All posts by Oporajita

 

জীবনের প্রথম স্কুলে যাওয়া আর হলো না মেহেরাবের!

প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে নতুন বছরের শুরুর দিন গত বৃহস্পতিবার বই নিয়েছিল শিশুটি। মাঝখানে শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ। গতকাল শনিবার জীবনের প্রথম ক্লাস করার জন্য বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ক্লাসে আর বসা হয়নি। বিদ্যালয় থেকে মাত্র পাঁচ গজ দূরে থাকতে বাসের চাপায় প্রাণ গেল ছোট্ট শিশুটির।
ওই শিশুর নাম মো. মেহেরাব হোসেন (৬)। গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গি ইউনিয়নের শ্রীঙ্গাল নামক জায়গায় এ ঘটনা ঘটে। বিদ্যালয়ে আসার পথে রাস্তা পার হওয়ার সময় ফরিদপুর থেকে টেকেরহাটগামী দিশারী পরিবহনের একটি বাসের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
মেহেরাব হোসেন ডাঙ্গি ইউনিয়নের বাশাগাড়ি গ্রামের আসমত মুন্সীর ছেলে। আসমত মুন্সী সিঙ্গাপুরপ্রবাসী। দুই ছেলে মো. মেহেদী হাসান (১১) ও মেহেরাবকে নিয়ে বাশাগাড়িতে থাকেন আসমতের স্ত্রী রেহানা বেগম।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাহেরা খান জানান, বৃহস্পতিবার শিশুটি নতুন বই নিয়ে বাড়ি যায়। গতকাল ক্লাস করার জন্য স্কুলে আসার পথে সে দুর্ঘটনার শিকার হয়।
এলাকাবাসী জানান, দুর্ঘটনার পর বাসটি দ্রুত চলে যায়। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। তারা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এবং গতিরোধক নির্মাণের দাবি জানায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি টেম্পো ভাঙচুর করে। পরে নগরকান্দার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল আজিজ, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলামসহ পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে গতিরোধক নির্মাণের আশ্বাস দিলে বেলা একটার দিকে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেয়।
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফসারউদ্দিন বলেন, বাসটি শনাক্ত করা গেছে। এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অটিজম শিশুদের জন্য নতুন অ্যাপ

অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্য নতুন অ্যাপ আনল গুগল গ্লাস। এই অ্যাপের মাধ্যমে ওই শিশুদের শিক্ষা দেয়ার সুবিধা হবে বলে দাবি করা হয়েছে গুগলের তরফ থেকে। নতুন এই অ্যাপের নাম দেয়া হয়েছে ‘ব্রেন পাওয়ার’।

এই অ্যাপ নিয়ে আপাতত গবেষণা চলছে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে।

আগামী বছরেই চালু হবে এই অ্যাপ।

অ্যাপটির মাধ্যমে অটিজম আক্রান্তদের মনের কথা বুঝে নেয়া যাবে। তারা কোন দিকে তাকিয়ে আছে, কোনদিকে মনঃসংযোগ করছে তা বোঝা যাবে। এর ফলে এদের সাথে কথা বার্তা বলা সহজ হবে।
সূত্র : ইন্টারনেট

ধর্ষনের চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে শিশুকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা!

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে রিয়া খাতুন (১০) নামে এক শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত রিয়া উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের আব্দুস সালামের মেয়ে ও লক্ষ্মীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

পুলিশ শুক্রবার রাত ৮টার দিকে গ্রামের একটি সরিষাক্ষেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে।

 বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) খাজা গোলাম কিবরিয়া জানান, শুক্রবার দুপুরে স্কুলছাত্রী রিয়া খাতুন ছাগলকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য ক্ষেতে নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় হয়ে গেলেও বাড়ি ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন তাকে খুঁজতে শুরু করে। একপর্যায়ে সরিষা ক্ষেতের মধ্যে তার লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা প্রথমে শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ব্যর্থ হওয়ায় তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ফেলে গেছে।

এ ঘটনায় নিহতের পিতা আব্দুস সালাম বাদি হয়ে বেলকুচি থানায় একটি খুনের মামলা দায়ের করেছেন।

 সূত্র- যুগান্তর।

 

অন্তত শিশুদের কথা শুনুন। কেননা, শিশুরা মিথ্যা কথা বলে না।

নিকট অতীতে বাংলাদেশ নিয়ে যেসব আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও গণমাধ্যম প্রতিবেদন তৈরি করেছে, তাদের প্রায় সবাই আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। কেউ বলেছে, বাংলাদেশ একটি ধাঁধা। কেউ বলেছে, বাংলাদেশ পারে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, সামাজিক খাত ও মানবসম্পদ উন্নয়নে ভারত যা পারেনি, বাংলাদেশ তা করে দেখিয়েছে।
একদা খাদ্যঘাটতির বাংলাদেশ চাল রপ্তানি করে অনেককে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। কেবল চাল নয়, মাছ, সবজি ও ছাগল উৎপাদনেও বাংলাদেশ রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। আগে বাজেটের আকার ছোট ছিল, তাও বিদেশি সাহায্য ছাড়া তৈরি করা ছিল অসম্ভব। এখন বাজেটের আকার দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়ালেও বিদেশের ওপর তেমন নির্ভর করতে হয় না। পাঁচ বছরের ব্যবধানে জাতীয় বাজেটের আকার দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশ গত এক দশক প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশে ধরে রেখেছে। বৈদেশিক মুদ্রাভান্ডার ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বেশি, যা দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম।
বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানীরা, গবেষকেরা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নানা মাত্রায় কৃতিত্বের ছাপ রেখে চলেছেন। তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে। বিজিএমইএ আশা করছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বর্তমান ২৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলারে রূপান্তরিত করতে পারবে। এই শিল্পে ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন, যার ৯০ ভাগ নারী শ্রমিক। বাংলাদেশের তৈরি জাহাজ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পেলে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাও যে পারেন, পাট ও ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচন করে তা দেখিয়েছেন ড. মাকসুদুল আলম এবং তাঁর সহকর্মীরা। তিনি মারা না গেলে হয়তো আরও অনেক উদ্ভাবন তাঁর কাছ থেকে আমরা পেতাম। তাঁর মৃত্যু বাংলাদেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা নোবেল পুরস্কারেও ভূষিত হবেন।

২.
বাংলাদেশের এই উন্নতি, অগ্রগতির পেছনে আছে মানুষের অদম্য ইচ্ছাশক্তি। তাদের কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় আমাদের অর্থনীতিকে পুষ্ট করছে, সামাজিক সূচককে এগিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশের তরুণেরা যেখানেই যান, সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছেন। বাংলাদেশের তরুণ কম্পিউটর প্রোগ্রামার সালমান খান ও সুমাইয়া কাজী আমেরিকাকে মাতিয়েছে। আমাদের যেসব তরুণ দেশের বাইরে পড়াশোনা করেন, তাঁদের অধিকাংশ নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনেক উঁচু পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তাঁদের শ্রম, মেধা ও অধ্যবসায়ের সুফল পাচ্ছেন বিদেশিরা। যদি আমরা তাঁদের উপযুক্ত পরিবেশ দিতে পারতাম, তাহলে তাঁরা দেশেই ফিরে আসতেন, দেশের মানুষের সেবা করতেন।
কিন্তু ফিরে না আসার বড় কারণ অস্থির, অনিশ্চিত ও সংঘাতময় রাজনীতি। এই রাজনীতি আমাদের সমাজ, সভ্যতা ও মানুষের চাহিদা মেটাতে পারছে না। এ রাজনীতি মেধাবী তরুণদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। ক্ষমতাসীনেরা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখালেও তারা দেশ, প্রশাসন, শিক্ষাঙ্গন—সবই চালাচ্ছে অ্যানালগ কায়দায়। এ কারণেই আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্দুকযুদ্ধে সম্ভাবনাময় তরুণদের খুন হতে দেখি, সরকারি অফিসে টেন্ডারবাজি এবং সর্বত্র দখলবাজির মহড়া চলতে দেখি।
আধুনিক মানুষের জীবনযাপন, দৈনন্দিন কাজ-কর্ম সব তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর হলেও আমাদের রাজনীতিটা রয়ে গেছে সেই মান্ধাতার আমলে। রাজনীতিকেরা একে অপরকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন, জিবের ধার পরীক্ষা করেন। তাঁদের এই বাগ্যুদ্ধে মানুষের স্বার্থ ও কল্যাণের কথা নেই। মানুষের স্বপ্ন ও ভালোবাসার কথা নেই। আছে কেবল হিংসা-দ্বেষ, ঘৃণা ও জিঘাংসা। রাজনীতি এখন বিদ্যাচর্চার মাধ্যম নয়, বুদ্ধিনাশ ও পেশিশক্তি চাষের মাধ্যম।
এ কথা সত্য যে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক ধ্যানধারণা, নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী। যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা দলীয় আদর্শ বাস্তবায়ন করবেন, এটাই স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগ তাদের নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে কঠিন বাধার মুখে পড়েছে, এমন নয়। বরং তারাই কখনো রাষ্ট্রধর্ম রেখে, কখনো নারীনীতি সংশোধন করে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির সঙ্গে আপস করছে। আপস করছে পরিত্যক্ত স্বৈরাচারের সঙ্গেও।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য যেসব উপাদান অপরিহার্য, যা কোনো দলই উপেক্ষা করতে পারে না, সেগুলো হলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সব নাগরিকের প্রতি সমান আচরণ, মানুষের মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকারগুলো সমুন্নত করা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও গণতন্ত্রের অতন্ত্র প্রহরী বলে দাবিদার সরকার সেই কাজগুলো কেন করছে না, সেটি আমরা বুঝতে অপারগ। কেন আমরা ৪৩ বছরেও একটি সরকারপদ্ধতি, নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্যে আসতে পারলাম না? বন্দুকের জোরে যাঁরা ক্ষমতাসীন হয়েছেন, তাঁদের কথা বাদ দিলাম, কিন্তু যাঁরা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন (লক্ষ করুন ১৯৭৩, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ সালের নির্বাচন), তাঁরা কেন গণতন্ত্রকে টেকসই ভিতের ওপর দাঁড় করতে পারলেন না? আমাদের গণতন্ত্রীরা এতটাই অগণতান্ত্রিক আচরণ করেছেন যে পরিত্যক্ত স্বৈরাচারও আজ গণতন্ত্রের সবক দেওয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। যে দেশে গণতন্ত্র থাকে, সে দেশে গণতন্ত্র হত্যা দিবস কিংবা গণতন্ত্র রক্ষা দিবস পালন করতে হয় না। গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, এ নিয়ে এত হাঙ্গামা, এত মারামারি, এত ঝগড়াঝাঁটি হয় না। এখানে হচ্ছে, কেননা সত্যিকার গণতন্ত্র নেই। এখানে হচ্ছে, কেননা যেকোনো উপায়ে আমরা ক্ষমতায় থাকতে চাই বা যেতে চাই।

৩.
২০১৪ সালটি জাতির জীবনে ভালো গেছে বলা যাবে না। তবে আগের বছরের চেয়ে কম খারাপ গেছে। এখন প্রশ্ন, ২০১৫ সাল কেমন যাবে? বছরের শুরুটা হয়েছে জামায়াতের হরতাল দিয়ে। তার আগে ২০ দলের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ছিল। হরতাল-অবরোধ, হাঙ্গামা, বাসে আগুন, ভাঙচুর চলবে কি না, সেটি নির্ভর করছে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর। তাদের শুভবুদ্ধি হলে এগুলো এড়ানো যায়। দুর্বুদ্ধি বজায় থাকলে এ থেকে রেহাই নেই। সংকট সমাধানে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। আলোচনার কথা বলেছেন। সরকারি দল পাল্টা ১৪ দফা দিয়ে তার অসারতা প্রমাণ করতে পারত। কিন্তু সেদিকে না গিয়ে তারা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। যেমনটি গত বছর নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়া করেছিলেন। এই পাল্টাপাল্টির নাম গণতন্ত্র নয়। খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের কথা বলেছেন, সেটি তো আগামী নির্বাচনের আগে করতেই হবে। সংবিধান অনুযায়ী কোনোভাবে এ কমিশন পাঁচ বছরের বেশি থাকতে পারবে না। কমিশনের মেয়াদ তিন বছর পার হয়ে গেছে।
নির্বাচন কবে হবে, কোন সরকারের অধীনে হবে, সে সমস্যা অমীমাংসিত রেখেও সরকার ও বিরোধী দল অন্তত দুটি বিষয়ে সন্ধি বা সমঝোতা করতে পারে। এক, বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার বাধা দেবে না, দুই, বিরোধী দল এমন কোনো কর্মসূচি নেবে না, যাতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত এবং জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়।
ক্ষমতাসীনদের মধ্যে একটি ধারণা বদ্ধমূল যে যারাই তাঁদের সমালোচনা করে, ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেয়, তারা দেশের শত্রু, সমাজের শত্রু, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। তারা এও মনে করেন যে, একমাত্র তারাই দেশের ভালো চান। কল্যাণ চান। আর কেউ দেশ নিয়ে ভাবেন না। দেশের জন্য আর কারও দরদ নেই। ভালোবাসা নেই। গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ—সবাই সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। সরকারের কোনো ভুল পদক্ষেপের সমালোচনা করলেও তাঁরা সেটি মানতে পারেন না। দেশের সাধারণ মানুষ, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কী চায়, তাও তাঁরা বুঝতে চান না। গত এক বছরে বিএনপি জোট আন্দোলন করতে পারেনি বলে সরকারি দলের নেতারা বাহবা নেন। কিন্তু বিরোধী দলের আন্দোলনহীন গত এক বছরে যত খুন, গুম হয়েছে, তার দায় তো সরকারকেই নিতে হবে।

৪.
গত বছর ৩০ ডিসেম্বর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ পেয়েছে। সেই পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে, এ রকম চারজন শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে প্রথম আলোয়। গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংস্থা, বিদেশি কূটনীতিক—যাঁরাই সরকারের সমালোচনা করছেন, তাঁদেরই ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু এই শিশু–কিশোরদের সরল সত্য ভাষণ সরকার কীভাবে নেবে?
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের ছাত্রী তাকীয়া এহসান বলেছে, ‘আমি নতুন বছরটি আনন্দে কাটাতে চাই। শান্তিতে থাকতে চাই। আর দেশকে এগিয়ে নিতে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।…আমি চাইলেও সন্ধ্যার পর একা বের হতে পারি না। আমার সমাজ ও রাষ্ট্র এখনো এভাবে নিরাপত্তা দিতে পারেনি।’
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী আদিল আহমেদ বলেছে, ‘রাজনৈতিক কর্মসূচি দিলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়, সেটি ২০১৩ সালে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম।…ওই বছর অনেক দিন স্কুলে যেতে পারিনি।…আমরা দেশে হানাহানি দেখতে চাই না। আমরা দেশ গড়ার রাজনীতি চাই। গাড়িতে ঢিল ছুড়ে একজন শিক্ষিকাকে খুন করা হয়েছে। এই বীভৎস চিত্র আমাদের মর্মাহত করেছে। আপনারা সমঝোতা করে শান্তি আনুন দেশে।’
রাজশাহী পিএন সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের নাফিসা বিনতে আসিফ বলেছে, ‘চারদিকে যেভাবে পরিবেশদূষণ হচ্ছে, তা দেখে মন খারাপ হয়। তার চেয়েও বেশি খারাপ হয় দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখে।’
মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাওহিদ আহসান বলেছে, ‘ঢাকা শহরের নোংরা পরিবেশ আর ট্রাফিক জ্যামটা সবচেয়ে খারাপ লাগে। যতই পরীক্ষা হোক না কেন, যেন প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয়। তাহলে দেশে মেধাবীদের সংখ্যা কমে যাবে। পরীক্ষার আগে প্রশ্ন পাওয়া একটি প্রতারণা।’
তাই সরকারকে বলব, গণমাধ্যমের সমালোচনা কানে না নিন, নাগরিক সমাজের উদ্বেগ অগ্রাহ্য করুন, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিন, অন্তত এই কোমলমতি শিশুদের চাওয়া-পাওয়ার কথাটি ভাবুন। তারা নোংরা ঢাকা শহরের মতো নোংরা রাজনীতিও অপছন্দ করে। তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়াকে ঘৃণা করে। তারা ঘরে-বাইরে নিরাপত্তা চায়।
অন্তত শিশুদের কথা শুনুন। কেননা, শিশুরা মিথ্যা কথা বলে না।
সোহরাব হাসান: কবি, সাংবাদিক।

 

শিশুরা কি শিখবে?মূল্য নাকি মূল্যায়ন!

বেশ কয়েকদিন আগে স্কুল থেকে ফেরার পথে নাকীবের এক ক্লাস ফ্রেন্ড ড্রাভিদও হাঁটছিল আমাদের সাথে! হাঁটতে হাঁটতে নানান বিষয়ে কথা বলছিলাম দুজনের সাথে! একসময় নাকীব ওর মামা ওকে নতুন খেলনা কিনে দিয়েছে সেকথা জানালো। খেলনাটির মূল্য কত জানতে চাইলো ড্রাভিদ। নাকিব মূল্য বলার পর ড্রাভিদ বলল, আমার কাছে ২৯ ইউরো আছে। আর ১৬ ইউরো জমালেই আমিও তোমার খেলনাটি কিনতে পারবো। কিন্তু আমি কিনবো না। ১৮ তারিখে আমার মাম্মার বার্থডে। আমি মাম্মাকে উপহার কিনে দেবার জন্য ইউরো জমাচ্ছি দুই মাস ধরে। মাকে উপহার কিনে দেবার জন্য টাকা জমাচ্ছে শুনেই কেমন যেন মুগ্ধতার ভরে গেলো মনটা। মনে পড়ে গিয়েছিল নিজের টাকা দিয়ে যেদিন প্রথম মামণিকে আর বাবাকে উপহার কিনে দিয়েছিলাম সেই দিনের কথা! স্মৃতিটা নাকীবের সাথে শেয়ার করার জন্য ওর দিকে তাকাতেই নাকীব হড়বড় করে বলতে শুরু করলো, আম্মুতা আমিও কিন্তু তোমাকে সবসময় ভালোবাসা উপহার দিই। ভালোবাসা সবচেয়ে সুন্দর উপহার। ভালোবাসা অমূল্য তাই এটা অর্থের বিনিময়ে কেনাও যায় না। চাইনি কিন্তু চেপে রাখতে না পেরে হেসে ফেলেছিলাম আমি! নাকীব মুখ একটু কালো করে বলল, তুমিই তো বলেছিলে কাউকে দেবার ভালোবাসার চেয়ে সুন্দর কোন উপহার নেই। তাই যারা আমার অনেক আপন তাদেরকে যেন সবসময় অনেক অনেক ভালোবাসা দেই! আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, অবশ্যই বাবা ভালোবাসার চেয়ে সুন্দর, পবিত্র ও অনন্য কোন উপহার নেই পৃথিবীতে। তোমার ভালোবাসা উপহার স্বরূপ পেয়ে আম্মুতা অনেক অনেক খুশি হই সবসময় আলহামদুলিল্লাহ।

বেশ কয়েক বছর আগে এক ক্লাস ফ্রেন্ড ভালোবাসার কারণে নিজ পরিবার পরিজন সবকিছু তুচ্ছ করে, চলে গিয়েছিল ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে ভালোবাসাময় জীবন গড়ার স্বপ্ন নিয়ে। সেই ভালোবাসার মানুষটি যখন ভালোবাসা ছাড়া জীবন ধারণের নিত্য প্রয়োজনীয় বিলাশ বাসন দিতে ব্যর্থ হচ্ছিলো। এবং ভালোবাসার দ্বারা সবকিছুই অভাব পূরণ করার চেষ্টা করছিল কয়েকমাস যেতে না যেতেই সেই ক্লাস ফ্রেন্ডটি হাঁপিয়ে উঠেছিলো ভালোবাসার মানুষটির দেয়া ভালোবাসার আতিশায্যে। সংসারে শুরু হয়ে গিয়েছিল ছোট ছোট চাওয়া-পাওয়াকে ঘিরে দ্বন্দ্ব-কলহ। যেই ভালোবাসার জন্য পরিবার ছেড়েছিল সেই ভালোবাসাতেই অতিষ্ট হয়ে সংসার ভেঙে সে ফিরে এসেছিল। এই ঘটনাটি দেখে গভীর চিন্তায় নিমজ্জিত হয়েছিলাম আমি। বার বার মনে প্রশ্ন জাগছিল যে, ভালোবাসার জন্য পরিবারকে ছেড়ে দেবার মত ত্যাগ স্বীকার করতে পারলে, নিজের ছোট ছোট চাহিদাকে কেন ত্যাগ করতে পারলো না?! সমস্যাটা কোথায়? ভাইয়া হেসে বলেছিলেন, সমস্যাটা হচ্ছে শাড়ি-গহনা ইত্যাদিও মেয়েদের কাছে ভালোবাসার উপকরণ। বলেছিলাম, আমি এমনটা মনে করি না। ভাইয়া বলেছিলেন, কারণ তোমাকে এমনটা মনে করার শিক্ষা দেয়া হয়নি। তোমাকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে, ‘সবার উপরে ভালোবাসা সত্য, সুখের জন্য শুধু ভালোবাসা প্রয়োজন নিত্য’। হেসেছিলাম তখন খুব। আসলেই এই শিক্ষাটাই দেয়া হয়েছে আমাদের সব ভাইবোনদেরকে। মামণি, বাবা, ভাইয়া, হাসানজ্বি, থেকে নিয়ে শুরু করে পরিবারের সবাই কবে আমাকে কি উপহার দিয়েছে মনে করতে হলে আমাকে ভাবতে হবে। যেহেতু ঐসব উপহার আমার কাছে কখনোই তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না। কিন্তু উনাদের দেয়া সুন্দর সুন্দর ভালোবাসাময় মূহুর্ত আমি ননস্টপ বলে বা লিখে যেতে পারবো। কারণ আপনজনদের ভালোবাসা আমার জীবনের অমূল্য সম্পদ।

জীবনে ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা আমরা কেউই অস্বীকার করতে পারি না। ভালোবাসা মনে এমন এক আশার জন্ম দেয় যা মানুষকে সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখতে শেখায়। আমরা জানি জীবনের ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তাকে কিন্তু তবুও কেন জানি ঠিক গুরুত্ব দিতে পারিনা সেভাবে। কাউকে ভালোবাসি ভালোবাসি করে জীবন দিয়ে দেই। অথচ সেই ভালোবাসার মানুষটি যদি শুধু ভালোবাসা নিয়ে কাছে আসে আমাদের মুখ কালো হয়ে যায়। এর কারণ আসলে আমরা শুধু ভালোবাসা পেয়েই সুখী বা তৃপ্ত হতে শিখি না বেড়ে ওঠার পরিবেশ থেকে। আমরা ভালোবাসাকে মূল্যায়ন করতে শিখি অর্থের মূল্যে। যে যত বেশি দামের উপহার দেয় বা দিতে পারে। সে আমাদের কাছে ততবেশি গুরুত্ব ও ভালোবাসার দাবীদার হিসেবে গণ্য হয়। এর প্রভাব গিয়ে পড়ে জীবনের সর্বক্ষেত্রে। জীবনকে ঘিরে ঘূর্ণায়মান প্রতিটি সম্পর্কের উপরেও। ছোটবেলা থেকেই তাই শিশুদেরকে কোনকিছুর মূল্য নয় মূল্যায়ন করা শেখাতে হবে। যাতে জীবনের চলার পথে মানুষকে তার ভালোবাসার দ্বারা বিবেচনা করে। কাউকে দেবার ক্ষেত্রে এবং নিজে পাবার ক্ষেত্রেও।

লিখেছেন – ডা.আফরোজা হাসান,শিশু-মনোবিজ্ঞানী। মাদ্রিদ,স্পেন।

পুত্রবধুর গায়ের রঙ কালো আর তাই লাশ হতে হলো ছেলেকে!

গায়ের রং কালো হওয়ায় পুত্রবধূ রুপালীকে মেনে নিতে পারেননি শ্বশুর আমিনুল ইসলাম (৫০)। তিনি ছেলে রায়হানকে চাপ দেন রুপালীকে তালাক দেওয়ার জন্য। কিন্তু বাবার আদেশ অমান্য করে রায়হান কালো স্ত্রীকে নিয়েই সংসার করার সিদ্ধান্ত নেন। এ নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে সৃষ্টি হয় দ্বন্দ্ব। একপর্যায়ে স্ত্রীকে নিয়ে ঘর ছাড়েন ছেলে রায়হান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পরিবারের অভিযোগ, কালো স্ত্রী নিয়ে সংসার করার কারণে শেষ পর্যন্ত বাবার হাতে খুন হয়েছেন রায়হান (২৮)।

গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের সোডাপীর নয়াপাড়া গ্রামে ঘটে এ মর্মান্তিক ঘটনা। ছেলে রায়হানকে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় অন্য দুই ছেলে তাঁকে আটক করে পুলিশে দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ আদালতের মাধ্যমে তাঁকে জেলহাজতে পাঠায়। নিহত রায়হানের দুই মাস বয়সী একটি পূত্রসন্তান রয়েছে।

ছেলে হত্যায় অভিযুক্ত আমিনুল ইসলামের সুনির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। মাঝে মধ্যে তিনি কৃষিকাজ করেন বলে জানা গেছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, আমিনুল অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িত। তিনি সড়ক-ডাকাতদের একটি চক্রের সঙ্গে যুক্ত। তিনি নেশা করেন। তবে এ ব্যাপারে আমিনুলের ছেলেরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, একই জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের আটুরিয়া গ্রামের রুপালীকে বিয়ে করেন রায়হান। বিয়ের পর রুপালীকে বাড়িতে নিয়ে এসে আমিনুল ইসলাম দেখেন ছেলের বউয়ের গায়ের রং অনেক কালো। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে রুপালীকে তালাক দেওয়ার জন্য ছেলের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন আমিনুল। কিন্তু রায়হান তাঁর বাবার নির্দেশ শোনেননি। একপর্যায়ে তাঁদের ওপর নেমে আসে নানা অত্যাচার। পারিবারিকভাবে নির্যাতন সইতে না পেরে রায়হান স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে যান। সেখানে কিছুদিন থাকার পর স্ত্রী রুপালীকে নিয়ে ঢাকায় পোশাক শ্রমিকের কাজ নেন রায়হান। দীর্ঘদিন রায়হানের সঙ্গে তাঁর বাবা আমিনুল ইসলামের যোগাযোগ ছিল না।

জানা গেছে, দুই মাস আগে রুপালীর পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। রুপালী সন্তান নিয়ে মিঠাপুকুরের আটুরিয়ায় বাবার বাড়ি আসেন। গত বুধবার তাঁদের ঢাকায় চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু রায়হানের মা রেহানা বেগম নাতিকে এক নজর দেখার জন্য রায়হানকে ডেকে আনেন। গত মঙ্গলবার নিজ বাড়ির টানে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে আসেন রায়হান। বুধবার জামায়াতের ডাকা হরতালে তাঁরা আটকা পড়েন। আর ওই রাতই রায়হানের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ওই দিন রায়হান তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে বাবার বাড়িতে নিয়ে এলে বাবা আমিনুল উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। কেন কালো বউকে বাড়িতে আনা হলো এ নিয়ে বাবা-ছেলের কথাকাটাকাটি হয়।

রায়হান বলেন, ‘কালো হলেও আমার স্ত্রী। আমি ওর সঙ্গেই সংসার করব।’ এ নিয়ে উত্তেজিত হয়ে আমিনুল ঘরে রাখা ধারালো ছুরি নিয়ে রায়হানকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। একপর্যায়ে আমিনুল ছেলে রায়হানের বুকে ছুরি বসিয়ে দেন। ঘটনাস্থলেই মারা যান রায়হান। এ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে আমিনুল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় তাঁর অন্য দুই ছেলে লিমন ও রাকিব ঘাতক বাবা আমিনুল ইসলামকে আটক করে পুলিশে দেন।

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, রায়হানের স্ত্রী রুপালী বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সুত্র- কালের কন্ঠ।

 

চাকরী প্রার্থীর ৪টি সাধারন দুর্বলতা!

চাকরি খুঁজছেন? কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে স্বপ্নের সোনার হরিণটির কাছাকাছি গিয়েও আপনাকে বারবার ব্যর্থতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে? একদমই হতাশ হবেন না। মনে রাখবেন, প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু দুর্বলতা আছে। আবার বিশেষ কিছু গুণও আছে সবার মধ্যে। তাই এসব দুর্বলতাকেই শক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। তাহলেই নাগাল পাবেন সোনার হরিণের।
চাকরিপ্রার্থীরা চারটি সাধারণ দুর্বলতার কারণে প্রতিযোগিতার দৌড়ে পিছিয়ে পড়েন। জেনে নিন সেই সীমাবদ্ধতাগুলো কী কী এবং কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন।

অভিজ্ঞতার ঘাটতি
যে পেশায় কাজ করার জন্য আবেদন করছেন, সে বিষয়ে হয়তো আপনার অভিজ্ঞতা খুব কম। তাই অন্যান্য যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আপনাকে বিবেচনা করা হচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে আবেদনপত্র ও সাক্ষাৎকারে (ইন্টারভিউ) নিজের অন্যান্য দক্ষতা বিশেষভাবে উল্লেখ করুন। আর নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করুন, যাতে মনে হয়, নতুন কিছু শেখার ব্যাপারে আপনি যথেষ্ট আন্তরিক এবং ওই সুনির্দিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞতার ঘাটতি আপনি দ্রুত পূরণ করে নিতে পারবেন। মনে রাখবেন, অনভিজ্ঞতা আপনার জন্য সুফলও এনে দিতে পারে। দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রশিক্ষণ আপনি সব সময়ই নিতে পারবেন, কিন্তু ব্যক্তিত্বের ব্যাপারটা অন্য রকম।


চাকরির মাঝখানে বিরতি
এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সত্যিই একটু কঠিন। চাকরি চলে গেলে বা স্বেচ্ছায় কোনো চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর নতুন আরেকটি পদে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত সময়টা বিরতি হিসেবে গণ্য হয়। এই সময় স্বেচ্ছাসেবামূলক কোনো কাজ বা প্রশিক্ষণ নেওয়ার কাজে যুক্ত হতে হবে। এতে বিরতির সময়টা আপনার জীবনবৃত্তান্তে (সিভি) ইতিবাচক বা দক্ষতা অর্জনের পর্যায় হিসেবে বিশেষ মূল্যায়ন পাবে। সিভি পড়ে সাধারণত কেউ জিজ্ঞেস করবে না, ওই বিরতির সময় আপনি বেতন পেয়েছেন কি না। কিন্তু নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো আপনার এসব কাজে ব্যস্ত থাকার তাৎপর্য হিসেবে আপনাকে ক্যারিয়ার-সচেতন এবং উদ্যমী হিসেবে বিবেচনা করবে।


দ্রুত ও ক্রমাগত চাকরি বদল
একটা চাকরি হঠাৎ করে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ও চাকরিপ্রার্থীর কারও পছন্দ নয়। বারবার ও দ্রুত চাকরি পরিবর্তন করার ফলে একজন কর্মীর ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব ক্ষেত্রে তিনি প্রতিষ্ঠানের প্রতি যথেষ্ট অঙ্গীকারবদ্ধ নন বলে মনে করা হতে পারে। ক্যারিয়ার গঠন ও দক্ষতা অর্জনের ব্যাপারে শক্তিশালী মনোভাব রাখার পাশাপাশি কাজেও তার প্রমাণ দিতে হবে। চাকরির বাইরে (ফ্রিল্যান্সার হিসেবে) নিজ উদ্যোগে কিছু ইতিবাচক কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে সেগুলো সিভিতে গুছিয়ে তুলে ধরুন। এতে আপনি বারবার চাকরি বদল করে থাকলেও ব্যাপারটাকে তুলনামূলক কম নেতিবাচক মনে হবে।


প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব
আপনি কাঙ্ক্ষিত কোনো প্রতিষ্ঠানে স্বপ্নের চাকরিটা করার সুযোগ পেয়ে যাওয়ার পরও আপনার মনটা যদি খুঁত খুঁত করে এই মনে করে যে আপনি কাজটার জন্য যথেষ্ট যোগ্য নন, তাহলে দুর্ভাবনা ও হীনম্মন্যতা ঝেড়ে ফেলুন। নিজের ঘাটতিগুলো ভিন্ন উপায়ে পুষিয়ে নিতে হবে। অতীতে গঠনমূলক বিভিন্ন কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে নিজেকে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য একজন আদর্শ কর্মী হিসেবে উপস্থাপন করুন। সিভিতেই বর্ণনা করুন, আপনার আগের কাজকর্ম নতুন প্রতিষ্ঠানটির কাঙ্ক্ষিত পদে চাকরির উপযোগী অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজে লাগবে।
মনস্টার ডট কম অবলম্বনে

 

চ্যানেল আইতে জমকালো বিয়ে উৎসব

পন্ডস-নকশা বিয়ে উৎসব নিয়ে নির্মিত অনুষ্ঠানটি চ্যানেল আইতে দেখানো হবে আজ বেলা ১১টা ৫ মিনিটে। গত ৯ ডিসেম্বর ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় বিয়ে উৎসব। ইউনিলিভার ও প্রথম আলোর এই আয়োজনে দিনভর ছিল বিয়ের নানা বিষয় নিয়ে মেলা।

সন্ধ্যায় ছিল জমকালো ফ্যাশন শো, নাচ ও গানের অনুষ্ঠান। দেশসেরা মডেলদের পাশাপাশি ফ্যাশন শোতে বিয়ের সাজে হেঁটেছেন ফেরদৌস, অপু বিশ্বাস, হৃদয় খান, সুজানা, আরিফিন শুভ ও মেহজাবীন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন তাহসান ও মিথিলা। অনুষ্ঠানে গান গেয়েছে ব্যান্ড দল চিরকুট আর বিয়ের গানের সঙ্গে ছিল অভিনেত্রী ভাবনার নাচ।

ফিরে দেখা ২০১৪ সাল…

অপরাজিতা ডেস্কঃ দেখতে দেখতে বিদায় নিয়েছে ২০১৪ সাল। সময়ের পাতা থেকে চলে গেছে আরও একটি বছর। পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায় বছর বিদায় নিয়েছে ঠিকই তবে ইতিহাসের পাতায় রেখে গেছে অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা। কিছু কিছু ঘটনা জাতিকে করেছে বিমোহিত। আবার কিছু ঘটনা এনে দিয়েছে দুঃখ-বেদনা। কিছু ঘটনা বিশ্ববাসীর কাছে বাঙালি জাতিকে নতুনভাবে তুলে ধরেছে। আবার কিছু ঘটনা সেই সম্মানকে ম্লান করেছে। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা সংবলিত গত বছরের আলোচিত ঘটনা গুলোর মধ্য থেকে কিছু ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরা হল।

৫ জানুয়ারির নির্বাচন : বছরের শুরুটা হয়েছিল বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন রোধেই ছিল সেই কর্মসূচি। বছরের শুরুতে যে সহিংসতা তাও সেই নির্বাচন ঘিরেই। বিএনপি নেতৃত্বাধীন প্রধান রাজনৈতিক জোটের বয়কটের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এত কম ভোটারের উপস্থিতি, অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া এবং সহিংসতার কারণে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয় এ নির্বাচন। নির্বাচনের দিনেই সহিংসতায় নিহত হন ২২ জন। দেশে-বিদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এই নির্বাচন।

ফিল্মি স্টাইলে জঙ্গি ছিনতাই : গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ্যে ফিল্মি স্টাইলে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে গুলি চালিয়ে ও বোমা মেরে পুলিশের কাছ থেকে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের তিনজন (জেএমবি) দুর্ধর্ষ ক্যাডারকে ছিনিয়ে নিয়েছে জঙ্গিরা। ছিনিয়ে নেয়া তিন জেএমবি সদস্য- সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি (৩৮), মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান (৩৫) এবং রাকিবুল হাসান ওরফে রাকিব ওরফে হাফিজ মাহমুদ (৩৫)। সালাউদ্দিন তিন মামলায় ও রাকিব এক মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এবং মিজান যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি। এদের মুক্তাগাছা থানার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ও কোতোয়ালি থানার সিরিজ বোমা হামলাসহ ৫ মামলায় হাজিরা দিতে ময়মনসিংহের আদালতে নেয়া হচ্ছিল। এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়।

লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা : গত ২৬ মার্চ ৪৪তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।’ এদিন ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জনের বিশাল মানবপতাকা তৈরি করে বিশ্বে এক অনন্য রেকর্ড গড়া হয়। সর্ববৃহৎ মানবপতাকা তৈরি ও সবচেয়ে বেশি মানুষের কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার এই বিরল ঘটনা স্থান করে নেয় গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে। অনেক অঘটনের মধ্যে এই একটি ঘটনা আমাদের নতুন পরিচিতি এনে দেয় বিশ্বের বুকে।

নারায়ণগঞ্জে সাত খুন : বছরের সবচেয়ে নৃশংস ঘটনা ছিল এটি। গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের ঘটনা ঘটে। এরপর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ ভেসে ওঠে। এ নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছিল রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বাহিনী র‌্যাবের হাতে। এই অপহরণ থেকে শুরু করে হত্যা পর্যন্ত র‌্যাব-১১’র তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল (বরখাস্তকৃত) তারেক সাঈদ ও মেজর (বরখাস্তকৃত) আরিফ হোসেন সরাসরি জড়িত ছিলেন। আর অপহরণে জড়িত ছিলেন লে. কমান্ডার (বরখাস্তকৃত) এমএম রানা। র‌্যাবের বিভাগীয় প্রতিবেদন অনুযায়ী এ ঘটনায় মোট ২১ জন র‌্যাব সদস্য জড়িত ছিলেন। সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন র‌্যাবের কয়েকজন অসৎ কর্মকর্তাকে টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে এই লোমহর্ষক খুনের ঘটনা ঘটায়। টাকার বিনিময়ে র‌্যাবের মানুষ খুনের ঘটনা দেশ-বিদেশের সব বিবেকবান মানুষকে স্তম্ভিত করে তোলে।

ফুলগাজী ট্রাজেডি : গত ২০ মে দিনদুপুরে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হককে গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা : দীর্ঘ এক মাস ধরে দেশ মেতেছিল বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনায়। প্রিয় দলের পতাকা স্থান করে নেয় গাড়ির সামনে, বাড়ির ছাদে এমনকি কপালেও। রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। রাত জেগে, চা স্টলে, নানা তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়ে চলে এই খেলা। ১৩ জুলাই ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে পরাজিত করে জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ের মধ্য দিয়ে এই উন্মাদনার সমাপ্তি ঘটে।

সবচেয়ে বড় নৌদুর্ঘটনা : বছরের সবচেয়ে বড় নৌদুর্ঘটনা ছিল মাওয়া ঘাটে প্রায় আড়াইশ’ যাত্রী নিয়ে পিনাক-৬ নামের লঞ্চডুবির ঘটনাটি। গত ৪ আগস্ট লৌহজং চ্যানেলের এই মর্মান্তিক ঘটনায় যাত্রীদের বেশির ভাগই হারিয়ে যায় প্রবল সে াতে। এত বিপুলসংখ্যক প্রাণহানির হৃদয়বিদারক ঘটনায় সারা দেশের আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।

বড়াইগ্রামের বেদনা : গত ২০ অক্টোবর নাটোরের বড়াইগ্রামে কেয়া ও অথৈ পরিবহনের দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন ৩৭ জন। দুর্ঘটনাকবলিত বাস দুটিকে চাপা দেয় হানিফ পরিবহনের একটি বাস। এ ঘটনা বড়াইগ্রামের মানুষের জন্য বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা বিচারে এটিই ছিল এ বছরের সবচেয়ে বড় সড়ক দুর্ঘটনা।

আন্তর্জাতিক সম্মান অর্জনের মাস : দেশ নানা অঘটনের মধ্য দিয়ে পার হলেও গত অক্টোবর মাসের দুটি ঘটনা বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম বাড়িয়ে তোলে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাস এটি। এ মাসে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। ৯ অক্টোবর ক্যামেরুনে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে তিনি পেয়েছিলেন ৭০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্যারিবীয় অঞ্চলের কেইম্যান আইসল্যান্ডসের স্পিকার জুলিয়ানা ও’কনর পেয়েছিলেন ৬৭ ভোট। এছাড়া ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি নির্বাচিত হন সাবের হোসেন চৌধুরী। ১৬ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আইপিইউর ১৩১তম সম্মেলনে সাবের হোসেন চৌধুরী পান ১৬৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের স্পিকার ব্রনউইন বিশপ পান ৯৫ ভোট।

কিংবদন্তিদের বিদায়ঃ ২০১৪ সালে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন বেশ কিছু কিংবদন্তি মুখ। যাদের অমর কীর্তিগুলো চির আসন তৈরী করে আছে হাজারো মানুষের হৃদয়ে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত নায়িকা সুচিত্রা সেন, কিংবদন্তি অভিনেতা রবিন উইলিয়ামস,

নোবেলজয়ী গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, নাদিন গার্ডিমার,বেলজিয়ামের সাবেক রাণী ফাবিওলা ব্রাসেলেস। এছাড়াও চলে গেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মুখ অভিনেতা খলীল আহমেদ,সঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগম,চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ,ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন,সাংবাদিক এমিএম মূসা  প্রমুখ।
খেলাধূলোয় সাফল্যঃ এ বছরটা খেলার জগতে টাইগারস টিমের জন্য বেশ ভালোই ছিলো বলা চলে। তিন ভার্সনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ গুলোতে সাকিব,মুমিনুলদের পারফর্মেন্স ছিলো অসাধারন। এবং সেই সাথে টাইগারস টিম নতুন করে আরেকবার নাম লিখিয়েছি সফল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অংগনে। তবে ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক অংগনটা বছরের শেষ সময় জুড়ে যথেষ্ট শোকের ছিলো বলা চলে! ক্রিকেটের বল কেড়ে নিয়েছিলো দেশে এবং বিদেশে সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারদের প্রাণ! দক্ষিণ আফ্রিকার ড্যারেন র‍্যান্ডাল,বাংলাদেশের রবিন আহমেদ এবং অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ফিলিপ হিউজের মৃত্য গুলো গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে শোকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলো।

জিহাদের মর্মান্তিক মৃত্যু : বছরের শেষ মুহূর্তের একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ছিল রাজধানীর শাহজাহানপুরে ওয়াসার পাইপ থেকে জিহাদকে জীবিত উদ্ধারের ব্যর্থতা। ২৬ ডিসেম্বর বিকালে জিহাদ পড়ে যায় গভীর পাইপের ভেতরে। ২৩ ঘণ্টা চেষ্টা করেও চার বছরের এই ছোট্ট সোনামণিকে উদ্ধারে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যর্থ হয়। রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনী তাদের উদ্ধার অভিযান সমাপ্তি ঘোষণার মাত্র ১০ মিনিটের মাথায় পাঁচ তরুণের সাহসী ভূমিকা আর দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জিহাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

এমন উল্লেখযোগ্য অসংখ্য ঘটনাই ঘটেছে গত বছর যা কেবল ২০১৪ সাল কে ই শুধু নয়,অনেক গুলো বছর জুড়ে আমাদের হৃদয়কে নাড়া দিয়ে যাবে।
প্রতিভাবান মহিলা ডাক্তার শামাররুখ মেহজাবিনের মৃত্যুর মতো অনেক মহিলা ডাক্তার কে আমরা হারিয়েছি শুধুমাত্র শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে। যা ছিলো ২০১৪ সালের আলোচিত অনেক গুলো ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

বর্তমান সময়ের তরুণীদের জন্য বিশ্বসুন্দরীর পক্ষ থেকে খোলা চিঠি

যেসব তরুণী ফেসবুক নিয়ে দিনরাত পড়ে থাকেন বা ফেসবুককেই তাঁদের জীবনযাপন বানিয়ে ফেলেছেন, তাঁদের কাছে ২০১৪ সালের মিস ওয়ার্ল্ড নির্বাচিত হওয়া রলিন স্ট্রস একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। তিনি লিখেছেন
ঠিক আছে! আমি রেগে আছি!! আমি আনুষ্ঠানিকভাবেই বলছি!!! আমি যে কথাগুলো বলব, তা শুনতে ভালো লাগবে না…কারণ, যে মেয়েরা নিজেদের মূল্য নিজেরাই দিতে পারেন না, তাঁদের কথা ভেবে আমার বিরক্ত ও অসুস্থ লাগছে…এই মেয়েগুলো কেমন করে যে ভুলে যায় তাঁরাই তো রাজকন্যা…রানি…সম্মানীয়…মূল্যবান…ব্যয়বহুল…এবং বিক্রির জন্য নয়…
ওইসব তরুণীদের বলছি:
সংক্ষিপ্ত পোশাক পরে তোলা ছবি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে পোস্ট করার অর্থ এই নয় যে, আপনি অন্তর্বাসের মডেল হয়ে যাচ্ছেন। এটার কোনো মানেও হয় না… এ রকম করার অর্থ দাঁড়ায়, নিজেকে সস্তা, সহজ এবং যাচ্ছে-তাই করে তোলা।
গোপন তথ্য: ভিক্টোরিয়া সিক্রেট মডেলরা পণ্য বিক্রির জন্য ফটো সেটের সামনে দাঁড়ায় এবং এই মডেলিং করার জন্য তাঁর অর্থও পায়…তাঁরা বাথরুমের আলোয় ছবি তুলে তা ফোনে রেখে সাইবার দুর্বৃত্ত বা অনলাইনে সাইবার অপরাধীদের হাতে তুলে দেয় না।

বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোন দিয়ে নিজের বক্ষের ছবি তুললে তা নিজেকে এবারকম্বির (মার্কিন ফ্যাশন হাউস) মডেল হিসেবে তৈরি করে দেবে না…এতে ফেসবুকে অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য নিজেকে মরিয়া মনে হবে।

আমার পরামর্শ: যদি একজন মডেল হতে চাও, তবে মডেল হও। নিজের পোর্টফলিও তৈরি করো। নিজেকে তৈরি করো এবং নিজের স্বপ্নের পথে হাঁটো। আর যদি তা না করো, তবে অন্যেকে সস্তা আনন্দ দেওয়ার জন্য নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। ফেসবুকে দেওয়া ছবি অন্যের লাইক পাবার আশায় পোস্ট করে মনোবল বাড়ানোর ভান করেই কাটাতে হবে। যদি আলাদা আলাদা ব্যক্তির কাছ থেকে ১০০ লাইক মেলে, তাতে কী লাভ?…শিশুর মতো আচরণ নয়? সুইটহার্ট, তোমার দাম কী এটাই??? শুধু লাইক???
বাস্তবতা: ফেসবুকে নিজের শরীরের কিছু অংশ দেখিয়ে ছবি দেওয়া মানে সেই ছবি অনলাইনে অনেকেই দেখবে, অনেক ভিউ পাবেন… কিন্তু সুইটহার্ট, এটা নিশ্চয় তোমাকে বিশেষ কেউ বানিয়ে দেবে না… বরং এটা কী করবে তা ভেবে দেখো… এটা তোমাকে সফট পর্নোর রানি করে তুলবে, যা তোমার জন্য খুবই খারাপ অভিজ্ঞতা হবে আর এর জন্য তুমি কোনো অর্থও পাবে না।

পোশাকে গুরুত্ব দাও: নিজের একটি ক্লাস তৈরি করে নাও… নিজের দেহ বিক্রি বন্ধ করে দাও। যেখানে দুটি রুমাল দিয়ে গাউন তৈরি করা হয়, সে ধরনের পোশাক পরা ছবি পোস্ট করা ছেড়ে দাও…
তুমি অনেক সুন্দর… যখন তোমার পোশাক পরনে থাকে, তখন আরও বেশি সুন্দর তুমি… এবং অনেক মর্যাদাবান…
নিজের ভেতরের নিজেকে তৈরি করো… অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য বাইরে নগ্ন হওয়ার দরকার হবে না।
আমি নিজেও একজন কম বয়সী নারী… আমি রলিন স্ট্রস… আমার সঠিক পোশাকে আমাকে সুন্দর দেখায়। হ্যাসট্যাগ গেটড্রেসড!

অনুবাদিত।

২০১৪ সালে মোট নির্যাতিত নারীর সংখ্যা ৪হাজার ৬৫৪জন

গত বছর মোট ৪ হাজার ৬৫৪ জন নারী বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হন ৪৩১ জন। যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয় ২৩৬ জনকে। উত্ত্যক্তের শিকার হন ৪৬৫ জন। এঁদের মধ্যে আত্মহত্যা করেন ২১ জন। ফতোয়ার শিকার হয়েছেন ২৯ জন।

আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। দেশের ১৩টি দৈনিক জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে এসব তথ্য সংরক্ষণ করেছে সংস্থাটি।

মহিলা পরিষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বছরটিতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে মোট ৯৩৯টি। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হন ১৭৪ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৯৯ জনকে। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১১৫ জনকে। বছরটিতে শ্লীলতাহানির শিকার হন ১১৬ জন। যৌন নির্যাতনের শিকার হন ৪৪ জন।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, বছরটিতে অ্যাসিডদগ্ধ হন ৫৫ জন। অ্যাসিডদগ্ধ হয়ে মারা যান চারজন। ৫৮ জন অগ্নিদগ্ধের মধ্যে মারা যান ৩৬ জন। অপহরণের শিকার হন ১১৮ জন। ৩০ জন নারী ও শিশু পাচারের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে যৌনপল্লিতে বিক্রি করা হয় ১৯ জনকে। বছরটিতে ৮৯৮ জন নারী ও শিশু হত্যার শিকার হয়। এ বছর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮৬ জন গৃহপরিচারিকা। এর মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ৩৯ জনকে। বিভিন্ন নির্যাতনের কারণে ৩৪১ জন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। ১৮৩ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে ৯৩ জন। পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫৩ জন। শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে ২৫৮ জনকে।

বছরটিতে মোট ২৭৭টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে।

সূত্র- বাসস।

 

পিকেটারদের ঢিলের আঘাতে শিক্ষিকার মৃত্যু

বিএনপি জোটের হরতালের মধ্যে নোয়াখালীর মাইজদী পৌরবাজারে পিকেটারদের ঢিলের আঘাতে নিহত হয়েছেন ঢাকার এক স্কুল শিক্ষিকা। নিহত শামসুন্নাহার ঝর্ণা (৩৭) ঢাকার আগারগাঁওয়ের তাওহীদ ল্যাবরেটরি স্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। হামলায় তার স্বামী আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা শাহজাহান সিরাজও আহত হয়েছেন।

সুধারাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, পিকেটারদের ঢিলে মাথায় আঘাত পাওয়ার পর নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে গত সোমবার সকাল সোয়া ১০টার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর বিডিনিউজের।

শাহজাহান সিরাজ জানান, তাদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতির পোড়াগাছা এলাকায়। সম্প্রতি তাকে ঢাকা থেকে নোয়াখালীতে বদলি করায় কভার্ড ভ্যানে মালপত্র নিয়ে তিনি বাড়ি যাচ্ছিলেন। ওই ভ্যানেই তার স্ত্রী ও ছেলে প্রিন্সও ছিলেন। তিনি জানান, সকালে হরতালের মধ্যে মাইজদী পৌরবাজারের মোড়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে উপস্থিত হরতালকারীরা গাড়ির দিকে ঢিল ছুড়তে শুরু করে। এতে শামসুন্নাহারের মাথা থেকে রক্তপাত হতে থাকে এবং তিনি নিজেও আঘাত পান। শামসুন্নাহারকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, তিনি মারা গেছেন।

জেলার পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ জানান, এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। দুপুর পর্যন্ত ছাত্রদলের দুই কর্মীকে আটক করেছেন তারা।

 

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সফল বাঙ্গালী নারীমুখ

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স ইন পাবলিক হেলথ পুরস্কার।

 18126

ওয়াসফিয়া নাজরীন

ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ‘অ্যাডভেঞ্চারার্স অব দ্য ইয়ার ২০১৪-১৫’-এর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন মাউন্ট এভারেস্ট বিজয়ী বাংলাদেশের দ্বিতীয় নারী পর্বতারোহী ওয়াসফিয়া নাজরীন। ২০১২ সালের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার গৌরব অর্জন করেন। বাংলাদেশী হিসেবে তিনি প্রথম দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে উঁচু পর্বত মাউন্ট অ্যাকোনকাগুয়া, উত্তর আমেরিকার ডেনালি, ইউরোপের মাউন্ট এলব্রাস ও অ্যান্টার্কটিকার ভিনসন মাসিফে আরোহণ করেন।

 2012-07-09-22-07-12-4ffb561039b63-untitled-1

সারজিনা তৃমা ও আজরিন আফরিন

৬ষ্ঠ বার্ষিক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে পাঁচটি বিভাগের মধ্যে পোর্ট্রেট ও লাইফ দুটি বিভাগেই সেরা আলোকচিত্রীর পুরস্কার পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী সারজিনা তৃমা। ফেস্টিভ্যাল বিভাগে শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্রীর পুরস্কার পান ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী আজরিন আফরিন।

 1622795_581170805297775_1381567668_n 10696404_825465440838354_7259026154770832119_n

অর্পা, মাশা ও মাহমুদা

এলডিসি অন্তর্ভুক্ত দেশের ২০১৫ পরবর্তী কাঠামোগত উন্নয়ন অগ্রাধিকার শীর্ষক ব্রিটিশ কাউন্সিলের অ্যাকটিভ সিটিজেনের তিন মেয়ে সদস্য আন্তর্জাতিক শিক্ষা সফর উপলক্ষে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশের তিন শিক্ষার্থী অর্পা রহমান, মাশা আল-আইরিন খান ও মাহমুদা সামানজার চৌধুরী ২৯ থেকে ৩১ জানুয়ারি এলডিসি অন্তর্ভুক্ত দেশের তরুণদের অংশগ্রহণে উইলটন পার্ক কনফারেন্সে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।

 1391506_828169927209976_1492329284_n 10376057_10204064242995694_6080455561046925174_n10868045_10204658032805133_1534719536879057800_n

আজিজা বেগম

নবজাতক শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়ার জন্য হবিগঞ্জের স্বাস্থ্যকর্মী আজিজা বেগম পান গ্লোবাল লিগ্যাসি অ্যাওয়ার্ড। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের ইলোমিনেশন গালায় যুক্তরাজ্যের নিউইয়র্কে তিনি এ পুরস্কার গ্রহণ করেন। আজিজা বেগম হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের একজন স্বাস্থ্যসেবী। বিশ বছর ধরে তিনি শিশুস্বাস্থ্যসেবায় কাজ করছেন।

তাসলিমা আখতার

সাভারের রানা প্লাজা ভবন ধসের শিকার দুই শ্রমিকের আঁকড়ে ধরে থাকা আলোচিত আলোকচিত্রের জন্য আলোকচিত্রী তাসলিমা আখতার পান জার্মানির লিড অ্যাওয়ার্ড। তিনি বাংলাদেশের আলোকচিত্রী ও গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সমন্বয়ক। জার্মানির স্টার্ন সাময়িকীতে প্রকাশিত শেষ আলিঙ্গন নামে পরিচিত তার আলোকচিত্রটি ১৯টি ক্যাটাগরির মধ্যে বছরের সেরা আলোকচিত্র নির্বাচিত হয়।

সোনা রানী রায়

দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার পশ্চিম সাহতারা গ্রামের সোনা রানী রায় কেয়ার বাংলাদেশ প্রকল্প ‘নিজেরা কটেজ এন্ড ভিলেজ ইন্ডাস্টিজ’-এর মাধ্যমে আমেরিকার সান্থাফেতে আন্তর্জাতিক লোকশিল্প মেলায় অংশ নেন। তার সেলাইকৃত নকশিকাঁথা এ মেলায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়।

নাবিরা রহমান এবং কাশফিয়া নেহরীন

জাতিসংঘের সদর দফতর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয় জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল (ইকোসোক) ইয়ুথ ফোরাম ২০১৪। এ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাবিরা রহমান ও বুয়েটের কাশফিয়া নেহরীন। এবারের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘সেই পৃথিবী আমরা চাই, যে পৃথিবী আমাদের চায়।’ নাবিরা রহমান অংশ নেন শিক্ষাবিষয়ক সেশনে। কাশফিয়া নেহরীন অংশ নেন কর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগবিষয়ক সেশনে। এ সেশনে আলোচিত হয় কীভাবে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিও একত্রে কাজ করতে পারে।

 সূত্র- যুগান্তর।

 

কিছু বিষয় জানা উচিত ২বছরের কম বয়সী শিশুর মায়েদের

যারা সন্তানকে স্তনের দুধ খাওয়ান তাদের কয়েকটি বিষয় জানা থাকা উচিত। এ লেখায় থাকছে তেমন কয়েকটি তথ্য।

১. মায়ের দুধ সব সময় সাদা নয়
সাধারণত মায়ের দুধ সাদা বা ক্রিম রঙের হয়ে থাকে। তবে এটা সব সময় নয়। মাঝে মাঝে তা সবুজ, নীল, হলদে বা কমলা রঙেরও হতে পারে। এ দুধের ঘনত্বও পরিবর্তিত হয়।
২. একটি স্তনে বেশি দুধ হয়
আপনার দুই হাত যেমন দুই রকম, তেমন দুটি স্তনও ভিন্ন। এর একটিতে বেশি এবং অন্যটিতে কম দুধ হতে পারে। তাই সন্তানকে দুধ দেয়ার সময় বিষয়টি লক্ষ করলে ভালো হয়।
৩. সন্তানকে দুধ দানের সময় বড় স্তন
স্বাভাবিক অবস্থায় একজন নারীর স্তনের যে আকার থাকে, সন্তান ধারণ করার পর তা পরিবর্তিত হয়। সন্তানকে দুগ্ধদান শুরু করলে এর আকার হয় সবচেয়ে বড়। এর মাত্রা নির্ভর করে আপনার ত্বকের স্থিতিস্থাপকতার ওপর। এর ওপরই নির্ভর করে সন্তানকে দুধ দান বন্ধ করার পর স্তন আগের অবস্থায় যাবে নাকি কিছুটা বড় থাকবে।
৪. শুধু স্তনবৃন্ত দিয়েই দুধ নয়
স্তনবৃন্তের একটি মাত্র ছিদ্র দিয়েই দুধ নির্গত হয় না। বেশ কিছুটা এলাকা জুড়ে থাকে দুধ নির্গত হওয়ার ছিদ্র।
৫. নিজে নিজেই নির্গত হতে পারে দুধ
অনভিজ্ঞ মায়েদের প্রায়ই এমনটা হতে দেখা যায়। বিশেষ করে সন্তান যদি কান্নাকাটি করে কিংবা সন্তানের দিকে তাকিয়ে থাকলে নিজে থেকেই স্তনের দুধ নির্গত হতে পারে। এছাড়া বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় হয়ে গেলেও এমনটা হতে পারে।
৬. যৌনতা কষ্টকর হতে পারে
এস্ট্রোজেন হরমোনটির অভাবে স্তন্যদানকারী মায়েদের যোনীপথে শুষ্কতা তৈরি হতে পারে। এতে অনেক সময় যৌনতা কষ্টকর অনুভূতি দিতে পারে।
৭. অতিরিক্ত দুধ হতে পারে
কোনো কোনো মায়ের অতিরিক্ত দুধ উৎপাদিত হতে দেখা যায়। এ ছাড়াও কারো স্তন থেকে ফিনকি দিয়ে দুধ বের হওয়ার প্রবণতা থাকে। এক্ষেত্রে সন্তানের অসুবিধা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে দুগ্ধ দান শিখে নিতে হয়।
৮. মানসিক উত্থান-পতন হয়
সন্তানকে দুগ্ধ দান করলে মায়ের দেহের হরমোনজনিত কিছু পরিবর্তন হয়। এতে অক্সিটোসিন নামে একটি হরমোনের ভূমিকা রয়েছে। এ ছাড়াও কিছু নারী দুর্বলতা, ঘাম, উদ্বেগ, পিপাশা ইত্যাদি সমস্যায় ভোগেন।
৯. মাত্রাতিরিক্ত ক্যালসিয়াম প্রয়োজন নেই
গরুর দুধ পান করলেও তা মায়ের দুধ সেভাবে বাড়াবে না। শিশুকে স্তনের দুধ পান করালে তাতে মায়ের দেহের হাড় হালকা হয়ে যায়। অবশ্য সন্তান বড় হওয়ার পর এটি বন্ধ করলেই তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে।
১০. যৌনতায় লিক হতে পারে
যৌনতার ফলে স্তন্যদানকারী মায়ের স্তন থেকে সামান্য দুগ্ধ বের হতে পারে। তবে এতে অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নেই।
১১. বাড়তি খাওয়া
শিশুকে স্তন্য পান করানোর জন্য একজন মায়ের দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ ক্যালরি বাড়তি খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয়। এজন্য বাড়তি কোনো টেনশন না নিয়ে নিজের শরীরের চাহিদামতো কাজ করলেই চলে। অর্থাৎ ক্ষুধা লাগলে খেতে হবে, ক্ষুধা না লাগলে খেতে হবে না।
১২. পিরিয়ড বন্ধ হতে পারে
সন্তানকে স্তন্য দান করা হলে তার ফলে কখনো কখনো মায়ের পিরিয়ড বন্ধও হয়ে যেতে পারে। এতে উদ্বেগের কিছু নেই।

সূত্র- ফক্স নিউজ।

 

এই মৌসুমে বিয়ের সাজ

অপরাজিতা ডেস্কঃ শীতকাল বিয়ের মৌসুম। তাই হরহামেশাই লেগে থাকে বিয়ের আয়োজন। এ আয়োজনে পাত্র-পাত্রীর ভালোলাগা-ভালোবাসা যেমন মুখ্য, তেমনই বিয়ের দিনে কনের সাজটিও গুরুত্ব বহন করে।

এ সময়ের বিয়ের বিশেষ কিছু সাজ সম্পর্কে রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভিন বলেন, বিয়ের সাজের ক্ষেত্রে দুই পরিবারের মতামত থাকাটা জরুরি। বিয়ের সাজে কনের কাপড়ের ধরনটাও গুরুত্বপূর্ণ। তাই শাড়ি দেখেই কনের বিয়ের সাজের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। আবার কনের পেশা বা পছন্দের ওপর নির্ভর করে স্পেশাল লুক আনা সম্ভব হয়। বিয়ের সাজের তিনটি অনুষ্ঠানকে মাথায় রেখেই সাজে পরিবর্তন আসে। গায়েহলুদ, বিয়ে ও বউভাতের সাজকে তিনটি ট্রেন্ডি, ফিউশন ও ট্র্যাডিশনে ভাগ করা হয়েছে। কনের একেক অনুষ্ঠানে একেক লুক দিতেই সাজে এই ভিন্নতা। তিনটি লুকের মধ্যে ট্র্যাডিশন লুকে চোখের ওপর বেশি কাজ করা হয়। ঠোঁট গাঢ় লাল করা হয়। চুল ফুলিয়ে ট্র্র্যাডিশনাল করা হয়। আর মডার্ন লুকে কনের সাজে স্মোকি ভাব ফুটিয়ে তোলা হয়। যা এ সময়ের কনেদের বেশ পছন্দের।
কনের ফিউশন সাজে যাদের চোখ ছোট তাদের চোখের শেপে পরিবর্তন আনা হয়। চোখ বড় করিয়ে দেখানো হয়। তাই দেখতেও ভালো দেখায়। এই সাজে ঠোঁটের সাজকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে মুখের বিভিন্ন অংশে মেকআপ ফুটিয়ে তুলতেই এই সাজটি বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

 

ওমেন্স ওয়ার্ল্ডের ডিরেক্টর রূপবিশেষজ্ঞ ফারনাজ আলম বলেন, ‘ভালোবাসার সঙ্গে লাল রঙটি বিশেষভাবে জড়িত। আগেকার দিনে বিয়ের সাজে লাল শাড়ি, লাল লিপস্টিক ও লালটিপ ছাড়া বউয়ের সাজ ভাবাই যেত না। দিন বদলেছে, বউ সাজে এসেছে অনেক রঙ। আমি ট্র্যাডিশনাল লুক থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি। আধুনিক বউ সাজে তুলে এনেছি লাল রঙটির ব্যবহার।’
বউ সাজে লাল রঙ নিয়ে ফারনাজ আলম বলেন, মডার্ন ব্রাইডাল লুকে রেড কালারের থ্রুতে ফেসের শার্পনেস বের করে আনা যায়। এ সাজে সাজতে হলে ত্বকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কনসিলার লাগান চোখের নিচে, মুখের কালো দাগ বা ব্রণে। ত্বকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ফাউন্ডেশন দিন সারা মুখে। এক শেড হালকা রঙের ফাউন্ডেশন দিন গালে, কপালের মাঝে, থুতনি ও নাকের ওপরের অংশে। ডার্ক কালারড ফাউন্ডেশন দিয়ে কন্টোরিং করুন চিকবোন, নাকের দু’পাশ ও গালের যে কোনো ফোলা অংশ। গালে লাগান ব্রাউন বল্গাশন।
চোখের সাজ নিয়ে ফারনাজ আলম বলেন, প্রথমেই আইব্রো প্লাক করে নিন। ব্রাইডাল সাজে শার্পনেস আনতে এ কাজটি মাস্ট। আইব্রো পেন্সিল দিয়ে সূক্ষ্ম রেখায় আইব্রো আঁকুন। গ্রে ও ব্ল্যাক শ্যাডো লাগান। আইব্রোর ঠিক নিচে হাইলাইট করুন গোল্ডেন আইশ্যাডো বা হাইলাইটার দিয়ে। রেড আইশ্যাডো দিয়ে রাঙিয়ে নিন চোখের ওপরের পাতা। ব্ল্যাক শ্যাডো দিন চোখের ভাঁজে ও বাইরের কোনায়। চোখের ভেতরের কোনায় অল্প সিলভার আইশ্যাডো দিন। কালো লিকুইড আইলাইনার দিয়ে মোটা রেখায় চোখ আঁকুন। নিচের পাতায় মোটা রেখায় কাজল লাগান। ঘন করে মাশকারা লাগান চোখের পাপড়িতে। ব্রাইডাল লুকে লিপ প্রমিনেন্ট করতে রেড লিপলাইনার দিয়ে লিপ আঁকুন। এরপর রেড লিপস্টিক দিয়ে ঠোঁট দু’টোকে ভরুন।

রূপ বিশেষজ্ঞ ফারজানা শাকিল মনে করেন, এ সময়ের কনেরা বিয়ের সাজে ট্র্যাডিশনাল লুককে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। তবে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাধারার মাধ্যমেও তাদের সাজে ভিন্নরূপ ফুটে উঠছে।

167880_10150376668485300_440905_n

বিয়ের সাজ নিয়ে গল্গামার্স বিউটি পার্লারের কর্ণধার জেসিকা মিথিলা হালদার বলেন, বিয়েতে কনে সাজের বিভিন্ন শাড়ি, লেহেঙ্গা ইত্যাদিতে খুব একটা পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে বিয়ের শাড়ি বা এর অনুষঙ্গ উজ্জ্বল রঙের হওয়া চাই। কনের উজ্জ্বল পোশাকের সঙ্গে চাই একটুখানি আলতো মেকআপের ছোঁয়া। তাই কনের সাজে মেকআপের জন্য বল্গাশন ও চোখের দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হয়। নন-শেড স্মোকি চোখের মেকআপ আমাদের মেকআপের ধরনের মূল আকর্ষণ হয়ে ফুটে উঠবে। আইল্যাশ এবং কাজল অবশ্যই মুখের গড়নের সঙ্গে মানানসই করে ফুটিয়ে তুলতে হবে। বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাঙালি কনেকে তার স্মরণীয় দিনে আকর্ষণীয় করে ফুটিয়ে তোলাটাই আমাদের নিবিড় চেষ্টা বলেও মিথিলা হালদার মনে করেন।

150470_10153027302465300_964473579_n

এ সময়ের কনে সাজ নিয়ে হেয়ারোবিক্স ব্রাইডালের কর্ণধার তানজিমা শারমিন মিউনী বলেন, কনে সাজ প্রত্যেক নারীর জীবনের প্রত্যাশিত স্বপ্ন। তা ছাড়া বিয়ে জীবনের বিশেষ একটি মুহূর্ত। তাই বিয়ের সাজে বিশেষত্ব থাকা চাই। বিয়ের সাজে কনের চোখ বা ঠোঁট সুন্দর করে সাজানো যেতে পারে। চাইলে চুলের ভিন্নতায় বিশেষ পরিবর্তনও আনা যেতে পারে। সুন্দর হাসি আর সেই সঙ্গে সুন্দর সাজ_ সব মিলিয়ে কনে অপূর্ব হয়ে ফুটে উঠবে। তবে চাইলে এই সৌন্দর্যকে সাধারণ সাজের আদলে আরও সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভারী মেকআপের দিকে খেয়াল না রাখাই ভালো। তাই নিজের সৌন্দর্য পুরোপুরি ফুটিয়ে তুলতে নিজের ব্যক্তিত্ব, পরিবেশ-পরিস্থিতি ও নিজের বা প্রিয়জনের পছন্দকে প্রাধান্য দিতে পারেন। তবে সাজের ক্ষেত্রে ত্বকের স্কিনটোনের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। সাজে নিজস্ব কোনো পছন্দ থাকলে তা বিউটিশিয়ানকে ভালো করেই বুঝিয়ে দিতে হবে।

 

নারীর ক্ষমতায়ন- অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ৩০বছর পূর্তি

কেমন ছিল সত্তরের দশকে বাংলাদেশের গ্রামীণ তৃণমূল নারীদের অবস্থা? পটুয়াখালীর চর মন্তাজের সালেহা বেগমের কথাই ধরি। তাঁকে সবাই সালেহা চাচি হিসেবেই জানে। ৩০ বছর আগে তিনি ছিলেন মুখের ওপর লম্বা ঘোমটা টেনে থাকা লাজুক নারী। অচেনা পুরুষের সঙ্গে কথা বলতেন পর্দার আড়ালে থেকে। পরবর্তী সময়ে এই সালেহা চাচিই চর মন্তাজের পরিবর্তনের অগ্রদূত হন। বয়স্ক শিক্ষার মাধ্যমে তাঁর ক্ষমতায়নের সূত্রপাত। তবে তিনি বয়স্কদের শিক্ষার পরিবর্তে ভাবলেন শিশুদের শিক্ষার অধিকারের কথা। কিন্তু দুর্গম চরে বিদ্যালয় কোথায় যে শিশুরা শিক্ষায় আলোকিত হবে? সালেহা চাচি নিজেই সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন। নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়। একটি নয়, নয়-নয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তিনি অবদান রেখেছেন। সরকারি দপ্তরে ঘুরে ঘুরে আদায় করে নিয়েছেন অনুমোদন ও নিবন্ধন। চর মন্তাজের শিশুদের শিক্ষার অধিকার আজ সুপ্রতিষ্ঠিত।
সালেহা চাচির মতো অগণিত নারীর ক্ষমতায়ন সমাজের পিছিয়ে রাখা নারীসমাজের অগ্রগতিই শুধু সাধন করেনি, তারা অবদান রেখে চলেছে বৈষম্যহীন, কল্যাণকর ও সংবেদনশীল সমাজ গড়তে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন নারীদের সক্রিয় বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। কারণ, নারীরা শুধু নিজের কথা ভাবেন না, ভাবেন পরিবার ও সমাজের সবার স্বার্থ ও অধিকারের কথা। এর প্রমাণও মেলে বিভিন্ন গবেষণায়। ইউনিয়ন পরিষদের পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়ন-প্রক্রিয়ায় নারীর কার্যকর অন্তর্ভুক্তি তাঁদের এলাকার পিছিয়ে পড়া সব গোষ্ঠীর স্বার্থ ও অধিকারের বিষয়গুলো নিশ্চিত করে। তাঁদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া ও দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের দাবিদাওয়া প্রতিফলিত হয় পরিকল্পনা আর বাজেটে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়ায় অধিকারবঞ্চিত প্রতিবন্ধী, আদিবাসী কিংবা দলিত নারীর কার্যকর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা গেলে তাঁদের দাবিদাওয়াও পরিকল্পনা ও বাজেটে সহজেই প্রতিফলিত হতে পারে।
বাংলাদেশে অ্যাকশনএইড তার কার্যক্রমের ৩০ বছর পূর্তি উদ্যাপন করছে। দারিদ্র্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সংস্থাটি নারীর ক্ষমতায়নকে সর্বাগ্রে স্থান দিয়েছে। গড়ে তুলেছে সালেহা চাচির মতো অগণিত সক্রিয় সমাজ পরিবর্তনের বাহক। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের সে প্রচেষ্টা বৃথা যায়নি। দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা পরিবর্তনের বাহকেরা নারীর প্রতি বৈষম্য, অবিচার, সহিংসতা প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। অধিকারবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ন্যায়সংগত দাবি ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন কিংবা স্থানীয় সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে মানসম্পন্ন সেবা প্রদানে উদ্যোগী করতেও সক্রিয় তারা।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ নানা প্রক্রিয়ায় নারীর ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করেছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, দুর্যোগ মোকাবিলা, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অংশগ্রহণ কিংবা স্থানীয় পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতাকাঠামোয় কার্যকর অন্তর্ভুক্তিতে নারী নেতৃত্ব তৈরির মাধ্যমেও নারীর ক্ষমতায়নের ধারণা এগিয়ে নিয়েছে অ্যাকশনএইড। নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ যুক্ত করেছে তার সহযোগী সংস্থা, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও, উন্নয়ন সহযোগী, নাগরিক সমাজ এবং সংবাদমাধ্যমকে। তাদের সঙ্গে নিয়ে সরকারি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে।

10450011_822230891152997_6977322731021705059_o
এ সাফল্য কারও একার অর্জন নয়। বরং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগসমূহের মিলিত প্রচেষ্টায়ই আজকের এ অর্জন। গত ৩০ বছরে বাংলাদেশের নারীদের ক্ষমতায়নে ব্যাপক অগ্রগতি ঘটলেও এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে বিদ্যমান সামাজিক-সাংস্কৃতিক রীতিনীতি, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব এবং অগণতান্ত্রিক আচার-আচরণের কারণে প্রান্তিক নারীরা পরিপূর্ণ স্বাধীনতা উপভোগ করতে কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়ায় কার্যকর অংশগ্রহণ ও ভূমিকা পালনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রেও প্রত্যাশিত পরিবর্তন এখনো আসেনি। ভাষা, উন্নয়ন এবং অন্যান্য প্রস্তাবে নারীকে অন্তর্ভুক্ত করার মৃদু প্রয়াস লক্ষ করা যায়। কিন্তু রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে পরিশেষে সেটা ব্যর্থ হয়। মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিশ্রুতি দিলেও ক্ষমতায় গেলে দেখা যায় যে প্রস্তাবিত বা প্রণীত আইনগুলো নারী উন্নয়ন বা তাঁদের ক্ষমতায়নকে উল্টো বাধাগ্রস্ত করছে। অতিসম্প্রতি বিয়ের ক্ষেত্রে নারীর বয়সসীমা কমানোর যে প্রস্তাব করা হয়, তা উদাহরণ হিসেবে এখানে উল্লেখ করা যায়। যদিও নাগরিক সমাজের ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার মুখে সরকার সিদ্ধান্ত বদলায়।
প্রকৃতপক্ষে, নারীর ক্ষমতায়নের সঙ্গে সম্পর্কিত কতকগুলো জরুরি বিষয় এখনো অমীমাংসিতই রয়ে গেছে। যেমন নারীর পারিবারিক গণ্ডিতে তথাকথিত জেন্ডার ভূমিকার কি পরিবর্তন হয়েছে? নারীর গৃহস্থালি কাজকে কি উত্পাদনমূলক কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়? কৃষিতে নিয়োজিত নারী কি কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি পান কিংবা প্রয়োজনীয় সরকারি সেবা পান? ভূমি ও অন্যান্য উত্পাদনমুখী সম্পদে নারীর অধিকার কি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে যোগাযোগ ও চলাচলে শহরে কিংবা গ্রামে নারী কি নিরাপদ? প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগে নারীর বিপদাপন্নতা কি এখনো উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে গুরুত্ব পায়? প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতাকাঠামোয় নারীর অন্তর্ভুক্তি কি পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব ও কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত এবং তাঁরা কি স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম?
এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদেরই খুঁজতে হবে এবং কাজ করতে হবে সম্মিলিতভাবেই। প্রশ্ন হলো, সরকারি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন কিংবা সংশোধন করেই কি এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব? নাকি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে থাকা অন্যায় রীতিনীতি, দৃষ্টিভঙ্গি ও
আচার-আচরণের পরিবর্তন ঘটানো জরুরি?

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আহ্বান জানাই—আসুন, ফিরে দেখি আমাদের স্বপ্নগুলোকে। সাজাই নতুন করে। জাগি এবং জাগাই সবাইকে। সমাজকে গড়ে তুলি ন্যায্যতা, যুক্তি আর জ্ঞানের ভিত্তিতে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে গড়ে তুলি মানুষকে। এ দেশকে গড়ে তুলি সবার জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ করে। সলিল চৌধুরীর গানে কণ্ঠ মিলাই:

সেদিন আর কত দূরে/ যখন প্রাণের সৌরভে/ সবার গৌরবে ভরে/ রবে এই দেশ ধনধান্যে/ শিক্ষায় জ্ঞানে মান্যে
আনন্দের গানে গানে সুরে…

লিখেছেন-ফারাহ্ কবির: কান্ট্রি ডিরেক্টর, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ।

 

আধুনিকতার ছোঁয়ায় দেশি শাড়ি

দাওয়াতে বা বন্ধুর বাড়িতে মেয়েটিকে দেখা যেত কুর্তা-লেগিংস বা জিনস ও টি-শার্টেই স্বচ্ছন্দ। শখ করে শাড়ি পরা বলতে বড়জোর পয়লা বৈশাখে বা কোনো বিয়ের নিমন্ত্রণে। তবে এখন এ ধারাটা বদলেছে। অনেক কিশোরী বা তরুণীই পরছেন শাড়ি। দেশি ধাঁচের তাঁত বা সুতির শাড়ি, তবে সাজটা একদম আধুনিক। তাতে নিজস্ব স্টাইলের ছাপ। কোনো উপলক্ষ নয়, এমনিতেই শাড়িতে দেখা যাচ্ছে অনেককে।

সুতি বা তাঁতের শাড়ি মানেই তার সঙ্গে পরতে হবে ঐতিহ্যবাহী গয়না, কাচের চুড়ি আর কপালে গোল টিপ—এমন ধারা থেকে কিছুটা সরে এসে নতুন ট্রেন্ড চালু হয়েছে এখন। দেশি শাড়ির সঙ্গে একটু ফাঙ্কি বা পশ্চিমা ধাঁচের অনুষঙ্গ ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। হাতে চুড়ির বদলে দেখা যাচ্ছে মোটা বালা বা ব্রেসলেট, গলায় বিব নেকলেস অথবা বড় কোনো লকেট। চুলটা হয়তো সাজিয়ে নিচ্ছেন স্টাইলিশ কোনো খোঁপা বা বেণির বাঁধনে।

কথা হলো একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইভলিন জয়িতার সঙ্গে। ক্লাসে ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাকই পরেন তিনি; কিন্তু শাড়ি তাঁর ভীষণ প্রিয় বলেই বিভিন্ন উৎসবে শাড়ি পরার সুযোগ হাতছাড়া করেন না। আগে শাড়ির সঙ্গে শুধু ঝুমকা, মাটির গয়না, কাচের চুড়ি—এসবই সবাই পরতেন। কিন্তু অন্য পোশাকের সঙ্গে যে গয়নাগুলো পরা হয়, তা-ই যদি পরেন শাড়ির সঙ্গেও, তাহলে বিষয়টি কেমন দাঁড়ায়, সেটিই পরখ করে দেখতে চেয়েছিলেন বলে জানালেন তিনি। সাদামাটা সুতির শাড়ির সঙ্গে তিনি কড়ি, সুতা ও মেটালের আধুনিক গয়না পরেন। হাতে বালা ও বড় ডায়ালের কোনো ঘড়ি পরতে পছন্দ করেন। চুলটা এক পাশে এলোমেলো খোঁপা করে একটা মেসি লুক আনার চেষ্টা করেন। কখনো বা সাজে ভিন্নতা আনেন বড় আকৃতির কালো ফ্রেমের চশমা পরে। আর এর সঙ্গে মেকআপটা হয় একদমই হালকা, শুধু ঠোঁট রাঙিয়ে থাকেন উজ্জ্বল কোনো রঙে। তাঁর ব্লাউজগুলোও গতানুগতিক কাটের থেকে ভিন্ন হয় বলে জানা গেল।

image_15651

সাধারণত চিকন পাড়ের সুতি, তাঁত বা অ্যান্ডি কাপড়ের শাড়িই তরুণীরা বেশি পরছেন। প্রাকৃতিক রঙে রাঙানো শাড়ির চাহিদাও কম নয়। চেক বা গামছা কাপড়ের শাড়িও নতুনরূপে জনপ্রিয় হয়েছে। এই শাড়িগুলোতে ব্লকপ্রিন্ট, এমব্রয়ডারি বা এ ধরনের কাজ তেমন থাকে না। বুননেই বৈচিত্র্য চোখে পড়ে। হালকা ও উজ্জ্বল—দুই রকম রংই তাঁরা বেশ পছন্দ করছেন।
ফ্যাশন হাউস যাত্রার ফ্যাশন ডিজাইনার মাধুরী সঞ্চিতা জানালেন, সাধারণ সুতির শাড়িকে আকর্ষণীয় করা যায় তার সঙ্গে গামছা প্রিন্ট, চেক, পোলকা ডটসহ বিভিন্ন ধরনের প্রিন্ট, বাটিক ও বিপরীত রঙের ব্লাউজ বেছে নিয়ে। তাঁর মতে, বয়স কম হলে যে কেবল উজ্জ্বল রংই বেছে নিতে হবে তা নয়; বরং চাপা সাদা, ছাই বা হালকা কোনো রঙের শাড়ির সঙ্গে রংচংয়ে ব্লাউজেও স্টাইলিশ লুক আনা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্লাউজের কাটছাঁটও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের শাড়ির সঙ্গে তরুণীদের হাইনেক, স্লিভলেস, বেন্ড কলার, বোট কলার, শার্টের কলার দেওয়া ব্লাউজ ব্যবহার করার পরামর্শ দেন তিনি। কোমর পর্যন্ত ঝুল ও দুই পাশের কাটা একটু বেশি দেওয়া ব্লাউজ পরলেও বেশ ভালো দেখাবে বলে মনে করেন তিনি।

BlogyMate.comIm_2011201364655
এ ধরনের সাজে আদিবাসী ধাঁচের গয়না, গলায় বিভিন্ন রঙের পুঁতির মালা, হাতে মোটা বালা অথবা শুধু কানে এক জোড়া বড় দুলে বেশ মানিয়ে যাবে; বললেন তিনি। নৃত্যশিল্পী ও উপস্থাপিকা শ্রীমন্তি পূজা সেনগুপ্ত সুতি শাড়ি পরতেই বেশি স্বাছন্দ্য বোধ করেন, শাড়ির সঙ্গে হল্টার নেক টপ ও ব্যাকলেস ব্লাউজ তাঁর খুব প্রিয়। নাচের অনুষ্ঠানে শাড়ির সঙ্গে স্বভাবতই একটু ভারী গয়না পরতে হয়। কিন্তু অন্যান্য সময় তিনি সুতি শাড়ির সঙ্গে খুব ছিমছাম সাজ ও অনুষঙ্গ বেছে নেন বলে জানালেন। ঘরোয়া কোনো আয়োজনে যে শাড়ির সঙ্গে হালকা গয়না পরেন, সেই শাড়ির সঙ্গেই আবার ভারী গয়না পরে পার্টিতে হাজির হন তিনি।

দেশাল, অরণ্য, আড়ং, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির ও অন্যান্য দেশি শাড়ির দোকানে পেয়ে যাবেন এ ধরনের ছিমছাম নকশার শাড়ি। আজিজ সুপার মার্কেটের দোকানগুলোতেও চোখে পড়বে। ব্লাউজের কাপড় আলাদাভাবে কিনে বানিয়ে নিতে পারেন। ম্যাচিং নয়, বরং কন্ট্রাস্টই ভালো মানাবে।

সূত্র- নকশা।

 

মুক্তিযুদ্ধ ও নারী

 

আলম শামস,অপরাজিতা ডেস্কঃ ১৯৭১। পৃথিবীর ইতিহাসে যুক্ত হলো নতুন দেশ। নাম তার বাংলাদেশ। আমরা পেলাম নতুন মানচিত্র, লাল-সবুজ পতাকা, স্বাধীন ভূখ-। আর এ বিজয় এসেছে এই মাসের ১৬ তারিখে। অনেক অনেক ত্যাগ, লাখ লাখ জীবনের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে কাক্সিক্ষত বিজয়। স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল সমগ্র জনগণের আন্দোলন। এই আন্দোলনে সশস্ত্র যুদ্ধে অনেক নারীর অবদান ছিল।

উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী যেমন ছিলেন যুদ্ধক্ষেত্রে, তেমনি অসংখ্য নারী নিবেদিত প্রাণে কাজ করেছেন নেপথ্যে। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন, খাবার, ওষুধ-পত্র সরবরাহ করে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন বিপুলসংখ্যক নারী। স্বামী, ভাই, সন্তানকে প্রেরণা দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়েছেন অগণিত নারী। তাদের সহযোগিতায় আন্দোলন, স্বাধীনতা, বিজয় সফল হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামে, নারী জাতির যে অবদান রয়েছে, তা শুধু আমাদের দেশেই নয়, মানব সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, যুগে যুগে অন্ধকার, পশ্চাৎপদতা ও পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য আন্দোলন সংগ্রামের যে ইতিহাস রয়েছে তা নারী-পুরুষের যূথবদ্ধ সংগ্রামের ইতিহাস।

full_2088743678_1393838210

 

সভ্যতা বিনির্মাণে নারী ও পুরুষ কেউই একক কৃতিত্বের দাবিদার নয়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, মহান ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ কোনো কিছুতেই নারীরা পিছিয়ে থাকেননি। আন্দোলন করতে গিয়ে তারা জেল খেটেছেন, সশস্ত্র অভিযানে অংশ নিয়েছেন, বর্বর, অমানবিক নির্যাতন সহ্য করেছেন। আমাদের দেশে বিজয়ের ৪৩ বছর পরও নারীরা বঞ্চিত অহহেলিত নির্যাতিত ও শোষিত হচ্ছেন। নারীর আর্তনাদ আজও আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নারী নিজ ঘরে অর্থাৎ পরিবারের সদস্য যেমন বাবা, মা, ভাই, বোন, স্বামী, শ্বশুর, দেবর, ননদ এদের দ্বারাই নির্যাতিত হচ্ছেন। পরিবারে যেন মেয়েদের নিজস্ব কোনো অধিকার নেই। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় দেখা যায় স্বামী, শশুর-শাশুড়ি, ননদ কর্তৃক নির্যাতনের খবর। নির্যাতনের কথা বলার মতো জায়গা ঘরে-বাইরে কোথাও নেই। সাহস করে বললে আপন লোকেরাও দোষারোপ করে। এ নির্যাতন গ্রাম থেকে শহরে, বিত্তহীন থেকে উচ্চবিত্ত পরিবারের সর্বত্র বিরাজমান। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা সামাজিক ও পারিবারিক চাপে পরিবারের নির্যাতনকে স্বাভাবিক মনে করেন। পরিবারের গ-ি থেকে বের হওয়া দুরূহ ব্যাপার। একদিকে সামাজিক অপবাদ, অপরদিকে আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তার অভাবে একজন নারী তার স্বাভাবিক প্রতিভা বা গুণ বিকাশে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়।

মানুষ হিসেবে নারী তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে অধস্তন ও বৈষম্যমূলক অবস্থায় আছে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন। অনেক সময় দেখা যায় ইভটিজিংয়ের কারণে প্রাণ পর্যন্ত হারাতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। সমাজে বিভিন্ন স্তরে যে যেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা যদি নারী প্রসঙ্গে নেতিবাচক কথা না বলেন, ইতিবাচক মন্তব্য করেন, বক্তৃতা বিবৃতিতে যা বলেছেন তা যদি কার্যকরী করেন তবে অনেকটা সহজ হবে নারী-পুরুষের সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় অনেক সময় দেখা যায়, কথা ও কাজে মিল নেই। যিনি নারীদেরকে ভোগের সামগ্রী হিসেবেই দেখেন ব্যক্তিগত জীবনে এমন একজন যদি কোনো এক এলাকায় নেতা বা শাসক থাকেন তার কাছে নারী নির্যাতনের কথা বললে হেসে উড়িয়ে দেয়ারই কথা। তিনি তো বলবেনই ‘এখন তো পুরুষরা নির্যাতিত হচ্ছে। তাই পুরুষ নির্যাতন আইন হওয়া উচিত।’ আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের মাঝে বৈষম্য বিরাজ করলেও আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রগতিও কম হয়নি।

সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসহ উচ্চতর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনা করছেন হাজার হাজার ছাত্রী। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করছেন অগণিত ছাত্রী। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মোট ছাত্র সংখ্যার অর্ধেক ছাত্রী। সরকারি বেসরকারি অফিসগুলোতেও কাজ করছে অসংখ্য নারী। উচ্চতর পদগুলোতেও নারীরা নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত গার্মেন্ট শিল্প মূলত টিকে আছে নারীর শ্রম সাধনায়। কিন্তু এই শিল্প নিয়েও চলেছে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র। গার্মেন্ট ও অন্যান্য শিল্পে নারী শোষিত ও বঞ্চিত হচ্ছেন। এই শোষণ, বঞ্চনার বিরুদ্ধেও লড়াই ও আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে এবং সুফল হবে এটা নিশ্চিত। কারণ কোনো আন্দোলনই বৃথা যায় না। সুফল পেতে শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। দেশের জনগণ পত্র-পত্রিকায় এবং টিভি খুললেই দেখেছেন অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও হরতালের সময় বিনা কারণে কীভাবে নারীদের গ্রেফতার এবং লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। এমপি, আইনজীবীসহ অসংখ্য নারীকে গ্রেফতার এবং নির্যাতন করা হচ্ছে অথচ মানবাধিকার তথা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়েই এদেশের আপামর জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। সমাজের ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হলেই আমাদের বিজয় সার্থক হবে। কিন্তু আমরা বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি নারী অধিকার তথা মানবাধিকারের গলা টিপে হত্যা করে বিজয়ের আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার অপচেষ্টা চলছে। নারীর প্রতি সম্মান, সহযোগিতা, সহমর্মিতা প্রদর্শন করে নারীকে এগিয়ে যেতে দেশে সকল নাগরিক স্ব স্ব স্থান থেকে এগিয়ে আসবেন মহান বিজয়ের মাসে এটাই নারী সমাজের প্রত্যাশা।

সূত্র- ইনকিলাব।

 

ঘরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে পোড়ামাটির জিনিসপত্র

প্রাকৃতিক পরিবেশ আর জলবায়ুর সঙ্গে মানানসই ঘরদোর বানানোর রীতি একসময় দুনিয়াজুড়েই ঐতিহ্য ছিল। আধুনিক বাস্তুকলায় আমরা নানা কারণেই এসব থেকে দূরে সরে এসেছি। কিন্তু অনেক কিছু ছেড়ে এলেও সব তো আর ভোলা যায় না। তাই এখনো ঐতিহ্য হাতড়ে ফেরে নাগরিক মন। আর এভাবেই একসময় যা ছিল ঐতিহ্য, এখন তা ফিরে আসে হাল আমলের স্টাইল হয়ে। এখন কুমারপাড়ার সব মাটির তৈজসপত্রেরই যেন একটা নাগরিক সংস্করণ পাওয়া যায় রাজধানীসহ বড় বড় নগর-বন্দরে। আটপৌরে প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর নানা উপকরণ বিক্রি হচ্ছে পথের ধারের ফুটপাত, বিপণিবিতান আর বিশেষায়িত পটারি শপগুলোতে। কেউ চাইলেই ঘরের মেঝে থেকে শুরু করে দেয়াল পর্যন্ত সাজাতে পারেন মাটির জিনিস দিয়ে।

ফুলদানি

ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে ফুলদানি কে না পছন্দ করে। আর মাটির ফুলদানি তো ধ্রুপদি সুন্দর। মাটির ফুলদানি ছোট, মাঝারি ও বড়—সব আকারেরই পাওয়া যায়। কিছু ফুলদানিতে মাটির গায়ে খোদাই আর রিলিফের কাজ। হালকা আর গাঢ় রঙে পোড়ানো। আর কিছু মাটির ফুলদানিতে গাঢ় রঙের ওপর জরির কাজ করা। কেউ চাইলে কৃত্রিম ফুলও রাখতে পারেন। আবার পানি দিয়ে তাজা ফুলও রাখতে পারেন মাটির ফুলদানিতে। শোবার ঘর, বসার ঘর—যেকোনো স্থানেই রাখতে পারেন সুদৃশ্য মাটির ফুলদানি। ৬০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে নানা আকৃতির ভিন্ন ভিন্ন নকশার মাটির ফুলদানি।

টেরাকোটা

বাহারি নকশা করা পোড়ামাটির ফলক ঘরের দেয়ালে। আছে ফুল-লতা-পাতা, আছে গ্রামীণ জীবনের ছবি আঁকা। এ ছাড়া পাওয়া যায় বিমূর্ত নানা নকশার টেরাকোটাও। ছোট ছোট বিভিন্ন মাপের টেরাকোটা প্রস্তুত অবস্থায় পাওয়া যায় মৃিশল্পের দোকানে। এ ছাড়া এমন মৃিশল্পের দোকান বা শিল্পীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে নিজের পছন্দমতো বানিয়ে নিতে পারেন মনের মতো টেরাকোটাও। সে ক্ষেত্রে খরচ করতে হবে প্রতি বর্গফুট হিসাবে। বসার ঘরের দেয়ালের কোনো একটা পাশে এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত লাগিয়ে নিতে পারেন টানা একটা টেরাকোটার কাজ। আবার শোবার ঘরের পেছনের দেয়ালেও রাখতে পারেন টেরাকোটা।

শোপিস

এখন সুন্দর সুন্দর মাটির শোপিস পাওয়া যায়। টেপা পুতুল, ছোট হাতি, ঘোড়া থেকে শুরু করে লোক-মোটিফের পোড়ামাটির নানা কাজ কিনতে পাওয়া যায় দোকানগুলোতে। কেউ চাইলেই এগুলো দিয়ে সাজাতে পারেন আপনার শোকেস। অথবা বসার ঘরের কোনো একটি কোনায় ছোট একটি নিচু টেবিল রেখে সাজাতে পারেন মাটির শোপিসে। এগুলোর দাম ৪০-৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকার মধ্যেই।

images (4)

মাটির ব্যাংক

শুধু শখের বশে খুচরা পয়সা বা টাকা জমানোর জন্যই নয়, মাটির ব্যাংক দিয়ে সাজাতে পারেন ঘরও। বিভিন্ন ফল, ব্যাঙ, হাতি, ঘোড়াসহ নানা আকৃতির ব্যাংক পাওয়া যায় মাটির। এগুলোতেও ঘরের শোভা বাড়াতে পারেন আপনি। দাম পড়বে ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যে।

দেয়াল সাজানো
অনেকেই ঘরে মাটির জিনিস রাখতে না চাওয়ার কারণ হিসেবে বাড়িতে ছোট ছেলেমেয়ে থাকার কথা বলেন। তাঁরা চাইলেই কিন্তু দেয়ালে টাঙানোর উপযোগী মাটির নানান জিনিস কিনে সাজাতে পারেন ঘরের দেয়াল। পর পর তিনটি তিন সাইজের মাটির মাছ দিয়েই সাজানো যেতে পারে দেয়ালের একটা দিক। তার আগে শিশুর ছবি আঁকার প্যাস্টেল রঙে কয়টা ঢেউ এঁকে নিতে পারেন দেয়ালে। আর মাছের ওপরেই উড়িয়ে দিতে পারেন মাটির রঙিন প্রজাপতি। যেকোনো ঘরেই এগুলো ভালো লাগবে। দাম পড়বে ৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।
মাটির ঘণ্টি
বসার ঘরের সিলিংয়ে কিংবা প্যাসেজের দরজায় ঝুলিয়ে দিতে পারেন টুংটাং মাটির ঘণ্টি। দুই বা তিনটি ঘণ্টি অথবা অনেকগুলো ঘণ্টি দিয়ে একটি সুন্দর চাইমও। ঘণ্টিগুলো সুতা বা ফিতে দিয়ে বেঁধে নিজের মনের মতো করে যেমন সাজাতে পারেন, তেমনি কিনে নিতে পারেন নানান ডিজাইনে বানানো এমন চাইমও। মিষ্টি একটা টুংটাং আওয়াজের এই মাটির ঘণ্টির দাম ২০ টাকা থেকে ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে।
অ্যাশট্রে
ধূমপান না করাই ভালো। কেউ যদি এখনো এই অভ্যাস ছাড়তে না-ই পারেন, আর অতিথি হয়ে আসেন আপনার বাড়িতে, তাহলে কী করবেন। একটা কর্নার টেবিলে রেখে দিতে পারেন একটা মাটির অ্যাশট্রে। এই অ্যাশট্রেও কিন্তু এখন পাওয়া যায় নানান জিনিসের আকৃতিতে। আছে বাহারি নকশা করা মাটির অ্যাশট্রেও। এতে যেমন সৌন্দর্য বাড়বে, তেমনি হঠাত্ প্রয়োজনও মিটবে। ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায় মাটির অ্যাশট্রে।

বড় চাড়ি ছোট বাটি

মাটির পাত্রে স্বচ্ছ টলটলে পানি রেখে দিয়ে ঘর ঠান্ডা করার পদ্ধতি অনেক পুরোনো হলেও এখন তা আবার ফিরে এসেছে নগর জীবনেও। গরমের দিনে একটা বড় চাড়িতে পানি দিয়ে তা ঘরের মাঝখানে রেখে দিতে পারেন। আর তাতে ছোট ছোট ফুল ও ফুলের পাপড়ি ছেড়ে দিতে পারেন। ভাসাতে পারেন দু-একটা কাগজের নৌকাও। সন্ধ্যায় কয়েকটি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে দিলে ঘরের পরিবেশই পাল্টে যাবে।

আর ছোট ছোট মাটির বাটি অনেক কাজেই লাগে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বাটিতে রাখতে পারেন টুকিটাকি নানা জিনিস। বিভিন্ন আকৃতির একদম সাধারণ বা কিছুটা নকশা করা মাটির বাটির দাম ২০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।

ফুলের টব

টব তো মাটিরই হওয়া দরকার। এখন অনেক আকৃতির আর নানা নকশার টব পাওয়া যায়। আছে গোল ও চৌকো আকৃতির মাটির টবও। ওপরে-নিচে কিংবা সারা গাজুড়ে নকশা করা মাটির টব পাওয়া যায় বিভিন্ন রঙের। এসব টবে শুধু ফুল কিংবা পাতা বাহারই নয়, বারান্দাটা একটু বড় হলে লাগিয়ে দিতে পারেন কোনো একটা ফলের গাছও। ১৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন আপনার মনের মতো টব।

মাটির-হাঁড়ি-পাতিল

আয়না

দিনের মধ্যে সবারই একবার হলেও আয়নার সামনে যেতেই হয়। আর আয়নাতেও রাখতে পারেন মাটির কারুকাজের ছোঁয়া। গোল, চার কোনা—নানা আকৃতির আয়না পাওয়া যায় মাটির ফ্রেমে। খাবার ঘরের হাত ধোয়ার স্থানে কিংবা প্যাসেজেও রেখে দিতে পারেন একটা ছোট মাটির ফ্রেমের আয়না। এ ধরনের আয়নার দাম ৩০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে।

মাটির থালাবাসন

পুরো ঘরদোরই যদি মাটির জিনিসে সাজিয়ে ফেলেন এই গরমের দিনে, তাহলে আবার খাবার টেবিলটাই বা বাদ যাবে কেন! আপনি চাইলেই বাসায় রেখে দিতে পারেন একটা মাটির ডিনার সেট। বিশেষ দিনে অতিথি আপ্যায়নে ব্যবহার করতে পারেন এই মাটির থালা-বাসন-গ্লাস বা কাপ-পিরিচ।

মাটির জিনিস ব্যবহারে সতর্কতা ও যত্ন

মাটির জিনিস ব্যবহারে একটু তো সতর্ক থাকতেই হবে। মাটির চাড়ি বা ফুলদানিতে পানি রাখলে তা অবশ্যই নিয়মিত পালটাতে হবে। কারণ পানি নোংরা হলে তাতে মশা হতে পারে। আবার চাইলে ফুলদানির ভেতরে একটা পলিথিন দিয়ে তাতে পানি দিতে পারেন। এতে পাত্রে সামান্য পানি চুঁইয়ে পড়ার সুযোগ থাকলে সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে। আর মাটির জিনিসে ধুলোবালি একটু বেশিই চোখে পড়ে। তাই নিয়মিত শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে রাখতে হবে মাটির জিনিস। এসবে ভেজা কাপড় ব্যবহার না করাই ভালো।

যেখানে পাবেন

মাটির জিনিস এখন অনেক জায়গাতেই পাওয়া যায়। শিশু একাডেমির সামনে দোয়েল চত্বর, নিউ মার্কেট, ঢাকা কলেজের সামনে, ধানমন্ডি ৬ নম্বর সড়কের ফুটপাত, কলাবাগান, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটেও পাওয়া যায় মাটির জিনিস। তবে কিনতে হবে একটু দরদাম করে।

সবশেষে বলে রাখতে চাই একটা ছোট্ট টিপস। নানান ঘরোয়া আড্ডায়-অনুষ্ঠানে জ্বালিয়ে দিন মাটির কয়েকটি ছোট্ট প্রদীপ। এ ছাড়া ব্যবহার করতে পারেন মাটির মোমদানিও। আর শুধু নিজের ঘরের জন্যই নয় চাইলে বন্ধুকেও উপহার দিতে পারেন পোড়ামাটির এসব খাঁটি জিনিস।

 

লৌহমানবী মার্গারেট থ্যাচার

যুক্তরাজ্যের একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার ১৯৭৯ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনৈতিক দৃঢ়তা ও স্পষ্টভাষী স্বভাবের জন্য তিনি পরিচিতি পেয়েছিলেন লৌহমানবী নামে।

১৯২৫ সালের ১৩ অক্টোবর জন্ম নেওয়া থ্যাচারের বাবার নাম অ্যালফ্রেড রবার্টস। পেশায় দোকানদার হলেও স্থানীয় রাজনীতিতে বাবার সক্রিয়তার কারণে বেশ অল্প বয়স থেকেই রাজনীতিকে কাছ থেকে দেখেছেন থ্যাচার। ১৯৫১ সালে ১৯৫১ সালে তাঁর বিয়ে হয় ডেনিস থ্যাচারের সাথে। বিয়ের পরই তিনি আইন পড়া শুরু করেন। ১৯৫৩ সালে ব্যারিস্টারি পাশ করেন। ঐ বছরই তার জমজ সন্তান মার্ক এবং ক্যারলের জন্ম হয়। বিয়ের পর তাঁর নামের শেষে যুক্ত হয় থ্যাচার। এর আগ পর্যন্ত তিনি পরিচিত ছিলেন মার্গারেট হিলডা রবার্টস নামে। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও ভালো ছিলেন তিনি। অঙ্ফোর্ডের সামারভিল কলেজে রসায়নের ওপর পড়াশোনা করেছেন তিনি। ১৯৫৯ সালে রক্ষণশীল দল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মার্গারেট থ্যাচার। ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক জীবনে আরেক ধাপ উন্নতি হয় তাঁর। অ্যাডওয়ার্ড হিথকে পরাজিত করায় দলের নেতৃত্ব আসে তাঁর হাতে।

130408135927_thatcher_14bbc

এরপর ১৯৭৯ সালে প্রথম নারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস রচনা করেন থ্যাচার। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে পরপর তিনবার তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেন। বিংশ শতাব্দীতে দেশটিতে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও এ সময়টায় তিনি যে শুধু মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন এমন নয়। নানা নীতির কারণে বহু সমালোচনার শিকারও হতে হয় ব্রিটেনের এই একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রীকে। তবে যেসব কারণে মার্গারেট থ্যাচার চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন, এর মধ্যে রয়েছে ইউরোপের বিভক্তি জয়, স্নায়ুযুদ্ধাবসান, ফকল্যান্ড যুদ্ধ ইত্যাদি।

তাঁর বিরুদ্ধে আনীত বড় অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, তাঁর সময়ে একদিকে ধনীরা যেমন আরো সম্পত্তির পাহাড় গড়েছে, অন্যদিকে গরিবরা হয়েছে আরো গরিব।২০০২ সালে ছোটখাটো একটি স্ট্রোক করার পর থেকে অনেকটা নিভৃত জীবনযাবন করে আসছিলেন,৮৭ বছর বয়সে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন লৌহমানবীখ্যাত মার্গারেট থ্যাচার।

 

নারীদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি

মহিলা উদ্যোক্তা তৈরিতে বিসিকের প্রশিক্ষণ

দেশের শিক্ষিত বেকার মহিলাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (স্কিটি)।

২৮ ডিসেম্বর শুরু হয়ে চলবে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত। আবেদনের যোগ্যতা এসএসসি পাস। কোর্স ফি ৫০০ টাকা। শিল্প বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে কোর্সটি সহায়ক হবে। কোর্স শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগ থেকে ঋণ পাওয়ার বিষয়ে সহায়তা করা হবে। আবেদনের শেষ সময় ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০টা।

যোগাযোগ : স্কিটি, বিসিক, প্লট-২৪/এ, রোড-১৩/এ, সেক্টর-৬, উত্তরা, ঢাকা।

ফোন : ০১৯১৫১৬৭০২৪.

বেসিক ওয়েব ডিজাইনের উপর ১মাস ব্যাপি ফ্রি প্রশিক্ষণ 

8973_755643557848467_4106716444139039084_n

‘জাগো হে নারী জাগো’ এই শ্লোগান নিয়ে রাজধানীতে শুরু হচ্ছে ১মাস ব্যাপি নারীদের জন্য বেসিক ওয়েব ডিজাইনের উপর ফ্রি প্রশিক্ষণ কর্মশালা। যার আয়োজক হচ্ছে, ওয়েবকোড ইনস্টিটিউট।

ভাষার মাসে শেখাবো ওয়েব ডিজাইনের ভাষা।
স্বাধীনতার মাসে শুরু হোক স্বাধীনভাবে নারীর পথচলা…

নারীদের জন্য ওয়েব কোড নিয়ে এলো ১ মাসব্যাপী বেসিক ওয়েব ডিজাইন শেখার ফ্রি প্রশিক্ষণ কর্মশালা। ৩০ জন নারী পাবেন এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহনের সুবর্ণ সুযোগ।

কে হতে চান সেই ৩০ জনের একজন??

প্রশিক্ষণ পরিচালনা করবেন গল্পে গল্পে কোডিং শিখি গ্রুপের শিউলী ইয়াসিন এবং সাদিয়া আহমেদ মনিকা।

বি:দ্র : সবার কাছে অনুরোধ আপনাদের পরিচিত যেসকল নারীর পক্ষে বেসিক ওয়েব ডিজাইন শেখা সম্ভব মনে করেন তাদেরকে জানার সুযোগ করে দিবেন।

হতে চাইলে ৩০ জনের একজন……
আজই রেজিষ্ট্রেশন করুন। রেজিষ্ট্রেশন লিংক : https://docs.google.com/forms/d/1aolfDlKpycL9tBp5q3Xe986I19LLks2oKF24QCgu2Nk/viewform

প্রশিক্ষণের বিস্তারিতঃ
রেজিষ্ট্রেশনের শেষ তারিখ : ১৫ জানুয়ারী-২০১৪
প্রশিক্ষণ শুরু : ১লা ফেব্রুয়ারী- ২০১৫
সময়ঃ সকাল : পরবর্তীতে জানানো হবে।
আসন সংখ্যাঃ ৩০টি

প্রশিক্ষণের স্থান :

ওয়েবকোড ইনস্টিটিউট
রুম – ০২ (১৩ তলা)
সাহেরা ট্রপিক্যাল সেন্টার,
২১৮, নিউ এলিফ্যান্ট রোড (বাটা সিগন্যাল)
ঢাকা – ১২০৫

প্রয়োজনে : ০১৬৭৮-১৭০-৫৯৩। 

চট্টগ্রামে ১১জন সফল নারী উদ্যোক্তাকে সম্মাননা প্রদান।

 ১১ সফল নারী উদ্যোক্তাকে অ্যাওয়ার্ড প্রদানের মাধ্যমে সম্মাননা জানালো চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিডব্লিউসিসিআই)। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যে ব্যবসা শুরু করে সফলতা অর্জন করায় তাদের এ সম্মান জানালো প্রতিষ্ঠানটি।

রোববার চট্টগ্রাম বিভাগের ১১জন সফল নারীর হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.আতিউর রহমান। এর আগে এফবিসিসিআই এর প্রথম সহ সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী বলেন, এক সময় চট্টগ্রামে নারী উদ্যোক্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখন হাজার হাজার উদ্যোক্তা।

সফল এই নারী উদ্যোক্তারা হলেনচট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের সভাপতি কামরুন মালেক(চট্টগ্রাম), নুর জাহান আক্তার চামেলি(কুমিল্লা), শামসুন্নাহার রানী(চাঁদপুর), রোকসানা হক সুচি(ব্রাহ্মণ বাড়িয়া), জোহরা বেগম (ফেনী), সুপ্তা চাকমা(খাগড়াছড়ি), মমতাজ বেগম(লক্ষীপুর), পপি রহমান(নোয়াখালী), সুশীলা চাকমা(রাঙামাটি), জাহানারা বেগম(কক্সবাজার) এবং শার্লী প্রো(বান্দরবান)

সম্মাননা প্রদানের সময় চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের সভাপতি কামরুন মালেকের সংক্ষিপ্ত জীবনী ও সফলতার গল্প প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়।

১৯৮০ সালে পিতার লবন ব্যবসার সাথে যুক্ত হন। সুযোগ পেলে নারীরাও যে পুরুষের থেকে পিছিয়ে থাকে না, তা প্রমাণের চ্যালেঞ্জটাও কাজ করেছিল নিজের মধ্যে। প্রথম চ্যালেঞ্জ সফলতার সাথে মোকাবেলার পর ১৯৮৫ সাল থেকে খলিফাপট্টিতে ডেইরি ফার্ম ব্যবসায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। আর উদ্যোক্তা হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি আসে ১৯৯২ সালে। ডেইরি ফার্ম ব্যবসার জন্য ওই বছর সরকারিভাবে পুরকৃত হন তিনি।

নিজের কর্মস্পৃহা, স্বামীর অনুপ্রেরনার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার তাগিদে যুক্ত হন বিভিন্ন সংগঠনের সাথে। ১৯৮০ সাল থেকে লায়ন্সের সাথে যুক্ত আছেন। ছিলেন চিটাগাং লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট। দায়িত্ব পালন করেছেন লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল ৩১৫/বি৪ এর জোন চেয়ারম্যান ও রিজিওন চেয়ারম্যান হিসেবে। বর্তমানে তিনি গভর্নর এডভাইজর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৩ সালে উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, চিটাগংয়ের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট মিসেস মনোয়ারা হাকিম আলীর অনুরোধে যুক্ত হন তিনি এ সংগঠনের সাথে। ২০১৩ সাল থেকে উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, চিটাগং এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের সফলতার প্রমাণ রেখে চলেছেন সাবলীল দক্ষতায়। আজাদী প্রিন্টার্স ও কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেসের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। পাশাপাশি ডায়াবেটিক সমিতি, চট্টগ্রাম, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং মা ও শিশু হাসপাতালসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে অবহেলিত চট্টগ্রামের উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন অবিরাম।

কামরুন মালেক বিশ্বাস করেন, সমাজের প্রতি প্রত্যেক মানুষেরই কিছু দায়িত্ব থাকে, যা পালনে তিনি দায়বদ্ধ। তাঁর আজকের সামাজিক অবস্থানের জন্য তিনি মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ করুণা বলেই মনে করেন। পাশাপাশি স্বামী এম এ মালেকের সার্বক্ষনিক উৎসাহ দা তো আছেই। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তিনি আমৃত্যু চট্টগ্রামের অবহেলিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত নারীদের পাশে থাকতে চান। তিনি বিশ্বাস করেন, একদিন সকল বৈষম্যের অবসান হবে, নারী পুরুষ, ধনীগরীব সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অবহেলিত চট্টগ্রামকে পৌঁছে দেবে তার কাঙিক্ষত ঠিকানায়।

সফল এই নারী উদ্যোক্তার জন্ম দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ঐতিহ্যবাহী সরকার বাড়িতে ১৯৪৮ সালের ১০ জুন। মাবাবা আদর করে নাম রেেেখছিলেন কামরুন নাহার। গৃহীনি মা সামশুন নাহার আর বাবা মরহুম বজলুল করিম চৌধুরী ছিলেন এলাকার জমিদার। তবে এলাকার যে কারো বিপদে পাশে দাঁড়াতে ছিলেন তিনি সদা তৎপর। পিতার এই গুণটুকু পুরোপুরি নিজের করে নিয়েছিলেন তিনি। চট্টগ্রামের ১৯৬৪ সালে পেকুয়া জিএমসি ইন্সটিটিউশন থেকে মাধ্যমিক পাশের পর নাসিরাবাদ সরকারি মহিলা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এ অঞ্চলের প্রথম মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের সন্তান এম এ মালেকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর থেকে তিনি কামরুল মালেক নামেই পরিচিত। 

সূত্র- আজাদী।

 

 

সব সময় শি্খতে থাকো,এক মুহুর্তের জন্যেও থেমো না- ইন্দ্রা কে নুই।

 

পেপসিকোর চেয়ারপার্সন ও সিইও ইন্দ্রা কে নুই। তাঁর জন্ম ১৯৫৫ সালে ভারতের চেন্নাইয়ে। তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন মাদ্রাজ ক্রিশ্চিয়ান কলেজ, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট কলকাতা ও যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে। ২০১১ সালের ১৬ মে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েক ফরেস্ট ইউনিভার্সিটিতে তিনি এই বক্তৃতা দেন।

পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার শপথ নিয়ে আজ তোমাদের পথচলা শুরু হবে। তোমাদের এমন সব সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে, যা আজ অবধি কোনো প্রজন্মেরই ছিল না। সামাজিক নেটওয়ার্কিং, তাৎক্ষণিক যোগাযোগ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির ফলে অর্থনৈতিক আর সামাজিক সমস্যার সমাধান এখন সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই উঠে আসছে, যা এর আগে সম্ভব ছিল না। তোমাদের সামনে সমস্যাগুলো পুরোনো হলেও পুরোনো ধাঁচের সমাধানের মধ্যে তোমাদের সীমাবদ্ধ থাকার কোনো কারণ নেই। এ প্রজন্ম পুরোনোকে ভেঙে নতুন পথ তৈরি করবে।
এই যাত্রার শুরুতে আজ আমি তোমাদের কিছু পরামর্শ দিতে চাই, যা তোমাদের পথ চলতে সাহায্য করবে। প্রথমেই আমি বলব, সব সময় শিখতে থাকো, এক মুহূর্তের জন্যও থেমো না। তোমাদের ভেতরে যে কৌতূহলী সত্তাটি লুকিয়ে আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে গিয়ে তাকে হারিয়ে ফেলো না। শৈশবের সবচেয়ে অসাধারণ দিকগুলোর একটি হচ্ছে পৃথিবীকে জানার, বোঝার তীব্র ইচ্ছা, যা বেশির ভাগ মানুষই বড় হতে হতে হারিয়ে ফেলে। ‘কেন?’ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার উৎসাহ ফুরিয়ে যায়। হ্যাঁ, আজকে তোমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পূর্ণ হচ্ছে, কিন্তু সত্যিকারের শিক্ষার কোনো শেষ নেই, পূর্ণতা নেই। বাইরের পৃথিবী থেকে তোমরা যা শিখবে, তা এক অনন্ত বিস্ময়ের উৎস হয়ে তোমাদের জীবন ভরে তুলতে পারে, যদি তোমরা তাকে গ্রহণ কর।
১৯৮৬ সালে আমি বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ থেকে মটোরোলার অটোমোটিভ ইলেকট্রনিকস ডিভিশনের হেড অব স্ট্র্যাটেজি পদে যোগদান করি। তখন কোম্পানির উঁচু পর্যায়ের হাতে গোনা নারীদের মধ্যে আমি ছিলাম একজন। প্রথম মিটিংয়ে এসে আমি হতভম্ব; উপস্থিত সবার মুখে ইলেকট্রনিকস আর গাড়ি ছাড়া কোনো কথা নেই—আর এ দুটির কোনোটি নিয়েই আমার ধারণা প্রায় ছিল না বললেই চলে। আমি কিছু গৎবাঁধা প্রশ্ন করে, কতগুলো মডেল বানিয়েই হয়তো পার পেয়ে যেতে পারতাম, কিন্তু আমি আরও বেশি কিছু করতে চেয়েছিলাম। আমি কোম্পানিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চাইছিলাম, এর ভবিষ্যৎ সুদৃঢ় করতে চাইছিলাম।
নতুন জিনিস শেখার ইচ্ছেটাকে ধরে রাখো, আর তোমার কাজের বিষয়ের গভীরে ডুব দেওয়ার আগে চারপাশটাও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিয়ো। ব্যবসার জগৎ নিয়ে আমার সবচেয়ে সেরা উপলব্ধিগুলোর মধ্যে বেশ কিছু এসেছে অন্যান্য বিষয়ে পড়তে পড়তে, কিংবা সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কোনো কিছুকে বিচার করতে গিয়ে। ব্যবসার ক্ষেত্রে আমাকে যেসব জ্ঞান এগিয়ে দিয়েছে, তার মধ্যে অনেক কিছু এসেছে ইতিহাস, মনোবিজ্ঞান, এমনকি রসায়নের মতো বিষয় থেকে। যেসব জিনিস আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় সম্পর্কহীন, বিচ্ছিন্ন, তাদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করতে পারার ক্ষমতা আমাকে অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছে।
আজকের পৃথিবীতে পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকা খুব প্রয়োজন। তোমরা আজ যা জানো, কালই তা সেকেলে হয়ে পড়বে। কেবল একটি জিনিস শিখে টিকে থাকা এখন মুশকিল। আর এর অর্থ একটাই, প্রতিনিয়ত শিখতে হবে।

indra-nooyi_660_070314124400_081314021500

তোমাদের জন্য আমার দ্বিতীয় পরামর্শ হলো সবকিছুকে সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে—তা ব্যর্থতা, কোনো একঘেয়ে কাজ, ক্যারিয়ারে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন, যা-ই হোক না কেন। প্রতিটি অভিজ্ঞতাই নতুন কিছু শেখার এবং নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলার এক দারুণ সুযোগ। আর শুধু সুযোগগুলোকে চিনতে শিখলেই হবে না, নিজের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে সেগুলোর সদ্ব্যবহার করতে হবে। অনেক আগে থেকে ক্যারিয়ারের আগাগোড়া পরিকল্পনা করে রাখা সম্ভব নয়, তা উচিতও নয়। কোনো নির্দিষ্ট চাকরিই করতে হবে, এমন বদ্ধমূল ধারণা মনে গেঁথে চোখ-কান বুজে সেই চাকরির দিকে ছুটে চললে পথের আশপাশে ছড়িয়ে থাকা হাজারো সুযোগ চোখ এড়িয়ে যায়, যা করাটা বোকামি।
৯০-এর দশকের শেষের কথা, তখন আমি পেপসিকোর করপোরেট স্ট্র্যাটেজি ও ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান। স্টিভ রেইনমান্ড, আমার সাবেক বস, একদিন সোজা আমার অফিসে এসে বললেন, ‘আমি চাই তুমি ফ্রিটো-লেতে যাও এবং আমাদের পণ্য সরবরাহের পদ্ধতি বদলে ফেলার প্রকল্পের নেতৃত্ব দাও।’ আমার সামনে দুটি পথ ছিল—কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করা অথবা যেখানে ছিলাম সেখানেই থেকে যাওয়া। আমি চ্যালেঞ্জকে বেছে নিয়েছিলাম এবং আমার আজকের অবস্থানের পেছনে সেই সাহসী সিদ্ধান্তের অবদান অপরিসীম।
তবে শুধু চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেই হবে না, নিজের সর্বোচ্চ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে সবচেয়ে ভালো কাজ করতে হবে। হোক সেটা প্রথম চাকরি বা নিজের ব্যবসা, বা একটা ফটোকপি মেশিন চালানো—যে কাজই করো না কেন, সেখানে নিজের ১১০ ভাগ সামর্থ্য উজাড় করে দেবে। বহুদিন আগে ঠিক করে রাখা ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটতে গিয়ে আরও সম্ভাবনাময় কোনো দরজা ভুলে বন্ধ করে ফেলো না।
আমার তৃতীয় পরামর্শ হলো, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। কাজ করতে গিয়ে ভিন্ন মতের, ভিন্ন সংস্কৃতির, ভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে দেখা হবে, তাদের সঙ্গে মিশতে হবে। সে ক্ষেত্রে অন্যদের সঙ্গে অমিলগুলো না খুঁজে, সবার ভালো দিকগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। তুমি যখন অন্যদের ভালো ব্যাপারগুলোকে প্রাধান্য দেবে, বিনিময়ে তারাও তোমাকে ভালো চোখে দেখবে। এটা ঠিক যে কর্মক্ষেত্রে সমালোচনা থাকবেই, সেটি অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। তোমার যদি নিজের ওপর দৃঢ়বিশ্বাস ও আস্থা থাকে, তবে সমালোচনা, সমস্যা, ব্যর্থতা—যা-ই আসুক না কেন, সেখান থেকেই তুমি নতুন কিছু শিখতে পারবে এবং পরেরবার ঠিকই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মানুষকে এমনভাবে কাছে টানে যে সুসময় বা দুঃসময়, যা-ই আসুক না কেন, তুমি কখনো একা হবে না।
নিজের ভেতরে সুপ্ত কৌতূহলকে জাগিয়ে রেখো আর সব সময় শিখতে থেকো, কখনো থেমে যেয়ো না। নিজের সবটুকু উজাড় করে কাজ করো, সুযোগ তৈরি করে নাও। সবকিছুকে ইতিবাচকভাবে নিতে শেখো। তুমি পৃথিবীকে যা দেবে, তা-ই তুমি ফিরে পাবে। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি, তোমরাই এ পৃথিবী বদলে দেবে।

সূত্র: ওয়েবসাইট। ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: অঞ্জলি সরকার। 

 

রাজধানীতে ‘নারী নেতৃত্ব এবং ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী বলেছেন, কাজের সহায়ক পরিবেশ পেলে নারী প্রতিষ্ঠানকে নেতৃত্ব দিতে পারে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের মানবসম্পদ নীতি জেন্ডার নিরপেক্ষ।

রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল শনিবার ‘ডিএইচএল ওমেনস নেটওয়ার্ক (ডিডব্লিউএন)’ আয়োজিত ‘নারী, নেতৃত্ব এবং ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সাবেক এই উপদেষ্টা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি তাঁর জীবনসংগ্রাম এবং কীভাবে তিনি ব্যবসায়িক নেতা হয়ে উঠলেন, সে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।
গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী বলেন, নারীদের আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে, কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে ‘আপনি কি পারবেন’ এমন প্রশ্নে মুখোমুখি হতে হয়। তিনি বলেন, নারীদের বিষয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।
এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ডিএইচএল ওমেনস নেটওয়ার্ক যাত্রা শুরু করল। এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডিএইচএলের নারী কর্মীদের কাজের ক্ষেত্রে আরও তথ্য ও সহযোগিতা দিয়ে উৎসাহ দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেন, চট্টগ্রামের উপাচার্য ফাতেমা আজিজ ‘নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে নারী নেতৃত্ব, নারী ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক উপস্থাপনার সময় বলেন, নারীরা পরিবারে বেশি সময় দেয় বলে উচ্চপদে কাজ করতে বেশি আগ্রহ দেখায় না। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএইচএল এক্সপ্রেসের দেশি ব্যবস্থাপক ডেসমন্ড কুইয়াহ, ডিএইচএলের গ্লোবাল ফরওয়ার্ডিংয়ের (ডিজিএফ) ব্যবস্থাপক নূরুদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।

 

যৌতুকের দাবিতে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধুকে নির্যাতন!

 

অপরাজিতা ডেস্কঃ রাজধানীর শাহবাগ থানা এলাকায় ফাতেমা আক্তার (২১) নামের সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূর ওপর তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফাতেমার স্বামী গুলজার আলম গতকাল শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের এ অভিযোগ করেন।
গুলজারের অভিযোগ, তাঁর বাবা-মা ও বোনেরা যৌতুকের জন্য তাঁর স্ত্রীর ওপর বিভিন্ন সময়ে মানসিক নির্যাতন চালিয়েছেন। যৌতুক না নেওয়ায় তাঁকে (গুলজার) বাসা থেকে বের করে দিতে চেয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সকালে স্ত্রীর পেটে গরম পাতিলের ছ্যাঁক ও পায়ে গরম ভাতের ফেন ঢেলে দেওয়া হয়।
গুলজার সাংবাদিকদের জানান, গত ২৮ মার্চ পারিবারিকভাবে ফাতেমাকে বিয়ে করেন তিনি। ফাতেমা উত্তরায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে শাহবাগ থানা এলাকার একটি বাসায় থাকেন তিনি।
ফাতেমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী যৌতুক নেয়নি বলে তাঁর বাবা-মা-বোনেরা আমাদের বাসায় রাখতে নারাজ। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা আমার ওপর ও আমার স্বামীর ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসছেন।’
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম  বলেন, ‘বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে ছেলেটি আগেও একটা জিডি করেছিল। অভিযোগ খতিয়ে দেখছি। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

তিন নারী মুক্তিযোদ্ধার জীবন নিয়ে প্রামান্যচিত্র

বেশ কয়েক বছর আগের কথা। ফারজানা ববির পরিচিত একজন গবেষক গবেষণা করছিলেন যুদ্ধাহত বীর নারী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে। সেই গবেষণার আর্কাইভ তৈরির কাজটি করেন ফারজানা। এ কাজ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অনেক নথিপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করেন। আবার বিভিন্ন বই ঘেঁটেও মুক্তিযুদ্ধে বীর নারী মুক্তিযোদ্ধাদের নির্যাতিত হওয়ার অজানা তথ্যও জানতে পারেন।
‘আর্কাইভের কাজ করার পর থেকেই মনে হচ্ছিল এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে। এভাবে শুরু করি বিষকাঁটার কাজ।’ বললেন বিষকাঁটা প্রামাণ্যচিত্রের নির্মাতা ফারজানা ববি। ঢাকার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবে ৬ ডিসেম্বর দেখানো হয় বিষকাঁটা ছবিটি। নির্মাতা ফারজানা এর আগে বেশ কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন। সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন মেহেরজান চলচ্চিত্রে।

তিন বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা রঞ্জিতা মল্লিক, রমা চৌধুরী আর হালিমা খাতুনের বর্তমান জীবনের বাস্তবতাকে তুলে ধরা হয়েছে বিষকাঁটায়। নিজের এলাকা খুলনা থেকেই কাজ শুরু করেন ফারজানা ববি। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন মুক্তিযুদ্ধের সময় সেখানকার নির্যাতিত নারীদের। ফারজানা বলেন, ‘খুলনার লেখক বাবর আলীর স্বাধীনতার দুর্জয় অভিযান বইটি থেকে জানতে পারি বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা রঞ্জিতা মল্লিকের কথা। এরপর তাঁকে খুঁজতে থাকি। একসময় তাঁকে পেয়েও যাই। রূপসার পাথরঘাটার যে বাড়িতে নির্যাতিত হয়েছিলেন রঞ্জিতা সেই বাড়িতে হয় বিষকাঁটার পুরো শুটিং।’
যুদ্ধ শেষে স্থানীয়রা রঞ্জিতার জায়গাজমি দখল করে সেখান থেকে তাঁকে উচ্ছেদ করে। পুরো সমাজ থেকে আলাদা হয়ে ৪৩ বছর ধরে রঞ্জিতা অসম্মানের জীবন যাপন করলেও মাথা উঁচু করে সসম্মানে বেঁচে আছে সেই স্বাধীনতা বিরোধীরা।

ফারজানা জানান, বীর শব্দের যোগ নিয়ে আপত্তি আছে রমা চৌধুরীর। তিনি সব সময় বলতেন বীর হলে এত অপমান আর পাশবিক অত্যাচারের শিকার হতে হতো না তাঁদের।
এখন বিশেষ দিনগুলোয় বীর নারী মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে প্রদীপ প্রজ্বলন বা পুনর্বাসনের যে কথা বলা হয়, সেটাও একধরনের প্রহসন মনে হয় ফারজানার কাছে। কারণ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের দলিলে যে ২২ জন নারী মুক্তিযোদ্ধার কথা আছে তার মধ্যে মাত্র ছয়জন যুদ্ধাহত বীর নারীর নাম রয়েছে।
যে কারণে দেশের জন্য নিজের সম্মানটুকু হারিয়েও হালিমার মতো মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাঁদের। ফারাজনা বললেন, ‘অথচ মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখসমরে অংশ নিয়ে পা হারিয়েছিলেন হালিমা। যুদ্ধে ক্ষত সৃষ্টি হয় তাঁর দুপায়ে। টাকার অভাবে পায়ের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। গত ৪৩ বছরে তাঁদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা উঠে এসেছে এই প্রামাণ্যচিত্রে।’

সূত্র- প্রথম আলো।

 

কমছে সৌদী আরবে নারী শ্রমিক সংখ্যা

রক্ষণশীল মুসলিম রাষ্ট্র সৌদি আরবের সরকার নীরবে সামাজিকভাবে বৈপ্লবিক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে যার বাস্তবায়নে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের নারীদের সৌদি আরবে গিয়ে কর্ম গ্রহণ করার সুযোগ কমে যাবে। সৌদি সমাজ এখন বিপুল সংখ্যায় বিদেশী পুরুষ ও নারীদের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করে নিজেরা আয়েশী জীবন কাটাতে অভ্যস্ত। সৌদি আরবের জনসংখ্যা দুই কোটি দেশজ আরব বা ‘ওয়াতানি’। এদের পাশাপাশি লাখ লাখ বিদেশী পুরুষ ও নারী সৌদি আরবে কর্মরত রয়েছে ‘ওয়ার্ক ভিসা’ ভিত্তিতে। এরা প্রতি মাসে তাদের বেতন থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিজ নিজ দেশে পাঠায়। বাংলাদেশ প্রবাসীদের পাঠানো থেকে যে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে তার বেশির ভাগ আসে সৌদি আরব থেকে।

 

সৌদি সরকারের পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, সৌদি আরবে ৪০ লাখ সৌদি পুরুষ কর্মরত রয়েছে, কিন্তু এর পাশে কর্মরত রয়েছে মাত্র ছয় লাখ ৮০ হাজার সৌদি নারী যারা মোট নারী জনসংখ্যার মাত্র ১১ শতাংশ! কর্মরত সৌদি নারীদের সংখ্যা দ্রুততম সময়ে বৃদ্ধি করার জন্য সৌদি সরকার এই সামাজিকভাবে বৈপ্লবিক প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

 

সৌদি সরকারের শ্রম ও জনসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহা কে তাইবা বলেন, এই প্রকল্প দ্বারা সরকার আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে কর্মরত সৌদি নারীদের সংখ্যা দ্বিগুণে উন্নীত করার আশা করছে। যেসব খাতে সরকার সৌদি নারীদের কর্ম সুযোগ বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করেছে তার মধ্যে আছে স্বাস্থ্য খাত, ম্যানুফ্যাকচারিং খাত এবং তথ্যপ্রযুক্তি। এর পাশাপাশি সৌদি নারীদের কর্মস্থলের পাশেই শিশুদের জন্য ‘ডে কেয়ার’ সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

 

তাইবা বলেন, ‘বর্তমানে সৌদি নারীরা মনে করে গৃহে অবস্থান করাই তাদের জন্য সঠিক কাজ।’ দীর্ঘকাল ধরে ভিনদেশী নারী-পুরুষ কর্মীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবনযাপনে অভ্যস্ত সৌদি সমাজে কর্মরত পুরুষ ও নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য সৌদি সরকার যে ব্যাপক আকারের প্রকল্প গ্রহণ করেছে তারই একটি অংশ সৌদি নারীদের গৃহের বাইরে কর্ম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সৌদি সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডের ‘কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্ট’কে তালিকাভুক্ত করেছে সৌদি সরকারকে পরামর্শ দানের জন্য।

 

সৌদি সরকারের কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, বহু সৌদি নারী আসলেই গৃহের বাইরে কাজ করতে আগ্রহী। ব্যাচেলর ডিগ্রিপ্রাপ্ত সৌদি নারীদের এক-তৃতীয়াংশ চাকরি খুঁজে পাচ্ছে না। সৌদি সরকারের প্রকল্পের অন্যতম প্রধান রোহিনী পান্ডে বলেন, ‘কেনেডি স্কুল’ এবং সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয় যৌথভাবে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখছে ‘রিটেইল’ চাকরিতে সৌদি নারীদের তাদের যোগ্যতানুযায়ী কর্ম জোগাড়ে যেসব সমস্যা রয়েছে তা কিভাবে অপসারণ করা যায়।

 

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কিছু বিশিষ্ট অধ্যাপিকা সৌদি সরকারের সাথে যৌথভাবে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সৌদি নারীরা তাদের যোগ্যতানুযায়ী কর্ম গ্রহণ করার পথে যেসব বাধার সম্মুখীন হয় তা অপসারণে তাদের সহায়তা করার জন্য। সৌদি সমাজ অতি রণশীল এবং নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এমন কঠোর যে, সৌদি নারীদের গাড়ি ড্রাইভ করার অনুমতি দেয়া হয় না। সমাজের এমন রণশীলতা এবং নারীদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের পরিবেশের সাথে কিভাবে মানিয়ে নিয়ে সৌদি নারীদের গৃহের বাইরে কর্মে নিয়োগ করা যায় তার উপায় উদ্ভাবন করছেন এসব পাশ্চাত্যের উচ্চ শিাবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা। এদের অন্যতম হার্ভার্ডের অধ্যাপিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ কডিয়া গোল্ডিন যখন সৌদি সরকারের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন তখন সৌদি নারীদের রেওয়াজ অনুযায়ী ‘আবায়া’ (শরীর সম্পূর্ণ আবৃত করে সৌদি নারীরা যে পোশাক পরে) পরে তার শরীরকে সম্পূর্ণভাবে আব্র“ আবৃত রাখেন।

 

কিন্তু যে জটিল বাধাটা প্রধান হয়ে উঠেছে তা হলো ‘রিটেইল’ কর্ম গ্রহণে সৌদি নারীদের অনীহা, কারণ তাদের ধারণা, এসব কর্ম শুধু বিদেশ থেকে আগত নারীরাই করে। আরেকটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে সৌদি নারীদের কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার কী ব্যবস্থা করা যায়।

 

এ সমস্যার সমাধানে সৌদি সরকার রিয়াদের একটি প্রধান শপিং মলে কর্মে যোগদানকারী সৌদি নারীদের আসা-যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি ভাড়ায় আংশিক ভর্তুকি দিচ্ছে। কিন্তু এ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করতে গেলে যে বিপুল অঙ্ক ব্যয় হবে তা হিসাব করে সৌদি সরকার পিছু হটেছে। এখন সৌদি সরকার ভাবছে পাবলিক বাস সার্ভিস চালু করবে কি না, অথবা শুধু নারীদের বহন করার জন্য বাস সার্ভিস চালু করা সম্ভব কি না।

 

পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, কর্মেেত্র সৌদি নারীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় প্রবেশের ফলে সৌদি সমাজে মৌলিক পরিবর্তন আসতে পারে। কর্মেেত্র প্রভূত সংখ্যায় সৌদি নারীদের উপস্থিতি সৌদি সমাজে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে। পাশাপাশি কর্মেেত্র বিদেশী নারীদের সংখ্যা লণীয়ভাবে কমে যাবে।

 

লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক, কানাডা প্রবাসী

 

বিশ্ব অপরিণত শিশু দিবস

শাহনাজ বেগম : আগাম জন্মের কারণে বা অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়া শিশুরা সরচেয়ে বেশি মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকে। এক গবেষণায় দেখা যায়, সারাবিশ্বে প্রতিদিন তিন হাজারেরও বেশি শিশু মারা যায়।
প্রথমবারের মতো একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, আগাম জন্ম বা মাতৃগর্ভে ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ করার আগে জন্মগ্রহণ করার ফলে শিশুদের শরীরে যেসব জটিলতা তৈরি হয়, তাতে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু মারা যায়। গত ১৭ নভেম্বরকে ‘বিশ্ব অপরিণত শিশু দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।

২০১৩ সালে সারা পৃথিবীতে পাঁচ বছরের কমবয়সী প্রায় ৬৩ লাখ শিশু মারা গেছে, যাদের মধ্যে ১১ লাখ আগাম জন্ম সংক্রান্ত জটিলতায় মারা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং জন্সহপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের একটি গবেষণা দল যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। নতুন এই গবেষণায় বলা হচ্ছে, ২০১৩ সালে সারা পৃথিবীতে আগাম জন্মের ফলে সৃষ্ট জটিলতায় মারা যাওয়া শিশুদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিশুমৃত্যু ঘটে জন্মের প্রথম আটাশ দিনের মধ্যেই।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিওনাটলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে মোট শিশুমৃত্যুর শতকরা ৪৫ শতাংশই হয় এ সংক্রান্ত জটিলতায়। কয়েকটি উন্নত দেশেও আগাম জন্ম সংক্রান্ত জটিলতাই শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। অনুন্নত দেশগুলোতে জীবাণু সংক্রমণসহ নানা কারণে শিশুমৃত্যু হলেও উন্নত দেশগুলোতে শিশুমৃত্যু হয় মূলত আগাম জন্মের কারণেই।
গবেষকরা শিশু মৃত্যুর অন্যান্য প্রধান কারণগুলোর মধ্যে নিউমোনিয়া, জন্মের সময়ে এবং তার পরবর্তী সময়ে সৃষ্ট বিভিন্ন জটিলতাকে চিহ্নিত করেছেন। আগাম জন্ম জটিলতায় প্রতিবছর পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুমৃত্যু সবচেয়ে বেশি হয় ভারতে। দেশটিতে বছরে গড়ে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি এমন শিশু মারা যায়। এর পরের অবস্থানেই রয়েছে নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, এবং ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো। বাংলাদেশেও আগাম জন্ম সংক্রান্ত জটিলতাই এখন শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ।
এ সংক্রান্ত জটিলতার ফলে শিশুমৃত্যুর শতকরা হারের দিক দিয়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে মেসিডোনিয়া, যেখানে শিশুমৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি ঘটে আগাম জন্ম নেয়া শিশুদের ক্ষেত্রে। এর পরের অবস্থানেই রয়েছে স্লোভেনিয়া, ডেনমার্ক, সার্বিয়া, যুক্তরাজ্য এবং হাঙ্গেরি।

-সূত্রঃ ইনকিলাব।

 

মায়েদের সচেতনতাই পারে শিশুকে সুন্দর জীবনের হাসি হাসতে

 

যশোর থেকে হাসান সোহেল : পাপিয়া আক্তারের (৩০) দ্বিতীয় সন্তান রীতার বয়স ৫ মাস। এ পর্যন্ত তিনি রীতাকে বুকের দুধ ব্যতীত পানিও খাওয়াননি। পাপিয়া জানান, তার প্রথম সন্তান ঋত্মিকের জন্মের পর এ সব নিয়ম মানেননি। বুকের দুধও ঠিক মত হয়নি। তাই জন্মের কয়েকমাসের মধ্যেই গরুর দুধ খাওয়াতেন। এতে তার প্রথম সন্তানের সব সময়ই অসুখ লেগে থাকতো। ওজনও তেমনি বাড়েনি। স্বাস্থ্য কর্মীদের সহায়তায় রীতা গর্ভে থাকা অবস্থা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সব ধরনের নিয়ম মেনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলছেন। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোয় অনেক খুশি বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, অন্যান্য শিশুদের চেয়ে তার শিশু অনেক সুস্থ। কীভাবে সুস্থতা বোঝা যায়, জানতে চাইলে তিনি জানান, দিনে ৬ বারের বেশি প্রসাব, হাসি-খুশি এবং শান্ত থাকা। একই সঙ্গে শিশু জন্মের কিছু সময় পর শাল দুধ খাওয়ানোসহ কিছু নিয়ম মেনে চলায়ই স্বাভাবিকভাবে বুকের দুধ আসে। যা তাকে প্রথম সন্তান জন্মের পর পর করানো হয়নি।
কথা হয় একই এলাকার গর্ভবতী সাবিনা ইয়াসমিনের (৩২) সঙ্গে। তিনি জানান, বর্তমানে গর্ভকালীন শিশুর ৭ মাস চলছে। তিনি চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী খাবার, দুপুরে খাবারের পর বিশ্রামসহ নিয়মিত যা করা দরকার অনাগত সন্তানের জন্য তার সবই করছেন। একই সঙ্গে শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ আছেন বলে উল্লেখ করেন।
১১ দিন বয়সের শিশু আহ্নিকার মা কুলসুম বেগম (২৫) জানান, দ্বিতীয় সন্তান আহ্নিকার জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত বুকের দুধ সঠিকভাবে খাওয়াচ্ছেন। শিশুও সুস্থ।
বিউটি আক্তার ও ফারুক হোসেন দম্পতির সন্তান সাইম ফারদিনের বয়স ১০ মাস। বর্তমানে শিশুকে দিনে ৩ বার বুকের দুধের পাশাপাশি ভাত, মাছ, মাংস, ডিমসহ প্রাণীজ খাবার খাওয়ানো হয়। বাইরের কোন খাবার খাওয়ান না বলে জানান। তিনি জানান, জন্মের পর থেকে ৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধ খাইয়েছেন। এখন পর্যন্ত শিশু সুস্থ। ওজনও স্বাভাবিক।

এভাবেই পুরো শার্শা উপজেলায় শিশুদের পুষ্টির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। এলাকায় ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মী এবং সেবিকাদের সহায়তায় গর্ভবতী নারী এবং মায়েরা জানেন শিশু জন্মের আগে এবং পরে শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতে ও শিশুর সুস্থ সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণে নিজেরাই ভূমিকা পালন করছেন। শুধু শার্মা নয়; সরকারি, বেসরকারি ও অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশ থেকে অপুষ্টি নিরসনে সমন্বিতভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, মা ও নবজাতকের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে ২০১৫ সালের মধ্যে ১০০ শতাংশ গর্ভবতী মা’কে কমপক্ষে একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করা এবং এ সময়ে মায়েদেরকে চারবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে এক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে।
শার্শা উপজেলায় পুষ্টি কার্যক্রম পরিচালনাকারী ব্র্যাকের পুষ্টি প্রকল্পের কর্মসূচি সমন্বয়ক ফায়জুল হাসান বলেন, এই উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে পুষ্টি উন্নয়ন কার্যক্রম বেশ ভালো। একসময়ে এই এলাকায় বিকল্প শিশুখাদ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর অপতৎপরতা বিদ্যমান ছিল। ওদের প্ররোচনায় শিশুর জন্মের পর বুকের দুধ খাওয়ানোর বিষয়ে কোন ধরনের নিয়ম মানা হত না। মায়ের দুধের পরিবর্তে বিকল্প শিশুখাদ্য খাওয়ানো হতো। ৩ লাখ ৩০ হাজার জনসংখ্যার এই উপজেলায় ব্র্যাকের ৩২ জন স্বাস্থ্য কর্মী, ২৬৩ জন সেবিকা এবং সরকারি পর্যায়ে অনেক স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করছেন। যাদের নির্দেশনায় এখন শিশুদের পুষ্টির ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এলাকার মায়েরাও অনেক সচেতন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

image_153486
পুষ্টি সম্পর্কিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুর পুষ্টিমান ধরে রাখতে গর্ভাবস্থায় মায়ের প্রয়োজন অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদান যা শিশুর ভ্রুণের মস্তিষ্ক, হাড় ও অঙ্গ-প্রতঙ্গ গঠন ও বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। একই সঙ্গে জন্মের পর একটি শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতের অন্যতম মাধ্যম ৬ মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো। পরে শিশুর বয়স ৬মাস পূর্ণ হলে শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে উঠার জন্য মায়ের দুধের পাশাপাশি সুষম বাড়তি খাবার প্রদান করা। গবেষণায় আরও ওঠে এসেছে, অপুষ্টির কারণে শিশুর জীবনের প্রথম ১০০ দিনের যে ক্ষতি হয় তা অপূরণীয়। এর ফলে মস্তিষ্কের বিকাশও বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে শিশুর বুদ্ধি কম হয়, লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ে। শারীরিক গঠন দুর্বল ও অপরিণত এবং পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই শিশুর এই সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে।
জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, মা ও শিশুদের অপুষ্টি  থেকে রক্ষায় পুষ্টিকে মূল ধারায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং পুষ্টি কার্যক্রমকে সমন্বিতভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৩টি মন্ত্রণালয় পুষ্টি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এদের একত্র করে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটি ব্যাপকভিত্তিক পুষ্টি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এদিকে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক প্রতিবেদনে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর অপুষ্টি, প্রসবপূর্ব স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রসব পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির তথ্য ওঠে এসেছে। একই সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘ শিশু তহবিলসহ (ইউনিসেফ) বেশ কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বলছে, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ উল্লেযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বিশেষ করে শিশু ও মাতৃমৃত্যু কমানোর ক্ষেত্রে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার ৬৭ শতাংশ কমেছে।
যশোর জেলার সিভিল সার্জন ডা. আতিকুর রহমান খান বলেন, শিশুদের অপুষ্টির বিষয়ে গ্রামে গ্রামে বৈঠক করে দীর্ঘদিন থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা সচেতন কার্যক্রম চালাচ্ছেন। একই সঙ্গে শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিতে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে এখনো অনেক সচেতনতার অভাব রয়েছে। আমরা যতই মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করি শিশু খাদ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো ততই চাতুর্য্যপূর্ণ কৌশল অবলম্বন করছে। তাই এই সব কোম্পানির বিরুদ্ধে আরও সোচ্চার হতে হবে।
বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে সচেতনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম কিউ কে তালুকদার মা ও শিশু অপুষ্টি রোধে প্রাথমিক ও দীর্ঘস্থায়ী কার্যক্রমের ওপর জোর দিয়ে বলেন, প্রাথমিকভাবে শিশুদের ৬ মাস বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। পরবর্তীতে দীর্ঘস্থায়ীভাবে ৬ মাস পর থেকে শিশুদের ঘরে তৈরি সুষম খাবার দিতে হবে। একই সঙ্গে মা ও শিশুদের জন্য ক্ষতিকর খাবারের ব্যাপারে নজরদারি রাখতে হবে। এটা করতে পারলেই সুস্থ-সুন্দর প্রজন্ম তৈরি হবে। তিনি বলেন, মায়ের দুধ শিশুদের সুন্দরভাবে, সুস্থ হিসেবে গড়ে তোলার একমাত্র খাবার। মায়ের দুধের বিকল্প আল্লাহ সৃষ্টি করেননি। তাই এর গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে বেশি করে বোঝাতে হবে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের হেলথ নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রাইসুল হক বলেন, পুষ্টি কার্যক্রমে অনেক সফলতা এসেছে। এরপরও এ কার্যক্রম আরও জোরদার করতে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে হবে। এছাড়াও তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে মা’দের পৃথকভাবে কাউন্সিলিং করানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন।

 

 

প্রথম নারী সামরিক পাইলট হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন অফিসার তামান্না ও নাইমা

 

অপরাজিতা ডেস্কঃ বাংলাদেশের প্রথম নারী সামরিক পাইলট হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন ফ্লাইং অফিসার তামান্না-ই-লুৎফী ও ফ্লাইট লে. নাইমা হক। বুধবার দুপুর সোয়া একটায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানে সর্বশেষ স্লো টেস্টে সফলতা দেখিয়ে তারা এই স্বীকৃতি পান। পরে তারা দুজনেই একা একা ফ্লাইং করেও সফল হন। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ইতিহাসে এটি একটি মাইল ফলক। দেশে বেশ কয়েকজন বেসামরিক নারী পাইলট থাকলেও সামরিক ক্ষেত্রে এর আগে কোন নারী এই স্বীকৃতি আর্জন করতে পারেননি।

স্বীকৃতি আর্জনের পর তামান্না ও নাইমা তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই আর্জনে আমরা খুবই আনন্দিত। দেশের প্রথম সামরিক নারী বৈমানিক হতে পেরে অনেক ভাল লাগছে। ঝুকিপূর্ণ হলেও দেশে জন্য আনন্দচিত্তে আমরা এই কাজ করব। দেশের যেকোন দুর্যোগে আমরা এগিয়ে যাব।
তারা আরো বলেন, আমাদের এই অর্জন শুধু সামরিক বাহিনীর নয়, পুরো দেশের, নারী সমাজের। আমরা আশা করবো আমাদের এই অর্জনে অন্য নারীরাও অনুপ্রানিত হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, এয়ার কমোডর সাঈদ, এয়ার কমোডর হাসান, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গ্রুপ ক্যাপ্টেন হাবিবুর রহমান, তামান্নার প্রশিক্ষক উইং কমান্ডার আসিফ ও নাইমার প্রশিক্ষক স্কোয়াড্রন লিডার আবুল বাসার।

সূত্র- ইত্তেফাক

 

সফল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বগুড়ার তামান্না

 

অপরাজিতা ডেস্কঃ দিনাজপুর থেকে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে ইংরেজিতে অনার্স পড়তেন তাজরীন তামান্না ইসলাম। সেখানেই তাঁর বিয়ে হয়। স্বামী ব্যবসায়িক কাজে সারা দিন বাইরে থাকতেন। সে সময় অনলাইনে চোখে পড়ে অনলাইনভিত্তিক বুটিক হাউস, ডিজাইন ও হ্যান্ডিক্রাফটসের সাইটে। এখান থেকে ডিজাইন শিখতে থাকেন। বাজার থেকে কাপড় কিনে নিজের মতো ডিজাইন ও হাতের কাজ শুরু করেন। এতে প্রতিবেশীদের প্রশংসা পেলেন। উৎসাহ বাড়ল।
তাজরীন তামান্না বলেন, ‘২০০৭ সালে ৫০ হাজার টাকা আর আটজন কর্মী নিয়ে বুটিকের কাজ শুরু করি। শুরুতে শুধু ডিজাইন করতাম। কর্মীরা আমার করা ডিজাইনের ওপর হাতের কাজ করতেন। ডিজাইন করা পোশাক বাসা থেকেই বিক্রি হতো।’
তামান্না প্রথম দিকে থ্রি-পিস, বিছানার চাদর, শাড়ি, কুশন কভার, জানালার পর্দা ডিজাইন করে বিক্রি করতেন। ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিধি বেড়ে যাওয়ায় বাসার নিচতলায় একটা বুটিক শপ খোলেন। নাম দেন ‘ট্রেন্ডি বগুড়া’। ২০১১ সালে ফেসবুকে ‘ট্রেন্ডি বগুড়া’ নামে একটি ফেসবুক পেজ (www.facebook.com/pages/Trendybogra/353733991387700?ref=br_rs) খোলেন।

10409137_763735990387496_103552542471618500_n10395191_765684353525993_4544214494424266631_n

 

তিনি বলেন, ‘ওই পেজে আমার ডিজাইন করা পণ্যের ছবি দামসহ আপলোড করতাম। অনলাইনে দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর অর্ডার আসতে থাকল। এখন দেশে-বিদেশে প্রচুর ক্রেতা আমার।’ অনলাইনে নিয়মিত তিনি অর্ডার পাচ্ছেন বিদেশ থেকে। অর্ডার অনুযায়ী ইএমএসের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পণ্য পাঠান তিনি।
তামান্না জানান, বর্তমানে তাঁর বুটিক হাউসে প্রায় ৫০ জন নারী কর্মী কাজ করেন। আগামী দিনে বড় পরিসরে অনলাইন কেনাকাটার একটি প্রতিষ্ঠান গড়ার স্বপ্ন তাঁর।

ভারতে পাচার হওয়া ৪৮ জন নারী দেশে ফিরেছেন।

অপরাজিতা ডেস্কঃ ভারতে বিভিন্ন সময় পাচার হওয়া ৪৮ জন নারী দেশে ফিরেছেন। গত সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের অভিবাসন ব্যুরোর কর্মকর্তারা বেনাপোল অভিবাসন পুলিশের কাছে তাঁদের হস্থান্তর করেন।
আরও অন্তত ১৮০ জন নারী ভারতের তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। তাঁদেরও দ্রুত দেশে ফেরত আনার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। স্বজনেরা এলেই তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয়কৃষ্ণ মল্লিক জানান, ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচারকারী চক্র ওই নারীদের দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ভারতে নিয়ে যায়। তাঁদের বেশির ভাগই আগে তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। সেখানে যাওয়ার পর পাচারকারীরা তাঁদের অসম্মানজনক পেশায় জড়িত হতে বাধ্য করে। একসময় তাঁরা ভারতের পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। পরে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা রেসকিউ ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা তাঁদের নিজেদের আশ্রয়ে নেন।

বেনাপোল অভিবাসন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আখতারুজ্জামান বলেন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি করে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

 

শীতের সবজির মজাদার রেসিপি

সবজির কোরমা

সবজির ন’রতন কোরমা
উপকরণ: ফুলকপি, আলু, গাজর, মাশরুম, টমেটো, ফ্রেঞ্চ বিন বা বরবটি, পেঁপে, ক্যাপসিকাম, পুঁই অথবা পালংপাতা। পছন্দের নানা রকম সবজি আধা কাপ করে হালকা সেদ্ধ করে ঠান্ডা (বরফ) পানিতে ধুয়ে নিন। কাঁচা মরিচ ৫-৬টি, চিনি ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, ঘি ও তেল প্রয়োজনমতো। (পছন্দমতো যেকোনো সবজি দেওয়া যায়)।
কোরমা পেস্ট তৈরি: টক দই ১ কাপ, পেঁয়াজ বেরেস্তা আধা কাপ, ভাজা রসুন ১টা, চামচ, আদা কুচি ভাজা ২ টেবিল চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা-চামচ। পেঁয়াজ, রসুন ও আদা ঘি দিয়ে ভেজে নিতে হবে। এবার সব উপকরণ ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে কোরমা পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে।
প্রণালি: কড়াই চুলায় দিয়ে তাতে ঘি ও তেল দিন। তেল গরম হলে কোরমা পেস্ট দিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে সবজিগুলো দিয়ে কষিয়ে নিন। আধা কাপ গরম পানি দিয়ে কাঁচা মরিচ, লবণ ও চিনি দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন ন’রতন কোরমা।

f4a4196f02392aa0d07a2ebcf20db61f-22

পুরভরা শিম
উপকরণ: শিম ১০-১২টি, পেঁয়াজ বাটা ২ চা-চামচ, রসুন বাটা আধা চা-চামচ, জিরা বাটা আধা চা-চামচ, নারকেল বাটা ১ টেবিল চামচ, হলুদ ও মরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ করে, লবণ স্বাদমতো, তেল প্রয়োজনমতো।
প্রণািল: শিম হালকা সেদ্ধ করে নিন। শিমের মধ্যে পুর ভরে দিন। কড়াইয়ে তেল দিয়ে তাতে পেঁয়াজ, রসুন, জিরা, নারকেল, হলুদ ও মরিচ গুঁড়া দিয়ে একটু কষিয়ে নিন। তাতে ১ কাপ পানি দিয়ে দিন। পানি ফুটে ঝোল ঘন হয়ে এলে পুরভরা শিম দিন।। কিছুক্ষণ চুলায় রেখে নামিয়ে ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
পুর তৈরি: চিংড়ি মাছ কুচি ২ টেবিল চামচ, নারকেল বাটা ২ টেবিল চামচ, সরিষা বাটা সামান্য, কাঁচা মরিচ মিহি কুচি ২টি, পেঁয়াজ মিহি কুচি ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো। সব উপকরণ ২ টেবিল চামচ তেল দিয়ে ভেজে পুর তৈরি করে ঠান্ডা করে নিতে হবে।

রেসিপি- শাহানা পারভিন।

 

এমবিএম- ব্যাংকিং ক্যারিয়ারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোর্স

 

বাংলাদেশে ব্যাংকারদের প্রশিক্ষণ ও ব্যাংকিং ডিগ্রি দেওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)। বিআইবিএম থেকে ব্যাংকিংয়ের জন্য রয়েছে মাস্টার্স অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (এমবিএম) নামের দুই বছর মেয়াদি বিশেষায়িত কোর্স। এ পর্যন্ত বিআইবিএম থেকে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এই কোর্স সম্পন্ন করেছেন বলে জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী।
কোর্সের সুবিধা: এমবিএম-এর শিক্ষা পদ্ধতি বহুলাংশে প্রায়োগিক হওয়ায় এর শিক্ষার্থীরা ব্যাংকিংয়ে দক্ষ হওয়ার সুযোগ বেশি পান। এ ছাড়া তাঁরা ব্যাংকিং খাতের দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পান।
যা থাকছে কোর্সটিতে: এমবিএম দিবা (ডে) প্রোগ্রামের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে দুই বছরে মোট ২০টি বিষয়ে ৬৬ ক্রেডিট সম্পন্ন করতে হয়। এর মধ্যে কোর্স ওয়ার্ক, প্রজেক্ট পেপার ও মৌখিক পরীক্ষা রয়েছে। চার মাস মেয়াদি মোট ছয়টি টার্মে এই কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। তবে সান্ধ্য কোর্সের শিক্ষার্থীদের কোর্সের মেয়াদ দুই বছর আট মাস। ইভিনিং কোর্সের শিক্ষার্থীদের চার মাস মেয়াদি মোট আটটি টার্মে কোর্সটি সম্পন্ন করতে হয়।
ভর্তির যোগ্যতা: এমবিএম কোর্সে ভর্তির জন্য প্রার্থীকে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেকোনো বিষয়ে কমপক্ষে স্নাতক হতে হয়। তবে ভর্তির আবেদনের জন্য শিক্ষাজীবনে কমপক্ষে একটি প্রথম বিভাগ থাকতে হবে এবং কোনো তৃতীয় বিভাগ থাকলে হবে না।
আবেদনের পদ্ধতি: বছরে দুবার এমবিএম প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। আগস্টে শুরু হয় সান্ধ্য প্রোগ্রাম এবং জানুয়ারিতে দিবা প্রোগ্রাম। দিবা প্রোগ্রামের আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয় সেপ্টেম্বর থেকে এবং সান্ধ্য প্রোগ্রামের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয় এপ্রিল থেকে। এই কোর্সে ভর্তির জন্য বিআইবিএম অফিস থেকে এক হাজার টাকা দিয়ে আবেদন ফরম কিনে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পূরণ করে জমা দিতে হয়।
ভর্তি পদ্ধতি: ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদনকারীকে দেড় ঘণ্টার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এই পরীক্ষার মধ্যে ৩০ মিনিট বরাদ্দ থাকে এমসিকিউ বা নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর করার জন্য এবং ৬০ মিনিটের মধ্যে লিখিত প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। নৈর্ব্যক্তিক অংশের প্রশ্ন করা হয় ইংলিশ প্রফিসিয়েন্সি এবং ম্যাথমেটিক্যাল অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটির বিভিন্ন অংশ থেকে আর লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থীর ইংরেজি লেখার ওপর দক্ষতা যাচাই নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। ভর্তি পরীক্ষা থেকে প্রথম ২০০ প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে প্রথম ৫০ জন ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান।
খরচ: এই কোর্সের জন্য একজন শিক্ষার্থীর মোট খরচ পড়বে প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তবে আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য থাকা ও খাওয়া বাবদ আরও বেশি লাগবে, দৈনিক প্রায় ৩৫০ টাকা।
বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ব্যাংক অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট
মিরপুর-২, ঢাকা-১২১৬
ফোন নম্বর-৯০০৩০৩১-৩৫ ওয়েবসাইট-www.bibm.org.bd

 

বুদ্ধিজীবী বাবার সন্তানদের কথা…

 

”বাবা ডাকতে পারিনি এটা আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়” নাহিদ গুলশান সোমা বাবা ক্যাপ্টেন শফিকুল আনোয়ার ছিলেন পিআইএ’র প্রকৌশলী। তার পোস্টিং ছিল ঢাকায়। একাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে তিনি একাত্মতা প্রকাশ করেন। ফলে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর তিনি আর চাকরিতে ফিরে যাননি। তিনি বলেছিলেন, এই পাকিস্তানিদের সঙ্গে আর নয়। স্বাধীন দেশে নিজস্ব এয়ারলাইনস গড়ে তুলব। যতদিন তা দাঁড় করতে না পারব ততদিন বিনা বেতনে কাজ করব।

বাবা বিভিন্ন সময়ে আমাদের বাসায় বন্ধুদের নিয়ে গোপন মিটিং করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হল। বাবা পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার কথা ভেবে একপর্যায়ে ফেনীর লেমুয়াতে নানু বাড়িতে নিয়ে যান।সে সময়ে লেমুয়া গ্রামে প্রতি সপ্তাহে একদিন হাট বসত। অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার, হাটবার। বাবা হাটে যান। সেখানে গিয়ে তিনি শুনতে পান মুক্তিযোদ্ধার একটি দল হাটে আসছে। লেমুয়া বাজারের কাছে কালিদহ আর্মি ক্যাম্প ছিল। পাক আর্মি এবং রাজাকাররা হাটে এসে গোলাগুলি শুরু করে। বাবা গোলাগুলির শব্দে লেমুয়া বাজার থেকে বের হওয়ার জন্য ছুটতে থাকেন। পেছন থেকে পাকসেনারা তাকে গুলি করে। গোলাগুলির পরেই এলাকায় কারফিউ দেয়া হয়। ঘর থেকে কেউ বের হতে পারেনি সেদিন। পরের দিন ধানক্ষেতে বাবার উপুড় হওয়া লাশ পাওয়া যায়। আমার বয়স তখন ১৩ দিন। আমাদের চার ভাই-বোনকে নিয়ে শুরু হল আমার মায়ের আরেক যুদ্ধ। পরিবারকে টিকিয়ে রাখার যুদ্ধ। আমাদের মানুষ করার জন্য গৃহিণী থেকে বাংলাদেশ বিমানে যোগদান করেন। চাকরি করে চার সন্তান মানুষ করলেন।আমি কখনও বাবা ডাকতে পারিনি। বাবার ভালোবাসা কেমন হয় অনুভব করতে পারিনি। এটা ভীষণ কষ্ট দেয় আমাকে। যদিও মা আমাদের বাবা-মা উভয়ের দায়িত্বই পালন করেছেন। বাবার পেশা প্রকৌশলী হওয়ায় জীবনযাপনের ধরনও ছিল উন্নতমানের। তার মৃত্যুর পর সেই জীবনযাপনে সন্তানদের মানুষ করা মায়ের জন্য ছিল কষ্টকর। ফলে বাবার অপূরণে সবকিছু পাল্টে যায়। কিন্তু মা আমাদের ভাই-বোনদের কষ্ট দেননি।

মা বড় মেয়েকে ব্যবসায়ী, বড় ছেলেকে প্রকৌশলী, মেজ মেয়েকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে এম.কম করিয়েছেন। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত ও নাট্যকলা বিভাগ থেকে এমএ করি। স্বামী, এক মেয়ে নিয়েই আমার সংসার। মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ওকে আমি মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাই। মায়ের মুখে শোনা আমার বাবার কথা, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কথা। ও অবাক হয়ে শোনে।

বাবার মৃত্যু খবর শুনে মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন সখিনা খন্দকার দীপু আমার বাবা খন্দকার আবু তালেবের গল্পগ্রন্থ ‘কাগজের মানুষ’। তিনি ছিলেন সাংবাদিক ও আইনজীবী। শখের বশে গল্প লিখতেন। মিরপুরে ১০ নম্বরের বাড়িটা আব্বা সবেমাত্র করেছেন। পুরো এলাকাটা ছিল বিহারি এলাকা। মার্চ মাস থেকেই মিরপুর এলাকার বিহারিরা বাঙালিদের ওপর নির্যাতন শুরু করে। আব্বা আমাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে মা’সহ আমাদের তিন ভাই-বোনকে ২৪ মার্চ রাজারবাগ ফুফুর বাড়িতে রেখে আসেন। বড় ভাই খন্দকার আবুল হাসান আইএ প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমি মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে আমি ছোট। বাবা ফুফুর বাড়ি যান ২৫ মার্চ। ২৯ মার্চ বাবা মিরপুরে আসেন। বাবার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তিনি কারও কোনো ক্ষতি করেননি, তার ক্ষতিও কেউ করতে পারবে না।

২৯ মার্চ কাদের মোল্লার লোকজন মিরপুর থেকে বাবাকে ধরে জল্লাদখানায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে হত্যা করে। বাবাকে যে কেউ মারতে পারে এটা তার ধারণার বাইরে ছিল, এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তা সত্যি হল না। বাবার কোনো খোঁজ নেই। আমরা বাবার খোঁজ পেতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। আমাদের গাড়ির ড্রাইভার ছিলেন বিহারি। ড্রাইভারের কাছে সংবাদ পাই বাবাকে হত্যা করেছে। বাবার মৃত্যু খবর শুনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন মা। বাবার মৃত্যুশোক কাটিয়ে ওঠার আগেই বড় ভাই মা, ভাই-বোনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। পয়সার অভাবে মায়ের সুচিকিৎসা করাতে পারেননি। কিন্তু সন্তানের মতো দেখাশোনা করেছেন। তখন চালের দাম ছিল চড়া। একবেলা ভাত খেলে আরেক বেলা রুটি খেয়েছি। বিহারিরা আমাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আসবাবপত্র থেকে শুরু করে ঘরের দরজা-জানালা সব পুড়ে যায়। তারা ভাবেনি নয় মাসে দেশ স্বাধীন হবে। আমাদের প্রতিটি ঘরে গর্ত করে বিহারিরা বেনারসির তাঁত বসায়।

১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু মিরপুরে নিজের বাড়িতে আসতে পারিনি আমরা। তখনও হানাদাররা মিরপুর দখল করে রেখেছে। ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি মিরপুর হানাদারমুক্ত হয়। বাবা খুব রসিক, মিশুক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। লেখাপড়া খুব পছন্দ করতেন। আমাদের সময় দিতেন। বাবার স্মৃতি আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। বাবার সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো। সেই ছোট্ট বয়সেই এলাকার লোকজন আমাকে চিনতেন। বাবা বলতেন, তোকে নির্বাচনে দাঁড় করালে জিতে যাবি।

সূত্র- যুগান্তর। আলোকচিত্রী ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য ও তানভীর ফেরদৌস।

 

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্মারকগুলো চিহ্নিত হবে কবে?

রাত পোহালেই ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর সে সময়কার রেসকোর্স ময়দানে (এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল হানাদার পাকিস্তানি সেনারা।
কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঠিক কোন জায়গায় আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল তা অনেকেরই অজানা। উদ্যানে গিয়েও জায়গাটি খুঁজে পাওয়ার কোনো উপায় নেই। কারণ সেই নির্দিষ্ট স্থানটির কোনো চিহ্ন বা স্মারক নেই।
অথচ ওই জায়গাটি চিহ্নিত করতে চার বছর আগে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। পাশাপাশি ওই অংশটিকে ‘স্বাধীনতা উদ্যান বা লিবার্টি স্কয়ার’ করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছিল।
সোহরাওয়াদী উদ্যানের এই স্থান থেকেই  মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ডাক দেওয়া হয়েছিল। আজ ওই স্মারকটি দাঁড়িয়ে আছে এই অবস্থায়। ছবি: মনিরুল আলমরাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্থান এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে ২০০৯ সালের ২৫ জুন হাইকোর্টে রিট করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। ওই বছরের ৮ জুলাই আদালত রায় দেন এবং ২০১০ সালের জুলাই মাসে লিখিত রায় প্রকাশিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী ১৯৯৫ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় স্তম্ভ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিন। সেটি পড়ে আছে এই অবস্থায় ছবি: মনিরুল আলমএ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কে এম সফিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবকিছু করব করব করে ফেলা রাখা ঠিক না। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার জন্য আমরা এ কাজটি করতে চেয়েছিলাম। তা এখনো নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছায়নি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক অবশ্য প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, আত্মসমর্পণের জায়গাটিসহ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাতটি ঐতিহাসিক স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এখনো কোনো ফলক বা স্তম্ভ বসানো হয়নি। শিগগির এ কাজ শুরু হবে।
এই স্মারক স্তম্ভটিতে কী লেখা হয়েছিল তা এখন আর উদ্ধার করা সম্ভব না। শিশু পার্কের দেয়াল ঘেসে এভাবে অনাদরে, অবহেলায় পড়ে আছে। ছবি: মনিরুল আলমহাইকোর্টের ওই রায়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে জায়গায় বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন সেই জায়গা এবং ১৬ ডিসেম্বর যে জায়গায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল সে জায়গাসহ ঐতিহাসিক সাতটি স্থান চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন।
সরেজমিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, এখনো আদালতের ওই রায়ের বাস্তবায়ন হয়নি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সাতটি স্থান চিহ্নিত করার কথা বললেও উদ্যানে তার কোনো চিহ্ন নেই। বঙ্গবন্ধু ঠিক কোন জায়গায় ভাষণ দিয়েছিলেন, কোন জায়গায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল তা বোঝার উপায় নেই।
তবে শিখা চিরন্তনের উত্তর পাশে শিশুপার্কের সীমানার কাছাকাছি একটি স্তম্ভ দেখা যায়। তাতে লেখা আছে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ডাক, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ওই স্তম্ভটিও আছে অবহেলায়। শেওলা পড়ে গেছে, লেখাও অনেকটা মুছে গেছে। এর পশ্চিমে আরেকটি ছোট স্তম্ভ আছে। কিন্তু তাতে কী লেখা আছে, তা এখন উদ্ধার করা দুরূহ।
এ ছাড়া শিখা চিরন্তনের কিছু আগে আরেকটি স্তম্ভ আছে। তা হলো ‘বিজয় স্তম্ভ’। ১৯৯৫ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এখনো শুধু ভিত্তিপ্রস্তরটিই আছে।

 

কম খরচে হালের ফ্যাশন ‘কুর্তা ‘

24618-exclusive-black-short-sleeve-designer-kurtis-at-low-cost

বিপাশা রায়ঃ সপ্তাহে পাঁচ দিন অন্তত বাইরে বেরোতে হয় যাঁদের, তাঁদের পক্ষে কী রোজ রোজ নতুন পোশাক পরা সম্ভব? নতুন পোশাক না হোক, নতুন একটা ভাব আনা তো খুবই সম্ভব। এমনই মনে করেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। এ জন্য চাই কয়েক রকম কুর্তা আর তার সঙ্গে পরার জন্য পালাজ্জো বা লেগিংস। খুব বেশি খরচও পড়বে না, নিজেই বানিয়ে নিতে পারেন নিজের বাজেটের মধ্যে কুর্তা। সে উপায় বাতলে দিয়েছেন ডিজাইনাররাই।

কয়েক বছর ধরে শুধু কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই ছিল কুর্তার জনপ্রিয়তা। তবে এখন অফিসে পরার পোশাক হিসেবেও মেয়েরা বেছে নিচ্ছেন কুর্তা। এর নকশাতেও এখন আসছে নানা পরিবর্তন। গলায় যোগ করা হচ্ছে লেস, কাটছাঁটে আছে ভিন্নতা।
নকশাটা যেমনই হোক না কেন সব সময় ব্যবহারের জন্য কুর্তার কাপড়টা সুতি হওয়াই ভালো বলে জানালেন অনলাইন পোশাকের দোকান ওয়ালীজের ডিজাইনার ওয়ালী উদ্দীন আহমেদ। এ ক্ষেত্রে আকািশ, সাদা, হালকা-সবুজ রংগুলো বেছে নেওয়া যেতে পারে। কাপড়ের রংটা সাদা হলে গলা আর হাতায় লাগাতে পারেন কালো রঙের পাইপিং। পাইপিংয়ের জন্য ব্যবহার করতে পারেন কালো রঙের বাটিক প্রিন্টের কাপড়, না হলে কালোর ওপর সোনালি রঙের সুতার কাজের লেস। কাপড়টা যদি প্রিন্টের হয় সে ক্ষেত্রে গলাটা হাইনেক রেখে সামনের দিকের বেশ কিছু অংশ কাটা রাখতে পারেন। কুর্তা বানানোর সময় আরও কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন হাতার পাইপিংয়ের দৈর্ঘ্য দেড় ইঞ্চি হলে এবং কুর্তার িনচের দিকে আড়াই থেকে তিন ইঞ্চি পাইপিং লাগালে তা দেখতে ভালো দেখাবে। কুর্তার দুপাশের কাটা অংশ ১৮ ইঞ্চির কম এবং ঘেরটা হবে ৩৬ ইঞ্চি। এ ছাড়াও কুর্তার দৈর্ঘ্য ৩৪ ইঞ্চির বেশি না করার পরামর্শ দিলেন তিনি। থ্রি-কোয়ার্টার হাতায় কুর্তাটা সবাইকে বেশ মানিয়ে যায় বলেও জানালেন তিনি। অফিসে পরতে পারেন থ্রি-কোয়ার্টার হাতার কুর্তা।
তিনটি কুর্তা থাকলে সপ্তাহে কোনোদিন তা একরঙা লেগিংসের সঙ্গে পরতে পারেন, আবার কোনোদিন না হয় পরুন প্রিন্ট নকশার পালাজ্জোর সঙ্গে। ভিন্ন ভিন্ন স্কার্ফ বেঁধেও একই কুর্তাটি নানাভাবে পরতে পারেন।

68e2708b4ea31c976c39a9769fac90eb-17

 

এদিকে প্রতিদিনের কাজে যাঁদের বাইরে বের হতে হয়, তাঁদের জন্য বিবিয়ানার ডিজাইনার লিপি খন্দকারের পরামর্শ হলো, প্রতিটি কুর্তার জন্য আলাদা রং নয়, বরং একটি রঙের লেগিংস বা সালোয়ারের সঙ্গে পরতে পারবেন যেকোনো ধরনের কুর্তা। এ ক্ষেত্রে লেগিংস, জিনস বা পালাজ্জোর জন্য কালো বা হালকা সাদা রং বেছে নিন। মোটামুটি সব রঙের কুর্তার সঙ্গেই তাহলে মানিয়ে যাবে। সব ধরনের কুর্তার সঙ্গেই পরতে পারেন প্রিন্টের নকশার সিল্কের স্কার্ফ। এ ক্ষেত্রে শুধু মনের মতো নকশায় কুর্তাটি বানিয়ে নিলেই কম বাজেটের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাবে আপনার প্রতিদিনকার পোশাক।
কুর্তার সঙ্গে সাজগোজটা হালকা হলেই ভালো দেখাবে এমনটা জানালেন রেড বিউটি স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন। যেমন যাঁদের চুল একটু লম্বা তাঁরা লেগিংসের সঙ্গে কুর্তা পরলে একটু উঁচু করে পনিটেল বেঁধে নিতে পারেন। পালাজ্জোর সঙ্গে খোলা রাখতে পারেন চুলগুলোকে।

begin101-womens-cream-kurti-300X420-5X7-2cfc4e5705ba4f2b8dfac1b356612743
কুর্তার বাজেট

ওয়ালী উদ্দীন আহমেদ জানালেন, সাধারণত কুর্তা বানাতে দেড় থেকে আড়াই গজ কাপড় লাগবে। এ ক্ষেত্রে বহর তিন হাত হলে কাপড় লাগবে দেড় গজ আবার বহর যদি আড়াই হাত হয় তাহলে সোয়া দুই গজ কাপড় দিয়েই বানাতে পারেন কুর্তা। ঢাকার চাঁদনী চক ও ইসলামপুরের কাপড়ের দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেল, সুতির ওপর ছাপা নকশার কাপড়ের দাম পড়বে গজপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। হাতে বোনা তাঁতের কাপড় পাবেন গজপ্রতি ১২০ টাকায়। আর ৭০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে মিলবে এক রঙা কাপড়। পাইপিং লাগাতে কলারের জন্য লেস বা রিবন লাগবে ১৪ থেকে ১৬ ইঞ্চি। হাতার জন্য লাগবে ১০ ইঞ্চি লেস। নকশার ওপর নির্ভর করবে এই লেসের দাম। আর কুর্তা বানানোর মজুরিটা এলাকাভেদে পড়বে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা। তবে পাড়ার বা স্থানীয় কোনো দোকানে বানালে ১২০ টাকার মধ্যেই বানিয়ে ফেলতে পারবেন আপনার পছন্দের কুর্তাটি।

 

একাত্তরের নাটক বীরাঙ্গনা: দ্য উইম্যান অব ওয়ার

অপরাজিতা ডেস্কঃ সময় ১৯৭১। মরিয়মরা থাকে ছোট্ট একটা গ্রামে। পাক হানাদারদের ভয়ে সারাক্ষণ তটস্থ থাকতে হয় তাদের। রাতেরবেলা তারা লুকিয়ে থাকে বাড়ির পেছনের পুকুরে। একদিন সত্যি হয় মরিয়মের আশঙ্কা। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যায় মরিয়ম। তারপর কী ঘটল মরিয়মের জীবনে?

একাত্তরের সেই বীরাঙ্গনার গল্প নিয়ে নাটক বীরাঙ্গনা: দ্য উইম্যান অব ওয়ার। নাটকটি ঢাকায় মঞ্চস্থ করবে লন্ডনভিত্তিক সাংস্কৃতিক দল কমলা কালেক্টিভ। সব ঠিক থাকলে, ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ছয়টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হবে এর প্রথম মঞ্চায়ন। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নাটকটি চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন স্থানেও প্রদর্শিত হওয়ার কথা।
‘ক্ষ’ ব্যান্ডের কণ্ঠশিল্পী সোহিনী আলম, অভিনেত্রী লীসা গাজী, ফিলিজ ওজজান ও ক্যাটলিন অ্যাবোট—চার বন্ধু মিলে ২০১২ সালে ইংল্যান্ডে শুরু করেন সাংস্কৃতিক দল কমলা কালেক্টিভ।

বীরাঙ্গনা: দ্য উইম্যান অব ওয়ার মঞ্চায়নের জন্য দলটি এখন অবস্থান করছে ঢাকায়। দলের সদস্য সোহিনী আলম জানান, বাংলা ভাষায় কমলা কালেক্টিভের এটি প্রথম প্রযোজনা। কমলা কালেক্টিভ শুরু করার পর ওই বছরই লীসা গাজী আসেন বাংলাদেশে। সিরাজগঞ্জে গিয়ে কথা বলেন কয়েকজন বীরাঙ্গনার সঙ্গে। বীরাঙ্গনাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের নিয়ে তৈরি করা হয় ছোট ছোট ভিডিওচিত্র, যা যুক্ত করা হয় নাটকটির সঙ্গে। এর আগে ইংরেজি ভাষায় যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে এটি মঞ্চস্থ হয়। সেখানে মঞ্চায়নের পর বেশ প্রশংসিত হয় বীরাঙ্গনা। মনোনীত হয় ইংল্যান্ডের দ্য অফ ওয়েস্ট অ্যান্ড থিয়েটার অ্যাওয়ার্ডের জন্য।
বীরাঙ্গনা নাটকটি রচনা করেছেন সামিনা লুত্ফা ও লীসা গাজী। রচনার পাশাপাশি এতে অভিনয়ও করেছেন লীসা গাজী। সঙ্গে থাকবেন অমিথ রহমান। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন ফিলিজ ওজজান। নাটকের সংগীতায়োজনে রয়েছেন আহসান রেজা খান। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সোহিনী আলম।

 

মিস ওয়ার্ল্ড ২০১৪ হলেন সাউথ আফ্রিকার রোলেন স্ট্রাউস

অপরাজিতা ডেস্কঃ এবার বিশ্ব সুন্দরীদের মধ্য থেকে মিস ওয়ার্ল্ড-২০১৪ এর সেরার মুকুট মাথায় পরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার রোলেনে স্ট্রাউস। লন্ডনের স্থানীয় সময় রবিবার সন্ধ্যায় গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠানে সেরা পাঁচের চারজনকে টপকে জয়ী হন তিনি। গতবারের মিস ওয়ার্ল্ড ফিলিপাইনের সুন্দরী মেগান ইয়ং তাকে মুকুট পরিয়ে দেন।
রোলেনে স্ট্রাউস এবার ১২১ জন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে মিস ওয়ার্ল্ড খেতাব লাভ করেছেন। প্রতিযোগিতায় রানার আপ হয়েছেন হাঙ্গেরির এডিনা ক‍ল্কজার এবং তৃতীয় হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সুন্দরী এলিজাবেথ সাফরিট।
মিস ওয়ার্ল্ড-২০১৪ এর টপ পাঁচে ছিলেন : হাঙ্গেরির এডিন কুল্কজার, অস্ট্রেলিয়ার কোর্টনি থর্প, দক্ষিণ আফ্রিকা রোলেনে স্ট্রাউস, যুক্তরাষ্ট্রের এলিজাবেথ সাফরিট এবং ইংল্যান্ডের কারিনা টাইরেল। তবে মালয়েশিয়ার তরুণী দেওয়ি লায়ানা সেরিয়েস্থা দর্শক ভোটে সরাসরি সেরা ছয়-এ স্থান করে নিয়েছেন।
এদিকে সেমিফাইনালে শীর্ষে থাকলেও টপ পাঁচ থেকে বাদ পড়েন এবারের মিস ওয়ার্ল্ডে অংশ নেওয়া ভারতের প্রতিযোগী কোয়েল রানা। তবে ‘বিউটি উইথ এ পারপাজ’ এবং ‘ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন ডিজাইনার অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছেন এই ভারতীয় সুন্দরী।

অনলাইন টিভি চ্যানেল ‘পপকর্ন লাইভের’ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শুরু

আজ থেকে পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শুরু করছে বিনোদনভিত্তিক অনলাইন টিভি চ্যানেল পপকর্ন লাইভ।www.popcornlive.tv তে গিয়ে কম্পিউটার, আইপ্যাড, ট্যাবসহ যেকোনো স্মার্টফোন থেকে দেখা যাবে এই চ্যানেলের অনুষ্ঠান।
পপকর্ন লাইভের অন্যতম উদ্যেক্তা নির্মাতা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘খুব শিগগির আমরা পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচারে যাব। এটি পুরোপুরি একটি বিনোদনভিত্তিক চ্যানেল হবে। অনলাইন ব্যবহারকারীদের উপযোগী করে আমরা সব অনুষ্ঠান সাজাচ্ছি।’
রনি জানান, অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের পাশাপাশি এখানে আর্কাইভের ব্যবস্থাও থাকবে।
www.popcornlive.tv তে প্রচারিত শুভেচ্ছাবার্তায় অভিনেতা সাজু খাদেম বলেন, ‘বিনোদনজগৎকে ঘিরে আমাদের যেই প্রত্যাশা অপূর্ণ ছিল, আশা করছি পপকর্ন লাইভের মাধ্যমে তার কিছুটা হলেও পূরণ হবে।’ অভিনেত্রী জেনি বলেছেন, ‘আমরা যারা বিজ্ঞাপন ছাড়া টিভি দেখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, তাদের জন্য অনেক ভালো একটি প্ল্যাটফর্ম হতে পারে পপকর্ন লাইভ টিভি।’
পপকর্ন লাইভের অনুষ্ঠানের মধ্যে থাকবে নতুন টিভি ধারাবাহিক, সালমান শো, কমেডি শো মিস্টার মিসফিট, মিউজিক প্রোগ্রাম আন্ডারগ্রাউন্ড লেভেল ৬ ইত্যাদি।

শীতে গরম গরম মাশরুম আর টমেটো ক্রিম স্যুপ

1406100274মাশরুম স্যুপ
উপকরণ: মাশরুম ১০০ গ্রাম, কর্নফ্লাওয়ার ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ কুচি ২টি, সিরকা ১ চা-চামচ, স্বাদলবণ সিকি চা-চামচ, সয়াসস ১ টেবিল চামচ, সাদা গোলমরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ, ডিম ১টি, মুরগির স্টক ৮ কাপ।
প্রণালি: মাশরুম হালকা গরম পানিতে ধুয়ে কুচি করে নিন। সসপ্যানে তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি ও মাশরুম কুচি দিয়ে নাড়তে হবে। সব উপকরণ নরম হয়ে গেলে তাতে সয়াসস দিতে হবে। এরপর স্টক দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। এবার ১ কাপ ঠান্ডা পানিতে কর্নফ্লাওয়ার মিশিয়ে স্যুপের মধ্যে ঢেলে চামচ দিয়ে অনবরত নাড়তে হবে। ডিম ফেটিয়ে নিয়ে ফুটে ওঠা স্যুপের মধ্যে মিশিয়ে দিতে হবে। সব শেষে সিরকা ও স্বাদলবণ মিশিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে।

টমেটো-স্যুপ

টমেটো ক্রিম স্যুপ
উপকরণ: টমেটো ৪টি, মুরগির স্টক ৫ কাপ, লবঙ্গ ৫টি, মাখন ১ টেবিল চামচ, ভাঁজ খোলা পেঁয়াজ ২টি, কাঁচা মরিচ ২টি, গোলমরিচ ১ চা-চামচ, চিনি ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, রসুন কুচি ১ চা-চামচ, ক্রিম ২ টেবিল চামচ।
প্রণালি: টমেটো সেদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। সসপ্যানে টমেটো পেস্ট ও মুরগির স্টক দিয়ে চুলায় দিতে হবে। ফুটে উঠলে অন্য সব উপকরণ দিয়ে আবার ফুটতে দিতে হবে। অন্য একটি ফ্রাইপ্যানে মাখন গরম করে তাতে রসুন কুচি দিতে হবে। হালকা বাদামি হলে স্যুপের ওপর ঢেলে দিতে হবে। গরম গরম ব্রেড টোস্টের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে টমেটো ক্রিম স্যুপ।

সুত্র- রান্না-বান্না

 

আউটসোর্সিং এ অবদান রাখায় ১০ নারীকে সংবর্ধনা।

বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মসূচি বৃত্তির আওতায় প্রায় ২০০ নারীকে গ্রাফিক ডিজাইন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্য থেকে আউটসোর্সিংয়ে অবদান রাখায় ১০ নারীকে সংবর্ধনা দিয়েছে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও ক্রিয়েটিভ আইটি।

সংবর্ধনাপ্রাপ্তরা হলেন ফওজিয়া ইয়াসমিন, জিনিয়া সওদাগর, তানজিন আকতার, আমেনা আকতার, আয়েশা সিদ্দিকী, জুই সাহা, তানিয়া তাহমিনা, তিথি, নাইমা চৌধুরী ও শবনম ইয়াসমিন।

অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ জানান, বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের ৯ শতাংশ নারী। এই সংখ্যা ৫০ শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছে সরকার। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম এবং ক্রিয়েটিভ আইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনির হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র- কালের কন্ঠ।

 

গৃহসজ্জায় কার্পেটের ব্যবহার,প্রয়োজন সতর্কতা ।

বর্ষা বা গরমকালে দরকার না হলেও এই শীতে ঠান্ডা মেঝে ঢেকে রাখতে কার্পেটের তুলনা হয় না।

জন্ম সনদ পেলো যুদ্ধশিশু মনোয়ারা

শুধু ঘুম কম হওয়াটাই ক্লান্তির কারণ নয়…

শীতে ত্বকের যত্ন

winter-skin-care (1)
অপরাজিতাবিডি ডটকম: শীতের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাস জানান দিচ্ছে, শীতের আগমন। ঋতু পরিবর্তনের কারণে ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ কারণে এ সময় ত্বকের জন্য দরকার একটু বাড়তি যত্ন। ত্বক এসময় অনেকটা রুক্ষ ও অনুজ্জ্বল হয়ে যেতে পারে এবং ত্বকে র্যা শ ও ব্রণের প্রকোপ বাড়তে পারে। তাই এমনভাবে ত্বকের যত্ন প্রয়োজন যা ত্বককে উজ্জ্বল করবে এবং শীতের প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রসাধনী, প্রাকৃতিক উপাদান, খাবার সব দিক বিবেচনা করতে হবে। তবে এজন্য আমাদের অধিক সময় বা অর্থ কোনটারই দরকার নেই। একটু সচেতন হলেই এই শীতেও আপনার ত্বক থাকবে সজীব, সতেজ ও প্রাণবন্ত।

* শীতে গোসলের সময় অত্যধিক গরম পানি ব্যবহার করবেন না। গরম পানি ত্বকের তেল শোষণ করে ত্বককে শুষ্ক করে তোলে। তাই এই শীতে গোসলের সময় ত্বকের জন্য সহনীয় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন।

* প্রতিদিন গোসলের আগে অয়েল ম্যাসাজ করতে পারেন। এক্ষেত্রে নারকেল তেল, বাদাম তেল (আমন্ড অয়েল), তিলের তেল বা যে কোনও ভালো মানের হারবাল তেল ব্যবহার করতে পারেন। সম্ভব হলে অয়েল ম্যাসাজের আধ ঘণ্টা পর গোসল করুন, যাতে ত্বক তেলটুকু শোষণ করে নিতে পারে।

* পাকা কলা, পাকা পেঁপে, সয়াবিনের গুঁড়ো অথবা ময়দা পেস্ট করে মুখে লাগান। ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখুন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকে টানটান ভাব আসবে।

* শীতে মুখ ধোয়ার ক্ষেত্রে সাবানের পরিবর্তে ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্লিনজার ব্যবহার করুন। দুধ, ময়দা এবং ঘিয়ের মিশ্রণ একটি ভালো ক্লিনজার যা আপনার ত্বককে আর্দ্রতা থেকে বাঁচাবে।

* ঠোঁট ফাটা থেকে রক্ষা পেতে রাতে ঘুমোতে যাবার আগে মধু এবং গ্লিসারিন একসাথে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগান।

* শীতে চুলের দরকার বিশেষ যত্ন। সপ্তাহে একদিন হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করুন। নারকেল তেল গরম করে স্ক্যাল্পে হালকা হাতে ঘষুন। গরম পানিতে তোয়ালে ডুবিয়ে নিংড়ে নিন। তারপর তোয়ালে মাথায় জড়িয়ে রাখুন। সহজে তেল চুলের গোড়ায় ঢুকে যাবে। পরের দিন শ্যাম্পু করে নিন।

* আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় এ সময় খুশকি বাড়ে। খুশকি কমাতে লেবুর রস চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করতে পারেন। তেলের সঙ্গে আমলকি মিশিয়ে লাগান। বেশি কেমিক্যাল সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না। হেনা, লেবুর রস, ডিম মিশিয়ে চুলে এক ঘণ্টা লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে নিন।

* খাবারের তালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি এবং ফলমূল রাখুন। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।

অপরাজিতাবিডি ডটকম/আর/এ/ডিসেম্বর২০১৪

 

কিশোরী নির্যাতন : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

নাছিমা আক্তার জলি : বর্তমানে কিশোরী নির্যাতন আমাদের সামাজিক, পারিবারিক এবং রাষ্ট্রীয় বাস্তবতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বিষয়টি এখন এমন এক স্বাভাবিকতায় রূপান্তরিত হয়েছে যে, এটি আমাদের চোখে ও মনে কোনো প্রতিক্রিয়াই তৈরি করে না। আমরা এ নিয়ে তেমন কোনো প্রশ্ন করি না, প্রতিবাদ করি না, কখনও গভীরভাবে ভাবিও না। সাম্প্রতিককালে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো খুললেই যে সকল তথ্য পাওয়া যায়, তা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, কিশোরী নির্যাতন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিশোরী নির্যাতনের ধরন বাড়ছে, বাড়ছে এর মাত্রাও। প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হওয়ার ঝুঁকি কিশোরীদের মনে এক গভীর নিরাপত্তাহীনতার জন্ম দিচ্ছে। ফলে কিশোরীর বাধাহীন মানসিক বিকাশ এক প্রকার অসম্ভব হয়ে উঠছে। তার পৃথিবী হয়ে আসছে সঙ্কুচিত। তার প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন ক্রমশ দূরবর্তী করে তুলছে ‘উন্নয়ন, শান্তি ও সমতা’র অভিষ্ঠ লক্ষ্যকে।

02b33139078b975029239544d821fa1f

একজন কিশোরীর অস্তিত্ব যদি হুমকীর সম্মুখীন হয়, তার স্বাধীনতা যদি খণ্ডিত হয়, শারীরিক, মানসিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ যদি ব্যাহত হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তার অমিত সম্ভবনার দ্বারগুলো রুদ্ধ হয়ে পড়ে। ফলে বাধাগ্রস্ত হয় জাতীয় উন্নয়নসহ সার্বিক উন্নয়ন। এজন্যই প্রয়োজন কিশোরী নির্যাতনের কারণ ও ধরন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করা এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা। যেনো সমাজে বিদ্যমান প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গী, সামাজিক ও পারিবারিক কুসংস্কারচ্ছন্নতা, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার ফলে উদ্ভূুত ঘৃণ্যতম কার্যক্রমগুলোর অবসান ঘটে।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং নতুন নতুন কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও লক্ষণীয় বিষয় হলো, কিশোরী নির্যাতনের হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০০ সালে প্রকাশিত দক্ষিণ এশিয়ার মানব উন্নয়ন রিপোর্ট অনুযায়ী, নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্থান তৃতীয়। অনেকের ধারণা, বর্তমানে এ বিষয়ে জরিপ পরিচালনা করা হলে, বিশ্বে নারী নির্যাতনে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশ হিসেবে শীর্ষ স্থানে অবস্থান করবে বাংলাদেশ।

 

একটি দেশের সাধারণ মানুষের অসচেতনতা, শিক্ষার অভাব, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা সর্বোপরি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অসচ্ছতা, দায়িত্বহীনতা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ার কারণে বাংলাদেশের কিশোরী নির্যাতনসহ নারী নির্যাতনের মাত্রা ও ধরন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বিশেষত, কিশোরী মেয়েদের পথে ঘাটে উত্ত্যক্ত করা, বিভিন্ন ধরনের কু-প্রস্তাব দেয়া, এসকল প্রস্তাবে রাজি না হলে এসিড নিক্ষেপ করা, ধর্ষণ করা, ধর্ষণের পর হত্যা করা ইত্যাদি ভয়বহ আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

জাতিসংঘের তথ্য মতে, প্রাপ্তবয়স্ক নারীর ওপর তার পুরুষ সঙ্গীর শারীরিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। বিবাহিতা নারীদের শতকরা ৬০ ভাগ স্বামীর হাতে মার খায়। ইউনিসেফ-এর তথ্য মোতাবেক, ১৮ বছর বয়সের মধ্যে বাংলাদেশের শতকরা ৫০ ভাগ কিশোরী বিবাহিতা। অল্প বয়সে বিয়ে, প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা, জড়তা ইত্যাদি কারণে প্রতিনিয়তই তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। ফলে কিশোরী বধূর ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবন হয়ে উঠে সংঘাতময় এবং সঙ্কটাপন্ন।

 

অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিশোরী নির্যাতন শুরু হয় পরিবার থেকে। পরিবার থেকে যেসকল নির্যাতন করা হয় সেগুলোকে অত্যন্ত স্বাভাবিক নিয়ম হিসেবে মনে করা হয়। এছাড়া তারা সামাজিক নির্যাতন এবং কোনো কোনো সময় রাষ্ট্রীয়ভাবেও তারা নির্যাতনের শিকার হয়। সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন গবেষণা ও অভিজ্ঞতা থেকে একটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বেরিয়ে এসেছে যে, আমাদের দেশে শতকরা ৮০ ভাগ কিশোরী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পরিবারের নিকটতম আত্মীয়ের দ্বারা সংঘটিত হয়। এসকল ক্ষেত্রে নির্যাতকরা সম্পূর্ণরূপে নাগালের বাইরে থাকে। কেননা কিশোরীরা লোকচক্ষুর ভয় এবং নালিশ করলে উল্টো অপবাদের ভয়ে মুখ খোলে না। অনেক সময় পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও বিষয়গুলো বিশ্বাস করতে চায় না। এরূপ অবস্থায় কিশোরীর আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়। তাদের মধ্যে প্রচণ্ড রকমের পুরুষ বিদ্বেষী মনোভাব সৃষ্টি হয়, যা তাদের পরবর্তী জীবনকে বাধাগ্রস্ত করে।

 

কিশোরী নির্যাতনের কারণ ও ধরন
কিশোরী নির্যাতনের পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম কারণগুলো হলোÑ সমাজে প্রচলিত অপসংস্কৃতি, রেডিও-টিভিসহ গণমাধ্যমের কিছু বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, পুরুষের বেকারত্ব, কিশোরীর বেকারত্ব, দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, পুরুষের ‘পৌরুষ’ বা ক্ষমতার প্রভাব খাটাবার এক অপপ্রয়াস ইত্যাদি।

 

পারিবারিক নির্যাতন: শিশুর জন্য সবচাইতে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হলো পরিবার। অথচ এই পরিবারই অনেক ক্ষেত্রে কিশোরীর নির্যাতনের প্রথম সোপান হয়ে দাঁড়ায়। কিশোরীর প্রয়োজনের তুলনায় পুষ্টি কম দেয়া হয়। শিক্ষার সুযোগ থেকে বি ত করা, স্বাস্থ্য এমনকি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও যথাযথ যতœ নেওয়া হয় না। পরিবারের নিকট আত্মীয়দের দ্বারা বিভিন্ন সময়ে যৌন নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়। যা তারা প্রকাশ করে না বা করতে পারে না। এসকল সংঘটিত সহিংসতামূলক ঘটনাগুলো অনেক সময় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দৃষ্টির অগোচরেই রয়ে যায়।

 

দৈহিক নির্যাতন: বয়ঃসন্ধিকালে স্বভাবজাতভাবেই কিশোরীরা চনচল হয়ে উঠে। নিজেদের বোঝার অস্পষ্টতা ও অজ্ঞতার কারণে এমন কিছু কাজ করে যা তার ব্যক্তিগত জীবন এবং পারিবারিক জীবনকে বিড়ম্বনার বেড়াজালে আবদ্ধ করে। সামাজিকভাবেও এজন্য মাশুল দিতে হয়। কিশোরীকে গৃহে বা বাইরে দৈহিকভাবে আঘাত বা মারধর করা হয়।

 

মানসিক নির্যাতন: পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে প্রায়ই কিশোরীর উপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। অধিকাংশ সময়ই কিশোরীকে যেহেতু একজন মানুষ হিসেবে মনে করা হয় না, তাই তার মন বা স্বত্ত্বাকেও স্বীকার করা হয় না। পরিবারে তার মতামত প্রকাশের কোনো সুযোগ থাকে না। যদি ক্ষেত্র বিশেষে কোনো কিশোরী হঠাৎ কোনো মতামত প্রকাশও করে তাহলে তাকে ‘ইঁচরে পাকা’ বলে অভিযুক্ত করা হয়। পরিবারের সুনাম-খ্যাতি নষ্ট হবে এই অজুহাত প্রদর্শন করে অনেক সময়ই কিশোরীর স্বাভাবিক চলাফেরাকে প্রতিরোধ করা হয়। গৃহ নামক জেলখানায় বন্দী করে মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। একজন কিশোরের ন্যায় খোলা মাঠে কিশোরী কখনই খেলতে পারে না। ইচ্ছে হলেই সে গাছের ডালে উঠতে পারে না, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারে না। কারণ তার প্রতি আঙ্গুল উঁচিয়ে বলা হয় Ñ গেছো মেয়ে, নষ্টা মেয়ে, পথভ্রষ্টা। ফলে কিশোরীর শারীরিক, মানসিক বিকাশসহ বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশও ব্যাহত হয়।

 

যৌন নির্যাতন: ধর্ষণ, গণধর্ষণ ঘরে বাইরে যৌন নিপীড়ন ও যৌন হয়রানী। কু-প্রস্তাব বা উত্ত্যক্তকরণের মাধ্যমে নির্যাতন: পথে ঘাটে বখাটে ছেলে, কখনো কখনো বয়স্ক পুরুষ কর্তৃকও বিভিন্ন ধরনের কু-প্রস্তাব প্রদান ও উত্ত্যক্ত করার মাধ্যমে নির্যাতন করা হয়। কু-প্রস্তাবে রাজি না হলেই কিশোরীর জীবন হুমকীর সম্মখীন হয়ে পড়ে।

 

প্রজনন অধিকারহরণ সংক্রান্ত নির্যাতন: কিশোরী বয়সে বিয়ে, গর্ভধারণ, গর্ভপাত এবং গর্ভনিরোধক ব্যবহারে বাধ্য করানো। ইউনিসেফ-এর তথ্য মোতাবেক, ১০-১৪ বছর বয়সী বিবাহিত কিশোরীর শতকরা ১৫.৬ ভাগ গর্ভনিরোধক পদ্ধতি গ্রহণ করে।

 

প্রচলিত রীতি-নীতি বা কুপ্রথাভিত্তিক নির্যাতন: যৌতুক সংক্রান্ত নির্যাতন, পারিবারিকভাবে পুত্রশিশুর তুলনায় কন্যাশিশুর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের মাধ্যমে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা। একতরফা বিচার করে কিশোরীসহ তার পরিবারকে এক ঘরে করা, দোররা মারা, রাস্তায় কু-প্রস্তাব বা উত্ত্যক্তকরণের পেছনেও কিশোরীকে দায়ী করে পারিবারিক সম্মান রক্ষার্থে কিশোরীকে হত্যা করা বা আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়া।
কিশোরীকে পণ্যে পরিণত করে নির্যাতন: দেহ ব্যবসা, পাচার, উটের জঁকি, বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে নারী দেহের যৌন আবেদনমূলক ব্যবহার, পর্ণোগ্রাফি বা নীল ছবি তৈরি ইত্যাদি।

 

যুদ্ধ-বিগ্রহ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতকালীন সময়ে কিশোরী নির্যাতন: যুদ্ধ ও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে নানাভাবে কিশোরীরা নির্যাতনের শিকার হয়। যুদ্ধ, জাতিগত বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হামলার সময়েও একটি বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা গেছে যে, কিশোরীরা সবসময়েই নির্যাতনের লক্ষ্যভুক্ত জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

 

 

কিশোরী নির্যাতনের খেসারত বা মাশুল

কিশোরী নির্যাতনের ফলে কেবল মাত্র কিশোরীরাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না, এর মাশুল গোটা পরিবার, সমাজ তথা সমগ্র রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই প্রদান করতে হচ্ছে। কিশোরী নির্যাতনের ফলে পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে পারস্পারিক অবিশ্বাস ও অনাস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে পড়ছে। ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রমেও তারা ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। রাষ্ট্রযন্ত্রটিকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হওয়া জরুরি। এক্ষেত্রেও তারা পিছিয়ে আছে।

 

ইউনিনেফ-এর তথ্য মোতাবেক, কন্যাশিশুর খাদ্য ও পুষ্টির প্রতি অবহেলার কারণে কিশোরদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হারে কিশোরীরা যে সকল রোগে ভুগছে তা হলো- বাতজ্বর, সাধারণ জ্বর, আমাশয় এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা। ১৩-১৭ বছর বয়সী কিশোরীদের অর্ধেকের বেশি স্বাভাবিকের তুলনায় কৃশ। পরবর্তীতে এরাই ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতির কারণে অধিক সময় অসুস্থ থাকে, গর্ভাবস্থায় মৃত্যু ঘটে এবং কর্মক্ষমতা কমে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আমাদের দেশে ২০ বছর বয়সী বা তার উর্ধ্বে নারীদের তুলনায় ১৮ বছর বয়সের কম প্রসূতিদের মৃত্যুর সম্ভবনা প্রায় ২-৫ গুণ বেশি।

 

কিশোরী নির্যাতনের হার ঘরে-বাইরে, সমাজে এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের হারাতে হচ্ছে রিমি, সীমি, মিমি, মহিমা, পিংকি, সিনথিয়া, কিশোরী বধূ জেনিদেরকে। এসিড সন্ত্রাসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

এর ফলে আমাদের অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। সামাজিক এবং পারিবারিকভাবে অনেক ক্ষেত্রেই তারা হেয় প্রতিপন্ন হওয়ায় নিজেদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে। ফলে নিজের সঙ্গে নিজে যুদ্ধ করে অনেক কিশোরীর পক্ষেই টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কেউ কেউ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে।

 

কিশোরী তথা নারী নির্যাতন প্রতিরোধে জাতীয় ও সামাজিক উদ্যোগসমূহ
কিশোরী তথা নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বেশ কিছু জাতীয় উদ্যোগ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ১৯২৯, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৩ (খসড়া), এসিড নিক্ষেপ আইন ২০০২, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেমনামূলক রায়, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০, মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯৭৪। এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও কিশোরী নির্যাতন ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা প্রদানসহ আত্মনির্ভরশীলতার লক্ষ্যে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য বিষয়েও সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

 

 

আমাদের করণীয়

আমাদের দেশে ব্যাপক হারে কিশোরী নির্যাতন সংঘটিত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটিকে কোনো সমস্যাই মনে করা হয় না। বিশেষ করে গৃহাভ্যন্তরে সংঘটিত শারীরিক নির্যাতনকে একটি সাধারণ বিষয় হিসেবে দেখা হয়। মানসিক নির্যাতনের ক্ষেত্রেও এটি সমভাবে প্রযোজ্য। অথচ এই নানামুখী নির্যাতনের শিকার হয়ে কিশোরীরা হারাচ্ছে তাদের আত্মবিশ্বাস, সৃজনশীলতা এবং গতিময়তা। তাদের সামনে যে অফুরন্ত সম্ভবনার আলো রয়েছে তা ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এখনই সময়। কিশোরী নির্যাতনকে প্রতিহত করে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের গণজাগরণ সৃষ্টি করা। এ জাগরণের লক্ষ্য হলো সকল প্রকার নির্যাতনের অবসান করে ক্ষুধামুক্ত আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করা।

 

অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরএ/এ/ডিসেম্বর ২০১৪ই.

গৃহকর্তা কর্তৃক যৌন নির্যাতন,১৪বছরের গৃহকর্মীর আত্নহত্যা!

Dorson

 

অপরাজিতাবিডি ডটকম : গৃহকর্তা কর্তৃক যৌন নির্যাতন ও মায়ের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়ার বদলে উল্টো মারধরের অপমানের জ্বালা সইতে না পেরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে গৃহকর্মী শিশু রুনা(১৪)। টানা চারদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেকহাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে অবশেষে পরাজিত হল ছোট শিশুটি। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে সে মারা যায় বলে চমেক হাসপাতাল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ ঘটনায় নগরীর সদরঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গৃহকর্তার যৌন নির্যাতন সইতে না পেরে অপমানে গত ২৯ নভেম্বর রুনা গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। এ সময় তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চারদিন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করার পর গতকাল সে মারা যায়।

এ ঘটনায় থানায় দায়ের করা এজাহার সূত্রে জানা গেছেরুনা আক্তার নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণ হাতিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের মেয়ে। তার মা রোকেয়া আক্তার নগরীর কর্ণফুলী থানার জহির মাঝির কলোনী সৈন্যেরটেক এলাকায় থাকেন। প্রায় ৬ মাস আগে রোকেয়া তার মেয়েকে সদরঘাটস‘ আমিন আহমেদের বাসায় কাজ করতে দেন। বেতন ছিল মাসিক দেড় হাজার টাকা। প্রত্যেক মাসের শেষে রোকেয়া মেয়েকে দেখতে ওই বাসায় যেতেন।

মামলার এজাহারে আরো বলা হয়গত ২৯ নভেম্বর দুপুর ১টার দিকে রোকেয়া দেখতে গেলে রুনা তাকে জানায়গৃহকর্তা আমিন তাকে প্রায়ই যৌন হয়রানি করে। সে আর ওই বাসায় কাজ করবে না। কিন্তুরোকেয়া তাকে আরও কয়েকমাস ওই বাসায় কাজ করার জন্য অনুরোধ করে। রুনা এতে রাজি না হওয়ায় রোকেয়া তাকে চড় দেন। এদিকে গৃহকর্তা আমিনও ক্ষুব্ধ হয়ে রুনাকে লাথি মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে রুনা রান্নাঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ সময় রুনার মা রোকেয়া ও গৃহকর্তা আমিন ভেজা কাপড় ও কম্বল চাপা দিয়ে আগুন নেভান। রোকেয়া মেয়ের আগুনে পোড়া শরীর দেখে সেখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। এরপর ওই বাসার অন্যান্য লোকজন রুনাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। এদিকে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার পর ২৯ নভেম্বর রাতে রোকেয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় মামলা দায়ের করেন। এতে আমিন আহমেদের বিরুদ্ধে রুনার সঙ্গে খারাপ আচরণ এবং যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদরঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্তসদীপ কুমার দাশ বলেনরুনা আক্তার নামে এক গৃহকর্মী গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। মঙ্গলবার সকালে সে মারা গেছে। এ ঘটনায় থানায় গৃহকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

 

অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ১৪২১ পেলেন,কথা সাহিত্যিক জাহানারা নওশিন।

4_47328

অপরাজিতা ডেস্কঃ সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ১৪২১’ পেয়েছেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক জাহানারা নওশিন। গত ২ই ডিসেম্বর জাতীয় যাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন,বরেণ্য সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক।

পাক্ষিক অনন্যার সম্পাদক ও দৈনিক ‘ইত্তেফাকে’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী ও কবি শামীম আজাদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন কথাসাহিত্যিক ঝর্না রহমান।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান কালে সৈয়দ শামসুল হক বলেন,অনন্যা সাহিত্য পুরস্কারের ধারাবাহিক তালিকা দেখে বোঝা যায় নামের দিকে নয় গুণ বিবেচনায়ই এ পুরস্কার দেয়া হয়। অনন্যা অপরিচিত গুণসম্পন্ন নারী লেখকদের অনন্য সম্মাননা দিয়ে আমাদের সামনে নিয়ে আসে। নারী লেখকদের জন্য ক্ষেত্র তৈরি করে। অনন্যা যেন নিজেকে বলে আমি দশজনের মধ্যে নই। আমি একাদশতম। সাহিত্যে নারীর আত্মপ্রকাশ ঐতিহ্যগতভাবে এক কুণ্ঠার বিষয়। দীর্ঘদিন ধরে নারী সাহিত্যে নিজের নাম লেখাতে বড়ই কুণ্ঠাবোধ করে। তাদের কুণ্ঠা ভাঙতে সওগাত সম্পাদক নাসির উদ্দিন বেগম প্রকাশ করেছেন। সেই লেখাগুলো পড়লে মনে হতো বড়ই কাঁচা সাহিত্য। কিন্তু তার গভীরে ছিল তাদের জীবনের উপলব্ধি সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ। আজ কথাসাহিত্যিক জাহানারা নওশিনও সেই কুণ্ঠার কথা বললেন। কুণ্ঠার জন্যই তিনি বড় দেরি করে সাহিত্যের জগতে নাম লিখিয়েছেন। কিন্তু তার লেখাগুলো মান বিচারে অসামান্য। তাই তিনি বেশি সময় ধরে নিজেকে তৈরি করেছেন। যারা অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন তারা প্রত্যেকেই আমাদের সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। অনন্যা প্রায় উপেক্ষিত ও আড়ালে থাকাদের সামনে এনে পুরস্কার দিয়ে সম্মাননা জানিয়ে আসছে।

কবি আসাদ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন,জাহানারা নওশিন বিনয় করে বললেন, তিনি লেখা প্রকাশ করতে লজ্জা পেতেন। তিনি আসলে নিজেকে তৈরি করেছেন। তার গদ্যের ডিটেলিং, প্রকৃতির বর্ণনা এসব ক্ষেত্রে অনেকের থেকে আলাদা। প্রেম ও পারিজাত-এ তিনি পুরুষ মনস্তত্বকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার দেশের নারী সাহিত্যিকদের দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে মজা করে বলেন, এই পুরস্কারটি কেবল নারীদের দেয়ায় আমরা উপেক্ষিত থাকছি।

সভাপতির ভাষণে অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, আমরা সাহিত্যে অবদান রাখার ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকাটা তার উপলব্ধি থেকে দেখার চেষ্টা করি। ‘অনন্যা’ অন্য এক দৃষ্টিকোণ বিবেচনায় প্রতি বছর লোকচক্ষুর অন্তরালের নারী লেখকদের মনোনীত করে। যারা সাহিত্য জগেক সমৃদ্ধ করার জন্য সত্যিকার অর্থে কাজ করেন এমন একজনকে মনোনীত করতে পেরে  প্রতি বছরই এই সময় এমন ভাললাগা কাজ করে।
কথাসাহিত্যিক জাহানারা নওশিন ৬ মার্চ ১৯৩২ সালে ভারতের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় শিক্ষক জাহানারা নওশিনের প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস, শিশুসাহিত্য মিলে এযাবত্ প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৯টি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ বৃক্ষে বৃক্ষে বিষকরবী, পিতামহীর পাখি, দুহিতা, প্রেম ও পারিজাত, হাড়িকাঠ, আহা ভূত বাহা ভূত ইত্যাদি। গত বছর তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান।

বাংলা ১৪০১ সন (১৯৯৩ সাল) থেকে ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার’ প্রবর্তন করা হয়েছে। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিবছর একজন কৃতী নারী, সাহিত্যিক অথবা সাহিত্য গবেষককে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে তরুণ কবিরা স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন।

 

নভেম্বরে যৌতুকের জন্য হত্যা করা হয়েছে ১৮জন নারীকে!

6-svaw06square

নভেম্বর মাসে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে ও কারা হেফাজতে ১১ জন মারা গেছেন। বিএসএফের গুলিতে মারা গেছেন চারজন। গুম হয়েছেন দুজন। যৌতুকের জন্য হত্যা করা হয়েছে ১৮ জন নারীকে।
গতকাল সোমবার মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের ১ থেকে ৩০ নভেম্বরের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেদনে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, রাজনৈতিক সহিংসতা, যৌতুকের জন্য অত্যাচার, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, অ্যাসিড-সন্ত্রাস, গণপিটুনি এবং তৈরি পোশাকশ্রমিকদের হতাহতের ঘটনাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত এক মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি নয়জন নিহত এবং ৮৫৪ জন আহত হন। গত এক মাসে যৌতুকের কারণে ১৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং দুজন আত্মহত্যা করেছেন৷ ১৯ জন নারী ও ৩৩ জন মেয়েশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ এর মধ্যে তিনজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে৷
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে গুম করা, বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা, মত প্রকাশ ও ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, দেশের যোগাযোগ নেটওয়ার্কের ওপর গোপন নজরদারি, ঠুনকো বিষয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে জেলগেট থেকে গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা, সহিংসতার দায় একে অন্যের ওপর চাপানো বন্ধ করা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বিচারের সম্মুখীন করা এবং পুলিশ বা র্যাব পরিচয় দিয়ে গুম-হত্যার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর জবাবদিহি সৃষ্টিসহ প্রতিবেদনে আরও কিছু সুপারিশ করা হয়।
প্রতিবেদনে দুর্নীতি দমন কমিশনের সমালোচনা করা হয়। বলা হয়, আইনানুযায়ী কমিশন একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করার কথা থাকলেও তা করছে না।

সূত্র- প্রথম আলো।

শিশুর জন্ডিস

1397640673jaundice.jpg-320x200

প্রকৃতপক্ষে জণ্ডিস কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র। ত্বক, মিউকাস মেমব্রেণ এবং চোখ হলুদ হয়ে যাওয়াকে জণ্ডিস বলে। শরীরে বিলিরুবিন নামে হলুদ রঞ্জক পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গেলে জণ্ডিস হয়।

লক্ষণ

  • জণ্ডিসে আক্রান্ত শিশুর চোখের সাদা অংশ, হাত-পা এর তালু মুখমণ্ডল থেকে শুরু করে পুরো শরীর হলুদ বর্ণের হয়ে যেতে পারে।
  • শিশু খুব দুর্বল হয়ে পড়ে
  • গা ম্যাজ ম্যাজ করে।
  • বমি বমি ভাব
  • রুচিহীনতা
  • পায়খানার রঙ ফ্যাঁকাসে হয়ে যাওয়া।
  • জ্বর জ্বর অনুভূতি বা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা।

কী করবেন?
জণ্ডিস হলে শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং স্বাভাবিক খাবার দিন।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে কোনো ধরনের প্যারাসিটামল কিংবা ভেষজ ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।
জণ্ডিস হলে অনেকেই কবিরাজি চিকিৎসা করেন, যা কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। এগুলোতে জণ্ডিস কখনও ভালো হয় না। তাই শিশুর জণ্ডিস হলে মালা পরানো, চুনের পানি দিয়ে হাতধোয়া প্রভৃতি কবিরাজি চিকিৎসা থেকে দূরে থাকুন।
জণ্ডিস হলে বমি হয়ে অনেক সময় শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে শিশুকে পর্যাপ্ত পানি পান করাতে হবে। তবে অতিরিক্ত নয়। দিনে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করানো যেতে পারে।
শিশুকে প্রোটিন, ক্যালরি পাবে এমন খাবর বেশি বেশি খেতে দিন।
পানিশূন্যতা দেখা দিলে স্যালাইন পান করান।
কম তেল মশলায় রান্না করা খাবার খাওয়াতে হবে।
শিশু জণ্ডিসে আক্রান্ত হলে কয়েকদিন পর পর টেস্ট করে দেখতে হবে লিভার ক্ষতি হয়েছে কি না এবং বিলিরুবিনের পরিমাণ কমেছে কিনা।
স্কুলের সামনের ফুচকা, চটপটি প্রভৃতি খাওয়ার কারণে শিশুদের টাইপ এ জণ্ডিস বেশি হয়ে থাকে। তাই শিশুকে এগুলো খাওয়া থেকে দূরে রাখুন।

নবজাতকের জণ্ডিস
জম্মের পর পর সব শিশুরই জণ্ডিস হয়ে থাকে। সাধারণত জম্মের দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই এ জণ্ডিস হয় এবং সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে সেরে যায়। শিশুর এ ধরনের জণ্ডিসকে বলা হয় ফিজিওলজিক্যাল জণ্ডিস। সদ্যোজাত শিশুদের যকৃতে যে এনজাইমগুলো বিলিরুবিন নিয়ন্ত্রণ করার কথা শিশু জম্মের অব্যাহতি পর সে এনজাইগুলো তাদের কাজ ঠিকমতো শুরু করতে পারে না। তাই সদ্যোজাত শিশুদের বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। তবে এতে চিন্তার কোনো কারণ নেই। শিশুর এ জণ্ডিস আপনা আপনি সেরে যায়। এ সময় শিশুকে প্রতিদিন সকালে ১৫ থেকে ২০ মিনিট করে ২ থেকে ৩ বার রোদে রাখুন (ঘরের মধ্যে গ্লাসের জানাল দিয়ে যে রোদ আসে সেখানে রাখা ভালো)। তবে এ সময় শিশুর মাথায় যেন রোদ না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখুন। কয়েকবার এপাশ-ওপাশ করে দিন। এই কটা দিন শিশুকে বেশি বেশি মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ত্বক ও চোখের হলুদ বর্ণ বা জণ্ডিসের লক্ষণ না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

জণ্ডিসের টিকা
শিশু-কিশোরদের জণ্ডিসের টিকা হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস ইনফেকশনের প্রতিষেধক হিসেবে দেয়া হয়। হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস ইনফেকশনের প্রাথমিক প্রতিষেধক হিসেবে তিনটি ডোজ দিতে হয়। প্রথম ডোজটি যে দিন দেয়া হবে তার এক মাস পর দ্বিতীয়টি এবং তৃতীয়টি দিতে হবে প্রথম ডোজ দেয়ার দিন থেকে ৬ মাস পর। প্রাথমিক কোর্স সম্পন্ন করার ৫ বছর পর বুস্টারের এক ডোজ দেয়া যেতে পারে।

লিখেছেন- আঞ্জুমান আরা কেয়া।

 

গর্ভাবস্থায় মায়েদের যে খাবার গুলো এড়িয়ে চলা ভালো

file45878597_dc8668fc

গর্ভাবস্থায় নারীদের অনেক নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। এর মধ্যে খাবারের দিকে নজর দিতে হয় বেশি। কারণ এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো গর্ভবতী মায়েদের একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। কারণ এই খাবারগুলোই গর্ভপাতের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। জেনে নিন এমন কিছু খাবার সম্পর্কে।

১. গর্ভবতী মায়েদের তাদের গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে আনারস একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। আনারসে ‘ব্রোমেলাইন’ নামের এক ধরণের উপাদান থাকে। এটি মায়ের ডায়েরিয়া, এলার্জি থেকে শুরু করে গর্ভপাতের কারণও হতে পারে। তাই গর্ভকালীন সময়ে এই ফল খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেয়া উচিত।

২. অত্যাধিক ক্যাফেইন মায়ের হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়াও এটি অনিদ্রাও মাথা ব্যথার উদ্রেক করতে পারে। এর ফলে প্রিম্যাচিওর বেবি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক সময় ক্যাফেইনের কারণে গর্ভপাতও হতে পারে।

৩. চিকিৎসকেরা গর্ভধারণের প্রথম দিকে আনারসের পাশাপাশি কাঁচা পেঁপে খেতেও নিষেধ করেন। কারণ এতে বিভিন্ন রকমের এনজাইম থাকে যা গর্ভপাতের সহায়ক।

৪. গর্ভকালীন সময়ে পনির জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এতে বিভিন্ন রকমের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলোও গর্ভপাত ঘটাতে পারে।

সূত্র : ইন্টারনেট

নারীর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

130919_AMIN_IN_HEALTH

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে সহায়তা করে। শুধু তাই নয়, রোগ থাকলে তা আগেই ধরা পড়ে এবং চিকিৎসা সহজ হয়। ১৮ বছর বয়স থেকেই একজন নারীর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। বিস্তারিত জানিয়েছেন ডাক্তার রেজাউল করিম কাজল।

রক্তচাপ পরীক্ষা

১৮ থেকে ৩৯ বছর পর্যন্ত প্রতি দুই বছর পর পর একজন নারীর রক্তচাপ মাপা উচিত। যাঁদের পরিবারে উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের ইতিহাস আছে, তাঁরা এ ব্যাপারে আরো সতর্ক থাকা জরুরি। আর যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাঁদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শমতো রক্তচাপ মাপা। আর ৪০ থেকে ৬৪ বছর বয়স হলে প্রতিবছর একবার রক্তচাপ মাপতে হবে।

রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা পঁয়তাল্লিশোর্ধ নারীর প্রতিবছর একবার করে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা দেখে নেওয়া উচিত।

ডায়াবেটিস পরীক্ষা

যদি রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে, তাহলে ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে প্রতি তিন বছর পর পর এবং চল্লিশের পরে প্রতি দুই বছর পর পর রক্তের সুগার বা ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা উচিত।

দাঁতের চেকআপ

যেকোনো বয়সের নারীর প্রতিবছর দাঁত ও মাড়ির পরীক্ষা করা দরকার। এতে দাঁতের বিভিন্ন রোগ, মুখগহ্বর, জিহ্বার ক্যান্সারের লক্ষণ অনেক আগেই ধরা পড়তে পারে।

দৃষ্টিশক্তির পরীক্ষা

২০ থেকে ৪০ বছরের একজন নারীর প্রতি দুই বছর পর পর চোখের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করা দরকার। চল্লিশের পরে সাধারণত প্রতিবছর দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।

শৈশবে সরকার প্রদত্ত সব টিকা অবশ্যই নিতে হবে। মেয়েদের জন্য বিশেষভাবে দুটি টিকা অপরিহার্য। একটি রুবেলা অন্যটি সারভাইক্যাল ক্যান্সার। এ দুটি টিকা বয়ঃসন্ধিকালে নিলে ভালো। অন্যদিকে অধিক বয়সে অন্ত্র বা কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ দেখা দেয়। এসব রোগের জন্য নিয়মিত কোনো পরীক্ষা করতে বলা হয় না। শুধু যাঁদের বংশে এসব রোগের ইতিহাস আছে বা যাঁরা এসব রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তাঁদেরই বিশেষ কিছু পরীক্ষা করতে চিকিৎসক পরামর্শ দেন। অন্যদিকে যাঁরা দীর্ঘমেয়াদি অসুখ যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনিজনিত সমস্যা, লিভার রোগে ভুগছেন, তাঁদের চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক করবেন।

দেশের ৪০ শতাংশ শিশু কম ওজন ও অপুষ্টিতে ভুগছে!

Poverty_7678

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) অনেক সূচকেই এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে শিশুর অপুষ্টি ও ওজনহীনতার চিত্র কাক্সিক্ষত নয় বলে মনে করছে সরকার। মা ও শিশুপুষ্টি নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত এক মানচিত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

মানচিত্র অনুসারে, বান্দরবান জেলায় সবচেয়ে বেশি পুষ্টিহীন শিশুর বসবাস। ফলে জেলার ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু বেটে। সিলেটের সুনামগঞ্জে ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ শিশু কম ওজনের। যা অন্যান্য জেলার তুলনায় সর্বোচ্চ। শিশুপুষ্টি নিশ্চিত করতে সম্পদের সুষম বণ্টন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রকাশিত ম্যাপ সহায়ক হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ ম্যাপ প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সুরাইয়া বেগম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামাল সভাপতিত্ব করেন।
পুষ্টিহীনতার কারণে বেটে শিশুর হার সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বান্দরবান জেলায়। এ হার ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ।

পাশাপাশি কম ওজনের শিশুর ক্ষেত্রে খারাপ অবস্থায় রয়েছে সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলা। এ হার ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে অপুষ্টি ও কম ওজনের ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে রয়েছে ঢাকা জেলা। চাইল্ড অ্যান্ড মাদার নিউট্রিশন সার্ভের (সিএমএনএস) ফলাফলের ভিত্তিতে অপুষ্টিসংক্রান্ত ম্যাপে এ চিত্র উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), ওয়ার্ল্ডফুড প্রোগ্রাম এবং ইফাদ যৌথভাবে পুষ্টিম্যাপ প্রকাশ করেছে।
এমএ মান্নান বলেন, এসব তথ্য কোনো সমস্যার সমাধান নয়। তবে সমাধানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যেসব এলাকায় পুষ্টির অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে সেসব এলাকায় বরাদ্দ বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে পুষ্টি সমস্যা সমাধান করা যাবে। তিনি জানান, ২ দশক আগে দেশে অপুষ্টির হার ছিল ৭০ শতাংশ। কিন্তু এখন সেটি ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। তারপরও এটি সন্তোষজনক নয়। তিনি আরও বলেন, এমডিজির অনেক লক্ষ্যই যখন পূরনের পথে তখন অপুষ্টি ও কম ওজনের শিশুর এ চিত্র কাক্সিক্ষত নয়। তারপরও বলব এ চিত্র ঠিক হলে বিষয়টির প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।

ম্যাপ অনুযায়ী দেখা যায়, বেটে শিশুর ক্ষেত্রে বরিশাল বিভাগের সর্বোচ্চ ভোলা জেলায় ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সর্বনিু ঝালকাঠি জেলায় ৩৭ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগের বান্দরবান জেলায় সর্বোচ্চ ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ (জাতীয়ভাবেও সর্বোচ্চ) এবং সর্বনিু চাঁদপুর জেলায় ৪০ দশমিক ১ শতাংশ। ঢাকা বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ কিশোরগঞ্জ জেলায় ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ। খুলনা বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ কুষ্টিয়া জেলায় ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং সর্বনিু ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ সিরাজগঞ্জ জেলায় ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ এবং সর্বনিু ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ। রংপুর বিভাগে সর্বোচ্চ নীলফামারী জেলায় ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সর্বনিু পঞ্চগড় জেলায় ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ। সিলেট বিভাগে সর্বোচ্চ সুনামগঞ্জ জেলায় ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ এবং সর্বনিু মৌলভীবাজারে ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

কম ওজনের শিশুর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি কম ওজনের শিশু রয়েছে ভোলা জেলায়, এ হার ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ। সবচেয়ে কম রয়েছে ঝালকাঠি জেলা, এ হার ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্মীপুর জেলায় ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম রাঙ্গামাটি জেলায় ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি নেত্রকোনা জেলায় ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ।
খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং খুলনা জেলায় সবচেয়ে কম ২৯ দশমিক ১ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে বেশি সিরাজগঞ্জ জেলায় ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম জয়পুরহাট জেলায় ৩০ দশমিক ১ শতাংশ। রংপুর বিভাগে সবচেয়ে বেশি কুড়িগ্রাম জেলায় ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম দিনাজপুর জেলায় ৩৩ শতাংশ।
সিলেট বিভাগে সুনামগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ (জাতীয়ভাবে সর্বোচ্চ) আর সবচেয়ে কম মৌলভীবাজার জেলায় ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুরাইয়া বেগম বলেন, আগে রংপুর অঞ্চল পিছিয়ে থাকলেও এখন সিলেট বিভাগ পুষ্টির ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।
এমডিজির লক্ষ্য পূরণে এ ম্যাপ অনুযায়ী সম্পদের সুষম বণ্টন করতে হবে। তিনি বলেন বাস্তবতার ভিত্তিতে এ ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে গোলাম মোস্তফা কামাল বলেন, ২০২৫-৩০ সালের মধ্যে দেশের দারিদ্র্য হার সর্বনিু পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ হার ৫ থেকে ৬ শতাংশে নিয়ে যেতে চায় সরকার।

সূত্র- যুগান্তর।

 

সবজি রাজ্যের ছালেহা

আবু আক্তার করন, মেহেরপুর : অবহেলিত নারীর জীবন সংগ্রামের দৃষ্টান্ত হতে পারেন জেলার সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের চাঁদবিল গ্রামের ছালেহা বেগম। স্বামীর অবহেলাকে তোয়াক্কা না করে উঠানের পাশে জমিতে গড়ে তুলেছেন রকমারি সবজির বাগান। এলাকাবাসী বাগানটির নাম দিয়েছে ছালেহা বেগমের জীবন্ত সবজি বাজার।

 

Shofolota-01

 

সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের চাঁদবিল গ্রামের ছালেহা বেগমের বিবাহিত জীবনের প্রথমদিকটা খারাপ ছিল না। কিন্তু ১০ বছর আগে স্বামী লিয়াকত আলী অন্যত্র বিয়ে করে বিদেশ চলে যান। এরপর ঠাঁই হয় বাবার বাড়িতে। বাবা ও ভাইদের কাছ থেকে পান একটি ছোট বাড়ি ও বাড়ি সংলগ্ন এক টুকরো জমি। ওই টুকরো জমিতে গড়ে তোলেন বিভিন্ন সবজিসহ ফলের বাগান। সবজি বিক্রি করে মাসে ৫-৬ হাজার টাকা আয় হয়। ফল বিক্রি করে বছরে আরও ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় হয়। নিজের খরচ বাদে ওই টাকা দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নাতনী তামান্নাকে সহায়তা করে আসছেন। এ সফলতা দেখে স্বামী তার সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে জানান।

 

Shofolota-02

 

ছালেহা খাতুন বলেন, স্বামী আমাকে ফেলে বিদেশ চলে যাওয়ার পর থেকে বাবার বাড়িতে এসে পৌনে দুই বিঘা জমির উপরে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করি। এখন এ সবজি চাষ থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে আমি চলি এবং তামান্নাকে সহযোগিতা করি। তিনি আরও বলেন, আমার বাগানের সবজি বিষমুক্ত হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক চাহিদা। যার কারণে আমাকে সবজি বিক্রি করতে বাজারে যাওয়া লাগে না। বাড়ি থেকেই বিক্রি হয়ে যায়।

 

Shofolota-03

 

সবজি কিনতে আসা রেখা খাতুন জানান, আমরা এখান থেকে প্রতিদিন সবজি কিনে নিয়ে যাই। বাড়িতে পুরুষ মানুষ না থাকলেও আমাদের সমস্যা হয় না। বাড়িতে কোনো মেহমান আসলে তাৎক্ষণিক নিজ হাতে সবজি তুলে নিয়ে যাই। এ ছাড়া সবজিতে কোনো প্রকার বিষ দেওয়া থাকে না, এ কারণে আমরা বিষমুক্ত সবজি খেতে পারি। আরেক প্রতিবেশী শেফালী খাতুন জানান, সালেহার সবজি বাজারটা হওয়ায় এলাকার অনেকের উপকার হয়েছে। আমাদের যখন মন চায় আমরা ইচ্ছামতো সবজি এখান থেকে কিনে নিতে পারি। আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় যদি এ ধরনের জমি থাকত তাহলে আমিও সবজির আবাদ করতাম। এখন গ্রামের অনেক গৃহবধূ বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ শুরু করেছেন।

 

Shofolota-03

 

ছালেহা খাতুনের নাতনী শাহেনা আক্তার তামান্না মোবাইলে জানান, নানী প্রতি মাসে লেখাপড়ার খরচ বাবদ আড়াই হাজার টাকা দেন। তিনি জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন, এখন অনেক ভালো আছেন।

 

Shofolota-02

 

ছালেহার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে কৃষি বিভাগ। সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, আমরা কৃষি বিভাগ সালেহা বেগমের সবজি চাষে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছি। আমঝুপি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নের চাঁদবিল গ্রামের সালেহা বেগম নিজ উদ্যোগে তার বসত বাড়ির আঙ্গিনাসহ আশপাশে সবজি চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এটি নজিরবিহীন। আমার ইউনিয়নসহ সারা জেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে যদি একজন করে সালেহা বেগম থাকেন, তাহলে আমাদের দেশের খাদ্য ঘাটতিসহ পুষ্টিহীনতা দূর হবে।

 

নারী পুলিশদের জন্য অপমানকর পরীক্ষা!

Article Lead - wide6327881011ovovimage.related.articleLeadwide.729x410.11oa8q.png1416272517633.jpg-620x349

সেটা ‘টু-ফিঙ্গার এক্সামিনেশন’ নামে পরিচিত। এই পরীক্ষায় একজন নারী যন্ত্রণাবোধ করেন, সম্ভ্রমহানির গ্লানিতে আহত হন, সব শেষে অবসাদে ভরে যায় মনটা। এই দুর্ভোগ পোহাতে হয় ইন্দোনেশিয়ার নারী পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার সময় সতীত্বের পরীক্ষা দিতে গিয়ে। এ নিয়ে দেশটির ভেতরে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই প্রথা বাতিলের দাবি উঠেছে।

আল জাজিরা টেলিভিশনের অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, কথিত সতীত্ব পরীক্ষাকে নারীর জন্য অবমাননাকর, বৈষম্যমূলক ও বেদনাদায়ক হিসেবে উল্লেখ করে তা অচিরেই বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
গতকাল মঙ্গলবার দেওয়া এইচআরডব্লিউয়ের ওই বিবৃতির বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ বিভাগ।
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় পুলিশের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, পুলিশে যোগ দিতে হলে অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি নারীদের অবশ্যই সতীত্বের পরীক্ষা দিতে হবে। অর্থাৎ, যেসব নারী পুলিশ হতে চান, তাঁদের অবশ্যই সতীত্ব বজায় রাখতে হবে।
ভুক্তভোগী একজন নারীর ভাষ্য, ‘সতীত্ব পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশের মতো কষ্টদায়ক আর কিছু নেই।’
অপর এক নারীর ভাষ্য, ‘আমি আর সেই অভিজ্ঞতার কথা মনে করতে চাই না। এটা অবমাননাকর।’
দেশটির পুলিশের অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও এই ‘সতীত্ব পরীক্ষা’ প্রথার বিরুদ্ধে তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। এ বিষয়ে এবার নিন্দা জানাল এইচআরডব্লিউ।
ইন্দোনেশিয়ার পুলিশের এক মুখপাত্রের দাবি, পুলিশে যোগ দিতে আসা নারী প্রার্থীদের মধ্যে যে যৌনবাহিত রোগ নেই, তা নিশ্চিত করতেই ওই পরীক্ষা করা হয়। পেশাদারি প্রক্রিয়ায় করা সতীত্ব পরীক্ষায় কারও কোনো ক্ষতি হয় না।

 

গত এক বছরে সাড়ে ৫হাজারেরও বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

6-svaw06square

বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস’ উদ্যাপন কমিটি ১৯৯৭ সাল থেকে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ পালন করছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকায় নারীদের এক সম্মেলনে ২৫ নবেম্বর ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলনে এই দিবসটিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়া হয়। জাতিসংঘ দিবসটিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, কন্যাশিশু এ্যাডভোকেসি ফোরামসহ বিভিন্ন নারী সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনের নানা আয়োজনে দেশব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ এবং ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ পালিত হচ্ছে। নারী নির্যাতন বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একই সঙ্গে দিবসটি পালন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ-২০১৪ পালন করা হবে। বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর দ্য এলিমিনেশন অব ভায়োলেন্স এ্যাগেইনস্ট উইমেন’ বা আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস ২০১৪ থেকে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ শুরু হলো মঙ্গলবার। ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ২০১৪’ উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ যৌথ উদ্যোগে র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। সেই সঙ্গে নারী নির্যাতনবিরোধী পোস্টার, স্টিকার ও লিফলেট বিতরণ করা হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, পরিবর্তিত হচ্ছে সমাজ কাঠামো, বিকশিত হচ্ছে সভ্যতা। পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে মানুষের জীবন যাত্রায় বরং নারী শব্দটিই যেন নির্যাতন ও শোষণের প্রতিশব্দে পরিণত হয়েছে। উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যমতে, ২০১৪ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা অনুপাতে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইরানের নাম আছে ধারাবাহিকভাবে বিশ্বপরিসংখ্যানে প্রথম সারিতে। এর মধ্যে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রদেশে ৯৫% পরিবার তাদের কন্যার বিয়েতে যৌতুক দিতে বাধ্য হন। যৌতুক দিলেও নারীরা নানা অজুহাতে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে উইকিপিডিয়াতে। পাকিস্তানের পরেই নারী নির্যাতনের দেশ হিসেবে উইকিপিডিয়াতে উঠে এসেছে বাংলাাদেশের নাম। বাংলাদেশে ২০১৩ সালে ৪ হাজার ৪শ’৭ জন নারী যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছে বলে প্রকাশ করেছে উইকিপিডিয়া।

 

সুস্থ-নিরাপদ ডে-কেয়ার ব্যবস্থা,কর্মজীবি নারীদের জন্য দিন দিন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে

image_104369

তিন বছরের নিঝুম ঘুম থেকে ওঠার আগেই তার মা-বাবা নিজ নিজ কর্মস্থলে চলে যায়। এমন দিন খুব কমই আছে সে তার মা-বাবা বা দুজনকেই সকালে উঠে দেখতে পেয়েছে। বাড়ির কাছাকাছি কর্মস্থল হওয়ায় দুপুরে খাবার খেতে মা-বাবা বাড়িতে এলেও তা কিছু সময়ের জন্য। অবুঝ নিঝুম তাদের সঙ্গ চাইলেও মা-বাবার তাড়া থাকে আবার অফিসে যাওয়ার। কাজের লোক তাকে আড়ালে নিয়ে গেলে তারা আবার বেরিয়ে পড়েন কাজের উদ্দেশ্যে। তাই নিঝুমকে দিনের প্রায় সবটা সময়ই কাটাতে হয় বুয়ার কাছে। বাড়িতে প্রায় নিঃসঙ্গ থাকে বলে দরজায় কোনো শব্দ হলেই সে ছুটে যায় কে এলো তা দেখার জন্য। সন্ধ্যায় মা-বাবা ফিরে এলে সংসারের নানা দিকও দেখতে হয় তাদের। এছাড়া থাকে সারা দিনের ক্লান্তি। চাকরি, সন্তান ও সংসার সব দিক সমন্বয় করার চেষ্টা করতে গিয়ে তারা তাদের সন্তানের স্বভাবিক বিকাশের জন্য যেটুকু সময় ও সংস্পর্শ দরকার তা দিতে পারছেন না। ফলে এ তিন বছর বয়সেও নিঝুম শুধু কিছু শব্দ উচ্চারণ করা ছাড়া কোনো প্রশড়ব বোঝা বা তার উত্তর দেয়ার মতো ক্ষমতা অর্জন করেনি। এখনও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাকে আকারে ইঙ্গিতে যোগাযোগ করতে হয়, যা এই বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নয়। 

নিঝুমের মতো সাড়ে তিন বছরের হেমা এক চিকিৎসক দম্পতির সন্তান। কোনো ডে-কেয়ার সেন্টার না থাকায় হেমাকেও কাজের লোকের কাছে থাকতে হয়। হেমার বাবা একাধিক প্রাইভেট ক্লিনিকে কাজ করেন। কারণ তাকে তার নিজের পরিবার ছাড়াও গ্রামে বসবাসকারী মা-বাবা ও ভাই- বোনদের পড়ালেখার খরচ চালাতে হয়। হেমার মা রাজশাহী মেডিকেলে চাকরি করেন। মেধাবী ছাত্রী হওয়ায় তিনি চাকরির পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার জন্য পড়াশোনা করছেন। ফলে হেমার জন্য তার মা-বাবার সময় নিঝুমের চেয়েও কম। মা দুপুরে অফিসের পর বাড়িতে এলেও তার চেষ্টা থাকে বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে লাইব্রেরিতে পড়তে যাওয়ার। ফিরে আসেন রাত নয়টা-দশটায়। আবার মাঝে মাঝেই তাকে রাতে হাসপাতালে ডিউটি করতে হয়। মা-বাবার যথেষ্ট সময় না দিতে পারা এবং বাড়িতে বেশিরভাগ সময় একা থাকার ফলে সে একগুয়ে স্বভাবের হয়ে গেছে। সে যখন যা করতে চায় তখন তাই তাকে করতে দিতে হয়। 
একক পরিবারের প্রচলন বাংলাদেশে বেশ আগে হলেও বর্তমানে এর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। সেই সাথে আধুনিক জীবন যাপনের আকাক্সক্ষা, ব্যয়বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি কারণে নারীরা এখন অনেক বেশি চাকরির সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করছে।

বাংলাদেশ শ্রমশক্তি জরিপ ২০০২-০৩ অনুসারে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে ০ দশমিক ৯৮ কোটি নারী বিভিনড়ব পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। এই শ্রমশক্তির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী পোশাক শিল্পে কাজ করছে। এখানকার মোট শ্রমশক্তির ৯০ শতাংশেরও বেশি নারী শ্রমিক। 
বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মধ্যে অনেকেরই শিশু সন্তান রয়েছে। মায়ের অবর্তমানে যাদের দেখাশোনার জন্য কেউ থাকে না, বা কাজের লোকের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই নারীদের কর্মক্ষেত্রে আসা অব্যাহত রাখতে এবং কাজে মনোযোগী করতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রয়োজন অনুসারে মানসম্পনড়ব ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর্মজীবী মায়েদের বাচ্চাদের রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের যথেষ্ট অভাব রয়ে গেছে। 

জাতীয় শ্রম আইন ২০০৬ অনুসারে কোনো প্রতিষ্ঠানে ৪০ জন নারী থাকলেই সেখানে শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার থাকার বিধান থাকলেও এখন পর্যন্ত খুব কম সংখ্যক প্রতিষ্ঠানেই ডে-কেয়ার সেন্টার রয়েছে। আবার সরকারি ও বেসরকারিভাবে যে ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেগুলোর প্রায় সবই রাজধানীকেন্দ্রিক। চাহিদা ও প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে এখনও পর্যন্ত ভালো মানের ডে-কেয়ার সেন্টারের সংখ্যা খুবই কম। ডে-কেয়ার সেন্টারের মানের ক্ষেত্রে দেখা যায় খোদ ঢাকা শহরেই যেসব ডে-কেয়ার সেন্টার রয়েছে তার কিছু সংখ্যক ছাড়া বেশিরভাগই মানসম্পনড়ব নয়। অর্থাৎ বিভিনড়ব বয়সী শিশুদের উপযোগী পরিবেশ, শিশু অনুপাতে প্রশিক্ষিত পরিচর্যাকারীদের সংখ্যা, নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছনড়বতা, পর্যাপ্ত জায়গা, স্কুলপূর্ব শিশুদের জন্য শিক্ষার পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়গুলোর সমন্বয়ের অভাব রয়ে গেছে এসব ডে-কেয়ার সেন্টারগুলোতে। ব্যাপক সংখ্যক নারী যে পোশাক শিল্পের সাথে জড়িত সেখানে দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ কারখানাতেই ডে-কেয়ার সেন্টার নেই। বেসরকারি সংস্থা কর্মজীবী নারী ২০০৭ সালের জুন মাসে ৫৫টি পোশাক কারখানায় একটি জরিপ চালায়। সেখানে দেখা গেছে, ৫৫টির মধ্যে মাত্র ১৫টি কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার রয়েছে। তবে কর্মজীবী নারীর মাঠপর্যায়ের সমন্বয়ক আরিফা আক্তার অনু বললেন, ‘যেসব কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা রয়েছে তার অধিকাংশই শিশুদের বসবাসের উপযোগী নয়। শুধু নিয়ম রক্ষার জন্য এসব ডে-কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আবার অনেক সময় বিদেশিদের আকৃষ্ট করার জন্য এসব ডে-কেয়ার সেন্টার অস্থায়ী ভিত্তিতে তৈরি করা হয়।’ 
তিনি আরো বললেন, ‘তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা হচ্ছে, নারী গার্মেন্টস শ্রমিকরা মা হওয়ার পর অধিকাংশই তাদের কাজ ছেড়ে দেয় এবং বাচ্চা বড় না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে বসেই উপার্জনমূলক অন্য কাজে শ্রম দেয়। এছাড়া এদের বাচ্চারা দেখাশোনার অভাবে শিশু অবস্থায় বেশি মারা যায় এবং এদের মধ্যে অপরাধী হওয়ার প্রবণতাও বেশি দেখা যায়। মায়েরা শিশুদের নিরাপত্তার জন্য একটু বড় হওয়ার পর গ্রামে আত্মীয়- স্বজনের কাছে পাঠিয়ে দেয় অথবা তালাবন্ধ করে বা শেকল দিয়ে বাড়িতে বেঁধে রেখে আসেন।’ সরকারি উদ্যোগে এ পর্যন্ত নি¤ড়ববিত্ত ও মধ্যবিত্ত কর্মজীবী মায়েদের শিশুদের জন্য ৩২টি ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি মধ্যবিত্তদের জন্য যার সবই ঢাকা শহরে অবস্থিত। নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য বাকি ১৮টির মধ্যে ঢাকা শহরে ৭টি, অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ৫টি এবং বিভিনড়ব জেলা শহরে ১৪টি ডে-কেয়ার সেন্টার রয়েছে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় সরকারি উদ্যোগ এক্ষেত্রে খুব কম। এছাড়া মধ্যবিত্তদের জন্য ঢাকার বাইরে কোনো ডে-কেয়ার সেন্টার নেই।  

সরকারি যে ডে-কেয়ার সেন্টারগুলো আছে সেগুলোতেও লোকবলের অভাব রয়েছে। আবার নি¤ড়ববিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য প্রতিষ্ঠত ডে-কেয়ার সেন্টারগুলোতে রয়েছে বৈষম্য। মধ্যবিত্তদের জন্য নির্ধারিত ডে-কেয়ার সেন্টারগুলোতে ৫০টি শিশুকে দেখাশোনার জন্য যেখানে দুজন কাজ করছে, সেখানে নি¤ড়ববিত্তদের ডে-কেয়ার সেন্টারগুলোতে শিশুর সংখ্যা ৮০ হলেও আয়ার সংখ্যা বাড়েনি অর্থাৎ এখানেও দুজন আয়া রাখা হয়েছে। এছাড়া সকল সরকারি ডে-কেয়ার সেন্টারে দুজন কুকের পদ থাকার নিয়ম থাকলেও বর্তমানে নি¤ড়ববিত্তদের ডে-কেয়ার সেন্টারে একটি কুকের পদ বাদ দেয়া হয়েছে এবং এখানে কোনো স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ দেয়া হয়নি। 

মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের শিশু উনড়বয়ন বিভাগের সহকারী পরিচালক শামীমা খানম এ সম্পর্কে বলেন, ‘ডে-কেয়ার সেন্টারের মানের ক্ষেত্রে শিশু অনুপাতে যথেষ্ট লোকবল অবশ্যই থাকা উচিত। তবে সরকার অর্থের অপর্যাপ্ততার কারণ দেখিয়ে লোকবল কমিয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে অধিদফতরের ডে-কেয়ার সেন্টারটিতে ৫০টি শিশু থাকার ব্যবস্থা থাকলেও রয়েছে ১৫টি শিশু।’ শিশুদের রাখতে আসার সমস্যার কথাটিও তিনি এ সেন্টারে শিশু কমে যাওয়ার একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করলেন। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের আইইআরে অবস্থিত ছায়ানীড় নামে যে ডে-কেয়ার সেন্টারটি রয়েছে সেখানে দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের থাকার ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে চাকরিজীবী মায়েদের চার মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয়া হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অনেক মা তার প্রতিষ্ঠানে ডে-কেয়ার সেন্টার থাকা সত্ত্বেও তাদের দুই বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের সেখানে রাখতে পারছেন না। 

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে কর্মজীবী মায়েরা তাদের শিশুদের ডে-কেয়ার সেন্টারে রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেও পর্যাপ্ত সংখ্যক ডে-কেয়ার সেন্টার না থাকা ও এগুলোর বিভিনড়ব সমস্যার কারণে বাবা-মা তাদের বাচ্চাকে সেখানে রাখতে পারছেন না। ফলে মা ও শিশু উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মা তার সন্তানের চিন্তায় যথেষ্ট দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কর্মস্থলে সর্বোচ্চ মানের কাজ দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ক্যারিয়ার ও সন্তান কোনোদিকেই তারা যথার্থ মনোযোগ দিতে পারছেন না। উভয় দিক সামলাতে না পেরে কর্মজীবী মায়েরা অনেক সময় নিজেদের ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে ছাড় দিতে বাধ্য হন। কেউ চাকরি ছেড়ে দেন, আবার কেউ সন্তান একটু বড় না হওয়া পর্যন্ত উচ্চশিক্ষা নেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। এছাড়া কর্মক্ষেত্রেও নানা বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন।

লিখেছেন- শামিম আরা বেগম।

নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে সমাজের বিবেক জাগ্রত হোক

6-svaw06square

নারী নির্যাতন প্রতিরোধের আন্দোলন কেবল নারীদের নয়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমাজের শিক্ষিত বিবেকবান সকল মানুষের সামাজিক দায়িত্ব। তাই নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে পুরুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে। নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া বন্ধ করতে হবে। যৌতুক, পারিবারিক সহিংসতা ও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নারীদের প্রতি সকল প্রকার সহিংসতারোধে দেশের তরুণ-যুবসমাজকে সচেতন, বলিষ্ঠ ও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০১৪ উপলক্ষে এক সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। গতকাল শনিবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে নারী নির্যাতন বিরোধী এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরুষ সমাবেশের  আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ (বিএমপি)। ‘নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে সমাজের বিবেক জাগ্রত হোক’ এ আহবান জানিয়ে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০১৪ পালিত হচ্ছে।

বিএমপির উদ্যোগে গত ২৫ নভেম্বর থেকে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এই প্রতীকী পুরুষ সমাবেশ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধে অভিভাবক, শিক্ষক ও এলাকার সামাজিক রাজনৈতিক নেতাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সক্রিয় উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ যা নারী নির্যাতনের সংস্কৃতিকে সমর্থন করে তা প্রতিরোধ ও নিরোধের লক্ষ্যে জাতীয় নীতি ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সংগঠনের সভাপতি আয়শা খানমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট লেখক গবেষক জনাব মফিদুল হক, এডভোকেট এস এম এ সবুর, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. সামন্তলাল সেন, সাবেক ছাত্রনেতা জনাব মাহবুব জামান, মিরপুর থানা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি দেওয়ান আবদুল মান্নান ও আহমদনগর পাইকপাড়ার আরিফ হোসেন প্রমুখ। সমাবেশে গণসঙ্গীত ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। সমাবেশ পরিচালনা করেন বিএমপির ডিরেক্টর লিগ্যাল এডভোকেসি এন্ড লবি এডভোকেট মাকছুদা আখতার। আয়শা খানম বলেন, নারীর বিষয়ে সমাজের পুরুষদের যে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতা সেখান থেকে আধুনিক যুক্তিযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের জন্যে সচেতনতার প্রয়োজন। সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী।  সকল ক্ষেত্রে সম অংশগ্রহণের সুযোগ না পেলে এবং নারী ও কন্যাশিশুদের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতা বন্ধ না হলে সমাজ ও রাষ্ট্র এগিয়ে যেতে পারবে না। নারীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, এসিড সন্ত্রাস, যৌতুকের দাবি, পারিবারিক সহিংসতা-এসব প্রতিরোধে যেসব আইন রয়েছে তার বাস্তব প্রয়োগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষের ঘোষণায় বলা হয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহিংসতার অস্ত্র হিসেবে ধর্ষণের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা, এসিড নিক্ষেপ, উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন, বে-আইনী ফতোয়ার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সকল নির্যাতন বন্ধে নিরবতা ভেঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও নির্মূলের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সচেতনতামূূলক কর্মসূচিতে নারী ও কন্যাশিশুদের যুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে পুরুষদেরও যুক্ত করে সাধারণ গণমানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

ঘোষণায় আরো বলা হয়, আন্তর্জাতিক সিডও সনদের অনুচ্ছেদ- ২ ও ১৬(১)(গ) -এর উপর থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ এর দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার এবং ওসিসির কার্যক্রম আরও বিস্তৃতি করতে হবে। প্রতিটি মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার চালু করার লক্ষ্যে বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখতে হবে। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের সংখ্যা বৃদ্ধি ও এর অবকাঠামো তৈরি ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক খাতে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবার থেকে নারী নির্যাতন বিরোধী সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বানও জানানো হয় ঘোষণাপত্রে।

 

২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে: প্রধানমন্ত্রী

২০২০ সালে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হবে বলেও আশা করেন তিনি।
আজ শনিবার দুপুরে হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধনের পর অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে দেশে দৈনিক এক হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হতো। এখন ২০১৪ সালে গ্যাসের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৫৪ মিলিয়ন ঘনফুট। তিনি বলেন, ‘আমরা সুন্দলপুর, শ্রীকাইল ও রূপগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছি। এই গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উন্নয়নকাজ শেষ হলে অতিরিক্ত ৭১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।’
সেখানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সভাপতিত্ব করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহি চৌধুরী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী প্রমুখ।
বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
এর আগে প্রধামন্ত্রী বিবিয়ানা গ্যাস সম্প্রসারণ প্রকল্প ও ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন করেন। পরে তিনি বিদ্যুৎ প্রকল্প-৩ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ ছাড়া বিবিয়ানা-ধুনুয়া ৩৬ ইঞ্চি গ্যাসবিশিষ্ট উচ্চচাপ পাইপ সঞ্চালন লাইন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক (এন-২) থেকে বিবিয়ানা বিদ্যুৎ প্রকল্পের সংযোগ সড়ক, বিজনা সেতু রসুলগঞ্জ ভায়া রইছগঞ্জ পানিউমদা ৯০ দশমিক ১০০ মিটার গার্ডার আরসিসি সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তরসহ নয়টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

বিকেল তিনটার দিকে হবিগঞ্জ নিউফিল্ড মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় তিনি বক্তব্য দেবেন।

 

ধবলধোলাইয়ের-বাকি-মাত্র-এক

স্টিভেন ম্যাঙ্গোঙ্গো, গিভমোর মাকোনি ও মুফারো চিতুরুমানি। প্রথমজন জিম্বাবুয়ে দলের কোচ, দ্বিতীয়জন প্রধান নির্বাচক আর তৃতীয়জন ম্যানেজার। প্রতিটি ম্যাচেই টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায় ড্রেসিংরুমের সামনে বসে থাকা এই ত্রয়ীর করুণ মুখ। যেন তাঁদের কেউ জোর করে বসিয়ে রেখেছে। ম্যাচ-ট্যাচ বাদ দিয়ে দেশে ফিরে যেতে পারলেই বাঁচেন সবাই!
একের পর এক হারে জিম্বাবুয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট সদস্যদের সময়টা নিরানন্দ কাটাই স্বাভাবিক। আগের ম্যাচেই সিরিজ হার নিশ্চিত হওয়ার পর কাল ব্যবধান বেড়ে হলো ৪-০। শেষ পর্যন্ত এটি ৫-০ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। চোখের সামনে দলের এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখে ম্যাঙ্গোঙ্গো-মাকোনি-চিতুরুমানির মন খারাপ হতেই পারে। তবে একটা জায়গায় কাল তাঁরাও নিশ্চয়ই খুঁজে পেয়েছেন ‘উন্নতি’র লক্ষণ? ওয়ানডে সিরিজে কালই যে প্রথম দুই শর ওপরে রান করল জিম্বাবুয়ে! বাংলাদেশের ২৫৬ রানের জবাবে তারা ৮ উইকেটে করতে পেরেছে ২৩৫, হার ২১ রানে।
এই ২৩৫-এ সবচেয়ে বড় অবদান চতুর্থ উইকেটে ব্রেন্ডন টেলর ও সলোমন মায়ারের ১০৬ রানের জুটির। ৬০ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর ওই জুটির সৌজন্যেই ম্যাচে টিকে থাকতে পেরেছে জিম্বাবুয়ে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। দলের ১৬৬ রানের সময় মায়ারকে কাভারে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানিয়ে জুটিটা ভেঙে দেন ওয়ানডেতে অভিষিক্ত লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন। এর আগে টিমিচেন মারুমার উইকেটটিও নেওয়ায় জুবায়েরের বোলিং বিশ্লেষণ ৬-০-৪২-২। প্রথম ম্যাচ হিসেবে বোলিংটা একেবারে খারাপ নয়। তবে বাংলাদেশের সফলতম বোলার বলতে হয় সাকিব আল হাসানকেই। ১০ ওভারে ১ মেডেনসহ ২৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট।
বাংলাদেশে আসার একটি লক্ষ্য তো অবশ্যই দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা। কিন্তু এখানে আসার পর জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের সামনে চলে আসে আরেকটা লক্ষ্যও, ভালো খেলে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের কোনো ক্লাবে ডাক পাওয়া। সে লক্ষ্য পূরণে এর মধ্যেই সফল চার ক্রিকেটার। সিরিজ শেষে হ্যামিল্টন মাসাকাদজা খেলবেন আবাহনীর হয়ে, ব্রেন্ডন টেলরকে দেখা যাবে প্রাইম ব্যাংকে, এলটন চিগুম্বুরাকে প্রাইম দোলেশ্বরে এবং রেজিস চাকাভার খেলার কথা মোহামেডানে।
বিসিবি দুবাইয়ে সহযোগী দেশগুলোর টুর্নামেন্টে দল পাঠাবে না বলে বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্যও নিজেদের প্রমাণ করার একমাত্র জায়গা এখন প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আত্মবিশ্বাস যা নেওয়ার নিতে হবে ১ ডিসেম্বর শেষ হতে যাওয়া জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকেই। তা সেটিতে এখন পর্যন্ত দারুণ সফল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। যদিও কাল চতুর্থ ওয়ানডের শুরুটা হয়েছিল হোঁচট খেয়ে।
আগের দুই ম্যাচেই ওপেনিং জুটিতে এক শর বেশি রান হয়েছে। কিন্তু কাল ব্যর্থ দুই ওপেনারই। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে নেভিল মাদজিভার বলে এলবিডব্লু এনামুল হক। ১১তম ওভারে দলকে ৩১ রানে রেখে মায়ারের বলে মাসাকাদজার ক্যাচ হন তামিম ইকবাল। এর পরের দুই ওভারে নেই হয়ে গেল আরও ২ উইকেট। তিন নম্বরে মুমিনুল হকের জায়গায় সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগাতে পারেননি ইমরুল কায়েস। পরের ওভারে সাকিবও বিদায় নিলে রীতিমতো খাদে পড়ার উপক্রম হয় বাংলাদেশ দলের। ৩২ রানে ৪ উইকেট নেই প্রতিপক্ষের—জিম্বাবুয়ে নিশ্চয়ই সান্ত্বনার জয় খুঁজে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছিল তখন?
কিন্তু বাংলাদেশ হারতে চাইলেও জিম্বাবুয়েকে তো জিততে চাইতে হবে! সেটা তারা চাচ্ছে বলে মনেই হলো না। তাদের সামনে পর্বত হয়ে দাঁড়াল দুই ভায়রা মাহমুদউল্লাহ আর মুশফিকুর রহিমের পঞ্চম উইকেট জুটি। ওভারপ্রতি ৫.৩২ করে নিয়ে এই জুটিতে এল ১৩৪ রান। ব্যাটিং পাওয়ার প্লের তৃতীয় ওভারে কামুনগোজিকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মুশফিক কাভারে ক্যাচ তুলে না দিলে আরও বড় হতে পারত জুটিটা, বড় হতে পারত বাংলাদেশের স্কোরও। মুশফিকের আউটে সেটি হলো না, বরং ব্যাটিং পাওয়ার প্লের মধ্যে বিদায় নিলেন নতুন ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমানও। ৩৬ থেকে ৪০—ব্যাটিং পাওয়ার প্লের এই ৫ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা হয়েছে মাত্র ২১ রান।
পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরের ওভারে আবুল হাসানও বিদায় নিলে মনে হচ্ছিল এবার বুঝি বাংলাদেশের দুই শর নিচে অলআউট হওয়ার পালা। ৭ উইকেটে ১৭৭ রানে ও রকম শঙ্কা জাগাই স্বাভাবিক ছিল তখন। দলকে সেই লজ্জা থেকে বাঁচিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ ও অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। অষ্টম উইকেটে ৮ ওভার একসঙ্গে থেকে ৬৫ রান যোগ করেছেন দুজনে মিলে। ম্যান অব দ্য ম্যাচ মাহমুদউল্লাহ শেষ পর্যন্ত ৮২ রানে অপরাজিত। আর মাশরাফি মাদজিভার বলে কট বিহাইন্ড হয়ে গেলেও দুই ছক্কা আর চার বাউন্ডারিতে মাত্র ২৫ বলে করে গেছেন ৩৯ রান।
ম্যাচটা শুরু হয়েছিল ফিল হিউজের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে। জিম্বাবুয়ের জন্য ম্যাচের শেষটাও হলো শোকের। বাংলাদেশ তাদের জেতার সুযোগ দিলেও চিগুম্বুরার দল যেন জিততে ভুলে গেছে! অবশ্য বাংলাদেশে এসেই তো হার আর হার, এত দিনে পরাজয়ের সঙ্গে তাদের মিতালিই হয়ে যাওয়ার কথা।

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৫৬/৮; জিম্বাবুয়ে: ৫০ ওভারে ২৩৫/৮; ফল: বাংলাদেশ ২১ রানে জয়ী

আহ! শামারুখ!!

 

Mahjabin (1)

 

নাজমা ফেরদৌসী, অপরাজিতাবিডি ডটকম : বাংলাদেশের প্রথমসারির এক দৈনিকে ডা. শামারুখকে নিয়ে শেষ পৃষ্ঠায় আজকের (১৯.১১.২০১৪) খবর ছিল “ছয়দিনেও প্রধান আসামিকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।”

 

যশোরের বর্তমান সরকার দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতানের পুত্রবধূ ডা: শামারুখ মাহজাবিন আত্মহত্যা করেছেন মর্মে তাঁর গ্রেফতারকৃত স্বামী হুমায়ুন সুলতান উল্লেখ করেছেন। আত্মহত্যা বলে প্রতিষ্ঠিত করা গেলে এই মৃত্যুর দায় হতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ রেহাই পেয়ে যায়। আর তারই মহড়া হচ্ছে এসব উক্তি। আত্মহত্যাকারী আত্মহননের জন্য নিজেই দায়ী। তখন এটির জন্য একটি অপমৃত্যুর মামলা হবে। তারপর কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে।

 

উল্লিখিত দৈনিকের ভাষ্য মতে, “মৃত্যুর একদিন আগেও চিকিৎসক শামারুখ মাহজাবিন তাঁর শ্বশুরবাড়িতে খুন হওয়ার আশংকা করে নিজের বাবাকে ফোন করেছিলেন। শামারুখের বাবা সুনির্দিষ্টভাবে একথা উল্লেখ করে হত্যা মামলা করলেও সেই বিষয়ে ওই মামলার প্রধান আসামি , শামারুখের শ্বশুর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ খান টিপু সুলতানকে জিজ্ঞাসাবাদই করেনি পুলিশ।”

 

ডা: শামারুখের স্বামী হুমায়ুন সুলতানের দাবী অনুযায়ী চিকিৎসক শামারুখ যদি আত্মহত্যাই করবে, তবে খুন হওয়ার আশংকায় তাঁর পিতাকে কেন ফোন করেছিল? এই একটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেলেই হয়তো মিলে যাবে কতটা মানসিক নির্যাতনে জর্জরিত ছিলেন মৃত্যুর নীল বেদনায় আচ্ছাদিত শামারুখ।

 

এ প্রসঙ্গে র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমনের কথা মনে পড়ছে। যাকে সন্ত্রাসী হিসেবে প্রমাণের শত চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে মিডিয়াগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায়। লিমনের প্রতি মিডিয়ার নিরবচ্ছিন্ন সহানুভূতিতে যেমন সত্য উদ্ঘাটিত হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে লিমন সন্ত্রাসী নয়। তেমনি মিডিয়ার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় কি ডা: শামারুখের উপর নির্মম নির্যাতনের সত্য উদ্ঘাটিত হতে পারেনা? বেচে থাকার ন্যূনতম সহানুভূতি বঞ্চিত শামারুখ কি মরেও আমাদের সহানুভূতি পাবে না?

 

আহ! শামারুখ!! কতটা নিষ্ঠুর ছিল তোমার হত্যাকারীরা!!! হত্যাকারীদের বুকের ভেতর লালিত আদর্শ এদেরকে কতটা নিষ্ঠুর হতে শিখিয়েছে!! ইসলামতো এমন কোনো শিক্ষা মানুষকে দেয় না। যদি দুজনার দুটি পথ কখনো বেকে যায়, ফিরানো না যায়; তবে তাকে সরে যেতে কিংবা নিজে সরে গিয়ে সুযোগ করে দিতেই ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে। ইসলামের শ্বাশত এই মানবিকতাকে প্রগতিশীলতার মোড়কে অধার্মিক হবার প্রতিযোগিতায় উপনীত হয়ে ইসলামের মানবিক শিক্ষাকে যতটুকু আমরা এড়িয়ে চলছি, নিষ্ঠুরতা আমাদের সমাজকে ততটুকু গ্রাস করে নিচ্ছে।

 

অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরএ/এ/নভেম্বর২০১৪.

 

 

  

দেশি কায়দায় চায়নিজ খাবার তৈরী পদ্ধতি।

Fried-Fice

ফ্রাইড রাইস

উপকরণ: বাসমতি বা পোলাওয়ের চাল আধা কেজি। ডিম ২টি। গাজর আধা কাপ। লবণ ২ চা-চামচ। গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ। পেঁয়াজ এক কাপের চারভাগের একভাগ। স্বাদ-লবণ বা টেস্টিং সল্ট চা-চামচের সিকিভাগ। পেঁয়াজকলি এক কাপের চারভাগের একভাগ। সয়া সস ১ চা-চামচ। সয়াবিন তেল ৪ টেবিল-চামচ। চিনি ২ টেবিল-চামচ।

পদ্ধতি: ভাত ঝরঝরে করে রান্না করতে হবে। গাজর এবং পেঁয়াজকলি কুচি করে নিন। ডিমে লবণ এবং গোলমরিচ দিয়ে ফেটে আলাদাভাবে ভেজে ছোট টুকরা করে নিন। বড় হাঁড়ি বা কড়াইয়ে তেল গরম করে পেঁয়াজ এবং গাজর ভাজুন। তারপর ভাত দিয়ে একে একে বাকি সব উপকরণ দিয়ে দিন। ৮ থেকে ১০ মিনিট রান্না করে নামিয়ে ফেলুন।

P1200768চায়নিজ সবজি

উপকরণ: চালকুমড়া এক কাপের চারভাগের একভাগ। গাজর ও আলু ১টি করে। ১টি পেঁয়াজ। নিজের পছন্দমতো কাঁচামরিচ। ধনেপাতা নিজের পছন্দমতো। আদা চা-চামচের চারভাগের একভাগ। রসুন চা-চামচের চারভাগের একভাগ। লবণ স্বাদমতো। তেল ৪ টেবিল-চামচ। চিনি মিষ্টি বুঝে। গোলমরিচের গুঁড়া চা-চামচের চারভাগের একভাগ। কর্নফ্লাওয়ার ১ চা-চামচ।

পদ্ধতি: প্রথমে প্যানে তেল দিয়ে পেঁয়াজ হালকা ভাজতে হবে। এরপর চালকুমড়া, গাজর, আলু দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে নিন। তারপর আদা, রসুন, গোলমরিচের গুঁড়া ও লবণ দিয়ে ভাজতে থাকুন। বেশখানিকটা পানি বের হবে। পানি কিছুটা শুকিয়ে আসলে চিনি, কর্নফ্লাওয়ার, কাঁচামরিচ এবং ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

রেসিপি দিয়েছেন,নদী সিনা।

গত এক বছরে সাড়ে ৫হাজারেরও বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

 বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস’ উদ্যাপন কমিটি ১৯৯৭ সাল থেকে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ পালন করছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকায় নারীদের এক সম্মেলনে ২৫ নবেম্বর ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলনে এই দিবসটিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়া হয়। জাতিসংঘ দিবসটিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, কন্যাশিশু এ্যাডভোকেসি ফোরামসহ বিভিন্ন নারী সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনের নানা আয়োজনে দেশব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ এবং ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ পালিত হচ্ছে। নারী নির্যাতন বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একই সঙ্গে দিবসটি পালন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ-২০১৪ পালন করা হবে। বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর দ্য এলিমিনেশন অব ভায়োলেন্স এ্যাগেইনস্ট উইমেন’ বা আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস ২০১৪ থেকে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ শুরু হলো মঙ্গলবার। ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ২০১৪’ উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ যৌথ উদ্যোগে র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। সেই সঙ্গে নারী নির্যাতনবিরোধী পোস্টার, স্টিকার ও লিফলেট বিতরণ করা হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, পরিবর্তিত হচ্ছে সমাজ কাঠামো, বিকশিত হচ্ছে সভ্যতা। পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে মানুষের জীবন যাত্রায় বরং নারী শব্দটিই যেন নির্যাতন ও শোষণের প্রতিশব্দে পরিণত হয়েছে। উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যমতে, ২০১৪ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা অনুপাতে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইরানের নাম আছে ধারাবাহিকভাবে বিশ্বপরিসংখ্যানে প্রথম সারিতে। এর মধ্যে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রদেশে ৯৫% পরিবার তাদের কন্যার বিয়েতে যৌতুক দিতে বাধ্য হন। যৌতুক দিলেও নারীরা নানা অজুহাতে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে উইকিপিডিয়াতে। পাকিস্তানের পরেই নারী নির্যাতনের দেশ হিসেবে উইকিপিডিয়াতে উঠে এসেছে বাংলাাদেশের নাম। বাংলাদেশে ২০১৩ সালে ৪ হাজার ৪শ’৭ জন নারী যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছে বলে প্রকাশ করেছে উইকিপিডিয়া।

 

untitled-13_100063
২০১৩-২০১৪ এক বছরে বাংলাদেশে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ১৪টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তৈরি করা পরিসংখ্যানমতে, নির্যাতিত নারীদের মাত্র ২% আইনের আশ্রয় নেন। এ ছাড়া লোকলজ্জার ভয়ে নির্যাতনের কথা লুকিয়ে রাখার প্রবণতার কারণে গণমাধ্যমে অনেক খবরই প্রকাশ পায় না। প্রকৃত ঘটনার চিত্র এবং পরিসংখ্যান অনেক ভয়াবহ বলে মনে করেন মহিলা পরিষদ নেতৃবৃন্দ। ২০০৮ সালে যৌতুকের কারণে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২শ’ ৬৯টি। ২০১২ সালে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৭শ’ ৭১টি। অর্থাৎ ২০০৮-২০১২ সালে নারী নির্যাতনের হার বেড়েছে ৪৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ধর্ষণের হার বেড়েছে ১৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উন্নযয়ন অন্বেষণ’-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।

‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস’-২০১৪ উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের যৌথ উদ্যোগে ‘যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সকল প্রকার সহিংসতা মুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই’ আহ্বান জানিয়ে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র‌্যালির শুরুতে সভাপতির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আয়শা খানম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তানিয়া হক। র‌্যালিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, ঢাকা মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীসহ মোট ৫০০ জন উপস্থিত ছিলেন। ‘নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে সমাজের বিবেক জাগ্রত হোক’ এই সেøাগানকে সামনে রেখে র‌্যালি শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের বটতলায় যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক পটগান পরিবেশন করে ‘রূপান্তর’-এর শিল্পীবৃন্দ। র‌্যালির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, নীলক্ষেত মোড়, নিউমার্কেট এলাকা, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, আজিমপুর মোড়, আজিমপুর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও গণমানুষের মাঝে নারী নির্যাতনবিরোধী পোস্টার, স্টিকার ও লিফলেট বিলি করা হয়।নারী নির্যাতন প্রতিরোধে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যৌথ উদ্যোগে এ শোভাযাত্রা বের করা হয়। এটি অপরাজেয় বাংলা থেকে শুরু হয়ে টিএসসি ঘুরে পুনরায় অপরাজেয় বাংলায় গিয়ে শেষ হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা ও বয়সের শতাধিক নারী পুরুষ অংশ নেয়। 

এর আগে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ উপলক্ষে ১৫ দিনব্যাপী কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক অনুষ্ঠানে এ কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হয়। এতে উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপার্সন তানিয়া হক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আয়েশা খানম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে-শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা, পটগান পরিবেশন, ছাত্র-শিক্ষক মতবিনিময় ইত্যাদি।

বখাটেদের হুমকিতে স্কুল যাওয়া বন্ধ!!

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার কোমরভাঙ্গি সরকারপাড়া গ্রামে বখাটে শহীদুল ইসলামের এ্যাসিড ছোড়ার হুমকিতে ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী স্কুলে যেতে পারছে না এক সপ্তাহ ধরে। তার দরিদ্র বাবা আবু বক্কর রৌমারী থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও কোন লাভ হয়নি। অজ্ঞাত কারণে তদন্তকারী কর্মকর্তা বখাটের পরিবারের পক্ষ নিয়ে স্কুলছাত্রীর পরিবারকে মীমাংসা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। স্কুলছাত্রীর বাবা পুলিশে অভিযোগ করায়, বখাটের পরিবার ক্ষিপ্ত হয়ে স্কুলছাত্রীর পরিবারের ওপর বিধিনিষেধ জারি করেছে। দিনমজুর আবু বক্করকে গ্রামের কেউ যাতে কাজে না নেয়, এমন হুমকিতে পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। রৌমারী উপজেলার কোমরভাঙ্গি সরকারপাড়া গ্রামের দিনমজুর আবু বক্করের কন্যা মমতাজ খাতুন কোররভাঙ্গি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। স্কুলে যাতায়াতের পথে একই গ্রামের গোলাম হোসেনের পুত্র শহীদুল ইসলাম মেয়েটির পথ আটকে নানাভাবে উত্যক্ত করে, তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ১৭ নবেম্বর ওই বখাটে ওই স্কুলছাত্রীর পথ আটকে এসিডে মুখ ঝলসে দেয়ার হুমকি দেয়। এরপর থেকে মেয়েটি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। 
কোমরভাঙ্গি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি কিন্তু ছাত্রী মমতাজ আমার কাছে আসেনি। তবে আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিব।’
দিনমজুর পিতা আবু বক্কর জানান, মেয়েটি ভয়ে স্কুলে যাচ্ছে না। থানায় অভিযোগ করলাম পুলিশও কিছু করে না। তিনি আরও বলেনÑ পুলিশে অভিযোগ করার কারণে শহীদুল ইসলামের বাবা গোলাম হোসেন, চাচা রফিকুল ইসলাম ও আবু শামা গ্রামে না থাকার হুমকি দিচ্ছে। দুইদিন থেকে গ্রামে কেউ কাজ দিচ্ছে না। বখাটে শহীদুল ইসলামের চাচা রফিকুল ইসলাম বলেন, সব মিথ্যা কথা। পুলিশ বিষয়টি মীমাংসা করতে বলেছে। রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম হাসান সরদার অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।

নারী নির্যাতন,ঘর থেকে বাইরে!

6-svaw06square

আজ ২৫শে নভেম্বর,আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিবাদ দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায়,বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। এবং সেই সাথে ২৫শে নভেম্বর থেকে ১০ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পালিত হবে,নারী নির্যাতন প্রতিবাদ পক্ষ। এই উপলক্ষ্যে লিখেছেন,কলামিষ্ট মাসুদুল আলম তুষার।

ঘরে-বাইরে নানা রূপে নারীর ওপর নির্যাতন চলছে। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের চেষ্টায় নির্যাতন আরো বাড়ছে; ভয়ংকর সহিংস রূপ নিচ্ছে তা। দিন পেরিয়ে সপ্তাহ, মাস; মাস পেরিয়ে বছর। সময় গড়াচ্ছে; কিন্তু দেশে নারী নির্যাতনের চিত্র রয়ে যাচ্ছে প্রায় আগের মতোই। যেটুকু বদল ঘটছে, তা নির্যাতনের কৌশলে। অসহনীয় পারিবারিক নির্যাতনে অসহায় নারী ‘আত্মহত্যা’ করছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে সেসব। হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, এসিড নিক্ষেপ প্রভৃতি ঘটনার পরিসংখ্যান বাড়তির দিকেই।

অপরাধ বিশ্লেষক ও মানবাধিকারকর্মীদের মতে, সমাজ পরিবর্তন ও আধুনিকতার সূত্রে নারী নির্যাতনের ঘটনা কমার কথা; কিন্তু কমছে না, বরং বেড়ে যাচ্ছে। সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ ক্ষয়ে যাচ্ছে, দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল ধরছে বিবিধ কারণে। এসবের সুবাদে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে নারীর সুরক্ষা বিধানের পথে।
গত দুই মাসের শতাধিক ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পারিবারিক সহিংসতা ভয়ংকর পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর এ সহিংসতার প্রধান শিকার নারী।
যৌতুক অথবা মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে স্বামী আগুন দিচ্ছে স্ত্রীর গায়ে; নৃশংসভাবে হত্যা করছে। পরকীয় সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতেও দাম্পত্য-বিরোধ দেখা দিচ্ছে, ঘটছে বীভৎস ঘটনা। নৃশংসতা মাত্রা ছাড়াচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনে শিথিলতা দেখা দেওয়ায় সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা, বিরোধ নিষ্পত্তিতে আইনি প্রক্রিয়ায় বিলম্ব, শিথিলতা প্রভৃতি নারীর প্রতি সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে। এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিক-পারিবারিক মূল্যবোধ জোরালো করতে হবে। প্রতিষ্ঠিত করতে হবে পারিবারিক অনুশাসন। আর সার্বিক সচেতনতা সৃষ্টির যে প্রক্রিয়া, তা ঢেলে সাজাতে হবে। সরকারকে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। এ ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ গাফিলতি আছে বলে মনে করেন মানবাধিকারকর্মীরা।
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান এ প্রসঙ্গে  বলেন, ‘নারী নির্যাতনের ধরন পাল্টেছে, তবে কমেনি। সমাজে সচেতনতা তৈরিতে যারা কাজ করছি, তারা লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। পুরুষের মাধ্যমে নির্যাতনের পাশাপাশি এখন নারীর মাধ্যমে নারী নির্যাতনের অভিযোগও অহরহ আসছে। পরকীয় সম্পর্ক ও লিভ টুগেদার বাড়ছে, যা নারী নির্যাতনের সহায়ক কারণ। অন্যদিকে প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমেও নারী নির্যাতন ঘটছে। বর্তমানে নারীর প্রতি যে ধরনের সহিংস আচরণ দেখা যাচ্ছে, তা আগে এতটা তীব্র ছিল না। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।’
যৌতুকের টাকার জন্য বিয়ের মাত্র ১৫ দিনের মাথায় স্বামীর দেওয়া আগুনে পুড়ে গত রবিবার মারা গেছেন নরসিংদীর গৃহবধূ সুবর্ণা আক্তার (১৮)। নরসিংদী সরকারি কলেজের এ ছাত্রীর বিয়ে হয়েছিল ইলিয়াস হোসেন (২১) নামের এক বেকার যুবকের সঙ্গে। দাবীকৃত দুই লাখ টাকা না পেয়ে ইলিয়াস ক্ষিপ্ত হয়ে আগুন দেয় বলে মৃত্যুকালে দেওয়া জবানবন্দিতে সুবর্ণা জানিয়েছেন। গত ৮ অক্টোবর রাতে কুষ্টিয়ার মিরপুরে চম্পা বেগম নামের এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে হত্যা করা হয়। জমিসংক্রান্ত বিরোধে চাচাশ্বশুর এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ। এ মাসেই নরসিংদীতে যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বামী পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছে সালেহা আক্তার (২২) নামের এক গৃহবধূকে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গত ৬ অক্টোবর ঘটে এক পৈশাচিক ঘটনা। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় একই পরিবারের চারজনকে ঘরে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে বখাটেরা। গৃহবধূ হাসনা বেগম (৩৫), তাঁর তিন মেয়ে মনিরা আক্তার (১৪), মীম আক্তার (১১) ও মলি আক্তার (৭) ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় এ নিষ্ঠুরতার শিকার হয়।
অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, সামাজিক ও পারিবারিক সহিংসতা বাড়ার অন্যতম কারণ মাদক ও পরকীয় সম্পর্ক। যৌতুক, সামাজিক ও পারিবারিক বৈষম্য, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, প্রযুক্তির অপব্যবহার, সমাজ পরিবর্তনের অসুস্থ ধারা, অস্বাভাবিক আর্থিক পরিবর্তন, সামাজিক ও পারিবারিক বৈষম্য প্রভৃতি কারণে অসহিষ্ণু পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এরই প্রকাশ ঘটছে সহিংস-রূপে। এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় উদাসীনতাকেও দায়ী করেছেন অনেকে। আর এ সহিংসতার প্রধান শিকার হচ্ছে নারী।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক  বলেন, ‘সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই মূলত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সমাজ পরিবর্তনের ধারা অস্বাভাবিক হওয়ায় পারিবারিক অনুশাসন ও মূল্যবোধ ক্ষয়ে গেছে। আর মাদকের প্রভাব ও আকাশ সংস্কৃতির কারণে নিষ্ঠুরতা, নৃশংসতার বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্দেহের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে এবং তা গড়াচ্ছে নির্যাতনের দিকে। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতা বাড়ছে। তাতে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার দায়ও রয়েছে। কখনো দীর্ঘমেয়াদি নির্যাতনের শিকার হয়ে ক্রোধবশত অনেকে নৃশংস ঘটনা ঘটাচ্ছে। শুধু আইনি প্রচেষ্টায় এ অবস্থার উন্নতি হবে না। পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি মূল্যবোধ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। নারীর অধিকার রক্ষা ও সচেতনতা বাড়াতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।’
সম্প্রতি জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউনিসেফ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে শীর্ষে। ৪৭ শতাংশ বিবাহিত নারী স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে এ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ হার ৩৪ শতাংশ।
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। এ বছর জানুয়ারি মাসে সারা দেশে এক হাজার ১২৭টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ২৫৬, মার্চে এক হাজার ৬৬৯, এপ্রিলে এক হাজার ৯৮৮,  মে মাসে দুই হাজার ৬৯, জুনে এক হাজার ৯৮১, জুলাইয়ে এক হাজার ৮২৩, আগস্টে দুই হাজার ২১৩ জন, সেপ্টেম্বরে দুই হাজার ৩১৭ ও অক্টোবরে দুই হাজার ৭৩ জন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, ২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেশে শুধু ধর্ষণের শিকার হয়েছে পাঁচ হাজার ১৬৬ জন নারী ও শিশু। ধর্ষণের পর হত্যা এবং আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ৮৫০টি।
মহিলা পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ছয় মাসে সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮২ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৫ জনকে। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছে আরো ৫১ জন।
কর্মীরা বলছেন, এসব পরিসংখ্যান প্রমাণ করছে কঠোর আইনও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। এর মধ্যে একটি কারণ হলো, আইনের ফাঁক-ফোকরের কারণে শেষ পর্যন্ত বেশির ভাগ অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না। সে জন্যই ‘ভিকটিম অ্যান্ড উইটনেস প্রোটেকশন অ্যাক্ট’ নামে নতুন আইনের দাবি জানানো হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। প্রয়োজন সুরক্ষা আইনও। এ আইনের মাধ্যমে নারী ও শিশুর সহিংসতা বা অন্য কোনো অপরাধের শিকার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। যার বা যাদের কারণে সহিংসতার অপরাধ ঘটবে, তার বা তাদের আইনের আওতায় নিয়ে শাস্তি দিতে হবে।
 

শীতে নারীর পারফিউম।

পারফিউম

সুগন্ধি ছাড়া নারীর সাজের সৌন্দর্য অপূর্ণ রয়ে যায়। পরিবর্তিত ঋতুতে চাই পারফিউমের বৈচিত্র্য। প্রত্যেক ঋতুর জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা সুগন্ধি। কোনোটা ফুলেল আবার কোনোটা কস্তরী গন্ধযুক্ত।

পারফিউম পছন্দের বিষয়ে পারফিউম ক্রিস্টিয়ান ডিউর এর ম্যানেজার ফিওনা ক্যারোলিন বললেন, শীতে বেশি পোশাক পরার জন্য সব পারফিউম তার সুবাস ছড়াতে পারেনা। তাই আপনার দৈহিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে পারফিউম পছন্দ করবেন। শুকনো ও আর্দ্রতাশুন্য ত্বকে পারফিউমের সুগন্ধি বেশিক্ষণ ¯স্থায়ীও হয়না, এজন্য কড়া কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করাটাই ভালো।

যারা একটু গম্ভির প্রকৃতির তারা কস্তরী গন্ধযুক্ত পারফিউম ব্যবহার করে দেখতে পারেন, এটা আপনার মুডের সাথে ভালই মানিয়ে যাবে। আর রোমান্টিকদের জন্য রয়েছে, ভালো ফুলের গন্ধযুক্ত পারফিউমগুলো।

সেলিব্রেটি মেকআপ এক্সপার্ট রিমা সাবলক বললেন, এই শীতে আপনি অ্যাম্বার, ভেনিলা এবং সিনামন জাতীয় সুগন্ধীগুলো ব্যবহার করতে পারেন যেগুলো অরেঞ্জ, ক্যারামেল, লেমন অথবা ফ্রুটস এর গন্ধযুক্ত।

আমাদের দেশেও শীতের তীব্রতা ধীরে ধীরে বাড়ছে, আর সচেতন নারীরা এ সময়ের জন্য বেছে নিচ্ছেন বিভিন্ন ব্যান্ডের পারফিউম।

রাজধানীর ইনফিনিটি মেগা শপের কর্মকর্তা মজিবুর রহমান বলেন, এই শীতে নারীরা উল ওয়াটার -২৯৯০, কোরাস ক্যালভিন ক্লিনার -২৪৫০ বারবারি ৩২০০ স্কাটা ৩১৫০ এই পারফিউমগুলোই বেশি ব্যবহার করছেন।

ক্রেতাদের পারফিউম কেনার সময়, এগুলো কোন দেশে তৈরি হয়েছে এবং কতদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায় তা নিশ্চিত হতে হবে। পারফিউম কেনার জন্য অবশ্যই কোনো ভালো ব্র্যান্ডের শোরুম থেকে নিতে হবে।

সূত্র- বাংলা নিউজ।

 

গণিতের নোবেল বিজয়ী বিশ্বের প্রথম নারী।

Iranian-math-scientist-Maryam-Mirzakhani

ইরানি গণিতবিদ মারিয়াম মির্জাখানি। বিশ্বের প্রথম নারী হিসেবে ‘গণিতের নোবেল’ হিসেবে খ্যাত ফিল্ডস পদক পেয়েছেন। জ্যামিতিশাস্ত্রের জটিল বিষয়ে অবদানের জন্য তিনি চলতি বছর এই পুরস্কার পান। মির্জাখানি ছাড়াও ফিল্ডস পদকজয়ী অন্যরা হলেন যুক্তরাজ্যের মার্টিন হায়ারার, ফ্রান্সের আর্তুর আভিলা এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত গণিতবিদ মঞ্জুল ভার্গব।

জ্যামিতি ও গতিশীলতা, বিশেষ করে বাঁকা পৃষ্ঠতলের প্রতিসাম্য ব্যাখ্যায় মির্জাখানির বিশেষ অবদানের জন্য ফিল্ডস পদক দেওয়া হয়। ১৯৭৭ সালে ইরানে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে গণিতের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। ইরানের তেহরানের শরিফ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে স্নাতক এবং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে আরেক ফিল্ডস পদকজয়ী কুরটিস ম্যাকমুলানের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রি নেন। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপক এবং ক্লে ম্যাথমেটিকস ইনস্টিটিউটে রিসার্চ ফেলো হিসেবেও কাজ করেছেন।

মির্জাখানি ১৯৯৪ সালে হংকংয়ে এবং ১৯৯৫ সালে কানাডার টরন্টোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) স্বর্ণপদক অর্জন করেছিলেন। ফিল্ডস পদকের আগে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন একাধিক পদক ও সম্মাননা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক্লে রিসার্চ পুরস্কার, এএমএস ব্লুমেন্থাল পুরস্কার, হার্ভার্ড জুনিয়র ফেলোশিপ, মেরিট ফেলোশিপ ইত্যাদি। এ ছাড়া গণিত বিষয়ের বিভিন্ন আয়োজনে বক্তা হিসেবেও নামডাক আছে মির্জাখানির।

ব্যক্তিগত জীবনে আইবিএম আলমাডেন গবেষণা কেন্দ্রের তাত্ত্বিক কম্পিউটার বিজ্ঞানী জ্যান ভনড্রাককে বিয়ে করেছেন তিনি। এ দম্পতির আনাহিতা নামে একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
ফিল্ডস পদক পেয়ে খুশি মির্জাখানি। তিনি মনে করেন, এই পথচলা শুরু হলো মাত্র। তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও অনেকেই ভবিষ্যতে এ পদক পাবেন। ভবিষ্যতে গণিত নিয়ে আরও কাজ করে যেতে চান তিনি।

অপরাজিতার পক্ষ থেকে মির্জাখানির জন্য রইলো অনেক অনেক শুভ কামনা।

সুত্র- উইকিপিডিয়া,নিউইয়র্ক টাইমস। 

বিয়ের ১৫দিনের মাথায় যৌতুকের জন্য লাশ হতে হলো নববধূ কে!

856080307135211741

যৌতুকের টাকার জন্য বিয়ের মাত্র ১৫ দিনের মাথায় স্বামীর দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেলেন এক নববধূ। আজ রোববার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

নিহত ওই নববধূ সুবর্ণা আক্তার (১৮)। তিনি নরসিংদী সরকারি কলেজের ২০১৫ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাহেরচর গ্রামে তাঁদের বাড়ি। সুবর্ণার স্বামীর নাম মো. ইলিয়াস (২১)। তিনি বেকার ছিলেন। ইলিয়াসের বাড়ি নরসিংদী পৌরসভা এলাকায়।

গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে সুবর্ণাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবা, চাচা ও অন্য স্বজনদের উপস্থিতিতে সুবর্ণা বলেন, গতকাল টেস্ট পরীক্ষা দিতে কলেজে যাওয়ার পথে ইলিয়াস তাঁকে ফোন করেন। ফোনে ইলিয়াস যৌতুক বাবদ দুই লাখ টাকা দাবি করেন। সুবর্ণা বলেন, তাঁর বাবা কৃষক। বাবার পক্ষে দ্রুত এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। এরপর বিকেলে বাসায় আসছি বলে ইলিয়াস মোবাইল কেটে দেন।

সুবর্ণার ভাষ্য, বাবার বাড়িতে একটি পৃথক ঘরে তিনি থাকতেন। বিকেল পাঁচটার দিকে পরীক্ষা দিয়ে কলেজ থেকে তিনি বাড়ি আসেন। ঘরে ঢোকা মাত্রই হাজির হন ইলিয়াস। ইলিয়াস তৎক্ষণাৎ টাকার কথা জানতে চান। জবাবে তিনি জানান, টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি আর বাবাকে তিনি টাকার কথা বলতে পারবেন না। ইলিয়াস তখন বলেন, টাকা না দিলে কিন্তু শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেব। সুবর্ণা বলেন, ‘ভালোবেসে বিয়ে করেছ, আবার পুড়িয়ে মারবে? তুমি চাইলে দাও।’ সঙ্গে সঙ্গেই ইলিয়াস একটি বোতলে করে নিয়ে আসা কেরোসিন সুবর্ণার গায়ে ঢেলে দেশলাই দিয়ে আগুন জ্বেলে দেন। এরপরই পালিয়ে যান।

সুবর্ণার বাবা আনোয়ার হোসেনের ভাষ্য, সুবর্ণার চিৎকার শুনে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসতে বললে রাত ১০টার দিকে সুবর্ণাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। তিনি আরও বলেন, কলেজে যাওয়ার পথে ইলিয়াস সুবর্ণাকে উত্ত্যক্ত করত। এতে অনেকটা অতিষ্ঠ হয়েই দুই পরিবারের সমঝোতায় ৮ নভেম্বর সুবর্ণার সঙ্গে ইলিয়াসের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় কথা ছিল, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর সুবর্ণাকে তুলে দেওয়া হবে। বিয়ের সময় যৌতুকের ব্যাপারে কোনো কথা ছিল না।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট সূত্রে জানা যায়, আগুনে সুবর্ণার শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তিনি মারা যান। তাঁর মরদেহ বার্ন ইউনিটের লাশঘরে রাখা হয়েছে।

বাবা আমজাদ হোসেনের দাবি, এ ব্যাপারটি তিনি রায়পুরা থানায় অবহিত করেছেন এবং থানা থেকে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় তিনি একটি মামলা করবেন।

ওয়ার্ল্ড মুসলিমাহ হলেন,তিউনিসিয়ার ফাতেমা।

untitled-8_100270_100282_0

ইন্দোনেশিয়ায় মুসলিম নারীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড মুসলিমাহ অ্যাওয়ার্ড’ প্রতিযোগিতায় তিউনিসিয়ার তরুণী ফাতমা বেন গুয়েফ্রাচ সেরা মুসলিমার (মুসলিম সুন্দরী) মুকুট জিতেছেন। পশ্চিমা বিশ্বে প্রচলিত সুন্দরী প্রতিযোগিতার পাল্টা শুধু মুসলমান নারীদের নিয়ে এ প্রতিযোগিতায় ১৮ জন ফাইনালিস্টের মধ্যে সবাইকে ছাড়িয়ে যান ২৫ বছর বয়সী এই কম্পিউটার বিজ্ঞানী।        

পুরস্কার হিসেবে তাকে দেওয়া হয় একটি সোনার ঘড়ি, সোনার ডিনার সেট ও কাবাঘরের একটি ক্ষুদ্র প্রতিকৃতি। ওয়ার্ল্ড মুসলিমাহ খেতাব জিতে উচ্ছ্বসিত তিউনিসিয়ান তরুণী ফাতমা বলেন, ‘আল্লাহর সহায়তায় আমি এতদূর এসেছি। আমার চাওয়া হলো একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এবং সিরিয়ার মানুষের মুক্তি।’ ১৮ জন চূড়ান্ত প্রতিযোগীর মধ্যে কম্পিউটার বিজ্ঞানী এবং ডাক্তারের মতো পেশাজীবী তরুণীরাও ছিলেন। বাংলাদেশি তরুণী তারান্নুমও ছিলেন ১৮ জনের একজন। তারান্নুম পেশায় একজন চিকিৎসক। ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী নারীদের জন্যই এ প্রতিযোগিতা উন্মুক্ত ছিল।

প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী প্রতিযোগীদের সবার মাথায় ছিল স্কার্ফ। বিচারকরা শুধু চেহারা বা সৌষ্ঠব দেখেই শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নির্বাচন করেননি। তারা কতটা নির্ভুলভাবে কোরআন থেকে তেলাওয়াত করতে পারেন সে পরীক্ষাও দিতে হয়। এ ছাড়া ইসলাম এবং আধুনিক বিশ্ব সম্পর্কে তাদের জানাশোনার পরিধিও ছিল বিচার্য বিষয়।

আয়োজকদের একজন জামেয়াহ শেরিফ বলেন, ‘আমরা দেখতে চেয়েছিলাম তারা ইসলামি জীবনাচার সম্পর্কে কতটা ওয়াকিবহাল। জানতে চেয়েছি তারা কী খায়, কী পরে এবং কীভাবে জীবন কাটায়।”ওয়ার্ল্ড মুসলিমা অ্যাওয়ার্ড’ ২০১৩ সালে প্রচার মাধ্যমে স্থান পায়। প্রচলিত বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হিসেবে তা ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত হয়।

মূলত পশ্চিমাদের মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় নারীদের বিকিনি পরিয়ে উপস্থাপন করার প্রতিবাদ হিসেবে এ প্রতিযোগিতার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ব্রিটিশ প্রতিযোগী দিনা তরকিয়া বলেন, ‘আশা করি, এই প্রতিযোগিতায় পশ্চিমা বিশ্বে সুন্দরী প্রতিযোগিতার চিরাচরিত ধারণা যেমন পাল্টাবে, তেমনি ইসলাম সম্পর্কেও তাদের কুসংস্কার দূর হবে।’প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিযোগীদের অনলাইন অডিশনের মাধ্যমে শুক্রবার ফাইনালে অংশগ্রহণকারীদের চূড়ান্ত করা হয়েছিল।

মেয়েদের জন্য পেশা হিসেবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং

 1525404_1448245098730288_1597213802_n
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং! শোনা মাত্রই গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিগুলোর ভারী ভারী যন্ত্রের কথা মাথায় চলে আসতে পারে অনেকেরই। আর অ্যাডমিশন টেস্টের সময়টাতে এই ইউনিভার্সিটি-সেই ইউনিভার্সিটি-এই সাবজেক্ট-সেই সাবজেক্টের হাতছানিতে দ্বিধায় পড়ে যায় ছেলেমেয়েরা। মেয়েদের মধ্যে যারা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-কে ক্যারিয়ার সূচনার মূলমন্ত্র হিসেবে বেছে নিতে আগ্রহী তাদের চোখেমুখে যেন কনফিউশনের ছাপটা একটু বেশিই লেগে থাকে! সত্যি কথা বলতে কি, সব ইঞ্জিনিয়ারিং-ই মেয়েদের জন্য একটু টাফতো বটেই। তাই বলে কি মেয়েরা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়বে না? নাকি পড়ছেনা?? মেয়ে বলে পিছিয়ে পড়লে চলবে কেন?

অন্য ইঞ্জিনিয়ারিং যদি পড়তে পারো তবে নির্দ্বিধায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংও পড়তে পারবে। তোমার মেধা আর মনোবলটাই আসল, আর কিছুনা। তাছাড়া আগের তুলনায় এখন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মেয়েদের সংখ্যা চোখে পড়ার মত। টেক্সটাইলে পড়তে আসবে কিন্তু মেয়ে বলে ভয় পাচ্ছো? জেনে নাও টেক্সটাইল সেক্টরে সফল মেয়েদের কিছু কথা।
 
আজিজা রহমান। বাংলাদেশের প্রথম মেয়ে টেক্সটাইল প্রযুক্তিবিদ। তিনি ছিলেন বগুড়ার মেয়ে। ১৯৮১-৮২ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কলেজ অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি হতে টেক্সটাইল প্রযুক্তিতে ৪ বছর মেয়াদী ডিগ্রী কোর্সে শিক্ষাজীবন শুরু করেছিলেন তিনি। বর্তমানে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনের উপমহাব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন।
 
ড. হোসনে আরা বেগম। বুটেক্সের একজন সহকারী অধ্যাপিকা এবং ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের প্রধান। কলেজ অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি থেকে পড়াশুনা করেছেন।  ITETএর একজন নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট তিনি।
 
তারান্নুম আফরীন। বুটেক্সের গর্ব। শৈশবের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন ঢাকার মগবাজারে। পেশা হিসেবে তার প্রিয় কাজটি হচ্ছে গবেষণা। গান এবং বিতর্ক করতে পছন্দ করেন। ১৬তম জাতীয় টেলিভিশন বিতর্কে প্রথম হয়েছিলেন টেক্সটাইল কলেজে পড়ার সময়। বর্তমানে পি.এইচ.ডি. করছেন অস্ট্রেলিয়ার Deakin বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার গবেষণার বিষয় ”বাঁশের আঁশের প্রস্তুতির পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি উদ্ভাবন ও এর বহুমুখী ব্যবহার”। টেক্সটাইল বিশ্বে তার এই গবেষণা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং প্রকাশ পেয়েছে বেশ কয়েকটি প্রচার মাধ্যমে।
 
আরো উদাহরণের কি দরকার আছে? মনে হয় না। টেক্সটাইল থেকে পড়াশুনা করে যে মিল-ফ্যাক্টরিতেই কাজ করতে হবে এমন কোন কথা নেই। ইউনিভার্সিটি লেকচারার হতে পারো, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট সেক্টরে কাজ করতে পারো, কর্পোরেট জব করতে পারো, এমনকি নিজেই হয়ে যেতে পারো একজন উদ্যোক্তা! আর একটা কথা মাথায় রেখো, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়লে কর্মক্ষেত্র হিসেবে শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্ব রয়েছে তোমার সামনে।
 
 
টেক্সটাইল সেক্টরকে বলা হয় বাংলাদেশের ”সোনার ডিম পাড়া হাঁস”। বিগত সময়ের রাজনৈতিক ডামাডোল আর একটার পর একটা দূর্ঘটনার কারণে আমাদের টেক্সটাইল সেক্টর কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ঠিকই তবে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা মোটেই অসম্ভব কিছুনা। আর টেক্সটাইল শিল্প এমন একটি শিল্প যার ধ্বংস নেই। এখানে ধ্বংস হলে তা অন্য জায়গায় গড়ে উঠবে, উঠবেই। ইতোমধ্যে মায়ানমার, ভিয়েতনাম, জাপান, কোরিয়া সহ আরো অনেক দেশ টেক্সটাইল শিল্প নিয়ে জোরেসোরেই কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে।
 
সুতরাং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়বে কি না তা নিয়ে দ্বিধায় থাকলে এখনি তা ঝেড়ে ফেলো আর হয়ে যাও টেক্সটাইল বিশ্বের একজন গর্বিত সদস্য। আমাদের জগতে স্বাগতম, অনেক শুভকামনা রইলো ।
 
লিখেছেন- তনিমা রহমান,৩৯তম ব্যাচ,বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।

রাজধানীর দৃক গ্যালারীতে শুরু হতে যাচ্ছে 'বিবাহ উৎসবঃসেশন-২'

10486239_580197762112986_9025239225348547020_o

বিয়ে শব্দটা খুব ছোট হলেও বিশাল এক পরিসরে বাঁধা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়ের নাম। দু’জন মানুষের চলার নতুন পথের সাথে সূচনা হয়,অনেক গুলো মানুষের আবেগ-অনুভূতির বন্ধন। আর তাই,বিয়ের অনুষ্ঠান মানেই হচ্ছে,নতুন জীবনের স্বপ্নিল সূচনা,এবং আনন্দ-উৎসবে মুখরিত অনেক গুলো মনের আনাগোনা। দিন বদলের সাথে সাথে বদলেছে বিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা,আয়োজন,যুক্ত হয়েছে অনেক অনেক নতুন কিছু মাধ্যম। যা বিয়ের অনুষ্ঠান কে করে তুলে আরো বেশি উৎসব মুখর ও আনন্দময়।

আর সেই উৎসব এবং আনন্দ কে আরেকটু নতুন আঙ্গিকে,স্বপ্নের সহজ বাস্তবায়োনের পথ টা কে আরো বর্ণিল করতে রাজধানীতে শুরু হতে যাচ্ছে, ‘বিবাহ উৎসবঃসেশন-২’।

ধানমন্ডির দৃক গ্যালারীতে আগামী ২৮-৩০ নভেম্বর শুরু হতে যাওয়া এই উৎসবের আয়োজন করেছে,জনপ্রিয় ফটোগ্রাফি এন্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা, ‘ড্রিম ওয়েভার’ এবং ‘শাহজাহান ওয়েডিং প্ল্যানার এন্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট’। উৎসবে থাকছে,বিয়ের অনুষ্ঠানের ফটোগ্রাফি,স্টেজ ডেকোরেশন,গ্রুম-ব্রাইডাল এক্সক্লুসিভ ডিজাইনার ড্রেস কালেকশন,ব্রাইডাল মেকওভার,মেহেদি ডিজাইন,এন্টারটেইনমেন্ট সহ বিয়ের আয়োজনের উল্লেখযোগ্য সব দিকের আয়োজনের খুঁটিনাটি।

উৎসব চলবে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। উৎসবটির স্পন্সর হিসেবে রয়েছে, আরটিভি,জাহিদ খান মেকওভার,শো স্টোপার,আযাদ প্রোডাক্টস সহ অনেক গুলো সংস্থা।

অপরাজিতা সেলিনা

কক্সবাজার শহরের কলাতলীর ৩০ শতক জমির ওপর নয়ন সেলিনা গড়ে তুলেছেন পোলট্রি ও ডেইরি ফার্ম। মুরগি ও গরু প্রতিপালনের পাশাপাশি এর বিষ্ঠা এবং গোবরকেও তিনি কাজে লাগিয়েছেন। এ দিয়েই তিনি তৈরি করেছেন বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। কক্সবাজারের প্রথম নারী উদ্যোক্তা সেলিনা বলেন, প্রথম অবস্থায় যতখানি গ্যাস উৎপাদন হতো তা দিয়ে আমার সংসারের পুরো মাসের জ্বালানির চাহিদা মিটে যেত। ভাবলাম প্রতিবেশীদের জন্যও এটা করা যেতে পারে। তাদেরও জ্বালানি সমস্যা থাকবে না। নিজ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করি। একটু একটু করে আমার স্বপ্নের পরিকল্পনাগুলো সত্যি হয়।
একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে সুনাম কুড়িয়েছেন সেলিনা। চারপাশের কোনো বাঁধাই তাকে দমাতে পারেনি। এখন তিনি কক্সবাজারে একজন মডেল নারী উদ্যোক্তা। তার শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৫ সালে ১০০ লেয়ার মুরগি দিয়ে। বর্তমানে তার পোলট্রি ফার্মে লেয়ার মুরগি ৬ হাজার, ব্রয়লার মুরগি রয়েছে ৪ হাজার, ডেইরি ফার্মে রয়েছে ১৮টি পিজিয়াম বিদেশী গাভী। গরু থেকে প্রতিদিন দুধ পান ৮০ লিটারের মতো। এই দুধ শহরবাসীর দুধের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। এই ব্যবসার পাশাপাশি তার ১০টি ছাগল, প্রায় ১০০ জোড়া কবুতরও রয়েছে। প্রতি ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর এই কবুতর থেকে ২০ জোড়া কবুতরের বাচ্চা পান। এ থেকে তার বছরে রোজগার হয় ২ লাখ টাকা।
সেলিনা বলেন, ব্যবসার পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মচারীর সংখ্যাও বেড়েছে। এই খামারে ৮ জন শ্রমিক নিয়মিত মাসিক বেতনে কাজ করছেন। ৬ হাজার লেয়ার মুরগি থেকে প্রতি দিন গড়ে প্রায় ৫ হাজার ডিম উৎপাদন হয়। ব্রয়লার মুরগির অধিক পরিচর্যা আর যত্নের কারণে মাত্র ২৮ দিনে প্রতি মুরগির ওজন ২ কেজি ২০০ গ্রাম থেকে ২ কেজি ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত বাড়ে। এ থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। কিন্তু টাকা জোগাড় করতে না পারায় এই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কৃষি ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ আর্থিক ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল তা এখনও পাননি। তাই এই প্রকল্পের কাজ স্থগিত রয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে সহযোগিতা পেলেও কিছুটা এগুতে পারতাম। সরকারি সহযোগিতা পেলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হতো।
 
– সূত্রঃ সুরঞ্জনা।

পরিমিত মরিচের পরিমিত ব্যবহার

14b5bd188fbf20e53e492c8765b4afd7

আমাদের দেশে রান্নায় সব মশলার মধ্যে লবণের পরই কাঁচামরিচের স্থান। যেকোনো রান্নাতে কাঁচামরিচের ব্যবহার যথেষ্ট। তবে অনেকেই ঝাল পছন্দ করেন না। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, লঙ্কার ঝালের জন্যই খাওয়ার সময় যে লালা নিঃসৃত হয়, তা খাবার হজম হতে সাহায্য করে। বর্তমানে বিভিন্ন রেস্তোরাঁ বা মেজবানির খাবারের মধ্যে লাল লঙ্কা বা শুকনো লঙ্কার ব্যবহার হয়। তাতে পেট জ্বালা, গ্যাস্ট্রিক আলসার বা আমাসার ভয় থাকে। সেদিক থেকে কাঁচামরিচ অনেকটাই নির্দোষ। আবার কিছু সমস্যাও আছে।

পরিমিত কাঁচামরিচ খেলে মুখের স্বাদ বদলে দেয়। খাওয়ার রুচিও বাড়িয়ে দেয়। কাঁচালঙ্কার বহু গুণাবলী রয়েছে। সেগুলোর দিকে একটু তাকানো যাক।

 ১. শরীর থেকে যাবতীয় নোংরা ফেলে দিতে সাহায্য করে কাঁচালঙ্কা। যেমন লোমকূপ পরিষ্কার রাখতে।

২. শুকনোমরিচের শুষ্ক খোসা খেলে ডায়াবেটিস সেরে যায়। এছাড়া আমাশয়, বমির প্রবৃত্তি নষ্ট করে দেয়।

৩. ব্যথা ও বাতের মালিশের জন্য কাঁচামরিচ ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।

৪. পেট ব্যাথা করলে পানির মধ্যে লঙ্কা মিশিয়ে খেলে উপকার মেলে।

৫. ছারপোকার উপদ্রব থেকে রেহাই পেতে মরিচের ব্যবহার করতে পারেন। শুকনো লঙ্কা পানিতে ফুটিয়ে ক্কাথ তৈরি করুন। এবার যেখানে যেখানে ছারপোকার উপদ্রব সেখানে সেখানে ওই ক্কাথ লাগিয়ে দিলে ছারপোকা মরে যায়।

৬. কুকুর কামড়ালে সাথে সাথে লালমচির পিষে ক্ষতস্থানে দিয়ে দিলে সঙ্গে সঙ্গে বিষ পুড়ে যায়।

৭. অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। কাঁচামরিচ বেশি খেলে যকৃৎ বা লিভার গরম হয়ে যায়। তাতে নানা রকম রোগ দেখা দিতে পারে।

৮. অতিরিক্ত মরিচ খেলে শুক্র তরল হয়ে যায়। এছাড়া রতি শক্তি হ্রাস পায়।

৯. বেশি পরিমানে মরিচ খেলে শরীর গরম হয়, মস্তিষ্ক দুর্বল হয়ে যায়। এছাড়া পাকস্থলীতে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়ে যায়।

১০. লঙ্কা বেশি খেলে হজম শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। ভয়ঙ্কর রকমর অজীর্ণ রোগ দেখা যেতে পারে। যে রোগ সারানো প্রায় দুঃসাধ্য!

সূত্র- নয়া দিগন্ত।

ভালোবাসুন নিজেকে,দূরে থাকুন অবসাদ থেকে!

অবসাদগ্রস্ততার কারণ

2057_1

আমরা নানা কারণে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ি। ডাক্তারি ভাষায় যাকে বলে ফ্যাটিগ সিনড্রোম। কারণ জানা থাকলে নিজেই কাটিয়ে উঠতে পারেন অবসাদগ্রস্ততা। বিস্তারিত জানালেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ফারুক হোসাইন

কম ঘুম : ঘুম মানে কর্মহীনতা নয়, নতুন করে কর্মে ফিরে যাওয়ার শক্তি জোগায় ঘুম। তাই যাঁরা কম ঘুমান, কাজকর্মে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয় না। সুস্থ থাকতে চাইলে প্রতি রাতে কমপক্ষে সাত-আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।

সমাধান : প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান। ঘুমানোর কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে থেকে চা-কফি খাওয়া বন্ধ রাখুন। ঘুমানোর আগে টিভি দেখা, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে কাজ করা বন্ধ করুন।

অপরিমিত খাদ্য গ্রহণ : সকালের নাশতা না খেয়ে থাকলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। আবার খাবার গ্রহণ পরিমিত বা সঠিক না হলে দেহে অবসাদ ভর করতে পারে। যেমন চর্বিযুক্ত বিরিয়ানি খেলে অবসাদ লাগে। কারণ এই খাবার ভেঙে গ্লুকোজ উৎপাদন করতে শরীরের বেশি সময় লাগে।

সমাধান :তেল-চর্বিযুক্ত খাবার না খেয়ে সুষম খাবার গ্রহণ করুন। যখন খুশি তখন খাবার গ্রহণ না করে নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

অতিরিক্ত ওজন : স্থূল মানুষের শরীরের বাড়তি ওজনের কারণে তাদের হাঁটাচলা থেকে শুরু করে যেকোনো কাজেই বেশি শক্তি খরচ হয়। তা ছাড়া বাড়তি ওজন হলে অসুখবিসুখও বেশি হয়।

সমাধান : ওজন কমাতে ডায়েটিং করুন, ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।

কর্মহীনতা : কর্মহীন দেহে অবসাদ দ্রুত ভিড় করে। কর্মহীন ব্যক্তি নানা দুশ্চিন্তায় ভোগেন। ফলে তিনি কাজকর্মে উদ্যম হারিয়ে ফেলেন। নিজের অজান্তেই তাঁর মধ্যে এ পরিবর্তন ঘটে। আবার অনেক রোগে আক্রান্ত হন।

সমাধান : পছন্দ হোক আর না হোক, যেকোনো একটি কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।

পানিশূন্যতা : পানিশূন্যতা অবসাদগ্রস্ততার অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত ঘাম, পাতলা পায়খানা, বমি, দীর্ঘ সময় পানি না খেয়ে থাকা পানিশূন্যতার কারণ।

সমাধান : পানিশূন্যতা পূরণে ঘন ঘন পানি পান করুন। দেহকে সুস্থ, কর্মময় রাখতে প্রতিদিন কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি গ্রহণ করা উচিত।

অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ : ঠাণ্ডার কারণে বা অ্যালার্জির কারণে অ্যান্টিহিস্টামিনজাতীয় ওষুধ খেলে কর্মক্ষমতা কমে যায়। অন্যদিকে যাঁরা টেনশন কমানোর ওষুধ নিয়মিত খাচ্ছেন, তাঁরাও ঘুম ঘুম ভাবের কারণে অবসাদে ভুগতে পারেন।

সমাধান : ঘুম ঘুম ভাব করে না এমন অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ বাজারে পাওয়া যায়, তা সেবন করা।

খাবারে অ্যালার্জি : অনেক খাবারে অ্যালার্জি হয়। এসব খাবার খেলে শরীর চুলকাবে, ত্বকে লালচে র‌্যাশ উঠবে এমন কথা নেই। কাজকর্মে শক্তি বা মনোযোগ হারিয়ে ফেলা এসব অ্যালার্জির কারণে হতে পারে।

সমাধান : খেয়াল করুন কোন খাবার খেলে আপনার দুর্বল লাগে। যদি তা নির্ণয় করতে পারেন, তবে তা এড়িয়ে চলুন।

আরো যা করবেন

যদি ছয় মাসের অধিক সময় ধরে অবসাদগ্রস্ততায় ভোগে, তবে ধরে নেওয়া যায় তিনি ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোমে ভুগছেন। এসব রোগী প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজকর্ম করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এ ক্ষেত্রে রোগীকে কাজের ধরন পাল্টাতে হয়। প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হয়। ঘুম যাতে ফ্রেশ হয়, সে ব্যবস্থা করতে হয়। কর্মে উদ্দীপনা ফিরে পেতে বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।

এ ছাড়া গৃহিণীরা দৈনন্দিন কাজের একটি রুটিন করে নিন। কখনোই ভাববেন না আপনার ঘরের কাজের কোনো মূল্য নেই। নিজের কাজের মধ্যে নিজেই আনন্দ খুঁজে নিন। অবসাদ ঝেড়ে ফেলে নতুন প্রাণে জেগে উঠতে ব্যায়াম করুন, বেড়াতে যান, ঘর গোছান, গান শুনুন, বই পড়ুন, সিনেমা দেখুন ও রান্না করুন। মনে রাখবেন কাজের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নিতে হয়।

সূত্র- কালের কন্ঠ।

শিশুর প্রতি মানসিক নির্যাতন- যা অনেক সময় নিজের অজান্তেই করা হয়!

Cute-School-Children-Photo-5

সাধারণত মা-বাবা জেনেবুঝে শিশুর ওপর নির্যাতন করেন না। কিন্তু তাঁদের অসচেতনতা, শিশু লালন-পালনের অদক্ষতা, মানসিক চাপ, অসুস্থতা, পারিবারিক বা অর্থনৈতিক ঝামেলা, নিজে শৈশবে নির্যাতনের শিকার হওয়া ইত্যাদি কারণে শিশুর ওপর নির্যাতন করে ফেলেন। মা-বাবা একটু সচেতন থাকলে শিশুর ওপর মানসিক নির্যাতন অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব। এ ব্যাপারে লিখেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক, সাইকোলজিষ্ট তানজির আহমেদ তুষার। 

আসুন জেনে নিই, কিভাবে অভিভাবকরা শিশুর ওপর নির্যাতন করে ফেলেন এবং এর প্রভাবই বা কী।

কথা দিয়ে নির্যাতন

অনেক মা-বাবা বা অভিভাবক প্রায়ই শিশুকে বকাঝকা করেন, উঠতে-বসতে খোঁটা বা গালি দেন। এ ছাড়া অপমানজনক কথা বলেন, অতিরিক্ত প্রত্যাশা ও প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে তিরস্কার করেন। এতে শিশু কথার মাধ্যমে নির্যাতিত হয়। এসবের মাত্রা বেশি হলে শিশুর মানসিক ও সামাজিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

মাত্রাতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ ও শাস্তি

শিশুকে কথায় কথায় শাস্তি দিলে তা-ও মানসিক নির্যাতন। অনেক অভিভাবক হাসি বা কোনো সৃজনশীল কাজের জন্যও শিশুকে বকা দিয়ে থাকেন। অনেকে আবার শিশুকে কাছে আসতে দেন না বা ‘খারাপ’ হয়ে যাওয়ার ভয়ে কারো সঙ্গে মিশতে দেন না। এগুলোও মানসিক নির্যাতন। কারণ শিশু মা-বাবার শারীরিক সংস্পর্শে না যেতে পারলে নিঃসঙ্গ বোধ করে। তার সমবয়সী ও চাচাতো-খালাতো-মামাতো-ফুপাতো ভাইবোনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে না পারলে তার সঠিক বিকাশ হয় না।

অবজ্ঞা করা

শিশুকে অবজ্ঞা করাও মানসিক নির্যাতন। কারণ এতে শিশুর সব ধরনের বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েক ধরনের অবজ্ঞাজনিত নির্যাতন রয়েছে। যেমন-

মৌলিক অধিকারের বেলায়

প্রতিটি শিশুরই খাদ্য, পোশাক, বাসস্থানের নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর বিষয় থেকে নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সে অধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব অভিভাবকের। সেটি রক্ষা না হলে তা হবে শিশুর জন্য অবজ্ঞাজনিত নির্যাতন।

আবেগীয় অবজ্ঞা

শিশুর মানসিক ও সামাজিক বিকাশে প্রয়োজনীয় ভালোবাসা, আদর-স্নেহ, বুদ্ধি ও আবেগের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্দীপনাসহ যথেষ্ট যত্ন করা না হলে সেটা হবে আবেগীয় অবজ্ঞা বা নির্যাতন।

তদারকির ক্ষেত্রে

অভিভাবকরা একটি ছোট শিশুকে বেশ কিছু সময়ের জন্য একাকী বা খালি বাসায় রেখে কোথাও গেলে শিশুকে তদারকির ক্ষেত্রে অবজ্ঞা করছেন বলে ধরা হয়। এটিও শিশুর জন্য নির্যাতন।

চিকিৎসাগত অবজ্ঞা

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নানা অজুহাতে শিশুর চিকিৎসা না করানো বা টিকা দিতে বিলম্ব হলে তা হবে চিকিৎসাগত অবজ্ঞাজনিত মানসিক নির্যাতন।

শিক্ষাক্ষেত্রে

শিশুকে তাঁর শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলে, তাঁর স্কুল বা পড়াশোনা সম্পর্কে খোঁজ-খবর না রাখলে, স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক ও সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা না করা হলে এবং সময়মতো স্কুলে পৌঁছানোর ব্যবস্থা না করা হলে শিশু মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়।

মানসিক নির্যাতনের কুফল

শারীরিক নির্যাতনের মতো মানসিক নির্যাতনও শিশুর ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতনের তুলনায় মানসিক নির্যাতনের প্রভাব বেশি হয়। এটি শিশুর বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব, আচরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ ছাড়া তাকে সমাজে মানিয়ে নিতে সমস্যায় ফেলতে পারে। পরে দাম্পত্য, পারিবারিক ও কর্মজীবনে নানা ধরনের অসুবিধায় ফেলে। বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তার মতো মানসিক রোগও হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যাসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পারে শিশুর।

৭ বছর পর,কেমন আছে সিডরে বিধ্বস্ত পরিবারের শিশুরা?

RTX3H7H1

ঘূর্ণিঝড় সিডরের সাত বছর পেরিয়ে গেলেও বরগুনায় এখনো স্বজনহারা পরিবারের আহাজারি থামেনি। নিহতদের সন্তানেরা লেখাপাড়া শিখে বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা মানুষ হতে চায়।

বরগুনার তালতলীর কবিরাজপাড়া গ্রামের বাসিন্দা খলিলুর রহমান তার মেয়ে ডলি (৭) ও কলিকে (১১) নিয়ে বেঁচে আছেন। তার পরিবারের বাকি ১১ জন সদস্যের সবাই মারা গেছেন। বেঁচে থাকা মেয়ে দু’টি মায়ের আদর যত ছাড়াই বড় হয়েছে। ছোট মেয়ে নানার বাড়িতে থেকে কবিরাজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে। তেঁতুলবাড়ীয়া গ্রামের আরেক পরিবারের নয়জন নিহত হন। তাদের পরিবারে বেঁচে থাকা আলমগীর বলেন, পরিবারের সবাইকে হারিয়ে আজ আমি অসহায়। লেখাপড়া করার অদম্য ইচ্ছা থাকলেও পারিনি। পরিবারের অভিভাবক হারিয়ে সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হয়েছি। 

বরগুনার আমতলী ঘটখালী গ্রামের ১৪ জন দিনমজুর পানের বরজের ধানশি লতা সংগ্রহের জন্য ট্রলার নিয়ে সাগর কাছে চরনিদ্রা ছকিনা গিয়েছিলেন। সিডরের ভয়াল সেই রাতে সবাই জলোচ্ছ্বাসে হারিয়ে যান। তাদের মধ্যে চারজন ফিরে এলেও ১০ জন আর ফিরে আসেননি। তারা হলেন ইউসুফ (৪০), জব্বার (৫৫), ছোবাহান (৪২), হোসেন (৫০), খলিল (৩৫), রতন (৪০), সোহেল (১৮), মনিরুল (২৫), দেলোয়ার (২৫) ও আলতাফ (২০)।

আমতলীর দিনমজুর ইউসুফ সরদার ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র অভিভাবক। তিনি রেখে গেছেন তিন সন্তান ও স্ত্রী আমেনা বেগমকে। আমেনা বেগম জানান, তার বড় মেয়ে সারমিন পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। সে এ বছর এসএসসি পরীার্থী। ছোট মেয়ে নীল দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী এবং ছেলে শাওন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছে। আমেনা বেগম আরো বলেন, আমি স্বামী হারিয়েছি, এতিম সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করতে পারছি না।

নিহত মনিরুলের স্ত্রী হামিদা বেগম বলেন, আমি দিনমজুরের কাজ করে একমাত্র মেয়ে সাইফাকে (৯) লেখাপাড়া শেখানোর স্বপ্ন নিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছি। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়–য়া সাইফা জানায়, বাবাকে হারিয়েছি। মায়ের মধ্যেই বাবার স্মৃতি খুঁজে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে লেখাপাড়া করছি। নিহত রত্তনের বাবা আবদুর বারেক মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মোর চাওয়া পাওয়ার কিছুই নাই, মোর পোয়ায় দুই ছেলে রাইখ্যা গেছে, হ্যাগো ল্যাহাপাড়া হরাইতে বড় কষ্ট অইতেছে। সরকার এই এতিম সন্তানদের দিকে তাকাইলে বড় ভালো অইত।’

বৈঠাকাটা গ্রামের একই পরিবারের দুই ছেলে দেলোয়ার ও আলতাফ সিডরে নিহত হয়েছে। তাদের প্রতিবন্ধী বাবা আলী আজম গত বছর মারা গেছেন। দেলোয়ারের দুই ছেলে এখন অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

সোবাহানের দুই ছেলে। বড় ছেলে রাসেল ঘটখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে আমতলী ডিগ্রি কলেজে লেখাপাড়া করছে। অর্থের অভাবে ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারছে না। অন্যের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করে। কাজের ফাঁকে লেখাপড়া করে। রাসেল জানান, ‘বাবা ছিলেন দিনমজুর। অর্থের সন্ধানে সাগরে গিয়ে আর ফেরেননি। আমার পরিবারের আর যেন কোনো সদস্যের সাগরের বুকে হারিয়ে যেতে না হয় এ জন্যই লেখাপড়া করছি। কষ্ট হলেও একদিন সমাজের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াব।’

ঘটখালীর সমাজসেবক আলমগীর হোসেন জানান, নিহত পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর অদম্য বাসনা নিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকে মেধাবী ও প্রতিভাবান। আমার বিশ্বাস তারা উচ্চশিা গ্রহণে সহযোগিতা পেলে দেশের সুনাগরিক হয়ে উঠবে।

ঘটখালী ও বৈঠাকাটা গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে সিডরে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের আজো তারা ভুলেনি। এখনো মাঝে মধ্যেই তাদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।

সূত্র- নয়া দিগন্ত

একটি মৃত্যু- আর প্রশ্নবিদ্ধ সমাজের চির নীরবতা!

86323_sumi with husband

৪দিন আগেও যে মানুষটির সরব পদচারণায় মুখর ছিলো হাসপাতাল,বাড়ির আঙ্গিনা,আজ সে মানুষটির হাসিমুখ কেবলই ছবি হয়ে থাকে দেয়ালে টাকানো ফ্রেমে! নিষ্ঠুর বাস্তবতার কাছে হার মেনে হারিয়ে গিয়েছে আগামীর স্বনামধন্য ডাক্তার,মা হারানো বাবার আদরের একমাত্র মেয়ে,ভাইয়ের কাছের বন্ধু প্রিয় বোন,হাসপাতালের আঙ্গিনার হাস্যজ্জ্বল মুখ ডা.শামারুখ মাহজাবিন সুমি।

গত ১৩ই নভেম্বর দুপুরে শ্বশুড়বাড়ির বাথরুমের গ্রিলে ঝুলানো সুমীর দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে,কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন। কিন্তু এটা কি কোন আত্নহত্যা ছিলো?আদৌ কি সুমী নিজ গলায় ফাঁসি নিয়ে নিজের জীবন শেষ করেছিলেন? নাকি কোন এক ভয়ানক সত্য জেনে ফেলার নিষ্ঠুর শাস্তি দেয়া হয়েছিলো তাকে? নাকি সত্য প্রকাশ করে দেবার ভয়েই নির্মম ভাবে খুন করা হয়েছিলো সুমীকে? প্রশ্ন গুলো কোন ভাবেই অযৌক্তিক না,বরং এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর খুঁজে পাওয়াই এখন সময়ের দাবী।

কেন এভাবে চলে যতে হলো একজন প্রতিভাবান ডাক্তার কে?কেন বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই লাশ হতে হলো একজন গৃহবধু কে? আর কেন ই বা তার মৃত্যুর কারণ গুলো অনুসন্ধান করতে যেয়ে কর্তৃপক্ষ কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোবার ভয় করছে?

ডা শামারুখ মাহজাবীন যশোরের পুরাতন কসবা এলাকার প্রকৌশলী নূরুল ইসলামের মেয়ে। রাজধানীর হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন,মৃত্যুর আগে সদ্য ইন্টার্নী শেষ করে,এফসিপিএস ডিগ্রী নেয়ার জন্য পড়াশুনা শুরু করেছিলেন। সুমী তার মেডিকেল কলেজের ডিবেট ক্লাবের প্রেসিডেন্টও ছিলেন। ন্যাশনাল ডিবেট ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর হিসেবেও কাজ করেছেন। শালীন ও ভদ্র ব্যবহারের জন্য পুরো কলেজে সুনাম ছিল তার। সুমীর মেধা আর ব্যবহার দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলো তারই কলেজের শিক্ষিকা ডা জেসমিন আরা ম্যাডামের। ডা জেসমিন আরা যশোরের-৫ আসনের সাবেক এমপি টিপু সুলতান সাহেবের স্ত্রী। ডা জেসমিন আরা সুমী কে তার ছেলে হুমায়ন সুলতান সাদাব এর জন্য বউ করে আনেন। উচ্চ শিক্ষিত,প্রভাবশালী পরিবারের ব্যারিষ্টার ছেলের কাছে একমাত্র মেয়েকে অনেক আশা আর নির্ভরতার সাথেই বিয়ে দিয়েছেল নুরুল ইসলাম সাহেব। কিন্তু কে জানতো,এতো সব ভালো পরিচয়ের আড়ালে রয়েছে এদের কি নিষ্ঠুর আর ভয়ানক পরিচয়!!

বিয়ের পর সুমীর পরিবার জানতে পারে,হুমায়ন সুলতান কোন ব্যারিষ্টার নন,তিনি ঢাকার একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে ল’পাশ করেছেন মাত্র!এবং তিনি পুরোদস্তর একজন মাদকাসক্ত! সব কিছু জানার পরেও সুমী আপ্রান চেষ্টা করছিলো স্বামীকে মাদকের পথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য,একটা সুন্দর সংসার সাজানোর জন্য কিন্তু গাছের গোড়াতেই যখন গলদ তখন আগাছা ছেঁটে কি আর ফল পাওয়া যায়? 

আর তাই নির্মম ভাবে হারিয়ে গেলেন সুমী!বিয়ের পর থেকেই শুরু হয়েছিলো সুমীর নরক বাস! দুর্নীতিবাজ শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি আর মাদকাসক্ত স্বামীর অত্যাচারে জীবন অতিষ্ট হয়েছিলো শামারুখের!পড়াশুনা করতে বাঁধা দেয়া থেকে শুরু করে কাজের মেয়ের মতো খাঁটুনী করিয়েও স্বস্তি পেতেন না তারা,আর তাই চলতো মানুষিকের পাশাপাশি শারিরিক অত্যাচারও! বাবার কাছে ফোন করে প্রায়ই কান্নাকাটি করত মা-হারা ডা. শামারুখ মাহজাবীন সুমী। মৃত্যুর আগের দিনও ফোনে বাবা নুরুল ইসলামকে বলেছিলেন, আব্বু, এটা আমার শ্বশুর বাড়ি নয় টর্চার সেল, তোমরা ঢাকায় চলে আসো। আমাকে টর্চার সেল থেকে নিয়ে যাও। আমি তোমাদের কাছে থেকে এফসিপিএস করব।
ডা. শামারুখ তার বাবাকে বলতেন, তারা (শ্বশুরবাড়ির লোকজন) আমাকে বাসায় চাকরানীর মতো সব কাজ করায়। সকালে নাস্তা বানানো, দুপুর ও রাতের খাবার সব রান্না করায়। পান থেকে চুন খসলেই গালিগালাজ আর চড়-থাপ্পড় দেয়।
শামারুখের বাবা প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, এসব শোনার পরও মানসম্মান আর লোকলজ্জার ভয়ে সব মুখ বুঝে সহ্য করে যাওয়ার পরামর্শ দিতাম। কিন্তু সেই মুখ বুঝে থাকার পরিণতি এত ভয়াবহ হবে সেটা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি। শ্বশুরবাড়িতে প্রায়ই নির্যাতন করত শামারুখের স্বামী হুমায়ুন সুলতান সাদাব, শ্বশুর খান টিপু সুলতান ও শাশুড়ি ডা. জেসমিন আরা। সব নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করত শামারুখ। সম্প্রতি নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় তা আর নিজের মধ্যে চেপে রাখতে পারছিল না। তখন আমাকে জানায়, তার লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছে। শ্বশুরবাড়ি তার জন্য টর্চার সেল-এ পরিণত হয়েছে।
বাবা নুরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, আমি যদি আমার মেয়েকে নিয়ে আসতাম, তাহলে তাকে আজ এই নির্মম ঘটনার শিকার হতে হতো না।

এমন অনেক আফসোস ই আজ চারপাশে সবার মুখে মুখে! এখনো পর্যন্ত শামারুখের শ্বশুড়-শ্বাশুরি কে গ্রেফতার করা হয়নি,কারন তারা অনেক শক্তিশালী!লোক দেখানোর জন্য স্বামীকে গ্রেফতার করা হলেও মামলায় নেই কোন অগ্রগতি

শামারুখের মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করতে যেয়ে জানা যায়,ক্ষমতাশীল শ্বশুড় টিপু সুলতানের গোপন দুর্নীতির তথ্য জেনে ফেলাটাই কাল হয়েছিলো,শামারুখ যাতে সে সব তথ্য বাইরে ফাঁস করে দিতে না পারে,সে কারণেই মেরে ফেলা হয় তাকে! সুমীর বাবা নুরুল ইসলাম জানান, যে দিন সুমিকে হত্যা করা হয় সে দিন তার সাথে ফোনে ৩৫ মিনিট তার কথা হয়। ওই সময় মেয়ে তাকে জানায়, বাসার কাগজপত্রের মাঝে খান টিপু সুলতানের দুর্নীতিসংক্রান্ত কিছু তথ্য-উপাত্ত সুমি দেখে ফেলে। এর পর থেকে তার ওপর অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে। সুমি ফোনে কাঁদতে কাঁদতে বারবার বাবাকে অনুরোধ করেন তাকে দ্রুত সেখান থেকে না সরালে ওরা তাকে মেরে ফেলবে। সুমির আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সত্য হয়েছে।

নুরুল ইসলাম আরো জানান, একজন সাবেক সংসদ সদস্য ও আইনজীবী হওয়া সত্ত্বেও খান টিপু সুলতান যে কত নিচু প্রকৃতির মানুষ তা সুমির বিয়ের পর তিনি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। তিনি বিয়ের পর মেয়েকে ১২ ভরি সোনার অলঙ্কার দিয়েছেন। এই সোনাকে টিপু সুলতান পিতল বলে আখ্যায়িত করতে দ্বিধা করেননি।সম্প্রতি সুমির স্বামী হুমায়ুন সুলতান সাদাব নুরুল ইসলামকে জানান, তারা নতুন ফ্যাটে উঠবেন, এ জন্য ফার্নিচার দিতে হবে। নুরুল ইসলাম বিয়ের পর মেয়ে-জামাইয়ের জন্য ফার্নিচার তৈরি করেছিলেন। সেই ফার্নিচার নিয়ে যাওয়ার কথা বললে টিপু সুলতান ক্ষেপে অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন। তিনি ফোনে নুরুল ইসলামকে বলেন, নতুন ফ্যাটের জন্য নতুন ফার্নিচার দিতে হবে। আর নিজের দোষ ঢাকতে সুমিকে শাসিয়ে বলে দেন তার বাবার কাছে বলতে হবে সেই (সুমি) নতুন ফার্নিচার দাবি করেছে। মেয়ের সুখের কথা ভেবে নিরুপায় হয়ে তিনি নতুন ফার্নিচার তৈরি করে দেন। যার চার হাজার টাকা এখনো দোকানে বাকি রয়েছে। অল্প কিছু দিন হলো এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে ফ্রিজও কিনে দিয়েছেন বলে নুরুল ইসলাম জানান।

ডা শামারুখের মৃত্যু অনেক গুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়ে গেছে,চোখে আঙ্গুল দিয়ে আরেকবার দেখিয়ে দিয়ে গেলো,আমাদের সমাজে নারীর অসহায় অবস্থানের কথা! শিক্ষিত-অশিক্ষিত ভেদে আজো নারীর অবস্থান কতোটা অমানুষিক পর্যায়ে রয়েছে তা আরেকটা বার আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে!

হয়তো ক্ষমতা-টাকার দাপটে শামারুখের স্বামী-শ্বশুড়বাড়ির লোকেরা পার পেয়ে যাবে,যুগের পর যুগ কেঁদে যাবে শামারুখের আত্না,কিন্তু আমাদের সমাজ কি বন্ধ করতে পারবে জীবিত শামারুখদের কান্না? পারবে কি সমাজের অসহায় সেই বাবা-মায়েদের বুকের জ্বালা কমাতে? আজো অনেক আশা নিয়ে বাব-মায়েরা মেয়েকে শ্বশুড়বাড়ি পাঠান,মেয়ের ঝুলন্ত লাশ দেখার জন্যে নয়,কিন্তু যে সমাজে টিপু সুলতান-জেসমিন আরাদের মতো শ্বশুড়-শ্বাশুড়িদের নামে নরপশুদের বাস সেখানে কি করে থামবে সুমীদের বাবাদের আর্তনাদ?

আমরা বিচার চাই ডা সুমীর হত্যাকারীদের,এবং আমরা পরিবর্তন চাই এই সমাজের।

বখাটেদের উত্ত্যক্তের শিকার হয়ে স্কুল ছাত্রীর আত্নহত্যা

মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার কাটাখালী এলাকায় গতকাল রোববার নবম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। শারমিন সুলতানা নামের ওই ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, বখাটের উত্ত্যক্তের শিকার হয়ে সে আত্মহত্যা করেছে।
শারমিন সুলতানা (১৪) মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার কাটাখালী এলাকার আবদুর রবের মেয়ে এবং স্থানীয় এ ভি জে এম সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ছাত্রী ছিল।
শারমিনের পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় শারমিনকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত এলাকার বখাটে অনিক। অন্যদের দিয়েও সে শারমিনকে উত্ত্যক্ত করাত। গতকাল সকালেও বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় কাটাখালী সড়কে শারমিনকে উত্ত্যক্ত করে অনিক। এর প্রতিবাদ করলে শারমিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে অনিক। বেলা ১১টার দিকে বাড়ি ফিরে গোসলখানার ঝরনার সঙ্গে ওড়না প্যাঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে শারমিন। একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা গোসলখানায় ঝুলতে দেখে শারমিনকে উদ্ধার করে দ্রুত মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের ফকির জানান, এ ঘটনায় শারমিনের মা অনিককে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। অনিককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

মানুষের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা সে নিজে!

Maria-Sharapova-img20981_668

মারিয়া শারাপোভা বিশ্বের অন্যতম আলোচিত টেনিস খেলোয়াড়। শারাপোভার জন্ম রাশিয়ায়, ১৯৮৭ সালের ১৯ এপ্রিল। এ যাবৎ তিনি টেনিসের পাঁচটি গ্র্যান্ড স্লাম জয় করেছেন। ২০০৭ সাল থেকে মারিয়া জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন।

১৭ বছর বয়সে আমি উইম্বলডন জয় করি। এর কয়েক বছরের মধ্যেই মারাত্মকভাবে কাঁধের ইনজুরিতে পড়ে আমার খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। আমার সামনে অনেক কারণ ছিল, যার জন্য টেনিস খেলাই ছেড়ে দেওয়ার কথা তুলেছিল অনেকে। ইচ্ছা করলেই তখন খেলা ছেড়ে দিতে পারতাম, কিন্তু হাল না ছেড়ে আবার কোর্টে নামার সাহস করি।
সত্যিকার অর্থে, আমার বেড়ে ওঠা ছিল ছাই থেকে। আবর্জনা থেকে আমার পরিবার মাথা তুলে দাঁড়ায়। আমার শিকড় কোথায়, সেটা আমি জানি। আমার শুরুর সেই কষ্টের দিনগুলো আমি কখনোই ভুলতে পারব না। আমার বাবা-মা দুজনেই বেলারুশ থেকে আসেন। আমি যখন মায়ের পেটে, তখন চেরনোবিল দুর্যোগ ঘটে। বাবা আর মায়ের কাজ চলে যায়। তাঁদের বাকি জীবনটা অনেক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে গেছে। আমি তাঁদের মেয়ে। বাবা চার বছর বয়সে আমার হাতে টেনিস র্যাকেট তুলে দেন। বাবাই ছিলেন আমার প্রথম কোচ। স্কুলে পড়াশোনা আর বাড়ির কাজ শেষ করে প্রতিদিন টেনিস অনুশীলনে নামতাম।

maria-sharapova1
আমি কোনো কিছু ধরলে তা ছাড়ি না। আমার বিখ্যাত কোনো বন্ধু ছিল না, যার মাধ্যমে আমি খ্যাতি অর্জন করতে পারি। কিংবা আমি ফ্যাশন মডেল নই, যাকে কোনো লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন বিখ্যাত করেছে। মূল কথা হচ্ছে, টেনিসই আমাকে সব দিয়েছে। ইনজুরিতে থাকার সময় যখন ম্যাগাজিন আর পত্রিকায় আমার ছবি দেখতাম, তখন ঠিক থাকতে পারতাম না। হাসপাতালে বসে কোর্টে দৌড়ানোর শব্দ পেতাম। আর দৌড়াব বলেই টেনিস কোর্টে ফিরে আসি।
আমি সব সময় মাঠে থাকতে চাই। প্রতিদিন। জয়-পরাজয় নিয়ে ভাবি না। মাঠে থাকাই সব। খেলা শেষে ঘেমে একাকার হয়ে বাড়ি ফিরতে চাই।
আমার বেড়ে ওঠা ছিল রাশিয়ার সোচি শহরে। যুক্তরাষ্ট্রে সবাইকে সোচি নামের বানান করে বলতে হতো। কেউ জানত না সোচি মানচিত্রের কোথায়। এখন আমার জন্য অনেকেই মানচিত্রে সোচি শহরকে চেনে। এটা অনেক আনন্দের। আমি যখন রাশিয়ার পতাকা নিয়ে কোথাও দাঁড়াই, তখন আমার চেয়ে গর্বিত আর কে হয় বলুন?
খেলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এক টেনিস একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছিলাম। যার জন্য মায়ের সঙ্গে প্রায় দুই বছর দেখা হয়নি। তখন আমাদের মুঠোফোন ছিল না, কোনো ই-মেইলও ছিল না। একটা কলম আর এক টুকরা কাগজই ছিল আমার সব। মাকে চিঠি লিখতাম। চিঠি যখন মায়ের কাছে যেত, তখন আমার যে অনুভূতি হতো, তা এখনো শিহরিত করে।
টেনিস খেলার একাডেমিতে অন্য মেয়েরা আমাকে নিয়ে হাসত। বেশি ছোট ছিলাম বলে র্যাগিংয়ের শিকার হতাম। আমাকে টিজ করা হতো। তখন আমি হতাশ হয়ে একা একা কাঁদতাম, কিন্তু আমার লক্ষ্য আমি জানতাম। রেগে দেশে ফিরে গেলে আমি হয়তো আজকের আমি হতাম না। সব সময় আশাবাদী হয়ে থাকলে বিপদে পড়লেও নিজেকে নিজে উদ্ধার করা যায়। কষ্ট করে লেগে থাকতে হয় স্বপ্নের পেছনে।
২০০৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে উইম্বলডন জেতা ছিল আমার জন্য বিস্ময়। এটা স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু ছিল। কখনোই চিন্তা করিনি মাত্র দুই সপ্তাহে পৃথিবীর সেরা সব টেনিস খেলোয়াড়কে হারিয়ে দেব! ফাইনালে আমি সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে দিই। আমি কতটা দুর্ধর্ষ টেনিস খেলোয়াড় হয়ে উঠেছিলাম, তা ভাবলে এখনো গায়ে কাঁটা দেয়। কোনো দিকে মন না দিয়ে টেনিস বলেই আঘাতের পর আঘাত করে গিয়েছি। ফলে ফাইনালে আমার হাতেই ছিল সেরার পদকটি।
বেঁচে থাকার জন্য আমি টেনিস বলকে আঘাত করি, পরিশ্রম করি। আমি সব সময় সবার কাছ থেকে শেখার আগ্রহ নিয়ে বসে থাকি। বাবা আর মায়ের কাছ থেকেই আমি কৌতূহলী হয়ে ওঠার নেশাটি পেয়েছি। আমার কাছে সবচেয়ে বড় আর গুরুত্বের বিষয় হলো, প্রথমে ভালো মানুষ হওয়া, তারপর পেশাদার ক্রীড়াবিদ হতে হবে। এটা সত্যি অনন্য এক চ্যালেঞ্জ।
বেঁচে থাকার জন্য বন্ধুর বিকল্প নেই। আমি সুযোগ পেলেই বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে যাই, গান গাই। টেনিস নিয়ে পড়ে থাকলেও পরিবারকে সময় দিই। যখন খুব হতাশায় ভুগি, তখন নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিই। নেইলপলিশ হাতে গ্র্যান্ড স্লামের ট্রফিগুলো তোলার স্মৃতি বারবার মনে করে নিজেকে সাহস দিই। আর হতাশার মাত্রা চরমে উঠলে গলা ছেড়ে গান গাই। প্রতিদিন সকালে আমি গান শুনে বাড়ি থেকে বের হই। আমার দুনিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো মায়ের হাতের রান্না। মায়ের হাতের বৈচিত্র্যময় রান্নার জন্য বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে আমার। আমি সময় পেলেই বইয়ের পাতায় হারিয়ে যাই। একই বই কয়েকবার পড়ার বাতিক আছে আমার।
আমাকে কেউ কেউ ‘সুগারপোভা’ নামে ডাকে। অনেক ছোটবেলা থেকে আমি চকলেটের ভক্ত। আমার দাঁতে সব সময় চিনি লেগে থাকত। আমি চাইতাম বড় হয়ে আমি চকলেটের দোকান দেব। বড় হয়ে ব্যবসায়ী হব। সত্যি সত্যি টেনিস খেলার ক্যারিয়ার শেষ করে ব্যবসা করতে নামব।

মানুষের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা সে নিজেই। নিজেকে সাফল্যের চূড়ায় দেখতে চাইলে মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। যখন যা করো, তা-ই উপভোগ করো। বাড়িতে থাকলে টিভি দেখো, সিনেমা উপভোগ করো। হাসো। কিন্তু যখন কাজ করবে, তখন তাকে উপভোগ করো। নিজের প্রতিভা আর বুদ্ধি দিয়ে কঠিন সব কাজকে আয়ত্তে আনাই সফল ব্যক্তিদের কাজ। নিজের জীবনকে নিজেকেই আকর্ষণীয় করে তুলতে হয়। গণ্ডির মধ্যে না থেকে মাঝেমধ্যে পাগলামি করো। পাগলামি করা শেখো। সামান্য কিছুতেই হাসতে শেখো। হাসিই সবচেয়ে বড় ওষুধ। ঝুঁকি নিতে শেখো। দাঁতে পোকা ধরার ঝুঁকি থাকলেও মাঝেমধ্যে চকলেট খাও। নিজেকে নিয়ে খুশি থাকো!
কিশোর বয়সে যারা টেনিস খেলতে চায়, তাদের জন্য আমার পরামর্শ, লেগে থাকতে হবে। পড়তে হবে, জানতে হবে, খেলতে হবে। সবকিছুর জন্য চাই কঠিন অনুশীলন। ব্যর্থ হলেও লেগে থাকতেই হবে। সফল হলেও লেগে থাকতে হবে।

তথ্যসূত্র: টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকার অবলম্বনে লিখেছেন
জাহিদ হোসাইন খান

এই শীতে প্রয়োজনীয় কিছু খাদ্যের তালিকা

veg1

দেখতে দেখতে শীতের আনাগোনা শুরু হয়ে গেলো,আর ক’দিন পরেই শুরু হয়ে যাবে পুরোদুস্তর শীত। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে সর্দি-কাশি হওয়া খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। কিন্তু সর্তকতার সাথে চলতে পারলে এই স্বাভাবিক ব্যাপারটিও রুখে দেয়া সম্ভব। খাদ্যতালিকায় কিছু খাবার যোগ করে শীতের সর্দি-কাশি থেকে খুব সহজেই মুক্তি পেতে পারেন। চলুন তবে চিনে নেয়া যাক শীতের সর্দি-কাশির বিরুদ্ধে কাজ করে এমন সুপারফুডগুলো। 

মাছ
মাছের ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেম অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে। ফলে সাধারণ সর্দি-কাশি দেহে বাসা বাঁধতে পারে না।

রসুন
কাঁচা রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সাধারণ ঋতু পরিবর্তনের সর্দি-কাশির বিরুদ্ধে সবচাইতে ভালো কাজ করে। তাই প্রতিদিন ১-২ কোয়া কাসা রসুন খাওয়ার অভ্যাস করুন।

আদা চা
শীতের সর্দি-কাশি রুখে দিতে সাধারণ দুধ চা পান কড়া ছেড়ে দিন। আদার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং গরম গরম চা ফ্লুয়ের বিরুদ্ধে বেশ ভালো কাজ করে।

মাশরুম
মাশরুমে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ভিটামিন এবং ফাইবার যা সর্দি-কাশি রোধের পাশাপাশি দেহের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সুরক্ষায় কাজ করে।

মিষ্টি আলু
শীতের খাবার এই মিষ্টি আলুর রয়েছে এই শীতকালের নানা ফ্লু জনিত রোগের হাত থেকে মুক্তির ক্ষমতা। এর ভিটামিন এ আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করতে বেশ কার্যকরী।

সূত্র: প্রিয় লাইফ

রাজধানীতে আগুনে দগ্ধ হয়ে নারীর মৃত্যু

রাজধানীর শ্যামপুরে গরম পানিতে দগ্ধ হওয়া জাহানারা বেগম (৩৫) গত শুক্রবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, জাহানারা রাজধানীর শ্যামপুরের ওয়াসা গেট এলাকায় চাঁদনী পাকিজা ফ্যাক্টরি নামে একটি শাড়ি তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। শুক্রবার ভোরে শাড়ি পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত ফুটন্ত পানিতে পড়ে যান তিনি। এতে দগ্ধ হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে রাত দুইটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্পের তত্ত্বাবধায়ক পরিদর্শক মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের কাছে জাহানারার মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছেন। নিহতের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপায়। তাঁর স্বামী আলাউদ্দিন একজন দিনমজুর।

হাতের মেহেদি না শুকোতেই লাশ হলো গৃহবধু ইয়াসমিন!

বিয়ের দুই মাসের মাথায় ইয়াসমিন আক্তার (১৮) নামের এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর কদমতলী থানার দনিয়ার এক বাসা থেকে গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় ইয়াসমিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর স্বামী তুহিন মোল্লা পলাতক।

দনিয়ার পাটেরবাগে ইয়াসমিনদের বাসা। গত ১২ সেপ্টেম্বর একই এলাকার তুহিন মোল্লার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর ইয়াসমিন স্বামীর সঙ্গে পাটেরবাগের একটি বাড়ির তিনতলায় থাকতেন।
লাশ উদ্ধারকারী কদমতলী থানার এসআই ওমর ফারুক জানান, বৃহস্পতিবার রাতে স্বামীকে নিয়ে বাবার বাসায় খেয়েছেন ইয়াসমিন। তখন পারিবারিক কোনো বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। রাত ১১টার দিকে ইয়াসমিন স্বামীর বাসায় চলে যান। গতকাল ভোরে তুহিন ইয়াসমিনের বাবার পরিচিত বাদশা নামের একজনকে ফোন করে জানতে চান, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়েছে কি না। তুহিনের কথায় সন্দেহ হওয়ায় বাদশা বিষয়টি ইয়াসমিনের বাবা দুরুল ইসলামকে জানান। দুরুল মেয়ের বাসায় গিয়ে তা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ দেখেন। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ওই বাসার তালা ভেঙে দেখে, বিছানায় গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় ইয়াসমিন পড়ে আছেন। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
ওই থানার এসআই রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জেরে তুহিন স্ত্রীকে হত্যা করে পালিয়েছেন। তাঁকে ধরার চেষ্টা চলছে।

বিয়ে যদি আবার করতেই হয়!

164

সঙ্গী হারিয়ে কিংবা জীবনের অন্য কোনো বাস্তবতায় দ্বিতীয়বার যদি বিয়ে করতেই হয়, তখন অবশ্যই সন্তানদের সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে। তাদের মন বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জীবনচিত্র ১: সন্তানের নিষেধাজ্ঞা
ক্যানসারে আক্রান্ত স্ত্রীবিয়োগের পর ১৩ বছরের একমাত্র মেয়ে অহনাকে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে রইলেন নিজাম হোসেন। বুকের নোঙর উপড়ে প্রিয়জনেরা এভাবেই চলে যায়। চলে যেতে হবে সবাইকে—এই সত্য উপলব্ধি করে শোক সামলে ঘুরে দাঁড়ালেন ৩৯ বছরের নিজাম।
মায়ের স্মৃতি বুকে নিয়ে শোকে বিহ্বল অহনাও একসময় আবার শুরু করল স্কুলে আসা-যাওয়া। বাবা ছাড়া কিছুই বোঝে না সে। কোনো বিষয়ে ছাড় দিতে চায় না বাবাকে। একদিন খাবারের টেবিলে খোশমেজাজে বাবার উদ্দেশে বলল, ‘তুমি কিন্তু আর কখনোই বিয়ে করতে পারবে না। বিয়ের জন্য আমার অনুমতিও পাবে না, জানিয়ে রাখলাম। মায়ের আসনে আর কাউকে বসতে দেব না আমি, বুঝেছ?’
‘বুঝেছি।’ বললেন নিজাম।

জীবনচিত্র ২: বাপের বাড়ির চাপ
জীবনের বাঁধ ভেঙে গেছে। আচমকা সড়ক দুর্ঘটনায় একেবারেই চলে গেছেন প্রতিষ্ঠিত আস্থাবান স্বামী। কষ্ট সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। তবু চলে জীবন। সময় যায়, শোক স্থিত হতে না হতেই ১০ বছরের মেয়ে আর ১২ বছরের ছেলেকে লালন-পালনের দায়িত্বের শৃঙ্খলে আটকে পড়েন ৩৫ বছরের সানজানা। ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট আছে নিজের নামেই। ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকাসহ আর্থিক নিরাপত্তাও রয়েছে তাঁর। রয়েছে বিত্তশালী বাবা-মায়ের নিঃশর্ত সহায়তা। বেঁচে থাকার জন্য, সন্তানদের মানুষ করার জন্য কোনো বেগ পাওয়ার কথা নয় তাঁর। তবু সানজানার চলার পথে তৈরি হতে লাগল জীবনের নতুন ঘূর্ণি।

স্বামী মারা যাওয়ার দুই বছর পর ঘনিষ্ঠজনেরা আবার বিয়ে করার জন্য ‘স্কাড’ ছুড়তে লাগলেন সানজানার দিকে। আশপাশের পুরুষেরাও নানা কৌশলে ফাঁদ পাততে লাগলেন, প্রলোভিত করতে লাগলেন সানজানাকে। পুরুষদের পাতা ফাঁদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারলেও স্বজনদের পীড়াপীড়ি থেকে রেহাই পেলেন না তিনি। বিপত্নীক এক প্রকৌশলীকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলেন। সন্তানদের অনুমতি চাইলেন। নীরব হয়ে গেল তারা। হ্যাঁ-না কিছুই না—কোনো প্রতিক্রিয়াও দেখাল না আচরণে।

জীবনচিত্র ৩: চেনা-অচেনা পুরুষের লোভ-লালসা
শ্বশুরবাড়িতে পা দেওয়ার পরই স্বপ্নের পতন ঘটল রাহার। কানকথা ভেসে এল কানে, ‘কেবল চেহারা ফরসা হলে হয়? উচ্চশিক্ষিত হলেই চলবে? মেয়ে তো দেখছি খাটো!’ নতুন জীবনের উচ্ছ্বসিত আনন্দময় মুহূর্তগুলো আচমকা থেমে গেল কানকথার বিষবাণে। জীবনের নোঙর গেড়ে বসেনি আর শ্বশুরবাড়িতে। নিজের বাড়িতে ফিরে আসার পর আর যাননি ওই বাড়ি। আরও নানা তিক্ত কাহিনির পর তালাকনামা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ডিভোর্সের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই টের পেতে লাগলেন চারপাশের চাপ। মুঠোফোন, ফেসবুক প্রযুক্তির অশুভ আক্রমণসহ চেনা-অচেনা মানুষের আনাগোনা, লোভ-লালসা যেন অরক্ষিত করে তুলল তাঁকে। একই সঙ্গে যুক্ত হলো নিজের বাড়িতে একমাত্র ভাইয়ের বউয়ের নানা কূটচাল। দুর্বিষহ হয়ে উঠল রাহার জীবন।

মনোবিশ্লেষণ
মেয়ে অহনাকে দেওয়া কথা রাখতে পারেননি নিজাম হোসেন। নৈতিকভাবে পুরুষ সত্তার জৈবিক চাহিদা মেটানো, সামাজিকতা রক্ষা করতে গিয়ে বিয়ে করে ফেললেন অবিবাহিত এক তরুণীকে।
আরেকবার জখমপ্রাপ্ত হলো অহনার আবেগ। তার চিন্তার জগৎ ছেয়ে গেল অনিশ্চয়তার কালো মেঘে। মাকে সে হারিয়েছে রোগের কারণে। আর বাবা আবার বিয়ের করার পর তার মনে হতে লাগল, বাবাকে হারাচ্ছে অন্য নারীর কারণে। নিজেকে জখমের পর জখম করে ভুল উপায়ে উপশম ঘটাতে চাইল রক্তাক্ত মনের।
নিজাম কি ভুল করেছেন?
না, বিয়ে করে ভুল করেননি—এই বয়সে আবার বিয়ে করে শরীর-মন, সমাজের দৃষ্টিমতে ঠিক কাজটিই করেছেন তিনি। কিন্তু একটি বড় ভুল করে ফেলেছেন তিনি। বিয়ের আগে অবশ্যই অহনাকে রাজি করিয়ে নেওয়া উচিত ছিল তাঁর। নিজে না পারলে, স্বজনদের উদ্যোগও ব্যর্থ হলে তাঁদের উচিত ছিল অহনাকে মনোচিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা। তবে নানা জীবনযন্ত্রণা ভোগ করে একসময় অহনা মেনে নেয় সৎমাকে। কিন্তু বাবাকে গোপনে এক শর্ত দেয় সে—যেন নতুন মায়ের কোলে কোনো সন্তান না আসে।
কথা দিয়েও সেই শর্ত রাখতে পারেননি নিজাম। নতুন স্ত্রী গর্ভবতী হয়ে পড়লে বিষয়টি জেনে যায় অহনা। এবার সে আত্মহননের জন্য চূড়ান্ত চেষ্টা করে। হাসপাতাল থেকে জান নিয়ে ফেরত আসে অহনা। উন্নতির একপর্যায়ে মনোচিকিৎসার একটি ধাপে মনোবিদ তাকে প্রশ্ন করলেন, ‘তোমার সবচেয়ে আপন কে?’
‘বাবা ছাড়া কেউ নেই আর।’ সহজ উত্তর অহনার।
‘বাবা কেন তোমার অতি আপন?’
এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি সে। উত্তরটা দিলেন মনোবিদই, ‘তোমার দেহমন জুড়ে রয়েছে তোমার বাবা-মায়ের জিনগত অস্তিত্ব। জিনের তীব্র টানেই বাবার প্রতি তুমি মমত্ববোধ অনুভব করো। তুমিই বলো, বাবা কি চিরকাল বেঁচে থাকবে?’
উত্তর না দিয়ে মাথা নত করে থাকে অহনা।
মনোবিদ আবার বললেন, ‘যে নতুন শিশু তোমার সৎমায়ের পেটে বেড়ে উঠছে, সেও কিন্তু ধারণ করছে তোমার বাবার জিন। মায়ের অংশ না থাকলেও সেই শিশুর মধ্যে জিনগতভাবে তোমার মতোই একই বাবার অস্তিত্ব প্রবহমান থাকবে না? সেই অস্তিত্ব কি তোমার আপন হবে না? কেউ নেইয়ের জগতে কেউ একজন কি আপন হয়ে তোমার পাশে দাঁড়াবে না জেনেটিক কোডের টানের কারণে, কী বলো তুমি?’
এবারও উত্তর দেয়নি অহনা। মনোবিদের দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছিল কেবল। চোখ থেকে ছিটকে বেরোচ্ছিল নতুন আলো, মুখ থেকে নেমে গেল অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। আনন্দে মন ভরে না উঠলেও নতুন অতিথিকে মেনে নিয়েছিল সে।
দ্বিতীয় জীবনচিত্রের সানজানাও ভুল করেননি। তবে ভুল করেছিলেন সন্তানের মনোজগৎ যথাযথভাবে বুঝতে না পেরে। ফলে দুই সন্তান মায়ের বিয়ের পর নিরুদ্দেশে বেরিয়ে পড়েছিল। অনেক ভোগান্তির পর তাদের পাওয়া গেলেও ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল ব্যাপক। সেই ক্ষতি পূরণের জন্য এখনো কেঁদে বেড়ান সানজানা। বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ান মনোচিকিৎসকদের চেম্বারে।
তৃতীয় জীবনচিত্রের রাহা পুনরায় বিয়ে না করে বাবা-মায়ের আকুতি-মিনতি উপেক্ষা করে একা চলতে থাকার কারণে জড়িয়ে যান অশুভ জালে—অনৈতিক যৌনতা, মাদক ও অপরাধজগতের জালে জড়িয়ে যান নিজেরই অজান্তে।

তাড়াহুড়া নয়
বিপত্নীক কিংবা বিধবা হলে, ডিভোর্স হলে ঠিক বয়সে, ঠিক সময়ে আবার বিয়ে করা মনস্তাত্ত্বিকভাবে একটা দরকারি পদক্ষেপ। জোর করে বিয়ে টিকিয়ে রাখার প্রবণতা অনেক সময় ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনে। ডিভোর্স অনিবার্য হলে তা মেনে নিয়ে পরিণতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা চিন্তা করে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবার ঠিক সময়ে পুনরায় বিয়ে না হলে নানা সংকটে জড়িয়ে যেতে থাকেন ভুক্তভোগী—এটিও মাথায় রাখতে হবে। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী না ঘটলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, বিষণ্নতাসহ আত্মহননের মতো প্রবণতা ঘনীভূত হতে থাকে মনে। দৈহিক সমস্যা এবং দৈহিক রোগও চক্রবৃদ্ধি হারে জটিল হতে থাকে। সন্তান না থাকলে ডিভোর্সি, বিধবা বা বিপত্নীকদের অবশ্যই দেখেশুনে পুনরায় বিয়ে করা উচিত। শুধু চাপে পড়ে আবেগের বশে যেনতেনভাবে বিয়ে করা বা কারও সঙ্গে তাড়াহুড়া করে জড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। সময় নিয়ে ধীরেসুস্থে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর মোটামুটি বোঝার বয়সী সন্তান থাকলে তাদের রাজি করিয়ে বা অনুমতি নিয়ে আবার বিয়ের জন্য এগোনো উচিত। এ ক্ষেত্রেও সময় নেওয়া জরুরি। অবুঝ সন্তান থাকলে আবার বিয়ে করা বা না-করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে সচেতন হতে হবে অবশ্যই। এ ক্ষেত্রে সামাজিকতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও আর্থিক নিরাপত্তার কথা মাথায় রাখতে হবে। বিয়ে না করে থাকলে যেমন ভেতরের জৈবিক তাড়না বা চাপ সৃষ্টি করতে পারে, তেমনিভাবে বাইরের জগতের চাপও আবেগে তৈরি করে অনিয়ন্ত্রিত ঘূর্ণি। এ অবস্থায় যখন-তখন মেজাজের বিস্ফোরণ ঘটে, রাগ-ক্রোধ উসকে ওঠে, চারপাশের সম্পর্কগুলো তখন জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে।

সন্তান অধিকৃত সম্পত্তি নয়
অনেকে দৃঢ়ভাবে সন্তানকে বুকে নিয়ে পার করে দিতে চান পুরো জীবন। তাঁরা সন্তানকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চান, অধিকৃত সম্পত্তি হিসেবে ভাবতে চান নিজেদের অজান্তে। কিন্তু সন্তান বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের আবেগ ও স্বতন্ত্র ব্যক্তিসত্তার কারণে প্রকৃতিগতভাবে জড়িয়ে যায় অন্য তরুণ-তরুণীর সঙ্গে। অনেক ক্ষেত্রে মা আরও বেশি একা হয়ে পড়েন এ সময়। এই একাকিত্ব তখন তাঁদের কুরে কুরে খায়। সময় ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে ভুক্তভোগীদের আর কিছুই করার থাকে না। হতাশা ও বিষণ্নতা হয় তাদের জীবনের নিত্য সঙ্গী। মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক রীতিনীতির কারণে নর-নারী আবার বিয়ের কথা ভাবতেই পারেন।
*লেখায় উল্লেখ করা সব চরিত্রে ছদ্মনাম দেওয়া হয়েছে।
লেখক: অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও কথাসাহিত্যিক।
drmohitkamal@yahoo.com

যে গল্প অংকুরেই শেষ হতে চায়!!

8432ae2233db91de2e505fef35253341-Untitled-2

‘ভেবেছিলাম একটু থিতু হয়ে জীবনটাকে উপভোগ করব। বিয়ের বয়স এক বছর পাঁচ মাস। হানিমুনে যাওয়া হয়নি। টাকা জমিয়ে রেখেছিলাম। কোথায় যাব, তা নিয়ে চলছিল আলাপ-আলোচনা। তবে দেশের বাইরে যাব বলে ঠিক করেছিলাম। হানিমুনের সেই টাকা দিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসা করেছি।’

এ কথা বলার সময় গভীর হতাশা ফুটে ওঠে চিকিৎসক মুনতাহিদ আহসানের মধ্যে। তাঁর স্ত্রী চিকিৎসক সানজানা জেরিনের চিকিৎসার কথাই বলছিলেন তিনি। বিয়ের পর স্ত্রীর সঙ্গে হানিমুনে যাবেন বলে যে টাকা জমিয়েছিলেন, সবই খরচ হয়ে গেছে তাঁর চিকিৎসায়।

জেরিন এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। গত ২৪ আগস্টের ছিনতাইয়ের ঘটনা শুধু জেরিনের নয়, তাঁর স্বামীর জীবনটাকেও তছনছ করে দিয়েছে। হারিয়ে গেছে নববিবাহিত দম্পতির ঘরবাঁধার সুখ।

সেদিন ভোর ছয়টার দিকে রিকশায় করে স্বামীর সঙ্গে জেরিন তাঁর কর্মস্থল ফেনীর পরশুরামে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। রাজধানীর কমলাপুর ফুটবল স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সাদা রঙের একটি ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে জেরিনের হাতব্যাগে হেঁচকা টান দেওয়া হয়। এতে জেরিন ১০-১৫ ফিট দূরে গিয়ে পড়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পান।

মুনতাহিদের ভাষ্য, ‘আমার মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা, আমার মাথার সিটিস্ক্যান করাও’—এ কথা বলেই জ্ঞান হারান জেরিন। এটাই ছিল জেরিনের মুখ থেকে শোনা শেষ কথা। এরপর থেকে তিনি নির্বাক, নিথর। জেরিনের মাথায় এর মধ্যে দুবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি।

জেরিন এখনো চোখ মেলে তাঁর প্রিয়জনদের দেখেন বটে, কিন্তু সেই চোখের কোনো ভাষা নেই। এক মাস লাইফ সাপোর্টে ছিলেন জেরিন। এখন অবশ্য সে ব্যবস্থা খুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেরিনের যন্ত্রণা কমেনি। মাঝেমধ্যে তাঁর এতটাই জ্বর ওঠে, ছটফট শুরু করেন জেরিন।

বিএসএমএমইউর অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল হাই প্রথম আলো অনলাইনকে বলেন, ‘মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত পাওয়া এমন রোগীর সুস্থতার বিষয়ে কিছুই বলা যায় না। রোগীকে চোখ মেলে তাকাতে দেখে সুস্থ মনে হলেও ভালো বলার উপায় নেই। আবার অসুস্থ মনে হওয়ার পরও অনেকে সুস্থ হন। এমন পরিস্থিতিতে এক রোগীর ৪২ বছর বেঁচে থাকার নজিরও আছে। আমরা চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। কত দিন চিকিৎসা চালাতে হবে, তা বলাও সম্ভব নয়।’

৩৩তম বিসিএস উত্তীর্ণ এ এই দম্পতি চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ঘটনার দিনই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক সংশোধিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জেরিনকে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগ করা হয়। মুনতাহিদকে ফেনীতে নিয়োগ করা হয়।

ঘটনার পর মুনতাহিদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর স্বামী ও স্ত্রীকে একই জায়গায় দিতে আবেদন করেন।

ঘটনার পর জেরিনকে প্রথমে আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সে ভর্তি করা হয়। পরে নেওয়া হয় কাকরাইলের ইসলামিয়া ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে। তারপর বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। আবেদন করার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনায় আইসিইউর ভাড়া নিচ্ছে না। এর পরও এ পর্যন্ত জেরিনের চিকিৎসার পেছনে খরচ হয়ে গেছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। প্রতিদিনই ওষুধসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খাতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা।

মুনতাহিদ ও জেরিনের দুজনের পরিবারই মধ্যবিত্ত। এই দম্পতি পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। তাঁরা ছিলেন একই ব্যাচের শিক্ষার্থী। সেখানকার শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনরাই জেরিনের চিকিৎসার জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁরাই বা আর কত দেবেন? মুনতাহিদ বুঝতে পারছেন না
স্ত্রীর চিকিৎসা খরচ আর কত দিন চালাতে পারবেন।

মুনতাহিদ বলেন, ‘জেরিন মাত্র ১০ বছর বয়সে তার মাকে হারায়। ছেলেমেয়ের সুখ-শান্তির কথা চিন্তা করে বাবা আর বিয়ে করেননি। জেরিনের চাহিদা খুবই কম। সময়ের কাজ সময়ে করতে ভালোবাসে। গোছানো জীবনে অভ্যস্ত। আমার অগোছালো জীবনটাকেও গোছাতে চেয়েছিল। তবে সেই মেয়ের জীবনটাই এখন অগোছালো হয়ে গেল।’

জেরিনের বাবার স্বপ্ন ছিল একটাই—তা হলো জেরিন চিকিৎসক হয়ে মানুষকে সেবা করবেন। জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় ভালো ফল করা জেরিনের বাবার সেই আশা পূরণ করতে চলেছিলেন। কিন্তু শুধু একটি ঘটনায় সব শেষ হতে চলেছে।

ঘটনার পর মুগদা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে মামলা করেছেন মুনতাহিদ। থানা থেকে সন্দেহভাজন ধরে মুনতাহিদকে ফোন দেওয়া হয়। মুনতাহিদ বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি শুধু একটি হাত দেখেছি। তা দেখে তো আর কাউকে দোষী বলা যায় না।’

মুনতাহিদ বলেন, ‘মাত্র কয়েকদিন আগে রাজধানীতে আরেকজন নারী ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে মারাই গেলেন। আমার স্ত্রী মারা যাননি তফাৎ শুধু এইটুকু। নগরীর কোন কোন জায়গায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তা পুলিশ প্রশাসন জানে। তারা একটু তৎপর হলেই আমাদের আর এ ধরনের ঘটনার শিকার হতে হয় না। এখন ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা তো দূরের কথা, স্ত্রী বাঁচবে কি না, এটাই তো অনিশ্চিত।’

ছিনতাইকারীদের উদ্দেশে মুনতাহিদ বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা কী মানুষ না?’

জেরিন আর মুনতাহিদের জীবনের গল্পের এমন অজস্র গল্প অংকুরেই শেষ হয়ে যাচ্ছে!প্রতিদিন ছিনতাই-দুর্ঘটনা এমন অনেক দম্পতির জীবনটা কে নিঃশ্ব করে দিচ্ছি! কিন্তু আমরা এভাবে জেরিনের গল্প টা কে ফুরিয়ে যেতে দিতে পারিনা…
 
জেরিনের সহায়তায় কেউ এগিয়ে আসতে চাইলে মোহাম্মদ মুনতাহিদ আহসান ভূঞা, ব্র্যাক ব্যাংক, মতিঝিল শাখা, হিসাব নম্বর-১৫১৩২০২৫০৬৬৮১০০১ এই ঠিকানায় আর্থিক সহায়তা করতে পারেন।

চা শ্রমিক- মানুষ হলেও যাদের জীবন ক্রীতদাসের ন্যায়!

3103

চা বাগান। সবুজের মোহন দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে দেয়। একই মাপের চা-গাছ ঢেউ খেলে পাহাড়-টিলার বুকে। ২৬ ইঞ্চির বেশি বাড়তে দেয়া হয় না সবুজের এ ঢেউকে। বাড়লেই ছেঁটে ফেলা হয়। গাছগুলোর মতোই যেন চা শ্রমিকদের জীবনও ছেঁটে ফেলা। যেখানে প্রশ্রয় নেই হাসি-আনন্দের। বেঁচে থাকা শুধু বেঁচে থাকার জন্যই। সমাজের মূল স্রোতে তারা মিশতে পারেননি কখনওই।

প্রায় ১৭৫ বছর ধরে পুরুষানুক্রমে গ্লানিমাখা জীবনের ঘানি টানছেন তারা। কোন মূল্যই যেন নেই তাদের জীবনের। প্রতি ঘণ্টা হাড়ভাঙা খাটনির দাম মাত্র সাড়ে আট টাকা। তাও অনেক আন্দোলন, অনেক তপস্যার পর শ্রমের এ মূল্য নির্ধারিত হয়েছে। এর মাঝেও কিন্তু আছে। আট ঘণ্টায় যদি নিরিখ (প্রতিদিন যে পরিমাণ পাতা তুলতেই হবে) পূর্ণ হয় তবেই পড়ে ঘণ্টার এ দাম। নিরিখ পূর্ণ না হলে ঘণ্টার মূল্য কমে আরও। 

চা শ্রমিকরা দীর্ঘ দিন ধরেই মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। হাড়ভাঙা খাটুনির বিপরীতে নামমাত্র মজুরি জুটে চা শ্রমিকদের ভাগ্যে। কোন রকমে বেঁচে থাকার হিসাব কষে তাদের উপলব্ধি দৈনিক ৩শ’ টাকার কম মজুরি হলে বেঁচে থাকাই দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। অথচ বর্তমানে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৬৯ টাকা। অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের পথ পেরিয়ে দফায় দফায় বেড়ে মজুরি এ পর্যন্ত এসেছে। এর আগে ২০১৩ সালের মে পর্যন্ত দৈনিক মজুরি ছিল ৬২ টাকা। তার আগে ৫৫ টাকা। এরও আগে ছিল ৪৮ টাকা। অর্থাৎ যতই আন্দোলন হোক এক দফায় ৭ টাকার বেশি মজুরি বাড়ছে না। ২০০৯ থেকে ৫ বছরে চার দফায় মজুরি বেড়েছে ২১ টাকা। সে হিসেবে ৩০০ টাকা মজুরি পেতে হলে চ শ্রমিকদের অপেক্ষা করতে হবে আর ৫৭ বছর।
শ্রমিকদের কম মজুরির বিষয়টি সামনে এলেই বাগান মালিকরা বরাবর ‘রেশন সিস্টেম’কে ঢাল হিসেবে নিয়ে আসেন। তবে তারা এ ‘রেশন সিস্টেমে’র বিস্তারিত কখনওই কারও সামনে তুলে ধরেন না- শুভঙ্করের ফাঁকি ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে। চা শ্রমিকদের তথ্যমতে, রেশন ব্যবস্থায় একজন শ্রমিক সপ্তাহে ৩ কেজি চাল বা আটা বরাদ্দ পান। সেগুলো খাওয়ার উপযোগী নয়। তবে বেঁচে থাকার তাগিদে তা-ও গিলতে হয় তাদের। এ বরাদ্দ দিয়েই দৈনিক ৬৯ টাকায় বাঁধা জীবনের হিসাব মেলাতে হয় তাদের।

হিসাবের তিনটি রুটি নিয়ে কাজে বের হন তারা। এর একটি সকালে নাশতা  হিসাবে খান, সঙ্গে থাকে কাঁচা চায়ের পাতার সঙ্গে  মরিচ মেখে তৈরি করা ভর্তা। বাকি রুটিগুলো জমা থাকে দুপুরের খাবারের জন্য। ৬৯ টাকার হিসাবে ফাঁক আছে আরও। এ ৬৯ টাকা থেকেই বাঁচিয়ে রাখতে হয় ছুটির দিনের খরচ। বাংলাদেশে একমাত্র চা শ্রমিকরাই ছুটির দিনে কোন মজুরি পান না। ছুটির দিনের মজুরি যাতে না দিতে হয় তাই ‘হপ্তা’ (সাপ্তাহিক বেতন) সিস্টেম ভাঙতে চান না বাগানের কর্ণধাররা। তাই কোনভাবেই জীবনের হিসাব মেলাতে পারেন না চা শ্রমিকরা। অন্যান্য এলাকার চেয়ে চা বাগানগুলোতে শীতের আধিক্য বেশি থাকলেও সাধ্য না থাকায় শীতের পোশাক কেনারও সামর্থ্য থাকে না তাদের। পুরনো ছেঁড়া-ফাটা পোশাক কিনে বা সংগ্রহ করে শীতের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয় তাদের।

চা শ্রমিকদের থাকার ঘরগুলোর বেশির ভাগেরই মাটির দেয়াল। দেয়াল গলে সহজেই ঢুকে পড়ে শীত। আর বর্ষায় থাকে দেয়াল ধসে মৃত্যুর ঝুঁকি। ঘরের মতো বাইরেও একই অবস্থা। চা শ্রমিকদের এমন সংগ্রামী জীবনের গল্প প্রায় ১৭৫ বছরের পুরনো। সময়টা উনিশ শতকের মাঝামাঝি। উপমহাদেশ জুড়ে তখন বৃটিশ রাজত্ব। বাংলায় রেল লাইন বসবে। নিজেদের স্বার্থেই গ্রামের পথ চিরে রেলের লাইন টানছে বৃটিশ শাসক। লাইন বসানোর জন্য বাংলার বাইরে থেকে মূলত বিহার, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ ও অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে শ্রমিক আনা হয়। 
রেল লাইনের কাজ শেষ হলেও সেই শ্রমিকদের একটি বিশাল অংশ বাংলাতেই থেকে যায়। এমনই সময় চা বাগানের ভাবনা আসে বৃটিশদের মাথায়। নেপালিসহ আরও কিছু অবাঙালি শ্রমিক পাঠানো হয়। থেকে যাওয়া অবাঙালি শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের পাঠানো হয় সিলেট-আসাম অঞ্চলে। উদ্দেশ্য, জঙ্গল সাফ করে পাহাড়ি টিলায় চায়ের বাগান তৈরী। শুধু বাগান নয় জনবসতি বিস্তারের লক্ষ্যেও বৃটিশদের এ চিন্তা। পাহাড়-টিলায় জায়গা করে নেয়া সেসব অবাঙালির পরিচয় হয় চা-শ্রমিক হিসেবে। আর তাদের খাটনির শুরুও সেই থেকেই।

১৭৫ বছর আগে যে জীবনের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়েছিল সে জীবনের ঘানি আজও টানছেন তারা। এ সময়ে বাইরের জীবনে যুগান্তকারী পরিবর্তন এলেও তার কোন ছোঁয়া লাগেনি চা শ্রমিকদের জীবনে।  
এখনও তাদের পথ চলতে হয় সামনের জঙ্গল কেটে কেটে। রোদে জ্বলে, বৃষ্টিতে ভিজে কেবলই কাজ করতে হয় তাদের। কাজের ফাঁকে বিশ্রামের জন্য একটু ছায়ারও ব্যবস্থা থাকে না তাদের জন্য। বৃটিশ তাড়িয়ে, পাকিস্তানের পতাকা সরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হলেও স্বাধীনতার পরশ পড়েনি চা শ্রমিকদের খেটে খাওয়া দেহে। 
চা শ্রমিকদের জীবন এখনও চলছে বৃটিশদের বেঁধে দেয়া নিয়মেই। তারা এখনও শ্রমদাস হয়ে আছেন। চেয়ে চেয়ে দেখেছেন শুধু মালিকানার পরিবর্তন, ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি এতটুকুও। বৃটিশ বিদায়ের পর চা বাগানের দখল নেন পাকিস্তানি পুঁজিপতিরা। এরপর দেশ স্বাধীন হলে ইস্পাহানি, বাওয়ানি, কাশ্মীরি পরিবারের হাতে থাকা বাগানের মালিকানা আসে বাংলাদেশী মালিকদের কাছে। তবে চা শ্রমিকদের ভাগ্য রয়ে গেছে একই। সাদা চামড়ার বৃটিশ মালিকদের চেয়ে কম নন বাদামি রঙের বাংলাদেশী মালিকরাও। বৃটিশদের বাবুয়ানা ষোলো আনাই ধরে রেখেছেন বাবু নামে পরিচিত এ কালের ম্যানেজাররাও। বড় বাবু, ছোট বাবুুদের সামনে বসার অধিকার চা শ্রমিকদের নেই। ডাক পড়লে তবেই কেবল ঘরে ঢোকা যায়। তা-ও ঢুকতে হয় খালি পায়ে। 
বাবুরা বিলাসিতার চরমে ভাসলেও চা শ্রমিকদের জীবনে তার সামান্য ছিটেফোঁটাও পড়ে না। এমনকি নিজেদের পরিশ্রমের ফসল চায়ের পূর্ণ স্বাদও তারা পান না কখনও। চা শ্রমিকরা পরম মমতায় সন্তানের মতো আগলে রেখে কুঁড়ি থেকে বড় করে তোলেন চায়ের পাতা। প্রক্রিয়াজাত হয়ে বাহারি মোড়কে ঢাকা সে চা পৌঁছে যায় ঘরে ঘরে। শুধু পৌঁছে না শ্রমিকদের ঘরে। তাদের কাছে চা বলতে চায়ের কাঁচা পাতাই। বাগান থেকে ছিঁড়ে আনা চায়ের কাঁচা পাতা লবণ-পানিতে গুলে তাই পান করেন তারা। চা শ্রমিকরা যাতে বাইরের ভুবনের সঙ্গে পরিচিত হয়ে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সজাগ হতে না পারেন সে পথ বৃটিশরাই তৈরি করে রেখেছিল। শ্রমিকদের বাগানের মাঝে বন্দি করে রাখার কৌশল হিসেবে প্রতিটি বাগানের ভেতর মদের দোকান গড়ে তোলা হয়। হাড়ভাঙা খাটুনির পর জীবনের যেটুকু উদ্যম বেঁচে থাকে তা-ও নিংড়ে নেয় স্থানীয়ভাবে পাট্টা নামে পরিচিত এসব মদের দোকান। চা বাগানের বর্তমান মালিকরাও নিজেদের স্বার্থে বাঁচিয়ে রাখছেন এসব পাট্টা।
চা শ্রমিকদের জীবনে আলোর পরশ যাতে না লাগে বৃটিশদের দেখিয়ে দেয়া পথ অনুসরণ করে তার সব রকম যোগানই করে রাখছেন বাগান মালিকরা। তাদের অনাগ্রহের কারণেই পর্যাপ্ত স্কুলের অভাব রয়েছে বাগান এলাকায়। যদিও এখন অনেক এনজিও বাগানের ভেতরে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে তবে তা-ও চলে অনেক তদারকের ভেতর দিয়ে। বাগান মালিকরা কখনই চান না আলো পড়ুক শ্রমিকদের নগ্ন ‘কালো’ গায়ে।

সূত্র- মানবজমিন

ডিসলেক্সিয়া এবং ডিসলেক্সিক শিশু

dev-bg-home-2

‘তারে জামিন পার’ নামের হিন্দি মুভিটির কথা মনে আছে? যারা দেখেছেন তারা অবশ্যই ডিসলেক্সিয়া শব্দটির সাথে পরিচিত। মুভির প্রধান চরিত্র ঈশান নামের ছেলেটি পড়া ও লেখার ক্ষেত্রে যে সমস্যায় পড়েছিল তা-ই হলো ডিসলেক্সিয়া। আমাদের দেশে অনেক শিশু এই সমস্যায় ভুগে থাকে। এটি একটি স্নায়ুগত সমস্যা যা জন্মগত ভাবেই অনেক শিশুর মধ্যে থাকে। এর সম্পর্কে কিছুটা ধারনা দেয়ার জন্যই এই লেখা।

ডিসলেক্সিয়া কি?

ডিসলেক্সিয়া (Dyslexia) বা স্পেসিফিক লার্নিং ডিজেএবিলিটি (শিখনমূলক অক্ষমতা) হলো এমন এক ধরনের সমস্যা, যা হলে শিশুর পড়তে অসুবিধা হয়। ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ নিউরোলজিস্টের মতে, এটা শিশুদের একটা সমস্যা যেখানে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা ঠিক থাকা সত্ত্বেও তারা কোনো কিছু লেখা বা পড়ায় সমবয়সী অন্য শিশুদের মতো সক্ষম হয় না। বিকাশগত ডিসলেক্সিয়া প্রথমবার বর্ণিত হয়েছিল ১৮৮৬ সালে একটি ১৪ বছরের ছেলের ঘটনায়, যে পড়তে শিখছিল না। ১৯৬০ সালের পরেই এটি গবেষণা চিকিত্‍সার ক্ষেত্র থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে সরে এসেছিল, এবং ইউএসএ -তে ৮০ এর দশকে “পড়ার অক্ষমতা” শব্দটির দ্বারা ডিসলেক্সিয়া শব্দটিকে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছিল।

ডিসলেক্সিয়ার কারণ ও ধরন 

আঘাতজনিত ডিসলেক্সিয়া: মস্তিস্কের একটি নির্দিষ্ট স্থান থাকে যেটি পড়ালেখার ক্ষমতা কন্ট্রোল করে। শিশুর জন্মের সময় অথবা অন্য কোনো কারণে মস্তিস্কের সেই স্থানে আঘাত পেলে ডিসলেক্সিয়া হতে পারে। তবে চিকিৎসা ব্যবস্থার অগ্রগতির সাথে সাথে বর্তমানে এ ধরনের ডিসলেক্সিয়া খুব একটা দেখা যায় না।

প্রাথমিক ডিসলেক্সিয়া: প্রাথমিক ডিসলেক্সিয়াতেই শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। এ ক্ষেত্রে ব্রেইনের বাম দিকের একটি অংশ কোনো কারণ ছাড়াই ঠিকভাবে কাজ করে না। বয়স বাড়লেও ব্রেইনের ওই অংশ ঠিকভাবে কাজ করে না। ফলে বড় হয়েও এরা ঠিকমতো লিখতে, পড়তে ও বলতে পারে না। এ সমস্যা বংশ পরম্পরায় ছড়াতে পারে। মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।

সেকেন্ডারি বা জন্মগত ডিসলেক্সিয়া: শিশু গর্ভে থাকা অবস্থায় হরমোনগত কারণে এ সমস্যা হতে পারে। শিশু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সমস্যা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। এ ধরনের সমস্যা ছেলেদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে।

লক্ষণসমূহঃ

আমরা যেটা দেখি তার আকার-আকৃতি ব্রেইনে স্থায়ীভাবে গেথে যায়। সে কারণে চারপাশের জিনিসগুলো আলাদাভাবে চিনতে পারি। কাউকে না দেখেও শুধু তার কথা শুনে বলে দিতে পারি সেটা কার কণ্ঠস্বর। কিন্তু ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ব্রেইন এ ধরনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে ভালো স্কুল, ভালো শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করালেও এরা পড়াশোনায় পিছিয়ে যায়। বর্ণমালার অক্ষরগুলো ঠিকমতো চিনতে পারে না বা উল্টা-পাল্টা দেখে। এমনকি ক্লাসে বসে শত চেষ্টা সত্ত্বেও শিক্ষকের পড়া ঠিকমতো বুঝতে পারে না। এরা স্কুলে বোর্ড দেখে দেখে খাতায় লিখতে খুব অসুবিধা অনুভব করে। একটি প্রশ্ন করলে অনেক সময় উত্তর করতে সমর্থ হলেও এক সঙ্গে অনেক প্রশ্ন করলে এরা কোনোটিরই উত্তর দিতে পারে না। কানে তেমন সমস্যা না থাকলেও এরা কোনো কিছু শুনে মনে রাখতে পারে না। একটি বাক্য বলার সময় মাঝের কিছু শব্দ তারা ভুলে যায় অথবা হারিয়ে ফেলে। ফলে বাক্যের অর্থ এমন হয়ে যায় যে, অনেকের কাছে তা হাস্যকর মনে হয়। তারা জানে তারা কি বলতে চাচ্ছে কিন্তু প্রকাশ করে ফেলে ভিন্ন কিছু। যার কারণে এরা পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ে। একসময় পরিবার তথা শিক্ষকদের রোষানলে পড়ে। ফলে তারা নিজেদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। সাধারনত শিশুরা ডান কিংবা বাম হাতে শক্তিশালী হলেও এরা দুই হাতে মোটামুটি সমান শক্তি প্রকাশ করে থাকে। যেহেতু সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে এই সমস্যাগুলো সারা জীবন থাকে, তাই বড় হলে সে বিষণ্নতায় ভোগে।

অথচ বুদ্ধির দিক থেকে এদের কোনো ঘাটতি থাকে না। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এসব শিশুর না আছে কোনো চোখে সমস্যা, না আছে কোনো কানে সমস্যা। এমনকি মানসিকভাবে এরা বিকারগ্রস্ত থাকে না।

যদি আপনার শিশু 

–      অন্যান্য বাচ্চাদের তুলনায় দেরিতে কথা বলতে শেখে।

–      দিক নির্দেশনা বুঝতে সমস্যা হয়। ডান ও বাম দিকের মধ্যে তফাত ধরতে পারে না।

–      সাধারনত যে বয়সে জামার বোতাম লাগাতে এবং জুতার ফিতা বাঁধতে পারার কথা তা না পারে বা করতে সমস্যা হয়।

–      অকারণেই হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়।

–      প্রতিটা শব্দ ধরে ধরে পড়ে কিন্তু মানে বুঝতে পারে না বা বুঝতে দেরি হয়।

–      দাঁড়ি, কমা, প্রশ্নবোধক চিহ্ন ইত্যাদির মানে বুঝতে পারে না।

–      কোনো কিছু বানান করে পড়তে তারা দুর্বলতা প্রকাশ করে।

–       শুদ্ধ উচ্চারনে সমস্যা

–      পড়া, দেখে বা শুনে লেখা সঠিকভাবে অন্যরা যত দ্রুত পারে, তত দ্রুত পারেনা। তাই তাদের লেখা অসুন্দর হয়। এক পৃষ্ঠায় একই শব্দ বিভিন্ন ভুল বানানে লেখে বা এক বানানের সাথে অন্য বানান মিলেনা।

–      কখনো কখনো উল্টো বা বিভিন্ন প্যাটার্নে শব্দ লেখে।

–      অনেক সময় পড়তে গিয়ে লেখা শব্দের জায়গায় বেশি চেনা অন্য শব্দ ব্যবহার করে।

–      পড়তে পড়তে লাইন বাদ দিয়ে যায়। অনেক সময় নিজের থেকে শব্দে অতিরিক্ত অক্ষর যোগ করে দিতে পারে। আবার অনেক সময় বাদও দিতে পারে।

–      পড়তে পড়তে অন্য দিকে তাকালে যে লাইনটা পড়ছিল সেটা আর খুঁজে পায় না।

–     কোনো কিছুর সঙ্গে এরা তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। এমনকি মিউজিকের তালেও এরা শরীর দোলাতে পারে না।

এই সমস্যার পাশাপাশি এই শিশুদের আরো কিছু উপসর্গও থাকে। যেমনঃ

* সামষ্টিক কাজে অনগ্রসরতা এবং অমনোযোগ

* অতিরিক্ত লজ্জা ও একা থাকার প্রবনতা

* গতি ও অবস্থান নির্ণয়ে অসামন্জস্যতার কারনে খেলায় অপারদর্শিতা

* দিবাস্বপ্ন দেখার প্রবণতা

* প্রচণ্ড স্কুল-ভীতি

 

ওপরের লক্ষণগুলো যদি থাকে, তাহলে হতে পারে যে শিশুটি ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে বাড়তে থাকতে পারে। এমনটি হলে যথাশীঘ্র শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এবং সঠিক দিকনির্দেশনা মত চলতে হবে।

চিকিৎসা ও করনীয়ঃ

ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত শিশুর জন্য প্রথম চিকিৎসাই হলো তার সমস্যাকে শনাক্ত করা। প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগটি নির্ণয় করা বেশ কঠিন। মা-বাবা কিংবা ক্লাসের শিক্ষক রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরতে পারেন না। তবে মানসিক বিশেষজ্ঞ কিংবা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগটি সহজেই নির্ণয় করতে পারেন। শিশুর ডিসলেক্সিয়া থাকলে তা সাধারণত বোঝা যায় স্কুলে ভর্তি করার পর। তাই এ সময়ে শিশুর  দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। এর চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত কোনো ওষুধ তেমন কার্যকরী ভুমিকা রাখতে সক্ষম হয় নি। ডিসলেক্সিয়ার কোনো নির্দিষ্ট চিকিত্‍সা হয় না। কবে কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করে শিশুদের দৈনন্দিন জীবন সহজ করে তোলা যেতে পারে।

–       শিশুর ঠিক কোন জায়গায় সমস্যা তা বোঝার চেষ্টা করুন। সেই অনুযায়ী স্ট্র্যাটেজি ঠিক করুন।

–      নির্দিষ্ট পড়ানোর স্টাইল ছেড়ে ইন্টারঅ্যাক্টিভ স্টাইলের আশ্রয় নিন। সম্ভব হলে কমপিউটারের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।

–      ডিসলেক্সিক শিশুরা যেন সহজে পড়াশোনা করতে পারে তার জন্য বড়দের আচরণ ঠিক রাখতে হবে। পড়াশোনা নিয়ে শিশুকে বেশি চাপ দেবেন না। আবার এত বেশি ছুট দেবেন যাতে আর পড়তেই না চায়।

–      হোমওয়ার্ক একটানা না করে কিছুটা বিরতি দিয়ে করানো উচিত। কোনো পড়া ঠিকমতো করলে শিশুর প্রশংসা করুন।

–      পড়ার সমস্যা কমাতে শিক্ষক-ছাত্র একসঙ্গে বসে পড়লে ভালো হয়। যেটা পড়া হবে সেটার মানে যদি শিক্ষক বুঝিয়ে দেয়, তাহলে বাচ্চার পড়তে সুবিধে হয়। দুজনকেই একসাথে শুরু করতে হবে, যাতে শিক্ষকের গলার আওয়াজ শিশুর কাছে সাপোর্টের কাজ করে। শিক্ষকের গলার আওয়াজ আস্তে আস্তে কমিয়ে দিতে হবে যেন শিশু একাই পড়তে পারে।

–      একটানা ক্লাস না নিয়ে বিরতি দিয়ে ক্লাস করতে হবে।

–      যেসব শিশুরা পড়তে পড়তে খেই হারিয়ে ফেলে তাদের আঙুল ব্যবহার করে পড়তে শেখানো যেতে পারে। এতে লাইন বাদ দেবার প্রবণতা কমে যাবে।

–      অনেক সময় স্পিচ মাসল ঠিকমতো কাজ করে না বলে শিশু ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারে না। অনেক ব্যায়াম আছে যেগুলো স্পিচ মাসল শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।  শিশুকে এসব ব্যায়াম করান।

–      ছোট ছোট খেলাও অনেক সময় উপকারী হয়। যেমন- শিশুর সাথে শব্দের পাজেল/ লেগো থেকে লুকানো শব্দ খুঁজে বের করার খেলা খেলুন।

 

ডিসলেক্সিক শিশু ও অভিভাবকের করণীয়ঃ

পৃথিবীতে সব শিশুই সমান ব্রেইন কিংবা মেধা নিয়ে আসে। এরপরও সে-ই ভালো ছাত্র/ছাত্রী হয় যে বেশি চর্চা করে। কিন্তু ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত শিশু চর্চা করার ক্ষমতা হারায়। শিশুর এ সমস্যা কাটাতে মা-বাবার ভূমিকাই প্রধান। শিশুর আশপাশের লোকজনের সহানুভূতিশীল হওয়া জরুরি। প্রথমে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন। প্রয়োজনে বিষয়টি নিয়ে স্কুল শিক্ষকের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন। তবে একজন চাইল্ড সাইকিয়াট্রিস্টের সহায়তা নিলে খুব ভালো হয়। শিশুকে তার ব্যর্থতার জন্য কোনোভাবেই গালমন্দ কিংবা মারধর করবেন না। পড়াশোনা না করার জন্য বকুনি শুনতে শুনতে হারিয়ে যায় ওদের ‘আমিও পারি’ বোধটা। তাই ‘ফাঁকিবাজ’রা এড়িয়ে চলতে শুরু করে ভালবাসার জিনিসও। সেখান থেকেই তৈরি হতে পারে ‘কনডাক্ট ডিসঅর্ডার’ বা আচরণের অসঙ্গতি। হয়ে উঠতে পারে আত্মহত্যাপ্রবণও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিসলেক্সিয়া অসুখ নয়। অক্ষমতা মাত্র। এই অক্ষমতা পুরোটা সারে না, তবে সচেতনতাই আসল। ফাঁকিবাজি না অন্য কিছু, তা বুঝতে হবে বাবা-মাকে, স্কুলকে, বিশেষত শিক্ষককে। ডিসলেক্সিকদের ‘অ্যাটেনশন স্প্যান’ খুব কম। তবে ডিসলেক্সিক বাচ্চারা খুব প্রতিভাবান হয়। তাদের খুবই ভাল চিন্তাশক্তি/কল্পনাশক্তি এবং কখনো কখনো ভাল গানিতিক প্রতিভা থাকে। বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে তাদের অসাধারন আগ্রহ ও পারদর্শিতা দেখা যায়। ওদের যে দিকে আগ্রহ সে দিকে উৎসাহ পেলে দারুণ উন্নতি করে।  ‘স্পেশ্যাল লার্নিং’ ও ‘স্পেশ্যাল কেয়ার’ও এই সমস্যার বেশ খানিকটা সমাধান হতে পারে। অনেক সময়ই দেখা যায়, ওপেন স্কুল ব্যাপারটা ডিসলেক্সিকদের ক্ষেত্রে খুব খেটে যায়। কারণ, সেখানে পছন্দসই বিষয় বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা থাকে। যা প্রচলিত কাঠামোয় নেই। তা ছাড়া উৎসাহ দিয়ে যেতে হবে ওদের ভাল লাগার বিষয়ে। সে দিকে বইতে দিলে সফল হয় ওরা। দেখা গিয়েছে, ওদের পিছনে লেগে থাকলে, অর্থাৎ সমস্যাটা বুঝে ওদের একটু সময় দিলে, সাহায্য করলে ওরা সফল হয়। সুতরাং শিশুর ডিসলেক্সিয়া থাকলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। দরকার ভালবাসা, উৎসাহ আর বোঝার মন। সমস্যা গুলো জন্মগত হলেও বিশেষ ভাবে দেখলে সেগুলো অনেকাংশে দুর করা যায়। আর তাদের গুণগুলো এগিয়ে নিতে পারলে মেধাবী কিছু মানুষ পাওয়া সম্ভব।

লিখেছেন- সিফাত মাহজাবিন,নিউট্রেশনিস্ট।

পরকীয়া- দিন দিন যার বৃদ্ধি ভয়ংকর!

htta

কিঞ্চিৎ ভুল বোঝাবুঝিতে সুখের ঘরে ঢুকে পড়ছে দুখের আগুন। পারিবারিক বন্ধন ভেঙে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা। পরকীয়ার ঘটনায় একের পর এক তছনছ হচ্ছে সাজানো সংসার। ঘটছে খুনোখুনির ঘটনাও। বাবা-মায়ের দাম্পত্য কলহের জেরে বিবাহবিচ্ছেদ অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ধাবিত করছে নিষ্পাপ শিশুসন্তানদের। পরবর্তীতে এ শিশুরা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। শিশুকাল থেকে পিতৃ-মাতৃহীনতার কারণে ঢুকে যাচ্ছে অন্ধকার নেশার জগতে। আক্রান্ত হচ্ছে নানা মানসিক রোগে। ঝরে পড়ছে বিদ্যাপীঠ থেকে। বহুবিধ কারণে সারা দেশে নারী নির্যাতন, তালাক ও পরকীয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সংশ্লিষ্টরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। 
গত প্রায় ৫ বছরে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ৫৪ হাজার ৪৯৫টি। পরিসংখ্যান বলছে গ্রামের চেয়ে শহরে তালাকের ঘটনা বেশি। তালাকে পুরুষের চেয়ে নারীরা এগিয়ে। 
পরকীয়ার জেরে গত ১৯ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুরে গিয়াসউদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী খুন হন। পুলিশ জানায়, গিয়াসউদ্দিনের স্ত্রী লিনা তার প্রেমিক তানভীর ও তানভীরের বন্ধুদের দিয়ে স্বামীকে হত্যা করান। একই কারণে গত ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় মিরপুর মধ্য পাইকপাড়ায় ৭ বছরের ছেলে সাবিদ হোসেন ও স্ত্রী আইরিন আক্তার আরজুকে হত্যা করেন তার স্বামী। স্ত্রীর পরকীয়ার খেসারত হিসেবে ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিনকে লাশ হতে হয়েছে। তার সন্তানদের ভবিষ্যৎও নষ্ট হওয়ার পথে। অন্যদিকে ব্যাংক কর্মকর্তা বাবার পরকীয়ার জেরে মায়ের সঙ্গে সাবিদকে শুধু প্রাণই দিতে হয়নি, তার দেড় বছরের ছোট ভাই সানভীরের জীবন এখন অনিশ্চয়তায় ঘুরপাক খাচ্ছে। 
অপরাধ বিশ্লেষক ও মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মোবাইল ফোন, চ্যাটবক্স, ফেসবুক, যৌতুক, নেশার উন্মাদনা, বিপরীত লিঙ্গ থেকে যৌন চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়ে দাম্পত্য কলহ, পরকীয়া, আর্থিক দৈন্য, বিদেশি বিশেষ করে ভারতীয় চ্যানেলের নাটক-সিনেমার প্রভাবসহ মানসিক হীনম্মন্যতার কারণে পারিবারিক বন্ধন ভেঙে যাচ্ছে। এর ফলে ভাঙছে সংসার। বাড়ছে নারীর ওপর নির্যাতন। পারিবারিক এ ভাঙনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে শিশুদের ওপর। যে সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অমিল থাকে, সেখানকার সন্তানরাও মানসিক সমস্যায় ভোগে। ভবিষ্যতে ওই সন্তান জড়িয়ে পড়ে বহুবিধ অপরাধে। 
সমাজবিজ্ঞানীরা এও বলছেন, নারী আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় সে তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে। তাই স্বামী ও তার পরিবারের নির্যাতন তারা এখন আর মুখ বুজে সহ্য করছে না। তাই বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা বাড়ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) হিসাব অনুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১১ হাজার ৫৬৬টি তালাকের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৩১৬টি তালাক দেওয়া হয় নারীর পক্ষ থেকে। আর পুরুষের পক্ষ থেকে ৪ হাজার ২৫০টি। এতসব ঘটনার মধ্যে পারিবারিক, সামাজিক ও আইনি মীমাংসায় মাত্র ৩০৬টি তালাক প্রত্যাহার করা হয়। 
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫টি অঞ্চলে একই সময়ে ১০ হাজার ৬৪৯টি তালাকের নোটিশ জমা পড়ে। সেখানেও তালাক প্রদানে নারীরা এগিয়ে। তালাক দেওয়ার েেত্র বেশিরভাগ নারীর বয়সই ২৫ থেকে ৩৫-এর মধ্যে। আর ২০১০ সাল থেকে গত অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৫ বছরে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ৫৪ হাজার ৪৯৫টি। পরিসংখ্যান বলছে গ্রামের চেয়ে শহরে তালাকের ঘটনা বেশি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২০১২ সালে ২ হাজার ৮৭৯টি তালাকের ঘটনা ঘটলেও পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৮০টিতে।  
বিবাহবিচ্ছেদ বৃদ্ধির ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ এহসান হাবিব বলেন, পারিবারিক ভাঙনের একক ও সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। নারীর ক্ষমতায়ন, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, প্রযুক্তির বিপ্লব ও বৈশ্বিক পরিবর্তনে মানুষের রুচি বদল হচ্
ছে। আর এ কারণেই ঘর ভাঙছে। তিনি বলেন, উচ্চবিত্ত পরিবারে ঘর ভাঙছে পারস্পরিক অঙ্গীকার থেকে কারো সরে আসা ও রুচির পার্থক্যের কারণে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারে মূল সমস্যা ভরণ-পোষণ মেটানো। তবে সব শ্রেণির পরিবারেই স্বামী-স্ত্রী পরস্পর সঙ্গ না পাওয়া, জৈবিক চাহিদা পূরণে অক্ষমতা, হীনম্মন্যতা ও অতি আবেগ বিবাহবিচ্ছেদের মূল কারণ। এ জন্য নারী-পুরুষ পরকীয়ায়ও জড়িয়ে পড়ছে।  
ড. শাহ এহসান হাবিবের মতে, সংসার টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন পারিবারিক বোঝাপড়া। এছাড়াও মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের সহায়তায় অন্তত জেলায়-জেলায় স্থায়ীভাবে পারিবারিক কাউন্সেলিং আয়োজনের মত দেন তিনি। 
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা জানান, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়া অবস্থায় অনেকেই প্রেমে জড়িয়ে পড়ে গোপনে বিয়ে সেরে ফেলছে। এরপর কয়েক বছর যেতে না যেতেই পরিবারের মন রক্ষা অথবা নানা দৈন্যদশায় পড়ে তারা তালাকের দিকে যাচ্ছে। ওই কর্মকর্তা জানান, নগর এলাকায় তালাক অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তার পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট নারী-পুরুষের স্থায়ী ঠিকানায় জনপ্রতিনিধির কাছে চিঠি পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু গোপনে বিয়ে করা ছেলেমেয়েরা এক্ষেত্রে তাদের ঠিকানায় চিঠি না পাঠাতে অনুরোধ করে থাকে। প্রতিদিনই এ রকম ঘটনা ঘটছে। 
সূত্র আরও জানায়, রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরায় ধনাঢ্য পরিবারে সবচেয়ে বেশি বিবাহবিচ্ছেদ হচ্ছে। বাদ পড়ছে না মডেল-তারকা পরিবারও। কিন্তু সম্মান বাঁচাতে উভয় পরিবারের পক্ষ থেকে তা গোপন রাখা হচ্ছে। 
দিনদিন পারিবারিক বন্ধন ন্যুব্জ হয়ে পড়ায় নারী নির্যাতনের ঘটনাও বেড়ে চলেছে। একই সঙ্গে সৎ মা, পাড়া-প্রতিবেশীসহ বহুবিধ কারণে শিশুর ওপরও অত্যাচার বাড়ছে। 
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ‘নারীর প্রতি সহায়তা সেল কর্মসূচি’ দেশের ৬টি বিভাগে গত এক বছরে সারা দেশে ৫ হাজার ২৫৪ নারী ও ৪ হাজার ৮৭৩ শিশু নির্যাতনের অভিযোগ পেয়েছে। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের নারী নির্যাতন সেল সূত্র জানায়, বিবাহবিচ্ছেদের পর আপন রক্ত-মাংসে গড়া শিশুটি যাতে নির্যাতনের শিকার না হয় সে কথা ভেবে ৬০ শতাংশ নারী চান সন্তান তাদের কাছে থাক। 
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহিন আহমেদ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, নারীরা শিক্ষাগ্রহণ করে অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম হচ্ছে। এখন সে তার ভালো-মন্দ বিচার করতে জানে। আর অর্থনৈতিকভাবে সক্ষমতার কারণে নারী তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অত্যাচারের জবাব দিতে শিখেছে। এছাড়া যৌতুকের দাবিসহ অনেক পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়ারও ভিন্নতা আছে। ইন্টারনেটের বদৌলতে সামাজিক অবক্ষয় বাড়ায় ঘর ভাঙছে। এতে শিশুর ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

লিখেছেন- হাসান জাভেদ।

কম্পিউটার ইউজারদের ১০টি বাজে ভুল!

real-issues

জেনেশুনেও একই ভুল আমরা বারবার করি। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্রযুক্তিপণ্যগুলোর ক্ষেত্রে এই কিছু অতি সাধারণ ভুলও কিন্তু আমাদের বড় ধরনের ঝামেলায় ফেলে। প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারের সময় গড়ে ওঠা কিছু বাজে অভ্যাসের কারণে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়—এমনই ১০ কু-অভ্যাস থেকে মুক্তির উপায় জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি ব্যবসা ও প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডারে এ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একটি প্রতিবেদন।

সবকিছুতে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার
এই একটি ভুল প্রায় অধিকাংশ মানুষই করেন। বিভিন্ন অনলাইন অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন অনেকেই। এতে একটি পাসওয়ার্ড দুর্বৃত্তদের হাতে পড়ে গেলে তারা সব অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারে। একটি পাসওয়ার্ড মনে রাখা সহজ বলে সব অ্যাকাউন্টে ওই একই পাসওয়ার্ড দিয়ে পাসওয়ার্ড মনে রাখার ঝামেলা এড়াতে চান অনেকে। এ অভ্যাসটিকে বিপজ্জনক অভ্যাস বলছেন প্রযুক্তি গবেষকেরা। যদি নতুন পাসওয়ার্ড মনে রাখতে সমস্যা হয়, তবে লাস্ট পাসের মতো পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনার অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্য নিতে পারেন।

কোনোদিন পাসওয়ার্ড পরিবর্তন না করা
একই পাসওয়ার্ড যেমন—বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা ঠিক নয়। আবার ঠিক তেমনি একই পাসওয়ার্ড বেশিদিন ব্যবহার করাও উচিত নয়। পাসওয়ার্ড নিয়মিত পরিবর্তন করা উচিত। মাইক্রোসফটের পরামর্শ হচ্ছে, প্রতি মাসে একবার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। মাসে একবার না পারলে নিরাপদ থাকতে প্রতি তিন মাসে হলেও পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।

দ্বিস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা সক্রিয় না করা
সাইবার দুর্বৃত্তদের রাজত্বের এই সময়ে দ্বিস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা ব্যবহারের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার না করা বোকামি। অনলাইন অ্যাকাউন্টগুলোর অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘টু-স্টেপ অথেনটিকেশন’ সক্রিয় করা প্রয়োজন। অনলাইনে আপনি যে যে সার্ভিস ব্যবহার করেন তাতে যদি দ্বিস্তরযুক্ত শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া ব্যবহারের সুযোগ থাকে তা কাজে লাগাবেন। ম্যাকাফির অনলাইন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রবার্ট সিসিলিয়ানোর পরামর্শ হচ্ছে এটা। তাঁর মতে, দুই স্তরের এই ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় ব্যবহারকারীকে তাঁর অ্যাকাউন্টে নিয়মিত পাসওয়ার্ড ব্যবহারের পাশাপাশি লগ ইন করার সময় স্মার্টফোন ও ট্যাবে আরও একটি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হয়। এতে অতিরিক্ত একটি স্তরের নিরাপত্তা পাওয়া যায়। তাই যতক্ষণ হাতে মোবাইল থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত আর কেউ অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারছে না, সে বিষয়টি নিশ্চিত হয়। অ্যাপল, গুগল, ফেসবুক, ড্রপবক্সের মতো অনেক সার্ভিসের ক্ষেত্রে দুই স্তরের এই ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া রয়েছে।

ছবি মুছতে ভুলে যাওয়া
আপনার মোবাইল ফোনের জায়গা নষ্ট হওয়ার জন্য ছবি মুছে ফেলতে ভুলে যাওয়ার অভ্যাস দায়ী। বেশি পুরোনো ছবি মোবাইলে না রেখে তা মুছে ফেলার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনার পুরোনো ছবি বা গানগুলোকে অনলাইনে ক্লাউড সার্ভিসে রেখে দিতে পারেন।

কাজের সময় কম্পিউটারে ঠিকভাবে না বসা
যাঁরা নয়টা-পাঁচটা অফিস করেন তারা কম্পিউটারে বসার নিয়ম কানুন অনেক সময় মেনে চলেন না। গবেষকেরা জানিয়েছেন, টানা ৮ ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করলে স্থূলতা, ডায়াবেটিসের মতো নানা সমস্যার ঝুঁকিতে পড়ে যাবেন।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একটানা কম্পিউটার ব্যবহারের পরিবর্তে মাঝে মাঝে বিরতি দিন। এ ছাড়া কম্পিউটার মনিটরটির অবস্থান আপনার চোখের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্থাপন করুন।

লগ আউট করা হয়নি!

অনেকেই ফেসবুক, জিমেইলের মতো অনলাইন অ্যাকাউন্টগুলোতে যাওয়ার পর লগ আউট করতে ভুলে যান। শিক্ষার্থীরা এই ভুল বেশি করে বসেন। সাইবার ক্যাফে. লাইব্রেরি কম্পিউটার কিংবা বন্ধুর কোনো কম্পিউটারে লগ ইন করার পর অনেক সময় তা ব্যবহার করে আর লগ আউট করেন না। অ্যাকাউন্ট থেকে লগ আউট হওয়া এবং ব্রাউজিং হিস্ট্রি মুছে মুছে ফেলার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। তবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টে লগ ইন করার বিষয়টি অনিরাপদ কোনো পিসি থেকে না করাই ভালো। গুগল, ফেসবুক, স্কাইপে দূর থেকে কীভাবে লগ আউট করা যায় তার ভিডিও টিউটোরিয়াল পাবেন।

কম্পিউটার কখনো রিস্টার্ট না দেওয়া
টানা কম্পিউটার ব্যবহার করে যাচ্ছেন কিন্তু পিসিকে মোটেও বিশ্রাম দিচ্ছেন না। এতে পিসির মারাত্মক ক্ষতি না হলেও পিসির গতি কমে যাবে। কম্পিউটারের গতি কমিয়ে দেয় এ ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড কার্যক্রম বন্ধ করতে রিস্টার্ট একটি উত্তম উপায়। অবশ্য, ঘন ঘন রিস্টার্ট দেওয়া বা পিসি বন্ধ করার অভ্যাস করাও ঠিক নয় এতে আপনি অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে পারেন।

বারবার মোবাইল দেখা
ঘুমানোর আগে অনেকেই বারবার মোবাইল দেখতে থাকেন যা মোটেও ঠিক নয়। গবেষকেরা বলেন, কৃত্রিম এই আলো ঘুম নষ্ট করার জন্য এই আলো দায়ী। আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, ঘুমানোর আগে ট্যাব বা স্মার্টফোনের ব্যবহার ঘুমের চক্রকে নষ্ট করে দেয়।

আপডেট নিতে ভয় করা
সফটওয়্যার আপডেট ইনস্টল করতে অনেক সময় বিরক্তিবোধ হয়। বেশি সময় লাগে বলে গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটা অনেকেই করতে চান না। কিন্তু সফটওয়্যার সবসময় হালনাগাদ সংস্করণ ব্যবহার করা উচিত। মোবাইল ফোনের অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার আপডেটে অনেক সময় সফটওয়্যার বাগ দূর করা হয় এবং অধিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে বলে হালনাগাদ সংস্করণ ব্যবহার করা উচিত।

ফাইল ব্যাকআপ না রাখা
অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ অনেক ফাইল ব্যাকআপ রাখেন না যা তার বাজে অভ্যাসের মধ্যে পড়ে। যদিও এখনকার ফোনে বেশির ভাগ ছবি, কন্টাক্ট ও বার্তা ব্যাকআপ রাখার সুবিধা থাকে কিন্তু ডেস্কটপে যখন মাইক্রোসফট অফিসে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হয় তখন তা দ্রুত ব্যাকআপ করে রাখা উচিত। এখন অনেক ক্লাউড সার্ভিস রয়েছে যার সুবিধা নিয়ে আপনি সহজেই তথ্য ব্যাকআপ রাখতে পারবেন।

নারী- সামাজিক মনস্তত্ব

2454

 ‘নারী বা পুরুষ হয়ে কেউ জন্মায় না : সামাজিক পরিবেশ, প্রথা, সংস্কৃতি একটি শিশুকে ধীরে ধীরে নারী বা পুরুষ করে তোলে।’ সামাজিক মনস্তত্ত্ব হচ্ছে জনমনে প্রতিদিন উদিত তাৎক্ষণিক ধ্যানধারণা, মতামত, আবেগ ও খেয়াল যার মধ্যদিয়ে প্রতিফলিত হয় সমাজে জনগণের অবস্থান এবং যা তাদের সামাজিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনে চালিত করেশ্রেণিবিভক্ত শোষণমূলক প্রতিটি সমাজে প্রতিটি শ্রেণি, গোষ্ঠী বা স্তরের একটি নির্দিষ্ট অবস্থান ও নির্দিষ্ট অবস্থান ও নির্দিষ্ট স্বার্থ থাকে, পাশাপাশি থাকে ধ্যানধারণা, মতামত ও ভাবাবেগ। এগুলোই তার সামাজিক মনস্তত্ত্ব। পুঁজিবাদী সমাজে মালিক আর শ্রমজীবীর মনস্তত্ত্ব এক নয়, এক নয় পুরুষ ও নারীর মনস্তত্ত্ব। সভ্যতার শুরু থেকেই নারী এক অবহেলিত প্রাণী হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। এ কারণেই অনেকে বলে থাকেন পৃথিবী যখন অসভ্য ছিল নারীর তখন সুখ ছিল, ক্ষমতা ছিল, পরিচয় ছিল। সে-ই ছিল পরিবার ও সমাজের মধ্যমণি।

যখন থেকে সভ্যতার শুরু হলো, নারী তখন থেকেই ধীরে ধীরে নিক্ষিপ্ত হলো পরিবার ও সমাজের অাঁস্তাকুড়ে। পুরুষ প্রধান এ সমাজে কন্যাশিশুর জন্ম প্রায় অনাকাঙ্ক্ষিত। কন্যাশিশুর এ অবস্থার পেছনে কাজ করে পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক মনস্তত্ত্ব। পরিবার ও সমাজে এমন একটা বোধ গড়ে উঠেছে যে_

১. কন্যাশিশুরা পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী নয়;

২. প্রধান অর্থ উপার্জনকারী নয় বলেই তার স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি বিষয়ে ব্যয় করা অযৌক্তিক;

৩. কন্যাশিশু মানেই বোঝা, কারণ তার বিয়ের সময় বিপুল ব্যয়;

৪. ভবিষ্যতে ছেলেশিশুরাই পিতামাতার ভরণ-পোষণ করে;

৫. কন্যাশিশুদের মেধা কম।

আজ যে কন্যাশিশু আগামীকাল তাকেই নানা সামাজিক প্রথার ও দৃষ্টিভঙ্গির বন্ধনে জড়িয়ে নারী হিসেবে সমাজে উপস্থাপন করা হয়। এসব প্রথা ও দৃষ্টিভঙ্গি আবহমান কাল থেকে আমাদের সমাজ ধারণ করে আসছে, লালন-পালন করে আসছে। সমাজের এসব প্রথা কন্যাশিশুকে শুধু অবদমিতই করে না, তাকে পারিবারিক, মানসিক এবং শারীরিকভাবেও দুর্বল করে তোলে। যুগ যুগ ধরে এর খেসারত দিতে হচ্ছে নারীকেই। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মভীরু। ধর্ম মানুষের অন্তরের বিশ্বাস। এখানে যুক্তি অর্থহীন। ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভবের প্রাথমিক পর্যায়েই নারী-পুরুষের সম্পর্কের মধ্যে পরিবর্তন ঘটে। সম্পত্তিতে অধিকার না থাকার ফলে নারী এখনো পরজীবী হিসেবে সমাজে পরিচিত। শুধু তা-ই নয়_ এখনো অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরা বস্তু বা পণ্য হিসেবে বিবেচিত। সুতরাং তার স্বত্বা, মেধা বা মননকে নয় বরং দৈহিক রূপকেই বড় করে দেখা হয়। শরৎচন্দ্র তার ‘নারীর মূল্য’ প্রবন্ধে লিখেছেন_ ‘কি পরিমাণে তিনি সেবা পায় না, স্নেহশীলা, সতী এবং দুঃখে কষ্টে মোনা। অর্থাৎ তাহাকে লইয়া কি পরিমাণে মানুষের সুখ ও সুবিধা ঘটিবে। এবং কি পরিমাণে তিনি রূপসী’ অর্থাৎ পুরুষের লালসা ও প্রবৃত্তি কতটা পরিমাণে তিনি নিবদ্ধ ও তৃপ্ত রাখিতে পারিবেন।

সিমঁ দ্য ব্যুভুয়া তার ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’-তে দেখিয়েছেন_ ‘বুর্জোয়ারা সেই পুরনো নীতিবোধকেই অাঁকড়ে ধরে থাকে যে, ব্যক্তিগত সম্পত্তি পারিবারিক সংবদ্ধতার নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু সেই ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে নারীর তেমন কোনো অধিকার নেই।’ আমাদের দেশের সব আইন পরিচালিত হয় সংবিধান অনুযায়ী, কিন্তু সম্পত্তিতে অধিকারের আইনের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয় ধর্মীয় প্রথা। এ দেশের সমাজব্যবস্থায় মনে করা হয় বিয়েই হচ্ছে সম্পদহীন কন্যাসন্তানের চূড়ান্ত গন্তব্য। ধর্মীয় বিধানও তাই বলে। বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে একজন নারীর শুধু ঠিকানাই বদলায় না, তার পরিচয়ও বদলে যায়; অধিকাংশ ক্ষেত্রে নামটা পর্যন্ত। আর এই বদলের মধ্যদিয়েই আমৃত্যু নারীকে বরণ করতে হয় পরিচয় সঙ্কট। পাশাপাশি পুরুষকে কিছুই বদলাতে হয় না। সম্পত্তির উত্তরাধিকার যেহেতু প্রজন্মের পর প্রজন্ম পুরুষ সন্তানের মাধ্যমে নিশ্চিত করার দরকার হয় সে কারণে কন্যাসন্তানের জন্মকে সামাজিক মনস্তত্ত্ব স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না, তাকে স্বাগত জানাতে পারে না। আমাদের দেশের পরিবারগুলোয় এ অবস্থা অনেকটা মনোসামাজিক বিকারের পর্যায়ে অবস্থান করছে। অন্যদিকে আজকের যুগে এসেও নারীর মুখ কালো হয়ে যায় তখন তারা জানতে পারে তার গর্ভে বেড়ে উঠছে কন্যাশিশুসন্তান। কারণ এখনো ঘরের পুরুষটিকে তারা সুখী করতে চায়, ঘরের পুরুষের কালো মুখ দেখতে তারা ভয় পায়। আত্মপরিচয়ের সঙ্কটে থাকা নারীর মনস্তত্ত্ব গড়ে ওঠে পুরুষতান্ত্রিকতার প্রভাবে। পুরুষের অত্যাচারে, নারী-পুুরুষের সব কাজে ‘হ্যাঁ’ বলতে শিখেছিল কোনো বিবেচনা ছাড়াই। সে বুঝেছিল পুরুষের সব কাজে ‘হ্যাঁ’ না বললে এ সমাজে বা পরিবারে তার অস্তিত্ব থাকবে না। হাজার বছর ধরে চর্চিত এই ব্যবস্থার ফলে নারীর মনোবিকাশ ভোঁতা হয়ে পড়েছে।

কোনো আত্মবিশ্লেষণ ছাড়াই নারী বিশ্বাস করে পুরুষের তুলনায় তার যোগ্যতার অভাব, বুদ্ধির ঘাটতি, কর্মদক্ষতার অভাব রয়েছে। এর ফলে নারীর বুদ্ধিবৃত্তিক সৃজনশীলতার বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ থেকেই মনে হয় পরিবারে পুরুষ হলো বুর্জোয়া আর নারী হচ্ছে সর্বহারা। নারীর সঙ্গে পুরুষের সম্পর্ক আসলে অধীনতার সম্পর্ক। সৃষ্টির ধারাবাহিকতাকে ধারণ করে পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখে যে নারী তার সার্বিক পরিস্থিতি, তার বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া খুবই ভয়াবহ। এই চরম বৈষম্যমূলক ব্যবস্থায় কেবল নারীর মনোবিকাশ নয়, পুরো সভ্যতার বিকাশই থমকে যেতে বাধ্য। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু নারী-পুরুষের সৃষ্টিশীলতায় যে সভ্যতা আজ গড়ে উঠেছে তাকে অর্থবহ করতে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস। এই প্রয়াসকে এগিয়ে নিতে হলে প্রথমেই লিঙ্গ বৈষম্যকে দূরে ঠেলে দিয়ে সব শিশুর সমবিকাশের অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের কর্তব্য হওয়া উচিত। এ কাজ কোনো বিচ্ছিন্ন উদ্যোগে সম্ভব নয়। এখন প্রয়োজন গতানুগতিকতার বাইরে এসে সমগ্র রাষ্ট্রব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি ঢেলে সাজানো, প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রচলিত সংস্কৃতির বাইরে সমঅধিকারের চর্চায় বাধ্য করানো। সর্বোপরি সমাজ ও পরিবারের মনোজগতের পরিবর্তনের জন্য দেশব্যাপী একটি ব্যাপক ধারাবাহিক কর্মসূচি গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

লিখেছেন- সুতপা বেদজ্ঞ

আগে সামাজিক বিবেককে জাগিয়ে তুলতে হবে- রুলা গণি

84454_nari-2
এমন এক সময় ছিল যখন আফগানিস্তানের নারীদের লোকসমাগমে প্রায় দেখাই যেত না। এমনকি নেতাদের স্ত্রীদেরও নয়। হয়তো কদাচিৎ কোনো কারণে এমন পরিবেশ বা অবস্থায় কোনো নারীর দেখা মিললেও তারা থাকতেন আবরু রক্ষা করে। মনে করা হতো, এটি আফগানিস্তানের ঐতিহ্য। এমনকি একসময়ে দেশটির ফার্স্ট লেডিও এমন রীতিকে স্বাগত জানাতেন। তবে ক্রমে দেশটির সমাজে এ ধ্যানধারণায় পরিবর্তন আসতে থাকে। এমন পরিবর্তনের পক্ষে নানা মত প্রকাশ করেন দেশটির নতুন ফার্স্ট লেডি রুলা গনি। এসব ব্যাপারে তিনি গণমাধ্যমের সামনেও কথা বলেন।
রুলা বলেন, দেশটির নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে আমাদের আরো সচেষ্ট হতে হবে। এ ব্যাপারে আমি সবাইকে উৎসাহিত করতে চাই। নারীদের চলার পথে নানা ভালো সুযোগ করে দেয়া গেলে তাদের জীবনে অগ্রগতি আসবে। রুলা গনি মনে করেন, নানা কুসংস্কারের দেয়াল ভাঙতে প্রয়োজন ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও জনসমর্থন। এ জন্য উপযুক্ত সময় প্রয়োজন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় এমন সুযোগ কাজে লাগালে ভালো ফল আসতে পারে। সেই ইচ্ছাও তার পূরণ হয়। চলতি বছর (২০১৪) অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আশরাফ গনির নির্বাচনী প্রচারণায় রুলা জনসম্মুখে উপস্থিত থেকে এ সংক্রান্ত নানা কথা বলেন। এ দিকে আশরাফ গনিও নিজের অভিষেক অনুষ্ঠানে এক আবেগময় বক্তৃতা দেন। এটি ছিল মূলত স্ত্রী রুলা গনির উদ্দেশে। আর তখনই রুলা পরিণত হন গোটা দেশের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। রুলা খুশির সাথে বলেন, আমার স্বামী (আশরাফ গনি) আমাকে সবার সামনে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, তাতে এটাই বোঝা যায় যে আমি আফগানিস্তানের মেয়েদের আরো সচেতন হতে অনুপ্রেরণা জোগানোর কথা বলতে চাই। তবে তিনি যা করতে চাইছেন তা মোটেই সামাজিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের বিপরীত বা সাংঘর্ষিক নয়। অর্থাৎ বর্তমান সমাজের ব্যাপক পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে না। রুলা গনি বলেন, আমি পশ্চিমে বড় হয়েছি ঠিকই, তবে সেখানাকার সমাজের রক্ষণশীলতার মনোভাব আমাকে প্রভাবিত করতে পারেনি মোটেই; বরং এসব দেশে থেকে এসংক্রান্ত অনেক শিক্ষা বা ধারণা হয়েছে আমার। তবে আমার যেটুকু কষ্ট তা হলো আমার পুরো পরিবারকে আমি একসাথে পাইনি। তারপরও মনে করি, সৃষ্টিকর্তা আমাদের ভালোই রেখেছেন। আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে তখনই যখন দেখি আমার কথা, উপদেশ, পরামর্শ ইত্যাদি মানুষ মনোযোগ সহকারে শুনছেন। আর মনোযোগ সহকারে শোনা মানেই এসবের প্রতি গুরুত্ব দেয়া। দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটির (আফগানিস্তান) অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তারপরও এখনো অনেক শক্ত আছে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক অনেক দিক। আর এটিই হচ্ছে বিরাট ইতিবাচক দিক। রুলা গনির জন্ম লেবাননের এক খ্রিষ্টান পরিবারে। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। রাজধানী বৈরুতের যুক্তরাষ্ট্র ইউনিভার্সিটিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন ১৯৭০-এর দিকে। পড়াশোনার ফাঁকে পরিচয় ঘটে আশরাফ গনির সাথে। রুলা প্রায় এক বছরের পড়াশোনা করে বৈরুতে যান। প্রতিষ্ঠানটি ছিল ফ্রান্সের প্যারিসের সায়েন্সের পো ইনস্টিটিউট। এক সময় ছাত্র আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। এমনকি এক বিক্ষোভে গ্রেফতারও হন রুলা। তারা দু’জন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান ১৯৭০-এর শেষের দিকে। সেখানেই আশরাফ গনি শেষ করেন পিএইচডি। আর ক্যারিয়ার শুরু করেন বিশ্বব্যাংকে। তারা দুই সন্তানের বাবা-মা। ছেলে তারেক উন্নয়ন গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আর মেয়ে মরিয়ম ভিডিও আর্টিস্ট হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তারা খুবই গর্বিত নিজেদের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য নিয়ে। বলা যেতে পারে মা রুলার দেখাশোনার কারণে নিজ সন্তানেরাও ব্যাপক পরিচিতি ঘটাতে পেরেছেন দেশে। রুলা গনি নারীদের পাশাপাশি শিশুদের উন্নয়নেও কাজ করেন। বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত শিশুরা যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে সে জন্য তাদের (শিশু ও মায়েদের) নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। রুলা মাঝে মধ্যেই আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে ঘুরে বেড়ান এবং সেখানকার লোকেদের সাথে তাদের নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতের জন্য ভালো কিছু করা খুবই জরুরি। অনেক সাধারণ নারী আছেন যারা সমাজে মিশে প্রচুর কাজ করেন। রুলা মনে করেন, দেশটি যুদ্ধবিধ্বস্ত হলেও সামাজিক কাঠামো এখনো যথেষ্ট শক্ত আছে। এর ওপর ভর করেই অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া মোটেই কঠিন নয়। রুলা গনি আফগানিস্তানে ফিরে আসেন তার (রুলা) বিয়ের পর। বসবাস করতে থাকেন কাবুলে। এর বছর তিন পর আশরাফ গনি কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। এর ফাঁকে সিদ্ধান্ত নেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যানথ্রোপলজিতে ডক্টরেট ডিগ্রি নেবেন। তারা দুই বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত হস্তক্ষেপ ও অভ্যুত্থানে তাদের সব কিছু পাল্টে যায়।
বিভিন্ন যুক্তিতে তাদেরকে ফেরত না আসতে বলা হয়। রুলা বলেন, আমার স্বামীর পরিবারের অনেক সদস্য পুল-ই চারখি কারাগারে বন্দী ছিল এবং ভয় ছিল যে আমরা ফেরত এলে তাকেও (আশরাফ) কারাগারে নিক্ষেপ করা হবে। সুতরাং আমরা যুক্তরাষ্ট্রেই থেকে যাই, যে থাকা দুই বছরের স্থলে টানা প্রায় ৩০ বছর হয়ে যায়।
সূত্র- নয়া দিগন্ত

মেয়েদের বিয়ের বয়স নূন্যতম ১৮ রাখার দাবী।

মন্ত্রিপরিষদ সভায় অনুমোদিত ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৪’ এ বিয়ের বয়স কমানোর বিষয়ে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ প্রদানের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছে ৬৮টি নারী ও মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফরম  সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। একইসঙ্গে প্রস্তাবিত  বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৪ এ মেয়েদের  বিয়ের বয়স ন্যূনতম ১৮ রাখার দাবি জানিয়েছে কমিটি। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম সাংবাদিক সম্মেলন পরিচালনা করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ হতে গত ২৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর নিকট বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে বিয়ের বয়স না কমানোর  দাবি জানিয়ে যে স্মারকলিপি প্রদান করা হয় তা পাঠ করে শোনান বাংলাদেশ নারী প্রগতির সংঘের উপ-পরিচালক শাহানাজ সুমী।
বক্তব্য রাখেন স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী  পরিচালক রঞ্জন কর্মকার। উপস্থিত ছিলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্র, মহিলা পরিষদ, নারী প্রগতি সংঘ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন, বাউশি, ঢাকা ওয়াই ডাব্লিউসিএ, নাগরিক উদ্যোগ, নারী মৈত্রী, আরডি আরএসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

'অ্যাডভেঞ্চারার অফ দ্যা ইয়ার' তালিকাভূক্ত হলেন,বাংলাদেশী নারী ওয়াসফিয়া নাজরীন

wasfia-nazreen-mount-everest-winning-amazing-history-pic10

অপরাজিতা ডেস্কঃ ১৯৫৩ সালের মে মাসের ২৯ তারিখে হিমালয়ের এই পর্বতশৃঙ্গে প্রথম পদচিহ্ন পড়েছিল নিউজিল্যান্ডের স্যার অ্যাডমন্ড হিলারি এবং নেপালের শেরপা তেনজিংয়ের। প্রথম মানব পদচিহ্ন পড়ার পর দীর্ঘদিন চলে গেছে। অনেকেই হিলারি আর তেনজিংয়ের পথ ধরে সেখানে পৌঁছেছেন।

কিন্তু বাংলাদেশ হিমালয়ের কাছাকাছি দেশ হওয়ার পরও বাঙালির কাছে হিমালয় চূড়ায় পৌঁছানোটা ছিল স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্নই প্রথম পূরণ করেন বাংলাদেশের তরুণ মুসা ইব্রাহীম। তিনি সেখানে গিয়েছিলেন ২০১০ সালের মে মাসে। দ্বিতীয় আরোহণকারী এম এ মুহিত গিয়েছিলেন পরের বছর অর্থাৎ ২০১১ সালের ২৩ মে। ২০১২ সালের ১৯ মে নিশাত মজুমদারের এবং সর্বশেষ ওয়াসফিয়া নাজরীন ২০১৩ সালের ২৬ মার্চ সর্বকনিষ্ঠ বাংলাদেশী হিসেবে এভারেস্ট চূড়া জয় করেন। 

এভাবেই শুরু হয়েছিলো ওয়াসফিয়ার পর্বত যাত্রার স্বর্নাজ্জ্বল অধ্যায়,যার ই ধারাবাহিকতায় ওয়াসফিয়া একে একে আরোহন করেছেন, ”সেভেন সামিট” এর পাঁচ টি চূড়ায়।  

মাউন্ট এভারেষ্ট,কিলিমানজারো,অ্যাকোনকাগুয়া,ভিনসন ম্যাসিফ,মাউন্ট এলব্রুস এই ৫টি পর্বত আরোহনের পর ওয়াসফিয়া পৌছে গেলেন আন্তর্জাতিক চ্যানেল ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ‘অ্যাডভেঞ্চারার অফ দ্যা ইয়ার’ এর তালিকায়। 

ন্যাশনাল জিওগ্রাফী প্রতি বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১০ জন অভিযাত্রীকে এ সম্মাননা দিয়ে থাকে। সাইটে জানানো হয়, ওয়াসফিয়া তার অভিযানের মধ্য দিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের যে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলেছেন তারই স্বীকৃতি স্বরূপ এ সম্মাননা দেওয়া হলো।

wasfia nazreen

এ দিকে এ ধরনের কাজের জন্য পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ডও দিয়ে থাকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি। ভোট দেওয়ার লিংক- http://on.natgeo.com/1E8oMz3। এ পুরস্কার ঘোষণা হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এভারেস্টের পর প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় পর্বত মাউন্ট দেনালিও জয় করেন ওয়াসফিয়া।

ওয়াসফিয়া নাজরীন হচ্ছেন বাংলাদেশে সবচেয়ে কম বয়স্ক এভারেস্ট জয়ী মহিলা তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৯। ওয়াসফিয়া প্রথম ও একমাত্র বাংলাদেশী মহিলা যিনি হিমালয়ের বাইরে সর্বোচ্চ পর্বত আফ্রিকার একনকাগুয়া জয় করেন। তিনি একই সঙ্গে এন্টার্কটিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট ভিনসনে আরোহণ করেন। ওয়াসফিয়া নাজরীন ১৯৮২ সালের ২৭ অক্টোবর ঢাকাতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ফেনীতে। ওয়াসফিয়া নাজরীনের পিতার নাম নাজসি জামান চৌধুরী এবং মা মালিহা চৌধুরী। তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র মেয়ে ওয়াসফিয়া নাজরীন। ওয়াসফিয়ার মা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বাবা বাংলাদেশের মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফরএভার লিভিং প্রডাক্টসের কান্ট্রি হেড। ওয়াসফিয়ার শৈশব-কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রামে। ছোটবেলা থেকেই কিছুটা ডানপিটে স্বভাবের মেয়ে ওয়াসফিয়া নাজরীন। বাবা-মার আদরে কোনো কিছুতেই বাধা পাননি তিনি।  ঢাকার স্কলাসটিকা স্কুল থেকে ও এবং এ লেভেল সম্পন্ন করেন ওয়াসফিয়া নাজরীন।

২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় এগনেস স্কট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান ওয়াসফিয়া। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ওয়াসফিয়া যান স্কটল্যান্ডে। পড়ার বিষয় সামাজিক মনোবিজ্ঞান আর স্টুডিও আর্ট। পেশায় তিনি একটি এনজিওর উন্নয়ন কর্মী, কিন্তু নেশা তার পর্বতারোহণ। তাই চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি নিজের উদ্যোগে গড়ে তোলেন ‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট’ নামে একটি ফাউন্ডেশন। সেই থেকেই চলছে পর্বত অভিযান।

একজন নারী হিসেবে পর্বত আরোহী হওয়াটা ওয়াসফিয়ার জন্য খুব যে সহজ ছিলো তা না,আর্থিক অসুবিধা সহ,নানান রকমের সমস্যার মুখোমুখি তাকে হতে হয়েছে। কিন্তু ওয়াসফিয়া কোন বাঁধার লাছেই হার মানেননি,ওয়াসফিয়া তার অদোম্য উৎসাহ,সাহস এবং আত্নবিশ্বাস এর মাধ্যমে পেরেছেন আজ নিজেকে একজন নারী হিসেবে,এবং একজন বাংলাদেশী হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে নিজের পরিচয় প্রতিষ্ঠিত করতে,পেরেছেন পৃথিবীর শত কোটি মানুষের জন্য,এই দেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরনীয়,অনুপ্রেরণা হতে।

ওয়াসফিয়া নাজরীন আজ এমন একটি নাম,যা সাহস,কোন বাঁধার কাছেই হার না মেনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক। আর তাই প্রবল আশা,এবং বিশ্বাস এর সাথে আমরা বলতে পারি, ওয়াসফিয়া হবেন এবারের ‘অ্যাডভেঞ্চারার অফ দ্যা ইয়ার’ এবং ‘সেভেন সামিট’ জয়ী প্রথম বাংলাদেশি নারী। 

অনেক অনেক শুভকামনা রইলো,ওয়াসফিয়া নাজরীনের জন্য।   

 

চুল নিয়ে কিছু সমস্যার চট জলদি সমাধান

2012-09-24-17-31-08-506098dc5ac10-27

চুল সামলানো সহজ নয়। পশ্চিমা ফ্যাশনে তো ‘ব্যাড হেয়ার ডে’ নামে রীতিমতো প্রবাদই চালু আছে। যেদিন চুলের স্টাইলটা ঠিকঠাক হয় না, সেদিন যেন কোনো কিছুই মনের মতো হয় না। তবে এমন দিনের হ্যাপা যাতে আপনাকে পোহাতে না হয়, সে জন্য রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি ও তানজিমা শারমীন দিয়েছেন কিছু পরামর্শ।

সকালে অফিস আবার বিকেলে বন্ধুর বাড়ির নিমন্ত্রণ, মাঝখানে হয়তো আর আলাদা করে সময় নেই বিশেষভাবে চুলের যত্ন নেওয়ার। বাইরের ধুলাবালি আর রোদে এরই মধ্যে দেখলেন নেতিয়ে পড়েছে চুলগুলো। এ অবস্থায় অফিস থেকে বের হওয়ার আগে  হালকা পানি দিয়ে চুল ভিজিয়ে মুজ লাগাতে পারেন।

সাজগোজের পর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলেন চুলের আগা ফাটা মনে হচ্ছে। এবারও চুলগুলোকে একটু ভিজিয়ে নিয়ে রোলার চিরুনি দিয়ে ঘুরিয়ে আঁচড়ান; যাতে আগা ফেটে যাওয়া চুলগুলো ভেতরে ঢুকে যায়। 

পাকা চুল নিয়ে কমবেশি সবাইকে সমস্যায় পড়তে হয়। পাকা চুলগুলোকে ঢাকতে ব্যবহার করতে পারেন স্প্রে কালার। এদিকে শ্যাম্পু করার পরও নেতিয়ে থাকে অনেকের চুল। সে ক্ষেত্রে হালকা করে লিভন বা এ ধরনের কোনো কন্ডিশনার লাগিয়ে আয়রন করে নিতে পারেন চুলগুলো।

তবে আয়রন করা যদি সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে চুলগুলোকে উল্টো করে আঁচড়ে নিয়ে ট্যালকম পাউডার লাগানোর পরামর্শ দিলেন রূপবিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমীন। পাউডার লাগানো শেষে তোয়ালে দিয়ে ভালো করে চুলগুলো মুছে নিন। খেয়াল রাখবেন, পাউডার যেন চুলের গোড়ায় লেগে না থাকে। এতে চুলের গোড়ার ঘাম বের হতে না পেরে ফুসকুড়ি উঠতে পারে।

অনেকেরই সামনের চুলগুলো বেশ পাতলা থাকার কারণে মাথার তালু দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে সামনের চুলগুলোকে চিরুনি দিয়ে হালকা পাফ করে নিন। আর যদি সম্ভব হয় তা হলে চুল কাটার সময় ভেতরের দিকে একটু বেশি করে লেয়ার কাট দিয়ে ফুলিয়ে দিতে পারেন। অনেকে কালো আইশ্যাডো বা হালকা কাজলের টান দিয়েও মাথার তালু ঢেকে দেন।

সামনের দিকে চুলগুলো হয়তো ছোট করে ছাঁটলেন, কিন্তু সেই চুলগুলোই চোখে-কপালে পড়ে বিরক্তির কারণ হয়ে উঠছে। গোসল করার পরপরই সামনের চুলগুলোকে গোল করে পেঁচিয়ে ক্লিপ আটকে নিন। বাইরে বের হওয়ার আগে ক্লিপগুলো খুলে নেওয়ার পর দেখুন কী সুন্দর ঢেউ খেলানো হয়ে কপালে এক দিকে পড়ে আছে চুলগুলো।

 বিউটি পারলার থেকে চুল বেঁধে এলে সেটা খোলা বেশ কঠিন হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে হাতে তেল নিয়ে হালকাভাবে আঙুল দিয়ে ছাড়িয়ে নিন চুলগুলোকে।

অনেক সময় বাইরে বের হওয়ার আগে হয়তো চুলগুলো ঠিকমতো শুকানোর সময় হয় না। সে সময় চুলগুলোকে হালকা পাঞ্চ করে বেঁধে নিন। তারপর গন্তব্যস্থলে পৌঁছে মোটা দাঁতের চিরুনি বা আঙুল দিয়ে বারবার আঁচড়ে নিন।

এদিকে যাঁদের কোঁকড়া চুল, তাঁদের জন্যও রূপবিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, এ ধরনের চুলে বের হওয়ার আগে হালকা পানি দিয়ে আঙুল চালিয়ে নিতে হবে। এতে করে যেভাবে রাখতে চাইবেন, ঠিক সেভাবেই থাকবে আপনার চুলগুলো।

সূত্র-নকশা।

৪র্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু কে ধর্ষন

শৈলকুপা থানার ওসি ছগির মিঞা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার কাঁচেরকোল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মেয়েটি (পরিচয় প্রকাশ করা হলো না) স্থানীয় একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।

ধর্ষণের অভিযোগে স্থানীয় সাইদুল মোল্লা ওরফে টিক্কা নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মেয়েটির বড় ভাই থানায় একটি মামলা করেছেন।

ওসি জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর হতদরিদ্র পরিবারের দুই বোন রান্না ঘরে শুয়েছিল। রাতে টিক্কা বাড়িতে ঢুকে অস্ত্র ধরে ছোট বোনটিকে পাশের বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে।

গভীর রাতে কাঁচেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুন জোয়ার্দ্দার পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করলেও পালিয়ে যায় টিক্কা।

মামলার আসামি টিক্কাকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ আটক করতে পারেনি বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা ছগির।