banner

সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: May 16, 2024

 

আমার অনুধাবন

ডা. মারুফ রায়হান খান


কথাটা রূঢ় সত্যি। তোমার মেনে নিতে কষ্ট হবে। তবে যতো আগে তুমি বুঝবে এবং মেনে নিতে পারবে ততোই তোমার জন্যে ভালো। দেখো, তুমি যে নেইম-ফেইমের জন্যে ছুটছো, খ্যাতির মোহে কখনও নিজের ব্যক্তিত্ব কখনও সততার সাথে আপোষ করছো সেটা ঠিক কাজ না। কোনো মানুষ অপরিহার্য না।

এই যে আজ তোমাকে ছাড়া যেন কিছুই চলছে না, সব জায়গায় তোমাকে খোঁজাখুঁজি, তোমার স্তুতি করার লোকের অভাব নেই–সেই তারা কিন্তু তোমার প্রস্থানে তোমাকে আর মনেও করবে না। সর্বোচ্চ দুএকবার আফসোস করতে পারে কিন্তু তাদের কাজ কিন্তু চলেই যাবে। তোমার যদি কিছু অবদান থেকেও থাকে সময় নামক নিষ্ঠুর পাহাড়ের নিচে কিন্তু চাপা পড়ে যাবে।

তোমার মতো প্রতিভাধর কিংবা পরিশ্রমী কিংবা ডেডিকেটেড লোকের কিন্তু অভাব নেই পৃথিবীতে। তোমার সাম্রাজ্য ভেঙে পড়া কেবল সময়ের ব্যাপার। প্রকৃতি তো শূন্যস্থান পছন্দ করে না। আমার পরামর্শ হলো তুমি খ্যাতির পেছনে ছুটো না অযথা, তুমি নাম-ডাক পেতে হন্যে হয়ো না, তুমি তোমার প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখানোর জন্যে ব্যস্ত হয়ো না তো, সবাই তোমাকে সম্মান করবে সমীহ করবে এমন ভাবনাটা সুস্থ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ না।

সেলেব্রিটিকে কি মানুষ আসলেই ভালোবাসে? বরঞ্চ তাদের প্রতি জেলাস হবার লোকের অভাব নেই, তাদের পতনে বিকটানন্দ পাবার জন্যে বহু লোক অপেক্ষায় থাকে। তুমি ভালোবাসা পেতে চাইলে সাধারণ কেউ একজন হও, মাটির মানুষ হও, নিরহঙ্কার হও, বোকা বোকা মানুষ হও। তোমার মনের মধ্যে যদি আমাকে দেখে দাঁড়ালো না কেন, আসন ছেড়ে দিলো না কেন, আগে সালাম দিলো না কেন জাতীয় ভাবনা থাকে তবে তুমি সংশোধিত হও। তোমার মাঝে অহঙ্কার আছে, নিজেকে বড় ভাবার প্রবণতা আছে।

হুমায়ূন আহমেদকে ছাড়াও কী অবলীলায় বইমেলা হচ্ছে, এম আর খান স্যারকে ছাড়াও কী অনায়াসে শিশু-চিকিৎসা চলছে…এক এক করে সব বিখ্যাত ও জনপ্রিয় মানুষের কথা চিন্তা করে দেখো…পৃথিবী আপন গতিতে চলছে, কেউ কারও জন্যে থেমে নেই…তাদের তুলনায় তুমি আর কী?

বিষয়: মনের জানালা

 

আত্মোপলব্ধিঃ ‘প্রসঙ্গ পহেলা বৈশাখ’

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ


বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের অনেক আলেমদের মধ্যে বোধদয় হয়েছে যে পহেলা বৈশাখের নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলীর স্পষ্ট সাংঘর্ষিক, যা ইসলামে কোনভাবে অনুমোদিত নয়।

ক. মঙ্গল শোভাযাত্রা
খ. রমনা বটমূলে বৈশাখীবরণ যেখানে সূর্য ওঠার জন্য অপেক্ষা করা হয়
গ. শরীরে উল্কি আঁকা
ঘ. অবাধ মেলামেশা করা
ঙ. লাল-সাদা পোষাক পরিধান
চ. অতিরিক্ত মাত্রায় অপচয়
ছ. গরীবের সাথে উপহাস করা।

উপরোক্ত বিষয়গুলোর ইসলামের ব্যাখ্যা সামাজিক মাধ্যমে আমরা জেনে গেছি। আজকের আলোচনার বিষয় সেটা নয় বরং এ সংক্রান্ত বিষয়ে আলেমদের ভূমিকা নিয়ে।

আলেম সমাজের অবস্থা হল চোর-মালিকের গল্পের মত। মালিক ভাবে দেখি চোর-বেটা কী করে, ভাবতে ভাবতে চোর সব নিয়ে যায়। তেমনি আলেমরা যখন চৈতন্য ফিরে পান, তখন সব হালাল হয়ে যায়। নিজেদের সমগোত্রীয়দেরকে কাফের, ইহুদীদের দালাল, ফাসেক ইত্যাদি ফতোয়া নিয়ে ব্যস্ত। একজন আর একজনের চোর, মূর্খ, গোবর-গণেশ, ইসলামের দুশমন ইত্যাদি অবিধায় উপস্থাপন করতে থাকে। এর মাঝে যে নিজেদের প্রকৃত শত্রুরা ধাঁই ধাঁই করে নিজেদের এজেন্ডা নিয়ে সম্মুখপানে এগিয়ে যায়, সেই হুঁশ নেই।

ভারতীয় উপমহাদেশ যেমন বীর পুরুষদের জন্মস্থল তেমনি গাদ্দারও কম জন্ম দেয়নি এই ভূমি।

আবুল ফজলের মত দরবারী চাটুকার আলেম যেমন ছিল এ মাটিতে, তেমনি মুজাদ্দিদে আলফেসানীর মত ক্ষণজন্মা পুরুষও এই মাটি জন্ম দিয়েছে। রাজন্যবর্গের অনুকম্পা লাভের জন্য পদলেহী আলেম যেমন ছিল ভরি ভরি, আবার রাজন্যবর্গের রক্ত-চক্ষু উপেক্ষা করে জেলের জিনজিরও স্বহাস্য বদনে অনেকে গলায় পরে নিয়েছেন, কিন্তু ইসলামের কোন বিষয়ে আপোষ করেননি।

এ উপমহাদেশের আলেমরা ফতোয়াবাজীতে যথেষ্ট এগিয়ে আছেন। মুখে আসলে যেমন যে কাউকে কাফের বলতে কার্পণ্য করেননা আবার হালুয়া-রুটি পাওয়ার জন্য শাসকের শরীয়া পরিপন্থী কাজকে জায়েজ করতে বিন্দুমাত্র সময়ও নেন না।

আচ্ছা, সমাজে প্রচলিত একটা বিষয়কে আপনি হারাম ঘোষণা করলেন। খুব ভাল কথা। কিন্তু সেই হারামে নিবিষ্ট মানুষকে হারাম থেকে ফিরিয়ে আনার আপনার বিকল্প কোন প্রচেষ্টা আছে কী?

মানুষের মুখ থেকে খাবার কেড়ে নিবেন ভাল কথা, কিন্তু তার বিকল্প তাকে কিছু না দিলে তো সে আপনার ইহকালীন জীবন সাঙ্গ করে দিবে। সে ভাবনা কি আছে আপনাদের? আপনি লাই দিয়ে তাকে যে নিয়ন্ত্রণহীন করেছেন সে উপলব্ধি কি আপনার হয়? সাগরের পানি অনেক গড়িয়ে গেছে। অনেক কিছু আপনাদের নিয়ন্ত্রণে আর নেই।

আলেম তথা সমাজসংস্কারকদের হতে হবে প্রবাহমান নদীর মত যেখানে যেকোন অপবিত্র ও দুর্গন্ধযুক্ত কিছু পড়লে ধুয়ে-মুছে পরিস্কার করে দিবে। বেলায় বেলায় দিন গড়িয়েছে অনেক। আর নয় ভেদাভেদ, অযাচিত ফতোয়াবাজী।

আসুন নিজেদের মধ্যে বিদ্যমান ছোট-খাট ভুল-ত্রুটি বিনাশ করে অস্তিত্বের স্বার্থে ইসলামের সঠিক শিক্ষা প্রচার করি।

নিজেদের হারানো শিরদাঁড়া আবার খাড়া করে দাঁড়াই। শত্রু-মিত্র ভেদাভেদ ভুলে দরদী মন নিয়ে এগিয়ে আসি সবাই।

যেকোন বিষয়কে শুধু হারাম ঘোষণা করে খতম নয় বরং বৃহৎ জনগোষ্টীকে সঠিক পথে আনার জন্য বিকল্প চিন্তা করি।

একসময় বাঙালী যে সংস্কৃতিকে ইসলাম বিরোধী বলে দুরে ঠেলে দিয়েছিলেন সেটাকে কিভাবে ইসলামীকরণ করা যায় সেই চিন্তা করি। কিভাবে দলাদলি ভুলে একই সাথে কাজ করা যায়, সেই পথ খুঁজি।

আরো দেরি করেছেন তো ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। কি, আপনারা প্রস্তুত তো?

 

মাতৃকথন-৬

ফারিনা মাহমুদ


ঘুম স্বল্পতা :
সদ্যজাত বাচ্চার পিছনে দিন রাত এক হয়ে যায়। বাচ্চা খাওয়ানো, ঘুম পড়ানো, কাঁথা পাল্টানো, কান্না সামলানো এই লুপের মধ্যে পড়ে যায় মা। আমি নিজেই মাথায় চিরুনি দিয়েছিলাম ১৯ দিন পরে, এমনও দিন গেছে যখন ২৪ ঘন্টায় একবার খাবার সময় পেয়েছিলাম! ভোজবাজীর মতো পাল্টে যাওয়া এই নিদ্রাহীন কান্ত জীবন ভীষণ প্রভাব ফেলে বাবা মায়ের উপরে, প্রভাব ফেলে সম্পর্কের উপরেও। মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে থাকে। বাবাদের জন্য অফিসে কাজে মন বসানো খুব কষ্টকর হয়ে যেতে পারে।

কি করবেন: ঘুমাবেন। সোজা হিসাব হচ্ছে যখনই একটু সুযোগ পাবেন, ঘুমিয়ে নেবেন। প্রথম ৬ সপ্তাহ বাচ্চার রুটিনের সাথে নিজে মানিয়ে নেয়া ছাড়া গতি নেই। বাচ্চা ঘুমালে এই করবো সেই করবো না করে নিজেও শুয়ে পড়বেন। হালকা তন্দ্রা বা বিশ্রামও আপনাকে অনেক ঝরঝরে করে তুলতে পারে। ২৪ ঘন্টায় কয়েকটা ছোট ন্যাপ নিলেও দেখবেন বাকি সময়টা অনেক ভালো কাটবে।

ক্ল্যাশিং প্যারেন্টিং স্টাইল:
ওই যে শুরুতে বললাম,বাবার বাড়ি থেকে বলেছে তেল ডলতে শ্বশুর বাড়ি বলছে না … এই ধরনের ক্ল্যাশ খুব কমন। এক একজনের বাচ্চা পালার তরিকা ও অভিজ্ঞতা এক এক রকম হয়। সবাই ভাবে সে ঠিক। এতে করে তৈরী হয় একটা সংঘাতময় অবস্থা। এর স্বীকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে মা। যেন মা ছাড়া দুনিয়ার সবাই সব জানে!

কি করনীয়: নিজেকে জানতে হবে কি করবো, কেন করবো। কনফিডেন্স রাখতে হবে নিজের উপরে। মানুষের বাচ্চা কোনো নতুন মডেলের গাড়ি না যে ম্যানুয়াল সাথে নিয়ে পৃথিবীতে আসবে। তবে হ্যা, সব গাড়ির কমন মেকানিজম থাকে। সেইটা জেনে রাখলে অন্যের কথা খুব বেশি আমল দেয়ার প্রয়োজন নেই যদি না যুক্তি যুক্ত মনে হয়। সবকিছুতে উদ্বিগ্ন হবেন না। তবে উদ্বিগ্ন কখন হতে হয় সেই বেসিক পয়েন্ট গুলো জানতে হবে।

একান্ত সময় থেকে বঞ্চিত:
বাচ্চা হবার আগে প্রতি সপ্তাহে দুজনে রিক্সার হুড ফেলে ঘুরতে যেতেন? রাত জেগে মুভি দেখতেন? আড্ডা দিতেন বন্ধুদের সাথে? আর এখন? নিজেদের বসে দুটো কথা বলার সময়ও নেই! আর কি কোনদিন জীবন স্বাভাবিক হবে?

কি করনীয়: জীবন স্বাভাবিক হবে আবার, তবে তার জন্য চেষ্টা করতে হবে দুজনকেই। বাচ্চার কাজগুলো দুজন মিলেই করুন। বাবা যখন বাচ্চার কাজ করতে চাচ্ছেন, মা তখন তাকে খবরদারি করা থেকে বিরত থাকুন, তাকে বুঝিয়ে দেখিয়ে দিন কি করলে ভালো হয়। তিনি একবারে না পারলেই গলা চড়াবেন না। আর একেবারে আপনার মতো করেই তাকে পারতে হবে এমন কথা নেই। একটু উনিশ বিশ হলে দুনিয়া উল্টে যায় না। ধৈর্য রাখুন, বাচ্চাকে একটা রুটিনে আনতে পারলে সব ই সম্ভব হবে। নিজেরা নিজেদের জন্য সময় বের করুন। সমঝোতা শক্ত করুন। একে অপরের পাশে থাকুন। একটু একটু করে প্রিয় জিনিসগুলো ফিরিয়ে আনুন।

এই চাল্যেঞ্জ গুলো প্রথম ৬ সপ্তাহ যদি ভালো মতো হ্যান্ডেল করতে পারেন, বিশ্বাস রাখেন,৬ সপ্তাহের পর থেকে পরিস্থিতি অনেক অনেক ভালো হবে!
ফিরে আসবো পরের পর্বে, নবজাতকের যত্ন নিয়ে!

চলবে..

পর্ব ৫