banner

বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 519 বার পঠিত

 

স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর…৪

স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর…৪


আফরোজা হাসান


নীলাকাশের বুকে ডানা মেলা পাখী দেখে নিজে পাখী হবার বায়না ধরে যেই শিশুরা তাদের মতই একজন ছিলাম আমি। পাখী দেখলেই বাবা আর মামণির কাছে গিয়ে ঘ্যানঘ্যান শুরু করতাম, আমাকে পাখী বানিয়ে দাও, আমাকে ডানা লাগিয়ে দাও। এই কথা সেই কথা বলে আমাকে বুঝ দিয়ে রাখতেন বাবা ও মামণি। আমার বয়স যখন ছয় তখন বড়আব্বু বেড়াতে এসেছিলেন আমাদের বাড়িতে। একদিন বিকেলে পাখী দেখে আবার কান্না শুরু করেছিলাম আমি। মামণির কাছ থেকে কান্নার রহস্য জেনে বড়আব্বু আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বাগানে গিয়ে বসলেন। আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, তুমি পাখী হতে চাও? ফোঁপাতে ফোঁপাতে জবাব দিয়েছিলাম, হু, কিন্তু কেউ আমাকে ডানা কিনে দেয় না। বড়আব্বু তখন হেসে বলেছিলেন, কেউ কেন তোমাকে ডানা কিনে দেয় না জানো? কারণ তোমার তো ডানা আছেই সেজন্য। আমি ভালো মত নিজেকে আরেকবার দেখে বললাম, কোথায় আমার ডানা? বড়আব্বু বলেছিলেন, তোমার ডানা আছে কিন্তু অনেক ছোট ছোট তাই দেখতে পারছো না। তুমি কি চাও তোমার ডানারা বড় হোক? মাথা দুলাতে দুলাতে বললাম, হু চাই। বড়আব্বু বললেন, তাহলে তোমাকে বেশি বেশি বই পড়তে হবে। তুমি যত বই পড়বে তোমার ডানারা তত দ্রুত বড় হবে। সেদিনই আমি জীবনে প্রথমবারের মত লাইব্রেরীতে গিয়েছিলাম। বড় আব্বু লাইব্রেরীতে নিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, যাও তোমার যে ক’টা ইচ্ছে বই নাও। দু’হাতে যতগুলো সম্ভব হয়েছিল তুলে নিয়েছিলাম বই। শিশুদের বই ছিল না একটাও তার মধ্যে। কিন্তু বড় আব্বু আমার উড়ন্ত মনে ছুটে চলা প্রথম কদমকে ব্যহত করতে চাননি। কিনে দিয়েছিলেন সবগুলো বই।

যেহেতু বুঝতাম না তাই কয়েকদিন সাথে সাথে রাখার পর একসময় ভুলে গেলাম প্রথম কেনা বইগুলোর কথা। বহু যতনে সেই বইগুলোকে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন বড়আব্বু। যখন ক্লাস ফাইভ থেকে সিক্সে উঠেছিলাম সেই বইগুলোকে খুব সুন্দর করে প্যাকেট করে উপহার দিয়েছিলেন আমাকে। সাথে দিয়েছিলেন আমার জীবনের প্রথম বই কেনার রত্নতুল্য স্মৃতিখানি। বড়আব্বুর কাছে থেকেই প্রথম বই উপহার পেয়েছিলাম। কমিকস আর রূপকথার জগত থেকে বড়আব্বুর হাত ধরেই প্রথম কদম রেখেছিলাম জ্ঞানোরাজ্যে। বড়আব্বু যখন আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসতেন কিংবা আমরা যখন বেড়াতে যেতাম পুরোটা সময় উনার সাথেই কাটতো আমার। এখন জানি ইতিহাস প্রিয় মানুষ ছিলেন বড়আব্বু। আর ইতিহাসের কথাই পড়ে শোনাতেন আমাকে। কিছু না বুঝলেও ডানা বড় করার জন্য চুপটি করে শুনতাম উনার সবকথা। এভাবেই যে কোন ব্যাপারে খুব মনোযোগী হবার বীজটিও বড়আব্বুই বুনে দিয়েছিলেন আমার কচি মনে। ডানার আকর্ষণে সেই যে ছুটে গিয়েছিলাম বইয়ের ভুবনে। এরপর আর কোনদিন ফিরে আসা হয়নি। এখনো সন্ধান চলছে ডানার। সময়ের বিবর্তনে ডানাতে পালকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, উড়ার ইচ্ছে আরো জোড়াল হয়েছে, মনটা বাঁধনহারা হয়েছে কিন্তু এখনো ডানাতে উড়ার শক্তি সঞ্চারিত হয়নি। মৌমাছি যেমন ফুলে ফুলে ঘুরে বিন্দু বিন্দু মধু সংগ্রহ করে। আমিও তেমনি বিভিন্ন বই থেকে করে চলছি একটু একটু শক্তি সঞ্চার। জানি না কবে আমার বাঁধনহারা মন প্রসারিত ডানা মেলে উড়তে শিখবে।

চুপচাপ বসে মুগ্ধ মনে স্বাতির কথা শুনছিল আরভ। স্বাতির কাছ থেকে কিছু জানতে হলে প্রশ্ন করে করে সেটা বের করতে হয়। সেটা গত এক সপ্তাহে বেশ ভালো মতোই বোঝা হয়ে গিয়েছে আরভের। অন্যে কেউ যাই বলবে চুপ করে শুনবে কিন্তু কখনোই নিজ থেকে কিছু জানতে চায় না। আবার নিজের সম্পর্কে কোন কথা বলতেও আগ্রহী নয়। তবে প্রশ্ন করলে জবাব দেয়। তাই প্রশ্ন করে করেই আরভকে জানতে হচ্ছে তার নববধূকে। এমনতর বইয়ের ভুবনে ডুবে থাকা কন্যা হবার রহস্য কি জানতে চাইলে নিজের ছোটবেলার কথাগুলো বললো স্বাতি। গত এক সপ্তাহ ধরে একটা প্রশ্ন করতে চাইছে আরভ স্বাতিকে। কিন্তু জিজ্ঞেস করবে কি করবে না সেটা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছে। আরভের খুব জানতে ইচ্ছে করে স্বাতির কি কখনো তাকে জীবনসাথীর জায়গায় কল্পনা করেছে?! যতবারই ভেবেছে জিজ্ঞেস করবে লজ্জা ও সঙ্কোচ ঘিরে ধরেছে মনকে। স্বাতি যদি তার ইনটেনশন না বোঝে? আরভের সবসময় মনেহয় স্বামী-স্ত্রীর কখনোই এমন কোন আচরণ বা কথা বলা উচিত নয়, যারফলে একে অন্যের প্রতি রেসপেক্টে প্রভাব পড়তে পারে। বাবা-মার চমৎকার দাম্পত্য জীবন দেখে বুঝেছে স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনে রেসপেক্ট সবচেয়ে শক্তিশালী স্তম্ভগুলোর একটি। যেটা নড়বড়ে হয়ে যাওয়া মানে সামান্য বাতাসেই দুলে ওঠা বন্ধনটি।

তোমাকে এত চিন্তিত দেখেচ্ছে কেন? মনেহচ্ছে খুব সিরিয়াস কিছু ভাবছো?

স্বাতির প্রশ্ন শুনে আরভ হেসে বলল, চেহারা দেখেই এতকিছু বুঝে ফেলেছো? শেষপর্যন্ত কি ফেস রিডার বিয়ে করে ফেললাম নাকি? অতি চিন্তার বিষয়।

স্বাতি হেসে বলল, চিন্তার বিষয় কেন? অনেক গোপন তথ্যাদির খাজানা লুকায়িত আছে নাকি আপনার মনের মাঝে?

হাত বাড়িয়ে স্বাতিকে আরেকটু কাছে টেনে নিলো আরভ। হেসে বলল, তুমি কি জানো তোমার শব্দরা অদ্ভুত সুন্দর?

চলবে..

পর্ব-৩

Facebook Comments