banner

সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: May 16, 2024

 

আপনার শিশুকে চিনুন ৮ টি উপায়ে’ (শেষ পর্ব)

এ কে এম ওমর ফারুক


দৃষ্টি ও অবস্থানমূলক বুদ্ধিমত্তা :
এই শ্রেণীভুক্ত শিশুরা ছবির বিষয়বস্তু সম্বন্ধে চিন্তা করে। ছবির সাহায্যে মনে রাখে। ছবি আঁকতে ও রং করতে ভালোবাসে। প্রতিকৃতি বানাতে পছন্দ করে। মানচিত্র চার্ট ও নং সহজে বুঝতে পারে। কোন কিছুর চিত্র সহজে কল্পনা করতে পারে। রূপক শব্দ ও বাক্য বেশি ব্যবহার করে।

অনুভূতি ও শরীরবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা :
যে শিশুরা খেলাধুলা পছন্দ করে তার অনুভূতি ও শরীরবৃত্তীর বুদ্ধিমত্তার শ্রেণীভুক্ত। এ ধরনের শিশুরা কোন কিছু সহজে ধরতে চায়। হাতেনাতে কাজ করতে পছন্দ করে। হস্ত শিল্পে দক্ষ হয়। শরীর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ থাকে। অংশগ্রহণ করে সহজে শেখে। বস্তু সহজে নিয়ন্ত্রণ করে। শুনে বা দেখে শেখার চেয়ে নিজে করে শেখে এবং মনে রাখে।

ছন্দ ও সঙ্গীতমূলক বুদ্ধিমত্তা :
কিছু শিশুর তাল ও লয়ের প্রতি আকর্ষণ বেশি থাকে। সুর ও ছন্দ সহজে এদের মনে প্রভাব বিস্তর করে। এরা গান পছন্দ করে। কবিতা ও ছড়ার তালে তালে আবৃত্তি করতে পছন্দ করে। বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পছন্দ করে। প্রকৃতির বিভিন্ন শব্দের প্রতি সহজে আকৃষ্ট হয়। এরা ছন্দ ও সঙ্গীতমূলক বুদ্ধিমত্তার আওতাভুক্ত।

আন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা :
এরা সহজেই অন্যের মনের কথা বুঝতে পারে। অন্যের সঙ্গে সহজেই সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। এদের অনেক বন্ধু-বান্ধব থাকে। অন্যের সমস্যা সমাধানে ঝগড়া-বিবাদ মেটাতে এরা পছন্দ করে। এরা দলভুক্ত হয়ে কাজ করতে ভালবাসে। অন্যের কাজে সহযোগিতা করে এবং সামাজিক পরিস্থিতি সহজেই বুঝতে পারে।

প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা :
প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি যারা বিশেষভাবে দুর্বল তারা প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তার অধিকারী। সাধারণত এরা প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে পছন্দ করে। তাছাড়া জীব ও জড়োর বৈশিষ্ট্য নিয়ে চিন্তা করতে পছন্দ করে। গাছপালা-পশুপাখি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পছন্দ করে। গাছপালার যত্ন করতে ভালবাসে। প্রকৃতির বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করতে আনন্দ পায়। সর্বপরি প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান নিয়ে গবেষণা করতে পছন্দ করে।

পৃথিবীর সকল শিশুই শুধু নয় সকল মানুষই এই আটটি বুদ্ধিমত্তার অন্তর্ভুক্ত। প্রত্যেকটি মানুষের ভেতর এই আটটি বুদ্ধিমত্তার যে কোন একটি প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয় এবং পাশাপাশি অন্য বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। এই বিষয়গুলো যে কারও আচরণে লক্ষ করলেই স্পষ্ট পরিলক্ষিত হবে।

একটি শিশুর সফলভাবে বেড়ে ওঠার জন্য তার বুদ্ধিমত্তাকে বিবেচনা করা প্রয়োজন। তার লেখাপড়া ও কাজে-কর্মে উৎসাহ প্রদান করা প্রয়োজন। তাহলে প্রত্যেকটি শিশুই সফল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তথ্য সূত্রঃ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ও সম্পাদিত।

পর্ব-১

 

শরীয়ত ভিত্তিক দাম্পত্য কাউন্সিলিং (কেস স্টাডি)- ১ম পর্ব

আফরোজা হাসান


ছোট্ট সুখের নীড় বলতে যা বোঝায় ঠিক তেমনটিই ছিল আমার জীবন। আদর, সোহাগ ও ভালোবাসায় আগলে রাখা একজন প্রেমময় অসাধারণ স্বামী। এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে ভীষণ আনন্দময় একটা জীবন কাটাচ্ছিলাম। প্রচন্ড ভালোবাসতো আমাকে আমার স্বামী। পিতা হিসেবেও খুবই দায়িত্ব সচেতন ছিলেন সবসময়ই। সুখের সাগরে ভেসে কাটছিল আমাদের দিন।

এরই মধ্যে একদিন জানতে পারলাম আমার স্বামীর অন্য একটি মেয়ের সাথে গোপন সম্পর্কের কথা।

প্রথমে কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায়নি মন। কিন্তু খোঁজ খবর নেবার পর বুঝলাম যা শুনেছি সবই সত্যি। অন্য একটি মেয়ের সাথে প্রায় দেড় বছর যাবত চলছে তার এই গোপন অনৈতিক সম্পর্ক। পুরো দুনিয়া থমকে গিয়েছিল আমার সামনে। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কারণ কোনদিন স্বামীর ব্যবহার থেকে এমন কিছুই আঁচ করতে পারিনি আমি। আমাদের সম্পর্কের মাঝেও কখনোই এমন কোন সমস্যা আসেনি যে সে এমন কিছু করতে পারে। কি করবো কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। কার কাছে বলবো এই ভয়াবহ লজ্জার কথা?!

কয়েকটা দিন গোপনে শুধু কান্না করেছি আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছি। আমার মানসিক অবস্থা দেখে স্বামী খুবই অস্থির হয়ে পড়েছিল। বারবার জানতে চাইছিল কি হয়েছে আমার। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার জন্য জোড়াজুড়ি শুরু করে দিয়েছিল। তখনো আমার ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো এত ভালোবাসা যার চোখে মুখে সে কেমন করে এমন করতে পারলো আমার সাথে? কেমন করে অন্য মেয়ের সাথে জড়ালো?!

শেষপর্যন্ত খুব কাছের এক বান্ধবীর কাছে খুলে বললাম মনের সব কথা। বান্ধবীটি খুবই প্রাক্টিসিং একজন মুসলিমাহ ছিলো। সে আমাকে সাহস দিলো। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ধৈর্য্য ধারণের পরামর্শ দিলো। বললো পরিবারকে না জানিয়ে আগে নিজেই স্বামীর সাথে কথা বলতে। যেহেতু আমার আর আমার স্বামীর মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল বিয়ের প্রথম থেকেই। আমি বান্ধবীর পরামর্শ মেনে নিয়েছিলাম। সরাসরি আমার সন্দেহের কথা স্বামীকে বললাম। প্রথমে সে অস্বীকার করলেও একসময় মেনে নিলো তার অনৈতিক কাজের কথা। খুবই অনুতপ্ত হয়েছিল সেদিন সে। বারবার আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলো। ভুলের পথ থেকে ফিরে আসবে এই ওয়াদা করলো।

আমি চাইনি আমার সংসারটা ভেঙ্গে যাক।

প্রথমত, আমার সংসার সুখেরই ছিল এই ঘটনা জানার আগে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের তের বছর ও নয় বছর বয়সী দুটি ছেলে-মেয়ে ছিল। সংসার ভাঙ্গা মানে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মাঝে ঠেলে দেয়া।

তৃতীয়ত, আমি স্বাবলম্বী কোন নারী না। বাবার বাড়িতেও আমার বোঝা তুলে নেবেন হাসিমুখে এমন কেউ নেই। আর সবচেয়ে বড় কারণ দীর্ঘ পনেরো বছরের সংসারের মায়া এত সহজে ছেড়ে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।

এরচেয়েও বড় কারণ স্বামীর প্রতি আমার ভালোবাসা নিখাদ ও পবিত্র ছিল। তাই সংসারটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যতটুকু ত্যাগ স্বীকার আমার পক্ষ থেকে করা সম্ভব ছিল আমি করেছি। এরপরের তিন-চার মাস ভালোই কেটেছে আমাদের। তারপর আবারো জানতে পারলাম যে আমার স্বামী ঐ পথ থেকে ফিরে আসেনি। সে এখনো মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করেই চলছে। চলছে তাদের অনৈতিক সমস্ত কাজকর্মও। খুব ভেঙে পড়লাম তখন মানসিক ভাবে। মেয়েটির বয়স তেরো বছর। অনেককিছুই বুঝতে শিখেছিল ততদিনে। আঁচ করে ফেলেছিল কিছু একটা সমস্যা চলছে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে। আবারো ছুটলাম সেই বান্ধবীর কাছে। ওর পরামর্শ মতো আপনার কাছে এলাম।

একদম চুপ করে কোন রকমের বাঁধা না দিয়ে ভদ্রমহিলার সব কথা শুনছিল নুসরাহ।

আরো কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আপনার স্বামীর এমন অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার পেছনে আপনার নিজের দায় কতটুকু সেটা কি কখনো ভেবে দেখেছেন?

চলবে…