banner

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ ইং, ,

Monthly Archives: May 2025

 

যে গল্পটি কারো বোনের নয়

কুশল ইশতিয়াক


ঘটনার দিন, মন্টু যখন মাগরিব নামাজের প্রস্তুতি নেয়, তখন বাড়িতে খবরটা আসে। এরপর আর তার কিছু খেয়াল থাকে না। দৌড়াতে দৌড়াতে ধানক্ষেতের ভেতর নেমে পড়লে, কাদাপানিতে মাখামাখি হয়ে যাওয়া বোনের নগ্ন শরীরের ওপর চোখ পড়ে তার।

মন্টু ডুকরে কেঁদে ওঠে। আদালত তাকে জিজ্ঞাসা করলো- এরপর কী হল?
স্যার, শুয়ারের বাচ্চারা আমার বইনের ইজ্জত লুটছে পরথম। হেরপর জবাই দিছে।
সে তো আপনার বোন নয়।

লাশটা তার বোনের নয়? মন্টু কিছুটা বিভ্রান্ত হয়। লাশটা তাহলে কার, লিপি কোথায়? মন্টু কথাটা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। কিন্তু আদালতকে সে অবিশ্বাসও করতে পারে না। যার কাছে বিচার চাইতে এসেছে সে, তাকে অবিশ্বাস সে কীভাবে করে? যদি অবিশ্বাসই করে, তাহলে তার বিচার চাইতে আসাটাই অর্থহীন। কিন্তু মন্টুর এই বিচার চাইতে আসার প্রয়োজনটুকু আছে। কারণ আদালত ছাড়া মন্টুর অন্য কোথাও যাবার আর জায়গা নেই। কারোই নেই। আদালতের কথা বিশ্বাস করা ছাড়া কীই বা করার আছে, সে ভেবে পায় না।

যান, বাড়ি যান। লাশটা লিপির নয়।

মন্টু কিছুটা ইতস্তত বোধ করে। একবার ভাবে জিজ্ঞাসা করবে, লাশটা আসলে কার? কিন্তু পরক্ষণেই ভাবে যার আপনজন, সে নিশ্চয়ই লাশটা খুঁজে বের করবে। মন্টু তার জন্য অপেক্ষাও করে। এইবার তার লাশটির জন্য মায়া হয়। কিন্তু পরক্ষণেই লিপির নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারটি এই ভাবনাকে ঢেকে দেয়। লিপি তাহলে কোথায়?

লাশটা যে তার বোনের নয়, এ কথা অনেকেই বলেছিল তাকে। এমনকি পাজামার আর ওড়নার রঙ মিলে যাবার পরও। লাশটার ক্ষতবিক্ষত মুখ কিছুতেই আলাদা করে বোঝা যাচ্ছিল না। যদিও কাঁদাপানিতে নেমে মন্টুর বারবার মনে হচ্ছিল এই মুখ লিপির। বোনের মুখ ভাই কী করে ভোলে?

তর মাথা আউলাইছে। এই মাইয়া আমাগো লিপি? জীবনেও না।

গ্রামবাসী সকলে সায় দেয়। সায় দেয় তারা যারা লিপিকে চেনে। তারাও, যারা কখনো লিপিকে দেখে নি। মন্টুর কাছ থেকে তারা জানতে পারে, বিকেলে লিপি পেয়ারা পাড়তে ক্ষেতের ধারে এসেছিল। এ কথা তারা মেনে নিলেও ধর্ষিত লাশটি আসলে অন্য কোনো তরুণীর বলে তারা মন্টুকে আশ্বস্ত করতে চায়।

মন্টু, বাড়িত যা। গিয়া দ্যাখ, লিপি বাড়িত আইছে নি।

এই লাশটা তাইলে কার? মন্টু যে প্রশ্ন আদালতে করতে পারে নি, ঘটনার দিন সে সবার কাছেই করেছে।

মিয়া, তোমার এত খোঁজের দরকার কী? হইব পাশের গেরামের কেউ। তোমার বইনের না হইলেই তো হয়। লাশ যার হউক, তোমার তো কিছু না। যাও, বাড়িত যাও।

মন্টু ভাবতে থাকে, আসলেই, লাশটা লিপির না হলেই তো হয়। যারই হোক, তার কী আসে যায়? তার তো কিছু না।

এ কথা ভাবতে ভাবতে মন্টু বাড়ি ফেরে। কিন্তু লিপি বাড়ি ফেরে না। মন্টুর মাগরিবের নামাজ, এশার নামাজ ক্বাজা হয়ে যায়। রাতের বেলা অস্থির হয়ে তার বোনকে খুঁজতে বের হয় সে। তখন তার আযহার মাষ্টারের কথা মনে হয়।

লাশটি ততক্ষণে নিয়ে যাওয়া হয়েছে থানায়। উলঙ্গ। ওড়না আর পাজামা পড়ে ছিল ধানক্ষেতে, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আযহার মাষ্টারকে মন্টু তার সন্দেহের কথা বলতেই মাষ্টার তাকে একটা রামধমক দেয়। মন্টু এবার ঝরঝর করে কাঁদতে শুরু করে।

চাচা, লিপিরে তো পাইতেছি না।
বকাঝকা করছিলি নি? আযহার মাষ্টার জিজ্ঞাসা করে।
কেউই কিছু কয় নাই।
কারো লগে প্রেম পীরিত ছিল? পলাইছে?

আযহার মাষ্টারের এই সব প্রশ্ন মন্টুর কাছে এই সময় খুব বেমানান লাগে। কিন্তু আযহার মাষ্টারকে সে কিছু বলতে পারে না। এরকম করে সে নিজেও একবার ভাবার চেষ্টা করে। তার মনে পড়ে লিপির সাথে গ্রামের ছোটভাই রফিকের হাসাহাসির একটা দৃশ্য। কিন্তু এই ভাবনা বেশিদূর এগোতে পারে না। বারবার অন্য একটি ভয়, প্রেতাত্মার মতো তার সামনে ঘোমটা দিয়ে এসে দাঁড়ায়।

তখন মন্টু বিষয়টা অন্যভাবে সমাধানের চেষ্টা করে। মনে মনে। লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলে বা অন্য কারো ভাই এসে দাবী করলে সে নিশ্চিন্ত হতো, যে লাশটা মন্টুর বোনের নয়।

চাচা,মাইয়াডার কোনো খোঁজ পাওয়া গেছে?
কার?

আযহার যদিও পাল্টা প্রশ্ন করে থতমত খায়, অন্ধকারে মন্টুর মুখের অভিব্যক্তি বুঝতে তার তেমন একটা সমস্যা হয় না। সে তাই বলে, যা সে জানে। সে বলে যে, সে জানে না।

চাচা লন, একবার থানাত যাই।

মন্টুর এই এত রাত বিরাতে থানায় যাবার প্রস্তাব আযহার মাষ্টারের ঠিক পছন্দ হয় না। তবু এমন দুঃসময়ে মন্টুর এই সরাসরি অনুরোধ পুরোপুরিভাবে এড়ানোও তার পক্ষে সম্ভব হয় না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে বলে- ঠিকাছে, চল যাই।

লাশটিকে একটু আগে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এখনও মর্গে চালান করা হয় নি। ত্থানার বারান্দায় লাশটাকে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে হোগল পাটিতে। কিছু ধাড়ি ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করছে বারান্দার কোনায়, এরা কি জেলের ভাত খেয়ে এরকম হয় নাকি অন্য কিছু খেয়ে, কে জানে। এরই মধ্যে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে লাশটা থেকে, একটা মানুষ মারা গেলেই সুগন্ধি ছড়াবার বদলে সাথে সাথে কী করে দুর্গন্ধ ছড়ায়, এই বিষয়টা মন্টুর ঠিক বোধগম্য হয় না। সে তড়িঘড়ি করে একবার লাশের দিকে তাকায়, তারপর দ্রুত মুড়িয়ে রাখা হোগলা সরিয়ে মুখটা দেখতে উদ্যত হয়।

এই খবরদার, হাত দিবি না।

মন্টুর চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। ওর মনে হয়, একটা বড়সড় ইটের আঘাতে কনস্টেবলের মাথাটা থেতলে দিতে। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলায়। লাশটা দেখার জন্য কী বলবে, সে ঠিক মনঃস্থির করতে পারে না।

কতক্ষণ চুপ থেকে সে বলে, একবার দেখতাম চাই।

কনস্টেবল অজ্ঞাত কারণে তাকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করে না। অথচ প্রশ্ন করাটা স্বাভাবিক ছিল। সে জিজ্ঞাসা করতেই পারতো, কেন সে লাশটা দেখতে চায়, লাশের সাথে তার সম্পর্ক কী? যেমন আযহার মাস্টারও তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল লিপি কারো সাথে পালিয়ে গেছে কি না। কনস্টেবল তাকে ইশারায় ওসির টেবিলের দিক নির্দেশ করে। মন্টু এবং আযহার পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে আর ইঁদুরগুলিও তাদের মুখের দিকে। আযহার মাষ্টার দুই পা এগিয়ে এসে গলা খাঁকারি দেয়।

মন্টুর তখন মনে হয়, সে অনেক বড় একটা বেকুব। থানায় তার মা’কে অথবা ফজলুটাকে নিয়ে আসার প্রয়োজন ছিল। তারা দেখে নিশ্চিত হতে পারতো লাশটা লিপির কি না। এই লাশতো এখানে থাকবে না, রাতের মধ্যেই চালান করা হবে মর্গে।

আবার এও হতে পারে, বাড়ি ফিরে মন্টু দেখবে লিপি ফিরে এসেছে। গতরাতের মতো কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে। তার কাছে গতরাত, কিংবা তার আগের রাত, বা তার আগের রাত, আরব্য রজনীর রাতের মতোই অপার্থিব সুন্দর মনে হতে থাকে। মনে হতে থাকে কোনো উপায় জানা থাকলে সে গতরাতেই ফিরে যেত।

এ্যাই, দেখা।

মন্টু, আযহার মাষ্টার এবং কনস্টেবল, অনন্তকাল ধরে লাশের দিকে আগায়। লাশের মুখ দেখে। কিন্তু মনে রাখতে পারে না। মন্টুর মনে হয় এটা লিপিরই মুখ। যদিও আযহার মাষ্টার প্রবল অসমর্থন যোগায় কিন্তু মন্টু ধীরে ধীরে বিশ্বাস করতে শুরু করে, এই মুখ দেখে সে ধর্ষকদের মুখগুলিও খুঁজে বের করতে পারবে। সে আর আগের মতো অস্থির হয়ে ওঠে না, সে খুব ক্লান্ত এবং নির্জীব বোধ করে। ফিরে আসার পথে সে আযহারের সাথে একটি কথাও বলে না।

পরদিন সকালে মন্টু থানায় একটা হত্যা মামলা করে।

লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে পাওয়া যায়, উপর্যুপরি ধর্ষণের পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা। একটা দুধও কাটা ছিল। মন্টু আগে সেটা খেয়াল করে নি।

এরপর কী হলো? আদালত তাকে জিজ্ঞাসা করে।
ওরা আমার বইনডার ইজ্জত লুটছে পরথম। হেরপর জবাই দিছে।
বাড়ি যান। এই লাশটি আপনার বোনের নয়।
আমার বইনের।
আপনার বোন, লিপি। তিন বছর আগে মারা গেছে।

মন্টুর সবকিছু অদ্ভুত লাগে। সে আদালতকে অবিশ্বাস করতে পারে না, কিন্তু একইসাথে এটাও বিশ্বাস করে যে, তার বোন ঘরে ফেরে না আজ একমাস চারদিন হলো। তাহলে তিন বছর আগে লিপি কীভাবে মারা যায়? আদালত থেকে সে বের হতে হতে ভাবে, আদালত কি তার সাথে মশকরা করে?

কি রে মন্টু। বইনের খোঁজ পাইলি?

ইঁদুরগুলি তখনও মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। মন্টু তাকিয়ে দেখে আদালতের সামনে গাছতলায় শফিক বসা। শফিক পাগলা। মন্টুর সেই বন্ধু শফিক। মন্টুর মনে পড়ে, শফিকের একটা বড় বোন ছিল। রাবু আপা। তিন বছর আগে একদিন লাশ পাটক্ষেতে পাওয়া গেলো। কেউ এগিয়ে এল না। মন্টু তখন কোথায় ছিল? সবাই বলল- রাবু না। শফিক বললো- রাবু।

মন্টুরও মনে হয় রাবু না। ও আসলে লিপি। তিন বছর আগে পাটক্ষেতে মারা গেছে। রাবু আপা হয়তো তারও অনেক আগে। শফিক জানত না।

 

স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে অধ্যাপক গ্রেফতার

নারী সংবাদ



স্ত্রী হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে হংকং স্ত্রীকে হত্যার
অধ্যাপককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ তার অফিসে রাখা একটি স্যুটকেসের ভেতর থেকে লাশটি উদ্ধার করে।

ওই নারীর গলায় বৈদ্যুতিক তার পেঁচানো অবস্থায় ছিল। ৫৩ বছর বয়সী চেউং কি চাং এর কার্যালয়ে একটি বড় কাঠের বাক্সে স্যুটকেসটি লুকানো ছিল।

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী এই অধ্যাপক ২০ আগস্ট থেকে তার স্ত্রী নিখোঁজ বলে জানিয়েছিলেন। তখন জানান, তাদের মধ্যে ঝগড়া হলে তার স্ত্রী রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।

পুলিশ সিসিটিভি থেকে তার স্ত্রীর বাড়ির বাইরে যাওয়ার ফুটেজ পায়নি। অথচ চেউংকে বড় একটি কাঠের বাক্স আঙ্গিনার বাইরে নিতে দেখে। তখন চেউয়েং কে তারা সন্দেহ করতে শুরু করেন।

মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ চেউংয়ের অফিস তল্লাশি করে। অফিসটি শিক্ষকদের ডর্মেটরি থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্বে।

চেউং তার স্ত্রী ও বাচ্চাদের নিয়ে থাকতেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ঝাং জিয়াং বুধবার বলেছেন, এই হত্যার ঘটনা শুনে তিনি স্তব্ধ ও দুঃখিত।

তিনি একে একটি মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সূত্র: নয়াদিগন্ত

 

পরকীয়া ও ব্যভিচারঃ আইনে কে দায়ী?

সাঈদ আহসান খালিদ


বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘পরকীয়া’ ও ‘ব্যভিচার’- এই দুটো শব্দ আমরা হামেশা গুলিয়ে ফেলি এবং সমার্থক মনে করি যা আদতে বেঠিক। আইনি দায় নির্ধারণের পূর্বে দুটোর তফাৎ জানা জরুরি।

‘পরকীয়া’ বলতে অন্যের স্বামী বা স্ত্রীর সাথে বিবাহবহির্ভূত প্রেম বা প্রণয় কে বুঝায়, ইংরেজিতে আমরা বলি- ‘Extra Marital Affair’ । এখন এই প্রেম যৌন সঙ্গম অব্দি গড়াতেও পারে আবার নাও পারে। অর্থাৎ, পরকীয়া ব্যভিচারসহ বা ব্যভিচারহীন দুটোই হতে পারে। পরকীয়া ‘অনৈতিক’ হলেও বাংলাদেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী ব্যভিচারের পরিণতি না পাওয়া পর্যন্ত ‘অপরাধ’ হিসেবে পরিগণিত হবে না। তার মানে যৌন সঙ্গমহীন বিবাহবহির্ভূত পরকীয়া আইনে অপরাধ নয় এবং এই পরকীয়ার অভিযোগে কাউকে দায়ী করা যায়না।

অপরের বিবাহিত স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম সংঘটিত হলে তখন সেটি আইনের ভাষায় ‘ব্যভিচার’ বা ‘Adultery’ হিসেবে গণ্য হবে। বাংলাদেশের ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারানুযায়ী ‘ব্যভিচার’ আইনের চোখে অপরাধ এবং শাস্তিযোগ্য। চলুন, দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা পড়ে দেখিঃ

“‘কোনো পুরুষ যদি জেনেশুনে কোনো বিবাহিত নারীর সঙ্গে তার স্বামীর সম্মতি না নিয়ে বা তার অজান্তে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন, এবং অনুরূপ যৌন সঙ্গম যদি ধর্ষণ না হয় তাহলে তা ব্যভিচারের অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং শাস্তিস্বরূপ সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা জরিমানা কিংবা উভয়ই প্রযোজ্য হতে পারে। এক্ষেত্রে ওই বিবাহিত স্ত্রী অপরাধের সহযোগী রূপে কোন শাস্তি পাবে না”

এই ৪৯৭ ধারায় কাউকে শাস্তি প্রদান করতে হলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো প্রমাণ করতে হবেঃ

▷ প্রথমত, আসামি কোনো নারীর সঙ্গে যৌন সঙ্গম করেছিল,

▷ দ্বিতীয়ত, ওই নারী বিবাহিত ছিল এবং তার স্বামী বর্তমান,

▷ তৃতীয়ত, অভিযুক্ত বিবাহের বিষয়টি জানত এবং তা বিশ্বাস করার কারণও ছিল,

▷ চতুর্থত, ওই যৌন সঙ্গম নারীর স্বামীর সম্মতি বা সমর্থন ব্যতিরেকে হয়েছিল,

▷ পঞ্চমত, ওই যৌন সঙ্গম নারী ধর্ষণের শামিল ছিল না অর্থাৎ, সঙ্গমে ওই নারীর সম্মতি ছিল।

মজার ব্যাপার হচ্ছে- এই ধারানুযায়ী ব্যভিচারের অপরাধে দায়ী হবে শুধু ব্যভিচারী পুরুষই, ব্যভিচারে লিপ্ত স্ত্রীলোকটির কোন আইনি দায় নেই এবং দুষ্কর্মের সহযোগী (Abettor) হিসেবে তার কোন শাস্তি হবে না। “ব্যভিচার প্রমাণিত হলেও স্ত্রীলোকটির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যাবেনা”- ৪৯৭ ধারার‍ এই ব্যাখ্যা ১৯৭৪ সালে লাহোর হাই কোর্টের এক সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যা পাকিস্তান লিগ্যাল ডিসিশানে (PLD) সন্নিবেশিত আছে।

দেড়শো বছরের পুরনো এই ব্যভিচার আইনে আজ অব্দি কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির এই ৪৯৭ ধারা নিম্নোক্ত কারণে অসম্পূর্ণ, লিঙ্গ বৈষম্যমূলক, সেকেলে এবং বর্তমান সময়ের উপযোগী নয়ঃ

◾ পুরুষ ব্যভিচারী এবং বিবাহিত নারীটি ঘটনার শিকার- দেড়শো বছরের পুরনো সামাজিক সেই বাস্তবতা বর্তমানে অসার। সম্প্রতি ভারতের সুপ্রীম কোর্ট প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ব্যভিচার সংক্রান্ত এক মামলায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারার এই বিধানের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন- ‘যদি কোনো বিবাহিতা নারী পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তার দায়-দায়িত্ব ওই পুরুষের যেমন, তেমনি ওই নারীরও। সেই দায়িত্ব তো নারীটিকে নিতেই হবে। সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লাম, তার ফল ভোগ করলাম, কিন্তু দোষী হলো শুধু পুরুষ, সেটা তো ঠিক নয়।”

◾ ব্যভিচারে লিপ্ত নারী-পুরুষের মধ্যে নারীটির অন্যের “বিবাহিত স্ত্রী” হওয়াটা এই ধারায় একটি শর্ত, ব্যভিচারী পুরুষটির বিবাহিত হওয়াটা শর্ত নয়। ৪৯৭ ধারার এই অংশটি অসম্পূর্ণ এবং ধর্মীয় আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশের আইনানুযায়ী একজন অবিবাহিত পুরুষ ও অবিবাহিত নারী কিংবা একজন বিবাহিত পুরুষ ও অবিবাহিত নারীর মধ্যকার পারষ্পরিক সম্মতিমূলক যৌন সঙ্গম ও একত্র বসবাস আইনসম্মত এবং তা ব্যভিচার বলে গণ্য হয়না।

৪৯৭ ধারার ব্যাখ্যানুযায়ী একজন বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে একজন অবিবাহিত, বিধবা বা স্বামী পরিত্যাক্ত নারীর মধ্যে যদি পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে শারীরিক সম্পর্ক হয়, তাহলে তা ব্যভিচার বলে গণ্য হবে না এবং ওই লোকের স্ত্রীটি অভিযুক্ত স্বামী কিংবা পরকীয়ায় লিপ্ত নারীটির বিরুদ্ধে কোন আইনগত প্রতিকার পাবে না।

◾ ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী, স্বামীর “সম্মতি” (Consent) নিয়ে বা জ্ঞাতসারে (Connivance) তাঁর বিবাহিত স্ত্রীর সাথে অন্য পুরুষ যৌন সঙ্গম করলে তা ব্যভিচারের সংজ্ঞায় পড়বেনা। স্ত্রীর সম্মতি এখানে অপ্রাসঙ্গিক। ব্যভিচারে বিবাহিতা মহিলার স্বামীর সম্মতি থাকা মানে কী? স্ত্রী কি স্বামীর সম্পত্তি না পণ্য? আবার দৃশ্যের অন্যপিঠও আছে- এ প্রসঙ্গে সাহিত্যিক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের “আমি সে ও সখা” গল্পটি প্রণিধানযোগ্য যেখানে স্বামী মনে করেছেন বিবাহিত জীবনের স্বাভাবিক সম্পর্ক ধরে রাখতে সে অক্ষম ৷ তাই স্বামী প্রতিবাদহীন মেনে নিয়েছে- অন্য পুরুষের সঙ্গে যদি তাঁর স্ত্রী ভালো থাকে, তো থাকুক৷ এই প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে ব্যভিচারের অভিযোগ হালে পানি পাবেনা।

পরকীয়া ও ব্যভিচার একটি সামাজিক অনাচার, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। বিয়ে ও পরিবারের মতো গুরুত্ত্বপূর্ণ সামাজিক সম্পর্ক কে সুরক্ষা দিতেই ১৮৬০ সালে দণ্ডবিধির এই ৪৯৭ ধারার উৎপত্তি। কিন্তু কালক্রমে এই ধারাটি অকেজো এবং অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। দেড়শ বছরের পুরনো এই আইনের সংশোধন এখন সময়ের দাবি।

====================
@ সাঈদ আহসান খালিদ
আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

 

মনের কথা

কানিজ ফাতিমা


  •  প্রকৃতিতে আমার কোনো ক্লান্তি নাই, ঘন্টা কেন, দিনের পর দিন একই দৃশ্যে তাকিয়ে থেকেও চোখ ফেরেনা আমার। কেউ হয়ত ভাববে, কি দেখে এত চেয়ে চেয়ে ? নিরত দু’চোখ মেলে পথের ধারের বনফুল দেখি,ছোট্ট ডোবায় হাসের নিস্তব্দ ভেসে যাওয়া দেখি, আকাশের মেঘ দেখি- সাদা মেঘ, ধুসর মেঘ, ঘন মেঘ, তুলির ছোপ মেঘ আর চপলা মেঘ – ক্লান্তিরা কখন ক্লান্ত হয়ে ফিরে যায় আমার অক্লান্ত চেয়ে থাকা দেখে। সাদা কয়েকটা মেঘের টুকরায় এত দেখার কি আছে ? আমার আছে। একটা কালো পাখির লেজ দোলানো, গাছের ডালে মৃদু-মন্দ বাতাসে পলকা বরফের ঝুর ঝুর ঝরে পরা, শীতের বাতাসে শুকনো পাতার ফুরুত ফুরুত ওড়া, পথিকের হেটে যাওয়া, হাত নাড়ানো, স্কুলের সামনের গাছটার সোজা উপরের দিকে উঠতে উঠতে হতাঠ বেঁকে যাওয়া, গাড়ীর দরজা খুলে একজন মহিলার বের হয়ে আসা – এসব সাধারণ দৃশ্যেও আমার বিস্তর আগ্রহ। সিনেমা দেখে, গল্প করে, আড্ডা দিয়ে আমার বিনোদনের দরকার হয় না, চারপাশই আমার বিনোদনের উত্স। প্রকৃতির পানে নীরব চাহনীতেই মিশে থাকে আমার মনের খোরাক।
    স্টাফ রুমের পুরো দেয়াল জুড়ে কাচের জানালাটা আমার খুব প্রিয়। অতি ব্যস্ত সিডিউলেও সুযোগ করে জানলার ধরে বসে একটু জিরিয়ে নেই। কলিগরা সবাই যখন গল্পে বা পেশাগত আলাপচারিতায় ব্যস্ত, আমি তখন হারিয়ে যাই আমার গোপন দৃষ্টির ভুবনে, পেছনের কিছুই টানেনা আর – জেগে থাকে শুধু সামনের দিগন্তে দু’চোখের তাপসী ধ্যান। দু’টো বাচ্চা নিয়ে এক মা বেরিয়ে এলো গাড়ী থেকে, মাঝারী ঠান্ডা, তাই ওদের কারো পায়েই ভারী বুট নেই, হালকা জুতো। ওরা হেটে আসছে আমার দিকে। মানুষের হাটাও যে কত বিচিত্র! – উলম্ব হাটা, ঝুলন্ত হাটা , ক্লান্ত হাটা, আত্মবিশ্বাসী হাটা, বিষন্ন হাটা, কৃত্রিম হাটা- আরো কত কী ! মহিলাটি আত্মবিশ্বাসী হাটা হাটছে, বাচ্চা দু’টোকে একটু আগলে নিয়ে। তার মুখ আমি দেখতে পাচ্ছিনা , কিন্তু এত দূর থেকেও তার বাচ্চা আগলে দৃঢ় হাটার ভঙ্গীতে তাকে অপূর্ব লাগছে। ওই যে পেছনের পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে এলেন আরেক মহিলা। বয়স পূর্বের মহিলার মতই হবে বোধ করি, কিন্তু হাটছেন কিশোরী ছন্দে, জ্যাকেটের জীপার এর মধ্যখান থেকে বেরিয়ে এসে একটা সরু সাদা রেখা দুভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়ে দু’ কানে মিশেছে – আশংকা করি সে গাড়ী চালানোর সময়ও এ দু’টোকে কান থেকে নামায়নি। অদ্ভুত ভাবে হাটছে মহিলা। বরফ কিছুটা গলে গেলেও এখানে সেখানে স্তুপ স্নো এখনো রয়ে গেছে, আর তার নীচে লুকিয়ে থাকা ছোপ ছোপ বরফ জমে আছে কোথাও কোথাও। এর মাঝ দিয়ে মহিলাটা একে বেকে হাটছে, নতুন হাটতে শেখা বাচ্চদের মত – পার্থক্য শধু এইযে তার পুরোটাই কৃত্তিম, বাচ্চদের অকৃত্তিম টলমলে হাটা নয়। দোতলার জানালায় বসে দেখলাম পার্কিং লটের মাঝা মাঝি থেকে স্কুলের গেটে ঢোকা পর্যন্ত এতগুলো পদক্ষেপের একটিতেও মহিলার দৃঢ়তা ছিলনা একফোটা। ভাবছিলাম এই বয়সের এক মহিলা কেন বরফের পিচ্ছিল পথে হাটার জন্য বেছে নিয়েছেন সরু হিলের বুট, কেন তিনি নিজেই নিজের চলাকে করেছেন বিপজ্জনক, কেন তিনি তার নিজের কোমরে, মেরুদন্ডে সৃষ্টি করছেন অতিরিক্ত ক্ষতিকর চাপ? এবং সর্বপরি যে “সৌন্দর্য” বা “স্মার্ট নেস” এর জন্য তিনি এই কষ্ট ও বিপদকে মেনে নিয়েছেন সেটার লেশ মাত্রও তো দেখতে পাচ্ছিনা আমি তার ভীরু, আত্ববিশ্বাসহীন, অনেকটা ভাড়ীয় হাটায়। তারপরও কেনো তিনি এটাকেই মনে করছেন “ফ্যাশন”?
    ফেসবুকে ঢাকার উঠতি বয়সের কিছু তরুনীদের ছবি দেখি টাইট জিন্সের প্যান্টে। এসব প্যান্ট তৈরী করা হয় শীতের দেশের জন্য। বাংলাদেশের গরম আবহাওয়ায় যে তাদের অনেক কষ্টে এই “ফ্যাশন” কে ধারণ করতে হচ্ছে তা বুঝতে কারো কষ্ট হবার কথা নয়। কষ্ট হোক তবু “স্মার্ট” তো হতে হবে।
    আচ্ছা, স্মার্টনেসের সংগাটা কি? বরফের ওপর বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর উচু হিল? গরমে মোটা টাইট প্যান্ট? নাকি আবহাওয়া অনুযায়ী সঠিক পোশাক নির্ধারণের মত মগজের ক্ষমতা? কে বেশী স্মার্ট, যে টিভির বিজ্ঞাপন দেখে বরফের মধ্যেও হিল পরে ভাড়ীয় হাটা হাটে নাকি যে আবহাওয়া সম্পর্কে অবগত থাকে এবং নিজের মাথার ব্যাবহার করে সঠিক জুতা নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে? যে হকার্সে গিয়ে টাইট জিন্স কিনে টেনে-টুনে শরীরে ঢুকায়, নাকি যে জানে যে গরম আবহাওয়ায় ঢিলা- ঢালা পোষাক আর হালকা মেকআপ বেশী উপযোগী? কে বেশী স্মার্ট, যে নিজের মাথার ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নেয়, নাকি যে নিজের চোখের মাথা খেয়ে মিডিয়ায় দেখানো অখ্যাদ্য কুখাদ্যকে বিশেষ “সুখাদ্য” হিসাবে চোখ বুজে গেলে?
    সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান প্রাণী হয়েও আমরা কিভাবে নিজের মস্তিস্কের হালটা নিশ্চিন্তে ছেড়ে দিতে পারি মিডিয়ার ওপরে? আমরা যখন নিজের ভাবনা নিজে নাভেবে মিডিয়াকে ভাবিয়ে নিতে দেই তখনই মিডিয়ার প্রচারে মিথ্যা আর অসুন্দর গুলো আমাদের মস্তিস্ককোষে বাসা বাধে সুন্দর আর সত্য রূপে। ক্রমে ক্রমে আমরা মানুষেরা হারিয়ে ফেলি আমাদের দৃষ্টিশক্তি, ক্ষয়ে যায় আমাদের চিন্তাশক্তি- চরম অসুন্দর দৃশ্যগুলো রুপান্তরিত হর সুন্দরতমে; দৃষ্টিকটু হয়ে ওঠে আকর্ষনীয়, মিথ্যা রুপান্তরিত হয় একমাত্র সত্যে, চক্রান্ত মূর্ত হয় চেতনায়। অবশেষে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান মানুষ হয়ে যায় বুদ্ধিহীন মিডিয়াধীন এক পরজীবীতে, এভাবেই হারিয়ে যায় তার স্বাধীনতা আর শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয়।

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৪

তাহনিয়া খান


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say. [20:25-28]

যারা হজ্জে গিয়েছিলেন তারা এসে বা ফোন করে আমাকে অনেক উপদেশ দিলেন। কোথায় কি সুবিধা অসুবিধা হতে পারে খুটি নাটি অনেক কিছু জানালেন। খুব কাজে লেগেছিল তাদের উপদেশগুলো।

আমার যাওয়ার দিন চলে আসলো। একি সাথে আনন্দ আর বেদনা আমার মনে। মনে আশা আল্লাহ্‌র মেহমান হতে যাচ্ছি। আমি তো শুধু মেহমান না, আমি জিহাদেও যাচ্ছি। হজ্জ তো মেয়েদের জন্য একটা জিহাদ। এহরামের কাপড় পরে দু রাকআত নামাজ পড়ে ফেলার পর হাত পা কাপতে লাগলো। আমি রীতিমত ভয়ে কাপছি। কাউকে বুঝতে দিচ্ছি না। নামাজে তো আল্লাহ্‌র সামনে হাজির হই। কিন্তু তখনো এমন ফিলিংস মনে আসে না। মাথায় কত কি ঘুরপাক খাচ্ছে। কান্নাও আসছে বাচ্চা দুটোর জন্য। আমার বিশ্বাস তারা তাদের বাবার কাছে ভালো থাকবে। তারপরেও বুকটা কেমন খালি খালি লাগছে। তাদের জন্মের পর তো তাদের কখনো কাছ ছাড়া করিনি। এতদিন প্রস্তুতির ঘোরে বাচ্চাদের ছেড়ে থাকার বিষয়টা অতটা মাথায় আসেনি। আসলে আল্লাহ্‌র ঘরে যাবো, এইটাই বেশী গুরুত্বপুর্ন ছিল। আর যেহেতু স্বামী থাকবে তাই নিশ্চিন্তে ছিলাম। কিন্তু হঠাত যাবার বেলায় যে কি হোল। মনে হচ্ছিল আর যদি ফিরে না আসি, তখন কি হবে? বাচ্চাদের কি আর দেখতে পারবো না ? আমাকে অনেকেই কঠোর হৃদয় এর অধিকারি বলেছিল। কিভাবে আমি স্বামী সন্তান ফেলে চলে যাচ্ছি। তাদের কে আমি বুঝাতে পারিনি যে আল্লাহ্‌র কাজের জন্য এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দুনিয়ার সম্পর্ক আল্লাহ্‌র সম্পর্কের কাছে তুচ্ছ হয়ে যায়। যদিও এসব সম্পর্কের উপর ভিত্তি করেই মানুষের জীবন চলে । আবার এসব সম্পর্কের সাথে আচার আচরণ বা লেনদেনের কারণে জবাবদিহি করতে হবে।

বাসার সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সরাসরি এয়ারপোর্টে চলে আসলাম। সাথে বাচ্চারা, স্বামী, আম্মু আর ভাইয়েরা। ফ্লাইট ছিল ভোর চারটার সময়। আমাদের এজেন্সি রাত দুটোয় আসতে বলেছিল। এয়ারপোর্টের ভিতরে হাজীদের ঢুকার জন্য আলাদা ব্যবস্থা। সেখানে অন্য কেউ ঢুকতে পারবে না। শেষ বিদায় নেওয়ার পালা।

এতক্ষন যে বুকের ভিতর বাচ্চাদের জন্য, স্বামীর জন্য কষ্ট অনুভূত হচ্ছিল, সেটা হঠাত উধাও হয়ে গেল। সবার কাছ থেকে আবারো মাফ চেয়ে বিদায় নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলাম। প্রথম পা ঢুকানোর সাথে সাথে মনে হোল, সব পিছুটান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। পিছুটান না থাকার আরো প্রমান আমি পেয়েছি হজ্জে গিয়ে। খুব কম মানুষকে দেখেছিলাম যারা তাদের পরিবার নিয়ে চিন্তিত ছিল। বেশীরভাগ মানুষই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। একদিন আমার স্বামী ফোন করে কোন এক কথা প্রসঙ্গে বলেছিল যে , তুমি জানো না যে গাদ্দাফীকে মেরে ফেলা হয়েছে? আমি বলেছিলাম জানিনা। সে অবাক হয়ে বলেছিল, পেপার পড় না, টিভি দেখো না ? আমি হেসে বলেছিলাম, এ অন্য জগত। এসবের সময় নাই। সবাই নিজের কাজ করছে। দরকার হলে পাশের মানুষটাকে সাহায্য করছে। সবার মাঝেই কেমন এক ঘোর লাগা অবস্থা। নিয়মের বাইরে কোন কাজ নেই, সময় নষ্ট নেই।

হজ্জের চতুর্থ শিক্ষা— ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি যে, কেয়ামতের সময় সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। সেই অনুভূতি পেলাম এয়ারপোর্টে ঢুকার পর থেকে একেবারে হজ্জের শেষ সময়টুকু পর্যন্ত। আমার সব সময় মনে হয়েছে যে, আমার পরিবার,বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন পৃথিবীর একপ্রান্তে,আর আমি আরেক প্রান্তে। আমি ছুটে যাচ্ছি আমার গন্ত্যবে, পাপ মোচনের আশায়, আল্লাহ্‌ কে সন্তষ্ট করার আশায়। দোয়া করা ছাড়া কেউ আর আমার জন্য কিছুই করতে পারবে না, আমিও দোয়া করা ছাড়া তাদের জন্য কিছুই করতে পারবো না। বেলা শেষে আমরা আসলে সবাই একা।

চলবে….

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৩

 

ছোটবেলার স্মৃতি

রেহনুমা বিনত আনিস


আমার জন্ম নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে পা দেয়ার কয়েকবছর পর, এক দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে – যেখানে প্রতিদিন বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার মানুষকে চমৎকৃত করছে, আগ্রহী করে তুলছে জ্ঞানের নতুন নতুন দিগন্তের প্রতি, ইউরোপ অ্যামেরিকা থেকে প্রকাশিত বই ম্যাগাজিন ডাকযোগে পৌঁছে যাচ্ছে সাধারন বাংলাদেশী পাঠকদের দুয়ারে; আজকের ব্ল্যাক অ্যান্ড ওয়াইট টিভি কাল রঙ্গিন হয়ে যাচ্ছে, টিভির পর্দায় বাংলার পাশাপাশি ভেসে আসছে ইংরেজী অনুষ্ঠানও; উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা পাজামা পাঞ্জাবী শাড়ি ছেড়ে প্যান্ট শার্ট সালোয়ার কামিজের দিকে ঝুঁকে পড়ছে, বিদেশ থেকে ক্যাটালগ এনে নকল করে জামা তৈরী হচ্ছে বাংলাদেশে; ড্যাটসান আর কচ্ছপের মত ভক্স ওয়াগন গাড়ীর পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে গরীবের টয়োটা আর আরবী শেখদের মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ী; আর শবে বরাতে তারাবাতি আর বাজিপটকা ফুটানোর পরিবর্তে নামাজ পড়ার প্রতি তাগিদ আসতে শুরু করেছে।
যেকোন পরিবর্তনশীল সমাজের মতই এই সমাজে ছিলো অস্থিতিশীলতা, পরিবর্তনের কিছু ভালো আর কিছু খারাপ ফলাফল। অল্প বয়সে পড়তে শেখায় চার পাঁচ বছর বয়সেই পরিণত হয়েছিলাম সর্বভুক পাঠকে। বাসায় ইংরেজীর চল ছিলো, যা জ্ঞানের দিগন্ত প্রসারিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যেহেতু তখনো অধিকাংশ তথ্যমূলক বই এবং অনুষ্ঠান ছিলো ইংরেজীতে। তার ওপর ছিলো লেখালেখি করার অনুপ্রেরণা যা সেই ছ’বছর বয়সেই ভাবনার কুঁড়িগুলোকে মেলতে সহায়তা করে।
স্বভাবগতভাবে ছোটবেলা থেকেই ছিলাম চিন্তাশীল ও চুপচাপ যার ভালো বাংলা হল ‘অলস’। ছুটোছুটির চেয়ে ভাল লাগত টেবিলের নীচে ঘর বানিয়ে রান্নাবাটি আর পুতুল খেলা। দুষ্টুমীর মধ্যে সবচেয়ে পছন্দ ছিলো জানালার গ্রিলের ভেতর দিয়ে পা গলিয়ে বাইরে পা ঝুলিয়ে বসে বৃষ্টি দেখা আর ফুল চুরি করা। একদিন ফুল ছেঁড়ার সময় বাবা দেখে ফেলল। বাসায় এসে পাশে বসিয়ে বলল, ‘যারা অন্যের জিনিস তাদের অনুমতি ছাড়া নিয়ে নেয় তাদের বলে চোর। এখন তুমিই বল, তুমি কি চোর?’ সেদিন থেকে এই বদস্বভাবের পরিসমাপ্তি ঘটে। এর পর থেকে ফুলটাইম মুখচুরির পেশা হয় যায়, যেখানেই যাই একটা নির্জন জায়গা দেখে বসে পড়ি একটা বই নিয়ে।
সচরাচর সমবয়সীদের তুলনায় কথা বলতাম কম, যা বলতাম তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হত ফিলোসফিকাল টাইপের, মানে এই দুনিয়ার সাথে সম্পর্কচ্যূত। এক পার্ফেক্ট পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতাম। ছোটবেলা থেকেই খুব শেল্টারড পরিবেশ বড় হলেও বুঝতাম এই পৃথিবীটা খুব একটা ভাল জায়গা না। তাই হোসেন ভাইয়া যখন বারান্দায় মরিচ শুকাতে দিতে দিতে ক্ষ্যাপাতে থাকত তখন বলতাম, ‘দাঁড়াও, মানুষ অলরেডি চাঁদে পৌঁছে গিয়েছে, কিছুদিন পর মঙ্গলেও চলে যাবে। কিছুদিনের ভেতর পৃথিবীর সব ভাল মানুষগুলো চাঁদে চলে যাবে, আর সব পঁচা মানুষগুলো পৃথিবীতে রয়ে যাবে। তোমাকে এখানেই থাকতে হবে, কারণ তুমি যে পঁচা!’ তবে অনেক বড় হয়ে বুঝেছি ভাল আর মন্দের তফাতটা এত স্পষ্ট বা এত সহজ নয়, একই মানুষ পরিস্থিতি এবং দৃষ্টিকোণ ভেদে দু’টোই হতে পারে। তাই হয়ত এত বছর পরেও আমি আর হোসেন ভাই এই একই পৃথিবীতে অবস্থান করছি।
বইয়ের পাতায় ডাইনোসরদের সাথে প্রাগৈতিহাসিক যুগে আর কল্পনার রকেটে বিভিন্ন গ্রহতারায় ঘুরে বেড়ালেও বাস্তবতার স্পর্শ তখনো জীবনে এসে লাগেনি। ছোটবেলায় আদর করে সবাইকে ডাকতাম কদু, শুধু রঙ হত আলাদা আলাদা। মৃত্যুর কন্সেপ্ট তখনো ছিলোনা। ভাবতাম আমার এই লাল কদু নীল কদুরা সবাই বুঝি অমর! আমি যখন বড় হয়ে যাব তখন ওরা আবার ছোট হয়ে যাবে, আবার ওরা বড় হতে হতে আমি ছোট হয়ে যাব। বাবা-মাকে বলতাম, ‘চিন্তা কোর না, যখন আমি বড় হয়ে যাব তখন তো তোমরা ছোট হয়ে যাবে, তখন আমি তোমাদের দেখব’। প্রথম মৃত্যু দেখি সাত বছর বয়সে, পাশের বাসার হাজী সাহেবের, আমি নিশ্চিত ছিলাম তিনি ঘুমোচ্ছেন আর তাঁর মেয়েরা কান্নাকাটি করে তাকে ডিস্টার্ব করছে, যেকোন সময় তিনি জেগে উঠে বলবেন, ‘অ্যাই কি শুরু করলি তোরা? ঘুমোতেও দিবিনা নাকি?’
যখন মৃত্যুর কন্সেপ্টটা মাথায় ক্লিয়ার হোল, তখন আবিষ্কার করা প্রয়োজন হয়ে পড়ল এর পর মানুষটা কোথায় যায়। তখন পড়াশোনা শুরু করলাম আখিরাত এবং কিয়ামাত নিয়ে। এতটুকু বুঝলাম, আমার পার্ফেক্ট পৃথিবীর অস্তিত্ব অলীক নয়, যদিও এর অবস্থান চাঁদ কিংবা মঙ্গলে নয়, জান্নাতে। তখন আবার গবেষনা করার প্রয়োজন হয়ে পড়ল জান্নাতে যেতে হলে কি কি প্রস্তুতি লাগবে। রাসূল (সা)সহ বিভিন্ন নবী রাসূল এবং বিখ্যাত ব্যাক্তিবর্গের জীবন থেকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করতে শুরু করলাম কি কি যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আট বছর বয়সে তাপসী রাবেয়ার জীবনী পড়ে পুরাই উতলা হয়ে গেলাম। নানী যখন রাতে ঘুমাতে ডাকল, বললাম, ‘তোমার জান্নাতে যাবার প্রয়োজন নেই তুমি ঘুমাও। আমি সারারাত নামাজ পড়ব’। নানী বলল, ‘না ঘুমালে শরীর খারাপ হবে’।

তাপসী রাবেয়ার প্রতিধ্বনি করে বললাম, ‘কবরে গেলে ঘুমোনোর অনেক সময় পাওয়া যাবে’। আধঘন্টা পরই দেখি ঘুমে ঢুলে পড়ে যাচ্ছি! ভাবলাম, নামাজই পড়তে হবে এমন তো কথা নেই, তাপসী রাবেয়া তো জিকরও করতেন, শুয়ে শুয়ে জিকর করলে নিশ্চয়ই কোন অসুবিধা নেই! নানীর পাশে শুলাম, নানী মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল, আরামে কোথায় যে হারিয়ে গেলাম! সকালে উঠে চোখ কচলাচ্ছি, দেখি নানী সামনে বসে মিটিমিটি হাসছে, ‘কি গো তাপসী, তোমার ফজরের নামাজ গেল কই?’ ঐ প্রকল্পের ওখানেই করুণ পরিসমাপ্তি!
কিন্তু শৈশবের এই জিনিসটাই সবচেয়ে মূল্যবান। অসম্ভব স্বপ্নকেও পরিপূর্ণ সততার সাথে লালন করা কেবল একজন শিশুর পক্ষেই সম্ভব। এই ইনোসেন্সই শৈশবের শক্তি। এই স্মৃতি আমাকে কাতর করেনা, বরং প্রেরণা জোগায়।
স্কুলে ভাল ছাত্রী ছিলাম না। স্কুলের বই বড় আটপৌরে লাগত। আমি তখন বিশ্বের এনসাইক্লোপিডিয়া পড়ছি – সম্রাট অ্যালেকজান্ডারের সাথে বেরিয়ে পড়েছি বিশ্বজয়ে, রাধানাথ শিকদারের সাথে এভারেস্টের উচ্চতা মাপঝোঁক করছি, মারিয়ানাস ট্রেঞ্চে ঊঁকিঝুঁকি করে দেখার চেষ্টা করছি কিছু দেখা যায় কিনা। কিছুদিন পরপরই নতুন বইয়ের সাপ্লাই আসে বাংলাদেশ থেকে। ছুটির দিনে বাবার সাথে সমুদ্রের পাড়ে মাছ ধরতে যাই; বাবার স্পন্ডিলাইটিস, ওজন আল্গানো নিষেধ, তাই বাজার ঘাট দোকানপাটেও আমি বাবার নিত্যসঙ্গী; ছোট ভাই দু’টোর গার্ডিয়ান আমি; আমার পড়াশোনার সময় কই?
একদিন হুট করে জীবনের সব গতি স্তব্ধ হয়ে গেল। দিন কাটতে লাগল হাসপাতালে, ডাক্তার থেকে ডাক্তারের চেম্বারে। তিনমাস পর একদিন নিশিযাপনের জন্যও ভর্তি হয়ে গেলাম। এগারো বছরের একটা কিশোরী যখন মৃত্যুর মুখোমুখি হয় তখন এক ঝটকায় তার বয়স অনেক বেড়ে যায়। আবুধাবীতে ভিজিটর্স আওয়ারের বাইরে কেউ দেখতে আসার অনুমতি নেই, বয়স কম বলে পরিবারের বাইরে কেউ আসার প্রশ্নই আসেনা। বাবা অনেকগুলো রিডার্স ডাইজেস্ট দিয়ে গেল। সেই প্রথম কল্পনাপ্রবণ মেয়েটির বিজ্ঞান, ইতিহাস আর কল্পকাহিনী ছেড়ে সত্যিকার মানুষদের সত্যিকার জীবনের সত্যিকার সমস্যার সাথে পরিচয়। পরিচয় হাসপাতালে আসা দুঃখী মানুষগুলোর সাথে, তাদের কষ্টের কাহিনীর সাথে, নিজের ভালোবাসা দিয়ে অ%?৯পরের দুঃখহারিনী নার্সদের উদারতার সাথে।
তখন মাত্র নানাপ্রকার গেম বাজারে আসতে শুরু করেছে। প্রথম দিককার গেমগুলো ছিলো ঘড়ি কাম গেম, সাইজে আজকালকার গেমগুলোর রিমোটের চেয়েও ছোট, নাম ছিলো গেম অ্যান্ড ওয়াচ। এসব জিনিসের প্রতি তেমন বিশেষ আকর্ষন ছিলোনা আমার। কিন্তু নিদ্রাহীন রাতে হসপিটালের বিছানায় একা শুয়ে কাঁহাতক ব?*+৯(ই পড়া যায়? তাই বসলাম খেলনাটা নিয়ে। স্ক্রীনের দু’পাশে ওপরে নীচে দু’টো করে মুরগীর খোপ, প্রতিটি খোপ থেকে নেমে এসেছে একটি করে পাটাতন, মুরগীগুলো ডিম পাড়ে আর ডিমগুলো নাচতে নাচতে পাটাতন বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে, মাঝখানে ঝুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে মিকি মাউস ডিমগুলোকে নীচে পড়া থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে করতে অস্থির, কারণ মুরগীগুলো প্রথমে ডিম পাড়ে একটা দু’টো করে, তারপর ডিম পড়তে থাকে অজস্র, অথচ তিনটা ডিম মাটিতে পড়লেই গেম ওভার!
গেম খেলতে খেলতে দু’টো সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম। এক, জীবনে সব প্রজাপতির পেছনে ছুটে লাভ নেই, একটা প্রজাপতিকে লক্ষ্য সাব্যাস্ত করতে হবে, সংকল্প করতে হবে এটিই আমার চাই, পথে যদি আরো কোন প্রজাপতি জালে আটকা পড়ে ভালো, কিন্তু অন্য প্রজাপতি ধরতে গিয়ে আসলটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে চলবেনা। দুই, অসামাজিক হবার কারণে সামাজিক কথাবার্তা এবং আচরনে যে ডিপ্লোমেসি লুব্রিকেন্ট হিসেবে কাজ করে সেগুলো আমার অভাব ছিলো। মনের কথা উগড়ে দিতাম চাঁচাছোলা অবস্থায়, তেলমসলা ছাড়া! বাবামা সারাক্ষণ অস্থির থাকত আমার কথাবার্তা কিভাবে ভদ্রস্থ করা যায়। যদিও এর জন্য ওদের পরিশ্রম করতে হয়েছে বহু বছর, তবু সুন্দর করে কথা বলা শিখতে পারিনি, শিখেছি বড়জোর চুপ করে থাকা। তবে জীবনের অভিজ্ঞতা এটাই শিখিয়েছে, বোবার শত্রু নেই কথাটা ভুল। যে আমাকে ভালবাসবে সে আমার ভুলত্রুটিগুলোকেও আপন করে নেবে। আর যে আমাকে ভালোবাসেনা সে আমার নীরবতার মাঝেও ত্রুটি খুঁজে নেবে। জীবনে সব ডিম রক্ষা করা যাবেনা, করার প্রয়োজনও নেই, সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে, তারপরও ডিম ভেঙ্গে গেলে তোয়ালে দিয়ে ফ্লোর পরিষ্কার করে বাকী ডিমগুলোর দিকে নজর দিতে হবে।
এর একমাস পর আল্লাহ আলৌকিকভাবে সুস্থতার পথ বাতলে দিলেন। হসপিটাল থেকে ফিরে এসে নিজের মাঝে এক বিশাল পরিবর্তন অনুভব করলাম। কল্পনাপ্রবণ কিশোরীটা রূপকথার জগত থেকে বেরিয়ে এসে একটু একটু করে বাস্তবতার দিকে পা বাড়াতে লাগল। তেরো বছর বয়সে আমি লিখি এক ঘোড়ার আত্মকাহিনী যেটা ইয়াং টাইমসের মূল ফিচার হিসেবে প্রকাশিত হয়। আমার নিজের লেখাগুলোর মাঝে এই লেখাটা আমার খুব প্রিয়।
এর শেষ লাইনটি ছিলোঃ Wanderers of the desert, heroes of war, we now stand in dirty stables, waiting for death’.

উপসংহার হোল, জীবনের গতিপ্রকৃতির ওপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে আমরা কি করব সে সিদ্ধান্তগুলো একান্তই আমাদের নিজেদের। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে জাবর কাটার মুহূর্তে কোন আক্ষেপ যেন আমাদের মনকে আচ্ছন্ন করতে না পারে সে সংকল্প আমাদের জীবনের শুরুতেই নিতে হবে। এই আমার শৈশবের শিক্ষা। এই শিক্ষাই আমার জীবনের প্রাপ্তি।

 

মেহরিন’ অস্ট্রেলিয়ার প্রথম মুসলিম নারী সিনেটর

নারী সংবাদ


প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়ার সিনেটে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মুসলিম নারী ‘মেহরিন ফারুকি’। বুধবার তাকে সিনেটের একটি শূন্য পদে মনোনয়ন দেয়া হয়। সিনেটর নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে গ্রিন পার্টির সাংসদ ছিলেন। ২০১৩ সালে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।

আগামী সপ্তাহে মেহরিন সিনেটর হিসেবে শপথ নেবেন।

বিবিসিকে মেহরিন বলেন, “তার কাজ হবে একটি ইতিবাচক অস্ট্রেলিয়া গড়ার পক্ষে, যেখানে ধর্ম-বর্ণের বিচিত্রতা থাকবে। তাঁর মতে, এই বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়ে (তাঁর সিনেটর হওয়া) অস্ট্রেলিয়ার ভবিষ্যৎ আরও শক্তিশালী হতে যাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “সিনেটর হিসেবে আমার প্রধান দায়িত্ব হবে বর্ণবাদকে পরাজিত করা।”

মেহরিন ১৯৯২ সালে পরিবারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া আসেন। পরিবেশ বিজ্ঞানে ডক্টরেট করা মেহরিন ক্যারিয়ার শুরু করার পরই রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই মুসলিম নারী পেশায় পরিবেশ প্রকৌশলী। তিনি নারীবাদী হিসেবেও বেশ পরিচিত।

সুত্র: খবর বিবিসি।

 

ক্লান্তিহীন ভালোবাসা

ডা. সাকলাইন রাসেল


মন খারাপ?
কি করেন আপনি মন খারাপ হলে?

-গান শোনেন?
-লেখালেখী করেন?
-বেড়াতে যান?
-সিনেমা দেখেন?
-ঘুরতে যান?
-আড্ডা দেন?

নাকি বিড়িতে টান দেন? নাকি এর চেয়েও বড় কিছু?
নাকি ঘুমের ঔষধ খেয়ে শুয়ে পড়েন..কমপক্ষে ৮ ঘন্টা.. একেবারে অর্ধমৃত ঘুম!

আমার পরিচিত কয়েকজন মানুষ আছে..মন খারাপ হলে তারা সাজুগুজু করেন..লম্বা সময় শাওয়ার নেন..আই মিন গোসল করেন..শপিং এ যান…এবং সত্যি সত্যি তাদের মন ভাল হয়ে যায়!
অবশ্য এই মানুষগুলোর সবাই নারী প্রজাতির!

আমার স্বভাব একটু ভিন্ন..অল্প স্বল্প মন খারাপে কিছুই হয়না..বেশি হলে মা কে খুঁজি!
সত্যি বলছি.. মা কে খুঁজি!
যেখানে যে অবস্থায় আছি..সেখান থেকে দৌড়ে যাই মা’র কাছে…পথে হাঁটতে গেলে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে মানুষ কি করে?উর্ধশ্বাসে দৌড় দেয়..আমিও তেমন হাসফাস করতে থাকি..কত দ্রুত মায়ের কাছে পৌছানো যায়!
আজও গেলাম..
মা ব্যস্ত মেহমানদারীতে.. ফাঁকে তার পাশে বসলাম..মা খাটে বসে..পা ঝুলছে ফ্লোরে..আমি ফ্লোরে বসে খাটে ঠেস দিয়ে!
একটু নীরবতা..কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলাম..বের হল না! বড় হওয়ার এই একটা সমস্যা..কথার পাহাড় জমে বুকে..অথচ গলায় এসে আটকা পড়ে..ঢাকার জ্যামের মত..যার শুরু আছে শেষ নেই!
ছোটবেলায় এমন ছিলাম না..মন খারাপ হলেই সোজা মায়ের গলা ধরে ভ্যা ভ্যা..এখন পারিনা..না পারাই নিয়ম..অথচ বড়রাও কাঁদে..ছোটদের সাথে এ কান্নার পার্থক্য আছে..এ কান্না শব্দহীন..অশ্রু অদৃশ্যমান!
তবে মা তো..প্রকাশ করা লাগেনা..ক্যামনে জানি বুঝে ফেলেন..সেই ছোটবেলার মত আজো!
-কী রে..মুখ শুকনা ক্যান? দুপুরে কি খেয়েছিস?

তিনি আসলে মনের খবর নিতে সাহস পাচ্ছিলেন না..বড়দের মনের খবর নিতে নাই..ইগোতে লাগে!
মনে হচ্ছিল..গলাটা ধরে সেই ছোট বেলার কেঁদে উঠি..আম্মু, কিছু ভাল লাগছেনা!
প্রতিবারের মত আজও পারলাম না..মনের সব কষ্ট বড় শরীরের প্রাচীরে আটকা পড়ে গেল..সাগরের উত্তাল ঢেউ যেমন পাহাড়ের বুকে আঁচড়ে পড়ে..তেমনি!
আমার একটা হাত ঘাড়ে ছিল..মা সেদিকে তাকিয়ে বলল, কি রে, ঘাড় ব্যথা?
হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম!
মা ঘাড় ম্যাসাজ করে দিচ্ছেন..
কীরে, তোর গা এত্তো গরম ক্যান?..চুলগুলো কি বড় হইছে?.মাথায় তেল দিস না?
স্বভাব সূলভ এসব প্রশ্ন মা করেই যাচ্ছেন..আশ্চর্য বিষয় হল, তিনি কোন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সুযোগ দিচ্ছেন না..কখনো দেনও না..হতে পারে এটা তার ভালোবাসা প্রকাশের অন্য এক মাধ্যম..যা কেবল বয়োবৃদ্ধ সন্তানের জন্য প্রযোজ্য!
মায়ের হাতের ছোঁয়ায় কষ্টগুলো যেন অশ্রু হয়ে গলে যাচ্ছিল..তবে চোখের কোণে পৌঁছাতে পারছিল না!..বুকের মাঝে বড় একটা বুদবুদ তৈরী করে হারিয়ে যাচ্ছিল!
মা উঠে দাঁড়াল..না, আগের মত স্বান্তনা দিল না..তবে মন ভাল করার দ্বিতীয় থেরাপি প্রয়োগ করল!
-চা খাবি?
হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম!
চা টা অনেকক্ষণ ধরে খেলাম..হঠাৎ মা এসে বলল, কিরে এখনো শেষ হয়নি?
কারণ, চা যতই গরম হোক..আমি তা দ্রুতই শেষ করে ফেলি!
তাড়াতাড়ি করে চা শেষ করায় মনোযোগী হলাম..মা কাপে হাত দিয়ে অবাক হলেন,
কি রে..চা তো একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে!
কিছু বলার আগেই মা চায়ের কাপ নিয়ে সোজা রান্নাঘরে গেলেন!
মা কে আর বলাই হল না..ঐ চা ঠান্ডা হওয়ার পিছনে বাতাসের কোন ভূমিকা নাই..চোখের অনেক শীতল অশ্রু চায়ের কাপে এসে উষ্ণ হয়ে গেছে!
বোকা মা..
সব বুঝে.. কিন্তু বোঝে না..আমি এখন শুধুই তার সন্তান না..এই মানুষটাও কারো পিতা..অশ্রু লুকিয়ে তাকেও নিজ সন্তানকে আগলে রাখতে হয়..অনন্ত যাত্রার আগে ক্লান্তিহীন ভালোবাসা দিয়ে!

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৩

তাহনিয়া খান


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

আমি হজ্জের উপর পড়ালেখা শুরু করলাম। আমাদের এজেন্সি আমাদের ট্রেনিং দিল। কিভাবে হজ্জ করবো, হজ্জের সময় কোথায় থাকবো, মক্কা মদিনায় অসুবিধা হলে কাকে কি জিজ্ঞেস করবো, হারিয়ে গেলে কোথায় যেতে হবে, যতরকম খুঁটিনাটি বিষয় আছে আমাদের মোয়াল্লেম দুদিন ধরে সেসব বুঝালেন। তখন অনেক কিছু না বুঝলেও শুনে রেখেছিলাম, যেটা পরবর্তীতে কাজে লেগেছিল।

মক্কা মদিনায় গিয়ে বুঝলাম যে, একটা ভালো এজেন্সির গুরুত্ব অনেক। এজেন্সির সার্ভিস পাওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ন, তেমনি হজ্জ গ্রুপের যিনি মোয়াল্লেম হবেন, তাকে হতে হবে একজন আলেম। আল্লাহ্‌র স্পেশাল নেয়ামত হিসাবে আমরা একটা ভালো এজেন্সির মাধ্যমে যেতে পেরেছি। আর পেয়েছিলাম এমন একজন মোয়াল্লেম, যিনি শুধু আলেম না, একজন ভালো মনের মানুষ। হাজীদের খেদমতের জন্য উনি উনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গিয়েছিলেন হাসি মুখে। একি প্রশ্ন হাজারবার করলেও উনাকে কখনো রাগ হতে দেখিনি।

সেখানে গিয়ে এমন অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে, যারা তাদের এজেন্সির বদনাম করতে করতে অস্থির। এমন অনেক লোক গিয়েছে যে হজ্জ তো দূরের কথা কিভাবে উমরা করতে হয় জানে না। তাদের এজেন্সি শুধু তাদের কে এনে ছেড়ে দিয়েছে। মোয়াল্লেমের কোন পাত্তা নেই।

যতই জেনে বুঝে আর পড়ালেখা করে যাই না কেনো , সেখানে গিয়ে একজন এক্সপার্ট সাথে থাকলে কাজের অনেক সুবিধা হয়, আর ভুল কম হয়। আমাদের মোয়াল্লেম গ্রুপ করে উমরা করিয়েছিলেন। প্রতিবার প্রতিটা গ্রুপের সাথে ছিলেন। একবার শিখে গেলেই আর সমস্যা হয় না।

এক মহিলার সাথে মক্কায় কথা হয়েছিল। উনার এজেন্সি উনাদের দুই দিন হোটেল দিতে পারেনি। তারা বাংলাদেশ হজ্জ মিশনের রাস্তার উপর ছিলেন। তারপর যখন হোটেল পেলেন, সেখান থেকে নামায পড়তে আসলেন। তখনো উমরা করেননি। জানেনও না কিভাবে উমরা করবেন। উনাকে শেখালাম কতক্ষন ধরে। একটু পরে দেখি উনার গ্রুপের এক মহিলা এসে উনাকে নিয়ে গেলেন উমরা করানোর জন্য।

যাই হোক আমি অফিস করি, বাসায় কাজ করি, বাচ্চাদের সামলাই, এর মাঝে পড়ালেখা করি। হজ্জের নিয়ম শিখি, মাসলা-মাসায়েল পড়ি, নেট সার্চ করি। আমার বাচ্চারা আমার পড়ালেখা দেখে, উত্তেজনা দেখে। বলে, ‘তুমি এত এক্সাইটেড কেনো, মা ?’

আমি আমার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারিনা ঠিকমত। যতদিন বেঁচে থাকবো, আমি আসলে কোনদিন কাউকে এই অনুভূতি বুঝাতেও পারবো না। শুধু মনে হয় যে, আমি প্রস্তুত হচ্ছি। এমন এক জায়াগায় যাচ্ছি যেখানে নবীদের পায়ের ধুলো আছে। দুনিয়াকে পিছনে ফেলে এমন এক জায়গায় যাচ্ছি যেখান থেকে নাও ফিরে আসতে পারি। দুনিয়ার সবচেয়ে পুণ্যবান আর উৎকৃষ্ট জায়গায় আমি আল্লাহ্‌র মেহমান হয়ে যাচ্ছি। যখনি ভাবি আমার মত তুচ্ছ, পাপীকে আল্লাহ্‌ উনার বড়ত্ব দিয়ে, রহমত দিয়ে, আমাকে এত সম্মান দিতে চাচ্ছেন তখন আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনা।

যখন আমার যাওয়ার দিন স্থির হয়ে গেলো, আমি তখন আমার আত্মীয়স্বজন, বন্ধু বান্ধব, কলিগদের জানালাম যে, আমি হজ্জে যাচ্ছি। দোওয়া চাইলাম সবার কাছে, যেনো ঠিকমত হজ্জ করে আসতে পারি। আমার খুশী, আমার আনন্দ তখন বিষাদে পরিনত হলো।

আমার হজ্জে যাওয়ার কথা শুনে সবাই জিজ্ঞেস করে কার সাথে যাচ্ছি। আমি উত্তরে বলি, আমার ছোট ভাই তাপসের সাথে। সবার তখন প্রায় একি ধরনের কথা, কেউ ইনিয়ে বিনিয়ে আকার ইঙ্গিতে অথবা সরাসরি বলে , কেন আমি আমার স্বামীর সাথে যাচ্ছি না। আর স্বামীর সাথে যখন যেতে পারছি না তাহলে তার যখন সময় হবে, তখন তার সাথে গেলেই তো হয়। হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ ছাড়া কেউ আমার হজ্জে যাওয়া নিয়ে খুশী না। কারণ একটাই, আমি আমার স্বামীর সাথে যাচ্ছি না।

আমি যখন বাসায় এহরামের কাপড় পরে এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠতে যাবো, তখনো হাতে ‘বেহেশতি জেওর’ নিয়ে হজ্জের মাসলা-মাসায়েলের পাতা বের করে একজন বললেন, হ্যা, তুমি তোমার স্বামী ছাড়া হজ্জে যেতে পারবে। আমি অবাক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠেছিলাম।

আমরা এমন এক সমাজে বাস করি, যেখানে মানুষ তার ধর্মীয় কাজ সঠিক ভাবে করতে গেলে বাধা আসে। আর হাজারটা বেদাআত করে গেলে কোন মানা নেই। মানুষকে বুঝানোর পরেও মানুষ বুঝে না যে, নিজের ইচ্ছা দিয়ে ইসলাম চলে না, সমাজের ইচ্ছা দিয়ে ইসলাম চলে না। আল্লাহ্‌র নিয়ম দিয়েই ইসলাম চলবে।

হজ্জের প্রধান দুটো শর্ত হচ্ছে শারীরিক সুস্থতা আর অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা। মানুষের যখন এই দুটি জিনিস একসাথে থাকবে, তখনই তার হজ্জ ফরয হয়ে যাবে। তাছাড়া মুসলিম হওয়া, পাগল না হওয়া, স্বাধীন থাকাও হজ্জের শর্তের মধ্যে পরে। একবার হজ্জ ফরয হয়ে গেলে তখনই হজ্জ করে ফেলতে হবে। কারণ শারীরিক সক্ষমতা থাকলেও কারো অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা হারিয়ে যেতে পারে।
আবার অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা থাকলেও শারীরিক সক্ষমতা হারাতে পারে। তখন কি হবে ?

আমার স্বামী ভবিষ্যতে হজ্জে যেতে পারবে কি না আমি সেটা জানিনা। ইন শা আল্লাহ্‌ , যদি সে হজ্জে যায়,তখন আমার কোন অবস্থা হবে সেটাও আমি জানি না। আল্লাহ্‌ না করুক, সে যদি হজ্জে না যেতে পারে , তাহলে পরে আমি কার সাথে যাবো ? একটা মানুষও এর উত্তর দিতে পারে না, কিন্তু তারা আমার হজ্জে যাওয়া নিয়ে অখুশি।

এখানে একটা জিনিস উল্লেখ করি , সেটা হলো অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার মাপকাঠি কি ? হজ্জে যাওয়া আসার ভাড়া এবং সেখানে যতদিন থাকবো, ততদিন থাকার মত টাকা পয়সা হাতে থাকলেই মূলত অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার মাপকাঠি। এখন আপনি যদি বলেন আপনি হিল্টন হোটেলে থাকবেন আর তার ভাড়া দেওয়ার মত অবস্থা আপনার নেই, আর সেজন্য আপনার হজ্জ ফরয হয় নি। তাহলে আপনি ভুল করবেন। নুন্যতম থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারলেই হবে। ইদানিং অনেক হজ্জ এজেন্সি বিভিন্ন প্যাকেজ দিয়ে থাকে। সর্বনিম্ন প্যাকেজের টাকা হাতে থাকলে কিন্তু হজ্জ করতে হবে বলে মনে করি। যেহেতু আমি কোন আলেম না, তাই কোন ফতোয়া দিতে চাই না। প্রতিটা ব্যক্তির উচিৎ তার হজ্জ ফরয হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে আগ্রহ থাকা এবং সেই অনুসারে কোন আলেমের সাথে কথা বলে জেনে নেওয়া। এ ব্যাপারে একটা লিঙ্ক দিলাম । http://islamqa.info/en/ref/41957

যাই হোক, আমি নিজেও মনের কষ্টে ভুগছিলাম যে আমি আমার স্বামীর সাথে যেতে পারছি না। তার উপর মানুষের নেতিবাচক কথা আমার উপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করছিল। আল্লাহ্‌তায়ালা আমাকে সেই সব চাপ উপেক্ষা করতে সাহায্য করেছিলেন। জীবনে যা কিছু করবো, শুধু আল্লাহ্‌কে খুশী করার জন্যই করবো– এই নিয়ত আমার মনকে স্থির করেছিল।

মহা উৎসাহে আমি বাচ্চাদের নিয়ে, স্বামীকে নিয়ে, আম্মু আর ভাইদের নিয়ে হজ্জের জন্য কেনাকাটা করেছি, হজ্জ ক্যাম্পে গিয়েছি, মেডিক্যাল চেকআপ করিয়েছি।

হজ্জের তৃতীয় শিক্ষা—মানুষ যা কিছুই বলুক না কেন, সত্যের পথে থেকে আল্লাহ্‌র উপর ভরসা করলে আল্লাহ্‌ সঠিক পথ দেখিয়ে মানসিক প্রশান্তি দিয়ে দেন।

চলবে…

রূপান্তরের যাত্রা পর্ব-২

 

হেভেন অফ সেভেন

ফাতিমা খান


” আমার বয়স কতই বা হবে তখন, বড়জোর পাচ কি ছয়। আমার মায়ের জন্মদিনে ‘সাম্পাগিতা’ (বেলী ফুল) ফুল দিয়ে মালা বানিয়ে ছিলাম। মা আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলেন। আমি নিশ্চুপ হয়ে মায়ের চোখে তাকিয়ে ছিলাম।স্বপ্নহীন, আশাহীন এক শূন্যতা ছিল তার দুই চোখে, এখনো ভুলিনি।”

লোরেন আমার নার্স। একটানা বলেই যাচ্ছে মায়ের কথা। ওর চোখ দুটো ছলছলে। মানুষের চোখে একই সাথে আনন্দ আর কষ্টের অশ্রু বড় মায়াবী দেখায়!

“আমার মায়ের খুব পছন্দের ফুল সাম্পাগিতা, ইংরেজীতে যাকে আমরা বলি জেসমিন। আমাদের বাড়ির ছোট্ট বাগানটায় জেসমিন ফুলের গাছটা মা ই লাগিয়ে ছিলেন। গাছটা বড় হওয়ার সাথে সাথে মায়ের স্বপ্ন গুলোও বড় হচ্ছিল প্রতিদিন। বাবা মার বিয়ের সময় আমার মায়ের গহনা বলতে ছিল শুধু এই ফুলের মালা। সাদা গাউন আর সাদা ফুলের মালা দিয়ে সাজানো মাকে ব্রাইডাল ফটো গুলোতে এঞ্জেল এর মত লাগছিল! আমার সেই রুপবতী মায়ের সাথে আজকের মায়ের চেহারার সামান্যই মিল খুঁজে পাই।

সাম্পাগিতা আমাদের ন্যাশনাল ফ্লাওয়ার, ডক। তাগালোগ ভাষায় “সাম্পা- কিতা ” অর্থ হল ”আই প্রমিস ইউ”। আমার মাকে বাবা সাম্পাগিতার মালা পরিয়েছিলেন ঠিক বাট হি ডিড নট কিপ হিস প্রমিস।

বাবার নেশা ছিল মদ আর বার বণিতায়। বাবা নেশায় বুদ হয়ে মাকে গালিগালাজ করতেন, খুব মারতেন। আধা রাতে বাড়ি এসে “লোরেনা……” বলে আমাকে ডাক দিতেন দরজা খুলে দিতে। বাবার স্মৃতি বলতে আমার এটুকুই মনে আছে। মা অনেক কষ্ট পেলেও হাসি হাসি মুখ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। মায়ের এই গুণটা আমি পেয়েছি। আমিও সূক্ষভাবে এই কাজটা করতে পারি। ভেবে দেখেন দিনের একটানা আটঘন্টা আপনি আমার সাথে কাটান। বাট কুড ইউ এভার প্রেডিক্ট মাই মাইন্ড ডক?..আই বেট, নো। হাহাহা। “

শুনছি আর ভাবছি সত্যিই তো! আমি তো এই লোরেন কে চিনতাম না। আমি যে লোরেন কে চিনি সে এক জন টিপিকাল হাসিখুশী প্রফেশনাল নার্স।

“মা রাত জেগে ব্র‍্যান্ড বেকারীর অর্ডার গুলো রেডি করতেন। আলো না ফোটা ভোরে ঘুম থেকে উঠে মায়ের হাতে বানানো কেক আর বান রুটিগুলো নিয়ে যেতাম ব্র‍্যান্ড বেকারি তে। আমার দুই বছরের ছোট ভাইটা আমার সাথে ছুটে চলত তার ছোট ছোট পায়ে। আমার সাথে আসার তাড়াহুড়োতে তার জুতা পরা হত না। মা চলে যেতেন সাহেব দের বাড়ির লণ্ড্রীর কাজ করতে, বড় পাচ ভাইবোন চলে যেত স্কুলে। মায়ের বানিয়ে রেখে যাওয়া গরম গরম বান এক হাতে আর অন্য হাতে ছোট ভাইটার হাত ধরে আমি চলে যেতাম পাহাড়ের কাছে।

ইউ নোউ ডক, আমাদের প্রভিন্সটা নীল আর সবুজে সাজানো একটা হেভেনলি প্লেস। সৃষ্টিকর্তা আমাদের দুটো চমৎকার উপহার দিয়েছিলেন। একতো আমাদের মা আর দ্বিতীয় হল পাহাড় আর সাগর ঘেরা আমাদের এই প্রভিন্স। উইকেন্ডে মা আমাদের নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতেন। মায়ের হাতের লেমন গার্লিক ফিশ গ্রীল…. উফফ! পাহাড়ের পাদদেশে রক্তজবার বাগানের (Gumamela garden) পাশে বসেই আমরা লাঞ্চ শেষ করতাম।

..সেই দিনগুলো আর তো ফিরে আসবে না। কষ্টের সময়গুলো একা একাই পার করেছেন মা,সবটুকু একাই সয়ে নিতেন, শুধু সুখের পুরোটুকু দিতেন আমাদের।

আমি বড় হয়েছি পাহাড়ের গায়ে ছিটকে পড়া সূর্যকিরণ আর সমুদ্রজল লাল করা সুর্যাস্ত দেখে দেখে। সমুদ্র পাড়ের একটা বড়সড় কালো রকে বসে থাকতাম যখন ইচ্ছে। নোনা পানির জোয়ার ভাটা দেখতাম। মুখে ফেনা তোলা ঢেউগুলো দৌড়ে এসে আছড়ে পড়ত পাড়ের বুকে। নীল আকাশে গোল গোল মেঘগুলো দাদুর জটাপাকানো সাদা চুলের খোপার মত মনে হত।

Have patience, do sacrifice. Bad times will fly like an arrow-
মা বলতেন। শুধু যুগের ব্যবধান, আমরা সত্যি সত্যি মায়ের জন্য সাত রত্ন হয়ে গেলাম একদিন। আমার বড় ভাইটা যেদিন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করল সেদিন মা আনন্দে কেঁদেছিলেন। এরপর একে একে আমরা সব ভাইবোন প্রফেশনাল হয়ে গেলাম।

মাকে নিয়ে আমরা ম্যানিলায় চলে আসি। মা আমাদের নতুন বাড়ির নাম দিলেন Heaven of Seven। ম্যানিলার পশ সোসাইটির মা রাও আমার মাকে আজ ঈর্ষা করে এ‍্যন্ড উই আর প্রাউড অফ হার।

 

ও বেলার গল্প

ম নি র মো হা ম্ম দ


গল্পটা তাদের জানা যারা ৯০ দশকে আমাদের সাথে বড় হয়েছেন, তাদের জীবনের জানা অধ্যায়! যা নিজ চোখে আমরা দেখেছি আর আমাদের আগামী প্রজন্ম হয়ত গল্পটা শুনে বলবে, “বাবা আসলেই কি সত্যি?” চলুন গল্পটা শুনে আসি। গল্পটা আবেগ আর ভালোবাসার এক মিশ্রণ।

তখনকার সময় এলাকার বেশিরভাগ বাড়ি ঘরই ছিল মাটির তৈরী। একটু অবস্থাপন্ন গেরস্তদের মাটির ঘরের উপরে টিনের চালা দেওয়া হত। আশে- পাশে কয়েক ক্রোশ এর মধ্যে পাকা বাড়ি চোখে পড়ত না। চোরের উৎপাত ছিল উল্লেখ করার মত। প্রায়ই সন্ধ্যে হলেই কোন না কোন বাড়ি থেকে চিৎকার শুনা যেত। বিশেষ করে গরু চুরির কথা। কেউ কেউ গোয়াল ঘরে মাছা বেঁধে থাকত গরু পাহারা দেওয়ার জন্য। প্রায়শই চোর ধরার খবর শুনা
যেত, দল বেঁধে চোর দেখতে যেতাম। চোরের মার খাওয়া আহত চেহারা দেখে নিজেদেরই তখন খুব খারাপ লাগত।

আমার কিছু বন্ধু ছিল, যারা স্কুল শেষে বাড়ি ফিরেই তাদের বাবার কাজে হেল্প করত। তাদের খেলাগুলোও ছিল অদ্ভুত।‘চারা‘ নামক একটা খেলা ছিল। মাটির কলস এর ভাঙ্গা টুকরা ছিল চারা। মাটিতে একটা ঘর কেটে একজন চারা ছুড়ে মারত। তারপর অন্য জনকে চ্যালেঞ্জ করা হতো ওই চারার
কাছাকাছি অন্য একটা চারা পৌঁছানোর। বাজিও ধরা হতো। বাজির বিভিন্ন উপকরণ ছিল,যেমন ম্যাচের খোসা বা বিভিন্ন সিগারেটের প্যাকেট। কখনো চকলেটের মোড়ক। এই খেলাটা খেলতাম উঁচু নিচু মাটিতে বা মাটির ঢিবিতে। এছাড়াও চারা খেলার বাজি ছিল কাল এক ধরণের গাছের বিচি। (এলাকায় বড়দিরা বা রনা গাছ) নামে পরিচিত।

প্রতি সপ্তাহে অনেককেই দেখেছি ব্যাগ ভরে সেই সব বিচি নিয়ে বাজারে সের হিসেবে বিক্রি করতে। মাঝে মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে চারা খেলা খেলতে যেতাম। প্রায়ই কারোনা কারো কাছে ধরা পড়ে যেতাম। শাস্তি হিসেবে আব্বার হাতে বেতের বাড়ি। আহারে কী মজার খেলাই না ছিল! প্রথমে আমার কিছু বন্ধুদের কথা বলেছিলাম, তাদের কিছু ক্ষমতা দেখে চোখ কপালে তুলে ফেলতাম। বড় বড় গাছ খুঁজে খুঁজে পাখির বাসা থেকে পাখির ছানা চুরি করাই প্রধান কাজ ছিল তাদের। এদের দেখে দেখে নিজেও একবার চেষ্টা করতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে হাত ভেঙে এক মাস বিছানায় শুয়ে ছিলাম। তাদের অনেকের সাথেই
অনেক দিন দেখা নেই। কিন্তু সেই টানটা আজ সংসারের টানে কোথায় জানি হারিয়ে গেছে?

ধান কাটার মৌসুুমে প্রতিদিন সকাল বেলা কিছু ফেরিওয়ালা আসত। ধানের বিনিময়ে মুড়ির নাড়ু আর সেগারিন দেওয়া আটার রসগোল্লাহ খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতাম। গড়গড় শব্দ করে কটকটি ওয়ালা আসলে ভাঙা কাচের বোতল, বাতিল টিন আর পুরুনো স্যান্ডেলের ফিতা দিয়ে কটকটি খাওয়া, আহারে কী আনন্দ!

মাঝে মাঝে গলা উচিয়ে কেউ আওয়াজ করে রাস্তা দিয়ে গেলে বুঝে নিতাম গরুর চিকিৎসা করার জন্য কেউ যাচ্ছে। সেই আওয়াজ এর মাঝেও একটা ভিন্ন সুর ছিল, ছিল একটা আবেগ।

প্রতি বৃহ:পতিবার আমরা পাঁচজন নামে একটা ফকির গ্রুফ ছিল,যারা “মায়াগো আমরা পাঁচ জন” হাঁক ছেড়ে ভিক্ষা করত। বাড়িতে বাড়িতে মাটির হাড়ির পসরা সাজিয়ে আসত কুমাররা। কিছু মহিলা বিক্রেতা ছিল মসলা বিক্রিই ছিল তাদের প্রধান কাজ। মাঝে মাঝে সোয়া সের চালের বিনিময়ে মুডি ভাজার হাঁড়ি নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরত তারা। আজ তাদের কাউকেই দেখিনা। কিন্তু তাদের কথাগুলো কেন জানি মনের আঙিনায় আলো ছড়ায় আজও। কলা গাছের গেইট আর মই দিয়ে নতুন জামাই আটকে সেলামী নেওয়া হত। সেলামী বাবাদথালা ভর্তি লাল চিনি আর বাতাসা দেওয়া হত। অনেকেই গেইট ফাঁকি দেওয়ার জন্য কাক ভোরেই নতুুন শ্বশুর বাড়ি চলে যেত।

কিছু কিছু ছেলেপুলে সিরিঞ্জের ভিতর লাল রং ঢুকিয়ে সাদা কাপড় নষ্ট করে দিয়ে দাঁত বের করে হাসত। মারামারি ঝগড়া ছিল বিয়ে বাড়ির নিত্য ঘটনা। সামান্য কারনে বিয়ে ভেঙে পর্যন্ত যেত। যাই হোক সবি ওবেলার
গল্প। আহারে আজ সবই শুধু স্নৃতি! প্রায়ই সাইকেলের সাথে টেপ রেকর্ডার বেঁধে পিছনে ব্যাটারি লাগিয়ে নতুন জামাই শ্বশুর বাড়িতে আসত। জামাইয়ের পিছনে পিছনে বাচ্ছাদের লাইন লেগে যেত আর টেপরেকর্ড এ বাজতো মামু-ভাইগন্নার কিচ্ছা। কী ভালোইনা লাগতো!

ঈদের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই বন্ধুদের সাথে পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। গোসল শেষ করার পর আম্মা আবার ঢলে ঢলে গোসল করাতেন। আগের দিন এক টাকা দিয়ে কিনে আনা রঙীন কাগজের টুপি মাথায় দিয়ে নতুন জামা কাপড় পরে সেমাই খাওয়া,দাদার হাত ধরে ঈদের নামাজে যাওয়া কী যে আনন্দ ! আজ সবই আছে কিন্তু শৈশবের সেই ঈদের দিনের আনন্দগুলো জীবনের পরতে হাতরে বেড়াই জানি আর পাবোনা, সব যেন হারিয়ে গেছে কালের দহনে।

একদিন চাচা বিরাট এক টেপ রেকর্ডার কিনে আনলেন। বাড়িতে বিনোদনের নতুন মাত্রা যোগ হল। কয়েক মাইল দূর থেকে ব্যাটারি চার্জ করে আনা হত। বিকাল হতেই সেই টেপ রেকর্ডার শুনার জন্য আশে-পাশের লোকজন ছুটে আসত। বিভিন্ন ধরণের ভান্ডারি আর বাংলা ছায়া ছবির গানই ছিল তখনকার জীবনের এক মাত্র আনন্দ! কেউ কেউ গান শুনে বলত আহারে কী আজব যন্ত্র! মানুষের মাথাত কত বুদ্ধি! কেউ কেউ বলত, “শেষ, শেষ দুনিয়া আর বেশি দিন নাই, কেয়ামতের আলামত।”

আহারে তাদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই। কিন্তু তাদের কথাগুলো ছন্দের তালের মত আজও কানে বাজে।

তরুন কথা সাহিত্যিক,
মনির মোহাম্মদ।

 

স্বাস্থ্য ও ত্বকের রূপচর্চায় আলু

ঘরকন্যা


আলু হচ্ছে সব ঋতুতে পাওয়া একটি সবজি। সাধারণত সবার ঘরেই সবসময় আলু থাকে। আলুর রস ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্যকর একটি উপাদান। আজকে আলুর রস এর কিছু ব্যবহার সম্পর্কে জানব।
আলুর রস আমাদের সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার। গবেষণা দ্বারা তা সমর্থিত, এবং তাদের কয়েকটি অন্ধভাবে অনুসরণ করা হয়েছে।

কেন আলুর রস ব্যবহার করবেন আপনি?

কিছু উপকারিতা:

১.আলুতে গুরুত্বপূর্ণ পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে – পুষ্টিকর যে ঠান্ডা এবং সংক্রমণ মারামারি এবং ইমিউন সিস্টেম জোরদার সাহায্য করে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

২. আলুর রসের বিস্ময়কর হল, জয়েন্টে, জরায়ুতে, এবং নানান সংক্রামক ব্যাথায় ব্যথার উপশম করতে সাহায্য করে।

৩. মাথার Migraines এর জটিল ব্যথায় তেও আলুর রস কাজ করে।

৪.কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার ক্ষেত্রেও আলুর রস উপকারী ভীষণ। এক গ্লাস আলুর রস ব্যবহার করে জিআই ট্র্যাক্ট পরিষ্কার করা এবং কব্জি সুস্থ করতে সাহায্য করে।

৫.কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয় আলুতে থাকা ফাইবার এবং ভিটামিন এ, বি-জটিল এবং সি মত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবারহ করে। এই পুষ্টি শরীরের কোলেস্টেরল মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

৬.অ্যাল্স্স নিরাময় ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, আলুতে আল্ট্রাসক্যাটিক অণু রয়েছে যা আলসার এবং হৃদরোগকে নিরাময় করে।

৭.কিডনি রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করে
ক্যালরির কার্যকারিতা এবং ক্যালসিয়াম পাথর গঠনের ঝুঁকি হ্রাসে আলুর রসের ভূমিকা অনেক।

৮.ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মসৃণ হবার জন্য আলুর রস যুগ যুগ করে ঘরে ঘরে ব্যবহার করা হয়।

৯.চোখের নিচের কাল দাগ কমাতেও আলু ব্যবহার করা হয়।

১০.চুলের জন্য, অথাৎ চুলের সিলকি ভাব বৃদ্ধি, চুল পড়া কমান, এবং খুশকি কমাতেও আলুর রস ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ২

তাহনিয়া খান


Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say [20:25-28]

আমার হজ্জে যাওয়ার বছর দু’এক আগে অফিসে একদিন মেয়েদের নামাজের ঘরে নামাজ পড়ছিলাম। একজন অপরিচিত মহিলাও নামাজ পড়ছিলেন। তিনি আমাদের অফিসে কাজ করেন না। নামাজ শেষে উনার সাথে কথা বলছিলাম। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম যে, সে বছরই উনি উনার স্বামীর সাথে হজ্জে যাবেন। আমার তো আগ্রহ বেড়ে গেলো। খুঁটিনাটি জিজ্ঞেস করা শুরু করলাম। উনি উনার জীবনের আশ্চর্য ঘটনা বললেন।

উনি তার আগের বছর হজ্জের নিয়ত করে ব্যাংকে টাকা রাখা শুরু করেন। খুবই কম টাকা রাখেন প্রতিমাসে। হিসেব করে দেখলেন যে, যে পরিমান টাকা উনি রাখছেন, কমপক্ষে ২৫ বছর লাগবে নূন্যতম হজ্জের টাকা জমতে। তারপরেও হজ্জের টাকা জমাতে শুরু করলেন। এর কিছুদিন পরেই হঠাত করেই উনার স্বামী অফিস থেকে বেশ কিছু টাকা পেলেন। আর সে টাকা দিয়েই উনারা এখন হজ্জে যাবেন বলে ঠিক করে ফেললেন। উনি শুধু আমাকে বললেন, নিয়ত করে ফেলেন আপা। শুধু এই ভদ্রমহিলা না, আমি যত মানুষের কাছে হজ্জের ঘটনা শুনতে চেয়েছি, সবাই একবার করে বলেছে, ‘নিয়ত কর’।

আমি তো নিয়ত বহু আগেই করে ফেলেছি। টাকা হাতে আসে আবার খরচ হয়ে যায়। কিন্তু সেই মহিলার কথা শুনে আমি এবার শুধু হজ্জের নিয়তে টাকা জমানো শুরু করলাম। একটা বক্সে যখন যেমন পারতাম রাখতাম। হাতে নতুন টাকা আসলেই বক্সে রেখে দিতাম। সেটা কখনো পাঁচ টাকা হতো, কখনো একশ বা এক হাজার টাকার নোট হতো। খুব সামান্যই জমা হয়েছিল। বাকি সব টাকা তো আল্লাহ্‌ আম্মুর মাধ্যমেই যোগার করে দিলেন।

আমার জন্য হজ্জের দ্বিতীয় শিক্ষা—নিয়ত একটা বিশাল বড় ব্যাপার। কেউ যদি কোন কাজের নিয়ত করে তাহলে আল্লাহ্‌ কোন না কোন ভাবে সেটা পূরণ করবেনই। সেটা দেরিতে হলেও হবে। তবে নিয়ত হতে হবে একদম মনের গভীরতা থেকে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে, আমি নিয়ত করলাম উত্তরা থেকে বনানী যাবো। শুধু মনে মনে ঠিক করলেই হবে না, আমাকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। তারপর প্রস্তুতি নিয়ে নির্দিষ্ট পথে যেতে হবে। এই প্রস্তুতি নিয়ে নির্দিষ্ট পথে যাওয়াটাই আসল নিয়ত। এখন আল্লাহ্‌ আমাকে নিয়ে যেতে পারেন বা নাও পারেন, এটা আল্লাহ্‌র ইচ্ছা। তবে বুকের গভীরে বিশ্বাস রাখতে হবে যে আল্লাহ্‌ আমাকে আমার জায়গায় পৌছিয়ে দিবেন। এটা আমার উপলব্ধি। আমার এই উপলব্ধির সাথে অনেকের মতের মিল নাও হতে পারে।

চলবে….

পর্ব ১

 

হাজেরাদের কুরবানী

কানিজ ফাতিমা


যুবতী এক মহিলা, কালো বর্ণের দাস। জীবনের স্বাভাবিক চাওয়া গুলোও যার জন্য স্বপ্নের মতো। এমন জীবনে কালো আকাশে নক্ষত্রের আলোর মতো নেমে এলো এক চিলতে সৌভাগ্য – ইব্রাহীম (আ) এর মতো ব্যক্তির স্ত্রী হওয়া আর ইসমাঈল (আ) এর মতো পুত্র সন্তানের মা হওয়ার সৌভাগ্য।

কিন্তু সে সুখও বেশীদিন যেন কপালে সইতে চায় না। আল্লাহর নির্দেশ আসলো শিশুপুত্র নিয়ে চলে যেতে হবে সুদূর মরুভূমিতে, যেখানে জনমানব তো দূরের কথা পশু-পক্ষীও যায়না। রসহীন শুষ্ক মরু প্রান্তর – যেন মৃত্যুরই আরেক নাম।

অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, নিশ্চিত মৃত্যু। – কিন্তু তাতে কি ? আল্লাহর আদেশ মেনে নিলেন যুবতী মাতা। শিশু কোলে স্বামীর পেছনে চললেন বালু সমুদ্রে।

স্বামী চলে গেছেন কিছু পানি আর খাদ্য রেখে। নির্জন মরুপ্রান্তরে কেবল দুধের শিশু নিয়ে কাটালেন তিনি কয়েক দিন, কয়েক রাত। রাতে আকাশের তারার আলো ছাড়া আর কোনো আলো নেই। গহীন নিস্তব্ধতা – গা ছম ছম করা নীরবতা। তবু তিনি প্রশান্ত – যে আল্লাহ এমন নির্দেশ দিয়েছেন তিনিই রক্ষা করবেন ; তিনিই ভরসা – এমনই অটল বিশ্বাস।

কিন্তু খাবার যে ফুরিয়ে এলো, পানিও নেই; তৃষ্ণার্ত মা, ক্ষুধার্ত শিশু। বুকে একফোঁটা দুধও নেই। কি খেয়ে বাঁচবে বুকের ধন একমাত্র সন্তান ? বিচলিত মা দৌড়ে বেড়ালেন সাফা থেকে মারওয়া, মারওয়া থেকে সাফা। একবার, দুইবার, এমনি করে সাতবার।

না, একফোঁটা পানি কোথাও নেই, মানিক বুঝি আর বাঁচে না।
স্বামী নেই, সংসার নেই, সহায় নেই , বিত্ত নেই – এমন জীবনের একমাত্র সম্বল এই শিশু পুত্র -তাও বুঝি হারিয়ে যায়।

হাজেরার বুক চিরে আহাজারী; হায় সেটা শোনার জন্যও তো একটা প্রাণী নেই।

ক্লান্ত ভারাক্রান্ত মা ফিরে এলেন শিশুর কাছে –
একি? যে আর্তনাদ কেউ শোনেনি তা শুনেছেন রব
যে ত্যাগ কেউ দেখেনি তা দেখেছেন আল্লাহ;
শিশু ইসমাইলের পায়ের কাছে বইছে পানির ফোয়ারা।

যেন ফিরে এলো সুখের পায়রা;
পানি হলো ,
পানিকে ঘিরে বসতি হলো –
ছেলে বড় হতে থাকলো সুস্বাস্থ আর সুন্দর চরিত্র নিয়ে।
স্বামীও মাঝে মাঝে এসে থেকে যায় কিছু দিন। বাবা-ছেলের ভালোবাসা দেখে নয়ন জুড়ায় মা হাজেরার। দুঃখের দিন বুঝি ঘুঁচলো।

হঠাৎ একদিন স্বামীর কপালে চিন্তার রেখা –
কোনো দুসংবাদ নয়তো? জানতে চাইলেন হাজেরা।
ছেলেকে কুরবানী করার নির্দেশ এসেছে আল্লাহর কাছ থেকে।

একমাত্র সন্তান
একমাত্র সম্বল
একমাত্র স্বজন
হারাতে হারাতে ফিরে পাওয়া বুকের মানিক
যাকে ছাড়া এই মায়ের আর কিছুই নেই;
তাকেই স্বামীর হাতে তুলে দিতে হবে চির বিদায় জানিয়ে।

স্বামী ইব্রাহীমের আরেক সন্তান আছে, গোত্র আছে; স্ত্রী সারাহ আছে;
দাসী হয়ে জন্মানো হাজেরার ইসমাইল ছাড়া তো আর কিছু নেই। – তাতে কি ? আল্লাহর নির্দেশ এবারেও তিনি পালন করলেন।
আগের বারতো নিজের সামনে ছেলের ক্ষুধা-তৃষ্ণায় মৃত্যু দেখার মতো কুরবানীতে প্রস্তুত ছিলেন; এবার তবু দেখতে হবেনা। কথাতো একই – সর্বোচ্চ ত্যাগ।

এভাবেই এক মা দুই-দুইবার নিজের একমাত্র সম্বল সন্তানকে আল্লাহর নির্দেশে ত্যাগের জন্য প্রস্তুত ছিলেন নির্দ্বিধায়।

কুরবানী কেবল ইব্রাহীম (আ) করেননি
কেবল ইসমাঈল (আ) করেননি
হাজেরাও করেছেন।

আমাদের সমাজ হাজেরাদের কোরবানী মনে রাখে তো ?

 

ঈদ মানে খুশিঃ সবাইকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা

অপরাজিতা ডেক্স


ঈদুল আযহা বা ঈদুল আজহা (আরবীতে:عيد الأضحى) ইসলাম ধর্মাবলম্বিদের সবচেয়ে বড় দু’টো ধর্মীয় উৎসবের একটি। বাংলাদেশে এই উৎসবটি কুরবানির ঈদ নামে পরিচিত। এই উৎসবকে ঈদুজ্জোহাও বলা হয়। ঈদুল আযহা মূলত আরবী বাক্যাংশ। এর অর্থ হলো ‘ত্যাগের উৎসব’।

মহান আল্লাহর আদেশে হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর আপন পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করার ঘটনাকে স্বরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা এই উৎসবটি পালন করে।

এ দিনটিতে মুসলমানেরা তাদের সাধ্যমত ধর্মীয নিযমানুযায়ী উট,গরু,দুম্বা কিংবা ছাগল কোরবানি করে।
এ এক অনাবিল আনন্দ, যে আনন্দের কোনো তুলনা নেই। এ আনন্দ আল্লাহর নৈকট্য লাভের আনন্দ। এ আনন্দ গুনাহ মাফের এবং বৈষয়িক ব্যস্ততাকে বাদ দিয়ে পরলৌকিক জগতের পাথেয় সংগ্রহ করার আনন্দ। এ আনন্দ গরিব-দুঃখীর সাথে একাত্ত্ব হওয়ার আনন্দ। এ আনন্দ পশু কোরবানীর সাথে সাথে মনের পশুকে পরাস্থ করার আনন্দ।

অথচ বাস্তবে আমরা কি দেখি-যে আনন্দের বারতা নিয়ে মুসলমানদের ঈদ আসে সে অন্তরালে ডুকরে কাঁদে। মনের পশুকে জবেহ করার পরিবর্তে আমরা হয়ে উঠি পশু হন্তারক। অশান্তির প্রচণ্ডতায় দগ্ধ হই আমরা। কিন্তু এটাতো ইসলামের শিক্ষা নয়।

পাশবিকতাকে মন থেকে নির্মূল করে মনুষ্যত্ব ও ত্যাগের শিক্ষাদানের জন্যই বিশ্ব স্রষ্টা আল্লাহ তা’আলা দান-সদকা, কুরবানীসহ অন্যান্য ইবাদতসমূহ মানুষের উপর আরোপ করেছেন। এসব কিছুর মাধ্যমেই আমরা যাতে আমাদের মনের পাশবিকতাকে ধ্বংস করে মনুষ্যত্বসহ অন্যান্য ভালোগুণগুলো অর্জন করতে পারি।

 

রূপান্তরের যাত্রা – ১ম পর্ব


তাহনিয়া খান


Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

জীবনের অনেক স্বপ্ন বা ইচ্ছা আমার পূরণ হয়নি। সে জন্য মাঝে মাঝে দুঃখবোধ হলেও নিজেকে বুঝাই যে, আল্লাহ্‌ যা করেন তা ভালোর জন্যই করেন। আলহামদুলিল্লাহ্‌, কিছু জিনিস আল্লাহ্‌ আমাকে না চাইতেই দিয়ে দিয়েছেন। আবার কিছু স্বপ্ন পূরণ করে দিয়েছেন একেবারে সারপ্রাইজ দিয়ে। আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে তেমনই একটি সারপ্রাইজ গিফট হচ্ছে আমার হজ্জে যাওয়া।

ছোটবেলায় হজ্জের দিন সৌদি চ্যানেল থেকে বিটিভিতে সরাসরি হজ্জ দেখাতো। আরবিতে কি সব বলতো, কিছুই বুঝতাম না। শুধু মানুষ দেখতাম। আর ‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক’ ধ্বনি শুনতাম। কেমন সুর করে ,ছন্দ দিয়ে সবাই একসাথে বলতো, খুব ভালো লাগতো শুনতে। ছোট থেকে শুনতে শুনতেই দোওয়াটা মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। প্রতি বছর আমি আগ্রহ নিয়ে হজ্জ দেখি।

যখন বড় হলাম, তখন একদিন শুনলাম যে, ইব্রাহীম (আঃ) যখন হজ্জের জন্য সবাইকে ডাক দিয়েছিলেন, তখন যার যার কানে সেই ডাক পৌছিয়েছে তারাই নাকি শুধু হজ্জে যাবে। এই কথা শোনার পর থেকেই শুধু মনে হতে লাগলো যে, ‘ আমার কানে সেই ডাক কি পৌছিয়েছে?’ প্রতিবার কোন না কোন পরিচিত লোক হজ্জে যান আর আমার মনে হয় এই লোক ডাক শুনেছেন। তখন নিজের কথা চিন্তা করি।

দিন যায় আর আকর্ষন বাড়তে থাকে। আমার স্বামীর সাথে কত প্ল্যান করি। সে বলে, আগে উমরাহ্‌ করে সব দেখে আসবে, তারপর পরেরবার হজ্জ করতে যাবে। আমি বলি, আগে হজ্জ করবো, তারপর যত ইচ্ছা ততবার উমরাহ্‌ করবো ইন শা আল্লাহ্‌। এই নিয়ে কত মনমালিন্য। অথচ দুইজনের কারোই হজ্জ বা উমরাহ্‌ করার সামর্থ্য হয়নি। চিন্তা করলে এখন হাসি আসে। আমি প্রতিদিন দোওয়া করতে থাকি, আল্লাহ্‌ হজ্জ করার তৌফিক দাও প্লিজ।

একটা সময় আমার হজ্জ করা ফরয হয়ে যায়। কিন্তু আমার স্বামীর তখনও হজ্জ ফরয হয়নি। আবার আমার এমন অবস্থাও নেই যে, দু’জনে মিলে যেতে পারবো। মন খুব খারাপ থাকে। মাহরাম ছাড়া তো যেতে পারবো না। আল্লাহ্‌র কাছে দোওয়া করি। প্রতিবার ভাবি, এ বছরই বুঝি যেতে পারবো। কিন্তু যাওয়া আর হয় না। হজ্জের দিন টেলিভিশন দেখি আর চোখ দিয়ে পানি পরে।

২০০৩ সালে আব্বু আর আম্মু হজ্জ করে আসলো। তখন আমার হজ্জ ফরয হয়নি। হলে চলে যেতাম তাঁদের সাথে। এর মাঝে টাকা পয়সা আমি খরচ করে ফেলেছি। হজ্জ ফরয হয়ে বসে আছে আর এখন টাকাও নেই। মন আরো খারাপ থাকে। ২০১১ সালে আমার ছোট দুই ভাই, তানভির আর তাপস হজ্জে যাবে বলে ঠিক হয়। খুব কম সময়ের মাঝে তারা এই সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও তানভিরের তখনো হজ্জ ফরয হয়নি, কিন্তু তাপসের হজ্জ ফরয হয়ে গিয়েছে। আম্মু তখন তানভির আর তাপসকে বললো, ‘তানিয়ার তো হজ্জ ফরয হয়ে গিয়েছে। যেহেতু তানভিরের হজ্জ ফরয হয়নি তাহলে তানিয়াই তাপসের সাথে যাক। সে তো মাহরাম ছাড়া যেতে পারবে না’। আমার ভাইয়েরাও দেখল যে আম্মু তো খারাপ কিছু বলেনি। তারাও রাজি হয়ে গেলো। এরপর আম্মু আমাকে ফোন দিল। আমি তো শুনে মহা খুশী। খুশীর চোটে আমার হার্টবিট এত বেড়ে গিয়েছিল যে আমার পাশে যদি সে সময় কেউ থাকতো তাহলে অবশ্যই তা শুনতে পেতো।

ফোন রাখার পর মন খারাপ হয়ে গেলো। শুধু মনে হলো, হায় আল্লাহ্‌ ! আমি আমার স্বামীর সাথে যেতে পারবো না ? আবার ভাবলাম যে হজ্জ ফরয তো আমার হয়েছে। আমি যদি এখন হজ্জে না যাই, তাহলে তো আল্লাহ্‌র কাছে আমাকেই জবাব দিতে হবে। আর নবীজী (সাঃ) তো বলেই দিয়েছেন যে কারো যদি হজ্জ ফরজ হয়, আর সে যদি তা পালন না করে মারা যায়, তাহলে সে ইহুদী হয়ে মারা যাক বা নাসারা হয়ে মারা যাক উনার কিছুই যায় আসে না।

আমি জানি, আমার স্বামী আমার কোন কাজে বাধা দেয় না। এ ব্যাপারেও সে কোন বাধা দিবে না। কিন্তু তার অনেক মন খারাপ হবে। তার স্বপ্ন আমাকে সাথে নিয়ে হজ্জ করা । সেদিন সে অফিস থেকে বাসায় আসলে আমি তাকে আম্মুর আর আমার সিদ্ধান্তের কথা জানালাম। তাকে বুঝালাম যে, ‘দেখো, হজ্জ ফরয আমার। তুমি যদি বাধা দাও তাহলে তুমি গুনাহর ভাগীদার হয়ে যাবে। তাছাড়া টাকা-পয়সা সব সময় হাতে থাকে না। শরীরটাও যে সবসময় আমার ভালো থাকবে তারও কোন গ্যারান্টি নেই। আর আমার সব খরচ এখন আম্মু দিয়ে দিবে। এটা তো আমার জন্য বিশাল একটা সাপোর্ট’। সে শুধু বললো, ‘ঠিক আছে তুমি হজ্জে যাও। কিন্তু আমি যখন হজ্জে যাবো আমি একাই যাবো’। বুঝলাম অনেক অভিমান নিয়ে কথা বলছে। আমি বড় হাসি দিয়ে বললাম, ইন শা আল্লাহ্‌, আল্লাহ্‌ তোমার সাথে আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন।

আম্মু কে সাথে সাথে ফোন দিলাম। বললাম যে, আম্মু, হজ্জে যাচ্ছি ইন শা আল্লাহ্‌। এরপর আমি ছিলাম এক ঘোরের মাঝে। আমি জানলাম আমার হাতে সময় আছে প্রায় দুই মাসের মত। এর মাঝে আমাকে এজেন্সির সাথে কথা বলতে হবে ,অফিস থেকে পারমিশন নিতে হবে, ছুটি নিতে হবে । হজ্জের ব্যাপারে লেখাপড়া করতে হবে, প্রশিক্ষন নিতে হবে, হজ্জের যাওয়ার জন্য জামা কাপড় সহ আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্র কিনতে হবে, ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হবে, ইত্যাদি হাজারো কাজ। সবচেয়ে বড় কথা এজেন্সি আমার ভাইয়ের বদলে আমাকে নিবে কিনা। আমি এত এক্সাইটেড যে কি বলবো। নিজেরি বিশ্বাস হতে চাচ্ছে না যে হজ্জে যাচ্ছি। তানভির দৌড়াদৌড়ি করে এজেন্সির সাথে সব কিছু ঠিক করার চেষ্টা করতে লাগলো। সে শুধু বললো, ‘আপু ,দোওয়া করতে থাকো। সব ঠিক হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ্‌’। যতক্ষন পর্যন্ত কনফার্ম না হই ততক্ষন পর্যন্ত কাউকে বলতেও চাচ্ছিলাম না।

এরপর শুরু হলো মিরাকেলের উপর মিরাকেল। এজেন্সি রাজি হয়ে গেলো। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে অফিস থেকে দেড় মাসের জন্য ছুটি পেয়ে গেলাম। এজেন্সি ভুল ঠিকানা দেওয়াতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় ঝামেলা হওয়ার আগেই আল্লাহ্‌ সেই সমস্যারও সমাধান করে দিলেন। শুধু আমার জন্য কিছু ভাইয়েরা কষ্ট করলেন। এর মাঝে আর্থিক সমস্যা দেখা দিল। সেটারও সমাধান হয়ে গেলো।

হজ্জের প্রথম শিক্ষা হচ্ছে – আল্লাহ্‌ যদি কারো ভালো চান বা কাউকে ভালো কিছু দিতে চান, সেটা তিনি দিবেনই দিবেন। আল্লাহ্‌ আপনার জন্য চেয়েছেন, আর আপনি তা পাবেন। সারা দুনিয়ার মানুষ বিপক্ষে থাকলেও বা বাধা হয়ে দাঁড়ালেও কোন লাভ নেই। কারো কোন ক্ষমতা নেই আল্লাহ্‌র চাওয়াকে নষ্ট করতে।

চলবে

 

মনের জানালা সৌন্দর্য

আফরোজা হাসান


প্রতিটি মানুষের মধ্যেই হিলিং পাওয়ার আছে। হিলিং মানে আরোগ্য। হিলিং পাওয়ার মানে, আরোগ্য লাভের ক্ষমতা। যার প্রয়োগে একজন ব্যক্তি অন্য যে কারো তরে যেমন আশা জাগানিয়া হতে পারে, তেমনি হতে পারে নিজেই নিজের সাপোর্ট সিস্টেম। অর্থাৎ, যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে নিজেই নিজেকে বের করে নিয়ে আসার ক্ষমতা কিংবা অন্তত পক্ষে প্রচেষ্টা। হতাশার ঘোর অন্ধকারে মনের দরজা জানালা বন্ধ করে বসে না থেকে চারপাশ হাতড়ে যদি কয়েকটা পাথর খন্ডও মিলে যায়, তার দ্বারা নিজকে আলোকিত করার প্রচেষ্টা। স্টিভ মারাবলি খুব চমৎকার একটা কথা বলেছেন, “দ্য মোস্ট পাওয়ারফুল রিলেশনশিপ ইউ উইল এভার হ্যাভ ইজ দ্য রিলেশনশীপ উইথ ইউর সেলফ।” শুধু তাই না মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তিও কিন্তু সে নিজেই। মানুষের দুর্বল হবার প্রথম ধাপটাই হচ্ছে, নিজকে ভুলে যাওয়া, নিজকে মূল্যায়ন না করা, নিজের ভেতরের শক্তিকে না চেনা, নিজের মধ্যের আলোকে না খোঁজা। মানুষের সুখ, শক্তি, আশ্রয় সবকিছুই হয় অন্য মানুষকে ঘিরে। মানুষ তার মনের এক মূহুর্তের শান্তির অনুভূতির জন্য মোহতাজ হয়ে যায় অন্য মানুষের। আমার কথার অর্থ এটা নয় যে, আমরা কাউকে ভালোবাসবো না, কারো মাঝে শান্তি, স্বস্থি খুঁজবো না, কাউকে নিজের ভরসায় আশ্রয়স্থল হতে দেবো না। সবকিছুই করবো কিন্তু সেই সাথে নিজেকেও মনে রাখবো, মূল্যায়ন করবো, নিজের সাথে গড়ে তুলবো চমৎকার বন্ধুত্ব, আত্মার সম্পর্ক। যাতে চলার পথে যদি কখনো কারো হাত ছুটে যায়, কারো সাথ ছুটে যায় তখন নিজেকে আঁকড়ে ধরে নিজেকে সামলে নেয়াটা অন্তত সম্ভব হয়।

আলো আঁধার পৃথিবীর স্বাভাবিকত্ব। চড়াই উৎরাই মানুষের জীবনের স্বাভাবিকত্ব। সময় কখনোই একরকম যাবে না! প্রিয়জনরা সর্বদাই পাশে থাকবে না! ঋতু চক্রের মতো বদলাবে কাছের মানুষদের রঙ-রুপ। সম্পর্কের বাঁধনে জোয়ার যেমন আসবে, ভাটাও আসবে। আপনজনেরা হাসাবে আবার কাঁদাবেও। সবার চেয়ে আপন যে জন সেও কখনো শ্রাবণে সিক্ত করবে, কখনো তপ্ত রৌদ্রে দাহন করবে! নিজেকে সবকিছুর জন্য প্রস্তুত রাখাটা জীবনে স্বস্থি ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। জীবন কখনো কখনো এমন মোড়ে নিয়ে যায় যেখানে নিজের কোন দোষ না থাকার পরেও ভুক্তোভোগী হতে হয়। আবার কখনো কখনো অনেক বড় ভুলও ক্ষমা পেয়ে যায় সময়ের উদারতায়। কখনো আমরা নির্দিষ্ট কোন কারণই খুঁজে পাই না ভোগান্তির পেছনে! ঠিক এমনি করে অনেক প্রাপ্তি যোগ হয় জীবন ভান্ডারে, যার কারণ জানার প্রয়োজনই বোধ করিনা। হুম, এটাই বলতে চাচ্ছি যে আমরা মানুষেরা অপ্রাপ্তির হিসাবে এত মশগুল থাকি যে প্রাপ্তিগুলো তেমন করে নজরেই আসে না। প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতি, মানুষ আমাদেরকে যতটা না হতাশ করে, তারচেয়ে বেশি নিরাশ করে ইতিবাচকতার প্রতি আমাদের উদাসীনতা। আমরা মুখে মুখেই শুধু দাবী করি জীবন একটি পরীক্ষাক্ষেত্র। আমরা এখানে প্রতিমূহুর্তে পরীক্ষা দিচ্ছি। দুনিয়া আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। আমরা নিজের জন্য ফসল ফলাচ্ছি। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে, আমরা পরীক্ষা দিতে প্রস্তুতই নই। তাই পরীক্ষা এলে প্রশ্নপত্রের দিকে ভালো মতো নোটিশ না করেই হাত-পা এলিয়ে বসে যাই। অন্যের কষ্টার্জিত ফসলের পানে চেয়ে আমরা হাহাকার করি নিজের ভাঁড়ার ঘর শূন্য বলে। কিন্তু নিজের ভাঁড়ার ঘর পূর্ণ করার জন্য পরিশ্রম করতে আমরা নারাজ, অপারগ, নানান অভিযোগ, বাহানার বেড়াজালে বন্দী।

এমন অবস্থা থেকে পেতে চাইলে মুক্তি, নিজেকেই হতে হবে নিজের শক্তি। জানতে হবে জীবনের মূল লক্ষ্য, সেই উদ্দেশ্যে নিজকে করতে হবে দক্ষ। জীবন মানেই আলো আঁধারির খেলা, কখনো পাশে থাকবে কেউ কখনো শুধুই একলা। তবুও পাড়ি দিতে হবে দুর্গম পথ, নিজের সাথে নিতে হবে দৃঢ় শপথ! দুঃখ আসুক কিংবা সুখ, অন্তর কখনো হবে না আখিরাত বিমুখ… ইনশাআল্লাহ।।

 

অধিকার

মোঃ দেলোয়ার হোসেন !


ভিক্ষা চাইতে আসিনি ,
এসেছিলাম আমার অধিকারের দাবী নিয়ে !

এ অধিকার,
আমার জন্মগত অধিকার !

এ অধিকার,
আমার খেটে খাওয়া পিতার কলিজার ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে,
“পনেরো” টাকা উপার্জনের অধিকার !

এ অধিকার,
আমার মায়ের একআধ বেলা না খেয়ে থেকে ,
“আটত্রিশ” টাকা সঞ্চয়ের অধিকার !

এ অধিকার ,
আমার ভাইয়ের সারাদিন রোদে পোড়ে বৃষ্টিতে ভিজে, জমিতে লাঙ্গল চষে,
পুরো পরিবারের খোরাকি উৎপাদনের অধিকার !

এ অধিকার ,
আমার বোনের মাটির ব্যাংকে পরম মমতায় গুঁজে রেখে
তিল তিল করে জমানো প্রতিটি চকচকে পয়সার অধিকার !

এ অধিকার ,
আমার সারা অঙ্গে লেপ্টে থাকা সুবাসিত,
অগনিত ধূলিকণা ও কাদামাটির অধিকার !

আমার এ অধিকার চাওয়ার বিনিময়ে,
আঘাতে আঘাতে আমি ক্ষতবিক্ষত হলাম !
সেই সাথে ক্ষতবিক্ষত হলো ,
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের প্রতি ইঞ্চি মাটি !

কালের সাক্ষী হয়ে রইলো যে কলংকিত ইতিহাস ,
তা তোমাদের কখনো ক্ষমা করবেনা !
কক্ষনো না !!
কক্ষনো না !!!

 

দাম্পত্য জীবনে দুইটা ব্যাপার

কানিজ ফাতিমা


দাম্পত্য জীবনে দুইটা ব্যাপারে সচেতন থাকুন।
এক – আপনার বাবা-মা যেন পিতা-মাতার প্রতি কর্ত্যব্যের নামে আপনাকে তাদের জীবনের সব আশা-আকাঙ্খা পূরণের হাতিয়ারে পরিণত না করে। তখনই বুঝবেন আপনি সীমা ছাড়াচ্ছেন যখন দেখবেন তাদের বর্তমান জীবনের চাহিদা পূরণ করার পরও তাদের চাহিদার শেষ হচ্ছেনা। তাদের ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে এমনকি তাদের অতীতের (যেমন বাল্যকালের) সব ইচ্ছাপূরণে আপনাকে বাধ্য করা হচ্ছে। আপনার পিতা -মাতার বর্তমান আপনার দ্বায়িত্ব। যখন আপনার স্ত্রী- সন্তানের বর্তমানকে আপনার কম্প্রোমাইজ করতে হচ্ছে পিতা-মাতার ভবিষ্যত সিকিউর ও অতীতকে রোমাঞ্চকর করার জন্য – বুঝে নেবেন তখনি আপনি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন।
দুই – আপনার স্পাউজ যেন আপনার সন্তানকে ‘মুলা’ হিসাবে ব্যবহার করে আপনাকে আপনার পিতা-মাতার দায়িত্বের প্রতি বেখেয়াল করে ফেলতে নাপারে। যখনই দেখবেন আপনার সন্তানের সাধারণ প্রয়োজনকে বেশী মাত্রায় জোর দেয়া হচ্ছে, আপনার পিতা-মাতার অতীব প্রয়োজনের থেকে ; আপনার পিতা -মাতার বর্তমানের জরুরী চাহিদার বিপরীতে আপনার সন্তানের ভবিষ্যতকে বেশী গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে তখনই বুঝবেন ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে।
“বাচ্চার পরীক্ষা, তাই শশুড় – শাশুড়ী বেড়াতে আসতে পারবেনা ”
“বাবার বাড়ী গেলে বাচ্চা ভালো থাকে, শশুর বাড়ী গেলেই বাচ্চা অসুস্থ হয়ে যায় ”
“শশুড় বাড়ী এসি নাই, বাচ্চার ঘুমাতে কষ্ট হবে।”
শ্বাশুড়ীর ওষুধ কেনার সময় “বাচ্চার ব্যাগ পুরানো হয়ে গেছে, ছেলেটা কত দিন ধরে একটা ব্যাগের জন্য বলছে – সেদিকে খেয়াল নেই ” ; ” মেয়েটার পার্টিতে যাবার ভালো একটা জামাও নেই “- এই জাতীয় বাহানা পেশ করা আসলে ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ।
বাবা-মা আর স্পাউজ – দু’ই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। কিন্তু আমরা না বুঝেই অনেক সময় বাবা-মাকে greedy করে ফেলি , স্পাউজ আর সন্তানদের অবহেলার মধ্যে ফেলে; আবার অনেকসময় স্পাউজের বাহানার ফাঁদে পরে বাবা-মাকে নিদারুনভাবে neglect করি।
ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করুন।
ভারসাম্যই ন্যায়, ভারসাম্যহীনতাই অন্যায়, জুলুম; সেটা যেদিকেই হোক না কেন।

 

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল……শেষ পর্ব

আফরোজা হাসান


এইজন্যই তো আমি বলি কোনদিন বিয়ে করবো না! ছবি আঁকা বন্ধ করে বাক্যটির উৎস সন্ধানে চোখ তুলে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ননদকে দেখে অন্তরা হেসে বলল, আবার কি হলো তোমার? ভাবীর পাশে এসে বসে শারলিন বলল, বিয়ে মানেই হচ্ছে নিজ জীবনের সব স্বপ্ন সাধের অবসান করে অন্যের রঙে রাঙিয়ে যাওয়া।

– অন্তরা হেসে বলল, একে অন্যের রঙে মিশে যাওয়া তো খারাপ কিছু না।

– একে অন্যের রঙে মিশে যাওয়া খারাপ কিছু না ঠিক, কিন্তু এমনটা তো ঘটে না। ছেলেরা নিজেদেরকে বদলায় না, বৌকে বাধ্য করে বদলাতে। এই যে তুমি এত চমৎকার ছবি আঁকো, এক সময় স্বপ্ন দেখতে পেইন্টার হওয়ার। বিয়ের পর কি সেই স্বপ্ন তোমাকে ছেড়ে দিতে হয়নি? তোমার কি মনেহয় না ভাবী তুমি তোমার প্রতিভাকে তার সঠিক পথে চলতে দাওনি? আমি হলে কখনোই এমন করতাম না। কারো জন্যই নিজের স্বপ্নকে ত্যাগ করতাম না। তুমিই বলো অন্যের জন্য নিজের জীবনের স্বপ্নকে বদলে ফেলাটা কি ভুল নয়?

-হয়তো ভুল। তবে জীবনের পথে এগিয়ে চলতে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় মানুষকে মাঝে মাঝে এমন ভুল করতে হয়। তবে ভুলটাকে ধরে বসে না থেকে যদি সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে সেটা জীবনের উপর তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনা। তাছাড়া একটা স্বপ্ন পূরণ করতে হলে মানুষকে আরেকটা স্বপ্ন ছাড়তে হয়।

-এটা তো নিজেকে নিজে সান্ত্বনা দেয়া কথা।

-আমার ধারণা এটা নিজেই নিজের কষ্টের কারণ হওয়া থেকে বাঁচার উপায়। আমার একটু ত্যাগ যদি আমার জীবনকে সুখী-সুন্দর করতে পারে, তাহলে কেন আমি সেটা করতে কার্পন্য করবো বলতো। তাছাড়া আমি কিন্তু আমার স্বপ্নকে হারিয়ে যেতে দেইনি। সময় পেলে আমি ছবি আঁকি, টুকটাক ডিজাইন করি নিজেদের জন্য। আসলে আমরা চাইলেই একই সাথে নিজের এবং আপনজনদের স্বপ্নগুলোকে পূরণ করতে পারি। কিন্তু আমরা সে চেষ্টা না করে নিজের ফলস ইগোর পাল্লায় পরে শুধু শুধু জীবনকে জটিল করে তুলি। হ্যা এটা ঠিক যে একটা স্বপ্নকে ছেড়ে দিতে অনেক কষ্ট হয় আমাদের কিন্তু পুরনোকে বিদায় না দিলে তো নতুনকে পাওয়া যায়না। আর নতুনকে পাবার পথে যদি একটা স্বপ্ন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সে স্বপ্নটাকে ছেড়ে দেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

-মেয়েরাই কেন ছাড় দেবে সবসময়?

-এখানে আবার ছেলে-মেয়ে আসছে কেন? সংসারের সুখের জন্য স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলেই চেষ্টা করতে হবে। ছাড় দেয়াটা যখন যার জন্য সহজ হবে তখন সে দেবে। সংসার তো কোন প্রতিযোগিতা নয় যে সারাক্ষণ হার-জিতের চিন্তা করতে হবে।

-সবাই তো এভাবে চিন্তা করেনা। একবার মেয়েরা ছাড় দিলে ছেলেরা সুযোগ পেয়ে যায়।

-সবার চিন্তা করে আমি আমার জীবনকে কেন জটিল করবো? অন্যের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি আমার জীবনকে চালাতে চাইনা। সমস্যা কিন্তু ছাড় দেয়া বা না দেয়া নিয়ে নয়। সমস্যাটা হচ্ছে বেশির ভাগ মানুষই জানেনা সে কেন ছাড় দিচ্ছে। যদি জানতো তাহলে ছাড় দেয়াটা কখনোই ইস্যু তৈরি করতো না সংসারে। কিন্তু আমি জানি আমি কেন ছাড় দিচ্ছি। আমি ছাড় দিয়েছি আমার নিজের সুখের জন্য। আমি আমার ছোট্ট একটা স্বপ্নকে ত্যাগ করেছি সারাজীবনকে স্বপ্নিল করার আশা নিয়ে। আর এরজন্য যতবার আমাকে ছাড় দিতে হবে আমি দেব ইনশাল্লাহ। তোমার ভাইয়া কি করছে সেটা তাঁর ব্যাপার। আমি শুধু আমার দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে চাই। আর একজন যখন নিঃস্বার্থভাবে তার দায়িত্ব পালন করবে, অন্যজন সেই প্রভাবমুক্ত থাকতে পারেনা বলেই আমার বিশ্বাস।

– কিন্তু সবসময় তো এমন হয় না ভাবী। নিঃস্বার্থভাবে ত্যাগ করেও অন্যকে প্রভাবিত করা যায় না। বরং এই ত্যাগের সুযোগই গ্রহণ করে সবাই।

– সেক্ষেত্রে এটাই হচ্ছে পরীক্ষা। যখন মানুষ তার ভালো কাজের মূল্য পায় না, উল্টো তাকে আরো অবহেলিত হতে হয়, আমি মনেকরি সেটাই তারজন্য পরীক্ষা। আর এরচেয়েও বড় কথা হচ্ছে আমাদের সকল কাজের প্রতিদান শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে আশা করতে হবে।

– তারপরও ভাবী শুনতে যত সহজ শোনায়, এত সহজ নয় এসব বিষয়।

-হেসে, আচ্ছা প্রশ্ন কঠিন এই ভয়ে কি আমরা পরীক্ষা দেয়া ছেড়ে দেই? উহু বরং পরীক্ষায় পাশের লক্ষ্যে খুব ভালো মত প্রস্তুতি নেই। সম্পর্কের মাঝের সমস্যাগুলোকে যদি আমরা পরীক্ষা মনে করে, পাশ করার লক্ষ্যে নিজেদেরকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করতাম তাহলে খুব ভালো রেজাল্ট না করলেও ফেল অন্তত করতাম না। টেনেটুনে পাশ হয়তো করেই যেতাম।

– হেসে, তোমার সাথে তো কথা বলাই মুশকিল। ঠিকই নিজের মত প্রতিষ্ঠা করে ফেলো কথা মায়াজালের ফাঁদ পেতে। এজন্যই তো সবাই তোমাকে এত পছন্দ করে।

-হেসে,আলহামদুলিল্লাহ! তোমাকে একটা গল্প বলি চল। বেতবন আর জলপাইগাছের মধ্যে নিজেদের শক্তি নিয়ে তর্ক চলছিলো। জলপাইগাছ বলল, তুমি তো একটু বাতাসেই নুয়ে পড়ো। তোমার আবার শক্তি কোথায়? বেতবন একথার কোন উত্তর দিলো না। কিছুক্ষণ পর ঝড় এলো। প্রচণ্ড ঝড়। বেতবন ঝড়ের ঝাপটাকে কোনরকম বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলো না। বাতাসের ধাক্কায় একবার সে এদিকে নুয়ে পড়ে আরেকবার ওদিকে। ঝড় শেষে দেখা গেলো ঝড়ের ধাক্কা সামলে উঠেছে সে, দাঁড়িয়ে আছে নিজের পায়ে।
এদিকে বিরাট শক্তিশালী জলপাইগাছ তো নুতে পারেনা। সে বাতাসের ধাক্কাকে ঠেকিয়ে রাখতে না পেরে ভেঙ্গে পড়লো। এখন বলো কি শিখলে এই গল্প থেকে?

-আমাদের উচিত অবস্থা অনুযায়ী খাপ খাইয়ে চলার চেষ্টা করা।

– আমি সবার সাথে এই কাজটি করারই আপ্রাণ চেষ্টা করি। আমরা নিজেদের ইচ্ছে, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন, কষ্ট ইত্যাদিকে বড় করে দেখি বলেই আমাদের জীবনটা জটিল হয়ে যায়। এভাবেই সম্পর্কের মাঝে দুরুত্ব আসে, ব্যবধান বাড়ে, কাছের মানুষরা দূরে চলে যায়। শুধু একটু ইচ্ছা, প্রচেষ্টা, অন্যেকে বুঝতে পারার মানসিকতাই সম্পর্কগুলোকে করে দিতে পারে স্বপ্নিল। আর যখন ভালো করেও খারাপ আচরণ পেতে হয়, তখন আমাকে রাসূল (সঃ) এর বাণী ধৈর্য্য ধরে করণীয় করে যেতে প্রেরণা যোগায়। “সে আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষাকারী নয়, যে সম্পর্ক রক্ষার বিনিময়ে সম্পর্ক রক্ষা করে। বরং প্রকৃত আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষাকারী সেই, যার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সে তা জোড়া দেয়।” আসলে সমস্যা কি জানো?

– কি ভাবী?

– -পৃথিবীতে জানে এমন মানুষের কোন অভাব নেই, অভাব হচ্ছে জানাকে মেনে চলে এমন মানুষের। আর এর কারণ আমরা মুখেই কুরআন-সুন্নাহর বড় বড় কথা বলি কিন্তু আমাদের মননে ইসলাম অনুপস্থিত। যদি মননে ইসলাম থাকতো তাহলে আমরা শুধু মুখে বলতাম না বরং কাজের দ্বারাও প্রমাণ করতে চেষ্টা করতাম যা বলছি সেটাকে।

– একদম ঠিক বলেছো ভাবী।

– আমাদের আরেকটা বড় সমস্যা হচ্ছে কিছু একটা ত্যাগ করেই আমরা মনে মনে নিজেকে মহান ভাবতে শুরু করি। অন্যের জন্য এটা করেছি ওটা করেছি, সুতরাং স্বীকৃতি এখন বাধ্য আমার জন্য এমন হয় আমাদের মনোভাব। এক হাতে দিয়ে, অন্য হাতে প্রতিদান নেবার জন্য তৈরি হয়ে যাই আমরা। যখন হাত শূন্য থেকে যায়, সহ্য করতে পারিনা। মনের মধ্যের কুপ্রবৃত্তি গুলো মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ভুলেই যাই আমাদের সব কাজের বহুগুণ প্রতিদান ফিরিয়ে দেবার জন্য একজন বসে আসেন। কিন্তু আমাদের ধৈর্য্য যে বড় কম, যে কোন ত্যাগের তৎক্ষণাৎ মূল্যায়ন চাই আমাদের।

– তুমি কারো কাছ থেকে কিছু পেতে চাও না তাই না ভাবী?

-হেসে, হ্যা চাই না কোন প্রতিদান। কারণ আমি যা করি নিজের জন্য করি, অন্যের জন্য না।

– মানে?

– মানে আমি বিশ্বাস করি যে, আজ যদি আমি তোমার জন্য ছোট কোন একটা ত্যাগ করি, তার বদলে আমাদের ননদ-ভাবীর সম্পর্ক আরো সুন্দর হবে। সুতরাং পরোক্ষভাবে আমিও লাভবান হবো। আবার যদি তোমার কাছ থেকে কোন স্বীকৃতি নাও পাই, আত্মীয়তার হক রক্ষার পুরস্কার আমি পাবোই, ইনশাআল্লাহ।

-হেসে, হুমম…এটাই তাহলে তোমার গিরগিটি হবার রহস্য?

– আমি জীবনে সুখী হতে চাই শারলিন। আর সুখী হবার সবচেয়ে সহজ ও ফলপ্রসূ টিপস হচ্ছে, সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করা। তাহলেই কেবল মানুষ সবকিছুকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে। সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে জীবনের প্রতিটা চড়াই-উৎড়াইকে, করতে পারে ছোট ছোট ত্যাগ যখন প্রয়োজন, যতবার প্রয়োজন। আমরা বড় স্বার্থপর, অন্যের কিছু করতে আমাদের বড় বেশি আপত্তি। তাই যখনই কোন কিছু ত্যাগ করার বা ছাড় দেয়ার প্রশ্ন আসে, আমি নিজের লাভটা সবার আগে ভেবে নেই। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যে, আমার ত্যাগ এই দুনিয়াতে যথার্থ মূল্যায়ন না পেলেও, আখিরাতে পাবে ইনশাআল্লাহ। আর তখনই আমার বেশি প্রয়োজন পড়বে এসবের।

– ইনশাআল্লাহ! আমিও আজকে থেকে এভাবে চিন্তা করবো ভাবি।

– কিভাবে?

-হেসে, ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল।

-হেসে, আলহামদুলিল্লাহ্‌! আমি দোয়া করি এই চিন্তার দ্বারা তোমার জীবন হয়ে উঠুক অনেক অনেক সুন্দর-সহজ-সরল ও স্বপ্নিল।

পর্ব-৫

 

ত্বকের যত্নে নানান রস

ঘরকন্যা


শসার রস

শসার রস যে কোন অঙ্গের দাগ দূর করার জন্য দারুণ উপকারী। এতে ত্বকের ক্ষতির কোন সম্ভাবনাই থাকে না। শসার রসলাগিয়ে রাখুন ২০/২৫ মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলুন। কয়েকদিন ব্যবহারেই উপকার পাবেন।

আলুর রস

আলুর রস লাগানো একটু ঝামেলার হলেই এটি উপকারী শসার রসের চাইতেও বেশী। ত্বকে আলুর রস লাগিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটাও ত্বকের কোন ক্ষতি করে না।

লেবুর রস

লেবুর রস হচ্ছে প্রাকৃতিক রূপচর্চা র সবচেয়ে সহজলভ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। কিন্তু সরাসরি অঙ্গে বা ত্বকে ব্যবহার না করাই উচিত, ত্বকে হতে পারে জ্বলুনি ও র্যাশ। লেবুর রসের সাথে শসার রস ও এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে নিন। তারপর একে লাগান যেতে পারে। লেবুর ও হলুদ দাগছোপ দূর করবে আর শসা রক্ষা করবে ত্বককে। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ধোয়ার সময় সাবান দেবেন না।

 

বগুড়ায় গণধর্ষণের শিকার নার্স

নারী সংবাদ


বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক নার্স গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এই ঘটনায় দুপচাঁচিয়া থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।

পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেফতার করেছেন। বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া ইউনিয়নের ওই নার্সের মামলা সূত্রে জানা যায়, সে দুপচাঁচিয়া মেইন বাসষ্ট্যান্ডে অবস্থিত একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নার্সের কাজ করত।

প্রতিদিন বাড়ি থেকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাতায়াত করে। পাশের গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে সোহান (২০) তাকে বিভিন্ন সময় প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসতেছিল। গত ২৭ জুলাই ওই নার্সকে বিয়ে করবে বলে প্রস্তাব দিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরাঘুরি করে তালোড়া কাজী অফিসে যাওয়ার কথা বলে দুপচাঁচিয়ার দোগাছি মানিকগঞ্জ মাঠের কাছে নিয়ে যায়।

পরে রাত ৯ টার দিকে চারযুবক মিলে তাকে জোরপূর্বক গণধর্ষণ করে। এরপর রাতে ১১টার দিকে আবারো তারা জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে ওই নার্স জ্ঞান হারিয়ে ফেললে আসামিরা তাকে ফেলে পালিয়ে যায়।

ভোরে সে অসুস্থ অবস্থায় তার কর্মস্থল দুপচাঁচিয়া প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসে এবং সিনিয়র নার্সকে ঘটনাটি অবগত করে চিকিৎসা গ্রহণ করে।

পরে ১১ আগস্ট, শনিবার দুপচাঁচিয়া থানায় নিজেই বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্তকারী অফিসার থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম জানান, এজাহারভুক্ত দুইজন আসামিকে আটক করা হয়েছে।

আটককৃতরা হলেন- বেলঘড়িয়া গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম ওরফে সাজু (২৮) ও খিহালী পশ্চিমপাড়ার আব্দুল রহিমের ছেলে নাজিম (২০)। বগুড়ার আদমদিঘি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, নার্সকে গণধর্ষণের শিকার হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। রোববার ওই নার্সকে মেডিকেলে নেওয়া হতে পারে।
সূত্র: ইন্টারনেট।

 

আপনার বাসার সাহায্যকারী আপনার জন্য পরীক্ষা স্বরূপ।….শেষ পর্ব

তাহনিয়া খান


অত্যাচার করা যেমন অমানবিক, তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও তা গুরু দণ্ডনীয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম তাঁর মৃত্যুর আগেও অধিনস্ত সাহায্যকারীদের ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছিলেন। সাহায্যকারীদের হক আদায় কতটা গুরুত্বপুর্ন যে মৃত্যুর আগে তিনি সব কথা বাদ দিয়ে এই ব্যাপারেই সাবধান হতে বললেন! এটা আমরা কয়জন চিন্তা করি ?

ঘটনা ১,৩,৪,৫ এর ঘটনাগুলি পর্যালোচনা করি। যখন অধিনস্ত সাহায্যকারীরা ভুল করে, বেয়াদবি করে বা বড় ধরনের অঘটন ঘটায়, তখন নিজেকে স্থির রাখা অনেক সময়ই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে নিজেকে স্থির রেখে ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করার প্রবণতা বজায় রাখতে হবে। রাগ করাও যাবে না। ব্যাপারটা যত সহজে লিখলাম, তত সহজ না। এটা প্রতি নিয়ত প্র্যাকটিসের ব্যাপার। একবার এক সাহাবী এসে নবীজীকে জিজ্ঞেস করলেন,আল্লাহর রাসূল! আমি খাদেমকে (কাজের লোক বা গোলামকে) কতবার ক্ষমা করব? নবীজী চুপ থাকলেন। সাহাবী আবার জিজ্ঞাসা করলেন। এবার নবীজী বললেন, প্রতিদিন সত্তরবার। তিরমিযী,হাদীস ১৯৪৯ রাসুলুল্লাহ সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের হাদিসটি মাথায় গেঁথে ফেললে নিজেকে কন্ট্রোল করা অনেক সহজ হয়ে যায়।
যখন কোনো সাহায্যকারী কথা না শুনে, তাকে না রাখাই উত্তম। কারণ মনমালিন্য করে সংসারে অশান্তি রাখার কোনো মানে হয় না। সংসারে অশান্তির চেয়ে নিজের ঘরে দুটো কাজ বেশী করলে বরং মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

সাহায্যকারীদের ভালো কথা, আদর, ধর্মীয় কথা দিয়ে মোটিভেট করার চেষ্টা করাই শ্রেয়। সাহায্যকারী আপনার কাজে সাহায্য করবে। সারাক্ষণ যদি বকা ঝকা আর ধমকের মাধ্যমে তাকে অর্ডার করা হয় তাহলে সাহায্যের বদলে সে আপনাকে অসহযোগিতাই করবে। আপনি নিশ্চয়ই তার অসহযোগিতা পাওয়ার জন্য তাকে নিয়োগ দেননি। এক্ষেত্রে কৌশলী হতে হবে। অনেক পরিবারে দেখেছি তারা তাদের সাহায্যকারীদের এমন ভাবে রাখেন , দেখলে মনে হয় পরিবারেরই একজন সদস্য। ঘটনা ৯ ও ১০ এর কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। যদিও ঘটনা ২ এর মত ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সেটাকে দূর্ঘটনা ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে।

কিছু মানুষ কখনোই তার স্বভাব পরিবর্তন করতে পারে না। এমন কিছু সাহায্যকারীদের দেখেছি যারা অন্যের বাসায় কাজ করে নিজের সন্তানদের শিক্ষিত করে স্বাবলম্বী করে ফেলেছে। আবার কাউকে দেখেছি স্বভাবের কারণে ভ্যান, রিক্সা, গরু,ছাগল কিনে দিয়েও কোনো লাভ করতে পারেনি। ঘটনা ৬,৭,৮ এর মত ঘটনাও আমাদের কাছে অপরিচিত নয়। অনেকেই তাদের সাহায্যকারীদের নীচু চোখে দেখে। ঠিকমত খাবার দেন না, দিলেও বাসী পচা খাবার দেন। আপনি নিজে যে খাবার পছন্দ করেন না, সেটা কেনো অন্যকে দিবেন? মুমিন তো সেই, যে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, অন্যের জন্যও তাই পছন্দ করবে। অথচ এমন মানুষ দেখেছি, যিনি বোন প্লেট থেকে খাবার তুলে তার সাহায্যকারীকে খাবার দিয়েছেন। একটা হাদিস পড়েছিলাম, যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ আল্লাাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করেছেন। তোমাদের কারো অধীনে যদি কেউ থাকে তাহলে সে যেন নিজে যা খায় তাকেও তা থেকে খাওয়ায়। নিজে যা পরিধান করে তাকেও তা থেকে পরিধান করায়। এবং তোমরা তাদের উপর সাধ্যের বেশি কাজ চাপিয়ে দিও না। যদি দাও তাহলে নিজেও সে কাজে তাকে সাহযোগিতা কর”। সহীহ বুখারী, হাদীস ২৫৪৫

রাসুলুল্লাহ সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “যখন খাদেম খাবার প্রস্তুত করে তোমার সামনে পেশ করে,তখন (পারলে তাকে তোমার সাথে বসিয়ে খাওয়াও) তাকে যদি তোমার সাথে বসিয়ে খাওয়াতে না পার অন্তত তার হাতে এক দুই লোকমা তুলে দাও। কারণ এ খাবার প্রস্তুত করতে গিয়ে (আগুনের তাপ ও) সকল কষ্ট তো সেই সহ্য করেছে”। সহীহ বুখারী,হাদীস ২৫৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৬৩

আমরা অনেকেই ভালো ভালো আমল করে থাকি। কিন্তু নিজের অজান্তেই সেই সব আমল নষ্ট করে ফেলি। বিশেষ করে মেয়েদের কথাই বলছি। এতক্ষণ এত কিছু লেখার মূল কারণ হচ্ছে নিজের আমলকে আগলে রাখার জন্য যত্নবান হওয়া এবং সেদিকে সজাগ দৃষ্টি স্থাপন করা। বেশীর ভাগ মহিলাই তার আমল নষ্ট করে ফেলে সাহায্যকারীদের সাথে দূর্ব্যাবহার করে এবং তাদের প্রাপ্য বা হক থেকে বঞ্চিত করে।

মনে রাখবেন, আপনার বাসার সাহায্যকারী কিন্তু আপনার জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। তার সাথে খারাপ ব্যাবহারের কারণে আপনার আমল নষ্ট হয়ে যেতে পারে, আবার ভালো ব্যবহারের কারণে আমল বৃদ্ধি পেতে পারে।

১ম পর্ব

 

অনন্তজীবনের মূলমন্ত্র

তাহেরা সুলতানা


রবার্ট ফ্রস্টের ‘Stopping by the Woods on a Snowy Evening’ খুব পরিচিত একটি কবিতা, যা বহু সাহিত্যচর্চায় এবং প্রায়ই নির্দিষ্ট ইংরেজি সাহিত্যে পড়া হয়। উক্ত কবিতার ১৬তম লাইনে ফ্রস্ট এমন একজন ভ্রমণকারীকে চিত্রায়িত করেছেন, যে কিনা কোন এক শীতের সময় শুনসান এক ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে এবং যাত্রাপথে হঠাৎ তুষারে আবৃত বৃক্ষরাজির অপরুপ দৃশ্য অনুভব করার জন্য কিছুক্ষণের জন্য থমকে দাঁড়ায়। সত্যিকার অর্থে, এই ‘থমকে দাঁড়ানো’টাই আমাদের দুনিয়ায় পথ চলার জন্য সংক্ষিপ্ত সময়। আর পুরো পথচলাটা হচ্ছে মৃত্যুর পর পরবর্তী জীবন! ফ্রস্টের ভাষায়, “The woods are lovely, dark and deep. But I have promises to keep, And miles to go before I sleep, And miles to go before I sleep.” যার সারমর্ম হলো, এই অপরুপ সুন্দর বৃক্ষরাজি যতই আমাকে থামিতে রাখতে চাক না কেন, আমি ওয়াদা করছি যে, আমার যাত্রা কোনভাবেই থামাবো না এবং ঘুমিয়ে পড়ার আগেই আমি আমার লক্ষ্যে পৌছে যাব!

বন্ধুরা, হয়তো ভাবছো, রবার্ট ফ্রস্টের কবিতার সাথে আমাদের দুনিয়া এবং আখেরাতের জীবনের মিল কোথায়?

ভ্রমণকারীর ছবিটি গভীরভাবে ইসলামের শিক্ষায় আবদ্ধ।
মুজাহিদ বিন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বললেন, “এই দুনিয়াতে তুমি এমনভাবে চল, যেন তোমাকে দেখে মনে হয়, তুমি একজন অপরিচিত বা ভ্রমণকারী।” (সহীহ বুখারী)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন একটি খেজুরের মাদুরের উপর শুয়ে ছিলেন এবং যখন তিনি উঠে দাঁড়ালেন তখন তাঁর শিয়রের পাশে একটি চিহ্ন দেখতে পেলেন। আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার জন্য কি একটি আচ্ছাদন তৈরি করতে পারি?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘এই জগতের সাথে আমি কি করতে পারি? আমি এই দুনিয়াতে একজন রাইডারের মতো, যিনি কিনা বৃক্ষের নীচে ছায়া খুঁজছেন এবং তারপর ছুটে চলেছেন!”(তিরমিযী)।

হাদিস দুটো থেকে এটা স্পষ্ট যে, যেহেতু আমরা রাইডার বা ভ্রমণকারী হিসাবেই এই পৃথিবীতে এসেছি, তাই আমরা যেন সে ব্যাপারে সর্বদা সচেষ্ট থাকি, আমরা এই সংক্ষিপ্ত জীবনটা যেন খুব জাঁকজমকপূর্নভাবে না কাটাই! সাময়িকভাবে থাকার জন্য আমাদের যতটুকু দরকার, ততটুকু নিয়েই যেন সন্তুষ্ট থাকি এবং আমাদের অনন্তকালীন জীবনে ভালো থাকার যে মূলমন্ত্র, সেই লক্ষ্য অর্জনে যেন সচেষ্ট থাকি!

রবার্ট ফ্রস্টের কবিতা দ্বারা আমরা বুঝি, যে যাত্রীটি তুষার ও বৃক্ষরাজির সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হয়ে যায়, কিন্তু সে বুঝতে পারে এই প্রশান্তি সাময়িক এবং ভ্রান্তিপূর্ণ। আসলে সচেতন মানুষ ঠিক এই জায়গা থেকেই চূড়ান্ত ভ্রমণের দিকে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান পায়!
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এই লোভনীয় সাময়িক প্রশান্তি আমাদের সাথে প্রতারণা করতে পারে, আমাদের লক্ষ্যে পৌছাতে বাধার সৃষ্টি করতে পারে! কিন্তু বন্ধুরা, আমাদের ভুললে চলবে না যে, আমরা একটি উদ্দেশ্য নিয়েই এই পৃথিবীতে আবর্তিত হয়েছি এবং সেই উদ্দেশ্য সফলভাবে সম্পন্ন করেই আমাদের অনন্তজীবনে প্রবেশ করতে হবে! মহান সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করা ও সেই বিশ্বাস সবার কাছে পৌছে দেয়া, সর্বদা মানবজাতির জন্য কল্যান বয়ে আনা এবং পরকালীন জীবনের জন্য সাধ্যমতো নিজেকে তৈরী করা-এটাই এই সংক্ষিপ্ত জীবনের মূলমন্ত্র!

‘Miles to go’ before ‘I sleep’. বন্ধুরা, আমাদের এই সংক্ষিপ্ত জীবনের প্রতিটি মুহুর্তের সঠিক ব্যবহার করতে হবে! কিভাবে আরও বেশী স্নেহশীল, আরো আন্তরিক, আরও ক্ষমাশীল, এবং আরও বুঝদার হওয়া যায়, সেগুলো শিখতে হবে এবং ব্যক্তিগত জীবনে তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে! একজন রাইডার বা ভ্রমণকারী হিসাবে আমারা আজ বিভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছি: শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মী, নেতা, অনুসারী, কর্মী কিংবা স্বেচ্ছাসেবী। আমরা প্রত্যেকে যদি আমাদের নিজস্ব জগতে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে ভ্রমণ করতে থাকি়, তাহলে একটা সময় আমরা ঠিকই একই বিন্দুতে এসে মিলিত হতে পারবো ইনশাআল্লাহ!

আমি একজন বিশিষ্ট স্পিকারের বক্তৃতায় শুনেছি, যিনি উপস্থিত সবাইকে কল্পনা করতে বলেছিলেন, “ধরুন, এই মুহুর্তে এই হলরুম থেকে আলো হঠাৎ করে চলে গেলো! তখন কি করবেন?” তখন অংশগ্রহণকারী সবাই বলেছিল, তাদের মোবাইলের আলো জ্বালাবে, নয়তো লাইটার অন করবে, অথবা যেকোনভাবে আলোর ব্যবস্থা করবে! তখন সেই বক্তা বলেছিলেন, “সবাই একসাথে আলোর খোঁজে বের হবেন, এই তো মূল উদ্দেশ্য? আর যেভাবেই হোক, আলোর ব্যবস্থা করবেন?” আসলে তিনি এটাই আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে এই দুনিয়ার জীবনে আমরা আমাদের যে গুণগত সম্পদগুলো পেয়েছি, সেগুলোর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে। আমাদের প্রত্যেককে অনন্তকালীন আলো পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য যে আলো দেওয়া হয়েছে, সেই আলোকে এককাতারে সামীল হয়েই ধারন করতে হবে!

রাসূল (সা:) বলেন; “পাঁচটি বস্তু আসার পূর্বে পাঁচটি বস্তকে সুযোগ মনে করো। বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে, অসুস্থ হওয়ার পূর্বে সুস্থতাকে, দারিদ্রতার পূর্বে সচ্ছলতাকে, ব্যস্ততার পূর্বে অবসরকে এবং মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে।”

তাই বন্ধুরা, আমাদের ভুললে চলবে না, ‘Miles to go before we sleep’!

মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে দুনিয়ার সকল মোহ থেকে মুক্ত রেখে অনন্তকালীন আলোর খোঁজে একসাথে সামিল হওয়ার তৌফিক দান করুন! আমিন!

 

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল (পর্ব -৫)

আফরোজা হাসান


শ্বশুর বাড়ির সবাই দুষ্টুমি করে অন্তরাকে ডাকে বহুরূপী গিরগিটি নামে। অবশ্য নামটা যথার্থই। কারণ বহুরুপী গিরগিটি যেমন যখন যে গাছে বাস করে সে গাছের সঙ্গে রঙ মিলিয়ে নিজের রঙ বদলায়, যাতে কেউ গাছ থেকে তাকে আলাদা করতে না পারে। অন্তরা তেমনি এই বহুরূপী গিরগিটি স্বভাবের কারণেই পরিবারের মধ্যমণিতে পরিণত হয়েছে। পরিবারের প্রতিটা সদস্যর সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনাতে তাদের পাশে থাকতে চেষ্টা করে সে। সবাইকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে, আর তাই সে ভালোবাসা দ্বিগুণ রূপে ফিরে আসে সবসময় তার কাছে। কষ্ট-ব্যথা যে পায়না পরিবারের কাছ থেকে তা অবশ্য না কিন্তু সেগুলোকে মনে ধরে বসে থাকে না কখনোই অন্তরা। অন্তরার যুক্তি হচ্ছে, “একটা কিছুকে আঁকড়ে ধরে থেকে মানুষ কেন জীবনের সুখ-শান্তিকে নষ্ট করবে? এমন বোকামো কখনোই কারো করা উচিত নয়। কারণ জীবন হচ্ছে গতির নাম। শারীরিক ও মানসিক গতিশীলতা বাঁধাপ্রাপ্ত হতে পারে এমন সবকিছুকে তাই যথাসাধ্য এড়িয়ে যেতে হবে।” রান্নাঘরে ঢুকে মেঝো জা যাবিনকে মুখ ভার করে কাজ করতে দেখে অন্তরা দুষ্টুমির ছলে বলল, শুনতে পাচ্ছো কি ঝিঁঝিঁ পোকার আনন্দমুখর গান? ভুলে যাও না তবে অকারণ এই মান-অভিমান। তাকিয়ে যদি দেখ জোনাকির আলো বিচ্ছুরণ, মুহুর্তে মনের বিষাদ তোমার করে নেবে হরণ।

-যাবিন হেসে বলল, উফ ভাবী! তুমি আর তোমার কাব্য। অবশ্য সুখী মানুষেরা এমন সব পরিস্থিতিতেই ছন্দ মিলিয়ে ফেলতে পারে।

-অন্তরা চোখ বড় বড় করে বলল, সেকি তুমি দুঃখী মানুষে এই তথ্য তো জানা ছিল না আমার। তা হঠাৎ তোমার দুঃখী মানুষ হবার রহস্য কি?

-তোমার সামনেই তো তোমার দেবর আমাকে কত কথা শোনালো।

-তুমি তো জানোই যে ব্যবসার কারণে সাকিব অনেক চিন্তা-অস্থিরতা মধ্যে আছে।

-ক্ষোভ ঝরে পড়লো যাবিনের কণ্ঠে, ভাবী চিন্তা-অস্থিরতার সময় করা মানুষের আচরণই কিন্তু বলে দেয় তার মনে কার অবস্থান কোথায়।

-তুমি সংসারের টুকটাক মনোমালিন্যকে এই সংজ্ঞা দিয়ে বিবেচনা করলে কিন্তু জটিলটা বেড়ে যাবে জীবনের। সব সংজ্ঞা সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

-হুম…তুমি তো এমন বলবেই, কারণ ভাইয়া কখনোই তোমার সাথে মিস বিহেব করেন না।

-করেন না কথাটা কিন্তু ঠিক না যাবিন। সঠিক কথা হচ্ছে আমি সবসময় চেষ্টা করি এমন সবকিছু এড়িয়ে চলতে যাতে তোমার ভাইয়া বিরক্ত হতে পারেন। নয়তো তোমার ভাইয়াও কখনো মনোরম উদ্যান, শোভিত জনপদ, অঝোর জলপ্রপাত, আবার কখনো ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভুমিকম্প, আগ্নেয়পাত।

-হেসে, তোমার এসব দুষ্টু দুষ্টু কথা শুনলে মেজাজ ঠাণ্ডা হয়ে যায়।

-হেসে, আলহামদুলিল্লাহ! তাহলে হয়ে যেতে দাও মেজাজকে ঠাণ্ডা।

-কিছুক্ষন চুপ থেকে যাবিন বলল, ভাবী ভাইয়া কি সত্যিই রাগ করে তোমার সাথে? মনে কষ্ট দিয়ে কথা বলে?

-হেসে, জানো সেদিন একটা মজার তথ্য জানলাম। আমরা কষ্ট পাই না বরং তৈরি করি। আমাদেরকে কেউ কষ্ট দেয়না, আমরাই কষ্ট টেনে নেই নিজের উপর।

-সেটা কিভাবে?

-সেটা এভাবে যে কোনো ঘটনা বা কথা তোমাকে কতটা বিচলিত করবে, সেটা নির্ভর করে তুমি ঘটনা বা কথাকে কীভাবে দেখছো বা গ্রহণ করছো তার ওপর। অর্থাৎ, তোমার দৃষ্টিভঙ্গির উপর। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন-মানুষ কষ্ট পায় না, কষ্ট তৈরি করে। আর কে কেমন কষ্ট তৈরি করবে সেটা তার বেড়ে ওঠা পরিবেশ, শিক্ষা, কোয়ালিটি অব ইনফরমেশন, বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে। তুমি এই কথাগুলো নিজের সাথে মিলিয়ে দেখো তাহলেই বুঝতে পারবে।

-কিন্তু সাকিব আমার সাথে মিস বিহেব করেছে বলেই আমি কষ্ট পেয়েছি। অকারণে কষ্ট তৈরি করিনি।

-হেসে, এই যে যুক্তিটা দিলে এটা কিন্তু কষ্ট তৈরিতে আরো সহায়তা করছে।

– এতো না পেঁচিয়ে তুমি বরং আমাকে বুঝিয়ে বলো।

– অন্তরা হেসে বলল, এই যেমন দেখো সাকিব তোমার স্বভাব আর অভ্যাস নিয়ে কিছু কথা বলেছে। মিথ্যা বা ভুল কিছু কিন্তু বলেনি। তুমি যা করো সেসবই বলেছে। তুমি যদি মেনে নিতে তাহলে মান-অভিমানের প্রশ্নই উঠত না। কিন্তু তুমি মেনে না নিয়ে উল্টো রাগ করেছো। তোমাকে বোঝে না, সম্মান করে না, যথেষ্ট ভালোবাসে না ইত্যাদি ইত্যাদি নানা কথা ভাবছো। অথচ সাকিব কিন্তু এসবের কিছুই বলেনি, এই প্রতিটি চিন্তা তোমার নিজের তৈরি করা। তোমার কল্পনাপ্রসূত এসব চিন্তাই তোমার মনে কষ্টের তৈরি করছে নতুন নতুন।

– লাজুক হেসে,আমি সত্যিই তো এসব ভাবছি। তুমি বুঝলে কি করে?

– হেসে, গবেষকরা তো আর শুধু শুধু বলেননি যে, মানুষ কোনো একটি ঘটনা বা কথাকে কেন্দ্র করে নেতিবাচক চিন্তা করতে করতে পাহাড়সমান কষ্ট তৈরি করে ফেলে। আর যে সকল চিন্তা তৈরি করে তার বেশির ভাগ চিন্তাই বাস্তব না। অথচ এমন অর্থহীন বা অবাস্তব চিন্তা করে সে নিজেকে কষ্ট দিয়ে জীবনকে নষ্ট করে, ধ্বংস করে। এমন ভুল করো না যাবিন। সংসার জীবনটাও একটা পরীক্ষা আর নিজেই নিজের পরীক্ষাকে জটিল করে কি লাভ বলো। নিজের ভুলকে মেনে নেবার মাঝে কিংবা হঠাৎ করে ফেলা স্বামীর কোন ভুল আচরণকে ক্ষমা করে দেবার মাঝে তো হেরে যাবার কিছু নেই।
তাছাড়া এতে তো তুমিই বেশি লাভবান হবে তাই না?

– কিন্তু নিজেকে যে সবসময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা। বিশেষ করে যখন আমার অপছন্দনীয় কিছু করে তখন।

– তোমাকে সবসময় যে কথাটা মনে রাখতে হবে সেটা হচ্ছে, জগতে তোমার ইচ্ছা মতো কেউই চলবে না। কারণ তোমার নিয়ন্ত্রণে কেউ নেই। তোমার নিয়ন্ত্রণে আছো শুধু তুমি নিজে। আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই দেখবে সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

– (হেসে) নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার কোন ম্যাজিক ওয়ার্ড নেই তোমার ভাবী?

– আলহামদুলিল্লাহ! অবশ্যই আছে, ম্যাজিক ওয়ার্ডটি হচ্ছে-

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে বিকশিত

ভুল বোঝাবুঝির দ্বারা দাম্পত্য হয়না আশাহত

সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জিনিসের প্রতি হলে অনুরক্ত

হতাশার ঘেরাটোপে মন হবে আসক্ত

সংসারটাকে করতে চাইলে দুর্লভ কোন ভাস্কর্য্য

অর্জন করতে হবে যে গুণ তার নাম ধৈর্য্য।

চলবে….

পর্ব-৪

 

একটি আত্মিক চিঠি!

                                                          হাবিবা মৃধা


প্রিয় মা মণি,

অসুস্থতার আজ সপ্তাহ পার হতে চলল! খুব করে ইচ্ছে করছিল আম্মুর হাতের আদর আর কোলে মাথা রেখে দোয়া নিতে , আল্লাহ্ আমার জাদু কে ভালো করে দাও! আম্মুকে এই ইচ্ছের কথা বললে তিনি যেকোন ভাবে চলে আসার বয়না করতেন  অথবা আব্বু নিজেই নিয়ে আসতেন! কিন্তু আবেগের এই চাওয়াটুকু একেবারেই মুল্যহীন কংক্রিটে গড়ে ওঠা স্বপ্ন ও বাস্তবতার কাছে ! চাইলেই সবটুকু আবেগ গুরুত্ব দেয়া যায় না! আম্মু দুর থেকে দোয়া করছেন আমি জানি সে দোয়া আল্লাহর আরশে পৌছে আল্লাহর ওয়াদা অনুযায়ী! মেরুদণ্ডে খুব ব্যাথা, একটু নড়াচড়া করতে পারিনা সবচেয়ে বড় কষ্ট সিজদা দিতে না পারার!

আজ তোমার ভিডিও কলের এই দোয়াটুকু আমায় যেন একেবারে ই সুস্থ করে তোলার দ্বার প্রান্তে! মাত্র আড়াই বছরের মেয়ে খেলায় দুষ্টুমিতে যার মন ছুটে বেড়ায়, সে আবার একদম মায়ের মত হাত তুলে পুরো রাব্বানা জলামনা সহ কত দোয়া করে আবার আমীন বলে শোনায়! এই দেখ ফুফি মোনাজাত করেছি এখনি তোমার ব্যাথা ভালো হয়ে যাবে!

অসুস্থতার সময় সুস্থতাকে পৃথিবীর সেরা নিয়ামত মনে হয়, কেউ একটু দোয়া করলে ভিতরটা প্রশান্তিতে ভরে যায় অথচ যিনি দোয়া করেন তিনি নিজেও উপকৃত হন কারণ দোয়া ইবাদতের মুল! তাছাড়া হাদীসের বাণী অনুযায়ী নিজের ও অন্যের জন্য দোয়া করলে এর সওয়াব নিজের আমলনামায় জমা হয়!

তুমি এখন ছোট হলেও বাবার বড় মেয়ে তাই কখনো ছোট ফুফি হতে পারবেনা তবে ফুফি হবে যদি আল্লাহ্ চান! হয়তো বুঝবে হয়তো বুঝবে না ভাতিজির জন্য কলিজাটা কিভাবে পুড়তে থাকে সারাক্ষণ!. একদিন তুমি বড় হবে, মানুষ হবার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সামনে পা বাড়াবে ! শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা রাখতেই তোমাকে ভুলতে হবে আজকের একলা কাটানো অবসর সময় গুলো!প্রতিযোগিতাময় পৃথিবীর মঞ্চে নিজেকে উপস্থাপন করতে তোমার ও প্রতিটি দিন হবে কোলাহল ময় বেড়ে যাবে ব্যস্ততা! হয়ত সেদিন তোমার আর আজকের মত মন কাঁদার সময়টুকু হবেনা! কোন এক বিকেলে বিস্মৃত স্মৃতিতে মনে হতে পারে ফুফির কথা!

আমি যখন হলে এসে একমিনিট ভিডিও কলে তোমাকে দেখি আর সারাক্ষণ কানে বাজে ফুফি তোমাকে খুব মিস করি!এতগুলো মিস করি সত্যি বলছি তুমি চলে এসো!

আমি কত পাষাণ তাইনা! এরপরেও থেকে যাই আমার স্বপ্নকে বাস্তবতায় রুপ দেয়ার প্রিয় আঙিনায় ! আমার দোয়া ও ভালোবাসা থাকবে সবসময়! ভালো থেকো কলিজা!!

তোমার ছোট ফুফি!

26/7/18

লেখিকা: কবি সুফিয়া কামাল হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়!!

 

‘ফিন্যান্স’ প্রেমিক যুগলের আত্মহত্যা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে

নারী সংবাদ


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দুই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জানা গেছে।
আত্মহননকারীরা হলেন- মুমতাহেনা আফরোজ ও রোকনুজ্জামান রোকন।

মুমতাহেনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. আশরাফুল ইসলামের মেয়ে।

রোকনুজ্জামান রোকন সম্পর্কে প্রক্টর জানান, নিহত রোকনুজ্জামান বিভাগের অনার্সে ১ম মেধাস্থান অর্জন করেছিলেন এবং মাস্টার্সের রেজাল্টও একই।
উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের (মাস্টার্স) শিক্ষার্থী ছিলেন।

পরিবার এই সম্পর্ক মেনে না নেয়ায় প্রথমে গলায় ফাঁসি দিয়ে মুমতাহেনা আত্মহত্যা করেন। পরে প্রেমিকার মৃত্যুর খবর শুনে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে রোকনও আত্মহত্যা করেন।

নিহত মুমতাহেনার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি থানার বালিয়াখালী গ্রামে। রোকনুজ্জামানের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানায়।

পরিবার ও সহপাঠী সূত্রে জানা গেছে, রোকন ও মুমতাহেনা মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করে ইন্টার্ন শিফট করছিলেন। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

পারিবারিকভাবে হেনাকে অন্যত্র বিয়ে দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিল। পরে পরিবারের সদস্যদের রোকনের বিষয়ে জানানো হলে তারা এ সম্পর্ক মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। একই সঙ্গে গত তিন দিন ধরে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল বলে জানিয়েছেন সহপাঠীরা। এতে তাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন ঘটে। সবকিছু মিলিয়ে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেল মেধাবী দুই মুখ।

ঝিনাইদহ শহরের ঝিনুক টাওয়ারের পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটে হেনা তার পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হেনা তার নিজ কক্ষের ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। পরে দরজা ভেঙে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ মেডিকেলে নেয়া হলে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।

এদিকে মুমতাহেনার মৃত্যুর খবর শুনে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন রোকন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোকনুজ্জামানের মরদেহ কুষ্টিয়া শহরের মতি মিয়া রেলগেট থেকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জিআরপি থানা পুলিশ।

রোকন কুষ্টিয়া শহরের পেয়ারাতলা নামক স্থানে একটি ছাত্রাবাসে থাকতেন।পোড়াদহ জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আজিজ জানান, কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার মতি মিয়া রেলগেট নামক এলাকায় পোড়াদহ থেকে ছেড়ে যাওয়া গোয়ালনন্দগামী ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে এক যুবক আত্মহত্যা করেছে। সংবাদ পেয়ে রেল পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, রাতেই হাসপাতাল মর্গ থেকে রোকনুজ্জামানের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। একই সঙ্গে মুমতাহেনার লাশও সাতক্ষীরায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সূত্র ও ছবি :ইন্টারনেট

 

বাংলাদেশের গোল বন্যা পাকিস্তানের জালে

নারী সংবাদ


থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরুর আগেই উপস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিকেল থেকেই মাঠে বসে ছিলেন ভারতীয় বাংলাভাষী কুচবিহারের বাঙালিরা। প্রথম ম্যাচে ভারতকে সমর্থন করার পর তারাও বসেছিল বাংলাদেশের খেলা দেখতে। একই সাথে সমর্থন জানানোর জন্যও। তা বাংলা ভাষাভাষী এবং বাঙালি বলে। তা ছাড়া এ বাঙালিরা কাজ করেন বাংলাদেশ দলের হোটেলের পাশেই। সাথে ভুটানে বেড়াতে আসা বাংলাদেশী পর্যটকেরাও উপস্থিত মাঠে। এদের আকুণ্ঠ সমর্থনকে সম্মান দেখিয়ে বিশাল জয়ও তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ মহিলা দল। কাল আসরের ‘বি’ গ্রুপে পাকিস্তানকে ১৪-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মতোই শুরু করেছে শামছুন্নাহার, তহুরা, মনিকা, মারিয়ারা। হ্যাটট্রিকসহ চার গোল করেছেন জুনিয়র শামছুন্নাহার। লাল-সবুজদের আগ্রাসী ফুটবলের কাছে খড়কুটোর মতো উড়ে গেছে পাকিস্তান। এর মাধ্যমে সিনিয়র-জুনিয়র মিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন খেলাতেই জয়ের ধারাই অব্যহত রাখল বাংলাদেশ। মারিয়া-মনিকাদের পরের ম্যাচ ১৩ তারিখে নেপালের বিপক্ষে।
তিন বছর ফিফার নিষেধাজ্ঞা কাটিয়েছে পাকিস্তান। এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানিদের পক্ষে ভালো ফুটবল উপহার দেয়া সম্ভব নয়। কাল এর ব্যতিক্রম করা সম্ভব হয়নি দেশটির অনূর্ধ্ব-১৫ মেয়েদের পক্ষে। তাদের পাড়া মহল্লার দলে পরিণত করে বিশাল জয় তুলে নিয়েছে গোলাম রাব্বানী ছোটনের দলের। এ জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন ডিফেন্ডার ছোট শামছুন্নাহার। তার হ্যাটট্রিকে দারুণ জয়ে আসর শুরু বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। গোল আরো বেশি হতে পারত। কিন্তু আনু চিং মগিনি অতি মাত্রায় মিস করলে বাড়েনি গোলের সংখ্যা। তবে এ আসরে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। গত বছর উদ্বোধনী ম্যাচে নেপালকে ৬-০তে পরাজিত করেছিল তারা।
সাত মিনিটে তহুরা খাতুনের গোল দিয়ে লাল-সবুজদের উৎসব শুরু। ১৮ মিনিটে মনিকা চাকমার ফ্রি-কিকে ব্যবধান দ্বিগুণ। ২১ মিনিটে তহুরা তার দ্বিতীয় গোল করেন চমৎকার ব্যাক হেডে। ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন ভাসিয়েছিলেন লবটি। ৩৩ মিনিটে নিজের প্রথম গোল করেন হ্যাটট্রিক করা ছোট শামছুন্নাহার। বিরতির পর ৫০ ও ৫৪ মিনিটে আরো দুইবার বল জালে পাঠিয়ে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন তিনি। ৫৭ মিনিটে করেন নিজের চতুর্থ গোল। এর আগে ৪১ মিনিটে অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা এবং ৪২ মিনিটে আঁখি দূরপাল্লার শটে গোল করেন।
প্রথমার্ধে ৬-০ এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ দল বিরতির পর ৬০ মিনিটের মধ্যে আরো ছয়বার বল পাঠায় পাকিস্তানের জালে। ৫৮ মিনিটে সাজেদা নিজের দ্বিতীয় এবং ৬০ মিনিটে আনাই মগিনি গোল করেন। ৮৯ মিনিটে আনাই তার দ্বিতীয় গোল করেন। ৯০ মিনিটে শেষ গোল সিনিয়র শামসুন্নাহারের। সূত্র: নয়াদিগন্ত।

 

আপনার বাসার সাহায্যকারী আপনার জন্য পরীক্ষা স্বরূপ…. ১ম পর্ব

তাহনিয়া খান


ঘটনা # ১
বেগম “ক’’ এর বাসায় বহুদিন কোনো কাজের মানুষ নেই। যৌথ পরিবার উনার। বহু কষ্টে একে ধরে তাকে ধরে একজন সাহায্যকারী যোগার করলেন। কিছুদিন পর বুঝতে পারলেন আগেই ভালো ছিল। সাহায্যকারীর নিত্য নতুন যন্ত্রণায় তিনি অতিষ্ঠ। হঠাত বেগম “ক” আবিষ্কার করেন তার দাঁত মাজার ব্রাশটি তিনি ছাড়াও আরেকজন সেটা ব্যবহার করে। শ্যাম্পুর বোতলে প্রায়ই কেউ পানি ভরে রাখে। এসব তার সাহায্যকারীর কাজ। একদিন দাওয়াত থেকে বাসায় এসে দেখেন, বাসার সব চামচ চ্যাপ্টা হয়ে আছে। বাসায় বসে থাকতে থাকতে নাকি সাহায্যকারীর বোরিং লাগছিল, তাই সে বসে বসে চামচ চ্যাপ্টা করে ফেলেছে।

ঘটনা # ২
বেগম “খ” এর বাসায় বিশ বছর ধরে কাজ করেন তার সাহায্যকারী। অসম্ভব বিশ্বস্ত। এতই বিশ্বস্ত যে, বেগম “খ” এর শাড়ি গহনা সব সেই সাহায্যকারী গুছিয়ে রাখে। একদিন দাওয়াত খেয়ে ফিরে এসে দেখেন, মেইন দরজা খোলা। বাসায় ঢুকে দেখেন, তার বিশ বছরের সাহায্যকারী দেশ বিদেশ থেকে সংগ্রহ করে আনা তার শখের দামী দামী গহনাগুলো নিয়ে পালিয়েছে।

ঘটনা # ৩
বেগম “গ” এর ছোট দুটো ফুটফুটে বাচ্চা। চাকরী করে বাচ্চা সামলানো অনেক কষ্টের ব্যাপার। উনার কষ্ট দেখে উনার মা একজন সাহায্যকারী পাঠালেন। বিশ্বস্ত মানুষ পেয়ে বেগম “গ” এর ভালোই দিন কাটছিল। তিনি যেখানে থাকতেন তার চারপাশে নতুন বিল্ডিং তৈরী হচ্ছিল। মাঝে মাঝে খেয়াল করতেন তার সাহায্যকারী সেইসব বিল্ডিঙের লেবারদের সাথে আকার ইঙ্গিতে কথা বলে। বাসার দারোয়ানের সাথে গল্প করে। সাবধান করে দিয়েছিলেন তিনি। হঠাত জরুরী কাজে বেগম “গ” কে চট্টগ্রামে তার মায়ের বাসায় যেতে হয় স্বামী সন্তান্দের নিয়ে। বাসা রেখে গেলেন বিশ্বস্ত সাহায্যকারীর কাছে। পাঁচ দিন পরে ফিরবেন। তিন দিন পার হতেই বেগম “গ” এর স্বামীকে অফিসের জরুরী কাজে ঢাকায় আসতে হলো। বাসায় এসে কলিং বেল না চেপেই বাসার চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকেই হাসাহাসির শব্দ পেলেন তিনি। আস্তে করে নিজের বেডরুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বাসার সাহায্যকারী আর নতুন দারোয়ান কে দেখে হতভম্ব হয়ে যান। দারোয়ানের দোষ যেন নিজের ঘাড়ে না আসে, সেজন্য তাড়াতাড়ি বাইরে থেকে বেডরুমের দরজা লাগিয়ে দেন তিনি। এরপর আশেপাশের মানুষকে ডাক দিয়েছিলেন।

ঘটনা # ৪
বেগম “ঘ” এর হিসাবের সংসার । বাড়তি কোনো আয় নেই তার ঘরে। তাই খুব হিসাব করে চলতে হয় তাকে। প্রতি মাসেই তিনি জানেন কতটুকু চাল ডাল লাগবে তার সংসারে। কিন্তু জিনিসের বরকত পান না তিনি। চাল, ডাল, আলু, মরিচ গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, তেল, তরিতরকারি সহ সব কিছুই গায়েব হয়ে যেত। একদিন তার সাহায্যকারীকে হাতেনাতে ধরে ফেললেন তিনি। অভিনব পদ্ধতিতে তার সাহায্যকারী নিজের বাসায় এসব পাচার করতো। এত হিসাবের মাঝে থেকেও তিনি তার সাহায্যকারীকে খাবার সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিতে কার্পণ্য করেননি কখনো। অথচ তার সাহায্যকারী আশেপাশের সবাইকে বলে বেড়িয়েছে যে বেগম “ঘ” তাকে ঠিকমত কোনো খাবার দাবার দিতেন না।

ঘটনা # ৫
বেগম “চ” এবং উনার স্বামী ডাক্তার। তাদের তিন মেয়ে। ছোট মেয়ের বিয়ের আয়োজন চলছে। বাসার নতুন সাহায্যকারী অসম্ভব মজার রান্না করে। একদিন বিয়ে বাড়ির খোঁজ নিতে বেগম “চ” এর দেবর সকাল সকাল বাসায় এসে হাজির। এসে দেখেন বাসার দরজা খোলা এবং সবাই ঘুমে অচেতন। সবাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। অন্যদের ঘুম ভাঙলেও বেগম “চ” এর ঘুম ভেঙ্গেছে পাঁচ দিন পর। নতুন সাহায্যকারী খাবারের সাথে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে সবাইকে অচেতন করে সব কিছু নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিল।

ঘটনা # ৬
বেগম “ছ” রান্না করতে বেশ পছন্দ করেন। দুপুর বেলা ভাতের সাথে কমপক্ষে চারটা আইটেম থাকতেই হবে। সারা বছর উনার বাসায় দুইজন সাহায্যকারী, দারোয়ান আর ড্রাইভার থাকে। উনার বাসায় ৪/৫ পদের আইটেম থাকলেও বাসার সাহায্যকারী, দারোয়ান আর ড্রাইভারকে ১/২ পদের তরকারী দেওয়া হয়। তাদের জন্য আলাদা করে মোটা চালের ভাত রান্না হয়। বেগম “ছ” এর ড্রাইভার আফসোস করে বলেছিল, সারা বছর স্যারের সাথে গিয়ে ঝাকা ঝাকা মুরগি কিনি, কিন্তু খাবারের সময় মুরগি পাই না।

ঘটনা # ৭
বেগম “জ” তার সাহায্যকারীকে অনেক টাকা বেতন দিয়ে রেখেছেন। সাহায্যকারী রাখার সময় বলেছিলেন কাজ শেষ হলে ছেড়ে দিতে হবে। বেতন উসুল করতে তাকে দিয়ে সারাদিন যতটুকুন পারেন কাজ করিয়ে নেন। কাজ আগে শেষ হলেও তাকে বাসায় যেতে দেন না, বসিয়ে রাখেন। বেশ কয়েক রকম রান্না হয় বেগম “জ” এর বাসায়। যথেষ্ট পরিমানে খাবার থাকা সত্ত্বেও শুধু মাত্র এক ধরণের তরকারী ও আগের দিনের বাসি ভাত দেওয়া হয় সাহায্যকারীকে, সাথে থাকে ফ্রিজের ২/৩ দিনের বাসি খাবার।

ঘটনা # ৮
বেগম “ঝ” মানসিক ভাবে অসুস্থ। কিন্তু সেটা কেউ বুঝতে পারে না। স্বামী সন্তানদের কাছ থেকে অবহেলা পেতে পেতে, টানা পোড়নের সংসার জোড়াতালি দিতে দিতে তিনি হাপিয়ে যান। কিন্তু সেটা তিনি প্রকাশ করতে পারেন না কারো কাছে। ভিতরের চাপা রাগ, দুঃখ আর অভিমানের ঝালগুলো ঝেড়ে ফেলেন সাহায্যকারীর উপর। যখন তার সাহায্যকারী কোনো ভুল করে ফেলে তখনি তিনি অশ্লীল বাক্য ও মারধর করে নিজের মনকে হাল্কা করে ফেলেন।

ঘটনা # ৯
বেগম “ট” বেশ বিত্তবান মহিলা। তার সাহায্যকারী অনেকদিন থেকেই তার সাথে থাকে। বেগম “ট” বছরের ছয় মাস দেশে থাকেন, আর ছয় মাস বিদেশে থাকেন। দেশের বাইরে থাকার সময় তার পুরো সংসার দেখাশোনা করেন তার সাহায্যকারী। তিনি সেই সাহায্যকারীকে বিয়ে দিয়েছেন, তার স্বামীকে চাকরী দিয়েছেন, তার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন, এমনকি সন্তানকে লেখাপড়ার জন্য ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন। তার সাহায্যকারী অকৃতজ্ঞ হয়নি কখনো।

ঘটনা # ১০
বেগম “ড” এর সাহায্যকারী এখন তার বাসায় কাজ করে না। কিন্তু বছরে ২/৩ বার বেগম “ড” এর সাথে দেখা করতে আসে। আসার সময় হাত বোঝাই করে গাছের ফল, তরিতরকারি, পালা মুরগি, পিঠা সহ হরেক রকম জিনিস নিয়ে আসে। মধ্যবিত্ত পরিবারের বেগম “ড” নিজের হাজারো সমস্যা মাথায় নিয়েও তার সাহায্যকারীর বিপদে আপদে হাত বাড়িয়েছেন সব সময়। সেটা ভুলে যায়নি তার সাহায্যকারী।

সাহায্যকারী, গৃহপরিচারিকা বা কাজের বুয়া, যে নামেই ডাকি না কেনো, তারা যেমন ব্যবহার করে ও ব্যবহার পায় আমাদের সমাজে, তার কিছু খন্ড চিত্র তুলে ধরলাম এখানে। প্রতিটা ঘটনা বাস্তব এবং আমার পরিচিত জনদের পরিবারের কিছু ঘটনা।

আমরা সব সময় বিভিন্ন পত্রিকাতে বা টেলিভিশনে গৃহপরিচারিকাদেরকে অত্যাচারের খবর পড়ি বা দেখি। অর্থাৎ মিডিয়া শুধু সাহায্যকারীদের উপর নির্যাতনকেই হাইলাইট করে। কিন্তু বাসার সাহায্যকারীরা যেভাবে মানুষদের অত্যাচার করে তা সহজে মিডিয়াতে আসে না বা গুরুত্বও পায় না।

চলবে….

 

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল (পর্ব-৪)

আফরোজা হাসান


বাড়ির গেটে এসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে শঙ্কিত বোধ করলো মঈন। বিকেলে ফেরার কথা ছিল তার, এখন বাজে রাত দশটা। ঘরে ঢুকেই আলিশবার ঘোমড়া মুখ দেখতে হবে। গতদিনের মত কান্না করতে না আবার শুরু করে দেয় সেই ভয় কাজ করতে লাগলো মনে। ইচ্ছে করে বা শখ করে দেরি করেনি এই কথাটা কেন যে বুঝতে চেষ্টা করে না…! মনখারাপ করা ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো মঈনের। ফোন করে জানাতে পারতো আলিশবাকে ফিরতে দেরি হবে একথা কিন্তু তাতে বাইরে থাকা অবস্থাতেই মনমালিন্য শুরু হয়ে যেত। তার মন খারাপ হত, সেই প্রভাব গিয়ে পড়তো কাজের উপর। এমনটা চায়নি বলেই ফোন করার রিস্ক নেয়নি সে। সমস্যা হচ্ছে একথা তো আর আলিশবাকে বলা যাবে না। এমন সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘরে পৌছে গেল সে। ঘরে ঢুকে যা দেখলো তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না মঈন। তার পছন্দের লাল শাড়ি পড়েছে আলিশবা, সেজেছে মনের মত করে। দেখে মনে হচ্ছিল চাঁদের এক টুকরো নেমে এসেছে ধরত্রীর বুকে। কিন্তু আলিশবার হাসিমুখের সালাম শুনে ভাবুকতা মুহুর্তে উবে গিয়ে, সেখানে স্থান করে নিল সংশয়। ঝড়ের আগের শান্ত প্রকৃতি নয় তো এটা? মৃদু কণ্ঠে সালামের জবাব দিল সে।

-আলিশবা হেসে বলল, তুমি এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো আমার দিকে? যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। জানো অন্তরা ভাবীর কাছে শিখে আমি তোমার জন্য মাছ রান্না করেছিল। তাড়াতাড়ি চলো খেয়ে বলবে কেমন হয়েছে রান্না।

-ধীরে ধীরে আলিশবার কাছে গিয়ে মঈন বলল, দেরি হবার জন্য আমি সত্যি খুব সরি। তুমি নিশ্চয়ই অপেক্ষা করেছো, কষ্ট পেয়েছো? আসলে হঠাৎ করে কয়েকজন ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিল।

-আলিশবা বলল, এরপর থেকে এমন হলে আমাকে ফোন করে জানিয়ে দেবে। আমি রাগ করবো না বরং তোমার সমস্যা বুঝতে চেষ্টা করবো।

-হেসে, তুমি রাগ করবে ভেবে আমি ফোন করিনা সেটা কিভাবে বুঝলে?

-হেসে, সেটা তো বলবো না। তবে আজ ভাবী আমাকে এমন কিছু কথা বলেছেন, যা আমার চিন্তা ভাবনাতে অনেক পরিবর্তন এনেছে।

-কি বলেছেন ভাবী?

-বলেছেন, স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন আকাশে তৈরি হয়। আর জমিনে এই ঘরকে সাজানোর কাজ মেয়েরা করে। পুরুষ না ঘর বাঁধে, না সাজাতে পারে। এই কাজ শুধু একটা মেয়েই করতে পারে। শুধু একটা মেয়ে। কারণ পুরুষ জানেই না এই কাজ কিভাবে করতে হয়।

-হেসে, এতো সাংঘাতিক কথা।

-হেসে, সাংঘাতিক সত্যি কথা এটা। সেজন্যই তো কথাটা মেনে নিয়ে এর উপর আমল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। এখন তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে। হাসিমুখে তখন ওয়াশরুমে রওনা করলো মঈন।

ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরিপাটি করে নেবার ফাঁকে আয়নায় মাঝে মাঝে স্বামীর দিকে তাকাচ্ছিল অন্তরা। মুখের সামনে বই ধরা কিন্তু চেহারা থমথম করছে। ভালোই রেগেছে আজ আবির তার উপর ভাবতেই দুষ্টুমির আবেশ ছেয়ে গেলো অন্তরার মনে। অবশ্য কিছুটা অপরাধ বোধও কাজ করতে লাগলো মনে। দেড় ঘন্টা আগে তাকে ডেকে পাঠিয়েছিল আবির কিন্তু সব কাজ শেষ করে আসতে আসতে দেরি হয়ে গেল অনেক। আবিরের মন ভালো হয়ে যাবে এমন কিছু শব্দ গোছানোর চেষ্টা করতে শুরু করলো মনেমনে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে অন্তরা বলল, আজ রাগের উপর দারুণ আর্টিকেল পড়েছি জানো।

-বই বন্ধ করে বলল আবির, তোমার হলে দয়া করে লাইট বন্ধ করো। ঘুম পাচ্ছে, আমি ঘুমবো এখন।

-অন্তরা হাসি চেপে বলল, জানো রাগ দমন করা ছাড়া নাকি আত্মিক সাধনার পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। এজন্যই তো রাগের ধ্বংসাত্মক দিন সম্পর্কে সব ধর্মেই সাবধান করা হয়েছে। আমাদের রাসূল(সঃ) বলেছেন, “ রাগান্বিত হয়ো না, যে ব্যক্তি রাগকে সংবরণ করতে পারে সেই প্রকৃত বীর। বুদ্ধদেব বলেছেন, “ রণক্ষেত্রে সহস্র যোদ্ধার উপর বিজয়ীর চেয়ে রাগ-ক্রোধ বিজয়ী বা আত্মজয়ী বীরই বীরশ্রেষ্ঠ।”বেদে আছে…

-চুপ করো তো অন্তরা। ঘুমোতে দাও আমাকে।

-আহা শোনই না। বেদে আছে, “ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত রাগ-ক্রোধ থেকে দূরে থাকো। যিশুখ্রীস্ট বলেছেন, “ যখন কেউ তোমার সাথে অন্যায় আচরণ করে, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। সদাপ্রভু তোমাকে ক্ষমা করবেন।” আর অন্তরা বলেছে…, থেমে যেতে দেখে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আবির তাকালো অন্তরার দিকে।

-আবিরের কাছে গিয়ে মিষ্টি হেসে অন্তরা বলল, জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু মুহুর্ত আসতেই পারে তাই বলে কি অভিমানের জ্বালাবো দিয়া? নক্ষত্র ভরা রাতকে ঢেকে দেবো মেঘের চাদরে? নিরানন্দে ডুবাবো জীবনের স্বাদছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল (পর্ব-৪)
আফরোজা হাসান

বাড়ির গেটে এসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে শঙ্কিত বোধ করলো মঈন। বিকেলে ফেরার কথা ছিল তার, এখন বাজে রাত দশটা। ঘরে ঢুকেই আলিশবার ঘোমড়া মুখ দেখতে হবে। গতদিনের মত কান্না করতে না আবার শুরু করে দেয় সেই ভয় কাজ করতে লাগলো মনে। ইচ্ছে করে বা শখ করে দেরি করেনি এই কথাটা কেন যে বুঝতে চেষ্টা করে না…! মনখারাপ করা ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো মঈনের। ফোন করে জানাতে পারতো আলিশবাকে ফিরতে দেরি হবে একথা কিন্তু তাতে বাইরে থাকা অবস্থাতেই মনমালিন্য শুরু হয়ে যেত। তার মন খারাপ হত, সেই প্রভাব গিয়ে পড়তো কাজের উপর। এমনটা চায়নি বলেই ফোন করার রিস্ক নেয়নি সে। সমস্যা হচ্ছে একথা তো আর আলিশবাকে বলা যাবে না। এমন সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘরে পৌছে গেল সে। ঘরে ঢুকে যা দেখলো তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না মঈন। তার পছন্দের লাল শাড়ি পড়েছে আলিশবা, সেজেছে মনের মত করে। দেখে মনে হচ্ছিল চাঁদের এক টুকরো নেমে এসেছে ধরত্রীর বুকে। কিন্তু আলিশবার হাসিমুখের সালাম শুনে ভাবুকতা মুহুর্তে উবে গিয়ে, সেখানে স্থান করে নিল সংশয়। ঝড়ের আগের শান্ত প্রকৃতি নয় তো এটা? মৃদু কণ্ঠে সালামের জবাব দিল সে।

-আলিশবা হেসে বলল, তুমি এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো আমার দিকে? যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। জানো অন্তরা ভাবীর কাছে শিখে আমি তোমার জন্য মাছ রান্না করেছিল। তাড়াতাড়ি চলো খেয়ে বলবে কেমন হয়েছে রান্না।

-ধীরে ধীরে আলিশবার কাছে গিয়ে মঈন বলল, দেরি হবার জন্য আমি সত্যি খুব সরি। তুমি নিশ্চয়ই অপেক্ষা করেছো, কষ্ট পেয়েছো? আসলে হঠাৎ করে কয়েকজন ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিল।

-আলিশবা বলল, এরপর থেকে এমন হলে আমাকে ফোন করে জানিয়ে দেবে। আমি রাগ করবো না বরং তোমার সমস্যা বুঝতে চেষ্টা করবো।

-হেসে, তুমি রাগ করবে ভেবে আমি ফোন করিনা সেটা কিভাবে বুঝলে?

-হেসে, সেটা তো বলবো না। তবে আজ ভাবী আমাকে এমন কিছু কথা বলেছেন, যা আমার চিন্তা ভাবনাতে অনেক পরিবর্তন এনেছে।

-কি বলেছেন ভাবী?

-বলেছেন, স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন আকাশে তৈরি হয়। আর জমিনে এই ঘরকে সাজানোর কাজ মেয়েরা করে। পুরুষ না ঘর বাঁধে, না সাজাতে পারে। এই কাজ শুধু একটা মেয়েই করতে পারে। শুধু একটা মেয়ে। কারণ পুরুষ জানেই না এই কাজ কিভাবে করতে হয়।

-হেসে, এতো সাংঘাতিক কথা।

-হেসে, সাংঘাতিক সত্যি কথা এটা। সেজন্যই তো কথাটা মেনে নিয়ে এর উপর আমল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। এখন তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে। হাসিমুখে তখন ওয়াশরুমে রওনা করলো মঈন।

ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরিপাটি করে নেবার ফাঁকে আয়নায় মাঝে মাঝে স্বামীর দিকে তাকাচ্ছিল অন্তরা। মুখের সামনে বই ধরা কিন্তু চেহারা থমথম করছে। ভালোই রেগেছে আজ আবির তার উপর ভাবতেই দুষ্টুমির আবেশ ছেয়ে গেলো অন্তরার মনে। অবশ্য কিছুটা অপরাধ বোধও কাজ করতে লাগলো মনে। দেড় ঘন্টা আগে তাকে ডেকে পাঠিয়েছিল আবির কিন্তু সব কাজ শেষ করে আসতে আসতে দেরি হয়ে গেল অনেক। আবিরের মন ভালো হয়ে যাবে এমন কিছু শব্দ গোছানোর চেষ্টা করতে শুরু করলো মনেমনে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে অন্তরা বলল, আজ রাগের উপর দারুণ আর্টিকেল পড়েছি জানো।

-বই বন্ধ করে বলল আবির, তোমার হলে দয়া করে লাইট বন্ধ করো। ঘুম পাচ্ছে, আমি ঘুমবো এখন।

-অন্তরা হাসি চেপে বলল, জানো রাগ দমন করা ছাড়া নাকি আত্মিক সাধনার পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। এজন্যই তো রাগের ধ্বংসাত্মক দিন সম্পর্কে সব ধর্মেই সাবধান করা হয়েছে। আমাদের রাসূল(সঃ) বলেছেন, “ রাগান্বিত হয়ো না, যে ব্যক্তি রাগকে সংবরণ করতে পারে সেই প্রকৃত বীর। বুদ্ধদেব বলেছেন, “ রণক্ষেত্রে সহস্র যোদ্ধার উপর বিজয়ীর চেয়ে রাগ-ক্রোধ বিজয়ী বা আত্মজয়ী বীরই বীরশ্রেষ্ঠ।”বেদে আছে…

-চুপ করো তো অন্তরা। ঘুমোতে দাও আমাকে।

-আহা শোনই না। বেদে আছে, “ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত রাগ-ক্রোধ থেকে দূরে থাকো। যিশুখ্রীস্ট বলেছেন, “ যখন কেউ তোমার সাথে অন্যায় আচরণ করে, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। সদাপ্রভু তোমাকে ক্ষমা করবেন।” আর অন্তরা বলেছে…, থেমে যেতে দেখে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আবির তাকালো অন্তরার দিকে।

-আবিরের কাছে গিয়ে মিষ্টি হেসে অন্তরা বলল, জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু মুহুর্ত আসতেই পারে তাই বলে কি অভিমানের জ্বালাবো দিয়া? নক্ষত্র ভরা রাতকে ঢেকে দেবো মেঘের চাদরে? নিরানন্দে ডুবাবো জীবনের স্বাদ? ভালোবাসাকে করবো না ধারণ? ক্ষমাকে করি চলো আপন… আবার সাজাই সুখের স্বপন।

না চাইতেও মুগ্ধতা জড়ানো হাসি ফুটে উঠলো আবিরের মুখে। হাত বাড়িয়ে দিলো সে অন্তরার দিকে।

ভালোবাসাকে করবো না ধারণ? ক্ষমাকে করি চলো আপন… আবার সাজাই সুখের স্বপন।

না চাইতেও মুগ্ধতা জড়ানো হাসি ফুটে উঠলো আবিরের মুখে। হাত বাড়িয়ে দিলো সে অন্তরার দিকে।

চলবে….

পর্ব-৩

 

ছাত্রীকে যৌন হয়রানী শিক্ষক গ্রেফতার

নারী সংবাদ


গাজীপুরের শ্রীপুরে স্কুল ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ওই স্কুলের এক শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যৌন হয়রানীর শিকার এক ছাত্রীর মায়ের অভিযোগে ভিত্তিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত শিক্ষকের নাম ইউনূস আলী সরকার (৫৫)। সে গাইবান্দা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার গোবিন্দগঞ্জ গ্রামের মৃত ইউসূফ আলীর ছেলে।

শ্রীপুর মডেল থানার এসআই সৈয়দ আজিজুল হক ও ছাত্রীর মা জানান, গাজীপুরে শ্রীপুরের গিলারচালা গ্রামের শফিকের বাড়ীতে ভাড়া থেকে স্থানীয় গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ী এলাকার হাজী আব্দুল হাই মডেল স্কুলে শিক্ষককতা করেন ইউনুস আলী সরকার। গত সোমবার ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী স্কুল ছুটি শেষে বিকেলে শিক্ষক ইউনূস আলীর কাছে কোচিং করতে যায়। এসময় অন্যান্য শিক্ষার্থীরা আসতে দেরী হওয়ায় কক্ষে ওই ছাত্রীকে একা পেয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শ কাতরস্থানে হাতাহাতি করে ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি এবং কথাবার্তা বলে যৌণপীড়ন করে শিক্ষক ইউনুস আলী। এক পর্যায়ে ওই ছাত্রী চিৎকার দিলে তার সহপাঠীরা এগিয়ে এলে শিক্ষক ইউনূস সেখান থেকে চলে যায়। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা মঙ্গলবার শ্রীপুর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে এ ধরণের আরো ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। সূত্র:নয়াদিগন্ত।

 

ইলিশের নানান রূপ

রেসিপি ঘর


পোলাও ইলিশ

উপকরণ :
১. পোলাওয়ের চাল ২ কাপ,
২. ইলিশের টুকরা ৬-৭টি (বড় ইলিশ), ৩. টকদই আধা কাপ, ৪. আদাবাটা ১ টেবিল-চামচ, ৫. কাঁচা মরিচ ৬-৭টি, ৬. তেল ২ টেবিল-চামচ, ৬. ঘি আধা কাপ , ৭. পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ, ৮. লবণ পরিমাণমতো, ৯. পেঁয়াজকুচি কোয়ার্টার কাপ, ১০. পেঁয়াজবাটা কোয়ার্টার কাপ, ১১. দুধ আধা কাপ, ১২. লেবুর রস ২ টেবিল-চামচ।

প্রণালি :
কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি হালকা ভেজে নিন। এবারে আদা, দই, পেঁয়াজবাটা ও পরিমাণমতো লবণ দিয়ে কষিয়ে ইলিশ মাছ ও লেবুর রস দিয়ে মৃদু আঁচে ঢেকে , দিন। ১০ মিনিট পর মাছের টুকরাগুলো ঝোল রেখে তুলে নিন। ঝোলের কড়াইতে ঘি এবং অর্ধেক বেরেস্তা দিয়ে একটু রান্না করে চাল দিয়ে কষিয়ে গরম পানি (৪ কাপ) ও কাঁচা মরিচ দিয়ে ঢেকে দিন। পানি শুকিয়ে এলে কিছু পোলাও উঠিয়ে নিন। মাছের টুকরোগুলো পোলাওয়ের উপর বিছিয়ে দিন। এবার তুলে নেওয়া পোলাও, মাছের উপর দিয়ে বাকি বেরেস্তা ও দুধ দিয়ে ঢেকে দমে দিন। ১৫-২০ পর হয়ে গেলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

ইলিশ মাছের ভর্তা

উপকরণ:
১.ইলিশের পিস-২টি,
২.পেঁয়াজ কুচি-১ কাপ,
৩.রসুন মোটা কুচি-৫-৬ কোয়া, ৪.শুকনামরিচ-৭-৮টি,
৫.লবণ-প্রয়োজন হলে সামান্য, ৬.সয়াবিন তেল- ১/২ কাপ, ৭.গুঁড়া মরিচ-১ চা চামচ, ৮.হলুদ-সামান্য।

প্রণালী:
ইলিশ মাছের টুকরা গরম পানিতে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ভালোমতো ধুয়ে নিন। বারবার ধুয়ে নেবেন যাতে লবণ কমে যায়। প্যানে অল্প তেল গরম করে শুকনামরিচ ভেজে উঠিয়ে নিন। ওই তেলেই মাছগুলো অল্প আঁচে হালকা করে ভেজে উঠান। ঠাণ্ডা করে কাঁটা বেছে ফেলুন। প্যানে বাকি তেল দিয়ে পেঁয়াজ ও রসুন কুচি দিন। গুঁড়ামরিচ ও হলুদ দিয়ে নাড়ুন। বেছে রাখা মাছ দিন। ভাজা শুকনামরিচ ভেঙে দিন। চেখে দেখে তবেই প্রয়োজনে লবণ দিন। ভালো করে নেড়েচেড়ে ৫-৬ মিনিট রান্না করুন। পেঁয়াজ ভাজা ভাজা হয়ে তেল ওপরে উঠলেই হয়ে গেল লোনা ইলিশ ভর্তা।

পরিবেশন:
পেঁয়াজ ও ভাজা শুকনামরিচ ডলে এ মাছ দিয়ে দিন। লবণ, ধনিয়া পাতা ও বাকি সরিষার তেল দিয়ে মাখিয়ে নিন। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
সূত্র:ইন্টারনেট

 

বিয়ে ও পরিবার সমকালীন জিজ্ঞাসা- ৭

কানিজ ফাতিমা


গত পর্বে আমরা গর্ভকালীন নারীর মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জেনেছি। এ পর্বে আমি আলোচনা করবো মেনোপজ (Menopause) নিয়ে। তার আগে গত পর্বের রেশ ধরে দু’একটি কথা বলে নেই। আমরা অনেক সময়ই লক্ষ্য করি আমাদের সমাজে স্ত্রীর সেবা করাকে ভালো চোখে দেখা হয় না। এটা অনেকটা পৌরুষ হানিকর কাজ মনে করা হয়। অনেকে আরও একটু আগ বাড়িয়ে একে অনৈসলামিক কাজও মনে করেন। এটি সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা। ইসলামে অসুস্থ স্ত্রীর দেখাশোনাকে স্বামীর গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর দৃষ্টান্ত আমরা ইসলামের ইতিহাসে দেখতে পাই। বদর যুদ্ধের সময় মুসলমানগণ সংখ্যায় কম ছিলেন। সেসময় মদীনাতে মাত্র ৭৭ জন সমর্থ মোহাজির পুরুষ ছিলেন। তিনজন বাদে এদের সবাই যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তালহা ও সা’দ (রাঃ) সেই মুহূর্তে সংবাদ সংগ্রহের কাজে মদীনার বাইরে ছিলেন বলে বাহিনীতে যোগ দিতে পারেননি। তার তৃতীয় ব্যক্তি যিনি মদীনাতে উপস্থিত থেকেও বাহিনীতে যোগ দেননি তিনি হলেন ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সারির সাহাবী উসমান (রাঃ)। যদিও সে সময় মুসলিম বাহিনীতে বেশী সংখ্যক যোদ্ধার দরকার ছিল তথাপি রাসূল (সাঃ) নিজেই উসমান (রাঃ) কে মদীনায় থাকতে নির্দেশ দেন কারণ তখন তার স্ত্রী রোকাইয়া (রাসূল সাঃ এর কন্যা) অসুস্থ ছিলেন। “The Prophet told his son-in-law ‘Uthman’ to stay at home and tend his sick wife.” (Muhammad his life based on the earliest sources by Martin Lings, পৃষ্ঠা ১৩৮)। আমরা এখানে সুস্পষ্ট দেখতে পাই শুধুমাত্র অসুস্থ স্ত্রীর দেখাশোনার জন্য তিনি বদর যুদ্ধের বাহিনীতে যোগদান থেকে বিরত থাকলেন স্বয়ং রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশে। অথচ সে সময় মদীনাতে অন্যান্য নারীগণ উপস্থিত ছিলেন যারা সহজেই রোকাইয়ার সেবা করতে পারতেন। সাওদা (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-এর স্ত্রী; ফাতেমা (রাঃ) ও উম্মে কুলসুম (রাঃ)- রোকাইয়া দু’বোন; উম্মে আয়মান ও খাওলাসহ অনেকেই রোকাইয়ার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তদুপরী রাসূল (সাঃ) স্ত্রীর সেবার জন্য স্বামীকেই দায়িত্ব দিলেন।
এবার আসা যাক মেনোপজ সম্পর্কে। অনেক সময় স্ত্রীদের অভিযোগ থাকে তাদের শাশুড়িদের বিরুদ্ধে যে তারা খিটখিটে, ভুলো মনা হয় এবং ছোটখাট ব্যাপার নিয়ে বকবক করতে থাকে। এই সমস্যাগুলোর পেছনে একটা বড় কারণ সাধারণত মেনোপজ। মেনোপজ হল মহিলাদের মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া। সাধারণত গড়ে ৫০ এর পরে নারীর মেনোপজে যায়। তবে ৪০ থেকে ৫৯ বয়সের মধ্যে যেকোন সময়ে এটা ঘটতে পারে। এ সময়ে মহিলাদের ডিম্বাশয়গুলো (Overies) কম পরিমাণে এসট্রোজেন ও প্রাজেসটেরন (Estrogen and Progesterone) হরমোন তৈরি করে। মূলত: এই হরমোন দু’টিই নারীদেহে মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণত নারীরা এই বয়সেই শাশুড়ি হয়ে থাকে। ফলে অন্যান্য কারণের পাশাপাশি এ কারণটিও তার আচরণকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে। একজন স্ত্রীর যদি Menopause-এর লক্ষণগুলো জানা থাকে তবে শাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরী অনেকটা সহজ হয়। নীচে মেনোপজ এর লণগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
১. Hot flashes:
গরম ঝাটকা লাগা মেনোপজের একটি সাধারণ লক্ষণ। এসময় বুক-মাথা গরম হয়ে যায়, অনেক সময় চামড়া লাল হয়ে যায় এবং অনেকে ঘামতে শুরু করে। এসময় অস্বস্তি ও অসুস্থ বোধ হয়ে থাকে। অনেক সময় মাথা ঘুরায়, মানসিকভাবে বিহ্বল ও হতবুদ্ধি লাগে। অনেক সময় বুক ধড়ফড় করে।
২. মাথা ব্যথা, রাতে ঘামানো, ঘুমের ব্যাঘাত ও কান্তিবোধঃ
ঘুমের সমস্যা ও ঘুমের মধ্যে হঠাৎ ঘেমে গিয়ে উঠে পরা প্রভৃতি কারণে এ সময় মেজাজ খিটখিটে ও সবকিছুতে বিরক্তিভাব তৈরি হয়। যার থেকে অল্পতেই রেগে যাওয়া বা ঘ্যানঘ্যানে স্বভাবের হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
মূলত: মেনোপজের শারীরিক লক্ষণগুলো একেকজনের জন্য একেক রকম ও একেক মাত্রার হয়। যেমন পশ্চিমা দেশগুলোতে ১৪% মহিলা খুব তীব্র শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় পড়ে এ সময়ে।
মেনোপজে যে মানসিক সমস্যাগুলো হয় তাও শারীরিক সমস্যাগুলোর মতই একেক জনের একেক রকম হয়। সব থেকে প্রচলিত যে মানসিক সমস্যার কথা বেশি শোনা যায় তা হলো-
১. Sadness বা দুঃখবোধ/বিষন্নভাব
২. Anxiet বা দুশ্চিন্তা
৩. Mood Swings বা অস্থিরতা
এসব সমস্যাগুলো নারীর কর্মদক্ষতা ও অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। আজ এ পর্যন্তই। এ সম্পর্কিত আরও আলোচনা থাকবে পরবর্তী সংখ্যায়।

চলবে…

পর্ব-৬

বিয়ে ও পরিবার সমকালীন জিজ্ঞাসা – ৬

 

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল (পর্ব-৩)

আফরোজা হাসান


ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অভিমানে মনের আকাশ মেঘলা হয়ে উঠলো আলিসবার। বিকেলে ফেরার কথা মঈনের অথচ এখন রাত নয়টা বাজে। গত সপ্তাহেও দুই দিন এমন দেরী করে বাসায় ফিরেছে মঈন। ফিরতে দেরী হবে সেটা ফোন করেও তো জানাতে পারে, তাহলে তো আর এভাবে অস্থির হয়ে প্রতীক্ষায় প্রহর গুনতে হত না তাকে। এসে সরি সরি করবে, একশোটা কারণ দেখাবে কিন্তু একটা ফোন করতে কতটুকু সময়ই বা লাগে? কিছুক্ষণ বইপত্র নাড়া চাড়া করে দেখলো মন বসাতে না পেরে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো সে। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বাগানে বসে গল্প করছে। অজান্তেই এক টুকরো হাসি ফুটে উঠলো আলিসবার মুখে। গত চার মাসে সে এটা খুব ভালো মতো বুঝে গিয়েছে যে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির মহা ভাব। একে অন্যেকে ছাড়া কিছুই বোঝে না দু’জন। পর মুহুর্তেই মঈনের কথা মনে পড়লো তার। অভিমানের মেঘ আরো ঘনীভূত হলো মনের মাঝে। মঈন বুঝি এখনো ফেরেনি? প্রশ্ন শুনে ঘুরে বড় জা’কে দেখে আলিসবা বলল, জ্বী না ভাবী।

-অন্তরা হেসে বলল, তাহলে আমার সাথে চলো। রান্না করতে করতে গল্প করবো।

-রাতের রান্না তো হয়ে গিয়েছে ভাবী।

-হুমম…জানি। কিন্তু তোমার ভাইয়া মাত্র ফোন করে বললেন কয়েকজন মেহমান আসবে উনার সাথে।

-রান্নাঘরে ঢুকে আলিসবা বলল, ভাইয়া বুঝি এমন প্রায়ই করেন?

-কি? হঠাৎ মেহমান নিয়ে আসা?

-জ্বী।

-হেসে, হ্যা।

-আমার আব্বুরও এই অভ্যাসটা ছিল। হঠাৎ করে মেহমান নিয়ে হাজির হতেন। আম্মুকে তখন অনেক বিপদে পড়তে হতো। হয়তো সারাদিন পর একটু বিশ্রাম নেবার জন্য ঘরে ঢুকেছেন আর আব্বুর ফোন মেহমান নিয়ে আসছি। ঘরে কি রান্না হয়েছে, বাজার আছে কিনা এইসব নিয়ে কোন কথা নেই। এক কথা মেহমান নিয়ে আসছি। এগুলো খুব অন্যায় মনে হয় আমার কাছে।

-হেসে, সমস্যা কি জানো? এগুলো যে অন্যায় সেটা ছেলেরা বোঝেই না। আমার তো মনেহয় সংসারের এসব টুকিটাকি বিষয় বোঝার ট্যালেন্টই ছেলেদের নেই। বিয়ের প্রথম প্রথম আমিও বেশ বিরক্ত হতাম। পরে দেখলাম যে এটা উনার স্বভাব। উনি মেহমানদারী করতে পছন্দ করেন। আর এটা যেহেতু খারাপ কিছু না বরং ভালো তাই নিজেকে এর সাথে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেছি এবং ধীরে ধীরে মানিয়েও নিয়েছি।

-তারপরও ভাবী। কত রকমের সমস্যা থাকতে পারে একটা মেয়ের। হাজবেন্ডের এটা বোঝা উচিত।

-হেসে, আসলে সংসার জায়গাটাই বোঝাপড়ার। দুজনেরই বুঝতে হবে দুজনকে। হঠাৎ মেহমান নিয়ে আসার কাজটি নিশ্চয়ই আমাকে কষ্ট দেবার জন্য করেন না আবির? আবার এমনও না যে রোজ রোজ করেন এটা। হয়তো কোন ফ্রেন্ড বা পরিচিত কারো সাথে দেখা হয়ে গেলো। কখনো আবির অফার করে, কখনো উনারা নিজেরাই আসতে চান বাসায়। এখন এটাকে ইস্যু করলে অশান্তি তো আমাদের দু’জনের জীবনেই আসবে।

-কিন্তু বিষয়টা তো একেবারে ইগনোর করার মতও না।

-আই থিংক ইস্যু করার মতও না। সংসারে সচারচর যে ঘটনাগুলো ঘটে সেগুলোর সাথে মানিয়ে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমি যেমন মেহমানের জন্য মোটামুটি একটা প্রিপারেশন নিয়েই রাখি সবসময়। আলাদা করে কিছু খাবার রেডি করেই রাখি হঠাৎ আসা মেহনাদের আপ্যায়নের জন্য। তাই তেমন কোন অসুবিধায় পড়তে হয় না কখনোই। এটা না করে যদি আমি রোজ রোজ খিটপিট করতাম আবিরের সাথে, তাহলে আমার জীবনের শান্তিই তো বিঘ্নিত হতো তাই না?

-হেসে, সবসময় কি এত পজেটিভ থাকা সম্ভব ভাবী? কষ্ট হয় না আপনার?

-হয়। কিন্তু আমার কাছে সেই কষ্টের চেয়ে সংসারের শান্তি অনেক বেশি গুরুত্বপুর্ণ। সেজন্য স্বামীর দোষ ধরে সময় নষ্ট করার চাইতে, দোষটা আসলেই দোষ কিনা এবং আমার কতটুকু ছাড় আর উনার কতটুকু সংশোধন দরকার, সময়টাকে সেই কাজে ব্যয় করার চেষ্টা করি। একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, দোষ খুঁজে আমরা যেই সময়টা ব্যয় করি, সেই সময়টা যদি একে অন্যেকে বোঝার ও সংশোধন করার জন্য ব্যয় করতে পারতাম, তাহলে সংসারটা অনেক সহজ হয়ে যেত আমাদের জন্য।

-হেসে, এত পজেটিভ চিন্তা করার শক্তি কোথায় পান আপনি?

-হেসে, জ্ঞান হবার পর বাবা প্রথম যে জিনিসটা আমাকে শিখিয়েছিলেন তা হচ্ছে, দুনিয়ার জীবন পরীক্ষাক্ষেত্র স্বরূপ। প্রতি মুহুর্তে তাই জীবন আমাদের কাছ থেকে নানা ধরনের পরীক্ষা নেবে। তাই সম্ভাব্য সবকিছুর জন্য সবসময় প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। যেমন প্রস্তুতি আমরা স্কুল-কলেজের পরীক্ষার জন্য নিয়ে থাকি অনেকটা সেরকম। অন্যের উপর ভরসা করে কি আমরা পরীক্ষার হলে যাই? কখনোই না। কারণ আমরা জানি যার যার পরীক্ষার তাকেই দিতে হবে। আমার বিয়ের দিন বাবা আমাকে এই কথাটাই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন।

-জীবন পরীক্ষাক্ষেত্র এটা?

-হেসে, বাবা বলেছিলেন সবসময় মনে রাখবে স্কুল-কলেজের পরীক্ষায় মতো সংসারটাও একটা পরীক্ষা তোমার জন্য। কারো সাহায্য ছাড়াই শুধুমাত্র আল্লাহর দেয়া মেধা-প্রতিভা ও নিজের পরিশ্রমের জোড়ে জীবনের প্রতিটা পরীক্ষায় যেভাবে তুমি প্রথম হয়েছো, তেমনি সংসার নামক পরীক্ষাতেও প্রথম হবার ইচ্ছা ও চেষ্টা জারি রাখতে হবে তোমাকে। আর যারা জীবনের প্রতিটা পরীক্ষায় টপ করতে চায়, অন্যেরা কি করছে কি করছে না সেসব দেখার সময় তাদের থাকে না। জীবনের ছোট ছোট পরীক্ষাগুলোতে সফল হতে হতে তারা ছুটে চলে আখিরাতের চূড়ান্ত সফলতার পানে।

চলবে…..

পর্ব-২

 

শিশু চুরির ঘটনা

নারী সংবাদ


হাসপাতাল থেকে শিশু চুরির ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হলেও এবার অন্যভাবে শিশু চুরির ঘটনা ঘটেছে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে। গত রোববার গভীর রাতে পৌর এলাকার বকচর মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সৌদি প্রবাসী ইমরান খানের স্ত্রী রাইবিনা ১৮ মাসের এক মাত্র শিশুপুত্র ইমার খান রাফিকে নিয়ে তার বাবা এরশাদের বাড়ি বচকর মহল্লায় থাকতেন। প্রতিদিনের মতো ওই দিনই রাতে মা, খালা ও নানীর সাথে রাফি ঘুমিয়েছিল। রাত ৪টার দিকে রাফির মায়ের ঘুম ভেঙে গেলে তাকে বিছানায় না পেয়ে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় এলাকার লোকজন এগিয়ে এসে শিশুটিকে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে তারা ঘরের পেছনের দিকে সিঁধ কাটা দেখতে পান। পরিবারের দাবি, সিঁধ কেটে শিশু রাফিকে চুরি করা হয়েছে। সেই সাথে তাদের পরিবারের ব্যবহৃত একটি মোবাইল সেট চুরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
চুরি হওয়া শিশুটির মা রাইবিনা বলেন, যেকোনো মূল্যে আমার সন্তানকে জীবিত অবস্থায় ফেরত চাই। এ জন্য তিনি পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যাপারে সিঙ্গাইর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো: নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। চুরি হওয়া শিশুটিকে উদ্ধারসহ জড়িতদের গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে। সূূূূত্র: নয়াদিগন্ত।

 

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল ‘পর্ব-২’

আফরোজা হাসান


ছোট ছেলের বৌকে চুপচাপ বাগানে বসে থাকতে দেখে বুকের ভেতর কষ্টের যে নদীটা সময়ের শীতল প্রবাহে বরফে ঢেকে গিয়েছিলো তা আবার গলতে শুরু করলো আফসানা রহমানের। নিজের বিয়ের পরের সময়গুলোর স্মৃতি ভেসে উঠলো মনের পর্দার। বিশাল বড় পরিবারের বড় বৌ হিসেবে যখন শ্বশুরবাড়িতে ঢুকেছিল, মনে কত হাজারো রকমের স্বপ্নই না ছিল তার। কিন্তু মাস ঘুরতে না ঘুরতেই সেই স্বপ্নের স্থান দখল করে নিয়েছিল অনিশ্চয়তা। মনে হতো যেন মাঝ সমুদ্রে আটকা পড়েছে। চারিদিকে কোথাও কোন কূল কিনারা চোখে পড়তো না। কোন কাজ না পারলে শিখিয়ে দেবার কেউ ছিল না কিন্তু বৌ কিছুই জানে না, কিছুই পারে না, বাবা-মা কিছুই শেখায়নি এসব বলার মানুষের কোন অভাব ছিল না। ভাল-মন্দ পরামর্শ দেবার কেউ না থাকলেও দোষ খুঁজে বের করার মত অনেকেই ছিল। শত কাজ করেও কিছুতেই শাশুড়ির মন রক্ষা করা যেত না।

বুক চিড়ে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো আফসানা রহমানের। এটা ঠিক যে সময় ভালো হোক বা খারাপ কেটেই যায় কিন্তু স্মৃতি সবসময় রয়ে যায় মনের মাঝে। তাই সময় যেমনই হোক মানুষের আপ্রাণ চেষ্টা থাকা উচিত স্মৃতি যেন যাতনাকর না হয়। কেননা অতীতের সেইসব স্মৃতিরা বর্তমানের সুন্দর সময়গুলোকেও ম্লান করে দেবার ক্ষমতা রাখে। ধীর পায়ে ছেলের বৌয়ের কাছে রওনা হলেন আফসানা রহমান। শাশুড়িকে দেখে আলিসবা উঠতে গেলে তাকে ধরে বসিয়ে আফসানা রহমান হেসে বললেন, বোস মা আমি তোমার সাথে গল্প করতেই এসেছি। বিয়ের পর নানাধরনের ব্যস্ততা, তারপর তোমাদের ঘুরতে যাওয়া সবকিছু মিলিয়ে তোমার সাথে তেমন করে কথা বলাই হয়ে ওঠেনি। জানাও হয়নি তোমার কেমন লাগছে, কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা ইত্যাদি।

-শাশুড়ির কণ্ঠের মায়া আলিশবার অন্তরকে ছুঁয়ে গেলো যেন। মৃদু গলায় বলল, আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না মা। আর এই বাড়ির সবকিছুই ভীষণ ভালো লাগছে।

-পুত্রবধূর মাথায় হাত বুলিয়ে আফসানা রহমান হেসে বললেন, তুমি যে সময়টার ভেতর দিয়ে যাচ্ছো, আমিও একসময় এমন সময় পার করেছি। তাই জানি কেমন লাগে, কেমন লাগছে তোমার। নিজের বাবা-মা-ভাই-বোন, চির চেনা গণ্ডি ছেড়ে নতুন পরিবেশে নতুন মানুষদের মাঝে এসে একটা মেয়ের কেমন অসহায় লাগে সেটা শুধু আরেকটা মেয়েই বোঝে।

-আপনারও বিয়ের পর এমন লেগেছিলো মা?

-কিছুক্ষণ চুপ থেকে আফসানা রহমান হেসে বললেন, সময়ের তারতাম্যে পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনের ধরণ কিছুটা বদলে গেলেও অভিজ্ঞতা আসলে অনেকটা একই রকম। সেজন্যই তো আমি আপ্রাণ চেষ্টা করি তোমাদের অভিজ্ঞতা যেন সুন্দর হয়।

-আপনার জীবন অভিজ্ঞতা কি অনেক কঠিন ছিল মা?

-হেসে, আমাদের সময়টাই অন্যরকম ছিল। পুত্রবধূর সাথে একজন শাশুড়ি সেই আচরণই করতো যেমন আচরণ সে পেয়ে এসেছে তার শাশুড়ির কাছ থেকে। জীবনের শুরুতে শাশুড়ির প্রতি অনেক অভিমান ছিল কিন্তু একটা সময় বুঝেছি যে কন্টকাকীর্ণ পথে আমি চলছি, উনার পদযুগলও ক্ষত বিক্ষত তেমন পথে চলে। তাই তো নিজের সাথে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমার পুত্রবধূদের এমন পথে চলতে দেবো না।

-কিন্তু এই বুঝ আসতে তো নিশ্চয়ই অনেক সময় লেগেছে তার আগে কিভাবে সহ্য করেছেন সবকিছু?

-অনেক চেষ্টার পরও যখন শ্বশুরবাড়ির কারো আচরণের মধ্যে কোন পরিবর্তন দেখলাম না আমার মনে হয়েছিল, যদি কিছু বদলায় তা শুধু আমার পক্ষ থেকেই বদলাবে, অপর পক্ষ থেকে না। তোমাদের শ্বশুর তখন আমাকে বলেছিলেন, মানুষের সবসময় আশা ধরে রাখা উচিত। এটা ঠিক যে আশা সবাই করে কিন্তু খুব কম মানুষের সেই আশার প্রতিফলে ভালো কিছু পায়। এমন তো হতে পারে যে তুমি সেই খুব কম সংখ্যক মানুষদের একজন। উনি সবসময় আমাকে আশা ধরে রাখার প্রেরণা যুগিয়েছেন এই বলে যে, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।

-ঠিক কি হয়েছিলো মা?

-হেসে, ধীরে ধীরে অনেক কিছুই বদলে গিয়েছিল। আসলে কি জানো একটা মেয়ে চাইলেই সংসারকে গড়তে পারে। সংসার গড়ার অপরিসীম ক্ষমতা দিয়ে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন প্রতিটা মেয়েকে। সমস্যা হচ্ছে নিজের এই ক্ষমতা সম্পর্কে বেশির ভাগ মেয়েই অবগত নয়। আর যারা অবগত তাদের বেশির ভাগই সবর ধরে রাখতে পারে না বেশিদিন। বেড়ে উঠার পরিবেশ থেকে যেহেতু আমরা নিঃস্বার্থভাবে ত্যাগ করতে শিখি না তাই রাখাটা কঠিনও বটে।

-আপনি কিভাবে সবর ধরে রেখেছিলেন?

-হেসে, আমি যে দুঃখ কষ্ট ব্যথা বেদনার মুখোমুখি হয়েছি, কাউকে আমি এরজন্য দায়ী মনে করিনি কখনোই। সবকিছুকে আমার নিয়তি মনেকরে নিয়েছি। তাই হয়তো আমার সাথে যা কিছু হয়েছে সবই আমাকে আরো মজবুত হতে সাহায্য করেছে। আমাকে কম্প্রোমাইজ ও সবর করতে শিখিয়েছে। এরপরও কখনোই যে ভেঙ্গে পড়িনি তা না। পালাতেও চেয়েছি একেকবার কিন্তু তোমাদের শ্বশুরের জন্য পারিনি।

-হেসে, বাবা সবসময় আপনার সাথে ছিলেন সেজন্যই আসলে আপনি কঠিন পথ পাড় করে আসতে পেরেছেন।

-হেসে, আলহামদুলিল্লাহ্‌! সত্যিই উনি পাশে না থাকলে আমি হাল ছেড়ে দিতাম। তবে সবচেয়ে বড় কথা কি জানো? যেদিন থেকে আমি শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের বাবা-মা, দেবর-ননদেরকে ভাইবোন ভাবতে পেড়েছিলাম মন থেকে সবকিছু অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল আমার জন্য। থাক এসব কথা এখন। তোমার কথা বলো।

-আজ বিকেলের নাস্তা সবার জন্য আমি বানাতে চাই মা।

-হেসে, রান্না করতে কি খুব পছন্দ করো?

-হেসে, জ্বী মা ভীষণ।

-হেসে, ঠিকআছে চলো নাস্তা বানানোর ফাঁকে ফাঁকে তোমার কথা শুনবো।

চলবে…….

১ম পর্ব

 

রক্তাক্ত স্কুলব্যাগ

তাহেরা সুলতানা


“আম্মু, জানো! আইজ শাম্মী কি যে সুন্দর একখান ব্যাগ কান্ধে কইরা স্কুলে আসছিল! শাম্মীর জন্মদিনে ওর মায়ে ওরে কিন্যা দিছে! আমার জন্মদিনে তুমিও কিন্তু ওইরকম একখান ব্যাগ কিন্যা দিবা! না হইলে আমি কিন্তক আর স্কুলেই যামু না! এই আমি কইয়া রাখলাম!” পুরনো স্কুলব্যাগটা বিছানার উপর রাখতে রাখতে রিতা মায়ের কাছে বায়না করে।

রমিছা বেগমের স্বামী ছিলো রিকশাচালক। রিতার যখন ৩ বছর বয়স, তখন তার স্বামী আফাস মিয়া ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যায়! আফাস মিয়া ২ বছর বিছানায় পড়ে ছিল। সেসময় থেকেই রমিছা মানুষের বাসায় কাজ করে সংসার চালাচ্ছে আর মেয়েটাকে মানুষ করছে। মেয়ের পড়াশুনার মাথা খুব ভালো! ক্লাস ফাইভে জিপিএ ৫ পেয়েছে। এখন ক্লাস এইটে পড়ে। সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা। এই মেয়েটাই রমিছার ভবিষ্যৎ! মেয়ের কোন অভাব সে কখনো বুঝতে দেয় না!

কাল মেয়েটার জন্মদিন! রমিছা আগেই ওর জন্য একটা নতুন ব্যাগ কিনে রেখেছে। কিন্তু মেয়েটাকে চমকে দেয়ার জন্য আগে থেকে কিছুই বলছে না। তাই সে রান্নাঘরে কাজ করছে আর মেয়ের অভিমানভরা কথাগুলো শুনে মুচকি মুচকি হাসছে!

রিতা মায়ের কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে আবারও বলতে লাগলো, “তুমি কিন্তু গতবছর আমার জন্মদিনে কইছিলা, এইবার নতুন ব্যাগ কিন্যা দিবা! আব্বু থাকলে এতোদিনে ঠিকই কিন্যা দিতো!”

কথাটা কানে যাওয়া মাত্রই রমিছার দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো! সে কোনদিন মেয়ের সামনে বাপের খারাপ কোন দিক উপস্থাপন করেনি! অথচ সত্যিটা একমাত্র সেই জানে! আফাস মিয়া কোনমতে রিকশা চালিয়ে যা পাইতো, তা ওই আর দশজনের সাথে তাসের আড্ডায় আর বিড়ি খেয়ে উড়াতো। সংসার কেমনে চলতো, কোনদিন খোঁজও নেয়নি! বাচ্চা মেয়েটার কথাও কোনদিন ভাবতো না। কিছু বললেই মারধোর করতো। রমিছা ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়াশুনা করেছিল। বাপের বাড়ির অবস্থাও ভালো ছিল না। তাই ফাইভে ওঠার পরই বিয়ে হয়ে যায়। তাই তার স্বপ্ন, মেয়েটারে অনেকদূর পর্যন্ত পড়াবে!

আফাসের যখন মরণ ব্যাধিতে ধরলো, তখন রমিছা নিজেই সংসারের হাল ধরলো! রিকশা, ঘর সব বেঁচে চিকিৎসা করানো শুরু করলো। রিকশাটা আফাস বিয়ের সময় রমিছার বাপের কাছ থেকে যৌতুক হিসাবে পেয়েছিল। সব বিক্রি করে অসুস্থ্য স্বামী আর মেয়েটাকে নিয়ে দূরের এক বস্তিতে ঘর ভাড়া নিলো।

আফাসের শরীর দিন দিন খারাপ হতে লাগলো! ডাঃও সময় বেঁধে দিলো! একদিন সন্ধ্যারাতে ঘরে একফোঁটা চালও ছিল না! আফাসের অসুধও শেষ! মেয়েটা ক্ষুধায় চিৎকার করে কাঁদছিল! রমিসা তখন দিশেহারা হয়ে গেলো! হঠাৎ মাথায় আঁচল টেনে মেয়েটারে কোলে নিয়ে কাজের খোঁজে বেড়িয়ে পড়লো। এবাড়ি ওবাড়ি করে ২/৩ জায়গায় কিছু ছুটা কাজও পেয়ে গেলো। তারপর চাল, তরিতরকারি আর অসুধ কিনে মধ্য রাতে বস্তিতে ফিরলো।

ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই আফাসের চড়াগলা শুনতে পেলো। আর সেইসাথে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ! চরিত্র নিয়ে আজেবাজে কথা বলতেও ছাড়লো না! রমিছা কোন কথায় কান না দিয়ে ঘরের এক কোনে স্টোভে ভাত চড়াতে চলে গেলো। আফাস তো অনর্গল বকবক করেই যাচ্ছে! ও কোন প্রতিত্তোর করলো না। মেয়েটা ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। ২/৩ বাসা থেকে মেয়েটারে আদর করে যা দিয়েছে, তাতেই ওর পেট ভরে গেছে। আর আদর করবেই না বা কেন! এমন ফুটফুটে মেয়ে কয়জনের হয়!

রমিছা থালা ভরে ভাত আর আলুভর্তা নিয়ে যখন আফাসের সামনে দিলো, তখনও সে গজগজ করছিল! রমিছা যত তাকে শান্ত করছে, সে তত রাগ দেখাচ্ছে! কিন্তু যখন ভাতের থালাটা ছুড়ে ফেলে দিলো, তখন রমিছা অগ্নিমূর্তি ধারণ করলো! আফাস বিনাকারনে অনেকবার রমিছার গায়ে হাত তুলেছে! রমিছা কিচ্ছু বলেনি কোনদিন। কিন্তু কস্টের উপার্জিত টাকায় কেনা ভাতগুলো যখন মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখলো, তখন যেন রক্ত চড়ে গেলো! যা মনে ছিল, সব যেন ঝেড়ে দিলো! সেদিনের পর আফাস সেই যে নিশ্চুপ হলো, আর কোনদিনই গলা উঁচু করে কথা বলেনি। এর কিছুদিন পরেই আফাস মারা যায়!

রমিছার তখন অল্প বয়স! দেখতেও সুন্দর! কতজন বিয়ের লোভ দেখাতো! কেউ কেউ কুপ্রস্তাব দিতেও ছাড়তো না। রাতের বেলা দরজায় এসে ধাক্কাতো! সবসময় রমিছার ভয় ভয় করতো! মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে গুটিসুটি হয়ে পড়ে থাকতো। দুই এক বাসায় কাজ করতে গিয়ে সেখানেও নানান সমস্যায় পড়তে লাগলো! অবশেষে একটা ভালো সদায়াসকবাসায় কাজ পেলো। বাসার মালিক মেজবাহউদ্দিন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা এবং উনার স্ত্রী ফাহমিদা বেগমও একটা স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন, কিছুদিন হলো অবসরে গেছেন ! বাসায় তারা দুইজন আর একজন কেয়ারটেকার থাকে। ৩ ছেলেমেয়ের কেউই দেশে থাকে না। উনারা রিতাকে খুব আদর করতেন। তাছাড়া রমিছার আচার ব্যবহার দেখেও তাদের ভালো লেগে যায়। রমিছা উনাদের খালাম্মা-খালুজান বলেই ডাকে।

একদিন রমিছা সাহস করে বস্তিতে তার যে সমস্যাগুলো হচ্ছে, সেগুলো ফাহিমা বেগমের কাছে খুলে বলে। আর সেইসাথে মেয়েকে নিয়ে তার স্বপ্নের কথাও জানায়। সবকথা শুনে মেজবাহউদ্দিন সাহেব একদিন সন্ধ্যায় রমিছাকে সাথে করে বস্তিতে আসেন। উনাকে এলাকায় সবাই খুব ভালো জানে বলে, তারপর বেশ কিছুদিন কেউ আর রমিছাকে ডিস্টার্ব করতে আসেনি। এরপর বেশি রাত হলে সেদিন মেয়েকে নিয়ে রমিছা মেজবাহ সাহেবের বাসাতেই থেকে যেতো। অনেক চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে যে মেয়েকে এতোটা বড় করলো, সে কিনা আজ বলছে, “আব্বু থাকলে ঠিক কিনে দিতো!”
এতো কিছু করছে, আর ব্যাগটা না দেয়ার কারণে সব মিথ্যা হয়ে গেলো! রমিছার কস্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল! মেয়ের কাল জন্মদিন বলে একটু পায়েস রাঁধছিল। চোখের পানিতে সব যেন ঝাপছা দেখতে লাগলো! মেয়ের ডাকে সম্বিত ফিরে পেলো! মেয়ের আবার একই কথা!

“আম্মু, আমি কি কইছি, শুনছো! কাল আমারে নতুন ব্যাগ না দিলে স্কুলেও যামু না। পড়ালেখাও করমু না। বান্ধবীরা হাসাহাসি করে! এক ব্যাগ নিয়া ৩ বছর ধইর‍্যা স্কুলে যাইতেছি! আমার কোন মানসম্মান নাই!”

রিতা হঠাৎই মায়ের চোখে পানি দেখতে পায়! সে কোনদিন মাকে কাঁদতে দেখেনি! ততক্ষণাৎ দৌড়ে এসে মাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আর কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আম্মু! আমার ব্যাগ লাগবো না! তুমি আর কাইন্দো না! লক্ষী আম্মু! এই আমি কানে ধরলাম! আর কোনদিন নতুন ব্যাগ চামু না! আমার ভুল হইয়া গেছে! আব্বুর কথা বইল্যা তোমারে কষ্ট দিছি! আমারে তুমি মাফ কইর‍্যা দাও!”
একনিমিষে রমিছার সব কস্ট যেন নি:শ্বেষ হয়ে গেলো! মনে হলো যেন, তার মতো সুখী মা এই পৃথিবীতে আর একটাও নাই! ঠিক যেদিন রিতার পিএইসসি এর রেজাল্ট বের হলো, সেদিনের মতো অনুভূতি হলো!

রমিছা মেয়েকে দুহাত দিয়ে সামনে টেনে আনলো আর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো, “পাগলি মাইয়া আমার! আমি তো ব্যাগ কবেই কিন্যা রাখছি! দেখ গিয়া! শিতানের কাছে বালিশের নিচে লুকাইয়া রাখছি। তোমারে চমকাইয়া দিবো দেইখ্যা আগে থাইক্যা কিছু কই নাই! তুমি মার্কেটে গিয়া যেইটা দেইখ্যা পছন্দ করছিলা, ওইটাই কিনছি! যাও, দেখো গিয়া!”

রিতা খুশিতে আরও শক্ত করে মাকে জড়িয়ে ধরলো! বললো, “সত্যই! তুমি আমার লিগা ব্যাগ কিনছো! এই জন্যই তো তোমারে আমি এত্ত ভালোবাসি!”

“হইছে! আর আল্লাদ করতে হইব না! এইবার যাও তো মা! হাত-মুখ ধুইয়া খাইতে আসো! তয় একখান কথা মা! আমারে কিন্তু ভালো রেজাল্ট আইন্যা দিবা! খাতায় যেন মেলা নম্বর দেখবার পারি! তোমারে যেন ডাঃ হওয়া দেইখ্যা মরতে পারি! এইডাই কিন্তু আমার স্বপ্ন!” রমিছার হাসিমুখ ভরা অভিব্যক্তি!

রিতা হেসে জবাব দেয়, “পাইবা আম্মু, পাইবা! আমার লিগা খালি এট্টু দোয়া কইরো! তোমার মাইয়া একদিন বড় ডাক্তার হইয়া তোমার সব কস্ট ভুলাইয়া দিবো! দেইখ্যো! কিন্তু আর একবার যদি মরার কথা কইছ, তাইলে কিন্তুক তোমার খবর আছে!”
রমিছা গালভরা হাসি দিয়ে বলে, “আইচ্ছা! আর কমু না! খুশী! এইবার যাও! সন্ধ্যা হইয়া যাইতেছে তো! পড়তে বসবা না!”

“হ! যাইতেছি তো!” এই বলে রিতা এক দৌড়ে ঘরে চলে গেলো।

দূর থেকে মাগরিবের নামাজের সুমধুর আজানের সুর ভেসে আসে। রমিছা দ্রুত কলঘরে অযু করতে চলে যায় আর মেয়েকেও নামাজের জন্য তাগাদা দিয়ে যায়।

মা আর মেয়ে মিলে সেদিন খুব গল্প করে! জানালার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ায় ছোট্ট ঘরটাকে যেন একটা স্বপ্নপূরী মনে হচ্ছিল! আর মেয়েটা যখন দুই হাত নেড়ে, মাথা ঝাঁকিয়ে গল্প করছিল, তখন চাঁদের আলোয় ওকে যেন একদম রাজকন্যার মতো লাগছিল! রমিছা মুগ্ধ হয়ে থাকিয়ে থাকে! নিজের মেয়েকেও যেন সে চিনতে পারে না! এই কবছরে মেয়েটা যেন হঠাৎ করেই অনেক বড় হয়ে গেছে! আজ যেন গল্প শেষই হচ্ছে না! মেয়েটাকেও কাছছাড়া করতে ইচ্ছে করছে না! কখন যে রাত ১২ বেজে গেছে, রমিছা টেরই পায়নি! দ্রুত গিয়ে পায়েসের বাটিটা নিয়ে আসে। মেয়ের মুখে পায়েস তুলে দেয় আর মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক দোয়া করে! রিতাও মাকে খাইয়ে দেয়!

প্রতিদিনের মতো আজকে সকালেও রিতা স্কুল ড্রেস পড়ে, কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো। সকালে কোনদিনই ওর মায়ের সংগে দেখা হয় না! মা সেই ভোরবেলা কাজে বেড়িয়ে যায়! কিন্তু আজ বের হওয়ার সময় কেন যেন মাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে! এদিকে ক্লাসেরও দেরী হয়ে যাচ্ছে! নতুন ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যাওয়ার জন্য যতটা না খুশী হওয়ার কথা, ওর ততটা খুশীও লাগছে না! রিতা অনেকটা আনমনা হয়েই আজ বাসা থেকে বের হলো। স্কুলে যাওয়ার পথেই শাম্মীদের বাসা! আজও দেখলো, শাম্মী ওর জন্য বাসার সামনে অপেক্ষা করছে। অনেকটা হাটার পথ! মা যদিও রিকশা ভাড়া দিয়ে দেয়, কিন্তু রিতা প্রায় দিনই হেটে যেতে চেষ্টা করে! প্রতিদিনের মতো আজও ওরা একসাথে গল্প করতে করতে যাচ্ছিল। হঠাৎই একটা গাড়ী ঝড়ের গতিতে ওদের ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো! শাম্মী রাস্তার এ পাশে ছিল বলে ও তেমন ব্যথা পেলো না। কিন্তু রিতা কিছু বুঝে উঠার আগেই মাটিতে পড়ে গেলো! সাথে সাথে রক্তের বন্যা বয়ে গেলো! আশেপাশের লোকজন ধর ধর বলে ছুটে আসলো! কিন্তু ঘাতক গাড়ীর আর হদিস মিললো না! সবাই ধরাধরি করে রিতাকে সিএনজিতে তুললো! শাম্মীসহ সিএনজি তখন নিকটস্থ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ছুটলো! রিতার মাথাটা শাম্মীর কোলে! ভয়ে, আতংকে ও যেন ভাষা হারিয়ে ফেললো! খালি একটু পর পর ডুকরে কেঁদে উঠলো!

রমিছা আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চায়! মেয়েটার জন্মদিন! তাই ওর জন্য একটু পোলাও আর মুরগীর গোস্ত রান্না করবে! বিকেলে মেয়েটা স্কুল থেকে ফিরেই যাতে খেতে পারে! রমিছা যেসব বাসায় কাজ করে, ভালো ছাত্রী বলে রিতাকে সবাই খুব ভালোবাসে! তাই ওর জন্মদিনের কথা শুনে সবাই কিছু না কিছু দিলো। রমিছা সব গুছিয়ে নিয়ে দ্রুত কাজ সেরে বাড়ির পথ ধরলো! ফেরার পথে বাজার থেকে হাফ কেজি পোলাও এর চাল আর একটা বয়লার মুরগী নিয়ে নিলো। বাড়ির পথটাও যেন আজ বেশী লম্বা মনে হচ্ছে!

বস্তির কাছাকাছি আসতেই দেখলো, একদল লোকের জটলা! বুকটা ধক করে উঠলো! কার আবার কি হলো! দোয়া পড়তে পড়তে নিজের ঘরের দিকে আসতেই রমিছা দেখলো, জটলাটা ওর ঘরের সামনেই! রমিছা এক দৌড়ে ঘরে ঢুকলো! তারপর ও যে দৃশ্য দেখলো, তাতে আর স্বাভাবিক থাকতে পারলো না! জ্ঞান হারিয়ে ফেললো! সবাই ওর চোখে মুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফিরালো ঠিকই! কিন্তু রমিছা যেন পাথর হয়ে গেছে! মেয়ের রক্তাক্ত দেহ আর রক্তমাখা স্কুল ব্যাগটার দিকে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো! সবাই মিলে রমিছাকে কাঁদানোর খুব চেষ্টা করলো! কিন্তু কেউই একফোঁটা চোখের পানি বের করতে পারলো না!

আজও রমিছা রক্তমাখা স্কুল ব্যাগটা বুকে করে রিতার স্কুলের পথটায় বসে থাকে! কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে, “তার মেয়ের আজ জন্মদিন! নতুন ব্যাগ কিনে এনেছে! মেয়ে স্কুল থেকে বের হলেই ব্যাগটা ওকে দিবে!” বি:দ্র: বাসের ধাক্কায় মৃত বাচ্চাগুলোর স্মরণে।

 

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল ‘পর্ব-১’

                                                 আফরোজা হাসান


রান্নাঘরের দরজায় এসে শাশুড়িকে ভেতরে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে গেলো আলিসবা। ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না এই দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে গেলো সে। বিয়ের দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সে ঠিক মানিয়ে নিতে পারেনি শ্বশুরবাড়ির সবার সাথে। বাবা-মা আর দুই ভাইবোনকে নিয়ে ছোট পরিবার ছিল তাদের। কিন্তু বিয়ের পর এসে পড়েছে বিশাল বড় যৌথ পরিবারে। যদিও শ্বশুরবাড়ির সবাইকে খুব ভালোই মনে হয়েছে তার কাছে কিন্তু সবাই যেন কেমন নিজের মত থাকতে পছন্দ করে। তাই কি করবে, কি করণীয় ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না আলিসবা। বড় জা অন্তরাকে রান্নাঘরের দিকে আসতে দেখে হেসে সালাম দিলো সে। সালামের জবাব দিয়ে জা হেসে বলল, তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে?

-মা নাস্তা বানাচ্ছেন সাহায্য করতে যাবো ভাবছিলাম।

-হেসে, সকালের নাস্তা মা নিজ হাতে বানান ছেলেদের জন্য। এই বাড়ির মা ভক্ত ছেলেরা সবাই দিনের শুরু মায়ের হাতের খাবার খেয়ে করতে চায় তো সেজন্য। আমি বাগানে যাচ্ছি গাছে পানি দেবো, চলো তুমিও।

জা’য়ের পেছন পেছন আলিসবাও বাগানে গেলো।

-কিছুক্ষণ চুপ থেকে অন্তরা হেসে বলল, কিছু বলছো না যে? তোমাদের ভ্রমণ কেমন হল সেটাই তো জানা হয়নি।

-জ্বী ভাবী ভালো হয়েছে। এই বাগানের সব ফুল বেগুনী কেন?

-হেসে, কারণ এটা তোমাদের বড় ভাইয়ার ব্যক্তিগত বাগান।

-ভাইয়ার বুঝি বেগুনী রং খুব পছন্দ?

-হেসে, উহু আমার বেগুনী রং খুব পছন্দ। বাগানের আদর-যত্ন উনিই করেন সাধারণত। উনি শহরের বাইরে গিয়েছেন তাই আমি করছি। তোমার কথা বলো কেমন লাগছে বাড়ির সবাইকে?

-জ্বী ভালো।

-হেসে, তোমাকে খুব আপসেট দেখাচ্ছে। অবশ্য প্রথম প্রথম সবারই এমন হয়। পুরোপুরি নতুন একটা পরিবেশ, নতুন লোকজন, নতুন সম্পর্কের ভিড়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারাটাই স্বাভাবিক।
-আপনারও হয়েছিলো এমন?

-হুম…তবে আমাকে মা খুব সাপোর্ট করেছেন পরিবারের প্রতিটা বিষয়ে। ইনশাআল্লাহ! দেখবে তোমাকেও করবেন। শাশুড়ি বৌয়ের সমস্যার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে কমুনিকেশন গ্যাপ। একে অন্যের সাথে কথা তো বলে কিন্তু একে অন্যেকে বোঝানোর বা বোঝার চেষ্টা করে না। আলহামদুলিল্লাহ্‌! আমাদের শাশুড়ি তেমন নন। উনি উনার সব কথা যেমন বুঝিয়ে বলেন, ঠিক তেমনি আমাদের সবার কথাও মন দিয়ে শোনেন এবং বোঝার চেষ্টা করেন।

-হ্যা মার সাথে আমার যখনই কথা হয়েছে খুব ভালো লেগেছে। আমাকে যেদিন দেখতে গিয়েছিলেন মা সেদিন বলেছিলেন, নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি ও বুঝেছি যে, বিয়ে কোন রূপকথার কাহিনী না। আর যদি হয়ও বা সেই কাহিনীতে একটা হলেও জ্বীন থাকে। আর সেই জ্বীনের সাথে লড়াই করে চলতে হয় সংসারের পথে। কথাটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছিলো।

-হেসে, মা সত্যিই অনেক সুন্দর কথা বলেন। সংসারের মূলমন্ত্র গুলো আমি মার কাছেই শিখেছি। আমার কি মনেহয় জানো? একজন শাশুড়ি যদি তার দীর্ঘ জীবনের সাংসারিক অভিজ্ঞতা গুলো তুলে দেন পুত্রবধূর হাতে, এরচেয়ে বড় দোয়া আর কিছুই হতে পারে না সেই পুত্রবধূর জন্য।

-সত্যিই অনেক সহজ হয়ে যেতো তাহলে সংসারের সবকিছু জানা ও বোঝা।

-হুম…ভেবে দেখো কত চমৎকার হতো যদি বিয়েতে অন্যান্য সবকিছুর সাথে প্রতিটা মেয়ের জন্য তার শাশুড়ির সাংসারিক অভিজ্ঞতার একটা প্যাকেজ দেবারও প্রচলন থাকতো। তাতে পরিবারের প্রতিটা সদস্য সম্পর্কে বেসিক ধারণা নিয়ে জীবনের নতুন সফর শুরু করতে পারতো প্রতিটা মেয়ে। চলার পথের খাঁদা-খন্দ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা থাকতো, চারিদিক অনিশ্চিত অন্ধকারে ঢাকা থাকতো না।

-আপনিও অনেক সুন্দর করে কথা বলেন ভাবী। সত্যি অনেক ভালো হত এমন হলে।

-হেসে, এই কথাগুলো মা আমাকে বলেছিলেন আমার বিয়ের পর। কারণ মার বিয়ের পর মাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। মা নাকি তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে কষ্ট উনি করছেন উনার ছেলের বৌদেরকে কখনোই এমন কষ্ট সহ্য করতে দেবেন না। যাইহোক, আমি চাই আমার মত তুমিও এসব কথা মার কাছ থেকেই জানো। তবে কি জানো?

-কি ভাবী?

-মার সংসার জীবনের অভিজ্ঞতাকে উপহার স্বরূপ না পেলে আমিও হয়তো জীবনের শেষ প্রান্তে গিয়ে বুঝতাম যে, ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল। শুধুমাত্র জানা না থাকার কারণে ত্যাগ গুলো আমরা করতে পারি না, যারফলে বেশির ভাগ সময়ই স্বপ্নিল করে সাজাতে ব্যর্থ জীবনটাকে।

-আপনার কথা শুনে আমার মনে আশার প্রদ্বীপ জ্বলে উঠেছে ভাবী। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছোট ছোট ত্যাগের মাধ্যমে জীবনকে স্বপ্নিল করে গড়ে তোলার প্যাকেজ আমি পেয়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ।

-হেসে, ইনশাআল্লাহ। তুমি যাও সবাইকে নাস্তার জন্য ডাকো। আমি মার কাছে যাচ্ছি।

চলবে…

 

গাজীপুরে পোশাককর্মী স্ত্রীকে খুন

নারী সংবাদ


গাজীপুরে দাম্পত্য কলহের জেরে এক পোশাককর্মীকে কুপিয়ে খুন করে তার স্বামী পালিয়েছে। গতকাল পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করেছে। নিহতের নাম চম্পা (২৩)। তিনি পটুয়াখালীর গলাচিপা থানার বালির হাওলা গ্রামের নুরুল ইসলাম গাজীর মেয়ে। গাজীপুর জেলা সদরের এনএজেড পোশাক কারখানার চাকরি করতেন চম্পা।
হোতাপাড়া পুলিশ ক্যাম্পের এসআই মো: সাইফুল ইসলাম ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নিজমাওনা এলাকার বাসিন্দা মো: ইসমাইলের ছেলে রফিকুল ইসলামকে প্রায় ১০ বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেন চম্পাকে। এটি তাদের দ্বিতীয় বিয়ে। তারা দু’জনই একই পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তাদের এ সংসারে সাত বছরের তামিম নামের এক ছেলে রয়েছে।
বিয়ের কিছুদিন পর থেকে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। সম্প্রতি রফিক গোপনে তৃতীয় বিয়ে করেন। এ বিয়ের খবর প্রকাশ পেলে রফিক ও চম্পার সম্পর্কের আরো অবনতি হয়। কয়েক মাস আগে চম্পা তার ছেলেসহ গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল গড় ইউনিয়নের নয়নপুর এলাকায় মনু মিয়ার বাড়িতে ভাড়া বাসায় আলাদা বসবাস শুরু করেন। গত বুধবার রাতে রফিক তার দ্বিতীয় স্ত্রী চম্পার বাসায় আসেন। তাদের মধ্যে বাগ-বিতণ্ডার একপর্যায়ে রাত আড়াইটায় রফিক ধারালো অস্ত্র দিয়ে চম্পাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চম্পা নিহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গতকাল ভোরে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। সূত্র :নয়াদিগন্ত।

 

লিটল হজ্জ্ব

তাহেরা সুলতানা


লিটল হজ্জ্ব! হয়তো ভাবছেন, বাচ্চাদের আবার কিসের হজ্জ্ব! কিন্তু শেখাতে তো সমস্যা নেই! এখন তো হজ্জ্বের মৌসুম চলছে! ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মতো হজ্জ্বও একটি গুরুত্বপূর্ন স্তম্ভ।
আর একটি বিষয় নিশ্চয় আমরা জানি যে, হজ্জ্ব পালনের সাথে সামর্থ্যের সম্পর্ক, বয়সের না। বাবা-মা হজ্জ্ব করার জন্য সামর্থ্যবান হলে সন্তানদেরও সাথে নিয়ে হজ্জ্বে যেতে পারবেন। কিন্তু আমরা বড়রা হয়তো স্বল্প সময়ে হজ্জ্বের নিয়মকানুন শিখে সঠিকভাবে হজ্জ্ব পালন করতে পারলেও কখনো কি ভেবে দেখেছি যে, বাচ্চারা এই অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে হজ্জ্বের কঠিন কঠিন ধাপগুলো শিখবে?
আর সেই বাচ্চা যদি একবারও ওমরা করতে না যায়, তাহলে তো আরও কঠিন হয়ে যায়, তাই না?
যদি এমন হয়, প্রি-স্কুল থেকেই বাচ্চাদের ইসলামের বাকি স্তম্ভগুলো শিখানোর পাশাপাশি হজ্জ্বের উপর ব্যবহারিক ক্লাস নেয়া হয়, তাহলে কেমন হয়!
মালয়েশিয়ার একটি নামকরা ইসলামিক প্রি-স্কুল সেটাই সম্পন্ন করে দেখিয়েছে! আলহামদুলিল্লাহ! স্কুলটির নাম ‘Little Caliphs Creative’।
গত ১২ই জুলাই একটি স্থানীয় মসজিদ প্রাংগনে (পুত্রজায়া মসজিদ) সারাদিনব্যাপী হজ্জ্বের উপর ব্যবহারিক ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়!
প্রতিষ্ঠানটির ৩০০ ব্রাঞ্চ থেকে ৬ বছর বয়সী প্রায় ৯০০০ বাচ্চাকে নিয়ে ‘লিটল হজ্জ্ব’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে বাচ্চাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে হজ্জ্বের প্রতিটি ধাপ খুব সুন্দরভাবে শেখানো হয়!
এই অনুষ্ঠানের পরিপ্রেক্ষিতে ‘লিটল হজ্জ্ব’ প্রোগ্রামের জন্য মালয়েশিয়ার রেকর্ড বুকে উক্ত স্কুলের নাম উঠে আসে, যা অত্যন্ত সম্মানের! এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি এবার শ্রেষ্ঠ প্রি-স্কুল হিসাবে গোল্ড মেডেলও পায়। মজার বিষয় হচ্ছে, এই স্কুলটি একটি আধাসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং এটি এখানকার সবচেয়ে কম খরচের স্কুলগুলোর মধ্যে একটি। আমি কিছু ছবি এবং একটি ভিডিও শেয়ার করছি। ছবি আর ভিডিও দেখলেই অনেক কিছু জানতে পারবেন। আমরা চাইলেই আমাদের দেশে অল্প খরচে এরকম প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে পারি। আমাদের দেশে সম্পদশালী এমন অনেকেই আছেন, যারা সবসময় ভালো কিছু করার চিন্তায় মগ্ন থাকেন। চাইলে স্কুলগুলোতেও সেরকমভাবে ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন, হোক সেটা স্বল্পপরিসরে!আবার অনেকে মালয়েশিয়াতেও স্থায়ীভাবে বসবাসের সামর্থ্য রাখেন, যাতে বাচ্চাকে সুন্দর একটি শিক্ষার পরিবেশ দিতে চান। আমাদের ভুললে চলবে না যে, একটি বাচ্চাই কিন্তু একটি দেশের ভবিষ্যৎ, একটি জাতির কর্নধার!

ছবি কর্ণার:

অংশগ্রহণকারী লিটল হাজ্জ্বী
তাওয়াফ করা
সাফা-মারওয়া সাঈ
জমজম কূপের পানি পান
মিনায় অবস্থানস্থল
শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের উদ্দেশ্যে পাথর সংগ্রহ
শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা