banner

সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ইং, ,

Monthly Archives: May 2024

 

‘সত্যি বলছি পবিত্র হব’

তামান্না সাদিকা


এই সময় তীব্র কড়া রোদের মাঝে হুট করে যে বৃষ্টি চলে আসে ছোটবেলায় আমি এই বৃষ্টিটাকে কান্না মনে করতাম। নিঃসঙ্গতার কান্না। এই বৃষ্টিটাই গাছে গাছে নতুন পাতা এনে দেয়। আমার জানালার সামনে গাছের কচি কচি পাতা গুলো দেখতে কি পবিত্র লাগছে…! বৃষ্টি যেন সব অপবিত্রতা মুছে নিয়ে গেছে…। কেমন যেন একা লাগছে … খুব একা ।। নিঃসঙ্গ… গাছের পাতা গুলোর মতো পবিত্র হতে ইচ্ছে করছে।

একটা সময় খুব চেষ্টা করেছিলাম পবিত্র হবার … কে জানে হয়তবা হয়েছিলাম কিছুটা।
ইদানিং ফেসবুকে জঘন্য সব ধর্ষণের ঘটনা পড়ে বুক ভরতি করে বমি করে এসে ক্লান্ত লাগে। পাশে শুয়ে থাকা বেবিদের দিকে তাকিয়ে অজানা আতঙ্ক আচ্ছন্ন করে ফেলে …। নামাজের সাথে সংমিশ্রিত পরের অনিষ্ঠ, পশুত্ব, মানসিক যৌন চর্চা। আমার পাশের প্রিয় গুড বয়টি দিনের আড়ালে দ্বিধাহীন মাতাল। একাকীত্বের মুহূর্তগুলোতে চেনা যায় আমার আমি কে …। রোজার সাথে মিথ্যা, ভ্রান্তি …। ছোট ছোট ভাল কাজ গুলো না করতে পারলে বড় বড় ভালো কাজ কিভাবে করবো …।
যারা পৃথিবী বদলে দেবার স্বপ্ন দেখে তাদের তর্জনীর আঙ্গুলটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে রেখে পথ চলতে হয় …। সত্যিই বলছি পবিত্র হব ।
এসবের সাথে নিজের জীবন আচরণ মিলে গেলে, কেমন অপবিত্র অপবিত্র লাগে …। সহজ, সাবলীল সুন্দর কাজে যেগুলো বাঁধা হয়। গতিকে slow করে দেয়, আর হয় spritual অন্তরে বোধের বিনাশ…। বোধের উদয় না হলে কি ধর্ষণ আইন দিয়ে ঠেকানো যাবে …। ভয় লাগে এখন আমার বোধের সাথে আমার সন্তানের বোধ তৈরি হচ্ছে …। সব ভুলতে চাই।
সব …সব ভুলে পবিত্র হতে চাই…
আমরা কেউ পরিপূর্ণ না কাছের মানুষ গুলো একজন আরেকজনের gap গুলো পূর্ণ করে করবে …। তাহলেই সহজ হবে … …।
আহা, আমার এলোমেলো অগোছালো চুলগুলোতে উষ্ণ ছোঁয়ায় যদি সে বলে “এসো পবিত্র হই” … এর চেয়ে প্রশান্তির আর কিইবা হতো …।

‘ হে প্রভু পবিত্র এই মাসে আমাকে একটু পবিত্র করো পবিত্রতার রূপে যেন সব অনিষ্ঠ গুলো ঝলসে যায় … অপার্থিব ঘ্রাণে সুরভিত হোক প্রত্যেক অন্তর ….।”
Inspired by : ( sura all mayeda 100)
قُل لاَّ يَسْتَوِي الْخَبِيثُ وَالطَّيِّبُ وَلَوْ أَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيثِ فَاتَّقُواْ اللّهَ يَا أُوْلِي الأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
বলে দিনঃ অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের প্রাচুর্য তোমাকে বিস্মিত করে। অতএব, হে বুদ্ধিমানগণ, আল্লাহকে ভয় কর-যাতে তোমাকে মুক্তি পাও।

Say: “Not equal are things that are bad and things that are good, even though the abundance of the bad may dazzle thee; so fear Allah, O ye that understand; that (so) ye may prosper.”

 

সম্মানের মৃত্যুর সন্ধানে

ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস


মৃত্যু একদিন প্রমাণ করে দিবে, আমরা এই পৃথিবীর কেউই নই, আহামরি কোন গুরুত্বপূর্ণ কেউই নই। এরপর আমরা হারিয়ে যাব বিস্মৃতির অতল তলে। বন্ধু বান্ধব এবং পরিবারের সদস্যরা এক দিন দুদিন, এক মাস, এক বছর এক যুগ কাঁদবে এর বেশি নয়।

সত্যি করে বুকে হাত দিলে বলেন তো, পাঁচ বছর আগে মারা যাওয়া আপনার কোন ফ্যামিলি মেম্বারের জন্য আপনি কি এখনো নিয়মিত কান্না করেন?

– অবশ্যই না।

– তাহলে?

– মৃত্যুর পরেও কীভাবে বেঁচে থাকব?

– হুম, উপায় আছে।

উপায় হচ্ছে বিশ্ববাসীর জন্য দীর্ঘমেয়াদী কিছু করে যাওয়া, জীবনকে পরার্থে বিলিয়ে দেওয়া, নিজের চিন্তা এবং কর্মের উত্তরসূরি রেখে যাওয়া।

বেঁচে থাকার এটিই সহজতম পথ।

আসুন মানুষের জন্য স্বচ্ছ এবং পবিত্র নিয়তে কিছু করি।

এই মৃত্যু আমাদের আরও শিখিয়ে গেল যে, সার্টিফিকেট বা ডিগ্রি অর্জন জীবনের মূল লক্ষ্য হতে পারে না, ডিগ্রির ফল ভোগ করার সুযোগ স্রষ্টা নাও দিতে পারেন। কাজেই জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ একজন ভাল মানুষ হওয়া, মানুষের মত মানুষ হওয়া।

আজ আমাদের কিছু কলিগ মারা গেল। কাল এই মৃত্যু আমার আপনার ও হতে পারে। গতকাল এই সময়ও মানুষ গুলো জানত না যে তারা আজ এই সময়ে বেঁচে থাকবে না। আমরাও জানি না, কাল আমরা সবাই এই সময় বেঁচে থাকব কিনা।

যারা মারা গেছে তারা অনেক অনেক ভাগ্যবান। আল্লাহ হয়ত এই বড় ধরনের দুর্ঘটনায় তাদের মাফ করবেন।

আমার আপনার কী হবে, কীভাবে সম্মানজনক মৃত্যু হবে সেই চিন্তা ই করা উচিৎ আমাদের।

বিশ্বনবী বলেছেন “কেউ যদি সুস্থ বরকত পূর্ণ হায়াত এবং সম্মানের মৃত্যু কামনা করে – সে যেন মানুষের উপকার করে আর আত্মীয় স্বজনের সাথে ভাল ব্যবহার করে”

সম্মানের_মৃত্যুর_সন্ধানে
Dr. Mohammad Ilias
Phase B Resident
Department of Neuromedicine
BSMMU

 

রাত জাগার ভয়াবহ কুফল

লাইফ স্টাইল


রাত হল অন্ধকার, অস্পষ্টতা যখন সূর্যের আলো অস্ত যায় তখন নেমে আসে রাত। আর চার্লস সিজিলার এর মতে, সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরপরেই মানুষের ঘুমের হরমোনগুলো কাজ করতে শুরু করে। মানুষ যদি রাতের প্রথম অংশ না ঘুমায়, তাহলে ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও বিষণ্ণতা সহ অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। রাতের প্রথমাংশে ঘুমালে খুব সহজে এসব অসুখগুলো শরীরে দানা বাঁধতে পারে না।

রাত জাগার ভয়াবহ কুফল

ইচ্ছাকৃত আর অনিচ্ছাকৃতভাবেই হোক না কেন, ইদানিং রাত জাগাটা এক ধরনের ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছে। আমরা এখন রাত জেগে কাজ করি আর ভোর হলে ঘুমাতে যাই। আমরা অনেকেই এখন রাত জেগে কাজ করতে পছন্দ করি ।

বিশাল কর্মব্যস্ততার এই ব্যস্ত নগরীতে আমরা এখন ভুলে যাই নিজেদের যত্ন নিতে। যার পরিণতি অল্প বয়সেই বুড়িয়ে যাওয়া সহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়া। চলুন জেনে নেওয়া যাক রাতের বেলা না ঘুমালে কিংবা কম ঘুমালে আমরা কী ধরনের অসুবিধার
সম্মুখীন হই।

১) ক্ষুধা বেড়ে যায় এবং আপনি বেশি খেতে শুরু করেন। যার পরিণতি হচ্ছে অবেসিটি বা স্থুলতা।
২) স্ট্রোক করার ঝুঁকি চারগুণ বেড়ে যায়।
এছাড়াও অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায় ।
৩) টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৪) মস্তিষ্কের টিস্যু নষ্ট হওয়া শুরু হয়।
৫) ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে শুরু করে।
৬) অ্যাসিডটি যেটা পরবর্তীতে পাকস্থলীতে আলসারে রূপ নেয় ।
৭) কর্মের ধারাবাহিকতা বিপর্যস্ত হয় এবং
কর্মচঞ্চলতা হ্রাস পায় ।
৮) কোন ব্যাপারে পূর্ণ মনোযোগ দেয়াটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে যায় ।
৯) সারাদিন একটা ক্লান্তি অনুভুতি হয় ।
১০) গ্যামিট কম তৈরি হয়। ফলে রিপ্রোডাকশন সিস্টেমের ফার্টিলিটি কমে যায় ।
১১) উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায় ।
১২) চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে ।
১৩) ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ পড়ে এবং ত্বকের রঙ নষ্ট হয়ে যায় ।
১৪) চামড়া দ্রুত কুঁচকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে ।
১৫) মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় ।
১৬) সারকোপেনিয়া হবার প্রবণতাও বেশি দেখা যায়। সারকোপেনিয়া হলো এমন এক জটিলতা যাতে রোগি ধীরে ধীরে পেশী হারাতে থাকেন ।
১৭) নারীদের মাঝে মেদবহুল পেট এবং মেটাবলিক সিনড্রোম হতে দেখা যায় বেশি।
১৮) স্তন ক্যান্সার এবং প্রস্টেট ক্যান্সারের
মতো ক্যান্সারের কোষ দেহে গঠন হয়ে থাকে অতিরিক্ত রাত জাগার কারণে !
অনেকদিন তারুণ্য ধরে রাখতে ঘুমের কোন বিকল্প নেই। নিয়ম মেনে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমালে শারীরিক এবং মানসিকভাবে খুব সহজেই সুস্থ্য থাকা যায়। সুত্র & ছবি: ইন্টারনেট

 

রূপনগরে ইসলামী ব্যাংকের প্রথম মহিলা শাখা উদ্বোধন

নারী সংবাদ


ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ৩৩৩তম ও প্রথম মহিলা শাখা হিসেবে মিরপুর মহিলা শাখা গতকাল ঢাকার মিরপুরে রূপনগর আবাসিক এলাকায় উদ্বোধন করা হয়।
ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য মো: আসলামুল হক প্রধান অতিথি হিসেবে এ শাখা উদ্বোধন করেন। ব্যাংকের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও প্রধান নির্বাহী মো: মাহবুব উল আলম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড: এ কে এম আব্দুল মোমেন ও ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আবু রেজা মো: ইয়াহিয়া। স্বাগত বক্তৃতা দেন ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা সেন্ট্রাল জোনপ্রধান মো: শফিকুর রহমান।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ব্যাংকের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখাপ্রধান হাসনে আরা বেগম। গ্রাহক ও সুধীবৃন্দের পক্ষে বক্তব্য রাখেন লন্ডনের লেবার ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবুল বাশার ও নারী উদ্যোক্তা কানিজ শারমিন মুক্তা। ব্যাংকের নির্বাহী-কর্মকর্তা, স্থানীয় ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মো: আসলামুল হক প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। ইসলামী ব্যাংকে উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের চলমান উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংক আরো বেশি ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশের তরুণ সমাজকে মাদকের আগ্রাসন থেকে মুক্ত করার জন্য জনমত সৃষ্টি করতে হবে। ইসলামী ব্যাংকের কল্যাণমুখী সেবা গ্রহণ করতে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
মো: মাহবুব উল আলম সভাপতির বক্তৃতায় বলেন, ইসলামী ব্যাংক দক্ষিণ ও দক্ষিণ এশিয়ার সর্বপ্রথম সুদমুক্ত ও শরিয়াহর ভিত্তিতে পরিচালিত ব্যাংক। এ ব্যাংক দেশের উন্নয়ন নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সব নিয়মনীতি পরিপালন করে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। এই ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা, পেশাগত দক্ষতা ও আন্তরিক সেবা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত। জনগণের আস্থার ফলেই ইসলামী ব্যাংক বিশ্বের সেরা এক হাজার ব্যাংকের মধ্যে অন্যতম। বিজ্ঞপ্তি। সুত্র:নয়াদিগন্ত

 

কৈশোর স্মৃতিতে রমজান

হাবিবা মৃধা


রমজান মাস এলেই ছোট্ট প্রানটা নেচে  উঠত খুশিতে!আম্মুর  সাথে তারাবী পড়ার সে কি আনন্দ!যদিও তখন নামাজের নিয়মকানুন কিছুই জানতাম না যতটুকু মনে পড়ে আম্মু কতবার সিজদায় যায় এটা দিয়ে রাকাত পূর্ণ করা হত!

আর এখন দেখি জেনেবুঝেও মানুষ শুধু রাকাত পূর্ণ করতে তারাবী পড়ে অথচ সময় নিয়ে নিষ্ঠার সাথে তারাবীতেই রয়েছে সফলতা রাকাত পূর্ণ এরপরেই গুরুত্বপূর্ণ!

সবচেয়ে প্রিয় সময় ছিল ভোর রাতের সেহরী!ভোর রাতে ইমাম সাহেব কাকার কুরআন তিলাওয়াত আর সেহরী আহব্বানেই আমাদের ঘুম ভাঙত!মনে পড়ে এখনো গ্রামের সেই রমজান মাসের বেহেশতি পরিবেশের কথা!

সবচেয়ে আনন্দের  ছিল দিনে যে আমার দুই তিনটা রোজা হত!কিন্তু সে পনেরো দিনে ত্রিশ রোজা পূর্ণ হওয়ার খুশি আর বেশি দিন টিকেনি ছোটভাইয়ার জন্য!

ভোর রাতে বড়ভাইয়া,মেজোদাদা,মেজোআপু সবাইকে ডেকে ডেকে উঠানো হত আমাদের  দুইভাইবোনের মনে হয় ঘুম পূর্ণ হতনা ভোর রাতে জাগার আশায়!

সবাই সেহরী খেয়ে আমাদের একটু শেষের দিকে খেতে ডাকত এখন মনে হচ্ছে সেটার কারণ ছিল দেরি করে খাবার খেয়ে যাতে দিন বারোটায় একটা রোজা হয়ে গেছে বলে খাবার খাই!

দ্বিতীয়ত আম্মু যাতে একটু শান্তি মত নামাজ পড়ে নিতে পারেন!আম্মু  কাজের ফাঁকেই সবসময় নামাজ তিলাওয়াতের জন্য সময় নিতে চাইতেন!

আমরা দোতলার সিঁড়িতে বসে থাকতাম কখন আম্মু বলবে তোমরা হাতমুখ ধুয়ে খাবার খাও!কিন্তু তাদের খাবার শেষ হতে না হতেই ছোটভাইয়া বলত সেহরীর সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে এরপর রোজা হবেনা তুমি কান্না করে দাও।

যেইকথা সেইকাজ! কিন্তু খাবারের জায়গা থেকে আদেশ আসত ঠিক আছে হাত মুখ ধুয়ে এসো কাল ঠিক দশটার পরে ই খাবার খেতে হবে!

একদিন নিয়মের বিপরীত ঘটল,পাশাপাশি  ঘুমিয়ে ছিলাম ছোটভাইয়া কে চুপি করে ডেকে নিয়ে এসেছে মেজো আপু,ঘুম ভেঙ্গে সে কি মনখারাপ!সেদিন সিঁড়িতে বসে কেদেছিল এই অবুঝ প্রাণীটি!

সকালে ছোটভাইয়ার সাথে অভিমান!কোন কথা নেই!অতঃপর তার সুন্দর বাণী ছিল এমন শোন!আমাকে এখন ডেকেই উঠানো হবে আমার পুরো রোজা থাকার বয়স হয়ে গেছে আর তুমি আরেক টু বড় হলে!আর দিনে যে দুইটা রোজা এগুলো কোন সত্যি রোজা নয় দিনে কিছু খেলেই রোজা হবেনা!

আম্মু কে একটু বেশি ই জ্বালিয়েছি এখন মনে পড়ে খুব মন খারাপ হয়!আম্মু চাইতেন ভোর রাত্রে একটু একা নিভৃতে নামাজ পড়তে আমরা ভাই বোন মিলে পুরো ঘরে বাইরে সেহরী আমেজ গড়ে তুলতাম!বড় ভাইয়া খেতে বসে কি মজার মজার ঘটনা ঘটাত আর সেই নিয়ে হাঁসি !!

ছোটভাইয়ার প্লেট থেকে মাছ ভাতের নিচে লুকিয়ে রেখে বলত বিড়াল নিয়ে গেছে আর সে সন্দেহ করতে নীরব চুপচাপ খেয়ে বাঁচতে চাওয়া মেজোদাদাকে!একটু পর প্লেটের ভাতে হাত দিয়ে মাছ পেতেই শুরু হত হাঁসি!

আম্মু বলতেন আশেপাশের মানুষেরা আগেই সেহরী খেয়ে ইবাদত বন্দেগী করছে তোমরা হইহুল্লোর করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলছ!

আম্মু কে সবচেয়ে বেশি জ্বালিয়েছি সেহরীর তরকারি নিয়ে!আমার একটা সাথী ছিল যার ঘরে রমজান মাসেও খুব একটা মাছ মাংস হতনা হয়ত বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া!ও রাতে আমার কাছে ঘুমাতে আসত বেশিরভাগ সময় ই আমি জিজ্ঞেস করতাম আজ রাতে ওরা কি খেয়েছে ,ভোর রাত্রে কি খাবে??

কখনো ডিমরান্না,সবজি আর বেশিরভাগই আলুভর্তার কথা বলত!একদিন রাতে ও বলল আজ ওদের শুধু আলুভর্তা কিন্তু ওটা খুব মজা!! পেঁয়াজ তেলে নেড়ে বানিয়েছে ওর মা!আমার শুনে ই খেতে ইচ্ছে করল কিন্তু ওকে বলিনি সম্ভবত!

আমাদের ঘরে সেদিন ইলিশ মাছ কিন্তু একটাই মাছ যাতে ছটুকরো মাছ মাথা লেজ সহ আট পিচ হয়!আম্মুর হয়তো খেয়াল ছিল ওদের ঘরে দুই টুকরো রান্না করা মাছ পাঠিয়ে দিবে যেহেতু আমাদের ঘরে ছয়জন আমরা!

আমার এখনো মনে পড়ে আম্মু ওদের জন্য তরকারি দিতেই আমি বলি আম্মু দুই টুকরো মাছ পাঠালে ওর ছোট ভাইবোনদের জন্য ও খেতে পায়না আমার মাছ টুকরো আমি ওকে দিতে চাই আমাকে শুধু মাছের ডিম দিলেই হবে!আম্মু সহজ করে বললেন আজকে আশেপাশে সবাই মাছ এনেছে ওদের কে দিবে তো!

রাতে আবার সাথীকে জিজ্ঞেস করলাম কেউ তরকারি দিয়েছে ওর উত্তর নাতো!

আম্মু কে নামাজের ভিতরে গিয়ে আবার বলি আম্মু কেউ তরকারি দেয়নি ওদের ! আমার কথায় আম্মু সেদিন হয়ত বিরক্ত হয়েছেন কিন্তু রাগ করেন নি মোটেও তাছাড়া রাগমুখে আমি আম্মু কে দেখিনি!

এরপরে আম্মু নিজের টুকরো আমার সহ চারটুকরো মাছ দিয়ে আমতা আমতা করে কিছু একটা বলছিলেন শান্তি থাক এবার এমন!ভোর রাতে আম্মু আলুর ঝোল দিয়ে খেয়েছিলেন আর আমার জন্য ডিম রেখেছিলেন!

আজ খুব করে মনে পড়ছে সেই দিনটির কথা !আসলে নিজেরা মাছ গোশত দিয়ে পেটপুরে খেলেই বুঝি রোজা হয়!সমাজের মানুষের সেহরী আমেজ দেখে তাই মনে হয়!

তবে এর বিপরীতে ভালো মানুষ ও থাকেন সবসময় ই কম বেশি!আমাদের ইমাম সাহেব কাকার বাবা যাকে মাষ্টার দাদা ডাকি আমরা!এখনো পর্যন্ত রমজান মাসে তিনি ইফতারী নিয়ে সবার ঘরে ঘরে ঘুড়ে বেড়ান বিশেষ করে যাদের একটু আয়োজন কম হত তাদের জন্য!

প্রথম প্রথম যখন রোজা রাখতে শুরু করেছিলাম সেটাই বেশি মজার ছিল বার বার হাদীসে কুদসীর সেই হাদীস মনে পড়ত আল্লাহ্ নিজেই প্রতিদান দিবেন

তখন ভিতরে শুধু ভাইয়ার কাছে শোনা #বুখারী  শরীফের হাদীসের কথা মনে পড়ে খুশি লাগত:রোজাদারের মুখের গন্ধ কস্তুরীর চেয়ে ও উত্তম!রোজাদার দুইবার খুশি হয় একবার ইফতারে দ্বিতীয়বার রবের সাথে সাক্ষাত লাভে!!

!ভাইয়া দুষ্টামি করে বলত তুমি ডুব দিয়ে পানি খেয়েছ গোসলের সময় আর আমি ভাবতাম সত্যি!!আবার আম্মুর কাছে গিয়ে কান্না!

আম্মুর ইফতার বানাতে বানাতে বেশিরভাগ সময় ই আজান দিয়ে দিত আর  আম্মু খুব আফসোস করতেন সময় নিয়ে ইফতারের আগে দোয়া ও করতে পারিনা!! মায়েদের সংসারের সব কাজ সেরেই আবার সবার মুখে খাবার দিতে ইফতার তৈরি রান্নাবান্না আরো কতকাজ!

পাশের ঘরে ইফতার নিয়ে যেতে যেতে প্রায় সময় ই আজান দিয়ে দিত আর আমার ইফতার হত তাদের সাথে অবশ্য তারাও রখুব খুশি হতেন আর ঘরে ফিরে সবার কতরকম কথা শুনতাম!!
পবিত্র ক্বদরের রাত্রিতে সাথীরা মিলে গোসল করতাম প্রতি ফোঁটা পানিতে গুনাহ মাফ হবে তাই বেশি করে সাবান মাখা তবে আজো কোথাও এমন দলীল পাইনি একসাথে তারাবী,একসাথে কদর পড়তাম আমরা সাথীদের খুব মিস করি এসবের জন্য এখনো!

ছোট চাচাতো বোনটা একটু মাঝে মাঝে তারাবীতে আলসেমি দেখালে আম্মু শিখিয়ে দিতেন চার রাকাত পর পর মোনাজাত করতে আর প্রতি বার এটা মনে করতে প্রথমবার তারাবী শুরু করছি!সত্যি ই আম্মুর কথামত আমরা তাই করতাম বিশ রাকাত তারাবী কখন শেষ হত এতটুকু বিরক্তি আসত না!তাই ভাবছি রমজান মাস রোজার সাথে তারাবী আমাদের জন্য বিশেষ এক নেয়ামত সুস্থ মানুষদের রাকাত সংখ্যা নিয়ে কিসের এত বিরোধ!তাছাড়া প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগন যেহেতু বিশ রাকাত পড়েছেন!

কৈশোরের ইবাদত খুব নির্ভেজাল হয় বার বার ইচ্ছে করে আবার সেই কৈশোরের রমজানে ফিরে যাই আম্মু কে জ্বালানোর মুহূর্ত গুলো ফেরত দিয়ে দেই আম্মু আজ তোমার যতখুশি নামাজ পড় কারণ আব্বুর পরিশ্রম আর আম্মুর দোয়া ই হয়তো আমাদের যতটুকু সফলতা তার পিছনের চাবিকাঠি!!কতদিন আম্মুর সাথে ইফতার হয়না ভোর রাত পেরিয়ে উঠানে হাটতে হাঁটতে  সুবহে সাদিক দেখা

হয়না! আবার কবে সব ভাইবোন মিলে আমেজ পূর্ণ সেহরী ইফতার হবে আম্মুর সাথে!!সবাই অনেক বড় হয়ে গেছি এই শহরে যে যারমত বন্ধু বান্ধবের সাথে ইফতার করি আম্মু হয়তো সেই আগের মতোই ইফতার নিয়ে বসেন আর আমাদের জন্য দোয়া করেন!!

হাবিবা মৃধা!!
শিক্ষার্থী ঢাবি!

 

জুতাচোর

জাহেদ উদ্দীন মোহাম্মদ


নাহিনের বাসায় এখন তুলকালাম অবস্থা। বিকালে বাবা এসেছে। রাতে খাবার পরেই ঘটনার শুরু। নাহিন ভাবছে, সব দোষ তার একার। কেন যে সে বাবাকে আসতে বলল!
এই নিয়ে এখন আফসোসের শেষ নেই।
নাহিনের মা সরকারী চাকুরে। বাবার বেসরকারি । পোস্টিং বরিশাল। নাহিনরা দুই ভাই, এক বোন। সবার বড় নাহিন, তারপর জাহিন, ক্লাস ফাইভে পড়ে। পিচ্ছি বোন অরিন, পড়ে ক্লাস টু’তে। খুবই বাবার ন্যওটা। ওরা সবাই চট্টগ্রামে মা’র নামে বরাদ্ধকৃত সরকারী কোয়ার্টারে থাকে। ।
নাহিনদের একটা হাসিখুশির সংসার। মা’র যা একটু ঝনঝনে মেজাজ। এইটুকু ছাড়া পুরা ঘরটা যেন শান্তির নহরে ভাসে। মাস শেষে বাবা ছুটিতে বাসায় এলেই পিচ্ছিদের কাছে ঈদের আমেজ। অরিন বাবার কাঁধে, জাহিন পিঠে আর নাহিনের হাত ধরে বাবা বাসার ছাদে চক্কর দেয়। তখন খুব মজা। বাবার দখল নিয়ে অরিনের সাথে জাহিনের খুব ঝগড়া। অরিন বলে,
-এটা আমার বাব্বা, কেউ বাব্বার গায়ে হাত দিবে না। বাব্বা শুধু আমার।
ছোট্ট জাহিন মুখ আধাঁর করে ব্যালকানিতে পালিয়ে যায়। লোহার গ্রীল ধরে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভেঁউ ভেঁউ করে কাঁদে। এই নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে।
মা পিছনে গিয়ে জাহিনের চুলে বিলি কেটে কেটে আদর করে। তারপর জাহিনের যা শান্তি। ভাবখানা এমন-
-সবাই দ্যাখো, মা কিন্তু আমার।
বরিশালে গিয়ে নাহিনের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে। তখন ছোট অরিনের বয়স মাত্র এক বছর। সবাই বলে মা’টা কি বোকা! বিয়ের দুই বছর পর এই কথা জানতে পারলো! কিন্তু বাবার বিয়ের সাথে মায়ের বোকামীর কি সম্পর্ক, নাহিনের মাথায় আসে না।
দ্বিতীয় বিয়ের পরও বাবা দুই-তিন মাস পর পর চট্টগ্রাম আসতো। সবাইকে খুব আদর করতো। তখন নাহিনের খুব রাগ হতো।, যখন দেখতো মা তুচ্ছ কারনেও বাবার সাথে ঝগড়া করে। একবার এক ফাগুন মাসে মা’র জন্য বাবা একটা লাল টগবগে শাড়ী আনলো। রঙ দেখে মা’র খুব চেছামেছি! সে কি রাগারাগি! তিনি রাগের মাথায় বাবার মুখে শাড়ী ছুড়ে মারে।
ভ্যাগিস, সেদিন কেউ বাবার মুখখানি দেখেনি।
সেদিনের পর হতে বাবা আর কখনো বাসায় আসেননি।
আগামী বিষুধবার নাহিনের জেএসসি পরীক্ষা। তাই ছেলের আবদার রাখতে আজ বাবার এই চলে আসা। রাতে বাবার নতুন কেনা জুতা চুরি হবে, সেই চুরি নিয়ে এতো কিছু ঘটে যাবে, কে জানতো? ঝগড়ার সুত্রপাত এখানে থেকেই। রাতেই বাবা চলে যাবেন তাই জুতা খুলে দরজার বাইরে রেখেছেন। । ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে একসাথে খাওয়া দাওয়া করলেন। মা খেতে বসলেন ন।
ফেরার সময় বাইরে এসে দেখেন নতুন জুতা নাই।
নাই মানে নাই।
একেবারে তাজ্জ্বব ব্যাপার!
প্রথমে কাজের লোককে জেরা করা হলো। তারপর কোয়ার্টার এর দাড়োয়ান। এমনকি ছোট্ট অরিনকেও জিজ্ঞাসা করা হলো।
কেউ কিছু স্বীকার করছে না।
বাবা রাগে গজ গজ করছেন। বারবার বলছিলেন-
– কদিন আগে ৬৯৯০ টাকায় কেনা নতুন জুতা আমার। মাত্র দুইবার পড়েছি।
বাবার প্লান ছিলো,ছেলেমেয়েদের সাথে দেখা করে নাইটকোচে রাতে ঢাকা চলে যাবেন। পরদিন অফিসের বার্ষিক সাধারন সভায় যোগ দেবেন। কিন্তু এখন উপায়!
তিনি অরিনকে আদর করে কাছে ডেকে মোলায়েম স্বরে বললেন-
-দেখো মা, জুতাগুলো তুমি নিয়ে থাকলে, দিয়ে দাও। কথা দিচ্ছি, আমি আবার আসবো। তোমাদের সাথে অনেকদিন থাকবো। লক্ষী মা আমার!
-না, বাব্বা আমি জুতা নিই নাই তো!
উপায় না দেখে হঠাৎ চোখ-মুখ গরম করে মেয়েকে ধমক দিতেই, সে হাউমাউ কেদেঁ উঠলো।
আর এই নিয়ে শুরু হলো স্বামী-স্ত্রী মধ্যে তুমুল ঝগড়া। বাবা পইপই করে পুরা বাসা খুঁজে দেখলো। কিন্তু জুতার কোন হদিস নাই।
নাহিন কিছু একটা বলতে চাইলেই ঘেউ ঘেউ করে উঠলো।
-চুপ! একদম চুপ, হারামজাদা কোথাকার! বলেই থামিয়ে দিলো।
পাশের ফ্লাটের লোকজন বেরিয়ে আসাতেই এই ঝগড়ার ঘুর্নি থামে।
বাবা নাহিনের স্পন্জ সেন্ডেল পা গলিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলো।
এই জুতাচুরি নিয়ে আবাসিক এলাকায় নানা রকম আলোচনা।
কেউ কেউ নিশ্চিত দাঁড়োয়ান নিয়ে গেছে। এগুলো এরাই করে বা করাই।
কেউ বললো, কাজের মেয়ে ময়লার ঝুড়িতে করে বাহিরে নিয়ে গেছে।
তবে বেশীর ভাগের ধারনা, কুকুর নিয়ে গেছে। নতুন জুতার গন্ধে কুকুর মাতাল হয়ে যায়। আগে এভাবে অনেকের জুতা হারিয়েছে। সবার কথা শুনে নাইট গার্ড বলল, নাহিনের বাবার পিছপিছ একটা কুকুর এসেছিল। তবে দোতলা পর্যন্ত উঠেছে কিনা নিশ্চিত নন। কিছু লোক মা’র দিকে অশ্লীল ইঙ্গিত করে।
জুতা চুরির পর হতে নাহিনের বাবা পরিবারের কোন খোঁজ খবর নেন না।
তিন বছর পর….
নাহিন এসএসসি দিলো। জাহিন জেএসসি। অরিন পিএসসি দিলো।
নাহিনের বাবা এক ছুটির বিকালে বরিশালে নিজের বাসার বারান্দায় বসে আয়েশ করে চা খাচ্ছিলেন। এমন সময় তার তিন বছরের মেয়ে একটি হলুদ খাম দিয়ে বলল,
-বাপ্পা, এইতা মা ডিলো।
ছোট্ট একটি চিঠি। খামের উপর শুধু চট্টগ্রাম লেখা।
বাবা,
সালাম নিও। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। বাবা, সেদিন তোমার জুতা আমিই চুরি করেছি। জানতাম, তুমি চলে যাবে কিন্তু পরদিন আমার যে পরীক্ষা! সবাই বাবাকে সালাম করে পরীক্ষার হলে যাবে। আমি কাকে সালাম করবো? তাই জুতা সরিয়েছি। প্রতিদিন পরীক্ষার হলে যাবার আগে লুকিয়ে তোমার জুতা জোড়া সালাম করতাম।
তুমি কিছুই টের পাওনি, বাবা?
বাবা, তুমি কি কখনো বাবাহীন ছিলে?
তুমি কি জানো, বাবাছাড়া সন্তানেরা কিভাবে বড় হয়?
জানো বাবা, এইবছর আমরা তিনজনেই পরীক্ষার্থী ছিলাম । গোপনে আমরা তোমার জুতা জোড়ায় সালাম করে, তারপর পরীক্ষার হলে যেতাম। আমাদের পরীক্ষার শেষদিন মা ঠিকই ধরে ফেললো।
যত ঝামেলার মুল তোমার মেয়ে ঐ অরিন। সে তোমার জুতা ধরে অনেকক্ষন কাঁদছিল আর বলছিল,
-বাবা, দোয়া করো। অ-নে-ক দোয়া!
-আচ্ছা বাবা, জুতা কি কখনো দোয়া করতে পারে? জুতা কি কখনো বাবা হয়? অথচ দেখো, কি বোকা মেয়ে অরিন! তোমার জুতাকেই বাবা ডাকে।
ইতি,
নাহিন।
চিঠি পড়াশেষে বাবা খানিক চোখ বন্ধ করে করে রইলেন।
ছলছল করে উঠে চোখ।
নিজের উপর প্রবল ঘৃনা আর তাচ্ছিল্যে কুকড়ে রইলেন।
আবার হঠাৎ দাড়িয়ে গেলেন…..
মনে হলো দুনিয়ায় এখনি গজব নাজিল হবে।

 

আমার বই পড়া (প্রথম পর্ব)

রায়হান আতাহার 


ছোটবেলায় রিডিং পড়তে শেখার আগে আমার মায়ের মুখে ছড়া শুনে ওগুলো মুখস্ত করে ফেলতাম। এরপর যখন রিডিং পড়তে শিখলাম, তখন থেকে কোন লেখা রিডিং করে পড়তে পারার মাঝে অদ্ভুত আনন্দ পেতাম। রাস্তায় বের হলেই আম্মুকে বিরক্ত করে ফেলতাম। বিভিন্ন পোস্টার, বিলবোর্ড রিডিং পড়তাম আর আম্মু ঠিক হয়েছে কিনা বলে দিত। ভুল হলে শুদ্ধ করে দিত।

আমার মনে আছে, একবার রাগ করে ছিলাম। আব্বু বাসায় ফেরার পথে একটা ভূতের গল্পের বই নিয়ে আসলো। আমার রাগ নিমেষেই গায়েব। ঐ বইটাই পাঠ্য বইয়ের বাইরে আমার পড়া প্রথম বই।

যে স্কুলে পড়তাম, সে স্কুলে একবার ছোটখাটো একটা বইমেলা হচ্ছিলো। নিজের পছন্দ অনুযায়ী সেবারই প্রথম বই কিনলাম। কিনেছিলাম “ছোটদের আরব্য রজনী”। কিনে আনার ঘন্টা খানেকের মধ্যে বই পড়া শেষ। খুব মন খারাপ হয়েছিল কেন যে এত তাড়াতাড়ি বই শেষ হয়ে গেল। ঐ বই ফেরত দিয়ে অন্য বই আনার চিন্তাও মাথায় এসেছিল, যদিও বাস্তবায়ন করা হয়নি।

বাসায় এক হুজুর আরবি পড়াতেন। উনি একবার গিফট করলেন সুকুমার রায়ের “পাগলা দাশু”। খুব ভাল লেগেছিল। ভাল লাগার পরিমাণ এতটাই ছিল যে, গত বছরেও সুকুমার রায়ের সব গল্পগুলো আবার পড়েছিলাম।

ছোটবেলায় একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত একেক ধরনের বই পড়ার অভ্যাস ছিল। (এখন অবশ্য সর্বভুক)

প্রথম যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করি, তখন কমিকস বইয়ের প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। বিশেষত চাচা চৌধুরীর কমিকস। চাচা চৌধুরী, সাবু, রকেট, পিংকি, বিল্লু, এমনকি চাচাজির গাড়ি ডগডগ- এগুলোর জন্য পাগল ছিলাম বলা যায়। প্রতিটি কমিকস কম করে হলেও একশ বার করে পড়া ছিল।

চাচা চৌধুরী চরিত্রের নির্মাতা হলেন কার্টুনিস্ট প্রাণ। মজার ব্যাপার হল, আমি ভাবতাম কার্টুনিস্ট প্রাণ হলেন বাংলাদেশের প্রাণ কোম্পানির মালিক। তাই ঐ সময় প্রাণের জুস ছাড়া অন্য কোন কোম্পানির জুস খেতে চাইতাম না।

একটু বড় হয়ে যাওয়ার পর কমিকসগুলো ছোট এক কাজিনকে দিয়েছিলাম পড়তে। আর ফেরত পাই নাই।

(চলবে)

লেখক পরিচিতি:

Raihan Atahar
Postgraduate Researcher at Bernal Institute
Material and Metallurgical Engineering at BUET

 

অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ

আফরোজা হাসান


কয়েকদিন আগে এক বাসায় দাওয়াত থেকে ফিরে এসেই আমার কাজিন ঘোষণা দিলো ঐ বাসায় জীবনে আর কোনদিন যাবে না। কারণ জানতে চাইলে বলল, বাচ্চারা মিলে দুষ্টুমি করার সময় একটা শোপিস পড়ে ভেঙ্গে যাওয়াতে মেজবান ভাবী খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন। বিভিন্ন কথার ফাঁকে কৌশলে মেজবান ভাবীটি বাচ্চাদের ভদ্রতা শেখানোর ব্যাপারে ছোটখাট কিছু পরামর্শও দিয়ে দিয়েছেন উপস্থিত অন্যান্য ভাবীদেরকে। এতে করে সবাই কম-বেশি অপমানিত বোধ করেছেন। সামাজিকতা রক্ষার্থে অনেক সময়ই আমাদেরকে এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের স্বীকার হতে হয়। বিশেষ করে যখন বাচ্চাদেরকে সাথে করে কোন বাসায় দাওয়াতে যাওয়া হয় তখন অনেক সময় না চাইতেও মেহমান ও মেজবানদের মধ্যে সূক্ষ্ম ভুল বোঝাবুঝির তৈরি হয়ে যায়। শিশুরা স্বভাবতই দুরন্ত, ছটফটে, চঞ্চল। আর কিছু কিছু শিশু তো আছে যারা মাত্রাতিরিক্ত ছটফটে ও চঞ্চল। এক মুহুর্ত এক জায়গায় স্থির থাকতে চায় না, সবকিছুতেই দুষ্টুমি করা চাই। সব বাসাতেই মুল্যবান কিংবা গুরুত্বপুর্ণ নানা জিনিসপত্র থাকে। শিশুরা না বুঝে সেসব ধরে এবং অনেকসময় না চাইতেও নষ্ট করে ফেলে। এই ধরণের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে যদি শিশুদেরকে দিয়েই শিশুদের বোঝানোর কাজটা করিয়ে নেয়া যায়।

আমার বাসায় সবচেয়ে মূল্যবান বলতে যা আছে তা হচ্ছে বই। আমার ছেলে যখন হাঁটতে শিখলো তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ ছিল সেলফ থেকে বই নামানো আর উঠানো এবং আমি খেয়াল না করলেই বই থেকে পৃষ্ঠা ছিড়ে সেটা খেয়ে ফেলা।

কি করা যায় ছেলেকে নিয়ে জানতে চাইলে ছেলের বাবা হেসে বললেন, এক কাজ করো ভক্ষককে রক্ষক বানিয়ে ফেলো। রাজকন্যা আর রাক্ষসের গল্প জানা থাকার কারণে আমার ছেলে জানতো যে রাক্ষসের প্রাণ থাকে সাগরের গভীর নীচে এক নীল ভোমরার ভিতর। ওকে বললাম রাক্ষসের প্রাণ যেমন ভোমরার ভেতর থাকে আম্মুর মন তেমন এই বইয়ের ভেতর। চোখ বড় বড় করে বলল, বইয়ের পাতা ছিঁড়লে কি তোমার হাত ছিড়ে পড়ে যাবে আম্মু? বললাম, আম্মুর হাত ছিড়ে যাবে না, আম্মু মারাও যাবো না কিন্তু আম্মুর মনে অনেক কষ্ট হবে। আম্মুর চোখ কান্নাও করতে পারে। করুণ স্বরে বলল, আমি চাই না তোমার মন কষ্ট পাক, তোমার চোখ কান্না করুক। এরপর থেকে আর কোনদিন সে আমার বই ধরে না আর ধরলেও ছিড়ে না। বাসার যখনি ওর বন্ধুরা আসে আগেই বলে দেয় যাতে বইয়ের সেলফের কাছে না যায়। এবং বইয়ের যতটুকু যত্ন তার পক্ষে করা সম্ভব করার আপ্রাণ চেষ্টা করে।

আমার বাসায় যেহেতু অনেক বাচ্চা আসে তাই ওদেরকে বোঝানোর দায়িত্ব আমি আমার ছেলেকেই দিয়েছি। বন্ধুরা আসার পর নিজেই বুঝিয়ে বলে যে, কিচেনে যাওয়া যাবে না, কোন কিছু খেতে ইচ্ছে করলে আম্মুর কাছে চাইতে হবে, ওয়াশরুম গিয়ে কোনকিছু নোংরা করা যাবে না, খেলনা ছাড়া অন্য কোন কিছু অনুমতি ছাড়া ধরা যাবে না ইত্যাদি। এতে আরেকটা সুবিধা হচ্ছে এই কাজগুলো সে অন্য কারো বাসায় বেড়াতে গেলেও করে না। আসলে বাচ্চাদেরকে যদি প্রত্যেকটা জিনিসের গুরুত্ব বুঝিয়ে বলা যায় তাহলে তারা বোঝে এবং মেনে চলতে চেষ্টা করে।

বন্ধুরা বাসায় আসলে তাদের সাথে কোন কোন খেলনা দিয়ে, কোথায় বসে খেলতে হবে, কোন কোন জিনিস ধরা যাবে না, কোন কোন কাজ করা যাবে না ইত্যাদি বাচ্চাকে সুন্দর মতো বুঝিয়ে বলে দিতে হবে। যাতে বাচ্চারাই করণীয় বর্জনীয় বুঝে সেইমতো চলতে পারে। বিষয়টা একটু কঠিন তবে বাবা-মা ধৈর্য্য ধরে চেষ্টা করলে ধীরে ধীরে বাচ্চারা এসব রপ্ত করে ফেলতে পারে। আর বাবা-মা মুক্ত থাকতে পারেন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের স্বীকার হওয়া থেকে।

 

দূরে বহুদূরে হেরার রাজতোরণ

ফাতিমা শাহীন


কবি ফররুখ আহমেদ এর কবিতার সাথে আমাদের পরিচয় শৈশব থেকেই। দেশের শিশু কিশোর পাঠ্যক্রমে আগে সেসব বিষয়ই নির্বাচিত করা হত যেসব রচনায় থাকত নিষ্পাপ কচিপ্রাণ শিশু কিশোরদের মন ও মননকে বিকশিত করার সমৃদ্ধ উপাদান। ছোট্ট বেলা থেকেই যেন মনুষ্যত্বের পূর্ণ রূপটি শিশুদের নিষ্পাপ অন্তরে স্থায়ী আসন গড়ে নিতে পারে , শিক্ষা কার্যক্রমে থাকত সেই প্রচেষ্টা। এরই অংশ হিসেবে আমরা পড়েছি কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী সাহিত্য সম্ভার , কবি গোলাম মোস্তফার অসাধারণ বিনির্মানগুলো , কবি ফররুখ আহমেদের উদ্দীপনাময় কাব্যসৃষ্টি সমূহ। এভাবে পড়তে পড়তে কবে থেকেই যেন ফররুখ আহমেদের পাঞ্জেরীর সাথে আমি হয়ে গেছি একাত্ম , অভিন্ন হৃদয় :

“রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী ,

এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে

সেতারা , হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে ?

তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে

অসীম কুয়াশা জাগে শুন্যতা ঘেরি। ”

তাইতো , ফররুখ আহমেদ আমার প্রানের কবি , আত্ম জাগরণের কবি , প্রিয় কবি !

ফররুখ আহমেদ বাংলা সাহিত্যের এক কালজয়ী প্রতিভার নাম। তিনি মুসলিম রেনেসাঁর কবি নামেই বেশি পরিচিত। বাংলা সাহিত্যের যে ক’জন স্বপ্নমুগ্ধ কবি ইসলামী মূল্যবোধ ও ভাবধারার মধ্যে থেকে পাঠকের চোখে ও অন্তরে তাদের স্বপ্ন ও মুগ্ধতাকে সমানভাবে ছড়িয়ে দিয়ে পারঙ্গম হয়েছিলেন , নি:সন্দেহে কবি ফররুখ আহমেদ তাঁদের মধ্যে একজন। ঘুনে ধরা , পাপ দগ্ধ এক সমাজের অন্ধকারের পর্দা সরিয়ে সুবেহ সাদিকের পবিত্র আভায় উদ্ভাসিত এক ভোরের পরম আকাঙ্খী ছিলেন তিনি , যা প্রকাশ পেয়েছে তাঁর ‘ সাত সাগরের মাঝি ‘ কবিতার বহু ছত্রে :

” কত যে আঁধার পর্দা পারায়ে ভোর হ’ল জানিনা তা’

নারঙ্গী বনে কাঁপছে সবুজ পাতা

দুয়ারে তোমার সাত সাগরে জোয়ার এনেছে ফেনা ,

তবু জাগলেনা ? তবু তুমি জাগলেনা ? ”

যে সুন্দরতম আদর্শকে আশ্রয় করে মানবতা হয়ে ওঠে মহীয়ান , গরীয়ান … তাকে তিনি বাঙ্ময় কাব্যজ্যোতির প্রদীপ্ততায় উদ্ভাসিত করে ফুঁটিয়ে তুলেছেন তাঁর ‘ সিরাজুম মুনীরা ‘ কবিতা নিজস্ব মহিমায় :

” কে আসে , কে আসে সাড়া পড়ে যায়

কে আসে , কে আসে নতুন সাড়া !

জাগে সুষুপ্ত মৃত জনপদ , জাগে শতাব্দী ঘুমের পাড়া।

হারা সম্বিত ফিরে দিতে বুকে তুমি আনো প্রিয় আবহায়াত ,

জানি সিরাজাম-মুনীর তোমার রশ্মিতে জাগে কোটি প্রভাত ,

তব বিদ্যুত্কনা – স্ফুলিঙ্গে লুকানো রয়েছে লক্ষ দিন

তোমার আলোয় জাগে সিদ্দিক , জিন্নুরাইন , আলী নবীন। ”

তাঁর অসাধারণ রচনাসমূহের মধ্যে একটি তাত্পর্যপূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে দিগন্ত ছোঁয়া নীল সমুদ্র , উত্তাল উর্মীমালার বিক্ষুব্ধ সন্তরণ। এর মাধ্যমে তিনি কবিতার ছত্রে ছত্রে ফুঁটিয়ে তুলতে চেয়েছেন সৃষ্টি লগ্ন থেকে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনাচারে নিরন্তন সংগ্রাম ও আন্দোলনকেই :

” এ ঘুমে তোমার মাঝি মাল্লার ধৈর্য্য নেইকো আর

সাত সমুদ্র নীল আক্রোশে তোলে বিষ ফেনভার ,

এদিকে অচেনা যাত্রী চলেছে আকাশের পথ ধ’রে

বেসাতী তোমার পূর্ণ করে কে মারজানে মর্মরে ? ”

আজ এ যুগে , এ ক্ষয়রোগে ধরা মুমূর্ষ সমাজে , যেখানে পাপ পঙ্কিলতা ও অশুভ আচার নির্বিবাদে বাড়িয়ে চলেছে তাদের অশুভ কালো বাহু , যেখানে অনৈতিকতার বিষবাষ্প সমাজকে পতনের শেষ সীমায় ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে , সেখানে আজ ফররুখ আহমেদের মত ভোরের নকীবদের আজ বড় প্রয়োজন! যিনি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সমুদ্রের অশান্ত তরঙ্গমালা সামাল দিয়ে সাত সাগরের মাঝিদেরকে হেরার রাজ তোরণের দিক নির্দেশনা দিতে পারেন , পাঞ্জেরীকে দিতে পারেন ধ্রুব তারার খোঁজ , এমন কবি ও লেখকদেরকেই এ সমাজে আজ বড় বেশি দরকার।

আর তাই , কবিকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে খ্যাতিমান কবি জাহানারা আরজু লিখেছিলেন ,

” এক মঞ্জিল , এক নিশানা হেরার রাজতোরণ

জীবন বোররাখ ছুটে চলেছে ঊর্ধ্বে গতিময়

তৌহিদের বাণী বয়ে , বুকে যার অসীম বিস্ময় ,

কলমের পুষ্পিত পরাগে জাগে অনন্য ভুবন ! ”

প্রানপ্রিয় এ কবির জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন এর দরবারে মাগফিরাত কামনা করি।

 

মায়ের প্রতিবিম্ব

তাহেরা সুলতানা


কোন এক চৈত্রসংক্রান্তিতে যখন তোমায় বলতে গেলাম, “মা, এবার আমায় দাও গো বিদায়।”
তুমি অশ্রুভেজা চোখে হাতটা ধরে বলেছিলে, “মারে!
বছরের প্রথম দিনটি কি আমার সাথে কাটানো যায়!”
আমি মনে মনে বলেছিলাম,
“মা, তোমাকে কি করে বোঝাই!
এ সংসারে আমার ইচ্ছে অনিচ্ছের আছে কি দায়!
কেন আমায় চোখের জলে দিচ্ছো মা বিদায়!”

চোখের পানি লুকিয়ে হাসতে হাসতে বলেছিলাম, “মা, তোমার মেয়ের যে অন্য দেশে সংসার!
আমায় যে ফিরতেই হবে মা!
লক্ষ্মী মা আমার! আর করোনা মুখটা ভার!
অনলাইন আছে তো!
কেনো এতো ভাবছো?”

মা যেন কিছুতেই পারছে না মানতে!
আমিও কি পারছি মা, সহজে, তোমায় ছাড়তে!
যেদিন তোমায় ছেড়ে এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি গিয়েছি,
সেদিনই সব আনন্দগুলো তোমারি শেখা পথে,
ও বাড়ির সবার সাথে ভাগ করে নিয়েছি।
শুধু বুকের বাম পাশটায় একটা চিনচিনে ব্যাথা আজও সাথী করে রেখেছি।
সে ব্যথার কথা তুমি ছাড়া কেই বা জানে বলো! কেই বা দেখে আমার সে দু’চোখ ছলোছলো!

তোমার মনে আছে? ছোটবেলায় বৈশাখ এলে, সারারাত জেগে সাদা জামায়,
পাইপেন আর সুতোর ছোয়ায়,
তোমার হাতের পরশ ফুটিয়ে তুলতে লালে!
কি যে মায়া! কি যে ভালোলাগা!
সেই দিনগুলো আজও আমায় স্মৃতিকাতর করে তোলে!

আমিও একদিন মেয়ের মা হবো, যদি জানতাম!
সেই জামাগুলো বড় যত্ন করে তুলে রাখতাম,
বড় যতনে সাজাতাম তাকে,
ঠিক তুমি যেমন চাইতে আমাকে,
আমি হয়তো ওর মধ্যেই তোমায় খুঁজে পেতাম!

আলমারীতে সাজানো অনেক শাড়ীর ভিড়ে,
আমি সেই জামাগুলোই খুঁজেছি বহুবার,
হয়তো জামা নয়, তোমারই পরশ খুঁজেছি। তোমাকেই খুঁজে ফিরেছি বারংবার।
প্রযুক্তি আমাদের দেখার সুযোগটা করে দিয়েছে।
তাই বলে হয়তো তোমায় চোখের দেখাটা দেখতে পাই।
কিন্তু মনের তৃষ্ণা কি করে মেটাই?
তোমার হাতের পরশ কি করে পাই?

আজ বৈশাখের প্রথম দিন।
এক আগত বৈশাখে তোমায় ছেড়ে আসার দিন।
মা, তুমি কেমন আছো?
আমার পাঠানো শাড়ীটা কি পড়েছো?
সেদিন বলেছিলে, আজকাল তোমার নাকি,
চশমা পড়েও সব কিছু বড্ড বেশি দূরের মনে হয়!
আমাকেও নাকি ঝাপসা দেখতে পাও!
চশমার গ্লাসের পাওয়ারটা কি বাড়িয়েছো?

মা, তোমাকে বলতে ভুলেই গেছি,
আমার চোখেও চশমা উঠেছে।
একটি করে বছর বিদায় জানাচ্ছি!
আজকাল ভিডিওকলে তোমাকেও বড্ড ঝাপসা দেখছি!
কি জানি, চশমার অভাব!
নাকি চোখের জলরেখার প্রভাব!

তুমি জানো, আমার মেয়ে এখন পুরোদস্তুর আমার মা হয়ে উঠেছে!
আমার জীবনে ও হয়তো তোমার ছায়া ধরেই এসেছে!
আমায় শাসন করে রীতিমতো!
ঠিক যেন তোমারই মতো!
সে যে কতো কাজের মেয়ে হয়েছে এই ক’দিন!
সে ফিরিস্তি না হয় শুনো আরেকদিন!

 

রমজানের ইফতারিতে মরক্কান বাগরির

মুনিম সিদ্দিকী


আসুন এই রমজানের ইফতারিতে মরক্কান বাগরির তৈরি করি।

মরক্কান বাগরির রেসিপি

শীত আর গ্রীষ্মে বাগরির বানিয়ে খেতে পারেন। একবার বানালে টাওয়াল দিয়ে ঢেকে রেখে তিন দিন পর্যন্ত খেতে পারবেন, আমাদের দেশের চালের গুড়ির চিতুই পিঠার মত শক্ত হবে না, নরম তুলতুলেই থাকবে।

আমাদের দেশে চিতুই পিঠা চালের গুড়ি দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। আমাদের চিতুই পিঠা গরম গরম খেতে হয়। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে শক্ত হয়ে পড়ে। আমি আজ যে চিতুই পিঠার রেসিপি দিচ্ছি তা নরম তুলতুলে হবে ঠাণ্ডা হলেও শক্ত হবেনা। সকল বয়সের মানুষের কাছে সুস্বাদু লাগবে বিশেষ করে শিশু এবং বয়ঃবৃদ্ধের জন্য হবে অনন্য খাবার।

দোহাই মরক্কান বাগরিরকে চিতুই পীঠা বলবেন না। চিতুই কে চিতুই আর বাগরিরকে বাগরির বলে উল্লেখ করুন। মরক্কান বাগরিরই বলে যেন অন্যদেরকে আপ্যায়ন করেন। ধন্যবাদ।

যা লাগবে

১- ময়দা দেড় কাপ বা ১৬৫ গ্রাম।
২-সুজি দেড় কাপ বা ১৬৫ গ্রাম।
৩- চিনি ১ টেবিল চামচ বা ১৫ গ্রাম।
৪- লবণ ১ চা চামচ বা ৫গ্রাম।
৫- বেকিং পাউডার ১ চা চামচ বা ৫ গ্রাম।
৬- ইস্ট ২ চা চামচ বা ১০ গ্রাম।
৭- পানি উষ্ণ তবে গরম নয় সাড়ে চার কাপ বা ৪৯৫ গ্রাম।

প্রস্তুতি

১- প্রথমে পানি বাদে সকল উপকরণ ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। ময়দা আর সুচির পরিমাণ কম বেশি করা যায়। তবে সুজির সাথে অবশ্য ময়দা থাকতে হবে, কিন্তু ময়দার সাথে সুজি না থাকলেও বাগরির করা যাবে। ডুরুম গমের ময়দা আর সুজি হলে রঙ হলুদাভাব দেখাবে। শুধু ময়দা হলে সাদাভাব দেখাবে। আমাদের দেশের সুজির পরিমাপ বেশি হলে কালচে ভাব দেখাবে।

২-অল্প অল্প করে ঐ মিশ্রণে উষ্ণ পানি ঢেলে মিশ্রণকে নরম থকথকে করে নিতে হবে।

৩- মেশিন থাকলে ৩০ সেকেন্ড ঐ মিশ্রণ ঘুটে নিন। না থাকলে কাঠে চামচ বা অন্য কিছু দিয়ে ভালো ভাবে ঘুটে মসৃণ করে নিন। মনে রাখবেন এই মিশ্রণ পানির মত পাতলা যেন না হয় আবার যেন ঘনও না হয়।

৪- ঘুটাঘুটির পর পরিষ্কার টাওয়াল দিয়ে ঢেকে গরম কোন স্থানে ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেস্টে রাখুন।

৫- ২০ /৩০ মিনিট পর লক্ষ্য করুন যে ঐ মিশ্রণের উপর বুদবুদ দেখা যায় কিনা? যদি বুদবুদ দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে আপনার মিশ্রণ ঠিক হয়েছে। যদি বুদ বুদ না হয় তাহলে আরো অল্প পানি মিশিয়ে নিন এবং অপেক্ষা করুন। বুদবুদ আসা পর্যন্ত।

৬- এবার চুলার মধ্যে মৃদু তাপে ননস্টিক ফ্রাই পেন গরম করুন।

৭- গরম হলে ডাবু হাতার চামচ দিয়ে এক চামচ মিশ্রণ ননস্টিক প্যানের মধ্যখানে গোল করে ছড়িয়ে দিন।

৮- কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন। যখন দেখবেন পিঠার মধ্যে অসংখ্য ছিদ্র দেখা যাচ্ছে এবং কাচা ভাব চলে গেছে তখন খন্তা দিয়ে আলতো করে ফ্রাইপ্যান থেকে নামিয়ে নিন।

৯- নামিয়ে নিয়ে পরিষ্কার টাওয়ালের মধ্যে একটি একটি করে রাখুন। গরম অবস্থায় একটির উপর আরেকটি রাখবেন না। ঠাণ্ডা হবার পর একটির উপরে আরেকটি রাখতে পারবেন।

১০- এবার ফ্রাই প্যানকে উলটো করে ট্যাপের ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন।

এর পর ৭ নং নির্দেশের মত করতে থাকুন।

এই গুলো ঘরে রেখে তিন দিন পর্যন্ত খাওয়া যাবে। সকাল বিকালের নাস্তায় চায়ের সাথে খেতে পারেন। বাগরির তাওয়া থেকে নামিয়ে গরম থাকতে থাকতে বাটার দিয়ে গ্লেজিং করলে বাগরির সুন্দর দেখাবে খেতেও ভালো লাগবে। গরম থাকা অবস্থায় বাটার (মাখন) লাগিয়ে বা বাটার মধু লাগিয়ে খেতে পারেন। ঠাণ্ডা হলে শুধু মধু বা জালিগুড় মিশিয়ে খেতে পারবেন। আবার রান্না করা গোস্তের তরকারী দিয়েও খেতে পারবেন। আবার জ্যাম জেলি বা কন্ডেন্সমিল্ক দিয়ে বা কাচমরিচ/পুদিনা পাতার চাটনি দিয়েও খেতে পারবেন।

 

 

‘পুরুষের একাধিক বিয়ে’ -শেষ পর্ব

ডা. ফাতিমা খান


ইসলামে একাধিক বিয়ে কখন বৈধ হবে :

ওহুদের যুদ্ধের পর বহু সংখ্যক মুসলমান যখন শহীদ হলেন তখন যারা বেঁচে ছিলেন তাদের উপর ইয়াতীম ও বিধবাদের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। তখনই একাধিক বিয়ের বৈধতা ঘোষণা করে কুরআন মজীদে আয়াত নাযিল হয়।

وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَىٰ فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَلَّتَعُولُوا

অর্থাৎ,” তোমরা যদি ইয়াতীমদের প্রতি অবিচার করতে আশঙ্কা কর, তবে যেসব স্ত্রীলোক তোমাদের পছন্দ তাদের মধ্য থেকে দুই, তিন বা চারজনকে বিয়ে কর।কিন্তু তোমাদের মনে যদি আশঙ্কা জাগে যে, তোমরা তাদের সাথে ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে একজন স্ত্রীই গ্রহণ কর।” (সূরা-নিসা, আয়াত-৩)

এ আয়াতটি থেকে নিম্নোক্ত সত্য গুলো স্পষ্টভাবে বোঝা যায়ঃ

১।একাধিক বিয়ে অবশ্য পালনীয় কোন কর্তব্য নয়। এ ব্যাপারে পুরুষদেরকে উৎসাহিতও করা হয়নি। শুধুমাত্র প্রয়োজনের তাগিদে অনুমতি দেয়া হয়েছে।
২।যে পরিস্থিতিতে এ আয়াত নাযিল হয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে শুধুমাত্র জৈবিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য নয়, বরং বিধবা ও ইয়াতীমদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর জন্য একাধিক বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
৩।যে সময় আরব দেশে এবং এর আশে-পাশের দেশগুলোতে দশজন কিংবা তারও অধিক সংখ্যক স্ত্রী গ্রহণের প্রচলন ছিল, সে সময় এই আইন অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত আইন হিসেবে বিবেচ্য।
৪।এই বহুবিবাহ আইনে প্রত্যেক স্ত্রীর সাথে ন্যায় সংগত আচরণ করা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক স্ত্রীর বাসস্থান, খাবার, পোশাক-পরিচ্ছেদ, সদয় ব্যবহার ইত্যাদির দায়িত্ব পূর্ণভাবে স্বামীর উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। যদি কেউ এ ব্যপারে অপারগ হয় তাহলে কুরআন মজিদে তার ব্যাপারে বলা হয়েছে ”তাহলে তোমরা একজনকেই বিয়ে কর”।

একই সূরায় অন্য একটি আয়াতে একাধিক বিয়েকে নিরুৎসাহিতও করা হয়েছে।

وَلَنْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ ۖ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ ۚ وَإِنْ تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا

অর্থাৎ ”স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা তোমাদের সাধ্যের অতীত। তোমরা অন্তর দিয়ে চাইলেও তা করতে সমর্থ হবে না। অতএব, একজন স্ত্রীকে একদিকে ঝুলিয়ে রেখে অপরজনের প্রতি একেবারে ঝুঁকে পড়বে না। (সূরা-নিসা, আয়াত ১২৯)

কুরআন একমাত্র কিতাব যেখানে ‘একজনকেই বিয়ে কর ‘ একথাটি বলা হয়েছে। অন্যান্য কোন ধর্ম গ্রন্থে এরকম কোন আদেশ দেয়া হয়নি। ইসলামে সময় ও পরিস্থিতিভেদে একাধিক বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে বটে কিন্তু তাও চারটির বেশী কখনই নয়। সুতরাং পুরুষেরা যত ইচ্ছা ততজন স্ত্রী গ্রহণ করবে এবং স্ত্রীদের মধ্য থেকে কাউকে সে বেশী মর্যাদা দিবে, কাউকে কম, এমনটি হতে পারবে না। ইসলামী আইনের দাবী হল, কোন পুরুষ তার স্ত্রী কিংবা স্ত্রীদের দায়িত্ব যথাযথভাবে ও সমভাবে পালন করতে ব্যর্থ হলে কিংবা স্বামী তার উপর অন্যায় অত্যাচার করলে স্ত্রী আদালতে গিয়ে বিয়ে- বিচ্ছেদের দাবী করতে পারবে।

একাধিক বিয়ের ব্যাপারে এরকম কঠিন কিছু নির্দেশাবলী থাকার পরও প্রয়োজনের তাগিদে যদি এর অনুমতি না দেয়া হত ও এ ব্যাপারে বেশ কিছু বাধ্য বাধকতা জারি করা হত তাহলে সমস্যাগুলোর সমাধান না হয়ে বেশ কিছু সামাজিক ও পারিবারিক বিশৃংখলা ও অশান্তি দেখা দিত। মহান আল্লাহ তায়ালা এ সার্বিক অবস্থা কে সামনে রেখেই মানুষের জন্য যথাযথ বিধান দিয়ে দিয়েছেন।

একাধিক বিয়ে কোন কোন ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান হতে পারে :

ক) ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে 

১. কোন পুরুষের স্ত্রী যদি বন্ধ্যা হয় এবং সে তার সন্তান বা উত্তরাধিকারীর জন্য উদগ্রীব হয়, তবে আরেকটি বিয়ে না করলে তাকে নিম্নের ২টি পন্থার যে কোন একটি কে গ্রহণ করতে হবে-

– আজীবন তাকে পিতৃত্বের সুখ থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।

– তার বন্ধ্যা স্ত্রীকে তালাক দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে।

বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এ ২টির কোনটিকেই সঠিক সমাধান হিসেবে মেনে নেয়া যায় না। এরকম পরিস্থিতিতে আরেকটি বিয়েই সমাধান হতে পারে… এক্ষেত্রে ১ম স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রেখেই পিতৃত্বের সুখ পাওয়া সম্ভব হবে।

অনুরূপভাবে, কোন পুরুষ যদি বন্ধ্যা হয় আর তার স্ত্রী সন্তানের জন্য উদগ্রীব হয় তাহলে সে চাইলে আদালতের মাধ্যমে বিয়ে-বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ২য় স্বামী গ্রহণ করতে পারবে। ( মেয়েদের জন্য একাধিক স্বামী গ্রহণ বৈধ নয় কেন, সে আলোচনায় আসছি কিছুক্ষণ পর )

২. কোন পুরুষের স্ত্রী যদি দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকে তাহলেও তাকে নিম্নোক্ত ৩টি পন্থার যে কোন একটি অবলম্বন করতে হবে-

– আজীবন তাকে জৈবিক চাহিদাকে সংবরণ করতে হবে।

– অসুস্থ স্ত্রীর সাথে আপোষ করে গোপনে তাকে কোন যৌনসঙ্গী বেছে নিতে হবে।

– অসুস্থ স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও তাকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করতে হবে।

প্রথম সমাধানটি মানুষের মানবিক প্রবৃত্তির পরিপন্থি। ইসলাম মানুষকে তার জৈবিক চাহিদা পুরণের জন্য বৈধ পন্থা অবলম্বনের আদেশ দিয়েছে। দ্বিতীয় সমাধানটি সম্পূর্ণভাবে ইসলামী আইন বিরোধী। তৃতীয় সমাধানটি অত্যন্ত অমানবিক ! বিশেষতঃ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন খুব ভালো সম্পর্ক থাকে।

সুতরাং এ আলোচনা থেকে বুঝা যায়, এসব অবস্থায় আরেকটি বিয়েই এই সমস্যাগুলোর একমাত্র বৈধ সমাধান হতে পারে। এটি একটি ঐচ্ছিক সমাধানও বটে। এখানে অন্য কারো জোর-জবরদস্তিও চলবে না। (নিজের মা -বাবার মন রক্ষা করতে গিয়ে বা গোত্র কিংবা সমাজের চাপে পড়ে নয়।)

খ) সামাজিক ক্ষেত্রে 

১.নৃতত্ববিদদের গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, প্রাচীন বহু গোত্র ও সমাজ তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনে একাধিক বিয়ে করত। সে সময় কিছু দরিদ্র এলাকায় শিশু মৃত্যুর হার ছিল বেশী, আবার কেউ কেউ সন্তানদেরকে তাদের উপার্জনের উৎস মনে করত। এসব কারনে বেশী সন্তানের আশায় তারা একাধিক বিয়ে করত। প্রাচীন আফ্রিকার খ্রীষ্টান মিশনারী সমাজ বহু আগেই একাধিক বিয়েকে সমর্থন করেছে এবং ঐ সমাজের মেয়েরা তাদের স্বামীদের একাধিক বিয়ে শুধু মেনেই নিত না বরং তা সমর্থন করত।

২. কোন দেশ বা সমাজ়ে যদি পুরুষের তুলনায় মহিলারা সংখ্যায় অধিক হয় ( কাশ্মীর, আফগানিস্তান ও ইরাকে বিবাহোপযোগী মেয়েরা পাত্র সঙ্গকটে ভুগছে) সেখানেও অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের একাধিক বিয়ে করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আমরা যদি অতীতের যুদ্ধগুলোর কথা ভাবি তাহলে দেখা যায় ধ্বংসাত্মক এ যুদ্ধগুলোতে পুরুষেরাই অধিকাংশ মৃত্যুবরণ করেছিল। এর ফলে শুধু যে বিয়ের জন্য পাত্রের অভাব হয়েছিল তা নয়, বরং যারা বিধবা হয়েছিল এবং একটি সম্মানজনক জীবন যাপনে আগ্রহী ছিল, তাদের জীবনও কষ্টকর হয়ে গিয়েছিল। এই সব দিক বিবেচনা করে ঐ পরিস্থিতিতে ঐ সমাজে পুরুষের একাধিক বিয়েই ছিল উত্তম সমাধান।

একজন বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত ব্যক্তি উভয়ই মানুষ। তাদের স্বভাবজাত চাহিদাগুলো যদি বৈধ উপায়ে পূর্ণ করা না হয় তবে বিকৃত ও অসাধু উপায়ে পূর্ণ করার জন্য সে প্রলুব্ধ হয়।এক্ষেত্রে নৈতিকতার দিক থেকে মেয়েরাই সবচেয়ে বেশী অপব্যবহৃত হয়। তাদের জীবনের নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা, আবেগ কোন কিছুরই কোন মূল্য থাকেনা। আর যদি তারা অবিবাহিত অবস্থায় গর্ভবতী হয়ে পড়ে তাহলে পিতৃ-পরিচয়হীন এই সন্তানের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব মায়ের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় (কিছু অমুসলিম দেশে এমন নিয়ম চালু আছে)। আবার একাকী এসব দায়িত্ব্ পালন করতে গেলেও সমাজে মা ও সন্তান উভয়েরই ভোগান্তির অন্ত থাকে না। সমাজ তাদেরকে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ করে না , আর পাঁচটি মানুষের মত পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করাও সম্ভবপর হয় না।

মেয়েদের জন্য একই সাথে একাধিক স্বামী গ্রহণ বৈধ নয় কেন ’

আল্লাহ তায়ালা নারী ও পুরুষকে দৈহিক ও মানসিকভাবে পৃথক ধাচে সৃষ্টি করছেন। পুরুষদের চরিত্রে বহুগামীতার ইচ্ছা লক্ষ্য করা যায়। তারপরও ধরা যাক, কোন মেয়ে একাধিক স্বামী গ্রহণ করছে। সম্ভাব্য সমস্যা গুলো আমরা একটু ভেবে দেখি।

১) তার যে সন্তানগুলো জন্ম নেবে তাদের কার পিতা কে হবে? কে, কোন সন্তানের পরিচয় বহন করবে?
২) একাধিক স্বামীর এই একমাত্র স্ত্রীর দায়ভার কার উপর ন্যস্ত হবে? সমাজে তার পরিচয় কার নামে হবে?
৩) ইসলাম ধর্মে পরিবারের কর্তা হলেন স্বামী। এই multi-husband এর পরিবারে কর্তা হবেন কে?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গেলে আমরা এই সহজ সমাধানটি পেয়ে যাই যে মেয়েদের জন্য একই সাথে একাধিক স্বামী গ্রহণ কখনও যুক্তি সঙ্গত হতে পারে না। তাই ইসলাম এর বৈধতা ঘোষণা করে না।

ইসলামের সকল বিধান, এর নমনীয়তা, কঠোরতা, দূরদর্শীতা ও বাস্তবধর্মী সিদ্ধান্ত গুলোর কৃতিত্ব কোন বিশেষ গোষ্ঠী, ব্যক্তি এমন কি মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর ও নয়। এর গোপন কৃতিত্বের দাবীদার একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যিনি তার সৃষ্ট প্রতিটি জীবের চাহিদা ও সমস্যাবলী সম্পর্কে অবহিত আছেন।

সহায়ক বই ও লিংক:
1) Quranul Majid
2) Hadith
3) Women Under the shade of Islam – Dr. Jamal Badawi
4) ইসলামী সমাজে নারীর মর্যাদা- ডঃ মুস্তাফা আস- সিবায়ী
5) Lectures of Dr. Zakir Naik
6) মরিয়ম জামিলার লেখা বইসমূহ।

ডা. ফাতিমা খান
লেখিকা কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

পর্ব -১

 

‘পুরুষের একাধিক বিয়ে’ পর্ব-১

ডা. ফাতিমা খান


ইসলাম ধর্মে একাধিক বিয়ের অনুমোদনকে কেন্দ্র করে জনসাধারণের মাঝে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারনা বিরাজ করছে। বিশেষত: আরব সমাজে এই অনুমোদনের অপচর্চা লক্ষ্য করা যায়। কোন কোন ইসলাম বিদ্বেষী ধর্মাবলম্বীরা ইসলামে একাধিক বিয়ের অনুমোদনের কিছু ভুল ব্যাখ্যা মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। যার ফলে সীমিত জ্ঞানের অধিকারী সাধারণ মুসলিমরাও কখনও কখনও বিভ্রান্ত হয়ে যায়।

ইহুদী ও খ্রীষ্টান ধর্মেও বহুবিবাহের উপর কোন নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। কিন্তু ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মের অনুকরণে নয় বরং সম্পূর্ণ স্বকীয়ভাবে ইসলাম একাধিক বিয়ে সম্পর্কে এমন কতগুলো বিধি-বিধান প্রদান করে ও মানুষকে আত্ন-সংযমের শিক্ষা দেয় যা তাদেরকে একাধিক বিয়েতে অনুৎসাহিত করে। এ আইনের উপর ইসলামের পুরোপুরি কোন নিষেধাজ্ঞা প্রদান না করার কারন হল, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও সামাজিক বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করা যায় একাধিক বিয়ের মাধ্যমে।

সময় ও পরিস্থিতি ভেদে বিয়ের এই নিয়ন্ত্রিত আইন অনেকগুলো অনৈসলামিক কাজ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। তাই ইসলাম একাধিক বিয়ের অনুমোদন দেয়ার সাথে সাথে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও প্রদান করেছে, একে মানবতাবাদী পন্থা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সব স্ত্রীদের সমান অধিকারের আদেশ দিয়েছে, আবার প্রয়োজন ছাড়া একের অধিক বিয়ে নিষিদ্ধ করেছে।

বহুবিবাহ নয়, বরং একটি বিয়েই ইসলামের সাধারণ রীতি। কিন্তু নারী ও পুরুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক নানাবিধ সমস্যা ও সংস্কৃতির কথা বিবেচনা করে সীমাবদ্ধ আইনের মধ্যে থেকে একাধিক বিয়ের অনুমোদন ইসলামের অত্যন্ত বাস্তবধর্মী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। একটি উদাহরণ দিয়ে যদি বলতে চাই, তাহলে বলতে হয় যে একটি সমুদ্রে একটি ডুবন্ত জাহাজের যাত্রীদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য যেমন ক্যাপ্টেনকে জাহাজের মালপত্র গুলো সমুদ্রে ফেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়…ঠিক তেমন বড় গুনাহ ও সামাজিক বিপর্যয় থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য দুটো খারাপের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম খারাপটিকে অনুমোদন দিয়েছেন।

চলবে…

ডা. ফাতিমা খান
লেখিকা কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

শেষ পর্ব

 

ভুল করা কন্যার লাগি মন আনচান করে

ফাতিমা মারিয়াম


সামিনার বাবা দেশের বাইরে থাকেন। দুই বা তিন বছর পরপর দেশে আসেন। ফলে ওর আম্মাই সংসারের সবকিছু দেখাশুনা করেন। সামিনার আরও তিনটি ভাইবোন আছে। সবাই পিঠাপিঠি। ওরা সব ভাইবোনই বেশ সুন্দর। তবে সামিনা সবার চাইতে বেশিই সুন্দর……… বেশ রূপবতী।

সামিনা যখন ক্লাস নাইনে পড়ে তখন তাকে এবং তার ছোট ভাইবোনদেরকে পড়ানোর জন্য উনার আম্মা একজন শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলেন। একসময় উনি উনার পছন্দমত একজনকে পেয়েও গেলেন।

ছেলেটির নাম সবুজ। জগন্নাথ কলেজে অনার্স পড়ে। ওর পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ততটা ভাল না। ফলে ঢাকায় থাকা, খাওয়া এবং পড়াশুনার খরচ তাকেই চালাতে হয়। তাই সে কয়েকটি টিউশনি করে।

সামিনা এবং তার ভাইবোনদেরকে সবুজ পড়ানো শুরু করল। সবুজ বেশ ভাল পড়ায়। সামিনাদের সব ভাইবোনকে সে বেশ যত্ন করেই পড়াত। ফলে সবাই বেশ খুশি।

দিন যেতে থাকে…… সবুজ ও সামিনা উভয়ে উভয়ের প্রতি এক ধরণের আকর্ষণ অনুভব করে। আকর্ষণ থেকে দুর্বলতা, আর দুর্বলতা থেকে প্রেম। মা ও ভাইবোনদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সামিনা সবুজের সাথে প্রায় দুই বছর প্রেম চালিয়ে যায়।

ইতিমধ্যে সামিনা এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে।

এক পর্যায়ে সামিনা ও সবুজ সামিনার মায়ের কাছে ধরা পড়ে যায়। সামিনার মা সবুজকে উনার বাসায় আসতে নিষেধ করে দেন।

সামিনার জন্য এখন আর বাসায় শিক্ষকের প্রয়োজন নেই। তাই ছোটদের জন্য নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেন। সবুজ সামিনাদের বাসায় আর আসেনা। কিন্তু ওদের যোগাযোগ বন্ধ হয় না। বান্ধবীদের মাধ্যমে সামিনা সবুজের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যায়।

ইতিমধ্যে সবুজ অনার্স কমপ্লিট করেছে। এবার সে তার পরিবারের হাল ধরার জন্য প্রবাসে পাড়ি জমায়।সামিনার সাথে তার যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। সামিনার বান্ধবীদের মাধ্যমে এই যোগাযোগ চলতে থাকে। এটা যেই সময়ের কথা তখন বাংলাদেশে মোবাইল ফোন আসেনি। বাসার ল্যান্ডফোন সামিনার জন্য নিষিদ্ধ ছিল।

তাই সে চিঠির মাধ্যমেই সব সময় সবুজের সাথে যোগাযোগ রাখত। আর এই চিঠিগুলো আসত বান্ধবীদের ঠিকানায়। মায়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সে তার প্রেম চালিয়ে যায়।

এর মধ্যে সামিনার এইচএসসি পরীক্ষা কাছাকাছি এসে যায়। সামিনার মা কোনভাবেই সবুজের কাছে মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হননি। কারণ এই ছেলের পরিবারের অবস্থা ভালো না। সবুজকেই সব দেখতে হবে। কবে সে ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে আর কবে তিনি মেয়েকে বিয়ে দেবেন! এইসব সাতপাঁচ ভেবে মেয়ের তীব্র অমত স্বত্বেও টেস্ট পরীক্ষার কিছুদিন আগে ওর মা ওকে এক ব্যবসায়ী পরিবারে বিয়ে দিয়ে দেন। পাত্রের পরিবার বেশ ধনি। উভয় পক্ষই মহা ধুমধাম করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সামিনার স্বামীর নাম কামাল।

যথা সময়ে সবুজের কানে বিয়ের খবরটা যায়। তখন সে এক ভয়ানক পরিকল্পনা করে। তার এখনো দেশে আসতে দুই/তিন বছর বাকি। সে সামিনাকে জানায়- তুমি আমার জন্য অপেক্ষা কর। আমি এসেই তোমাকে বিয়ে করব। ততদিন তুমি কামাল ও তার পরিবারের সাথে বসবাস করে যাও। কাউকে কিছু বুঝতে দিও না।

সামিনা মনে মনে স্বপ্ন দেখে একদিন সে আর সবুজ মিলে একটি ছোট সংসারে বাস করবে। এই ভাবনায় তার দিন কাটে…..।

এমন সময় সে অনুভব করে যে সে মা হতে চলেছে। শারীরিক অসুস্থতার ফলে সে আর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে নি। সুতরাং তার শিক্ষাজীবন ওখানেই শেষ হয়ে যায়।

দুই পরিবারের সবাই তার এই নতুন খবরে বেশ খুশি। কিন্তু সামিনা কোনভাবেই সবুজের কথা ভুলতে পারছেনা। সে শুধু সবুজের আসার অপেক্ষায় দিন গোনে।

যথা সময়ে তার একটি পুত্রসন্তান হয়। এমন কি ছেলের মুখের দিকে তাকিয়েও সে সবুজকে ভুলতে পারেনা।

ছেলে বড় হতে থাকে। সে মনে মনে ফন্দি করতে থাকে সবুজ দেশে এলে সে এই সংসার ছেড়ে সবুজের কাছে চলে যাবে। তবে তার মনে একান্ত ইচ্ছা সে তার ছেলেকে এদের পরিবারে রেখে যাবে না। তাকে সে সাথে করেই নিয়ে যাবে।

এদিকে সবুজের দেশে আসার দিনও প্রায় এসে গেল। এখন আর সবুজের সাথে তার যোগাযোগ করতে কোন অসুবিধা হয়না। সামিনা যখন তার মায়ের বাসায় বেড়াতে আসে তখন সে সুযোগ বুঝে সবুজকে ফোন করে। আর ওর মা বা অন্য কেউ ওকে এখন আর ফোন ব্যবহার করতে বাধা দেয়না। কারণ সবাই ভাবে বাচ্চা হয়ে গেছে, এখন কি আর ও কোন অঘটন ঘটাবে? কিন্তু ও যে নিয়মিত গোপনে সবুজের সাথে এই কয় বছর যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে তা কেউ বুঝতে পারেনি।

সবুজ দেশে আসে। এসেই সে সামিনার সাথে যোগাযোগ করে। সবুজ সামিনাকে তার সাথে দেখা করতে বলে। সুযোগ বুঝে একদিন সামিনা সবুজের সাথে দেখা করে। তারা দুজনে প্ল্যান করে তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে। সবুজের প্ল্যান অনুযায়ী সামিনা বাবার বাসায় বেড়াতে আসে।

এর কয়েকদিন পরের ঘটনা…… সে তার বাচ্চাকে মায়ের বাসায় রেখে সবুজের কাছে চলে যায়। কিভাবে যেন সামিনার শ্বশুরবাড়ির সবাই এই দুঃসংবাদ জেনে যায়। তারা এসে তাদের বাচ্চাটিকে সামিনার মায়ের কাছ থেকে নিয়ে চলে গেল।

সব কথাই সামিনা জানতে পারে। কিন্তু বাচ্চার জন্য তার আর কিছুই করার থাকে না।

কয়েকদিন কেটে গেছে। কিন্তু সামিনার কাছে সবুজের আচরণ কেমন জানি মনে হয়! সামিনা সবুজকে বলে-চল আমরা বিয়ে করে ফেলি। কিন্তু সবুজ টালবাহানা করে সময় কাটাতে থাকে।

কয়েকদিন পরে সবুজ সামিনাকে বলে যে -‘আমি তোমাকে মোটেও বিশ্বাস করিনা। একবার তুমি আমার সাথে প্রতারণা করে কামালকে বিয়ে করেছ। আবার এখন কামালের সাথে প্রতারণা করে আমার কাছে চলে এসেছ। তোমার একটি সন্তান থাকা সত্ত্বেও তুমি সংসার ত্যাগ করেছ। আবার হয়ত তুমি নতুন কাউকে পেলে আমাকে ছেড়েও চলে যাবে। এ ছাড়া আমার মনে তোমার প্রতি বেশ অনেকটা ক্ষোভ ছিল। তুমি আমার ভালবাসাকে অপমান করে কামালকে বিয়ে করেছ শুনেই আমি মনে মনে পরিকল্পনা করেছিলাম যে আমি তোমাকে একটা উচিৎ শিক্ষা দেব। সেই জন্যই আমি তোমার সাথে এই আচরণ করেছি। আমি এখন বাড়ি যাব। ওখানে আমার পরিবারের পছন্দ করা পাত্রীকে বিয়ে করব। তুমি তোমার বাবা মায়ের কাছে চলে যাও। আমার সাথে আর কোনোদিন যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। এখানেই তোমার সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ।’

সবুজের কাছে চরমভাবে অপমানিত হয়ে সামিনা বাবা-মায়ের কাছে ফিরে আসে।

দিন যায়…..।

সামিনা এবং তার বাবা-মা মিটমাটের জন্য কামাল ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে। কামাল ও তার পরিবার জানিয়ে দেয় এই বউকে তারা কোনদিন তাদের বাড়িতে স্থান দেবে না। বাচ্চাটিকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনার জন্য সামিনা অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু কামাল ও তার পরিবার তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। তারা বাচ্চাকেও ফেরত দেয় নি।

আরও কিছু দিন কেটে যায়।

এবার কিভাবে যেন সামিনার সাথে পুরনো ঢাকার এক ধনী ব্যবসায়ীর সাথে পরিচয় হয়। এই ভদ্রলোকের স্ত্রী আছে, ছেলেমেয়ে আছে। এক পর্যায়ে সামিনাকে সেই ভদ্রলোক বিয়ে করে। তবে তার নতুন স্বামী তাকে এই শর্তে বিয়ে করেছে যে,কোনদিনও সামিনা বা তার পরিবার এই বিয়ের কথা উনার পরিবারের নিকট প্রকাশ করতে পারবে না। যেদিন প্রকাশ করবে সেদিন থেকে তিনি আর সামিনার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবেন না।

সামিনা এই শর্ত মেনে নিয়ে জীবন যাপন করতে থাকে।

তার এই স্বামী তাকে তার মায়ের বাসার কাছে একটি ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছে। এই এলাকাতেই ওকে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছে। টাকা-পয়সা, শাড়ি-গয়না কোন কিছুরই অভাব নেই।

একে একে সামিনার দুইটি বাচ্চা হয়েছে। বাচ্চা দুইটাও এখন বেশ বড় হয়ে গেছে। বাচ্চাগুলো সামাজিকভাবে একটু কোণঠাসা হয়েই দিন কাটায়।

নিজের জীবনের কিছু বোকামির মাশুল আজ সামিনা এভাবেই দিয়ে যাচ্ছে………।

 

অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ আর নেই

নারী সংবাদ


ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে তিনি ইনতিকাল করেন।
গতকাল সকালে তাজিনের হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখেন চিকিৎসকেরা। তিনি সেখানে ডা: নূর হোসেনের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বেলা ৪টা ২০ মিনিটে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তাজিনের অসুস্থতার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান তার সহকর্মীরা। অভিনয় শিল্পী সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম, রওনক হাসান, জাকিয়া বারী মম, হুমায়রা হিমু ও আরো অনেকে তার অসুস্থতার খবরে ছুটে যান হাসপাতালে। দুপুরে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে অভিনয়শিল্পী সঙ্ঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান লিখেছেন, ‘অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে আছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সবাই তার জন্য দোয়া করুন।’ রওনক হাসান পরবর্তীতে বলেন, আমরা খবর পেয়েই ছুটে এসেছি। এখন হাসপাতালেই আছি। তার অবস্থা খুবই গুরুতর ছিল। অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচানো গেল না।
আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘আমরা ৩টার দিকে খবরটি পেয়েছি। যখন তাজিনের হার্ট অ্যাটাক হয় তখন বাসায় কেবলমাত্র একজন মেকাপ আর্টিস্ট ছিলেন। উনি তাজিনের সাথেই থাকতেন। তিনিই তাজিনকে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন।’
জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ অভিনয় ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে আরণ্যক নাট্যদলের সাথে যুক্ত ছিলেন। পরে টেলিভিশন নাটকে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিটিভির সোনালি দিনগুলোতে তিনি ছিলেন প্রথমসারির তারকাদের একজন। জাহিদ হাসান, আজিজুল হাকিম, তৌকীর আহমেদ, টনি ডায়েসদের সাথে জুটি বেঁধে নিয়মিতই তিনি হাজির হতেন টিভি দর্শকদের সামনে। অভিনয়ের পাশাপাশি মডেলিংও করেছেন বেশ কিছু। সুত্র:নয়াদিগন্ত

 

বিয়ে ও পরিবার – ৩

কানিজ ফাতিমা


বিয়ে দু’জন মানুষের মধ্যে জীবনকে ভাগাভাগি করে নেয়ার চুক্তি। জীবনে এক সাথে চলার পথে বহু বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়। এই বাস্তবতার অন্যতম বাস্তবতা হল Conflict বা দ্বন্দ, সংঘাত, বিরোধ ইত্যাদি। বিয়ের পূর্বে এ ব্যাপারটি নিয়ে খুব একটা চিন্তা ভাবনা করা হয় না। বিয়ের পূর্বে সম্পর্কের মধুর (Romantic) দিকটি নিয়েই বেশি জল্পনা-কল্পনা হয়। ফলে বিয়ের পরে যখন এই দ্বন্দ বা Conflict দেখা দেয় তখন অনেকেই এটিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না। অনেকে হতাশা বোধ করে, অনেকে নানা প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। এজন্য বিরোধ ব্যবস্থাপনা বা Conflict management সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরী। Conflict management বা বিরোধ ব্যবস্থাপনার প্রথম কথা হল সমাজে, সংগঠনে বা পরিবারে বিরোধ থাকা একটি বাস্তবতা। কেউ যদি মনে করে দু’জন মানুষ একত্রে বসবাস করবে আর তাদের মধ্যে কোন বিরোধ থাকবে না তবে তা একমাত্র রূপকথাতেই সম্ভব। বাস্তবতা হল দু’জন মানুষ একত্রে থাকলে বিরোধ বাঞ্ছনীয় তাতে দু’জনের সম্পর্ক যাই হোক না কেন। স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, বাবা-পুত্র সবার মধ্যেই বিরোধ থাকবে।
তবে প্রশ্ন হল সেই বিরোধের মাত্রা কতটুকু? যেমন ধরা যাক বাবা জমি কিনতে চাচ্ছেন আর পুত্র ব্যবসার টাকা বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন। মা মেয়ের জন্য সালোয়ার কামিজ কিনতে চাচ্ছেন কিন্তু মেয়ে প্রসাধন সামগ্রী চাচ্ছে। মানুষে মানুষে বিরোধ না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। বিরোধ, মতের পার্থক্য, চিন্তার ভিন্নতা এ পৃথিবীর অপরিহার্য একটি বৈশিষ্ট্য। Conflict সম্পর্কে দ্বিতীয় কথা হল সব Conflict বা বিরোধই খারাপ নয়। Conflict বা বিরোধ শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে বিরূপ চিত্র ভেসে ওঠে। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন Conflict বা বিরোধের ফলে অনেক ভাল জিনিসের তৈরী হয়। যেমন Conflict সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। যেমন ধরুন বাবা বললেন আমরা অমুক এলাকায় বাসা ভাড়া নিবো, মা বললেন না, এখানে বৃষ্টি হলেই পানি জমে। আমরা অমুক এলাকায় যাব। ছেলে বললো না, এখান থেকে আমার কলেজ অনেক দূরে, আমাদের কলেজের কাছাকাছি এলাকায় থাকা উচিত। এভাবে ভিন্ন মতামতের কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয় সব তথ্য বের হয়ে আসবে এবং একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে। অপর পক্ষে অতিমাত্রায় বিরোধ, হিংসা ও সংঘর্ষ জীবনে অশান্তির কারণ। কাজেই আমরা বলতে পারি সহনশীল মাত্রার বিরোধ পরিবারের জন্য উপকারী। একজন স্বামী বা স্ত্রীকে এটি মেনে নিতে হবে যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ ঘটবেই। তবে তাকে সহনশীল পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করাই হচ্ছে Conflict management বা বিরোধ ব্যবস্থাপনা। দ্বন্দ বা বিরোধ পুরোপুরি নিরসন বা নির্মূলকরণ অসম্ভব বা অবাস্তব। মূলতঃ দ্বন্দ বা বিরোধ ব্যবস্থাপনাই সঠিক পন্থা। তাই স্বামী ও স্ত্রীকে Conflict management বা দ্বন্দ ও বিরোধ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। স্কলারগণ Conflict management এর নিম্নরূপ মডেল প্রদান করেছেন-

১. Forcing- বিরোধের সময়ে আপনি অন্যপক্ষের মতামত বা স্বার্থকে আমলে না এনে যদি শুধুমাত্র নিজের অবস্থানে অটল থাকেন, নিজের স্বার্থ ও মতামতকেই প্রাধান্য দেন তবে একে বলা হয় চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে দ্বন্দ নিরসন করা। আপনি যদি অন্য পক্ষের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হন তবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে চাইবেন। এতে অন্যপক্ষ মন থেকে নয় বরং বাধ্য হয়ে আপনার কথা মেনে নেবে। এ পদ্ধতি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের জন্য বিরোধ নিরসনের সঠিক পন্থা নয়। হুমকি, ধমকীর মাধ্যমে নিজের ইচ্ছাকে স্থাপন করার চেষ্টা নির্যাতনের আওতায় পড়ে।

২. Accommodating বা আত্মসমর্পন করা- এটি Forcing এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আপনি যদি নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেন এবং অপর পক্ষের মতামত পুরোপুরি মেনে নেন তবে তাকে Accommodating পদ্ধতি বলে।

দুই ক্ষেত্রে সাধারণত মানুষ এটা করে থাকে।
ক. আপনি যদি দুর্বল হন এবং আপনার প্রতিপক্ষ যদি শক্তিশালী হয় তবে আপনি বাধ্য হবেন এ পদ্ধতি অবলম্বন করতে।

খ. আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আপনার অবস্থান ভুল এবং আপনার প্রতিপক্ষ সঠিক তখন আপনি স্বেচ্ছায় নিজ অবস্থান থেকে সরে আসবেন। স্বামী বা স্ত্রী যদি নিরপেক্ষ চিন্তায় নিজের ভুল বুঝতে পারে সেক্ষেত্রে ঐ ভুলটি আঁকড়ে ধরে না থেকে এই পদ্ধতির মাধ্যমে বিরোধ নিরসন করতে পারেন। আজ এ পর্যন্তই। এ সম্পর্কিত আরও আলোচনা থাকবে পরবর্তী সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ।

চলবে…

পর্ব-২

 

বৃদ্ধাশ্রমে অসুস্থ মা, চিকিৎসক ছেলে লন্ডনে!

নারী সংবাদ


রাফসান আরা (৬৩)। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরশনের সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা। ২৬ বছরের চাকরি জীবন শেষে ২০০৭ সালে অবসরে যান। জীবনের শেষ দিনগুলি কাটাতে দুই বছর ধরে আছেন রাজধানীর আগারগাঁওয়ের প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের প্রবীণ নিবাসে।

রাফসান আরার বড় ছেলে ফাহাদ হোসেন (৩৯) লন্ডনের একটি হাসপাতালে অর্থপেডিকস অ্যান্ড সার্জারি বিভাগের প্রধান। দুই মাস আগে লন্ডন থেকে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন আরো বড় ডিগ্রি নিতে। ২০১০ সালে স্ট্রোক করেন রাফসান আরা। ডায়াবেটিকস ও উচ্চরক্তচাপসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন তিনি।

নীলফামারী জেলার ডিমলার মেয়ে রাফসান আরার স্বামী এয়ারলাইন্স কার্গো সেকশনে চাকরি করতেন। মেয়ে নাজিয়া হোসেন (৩৭) লন্ডনে অর্থনীতিতে উচ্চ ডিগ্রি নিয়েছেন। এখন তিনি সোশ্যাল ওয়েলফারের ওপর একটি এনজিওতে চাকরি করেন সেখানেই।

অবসরের পর কিছুদিন সন্তানদের সঙ্গে লন্ডনে ছিলেন রাফসান আরা। তবে সেখানে তার থাকা হয়নি বেশিদিন। এখন প্রবীণ নিবাসে একাই দিন কাটান নীরবে। বিগত দিনের স্মৃতি ভুলে থাকার চেষ্টা করেন সব হারানো রাফসানা।

সন্তানদের পড়ালেখা করানোর জন্য ২৬ বছর চাকরি করে গেছেন। নিজে টাকা জমাননি। পড়ালেখা শেষে সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় পাঠিয়েছেন লন্ডনে। সেখানে উচ্চশিক্ষা শেষে বড় ছেলে ১১ বছর ধরে ডাক্তারি করছেন। মেয়েও লন্ডনে ৭ বছর চাকরি করছেন। স্বামীকে নিয়ে দুই বছর আগে লন্ডনে গিয়েছিলেন রাফসান আরা। সেখান থেকে বর্তমানে বৃদ্ধাশ্রমে।

নিজের বেদনা ঢেকে রাফসান আরা বলেন, আমি কেমন আছি সেটা দেখার বিষয় না, আমি কেমন আছি এটাও বড় ব্যাপার না। আমি সব সময় দোয়া করবো আমার সন্তানেরা যেন দুধে-ভাতে থাকে। আল্লাহ সব সময় তাদের ভালো রাখুক। মায়ের ভালোবাসা চিরন্তন। সন্তানরা যাই করুম মায়ের দোয়া সবসময় তাদের প্রতি থাকবে।

লন্ডনে পরিবারের কাছে থাকলেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে চোখের লোনা জল ফেলতে থাকেন মা রাফসান। ফেলে আসা দিনের কথা মনে করতে চান না তিনি। সবকিছু ভুলে

জীবনের শেষ দিনগুলি প্রবীণ নিবাসে নির্বিঘ্নে কাটাতে চান রাফসান আরা। সুত্র: বাংলানিউজ২৪.

 

রমজানে ইফতারির রেসিপি-২

রেসিপি


মাছের চপ

উপকরণ: ১. যেকোনো মাছ (ভেটকি, রুই বা ইলিশ) পাঁচছয়টি বড় টুকরা,
২. আলু মাঝারি ৩টি,
৩. একটি বড় পাউরুটির টুকরা,
৪. পেঁয়াজ মিহিকুচি আধা কাপ,
৫. আদাবাটা ১ চা-চামচ,
৬. রসুনবাটা ১ চা-চামচ,
৭. কাঁচামরিচ-কুচি ১ টেবিল-চামচ,
৮. মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ,
৯. হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১০. ধনিয়াগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১১. ভাজা জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ,
১২. লবণ স্বাদমতো,
১৩. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি: মাছের টুকরাগুলো ভাপে সেদ্ধ করে কাঁটা বেছে নিতে হবে। সেদ্ধআলু ভালোভাবে চটকে নিন। এবার পাউরুটি পানিতে ভিজিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তুলে নিতে হবে। তারপর মাছ, আলু, রুটি খুব ভালো করে মেখে নিতে হবে। একে একে তেল বাদে সব উপকরণ খুব ভালো করে মিশিয়ে হাতে পছন্দ মতো আকার দিন। এবার গরম তেলে চপগুলো ছেড়ে দিয়ে মাঝারি আঁচে ভাজতে হবে। হালকা বাদামী রঙ আসলে নামিয়ে নিলেই হল। ইফতার, সাদাভাত, পোলাও বা বিরিয়ানির সঙ্গে খেতে মাছের চপের জুড়ি নেই।

পরিবেশন: গরম গরম মাছের চপ হাফ বাটিতে নিয়ে তাতে লেবু ও পুটিনা পাতা দিয়ে পরিবেশন করুন।

চিকেন মোমো

উপকরণ : ১. ময়দা ২ কাপ,
২. তেল ২ টেবিল চামচ,
৩. মুরগির কিমা দেড় কাপ,
৪. রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ,
৫. আদা কুচি ৩ চা-চামচ,
৬. পেঁয়াজপাতা কুচি ২টি,
৭. লবণ স্বাদমতো,
৮. সয়াসস ২ চা-চামচ,
৯. গোলমরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ,
১০. লেবুর খোসা কুচি আধা টেবিল চামচ,
১১. মাখন ১ টেবিল চামচ।

প্রণালি: ময়দার সঙ্গে আধা চা-চামচ লবণ, তেল ও পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে ময়ান দিতে হবে। কিমার সঙ্গে পেঁয়াজ, আদা-রসুন কুচি, সয়াসস, লবণ ও গোলমরিচ গুঁড়া মিশিয়ে মেখে রাখতে হবে। ফ্রাইপ্যানে মাখন গলিয়ে কিমার মিশ্রণ অল্প আঁচে রান্না করুন। কিমার পানি শুকিয়ে গেলে পেঁয়াজপাতার কুচি দিয়ে নেড়ে আরও ২ থেকে ৩ মিনিট ঢেকে রাখুন। এবার ঢাকনা খুলে কাঁচা মরিচ কুচি ও লেবুর খোসার কুচি দিয়ে নেড়ে আবার ঢেকে দিয়ে মৃদু আঁচে দুই মিনিট রাখুন। এদিকে ময়দার খামি থেকে ছোট আকৃতির রুটি বেলুন। রুটির কিনার বেশি পাতলা থাকবে। রুটির মাঝখানে ১ টেবিল চামচ করে কিমার পুর দিয়ে অর্ধেকটা মুড়ে দিয়ে ও পেঁচিয়ে এনে বাকি অর্ধেক চেপে দিন, যেন মুখ খোলা না থাকে। সব গুলো মোমো তৈরি হয়ে গেলে মাইক্রোওয়েভ কুকারে বা পানি ভর্তি বড় পাতিলের মুখে কাপড় বেধেও ভাপ দিয়ে নিতে পারেন। পাতিলের মুখে ভাপ দিতে হলে মিনিট দশেকই যথেষ্ট।

পরিবেশন: ভালোভাবে ভাপ দেয়া হলে নামিয়ে তারপর সসের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন মজাদার মোমো।
সুত্র রেসিপি: বাংলাদেশ রেসিপি

রমজানে ইফতারির রেসিপি-১

 

বাতিঘর

রেহনুমা বিনতে আনিস


কোণাচোখে তারিককে পাশের টেবিলে আরাম করে বসতে দেখে জামিল দ্রুত গলা নামিয়ে বলে, ‘শুনুন, আপনি কিন্তু কিছুতেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবেননা’।

ঘটনার আকস্মিকতায় থতমত খেয়ে যায় ফারজানা। সে লোকটাকে চেনেনা, জানেনা, কোন সালাম নেই, সম্ভাষন নেই, হুট করে এই আচমকা অনুরোধ! তারিকের দিকে জামিলের চোরা চাহনি, ফিসফিস কথা বলার ভঙ্গি আর এই অদ্ভুত প্রস্তাব- সব মিলিয়ে কিম্ভুত এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ হাসি পেয়ে যায় ওর। হাসি চাপার চেষ্টা করতে করতে সে স্মিত হেসে বলে, ‘আসসালামু আলাইকুম’।

এবার নিজের অভদ্র আচরন স্মরন করে জামিল নিজেই একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে, লজ্জা লজ্জা চেহারায় টেবিলের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’।
– ‘আমার নাম ফারজানা’।
– ‘জ্বি, তারিক ভাই এইমাত্র বললেন। আমি জামিল’।
– ‘আপনার মত আমিও আসলে এখন বিয়ে করতে উৎসাহী নই। কিন্তু আমি যদি এই মূহূর্তে উঠে চলে যাই তাহলে বিয়ে করবনা বললে ভাইয়া কিছুতেই কনভিন্সড হবেনা। সুতরাং, আমাদের মনে হয় কিছুক্ষণ অন্তত কথা বলার অভিনয় করা উচিত’।
জামিল বুঝতে পারল কথায় যুক্তি আছে, কিন্তু সে কি বলবে? ওর তো এটুকুই শুধু বলার ছিল!
ফারজানাই এগিয়ে এলো, ‘আচ্ছা, আপনি বিয়ে করতে না চাইলে দেখা করতে চাইলেন কেন? আপনি তো মেয়ে না যে কেউ আপনাকে জোর করে বাধ্য করতে পারবে!’

জামিল ওর দিকে তাকালে দেখতে পেত ওর চোখের তারায় কৌতুক, কিন্তু টেবিলের দিকে তাকিয়ে থাকায় সে ফারজানার কথায় দুষ্টুমির ভাবটা ধরতে পারলনা। খুব অপরাধী, মাটির সাথে মিশে যেতে পারলে বাঁচে এমন চেহারা করে আমতা আমতা করে বলতে লাগল, ‘আসলে আমার বাবামা ভাইবোন কেউ নেই। চাচা চাচীর কাছে মানুষ। এখন শহরে থাকি বলে তাঁদের সাথেও তেমন যোগাযোগ হয়না। একা থাকি বলে তাঁদের চিন্তার অন্ত নেই। চাচা তাঁর এক বন্ধুকে বললেন আমার জন্য মেয়ে দেখতে। আমার নিজের কোন কুলকিনারা নেই, সাধারন একটা পেটেভাতে চাকরী করি, ছোট্ট একটা দু’কামরার ঘরে ভাড়া থাকি- এই জীবনে কাউকে জড়িয়ে কষ্টে ফেলে লাভ আছে? কিন্তু চাচা চাচী কিছুতেই বুঝতে চান না। চাচার এক বন্ধু আপনার ভাইকে চেনেন। ওঁরা আমাকে এমনভাবে ধরলেন যে মেয়ে না দেখে কোন সিদ্ধান্তই তারা শুনবেন না। তাই আপনাকে কষ্ট দিতে হোল। আপনাকে এখানে আসতে বাধ্য করা হয়ে থাকলে সেজন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত। প্লীজ আমাকে মাফ করে দেবেন’।

জামিলের হাবভাবে এবার ফারজানা কিছুতেই হাসি চেপে রাখতে পারলনা, খিক করে একটু হাসি দিয়েই মুখে হাত চেপে ধরল। এবার জামিল থতমত খেয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘আমি কি এমন কিছু বলেছি যা আপনার অস্বাভাবিক মনে হয়েছে?’

ফারজানা হাসি সংযত করার চেষ্টা করে বলে, ‘নাহ, তবে আপনার চেহারায় কেমন যেন একটা চোর চোর মার্কা দুঃখী দুঃখী ভাব আছে, হি হি…’
-‘চোর চোর?’, কনফিউজড হয়ে যায় জামিল।
-‘জ্বি, আদিব, আমার ভাইয়ের ছেলেটা বিস্কিট চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলে যেমন চেহারা বানায় আপনার চেহারাটা ঠিক তেমন লাগছে, হি হি হি…’
এবার জামিলও হেসে ফেলে।
-‘আচ্ছা, আপনি কি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়েন?’
অপ্রত্যাশিত প্রসঙ্গ পরিবর্তনে আবার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় জামিল, শুধু উত্তর দিতে পারে, ‘জ্বি’।
-‘আপনি কি লেখাপড়া করতে পছন্দ করেন? যেমন কুর’আন হাদিস পড়া, গল্পের বই পড়া, বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা ইত্যাদি?’
– ‘জ্বি, নিয়মিত পড়ি’।
– ‘আপনি কি সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করেন?’
– ‘জ্বি’, কথাবার্তা যে কোনদিকে যাচ্ছে কিছুই ঠাহর করতে পারেনা জামিল।
– ‘আপনি কি বিশ্বাস করেন যে সৃষ্টিকর্তা আপনাকে কোন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এবং তিনিই আপনাকে সেই উদ্দেশ্যের কাছে পৌঁছে দেবেন?’
– ‘জ্বি’।
– ‘তাহলে আপনার কি মনে হয় আপনার কথায় এই বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়? নাকি আপনার মন বিশ্বাসের কথা বললেও মুখ অবিশ্বাসের সাক্ষ্য দেয়?’

বাক্যালাপ এখানে এসে ঠেকবে স্বপ্নেও কল্পনা করেনি জামিল। কিন্তু এই অপরিচিত মেয়েটি তাকে এমন এক রূঢ় সত্যের সম্মুখীন করে দিয়েছে যা সে কখনো ভেবেও দেখেনি। সময় তাকে এমন এক ব্যাক্তিতে রূপান্তরিত করে দিয়েছে যে বিশ্বাসের কথা বলে অথচ নিরাশায় ভোগে, যে আত্মীয়তার জন্য হাহাকার করে অথচ আত্মীয়তার বন্ধনের মূল্যায়ন করতে পারেনা, যে আল্লাহর ওপর নির্ভরতার কথা বলে অথচ কারো দায়িত্ব নেয়ার জন্য নিজেকে নির্ভরযোগ্য মনে করেনা। হা করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোন জবাব দিতে পারেনা সে।

ওদিকে তারিক উঠে দাঁড়ায়, ফারজানাও সালাম দিয়ে ভাইকে অনুসরন করে। তারিক আর ফারজানাকে বিদায় দিয়ে আবার রেস্টুরেন্টের বে-আরাম চেয়ারটাতে বসে ভাবতে থাকে জামিল, মেয়েটা তাকে কি বলে গেল?

দু’ঘন্টা পর, ফারজানার বাসায়ঃ

‘অ্যাই বলনা ছেলেটা দেখতে কেমন ছিল?’
‘সত্যি ভাবী, আমি খেয়াল করিনি। খুব বেশি খারাপ হলে হয়ত খেয়াল করতাম’।
‘তাহলে আমার যে ননদিনি এতদিন বিয়ে করতে রাজী হয়নি সে কি দেখে একঘণ্টায় বিয়ে করতে রাজী হয়ে গেল?’
‘ওহ, তুমি এটা জানতে চাও? বললেই তো হত!’, চোখ টিপে হেসে ফেলে ফারজানা।
‘জ্বি ফারজু বিবি, এটাই জানতে চাই’, গালে হাত দিয়ে কৌতুহল প্রকাশ করেন ভাবী।
‘শোন তাহলে- লোকটাকে দেখে মনে হোল আমি এই লোকটার জীবনে কিছু একটা অবদান রাখতে পারব, তার বিশ্বাসকে পূর্ণতা দান করতে সাহায্য করতে পারব, তার সাথী হতে পারব। অধিকাংশ পুরুষ বিয়ে করার সময় কাজের মেয়ে খোঁজে। ভাবী, আমার ঘরের কাজ আমি করব, তাতে আপত্তির কি আছে? কিন্তু সেটাই যদি বিয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য হয় সেটা আমি মেনে নিতে পারিনা’।
‘তা তো ঠিক আছে ফারজু বিবি। কিন্তু তোমার ভাইয়া বলল ছেলেটাকে দেখে বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহী মনে হয়নি, আমি ভাবছি তুমি তার জীবনে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে তা সে মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কিনা’, চিন্তিত মনে হয় ভাবীকে।
‘ভাবী, লোকটাকে দেখে মনে হোল খুব সরল আর লাজুক প্রকৃতির কিন্তু বোকা না। উনি নানা কারণে জীবনের প্রতি আশাহত কিন্ত এই আশা জাগিয়ে তোলার মত বিশ্বাস ওনার মনের কোণে কোথাও অবশিষ্ট আছে’।
‘তাহলে আশা করি তুমি তার সেই ভঙ্গুর আশালতায় কোথাও দোলা দিতে পেরেছ’, ফারজানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকান ভাবী। বাপমা মরা এই মেয়েটাকে নিজের মেয়ের মত করেই বড় করেছে তিনি। কোনদিন ওর বিশ্বাসে এতটুকু চির ধরতে দেননি। এই আশার উজ্জ্বল প্রদীপ, এই বাতিঘর যদি সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া কোন নাবিককে পথ দেখাতে পারে, পারে আরেকটি ঘরকে আলোকিত করতে, তবে এর চেয়ে বেশি আর কি সাফল্য আশা করতে পারেন তিনি?

তিনদিন পর, নদীর ধারেঃ

‘মেয়েটা যে তোর জন্য perfect তা কি এখন তোর মাথায় ঢুকেছে না আরো সময় লাগবে?’, রোদের জন্য ভ্রূ কুঁচকে জামিলের দিকে তাকানোর চেষ্টা করে কামাল। জামিলের মুখটা ভারী উজ্জ্বল দেখাচ্ছে, ওটা কি রোদের আলো না আশার?
‘হিসেব করছি রে দোস্ত। কথায় কথায় ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদবে, বাচ্চাদের মত আবদার করে জীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে এমন বৌয়ের ভীতি থেকেই বিয়ে করতে অনীহা বোধ করতাম। কিন্তু এই মেয়েটা প্র্যাক্টিকাল, সেন্সিবল, স্মার্ট, বুদ্ধিমতি এবং ঠিক আমার মত পরিস্থিতিতে বড় হয়েও ওর বিশ্বাসটা অত্যন্ত মজবুত। আমার জীবনের এক বিরাট সত্য সে আমাকে কি অবলীলায় বুঝিয়ে দিল মনে একটুও কষ্ট না দিয়ে! এই সাহচর্য আমার প্রয়োজন, ম্যাগ্নিফায়িং গ্লাস দিয়ে দুঃখগুলোকে দেখা বন্ধ করার জন্য ওর হাসির জোয়ার আমার জীবনে দরকার, সবচেয়ে বড় কথা ওর বিশ্বাসের শক্ত খুঁটিটা হতে পারে আমার জীবনের সে অবলম্বন যা আমি এতদিন খুঁজে খুঁজে হয়রান হচ্ছি’।
‘তাহলে তুই দেরি করছিস কিসের জন্য?’
‘মেয়েটা যে বলল সে বিয়ে করতে আগ্রহী না!’
‘তুই জিজ্ঞেস করেছিলি, কেন?’
‘নাহ’।
‘গাধা কোথাকার! জিজ্ঞেস করবিনা?’, ঈষৎ বিরক্ত হয় কামাল, পরক্ষণেই আবার আশাবাদী হয়ে ওঠে, ‘যাক, সে বুদ্ধিমতি মেয়ে, ঠিকই বুঝতে পারবে তোর জীবনে সে ফ্রেন্ড, গাইড অ্যান্ড ফিলোসফার হয়ে বিরাজ করতে পারবে। একজন বুদ্ধিমতি মেয়ের জন্য এটাই বড় প্রাপ্তি’।
‘কিন্তু ওর আমাকে পছন্দ হোল কি’না কিভাবে জানব?’
‘ওরে দোস্ত, ওর পরিবারের সাথে কথা বল, নাহলে জানবি কি করে?’
‘ওঁরা যদি না করে দেয়?’
‘হ্যাঁও তো বলতে পারে। তুই আগেই নিরাশ হলে মেয়েটা তোকে শেখালটা কি?’
মাথা নাড়ে জামিল, আজই কথা বলতে হবে।
‘তা মেয়েটা দেখতে কেমন রে?’
‘খেয়াল করিনি তো!’, নিজেই অবাক হয় জামিল, ‘কিন্তু খুব বেশি খারাপ না মনে হয়, তাহলে হয়ত খেয়াল করতাম’।
খুশি হয় কামাল, ‘যারা মানুষের অন্তর দেখে পছন্দ করে তারাই মেয়ে দেখে এসে বলতে পারে চেহারা খেয়াল করেনি। এই বিয়ে হলে তুই ঠকবি না দোস্ত’।
উঠে দাঁড়ায় দু’জনে, আনন্দের আতিশয্যে হঠাৎ স্লোগান ছাড়ে কামাল, ‘জামিল তুই এগিয়ে চল, আমরা আছি তোর সাথে’।
হো হো করে হেসে ফেলে দু’জনে।

ছয়মাস পরঃ

‘আজকে তোমার নতুন চাকরী, এত সুন্দর জামাকাপড় পরেছ অথচ চুলটা আঁচড়াওনি। একটু গেলাম রান্নাঘরে আর ব্যাস, তোমার ফাঁকিঝুঁকি শুরু! তোমাকে নিয়ে আমি কি করি বলত?’, ব্যাস্তসমস্ত হয়ে পাশের রুম থেকে চিরুনী হাতে দৌড়ে আসে ফারজানা।
টেবিলে ঠান্ডা হতে দিয়ে যাওয়া খাবারগুলো টিফিন ক্যারিয়ারে ভরতে ভরতে জামিল বলে, ‘আমি চুল আঁচড়ালে সকাবেলা আমার মাথায় তোমার হাতের স্পর্শ নিয়ে বেরোব কি করে বলত? তুমি সকালে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিলে আমার সারাদিন মাথা ঠান্ডা থাকে, একদম যেন তিব্বত কদুর তেলের বিজ্ঞাপনের মত!’
‘হি হি হি’, ওকে হাসতে দেখে জামিলের হাসিটাও ঠোঁটের একপাশ থেকে পুরো মুখে ছড়িয়ে পড়ে। জামিলকে শেষপর্যন্ত হাসতে শেখাতে পেরেছে ফারজানা, ওর দুষ্টুমিগুলো এখন সে কিছু কিছু বোঝে, নিজেও দুষ্টুমি করতে শুরু করেছে দেখে বেশ উৎফুল্ল হয় সে।
‘যাবার পথে চাচা চাচীকে ফোন করে জানিয়ো নতুন চাকরিতে যাচ্ছ’।
‘ওঁরা জানেন তো’।
‘তাতে কি হয়েছে? ফোন করে জানাও, খুশি হবেন। আর বিকালে ফিরলে চাচীর জন্য শাড়ি কিনব যেন আগামী বৃহস্পতিবার নিয়ে যেতে পারি। আগামী মাসে বেতন পেলে চাচাকে পাঞ্জাবী কিনে দেব’।
‘আর তুমি কি কিনবে?’
‘বাহ, তোমার মতন এমন একটা চমৎকার গিফট থাকতে আমার আর কি লাগবে?’
মনে মনে একই কথা ভাবে জামিল, কিন্তু ওর মত সাবলীলভাবে বলতে পারেনা। বেহেস্তের টুকরোর মত বৌটার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে।
‘তুমি কি চাও তোমার নতুন অফিসে প্রথম দিন লেট হোক?’
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জুতো পায়ে দিতে দিতে আবার ফারজানার দিকে তাকায় জামিল।
‘যাআআআও’, বলে হাতে টিফিন ক্যারিয়ারটা হাতে গুঁজে দিয়ে দরজা খুলে ওকে প্রায় ঠেলে বের করে দেয় ফারজানা।
শেষ একবার পেছন ফিরে তাকালে ফারজানা মিষ্টি হেসে বলে, ‘আসসালামু আলাইকুম’।
এই স্বর্গীয় সম্ভাষন কানে নিয়েই প্রতিদিন পৃথিবীর বন্ধুর পথে যাত্রা শুরু হয় জামিলের, সে স্মিত হেসে জবাব দেয়, ‘ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’।

এখনো রিক্সা পেতে দেরী হয়, বাসে ভিড় ঠেলে উঠতে কষ্ট হয়, অফিসে ঝামেলা হয়, দোকানে দরদাম নিয়ে মন কষাকষি হয়, দু’কামরার ঘরটাতে চাপাচাপি হয়, কোন কোনদিন ভাল তরকারীও থাকেনা। তবু কেন যেন পৃথিবীটাকে আর আগের মত জটিল মনে হয়না। দিনের শেষে ওর জীবনে আছে এমন এক সাথী যে ওর সুখদুঃখ সব সমানভাবে ভাগাভাগি করে নেয়, যে ওর কষ্টগুলোকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারে, যে ওর বিশ্বাসকে এক আলোর তৈরী মিনারের মত উচ্চকিত করে তোলে। হাসি পায় এই ভেবে যে এই দুই শ্রেষ্ঠ বন্ধুর প্রথম বাক্যালাপ ছিল, ‘আপনি কিন্তু কিছুতেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবেননা’!

 

রমজানে ইফতারির রেসিপি

নুডলস পাকোড়া

উপকরণ
১. ১ কাপ বেসন,
২. ২ টেবিল চামচ চালের গুঁড়া,
৩. ১ কাপ সেদ্ধ নুডলস,
৪. ১ কাপ পরিমাণে সবজি (আলু, গাজর, ক্যাপসিকাম, মাশরুম বা আপনার পছন্দের যে কোনো সবজি),
৫. ৩/৪ টি কাঁচা মরিচ কুচি,
৬. ২ টি পেঁয়াজ কুচি,
৭. ১ ইঞ্চি আদা কুচি,
৮. ২ টেবিল চামচ টমেটো সস,
৯. ২ টেবিল চামচ ধনিয়া পাতা কুচি,
১০. লবণ স্বাদমতো,
১১. পানি পরিমাণমতো,
১২. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি
১. প্রথমে পানি দিয়ে বেসন ও চালের গুঁড়ো ভালো করে মিশিয়ে ঘন থকথকে ব্যাটারের মতো তৈরি করে নিন। ভালো করে মিশিয়ে নেবেন যেনো বেসনে দলা না থাকে।

২. এরপর একে এঁকে বাকি সব উপকরণ (তেল ছাড়া) বেসনের মিশ্রনে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে আরও খানিকটা পানি দিয়ে বড়া ভাজার মতো মিশ্রন তৈরি করে ফেলুন।

৩. এরপর চুলায় কড়াইয়ে ডুবো তেলে ভাজার জন্য তেল গরম করে নিন। অল্প একটু মিশ্রন হাতে নিজে বড়ার মতো গোল চ্যাপ্টা আকার দেয়ার চেষ্টা করুন এবং তেলে দিয়ে লালচে করে মুচমুচে করে ভেজে তুলে নিন।

পরিবেশন

একটি কিচেন টিস্যুতে রেখে তেল শুষে নিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন ইফতারে।

জিলাপি

উপকরণ
১. ১ কাপ ময়দা,
২. আধা কাপ টকমিষ্টি দই,
৩. ১ চা চামচের সামান্য বেশি বেকিং পাউডার,
৪. কয়েক ফোঁটা কমলা ফুড কালার,
৫. ঘি বা ডালডা ভাজার জন্য,
৬. ২ কাপ চিনি,
৭. ১ কাপ পানি।

প্রণালি

১. প্রথমেই চিনি ও পানি একসাথে দিয়ে প্যান চুলায় বসিয়ে জ্বাল করতে থাকুন শিরা তৈরির জন্য। মাঝারি আচে জ্বাল দিয়ে মাঝারি ঘন শিরা তৈরি করে নিন। শিরা ঠিকমতো হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য ঠাণ্ডা পানিতে কয়েক ফোঁটা শিরা ফেলে দেখুন। শিরা ছড়িয়ে না পড়ে যদি গোল বলের মতো হয় তাহলে বুঝবেন শিরা তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাহলে নামিয়ে রাখবেন।

২. শিরা জ্বাল করতে করতেই ময়দা ও বেকিং পাউডার একসাথে ভালো করে মিশিয়ে ফেলবেন। এবং এতে মেশাবেন দই ও ফুড কালার। ভালো করে মিশিয়ে পরিমাণমতো পানি দিয়ে ঘন মসৃণ ব্যটার তৈরি করে নিন।

৩. ব্যাটার খুব ঘন হবে না বা পাতলাও হবে না। বেগুনী বা আলুর চপ ভাজার জন্য যেমন অল্প ঘন ধরণের বেসনের ব্যটার তৈরি করেন ঠিক তেমনটা।

৪. কেকের উপরে ক্রিম সাজানোর যে পাইপিং ব্যাগ পাওয়া যায় তাতে নিন এই ব্যটারগুলো। যদি না থাকে একটি প্ল্যাস্টিকের ব্যাগে ভরে নিন এই ব্যটার এবং ব্যাগের এক কিনারে একটু গোল ফুটো করে দিন।

৫. একটি তলা ভারী কড়াইয়ে ডুবো তেলে ভাজার জন্য ঘি বা ডালডা দিয়ে গরম করুন। যদি ঘি বা ডালডা ব্যবহার করতে না চান তাহলে সাধারন তেলেও চলবে। তেল অতিরিক্ত গরম করবেন না। মাঝারি ধরণের গরম করে নিন।

৬. ব্যাগ চেপে হাত ঘুরিয়ে জিলাপির প্যাঁচ তৈরি করে জিলাপি ফেলুন তেল বা ঘি তে। সোনালি বাদামী রঙের করে ভেজে নিন দুপাশ এবং তুলে হালকা গরম শিরার মধ্যে ফেলুন।

পরিবেশন

৩-৪ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন শিরাতে তারপর তুলে নিন। ব্যস, এবার পরিবেশন করুন ইফতারে। ১৫ মিনিট শিরা তৈরি এবং পাশাপাশি ব্যটার তৈরি এবং ভেজে ৩-৪ মিনিট শিরায় ডুবিয়ে পরিবেশন। দেখলেন তো ৪০ মিনিটেরও কম সময়ে তৈরি করে ফেলতে পারবেন সুস্বাদু জিলাপি। সুত্র: বাংলাদেশি রেসিপি

 

শিশুদের মনে সৃষ্টিকর্তার অবস্থান

আফরোজা হাসান


নাকীবের যখন ছয় বছর বয়স তখন একদিন ওকে গেমস খেলতে দিয়ে আমি রান্না করতে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর শুনলাম জোড়ে জোড়ে বলছে, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। কিছুক্ষণ পর শুনি আবারো বলছে একই কথা। আরো দু’বার শুনে আমি রান্নাঘর থেকে ওর রুমে গিয়ে বললাম, কি হয়েছে বাবা তুমি বার বার ‘বিসমিল্লাহ’ বলছো কেন? নাকীব বলল, আম্মু তুমি না বলেছে আল্লাহর নামে কিছু শুরু করলে তাতে বরকত হয়। আমি গেমসের প্রতিটা লেবেল পার করার সময় সেজন্য বিসমিল্লাহ পড়ে নিচ্ছি। দেখো সব লেভেলে সেজন্য হাই স্কোর হচ্ছে আমার। আমি হেসে ওকে খেলতে বলে আমার কাজে ফিরে গিয়েছিলাম।

এর কিছুদিন পরের কথা। তখন নাকীবকে আমি যা কিছু চাওয়ার আল্লাহর কাছে চাইতে হবে এই বিষয়টা মাত্র বোঝাতে শুরু করেছি। একদিন ওর প্রিয় একটা খেলনা খুঁজে পাচ্ছিলো না আমাকে এসে বললে আমি বললাম আগে নিজে খুঁজে দেবো একান্তই না পেলে আম্মু সাহায্য করবো খুঁজতে। সে মুখটা বাদলা আকাশের মত করে চলে গেলো। একটু পর শুনি চিৎকার করছে ‘গ্রাসিয়াস আল্লাহ’ ‘গ্রাসিয়াস আল্লাহ’ (ধন্যবাদ আল্লাহ)। জানতে চাইলাম কি হয়েছে? বেশ একটা মুড নিয়ে বলল, তুমি তো আমাকে খেলনা খুঁজে দিলে না। আমি আল্লাহকে বলেছি, হে আল্লাহ আমার খেলনাটা খুঁজে দাও। আল্লাহ তখন আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন আমি তো বন্ধুদের দেখানোর জন্য স্কুলে নিয়ে গিয়েছিলাম খেলনাটা। তাই খেলনাটা আমার স্কুল ব্যাগের মধ্যে।

নাকীবের স্কুলে এই মাসে প্রথম সপ্তাহে বেশ বাজে একটা ঘটনা ঘটেছে। যখন রিলিজিয়ন ক্লাস হয় তখন মুসলিম বাচ্চাদের জন্য এডুকেশনাল গেমসের একটা আলাদা ক্লাসের ব্যবস্থা আছে স্কুলে। নাকীবদের ক্লাসে যে ছয়জন মুসলিম বাচ্চা আছে ওরা রিলিজিয়ন ক্লাসের সময় ওদের জন্য নির্ধারিত ক্লাসে গিয়ে খেলা করছিলো। ওদের প্রফ এসে কথা প্রসঙ্গে ওদেরকে বললো যে, সৃষ্টিকর্তা বলে আসলে কিছুই নেই। এসব মানুষের বানানো ধারণা। এসব বিশ্বাস করা বোকামো ছাড়া আর কিছুই নয়। বাচ্চারা সবাই প্রফের এই কথার তীব্র প্রতিবাদ করলো। নাকীব বলেছে, তুমি সৃষ্টিকর্তা বিশ্বাস না করতে পারো কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি যে আমাদের আল্লাহ আছেন। এই কথা শেষ করেই নাকীব সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করতে শুরু করে দিয়েছিলো প্রফের সামনেই।

ঘটনাটা নিয়ে মুসলিম অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। স্কুলের টিচার কখনোই বাচ্চাদেরকে এই কথা বলার রাইট রাখেন না যে, সৃষ্টিকর্তা বলে আসলে কিছুই নেই। এই ধরণের কথা টিচারদের বলারও কথা নয় বাচ্চাদেরকে। উনি কেন বলেছেন সেটা নিয়ে আলোচনা করার জন্য গতকাল আমরা অভিভাবকরা একসাথে হয়েছিলাম। আলোচনার সময় আমাদের সাথে বাচ্চারাও ছিলো। আমার এই পোস্টি লিখতে বসার কারণ আসলে বাচ্চারাই। ‘আল্লাহ নেই’ প্রফ কেন এই কথা বলেছে সেজন্য বাচ্চারা ভয়ংকর রকম রাগান্বিত প্রফের উপর। একটা ছেলে আছে নাম নোমান। মরক্কোর অধিবাসী। নোমানের সেই ক্ষোভ ভরা কণ্ঠ, রাগে জ্বলজ্বল করতে থাকা চোখ, প্রতিবাদী অঙ্গভঙ্গি থেকেই আমার এই লেখার সূত্রপাত।

আমি অবাক হয়েছি নোমানের আল্লাহর অস্তিত্বের উপর দৃঢ় বিশ্বাস এবং সেই বিশ্বাসের প্রকাশ দেখে। আট বছর বয়সী একটা বাচ্চা, যুক্তির প্রয়োগ সে জানে না। কিন্তু প্রতিবাদী কণ্ঠে বলছিল, এটা কি কখনো সম্ভব নাকি যে আল্লাহ নেই? আল্লাহ না থাকলে আমরা এলাম কি করে? পৃথিবী সৃষ্টি হলো কি করে? প্রফ একটা বোকা তাই এমন কথা বলেছে। অভিভাবকদের মধ্যেও নোমানের আম্মুই সবচেয়ে বেশি রাগান্বিত ছিলো। তিনিই সব গার্জিয়ানদের সাথে কথা বলে সবাইকে একত্রিত করার পুরো উদ্যোগটি নিয়েছিলেন। রাগে লাল হয়ে গিয়েছিলেন ভদ্রমহিলা। বলছিলেন, কোন সাহসে এই কথা প্রফ বললেন আমাদের বাচ্চাকে। আমরা স্কুলে পড়াশোনা শিখাতে পাঠিয়েছি তাদের কাজ শুধু সেটা শিখানো। আল্লাহ আছেন কি নাই সেটা আমরা শিখাবো আমাদের বাচ্চাকে। আমরা সবাই অভিযোগ করলে স্কুল কতৃপক্ষ ঐ প্রফকে জব থেকে বের করে দিতে বাধ্য। ইত্যাদি ইত্যাদি!

মা-ছেলের প্রতিবাদে গমগম করছিলো মাহফিল। একজন গার্জিয়ান বললেন, ভুল করে হয়তো বলে ফেলছে এটাকে এত বড় ইস্যু করার কোন প্রয়োজন দেখছি না। লক্ষ্য করলাম উনার বাচ্চাটাও বেশ নির্লিপ্ত এই ব্যাপারে। ওর কাছে ঘটনাটা জানতে চাওয়া হলে ঠিকমতো বলতেও পারলো না। কারণ বিষয়টা ওর মনে তেমন কোন প্রভাব রাখেনি। নাকীব বলল, প্রফ বলেছে তো কি হয়েছে? প্রফের বলাতে কি এসে যায়? আমি তো জানি যে আল্লাহ আছেন। (নাকীবের বাবা-মা দুজনই আসলে একটু ড্যাম কেয়ার স্বভাবের। মানুষের অপ্রয়োজনীয় বা অযৌক্তিক কথা যে কান দিয়ে শোনে সেই কান দিয়েই বের করে দেয় দু’জন ) দেখা গেলো পুত্রও বাবা-মার রঙে রঙিন।

আমি আরেকবার অনুভব করলাম কোন ঘটনাতে একটি শিশু কিভাবে রিঅ্যাক্ট করবে সেটা আসলে নির্ভর করে বাবা-মা তথা বেড়ে উঠার পরিবেশের উপর। চাইল্ড সাইকোলজিস্টরা যেমন বলেন যে, মা-বাবা হয়তো বুঝতে পারেন না কিন্তু এটা সত্যি সন্তানরা সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরার মতো তাদের অবলোকন করে এবং তাদের দেখে শিখতে থাকে। মাঝেমধ্যে কিছু কিছু আচরণ বাচ্চারা কপি করে নেয় এবং মা-বাবার রোল মডেল হয়ে অভিনয় করে দেখায়। তাই আমরা যদি চাই আমাদের সন্তান একজন আদর্শ মুসলিম হোক এর সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে নিজেরা চর্চার মাধ্যমে তাদের সামনে আদর্শ মুসলিমের গুণাবলী তুলে ধরা।

বেড়ে উঠার পরিবেশ থেকে জেনেছিলাম ইসলামের বিধান মেনে চলাটা জীবন ধারণের অন্যান্য জিনিসের মতোই। ক্ষুধা লাগলে যেমন আমরা খাবার খাই, ঘুম পেলে ঘুমোতে যাই, ঠিক তেমনি আযান শুনলে নামাজ পড়তে যেতে হবে। কারণ জীবন ধারণের বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে নামাজও একটি। এটা মোটেই বাড়তি কোন দায়িত্ব না বরং জীবন যাপনের অংশ। দেহকে যেমন আমরা পোশাক ও বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী দিয়ে সাজাই, মনেরও তেমন প্রসাধনী প্রয়োজন। আর মনের প্রসাধনী হচ্ছে কুরআন ও হাদীসের চর্চা। শরীর যেমন খাদ্যর দ্বারা সুস্থ্য থেকে, মন সুস্থ্য থাকে কুরআন তেলাওয়াত দ্বারা। ভিন্ন ভাষা ইংরেজির অর্থ না জানলে বা বুঝলে যেমন পরীক্ষার খাতায় সঠিক উত্তর লিখতে পারবো না। ঠিক তেমনি কুরআনের অর্থ না জানলে আখিরাতের পরীক্ষায় পাশ করা সুকঠিন হয়ে যাবে।

আমার মধ্যে এই চিন্তাগুলোই বদ্ধমূল এখনো পর্যন্ত। আমি যখন কাউকে দেখি নামাজ পড়ে না মেনে নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হয়। একজন মুসলিম নামাজ পড়বে না চিন্তাই করতে পারি না আমি! অনেক অনেক কষ্ট পাই তাই পরিচিত কাউকে নামাজ ছেড়ে দিতে দেখলে। এর কারণ বাবা-মামণিকে দেখে এভাবেই চিন্তা করতে শিখেছি আমি। আসলে আমাদের সন্তানদের মনে সৃষ্টিকর্তার অবস্থান কেমন হবে সেটা নির্ভর করে আমরা সৃষ্টিকর্তাকে কিভাবে পেশ করছি তাদের সামনে তার উপর।

সুতরাং সন্তানের মনে সৃষ্টিকর্তার অবস্থানকে নিশ্চিত করতে হলে আগে আমাদের মনের সৃষ্টিকর্তার অবস্থান কোথায় ও কেমন সেটা যাচাই করে দেখতে হবে। তাই চলুন আমরা নিজেরা সৃষ্টিকর্তাকে আমাদের মনে দৃঢ় ভাবে স্থাপন করি, তাহলে আমাদের সন্তানদের মনেও সৃষ্টিকর্তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে যাবে (ইনশাআল্লাহ)।

 

মাতৃকথন ৭

ফারিনা মাহমুদ


শুরু করি সত্য ঘটনা দিয়ে । আমার ছেলের বয়স যখন ১৬ মাস, ওকে নিয়ে গেলাম আর্লি চাইল্ডহুড সেন্টারে। বাচ্চা জন্মের পর থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই সেন্টারে শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সংক্রান্ত রুটিন চেকাপ করানো যায়, প্রয়োজনে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নার্সদের সাথে বিশেষ সমস্যা নিয়ে কথা বলা যায় মা ও বাচ্চা উভয়ের ব্যাপারে। ওরা পরামর্শ দেবার পাশাপাশি অন্যান্য ক্লিনিকে রেফার করে দিতে পারে। এখানে যেকোনো সমস্যা নিয়েই যাওয়া যায়। যেমন ধরেন বাচ্চার ঘুমের রুটিন ঠিক করতে পারছি না, রাতে কান্না করে, খেতে চায় না, খুব ভয় পায়, সারাক্ষণ মা আঁকড়ে থাকে, বুকের দুধ ছাড়াতে পারছি না … যে কিছু ।
ওরা কিছু ট্রিক্স আর টিপস দেয়, সচরাচর খুব ত্যাঁদড় বাচ্চা না হলে ঐসব ট্রিক্স কাজ করে যদি ঠিকমতো ফলো করা যায় । আর এতে কাজ না হলে ফিডিং ক্লিনিক বা স্লিপ ক্লিনিক এর মতো স্পেশালাইজড জায়গায় পাঠানো হয় ।
আমার সমস্যা ছিলো বাংলাদেশী মায়েদের জাতীয় সমস্যা, বাচ্চা খায় না। আসলে ব্যাপারটা যতটা হালকাভাবে বলছি, ততটা হালকা না । এই ভয়ঙ্কর কষ্ট যেই মা ভোগ করেন, তিনিই শুধু জানেন এটা কতটা পীড়া দায়ক । যে বেলা বাচ্চাটা পেট ভরে খায়, মায়ের যেনো মাথাটা একটু ঠান্ডা থাকে। বাচ্চা খেলো না, ব্যাস, দুনিয়ার কিছুই আর ভালো লাগে না। ঠিক এই অবস্থায় বিদেশ বিভূঁইয়ে কর্মজীবি একজন মায়ের বাচ্চা যখন রীতিমতো খাবার সামনে দেখলে মুখে যমদুয়ারের খিল এঁটে বসে থাকে, তখন লাগে টা ক্যামন?

চোখের সামনে আমার ব্যর্থ মাতৃত্বের স্বাক্ষ্য দিতে তার জামা কাপড় সাইড দিয়ে ঢল ঢল করছে। অফিস থেকে ফিরে আমি বাচ্চার খাবার নিয়ে বসি এমনভাবে যেনো গাজা উপত্যকা নিয়ে ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে চলমান সংকটের একটা সমাধান করার মরণপণ নিয়ে জাতিসংঘ শান্তি চুক্তিতে জেনেভায় বসছে। প্রতিরাতে সেই চুক্তি ব্যর্থ হয়, ডিপ্লোম্যাট হিসাবে আমি ফেল মারি এবং সংকট প্রকটতর হতে থাকে! বাচ্চার ঘাউড়ামি বাড়ে পাল্লা দিয়ে।

শেষ চেষ্টা হিসাবে পেন্টাগনে এপয়েন্টমেন্ট নিলাম, অর্থাৎ আর্লি চাইল্ডহুড সেন্টারে নিয়ে গেলাম ওকে। নার্স আমার সব কথা শুনলো, ওর ওজন উচ্চতা মাপলো। ওর বয়স অনুযায়ী ডেভেলপমেন্ট মাইলস্টোন গুলো কতটুকু ও এচিভ করেছে সেই ব্যাপারে আমাকে ধারাবাহিক প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হলো । বাসায় যতক্ষণ থাকে ওকে কয়বার এবং কি ধরণের খাবার দেয়া হয় তার একটা বিবরণ দিতে হলো। এরপর আমাকে যেই প্রশ্নটা মহিলা করলো, তা শুনে আমি ভিমরি খেলাম!

– ফারিনা, তুমি কি ওভারওয়েট?
আমি আমতা আমতা করে বললাম হ্যাঁ আইডিয়াল বডি ওয়েটের চেয়ে বেশ অনেকটাই বেশী ওজন আমার ।
– ডু ইউ নো হোয়াই?
মানে কি? তুই কি কইতে চাস ছেলের খাওয়া আমি খাই? আমার ওজন ক্যানো বেশী এইটা তোর কাছ থেকে আমার জানা লাগবো? আল্লাহ গো তুমি দড়ি ফালাও, তোমার দোহাই লাগে! আমার রাগ তখন চরমে, তারপরেও মুখে হাসি ধরে বললাম – হোয়াই ?
– বিকজ ইউ ডোন্ট নো হোয়েন টু স্টপ ইটিং !
আমি তব্দা খেয়ে বসে আছি!
মহিলা বলে যাচ্ছে – সুস্থ স্বাভাবিক জীব মাত্রই তার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু খাবার খাবে। যেখানে থামা প্রয়োজন সেখানে থামবে। মানুষই সম্ভবত একমাত্র জীব যে চোখের ক্ষুধায় খায়। পেট ভরা একটা বাঘের সামনে দিয়ে একটা হরিণ হেঁটে গেলে বাঘ লোভে পড়ে লাফ দিয়ে হরিনের পশ্চাৎদেশ থেকে এক খাবলা মাংস খেয়ে নেয় না। কিন্তু পেট ভরা অবস্থায় লোভনীয় একটা ডেজার্ট দেখলে আমরা মানুষরা হামলে পড়ি! বিপত্তিটা ঘটে তখনি, ওজন বেড়ে যায় ওভার ইটিং এর জন্য বাচ্চার এই স্টার্ট স্টপ সিগন্যালকে ইগ্নোর করে তুমি যদি ওকে জোর করে বা ট্রিক্স করে বাড়তি খাবার খাওয়াও, ওর ব্রেইন স্টার্ট স্টপ সিগন্যাল দেয়ায় গোলমাল করবে, ওর স্টমাক ক্যাপাসিটি প্রয়োজনের চেয়ে বেড়ে যাবে এবং আর্লি এইজে এটা সমস্যা না হলেও একটা বয়সে গিয়ে ও সাফার করবে – ঠিক তোমার মতো! নিজের পয়সায় খাবার খাবে আবার নিজেই পয়সা খরচ করে জিমে গিয়ে ওজন ঝরাতে স্ট্রাগল করবে! বর্তমানে তোমার ছেলের ব্রেইন জানে কখন থামতে হয়, তোমার ব্রেইন জানে না, আর এজন্যই তুমি ওভারওয়েট আর ও পারফেক্ট। ইউ শুড প্রবাব্লি লার্ন ফ্রম হিম হোয়েন টু স্টপ!

ডাহা বেইজ্জতি কারে বলে !! আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো আমার মায়ের দ্বারা অতি ভালোবাসা মাখা শৈশব ! অপরিসীম ধৈর্য্য নিয়ে ২ ঘন্টা ধরে আমাকে একটা ডিম্ খাওয়ানো, চোখের জলে মাখামাখি হয়ে নাক চেপে ধরে গ্লাস ভরা দুধ শেষ করা, ভাতের কথা নাই বা বললাম ! আহারে ! ওই যে ব্রেইনের সিগন্যাল ম্যান ইন্তেকাল করলো, এখন তার কবরে ফুল দেই আর জামাকাপড় ফেলি, গায়ে লাগেনা তাই!

আমি প্রশ্ন করলাম, ওর ব্যাপারে তাহলে তোমার সাজেশন কি ? বাচ্চা আমার প্রপারলি একটা ডিনার করে না, ওজনের পার্সেন্টাইল বলছে ওর গ্রাফ ১৮ থেকে ২৫ এর মধ্যে, তুমি বলছো আমি ওর ব্রেইনের সিগন্যালকে রেস্পেক্ট করে ওরে না খাওয়ায়ে ঘুম পড়াবো ?

মহিলা উত্তর দিলো –

এক নম্বর– তুমি যা করবে তা হচ্ছে ও “কম খায়” এই জাজমেন্ট বন্ধ করবে। তুমি ঠিক কিসের ভিত্তিতে বলছো ও কম খায়? তোমার বয়সী কেউ হয়তো এক বসায় ৪০০ গ্রামের দুইটা স্টেক শেষ করে ফেলতে পারবে, আর কেউ হয়তো আড়াইশ গ্রামের একটা স্টেক শেষ না করেই বলবে আই এম ডান! এখন দ্বিতীয়জনকে যদি আমরা ৪০০ গ্রামের দুই স্টেক দিয়ে বলি, এইটাই তোমার সঠিক পরিমান এবং এইটাই তোমাকে শেষ করতে হবে, ব্যাপারটা কি দাঁড়ায়? অত্যাচার হয় কি হয় না? সুতরাং ওর খাওয়ার পরিমান তুমি নির্ধারণ করতে পারো না, ও কম খায় এই স্টেটমেন্ট তুমি দিতে পারো না। ওর বয়সী একটা বাচ্চার স্টমাক ক্যাপাসিটির একটা উদাহরণ হচ্ছে ওর নিজের এক হাতের এক মুঠি খাবার হবে ওর বিকালের স্ন্যাক্স? মানে বুঝতে পারছো? এক টুকরো পনির ই কিন্তু যথেষ্ট, অথবা অর্ধেকটা গাঁজর বা একটা ক্র্যাকার !

দুই নম্বর– ওর গ্রোথ গ্রাফ কি বলছে তা খুব ইম্পরট্যান্ট। এই যে তুমি বললে ওর ওজনের গ্রাফে ওর অবস্থান ১৮ থেকে ২৫ পার্সেন্টাইলে, ও তো জন্মের সময় থেকেই তাই! আমরা যেইটা দেখবো সেটা হচ্ছে কার্ভটা লিনিয়ার (সরলরেখায় ও মোটামুটি সমানুপাতে ) যাচ্ছে কিনা বয়সের সাথে। আমি তো দেখছি ওর ওজন ১৮ থেকে ২৫ পার্সেন্টাইলের মধ্যেই এগুচ্ছে, যদি ১৮ এর নীচে নেমে যেতো, আমরা হায়ার লেভেলে এক্সামিন করতাম। একই ভাবে এই রেঞ্জ থেকে হটাৎ বেড়ে বেশি উপরে গেলেও আমরা ওভারওয়েট নিয়ে কনসার্ন হতাম এবং দুই ক্ষেত্রেই ডায়েটিশিয়ানের সাথে বসতে হতো তোমাকে। হাইটওয়াইজ ওর পার্সেন্টাইল হাই, ৮০ এর উপরে, জন্ম থেকে এখন পর্যন্ত ঐটাও সরলরেখায়ই আছে। কাজেই তোমার বাচ্চা বড় হচ্ছে কোনো সন্দেহ নেই !

তিন নম্বর– ওর মানসিক বিকাশ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরগুলো বলে দিচ্ছে ওর বিকাশ স্বাভাবিক।

চার নম্বর– ও যথেষ্ট একটিভ, আমি দেখতেই পাচ্ছি, এটাও একটা পজিটিভ দিক।

পাঁচ নম্বরে – তোমাকে তোমার বাচ্চার হেলদি ফুড হ্যাবিটের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, এমফাসাইজ মোর অন কোয়ালিটি, কোয়ান্টিটি কামস লেটার । খায়না বলে অতিরিক্ত চিনি, চর্বিজাতীয় খাবার, জাঙ্ক ফুড, সস ড্রিঙ্কস এসবের লোভ দেখানো যাবেনা।

ছয় নম্বর – তোমাকে তোমার নিজের জাজমেন্ট দিয়ে ওর ইচ্ছা অনিচ্ছাকে ওভার পাওয়ার করা বন্ধ করতে হবে। এইটুকু তোমাকে শেষ করতেই হবে, খাও , হা করো .. এইসব ধমক বাচ্চাকে খাবার নিয়ে একটা ট্রমার মধ্যে ফেলে। মিল টাইম কখনোই ব্যাটেল টাইম হওয়া উচিত না। মিল টাইম হওয়া উচিত আনন্দময় ।

চলবে…

মাতৃকথন ৬

 

মেজাজ খারাপ হবার কারণ

লাইফস্টাইল


এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, মানুষের ‘দেহ ঘড়ির’ ছন্দে কোন উল্টোপাল্টা হলেই তার ‘মুড ডিজঅর্ডার’ বা মেজাজ খারাপ হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর গবেষকরা ৯১ হাজার লোকের ওপর এক জরিপ চালানোর পর বলছেন, বিষণ্ণতা, হঠাৎ ভীষণ রেগে যাওয়া, একাকীত্ব, অসুখী মনোভাব, আরো অনেক মানসিক সমস্যার সাথে মানবদেহের স্বাভাবিক ছন্দ বিঘ্নিত হবার সম্পর্ক আছে।

দিনে জেগে থাকা আর রাতে ঘুম’ – এই হচ্ছে মানবদেহের স্বাভাবিক ছন্দ – যা অনুযায়ী দেহের প্রতিটি কোষ, শারীরিক প্রক্রিয়া এবং স্নায়ুতন্ত্র কাজ করে, বলছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষকরা বলছেন, কেউ যদি রাত জেগে বেশি কাজকর্ম করে বা সক্রিয় থাকে, বা দিনে নিষ্ক্রিয় থাকে তাদেরকেই দেহঘড়ির বিঘ্নের আওতায় ফেলা হয়েছে।

এদের মানসিক নানা সমস্যায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা স্বাভাবিক জীবনযাপনকারীদের চেয়ে ৬ থেকে ১০ শতাংশ বেশি।

গবেষকরা বলছেন, অনেক সমাজেই এই স্বাভাবিক মানুষের জীবনযাপনে এই স্বাভাবিক দিনরাতের চক্র বদলে যাচ্ছে এবং তাদের জন্য এই জরিপের ফলাফল একটি সতর্কবাণী।

তবে দেহঘড়ির এই ছন্দ-বিভ্রাটই কি মানসিক রোগের কারণ, নাকি এটা তার লক্ষণ মাত্র? জরিপটিএ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে নি। এ জন্য আরো গবেষণা দরকার হবে।

দেহঘড়ির এই ছন্দকে বলে সার্কেডিয়ান রিদম। মানুষের মনমেজাজ, হর্মোনের স্তর, শরীরের তাপমাত্রা, এবং দেহের বিপাক ক্রিয়া – এই সবকিছুর ওপরই এর প্রভাব ব্যাপক।

দিনের শুরুতে সকালবেলা যখন মানবদেহ জেগে ওঠার পর জোরেশোরে কাজ করতে শুরু হরে – ঠিক যেমন একটা গাড়ির ইঞ্জিন চালু করার মতো – তখন এমনকি হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। যা দেহঘড়ির গুরুত্বের আরো একটি দৃষ্টান্ত।

বিবিসিকে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল স্মিথ বলেন, এই জরিপে দেহঘড়ির সমস্যায় আক্রান্ত এমন যারা অংশ নিয়েছেন – তাদের কেউ কেউ হয়তো রাত জেগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেছেন – এটা হতে পারে।

তবে আমার জন্য কড়া নিয়ম – আমি রাত ১০টা বাজলেই আমার মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেই – বলেন ড. স্মিথ।

‘কারণ, বিবর্তন অনুযায়ী মানুষ এমন ভাবে তৈরি হয়নি যে যখন তার ঘুমিয়ে থাকার কথা, তখন সে মোবাইলের পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকবে’ – বলেন তিনি।

সুত্র: বিবিসি বাংলা

 

একজন রোজাদারের সারাবেলা

আকলিমা ফেরদৌস আখি


রোজার প্রকৃত হক আদায় করার জন্য আমরা আমাদের সময়গুলোকে এ ভাবে ভাগ করে নিতে পারি (এটি একটি নমুনা মাত্র)।

রাতের শেষাংশে

সালাতুল তাহাজ্জুদ-২:৪৫-৩:১৫
(তাহাজ্জুদ নামাজের আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে রাসূল সা: সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকু তেলওয়াত করতেন।এই আমলটির অভ্যাস করা যেতে পারে।)

সেহেরী গ্রহণ- (৩:১৫ থেকে ৩:৪৪মি:)
সালাতুল ফজর ও সকাল বেলার
আযকার পাঠ- (৩:৪৫মি: থেকে ৫:০০মি:) (হিসনূল মুসলিম অথবা কতিপয় প্রয়োজনীয় দোয়া বই গুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে)

কোরআন তেলওয়াত অর্থসহ
(চার পৃষ্ঠা)- (৫:০০ থেকে ৬:০০)
সালাতুল দুহা বা ইশরাক- (৬:০০ থেকে ৬:১৫মি)

বিশ্রাম ও ঘুম- (৬:২০ থেকে ৮:৩০)

সকাল বেলা

ঘুম থেকে ওঠা- (৮:৩০ থেকে ৯:০০)
দৈনন্দিন কাজ শেষ করা-
(৯:০০টা থেকে-১০:৩০টা)
(এ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের জন্য সারাদিনের খাবার রেডি করা,ইফতার কি হবে , রাতের খাবার ও সেহেরী কি হবে তা রেডি করে রাখা। মাছ, সবজি কেটে ধুয়ে রাখা যেতে পারে)

কোরআন অধ্যায়ন অর্থসহ, ইসলামী বই পড়া, হাদীস ইত্যাদি-(১০:৩০ থেকে ১২:০০)

দুপুর বেলা

বিশ্রাম ও সালাতুল যোহরের প্রস্তুতি সালাত পরবর্তী মুস্তাহাব তাসবীহ ও যিকির পাঠ-(১২:০০ থেকে ১:০০)
কোরআন তেলওয়াত অর্থসহ(চার পৃষ্ঠা)-(১:০০ থেকে ১:৩০মি)
সন্তানদের (প্রতিবেশীর সন্তানদেরও সাথে নেওয়া যেতে পারে)
কোরআন পড়ানো, হাদিসের গল্প বলা, ইসলামী বই পড়িয়ে শুনানো, স্কুলের পড়া ইত্যাদি-(১:৩০ থেকে ৩:০০)

ইস্তেগফার পাঠ (আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ ১০০বার তওবার অনুভুতি নিয়ে)
-(৩:০০ থেকে ৩:১৫)
বিশ্রাম-(৩:১৫ থেকে ৩:৩০)
কোরআনের সূরা মুখস্ত
(এ ক্ষেত্রে আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে কোন সূরা গুলো মুখস্ত করা হবে।)
প্রতিদিন অন্তত: একটি দোয়া মুখস্ত করা (রাসূল সা: যে গুলো দৈনন্দিন জীবনে পড়েছেন)- (৩:৩০ থেকে ৪:৩০)

বিকেল বেলা

সালাতুল আসর,সালাত পরবর্তী মুস্তাহাব তাসবীহ ও যিকির এবং কোরআন পাঠ অর্থসহ-(৪:৩০ থেকে ৫:০০)

রাতের খাবার, ইফতার ও সেহেরীর জন্য প্রস্তুতি এবং রান্না শেষ করে ফেলা- (৫:০০ থেকে ৬:১৫)

এ সময় মায়েরা যেহেতু রান্না বা ইফতারের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত থাকেন তাই বাবারা সন্তানদেরকে কিছুটা সময় দিতে পারেন।

গল্পের বই পড়ে শুনানো, হাতের লেখা প্র্যাকটিস করানো, টিভিতে ভালো কোন অনুষ্ঠান দেখানো, আল্লাহর নিরানব্বইটা নাম থেকে প্রতিদিন পাচঁটি করে শিখানো , সৃজনশীল লেখা ইত্যাদি।

ইফতার ও সন্ধ্যাবেলা

ইফতারের প্রস্তুতি নিয়ে পরিবারের সবাই একসাথে বসা:(৬:২০ থেকে সময় হওয়ার আগ পযর্ন্ত)

(এ সময় পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে কেউ অর্থসহ কোরআন তেলওয়াত করতে পারে। একটি/দুইটি হাদিস পড়ে শোনানো এবং সবশেষে সবাই মিলে বা ব্যক্তিগত ভাবে দোয়ার পরিবেশ তৈরী করা যেতে পারে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা)।

ইফতার গ্রহণ- {৭:০০- (ইফতারের সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সময়টা মিলিয়ে নিতে হবে।)}

সালাতুল মাগরিব ও সন্ধ্যাকালীন আযকার পাঠ (৭:০০ থেকে ৭:৩০)

(হিসনূল মুসলিম অথবা কতিপয় প্রয়োজনীয় দোয়া বই গুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে)

বিশ্রাম ও প্রয়োজনীয় কাজ (৭:৩০ থেকে ৮:০০)

রাতের বেলা

সালাতুল এশা , তারাবীহ ও কোরআন তেলওয়াত অর্থসহ(চার পৃষ্ঠা)- (৮:০০ থেকে ৯:৩০)

রাতের খাবার- (৯:৩০ থেকে ১০:০০)
সূরা মূলক তেলওয়াত ও এক আয়াত মুখস্ত-(৯:৩০ থেকে ১০:০০)
ঘুমের প্রস্তুতি-(১০:০০ থেকে ১০:৩০)
ঘুম-(১০:৩০ থেকে ২:৩০)

মহান আল্লাহ আমাদের রোজার যথাযথ হক আদায়ের তৌফিক দিন।
আমীন।

(বি:দ্র- এটা একটা নমুনা মাত্র যে যার সুবিধামত নিজের কাজগুলো গুছিয়ে নিতে পারেন)

 

রমজানে নারীর সাথে যেমন আচরণ করা দরকার

অন্যান্য


চিত্র ১:

তামিমার বিয়ে হয়েছে আজ বেশ কয়েক বছর। বউ বউ ভাবটা চলে গেছে। এখন সে নিছক একজন রাঁধুনি। স্বামী কাস্টমসে জব করে। কাজ করে ফিরতে প্রায় বিকাল হয়ে যায়। এটা তাদের ৩য় রমজান মাস।তামিমা মনোযোগ দিয়ে স্বামীর জন্য বাহারী ইফতারি রেডি করলেন। স্বামী কোন রকম ইফতারের আগে বাসায় পৌঁছলেন, তামিমা সাথে সাথে ঠান্ডা পানির গ্লাসটা নিয়ে দৌঁড়ে আসলেন। মুখে দিতে রুচির মানসম্মত না হওয়ায় সাথে সাথে গ্লাস মাটিতে ছুঁড়ে মারলেন। তামিমার পরিবার ধরে ১৪ গোষ্ঠীকে কিছুক্ষণ গালিগালাজ করে ধুয়ে দিলেন।একবারও জিজ্ঞেস করলেন না, মেয়েটি সারাদিন রোজা রেখে কষ্ট করে স্বামীর জন্য ইফতার তৈরি করলেন, নিজের মুখে পানি তুলে দেয়ার আগে স্বামীকে তুলে দিলেন।

চিত্র ২:

মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মাহমুদা। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে জীবনের ২য় পর্বটির বাস্তবচিত্র দেখতে পেলেন। স্বামী থেকে শুরু করে পরিবারের সকলের সন্তুষ্ট অর্জন করা যেন তার নিয়ম মাফিক দায়িত্ব। রমজানে ভোরে সেহেরি প্রস্তুত করে সবাইকে খাবার পরিবেশন করেন।সবার শেষে নিজের খাবারটা খান। কিন্তু আজ দুর্ভাগ্যক্রমে গরুর মাংসে মরিচের পরিমাণটা বেশি পরে গিয়েছিল। এ নিয়ে ভোরবেলায় তার পরিবারে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হল। অবশেষে স্বামী রাগ সামলাতে না পেরে মাহমুদার চুলের মুঠি ধরে কিল ঘুসি আচ্ছামত দিলেন। আর অসহায় মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বাকি দিনটা উপবাসে রোজার নিয়তে কাটিয়ে দিলেন।

আজকের কলামের অবতারণায় সমাজের ২ টি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।এগুলো নিছক কোন কল্পনা নয়। সমাজে হরহামেশা ঘটমান দৃশ্যাবলি। এগুলোর শিকার কেবল নারীরা।

কিন্তু ইসলাম কী বলে? ইসলামে এসব ব্যাপারে কী বলা আছে?

আমরা যদি মহানবী সাঃ এর জীবনী পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাবো তিনি তার পরিবারের নারীকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন।

এমনকি ভোরে তাহাজ্জুদ পড়তে উঠতেন এমনভাবে যাতে তাঁর উঠার শব্দ শুনে স্ত্রীর ঘুম ভেঙ্গে না যায়। তিনি কখনো খাবারের দোষ ধরেননি। অনেক সময় রান্না ভালো না হলেও এমন ভাব নিতেন যাতে রাঁধুনী বুঝতে না পারে খাবারের মান খারাপ হয়েছে।

আমরা স্বীকার করি বা না করি মানুষ ধর্ম মানা থেকে যত দূরে যাচ্ছে তার ভেতর থেকে মানবিকতা তত হারিয়ে যাচ্ছে।সবাই সবখানে কর্পোরেট চিন্তাভাবনা শুরু করছে। কিন্তু পবিত্র রমজান আমাদের সেখান থেকে বের হওয়ার শিক্ষাদান করেন।

প্রথমে নারীদেরকে আমাদের খুব আপন ভাবতে হবে। নিজের বোন ভুল করলে যেমন ভালোবাসা আর মমতা দিয়ে শুধরিয়ে দিতেন ঠিক তেমনি স্ত্রী বা অন্য সম্পর্কের নারীর ভুলগুলো ভালোবাসা দিয়ে শুধরাতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যখন ভোরে নাক ডেকে ঘুমাতে থাকি সে সময়ে এই নারীরাই আমাদের জন্য মুখরোচক সেহরী তৈরীতে ব্যস্ত থাকেন। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ কাজ একজনের উপর চাপিয়ে না দিয়ে তারকাজে সাহায্য করা।সবাই একসাথে খাবার খেতে বসা।
আমরা যখন সারাদিন রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে পড়ি ঠিক সে সময়ে নারীরা আমাদের জন্য ইফতার তৈরীতে ব্যস্ত থাকেন।একবারও কী ভেবেছেন পেটে ক্ষুধা রেখে খাবার তৈরী করা কত কষ্টের?
তবুও তারা আমাদের জন্য খাবার তৈরী করেন।
তাই আমাদের উচিৎ তাদের কাজে সহযোগিতা করা।
ইফতারে সবাই একসাথে বসা।
ইফতার যিনি তৈরি করেছেন তার প্রশংসা করা। আর মেয়েরা এই ভালোবাসাটার বিনিময়ে জগতের সব কষ্ট মেনে নিতে পারেন।

পুরুষদের মনে রাখা উচিৎ , বাজার করার উদ্দেশ্যে এদিক সেদিক অযথা সময় নষ্ট না করে খুব তাড়াতাড়ি বাজার করে নিয়ে আসবেন।

যাতে মেয়েদের শক্তি এবং সময় থাকা অবস্থায় কাজটা করতে পারেন। সবসময় মনে রাখবেন,আপনার জন্য যা কষ্টকর তা অন্যের জন্যও কষ্টকর।

লজ্জার কিছু নাই, মেয়েরা প্রতিমাসে নির্দিষ্ট কিছু দিন অসুস্থ থাকেন। আল্লাহ তাইতো সে সময়টাতে তাদের শরীয়তের বিধানগুলো পালন করা থেকে অবকাশ দিয়েছেন। তাহলে আমরা কেন তাদের প্রতি অনুগ্রহ করব না?

তাই সবার মাথায় রাখা উচিৎ, কোন মেয়ে রোজা না রাখলে তাকে প্রশ্ন না করা এ বিষয়ে। বরং তার জন্য দিনের বেলায় খাবারের ব্যবস্থা রাখবেন। যাতে তাকে রোজাদারের ন্যায় উপবাসে দিন যাপন করতে না হয়।

অনেক পরিবার এমন আছে, যেখানে বউদের দিয়ে পরিবারের সবার কাপড় ধুয়ানো হয় যা জঘন্যতম এবং নিন্দনীয়।হ্যা, মানুষ অসুস্থ হলে সেবা করা যায়, কিন্তু সুস্থ থেকেও কাজের বুয়ার মত আচরণ করা চরম অন্যায়।
বিশেষ করে এ স্বভাবটা আমাদের মডার্ণ ভাইদের মাঝে বেশি।

আমরা পুরুষরা যেমন রমজানে ইবাদত করি, কোরআন তেলোয়াত করি, সেভাবে তাদেরও সুযোগ করে দিন।

সারাদিন তাদেরকে কাজের উপর রাখবেন না। তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করুন। কাজের চাপ যত পারেন কমাবেন। নারীদের সহায়তা করাও ইবাদত।

নারীরা আমাদের মা,তারা আমাদের বোন,তারা আমাদের নিসঙ্গতার পরম বন্ধু। তাদের কে সেভাবে সম্মান করা উচিৎ যেভাবে ইসলাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছে। মুখে মুসলিম দাবী করলাম আর কাজকর্ম সব জালেমি মার্কা, তাহলে ধরে নিতে হবে আমরা ইসলামের গন্ডি থেকে অনেক দূরে চলে গেছি।

কুরআন হাদিসে বর্ণিত রুলস অনুযায়ী পারস্পারিক মর্যাদা, সম্মান এবং সহযোগিতা পারিবারিক বন্ধনকে করে তুলবে সুদৃঢ় এবং সুখকর।

গৃহিণী শুধু নারী নয় একজন মানুষ। আর মানুষ হিসেবে তার প্রাপ্য মর্যাদা পেলেই দূর হয়ে যাবে নারীর প্রতি সকল প্রকার অসম্মান, নির্যাতন ও সহিংসতা।

আল্লাহ আমাদের মাহে রমজানের তাৎপর্য উপলদ্ধি করে, নারীদের সাথে সদাচারণ করার তাওফিক দান করুন।

সুত্র: (ফেসবুক পাতা থেকে সংগৃহীত। যেখান থেকে নেওয়া হয়েছে তিনিও সংগৃহীত লিখেছেন। তথ্য খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। দুঃখজনকভাবে লেখকের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।)

 

জীবনের সার্থকতা

আফরোজা হাসান


মানুষের মধ্যে রয়েছে বিবেক ও বুদ্ধি। এই বিবেক ও বুদ্ধির সাহায্যে মানুষ জ্ঞান ও মনুষ্যতের বিকাশ ঘটাতে পারে। জীবনে বয়ে আনতে পারে কল্যাণ। তবে জীবনে কোন কিছুই হঠাৎ অর্জন করা যায়না। বিবেক ও বুদ্ধির সঠিক প্রয়োগের জন্য ধীর ও কঠোর অনুশীলন ও চর্চার প্রয়োজন। আর এরজন্য দরকার গভীর আত্মিক সাধনা। মানুষের মন যখন স্থবির, নিশ্চল ও গতিহীন থাকে তখন নানা সঙ্কীর্নতা-কুসংস্কার তার মধ্যে বাসা বাঁধে। তাদের মন হয়ে পড়ে ক্ষুদ্র ও জরাগ্রস্ত। এই অবস্থা থেকে মুক্ত থাকতে হলে মনকে গতিশীল ও সচল করতে হবে। আর মনকে সচল ও গতিশীল করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে বই পড়া। কারন বইয়ের মধ্যে জ্ঞানী-গুনীদের ভাবনা-চিন্তা নিহিত আছে। সমুদ্রের ঢেউ রাশির মতোই এসব চিন্তা প্রবাহিত হয় বইয়ের মধ্যে। কেউ যদি একনিষ্ঠ মনে চায় তাহলে অনুভব করতে পারে সেইসব চিন্তার গর্জন।

বিভিন্ন কারণে আমদের মনে সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রনহীন ভাবে নানা ধরণের নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা আসতে থাকে। অনেক চেষ্টা করেও সেটা যখন থামানো যায় না তখন আমরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি এবং প্রতিদিনের কাজকর্ম ব্যাহত হয়। নানারকম মানসিক কষ্ট, হতাশা, দুরাশা, ক্লান্তি মনকে তখন ঘিরে ধরে। আমরা ভীষণ অসহায় বোধ করতে থাকি। চরমভাবে বিঘ্নিত হয় মনের শান্তি। নিজের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে মন অনেক সময়। আসলে আমাদের সবার মনেরই দুটো দিক রয়েছে।
একটি হচ্ছে আবেগপুর্ন, অন্যটি হচ্ছে যুক্তিনির্ভর। এই দুটি দিকের ভারসাম্যপুর্ন সহাবস্থানই পারে মনের শান্তিকে অক্ষুন্ন রাখতে। আর এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা চিন্তার দ্বারা আমাদের আবেগগুলোকে চিহ্নিত করে যুক্তির দ্বারা সেগুলোকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো। নিজেকে চেনা-জানা-বোঝা এবং নিজের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস-শ্রদ্ধা বোধ ছাড়া এটা সম্ভব নয়। আমরা আমাদের জীবনকে তখনই সার্থক করে তুলতে পারবো যখন সার্থকতা কোথায় সেটা জানা থাকবে।

আমার কাছে জীবনের সার্থকতা মানে হচ্ছে নিজের বিবেকের কাছে দায়ী না থাকা। আমরা অনেক সময় দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগি কোন একটা কাজ করবো কি করবো না। মানুষ যতগুলো মানসিক দ্বিধায় ভোগে তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে আবেগ এবং বাস্তবতার দ্বন্দ্ব। বাস্তবতা বলছে কাজটি করোনা, আবেগ হয়তো বলছে করো। এরফলে আমরা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে যাই। কিন্তু তখন আমাদের উচিত স্থির হয়ে বসা এবং ঠাণ্ডা মাথায় বিবেকের সাথে কথা বলা। বিবেক যে কাজ করতে নিষেধ করে, সে কাজ কখনোই করা উচিত নয়।
সব মানুষের জীবনদর্শন যেহেতু একরকম নয় তাই একেক জন জীবনের সার্থকতাকে একেক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ব্যাখ্যা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিবেকের কাছে দায়ী না থাকাটাকে কেউ অনৈতিক বলতে পারবে না। বরং বিবেককের কাছে যদি স্বচ্ছতা বজায় রেখে চলা যায় তাহলে প্রতিটি মানুষই তার মূল্য বুঝতে পারে।

মানুষের মূল্য তার চরিত্র, মনুষ্যত্ব, জ্ঞান ও কর্মে। মানুষের প্রকৃত পরিচয় ফুটে ওঠে ছোট ছোট কাজের মধ্যে দিয়ে। সুশৃঙ্খল জীবন, সুন্দর আচার-ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে একজন মানুষের চরিত্রমাধুর্য ফুটে ওঠে। পৃথিবীতে কোন কিছুই ক্ষুদ্র বা সামান্য নয়।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহুর্ত যেমন যুগ-যুগান্তরের জন্ম দেয় তেমনি ক্ষুদ্রের মধ্যেই বৃহৎ এর অবস্থান। আমরা আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজ ও সাহায্যের দ্বারা মানুষের উপকার করতে পারি। স্নেহপুর্ন ছোট ছোট সান্ত্বনার বাণী ও আন্তরিকতাপুর্ন দান পৃথিবীতে এনে দিতে পারে সুখ। আমরা একটু সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিয়ে অন্যের মনে আশা জাগাতে পারি। করে তুলতে পারি নিজেদের জীবনকে সার্থক।

 

‘আকর্ষণীয় কিছু খাবার’ যা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে

ফাতেমা শাহরিন


পেস্ত বাদাম

পেস্ত বা কাজু বাদামের বাইরের আবরণে সাইটিক এসিড থাকে। এই সাইটিক এসিড বাদামের উপকার করে, তবে মানুষের ক্ষতি হয়, সাইটিক এসিডের গ্রহণ মানবশরীরে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা তৈরি করে। তাই খাওয়ার আগে বাদাম ভিজিয়ে রাখলে এই সাইটিক এসিড চলে যায়। পেস্তাবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-৬, মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা কোলেস্টেরল লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী এবং পেস্তা বাদাম মানসিক চাপও কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া দাঁতের রোগ, মাংসপেশির দুর্বলতা, চোখের ছানির সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে প্রতিরোধে সহায়তা করে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমান বাদাম খেলে ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল হয়।

সবুজ শাক-সবজি

মানসিক সুস্থ স্বাস্থ্যের জন্য সবুজ শাক-সবজি খাওয়া খুবই উপকারী। সম্প্রতি ক্যারেন তার ‘The Calendar Diet’ বইতে উল্লেখ করেছেন , ‘প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সবুজ তাজা শাক-সবজি রাখলে তা ‘মানসিক চাপ’ কমাতে সাহায্য করে এবং নানান রকম হৃদরোগেট ঝুঁকিও কমাতে পারে।’

গাজর

গাজর আছে ভিটামিন ‘এ’, বেটা ক্যারোটিন, এন্টিওক্সিডেন্ট যা শরীর ও মনের নানান সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখে বিশেষ করে মানসিক স্বাস্থ্য ও ত্বক সুন্দর রাখতে সহায়তা করে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, সপ্তাহে ৬টির বেশি গাজর খাচ্ছেন যারা তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি অর্থাৎ মানসিক চাপ তুলনামূলক হারে কম যারা এর থেকে কম পরিমানে গাজর খাচ্ছেন তাদের তুলনায়।

শিমের বীজ

শিমের বীজে থাকে প্রচুর আমিষ ও স্নেহজাতীয় পদার্থ যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। লিউকোরিয়াসহ মেয়েদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূরীভূত করে।

চকলেট

চকোলেটের মূল উপাদান কোকো যাতে ফ্ল্যাভানল & ম্যাগনেশিয়াম নামে উপকারী পদার্থ থাকে যা শরীরে যথাযথ রক্ত সঞ্চালন, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং রিল্যাক্স থাকতে সাহায্য করে। নিউট্রিশিওনাল নিউরোসায়েন্স নামের বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুযায়ী, চকোলেট খেলে মন ভাল হয়ে যায়। অবসাদ কমে।

মাখন

মাখন সাধারণত দুধ দিয়ে তৈরি হয়। মাখনে থাকে ভিটামিন, অ্যাক্টিভেটর এক্স নামের যৌগ উপাদান এবং আয়োডিন, সেলেনিয়াম, লেসিথিন ও লরিক এসিডের মতো কার্যকরী খনিজ উপাদান পাশাপাশি এরাকিডোনিক্স এসিডও থাকে। চোখের ছানির গতিরোধ, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃষ্টি, ত্বক মসৃণ ও সুন্দর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মাখন খেলে নারীর গর্ভধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

আইসক্রিম

আইসক্রিম একটি জনপ্রিয় খাবার যাতে থাকে ‘টোনড মিল্ক’। আইসক্রিমের জন্মস্থান চীনে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং কিডনির পাথর হওয়ার মাত্রা কমাতে আইসক্রিমের ভূমিকা রয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ভালো কোম্পানির আইসক্রিমে প্রচুর পরিমাণে ভেজিটেবল ওয়েল থাকে। যা শরীরের জন্য উপকারী। তাই এতে ওজন বাড়ে না।

তথ্যসুত্র: Karen Ansel, R.D. লেখকের বই The Calendar Diet মত অনুসারে লেখা এবং ইন্টারনেট।

 

বিয়ে ও পরিবার – ২

কানিজ ফাতিমা


ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে প্রতিটি ব্যক্তি তার নিজ কর্মের জন্য দায়ী হবে। নিজের প্রতিটি কাজের হিসাব নিজেকে দিতে হবে, অন্যের কর্মের জন্য সে দায়ী থাকবে না। অন্যের জন্য তাকে পাকড়াও করা হবে না। কাজেই একজন মুসলিমকে সর্বদা সচেতন থাকতে হয় নিজের সম্পর্কে, নিজের দোষ খুঁজে বের করে তা শুধরানোর জন্যই তাকে সর্বদা ব্যস্ত থাকতে হয়।

অন্যের দোষ খোঁজার সময় তার হাতে কমই থাকে। একান্তই অন্যের দোষ-ত্রুটি যখন প্রকাশ্য ও স্পষ্ট হয়ে ওঠে তখনই সে তা দেখতে পায় এবং সঠিক নিয়তে শুধরানোর উদ্দেশ্যে সহানুভূতি সহকারে ঐ দোষ সম্পর্কে কর্তাকে অবগত করে।

অপরপক্ষ একদল ব্যক্তি অন্যের দোষ খুঁজে বের করে তার কঠোর সমালোচনায় এত বেশী মনোযোগী হয় যে তার নিজের দোষ দেখার সময়ই তার হয় না। তারা ভুলে যায় ইসলাম অন্যের সমালোচনার আগে নিজের দোষ শুধরানোর বেশী পক্ষপাতী। ‘জিহাদ’ শব্দটির অনেক অর্থ রয়েছে। কিন্তু সব থেকে বড় ও মুখ্য জিহাদ হল নিজের অহংবোধ (Ego)এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সঠিক কাজটি করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
নিজের দোষ স্বীকার করা কঠিন একটি কাজ, নিজের অহংবোধে আঘাত লাগে। অন্যপক্ষে অন্যের দোষ ধরে সমালোচনা করে তাকে ছোট প্রমাণ করে আত্মতৃপ্তি লাভ করা সহজ ও সুখকর।

কিন্তু ইসলাম চায় মুসলমানগণ নিজের এই অহংবোধের বিরুদ্ধে জিহাদ চালিয়ে যাক। প্রতিটি মুসলিম স্বামী স্ত্রীর ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য।

সর্বক্ষণ স্বামী বা স্ত্রীর দোষের পেছনে না লেগে থেকে নিজের উন্নয়নে চেষ্টা করা অনেক বেশী কল্যাণকর।

ধরুন, আপনার উন্নতির জন্য (চারিত্রিক, অর্থনৈতিক বা পেশাগত) আপনাকে একজন সঙ্গী দেয়া হবে। আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় আপনি কি একজন কড়া সমালোচককে সঙ্গী হিসেবে চান যে আপনার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখবে আর
ছোট-বড় সব ত্রুটির সমালোচনা করবে।

নাকি এমন একজন সাহায্যকারী চান যিনি আপনাকে বিভিন্ন সমস্যায় সাহায্যের হাত (Co-operative) প্রসারিত করবে?

নিঃসন্দেহে বলা যায়, আপনি দ্বিতীয় ব্যক্তিকে বেছে নেবেন, একইভাবে আপনার উদ্দেশ্য যত মহৎ হোক না কেন আপনার স্ত্রী বা স্বামী আপনাকে ‘সমালোচক’ না, ‘সাহায্যকারী’ হিসেবে পেতে চায়।

বিবাহ ও পরিবারে যোগাযোগের (Communication) ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বক্তার দায়িত্ব নিয়ে বেশ কিছু আলোচনা করলাম, এবার আসা যাক শ্রোতার দায়িত্বে। যদিও যোগাযোগে বক্তার দায়িত্ব অনেক বেশী তবুও এতে শ্রোতারও কিছু দায়িত্ব রয়েছে।

শ্রোতার প্রথম দায়িত্ব হল মনোযোগ দিয়ে শোনা ও আগ্রহ প্রকাশ করা (showing interest)। শ্রোতার উচিত বক্তার কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে তার অঙ্গভঙ্গি খেয়াল করা। বুঝতে চেষ্টা করা যে সে শ্রোতাকে কী বলছে। শ্রোতার বক্তব্যের কোন অংশ পরিষ্কার না হলে প্রশ্ন করে বুঝে নেয়া। অনেক সময় শ্রোতা তাড়াহুড়া করে, বক্তার পুরো কথা না শুনেই ধরে নেয় যে বক্তা এটা বলতে চাচ্ছে। শ্রোতাকে বক্তার পুরো কথা শুনতে হবে, কথা অর্ধেক থাকতেই ‘আমি বুঝে ফেলেছি’ মনোভাব দুর্বল যোগাযোগ এর লক্ষণ। আবার অনেক সময় বক্তা যা বলেছে তা সম্পূর্ণ তথ্য দেয় না। শ্রোতা পাল্টা প্রশ্ন করে তথ্য সম্পূর্ণ করার পরিবর্তে কিছু একটা ধারণা করে নেয়। এতে অনেক ক্ষেত্রে শ্রোতার ধারণা সঠিক হয় না এবং ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।

যেমন স্বামী স্ত্রীকে বললো ‘কাল রেডি হয়ে থেকো, আমরা বেড়াতে যাবো’ স্ত্রী ধরে নিলো কাল স্বামী অফিসে যাবে না। আমাকে নিয়ে বেড়াতে যাবে। স্বামী হয়তো ভেবেছে অফিস থেকে ফিরে সে বেড়াতে যাবে। এক্ষেত্রে বক্তাও বলেনি কখন বেড়াতে যাবে আর শ্রোতাও জিজ্ঞাসা না করে ধারণা করে নিয়েছে। অনেক সময় শ্রোতা বক্তার কথায় প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে না। এতে বক্তা কথার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ব্যাপারটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রতি নিয়ত ঘটতে থাকলে তা তাদের সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে।

যেমন একবার এক কানাডিয়ান মহিলা তার স্বামীর সঙ্গে কেন ডিভোর্স হয়েছে বলতে গিয়ে বললো যে, তার স্বামী তাকে কোন গুরুত্বই দিতো না, সে যখন তার স্বামীকে কোন কিছু বলতে চাইতো হয়তো স্বামী কম্পিউটারের মনিটরে চোখ রেখেই বলতো ‘আমি শুনছি’ অথবা অন্য রুমের দিকে হেঁটে যেতে যেতে বলতো – ‘বলো, শুনছি’। মূলত: একজন বক্তার দায়িত্ব হল শ্রোতার দিকে তাকানো এবং শারীরিক অঙ্গভঙ্গি (facial expression) দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া যে সে শ্রোতার কথাকে গুরুত্ব দিয়ে শুনছে।

স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্ক উন্নয়নের একটি বড় শর্ত হল যে দু’জন দু’ জনের কথা আগ্রহ নিয়ে শুনবে।

(চলবে)

পর্ব-১

 

রোযায় খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্য ২

ডা.ফাতিমা খান


রোযার মাসে খাওয়া দাওয়া ও সাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে কম বেশী অভিযোগ নেই এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। এসিডিটি, পেটের গোলযোগ আর দুর্বলতা নিয়ে তাদের অভিযোগ লেগেই থাকে। তখন সব দোষ গিয়ে পড়ে রোযার উপর। অসুখে পড়বেন বলে রোযা রাখেন না এমন মানুষও একদম কম নেই। আসলে দোষ কিন্তু রোযা বা খাবার কোনটিরই না… সমস্যা আমাদের নিজেদের অভ্যাসের। রোযার সময় যদি আমরা প্রচলিত ভাজাভুজি বা বেশী মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিয়ে খাবারের মেনুতে ও রান্নার প্রণালীতে একটু পরিবর্তন আনি, তাহলে কিন্তু পুরো রোযার মাসটাই সুস্থভাবে কাটানো যাবে।

সাহরীতে যা খাওয়া উচিত নয়ঃ

সাহরীতে চা পান না করাই উত্তম। চায়ে থাকে মুত্র-বর্ধক উপাদান। সাহরীতে চা পান করলে এই মুত্র-বর্ধকের প্রভাবে দেহের পানি প্রস্রাবের মাধ্যমে দ্রুত বের হয়ে যায়।

ইফতারে যা খাওয়া উচিত নয়ঃ

ভাজা-পোড়া ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার শরীরের জন্য সবসময়ই ক্ষতিকর। বিশেষ করে শরীরের তাৎক্ষণিক ঘাটতি পূরণ ও শক্তি যোগানের ক্ষেত্রে এদের ভূমিকা নেই বললেই চলে। এসব খাবারের উপরিভাগে তেলের আবরণ (Oily coating) থাকার কারনে এরা পাকস্থলীতে পরিপাক হয় না এবং পাকস্থলী অতিক্রম করতে অনেক সময় নেয়; তারপর অন্ত্রে গিয়ে শোষিত হয়ে রক্তে মিশে। ফলে এ ধরনের খাবার দেহে দ্রুত শক্তি যোগাতে পারে না।

রোযার সময় দাঁতের যত্নের ব্যাপারে আমরা অনেকেই বেখেয়াল হয়ে যাই। রমজান মাসে সাহরীর পর অবশ্যই টুথপেস্ট ও ব্রাশ দিয়ে দাঁত ও জিহ্বা পরিষ্কার করা উচিৎ। সম্ভব হলে একটু কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলি করে নেয়া যেতে পারে। ইফতারের পর আরেকবার ব্রাশ করে নেয়া ভাল। এর মাঝে রোযা রাখা অবস্থায় মেসওয়াক অথবা শুধু ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতে পারেন । তাতে মুখে দূর্গন্ধ কম হবে এবং দাঁত ও মাড়ির রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

অনেক অসুখ-বিসুখের সমাধান কিন্তু রোযা রাখা বা কম খাওয়া।

 

ডা.ওয়ান আজিজাহ মালয়েশিয়ার প্রথম মহিলা উপ-প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে আসুন ৭টি বিষয় জেনে নেই


অপরাজিতা


মালয়েশিয়ার ইতিহাসে নতুন এক দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে যার কারণ একজন নারী।

মালয়েশিয়ার পরবর্তী উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ‘ডা.ওয়ান আজিজাহ, দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন বলে জানা যাচ্ছে। এর ফলে নারীর ক্ষমতায়নে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। প্রথম নারী ডা.ওয়ান আজিজাহ উপ-প্রধানমন্ত্রীর হলে নতুন এক পদচিহ্নকে স্বাগত জানাবে মালয়েশিয়ার ইতিহাস।

অনুপ্রেরণা সৃষ্টকারী নারী ডা.ওয়ান আজিজাহ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য তুলে ধরা হল,

১. শক্তিশালী ব্যাকগ্রাউন্ড

একটি শক্তিশালী ব্যাকগ্রাউন্ড খুঁজে পাওয়া যায় ডা.ওয়ান আজিজাহ। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫২ সালে পয়লা ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে কিন্তু বড় হয়েছেন কেদা শহরে। আয়ারল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ থেকে সার্জন মেডিসিনে পড়াশুনার পাশাপাশি সেরেবান কুশিয়াহ কলেজ থেকে তিনি তাত্ত্বিক শিক্ষাও অর্জন করেন। তিনি সেখানে প্রত্নতাত্ত্বিক ও গাইনোকোলজির উপর বিশেষ অবদান রাখার কারণে স্বর্ণ পদক পান। পরবর্তীতে ডা.ওয়ান আজিজাহ একজন যোগ্যতাসম্পন্ন চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসাবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেন। ১৪ বছর ধরে একটি সরকারী হাসপাতালে কর্মরত থাকার পর ১৯৯৩ সালে তার হাজবেন্ড আনোয়ার ইব্রাহিমকে উপ-প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেওয়া হলে পরবর্তীতে ডা.ওয়ান আজিজাহ ন্যাশনাল ক্যান্সার হসপিটালে কাউন্সিলরে একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।

২. মা ও গ্রান্ডমাদার

ডা.ওয়ান আজিজাহ ছয় সন্তানের জননী এবং রয়েছে নয়জন নাতি-নাতনি
যদিওবা ওনার রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বিশিষ্ট্য ব্যক্তি হয়ে ওঠার কারণে অনেকেই তা জানে না। একটি সাক্ষাৎকারে, তার বড় মেয়ে নুরুল ইজাহা আনোয়ার জানান, ‘ডা.ওয়ান আজিজাহ তার ব্যস্ত রাজনৈতিক কর্মজীবন থাকা সত্ত্বেও তার পরিবারকে অবহেলা করেননি।’

৩. দৃঢ় প্রত্যয় এবং একনিষ্ঠ

ডা.ওয়ান আজিজাহ একজন সুদৃঢ় মনোবল সম্পূর্ণা নারী। ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমকে অন্যায়ভাবে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হলে তখন আনোয়ার ইব্রাহীমের অনুপস্থিতিতে তার মুক্তির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করার লক্ষ্যে মাঠে নামেন তিনি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ডা.ওয়ান আজিজাহ রিফর্মসি আন্দোলন, নাগরিক অধিকার আন্দোলন, এনজিও সামাজিক ন্যায়বিচার আন্দোলন (এডিআইএল) এর নেতৃত্ব দেন এবং তারপর সেই বছরেই কাদিলান নাশিয়াল (পিকেএন)পাটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে ডা.ওয়ান আজিজাহকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।

৪. রাজনীতিতে তার যাত্রা

ডা.ওয়ান আজিজাহ ভাষ্যমতে, “আমি একজন রাজনীতিবিদের স্ত্রী। আমি রাজনীতিবিদ নই। কিন্তু ঘটনাক্রমে, আমাদের পরিবারকে সেই সময় অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন একটি সংগ্রামে অংশ নিই। সংগ্রাম বা যুদ্ধটি আমাদের দুজনকে নীতিগত ভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে কাজ করার একটি সম্ভাবনার জন্ম দেয়”।

১৯৯৯ সালে প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে, তখন তিনি সংসদে পাঁচটি আসনে জয় লাভ করেন। নেতৃত্ব তিনি ২০০২ ও ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনেও আসন লাভ করেন। সেই বছরের মধ্যে, পুনরায় আনোয়ার ইব্রাহীম ফিরে এলে তিনি পদত্যাগ করেন। তবে, পুনরায় আনোয়ার ইব্রাহীমকে পাঁচ বছরের জন্য কারাগারে পাঠানো হলে, ২০১৪ সালে আবার রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসেন। ২০১৫ সালে তিনি আবার সংসদীয় আসনটি পান।

৫. সুন্দর মানবিক গুনসম্পন্ন

‘মানবিকতা’ তার স্বভারর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। শান্ত, স্বভাবের হওয়ায় জানা যায় যে, নির্বাচনের মত সময়ও ডা. ওয়ান আজিজাহ ধীর স্থিরভাবে কাজ করতে পারেন। তার মেয়ের মতে, “তিনি হাসিখুশির অনুভূতি ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে।” সত্যিকার অর্থে, তিনি একজন অনুপ্রেরণাকারী অসাধারণ নারী।

৬. দৃঢ় সংকল্প

ডা.ওয়ান আজিজাহ একটি দলের সভাপতি এবং আনোয়ার ইব্রাহীমের স্ত্রী হিসেবে কাজ করা তার জন্য মোটেও সহজ ছিল না। তিনি তার নিজস্ব মতামত ভিত্তিতে এবং দৃঢ়তার সাথে সবসময় কাজ করে গিয়েছেন। অনেকে মন্তব্য করেন যে, তিনি তার হাজবেন্ডের জন্য পদটি আগলে রাখবেন। কিন্তু ডা.ওয়ান আজিজাহ বলেছেন, আমি তার জন্য কোন সিট আগলে রাখার ক্ষমতা রাখি না। আমি দৃঢ়তার সাথে মনে করি, একজন নারী হিসেবে যে কেউ ভাল ভাবে যে কোন কাজ উপস্থাপনা করতে সক্ষম।

৭. নারীদের ক্ষমতায় প্রতি তার বিশ্বাস
নারীদের ক্ষমতার প্রতি তার রয়েছে অগাধ বিশ্বাস।একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন-“আমাদের অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী রয়েছে যারা প্রধানমন্ত্রী হবার মত।” তার মতে, “সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভূমিকা, বিশেষ করে রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে, আমরা নারীরাও একটি শক্তি হতে পারি।”

একজন রাজনীতিবিদ হয়ে উঠার এই পুরো যুদ্ধটাই তিনি করেছিলেন তার ছোট ছোট সন্তানদের সাথে নিয়ে।

সুত্র: buro 247.my থেকে অনুবাদ

 

বিয়ে ও পরিবার -১

কানিজ ফাতিমা


সুরা নিসার ১৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- “তোমরা স্ত্রীদের সাথে ভাল ব্যবহার কর। কোন কারণে যদি তাদের কিছু তোমাদের কাছে ভাল নাও লাগে, তাহলে তোমরা হয়ত এমন একটি বস্তুকে খারাপ মনে করছ যার মধ্যে আল্লাহ তোমাদের জন্য মহাকল্যাণ নিহিত রেখেছেন।”

“Treat them with kindness; for even if you dislike them, it may well be that you dislike something which God has invested with abundant goodness.” (19)

এখানে দেখা যাচ্ছে স্ত্রীর কিছু দিক স্বামীর পছন্দ না হলেও স্ত্রীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে স্বামীকে স্পষ্ট নির্দেশ করা হয়েছে। এবং বলা হয়েছে স্ত্রীর কোন দোষ চোখে পড়লে শুধু সেটার কারণেই তাকে অপছন্দ না করে বরং তার ভাল দিকগুলো সামনে রেখে তাকে বিচার করতে হবে। একই কথা একজন স্ত্রীর জন্যও সমভাবে প্রযোজ্য।

অনেক সময় এমনটা দেখা যায় যে, একজন ব্যক্তি খুবই ধার্মিক, দানশীল, বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের প্রতি যত্নশীল কিন্তু স্ত্রীর প্রতি নির্দয়, কঠিন, রুক্ষ এবং তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে না। এটি খুবই দুঃখজনক। অনেকে এ জন্য স্ত্রীকেই দোষারোপ করে এবং স্বামীর এরূপ ব্যবহারের জন্য স্ত্রীকেই দায়ী করে। অভিযোগটা এরকম যে, “লোকটি খারাপ হলে সবার সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করত। নিশ্চয়ই স্ত্রী ভাল না বলেই সে শুধু স্ত্রীর সঙ্গে এরূপ ব্যবহার করে।”

এরূপ অজুহাতে স্বামীর খারাপ ব্যবহারকে সমর্থন দেয়া ইসলামের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। আমরা দেখেছি সুরা নিসায় (১৯) আল্লাহ স্পষ্ট বলেছেন, স্ত্রীদের কিছু ব্যাপার অপছন্দ হলেও স্বামীকে ভাল ব্যবহার করতে হবে। এটা নির্দেশ আকারে এসেছে।

সুরা বাকারায় (২৩১) বলা হয়েছে- “তোমরা যখন স্ত্রীদের তালাক দাও, ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে নিয়ম অনুযায়ী রেখে দাও অথবা নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে ভাল ভাবে মুক্ত করে দাও। তাদেরকে কষ্ট দেয়ার জন্য এবং জুলুম করার উদ্দেশ্যে আটকিয়ে রেখ না।” (বাকারা ২৩১)

আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, Believers with the most excellent faith are those with the best manners and those who are kindest to their wives.
ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেছেন, The best among you are those who are kindest towards their wives and I am the kindest among you towards mine. (তিরমিযি)(The thematic commentary on the Qur’an, Shaykh Muhammad al-Ghazali, p

58)কাজেই দেখা যাচ্ছে ইসলামে স্পষ্ট নির্দেশ হল স্ত্রীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা। সবার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার ইসলামে গ্রহণযোগ্য আচরণ নয়। এরূপ ব্যক্তিকে আপাত দৃষ্টিতে ধার্মিক মনে হলেও প্রকৃতপে তার আচরণ ইসলাম সমর্থিত নয়। হাদিসে এসেছে আদদিনু মুআ’মিলা।

এবং স্বামী বা স্ত্রীই প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষের সত্যিকার আচরণ ও ব্যবহার দেখতে পায়। ঘরের বাইরে মানুষ যতটুকু সময় থাকে ততক্ষণ নিজেকে ঘষে মেজে ভদ্রভাবে উপস্থাপন করাটা খুবই স্বাভাবিক। মূলত: ঘরে ফিরেই মানুষ তার সত্যিকার আচরণটা প্রকাশ করে এবং ইসলাম মানুষের সেই সত্যিকার ভেতরকার আচরণকেই সুন্দর করতে চায়। ভেতরটা যাচ্ছে তাই রেখে উপরে সুন্দর একটা প্রলেপ দেয়া ইসলামের উদ্দেশ্য নয়।

স্বামী বা স্ত্রীর পারস্পরিক সমালোচনা নিয়ে আলোচনা করছিলাম না। আলোচনা করেছি সমালোচনার বাক্য গঠন নিয়ে। এ সম্পর্কিত আরও কিছু নীচে দেয়া হল-

১. সাধারণ কথার সময় আমরা Active Voice (কর্তৃবাচ্য) ব্যবহার করি। সমালোচনার সময় Passive Voice ব্যবহার করলে (কর্মবাচ্য) শ্রোতা মনে আঘাত পায় না। কারণ Passive Voice এ কাজটাকে গুরুত্ব দেয়া হয়, যে কাজটা করেছে তাকে (কর্তাকে) নয়।
যেমন-তুমি ঘর পরিষ্কার করনি। (এখানে ব্যক্তিকে দায়ী করা হচ্ছে) ঘরটা পরিষ্কার নয়। (এখানে কাউকে দায়ী করা হয়নি) কাজেই ‘তুমি ঘর পরিষ্কার করনি’ না বলে ‘ঘরটা পরিষ্কার না’ বলা উচিত।

২. নেগেটিভ কথাগুলো পজিটিভ করে বলা। মানুষ নেগেটিভ কথা শুনতে পছন্দ করে না। তাই প্রতিটি নেগেটিভ কথাকে পজিটিভে রূপান্তর করে বলুন।
যেমন- তুমি অলস, একটুও পরিশ্রম কর না। এর পরিবর্তে বলুন- তোমার একটু বেশী পরিশ্রম করা দরকার।

নীচে আরও কিছু উদাহরণ দেয়া হল-নেগেটিভ কথা পজিটিভ কথা

ক. তুমি ঠিক বলনি।
ক.আমি ভিন্নমত পোষণ করি।
খ. তুমি কাপড়টা ভাল কেননি।
খ. কাপড়টার রঙ নীল হলে বেশি ভাল হত।
গ. তুমি আজকে শফিকের বাসায় যেতে পারবে না।
গ.আজ বাসায় থেকে ছেলে-মেয়ের সঙ্গে সময় দেয়া জরুরী।
ঘ.তুমি টমেটো কিনেছো কেন?
ঘ.টমেটোর বদলে আলু কিনলে খরচ অনেক কম হত ইত্যাদি।

৩. ‘আমরা’ শব্দের ব্যবহার বাড়ানো।

নীচের বাক্যগুলো খেয়াল করুন-

ক. তুমি আমাকে বেড়াতে নিয়ে যাও না। ক. আমরা অনেকদিন বেড়াতে যাচ্ছি না।

খ. তুমি বেশি খরচ করছো।
খ. আমরা এখন থেকে বাজেট করে খরচ করবো। এতে আমরা প্রতিমাসে কিছু সঞ্চয় করতে পারবো।

এভাবে সচেতনতার সাথে বাক্য গঠন করলে অন্যকে আঘাত না করেও তাকে শুধরানো সম্ভব। সমালোচনার বাক্যে যদি ঐ ব্যক্তিকে দায়ী করা হয় তবে তার মনে আপনার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়। তখন সে আপনার সমালোচনা গ্রহণের পরিবর্তে ঘৃণা ভরে বর্জন করে। ফলে সে শুধরাবে তো নয়ই বরং আপনার সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

 

মা-ছেলের খুনসুটি

আফরোজা হাসান


এক.

ফজরের পর বিছানাতে শোবার পর প্রচন্ড পিপাসা লাগলো কিন্তু ঠাণ্ডার মধ্যে কম্বলের নীচ থেকে আবার বেড়োতে ইচ্ছে করছিলো না কিছুতেই। পুত্রকে বললাম, বাবা যাও তো আম্মুর জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আসো। কিন্তু সে উঠলো তো না-ই উল্টো আরো আমার কোল ঘেঁষে এলো। পিপাসা মেটানোর ইচ্ছা পরিত্যাগ করেই দিচ্ছিলাম ঠিক তখন দেখি পুত্রের পিতা পানি নিয়ে হাজির। আমার জাযাকাল্লাহ এর জবাবে উনি খোঁচা দিয়ে বললেন, ছেলেকে কি বায়েজীদ বোস্তামী মনে করেন নাকি? খালি আহ্লাদ না দিয়ে বাবা-মার প্রতি দায়িত্ব পালন বিষয়ক কিছু কথাও শেখান আপনার ছেলেকে।
এক গ্লাস পানির বদলে এত বড় কথা ছোট্ট একটা শিশু বাচ্চাকে মিন করে? মা হয়ে পুত্রের বিরুদ্ধে এত বড় অপবাদ সহ্য করা অসম্ভব। নাকীবকে তখনি বায়েজীদ বোস্তামীর মাকে পানি পান করানোর সেই ঘটনা সুন্দর করে বুঝিয়ে বলে বললাম, দেখেছো মাকে কত ভালবাসতেন। এমন হলে তুমি কি করতে? জবাবে বলল, আম্মু আমি পানি নিয়ে এসে তোমাকে ডেকে তুলতাম। তুমি উঠতে না চাইলে যন্ত্রণা দিয়ে জোর করে উঠাতাম। পিপাসা নিয়ে তোমাকে ঘুমাতে দিতাম না। পিপাসায় তুমি যদি ঘুমের মধ্যে মারা যাও তাহলে আমার কি হবে? আমি তো স্তম্ভিত! হায় আল্লাহ আমি কি বুঝালাম আর আমার পুত্র কি বুঝলো। কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা স্বরূপ পাশের ঘর থেকে ভেসে এলো পুত্রের পিতার অট্টহাসি।

দুই.

বাসায় থাকলে আমরা মা-ছেলে সবসময় একসাথে জামায়াতে নামাজ আদায় করি। গতকাল মাগরিবের সময় ওকে ডেকে নামাজে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণ পরই নাকীবের মনে পড়লো তার ওজু নেই। জায়নামাজ থেকে নেমে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, আম্মু কাজটা ঠিক করেনি। নামাজে দাঁড়ানোর আগে আমাকে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল, নাকীব ওজু করেছো? আমি বলতাম, না। আম্মু বলত, তাহলে অজু করে আসো। আমি তখন ওজু করে আসতাম, তারপর দুজন নামাজ পড়তাম। এটা আমার ভুল না কিন্তু আম্মু নামাজ শেষ করেই বলবে, এটা কি হল? কাজটা কি তুমি ঠিক করলে? অথচ ভুল আম্মুর। এমন ননস্টপ বিড়বিড় করতে করতে সে ওজু করে এসে আমার পাশে দাঁড়ালো। নামাজ শেষ করার সাথে সাথে বলল, আমার কিন্তু কোন দোষ নেই। তুমি জিজ্ঞেস না করে ভুল করেছো। বললাম, হ্যা আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি খুব স্যরি। ব্যাস শুরু করলো আমাকে জ্ঞানদান করা। যার সারমর্ম হচ্ছে সবসময় যাতে নামাজে দাঁড়ানোর আগে জিজ্ঞেস করে নেই ওর ওজু আছে কিনা। আমি বাধ্য মায়ের মত সব কথা মেনে নিলাম চুপচাপ।

তিন.

স্কুল থেকে ফেরার পথে আমার যুক্তিবাদী পুত্রের সাথে একচোট যুক্তি-তর্ক হয়ে গেলো। বিষয় ছিল একা একা স্কুলে যাওয়া। আমাদের বাসার গেট থেকে নাকীবের স্কুল দেখা যায় কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই পথটুকু যেতে তিনটা সিগন্যাল পেড়োতে হয়। সুতরাং ওকে একা ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু নাকীবের যুক্তি হচ্ছে, সে যথেষ্ট বড় হয়েছে এবং সিগন্যাল কিভাবে পেড়োতে হয় সেটা খুব ভালো মতো জানা আছে তার। আমি বললাম, তুমি এখনো অনেক ছোট তাই একা একা রাস্তা পেড়োতে পারবে না। জবাবে বলল, আম্মু তুমি আমাকে একদিন একা একা স্কুলে যেতে তো দাও। তখন না বুঝবে যে আমি কত বড় হয়েছি। তুমি যদি আমাকে না ছাড় তাহলে জানবে কি করে আমি কি পারি আর কি পারি না। এই যুক্তির পর আর কি বলবো খুঁজে না পেয়ে চুপ করে রইলাম। কিন্তু এত সহজে দমে যাবার পাত্র আমার পুত্রটি নয়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আম্মু আমার কত বছর বয়স হলে তুমি আমাকে একা একা স্কুলে যেতে দিবে? বললাম, আঠারো বছর হলে। চোখ বড় বড় করে বলল, আঠারো বছর? আমার তো মাত্র আট বছর বয়স। তারমানে তো আরো দশ বছর বাকি। উহু এটা হবে না। বারো বছর হলেই আমি একা একা স্কুলে যাবো। বললাম, আচ্ছা তোমার আগে বারো বছর হোক তখন দেখা যাবে। সন্তুষ্ট না হলেও আর কথা বাড়াল না। আমিও স্বস্থির শ্বাস ছাড়লাম। যাক আগামী চার বছরের জন্য যুক্তি-তর্কের একটা বিষয় অন্তত কমলো।

চার.

কেমন যোগ করা শিখেছে সেটা পরীক্ষা করার জন্য পুত্রকে সুপার মার্কেটে নিয়ে গিয়ে দশ ইউরো দিয়ে বললাম, দশ ইউরোর মধ্যে তোমার পছন্দনীয় খাবার কিনো। খেয়াল রাখবে যেন সব মিলিয়ে দশ ইউরোর বেশি না হয় কিছুতেই। এটা কোন ব্যাপার হল এমন ভঙ্গী করে হাত থেকে টাকা নিয়ে সে ভেতরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর বিশ্ব জয় করেছে এমন ভাব নিয়ে ফিরে এলো। কাউন্টারে গিয়ে টাকা দিতে গিয়ে দেখা গেলো কাটায় কাটায় দশ ইউরোর বাজার করেছে। আমি তো মহা আনন্দিত হলাম। আদরে আদরে লাল করে দিলাম বাবা সোনাটাকে। কিন্তু ওর ঠোঁট টিপে হাসিটা একটু কেমন কেমন লাগাতে হাসির রহস্য কি জানতে চাইলাম। জবাবে বিচ্ছু ফিক ফিক করতে করতে বলল, আমি কি করেছি জানো? কঠিন যোগ করতে হবে এমন কোন খাবারই কিনিনি। আমি তিন ইউরো দিয়ে কেক কিনেছি, বিস্কিট কিনেছি দুই ইউরো দিয়ে, ব্রেড কিনেছি আড়াই ইউরো দিয়ে আর বাকি আড়াই ইউরো দিয়ে কিনেছি চকলেট। হিহিহি…! বললাম, হিহিহি…বন্ধ। তুমি একটা দুষ্টু বাচ্চা। বলল, আম্মু তুমি শুধু ভুল কথা বলো। আমি দুষ্টু না অনেক বুদ্ধিমান বাচ্চা। তোমার উচিত আমাকে নিয়ে গর্ব করা। মনে মনে বললাম, আলহামদুলিল্লাহ্‌! গর্ব তো করিই তোমাকে নিয়ে বাপজান কিন্তু পাগলকে সাঁকো নাড়াতে বলার মত পাগল তোমার আম্মু না।

পাঁচ.

আমাদের গেটের বাইরেই নতুন একটা আইসক্রিমের দোকান হয়েছে। আমার পুত্র একা একা সেই দোকান থেকে গিয়ে আইসক্রিম কিনে নিয়ে এলো। মাত্র একমিনিট সময় লেগেছিল আমার চোখের আড়াল হয়ে আইসক্রিম কিনে ফিরে আসতে। জীবনে এই প্রথম নাকীব একা মেইনগেটের বাইরে গেলো। ছেলের চিন্তায় একমিনিটের জন্য আমার মনের সব শান্তি বনবাসে চলে গিয়েছিলো। গেটের গ্লাসে ওর চেহারাটা দেখার পর আনন্দাশ্রু চোখের কোনে ঝিলমিল করে উঠেছিলো। আর একা একা আইসক্রিম কিনে এনে বিশ্বজয়ী বীরের বেশ ধারণ করলো নাকীব। একা কিছু করতে পারার আনন্দে আত্মহারা যাকে বলে। আমাকে শুনিয়ে দিল ছোট একটা লেকচার, এখন আর সে ছোট নেই। আমাকে ছাড়াও অনেক কিছু করতে পারে। আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদরে আদরে আবার ছোট্ট বানিয়ে ফেলার চেষ্টা করলাম কিছুক্ষণ। সব মায়েরাই চায় তাদের সন্তান অনেক বড় হোক কিন্তু সাথে সাথে মায়েরা তাদের মনের কোণে সন্তানের গুড্ডু গুড্ডু বেবী ইমেজটাও লালন করে বহু যতনে।

 

ফ্যাশন শো’তে আবায়ার ইউনিক কালেকশন

নারী সংবাদ


বদলে যাচ্ছে ফ্যাশন শো এর অঙ্গন। আর এই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে নানামুখী পোশাকেও। মুসলমানদের দুটি উৎসব সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ উপলক্ষ্যে
‘Online women Enterpreneur welfere Association (OWEA)’ এর উদ্দ্যোগে ৫-ই মে প্রথম প্রোগ্রামটি অংশ নেন প্রথম বারের মত অভিজাত ফ্যাশন হাউজ “R i v a J Fashion Bar”।

“R i v a J Fashion Bar”  নিয়ে এসেছেন এক্সক্লুসিভ সব আবায়া, বোরকা, কোটি/ স্রাগের বিশেষ কালেকশন। তাদের বিশাল কালেকশন নিয়ে উত্তরা ক্লাবে সেই দিনে ৫-ই মে ফ্যাশন শো’ এর আয়োজনও করা হয়।

একদিন ব্যাপী এই শো-তে  ঈদ ও পার্টির জন্য জাঁকজমক ও এক্সক্লুসিভ সব আবায়া, বোরকা এবং কোটি/ স্রাগের প্রদর্শিত হয়। দেশের বিশিষ্ট মডেলরা শো তে অংশ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে নাট্যকার আজিজুল হাকিম, নাট্য লেখক জিনাত হাকিম এবং গায়িকা আঁখি আলমগীর সহ বেশ কিছু মডেল, গায়ক এবং অভিনেত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এই আয়োজনের মধ্যে “R i v a J Fashion Bar” এর ছিল সব নতুন নতুন এবং বিভিন্ন ডিজাইনের আবায়া, বোরখা, স্কার্ফ, কোটি/স্রাগের এবং গাউন।

“R i v a J Fashion Bar” থেকে অনলাইনে যে কেউ অর্ডার করতে পারবেন, https://www.facebook.com/rivajbar/ । মুল শাখা নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা।

মুলত ‘R i v a J Fashion Bar’ রিভা মাহমুদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। তার পুরো এই যাত্রা পথে তার সার্বিক সহযোগিতা করছেন তার হাজবেন্ট মোহাম্মদ মাহমুদ। তার ভাষ্যমতে, তার সহযোগিতায় তিনি এতদূর পথ এগিয়ে আসতে পেরেছেন।

ভবিষ্যতে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও ফ্যাশন শো তে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছে এবং তাদের নিজস্ব ব্রান্ড ‘R i v a J Fashion Bar’ বের করা আশা ব্যক্ত করেছেন রিভা মাহমুদ।

 

 

‘একটি আদর্শ প্রি-স্কুল, নারীই মূল চালিকাশক্তি’

তাহেরা সুলতানা


কোন স্কুল যদি বাচ্চার মানসিক এবং শারীরিক দুই সেক্টর বিকাশে সহায়ক হয়, আর শিক্ষক যদি হন মায়ের মতো, তাহলে কি কোন বাবা-মায়ের চিন্তা থাকে? নিশ্চয় নয়। মালয়েশিয়াতে বাচ্চাদের স্কুলগুলোতে পুরুষ শিক্ষক নেই বললেই চলে। আমি মূলত প্রি-স্কুলের কথা বলছি। আমার ছেলে এখানকার খুব নরমাল একটা স্কুলে পড়ে। অনেকটা সরকারি স্কুলের মতই, কিন্তু ইসলামিক স্কুল। তবে এ রকম অমুসলিম স্কুলগুলোতেও ব্যাসিক নিয়ম এক। আমি উল্লেখযোগ্য কিছু উদাহরণ তুলে ধরছি, যা আমাদের দেশের নামি-দামি স্কুলগুলোতেও অনুপস্থিত।

১। এখানে বাচ্চাদের স্কুলে ঢুকানোর পরপরই ১৫-২০ মিনিটের জন্য খেলতে দেয়া হয়, এরপর এসেম্বলি হয়, নাস্তা দেয়া হয়। বাসা থেকে স্কুলে খাবার আনা একদম নিষেধ। আর যদি কেউ আনতে চায়, পুরো ক্লাসের জন্য আনতে হবে। স্কুলের খাবার অত্যন্ত ভালো আর এক সপ্তাহের মধ্যে একই খাবার রিপিট করা হয় না। যারা সারাদিন থাকে, তাদের লাঞ্চও দেয়া হয়। এর জন্য এডমিশন এর সময় খুব সামান্য পরিমাণ টাকা নিয়ে নেয়। নাস্তার পর ক্লাস শুরু হয়। আর ক্লাস বলতে অইভাবে পড়াশুনা না, ছবি আঁকা, কিছু বানানো, এর মাঝে টুকটাক পড়াশুনা। হাতে কলমে শিক্ষার দিকেই এরা বেশি জোড় দেয়। ৪-৭ বছর বয়সী সব বাচ্চার জন্য একই নিয়ম। আর এখানে বাসায় বই আনা অথবা বাসা থেকে বই বা অন্য কিছু নেয়াও নিষেধ।
২। মেডিকেল ইন্সুরেন্স কার্ড স্কুল থেকেই বিনা খরচে করে দেয়।
৩। প্রতিদিন নাস্তার করানোর পর ৫ বছর থেকে সব বাচ্চাদের নিয়ে শিক্ষিকারা ‘সালাতুল দুহা’ পড়েন।
৪। বাচ্চাদের সব কাজ শিক্ষিকারা নিজ হাতে করেন। কোন আয়া এখানে নিয়োগপ্রাপ্ত নেই। তবে প্রায় সব বাচ্চাই নিজের কাজ নিজে করতে শিখে যায়। কারন এভাবেই তাদের গাইড করা হয়।
৫। মালয়েশিয়ান স্কুল হলেও ৭০% কনভারসেশন এবং পড়াশুনা ইংরেজিতে হয়, আর ৩০% বাহাসা মালয় ভাষায় হয়। আর ফরেন বাচ্চাদের ক্লাসেই ভালোভাবে মালয় ভাষা শেখানো হয়।
৬। টিচার-স্টুডেন্ট র‍্যাশিও ১:২০ এর বেশি নয়। আমি এখানে যে ক্যাটাগরির স্কুলের উদাহরণ দিলাম, এটা সবচেয়ে কম খরচের স্কুল। কিন্তু এদের সার্ভিস আমাদের দেশের খুব নামকরা স্কুলের চেয়ে বেশি। দেশে অনেকদিন শিক্ষকতা পেশায় থাকার কারনে বাস্তবচিত্র নিজের চোখেই দেখার সৌভাগ্য এবং দুর্ভাগ্য দুটোই হয়েছে।
৭। এখানকার সরকারি, বেসরকারি এবং প্রাইভেট সব স্কুলগুলোতেই কোন বাচ্চার বাবা-মা কত ধনী, সেইটা কখনওই বিচার করা হয় না। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ স্কুলে বাচ্চাদের জন্মদিন উৎযাপনের পদ্ধতি। একটি মাসে যতগুলো বাচ্চার জন্মদিন পড়ে, সবার একসাথে একটি দিনে উৎযাপন করা হয়। অভিভাবকদের আগের থেকেই জানিয়ে দেয়া হয়, তারা চাইলে কেকসহ অন্যান্য খাবার বাচ্চার জন্য সরবরাহ করতে পারেন এবং বাচ্চার সাথে থেকে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। এই প্রোগ্রামের আর একটি উদেশ্য হলো, সবার সাথে আলাদা করে পরিচিতি, যাতে সব বাচ্চাই নিজেদের চিনে এবং জানে। এক বছরে ১২ টি মাসে যদি এভাবে জন্মদিন পালন করা হয়, তাহলে কেউ আর কারো কাছেই অচেনা থাকবে না, বন্ধুত্ব আর ভালোবাসায় স্কুল প্রাজ্ঞন ভরে উঠবে, সবার মধ্যে খুব ভালোভাবে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরী হবে। আর বাচ্চাদের যদি জড়তা থাকে, সেটাও আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়।
৮। কোন দেশের কোন সাধারণ প্রি-স্কুলের পক্ষ থেকে যদি বাচ্চার সাথে সাথে বাবা-মাকেও গাইড করা হয়, সে দেশের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন জায়গাই কিন্তু থাকেনা। কিভাবে বাচ্চাকে ভাষা চর্চা করাতে হবে, কিভাবে পড়ার দক্ষতা বাড়াতে হবে, নতুন ভাষার সাথে বাচ্চাকে কি করে অতি সহজে পরিচিত করানো যাবে, কিভাবে একটি বাচ্চা একই সাথে ২/৩ টি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারবে, এই সবকিছু এই ট্রেইনিং গুলোর বৈশিষ্ঠ্য। বাচ্চা যাতে শিক্ষক আর বাবা-মায়ের শিখানোর মধ্যে সমতা খুঁজে পায়, এটাই এই ট্রেইনিং এর প্রধান উদ্দেশ্য।
৯। প্রতি মাসেই প্রতিটা বাচ্চাকে ক্লাসে ইংরেজিতে কোন না কোন বিষয়ের উপর উপস্থিত বক্তৃতা দিতে হয়। এটি হতে পারে কোন একটা খেলনা গাড়ী নিয়ে, কিংবা কোন ছবি নিয়ে অথবা কোন প্রিয় খাবার নিয়ে। এতে করে একটা বাচ্চা কেবল একজন ভালো স্পিকারই হয়ে উঠে না, তেমনি কথা বলার জড়তাও কাটিয়ে উঠতে পারে।
১০। স্কুলে বাচ্চাদের আলাদা করে কোন পরীক্ষা নেয়ার কোন সিস্টেম নেই। সারাবছর ধরেই এ্যাসেসমেন্ট চলতে থাকে। প্রতি সেমিস্টারে রেজাল্ট কার্ডে তার প্রতিফলন দেখা যায় এবং বাচ্চার সর্বনিম্ন এ্যাসেসমেন্ট হচ্ছে ‘সন্তোষজনক’।
১১। যেকোন ধরনের প্রতিযোগিতা বা খেলাধুলায় শিক্ষকরা সব বাচ্চাদের ১০০% অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন এবং সবার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকে। এখানে হার জিতের থেকে অংশ গ্রহণটাকেই বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়, যাতে একটা বাচ্চার মনের উপর কোন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে।

আমরা চাইলেই কিন্তু আমাদের দেশের স্কুলগুলোতেও বাচ্চাদের জন্য এরকম ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে পারি। আর যারা নিজেরাই স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছেন, তারাও কিন্তু এরকম একটা স্কুলের খসড়া এঁকে ফেলতে পারেন। আমাদের সবার ইচ্ছা, উদ্যোগ আর সাহসই কিন্তু আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট! এর জন্য সত্যিই অনেক টাকার প্রয়োজন নেই!

 

গাছা ও গাছি

কানিজ ফাতিমা


নদীর ধারে একটু নির্জন বাঁকে আপনা থেকেই জন্ম নিয়েছে দু’টি গাছ। পাশাপাশি, কাছাকাছি। তাদের পাতার সতেজ নবীন আভাই বলে দেয় খুব বেশী দিন হয়নি ওরা জন্মেছে। কতইবা বয়স হতে পারে? গাছার হয়তো পনের আর গাছির দশ-বারো। শাখায়-পাতায় জড়াজড়ি করেই বেড়ে উঠেছে ওরা।

একই বাতাসে দোল খায় তারা। একই সঙ্গে বৃষ্টিতে ভেজে, রোদে পুড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে পখিরা এসে বসে ওদের ডালে। একটু জিরোয়, ফুরুৎ করে এ ডাল থেকে ও ডালে উড়ে, নাচানাচি করে, আপন মনে ডাকে আর তারপর পাখনা মেলে পাড়ি জমায় নিজ ঠিকানায়। কখনও কখনও একঝাঁক পাখি এসে কিচির মিচির মেলা বসায়। এ সবই উপভোগ করতে করতে দিনে দিনে ওরা বেড়ে উঠেছে।

জন্মের পর প্রথম ক’টি বছর গাছা খুবই নিঃসঙ্গ ছিল। নির্জন বাঁকে মাঝে মাঝে পাখিদের গান অথবা দূর নদীতে দু’ একটি নৌকার ছলাৎ শব্দ এই ছিল তার সারা দিনের বৈচিত্র। তাই গাছি যখন মাটির উপরে মাথা তুলে প্রথম পৃথিবীর আলোতে পাতা মেলেছিল, বাতাসে থির থির কেঁপেছিল তখন গাছার মনেও আনন্দের বন্যা বয়েছিল। সে পরম যত্নে গাছির মাথার উপরে নিজের পাতা মেলে দিয়েছিল। গাছিও গাছার পাতার কোমল ছায়ায় ধীরে ধীরে বাড়ালো। সেদিন থেকেই ওদের এ শখ্যতা।

কয়েক বছরের মধ্যেই গাছা তার ডাল পালা মেলে মাটির নীচে শেকড়ের জাল বুনে মোটামুটি এক বিশাল দেহে আবির্ভূত হল, যেন শক্ত সমর্থ এক বীর মূর্তি।

গাছি বললো,
– আমিও ডাল মেলি?
– কি দরকার? আমি তো আছি। আমার ডালপালাই তোমাকে ঝড় থেকে বাচাঁবে।

গাছি বললো,
– শেকড় মেলে একটু শক্ত হই
– কি দরকার? আমার শেকড়ের জালই মাটি শক্ত করে ধরে রেখেছে। আমাদের দু’জনের জন্য এই যথেষ্ট। বুক পেতে আমি তোমায় ঝড় থেকে বাঁচাবো।

গাছা তার ডাল সরিয়ে গাছিকে ডালপালা মেলার জাগয়া করে দিল না। গাছার শেকড়ের ফাঁকে গাছি তার শেকড় ছড়ানোর সুযোগ পেলনা। ফলে গাছি দুর্বল আর গাছা-নির্ভর হয়ে রইলো।

একদিন হঠাৎ দশদিক দাপিয়ে ঝড় শুরু হল। ঝড়ের সেকি তান্ডব – বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নদী পানিও যেন দুকূল ছাপাতে চাইছে। উপরে বাতাস আর নীচে নদীর জোয়ারের তোড়-গাছা একা আর সামলে উঠতে পারলোনা। বাতাস গাছার শক্ত ডাল এক এক করে ভেঙ্গে ফেলল। নদীর জোয়াড়ে গাছার শেকড়ের বুণনকে আলগা আলাদা করে দিল।

গাছি তার দুর্বল শরীর দিয়ে গাছাকে সাহায্য করতে চাইলো। চাইলেই কি আর সব হয়? সামর্থ থাকা তো চাই।

ঝড়ের সাথে ঝুলতে ঝুলতে দুর্বল গাছা বললো – “গাছি, যদি তোমার শাখাকে বাড়তে দিতাম তবে আজ ‘আমরা একসাথে’ পাগলা হাওয়া রুখতে পারতাম, তোমার শেকড় যদি মজবুত হতে দিতাম তবে আজ দু’জনে মিলে মাটি আঁকড়ে রাখতে পারতাম। হায়! তোমার বশ্যতা পাবার লোভের আজ এ পরিনতি। শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার আর বশ্যতার নিস্ক্রিয়তায় ভালবাসা নেই; পারস্পারিক সম্মানের ভারসাম্যেই ভালবাসা।”

বাতাসের শোঁ শোঁ গোঙ্গানী ছাপিয়ে মড়-মড়াৎ শব্দ হল। পরের দিন পাখির ঝাঁক এসে তাদের চিরপরিচিত বসার জায়গা আর খুঁজে পেলনা। তারা দেখল নদীর চরে শিকড় উপড়ে পাশা পাশি পড়ে আছে দু’টি গাছ।

কানিজ ফাতিমা
লেখিকা, ট্রেইনার, শিক্ষিকা এবং গণসচেতন কর্মী

 

নিয়মিত ফাস্টফুডে নারীদের গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে

নারী সংবাদ


যে নারীরা নিয়মিত ফাস্টফুড খান কিন্তু ফলমূল কম খান, তারা গর্ভধারণ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন বলে নতুন একটি গবেষণায় বলা হয়েছে।

৫৫৯৮ জন নারীর ওপর একটি গবেষণার পর দেখা গেছে, যারা ফাস্টফুড খান না, তাদের তুলনায় যারা সপ্তাহে চার বা আরো বেশিবার ফাস্টফুড খান, তাদের গর্ভধারণে অন্তত একমাস সময় বেশি লাগে।
তাদের সন্তান ধারণ করতেও বেশি সময় লাগে বলে ওই গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এটা প্রমাণ করছে যে, ভালো খাবার খেলে গর্ভধারণের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়’।

অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য আর আয়ারল্যান্ডের নারীদের কাছে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, প্রথম সন্তান ধারণের কয়েক মাস আগে তারা কোন ধরণের খাবার খেয়েছিলেন। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, ‘যে নারীরা মাসে তিনটার কম ফল খেয়েছেন, তাদের গর্ভধারণে নিয়মিত ফলাহারীদের তুলনায় দেড় মাস সময় বেশি লাগে’।

তারা দেখেছেন, ‘যারা ফল কম খায় বা ফাস্টফুড বেশি খাচ্ছেন, তাদের অনেকে পুরো বছর জুড়ে চেষ্টা করেও গর্ভধারণ করতে পারেননি’।

তবে কোন যুগলের পুরুষ সঙ্গী যদি ফাটিলিটি চিকিৎসা নিয়ে থাকেন, তাদের এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

গবেষণা দলের প্রধান, ইউনিভার্সিটি অব এডিলেডের অধ্যাপক ক্লারি রবার্টস বলছেন, ‘এই পর্যবেক্ষণ বলছে যে, ভালো মানের খাবার খাওয়া আর ফাস্টফুড এড়িয়ে চলতে পারলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় এবং তাড়াতাড়ি গর্ভধারণ করা যায়’।

তবে অনেকে এর সমালোচনা করে বলছেন, এই গবেষণায় অল্প কিছু খাবারকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। কিন্তু গর্ভধারণে হয়তো আরো অনেক বিষয়ের প্রভাব থাকতে পারে। এমনকি বাবাদের খাবারের বিষয়ে এখানে তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি।

তারপরেও এই গবেষণাটির অনেক গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত নন, ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের অধ্যাপক জিনো পেকোরারো বলছেন, ‘সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যা মনে করেন, এই গবেষণা সেটিকেই সমর্থন করেছে যে, যে যুগলরা সন্তান নিতে চান, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তাদের জন্য সহায়ক হতে পারে।’
সূত্র: বিবিসি

 

একজন ডাক্তার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার গল্প

ফাতেমা শাহরিন


তানজিলা জলিল অমি। হলি ফ্যামিলি মেডিক্যাল কলেজ এবং হসপিটাল থেকে এমবিবিএস শেষ করেছেন। একাধারে ‘কণ্ঠী’ এর ওয়নার,  ডিজাইনার দুটোই।

এক বছর আগের কথা,  নিজের ভেতরই পরিবর্তনের ডাক পেলেন অমি এভাবেই শুরু হল তার ‘কণ্ঠী’ র যাত্রা। ‘কন্ঠী’ মূলত হাতে বানানো গয়না এর অনলাইন দোকান। কন্ঠীর শুরুর গল্পটা বলতে গিয়ে অমি বলেন,  আমার প্রথম অনলাইন শপ আবোলতাবোল ক্রাফটস থেকে। মূলত ক্রাফটিং ম্যাটেরিয়াল সেল করতাম। ম্যাটেরিয়াল নিয়ে কাজ করতে করতেই এক সময় অল্পকিছু গয়না বানানো হয়। সবার ভালোলাগা আর উৎসাহতেই কন্ঠী চালু।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা অমি বলছিলেন, ‘কণ্ঠী’ তে মূলত আমি একাই কাজ করি। এছাড়া আমার একজন ওয়ার্কার আছেন যিনি হাতের কাজ করেন। আমি কাজ কারো কাছে শিখিনি। নিজে নিজেই শেখা। ছোটবেলা থেকেই ক্রাফটিং এ উৎসাহ ছিলো আমার।
ম্যাটেরিয়াল সেল এর কারনে কাজ করা আরো সুবিধাজনক হয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, সবচাইতে বেশি সহযোগিতা ও উৎসাহ পেয়েছেন মা এবং কাছের দুই একজন বন্ধুর কাছ থেকে।

নারী হিসেবে কাজটি তার কাছে কতটা চ্যালেঞ্জের ছিল?
এ প্রসংগে অমি বলেন, নারী হিসাবে সবচাইতে সমস্যা হল, গয়না বানানোর কাঁচামাল জোগাড় করা। কারণ আমাদের দেশে এখনো হাতের কাজ জনপ্রিয় না। এবং এসবের পরিসর অনেক কম। সেগুলো খুঁজে বের করা এবং কাজ করা কিছুটা কঠিন। এছাড়া বড় চ্যালেঞ্জ মুলধন। নিজ উদ্যোগ কাজ শুরু করা আবার নারী হিসাবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যে কোনো কাজেই সাফলতা পাওয়া কিছুটা কষ্টকর। বড় সমস্যা হল, মূল ধারার ব্যবসার জন্য নারীরা সহযোগীতা কম পায়। বাধা প্রধানত, পরিবার থেকে আসে। দ্বিতীয়ত, মূলধনের অভাব তো আছেই।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা  অমি বলেন,’মেয়েদের সাবলম্বী হওয়ার জন্য এটা যথেষ্ট ভালো সুযোগ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করা। কারন ঘরে থেকেই এই কাজ করা যায়। সীমিত মুলধন হাতে থাকলেও শুরু করা যায়।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা অমির মতে, ‘নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একটা কথাই হল, ‘কোনোভাবেই হার মানা যাবেনা।’ অনেক বাঁধা আসবে। অনেক কষ্ট করতে হবে। কিন্তু তবুও সামনে এগোনোর চেষ্টা করতে হবে। কণ্ঠী নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানান অমি। তিনি অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও কন্ঠীকে নিয়ে যাবেন। নিজের স্বপ্ন পূরণ করার ক্ষমতাই আসলে অমির কাছে বড় সফলতা।’

পরিশেষে একটাই কথা বলা যায়, যে কোন পেশার হতে পারেন সেটায় জীবনের মুল লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য হওয়া চাই ‘সফলতা’। আর সফলতার জন্য কেবল মাত্র চাকুরিই মাধ্যম নয় বরং পরিশ্রমী, আত্মবিশ্বাসী, বুদ্ধিদীপ্ত উদ্যোক্তা হতে পারাটাই বড় সফলতা নিশ্চিত করে।

 

রোযায় খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্য (পর্ব- ১)

ডা. ফাতিমা খান


রহমত, বরকত ও মাগফিরাত এর পয়গাম নিয়ে আসে মাহে রমজান। আমাদের দেহযন্ত্রটি সার্ভিসিং করার জন্যই এ মাসের আগমন ; শুধু দেহই নয়, আত্নার পরিশুদ্ধিরও এক বিশাল সুযোগ দেয়া হয়েছে এ মাসে। ইসলাম ধর্ম ছাড়া আরও কিছু ধর্মে উপবাসের প্রথা চালু আছে। কিন্তু ইসলাম ধর্মের মত এত সহজ ও স্বাস্থসম্মত নিয়ম-নীতি অন্য কোন ধর্মে নেই। তাই রোযা অনেকগুলো রোগ-ব্যাধির চিকিৎসাও বটে। এসময় সাহরী ও ইফতারের খাদ্যতালিকার ব্যাপারে আমাদের একটু মনোযোগি হওয়া উচিৎ। অনেক সময় রোযার মাসে খাবার নির্বাচনে ভুল করায় আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। অনেকেই অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ভয়ে রোযা রাখা থেকে বিরত থাকেন। আসলে একটু খেয়াল করে স্বাস্থ্যসম্মত মেনু নির্বাচন করা হলেই আর স্বাস্থ্যগত সমস্যা হয়না।

সাহরীতে যা খাওয়া উচিত :

সাহরীর খাবার এমন হওয়া উচিত যা দীর্ঘক্ষন পেটে থাকে অর্থাৎ হজম হতে বেশি সময় লাগে। কেউ কেউ মনে করেন, সাহরীতে প্রচুর পরিমান আমিষ ( Protien) জাতীয় খাবার খেলে সারাদিন একটু সবল থাকা যাবে। কেউ কেউ আবার ভাত (Carbohydrate) বেশী খাওয়ার পক্ষপাতি। আসলে এর কোনটিই ঠিক নয়। সাহরীতে খাবারের প্রত্যেকটি উপাদান যেন প্রয়োজনীয় পরিমাণে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বছরের অন্যান্য সময়ে হয়ত আমরা এভাবে সুষম খাবার খাওয়ার কথা ভাবি না, কিন্তু অন্যান্য সময় ত বটেই, রোযার মাসে এ দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। আমিষ, শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাবারের কোনটিই যেমন খাদ্যতালিকায় বাদ পড়া উচিত নয়, তেমনি কোনটি পরিমানে বেশী খাওয়া ঠিক নয়। শর্করা জাতীয় খাবার বেশী খাওয়ার ফলে pancreas থেকে ইনসুলিন এর নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত ইনসুলিন গ্লুকোজ কে রক্ত থেকে দ্রুত দেহকোষে প্রবেশ করিয়ে দেয়। অর্থাৎ অতিরিক্ত ইনসুলিন এর কারনে রক্তে গ্লুকোজ বেশীক্ষণ থাকতে পারে না। অতিরিক্ত ইনসুলিন নিঃসরণের কারণে দেহের স্থুলতা বেড়ে যায়। আবার,আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসের কারণে দৈনিক যে নির্দিষ্ট পরিমাণ আমিষ-হজমকারী এঞ্জাইম আমাদের পাকস্থলি থেকে নিসৃত হয় , তা দিয়ে অতিরিক্ত আমিষ হজম করা সম্ভব নয়। তাছাড়া অতিরিক্ত আমিষ গ্রহনের ফলে শরীরে ঝিমুনি আসে ও রক্তে ইউরিয়ার পরিমান বেড়ে যায়, যা দেহের জন্য একটি ক্ষতিকারক বর্জ্য পদাথ। অনুরূপভাবে অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার দেহকোষ ও রক্তে অনাকাংখিত মেদ তৈরী ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। যাদের পিত্তথলি বা লিভারের সমস্যা আছে তাদের জন্য অতিরিক্ত চর্বি অত্যন্ত ক্ষতিকর !তাই রোযার মাসে সাহরীতে অন্য মাস গুলোর মত স্বভাবিক খাবার খাওয়াই শ্রেয়ঃ। তবে জটিল শর্করা জাতীয় খাবার খুব ধীরে হজম হয় বলে এ ধরনের খাবার সাহরীতে খাওয়া ভালো। যেমন- ঢেঁকিছাটা চালের ভাত, লালরুটি, পাউরুটি, বার্লি, সব রকমের আলু, oatmeal, pasta, macaroni, spaggetti ইত্যাদি। এই খাবারগুলো পাকস্থলীতে দীর্ঘক্ষণ স্থিত থাকে ,হজম হয় ধীরে ধীরে। তাই রোযাদারের ক্ষুধাভাব কম অনুভব হয়। এর সাথে পছন্দ অনুযায়ী পরিমিত মাছ/ মাংস ও প্রচুর শাক-সবজি খাওয়া যেতে পারে। একজন রোযাদারের জন্য সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন যথেষ্ঠ পানি ( দৈনিক অন্তত ২ লিটার ) ও তাজা ফলের রস পান করা । অনেকেই এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না। পানি দেহকে সতেজ রাখে। শরীর নামের কারখানার বিভিন্ন রাসায়নিক কার্যকলাপের মূল উপাদান এই পানি। পানি কম খেলে দেহের বর্জ্য পদাথগুলো বের হয় না, দেখা দেয় নানাবিধ সমস্যা। স্বাস্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সাহরীতে খাওয়ার বেলায় আল্লাহ রাসূলের (সাঃ) নিয়ম অনুযায়ী খাওয়াই উত্তম – অর্থাৎ পাকস্থলীর তিন ভাগের একভাগ খাবার ও তিন ভাগের একভাগ পানি দিয়ে পূরণ হবে এবং বাকী এক ভাগ খালি রাখতে হবে শ্বাস নেয়ার জন্য। অনেকেই হয়ত ভাববেন, আমরা তো পাকস্থলী দিয়ে শ্বাস নেই না, তাহলে পাকসথলীর এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস নিতে সাহায্য করে কেমন করে ? উত্তরটা খুবই সহজ। পাকস্থলীর উপরে আছে ‘ডায়াফ্রাম’ নামের একটি বড় মাংসল পর্দা। আমরা যখন শ্বাস গ্রহণ করি, তখন ডায়াফ্রাম সংকুচিত হয়ে নিচের দিকে নেমে আসে এবং ফুসফুস স্ফীত হয়। খাদ্য দিয়ে পাকস্থলী পুর্ণ থাকলে শ্বাস গ্রহণের সময় নিশ্বাস-প্রশ্বাসের এই মূল পেশী – ডায়াফ্রাম সংকুচিত হয়ে নিচের দিকে নামতে পারেনা, ফুসফুস পর্যাপ্ত স্ফীত হয় না ও পরিমাণমত অক্সিজেন দেহে প্রবেশ করতে পারে না। তাই খাবার গ্রহণের ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) এর Golden theory of one third মেনে চলা আবশ্যক।

ইফতারে যা খাওয়া উচিত :

সারাদিন রোযা থাকার পর পাকস্থলীতে এমন কিছু খাবার দেয়া উচিৎ যা দ্রুত শরীরে শক্তি যোগায় ও বিভিন্ন ঘাটতি পূরণ করে। ইফতার হিসেবে সরল শর্করা উত্তম। কেননা এটি দ্রুত হজম হয় ও শক্তি যোগায়। দেহের শরীরবৃত্তীয় চাহিদা পূরনের জন্য কিছু Essential elements গ্রহণ করা জরুরী। যেমন- মস্তিষ্কের খাদ্য হল গ্লুকোজ । গ্লুকোজের অভাবে মস্তিষ্কের কাজ ব্যাহত হয়। সৃষ্টিকর্তা মস্তিষ্ককে এভাবে তৈরী করেছেন যে, ইন্সুলিনের সাহায্য ছাড়াই গ্লুকোজ মস্তিষ্ক কোষে ঢুকে যায়।

শরীরের আরেকটি গুরুত্বপূরণ অঙ্গ হল কিডনি, যা পানির অভাবে মারাত্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। ১২ ঘন্টায় ৩০০ মিলি র কম প্রস্রাব উৎপন্ন হলে kidney failure এর সম্ভবনা থাকে।
দেহের স্বাভাবিক কার্যকারিতার জন্য বিভিন্ন খনিজ উপাদান যেমন- সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি অত্যাবশ্যক। ইফতারে এমন সব খাবার খাওয়া উচিত যে খাবারে প্রয়োজনীয় পরিমান পানি, গ্লুকোজ ও খনিজ উপাদান থাকে। তাতে মস্তিষ্ক, কিডনি ও ত্বকের কার্যক্রম ঠিক থাকে।

আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ” যদি তোমাদের কেউ রোযা রাখে তাহলে সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। যদি সে তা না পায় তাহলে পানি দিয়ে। নিশ্চয়ই পানি হল পরিশোধক ( Purifiyer)।” [সূত্র-বুখারী ও বায়হাকী]

এদিক থেকে চিন্তা করলে পানি, শরবত ও ফলের রস ইফতার হিসেবে অতি উত্তম। খেজুরে আছে গ্লুকোজ ও নানা ধরনের খনিজ উপাদান। এতে রয়েছে সরল শর্করা যা দ্রুত শোষন হয় এবং মস্তিষ্ক ও দেহে শক্তি জোগায়। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও বিভিন্ন হৃদরোগ প্রতিরোধে খেজুরের অবদান অপরিসীম। হাড়ের সুস্থতা ও রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষেত্রেও।

 

সৌন্দর্য্য সচেতনতা নাকি স্বাস্থ্য

মিথিলা ফেরদৌস


জীবনে প্রথম বিউটি পার্লার গিয়েছিলাম, ডাক্তার হবার পর, আমার দুই কাজিনের সঙ্গে , যারা আমার হাঁটুর বয়সি, তাদের কাজে, আমার কাজে না।

সেই বয়সেই তারা সৌন্দর্য সচেতন। বাসার কাছেই পার্লার। গিয়ে অপেক্ষা করছি, সোফায় দুই বোন আমার দুই পাশে বসে, কিছুক্ষন পর আরও দুইটা মেয়ে ঢুকলো, আমাদের সামনের সোফায় বসলো। আমার দুইবোন সঙ্গে সঙ্গেই , আমার দুই পাশে দুই হাত ধরে টেনে পার্লার থেকে বের করে আনলো, বুঝলাম না কি হইছে। একজন বললো, পরে আসা ওই দুই মেয়ের মধ্যে একজন তাদের কাজের বুয়ার মেয়ে।

আমি একটু অবাক, তাতে কি? তাদের কথায় বুঝলাম শ্রেণী সচেতনতা। তারা ডিক্লেয়ার করলো, এই পার্লারে তারা জীবনেও আসবে না।

রংপুর শহরে এক রাস্তার দুই কিমি. এর মধ্যে ১৩ টা পার্লার আছে। মানুষ দিন দিন সৌন্দর্য সচেতন হচ্ছে। খারাপ না। চাকুরী সুবাদে অনেক রিমোট অঞ্চলে আমার পোস্টিং ছিলো, সেইসব জায়গায়ও বিউটি সেলুন দেখেছি অনেক।

আমার বাসার কাছে একটি পার্লারের নতুন একটি ব্রাঞ্চ খুলবে ব্যাপক প্রচার। মসজিদে পর্যন্ত লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে, জুম্মার নামাজের দিন আমার ছেলে হাতে করে লিফলেট আনলো, এছাড়া নেটে মোবাইলে প্রতিদিন ম্যাসেজ আসে।

একটু উৎসুক হইলাম। হইতেই পারি।মেয়ে তো। উদ্বোধনের দুইদিন পর গেলাম।১০% ছাড় চলতেছে। তিন তলায় পার্লার,শুধু পার্লারের জন্যে আলাদা লিফট। ভিতরে ঢুকেই আমার মাথা নষ্ট। এত্তো সুন্দর ইন্টিরিয়র ডিজাইন। সুন্দর সুন্দর মেয়েরা ঘুরছে চারিদিকে, সবাই দেখে সুন্দর হাসি দিচ্ছে, গুডমর্নিং ম্যাম,ওয়েলকাম, জটিল অবস্থা, কারে কি উত্তর দিবো।

যেখানে চাকরী করি সেখানে তো এইসবের কারবার নাই, তাই অভ্যস্ত ও নই। যাইহোক ঢুকার পর আমাকে একগাদা ফর্ম ফিল আপ করতে দেয়া হলো। এই একটা কাজ আমার বিষের মত লাগে, ফর্ম ফিল আপ। মনে হচ্ছে বিসিএস এর ফর্ম ফিল আপ করতেছি।ভাগ্য ভালো গোল্লা পুরন নাই। এককপি ছবিও দিতে হইলো। আটাস্টেড লাগে নাই।যথারীতি কাটাকুটি করে ফর্ম ফিল আপ করে দিলাম। একটা পয়েন্ট কার্ড দিলো।

এরপর বিশাল লাইনের পিছনে কাউন্টারে দাড়ালাম, আমার সামনে যারা, তারা বেশির ভাগ মধ্যবয়সি, অথবা কম বয়সি মেয়ে। বেশির ভাগ দেখলাম, ৫০০০ টাকা থেকে ২০০০০ টাকার কাজ, মনে মনে ভাবলাম, এরা কি সারাদিন এখানেই থাকবে?!

আমার পালা আসলো,
–কি করবেন ম্যাম??
কি করবো বুঝতে পারছিনা,বললাম
–চুল কাটাবো
মেনু বের করে দিলো, মেনু দেখে চুল কাটার নাম না পড়ে দাম দেখা শুরু করলাম ১২০০ টাকা থেকে শুরু, আমার মুখ দেখে ওরা বুঝেছে, বললো
–ম্যাম আপনি কি রেগুলার হ্যান্ডে(আনএক্সপার্ট হ্যান্ড)
কাটতে চান তাহলে খরচ একটু কম পড়বে।
— হুম।
সেই মেনুর ও দাম শুরু ৬৫০ টাকা দিয়ে।মনে মনে ভাবলাম, আমার চার টা চুল, আমার রেগুলার হ্যান্ড, জামাই কেটে দিতে পারবে।
বললাম
–চুল কাটবো না। ফেসিয়াল করবো।
ফেসিয়ালের লিস্ট বের করলো, কি কি সব নাম, আবার দাম দেখা শুরু করলাম, সবচেয়ে কম দাম ৩০০০টাকা। বললাম
–আর কিছু নাই?
–ম্যাম এইটা স্পা,রেগুলারে কম খরচ পড়বে।
ওরা আমারে বুঝে গেছে। বললাম দেখি।আবার মেনুতে নাম না দেখে দাম দেখা শুরু করলাম, সবচেয়ে কম দাম ৯৫০ টাকা, নাম টাও চেনা। অরেঞ্জ ফেসিয়াল।কি আর করা। কাউন্টারে বিল দিয়ে স্লিপ নিয়ে অপেক্ষার পালা। তখন পুরাটা খুটে খুটে দেখা শুরু করলাম।

চারিদেকে সুরুচির চিহ্ন। একটা দেয়ালে দুই প্বার্শে গ্লাসের মধ্যে ফোয়ারা, সুন্দর লাইটিং তার মধ্যে, চারিদিকে দেয়ালে সুন্দর সুন্দর ছবি ঝুলানো, প্রতিটা কর্নারে দামী দামী ক্রিস্টালের শো পিস। এমন কি ওয়েটিং কর্নার গুলো এতো সুন্দর সুন্দর চেয়ার। কোথাও ইংলিশ গান, কোথাও হিন্দি গান, কোথাও শুধু মিউজিক। ক্লিনার রা পরিষ্কার করে যাচ্ছে, কিছুক্ষন পর পর পারসোনা লোগো এর কাপে চা দিয়ে যাচ্ছে। একগাদা পত্রিকা। এর মধ্যে মাইকে আমার নাম শুনে চমকে উঠলাম, যাইহোক আমার পালা।গেলাম,সেখানে আমাকে একেবারে নতুন একটা ড্রেস দেয়া হলো।

আমি তীব্র ভাবে বললাম,আমি অন্য ড্রেস পরতে পারবোনা,আমার শুধু মুখ পরিষ্কার করে দেয়া হোক।যাই হোক ফেসিয়াল শুরু।আমার মত একটা রেস্টলেস মেয়ের জন্যে যা বিভিষিকা।চোখ বন্ধ করে থাকা। আমি বার বার বলছিলাম,
–কখন শেষ হবে?
বাসায় আসার পর আমার জামাই অফিস থেকে এসে বলে
—তোমাকে এত কালো লাগতেছে কেনো? কি হইছে?তোমার না আজ পার্লার যাবার কথা!!
—গেছিলামতো।
—-তাহলে এই অবস্থা কেন?
—–তোমার কি ধারণা,পার্লার গেলে একদিনে বাজিগরের কাজল,কাভি খুশি কাভি গমের কাজল হয়ে যায়?অসহ্য।

আমার ছেলে যে সেলুনে চুল কাটে,ঢাকা শহরে,সব বড় মার্কেটে তার ব্রাঞ্চ আছে।কয়দিন পর পর দাম বাড়ায়,আর আমার জামাই বলে আর জীবনেও আসবোনা।কিন্তু ছেলে জিদের কাছে পরাজিত বাবা বার বার যেতে হয়।কারণ সেখানে গাড়ীতে বসে চুল, কাটতে কাটতে কার্টুন দেখে, চুল কাটার পর খেলনা পাওয়া যায়।

আমার আজকে লেখা মুল উদ্দেশ্য,মানুষ দিনে দিনে যতটা সৌন্দর্য সচেতন হচ্ছে, ততটা স্বাস্থ্য সচেতন হতো যদি। একজন ডাক্তারকে ৫০০ টাকা ভিজিট দিতে তাদের যে কষ্ট, অবলীলায় পার্লারে হাজার হাজার টাকা দিতে তাদের তেমন কোনো কষ্টই হয়না। অথচ এইসব পার্লার থেকে কত কত স্কিন ডিজিস এনে ডাক্তারদের ৫০০ টাকা দিতে তাদের এত পরান কান্দে কেনো?

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ
______________________________
মিথিলা ফেরদৌস

 

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে (শেষ পর্ব)

আফরোজা হাসান


বেশ কয়েকমাস আগে একজন ব্যক্তির কিছু কথা ও কাজের কারণে তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধে চিড় ধরে গিয়েছিল। প্রফ বোঝাতে চেষ্টা করছিলেন কারো একটা বা দুটা ভুল আচরণের জন্য তার উপর নেতিবাচকতার সাইনবোর্ডই লাগিয়ে দেয়াটা অন্যায়। কেউ ভুল ত্রুটির উর্দ্ধে নয় এটা সবসময় মনে রাখা উচিত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা যাদেরকে পছন্দ করি তাদেরকে মনের সর্বোচ্চ স্থানে জায়গা দিয়ে ফেলি। তাই তাদের সামান্য চ্যুতিও আমাদেরকে মুষড়ে দেয়। আর চ্যুতি যখন ক্রমাগত হতে থাকে তখন শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। অবশ্য শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরও সচেতন থাকা অবশ্যক। কেননা একটা আচরণের দ্বারা যদি আমি কারো মনে শ্রদ্ধার বীজ বপন করি। তখন সেই বীজটা যাতে অক্ষত থাকতে পারে, বীজ থেকে চারা বের হতে পারে, চারা গাছে রূপান্তরিত হতে পারে সেই দায়িত্বটাও আমারই পালন উচিত। সবসময় শুনেছি শ্রদ্ধা অর্জন করার চেয়ে টিকিয়ে রাখাটাই বেশি কঠিন। প্রফের কাছ থেকে জেনেছিলাম নিজ আচরণ দ্বারা কারো মনে যদি শ্রদ্ধার জন্ম দেই তাহলে সেটাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্বও আমারই।

এমন ছোট-বড় আরো কতই কিছুই না শিখিয়ে গিয়েছেন উনি আমাদেরকে। যা যা মনে পড়েছে এক এক করে সব লিখে মেইল পাঠিয়ে দিয়েছি প্রফকে। জানি সেই মেইল উনি হয়তো দেখবেন না কোনদিন। তবুও আমি এমনটা করেছি নিজের মনের স্বস্থির জন্য। কেননা মনে স্বস্থি না থাকলে জীবনে সব থাকতেও কোথাও শান্তি মিলে না এটা আমার খুব ভালো মতই জানা আছে। তাই সদা সতর্ক থাকতে চেষ্টা করি যাতে কিছুতেই মনের স্বস্থি বিঘ্নিত না হয়। কিন্তু সবসময় পারিনা। প্রফ যেহেতু আমার কলিগও ছিলেন এমন বেশ কয়েকবার হয়েছে উনার উপর রেগে গিয়েছি, যা বলেছেন তার উল্টো বলেছি, আমার যুক্তির সাথে মেলেনি তাই কেয়ার করিনি উনার কথা। সব বার হয়তো তেমন করে সরি বলাও হয়নি। গত তিন-চার মাস থেকে খুব কথা বলতে চাইতেন আমার সাথে। আমারো নানান ঝামেলা যাচ্ছে তাই নিজে তো ফোন দিতামই না উনি করলেও তেমন করে কথা বলা হয়ে ওঠেনি যেমনটা করে উনি বলতে চাইতেন।

আজ এসব স্মৃতি মনেকরে অপরাধবোধে ভোগা, দুঃখিত হওয়া আসলে অর্থহীন। কেননা আমার কোন অনুভূতিই উনার কাছে পৌছোবে না। কথায় বলে জীবনে সুযোগ, সম্ভাবনা একবারই আসে। হেলায় হারিয়ে ফেললে তাকে আর পাওয়া যায় না জীবনে। কিন্তু আপনজন, প্রিয়জন, পছন্দের মানুষদের ঘিরে স্মৃতিগুলোকে সুন্দর করার সুযোগ বার বার আসে, আর আসতেই থাকে আমাদের জীবনে। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই আমরা সেই সুযোগকে কাজে লাগানো তো দূরে থাক, সেটা যে একটা সুযোগ এটাই অনুভব করতে পারি না।

সমস্ত অনুভব, উপলব্ধি একসাথে মনে এসে ভিড় করে যখন সেই মানুষগুলো আমাদেরকে ছেড়ে চলে যায় অনেক দূরে। অথচ এই মানুষগুলোই জীবন যখন তপ্ত দাহ নিয়ে হাজির হয়, এরা হয় প্রশান্তিকর ঘন ছায়া! পিপাসাক্ত পথিকের মত মন এদের মাঝে খুঁজে পায় মিঠা পানির সরোবর! হতাশার ঘোর অমানিশায় এরাই জ্বালিয়ে যায় আশার প্রদ্বীপ! অসহায়ত্বের প্রহরগুলোতে জাগায় নির্ভরতার আশ্বাস। পথহারা মুহুর্তেকে আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দেয় গন্তব্যের দিশা!

ভালোবাসার রেণু ঝরিয়ে যায় এরা শব্দে শব্দে! ধূসর গোধূলি বেলা এদের ছোঁয়ায় পরিণত হয় মাহেন্দ্র ক্ষণে! ধূ ধূ মুরুভূমিকে মনেহয় চন্দ্রালো ছড়ানো শালবন! মেঘলা আকাশকে করে দেয় রোদেলা দুপুর। এরা সবসময়ই অবস্থান করে মনের অনুভূতির বিপরীতে।

যাতে জীবন বীণা যখন বেদনার ঝঙ্কার তোলে ছড়িয়ে দিতে পারে আনন্দের বাণী। এরা আসলে ঠিক কেমন সেটা প্রকাশ যোগ্য না। তবে যারাই জীবনে এমন কারো সন্ধান পায়, আল্লাহর রহমা স্বরূপই পায়। সবসময় যে পরিবারের সদস্যই হয় এমন মানুষগুলো এমনটা ঠিক না।

রক্তের বন্ধনের বাইরেও কেউ হয়ে উঠতে পারে আপনার আপন। বন্ধন রক্তের হোক কিংবা মনের এটা আসলে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বন্ধনের হক আদায় করা, তাদের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি দেয়া। যাতে তারা জীবন থেকে অতীত হয়ে গেলে মনের কোণে ভিড় জমাতে না পারে তাদের প্রতি আমাদের দ্বারা সংঘটিত অভিমান, অবহেলা, অনুযোগ, অভিযোগ…।

এমন মানুষ গুলো আসলে আমাদেরকে জীবনকে চিনতে, জানতে ও বুঝতে শেখায়! যাদের কথা এই উপলব্ধি জাগায় যে জীবন যদি নিস্তব্ধতার আঁধারে ঢেকে যায়, তবুও সেটা আমাদের জন্য আল্লাহর দেয়া আমানত। দুঃখের অমানিশায় তাই জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে না নিয়ে হাত বাড়িয়ে তাকে কাছে টেনে নিতে হবে।

আগাছায় ছেয়ে গিয়েছে বলে ত্যাগ না করে মমতার চোখে তাকাতে হবে জীবনের দিকে। তাহলেই চোখে পড়বে আগাছার ফাঁকে ফাঁকে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়া ঘাসফুলদের। এই প্রিয় মানুষগুলো যদি কখনো হারিয়ে যায়, তবুও সবসময় বেঁচে থাকে মন মাঝারে। কেননা উৎসাহ-প্রেরণা-স্নেহ-মায়া-মমতা-আদর-শাসন ও ভালোবাসার আদলে এরাই গড়ে দিয়ে যায় জীবনের ভিত্তি। হারিয়ে গিয়েও তাই এরা বেঁচে থাকে যাপিত জীবনের প্রতিটি কথা, কাজ ও দর্শনে।

 

চট্টগ্রামে নবম শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যা

নারী সংবাদ


নবম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী তাসফিয়া আমিন বয়স ১৬ বছর। চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত ইংলিশ মিডিয়াম ছাত্রী। বন্ধুর আদনান মির্জার সাথে সৈকতে বেড়াতে গিয়ে লাশ হলেন। পুলিশের ধারণা, ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ সৈকতে ফেলে দেয়া হয়।

গতকাল (বুধবার) নগরীর পতেঙ্গা থানার নেভাল বিচ এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে চোখ, নাক-মুখ থেঁতলে যাওয়া ওই স্কুল ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বেলা ১১টায় স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে নেভাল একাডেমির ১৮ নম্বর ঘাট এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

তাসফিয়া আমিন নগরীর নাসিরাবাদ ইংলিশ মিডিয়াম সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার পিতার নাম মোঃ আমিন। তাদের বাসা নগরীর ও আর নিজাম রোড আবাসিক এলাকায়। তাদের বাড়ি কক্সবাজার শহরের ডেইলপাড়া এলাকায়। লাশটি অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধারের পর দুপুরে তার বাবা আমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।

পরিবারের বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পতেঙ্গা থানার এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে আদনান মির্জা নামে এক বন্ধুর সঙ্গে তাসফিয়া বেড়াতে বের হন। দুজন কিশোর কিশোরী। তারা দুইজনেই ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সানশাইন এ পরেছে। সেখানেই তাদের পরিচয়। আর সম্পর্ক ১ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ঘুরতে বের হয়। এরপর রাতে আর বাসায় ফেরেনি। আদনান মির্জার সন্ধানে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। পুলিশ জানায়, ফেইসবুকের মাধ্যমে ওই যুবকের সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে দুইজন।

পতেঙ্গা থানার পরিদর্শক ফৌজুল বলেন, পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ফেইসবুকে পরিচয়ের পর আদনান মির্জা নামে এক যুবকের সঙ্গে এক বছর আগে থেকে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তাসফিয়া। আদনানের সঙ্গেই তাসফিয়া পতেঙ্গা সৈকতে এসেছিল বলে পরিবারের ধারণা। আদনানকে আমরা আটকের চেষ্টা করছি। তার ধারণা, তাসফিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ নদীর তীরে ফেলা হয়েছে।

ফৌজুল আজিম চৌধুরী জানান, তার দুই চোখ, নাক ও মুখ থ্যাঁতলানো ও রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। মুখে ফেনা ও রক্ত আছে। তার পরনে ছিল সালোয়ার কামিজ। স্থানীয়রা দেখে তাকে প্রথমে বিদেশি বলে ধারণা করে। নদীর তীরের উঁচু স্থান থেকে আনুমানিক ৮-১০ ফুট নিচে পাথরের ওপর লাশটি পড়ে ছিল। তার ধারণা আগের রাতের যেকোন সময় তাকে খুন করে লাশ সেখানে ফেলে যাওয়া হয়েছে।

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসলে এসব বিষয় নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তিনি। সুত্র: ইন্টারনেট এবং ফেসবুক।

 

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে……১ম পর্ব

আফরোজা হাসান


“আমাদের জীবনের সবচেয়ে অবধারিত ঘটনা হচ্ছে মৃত্যু। তাই একটি মুহুর্তকেও এলোমেলো, অগোছালো, উদ্দেশ্যহীন ভাবে কাটানোর কোন সুযোগ নেই। তাই কোন ভাবনা যদি স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বিঘ্নিত করে তবে সেটা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। কেননা কোন কিছুর বিনিময় জীবনের স্বাভাবিকত্বের সাথে হতে পারে না।” কথাটি আমাদের নিউরো সাইকোলজির প্রফ বলেছিলেন আমাদের এক ক্লাসমেটকে। ক্লাসমেটটি তার পারিবারিক কিছু জটিলতার ভাবনাতে এতোই এলোমেলো হয়ে পড়েছিল যে তার প্রভাব পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলো। প্রফের কথাটি শোনার পর শুধু সেই ক্লাসমেটই নয় আমরা সবাই’ই সতর্ক হয়েছিলাম আমাদের সেইসব ভাবনার ব্যাপারে যা অকারণ জটিলতার বীজ বুনে চলছিল আমাদের জীবনে।

আমার সবচেয়ে প্রিয় টিচারদের একজন ছিলেন উনি। শুধু তাই নয় যাদেরকে দেখে শিখেছিলাম জীবনকে জীবনের মত করে যাপন করতে, যাদের কাছে জেনেছিলাম জীবনে সুখী হবার সবচেয়ে শর্টকার্ট ও ফলপ্রসূ টিপস হচ্ছে,সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করা উনি তাদেরও একজন ছিলেন। কিছু মানুষ বুঝিয়েছিলেন জীবনে মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যার উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সেসব ঘটনার জন্য কাউকে দায়ী না করে নিয়তি লিখন হিসেবে তার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়াতেই কল্যাণ নিহিত থাকে।কেননা তাহলেই কেবল মানুষ সবকিছুকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারে। সহজ ভাবে গ্রহণ করতে পারে জীবনের প্রতিটা চড়াই-উৎরাইকে। উনাদেরকে দেখেই উপলব্ধি করেছিলাম নিজের সমস্যা ও কষ্টকে কখনোই বড় করে দেখা ঠিক নয়। আর সেজন্য সবসময় মনে রাখতে হবে যা ঘটার কথা ছিল তাইঘটেছে, আর যা ঘটেছে তার মধ্যেই নিহিত আছে কল্যাণ।

বাবা সেই ছোটবেলা থেকেই বার বার বলতেন, ´´কখন যে জীবন বৃক্ষ থেকে হঠাৎ কে ঝরে যাবে সেটা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। তাই আপনজন, প্রিয়জন, পছন্দের মানুষদেরকে কখনোই যথাযথ মূল্যায়ন করতে অবহেলা করবে না। ´´ কিন্তু তারপরও অবহেলা যে হয়েই যায় সেটা আবারো অনুভব করলাম আমাদের নিউরো সাইকোলজির প্রফের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর। মনের পর্দায় ভেসে এসেছিল ‘খুব ইচ্ছে করছে তোমার হাতের মাটন বিরিয়ানি, চিকেন তান্দুরী আর গাজরের লাড্ডু খেতে’। শেষ যেদিন কথা হয়েছিল আমার হাতের খাবার খেতে ইচ্ছে করছে এই আবদার করেছিলেন প্রফ। একবার কোলকাতায় গিয়ে “যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন…” এই রবীন্দ্র সঙ্গীতটি শুনেছিলেন প্রফ। ফিরে এসে ক্লাসে জানতে চাইলে অর্থ বুঝিয়ে বলার পর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেছিলেন, আচ্ছা ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’ তোমরা কি আমাকে মনে রাখবে? তোমরা আমাকে মনে রাখতে পারো এমন কিছু তোমাদেরকে শেখাতে পেরেছি? এরপর থেকে প্রতি ক্লাসের পরই উনি আমাদের সবার কাছ থেকে বিদায় নেবার সময় জানতে চাইতেই, আমাকে তোমরা মনে রাখবে এমন কিছু আজ শেখাতে পেরেছি?!

আমরা কখনোই খুব একটা সিরিয়াসলি নেইনি প্রফের প্রশ্নটিকে। বেশির ভাগ সময়ই হেসে উড়িয়ে দিয়েছি। উনার মৃত্যু সংবাদ শোনার পর প্রথমেই কানে বেজে উঠেছিল ‘খুব ইচ্ছে করছে তোমার হাতের মাটন বিরিয়ানি, চিকেন তান্দুরী আর গাজরের লাড্ডু খেতে’। চোখ থেকে ঝরঝর অশ্রু নেমে এসেছিল। এমনটা আমার দ্বারা কখনোই হয় না সাধারণত। কেউ কিছু খেতে চাইলে শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমি তাকে সেটা রান্না করে খাওয়াতে চেষ্টা করি। জানি না কেন প্রফের ক্ষেত্রে ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে আজ করবো কাল করবো করে করে শেষপর্যন্ত আর উনার জন্য রান্না করাই হলো না। ‘আমাকে তোমরা মনে রাখবে এমন কিছু আজ শেখাতে পেরেছি’? এই প্রশ্নটার কথা মনে পড়ার পর বেদনার আরেকটি তীব্র স্রোত বয়ে গিয়েছিল অন্তর জুড়ে। কেন এই ছোট ও সহজ প্রশ্নটির জবাব নিয়ে এত হেয়ালি করেছিলাম? বেদনার সাথে যুক্ত হয়েছিল অপরাধবোধও।

অবুঝের মতো ছুটে গিয়েছিলাম রান্নাঘরে। মাটন বিরিয়ানি, চিকেন তান্দুরী, গাজরের লাড্ডুর সাথে চমচম আর বোরহানিও তৈরি করলাম। প্রফ আমার হাতের চমচম আর বোরহানিও অনেক পছন্দ করতেন। রান্না শেষ করে মেইল লিখতে বসলাম। কত কিছু শিখেছি গত বারো বছরে প্রফের কাছে। এক এক করে সব লিখলাম। প্রফকে দেখে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটা শিখেছিলাম সেটা হচ্ছে মানুষের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা রাখা। দীর্ঘ এত বছরে এমন একবারও হয়নি উনি কারো ব্যাপারে সামান্য নেতিবাচক কিছু বলেছেন। কিংবা উনার কাছে কেউ কারো সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু বলতে চাইলে সেটাকে প্রশয় দিয়েছেন। আমাদের এক ক্লাসমেট যখন বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির সবার সম্পর্কে ওর নেতিবাচক ধারণার কথা বলছিল প্রফ বলেছিলেন, সারাজীবন যাদের সাথে কাটাতে হবে তাদের ব্যাপারে এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক নয়।

 

মে দিবসে শ্রমজীবি নারী

অপরাজিতা ডেক্স


মে দিবস, ‘শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই সোনার বাংলা গড়তে চাই।’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ২০১৮ সালের মে দিবস পালিত হচ্ছে। শোষণ, বঞ্চনা আর অক্লান্ত পরিশ্রম থেকে মুক্তির দাবীতে ১৮৮৬ সালের এই দিনে রক্ত ঝরিয়ে ছিলেন শ্রমিকরা।

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও রাষ্ট্রীয়ভাবে মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।

শ্রমজীবী নারী

বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই নারী শিক্ষা আনুপাতিক হারে কম আমাদের দেশে। ফলে নারীর স্বীকৃতি মিলছে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই শ্রমজীবী হিসেবে। বর্তমান সময়ে চায়ের দোকান, দিনমজুর থেকে সব ধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নারী শ্রমিকদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা যায়।

কি কি কাজে নিয়োজিত

নারী শ্রমিকরা মুলত নানানমুখী কাজ করছে।
১.গৃহকর্মী হিসেবে।
২.গার্মেন্টস শিল্পে নারী শ্রমিকদের বিশাল ভূমিকা। গার্মেন্টসে কাজ করা শ্রমিকদের শতকরা ৮০/৯০% ভাগই নারী। ৩.কৃষিকাজেও অংশগ্রহণ।
৪. ইটভাটায়ও কাজ ।
সর্বস্তরেই কোন কাজেই নারীরা পিছিয়ে নেই। নারী শ্রমিকদের প্রতি সম আচরণ ও সমান সুযোগের ঘোষণা গৃহীত হলেও নারী শ্রমিকরা কার্যত সেই সুবিধা ভোগ করতে পারেন না।

শ্রমজীবী নারীদের বেতন বৈষম্য

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের যৌথ এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, “নারীর জন্য অর্থনৈতিক ন্যায্যতা’ থেকে জানা যায়, শতকরা ৬১ জন নারী শ্রমিক দৈনিক ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকেন এবং শতকরা ৩২ জন দৈনিক ১০০ টাকার কম মজুরি পান”। অন্যদিকে, শতকরা ৫৬ জন পুরুষ শ্রমিক ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান।

শ্রমজীবি নারীদের আইনগত সচেতনতা

মূলত চারটি আইন সম্পর্কে শ্রমজীবী নারীদের প্রাথমিক ধারণা থাকা দরকার। এগুলো হলো :
১. মুসলিম পারিবারিক আইন
২. নাগরিক অধিকার রক্ষা আইন।
এর দু’টো ধারা রয়েছে :
ক. সাংবিধানিক ও খ. ফৌজদারি আইন
৩. মুসলিম উত্তরাধিকার আইন এবং
৪. ভূমি আইন।
একজনকে শ্রমজীবিকে লিখিত সহায়িকা, ছবি সম্বলিত চার্ট, ক্লাস নোট প্রভৃতির মাধ্যমে সহজভাবে ক্লাসে করে করে বিভিন্ন আইনের ধারাগুলো বুঝিয়ে দেওয়া উচিত।

শ্রমজীবি নারী বা সাধারণ সকলের প্রতি সংবেদনশীল আইনও নারীদেরকে আশ্রয় দিতে হবে, ছায়া দিতে হবে, রক্ষা করতে হবে কিন্তু আদৌ কি পারছে এই সমাজ? মুলত সমাজে পুরুষ এবং নারীর অবস্থা ও অবস্থান যে সম পর্যায়ের নয় এবং তার নাম ঠিকানা পত্রিকায় প্রকাশ যে তার জন্য আজীবন অভিশাপ বয়ে আনে এ বোধ সাংবাদিকদেরকেও ভাবতে হবে। জাতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এসব নারী শ্রমিকদের অবদান অনেক।

 

নবজাতকের যত্ন

ডা. মারুফ রায়হান খান


সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু! এই সারা ধরায় এর চেয়ে সৌন্দর্যময় আর আকর্ষণীয় বুঝি আর কিছু নেই। নবজাতকের প্রতি আমরা সবাই খুব বেশি যত্নবান হতে চাই, কিন্তু আমরা ঠিকঠাক জানি তো কী কী বিষয় এক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত? কোনো বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি হয়ে যাচ্ছে না তো? কয়েকটা কথা আমাদের একেবারে সবারই মনে রাখা উচিত। আর সদ্য/ হবু মা-বাবা হলে তো কথাই নেই!

সুস্থ নবজাতক বলতে আমরা কী বুঝি আসলে?

  • মায়ের গর্ভ থেকে যদি ৩৭-৪২ সপ্তাহের মধ্যে ভূমিষ্ঠ হয়, এর আগে বা পরে না।
  • জন্মের সময় ওজন যদি ২.৫-৪ কেজি হয়।
  • জন্মের পরপরই যদি স্বাভাবিক কান্নাকাটি করে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়। স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসের হার প্রতি মিনিটে ৩০-৬০ বার।
  • কান্না করার সাথে সাথে বাচ্চার রঙ গোলাপী বর্ণ ধারণ করবে।
  • বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে।
  • কোনো জন্মগত ত্রুটি থাকবে না।

বাচ্চার খাওয়া-দাওয়া 

জন্ম হবার আধাঘণ্টার মধ্যেই বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে। বাচ্চাকে প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্রই বুকের দুধ খাওয়ান। এটা আল্লাহ প্রদত্ত এক আশ্চর্য রকমের বিশেষ নিয়ামত। বাচ্চাকে এই নিয়ামত থেকে বঞ্চিত করবেন না। আপনার বাচ্চাকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ালে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া আর কান পাকা রোগ থেকে রক্ষা পাবেন। বাচ্চা হবে অনেক অনেক বেশি বুদ্ধিমান।

বুকের দুধ কতো বার খাওয়াতে হবে 

বাচ্চাকে আসলে ডিমাণ্ড ফিডিং করাতে হয়। অর্থাৎ বাচ্চা কাঁদলেই খাওয়াতে হবে। রাতের বেলাতেও খাওয়াতে হবে। নিদেনপক্ষে বাচ্চাকে ৮ বার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

নবজাতকের প্রস্রাব -পায়খানা

মায়েদের এবং সেই সাথে বাচ্চার নানী-দাদীদের খুব কমন অভিযোগ বাচ্চা দুধ পায় না। যদি দেখা যায় যে বাচ্চা ২৪ ঘণ্টায় ৬ বার প্রস্রাব করে, তাহলে ধরে নিতে হবে সে পর্যাপ্ত খাচ্ছে। আর যেসব বাচ্চারা বুকের দুধ খাচ্ছে, তারা দিনে ১০-১৫ বার পায়খানা করতে পারে, এতে ভয়ের কিছু নেই।

বাচ্চার ডায়াপার 

একবার প্রস্রাব/পায়খানা করা মাত্রই ডায়াপার বদলে ফেলতে হবে। আমাদের দেশের মায়েরা দেখা যায় ওজন করতে থাকেন যে কখন ডায়াপারটা ভারী হয়। দেখা যাচ্ছে বাচ্চা দীর্ঘ সময় পায়খানা/প্রস্রাবের মধ্যেই আছে, যা খুব অস্বস্তিকর বাচ্চার জন্যে।

নবজাতকের গোসল 

গোসলটা ২-৩ দিন পর দিলে সবচেয়ে ভালো হয়। জন্মের সাথে সাথে গোসল করালে নিউমোনিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে। ২-৩ দিন পর থেকে প্রতিদিনই গোসল করাবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে হালকা গরম পানিতে বাচ্চাকে গোসল করিয়ে ফেলতে হবে। প্রথমে মাথাটা ধোবে, তারপর মাথা মুছে ফেলবে। তারপর শরীরে পানি দিয়ে গোসল সম্পন্ন করবে। পানিতে কোনো জীবাণুনাশক মেশানোর দরকার নেই।

ঋতুভেদে বিশেষ খেয়াল 

শীতকালে একটু বেশি কাপড় চোপড় দিয়ে বাচ্চাকে ঢেকে রাখতে হবে। মাথায় ক্যাপ, হাতে-পায়ে মোজা পরাতে হবে। বাচ্চা যেন ঠাণ্ডা না হয়, এটা খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি বাচ্চা যেন ঘেমে না যায় সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।

দুটো অনুরোধ 

দাদী-নানীদের উদ্দেশ্যে একটা কথা! বাচ্চা একটু কান্নাকাটি করলেই মা-কে ফিডার/কৌটার দুধ দেওয়ার জন্যে জোর করবেন না।

সিনিয়রদের প্রতি অনুরোধ! বাচ্চা বুকের দুধ খেলে বারবার পায়খানা করতেই পারে। এ কারণে বুকের দুধ বন্ধ করে আপনারা কৌটোর দুধ লিখবেন না কাইন্ডলি।

ডা. মারুফ রায়হান খান
প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ