banner

সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: May 16, 2024

 

জীবনের বাকচক্র (শেষ পর্ব)

তাহেরা সুলতানা


শেষ পর্যন্ত সামান্য জমানো টাকা আর কিছু ধার-দেনা করে চাঁদনীকে নিয়ে রাফিয়া আর বাশার ঢাকার পথে রওয়ানা হলো। ততদিনে চাঁদনীর ছোট্ট শরীরটা শুকিয়ে একটা পুটলির মতো হয়ে গেছে। কোন প্রাণ নেই যেন! সারাক্ষণ অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে রাখতে হচ্ছে।

ঢাকায় এসে ওরা প্রথমেই ঢাকা মেডিকেলের শিশু বিভাগে গেল। সেখানে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ পেসেন্ট এর এই অবস্থা দেখে দ্রুত ভর্তি করিয়ে নিলো।

ডাঃ এর সব রিপোর্ট আর প্রেসক্রিপশন দেখে উনার মুখটা থমথমে হয়ে গেলো। আরও কিছু টেস্ট এর কথা বলে ভিতরে চলে গেলো। বাশার ডাঃ এর মুখ দেখে বেশ খারাপ কিছুই আঁচ করলো, কিন্তু রাফিয়াকে কিছু বুঝতে দিলো না। কিন্ত বুকের ভিতরটা যেন ধক করে উঠলো।

অনেকক্ষণ ডাঃ, নার্স কাউকে দেখতে না পেয়ে রাফিয়া কাঁদতে কাঁদতে বাশারকে
জিজ্ঞেস করলো, -আচ্ছা, রুমের মদ্যি এতোক্ষণ ধইরে কি করছে? মেয়ে ডারে দেখতিও তো দেচ্চে না। আমার কিন্তু কিছুই ভালো ঠ্যাকছে না! তুমি এট্টু দেকনা গো!

বাশার এক ধমক দিয়ে বসিয়ে দিয়ে বললো, তুমি চুপ কইরে বসি থাকো। ডাঃ তো দেখতিসে। তুমি কি ডাঃ এতো কতা কচ্চ? মাইয়ে ভালো হইয়ে যাবিনে। তুমি বসি বসি খালি দুয়া পড়।

লাস্টের কথাগুলো বলার সময় বাশারের গলাটা যে ধরে আসছিল, সেটা কিন্তু রাফিয়ার চোখ এড়ালো না।

এভাবে ৭ দিন কেটে গেল। হাতে যা টাকা ছিল, তাও শেষ। কিন্তু চাঁদনীর অবস্থার কোন উন্নতি না হয়ে আরও অবনতি হলো। এখানকার ডাঃ ও ফিরিয়ে দিলো। বললো,

-দ্রুত ইন্ডিয়া নিয়ে যান। এখানে আর সম্ভব না। আপনারা আগে যে ডাঃ দেখিয়ে ছিলেন, উনারা ভুল চিকিৎসা করেছে। বাচ্চার ফুসফুসে ইনফেকশন হয়েছে। অনেকটা জায়গায় ইফেক্ট করেছে।

বাশার ধপাশ করে চেয়ারে বসে পড়লো। ভাগ্য ভালো, রাফিয়া তখন রুমের বাইরে ছিল, বাশার মনে মনে ভাবলো।

বাড়ি পৌছানো পর্যন্ত বাশার রাফিয়াকে কিচ্ছু বললো না। কি বা বলবে! ইন্ডিয়া গিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো ক্ষমতা তো তার নাই।

সারাটা রাস্তায় বাশার থমথমে মুখ করে থাকলো। কয়েকবার জিজ্ঞেসও করেছে, ডাঃ কি বললো। অন্য কথা বলে এড়িয়ে গেছে। সঠিক কোন উত্তর পায়নি। উত্তরটা জানতে পারলো পরদিন সকালে, ফুফুর চিৎকার চেঁচামেচিতে।

-আমাগেইরে এতো তালুক নেই যে, ভারতে লিয়ে গিয়ে চিকিৎসে করাতি হবি! বাপের বাড়ি থেইকে আনতি ক! নয়তে যা হবার তাই হবি! আমরা আর পারছিনে! বিয়ের সময় আমার ভাই খালি মেয়েডারেই গছিয়ে দেল! কিছু দিয়েছে নাকি? কি কুলক্ষণেই যে এই অপয়া মাইয়েডারে ঘরের বউ কইরে আনতি গিলাম!

ওর মা একডা….
বাকি কথা আর রাফিয়ার কান পর্যন্ত পৌছালো না। জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলো।

রাফিয়া চোখ খুলে দেখলো, বাশার মাথার পাশে বসা। হঠাৎ মেয়ের কথা মনে পড়ায় লাফিয়ে উঠে বসলো। বাশার বুঝতে পেরে বললো,

-চাঁদনীক খুজতিছো? মার ঘরে রেকে আইছি। তুমি মাথা ঘুইরে পইড়ে গেলা। আমি তখন তুমারে লিয়া বেস্ত। অক্সিজেন মাস্ক এট্টু পর পর খুলতি হচ্ছে, তাই ভাইবলেম, মার কাছি ভালো থাকপেনে। আমি ভালো কইরে শিখিয়ে দিয়ে এইসেছি। একন সবারি মাতা গরম। তুমি মার কতায়….
বাকি কথা রাফিয়ার কানে আর গেলল না। সে এক লাফে বিছানা থেকে নেমে পড়লো, এরপর ফুফুর ঘরের দিকে ছুটলো। আজকাল তার কাউকে বিশ্বাস হয় না।
ঘরে ফুফুকে পেলো না। ডাঃ ১০ মিনিট পর পর বিরতি দিয়ে মাস্ক পরাতে বলেছে। শ্বাস-প্রশ্বাস অবজার্ভ করতে বলছে, কিছুই তো হয়নি। ওইভাবে ছুটতে দেখে বাশারও পিছন পিছন চলে আসছে। রাগে গজগজ করে বললো,

-তুমি আমার মারে সন্দেহ করতিচো? আমার মায়ে মাইয়েরে মাইরে ফেলবি, এই ভাবতিছ? ছি! ছি! ছি!

রাফিয়া কাঁদতে কাঁদতে বাশারের পায়ে ধরে বললো,

-আস্তে কতা কও। মা শুইনে ফেললি লংকাকান্ড বেধে যাবিনে। আমি সেকতা কচ্চিনা গো। মেয়েডারে না দেকতি পেয়ে ছুটি চলি আইচি। তোমার পায়ে ধরি কচ্চি, তুমি চুপ করো। চুপ করো।

বাবার সাথে ফুফুর সম্পর্কে চরম টানাপোড়ন চলছে। তাও রাফিয়ার আর নাতনীর কথা ভেবে বাবা-মা ২জনই চলে আসলো। রাফিয়ার মুখে সব কথা শুনে বাবা যেটুকু জমি ছিল, তা বেচে দিয়ে টাকাটা বাশারকে দিয়ে দিলো। আর বললো,

– বাবা, আমার নাতনীর চিকিৎসে বাবদ যা লাগবি, আমিই দেব, তুমি যাওয়ার ব্যবস্থা করো। লাগলি, ভিটেবাড়িও বেইচে দেব। তাও আমার নাতনী যেন সুস্থ্য হইয়ে আসে।

রাফিয়া বাবার পায়ের কাছে বসে অনবরত কাঁদতে লাগলো।
বাশার ইন্টারনেট ঘেটে ভারতের ভেলরে একজন নামকরা শিশু বিশেষজ্ঞ এর খোজ পেল। কিন্তু সিরিয়াল পেল এক মাস পর। এরপর ঢাকার ডাঃ এর মাধ্যমে সেটা এক সপ্তাহ কমিয়ে আনতে পারলো।
এর ওর মাধ্যমে টাকা খাইয়ে যথাসময়ে ভিসা আর ট্রেইনের টিকেটও করে ফেললো। বেনাপোল কাছে হওয়ায় ট্রেইনেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।

ভেলর হাসপাতালের প্রধান শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ দীনেশ পান্ডে (ছদ্মনাম) পুরো একদিন ধরে সমস্ত রিপোর্ট আর

প্রেসক্রিপশনগুলো নিয়ে গবেষণা করলো। বাশার আর রাফিয়া কাজিন শুনে ওদের ব্লাডগ্রুপের রিপোর্ট চাইল। বাশার শুধু রাফিয়ার টা বলতে পারলো। কারন ওর নিজের ব্লাডগ্রুপ কি, সে নিজেও জানে না। বাশারের ব্লাডটেস্ট রিপোর্ট এ আসলো, ওর ব্লাডগ্রুপ O(+) আর রাফিয়ার O(-)।

রাফিয়ার ডেলিভারির সময় Anti D ইঞ্জেকশন দেয়া হয়েছে কিনা, সেটা সম্পর্কে জানতে চাইলো। বাশার মাথা নেড়ে জানালো, দেয়া হয়েছে। কতক্ষণ পর দেয়া হয়েছে, জানতে চাওয়া হলে, বাশার সঠিক উত্তর দিতে পারলো না। তবে ডাঃ কনফার্ম হয়ে গেলো, নির্দিষ্ট সময়ের থেকে কিছুটা পার হয়ে গিয়েছিল।

চাঁদনীকে ২৪ ঘন্টা অবজারভেশনে রেখে এবং টোটাল কেস হিস্টরী গবেষণা করে ডাঃ বাশার আর রাফিয়াকে ইচ্ছেমত কতক্ষণ বকলো। এরপর যে রেজাল্ট দিলো, তা হলো,
১। Anti D ইঞ্জেকশন ৭২ ঘন্টার মধ্যে দেয়া হয়নি বলে
পেসেন্ট এর Antibody তৈরি বাধাগ্রস্থ হয়েছে। কারণ তার ব্লাডগ্রুপ O(+)। মায়ের উল্টো।

২। নিয়মোনিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার পর এতোটুকু বাচ্চাকে যে এন্টিবায়োটিক আর যে ওষুধ পুশ করা হয়েছে, তাতে পেসেন্ট এর ফুসফুস ৭০% ড্যামেজ হয়ে গেছে।
৩। একদিকে পেসেন্টের Antibody তৈরি বাধাগ্রস্থ হওয়া এবং অনেক বেশি হাই পাওয়ার ইঞ্জেকশন পুশ করার কারনে পেসেন্ট পুরোই এবনরমালিটির দিকে যাচ্ছে। ডাঃ দের হাতে আর কিচ্ছু করার নেই।

বাশার ইচ্ছে করেই রাফিয়াকে ডাঃ এর চেম্বারে আনেনি। সব শুনে সে ডাঃ এর পায়ে ধরতে গেল। ডাঃ “কি করছেন? কি করছেন?” বলে পা ছাড়িয়ে নিলেন।এরপর বাশার হাত জোড় করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,

-প্লিজ ডাঃ, আমার মেয়েটাকে ভালো করে দিন। আমার মেয়েটাকে বাচান। যতটাকা লাগে দিবো।

ডাঃ আস্তে করে ঘাড়ে হাত দিয়ে বললেন,
-আমার কাছে আসতে অনেক দেরী করে ফেলেছেন। উপরওয়ালাকে ডাকুন, তিনি যদি কিছু করতে পারেন।

একদম শুন্য হাতে ওরা মেয়েটাকে নিয়ে দেশে ফিরে আসলো। ভেলর থেকে আসার পর থেকেই রাফিয়া কেমন যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। খায় না, ঘুমায় না, পাথর হয়ে মেয়ের শিয়রে বসে থাকে। বাশার আবার অফিস শুরু করেছে। অনেক কাজের চাপ! এ অবস্থা দেখে রাফিয়ার বাবা মা তাদের কাছে নিয়ে গেলো। প্রথম প্রথম বাশার প্রতি বৃহঃস্পতি আসতো। আবার রবিবার গিয়ে অফিস করতো। আজকাল আসা কমিয়ে দিয়েছে। রাফিয়ার মধ্যে আজকাল কোন অনুভুতিই কাজ করে না। প্রয়োজন না হলে মেয়ের কাছ থেকে উঠেই না। যদি একবার চোখ মেলে দেখে! যদি একবার মা বলে ডাকে!

দিন যায়। মাস যায়। বছরও চলে যায়। কবিরাজি, হোমিওপ্যাথিও বাদ দেয় না। তাতেও যদি মেয়েটা ভালো হয়! যে যা বলে, তাই করে। আজকাল বাশার তেমন একটা আসেও না। মাঝে মাঝে ফোন করে দায়শারা গোসে খোঁজ নেয়।

চাঁদনীর বয়স যেদিন ২ বছর হয়ে ৩ মাসে পড়ে, সেদিন সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যায়। চাঁদনীকে শেষ দেখা দেখতে বাশার আর ওর মা এসেছিল। কিন্তু সেদিন রাফিয়া মেয়েকে কারও কাছে দেয়নি। পাথরের মতো কোলে নিয়ে বসেছিল। এক ফোঁটা চোখের পানিও ফেলেনি। মেয়েকে কবরই দিতে দিচ্ছিল না। পরে সবাই জোড় করে নিয়ে যায়। সবাই মিলে ওকে কাঁদানোর অনেক চেষ্টা করে, কিন্তু কোন লাভ হয় না। কিভাবে কাঁদবে? চোখে আর পানি থাকলে তো বের হবে?

এর এক মাস পর কেউ এসে খবর দিলো, বাশারের মা মাশারের আবার বিয়ে ঠিক করেছে। রাফিয়া এক দৃষ্টিতে বার্তা বাহকের দিকে তাকিয়ে থাকলো। হাত দুটো খাটের ডাসার সাথে বাধা। সুযোগ পেলেই নাকি কবর খুড়তে যাচ্ছে। মেয়েকে তুলে আনবে। তাই এই ব্যবস্থা। হঠাৎ হো হো করে হেসে উঠলো। হাসি যেন আর থামছেই না। কতকাল হাসেনি, না! আজ তাই অনেক হাসি পাচ্ছে। প্রাণখুলে হেসেই যাচ্ছে। হা হা হা! হি হি হি! হো হো হো!

পুনঃশ্চ: বন্ধুরা, ইহাকে নিতান্তই একটা গল্প মনে করিয়া ভুল করিবেন না। ইহা একটি অতীব সত্য ঘটনা। যাহা আমার চোখের সামনে ঘটিয়াছে।

 

লিন্ডা একটি শাড়ী কিনেছিল (শেষ পর্ব)

জাজাফী


আগে কখনো বাংলাদেশে আসেনি ও। হঠাৎই বাংলাদেশ নিয়ে এতো আগ্রহ কেন সেটা প্রশ্ন উঠতে পারে তবে গ্রেড ফোরে থাকতে আমি যখন ওকে বাংলাদেশের কথা বলেছিলাম এবং বলেছিলাম আমার মম বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছে তখন ও খুবই উৎসাহী ছিল জানার জন্য। বিশেষ করে ভাষা আন্দোলন আর স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই উত্তাল দিনের কথা ও কখনো ভুলতে পারেনি। বাচ্চারা যেমন দাদু দিদার কাছে রোজ রুপকথার গল্প শোনার জন্য বায়না করে ও ঠিক তেমন করতো। রোজই স্কুলে আমাকে চেপে ধরতো গল্প বলার জন্য যেন আমি নিজে ভাষা আন্দোলন করেছি আর মুক্তিযুদ্ধের একজন সৈনিক! বলতে বলতে এমন হয়ে গেল যে ওর সব মুখস্থ।কিন্তু তারপরও ও শুনতে চাইতো। তখন বুঝিনি তবে এখন মনে হয় ও আসলে মুক্তিযুদ্ধ,ভাষা আন্দোলনের গল্প শোনার নাম করে আমার কন্ঠ শুনতে ভালোবাসতো।যেহেতু আমি মুক্তিযুদ্ধ,ভাষাআন্দোলনের স্মৃতি খুব ভালোবাসি তাই ও চাইতো আমার প্রিয় বিষয় নিয়েই যেন আমি বলতে পারি। সন্ধ্যায় মম আমাকে রেডি হতে বললেন মার্কেটে যেতে হবে। আমি ভীষণ অবাক হয়ে জানতে চাইলাম মম একটু আগেই না তুমি মার্কেট থেকে আসলে এখন আবার কেন মার্কেটে যেতে হবে? মুখে একরাশ হাসি টেনে বললেন লিন্ডা আসছে ওর জন্য ঘর গোছাতে হবে না? তাই কিছু কেনা কাটা করতে হবে। আমি দুষ্টুমীর সুরে বললাম মম তুমি এমন করছো যেন লিন্ডা নামে যে আসছে সে আসলে তোমার এখানে চিরদিন থেকে যাবার জন্য আসছে। মনে হচ্ছে সে তোমার খুব কাছের কেউ। আমার কথাটি খপ করে টেনে নিয়ে মম আমার কাধে হাত রেখে বললো তুইতো বেশ দারুণ একটি কথা বলেছিস। এটা আমার মাথায় আসেনি কেন?লিন্ডাকেতো আজীবনের জন্যই রেখে দেওয়া যায়!
আমি আরো খানিকটা অবাক হয়ে জানতে চাইলাম কিভাবে রেখে দিবে? আর সেইবা কেন থাকবে? মম আমাকে বললেন কেন তুইকি আজীবন একাই থাকবি নাকি?তোর সাথে লিন্ডাকে বেশ মানাবে। মমের কথা শুনে আমি হাসিতে ফেটে পড়লাম। যদিও কথাটি খুব একটা খারাপ বলেনি। মমের সাথে মার্কেট থেকে অনেক কিছু কেনা কাটা করলাম।
রাতে লিন্ডাকে ফেসবুকে মেসেজ দিলাম সে বাংলাদেশে কি এমনিতেই ঘুরতে আসবে নাকি অন্য কোন কারণ? সাথে সাথে ওর উত্তর পাইনি। ঘুমোতে যাবার আগে আরেকবার চক করতেই দেখলাম ওর রিপ্লাই এসেছে।সেখানে সে লিখেছে আমি বাংলাদেশে আসবো একটি বিশেষ কারণে। শুনেছি বাংলাদেশ আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে,ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে গেছে,নেতা নেত্রীরা এখন নিয়মিত শপিং করতে আমেরিকা কানাডাতে আসছে। কারো কারো পুরো পরিবার দেশের বাইরে রাজার মত বাস করছে কিন্তু টাকা পয়সার কোন অভাব হচ্ছে না। এর বাইরে আরো কয়েকটা কারণ আছে এই যেমন বাংলাদেশে ঘুরতে গিয়ে অনেক পযর্টক সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করেছে সেগুলি আমাকে আগ্রহী করে তুলেছে। তাছাড়া তুই চলে যাবার পরতো তোর সাথে কখনো দেখা করার সুযোগ হয়নি এটাও একটা কারণ বলতে পারিস। তবে প্রধান কারণ যেটি তা আমি এখনি বলতে চাইনা।এসে তার পর বলবো। প্রধান কারণ আর জানা হলো না এবং সেটা জানার জন্য মনটা বেশ উদগ্রীব হয়ে থাকলো।সেদিন চোখে আর ঘুম এলো না।দুটো কথা বেশ বার বার ঘুরে ফিরে আসছিল মাথার মধ্যে। প্রথমটি লিন্ডা নিজে বলেছে আর দ্বিতীয়টি মম বলেছে। লিন্ডা বলেছিল ও যাকে পছন্দ করে সে হলো চাঁদের মত যাকে দূর থেকে দেখতে হয়,কল্পনায় ছুতে হয়। চাঁদকে যেমন ছোয়া যায় না ঠিক তেমন। তার মানে সে এমন কারো কথা বলেছে যে তার থেকে অনেক দূরে থাকে তাই ইচ্ছে হলেও তাকে কাছে পাওয়া যায়না,ছোয়া যায়না বরং দূর থেকে দেখতে হয়। আমিওতো অনেক দূরে থাকে যাকে দুর থেকেই দেখতে হয় এবং কল্পনাতেই ছুতে হয়। তবে কি লিন্ডা আমার কথাই বলেছে!নিজেই নিজের মাথায় একটা টোকা দিয়ে বললাম যাহ এসব কেন ভাবছি। আবার মমের কথাটাও মাথায় ঘুরছে। লিন্ডাকেতো সারা জীবনের জন্যও রেখে দেওয়া যায়! তুইকি সারা জীবন একা থাকবি নাকি? তার মানে মম বলতে চাইছে লিন্ডা আর আমার মধ্যে একটি বন্ধন তৈরি হলে সে আমার হয়ে থাকবে।
নিজেকে বেশ পাগল বলে মনে হচ্ছে। আমি যে লিন্ডাকে নিয়ে এসব কথা ভাবছি ও জানতে পারলে কি মনে করবে! তবে চাইলেইতো আর মনের মধ্যে গড়ে ওঠা কল্পনার জাল ছিড়ে ফেলা যায় না। আমিও সেটা ছেড়ার চেষ্টা করিনি। যথারীতি সাটারডে ইভিনিংএ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের বিজনেস ক্লাসের যাত্রী হয়ে বাংলাদেশের আলোবাতাসে বেরিয়ে এলো লিন্ডা ওয়াটসন।আমি আর মম আগে থেকেও প্লাকার্ড হাতে রিসিভিং জোনে হাজির ছিলাম। বোর্ডিং পাস হয়ে গেলে লিন্ডা বেরিয়ে এলো। আমাদের কেউ কাউকে চিনতে কোন বেগ পেতে হয়নি কারণ প্রতিনিয়তই আমরা একে অন্যকে ছবিতে দেখি। লিন্ডা আমাকে হাগ করে মমকে জড়িয়ে ধরলো। মমও ওকে এমন ভাবে আগলে নিলো যেন জনম জনমের পরিচয় দুজনের মধ্যে। যেন ওরা দুজন একসাথে বেড়ে উঠেছে,খেলেছে,স্কুলে গিয়েছে। ওর লাগেজ গুলো ভাগাভাগি করে টেনে নিয়ে গাড়িতে চেপে বসলাম। আমি সামনে বসলাম আর মম ওকে নিয়ে পিছনে বসলো। বাসায় যেতে যেতে কত যে কথা হলো। লিন্ডা বাংলাদেশে এসেছে মাত্র কয়েক সপ্তাহ থাকবে বলে। তবে ভালো না লাগলে একসপ্তাহ থেকেও চলে যেতে পারে।কথাটা বলতেই মম বললো আর যদি ভালো লেগে যায় তবেকি তুমি সারা জীবনের জন্য থেকে যাবে? মমের কথাটা ওর মনে ভাবাবেগ তৈরি করলো।লিন্ডা বললো তেমন কিছু হলেতো বেশ মজাই হবে।
সামনের লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে একবার ওকে দেখে নিলাম। আগের সব দেখার সাথে এই দেখার কেন যেন কোন মিল নেই!! আশ্চর্য আমি বোধহয় ওকে বেশি করে ফিল করতে শুরু করেছি। বাসায় ঢুকে ফ্রেশ হয়ে লিন্ডা ওর লাগেজ নিয়ে বসলো। আমেরিকা থেকে আসার সময় কত কিছু যে নিয়ে এসেছে তার কোন হিসেব নেই। আমাদের জন্য এবং আমাদের পরিচিতদের মধ্যে লিন্ডা যাদেরকে চেনে সবার জন্য কিছু না কিছুতো এনেছেই। বাদ পড়েনি জাহিন জামিল ফীহা নোভা মুনা মিফরা কেউ। কারো জন্য চকলেট এনেছে কারো জন্য পুতুল আবার কারো জন্য স্মার্টওয়াচ। যার যেমনটি পছন্দ তাকে তেমন উপহার।মমের জন্য এনেছে দামী কসমেটিক্স আর আমার জন্য কিছু টিশার্ট আর পারফিউম। সবার জন্য আনা উপহার বের করার পরও ওর লাগেজে একটা প্যাকেট ছিল। কাগজ দিয়ে মোড়ানো।আমি বললাম ওটা কি? ও বললো ওটা একটা শাড়ী!

আমেরিকানরাতো শাড়ী পরেই না বলা চলে!! তাহলে শাড়ী কার জন্য? মম বললেন তবেকি তুমি বাংলাদেশের কালচারের সাথে মিশতে চাও বলেই শাড়ী কিনেছ ওটা নিজে পরবে বলে?
মমের কথা শুনে লিন্ডা মাথা নেড়ে জানালো নিজে পরার জন্য সে শাড়ীটা কেনেনি!! মমের চেয়েও বেশি অবাক হলাম আমি। তার পর জানতে চাইলাম তাহলে তুমি শাড়ী কেন কিনেছ? কাকে দিবে বলে কিনেছ? এবার ওর মূখটা বেশ মলিন হয়ে গেল।চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো যেনবা তখনি সে কেঁদে ফেলবে। একটা মেয়ে একাকী আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ দেখবে বলে ছুটে এসেছে আর দীর্ঘ ক্লান্তিকর জার্নির পর তাকে বিশ্রান নেওয়ার সুযোগ না দিয়ে আমরা তার সাথে আড্ডা শুরু করে দিয়েছি এটা বেশ অমানবিক। তবে লিন্ডা নিজে বললো সে ক্লান্ত নয় এবং এখনি তার বিশ্রামের দরকার হচ্ছেনা। তার পর একটু শান্ত হয়ে সে বললো শাড়ীটা সে একজনকে দিবে বলে কিনেছে এবং এই শাড়ীটা দেওয়াটাই বাংলাদেশে আসার প্রধান উদ্দেশ্য!
কেউ একজনকে একটা শাড়ী দেওয়ার জন্য আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে আসতে পারে তা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল।
তাও যদি এমন হতো যে লিন্ডা নিজে একটি ছেলে এবং সে শাড়ীটা এমন একজন মেয়েকে দিতে চায় যাকে সে ভালোবাসে তাহলেও একটা কথা ছিল কিন্তু লিন্ডা নিজে মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে একটা শাড়ী দেওয়ার জন্য হাজার হাজার ডলার হাতে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে এটা সত্যিই বিস্ময়কর। মম জানতে চাইলো কাকে দেবে শাড়ীটা? লিন্ডা জানালো সে যাকে শাড়ীটা দেবে তাকে সে চেনে না বরং তাকে খুজে নিতে হবে আর এ জন্যই সে বেশ কিছুদিন সময় নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। ওর কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। যাকে সে একটা শাড়ী দিবে বলে সুদুর আমেরিকা থেকে এসেছে তাকে সে চেনেই না এমনকি তার কোন ঠিকানাও সে জানে না!তাহলে কি করে দেবে সে? কোথায় পাবে তাকে?লিন্ডার সরল জবাব সে তাকে দেশের অলিতে গলিতে খুঁজবে তার পরও সে তাকে খুঁজে বের করবেই।
তখনকার মত আড্ডা শেষ করে লিন্ডাকে ওর রুম দেখিয়ে দেওয়া হলো। মম ওকে সব বুঝিয়ে দিলো।রুমের সাজ সজ্জা দেখে লিন্ডা খুবই অবাক হলো। মম ওটাকে এতো সুন্দর করে সাজিয়েছে যেন মনে হয় স্বপ্নলোক! ডিনার শেষে লিন্ডা সবাইকে ওর রুমে ডাকলো। তার পর ব্যাগ থেকে একটি অ্যালবাম বের করলো এবং সেটা থেকে একটি ছবি বের করলো। সেটি দেখিয়ে বললো এই মানুষটিকে আমি শাড়ী দেব বলে এসেছি। ছবিটার অনেক গুলো কপি করেছে লিন্ডা। একটি ছবি আমার হাতে দিয়ে একটি মমকেও দিলো।মিফরা,ফীহা,ফারহানা ওরাও একটা করে ছবি নিলো। সেই ছবিটার দিকে তাকিয়ে মনের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসলো। আমি যখন নিজের চোখের পানি আড়াল করতে চেষ্টা করছি তখন লক্ষ্য করলাম অন্য সবার চোখেও পানি এবং সেটা কিছুক্ষণের মধ্যে প্রায় কান্নায় রূপ নিলো। ছবিটি একজন বয়স্ক মহিলার। একটি খোলা মাঠে বাশের বেড়ায় যিনি ভেজা শাড়ী শুকাতে দিয়ে ঠায় দাড়িয়ে আছেন। শাড়ীটা শুকাতে দিয়ে তার যে চলে যাবার কোন উপায় নেই কারণ শাড়ীর অন্য প্রান্ত তখন তার পরণে! তার যে একটি মাত্র শাড়ী যেটি গোসলের পর ভেজা থাকায় রোদে দাড়িয়ে শুকাতে হচ্ছে। একপাশ শুকিয়ে গেলে সে পাশ শরীরে জড়িয়ে নিয়ে অন্য পাশটাও শুকাতে হবে।
এই ছবির মানুষটির কথা ভেবে লিন্ডা সুদুর আমেরিকা থেকে ছুটে এসেছে শাড়ী নিয়ে। আফসোস আমি কেন গেলাম না? আমি কেন অতটা মায়া দেখালাম না? রাতে ঘুমানোর সময় চিন্তা করলাম যে দেশের রাস্তায় কয়েক কোটি টাকা দামের ব্যক্তিগত গাড়ী চলে সে দেশে এমনও মানুষ আছে যাদের ভেজা শাড়ী শুকাতে রোদে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতে হয়। একটা শাড়ীর কতইবা দাম?পাঁচশো? এক হাজার? দুই হাজার? বিশেষ করে সাধারণ মানুষ যে শাড়ী পরে তার দামতো পাঁচশোটাকাও না। পরদিন সকালে আমি লিন্ডাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম সেই মহিলাকে খুঁজতে। ঢাকার অলিতে গলিতে,বস্তিতে বস্তিতে খুজলাম,মানুষকে ছবি দেখালাম কিন্তু কেউ বলতে পারলো না। এক সপ্তাহ ঘুরে পুরো ঢাকা দেখা শেষ হলে গেলাম ঢাকার বাইরে। সাভারে গিয়ে ছবিটা দেখাতেই অনেকেই চিনলো। তারা আমাদেরকে এলাকার নাম বলতেই আমরা ছুটে চললাম সেদিকে। পথে একটি দোকান থেকে আরো বেশ কয়েকটি শাড়ী কিনলো লিন্ডা।একসাথে অনেক গুলো শাড়ী হলে সেই মানুষটি আগামী কয়েক বছর নিশ্চিন্তে পরতে পারবে এটাই ছিল লিন্ডার চিন্তা। ওর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। অবশেষে পাওয়া যাচ্ছে সেই মহিলাকে যাকে সে শাড়ী দিতে ছুটে এসেছে সুদুর আমেরিকা থেকে।
পথে একটি মাঠ পেরোতে হয়। যে মাঠের ছবি ছিল সেই ছবিটাতে যেখানে মহিলা শাড়ী শুকাচ্ছিল। দূর থেকে সেই বাশের বেড়াটিও দেখা গেল। তবে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম সেই বেড়ার উপর কি যেন লাগানো। আমাদের গাড়ীটা যতই কাছে আসছিল ততো স্পষ্ট হচ্ছিল। এবং একসময় দেখলাম ওটা একটি শাড়ী! লিন্ডার চোখটা ছলছল করে উঠলো।
ব্যাগ থেকে ছবিটা বের করে মেলে ধরতেই চোখটা প্রায় ঝাপসা হয়ে এলো পানিতে। এই শাড়ীটাতো সেই শাড়ী যেটা মহিলাম পরে ছিলেন এবং একটা পাশ রোদে শুকাতে দিয়েছিলেন। হঠাৎই লিন্ডার মনটা খারা হয়ে গেল। সে যাকে শাড়ী দিতে এসেছে তার বোধহয় এখন আর শাড়ীর প্রয়োজন নেই। নিশ্চই তাকে কেউ নতুন কাপড় কিনে দিয়েছে তা না হলে এই শাড়ীটা এখানে থাকতো না। আমি বললাম সেটা হলেতো ভালো হয়। তুমি যার দুঃখ দূর করতে ছুটে এসেছো তাকে সুখী দেখলে তোমারতো আনন্দিত হওয়া উচিত।
আমার কথাটা লিন্ডার কাছে বেশ যুক্তিযু্ক্ত মনে হওয়ায় চোখের পানি মুছে ফেললো। তবে ড্রাইভারকে বলে গাড়ী থামিয়ে সে নেমে পড়লো। তার পর বাশের বেড়ার উপর রাখা শাড়ীটাতে সে হাত বুলাতে লাগলো। এভাবে কিছুক্ষণ পার হওয়ার পর আমরা আবার রওনা হলাম।লিন্ডার চেহারায় আগের মত দুশ্চিন্তার ছাপ নেই। সে বোধহয় মহিলার সুখী হওয়াতে খুবই আনন্দিত হয়েছে।সেই আবাসিক এলাকাতে প্রবেশ করতেই একজনের সাথে দেখা। গাড়ী থামিয়ে তাকে ছবিটা দেখাতেই তিনি যা বললেন তাতে লিন্ডার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। লাস্ট সাটারডেতে যখন লিন্ডা আমেরিকা থেকে রওনা দিয়েছে তারও এক সপ্তাহ আগে মহিলা মারা গেছেন!লিন্ডার হাতে ধরে রাখা শাড়ীটা ছুটে পড়ে গেল। আমি সেটা উঠিয়ে ওর হাতে দিয়ে ওকে শক্ত করে ধরলাম।বুঝলাম কেন আসার সময় মহিলার সেই শাড়ীটাকে বেড়াতে লাগানো দেখেছিলাম।
সত্যিইতো তার আর ওই শাড়ীর কোন দরকার নেই।তাকে সবাই মিলে নতুন কাপড় কিনে দিয়েছে। সে এখন অনেক সুখে আছে। তারতো আর ওই পুরোনো শাড়ীর কোন দরকার নেই। লিন্ডা একটি শাড়ী কিনেছিল সেই শাড়ীটা যার জন্য কিনেছিল তাকে দেওয়া হলো না।ফেরার পথে সে শাড়ীটাকে আগে নেড়ে দেওয়া শাড়ীটার উপর ঝুলিয়ে দিলো।ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হলো।আকাশে তখন ভরা পুর্ণিমার চাঁদ। চাঁদের দিকে তাকিয়ে মনে পড়লো লিন্ডার সেই কথাটি। চাঁদের মতও কোন কোন মানুষ হয় যাদেরকে ধরা যায়না,ছোয়া যায়না বরং সরে যেতে থাকে। দুদিন পর ফিরতি ফ্লাইটে লিন্ডা ফিরে গেল আমেরিকাতে। জীবনে আর কোন দিন লিন্ডা শাড়ী কেনেনি। এমনকি আমাদের বিয়ের দিনেও সে শাড়ী পরেনি।

 

স্পর্শ: শিশুর সাথে যেন আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে

ফাতেমা শাহরিন


‘তুমি’ আছো, তেমনই তুমি “সুন্দর ” সবসময়। তোমার ছোট ছোট  চুল, হাত, পা সব কিছু অসাধারণ। তোমার মাঝে আটকে যায় যেন সব অনুভূতিরা। লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা টুকু আঙ্গুল ছুঁইয়ে খুঁজে নেয় যেন প্রশান্তির অঙ্গন।

মনে রাখবেন, শিশুর জন্ম হয় প্রচুর সম্ভাবনা নিয়ে, প্রতিভাগুলো ঢাকা থাকে ভালবাসার চাদর দিয়ে। ভালবাসার সুন্দর বর্হিঃপ্রকাশ তাদেরকে উড়তে সাহায্য করে।

শিশুকে শারীরিক স্নেহ, আবেগ, ভালোলাগা এবং ভালবাসাময় অঙ্গন  তৈরির লক্ষ্যে আমাদের শিশুদের প্রতি ভালবাসা বা অনুভূতি প্রকাশ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। ‘স্পর্শ ‘ একটি সহজ ভাষা, ভালাবাসার। অধিকাংশ শিশু এই ভাষা আগ্রহের সাথে গ্রহন করে, এবং কিছু কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে, এটি প্রবল আকর্ষণীয় ভালবাসার শক্তি রূপে কাজ করে।

সহজ আবার অজানাও নয়। আসুন এমন কয়েকটি উপায় শিশুদের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য।

হাত ধরা
আলতো করে শিশুর হাত ধরুণ যখন আপনি পাশাপাশি হাটছেন বা গল্পগুলি বলছেন একান্ত শিশুকে বুঝতে দিন, পাশেই রয়েছেন আপনি।

শিশুকে জড়িয়ে ধরা
প্রতিটি বাবা মা সন্তানকে প্রচন্ড ভালবাসে ভালবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রে ছোট্ট শিশুকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে রাখুন। তার কাছে প্রকাশ করুণ আপনার অনুভূতি।

সন্তানকে চুমু দিন
সন্তানকে আদর করার ক্ষেত্রে মতপার্থক্য হয়ত কারই নেই কিন্তু ছোট্ট শিশুকে আপনার প্রকাশ ভঙ্গিমার মাধ্যমে কাছাকাছি আগলে রাখা উচিত। সুতরাং বুঝুন, বুঝতে দিন আপনিও তাকে প্রচুর ভালবাসেন। রোজ কপালে চুমু দিন। সন্তান বড় হলেও মা উচিত কন্যাকে বুঝানো তার পাশেই আছেন এবং বাবাদের ছেলেদের কাছে থেকে ভালবাসা প্রকাশ করা খুব খুব জরুরী।

এক সাথে পাশাপাশি বসুন
আপনার কম্বলের মধ্যে শিশুকে পাশে নিয়ে গল্প করুন। বৃষ্টি, শীতের সকাল বা হঠাৎ বিকেলের আবেশে পাশাপাশি বসুন, চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে শিশুর মত হয়ে যান।

সন্তানকে বিরক্ত করুন
ছোট্ট শিশুমনিরা বিরক্ত করা খুব পছন্দ করে। মাঝে মাঝে ছোট্ট হাত পাগুলো
ম্যাসেজ করুন। মাঝে মধ্যেই বিরক্ত করুন কারণ বিষয়টি তারা খুবই মজা পায়।

আন্তরিকভাবে কাঁধে হাত রাখুন
কথা বলার সময় বা সুন্দর কোন প্রকৃতির দেখার সময় অথবা অনুরোধ করার সময় শিশুদের কাঁধ স্পর্শ করুন। প্রায়ই যদি শিশুদের আলিঙ্গন অথবা আদর প্রকাশ করা হয় শিশুরা খুশি হয়।

সংশোধনের ক্ষেত্রে কৌশলী
শিশু শুধু নয় বড়রাও ভুল করে। ভুল বিষয়টিকে সংশোধন করার সময় সম্পর্ক গুলো নড়বড়ে হয়ে যায়। সুতরাং শিশুর ভুল পাওয়া গেলে, কৌশলপূর্ণ সংশোধন করা। পরবর্তীতে মৌখিক প্রশংসা পাশাপাশি আলিঙ্গন করুন, শিশুকে পুরষ্কার দিবেন বলে অফার করুন ভাল কাজের জন্য।

আপনিও খেলুন
একইসঙ্গে মজার নানান রকম খেলা খেলুন, ছোঁয়াছুয়ি, দৌড়াদৌড়ি হইহুল্লা একেবারে সে রকম খেলাধূলা করুন।

আপনাদের দুজনের মধ্যে একটি  “বিশেষ বন্ধন” জাগ্রত  থাকে কিনা খেয়াল করলে দেখবেন, ওর  প্রতিদিনের বন্ধনটি  গড়ে উঠুক সুন্দর আর সাবলিল  ভাষাাা বুঝুন এবং শিশুকে সর্বদায় বুঝতে সহযোগিতা করুন। আপনার শিশুর শারীরিক এবং মানসিক সুন্দর বিকাশ হলে আপনিও ভাল থাকবেন।