banner

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ ইং, ,

Monthly Archives: May 2025

 

সম্পর্কের মূল্যায়ন -শেষ পর্ব

রেহনুমা বিনতে আনিস


সবচেয়ে বড় কথা, মানুষকে মূল্যায়ন করতে শিখতে হবে। কোন মানুষই পার্ফেক্ট হয়না। আমিও না। এমনকি বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও বিশ্বাস করুন, আপনিও না। সুতরাং, মানুষের মাঝে ত্রুটির অনুসন্ধান করলে আপনি ত্রুটির অভাব পাবেন না। কিন্তু গুণের অনুসন্ধান করলেও আপনি নিরাশ হবেন না। আমরা যদি অপরের ত্রুটির পরিবর্তে ভালো গুণের ওপর ফোকাস করি এতে নানাবিধ লাভ।
প্রথমত, আমরা তাঁর উদাহরণ থেকে কিছু শিক্ষা লাভ করতে পারি।
দ্বিতীয়ত, তাঁকে অ্যাপ্রিশিয়েট করা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।
তৃতীয়ত, আমরা একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি। এতে নিজেও শান্তিতে থাকা যায়, অপরেরও অশান্তির কারণ হতে হয়না।

রাসূল (সা) শিখিয়েছেন অ্যাপ্রিশিয়েট করার পাশাপাশি তা প্রকাশ করতে। কারণ আমরা কেউ মানসবেত্তা নই যে কারো মুখ দেখে বলে দেব সে কি ভাবছে। অবশ্য আমার ধারণা এতে ভালই হয়েছে, কারণ আমাদের ভাবনাগুলো মাঝে মাঝে ভয়ংকর হতে পারে। সে যাই হোক, আমরা অপরের অনুমতি ব্যতিরেকে তাদের মনের ভেতর প্রবেশ করতে পারিনা বিধায় আমাদের আশেপাশের লোকজনকে আমাদের জানানো প্রয়োজন আমরা তাদের কতখানি ভালবাসি, কতখানি অ্যাপ্রিশিয়েট করি, তাদের আচরণগুলো আমাদের কতখানি আনন্দ দেয় বা ব্যাথা।

অধিকাংশ ভুল বুঝাবুঝির উৎস communication-এর অভাব, কোন যুক্তি ছাড়াই ধরে নেয়া যে অপর ব্যক্তি বুঝে নেবে আমি কি চাই বা আমি কি অনুভব করছি। আপনি যদি কারো ব্যপারে মায়া পোষণ করেন তবে কেন বলার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে এমন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করতে চান? এ’ কেমন ভালোবাসা যা ভালোবাসাকেই ধ্বংস করে দেয়?

সুতরাং, পরবর্তীতে হা হুতাশ করার পরিবর্তে সময় থাকতেই নিজের মনের ভাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে শিখুন। প্রয়োজন না হলে রাগারাগি করা থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজন হলে বলার আগেই ভাবুন কি বলছেন কেন বলছেন, কিভাবে বলছেন, যে উদ্দেশ্যে বলছেন তা স্পষ্ট হবার মত করে বলছেন কিনা।

‘Please’, ‘ধন্যবাদ’, ‘দুঃখিত’ এই ধরনের শব্দগুলো আপনার প্রতিদিনের vocabulary-র অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নিন। চেহারায় হাসি রাখুন। আপনার আশেপাশের মানুষগুলোকে বুঝতে দিন তারা আপনার জীবনে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। হয়ত দেখবেন আপনার জীবনে হঠাৎ করে বন্ধু এবং শুভাকাঙ্ক্ষীর সয়লাব হয়ে যাবে যারা আগে আপনার কাছে ভিড়তে সাহস পেতনা।

১ম পর্ব

 

সম্পর্কের মূল্যায়ন -১ম পর্ব

রেহনুমা বিনতে আনিস


স্ত্রী বিগত হবার পর এক ব্যক্তি দুঃখ প্রকাশ করছিলেন, ‘আহারে! ওর সাথে কত সময় কত রাগারাগি, কত দুর্ব্যবহার করেছি! কত সময় সে আমার জন্য কতকিছু করেছে, অথচ আমি কোন অ্যাপ্রিশিয়েশন দেখাইনি! এখন আমি এসব খুব অনুভব করি। কিন্তু সে বেচারী তো জানতেও পারল না আমি আসলে তাকে কতখানি ভালবাসতাম। এই মূহূর্তে হয়ত সে আল্লাহর সামনে আমার নামে নালিশের ফিরিস্তি নিয়ে বসে আছে!’
এমন আফসোস অনেকেই করে থাকেন। যেমন স্বামীকে তালাক দিয়ে চলে যাবার বিশ বছর পর এক ভদ্রমহিলা অনুশোচনা করে বলছিলেন, ‘তখন বয়স কম ছিল। রাগের মাথায় তালাক দিয়ে চলে এসেছিলাম। কিন্তু এতে করে যে কেবল ওর ক্ষতি হয়েছে তা নয়, আমার জীবনটাও এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। ছেলেমেয়েদের গড়ে তোলার জন্য বাবা বা মা কেউ এককভাবে যথেষ্ট নয়। আমার সর্বাত্মক চেষ্টা সত্ত্বেও আমি আমার ছেলেমেয়েদের কাঙ্ক্ষিতভাবে মানুষ করতে পারিনি। আমার জেদ বিজয়ী হয়েছে, কিন্তু আমার সন্তানগুলোর জীবন তছনছ হয়ে গিয়েছে। সেদিন যদি আমার আজকের মত মানসিক পরিপক্বতা থাকত, তাহলে আমি আমার সংসারটাকে বাঁচানোর জন্য যুদ্ধ করতাম’।

পরিণত বয়সী এক ভদ্রমহিলা। স্বামী সন্তান নিয়ে গুছানো সংসার। কিন্তু পরম সুখের মূহূর্তগুলোতেও তিনি হঠাৎ হঠাৎ আনমনা হয়ে যান, বিষণ্ণতায় ভোগেন। কারণ তিনি সার্বক্ষণিক একটা মৃত্যুকে বয়ে নিয়ে বেড়ান। নিজেকে দায়ী করেন, ‘আমি যদি একটু সচেতন হতাম, হয়ত আজ সে জীবিত থাকত। হয়ত তার একটা চমৎকার সংসার থাকত, একটা ফুটফুটে বৌ থাকত, তিন চারটা বাচ্চাকাচ্চা থাকত!’ কিন্তু কিছু কিছু আক্ষেপের কোন প্রতিকার থাকেনা। তাঁরও নেই। কিশোরী বয়সে যখন তিনি পর্দা করতেন না তখন এক ছেলে তাঁর প্রেমে পড়ে যায়। প্রেম নিবেদন করায় তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন, সবার সামনে তাকে অপদস্থ করেন। অপমানের জ্বালা সইতে না পেরে ছেলেটি পরদিন আত্মহত্যা করে বসে। তিনি আজও ভাবেন, যদি সে সময় তিনি পর্দা করতেন, সিগনাল দিতেন, ‘I am not available’, হয়ত ছেলেটি তাঁর দিকে তাকাতও না, প্রেম নিবেদনের প্রশ্নও আসতনা, তিনি কটু কথা বলে ঝাল ঝাড়তেন না, ছেলেটি সুইসাইড করতনা, তিনি এই অপরাধবোধ আজীবন বয়ে বেড়াতে বাধ্য হতেন না। কিন্তু মাঝে মাঝে চোর পালালে যখন বুদ্ধি বাড়ে তখন আর হৃত সম্পদ ফিরে পাবার কোন উপায় থাকেনা।

এক মূহূর্ত রাগ সংবরণ করতে না পারার ফলে কত সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়, মনের ঝাল ঝাড়তে পারার আনন্দ কিছুতেই সেই বিচ্ছেদের বেদনা নিবারণ করতে পারেনা। একটা ‘ধন্যবাদ’ কিংবা একটু মৃদু হাসি দিতে কার্পণ্য করার কারণে কত আশা ভালোবাসার ফুল কুঁড়িতেই ঝরে যায়, শত উপহার উপঢৌকনে সেই না পাওয়ার কষ্ট মুছে দেয়া যায়না। কত হৃদয়বিদারক কথা ক্ষোভের মূহূর্তে বাক্যবাণ হয়ে বেরিয়ে যায়, যে ক্ষত পরে আর কোন মলম দিয়ে সারানো যায়না। কত অবুঝ আচরণ সারাজীবনের জন্য দুঃস্বপ্ন বনে যায়, যার কোন প্রতিকার করা যায়না।
হুম, জানি, আমরা সবাই ভুল করি। বুঝবোনা কেন ভাই, আমি নিজে কি সেই পথ পাড়ি দিয়ে আসিনি? মানসিক পরিপক্বতা যে বয়সে আসে তার আগে অপরিণত অবস্থাতেই আমরা জীবনের অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে ফেলি। সেই পথ যেমন পদে পদে কন্টকাকীর্ণ তেমনই বিপদসংকুল। সে বয়সে সবারই মনে হয় শুনিয়ে দেয়া, দেখিয়ে দেয়া, নিজেকে জাহির করা এক বিরাট কৃতিত্বের ব্যাপার। এখানেই নিজের মনের চাকায় ঈমানের ব্রেক লাগানোর প্রয়োজন পড়ে। কারণ, একজন মানুষের মাঝে অপরিণামদর্শিতা থাকতে পারে। আবেগের সামনে বিবেকের ব্রেক ফেল করতে পারে। কিন্তু যার ঈমান আছে তাঁর নিজেকে প্রতিরোধ করার জন্য ‘আমি আল্লাহর সামনে কি জবাব দেব?’-এর চেয়ে ভাল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আর নেই। কারণ, আমাদের সম্পর্কগুলো তো আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম! এগুলোর প্রত্যেকটির হক আদায় করার ব্যাপারে আমাদের আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং প্রতিটি সম্পর্কের স্বরূপ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সম্পর্কগুলোর দাবী বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এগুলোর সীমারেখাগুলোও অংকন করে দিয়েছেন। হ্যাঁ, এই কাজগুলো সহজ কিংবা মসৃণ হবে মনে করার কোন কারণ নেই। কিন্তু পরীক্ষা সহজ হলে কি পাশ করায় কোন কৃতিত্ব থাকে? সম্পর্কগুলো জিইয়ে রাখার জন্য হয়ত কখনো আমাদের নিজেদের, কখনো অন্যদের ঘষামাজা করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু সেটা কিভাবে এবং কতটুকু হবে তার জন্যও নীতিমালা দিয়ে দেয়া হয়েছে।
আমাদের প্রত্যেকের অবস্থান আমাদের জন্য একটি পরীক্ষা। আমার অবস্থানে আমি হয়ত অপর কোন ব্যক্তির সাথে অযাচিত আচরণ করতে পারি, তবে তার মূল্য দেয়ার জন্য আমাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। নতুবা ন্যায়সঙ্গত আচরণ করার জন্য সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। আমার আচরণ সঠিক হচ্ছে কিনা তা নিরূপণ করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হোল সেই ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁর প্রতি আমার ব্যবহার যাচাই করার চেষ্টা করা। কাজটি নিঃসন্দেহে কঠিন, কারণ আমাদের মন কেবল অন্যের ত্রুটিগুলো দেখে, নিজেরগুলো কিভাবে যেন দৃষ্টিগোচর হয়না। কিন্তু চর্চা করলে এই বোধ নিজের মাঝে গড়ে তোলা অসম্ভব নয়।কারণ অতিরিক্ত অনুভূতিপ্রবণ লোকজন ব্যাতিরেকে সাধারণত সব মানুষ একই ধরণের আচরণে আনন্দিত হয় কিংবা কষ্ট পায়।
আবঞ্ছিতভাবে কাউকে আঘাত দিয়ে ফেলা থেকে বিরত থাকার সবচেয়ে সহজ উপায়ঃ ‘ভাবিয়া করিয়ো কাজ করিয়া ভাবিওনা’। যেকোন অবস্থায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার পরিবর্তে খানিক সময় নিয়ে চিন্তাভাবনা করে কথা বললে বা কাজ করলে অসাবধানতাবশত অপরের কষ্টের কারণ হওয়া থেকে আত্মরক্ষা করা যায়। আমাদের সমাজে, যেখানে ভদ্রতাকে দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়, হয়ত আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণকে কমজোরী হিসেবে দেখা হতে পারে, জনসমক্ষে আপনার ইমেজ হেয় হতে পারে। কিন্তু যে কঠিন মূহূর্তে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে তাঁর ইমেজ আল্লাহর কাছে অনেক উচ্চে স্থান পায়। কারণ তিনিই বলেছেনঃ
‘রাহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয়, ‘তোমাদের সালাম’ (সুরা ফুরক্কানঃ আয়াত ৬৩)৷
আবার তিনিই উল্লেখ করেছেনঃ
‘আর মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কথা বলো না, পৃথিবীর বুকে উদ্ধত ভঙ্গিতে চলো না, আল্লাহ পছন্দ করেন না আত্মম্ভরী ও অহংকারীকে৷ নিজের চলনে ভারসাম্য আনো এবং নিজের আওয়াজ নীচু করো৷ সব আওয়াজের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে গাধার আওয়াজ’ (সুরা লুকমানঃ আয়াত ১৮-১৯)৷
সুতরাং, যতই কঠিন মনে হোকনা কেন, অপরের সাথে সেই আচরণ করাই সঙ্গত যে ব্যবহার আমরা নিজেরা অপরের কাছে পেতে চাই। একইভাবে অপরের প্রতি সেই ব্যবহার বর্জনীয় যা আমাদের কষ্ট দেয়।
তখন প্রশ্ন আসে, তাহলে কি আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাব না? হুম, সেখানে চুপ থাকলে আবার আমরা আল্লাহর কাছে আটকে যাব। প্রতিক্রিয়া দেখাতেই হবে। তবে কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাব সে ব্যাপারে কিছু নীতিমালা দিয়ে দেয়া হয়েছে। রাসূল (সা) বলেছেন শুধু নির্যাতিত ব্যক্তিকে নয়, নির্যাতনকারীকেও সাহায্য করতে। কারণ, তাঁর এই আচরণ তাঁকে শাস্তির জন্য নির্ধারিত করে ফেলছে অথচ তিনি তা বুঝতে পারছেন না। তবে আমরা নির্যাতিত ব্যক্তিকে ধৈর্য্যধারণের উপদেশ দেই, কিংবা নির্যাতনকারীকে আত্মনিয়ন্ত্রণের উপদেশ দেই, পদ্ধতি একই। প্রথমে সেই ব্যক্তিকে ব্যক্তিগতভাবে বুঝানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তাঁকে নিয়ে আড়ালে বসতে হবে যেন তিনি অপরের সামনে লজ্জা না পান। তাঁর মুখোমুখি বসে, তাঁর চোখে চোখ রেখে, সম্ভব হলে তাঁর হাতে হাত রেখে, চেহারায় আন্তরিকতা মেখে, কণ্ঠে আন্তরিকতা ঢেলে, বার বার প্রিয় সম্বোধনে সম্ভাষন করে তাঁকে নিজের আন্তরিকতার ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে হবে। কোন পর্যায়ে তাঁকে অভিযুক্ত করে বা হেয় করে কথা বলা যাবেনা। মনে রাখতে হবে, আমার আচরণ বা কথা যদি ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের পর্যায়ে নিয়ে যায় তাহলে আমি ব্যর্থ হয়েছি। কারণ একজন মানুষ যখন defensive mode-এ চলে যায় তখন সে আর আপনার কথা গ্রহণ করতে প্রস্তুত কিংবা ইচ্ছুক থাকেনা। কিন্তু আপনি যদি আন্তরিকতা দিয়ে তাঁকে বুঝাতে পারেন আপনি কথাগুলো কোন ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে নয় বরং তাঁর কল্যাণ কামনায় বলছেন, সেক্ষেত্রে মানুষ অনেক তিক্ত কথাও সহজভাবে গ্রহণ করে পারে।

চলবে

 

স্মার্ট হবার উপায়

লাইফস্টাইল


Smart কি?

Smart নয় বরং Smartness নিয়েই আজকের আলোচনা- “সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে পারা যেখানে উপস্থিত বুদ্ধি, মানবিকতাবোধ, পাণ্ডিত্য, সাহসিকতা, সামাজিকতা, পোশাকে মাধুর্যতা এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় দক্ষতার সাথে নিজেকে উপস্থাপনকে বুঝায়।”

Smart হওয়ার প্রয়োজনীয়তা

আসলে স্মার্ট হবার প্রয়োজনীয়তা কেন তা নিয়ে ভাবনা থাকা দরকার ভাবুন ত,
কোনো একজন মানুষ যদি,’বিবেক বুদ্ধি অনুযায়ী সঠিক কাজ করেন এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, জ্ঞানের সাথে থাকে যদি বিনয়, নিজের ভুল নিজেই বুঝতে পারেন এবং তা থেকে শিক্ষা নেন এবং সর্বদা নিজেকে আরো সুন্দর করার চেষ্টা করেন, পজেটিভ সুন্দর কথা বলতে পারেন, রুচিশীলতার পরিচয় দিতে পারেন তার আচার আচরণ এবং পোশাকে মানুষটি সব রূপ ফুটে উঠে ‘কত সুন্দর হবেন’, আর এই বিষয়টিই হল স্মার্টনেস। আপনি যত বেশি মানুষকে কনভেন্স করতে পারবেন, ততই কাজের গতি আপনার সহজ হবে। আপনি সহজেই সাফল্যের দেখা পাবেন। সুতরাং Smart হবার প্রয়োজনীয়তা অনেক।

Smart হতে যে সকল গুন দরকার

সঠিক যোগাযোগ
খেয়াল করুন, ১.সঠিক শব্দচয়ন,
২. নিজের কাছে ইমোশন ব্যাংক বা শব্দ ভান্ডার, ৩.সহজ শব্দ ও বাক্য।
কথা বলার সময় উপরের তিনটি পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে বাড়তি কথা বলা একটু কমিয়ে দিন। যতটুকু প্রয়োজন কথা ঠিক ততটুকু বলার অভ্যাস করুন।

চশমার ব্যবহার
জৌলুশ বা স্মার্টনেস কিছুটা হলেও বাড়িয়ে তুলতে পারে একটি আকর্ষণীয় চশমার ব্যবহার।

কৌতুক বা হাসিমুখ
গম্ভীর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষদের সাধারণ মানুষ পছন্দ করেন না। মানুষ পছন্দ করেন সদা সহাস্য মানুষদের।স্মিতহাস্যে কথা বলুন সবার সাথে। মানুষটি যদি বিরক্তিকরও হয়, আপনার কথা শুনে সে যেন আপনার বিরক্তিটুকু ধরতে না পারে।

ভাল ভাল বই পড়া
বই পড়া আপনার সৃজনশীল ক্ষমতাকে প্রখর করে তুলবে। কথা বলার দক্ষতা এবং শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করবে।

মনকে উজ্জীবিত রাখা
স্মার্টনেস হলো অভ্যন্তরীণ মানসিক ব্যাপার। আপনি যা, নিজেকে ঠিক সেভাবেই উপস্থাপন করা হলো স্মার্টনেস সুতরাং তা আপনার মনকে উজ্জীবিত রাখতে পারে।

যা জানি না তা অন্যদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করা
প্রতি সপ্তাহে আপনি নিজে কতটা এগোলেন, নিজের কাছেই পরীক্ষা দিন এজন্য যা আপনি জানেন না তা অন্য আরেক জনের কাছে গিয়ে জানার চেষ্টা করা।

যেসব বিষয় জানি তা অন্যদের জানান
পুরনোটা মনে রাখতে পারছেন না ত সহজ উপায় হল, সেটা দেখে আরও জানুন, শিখুন। যেসব বিষয় অন্যদের শেখান পুরনো টাও নিশ্চিত থাকুন মনে থাকবে। সুত্র: Google, Youtube channel (pi fingers motivation), (Career intelligence)

 

১৫ বছরের প্রেমিকাকে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে ধর্ষণ

নারী সংবাদ


রংপুরের পীরগাছায় প্রেমের টানে প্রেমিকের বাড়িতে এসেছিলেন প্রেমিকা। কৌশলে তাকে ঘুমের ট্যালেট খাইয়ে রাতভর ধর্ষণ করেছে১৫ বছরের প্রেমিকাকে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে ধর্ষণ

নারী সংবাদ প্রেমিক! এমন অভিযোগের ভিত্তিতে প্রেমিক ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের বুলবুলির ডোবা গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে জাহিদ মিয়ার (২০) সঙ্গে পারুল ইউপির গুঞ্জর খাঁ গ্রামের আব্দুল হাকিম মিয়ার মেয়ের (১৫) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের সুবাদে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় জাহিদ মিয়া প্রেমিকাকে তার বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে ভাতের সঙ্গে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে প্রেমিকাকে রাতভর ধর্ষণ করে জাহিদ। এ ঘটনায় প্রেমিকা অসুস্থ হয়ে পড়লে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়।

পুলিশ আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রেমিকাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় জাহিদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে প্রথমে পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়।

পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রেমিক জাহিদকে আটক করেছে। থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

পীরগাছা থানার ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেন জানান, জাহিদের বাড়ি থেকে অসুস্থ অবস্থায় ১৫ বছরের এক মেয়েকে উদ্ধার করা হয়েছে। অসুস্থতার কারণ এখনো জানা যায়নি।

পীরগাছা থানার ওসি সরেস চন্দ্র জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলা দায়ের হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুত্র: ইত্তেফাক/নূহু

 

আমি আগের ঠিকানায় আছি

মুক্তারা বেগম নদী


আজ ১লা আষাঢ়, বর্ষার প্রথম দিন। কিন্তু আজ আমি কোথাও যাব না, মন ভাল নেই। আজ অসম্ভব ইচ্ছে করছিল অঝোর ধারায় বৃষ্টি হোক কিন্তু আমি জানি আজ বৃষ্টি হবে না, আমি যে বৃষ্টিকে অনেক অনেক ভালবাসি। আমি যা ভালবাসি, যা চাই তা কখনও হবে না, হতে নেই। বৃষ্টির কাছে আমার অসীম কৃতজ্ঞতা, কারন বৃষ্টি আমার কান্নার নোনা জল মুছে দেয়। বৃষ্টি নিয়ে আমার অনেক আদিখ্যেতা আছে, বৃষ্টি হলেই আমার মন এলোমেলো হয় যায়। তুমি তো জানো অরন্য আমি বৃষ্টিতে ভিজতে ভীষণ ভালবাসি। আরও ভালবাসি শাড়ি পড়তে কিন্তু আজ প্রিয় রঙের নীল শাড়ি, চুড়ি, টিপে নিজেকে সাজাবো না, ঘন কালো চুলগুলো বেলী ফুলের মালা দিয়ে জড়াবো না, কোন এক শান্ত নদীর জলে পা ডুবিয়ে বসা হবে না, বৃষ্টি ভেজা কদম ফুল নিয়ে আসবে না আমার জন্য, তবু আমি অপেক্ষা করব।

আজ সারাটা দিন কষ্টের নীল চাদর জড়িয়ে থাকব, আমার কষ্টের রূপ আর অপেক্ষা কোনটাই যক্ষের বিরহের মত নয় যে কালিদাস তার অলংকার দিয়ে সাজাতে পারবেন। কারণ আমার কষ্ট আর অপেক্ষায় আর যাই হোক কোন অলংকার নেই। আমার অপেক্ষা বা কষ্টগুলো অনেক বেশী সাধারণ, কখনো কখনো হয়ত তার রঙ বদলায় লাল, নীল, বেগুনি হয় কিন্তু কষ্টগুলো কষ্টই থেকে যায়। আমি এমনই একজনকে ভালবাসি যে আমার স্বপ্নে আছে কিন্তু জীবনে নেই। ভীষণ অবাক লাগে, খুব বেশী কিছু চাইনি, শুধু চেয়েছিলাম একদিন ঝুম বৃষ্টিতে তোমার হাতে হাত রেখে পথ চলতে, কোন এক বৃষ্টি ভেজা বিকালে তোমার চোখে চোখ রেখে রংধনু দেখতে, কোন এক সোনালী সন্ধ্যায় মুখোমুখি বসে থাকতে মৌন সুখে, বসন্তের প্রথম প্রহরে পাশাপাশি পথ চলতে, জ্যোৎস্না ভেজা রাত্রিতে তোমাকে নিয়ে ভেসে যেতে।

প্রতিটা সন্ধ্যায় আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করি, এই বুঝি তুমি এলে আমার দুয়ারে, হাতে আমার প্রিয় বেলী ফুলের মালা নিয়ে। সমস্ত শহর তন্ন তন্ন করে তুমি আমার জন্য কোন একদিন একটি নীল গোলাপ নিয়ে আসবে ভেবে ভেবে ফুরিয়ে গেল আমার সারাটি বেলা। তাই দেখে খুশিতে মাতাল হব না কোনদিন জেনেও অপেক্ষার ক্ষণগুলো রক্তাক্ত করে দিয়ে যায় আমায়, আমি পড়ে থাকি জমাট লাল রঙের মাঝে। তোমাকে সঙ্গে নিয়ে কোনদিন শিউলি কুড়ানো হবে না জেনেও আমি অপেক্ষা করি, অপেক্ষা করি আর মলিন হই।

ভোরের আলোয় তোমাকে দেখার ভীষণ সাধ ছিল, রাঙ্গা ভোরে তুমি আসনি, দুপুরের কড়া রোদে তোমাকে কেমন দেখায় তা অজানাই থেকে গেল। কারণ দুপুরের পথও আমাকে নিরাশ করেছে। শেষ বিকালের রক্তিমায় তোমার রঙ কি বদলায়? তাও জানি না কারণ বিকালেও আসনি তুমি। খুব বেশী কি চেয়েছিলাম? এই ভেবে ভিজে যায় আমার চোখ, চোখের পাতা, ভিজে যায় আমার সনাতনী মন।

সমুদ্রের খুব কাছে গিয়ে জলকে স্পর্শ করার বড্ড বেশী সাধ হয়, ইচ্ছে করে তোমাকে সাথে নিয়ে ঝিনুক কুড়াই। ভীষণ ইচ্ছে করে লাল, নীল, বেগুনি ছবি আঁকার। কিন্তু সে জানি তা কোনদিন হবে না, হতে নেই। ভীষণ ইচ্ছে তোমাকে পাশে নিয়ে কোন এক সবুজ পাহাড়ের গায়ে হেলান দিতে। বুকের ভিতর ঘাপটি মেরে বসে আছে এক বিশাল নীলাঞ্জনা আকাশ, চোখের তারায় নাচে একশ কোটি নক্ষত্র। ফিরে আসি একই আবর্তে, নৈবদ্য সাজাই ভীষণ গোপনে।

জানো অরন্য, প্রত্যেক মানুষের মনের ভিতরেই একটা ছোট ঘর থাকে, একটা মাত্র দুয়ার তার। ঘরের ভিতরে থাকে আসল মন আর দুয়ার থাকে বদ্ধ। বদ্ধ ঘরে বসে সে মন শুধু কাঁদে শুধু একজনের কথা ভাবে। কিন্তু বেশীর ভাগ মানুষই মনের সে মানুষটাকে পায় না। মনের কথা বলার মানুষটাকে পায় না। দুয়ার বদ্ধ ঘরে বসে শুধু সারাজীবন কাঁদে, শুধু কাঁদে। যখন তোমায় কথা মনে পড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস হৃদয়ে গুমড়ে উঠে-আমি লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদি যখন পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়ে। আর বাতাস যখন উঠে তখন বুকের মধ্যে ঢেউ থাকে না,পড়ে থাকে আমার পুস্পিত ভালবাসা, অনাদর, অবহেলায়।

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে হ্রদয় থেকে ভালবাসার অনুভূতিটাকে ছিঁড়ে নিয়ে নির্লিপ্তে ছুড়ে ফেলি বঙ্গোপসাগরে, মৌসুমী সমুদ্রের পেটের মতো দুঃখগুলো যখন ফুলে ফেঁপে উঠে, তখন ইচ্ছে করে চোখ বুজে চলে যাই ব্যবলিনের শূন্য উদ্যানে। তোমাকে না পাওয়ার কষ্টে নিজেকে পোড়াতে পোড়াতে ভাবি জীবনের এতটা পথ একাই হেঁটেছি, একাই থেকেছি, বাকীটাও না হয়।

অরন্য, আমার কাছে তোমার কোন ঠিকানা নেই, তাই এই না বলা কথাগুলো কখনই পৌছাবে না তোমার কাছে। তুমি কখনই জানবে না কতটা তীব্রতা ছিল তোমাকে পাবার। কেমন করে তোমাকে খুঁজে বেড়াই দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। তোমাকে ভুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেই জ্বলে উঠে আমার দমিয়ে রাখা ভালবাসা।

তারপর কোনে এক বসন্ত বিকালে ঝড়ে যাবে জীবন বৃক্ষের পাতা ক্লান্ত বাতাসে ভাসবে আমার না বলা কথা। বাতাসের কানে তবু বলাবলি হবে।

এতো ভালবাসে কি আর কেউ? এমন করে?

তোমার বন্যা

 

পরিষ্কার_পরিচ্ছন্ন রান্নাঘর

ঘরকন্যা


রান্নাঘর ভালো থাকলেই পরিবারের সবার সুস্বাস্থ্যও বজায় থাকবে। রান্নাঘরই হচ্ছে বাসা-বাড়ির সেই স্থান, যা সবেচেয়ে বেশি নোংরা হয়। কিছু সহজ টিপস, আপনার রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার জন্য।

সাবান ও গরম পানি

থালাবাসন এবং রান্নাঘরের দেয়াল এর তেল-চর্বি পরিষ্কার করতে সাবানের সাথে গরম পানি। ফলে চর্বি ভাব দূর হবে।

কাগজে কাটাকাটি
পুরনো খবরের কাগজ বিছিয়ে নিয়ে কাটাকাটির কাজ করুণ। রান্নাঘরের মেঝেতে কাটাকাটির কাজ করবেন না।

পোকা মারা স্প্রে
ময়লার ঝুরিও নোংরা হবে কম। আর রোজ ময়লার ঝুরির আশেপাশে একটু পোকা মারার স্প্রে ছিটিয়ে দিন। এতে ময়লার ঝুড়িতে পিঁপড়াও ধরবে না।

টিস্যুর ব্যবহার
প্রত্যেকবার চুলার কাজ শেষ হলে চুলাটি একটি কাপড় বা টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলুন।
রান্নাঘর অনেকটাই কম ময়লা হবে।

এয়ার ফ্রেশনার অবশ্যই
রান্নাঘরে ব্যবহারের জন্য পছন্দের ফ্লেভারের এয়ার ফ্রেশনার অবশ্যই কিনে নেবেন। এর মাধ্যমেও গন্ধের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

লবণ ও গরম পানি
রান্না করার সময় চুলার ওপর চা,তরকারির ঝোল ছলকে পরে এবং শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়। এক চামচ লবন আর গরম পানি দিয়ে ভাল করে ঘষে নিলে তা সহজেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

পানিতে ভিজিয়ে রাখুন
পেঁয়াজ বা রসুন ইত্যাদি যেসব খাবারের খোসা বাতাসে ওড়ে, সেগুলো কাটার আগে পানিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। খোসা উড়ে ঘর নোংরা হবে না।

রান্নাঘরে সম্ভবপর কম জিনিস রাখা গেলে স্বাচ্ছন্দ্য ও সুন্দর থাকবে। নোংরাও হবে কম।

 

মাতৃকথন ৮

ফারিনা মাহমুদ


কাজেই আমি মনে করিনা তোমার দুশ্চিন্তার কোনো কারণ আছে। তবে তোমাকে আমি যে পরামর্শ দেবো তা হচ্ছে তুমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে ওর একটা ব্লাড টেস্ট করে দেখতে পারো ওর ভিটামিন ডি এবং আয়রন লেভেল ভালো আছে কিনা, না থাকলে ঐটা একটু পূরণ করা জরুরি। আর তুমি ওর ফুড প্যাটার্নে লিখেছো রাতে ওকে এক বোতল দুধ দেয়া হয় এবং ও এইটা খেয়ে ঘুমায়। তুমি এই দুধ বন্ধ করে দেবে। একেবারেই পারবে না, একটু একটু করে পরিমান কমাবে এবং একসময় বন্ধ করে দেবে। শুরুটা করবে ছুটির দিনের আগের রাতে কারণ ওই রাতে ও উঠে যেতে পারে এবং কান্না করতে পারে।
আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, খায় ই ওই এক বোতল দুধ, ঐটা বন্ধ করে দেবো মানে?
– বাচ্চা যখন থেকে শক্ত খাবার খায়, দুধ আস্তে আস্তে কমিয়ে দিতে হয়। ১৬ মাস বয়সী বাচ্চা ২ কাপ এর বেশি দুধ বা তার সমপরিমাণ ডেইরী প্রোডাক্ট (দই, পনির) এর বেশি খাওয়ার প্রয়োজন নেই। দুধ খাওয়া সহজ, টানলেই পেট ভরে। তোমার বাচ্চা জানে রাতে ঐটা খেয়ে সহজেই তার পেট ভরবে। তাই সে কষ্ট করে শক্ত খাবারটা খায় না। আর যখন সে জানবে তার ওই অপশন বন্ধ, আস্তে আস্তে সে ডিনার ঠিক মতো করবে। শুরুতে তোমাদের দুইজনেরই একটু স্ট্রাগল হবে তবে এক সপ্তাহ ফলো করে দেখো, উন্নতি হবে অবস্থার।
ও বলে চললো , আমরা মূল যে ব্যাপারটা খেয়াল করি সেটা হচ্ছে বাচ্চা সব ফুড গ্রুপের খাবার খাচ্ছে কিনা, ফিজিক্যালি একটিভ আছে কিনা, গ্রোথ চার্ট ঠিক আছে কিনা। পাশাপাশি এটাও মনে রাখা দরকার সব বাচ্চার বৃদ্ধি এক বয়সে হয় না। কোনো কোনো সময় বৃদ্ধি একটু স্লো ডাউন হতে পারে, এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এটা যদি “রিমার্কেবলি লং পিরিয়ড এসোসিয়েটেড উইথ আদার সিম্পটমস” না হয় সেই ক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তোমার নিশ্চয়ই এমন কোনো সহপাঠী ছিলো যে শৈশবে বেশ লম্বা থাকলেও কৈশোরে এসে আর অতো লম্বা হয়নি বা উল্টোটা? এটা একটা উদাহরণ হতে পারে গ্রোথ স্লো ডাউনের। তেমনি মেটাবলিজম ও আপ ডাউন হয়। তোমার হয়না? কোনো কোনো দিন তোমার নিশ্চয়ই খেতে ইচ্ছে করে না, আবার কোনো কোনোদিন অনেকটা খেয়ে ফেলো! ওরও তাই। এ ছাড়া দাঁত ওঠার সময় বা অন্য কোনো সাময়িক পরিবর্তনের কারণেও বাচ্চা কম খেতে পারেনা। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে ওই ফেইজ টা কেটে গেলে বাচ্চা বেশ ভালো খাওয়া দাওয়া করে নিজে থেকেই নিজের ঘাটতি পুষিয়ে নেয় ! অসুস্থতা থেকে সুস্থ হবার পরেও বাচ্চার ক্ষুধা বাড়ে এইজন্য।
আমি রিলেট করছি মনে মনে – ভাবি, বাচ্চা ক্যামন আছে? এর উত্তরে প্রায়ই বলি, আর বৈলেন্না ভাবি, দুইদিন ঠিক মতো খায় তো তিন দিনের দিন আবার যেই সেই! আচ্ছা, ঘটনা তাইলে এই!
সুতরাং ফারিনা, ওকে তুমি ওর খাবার দেবে। ও খেতে না চাইলে আধা ঘন্টা খেলতে দেবে এরপর একই খাবার আবার একটু গরম করে দেবে। বুঝতে পারলে? পৃথিবীর কোনো জীব ক্ষুধা পেটে সামনে খাবার রেখে উপোষ থাকে না। একসময় ও খাবেই। ওকে এটা বুঝতে হবে, সারাজীবন ওকেই খাবারের পেছনে ছুটতে হবে, খাবার ওর পেছনে ছুটবে না।যত তাড়াতাড়ি তুমি ওকে এটা বুঝতে দাও, ততই মঙ্গল !
আমি মাথা নাড়লাম। আমার দ্বিধাগ্রস্থ চেহারা দেখে মহিলা হেসে বলে উঠলো,
– এটলিস্ট হি ইস গ্রোইং হাইওয়াইজ হুইচ ইউ কান্ট্ মেইক হ্যাপেন বাই ফোর্স! এন্ড এবাউট ওয়েট? ডোন্ট ওরি, প্রবাব্লি ওয়ান ডে হি উইল অলসো গো টু জিম টু গেট রীড অফ এক্সট্রা কিলোস!
আপডেট : আজ অবধি, আড়াই বছর বয়সী ছেলে আমার স্কিনি একটিভ বয়। জামা কাপড় যথারীতি ঢিলে ঢালাই ! তবে আমি রাতে ওই বোতল ভরা দুধ বন্ধ করে দিয়ে এবং খাবার নিয়ে ওকে জোরাজুরি বন্ধ করে যেই উপকারটা পেয়েছি তা হচ্ছে খাবারের প্রতি ওর আগ্রহ বেড়েছে। আমার কাছে এটাই বড় কথা। যেটুকু খায়, আনন্দ নিয়ে খায়। পছন্দের খাবার নিজে চেয়েও খায় মাঝে মাঝে। আমি এতেই খুশি। ওর খাবার পরিমান বাড়ানোর চেয়ে আমার নিজের খাবারের পরিমান কমানো নিয়েই বেশি দুশ্চিন্তায় আছি!
সতর্কতা : আমি চিকিৎসক নই, ডায়েটিশিয়ান নই, আমি যা লিখলাম তা একান্ত আমার অভিজ্ঞতা। কারো সাথে মিলবে এমন কথাও নেই। যে কোনো ব্যাপারে সন্দেহ থাকলে উপযুক্ত মানুষের পরামর্শ নেয়াই ভালো।
হ্যাপি মাদারহুড !

চলবে…
পর্ব-৭

 

যৌতুক না দেওয়ায় রাণীনগরে তালাকের পর দ্বিতীয় বিয়ে : সাফিয়া বিবির আত্মহত্যা

নারী সংবাদ


নওগাঁর রাণীনগরে যৌতুকের টাকা না পাওয়ায় তালাক দিয়ে স্বামী অনত্র বিয়ে করায় সাফিয়া বিবি (২৫) নামে এক গৃহবধু বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার পারইল ইউনিয়নের বোদলা গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে। শুক্রবার রাতে রাণীনগর থানা পুলিশ সাফিয়া বিবি মৃত্যুর খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে শনিবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
সাফিয়া বিবি উপজেলার সদর ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের মো: মুক্তার এর স্ত্রী ও বোদলা গ্রামে মৃত শহীদ উদ্দীন সরদারের মেয়ে।
এলাকাবাসি ও পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, স্বামী মুক্তার হোসেন তার স্ত্রী সাফিয়া বিবিকে শশুরবাড়ী থেকে ২ লাখ টাকা এনে দেয়ার জন্য শারিরিক নির্যাতন চালায়। বাধ্য হয়ে সাফিয়া ২০ হাজার টাকা এনে স্বামীকে দেয়। পরে আরো টাকার জন্য নির্যাতন করে সাফিয়াকে বাপের বাড়ীতে তাড়িয়ে দেয়।
এর পর থেকে সাফিয়া বাপের বাড়ীতে থাকছেন। এরই স্বামী গোপনে তালাকনামা পাঠিয়ে দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে। পারইল ইউনিয়ন পরিষদে তালাকের কাগজ পৌঁছিলে বিষষটি সাফিয়াকে জানানো হয়। তালাক ও স্বামীর অন্যত্র বিয়ে করার সংবাদ জানতে পেরে শুক্রবার দুপুরে বাবার বাড়ির সবার অজান্তে সাফিয়া বিষপান করে। পরে তার পরিবারের লোকজন জানতে পেরে সাফিয়াকে রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে দেয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে নওগাঁ সদর হাসপাতালে রেফাট করেন। নওগাঁতেও তার অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মধ্যে তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার রাতে রাণীনগর থানা পুলিশ খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে শনিবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএসএম সিদ্দিকুর রহমান জানান, টাকা-পয়সা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন্দল চলছিল। এছাড়াও তাকে তালাক দিয়ে স্বামী অন্যত্র বিয়ে করায় সাফিয়া বিবি আত্নহত্যা করেছে। যৌতুকের বিষয়ে আদালতে মামলা করতে পারে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সুত্র: নয়াদিগন্ত

 

মনে হচ্ছে, আমি আর বাঁচবোনা -১

প্রবাসী মজুমদার


মসজিদ হতে মাগরিবের নামাজ পড়ে এসেছি মাত্র। অন্দর মহলে ঢুকতেই নাজুকে চোখে পড়ল। জায়নামাজে চুপ করে বসে আছে। সালামের জবাবটা এত ক্ষীণ ছিল যে, মনে হল কিছু একটা হয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম

– কি হয়েছে তোমার? এমন করে বসে আছ কেন?

– বুকে ব্যথা।

– বেশী।

– অনেকটা তাই-ই।

– কোন দিকে?

– বা দিকে।

– শুরুটা কিভাবে হল? জানতে চাইলাম।

নাজু বলতে লাগল, নামাজে রুকু থেকে সিজদায় যাবার সময় হঠাৎ বাম দিকে টান লেগেছে। ভেবেছিলাম চলে যাবে। এমনটি মাঝে মধ্যে হয়। কিন্তু কফ দিয়ে কিংবা ম্যাচেজ করেও যেন ব্যথাটি যাচ্ছে না। কিট কিটি ব্যথ্যাটা যেন রয়েই গেল।

– আচ্ছা। ব্যথাটা কি এক জায়গায় আছে, নাকি বাম হতেও ছড়িয়ে পড়ছে?

– না। এক জায়গায়। কিন্তু কেমন জানি মনে হচ্ছে। ইতি পুর্বে এমন আর কখনো অনুভব হয়নি।

– ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?

– গেলেই ভাল। আমার খুব ভয় হচ্ছে।

নাজু অসুস্থতাকে সব সময়ই উপেক্ষা করতে অভ্যস্ত। দ্বিতীয়ত সামান্য সর্দি জ্বরের জন্যও হাসপাতালে টেস্টের নামে ডাক্তারদের হয়রানি আর দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাড়িয়ে থাকা খুবই বিরক্তিকর। হাসপাতালের এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়িয়ে চলার জন্য অনেক রোগীই টোকেন নিয়ে দু এক ঘন্টার মার্কেটিং ও সেরে আসে।

যাইহোক, হার্ট জনিত কারণে নাজু যেহেতু আজ হাসপাতালে যাবার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে। তাকে এতটুকু ভয় পেতে দেখে আমিও তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে গেলাম। সন্তান দুটোকে বাসাতেই রেখে গেলাম।

বিদ্যুতের গতিতেই হাসপাতালের দরজায় গিয়ে পৌছলাম। আল আবির সাসপাতাল। জেদ্দা। রিসিপশনে লম্বা লাইন।অনেক্ষণ দাড়িয়ে সিরিয়াল পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। পাকেট থেকে ইনসিওরেন্সের মেডিক্যাল কার্ডটি বের করে এগিয়ে দিতেই রিসিপশনিষ্ট জানতে চাইল,

– কোন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

– হার্ট স্পেশালিষ্ট ডাক্তার তাহির।

– সরি। একেবারে ওভার বুকড হয়ে আছে।

– মানে?

– রোগীর সংখ্যা এত বেশী যে, রাত একটায় ও রোগী দেখা শেষ করতে পারবেনা। এখন আর একজন বাড়তি রোগী নেয়ার কথা বললে ডাক্তার আমাকে উল্টো মারবে।

অসহায় রিসিপশনিষ্ট এর কথা শুনে থ হয়ে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম

– তাহলে আমি এখন কি করবো? আমাকে যে ডাক্তার দেখাতেই হবে।

– আপনি একজন জেনারেল ফিজিশিয়ানকে দেখান। ও যদি হার্ট এর ডাক্তার দেখাতে রিকমান্ড করে, তাহলেই আপনাকে রেফার করা যাবে।

তাৎক্ষণিক্ষ রাজী হয়ে গেলাম। জেনারেল ফিজিশিয়ানের সাথে দেখা করার জন্য স্লিপ দেয়া হল। ডাক্তারের সাথে দেখা করলাম। রোগীর মুখে বিস্তারিত শুনে হাতে আরও একটা স্লিফ ধরিয়ে দেয়া হল। ইসিজি টেস্ট। হার্টবিট দেখতে হবে। না দেখে অগ্রীম কোন কিছু বলা যাবেনা।

মাসের শেষ। পকেটের দাপট অনেকটা ক্ষীণ। দোয়া কালেমা পড়েও টেষ্ট হতে বাঁচার উপায় নেই। তাই অযথা টেস্টের যন্ত্রনায় নিজের হার্টবিট বেড়ে না যাবার জন্য নিজের জন্যও এখন দোয়া পড়ছি।

প্রাথমিক টেষ্ট ইসিজির পয়সাটা দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। রোগীকে নিয়ে ইসিজি করে সীট দেখিয়ে শুয়ে থাকতে বলল। নাজুর চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, ওর অনুমান একেবারে ঠিক। হার্টের কিছু একটা অবশ্যই হয়েছে। না জানি কি হয়।

অভয় দিয়ে রোগীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আনার চেষ্টা করলেও যেন মন মানছে না। হার্টের রোগে মারা যাওয়া মানুষগুলোর দৃশ্য ওকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বার বার বলছে, ওমুকের এ হয়েছে। তমুকের ও হয়েছে। হায় আল্লাহরে তুমি আমার বাচ্চা গুলোর দিকে তাকিয়ে একটা ভাল সংবাদ শোনাও।

কিছুক্ষণ জেনারেল ফিজিশিয়ান মহিলাটা রিপোর্ট হাতে এগিয়ে আসল। খুব গাম্ভীর্যতার সাথে বলতে লাগল, তোমার হাটের ইজিসি হার্টের ডাক্তার তাহিরকে দেখিয়েছি। রিপোর্ট এ্যবনরমাল।

– এখন কি করতে হবে? জানতে চাইলাম।

– অন্য হাসপাতালে যেতে হবে। আমাদের এখানে চিকিৎসা সম্ভব নয়।

– এখনি যেতে হবে? নাকি আগামীকাল?

– এ রিক্স আপনাদের। আমার পরামর্শ হল এখনি কোন বড় হাসপাতালে গেলে ভাল হবে, ডাক্তার সাফ জানিয়ে দিয়ে চলে গেল।

নাজুকে বুঝিয়ে রাখার কিছুই বাকী রইলনা। ওর হতাশার মাত্রাটা বেড়ে গেল। সন্তান দুটি কথা ভেবে ওর দু চোখ বেড়ে পানি পড়ছে।

আমি ডাক্তার নই। তবুও ডাক্তারের কান্ডজ্ঞানহীন পরামর্শের নমুনা দেখে নিজেই বকাবকি করলাম।
বললাম,

– তোমার মনে আছে? দ্বিতীয় সন্তানের সময় তুমি কতো দোয়া করছিলে আল্লাহ আমাদের একটি কন্যা সন্তান দেয়ার জন্য। কিন্তু ডাক্তার বার বার ছেলে সন্তানের কথা নিশ্চিত করে বললেও অবশেষে কন্যা সন্তান তাসনিয়াকে পেয়ে বিশ্বাসই হচ্ছিলনা। কি আর করবো, অবশেষে ছেলে সন্তানের জন্য কেনা জামাই মেয়ে সন্তানকে পরিয়ে হাসপাতাল হতে বিদায় নিলাম।

প্রথমাবস্থায়, সিফা মেডিকেলের ডাক্তার আয়েশাতো আল্ট্রাসোনোগ্রাম করতে গিয়ে আশ্চার্য হয়ে বলতেই লাগল, বাচ্চা কৈ? বাচ্চাতো খুঁজে পাইনা। এ নিয়েও তুমি কেঁদেছিলে। কিন্তু অবশেষে সবই ভুল প্রমাণিত হল। আমার মনে হয়, এসব ডাক্তারগুলো মেডিকেলে পিছনের টেবিলের ছাত্র ছিল। খোঁজ নিয়ে হয়তবা দেখবে, মেডিক্যালের শিক্ষা বোর্ড এ সব আদুভাইদের যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্যই হয়তবা সাটিফিকেট দিয়ে বিদায় দিয়েছে…।

কোথায় যাবো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। ভাবলাম আগে সন্তান দুটোকে বাসা থেকে গাড়ীতে তুলে নেই। বাসায় যেতে যেত বিল্ডিং এর ডাক্তার সাহাবুদ্দিনকে ফোন করলাম। বিষয়টা খুলে বলতেই জানাল, আজ আমার ডিউটি নেই। তবে হাসপাতালে এসেছি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য। ইচ্ছে করলে হাসপাতালে চলে আসুন। দেখি রিপোর্টে কি লিখা আছে।

ডাক্তার সাহাবুদ্দিন জেদ্দাস্থ কিং আব্দুল আজি ইউনিভার্সিটি মেডিকেলের আই,সি. ইউ. ডিপার্টমেন্টের ইনসেনটিভ কেয়ার এর ইনচার্জ ও স্পেশালিষ্ট। যে কোন বাংলাদেশীর সহযোগীতায় সে সবার অগ্রভাবে। তার কর্মদক্ষতা, ডাক্তারদের সাথে লিয়াজোসহ একজন সিনিয়র ডাক্তার হিসেবে সবার শ্রদ্ধাভাজন।

রাত ১১টা। সন্তানদের গাড়ীতে নিয়ে ছুটে চলেছি ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের দিকে। দুরত্ব বাসা হতে প্রায় ৭-৮ কিলো মিটার।

(চলবে)

 

জীবন যখন গোলকধাঁধা

আফরোজা হাসান


মেইল খুলে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো অধরার। একশো বাইশটা মেইল এসে জমেছে। তিন সপ্তাহ ইচ্ছে করেই মেইল চেক করেনি। কিন্তু এখন মনেহচ্ছে বিরাট বড় ভুল করে ফেলেছে। এই মেইল দেখতে এখন আরো তিন সপ্তাহ লাগবে। আর চলতি তিন সপ্তাহে যেসব মেইল আসবে সেসব কি করবে? জীবন থেকে পিছিয়ে পড়া কি এটাকেই বলে? এভাবেই কি নানা ধরণের কাজে ছোট ছোট অবহেলা বা গাফলতি মানুষকে একটু একটু করে পিছিয়ে দেয় জীবনের পথে? মনের অসৎ ইচ্ছে গুলোকে মূল্য দিয়ে গিয়ে এভাবেই অবমূল্যায়ন করা হয় মহামূল্যবান সময়ের! মোবাইলের শব্দে ভ্রু কুঁচকে গেলো অধরার। এখন কারো সাথেই কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু পর মুহুর্তেই মনে হলো যে, এটাও মনের একটা অসৎ ইচ্ছা। এমন তো হতে পারে কেউ খুব প্রয়োজনে ফোন করেছে।

মোবাইল হাতে নিয়ে স্ক্রীনে জুম্মির নাম্বার দেখে হাসলো। না জানি আবার কি আজগুবি কথা বলার জন্য ফোন করেছে। মাঝে মাঝে কিছু মানুষকে বোঝাতে গেলে মনে হয় বিশাল এক মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। যার কোথাও কিছু নেই, চারিদিকে শুধু ধূ ধূ প্রান্তর। যা বলা হয় সেটা প্রতিধ্বনিত হয়ে নিজের কাছেই ফিরে আসে। আবার কারো ক্ষেত্রে মনে হয় কালবৈশাখীর ঝড়ের কবলে পড়েছে। চারপাশে মটমট করে ভাঙছে ডালপালা, উড়ে যাচ্ছে টিনের চাল। কখন না জানি কি এসে আঘাত হানে এই আতঙ্কে জড়োসড়ো হয়ে উঠে মন। আবার কিছু মানুষকে বোঝাতে গেলে তাদের মনের কোমলতা ও নিজেকে শুধরানোর আকাঙ্ক্ষা মনে ঝরিয়ে দেয় এক পশলা বৃষ্টি। কেউ বা ফুলে ফুলে ভরিয়ে দেয় মনের আঙিনা। জুম্মি ঠিক এমন একজন যার ভুল গুলোকে ফুল করে দিতে কখনোই বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয় না অধরাকে।

সালাম বিনিময়ের পর জুম্মি বলল, ম্যাম আমি জানি আজ আপনি ভীষণ ব্যস্ত। আমি বেশিক্ষণ সময় নেব না। আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা জানিয়েই ফোন রেখে দেবো।

অধরা হেসে বলল, হুমম…বুঝলাম। আচ্ছা বলো শুনি আবার কি সিদ্ধান্ত নিয়েছো তুমি!

ম্যাম ঠিক করেছি সন্ন্যাসী হয়ে যাবো। আইডিয়াটা কেমন বলেন তো?

অধরা হেসে বলল, আইডিয়ার পেছনে কারণগুলো জানার আগে বলতে পারছি না যে আইডিয়াটা ঠিক কেমন।

অনেকগুলো কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি ম্যাম। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে জীবনের এত সব জটিলতা, কুটিলতা ভালো লাগে না। মানুষের ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদল খুব কষ্ট দেয় আমাকে। তারচেয়েও বেশি কষ্ট দেয় মানুষের মধ্যের ক্ষুদ্রতা। মানুষকে জার্জ করতে চাই না আমি কিন্তু বেসিক বিবেকবোধের ঘাটতি যখন দেখি চোখ ফিরিয়েও নিতে পারি না।

এর জন্য তুমি ঠিক করেছো সন্ন্যাসী হয়ে যাবে?

জ্বী ম্যাম। এইসব কারণে আমার মনের ভিতর যে রাজ্যটা আছে সে রাজ্যের রাণী একা থাকাটাকেই ভালো মনে করছে। তাছাড়া নিরবতা, নিস্তব্ধতা, নিবিড়তা, শান্ত-স্বিগ্ধ পরিবেশে তীব্র ভাবে আকর্ষণ আমাকে। ইচ্ছে মত যখন যেখানে ইচ্ছে ঘুরতে বেড়াতে ইচ্ছে করে। চাই যখন আপন মনে চিন্তা ভাবনা করবো তখন কেউ এসে বাঁধাগ্রস্ত না করুক আমাকে। গুহা আর পাহাড়ে ধ্যান করাটাকে এখন জীবনের একমাত্র স্বপ্ন মনেহয়। রাসুল (সাঃ) হিরা গুহাতে ধ্যানরত ছিলেন, সেটা উপলব্ধি করার পর থেকেই এই ইচ্ছাটা মনে বাসা বেঁধেছে। আপনি কি আমার কথাতে বিরক্ত হচ্ছেন?

অধরা হেসে বলল, উহু আমার তো শুনতে বেশ লাগছে তোমার কথা। তুমি নিশ্চিন্তে তোমার মনের সব কথা বলো আমাকে।

আপনি তো জানেন ম্যাম আমি বড্ড স্বাধীনচেতা কিন্তু বিদ্রোহী নই। মনে প্রাণে চাই যে আমার নিজের একান্ত একটা সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে। কেউ যেখানে নাক গলাতে আসবে না, কেউ নাক উঁচুও করবে না যে সিদ্ধান্ত শুনে। মোটকথা এমন অন্ধ বন্ধন থাকবে না যাতে করে চাইলে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারবো আমি। তবে সন্ন্যাসীরা সাধারণত ঘর ছাড়া কিন্তু আমি ঘরে থেকে সন্ন্যাসী হতে চাই। আর আমি সন্ন্যাসী হতে চাই সমাজকে নতুন করে নতুন রূপে সাজাতে। ম্যাম এবার বলেন আইডিয়াটা কেমন?

অধরা হেসে বলল, তোমার আইডিয়াটা কেমন সেটা পরে বলছি। তবে তোমার সন্ন্যাসী হতে চাইবার কারণটা অনেক সুন্দর। কিন্তু সমাজকে নতুন করে নতুন রূপে সাজাতে হলে আগে নিজেকে নতুন করে নতুন রূপে সাজাতে হবে। নিজেকে গড়ো অতঃপর জগতটাকে। সুতরাং, আগে নিজেকে গড়তে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে নিজেকে গড়ার জন্য সন্ন্যাস জীবন ধারণ করার যোগ্যতা তোমার আছে কিনা?

প্রশ্নটা বুঝিনি ম্যাম।

আচ্ছা বুঝিয়ে বলছি। যেমন ধরো আমাদের এই দুনিয়াবী জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে জান্নাত লাভ। এখানে লক্ষ্য হচ্ছে জান্নাত আর মাধ্যম হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। এখন যদি প্রশ্ন করা হয় জান্নাত লাভের জন্য কি করতে হবে? জবাব হচ্ছে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি কিভাবে অর্জন করবো? আল্লাহর পাঠানো শরীয়তের বিধান মত জীবন যাপন করে। ঠিক তেমনি তোমার লক্ষ্য সমাজকে নতুন করে নতুন রূপে সাজানো। মাধ্যম হিসেবে তুমি বেছে নিয়েছো সন্ন্যাস জীবনকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তোমার সন্ন্যাস জীবনের ভিত্তি কি? কিসের আলোকে তুমি সমাজকে নতুন করে নতুন রূপে সাজাতে চাও?

অবশ্যই শরীয়তের আলোকে ম্যাম।

কিন্তু শরীয়ত তো সন্ন্যাস জীবন সমর্থন করে না। সূরা নাহলের ৯নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-“ সরল পথ আল্লাহ্‌র দিকে পরিচালিত করে,কিস্তু পথগুলির মধ্য বক্রপথও আছে। আল্লাহ্‌ যদি ইচছা করতেন তবে তিনি সকলকেই সৎ পথে পরিচালিত করতে পারতেন।” এই আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে-“ এই পার্থিব জীবন, হাসি, কান্না, ভালোবাসা, হিংসা-দ্বেষ, লোভ-লালসা দ্বারা আবৃত। আর এ সব মিলেই আমাদের পৃথিবীর জীবন। সংসার ত্যাগ করে বনে গিয়ে আল্লাহ্‌কে পাওয়ার ইবাদত ইসলাম স্বীকার করে না। এই পার্থিব জীবনের মাধ্যমে স্রষ্টাকে পাওয়ার সাধনাই হচেছ ইসলামের শিক্ষা। আল্লাহ্‌ ইচছা করলে মানুষকে “সীমিত স্বাধীন ইচছা শক্তি”দান না করলেও পারতেন। তাহলে ফেরেশতা বা অন্যান্য জীবন্ত প্রাণীজগতের মত তাকে পরকালে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হতো না। কিন্তু স্রষ্টার পরিকল্পনা হচেছ মানুষের ইচছা শক্তিকে প্রশিক্ষিত করা,যেনো সে স্ব-ইচছায় স্রষ্টার ইচছার কাছে আত্মসর্ম্পন করে।” সুতরাং, আল্লাহ যদি চাইতেন তাহলে দুনিয়াতে কোন সমস্যাগ্রস্ত মানুষ ও সমস্যা কিছুই থাকতো না। তাহলে আমাদের জীবনটা পরীক্ষাও হতো না। তাই প্রতিকূলতার মধ্যেই দিনযাপন করতে করতে আমাদেরকে নিজ নিজ লক্ষ্য পানে ছুটে চলতে হবে। কি মুখ ভার হয়ে গেলো?

হেসে, আপনি কি করে বুঝলেন আমার মুখ ভার হয়েছে?

অধরা হেসে বলল, তুমি যে রাস্তায় চলছিলে আর আমি তোমাকে নিয়ে এলাম আরেক রাস্তায়। মুখ ভার হওয়া তো স্বাভাবিক। দেখো নিজের সাথে কিছুটা সময় একা কাটানো অবশ্যই উচিত সবার। কিন্তু মন যদি সবসময় একা থাকতে চায় সেটা শুধু অনুচিতই নয়, মনের এই চাওয়া অতি ভয়ংকর। একাকী মানে তার ভুলকে দেখার ও শুধরে দেবার কেউ নেই। আর এই দাবী কেউ করতে পারবে না যে অন্যের সাহায্য ছাড়াই সে নিজের দোষ-ত্রুটি সর্বাবস্থায় যাচাই বাছাই করতে পারে। সুতরাং, মন সর্বদা একা থাকতে চাইলে তাকে কান ধরে হিড়হিড় করে টেনে জনসম্মুখে নিয়ে আসতে হবে।

জুম্মি হাসতে হাসতে বলল, আপনি সত্যিই আরেক রাস্তায় চলে গিয়েছেন ম্যাম। আমি এভাবে ভাবিনি।

তাহলে এখন ভাবো। দেখো সমাজকে গড়তে হলে আগে নিজকে গড়তে হবে। আর একা একা কখনোই নিজকে গড়া সম্ভব নয়। কুরআন ও হাদীস থেকে জ্ঞানার্জন করতেও তোমার অন্যের সাহায্য প্রয়োজন হবে। আর তোমার মন যা কিছু কল্যাণকর ভাবছে, তার সবই যে তোমার জন্য কল্যাণকর হবে এমন তো কোন গ্যারান্টি নেই। সুতরাং, তোমার স্বাধীন ইচ্ছাকে বা চিন্তাকে বাঁধাগ্রস্ত করার মত কেউও থাকা দরকার পাশে। যাতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষন করা যায় নিজের চাওয়া গুলোকে। তাছাড়া জীবনে যা চাইবো তার সবই আমাকে পেতে হবে এমনো তো কোন নিয়ম নেই। কোন কিছু চাওয়ার পথে যদি কেউ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তবে ধরে নেবে ঐটা তোমার প্রাপ্য ছিলই না। আর আমার অভিজ্ঞতা তো অন্য কথা বলে।

কি ম্যাম?

কোন কিছু মনে প্রাণে চাওয়ার পরও যখন আমরা সেটা পাই না। তার অর্থ হচ্ছে এরচেয়েও ভালো কিছু আমাদের জন্য প্রতীক্ষ মান। দেখো আমার মতে সন্ন্যাসী হওয়া মানে নিজের সংশোধনের পথ বন্ধ করে দেয়া। আর সংস্কার বিহীন কারো পক্ষে সমাজকে দেবার মত কিছু থাকতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না। তাই আমাদেরকে সংসারের মাঝেই থাকতে হবে। এবং সব প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করতে করতেই নিজেকে গড়তে হবে এবং সমাজকে সাজানোর চেষ্টা করতে হবে। তাছাড়া জীবনটা আল্লাহর দেয়া এক আমানত আমাদের জন্য। এটাকে তাই অজ্ঞতা-অসন্তোষ ও আত্ম-অত্যাচারের দ্বারা নষ্ট করার কোন অধিকার আমাদের নেই। আর একমাত্র জ্ঞানার্জনের দ্বারাই মনে এই বোধের জন্ম হওয়া সম্ভব। মন ও মনন যদি সঠিক জ্ঞানের আলোতে আলোকিত না হয় তাহলে নিজেকে ঠিকভাবে দেখতে পারে না মানুষ।

আমি বুঝতে পেরেছি ম্যাম।

অধরা হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। বুঝতে পারলে তো ভালো। আসলে কি জানো জীবন মাঝে মাঝে গোলকধাঁধার মত হাজির হয় আমাদের সামনে। সেই গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাওয়ার হাত থেকে বাঁচার একটাই উপায়। জ্ঞানার্জন করা। যত তোমার জ্ঞান বাড়বে তুমি বুঝে নিতে পারবে পরিস্থিতি অনুযায়ী করনীয়কে। যাইহোক, তুমি ভেবে দেখতে পারো আমার কথাগুলো। সবসময় যে আমার সব কথা তোমার পছন্দ হতেই হবে এমন কোন নিয়ম নেই। এখন তাহলে আমি রাখি। পরে কথা হবে আবার, ইনশাআল্লাহ।

জুম্মিকে বিদায় জানিয়ে আবার মেইল নিয়ে বসলো অধরা। মনের সৎ ইচ্ছা ও অসৎ ইচ্ছার একটা তালিকা বানিয়ে চোখের সামনে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। তাতে কোন ইচ্ছাকে আদর করে কাছে টেনে নেবে আর কোন ইচ্ছাকে জালিবেত দিয়ে সপাৎ সপাৎ দুটা লাগাতে হবে সেটা জানা থাকবে। নয়তো ভুল ইচ্ছারাও জীবনকে পরিণত করে দেয় স্বনির্মিত গোলকধাঁধায়। আর গোলকধাঁধা তৈরি হচ্ছে এই সচেতনতা যেহেতু থাকে না। নিজেকেই তখন ঘুরপাক খেতে হয় নিজের তৈরি গোলকধাঁধার মাঝে।

প্রথম মেইলটা ওপেন করতে করতে অধরা মনে মনে বলল, হে প্রভু রক্ষা করো মোরে নিজেই নিজের জন্য এমন গোলকধাঁধা তৈরি করা থেকে।

 

বিয়ে ও পরিবার সমকালীন জিজ্ঞাসা -৫

কানিজ ফাতিমা


পূর্বের কয়েকটি পর্বে দ্বন্দ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করেছি। দ্বন্দ ব্যবস্থাপনার অন্যতম একটি উপায় হল Avoiding বা নিশ্চুপ থাকা। স্বামী বা স্ত্রী যদি কোন কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ বা চাপের মুখে থাকে (Streesed) কিংবা অসুস্থ থাকে তবে তার মধ্যে দ্বন্দ ও বিরোধ সৃষ্টির প্রবণতা বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে অন্যপক্ষের দায়িত্ব হল Avoid বা নিশ্চুপ ও নিষ্ক্রিয় থাকা। কারণ সময়ের ব্যবধানে আপনা আপনিই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এক্ষেত্রে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা বিবাহোপযোগী প্রতিটি নারী-পুরুষের জানা প্রয়োজন তা হল মাসিক কালীন ও মাসিক পূর্ব নারীর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ও এর কারণে সৃষ্ট দ্বন্দ। গবেষণায় দেখা গেছে মাসিকের সঙ্গে দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ (Stress) এর সম্পর্ক রয়েছে। মাসিকপূর্ব ও মাসিক কালীন নারীদেহে যে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে তার প্রভাব কেবল নারীর শরীরে পড়ে না, নারীর মনের ওপরও এর সুস্পষ্ট প্রভাব রয়েছে। ইংরেজিতে এ অবস্থাকে বলা হয় Premenstrual Syndrome বা PMS. দুইশ’রও বেশি লক্ষণ রয়েছে PMS এর। তবে সব থেকে বেশি দেখা যায় তিনটি-

১. Irritability বা খিটখিটে ভাব
২. Tension বা দুশ্চিন্তা
৩. Dysphoria (Unhappiness) ভাল না লাগা।

মাসিকের সময় যে শারীরিক কষ্ট হয় তার মধ্যে রয়েছে-
১. বমি ভাব
২. অরুচি
৩. মাথা ব্যথা
৪. দুর্বলতা (Fatigue)
৫. ঘুমের সমস্যা ও
৬. তলপেটে ব্যথা/কোমর ব্যথা ইত্যাদি।
মাসিক বা মাসিকপূর্ব (PMS) সময়ে যে মানসিক পরিবর্তনগুলো গবেষণায় বের হয়ে এসেছে সেগুলো হল-
১. Depression – অনেক সময় মাসিকপূর্ব Depression যখন মারাত্মক আকার নেয় তখন একে বলা হয় Premenstrual Dysphoric Disorders (PMDD) যে নারীদের PMS রয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় ৫% এর (PMDD) হবার সম্ভাবনা প্রবল।
২. Anxiety and panic Attack বা Insomnia
৩. Stress and tension
মাসিক ও মাসিকপূর্ব এই Depresson, Anxiety এর কারণে এই সময় নারীদের stress বা মনের অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। যার ফলে এই সময় নারীরা অল্পতেই রেগে যায় (Out bursts of anger), সব সময় বিরক্তিভাব প্রকাশ করে (Irritability) এবং অন্যের প্রতি বিরূপ বা শত্রুভাবাপন্ন (Hostility)হয়। এর মাত্রা বেশি হলে সে নিজের প্রতি বা অন্যের প্রতি আক্রমনাত্মক (Violence and agressive) হয়ে ওঠে। কোন কোন নারী এ সময় অন্যদের সঙ্গে মিশতে চায় না এবং একাকী থাকতে চায় (Withdrawl from others)।

এ সময় দুর্ঘটনা প্রবণ মানসিকতা লক্ষ্য করা যায়। এই সময় নারীদের মনে যে অসহায় দুঃখী ভাবের (Sadness and hopelessness) জন্ম হয় তা থেকে অনেকে আত্মহত্যা প্রবণও হয়ে পড়ে। গবেষণায় আরও এসেছে যে এ সকল কারণে এই সময়গুলোকে নারীদের এই মানসিক অবস্থা তার দৈনন্দিন কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি করে এবং পরিবারের অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। কাজেই স্বামীর যখন জানা থাকে যে তার স্ত্রীর মাসিক ও মাসিকপূর্ব সময়ে প্রাকৃতিকভাবেই শরীরিক ও মানসিক কিছু পরিবর্তন ঘটে এবং এ সময় তার স্ত্রী শারীরিক কষ্ট ও মানসিক চাপ ভোগ করছে তখন এই সময়ে স্ত্রীর বিরোধপূর্ণ আচরণে স্বামীর ধৈর্যধারণ
করা কর্তব্য। স্ত্রীর খিটখিটে ভাব বা আক্রমণাত্মক আচরণকে আমলে না এনে বরং তার প্রতি দয়া ও সহানুভূতি প্রকাশ করা উচিত। সূরা রুমের ২১ নং আয়াতে আল্লাহ পাক স্বামী স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি ভালবাসা ও সহানুভূতির কথা বলেছেন। স্ত্রী যখন শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি থাকে স্বামীর সহানুভূতি পাবার হক স্ত্রীর তখন বেশি হয়।

চলবে…

পর্ব-৪

 

বাংলাদেশে ঈদ আনন্দ

নিবরাজ জাহান হুজায়রা


ঈদ নিয়ে একটা কিছু লিখতে ইচ্ছে হলো কিন্তু কোথা থেকে শুরু করব, কি ভাবে কি লিখব? যা হোক ঈদ যেহেতু এক মাস সিয়াম সাধনের পর আসে তাই রোযা দিয়ে শুরু করি এই লেখা। বারো মাসের এই একটা মাস যার একটা জাদুকরী ক্ষমতা আছে, আমরা এমনিতেও কিন্তু অন্যান্য মাসেও রোযা রাখি, কিন্তু এই মাসের ব্যাপারটাই আলাদা। স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যায়, মা-দের কোচিং এ মাসব্যাপী দৌড় ঝাঁপ করতে হয় না, ঘরে ঘরে একটা ইবাদতের পরিবেশ বিরাজ করে, এই পরিবেশটা আগে অবশ্য পুরো দেশেই বিরাজ করত কিন্তু ইদানিং যা অবস্থা হয়েছে তাতে বিরক্ত, লজ্জা এবং মাঝে মাঝে ভীষণ রাগও হয় !

রোযা নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের চিন্তা ভাবনা রয়েছে: সাধারণত পুরুষরা রোযা রাখতে গরিমসি করে! তবে তাদেরকে কিছু বলা হলে অবশ্য কোন মন্তব্য করে না শুধু লাজুক একটা হাসি দেয়া ছাড়া। কিছু অল্প বয়স্ক মেয়ে আছে (কলেজ থেকে ভার্সিটি লেভেলের) যারা রোযা রাখে না, কিছু বলা হলে উত্তর দেয় আম্মু রাখতে দেয় না, কেউ উত্তর দেয় আমার সমস্যা আছে, ডাক্তার বারণ করেছে, এবং সত্যি সত্যি কারো মা সন্তানের কষ্ট হবে মনে করে সন্তান কে রোযা রাখা থেকে আসলেই বিরত রাখে!

রোযার মধ্যে কেনাকাটার জন্য মার্কেটে গিয়ে তো আমি বোকা হয়ে গেছি, প্রচুর ছেলে-মেয়েরা এমন ভাবে খাওয়া দাওয়া করছে এবং মার্কেটের দোকান থেকে এমন ভাবে ডাকাডাকি করছে যে কোন অবস্থাতেই বুঝার উপায় নেই এটা রোযার মাস! আমার ক্লাস টুতে পড়া সন্তানটি খুবই অবাক হয়ে হিজাব পরা একটি মেয়েকে দেখিয়ে প্রশ্ন করলো, মা এই আপুটা রোযা রাখেনি কেন? আমি আমার সন্তানটিকে বুঝালাম, আপুটা সম্ভবত অসুস্থ তাই !!!

রোযারই শেষের দিকে আমার এক হিন্দু বন্ধু আমার সাথে মার্কেটে গেল, ও কিছু কেনাকাটা করবে, এর মধ্যে ও ২/৩ বার বলল পানি খেতে ইচ্ছে করছে, আমি ওকে কতবার করে বললাম, আমার কোন সমস্যা হবে না, তুমি পানিটা খাও, ও শেষ পর্যন্ত পানিটা খেল না। ওর একটাই কথা তোমার সামনে আমি কিছুতেই পানি খাব না, ভদ্রতাবোধ বলে একটা ব্যাপার আছে।

কাগজে কলমে শুধু নয়, অন্তরে বিশ্বাসের কারণে এই দেশটা এখনও ইসলাম প্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত। রোযার মধ্যে কোনমতে একটা ছেঁড়া লুঙ্গি, ছেঁড়া চাদর টেনে সবাই কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া দাওয়া করবে, বড় বড় মার্কেট গুলো খাবারের ব্যবস্থা থাকবে এই অবস্থা আইন করেও উঠানো যাবে না, কারণ আমরা আইন না মানতেই ভালোবাসি! এটা একটা বোধের ব্যাপার।

এই শিক্ষাটা আমাদের পরিবার থেকেই হতে হবে। মেয়ের সাথে তার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন খারাপ ব্যবহার করলে মনের কষ্ট মনে চেপে মারা যদি সামাজিকতার ভয়ে মেয়েকে শিক্ষা দিতে পারেন, মানিয়ে নেবার চেষ্টা করতে তবে আল্লাহ্ র ভয় কেন মায়েরা পাবেন না, কেন মেয়ের গুনাহের ভাগ দার হতে যাবেন? সন্তানটি পরিনত বয়সে যদি ধর্মের দিকে ঝুঁকে যায়, তবে অল্প বয়সে আহ্লাদ করে রোযা রাখতে না দেবার জন্য আপনারই সমালোচনা করবে! সন্তানের সমালোচনা সহ্য করা খুব কষ্টের, কেন মিছেমিছি কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন?

রোযা সংযমের শিক্ষা দেয়, ত্যাগের শিক্ষা দেয়(যাকাত প্রদানের মাধ্যমে), তওবা করা শেখায়(ফিতরাহর মাধ্যমে), ইফতার বন্টনের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়ায়।
এই রোযাতেই দোকানীদের বছরের আয় হয়ে যায়, শুধু বড় বড় শপিং মলের নয় ফুটপাতের দোকানীরও তৃপ্তির হাসি ফোঁটায় মুখে।

রোযা শুধু না খেয়ে থাকা নয়, রোযা ঈদের আনন্দ বারতা। এক ঈদেই আমরা পুরো পরিবারের সবাই কে প্রীতি উপহার দেই এবং পেয়ে থাকি। দেবার মধ্যে যে এক অনাবিল আনন্দ আছে তা কিন্তু ঈদেই বেশী অনুভব হয়। জীবনের ঝুঁকি আছে জানার পরও ঈদের মধ্যে মা-বাবার সাথে সবাই দল বেঁধে ঈদ করতে চলে যাওয়া কি কেউ আটকাতে পারে?

ঈদের নামাজ, ঈদের জামাত, নামাজ শেষে কোলাকুলি এই অপার সৌন্দর্য শুধু ঈদ-ই দেয়। ঈদের সালামি ২০টাকা হোক বা ১০০০টাকা হোক(তাও যদি হয় জোর করে আদায় করা তবে তো কথাই নেই) এর আনন্দ অন্য কোন কিছুর সাথে তুলনাই চলে না। মহান আল্লাহ্ র কাছে শুকরিয়া ঈদ আনন্দ সবার সাথে উৎযাপন করতে পারার জন্য।
সবাইকে ঈদ মোবারক।

নিবরাজ জাহান হুজায়রা
কাউন্সেলিং সাইকোলজিষ্ট

 

মেঘের দেশে ছোট্ট শহর

তাহেরা সুলতানা


গেন্টিং হাইল্যান্ডস, যাকে মালয়েশিয়াতে বলে ‘সিটি অফ এন্টারটেইনমেন্ট’! ঈদের পরদিন এবার ফ্যামিলি ট্যুরে গেন্টিং হাইল্যান্ডসকেই টার্গেট করলাম। এর আগে অবশ্য ২ বার গিয়েছি। ২০১২ সালে একবার আর ২০১৪ সালে আর একবার গিয়েছি। প্রথমবার তো কেবল কারে উঠে ভয়ে যেই একটা চিৎকার দিয়েছিলাম, আজো আমার হাসবেন্ড সেইটা মনে করে খেপায়! এর পরেরবার কিন্তু ভয় লাগেনি! এবার কিছুটা ভয় আর টেনশন হচ্ছিল, কিন্তু সেটা প্রথমবারের মতো অতোটা ছিল না!

আমার বাসা সুবাং জায়াতে। বাসা থেকে যখন গেন্টিং রওনা দিয়েছিলাম তখন সকাল ৯ টা, কটকটা রোদ। কিন্তু যখন থেকেই শুরু হলো পিচঢালা পাহাড়ি পথ, তখন থেকেই আকাশ মেঘলা হতে শুরু করলো। পাহাড়ি পথ বেয়ে আমাদের গাড়ী (গ্রাব) আস্তে আস্তে এঁকে বেঁকে উপরের দিকে উঠছিল। উপরে মেঘের কাছাকাছি বৃষ্টিও হচ্ছিল, বৃষ্টির ছাট গাড়ীর গ্লাসে বার বার বাড়ি খাচ্ছিল। অল্প অল্প ঠাণ্ডা লাগছিল, নির্মল প্রকৃতি আর বৃষ্টিস্নাত আকাশ মনটাকে কোন এক অজানা শহরের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল!

আমি মালয়েশিয়াতে এসে প্রথমদিকে গোমবাক (ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভারসিটি এর কাছাকাছি) থাকতাম। তখন আমার বাসা থেকে গেন্টিং এর চূড়াটা দেখা যেত। মনে মনে ভাবতাম, এতো উঁচূতে কি করে একটা শহর বানানো হলো! কি করে ওইখানে ইট, কাঠ, সিমেন্ট বালি এবং বাকি সব সরঞ্জাম নিয়ে গেল! রাতের বেলা আলোকচ্ছটায় শহরটা আরো বেশি স্পষ্ট হতো! আর বিশেষ বিশেষ দিন কিংবা চাইনিজ নিউ ইয়ারের সময় যেন বাঁধভাংগা আলোকরাজির সম্মিলন ঘটতো! আর সেই আলোকরাজির ছটা মনটাকে গেন্টিং এর চূড়ায় নিয়ে গিয়ে ফেলতো, কখনো ঘুমের ঘোরে নিজেকে খুঁজে পেতাম মেঘের সারিতে ভেসে বেড়ানো মেঘবালিকার বেশে।

কুয়ালালামপুর থেকে মাত্র ১ ঘন্টার দূরত্বে ১৮৬০ মিটার উচ্চতায় তৈরী গেন্টিং সিটিতে আছে রিসোর্টস, থিম পার্ক আর ক্যাসিনো। বাস থেকে নেমে ৩.৩৮ কিমি. স্কাই ওয়ে পেরিয়ে ওখানে যেতে হয় (স্কাই ওয়ে বাই পাস করে সরাসরিও ওখানে যাওয়া যায়)। স্কাই ওয়ের যাত্রা পথ আর নৈসর্গিক দৃশ্য অসাধারণ, অবর্ণনীয় ! গেন্টিংকে মালয়েশিয়ার মন্টিকার্লো বলা হয় এবং এটি এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ ক্যাবল কারের সংযোগ।

আমরা বিশাল লম্বা লাইন পার করে টিকিট কেটে কেবল কারে চড়ে বসলাম। বাচ্চারা বেশ মজাই পাচ্ছিল! আমরা তখন মাটি থেকে হাজার মিটার ওপরে! নিচের দিকে তাকালে মনে হয়, গহীন জঙ্গলে যেন এক ভৌতিক অবস্থা বিরাজ করছে, শুণ্যে ঝুলে ঝুলে চলেছি আর নিচে গভীর ঘন জংগল! বনের মাঝখান দিয়ে রাস্তাটাও উপর থেকে দেখা যাচ্ছে। নির্জন, নিরিবিলি, কেমন যেন ভূতুরে! আমাদের ক্যাবল কার হালকা হালকা মেঘ আলতো হাতে সরিয়ে সরিয়ে যাচ্ছিল। মনের ভেতর কেমন যেন ছমছম করে উঠছিল! তার ছিড়ে যদি এ জঙ্গলে পড়ি, তবে হাড় গোড় থাকলেও হিংস্র প্রাণী কিন্তু আমাদের টেনে হিঁচড়ে খেয়ে ফেলবে!

প্রায় আধঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে ক্যাবল কার থেকে নেমে যখন শৈল শিখরে পৌছালাম, মনে হলো যেন এক স্বপ্নের দেশে আসলাম! যেন হিমালয়ের কোনো দেশে এসে পাড়ি জমালাম! চারিদিকে আলো ঝলমলে। হাঁটতে শুরু করলাম। এখানে আছে হোটেল, ক্যাসিনো, থিক পার্ক, দোকানপাট, ভিডিও গেম ও অন্যান্য নানা রকম খেলাধুলা ও চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা। মেঘের উপরে এতো সুন্দর শহর যেনো অন্য একটা জগৎ! এই শহরটাকে তাই ‘মেঘের ভেতর মজার শহর’ ও বলা হয়। শহরের লেকে রয়েছে বোটে ভ্রমণের ব্যাবস্থা। গেন্টিং থিমপার্কে আছে ট্রেন ভ্রমণ, কর্ক স্ক্র, গ্রান্ড প্রিক্স গোকার্ট, ফ্লাইং কোস্টার, স্পেস শট, স্পিনার এবং বাচ্চাদের জন্য এরকম আরও অনেক খেলার ব্যবস্থা। তাছাড়া রয়েছে চকলেটের ফ্যাক্টরি। চারপাশে চোখ ঘুরলে মনে হবে যেন চকলেটের এক রাজ্যে এসে পৌছেছি! থিম পার্ক ঘুরে এসে প্রবেশ করলাম চকলেটের দোকাগুলোতেও। মজার বিষয় হচ্ছে, চকলেটগুলো খেয়ে টেস্ট করা যায়। প্রায় একশ ধরনের চকলেট। গ্রাম হিসেবে বিক্রি করে। একটার টেস্ট অন্যটার চেয়ে ভিন্ন। সত্যিই অনেক সুস্বাদু! না খেলে এ স্বাদ বোঝা খুব কঠিন!

ঘুরতে ঘুরতে ক্যাসিনোর গেটে চলে আসলাম।
বুঝলাম কেন এখানে পৃথিবীর বিখ্যাত সব জুয়াড়িরা এসে মাসের পর মাস পড়ে থাকে। এটাকে ক্যাসিনোর জগৎ বলতেই হবে। ক্যাসিনোতে ঢুকতে হলে টাই কিংবা বাটিকের শার্ট পরতে হয়। পাশেই বাটিকের শার্ট ভাড়া পাওয়া যায়। নির্ধারিত ফি দিয়ে শার্ট ভাড়া করে ভেতরে যাওয়া যায়। এ এক বিশাল ব্যাপার!

বাইরে হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল, ওর মধ্যেই দাঁড়িয়ে কিছু ছবি তুললাম আর ছুটে চলা মেঘের ভিডিও করলাম। কিছুক্ষণ পর পর মেঘ এসে ঘিরে ফেলছিল আমাদের। মাঝে মাঝে মেঘগুলো হাতের উপর দিয়ে উড়ছিল।
ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। চারিদিকের সবুজ পাহাড়গুলো আমাদের থেকে নীচে। পাহাড়ের এক পাশে ঘন কালো মেঘের অন্ধকার। কিছুক্ষণের মধ্যেই বড় বড় বিল্ডিংগুলো মেঘে ঢাকা পড়ে গেলো। দূরে দেখা যায় রোদের রেখা। রোদের মাঝেই হঠাৎ বৃষ্টি। এ যেন এক মেঘের রাজ্য। মনে হচ্ছে যেন আকাশের উপর বসে থেকে আমরা দেশটাকে দেখছি। চারিদিকের পাহাড় ও বন, নিস্তব্ধ প্রকৃতি, অনেক মানুষের কোলাহলও নিস্তব্ধতা ম্লান করতে পারছিল না।

ঘুরাঘুরি শেষ করে সন্ধ্যার দিকে আমরা ট্যাক্সি নিয়ে মসজিদ জামেক চলে আসলাম। সেখান থেকে ট্রেনে আসলাম সুবাং জায়া। রাত ৯ টা নাগাত বাসায় পৌছে গেলাম।

গেন্টিংয়ের জগৎ মানুষকে মোহাবিষ্ট করে তোলে, আচ্ছন্নতায় ভরিয়ে রাখে। সব বয়সের মানুষের জন্য সব ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা এখানে রয়েছে। একজন মানুষকে অনায়াসে ব্যস্ত সময় থেকে গেন্টিং দূরে, বহুদূরে ছুটিয়ে নিয়ে যেতে পারে! ভুলিয়ে দিতে পারে সকল রকম ব্যস্ততা! মেঘের পরে মেঘ, তার উপরে আরও অনেক সারি সারি মেঘপুঞ্জের ভীরে হারিয়ে ফেলতে পারে! তথ্য এবং ছবির উৎস (কিয়দংশ): গুগোল।

 

আগুন

রেহনুমা বিনত আনিস



মানুষের মন এক অদ্ভুত চিজ। চোখের সামনে এমন অভাবনীয় দৃশ্য ঘটমান, আর আমার মন কি’না আমাকে নিয়ে চলে গেল বেড়াতে, তিন বছর আগে, যখন প্রথম এই ছেলেটিকে দেখেছিলাম।

সেদিন ছিলো আমাদের ছাত্রজীবনের সমাপ্তি দিবস। রায়হান বলল, ‘চল, আজ সেলেব্রেট করি। কি করা যায়? কি করা যায়? পেয়েছি! চল, তোকে কাবাব খাওয়াব, পোড়া মাংসের গন্ধে খাবার এসে পৌঁছবার আগেই তোর ঠোঁটের কোণ বেয়ে লোল পড়বে, দেখে দেখে আমি হাসব। সিরিয়াস মজা হবে’।

রায়হান আর আমার বন্ধুত্ব হোল যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে সিম্বায়োটিক রিলেশনশিপ, পরস্পরনির্ভরশীলতাই যার ভিত্তি। সে বিশাল বড়লোকের ছেলে, ওর দাদার দেয়া হাসপাতাল ওদের পারিবারিক সম্পদের একটি অংশ। সুতরাং, মেধা থাক বা না থাক, ওকে ডাক্তার হতেই হবে। আর আমি হলাম গরীবের মেধাবী ছেলে। মেধার জোরে ভর্তি পেয়েছি বটে, কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। রায়হানের সুবিধা আমি ওকে পড়াশোনায় সাহায্য করি, আমার সুবিধা সে আমার পকেটের অবস্থা বুঝে আমাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে আমার সুবিধা অসুবিধার দিকে খেয়াল রাখে। সব দিক মিলিয়ে এই বন্ধুত্বে উভয়ের লাভ। আমরা উভয়ই জানি আমরা পাশ করব। কিন্তু রায়হান পাশ করা মাত্র গিয়ে বসবে ওর দাদার হাসপাতালে, কয়েক বছরের ভেতর সে পৌঁছে যাবে এম ডির চেয়ারে; আর আমার চিন্তা আমাকে কোন পাহাড়ে বা কোন অজ পাড়াগাঁয়ে পাঠানো হবে। যাক, এই সুযোগে একবার কাবাব খাওয়া হয়ে যাবে, এটাই লাভ।

দোকানে গিয়ে পোড়া মাংসের গন্ধে আসলেই আমার জিভে জল আসতে লাগল। অপেক্ষার প্রহর যেন আর শেষ হয়না। এমন সময় আজকের এই ছেলেটা একটা মেয়ে নিয়ে প্রবেশ করল। গিয়ে বসল রায়হানের পেছনের টেবিলটায়। ওদের অন্তরঙ্গতা দেখে মনে হচ্ছিল যেন ওরা স্বামী স্ত্রী। কিন্তু স্বামী স্ত্রী পাবলিক প্লেসে এতটা অন্তরঙ্গতা প্রকাশ করেনা, কারণ ওদের অন্তরঙ্গ হবার জন্য বাড়ীঘর রয়েছে। মেয়েটা হোল যাকে বলে আগুনে সুন্দরী, হাসিতে মুক্তো ঝরে টাইপের। এত সুন্দর মেয়েটা কেন কারো ঘর আলো না করে এমন একটা ছেলের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে যে তার মানসম্মানের কোন পরোয়াই করেনা, সেটা বুঝতে পারলাম না। যাক, বড় বড় লোকের বড় বড় কারবার আমার মত গরীবের ছেলেরা বুঝবে তাই বা আশা করি কি করে? নিজের অজান্তেই বার বার চোখ চলে যাচ্ছিল মেয়েটার দিকে। মন বলল, ‘হে ফাইয়াজ, তোমার প্রভু তোমাকে যে চোখ দিয়েছেন তার হিসেব কিন্তু তাঁকে বুঝিয়ে দিতে হবে, ভুলে যেয়োনা’। মনের ওপর জোর খাটিয়ে রায়হানকে বললাম, ‘নাহ, আজ কাবাব খাবনা। চল, চাইনিজে যাই’। ওর আপত্তি উপেক্ষা করে, অর্ডার ক্যান্সেল করে, দোকানের বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। মহাখাপ্পা হয়েছিলো রায়হান সেদিন, কিন্তু আমি ওকে আজও বলিনি কেন সেদিন এমন অদ্ভুত আচরণ করেছিলাম।

পোড়া মাংসের তীব্র গন্ধ অতীত থেকে টেনে ফিরিয়ে নিয়ে এলো। মেয়েটা দু’দিন হোল হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। প্রতিটি শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্টের শব্দ। কিন্তু এই কষ্ট তার নিজের হাতে সৃষ্ট। চার বছর প্রেম করার পর বয়ফ্রেন্ড বিয়ে করবেনা জানিয়ে দেয়াতে সে নিজের গায়ে আগুন দিয়েছে। পরিবারের সবাই মিলে আগুন নিভাতে নিভাতে ততক্ষণে শরীরের অধিকাংশ পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছে। মাথার চুল জ্বলে গিয়ে দগদগে লাল পোড়া চামড়া বেরিয়ে পড়েছে, মুখের রঙ কালো আর লালের সংমিশ্রনে ভয়াবহ হয়ে রয়েছে, ঠোঁট গলে গিয়ে কথা পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছেনা। তবু যতবার কাছে যাচ্ছি ওর পাপড়িবিহীন চোখে দু’টো করুণ দৃষ্টিতে বলার চেষ্টা করছে, ‘আউয়ি আর ওয়াচতে চাইয়াঁ, আওয়াকে ওয়েরে হ্যালেন’।

আমি বুঝতে পারছি এটা ওর অভিমানের কথা নয়। ওর বাবা সেদিন থেকে এক মূহূর্তের জন্য ওকে ফেলে নড়েননি। মা এই দৃশ্য সহ্য করতে পারছেন না বলে রুমের বাইরে চেয়ার নিয়ে বসে অবিরাম কেঁদে চলেছেন, আর সাথে সাথে চলছে বিড়বিড় করে দু’আ পড়া। বড় বোনটা মনে হয় ঘটনার আকস্মিকতায় বোকা বনে গিয়েছে। বোনের বিছানার পাশে খুব সুন্দর ফ্রুট বোলে সাজানো নানারকম ফলফলাদি, ছুরি, কাঁটা চামচ, বাটি সাজিয়ে রেখেছে। অথচ সে তো কিছুই খেতে পারবেনা! ভাইটা আজই এসেছে ঢাকা থেকে। এসে সব শুনে কিচ্ছুটি না বলে বেরিয়ে গেল। কিন্তু মেয়েটির বর্ণনাতীত কষ্টের সামনে এই স্নেহমায়ার বন্ধন যে বড় ঠুনকো!

ভাইটা এইমাত্র ফিরে এলো তিন বছর আগে দেখা ছেলেটিকে নিয়ে। ওর কলার চেপে ঘাড় ধরে ঠেলতে লাগল মেয়েটির দিকে, ‘তুই আজ এখনই ওকে বিয়ে করবি’। ছেলেটি মেয়েটিকে দেখে শিউড়ে উঠে পিছিয়ে আসতে চাইল। ভাইটি ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে দিলো, ‘কেন, ওর সাথে চার বছর ঘুরার সময় এত ভালো লেগেছে। এখন আর আমার বোনকে তোর ভালো লাগছেনা, তাইনা? আব্বা, ওকে চোখে চোখে রাখবেন, ও যেন কোনদিকে পালাতে না পারে। আমি এখনই বিয়ে পড়াবার ব্যাবস্থা করছি’।
বাবা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন। আমি হতবাক। চোখের সামনে যা ঘটছে তার চেয়েও হতবাক এই ভেবে যে এই সেই আগুনে সুন্দরী! এই মূহূর্তে ওর চেহারা, ওর গন্ধ, ওর কষ্টের শব্দ ডাক্তার হয়েও আমি সহ্য করতে পারছিনা, এই ছেলে তাকে সহ্য করবে কি করে?

খবর পেয়ে রায়হান হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো। ওহ, বলা হয়নি, আমাকে আর শেষ পর্যন্ত পাহাড়ে জঙ্গলে যেতে হয়নি, রায়হানের বুন্ধুত্ব আমাকে ওর দাদার হাসপাতালেই একটা কাজ জুটিয়ে দিয়েছিলো। এখন দু’জনে মিলে পরামর্শ করে ঠিক করলাম পুলিশ ডাকাই সবচেয়ে নিরাপদ। রায়হান রুমের বাইরে গিয়ে মোবাইলে কল দিলো পুলিশে। ততক্ষণে প্যাসেজে মেয়ের ভাইয়ের হুংকার শুনে বোঝা যাচ্ছে সে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। হঠাৎ ছেলেটা লাফিয়ে উঠল। ফ্রুট বোল থেকে ছুরিটা তুলে নিয়ে বাতাসে পোঁচ দিতে দিতে বলল, ‘আমি ওকে বিয়ে করতে পারবনা, আমাকে বাধ্য করার চেষ্টা করলে ভালো হবেনা’। মেয়ের বড়বোনের ওপর মেজাজটা খুব খারাপ হোল। ফ্রুট কাটার জন্য এত বড় সাইজের ছুরি লাগে নাকি? এটা দিয়ে গরু জবাই করা যাবে! ছোট ছুরি হলে চেষ্টা চালিয়ে দেখতাম ওকে নিরস্ত্র করা যায় কি’না। মেয়ের ভাই ঘরে ঢুকে ওর কান্ড দেখে রাগে ঠোঁট কুঁচকে ফেলল, আক্রমনোদ্যত কুকুরের মত ক্যানাইন দাঁত বেরিয়ে পড়ল তার। তারপরের ঘটনাগুলো অকল্পনীয় দ্রুতগতিতে ঘটতে লাগল। স্লো মোশানে দেখা গেলে দর্শক দেখতেন, রায়হান আমার মনোভাব বুঝতে পেরে আমাকে শক্ত করে ধরে ফেলল যেন আমি ছুরি হাতে প্রলাপরত ছেলেটির দিকে এগোতে না পারি। মেয়েটির ভাই ছেলেটির দিকে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করছে, বুড়ো বাপ বাঁধা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছেনা। ভেতরে হুটোপুটির শব্দ শুনে বড়বোন কি ঘটছে দেখার জন্য এসে বেহুঁশ হয়ে দরজার পাশেই এলিয়ে পড়েছে। মেয়েকে ধরতে এসে মা ঘরের ভেতর দৃশ্য দেখে দিলেন এক গগনবিদারী চিৎকার। ছুরি হাতে ছেলেটা ওদিকে তাকাতেই মেয়েটির ভাই ওর কাছ থেকে ছুরি ছিনিয়ে নিতে পা বাড়াল। সাথে সাথে ছেলেটা সবাইকে হতভম্ব করে দিয়ে মেয়েটার হৃৎপিণ্ড বরাবর ছুরিটা বসিয়ে দিলো। সাথে সাথে সব স্তব্ধ, মেয়েটার সামান্য একটা দীর্ঘশ্বাস, তারপর ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটলো। রায়হান এবার আমাকে ছেড়ে দিয়ে গিয়ে ছেলেটাকে ধরে ফেলল। ছেলেটা নিজেও বিশ্বাস করতে পারছেনা সে এইমাত্র কি করেছে। সে বার বার বলছে, ‘আমি ওকে বিয়ে করতে পারবনা, আমি ওকে বিয়ে করতে পারবনা …’। আমি ততক্ষণে ছুটে গিয়েছি মেয়েটার পাশে। না, মনে হচ্ছেনা ওকে বাঁচানো যাবে। ওর শরীর এমনিতেই গত দু’দিন ধরে যুদ্ধ করে ক্লান্ত। ছুরিটা বিঁধেছে ঠিক ওর হৃৎপিন্ড বরাবর, ওর নিঃশ্বাসের শব্দ বলছে ও এবার এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চায়। মেয়েটার বাবা ঘটনার আকস্মিকতায় পাথরবৎ দাঁড়িয়ে রয়েছেন, চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন যেন। মেয়েটার ভাই দুই হাতে মাথার সমস্ত চুল আঁকড়ে ধরে হাঁটু মুড়ে বসে পড়েছে, যেন সে পারলে পুরো ঘটনা আবার রিওয়াইন্ড করে এবার ঠিকভাবে করত। দরজার কাছে নার্স মা মেয়ের নিথর দেহগুলোতে জ্ঞান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এর মাঝে মেয়েটার আত্মা ওর দেহ থেকে মুক্ত হয়ে উড়ে গেল।

মনে মনে ভাবলাম, যাক সে অন্তত এই নরকযন্ত্রনা থেকে তো মুক্তি পেল! পরক্ষণেই মনের আয়নায় ভেসে উঠল, ‘যে ভয় করে সে উপদেশ গ্রহন করবে, আর যে হতভাগা সে তা উপেক্ষা করবে, সে মহা অগ্নিতে প্রবেশ করবে, অতঃপর সেখানে সে মরবেও না জীবিতও থাকবেনা’ (সুরা আলাঃ আয়াত ১০-১৩)। আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। এই জীবনে আমাদের কৃতকর্মের শাস্তি যতই কঠিন হোক, মৃত্যু এক সময় তার সমাপ্তি টেনে আনে, শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। কিন্তু এর পরবর্তী অধ্যায়ে মৃত্যুর অনুপস্থিতি এক বিরাট পার্থক্যসূচনাকারী ফ্যাক্টর। সেখানে কোন মৃত্যু, চেতনাহীনতা বা দুর্বলতা আমাদের আগুনের তেজ থেকে সাময়িক নিরাপত্তাও প্রদান করতে পারবেনা। তবে কিসের আশায় আমরা এই জীবনটা হেলাফেলায় কাটিয়ে দেই যেখানে এটিই একমাত্র ফলাফলনির্ধারনী পরীক্ষা? হঠাৎ মেয়েটির জন্য করুণা এবং বিষাদে ছেয়ে গেল মন। বেচারী! ওর প্রভু ওকে উজার করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিবেচনার অভাবে সে এদিকেও কিছু পেলোনা, ওদিকেও কিছু পাবার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা। নিজের জন্য আশংকায় কেঁপে উঠলাম, ‘হে আমাদের পালনকর্তা, সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত কোরোনা, আমাদের তোমার অনুগ্রহ দান কর, তুমিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা’!

 

সুস্থতার যাদুর বাক্সঃ ইতিবাচক চিন্তন (Positive Thinking)

ড. লিপি গ্লোরিয়া রোজারিও (সিস্টার গ্লোরিয়া), জেমস্ শিমন দাস


প্রাচীণগুহাবাসী মানুষ থেকে শুরু করে আজকের উন্নত, সভ্য গ্রহান্তরিত মানুষ পর্যন্ত নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য আজীবন লড়াই করে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত মানুষ ও সমাজ ব্যবস্থা বিবর্তিত, রূপান্তরিত ও পরিবর্তিত হচ্ছে। যে মানুষ সুস্থতার জন্য লতা গুল্ম দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেছিল আজকে সে রোগের জীবাণুর জিনোম পর্যন্ত আবিষ্কার ও রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করছে। চিকিৎসকদের সংগে সমান্তরালভাবে মানসিক সুস্থতা আনয়ন ও রক্ষার উদ্দেশ্যে মনোবিজ্ঞানীগণও আপ্রান প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে সময় এসেছে “আমরা কি অনুভব করছি” তা না ভেবে “আমরা কিভাবে চিন্তা করছি” তা নিয়ে চিন্তা করার। মানুষের সুস্থতার যাবতীয় রহস্য এই চিন্তন প্রক্রিয়ার মধ্যে নিহিত। নিচের গল্প থেকে আমরা ইতিবাচক চিন্তন প্রক্রিয়া সমন্ধে শিক্ষা নিতে পারি।

ইতিবাচক চেষ্টা বা ইতিবাচক চিন্তন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অধিকাংশ সময়ে লোকজন ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে থাকে। তারা ভাবে যে, ইতিবাচক চিন্তন মানে স্বপ্নের এক জগৎ, সেখানে মেঘে ভাসা যায়, অসাধারণ কিছু স্বপ্নের ছোঁয়া পাওয়া যায়, সকলকিছুই কাল্পনিক বাস্তবতাবিবর্জিত, জীবনের সকল কিছুই সুন্দর, সকল কিছুই রঙিন। তারা এর মধ্যে এতোটায় বিভোর থাকে যে, সাদাসিধা সাধারণ ঘটনাকেও তারা বাস্তবতার প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করতে পারে না।

ইতিবাচক চিন্তন অর্থ এমন নয় যে, শুধু ভালো কিছু আপনার জীবনে ঘটবে বা এর মানে এমন নয় যে আপনি অসুস্থ হবেন না, কিংবা আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মধ্যে এমন নেতিবাচক কিছু ঘটবে না যেটা আপনাকে সমস্যাগ্রস্থ করে তুলে বা এমন কিছু ঘটবে না যার জন্য আপনি কষ্ট পান। এর অর্থ আবার এমনও নয় যে সবাই আপনাকে ভালোবাসবে, যার জন্য আপনি কখনোই কষ্ট পাবেন না এবং সব সময় আপনি জয়ী হবেন। ইতিবাচক হওয়ার অর্থ এমন নয় যে, আপনি সবসময়ই হাসবেন এবং আনন্দ, প্রেম, শান্তি ছাড়া আর অন্য কোন আবেগ অনুভব করবেন না বা কখনোই আপনি কোন বিপদের সম্মুখীন হবেন না।

কিন্তু ইতিবাচক চিন্তনের অর্থ এমনই যে, কোন একটি খারাপ/বিপরীত/বিপদসংকুল পরিস্থিতি/ঘটনা/ব্যক্তিকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকেই একটি আশীর্বাদ হিসেবে দেখা, জীবন চলার পথে সকল বাঁধা বিপত্তিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহন করা, সেগুলোর মুখোমুখি হওয়া যা আপনাকে সামনে এগুতে এবং জীবনের বৃদ্ধি ও উন্নতিতে সহায়তা করবে। সহজভাষায়, ইতিবাচক চিন্তন প্রক্রিয়া হচ্ছে একটা মনোভাব। শুধুমাত্র আপনার মনোভাব পরিবর্তন করুন পৃথিবীর সকল কিছুই পরিবর্তিত হয়ে যাবে। দেখবেন, মনোভাবের পরিবর্তনের সাথে সাথে আপনার মন্দভাগ্য ও অপকারিতাসমূহ উপকারীতায় রূপান্তরিত হয়েছে, নেতিবাচক যাবতীয় কিছু ইতিবাচক ও গঠনমূলক কিছুতে পরিবর্তিত হবে। রুশদেশের একটি প্রবাদ বাক্য এইরকম যে, “যখন তোমাকে লেবু দেওয়া হয়, তখন সেটাকে লেবুর রস বানিয়ে খাও।” অর্থাৎ জীবন যতক্ষণ আছে ততক্ষণ এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এটাকে উপভোগ এবং এটার ভালো,মন্দ,টক, মিষ্টি সকল স্বাদই গ্রহণ কর। ইতিবাচক চিন্তনের ফলে ব্যক্তি ও সমাজের অভূতপূর্ব কল্যাণ সাধিত হয় এবং অনেক অসাধ্য ও অসম্ভব কাজও সম্ভব হয়ে উঠে। ইতিবাচক চিন্তনের ফলে ব্যক্তি জীবনে নিম্নরূপ উপকারীতাসমূহ পরিলক্ষিত হয়। যেমনঃ দৈনন্দিন জীবনের মানসিক চাপ ও ভুলের সংখ্যা হ্রাস, সুস্বাস্থ্য অর্জন, আত্মবিশ্বাস গঠন ও বৃদ্ধি , সুখী জীবন যাপন, জীবনের দীর্ঘায়ূ , দ্রুত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজকরণ এবং বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

ইতিবাচক চিন্তন যেহেতু ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সুখ, শান্তি ও সাফল্য বয়ে আনে, সেহেতু ইতিবাচক চিন্তা করার জন্য কতগুলো ছোট ছোট টিপস্ আমরা আপনাকে জানাতে চাই।

১. ঘুম থেকে উঠেই একটি আয়নার সামনে দাঁড়ান এবং আয়নার দিকে হাঁসিমুখে তাকিয়ে বলুন,“মি: সাইমন,আমি জানি তুমি সকল কিছু করতে পারবে। আজকের দিনটা তোমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন। আজকে তুমি একটা অসাধারণ ব্যস্ত দিন কাটাবে। তোমার জন্য শুভ কামনা রইল”। যদিও এইসব আপনার কাছে মনে হয় একটু বোকা বোকা কথা-বার্তা কিন্তু এক সপ্তাহ চেষ্টা করুন তারপর ফলাফল আপনি নিজেই মূল্যায়ণ করতে পারবেন।

২. আপনি আপনার ছোটবেলার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক এ্যালবাম ঘেঁটে দেখতে পারেন যেন ছোটবেলার আনন্দ পুনরায় উপভোগ করতে পারেন।

৩. অতীতের কোন ঘটনার কথা যেটা আপনাকে সুখ দেয়, যেটাতে আপনি স্বস্তিবোধ করেন এমন স্মৃতির কথা স্মরণ করতে পারেন।

৪. ছোট ছোট ভালো কাজের প্রতি মনোযোগ দিন। সফলতা ও সুখ যেমনই হোক না কেন সেগুলোকে গ্রহণ করুন এবং সেগুলোর প্রতি সচেতন হোন।

৫. আপনি অফিসে যাচ্ছেন, এমন সময় যানজটে আটকা পড়েছেন, আপনি ভীষণ রকম অস্বস্তিবোধ করছেন। সেই সময় আপনি গান শুনতে পারেন। এটা আপনার জন্য একটা সুযোগ কারণ গান শুনার মতো সময় আপনার নাই। তাই বিরক্ত হয়ে বসে না থেকে গান শুনুন।

৬. প্রতিটি ভুল থেকে কী শিক্ষা নিতে পারেন তা খুঁজে বের করুন। কথায় বলে, যে নিজের ভুল থেকে শিখে সে বুদ্ধিমান আর যে অন্যের ভুল থেকে শিখে সে আরো বেশী বুদ্ধিমান।

৭. যারা ইতিবাচক পরামর্শদাতা, বন্ধুবান্ধব তাদের সাথে চলাফেরা করুন। যারা নেতিবাচক কথাবার্তা বলে তাদের কাছ থেকে দুরে থাকুন।

৮. খারাপ ঘটনা থেকেও কৌতুকরস বা মজা খোঁজার চেষ্টা করুন।

সুতরাং আমরা দেখছি যে, ইতিবাচক চিন্তনের ফলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি একটি সফল ও সুখী জীবন এবং এমন কি আমরা সমাজ গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবো। আসুন আমরা যা করতে পারবো না তা নিয়ে চিন্তা করে সময় ও অর্থ অপচয় না করে, আমরা যা সৃষ্টি করতে পারবো তাতে সময় ব্যয় করি এবং জীবনে সফল হই। কারণ জগৎবিখ্যাত নাট্যকার ও সাহিত্যক স্যার উইলিয়াম শেকস্ পিয়ারের ভাষায়,
“পৃথিবীতে ভালো বা মন্দ কিছুই নাই কিন্তু আমাদের চিন্তন প্রক্রিয়ায় সেগুলো নির্ধারণ করে।”
সমস্ত পৃথিবীতে পরিবর্তন আনয়নের জন্য একটি ইতিবাচক চিন্তাই যথেষ্ট। চিন্তার ধরণ পরিবর্তন করুন, পৃথিবীই পরিবর্তন হয়ে যাবে।

 

আমার বই পড়া (তৃতীয় পর্ব)

রায়হান আতাহার


কিশোর বয়সে যে লেখকদের লেখা পড়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি, তার মধ্যে মুহম্মদ জাফর ইকবালের নাম সবার আগে স্মরণ করতে হয়। স্যারের লেখা ‘কিশোর উপন্যাসসমগ্র ১’ আমার সংগ্রহে থাকা সেরা বইগুলোর মধ্যে অন্যতম। সমগ্রটিতে ছয়টি কিশোর উপন্যাস ছিলো- ‘হাতকাটা রবিন’, ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, ‘টি-রেক্সের সন্ধানে’ ও ‘জারুল চৌধুরীর মানিকজোড়’। প্রতিটি উপন্যাস যেন এক একটি ভালোবাসার নাম। কতবার করে যে পড়েছি উপন্যাসগুলো!

সিনেমার পর্দায় ‘দীপু নাম্বার টু’ দেখার পর মুগ্ধতা যেন আরো বাড়লো। সেসময় ইটিভিতে ধারাবাহিকবাভাবে ‘হাতকাটা রবিন’-এর সিরিয়াল দেখাতো। চোখের সামনে ভাসে এখনো। ‘জারুল চৌধুরীর মানিকজোড়’-ও টিভিতে দেখাতো। আর ‘আমার বন্ধু রাশেদ’-এর চলচ্চিত্রায়ন তো এই সেদিনের কথা। ‘টি-রেক্সের সন্ধানে’ ও ‘দুষ্টু ছেলের দল’-কেও হয়তো কোন এক সময় টিভির পর্দায় দেখতে পাবো।

এরপর স্যারের যে বইটি হাতে এল তা হল ‘বেজি’। একই সাথে সাইন্স ফিকশন আর এডভেঞ্চার। সাইন্স ফিকশনের প্রতি আগ্রহ জন্মানোর জন্য এই একটি বই যথেষ্ট ছিলো আমার জন্য। এরপর সাইন্স ফিকশন সমগ্র কিনেছিলাম। দিন নেই, রাত নেই; সাইন্স ফিকশন নিয়ে পড়ে থাকতাম। পরবর্তীতে ম্যাথ অলম্পিয়াডে অংশগ্রহণের জন্য স্যারের গণিত নিয়ে লেখা বইগুলোও পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার আমার চাইল্ডহুড হিরো। তাঁর লেখাগুলো যেন ঠিক আমার মত মানুষদের জন্যই লেখা। কিশোর বয়সের মুগ্ধতা বজায় আছে এখনো। সুযোগ পেলেই তাঁর লেখা পড়ি। তাঁকে নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা আছে, সেদিকে যাবো না। আমার কিশোর বয়সকে রঙিন করার জন্য স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ আমি।

জাফর ইকবাল স্যারের লেখার প্রতি ছোটবেলা থেকে যে ভালোলাগা ছিলো, হুমায়ূন আহমেদের লেখার প্রতি ততটা ভালোলাগা ছোট থেকে ছিলো না। হুমায়ূন আহমেদের লেখার সাথে পরিচয় হয়েছিলো ছোটবেলায় “বোতল ভূত” বইটির মাধ্যমে। বইটির অনেকগুলা গল্পের মাঝে একটি গল্পের চরিত্র ছিলো ‘পিপলী বেগম” নামের একটি পিঁপড়া – এখনো মনে আছে। এরপর কেন যেন তাঁর লেখা পড়া হয়নি ছোটবেলায়।

একটু বড় হয়ে (সম্ভবত নবম শ্রেণিতে) পড়লাম “হিমু রিমান্ডে”। এক অদ্ভুত নেশা পেয়ে বসলো এরপর থেকে। হুমায়ূন আহমেদের কতগুলো গল্প-উপন্যাস পড়েছি আমার নিজেরও জানা নেই। হার্ডকপিতো পড়েছি, সফটকপিও কম পড়িনি। তখন রিভিউ লেখার অভ্যাস ছিলো না বলে কাহিনীও ভুলে গেছি অনেকগুলোর।

“জোছনা ও জননীর গল্প”, “বহুব্রীহি”, “জীবনকৃষ্ণ মেমোরিয়াল হাইস্কুল”, “দেয়াল”, “তেতুল বনে জোছনা”সহ স্যারের অসংখ্য সৃষ্টি দাগ কেটে গেছে মনের ভেতর। তিনি অসংখ্য নাটক-সিনেমা উপহার দিয়েছেন। কিন্তু আমার কাছে লেখক হুমায়ূন আহমেদকেই বেশি ভালো লাগে। অতি সাধারণ জিনিসগুলোকেও অসাধারণ করে তোলার এক অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছিলেন মানুষটি। হিমু, রূপা, মিসির আলী, শুভ্র, বাকের ভাইদের মাঝে তিনি বেঁচে আছেন এবং থাকবেন সবার মাঝে।

(চলবে)

Raihan Atahar
Postgraduate Researcher at Bernal Institute
Material and Metallurgical Engineering at BUET

 

গেমের নেশাকে ‘মানসিক রোগ’ বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

শিশু স্বাস্থ্য


কম্পিউটারে গেম খেলার প্রতি নেশাকে এই প্রথম একটি মানসিক রোগ হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

১১তম ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজেস বা আইসিডি-তে এটিকে ‘গেমিং ডিজঅর্ডার’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ সংক্রান্ত খসড়া দলিলে এই গেমিং আসক্তিকে বর্ণনা করা হয়েছে এমন এক ধরণের আচরণ হিসেবে, যা জীবনের আর সব কিছুর আকর্ষণ থেকে একজনকে দূরে সরিয়ে নেয়।

বিশ্বের কিছু দেশে গেমিং আসক্তিকে ইতোমধ্যে একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যসহ কিছু দেশে তো ইতোমধ্যে এর চিকিৎসার জন্য প্রাইভেট এডিকশন ক্লিনিক পর্যন্ত রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯২ সালে সর্বশেষ ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজেস বা আইসিডি তৈরি করেছিল। নতুন গাইডলাইনটি প্রকাশিত হবে এ বছরই।

এই গাইডে বিভিন্ন রোগের কোড, লক্ষণ এবং উপসর্গ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থাকে। চিকিৎসক এবং গবেষকরা এটির সঙ্গে মিলিয়ে রোগ নির্ণয়ের করার চেষ্টা করেন।

গেমিং আসক্তিকে কখন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করা হবে, তার বিস্তারিত থাকছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই গাইডলাইনে।

এতে বলা হয়েছে, ১২ মাস সময় ধরে অস্বাভাবিক গেমিং আসক্তি বা আচরণ দেখা গেলে তা নির্ণয়ের পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে যদি অস্বাভাবিক আচরণের মাত্র অনেক বেশি তীব্র হয়, তখন ১২ মাস নয়, তার আগেই ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

যেসব লক্ষণের কথা এতে উল্লেখ করা হয়েছে:

• গেমিং নিয়ে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা (বিশেষ করে কত ঘন ঘন, কতটা তীব্র এবং কত দীর্ঘ সময় ধরে গেমিং করছে, সে বিষয়ে)

• গেমিং-কেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া

• নেতিবাচক প্রভাব সত্ত্বেও গেমিং অব্যাহত রাখা বা আরও বেশি গেমিং করা

লন্ডনের নাইটিংগেল হাসপাতালের টেকনোলজি এডিকশন স্পেশালিস্ট ড. রিচার্ড গ্রাহাম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।

‘এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর ফলে আরও বিশেষায়িত চিকিৎসার সুযোগ তৈরি হবে। এতে করে এ ধরণের গেমিং আসক্তিকে লোকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নেবে।’

তবে যারা গেমিং আসক্তিকে একটি মানসিক ব্যাধি হিসেবে দেখার বিপক্ষে, তাদের প্রতিও তিনি সহানুভূতিশীল।

তিনি স্বীকার করছেন যে অনেক বাবা-মা এ নিয়ে বিভ্রান্ত হতে পারেন। কেবল গেমিং এ উৎসাহী বলে সন্তানদের তারা ‘অসুস্থ’ বলে ভাবতে পারেন।

ড. রিচার্ড গ্রাহাম জানান, বছরে তিনি ডিজিটাল আসক্তির প্রায় ৫০টির মতো কেস দেখেন। এই আসক্তির কারণে এদের ঘুম, খাওয়া-দাওয়া, সামাজিক মেলা-মেশা এবং শিক্ষার ওপর কি প্রভাব পড়ে, সেটার ওপর ভিত্তি করে আসক্তির সমস্যার মাত্রা বোঝার চেষ্টা করা হয়।

রোগী দেখার সময় একটা জিনিসকেই তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। এই গেমিং আসক্তি ‘নিউরোলজিক্যাল সিস্টেম’কে কতটা প্রভাবিত করছে। এটি চিন্তার ক্ষমতা বা নিবিষ্ট থাকার ক্ষমতার ওপর কি প্রভাব ফেলছে।

বিশ্বের অনেক দেশই গেমিং এর আসক্তি নিয়ে চিন্তিত। দক্ষিণ কোরিয়ায় তো সরকার এমন আইন করেছে যাতে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুরা মধ্যরাত হতে ভোর ছটা পর্যন্ত অনলাইন গেম খেলতেই না পারে।

জাপানে কেউ যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ের বেশি গেম খেলে তাকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। চীনে সেখানকার সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান টেনসেন্ট শিশুরা কতক্ষণ গেম খেলতে পারে তার সময় বেঁধে দিয়েছে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হচ্ছে, শিশুরা যদিও প্রচুর সময় স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে কাটায়, কিন্তু তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে এই ডিজিটাল জগতকে ভালোই খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়েদের তুলনায় ছেলেরাই ভিডিও গেম খেলায় বেশি সময় দেয়।

গবেষণক কিলিয়ান মুলান বলেন, ‘মানুষের ধারণা শিশুরা দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টা স্ক্রীনের সামনে বসে থাকছে, আর কিছু করছে না। আসলে তা নয়। আমাদের গবেষণায় আমরা দেখছি, তারা প্রযুক্তিকে নানা কাজে ব্যবহার করছে। এমনকি স্কুলের হোমওয়ার্ক করার জন্যও তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।’

‘আমরা বড়রা যেভাবে করি, অনেকটা সেভাবে শিশুরাও আসলে তাদের ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারটা সারাদিন ধরেই অন্য অনেক কিছুর ফাঁকে ফাঁকে করছে, একবারে নয়।’ সুত্র: বিবিসি। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

পথেঘাটে নারীদের নিরাপত্তা নেই

ডা. মিথিলা ফেরদৌস


সি এন জি বাপ ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে, ভাবলাম এক কিলো রাস্তা হেটেই যাই। সি এন জি থেকে নেমে, রিক্সা খুঁজলাম একটু, তারপর হেটেই রওনা দিলাম।

ঈদের পর রাস্তা পুরাই ফাঁকা। ফুটপাথ ধরে হেটে যাচ্ছি। ঘ্যাচ করে একটা মাইক্রো এসে পাশে দাঁড়ায় কয়,
:আপা কই যাইবেন?
আমি কোন কথা না বলে হন হন করে হাটতে থাকি।
কিছুক্ষন পর একটা মোটরসাইকেল পাশে এসে থামলো।
:কই যাবেন?
আমি কোন কথা বলিনা।
এরপর একটা ভাঙাচোরা প্রাইভেট কার বেশ কিছু সামনে এসে থেমে, গ্লাস নামাচ্ছিলো।
আমি কাছে আসতেই
:আপা কই যাবেন?
এবারও কথা বলিনা, কিন্তু গাড়িটা পাশে পাশে চলতেই থাকে। রাস্তায় দুই একজন লোক আছে দূরে দূরে। একটু ভয় ভয় করছে। আমি আরও জোরে হাটতে থাকি।মুখ ঘেমে টুপ টুপ করে পরছে। গাড়িটা চলে যায়।

আলতাফ বার বার বলতেছিলো, ওকে অফিসে নামায় ওই সি এন জি নিয়ে আসতে। পাত্তা দেইনি। ভাবলাম রাস্তা ফাঁকা, হাটা হয় না। একটু হাটি।

সামনেই পথ ঘুরে গেছে। ঠিক সেই জায়গায় একটা বেশ দামী প্রাইভেট কার এসে দাঁড়ালো। এইবার খুব ভয় হচ্ছিলো।এমন হচ্ছে কেন?
এইটাই কি স্বাভাবিক? রাস্তায় হাটলে কিছুক্ষন পর পর কি এমন প্রাইভেট কার, মাইক্রো, বাইক এসে দাঁড়ায়? আলতাফের সাথে যখন রাস্তায় চলি, কখনও এমন হয় নাই তো। এইবার আরও জোরে হাটতে থাকি, গাড়িটা রেখেছেও এমন জায়গায় যেদিক দিয়েই যাই, গাড়ির ঠিক পাশ দিয়ে যেতে হবে। ড্রাইভার মুখ বাড়িয়ে
:কি ম্যাডাম কই যাবেন?
গলায় স্বরেই বোঝা যায় টিজিং। ইচ্ছা করতেছিলো কষে দুই চড় দিই। সেইটা তো অসম্ভব। আমি জোরে জোরে হাটতে থাকি। গাড়ি স্লো আমার পাশে পাশে কিছুদুর চলে, এরপর জোরে চালায় চলে যায়।

হাসপাতালের কাছে, আসতেই ডাক্তারদের গাড়ি চোখে পরে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। এবার ধীরে ধীরে হাটি।
এইটুকু রাস্তায়, দিনের বেলায়ই আমার মত একজন মহিলার জন্যেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে অন্যদের জন্যে কি অবস্থা!

যদি আমার গাড়ি লাগতোই তাহলে আমি দাঁড়ায় ডেকে নিতাম, যদিও আমি বা যে কারো এমন কারো কাছে লিফট নেয়া কখনই উচিৎ না। একটা মানুষ হেটে যাচ্ছে মানেই হয়তো তার গন্তব্য কাছেই, তাকে লিফট দিতে চাওয়ার তো কোন কারণ দেখিনা।

যেহেতু আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমন দুর্বল(আশে পাশে কোথাও কোন পুলিশ আমি দেখিনি।অথচ ভি আই পি রোড।প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম।) সেহেতু আমাদের নিজেদের ব্যাপারে নিজেদের সচেতন হওয়া খুব জরুরী।
আমি বলছিনা, আমাকে যতজন লিফট দিতে চেয়েছে, তাদের সবার উদ্দেশ্যই খারাপ ছিলো। কিন্তু এই চারজনের সবার উদ্দেশ্যই কি ভাল ছিল? আমার কাছে লিফট নেয়ার ব্যাপারটা কখনওই ভাল মনে হয় না।
অনেক সময় এমন হয়, হাটতে হাটতে হয়রান হয়ে মনে হয়, কিছু একটা পেলেই উঠে যাবো, তখনও সাবধান হতে হবে।

একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, নিজেদের মধ্যেই একটা রিফ্ল্যাক্স আনতে হবে, কোনটা ভাল কোনটা মন্দ!নিজেদের নিরাপত্তার কথা নিজেকেই ভাবতে হবে, দেশ আপনার নিরাপত্তা না দিলেও, কোন ঝামেলায় পরলে, কিছু নেগেটিভ মানুষ আপনাকে নিয়ে কথা বলতে ছাড়বেনা। কিছু অঘটন ঘটলেই একদল ঝাঁপায় পরে, বিপদে পরা মেয়ের চারিত্রিক সনদপত্র বিতরণ করতে।

  • ডা. মিথিলা ফেরদৌস
    বিসিএস স্বাস্থ্য
    সাবেক শিক্ষার্থী, রংপুর মেডিকেল কলেজ।

 

ঈদ উৎসবে সৌদি আরব

ডা. ফাতিমা খান


সৌদি আরবে ঈদের আনন্দ শুরু হয়ে যায় রমজান শুরু হওয়ার আগে থেকে। আমার কাছে যে আরব দেশীয়রা চিকিৎসা নিতে আসে, তাদের মাঝে আমি এ ব্যাপারটা প্রত্যক্ষ করেছি। এদেশের সংস্কৃতি অনেকটা মিশ্র ধরনের। যুগ যুগ ধরে ইয়েমেনি, মিশরীয়, ফিলিস্তিনি, জর্ডানি, সিরিয়ানসহ ইন্ডিয়ানরা তাদের কিছু কিছু কালচার এদেশে প্রচলিত করে দিয়েছে। যার কারণে ওদের অভ্যাস আর কালচারের মাঝেও বিভিন্নতা দেখা যায়। অনেক গুলো বছর এদেশে কাটানোর পরও সৌদিদের সাথে খুব বেশী পারিবারিক ভাবে মেলামেশা বা সামাজিকতা রক্ষা করা হয়নি। তবে ওদের উৎসব বা আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা হয়ে গিয়েছে।

রমজানের সময় দেখতাম আমভাবে রোগীরা বিদায় নেয়ার সময় বলত, “কুল্লু আ’ম ওয়া আনতুম বি খায়ের” অথবা “কুল্লু সানা আনতুম তাইয়্যেবীন”। দুইটা বাক্যই হল একটা শুভকামনার প্রকাশ যার অর্থ হল “সারাবছর তোমরা ভাল থেকো”। এই একই কথা তারা ঈদের সময়ও বলে থাকে। সাথে যুক্ত হয় আরো কিছু দোয়ামূলক বাক্য, যেমন তাকাব্বাল মিন্না ওয়া মিনকুম (আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের নেক আমলগুলোকে কবুল করুন) বা ঈদ সাঈদ ( আনন্দময় ঈদ) অথবা ঈদ মোবারাক।

রোজার মাসে এখানে সবাই রাতে জেগে ইবাদত করে , সেহরির পর ঘুমায়। দুপুরে যুহর নামাজের সময় তাদের দিন শুরু হয়। সেই অভ্যাসমত চাঁদ রাতেও নিদ্রাহীন ভাবে এখানে সবাই ঈদের দিনটার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকে। মসজিদে তাকবীর শোনার পর সবার মাঝে ঈদের আমেজ শুরু হয়। পটাকা বা বাজী ফুটিয়ে, ঘরদোর সাজিয়ে, বাখুর ( সুগন্ধী কাঠের গুড়া বা টুকরা) জ্বালিয়ে, প্রতিবেশীদের চকলেট বা মিষ্টি জাতীয় খাবার পাঠিয়ে তারা চাঁদ রাতে ঈদেকে স্বাগতম জানায়। বাড়িতে আত্নীয় স্বজনদের সমাগম হয়। অন্দরমহলে চলে মেহেদী লাগানোর ধুম। ছোট থেকে বড় সবার ফ্যাশন, মেকাপ আর ড্রেসাপ এর জল্পনা কল্পনায় ঘরবাড়ি সরব হয়ে ওঠে। ঘরের মুরব্বীরা কনিষ্ঠদের জন্য সামর্থ অনুযায়ী ঈদের সেলামী বা মিনি গিফট প্যাক তৈরী করে। সুঘ্রানের এরাবিয়ান কফি বা “কাহওয়া” পান চলে সারারাত। সাথে থাকে “হালা” বা যেকোন মিষ্টিজাতীয় খাবার।

ঈদের সময় ওদের ঘরে যে সুসাদু মিষ্টি জাতীয় খাবারগুলো তৈরী হয় তারমধ্যে বাসবুসা, বাকলাভা, কুনাফা, কাতায়েফ, ফ্রুট ক্যারামেল, ক্ষীর, পুডিং, মাহালাবিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো বেশীরভাগই ওভেন বেকড এবং দুগ্ধজাত। এর মধ্যে কয়েকটি লেবানিজ বা মিশরীয় কুস্যিন।

দান দখিনায় এদেশের ধনী ও ধার্মিক মানুষগুলোর জুড়ি নেই। একাজে তাদের অনেকেই নবী, রাসূল ও সাহাবাদের আদর্শের অন্ধ অনুসারী। ধনীর দৌলতের অংশ থেকে গরীবদের প্রাপ্তিটুকু বুঝে নিতে ঈদের আগের দিন বা ঈদের দিন পর্যন্ত সোমালি, হাবাশী, ইথিওপিয়ানসহ কিছু গরীব দেশের মানুষদের দেখা যায়, যারা যাকাত ফিতরা বা কিছু সাদাকা প্রাপ্তির আশায় অপেক্ষা করে।

ঈদগাহে মানুষের সমাগম হয় দেখার মত। বিশাল ঈদগাহ গুলোতে সব দেশের, সব বয়সের পুরুষ, মহিলা ও বাচ্চাতে জনাকীর্ণ হয়ে যায়।

দেশ, জাতি নির্বিশেষে নাড়ীর সাথে বাড়ীর সাথে মানুষের বন্ধন চিরন্তন। আমাদের দেশের মত এদেশেও ব্যস্ত কমার্শিয়াল শহরগুলোর একটা বড় অংশ ঈদের সময় ফাকা হয়ে যায়। সবার গন্তব্য থাকে যার যার গ্রামের বাড়ির দিকে। গ্রাম বা মফস্বল জাতীয় এলাকাগুলোকে তারা বলে ‘ক্বারিয়া’ (যদিও কোরআন শরীফে বিভিন্ন জায়গায় ‘ক্বারিয়া’ বলতে জনপদকে বোঝানো হয়েছে)।ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই তাদের আনন্দমিশ্রিত অস্থিরতা শুরু হয়ে যায় “ক্বারিয়া” গমনের জন্য। ঈদের দিন এখানকার পার্ক, সি-বীচ আর রিসোর্টগুলো থাকে ভিড়ে আকীর্ণ।

বাংলাদেশী পরিবারগুলো দেশী রীতি রেওয়াজ অনুযায়ী ঈদ উদযাপন করে। উপমহাদেশের অন্য দেশগুলোর প্রবাসীদের ঈদ যাপন অনেকটা আমাদের মতই। বাঙালি নারীদের ঐতিহ্যবাহী অভ্যাস হল ঈদের সারাটা দিন রসুইঘরে মুখরোচক রান্না করে কাটানো। নিজের পরিবার, মেহমান, পাড়া প্রতিবেশীদের আপ্যায়নের জন্য তাদের ঈদের দিন রীতিমত কোরবানী করার মাঝেই তাদের ঈদ আনন্দ। স্বামী সন্তানদের নতুন কাপড় পরিয়ে নিজের কাপড়খানা কোন অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেই তারা খুশি থাকেন। অবশ্য কেউ কেউ ঈদের ছুটি কাটাতে অন্য কোন শহরে ঘুরতে যান পরিবারসহ। বিশেষ করে আমাদের মত চাকুরীজীবী মায়েরা কর্মব্যস্ততার ক্লান্তি দূর করতে ও বাচ্চাদের সাথে একটু আনন্দময় সময় কাটাতে দু একদিনের জন্য দূরে কোথাও বা প্রকৃতির কাছাকাছি কোথাও বেরিয়ে আসেতে পছন্দ করেন।

এখানকার প্রবাসী পরিবারগুলোর ঈদ আনন্দের আরেকটি বড় উৎস হল ঈদ পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানগুলো। অনুষ্ঠানগুলোতে প্রত্যেক দেশের মানুষগুলো যার যার দেশীয় খাওয়া দাওয়া ও বিনোদনের আয়োজন করে থাকে। স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে স্বদেশের প্রচারিত অনুষ্ঠানমালা উপভোগ করতে অন্তত বাংলাদেশীদের ভুল হয়না।

ঈদকে পুরাপুরি উপভোগ করতে পারেননা প্রবাসী শ্রমিক গোছের মানুষগুলো। যারা পরিবার পরিজন রেখে এখানে একা থাকেন তাদের ঈদের দিনটা নিতান্ত মলিন। দেশে পরিবার পরিজনদেরকে নিজের সবটুকু উপার্জন আর উপহার পাঠানোর মাঝেই তারা আনন্দ খুঁজে নেন। তারপরও অনেকেই পরিবারের মন রক্ষা করতে পারেননা । ঈদের দিনেও তাদের কেউ কেউ ওভারটাইম করেন আরো কিছু বাড়তি অর্থের যোগান দিতে। ঈদের আনন্দঘন দিনটির সুশীতল আমেজ তাদের ঘর্মাক্ত দেহ আর ক্লান্ত মনকে একটু স্বস্তি দিতে পারেনা।

ডা. ফাতিমা খান
লেখিকা কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

‘সুখী দাম্পত্যজীবন’ কিছু টিপস

দাম্পত্য


ভালোবাসা
একে অপরকে জানিয়ে দিন যে আপনারা পরস্পরকে ভালোবাসেন। দিনে অন্তত একবার আপনার জীবনসঙ্গী/জীবন সঙ্গিনীর প্রশংসা করুন কিংবা তাকে ভালোবেসে দয়ামাখা গলায় কথা বলুন।

বুঝে রাগ করুন 
একই সময়ে দু’জন একসাথে রেগে যাবেন না। কোন তর্ক জিইয়ে রেখে ঘুমাতে যাবেন না, সমাধান করে নিন আগেই। মনে রাখবেন, ঝগড়া করতে দুই জনের প্রয়োজন হয়।

সমালোচনা
সমালোচনা যদি করতেই হয়, ভালোবাসা দিয়ে বলুন। আপনি যখন কোন ভুল করে ফেলবেন, তা স্বীকার করে নিন।

অতীত স্মৃতি
পুরোনো ভুলগুলোকে তুলে আনবেন না।
একে অপরকে উপেক্ষা করার পরিবর্তে বরং গোটা দুনিয়াকে আগে উপেক্ষা করুন।

নামাজ পড়ুন
দিনে কমপক্ষে একবার একসাথে সালাত আদায় করুন।

মন দিয়ে শুনন
আপনার জীবনসঙ্গী যখন কিছু বলে, তা মন দিয়ে শুনুন। মনে রাখবেন, আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনী কিন্তু একটা ক্রিকেট বা ফুটবল ম্যাচ, মুভি, সিরিয়াল, ইউটিউব ভিডিওর চেয়ে বেশি মূল্যবান।

খেয়াল করুন
আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীকে যখন নতুন কোন পোশাক পরে তথবা তার চুল ভিন্নভাবে আঁচড়ায় তখন খেয়াল করুন। আপনাদের বিবাহবার্ষিকী এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোকে স্মরণ রাখতে চেষ্টা করুন।

ধন্যবাদ দিন
আপনাদের পক্ষ থেকে আপনার সঙ্গী কাউকে কোন উপহার দিলে বা কোন কাজ করে দিলে আপনার পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ দিন।

লক্ষ্য করুন
আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীকে যদি ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত দেখায় তবে তা লক্ষ্য করুন এবং তার জন্য কিছু করুন।

আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীকে কখনো সমালোচনা করে আহত করবেন না এবং জনসমক্ষে কখনো তাকে অপমান করবেন না৷ বৈবাহিক বন্ধনকে বেঁধে রাখুন অটুট। সুত্রঃ সংগ্রহ এবং সংকলিত।

 

সবুজ প্রাণে হিন্দোল

অনবরত বৃক্ষের গান


পড়ার টেবিলে মুনিবা,পাশে ডেস্কে বসে পড়ছে ওর ভাইয়া। দুষ্টোমিতে সেরা মুনিবা, তবে ভাইয়া যখন পড়তে বলে, মন দিয়ে পড়ে। ছাত্র সে, আর মুনিবা ক্লাস ফোর এ। ছোট্ট বাটিতে আমলকি, জলপাই নিয়ে এসে রাখলেন আম্মা।

বললেন, “জুবায়ের, মুনিবা, তোমাদের দাদুভাই পাঠিয়েছেন সকালে, গ্রাম থেকে। “ভাইয়া টিপ্পনী কেটে বলে,”মুনিবার মাথায় যা দুষ্ট বুদ্ধি, ওর টক খাওয়া ঠিক হবে না,বরং আমি খেয়ে ফেলি।” এ নিয়ে একদফা অভিমান,খুনশুটি। মুনিবা তো পড়বেই না,ভাইয়ার সাথে রাগ। অনেক বুঝিয়ে ঠিক হলো, ভাইয়া বেড়াতে নিয়ে যাবে।

রাতে খাওয়ার টেবিলে, আব্বুর কাছে নালিশ করলো মুনিবা। শাস্তি হিসেবে যে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে, সেটাও জানালো। তাদের বাবা বললেন, তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করো, গল্প শুনাবো তোমাদের। গল্পের কথা শুনে, দুই-ভাই বোন নড়েচড়ে বসলো।

সবাই এসে বারান্দায় বসলে, মুনিবার আব্বু গল্প শুরু করলেন। আজকে তোমাদের দাদুভাই কতো কি পাঠিয়েছেন বলতো, মুনিবা। মুনিবা হাতের কড় গুনে বলতে শুরু করল, বাতাবি লেবু, চালতা, আমলকি, জলপাই, নারকেল, কতো সবজি। ও থামলে, মাহবুব সাহেব বললেন, এই যে বাতাবী লেবু গাছ, যখন বুনেছি, তখন জুবায়ের অনেক ছোট। মুনিবা নড়েচড়ে বসে, আমার জন্য কোন গাছ বুনোনি! তিনি বললেন,হ্যা আম্মু,বলছি শোন। তোমার আম্মা গাছ লাগাতে ভালোবাসেন, খুব। রাসূল (সা) এর প্রিয় হাদীসটি ভাইয়া শোনায়নি তোমাকে?

‘যখন কোনো মুসলমান একটি ফলবান বৃক্ষের চারা রোপণ করে, আর এতে ফল আসার পর সে নিজে অথবা অন্য কোনো মানুষ তা থেকে যা ভক্ষণ করে তা তার জন্য সাদকা (দানস্বরূপ), যা চুরি হয়, যা কিছু (খোসা, আঁটি ইত্যাদি) গৃহপালিত পশু খাবে এবং বিভিন্ন পাখপাখালি যা খাবে, সবগুলো তার জন্য সাদকা।’ (বুখারি ও মুসলিম) মুনিবা বলে,তাহলে তো পাখি পেপে খেতে আসলে,তাড়িয়ে দেওয়া যাবে না।ওর আব্বু হাসেন,আবার বলতে শুরু করেন।
আমি বাড়িতে গেলে, প্রতিমাসে গাছের চারা নিয়ে যেতে হতো। বাড়ির সামনে যে শিউলী গাছটা,আর পশ্চিমে দাড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়াটা, তোমার জন্য বুনেছিলেন। মুনিবা খুশিতে বাক-বাকুম করে ওঠে।আম্মুকে আহ্লাদে জড়িয়ে ধরে সে। সেদিনকার মতো গল্প শেষ করে ঘুমাতে যায় সবাই।

সকালে স্কুলে সামাজিক বিজ্ঞান ক্লাসে ফাতিমা ম্যাম পড়াচ্ছিলেন। জলবায়ু কনফারেন্স নিয়ে অডিও, ভিজ্যুয়াল দেখালেন, কিভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, অক্সিজেনের পরিমান কমে যাচ্ছে। আটলান্টিক এ পানির উচ্চতা বেড়ে, নিম্নভূমির দেশগুলো তলিয়ে যেতে পারে। মুনিবার ছোট্ট মন চিন্তায় ভরে গেলো, সে ম্যামকে জিজ্ঞেস করল, “আমাদের বাংলাদেশটার কি হবে?”  ম্যাম হাসলেন,আমাদের পরিবেশকে অনেক সুন্দর রাখতে পারি, বেশী করে গাছ লাগাতে পারি। টেবিলের উপর কিছু ফুল, আর ফল। তার ছাত্র -ছাত্রীদের জন্য এনেছেন, বাসার ছাদে করা বাগান থেকে। সকলে খুব উৎসাহ পেলো। পরের সপ্তাহে সবাই মিলে ফাতিমা ম্যামের বাগান দেখতে গেলো।

সেদিন রাতে আবার মুনিবারা গল্প করতে বসল। ফাতিমা মিসের করা বাগান দেখে, খুব আগ্রহ ছোট্ট বাগান করার। ভাইয়ের শাস্তি আরো বেড়ে গেছে, বাগান করায় সহকারী হতে হবে। চারা কিনে এনে , মাটি-সার দিয়ে টব তৈরি করে দিতে হবে। ভাইয়া হাসিমুখে রাজি হলো। পরেরদিন থেকে শুরু হলো, মুনিবার বাগান করা। প্রথমে, স্ট্রবেরী চারা বুনেছে, আর আম্মুর জন্য বেলী ফুলের চারা। প্রতিদিন ক্লাস থেকে ফিরে বারান্দায় চলে যায়। একটু করে গাছগুলো বড়ো হয়, কুড়ি আসে। একদিন সাদা বেলী ফুলে গাছটা ভরে আসে,সুগন্ধে মনটা ভরে আসে। নিজের হাতে বোনা গাছে ফুল, খুশিতে সে উদ্বেল হয়ে উঠে। (এতোটা আনন্দ সে কখনোই পায়নি)।আর,যেদিন মুনিবার স্ট্রবেরী গাছ পাকা পাকা ফল ভরে যায়-দাদাভাই, আম্মু আর ভাইয়াকে নিয়ে খেতে কি যে আনন্দ পায় সে। দাদাভাই খুশিতে নাতনিকে নার্সারি থেকে দশটি ফলের চারা গিফট করেন।মুনিবার বাগান এখন বেশ বড়, বাসার সামনে ফুলেফলে ভরে আছে। বান্ধবীদের সে ফুলের চারা গিফট করে, তাদের হাসিমুখ দেখে প্রান ভরে ওঠে। #বৃক্ষরোপণ

 

মালয়েশিয়ার বৈচিত্রময় ঈদ

তাহেরা সুলতানা


মালয় ভাষায় ‘ঈদ মুবারাক’ কে বলে ‘সালামাত হারি রাইয়া’ যার অর্থ ‘রোজা ভাংগার শুভ উৎযাপন’ অথবা ‘রোজা ভাংগার উৎসব’।
আমি প্রায় ৬ বছর যাবত মালয়েশিয়াতে অবস্থান করছি। আমার অভিজ্ঞতা থেকে ঈদকে ঘিরে মালয়েশিয়ার সংস্কৃতির কিছুটা অংশ আমি এখানে শেয়ার করার চেষ্টা করছি। যেহেতু আমার বিদেশে ঈদ উৎযাপন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভারসিটি থেকেই শুরু হয়েছিল, তাই আমি সেখান থেকেই শুরু করছি।
মালয়েশিয়াতে আমার প্রথম ঈদ উৎযাপন ২০১১ সালে। তখন আমার স্বামী ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভারসিটিতে মাস্টার্স করছিল। আমি কোনদিন ঈদের নামাজ পড়তে মসজিদে যাইনি। এমনকি দেশে থাকতে জুম্মার নামাজ পড়তেও কখনো যাওয়া হয়নি। আসলে মেয়েরা মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে পারে, এরকম কোন ধারনাই আমার ছিল না! সে যাই হোক, সেবার ইসলামিক ইউনিভারসিটির মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে আসলাম। অনেকটা দ্যোদুল্যমান মনেই আসলাম। এখানে বলে রাখি, এই ইউনিভারসিটিতে প্রায় ১৩৫ টি দেশের মুসলিম ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করে। মসজিদের প্রতিটি ফ্লোরে ২ টি ইউনিট। একটি ছেলেদের, আর একটি মেয়েদের। ঈদের নামাজ পড়তে এসে আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো সবার দিকে তাকিয়েছিলাম! নানান দেশের ছেলেমেয়েরা নানান রঙে আর ডিজাইনে সুসজ্জিত হয়ে মসজিদ প্রাঙ্গণকে আলোকিত করে রেখেছে। অপরূপ সে দৃশ্য! নামাজ শেষে আমরা মেয়েরা একে অপরের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে, হাতে চুমু খেয়ে অথবা কারো কারো সাথে কোলাকুলি করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করলাম। একবারের জন্যও মনে হয়নি, আমি এদের চিনি না! যেন আত্মার গভীর থেকে টান অনুভব করেছিলাম! অনেক নতুন নতুন বাংলাদেশী মেয়ে, আপু এবং ভাবীর সাথেও সেদিন পরিচয় হয়েছিল। দেশে ফেলে আসা বাবা-মা, ভাই-বোন আর আত্নীয় স্বজনদের বাদ দিয়ে বিদেশের মাটিতে ঈদ করার কষ্টটা কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছিল।
ইসলামিক ইউনিভারসিটি হলেও এখানকার রেক্টর (এখানে ভিসিকে রেক্টর বলে) কিন্তু একজন মহিলা, যার নাম ড. জালেহা কামারুদ্দিন। ঈদের দিন ইউনিভারসিটি ক্যাম্পাসে উনি নিজে হাতে সৌজন্যমূলকভাবে স্টুডেন্ট দের খাবার সার্ভ করেন এবং সবার সাথে একসাথে বসে, খেয়ে, ঈদ উৎযাপন করেন। ইউনিভারসিটি ছাড়াও বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে সারাদিন ব্যাপী নানান পদের মুখরোচক খাবার সরবরাহ করা হয়। বাংলা কমিউনিটি থেকেও আলাদাভাবে ঈদ উৎযাপন করা হয়।
মালয়েশিয়ায় সংস্কৃতির একটা বিশেষ অংশ হলো, ঈদের দিন সব বাচ্চাদের হাতে ‘ডুয়েট রাইয়া’ (একই মানের ২ টি রিংগিটের ২ টি মূদ্রা একটি খামে ভরে প্রতিটি বাচ্চাকে দেয়া) একটি তুলে দেয়া। এমনকি প্রতিটি মালয় স্কুল থেকেও বাচ্চাদের এই ‘ডুয়েট রাইয়া’ দেয়া হয়। এখানে ছেলেরা ঈদের দিন যে ড্রেস পরে, তাকে বলে ‘বাজু মেলাউ’ (উপরের অংশটা ফতুয়া আর নিচেরটা পায়জামা আর তার উপরে লুঙ্গীর মতো) এবং মেয়েরা যে ড্রেস পরে, তাকে বলে ‘বাজু কুরুং’ (উপরের অংশটা কামিজ আর নিচেরটা স্কার্ট)। প্রায় সব মুসলিম মালয় মেয়েরা মাথায় হিজাব ব্যবহার করে। ঈদের দিনও এর ব্যতিক্রম দেখা যায় না।
অধিকাংশ মালয় ঈদের দিন খাবার সার্ভ করার ক্ষেত্রে পরিবার, আত্নীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব আর প্রতিবেশীর জন্য ‘ওপেন হাউস’ প্রোগ্রাম করে। এইদিন সবাই ইচ্ছেমতো সবার বাড়িতে গিয়ে খেতে পারে। ঈদের দিন মালয়েশিয়ানদের সবচেয়ে পরিচিত এবং সবচেয়ে পছন্দনীয় খাবার হচ্ছে ‘কেতুপাত’ (Ketupat)। এক ধরনের আঠালো ভাতের ভর্তা পরিমস একটা কলাপাতা বর্গাকারে কেটে এর মধ্যে রেখে চারপাশ থেকে মুড়িয়ে দেয়া হয়। এই ‘কেতুপাত’ ২/৩ ধরনের সস আর তরকারীর সাথে সার্ভ করা হয়। আর একটি বিখ্যাত খাবার হলো ‘নাসি পান্দাং’ ( Nasi Pandang)। এই রেসিপিতে ভাতের সাথে নানান ধরনের তরকারী পরিবেশন করা হয়। এছাড়া নানা ধরনের কেক, পেস্ট্রি আর স্নাক্সও সার্ভ করা হয়। সেইসাথে থাকে বিভিন্ন রংগ আর বিভিন্ন ফ্লেভারের সিরাপ, যেটাকে মালায় ভাষায় ‘মিনুম’ বলে, যার অর্থ হচ্ছে পানীয়। মালয়েশিয়ানরা ‘তেও পানাস’ (গরম চা) বা ‘কপি পানাস’ (গরম কফি) এর পরিবর্তে ‘তেও আইস’ (ঠান্ডা চা) কিংবা ‘আইস কপি’ (ঠান্ডা কফি) বেশী পছন্দ করে, যেটার চল ঈদের দিনও দেখা যায়।
বাংলাদেশীদের মতো মালয়েশিয়ারাও ‘কাম্পুং’ (গ্রাম) এগিয়ে আত্নীয় স্বজনদের সাথে ঈদ উৎযাপন করতেই বেশী পছন্দ করে। সবার সাথে একত্রিত হয়ে বার বি কিউ পার্টি করা আর ‘হারি রাইয়া’ গান শোনা এদের সংস্কৃতিরই অংশ।
যেহেতু মালয়েশিয়ানরা জাতিগতভাবেই খাদ্যপ্রেমী, তাই তারা যেকোন উৎসবে খাবারে ভিন্নতা আনতে এতোটুকু কার্পণ্য করে না। তাছাড়া এখানে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষাভাষী এবং নানান সংস্কৃতির লোকের বসবাস। তাই এখানে সবসময় একটা মিশ্র সংস্কৃতি বিরাজ করে, যার সবচেয়ে বেশি প্রভাব খাবারে গিয়ে পড়ে।

সালামাত হারি রাইয়া!

 

আব্বার ঈদ

মনির মোহাম্মদ


আমার পিতা শিক্ষক মানুষ। একজন আদর্শ শিক্ষক বলতে আমরা যা বুঝি উনি ঠিক তাই। সুযোগ পেলেই সন্তানদের বই কিনে দিতেন। আর কিছুদিন পর পর বলতেন ঐ গল্পের সেই কথাটা মনে আছে। আমরা মনে না থাকলেও বলতাম হ্যা হ্যা হ্যা মনে আছে। আব্বা সব সময় বলেন শুধু পড়লে হবে না, বুঝে পড়তে হবে। তবেই দেশ আলোকিত হবে। মুখস্ততো ময়না পাখিও করে।
আমরা ভাই বোনরা বই পড়া শিখেছি পিতার কাছ থেকে। আমার পিতা একজন বোদ্ধা পাঠক। আমার প্রথম গল্পের বই নীলাদ্রির সবচেয়ে বড় সমালোচক আব্বা । আব্বা নাকি আমার বই পড়ে মুগ্ধ হয়েছে। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর নেই আমার জীবনে। এবার আসুন মূল গল্পে যাই।
প্রতি ঈদেই আব্বাকে কিছু দিলে কেন জানি তার সাইজ মিলেনা, সাইজ মিললে আম্মা বোনদের কাররই পছন্দ্র হয়না। অবশেষে ঈদের শপিং এর দায়িত্ব নিল আম্মা আর আমার বোনরা এবং আমারটা সহ, আমি এখন চিন্তা মুক্ত সাইজ আর পছন্দ্র নিয়ে ঝামেলা নেই ,আমি আমার শব্দ খুঁজায় ব্যাস্থ থাকতে পারি।
গতকাল রাত্রে একটা মেসেজ দিল আব্বা আমার মোবাইলে, তখন প্রায় দু’টো বাজে। মেসেজে একটা লিস্ট। লিস্ট দেখে আমি অবাক, একটা বিরাট বইয়ের লিস্ট। এত বই একদিনে কোথায় পাব? তার উপর কিছু উপহার এর বইও আছে। হাতে সময়ও কম। বিকালেই ছুটলাম বই এর খুঁজে। অবশেষে সারা ঢাকা শহর তন্নতন্ন করে খুঁজে অবশেষে সবগুলো বই কিনে আব্বাকে মেসেঞ্জারে ছবি পাঠালাম। আব্বা খুশি এবং বিরাট খুশি! এবার ঈদ কাটবে আমাদের বাপ-বেটার বই পড়ে ইনশাআল্লাহ্‌!
সবাই ভাল থাকবেন,
ধন্যবাদ,

ম নি র মো হা ম্ম দ
তরুন কথা সাহিত্যিক।

 

“আয় খুকু আয়, আয় খুকু আয়”

দিবা রুমি


★ সকালে উঠেই মনে পড়ে গেল চিরচেনা এবং ভীষণ প্রিয় এ গানটার কথা। কেন মনে পড়লো? হঠাৎ নিউজ পেলাম আজ বাবা দিবস, সেজন্যই কি গানটা মনে পড়লো? কিন্তু একটি নির্দিষ্ট দিনেই শুধু বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করতে হবে কেন? যিনি জন্মদাতা তার প্রতি ভালোবাসা যদি প্রদর্শন করতেই হয় তাতো প্রতিটা ক্ষণ প্রতিটা দিন করতে হবে।

★ এই যে এতো বড় হলাম কার আদর্শে, ভালোবাসায়, সহযোগীতায়, আত্মবলিদানে? অবশ্যই বাবা- মা এর যৌথ উদ্যোগ আর রব্বুল আলামিন এর অপার করুণায়।

এবার লেখার একটু ভিতরে ঢুকি

★ আদর্শ সন্তান গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন বাবা-মা উভয়ের যৌথ উদ্যোগ।

★ কিন্তু “আদর্শ কি” এই বিষয় সম্পর্কিত জ্ঞান যদি বাবা- মা এর না থাকে বা জানার আগ্রহ না থাকে বরং নিজের চিন্তাধারা ও কর্মপন্থাকে সঠিক বলে বিবেচনা করে তাহলে সেই সন্তান কখনোই আদর্শবান হবেনা।

★ খুব কম ক্ষেত্রেই আছে যারা মায়ের ছায়াতলে থাকলেও গড়ে ওঠে বাবার আদর্শ নিয়ে। তবে বেশির ভাগ সন্তানই মাকে অনুসরণ করতে পছন্দ করে। মায়ের আচরন যেমন হবে সন্তান তেমনটাই শিখবে। তেমনি বাবার আচরনেরও প্রতিফলন ঘটবে সন্তানের আচরনে। তাই সন্তানের মন্দ আচরনের জন্য সন্তানকে দায়ী করা যায়না।

যেহেতু বাবা দিবসে লেখতে বসলাম তাই বাবাকেই একটু হাইলাইট করি

★ আমাদের এই যান্ত্রিক জীবনের জ্যামঘটিত টানা হেঁচড়ায় বাবা মানুষটা কতটুকু সময়ইবা পায় সন্তানকে সময় দেবার? যেহেতু অধিকাংশ পরিবারই চলে বাবার উপার্জনে। আর এই সময় না দেয়ার কারনে সন্তানের মূল্যবোধ সঠিকভাবে গড়ে উঠে না।

★ একটা মজার ঘটনা না বলে পারছিনা। এক ব্যাক্তি তার কলিগকে জিজ্ঞেস করলেন-
৩ বছরতো হয়ে গেলো আপনার বাচ্চা কত বড় হলো?
– তিনি দু’হাত দু’দিকে প্রসারিত করে বললেন ‘এইটুকু।’
– তিন বছর আগেওতো এটুকুই দেখালেন।
– কি ভাবে বলব? আমি যখন বাসায় যাই তখন বাবু ঘুমায়, আবার যখন অফিসে আসি তখনো বাবু ঘুমায়।

★ এই হচ্ছে আমাদের বাবাদের দায়িত্ব! হাজার কষ্ট হলেও বাবাদের উচিত বাবা হওয়ার চেষ্টা করা, প্রয়োজনে বাবা হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ কারণ শুধু জন্মদান এ অংশগ্রহনই সমাপ্তি নয়। তেমনি- যে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত সেই মায়েরও আদর্শ মা হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, যেহেতু মায়ের ভূমিকাই মুখ্য।

(আমার এই পোস্ট এর কথাগুলো পারিপার্শ্বিক সমাজ জীবন থেকে নেয়া কিছু যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতির সামান্য বহিঃপ্রকাশ মাত্র।)

★ আজ মহান বাবা দিবস; আমার নিজের বাবা এবং সব বাবাদের প্রতি রইলো অকৃত্রিম ভালোবাসা।

 

একটি অসমাপ্ত ঈদগল্প

রায়হান আতাহার


১.
সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল হাতে নিল জাহিদ। ওয়াইফাই চালু করতেই একগাদা ম্যাসেজ আসলো। ঘুমের রেশ কেটে গেলো। কারণ সাধারণত তাকে কেউ প্রয়োজন অথবা শুভেচ্ছা জানানো ছাড়া ম্যাসেজ করে না। আজ এতগুলো ম্যাসেজ এসেছে, কারণ আজ ঈদ।

ঈদের দিন মানুষের মাঝে এক ধরনের উচ্ছ্বাস কাজ করে। কিন্তু জাহিদের মাঝে কোন উচ্ছ্বাস নেই। পরিবার ছাড়া দেশের বাইরে প্রথম ঈদ জাহিদের। মাস ছয়েক হলো স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছে সে।

বাংলাদেশের সাথে সময় ব্যবধানের কারণে বলতে গেলে একদিন আগেই তার ঈদ চলে গেছে। গত রাতেই অনেকের ‘ভার্চুয়াল শুভেচ্ছা’ পেয়েছে। বাসায় বাবা-মায়ের সাথে ঈদের কুশল বিনিময় হয়ে গেছে। নামেই শুধু কুশল বিনিময়, ভৌগোলিক দূরত্ব ঈদের দিনটিতে জাহিদ ও তার পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারেনি। ম্যাসেজগুলো পড়তে ইচ্ছে করলো না জাহিদের। ইচ্ছে করলেও লাভ হতো না। নাস্তা করে ক্যাম্পাসে চলে যেতে হবে তাকে। হাতে সময় কম।

২.
বারবার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে জাহিদ। আসমানি ফোন দেয়ার কথা এ সময়ে। হুমায়ূন আহমেদের ‘জোছনা ও জননীর গল্প” উপন্যাসের আসমানি চরিত্রটি জাহিদের খুব ভালো লেগেছিলো। তাই প্রিয় মানুষটিকে ‘আসমানি’ বলে ডাকে সে।

ফোন আসার সময় পার হয়ে যায়নি। কিন্তু অপেক্ষার সময়গুলো কেন যেন কাটতে চায় না। নিজেই ফোন দেবে কি? না, ঠিক হবে না। ঈদের দিন ব্যস্ততা থাকে সবারই। ভাবতে ভাবতেই মোবাইল বেজে উঠলো। হ্যাঁ, ফোনটা আসমানিরই। মোবাইল কানে দিয়ে অন্য দশটা দিনের মতই বের হয়ে গেল জাহিদ। (অণুগল্প)

Raihan Atahar
Postgraduate Researcher at Bernal Institute
Material and Metallurgical Engineering at BUET

 

ঈদের শুভেচ্ছা

অপরাজিতা


“আকাশের বাঁক ঘুরে চাঁদ এল ছবির মতন
নতুন কিশ্তী বুঝি এল ঘুরে অজানা সাগর
আজ এ স্বপ্নের মাঠে রাঙা মেঘ হল ঘন।

আতরের ঘন গন্ধে মাটি চায় হাওয়ার বাঁধন
ঈদের আনন্দ, স্বপ্ন রেখায়িত গোধূলি আকাশ।”

ফররুখ আহমেদ

‘ঈদের শুভেচ্ছা’ বাংলায় মনের জানালা, গদ্য, কবিতা ও অপরাজিতা নিয়ে লেখক, পাঠক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের।
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদ। প্রতি বছর ঈদকে সামনে রেখে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় দেখা যায় নানা আয়োজন। প্রবন্ধ, গান, ছড়া-কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান কোন কিছুই বাদ যায় না। ঈদকে কেন্দ্র করে কবি- সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী, অভিনেতাদের ব্যস্ত সময় কাটে। সত্যি বলতে কী, এমন কোন মুসলিম কবি-সাহিত্যিক কিংবা লেখককে হয়তো পাওয়া যাবে না যিনি ঈদ নিয়ে কোন লেখা লিখেননি। বাংলা ভাষাভাষী কবি-সাহিত্যিকরাও এগিয়ে আছেন।

ঈদকে নিয়ে কবি কায়কোবাদ ‘ঈদ আবাহন’ নামে একটি কবিতা লিখেছেন। কবিতাটি কয়েকটি লাইন-

“ এই ঈদ বিধাতার কি যে শুভ উদ্দেশ্য মহান,
হয় সিদ্ধ, বুঝে না তা স্বার্থপর মানব সন্তান।
এ ত নহে শুধু ভবে আনন্দ উৎসব ধুলা খেলা।
এ শুধু জাতীয় পুণ্যমিলনের এক মহামেলা। ”

কবি কায়কোবাদ ঈদকে পুণ্যমিলনের মহামেলা হিসেবে অভিহিত করলেও ইসলামের নির্দেশনা সঠিকভাবে অনুসরণ না করার কারণে ঈদের দিনেও গরিব-দুঃখী ও অসহায়দের কষ্টের যেন শেষ থাকে না।

এ দিকটি ফুটে ওঠেছে শাহাদাত হোসেনের ‘বাংলার ঈদ’ কবিতায়। কবি লিখেছেন,

“বাংলার মুসলমান
শুধু চেয়ে রয়-
মৌন ম্লান ক্লিষ্ট মুখ নির্বাক নিশ্চল।
ফিত্রার খুশী কোথা তার?
কি দান সে দিবে ক্ষুধিতেরে?
নিজেই কাঙাল রিক্ত-
ভিক্ষা মাগি ফিরে দ্বারে দ্বারে।”
এ কবিতায় কবি ফিতরা আদায়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

কবি গোলাম মোস্তফা ঈদকে মানবতার বিরাট প্লাটফর্ম হিসেবে কল্পনা করেছেন। ঈদ উৎসব কবিতায় তিনি লিখেছেন-

“ কণ্ঠে মিলনের ধ্বনিছে প্রেম-বাণী, বক্ষে ভরা তার শান্তি,
চক্ষে করুণার স্নিগ্ধ জ্যোতি ভার,বিশ্ব-বিমোহন কান্তি
প্রীতি ও মিলনের মধুর দৃশ্যে
এসেছে নামিয়া যে নিখিল বিশ্বে
দরশে সবাকার মুছেছে হাহাকার বিয়োগ-বেদনার শ্রান্তি।”

ঈদ নিয়ে সবচেয়ে বেশি কবিতা ও গান লিখেছেন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার লেখা – ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ।
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাকিদ।’ এ গানটি ছাড়া ঈদের আনন্দ যেন পূর্ণতা পায় না। সুত্র: Subornolota-সুবর্ণলতা

 

ফিতরা

দ্য স্লেভ


আমরা যাকাতের বিষয়ে জানি কিন্তু ফিতরার বিষয়ে অবগত নই বললেই চলে। যাকাত অবশ্য সঠিকভাবে প্রদান করিনা আমরা। আর রমজানেই কেবল যাকাত নিয়ে আলোচনা করাই তার প্রমান। অথচ বিষয়টা রমজান কেন্দ্রীক নয়। এটা নিসাব পরিমান অর্থ সংক্রান্ত এবং তা এক বছর অতিবাহিত হতে হবে।

জাকাতের ২টা পরিমাপক আছে, একটা স্বর্ণ অন্যটা রৌপ্য। যেটার সাথে মিলে, সেটায় নিয়মানুযায়ী জাকাত দিতে হবে। যদি রুপার তুলা(প্রায় ১০ গ্রাম) ৫০০ টাকা হয় তাহলে সাড়ে ৫২ তুলার দাম ২৬২৫০(রুপার বর্তমান দাম সম্ভবত আরেকটু বেশী) হয় । আর এই পরিমান টাকা কারো ব্যাংকে বা ঘরে ১ বছর পড়ে থাকলে তার উপর ২.৫% জাকাত দিতে হবে। জাকাত সর্ব প্রথম আপন লোকদেরকে দিতে হবে, এতে জাকাতও আদায় হবে আবার আত্মীয়তাও রক্ষিত হবে। এমনকি স্ত্রী তার গরিব স্বামীকেও জাকাত দিতে পারে।

কিন্তু ফিতরার ব্যাপারে আমরা প্রায় জানিনা বললেই চলে। এটা রমজানে প্রদান করতে হয় শেষের দিকে এবং ঈদের নামাজের পূর্বে। ভালো হয় যদি ঈদের আগের দিন প্রদান করা হয়। রসূল(সাঃ) খেজুর,কিসমিস,বার্লি ইত্যাদীর এক সা(আনুমানিক আড়াই কেজী বা ৩ কেজী বা কিছু কম বেশী পরিমান) পরিমান ফিতরা দিতেন। তবে আলেমরা বলেন এটা প্রচলিত প্রধান খাদ্য দ্বারাও আদায় করা যাবে। তবে কেউ খেজুর বা উক্ত দামী খাদ্য দ্বারাও করতে পারে। বিশেষ করে ধনীরা ফিতরা দিবে দামী খাবারের পরিমানে। সেটাই উত্তম।

ফিতরা খাদ্য দ্বারা দিতে হবে এটাই সুন্নাহ কিন্তু অনেকে উক্ত পরিমান টাকা দ্বারাও ফিতরা দেওয়া যাবে বলেছেন। তবে খাদ্য দ্বারা দেওয়াই উত্তম। যারা বিদেশে আছে এবং আশপাশে গরিব মানুষ নেই, তারা দেশে টাকা পাঠালে সেটা দিয়ে অন্যরা খাদ্য কিনে খেতে পারে। এটা প্রত্যেক সক্ষম ব্যক্তি আদায় করবে যার মোটামুটি খেয়ে পরে চলে যায়। ফিতরার জন্যে যাকাতের নিসাব পরিমান সম্পদ হওয়া জরুরী নয়।

আমি ভাবছিলাম খেজুর কিনে দেব, কিন্তু মসজিদ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা টাকা সংগ্রহ করছে এবং এটা দ্বারা তারা খাদ্য কিনে এখানে বসবাসকারী গরিবদেরকে প্রদান করবে। ইমাম বললেন খাদ্য দিয়েই ফিতরা দিতে হবে,, তাদের হাতে টাকা দিলে হবেনা। এর একটা আলাদা অর্থ আছে। ঈদে গরিব লোকেরা যাবে ভালো খাবার খেতে পারে তার জন্যেই ফিতরা। বাস্তবে দেখা গেছে গরিবদেরকে টাকা দিলে তারা সেটা দিয়ে পরিবারের জন্যে খাবার না কিনে গরিবি হালে ঈদ করে, এতে তাদের পরিবার ভালো খাবার খেতে পারেনা। ফিতরা আসলে তাদের ঈদের দিন উত্তম খাবার নিশ্চিত করে।

সুন্নাহ থেকে আমার মনে হয়েছে যেই লোক যেই মানের খাবার ঈদের দিন খায়,তিনি সেই মানের খাবার ফিতরা হিসেবে প্রদান করবেন। এ কারনেই তৎকালীন আরবের বিভিন্ন ধরনের প্রচলিত খাদ্যের উপর রসূল(সাঃ) ফিতরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার লেখা পড়ে যারা ভাবছেন ফিতরা তার উপর কর্তব্যরূপে আরোপিত হয়েছে কিনা,,, তারা এত না ভেবে ফিতরা দিয়েই ঈদের নামাজ পড়তে যাবেন দয়া করে

আল্লাহ আমাদের সকল ইবাদতকে কবুল করুন এবং সম্মান বৃদ্ধি করুন।

 

ভালো থাকাটাও একটি শিল্প

আফরোজা হাসান


খুব ছোটবেলায় শখ করে গান (হামদ, নাত, গজল) শিখেছিলাম। মামণির এক বান্ধবী বাসায় এসে গান শিখাতেন। উনার কাছেই প্রথম জেনেছিলাম যে, গান হচ্ছে একটা শিল্প। আর শিল্পর প্রয়োগে শিল্পী হতে প্রয়োজন অনেক সাধনার। সত্যি অনেক সাধনা করেছিলাম। সেই সময় আইসক্রিম খুব পছন্দ করতাম কিন্তু কণ্ঠস্বর খারাপ হয়ে যাবে সেই ভয়তে আইসক্রিম খেতাম না। কুসুম গরম পানি, আদা, লেবু, মধু, যষ্টিমধু আরো কত কি খেতাম সুন্দর কণ্ঠস্বরের জন্য। আর সকালে উঠে খালি গলার আ-আ-আ-আ- সেতো ছিলোই। এইসব কষ্ট খুব মনের আনন্দ নিয়ে করতাম কারণ আমার শখ ছিলো শিল্পী হবার। আর মানুষ যখন মন থেকে কোন কিছু হতে চায়, তখন তারজন্য নিরলস পরিশ্রম করে যেতে পারে। আমিও পেরেছিলাম। আর সেই কষ্ট ও ত্যাগের ফল স্বরূপ কিছু পুরষ্কার, আপনজনদের প্রশংসা, স্পেশ্যাল মূল্যায়ন যোগ হয়েছিলো জীবন ঝুলিতে।

ছোটবেলা থেকেই রান্নার ভীষণ শখ ছিল। স্বপ্ন দেখতাম সবাই আমার রান্না খেয়ে পরিতৃপ্তির ধ্বনি তুলছে। সবচেয়ে পছন্দ করতাম যেই মানুষটির রান্না তাকে গিয়ে ধরেছিলাম আমাকেও তার মত রাঁধুনী বানিয়ে দেবার জন্য। উনি হেসে বলেছিলেন, আমার রান্না মজা হবার সবচেয়ে বড় কারণ হলো আমি রান্না করতে ভালোবাসি। উপভোগ করি রান্না করাটাকে। আসলে উপভোগ না করলে মানুষের কোন গুণ বিকশিত হয় না পরিপুর্ণ ভাবে। কারণ কোন কিছুকে উপভোগ না করলে মানুষ সেই কাজে মনোনিবেশ করতে পারে না। আর মন যেখানে অস্থির বা অমনোযোগী সেখান থেকে ভালো কিছু আশা করাটাই আসলে ঠিক না। তাই কোন কিছুতে পারদর্শী হতে সেই জিনিসকে ঘিরে মনে সুখ সুখ আবেশ থাকাটা খুব জরুরি। তাই ভালো রান্না করতে হলে তোমাকে সবার আগে ভালবাসতে হবে রান্নাকে। কেননা রান্না একটি সাংঘাতিক আর্ট। একদম ছবি আঁকার মতো। মনের মাধুরী মিশিয়ে যে শিল্পকে রূপদান করতে হয়। রান্নাকে আমি ছবি আঁকার মতই বহু যতনে আয়ত্ত্ব করতে চেষ্টা করেছি এরপর থেকে।

মানুষের মন নিয়ে স্টাডি করতে করতে আজ হঠাৎ একটা উপলব্ধি হলো। মনে হলো শিল্পর প্রয়োগে শিল্পী হতে হলে সেই সম্পর্কে জ্ঞানের প্রয়োজন। প্রয়োজন যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের। এবং সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন চেষ্টার। নিরলস ভাবে লেগে থাকার ইচ্ছার। শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে যার প্রচেষ্টা যত বেশি থাকে, সে তত বেশি সফল হয়। ঠিক তেমনি ভালো থাকতে জানাটাও মনে হয় এক ধরনের শিল্প। কেননা এমন অনেক মানুষকে দেখেছি যারা ভালো থাকার জীবনাপোকরণে ভরপুর থাকা স্বত্ত্বেও হতাশা-নিরাশায় দিনযাপন করছে। জীবনকে ঘিরে শুধুই হাহাকার ধ্বনি তোলে তারা। আবার কিছু মানুষ দেখেছি যারা জীবনাপোকণেরর সন্ধানে ছুটে চলছে একরাশ তৃপ্ততা নিয়ে। তাদের কণ্ঠে সর্বদা ধ্বনিত হয় “আলহামদুলিল্লাহ”।

আসলে ভালো যে আছি সেটা বুঝে নিতে জানতে হয়, শিখতে হয়। আর সেজন্য প্রয়োজন হয় জ্ঞানের। প্রয়োজন হয় যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের। দরকার হয় প্রচণ্ড চেষ্টা ও নিরলস লেগে থাকার ইচ্ছার। ত্যাগ করতে হয় অনেক অ-নে-ক কিছুকে। তা না হলে কখনোই অর্জন করা যায় না মনের আরাধ্য প্রশান্তিকে।

 

নতুন ভোরের গল্প

ডা. ফাতিমা খান


অফিসের পাশে সুপার শপে বাজার করছি, হঠাতই সাওসান এর সাথে দেখা। আমি খেয়াল না করলেও সে ঠিকই আমার কাছে অনেকটা ছুটে এসেই সালাম দিল। এখানকার রেওয়াজ অনুযায়ী পরিচিত কারো সাথে সাক্ষাৎ হলে সালাম বিনিময়ের পর কোলাকুলি করা হয়, যেমনটা আমরা ঈদের দিনে করে থাকি।
– কেমন আছ তুমি ডক্টর? কত্তদিন পর!
– সাওসান! কেমন আছ তুমি?
– খুব ভাল আছি আমি, আল্লাহ আমাকে অনেক ভাল রেখেছেন। তোমাকে একটা ভাল খবর দিতে চাই ডিয়ার; guess what?… আচ্ছা বলেই ফেলি। আমি সিগারেট, সিসা আর ওই যে বাকী ওইসব… সব ছেড়ে দিয়েছি। তোমার কথা গুলো আমার বারবার মনে পড়ে, সম্ভবত এজন্যই নিজেকে বদলাতে পেরেছি। ঐ যে বলেছিলে না Almighty created you with divine beauty and strength not to chase for the empty things that harm you, but to find your ownself and realize that you belong to Him only! “.
হুম, একবার বলেছিলাম বটে, অনেক কথাই তো বলতাম। ওকে কাউন্সিলিং করতাম মাঝে মাঝে। ওরাল থেরাপি হল সর্বোত্তম থেরাপি। আমার উদ্দেশ্য ছিল ফুলের মত মেয়েটা যেন অকালে ঝরে না পড়ে। বললাম,
– আচ্ছা, বেশতো! আজকে আমার সারাদিনের সবচেয়ে ভাল খবরটা তুমি আমাকে দিলে সাওসান। হ্যাপি টু হিয়ার দা বেস্ট নিউজ অফ দা ডে!
মেয়েটা কথায় কথায় অনেক কথাই মনে করিয়ে দিল। আমার খুব সাধারন উপদেশগুলোকে সে যে কত দামী উক্তি ভেবে যত্ন করে মনে রেখেছে তা ও না বললে হয়ত জানতাম না।
সাওসান ফিলিস্তিনি মেয়ে। “ফিলিস্তিন” নাম শুনলে যেমন একটা বিদ্ধস্ত দেশ, বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত পরিবার আর গোলা বারুদের ধোয়ায় ঝাপসা একটা ছবি ভেসে ওঠে, এখানে ফিলিস্তিনিদের অবস্থা কিন্তু সেরকম নয়। সৌদিআরবে প্রচুর ফিলিস্তিনিদের বসবাস, তাদের বাপ দাদাদের আমল থেকে। বেশীরভাগই ব্যবসায়ী। স্বভাবগত ভাবে তাদের মধ্যে একতা অনেক বেশী। সম্ভবত ‘একতার বল’ এর জন্যই তারা এদেশে অর্থনৈতিক আর সামাজিক খুটি মজবুত করে নিয়েছে। ফিলিস্তিনি মেয়েরা দেখতে সুন্দর আর তুলনামূলক ভাবে সৌদি মেয়েদের থেকে নমনীয় বলে পাত্রী হিসেবে এখানে তাদের চাহিদা আছে বেশ।
একুশ কি বাইশ বছরের উচ্ছল, চপল তরুণী সাওসান। খুব সাধারণ কিন্তু শিক্ষিত মেয়ে সে। এখনো তার মাঝে শিশুসুলভ কিছু স্বভাব রয়ে গিয়েছে। বছর পাচেক আগে বিয়ে হয়েছে এক ফিলিস্তিনি ধনকুবেরের ছেলের সাথে। যৌথ পরিবার, লোকজনে জমজমাট শ্বশুরবাড়ি। বাসায় বড় থেকে ছোট মোটামুটি সবাই ধুমপায়ী, অবসরে মজলিশে বসে সবাই একসাথে ধোয়া ছাড়ে, সিসা টানে। এমনকি ষাটোর্ধ শাশুড়িও তার কুঞ্চিত চামড়ার সরু দুই ঠোঁটের মাঝখানে সিগারেট সেটে লম্বা টান দেয়। শ্বশুরমশাই দেখতে কিছুটা Anthony Bardain এর মত, আমি যখন দেখেছি তখন তিনি তার টোবাকো পাইপ খানা দুই ঠোটের মাঝ খানটায় ধরে ছিলেন। মাথায় কাওবয় হ্যাট, ব্ল্যাক স্যুটে নিজেই তার হলুদ ‘হামার’ হাকিয়ে পুত্রবধূকে নিয়ে ক্লিনিকে এসেছিলেন। আমার ক্লিনিক থেকে মাইল খানেক দূরেই তদের ডুপ্লেক্স বাসা। অনেকবার তার বাসায় আমন্ত্রণ জানালেও সময়ের অভাবে যাওয়া হয়নি। তার সাথে আমার দেখা হত আমার ডেন্টাল অফিসে। যেদিন আমার ব্যস্ততা কম থাকত সেদিন তার রাজ্যের গল্প শুনতাম ।
অনেকদিন মেয়েটার চিকিৎসা করেছি। অতিরিক্ত ধুমপান আর অবহেলার জন্য তার সব দাঁতই প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ট্রিটমেন্ট চলাকালে সে তার জীবনের ভাল মন্দ অনেক গল্পই শেয়ার করত। আমি তার ধূসর নীল চোখের স্ফূর্ত চাহনীর দিকে তাকিয়ে শুনতাম আর ভাবতাম.. পরিবার বা পারিপার্শ্বিকতা মানুষের অভ্যাসকে কি ভীষণভাবেই না প্রভাবিত করে! কে বলবে এই মেয়ে টুয়েন্টি স্টিকস পার ডে স্মোক করে বা সিসাতে কয়েক টান না দিয়ে ঘুমুতে যেতে পারেনা! অথচ সতের বছর বয়সে হিশামের সাথে বিয়ের আগে পর্যন্ত কখনো নাকি সে সিগারেট ছুঁয়েও দেখেনি! প্রথমবার মদে চুমুক দিয়েছিল দুবাইয়ের এক হোটেলে হিশামের সাথে বসেই, শ্বশুরের এক বিজনেস পার্টনারের ডিনার পার্টিতে। তারপর ধীরে ধীরে সে অভ্যস্ত হয়ে যায়। হুইস্কি, বিয়ার, ভোদকার প্রথম স্বাদ গ্রহনের অভিজ্ঞতার গল্পগুলোও সে আমাকে শোনাতে বাদ দেয়নি। তবে আসক্তি ছিল শুধু সিগারেট আর সিসাতে। প্রেগ্ন্যান্সিতে অতিরিক্ত ধূমপানের কারণে তার একমাত্র ছেলেটা ক্রনিক লাং ইনফেকশনে ভুগছিল।
ডেন্টাল চেয়ারে তার সাথে শেষ সিটিং এর পর তাকে কিছু নাসীহা করেছিলাম।
– বুঝলে সাওসান, তোমার নামটা যেমন সুন্দর ( সাওসান অর্থ ফুল) , তুমি দেখতেও সেরকম অপরূপা। আচ্ছা বলতো কি লাভ এসব ছাইপাঁশ খেয়ে? মন্দ ছাড়া ভাল কি কিছু পেয়েছ এই ধোয়া ফুঁকে? তোমার বাবা মা যদি বেচে থাকতেন তাহলে তাদের ফুলের মত মেয়েটাকে আসক্ত দেখলে কি খুশী হতেন? আমি জানি তোমার একটা নিষ্পাপ অন্তর আছে। আমি চাই তুমি ভেতরে ও বাইরে অপরূপা হও, অদ্বিতীয়া হও। আমি তোমাকে আজই স্মোকিং ছেড়ে দিতে বলছিনা, বরং তুমি প্রতি সপ্তাহে একটা করে স্টিক কমিয়ে দাও। আগামী একবছর পর তোমার সাথে যদি আমার দেখা হয় তখন আমি তোমার মুখে শুনতে চাই.. বাহান্ন সপ্তাহে তুমি তোমার সব বাজে অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছ। পারবে না ?
সাওসান কথা দিয়েছিল, কথা রেখেছেও। গত রমজান থেকে এই রমজান মাস, প্রায় একবছর পরই তার সাথে আমার এই সুপারশপে দেখা হল। সাওসান চলে যাচ্ছে জর্ডানে, তার চাচার কাছে যিনি ছোটকাল থেকে তার লালন পালন করেছেন। ” আই ওয়ান্ট টু টেইক আ টার্ন ইন মাই লাইফ । আই নিড আ চেইঞ্জ” – এরকম কিছু একটা বলল। ঠিক কি বোঝালো জানতে চাইনি। যেখানেই যাক ভাল থাকুক সওসান। নিজেকে গড়ে নিক। জীবনের পুরোটাই ওর এখনো বাকী প্রায়। শুদ্ধি আছে বলেই মানুষ ভুল করে, উপলব্ধি আত্নসংস্কারের মূল।
আলো, অন্ধকার , মেঘ, বৃষ্টি, রোদ, ছায়া, রংধনু – সবকিছুই মানুষের জীবনে একটু একটু চাই। পেইন্টিং এর প্যালেট এর মত জীবনটা, একেক খাপে একেক রঙ থাকতেই হয়। দুই তিন রঙ মিশে নতুন আরেকটা রঙ তৈরী না করলে যেমন ক্যানভাসের কিছু অংশ সাদাই থেকে যায়, আবার ভুল বাছাই করা রংগুলোর মিশ্রণে বেমানান রংটা ক্যানভাসের পুরো সৌন্দর্যটা নাশ করে ফেলে।। সবার জীবন রঙিন হোক, না হয় শুভ্রই থাকুক।

 

রাজশাহীতে গৃহবধূর আত্মহত্যা স্বামী শাশুড়ি গ্রেফতার

নারী সংবাদ


রাজশাহীতে গলায় ফাঁস দিয়ে শিউলী খাতুন (১৬) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে শোয়ার ঘর থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত শিউলী নগরীর শালবাগান এলাকার সামিউল বাশিরের স্ত্রী। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় থানায় একটি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের হয়েছে। শিউলীর বাবা মোখলেসুর রহমান বাদি হয়ে মঙ্গলবার রাতেই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় শিউলীর স্বামী সামিউল বাশির (২৩) ও শাশুড়ি তানিয়া সানজিদাকে (৪৩) আসামি করা হয়। মামলার পর ওই রাতেই তারা গ্রেফতার হন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় আট মাস আগে শালবাগানের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে সামিউলের সাথে নওদাপাড়া এলাকার মোখলেসুর রহমানের মেয়ে শিউলীর বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর থেকে তাদের দাম্পত্য কলহ ছিল। এরই জের ধরে শিউলী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে শিউলীর লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা হলে দুই আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়। তদন্ত শেষে পরবর্তী আইনানুগ পদপে গ্রহণ করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সুত্র:নয়াদিগন্ত

 

টিনএজারদের জন্য প্রেমের গল্প

আফরোজা হাসান


গতকাল ক্লাস শেষে যখন সবাই মিলে গল্প করছিলাম এক স্টুডেন্ট তার জীবনে পড়া প্রথম প্রেমের গল্প বিষয়ক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিল ক্লাসের সবার সাথে। প্রেম ব্যাপারটা আসলে কি বোঝার জন্যই সে উপন্যাস হাতে তুলে নিয়েছিল। এবং প্রেম সম্পর্কে ধারণা আরো ঘোলাটে করার মধ্যে দিয়ে তার উপন্যাস শেষ হয়। সে বলছিল টিনএজারদের জন্য স্বচ্ছ, সুন্দর ও সঠিক প্রেমের গল্প লেখা দরকার। যেখানে গল্পে গল্পে তারা জেনে ও বুঝে যাবে প্রেম ব্যাপারটা আসলে কি এবং শরীয়তে এই বিষয়ে কি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া টিনএজে দেহ ও মনে যে পরিবর্তন সাধিত হয় তার ফলে আবেগের যে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয় এবং যে যে রূপে তা বাইরে বেড়িয়ে আসতে চায় সেই ব্যাপার গুলোও সুন্দর করে বিশ্লেষণ করা থাকবে গল্পের বইতে। যাতে আবেগকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেই ব্যাপারেও একটা ধারণা পেয়ে যায় গল্প পড়ে।

বেশ কিছুদিন আগে এক বোন ফোন করে খুব চিন্তিত কণ্ঠে জানিয়েছিলেন তার বারো বছর বয়সি মেয়েটি আজকাল খুব প্রেমের গল্প-উপন্যাস পড়তে পছন্দ করে। বারবী কার্টুন গুলোর খুব ভক্ত হয়ে উঠেছে। কার্টুনে যখন প্রিন্স ও প্রিন্সেস রোমান্টিক মুহুর্তে থাকে বা কথা বলে বোনটি খেয়াল করেছেন তার মেয়ের চেহারাতে গোলাপী আভা ছড়িয়ে পড়ে! ঠোঁট টিপে মেয়ে হাসে! মাঝে মাঝে নাকি দীর্ঘশ্বাসও ফেলে মৃদু মৃদু! বোনটি খুবই চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন মেয়েকে নিয়ে। চিন্তায় পরাটা অবশ্য স্বাভাবিক। সন্তানের চিন্তায় মায়ের মন সবসময় চিকন একটা দড়ির উপর দাঁড়িয়ে থাকে। যার নীচে থাকে জ্বলজ্বলে আগুণ কিংবা অথৈ পানি। এখন সার্কাসের দড়কাবাজের ট্রেনিং তো আর সব মায়েদের থাকে না। সুতরাং প্রতি মুহুর্তে ‘কি হয়’ ‘কি হয়’ অর্থাৎ, পড়ে যাবার ভয়।

গতবছর বড় ভাইয়ার কন্যারত্নাটি রোমিও-জুলিয়েট পড়ার আবদার করেছিল। ভাইয়া আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না যে, আমার মেয়ে তার জীবনের প্রথম লাভ স্টোরি পড়বে রোমিও-জুলিয়েট! শিক্ষণীয় তো কিছুই নেই এই গল্পে। ধোঁকা, মিথ্যা, আত্মহত্যার মত জঘন্য সব উপাদানে ঘেরা পথে চলে আমার মেয়ে ভালোবাসার ভুবনে প্রবেশ করবে? ভালোবাসার কারণে সবকিছু তুচ্ছ করা কি ঠিক? সম্পর্ক বা ভালোবাসার দাবী কি জীবনের চেয়ে বেশি হওয়া উচিত? আমার মনেহয় না। কারণ আমাদের জীবন তো প্রকৃত পক্ষে আমাদের নিজের না। আমাদের জীবন আমাদের কাছে আল্লাহর দেয়া আমানত। তাই জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছুই থাকা ঠিক না মানুষের কাছে। জীবন নেই তো কিছুই নেই। জীবনই যদি না থাকে ভালবাসা, স্বপ্ন, বন্ধন সবই তো অর্থহীন।কাউকে ভালোবেসে জীবন দিয়ে দেয়ার মত ইউজলেস আর কিছুই নেই দুনিয়াতে। তাহলে এমন ইউজলেস কাহিনী কেন পড়তে দেবো আমার মেয়েকে?

আমি সত্যি খুব অবাক হয়েছিলাম সেদিন ভাইয়ার কথা শুনে। এভাবে আমি কখনোই চিন্তা করিনি। গল্প-উপন্যাস-নাটক-সিনেমা-কার্টুন মনকে প্রভাবিত করে সেটা আমিও জানি। কিন্তু কোন মনে যখন সবকিছুর সংজ্ঞা তৈরি হচ্ছে সেই মনকে এইসব ভুল উদাহরণ থেকে বাঁচিয়ে রাখাটা কতটা জরুরি সেটা সেদিন অনুভব করেছিলাম। প্রেম-ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে যাদের নাম ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ, রোমিও-জুলিয়েট, লায়লা-মজনু, রাধা-কৃষ্ণ, রজকিনী-চণ্ডিদাস ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব প্রেম কাহিনীর মধ্যে ভালোবাসা কোথায় সেটাই আমি খুঁজে পাইনা। এসব হচ্ছে মোহ, আবেগ আর পরকিয়ার কাহিনী। একে-অন্যের জন্য আত্মহত্যা মানে হচ্ছে জাহান্নামের কাহিনী। আর এসবকে যদি কেউ ভালোবাসা বলে তাহলে এমন ভালোবাসা থেকে আমি নিজেকে মাহরুম রাখাই পছন্দ করবো। জীবন দেয়া কখনোই ভালোবাসার গভীরতা বোঝায় না। সেটা তো ভালোবাসাই না যা জীবনকে ধ্বংস করে দেয়।ভালবাসা তো সেটা যা আমাদেরকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়। জীবনকে ফুলে-ফলে গড়তে শেখায়। অনন্ত জীবন একসাথে কাটানোর স্বপ্ন দেখায়। দুনিয়ার ক্ষণিকের জীবনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে শেখায়।

ভাইয়া কাগজ-কলম নিয়ে বসে গিয়েছিলেন প্রেমের গল্প লিখতে। লিখেছিলেন উনার সাংসারিক জীবনের ভালোবাসার গল্প। ভাইয়ার কন্যার জীবনে পড়া প্রথম প্রেমের গল্প ছিল ওর বাবা-মার সংসার জীবনের ভালোবাসার গল্প। সেদিন আবারো মনে হয়েছিল বাবা- মা’ই তো সন্তানদেরকে দেখাবে সামনে চলার পথ, পথের দিশা, পথ মাঝের চরাই-উৎড়াই, অতঃপর গন্তব্য। বাবা-মা যদি কোন ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে অবহেলা করে, ব্যর্থ হয়। তাহলে সন্তানদের উপর সেটার প্রভাব পড়বেই। বাবা-মা না শেখালে কিন্তু সন্তানরা অজ্ঞ থেকে যাবে না। তারা হয়তো কোন ভুল মাধ্যম থেকে সেই জ্ঞানটা অর্জন করবে। যারফলে ভুলের পথে চলা সহজ হয়ে যাবে তাদের জন্য। বাবা-মা যেমন আঙ্গুল ধরে সন্তানদেরকে হাঁটতে শেখায়, চলতে চলতে পড়ে গেলে হাত বাড়িয়ে দেয় তাদের সামনে, যাতে আবার উঠে দাঁড়াতে পারে তারা। সন্তানদের মনোজগতেও বাবা-মার অবস্থান এমনটাই হওয়া উচিত। আঙ্গুল ধরে মনের আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু পথে বাবা-মাকেই হতে হবে সন্তানদের পথ প্রদর্শক। যতবার হোঁচট খেয়ে পড়বে সামনে বাড়িয়ে দিতে হবে হাত উঠে দাঁড়াবার জন্য।

কনসেপ্টটা অসাধারণ মনে হয়েছিল আমার কাছে। আসলেই কতই না সুন্দর হতো যদি প্রতিটা সন্তান ভালোবাসাকে জানতো বাবা-মাকে দিয়ে! প্রতিটা সন্তানের জীবনে পড়া প্রথম প্রেমের গল্প হত তাদের বাবা-মাদের জীবনের ভালোবাসার উপাখ্যান। তাহলে শুধু যে ভালোবাসার সঠিক জ্ঞান অর্জিত হতো সেটাই না। সাথে সাথে অর্জিত হতো জীবন-যাপনের নানাবিধ শিক্ষা। সন্তানরা জানতে পারতো জীবনে সুখী হবার পথে করণীয়-বর্জনীয়। এবং সেই আলোকে তারা আলোকিত করে নিতে পারতো তাদের জীবনের পথ। বর্তমানে আমরা এমন একটা সময় পার করছি যা সবদিক থেকে বৈরী আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। তাই এটা সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে জীবনের প্রতিটি ধাপের প্রয়োজনীয় শিক্ষা বাবা-মাকেই সকল দ্বিধা-সংকোচ ঝেড়ে ফেলে সন্তানদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।

টিনএজারদেরকে যে কোন ব্যাপারে বোঝানোর ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। সেটি হচ্ছে, ওদের প্রশ্নের জবাবে শরীয়তের বিধান বা কুরআন ও হাদিস থেকে বাছাইকৃত অংশ বলে দেয়াটা আসলে খুব সহজ। কুরআন বা হাদিসের রেফারেন্স শুনে ওরাও হয়তো বেশির ভাগ সময় চুপচাপ মেনে নেয়। কেননা শরিয়তের বিধানের ব্যাপারে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই।কিন্তু এতে প্রায় সময়ই ওদের অনুসন্ধিৎসু মন পুরোপুরিভাবে পরিতৃপ্ত হয় না। কারন সমাধান পেলেও মনের খোঁড়াক পায় না যথাযথ। তাই ইসলামিক ভাবে সমস্যার সমাধান দেবার সময় প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে কোন উৎস থেকে এই চিন্তাটা বা প্রশ্নটা ওদের মনে জেগেছে। অতঃপর প্রাসংগিক আলোচনা কোনদিকে প্রভাবিত হবে সেটা নির্ধারিত করে নিয়ে সেই আলোকে বিশ্লেষণ করতে হবে পুরো বিষয়টাকে। এবং সবশেষে মন্তব্যে কুরআন বা হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে।

 

যে সব মেয়েরা রোজা রাখতে পারেনা তারা কিভাবে লাইলাতুল কদর পালন করবে?

বিশেষ সংখ্যা 


উমর সুলায়মানঃ

আমরা একটা প্রশ্ন পেয়েছি যে, যদি কোন মেয়ে রোজা করতে না পারে তবে সে কিভাবে রমজান মাসের সর্বোচ্চ উপকার পেতে পারে? এমন অনেক বোনেরা আছেন যারা আমার সামনে এসে এই বলে কেঁদে ফেলেছেন যে, রমজানের শেষ ১০ রাত এসে গেছে কিন্তু আমি রোজা করতে পারবো না, নামাজ পড়তে পারবো না। শেষ ১০ রাতের মধ্যে লায়লাতুল কদর, কিন্তু আমি রোজা করতে পারবোনা, নামায পড়তে পারবো না। একটা হাদীস আছে যেটা আপনাকে অনেক আশাবাদী করে তুলতে পারে। প্রথমটি হল, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, কেউ যদি অসুস্থ্য হয়ে পরে। কিয়াসের মাধ্যমে উলামারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, কোন মেয়ে যে রোজা করতে পারছে না তাকে সাময়িকভাবে অসুস্থ্য মানুষের সমতুল্য মনে করা যাবে। মহানবী (সাঃ)বলেছেন, “কেউ যদি অসুস্থ্য হয়ে পরে বা সফরে থাকে এবং একারণে তারা সাধারণত যেই ইবাদত করত সেটা মিস করে ফেলে। সেক্ষেত্রে আল্লাহ সুবহানাওয়াতাআলা তাদের নামে এই ইবাদতের সওয়াব পুরোপুরি লিখে দেন”। আল বুখারীতে এই হাদিসটি এসেছে। আল্লাহর কি রহমত! আল্লাহ যদি জানেন যে, আপনি নামায পড়তেন এবং আপনার সেই আকাঙ্ক্ষা ও প্রয়োজন আছে তবে আল্লাহ সুবহানাওয়াতাআলা সেটা লিখে দিবেন। তবে সেটা আপনার স্ট্যান্ডার্ডে নয়, তাঁর স্ট্যান্ডার্ডে। যাই ঘটুক না কেন আপনি পুরো পুরস্কারই পাবেন। এটা হল এক নাম্বার কথা।

দুই নাম্বার হল, তখনো কুর’আন পাঠ করা। এই অবস্থায় কুর’আন পাঠ করা ফিক্‌হের এক দীর্ঘ আলোচনার বিষয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) একদা জানাবাহ অবস্থায় ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে বলেছিলেন যে, সুবহানাল্লাহ! “মু’মিন, যে বিশ্বাসী, সে কখনো সত্যিকারের অপবিত্র হয় না”। ঠিক আছে? সে কখনো অপবিত্র হয় না। সহীহ মুসলিমে দীর্ঘ হাদীস আছে, সেখানে ইহুদীদের, বিশেষত গোঁড়া ইহুদীদের কথা বলা হয়েছে। হাদীসের বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারি যে, তারা ছিলেন বনু কুরায়দার কিছু গোঁড়া ইহুদী। তাদের মধ্যকার কোন মেয়ের মাসিকের সময়টাতে তারা সেই মেয়েকে পুরোপুরি পরিত্যক্ত করতো। তাকে বাসাতে ঘুমাতে পর্যন্ত দেয়া হত না। সুবহানাল্লাহ! তার সাথে এমন ব্যবহার করা হত যেন সে ভুল কিছু করছে। আল্লাহ সুবহানাওয়াতাআলা নাযিল করলেন- فَاعْتَزِلُواْ النِّسَا “রজঃস্রাবকালে স্ত্রী-সংগম বর্জন করবে”(সূরা বাকারাহঃ ২২২)। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, এটা দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে যে, সে সময় স্ত্রীদের সাথে পুরোপুরি ঘনিষ্ট না হতে। মহানবী (সাঃ)আমাদের উদাহরণ দেখিয়েছেন সেই অবস্থায় কিভাবে আয়েশা (রাঃ) এর সাথে মেলামেশা করতেন সেটার মাধ্যমে । মদীনার ইহুদীরা মহানবী (সাঃ) এর সমালোচনা করে বলতো যে, “তিঁনি এক্ষেত্রেও আমাদের থেকে আলাদা”। এর অর্থ হল, আমরা ব্যাপারটাকে এভাবে দেখিনা যে একজন মু’মিন সেসময় অপবিত্র হয়ে যায়। এসময় তাদের যে কাজটি করতে পুরোপুরি মানা সেটা হল মুসহাফ স্পর্শ করা। একারণে নয় যে সে অপবিত্র। একারণে যে মুসহাফ (কুরআন) ধরতে অজু করা প্রয়োজন। মুসহাফ ধরার জন্য, কুর’আনের শব্দগুলোকে ধরার জন্য গৌণ ধরণের পবিত্রতার প্রয়োজন হয়। আর একজন মেয়ে এই অবস্থায় এটা করতে পারে না। আধ্যাত্মিকভাবে সে পবিত্র থাকে। একজন মু’মিন কখনও অপবিত্র হয় না। যতটুকু যিকির, দু’আ করা সম্ভব তারা সেটা করতে পারবে। আইপ্যাড ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঊলামারা বলেছেন, আপনি যখন আইপ্যাড ধরে আছেন তখন আপনি একটা ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র ধরে আছেন। সেই মুহূর্তে একটা মুসহাফের ক্ষেত্রে যে নিয়ম এটার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।এ্যাপে এমন উপায় থাকে যে শব্দকে স্পর্শ না করে পাতা উল্টানো যায়। ফিক্‌হ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সেই মুহূর্তে আইপ্যাডটা মুসহাফের কাজ করে। সেই মুহূর্তে এটা মুসহাফ। তারপরেও, মেয়েরা সেটাকে ধরতে পারে এবং পড়তে পারে। খেয়াল রাখতে হবে শব্দগুলোকে না ধরার ব্যাপারে। সেটার জন্য পবিত্রতার দরকার হয়। এটা ধরার জন্য এক ধরণের পবিত্রতা দরকার হয়। আমি বোঝাতে চাচ্ছি, বিভিন্ন ধরণের মতামত আছে। ফিক্‌হ দৃষ্টিকোণ থেকে সেটা আলোচনা করতে গেলে অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে।

তবুও এটা বলা যায় যে, যিকির করা, দু’আ, কুর’আন পাঠ করা যাবে। আল্লাহর কাছে “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুওউন তু’হিব্বুল ‘আফ্‌ওয়া ফা’ফু ‘আন্নী” এই দু’আ করা যাবে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে দু’আ করা। এই সব করলেও কিন্তু কম নয়। এটা করলেও আল্লাহ লিখে রাখবেন যে আপনি সেই রাতে ইবাদত করেছেন কারণ আপনি অন্তত এতটুকু করেছেন।

নুমান আলী খানঃ

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমি একবার দারুস সালামে গিয়েছিলাম এবং সেখানকার ইমামকে একই প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিঁনি বোনদেরকে খুব সুন্দর একটা উত্তর দিয়েছিলেন। আমি আপনাদেকে আজ সেটা উত্তরটাই জানাতে চাই। তিঁনি বলেছিলেন, “এই অবস্থায় মেয়েরা নামায পড়তে পারেনা এবং বিশেষ কিছু কাজ করতে পারে না। তাদেরকে কিছু কাজ করতে মানা করা আছে। তার সেই কাজগুলো না করাই আসলে এক ধরণের ইবাদত। এই পুরো সময়ে মেয়েটা যখন ঘুমাচ্ছে এবং জেগে আছে পুরোটাই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। অন্যসময়ে সাধারণত যে ইবাদত সে করত, এই সময়ে তার সেই ইবাদত না করাই আসলে সারাক্ষণ, সবসময় ইবাদতের সমতুল্য।

সুবহানাল্লাহ! উপরন্ত সে সুস্থ্য থাকলে, পুরোপুরি পবিত্র থাকলে ইবাদত করত তাই সেটা তো লেখা হবেই”। সুবহানাল্লাহ! (মজা করে বললেন) মনে হয় যেন মেয়েদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। হা, হা, হা।

সংগ্রহ: nouman ali khan collection in bangla থেকে।

 

‘আম্মু বলেই ডাকি’

ডা. সাকলায়েন রাসেল


এই নারী বয়সে আমার প্রায় ১৭ বছর বড়! প্রথম যেদিন তিনি মা হন। সেদিন আমি প্রথম পৃথিবীতে আসি। সেদিন ছিল সোমবার, ৯ নভেম্বর…।

আমার প্রথম জন্মদিন, তাঁর প্রথম মা হওয়ার দিন! বছর ঘুরে ৯ নভেম্বর আসে…।
মা মুচকি হাসে, চোখে আনন্দ নাচে, বয়স হয়ে গেছে আমার…।বয়স হয়েছে তাঁরও…।

কিন্তু পার্থক্যটা রয়ে গেছে সেই ১৭ তেই! আমি তাই আটকে আছি সেই কৈশোরে..আম্মু বলেই ডাকি…অনেকে মুচকি হাসে…বুড়া ছেলে মা কে এখনো আম্মু ডাকে!!
ক্যামনে বোঝাই তাদের…পার্থক্যটা যে এখনো সেই ১৭ তে! তাই থাকবে শেষ দিন পর্যন্ত! জন্মদিন এলে তাই আগের মত কম বয়সী উচ্ছ্বাস দেখায় না মা। বলতে পারে না হালের সুরে…হ্যাপি বার্ডে বাবা!

জন্মদিন এলে তাই যেনতেন ভাবে বলে…আরে! তোর না আজ জন্মদিন!
ভাবখানা এমন যেন ভুলেই গিয়েছিল। একটু আগে মনে পড়ল!
অথচ টেবিলে বসলে…মিস নাই…। ছেলের জন্য ভালোমন্দ কত আয়োজন! উপলক্ষ জন্মদিন!

মিস হয়ে গেল শুধু এবার…৯ নভেম্বর!
ভাইরাল ইনফেকশন ও এর নানা জটিলতায় কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শয্যাশায়ী মা। বিকালের দিকে শুধু চোখ মেলে ফ্যালফ্যাল করে বললেন, ‘তোর জন্মদিনে এবার কিছুই করতে পারলাম না বাবা!’
আমিও চাইনি আম্মু কিছু করুক। শুধু চেয়েছি তাঁর রিপোর্টগুলো ভাল আসুক। চোখ মেলে তাকালে, এলোমেলো কথাগুলো সাজিয়ে উঠুক। আমার বুকের ধড়পড় ভাবটা একটু স্বাভাবিক হোক!
সেদিন থেকেই অপেক্ষায় আছি…মা সুস্থ হয়ে একবার হাসিমুখে তাকাবে! আজো সেই ক্ষণটা এলো না!

গত ৪৮ ঘন্টা হাসপাতালেই আছি…। এমন অপেক্ষায় থাকে অনেক সন্তানেরা।
প্রতিদিনই দেখি…কাল ছিলে তুমি, আজ আমি…কাল হয়ত সে!

পার্থক্য শুধু…মা আছেন আমারই আঙ্গিনায়…কিংবা আমি আছি তাঁর আঁচলে! ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে!

আজ এন্ডোক্রাইন, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট, মেডিসিন, নেফ্রোলজিস্ট, কার্ডিওলজিস্ট সবাই মাকে দেখেছেন..ভাল আশ্বাস শুনিয়েছেন।

তবুও মন অস্থির…কতোক্ষণে বাসায় যাব! মাকে নিয়ে…সেখানে যে আরেক মা আছে! মা ডাকতে ডাকতে অনেক সময় মনেই হয় না-নাম তার আরিবা!
আরিবা…আমার ৫ বছরের বুড়িমা…আমার সবটুকু কোলাহল!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম

 

দাম্পত্য জীবন: স্বামী-স্ত্রীর রাগারাগি এবং স্বামীকে বা স্ত্রীকে কেন ক্ষমা করবেন?

দাম্পত্য জীবন:
স্বামী-স্ত্রীর রাগারাগি এবং স্বামীকে বা স্ত্রীকে কেন ক্ষমা করবেন?

মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন

শাশুর-শাশুড়ির সেবা করতে বললে, বেশী দিন বাপের বাড়িতে থাকতে নিষেধ করলে, পকেট থেকে চাহিবামাত্র অর্থ বের করে দিতে না পারলে, সেজেগুজে বেপর্দা হয়ে ঘরের বাইরে চলাফেরা করতে নিষেধ করলে, মা-বাবার অনুমতি ছাড়া বাসার বাইরে যেতে নিষেধ করলে, স্ত্রীর কথামতো ও শাশুরবাড়ির পরামর্শ মত না চললে, হিন্দী চ্যানেল দেখা থেকে বিরত থাকতে বললে, ছোট ভাইকে চাকরী ব্যবস্থা করে দিতে না পারলে, বেশী রাত করে বাসায় ফিরলে, সিগারেট খেতে দেখলে, অসৎ পথে হলেও বেশী অর্থ উপার্জনের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে দেখলে, নিজের মা-বাবার বিরুদ্ধে উল্টাপাল্টা কথা বললে, বোনেরা বেড়াতে আসলে স্ত্রী মুখ কালো করে থাকলে, ভাই-বোন-ভাবীদের সাথে ঝগড়া করলে, বাসায় অপরিস্কার-অপরিচ্ছন্ন করে রাখলে, বাবা-মায়ের সামনে সন্তানদেরকে মারপিট করতে দেখলে, পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গ্যাঞ্জাম সৃষ্টি করতে চাইলে। যৌথ পরিবারের সুখের সংসার থেকে বের হয়ে আলাদা হয়ে বসবাস করার জন্য বাধ্য করলে।

আরো অনেক কারণে স্বামী-স্ত্রী রাগ করে থাকে। এই রাগারাগি থেকে অনেক সময় দীর্ঘদিন পর্যন্ত দুজন কথা বলা থেকে বিরত থাকে। রাগারাগির কারনে স্বামী-স্ত্রীর মধুর সম্পর্কে ফাটল ধরে। রাগারাগি চরম পর্যায়ে পৌছে গেলে অনেক সময় ছাড়াছাড়িও হয়ে থাকে। তাই বলি কি, দুই দিনের এই দুনিয়ায় বেশী রাগারাগি না করে সবকিছু হাসি-মুখে মেনে নিয়ে একটু ত্যাগ স্বীকার করে সংসার করলে সেই সংসার সুখের হয়, শান্তির হয়।

আরও একটি বিষয়,

দাম্পত্য জীবনঃ স্বামীকে বা স্ত্রীকে কেন ক্ষমা করবেন?

দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েই থাকে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে রাগ করে স্বামী-স্ত্রী দুজনে কিছু কিছু বাক্য বিনিময় করে।

এই যেমন,

“আমি তোমাকে আর ক্ষমা করবো না”, বা
“আমার পক্ষে তোমার সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখা সম্ভব না”, বা “জীবনেও আমি তোমাকে ক্ষমা করবো না”, বা “এটা আমার পক্ষে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব না”…ইত্যাদি, ইত্যাদি।

মনে রাখতে হবে যখনই আপনি “পারবো না”, “করবো না”, “মানবো না”, “মানা সম্ভব না”, “ক্ষমা করবো না”— এই জাতীয় শব্দগুলো ব্যবহার করেন, তখন এক অর্থে আপনার অক্ষমতাই প্রকাশ পায়। অর্থাৎ আপনার আর ক্ষমতা নেই মাপ করার বা মেনে নেওয়ার।

কিন্তু মহান আল্লাহর এক অন্যতম গুণ হচ্ছে ক্ষমা। এই ক্ষমা যদি আমরা করতে পারি তাহলে কিন্তু ক্ষমতা আবার প্রথম থেকে শুরু হয়ে যায় এবং ক্রমাগত ক্ষমা ক্রমাগত ক্ষমতার আধার। এটাই মহান আল্লাহর রীতি। তাই আসুন হে বিবাহিত ভাই-বোন, দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী মিলেমিশে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটি সুন্দর সংসার সাজান। দুজনের ছোট-খাট ভুলগুলি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখুন। কোন বড় ভুল হয়ে থাকলে অবশ্যই পরিবারের মুরব্বীদের পরামর্শ নিয়ে সমাধান করুন। (সুত্রঃ সিটিজি৪বিডি এর ব্লগ)

 

‘কদর রাত’

আমিনুল ইসলাম


মাহে রমজান যাচ্ছে চলে
কদর খুঁজি শুধু,
না পেলে হায় জীবন হবে
শুকনো মরু ধূ ধূ।
ভাগ্য আমার বদলে যাবে
পেলে কদর রাত,
জীবন হবে রঙিন রঙিন
থাকবে না জুলমাত।

 

গল্পে গল্পে বাবুদের শেখানো

কানিজ ফাতিমা


বাচ্চারা উপদেশ অপছন্দ করে, আর গল্প শুনতে ভালোবাসে। গল্প ব্যবহার করে আপনার শিশুকে দিতে পারেন প্রয়োজনীয় উপদেশ –

লিমার প্রতিজ্ঞা

লিমার ক্লাসে একটা মজার ইভেন্ট হতে যাচ্ছে। শুক্রবার সবাই তাদের প্রিয় খেলনা ক্লাসের সবাইকে দেখতে পারবে। লিমা গত মাসেই খালামনির কাছ থেকে একটা মজার খেলনা উপহার পেয়েছে – পেট ক্যাট। ক্যাটটা খুবই মজার, মজার সব কান্ড করে। কেউ হাতে তালি দিলে সে তার দিকে এগিয়ে যায়, কখনো খেতে চায়. কখনো ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরে। আনন্দ পেলে তার চোখ হলুদ হয়ে জ্বলতে থাকে, আর দুঃখ পেলে চোখ নীল হয়ে যায়। লিমা একটুও অপেক্ষা করতে পারছে না, শুক্রবার আর কতদিন পরে আসবে? উহ – এতো দিন লাগছে কেন? সে জানে সবাই তার খেলনা টা পছন্দ করবেই আর সেটা হবে ক্লাসে সবার সেরা খেলনা। লিমা তার খেলনা একটা সুন্দর ব্যাগে যত্ন করে গুছিয়ে রাখলো যাতে শুক্রবার সে সেটা নিতে ভুলে না যায়।

বৃহস্পতিবার লিমার প্রিয় কাজিন ফারিহা বেড়াতে এসেছে তাদের বাসায়। লিমা খুবই খুশী। সারা বিকাল ওরা দুজন খেলা করে কাটিয়ে দিলো।

সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ শেষে ওরা গল্প করতে বসলো। লিমা ওর স্কুলে কাল যে ইভেন্ট আছে সেটা ফারিহাকে বললো।
লিমা: জানো, কাল আমাদের ক্লাসে শেয়ার এন্ড টেল হবে। টিচার বলেছে আমরা আমাদের প্রিয় খেলনা নিয়ে যেতে পারবো। যার খেলনা বেশী ছেলে-মেয়েরা পছন্দ করবে তার খেলনা সেরা হবে। আমি আমার পেট ক্যাট নিয়ে যাবো।
ফারিহা : দেখিতো তোমার পেট ক্যাট?

ফারিহা আর লিমা পেট ক্যাট টা নিয়ে অনেক্ষন খেললো।

মামনি পাশের রুম থেকে বললেন, ” তোমরা এশার নামাজ পরে ঘুমিয়ে পড়ো। কাল সকালে উঠতে হবে, নামাজ পড়তে হবে আর স্কুলের জন্য রেডী হতে হবে”

“ঠিক আছে, মামনি” লিমা বললো।
কিন্তু তারা ভাবলো আর একটু খেললে কোনো ক্ষত নেই। তাই তারা আবার খেলা করতে লাগলো।

খেলতে খেলতে কখন যে রাট দশটা বেজে গেলো খেয়ালি করেনি ওরা। মামনি বিছানায় যাবার আগে প্রতিদিন লিমার ঘর চেক করে যায়। আজ এসে সে দেখলো লিমা আর ফারিহা এখনো খেলছে।

মামনি অসন্তুষ্ট হলেন, কিন্তু খুব রাগ করলেননা। ” তোমাদের কথা ছিল এক ঘন্টা আগে বিছনায় যাবার। আমি দেখতে পাচ্ছি এখনো তোমরা খেলছো। তোমরা কি নামাজ শেষ করেছো ?”

লিমা আর ফারিহা লজ্জা পেলো। কিন্তু মায়ের কাছে সেটা না বলে বললো ” এইতো পড়ছি”

মামনি এবার সত্যি রাগ হলেন। “তোমরা এখনই নামাজ পড়বে ও ঘুমাতে যাবে। আমি খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছি ” – বলে মামনি বেরিয়ে গেলেন।

ফারিহা আর লিমা নামাজ সেরে বিছানায় আসলো। কিন্তু না ধুমিয়ে তারা গল্প শুরু করে দিলো।

লিমা – মামনি, মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত করে, সব কিছু সময় মতো করতে বলে। সবসময় এসব ভালো লাগে না। ”
ফারিহা – আমার আম্মুও এরকম। সব মায়েরাই একই রকম।
লিমা – ‘এখন খাবার সময় খেতে আসো, এখন পড়ার সময়, এখন ঘুমানোর সময়
ফারিহা’ – একটু রাত করে ঘুমালে কি হয় ?
লিমা – আম্মু বলে রাত করে ঘুমালে সকালে ওঠা যায় না। আর সকালে না উঠতে পারলে দিন সুন্দর করে শুরু করা যায় না, পুরো দিনটাই এলোমেলো হয়ে যায়।
ফারিহা – আমার মনে হয়না একটু রাত জাগলে এত সমস্যা হবে –

লিমা, ফারিহা এভাবে কথা বলতে বলতে অনেক রাত হয়ে গেলো ঘুমাতে।

পরের দিন সকালে লিমার মনে হলো মামনি তাকে অনেক দূর থেকে ডাকছে।
– লিমা, তুমি এখনো উঠোনি, স্কুলে দেরী হয়ে যাচ্ছে, তুমি ফজরের নামাজও পড়োনি। লিমা ওঠো , চোখ খোলো

লিমার মনে হচ্ছে অনেক দূর থেকে মায়ের গলা ভেসে আসছে। লিমা চোখ খুলে দেখলো মা তার ওপরে ঝুকে আছেন, ওকে জাগানোর চেষ্টা করছেন।
‘সেই কখন থেকে ডাকছি, তাড়াতাড়ি ওঠো – স্কুলে দেরী হয়ে যাচ্ছে -‘

লিমা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো অনেক বেজে গেছে –
বাথরুমের দিকে দৌড়াতে দৌড়াতে বললো ” আমাকে আগে ডাকোনি কেন ”
” আমি তোমাকে ডেকে দিয়ে রান্না ঘরে গিয়েছি নাস্তা রেডি করতে, এসে দেখি তুমি তখনও ওঠোনি – তাড়াতাড়ি নামাজ পরে রেডি হয়ে নাও ”

লিমা কোনো রকম বাথরুম সেরে নামাজ পরে রেডি হয়েই বেরিয়ে গেলো। ওর নাস্তা খাওয়ার সময় আর হলোনা।

স্কুলে গিয়ে লিমার শরীর খারাপ লাগলে শুরু করলো। খুব ঘুম পাচ্ছিলো। টিচার কি পড়ালো সে কিছুই বুঝলো না। সেকেন্ড পিরিয়ডে ওর মাথা ঘুরাতে লাগলো আর বমি লাগলো।

টিচার জিজ্ঞাসা করলেন , ” লিমা, তুমি কি অসুস্থ?”
“না, টিচার ”
পরের পিরিয়ডে লিমার পেটে ব্যাথা শুরু হলো। টিচার তাকে ক্লাসের পাশে নিয়ে সিক বেড়ে শুইয়ে দিলেন।
” আজ সকালে কি দিয়ে নাস্তা করেছো লিমা?- টিচার জিজ্ঞাসা করলেন।
” নাস্তা করিনি”
“কাল রাতে ভালো ঘুম হয়েছে ? তোমাদের বয়সে ৮ ঘন্টা ঘুম হয় জরুরী”
লিমা কিছু বললো না, সে তার ভুল বুজতে পারলো। তার নিজের কার্যকারিতার জন্য তার লজ্জা লাগছিলো।
টিচার তার লাঞ্চপ্যাক থেকে স্নাকস বেরকরে ওকে খেতে বললেন।
“কম ঘুম আর সকালে নাস্তা না খাওয়ার জন্য এমনটা হয়েছে। ইটা খেয়ে নাও আর একটু শুয়ে থাকো , দেখবে ভালো লাগবে ইনশাআল্লাহ। ”

সত্যিই কিছুক্ষনের মধ্যেই লিমার ভালো লাগতে শুরু করলো। লিমা উঠে গিয়ে তার ক্লাসে বসলো।
লিমার ভাগ্য খুব ভালো, সে শেয়ার এন্ড টেল শুরু হবার আগেই ক্লাসে এসেছে।
“তোমার তোমাদের পছন্দের খেলনা নিয়ে রেডি হও। আমরা এখন শেয়ার এন্ড টেল শুরু করবো ”

সবাই তাদের ব্যাকপ্যাক থেকে নিজ নিজ খেলনা বের করে ডেস্কে রাখলো। লিমাও তার ব্যাকপ্যাকের দিকে এগিয়ে গেলো – তার প্রিয় পেট ক্যাট বের করে আনতে।
লিমা ব্যাগ খুলে খেলনাটা দেখতে পেলোনা।
নিশ্চয়ই বইয়ের পেছনে আছে – লিমা ভাবলো
নাহ – ওখানেও নেই
লিমার দুশ্চিন্তা হতে শুরু করলো – তবে কি ?

লিমার এবার মনে পড়লো – কাল রাতে সে ফারিহার সঙ্গে খেলার পর ব্যাগে ওটা ঢুকাতে ভুলে গেছে। গল্প করতে করতে সে ভুলেই গিয়েছিলো যে তাকে স্কুলের ব্যাগ আগের রাতে গুছিয়ে রাখতে হবে। সকালে দেরী করে ওঠার জন্য সে ঠিকভাবে সব কিছু চেক করতে পারেনি – তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পড়তে হয়েছে।

লিমার চোখে পানি চলে আসলো, সে উঠে গিয়ে ধীরে ধীরে নিজে ডেস্কে গিয়ে বসলো –
আম্মু ঠিকই বলেছে, রাত জেগে থাকলে পরের দিনটা একেবারে এলোমেলো হয়ে যায়। ঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়া আর স্কুলে আসার আগে সময় নিয়ে প্রিপারেশন নেয়া খুবই জরুরী। লিমার খুব মন খারাপ লাগছে – আর কোনোদিন সে এমনটা করবেনা।

গল্প শেষে:
গল্প শেষে আপনি আলোচনা করতে পারেন গল্পের শিক্ষা নিয়ে। প্রশ্ন করুন –
১. লিমা কেন সকালে উঠতে দেরী করলো ?
২. এতে তার কি কি সমস্যা হয়েছিল?
৩. তোমার কোনো বন্ধু বেড়াতে এলে তুমি কি কি করতে চাও?
৪. বন্ধুর সঙ্গে মজা করার সময় কি কি বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার?
৫. প্রস্তুতি বলতে কি বুঝায়? কি কি ভাবে আমরা প্রস্তুতি নিতে পারি? কয়েকটা উদাহরণ দাও –
৬. স্কুলে যাবার আগে কি কি প্রস্তুতি নেয়া দরকার? সেজন্য কত সময় প্রয়োজন ?
৭. রাতে ঘুমাতে যাবার আগে কি কি প্রস্তুতি নেয়া জরুরী?

 

মাহে রমজানে সবাইকে স্বাগতম!

প্রবাসী মজুমদার


এসেছে রমজান সাজিয়ে গগন
নেমেছে ধরায় আষাঢ় ও শ্রাবণ,
ধুয়ে মুছে যেতে জীবনের গ্লানি
সিয়াম সাধনায় গড়িতে জীবন।

ভেঙ্গে দিয়ে সব জটের অনিয়ম
শৃঙ্খলে আবার বাঁধিব নিজেকে
সকাল বিকেল নিশীথে জেগে
সেজদায় লুটাব প্রভুর বিধিতে।

খুলে দাও তোমার আকাশ দ্বার
ভরে দাও ধরার পাতাল জমিন,
শুধিতে তোমার করে নাও মোকে
রোজায় যেন পাই পরপারে জামিন।

রাহমাত,মাগফেরাত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে আবারও শুরু হয়েছে নিজেকে পরিশুদ্ধি করার মাসিক কর্মশালা – মাহে রমজান। সিয়াম সাধনার এক কঠিন অনুশীলনের মধ্য দিয়ে নিজেকে আবারও প্রস্তুত করার এ শুভ যাত্রায় সবাইকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা।

ফেলে আসা জীবনে ‘মাহে রমজানের’ এ প্রশিক্ষণ অসংখ্যবার পেলেও এর শিক্ষা, উদ্দেশ্য এবং অভিষ্ট লক্ষ্য যেন বরাবরের মতই ‘তাঁকে বন্দী কোরানের’ মত অনাদর আর অবহেলার গেলাপে যতন করে রেখে দিয়েছি । রমজানের পুর্বে রেখে আসা কু-অভ্যাস গুলোই বার বার লালন করা যেন জাতিগত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা বিমুখ মানুষের মতই নিজেকে মিছে উপোস রেখে যেন আল্লাহর কাছে নিজেকেই তামাশায় পরিণত করেছি।

নীতি নৈতিকতাহীন স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুব্ধ আজ আমরা যেন ধেয়ে আসা উলঙ্গ সভ্যতার সংস্কৃতির হিংস্র স্রোতে ভেসে চলেছি কোন এক অজানার দিকে। তীর হারা জাহেলিয়াতের এ ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে যেন নিজেদের গন্তব্যকে হারিয়ে ফেলেছি জনমের মত।

সৌর্য বীর্য আর খ্যাতিতে কালজয়ী ইতিহাস সৃষ্টিকারী স্রষ্টার অকুতভয় সেই দুঃসাহসী মানুষগুলোর ঈর্ষণীয় কৃতিত্বের দাবীদার এ ‘রমজান’ হোক আমাদের সীসা ঢালা প্রাচীর সম চরিত্র গড়ার অঙ্গীকার। সত্যর পতাকা উড্ডয়নে প্রতিটি নির্যাতিত মুসলমান হোক হিমালয় পাহাড় সম ঈমানের মুর্ত প্রতীক। বরফ গলা সমুদ্রের নোনা পানিতে ধূয়ে মুছে যাক সব অতীতের গ্লানি। আল্লাহর দ্বীনকে বুকে ধারণ করার মাধ্যমে প্রতিটি হৃদয় হোক প্রশান্ত মহাসাগরের মত উদার। আখেরাতে জান্নাতের প্লট এবং ফ্লাট পাওয়ার প্রত্যাশায় দুনিয়ার প্রতিটি জনপদ হোক দায়ীদের একচ্ছত্র বিচরণ ভূমি। কাবার মিনার থেকে ভেসে আসা আজান ইথারে ভেসে ভেসে আঘাত হানুক প্রতিটি ঘুমন্ত নামধারী আর অবিশ্বাসীর কর্ণকুহরে। আকাশ বাসীদের পদচারণায় বছরের প্রতি মাস হোক মাহে রমজানের মত বরকতময়।

কলমের কালিতে উগলে দেয়া প্রতিটি শব্দ হিরোশিমা আর নাগাসাকির মত অবিশ্বাসীদের বিদ্রোহী মনকে জ্বালিয়ে দিয়ে তৈরী হোক ভ্রাতৃত্ব বোধ আর সহমর্মিতায় ভরা এক নতুন বিশ্ব –
এ প্রত্যাশায়।

প্রবাসী মজুমদার
জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

মাক্সিম গোর্কির ‘মা’: শ্রমিকের অধিকার

নাজমুল হক


‘হ্যাঁরে, এমনি করে যদি মদ খাস, আমায় খাওয়াবী কী করে বল তো?
চোখ সেঁটে বন্ধ করে জবাব দেয় পাভেল:
‘সব্বাই তো মদ খায়….
মায়ের দীর্ঘশ্বাস পড়ে। ঠিকই তো বলছে। ও নিজে তো জানে, এক ওই শুড়িখানায়ই যা হোক ছিটেফোটা সুখের সোয়াদ পায় মানুষগুলো।

তবু বলে, ‘তাই বলে তুই মদ ধরিস নি, বাবা। তোর বাপ তো অনেক খেয়ে গিয়েছে। তার হাতে আমার দশাটা দেখেছিস তো…. তুইও আমার মুখের দিকে চাইবি না?’

গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ে মায়ের।
ছেলে আস্তে আস্তে বলল, ‘কেঁদো না মা। একটু জল দাও।’
‘দাঁড়া, বরফ দিয়ে জল নিয়ে আসি…..’

বই নিয়ে আসতে লাগলো পাভেল্ বাড়িতে। লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ে। পড়া শেষ হলে লুকিয়ে রেখে দেয়। মাঝে মাঝে কি সব যেন টোকে বই থেকে। তাও লুকিয়ে রাখে।…….

‘এই শুধোচ্ছিলাম, মুখ গুঁজে এ সব কী পড়িস তুই!’ আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করে।
বই বন্ধ করে পাভেল্ বলে, ‘বস মা।….’
‘এই যেসব বই পড়ছি দেখছ, এসব পড়া নিষেধ। আমরা যারা খেটেখুটে খাই তাদের সম্বন্ধে সব সত্যি কথা লেখা আছে কিনা, তাই পড়া নিষেধ এসব বই।… এগুলো গোপনে ছাপা হয়। এসবের খবর পেলেই আমাকে টেনে নিয়ে জেলে পুরবে।
হাঠাৎ যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে মায়ের। জিজ্ঞাসা করে, ‘আচ্ছা খোকা, তা হলে এসব পড়িস কেন?’
‘ভাব তো মা’, পাভেল্ বলে চলল, ‘কী জীবন আমাদের এখানে? তোমর বয়স চল্লিশ, তুমি কি সত্যি করে বেঁচেছ? বাবার মার খেয়েছ-এখন আমি বুঝি কেন তোমায় বাবা মারত। নিজে নরক ভোগ করেছে, তার শোধ তুলেছে তোমার উপর। কষ্ট পেয়েছে, অসহ্য মনে হয়েছে; কিন্তু কখনও বোঝেছে কেন এমন হয়। বাবা এই কারখানায় কাজ করেছে ত্রিশ বছর। শুরু করেছিল সেই যখন মোটে দুটো বাড়ি নিয়ে। সেই জায়গায় এখন সাতটা।’
‘কোন দিন একটুকু আনন্দ পেয়েছ, মা? মনে করে রাখার মত কী ছিল তোমার জীবনে?’
মা- ‘কী করতে চাস এখন?’
পাভেল্ বলে- ‘প্রথমে নিজের পড়াশোনা। তারপর অন্যদের। আমাদের শ্রমিকদের পড়তে হবে, জানতে হবে আমাদের জীবনে এতো কষ্ট কেন?’
মা ভাবে ছেলের মাঝে কত পরিবর্তন! কি বুদ্ধিদীপ্ত।

মায়ের চোখের সামনে সব অন্ধকার…. বোঁ-বোঁ করে ঘুরছে সব। সকল অবসাদ ঝেড়ে ফেলে যেটুকু শক্তি বাকি ছিল, তাই দিয়ে চিৎকার করে জড় হওয়া হাজার হাজার মানুষের উদ্যেশে বলে:
‘এক হও, এক হও, সব মানুষ এক হয়ে এক বিরাট শক্তি গড়ে তোল!’
একজন পুলিশ থাবা দিয়ে কলার ধরে মাকে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে- ‘চোপরাও!’
মা বলে- ‘কিছুতেই ভয় পেও না।
আর বেশি কী ভয়ঙ্কর আছে বলতো?
যে জীবন তোমরা কাটাচ্ছ তার চাইতে?’
‘মুখ বন্ধ করলি’ এই বলে হ্যাঁচকা টানে মাকে নিয়ে চলে পুলিশ।

এটি ছিল মাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসের কিছু অংশ।

কত টুকু অধিকার শ্রমিক পেয়েছে জানিনা। তবে মে দিবস ও শ্রমিককে পুজি করে আনেক সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তার উদাহারন আমাদের আশেপাশে অনেক।

আমি তখন ছোট। ১৯৯৩ সালে মে দিবসের শ্রমিক সমাবেশ শেষে আমাদের কাপড়ের দোকানের কারিগর মালেক ভাই দুপুর ৩টায় দোকানে এলে বললাম কি খবর ভাই- মুখ শুকনা কেন? মন খারাপ কেন?

আর বলো না একটা বাজে গালি দিয়ে বলল- ‘কেউ খাবে, কউ খাবে না’ এই শ্লোগান দিয়ে নেতারা ৪/৫টা করে খাবার প্যাকেট নিলো আর আমরা সারা দিন না খেয়ে রোদে মিছিল করে এক প্যাকেটও পেলাম না। আর জীবনে এই সব সমাবেশে যাব না।

মালেক ভাই না গেলেও অনেকেই এখন যায়। শ্লোগান দেয় দুনিয়ার মজদুর এক হও। এলাকার অনেকেই শ্রমিক মালেকদের সমনেই আজ অনেক সম্পদ ও ক্ষমতার মালিক এই মে দিবস ও মালেকদের পুঁজি করে। কত মে দিবস আসে যায় ভাগ্য বদলায় না শুধু মালেকদের।

 

ফলের খোসা দিয়ে রূপচর্চা

লাইফস্টাইল


ফলে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ তেমনি ফলের পাশাপাশি ফলের খোসাতেও রয়েছে পুষ্টি। সুতরাং রূপচর্চায় ফলের খোসা ব্যবহার করা যেতে পারে।

কি উপকার হবে
দাগ দূর করে,
ত্বকের উজ্জ্বলতা ও
মসৃণ ও সুন্দর করে তোলে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন
কিছু ফলের খোসা সরাসরিই ব্যবহার করা যায়। যেমন, লেবু। কিছু আবার গুঁড়া করে সংরক্ষণ করেও ব্যবহার করা হয়। যেমন, কমলার খোসা।

কি কি ফলের খোসা ব্যবহার করবেন ত্বকের উজ্জ্বলতার জন্য

কলার খোসা
সরাসরি ত্বকে ঘষুন। সপ্তাহ দুয়েক নিয়মিত ঘষলে ত্বকের জৌলুস বাড়বে।

কমলার খোসা
ত্বক উজ্জ্বল করতে কমলার খোসার গুঁড়া ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্ন ফেসপ্যাকে।

পেঁপের খোসা
ত্বক প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করতে পেঁপের খোসা অতুলনীয়। সরাসরি ত্বকে ঘষে লাগান পেঁপের খোসা।

আপেলের খোসা
আপেলের খোসা পানিতে ফুটিয়ে নরম করে মুখ ও গলার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। এটি বাড়াবে ত্বকের জৌলুস।

লেবুর খোসা
লেবুর খোসাও ব্যবহার করতে পারেন রূপচর্চায়। এজন্য লেবুর খোসা শুকিয়ে গুঁড়া করে নিন।

বিভিন্ন ফেসপ্যাকের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করুন ফলের খোসা। হাতের কাছে পাওয়া যায় এসব ফল সহজে সুতরাং ঘরে বসেই তৈরি করুণ ফলের খোসা দিয়ে রূপচর্চার উপকরণ।

 

অবশ্যই তোমাকে পরীক্ষায় প্রথম হতে হবে

ডা. তাজুল ইসলাম


মসজিদে গেলে সেখানে সামাজিক যুদ্ধ চলে কার ছেলে/মেয়ে কত ভালো করছে, কোথায় চান্স পেয়েছে, যখন ক্লাশে ফার্স্ট হতে শুরু করলাম বাবাসহ সবাই বলতে লাগলো অন্য ছেলেরা কম পড়েছে তাই তুমি ফার্স্ট হয়েছ।

কাহিনী সংক্ষেপ :রোগীর মা বলেন স্যার দিনাজপুর থেকে এসেছি –

বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নিউরোলজিস্ট দ্বীন মোহাম্মদ স্যার আমার সব কথা শুনে তাৎক্ষনিভাবে আপনার ঠিকানা দিয়ে বলেন এখনি ওনার কাছে চলে যান।

মা,খালা ও রোগী আজমি যা বললেন :

বাবা একটি সরকারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক, মা প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। আজমির বাবা গ্রাম থেকে উঠে আসা ব্রিলিয়্যান্ট ছাত্র। বোর্ডে স্টান্ড করা। দারিদ্র ও পারিপার্শ্বিকতা কারনে তিনি পরবর্তীতে তত ভালো করতে পারেননি।

তাই তিনি এখন তার অপূর্ণ স্বপ্ন একমাত্র ছেলেকে দিয়ে পূরণ করতে চান। ছেলেকে সব সময় কন্ট্রোল করা ও আগলে রাখার চেষ্টা করেন। প্রতিদিন ভোরে উঠার জন্য ১ বার, দুপুরে খাবার ব্রেকে ১ বার ও বিকেলে হাটতে গেলে ১ বার ফোন করবেনই।

যদি ফোন রিসিভ না করে তাহলে ১৫-১৬ বার ফোন করতে থাকে( বলে তোমার কিছু হলে আমি বাঁচবো না)।
পড়ার সময় আত্মীয় স্বজন এলে বলে ওর কাছে যেও না ওর পড়ার ডিস্টার্ব হবে, কিন্তু নিজে ছেলের পাশে বসে স্কুলের নানাবিধ সমস্যার কথা ছেলের কাছে শেয়ার করে।

বন্ধুদের বার বার ফোন করে জানতে চায় আজমি ক্লাশে আছে কিনা, কোথায় খাচ্ছে, কি খাচ্ছে। এতে বন্ধুরা মজা পেয়ে তারা বলে আঙ্কেল ও তো ক্লাশ করে না, বাজে হোটেলে খায় ইত্যাদি।

এভাবে ওনার টেনশন আরো বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ছুটির দিনও হল থেকে বাসায় আসতে মানা করে কেন না এতে পড়াশোনার ক্ষতি হবে। সারাক্ষণ খবরদারি করতো টিভি দেখো কেন, এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না ইত্যাদি।

বানান ভুল করলে মারধর করতো। বলতো ওমুকের ছেলের রোল ১ বা ২ আর তুমি সবসময় ৮-৯ এ থাকো।

আজমি বলে ক্লাশ সিক্স এ উঠার পর আমার রেজাল্ট ভালো হতে থাকে। আমি ফার্স্ট হতে শুরু করি। কিন্তু বাবাসহ অন্যরা বলে বাকী সবাই তেমন পড়াশুনা করে নাই, তাই তুমি ফার্স্ট হয়েছো। সন্ধ্যার পর কোন আড্ডায় যাওয়া নিষিদ্ধ। তুলনা করে বলে পাশের বাড়ীর মেয়েটি স্কলারশিপ পেয়েছে, ওমুকে তেমন করেছে। এরকম তুলনা করলে মন খারাপ হতো।

আজমি আরো বলে, স্যার মসজিদে নামাজ পড়ার পর এক সামাজিক যুদ্ধ বাঁধে- সবাই বড় গলায় বলতে থাকে কার ছেলে/ মেয়ে কত ভালো রেজাল্ট করেছে বা কত ভালো জায়গায় ভর্তি হতে পেরেছে। এগুলো বাবার মনে জিদ তৈরি করে, আমার ছেলে পিছিয়ে থাকবে কেন?

আজমির সমস্যা শুরু ৫ বছর আগ থেকে যখন সে ক্লাশ টেনে পড়ে। এক সময় সে লক্ষ করে লিখতে গেলে তার আঙ্গুল শক্ত হয়ে যায়, লিখতে অসুবিধা হয়। তবে নিজেই মনের জোরে চেষ্টা করে ভালো হই। আড়াই বছর পর আবার এ সমস্যা দেখা দেয় যখন এইচএসসি পরীক্ষার ২ মাস বাকী। একই সঙ্গে অতিরিক্ত স্বপ্ন দোষ হতে থাকে।ডাক্তার বলে এগুলো নরমাল।

আরো সমস্যা যোগ হয়- ঘাড় ভার হয়ে আসে, যেন কেউ একজন ঘাড়ে বসে আছে। এই ভারে হাটতে গেলে মাথা নিচু হয়ে যেতো। পড়তে গেলে মাথা জ্বলে।

একদিন দেখি পুরো ঘরে ধোয়ায় ভরা,একটি লোকের লম্বা আঙ্গুল আমার গলা চেপে ধরতে আসছে। আমি পা দিয়ে খাটে আঘাত করি যাতে শব্দ শুনে কেউ আসে। তারা আমার পা ও চোখ চেপে ধরে। আয়াতুল কুরসি পড়তে থাকি।কিছুক্ষণ পর সব পরিষ্কার। এর সঙ্গে আরেক সমস্যা শুরু হয়, কে যেন বলে আমি জানালার পাশে আছি, তোকে মেরে ফেলবো।

মনে হয় কে যেন পা ধরে টানে,মনে হয় বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছি। এসব কারনে পড়া শুনা বন্ধ হয়ে যায়। খালাতো ভাই হুজুর আনে। তিনি অন্য একজনের উপর জ্বীন ঢেকে আনেন। সে বলে তাবিজ আছে, জ্বীন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব বলে হুজুর বলে ওকে আর ঝামেলা করবেন না। এরপর হাত ঠিক হয়ে যায়। পরীক্ষার আর মাত্র ৩ দিন বাকি। তবু ও পড়া শুরু করি। পরীক্ষার আগের দিন কাউকে চিনি না, উদভ্রান্ত হয়ে পড়ি। সকালে ৪ জনে ধরে নিয়ে হলে বসিয়ে দেয়( বাবা চান না ইয়ার লস হোক)। ম্যাডাম বলে যা পারো লেখো।

৫ বার উঠি,ম্যাডাম প্রতিবার বসিয়ে দেয়( যেহেতু বাবা বলে গেছে)। সে পরীক্ষায় ৮৬% এন্সার করে ৮২% মার্ক পেয়েছিলাম।

পরের দিন পরীক্ষা দেবো না। তখন নিউরোলজিস্ট দেখানো হয়। তিনি সিটি স্ক্যান করে বলেন কোন সমস্যা নাই। তবু পরীক্ষা দেই। বন্ধুরা, বিশেষ করে মেয়েগুলো বলতে থাকে বেশী বেশী পড়তো বলে আজ এ অবস্থা।

প্রতিটি পরীক্ষা দেই আর হাতের সমস্যা তত বাড়তে থাকে। শেষ দিন হাতের আঙ্গুল একেবারে বেকে যায়, কোন রকমে টেনে টেনে লিখা শেষ করি। এরপর খালার বাসায় নিয়ে অন্য হুজুর দেখানো হয়। তিনিও একই কথা বলেন। এরপর হাতের সমস্যা কমে যায়।

খালা বলে স্যার ওর সমস্যা দেখা দিলেই হুজুরকে ফোন করে, আর হুজুর টাকা চায়। এভাবে অনেক টাকা দেওয়া হয়ে গেছে। এরপর ভার্সিটির এডমিশন টেস্ট। সেখানেও কষ্ট করে পরীক্ষা দেই।তবু বি- ইউনিটে ৩৪ তম হয়ে ঢাকা ভার্সিটিতে’ল সাবজেক্টে ভর্তি হই( জগন্নাথে ২১ তম হই)।

এরপর হাতের সমস্যার জন্য অর্থোপেডিক ডাক্তার দেখাই। একজন বলেন ট্রিগার আঙ্গুলে সমস্যা কিন্তু পিজিতে বলে কোন সমস্যা নেই। কোনভাবে ফার্স্ট টার্ম দেই। সেকেন্ড টার্মের আগে আব্বুকে বলি দ্বীন মোহাম্মদ স্যারকে দেখাতে। ভালো হইনি। তখন ম্যাডামের অনুমতি নিয়ে ” রাইটার” নিয়ে ৬টি পরীক্ষা দিলাম।

এরপর অন্য সমস্যা দেখা দেয় ঘুমাতে যাই কে যেন পা টেনে অন্য দিকে নেয়, আঙ্গুল শক্ত করে দেয়, হাত- পায়ের রগ দিয়ে বাতাস ঢুকে আমাকে অস্হির করে তুলে, মনে হয় সবাইকে মেরে ফেলবো,ভাংচুর করবো। এবার দ্বীন মোহাম্মদ স্যারের কাছে গেলে সরাসরি আপনার কাছে পাঠিয়ে দেয়।

এ কাহিনী থেকে যা শিক্ষনীয়:

১। লিখতে গেলে আঙ্গুল শক্ত হয়ে গিয়ে লিখতে না পারার রোগের নাম ” writer’s cramp”।

২। এটি একটি উদ্বেগ জনিত রোগ হলেও মূলত যারা পারফেক্টশনিস্ট( অতিরিক্ত নিখুত হতে চায় ) তাদের এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়।

৩। শিশু লালন পালন পদ্ধতি : মূলত ৪ ধরনের।তবে এখানে বাবা কে একাধারে অতি নিয়ন্ত্রণ ও অতি আগলে রাখার প্রব্ণতা দেখতে পাচ্ছি ( over control and over possessiveness)। এটি একটি মিশ্র পদ্ধতি। উভয় প্রবণতাই ক্ষতিকর।

৪। নিজেদের অপূর্ন স্বপ্ন সন্তানদের দ্বারা পূরণ করার অবাস্তব চেষ্টা তাদের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করে।

৫। সারাক্ষণ অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে আমরা সন্তানদের মনোবল ভেঙ্গে দেই,তাদের মনে হীনমন্যতা ঢুকিয়ে দেই।

৬। সামাজিক যুদ্ধ – কার ছেলে/মেয়ে কত ভালো করেছে- এটি আমাদের সমাজে একটি ব্যাধি হয়ে দাড়িয়েছে।জিপিএ-৫ এর নেশায় অভিভাবকরা মরিয়া হয়ে সন্তানদের পিছে লাগছে

৭। বাবার অতি নিখুত হওয়ার প্রবনতা আজমি পেয়েছে,অতি নিয়ন্ত্রণ, আগলে রাখার কারনে আত্মবিশ্বাস দুর্বল হয়েছে, অতি সামাজিক তুলনা ও সমালোচনায় হীনমন্যতা তৈরি হয়েছে,অতি প্রত্যাশা মনে আশঙ্কা তৈরি করেছে।

সব মিলিয়ে পরীক্ষা তার কাছে মূর্তিমান দৈত্য হিসেবে হাজির হয়- তার অবচেতন মন শঙ্কা ও উদ্বেগে ভারাক্রান্ত হয়।ফলে পরীক্ষার সামনে লিখতে গেলে তার ” রাইটারস ক্রাম্প” শুরু হয়।

৮। একই মানসিক দ্বন্দ্ব, সংঘাতের কারনে তার অবচেতন মনে অনেক চাপ পরে, যা তার ধারন ক্ষমতার বাইরে।

ফলে”dissociative- conversion”- রোগের লক্ষণ দেখা দেয়-

যার বেশীরভাগ লক্ষণকে আমাদের দেশে ” জ্বীন-ভুতে” ধরার লক্ষণ মনে করা হয়।
৯। মনে রাখতে হবে শুধু মেধা থাকলে হবে না,মানসিক জোর,আত্মবিশ্বাস ও থাকতে হবে।তানাহলে মেধা কোন কাজে আসবে না।

১০। যেহেতু মানসিক রোগ – তাই হুজুর ও ধর্ম বিশ্বাস -রোগীর মনে এই বিশ্বাস ও আস্হা তৈরি করে যে এবার সে জ্বীনের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে,তাই সাময়িকভাবে সে লক্ষণ মুক্ত হয়( আমরা একে বলি ” placebo effect “।

১১। কিন্তু রোগের মূল যে কারন তার অবচেতন মনের চাপ,দ্বন্দ্ব সেটির নিরসন না হওয়ার কারনে এবং মানসিক সক্ষমতা না বাড়ানোর কারনে, যখনি পরীক্ষা বা কোন চাপের মুখে পড়ে তখনি তার পূর্বের সমস্যা আবার দেখা দেয়।

১২। তাই জ্বীন- ভূত তাড়ানো নয়,তাদের দরকার মনোরোগ বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা

লিখেছেন- প্রফেসর তাজুল ইসলাম

 

দৈনিক ১৮ মা ও ঘন্টায় ৮ শিশুর মৃত্যু হয়

নারী সংবাদ


দক্ষ হাতে প্রসব না হওয়ায় বাংলাদেশে দৈনিক ১৮ মা ও ৮ নবজাতক মারা যাচ্ছে। এভাবে বছরে মৃত্যু হয় ছয় হাজার ৫৬৯ জন মায়ের ও ৭৪ হাজারটি নবজাতকের। মা ও শিশু মৃত্যুর বেশি ঘটনা ঘটে বাড়িতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ও অদক্ষ দাইয়ের হাতে সন্তান প্রসবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষ দাই অথবা চিকিৎসকের হাতে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা নেয়া হলে মা ও শিশু উভয়ের মৃত্যু ঝুঁকি কমে যায়। গ্রামের মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক ওষুধ-পত্র পেয়ে থাকলেও প্রসবসেবা সেখান থেকে পান না। কাছের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সেবা প্রদানকারী থাকলেও পরিবেশ নেই। আবার পরিবেশ থাকলেও সেবা প্রদানকারীরা থাকেন না। সরকারি সহযোগিতায় ইউএস এআইডি’র প্রকল্প ‘মামণি এইচএসএস’ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্ট করে কিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে সপ্তাহের সাত দিনই ২৪ ঘন্টা খোলা রাখার ব্যবস্থা করায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সন্তান প্রসবের সংখ্যা বেড়েছে। এতে করে মা ও শিশু মৃত্যুও রোধ করা গেছে। নোয়াখালী, লক্ষীপুর, হবিগঞ্জ, ঝালোকাঠি জেলায় আগের ১১টি থেকে ‘মামণি এইচএসএস’ এখন ১০০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রসব পূর্ববতি ও প্রসব পরবর্তি সেবাদানে প্রস্তুত করে গত চার বছরে সাড়ে ১৫ হাজার নিরাপদ প্রসব সম্পন্ন করেছে।

২০১৪ সালে এসব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেখানে ১ শতাংশ ডেলিভারি হতো ২০১৭ সালে সেখানে ৭ শতাংশ প্রসব হচ্ছে। এই চার উপজেলায় আগে যেখানে বাড়িতে ৭০ শতাংশ প্রসব হতো ২০১৭ সালে হয়েছে ৫৬ শতাংশ। গতকাল সোমবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র শক্তিশালী করে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বৃদ্ধি করা’ শীর্ষক সেমিনারে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উপরের চিত্রটি তুলে ধরেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য সেবা মেডিক্যাল অ্যাডুকেশন সচিব সিরাজুল হক খান, মেডিক্যাল অ্যাডুকেশন সচিব ফয়েজ আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, পরিবার পরিকল্পণা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. কাজী মুস্তাফা সারোয়ার, সেভ দ্য চিলড্রেন, বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. ইশতিয়াক মান্নান প্রমুখ।

তারা বলেছেন, সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বিশেষ করে ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্র সমূহকে শক্তিশালী করারমাধ্যমে দূর্গম ও সুবিধা বঞ্চিত জনপদে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের ব্যাপক উন্নতি ঘটানো সম্ভব। পরিবার পরিকল্পণা অধিদপ্তর এই সেমিনারের আয়োজন করে।

মা মণি এইচএসএস’র সাথে স্থানীয় সরকার, পরিবার পরিকল্পণা বিভাগ ও স্থানীয় কমিউনিটি সম্মিলিতভাবে স্ব স্ব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উন্নয়নে এগিয়ে আসে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নানা ঘাটতি (যেমন আয়া নিয়োগ, ওষুধ, আসবাপত্র ক্রয় করা) মেটাতে স্থানীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ করে এবং নিবিড় তদারকির মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চত করে। অন্যদিকে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ প্রয়োজন মাফিক লোকবল নিয়োগ দিয়ে,কখনো বা অবকাঠামো সারিয়ে তুলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে সেবা প্রদানের জন্য তৈরি করেছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।
ছবি:ইন্টারনেট।

 

রমজানে ইফতারির রেসিপি

রেসিপি


উপকরণ :
ময়দা ১-১/২সোয়া কাপ,
পানি ১ কাপ,
ছোলার ডালের বেসন (১ কাপ),
বেকিং পাউডার (আধা চা চামচ),
চিনি (দুই কাপ),
তেল,
লাল ফুড কালার (ন্যাচারাল ফুড কালার ব্যবহার করুন)…. ,
তেল-ভাজার জন্য হালকা ঘি ব্যবহার করতে পারেন,
পরিবেশনের জন্য ফল ও
খেজুর৷

সিরার জন্য :
চিনি আধা কেজি,
পানি ২ কাপ,
এলাচ ৪টি৷

প্রণালী :
১.প্রথমে বেসন ও ময়দা একসঙ্গে পানি দিয়ে মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করুন৷ ভালো করে ফেটা হলে ডিশে বেসন ঢেলে নিন৷

২.এবার গোলা অর্ধেক ভাগ করে অন্য একটি পাত্রে রং মিশিয়ে নিন৷

৩.এবার কড়াইয়ে তেল গরম করে ঝাঁঝরি মধ্যে গোলা রেখে কড়াইয়ের উপর রেখে হাতা দিয়ে ঘষে ঘষে তেলের উপর ছোট ছোট গোলা ফেলুন৷ ডুবো তেলে মচমচে করে ভেজে তুলুন৷

৪.অন্য একটি পাত্রে আগেই সিরা করে রাখুন ভাজা মাত্রই সিরায় ছেড়ে দিন৷ সব বুন্দিয়া ভাজা হয়ে গেলে সিরাসহ বুন্দিয়া চুলায় দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে ভাজুন৷

৫.হাত দিয়ে চেপে দেখুন নরম হলে নামিয়ে নিন৷

পরিবেশন:
সুন্দর একটি প্লেটে খেজুর এবং ফল
দিয়ে মাঝে কালার ফুল বুরিন্দা গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

চক্ষু অবনমিত জাতি

শামছুন নাহার মলি


এই প্রথম বারের মত প্রবাসে বেশি দিন থাকা। মানুষে বলে প্রবাস জীবন দুনিয়ার জান্নাত। বলার কারণ আছে। তবে কষ্ট ও যে নেই তা না।

ইউরোপ কে দুনিয়ার জান্নাত মনে করে,মনে মনে তাদের খুব রাগ প্রবাসিদের উপর। “আরামে আছো তো,তাই টের পাওনা” টাইপের কথা শুনতে হয়। সেজন্য এখানে এত সুখের জীবন কাউকে বলতেও ভয় হয়, ভয় হয় দেশের কোন সমস্যা বলতে। আমরা দেশে থাকিনা বলে দেশের বদনাম করতে পারবো না। যাইহোক।

ফিনল্যান্ড খুব ছিমছাম, গোছালো, শান্তিময় একটা দেশ। আয়তনে বাংলাদেশের তুলনায় অনেক অনেক গুন বড় হওয়া সত্বেও জনসংখ্যা এখনো
৫৫লাখের মত। যেখানে আমাদের শ্যামনগর থানাতেই এদেশের ডাবল হবে মানুষ।

ঠান্ডার দেশ, বিশ্বস্ত দেশ, খুন, ধর্ষন, চুরি ডাকাতি নাই। সিকোরিটি খুব স্ট্রং।বোরখা, হিজাব, নিকাব করে চলতে ফিরতে কখনো সমস্যা হয়নি আজ পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ্‌। শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা অনেক উন্নত।

সব মিলিয়ে আরাম প্রিয়, শান্তি প্রিয়দের জন্য এদেশ ভালো। সবচে ভালো লাগে সবাই সবাইকে এত রেসপেক্ট করে, হেল্প করে। বাচ্চার স্ট্রলার সহ মা যেখানে খুশি যাতায়াত করতে পারবে ফ্রিতে।
কখনো গৃহবন্দী লাগেনি এজন্য।

ধর্মীয় প্রোগ্রামে কখনো বাঁধা আসেনি আলহামদুলিল্লাহ্‌। সেজন্য ঈমান আমল বেঁচে দিতে হয়নি এই অমুসলিমদের কাছে। প্রতিবেশি গুলোর সাথে মিশেও মনে হয়নি মুসলিম বলে আমাদের ভিন্ন চোখে দেখে।

পথে, বাসে, ট্রেনে সব খানে নিশ্চিতায় চলা ফেরা করা যায়, আজ পর্যন্ত দেখিনি কোন ইভটিজিং। বা খারাপ দৃশ্য। অবশ্য আমার চোখ সব সময় বেবি স্ট্রলার আর রাস্তার দিকে থাকায় হয়তো আমি এখনো চেহারা দেখেই বলে দিতে পারবো না কে কোন দেশের।

এদের একটা ভালো গুন হলো এরা কারো নিয়ে নাক গলায় না, কাপড় এত কম পরে বের হয় তবুও গিলে খাওয়ার চাহনি দেখা যায় না। যেটা দেশে বেশি ফেইস করে প্রত্যেকটা মেয়ে, হোক হিজাবি, হোক নন-হিজাবি।

বাসে, মেট্রোতে বসা অবস্থায় আগে দেখতাম বই পড়তে, এখন মোবাইল নিয়ে নত মস্তকে থাকতে দেখি। কেউ কাউকে নিয়ে গবেষণা চালায় না। অথচ বাঙালীরা যদি একজন হিজাবিকেও দেখে তার উপর চালায় গবেষণা কোন দেশের, পরিচিত কিনা হাবিজাবি। এক ভাবি বলেন, বাইরে সে নেকাব দেন না কিন্তু বাংলাদেশি কমিউনিটির কোন অনুষ্ঠান বা দাওয়াতে গেলে মুখ ঢেকে যান।
আমার বান্ধবীর অভিযোগ, প্লেনে বাঙালীরা এত ছ্যাচড়ামি করছে যে ছোট বাবুটাকে খাওয়াতেও পারেনি।

দেশে গিয়ে আমার কিছু দিন বোরখা পরেও পা চলে না। এত মানুষের দৃষ্টি ভয় লাগে। কিন্তু কেন? এত বেশি নির্লজ্জ হয়ে গেছে কেনো মানুষ?
কোথায় চোখের পর্দা? হযরত সালাবার (রা) গল্প গল্পটা সাম্মানকে শুনিয়েছি। যদিও অথেনটিক কিনা সিওর না। কিন্তু তবুও চেয়েছি অন্তত চোখটা নত রাখা শিখুক।

সামারে বাইরে গেলে গল্প করে ওর মুখ ঘুরিয়ে রাখি। মাঝে মাঝে বলে আম্মু ওরা তোমার মত বোরখা পরে না কেন? আমি বলি ওরা কোরআন পড়ে না, মুসলিম না তাই। অনেক মুসলিমদের কে দেখেও বলে এরা কেন তোমার মত হিজাব, নেকাব পরে না? বলেছি ওরা কোরআন আরো পড়লে জানতে পারবে কিভাবে হিজাব করতে হয়।

কি বলবো বুঝিনা। শুধু শিখিয়েছি বেশি মানুষের দিকে তাকাবা না, পথ চলতে এদিক ওদিক তাকালে পড়ে যেতে হয়।আর মানুষের দিকে তাকালেও বেশিক্ষণ না দেখতে, কারণ শয়তান দ্বিতীয় দৃষ্টিতে তোমার সঙ্গী হয়ে যাবে। বেচারা ছোট মানুষ, আর কিই বা বলা যায়। এই ছোট দেশে যে এত মহিলা, পুরুষ কম। হসপিটাল, মার্কেট, স্কুল সবখানে মেয়ে বেশি।

আল্লাহ যেন আমাদের কে দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তিতে রাখেন। শকুনি চোখ থেকে রক্ষা করেন।

 

একটি শিশুর নামাজ শেখার গল্প

আফরোজা হাসান


বিভিন্ন সময় বোনদের সাথে যেসব হালাকাতে অংশগ্রহণ করি তাতে প্রায় সবাই যে প্রশ্নটা করেন তা হচ্ছে, সন্তানদের কিভাবে নামাজে অভ্যস্ত করাবেন! আমি সবসময় যে পরামর্শ দিতাম তা হচ্ছে, শিশুদেরকে মুখে বলে করানোর চাইতে, করে দেখিয়ে শেখানোটা অনেক বেশি সহজ। সুতরাং, বাবা-মা যদি নিয়মিত নামাজ আদায় করেন শিশুরা দেখে দেখে সেটা রপ্ত করে ফেলবে ইনশাআল্লাহ। সুতরাং বাবা-মাকে নিয়মিত নামাজ আদায় করতে হবে। এবং সন্তানদেরকেও উৎসাহিত করতে হবে নামাজের ব্যাপারে। ছোটদের ভাষায় ওদেরকে বুঝিয়ে বলতে হবে নামাজ কেন পড়তে হবে, নামাজ পড়লে আল্লাহ অনেক খুশি হবেন ইত্যাদি। তবে এখন কিন্তু আমি এই পরামর্শ ঠিক এমন করে বলি না কাউকেই। কেন?! কারণ আমার পুত্র সেই উপায় রাখেনি। ছোটবেলায় নাকীবও অন্য আর সব বাচ্চাদের মত আমরা যখন নামাজ পড়তাম পাশে এসে দাঁড়িয়ে যেত। আমাদের সাথে রুকু, সিজদাহ দিতো, কখনো ওর বাবার পিঠে উঠে বসে থাকতো, কখনো বা গলা ধরে ঝুলতো নামাজের সময়। এসব কর্মকান্ড করে কিছুক্ষণ পর আবার নিজের খেলায় ফিরে যেত। ছয় বছর পর্যন্ত এমনই চলছে। এরপর হাসানজ্বি বললেন, এখন থেকে আমাদের নামাজের ব্যাপারে সিরিয়াসলি একটু একটু করে তৈরি করানো উচিত নাকীবকে।

আমরা দুজন মিলে ঠিক করলাম যে, বাকি সব ওয়াক্ত নাকীব ওর ইচ্ছে মত নামাজ আদায় করবে শুধু যোহর ছাড়া। যোহরের চার রাকআত ফরজ ওকে পুরোটাই আদায় করাবো আমরা। আগের মত আর দু’এক রাকাত আদায় করেই দৌড় দিতে দেয়া যাবে না। আমরা দুজন মিলে বসে খুব সুন্দর করে নাকীবকে বুঝিয়ে বললাম, নামাজের মাঝখান থেকে ইচ্ছে মত উঠে যাওয়া ঠিক নয়। পুরো নামাজ শেষ করে সালাম ফিরিয়ে এরপর তুমি আবার খেলা করবে। সে নিজে যেহেতু জ্ঞান হবার পর থেকেই যুক্তিবাদী(মাশাআল্লাহ) তাই যুক্তি বোঝে এবং মেনেও নয়। সপ্তাহ খানেক খুবই সোনা বাচ্চা হয়ে আমাদের সাথে যোহরের চার রাকআত ফরজ নামাজ আদায় করলো। এক সপ্তাহ পর থেকে তার উসখুস শুরু হয়ে গেলো। সে হচ্ছে জাম্পিং বেবী। এক মূহুর্ত স্থির থাকে না। সেখানে সাত-আট মিনিট চুপচাপ দাড়িঁয়ে থাকাটা কষ্টসাধ্যই তার জন্য। তো একদিন ঠিক নামাজের আগ মূহুর্তে সে ওয়াশরুমে যেতে চাইলো। দুপুরে তাড়া থাকে আমাদের দুজনেরই। নাকীব দেরি করবে বের হতে তাই ওকে ছাড়াই নামাজ আদায় করে নিলাম। দ্বিতীয় দিনও সে একই সময়ে ওয়াশরুমে যেতে চাইলো। তৃতীয়দিনও যখন একই কথা বললো নামাজের আগে আমাদের দুজনের বুঝতে বাকি রইলো না যে, আমাদের সুপুত্র কেন ওয়াশরুমে গিয়ে বসে থাকেন। সে আসলে নামাজে ফাঁকি দিতে চায়। আমরা দুজন সেদিন নামাজ না পড়ে বসে রইলাম। নাকীব বেড়িয়ে যখন দেখলো আমরা ওর জন্য বসে আসি। সে খুবই আহত (মানসিকভাবে) হয়ে চুপচাপ আমাদের সাথে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো।

প্রথম প্রথম আমরা নাকীবকে নামাদের ভেতরের সূরা, তাসবীহ কিছুই পড়াইনি। ও শুধু আমাদের সাথে উঠ-বোস করতো। বেশ কিছু সূরা তার মুখস্ত ছিল। আর আমি প্রতিদিন ঘুমোতে যাবার সময় দু’তিন বার নামাজের ভেতরের সব দোয়া সমূহ ওকে পড়াতাম। আমরা চাইনি নামাজের ব্যাপারে বাড়তি কোন চাপ দিতে ওর উপর। কিংবা এভাবে বললে ভালো যে, ওকে বুঝতে দিতে চাইনি বাড়তি কিছু করানো হচ্ছে ওকে দিয়ে। ওয়াশরুমের আইডিয়া ফেল করার পর তিন-চার দিন পুত্র আমাদের চুপচাপই রইলো। এরপর একদিন ঠিক নামাজের আগে প্রচন্ড পেটব্যথা শুরু হলো তার। নড়তেই পারে না ব্যথার প্রচন্ডতায়। ওকে শুইয়ে দিয়ে আমরা দুজন নামাজ আদায় করে নিলাম। আমাদের নামাজ শেষ আর পুত্রের ব্যথা ভালো হয়ে জাম্পিং জাম্পিং শুরু। পরদিন যখন আবারো পেটব্যথা শুরু হলো হাসানজ্বি ছেলেকে আদর করে হেসে বললেন, কোন সমস্যা নেই বাবা তুমি শুয়ে থাকো। বাবা আর আম্মুতা নামাজ শেষ করে তোমাকে শিখিয়ে দেব শুয়ে শুয়ে কিভাবে নামাজ আদায় করতে হয়। নাকীব চোখ বড় বড় করে বলল, শুয়ে শুয়েও নামাজ পড়া যায়? হাসানজ্বি হেসে বলল, হুম যায় তো। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে এত বেশি ভালোবাসেন যে, যদি আমাদের কষ্ট হয় তাহলে যাতে বসে বা শুয়েও নামাজ পড়তে পারি সেই সুযোগও দিয়ে দিয়েছেন। নাকীব তখন উঠে বসে বলল, বাবা ব্যথা কমে গিয়েছে তোমাদের সাথেই নামাজ পড়বো। আলহামদুলিল্লাহ এরপর আর কোনদিনও নামাজ ফাঁকি দেবার নতুন কোন বুদ্ধি বের করেনি নাকীব।

আমরা যখন দেখলাম যোহরের চার রাকআত ফরজ নামাজ পড়াতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে নাকীব। তখন আসরের নামাজেও ওকে সাথে নিতে শুরু করলাম। যোহর ও আসর নামাজ বেশ কিছুদিন নিয়মিত আদায় করার পর মাগবীবের সময় ওকে সাথে রাখলাম। যখন দেখলাম যে নামাজের সময় হবার পর ডাকলেই নাকীব চলে আসছে। তখন আমরা ওকে বোঝালাম নামাজের সময় শুধু উঠ বোস করলেই হবে না। সূরা ও দোয়াও পড়তে হবে। ততদিনে সবকিছু ওর মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। আমরা তখন ওকে আমাদের সাথে নামাজ না পড়িয়ে একা একা পড়ালাম কয়েকদিন। জোড়ে জোড়ে পড়তো নাকীব সবকিছু তাই ভুল হলে ধরিয়ে দিতাম।

এর মাস খানেক পর আমরা ওকে ঈশার ফরজ নামাজ পড়ানো শুরু করেছিলাম। ছয় বছর বয়স থেকে নাকীবকে নামাজের ব্যাপারে উৎসাহিত করতে শুরু করেছিলাম আমরা। মোটামুটি পুরো এক বছর লেগেছিল নাকীবকে খুশি মনে নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত করতে। এর মাঝে আমরা কখনোই ওর সাথে রাগ করিনি। ফাঁকি দেয়ার যেসব পন্থা বের করেছিল সেসব যে আমরা বুঝতে পেরেছি সেটাও ওকে বুঝতে দেইনি। পেট ব্যথার মিথ্যা বাহানা করছে সেজন্য কোন ভৎর্সনাও দেইনি। আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় ছিল ধীরে সুস্থে নাকীবের মধ্যে নামাজের অভ্যাস তৈরি করার। তাই হুট করে কোন কিছু চাপিয়ে দেবার প্রয়োজন পড়েনি।

আর প্রথম মাসখানেক ছাড়া নাকীবও কখনোই বিরক্ত বা দুঃখী মন নিয়ে নামাজ আদায় করেনি। আমরা খেয়াল রেখেছি ওর ইচ্ছার দিকে। হয়তো বা আমাদের তাড়া ছিল বাইরে যাবার। কিন্তু তখন নাকীবের পছন্দের কার্টুন চলছিল টিভিতে। আমরা ওকে বলেছি ঠিক আছে তুমি এখন কার্টুন দেখো পরে একা নামাজ আদায় করে নিয়ো। কার্টুন শেষ হবার সাথে সাথে নিজেই জায়নামাজ বিছিয়ে খুশি মনে নামাজে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আমাকে বলতেও হয়নি। কোথাও বেড়াতে গিয়ে দু’একদিন যদি নামাজ পড়বে না এমন বলেছে, আমরা জোড় করে বাধ্য করিনি যেহেতু ওর উপর নামাজ ফরজ নয়। কিন্তু পড়ে অন্য সময় আদর করে বুঝিয়ে বলেছি কখনোই নামাজ ছেড়ে দেয়া ঠিক নয়। হিসাব করে দেখেছি পুরো আড়াই বছর লেগেছে আমাদের নাকীবকে মোটামুটি নামাজের বিষয়ে শেখাতে এবং খুশি মনে আদায় করতে অভ্যস্ত করতে।
এখন আলহামদুলিল্লাহ বলাও লাগে না। সে নিজেই নামাজের ব্যাপারে অনেক সতর্ক ও আগ্রহী। গত বছর প্রচন্ড জ্বর করেছিল নাকীবের। এত অসুস্থ্য বাচ্চাকে উঠিয়ে নামাজে ডাকতে ইচ্ছে করেনি তাই একাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর টের পেলাম নাকীব বিছানা থেকে উঠে এসে পাশে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। সেদিন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় আনন্দ ও প্রাপ্তির অশ্রু গড়িয়ে পড়েছিল চোখ দিয়ে। যখন নাকীবকে বসে থাকতে দেখি কখন তার বাবা বাসায় ফিরবে এবং সে বাবার সাথে জামায়াতে নামাজ আদায় করবে! কিংবা বার বার ফোন করে ওর বাবাকে তাগাদা দেয় যখন যে, বাসায় এসো একসাথে নামাজ আদায় করবো! আলহামদুলিল্লাহ প্রশান্তিতে ভরে যায় মন।
আসলে আমরা চেষ্টা করলেই বিন্দু বিন্দু করে শরীয়তের ভালোবাসার সিন্ধু গড়ে তুলতে পারি আমাদের সন্তানদের মনের ভেতরে। সেজন্য আমাদেরকে শুধু একটু কৌশলী এবং কিছুটা ধৈর্য্যশীল হতে হবে। তাড়াহুড়া করা চলবে না একদমই। শরীয়তের বিধান সারাজীবন মেনে চলতে হবে আমাদের সন্তানদেরকে। তাই সতর্ক থাকতে হবে গোড়ায় যেন গলদ থেকে না যায়। ভিত্তি যেন মজবুত হয়। সন্তানদের উপর শরীয়তের বিধান কখনোই চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়। কেননা চাপিয়ে দিলে সেটা বোঝাতে পরিণত হবে, কখনোই ভালোবাসাতে নয়। সুযোগ পাওয়া মাত্রই নিজের উপর থেকে সেই বোঝা সরিয়ে দিতে সচেষ্ট থাকবে। তাই শরীয়তের প্রতিটা বিধান নিজেরা মেনে চলতে হবে, কেন মেনে চলছি সেটা সন্তানদেরকে বুঝিয়ে বলতে হবে। এবং সন্তানরাও যাতে মেনে চলতে পারে সেজন্য ধীরে ধীরে ওদেরকে সেই ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে হবে। ফজরের নামাজ আমরা নাকীবকে পড়াতে শুরু করেছিলাম ওর আট বছর হবার পর। তাও ঘুম থেকে উঠার পর পড়ে নিতো। এখনো ঘুম থেকে উঠার পরই ফজরের নামাজ পড়ে। কেননা এখন আমাদের এখানে সূর্যোদয় হয় সাড়ে আটটায়। নাকীব আটটায় ঘুম থেকে উঠে ওয়াক্ত থাকতে থাকতেই নামাজ আদায় করে নিতে পারে। যেহেতু খুব শিঘ্রীই নাকীবের দশ বছর হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ ইচ্ছে আছে এখন থেকেই ছুটির দিনগুলোতে ওকে উঠিয়ে ধীরে ধীরে ফজরের আযানের পরপরই নামাজ আদায়ের অভ্যস্ত করে তোলার।

 

আমার বই পড়া (দ্বিতীয় পর্ব)

রায়হান আতাহার


“হ্যাল্লো কিশোর বন্ধুরা-
আমি কিশোর পাশা বলছি অ্যামিরিকার রকি বীচ থেকে। জায়গাটা লস অ্যাঞ্জেলসে, প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে, হলিউড থেকে মাত্র কয়েকমাইল দূরে। যারা এখনও আমাদের পরিচয় জানো না, তাদের বলছি, আমরা তিন বন্ধু একটা গোয়েন্দা সংস্থা খুলেছি। নাম- তিন গোয়েন্দা।

আমি, বাঙালী। থাকি চাচা-চাচীর কাছে। দুই বন্ধুর একজনের নাম মুসা আমান, ব্যায়ামবীর, অ্যামিরিকার নিগ্রো। আরেকজন রবিন মিলফোর্ড, আইরিশ অ্যামিরিকান, বইয়ের পোকা। একই ক্লাসে পড়ি আমরা। পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে লোহা-লক্কড়ের জঞ্জালের নিচে পুরোন এক মোবাইল হোম-এ আমাদের হেডকোয়ার্টার। তিনটি রহস্যের সমাধান করতে চলেছি, এসো না , চলে এসো আমাদের দলে…”

আমার সবচেয়ে প্রিয় লাইনগুলোর মধ্যে প্রথম দিকে থাকবে এই লাইনগুলো। ক্লাস সিক্সে উঠার পর এক বন্ধুর কল্যাণে “তিন গোয়েন্দা”-র সাথে পরিচয় হয়। এরপর আমাকে আর পায় কে! এক নাগাড়ে পড়তে থাকলাম। ঐ সময়টাতে “তিন গোয়েন্দা” ছাড়া কিছু ভাল লাগতো না।

কিশোর-মুসা-রবিনের পাশাপাশি রাশেদ পাশা, মেরি চাচী, জর্জিনা পারকার, রাফিয়ান, টেরিয়ার ডয়েল, ওমর শরীফ, ডেভিস ক্রিস্টোফার, ভিক্টর সাইমন, ফগ র‍্যাম্পারকট, হ্যানসন সবাইকে বাস্তবে খুঁজে ফিরতাম। এখনো ভালোলাগা অনুভূতিটুকু একটুও কমেনি।

তিন গোয়েন্দার সবগুলো ভলিউম সংগ্রহ করা আমার জীবনের অন্যতম একটি লক্ষ্য। কৈশোরের যে এডভেঞ্চার প্রীতি “তিন গোয়েন্দা” দিয়ে শুরু হয়েছিলো তা পূর্ণতা পায় “শার্লক হোমস” দিয়ে। একুশে বইমেলায় “শার্লক হোমস রচনাসমগ্র” কিনেছিলাম, যা আজ অবধি আমার সংগ্রহকৃত অন্যতম সেরা বই।

বিশ্ববিখ্যাত গোয়েন্দা কাহিনী লেখক স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের অনবদ্য কীর্তি “শার্লক হোমস”। শার্লক হোমস, ডাক্তার ওয়াটসন, মাইক্রফট হোমস, প্রফেসর জেমস মরিয়ার্টি, মিসেস হাডসন- প্রতিটি চরিত্র যেন একেকটি মুগ্ধতার নাম। রচনাসমগ্র পড়তে যেয়ে “দ্য ফাইনাল প্রব্লেম” গল্পে শার্লক হোমসের মৃত্যুর ঘটনা পেলাম। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম গল্পটি পড়ে। আবার অবাকও হলাম, কারণ রচনাসমগ্র শেষ হতে তখনো বাকি ছিলো। পরে জানতে পেরেছি, শার্লক হোমসকে পাঠকের চাপে ফিরিয়ে এনেছিলেন ডয়েল। কী যে ভালো লেগেছিলো!

শার্লক হোমসের গোয়েন্দাগিরি তখন আমাকে পেয়ে বসেছিলো। নিজের মাঝে “গোয়েন্দা গোয়েন্দা” ভাব! তবে সেটি স্বাভাবিকভাবেই বেশি দূর এগোয়নি। কিন্তু বইয়ের পাতায় শার্লককে খুঁজেছি বারবার। আমার মত অলস প্রকৃতির পাঠক, যে কিনা এক বই সহজে দ্বিতীয়বার পড়ে না, সেই আমি রচনা সমগ্রটি কতবার পড়েছি তার কোন হিসেব নেই। “২২১/বি, বেকার স্ট্রীট, লন্ডন”- এখনো আমাকে ঠিক আগের মতই টানে। টিভি সিরিজ কিংবা মুভিতে যখনই শার্লককে দেখার সুযোগ পেয়েছি, হাতছাড়া করিনি।
অগণিত এডভেঞ্চারপ্রেমীদের মতো শার্লক হোমস আমার স্মৃতিতে বেঁচে থাকবেন আজীবন।

…..চলবে

১ম পর্ব

Raihan Atahar
Postgraduate Researcher at Bernal Institute
Material and Metallurgical Engineering at BUET

 

একই দিনে তিনটা নারী নির্যাতন কেস!

ডা. মিথিলা ফেরদৌস


প্রথম কেস: মা মেয়েকে নিয়ে আসছে,স্বামী মেরেছে। ইনজুরি গুরুতর না। সারা শরীরে মারের চিহ্ন। চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলাম, তারা যাচ্ছেনা সার্টিফিকেট চায়। এই কাজ আমি সাধারণত এভোয়েড করি তাই ইমার্জেনসীতে যেতে বললাম। যদি উপকার হয় কিছু।

দ্বিতীয় কেস: স্বামী স্ত্রী দুইজন একসাথেই এসেছে। মেয়েটার থুতনীতে কাট ইনজুরি।দেখেই বোঝা যায় কেউ মেরেছে। পুরুষটি এসেই বলে।
: সেলাই করে দেন।
: কখন কেটেছে?
: ৫/৬ঘন্টা হবে।

এই পর্যায়ে মহিলা বলে,
: শেষ রাতে।
হিসাব করে দেখলাম প্রায় ৮/৯ ঘন্টা। ৬ ঘন্টার মধ্যে হলে স্টিচ দেয়া যেতো।
: এখন আর সেলাই দেয়া যাবেনা, চিকিৎসা দিচ্ছি, আর ড্রেসিং করে নিয়ে যান।ভাল হয়ে যাবে। খুব ডিপ ক্ষত না।
পুরুষ টি ক্ষিপ্ত
: ডাঃ বলেছে, সেলাই দিতে।
: আমি কি তাহলে?
: ছেলে ডাঃ বলেছে।
: কেনো,মেয়ে ডাঃ কি চিকিৎসা জানে
না?
: আপনি সেলাইয়ের ব্যবস্থা করেন।
: কিভাবে হইছে?
: স্বামী স্ত্রীর কথা কাটাকাটি।
মনে মনে ভাবলাম, কথা কাটাকাটিতে স্বামীর কিছুই হইলো না!!
বুঝলাম, অশিক্ষিত শ্রেণী, নারীর প্রতি অবজ্ঞা, এরে বুঝায় লাভ নাই। ছেলে ডাক্তারের কাছে পাঠায় দিলাম।

তৃতীয় কেস: মোটামুটি অবস্থাপন্ন ঘরের, শিক্ষিতই মনে হলো। মেয়েটা দুই চোখ ফুলে কালো হয়ে গেছে, মেয়েটা টলতেছে। মাথায় ব্যথা পেয়েছে।
টিকিট নিয়েই হেড ইনজুরী কেস লিখে, নিউরো সার্জারি ডিপার্টমেন্ট এ পাঠায় দিলাম। ডিপার্টমেন্ট এর ওপিডি বন্ধ। তারা ফিরে আসছে।

এই ছেলের মধ্যেও উদ্ধত ভাব।
: আপনি চিকিৎসা দেন। এইটা নরমাল কেস।মাথার বাইরে ব্যথা পাইছে।
বুঝলাম নিউরোর পিওন, এইটা বুঝায় পাঠায় দিছে, ঝামেলা কমানোর জন্যে।বললাম,

: আমি নিউরোসার্জারিতে ট্রেনিং করে আসছি, কোনটা ভিতরের ব্যথা আর কোনটা বাইরের আমি বুঝি। আমরা যেকোন সময় জ্ঞান হারাতে পারে, তখন বিপদে পরতে পারেন।

ছেলেটা ভর্তি করবেনা, এখানে আইনত কিছু সমস্যা আছে তাই কোনমতে চিকিৎসা নিয়েই বাড়ি নিয়ে যাবে। আমি আরও বুঝলাম, ছেলেটা কাপুরুষ শ্রেণীর, মেয়েদের সাথে এই শ্রেণীর পুরুষরা খারাপ ব্যবহার করে বিকৃত আনন্দ পায়। যেহেতু হাসপাতাল আমাদের সিকিউরিটি দেয় না। তাই আমিও বললাম,
: পাশের রুমে ভাল ডাক্তার আছে দেখান।

শিক্ষিত অশিক্ষিত সব শ্রেণীতে কিছু ছেলেমানুষ আছে যারা মেয়েদের নিম্ন চোখে দেখে, বউ পিটানো বীর পুরুষ এরা।এরা পিওন বা কোয়াককেও গুরুত্ব দিবে, কিন্তু শিক্ষিত মেয়ে ডাক্তার হোক, ব্যাংকার হোক, টিচার হোক পারলে তাদের সাথেও খারাপ আচরণ করবেই।এইটাই তাদের বীরত্ব। এইটাকেই তারা পুরষত্ব মনে করে। অসভ্য ইতর নিম্নশ্রেনীর এই সব পুরুষ মানুষ,যত উচু বা নীচু পরিবার থেকেই আসুক, মেয়েদের সবসময় নিম্নজাতের মনে করে, কারন হয়তো পরিবারে নিজের মাকেও এমন অপমানিত হতে দেখেছে। এরা শিক্ষিত হলেও তাই এদের মানসিকতার পরিবর্তন আসে না।

এর আগের পোস্টে নারী শিক্ষা তথা আমাদের সার্বিক শিক্ষা নিয়েই বলেছি।আজ এইসব কাপুরুষদের জেনেটিক্স নিয়ে বললাম। কিছু অমানুষ বীর পুরুষ যুগে যুগে বুঝবেনা, নারীদের সম্মান করাই প্রকৃত শিক্ষা।

নারী নির্যাতনে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। যেভাবেই হোক শীর্ষে তো আছি তাইনা?

ডা. মিথিলা ফেরদৌস
বিসিএস স্বাস্থ্য
সাবেক শিক্ষার্থী, রংপুর মেডিকেল কলেজ।

 

বিয়ে ও সমাজ (পর্ব-৪)

কানিজ ফাতিমা


পরিবারে দ্বন্দ নিরসন এর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করছিলাম গত সংখ্যায়। আমরা জেনেছি যে, Conflict Management বা বিরোধ ব্যবস্থাপনার উপায়গুলো হল-

1. Forcing
2. Accommodating
3. Avoiding
4. Compromising
5. Collaborating

Forcing (চাপ প্রয়োগ), ও Accommodating (মেনে নেয়া) পদ্ধতি দু’টি সম্পর্কে আমরা জেনেছি। এবার বাকী তিনটি পদ্ধতি জানা যাক-

Avoiding বা সরে যাওয়া
দ্বন্দ সম্পর্কে নিশ্চুপ থাকা, কোনরূপ মনোযোগ না দেয়া এবং দ্বন্দ নিরসনে কোন ভূমিকা পালন না করা ও নিস্ক্রিয় থাকা। এটি Non-assertive ও non co-operative অর্থাৎ এ পদ্ধতিতে কোন চাপ প্রয়োগ নেই আবার কোন সহযোগিতাও নেই। যদি দ্বন্দের বিষয়টি খুবই নগণ্য হয় অথবা যদি আপনি মনে করেন যে কিছু সময় পরে প্রতিপক্ষ নিজে থেকেই চুপ হয়ে যাবে তবে এই Avoidance বা অগ্রাহ্য পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা উত্তম। অনেক ছোট-খাট দ্বন্দ পারিবারিক জীবনে ঘটে যা সময়ের ব্যবধানে আপনা থেকেই সমাধান হয়ে যায়। এই সব টুকিটাকি ব্যাপারে Avoiding খুবই কার্যকরী পন্থা। যেমন ধরুন যদি আপনার স্ত্রীর উপরে কোন কারণে Stress বা চাপ বেড়ে যায় (যেমন সন্তান অসুস্থ, বাসায় অতিরিক্ত মেহমানের চাপ ইত্যাদি), এবং এ কারণে তার মেজাজ কিছুটা খিটখিটে হয় এবং আপনার সঙ্গে দ্বন্দে লিপ্ত হয় হবে এক্ষেত্রে Avoiding সর্বাপেক্ষা উত্তম পন্থা। তবে অন্যপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ বা মৌলিক দাবীর মুখে লাগাতার নিশ্চুপ থাকা বা Avoiding পদ্ধতির ব্যবহার একটি অকার্যকরী পন্থা।

Collaborationবা সংযোগিতামূলক:
এটি সর্বাপেক্ষা উত্তম পন্থা। দ্বন্দ নিরসনের এ পদ্ধতিতে অন্যপক্ষের মতামতকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয় সাথে সাথে নিজ মতামতকেও সুদৃঢ়ভাবে উত্থাপন করা হয়। এ পদ্ধতিতে দু’পক্ষকেই মনে রাখতে হয় যে মতামতের ভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক এবং প্রত্যেকেরই নিজস্ব মত পোষণের অধিকার আছে। এ পদ্ধতিতে দু’পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে এমন একটি পথ খুঁজে বের করা হয় যাতে দুপক্ষের দাবীই পরিপূর্ণরূপে পূরণ হয়। এজন্য একে Win-Win পদ্ধতি বলা হয়।
যেমন ধরুন, স্বামী বললো আজ আমরা পার্কে বেড়াতে যাবো। স্ত্রী বললো আমি আজ চায়নিজ (ফুড) খেতে চাই। তারা যদি পার্কে বেড়িয়ে ফেরার পথে চায়নিজ খেয়ে আসে তবে তারা Collaboration পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করলো। এই পদ্ধতিটি বিরোধ নিরসনের সর্বাপেক্ষা উত্তম পন্থা। কিন্তু সমস্যা হল সব সমস্যায় এমন উপায় খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন যাতে দু’পক্ষের দাবী পূর্ণরূপে পূরণ হয়।

Compromise বা আপোসমূলক পদ্ধতি হল সম্ভবত:
সর্বাপেক্ষা বেশী ব্যবহৃত বিরোধ নিরসন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে দু’পক্ষের দাবীর কিছু অংশ মেনে নেয়া হয় এবং দু’পক্ষই তাদের অবস্থান থেকে সরে এসে মাঝামাঝি কোন স্থানে আপোস রফা করে। যদি Collaborating সম্ভব না হয় তখন স্বামী-স্ত্রীর উচিত Compromise-এর মাধ্যমে বিরোধ নিরসনের প্রচেষ্টা চালানো। যেমন ধরুন স্বামী চাইলো তার অফিসের কাছাকাছি বাড়ি ভাড়া করতে। স্ত্রী চাইলো তার অফিসের কাছাকাছি বাসা নিতে। তারা যদি দু’জনের অফিসের মাঝামাঝি কোন স্থানে বাসা নেয় তবে তারা Compromise পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করলো।

উপরোক্ত পাঁচটি পদ্ধতি জানার পর আপনি প্রশ্ন করতে পারেন কোন পদ্ধতিটি সর্বাপেক্ষা উত্তম? মূলত: প্রত্যেকটি পদ্ধতিরই কিছু ভাল ও কিছু দুর্বল দিক রয়েছে। তাছাড়া অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একেক সময় একেকটি পদ্ধতি বেশি কার্যকরী প্রমাণিত হয়। তবে সাধারণভাবে বলা যায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে Forcing পদ্ধতি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। এবং Collaborating ও Compromising পদ্ধতি দু’ টি সর্বাপেক্ষা বেশী অনুসরণ করার চেষ্টা করা উচিত।

(চলবে)

পর্ব-৩

 

মাহে রমজানে ইফতারির রেসিপি

ফল, সবজি ও ছোলার সালাদ

উপকরণ
– ছোলা পৌনে ১ কাপ,
– যেকোনো সবজি টুকরা আধা কাপ,
– বিটলবণ আধা চা চামচ,
– শসা ১ টেবিল চামচ,
– আনারস আধা কাপ,
– কাঁচা মরিচ কুচি ১ চা চামচ,
– খেজুর আধা কাপ,
– ধনিয়াপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ,
আলু সিদ্ধ ৩টি,
-ডালিম পরিমাণমতো,
-নাশপাতি ১টি,
-লেবুর রস ১ টেবিল চামচ,
-লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালি
১. ছোলা সারা রাত ভিজিয়ে রেখে অল্প সিদ্ধ করে নিন।

২. আনারস, খেজুর, আলু সিদ্ধ, নাশপাতি চারকোনা করে কাটুন।

৩. সবজি হালকা লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে নিন।

পরিবেশন: এরপর ছোলা, সবজি ও ফলের সঙ্গে বিটলবণ, কাঁচা মরিচ কুচি, ধনিয়াপাতা কুচি, লবণ, লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করুন। রেসিপি : কালের কন্ঠ

গোলাপ পিঠা

প্রয়োজনীয় উপকরন
ডো তৈরির জন্যঃ
– চালের গুড়া ২ কাপ
– চিনি আধা কাপ
– ডিম ১ টি
– তেল ২ টেবিল চামচ
– দুধ ১ কাপ
– ঘি ১ টেবিল চামচ
– তেল ডুবো তেলে ভাজার জন্য পরিমান মত ।

সিরা তৈরির জন্যঃ
– চিনি ২ কাপ
– পানি ২ কাপ
– সাদা এলাচ ২ টি
– লং ১ টি

প্রস্তুত প্রনালী
( ১ ) প্রথমে চিনি, পানি, এলাচ ও লং একসঙ্গে জ্বাল দিয়ে সিরা তৈরি করে রাখতে হবে ।

( ২ ) এরপর একটি পাত্রে দুধের সাথে চিনি দিয়ে ফুটতে দিতে হবে । দুধ ফুটতে শুরু করলে চালের গুঁড়া দিয়ে সিদ্ধ শক্ত কাই বানাতে হবে ।

( ৩ ) এবার শক্ত সিদ্ধ কাই একটু ঠান্ডা করে নিয়ে এর সাথে ডিম ভেঙে দিয়ে এর মধ্যে ঘি দিয়ে খুব ভালোভাবে ময়ান করতে হবে । এভাবে সুন্দর ভাবে ময়ান করে মসৃন ডো বানাতে হবে ।

( ৪ ) এখন মসৃন ডো থেকে অল্প করে আটা নিয়ে ছোট ছোট গোল পাতলা রুটি বানাতে হবে। এরপর ৬ টা ছোট রুটি নিয়ে একটার উপর আরেকটা রেখে ছবির মত করে সাজাতে হবে । তারপর রুটি গুলোকে গোল করে ভাঁজ করে রোল বানিয়ে চাকু দিয়ে কেটে দুই টুকরো করলেই দুইটা গোলাপ হবে । কমেন্টে ছবি দেয়া আছে, দেখুন ।

( ৫ ) ভালো ভাবে বুঝার জন্য ছবিতে দেখুন । তারপর গোলাপ গুলোর নিচের দিকে হাত দিয়ে একটু চেপে দিলে খুলে যাবে না ।

( ৬ ) এভাবে একই পদ্ধতিতে সব টুকু আটা দিয়ে অনেক গুলো গোলাপ তৈরী করতে হবে। এরপর গোলাপ গুলো ডুবো তেলে বাদামী করে ভেজে সিরায় ছাড়ুন ।

( ৭ ) এটা সিরায় ভেজানো গোলাপ পিঠা । তাই সিরাতেই ভিজিয়ে রাখতে হবে । সিরায় ভেজানোর পর ঢেকে ২-৩ ঘন্টা রেখে দিন । তৈরী হয়ে গেল মজাদার গোলাপ পিঠা ।

পরিবেশন: গোলাপ পিঠা সিরায় ভিজে নরম হলে পরিবেশন করতে হবে । এই উপকরনে ৫-৬ জনকে পরিবেশন করা যাবে । রেসিপি- আফরুজা শিল্পী।