All posts by Oporajita

 

৩৯ স্ত্রী, ৯৪ সন্তান ও ৩৩ নাতি-নাতনী নিয়ে একত্রে থাকেন তিনি

৩৯ স্ত্রী, ৯৪ সন্তান ও ৩৩ নাতি-নাতনী নিয়ে একত্রে থাকেন তিনি


অন্যান্য সংবাদ


ভারতের মিজোরামের এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জিওনা। ১৯৪৫ সালে যখন তার মাত্র ১৭ বছর বয়স, তখন প্রথমবার বিয়ে হয় তার। তবে একটা বিয়ে করেই তিনি সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি। এরপর বহুবার বিয়ে হয়েছে তার। এইভাবে মোট ৩৯ জন নারীকে বিয়ে করেন তিনি।

বিশ্বে এত জন স্ত্রী কারোর নেই। এক বছরে তিনি ১০টি বিয়ে করে রেকর্ড গড়েছেন। প্রত্যেক স্ত্রী এখনো তার সঙ্গেই থাকেন।

গত ১৩ মার্চ লন্ডন ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়, তাতে জানা যায়, পৃথিবীর সবথেকে বড় পরিবারের প্রধান হলেন জিওনা চানা । তার ৩৯ জন স্ত্রী, ৯৪ জন সন্তান, ১৪ জন পুত্রবধূ এবং ৩৩ জন নাতি-নাতনি রয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, জিওনার বাড়িটি তার সংসারের মতোই বিশাল বড়। তার বাড়িতে ১০০টি ঘর আছে সেখানে তিনি সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে থাকেন। তার ঘরের পাশাপাশি তার স্ত্রীদের ঘর। বিয়ের দিন অনুযায়ী তারা দূরে বা কাছে থাকে। অর্থাৎ যাকে শেষে বিয়ে করেছেন তিনি থাকেন সবথেকে কাছে আবার যাকে প্রথমে বিয়ে করেছেন, তিনি থাকেন সব থেকে দূরে । তবে সবার জিওনার ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি আছে।

জিওনার বাড়িতে তার সব ছেলেরাই নিজেদের স্ত্রী নিয়ে থাকেন। তার পরিবারে সবার আলাদা ঘর থাকলেও রান্নাঘর কিন্তু একটাই। অর্থাৎ ওই পরিবারের রান্না একসঙ্গেই হয়। খাবার জন্য তাদের প্রতিদিন ১০০ কেজি চাল আর ৭০ কেজির বেশি আলু রান্না হয়। আর মাংস রান্না হলে তো কথাই নেই। মোটামুটি ৬০ কেজি আলু এবং ৪০টি মুরগি লাগে গোটা পরিবারের। জিওনার ছেলেরা সবাই চাষের কাজ আর পশু পালন করে থাকেন ৷

পৃথিবীর সব থেকে বড় পরিবারের প্রধান হয়েও জিওনা এখানে থামতে চান না। বিশ্বের সবথেকে বড় পরিবারের কর্তা হয়ে তিনি গর্বিত। তিনি আরও বাড়াতে চান তার পরিবার। এদিকে পরিবারের ছোট ছোট সদস্যদের জন্যও তিনি স্কুল বানিয়েছেন সেখানে তার ছেলেমেয়ে এবং নাতি-নাতনিরা পড়াশোনা করেছে এবং করছে স্কুলটি সরকারের কিছু অনুদান পায়। আগেকার দিনের রাজা বাদশাদের মত জিওনাও তার এতগুলি স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি নিয়ে সুখে-শান্তিতে একসঙ্গে বাস করছেন।

সুত্রঃ নিউজ১৮

 

দেশে গর্ভবতী মায়েদের এক-চতুর্থাংশ ডায়াবেটিক রোগী

দেশে গর্ভবতী মায়েদের এক-চতুর্থাংশ ডায়াবেটিক রোগী


স্বাস্থ্যকথা


পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী সুমাইয়া দ্বিতীয়বারের মত সন্তান-সম্ভবা। সন্তান ধারণের সাতাশ সপ্তাহের সময় জানা গেল তার ডায়াবেটিক। এ কথা শুনেই স্বামী আনসার আর সুমাইয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সেই থেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একেবারে নিয়ম মাফিক চলার পর নির্দিষ্ট সময়ে এক কন্যা সন্তান হয় তার। প্রসবের সময়ও বেশকিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দেয় সুমাইয়ার। ডায়াবেটিক বেড়ে যায়। তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। পরে ডাক্তারদের জোর চেষ্টায় মা-মেয়ে দু’জনই সুস্থভাবে বাড়ি যায়।
কিন্তু সুমাইয়ার মত অন্য সবার শারীরিক অবস্থা একই না। এই যেমন রাবেয়া বেগম। তেত্রিশ বছর বয়সী রাবেয়া প্রথমবারের মত মা হতে চলেছেন। কনসিভের ছয় সপ্তাহের মধ্যে জানা যায় যে রাবেয়ার ডায়াবেটিক। তারপরও দুই সপ্তাহ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই শারীরিক অবস্থার অবনতির কারনে দ্রুত তাকে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পরপরই এবরশন করাতে হয়।
সূত্র মতে দেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি। অধিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আরও এক কোটি। গর্ভবতী মায়েদের প্রতি চার জনের একজনই ডায়াবেটিক রোগী।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হসপাতালের এন্ড্রোক্রিনিউলোজী বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. ইমতিয়াজ মাহবুব বলেন, বিশৃঙ্খল এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন ডায়াবেটিস রোগের প্রধান কারন। এ বিষয়ে সরকারী এবং বেসরকারীভাবে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরী করতে হতে হবে যাতে করে এই নিরব ঘাতক মরণ ব্যাধি শরীরে বাসা বাঁধতে না পারে।
তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষকেই বিশেষ করে শিশুকাল থেকে স্বাস্থ্যসম্মত এবং পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। আর এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বাবা-মা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে যাতে নতুন প্রজন্ম এ বিষয়ে জানতে পারে। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই এ রোগ সম্পর্কে সচেতন নয়। তাই জন সচেতনতা তৈরী করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সোহেলুর রহমান বলেন, ডায়াবেটিসের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ করতে ও রোগীদের দীর্ঘস্থায়ী ঝুঁকি কমাতে ডায়াবেটিস শিক্ষার কার্যক্রমের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। এই শিক্ষা কার্যক্রম চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমকে আরও বেগবান করবে। ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী ও সর্বঘাতী রোগকে মোকাবেলা করতে রোগীদেরকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা অবশ্যই দিতে হবে। যাদের এখনও ডায়াবেটিস হয়নি তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষাদান, সঠিক, আর্দশিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকেই রক্ষা করা সম্ভব। এটাই হতে পারে রোগ প্রতিরোধের সর্বোত্তম পদ্বতি।
এত বিশাল সংখ্যক রোগীর যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা শুধুমাত্র সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য জনগণকে আরো সচেতন হতে হবে।
গত ১২ অক্টোবর ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ‘ডায়াবেটিক প্যাশেন্ট এডুকেশন’ শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগের ১ নম্বর ভবনের ৫ম তলায় ৫০৯নং কক্ষে এ ডায়াবেটিক রোগী ও রোগীদের পরিবারের সদস্যদের জন্য এ শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
সপ্তাহের প্রতি শনিবার ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত এই শিক্ষা কার্যক্রম চলবে। আগামীতে সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে ১ পর্যন্ত এই সেবা দেয়া হবে। ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগের (এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ) উদ্যোগে কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

সুত্রঃ বাসস।

 

‘শতরঞ্জিতে রঙিন কুড়িগ্রামের নারীরা’

‘শতরঞ্জিতে রঙিন কুড়িগ্রামের নারীরা’


ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা


কেউ ব্যস্ত শতরঞ্জি তৈরিতে, কেউবা আবার হাত পাখা। অনেকেই সেলাই করছেন কুশন। এমন দৃশ্য উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। যেখানে গৃহকর্ম শেষে অবসর সময় এসব হাতের কাজ করে পরিবারের খরচে অবদান রাখছেন নারীরা। আবার অনেকেই হয়েছেন স্বাবলম্বী। পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কাজেও সিদ্ধান্ত গ্রহণে মতামত দিচ্ছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামের যেসব নারী হস্তশিল্পের এসব কাজ করছেন তাদের বেশির ভাগই বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা কিংবা তালাকপ্রাপ্তা। হতদরিদ্র কর্মহীন নারীদের দিয়ে পাটের আঁশ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন এসব ব্যবহার্য পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। যা দেশের বিভিন্ন বড় শহরে পাঠানোর পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে।
এতে দেশের যেমন রাজস্ব আয় বাড়ছে তেমনই স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেছেন এসব কর্মহীন নারীরাও। এসব কাজে গ্রামীণ নারীদের সহযোগিতা দিচ্ছে ‘নারী’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা।

সরেজমিনে দেখা যায়, নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা বারান্দায় সৃজনশীল হাতের ছোঁয়ায় পাটের আঁশ থেকে দৃষ্টিনন্দন শতরঞ্জি, কিচেন ম্যাট, ঝুড়ি, ব্যাগ, হাতপাখা, পাপোস, কুশন, টেবিল ম্যাট, কার্পেট, সিকা, শো-পিস, গহনাসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করতে।

সোনালী আঁশ পাট আগের মতো উৎপাদন হয় না। এরপরও পাট দিয়ে কুড়িগ্রামের উলিপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে তৈরি হচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী নানা পণ্য। উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৭শ’ নারীর কারুকাজ খচিত পণ্য তৈরি করছেন। তাদের তৈরি এসব পণ্য রফতানি হচ্ছে বিদেশেও।

জানা যায়, এসব কর্মহীন নারীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে ২০১৪ সালে গড়ে তোলা হয় নারী অ্যাসোসিয়েট ফর রিভাইভার ইনিসিয়েটিভ নামে একটি সংগঠন। যা সংক্ষেপে ‘নারী’ নামেই পরিচিত।

উলিপুর-চিলমারী সড়কের রামদাস ধণিরাম পাড়ায় নারীদের নিয়ে কাজ শুরু প্রথমে ‘নারী-ই’। পরবর্তীতে নিজ উদ্যোগেও অনেকেই তৈরি করছেন সৌখিন এসব পণ্য।

নারী’র সংগঠক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, নারীরা দৃষ্টিনন্দন পাটজাত পণ্য উৎপাদন করছেন। যা রুচিশীল মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে অল্পদিনেই। আমাদের এ উদ্যোগ পরিবারে স্বচ্ছলতার আনার পাশাপাশি হতদরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করেছে।
এ উদ্যোগের শুরুর কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, শুরুতে সংগঠনের পক্ষ থেকে ৩শ’ তাঁত কেনা হয়। ছোট কারখানাতেই কাজ শুরু হয়। আর এ উদ্যোগে আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় নারীদের মধ্যেও। প্রথমে স্বামী পরিত্যক্তা, তালাকপ্রাপ্তারা কাজ করলেও পরবর্তীতে গৃহবধূরাও যোগ দেন।

ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, প্রথমে আশপাশের বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী পরিত্যক্তা ও হতদরিদ্র নারীদের সংগঠিত করে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করি। উদ্দেশ্য তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরানো।
‘এক পর্যায়ে নারীদের তৈরি পণ্য ডিসপ্লের জন্য একটি শো-রুম খোলা হয়। একই সঙ্গে প্রচারের জন্য জেলাশহরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মেলায়ও অংশ নিই। যা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে’ বলছিলেন এই সংগঠক।
তবে এ উদ্যোগের পেছনে কিছু কষ্টের কথাও জানালেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা নিজ উদ্যোগে চেষ্টা করছি। পুঁজির জন্য বিভিন্ন ব্যাংকে গেলেও নারী হওয়ার কারণে ঋণ দিতে অনীহা প্রকাশ করছে। ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ঋণ না পেয়ে অবশেষে শেষ সম্বল জমিটুকু বিক্রি করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

পাটজাত পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন শেফালী আক্তার (২০)। তার স্বামী এক সন্তান রেখে চলে যায় সেই ছেলে হওয়ার পরপরই। এখন ছেলের বয়স ৬ বছর।
‘নারী’র কারখানায় পাটজাত পণ্য তৈরি করেন তিনি। প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। এ দিয়েই চলে সংসার। ছেলেকেও স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন।
তার ভাষ্য, গরিব মা-বাবার ঘরে জন্ম নেওয়ার পর অভাব অনটনে বড় হয়েছি। এর মাঝে ১৪ বছরেই বিয়ে হয়ে যায়। এর মাঝে কোলে আসে ছেলে। কিন্তু স্বামী আমাদের রেখে পালিয়ে যায়। এখনও তার খবর নেই।

‘গতবছর খোঁজ পাই ‘নারী’র। এখানে এেেস কাজ নিই। এখন নিজে চলি। কিছু টাকাও জমাই।এখন কেউ অবহেলা করে না,’ বলেন শেফালী।
তাদের মধ্যে সেলিনা বলেন, আগে খুব কষ্টে দিন কাটালেও কাজ পেয়ে সংসারে শান্তি এসেছে। স্বামী রিকশা চালায়। দুজনের আয়ের টাকায় ছেলে-মেয়েকে পড়াতে পারছি। নিজস্ব থাকার ঘর তৈরি করতে পারছি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কুড়িগ্রাম জেলার সভাপতি রওশন আরা চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন হয়েছে। সরকার তৃণমূল পর্যায়ে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছে এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করছে। এরই সুফল ভোগ করছেন উলিপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের নারীরা।

‘নারী’র এ উদ্যোগে বেশ উৎফুল্ল কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে। নারীরাও বিভিন্ন কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হয়ে পরিবারে সহযোগিতা করছে। ‘নারী’ যে উদ্যোগ নিয়েছে এতে আমাদেও সহযোগিতা থাকবে সব সময়।

সুত্রঃ বাসস।

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা – ১২

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা – ১২


আফরোজা হাসান


গাড়ি থেকেই শাবাব ও আরিফীকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো মাহাম। দূর থেকেই বোঝা যাচ্ছে শাবাব ননস্টপ বকবক করছে আর আরিফী মুগ্ধ মনে শুনছে। হাসি পেলো মাহামের শাবাবের দিকে তাকিয়ে। শুধু মুখ না সারা শরীর কথা বলে এই মেয়ের। কিন্তু বোনের এই সদা চঞ্চল ভাবভঙ্গী খুব উপভোগ করে মাহাম। ঐ যে ছুট লাগিয়েছে শাবাব এদিকে। মনেহয় দেখতে পেয়েছে তাদেরকে।

গাড়ি নামতে না নামতেই খপ করে মাহামের হাত চেপে ধরে শাবাব বলল, এতক্ষণে আসার সময় হল আপনাদের? আধঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। তোর পছন্দের বোরিং স্ট্রোবরী ফ্লেবারের আইসক্রিম নিয়ে এসেছিলাম। গলে যাচ্ছিলো তাই আরিফী খেয়ে ফেলেছে। আমি তোর জন্য কিনেছি আর সে খেয়ে নিলো পেটুকের মতো। এখন গলা চাপা দিয়ে বের করতে ইচ্ছে করছে আইসক্রিম পেট থেকে।
হেসে ফেললো মাহাম। বলল, উফ…কি যে সব বলো না তুমি! আসলে আয়ানকে একটু বাইরে যেতে হয়েছিল তাই দেরি হয়ে গিয়েছে আমাদের আসতে।

শাবাব বলল, কিন্তু এখানে এসেছি কেন আমরা?

তা তো জানি না। আয়ান শুধু বলেছে সারপ্রাইজ আছে আমার জন্য।

ইশশ…ভাইয়া কত্ত রোমান্টিক। আর আরিফী?

মাহাম হেসে বলল, আরে আরিফী ভাইয়া নিজেই তো আপাদমস্তক সারপ্রাইজ তোমার জন্য। স্পেশাল আর কোন সারপ্রাইজ দেবার অবকাশ কোথায়?

বোনের কাঁধে আদরের ঘুষি লাগিয়ে শাবাব বলল, তোর সবচেয়ে বড় গুণ কি জানিস? ভুজুংভাজুং বলে মানুষকে পটিয়ে ফেলা।

আমি আমার গুড এন্ড ব্যাড উভয় কোয়ালিটি সম্পর্কেই জানি। এবং মনেকরি প্রত্যেকেরই তার গুড এন্ড ব্যাড উভয় কোয়ালিটি সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। আচ্ছা তুমি জানো তোমার গুড কোয়ালিটি কি?

শাবাব চিন্তিত কণ্ঠে বলল, নাতো। তুই জানিস?

বোনকে কথার ঝাঁপি খোলার সুযোগ না দিয়ে হেসে হাঁটতে শুরু করলো মাহাম। পাশে হাঁটতে হাঁটতে শাবাবের কথা চলতে থাকলো। আজকে আরিফী মিয়াকে লাট্টুর মতো ঘুরানোর প্ল্যান ছিল আমার বুঝেছিস। ইচ্ছে ছিল শপিং করতে করতে ফতুর করে দেবো। কিন্তু ভাইয়া ফোন করে এখানে আসতে বলে আমার সব প্ল্যান বানচাল করে দিয়েছে।
মাহাম হেসে বলল, কেন তুমি এত যন্ত্রণা করো বেচারা ভাইয়াকে বুঝি না!

আমিও বুঝি না তুই এত পতিপ্রাণা হয়ে থাকিস কেন? বিয়ের পর থেকে কত বদলে গিয়েছিস তুই সেটা কি জানিস ?

মাহাম হেসে বলল, হুম…জানি। শোনো জীবনকে স্বপ্নিল বানানোর জন্য মেয়েদেরকে তাদের অনেক পছন্দ, শখ, ভালোলাগা, মন্দলাগা স্বামীর ইচ্ছানুযায়ী বদলাতে হয়। আর এতে কল্যাণ উভয়েরই হয়।

তোর সব ওয়াজ শুধু মেয়েদের জন্য কেন বুঝি না! বিশেষ করে আমার জন্য।

কারণ আমি নিজে একটা মেয়ে। মেয়েদের মন মানসিকতা আমি বেশি বুঝি এবং মেয়েদের ক্ষমতাও আমি উপলব্ধি করতে পারি নিজেকে বিচার করে। আর তোমাকে বেশি বলি কারণ বোন আমি তোমার। জীবনের প্রতি মুহুর্তে প্রতি কদমে তোমাকে বোঝানো, শুধরে দেয়া আমার জন্য ফরজ।

শাবাব হেসে বলল, এজন্যই তো তোকে আমি এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। আমার কাছে পুরো পৃথিবী একদিকে আর তুই একা একদিকে।

সাথে সাথে মুখটা ভার করে ফেললো মাহাম। বলল, শাবাব প্রিয় বোন আমার আমি তোমার কথার বদলে একই কথা তোমাকে বলতে পারলাম না বলে খুবই দুঃখিত। কি করবো বলো আমার দুনিয়া যে আমি অন্য একজনকে বানিয়ে ফেলেছি।

দুই বোনই হেসে ফেললো একসাথে। অতঃপর একে অন্যের সাথে ভাবের আদান প্রদান করতে করতে সবার পেছন পেছন হাটতে লাগলো।

ভেতরে প্রবেশ করে যা দেখলো তাতে আয়ান আর আরিফী ছাড়া পরিবারের সবাই বেশ অবাক হলো। চোখ প্রশ্ন নিয়ে আয়ানের দিকে তাকালো মাহাম! সারপ্রাইজের কথা বলে সবাইকে চাইল্ড হোমে নিয়ে এসেছে কেন আয়ান? তাও আবার মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু সবাই। প্রথমে তো সবাইকে ঘুরিয়ে দেখলো সবকিছু আয়ান আর আরিফী মিলে। এরপর সবাইকে নিয়ে বাগানে এসে বসলো।

আয়ান সবাইকে জানালো তাদের এক শিক্ষক ও তাঁর স্ত্রী মিলে মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য এই স্কুলটি শুরু করেছিলো আরো ছয় বছর আগে। তাদের নিজেদের কোন সন্তান ছিল না তাই অসহায় এই শিশুগুলোর জন্য একটু আশ্রয় হতে চেয়েছিলেন। এটাকেই জীবনের মিশন হিসেবে নিয়েছিলেন দুজন। প্রথম থেকেই আয়ান ও আরিফী সাথে ছিল উনাদের। আয়ানের সাথে তাদের পরিচয় হয়েছিলো নিউজিল্যান্ডে আরো একযুগ আগে। ইউরোপিয়ান এই দম্পতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন পাঁচ বছর আগে। গত বছর এক এক্সিডেন্টে স্বামী-স্ত্রী দুজনই মারা গিয়েছে। এবং মৃত্যুর আগে স্কুলটার দায়িত্ব আয়ানকে দিয়ে গিয়েছেন উনারা দুজন।

গাড়িতে উঠার পর থেকেই সীটে হেলান দিয়ে বাইরের চুপ দিকে তাকিয়ে আছে মাহাম। অনেকক্ষণ পর আয়ান বলল, কি ভাবছো? সারপ্রাইজটা তোমাকে সত্যি সত্যিই খুব সারপ্রাইজড করে দিয়েছে তাই না?

আয়ানের দিকে ঘুরে তাকালো মাহাম। বলল, বাচ্চাগুলোর কথা ভাবছি। তোমাকে নিয়েও ভাবছি।

আমাকে নিয়ে? হাসলো আয়ান। আমাকে নিয়ে কি ভাবছো?

ভাবছি অনেক দায়িত্ব তোমার উপর। আমি পারবো তো তোমার যোগ্য সাথী হতে? তোমার সাথে কদমে কদম মিলিয়ে চলতে?

আয়ান হেসে বলল, আমি আরো কি ভাবছিলাম জানো? তুমি হয়তো ঘাবড়ে যাবে এসব দেখে। অথচ দেখো তুমি আমার সাথে কদমে কদম মিলিয়ে চলতে চাইছো! এটাই তো প্রমাণ করে আমাদের সফরটা খারাপ হবে না, ইনশাআল্লাহ। তাছাড়া…

তাছাড়া কি?

গাড়ি থেকে নামো।

অবাক দৃষ্টিতে মাহাম তাকালো আয়ানের দিকে। আয়ান সেই দৃষ্টির দিকে দৃষ্টিপাত না করে গাড়ি থেকে নেমে গেলো। ঘুরে এসে মাহামকেও ধরে বের করলো। পেছনে ঈশারা করে আয়ান বলল, ঐ দেখো বাস আসছে।

হ্যা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু তাতে কি?

আয়ান হেসে বলল, চলো নাইট বাসে করে ঘুরবো দুজন। দৌড়ে কখনো বাস ধরেছো? আমিও পাগল তোমার কাছে এই প্রশ্ন করছি? জাদুঘরে রাখার মত বোরিং লাইফ লিভ করো তুমি। চলো তোমাকে লাইফ লিভ করতে শেখাবো। বাসে উঠে যত ইচ্ছে তাকিয়ে থেকো আমার দিকে। বাস এসে যাচ্ছে চলো তাড়াতাড়ি। কামঅন।

হেসে ফেললো মাহাম। আয়ানের বাড়িয়ে ধরা হাত ধরে ছুটতে শুরু করলো সম্মুখ পানে……।

চলবে

পর্ব-১১

 

সোনারগাঁওয়ে নারী জামদানী কারিগরকে ধর্ষণের অভিযোগে একজন গ্রেফতার


নারী সংবাদ


নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে এক নারী জামদানী শাড়ী কারিগরকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ অভিযুক্ত শাহিনকে গ্রেফতার করেছে।

আজ বুধবার সকালে ধর্ষিতা মামলা দায়ের করলে পুলিশ দুপুরে শাহিনকে সাদিপুর ইউনিয়নে ভারগাঁও চৌধুরীপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। বিকেলে গ্রেফতারকৃত শাহিনকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠিয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নে ভারগাঁও চৌধুরীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা দুই সন্তানের জননী (৩৫) বসবাস করেন। তার স্বামী রূপগঞ্জের রূপসী এলাকায় একটি জামদানী কারখানায় কাজ করেন। তিনিও জামদানী কারিগর। তিনি জামদানী তৈরীর সুতার কাজ করেন। প্রতি সপ্তাহে দু’একদিন বাড়িতে আসেন তার স্বামী। এ সুযোগে গত ১২ ডিসেম্বর রাতে ওই নারী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে যান। আগে থেকে উৎ পেতে থাকা সাদিপুর ইউনিয়নের ভারগাঁও চৌধুরীপাড়া এলাকার মৃত ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে শাহীন ওই নারীর মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এসময় ওই নারীর ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে শাহীন পালিয়ে যায়।

ঘটনার পর ছয় দিন গ্রামবাসীর কাছে বিচার দাবি করে না পেয়ে বুধবার সকালে ধর্ষিতা বাদি হয়ে সোনারগাঁও থানায় মামালা দায়ের করেন। পরে পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহিনকে গ্রেফতার করে বিকেলে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠায়।

সোনারগাঁও থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির জানান, ধর্ষণের অভিযোগে শাহিন নামের ধর্ষককে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

মামলা করে বিপাকে ধর্ষিতার বাবা!


নারী সংবাদ


ধর্ষকের নামে মামলা করে বিপাকে পড়েছেন ধর্ষিতার বাবা। ধর্ষক আলেক মোল্লা তাকে মামলা তুরে নিতে হুমকি দিচ্ছে। কয়েকবার তার বাড়িতে হামলা করেছে। ধর্ষক আলেক মোল্লার বাড়ি যশোর সদর উপজেলার মথুরামপুর গ্রামে।

আজ বুধবার প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত ৫ অক্টোবর প্রতিবেশি আলেক মোল্লা তার শিশু মেয়েকে পান খাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নিজের কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে। শিশুর চিৎকার শুনে প্রতিবেশিরা তাকে উদ্ধার করে গ্রাম্য ডাক্তার দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। এ প্রতিবাদে বিচার চেয়ে তিনি ৮ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কোতোয়ালি থানায় ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার পর ধর্ষক গা ঢাকা দিয়েছে।

মামলা তুলে নিতে তাদের পক্ষে শিল্পীর জামাই বিজিবি সদস্য আরিফ হোসেন, এলাকার রানা, মিলন ইসলাম, আলম হোসেন ও নাহার বেগম তাকে ও তার পরিবারকে পক্ষের প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। গত ৯ ডিসেম্বর আলেক ও তার লোকজন রবিউলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তিনি বিচার ও নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য বদর সিদ্দিকী, সাবেক ইউপি সদস্য আবু জাফর, গ্রামের আবু দাউদ সোনা, আবদুস সালাম, মমতাজুল করীম প্রমখ।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

বাবুদের শীতের পোশাক


ঘরকন্যা


শীত মানেই ছুটি। দিনের বেলাতেও অনেক ঠাণ্ডা টের পাবেন। রাতে কিন্তু তাপমাত্রা আরও নিম্নমুখী হচ্ছে দিন দিন। আর কদিন পরেই শীত আরও জেঁকে ধরবে। তাই শীতকে ভয় পেয়ে শিশুদের ঘরে আটকে রাখা না। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে বেছে নিতে হবে শীতের পোশাক। অনেকেরই আফসোস থাকে শীত এলে ফ্যাশনের বারোটা বেজে যায়। বাজবে না বারটা, আসুন দেখি শিশুদের পোশাক পাবো।

শিশুদের পোশাক পছন্দ করা  খুব কঠিন । যখন বাজারে নানান নামের কাপড় ছড়িয়ে আছে, মিকিমাউস ড্রেস, চিকেন উইন্টার ড্রেস, বেবি কটন উইন্টার ড্রেস, উলেন ড্রেস,  স্লেবি রেড রেবিট,  কটন বয় কোর্ট, বেবিদের ড্রেস গুলর দাম মার্কেট ভেদে ভিন্ন ভিন্ন। মোচাক ,নিউ মার্কেট, বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স , যমুনা শপিং কমপ্লেক্স সহ ঢাকার আনাচে কানাচে শীতের কাপড় এখন বাজারে ছড়িয়ে গেছে।

সোয়েটার কালেকশনে পাশ্চাত্যের ঢঙে দেখা যায়। সোয়েটারগুলোর দাম পড়বে অনলাইনে দেখা গেল ৮০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা ভিতরে। আর স্টাইলিশ হুডিগুলো  ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যেই।’ কিন্তু নিউমার্কেট দাম অনেক কম দেখা যায়, ২৫০ থেকে ১০০০ অনেক সুন্দর সুন্দর শীতের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।

অর্থাৎ শীতের পোশাকে ঢাকা পড়ে যায় ফ্যাশনেবল পোশাকটি। তাইতো এখন ফ্যাশন ডিজাইনাররা শীতের পোশাকটিই তৈরি করছেন ফ্যাশনেবল করে।

কোথায় পাবেন: নিত্য উপহার, বিশ্বরঙ, কে ক্রাফট, লা-রিভ, জেড অ্যান্ড জেড কালেকশন, আম্বার লাইফস্টাইল, সেইলর, এসটাসি, ক্যাটস আই, ওটু, টুয়েলভ, ওকোড, ইস্টওয়ে, ফ্রিল্যান্ডসহ প্রায় সব নামি ব্র্যান্ডেই মিলবে হালকা শীতের পোশাক। বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, গুলশান পিংক সিটি, নিউ মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, বঙ্গবাজার, মিরপুরের মার্কেটগুলোতে মিলবে শীতের পোশাক।

 

ফরিদপুরে প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত

ফরিদপুরে প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত


নারী সংবাদ


ফরিদপুরের চাঞ্চল্যকর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমাকে ধর্ষণ শেষে হত্যার ঘটনায় জড়িত আসামি ইয়াসিন শেখ পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে তিন পুলিশ সদস্য।

রবিবার দিবাগত রাত দুইটার সময় শহরের পূর্বখাবাসপুরস্থ লঞ্চঘাট জোড়া ব্রিজের সামনে এ বন্ধুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত ইয়াসিন শেখ শহরের ওয়ারলেস পাড়ার মনি শেখের পুত্র।

তার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, রাজেন্দ্র কলেজের মেলার মাঠের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আসামির ছবি সংগ্রহ করে ইয়াছিনকে চিহিৃত করা হয়। এরপর জনগণের সহয়তায় তাকে আটক করা হয়।

রাতে অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে আসামির অন্যান্য সহযোগী ও পুলিশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গুলি বিনিময় হয়। আর এসময় গুলিবিদ্ধ হয় আসামি ইয়াছিন। আর এ ঘটনায় আহত হয় তিন পুলিশ সদস্য।

পরে ইয়াসিনকে উদ্ধার ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ লাশের ময়নাতদন্তের জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ১৪ বছরের প্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমাকে বিকেল বেলা রাজেন্দ্র কলেজের মেলার মাঠ থেকে তুলে নিয়ে যায় ইয়াছিন নামে ওই ধর্ষক। পরের দিন পাশের টেলিগ্রাম অফিসের পাশ থেকে ফাতেমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশের পক্ষ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা কিশোরী ফাতেমা নিখোঁজ হওয়ার ফুটেজ প্রকাশ করা হয়। জেলা পুলিশের অফিসিয়াল পেইজে ১১ সেকেন্ড ও ১৯ সেকেন্ডের দু’টি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়। একইসাথে প্রকাশিত ওই ফুটেজে চিহ্নিত সন্দেহভাজন খুনির পরিচয় সনাক্ত করে দিতে পারলে ব্যক্তিগতভাবে তাকে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দেয় মামলার তদন্তদকারী কর্মকর্তা।

ডিস্ট্রিস্ট পুলিশ, ফরিদপুর নামের ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত ওই সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা গেছে, শহরের রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে অনুষ্ঠিতব্য ব্রান্ডিং মেলার মাঠ থেকে বাম হাত ধরে ফাতেমাকে মাঠের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহভাজন ওই খুনি।

প্রথম ফুটেজটি গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটের। ১৯ সেকেন্ডের ওই ফুটেজে দেখা যায় সন্দেহভাজন ওই খুনি মেলার শিশু কর্ণারের দিকে একটি স্টলের পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে বাঁশের খুঁটির নিকট এসে উকিঝুঁকি দিচ্ছে। সেখানে তার গতিবিধিই ছিল সন্দেহজনক।

এরপরের ১১ সেকেন্ডের আরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, ফাতেমার হাত ধরে মেলার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহভাজন ওই খুনি। ফুটেজে সনাক্ত ওই সন্দেহভাজন খুনির বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছর। তার পরনে অফ হোয়াইট রঙের কালো স্টেপের ফুলহাতা জামা ও একটি ফেড করা জিন্স প্যান্ট। আর ফাতেমার পরনে ছিল কামিজ ও কমলা রঙের একটি পায়জামা। এই পায়জামাটি পুলিশ ফাতেমার লাশের সাথে জব্দ করে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নিখোঁজ হন বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমা বেগম (১৪)। এর পরেরদিন শুক্রবার সন্ধার একটু পর সাড়ে ৬টার দিকে রাজেন্দ্র কলেজের পাশে টেলিগ্রাম কার্যালয়ের চত্ত্বর থেকে ফাতেমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় ফাতেমার মুখ থেতলানো ছিলো। রক্ত জমাট বাঁধা। বিবস্ত্র ফাতেমার গলায় ফাঁস দেওয়া ছিলো। ফাতেমাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এখনো ফাতেমার লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ফাতেমার বাবার নাম এলাহি শরিফ। তিনি রিক্সা চালানোর পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের এটিএম বুথের গার্ড হিসেবে কাজ করেন। তিন মেয়ের মধ্যে ফাতেমা বড়। ফাতেমা জন্ম থেকেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক)। ওই কিশোরী বাবার সাথে শহরের রাজেন্দ্র কলেজ সংলগ্ন এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতো।

বুদ্ধি ও বাক প্রতিবন্ধী ফাতেমার এই নৃশংস হত্যাকান্ডের খবরে ফরিদপুরের জনমনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই খুনিদের যেকোন মূল্যে খুঁজে বের করার জোর দাবি উঠে।

এ ঘটনায় ফরিদপুর সুইড ফিরোজার রহমান বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছাত্রী শিশু ফাতেমা হত্যার দৃষ্টান্তমুলক বিচারের বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করে। গতকাল রবিবার দুপুরে নিহত ফাতেমার সহপাঠী, শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল বের করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে স্মারকলিপি দেয়।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার স্মারকলিপি গ্রহণ করে ফাতেমা হত্যার সাথে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের আশ্বাস দেন। বিকেলে একই দাবিতে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে প্রগতিশীল সংগঠন সমূহের ব্যানারে।

সুত্রঃ বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ।

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা – ১১

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা – ১১


আফরোজা হাসান


চোখ মুখ শক্ত করে রাগের ভান করলেন সাবিহা। আমি যা জানতে চাচ্ছি সেটার জবাব দে। কোথায় ছিলি এতক্ষণ?
মাহাম হেসে বলল, আমি তো ভাইয়া-ভাবীর সাথে ছিলাম। ভাইয়া যে সারাক্ষণ শুধু বাইরে বাইরে থাকে সেই বিচার করছিলাম আমি আর ভাবী মিলে। আমি তোমাকেই নিয়ে যেতে এসেছি বিচার সভায়।

কেন?

মাহাম হাসতে হাসতে বলল, ভাইয়াকে মারতে হবে। আমি তো বড় ভাইকে মারতে পারিনা আর ভাবী বলেছে মশা মেরে হাত নোংরা করতে চায় না। তাই তুমি চলো ভাইয়াকে মারবে।
হাসলেন সাবিহা। তোরা পারিসও সারাক্ষণ দুষ্টুমি করতে। কিন্তু আয়ান কোথায়?

সেও আছে বিচার সভায়। মুখের সামনে ফাইল ধরে হুমম… হুমম… করছে। এই ছেলের কথা বলতে কিসের এত কষ্ট আল্লাহ’ই জানেন। দশটা প্রশ্ন করলে নয়টার জবাব দেন হুম নয়তো উহু ধ্বনির প্রয়োগে।

আয়ানকে দরজায় এসে দাঁড়াতে দেখে দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে করলো সাবিহার। বললেন, তোর জামাইয়ের মুখ দিয়ে বিষ ঝরে সারাক্ষণ। কথা বলে না তাই রক্ষা আমাদের। তুই যে কি দেখে পাগল হয়েছিল এই ভিলেন স্বভাবের ছেলের জন্য এখনো আমার বুঝে আসে না। ঐ যে বলতে না বলতে হাজির তোর ভিলেন।

মাহাম হেসে বলল, আচ্ছা তো শুনিয়ে শুনিয়ে বদনাম করা হচ্ছিলো!

তো? চোখ পাকালেন সাবিহা। আমি কি তোদেরকে ভয় পাই নাকি যে পেছনে কথা বলবো!

আয়ান রুমে ঢুকে হেসে বলল, পেছনে কথা বলা ঠিকও না মাদার ইন ল। এতে একদিকে যেমন গীবত করা হয় অন্যদিকে ব্যক্তির ভুল ধারণাকে শুধরানো সম্ভব হয়না।
সাবিহা বললেন, আচ্ছা তা কি ভুল বলেছি আমি শুনি?

ঐ যে বললেন আপনার মেয়ে আমার জন্য পাগল হয়েছিলো! জবাব দিল আয়ান।

এটা ভুল কথা?

হান্ড্রেড পার্সেন্ট ভুল কথা।

সঠিক কথাটা কি শুনি?

আয়ান হেসে বলল, সঠিক কথাটা হচ্ছে আমি পাগল হয়েছিলাম আপনার মেয়ের জন্য। এবং যতই দিন যাচ্ছে সেই পাগলামির পরিমাণ বেড়েই চলছে। কিন্তু আপনার মেয়ে আমাকে পাত্তাই দেয়না। সে তার মত থাকে।
হয়েছে তোদের এসব কথার ফাঁদে আমি পড়ছি না। বকবক কর তোরা আমি যাই। জামাই আর মেয়েকে একা থাকার সুযোগ দিয়ে চলে গেলেন সাবিহা।

আয়ান মাহামকে কাছে টেনে নিয়ে বলল, একটা ব্যাপার বলো তো এই যে তুমি এত নিরস, মুডি, একরোখা স্বভাবের একটি মেয়ে। তারপরও তোমাকে এত ভালোবাসি কেন আমি?

কারণ আমাকে ভালোবাসা ছাড়া তোমার জন্য আর কোন পথই খোলা রাখিনি আমি। হেসে জবাব দিলো মাহাম।
হাসলো কিন্তু মুখে কিছু বললো না আয়ান। মাহামকে আলতো করে বুকে টেনে নিলো। কখনো কখনো মাহামের বিষণ্ণতা আপাদমস্তক ডুবিয়ে দেয় তাকে! কিন্তু যখন মেঘের আড়াল থেকে সূর্যের মত বেড়িয়ে আসে মাহাম, স্বমহিমায় তার জীবনকে ভরিয়ে দেয় ভালোবাসাময় প্রশান্তিকর আলোতে। এই কিছুটা পাগলা, ভীষণ রকম খেয়ালী আর প্রচণ্ড কল্পনাবিলাসী মেয়েটা সত্যিই তাকে ভালোবাসা ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা রাখেনি তার সামনে। মাহামকে দেখলে ওর কথা শুনলে মনেহয় দুনিয়ার কোন কিছুতেই ওর কোন আগ্রহ নেই। কিন্তু আয়ান জানে ঘাষের ডগায় শিশির বিন্দু থেকে নিয়ে শুরু করে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা আকাশের তারা, রান্নাঘরের তেল-মশলা থেকে নিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা সবকিছুতেই মাহামের ব্যাপক আগ্রহ। জীবনসাথী হিসেবে মাহামকে পেতে চাইবার এটাও একটা জোড়াল কারণ ছিল।

কিছুটা ক্ষণ এভাবেই কেটে গেলো। নীরবতার ভেঙ্গে মাহাম বলল, আচ্ছা তুমি না বলেছিলে আমার জন্য বিশাল একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে? কোথায় আমার সারপ্রাইজ?

বলেছিলাম নাকি?

হুম…বলেছিলে তো!

আয়ান হেসে বলল, তাহলে তো দিতেই হয় সারপ্রাইজ। তবে সেজন্য তোমাকে আমার সাথে বাইরে যেতে হবে।

সারপ্রাইজকে ঘরে আনা সম্ভব না?

উহু…সাইজে সামান্য বড়। তোমাকেই যেতে হবে।

মামণি-বাবা আর মিহিরকে কি নিয়ে যাওয়া যাবে আমাদের সাথে?

মামণি-বাবা আর মিহিরকে নিয়ে গেলে কি তুমি খুশি হবে?
হ্যা।

আয়ান হেসে বলল, ঠিকআছে আমরা তাহলে মামণি-বাবা আর মিহিরকে নিয়েই যাবো। যাও সবাইকে রেডি হতে বলো তুমি। আমরা আধঘন্টা পর বেড়বো ইনশাআল্লাহ।

দরজার কাছে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো মাহাম। কিন্তু শাবাব আর আরিফী ভাইয়া যাবে না আমাদের সাথে? আয়ান হেসে বলল, ঠিকআছে আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি বলে আরিফীকে নিয়ে আসবে শাবাবকেও। আয়ানকে বিশাল একটা হাসি উপহার দিয়ে বেড়িয়ে গেলো মাহাম।

চলবে…
পর্ব-১০

 

শীতকালে শিশুর যত্ন


শিশুর যন্ত


শীতে বেশি অসুস্থ্ হয় শিশুরা। বিরুপ এই সময়ে শিশুরা কী  ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় এবং কীভাবে প্রতিকার পাওয়া যায় এসব প্রশ্ন নিয়ে কথা বলেছেন এ্যাপোলো হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ কামরুল হাসান।

শীতে শিশুদের কী কী রোগ দেখা যায়?

ডাক্তার: মূলত এ সময় শিশুরা নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ঠাণ্ডা, কাশি, সর্দি এবং এ্যাজমায় বেশি আক্রান্ত হয়। আর সঙ্গে সিজোনাল জ্বর তো রয়েছেই।

এসব রোগের লক্ষণ:

ডাক্তার: ঠাণ্ডা অনেক দিন স্থায়ী হওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব, বুকের খাঁচা দেবে যাওয়া, দ্রুত শ্বাস নেয়া।

কারা বেশি আক্রান্ত হয়:

ডাক্তার: সাধারণত আমাদের দেশের অপুষ্ট, কম ওজনের শিশুরাই এধরনের রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। আর দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা সুষম খাদ্য এবং যত্নের অভাবে পুষ্টিহীনতায় ভোগে। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে।

কীভাবে সতর্ক হতে হবে?

ডাক্তার: শিশু অসুস্থ হলে মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে এবং নিয়মিত খাবার খাওয়াতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তার ঠাণ্ডা না লাগে। তাদের ধুলা বালি থেকেও দূরে রাখতে হবে। শিশু একটানা তিনদিনের বেশি অসুস্থ থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবেরাজিতাৎসা: নিউমোনিয়া প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা গেলে ১৫ দিনের চিকিৎসায়ই শিশু ভালো হয়ে যায়। আর ভাইরাস জনিত জ্বরও ৩ থেকে ৫ দিনেই সেরে যায়। শিশুকে জন্মের পর থেকে সবগুলো টিকা সময় মতো দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। টিকার পাশাপাশি ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর বিষয়েও তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, সবগুলো টিকা নিয়মিত দিলে শিশু বিভিন্ন মারাত্বক রোগ থেকে রক্ষা পায় এবং তার মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

সাধারণ সর্দি, কাশিকে অবহেলা না করারও পরামর্শ দেন তিনি। শীতের মধ্যে আগুন জ্বেলে তাপ নেওয়ার সময় প্রতিবছর বহু দুর্ঘটনা ঘটে এবং এতে অনেক শিশু মারাত্বক আহত হয়, সবাইকে এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করেন কামরুল হাসান।

প্রতিবেদক,অপরাজিতাবিডি ডটকম

 

শীতের সকালে দুধ-চিতই

শীতের সকালে দুধ-চিতই


ঘরকন্যা


শহুরে যান্ত্রিকতায় হয়তো ভুলেই বসে আছেন, কিংবা শীতের ছুটিতে গ্রামে যাওয়ার অপেক্ষায়। যারা আমার মতো দেশী পিঠা পছন্দ করেন,খুব সহজেই অল্প উপকরণে তৈরি করে ফেলতে পারেন সদ্য ঘরে বানানো দুধ-চিতই পিঠা তৈরি করে ফেলুন,

উপকরণঃ
আমাদের লাগবে টাটকা চালের গুঁড়া ২, ১/২ কাপ
চিনি আধা কাপ
লবণ স্বাদ মতো
এলাচ ৩ টি
তেজপাতা ২টি
নারিকেল অথবা বাদামকুচি ২ টেবিল-চামচ
পানি ১ কাপ
১ লিটার দুধ।

পদ্ধতিঃ
চালের গুঁড়ার সঙ্গে লবণ মিশিয়ে পানি দিয়ে গোলা তৈরি করে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে গোলা যেন ঘন বা পাতলা না হয়। গোলা ঠিক মতো না হলে পিঠায় ছিদ্র হবে না। সুবিধা মতো পাত্রে গোল আকারে চিতই বানাতে হবে। এবার ১ লিটার দুধে এলাচ, তেজপাতা আর চিনি দিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন। দুধ আধা লিটার হলে পিঠাগুলো এর মধ্যে ছেড়ে দিন। তারপর জ্বাল কমিয়ে দিন। আস্তে আস্তে পিঠায় দুধ ঢুকে নরম হয়ে ফুলে ফুলে উঠবে। এখন জ্বাল বন্ধ করে দিন।

পরিবেশনঃ
কয়েক ঘণ্টা রেখে দিন। পরিবেশনের আগে উপরে নারিকেল বা বাদাম ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা – ১০

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা – ১০


আফরোজা হাসান


ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলে সামনে যা দেখলো তাতে সাথে সাথে আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো শাবাব। যা দেখেছে তা কি সত্যি? ভাবনায় পড়ে গেলো সে। একবার মনেহলো স্বপ্ন দেখছে কিন্তু জানামতে নিশ্ছিদ্র ঘুম তার। স্বপ্ন ঘুমের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করলেও বেশির ভাগ সময়ই ব্যর্থ মনে ফিরে যায়। আর দ্বিতীয় কারণ তার স্বপ্নরা একটু অন্যরকম হয়। স্বপ্নে কখনো সে পরী হয়ে ফুলবাগানে ঘোরে, কখনো পাখী হয়ে আকাশে উড়ে, কখনো বরফে স্কি করে বেড়ায়, কখনো ঘুরে বেড়ায় গভীর সমুদ্রের নীচে।

তারমানে এখন যা দেখছে তা স্বপ্ন হবার কোনই অবকাশ নেই। আরিফী সত্যিই তার সামনে বসে আছে। কিন্তু এইভাবে রুমে আসবে কেন সে? আজ কিছু না করলে এমন কাজ বারবার করার সাহস পেয়ে যাবে আরিফী। ন্যাড়া নাকি বেল তলায় একবারই যায়। কিন্তু সেজন্য ন্যাড়ার মাথায় বেল তো ফেলতে হবে। মগজের সার্চ মেশিনকে অন করে দিলো সে আরিফীর মাথায় ফেলার মত বেলের সন্ধানে।

চোখ খুলেই যে শাবাব আবার ঝট করে বন্ধ করে ফেলেছে সেটা মোটেই আরিফীর চোখ এড়িয়ে যায়নি। খুব ভালো মত চেনে শাবাবকে তাই নিশ্চিত যে দুষ্টুমি করার কোন প্ল্যান করছে এখন। বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তোলাও অসম্ভব কিছু না শাবাবের জন্য। সুতরাং কিছু করার আগেই পথ বন্ধ করে দিতে হবে। শাবাব তোমার ঘুম কি ভেঙ্গেছে? জানতে চাইলো আরিফী। নাস্তা সেরে তোমাকে নিয়ে শপিংয়ে যাবো ভাবছিলাম।

ধীরে ধীরে চোখ খুললো শাবাব। আরিফীকে হাসিমুখে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উঠে বসতে বসতে বলল, দাঁত দেখাচ্ছো কেন নতুন লাগিয়েছো নাকি?

স্বশব্দে হেসে ফেললো আরিফী। কি যে অদ্ভুত একটা মেয়ে তুমি সেটা কি জানো?

জানতে চাচ্ছি না। আমি যা জানতে চাচ্ছি তা হচ্ছে বিনা অনুমতিতে কেন তুমি আমার রুমে ঢুকেছো? এত বড় সাহস কোথায় পেলে?

আরিফী হেসে বলল, তুমি কি জানো কিছু কিছু মানুষের কাছে মনের অনুভূতিগুলো সবসময় এভেলেভেল থাকে।

সেটা আবার কেমন?

সেটা এমন যে কিছু কিছু মানুষ আমাদের মনের ঝিমিয়ে পড়া অনুভূতিতে প্রাণের পরশ জাগিয়ে যেতে পারে। যেমন ধরো ভালোবাসা, মায়া, মমতা, রাগ, শোক, বেদনা, ব্যর্থতা, সাহস ইত্যাদি সবই তো আসলে মনের ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতির নাম তাই না? তো কিছু কিছু মানুষ তাদের কথা, কাজ ও আচরণের দ্বারা এই অনুভূতিগুলোকে সতেজ করে তুলতে পারে। আমি আজ সকাল থেকে এমন দুইজন মানুষের দেখা পেয়েছি।

হাসি ফুটে উঠলো শাবাবের চেহারাতে। মাহাম কোথায়?

মাহাম অসুস্থ্য শরীর নিয়ে চাচীকে সাহায্য করছে নাস্তা বানাতে আর তুমি ঘুমচ্ছো! এটা কেমন কথা হলো?

আমাকে তো কেউ ডাকেনি। আচ্ছা আমি এখনই যাচ্ছি।

মুহুর্তেই শাবাবের চেহারা থেকে দুষ্টুমি উবে যেতে দেখলো আরিফী। সেখানে জায়গা করে নিলো বোনের জন্য মায়া-মমতা-ভালোবাসা ও কল্যাণকামীতা। শাবাবের হাসি-মজা-দুষ্টুমিকে তার কাছে যতটা পরিচিত, নীরবতা ঠিক ততটাই অপরিচিত। তবে শাবাবের যে জিনিসটা তার সবচেয়ে ভালো লাগে তা হচ্ছে ওর আবেগের মধ্যে কোন উপরি উপরি ভাব নেই। ওর অনুভুতিতে অগভীর বলে কিছু নেই। দুষ্টুমির ছলে প্রচুর জ্বালা যন্ত্রণা দেয় কিন্তু সম্পর্কের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধে কোন ঘাটতি নেই ওর মনে। বরঞ্চ শাবাবের চমৎকার কৌতুকবোধ তার মনে ভালোবাসা আর উষ্ণতাই জাগিয়ে যায় সবসময়। জানে না কেন কিন্তু শাবাবকে দেখলেই তার চার্লি চ্যাপলিনের কথা মনে পড়ে যায়। শাবাবের দুষ্টুমির পারফেক্ট বর্ণনা চার্লি চ্যাপলিনের সেই উন্মত্ত মজার হাসির সিনেমা গুলোই।

পরিবারের সবাই মিলে একসাথে নাস্তা করার মজাটাই আসলে অন্যরকম। এই মজা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে নারাজ জাহিদ সাহেব। যেখানেই থাকেন না তিনি পরিবারের একজন সদস্যও যদি সেখানে উপস্থিত থাকে খাবার টেবিলে একসাথে হতেই হবে। দুই মেয়ে আর মেয়ে জামাইরা, পুত্র-পুত্র বধূ-নাতি সবাইকে নিয়ে একসাথে বসে নাস্তা করতে গিয়ে বারবার আজ চোখ ভিজে যাচ্ছিলো ফাইয়াজ সাহেবের। সবার আড়ালে বারবার চশমা খুলে অশ্রু মুছে নেয়া কি কম মুশকিলের ব্যাপার! এই মুশকিল কাজটি করতে করতে নাস্তা সারতে হল আজ ফাইয়াজ সাহেবকে।

নাস্তার পর অনেক ক্ষণ মাহামকে শপিংয়ে যাবার জন্য রাজী করাতে চেষ্টা করলো শাবাব। একসময় বিরক্ত হয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো। মামণিকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শাবাব সুরে সুরে বলল, এখন বিদায় দাও মা ঘুরে আসি।

সাবিহা বললেন, কোথায় যাচ্ছিস?

হাসি হাসি পড়াতে ফাঁসি! একই সুরে শাবাব জবাব দিলো।
সাবিহা হেসে বললেন, আজ কার কপাল পুড়লো আবার?
শাবাব হেসে বলল, যার কপাল তিনমাস আগেই পুড়েছে তাকেই আজ নতুন করে পোড়াবো ঠিক করেছি। মামণি দোয়া করে দাও।

কিসের দোয়া?

কপাল পুড়িয়ে যাতে হনুমান বানিয়ে দিতে পারি সেই দোয়া।

কি যে সব তুই বলিস না শাবাব। সাবধানে যাস। আর এত জ্বালাস না ছেলেটাকে। মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন সাবিহা।

মাকে আদর করে দিয়ে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো শাবাব। মাহাম নিশ্চয়ই একা ভেবে মেয়েদের ঘরে রওনা করলেন সাবিহা। ঘরে ঢুকে মাহামকে না দেখে বুকের মধ্যে কেঁপে উঠলো। কোথায় গেলো মাহাম? বাগানে তো দেখেননি ওকে! তাহলে? বীচে যায়নি তো আবার? কত বার করে বলেছেন একা একা ঘুরঘুর না করতে। একটা মেয়ে যদি তার কথা শুনতো। অস্থির চিত্তে মেয়ের খোঁজে বের হলেন সাবিহা।

মেয়ের খোঁজে তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেড়োতে গিয়ে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা খেলেন সাবিহা। মাহাম রুমে ঢুকছিল আর তিনি ঝড়ের গতিতে বেড়োচ্ছিলেন যার ফলে এই সংঘর্ষ। মা-মেয়ে দুজনই কমবেশি ব্যথা পেলো। মাহাম বলল, মামণি তুমি ঠিক আছো তো? ব্যথা লাগেনি তো বেশি?

মাহামকে ধরে মাথায় পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে সাবিহা বললেন, তোর কোথাও লাগেনি তো মা? একটু দেখে কেন চলিস না বল তো! মেয়ের সামনে সাধারণত কখনোই দুর্বল হতে চায় না সাবিহা কিন্তু আজ কেন জানি ধরে রাখতে পারলো না নিজেকে। মাহামকে বুকে টেনে নিলো। চোখ বেয়ে ঝরঝর অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।

কিছু না বলে চুপ করে রইলো মাহাম। বুঝতে পারছে কোন কারণে আপসেট মামণি। নিজেকে কিছুটা সামলে নেবার সুযোগ দিলো মাকে। কিছুটা স্থির হয়ে মাহামকে নিয়ে বিছানাতে বসলেন সাবিহা। কোথায় ছিলি তুই? তোকে না বলেছি একা একা কোথাও না যেতে? তোকে রুমে না দেখে জানিস আমার কি অবস্থা হয়েছে? জবাব না দিয়ে আবার হাসছিস কেন ফাজিল মেয়ে?

মা’র মুখ থেকে একের পর এক প্রশ্ন বেড়োতে দেখে মাহাম হাসতে হাসতে বলল, আমার খুব শখ আল্লাহ যদি আমাকে বাবু দেন তাহলে যেন মেয়েই দেন। তোমার কান্ড কারখানা দেখে আমার খুব মেয়ের মা হতে ইচ্ছে করে। জানতে ইচ্ছে করে কি সেই অনুভূতি যা এতটা দুর্বল করে দেয় একজন মাকে!

চলবে

পর্ব-৯

 

কাফিরদের প্রতি(ছন্দে ছন্দে আল কুরআন)

কাফিরদের প্রতি(ছন্দে ছন্দে আল কুরআন)


ফাতিমা মারিয়াম


হে নবী! বলে দাও,
‘হে কাফেরগণ শোন,
তোমরা যাদের ইবাদাত করো,
আমি করি না তাদের ইবাদাত জেনো।
.
তোমরা তো করোনা তাঁর ইবাদাত
যাঁর ইবাদাত করি আমি।
আমিও করিনা তাদের ইবাদাত
যাদের উপাসনা কর তোমরা দিবা যামী।
.
তোমরা তো করোনা ইবাদাত তাঁর
ইবাদাত আমি করি যাঁর।
তোমাদের দ্বীন তোমাদের জন্য
আমার দ্বীন আছে আমার।’
সূরার অর্থ –
১) বলে দাও, হে কাফেররা!
২) আমি তাদের ইবাদাত করি না যাদের ইবাদাত তোমরা করো।
৩) আর না তোমরা তাঁর ইবাদাত করো যাঁর ইবাদাত আমি করি।
৪) আর না আমি তাদের ইবাদাত করবো যাদের ইবাদাত তোমরা করে আসছ।
৫) আর না তোমরা তাঁর ইবাদাত করবে যাঁর ইবাদাত আমি করি।
৬) তোমাদের দ্বীন তোমাদের জন্য এবং আমার দ্বীন আমার জন্য।
[আল কাফিরূন]

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা- ৯



আফরোজা হাসান


ফজরের নামাজের পর না কান পেতে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলো মাহাম কিন্তু বাতাস আজ কোন শব্দই নিয়ে এলো না তার কাছে। কিন্তু এমন তো হবার কথা ছিলো না! আজ তো এই বাড়ির আকাশে সূর্যোদয় হবার কথা ছিলো পবিত্র বাণীর সুরলিত স্বাগত ধ্বনিতে। আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বাইরে বেড়িয়ে দেখবে কিনা ভাবছিল তখন রুমে ঢুকল মিসেস জাহিদ। মাহামকে বসে থাকতে দেখে হেসে বললেন, ওহ তুই জেগেই আছিস! আমার সাথে একটু চল তো মা নাস্তা বানাতে সাহায্য করবি। শাবাবকে ডাক।

মাহাম হেসে বলল, শাবাব ঘুমোচ্ছে ঘুমোক মামণি। চল আমি যাচ্ছি তোমার সাথে।

মা-মেয়ে গল্প করতে করতে নাস্তা বানানোতে মন দিলো। যদিও কখনো মুখে বলে না কিন্তু মেয়েরা যখন কাজে সাহায্য করতে আসে ভীষণ ভালো লাগে সাবিহার। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নানা ধরণের গল্প করেন তখন মা-মেয়েরা মিলে। নিজের জীবনের জটিল কঠিন অভিজ্ঞতাগুলো ইতিবাচক হিসেবে শেয়ার করেন মেয়েদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার জন্য। এক মনে ছিটারুটি বানাচ্ছে মাহাম। মেয়ের চেহারার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলেন সাবিহা। শুকিয়ে কালো হয়ে কেমন হয়ে গিয়েছে মাহামের চেহারা। নানা ধরণের শারীরিক অসুস্থতার কারণে দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছে তার চাঁদের মত মেয়েটি।

মাহামের মাথায় হাত বুলিয়ে সাবিহা বললেন, তোকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। তুই বরং গিয়ে বিশ্রাম কর। শাবাবকে পাঠিয়ে দে আমাকে সাহায্য করবে।

মাহাম হেসে বলল, আমি ঠিক আছি মামণি।

কিন্তু তোকে অসুস্থ্য দেখাচ্ছে। আমি নিশ্চিত তোর মাথা ব্যথা করছে।

হুম করছে। তবে যতটুকু ব্যথা করছে তা নিয়ে রান্না করতে পারবো। তাছাড়া বসে থাকলে ব্যথা বেশি করে। কাজে থাকলে মনেই থাকে না ব্যথার কথা। তারচেয়েও গুরুত্বপুর্ণ কথা হচ্ছে, ব্যথা-কষ্ট-দুঃখ-হতাশা-দুরাশা-নিরাশা তাদের জীবনের গতিকে থামিয়ে দেয় যারা অকর্মণ্য। কিন্তু আপনার মেয়ে দুনিয়াতে কাজ করতে এসেছে।

সাবিহা হেসে বললেন, আমার তো ধারণা শুধু পটপট আর ঝামেলা পাকাতে এসেছে।

আপনার ধারণার সংস্কার প্রয়োজন মাতাজ্বী।

মেয়ের কান ধরে ঝাঁকিয়ে সাবিহা বললেন, বেশি বেশি দুষ্টু হয়েছিস তোরা দুইটাই। দেখ তো তোর বাবা, আয়ান ওরা ফিরছে কিনা মসজিদ থেকে। তাহলে চা দিয়ে আয়।
মাহাম বলল, ও সবাই তাহলে নামাজ আদায় করতে মসজিদে গিয়েছিল! সেজন্যই তো বলি!

সেজন্যই তো কি? জানতে চাইলেন সাবিহা।
না কিছু না।

হাসলেন সাবিহা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, এমনিতে তোকে দেখলে বোঝাই যায় না যে তুই এত দুষ্টুমি করতে পারিস। কি মনেহয় জানিস?

কি?

সুপার রসকষহীন মেয়ে। যার দুনিয়া বইয়ের মধ্যে শুরু হয়ে বইয়ের মধ্যেই শেষ। কিন্তু যখন আয়ান আশেপাশে থাকে একদম বদলে যাস তুই। তখন তোকে শাবাবের চেয়েও ফাজিল মনেহয়। এর রহস্য কি?

মাহাম হেসে বলল, রহস্য হচ্ছে আমার দুষ্টুমি, চঞ্চলতা, অস্থিরতা শুধু আয়ানের জন্য। আমার এইসব রূপ পৃথিবীর আর কাউকে দেখাতে চাই না আমি। মাহামের মধ্যে গুটিসুটি মেরে যে ছোট্ট মাহাম বসে আছে, সে নিজকে ছাড়া শুধু আয়ানের কাছেই বাঁধনহারা। এই রহস্য তোমাকে অন্য কোন দিন বলবো। যাই সবাইকে চা দিয়ে আসি।

বাবা ও ভাইয়াদের সবাইকে চা দিয়ে আয়ানের সন্ধানে বের হলো মাহাম। বারান্দায় এসে ফাইলপত্র নিয়ে আয়ানকে বসে থাকতে দেখে সামনে চা রাখলো। তারপর কিছুই না বলে মুখ ভার করে গিয়ে আয়ানের পাশে বসলো মাহাম। আয়ান হেসে বলল, আমার জানা মতে সুবেহ সাদিক তো অন্ধকারের সমাপ্তি ঘোষণা করে, আলোর পথে যাত্রা শুরুর র্বাতা বহন করে। তাহলে সুবাহ সাদিকের আগমনের পরেও আমার পৃথিবীর চেহারা আঁধারে ঢাকা কেন?

আমি কখন থেকে অপেক্ষা করছি তোমার তিলাওয়াত শোনার জন্য। অভিমানী কণ্ঠে বলল মাহাম।

আমিও তো সেই কখন থেকে অপেক্ষায় ছিলাম ঊষার লগ্নের। রাত্রির সুচীভেদ্য অন্ধকারকে ভেদ করতে যে হাজির হবে প্রথম আলোক রশ্মী হয়ে আমার ভুবনকে আলোকিত করতে।

হেসে ফেললো মাহাম! বলল, আমি তোমার তিলাওয়াত শুনবো।

অবশ্যই শুনবে। তার আগে বলো শরীর কেমন আজ? ঘুম কেমন হয়েছে?

আলহামদুলিল্লাহ্‌ অনেক ভালো ফিল করছি আজ। ঘুমও অনেক ভালো হয়েছে। এক ঘুমে রাত সাবাড়। তোমার কি অবস্থা?

হেসে, তোমার মত সাবাড় করতে পারিনি রাতকে। তবে টেনেটুনে কাভার করেছি।

মাহাম হেসে বলল, ঠিকআছে আমি এখন যাই। মামণিকে সাহায্য করছি নাস্তা বানাতে।

রান্নাঘরে যাবার আগে শাবাবকে ডাকার জন্য রুমে রওনা করলো মাহাম। দরজার কাছে আরিফীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মাহাম হেসে বলল, সাহস পাচ্ছো না ভেতরে ঢোকার?
সাহস দেখানোটা দুঃসাহস হয়ে যাবে কিনা সেটা ভাবছি। হেসে জবাব দিলো আরিফী।

কামঅন ভাইয়া এতটাও ভয়ংকর না আমার বোন। উপর দিয়েই একটু হৈচৈ করে।

তোর বোনকে দেখে আমি বিয়ের একটা সংজ্ঞা লিখেছি।
তাই? শোনাও দেখি তোমার সংজ্ঞা।

বিবাহ একটি যুদ্ধক্ষেত্র। স্বামী-স্ত্রী হচ্ছে যোদ্ধা। আর জিহ্বা হচ্ছে বহুরূপী গিরগিটি। যা কখনো হাতুড়ি হয়ে একে অন্যকে আঘাত করে, কখনো তরবারি হয়ে রক্তাক্ত করে, কখন বরষার জল হয়ে ভাসায় আনন্দধারায়, কখন কালবৈশাখী হয়ে মটমট করে ভাঙ্গে মনের কচি ডালপালা, কখন শ্রুতিমধুর শব্দ হয়ে দোলা দিয়ে যায় প্রাণে। যার মোহনীয় সুরে পাগল হয়ে মন গেয়ে ওঠে, প্রানো সখী রে ঐ শোন কদম্ব তলে বংশী বাজায় কে? ঠিক পরক্ষনেই ভেসে আসে সাবধানী বানী, বাঁশী শুনে আর কাজ নাই সে যে ডাকাতিয়া বাঁশী।

মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসি আটকালো মাহাম। আরিফীকে রুমে ঢুকতে বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো রান্নাঘরে।

পর্ব- ৮

 

উটে চড়ে হজ্জে

উটে চড়ে হজ্জে


কানিজ ফাতিমা


গফুর সাহেব বাসায় ডায়নিং টেবিল কেনেননি কারণ “ডায়নিং টেবিলে খাওয়া ‘বিদা ‘ত’। ”
-এনিয়ে তার কিশোর ছেলের সঙ্গে প্রায়ই উচ্চবাচ্চ হয়। কিন্তু সন্তানের কথায় তো আর ‘বিদা ‘ত’ করা যায় না। ওদিকে ছেলের যুক্তি, “তাহলে তো প্লেনে উঠে হজ্জে যাওয়াও ‘বিদা ‘ত’, কারণ রাসুল স: উটে চরে হজ্জে গিয়েছেন।”
মুন্শীপুর গ্রামে করিম মুন্সীর ছেলে বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়েছে গ্রামের মসজিদ পাকা করার জন্য। মসজিদ পাকা হয়েছে এখন মাইক লাগানোর পালা। ওমনি গ্রামের মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত ” মাইকে আজান দেয়া বি’দাত, “রাসুলএর যুগে কি মাইকে আজান দেয়া হত? এটা ধর্মে নতুন, এটা বিদা ‘ত”- একপক্ষের যুক্তি। অন্য পক্ষ বলে, “আরে রাসুলের মসজিদে তো ফ্যান ছিল না, এটা ‘বিদা ‘ত’ না ?”
“রাসুল খালি চোখে চাদ দেখেছেন – দুরবীন দিয়ে দেখলে চলবে না, এটা ‘বিদা ‘ত”
“আচ্ছা ভাই চোখে চশমা থাকতে পারবে?”
“আমি নিজে চাদ দেখি নাই, টেলিভিশনে শুনেছি চাদ উঠেছে , রাসুল স: তো টিভিতে শুনে ঈদ করতেন না, এটাও কি বিদা ‘ত হবে ?”
” আরে ভাই কি করেন, কি করেন ?”
” ক্যান, নামাজের শেষে মুনাজাত করি। ”
” হায় ! হায় ! বিদা’ত করলেন তো; নামাজের পরে মোনাজাত তো বিদা’ত ! ”
এগুলো হলো আমাদের মত (আমিও included ) অতিভক্ত কমজ্ঞাতদের ‘বিদা’ত’ ভার্সন। এবার দেখা যাক এসময়ের বিশ্বসেরা ইসলামী স্কলার ইউসুফ আল কারজাভী ‘বিদা’ত” সম্পর্কে কি বলেন –
” কোনো নতুন জিনিস বা আবিস্কারের বিরুদ্ধে ইসলাম ‘বিদা’ত’ নামে অবস্থান গ্রহণ করে এরূপ ধারণা করা ভুল। কোনো নির্ভেজাল দ্বীনী বিশ্বাসে কিছু উদ্ভাবনই কেবল ‘বিদা’ত’ হতে পারে , যেমন ঈমান ও ইবাদতের শাখা প্রশাখা।”
[অর্থাত একমাত্র ঈমান/ বিশ্বাস ও ইবাদতের মধ্যে সংযোজন বি’দাত, অন্য সংযোজন বিদা’ত নয় ।]
ইউসুফ আল কারজাভী, ইসলামী আন্দোলন,আধুনিক যুগ, কৌশল ও কর্মসুচী , পৃষ্ঠা -১২৫
“It is wrong to think that Islam stands against anything new or invented classifying it under the name of ‘bid’ah’.In fact, a bid’ah is what is invented in matters of a purely religious nature, such as creed and worship and their branches; while the changing matters of life such as norms, traditions, customs and administrative, social, cultural and political practices are not be regarded at all as bid’ah. They fall under what the ulama call ‘al maslahah al mursalah’ (public interest) as explained by Imam Al Shatibi in his book ‘Al I’tisam’.” – Priorities of the Islamic Movement in the Coming Phase by Shaykh Yusuf Al-Qaradawi, Awakening Publication, April 2000; page: 158, 159.
কি বুঝলেন ?

 

প্রোষিতভর্তৃকা-২

প্রোষিতভর্তৃকা-২


ফাতিমা মারিয়াম


ঘটনা-৩
প্রায় একমাস আগের কথা। আমার এক চাচাত দেবরের মেয়েকে মালয়েশিয়া প্রবাসী এক দোজবরে পাত্রের কাছে বিয়ে দেয়া হয়েছে। মেয়ের বয়স মাত্র ১৫ বছর। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ছেলের বাড়ীর যা অবস্থা শুনেছি, কোনভাবেই এই মেয়ের পরিবারে তাদের আত্মীয়তা করার কথা নয়। গতবছর তার প্রথম বউ একজনের সাথে পালিয়ে যায়। সে এবার দেশে এসে দরিদ্র পরিবারের মেয়ে বিয়ে করেছে। তাদের যুক্তি হল যেহেতু গরীব ঘরের মেয়ে তাই এই মেয়ে তাদের কথামত চলবে। শুনেছি এ মাসের শেষের দিকে সে চলে যাবে। আবার ২/৩ বছর পর আসবে।

ঘটনা-৪
গতকাল সকালবেলা আমার ফুফাত ভাই ফোন করে উনার মেয়ের বিয়ের দাওয়াত দিলেন। মেয়েটি এবার এইচ.এস.সি. পরীক্ষা দিবে। আমি জানতে চাইলাম- ‘পাত্র কি করে, পড়াশোনা কতটুকু করেছে?’
ভাই জবাব দিলেন,’ বিদেশ থাকে, অবস্থা বেশ ভালো। আর পড়ালেখা তেমন একটা নাই।’ ছেলে এস.এস.সি পাশ কি না এটাও উনি স্পষ্টভাবে বলতে পারলেননা।
এক পর্যায়ে আমি জানতে চাইলাম- ‘বিয়ের পর কি মেয়েকে বিদেশে নিয়ে যাবে?’
উনি অবাক হয়ে বললেন,’ওকে নিবে কেন?’
এই হচ্ছে আমাদের অভিভাবকদের অবস্থা।

ঘটনা-৫
এবার আমার শোনা একটি ঘটনা। ভদ্রমহিলার বয়স খুব বেশী নয়। এক বা দুই সন্তানের জননী। ইনি চেষ্টা করেন ইসলামী জীবন বিধান মেনে চলতে। কিন্তু দীর্ঘদিন স্বামীর অনুপস্থিতির কারনেই হোক বা অন্য কোন কারনেই হোক তিনি একজনের সাথে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন।
অনেকেই মনে করেন ধার্মিক মেয়ে বিয়ে করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এই ধার্মিক মেয়েটিকে একটি ইতিবাচক পরিবেশ দেয়াও যে স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের দায়িত্ব তা আমরা জানিনা। অথবা জানলেও মানিনা। শুধুমাত্র তাকওয়াসম্পন্ন স্ত্রী সন্ধান করলেই কি এসব সমস্যার সমাধান হবে? স্বামীকেও তাকওয়াসম্পন্ন হতে হবে এবং বউ যাতে তার প্রাপ্য সব অধিকার পায় তা-ও স্বামীকেই নিশ্চিত করতে হবে।
এই নারীও যে ‘রক্ত মাংসের তৈরি’ এই বোধটুকু যদি তার স্বামীর থাকত তবে সে নিশ্চয়ই তার বউকে ছোট বাচ্চা সহ ঢাকায় একা একা ফ্ল্যাট ভাড়া করে রাখতনা। এই চরম ঘৃণিত কাজটি করার পর সেই মহিলাই বা কতটুকু ভালো আছে তা জানিনা। তবে এই ধরণের ঘটনা আমাদের সমাজে এখন খুব বেশী মাত্রায়ই ঘটছে।

 

প্রোষিতভর্তৃকা-১

প্রোষিতভর্তৃকা-১


ফাতিমা মারিয়াম


ঘটনা-১
আমার আপন খালাতো বোনের কথা। প্রবাসী পাত্রের হাতে মেয়েকে তুলে দিয়ে পিতামাতা ভীষণ তৃপ্ত। বিয়ের কয়েকমাস পরে দুলাভাই তার কর্মস্থলে চলে গেলেন। এবার আপার কিছু সমস্যা শুরু হল। কিছুটা শারীরিক, কিছুটা মানসিক। চিকিৎসার জন্য ঢাকা আসলেন। ভাশুরের বাসায় উঠলেন। উনার বড় জা উনাকে ডাক্তার দেখালেন। ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে দিলেন। কোন রোগ ধরা পড়লোনা।
ডাক্তার বললেন, ‘উনার স্বামী যদি দেশে চলে আসেন তা হলে হয়তো উনি সুস্থ হয়ে যাবেন।’ কিন্তু এটা তো আর সম্ভব না। ফলে আপাও সুস্থ হলেননা। নিকটতম দূরতম সকল আত্মীয় স্বজন নিয়মিত তার খোঁজখবর নেয়া শুরু করলেন। সে দুঃশ্চিন্তা করে কি না এই বিষয়ে কেউ কোন প্রশ্ন করলে আপা সাফ জানিয়ে দিতেন – ‘আমি কোন দুঃশ্চিন্তা করিনা।’ এভাবে ২/৩ বছর কেটে গেল। দুলাভাই দেশে আসলেন। আপা পুরো সুস্থ। উনার কোন সমস্যা নেই।
এভাবে দুলাভাই দুই /তিন বছর পরপর দেশে আসতেন। বেশ কয়েক বছর কেটে গেছে। আপা তিন কন্যাসন্তানের জননী হয়েছেন। রোগটা রয়েই গেছে তবে তীব্রতা আগের চাইতে কম। আরও কয়েকবছর পর দুলাভাই স্থায়ীভাবে দেশে চলে আসলেন। আপা সম্পূর্ণ সুস্থ।

ঘটনা-২
আমার গ্রামের এক বধুর কথা বলছি। উনি, উনার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি এই চারজন নিয়ে সংসার। উনার শ্বশুরের আরও ৩/৪টি ছেলে আছে। তারা প্রত্যেকে পৃথক সংসারে থাকে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। তারা সবাই তাদের শ্বশুরবাড়িতে আছে। জীবিকার প্রয়োজনে তার স্বামী একসময়ে প্রবাসী হতে বাধ্য হয়।
সন্তানাদি হয়নি, কমবয়সী মেয়ে। এই মেয়ের উপর যদি বাইরের শকুনের দৃষ্টি পড়ত সবাই আর দশটা ঘটনার মতই হয়ত মনে করত। কিন্তু এই বধূটি তার স্বামী বিদেশ যাওয়ার পর (ঠিক কতদিন পরে তা আমি জানিনা) নিজ শ্বশুর দ্বারা ধর্ষিতা হয়েছে।
এই ঘটনাটি নিয়ে পুরো এলাকায় ঢিঢি পড়ে যায়। একপর্যায়ে ছেলের কানেও এই কথা যায় এবং ছেলে তার মাকে বলে বউকে যেন বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর সে তার স্ত্রীকে তালাক দেয়। সেই বউটি এখন কোথায় আছে, কেমন আছে, আদৌ বেঁচে আছে কিনা আমি জানিনা। গ্রামে খুব একটা যাওয়া হয়না। আমার বড়ফুফুর মুখে ঘটনাটা শুনেছিলাম।
চলবে…

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা- ৮

 

দেশের সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মেয়েরা ফ্রি ন্যাপকিন পাবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

দেশের সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মেয়েরা ফ্রি ন্যাপকিন পাবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী


নারী সংবাদ


দেশের সব সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে নারীদের ফ্রি স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, টাকার অভাবে অনেক নারী-কিশোরী স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে পারে না। এই সরকারি সেবাটি গ্রামে থাকা মা-বোনদের অনেক উপকার করবে।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) ‘পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ উদযাপন’ উপলক্ষে রাজধানীর পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের গ্রামাঞ্চলের মা ও মেয়ে শিশুদের জন্য অধিক মূল্য হবার কারণে ন্যাপকিন ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। এতে করে তাদের শরীরে ক্যানসারসহ নানাবিধ জটিল রোগ সৃষ্টি হয়। এ কারণে দেশের সর্বত্র এ বছর থেকেই সরকারি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থেকে আমাদের মা- বোনদের জন্য বিনামূল্যে এই স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদান করা হবে।

নিরাপদ মাতৃত্ব ও শিশু মৃত্যু হার প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক আরো বলেন, এসডিজি অর্জনে ৩.৭.২ সূচকে কৈশোরকালিন মাতৃত্ব কমানোর ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে। কারণ ১৪ বছর বা তার কম বয়সী কিশোরী মায়েদের মধ্যে গর্ভজনিত জটিলতার কারণে মৃত্যু ঝুঁকি ৫ গুণ বেশি। ২০ বছরের বেশি বয়সী মায়েদের তুলনায় ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী মায়েদের মৃত্যুহার দ্বিগুণের বেশি।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে চার হাজার ৬২৮টি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। জনবলের অভাবে সবগুলো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা যাচ্ছে না। এ কারণে সরকার নতুন জনবল নিয়োগের কথা ভাবছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের জনবলের অভাব রয়েছে। এই সঙ্কট কেটে যাবে বলে আশা করছি। এটা হলে আমরা সবগুলো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার ব্যবস্থা করব।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণে সক্ষম দম্পতিদের উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে বিবাহিত কিশোরীদের সঠিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব সেবার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করার বিষয়েও জোর তিনি।

এই অনুষ্ঠান থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সারাদেশের ১৫০টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী আ খ ম মহিউল ইসলাম।

উল্লেখ্য, ‘পরিবার পরিকল্পনা সেবা গ্রহণ করি, কৈশোরকালীন মাতৃত্ব রোধ করি’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার ৭ থেকে ১২ ডিসেম্বর সারাদেশে পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ পালন করা হবে। এ উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে অত্যন্ত আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে সপ্তাহটি উদযাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে অ্যাডভোকেসি সভা, প্রেস ব্রিফিং, সেবা কেন্দ্র হতে বিশেষ সেবা প্রদান, অডিও ভিডিও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, টিভি চ্যানেলে স্ক্রলিং-এর মাধ্যমে বার্তা প্রচার, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ডকুমেন্টরি প্রচার ইত্যাদি। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতারে জিংগেলও প্রচারিত হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

এছাড়া বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে সুবিধাজনক ভেন্যুতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

সুত্রঃ মেডিভয়েস রিপোর্ট।

 

বাংলাদেশের স্বর্ণালি এক দিন

বাংলাদেশের স্বর্ণালি এক দিন


নারী সংবাদ


মুহূর্তেই সাদতোবাদো ক্রীড়া কমপ্লেক্সের কারাতে ভেনু হয়ে উঠল এক টুকরো বাংলাদেশ। সতীর্থ কারাতে খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, কোচ সবাই যেন ঈদের আনন্দে মেতে উঠলেন। কোলাকুলি পর্ব যেন শেষ হতেই চায় না। এই মিলনমেলায় সবার চোখেই ছিল আনন্দ অশ্রু। একই দিনে পোডিয়ামে তিন তিনবার জাতীয় সঙ্গীত বাজলে কোনো বাংলাদেশী চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। শিহরণে মন প্রাণ উজাড় করে গাইতে ইচ্ছা করে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ আর যাদের কারণে এমন একটি পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে তারা হলেন আল আমিন, মারজান আক্তার প্রিয়া ও হুমায়রা আক্তার অন্তরা। ১৩তম সাউথ এশিয়ান গেমসে কারাতে ডিসিপ্লিনে ভিন্ন ভিন্ন তিনটি ইভেন্টে স্বর্ণপদক জয় করে সোনালি এক অধ্যায় রচনা করেছেন। এর আগের দিন তায়কোয়ানডোতে স্বর্ণ জিতেছিলেন দীপু চাকমা।
দশরথ থেকে সাতদোবাদো এক ঘণ্টার রাস্তা। সকালে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উপেক্ষা করে যারা ভেনুতে গেছেন তাদেরকে ভাগ্যবানই বলা যায়। উশু, শুটিং, তায়কোয়ানডো, কারাতেসহ অনেক ডিসিপ্লিনের ভেনুই সেখানে। খবর পাওয়ামাত্রই হা পিত্তেশ করতে করতে ছুটে চলা। ফটোসাংবাদিকদের অনবরত ফ্লাশ। বুকে পতাকা জড়িয়ে হাসি মুখে তিন স্বর্ণজয়ী কারাতেকা আল আমিন, অন্তরা ও পিয়া। কাঠমান্ডুর ক্রীড়া কমপ্লেক্সে উপস্থিত বাংলাদেশীদের চোখে মুখে বিশেষ রকমের তৃপ্তি। একই দিনে তিনটি স্বর্ণ জয়ের ঘটনা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে খুবই বিরল। বিদেশের মাটিতে তিন স্বর্ণ জয় দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ গৌরবের। তিনজন স্বর্ণজয়ী ক্রীড়াবিদকে একসাথে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য অন্য ডিসিপ্লিনের কর্মকর্তা, সাবেক ক্রীড়াবিদরা ছুটে এসেছিলেন হন্যে হয়ে।
গেমসের তৃতীয় দিনেও সাফল্য এলো সাদতোবাদো কমপ্লেক্স থেকে। দ্বিতীয় দিনে এসেছিল তায়কোয়ানডো আর গতকাল কারাতে থেকে। কাঠমান্ডুর সকাল গড়িয়ে দুপুরের আগেই বাংলাদেশের আরো তিনটি স্বর্ণ যোগ করেছে কারাতে। কারাতে সেন্টারে বাংলাদেশের খুশির বন্যা। কোচ-কর্মকর্তা-কাভার করতে আসা সাংবাদিক সবাই আনন্দে মাতোয়ারা। মাত্র ঘণ্টা দু’য়ের ব্যবধানে তিন স্বর্ণ। এর চেয়ে আর আনন্দের উপলক্ষ কী হতে পারে। উপস্থিত ভিনদেশীদের আফসোসের মাত্রাটাও ছিল চোখে পড়ার মতো। হয়তো ভাবছিল ইস আমরা যদি জিততে পারতাম।
কাঠমান্ডুর ঠাণ্ডা সকালে বাংলাদেশের আড়মোড়া ভেঙেছে কুমিতে অনূর্ধ্ব ৬১ তে আল আমিনের স্বর্ণজয়ের মধ্য দিয়ে। পাকিস্তানের জাফরকে ৭-৩ পয়েন্টে হারান। এর আগে সেমিফাইনালে হারান নেপালি রাজীব পোদাসানিকে। আল আমিনের স্বর্ণপদকের পরেই উল্লাসের উপলক্ষ তৈরি করেন মারজান আক্তার প্রিয়া। কুমি অনূর্ধ্ব ৫৫ কেজিতে পাকিস্তানের কাউসার সানাকে ৪-৩ পয়েন্টে হারান। কিছুক্ষণ পর কুমিতে অনূর্ধ্ব ৬১ কেজিতে হুমায়রা আক্তার অন্তরা নেপালের আনু গুরংকে ৫-২ পয়েন্টে হারিয়ে তৃতীয় স্বর্ণ জয় করেন।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

শীতকালে নবজাতক শিশুর যত্ন


শিশুর জন্য স্বাস্থ্যসেবা


ঋতু পরিবর্তনের ফলে শীতকালে শিশুরা খুব অল্পতেই অসুস্থ্য হয়ে পরতে পরে। এমনিতেই শিশুর যত্নে সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয় আর শীতকালে শিশুর চাই বাড়তি যত্ন।

শিতে শিশুকে উপযুক্ত আরামদায়ক ও কিছু বাড়তি গরম কাপড় গায়ে দিতে দিবেন। তার মাথা, ঘাড়, হাত এবং পা ভালো ভাবে গরম কাপড়ে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করুন। সাধারনত প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের চেয়ে শিশুদের এক লেয়ার বেশি কাপড় নিশ্চিত করুন। আর অবশ্যই শিশুদের জন্য কয়েক জোড়া শীতের কাপড় ব্যবহার করবেন এবং দুই থেকে তিন দিন অন্তর অন্তর তা পরিস্কার করে ধুয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিবেন।

শীতে শুধু ঠাণ্ডা লাগার কারণেই যে বাচ্চা অসুস্থ হবে তা নয় বরং শীতকালীন অসুখের মূল কারণ বায়ুবাহিত বিভিন্ন রোগজীবাণু যা সহজেই ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশেষ করে শিশুদের সহজেই আক্রমণ করে। আর সেইসাথে থাকে প্রচুর ধুলোবালি যা শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে নাক দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করলে গলায় কিংবা নাকে প্রদাহ, সর্দি, কাশি সহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। আর মাত্রাতিরিক্ত দূষিত ধোঁয়া এবং ধুলো শিশুদের নিউমোনিয়া কিংবা ব্রঙ্কাইটিসের মতো সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। ভালো ভাবে হাত না ধুলে এর মাধ্যমে অনেক রোগ ব্যাধি ছড়ায়। বিশেষ করে শিশুদের ভালো ভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস করাতে হবে। শীতে গরম পানিতে শিশুকে হাত ধুতে দিন, কারণ ঠান্ডা লাগার ভয়ে শিশু ভালো ভাবে হাত না ধুলে সর্দি, কাশি ও নিওমোনিয়ার জীবানুতে আক্রান্ত হবার ভয় থাকে।

শুষ্ক শীতের মৌসুমে শ্বাস প্রশ্বাস এর সাথে অন্য সময়ের তুলনায় বেশি পানি বেড়িয়ে যায়। এটি একটি বিশেষ লক্ষণীয় বিষয় আর এজন্য সর্বদা শিশুদের জলযোজিত রাখতে হবে। এই ঋতুতে বাচ্চাদের বেশি বেশি গরম পানিয় পান করতে দিন তাতে পানি শুন্যতা পূরণ হবে আর গরম পানি তাকে ঠান্ডা লাগা থেকে দূরে রাখবে। শীতে সবার ত্বকই শুস্ক ও রুক্ষ হয়ে যায় আর বিভিন্ন চর্ম রোগ আক্রমন করে। শীতে চাই ত্বকের পর্যাপ্ত ময়েশ্চারাইজার। শীতকালে আপনার বাচ্চা স্কুলে অন্যদের মাধ্যমে কিছু ছোঁয়াচে চর্মরোগে আক্রান্ত হতে পারে। শীতে শিশুর ত্বকের যত্ন নিতে বিশেষ খেয়াল রাখুন। নিয়মিত লোশন লাগান যেন ত্বক শুষ্ক হয়ে না যায়।

শীতকালের ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে শিশুকে সুরক্ষা দিতে খোলামেলা পরিবেশে খুব বেশি খেলাধুলা করতে না দেয়ায় ভালো বিশেষ করে শৈত প্রবাহের সময়। খুব বেশি ঠান্ডা আবহাওয়া শিশুদের অনেক ক্ষতি করে আর কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। আরও লক্ষ্য রাখবেন শিশু যেন মেঝেতে খালি পায়ে না হাঁটে। শিশুর জন্য বাসায় ব্যবহার উপযোগী জুতা কিনতে পারেন পাশাপাশি ঘরের মেঝেতেও মাদুর বা মোটা কাপড় বিছিয়ে দিতে পারেন। তাহলে মেঝেতে বসে খেলা করলেও ঠাণ্ডা লাগবে না।

শীতে আপনার নবজাতক শিশুর (১ থেকে ২৮দিন বয়সী শিশু) জন্যে আরও বেশি যত্নবান হতে হবে। নবজাতক শিশুর যত্ন সম্পর্কে জানতে পড়ুন শীতে নবজাতকের যত্ন – করণীয় ও পরিচর্যা।

আপনার শিশুকে শীতকালে বেশি বেশি ফলমূল, শাকসবজি ও সুষম খাদ্য খাইয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করুন তাতে করে আপনার বাচ্চার শুধু শীতের রোগ না বরং অন্য সকল রোগের ঝুঁকিও কমে যাবে। এই মৌসুমে নানান রকমের রোগ বালাই থেকে দূরে থাকতে ছোট্ট সোনামণিদের খাওয়ান মৌসুমি ফল ও সবজি। মূল কথা বাচ্চার ভিটামিন প্রাকৃতিক ভাবেই পূরণ করুন। এছাড়া দৈনিক এক চামচ মধু খাওয়ান তাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে ও সর্দি-কাশি কিংবা ঠাণ্ডা লাগার ঝামেলা একদম কমে যাবে।

বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে শীত মৌসুম এলেও অভ্যাসবসত ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি পান, আইসক্রিম খাওয়া বা রাতের বেলায় ফ্যান ছেড়ে ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণে টনসিল বা গলায় ব্যথা হয়। তাই তাদের এইসকল কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে।

শীত বলে পরিচ্ছন্নতায় অবহেলা না করে শিশুকে নিয়মিত গোসল করান। তবে দুপুর ১২ টার আগেই গোসলের পর্ব সেরে ফেলুন। গোসলের পর বাচ্চার মাথা ও শরীর ভালো করে মুছে তারপর জামা কাপড় পরাবেন। ত্বক ভালো রাখতে অবশ্যই বেবি লোশন বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করবেন নইলে শীতের রুক্ষ বাতাস ত্বকের ক্ষতি করবে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য শিশুর শরীর হালকা গরম পানি দিয়ে ধোয়ালেও মাথা ধোয়ানোর সময় অবশ্যই স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করতে হবে। বেবি-শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে সপ্তাহে দুই-এক দিন। তবে শিশুর চুলে খুশকি হলে তা ভালো হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওর চুলে তেল দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। শ্যাম্পু করার সময় শিশুর মাথা আলতোভাবে মাসাজ করতে হবে। জোরে মাসাজ করলে শিশুর ফলিকল ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।

সুত্রঃ ভোরের কাগজ।

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা- ৭


আফরোজা হাসান


বিয়ে হয়ে গিয়েছে এখন একটু স্বভাব বদলাতে চেষ্টা কর! কয়েকদিন আগেও একবার তুমি এই কথাটা বলেছো শাবাবকে। সেদিন ছোট ফুপ্পি এসেও একগাদা লেকচার শুনিয়ে গেলো আমাদেরকে। এখন থেকে এভাবে চলবি, ঐভাবে বলবি, এটা করবি না, সেটা ভাববি না! ইত্যাদি ইতাদি! বিয়ে জিনিসটা তাহলে কি মামণি? জেলখানা? কয়েদি হয়ে ছোট্ট একটু পরিসরে বন্দি থাকা কি বিয়ের শর্ত?

মাহাম কি হয়েছে তোর? এভাবে কথা বলছিস কেন? বেশ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন সাবিহা।

একটা মেয়ে যার চোখে হাজারো স্বপ্ন, মনে ফুল-পাখী-প্রজাপতি- রংয়ের ছড়াছড়ি। যার বাঁধনহারা মনটা মুক্ত বিহঙ্গের ডানা মত মেলে উড়তে চায়, খেলা করতে চায় মেঘেদের কোল ঘেঁসে, গাঁথথে চায় তারার মালা, ভিজতে চায় জোছনার শিশিরে! বিয়ে নামক শব্দটার মাঝে কি এতই জোর যে সব কেড়ে নেবে তার মন থেকে? এই একটা বন্ধনের কাছে বাঁধা পরে যাবে জীবনের সব স্বপ্ন? সব শখ? সব আনন্দ? কেন মামণি?

কি বলবেন বুঝতে না পেরে নির্বাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন সাবিহা। শাবাবও বোনের মুখে এমন কথা এরআগে কখনো শোনেনি তাই বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো। মা আর বোনের চেহারা দেখে হাসি ফুটে উঠলো মাহামের চেহারাতে। বলল, আমি ইনজেনারেল কথাগুলো বললাম মামণি। আমাদের দুজনের একজনের খালার বাড়িতে, অন্যজনের চাচার বাড়িতে বিয়ে হয়েছে। আমাদের পারিবারিক বন্ধন যেমন দৃঢ়, শরীয়তের বিধান ছাড়া অন্যসব ক্ষেত্রে প্রচণ্ড রকম মুক্তমনা আমরা সবাই। আমরা সবাই স্বাধীনতা প্রিয়, তাই কেউ কারো স্বাধীনতাতে হস্তক্ষেপ করি না। কিন্তু বেশির ভাগ মেয়েদের ক্ষেত্রেই তো এমন হয়না। নতুন এক ভুবনের পথ উন্মুক্ত হবার কথা যে বন্ধনের দ্বারা, সেই বন্ধনই তাকে আস্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলে। চোখের সামনে নোটিশ বোর্ড ঝুলিয়ে দেয় এটা করতে পারবে না, ওটা তোমাকে মানায় না, বিয়ে হয়ে গেছে তারমানে অনেক বড় হয়ে গিয়েছো তুমি। হাসি-আনন্দ-উল্লাস এখন অশোভন তোমার জন্য!

ব্যাপারটা আসলে ঠিক তা না! বললেন সাবিহা।

মাহাম বলল, ব্যাপারটা আসলে কি সেটাই আমি জানতে আগ্রহী মামণি। বিয়ে কেন একটা মেয়েকে তার বয়স অনুযায়ী চলতে বাঁধা দেবে? বিয়ে হয়েছে বলে কেন আমরা পারবো না সতেরো বছর বয়সি মেয়েদের মত ছুটে বেড়াতে? শরীয়তের কোথাও তো এমন কোন বিধান নেই যে বিয়ে মানেই দাদী আম্মা হয়ে যাওয়া।

এইসময় তো ফুমা ফুমা বলে চিৎকার করতে করতে মিহির ঢুকলো। মাহাম হেসে বলল, কি হয়েছে আমার সোনা বাবা? মাহামের হাত ধরে টানতে টানতে মিহির বলল, আয়ান বাডি এসেছে। চলো চলো তোমাকে ডাকছে। যেতে যেতে মাহাম বলল, আমাদের কথা কিন্তু শেষ হয়নি মামণি। এই ব্যাপারে আমি অবশ্যই তোমার সাথে কথা বলবো।

মাকে কনুই দিয়ে হালকা খোঁচা দিয়ে শাবাব বলল, আজকে তোমার খবর আছে মামণি! হিহিহি… তোমার মায়াবতী কন্যার কচ্ছপি কামড় থেকে আজ আর মুক্তি নাই তোমার! তবে যাই বলো মাহামের কথাগুলোতে যুক্তি আছে মামণি। আমার মাথায় কখনো এমন চিন্তা আসেনি কখনো সেটা ভাবছি!
আয়ানের না রাতে আসার কথা শুনলাম। শাবাবের কথা কানে তুললেন না সাবিহা।

ঠিকই শুনেছিলে। আসলে ভাইয়া ফোন করেছিলো কিছুক্ষণ আগে। আমি ফুলিয়ে ফাপিয়ে ভাব দিয়ে মাহামের অসুস্থতার কথা বলেছি। সেজন্য হয়তো চলে এসেছে মিটিং টিটিং ছেড়ে।

হেসে ফেললেন সাবিহা। শাবাবের কান ধরে ঝাঁকিয়ে বলল, তুই পারিসও দুষ্টুমি করতে। দেখ কিছু লাগবে কিনা আয়ানের। মাকে আদর করে দিয়ে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো শাবাব।

চলবে…

 

এই কবিতার কোনো নাম নেই

এই কবিতার কোনো নাম নেই


সুমাইয়া তাসনিম


১.
বহুক্ষণ আগে নিস্তেজ হয়ে যাওয়া মৃতদেহটার
ফিনকি দিয়ে গড়িয়ে পড়া রক্তে প্রতিফলিত সূর্যটা
কেমন আশ্চর্য উজ্জ্বলতায় ঝিকমিকিয়ে উঠল!
সে রক্তে হাত ছুইয়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম,
কৈশোরের মতই দারুণ উষ্ণ সে লাল!

এখানে একটা শুভ্র ফুলের বাগান ছিল।
সাদা বিনয় আর শুদ্ধতার প্রতীক।
এখানকার বাতাস ছিল সুবেহ সাদিকের
প্রথম পরিশুদ্ধ বাতাসের মতই শীতল।
এখন অবশ্য সে সফেদ স্নিগ্ধতা
ক্রমাগত ঢেকে গেছে লাল রক্তে।
লাল মানে ঔদ্ধত্য,
লালে যেন আহ্বান আছে বিপ্লবের!
বাতাস হয়ে উঠছে লু হাওয়ার মত অসহনীয় উষ্ণ।
বহুদূর-দূরান্ত থেকে রক্তের গন্ধ নিয়ে আসা এ বাতাস এসেছে,
মিসর, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, পূর্ব তুর্কিস্তান,
আরাকান, কাশ্মীর থেকে মিন্দানাও হয়ে।
সত্যের সুগন্ধি এত তীব্র কে জানতো!

সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া ছেলেটা তার
গোলাপের মত রক্তাভ ঠোঁটে প্রথম চুমু খেয়েছিল
একটা দু’নলা বন্দুকের হাতলে।
রক্তকমলের মত রাঙ্গা চোখজোড়া থেকে
ঠিকরে বেরিয়ে আসা আগুনের ফুলকিগুলো
শেষবারের মত তার গাল বেয়ে নেমে এসেছিল
কসম আর কিসাসের জন্যে।
কসম! পূর্বসূরীদের রক্ত সিঞ্চিত উর্বরতম মাটিতেই
এবার চাষ হবে যুগান্তরের শ্রেষ্ঠ বিপ্লব।

২.
তন্দ্রাতুর চোখে ঝিমোতে ঝিমোতে
সতচকিত হয়ে সামনে চাইলাম হঠাৎ,
আমি যেন কোথাও নাকারা বেজে উঠতে শুনলাম!
কোথাও কি নতুন করে শপথ হচ্ছে
বায়াত আর-রিজওয়ানের?

 

গার্ডিয়ান উইমেন আওয়ার

গার্ডিয়ান উইমেন আওয়ার


কি পড়বেন


আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬.০০টা থেকে ৭.০০টা গার্ডিয়ানের নারী পাঠকদের সম্মানে ‘উইমেন্স আওয়ার’ ঘোষণা করেছে।

এই ১ ঘন্টায় ৫০% ডিসকাউন্টে নারী পাঠকদের অর্ডার গ্রহণ করবে। আর হ্যাঁ, প্রত্যেক অর্ডারকারী গার্ডিয়ান ও খাস ফুডের সৌজন্যে বিশেষ উপহার পাচ্ছেন ইনশাআল্লাহ। গার্ডিয়ানের সকল বই এই অফারের আওতায় থাকবে।

শুধুমাত্র সন্ধ্যা ৬.০০টা থেকে ৭.০০টা এই ঘন্টা সময়ে একটা অনলাইন অর্ডার ফরম, কয়েকটি মুঠোফোন নম্বর এবং গার্ডিয়ানের ফেসবুক পেইজের ইনবক্সে অর্ডার গ্রহণ করা হবে। ঠিক ৬.০০টায় অনলাইন অর্ডার ফরম উন্মুক্ত করা হবে। অর্ডারে বইয়ের নাম, সংখ্যা, গ্রাহকের ঠিকানা বলতে হবে। আমরা পরবর্তীতে কল দিয়ে পেমেন্ট কনফার্ম করব। নির্দিষ্ট ঠিকানায় কুরিয়ারে এবং হোম ডেলিভারিতে বই পৌঁছে দেওয়া হবে। ঢাকার পাঠকবৃন্দ বইমেলা অথবা গার্ডিয়ান সেলস সেন্টারে এসেও বই নিতে পারবেন।

হোম ডেলিভারির জন্য অতিরিক্ত ৫০ টাকা এবং কুরিয়ারের জন্য ৪০ টাকা দিতে হবে।

বই লিস্টঃ

অর্ডার করার জন্য মুঠোফোনঃ
01710-197558,
01998-584958,
01863-961753,
01737-144915,
01726-859484,
01830-733323,
01867-346377,
01924-374962,
01724-538590,

গার্ডিয়ানের ফেসবুক পেইজঃ
গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স

আগামীর পৃথিবী বইয়ের হোক, জ্ঞানের হোক।

 

৯২ বছর বয়সেও সাইকেল চালিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন বৃদ্ধা

৯২ বছর বয়সেও সাইকেল চালিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন বৃদ্ধা


নারী সংবাদ


বাংলাদেশের নারীরা পিছিয়ে নেই। শ্রম, মেধা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে তারা। এরই মধ্যে দুঃসাহসী ও চ্যালেঞ্জি কর্মকাণ্ডে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে তারা। এই ধারাবাহিকতা এখন শুধু শহরে নয় উপজেলা ও প্রত্যন্ত গ্রামেও যুক্ত আছেন বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও মানব সেবায়। নানা রকম যুদ্ধ পাড়ি দিয়ে একমাত্র নিজের সাহসিকতায় অনেক নারীর সফলতার গল্প আমরা শুনেছি। তবে আজ জানাবো অন্যরকম এক গল্প।

গ্রামের সবাই যাকে চিনেন নানী নামে। তিনি হলেন জহিরন বেওয়া। বয়স ৯২ বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু মনের উদ্যমতা, সাহসিকতা, কর্মের দক্ষতা-সখ্যতা কমেনি তার। স্থায়ীয় এমপিও কারো কাছে অপরিচিত হলেও গ্রামের সবার কাছে নানী জহিরন বেওয়া এক পরিচিত নাম।

৯২ বছর(তার দাবি) বয়সী জহিরন বেওয়া লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউপির সীমান্তবর্তী গ্রাম তালুক দুলালীর মৃত সায়েদ আলীর স্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধের চার বছর আগে স্বামীর মৃত্যুতে ভেঙ্গে পড়া এ সংগ্রামী নারী তিন ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে সংসার সংগ্রাম শুরু করেন। আট বছর আগে বড় ছেলে দানেশ আলী ৬৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করায় ভেঙ্গে পড়েন জহিরন বেওয়া। ছোট ছেলে তোরাব আলীর (৫৯) সংসারে এই সংগ্রামী নারী এখনো সচল, সজাগ আর কর্ম উদ্যামী হয়ে বেঁচে আছেন।

দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু সংসারে অভাব-অনাটন ছিল প্রতিক্ষণের চিন্তা। সমাজের কথা উপেক্ষা করে ১৯৬৮ সালে জহিরন পরিবার পরিবল্পনার অধিন স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা বিষযে ছয়মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, চুক্তিভিত্তিক মাসিক মজুরিতে কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মে যোগ দেন। নিজ গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে বাইসাইকেল চালিয়ে গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতেন। ২শ’ থেকে ৩শ’ অবশেষে ৫শ’ টাকা মাসিক মজুরিতে ১০ বছর চাকরি করে অবসরে যান জহিরন। কিন্তু বাড়িতে বসে থাকতে পারেননি।

জহিরন বেওয়া ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি শুধু সাধারণ রোগ যেমন জ্বর, মাথাব্যথা, বমি শারীরিক দুর্বলতাসহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। চিকিৎসার জন্য আমাকে কোনো অর্থ দিতে হয় না, তবে আমি বাজারমূল্যে তাদের কাছে ওষুধ বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ টাকা আয় হয়।

তিনি আরো বলেন, আদিতমারী উপজেলার ৩০টি গ্রামে প্রায় দুই হাজারের বেশি পরিবারের সঙ্গে রয়েছে আমার যোগাযোগ। আমি প্রতিদিন বাইসাইকেল চালিয়ে কমপক্ষে সাতটি গ্রামের ৭০টি বাড়িতে যাই এবং তাদের খোঁজখবর নিই। এমনটি দাবি করে জহিরন বেওয়া জানান, গত ৫০ বছরে তিনি কোনো রোগে আক্রান্ত হননি।

আদিতমারীর গ্রামবাসীরা জানান, গত ৪৫ থেকে ৫০ বছর ধরে জহিরন বেওয়াকে দেখছি তিনি সাইকেল চালিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে দরিদ্র রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ কোনো অসুখ-বিসুখ হলে আমরা তার কাছেই চিকিৎসা নিই। আর তিনি কখনোই আমাদের কাছে টাকা নেননি। মাঝে মধ্যে ওষুধও বিনামূল্যে দেন।

তারা জানান, উনি এখন গ্রামের সবার জাতীয় নানী। সবাই তাকে নানী বলেই ডাকে, হয়তো ছেলে দেখলে তাকে নানী বলে ডাক দেয়, ছেলের বাবাও দেখলে নানী বলে ডাকে। অনেকে আবার আদর করে উনাকে নানী বুড়ি বলে ডাকেন। আমাদের এই অঞ্চলে সবাই নানী বুড়ি বললে জহিরন বেওয়াকে এক নামে চিনে, এমনকি আমাদের এমপিরে কেউ চিনুক না চিনুক কিন্তু এই নানী বুড়িকে আশেপাশের সব লোক এক নামে চিনে।

তারা আরো জানান, নানীকে ভালোবেসে অনেকে পরামর্শ দেয়- নানী তোমার বয়স হইছে, এখন সাইকেল চালানো বাদ দাও, বাড়ি বাড়ি যাওয়া বাদ দাও, রাস্তা ঘাটে কখন কি ঘটে যায় কে জানে। তবে শুনেছি, নানী এসব বাদ দিতে পারেন না, উনার একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। সকাল হলেই উনি ক’টা ভাত মুখে তুলে সাইকেল নিয়ে বের হয়ে যান। তারপর, আশেপাশের গ্রামের সবার খোঁজ খবর নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেন। নানী যদি কখনো নিজে অসুস্থ থাকেন, উনার খোঁজ খবর নিতে উনার নিজের বাড়িতে লোকজনের ঢল নামে।

ভেলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, জহিরন বেওয়া নিজেকে সবসময় হাসি-খুশি রাখেন আর গ্রামবাসীকেও আনন্দ দিয়ে হাসি-খুশি রাখেন। তাই জহিরন বেওয়া গ্রামের সবার কাছে জনপ্রিয়, হয়ে উঠেছেন সবার নানী, লালমনিরহাট তথা বাংলার নানী। আমরা তাকে বাংলা নানী বলে সম্বোধন করি আর এতে তিনি বেশ খুশি থাকেন।

জহিরন বেওয়ার নাতি আব্দুর রাজ্জাক ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, তিনি বার বার চেষ্টা করে যাচ্ছেন দাদিকে সাইকেল চালিয়ে বাইরে যেতে না দিতে কিন্তু পারছেন না। দাদি কষ্ট করে তার ছেলে-মেয়েদের মানুষ করেছেন তেমনি আমাদের মানুষ করার ক্ষেত্রেও তার অবদান রয়েছে।

আমরা হয়তো বইয়ে পড়েছি বেগম রোকেয়া, মাদার তেরেসা, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের কথা- কিন্তু এমন অন্তরালে লুকিয়ে থাকা নানীদের অবদান তাদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। কেউ তার কাজের ব্যপ্তি নিয়ে দীপ্তি ছড়িয়েছেন, কেউবা নানীর মত ছোট্ট পরিসরের আলোকিত সেবক।

সুত্রঃ( রাসিব মোস্তফা ও জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না) ডেইলি বাংলাদেশ।

 

সোনার হরিণ (পাঁচ)

সোনার হরিণ (পাঁচ)


ফাতিমা মারিয়াম


আলাদা সংসার পেয়ে মালা মহা খুশি। সে নিজের মত করে সংসার গুছিয়ে নিচ্ছে।

চার/ পাঁচ বছর চলে গেল। এরই  মধ্যে সে আরেকটি সন্তানের মা হল। এবারের সন্তান মেয়ে। এই সন্তান হওয়ার সময়ও রীতা মালাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। কিন্তু মালা যেন একটু কৃতঘ্ন ধরনের মেয়ে।  সে শফিকের কানে রীতা সম্পর্কে বিভিন্ন কথা তুলে দেয়।  একবার দুইবারের পর শফিক রীতার কাছে এটা ওটা কৈফিয়ত চায়। রীতা তার মতামত ব্যক্ত করে। আপাতত ঝামেলা মিটে যায়! কিন্তু আবার শুরু হয়…………।

কয়েকবারের পর রীতা যখন বুঝতে পারলো এসবের পিছনে মালার হাত আছে, তখন সেও এসব নিয়ে তুমুল ঝামেলা করতে থাকল। শ্বশুরবাড়িতে নালিশ করেও কোন ফলাফল নেই।

এদিকে শফিক দুই বউকেই হুমকি ধমকি দেয়। শাসনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কিন্তু কেউই কথা শুনতে বা মানতে নারাজ। শফিক এক পর্যায়ে রীতাকে চাকুরী ছেড়ে দেয়ার জন্য জোর নির্দেশ দিলো।

কিন্তু এই ব্যাপারে রীতা কোনভাবেই রাজি হল না। তার সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সবাই-ই তাকে এব্যাপারে শক্ত থাকার পরামর্শ দিল। এদিকে শফিক চূড়ান্ত নোটিশ দিলো চাকুরী না ছাড়লে সে রীতাকে তালাক দেবে।

তখন শুভাকাঙ্ক্ষীরা পরামর্শ দিলো আপাতত কিছুদিন হাসপাতাল থেকে ছুটি নিতে। রীতা হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে স্বামীর কাছে মিথ্যা বলল যে সে চাকুরী ছেড়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রীতা শফিককে সব খুলে বলল। শফিকও বেশি উচ্চবাচ্য করলো না। কারণ তার ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। এদিকে খরচও অনেক বেড়ে গেছে। আগে রীতাকে সামান্য খরচ দিলেই চলত, এখন তাকে সম্পূর্ণ সংসার খরচ দিতে হয়।

আবার মালার জন্য বাসা ভাড়া করায় ওখানেও বেশ ভালো পরিমাণ টাকা খরচ হয়ে যায়। আগে সবার সাথে থাকায় ওখানেও খরচ অনেক কম হত। বাসা ভাড়া লাগত না। এখন দুই সংসার চালাতে গিয়ে সে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। তার উপর ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। ফলে রীতা আবারও হাসপাতালে যাওয়া শুরু করলো।

এদিকে শফিকের ব্যবসা দিনদিন খারাপ হতে হতে এক পর্যায়ে সে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হল। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পারিবারিক সিদ্ধান্তে সে বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। প্রবাসে যাওয়ার জন্য যা খরচ হচ্ছে তা কয়েক দিক  থেকে ম্যানেজ করা হয়েছে। রেস্টুরেন্ট বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া গিয়েছিলো তার কিছু অংশ এখনও আছে, খালু  কিছু দিয়েছে, রীতা ঋণ করে কিছু দিয়েছে, শফিক নিজেও ঋণ করে কিছু টাকার ব্যবস্থা করেছে।

শফিক চলে গেল।

পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্বাভাবিক। ঋণ শোধ হয়ে গেছে।  দুই বউকেই আলাদাভাবে খরচের টাকা পাঠায়। খালাকেও  কিছুকিছু দেয়। দিন মাস কেটে যায়……।

দুই বছর পর শফিক দেশে আসলো। ৩/৪ মাস থেকে আবার চলে গেল। আবারও দুইবছর পর দেশে আসলো। এভাবে সে প্রবাস জীবন কাটাতে লাগলো।

এদিকে রীতা আর মালার ঝামেলা কিন্তু বন্ধ হয়নি! শফিকের অনুপস্থিতি এবং উপস্থিতি উভয় অবস্থাতেই দুজনের মনোমালিন্য লেগেই আছে। সামান্য বিষয়েই দুজনের ঝগড়া হয়! আবার মিটমাট করে। দুজনে দুজনের বাসায় যায়। কিছুদিন পরে আবারও ঝামেলা…………………।

একদিন কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মালা রীতাকে হুমকি দিলো- তুমি দেখে নিও আমি একদিন তোমাকে শফিকের ঘর থেকে বের করে দেবই।  ওর এই হুমকি যে একদিন তারই দিকে ফিরে আসবে তখন তা কেউই বুঝতে পারেনি!!!

শফিকের ভয়েই হোক বা অন্য যে কোন কারণেই হোক একটি বিষয়ে সবসময় দুজনের মিল ছিল তা হল উভয়েই একে  অন্যজনের সন্তানকে  বেশ আদর যত্ন করত। অবশ্য এ ব্যাপারে রীতাই অগ্রগামী ছিল।

শফিক এবার চিন্তা করে দেখল  প্রবাসে তার জীবন অনেক  বছর কেটে গেছে। বয়সও বেড়ে যাচ্ছে।   তাই এখন    ছেলেদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করাই  তার জন্য ভালো।  তার দুই ছেলেই  ইতিমধ্যে এইচএসসি পাশ করেছে। সে তার দুই ছেলেকেই ওখানে নিয়ে গেল। তাদেরকে সেখানে রেখে বছর খানেক পর শফিক একেবারেই দেশে চলে আসলো।

 চলবে..

 

বোরকা পরেই সাংবাদিক হিসেবে বিখ্যাত হচ্ছেন সাবিহা ও লতিফা

বোরকা পরেই সাংবাদিক হিসেবে বিখ্যাত হচ্ছেন সাবিহা ও লতিফা


ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স


ছোটো বেলা থেকে ইচ্ছে ছিল সাংবাদিক হবেন। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বাসিন্দা সাবিহা শেখ সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। সব বাধা অতিক্রম করে সফল সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যখন পাকিস্তানের ডেরা ইসমাইল খানের গোমাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু ক্লাস করতে গিয়ে আচমকাই কতগুলো প্রশ্ন তার সামনে উদয় হয়ে ছিল।

অধ্যাপকরা বলে ছিলেন, ‘বোরকা পরা মেয়েরা ভালো সাংবাদিক হতে পারে না, তুমি রোরকা পরে কিভাবে সাংবাদিকতা করবে? পশ্চিমারা রোরকাকে ঠিকভাবে মেনে নিতে পারে না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে তোমাকে মানুষের কথা শুনতে হবে।’

এমন প্রশ্নের মুখে সাবিহা কোনো দিন পড়েননি। অবাক হলেও সেই সময় সাহসিকতার সঙ্গে উত্তর দিয়ে ছিলেন তিনি। বলেছিলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শুধু একজন ভালো সাংবাদিকই হবো না, বোরকা পরা মেয়েদের রোল মডেল হবো। বোরকা পরা মেয়ে পেশাদার সাংবাদিক হওয়ার জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করব।

যেমন কথা তেমন কাজ। আজ সত্যি সাবিহা বোরকা পরা মেয়েদের দিশারি হয়ে উঠেছেন। তিনি বন্ধু সামিরা লতিফাকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন বোরকা জার্নালিস্ট সংগঠন। ২০১৮ সালে তারা এই সংগঠন তৈরি করেন।

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশটি আফগানিস্তান সীমান্ত ঘেঁষা। সেখানে বেশিরভাগ মুসলিম নারীদের মধ্যে বোরকা নিকাব পরার চল রয়েছে।
এখানে মেয়ে শিক্ষা নিয়ে কাজ করে চলেছেন সাবিহা ও লতিফা। তারা সেখান মেয়েদের কথা তুলে ধরছেন। জানা গেছে, ওই এলাকায় মেয়েদের তেমন কোনো স্কুল কলেজ নেই। পরিবার থেকে দূরে গিয়ে পড়াশোনা চালানো অনেক সময় মেয়ের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে তাকে আশা-আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরাই সাবিহা ও লতিফার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। এই কাজে করতে গিয়ে এখন যথেষ্ট পরিচিত হয়ে উঠেছেন সাবিহা।

সাবিহা জানিয়েছেন, আমরা বোরকা পরিধান করে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমাদের মতো মেয়েদের জন্য সাংবাদিকতায় জায়গা তৈরি করতে চাই। যেখানে মুসলিম মহিলারা কোনো সমস্যা ছাড়া কাজ করতে পারবেন।বোরকা বা নিকাব কোনো দিন কোনো পেশায় আসার জন্য বাধা হতে পারে না।

গোমাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ওয়াসিম আকবর শেখ বিশ্বাস করেন, সরকারের সহযোগিতা না পেলে তারা এই জাতীয় কাজ করে বেশি দূর এগোন যায় না। তাই সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে।

লতিফা বলেন, আমাদের বোরকা জার্নালিস্ট নামের যে প্রকল্পটি মুসলিম মেয়ের জন্য চালু করেছি, তা প্রসারিত করতে আরো বেশি মহিলারা এগিয়ে আসার প্রয়োজন। পাশাপাশি সংগঠন চালাতে অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। সরকার সাহায্য করলে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।

সাবিহা বলেন, এ কাজে নামি আমার মা আমাকে সমর্থন করেন। কিন্তু আমাকে এখন মানুষ সম্মান করেন। আমি চাই জার্নালিজমেও ইসলামের আদর্শ মেনে চলুক মুসলিম নারীরা। মুল : পূবের কলম সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

“দই বড়া” বানায় সহজে

“দই বড়া” বানায় সহজে


ঘরকন্যা


উপকরণ লাগবে
# মাষকলাইয়ের ডাল ১/২ কাপ,
# আদাবাটা ১/২ চা-চামচ,
# লবণ ১/২ চা-চামচ,
# বিট লবন ১/২ চা-চামচ,
# তেতুলের কাঁথ আধা কাপ,
# চিনি বা গুঁড় ১,১/২ টেবিল-চামচ,
# দই ২,৩ কাপ (ফেটানো),
# চাট মসলা ১/২ চা-চামচ।
#শুকনা লালমরিচ ৪,৫টি (টেলে নিন),
#জিরা ৩ চা-চামচ (টেলে নিন)।
আরো লাগবে, পুদিনা পাতা, কাঁচামরিচের কুচি, পেঁয়াজ কুচি, ভাজা নিমকি ভেঙে নিন।

প্রণালি
প্রথম ধাপে,
মাষকলাইয়ের ডাল আগের রাতে ভিজিয়ে রাখুন। অথবা পাঁচছয় ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।এখন আধা কাপের চেয়েও কম পরিমাণ পানি দিয়ে মিহি করে বেটে কিংবা ব্লেন্ড করে নিন। যেন থকথকে খামির হয়।

দ্বিতীয় ধাপে,
একটি বাটিতে পানি নিয়ে, ছোট একটি ডালের বড়ি ফেলে দেখে নিন, খামির ঠিক হয়েছে কিনা। ভেসে উঠলে মনে করবেন, খামির একদম ঠিক হয়েছে।

তৃতীয় ধাপে,
এবার ডালের সঙ্গে আদাবাটা ও অল্প লবণ দিয়ে মিশিয়ে রাখুন ১০ মিনিট।

চতুর্থ ধাপে,
চুলায় তেল গরম করতে দিন। এই ফাঁকে বড় বাটিতে তিনকাপ খাওয়ার পানিতে অল্প লবণ ও তেতুলের কাঁথ গুলে রাখুন।

পন্ঞম ধাপে
তেল গরম হলে মাঝারি রাখুন চুলার আঁচ। এখন ডালের খামির থেকে ছোট এক চামচ নিয়ে বড়ার মতো করে তেলে দিন। বাদামি করে ভেজে তুলে সঙ্গে সঙ্গে তৈরি করে রাখা তেঁতুলের পানিতে ছেড়ে দিন। এতে বড়া নরম নরম হবে।

ষষ্ঠ ধাপে
এভাবে সবগুলো বড়া তৈরি করে নিন। বড়াগুলো পানি থেকে উঠিয়ে চেপে পানি বের করে পরিবেশন পাত্রে সাজিয়ে রাখুন।

সপ্তম ধাপে
অন্য একটি বাটিতে দই নিয়ে সেটাতে টালা মসলা থেকে এক চামচ করে মরিচগুঁড়া, জিরাগুঁড়া, তেঁতুলের কাঁথ, বিট লবণ, চিনি, অল্প চাটমসলা দিয়ে দই ফেটে নিন।

পরিবেশন

ডালের বড়ার উপর ফেটানো দই ঢেলে দিন। তারপর অল্প টালা গুঁড়ামসলা আর চাটমসলা ছড়িয়ে দিন। পুদিনাপাতার কুচি, কাঁচামরিচের কুচি, পেঁয়াজকুচি এবং নিমকির উপর দিয়ে ভেঙে দই বড়া পরিবেশন করুন।

সুত্রঃ বাংলাদেশি রেসিপি।

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা – ৬

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৬


আফরোজা হাসান


রান্নার সব আয়োজন ঠিক আছে কিনা শেষ বারের মত দেখে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললেন সাবিহা। মনের মাধুরী মিশিয়ে আজ সবকিছু রান্না করেছেন তিনি। যা রান্না করেছেন তার বেশির ভাগ জিনিসই হয়তো খাবে না কিন্তু পছন্দের প্রতিটা মেন্যু মেয়ে জামাইদের সামনে রাখতে চান তিনি। হোক না ঘরের ছেলে তাতে কি? মেয়ের জামাই মানেই ভীষণ স্পেশাল কিছু! হঠাৎ বুকের ভেতরটা কেমন যেন শূন্যতায় ছেয়ে গেলো! সাথে ছলছল করে উঠলো সাবিহার চোখ! মনেহয় এই তো সেদিন মেয়েরা এলো তাদের জীবনে অথচ দেখতে দেখতে আঠারোটা বছর পেড়িয়ে গেছে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে তারও প্রায় তিন মাস হয়ে গিয়েছে। এইচ.এস.সি’র ফাইনাল এগজামের শেষ হবার পর শ্বশুরবাড়ি যাবার সময়ও এসে যাবে।

দুই মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে হজ্ব করতে যেতে নারাজ ছিলেন ফাইয়াজ সাহেব। বিয়ে যেহেতু ঠিক করাই ছিলো তাই বেশ তড়িঘড়ি করেই আকদ অনুষ্ঠানটি সেরে ফেলেছিলেন সবাই মিলে। এরফলে সংসার শুরুর আগে কিছুটা বোঝাপড়া করে নেয়ার পথটাও সহজ হয়ে গিয়েছে ছেলেমেয়েদের জন্য। মেয়ে দুটা এখনো ছোট্ট বাচ্চাদের মতোই পুরো বাড়ি মাথায় তুলে রাখে হাসি-মজা আর দুষ্টুমি দিয়ে। কেমন করে থাকবেন মেয়ে দুটিকে ছাড়া তিনি? না চাইতেও ঝরঝর অশ্রু নেমে এলো সাবিহার চোখ বেয়ে। রান্নাঘরের দরজায় নক হলে চোখ মুছে ঘুরে তাকিয়ে ফাইয়াজ সাহেবকে দেখে সাবিহা বললেন, তোমাকে চা দেয়নি শাবাব?

হ্যা দিয়েছে। আমি তোমার খবর নিতে এলাম। সেই সকালে ঢুকেছো রান্নাঘরে। শরীর খারাপ করবে তো শেষে।

মাহাম, শাবাব ওরা কোথায়?

শাবাব আরিফীর সাথে বাগানে বসে গল্প করছে দেখে এসেছি। মাহামের মাথাব্যথা কমেনি এখনো শুয়ে আছে। তোমার মন খারাপ মনেহচ্ছে কেন? চুপ দেখে স্ত্রীর কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বললেন, কি হয়েছে সাবিহা? মেয়েদের কথা ভেবে মন খারাপ?

কাঁধ থেকে স্বামীর হাত সরিয়ে দিতে সাবিহা বললেন, আমরা এখানে আসছি এই খবর দিতে কেন গিয়েছো তুমি তোমার আদরের মেয়ে জামাইদেরকে? শান্তিতে একটু সময় কাটাবো মেয়েদের সাথে তা না দুইজনই এসে হাজির।

ফাইয়াজ সাহেব হেসে বললেন, আমাদের তো আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত এজন্য। এমন জামাই’ই তো চেয়েছিলাম আমরা আমাদের দুই রাজকন্যার জন্য তাই না? যারা ওদেরকে আমাদের মত করে ভালোবাসবে, ওদের খেয়াল রাখবে। দেখো শত ব্যস্ততার মধ্যেও আয়ান আর আরিফী সপ্তাহ খানেক সময় বের করে নিউজিল্যান্ড থেকে এখানে চলে এসেছে।

হয়েছে তোমাকে আর জামাইদের সাফাই গাইতে হবে না। আয়ান ফোন করেছিল? কখন এসে পৌঁছাবে কিছু জানিয়েছে?

হ্যা, ফোন করেছিল কিছুক্ষণ আগে আয়ান। বলেছে রাতের আগে আসতে পারবে না।

সাথে সাথে মুখটা আঁধারে ঢেকে গেলো সাবিহার। খাসীর গোশতের কোর্মা, আনারস ইলিশ, তেলাপিয়া মাছ ভাজা, চিংড়ির মালাইকারি, ইলিশ মাছের ডিম দিয়ে আলু ভাঁজি, পোনা মাছের চচ্চড়ি এত কিছু তাহলে কার জন্য রান্না করলেন তিনি? আরিফী সবকিছুই অনেক মজা করে খায়, তাই যত চিন্তা আয়ানকে নিয়েই ছিল। দৈ পছন্দ করে সেজন্য সেটাও বসিয়েছেন তিনি আয়ানের জন্য।

স্ত্রীর চেহারার দিকে তাকিয়ে ঝড়ের আভাস পেয়ে আর কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি সরে পড়লেন ফাইয়াজ সাহেব। এত মজার মজার খাবার তৈরি হয়েছে সেসব ফেলে ঝাড়ি খাওয়ার কোন মানেই হয় না। তারচেয়ে নাতিকে নিয়ে বাগানে কিছুক্ষণ পায়চারী করে ক্ষুধাটা আরেকটু বাড়িয়ে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে সেই উদ্দেশ্য রওনা করলেন তিনি।

শাবাবকে রান্নাঘরের দিকে যেতে দেখে ফাইয়াজ সাহেব একবার ভাবলেন ডেকে সাবধান করে দেবেন। পর মুহুর্তেই মনে পড়লো যে কোন একজনের সাথে কিছুক্ষণ হৈচৈ করলেই সাবিহার রাগ পড়ে যাবে। দুষ্টুমি করে মেয়ে মার হাতে বকা খাবে এরমধ্যে বাবার ইন্টারফেয়ার না করাই সমীচিন। ভেতর থেকে কে যেন বলল, জেনে শুনে মেয়েকে বিপদের মুখে পাঠাচ্ছো শুধুমাত্র নিজে নিরাপদ থাকার জন্য? ধিক্কার তোমাকে! সবসময় ভেতরের আওয়াজকে পাত্তা দেয়া ঠিক না! জাহিদ সাহেবও দিলেন না! নাতিকে নিয়ে বাগানে রওনা করলেন।

রান্নাঘরে ঢুকেই উমমম…ইয়াম্মি…সারা বাড়ি তো মৌ মৌ করছে ঘ্রাণে! বলতে বলতে খাবারের প্লেট টেনে নিলো শাবাব। সাবিহা বললেন, কি করছিস তুই?

সবকিছু ঠিকআছে কিনা একটু একটু করে চেখে দেখি মামণি।

সামনে থেকে যা তো শাবাব। তোকে দেখলে আমার ভালো মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায় আর এখন মেজাজ এমনিতেই খুব খারাপ।

মামণি চল আজ একটা এক্সপেরিমেন্ট হয়ে যাক!

কিসের এক্সপেরিমেন্ট?

আমার কারণে তোমার ভালো মেজাজ খারাপ হয় এটা তো প্রাচীন কথা। দেখা যাক খারাপ মেজাজ ভালো হয় কিনা!
সবসময় এত ফান করিস নাতো শাবাব। যথেষ্ট বড় হয়েছিস তুই, বিয়ে হয়েছে এখন আর এসব মানায় না, বুঝেছিস!
কেন মানায় না মামণি? প্রশ্ন শুনে সাবিহা তাকিয়ে দেখলো মাহাম এসে দাঁড়িয়েছে দরজায়। মা আর বোনের কাছে এসে দাঁড়িয়ে মাহাম বলল, বিয়ে হয়ে যাওয়া মানে কি জীবনের সব আনন্দ-উচ্ছ্বাস- হাসি-দুষ্টুমির অবসান মামণি?

ধীর গলায় সাবিহা বললেন, এই কথা আমি কখন বললাম?

চলবে…

 

মনের কথা

মনের কথা


ইসরাত জাহান রুবাইয়া


সাড়ে ৪ বছরের দীপ্তর শখ হয়েছে সুপারম্যান হবে। সুপারম্যান তার হিরো। কী সুন্দর করে সে উড়ে চলতে পারে, কার্টুনে দেখেছে দীপ্ত। সেও ওরকম করে উড়বে। ড্রয়ার থেকে মায়ের একটা বড় ওড়না বের করলো। ওড়নাটা দুইভাঁজ করে একপ্রান্ত পিঠের উপর দিয়ে গলার কাছে এনে বাঁধলো। পা টিপে টিপে মায়ের রুমে এসে দেখলো মা ঘুমাচ্ছে। এইতো সুযোগ একা একা ছাদে যাওয়ার। ছাদে গিয়েই সুপারম্যানের মত উড়াল দেবে সে।
শম্পার চোখদুটো তখন লেগে এসেছে কেবল। এমন সময় দরজা খোলার অাওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। লাফ দিয়ে উঠে বসলো সে। বাসায়তো মা ছেলে ছাড়া এমুহূর্তে কেউ নেই। দরজাটা খুললো কে তবে! দীপ্ত বাইরে যাচ্ছেনাতো একা একা! দৌড়ে এসে দেখে দীপ্ত সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছে। সেও ছেলের পিছু নিল। শম্পা পৌঁছতে পৌঁছতে দীপ্ত ছাদের রেলিং এ উঠে দাঁড়িয়েছে। দুইহাত দুইপাশে ছড়িয়ে যেইনা একপা বাঁড়িয়েছে ওমনি দৌড়ে এসে ছেলেকে শক্ত করে ধরে ফেললো শম্পা। দীপ্তর সে কী কান্না! অনেক অনুরোধ করলো অন্তত একটা বার ওকে উড়তে দিতে। শম্পা কোনোভাবেই রাজী না। পাঁজাকোলা করে তাকে তুলে নিয়ে ঘরে ছুটলো সে। হাত পা ছুঁড়ে কান্না করতে করতে দীপ্ত বললো তুমি অামার পছন্দের কিচ্ছু করতে দাওনা! সুপারম্যান হতে দাওনা! তুমি অনেক অনেক পঁচা মা, তুমি ভালোনা!
.
.
দীপ্তকে ছাদ থেকে লাফ দিতে দেয়নি বলে শম্পা কি অাসলেই পঁচা মা হয়ে গেছে? একবাক্যে সবাই বলবে, কখনোই না! দীপ্ত জানেনা ১১তলা থেকে লাফ দিলে কী ঘটবে! কিন্তু শম্পা জানে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে তার কলিজার টুকরা বাচ্চাটা। দীপ্ত মনে করে সে লাফ দিলে সুপারম্যানের মত উড়ে যাবে। কিন্তু শম্পা জানে বাস্তবে কী ঘটবে। বাচ্চা যতই অনুনয় বিনয় করুক, যতই জেদ করুক, যতই তাকে পঁচা মা বলুক; সে দীপ্তকে এই শখ পূর্ণ করতে দেবেনা। কেন ই বা জেনে শুনে সন্তানকে অাগুনে ঝাঁপ দিতে দেবে সে?
.
অাসুন, এবার অন্য কিছু ভাবি।
অনেক সময় অামরা অাল্লাহর কাছে অনেক কিছু চাই। কোনটা তিনি দেন, কোনটা দেননা। হ্যাঁ কখনো এমন কিছু তিনি দেননা যেটা অামরা অনেক বেশি পছন্দ করি। তখন হতাশ হয়ে অামাদের অনেকই অাল্লাহর উপর অভিমান করে বসেন। এত চাইলাম, দিলেননা অাল্লাহ! কেন, কী হত দিলে? তাঁর ভান্ডারে তো কিছুর অভাব নেই! তাঁর পক্ষেতো অসম্ভব বলে কিছু নেই! তবুও কেন দিলেননা! কেন???
শত অভিযোগ অার অাক্ষেপে অভিমানে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নেই।
.
দৃষ্টি সীমাবদ্ধ অামাদের। ভবিষ্যত অামাদের অজানা। অামরা জানিনা জীবনপথে অামাদের সামনে কী অাছে। তিনি জানেন। সঅঅব জানেন। জেনেশুনে তিনি অামাদের সেসব অাব্দারগুলো পূর্ণ করেননা, যেগুলো পূর্ণ হলে অামরাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। দীপ্তর মত অামাদের অভিমান হয়। অাক্ষেপ করি, অভিযোগ করি।
মা জন্ম দিয়েছেন বলে এত ভালোবাসেন, এত মমতাময়ী, সন্তানের কল্যাণলামী। অার যিনি সৃষ্টি করেছেন এত যত্নে তিনি কতটা কল্যাণকামী হতে পারেন? তিনি কতটা ভালোবাসেন বান্দাহকে? বান্দাহর ভালো-মন্দ, কল্যান-অকল্যান তাঁর মত ভালো অার কে বোঝে! কী করে তিনি সেই অাব্দারগুলো পূর্ণ করবেন যেগুলো বান্দাহর জন্য অকল্যানকর! যেগুলো পূর্ণ করলে বান্দা ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে! তাই তিনি সেই অাবদারগুলো পূর্ণ করেননা, কিন্তু খালি হাতেও ফিরিয়ে দেননা। কখনো সেসব বদলে দেন উত্তম কল্যানকর অন্যকিছুর দ্বারা। কখনো সেইসবের বদলে জমা করে রাখেন কিছু অভাবনীয় পুরষ্কার! এক অবশ্যম্ভাবী দিনে বান্দাহ তা প্রত্যক্ষ করে অাপ্লুত হবে। সিজদায় পড়ে যাবে। নতমস্তকে অান্তরিক স্বীকারোক্তি দেবে, অামার রব! নিঃসন্দেহে অাপনি মহীয়ান!
.
“তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে তা অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। [সুরা বাকারা: ২১৬]

 

শীতের বিকেলে নাস্তায় ‘চিকেন পাফ’

শীতের বিকেলে নাস্তায় ‘চিকেন পাফ’


ঘরকন্যা


উপকরণ
১. ৩০০ মুরগির মাংসের কিমা ৩০০ গ্রাম,
২. ২৫০ গ্রাম ময়দা ২৫০ গ্রাম,
৩. ১ চা চামচ চিনি ১ চা চামচ,
৪. ১ চা চামচ বেকিং পাউডার ১ চা চামচ,
৫. ২ টেবিল চামচ পিয়াজ কুঁচি ২ টেবিল চামচ,
৬. ১ টেবিল চামচ কাচা মরিচ কুঁচি ১ টেবিল চামচ,
৭. ১ টেবিল চামচ আদা রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ,
৮. ১ টেবিল চামচ ধনে পাতা কুঁচি ১ টেবিল চামচ,
৯. লবণ স্বাদমতো,
১০. তেল প্রয়োজন মতো।

প্রণালি
১. প্রথমে একটি বোলে ময়দা, বেকিং পাউডার, লবণ এবং আধাকাপ তেল নিয়ে ভাল করে মেখে নিন । এরপর এতে পানি দিয়ে আবার মেখে ডো করে আলাদা করে রেখে দিন ১ ঘণ্টা।

২. এবার একটি প্যানে পরিমাণ মতো তেল দিয়ে আদা ও রসুন বাটা দিয়ে দিন। এরপর পেঁয়াজ, মরিচ কুঁচি দিয়ে খানিকক্ষণ নেড়ে কিমা দিয়ে দিন। লক্ষ্য রাখবেন যেন কিমাতে ঝোল না থাকে। রান্না হলে ধনিয়া পাতা ছিটিয়ে দিয়ে ঢেকে নামিয়ে রাখুন।

৩. এরপর ময়দার ডো থেকে লুচির মত করে ছোট ছোট রুটি বানিয়ে নিন। এরপর একটি লুচির অর্ধেকের উপরে কিমার পুর দিয়ে বাকি অংশ দিয়ে ঢেকে গোল অংশ ভাল করে মুড়ে দিন যেন ভাজার সময় খুলে না যায়। অনেকটা পুলি পিঠার মতো করে বানিয়ে নিন।

৪. এরপর প্যানে ডুবো তেলে ভাজার মতো তেল ঢেলে গরম করুন। হালকা আচে বাদামি রঙ করে ভেজে নিন ‘চিকেন পাফ’।

পরিবেশন
গরম গরম ‘চিকেন পাফ’ রান্না হয়ে গেলে সস আর আলুর ভাজার সাথে পরিবেশন করুন।

রেসিপি : বাংলাদেশি রেসিপি

 

সোনার হরিণ (চার)

সোনার হরিণ (চার)


ফাতিমা মারিয়াম


মালা অতি দরিদ্র ঘরের মেয়ে। অসম্ভব রূপবতী। ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড়। তার দরিদ্র পিতা সব জেনেশুনেই মেয়েকে এখানে বিয়ে দিলেন। ঢাকায় জামাইয়ের পরিবারের নিজস্ব বাড়ি আছে। শফিক যদিও খালার পরিবারেই মানুষ তবুও পরিবারের সবাই তাকে এই পরিবারের একজন হিসেবেই গণ্য করে। তাই বেকার হওয়া সত্ত্বেও মালার বাবা বিনা বাক্যব্যয়ে মেয়েকে শফিকের কাছে বিয়ে দেন। পরিবারের অবস্থা ভালো। এখানে মেয়ে খেয়ে পরে সুখে থাকতে পারবে।

আগের বউকে এরা কখনোই মেনে নেবে না। তাই মালাই হবে পরিবারে শফিকের স্বীকৃত বউ। আর তাছাড়াও আগের বউ যেহেতু নিজেই চাকুরী করে শফিক পরবর্তীতে যা-ই রোজগার করুক না কেন ওদিকে বেশি কিছু দিতে হবেনা। এসব কিছু ভেবেই তিনি এই ঘরে মালাকে বিয়ে দিলেন। মালাও পরিবারের সিদ্ধান্ত চুপচাপ মেনে নিলো। আর মেনে না নিয়েই বা করবে কী? সীমাহীন দারিদ্র্য তাদের সবাইকে এই পথে আসতে বাধ্য করেছে।

বিয়ের প্রায় এক/দেড় মাস পরে মালা শ্বশুরবাড়িতে আসলো। এদিকে শর্ত অনুযায়ী পরিবারের পক্ষ থেকে শফিককে ব্যবসা করার জন্য টাকা দেয়া হল। ঐ টাকা দিয়ে সে ছোট একটি রেস্টুরেন্ট দিলো। ব্যবসা মোটামুটি চলছে।

শফিকের দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনাটা রীতা প্রথমে টের পায়নি। মালা ঢাকা আসার আগেই তার কানে কিছু কিছু কথা এসেছিল। কিন্তু সে বিশ্বাস করেনি। শফিকের কাছে জানতে চাইলে সে সবকিছু অস্বীকার করলো। রীতাও তাই বিশ্বাস করে।

কিন্তু মালা ঢাকায় আসার পর এক কান দুই কান হতে হতে রীতার কানে আবার কথাটা আসে। এবার অনেক প্রত্যক্ষদর্শীও সাক্ষী দিলো। প্রতিবেশীদের অনেকেই মালাকে দেখে এসে রীতার কাছে বলে দেয়। রীতা নিজেও কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করে।

অবশেষে সে নিশ্চিত হয়ে শফিককে জিজ্ঞাসা করলো। এবার সে সব কিছু স্বীকার করলো। রীতা একেবারেই ভেঙ্গে পড়ে। খুব কান্নাকাটি করতে থাকে। মা, ভাবী এবং প্রতিবেশীরা তাকে এসময় বুঝায়, ধৈর্য ধারণ করতে বলে। তার শারীরিক অবস্থা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সে চুপ করে যায়।

কিছুদিন পরে রীতা শফিককে সাথে নিয়ে ঐ বাসায় গিয়েছে মালার সাথে দেখা করতে। মালার সাথে কথাবার্তা বলেছে। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে। কারণ তার ধারণা ছিল সে যদি মালাকে সহজভাবে গ্রহণ করে নেয়, তবে শফিকসহ অন্যদের মন জয় করা তার জন্য সহজ হবে। তার বোকামি ও ভুলের কারণে আজ ছেলেটি পিতৃ-পরিচয়-হীন! তাই পরবর্তী সন্তান যেন এ সমস্যায় না পড়ে এজন্য সে আজ মনে অনেক কষ্ট চেপে রেখে এই ধরণের সামাজিকতা করে যাচ্ছে!

শফিক প্রায়ই আসে। তার খোঁজ খবর নেয়। এটা ওটা কিনে দেয়।

দিন যায়……।

কিছুদিন পরে রীতার একটি ছেলে হল। ছেলে হওয়ায় শফিক বেশ খুশী। রীতাও খুশী… রীতার শ্বশুর শাশুড়ি সহ সবাই নিয়মিত রীতা ও তার পুত্রকে দেখতে আসে। এমনকি স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সবার মন রক্ষা করতে মালাও কয়েকবার এসেছে।

দেখতে দেখতে ছেলের বয়স কয়েকমাস হয়ে গেছে। এবার রীতা আলাদা বাসা নিলো। সংসার এখন বড় হয়েছে। বাবার বাসায় আর কত থাকা যায়! যদিও বাসার কেউ তাকে কখনই এ ব্যাপারে কিছুই বলেনি, তবুও সে নিজ সিদ্ধান্তেই বাসা নিলো।

বাবার বাসার কাছাকাছি বাসা ভাড়া করেছে। যেহেতু সে সারাদিন বাইরে থাকে তাই সংসার ও ছেলের দেখাশোনা করার জন্য দুঃসম্পর্কের এক ফুফু শাশুড়িকে রীতা নিয়ে এলো। রান্নাবান্না, ছেলেদের দেখাশোনা, সংসারের আর সব কাজ ফুফু করে।

সংসারে খরচ এখন অনেক বেড়েছে। শফিক সহযোগিতা করে, রীতার বেতনও এখন আগের চাইতে বেশি। সংসার বেশ ভালোই চলছে।

প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনরা বিপদে আপদে তাকে ডাকে। রাতবিরেতে কারো কোন সমস্যা হলে সবার আগে রীতাকে খবর দেয়। সে ছুটে যায়! গর্ভবতী মায়েদেরকে গর্ভকালীন পুরো সময় সে দেখাশোনা করে। কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, কোন ডাক্তার ভালো, কোথায় কি সুবিধা আছে এসব ব্যাপারে সে পরামর্শ দেয়। এর বিনিময়ে সবাই তাকে পারিশ্রমিক দেয়।
দিন যাচ্ছে……।
শ্বশুর বাড়ীর যে কোন কারও অসুখবিসুখেই সে ছুটে যায়। ফলে দিনদিন ওখানেও তার কদর বাড়ছে। রীতার ছেলের বয়স যখন এক/দেড় বছর তখন সে জানতে পারল মালার বাচ্চা হবে। পুরো সময়টা সে মালাকে দেখেশুনে রাখল। যখনই সময় পায় ঐ বাসায় গিয়ে মালাকে দেখে আসে। বাচ্চা হওয়ার সময় মালাকে সে তার হাসপাতালে নিয়ে গেল। মালার একটি ছেলে হল।

মালার ছেলের বয়স যখন কয়েকমাস তখন অশান্তি শুরু করলো মালা।

সে দেখছে রীতা তার সংসার বেশ গুছিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সে এখনও খালা শাশুড়ির পরিবারের অধীনে। উনাদের সাথে মাঝে মধ্যে একটু আধটু মন কষাকষি হয়। দুই চারটি কটু কথাও হয়। কেউ কাউকে ছাড় দেয়না। মাঝে মাঝে খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে ঘরের সবার সাথে এমন কি স্বামীর সাথেও তুলকালাম কাণ্ড করে।

দিনদিন ঝগড়া ঝাটি বেড়েই চলেছে। এখন তার একটাই দাবী-তাকে আলাদা বাসা ভাড়া করে আলাদা সংসারে রাখতে হবে। পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিলো তখন শফিক বাধ্য হল মালাকে আলাদা সংসার করে দিতে।

চলবে..

 

মা হওয়ার ছয় মাস পর নিয়মিত ব্যায়াম করে ফিটনেস ধরে রাখা সম্ভব

মা হওয়ার ছয় মাস পর নিয়মিত ব্যায়াম করে ফিটনেস ধরে রাখা সম্ভব


স্বাস্থ্যকথা


চার মাস আগেই প্রথম মা হয়েছেন মন্টি দে। একটি বেসরকারি কোম্পানীতে চাকরি করেন মন্টি। আর মাত্র এক মাস পরেই মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে যোগ দিতে হবে চাকরিতে। কিন্তু এই কদিনেই বেশ মুটিয়ে গেছে মন্টি। আয়নাতে নিজের চেহারা যেন নিজেই চিনতে পারছেনা। মূলত মা হওয়ার পর থেকে বেশ শারীরিক পরিবর্তন হয়েছে তার। বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন মন্টি। কারন চাকরীতে তাকে বেশ দৌঁড়াতে হয়। আর শরীর ফিট না থাকলে কি করে হয়। অনেক ভেবেও কী করা যায় বুঝতে পারছেন না মন্টি। শেষ পর্যন্ত শরণাপন্ন হলেন তারই স্কুল বান্ধবী ডা. শর্মিলার। সব শুনে ডাক্তার পরামর্শ দিলেন আবার ব্যায়াম শুরু করার।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. নুরানী নিরু বলেন, মা হওয়ার পর আমরা ধরেই নিই যে আমাদের শারীরিক ফিটনেস শেষ। আমরা আর আগের মত সুন্দর হতে পারব না। পাব না চেহারার সেই সৌন্দর্য্য। কিন্তু আগের সেই শারীরিক সৌন্দর্য্য ফিরে পাওয়া খুব কষ্টের কিছু না। এজন্য দরকার দৃঢ় মনোবল আর আত্মবিশ্বাস।
তিনি বলেন, মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে যেকোন মা’ই শারীরিকভাব্ওে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। মা হওয়ার পরবর্তী শারীরিক নাজুক অবস্থা থেকে পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লেগে যেতে পারে। মূলত বড় হওয়া জরায়ু ও দুর্বল হয়ে পড়া পেলভিক মাংসপেশিগুলো আগের অবস্থানে ফিরে আসে ছয় সপ্তাহের মধ্যেই। শুরু থেকেই পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করলে প্রস্রাব ধরে রাখার সমস্যা বা তলপেটের পেশির দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা যায়। তবে পুরোদমে ব্যায়াম শুরু করা উচিত ছয় মাস পর থেকে। আর বুকের দুধ খাওয়ানোর কারণে প্রথম ছয় মাস খুব বেশি ডায়েট না করাই ভালো।
প্রায় একই ধরনের কথা বলেন পিটিআরসি রিহ্যাব অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারের পরামর্শক শায়লা। তাঁর সেন্টারে আজকাল অনেক মা হারিয়ে ফেলা ফিটনেস ও ফিগার ফিরে পেতে নানান সেশনে আসছেন। এ ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি অনেক পাল্টেছে। তবে মা হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হাঁটাচলা শুরু করলেও ছয় মাস পর্যন্ত কোনো ভারী ব্যায়াম না করাই উচিত, বিশেষ করে যদি সিজারিয়ান হয়ে থাকে। ছয় মাস পর থেকে বিশেষজ্ঞের অধীন নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে আগের ওজন ও ফিগার পাওয়া সম্ভব। কেবল ওজন কমানোটাই মুখ্য নয়, মা হওয়ার পর পেট ও পেলভিসের পেশিগুলো শিথিল বা লুজ হয়ে পড়ে, এর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম লাগে। ফিট থাকার জন্য মা হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর থেকে প্রতিদিন ৪০ মিনিট করে হাঁটা ভালো।
ফিট থাকতে খাবারের ভূমিকা আছে। ফিটনেস বা স্ট্রেংথ কেবল শরীরের ব্যাপার নয়, এটা মনেরও। অনেক মেয়েই মা হওয়ার পর মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। অনেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কাজে ফিরে যান বটে, কিন্তু সেই এনার্জি যেন হারিয়ে ফেলেন।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সিফাত ই সাঈদ বলেন, বেশির ভাগ নতুন মায়েরই পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন হয়। মনে হয় যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। এ বিষয়ে তাঁর পরামর্শ হলো, শরীর ও মন পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসতে ৬ থেকে ৯ মাস লাগবে, রাতারাতি আগের মতো হওয়া যাবে না। এটা আগেই মেনে নিতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। নিজের জন্য সামান্য হলেও আলাদা একটু সময় বের করতে হবে। যে সময় আপনি নিজের যতœ নেবেন, ব্যায়াম করবেন বা হাঁটবেন, চাইলে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দেবেন, একটা ভালো ছবি দেখবেন বা গান শুনবেন। পরিবারের অন্যরা নবজাতকের দায়িত্ব দিনে দু–একবার না নিলে এটা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে স্বামী সবচেয়ে ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন। সুত্রঃ (বাসস)।

 

সোনার হরিণ (তিন)

সোনার হরিণ (তিন)


ফাতিমা মারিয়াম


এবার রীতার জীবনের আরেকটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল।

শায়লা রীতার  এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। একই পাড়ায় বাসা। ছোটবেলা থেকেই দুজনার গলায় গলায় ভাব। দুজনে সব সময়ই পরস্পরের বাসায় যাতায়াত করত। শায়লার পরিবারের সবাই রীতা ও তার মেয়ের প্রতি খুব সহানুভূতিশীল ছিল। সবসময়ই তারা রীতা ও তার ছেলের খোঁজখবর নিত।

শায়লারা দুই বোন ও পাঁচ ভাই। বাবা মা সহ বেশ বড় পরিবার।   শায়লার খালাতো ভাই  শফিক ছোটবেলা থেকেই শায়লাদের পরিবারেই বড় হয়েছে। তার মা বাবা নেই। মাতৃ-পিতৃহীন শফিক খালার পরিবারে বেশ আদর যত্নেই অন্য ভাই বোনদের মত দিন যাপন করছে।    এইচএসসি পাশ করে আর পড়াশুনা করেনি। আপাতত বেকার জীবন যাপন করছে।

শফিক সবসময়ই রীতার কাছে আনিসের কথা জানতে চাইত। তার ছেলের কথা জিজ্ঞেস করত। রীতার জীবনে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা নিয়ে শফিক খুব আফসোস করত। সহানুভূতিও দেখাত। রীতাও শফিককে বড়ভাই মনে করেই সব কিছুই বলত। একে তো বান্ধবীর ভাই তার উপর প্রতিবেশী!!!

এভাবে কুশল বিনিময় করার ফাঁকে ধীরে ধীরে তারা কখন যে একে অপরের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে তা তারা নিজেরাও জানেনা। যখন বুঝতে পারল তখন তাদের আর কিছুই করার থাকল না। রীতার বয়স কম। আনিসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে সে হতাশ হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েক বছর কেটে গেল…… আনিস তার সাথে কোনরূপ যোগাযোগও করছেনা। ফলে যা হওয়ার তাই হল!

এরপর বেশ কয়েকমাস কেটে গেছে।

শফিকের বা রীতার বাসার কেউ বিষয়টি প্রথমে টের পায়নি। ধীরেধীরে ওদের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে প্রথমে পরিবারে ও পরে এলাকায় গুঞ্জন, কানাঘুষা শুরু হয়ে গেল। এবার ওরা দুজনেই সবার কাছে ওদের সম্পর্কের বিষয়টি পরিষ্কার করে দিল।

তারা সবাইকে জানাল যে, যখন তাদের মাঝে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তখন তারা উভয়েই সিদ্ধান্ত নেয় যে- বিয়ে করবে। যেহেতু পরিবার বা সমাজ তাদের এই সম্পর্ক মেনে নেবে না তাই তারা গোপনে বিয়ে করেছে। অবশ্য তার আগে রীতা সব নিয়ম মেনেই আইনের মাধ্যমে আনিসকে তালাক দিয়েছে।

রীতার পরিবার এই বিয়ে মেনে নিলেও শফিকের পরিবার কিছুতেই এই বিয়ে মেনে নিলো না। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে রীতাকে অপমান অপদস্থ করলো, ভীষণভাবে নাজেহাল করলো। তারা সুযোগ পেলেই রীতার বাবার বাসায় এসে রীতাকে কটু কথা শোনাতে লাগলো। রীতা তার অবস্থানগত কারণে সব কিছুই চুপচাপ হজম করে যায়। শফিকও তাকে ধৈর্য ধরতে বলে।

শফিকের পরিবার রীতাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য শফিককে চাপ দিতে থাকলো। এমনকি তাকে পরিবার  থেকে বের করে দেয়ার  করার হুমকিও দিল। কিন্তু সকল চাপের মুখে শফিক অনড় থাকলো। এক পর্যায়ে তারা হাল ছেড়ে দিলো। কিন্তু মনেমনে নতুন করে পরিকল্পনা করতে থাকে। এভাবে টানাহ্যাঁচড়ায় প্রায় দুই বছর কেটে গেল।

পরিস্থিতি এখন আগের চাইতে কিছুটা স্বাভাবিক। যদিও শফিকদের বাসার কেউ রীতাকে মেনে নেয়নি, তবুও এখন আর ঐরকম দুর্ব্যবহার কেউ করেনা। কারণ রীতা মা হতে চলেছে। সারাদিন হাসপাতালে থাকে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে এসে ছেলেকে নিয়ে সময় কাটায়। দিন মোটামুটি কাটছে।

শফিক এখনও বেকার। ওর হাতখরচ রীতাই দেয়। পরিবার থেকে শফিক কোন সহযোগিতাই পায়না। বরঞ্চ পায় গঞ্জনা আর তিরস্কার। ওর বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে বাসার সবাই  নতুন এক ফন্দি করলো।

তারা শফিককে জানাল- ‘তুমি যদি আমাদের কথা মেনে নাও। তাহলে তোমাকে আমরা ব্যবসা করার টাকা দিব। এখন যেহেতু রীতার বাচ্চা হবে তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা এখন আর আমরা বলছিনা…..ওর জায়গায় ও থাকুক। ওকে আমরা এই পরিবারে কখনই স্থান দেব না। তোমাকে আমরা আবার বিয়ে করাবো…… মেয়ে আমাদের দেখাই আছে। শুধু তোমার মতের অপেক্ষা করছি। তুমি ভেবেচিন্তে আমাদের জানাও।‘

শফিক বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। একদিকে রীতা মা হবে। অন্যদিকে সে বেকার। সামনে খরচ অনেক বাড়বে। অতি দ্রুত তার কিছু একটা কাজ করা উচিত। চাকুরী করার চেষ্টা করেও সে ব্যর্থ হয়েছে। সে দিশাহারা হয়ে গেল। এমন একটা বিষয় যে সে কারো সাথে বুদ্ধি পরামর্শও করতে পারছেনা। বেকারত্বের যন্ত্রণা আর কত সহ্য করা যায়!!! অবশেষে সে পরিবারের সিদ্ধান্তের কাছেই নতি স্বীকার করলো।

রীতাকে মিথ্যা কিছু একটা বলে সে খালুর  সাথে  গ্রামের বাড়ি  চলে গেল। সেখানে গিয়ে সে পরিবারের পছন্দ করা পাত্রী মালাকে বিয়ে করলো। বিয়ের পর সেখানে কয়েকদিন থেকে শফিক ঢাকা চলে আসলো। যেহেতু শফিক ও রীতার বাসা একই পাড়ায়, তাই মালাকে এত তাড়াতাড়ি ঢাকা আনল না।

চলবে…

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৫

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৫


আফরোজা হাসান


বাইরে বেড়োতেই ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা এসে লাগলো গায়ে। কাঁপন ধরে গেলো কিন্তু ভীষণ ভালো লাগলো শাবাবের। ঠাণ্ডা পছন্দ করে সে ভীষণ। কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমানো তার অনেকগুলো শখের মধ্যে একটা। এবং বেশ উপরের দিকেই এটার অবস্থান। মাত্র আলো ফুটতে শুরু করেছে। চারিদিকে হালকা কুয়াশার চাদর। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে মনেমনে বলল শাবাব, চমৎকার সাজিয়েছে ভাইয়া-ভাবী তাদের ছোট্ট সংসার। ছবির মত সুন্দর বাংলোটা। একপাশে নানান ধরণের ফুল, পাতাবাহারের গাছ, আরেক পাশে দেশি শাক-সব্জীর বাগান। তবে সবচেয়ে সুন্দর হচ্ছে বারান্দায় দাঁড়িয়েই সমুদ্রের অনেকটা দেখা যায়। নাহ! মাহামকে নিয়ে বাইরে আসা উচিত ছিলো। প্রকৃতির একটু কাব্যিক বর্ণনা শোনা যেত।

সুপ্রভাত! শব্দটি কানে আসতেই মনে কাঁপন ধরে গেলো শাবাবের। এই কণ্ঠের অধিকারীর তো এখন এখানে থাকার কথা না। ভুল শুনছে নাতো? ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালো সে। হাসিমুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে আরিফী। মুহুর্তে নিজেকে সামলে নিলো শাবাব। আবেগের উর্মিমেলাকে যতটুকু সম্ভব হজম করে গম্ভীর কণ্ঠে সালাম দিলো।

হাসতে হাসতে সালামের জবাব দিলো আরিফী। অবাক হয়েছো খুব আমাকে দেখে? জানতে চাইলো।

অবাক হবার মত কিছু ঘটলে মানুষ অবাক হবে সেটাই কি স্বাভাবিক না?

আরিফী হেসে বলল, তুমি কি এখনো রেগে আছো আমার উপর?

আমি বুঝি না রাগ করার মত কাজ করার পর মানুষ আবার প্রশ্ন কেন করে রেগে আছে কিনা? এর সাইকোলজিক্যাল ব্যাখ্যাটা কি?

চিন্তিত কণ্ঠে আরিফী বলল, সত্যিই আমার জানা নেই। এই ধরণের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে জানলে আমি সত্যিই সাইকোলজি নিয়ে পড়তাম।

ভেরি ফানি।

হেসে ফেললো আরিফী। আরো কিছুটা কাছে সরে এলো শাবাবের। অজুহাতের স্বরে বলল, আমার সত্যি ইচ্ছে ছিলো ঈদে দেশে যাবার। কিন্তু কাজের এত প্রেশার ছিল সময় বের করতে পারিনি। তাছাড়া আমি দেশে গেলে ভাইয়ার যাওয়া হতো না। মাহাম অসুস্থ্য ছিল তাই আমার কাছে ভাইয়ার যাওয়াটাকেই বেশি জরুরি মনে হয়েছিলো। এখনো রাগ করে থাকবে?

না রাগের পর্ব শেষ। এখন শাস্তির পর্ব শুরু।

শাস্তি? আবার শাস্তি কেন?

তোমার মাথার ঢিলা স্ক্রু টাইট করার জন্য।

আচ্ছা দাও শাস্তি। তোমার সব শাস্তি মাথা পেতে নেবো।
মাথা পেতে না নিয়ে উপায় আছে নাকি তোমার? বাড়ি দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেবো না একদম।

এই সময় তো শাবাবকে ডাকতে ডাকতে বাইরে বেরিয়ে এলো মাহাম। আরিফী আর শাবাবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল, সরি। আমি আসলে শাবাবকে রুমে না দেখে খুঁজতে এসেছিলাম। বাবা বলছেন আজ আমরা সবাই বীচে নাস্তা করবো। শুনেই তো স্বভাব সুলভ লাফিয়ে উঠলো শাবাব।

আধ ঘণ্টা পরেই তো পুরো পরিবার নাস্তার জিনিসপত্র নিয়ে বীচে রওনা করলো। পরিবারের সবাই মিলে হাসি-আনন্দ-গল্পের মধ্যে দিয়ে স্বাগত জানালো নতুন আরেকটি দিনকে।
ভাতিজা মিহিরকে বীচে ছুটাছুটি করতে শুরু করলে তার বডিগার্ডের দায়িত্ব দেয়া হলো আরিফীকে। শাবাবের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো সে। ভাবী আর মায়ের সাথে গল্পগুজবে মশগুল শাবাব। ফিরেও তাকালো না আরিফীর দিকে। ফাইয়াজ সাহেব ছেলের সাথে ব্যবসা বিষয়ক আলোচনাতে ব্যস্ত। সবার উপর একবার চোখ ঘুরিয়ে মাহামের উপর আটকে গেলো আরিফীর দৃষ্টি। কফির মগ আর বই নিয়ে একপাশে নিজের জগতে মগ্ন মাহাম। এগিয়ে গিয়ে বসলো মাহামের পাশে।

কি এখনো পটাতে পারোনি তোমার বৌকে? হাসিমুখে জানতে চাইলো মাহাম। আমি তোমার অপেক্ষাই করছিলাম ভাইয়া। এই নাও লটকন।

লটকন দিয়ে কি করবো?

মাহাম হেসে বলল, তোমার বৌ আমার কাছে তোমাকে জব্দ করার জন্য আইডিয়া চেয়েছিলো। আমি বলেছি এমন কোন খাবার এনে দিতে বলো যেটা ইউরোপে পাওয়া অসম্ভব। যেমন ধরো লটকন। তবে আমি যে সাথে করে ভাবীর জন্য লটকন নিয়ে এসেছি এটা তোমার বৌ জানা নেই।

হাসতে হাসতে মাহামের হাত থেকে লটকন নিয়ে আরিফী বলল, তুই আসলেই আমাদের সবার জীবনে নূর হয়ে এসেছিস বুঝেছিস?

হুম, বুঝলাম। ঐ যে তোমার হুর আসছে। লটকন খাইয়ে বশ করো হুরকে। আমি যাই।

শাবাব কাছে আসতেই চোখ মুখ করুণ করে ফেললো আরিফী। ব্যথিত কণ্ঠে বলল, এভাবে আর কতক্ষণ চলবে শাবাব? সবকিছুকে টেনে ইলাস্টিকের মতো লম্বা করতে চাওয়া কিন্তু অনুচিত।

খবরদার আমাকে লেকচার শোনানোর চেষ্টা করবে না।

আচ্ছা কি করতে হবে আমাকে সেটা বলে দাও তুমি।

আমার লটকন খেতে ইচ্ছে করছে এনে দাও।

এই না হলে মনের মিল। জানো আমিও এমনটাই চাচ্ছিলাম।
মানে?

মানে প্রেমিক-প্রেমিকারা বাদাম ছুলে খেতে খেতে গল্প করে, আমার ইচ্ছে করছিলো আমরা দুজন লটকন ছুলে খেতে খেতে গল্প করবো। ইম্যাজিন করো তুমি আমি সমুদ্রের তীর ঘেঁষে হাঁটছি আর একে অন্যেকে লটকন ছুলে খাওয়াচ্ছি।
শাবাবকে বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরিফী বলল, আচ্ছা বাদ দাও ইম্যাজিন করতে হবে না। এত নাও লটকন চলো প্র্যাক্টিকাল করি।

একবার লটকন আরেকবার আরিফীর দিকে তাকিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে শাবাব বলল, মাহাম ইউ বিশ্বাসঘাতিনী! মির জাফরের খালাম্মা! খুন করবো তোকে আমি।

শাবাবকে তেড়ে আসতে দেখে বাবা বাঁচাও বলে চিৎকার করতে করতে ছুট লাগালো মাহাম।

চলবে…

 

সোনার হরিণ (দুই)

সোনার হরিণ (দুই)


ফাতিমা মারিয়াম


কয়েকদিনের মধ্যেই বিয়ের বিষয়টি বাসায় জানাজানি হয়ে গেল। মা, ভাবী এবং অন্যরা আনিসের কাছে তার পরবর্তী পদক্ষেপ কি তা জানতে চাইলো। সে বলল, ‘ আর কিছুদিন পরে আমি আমার পরিবারে এই বিষয়টি জানাব। ততদিন আমাকে সময় দিন।’ সবাই আনিসের কথাই মেনে নিলো।

আনিস এখন প্রায়ই রীতাদের বাসায় আসে। পরিবারের অন্যরাও যেহেতু বিয়েটা মেনে নিয়েছে তাই ওদের আর কোন সমস্যাই রইলো না। নিশ্চিন্তভাবে দুজনে ঘুরে ফিরে বেড়াতে লাগলো।

কয়েক মাস হল বিয়ে হয়েছে। কিন্তু আনিস তার পরিবারকে এখনও কিছু জানায়নি। রীতাও চাইছে বিষয়টি পারিবারিক ভাবে সমাধান হোক। এদিকে সে এখন নিজের ভিতরে আরেকজনের অস্তিত্ব টের পাচ্ছে। এই অবস্থায় রীতাদের পরিবার থেকেও আনিসকে বলা হচ্ছে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে। আনিস ওদের কাছে আরও সময় চায়। এভাবে সে বারবার একই কথা বলে সময় পার করতে থাকে। কিন্তু তার পরিবারকে জানানোর কোন উদ্যোগই নেয় না। ফলে রীতার পরিবারের সবাই ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে যায়।

এই পর্যায়ে রীতার বড়ভাই এবং কয়েকজন আত্মীয় মিলে সিদ্ধান্ত নেয় এবার আনিস এই বাসায় আসলে তারা ওকে কড়াকড়ি ভাবে বলবে যেন সামাজিকভাবে রীতাকে পরিবারের বউ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যবস্থা করে। আনিস আসলো এবং যথারীতি সময় চাইলো। এক পর্যায়ে বড়ভাই এবং আরও দু একজনের সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হল। রীতা এসে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে আনিসকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে গেল।

সেই রাতে পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিলো আনিসকে ভোরবেলা কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তারা আনিসকে হাত পা বেঁধে পিটানোর পরিকল্পনা করেছিল। তখন রীতা ঘুমে থাকবে সে বাধা দিতে পারবেনা। শাস্তি দেয়ার পর আনিসও ভয় পেয়ে রীতার ব্যাপারে ইতিবাচক কিছু চিন্তা করবে। তারা এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রীতা এবং তার অনাগত সন্তানের ভালোর জন্যই।

রীতা কিভাবে যেন  এই পরিকল্পনার কথা জেনে যায়। সে ভোর হওয়ার অনেক আগেই স্বামীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিলো এবং যত দ্রুত সম্ভব এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বলল। আনিসকে বিদায় দিয়ে সে আবার শুয়ে রইলো যাতে কেউ টের না পায় যে আনিস চলে গেছে এবং আনিস যাতে আরও দূরে যাওয়ার কিছুটা সুযোগ পায়!!!

পরিকল্পনা মাফিক সবাই ভোরবেলা রীতার রুমের সামনে আসলো। দরজায় শব্দ শুনে রীতা উঠে দরজা খুলে দিলো। বড়ভাই ওর কাছে জানতে চাইলেন, ‘আনিস কোথায়?’ সে মিথ্যা জবাব দিল, ‘ আমি জানিনা। আমি ঘুম ভাঙার পর থেকেই ওকে দেখতে পাচ্ছিনা।‘

সবাই চারপাশে বহু খোঁজাখুঁজি করলো। রীতা কাউকে সত্যি কথাটা তখনও জানায়নি। সে চুপচাপ রইলো। মনেমনে তার দৃঢ় বিশ্বাস আনিস তার কাছে আবার ফিরে আসবে। সন্তান জন্মাবার আগেই তাকে সসম্মানে ঘরে তুলে নেবে!

কিন্তু ওটাই ছিল আনিসের রীতাদের বাসায় সর্বশেষ আসা।

দিন যায়……মাস যায়……রীতা অপেক্ষা করে…… আনিস আসবে।

কিন্তু সে আর আসেনা। তার ভাই ও অন্য আত্মীয়রা চেষ্টা করেছে আনিসকে খুঁজে বের করতে। কিন্তু সেই যুগে তো আর এত উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলনা। ফলে আনিস খুব সহজেই নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পেরেছিল।

যথাসময়ে রীতা এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিলো। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রীতা তার সব দুঃখ অপমান ভুলে থাকার চেষ্টা করে। তার মনে আশা…… আনিস একদিন এসে তাদের মা ছেলেকে ওর বাড়ি নিয়ে যাবে।

দিনদিন ছেলে  বড় হচ্ছে। তার খরচ বাড়ছে। বাচ্চার জন্য এটা ওটা কিনতে হয়। নিজেরও কিছু ব্যক্তিগত খরচ আছে। বাবা আর বড়ভাইয়ের কাছে কত আর হাত পাতা যায়!!! সে ভালোভাবেই বুঝতে পারছে তার ও তার ছেলের এইসব খরচের ব্যবস্থা তাকেই করতে হবে। আনিস আজ পর্যন্ত কোনরূপ যোগাযোগ করেনি। নিরুপায় হয়ে ছেলের জন্মের কয়েকমাস পরে রীতা চাকুরীর সন্ধান করতে লাগলো।

কিন্তু তার এই শিক্ষাগত যোগ্যতায় কোন কাজ পাওয়া তার জন্য কঠিন হয়ে গেল। অনেক চেষ্টার পর অবশেষে পরিচিত একজনের মাধ্যমে একটি হাসপাতালে আয়া  হিসেবে সে তার কর্মজীবন শুরু করলো। সেই যুগে একটি মেয়ের জন্য আয়ার চাকুরী করা যে কত কঠিন ছিল তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন।

চাকুরীর শুরুতে পরিবার থেকে তাকে বাধা দেয়া হয়। তার অভিভাবকরা তাকে জানায় যে তার ও তার ছেলের সব ভরণপোষণ পরিবার থেকেই করা হবে। সে যেন এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে। ঐ চাকুরীতে সে যেন আর না যায়! কিন্তু সে এ ব্যাপারে অনড় থাকল। কোন বাধাই সে মানল না। তাই ঘরের মানুষরা এই ব্যাপারে হাল ছেড়ে দেয়।

কিন্তু সমস্যা শুরু হয় অন্য জায়গায়। প্রতিবেশীরা তার এই চাকুরী করাটা কোনভাবেই মানতে পারছিলনা। ফলে তাকে অনেকেই অনেকভাবে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। পাড়ার কয়েকজন সিনিয়র ভাই তার হাসপাতালে যাওয়া আসার সময়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাকে উত্যক্ত করত। নানা রকম কটু ও অশ্লীল কথা বলতো। সে কোন কিছুর পরোয়া না করে হাসপাতালে যেতে থাকে। একসময়ে তারাও হাল ছেড়ে দেয়।

পরিবার ও সমাজের সকল বাধাকে উপেক্ষা করে রীতা দৃঢ় মনোবল নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকলো। ওর ছেলের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে বড় ভাবীর উপর দিয়ে দিলো। এছাড়া তার পক্ষে কোনভাবেই চাকুরীটা করা সম্ভব হতনা। বড় ভাবিও নিজ সন্তানের মত করেই ছেলেটিকে লালনপালন করতে থাকে।

রীতার দিন কেটে যাচ্ছে। সে প্রতিদিন ভোরবেলা হাসপাতালে যায়……আর সন্ধ্যাবেলা বাসায় ফেরে। বাবার বাসায় থাকে। ফলে থাকা খাওয়ার জন্য তার কোন খরচ নেই। যা বেতন পায় তা দিয়ে মা ও ছেলের অন্যান্য খরচ চলে যায়। ছোট ভাইবোন ও পরিবারের অন্য বাচ্চাদের শখের জিনিসগুলো কিনে দেয়। বাহ্যিক ভাবে দিন ভালোই কেটে যাচ্ছে………।

ছেলে  দিনদিন বড় হচ্ছে। রীতা আবারও আনিসের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। কিন্তু সে এবারও ব্যর্থ হয়। মানুষটা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, শুভাকাঙ্ক্ষী সকলের শত প্রশ্নের সামনে সে বোবা হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে অনেকের কটু কথাও হজম করতে হয়। চোখের পানি আর দীর্ঘশ্বাস সম্বল করে দেখতে দেখতে ৫/৬ বছর কেটে গেল।

চলবে…

 

কিন্তু, এত কিছুর সময় কোথায়?

কিন্তু, এত কিছুর সময় কোথায়?


কানিজ ফাতিমা


Parenting নিয়ে কথা বলতে গিয়ে যে প্রশ্নটি সবথেকে বেশী শুনি তা হলো- “বুঝলাম তো এসব করা খুবই জরুরী….কিন্তু এত কিছু করার সময় কোথায়?”
বাবা- মা হওয়া একটি প্রাকৃতিক নিয়ম ৷ প্রাকৃতিক নিয়মে প্রতিটি প্রানীই সন্তান লাভ করে৷ তাই বাবা – মা হওয়ার মধ্যে আলাদা কোনো কৃতিত্ব নেই৷ বাবা-মা হওয়ার মধ্যে তৃপ্তি বা মানসিক সুখ আছে; কিন্তু কোনো কৃতিত্ব নেই৷ কৃতিত্ব আছে “ভালো বাবা-মা” হওয়ার মধ্যে৷ আর ভালো বাবা-মা হতে হলে তিনটি জিনস অবশ্যই লাগবে-
১. parenting এর জ্ঞান
২. যথেষ্ট সময় ও
৩. ধৈর্য

এই তিনটি প্রয়োজনের দ্বিতীয় প্রয়োজনটা নিয়েই প্রশ্ন সবথেকে বেশী- এত কিছুর সময় কোথায়?

আসুন, আমরা প্রত্যেকে আমাদের নিজ নিজ জীবনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলোর তালিকা করি-
যেমন ধরুন, আমাদের তালিকাটা হয়ত এমন হবে-
১. সন্তান মানুষ করা
২. সুন্দর পারিবারিক পরিবেশ বজায় রাখা
৩. চাকরি বা ব্যবসায় সফলতা অর্জন
অনেকে হয়ত লিখবেন –
দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের অনুশাসন মেনে চলা …ইত্যাদি
যাদের ছেলেমেয়ে আছে তাদের প্রায় প্রত্যেকেই সন্তান মানুষ করাকে ১ বা ২ নাম্বারে রাখবেন এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস৷ এবার প্রশ্ন হলো যে কাজটি আপনার জীবনের ১ বা ২ নাম্বার গুরুত্বপূর্ণ কাজ তার জন্য আপনার সময় হবে না? একটু চিন্তা করে দেখুনতো, আপনি কি আপনার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি পাশে ফেলে রেখে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেশী সময় দিচ্ছেন? আরো নির্দিষ্ট করে বললে বলা যায়- গত তিন দিনে আপনি কি কি কাজ করেছেন যা না করলেও হত বা কম করলেও হত; যেমন-

১. মার্কেটে ৪০/৫০ টাকা বাচানোর জন্য দোকান দোকান ঘোরা
২. পোশাকটি ঠিক আপনার পসন্দ মত হওয়ার জন্য কাপড়ের দোকান, টেইলার্স , লেইসের দোকান……সহ আরো অনেক স্থানে প্রচুর সময় খরচ
৩. টেলিফোনে আত্বীয় বা বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে লম্বা সময় নিয়ে কথা বলা
৪. মহিলাদের ক্ষেত্রে ভাবীদের সঙ্গে কোন কাপড়ের কত দাম, কোথায় পাওয়া যায় ….জাতীয় বিষয় নিয়ে লম্বা গল্প
৫. পুরুষদের ক্ষেত্রে অপ্র্য়্যজনীয় রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে অহেতুক বিতর্ক
৬. অনুপস্থিত কারো নামে সমালোচনা করে সময় পার করা
৭. কাজের লোকের কাজ নিখুত করানোর জন্য তার পেছন পেছন লেগে থাকা
৮. টিভিতে অপ্রয়োজনীয় সিরিয়াল বা অনুষ্ঠান দেখা
৯. প্রয়োজনের অতিরিক্ত রান্না বান্না করা
১০. নিজে ও নিজের ঘর ফিট রাখতে অতিরিক্ত সময় খরচ
১১. সামাজিক কাজের নামে বাইরে অতিরিক্ত সময় দেয়া
১২. বেশী বেশী ফোন করা ও বেশী বেশী ফোন রিসিভ করা
১৩. বেশী বেশী দাওয়াত দেয়া ও বেশী বেশী দাওয়াত নেয়া
১৪. ইন্টারনেটে মাত্রাতিরিক্ত সময় দেয়া

খেয়াল করুন, অনেক কাজই আছে জরুরী কিন্তু তা সন্তান লালনপালনের থেকে বেশী জরুরী না৷ যেমন ঘর পরিচ্ছন্ন রাখা ও গুছিয়ে রাখা একটি জরুরী কাজ, কিন্ত অনেকে এটা নিয়ে এতটাই করেন যে সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় সময় থাকে না৷ অথচ এ মাত্রাতিরিক্ত কাজগুলো কমিয়ে খুব সহজেই আপনার সন্তানের সঙ্গে activity বা গল্প করার সময় বের করতে পারেন ৷

না বলতে শেখা –

আমরা অনেকেই জায়গামত ‘না’ বলতে পারিনা৷ লজ্জা পাই বা মনে করি অন্য পক্ষ কি ভাববে৷ এমনটা ভাবার দরকার নেই৷ চিন্তা করুন কোন কাজটি তুলনা মূলক বেশী গুরুত্বপূর্ণ; আর কম গুরুত্বপূর্ণ কাজটিকে না বলে দিন৷ যেমন ধরুন বাচ্চাকে কথা দিয়েছেন কাল তাকে নিয়ে বেড়াতে যাবেন, এমন সময় শ্বশুর বাড়ী থেকে ফোন এলো কাল সেখানে যেতে হবে এক্ষেত্রে অতীব গুরুত্ব পূর্ণ না হলে শুধু লজ্জার খাতিরে ‘হ্যা’ না বলে “না” করে দিন ৷
এটা শুধু বাইরের লোকের সাথেই না, অনেক সময় একেবারে পরিবারের মধ্যেও ঘটে৷ যেমন কাল বাচ্চার পরীক্ষা এমন সময় যদি স্বামী বন্ধুদের দাওয়াত দিতে চায় তবে কারণ বুঝিয়ে তাকে না করে দিন৷
পরিবারের লোকজন যদি প্রতিদিন ৪/৫ রকম রান্না দাবী করে আর এটা যদি আপনার বাচ্চাকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে অসুবিধা সৃষ্টি করে তবে রান্নার রকম কমিয়ে দিন৷

সঠিকভাবে না বলতে পারা একটি বড় গুন৷ ঝগড়া, বিতর্ক না করে বা রূর (Rude) না হয়ে শক্তভাবে “না” বলতে জানা একটি দক্ষতা৷ এটি অর্জন করলে সন্তানের জন্য সময় বের করা সহজ হয়৷ আমাদের চারপাশে অনেক ‘অভিমানী’ মানুষ রয়েছে যারা ‘না’ তে মাইন্ড করেন৷ সেক্ষত্রে ‘না’ মুখে না বলে কৌশলে বুঝিয়ে দেয়া যেতে পারে৷ যেমন কেউ দাওয়াত দিলে সরাসরি ‘না’ না বলে এমনটা বলা যায় “শুক্রবার হলে কেমন হয়?”

মোটকথা ,অপ্রয়োজনীয় কাজ বাদ দেয়া, মাত্রাতিরিক্ত কাজ কমিয়ে দেয়া ও প্রয়োজনে ‘না’ বলার মাধ্যমে আমরা আমাদের সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় সময় বের করে নিতে পারি৷

 

নিজের তৈরি করে নিন নাইট ক্রিম

নিজের তৈরি করে নিন নাইট ক্রিম


ববিতা পারভীন


ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষার্থে ময়েশ্চারাইজার অদ্বিতীয়। বাজারে নানা ব্র্যান্ডের ও বাজেটের ময়েশ্চারাইজার রয়েছে। শুষ্ক ত্বকে তো বটেই তৈলাক্ত ত্বকেও ময়েশ্চারাইজার প্রয়োজন। দিনে ও রাতে আলাদা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো। কেননা রাতের জন্য তৈরি ক্রীম গুলোতে আলাদা কিছু উপদান থাকে, যা সারা রাতে ত্বককে পুষ্টি যোগায় এবং ক্রীম ভেদে কার্যক্রমও আলাদা হয়। আর সাধারণত ডে ক্রিম গুলোর চেয়ে নাইট ক্রীমের দামও পড়ে বেশি, তাই অনেকেই হয়ত আলাদা নাইট ক্রীম ব্যবহার করেন না বা অনেকের ত্বক স্পর্শকাতর হওয়াতে বাজারে প্রচলিত কেমিকেল নির্ভর প্রসাধনীকে ভয়ও পেয়ে থাকেন।

আসুন জেনে নিই ঘরেই নাইট ক্রিম তৈরির পদ্ধতি।

উপকরণঃ

-কাঠবাদাম ১০ টি

পেস্তা বাদাম ১০ টি

– গোলাপ জল

-১ টেবিল চামচ মধু(যাদের ত্বকে মধু স্যুট করেনা তারা মধু দিবেন

-১ টা ভিটামিন ই ক্যাপসুল

-ক্রিম রাখার বক্স

পদ্ধতিঃ

১। কাঠবাদাম গুলোকে সারা রাত দুধ বা গোলাপ জলে ভিজিয়ে রাখুন।

২। পরের দিন সকালে বাদামগুলোকে ছাল হতে আলাদা করে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড বা শিল পাটায় বেটে নিন, খুব মিহি পেস্ট হতে হবে।

৩!কাচা হলুদ ও বেটে নিতে বা ব্লেন্ড করতে হবে।হবে-মেয়ের

৪। এবার পরিষ্কার একটি বাটিতে বাকি সব উপকরণ যেমন মধু, ভিটামিন ই ক্যাপসুল, দিয়ে ভালো করে পেস্ট গুলো মিশিয়ে নিন।

৫। এবার সবগুলো উপকরণ ভালো ভাবে মিশিয়ে যে পাত্রে সংগ্রহ করতে চান সেটাতে রেখে দিন।

৭। পাত্রটিকে প্রথম ২৪ ঘণ্টা ডিপ ফ্রিজে এবং তারপর নরমাল ফ্রিজে রাখুন।এটি ফ্রিজে রেখে ৮/১০ দিন ব্যবহার করা যাবে।

৮। এবার প্রতিদিন রাতে ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ভালো ভাবে পরিষ্কার করে ব্যবহার করুন নিজের তৈরি করা নাইট ক্রীম।

নিয়ম মেনে টানা ২ সপ্তাহ ব্যবহারেই ফলাফল দেখতে পাবেন জাদু।
সবার ত্বক এক নয় অনেকের স্যুট নাও করতে পারে।

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৪

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৪


আফরোজা হাসান


ঘরের এক মাথা থেকে অন্য মাথা পায়চারি করতে করতে গজগজ করছিল শাবাব। বইয়ের সেলফ গোছানোর ফাঁকে ফাঁকে বোনের দিকে তাকাচ্ছিলো আর মিটিমিটি হাসছিল মাহাম। শাবাব তার হাসি দেখলে খবর আছে তাই হাসি চেপে মাহাম বলল, ভাইয়া কাজটা মোটেই ঠিক করেননি। তাহমিনার হলুদের অনুষ্ঠানে যেতে দেয়া উচিত ছিলো তোমাকে। এত কাছের বান্ধবী তোমার।

তুই তো কথাই বলিস না ভাইয়ার চামচি। তুই যদি যেতে রাজী হতি তাহলে ঠিকই ভাইয়া অনুমতি দিয়ে দিতেন। ঝাঁঝের সাথে বললো শাবাব।

আচ্ছা বাদ দাও এসব। যা হবার তা তো হয়েই গিয়েছে। তাছাড়া এসব অনুষ্ঠানে না যাওয়াই ভালো।

তাহমিনার অনুষ্ঠানটি একদম ঘরোয়া পরিবেশে হচ্ছে।

পরিবেশ কেমন সেটা কিন্তু ম্যাটার না শাবাব।

তাহলে ম্যাটারটা কি?

আচ্ছা ধরো পচা, শুকিয়ে যাওয়া ফুল পাতা দিয়ে যদি খুব সুন্দর করে একটা তোড়া বানিয়ে দেই তুমি কি খুশি মনে সেটা নেবে?

ফেনাচ্ছিস কেন? যা বলার সোজাসুজি বল।

মনেআছে বাবা একদিন আমাদেরকে বলেছিলেন, পচা খাবার খুব সুন্দর করে প্যাকেট করে এনে দিলে যেমন আমরা অমৃত ভেবে সেটা খেয়ে ফেলবো না। ঠিক তেমনি শরীয়তে যার অনুমোদন নেই তার উপস্থাপন যেমনই হোক না কেন সেটা সর্বদা বর্জনীয়।

বোনের কথাতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হলেও আর কথা বাড়াল না শাবাব। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, মানুষের শরীরে আঘাত করলে যেমন শাস্তি দেয়া হয়, মনে আঘাত দেবার ব্যাপারেও একই বিধান থাকা উচিত ছিল।

কেন?

একজনকে হাতে মারা আর মানসিকভাবে আহত করার মাঝে কিন্তু খুব বেশি পার্থক্য নেই। উভয় ক্ষেত্রেই মানুষকে কষ্ট দেয়া হয়। দেহের আঘাত দেখা যায় আর মনের আঘাত দেখা যায় না, এই তো শুধু পার্থক্য। প্রচণ্ড অভিমানী কণ্ঠে বললো শাবাব।

তুমি ভাইয়ার কথাতে অনেক কষ্ট পেয়েছো তাই না? ভাইয়া তো খারাপ কিছু বলেননি। হ্যা একটু কড়া করে বলেছেন। কিন্তু ভেবে দেখো কড়া করে না বললে কি তুমি মানতে? বরং ভাইয়াকে কনভিন্স করার চেষ্টা করতে।

হুমম…এটাও তো ঠিক। আমি তো ভাইয়াকে পটানোর ডায়লগও রেডি করে রেখেছিলাম। ভাইয়া মনেহয় টের পেয়ে গিয়েছিলো সেটা। দুষ্টু হাসি খেলে গেলো শাবাবের চেহারাতে।
হেসে ফেললো মাহাম। বোনের এই মেঘ এই রৌদ্দুর স্বভাবটা খুব ভালো লাগে মাহামের। তার নিজের মধ্যে এই জিনিসটা একদমই নেই। সে সাধারণত রাগ বা জেদ করে না কিন্তু একবার করলে সেসব মনের মধ্যে পুষে রাখতে রাখতে নিজেই একসময় বিরক্ত হয়ে যায়।

দরজা নক হলে শাবাব বলল, বাবা ভেতরে আসো। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন ফাইয়াজ সাহেব। দুই মেয়ের মাঝে বসে দুজনকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বললেন, শুনলাম আমার মায়েদের নাকি মন খারাপ?

শাবাব হেসে বলল, কিঞ্চিৎ মনখারাপ ছিলো বাবা। কিন্তু এখন মন ভালো।

ফাইয়াজ সাহেব হেসে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ আমি তো আরো তোদের মন ভালো করতে এলাম।

এই কথা আগে বলবে তো! সাথে সাথে মুখ গোমড়া করে শাবাব বলল, তুমি আসার আগেই মন ভালো হয়ে গেলো কেন? ফাজিল মন আরেকটু অপেক্ষা করলো না কেন? এই দুঃখে আবার মন খারাপ হয়েছে বাবা। নাও এখন মন ভালো করে দাও।

সশব্দে হেসে ফেললেন ফাইয়াজ সাহেব। বাবার সাথে শাবাব আর মাহামও যোগ দিলো হাসিতে। হাসাহাসির শব্দে হাজির হলেন মিসেস ফাইয়াজও। ভ্রু কুঁচকে বললেন, আপনাদের সম্মিলিত হাসির রহস্য কি?

ফাইয়াজ সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, সাবিহা তুমিই মনেহয় পৃথিবীর একমাত্র নারী যে কিনা স্বামী-সন্তানদের হাসির মধ্যেও রহস্য সন্ধান করো।

কি আর করার বলো ঘর পোড়া গরু সিঁদুরের মেঘ দেখলেও ভয় পাবে এটাই হচ্ছে নিয়ম।

আরেক ঝাপটা হাসির বৃষ্টি ঝরে পড়লো রিমঝিম শব্দে। ভিজবে না ভিজবে না করেও তাতে ভিজতে হলো সাবিহাকে। হাসিমুখে এসে বসলেন স্বামী ও কন্যাদের কাছে। বাবা-মাকে মাঝখানে বসিয়ে দুপাশ থেকে দুজনকে জড়িয়ে ধরে বসলো শাবাব আর মাহাম।

ফাইয়াজ সাহেব বললেন, ব্যবসার কাজে আমাকে দু’সপ্তাহের জন্য ইউরোপ যেতে হবে আগামী মাসে।

রোদ ঝলমলে তিনটা চেহারাকে মুহুর্তে মেঘে ঢেকে যেতে দেখলেন ফাইয়াজ সাহেব। হেসে বললেন, তোমাদের মেয়েদের নিয়ে এই হচ্ছে সমস্যা। পুরো কথা শোনার আগেই রিঅ্যাক্ট করো।

শাবাব হেসে বলল, ওহ তারমানে তুমি যাচ্ছো না? হুররে..
.
হ্যা বাবা তুমি যেও না। তোমাকে ছাড়া একটুও ভালো লাগে না আমাদের। আদুরে গলায় বললো মাহাম।

স্ত্রীর চোখেও এই শব্দগুলোকেই ঝিলিক দিয়ে উঠতে দেখলেন ফাইয়াজ সাহেব। হেসে বললেন, উহু তারমানে হচ্ছে তোমরা তিনজনও আমার সাথে যাচ্ছো। কারণ তোমাদেরকে ছাড়া আমারো কোথাও ভালো লাগে না।

ইয়াহু বলে চিৎকার করে লাফিয়ে উঠলো শাবাব। মাহামকে টেনে ধরে উঠিয়ে তার সাথে লাফাতে বাধ্য করলো। দুই কন্যার আনন্দ দেখে হেসে ফেললেন সাবিহাও। আর আনন্দ চিকচিক করে উঠলো ফাইয়াজ সাহেবের চোখে।

চলবে

 

সোনার হরিণ (এক)

সোনার হরিণ (এক)


ফাতিমা মারিয়াম


আজ থেকে প্রায়  চল্লিশ  বছর আগের কথা। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রীতা। এই কাহিনী তার জীবন থেকে নেয়া। রীতার কথা শুরু করার আগে তার পরিবার সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেয়া যাক!

রীতার মায়ের সাথে তার বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর ওরা দুই  বোন বাবার সাথেই থেকে যায়। কারণ ওদের ভরণপোষণ করার কোন সামর্থ্যই তার মায়ের ছিলনা। উনার বাবার বাড়ির অবস্থা তেমন একটা ভালো ছিল না।  যেখানে তিনি নিজেই আজ এর দুয়ারে কাল ওর দুয়ারে ঘুরে ফিরে থাকতে লাগলেন, সেখানে তিনি কিভাবে  দুইটি  মেয়েকে নিজের কাছে রাখবেন!
ছাড়াছাড়ি হবার কারণ হল রীতার মা কয়েক বছর ধরে মাঝে মধ্যে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। একজন পাগলের সাথে স্বাভাবিক সংসার জীবন যাপন সম্ভব নয়। ফলাফল………তালাক।
রীতার মা ছিলেন তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে মারা গেলে তিনি রীতার মাকে বিয়ে করলেন। দুই ঘরের চারটি বাচ্চার দেখাশোনা এবং সংসার পরিচালনার জন্য তিনি তৃতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন।    যিনি এই সংসারে আসলেন তিনি অত্যন্ত রূপবতী একজন মহিলা। দুই সন্তান রেখে তার আগের স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি বাবার বাড়ীতে থাকতেন। এক সময়ে রীতার বাবার সাথে বিয়ের প্রস্তাব আসায় তার অভিভাবক তাকে এইখানে বিয়ে দিয়ে দেয়। বাচ্চা দুটি নানার বাড়িতেই থেকে যায়। এই সংসারে এসে তিনি শক্ত হাতে হাল ধরেন। চারটি  ছেলেমেয়ে নিয়ে এখানে তার সংসার জীবন শুরু হল। মাঝে মধ্যে তার নিজের সন্তানরাও এসে মায়ের কাছে দুই চার দিন বেড়িয়ে যায়। এই স্বামীর সংসারে তিনি একে একে চার সন্তানের মা হলেন। দুইটি ছেলে ও দুইটি মেয়ে। অর্থাৎ রীতার বাবার  ঘরে তার সর্বমোট সন্তানের সংখ্যা হল আট। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে রীতার বড়মায়ের ঘরে এক বোন ও এক ভাই। বোনটির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সে স্বামীর সংসারে বেশ ভালই আছে। এবার তার বাবা ভাইটিকেও বিয়ে করিয়ে দিলেন। নতুন বউ প্রথম প্রথম বেশ ভয়েই ছিল। সৎ শাশুড়ির সংসার না জানি কত সমস্যা হয়! কিন্তু ধীরেধীরে সে দেখল তার শাশুড়ি বেশ ভালো একজন মানুষ। ননদ দেবররাও সবাই বেশ মিশুক। খুবই ভালো। ফলে খুব সহজেই বউটি সবাইকে আপন করে ফেলল। শাশুড়ি যেমন আটটি সন্তানকে নিয়ে নির্ভেজাল জীবন যাপন করছে, নতুন বৌও একইভাবে সবাইকে আপন করে নিলো। এত বড় সংসার নিয়ে শাশুড়ি-বউয়ের বেশ ভালই দিন কাটছিল। রীতার মায়ের ঘরে ওরা দুই বোন……রীতা ছোট।  আটজনের মধ্যে রীতা চতুর্থ। রীতা ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় তার ঠিক আগের বোনটিকে ওর বাবা বিয়ে দিয়ে দেয়। এরই মধ্যে রীতার ভাবীর একে একে দুইটি বাচ্চা হয়ে গেছে।
রীতা  পড়ালেখায় খুব একটা ভালো না। এটা নিয়ে ওর নিজের বা অন্য কারোও খুব একটা মাথাব্যথা নেই। সামাজিক আর দশটা নিয়মের মতই স্কুলে যায় আসে। ফলে ক্লাস এইটের বার্ষিক পরীক্ষার পর নিজ থেকেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সংসার এখন আগের চাইতেও অনেক বড়। রীতা এখন মা ও ভাবীর পাশাপাশি ছোট ভাইবোনদের ও বড় ভাবীর বাচ্চাদেরকে দেখাশোনা এবং সংসারের কাজে মা ও ভাবীকে সাহায্য করে। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে।
এক নিকটাত্মীয়ের সাথে তার এক বন্ধু আনিস প্রায়ই রীতাদের বাসায় আসে। আনিসের পরিবার ঢাকাতেই থাকে। রীতাদের চাইতে অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক বেশি ভাল। রীতাদের অবস্থাও ভালো। তবে আনিসের পরিবারের মত নয়। রীতাদের পরিবারের সবার সাথে আনিসের সম্পর্ক বেশ ভাল। এত বড়লোকের ছেলে হয়েও মনে কোন অহংকার নেই। ওদের ভাইবোন সবার সাথেই বেশ ভালো সম্পর্ক। আনিস যখন আসে রীতা এবং অন্য ভাইবোনেরা তার সাথেই বেশিরভাগ সময় কাটায়।
আনিসের কথাবার্তা, আচার- আচরণ সব কিছু দেখে রীতা খুব মুগ্ধ হয়। রীতাকেও আনিসের কাছে বেশ ভালো লাগে। ধীরে ধীরে দুজনের এই ভালোলাগা ভালোবাসায় রূপ নেয়। মা ও ভাবী যখন বিষয়টি টের পেল তখন পানি বহুদূর গড়িয়ে গেছে। শাসন তিরস্কার কোনকিছুই রীতাকে পিছু ফেরাতে পারেনা। একদিন সবার অগোচরে তারা লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলল।

চলবে…

 

বেশি সন্তান জন্ম দেয়া জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ

বেশি সন্তান জন্ম দেয়া জরায়ুমুখ
ক্যান্সারের অন্যতম কারণ


নারীর স্বাস্থ্যকথা


চার সন্তানের জননী রাফিজা খানমের বয়স এখন ছত্রিশ বছর । বাবা-মা আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় দশম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় বিয়ে হয় প্রবাসী আব্দুস সাত্তারের সাথে। বিয়ের মাত্র দুই মাসের মাথায় অন্তঃসত্তা হয়ে পড়ে রাফিজা। আর তাই পরের মেট্রিক পরীক্ষা দেয়া হয়নি রাফিজার। কিন্তু স্বামী আশ্বস্ত করে বাচ্চা হওয়ার পরে সে আবার পড়ালেখা করতে পারবে। এভাবেই এক সময় মাস্টার্স শেষ করে নীলফামারীর স্থানীয় এক উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরীও পেয়ে যান রাফিজা। স্বামী প্রবাসে থাকলেও চার সন্তান নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল রাফিজার। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছে তার। প্রায়ই সময় তলপেটে যন্ত্রণা আর প্রশ্রাবের জ্বালা-পোড়া। শেষ পর্যন্ত এক গাইনী ডাক্তারের সাথে কথা বলে রাফিজা। অনেক পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর জানা যায় রাফিজা জরায়ুমূখ ক্যান্সারে আক্রান্ত। যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তার।
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের (আইএআরসি) সূত্র মতে বাংলাদেশের নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় স্তন ক্যানসারে। এর পরেই জরায়ুমুখ ক্যানসার । প্রতিবছর জরায়ুমুখ ক্যানসারে বাংলাদেশে ৮হাজার ৬৮ জন জন আক্রান্ত হয়। আর মৃত্যু বরণ করে প্রায় ৫ হাজার। এছাড়াও বিশ্বে প্রতিবছর এই রোগে আক্রান্ত হয় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ নারী। আর মৃত্যু হয় প্রায় ৩ লাখ।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. রোকেয়া বেগম বলেন, মূলত জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) নামের এক ভাইরাস। আর এই এইচপিভি বিভিন্ন ধরনের আছে, যার মধ্যে এইচপিভি ১৬ ও ১৮ জরায়ুমুখ ক্যান্সারের জন্য সবচেয়ে বেশী মারাত্মক। তিনি বলেন, মূলত যেসব মেয়েদের বাল্যবিবাহ হয় এবং যেসব নারী অধিক সন্তান জন্ম দেন তারাই এই জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়াও নারীর ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার বিষয়টিও রয়েছে। যেসব অল্পবয়সী নারী মাসিকরে সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে না পারে তাদের বিভিন্ন ধরনের জীবানু আক্রমন করতে পারে। আর তাই মাসিকের সময় অবশ্যই পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার এবং নিজেকে পরিষ্কার রাখতে হবে। ডা. রোকেয়া বলেন, অল্প বয়সী মেয়ে বিশেষ করে নয় থেকে ১৫ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য রয়েছে এইচপিভি টিকা। একটু দামী হলেও এই টিকা দিয়ে দেওয়াই উত্তম। এছাড়াও বেশী বয়সী নারীদের জন্য রয়েছে ক্যান্সার স্ক্রিনিং। ক্যান্সার স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে সহজে এই রোগ নির্ণয় করা যায় এবং পরবর্তী চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা যায়।
আরেক গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. শাহানা আক্তার বলেন, আমাদের দেশে বিশেষ করে এখনো গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের বয়:সন্ধির সময় নোংরা কাপড় ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। এসময় তাদের স্কুল পর্যন্ত বন্ধ করে দেয় কিছু কিছু অভিভাবক। অথচ তার কোন দরকারই হয়না। এখন বাজারে অল্প দামে দেশীয় তৈরী বিভিন্ন ধরনের প্যাড পাওয়া যায় এবং তারা এসব সহজেই ব্যবহার করতে পারে।
তিনি বলেন, এসব বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম আরো বেশী পরিমানে বাড়াতে হবে। যদিও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার স্বাস্থ্য সেবা ঘরের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক অন্যতম। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু মানুষ এখনো এসব সেবা নিতে আগ্রহী নয়। তাদেরকে এসব সেবার আওতায় আনার জন্য আরো বেশী পদক্ষেপ নিতে হবে।
ডা. শাহানা বলেন, প্রাথমিকভাবে এই ক্যান্সার ধরা পড়লে খুব সহজেই এ থেকে নিরাময় সম্ভব। নিয়মিত ঔষুধ সেবন করলে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে যদি দেরীতে ধরা পড়ে তবে তা অনেক সময় জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। অনেক সময় ডাক্তারদেরও আর কিছু করার থাকে না। আর তাই এ বিষয়ে পরিবারের সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরী করতে হবে।
তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত আমাদের দেশের নারীরা এসব মেয়েলী শারীরিক সমস্যা নিয়ে কারো সাথে আলোচনা করতে লজ্জা পায়। একেবারে চরম পর্যায়ে না গেলে তারা তা কাউকে জানায় না । এমনকি অনেক বিবাহিত নারীরাও তাদের স্বামীর সাথে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন না। এর ফলে অনেক নারীই এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। যা কখনোই কাম্য নয়। তিনি সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও যেসব সংস্থা এসব বিষয়ে কাজ করেন তাদেরকে এ বিষয়ে আরো বেশী জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানান।

সুত্রঃ বাসস।

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৩

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৩


আফরোজা হাসান


খুব আনন্দ নিয়ে সাবিহা যে কাজগুলো করেন তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে, দুই কন্যার জন্য শপিং। আজও দুই কন্যার জন্য একগাদা শপিং করে বাসায় ফিরলেন তিনি। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রওনা হলেন কন্যাদের কাছে। ঘরে ঢুকে দেখেন বড় কন্যা শাবাব দুই হাত মুঠো করে নিজেই নিজের শরীরে মারছে। পাশে বসতে বসতে সাবিহা বললেন, মাইর খেতে ইচ্ছে করলে আমাকে বল। তোদেরকে মারার জন্য আমার হাত সবসময় নিশপিশ করে।

শাবাব হেসে বলল, নিশপিশ করলে মারবে। মার মাইর তো হেলদি ফুড।

হাসলেন সাবিহাও, কি করছিস? জানতে চাইলেন মেয়ের কাছে।

এটা যোগ ব্যায়ামের একটা প্র্যাকটিস মামণি। এর নাম কি ফো ব্যায়াম। দু’হাত হালকা করে মুঠো করে সারা শরীরে চাপড়াতে হয় দু’তিন মিনিট। একদম মাথা থেকে আরম্ভ করে সারা শরীরে করতে হবে এটা। এরফলে রক্ত চলাচল বেড়ে গিয়ে দেহে শক্তি উৎপন্ন হতে সাহায্য করবে। জবাব দিল শাবাব।

মাথার দুষ্টুমি বুদ্ধি কমানোর কোন যোগ ব্যায়াম নাই? থাকলে সেটার প্র্যাকটিস কর তোরা দু’জন।

দু’জন বলছো কেন মামণি? আমি কি কখনো দুষ্টুমি করি? অভিযোগের স্বরে বললো মাহাম।

শাবাব বলল, দুষ্টুমি একটা আর্ট। চাইলেই সবাই এটা করতে পারে না বুঝলি গাধী। তুই বই পড়ছিলি তাই পড়। পড়তে পড়তে মহিলা বিদ্যাসাগর হয়ে যা। প্যাকেটে কি মামণি? শিপিং করেছো আমাদের জন্য? ইয়া হু…বলে চিৎকার দিয়ে যোগ ব্যায়ামের প্র্যাকটিস ছেড়ে প্যাকেট খোলাতে মন দিলো শাবাব।

মাহামের দিকে তাকালেন সাবিহা। বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে বসে আছে। ফিরেও তাকাচ্ছে না শপিংয়ের দিকে। মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার। এত শখ করে শপিং করে কিন্তু মাহাম কখনোই কোন একটা জিনিস আনন্দ নিয়ে দেখে না। অথচ ছোট্ট একটা ক্লীপ দেখেও মহা আনন্দিত হয় শাবাব। একেবারে উত্তরমেরু আর দক্ষিণমেরু তার দুই মেয়ে। মাঝে মাঝে মনেহয় শাবাবের কিছু চঞ্চলতা যদি ঢুকে যেতো মাহামের মধ্যে, বদলে মাহামের প্রশান্ত চিত্তের একটু ছোঁয়া যদি লাগতো শাবাবের গায়ে। একটা ড্রেস নিয়ে মাহামের সামনে ধরে বললেন, দেখ তো মা কেমন হয়েছে এটা?

একবার চোখ বুলিয়ে মাহাম বলল, হুম…সুন্দর। শাবাবকে অনেক মানাবে।

এটা আমি তোর জন্য এনেছি।

ও আচ্ছা! জাযাকিল্লাহ মামণি।

দেখ শাবাব চলেও গেছে ড্রেস চেঞ্জ করতে। তুইও এটা একটু পড়ে আয় না মা! দেখি তোকে কেমন লাগে। আবদারের স্বরে বললেন সাবিহা।

উহু…এখন পারবো না মামণি। ইচ্ছে করছে না। তাছাড়া আল্লাহ তোমার কন্যাদের ব্যাপক রূপবতী করে সৃষ্টি করেছেন। খারাপ লাগার তো কোন কারণ দেখছি না।

মাঝে মাঝে যখন সিরিয়াস মুখ করে দুষ্টুমি মাখা কথা বলে মাহাম ভীষণ ভালো লাগে সাবিহার। কিন্তু সবকিছুর প্রতি মেয়েটার আকর্ষণ হীনতা খুব বিরক্ত করে। রাগ করে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। মাকে রাগ করে উঠে যেতে দেখে হার চেপে ধরলো মাহাম। টেনে ধরে আবারো পাশে বসিয়ে বলল, মামণি তোমার উচিত যোগ ব্যায়াম করা। তোমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ যোগ ব্যায়ামের প্র্যাকটিস হলো হওয়াইন বা হুপোনোপোনো।

কি অদ্ভুত নাম। এটা আবার কেমন ব্যায়াম?

মাহাম হেসে বলল, এই প্র্যাকটিসের মূল কথা হচ্ছে চারটি। এক. আমি তোমাকে ভালোবাসি, দুই. আমি দুঃখিত, তিন. তোমাকে ধন্যবাদ, চার. আমাকে ক্ষমা করো। এটা হচ্ছে মন পরিস্কার এবং মনকে শান্ত ও স্বচ্ছ রাখার ব্যায়াম।

সেটা কিভাবে?

ধরো তোমার সাথে কারো খারাপ সম্পর্ক আছে কিংবা কাউকে তুমি সহ্য করতে পারো না। দেখলেই ইচ্ছে করে গলা চাপা দিতে। তখন তোমাকে যা করতে হবে তা হচ্ছে, তোমার মনের মধ্যে ব্যক্তিটির ছবি কল্পনা করে, তোমার উচ্চ সত্ত্বা থেকে ভালোবাসার ক্ষমতা নামিয়ে এনে ঐ চারটি কথা বারবার বলতে হবে।

বললে কি হবে? আর গলা চাপা দিতে ইচ্ছে করবে না?

হুম…ইচ্ছে করবে না। এই প্র্যাকটিসের ফলে সেই ব্যক্তির প্রতি যদি তোমার ভালোবাসা নাও জন্মে, অন্তত বারবার এমনটি করার ফলে তাকে তুমি ক্ষমা ঠিকই করে দেবে।
কোথায় শিখেছিস এসব ফালতু যোগ ব্যায়াম?

এটা মোটেই ফালতু না মামণি। আমার তো শাবাবের উপর রাগ হলেই এটা করি। নয়তো কবেই আমি গলা চেপে ওকে মেরে ফেলতাম।

হেসে মাহামকে জড়িয়ে ধরে আদর করে সাবিহা বললেন, তুই কি জানিস যে তুই একটা সোনার টুকরা মেয়ে?

মাহাম হেসে বলল, উহু…আমি এমন একটা মেয়ে যার জন্ম হয়েছে অসাধারণ দুজন মানুষের সংমিশ্রণে। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করি সেই মানুষ দুজনকে ধারণ করতে আমার মধ্যে। সমুদ্রের টানে নদী যেমন ছুটে চলে ঠিক তেমনি ঐ মানুষ দুজনের পানে ছুটে চলতে চাই আমি। হয়েছে এমন ছলছল চোখে তাকাতে হবে না এখন। দাও তোমার ড্রেস পড়ে আসি।
হেসে মেয়ের হাতে ড্রেস তুলে দিলেন সাবিহা। মাকে আদর করে দিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে রওনা করলো মাহাম।

চলবে….

 

“প্রিয় আহবাব”

“প্রিয় আহবাব”


কামরুন নাহার কণা


মায়ের সালাম আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা নিস বাবা! জানি ভালো আছিস,খুব ভালো! কেউ কি তার রবের কাছে ভালো না থেকে পারে বল? আমিও আছি আলহামদুলিল্লাহ! আমার রবের কোন সিদ্ধান্তের উপর অভিযোগ কিংবা অসন্তুষ্ট হওয়ার দুঃসাহস আমার নেই। আলহামদুলিল্লাহ আ’লা কুল্লি হা’ল!!!!

বাবা জানিস, তোর সাথে আমার অনেক কথা জমা আছে! কবে শুনবি বলতো? কতো কথা, কতো ভালোবাসা, কতো মমতা জমিয়ে রেখেছি বুকের খাঁচায়! কিন্তু তুই মা কে এমন করে ফাঁকি দিয়ে উড়াল দিলি! এতো অভিমান বাবা তোর! কিসের এতো অভিমান সোনা? আমার দিকে একবার তাকালিও না! আমি তোর খুব হতভাগী মা, তাইনা রে!!!

কিকরে ভুলবো সোনা বল! গত বছরের এই দিনগুলোতে তোর প্রতিটা হৃদস্পন্দন অনুভব করেছি! সে যে কি এক পরম সুখ সুবহানআল্লাহ!! দুচোখ দিয়ে যদি তোর নড়াচড়া দেখতে পেতাম না জানি কতোই সুখ পেতাম! জানিস, তুই যখন পেটের মধ্যে খুব বেশি নড়াচড়া করতি, আমি অবাক হয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম, আর মনে মনে ভাবতাম, দুনিয়াতে আসলে নিশ্চয়ই খুব চঞ্চল হবি! তোর জন্যে নিজের হাতে কাঁথা সেলাই করে রেখেছিলাম! অনেকেই নিষেধ করার পরও শুনিনি! অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও কাঁথাটা সেলাই করে শেষ করেছিলাম। মনেহয়ছিলো তুই যখন প্রথম আমার কোলে আসবি, তোকে এমন একটা উপহার দেয়া দরকার যেটা সারা জীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে! অনেক বড় হয়ে গেলেও তুই জানতে পারবি, এটা তোর মায়ের দেয়া জীবনের প্রথম উপহার! তাই এ পাগলামি! অনেক ভালোবাসা আর মমতা লুকানো ছিলো তাতে বাবা! আজ তোর স্পর্শ মাখা, স্মৃতি মাখা একমাত্র বস্তু হিসেবে সেটিই আমার সম্বল হয়ে আছে! পৃথিবীর আর কোন জিনিসে তোর স্পর্শ নেই, সেই কাঁথাটা ছাড়া! যখন তোকে খুব মনেপড়ে, সেই কাঁথাটা বুকের সাথে জড়িয়ে রাখি। যখন ভিতর টা খুব ভারী হয়ে ওঠে, জায়নামাজে বসে সিজদায় অথবা মুনাজাতে তোর সেই কাঁথাটার মাঝে নিরব অশ্রু গুলো ফেলি, মনেহয় এতে হয়তো আমার রবের আমার প্রতি একটু বেশি করুণা হবে! কেন এমন মনেহয় জানিনা।

বাবা জানিস, তোর জন্মের কয়েক মাস আগেই তোর নাম রেখেছিলাম “আহবাব”। যার অর্থ “সবচেয়ে প্রিয়”! বিশ্বাস কর, সেদিন একবারের জন্যে ভুলেও মনে পড়েনি, সবচাইতে প্রিয় জিনিসই রবকে উপহার দিতে হয়! যাক, তবে আমি মোটেও অসন্তুষ্ট নই। আমি জানি আমার রব আমাকে ঠকাবেন না! সবচাইতে কঠিন এই পরীক্ষায় আমি যেন উত্তীর্ণ হতে পারি, তুই শুধু এই দোয়াটা করিস বাবা! হাশরের দিন, তোর আর আমার মাঝে, কোন ব্যবধান যেন না থাকে!

বাবা এ পরীক্ষা টা বড়ো কঠিন! জানিস, আমি ধৈর্য ধরেছি, সব কথা, ব্যথা, অনুভূতি গুলোকেও কবর দিয়ে দিয়েছি তোর সাথে! তবুও এক অসীম শূন্যতা আমাকে যেনো গ্রাস করে নিয়েছে! যেন সমস্ত পৃথিবীটা আমার বুকের মধ্যে দিয়ে দিলেও এশূন্যতা, এ শুষ্কতা, এ রুক্ষতা দূর হবেনা! কি যে পেলাম, আর কি যে হারালাম, সেটাই শুধু খুঁজে পাইনা!
এ শূন্যতা পৃথিবীর কাউকে বুঝাতে পারিনা! দেখাতে পারিনা! এমনকি আমার রবের কাছেও সবটা বলতে পারিনা, যদিও অনেক কিছুই বলতে চাই! তবে জানি, তিনি তো অন্তর্যামী! তিনি সব জানেন! তিনি সব বুঝেন! তিনি যদি আমাকে ধৈর্য্য না দিতেন, আমি কি পারতাম এতো সহজ ভাবে বেঁচে থাকতে? সবটা মেনে নিতে? এতো সহজ ভাবে তোকে বিদায় দিতে কি পারতাম সোনা?

কলিজা আমার! অনেক ভিক্ষা চেয়েছিলাম তোর প্রাণটা! প্রতিটা নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে! কিন্তু আমার রবের সিদ্ধান্তই যে চূড়ান্ত! জন্মের পর পরই দশ দিন, দশ রাত তুই NICU তে থাকার পর আর পারছিলাম না! শারীরিক, মানসিক, আর্থিক সবদিক দিয়ে যখন শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছিলাম, সেদিন সব অসহায়ত্ব স্বীকার করে মেনে নিয়েছিলাম, আমার রবের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত! হৃদয়ের সবটুকু মিনতি দিয়ে NICU এর রুমে তোর লাইফ সাপোর্ডের পাশে বসে শেষ বারের মতো দুহাত তুলে প্রভুকে বলেছিলাম- “হে আমার রব! হে জীবন মৃত্যুর চূড়ান্ত ফয়সালাকারী! তোমার নাম রাহমানুর রাহীম! জীবন এবং মৃত্যু তোমার হাতে! আমার এ নাড়ীছেঁড়া ধন, কলিজার টুকরার প্রাণটা তোমার কাছে অনেক ভিক্ষা চেয়েছিলাম! কিন্তু আমি জানিনা, ওর ব্যাপারে তোমার কী ইচ্ছা! যদি তুমি ওর হায়াত লিখে থাকো, তাহলে সম্পূর্ণ সুস্থ করে আমার মানিক কে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও! আর যদি তুমি ওর হায়াত নাই লিখে থাকো……তবে নিয়ে যাও রব! আমার আর কোন আফসোস নেই! আমি বিশ্বাস করি, সাধ্যাতীত কোন বোঝা তুমি আমার ওপর চাপিয়ে দিবেনা!”
আহা! বাবারে….সেদিনই ছিলো তোর জীবনের শেষ দিন!

সেই যে তিনি আমাকে ধৈর্য দিলেন, আমি আজও আর মন ভরে কাঁদতে পারিনা! আমি যেন কান্না ভুলে গেছি। তোকে জীবনের প্রথম এবং শেষবারের মতো কোলে পেলাম! একবার ভাবতে পারিস সেই অনুভুতি টার কথা? আমার নাড়ীছেঁড়া ধনকে ১০দিন ১০ রাত পর প্রথম বারের মতো বুকে পেয়েছি, কোলে নিয়েছি! কিন্তু এটাই জীবনের শেষ নেওয়া! আর কোনদিন তুই আমার বুকে আসবিনা! আর কোনদিন তোকে কোলে নিতে পারবোনা! বুঝতে পারছিলাম না আমার তখন কাঁদা উচিত নাকি হাসা উচিত! সবাই খুব কান্না করছিলো! তোর দাদী, দাদা, নানুভাই, খালামনিরা সবাই খুব কাঁদছিলো! শুধু আমিই একটুও কাঁদতে পারিনি বাবা জানিস! অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তোকে দেখছিলাম! একটা পলকের জন্যে চোখটা বন্ধ করে তোকে দেখার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে চাইনি! তোর পা দুটোকে মনেহচ্ছিলো আমার জান্নাত! তাই চুমো না দিয়ে থাকতে পারিনি!

পরের দিন…. সাদা কাফনে তোকে জড়িয়ে শেষবারের মতো আমার সামনে আনা হলো! বিশ্বাস কর সোনা! আমি তখনো কাঁদতে পারিনি! এতো সুন্দর লাগছিলো তোকে! কি বলে তোকে চির বিদায় দিবো বুঝতে পারছিলাম না! তোর কপালে আর পা দুটোতে চুমু দিয়ে বলেছিলাম…..বাবা, আমি ইচ্ছে করে তোমাকে কোন কষ্ট দিতে চাইনি! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও! তোমার রবের কাছে আমার আর তোমার বাবার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করো! জান্নাতে যেন আমাকে আর তোমার বাবাকে তোমার সাথে মিলিত হওয়ার অনুমতি তিনি দেন! আল্লাহ হাফেজ”।

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-২

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-২


আফরোজা হাসান


ছোটবেলা থেকেই নিজ হাতে মাটির তৈজসপত্র বানানোর শখ সাবিহার। বিয়ের পর তার স্বামী এই শখের কথা জানতে পেরে কোর্স টোর্স করিয়ে একদম মহিলা কুমোর বানিয়ে ফেলেছেন তাকে। সংসার শত কাজের ভিড়ে সামান্য যতটুকু সময় পান নিজ হাতে মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র বানান সাবিহা। গতকাল একটা ফুলদানী বানিয়েছিলেন। যত্ন করে তাতে রং করতে বসেছেন এখন। ফাইয়াজ সাহেব পাশে এসে বসলে একবার তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে নিজের কাজে মন দিলেন আবার সাবিহা।

কিছুক্ষণ স্ত্রীর কাজ দেখে ফাইয়াজ সাহেব হেসে বললেন, তোমার দুই কন্যা আজ চাকরীর খোঁজে আমার অফিস গিয়েছিলো।

উফফ, আর বলো নাতো তোমার মেয়েদের উদ্ভট কর্মকান্ড।
কি নিয়ে আবার লেগেছে আজ তোমাদের? হাসতে হাসতে জানতে চাইলেন ফাইয়াজ সাহেব।

মানুষের ঘরে দেখি কত সোনার টুকরা একেকটা মেয়ে। আর আল্লাহ আমাকে এই দুইটা কি দিয়েছেন বলো তো! কোন একটা কথা যদি কানে তুলতো এই দুই মেয়ে। যখন যা মন চায় তাই করে। অভিমানী কণ্ঠে বললেন সাবিহা।

স্ত্রীকে কাছে টেনে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিলেন ফাইয়াজ সাহেব কিন্তু মেয়েদের চিৎকার শুনে ঘুরে তাকিয়ে দেখলেন বড় মেয়ে শাবাব ছুটতে ছুটতে এদিকেই আসছে আর তাকে পেছন থেকে ধাওয়া করছে ছোট মেয়ে মাহাম।
শাবাব আস্তে এখানে রং, ফুলদানী সব ছড়ানো পড়ে ব্যথা পাবি! কিন্তু মায়ের সতর্কবাণী কানে পৌছার আগেই হুড়মুড় করে সবকিছু নিয়ে পড়লো শাবাব। মেয়েকে ধরে ফাইয়াজ সাহেব বললেন, ব্যথা পাসনি তো মা?

না বাবা আমি ঠিক আছি। কিন্তু মামণির ফুলদানী তো ভেঙে গেছে। মায়ের দিকে তাকিয়ে নাক মুখ কুঁচকে সরি বললো শাবাব।

সাবিহা বললেন, হয়েছে আর সরি বলতে হবে না। এটা মোটেই নতুন কিছু না। পরশু দিনও দুইটা টব ভেঙেছিস তুই। আর গত সপ্তাহে এত কষ্ট করে একটা ঝাড়বাতি বানালাম আমি সেটাও তুই নষ্ট করেছিস।

শাবাব বলল, ওহো মামণি! ফুলদানী ভাঙা ক্রাইমের কথা হচ্ছে সেটার কথা বলো শুধু। পুরনো ফাইল খুলো নাতো এখন।

দেখেছো? দেখেছো তোমার মেয়ের কথার স্টাইল? ফাজিলের চূড়ান্ত হয়েছে এই মেয়ে।

মেয়েকে কাছে টেনে ফাইয়াজ সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, শাবাব খুব বেশি দুষ্টু কথা বলিস তুই মা। কেন ছুটছিলি এভাবে?

মাহাম বলল, দেখো না বাবা শাবাব আমার ডায়েরী নিয়ে এসেছে।

ফাইয়াজ সাহেব তাকালে শাবাব মাহামের হাতে ডায়েরী ফেরত দিয়ে বলল, নে ফেসকুন্নি তোর ডায়েরী। বোনকে ভেংচি কেটে মায়ের দিকে চোখ পড়তেই চিৎকার করে উঠলো মাহাম, মামণি তোমার পায়ে কি হয়েছে?

সাবিহা বললেন, কিচ্ছু হয়নি। রঙ লেগেছে। আর হলেই বা কি? তোদের কি কিছু এসে যায় নাকি তাতে?

মায়ের কাছে বসে হাত দিয়ে রঙ পরিস্কার করতে করতে মাহাম বলল, কি যে বলো না তুমি মামণি! তোমার পা আমাদের কাছে কত স্পেশাল সে কথা যদি জানতে কখনোই এমন কথা বলতে না।

আমার পা স্পেশাল? মামণির প্রশ্ন শুনে পুতুলের মতো মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো মাহাম। সাবিহা বললেন, সেটা কেন শুনি?

শাবাব বলল, কারণ তোমার পদতলে মোদের জান্নাত হে মাতা। মেয়ের জবাব শুনে স্বশব্দে হেসে ফেললেন ফাইয়াজ সাহেব।

মাহাম বলল, বাবা হাসি বন্ধ। এসে তোমার ডিউটি পালন করো।

ফাইয়াজ সাহেব বললেন, আমার আবার কিসের ডিউটি?

কামঅন বাবা এটাও আমাদেরকে বলে দিতে হবে? যে পায়ের নিচে তোমার কন্যাদের জান্নাত সেই পায়ের সেবাযত্ন করা তো তোমার ডিউটি নাকি? তুমি তোমার ডিউটি পালন করো আমরা দুজন যাই। চলো শাবাব।

মেয়েরা চলে যাবার পর ফাইয়াজ সাহেব স্ত্রীর কাছে বসতে গেলে সাবিহা বললেন, খবরদার বলছি! দূরে থাকো তুমিও তোমার মেয়েদের মত আমার কাছে থেকে। বলে তো উঠে ভেতরে রওনা করলেন। ফাইয়াজ সাহেবও হাসতে হাসতে স্ত্রীর পিছু নিলেন।

সিঁড়ির গোঁড়ায় এসে পাশে লাগানো আয়নার সামনে থমকে দাঁড়ালো শাবাব, হাত দিয়ে টেনে ধরলো বোনকেও। মাহাম বলল, আবারো? আচ্ছা রোজ রোজ একই কাজ করতে বিরক্ত লাগে না তোমার?

বাতাসে হাত নেড়ে বোনের কথাকে উড়িয়ে দিয়ে শাবাব আয়নার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল, হে আয়না বলো তো এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে কে? গলা সামান্য ভারী করে নিজেই জবাব দিলো, শাবাব শাবাব শাবাব।

হেসে ফেললো মাহাম। বোনকে টেনে ধরে উপড়ে উঠতে উঠতে বলল, পাগল তুমি বুঝলে। কি যে হবে তোমার আল্লাহ জানেন। শাবাবও হেসে গলা জড়িয়ে ধরলো বোনের।

চলবে

 

‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে নারী সমাজ

‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে নারী সমাজ


ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা


গ্রাম-শহর সমানভাবে উন্নত হলেই একটা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। কেবলমাত্র শহরের উন্নয়ন দিয়ে কখনই একটা দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী করা সম্ভব নয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে সেখানকার গ্রামীণ অর্থনীতি বেশ শক্তিশালী। আর গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি ভূমিকা পালন করে থাকেন। বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের ‘গ্রাম-শহর সমান উন্নতি’ নীতির কারণে এবং অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়ে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন, অবদান রাখছেন দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে। যেমন তাদেরই একজন বান্দরবানের বিলাইছড়ির আয়শা খাতুন।
আয়শা খাতুন কয়েক বছর আগে ঢাকা শহরে এসেছিলেন এক বান্ধবী শাহেদার হাত ধরে। ইচ্ছে ছিল গ্রামের গরীব বাবা-মাকে সাহায্য করা। শুরুতে এক গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি নেন। বেতন ছিল সাত হাজার। শুরুতে কারখানায় হেলপারের কাজ করলেও পরে আস্তে আস্তে নিজেই শিখে যান সেলাইয়ের কাজ। এভাবে প্রায় দু’বছর কাজ করার পর বেতন দাঁড়ায় সাড়ে আট হাজার টাকায়। চার হাজার টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে বাকি সাড়ে চার হাজার টাকায় ঢাকায় থাকা-খাওয়া খুব কষ্ট হয়ে যেত আয়শার। সিদ্ধান্ত নেন বাড়ি ফিরে যাবেন।
বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার বিলাইছড়িতে তার গ্রাম। সেখানে ফিরে প্রথমে এক এনজিও’র সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ নেন কাপড় কাটার। তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন কিনে ঘরের মধ্যে নিজেই শুরু করেন সেলাইয়ের কাজ। প্রথমে খরিদ্দার পেতে কিছুটা কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি আয়শাকে।
নিজের বিয়ের সব খরচ নিজেই বহন করেছে আয়শা। এক সময় বিয়ে করেন। বিয়ের আগে নিজের জমানো টাকা দিয়ে ছোট ভাইকে কিনে দিয়েছে দু’টি ব্যাটারী-চালিত রিকশা।
আয়শার মতো অনেক নারীই এখন শহর ছেড়ে চলে ফিরে যাচ্ছে নিজের গ্রামে। সেখানে গিয়ে তারা চেষ্টা করছেন কিছু না কিছু অর্থ উপার্জন করে সাবলম্বী হতে। ফলে গ্রামে বাড়ছে নারীদের শ্রমশক্তি। এরফলে চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতিও।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে বলা হয়েছে, এখন দেশের মোট শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। ১৯৯৫-৯৬ সালে শ্রমে নারীর অবস্থান ছিল শহরে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, গ্রামে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০০৩ সাল পর্যন্ত এ হার শহরেই বেশি ছিল। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ সালে গ্রামে এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশে। অন্যদিকে, শহরে কমে হয়েছে ৩১ শতাংশ। গ্রামের শ্রমশক্তিতে যুক্ত নারীদের ৬০ শতাংশই আছেন কৃষি খাতে।
বিবিএসের ২০১৫-১৬ সালের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, মোট শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বিভাগীয় পর্যায়ে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুরে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বেশি। রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে বেশি ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ। খুলনায় ৪২ দশমিক ২ শতাংশ। রংপুরে ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। চট্টগ্রামে ৩৪ শতাংশ, ঢাকায় ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ, বরিশালে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ এবং সিলেটে সবচেয়ে কম ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
আয়শা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নারীদের উন্নয়নের জন্য অনেক কিছুই করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ নারীই সে সব সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না। যদি তারা একটু সচেতন হন, তবে অনেক সুযোগ-সুবিধাই রয়েছে যাতে করে নারীরা ঘরে বসেই উপার্জন করতে পারে এবং সাবলম্বী হতে পারেন।
নারী অধিকার বিষয়ক আন্দোলন কর্মী মারিয়া সরকার বলেন, আগে নারীরা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য গ্রাম থেকে শহরে চলে আসত। এর মূল কারন ছিল গার্মেন্টস শিল্প। মূলত নারীরা শহরেই আসত এসব পোশাক কারখানায় চাকরি করে নিজের খরচ চালানোর জন্য। আর এসব কারখানায় কাজ করা নারীদের অধিকাংশের বাড়ি উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে। কারণ এসব এলাকায় দারিদ্র্যের হার অন্যান্য এলাকার চেয়ে কিছুটা বেশি ছিল।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এসব এলাকার চিত্র অনেকটা পাল্টে গেছে। কারণ এই সরকার নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। পাশাপাশি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করতে চায় এই সরকার। এজন্য নেয়া হয়েছে বেশ কিছু উদ্যোগ। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে একটি বাড়ী, একটি খামার প্রকল্পটি।
অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. সেকান্দার ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকারের একটি বাড়ী, একটি খামার প্রকল্পে আগ্রহী হয়ে এখন অধিকাংশ বাড়ীতেই গড়ে উঠেছে খামার। আর এসব খামারে হাঁস, মুরগী, ছাগল, ভেড়া এবং গরু পালনের পাশাপাশি অনেক শাক-স্বব্জির চাষ অথবা পুকুরে মাছ চাষ করছেন। আর এসব করছেন বাড়ীর মেয়েরাই বেশি। আর এরফলে নারীরা যেমন অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন আবার গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙ্গা হচ্ছে।

সুত্রঃ বাসস।

 

বই রিভিউঃ মনোসন্ধিঃ মানসিক চাপ মোকাবিলার সহজ উপায়

বইঃ মনোসন্ধিঃ মানসিক চাপ মোকাবিলার সহজ উপায়


 রিভিউ লেখকঃ রায়হান উদ্দিন মিলন


আচ্ছা বলুন তো, এখন আমার মন কি বলছে? মনোবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে সাধারন মানুষের কাছ থেকে এই প্রশ্নটি সবচেয়ে বেশি শুনতে হয়েছে। আমি তখন মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের কিছু ধারণা দিতাম। যদি বন্ধুরা প্রশ্নটি করতো তাদের মজা করে উত্তর দিতাম।

আমি পাঠশালার একজন নিরব পাঠক। পাঠশালায় মাঝে মাঝে অনেকে মনোবিজ্ঞান বিষয়ক বই সম্পর্কে জানতে চায়। তাই আজ একটু জানানোর চেষ্টা করেই দেখি।

জীবন চলার পথে আমাদের অনেক কাজ বা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। কিছু কাজ সহজ আর কিছু কাজ কঠিন। এই কঠিন কাজ মোকাবিলা করতে গিয়ে কেউ কেউ দিশেহারা হয়ে পড়ে, কি করবে বুঝতে পারে না আর তখন ই শুরু হয় মানসিক চাপ। এই মানসিক চাপ অনেকাংশে নির্ভর করে, আমাদের চাওয়া ও পাওয়ার অসামঞ্জস্যতা এবং তা সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করতে না পারার কারনে। আর এই না পাওয়ার বেদনা মননে তৈরি করে মানসিক চাপ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক মনোবিজ্ঞানী আজহারুল ইসলাম স্যার তার “মনোসন্ধিঃ মানসিক চাপ মোকাবিলার সহজ উপায় “ বইতে মূলত মানসিক চাপ, তার উৎপত্তি ,শারীরিক ও মানসিক প্রভাব এবং তার মোকাবিলার কৌশলগুলো সহজভাবে তুলে ধরেছেন। মানসিক স্বাস্থ্যের অনেকগুলো দিক রয়েছে তার মধ্যে মানসিক চাপ অন্যতম। যা একজন ব্যক্তির জীবনে অহরহ ঘটে থাকে। তা হতে পারে- পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা,চাকুরির চিন্তা, অন্তরঙ্গ সম্পর্কের বিচ্ছেদ ইত্যাদি। মানসিক চাপের প্রভাবে অনেকে শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যায় এবং তা আচরনে প্রভাব ফেলে।

চিন্তার ভ্রান্তি বা বিভ্রাট, অযোক্তিক বা অবাস্তব বিশ্বাস, দক্ষতার ঘাটতি,সক্ষমতার অভাব, শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা, আকস্মিক দুর্ঘটনা,অতিরিক্ত কাজের বোঝা,চাকরির ধরন ইত্যাদি মানসিক চাপের উৎপত্তির কারন হিসেবে বিবেচিত । লেখক এই বইতে বলেছেন যে, মানসিক চাপের প্রভাব নির্ভর করছে পরিস্থিতির বা ঘটনার মূল্যায়নের উপর। গবেষণায় দেখা গেছে , যারা চাপের প্রভাব কে অনেক ক্ষতিকর হিসেবে ধরে নিয়েছে,তাদের আসলেই অনেক ক্ষতি হয়েছে। আর যারা চাপকে ক্ষতিকর না ভেবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অংশ হিসেবে নিয়েছে, তাদের উপর চাপের প্রভাব কমই পড়েছে। তবে এই মানসিক চাপ যে সব সময় খারাপ তা কিন্তু না।কারন মানসিক চাপ না থাকলে আপনি পরীক্ষার আগে পড়ার আগ্রহ বোধ ই করতেন না। মনের বিজ্ঞান বলে, অতীত ও ভবিষ্যৎ থেকে আপনি যদি বর্তমানকে বেশি প্রাধান্য দেন ,তাহলে আপনি বেশি সুখি ও কর্মদীপ্ত ।

মানসিক চাপ মোকাবিলার জন্য শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক এই তিনটি ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানসম্মত কৌশলগুলো বিস্তারিত বলা আছে। শারীরিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা ও শারীরিক ব্যায়ামের কথ বলা হয়েছে, যা শরীরের পেশিগুলোকে শিথিল করে আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। মানসিক ও সামাজিক ব্যবস্থাপনার কৌশলগুলো পড়ে মনে হতে পারে, আপনি নিজের সম্পর্কে পড়ছেন বা সমাজের মানুষের সাথে ভাবের আদান -প্রদান করছেন।

বর্তমান ইন্টারনেট যুগে মানুষের ইন্টারনেট কেন্দ্রিক আলাদা একটা জগৎ বিদ্যমান। এর প্রভাব ও ব্যবস্থাপনার নিয়ে আলাদা একটা অধ্যায় আছে এই বইটিতে। যা কারো মধ্যে বিদ্যমান রিয়েল সেলফ(আপনি যা)/বাস্তবের আপনি ও আইডিয়েল সেলফ(আপনি যা হতে চান)/ ইন্টারনেটের আপনি সম্পর্কে ধারনা দিবে। সবশেষে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য আমরা কাদের সাহায্য নিবো তার বর্ণনা দিয়ে বইটির ইতি টানা হয়েছে।

সর্বোপরি বইটি পড়ে আপনার মনের গলিপথে হেটে আসতে পারবেন । যা নিজেকে নিজের সাথে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিবে হয়তো।

…………………………………………………………

বইঃ মনোসন্ধিঃ মানসিক চাপ মোকাবিলার সহজ উপায়

লেখকঃ আজহারুল ইসলাম

রিভিউ লেখকঃ রায়হান উদ্দিন মিলন

প্রকাশকঃ আদর্শ

পৃষ্ঠাঃ ৯৬

মূল্যঃ ২০০ টাকা

 

অটিজম শিশুর খাদ্য নিয়ে

অটিজম শিশুর খাদ্য নিয়ে


নিউট্রিশনিস্ট সুমাইয়া সিরাজী


সব বিশেষ শিশু দের মধ্যে অটিজম সমস্যা সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। অটিজম এর বৈশিষ্ট্য গুলো কারো প্রকট থাকে কারো প্রচ্ছন্ন থাকে! আবার একি রকম বৈশিষ্ট্য গুলো সবার মধ্যে থাকে না সবাই একক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয় তবে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যে আবার মিলও থাকে।
মনে রাখবেন পৃথিবীতে যদি এক লক্ষ মানুষ থাকে তবে এই লক্ষ মানুষের চাহিদা, ধরন, সমস্যাও এক লক্ষ রকমের হবে । একেক মানুষ একেক সত্তা! এই অটিস্টিক শিশুর বেলা তেও এর ব্যতিক্রম নয়। সবার খাবারের ধরণ ও চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হবে । খাবার এর পছন্দের তালিকাও ভিন্ন হবে ।
যখন প্রথম অটিজম আক্রান্ত শিশুর খাবার নিয়ে আলোচনা আসলো গবেষণা হলো তখন দেখা গেলো যে , যে সকল খাবারে অক্সালিক এসিড , গ্লুটেন , ক্যাসিন আছে ঐ ধরনের খাবার খেলে এসব শিশুর অস্থিরতা জনিত সমস্যা বাড়ছে। এছাড়াও ফাস্টফুড জাঙ্ক ফুড এগুলা প্রতিদিন খেলে তাদের মধ্যে আচরণগত সমস্যা বাড়ছে।
বাংলাদেশে এটা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে বেশি দিন হয়নি কিন্তু এটা নিয়ে গবেষণা এখনো চলমান!
গুগলের কল্যাণে আমরা যেমন অনেক ভালো কিছু শিখি আবার অনেক ভুল ধারণা নিয়ে থাকি। গ্লুটেন , ক্যাসিন, অক্সালিক এসিড খাবারে থাকলে খারাপ তাই সব বন্ধ বলে দেয়া হয়! কিন্তু সব অটিস্টক শিশুর এই সব উপাদান থাকা খাবারে সমস্যা নাও হতে পারে! কারো দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে সমস্যা কারো শুধু বাদামে কারো আবার রুটি তে, কোন শিশুর আবার দুধ ও ডিমে!

আমার দীর্ঘ চার বছরের অভিজ্ঞতা বলছি আমি এমনো অটিস্টিক শিশু পেয়েছি যার শুধু ভাত এ সমস্যা অর্থাৎ রাইস ও রাইস দিয়ে তৈরি খাবারে! অন্য কোন খাবারে সমস্যা নাই!!! শিশু টির ভাতে ফুড সেনসিটিভিটি ছিলো ৫+ অর্থাৎ সর্বোচ্চ!!! আর বাদামে ছিলো ৪+!!! এখন আপনি কিভাবে নির্ধারন করবে আপনি আপনার শিশু কে গুগল থেকে জেনে সঠিক খাবার দিচ্ছেন???
এই শিশু টির বাবা মা সিঙ্গাপুর থেকে এই টেস্ট গুলো করে এনেছেন । ওনার সামর্থ্য ছিলো কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই সামর্থ আমাদের সবার নাই!
তাহলে উপায় কি???
হা অবশ্যই উপায় আছে!

১.আপনি আপনার অটিস্টিক শিশু টির খাবারের ব্যাপারে আরেকটু সচেতন হতে পারেন! ফাস্টফুড এড়িয়ে নরমাল খাবার দিয়ে দেখুন তার সমস্যা গুলো কমে কিনা!
২!. আপনার শিশু কে সপ্তাহে ২ দিন দুধ খেতে দিন আর ঐ ২ দিন তাকে পর্যবেক্ষণ করুন কোন সমস্যা হচ্ছে নাকি সব ঠিক আছে!
৩. একটা ডায়েরি মেইনটেইন করুন যেদিন খুব বেশি অস্থির হয়ে যায় ঐ দিন নতুন কোন খাবারে সে খেয়েছে কিনা বা বেশি কোন খাবার খেলো কিনা দেখুন আর লিখে রাখুন! এভাবে প্রতি মাসে তাকে ফলো আপ এ রাখুন।

৪. একটা গোটা ডিম তাকে ১ দিন পর পর দিয়ে দেখুন তার আচরণ ঠিক আছে কিনা থাকলে প্রতিদিন খেতে দিন।

৫. চকলেট ,চিপস, ডীপ ফ্রাই খাবার এড়িয়ে চলুন। সয়াসস দেয়া খাবার , টেস্টিং সল্ট দেয়া খাবার, ইস্ট আছে এমন খাবার এসব শিশুর অস্থিরতা বাড়ানোর অন্যতম কারণ!

৬. শিশুর শরীরে সীসা , ক্রোমিয়াম, ল্যাকটেট এসিড, ম্যাগনেসিয়াম এর মাত্রা কতটুকু এগুলো একবার টেস্ট করাতে পারেন। এগুলোর সাথেও শিশুর অস্থিরতা ও আচরণের সম্পর্ক আছে। আইসিডিডিআরবি ( Icddrb) তে অথবা ঢাকা সিএমএইচে এও এই টেস্ট করাতে পারেন!!
৭. আটা দিয়ে তৈরি খাবার অল্প দিয়ে চালের তৈরি খাবার দিতে পারেন ‌। যেমন চালের রুটি, পিঠা , চালের পায়েস । আবার আরেক দিন রুটি দিয়ে দেখুন দুই দিনের পার্থক্য!!
৮. একজন বিশেষজ্ঞ ডায়াটেশিয়ান এর কাছে পরামর্শ নিতে পারেন। শিশুটির জন্য তার উপযোগী খাদ্য তালিকা করে
দিবে ।
৯ . আশে পাশের মানুষের কথায় না জেনে কোন খাবার দেয়া বন্ধ করবেন না! আপনার শিশুর খাবার সম্পর্কিত সমস্যা গুলো একজন অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ান কে জানান। আপনি নিশ্চয়ই হার্টের সমস্যা হলে দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাবেন না!!

মনে রাখবেন আপনার শিশু টি হয়তো বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন যা তাকে অন্য সবার থেকে ভিন্নতা দিয়েছে! কিন্তু সেও আপনার আর আমার মতো একজন মানুষ ‌। তাই তাকেও অন্য শিশুর মতো করেই দেখুন যেভাবে আপনি আপনার অন্য সন্তান কে দেখেন !!!

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পেল প্রথম নারী ভিসি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পেল প্রথম নারী ভিসি


নারী সংবাদ


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী ভিসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত ভিসির দায়িত্ব পালন করে আসা বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রোভিসি ড. শিরীন আখতার ভিসি পদে নিয়োগ পেয়েছেন।

রোববার রাষ্ট্রপতির এক আদেশে তাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

সিনিয়র সচিব নীলিমা আফরোজ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে।

এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ এর ১২ (২) ধারা অনুযায়ী ড. শিরীন আখতারকে প্রোভিসি পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানপূর্বক ভিসি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের ১৫ জুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মেয়াদ শেষ হলে এক আদেশে ড. শিরীন আখতার অস্থায়ীভাবে ভিসির দায়িত্ব পান। ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি হিসেবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার ১৯৭৩ সালে কক্সবাজার সরকারি গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রাম গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ সালে স্নাতকোত্তর পাস করেন। ১৯৯১ সালে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৯৬ সালের ১ জানুয়ারি তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৬ সালে শিরীন আখতার অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।
সূত্র : ইউএনবি

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-১

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-১


আফরোজা হাসান


অফিসের কাজ শেষ করে কেবিন থেকে বেড়িয়ে দুই কন্যাকে ওয়েটিংরুমে বসে থাকতে দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন ফাইয়াজ সাহেব। কন্যাদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন একসাথে দুইজনের আগমনের হেতু। স্বভাব স্বরূপ একজনের হাতে বই, অন্যজনের হাতে মোবাইল। একজনের মুখ প্রশান্ত আরেকজনের চেহারা জুড়ে খেলা করছে দুষ্টুমি। দেখে অবশ্য মনেহচ্ছে না আজ নতুন কোন ঝগড়া নিয়ে হাজির হয়েছে দুজন।

হাসি ফুটে উঠলো ফাইয়াজ সাহেবের মুখে। সপ্তাহে কম করে হলেও একদিন তাঁর দুই কন্যা অফিসে হানা দেয়। এবং বেশির ভাগ সময়ই দুজন ঝগড়া করতে করতে ঢোকে। পুরো অফিস জুড়ে সেদিন বইতে থাকে আনন্দধারা। স্টাফদের সবার ঠোঁটের কোণেও খেলা করে হাসি। ছোটবেলাতেও নিয়মিত অফিসে আসতো তাঁর দুই কন্যা। নিজ নিজ মহিমায় স্টাফদের সবার মনেও একটু করে জায়গা দখল করে নিয়েছিল দুই কন্যা সেই ছোটবেলাতেই।

এরপর থেকে রাজশাহীর আম, বগুড়ার দই, নাটোরের কাঁচাগোল্লা আর কোনদিন কিনে খেতে হয় না ফাইয়াজ সাহেবকে। স্টাফদের যার দেশের বাড়ি যেখানে সে সেই স্থানের বিখ্যাত জিনিস নিয়ে হাজির হয় মামণিদের জন্য। অবশ্য ফাইয়াজ সাহেবের দুই কন্যাও কম যায় না এই ব্যাপারে। প্রায়ই বাসা থেকে স্টাফদের সবার জন্য খাবার নিয়ে আসে স্টাফদের সবার জন্য। পর্দার দিকে পরিপূর্ণ খেয়াল রেখে স্টাফদের সবার পরিবারের খোঁজ-খবর রাখা, পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করা ইত্যাদি কাজগুলো খুব আনন্দ নিয়ে করে দুই বোন।

ভীষণ ভালো লাগে তখন ফাইয়াজ সাহেবের। তিনি নিজেও সবসময় স্টাফদের খোঁজ-খবর রাখতে চেষ্টা করেন। মেয়েরা যখন থেকে অফিসে আসা শুরু করেছে একটা দায়িত্ব নেমে গিয়েছে কাঁধ থেকে এমনটা অনুভব করেন। অদ্ভুত এক প্রশান্তি খেলা করে মন জুড়ে। সন্তানরা বড় হয়ে যখন তাদের কাজের দ্বারা পিতার মনে এই ভরসা তৈরি করে ‘আমরা আছি পাশে’ তখন মনেহয় এমনতর প্রশান্তির আবহ সৃষ্টি হয় মনে।
সমস্যা শুধু একটাই দিনের মধ্যে একাধিক বার দুজন চিৎকার চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তোলে। দুজনের পছন্দ-অপছন্দ, ভালোলাগা-মন্দলাগা একদম আলাদা বলেই হয়তো এমনটা হয়। তবে ফাইয়াজ সাহেব খুব উপভোগ করেন দুই কন্যার ঝগড়াঝাটি। একজনের কথা জ্ঞান মিশ্রিত, অন্যজনের শব্দরাও মনেহয় যেন খুনসুটি করছে। এই মেয়ে দুটাকে জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মনেহয় ফাইয়াজ সাহেবের।
হাসিমুখে মেয়েদের কাছে এগিয়ে গেলেন। বাবাকে দেখে শাবাব এবং মাহাম উঠে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে সালাম দিলো।
সালামের জবাব দিয়ে ফাইয়াজ সাহেব বললেন, কিরে মা তোরা কখন এসেছিস?

এই নাও আমাদের সিভি! বলে বাবার হাতে সিভি ধরিয়ে দিলো শাবাব।

অবাক কণ্ঠে ফাইয়াজ সাহেব বললেন, সিভি দিয়ে কি করবো?

আমরা দুজন ঠিক করেছি জব করবো তোমার অফিসে। সিরিয়াস কণ্ঠে বললো মাহাম।

হাসতে হাসতে দুহাতে দুই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে ফাইয়াজ সাহেব বললেন, কি আজ আবার ঝগড়া হয়েছে মামণির সাথে? আবার কি করেছিস তোরা দুজন?

শাবাব বলল, কিছুই করিনি আমরা বাবা। তোমার বৌ খালি খালি চিৎকার করে। আহ্লাদ দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলে ফেলেছো বৌকে। স্বৈরাচারী মহিলা।

মাহামও মাথা ঝাঁকিয়ে বড় বোনের সাথে সহমত পোষণ করে বলল, তো কাল থেকে জয়েন করছি আমরা।

শাবাব বলল, প্রতিদিন বিকেলে তিনঘণ্টা কাজ করবো আমরা। বেশি না মাত্র ত্রিশ হাজার বেতনেই এই কাজ করে দেবো আমরা।

দুই মেয়ের সিরিয়াস ভাব দেখে ফাইয়াজ সাহেবও হাসি গোপন করে বললেন, আরে এটা কেমন কথা হলো? অফিসের তো কিছু রুল আছে চাকরি করতে হলে সেসব মানতে হবে। সবার আগে ইন্টারভিউ দিতে হবে।

অবাক কণ্ঠে শাবাব বলল, ছিঃ বাবা! তুমি আমাদের ইন্টারভিউ নেবে? বাবা হয়ে মেয়েদের ইন্টারভিউ?

মেয়েরা যদি বাবার অফিসে কাজ করার বদলে বেতন চাইতে পারে, বাবা মেয়েদের ইন্টারভিউ নিতে পারবে না কেন? তাছাড়া আমি প্রফেশন আর রিলেশন মিক্সআপ করার পক্ষপাতী নই। কেননা এতে সম্পর্ক তার নিজস্ব গতিপথে চলতে বাঁধাগ্রস্ত হয়।

ঠিকআছে দিলাম নাহয় ইন্টারভিউ। আপনার অফিসে ইতিহাস হয়ে থাকবে এই ইন্টারভিউ মনে রাখবেন। এই মাহাম চল। বোনের হাত ধরে হাঁটা ধরলো শাবাব।

ফাইয়াজ সাহেব হেসে বলল, চলেন পৌছে দেই আপনাদেরকে।

জ্বীনা। আমরা বসদের কাছ থেকে লিফট নেই না। বলার জন্য শুকরিয়া।

অফিস থেকে বেড়িয়ে যেতে থাকা দুই কন্যার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আনন্দাশ্রুতে চোখ ভরে গেলো ফাইয়াজ সাহেবের। সত্যিই জীবনের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে তাঁর দুই কন্যা। ছোট্ট ছোট্ট হাতের ছোঁয়ায় জীবনের একটি অধ্যায় রচনার স্বপ্ন দুচোখ নিয়ে তিনিও রওনা হলেন মেয়েদের পেছনে।

চলবে

 

নারীর কাজের পরিধি বেড়েছে

নারীর কাজের পরিধি বেড়েছে


নারী সংবাদ


রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানার গোগ্রাম গ্রামের এক ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠি সাঁওতাল পরিবারের সদস্য মিনুরা। তাঁর স্বামীর নাম শ্রী মানিক ও পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। কৃষিনির্ভর এ পরিবারটির আয়ের উৎস তিন বিঘা বর্গা জমি। এছাড়া বাড়ির পাশে তাদের নিজস্ব একটি ডোবা আছে। ডোবাটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকত। দীর্ঘদিন থেকেই নিজের পরিবারের জন্য মিনুরার কিছু করার ইচ্ছা ছিল। মিনুরার আগ্রহ ও ইচ্ছায় একটি এনজিও এর সহযোগিতা ও পরামর্শে ডোবায় কার্পজাতীয় মাছের ২ কেজি ধানী পোনা ছেড়ে দেয়। মিনুরার প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনায় দেড় মাস পোনা পালন করে আঙ্গুলী পোনা তৈরি করে। দেড় মাস পর এ পোনা বিক্রি করে সে ৫ হাজার টাকা লাভ করে। ২ কেজি ধানী পোনার বাজারমূল্য ছিল ৮শ’ টাকা। খাবার বাবদ খরচ হয়েছে ২শ’ টাকা। এনজিওর সহযোগিতায় বিনামূল্যে ধানী পোনা ও মাছের খাবার না পেলেও তার লাভ হত ৪ হাজার টাকা।
শুধু মিনুরা নয়, এখন শহরের মতো গ্রামীণ নারীরাও নানা ধরণের উর্পাজনের প্রতি ঝুঁকেছে।
নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার কারণে তাদের সামাজিক ওপারিবারিক গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে ও অর্থনৈতিকভাবে পরিবারের উপর তাদের নির্ভরশীলতা কমেছে। গ্রামের নারীরা বাড়ির নিকটবর্তী পুকুর , ধানক্ষেত ও বড় পুকুরে খাঁচায় অনায়াসেই মাছ চাষ করছে।
কয়েক বছর যাবত নারী শুধু গার্মেন্টস সেক্টর নয়, কৃষিখাত, সূচিশিল্প, মৎস্যচাষ ও চিংড়ি রপ্তানীর কাজেও তাদের সমপৃক্ততা বাড়িয়েছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলে, শহরের চেয়ে গ্রামে নারী কর্মজীবির সংখ্যা বেশি। নিজ পরিবারেও ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীর শ্রম পুরুষের তুলনায় বেশি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরে‌্যর (বিবিএস) ২০১৫-১৬ সালের পরিসংখ্যানে জানা যায়, বিভাগীয় পর্যায়ে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুরের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বেশি। রংপুরে এ হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ।
গ্রামে জনশক্তিতে যুক্ত নারীদের শতকরা ৬০ ভাগ ই শ্রম দিচ্ছে কৃষিতে। আর শহরে গার্মেন্টেসে। ব্যুরো আরো জানায়, সবশেষে ২০১৫ -২০১৭ সালে গ্রামে নারীর কাজের হার বেড়েছে। গ্রামে শতকরা ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ শ্রমজীবি হিসেবে রয়েছে। শহরে কমে হয়েছে ৩১ শতাংশ।
এদিকে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) জানায়, পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ ছিল শতকরা ৬৪ ভাগ এখন তা কমে ৬০ দশমিক ৮ শতাংশ। ১৯৯৫-৯৬ সালে শ্রমে নারীর অবস্থান ছিল শহরে ২০দশমিক ৫ শতাংশ, গ্রামে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০০৩ সাল পর্যন্ত শহরে এ হার বেশি ছিল।
গাজীপুরের গাছা গ্রামের মেয়ে সামিনা। তার বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর বয়সে। এখন বয়স ছাব্বিশ বছর। বিয়ের পর থেকেই সে দিনে সতেরো ঘন্টা কাজ করে। তার পরিবারে সদস্য সংখ্যা সাতজন। এ সাতজনের খাওয়া দাওয়াসহ সেবা,সবকিছুর দায়িত্ব তার ওপরে। সামিনা আরো জানায় ভোর পাঁচটায় ফজরের আজানের পর থেকেই তার দিন শুরু হয়। শেষ হয় রাত দশটায়।রান্নাবান্না, পশু পালন, পরিবারের সদস্যদের খাওয়ানো, দুই শিশু সন্তানকে মাদ্রাসায় দিয়ে আসা ও বিকেলে আনা সব রকমের কাজ তার করতে হয়। সামিনা ঊঠানে শাক সবজিও লাগায়। তার লাগানো মরিচ দিয়েই সংসারের প্রয়োজন মেটে। এছাড়া বেগুন শাক তো রয়েছেই।
অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলেন, গ্রামে কাজে নারীর অংশগ্রহন বাড়া অবশ্যই ইতিবাচক। তা নারীর ক্ষমতায়নে প্রভাব ফেলবে।
সাভারের ষোলমাসী গ্রামের হাফিজা বেগমের তিনটি গরু। ৪০ বয়সী হাফিজা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গরুগুলো কিনেছে। এদিকে মহিলা অধিদপ্তর ও বিভিন্ন আয়বর্ধক কর্মসূচি যেমন সেলাই মেশিন ক্রয়, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী পালন, ক্ষুদ্র ব্যবসা, মৎস্য চাষ, নার্সারী ইত্যাদি বিষয়ে ঋণ দেয়। মহিলা অধিদপ্তরের ৬৪টি জেলার ৪৭৩টি উপজেলায় ক্ষুদ্র কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন সংস্থা জানানয়, ৯০ শতাংশের বেশি ক্ষুদ্র ঋন গ্রহনকারী হচ্ছেন নারী। ঋণের ক্ষেত্রে ফসল উৎপাদনে, পশুর খামার ও হাঁস-মুরগি পলনে টাকা ব্যয় করেন। খামারে যুক্ত আছেন ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। ফসল উৎপাদনে ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ। খুলনায় রপ্তানীমুখী চিংড়ি খাতেও নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ বাড়ছে।
রংপুরের গাইবান্ধার বাসিন্দা সুরাইয়া (৩০) জানান, একসময়ে খুব অভাবে ছিলেন, এখন সূচিকর্ম করে মাসে ৭/৮ হাজার টাকা আয় করেন। বিশেষ করে ,তারা টুপি সেলাই করেন। তাদের তৈরি টুপি মধ্যপ্রাচ্যেও যায়।

সুত্রঃ বাসস।

 

স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা

স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা


ডা. মারুফ রায়হান খান


সারা বিশ্বজুড়ে এই অক্টোবর মাসে পালিত হচ্ছে স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা মাস।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও আশঙ্কাজনক হারে প্রকোপ বাড়ছে ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সারের। বলা হয়ে থাকে প্রতি ৮ জন নারীর মধ্যে ১ জনের জীবদ্দশায় ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়ে থাকে।

কাদের বেশি হয় ব্রেস্ট ক্যান্সার?

– ৯৯.৫% ক্ষেত্রে মহিলাদের, ০.৫% ক্ষেত্রে পুরুষদের।

– বয়স : সাধারণত ৩০-৬০ বছর।

– ইউরোপের দেশগুলোর অধিবাসীদের।

– পরিবারে যদি অন্য কারও হয়ে থাকে (মা,খালা ইত্যাদি)।

– যারা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেন। জন্মনিরোধক ওষুধ খান।

– যাদের মাসিক আগে শুরু হয় এবং দেরিতে মাসিক বন্ধ হয়।

– যারা প্রথম বাচ্চা বেশি বয়সে নেন।

– চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খান।

– সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান না।

– যাদের সন্তান নেই।

কী কী উপসর্গ নিয়ে আসেন রোগীরা?

– এক ব্রেস্ট বা দুই ব্রেস্টের আকারে বা গঠনে কোনো পরিবর্তন। চাকা চাকা দেখা যাওয়া।

– নিপল বা স্তনবৃন্ত থেকে রস নিঃসৃত হওয়া। কখনও রক্ত নিঃসৃত হওয়া।

– নিপল ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া, নিপলে চির ধরা।

– বগলে চাকা চাকা কিছু দেখা যাওয়া।

– অনেক সময় ব্রেস্টের চামড়া গর্ত গর্ত হয়ে যায় (অনেকটা কমলার খোসার মতো)।

– এছাড়া ব্রেস্ট ক্যান্সার যদি শরীরের অন্যান্য জায়াগায় ছড়িয়ে যায় তাহলে কাশি, জণ্ডিস, হাড়ে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ নিয়ে রোগী আসতে পারে।

কীভাবে ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্ণয় করা যায়?

১. রোগের যথাযথ ইতিহাস নিয়ে এবং পরীক্ষা করে

২. ইমেজিং :
– আল্ট্রাসনোগ্রাফি
-ম্যামোগ্রাফি

৩. হিস্টোলজি :
– FNAC
– বায়োপসি

৪. টিউমার মার্কার্স : যেমন- BRCA- 1, BRCA-2

তবে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে নিরূপণের জন্যে প্রতি মাসে একবার নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা (Self Breast Examination) করে দেখতে বলা হয়ে থাকে।

যেভাবে করা যেতে পারে সেল্ফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশান :

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা :

ক. দুই বাহু মাথার ওপরে বা পেছনে উঁচু করে ধরতে হবে।

খ. লক্ষ্য করতে হবে স্তনের আকার-আকৃতি, উপরের চামড়া বা রঙের কোনো পরিবর্তন আছে কি না। যেমন : চামড়া পুরু হয়ে যাওয়া, লালচে বা কালচে হয়ে যাওয়া, তাপ অনুভব করা।

বিছানায় শুয়ে পরীক্ষা :

ক. ডান কাঁধের ওপর বালিশ রাখতে হবে।

খ. ডান হাত মাথার পেছনে দিতে হবে।

গ. বাম হাতের ৩ আঙুল দিয়ে ডান স্তন চক্রাকারে পরীক্ষা করতে হবে এবং দেখতে হবে কোনো তরল বা রক্ত নিঃসৃত হয় কি না।

ঘ. একইভাবে বাম পাশের স্তন পরীক্ষা করতে হবে।

স্নান করার সময় পরীক্ষা :

ক. একটি হাত মাথায় রাখতে হবে।

খ. অন্য হাতের আঙুল দিয়ে কলার বোনের কয়েক ইঞ্চি নিচ থেকে একদম বগল পর্যন্ত চেপে দেখতে হবে কোনো চাকা বা ব্যথা অনুভূত হয় কি না।

আর যাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশি (উপরে উল্লেখ করা হয়েছে) তাদের প্রতি ৬ মাসে একবার আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা ম্যামোগ্রাফি করাতে বলা হয়। যাদের বয়স ৩০ বছরের কম তাদের জন্যে আল্ট্রাসনোগ্রাফি এবং যাদের ৩০ বছরের বেশি তাদের জন্যে ম্যামোগ্রাফি অধিক প্রযোজ্য।

কীভাবে চিকিৎসা করা হয় ব্রেস্ট ক্যান্সারের?

কয়েক প্রকারের চিকিৎসা রয়েছে ব্রেস্ট ক্যান্সারের।
যেমন :

১. অপারেশন
২. রেডিওথেরাপি
৩. কেমোথেরাপি
৪. হরমোন থেরাপি
৫. ইমিউন থেরাপি

 

জীবনের নানান রঙে আঁকা বই ‘ইয়াসমীন’

জীবনের নানান রঙে আঁকা বই ‘ইয়াসমীন’


রংধনু


আজ একটা বই পড়া শুরু করেছি। গল্পের বই। বেশ কয়েকটি ছোট গল্পের সমন্বয়ে রচিত বইটি। নাম ইয়াসমীন, প্রথম গল্পের নামে বইটির নামকরণ করা হয়েছে। সেখান থেকে দুটো গল্প পড়লাম।

যেকোনো বই পড়ে সেখান থেকে কী বুঝলাম, কী শিখলাম এই নিয়ে আলোচনা করা হয়নি কারো সাথে। হবেই বা কিভাবে! তেমন বই পড়ুয়া পাইনি যে। গল্পগুলো পড়ে কেমন কেমন মন খারাপের মেঘ ভর করেছে। আটপৌরে জীবনের গল্প।

প্রথম গল্পটা দুই বান্ধবীর। অনেকটা স্মৃতিচারণমূলক। আজকের দিনে থেকে মারজান চরিত্রটি অতীতের ডানায় ভর করে বান্ধবী ইয়াসমীনের সাথে কাটানো নানান ঘটনা মনে করছে। অতীত ভ্রমণে যাওয়ার মূল কারণ ইয়াসমীনের চিঠি। চিঠির খাম না খুলে মাদ্রাসায় তাদের দেখা হওয়ার প্রথম দিন থেকে শুরু করে ইয়াসমীনের বাসায় বেড়াতে যাওয়া, সেখানে প্রকৃতির খুব কাছে ঝর্ণা, পাহাড় এসব দেখা, অনেক বছর পর ট্রেনে দেখা হওয়া নানা বিষয় নিয়ে বলেছে। অনেক অপেক্ষার পর শেষ পর্যন্ত চিটি পড়েছে। ইয়াসমীনের কঠিন অসুখ হয়েছে, বাঁচবে না বেশিদিন হয়ত। পাহাড়ি ঝর্ণার কাছে তাকে কবর দিতে বলেছিল।

অনেকদিন পর বই পড়তে পড়তে প্রকৃতির সংস্পর্শে গেলাম। নদী, চাদের আলো, গাছপালা, পাহাড়, ঝর্ণা অবলোকন করেছি। কিন্তু গল্পের বর্ণনা বেশি লম্বা করে ফেলেছে আমার মনে হয়েছে। এক জায়গা থেকে হুট করেই আরেক জায়গায় চলে গিয়েছে লেখিকা। আবার কিছু কিছু জিনিস বোঝা যায়নি, বিশেষ করে কয়েকটা চরিত্র। যেমন ইয়াসমীনের বাবার সাথে মারজানের বাবার কি কিছু নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে কিনা।

দ্বিতীয় গল্পটার নাম সময়। এটা সংগ্রাম করা এক ছেলের গল্প। অভাবের সংসারে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ওষুধের দোকানে কাজ করে। অসুস্থ বাবা, মন মরা মা, জীর্ণশীর্ণ ছোট ভাই। এই নিয়ে পরিবার। শহরের প্রাণকেন্দ্রে ভিটে আছে কিন্তু ঘর দুটো ভাঙা, বৃষ্টির পানি পড়ে। ফুফুরাও থাকে সেই ভিটায় ঘর তুলে। একটা আহত কুকুরকে সে পকেটের টাকা খরচ করে চিকিৎসা করিয়েছিল। সেই থেকে কুকুর ছেলেটার ভক্ত। প্রতি রাতে কাজ থেকে ফেরার সময় কুকুর তার সাথে দেখা করে। ছেলেটি চায়ের দোকান থেকে রুটি খাওয়ায় প্রতি রাতে। এর মাঝে ফুফুরা তাদের ভাগের জায়গা বিক্রি করে দেয়। ফুফাতো বোনটি ছেলেটিকে জানায় দাদি কিছুটা জমি ছেলেটিকেও লিখে দিয়ে গেছে। যেন ওই জমিটুকু বিক্রি করে বাড়ি ঠিক করে আর ব্যবসা করে। ফুফাতো বোন বিক্রির সব ব্যবস্থা করে দেয়। এরমধ্যে ফুফুরা সবাই গ্রামে চলে যায়। আর ছেলেটিও ধীরে ধীরে ব্যাবসার প্রসার ঘটায়। বাড়ি গাড়ির মালিক হয়। শেষে এক রাতে ড্রাইভে বের হয়। সেই কুকুরটি ছেলেটিকে এক নজর দেখার জন্য রাস্তায় এসেছিল। কিন্তু সে গাড়ি দিয়ে তাকে ধাক্কা দেয় কুকুরটাকে। কুকুর মারা যায়। ছেলেটি কুকুরকে গালি দেয়, কারণ রক্ত লেগে গাড়ি নোংরা হয়েছে। আর সেই ফুফাতো বোন বা ফুফুদেরও খবর নেয় না ছেলেটি।

সময়ের বদলে বদলেছে ব্যবহার। একসময়ের দরদী লোক হয়ে উঠেছে দাম্ভিক। বাস্তব জীবনেও অনেকের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়। অতীত ভুলে যায়। কষ্টের সময়ে পাশে থাকা মানুষদের ভুলে যায়। নিজেই সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে। এটা মোটেও ঠিক না। বরং এর উল্টোটাই হবার কথা। কৃতজ্ঞতা থাকা উচিৎ সবার প্রতি।

আমার কেন যেন একটা গল্পের শেষও ভালো লাগেনি। তাতে কী! নিজের মত করে শেষ ভেবেছি। ইয়াসমীন আর মারজান জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পাহাড়ী ঝর্নাঘেরা সবুজ কোনো অরণ্যে কাটাচ্ছে দিনগুলো সেই আগের মত দূরন্তপনায়। আর দ্বিতীয় গল্পের ছেলেটি আত্মীয়ের হক তো আদায় করেই সাথে সেই কুকুরটির জন্যেও বাড়ির আঙিনায় একটি ঘর বানিয়ে দিয়েছে। সাথে অন্যদেরও সাহায্য করছে জীবনে বড় হওয়ার জন্য।

গল্প পড়ে আলোচনা করতে ইচ্ছে করল তাই লেখার চেষ্টা। আমি অবশ্য জানি না কিভাবে আলোচনা করতে হবে। রিভিউও লিখিনি। নিজের মতামত লিখলাম। আরো কয়েকটা গল্প আছে, পড়ে সেগুলো নিয়েও লিখব ইন শা আল্লাহ্‌।

 

সব প্রতিষ্ঠানে ‘মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ ও বেবি কেয়ার কর্নার’ করতে হাইকোর্টের রুল

সব প্রতিষ্ঠানে ‘মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ ও বেবি কেয়ার কর্নার’ করতে হাইকোর্টের রুল


নারীর জন্য আইন


দেশের সকল কর্মক্ষেত্র, বিমানবন্দর, বাস, রেলওয়ে স্টেশন ও শপিংমলে মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ ও বেবি কেয়ার কর্নার স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে রুল জারি করেছেন আদালত।

রোববার (২৭ অক্টোবর) একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানিতে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

মন্ত্রী পরিষদ সচিব, নারী ও শিশুকল্যাণ সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, বিমান ও পর্যটন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, শপিংমলে ব্রেস্ট ফিডিং ও বেবি কেয়ার কর্নার স্থাপনে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করতে রুল জারি করেছেন আদালত।

রিট আবেদনটি দায়ের করেন নয় মাসের শিশু উমাইর বিন সাদী ও তার মা আইনজীবী ইসরাত হাসান।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মায়েরা উল্লেখিত জনসমাগম স্থানে প্রায় দুধ পান করা শিশুদের নিয়ে অস্বস্তিতে ভোগেন। কারণ সেসব স্থানে শিশুকে নির্বিঘ্নে ও আচ্ছাদিত পরিবেশে শিশূকে স্তন্যদান করাতে পারেন না। সেই সুবিধাই করে দেয়া থাকেনা সেসব স্থানে। তাই এসব স্থানে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করতে হবে যেন সেখানে কোনো মা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে কোনো বিড়ম্বনায় না পড়েন। এ কারণেই রিট করেছি।

রিটে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করেছেন আইনজীবী ইসরাত হাসান।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুন্দর, সুস্থ ও সবলভাবে শিশুকে বেড়ে তুলতে এবং নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে সরকারি বেসকারি প্রতিটি কর্মস্থলে ডে কেয়ার সেন্টার ও মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ স্থাপন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

এরপর ৯ বছর অতিবাহিত হলেও এক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যায়নি। বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রে কর্মজীবী মায়েদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার নেই।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে, কর্মক্ষেত্রে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে যেন একজন কর্মজীবী মা সমর্থ হন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিমা-ব্যাংক, শপিংমল, কল-কারখানা, পেশাজীবী সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন ও মানবাধিকার সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

কিন্তু নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালসহ অফিস, ব্যাংক-বিমা প্রতিষ্ঠান এবং শপিংমলে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করা হয়নি।

সুত্রঃ যুগান্তর।

 

গর্ভকালীন কিছু কমন সমস্যা এবং তার প্রতিকার

গর্ভকালীন কিছু কমন সমস্যা এবং তার প্রতিকার


ডা. মারুফ রায়হান খান


আজ লিখতে চাই গর্ভকালীন কিছু কমন সমস্যা এবং তার প্রতিকার নিয়ে। এটা আসলে সবার জানা প্রয়োজন।
‘প্রেগনেন্সি’ বিষয়টা আমার কাছে মিরাকিউলাস লাগে। একটা দেহে দুটো প্রাণ। একসাথে নির্ভর করছে দুটো সত্ত্বার ভালো থাকা-মন্দ থাকা, সুস্থতা-অসুস্থতা–মায়ের স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে সন্তানের বাঁচা-মরা। প্রেগনেন্সিতে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে হরমোনের বেশ তারতম্য ঘটে, শারীরিক গঠনের কিছু পরিবর্তন হয়–তাই মায়ের কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা নতুন করে দেখা দেয় বা বেড়ে যায়। দেখা যায় যে, ডেলিভারি হয়ে যাবার পরপর সে সমস্যাগুলোও চলে যায়। এগুলোর বেশিরভাগই ফিজিওলজিক্যাল বা স্বাভাবিক। প্রেগনেন্সি ইস্যুটা যেহেতু সবার কাছে খুব সেন্সিটিভ তাই অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এসব সমস্যায়। আসলে খুব বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হবার কিছু নেই। জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন নিয়ে এলে, কিছু পরামর্শ মেনে চললে যার অধিকাংশই প্রতিকার বা প্রতিরোধ করা যায়। একেবারেই কমন কিছু সমস্যার সমাধান নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি। আমার মনে হয় বিষয়গুলো সবারই জানা থাকা প্রয়োজন।

১. বমিবমি ভাব এবং বমি
দেখা যায় যে প্রতি ১০০ জন গর্ভবতীর প্রায় ৭৫ জনেরই এ সমস্যাটা দেখা দেয়। সাধারণত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরপরই এ সমস্যা হয়।
-সকালে ঘুম থেকে উঠেই, বলা হয়ে থাকে বিছানাতেই শুকনো খাবার যেমন : টোস্ট, বিস্কিট, মুড়ি ইত্যাদি খেতে।
-প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে বলা হয়।
-অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হয়।
-একবারে বেশি খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খান।

২. কোমর ব্যথা 
প্রতি ১০০ জনের প্রায় ৫০ জনেরই এ সমস্যা দেখা দেয়।
-অনেক বেশি ওজন বাড়িয়ে ফেলা পরিহার করতে হবে।
-পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, মোট দশ ঘণ্টা।
-পা কিছুটা উঁচুতে রেখে যেমন : পায়ের নিচে একটা বা দুটো বালিশ রেখে বিশ্রাম নিন।
-শক্ত বিছানায় শোয়া ভালো।
-উঁচু হিলযুক্ত জুতো পরা যাবে না।
– কুঁজো হয়ে বসা বা কোনো জিনিস নিচ থেকে তোলা পরিহার করা শ্রেয়।
– দাঁড়ানোর সময় সোজা হয়ে দাঁড়াবেন।
– ভারী এবং পরিশ্রমের কাজ করবেন না।
– কোমরে ম্যাসাজ করতে পারেন।
– গরম বা ঠাণ্ডা কিছু দিয়ে সেঁক দিতে পারেন।

৩. কোষ্ঠকাঠিন্য
-প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
– আঁশজাতীয় খাবার যেমন : শাকসবজি এবং তাজা ফলমূল বেশি করে খেতে হবে।
-ইসপগুলের ভূষি খাওয়া যেতে পারে।
– চাপ এলে টয়লেটে যেতে বিলম্ব করা যাবে না।
– কিছুটা হাঁটাচলার অভ্যেস করা ভালো, দিনে ২০-৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৩ দিন হাঁটা যেতে পারে।

৪. পায়ে খিল ধরা
-পায়ে ম্যাসাজ করতে হবে।
– গরম সেঁক দিলে উপকার পাওয়া যায়।
-চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি-ওয়ান সেবন করা যেতে পারে।

৫. পায়ে পানি আসা/ পা ফোলা 
-বিশ্রাম নিন এবং পা দুটো একটা বা দুটো বালিশের ওপর রাখুন।
– একটানা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না।
-আরামদায়ক জুতো পরুন।
– বেশি করে পানি পান করুন।

৬. বুক জ্বালাপোড়া, এসিডিটি 
-একসাথে অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলা পরিহার করতে হবে।
– খাবার পরপরই বিছানায় শুতে চলে যাওয়া যাবে না।
– বিছানায় যাবার অনেকক্ষণ আগেই খাবার খেয়ে ফেলুন।
– উঁচু বালিশে শুলে আরাম পাওয়া যায়।
– এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।

৭. পায়ে আঁকাবাঁকা শিরা, পাইলস 
-পায়ে আঁকাবাঁকা শিরার জন্যে ক্রেপ ব্যান্ডেজ ব্যবহার এবং বিশ্রামের সময় পা উঁচু করে রাখতে বলা হয়।
-পাইলসের জন্যে নিয়মিত টয়লেট সারা জরুরি; কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয়ে যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। টয়লেট সারার সময় বেশি চাপ দেওয়া যাবে না। বাম কাত হয়ে শোয়া ভালো। গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

৮. সাদা স্রাব যাওয়া 
-ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এর প্রধান চিকিৎসা।
-নরম সূতি আন্ডারগার্মেন্টস ব্যবহার করা ভালো।
তবে সবকথার শেষকথা হচ্ছে প্রতিজন গর্ভবতী নারীরই নিয়মিতভাবে চিকিৎসকের কাছে ভিজিটে যেতে হবে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে এবং তার প্রেস্ক্রাইব করা ওষুধপত্র নিয়মিত খেতে হবে।

 

স্মৃতিটুকু নিস্তরঙ্গ

স্মৃতিটুকু নিস্তরঙ্গ


সুমাইয়া তাসনিম


আমার কাছে শেষ বলে আসলে কিছু নেই। যতদিন মানুষ বেঁচে থাকে ততদিন তার জীবনের কোনো গল্পের কোনো অধ্যায়ই একেবারে শেষ হয়না। তবু দিন শেষে কিছু কিছু চেনাপথ শত অভ্যস্ততা মুছে রোজকার রুটিন থেকে বাদ পড়ে যায়। কেবল স্মৃতিটুকু নিস্তরঙ্গ পুকুরে অবসন্ন দুপুরে টুপ করে ঝরে পড়া পাতার মত হাল্কা ঢেউ তোলে মাঝেমাঝে। এক বছর বেশি সময় লাগার পরও শেষ ক্লাস পাঁচ বছরের সময়টাকে যেন একটা মালায় গেঁথে ফেললো। যেন একটা পুতির মালা গাঁথা অবশেষে শেষ হলো। আর একটি দিনও বাকি নেই ক্লাসের। আর একটি পুতিও হাতে নেই গাঁথবার।

কাল শেষ ক্লাস শেষে অনেকক্ষণ বসে বসে মেয়েদের র‍্যাগডে প্রিপারেশন দেখলাম। তারপর ফুটপাতের হলুদ টাইলসগুলো ধরে হাঁটতে হাঁটতে পলাশি পেরিয়ে রাহির ডিপার্টমেন্টে গেলাম। ওর কাজ শেষে একসাথে বাসায় ফিরলাম। ক্লাস শেষে একসাথে ফেরা আর কবে হবে কে জানে!

আমরা যখন ইডেনে ভর্তি হই তখন ইডেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ন্যাশনালে প্রায় সবাই ভর্তি হয় একটা চাপা কষ্ট নিয়ে। আরেকটু ভালো প্রিপারেশন নিলে আরেকটু ভালো কোথাও থাকতাম এই উপলব্ধি আসে সহসাই। আমি তেমনটা ভেবেছিলাম কিনা মনে নেই। তবে পছন্দের বিষয়ে পড়তে পারায় আর কোনো কষ্ট ছিলো না।

আমার শুরুটা ছিলো সরকারি কলোনির স্কুলে। তারপর মাদরাসার দোতলা ভবন আর ছোট্ট মাঠের গন্ডি, যেখানকার টিচাররা এখনো দেখলে খুশি হয়ে যান। তারপর জেলখানার মত ঢাকা সিটি কলেজ, অনেক দিন পর্যন্ত ঘুরানো প্যাচানো সিড়ি ডিঙ্গিয়ে নিজের ক্লাস কোনটা তাই খুঁজে পেতে কষ্ট হয়ে যেতো। তারপর আসলাম ইডেনে। সিটি কলেজের মাঠ ছাড়া এসি রুমের বদ্ধ পরিবেশ আমার মত মানুষের জন্য না সেটা বেশি টের পেয়েছিলাম ইডেনের মুক্ত হাওয়ায়। ক্যাম্পাসে পা দিতেই ভেতরটা ঠান্ডা হয়ে আসবে প্রকৃতির আবহে। এত্ত রকমের গাছ, এত্তরকমের পাখির ডাক, এত্ত রঙের ফুল.. আহ…! বাইরের কোনো মানুষ ছাড়া নিজেদের একটা রাজ্য মনে হয়। এত্ত মেয়ে একসাথে আমি এর আগে দেখিনি। সবাই নিজের মত পড়ছে, খাচ্ছে, কাজ করছে, আনন্দ করছে, নিজের মত সময় কাটাচ্ছে। ভিন্ন একটা জগৎ যেন! কতদিন পুকুরপাড়ের বেঞ্চে শুয়ে শুয়ে জীবনের কত প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি ভাবনায়। বিশাল মাঠের কোণের ছোট ক্লাবটায় তাইকোয়ান্ডো প্র‍্যাকটিস করতে করতে হারানো আত্মবিশ্বাস আবার খুঁজে পেয়েছি নিজের ভেতরে। ধবধবে সাদা ড্রেসটা গায়ে চাপালেই শরীরে একটা অদ্ভুত জোর পেতাম। সব শক্তি দিয়ে একেকটা কিক আর পাঞ্চ মেরে দুইঘন্টার প্র‍্যাকটিস শেষে ক্লান্ত হয়ে হাভাতের মত নাশতা করতাম হলের ক্যান্টিনে। পড়াশোনার মান নিয়ে আমার বরাবরই আপত্তি ছিল কিন্তু একসময় সেটা মেনে নিয়েছিলাম। বুঝে নিয়েছিলাম এখানে প্রেশার করার কেউ নাই। লক্ষ্য ঠিক করে নিজেকেই চেষ্টা করতে হবে৷ একদিকে ভালোই ছিলো, প্রচুর এক্সট্রা কারিকুলার এ্যাক্টিভিটিজ তেমন কোনো জটিলতা ছাড়াই করতে পেরেছিলাম।
ইডেনের বিশাল ক্যাম্পাস পুকুরঘাট আর পুকুরের মাছগুলোকে পর্যন্ত এই যাবার কালে আপন মনে হচ্ছে। কলেজ বাসের দিনগুলোতে গল্প করতে করতে কখন পথ ফুরিয়ে যেতো টের পাওয়া যেতোনা। সেই লাল কলেজ বাস “চন্দ্রমল্লিকা” তোরে মিস করবো। সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের করিডর, মিস করবো। ডিপার্টমেন্ট থেকে নামলেই ফুচকা, ভেলপুরি, আঁচার, চাটনি, ফলের জুস, কিমা পরোটা, খিচুড়ি, ফ্রাইড রাইস, শীতের ভাপা পিঠা আর নানাপদের ঝাল ঝাল ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা খেয়ে পেট ভরানোর দিনগুলো মিস করবো। ইডেনের প্রত্যেকটা ফুল গাছ, লাইব্রেরির টেবিল-চেয়ার, ক্লাসরুম আর পুরানো বেঞ্চগুলো, ছাদ আর ল্যাবরুম, সেমিনারের বইগুলো, মিস করবো খুব। টিচারদের আর হাসি, কান্নায় ভরপুর মেয়েগুলোকে মিস করবো।।

*এই ছবিগুলো ইডেনে বিভিন্ন সময়ে তোলা। ছবিগুলোর আসল কপি গুলো হারিয়ে ফেলেছি ত মনে হলো এই পোস্টের সাথে থাকুক।

 

সময়মতো চিকিৎসায় শিশুর অন্ধত্ব প্রতিরোধ সম্ভব

সময়মতো চিকিৎসায় শিশুর অন্ধত্ব প্রতিরোধ সম্ভব


স্বাস্থ্যকথা


লাবনীর বয়স মাত্র নয় বছর। এই অল্প বয়সেই মেয়েটি খুব গোছালো। বাবা-মা যাই বলে তাতেই তার সম্মতি। অন্য বাচ্চাদের মত তার তেমন কোন বায়নাও নেই। প্রতিদিন সকালে স্কুলে যায়। আর স্কুল থেকে ফিরে কিছুক্ষণ টিভিতে কার্টুন দেখে। তারপর গোসল সেরে খেয়ে নেয়। এরপর ঘুম। বিকেলে ঘুম, থেকে উঠে বই নিয়ে পড়তে বসা। এ যেন তার নিয়মিত কাজ।
কিন্তু ক’দিন হলো মেয়েটি মা’কে এসে বলছে শ্রেণী কক্ষে পিছনে বসলে সে ব্ল্যাক বোর্ডে শিক্ষকের লেখা ভালভাবে দেখতে পায় না। মা শুরুতে পাত্তা না দিলেও একদিন লাবনীর শ্রেণী শিক্ষক ফোন করে জানায় বিষয়টি। তারপর দিন লাবনীর মা তাকে নিয়ে যায় নগরীরর ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে। সেখানে চোখের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে জানা যায়, লাবনীর চোখে ছানি।
মাত্র ছয় মাস সতের দিনে জন্ম হয় মিথিলার। জন্মের পরপরই রাখা হয় ইনকিউবেটরে। জন্মের সময় ওজন ছিল মাত্র ১১২০ গ্রাম। জন্মের একদিন পরই ধরা পড়ে জন্ডিস। এভাবে প্রায় দেড় মাস নগরীরর দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাসায় নিয়ে আসা হয় মিথিলাকে। বাসার আনার সময় একজন সেবিকা বলেছিলেন চোখের এবং কানের ডাক্তার দেখানোর কথা। কোথায় দেখাব জানতে চাইলে সেই নার্স মিথিলার বাবা-মা’র হাতে এক ডাক্তারের ঠিকানা ধরিয়ে দেন। বাসায় আনার পর মিথিলার বাবার আর্থিক অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে সেই মাসে আর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি।
পরের মাসে মিথিলার বাবা বেতন পাওয়ার পরদিনই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। সেদিন অনেক্ষন দেখেন।  এক সপ্তাহ পর সেখানে গেলে বেশ কয়েকজন ডাক্তার মিথিলার চোখ পরীক্ষা করেন। ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ডাক্তার সামান্য দেখেই বুঝে যান । তখন কর্তব্যরত ওই ডাক্তার যত দ্রুত সম্ভব তাকে ভারতে নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। কারন মিথিলার রেটিওনাপ্যাথী অব প্রি-ম্যাচিউরিটি সংক্ষেপে ‘আরওপি’ বলা হয়। তা সমস্যা হয়েছিল।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ছয় কোটি শিশু। আর মোট জনসংখ্যার মধ্যে অন্ধত্বের সংখ্যা প্রায় সাড়ে আট লাখ। আর এরমধ্যে শিশুর সংখ্যা অর্থাৎ অন্ধ শিশুর সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ হাজারের কাছাকাছি।
চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আরিফুর রহমান বলেন, শিশুদের বিভিন্ন ধরনের চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অনেক শিশু চোখের কাছে নিয়ে বই পড়ে, কাছে গিয়ে টিভি দেখে, পেছনে বসলে ক্লাসের বোর্ড দেখতে পায় না। এসব সমস্যা হলে চশমা ব্যবহার করেই স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়াও অনেক শিশুর চোখে ছানি হতে পারে। ছানি রোগ হলেও ভয়ের তেমন কিছু নেই। কারণ ছানি সহজেই অপারেশন করা যায়।
তিনি বলেন, অনেক বাচ্চার চোখ টেরা হয়। এতে করে চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে যেতে থাকে। এসব টেরা চোখের অপারেশন করে যত দ্রুত সম্ভব সোজা করা উচিত। এছাড়াও আঘাতজনিত কারণেও অনেক সময় চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
রেটিনা বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমুন নাহার বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে শিশু অন্ধত্বের প্রধান কারণ হচ্ছে ভিটামিন-‘এ’ এর অভাব। অনেক বাবা-মা’ই শিশুদের খাবারে ভিটামিন‘এ’ যুক্ত খাবার রাখেন না। এটা তারা করেন অজ্ঞাত এবং অসচেতনতাবসত। মূলত শিশুদের খাবারের মধ্যে সব ধরনের ভিটামিনের খাবার যুক্ত করতে হয়।
তিনি বলেন প্রতিবছর হাজারো শিশু অন্ধ হয়। সময়মতো চিকিৎসা করে এ অন্ধত্বের প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সুত্রঃ বাসস।

 

মহাকাশে হাঁটলেন দুই নারী

মহাকাশে হাঁটলেন দুই নারী


ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স


এতদিন ঠিকঠাক পোশাকের অভাব ছিল। সেই আকাঙ্খিত স্পেসসুট তৈরির পরই প্রথমবারের মতো মহাকাশে একসঙ্গে হাঁটলেন দুই নারী। এর আগে বেশ কয়েকবার নারীরা মহাকাশে গেলেও একসঙ্গে হাঁটার সৌভাগ্য হয়নি।

মহাকাশচারী ক্রিস্টিনা কোচ ও জেসিকা মেইর শুক্রবার এই সৌভাগ্য অর্জন করেন বলে জানিয়েছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা। কোচ এই নিয়ে চারবার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গেলেন। অপরদিকে ১৫তম নারী হিসেবে স্টেশনে গেছেন মেইর।

নাসা জানায়, ১৮ অক্টোবর তারা মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন জানিয়েছে, নিউইয়র্ক সময় শুক্রবার সকালে তারা স্টেশনের বাইরে হাঁটেন। প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টাব্যাপী এই প্রোগ্রাম সরাসরি সম্প্রচার করে নাসা। প্রায় ৬১ জন ক্রু তাদের এই মহাকাশে পাড়ি দেয়ার বিষয়টি দেখভাল করছেন।

নাসা বলছে, এটি তাদের ২০২৪ সাল নাগাদ চাঁদে মানুষ পাঠানো এবং নারীদের এ ক্ষেত্রে আরও উৎসাহিত করার পদক্ষেপ।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

মাসিক চলাকালে কিশোরীদের পরিমাণমত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে

মাসিক চলাকালে কিশোরীদের পরিমাণমত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে


স্বাস্থ্যকথা


যে কোন মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য প্রয়োজন। সু-স্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের পুষ্টিকর খাদ্যের বিকল্প নেই। তবে তারপরও প্রতিটি মানুষের জন্য বিশেষ সময়ে পুষ্টিকর খাদ্য পরিমাণমত না পেলে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে পুষ্টিকর খাদ্য অবশ্যই দরকার। যেমন চৌদ্দ বছর বয়সী মারিয়া গত কয়েক মাস ধরে প্রায় সময় অসুস্থ থাকছে। আজ জ্বর তো কাল পেট ব্যাথা এমন অসুখ যেন তার নিত্যদিনের সঙ্গী। অসুখের কারণে প্রতি মাসে প্রায় দিনই স্কুল কামাই যায় তার। একেবারে কিছুই খেতে চায় না মেয়ে। না খেয়ে শরীর হয়ে গেছে শুকনো কাঠ। মুখেও ব্রণ হয়েছে বেশ।
এ রকম কয়েকদিন পরপর অসুস্থ থাকায় মা একদিন নিয়ে গেলেন এক গাইনী ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার রোগের ধরন আর মারিয়ার সাথে কথা বলে বুঝতে পারলেন, সে আসলে অপুষ্টিতে ভুগছে।
ডাক্তার জানান, মূলত মাসিক শুরু হওয়ার পর থেকে তার এ ধরনের সমস্যা। এই বয়:সন্ধিকালে তার যে ধরনের খাবার দরকার তা সে খায়নি। সে কারণেই শরীর বারবার খারাপ হয়ে যায়।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ারা বেগম বলেন, বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের মধ্য বেশ পরিবর্তন হয়। এ সময় তাদের মনের অবস্থার যেমন পরিবর্তন হয় তেমনি শারীরিক পরিবর্তনও হয়। মূলত ১১ বছর থেকে ১৮ বছর সময়কালকে বয়:সন্ধিকাল বলে। এসময় তাদের হরমোন নি:সরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
তিনি বলেন, কিশোরীদের মাসিক শুরু হওয়ার সময় স্তনগ্রন্থি বৃদ্ধি পায়। আর মাসিকের সময় প্রায় কিশোরীদের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ এবং বেশী সময় ধরে রক্তক্ষরণ হয়। আর এজন্যই এ সময় কিশোরীদের পরিমাণমত পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। অন্যথায় কিশোরী অপুষ্টিসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগতে থাকে।
এ সময় কিশোরীদের মুখে বেশ ব্রণও দেখা যায়। আর তাই ব্রণ যাতে না হয় সেজন্য প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণ শাকসব্জি এবং আঁশযুক্ত খাবার খেতে দিতে হবে কিশোরীদের।
ডা. মনোয়ারা বলেন, এই বয়ঃসন্ধিকালে বিশেষ করে অনেক কিশোরীই অতিরিক্ত ডায়েট করতে চায়। কিন্তু এই অতিরিক্ত ডায়েটিং এর ফলে মেয়েরা অপুষ্টিতে ভুগতে থাকে। অনেক মায়েরাও তাদের সন্তানদের এই অতিরিক্ত ডায়েটিং’ এ সমর্থন দিয়ে থাকে। যার ফলে ওই কিশোরী বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন ভিটামিনের অভাব, রক্তশূন্যতায় ভুগতে থাকে। এজন্য প্রত্যেকের উচিত নির্দিষ্ট পরিমাণ পুষ্টিসম্মত খাবার খাওয়া।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের গাইনী এন্ড অবস্ বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ডা. রোকেয়া বেগম বলেন, বয়:সন্ধিকালে সবার শরীর এবং মনের ব্যাপক পরিবর্তন হয়। আর এ কারণেই অভিভাবকদের এ সময় খুব সচেতন থাকতে হয়। এ সময় কিশোরীদের কী কী খাবার দিতে হয় তা অনেক বাবা-মা’ই জানেন না। মূলত অসচেতনতার কারণেই এমন হয়। এই সময়কালে কিশোরীদের খাবারের তালিকায় কী কী রাখতে হবে তা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে সে অনুযায়ী চলাই উত্তম।
তিনি বলেন, একটা বয়সে বিশেষ করে ১৮ বছর থেকে ২১ বছর বয়সের মধ্যে মানব দেহের হাড় বৃদ্ধি পায়। পরে এই হাড় সাধারণত আর বাড়ে না। তাই এই সময় প্রচুর ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার থেতে হবে। শাক-সব্জি, ছোট মাছ, ডিম, দুধ, দই, বাটারজাতীয় খাবার খেলে হাড় বৃদ্ধি পায়। আর কিশোরীদের খাবারের তালিকায় এসব খাবারই রাখতে হবে।
ডা. রোকেয়া বলেন এই বয়ঃসন্ধিকালে সঠিক পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষা খুবই দরকার। কিন্তু দেখা যায়, কৈশোরেই খাদ্যে অনিয়ম, অপুষ্টি বা অতিপুষ্টি, ওজনের ভারসাম্য নষ্ট হয় বেশি। এর প্রতিক্রিয়া পড়ে পরবর্তী সময়ে, দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা। এ ছাড়া বয়ঃসন্ধিতে কিশোরীদের কিছু পরিচিত সমস্যার সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, যখন কিশোরীদের নিয়মিত মাসিক শুরু হয় তখন প্রচুর পরিমাণে ও বেশি সময় ধরে রক্তক্ষরণ হয়। প্রয়োজনীয় খাবার না খেলে দেখা দেয় এনিমিয়ি বা রক্তশূন্যতা। কিশোরীদের প্রতি মাসে লৌহ বা আয়রনের চাহিদা ছেলেদের তুলনায় অনেক বেশি। তাই মাংস, কলিজা, শাক, মাছ, ডিম বেশি করে খেতে হবে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণ ফল যেমন কলা, আনার, পেঁয়ারা, খেজুর থেতে হবে।

 

শুকনোপাতার কাব্য-১৩

শুকনোপাতার কাব্য-১৩


শুকনো পাতা


সকাল গড়ায়,দুপুর গড়ায়
বিকেল কাছাকাছি,
সাঁঝের আঁধার ঢাকবে কখন
সেই প্রতিক্ষায় আছি।

সন্ধ্যে নামার খানিক বাদে
আকাশ দেখার ফাঁকে,
বেলা ফুরোনোর গল্প বলি
নীড়ে ফেরা পাখিটাকে।

বিকেল গড়ায় সাঁঝের পানে
রাত্রি আসে ফিরি,
দিন দুয়ারে দাঁড়িয়ে তবু
দিনের হিসেব গুনি।

অল্প সময় অল্প ক্ষনেই
দিন গড়িয়ে রাত,
মন খারাপের গল্পে তবু
আসে না প্রভাত।

হাসি আছে কান্না আছে
আছে ভাঙ্গার কষ্ট
হারিয়ে স্বপ্ন,দিন কেটে যায়
তবু থাকে মন তুষ্ট।

মন খারাপের গল্প লিখি
লিখি দুঃখের কাব্য,
মন খারাপেই হাসতে থাকি
লুকিয়ে নিজের যুদ্ধ!

ফুরোবে গল্প,ফুরোবে পদ্য
প্রতিক্ষায় দিন পাড়,
মন খারাপের গল্প তবু
শেষ হয় না আর…!

 

সাভারে ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ১২ বছরের কিশোর আটক

সাভারে ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ১২ বছরের কিশোর আটক


নারী সংবাদ


সাভারে বিরুলিয়া ইউনিয়নের দত্তপাড়ায় পাঁচ বছরের এক মেয়েশিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ১২ বছর বয়সী সাকিব হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ। সাকিব হোসেন স্থানীয় আল-আমিনের ছেলে।

মঙ্গলবার রাতে ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করেছে।

জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে ওই এলাকায় একটি বাড়ির ছাদে ওই মেয়েশিশুকে ধর্ষণ করে সাকিব। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ব্যাপারটি জানাজানি হলে শিশুটির বাবা রাতেই সাভার মডেল থানায় ধর্ষক সাকিব হোসেনকে প্রধান আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ সাকিবকে আটক করে।

সাভার মডেল থানা ও বিরুলিয়া ফাঁড়ি ইনচার্জ (এসআই) মো: আজগর আলী জানান, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করেছে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

শুনি নব জীবনের প্রতিধ্বনি…১

শুনি নব জীবনের প্রতিধ্বনি…১


আফরোজা হাসান


ছোট ননদের রুমে কয়েকবার নক করার পরও ভেতর থেকে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো রুহিনা। রুমের ভেতর কোথাও না দেখে বারান্দায় উঁকি দিয়ে দেখলো রেলিঙয়ে পা তুলে দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে স্বাতি। ননদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, নাস্তা নিয়ে এসেছি তোর জন্য। খেয়ে নে।

স্বাতি সোজা হয়ে বসে ভাবীকে বসার জায়গা করে দিয়ে বলল, একদম খেতে ইচ্ছে করছে না ভাবী। খাবার কথা মনে করলেই কেমন যেন বমি ভাব হচ্ছে।

গতকাল রাতেও কিছু খাসনি তুই। এমন করলে শেষে অসুস্থ হয়ে যাবি। সোনা বুবু না আমার খেয়ে নে। আচ্ছা চল আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি। দেখ সব তোর পছন্দের খাবার বানিয়েছে মামণি।

মামণি কি করছে ভাবী?

তোকে নিয়ে টেনশন করা ছাড়া আর কি করবে এই সময়। তারউপর তুই খাওয়া দাওয়া না করে, অনিয়ম করে আরো বেশি টেনশন দিচ্ছিস সবাইকে।

আমি কি করবো খাবার ভেতরে ঢুকতেই চাইছে না।

তুই একটু শান্ত হবার চেষ্টা করতো স্বাতি।

বললেই কি শান্ত হওয়া যায় নাকি? তুমি কি শান্ত ছিলে তোমার বিয়ের এক সপ্তাহ আগে?

হেসে ফেললো রুহিনা। উহু.. আমিও ভয়াবহ রকমের অশান্ত ছিলাম। মনের মধ্যে তুফান, সুনামী, সাইক্লোন সব একসাথে বইতে শুরু করেছিল। এমন সব অদ্ভুত চিন্তা-ভাবনা মনে আসতো যা রূপকথার গল্পেরও স্থান পাবে কিনা সন্দেহ। তবে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করেনি তোর মত। আমার আবার উল্টো স্বভাব জানিসই তো। টেনশনের সময় বেশি বেশি ক্ষুধা লাগে। ঘরের মধ্যে সারাক্ষণ ঘুরতাম আর চকলেট, আইসক্রিম, পেস্ট্রি এসব খেতাম। আম্মু সেটা দেখে সমানে চিৎকার করতো আর বলতো, দুদিন পর বিয়ে কই জীমে যাবি তা না তুই আরো মোটা হবার জিনিস খাচ্ছিস।

স্বাতি হাসতে হাসতে বলল, আমিও খেয়াল করেছি কোন কারণে যেদিন তুমি টেনশনে থাকো ঘুরে ঘুরে শুধু এটা সেটা খাও।

প্লেট থেকে পরোটা নিয়ে একটু করে ছিঁড়ে স্বাতির মুখে দিয়ে রুহিনা হেসে বলল, সবকিছুরই সাইট অ্যাফেক্ট আছে বুঝলি। আমার এই স্বভাবের সাইট অ্যাফেক্টের কারণেও বেশ কয়েকবার লজ্জিত হতে হয়েছে তোর ভাইয়া সামনে।

যেমন?

যেমন তোর ভাইয়া যখন কোন কারণে টেনশনে থাকে তোর মত খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। আর আমার তখন ক্ষুধা বেড়ে যায়। বারবার খেতে ডাকি তোর ভাইয়াকে। সে তখন বিরক্ত স্বরে বলে, তোমার সমস্যা কি এত খাই খাই করছো কেন? তবে সবচেয়ে বেশি লজ্জায় পড়েছিলাম আমাদের বিয়ের দিন। বাসর ঘরে।

সেটা কিভাবে?

আমাকে রুমে রেখে যখন তোরা সবাই বেড়িয়ে গিয়েছিলি প্রথমে তো কিছুক্ষণ স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিলো রুমের মধ্যে এক ফোটাও অক্সিজেন নেই। তোর ভাইয়া রুমে ঢোকার সময় অক্সিজেনের সাথে সাথে আমার জন্য রাজ্যের ক্ষুধাও নিয়ে এলো। এত ক্ষুধা মনেহয় জীবনে আর কোনদিন লাগেনি আমার। খাবার না পেলে এই মূহুর্তে মারা যাব এমন লাগছিল। আমার চোখ মুখ দেখে উনি প্রশ্ন করলেন, কোন সমস্যা হচ্ছে তোমার? ক্ষুধার কাছে নতি স্বীকার করে আমাকে তখন বলতেই হয়েছিল, আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে।

স্বাতি খিলখিল করে হেসে উঠে বলল, ও আচ্ছা এজন্যই ভাইয়া আমাকে ডেকে খাবার চেয়েছিলেন? আমি তো ভেবেছিলাম সারাদিন ব্যস্ততায় ঠিকমতো খেতে পারেনি তাই মনেহয় ভাইয়ার ক্ষুধা লেগেছে। কিন্তু সব ছেলে তো আর আমার ভাইয়ার মত সুইট না। বলতে বলতেই আবারো বিয়ের কথা মনে পড়তেই হাসি মুছে গেলো স্বাতির চেহারা থেকে।

আরে একি হাসতে হাসতে আবার মুখ গোমড়া করলি কেন? সব ছেলে যেমন তোর ভাইয়ার মত না। সব মেয়েও তো আমার মত না। তুই কি আমার মতো? তাহলে আমার স্বামীর মত স্বামী হতেই বা যাবে কেন তোর? প্রবাদ শুনিসনি, “যথার সাথে তথা মেলে, রাজার সাথে রাণী মেলে”। তুই আমাদের সবার আদরের ছোট্ট রাজকন্যা। এজন্যই তো আল্লাহ তোর জন্য আরভ ভাইয়ার মতো রাজপুত্র পাঠিয়েছেন। আমি অবাক না হয়ে পারছি না স্বাতি। তুই আরভ ভাইয়াকে নিয়ে এত টেনশন করছিস? তুই তো ছোটবেলা থেকেই ভাইয়াকে দেখছিস। তারপরও এত দুশ্চিন্তা কেন? ইস্তিখারা করতে বলেছিলাম তোকে। করেছিলি?

স্বাতি লাজুক হেসে বলল, হুম! করেছি। সব ঠিক আছে কিন্তু তারপরও কেন জানি না খুব বেশি ভয় লাগছে। আমার জীবনসাথীকে ঘিরে তেমন কোন এক্সপেক্টটেশন নেই। এইসব বিষয় বুঝতে শেখার পর থেকেই মামণি মনের চাওয়ার লাগাম টেনে ধরতে শিখিয়েছেন আমাকে। বুঝিয়েছেন নিজ ভাবনার রঙে মনে কারো ছবি গড়ে তোলা ঠিক নয় বিয়ের আগে। বিয়ের আগে শুধু আল্লাহর কাছে একজন উত্তম জীবনসাথী চাইতে হবে। আল্লাহ যাকে জীবনসাথী করে পাঠাবেন। তাকে সামনে বসিয়েই আঁকতে হয় মনের মাঝে জীবনসাথীর ছবি।

তুই তো আমার চেয়েও ভালো বুঝিস। তাহলে আবার এত ভয় কিসের?

কেমন হবে আমাদের জীবনের প্রথম দিনের শুরুটা। উনি কি বলবেন, আমি কি বলবো এসব ভেবে খুব বেশি টেনশন কাজ করছে।

চলবে…

 

আপন আলাপ

আপন আলাপ


রাহনুমা সিদ্দিকা


টি এস সি-র পাশে ছাউনিতে বসে আছি, বাসের অপেক্ষায়। পাশে দুটি মেয়ের কথোপকথন কানে এলো। কথাবার্তায় বোঝা গেলো এরা একই কলেজে পড়েছে, ভর্তিসংক্রান্ত কাজে এসেছে, দুজনেই বিজনেস ফ্যাকাল্টির, নিউ ফার্স্ট ইয়ারের।
এক পর্যায়ে একজন বলছে,
-তোমাকে না আমি চিনতেই পারি নি! আগে না হিজাব পরতে?
-হ্যাঁ
-ছাড়লে কেনো?
-আরে! ‘ও’ একদম পছন্দ করে না!
তারপর বাস চলে এসেছিলো। ব্যাপারটা ভাবালো! ‘ও’ পছন্দ করে না- তাই মেয়েটা হিজাব ছাড়লো? এমনও মেয়ে আছে -‘ও’ ধার্মিক হলে আপনাকে আবার ‘রিলেশন’ টিকিয়ে রাখার স্বার্থে কিংবা ভালোবাসার দাবীতেই হোক না কেন হিজাব পরতে হচ্ছে! প্রহসন আর কাহাকে বলে!!!!
প্রসঙ্গক্রমে, পারস্যের মহিলাদের তৎকালীন অবস্থা সম্পর্কে বেগম রোকেয়ার কথাটি স্মরণ করুন ,
“ওই যে পর্দা ছাড়িয়াছেন তাহা দ্বারা তাহাদের স্বকীয় বুদ্ধিবিবেচনার ত কোন পরিচয় পাওয়া যায় না! পার্সি পুরুষগণ কেবল অন্ধভাবে বিলাতী সভ্যতার অনুকরণ করিতে যাইয়া স্ত্রীদিগকে পর্দার বাহিরে আনিয়াছেন। ইহাতে অবলাদের জীবনীশক্তির ত কিছু পরিচয় পাওয়া যায় না। তাহারা যে জড়পদার্থ ,সেই জড়পদার্থই আছেন। পুরুষ যখন তাহাদিগকে অন্তঃপুরে রাখিতেন, তাহারা সেখানেই থাকিতেন। আবার পুরুষ যখন তাহাদিগকে ‘নাকের দড়ী’ ধরিয়া টানিয়া মাঠে বাহির করিয়াছেন, তখনই তাহারা পর্দার বাহির হইয়াছেন।”
হিজাব এখানে একটা উদাহরণমাত্র। অমন উদাহরণ হাজারটা দেয়া যায়। আপুরা ভাবুন, আপনার বিশ্বাস, আপনার দর্শন, আপনার জীবনাচরণ নিয়ন্ত্রিত হবে আরেকজনের দ্বারা? আপনার বিশ্বাসের এত তারল্য? তবে যে আপনি কলার উঁচিয়ে ‘ব্যক্তিস্বাধীনতা’ নামে একটি সফিস্টিকেটেড শব্দ উচ্চারণ করছেন আবার?
আপনি যদি একটি মেয়ে হন, আপনি খুব ভালো করেই জানেন মেয়েরা (সাধারণত ) কেন সাজে! খুব ভালো করেই জানেন পত্রিকার ফ্যাশন পাতায় মডেল কন্যাটির পোশাকে বিশেষ ধরণের ডিজাইনটি কেন করা হয়েছে।
কিছু প্রশ্ন সামনে আসে-
অতীতে যেসব মহীয়সীরা নারীমুক্তির জন্য নিজেদের সমস্ত জীবনভর সংগ্রাম করে গেছেন, যেসবঅন্তঃপুরবাসিনীরা একটুকরো জ্ঞানের আলোর জন্য নরক প্রতিকুলতার সাথে লড়াই করে গেছেন- কালক্রমে যাঁদের ত্যাগের সুফল আমরা ভোগ করছি- তাঁরা আজকে থাকলে কী বলতেন? এই স্বাধীনতাই কি তাঁরা চেয়েছিলেন? স্বাধীনতা কি বিপরীত লিঙ্গের মনোরঞ্জনের স্বাধীনতা? স্বাধীনতা কি চ্যানেল আইয়ের পর্দা কাঁপানো সুন্দরীদের মেলা? সেলফিম্যানিয়ার কথা নাহয় না-ই বললাম!
আজ ত নারীরা নিজ যোগ্যতায় সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের জায়গা করে নিচ্ছে, আজ শিক্ষাঙ্গনে নারী-পুরুষ অনুপাত সমান। কর্মক্ষেত্রে লৈঙ্গিক বৈষম্য প্রায় নেই বললেই চলে। আলোকপ্রাপ্ত এই সমাজের পরিপূর্ণ চিত্র কেবল এটুকই নয়, সচেতন প্রত্যেক ব্যক্তিই তা জানেন।
ভাবুন তো,
আদৌ কি নারীরা স্বাধীন হয়েছেন নাকি এক ছদ্ম (Pseudo) স্বাধীনতার নামে আরেক মানসিক দাসত্বে জড়াচ্ছেন? স্বাধীনতা তো চাকুরিতে, কাপড়ে সীমাবদ্ধ না- চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা, যুক্তির স্বাধীনতা, আত্মপ্রকাশ ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের স্বাধীনতাই স্বাধীনতা!
খানিক উড়ার সুযোগ পেয়ে নাটাইবাঁধা ঘুড়িরও নিজেকে মুক্ত পাখি ভেবে ভ্রম হতে পারে!

 

স্ত্রীকে হত্যা করে ডাকাতির গল্প সাজিয়েছেন স্বামী

স্ত্রীকে হত্যা করে ডাকাতির গল্প সাজিয়েছেন স্বামী


নারী সংবাদ


নওগাঁর সাপাহারে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ডাকাতির ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করছে চতুর স্বামী নজরুল ইসলাম। শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার বিদ্যানন্দী বাহাপুর গ্রামে নিশৃংস ঘটনাটি ঘটেছে। চতুর নজরুল ওই গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ছেলে।

ঘটনা স্থলে গিয়ে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে তার বাবা-মা বাড়ীতে ছিল না। নজরুল বাড়ীতে তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে একই থাকত। ঘটনার দিন রাত ২টার দিকে উক্ত গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ছেলে নজরুল(৩২) বাড়ী থেকে বের হয়ে গ্রামের অন্যলোকের দরজায় আঘাত করলে, কয়েকজন বেরিয়ে আসে এবং তাকে তার মুখে কসটেপ আটানো ও হাত দু’টি পিছনের দিকে গামছা দিয়ে বাধাঁনো অবস্থায় দেখতে পায়। তার মুখের টেপ ও বাধঁন খুললে সে বলে, আমার বাড়ীতে ডাকাত দল প্রবেশ করেছে, তারা আমার ছেলেকে কুপের মধ্যে ফেলে দিতে চায়, আপনারা আমার ছেলেকে বাঁচান বলে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

গ্রামের লোকজন তার বাসায় ছুটে এসে দেখতে পায়, বিছানায় তার স্ত্রী (রুমী) (২৫) অচেতন অবস্থায় পড়ে রয়েছে ও সন্তান রাফি (২) ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছে। লোকজন তৎক্ষনাত তাকে ও তার স্বামী নজরুল ইসলামকে সেখান থেকে উদ্ধার করে রাত আড়াইটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক রুমীকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত রুমীর গলায় শ্বাস রোধ করে হত্যাকরার স্পষ্ট চিহৃ রয়েছে।

মৃত গৃহবধু রুমীর স্বামী নজরুল ইসলামের সাথে হাসপাতালে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, রাত দেড়টার দিকে সে বাড়ীর বাথরুম থেকে বেরুনোর সময় তাকে অপরিচিত ৩জন লোক ঝাপটে ধরে এবং তাকে ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে বাইরের দরজার চাবি আদায় করে।

বাড়ীর দরজায় তালা ছিল, তারা কি করে বাসায় প্রবেশ করল? এ প্রশ্নের জবাবে সে কিছুই বলতে পারেনা। এর পর ডাকাতরা চাবি দিয়ে বাড়ীর সদর দরজা খুললে আরো ৬জন লোক বাহির থেকে বাসায় প্রবেশ করে এবং তাকে তার শয়ন ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে গামছা দিয়ে দু;হাত বেধেঁ ফেলে ও মুখে কসটেপ এঁটে দেয়। এর পর আবারো তাকে ঘর হতে বের করে নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় যায়। ওই সময় সে ডাকাত দলের হাত থেকে ফসকে সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে প্রতিবেশীদের ডাক দেয়। এর মধ্যে ঘরে ডাকাতদল কি করল এবং কি সম্পদ লুট করল তা স্বামী নজরুলের জানা নেই বলে জানান এবং এ পর্যন্ত তার স্ত্রী ও সন্তান ঘুমেই ছিল বলে তিনি জানান।

বিষয়টি নিয়ে বড় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে, কোনো পরকীয়া কিংবা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সৃষ্ট কোনো মন মালিন্যের কারণে সে তার স্ত্রীকে ঘুমের ঘোরে শ্বাস রোধ করে হত্যা করতে পারে এ নিয়ে এলাকায় খুব জোরালো গুঞ্জন চলছে। পুলিশ ও বলছে এটি কোনো চুরি কিংবা ডাকাতির ঘটনা নয়, চুরি বা ডাকাতি হলে তারা ঘরের মধ্যে থাকা নগদ টাকা পয়সা, গহনা কিছুই নেয়নি সবই ঠিক মত অবস্থায় রয়েছে।

একটি জিনিসপত্র ও খোয়া যায়নি কিংবা কোনো দরজা জানালাতেও কোনো চিহৃ নেই সবই অক্ষত রয়েছে। তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো ঘনটা থাকতে পারে বলেও পুলিশ ধারণা করছে। নিহত গৃহবধুর পিতা রমজান আলী ও বড় আব্বা নুরমোহাম্মাদ দাবী করে বলেছেন, তাদের মেয়েকে জামাই নজরুল হত্যা করে ডাকাতির নাটক সাজিয়েছে। তাদের বাড়ী ধামইর হাট উপজেলার ফতেপুর গ্রামে। ঘটনার পর রাত সাড়ে ৩টা হতে সাপাহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাই এক দল পুলিশ নিয়ে ঘটনা স্থলে রয়েছে। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত, কোনো মামলা দায়ের না হলেও হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, এটি চুরি কিংবা ডাকাতির কোন ঘটনা নয়। স্বামীর দ্বারাই ঘটনাটি ঘটতে পারে, তবে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উম্মোচিত হবে বলে তিনি মনে করেন। নওগাঁ জেলা পুলিশ সুপার মো: রাশেদুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

গাজীপুরে কিশোরী গার্মেন্টস শ্রমিক খুন, মামী-মামাতো ভাই আটক

গাজীপুরে কিশোরী গার্মেন্টস শ্রমিক খুন, মামী-মামাতো ভাই আটক


নারী সংবাদ


গাজীপুরে পারিবারিক কলহের জেরে কারখানার শ্রমিক এক কিশোরীকে হত্যা করেছে। শুক্রবার নিহতের লাশ এক বন থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় পুলিশ নিহতের মামী ও মামাতো ভাইকে আটক করেছে। নিহতের নাম লুনা আক্তার (১৫)। সে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানার কুলশীবাড়ি এলাকার নবীর উদ্দিনের মেয়ে।

জিএমপি’র সদর থানার এসআই শহিদুল ইসলাম ও স্থানীয়রা জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বাহাদুরপুর হাজী মার্কেট এলাকায় মামী ও মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে মুজিবের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় পারটেক্স গ্রুপের আরসি কোলা কারখানায় কাজ করতো লুনা। পারিবারিক কলহের জেরে বৃহষ্পতিবার গভীর রাতে লুনাকে তার মামী ও মামাতো ভাই বেধড়ক মারধর করে। এক পর্যায়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এ ঘটনার পর অসুস্থ্যতার কথা বলে রিক্সায় করে নিহতের লাশ পার্শ্ববর্তী রাজেন্দ্রপুরের বিকেবাড়ি এলাকার এক বনে নিয়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরদিন শুক্রবার স্থানীয়রা ওই বনে নিহতের লাশ দেখতে পায়।

খবর পেয়ে পুলিশ বন থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় পুলিশ নিহতের মামী ও মামাতো ভাইকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলো- লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানার কুশলীবাড়ি এলাকার মৃত জামিরুল ইসলামের স্ত্রী আকলিমা বেগম (৪৮) ও তাদের ছেলে রবিউল ইসলাম (২০)। এদের মধ্যে আকলিমা এলাকায় রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে এবং রবিউল স্থানীয় এক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতো।

এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

প্রসবপূর্ব ও পরবর্তী সেবায় অবদান রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক

প্রসবপূর্ব ও পরবর্তী সেবায় অবদান রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক


স্বাস্থ্যকথা


মাত্র পাঁচ মাস আগেই মা হয়েছেন সুলতানা। উচ্চশিক্ষিত সুলতানা নিজেই এ ব্যাপারে অনেক সচেতন। কিন্তু ডেলিভারির সময় একেবারে মৃত্যুর মুখে চলে গিয়েছিলেন তিনি। সুলতানা জানান, ডেলিভারির সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল তার। ডাক্তার কোনভাবেই বন্ধ করতে পারছিলেন না। আর তাই প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হয়। শুরুতে ডাক্তার সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা বের করে নেয়। না হলে বাচ্চাও অসুস্থ হয়ে যেত। কিন্তু এরপর থেকে আর ব্লিডিং বন্ধ হচ্ছিল না। ভাগ্য সহায় ছিল দশজন ব্লাড ডোনার রেডি ছিল। একের পর এক রক্ত দেয়া হচ্ছিল আমাকে। সাত ব্যাগ রক্ত দেয়ার পাশাপাশি ডাক্তার এবং নার্সদের অক্লান্ত চেষ্টার ফলে বেঁচে যাই।
কিন্তু সব মায়ের ভাগ্য সুলতানার মত নয়। অনেক মা’ই সন্তান জন্মদানের সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। তবে পরিসংখ্যান বলছে আগের চেয়ে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে এসেছে। আর যেসব মায়েরা সন্তান জন্মদানের সময় অথবা শিশুদের মৃত্যু হচ্ছে তার প্রধান এবং অন্যতম কারন হচ্ছে সচেতনতার অভাব। একটু সচেতন হলেই সম্ভব পুরোপুরি মাতৃ মৃত্যু হার একেবারে কমিয়ে আনা এবং এ বিষয়ে সাফল্য অর্জন করা।
বিশিষ্ট গাইনোলজিস্ট ডা. রোকেয়া হক বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাংলাদেশের মাতৃ মৃত্যুর হার ৭০ এ নামিয়ে আনতে হবে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ জীবিত শিশুর মধ্যে ১৭২ জন মৃত্যুবরণ করে। ৩৭ শতাংশ মা প্রসবপূর্ব সেবা গ্রহণ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি হয় ৪৭ শতাংশ। আর প্রসব পরবর্তী সেবা গ্রহণ করেন ৭৩ শতাংশ নারী। প্রসবজনিত জটিলতার কারণে দেশে এখনও প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫ জন মা মৃত্যুবরণ করেন। বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার।
তিনি বলেন, দেশে মাতৃ মৃত্যুর প্রধান কারণ রক্তক্ষরণ এবং খিঁচুনি। খুব স্বল্প মূল্যের ওষুধ দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। আমাদের অবশ্যই নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর স্বাস্থ্য সেবাকে মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ যদি সেসব সেবা গ্রহণ করতে না চায় এবং সচেতন না হয় তবে একা সরকারের পক্ষে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমানো সত্যিই কঠিন।
তিনি বলেন, এখন দেশে প্রায় ১৩ হাজারের বেশী কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব ক্লিনিকে বিনা মূল্যে প্রসবপূর্ব এবং প্রসব পরবর্তী সেবা প্রদান করা হয়। এছাড়াও অনেক ক্লিনিকে প্রসুতি সেবাও দেয়া হচ্ছে। রাখা হয়েছে ডেলিভারির ব্যবস্থা। কিন্তু এসব জানার পরও অনেক পরিবার বাড়িতেই সন্তান প্রসব করায়। আর এরফলে মারা যাচ্ছে মা।
তিনি বলেন, এসব বিষয়ে একটি পরিবারের প্রাপ্ত বয়স্ক সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে। যাতে করে একজন মা’ও যেন অকালে মৃত্যুবরণ না করে।
বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যাংছড়ি উপজেলার চিউবতলী বাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবা নেয়া সন্তান সম্ভবা মা শান্তি চাকমা বলেন, আমি প্রতিনিয়ত এখানে এসে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করি। এখানে বিনামূল্যে ওষুধও দেয়া হয়। সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আমাদের দিচ্ছে। কিন্তু আমরা সেটা গ্রহণ করতে পারছি না। এর পেছনে মূলত দুটি বিষয় কাজ করে। একটি হচ্ছে সচেতনতার অভাব আর অন্যটি কুসংস্কার।
তিনি বলেন, আমাদের পাড়ায় এমন কিছু পরিবার রয়েছে যারা কখনোই ডাক্তারের শরণাপন্ন হন না। এমনকি তাদের বাড়িতে এখনো পর্যন্ত সন্তান প্রসব করানো হয় এলাকার এক বয়স্ক ধাই মাকে দিয়ে। আমাকেও অনেকে পরামর্শ দিচ্ছে যাতে করে আমিও ওনার কাছে সেবা নিই।
কিন্তু আমি আর আমার স্বামী বলে দিয়েছি সন্তান প্রসবের আগে আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হব। সেখানেই আমার সন্তান জন্ম নিবে।

সুত্রঃ বাসস।

 

ঘরের ভেতরে শিশুর লাশ, সন্দেহের তীর সৎ মায়ের দিকে

ঘরের ভেতরে শিশুর লাশ, সন্দেহের তীর সৎ মায়ের দিকে


নারী সংবাদ


সাভারে দক্ষিণ দরিয়াপুরের তালবাগ এলাকায় ঘরের ভিতর থেকে বৃহস্পতিবার বাদশা(৭) নামের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত বাদশা সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানার ঘোষার গ্রামের মোঃ আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তিনি স্থানীয় ইউসুফ মাস্টারের ভাড়াটে বাড়ির একটি কক্ষে সৎ মা ও বাবার সাথে থাকতেন।

সৎ মা ময়না খাতুন সাভারের উলাইলের আল-মুসলিম গামের্ন্টস কারখানায় কাজ করেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সৎ মা ময়না খাতুনকে আটক করেছে পুলিশ।

থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ৬টার সময় শিশু বাদশা মিয়াকে বাসায় রেখে তার বাবা মাছ বিক্রি করতে সাভারের ব্যাংক কলোনীতে এলাকায় যান। শিশুটির বাবা চলে যাওয়ার পর সৎ মা সাড়ে ৭টার সময় যান তার কর্মস্থল আল-মুসলিম গামের্ন্টেসে। দুপুরে বাবা আনোয়ার হোসেন বাসায় খাওয়ার জন্য এসে ছেলেকে ঘরের ভিতরে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

স্থানীয়দের অভিযোগ নিহত শিশুটির সৎ মা তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে থাকতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক এক প্রতিবেশী জানান, শিশুটির গলায় আঘাতের চিহৃ ছিল। এ ঘটনায় পুলিশ তার সৎ মা ময়না খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।

সাভার মডেল থানার (এসআই) সবুর জানান, শিশুটির বাবা খবর দিলে আমরা ঘর থেকে লাশটি উদ্ধার করি।

তিনি আরো জানান, ৭ বছরের শিশু আত্নহত্যা করতে পারেন না। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

অ্যাভোকাডো, শশা ,আর টমেটোর সালাদ

অ্যাভোকাডো, শশা ,আর টমেটোর সালাদ


ঘরকন্যা


সালাদ মানেই শশা টমেটো এবার মিশে গেলো অ্যাভোকাডো। শীতের সময়ে সালাদের নানান উপকরণ অনেক সহজলভ্য। তাই আসুন এই সময়ে আপনার খাবারে সালাদের ছোট রেসিপি। সহজে আর ঝটপট করে ফেলতে পারেন।

ছবিঃ অ্যাভোকাডো, শশা & টমেটো

উপকরণঃ

শশা – ২ টি (মাঝারি)
টমেটো -৩ টি (মাঝারি)
অ্যাভোকাডো -১ টি
পেয়াঁজ কুচি -১ টেবিল চামচ
ধনেপাতা কুচি – ১ টেবিল চামচ
কাঁচামরিচ কুচি – ১ চা চামচ
লবন – স্বাদমতো
সরিষার তেল – সামান্য
লেবু- কেউ পছন্দ করলে ছোট ছোট লেবুও কেটে নিন।

প্রস্তুত প্রণালীঃ

শশা, টমেটো এবং অ্যাভোকাডো কেটে নিন একই মত সাইজে। সালাদের সাইজ সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। এর সাথে পেয়াঁজ, কাঁচামরিচ ও ধনেপাতা কুচি দিন। উপাদানগুলো ওল্টে-পাল্টে মিশিয়ে নিন। স্বাদমতো লবন ও সামান্য সরিষার তেল দিন।

পরিবেশন
সুন্দর বাটিতে, মাখিয়ে খাবারের আগে পরিবেশন করুন।

 

‘অসম্মান, অশ্রদ্ধা, অপমান!’

‘অসম্মান, অশ্রদ্ধা, অপমান!’


আফরোজা হাসান


“ভালোবাসা সেটা গোপন হোক কিংবা প্রকাশ্য।
স্পষ্ট হোক কিংবা অস্পষ্ট। ভালো লাগার স্বীকৃতি দেয়াটা কঠিন হোক কিংবা সহজ। পরিস্থিতি অনুকূলে থাক কিংবা প্রতিকূলে।
সর্বাবস্থাতেই ভালোবাসা কল্ল্যাণকামী থাকে অপর জনের তরে।
তবে এটাও ঠিক যে ভালোবাসার মতোই ভালোবাসার ভাঁজে ভাঁজে, খাঁজে খাঁজে রাগ, অভিমান, অধিকারের অস্তিত্বও বিদ্যমান।
রাগ অভিমানের সংমিশ্রণে ভালোবাসার মানুষকে আঘাত করাটা তাই খুব স্বাভাবিক।
কষ্ট দেবার বদলে নিজেকেও কষ্ট অনুভব করতে হবে জানার পরেও ভালোবাসার মানুষটিকে কষ্ট দিয়ে বিমলানন্দ উপভোগ করার চেষ্টা করাটাও খুব স্বাভাবিক।
কারো প্রতি ভালোবাসা আসলে সাথে করে তাকে ঘিরে সীমাহীন অধিকারও নিয়ে আসে।
সেই অধিকারের দাবীতেই আপনজনকে আনন্দ যেমন দেয়া যায়, বেদনাও দেয়া যায়। তার জন্য ত্যাগ যেমন করা যায়, কোন কিছু জোর করে আদায় করেও নেয়া যায়।
তাকে ঘিরে পছন্দ যেমন থাকে, অপছন্দও থাকে।
তাকে প্রশান্তি দিতে যেমন আকুল থাকে মন, অশান্তি দেবার সুযোগও হাতছাড়া করতে চায় না। তারজন্য বিনিদ্র রজনী কাটানোতেও সুখের দেখা মেলে, তাকে জেগে থাকতে বাধ্য করার মাঝেও মেলে সুখানন্দ।
যাকে ভালোবাসি তারসাথে আবার এত কিসের হিসেব নিকেষ?
যখন ইচ্ছে হয় হাসাবো, যখন ইচ্ছে হয় রাগাবো। কখনো তাকে নিয়ে মাইলের পর মাইল স্বপ্নের মহল গড়বো। কখনো পাথর ছুড়ে মেরে তার স্বপ্নের মহলকে ভেঙে গুঁড়া গুঁড়া করে দেবো। যা ইচ্ছে হয় তাই করবো। যখন ইচ্ছে হবে তখনই করবো। কারণ সব আবেগের প্রবেশাধিকার আছে ভালোবাসার জগতে। তবে হ্যা শুধু মাত্র একটি আবেগ ছাড়া।

”অসম্মান, অশ্রদ্ধা, অপমান! শব্দ তিনটি হলেও সমার্থক। ক্ষেত্র বিশেষে আমরা ভালোবাসার মানুষকে ঘৃণাও করতে পারি। কিন্তু যাকে ভালোবাসি তাকে কখনোই অসম্মান, অশ্রদ্ধা কিংবা অপমান করতে পারিনা।

না নিজে, না অন্যের দ্বারা।

ভালোবাসা কষ্ট দিতে পারে কিন্তু কখনোই অসম্মান করতে পারে না। ভালোবাসা অশান্ত করতে পারে কিন্তু কখনোই অশ্রদ্ধা করতে পারে না। ভালোবাসা অনাকাঙ্ক্ষিত যে কোনো কিছুই করতে পারে কিন্তু অপমান নয়। কখনোই নয়, কোন অবস্থাতেই নয়। ভালোবাসার মানুষের প্রতি সর্বপ্রথম হক সম্মানের। যে সম্মান দিতে ব্যর্থ হয়, সে যোগ্যতাই রাখে না ভালোবাসার দাবী করার।

নিঃসংকোচে, দ্বিধাহীন ভাবে, আত্মবিশ্বাসের সাথে এমন কারো ভালোবাসাকেই সত্য বলা যায় যে ভালোবাসার মানুষের সম্মান রক্ষার তরে নিজে অন্যদের সম্মুখে অপমানিত হতেও প্রস্তুত থাকে। কিন্তু কেউ তার ভালোবাসার মানুষকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে এই সুযোগ দেয় না। কখনোই না। যে বা যারা দেয় তাদের সাথে ভালোবাসার কোনই যোগসূত্র নেই”…..।

মুল গল্পঃ  ভালোবাসার সুতোয় গাঁথি সম্পর্কের মোতি…শেষ পর্বের একটি অংশ।

 

শিশুদের হাঁপানি : চাই সযত্ন সতর্কতা

শিশুদের হাঁপানি : চাই সযত্ন সতর্কতা


স্বাস্থ্যকথা


মাত্র সাত মাস বয়স রাইফার। কয়েকদিন ধরেই সর্দি লেগে আছে। প্রায় সময়ই কান্নাকাটি করছে ছোট্ট মেয়েটি। কাঁদতে কাঁদতে অনেক সময় বমিও করছে। রাতে ঘুমানোর পর নাক ঘড়ঘড় করছে। বারবার নাকে নেজাল ড্রপ দিয়ে চলেছেন রাইফার মা। এভাবেই চলছিল। কয়েকদিন পর আর থাকতে না পেরে ডাক্তারের কাছে নিতে হলো রাইফাকে। ডাক্তার শিশুটিকে দেখেই বুঝতে পারলেন, তার অবস্থা ভালো না। তিনি কয়েকটি টেস্ট আর রাতের জন্য অল্প কিছু ওষুধ লিখে দিলেন। বললেন টেস্ট গুলো করানোর পর কাল যেন অবশ্যই রিপোর্ট দেখিয়ে নিয়ে যান।
পরদিন রিপোর্ট দেখেই ডাক্তারের সন্দেহ সত্যি হয়ে গেল। রাইফা হাঁপানি রোগে আক্রান্ত। বেশি ঠান্ডা লাগার কারণে নিউমোনিয়াও হয়েছে। দ্রুত রাইফাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিলেন ডাক্তার।
রাইফার মতই ঠা-া লেগেছিল দুই বছর বয়সী শিশু আজাদের। কয়েকদিন পরপরই ঠা-া লেগে থাকে তার। প্রতিবারই নাকের ড্রপ আর ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে খাওয়ানো হয় ওকে। এভাবেই চলছিল। কিন্তু এবারের সর্দি আর কাশি কিছুতেই যেন ভালোই হচ্ছে না আজাদের। শেষ পর্যন্ত মায়ের পীড়াপীড়িতে বাবা ওকে নিয়ে যান এক শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, আজাদের হাঁপানি হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসপিটালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রহমত উল্ল্যাহ বলেন, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের মত নয়। যার ফলে অল্পতেই তাদের বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি হয়। এজন্য দরকার বাড়তি যত্ন।
তিনি বলেন, শীতকালে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এরমধ্যে শিশুরা হাঁপানি রোগে কষ্ট পায় বেশি। তাপমাত্রা কমে গেলে তা শিশুদের শ্বাসতন্ত্র সহ্য করতে পারে না। এতে তাদের সর্দি, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট হয়। এছাড়াও ঘুমানোর পর তাদের নিঃশ্বাস ভারি হয়ে ওঠে। এমনকি ঘড়ঘড় করে আওয়াজও হয়। শিশুদের শ্বাসনালি খুবই সংবেদনশীল। একটু ঠান্ডা লাগলেই তাদের সর্দি বা কাশি হয়ে যেতে পারে। এরপর আস্তে আস্তে তা হাঁপানিতে রূপ নেয়।
এছাড়াও বাইরের ধুলো-বালিও এই হাঁপানি রোগের আরেকটি অন্যতম কারণ। অনেক শিশুই ধুলো-বালি সহ্য করতে পারে না তাদের সংবেদনশীল শ্বাসনালির কারণে। তাই দেখা যায়, সুস্থ স্বাভাবিক বাচ্চা ধুলা-বালিতে খেলাধুলা করতে পারলেও হাঁপানি আক্রান্ত শিশুরা সেটা করতে পারে না। কিছুক্ষণ বাইরে থাকার পরই তাদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
ডা. রহমত উল্ল্যাহ বলেন, এই হাঁপানি আবার বংশগতও হতে পারে। তবে হাঁপানি হলে বেশ কিছু বিষয় এড়িয়ে সচেতনভাবে চলার পরামর্শ দেন তিনি। তার মতে, এলার্জি হয় এমন বিষয় যেমন ধুলো-বালি যত সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। ঠা-া, সর্দি এবং কাশি হলেই সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে। এছাড়াও বাচ্চাদের সামনে ধূমপান একেবারেই করা যাবে না। কারণ সিগারেটের ধোঁয়া বাচ্চাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। হাঁপানি রোগে আক্রান্ত শিশুদের সামনে ধূমপান করলে তা ওদের শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দেয়।
বাসা-বাড়ি সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দেন এই শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, বাসা-বাড়ি সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। যাতে করে কোথাও ধুলো-বালি না জমে। এছাড়াও ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। শীতকালে শিশুদের জন্য লোমযুক্ত কোনো কাপড়চোপড় বিশেষ করে কম্বল ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া এলার্জিযুক্ত খাবার বিশেষ করে যেসব খাবারে শিশুর এলার্জি হয় সেসব খাবার তাকে দেয়া যাবে না। হাঁপানি রোগে আক্রান্ত শিশুদেরকে সবসময় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে লালন পালন করার পরামর্শ দিয়েছেন ডা.রহমত উল্ল্যাহ।

 

বুটিক হাউজে সবার নয়নমনি আঁখি

বুটিক হাউজে সবার নয়নমনি আঁখি


মাহবুব আলম


পিছিয়ে থাকার দিন শেষ। নারীরা এখন আর ঘরে বসে নেই। পুরুষের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে চলেছেন তারা। ঘরকন্যার পাশাপাশি সাধারণ চাকরি থেকে শুরু করে প্লেনও চালাচ্ছেন তারা। এর মাঝে কেউ কেউ শূন্য থেকে শুরু করে সফল উদ্যোক্তাও হয়ে অন্যের অনুকরণীয়ও হয়েছেন। তাদেরই একজন ফারজানা আঁখি।
‘আখি’স’এর স্বত্বাধিকারী ফারজানা আঁখি শুনিয়েছেন তার আজকের সফলতার পেছনে থাকা শ্রম ও আনন্দ সুখের কাহিনী।
সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আঁখি জানান, শখ নিয়ে সময় কাটানো থেকেই তার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প শুরু। সেটি ১৯৯৯ সালের কথা। মাত্র আড়াই হাজার টাকা নিয়ে আঁখি ঘরে বসেই নিজ হাতে হরেক ডিজাইনের সালোয়ার-কামিজ সেলাই করতে লাগলেন। বাজার থেকে শাড়ি কিনে তাতে হাতের কাজ করতেন।
মূলত তার গ্রাহক ছিলেন স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন দোকানি ও পরিচিতজনেরা। তাদের কাছ থেকে বেশ প্রশংসাও পেতেন তিনি। ফারজানা আঁখির ভাষায়, কাপড় বিক্রির পর ক্রেতাদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসা টনিকের মতো কাজ করে। মনোবল আরো বাড়িয়ে দেয়। অর্ডারও বাড়তে শুরু করে।
তবে, পুঁজি না থাকায় আটকে যান ওই সময়ের কিশোরী আঁখি। কিন্তু থেমে থাকেননি। বন্ধুদের সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে থাকেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বেড়ে ওঠা এই উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, আমার আগ্রহ দেখে বন্ধুরা আমাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এরপর অল্প অল্প করে পরিচিতিও বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে আমার তৈরি বাটিক ও নকশার কাজ করা সালোয়ার-কামিজ, থ্রিপিস, শাড়ি, বিছানার চাদর, কুশন কভার, শাল চাদরের ব্যাপক চাহিদা বাড়তে লাগলো। ফলে, পরিস্থিতিই বলে দেয় একটি শোরুম নেবার। কিন্তু তখনও সমস্যা সেই পুঁজি। এই সময় তিনি দ্বারস্থ হন ব্যাংকের। সেখানে থেকে প্রথমে মাত্র আড়াই লাখ টাকা ঋণ নেন তিনি।
উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের গল্প বলতে গিয়ে যো ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যান আঁখি। বলতে থাকেন, ‘ব্যাংক ঋণের ওই টাকা দিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি শোরুম চালু করি। নাম দিই আখি’স।’ এরপর আর পেছন তাকাতে হয়নি ফারজানা আঁখির। যেন আলাদীনের চেরাগের যাদুর মতো দ্রুতই বদলে গেলো তার জীবন।
গল্পের ছলে তিনি বলেন, একটা সময় আসে যে আমার ডিজাইন করা কাপড়ের চাহিদা খুবই বেড়ে যায়। তখন ডেলিভারি দিতে গিয়ে হিমসিম খেতে হতো। শোরুম চালুর পর এ অবস্থা আরও বেড়ে গেলো। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আঁখি’স এর সুনাম।
আঁখি বলেন, আমি যখন এই ব্যবসা শুরু করি তখন নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা হাতেগোনা। এখানকার মতো ফেসবুকে কিংবা অনলাইনে নারী উদ্যোক্তা ছিল না। ‘শুরুতে নিজেই শোরুমে বসতাম। অবশ্য মানুষের কটু বাক্যও কম শুনতে হয়নি। তবে পাত্তা দিইনি। একমনে কাজটা করে গেছি। তবে, এখন টাকা-পয়সা হয়েছে, দোকানেরও সুনাম হয়েছে। এখন সবাই প্রশংসা করে।’ নিজের উৎসাহের কথা উল্লেখ করে আঁখি বলেন, আশপাশের মানুষ নানা কথা বলতো। কিন্তু সব সময়ই পরিবারে মা-বাবার সহযোগিতা ও সমর্থন পেয়েছি। ‘তখন নিজেই কাঁচামাল কিনতাম। নিজেই ব্যাংকে যেতাম, পাইকারি অর্ডার নিতাম। সব নিজেকেই করতে হতো। এখন অনেকের কর্মসংস্থানও হয়েছে। এটা ভাবতেই ভালো লাগে,’ যোগ করেন তিনি।
শুধু ব্যবসা নিয়েই থাকতে পারেননি ফারজানা আঁখি। ব্যবসা দেখভালের পাশাপাশি সংসারও সামলেছেন তিনি। ফলে, অবসর বলে কিছু ছিল না। ‘অনেকেই অনেক কথা বলেছে। বলতো মেয়ে মানুষ দোকানে বসে। কিন্তু আমি কখনও দমে যাইনি। চেষ্টা আর একাগ্রতা থাকলে যে যেকোনো নারীই ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে সফল হতে পারেন সেটা আমি বুঝেছি,’ সাফল্যর তৃপ্তির হাসি হেসে বলছিলেন এই উদ্যোক্তা।
নতুনদের উদ্দেশ্যে তার পরামর্শ, পরিচিত কোনো মেয়ে যখন চাকরি করার কথা বলেন, আমি তাদের উৎসাহ দিই ব্যবসা করতে। কারণ, আমাদের একটাই লক্ষ্য, চাকরি করবো না, চাকরি দেবো।
এক্ষেত্রে ব্যবসা করতে গিয়ে উদ্যোক্তারা যেসব সমস্যায় পড়েন সেগুলো মসৃণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান এই নারী। তিনি বলেন, এখনও ব্যাংক লোন পাওয়া অতটা সহজ হয়ে ওঠেনি। এসব বিষয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

সুত্রঃ বাসস

 

অন্তঃসত্ত্বা মা ও শিশুকন্যাকে গলা কেটে হত্যা

অন্তঃসত্ত্বা মা ও শিশুকন্যাকে গলা কেটে হত্যা


নারী সংবাদ


টাঙ্গাইল শহরের ভাল্লুককান্দী এলাকায় সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা মা ও তার চার বছরের একমাত্র কন্যাকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, টাঙ্গাইল শহরের ব্যবসায়ী আলামিনের স্ত্রী লাকী বেগম (২২) ও তার কন্যা আলিফা (৪)। এ ঘটনায় নিহত লাকীর বাবা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

টাঙ্গাইল মডেল থানার ওসি মীর মোশাররফ হোসেন জানান, শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে দুর্বৃত্তরা বাড়িতে ঢুকে কুপিয়ে ও গলা কেটে অন্তঃসত্ত্বা মা ও তার শিশুকন্যাকে হত্যা করে। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দু’টি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিচিতরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।

এই হত্যা রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশ জোর তৎপর চালাচ্ছে। এ ঘটনায় নিহত লাকীর বাবা হাসমত আলী রোববার টাঙ্গাইল মডেল থানায় অজ্ঞাতদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

নিহত লাকীর স্বামী আলামিন জানান, তিনি টাঙ্গাইল শহরের আসাদ মার্কেটে মোবাইল ফোন ফ্যাক্স ও বিকাশের দোকান করেন। এজন্য বাড়ি ফিরতে তার প্রায়ই মাঝরাত হতো। বাড়িতে যাওয়ার পথে তিনি স্ত্রীকে ফোন করতেন। স্ত্রী বাড়ির গেট খুলে দিতেন। শনিবার দিবাগত রাত ১২টার পর তিনি বাড়ির কাছাকাছি যাওয়ার পর স্ত্রীকে ফোন করলে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। বাড়ির সামনে গিয়ে দেখেন গেট খোলা। ঘরের ভিতরে উচ্চ শব্দে টেলিভিশন চলছে। তিনি বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই রক্তাক্ত অবস্থায় তার স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করলে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসেন। পরে থানায় খবর দেয়া হয়।

নিহতের স্বজনেরা জানান, হত্যাকাণ্ডের পর ঘরের একটি ড্রয়ার খুলে প্রায় আট লাখ টাকা লুট করা হয়েছে। অন্য কোন ড্রয়ার খোলা হয়নি। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

প্রসঙ্গ; শিক্ষা

প্রসঙ্গ; শিক্ষা


জিয়াউল হক


সমাজেই তিন তিন জন বিশ্বখ্যাত দর্শনিক জন্ম নিয়েছিলেন। গ্রিক গ্যাং অব থ্রী নামে তাদেরকে এক নামে সবাই চেনে। সক্রেটিস, তার চুয়াল্লিশ বৎসর পরে প্লেটো এবং তারও একচল্লিশ বৎসর পরে এ্যরিস্টেটলের জন্ম। এই তিন দার্শনিকের দর্শন গ্রিক সমাজে ব্যাপকভাবে চর্চিত হতো। শাসক শ্রেণীর সাথে সক্রেটিসের চিন্তার অনৈক্য তাকে শেষ পর্যন্ত হেমলক পানে আত্মহত্যায় বাধ্য করার ঘটনা আমরা জানি।

সক্রেটিসের একটা উক্তি Know Thyself ’ ( নিজেকে জানো) অমর হয়ে আছে। নিজেকে জানলে কি হবে? সেই জানার পথ ও পদ্ধতিই কি? সে বিষয়ে সক্রেটিস নিশ্চুপ।

সক্রেটিসের অনেক পরে এসে ইসলাম সোজাসাপ্টা বলেছে; নিজেকে জানো, তা হলে তুমি তোমার স্রষ্টাকে জানবে। বলেছে; ‘মান আরাফা নাফসাহু ফাক্বাদ আরাফ রাব্বাহু অর্থাৎ যে নিজেকে চিনেছে, সে তার স্রষ্টাকে চিনেছে।

এই যে স্রষ্টাকে চিনতে পারার সহজ ও সোজা পথ, এই পথটাই সক্রেটিস, প্লেটো এবং এ্যরিষ্টেটল কেউই বলতে পারেন নি।

গ্রিক দর্শনের এই ব্যার্থতার অন্যতম কারণ গ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা, যার মৌলিক ভিত্তি দুটো; এক-ইনটুইশন – Intuition, দুই- লজিক – Logic অর্থাৎ বোধ ও যুক্তি।

এই বোধ আর যুক্তির উপরে ভিত্তি করেই তারা টিকে থাকার চেষ্টা করেছে। সক্রেটিস থেকে শুরু করে এ্যরিস্টেটল পর্যন্ত সকলেই তাদের ‘বোধ কে যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন।

মানুষের বোধে বা উপলব্ধীতেই যদি ভূল হয়, অপূর্ণতা থাকে, তা হলে কি সে অপূর্ণতাকে যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা যায়? এ প্রশ্নটি কেউ তুলেননি গ্রিক ঐ তিন দার্শনিকের কাছে। সর্বপ্রথম তাদের সেই দর্শন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে ইসলামের সান্নিধ্যে এসে।

গ্রিক সমাজে শিক্ষা দুটি মৌলিক ভিত্তির বিপরিতে ইসলাম তিনটি মৌলিক ভিত্তি দাঁড় করিয়েছে, বোধ ও যুক্তির সাথে এক্সপেরিমেন্টের তথা পরীক্ষা নিরীক্ষার কথা বলেছে। তার মানে, ইসলাম বলেছে, জ্ঞানের উৎস হলো তিনটি; ইনটুইশন (Intuition), লজিক – (Logic), এক্সপেরিমেন্ট (Experiment) অর্থাৎ বোধ-যুক্তি আর নীরিক্ষণ।

এর মধ্যে প্রথমটি অর্থাৎ ইনটুইশন তথা বোধটার উৎস গ্রিক সমাজে মানুষে নিজের মনের উদিত চিন্তা ও বিশ্বাস । ইসলামে এই বোধের উৎস আল্লাহ প্রদত্ত অহি (নবী রাসুল গণের ক্ষেত্রে) অথবা ইলহাম (সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে)। এই ইলহামটিই অহির মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞান, যুক্তি ও বাস্তবতার আলোকে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে বিশ্বাস করা বা না করাটাই হলো ইসলামি শিক্ষার মৌলিক ভিত্তিমূল।

এই ভিত্তিমূলের সন্ধানটাই সক্রেটিস ও তার অপর দুই শিষ্য দিতে পারেন নি। এটা হলো সক্রেটিসের শিক্ষা ও দর্শনের দূর্বলতা। এটা বলতে আমরা ভয় পাই, সংকোচ বোধ করি, কারণ, সক্রেটিস হলেন বিশ্বের কাছে এতো বড় দার্শনিক যে, তাকে পশ্চিমা বিশ্বে চিন্তা ও দর্শনের ইশ্বর ভাবা হয়। ইশ্বরের কি সমালোচনা করা যায়?

এই যে মনস্তত্ব, চিন্তা ও দর্শনের ক্ষেত্রে কিংবা ক্ষমতা ও প্রভাব প্রতিপত্তির ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত শ্রেষ্ঠত্ব থাকার কারণে প্রশ্নাতীতভাবে দাসত্ব করে যাওয়ার মত মানসিক অবস্থাটা ছিলো গ্রিক সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রতিষ্ঠিত। সেখানে আল্লাহর পরিচিতি কিছুই ছিল না। মানুষের বাইরে আরও উচ্চক্ষমতাশালী কর্তৃত্বপরায়ন কোন শক্তি যদি থেকে থাকে, তারা হলো; ভেনাস, এ্যাপেলো, জুপিটার এসব। আল্লাহ নয়।

সময় গড়িয়ে যাবার সাথে সাথে গ্রিকো-ল্যাটিন সেই দর্শনের মধ্যেও পরিবর্তণ এসেছে। মানুষের বোধ বুদ্ধি ও উপলব্ধীর মধ্যে এক বিরাট অপূর্ণতা রয়েছে এবং তাকে শিক্ষার একমাত্র ও চুড়ান্ত উৎস হিসেবে মেনে নেওয়াটা নিরাপদ নয়, সে বোধ তাদের মধ্যে এসেছে। কিন্তু তা তথা পশ্চিমা সভ্যতা ইনটুইশন এবং লজিক বা উপলব্ধী ও যুক্তি, এ দুটোকে বিজ্ঞানের অধিনস্থ করে দিয়েছে। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যদি ইনটুইশন ও লজিক উৎরে যায়, তা হলে সেটাই সত্য!

মানবতার জন্য এ এক আত্মবিধ্বংসী বিশ্বাস। নিত্য পরিবর্তনশীল বিজ্ঞানকেই সত্যের উৎস হিসেবে মেনে নেয়াটা এক মারাত্মক ভ্রম। এই ভুলের মধ্যেই পড়ে আছে আজকের বিশ্ব; আধুনিক বিশ্ব।
আমরা আধুনিক যুগের অধিকাংশ মুসলমানরা ইসলামি শিক্ষা ও সাংস্কৃতির ধারক বাহক হবার বা তেমনটা হবার দাবীদার হওয়া সত্তেও কিন্তু সেই হাজার বসর প্রাচিন গ্রিকদের মানসিকতা ছাড়তে পারি নি।

আমাদের সমাজেও এখন শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যতম বড় সমস্যা হলো, ওস্তাদ বা শিক্ষকের কথার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। ওস্তাদ বা শিক্ষকের বাণীকেই শীরোধার্য হিসেবে মানতে হবে! অথবা যারা একটু স্বাধীন চিন্তা পোষণ করেন তারা ওস্তাদ বা শিক্ষকের মতের বিপরিতে আরও একজনের মতামতকে অন্ধের মত প্রাধান্য দেন; Science বা বিজ্ঞানের !

হয় আমার শিক্ষক, না হয় হয় বিজ্ঞান, দুটোর যে কোন একটা অবশ্যই সত্য ও চুড়ান্ত। এসবের কোনটিকেই শিক্ষার্থী তার নিজস্ব চিন্তা ও বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে পরখ করছে না। অথচ ইসলামের নির্দেশই হলো প্রতিটি জ্ঞান, তথ্য উপাত্ত ও শিক্ষা যাচাই করতে হবে, তারপরেই কেবল তা সত্য বলে গ্রহণ করতে হবে। কারোরই অন্ধ অনুসরণ করা যাবে না (আল কুরআন ১৭ : ৩৬)।

তার মানে হলো ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার তৃতিয় যে বৈশিষ্ঠ, সেই বৈশিষ্ঠের কোন চর্চা হচ্ছে না আমাদের মুসলিম সমাজের ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে।

এ মানসিকতার কারণে একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে স্বাধীন চিন্তাধারার উন্মেষ ঘটছে না যেমনি, তেমনি শিক্ষাও রয়ে যাচ্ছে অপূর্ণাঙ্গ ও অর্থহীন। ছাত্ররা পড়ছে তবে শিখছে না। এরকম পরিস্থিতি থেকে যত দ্রুত বের হয়ে আসা যায়, ততোই মঙ্গল।

 

এক বছর ধরে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া চাচাতো বোনকে ধর্ষণ, এরপর….

এক বছর ধরে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া চাচাতো বোনকে ধর্ষণ, এরপর….


নারী সংবাদ


মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখানে বিভিন্ন প্রকার ভয় ভীতি দেখিয়ে অষ্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় মো. আবুল বাশার শেখ (২৩) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আবুল বাশার শেখ উপজেলার শেখরনগর ইউনিয়নে অবস্থিত দক্ষিণহাটী গ্রামের মোঃ হেলাল উদ্দিন শেখের ছেলে।

ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মুন্সীগঞ্জ সদর হসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সিরাজদিখান থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মোঃ ফরিদউদ্দিন জানান, ধর্ষক মোঃ আবুল বাশার শেখ সম্পর্কে ধর্ষিত ছাত্রীর প্রতিবেশি চাচাতো ভাই। সেই সুবাদে বিবাদী ধর্ষক ওই ছাত্রীর বাড়িতে আসা যাওয়া করতো। পরে ভয় দেখিয়ে গত এক বছর ধরে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে আসছিল মোঃ আবুল বাশার।

সর্বশেষ গত শুক্রবার বিকাল ৪টায় বাড়িতে অন্য কেউ না থাকায় ওই ছাত্রীর বাসায় তখন একা পাইয়া জোড়পূর্বক ধর্ষণ করতে চাইলে ছাত্রীর চিৎকার করিলে ঘটনাটি কাউকে কিছু না বলার জন্য বিভিন্ন প্রকার হুমুকি দিযে কৌশলে ওই বাড়ি হতে চলে যায়। এর পরে বাড়িতে লোকজন আসলে বিষয়টি ওই ছাত্রীর ভাই, বোন ও তার মাকে জানায়। এরপর গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় ছাত্রীর বোন মোসাঃ আমেনা বেগম বাদী হয়ে থানায় ধর্ষণ মামলা করেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে ওইদিনই রাতেই উপজেলার শেখরনগর দক্ষিণহাটী এরাকা থেকে মোঃ আবুল বাশারকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার আইও এস আই মোঃ আসাদুজ্জামান তালুকদার জানান, আসামিকে শনিবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে জিজ্ঞাসাবাদে একাধিকবার ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে মোঃ আবুল বাশার শেখ।
-নয়া দিগন্ত

 

নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে করণীয়


সৈয়দ মুহম্মদ জুলকারনাইন


আমরা পারিবারিক অশান্তি বা সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ যেখানে- সেখানে সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, আন্তর্জাতিক বা বিশ্ব নিয়ে ভাবার সুযোগ কোথায়? তবে কিছু মানুষ অবশ্যই ভাবছেন সীমিত বিষয় নিয়ে। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা তাই বলে। অথচ তাকালেই দেখি ধ্বংস, ক্ষয় আর নির্মমতার ঘটনাবহুল দিন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম উন্নতিও রক্ষা করতে পারছে না মানুষ নামের প্রাণী ও তার আবাসভূমিকে ধ্বংস, ক্ষয় আর চরম নির্মমতার হাত থেকে। আমরা প্রতিনিয়ত পৈশাচিক আর হৃদয়বিদারক ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছি। সমাজ অভ্যন্তরে চলছে গভীর সঙ্কট। নীতি আদর্শ এবং মূল্যবোধ হারিয়ে মানুষ হয়ে উঠেছে জাহেলিয়া যুগের পশুবৃত্তি ও জিঘাংসাপ্রবন। খুন, গুম, অনৈতিক কর্মকাণ্ড মানবতাকে পদদলিত করে চলেছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুর প্রতি নৃশংসতা ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে।

মানুষকে বলা হয় ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব। তাই মানুষের আচরণ হওয়া উচিত অন্যান্য জীবের চেয়ে স্বতন্ত্র। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন, ‘আমি মানব জাতিকে সম্মানিত করে সৃষ্টি করেছি’। অথচ সে মানুষই আজ দানবের মতো আচরণ করছে। দেশের কোথাও না কোথাও হত্যা, ধর্ষণ, ইভটিজিং ও আত্মহননের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হারে ঘটে চলেছে। তুচ্ছ ঘটনায়ও মানুষ খুন হচ্ছে, খুন হচ্ছে আদালত কক্ষে বিচারকের সামনে। অর্থাৎ কে, কখন, কোথায় হত্যার শিকার হবে, তার কোনো গ্যারান্টি নেই। হত্যার পাশাপাশি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ধর্ষণ। ধর্ষকদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ছয়-সাত বছরের মেয়েশিশু কিংবা ছয় মাসের কোলের শিশু। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য মতে, ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে মোট ৪৯৬ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আইন ও সালিস কেন্দ্রের নিয়মিত মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে ধর্ষণের ঘটনা ছিল ৬৩০টি। ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টায় শিশু হত্যার ঘটনা ঘটে ২১টি। ধর্ষণের শিকার শিশুদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশুর বয়স সাত থেকে ১২ বছরের মধ্যে। বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৮ সালে সারা দেশে ৪৩৩টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের কারণে একই বছর প্রাণ হারায় ২২ শিশু। এ ছাড়াও ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয় ৫৩ শিশুর ওপর। যৌন নির্যাতনে একটি শিশু মারা যায়। ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, হত্যা ও শারীরিক নির্যাতনে মারা গেছে ২৭১ শিশু। বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে আরো এক হাজার ছয়জন।

যে বয়সে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার কথা, সে বয়সে তাদের দেখা যায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) জরিপ মতে, কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৫ ধরনের কাজের মধ্যে ৪১ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুরা কর্মরত। পেটের দায়ে শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে থাকলেও ছোটখাটো ভুলের জন্য নির্যাতনের শিকার হতে হয়। বিশ্ব বরেণ্য বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘সমাজ কিভাবে শিশুদের প্রতি আচরণ করে তার মধ্য দিয়ে সমাজের চেহারা ফুটে উঠে’। বর্তমানে আমাদের সমাজে যে ধরনের নিষ্ঠুরতা ও যৌন উন্মাদনা চলছে, তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। নারী ও শিশুদের ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। যেভাবেই ধর্ষণ হোক না কেন, তা গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা অনুযায়ী কারো ইচছার বিরুদ্ধে, সম্মতি ছাড়া, ভয় প্রদর্শন করে, প্রতারণার মাধ্যমে এবং ১৪ বছরের কম বয়সী বালিকার সাথে সহবাস করলে (ব্যক্তি বা দল) ধর্ষণ করেছে বলে গণ্য হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ৯ ধারা মোতাবেক, ধর্ষণের ফলে যদি কোনো নারী বা শিশুর মৃত্যু হয়, তাহলে ধর্ষণকারীর জন্য রয়েছে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। উপরন্তু কমপক্ষে এক লাখ টাকার অর্থদণ্ড। দলগতভাবে নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করলে ধর্ষণকালে কিংবা ধর্ষণের পর মৃত্যু হলে তবে ওই দলের সবাইকে উল্লিখিত শাস্তি ভোগ করতে হবে। কেউ ধর্ষণের চেষ্টা করলে তার জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছর এবং সর্বনিম্ন পাঁচ বছরের কারাদণ্ডসহ অতিরিক্ত অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তবুও দুর্বৃত্তরা ক্ষান্ত হচ্ছে না। আইন ও সালিস কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে তিন হাজার ৫৮৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। একই সময়ে পুলিশ সদর দফতরে মামলা হয়েছে ১৯ হাজারের অধিক। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১১টি ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে। তবে আসামিদের মাত্র তিন শতাংশের সাজা হয়েছে। শাস্তির আওতায় আসা আসামিদের এ সামান্য হারেই ধর্ষকদের বেপরোয়া করে তুলছে বলে বিজ্ঞজনদের অভিমত।

গত ১২ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘অনেক ঘটনাই নতুন আরেক জঘন্য ঘটনার চাদরে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। কেবল সেই সব জঘন্য ঘটনার বিচার হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে যেগুলোর ব্যাপারে একযোগে মিডিয়া, সরকার ও সুশীলসমাজ সমানভাবে সোচ্চার হচ্ছে। গণমাধ্যম সোচ্চার হলে প্রশাসন ও নাগরিক সমাজ দৌড়ঝাঁপ করে, কিন্তু বেশির ভাগ ঘটনা ওভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে না। এ ধরনের ঘটনার সাথে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও ক্ষমতার রাজনীতির সংযোগ রয়েছে। আজ অত্যন্ত বেদনাদায়ক এক ভয়াবহ সময়ে আমরা উপনীত হয়েছি। ঢাকাসহ দেশের সব শহরের অলিতে গলিতে বিশেষত রেললাইনের আশপাশে হতাশা, বেকারত্ব, অসৎ সঙ্গ ও পারিবারিক অশান্তির কারণে মানুষ নেশায় আচ্ছন্ন। ইয়াবা ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য টেকনাফ এবং পার্বত্যাঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ঢুকে পড়ছে। যার ফলে ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী খুন-গুমের মতো অন্যান্য অপরাধ বেড়ে চলেছে।

সূরা আল কেয়ামায় মহান আল্লাহ সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, ‘মানুষ কি মনে করে যে, তাকে এমনি বেহিসাব ছেড়ে দেয়া হবে’? ‘আহকামুল হাকেমিন’ সর্বাবস্থায় শ্রেষ্ঠ বিচারক। এ বোধ, জ্ঞান ও অনুভূতি যার অন্তরে সে ধর্ষণ, খুন, গুম, অন্যায়, অবিচার করতে পারে না। পারে না নীতিশূন্য হতে। অন্য দিকে আল্লাহ ভীতি যার অন্তরে নেই, পরকালে জবাবদিহিতার ভয় নেই তার কাছে তো সুনীতি-দুর্নীতি, ন্যায়-অন্যায় কিংবা ভালো-মন্দ সমান। ওই যে পরকালের জবাবদিহিতার ভয়ে মানুষ অপকর্ম পরিহার করে, তাই ধর্ম। কেন না, কোনো ব্যক্তি যদি চিন্তা-চেতনা, বোধ-বিশ্বাস, আচার-আচরণে পরকালের সংশ্লিষ্টতা রাখেন, তাহলে সে ধর্মহীন হতে পারে না। ধর্ম মানুষের আদিমতম আইন, ধর্মই মানুষকে নীতিশূন্য হতে বাধা দেয়। সুতরাং সময় থাকতে আমাদের পাঠশালা, বিদ্যানিকেতন সর্বত্র নৈতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর তালিম বা শিক্ষাদান করলে শিশু ও নারীর ওপর পাশবিকতা বা নির্যাতন অবসানের আশা করা যায়।

 

দাম্পত্যে ধৈর্য, পারস্পারিক সহানূভূতি


দাম্পত্য


স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মতদ্বৈততা একটি স্বাভাবিক বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে মতভেদ ঘটতেই পারে। কিন্তু আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল, ধৈর্য, পারস্পারিক সহানূভূতি ও সুধারণা এ সকল সমস্যা অনেকাংশে দূর করতে সক্ষম।

ঘনিষ্ঠতায় 
সুখী দাম্পত্য জীবন সবাই চায়। কিন্তু শুধু চাইলেই তো আর জীবনে সুখ আটকে রবে? সুখী দাম্পত্য জীবন পেতে গেলে তার কতগুলো শর্ত আছে, ঘনিষ্ঠতায় একটি। আপনাকে ভালবাসেন তিনি আপনার ঘনিষ্ঠতায় সান্নিধ্যও উপভোগ করবেন।

আলাদা ব্যক্তিত্ব থাকা সম্পর্কের ভালো
ব্যক্তিত্ব ভিন্ন হলেও একে অপরের সঙ্গে অনেকটা সময় একসঙ্গে কাটান, নিজেদের পছন্দের কাজগুলো করুন। বিয়ের আগে বাড়ির লোকের সঙ্গে রাগ দেখিয়েছেন বলে বিয়ের পরেও সেটা করবেন তা কিন্তু ঠিক নয়। ধীরে ধীরে স্বভাবে পরিবর্তন আনুন। সম্মান দিন একে অপরকে। একে অপরকে নিয়েও আগ্রহটা বাঁচিয়ে রাখুন।

পাশে থাকুন
পরস্পরের অভ্যেস তৈরি করে, পাশে থাকুন। কেউই পারফেক্ট হয় না, আপনিও নন। আপনারা ক্ষমাশীল এবং সম্পর্কটাকে সুস্থ রাখতে আগ্রহী। বড়ো কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করুন। বিপদে পরস্পরের পাশে থাকুন।

আর্থিকভাবে ভারসাম্য রাখুন
সুখী দম্পতিরা আর্থিক ভারসাম্য বজায় রাখেন। সাধারণত উপার্জন, টাকা জমা ও খরচ বিষয়ে তাঁদের ধ্যানধারণা একইরকম হয়। টাকাপয়সা খরচের অভ্যেসে ফারাক থাকার দরুন বহু বিয়ে ভেঙে যায়। তাই আর্থিক ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। বড়ো কোনও খরচ করার আগে পরস্পরকে জানিয়ে রাখুন।

 

আমার ভেতরটা চুরমার হয়ে যাচ্ছে!

আমার ভেতরটা চুরমার হয়ে যাচ্ছে!


সাজেদা হোমায়রা


বারবার চোখ ভিজে যাচ্ছে!
আবরারের মায়ের বিলাপ! বাবার কান্না ভেজা চেহারা! একজন মেধাবীর তিল তিল করে দেখা স্বপ্নগুলো নিমিষেই নিঃশ্বেষ হয়ে গেল!

নির্মমতার স্বাক্ষী আবরারের গোটা শরীর। ৬ ঘন্টা ধরে একটু একটু করে জীবনের আলো নিভে গেছে ছেলেটার…
কেমন ছিলো সেই মুহূর্তটা যখন সে আর শ্বাস নিতে পারছিলো না?
কেমন ছিলো তার সেই চাহনিটা যাতে ছিলো প্রচণ্ড বাঁচার আকুতি?

রাজনীতি মানেই এতোটা নির্মমতা, এতোটা বর্বরতা, এতোটাই সহিংসতা?

ফেসবুকে আবরারের হাত, পা, পিঠের ছবি দেখে আঁতকে উঠেছি। কি হিংস্র! কি নৃশংস!
কি নির্মমভাবে তাকে পিটিয়েছে!
এই পিঠেই কতো রাত তার মা হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে ! কতো যত্নে তাকে আগলে রেখেছে!

ভাবতেই খুব অবাক লাগছে…যারা আবরারকে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে, তারা রাস্তার নষ্ট হয়ে যাওয়া কোনো ছেলে না। এরাও মেধাবী ছাত্র।
কিন্তু এতো মেধাবী, আউটস্ট্যান্ডিং হওয়ার পরও তারা কিভাবে এমন বর্বর আচরণ করতে পারলো?

দেশ সেরা প্রতিষ্ঠানে পড়লেই মানুষ হওয়া যায় না। এখানেও পশুদের অবাধ বিচরণ!
মানুষ হওয়ার শিক্ষাটা আলাদা।
শিক্ষার সাথে নৈতিকতার যোগসূত্রটা খুব প্রয়োজন। নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষা শুধু বর্বরতাই উপহার দিতে পারে।

যে শিক্ষা মানুষকে স্বার্থপর করে….
উগ্র ইন্দ্রিয় সুখের জন্য খুনকে উৎসাহিত করে…
যে শিক্ষায় থাকে ক্ষমতার দাপট…
যে শিক্ষায় ভিন্ন মতাবলম্বীদের নির্মূল করা হয় নির্মমভাবে…
যে শিক্ষায় সহপাঠীকে পিটিয়ে হত্যা করতে কোনো দ্বিধা হয় না…
কি লাভ সে শিক্ষায়? এ শিক্ষায় মেধাবী সন্তান শুধু কুলাঙ্গারই হয়।

নৈতিক শিক্ষা আর ইতিবাচক মনোভাব ছাড়া সত্যিকারের মানুষ হওয়া কখনোই সম্ভব না! কখনোই না!

সব সন্তানই তো বাবা মার অনেক প্রিয়… অনেক ভালোবাসার! কখনো আমরা সন্তানদের এতোটাই ভালোবাসি যে তাদের ছোট ছোট ভুলগুলোও শুধরে দেই না। অথচ একসময় এই ভুলগুলোই বড় আকার ধারণ করে। তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয় তাকে।
ছোট ছোট ভুলগুলো শুধরে দিয়ে সন্তানকে সঠিক পথ দেখানো আমাদের দায়িত্ব। আমরা যতোটা সচেতন থাকি সে পরীক্ষার খাতায় ১০০% মার্কস পেয়েছে কিনা, ততোটা কি সচেতন থাকছি তার আচরণ, মানসিকতা আর নৈতিকতার ব্যাপারে? এসব সন্তান পরবর্তীতে সো কল্ড মেধাবী হলেও মানুষ কখনোই হতে পারে না।

আমার স্বপ্ন… আমার দোয়া…আমার চাওয়া….
আমাদের প্রত্যেকটা সন্তান হোক বাবা মায়ের চোখ শীতলকারী!
প্রত্যেকটা সন্তান মানুষ হোক!
বেঁচে থাকুক নিজে!
বাঁচতে দিক অন্যকে!

 

কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে গার্মেন্টস কর্মীকে গণধর্ষণ

কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে গার্মেন্টস কর্মীকে গণধর্ষণ


নারী সংবাদ


নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে এক গার্মেন্টস কর্মীকে রাতভর গণধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের ব্রাহ্মনবাওগা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে । ঘটনার পর ওই গার্মেন্টস কর্মীকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুই আসামী পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছেন তালতলা ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আহসানউল্লা। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে ৭ জনকে আসামি করে ওই গার্মেন্ট কর্মী বাদি হয়ে সোনারগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

সোনারগাঁও থানায় দায়ের করা মামলার এজহারে বাদি উল্লেখ করেন, গার্মেন্ট কর্মী রূপগঞ্জের রবিন গার্মেন্টে তিনি কর্মরত। গত সোমবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে গার্মেন্ট ছুটি শেষে বাড়ি ফেরার জন্য গার্মেন্টের সামনে থেকে গাউছিয়া যাওয়ার জন্য একটি সিএনজি অটোরিকশায় উঠেন। ওই সময়ে জাহাঙ্গীর নামের এক অভিযুক্ত ধর্ষক পেছনের সিটে বসা ছিল। গাউছিয়া যাওয়ার পর ওই গার্মেন্ট কর্মী সিএনজি অটোরিকশা থেকে নামতে চাইলে পেছনের সিটে বসা জাহাঙ্গীর তাকে বাঁধা দেয়। পরে সিএনজি চালককে সিএনজিটি দ্রুত গতিতে সোনারগাঁওয়ের তালতলার দিকে চালিয়ে যেতে বলে। ধর্ষক জাহাঙ্গীরের কথা মতো চালক গাড়িটি চালিয়ে যায়। এসময় ওই গার্মেন্ট কর্মীর মুখে সাদা রঙের কসটেপ লাগিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তালতলা এলাকায় হালিম মিয়ার ঘরে নিয়ে আটকে রাখে তাকে। ওই সময় হালিম মিয়া বাড়িতে ছিলেন না। পরে গভীর রাতে ব্রাহ্মনবাওগা গ্রামের মুজিবুর রহমানের বখাটে ছেলে আবু সাইদ, রেহাজউদ্দিনের ছেলে ইমরান, নবি হোসেনের ছেলে রনি, আবু সিদ্দিকের ছেলে আবুল হোসেন, ভট্টু মিয়ার ছেলে মাসুদ, আমির হোসেনের ছেলে আরিফ ও সামসুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর ওই গার্মেন্ট কর্মীকে রাতভর পালাক্রমে ধষর্ণ করে। রাত সাড়ে তিনটার দিকে হালিম মিয়া বাড়িতে এসে এ ঘটনা দেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৫ ধর্ষককে গ্রেফতার করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ধর্ষক আরিফ ও জাহাঙ্গীর পালিয়ে যায়।

পুলিশ অসুস্থ ওই গার্মেন্ট কর্মীকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনায় ওই গার্মেন্ট কর্মী বাদি হয়ে ৭ জনের বিরুদ্ধে সোনারগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

তালতলা ফাঁড়ির ইনচার্জ মো.আহসানউল্লাহ জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দু’জন পলাতক রয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ভিকটিম উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোনারগাঁও থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির জানান, গণধর্ষণের ঘটনার মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

মা হওয়ার ছয় মাস পর নিয়মিত ব্যায়াম করে ফিটনেস ধরে রাখা সম্ভব


স্বাস্থ্যকথা


চার মাস আগেই প্রথম মা হয়েছেন মন্টি দে। একটি বেসরকারি কোম্পানীতে চাকরি করেন মন্টি। আর মাত্র এক মাস পরেই মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে যোগ দিতে হবে চাকরিতে। কিন্তু এই কদিনেই বেশ মুটিয়ে গেছে মন্টি। আয়নাতে নিজের চেহারা যেন নিজেই চিনতে পারছেনা। মূলত মা হওয়ার পর থেকে বেশ শারীরিক পরিবর্তন হয়েছে তার। বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন মন্টি। কারন চাকরীতে তাকে বেশ দৌঁড়াতে হয়। আর শরীর ফিট না থাকলে কি করে হয়। অনেক ভেবেও কী করা যায় বুঝতে পারছেন না মন্টি। শেষ পর্যন্ত শরণাপন্ন হলেন তারই স্কুল বান্ধবী ডা. শর্মিলার। সব শুনে ডাক্তার পরামর্শ দিলেন আবার ব্যায়াম শুরু করার।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. নুরানী নিরু বলেন, মা হওয়ার পর আমরা ধরেই নিই যে আমাদের শারীরিক ফিটনেস শেষ। আমরা আর আগের মত সুন্দর হতে পারব না। পাব না চেহারার সেই সৌন্দর্য্য। কিন্তু আগের সেই শারীরিক সৌন্দর্য্য ফিরে পাওয়া খুব কষ্টের কিছু না। এজন্য দরকার দৃঢ় মনোবল আর আত্মবিশ্বাস।
তিনি বলেন, মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে যেকোন মা’ই শারীরিকভাব্ওে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। মা হওয়ার পরবর্তী শারীরিক নাজুক অবস্থা থেকে পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লেগে যেতে পারে। মূলত বড় হওয়া জরায়ু ও দুর্বল হয়ে পড়া পেলভিক মাংসপেশিগুলো আগের অবস্থানে ফিরে আসে ছয় সপ্তাহের মধ্যেই। শুরু থেকেই পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করলে প্রস্রাব ধরে রাখার সমস্যা বা তলপেটের পেশির দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা যায়। তবে পুরোদমে ব্যায়াম শুরু করা উচিত ছয় মাস পর থেকে। আর বুকের দুধ খাওয়ানোর কারণে প্রথম ছয় মাস খুব বেশি ডায়েট না করাই ভালো।
প্রায় একই ধরনের কথা বলেন পিটিআরসি রিহ্যাব অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারের পরামর্শক শায়লা। তাঁর সেন্টারে আজকাল অনেক মা হারিয়ে ফেলা ফিটনেস ও ফিগার ফিরে পেতে নানান সেশনে আসছেন। এ ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি অনেক পাল্টেছে। তবে মা হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হাঁটাচলা শুরু করলেও ছয় মাস পর্যন্ত কোনো ভারী ব্যায়াম না করাই উচিত, বিশেষ করে যদি সিজারিয়ান হয়ে থাকে। ছয় মাস পর থেকে বিশেষজ্ঞের অধীন নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে আগের ওজন ও ফিগার পাওয়া সম্ভব। কেবল ওজন কমানোটাই মুখ্য নয়, মা হওয়ার পর পেট ও পেলভিসের পেশিগুলো শিথিল বা লুজ হয়ে পড়ে, এর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম লাগে। ফিট থাকার জন্য মা হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর থেকে প্রতিদিন ৪০ মিনিট করে হাঁটা ভালো।
ফিট থাকতে খাবারের ভূমিকা আছে। ফিটনেস বা স্ট্রেংথ কেবল শরীরের ব্যাপার নয়, এটা মনেরও। অনেক মেয়েই মা হওয়ার পর মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। অনেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কাজে ফিরে যান বটে, কিন্তু সেই এনার্জি যেন হারিয়ে ফেলেন।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সিফাত ই সাঈদ বলেন, বেশির ভাগ নতুন মায়েরই পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন হয়। মনে হয় যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। এ বিষয়ে তাঁর পরামর্শ হলো, শরীর ও মন পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসতে ৬ থেকে ৯ মাস লাগবে, রাতারাতি আগের মতো হওয়া যাবে না। এটা আগেই মেনে নিতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। নিজের জন্য সামান্য হলেও আলাদা একটু সময় বের করতে হবে। যে সময় আপনি নিজের যতœ নেবেন, ব্যায়াম করবেন বা হাঁটবেন, চাইলে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দেবেন, একটা ভালো ছবি দেখবেন বা গান শুনবেন। পরিবারের অন্যরা নবজাতকের দায়িত্ব দিনে দু–একবার না নিলে এটা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে স্বামী সবচেয়ে ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন।

সুত্রঃ (বাসস)

 

ছোট্ট শিশু “মাসানকে (৪)” নিতে চান না বাবা-মা

ছোট্ট শিশু “মাসানকে (৪)” নিতে চান না বাবা-মা


অন্যান্য সংবাদ


সৃষ্টিকর্তার পর মানুষের সবচেয়ে আপনজন বলা হয় মাকে। আমরা বলি মা-বাবা। কিন্তু চার বছরের ছোট্ট শিশু মাসান আরদিতের আপন যে কে? দুপক্ষের আইনজীবীসহ বিস্মিত পুরো আদালত।

মানবাধিকারকর্মীরা মতে, বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা বিপর্যস্ত করে তুলছে শিশুদের জীবনকে প্রতিনিহিত।

ঢাকার সিএমএম আদালতে তার মা-বাবা জানিয়েছেন, মাসানকে তারা রাখতে চান না। বিবাহ বিচ্ছেদের পর, বাবা উঠেছেন একটি মেসে। সেখানে শিশুটিকে রাখার পরিবেশ নেই। আর সন্তানের খরচ চালানোর অক্ষমতার কথা বলছেন মা।

জানা যায় যে, ২০১৩ সালে দিকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন এ দম্পতি। তবে, নানান কারণে বিভেদ সৃষ্টি হয় দুজনের মধ্যে। দাম্পত্য কলহের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে ডিভোর্সের যান তারা।
তবে সবচেয়ে আশ্চার্যের বিষয় হলো সন্তানকে কেউ কারো কাছে রাখতে চাচ্ছেন না। এমন ঘটনা অবাক করে দেয় উপস্থিত সবাইকে।

এ সময় আদালত প্রশ্ন রাখেন, বাবা-মা না দেখলে ছোট্ট শিশুটির দায়িত্ব নেবে কে?

সানজিদা শারমিন (মাসানের মা) ভাষ্য মতে, বাচ্চার বাবা তার কোনই খোজ নেই না, একবার দেখতে আসে না। ভরণপোষণ ও দিচ্ছে না। তাহলে বাচ্চাটাকে আমি কিভাবে রাখবো?

তবে, বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে চাননি বাবা মাহফুজ ইসলাম।

মাসানের বাবার আইনজীবী ইকবাল আহাম্মেদ খান বলেন, বাচ্চা নাবালক হলে ৭ বছর বয়স পর্যন্ত আইন অনুযায়ী মার কাছেই থাকবে। অপর দিকে মাসানের মায়ের আইনজীবী আকলিমা ইসলাম বলছেন, বাচ্চার মা রাখতে পারবে কিন্তু বাচ্চার খরচ অবশ্যই বাবাকে দিতে হবে, না দিলে ভিন্নপথ অবলম্বন করতে হবে আমাদের।

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ফাওজিয়া কর্মী ফিরোজ বলছেন, বিচ্ছেদের মামলা বিষাক্ত করে তুলছে এখন শিশুদের জীবনকে। তিনি বলছেন, আমাদের আদালত নারী ও শিশু বান্ধব নয়। আদালত দেখতে চান বলে অনেকেই ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে আসেন, কিন্তু সেখানে বাচ্চা নিয়ে ঢোকার মত পরিবেশ থাকে না।

 

ঘরের কাজে পুরুষরা নারীদের পুরোপুরি সহযোগিতা করবেন বলেই বিশ্বাস মানবাধিকার কর্মীদের

ঘরের কাজে পুরুষরা নারীদের পুরোপুরি সহযোগিতা করবেন বলেই বিশ্বাস মানবাধিকার কর্মীদের


নারী সংবাদ


ইট ভাঙ্গার কাজ করেন ২৯ বছর বয়সী সালমা। প্রতিদিন ভোর ছয়টা থেকে সাড়ে ছয়টার মধ্যে নগরীর মাতুয়াইল এলাকার ইট ভাঙ্গার কাজের জায়গায় হাজির হতে হয়। সঙ্গে নিয়ে আসতে হয় মাত্র সাড়ে সাত-মাস বয়সী বাচ্চাকেও। কারণ, সেছাড়া বাচ্চাটাকে দেখাশোনা করার মত কেউ নেই। থাকেন যাত্রাবাড়ীর এক বস্তিতে। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত একটানা কাজ করতে হয় তাকে। শুধু দুপুরে খাওয়ার জন্য ৪৫ মিনিট ছুটি পান কাজ থেকে। আর বাচ্চা সঙ্গে থাকায় কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে বাচ্চার দেখাশোনা করার সুযোগ পান সালমা।
সারাদিন কাজ শেষে বাসায় পৌঁছে কিন্তু তার শুয়ে-বসে বিশ্রাম নেওয়ার কোন সুযোগ নেই তার। গোসল করেই ঢুকতে হয় রান্না ঘরে। সবার জন্য রান্না শেষ করে, সবার খাওয়া শেষে তারপর নিজে খেয়ে যখন বিছানায় যান তখন রাত প্রায় সাড়ে ১১টা। পরদিন আবার ভোর ৫টা মধ্যে উঠে সবার জন্য খাবার তৈরী করতে হয় তাকে। প্রায় সময়ই ভোর বেলা নিজে কোন কিছু না খেয়েই ছেলেকে নিয়ে চলে যান মাতুয়াইলে।
ফাহমিদা পেশায় ব্যাংকার। বছর দুয়েক আগে বিয়ে করেন আরেক ব্যাংকারকে। বছর ঘুরতেই তাদের কোল জুড়ে আসে এক মেয়ে সস্তান। তার নিত্যদিনের জীবনটাও অনেকটা সালমার মতোই।
ফাহমিদা বলেন, সকাল সাড়ে ৯ টার মধ্যে গুলাশন-১-এ আমার অফিসে পৌঁছাতে হয়। বাসা নগরীর মধ্য বাড্ডা এলাকায়। সকাল সাড়ে ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য নাস্তা রেডি করি। তারপর নিজে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসের গাড়ীর জন্য যখন রাস্তায় পৌঁছাই তখন ঘড়ির কাঁটা ৮ টা ২০-এ। অফিস শেষ করে বাসায় পৌঁছাই সাড়ে সাতটার সময়। আসার সময় আমার বাবার বাড়ী থেকে বাবুকে নিয়ে তারপর বাসায় ফিরি। এরপর বাবুর খাবার রেডি করে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিই। তারপর আমাদের রান্না-বান্না শেষ করে খেতে খেতে রাত প্রায় সাড়ে ১১টা বেজে যায়।
এভাবেই দিনের পর দিন চলছে সালমা, ফাহমিদাসহ লাখো নারীর কর্মজীবন আর সংসার। তারা দু’হাতে একই সঙ্গে সামলাচ্ছেন সংসার ও কর্মস্থল।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, একজন কর্মজীবী নারী, পুরুষের দ্বিগুণ কাজ করেন। তবে, কর্মজীবী নারীর গৃহস্থালি কাজের কোন আর্থিক মূল্যায়ন করা হয় না বলেই এর গুরুত্ব দৃশ্যমান হয় না। বিবিএস পরিচালিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপে কর্মজীবী নারীর ঘরের কাজকে দ্বিগুণ বোঝা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জরিপ মতে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই কর্মজীবী এমন পরিবারে শতকরা ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই রান্নার কাজ করেন নারী। অন্যদিকে কর্মজীবী পুরুষ যারা রান্না করেন তাদের সংখ্যা মাত্র আড়াই শতাংশ।
এছাড়াও ১০০ জন কর্মজীবী নারীর মধ্যে ৮৯ জনই কাপড় ধোয়ার কাজ নিজেরা করে থাকেন। অন্যদিকে মাত্র ১২ শতাংশ পুরুষ তাদের নিজেদের কাপড় নিজেরা ধুয়ে থাকেন। অন্য পরুষদের কাপড় ধোয়ার কাজ করেন মূলত বাড়ির অন্য নারী অথবা গৃহকর্মীরা।
কর্মজীবী নারীর মধ্যে ৫৩ শতাংশ নারী পরিবারের অন্যান্য সদস্য যেমন-শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ সদস্যদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন। আর মাত্র ২১ শতাংশ কর্মজীবী পুরুষ এ দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে, ২৬ শতাংশ কর্মজীবী নারী চাকরির পাশাপাশি সংসারের জন্য কেনাকাটার দায়িত্ব নিয়ে থাকেন।
জরিপ মতে, এসব কাজের বাইরেও সংসারের অন্যান্য কাজগুলোতে কর্মজীবী নারীর অংশগ্রহণ কর্মজীবী পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি। জরিপে বলা হয়, কর্মজীবী নারীরা পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ পাচ্ছেন না।
মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মানোয়ারা হক বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই মূলত নারীদের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। হয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন। এর ফলে নারীরা যেমন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে অন্যদিকে দেশও এগিয়ে যাচ্ছে।
তবে, দুঃখের বিষয় হচ্ছে, নারীদের শ্রম বাজারে অংশগ্রহণ বাড়লেও তাদের ঘরের কাজ নিয়মিতই করতে হচ্ছে। এখান থেকে এখনো পর্যন্ত নিস্তার নেই। অন্যদিকে অনেক পুরুষ সদস্য তার সঙ্গীনীর চেয়ে কম সময় অফিস করেও ঘরের কোন কাজ করছেন না অথবা তাকে সহযোগিতাও করেন না। আবার অনেক পরিবার শর্তই দিয়ে রাখেন যে, আগে সংসার, স্বামী আর বাচ্চা সামলাতে হবে। তারপর বাইরে চাকরি করা যাবে। অধিকাংশ নারী তা মেনেই বাইরে যাচ্ছেন এবং কাজ করছেন।
মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, বাংলাদেশে এখন অনেক নারী শ্রম বাজারের সাথে যুক্ত হচ্ছেন, এটা সত্যিই আশার কথা। এর ফলে নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতা আরো জোরদার হচ্ছে। তবে, সমাজ নারীদের ওপর অতিরিক্ত শ্রমের বোঝা চাপিয়ে দেয়ায় এই ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতার স্বাদ থেকে তারা যেমন বঞ্চিত হচ্ছে তেমন তাদের মানসিক প্রশান্তিও নষ্ট হচ্ছে। তারা বিশ্বাস করেন, দেশ উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের ওপর থেকে অতিরিক্ত শ্রমের বোঝা লাঘব হবে এবং ঘরের কাজে পুরুষরাও নারীদের পুরোপুরি সহযোগিতা করবেন এবং নারীর ক্ষমতায়নে তাদের জীবনসঙ্গীরা পুরোপুরি সহযোগিতা করবেন।
জরিপের অবশ্য একটা আশা জাগানিয়া বিষয় দেখা যায়, আর তা হল আনুষ্ঠানিক ভাবে শ্রমবাজারের পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। জরিপ মতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের শ্রমশক্তিতে অন্তর্ভুক্ত নারীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। এর আগের অর্থবছরে এ সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৯১ লাখ। এছাড়াও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের শ্রমশক্তির মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৩৫ লাখ। আগের অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৩১ লাখ।

সুত্রঃ বাসস।

 

মুরগির মাংসের টিক্কা

মুরগির মাংসের টিক্কা


ঘরকন্যা


উপকরণ

মুরগির মাংসের কিমা ২ কাপ,
পেঁয়াজ বাটা আধা কাপ,
কাঁচা মরিচ ৩টি,
রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ,
আদা বাটা ২ টেবিল চামচ,
সয়াবিন তেল ১ কাপের চার ভাগের এক ভাগ,
ঘি ৩ টেবিল চামচ,

টকদই আধা কাপ,
পেঁয়াজ বেরেস্তা আধা কাপ,
গরম মসলা গুঁড়া ১ চা চামচ,
কাজু ও পোস্ত বাটা একসঙ্গে মিলিয়ে ৩ টেবিল চামচ,
লবণ পরিমাণমতো।

রান্নার প্রক্রিয়া

১. মুরগির কিমা, লবণ, আদা বাটা দিয়ে একসঙ্গে মেখে ছোট ছোট মার্বেলের মতো বল করে ২০ মিনিট রেখে দিন।
২. এবার কড়াইয়ে তেল দিয়ে পেঁয়াজ বাটা, রসুন বাটা, আদা বাটা, কাজু ও পোস্ত বাটা দিয়ে মসলা ভুনে বলগুলো দিন। সঙ্গে দই দিয়ে কষান। পানি দেওয়া যাবে না।
৩. ঘন হয়ে এলে কাঁচা মরিচ, ঘি, গরম মসলা গুঁড়া ও পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

 

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আইন পর্ব-১

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আইন পর্ব-১


নারীর জন্য আইন


নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়।

নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে সংঘটিত কয়েকটি অপরাধ চিহ্নিত করে তার দ্রুত বিচার ও শাস্তি বিধান নিশ্চিত করার জন্য এই সব আইন। সাধারণভাবে সংঘটিত কয়েকটি অপরাধের মধ্যে অন্যতম হলো দহনকারী পদার্থ দ্বারা কোনো নারী বা শিশুকে আহত বা মৃত্যু ঘটানো। দহনকারী পদার্থের মধ্যে এসিড নিক্ষেপের অপরাধও অর্ন্তভূক্ত। বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে নির্যাতন মানবাধিকারের সর্বাধিক লঙ্ঘন। এই নির্যাতন সূক্ষ্ম এবং প্রকট উভয় ধরনেরই হতে পারে। বাংলাদেশে উন্নয়নের ক্ষেত্রে এর প্রতিক্রিয়া বিশাল।

সংজ্ঞা

বিষয় বা প্রসংগের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকলে,

এই আইন,

(ক) “অপরাধ” অর্থ এই আইনের অধীন শাস্তিযোগ্য কোন অপরাধ

(খ) “অপহরণ” অর্থ বলপ্রয়োগ বা প্রলুব্ধ করিয়া বা ফুসলাইয়া বা ভুল বুঝাইয়া বা ভীতি প্রদর্শন করিয়া কোন স্থান হইতে কোন ব্যক্তিকে অন্যত্র যাইতে বাধ্য করা

(গ) “আটক” অর্থ কোন ব্যক্তিকে তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন স্থানে আটকাইয়া রাখা

(ঘ) “ট্রাইব্যুনাল” অর্থ এই আইনের অধীন গঠিত কোন ট্রাইব্যুনাল

(ঙ) “ধর্ষণ” অর্থ ধারা ৯ এর বিধান সাপেক্ষে, Penal Code, 1860 (Act XLV of 1860) এর Section 375 এ সংজ্ঞায়িত ærape”

(চ) “নবজাতক শিশু” অর্থ অনূর্ধ্ব চল্লিশ দিন বয়সের কোন শিশু

(ছ) “নারী” অর্থ যে কোন বয়সের নারী

(জ) “মুক্তিপণ” অর্থ আর্থিক সুবিধা বা অন্য যে কোন প্রকারের সুবিধা

(ঝ) “ফৌজদারী কার্যবিধি” অর্থ Code of Criminal Procedure, 1898 (Act V of 1898);

(ঞ) “যৌতুক” অর্থ-

(অ) কোন বিবাহের বর বা বরের পিতা বা মাতা বা প্রত্যক্ষভাবে বিবাহের সহিত জড়িত বর পক্ষের অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক উক্ত বিবাহের সময় বা তত্পূর্বে বা বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাকালে, বিবাহ স্থির থাকার শর্তে, বিবাহের পণ হিসাবে বিবাহের কনে পক্ষের নিকট দাবীকৃত অর্থ, সামগ্রী বা অন্যবিধ সম্পদ; অথবা

(আ) কোন বিবাহের কনে পক্ষ কর্তৃক বিবাহের বর বা বরের পিতা বা মাতা বা প্রত্যক্ষভাবে বিবাহের সহিত জড়িত বর পক্ষের অন্য কোন ব্যক্তিকে উক্ত বিবাহের সময় বা তত্পূর্বে বা বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাকালে, বিবাহ স্থির থাকার শর্তে, বিবাহের পণ হিসাবে প্রদত্ত বা প্রদানে সম্মত অর্থ, সামগ্রী বা অন্যবিধ সম্পদ;

(ট) “শিশু” অর্থ অনধিক ষোল বত্সর বয়সের কোন ব্যক্তি;

(ঠ) “হাইকোর্ট বিভাগ” অর্থ বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট এর হাইকোর্ট বিভাগ৷

নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে নির্যাতন উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি সাংঘাতিক বড় সমস্যা যার শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া আগামী প্রজন্ম ও সাধারণভাবে সমাজের ওপর পড়ছে। বাংলাদেশে মানব নিরাপত্তার উদাহরণ রচনার ক্ষেত্রে এই সহিংসতা ও নির্যাতনের অবসান ঘটানো একান্ত আবশ্যক।

সুত্রঃ http://bdlaws.minlaw.gov.bd

 

জুস পান করে মারা যাওয়া সুস্মিতার বোনের আবেগঘন স্ট্যাটাস

নারী সংবাদ

হকারের নিকট থেকে কেনা জুস পান করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া মেধাবী কলেজ শিক্ষার্থী সুস্মিতা হোম চৌধুরী মন্টির মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার বোন সুমনা বাসু। ‘বোধনের আগেই বিসর্জন’ শিরোনামে সুম্মিতাকে নিয়ে বোন সুমনা বাসুর দেয়া আবেগঘন ফেসবুক স্ট্যাটাসে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না।

‘মৃত্যু নয় হত্যা- বিচার চাই’ লিখে সুম্মিতার মৃত্যুর বিচার দাবি করে ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন অসংখ্য মানুষ। প্রথম শ্রেণি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত প্রথম হওয়া মেধাবী শিক্ষার্থী সুস্মিতার এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না। আবার অনেকেই ময়মনসিংহ ব্রিজের মোড়কে চুরি-ছিনতাইমুক্ত করার দাবিতেও প্রতিবাদ করছেন।

অপরদিকে সুস্মিতার বাবা কাঞ্চন কুমার হোম শনিবার সকালে মেয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি আকুতি করে বলেন, তার মেয়ের মতো আর কোনো মেয়ের যেন এভাবে মৃত্যু না হয়।

সুস্মিতা হোম চৌধুরী মন্টির জন্য শারদীয় দুর্গোৎসবের জন্য কেনা নতুন কাপড়ও শেষকৃত্যানুষ্ঠানে বিসর্জন দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তার বোন সুমনা বসু ‘বোধনের আগেই বিসর্জন’ শিরোনামে ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘যাকে নিয়ে আজ লিখতে বসেছি কোনোদিন কল্পনাও করতে পারিনি ওকে নিয়ে এভাবে লিখবো। কতো মজা করলাম বোনরা মিলে রুমার বিয়েতে এটাই শেষ মজা ছিল? সেদিনও বাসায় আসলি এটাই কি শেষ দেখা ছিল? কত গল্প করলাম ভাবলাম পূজায় বাড়ি যাব। দেখা হবে। কিন্তু কাজটা ঠিক হলো না মন্টি। বোধনের আগেই বিসর্জন।’

উল্লেখ্য, হকারের কাছ থেকে কেনা জুস পান করে মৃত্যুবরণ করেন মুমিনুন্নেছা সরকারি কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী সুস্মিতা হোম চৌধুরী (মন্টি)। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ডৌহাখলা ইউনিয়নের ডৌহাখলা গ্রামের কাঞ্চন কুমার হোম চৌধূরীর কন্যা। ১৩দিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত বুধবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সুস্মিতা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

পারিবারিক সূত্র ও সাবেক ইউপি সদস্য নিতাই কুমার চন্দ জানান, সুস্মিতা হোম চৌধুরী (মন্টি) গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বোনের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার পথে ময়মনসিংহ ব্রীজের মোড়ে দুই শিশু হকারের নিকট থেকে একটি কোম্পানির জুস কেনেন। কিন্তু জুসটি তখন না খেয়ে বোতলটি ব্যাগে রেখে দেন পরে খাবেন কিংবা তার ছোট ভাগ্নেকে দেবেন বলে। কিন্তু ঢাকায় গিয়ে জুসের কথা ভুলে যান তিনি। জুসটি ভাগ্নেকে আর খাওয়ানো হলো না।

এরপর গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে ব্যাগের কাপড় সরাতে গিয়ে জুসের বোতলটি চোখে পড়ে। এরপর তিনি মাকে বলেন, আজ রাতে ভাত খাব না, শুধু একটু দুধ আর এই জুস খেয়ে নেব। তার মা আর জোর না করলে জুস খেয়েই ঘুমাতে যান তিনি। পরদিন সকালে আর ঘুম ভাঙেনি সুম্মিতার। যে মেয়েটি প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, কিন্তু সেদিন সকাল ১০টায়ও ঘুম না ভাঙায় পরিবারের লোকজন জোর করে তার ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে কোনোরকমে ঘুম ভাঙলেও তিনি আর মাথা তুলে বসতে পারছিলেন না।

এরপর স্থানীয় ডাক্তার দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হলেও অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চারদিন চিকিৎসা শেষে গত ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে আসার পর সেদিন রাত থেকেই আবারো ডায়রিয়া শুরু হয় সুস্মিতার। পরে ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে পুনরায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এরপর টানা ৮দিন চিকিৎসার পর সুম্মিতার অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার বিকেলে ডাক্তর তাকে ঢাকায় রেফার করেন। ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পথে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সুম্মিতাকে নিয়ে ত্রিশাল থেকে পুনরায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফিরে আসেন তারা। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, সুস্মিতা আর বেঁচে নেই।

নিহত সুস্মিতা হোম চৌধুরী (মন্টি) মুমিনুন্নেছা সরকারি কলেজ থেকে গণিতে অনার্স ও সদ্য মাস্টার্স পরীক্ষায় দুটোতেই প্রথম শ্রেনীতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

 

স্বাস্থ্যে ভাল রাখতে খেয়াল রাখুন


স্বাস্থ্যকথা


বাইরে সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর বাসায় ফিরে বসুন নিঃশ্বাস নিন  তরতাজা মনকে প্রফুল্ল রাখাবে বিশ্বাস যদি না হলে আজ থেকে নিজেই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন এর বিশেষ সুফল।ঐতিহ্যবাহী খাবারের অভ্যাস থেকে সরে আসতে হবে। প্রয়োজনীয় শারীরিক কসরতের অভাব, হতাশা, দুশ্চিন্তা  ছুড়ে ফেলুন।

আর কি কি করতে পারেনঃ

  • টমেটোর রস ও দুধ একসঙ্গ মিশিয়ে মুখে লাগান 
  •  কনুইতে কালো ছোপ দূর করতে লেবুর খোসায় চিনি দিয়ে ভালো করে ঘষে নিন। এতে দাগ চলে গিয়ে কনুই নরম হবে।
  •  রসুনের কোয়া ঘষে নিন ব্রণের উপর। ব্রণ তাড়াতাড়ি মিলিয়ে যাবে।
  •  চুল পড়া বন্ধ করতে মাথায় আমলা, শিকাকাই যুক্ত তেল লাগান।
  • হাত খুব ঘামে তারা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে লাউয়ের খোসা হাতে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ।
  • মাথাব্যথা হলে প্রচুর মাছ খান। 
  •  মধু কার্যকর  ত্বকের জন্য।
  • পেটের পীড়ায় খেতে পারেন কলা, আদা।
  • স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে গমজাত খাদ্য, বাঁধাকপি কার্যকর।
  • মুখের বাদামী দাগ উঠাতে পাকা পেঁপে চটকে মুখে লাগান, পরে ধুয়ে ফেলুন।
  • শুষ্কতা থেকে মুক্তি পেতে মধু, দুধ ও বেসনের পেষ্ট মুখে লাগান নিয়মিত। এতে ত্বকের বলিরেখা ও দূর হয়ে যাবে।
  • পায়ের গোড়ালি ফাটলে পেঁয়াজ বেটে প্রলেপ দিন এ জায়গায়।
  • ফলে তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া গেলেও পড়ে  আপনাকে আরো বেশি দুর্বল করে দেয় এবং দ্রুতই ঘুম পায়, গা ছেড়ে দিয়ে থাকে। যা শরীরের জন্য উপকারের চেয়ে ক্ষতির পরিমান বেশি হয়ে থাকে।

 

দেশ খুলনা বিয়ের ৩ দিনের মাথায় কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা


নারী সংবাদ


মেহেদির রঙ শুকানোর আগেই বিয়ের মাত্র তিন দিনের মাথায় কুষ্টিয়ায় কলেজছাত্রী এক নববধূ আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনার পর থেকে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন পালিয়ে গেছেন। নববধূ পাপিয়া খাতুন তার বাবার বাড়িতে বৃহস্পতিবার রাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। শুক্রবার সকালে পরিবারের সদস্যরা ফ্যানের সাথে লাশ ঝুলতে দেখে থানায় খবর দিলে পুলিশ তা উদ্ধার করে।

স্বজনরা জানান, খোকসা সরকারি ডিগ্রি কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী পাপিয়ার সাথে একই কলেজের শামীম রেজার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে ছাত্রীর বাবার বাড়ি উপজেলার হিলালপুর গ্রামে তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু এ বিয়ে ওই ছাত্রের পরিবার মেনে নিতে পারেনি।

বৃহস্পতিবার বিকালে নববধূকে রেখে শামীম নিজের বাড়ি যান। পরে তিনি না ফিরলে নব দম্পতির মধ্যে মোবাইল ফোনে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে রাতেই নববধূ আত্মহত্যা করেন। নিহতের বাবা ওমর আলী জানান, শামীম পালিয়ে যাওয়ায় পাপিয়া অভিমানে আত্মহত্যা করেছেন।

এ ব্যাপারে শামীমকে ফোনে পাওয়া যায়নি। সেই সাথে তার বাবা রাজ্জাক বিশ্বাসের বাড়ি উপজেলার মির্জাপুরের গিয়েও কারও দেখা মেলেনি। খোকসা থানার এসআই বুলবুল আহমেদ বলেন, এ ব্যাপারে অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সুত্রঃনয়াদিগন্ত।

 

ছাত্রীকক্ষে গিয়ে উত্যক্ত : বখাটের দুই মাসের কারাদণ্ড

ছাত্রীকক্ষে গিয়ে উত্যক্ত : বখাটের দুই মাসের কারাদণ্ড


নারী সংবাদ


কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে স্কুল শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করার দায়ে রাজন মিয়া (১৯) নামে এক বখাটেকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) একেএম লুৎফর রহমান এ দণ্ডাদেশ দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত রাজন মিয়া উপজেলার তারাকান্দি গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে বহিরাগত ৪-৫ জন বখাটে পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের কক্ষে প্রবেশ করে। এ সময় তারা ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতে থাকে। কয়েকজন শিক্ষার্থী বিষয়টি প্রধান শিক্ষক আফছর উদ্দিন আহম্মদ মানিককে জানান।

পরে প্রধান শিক্ষক অন্যান্য শিক্ষকদের নিয়ে বখাটেদের ঘেরাও করেন। এ সময় ৩-৪ জন বখাটে বিদ্যালয়ের দেয়াল টপকে পালিয়ে গেলেও রাজন নামে এক বখাটেকে আটক করে। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) একেএম লুৎফর রহমানকে এ বিষয়টি অবগত করেন প্রধান শিক্ষক। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। পরে ছাত্রীদের অভিযোগ শোনেন এবং বখাটে রাজন অপরাধ স্বীকার করায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। এ সময় পাকুন্দিয়া থানার এসআই বিষ্ণুপদ দাশ ও প্রধান শিক্ষক আফছর উদ্দিন আহম্মদ মানিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)একেএম লুৎফর রহমান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

মনোজাগতিক অভিযাত্রা (২)

মনোজাগতিক অভিযাত্রা (২)


আফরোজা হাসান


হতাশার চোরাবালিতে আকন্ঠ ডুবে থাকা মানুষ প্রায়ই ছুটে আসে একটু আশার আলোর সন্ধানে। কিন্তু তাদের মনের হতাশার গভীরতা এত বেশি থাকে আমার আশা জাগানিয়া শব্দরা সেখানে পৌছা মাত্রই টুপ করে ডুবে যায়। এমন মানুষদের সঠিক পথের দিশা দেখাতে যেয়ে নিজেই দিশেহারা হয়ে যেতাম। কয়েকজন এসেই আকুতি জানাতো ঘুমের ঔষধের। ঘুমিয়ে কিছুক্ষণের জন্য সবকিছু ভুলে যেতে চায়। কাউকেই এমন সমাধান দিতে ইচ্ছে হতো না। ইচ্ছে হতো এমন কোন সমাধান দিতে যাতে অশান্ত প্রাণগুলো প্রশান্তির সন্ধান পাবে আত্মিক ভাবেই। কোন ড্রাগের প্রভাবে কিছুটা সময় ভুলে থাকবে না নিজের সমস্যার কথা। বরং নিজের সমস্যাকে মেনে নিয়ে সেটার সমাধানের চেষ্টা করবে। সমস্যায় দ্বিগিদিক ছোটার একটা অন্যতম কারণ হচ্ছে মানুষ আগত সমস্যাকে মেনে নিতেই নারাজ থাকে। যারফলে সমাধান হাতের কাছে থাকা স্বর্ত্বেও নিজ সাধ্যের বাইরে কিছু ভেবে নিয়ে আহাজারি করে, ভীত হয়। মনে পড়লো একটা সময়ে আমি নিজেও এমনটাই ছিলাম। কিন্তু যেদিন মন থেকে সত্যিকার অর্থে মেনে নিয়েছিলাম, দুনিয়াতে এসেছিই পরীক্ষা দিতে। এবং ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ভয়, বিপদআপদ ইত্যাদির দ্বারা আল্লাহ পরীক্ষা করবেন। কিন্তু কখনোই আমার সাধ্যের বাইরের কোন বোঝা আমার উপর চাপাবেন না। সেদিন থেকে যে কোন সমস্যাকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গীটাই বদলে গিয়েছিল আমার। এতই অধৈর্য্য স্বভাবের একজন মানুষ ছিলাম আমি সুপার মার্কেটে লম্বা লাইন দেখলে অনেকক্ষণ ধরে খুঁজে খুঁজে বের করা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখেই চলে আসতাম। কারণ অতক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার ধৈর্য্য আমার ছিল না। কিন্তু দুনিয়া পরীক্ষা ক্ষেত্র মেনে নেবার পর থেকে এমন পরিস্থিতিতে পড়লেই মনেহতো ধৈর্য্যশক্তি বৃদ্ধির পরীক্ষা চলছে আমার। এমন ছোট ছোট পরীক্ষার মধ্যে দিয়েই নিজেকে ধৈর্য্যশীল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে আমাকে।

তারমানে আপনার অপরিসীম ধৈর্য্যশীলতার গোপন রহস্য এখানে লুকায়িত?

এই প্রথম হাসি ফুটে উঠলো সিনিয়র সহকর্মীর চেহারাতে। ব্যক্তি হিসেবে উনি যথেষ্ট হাসিখুশি। উনার রসবোধও চমৎকার। এটা নিয়ে কোন দ্বিমত নেই। তবে নিজের ব্যক্তি জীবনের আলোচনা বিশেষ করে অতীতের প্রসঙ্গ উঠলেই কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে যান। উনার ব্যক্তিত্বের এই অংশটা প্রায় সময়ই চিন্তার খোরাক জোগায় আমার। কর্মজীবনের দীর্ঘ পথে অসংখ্য মানুষকে উনি তাদের অতীতের নিকষ অন্ধকার থেকে মুক্ত সহায়তা করেছেন। অথচ নিজেকে মুক্ত করতে পারেননি মন্দ অতীতের বাহুডোর থেকে। অবশ্য একজন ক্যান্সার স্পেশালিষ্ট যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। সেক্ষেত্রে একজন মনোচিকিৎসকও ভুগতে পারেন মনোরোগে। যাইহোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাই।

আমার প্রশ্নের জবাবে হাসি মুখে বললেন, তা বলতে পারো। তবে মূল কথা কিন্তু একটাই। যে কোন পরিস্থিতিকে মেনে নিতে পারাটা। কারণ একটি পরিস্থিতিকে মেনে নিতে পারাটাই হচ্ছে সেই পরিস্থিতি থেকে বেরোবার বদ্ধ তালার চাবি। এই কথাটা বোঝার পর থেকে কোন পরিস্থিতিই আর আমার সামনে এগিয়ে যাবার পথ রোধ করে দাঁড়াতে পারেনি। তাই আমার একটাই চিন্তা ছিল পেশেন্টদের মনে এই একই আত্মপোলব্ধি জাগানো। সমস্যা থেকে পালানোর চেষ্টা না করে ফেস করতে শেখানো। সমস্যার স্বভাবই যত পিছু ছাড়ানোর চেষ্টা করা হয় পেছন পেছন ধাওয়া করে। কিন্তু যখনই মুখোমুখি দাঁড়ানো হয় একপা, দু’পা করে পিছাতে পিছাতে একসময় ঝেড়ে দৌড় লাগায় এবং হারিয়ে যায় দৃষ্টিসীমার বাইরে।

এই পদ্ধতিটা সত্যিই ফলপ্রসূ। আমার অভিজ্ঞতাও বলে যে কোন সমস্যাকে মেনে নিতে পারাটাই আসলে জয়ের পথের প্রথম কদম। তারপর বলুন..

আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি নানারকমের সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশা, ছন্দ-দ্বন্দ্ব নিয়েই আমাদের জীবন। আর এসব তাই পালা ক্রমে আমাদের জীবনে আসতেই থাকবে। সুখ হোক বা দুঃখ কোন অবস্থায় মধ্যেই স্থির থাকা সম্ভব নয় জীবনে। কিন্তু তারপরও মাঝে মাঝে বিষণ্ণতা ঘিরে ধরে মনকে। তখন মনের অন্ধকার কোনে কুরআনের একটি আয়াত জাগিয়ে যায় প্রশান্তির প্রদ্বীপ শিখা। সূরা রা’দ এর ২৮ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “যারা ঈমান আনে ও আল্লাহর স্মরণে যারা প্রশান্তি লাভ করে। নিঃসন্দেহে আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্তি খুঁজে পায়।” আল্লাহর স্মরণের মাঝে প্রশান্তি খুঁজে নিতে পারাটা জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এই প্রাপ্তি একবার যদি কেউ হাসিল করে নিতে পারে দুনিয়ার কোন অপ্রাপ্তি আর সেই মনকে স্পর্শ করতে পারে না। এই প্রাপ্তি অর্জন কিন্তু খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। এই প্রাপ্তির জন্য শুধু প্রয়োজন নিজ অবস্থানে সর্বাবস্থায় সন্তোষ। যে কোন পরিস্থিতিতেই আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারাটা। এটাও কিন্তু বেশ সহজ। আমাদের জন্য একটা পরিস্থিতি যতই নাজুক হোক না কেন দৃষ্টি নীচের দিকে করলেই তারচেয়েও নাজুক পরিস্থিতির মোকাবিলায় রত অসংখ্য মানুষের দেখা মেলে। তাই নিজ অবস্থানকে সন্তোষ ভরা মেনে নেবার কথাটাই প্রথম বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম পেশেন্টদের। সেই চেষ্টাটাকে জয়ের মুখ দেখানোটা অবশ্য বেশ কঠিন ছিল।

হুম, যখন কোন পরীক্ষা আসে তখন নিচের দিকে তাকানোর সেন্সটাই কাজ করা ছেড়ে দেয় যেন। নিজেকেই তখন জগতের সবচেয়ে অভাগা মনেহয়। আপনার কখনো নিজেকে এমন মনে হয়েছে? কখনো কি ভেতর থেকে কেউ বলেছে তোমার মতো দুর্ভাগা জগতে কেউ নেই? যদি বলে থাকে ঐ পরিস্থিতিতে কিভাবে নিজেকে বুঝিয়েছিলেন?

হেসে বললেন, যখন থেকে শরীয়তের আলোকে চিন্তা করতে শিখেছিলাম তখন থেকে আর কখনোই নিজেকে দুর্ভাগা মনেহয়নি। যখনই কোন সমস্যা এসেছে, আমি কোনকিছু চেয়েছি কিন্তু পাইনি। এমন পরিস্থিতি গুলোকে নিজের জন্য পরীক্ষা ভেবে নিয়েছি। যদিও ভাবাটা সহজ হতো না বেশির ভাগ সময়ই। লক্ষ্য থেকে বারবার ফসকে যেতো চাইতো মন। দুঃখবিলাসে মগ্ন হতে চাইতো। কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতাম কিছুতেই হাল ছেড়ে না দেবার। আসলে যে কোন পরিস্থিতিতে হাল ছেড়ে দেবার অসংখ্য কারণ থাকে আমাদের কাছে। কিন্তু হাল ছেড়ে না দেবার জন্য একটা কারণই যথেষ্ট হয়। যেটা হচ্ছে রব্বের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি। জীবনের লক্ষ্যটাকে যদি রব্বের সন্তোষ অর্জনে স্থির করা যায়, তাহলে কঠিন থেকে কঠিন পরিস্থিতিতেও আশায় দিয়া নিভু নিভু করে হলেও প্রজ্জলিত থাকে অন্তরে……।

 

প্রেমিকার বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করলেন ছাত্রলীগনেতা


নারী সংবাদ


দেড় বছরের প্রেমের সম্পর্ক। প্রেমিকার বাবা জানার পর প্রেমের প্রস্তাবে সম্মতি না দেয়ায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন প্রেমিক।

সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও আলমপুর গ্রামের মৃত ইসলামের পুত্র আমিনুল ইসলাম (৩০) দুবলাই গ্রামের মৃত কোরবান আলী মন্ডলের পুত্র আব্দুর রউফ সাইদ (৩৫) এর কন্যা সিরাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অনার্স ১ম বর্ষে পড়ুয়া ছাত্রী সোনিয়ার সাথে প্রেমের সর্ম্পক। সোনিয়ার পিতা প্রেমের সম্মতি না দেয়ায় বুধবার দুপুরে আরআইএম ডিগ্রি কলেজের পাশে এলাপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। সাইদকে কাজিপুর হাসপাতালে ভর্তি করার পর বিকাল ৫টায় তিনি মারা যান।

পুলিশ কাজিপুর পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামকে আটক করেছে। পুলিশ লাশ উদ্বার করে পোস্টমর্টেমের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করবেন বলে জানান নিহতর পরিবারের সদস্যরা।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

ফেনীতে ‘কিশোর গ্যাং’, উদ্বিগ্ন অভিভাবক


নারী সংবাদ


ফেনী শহরের পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং হিসেবে পরিচিত উঠতি বয়সী সংঘবদ্ধ বখাটেদের নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে অভিভাবকরা। তাদের দমনে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এজন্য শহরে বেশ কিছুদিন ধরে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাং মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে জেলায় সংগঠিত খুন, ছিনতাইসহ বেশ কিছু অপরাধ ঘটনায় উঠতি কিশোরের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে।

একাধিক লোহর্ষক হত্যার তদন্তে দেখা গেছে, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এসব অপরাধের সূত্রপাত। পাড়া-মহল্লার অলি-গলি এমনকি স্কুল-কলেজের সামনে তারা পথচারীদের উত্ত্যক্তও করে। ইতোমধ্যে এসব অপরাধ দমনে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। ক’দিন আগে শহরের শাহীন একাডেমী সড়ক, ফনেী সরকারি কলেজ গেইটসহ তিনটি স্থান থেকে ১১ কিশোরকে আটক করা হয়। দৃষ্টিকটু হওয়ায় তাদের চুল কেটে দেয়া হয়। আটককৃতদের অভিভাবকদের থানায় ডেকে নেয়া হয়। পরে তাদের সন্তানদের খোঁজ-খবর রাখা এবং তাদের ব্যাপারে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রনজিত কুমার বড়–য়া। পরে মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকদের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

সূত্র আরো জানায়, এসব অপরাধ দমনে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে তিনটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিম শহর সহ বিভিন্ন স্থানে টহল অব্যাহত রেখেছে। একজন ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে প্রতিটি টিমে ৭ জন সদস্য রয়েছেন।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রনজিত কুমার বড়–য়া বলেন, কোন অবস্থায় কিশোর গ্যাং মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেয়া হবেনা। উশৃঙ্খল চলাফেরা, আড্ডারত এমনকি মোটর সাইকেলে তিনজন চললেই আটক করা হবে।

ফেনী পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহতাব উদ্দিন মুন্না বলেন, কিশোর অপরাধ বাড়ার পেছনে চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকা অন্যতম কারণ। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই নয়, অভিভাবকদের সচেতনতার বিকল্প নেই। সন্তানদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ ও যত্নশীল হওয়া খুবই জরুরী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভাবক জানান, স্কুল পর্যায়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে কথিত বড় ভাইদের অনুসরণ করতে গিয়ে শিশু-কিশোররা বিপথগামী হচ্ছে। অনেকে দলভারী করার জন্য শিশু-কিশোরদের তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। ইতোমধ্যে জেলায় সংগঠিত বিভিন্ন অপরাধে এমন সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে এসেছে।

একজন গণমাধ্যম কর্মী জানান, ফেনীর বহুল আলোচিত একরাম হত্যাকাণ্ড, মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত রাফি হত্যাকাণ্ড, স্কুল ছাত্র আরাফাত হত্যাকাণ্ডসহ বেশ কিছু লোহহর্ষক ঘটনায় কিশোররা জড়িত রয়েছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়।

ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, কিশোর গ্যাং কালচার খুবই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি সর্বাগ্রে অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, পরিবার ও প্রতিষ্ঠানে এসব ব্যাপারে শিশু-কিশোরদের নিরুৎসাহিত করতে হবে। তিনি তার প্রতিষ্ঠানে (ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুল) শিক্ষার্থীদেরকে এসকল বিষয়ে নিয়মিত নজরদারী করেন। ওই স্কুলে কোন ছাত্র অর্ধ ইঞ্চির উপর চুল রাখতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে তিনি জানান।

ফেনী মডেল থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন জানান, এ ধরনের ঘটনায় ১২ জনকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী বলেন, দেশব্যাপী কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে। তারা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও খুনোখুনি করেছে। ফেনীতে কিশোর গ্যাং যেন গড়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বেশ কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনা হয়ছে।

তিনি আরো বলেন, দুই-তিন কিংবা চারজন মোটর সাইকেলে মহড়া, রাতে আড্ডা, মাদকাসক্ত, স্কুল পালিয়ে ইভটিজিং করলে তাদের আটক করা হচ্ছে।

 

প্যারেন্টিং নিয়ে বইপড়া

প্যারেন্টিং নিয়ে বইপড়া


খালেদা সুলতানা সুইটি


প্যারেন্টিং নিয়ে কিছু বই পড়তে যেয়ে একটা বই বেশ ভালো লাগলো। আমরা পিতামাতা রা চাই সন্তান যেন একজন আদর্শ মুসলিম হয় কিন্তু আমরা নিজেরা কতটা ইসলাম প্র্যাকটিস করছি বা কতটা জানি সেটা নিয়ে ভাবিনা। সন্তানরা পরিবারের মানুষদেরকে বিশেষ করে মাবাবাকে অনুকরন করে। মা বাবার কাছ থেকেই প্রথম জ্ঞানার্জন করে। সেই মা বাবা নিজেরাই যদি না জানে না মানে তবে সন্তানকে শেখাবে কিভাবে বা সন্তানই বা মানবে কেন।

তাই সন্তানকে শেখানোর জন্য মানানোর জন্য সর্বোপরি সন্তানকে গড়ে তোলার জন্য এবং নিজেও পরিপূর্ণ ভাবে ইসলাম প্র্যাকটিসের জন্য যে ধরনের রুটিন ফলো করা দরকার, যা যা জানা দরকার, দৈনন্দিন কাজকর্মের পাশাপাশি, জীবন চলার পথে ইসলামের দিক নির্দেশনা, কুরআন এবং হাদীসের রেফারেন্সসহ সাবলীলভাবে বর্ননা দিয়েছেন বইটিতে লেখক জাবেদ মুহাম্মদ। দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা লাভের জন্য আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা’আলার নির্দেশিত কুরআন এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রদর্শিত সুন্নাহ উল্লেখ করে লেখক সন্তান প্রতিপালনের নানাবিষয়ে আলোকপাত করেছেন।

বইটির নাম ” প্যারেন্টিং : এন ইসলামিক আইডোলজি ফর চিলড্রেন।”
– আহসান পাবলিকেশন্স

** শুধু মা বাবারাই নয়, অন্য যে কেউ বইটি পড়ে দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে ইসলাম নির্দেশিত পন্থা, কুরআন হাদীসে সে সকল বিষয়ে যে দিক নির্দেশনা আছে তা জানার মাধ্যমে উপকৃত হবে বলে মনে করছি ।

** বইটি পড়ে ভালো লাগলে আমার জন্য দুআ করতে ভুলবেননা যেন।

 

নুসরাত হত্যা মামলার রায় ২৪ অক্টোবর

নুসরাত হত্যা মামলার রায় ২৪ অক্টোবর


নারী সংবাদ


ফেনীর আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায় আগামী ২৪ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে।

আজ সোমবার রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের এ তারিখ ঘোষণা করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারিক মো: মামুনুর রশিদ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন পাবলিক প্রসিকিউটর হাফেজ আহম্মদ। বাদীপক্ষের আইনজীবী আক্রামুজ্জামান ও এম. শাহজাহান সাজু আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক খন্ডন করে নিজেদের স্বপক্ষে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। তারা আদালতের কাছে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।

এর আগে এগার কার্যদিবসে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুখ আহমেদ, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ নান্নু, আহসান কবির বেঙ্গল ও কামরুল হাসান।

গত ৬ এপ্রিল নুসরাত জাহান রাফিকে মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে ডেকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে গাঁয়ে কেরোসিন ঢেলে হত্যার উদ্দেশ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ওইদিনই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো: শাহ আলম। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহআলম তদন্ত শেষে ২৯ মে আদালতে মোট ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন। এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তদন্তে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় পিবিআই অন্য ৫ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করলে আদালত তা অনুমোদন করেন।

২৭ জুন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাত রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এ মামলার চার্জশিট জমা দেয়ার আগে সাতজন সাক্ষী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এ মামলায় গ্রেফতারকৃত মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।

সুত্রঃ নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয় – নয়া দিগন্ত।

 

ঘরের জন্য পর্দা নির্বাচন করি

ঘরের জন্য পর্দা নির্বাচন করি


ঘরকন্যা


ঘরের পর্দার ধরন, রঙ, ডিজাইন নির্বাচন করা ঘরের দেয়ালের রং, ঘরের সাইজের উপর নির্ভর করে।

পর্দা নির্বাচনে অবহেলার কারনে আপনার অনেক সুন্দর সাজানো ঘরটি তেমন সুন্দর নাও লাগতে পারে। তাই একটু সময় করে, বুদ্ধি খাটিয়ে মানানসই পর্দা নির্বাচন করা দরকার।

পর্দা নির্বাচনে যা খেয়াল রাখবো,

১. ধুতে সুবিধা হয় এমন পর্দা নির্বাচন করা।

২. বয়সভেদে পর্দার রং ভিন্ন হবে।

৩. বেশি কুচি থাকলে পর্দা দেখতে ভালো লাগে।

৪. হালকা রঙের দেয়ালে গাড় রঙের পর্দা বেশি মানায় আর গাড় রঙের দেয়ালের ক্ষেত্রে হালকা রঙের পর্দা মানানসই।

৫. ঘরে শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ বজায় রাখতে হালকা রঙের পর্দা বাছাই করুন।

৬. হালকা পর্দা ছোট ঘরকে বড় দেখায়।

৭. লম্বা পর্দা এবং একটু খাটো পর্দা কেনার সময় ঘরের সাইজ মনে রাখবেন।

৮. ছোট ঘর হলে লম্বা লম্বি প্রিন্টের পর্দা ব্যবহার করতে পারেন এতে ঘর বড় লাগবে।

৯. শীতকালের জন্য একটু মোটা কাপড়ের পর্দা নির্বাচন করুন।

১০. গ্রীষ্মকালের পর্দা সুতি হলে ভালো হয়।

১১. বসার ঘরের জন্য গাড় রঙের বাহারি ডিজাইনের পর্দা ব্যবহার করুন।

কিছু কৌশল অবলম্বন করলে আপনিও হতে পারেন পর্দা বাছাইয়ের ব্যাপারে পারদর্শী। আপনার একটু বুদ্ধিমত্তায় ‘সঠিক পর্দা নির্বাচন’ আপনার ঘরের সৌন্দর্য বহু গুন বাড়িয়ে তুলবে।

 

বরগুনায় স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

বরগুনায় স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড


নারী সংবাদ


যৌতুক দাবিতে বরগুনায় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামী সিদ্দিককে মৃত্যুদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা এবং শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর ও দেবরের বন্ধুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। রোববার বিকেল ৪টার দিকে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।

এ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার পূর্ব রাণীপুর গ্রামের হাসেম গাজী, তার ছেলে বেবীর স্বামী সিদ্দিক, খোকন, সিদ্দিকের মা পারুল বেগম ও খোকনের বন্ধু লিটন। রায় ঘোষণার সময় পারুল বেগম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি আসামিরা পলাতক রয়েছেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী জেলার মীর্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর উরবুনিয়া গ্রামের আবদুল আজিজের মেয়ে সাজেদা বেগম বেবীকে ২০০২ সালের জুন মাসে সিদ্দিকের সঙ্গে বিয়ে দেন। বিয়ের পর সিদ্দিক ঢাকায় চলে যায়। এই ফাঁকে সিদ্দিকের ভাই খোকন ও লিটন বেবীকে কুপ্রস্তাব দেয়। বেবী ক্ষিপ্ত হয়ে খোকনকে জুতাপেটা করে। এতে খোকন ও লিটন ক্ষুব্দ হয়।

খোকন ও লিটন সিদ্দিককে জানায় তার স্ত্রী খারাপ। কিছুদিন পর সিদ্দিকের জ্বর হলে সে বাড়িতে চলে আসে। ওই সময় বেবীর বাবা আবদুল আজিজ মেয়েকেসহ সিদ্দিকের বাড়িতে একটি সনি টিভি নিয়ে যান। সিদ্দিক তার শ্বশুরের কাছে এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। আবদুল আজিজ যৌতুক দিতে অস্বীকার করলে সিদ্দিক ও অন্য আসামিরা তাকে ও তার মেয়েকে নোংরা ভাষায় গালি দেয়। আবদুল আজিজ তার মেয়েকে সিদ্দিকের বাড়িতে রেখে চলে আসেন।

২০০২ সালের ২০ জুলাই রাত অনুমান তিনটার সময়ন সিদ্দিকের বসতঘরে বসে ওই আসামিরা যৌতুকের দাবি ও চরিত্রহীন বলে বেধড়ক মারধর করেন বেবীকে। ২১ জুলাই সকালে আবদুল আজিজ খবর পেয়ে সিদ্দিকের বাড়ি গিয়ে তার মেয়েকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।

বাদী বলেন, আমার মেয়েকে সুস্থ অবস্থায় সিদ্দিকের বাড়িতে রেখে আসি। সকালে খবর পাই সে মারা গেছে। পরে জানতে পারলাম আসামিরা আমার মেয়ের কাছে এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। আমি বেবীর সুরাতহাল ও ময়না তদন্তের রিপোর্ট সংগ্রহ করে বেতাগী থানায় মামলা দায়ের করি। পুলিশ তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১( ক) ও ৩০ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী কমল কান্তি দাস। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন বিশেষ পিপি মোস্তাফিজুর রহমান।

(সুত্রঃ নয়াদিগন্ত)

 

হেঁচকি কেন উঠে

হেঁচকি কেন উঠে, থামাবেন কীভাবে?


স্বাস্থ্যকথা


খাবার খাওয়ার সময়, গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজের মধ্যে অথবা অবসর কাটানোর সময় হঠাৎ হেঁচকির প্রকোপ শুরু হওয়াটা খুব সাধারণ একটি বিষয়। এমনকি কোনো কারণ ছাড়াই যখন তখন মানুষের হেঁচকি শুরু হলে তা নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিপাকতন্ত্রের গোলমালের কারণেই মানুষের হেঁচকি আসে।

মানুষের হেঁচকি আসে কেন?

বিজ্ঞানীরা শত শত বছর ধরে আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিহীন এই শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যার সুনির্দিষ্ট কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছেন। হেঁচকির সময় শ্বাসনালীতে সামান্য খিঁচুনির মত হয় যার ফলে শ্বাসযন্ত্রে দ্রুত বাতাস প্রবেশ করে। তখন ভোকাল কর্ড হঠাৎ বন্ধ হয়ে ‘হিক’ শব্দ তৈরি হয়। ফুসফুসের নীচের পাতলা মাংসপেশীর স্তর, যেটিকে ডায়াফ্রাম বলে, হঠাৎ সংকোচনের ফলেই হেঁচকি তৈরি হয়।

হেঁচকি ওঠার একশো’র বেশি মেডিক্যাল কারণ থাকতে পারে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলো খুবই সামান্য কারণেই হয়ে থাকে।

ওষুধ নির্মাতা সংস্থা অ্যাকমে’র সিনিয়র ম্যানেজার ও চিকিৎসক আফরোজা আখতার বলেন, “হেঁচকির সবচেয়ে সাধারণ কারণ দ্রুত খাবার গ্রহণ করা।”

দ্রুত খাওয়ার কারণে খাবারের সাথে সাথে পেটের ভেতর বাতাস প্রবেশ করার কারণে ‘ভ্যাগাস’ নার্ভের কার্যকলাপ বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে হেঁচকি তৈরি হয়। চেতনানাশক, উত্তেজনাবর্ধক, পার্কিনসন্স রোগ বা কেমোথেরাপির বিভিন্ন ধরণের ওষুধ নেয়ার ফলেও হেঁচকি তৈরি হতে পারে। এছাড়া কিছু অসুখের ক্ষেত্রেও মানুষের হেঁচকি হতে পারে।

মিজ. আখতার বলেন, “কিডনি ফেল করলে, স্ট্রোকের ক্ষেত্রে, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস বা মেনিনজাইটিসের ক্ষেত্রেও অনেকের হেঁচকি তৈরি হতে পারে।”

কিন্তু অধিকাংশ সময়ই হেঁচকি শুরু হওয়ার জন্য এসব কোনো কারণেরই দরকার হয় না।

হাসি বা কাশির মধ্যে, অতিরিক্ত মদ্যপান, অতিদ্রুত খাবার গ্রহণ করা বা ঝাঁঝসহ পানীয় বেশি পরিমাণে খেলে হেঁচকি শুরু হতে পারে, তবে কোনো ধরণের কারণ ছাড়াও হেঁচকি আসাটা একেবারেই অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। হেঁচকি ওঠাটা খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা এবং সাধারণত মিনিটখানেকের মধ্যেই তা স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় হেঁচকির উদাহরণও কিন্তু রয়েছে।

যেমন সবচেয়ে বেশি সময় ধরে হেঁচকি ওঠার বিশ্ব রেকর্ডের উদাহরণ হিসেবে মনে করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের চার্লস অসবোর্নের ঘটনাকে। ১৯২২ সালে হেঁচকি তোলা শুরু করেন তিনি, কথিত আছে সেসময় তিনি একটি শূকর ওজন করার চেষ্টা করছিলেন। মি. অসবোর্ন হেঁচকি তোলা থামান ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে – মোট ৬৮ বছর পর।

হেঁচকি থামানোর উপায়

ঘরোয়াভাবে হেঁচকি থামানোর প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে মূলত দুইটি মূলনীতি অনুসরণ করা হয়। একটি হলো রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া যেন শ্বাসনালীতে খিঁচুনি বন্ধ হয়। আরেকটি হলো শ্বাসপ্রশ্বাস ও গলধকরণের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা ‘ভ্যাগাস’ স্নায়ুকে উদ্দীপ্ত করা। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী কয়েকটি পদ্ধতিতে হেঁচকি থামানো যায়।

১. কাগজের ব্যাগে নিশ্বাস ফেলা (ব্যাগ মাথা দিয়ে ঢুকাবেন না)

২. দুই হাঁটু বুক পর্যন্ত টেনে ধরে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া

৩. বরফ ঠাণ্ডা পানি খাওয়া

৪. কিছু দানাদার চিনি খাওয়া

৫. লেবুতে কামড় দেয়া বা একটু ভিনেগারের স্বাদ নেয়া

৬. স্বল্প সময়ের জন্য দম বন্ধ করে রাখা

কখন চিকিৎসার পরামর্শ নিতে হবে

হেঁচকি সাধারণত আপনা থেকেই ভাল হয়ে যায়, তবে যদি অতি দীর্ঘসময় ধরে হেঁচকি উঠতে থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।

মিজ. আখতার বলেন, “হেঁচকি নিরাময়ে ঘরোয়া চিকিৎসা যদি কাজ না করে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”

হেঁচকির তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন মিজ. আখতার। এছাড়া নিয়মিত হেঁচকিতে দৈনন্দিন জীবনের কার্যক্রম ব্যহত হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার উপদেশ দেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র : বিবিসি।

 

কালো মেয়ের কিছু কথা

কালো মেয়ের কিছু কথা


আঞ্জুমান আরা


ছোটবেলার কথা। গায়ের রঙ কালো ছিল বলে অনেকেই অনেক কিছু বলত যেমন, তোর বাপের অনেক যৌতুক দিতে হবে । তুই সেজে কি করবি। তুইতো কালো।
মনের মধ্যে একটা চাপা কষ্ট নিয়ে দিন কাটত। নিজেকে খুব ছোট ও মূল্যহীন মন হত। সেজন্য সাজতে লজ্জা হত। লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছি অনেক।

বলে রাখি আমি ছোটবেলাটা বেশী কাটিয়েছি গ্রামে। মাাথার মধ্যে শুধু বিয়ে যৌতূক এসব ঢুকোনো হয়েছিল। শুধু আব্বা বলতেন ভালো করে পড়াশুনা করো।
বাঙ্গালী মেয়ে হিসেবে আরো কিছু নেগেটিভ কথা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। যেমন; মেয়ে মানুষের বুদ্ধি কম। মেয়েদের কথা বাদ দাও। মেয়েদের চাকরি করার দরকার নাই। মেয়েলি কান্না থামাও। মেয়েলি স্বভাব বদলাও। মেয়েটি কালো আরেকটি দেখ। মেয়েটি মাল ইত্যাদি।
এসমস্ত কথা কিন্তু শিক্ষিত ব্যক্তিদের মুখেও শুনেছি। যাদেরকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি ও জানি।
ছোটবেলায় আমি মানুষের ওসব নেগেটিভ কথা বিশ্বাস করতাম আবার আব্বার কথাও শুনতাম। এজন্য মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনার ফাঁকেফাঁকে গায়ে হলুদ মাখতাম। তখন বাজারে কাঁচা হলুদ পাওয়া যেত।
কাঁচা হলুদে গায়ের বর্নের কোন উন্নতি না হলেও পরীক্ষার রেজাল্ট ভাল হওয়া শুরু করল।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ করার পর দেখলাম আমার স্কুল, কলেজ, আনার্স, মাস্টার্স সহ চারটা ফাস্ট ক্লাস হয়ে গেছে।। তারমধ্যে একটাতে আবার ফার্সক্লাস ফার্স্ট। নিজের বায়োডাটায় নিজেই মুগ্ধ।
চারদিক থেকে চাকরির অফার আসা শুরু করল। দরখাস্ত করা ছাড়াই। কোনটা ছেড়ে কোনটা ধরি আবস্থা। বিসিএস টাও পাশ করে ফেললাম।

বিয়ে? সেটা থেকে বাঁচতে মিথ্যা কথা বলতে হয়েছে আমাকে। বলেছি এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। আসলে হয়নি। কারন বিয়ের বাজারেও আমার কদর বেড়ে গিয়েছিল।
একসময় যারা আমার গায়ের বর্ন নিয়ে কানাঘুষা করত তাদের সুরও বদলে যেতে থাকল। আমিও আমার জীবন উপভোগ করতে শুরু করলাম। সুদর্শন মেধাবী আর্মি অফিসার স্বামী সন্তানসহ আমার চাকরি জীবন।

আসলে মেয়েদের গায়ের বর্ণই কি সব? আমার কাছে জীবনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, প্রবল ইচ্ছাশক্তি সেইলক্ষে কঠোর পরিশ্রম আর সাথে প্রচন্ড আত্ববিশ্বাসই নারীর আসল বর্ণ। যা নারীর মর্যাদা বাড়ায়। এই শক্তি যৌতুক কেউ হার মানায়। নারীর নির্যাতন কমায়। মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখায়। নিন্দুকের মাথানত করতে শেখায়।
এখন দেখছি ফর্সা মেয়েদের অনেকেই ঘরের চৌকাঠ পেরুতে পারেনি আর আমি পৃথিবীর আনাচে কানাচে চষে বেড়াই। আর সেই সুন্দরীরা অনেকেই আবার শশুড় শাশুড়ি ও স্বামী দ্বারাও নির্যাতিত হতে শুনি। যা সত্যি কষ্টকর।
এখন মনে হয় নারীর প্রতি এসব নেগেটিভ ধারণা আসলে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পুরুষরা বেশি করে কারন সে যা দেখে এসেছে তার পিতামাতার কাছ থেকে তাই তার জীবনে প্রয়োগ করে। এরা নারী জাতিকে সন্মান করতে শেখে নি, শিখেছে কিভাবে প্রভু হতে হয়।
সে ভুলে যায় সে কোন মায়ের গর্ভে জন্ম গ্রহন করেছিল। সে নির্যাতক খাতায় নাম লেখায় নিজের অজান্তেই। সমাজ যদি পুরুষ শাসিত না হয়ে নারী শাসিত হত তাহলে কিন্তু নারীরাও একি খাতায় নাম লিখাতো। নারী হত তখন নির্যাতক।
কিন্তু আমাদের সমাজে এখনো অনেক নারী নিকৃষ্ট জীবনযাপন করে। শুধুমাত্র ভক্তি ও দায়বদ্ধতার কারনে। বিনিময়ে সে কিছুই পায় না। তারপরেও সে মাটি আঁকড়ে পরে থাকে। কারণ তার তো যাওয়ার কোন জায়গা নেই। কারন সে পরনির্ভরশীল। সেইসাথে যোগ হয় মানসিক নির্যাতন।
নারীর মুক্তি তখনই যখন সে আত্বনির্ভরশীল হবে। নিজের আত্ববিশ্বাস বাড়িয়ে নিজের মত প্রকাশ করতে পারবে। নিজের অধিকারর আদায় করতে পারবে। দেশ তার লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে সঠিক আইন প্রয়োগ করবে। আর যতদিন তা না হয় ততদিন নারী প্রভুভক্ত হয়ে থাকবে পুরুষের কাছে।
আপনি যদি বাবা মা হন তাহলে আপনার সন্তানকে কি শিক্ষা দিচ্ছেন তা ভেবে দেখুন।
আপনার দেয়া সঠিক শিক্ষার উপরই নির্ভর করবে আপনার সন্তান কি ধরণের ধারণা ও আচরণ করবে অন্যের প্রতি। তাকে ছেলেমানুষ মেয়েমানুষ নাকি মানুষ বানাবেন, তার দায়িত্ব কিন্তু আপনার আমার সকলের।
সকলের মঙ্গল কামনায়

আঞ্জু, লন্ডন।

 

কানাডায় হিজাব নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হলেন বাংলাদেশী ফাতিমা

কানাডায় হিজাব নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হলেন বাংলাদেশী ফাতিমা


আন্তর্জাতিক নারী


ফাতিমা কানাডার সংসদের বিরুদ্ধে প্রায় একাই লড়ে বিজয়ী হওয়া ঈমানোদ্দীপ্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক কিশোরীর নাম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন একে একে হিজাব ও নিকাব নিষিদ্ধ হচ্ছিল, তারই ধারাবাহিকতায় কানাডাতেও কয়েকমাস আগে প্রকাশ্যে নিকাব নিষিদ্ধ করে একটা আইন পাস হয়। যার নাম বিল-৬২।

এর আইন অনুযায়ী কানাডায় প্রকাশ্যে কেউ নিকাব পড়তে পারবে না। ইউরোপবার্তা ফাতিমার জন্ম ও বেড়ে উঠা কানাডাতে হলেও অন্য আর দশটা মেয়ের মতো সে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে পশ্চিমা সংস্কৃতিকে বরণ করে নেয় নি। বরং সে ইসলামী অনুশাসনকে আরও গভীরভাবে বুকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে থাকে।

নিকাব পরেই সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করা সহ কানাডিয়ান মানুষের মাঝে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছাতে থাকে। তার স্বপ্ন, সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে স্কুলে শিক্ষকতা করবে, ছোট ছেলে-মেয়েদের দ্বীনের শিক্ষায় শিক্ষিত করবে। কিন্তু তার স্বপ্নের পৃথিবীতে কালো মেঘ হিসেবে আবির্ভূত হয় নিকাব নিষিদ্ধ করা সেই কালো আইন, বিল-৬২।

এই বিল পাসের পর কানাডার বিপুল সংখ্যক হিজাবি নারী যখন অন্ধকার দেখছিল, তখনই আলোর ঝাণ্ডা হাতে লড়াইয়ে নেমে পরে কিশোরী ফাতিমা। সে তার এক শুভাকাঙ্ক্ষীকে সাথে নিয়ে কানাডার আদালতে রিট করে। আইনি লড়াইয়ের সাথে চলতে থাকে বিল-৬২ এর বিপক্ষে জনমত গঠন।

লক্ষ্য পূরণের জন্য ফাতিমা তার কয়েকজন মুসলিম বান্ধবীকে নিয়ে প্রতিকূল পরিবেশে অনেক বাঁধা ও উসকানি সহ্য করেও নিকাব পরেই তার সব কার্যক্রম চালাতে থাকে। কানাডার প্রথম সারির টিভি চ্যানেলগুলিতে সাক্ষাৎকার দিয়ে জনমত গঠনে বড় ভূমিকা পালন করে। তার হিজাবি জীবন নিয়ে একটা ডকুমেন্টারিও প্রচার হয় একটা চ্যানেলে।

দীর্ঘ এক অসম লড়াই শেষে গতকাল সেই ঐতিহাসিক দিনটির সূর্য যেন নতুন আলোর বারতা নিয়ে উদিত হয়েছে। কানাডার আদালত নিকাব নিষিদ্ধ করা সেই কালো আইন বিল-৬২ বাতিল করে দিয়েছে। ফাতিমা আজ বিজয়ী হয়েছে।

এই বিজয় শুধু তার নয়, এই বিজয় পুরা মুসলিম উম্মাহর, এই বিজয়ের গর্ব ১২ হাজার কিলোমিটার দূরের একজন মুসলিম হিসেবে আমাদেরও স্পর্শ করেছে। ফাতিমার এই সংগ্রাম আমাদের শিক্ষা দেয় শত প্রতিকূলতার মাঝেও অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার। তার বিজয় তো আমাদের সেই বাণীর কথাই মনে করিয়ে দেয়- “তোমরা হতাশ হয়ো না, মনমরা হয়ো না। তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হও।

সুত্রঃ ডেইলি মনিং

 

ভাগ্য মানুষকে কোথায় না নিয়ে যায়!

ভাগ্য মানুষকে কোথায় না নিয়ে যায়!


ডা. তামান্না কবীর


ভাগ্য মানুষকে কোথায় না নিয়ে যেতে পারে।গাইনী ওয়ার্ডে ভর্তি এক মহিলার স্বামী বেশকিছুদিন হলেই ঘুরছে

“ম্যাডাম আমার ঔষুধ কেনার টাকা নাই,আপনি যদি একটু হাসপাতাল থেকে সব ঔষুধের ব্যবস্থা করে দিতেন”

এমন কথা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি বেশিরভাগ রোগীই বলে,তবুও সিস্টারদের বলা হলো যেনো সাপ্লাই ঔষুধগুলো উনাকে দেয়া হয়।

আজ evening ডিউটিতে আমি যখন ডিউটি Doctor রুমে বসে আছি লোকটা এসে অবলীলায় ইংরেজীতে কথা বলে যাচ্ছে অথচ তার Appearance,, dress up কোনকিছুই তার এই আচরনের সাথে বিন্দু মাত্র ও মিলছে না,,,কৌতুহলের সীমা ছাড়িয়ে গেলে জিজ্ঞেস করলাম আপনি মনে হচ্ছে অনেকদূর লেখাপড়া করেছেন?

তার উত্তর, সে ঢাকা ভার্সিটি থেকে ইংরেজীতে মাস্টার্স করেছে,স্কলার্শীপ নিয়ে কলকাতা ইউনিভার্সিটিতেও যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো তার…।একটা job করত,কোন একটা কারনে job টা তার থাকেনা,,পরে অন্য job গুলোতে ঘুষ না দিলে হচ্ছিলো না তাই সে এখন অটো ড্রাইভার. job এরও আর বয়স নাই….বৌয়ের অসুস্থতায় অটো চালানো বন্ধ তাই ইনকাম ও নাই…

সে যে DU এর English এ মাস্টার্স করা, এখন সেটা বলতেও লজ্জা পায়…এই সবগুলো কথা সে ইংরেজীতে fluently বলে গেলো…

এমন অনেক ঘটনা গল্পে পড়েছি,কখনও কারও মুখে শুনেছি কিন্তু নিজের চোখে এই প্রথম দেখলাম…
এদেশে প্রকৃত শিক্ষার মূল্য কোথায়…!!

 

বড়লেখায় কলেজ ছাত্রীকে তুলে নিয়ে বিয়ে, পরে হত্যা

বড়লেখায় কলেজ ছাত্রীকে তুলে নিয়ে বিয়ে, পরে হত্যা


নারী সংবাদ


বড়লেখায় এক কলেজছাত্রীকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে এক বখাটে। বিয়ের সাড়ে পাঁচ মাস পর ওই ছাত্রীকে হত্যা করে তা আত্মহত্যা বলে চালায় তার স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ ব্যাপারে কলেজছাত্রীর বাবা আদালতে মেয়ের স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। মামলার প্রতিবেদন ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

জানা গেছে, কলেজছাত্রী মাধবী রানী বিশ্বাসকে (১৮) কলেজে যাওয়া-আসার পথে এক যুবক উত্ত্যক্ত করত। ৭ মার্চ কলেজের সরস্বতী পূজা শেষে বাড়ি ফেরার সময় মাধবীকে জুড়ী উপজেলার সায়পুর গ্রামের করুণা বিশ্বাসের ছেলে অরকুমার বিশ্বাস নামের ওই যুবক জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। তুলে নেয়ার ২৬ দিন পর অরকুমার বিশ্বাস কলেজছাত্রী মাধবীকে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে করে। কিন্তু তার বাবা-মা এ বিয়ে মেনে না নেয়ায় বাড়িতে তুলছিল না মাধবীকে। পরে দুই পরিবারের মধ্যস্থতায় সামাজিকভাবে তাদের বিয়ে হয়।

মাধবীর বাবা অকিল বিশ্বাস অভিযোগ করেন, সামাজিকভাবে বিয়ের পর মেয়ের ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়। বিয়ের সাড়ে ৫ মাসের মধ্যে একটিবারের জন্যও মাধবীকে তার বাবার বাড়িতে যেতে দেয়া হয়নি। ১৮ আগস্ট রাতে স্বামী অরকুমারসহ তার পরিবারের সদস্যরা মাধবীকে মারধর করে। একপর্যায়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর তারা আত্মহত্যার নাটক সাজায়। মাধবী আত্মহত্যা করেছে বলে এলাকায় প্রচারণা চালালেও বাবার বাড়িতে কোনো খবর দেয়া হয়নি। প্রতিবেশী মারফত খবর পেয়ে পরদিন সকালে মাধবীর বাবা ও মা জুড়ী থানায় গেলে পুলিশ তাদেরকে মেয়ের লাশ দেখতে না দিয়েই ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়। মেয়ের গলায় দায়ের কোপ ও দেহে আঘাতের চিহ্ন থাকার বিষয়টি জেনে অভিযোগ দিতে চাইলে পুলিশ উল্টো হুমকি-ধামকি দেয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নিয়ে আসার পরও স্বামীর বাড়ির লোকজন তাদেরকে লাশ দেখতে দেয়নি। শ্বশুরবাড়ির লোকজন মাধবীর পরিবারকে না জানিয়ে লাশ দাহ করে। অবশেষে ২৫ আগস্ট মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫নং আমলি আদালতে স্বামী অরকুমার বিশ্বাসকে প্রধান করে শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদ-দেবরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন মাধবীর বাবা।

জুড়ী থানার ওসি মো. জাহাঙ্গির হোসেন সরদার জানান, আদালতের নির্দেশে মাধবী রানীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলার প্রতিবেদন ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সুত্রঃ যুগান্তর।

 

ফরিদপুর অজ্ঞাত যুবতীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার


নারী সংবাদ


ফরিদপুরের এক যুবতীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের তালতলা বাজার এলাকায় গোয়ালন্দ-তারাইল আঞ্চলিক বেড়িবাধ সড়কের পাশে থেকে পরিচয় না জানা লাশটি উদ্ধার করা হয়।

ফরিদপুর কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) মো: এনায়েত হোসেন জানান, সকালে অম্বিকাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বারী চৌধুরীর কাছ থেকে খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

যুবতিটির বয়স আনুমানিক ২৬ বছরের মতো বলে তিনি জানান।

এনায়েত হোসেন জানান, লাশের মাথায় জখমের চিহ্ন এবং গায়ে থাকা ওড়নায় প্রচুর রক্তের দাগ রয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আবার কোনো সড়ক দুর্ঘটনায়ও তার মৃত্যু হতে পারে। লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পেলে হত্যার কারণ জানা যাবে।

 

গরমে লাচ্ছি বানিয়ে ফেলুন বাসায়


রেসিপি


গরমের তৃষ্ণা মেটাতে মানেই লাচ্ছি। কম বেশী আমরা সবাই খুব পছন্দ করে থাকি।আর তাই আজ কয়েক প্রকারের লাচ্ছি তৈরি করে দেখাবো।

মিষ্টি লাচ্ছিঃ

উপকরণ :
মিষ্টি দই – ১ কাপ
বরফ কুচি – ১ কাপ
চিনি – রুচি মতন
গুড়ো দুধ – ১/২ কাপ
পানি – সামান্য

মিষ্টি দই লাচ্ছি তৈরি করুন খুব সহজে

প্রণালী :
ব্লেন্ডারে সব উপকরণ একসাথে দিয়ে পানি সহ ১ মিনিটের মতন ব্লেন্ড করে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশন করুন গ্লাসে ঢেলে।

কলার লাচ্ছিঃ

মিষ্টি দই – ১ কাপ
বরফ কুচি – ১ কাপ
কলা – ২ টা
চিনি – রুচি মতন
গুড়ো দুধ – ১/২ কাপ
পানি – সামান্য

প্রণালী :
ব্লেন্ডারে সব উপকরণ একসাথে দিয়ে পানি সহ ১ মিনিটের মতন ব্লেন্ড করে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশন করুন গ্লাসে ঢেলে।

টক মিষ্টি লাচ্ছিঃ

টক দই – ১ কাপ
মিষ্টি দই – ১ কাপ
বরফ কুচি – ১ কাপ
চিনি – রুচি মতন
গুড়ো দুধ – ১/২ কাপ
পানি – সামান্য

প্রণালী :
ব্লেন্ডারে সব উপকরণ একসাথে দিয়ে পানি সহ ১ মিনিটের মতন ব্লেন্ড করে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশন করুন গ্লাসে ঢেলে।

ম্যাংগো লাচ্ছিঃ

  • মিষ্টি দই – ১ কাপ
  • ম্যাঙ্গো স্লাইস- ১ কাপ
  • বরফ কুচি – ১ কাপ
  • চিনি – রুচি মতন
  • গুড়ো দুধ – ১/২ কাপ
  • পানি – সামান্য
প্রনালীঃ
ব্লেন্ডারে সব উপকরণ একসাথে দিয়ে দুই গ্লাসের মতন পানি দিয়ে কয়েক বার ভাল মতন ব্লেন্ড করে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশন করুন গ্লাসে ঢেলে।

লেবুর লাচ্ছিঃ

  • মিষ্টি দই – ১ কাপ
  • লেবুর রস – ১ কাপ
  • বরফ কুচি – ১ কাপ
  • চিনি – রুচি মতন
  • গুড়ো দুধ – ১/২ কাপ
  • পানি – সামান্য
প্রনালীঃ
ব্লেন্ডারে সব উপকরণ একসাথে দিয়ে দুই গ্লাসের মতন পানি দিয়ে কয়েক বার ভাল মতন ব্লেন্ড করে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশন করুন গ্লাসে ঢেলে।

বাদামের লাচ্ছিঃ

  • মিষ্টি দই – ১ কাপ
  • বরফ কুচি – ১ কাপ
  • চিনি – রুচি মতন
  • গুড়ো দুধ – ১/২ কাপ
  • পানি – সামান্য
  • বাদাম কুচি কয়েক প্রকার-  (এক কাপ)
প্রনালীঃ
ব্লেন্ডারে সব উপকরণ একসাথে দিয়ে দুই গ্লাসের মতন পানি দিয়ে কয়েক বার ভাল মতন ব্লেন্ড করে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশন করুন গ্লাসে ঢেলে।
সুত্রঃ https://nahidarecipe.com।