banner

সোমবার, ০৬ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 547 বার পঠিত

 

কমছে সৌদী আরবে নারী শ্রমিক সংখ্যা

রক্ষণশীল মুসলিম রাষ্ট্র সৌদি আরবের সরকার নীরবে সামাজিকভাবে বৈপ্লবিক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে যার বাস্তবায়নে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের নারীদের সৌদি আরবে গিয়ে কর্ম গ্রহণ করার সুযোগ কমে যাবে। সৌদি সমাজ এখন বিপুল সংখ্যায় বিদেশী পুরুষ ও নারীদের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করে নিজেরা আয়েশী জীবন কাটাতে অভ্যস্ত। সৌদি আরবের জনসংখ্যা দুই কোটি দেশজ আরব বা ‘ওয়াতানি’। এদের পাশাপাশি লাখ লাখ বিদেশী পুরুষ ও নারী সৌদি আরবে কর্মরত রয়েছে ‘ওয়ার্ক ভিসা’ ভিত্তিতে। এরা প্রতি মাসে তাদের বেতন থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিজ নিজ দেশে পাঠায়। বাংলাদেশ প্রবাসীদের পাঠানো থেকে যে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে তার বেশির ভাগ আসে সৌদি আরব থেকে।

 

সৌদি সরকারের পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, সৌদি আরবে ৪০ লাখ সৌদি পুরুষ কর্মরত রয়েছে, কিন্তু এর পাশে কর্মরত রয়েছে মাত্র ছয় লাখ ৮০ হাজার সৌদি নারী যারা মোট নারী জনসংখ্যার মাত্র ১১ শতাংশ! কর্মরত সৌদি নারীদের সংখ্যা দ্রুততম সময়ে বৃদ্ধি করার জন্য সৌদি সরকার এই সামাজিকভাবে বৈপ্লবিক প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

 

সৌদি সরকারের শ্রম ও জনসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহা কে তাইবা বলেন, এই প্রকল্প দ্বারা সরকার আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে কর্মরত সৌদি নারীদের সংখ্যা দ্বিগুণে উন্নীত করার আশা করছে। যেসব খাতে সরকার সৌদি নারীদের কর্ম সুযোগ বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করেছে তার মধ্যে আছে স্বাস্থ্য খাত, ম্যানুফ্যাকচারিং খাত এবং তথ্যপ্রযুক্তি। এর পাশাপাশি সৌদি নারীদের কর্মস্থলের পাশেই শিশুদের জন্য ‘ডে কেয়ার’ সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

 

তাইবা বলেন, ‘বর্তমানে সৌদি নারীরা মনে করে গৃহে অবস্থান করাই তাদের জন্য সঠিক কাজ।’ দীর্ঘকাল ধরে ভিনদেশী নারী-পুরুষ কর্মীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবনযাপনে অভ্যস্ত সৌদি সমাজে কর্মরত পুরুষ ও নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য সৌদি সরকার যে ব্যাপক আকারের প্রকল্প গ্রহণ করেছে তারই একটি অংশ সৌদি নারীদের গৃহের বাইরে কর্ম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সৌদি সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডের ‘কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্ট’কে তালিকাভুক্ত করেছে সৌদি সরকারকে পরামর্শ দানের জন্য।

 

সৌদি সরকারের কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, বহু সৌদি নারী আসলেই গৃহের বাইরে কাজ করতে আগ্রহী। ব্যাচেলর ডিগ্রিপ্রাপ্ত সৌদি নারীদের এক-তৃতীয়াংশ চাকরি খুঁজে পাচ্ছে না। সৌদি সরকারের প্রকল্পের অন্যতম প্রধান রোহিনী পান্ডে বলেন, ‘কেনেডি স্কুল’ এবং সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয় যৌথভাবে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখছে ‘রিটেইল’ চাকরিতে সৌদি নারীদের তাদের যোগ্যতানুযায়ী কর্ম জোগাড়ে যেসব সমস্যা রয়েছে তা কিভাবে অপসারণ করা যায়।

 

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কিছু বিশিষ্ট অধ্যাপিকা সৌদি সরকারের সাথে যৌথভাবে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সৌদি নারীরা তাদের যোগ্যতানুযায়ী কর্ম গ্রহণ করার পথে যেসব বাধার সম্মুখীন হয় তা অপসারণে তাদের সহায়তা করার জন্য। সৌদি সমাজ অতি রণশীল এবং নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এমন কঠোর যে, সৌদি নারীদের গাড়ি ড্রাইভ করার অনুমতি দেয়া হয় না। সমাজের এমন রণশীলতা এবং নারীদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের পরিবেশের সাথে কিভাবে মানিয়ে নিয়ে সৌদি নারীদের গৃহের বাইরে কর্মে নিয়োগ করা যায় তার উপায় উদ্ভাবন করছেন এসব পাশ্চাত্যের উচ্চ শিাবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা। এদের অন্যতম হার্ভার্ডের অধ্যাপিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ কডিয়া গোল্ডিন যখন সৌদি সরকারের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন তখন সৌদি নারীদের রেওয়াজ অনুযায়ী ‘আবায়া’ (শরীর সম্পূর্ণ আবৃত করে সৌদি নারীরা যে পোশাক পরে) পরে তার শরীরকে সম্পূর্ণভাবে আব্র“ আবৃত রাখেন।

 

কিন্তু যে জটিল বাধাটা প্রধান হয়ে উঠেছে তা হলো ‘রিটেইল’ কর্ম গ্রহণে সৌদি নারীদের অনীহা, কারণ তাদের ধারণা, এসব কর্ম শুধু বিদেশ থেকে আগত নারীরাই করে। আরেকটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে সৌদি নারীদের কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার কী ব্যবস্থা করা যায়।

 

এ সমস্যার সমাধানে সৌদি সরকার রিয়াদের একটি প্রধান শপিং মলে কর্মে যোগদানকারী সৌদি নারীদের আসা-যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি ভাড়ায় আংশিক ভর্তুকি দিচ্ছে। কিন্তু এ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করতে গেলে যে বিপুল অঙ্ক ব্যয় হবে তা হিসাব করে সৌদি সরকার পিছু হটেছে। এখন সৌদি সরকার ভাবছে পাবলিক বাস সার্ভিস চালু করবে কি না, অথবা শুধু নারীদের বহন করার জন্য বাস সার্ভিস চালু করা সম্ভব কি না।

 

পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, কর্মেেত্র সৌদি নারীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় প্রবেশের ফলে সৌদি সমাজে মৌলিক পরিবর্তন আসতে পারে। কর্মেেত্র প্রভূত সংখ্যায় সৌদি নারীদের উপস্থিতি সৌদি সমাজে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে। পাশাপাশি কর্মেেত্র বিদেশী নারীদের সংখ্যা লণীয়ভাবে কমে যাবে।

 

লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক, কানাডা প্রবাসী

Facebook Comments