banner

সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: May 16, 2024

 

ঘর সাজিয়ে তুলুন মাটির জিনিসে

অপরাজিতা


শহরে থাকলেও আমরা পারি বাসার কোনো এক জায়গায় একটু গ্রাম্য ছোঁয়ায় সাজাতে। অনায়াশে শহুরে মানুষের জীবনের মধ্যে আজও জীবন্ত হয়ে উঠে গ্রামের মাটি। দামি কার্পেট, ফুলদানি, শো পিসের সাথে মানিয়ে নিয়েছে এখন মাটির জিনিসপত্র স্ব মহিমায়। মাটির তৈরি জিনিস তুলনামূলক সস্তা। আসুন অল্প খরচে নিজের ঘরের সাজকে করে তুলি ছিমছাম ও সুন্দর। সুন্দরভাবে ঘর সাজাতে সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন রুচিবোধ।

মাটির জিনিস দিয়ে কীভাবে ঘর সাজাবেন আসুন দেখি কিছু কৌশল-

মাটির তৈরি শো পিস

ঘর সাজিয়ে ফেলুন মাটির তৈরি শো পিস দিয়ে। ঘরে রাখতে পারেন সুন্দর কোনো ওয়াল হ্যাঙ্গিং। এটি ঘরের চেহারাই পালটে দেবে।

মাটির কলসি

মাটির কলসি দিয়ে ঘর সাজাতে পারেন সুন্দর করে। বড় বড় চারটি কলসি চারদিকে রেখে তার উপর কাচ বসিয়ে দিন। তা সেন্টার টেবিল হিসেবে দিব্য ব্যবহার করতে পারবেন।

টেরাকোটা

ঘরের সাজে ভিন্নতা আনতে চাইলে সামর্থ্য অনুযায়ী বসার ঘর, শোবার ঘর অথবা খাবার ঘরে দেয়ালের একপাশে মাটির ফলক অর্থাৎ টেরাকোটা ব্যবহার করতে পারেন। আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে মূল দরজার সামনের ফ্রেমে মাটির টেরাকোটা ব্যবহার করতে পারেন।

মাটির ফ্রেম

খুব সাধারণ ও সুন্দরভাবে ঘর সাজাতে চান তাহলে ফুলদানি, পুতুল, শো-পিস ইত্যাদি ব্যবহারের পাশাপাশি ঘরের ভিতরে যে স্থানটি খুব সহজেই সকলের নজরে পরে সেখানে মাটির ফ্রেম ব্যবহার করে তাতে যে কোনো ছবি বাঁধাতে পারেন।

ছোটো জার

মাটির তৈরি ছোটো জার কিনে তার উপর নিজের মতো করে ডিজ়াইন করতে পারেন।

মাটির ফুলদানি

দামি ফুলদানির বদলে মাটির তৈরি ফুলদানি বাড়িতে রাখতে পারেন। সেখানে কিছু সতেজ ফুল রাখার চেষ্টা করুন। তাতে আপনার ঘরের সাজগোজ যেমন ছিমছাম দেখাবে, তেমনই দেখাবে আকর্ষণীয়।

মাটির টব

শহুরে জীবনে এখন মাটির টবের জায়গায় এসেছে আধুনিক ফুলের প্লাস্টিক ও চিনা পাথরের টব। কিন্তু ফুলগাছ মাটির টবে রাখলে তা ভালো থাকে আবার মাটির টবও আপনার ঘর সাজাবে।

কলমদানি-মোমবাতি

মাটির তৈরি কলমদানি, মোমবাতি স্ট্যান্ডের মতো জিনিস আপনার ঘরের সৌন্দর্য বাড়াবে।

প্লেট-গ্লাস-ফুল-ফল-বাটি

ঘর সাজানোর জন্য কাজে লাগাতে পারবেন মাটির তৈরি প্লেট, গ্লাস,ফুল-ফল, বাটি। আপনি চাইলে এসব জিনিসের উপর কারুকার্য করতে পারেন। তাতে সামান্য জিনিসও অসাধারণ হয়ে উঠবে।

 

আলো আঁধারের ছায় -১

আফরোজা হাসান


আমার পড়াশোনার বিষয়টিই এমন যে ভালো কথার চেয়ে মন্দ কথাই বেশি শুনতে হয় আমাকে। সুখের চেয়ে জীবনে বিরাজমান দুঃখের কথাই বেশি জানতে হয়। আনন্দময়তার চেয়ে বেদনাক্ত গল্পগুলোই আগে কড়া নাড়ে আমার দ্বারে এসে।

মানুষের ভেতরের আলোকময়তার চেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্নতাই বেশি উন্মোচিত হয় আমার সামনে।

বলা হয়, “কোন জিনিস যখন সচারচর সংঘটিত হয় মানুষ সেটার সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায়। একসময় সেই জিনিসটা মানুষের মনের আর তেমন করে প্রভাব ফেলতে পারে না।” কিন্তু এই ক্ষেত্রে কেন জানি না আমার সাথে এমন হয়নি। এখনো কারো কষ্টের কথা শুনলে, দুঃখের কথা জানলে, বেদনাক্ত চেহারা দেখতে, অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে আছে অনুভব করলে খুব বেশি কষ্ট হয়।

এমন মানুষগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়াতে ইচ্ছে করে! তাদের পানে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে! যে গোলক-ধাঁধায় তারা ঘুরপাক খাচ্ছে সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসতে ইচ্ছে করে।

অন্ধকারে নিমজ্জিত মনগুলোকে অভয় দিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, এই তো আরেকটু এগোলেই পেয়ে যাবে আলোর সন্ধান। ধৈর্য্য ধরে রেখে কদম সামনে বাড়াও। উঁচু নীচু পথ দেখে ভয় পেয়ো না। দূর থেকে দেখছো তো তাই এমন মনে হচ্ছে। যখন চলতে শুরু করবে নিজের অজান্তেই দেখবে পথের সাথে তাল মিলিয়ে, সব বাঁক পেড়িয়ে ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছো গন্তব্য পানে ইনশাআল্লাহ।

‘নানান প্রতিকূলতায় জীবনের পথ যখনই লাগবে খুব দুর্বোধ্য, রাখবে মনে আলো আঁধারের মাঝে আলো সর্বদা অপ্রতিরোধ্য’।

এই কথাটা চলার আমি সবসময় মনে রাখতে চেষ্টা করি। তাই যখনই কোন কারণে চোখের সামনে হঠাৎ আঁধারের পর্দা নেমে আসে। নিজেই নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করি এই আঁধার ক্ষণস্থায়ী রূপে এসেছে। কেননা আলোকে বেশীক্ষণ আড়াল করে রাখার ক্ষমতা আঁধারের নেই।

আমার কাছে যখনই কেউ কোন সমস্যা নিয়ে আসে একথাটাই বোঝাতে চেষ্টা করি। কিন্তু অনেক সময় কেউ কেউ এত বেশি বেদনাহত থাকেন তাদেরকে বোঝাতে গেলে বোঝেন তো নাই, উল্টো ভয়াবহ রকম উত্তেজিত হয়ে যান। কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মনের সব রাগ ঝেড়ে গটগট করে উঠে চলে যান। ও হ্যা যাবার সময় স্বশব্দে দরজা বন্ধ করতে ভুলেন না।

আমার সাথে এমন যে ক’বারই হয়েছে দরজা বন্ধের শব্দে চমকে উঠেছি ভীষণ ভাবে। মনে হয়েছে ঠিক এতটাই প্রচন্ডতার সাথেই সেই ব্যক্তি তার মনের দরজাটাও বন্ধ করে দিলেন। এর ফলে না তার ভেতর থেকে বদ্ধ বাতাস বেড়িয়ে আসতে পারবে, না বাইরে থেকে বিশুদ্ধ বাতাস ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে। যার ফলে গুমোট পরিবেশে দমবন্ধ করা এক অস্বস্থিতে কাটবে তার সময়। যা তাকে আরো নাজুক ও দুবর্ল করে তুলবে সমস্যার মোকাবিলায়।

এমন মানুষগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়াতে ইচ্ছে করলেও, তাদের কষ্টগুলোকে মমতার পরশ বোলাতে চেষ্টা করলেও তারা কাউকে সেই সুযোগ দিতেই নারাজ থাকেন। বিদ্বেষে তাদের মনের পেয়ালা এতটাই টইটুম্বুর থাকে সেখানে মমতা মাখা শব্দরা পড়া মাত্র গড়িয়ে বাইরে বেড়িয়ে যায়। জায়গা করে নিতে পারে না কোমল ভালোবাসা।

ঘৃণার আগুনের তাপে গলে যায়। ঘৃণার এমন দহন ক্ষমতা দেখে বুক কেঁপে ওঠে। কাছে যেতে চাইলে আমাকেই না জ্বলসে দেয় ঐ আগুন সেই আতঙ্ক ঘিরে ধরে মনকে। বাবা বলেছিলেন, ক্ষেতে কৃষক যে বীজ বোনে সেই ফসলই ঘরে তোলে। ঠিক তেমনি মানুষের মনেও তুমি যা বুনবে তাই ফিরে পাবে। আমার নিজ অভিজ্ঞতায় মনের ব্যাপারে বাবার কথাটা অবশ্য সবসময় সত্য বলে প্রমানিত হয়নি।

ভালো কিছু বোনার পরেও অনেক সময় একদম বিপরীত কিছু ফিরে পেতে হয়েছে অনেক মনের কাছ থেকেই। এক সময় ব্যথিত হতাম খুব এটা নিয়ে। মনে হতো আমি এত ভালো ব্যবহার করছি তাহলে মানুষ কেন আমাকে কষ্ট দেয়? কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছি যে, অনাবাদী জমির মত কিছু কিছু অনাবাদী মনও আছে। সেইসব মনে যত ভালো কিছুই বোনা হোক না কেন অনুর্বরতার কারণে অবিকশিতই থেকে যায়। যার ফলে উত্তম কিছু ফিরে আসার কোন সুযোগই থাকে না।

আবার কত সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি কারণে উর্বর জমিরও তো ব্যর্থ হয় ফসল ফলাতে। তেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের স্বীকার তো মানুষের মনকেও হতে হয় অনেক সময়। তাই দোষ-গুণ যাচাই বাছাই ইত্যাদি ঝামেলাতে এখন আর যেতে চাই না। ভালোটা দিয়েই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করি। কারণ উত্তম প্রতিদান দেবার একমাত্র মালিক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। প্রতিদান একমাত্র তাঁর কাছেই আশা করা উচিত।

কিন্তু মনখারাপের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি না। এমন মানুষগুলোর জন্য কিছু করতে না পারার ব্যর্থতা মনকে খুব ব্যথিত করে। এমন মানুষদের প্রতি আমার কখনোই ঘৃণা বা রাগ হয় না। দয়া বা করুনাও হয় না। আমার মায়া হয়। খুব খুব বেশি মায়া।

কারণ নিজের স্বল্প জ্ঞান থেকে এইটুকু অন্তত জানি ও বুঝি যে, ব্যক্তি জীবনের তিক্ততা এই মানুষগুলোকে এমন তিক্ত বানিয়ে দিয়েছে। তাদের মনের তিক্তরার বিষ এমন ভাবে ছড়িয়ে গিয়েছে যে তারা না চাইলেও তাদের ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসে বিষবাষ্প।