banner

বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 468 বার পঠিত

 

নারীদের বাইরে কাজ করা নিয়ে কিছু কথা

নারীদের বাইরে কাজ করা নিয়ে কিছু কথা


ফাতেমা জাহান লুবনা


নারীদের বাইরে একেবারেই কাজ না করার পক্ষপাতী যারা তারাই আবার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানোর সময় গার্লস স্কুল – কলেজ খুঁজি, নারী শিক্ষক খুঁজি, স্ত্রীলোকের জন্য মহিলা ডাক্তার খুঁজি …কীভাবে সম্ভব? বিয়ের পর সংসার ও সন্তান সামলে সম্ভব হলে একজন শিক্ষিতা নারী ডাক্তারি, শিক্ষকতা বা অন্য যে কোন ধরণের হালাল পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন পর্দা করে। এটা নিষেধ হতে পারে এমন ক্ষেত্রে যখন সন্তানদের দেখাশোনার মত বিশ্বস্ত কেউ না থাকেন বা যদি কাজের বুয়ার কাছেই শিশুকে ফেলে চলে যেতে হয় যখন সেই কাজের বুয়া সম্পর্কেও সন্দেহ থেকে থাকে অথবা জরুরী কিছু সমস্যা থাকলে। অনেক শিক্ষিত নারী আছেন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী অথচ বাইরে কাজের অবসর ও সুযোগ থাকা সত্তেও ঘরে বসে সময় অতিবাহিত করছেন । এক এলাকায় সব নারীই সমানভাবে শিক্ষিত নয়। ভালো নারী শিক্ষিকা না পাওয়ার ফলে নারীদের চল্লিশ পার্সেন্ট কোটা অনেক সময় খালি থেকে যায় অথবা অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন নারীদের/ কখনও কখনও পুরুষদের দিয়ে সেই কোটা পূরণ করা হয়।

ডিজিটাল এই যুগে ঘরে বসে থাকলেই কি নারীরা নিরাপদ যখন সবার হাতে হাতেই আছে মোবাইল ফোন যাতে সারাবিশ্বের যে কারো সাথে যখন খুশি কথা বলা যেতে পারে অথবা বিচরণ করা যেতে পারে নিষিদ্ধ জগতে? আসলে এটা অভিরুচির ব্যাপার আর প্রয়োজনে নারীদের বাইরে বের হবার পারমিশন কিন্তু স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই দিয়েছেন আর সেটা কীভাবে তাও জানিয়ে দিয়েছেন। তাই বাড়াবাড়ি করা অনুত্তম।

চাকরির ক্ষেত্রে নারী পুরুষ সবার জন্যই বয়সের বিধিনিষেধ দূর করে দিলে একজন নারী বিয়ের পর সংসার ও সন্তান সামলে সম্ভব হলে পরবর্তীতে চাকরিতে যোগদান করতে পারেন। এতে রাষ্ট্রীয়, পারিবারিক এবং সামাজিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। যুক্তরাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা ও চাকরির ক্ষেত্রে লক্ষ্য করলেও এর সুফলগুলো অনুধাবন করা যায়।এখানে অবসরের আগের বছরেও কেউ যোগ্যতা থাকলে সরকারি চাকরির সুযোগ পেয়ে থাকেন। অনেকে ভাবতে পারেন এতে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে। আসলে এই ধারণা ঠিক নয় কারণ এতে এত তাড়াহুড়ো করে চাকরির ট্রেন ধরার ঊর্ধ্বগতি কমে আসবে , নারীরা সংসার ও পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালনে যথাযথ সময় ও সুযোগ পাবে আর পরবর্তীতে ইচ্ছা থাকলে চাকরিও করতে পারবে আর পুরুষরাও চাকরি করার সময় আছে জেনে স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে মনোযোগী হবে কারণ ব্যবসা মানেই নতুন এক জগৎ আর কিছু রিস্ক তো বটেই তবে উদ্যোক্তা যদি সঠিকভাবে এগুতে পারেন তবে সাফল্য একদিন আসে।

অনেকে নারীদের চাকরিক্ষেত্রে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে এটিকে শুধুই টাকার সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলেন। মানে যাদের টাকা নেই তারা চাকরি করেন বা আরেকটু বাড়িয়ে বললে টাকার প্রতি যাদের অনেক লোভ তারাই (শুধুমাত্র নারীদের ক্ষেত্রে বলা হয়) চাকরি করেন। টাকার প্রয়োজন থাকতে পারে আর গ্রহণযোগ্য প্রয়োজন থাকলে সেটাকে সম্মান করতে হবে। কিন্তু নারীদের জবটাকে শুধুমাত্র টাকার সাথে সম্পৃক্ত করে না রাখাই উত্তম। কারণ অনেক সময় নারীদের অংশগ্রহণে সমাজে কল্যাণের জোয়ার আসতে পারে। ধরুন এক এলাকায় এক নারী ডাক্তার হবার পর তার পরিবার তাকে চাকরিতে বাধা প্রদান করল বা তিনি নিজেও চিন্তা করলেন যে চাকরি করবেন না অথচ তার মাঝে যে জ্ঞান রয়েছে তা তো গ্রামের অন্য কারো মাঝে নাই অপরদিকে ঐ গ্রামের অনেকে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে বা প্রচণ্ড অসুস্থতায় কাতরাচ্ছ। এক্ষেত্রে জ্ঞানের অবচয়ের দরুণ ঐ পরিবারকে বা নারীকে যদি আল্লাহ্ বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেন তবে? ভাবতে হবে বিষয়গুলো নিয়ে।

নিজের জ্ঞান ও শ্রম দিয়ে যদি কারো উপকার করা যায় তবে দুনিয়ার জীবন যেমন সবার জন্য সুন্দর হয়ে ওঠে তেমনই পারলৌকিক জীবনেও কল্যাণী ব্যক্তিগুলো সাধারণ মানুষের চেয়ে অগ্রবর্তী হবেন তিনি নারী পুরুষ যেই হোন না কেন। তাই নিজেকে নিয়োজিত করুন কল্যাণকর কাজে টাকা কম বেশি যাই আসুক বা একেবারে নাই আসুক এতে কিছু যায় আসে না। অনেকের ব্যাংক ভর্তি টাকা থাকে কিন্তু মনে শান্তি থাকে না তাই অর্থই সবকিছু নয়। নিজেকে যোগ্য করুন কল্যাণকর কাজের জন্য আর সেটা সমাজের কল্যাণে বিতরণ করাকে নিজের উপর দায়িত্ব মনে করুন। যেমন এই মুহূর্তে আমার এই লেখাটি বাহ্যত আনপেইড জব যেটা করতে আমি ভালোবাসি। আপনিও লিখতে পারেন কোন কল্যাণকর গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ যাতে নির্দেশনা আছে; আছে উদ্দীপনা মানুষের জন্য উত্তম কাজের। নিজের জ্ঞানকে শুধুই নিজের মাঝে আবদ্ধ রাখবেন না; ছড়িয়ে দিন সর্বত্র কারণ জ্ঞানই আলো আর শ্রম হলো আর বহিঃপ্রকাশ। আর একটা কথা অবশ্যই মনে রাখবেন নিয়্যাতকে উত্তম কাজের জন্য উত্তম করে নেবেন তাহলে কেউ আপনার পারিশ্রমিক দেক না দেক আপনার প্রতিপালক বহুগুণ পুরস্কার প্রদান করবেন ……………….এবং তাতে অবশ্যই আপনি খুশি হয়ে যাবেন।

Facebook Comments