banner

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 3672 বার পঠিত

শিশুর জন্ডিস

1397640673jaundice.jpg-320x200

প্রকৃতপক্ষে জণ্ডিস কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র। ত্বক, মিউকাস মেমব্রেণ এবং চোখ হলুদ হয়ে যাওয়াকে জণ্ডিস বলে। শরীরে বিলিরুবিন নামে হলুদ রঞ্জক পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গেলে জণ্ডিস হয়।

লক্ষণ

  • জণ্ডিসে আক্রান্ত শিশুর চোখের সাদা অংশ, হাত-পা এর তালু মুখমণ্ডল থেকে শুরু করে পুরো শরীর হলুদ বর্ণের হয়ে যেতে পারে।
  • শিশু খুব দুর্বল হয়ে পড়ে
  • গা ম্যাজ ম্যাজ করে।
  • বমি বমি ভাব
  • রুচিহীনতা
  • পায়খানার রঙ ফ্যাঁকাসে হয়ে যাওয়া।
  • জ্বর জ্বর অনুভূতি বা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা।

কী করবেন?
জণ্ডিস হলে শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং স্বাভাবিক খাবার দিন।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে কোনো ধরনের প্যারাসিটামল কিংবা ভেষজ ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।
জণ্ডিস হলে অনেকেই কবিরাজি চিকিৎসা করেন, যা কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। এগুলোতে জণ্ডিস কখনও ভালো হয় না। তাই শিশুর জণ্ডিস হলে মালা পরানো, চুনের পানি দিয়ে হাতধোয়া প্রভৃতি কবিরাজি চিকিৎসা থেকে দূরে থাকুন।
জণ্ডিস হলে বমি হয়ে অনেক সময় শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে শিশুকে পর্যাপ্ত পানি পান করাতে হবে। তবে অতিরিক্ত নয়। দিনে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করানো যেতে পারে।
শিশুকে প্রোটিন, ক্যালরি পাবে এমন খাবর বেশি বেশি খেতে দিন।
পানিশূন্যতা দেখা দিলে স্যালাইন পান করান।
কম তেল মশলায় রান্না করা খাবার খাওয়াতে হবে।
শিশু জণ্ডিসে আক্রান্ত হলে কয়েকদিন পর পর টেস্ট করে দেখতে হবে লিভার ক্ষতি হয়েছে কি না এবং বিলিরুবিনের পরিমাণ কমেছে কিনা।
স্কুলের সামনের ফুচকা, চটপটি প্রভৃতি খাওয়ার কারণে শিশুদের টাইপ এ জণ্ডিস বেশি হয়ে থাকে। তাই শিশুকে এগুলো খাওয়া থেকে দূরে রাখুন।

নবজাতকের জণ্ডিস
জম্মের পর পর সব শিশুরই জণ্ডিস হয়ে থাকে। সাধারণত জম্মের দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই এ জণ্ডিস হয় এবং সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে সেরে যায়। শিশুর এ ধরনের জণ্ডিসকে বলা হয় ফিজিওলজিক্যাল জণ্ডিস। সদ্যোজাত শিশুদের যকৃতে যে এনজাইমগুলো বিলিরুবিন নিয়ন্ত্রণ করার কথা শিশু জম্মের অব্যাহতি পর সে এনজাইগুলো তাদের কাজ ঠিকমতো শুরু করতে পারে না। তাই সদ্যোজাত শিশুদের বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। তবে এতে চিন্তার কোনো কারণ নেই। শিশুর এ জণ্ডিস আপনা আপনি সেরে যায়। এ সময় শিশুকে প্রতিদিন সকালে ১৫ থেকে ২০ মিনিট করে ২ থেকে ৩ বার রোদে রাখুন (ঘরের মধ্যে গ্লাসের জানাল দিয়ে যে রোদ আসে সেখানে রাখা ভালো)। তবে এ সময় শিশুর মাথায় যেন রোদ না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখুন। কয়েকবার এপাশ-ওপাশ করে দিন। এই কটা দিন শিশুকে বেশি বেশি মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ত্বক ও চোখের হলুদ বর্ণ বা জণ্ডিসের লক্ষণ না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

জণ্ডিসের টিকা
শিশু-কিশোরদের জণ্ডিসের টিকা হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস ইনফেকশনের প্রতিষেধক হিসেবে দেয়া হয়। হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস ইনফেকশনের প্রাথমিক প্রতিষেধক হিসেবে তিনটি ডোজ দিতে হয়। প্রথম ডোজটি যে দিন দেয়া হবে তার এক মাস পর দ্বিতীয়টি এবং তৃতীয়টি দিতে হবে প্রথম ডোজ দেয়ার দিন থেকে ৬ মাস পর। প্রাথমিক কোর্স সম্পন্ন করার ৫ বছর পর বুস্টারের এক ডোজ দেয়া যেতে পারে।

লিখেছেন- আঞ্জুমান আরা কেয়া।

 

Facebook Comments