banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 396 বার পঠিত

 

স্মৃতির জোনাকি… ৬

স্মৃতির জোনাকি… ৬


আফরোজা হাসান


স্মৃতির জোনাকি… ৬

নাবিহা একবার ভেবেছিলো মামণি আর ফুপির কথায় কান পাতবে কিন্তু পরমূহুর্তেই এই দুষ্টু চিন্তাকে মন থকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আদীব্বার রুমের দিকে রওনা দিলো। যে ক’টি চেহারা না দেখলে নাবিহার মনের ভুবনে সূর্যোদয় হয়না পরিপূর্ণ রূপে তারমধ্যে অন্যতম একজন আদীব্বা। আদীব্বার রুমের দিকে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ পথ বদলে রান্নাঘরে পৌঁছে গেলো নাবিহা। ইচ্ছে ছিল গ্রীনটি বানিয়ে আদীব্বার জন্য নিয়ে যাবে। কিন্তু গ্রীনটি বানাতে বানাতে যার জন্য বানাচ্ছিলো তিনি এসে হাজির হলেন রান্নাঘরে। আদীকে ঢুকতে দেখে সালাম দিয়ে নাবিহা বলল, আদীব্বা আমি তোমার কাছেই যাবো ভাবছিলাম।

সালামের জবাব দিয়ে আদী হাসি মুখে বললেন, মা স্মরণ করেছে আর পুত্র হাজির হয়ে গিয়েছে। একেই বলে মাতা পুত্রের বন্ধনের ম্যাজিক। বুঝেছেন আম্মাজান!

নাবিহা হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। গ্রীনটি বানিয়েছি তোমার জন্য। সাথে আর কিছু দেবো?

আদী হেসে বললেন, কিছুক্ষণ আগে নাস্তা করেছি পেট একদম ভরা। তবে কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়ে মনের ক্ষুধা মেটাতে পারো। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, তুমি কি জানো আমাদের নেতাজ্বি কোথায় আছেন এই মূহুর্তে?

নাবিহা হেসে বলল, হসপিটাল থেকে ফোন এসেছিল এ বি নেগেটিভ রক্ত প্রয়োজন। পাপা, জিহাদ ভাইয়া রক্ত দান করতে গিয়েছেন।

জিহাদও গিয়েছে রক্ত দান করতে?

হ্যা, আজকে ভাইয়ার প্রথম রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ। পাপা অবশ্য প্রথমে নিতে চাননি ভাইয়াকে। কিন্তু ভাইয়া খুঁটি আঁকড়ে ধরে থাকা টাইপের জেদ ধরে বসে ছিল। পাপা তখন বিরক্ত কন্ঠে বলেছেন, একদম মায়ের মতো অবাধ্য প্রতিটা বাচ্চা। এরপর নিয়ে গিয়েছেন ভাইয়াকে। হাসতে হাসতে বললো নাবিহা।

আদী হেসে বললেন, আচ্ছা এবার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দাও। আনন্দবাড়ির বাতাসে একটা নিউজ ভাসছে, তোমাদের কন্যা গ্রুপের সদস্যারা মিলে নাকি বিজনেস প্ল্যান করছো? ঘটনা কি সত্যি?

নাবিহা চোখ বড় বড় করে বললো, হায় আল্লাহ! তোমার কাছে এই তথ্য পৌঁছে গিয়েছে? আমরা তো সারপ্রাইজ দেবো ভেবেছিলাম।

আদী হেসে বললেন, কিসের সারপ্রাইজ?

নাবিহা হেসে বলল, আচ্ছা চলো তোমাকে পুরো ঘটনা খুলে বলি। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল আজ থেকে প্রায় আড়াই মাস আগে। আমাদের ফ্রেন্ডদের একটা প্রোগ্রাম ছিল। সবসময় তো প্রোগ্রাম আমাদের বাড়িতেই হয়। কিন্তু ঐদিন প্রোগ্রাম আমরা হিবাদের বাসায় করেছিলাম। নানুমণি আমাদের সবার জন্য রসগোল্লা, কালোজাম মিষ্টি বানিয়ে দিয়েছিলেন। মামণি পেস্ট্রি কেক বানিয়ে দিয়েছিলেন। অনেক বেশি করে বানিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা সবাই খাওয়ার পরেও অনেক রয়ে গিয়েছিল। সবাই তখন ভাগ করে নিজ নিজ বাসায় নিয়ে গিয়েছিল মিষ্টি আর কেক। ওদের বাসা থেকে আবার ওদের রিলেটিভদের কেউ কেউ খেয়েছে সেই কেক মিষ্টি। মোটকথা, কেক, মিষ্টি ছড়িয়ে পড়েছিল দিকে দিকে, ঘরে থেকে ঘরে।

আদী হেসে ফেললেন। নাবিহাও হাসতে হাসতে বলল, হিবা, ফারিহা, মেহরিন তিনজনই পরদিন ফোন করেছিল কেক, মিষ্টির জন্য। আমি বলেছিলাম মামণি, নানুমণিকে বানিয়ে দিতে বলবো। কিন্তু ওরা যেহেতু পরিমাণে বেশি চাচ্ছিলো তাই হাদিয়া স্বরূপ নিতে চাচ্ছিলো না। কিনে নিতে চাচ্ছিলো। এই কথা শুনে আমি খুবই বিরক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু জিহাদ ভাইয়া বললো, এমনটা হলে কিন্তু মন্দ হয়না। পাপা , চাচ্চুদের স্টুডন্ট লাইফের কথা ভেবে দেখো। স্টুডেন্ট লাইফে পাপা, চাচ্চুরাও তো পার্টটাইম জব করেছেন। এবং হোম কিচেন সার্ভিসই করেছেন উনারা। পাপা, চাচ্চুরা সবসময় কতো কনফিডেন্টের সাথে বলেন উনারা সেলফ মেড পারসন। আমরা যদি এই সুযোগটা কাজে লাগাই তাহলে হয়তো আমরাও একসময় বলতে পারবো আমরা সেলফ মেড পারসন। ভাইয়ার কথাটা আমাদের সবার পছন্দ হয়েছিল।

আদী হেসে বললেন, মাশাআল্লাহ! পছন্দ করার মতো কথাই বলেছে জিহাদ। আমরা যখন হোম কিচেন সার্ভিস শুরু করেছিলাম তোমাদের বয়সীই ছিলাম।

আবারো শুনতে চাই তোমাদের কিচেন সার্ভিস শুরু গল্পটা। বলো না আদীব্বা প্লিজ।

আদী হেসে বললেন, একবার ছুটিতে দেশে গিয়েছিলাম আমরা। ফেরার সময় মা, মামণি, আম্মি সবাই মিলে ভাপের পুলি পিঠা, মালপোয়া, নাড়ু আরো অনেক কিছু দিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের ফ্রেন্ডদের জন্য। বিকেলে ফ্রেন্ডদেরকে যখন দিচ্ছিলাম তখন আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের ডেভিডকে দেখে ওকেও দিয়েছিলাম। ডেভিডের বাসায় তখন ওর কিছু ফ্রেন্ড এসেছিল। ওরা মালপোয়া আর ভাপা পুলিপিঠা খেয়ে এতই মজা পেয়েছিল আবারও নিতে চলে এসেছিল ডেভিড। যা ছিল দিয়ে দিয়েছিলাম তখন। এর পরের উইকএন্ডে ডেভিড অনুরোধ করেছিল ওর এক ফ্রেন্ডের পার্টির জন্য দেড়শো মালপোয়া আর ভাপের পুলিপিঠা এনে দিতে পারবো কিনা। ডেভিড কে বলা হয়নি ওগুলো যে মা দেশ থেকে পাঠিয়েছিলেন। তাই ভেবেছিল আমরা হয়তো আশেপাশের কোন ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট থেকে এনেছি। আমরা হ্যা বা না কিছু বলার আগেই ডেভিড হান্ডেড ডলার হাতে গুঁজে দিয়ে বলেছিল, এতে হয়ে যাবে নাকি আরো লাগবে? ঐ সময় টাকায় বেশ প্রয়োজনও ছিল আমাদের। তাই বললাম, এরমধ্যেই হয়ে যাবে। এরপর ওকে বিদায় দিয়ে তোমার পাপা, আমি আর হুজাইফা মিলেই বানিয়ে ফেলেছিলাম মালপোয়া আর ভাপের পুলিপিঠা। মামণিকে ফোন করে জেনে নিয়েছিলাম সবকিছু। আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি ভালোই হয়েছিল। পার্টির সবাইও খুব পছন্দ করেছিল । পরের ইউকএন্ডে তিনটা পার্টি থেকে প্রায় এক চারশো পিসের অর্ডার পেয়েছিলাম।ডেভিড এরমধ্যে একদিন এসে যেখান থেকে খাবার আনি সেই রেস্টুরেন্ট এর ঠিকানা চাইলো। তখন ওকে জানালাম আমরা নিজেরাই বানিয়ে দিয়েছি। ডেভিড ব্যবসায়ী মানুষ তাই ব্যবসার বুদ্ধি দিলো আমাদেরকে। পরের উইকএন্ডে নিজের বাসায় পার্টি দিয়েছিল। এবং ওর সাথে কথা পরামর্শ অনুযায়ী আমরা নতুন কিছু খাবার বানিয়ে দিয়েছিলাম সেদিন। বীফ টিকিয়া কাবাব, বুন্দিয়ার লাড্ডু, চিকেন রোল এন্ড ভেজিটেবল পাকোড়া। প্রতিটা আইটেমই সবার ভীষণ পছন্দ হয়েছিল আলহামদুলিল্লাহ। এরপর থেকে এত অর্ডার আসতে শুরু করেছিল যে রীতিমত হিমশিম খেতে হতো আমাদেরকে। পাবলিসিটির কাজে ডেভিডই সবকিছু করেছে। ডেভিড পরামর্শ দিয়েছিল ফার্স্টফুড রেস্টুরেন্ট দেবার। কারণ আমাদের স্যান্ডুইচ, বার্গারও খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু প্রথমেই আমরা রেস্টুরেন্ট নেবার সাহস করতে পারিনি। তাছাড়া আমরা সবাই স্টুডেন্ট ছিলাম অতটা সময়ও ছিল না আমাদের। প্রায় দেড় বছর আমরা হোম কিচেন সার্ভিসই চালিয়েছি। এরপর পাবলিক প্লেসে একটা পুরনো রেস্টুরেন্টের খোঁজ এনে দিয়েছিল ডেভিড আমাদেরকে।

সেটাই ছিল তোমাদের প্রথম রেস্টুরেন্ট, তাই না? উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বললো নাবিহা।

আদী হেসে বললেন, হ্যা, আলহামদুলিল্লাহ। সেই রেস্টুরেন্টটাই ছিল আমাদের রেস্টুরেন্ট বিজনেস শুরুর প্রথম রেস্টুরেন্ট। ডেভিডের উৎসাহ ও পরামর্শে আমরা রেস্টুরেন্ট তো নিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু যেহেতু আমরা সবাই স্টুডেন্ট ছিলাম। পড়াশোনা ঠিক রেখে ফুল টাইম রেস্টুরেন্ট দেখাশোনা করার মতো কেউ ছিল না আমাদের। তাই আমরা ডেভিডের সাথে কন্টাক্ট এভাবে করেছিলাম যে ইনভেস্ট আমরা করবো, কি কি খাবার থাকবে সেই মেন্যু আমরা নির্ধারণ করবো। কিন্তু দেখাশোনা থেকে নিয়ে শুরু করে অন্যান্য অফিশিয়াল সব কাজ ডেভিড করবে। এজন্য সেলারি ছাড়াও প্রফিটের টুয়েন্টি পার্সেন্ট ওকে দেয়া হবে। ডেভিড রাজী হয়ে গিয়েছিল বলার সাথে সাথেই। এরপর কাজ শুরু করেছিলাম আমরা। পুরো রেস্টুরেন্টই নতুন করে ডেকোরেশন করেছিলাম। কোয়ালিটির দিকে খুব বেশি কেয়ারফুল ছিলাম আমরা। যাতে কেউ একবার আমাদের রেস্টুরেন্টে এসে খেয়ে যাবার পর, পরবর্তীতে আবারো আসার সময় সাথে করে নতুন কাউকে নিয়ে আসে খাবার টেষ্ট করানোর জন্য। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিভিন্ন ফ্লেবারের জ্যুস, আইসক্রিম, চা-কফি, স্যুপ এসব আমরা রেখেছিলাম অ্যালকোহলের চাহিদা দূর করার লক্ষ্য। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ এই আইটেমগুলোই আমাদের রেস্টুরেন্টের মূল আকর্ষণে পরিণত হয়েছিল। অনেক দূর থেকেও লোকজন আসতো আমাদের রেস্টুরেন্টে। ধীরে ধীরে আমাদের অভিজ্ঞতা যত বেড়েছে, খাবারের মান তত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেই সাথে খাদ্য প্রেমী মানুষও। এক পর্যায়ে গিয়ে রেস্টুরেন্টের সংখ্যা।

নাবিহা হেসে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। আসলেই যখন মানুষ কল্যাণের পথে চলতে চেষ্টা করে, আল্লাহ সেটা সহজ করে দেন। কল্যাণের পথকে আমরাই কঠিন মনে করে এড়িয়ে যাই। নিজেদেরকে বঞ্চিত করি আল্লাহর করুণাধারায় সিক্ত হওয়া থেকে।

আদী হেসে বললেন, একথাটাই বেশির ভাগ মানুষ বুঝতে পারে না বা বোঝার চেষ্টা করে না। আল্লাহর উপর ভরসা করে বলে কিন্তু সেই ভরসা থেকে উদ্যোগ নেবার সাহস করে না। অথচ সেই ভরসার ভীত কতই না দুর্বল যা আমাদের কদমকে সামনে এগুবার সাহস পর্যন্ত দিতে পারে না। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের মনে এক মূহুর্তের জন্যও দ্বিধা কাজ করেনি। কারণ আমাদের লক্ষ্য ক্লিয়ার ছিল আমাদের কাছে। আমরা জানতাম কি করতে যাচ্ছি, কেন করতে যাচ্ছি। ব্যর্থতা আসতে পারে এই চিন্তাটাকেও আমরা মনের কাছে ভিড়তে দেইনি। হয়তো তখন সবে মাত্র আমরা টিনএজের গন্ডি থেকে বের হয়েছিলাম বলেই অন্যরকম উত্তেজনা ছিল মনে। রিক্স নিতে ভালো লাগতো। অ্যাডভেঞ্চার ভালো লাগতো। চিন্তার করার সাথে সাথেই অ্যাকশনে নেমে পড়তাম সবাই মিলে। ঐসময় একটাই ভাবনা ছিল আমাদের মনে, “ আমাদের উদ্দেশ্য যদি সুন্দর ও সঠিক থাকে তাহলে ব্যর্থতা আমাদেরকে স্পর্শ করতে পারবে না কিছুতেই।“ এই বিশ্বাস আর ভরসাকে আমরা সবসময় ইতিবাচক রুপেই ফিরে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ। তাই হয়তো প্রথম রেস্টুরেন্টটা দেবার সাড়ে তিন বছরের মধ্যে আমাদের রেস্টুরেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১৩ টিতে। এবং সেই বছরই আমরা প্রথম সুপার স্টোর দিয়েছিলাম সমস্ত হারাম ফুড অ্যাভয়েড করে শুধুমাত্র হালাল ফুডের। এমনকি আমরা সন্দেহযুক্ত ই-কোড আছে এমন খাবারও অ্যভয়েড করেছি। উইলি দাদু তখন বিশাল বড় সাহায্য করেছিলেন আমাদেরকে। আমাদের নানাভাইয়ের এক আমেরিকান ফ্রেন্ড ছিলেন।

উইলি দাদু, তাই না আদীব্বা?

আদী হেসে বললেন, হ্যা উইলি দাদু। উইলি দাদুদের পারিবারিক বন্ধ পরে থাকা ফ্যাক্টরিটা আমাদেরকে উপহার স্বরূপ দিয়েছিলেন। যারফলে, আমাদের সুপার মার্কেট আমরা নিজস্ব প্রোডাক্ট দ্বারা সাজানোর সুযোগ পেয়েছিলাম আলহামদুলিল্লাহ। আমাদেরকে পার্টটাইম জবের জন্য তখন আর অন্য কোথাও যেতে হতো না। নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেই আমরা নিজেরা কাজ করেছি, আমাদের যেসব ক্লাসমেটদের জবের দরকার ছিল তাদেরকে কাজ দিয়েছি। এছাড়া অসংখ্য নীডি মানুষেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছিল এরফলে আলহামদুলিল্লাহ।

নাবিহা বলল, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু পড়াশোনা সামলে এইসব কিছু দেখাশোনা নিশ্চয়ই অনেক বেশি কঠিন হয়েছিল তোমাদের জন্য।

আদী হেসে বললেন, কঠিন হতো যদি আমরা সংঘবদ্ধ না থাকতাম তাহলে। কিন্তু আমরা তো সর্বদা, সর্বাবস্থায় পরস্পরের হাত আঁকড়ে ধরে পথ চলেছি। আমাদের কারো জীবনে এমন কোন সফলতা নেই, যেটাকে ঘিরে বলতে পারি এটা আমার একার অর্জন। আমাদের একার কোন অর্জন নেই। যা কিছুই আছে সব আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রতিফল আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের প্রতিটা কাজের পেছনে পরিষ্কার পরিকল্পনা ছিল। নিয়ম ছিল, রুটিন ছিল প্রতিটা কাজের। কেউ যাতে ভুলেও রুটিনে বা নিয়মে কোন উল্টা পাল্টা করতে না পারে সেজন্য আমাদের চারজনের একটা গ্রুপ ছিল। তাদের কাজ ছিল একাউন্ট দেখা আর সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া। যদিও মনেহতো ওরা হয়তো কম কাজ করছে, আরামে আছে। কিন্তু ওদের কাজই ছিল সবচেয়ে কঠিন। সাথীদের পিছনে অতন্দ্রপ্রহরীর মতো লেগে থাকতো ওরা চারজন। আলহামদুলিল্লাহ ওদের এই ধৈর্য্য, অধ্যবসায় ও ত্যাগের মূলধন যদি না থাকতো আমরা কখনোই হয়তো পারফেকশনিস্ট হতে পারতাম না কথা, কাজ ও আচরণে।

নাবিহা হেসে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। আমার সেই চারটা সোনার টুকরো ছেলে যেন কে কে?

আদী হেসে বললেন, কুতায়বা, হুজায়ফা, হামজা আর মাহমুদ। তবে আম্মাজান আপনার এই সোনার টুকরোরা আপনার পাপার আত্মার একেকটা টুকরো।

নাবিহা হেসে বলল, হ্যা পাপা সবসময় বলেন, ‘আমার সাথীদের ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। আমার জীবনের সবকিছু অসম্পূর্ণ। ওরা আছে বলেই আমি আছি। ওদের একজনও যদি আমাকে ছেড়ে সরে যায় আমার ভীত হেলে যাবে। আমার প্রতিজন সাথী আমার অস্তিত্বর অত্যাবশ্যকীয় অংশ।’ তোমাদের সবার বন্ধন অদ্ভুত সুন্দর আদীব্বা। কত বছর হয়ে গিয়েছে তাও তোমাদের বন্ধন আগের মতোই আন্তরিক, সুদৃঢ়। মত পার্থক্য অনেক হয় তোমাদের কিন্তু তোমাদের মন সবসময়, সর্বাবস্থায় একত্রিত থাকে। এর কারণ তোমাদের বন্ধনের কেন্দ্রবিন্দু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি ভালোবাসা। ইনশাআল্লাহ আমরাও নিজেদেরকে এভাবেই গড়বো। এখন তাহলে আমি যাই আদীব্বা।

আদী বললেন, যাবে মানে? তোমাদের হোম কিচেন সার্ভিসের ঘটনা বলবে না?

নাবিহা হেসে বলল, অবশ্যই বলবো তবে এমন একা একা না। এটা আমাদের সবার অর্জন তাই সবাই মিলে একসাথে বলবো ইনশাআল্লাহ।

আদী তখন হাসি মুখে নাবিহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। নাবিহাও হাসতে হাসতে চলে গেলো।

চলবে…

পর্ব-৫

Facebook Comments