banner

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

Monthly Archives: April 2024

 

ঘরের নিত্যকার টুকিটাকি তথ্য

অপরাজিতা ডেক্স


ঘরের নিত্যকার প্রয়োজনীয় তথ্য এখন আর মেঝে বা দেয়ালেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, সৌন্দর্য ছড়াবে সর্বত্র। রান্নার সময় বা কোন কিছু সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে সচেতনায় যথেষ্ট।

পোড়া দুধে পানপাতা

দুধ পড়ে গেলে বা দুধ থেকে পোড়া গন্ধ দূর করতে হলে তাতে পান পাতা ফেলে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। পোড়া গন্ধ কেটে যাবে।

দুূধের সরে গন্ধ

বাড়িতে ঘি তৈরি করার জন্য দুধের সরটা বাটিতে ১/২ চামচ টক দই দিয়ে তার উপর রাখতে হবে। সরটা এমনভাবে রাখতে হবে যাতে পুরো দইটা ঢেকে যায়। এই ভাবে দই এর সাথে সর জমলে সর জমা যে গন্ধ হয় সেটা হবে না।

টাটকা ঘি

এক টুকরো সন্ধক লবণ ঘি এর শিশির মধ্যে রেখে দিন। এতে ঘি বেশি দিন টাটকা থাকবে, স্বাদেরও পরিবর্তন হবে না। ঘিয়ের গন্ধ বজায় রাখতে হলে ঘি রাখার শিশিতে এক টুকরো আখের গুড় রেখে দিন।

গোলমরিচের ব্যবহার

ভোজ্য তৈলে ৮/১০ টা আস্ত গোলমরিচ ফেলে দিন। তেল দীর্ঘদিন অব্যবহৃত হলেও ভাল থাকবে।

ঘন দই

দই পাতবার সময় দুধের সঙ্গে ১ চামচ কর্ণফ্লাওয়ার গুলে দেবেন। দই অনেক বেশি ঘন হবে।

সরিসার তৈল ও সোভা-বাই-কার্ব

গরু বা মোষের দুধ ঠিক সময় মতো গরম না করলে দুধ কেটে যাবার ভয় থাকে। দুধের মধ্যে দু-ফোঁটা সরষের তেল দিয়ে রাখলে দুধ যখনই ফোটান হোক না কেন দুধ কাটবে না। দীর্ঘ সময় বাইরে পড়ে আছে দুধ। ভয় হচ্ছে আঁচে বসালেই কেটে যাবে। আঁচে বসানোর আগে দুধে ১ চিমটি সোভা-বাই-কার্ব মিশিয়ে নিন। দুধ কাটবে না।তুলসীপাতা শুকনো গুঁড়া

তুলসীপাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখুন। চা’ তৈরীর সময় দু-চিমটি লিকারে দিয়ে দেবেন। আরো ভাল স্বাদ আসবে। নানা রোগও আটকাবে।

খই সাথে চালের গুঁড়ো

চালের গুঁড়োর পিঠে করলে সাধারণত শক্ত হয়। পিঠে করার আগে যদি চালের গুঁড়োতে কিছুটা খই মাখিয়ে নেওয়া হয় তবে পিঠে নরম হয় এবং খেতেও ভাল লাগে।

 

আপনার শিশুকে চিনুন ৮ টি উপায়ে (পর্ব-১)

এ কে এম ওমর ফারুক


পাঁচ বছরের বর্ণকে নিয়ে বাবা-মার চিন্তার শেষ নেই যেন। বাবা চান মেয়ে হবে পাইলট বা ফ্যাশন ডিজাইনার আর মা চান ডাক্তার। আবার বাবা চান মেয়ে লেখাপড়া করবে ইংরেজী মাধ্যমে কিন্তু মা চান বাংলায় মেয়েকে পড়াতে। শুধু বাবা মা-ই নন, মামা-চাচারাও নেমেছেন এই যুদ্ধে। খালামণি চান বর্ণকে নাচ শেখাবেন, চাচুর ইচ্ছা বর্ণ হবে ক্রিকেটার। এ নিয়ে প্রত্যেকেই যাঁর যাঁর যুক্তি উপস্থাপন করছেন। কখনও বা রীতিমতো ঝগড়া লেগে যায়।

কিন্তু কেউই একবারও চিন্তা করছেন না যে, বর্ণর জন্য কোনটা উপযোগী? বর্ণ কি চায়? কোন বিষয়ের প্রতি বর্ণর আগ্রহ।
এটা শুধু একজন বর্ণর গল্পই নয়, আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি শিশুর ক্ষেত্রেই ঘটে এমন বিড়ম্বনা।

পরিবারের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তে হাজারো শিশুর শৈশব ও কৈশোর হয়ে ওঠে দুর্বিসহ। বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে চুরি করা হয় শিশুর শৈশব। পর্যাপ্ত মেধাশক্তি থাকা সত্ত্বেও শুধু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে শিশু বেড়ে ওঠে অন্তঃসার শূন্যভাবে। তৃতীয় বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই দেখা যায় এই একই চিত্র।

পরিবারই শিশুর প্রথম পাঠশালা। এরপরই শিশু যায় স্কুলে। পরিবার যেমন চাপিয়ে দিতে চায় তেমনি নির্দিষ্ট কারিকুলামে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য স্কুল বাধ্য করে ছোট শিশুদের। ফলে গতানুগতিক ধারায় অনেক শিশুই বাধ্য হয়ে এগিয়ে চলে। কিন্তু ভবিষ্যত হয়ে পড়ে দুর্বল। বাধাগ্রস্ত হয় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা-ছন্দময়তা।

শিশুর স্বাভাবিক ও সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রথমে বুঝতে হবে শিশুটি কোন মনোবৃত্তির। সে কিভাবে শিখতে চায়। কি জানতে চায় বা কি বলতে চায়।

মানুষের ওপর গবেষণা করে অজানা পৃথিবীকে জানার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কিত এক তত্ত্ব সর্বপ্রথম প্রদান করেন হাওয়ার্ড গার্ডনার। বহু বুদ্ধিমত্তা তত্ত্বের উদ্ভাবক হাওয়ার্ড গার্ডনার হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক।
তিনি অসংখ্য মানুষের জীবন পরিক্রমা ও মানসিক অবস্থার ওপর গবেষণা করে এ তত্ত্ব প্রদান করেন।

গার্ডনারের বহুবুদ্ধিমত্তা তত্ত্বের সকল মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে আটটি স্তরে ভাগ করা হয়। তাঁর মতে, পৃথিবীর সকল মানুষই বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এই আটটি শিক্ষাগ্রহণ করে থাকেন। গার্ডনারের তত্ত্বগুলো নিম্নরূপ।

মৌখিক ও ভাষাবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা :
শিশুদের ক্ষেত্রে লক্ষ করলে দেখা যাবে এই শ্রেণীর শিশুরা সাধারণত শুনতে পছন্দ করে, বলতে পছন্দ করে, পড়তে, লিখতে পছন্দ করে। সহজে বানান করে পড়ে। গল্প বলে, গল্প লেখে। স্বাবলিল ভাষায় বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে। শব্দভান্ডার বেশি এবং সেগুলো যথাযথ ব্যবহার করে থাকে, গুছিয়ে কথা বলে। প্রখর স্মরণ শক্তির অধিকারী হয় এবং ভাল বক্তৃতা দিতে পারে।

যৌক্তিক ও গাণিতিক :
এই শ্রেণীর শিশুরা গুনতে আনন্দ পায়। বস্তুর সাহায্য ছাড়াই যে কোন বিষয়ে সহজে ধারণা পায়। সংক্ষিপ্ততা পছন্দ করে। যুক্তি দিয়ে বিচার করে। ধাঁধা ও অঙ্কের খেলা পছন্দ করে। সাজিয়ে ও গুছিয়ে বলতে পছন্দ করে। সমস্যা সমাধান করতে আনন্দ পায়। যুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

তথ্য সূত্রঃ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ও সম্পাদিত।

চলবে…

 

সন্তানকে আদরের নাম ধরে ডাকুন

আকলিমা ফেরদৌস আখি


আমি সাধারণত প্যারেন্টিং বিষয়ে পড়াশুনা করতে ভয় পাই। কারণ কোন আর্টিকেল বা বই পড়লেই অনুশোচনা আর আত্মগ্লানিতে ভুগতে থাকি-যা কিছু লেখা আছে তার কিছুই তো করছি না, আমি বোধহয় আদর্শ মা হতে পারব না, আমার সন্তানরা মানুষের মত মানুষ হবে তো! অথবা এখানে যে ভাবে লেখা আছে সে রকম তো করে দেখলাম কোন কাজ হচ্ছে না ইত্যাদি ইত্যাদি।

আবার মনে মনে এ বলেও সান্তনা দিই যে,একেক সন্তান একেক রকম সবার ক্ষেত্রে একই সূত্র হয়ত কাজ করবে না।

ঠিক সময়ে না খাওয়া,গোসল না করতে চাওয়া,পড়তে না বসা,মোবাইল নিয়ে বসে থাকা এধরনের কমন সমস্যা গুলো আমার জানা মতে সব মায়েরই আছে।আমারও আছে।

রাগ করা ,শাসন করা ,হালকা পিটুনি ,আদর করে বলা কোন কিছুতেই যখন কাজ হচ্ছিলো না ,তখন একদিন প্যারেন্টিং এর থিউরি অনুযায়ী (সন্তানদেরকে আদরের নাম ধরে ডাকুন) আমার মেয়েকে ডাকলাম ‌-”কইরে আমার মা কথা শোনা পাখি’!

দেখি এক ডাকেই মেয়ে হাজির, যেখানে অনেকবার ডাকলেও তার নিজের কাজ রেখে আসতে চায় না।
মেয়ে এসে বলল’- ‘আচ্ছা মা ,মা কথা শোনা পাখি কি?

আমি ওকে বললাম -মা কথা শোনা পাখি হলো সেই ছোট্টর মেয়ে যে সব সময় মায়ের কথা শোনে।’
ও খুশি হয়ে মাথা নাড়লো।
এরপরে যা হলো তা হলো, আমার মেয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলল: ‘মা ওই ম্যাজিক ওর্য়াডটা আবার বলতো’!

আমি আবার বললাম -‘কইরে আমার মা কথা শোনা পাখি!’

এবং সত্যিই এই ডাকটি জাদুকরী শব্দেই পরিণত হয়ে গেল আমার আর আমার মেয়ের ক্ষেত্রে।

এখন এই একটি ডাক দিয়ে সব করানো যাচ্ছে। যখনই আমি বলি : কইরে আমার মা কথা শোনা পাখি ” তখনই সাথে সাথে মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়,সময় মত খাওয়া, ঘুম, পড়া , মক্তবে যাওয়া সবই হয়ে যায়।

আলহামদুলিল্লাহ।

 

ধর্ষণ প্রতিরোধ

ডা. তাজুল ইসলাম


‘ধর্ষণ’ সুনামি বন্ধ করবে কে?
বিউটি, তনুদের আত্মা। আমাদের ক্ষমা করবে? ক্ষমার অযোগ্য এ কোন সমাজ, জাতি আমরা তৈরি করেছি?

কালের, ইতিহাসের প্রতিশোধ বড় নির্মম
হে রাষ্ট্র, হে সমাজ, তোমাকে এর দায় অবশ্যই নিতে হবে।

ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রয়োজন ধর্ষণ সাংস্কৃতিকে উচকে দেয়, প্রশ্রয় দেয় তেমন সমাজকে ধর্ষণ বিরোধী, ধর্ষণ প্রতিরোধী সমাজে রূপান্তর করা।

এর জন্য গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা,বিজ্ঞাপনে নারীকে “যৌন পণ্য” হিসেবে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। নারীকে “সেক্সুয়ালাইজড” করার কালচার বদলে ফেলে,তাকে “মানুষ” হিসেবে ভাবার সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে। অন্য দিকে সমাজে যে সব মিথ্যা, বিশ্বাস ধর্ষণকে প্রশ্রয় দেয়, তেমন মিথ্যাগুলোকে ভেঙ্গে দিতে হবে।

তেমন কিছু প্রচলিত মিথ্যা হচ্ছে:

১। নারীর উগ্র পোশাক, চাল-চলন ধর্ষণকে উৎসাহিত করে
২। নারী ধর্ষিতা হতে চায়
৩। নারীর বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না,তাই তাকে বার বার “আহ্বান” জানাতে হবে
৪।পুরুষরা অধিক যৌন-কাতর, তাই তারা নিজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না
৫। ভূমি দস্যুদের মতন এই যৌন দস্যুদের মানসিকতা এই যে নারীর দেহের উপর সে “অধিকার প্রাপ্ত”( এনটাইটেলমেন্ট)
৬। একবার শারীরিক সম্পর্ক হওয়া মানে পরবর্তীতে ও সে অধিকার থাকবে
৭। রাত- বিরাতে নারীর একাকী চলাফেরা ধর্ষণের অন্যতম কারণ
৮। ধর্ষিতার শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই, তাই তার নীরব সমর্থন ছিল- ইত্যাদি ভ্রান্ত বিশ্বাস সমাজ থেকে দূর করতে হবে।

এছাড়া ও ধর্ষণ সংস্কৃতি পরিবর্তনে আরো যা যা করতে হবে:
৯। ধর্ষণ প্রতিরোধে শুধু নারীকে সতর্ক থাকতে বললে হবে না,পুরুষকেও “ধর্ষণ করবে না” এই বার্তা বার বার দিতে হবে
১০। পরিবার, সমাজে অন্যের “অনুমতি/ সম্মতি” নেওয়ার (কনসেন্ট)কালচার তৈরী করতে হবে
১১। প্রচার মাধ্যম, ভিডিওতে যৌন সুরসুরি দেওয়া প্রোগ্রাম বন্ধ করতে হবে
১২।পৌরুষত্বের সনাতনী ধারণায় পরিবর্তন আনতে হবে
১৩। ধর্ষণ “প্রাকৃতিক” ব্যাপার এ ভুল ধারনা ভেঙ্গে একে “অপরাধ” ও নারীর প্রতি “সহিংসতা” হিসেবে দেখতে হবে
১৪। ধর্ষণ মানে ধর্ষণ, প্রেম-বন্ধুত্বের নামে একে “বৈধতা” দেওয়ার চেষ্টা করা যাবে না
১৫। চোখের সামনে ধর্ষণ হচ্ছে অথচ নির্বিকার, নিষ্ক্রিয় থাকার কাপুরুষতা পরিহার করতে হবে
১৬। সামাজিক/আইনগত হয়রানি, অসম্মানের ভয়ে ধর্ষণের ঘটনা লুকিয়ে রাখা যাবে না।

ডা. তাজুল ইসলাম
অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

 

বিষ

ফাতিমা মারিয়াম


-বাবারে, মানুষ যেসব কথা বলে সেগুলো আর শুনতে ভালো লাগে না! তুই এবার বউমার বিষয়টা ভালো করে মিটিয়ে ফেল।

-কি বলছ তুমি মা?

-ঐ যে তোর বন্ধুর ছোট ভাইটা আসে না? ওর সাথে বৌমার মেলামেশা কেউ ভালো নজরে দেখে না! আর বিষয়টা কেমন লাগে? একটা পর পুরুষ প্রতিদিন তোর বাসায় আসে!

-মা তোমরা যা ভাবছ আসলে বিষয়টা তা নয়। পরিচিত মানুষ তাই বাসায় আসে।

-তুই যখন বাসায় থাকিস না তখন আসার দরকার কি? আগেতো এই বিষয়টা শুধু তোর বাসাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এখন গ্রামের আত্মীয় স্বজনরাও জেনে গেছে আমরা গ্রামে মুখ দেখাতে পারিনা! মানুষের মুখতো আর বন্ধ রাখতে পারিনা!

-বাদ দাও তো মা এসব কথা। তোমার বৌমা সংসারের জন্য কত কষ্ট করে দেখ না? বাচ্চাদের স্কুল, কোচিং এ আনা নেয়া, ওদের দিকে খেয়াল রাখা সবতো ও-ই করে, না?

-এসব তো সব মা-ই তার বাচ্চার জন্য করে, তাই বলে তুই বউকে এইভাবে চলার ব্যাপারে কিছুই বলবি না?

-মা আমি সেই সকালে অফিসে যাই, সন্ধ্যার পরে ফিরি সারাদিন ওকে একা একা কত কাজ করতে হয়, কত জায়গায় যেতে হয়, সাথে একজন কেউ থাকলে ওর জন্যই তো সুবিধা, তাই না? এসব কথায় কান দিও না।।

এইভাবে কিছু মানুষ জেনেও না জানার ভাণ করে, দেখেও না দেখে পরকীয়া নামক বিষবৃক্ষ রোপণ করে যায়।

 

‘ভুল চিকিৎসায় এবার চিকিৎসকের মৃত্যু’ চলুন বিদেশ যাই

ডা. সাকলাইন রাসেল


প্রিয় ডাঃ মুজিবুর রহমান ভুইয়া স্যারও কি তবে চিকিৎসকের অসতর্কতায়(পড়লেন ভুল চিকিৎসায়) অকালেই চলে গেলেন!

কিডনিতে ক্যানসার ধরা পড়েছিল। প্রাথমিক পর্যায়। অপারেশন করাবেন, সুস্থ হবেন। চলে আসবেন। ২৪ মার্চ এ্যাপোলো হাসপাতালে নিজের সব রোগী দেখেছেন, জরুরী চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন!

একবার ভেবে দেখুন শারিরীকভাবে কতটা ফিট ছিলেন তিনি! ২৫ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ড এ্যালিজাবেথে গেলেন। ২৬ মার্চ অপারেশন টেবিলে ঢুকলেন। ল্যাপারোস্কপিক কিডনি অপসারণ। অপারেশন চলাকালীন সময় শিরায় (Inferior Vena Cava) ইঞ্জুরি হল। ব্লিডিং কেউই আর সে ব্লিডিং থামাতে পারলেন না। তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মুহুর্তেই এ খবর ছড়িয়ে পড়ল সারাদেশে।

শোকে কাতর আমরা। কিছুতেই মানতে পারছিনা এ চলে যাওয়া! মৃত্যু আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সব মৃত্যুরই একটা ব্যাখ্যা থাকে। সে ব্যাখ্যায় যদি গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যায় তবে আমরা কিছু বলতে চাই। ঠিক কিছু না, অনেক কিছু।

কারণ, এসব অপারেশন এদেশের ইউরোলজিস্টরা অত্যন্ত সফলভাবে করছেন। আগে থেকে ব্লিডিং এর জটিলতার কথা মাথায় রেখে তারা অনেকসময় আমাদের মত ভাসকুলার সার্জনদের টীমে রাখেন। কারণ, ভাসকুলার সার্জন পাশে থাকলে শিরা ইঞ্জুরিজনিত জটিলতা সহজে ম্যানেজ করা যায়। পুরো এশিয়ার ভাসকুলার সার্জারীর প্রেসিডেন্ট পিটারের চেম্বারও এই মাউন্ড এলিজাবেথই। তবুও কেন এ জটিলতা ম্যানেজ করা গেল না। বলছি না, আমরা করলে জটিলতা হত না কিংবা একেবারেই হয় না। শুধু এতোটুকু বলতে চাই, প্রেশার মাপতেও যেদেশের মানুষ সিঙ্গাপুরে দৌড়ায় সেখানে কেন এমন দূর্ঘটনা ঘটবে? ছেঁড়া কাঁথার নিচে শুয়ে ঠাণ্ডা বাতাসকে আলিঙ্গন করতে আমার সংকোচ নেই। কিন্তু অট্টালিকায় বসে কেন ঠান্ডায় কাঁপব?

শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যু নিয়েও আমরা কিছু বলিনি। কোন সাংবাদিককে সেটা নিয়ে হৈচৈ করতেও দেখেনি। কিন্তু আমরা এখনো মনে করি। তাঁর মৃত্যু হয়েছিল অপারেশন পরবর্তী জটিলতায়।এ জটিলতার জন্য সেখানকার সার্জনদের অতি কনফিডেন্স দায়ী ছিল। কারণ, Large Gut Anastomosis (অন্ত্র কেটে জোড়া লাগা) হয়েছিল সরাসরি। কোন Coverage Colostomy করা হয়নি। ফলাফল, Anasotomosis বা জোড়া লাগানোর জায়গা দিয়ে লিক হয়ে যায় এবং তিনি আমাদের কাঁদিয়ে চির বিদায় নেন।

সেসময়ের পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এদেশের চিকিৎসকরা তাই হুমায়ন আহমেদ এর জন্য অনেক বেশি কেঁদেছেন। আফসোস করেছেন!
কারণ, সেই অপারেশন বাংলাদেশে অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এমন অপারেশন প্রতিদিনই এদেশে হয়।!
ভাবুন তো একবার। হুমায়ুন স্যারের মৃত্যু যদি বাংলাদেশে হত। বাংলাদেশী কোন সার্জনের অপারেশন পরবর্তী জটিলতায় যদি তিনি মারা যেতেন? সেই চিকিৎসক বা হাসপাতালের অবস্থা কি হত একবার, ভাবেন তো?
কিন্তু কিছুই হয়নি। কেন হয়নি?

কারণ, দেশটি আমেরিকা। সার্জনরাও আমেরিকান। এককথায় বিদেশ ও বিদেশী সার্জন, আমরা তাই নিশ্চুপ ছিলাম! তাঁর পরিবারও হয়ত এটাকে নিয়তির লেখা মনে করেই মেনে নিয়েছিলেন! অথচ এখনো আমরা তাঁকে খুঁজি। তাঁর লেখাকে খুঁজি! এ খোঁজা শেষ হবে না কোনদিন!

আজ যেমন খুঁজছি অত্যন্ত বিনয়ী, মেধাবী, মানুষ তৈরীর কারিগর অধ্যাপক ডাঃ মুজিবর রহমান ভুঁইয়া স্যারকে! দেশের একজন সফল খাদ্য ও পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ। ঢাকা মেডিকেলের ক-৩৭ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র। শুধু তাই নয়, ঢাকা মেডিকেলের ছাত্রদের নিয়ে যেতেন বঙ্গভবনে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বি চৌধুরী দরবার হলেই স্টুডেন্টদের ক্লাশ নিতেন। অভিনব এ উদ্যোগের ছাত্র হিসেবে বঙ্গভবনে ক্লাশ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমিসহ অনেকের।

কথা হল, বারডেম হাসপাতালের ইউরোলজির অধ্যাপক ডাঃ এটিএম মাওলাদাদ চৌধুরীর সাথে, তিনি অনেকটা বিলাপের সুরে বললেন,‘সাকলায়েন, একটাবার যদি জানাতেন উনি সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন অপারেশন করাতে তবে আমি ওনাকে বেঁধে রাখতাম…। আহারে, কনফাইন্ড একটা টিউমার। অপারেশন করে ফেলে দিবে। ঝামেলা শেষ। প্রতিদিন কত করছি। ১০ বছর পরও অনেকে আসছেন ফলোআপে। কত ভাল আছেন। আর উনি চলে গেলেন একেবারে বাজে ম্যানেজমেন্টের শিকার হয়ে’।

ফোন দিয়েছিলাম (২৮ মার্চ, দুপুর ১২ টায়) বিদেশে অবস্থানরত সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের কান্ট্রি ম্যানেজারকে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে জানালেন, এখনো সিঙ্গাপুর সরকার মৃত্যুর কারণ ঘোষনা করেননি। ময়নাতদন্ত শেষে রিপোর্ট তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

রিপোর্ট যাই থাক…আমরা উপযুক্ত ব্যখ্যা চাই…পরিবারের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাই।
না থাক, কিচ্ছু করার দরকার নাই।
বিদেশতো!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

রোগগল্প

ডা.সাকলায়েন রাসেল


“ডাক্তার মানুষকে বাঁচাতে পারে না
মানুষের বেঁচে থাকাটাকে সুন্দর করতে পারে।”

ভাগ্য কিভাবে মানুষকে নিয়ে খেলে আসেন আজ দেখে নেই। সেদিন একটি ছেলে পড়েছিল ছিনতাইকারীর কবলে। যা ছিল সব তুলে দিয়েছিল তাদের হাতে। প্রতিবাদ করেনি। কারো সাহায্যের জন্য চিৎকারও করেনি। তবুও, ছিনতাইকারী চলে যাওয়ার সময় খুর দিয়ে তার ডান বাহুতে হালকা একটা টান দেয়। মুহূর্তেই কেটে গিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।

নিকটস্থ একটি ফার্মেসিতে দৌড়ে গিয়ে সে রক্ত বন্ধের চেষ্টা করে। দোকানদার ‘কাম ডাক্তার’ তাঁর হাতে ব্যান্ডেজ দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেয়। তবুও রক্ত বন্ধ হয় না।গড়িয়ে গড়িয়ে ব্যান্ডেজ ভিজে যেতে থাকে। অতপর একটা স্যালাইনের তার দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেয় ব্যাস, রক্ত পড়া বন্ধ। এরপর রোগীকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।

ঢাকার বাইরের সে হাসপাতাল থেকে তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়। সেদিন ভাসকুলার সার্জারী বিভাগে আমার ডিউটি ছিল। প্রথমে আমি সামান্য কাঁটা ভেবেছিলাম ব্যান্ডেজটাকেও খুব একটা খারাপ মনে হয়নি। কিন্তু যখন খুলতে গেলাম। অবাক হয়ে দেখলাম।ব্যান্ডেজের ঠিক নিচেই স্যালাইনের তার দিয়ে শক্ত করে বাঁধা। স্যালাইনের তার নিচ থেকে হাতটা কালচে হয়ে গেছে। আপনারাও শরীরকে হাতের সাথে মেলালে কালো হয়ে যাওয়া বিষয়টি স্পষ্ট বুঝতে পারবেন।

ফলাফল রোগীর হাতটিই কেটে ফেলতে হয়েছিল! কেন হাতটি কেটে ফেলতে হয়েছিল?

খুর দিয়ে হালকা গর্ত হয়ে কেটে গিয়েছিল। তাতে শিরা (দেহের উপরিভাগের রক্তনালী) কেটে গিয়ে রক্ত পড়ছিল। হালকা টাইট করে ব্যান্ডেজের চাপ দিয়ে। কিংবা শিরাটি চিহ্নিত করে বেঁধে দিলে এমনিতেই রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যেত।

কিন্তু স্থানীয় “কোয়াক চিকিৎসক” স্যালাইনের তার দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেয়ায় তাঁর মূল ধমনীও (দেহের গভীরের রক্তনালী) বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় রক্ত সরবরাহ। এভাবে একটানা প্রায় ৬ ঘন্টা রক্ত সরবরাহ বন্ধ থাকায় হাতটি মারা যায়। সে কারণে বাহু থেকে পুরো হাত কেটে ফেলা ছাড়া আর উপায় ছিল না!

ক’টি অনুরোধঃ
১। কেটে বা ছিঁড়ে গেলে অতিরিক্ত টাইট ব্যান্ডেজ দেয়া থেকে বিরত থাকুন
২। চিকন ব্যান্ডেজ না দিয়ে চওড়া করে ব্যান্ডেজ দিন। প্রয়োজনে ব্যান্ডেজের নিচে তুলা ব্যবহার করুন।
৩। সাপে কাঁটলে একই কারণে দড়ি জাতিয় জিনিস দিয়ে না বেঁধে হালকা চাপে মোটা কাপড় যেমন মাফলার/ওড়না/গামছা দিয়ে বাধুন এতে প্রত্যাশিত শিরাপথ বন্ধ হয়ে বিষ ছড়ানো বন্ধ হবে।কিন্তু ধমনী বন্ধ হবেনা। ফলে পা হারানোর ঝুঁকিও থাকবে না।

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

প্রিয় স্বদেশ


ডা. ফাতিমা খান


তোমার ৪৭ বছরের প্রৌঢ়ত্বের অবয়বে আমরা এক থুড়থুড়ে, অসহায় বৃদ্ধাকে দেখি।
কিন্তু এমনটা কি হওয়ার কথা ছিল?
তোমার ষোল কোটি সন্তানের অনেক আশা অনেক ভালবাসার আধার তুমি।
লাল সবুজ পতাকাটা তোমার জন্য ছিনিয়ে আনতে তোমার সবুজ আচল বুকের টকটকে লাল রক্তে রাঙিয়ে দিয়েছিল তোমার সন্তানরা, দু’বার ভাবেনি!
শুধু এক বুক আশা আর দুচোখ ভরা স্বপ্ন ছিল,
তুমি স্বাধীন হবে!
আর একটি ফুলও ঝরবে না!
রোদ ঝলমলে আকাশের নিচে সবুজ মাঠে ছুটে বেড়াবে প্রফুল্ল শিশু কিশোরের দল,
হাড্ডিসার অনাথ শিশুটা থালা হাতে দ্বারেদ্বারে ফিরবে না।
আর একটি মা ও হারাবে না তার নাড়িছেঁড়া ধন!
দুস্বপ্নে ভরা নিকষ কালো রাতগুলোর কথা ভুলে যাবে ভয়ে জবুথবু হয়ে থাকা নিষ্প্রাণ কুমারীরা!
স্বপ্নিল চোখগুলো বিষন্নতায় আর মুদবে না ।
আসবে আলো, ঘুচে যাবে অন্ধকার!
কিন্তু দেখ!
এতগুলো বছর পরও এই আমরা, তোমার সন্তানেরা স্বাধীনতা খুঁজি।
অনেক পরে হলেও বুঝি,
তোমার এই ছোট্ট অবয়ব আজন্ম পরাধীন ছিল, আজো আছে।
ভাল থেকো প্রিয় দেশ!

 

সারপ্রাইজ

আফরোজা হাসান


টিভিতে নতুন একটা কমিকসের অ্যাড দেখার পর থেকে সেটা কেনার জন্য ঘ্যানঘ্যান শুরু করেছে আমার পুত্র। কমিকসের সাথে আবার একটা খেলনা ফ্রি। নাকীবের মূল আগ্রহ কমিকসের সাথে দেয়া সেই খেলনার উপরই ছিল। সেজন্যই কিনে দিতে চাইছিলাম না। কিন্তু রোজই নানান যুক্তি পেশ করতে লাগলো কেন কমিকসটা সে কিনতে চায়। পরীক্ষাতে ভালো করার পুরস্কার হিসেবে কমিকসটা চাইলে শেষ পর্যন্ত হার মেনে নিলাম। নিয়ে গেলাম ওর বহু আকাঙ্ক্ষার সেই কমিকস কিনে দেবার জন্য।

কিন্তু দোকানে ঢুকতেই নাকিবের চোখ চলে গেলো অন্য একটি প্যাকেটের দিকে। সেটা ছিল একটা সারপ্রাইজ প্যাকেট। মানে খুব সুন্দর করে প্যাকেট করা কিন্তু ভেতরে কি আছে সেটা দেখার কোন উপায় নেই। বহু আকাঙ্ক্ষার কমিকস রেখে তো তখন সেই সারপ্রাইজ প্যাকেট নেবার ইচ্ছে পোষণ করলো পুত্ররত্ন। আমি ওকে ভালো মত চিন্তা করে দেখতে বললাম। কিন্তু পুত্রের মাথায় তখন সারপ্রাইজ ঢুকে গিয়েছে। শেষমেশ সেই সারপ্রাইজ প্যাকেটই কিনে দিলাম ওকে। ভেতরে মহা মুল্যবান কিছু অপেক্ষা করছে এমনই ধারনা মনে নিয়ে খুশিতে টগবগ করতে করতে দোকান থেকে বের হলো।

“চকচক করিলেই সোনা হয় না” এই প্রবাদ পুত্রের জানা না থাকলেও আমার জানা ছিল। কিন্তু সেভাবে করে মনে আসেনি তখন। প্যাকেটের ভেতর কি আছে সেটা নিয়ে আমি নিজেও কিছুটা কৌতুহলি ছিলাম। আর পুত্রের চোখ তো ঝলঝল করছিল না জানি ভিতরে কত সুন্দর সারপ্রাইজ প্রতিক্ষারত। বাসা পর্যন্ত আসার অপেক্ষাও করতে চাইছিল না সেটা চেহারা দেখে বুঝতে পারছিলাম। অনুমতি দেবার সাথে সাথেই বিরাট একটা হাসি দিয়ে খুলতে শুরু করলো প্যাকেট।

প্যাকেটের ভেতর থেকে যা বের হলো তা দেখে বিরাট একটা ঢাক্কা খেলো বাচ্চা আমার। সারপ্রাইজ ছিল একটি প্যাকেটের মধ্যে পেন্সিল, ইরেজার, শার্প্নার, ছোট্ট একটি ডায়েরী আর একটি কমিকস। তাও সেই ব্র্যান্ডের কার্টুনের যেটা একদম ছোট বাচ্চাদের। আর নিজেকে বড় ভাবা আমার আদরের পুত্র যেই কার্টুনটি দেখতে নারাজ। জিনিসগুলো স্পাইডারম্যান, গোরমিটি, স্পঞ্জ বব ইত্যাদি ব্র্যান্ডের হলে হয়তো মনখারাপ একটু কম করতো। সত্যি ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে ভীষণ মায়া লাগছিল।

আমার একটা কিছু ভুল হলেই সেটা নিয়ে আমাকে ঘুরে ঘুরে লেকচার দেয় এই দুষ্টু ছেলে। তাই ওর সাথে একটু দুষ্টুমি করার লোভ সামলাতে পারলাম না। হাসি দিয়ে বললাম, ওয়াও কি সুন্দর সবকিছু। তোমার পছন্দ হয়েছে তো বাবুতা? পারলে চিৎকার করে কান্না করে এমন অবস্থায় আমার কথা শুনে জোড় করে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে দেখে অনুভব করলাম ‘জীবন নামক নাট্যশালায়’ পদার্পন করতে শুরু করেছে আমার পুত্র। অর্থাৎ,পুত্র আমার সত্যিই বড় হচ্ছে। তাই তো হাসির আড়ালে নিজের মনের প্রকৃত অবস্থা গোপন করার চেষ্টা করছে।

কাছে টেনে নিয়ে বললাম, মনখারাপ করো না বাবা আম্মুতা তোমাকে তোমার পছন্দের সেই কমিকসটা কিনে দেব ইনশাআল্লাহ। চেহারাটা তখন উজ্জ্বল হয়ে উঠলো বলল, আম্মুতা এটা ফেরত দেয়া যাবে না? বললাম, তুমি তো প্যাকেট খুলে ফেলেছো তাই এখন আর ফেরত দেয়া যাবে না। এজন্যই তো তোমাকে বলেছিলাম ভালো ভাবে চিন্তা করে নিতে। ভুল বুঝতে পেরেছে এমন স্বরে বলল, হু ভুল হয়ে গিয়েছে। আমার ঐ কমিকটাই কেনা উচিত ছিল। কবে থেকে কিনবো ভাবছি। কেন যে এটা কিনতে গেলাম! হাসি মুখে বললাম, থাক যা হবার তা তো হয়েই গিয়েছে। এটা নিয়ে এখন আর মন খারাপ করতে হবে না। এরপর থেকে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

বিকেল বেলা সুপার মার্কেটে গিয়ে পুত্র কোকো পাউডার কেনার বায়না ধরলো। চকলেট খুব একটা পছন্দ করে না সে। আর চকলেট দুধ তো ওর জানের দুশমন তাই চকলেট দুধ কেনার কথা বলতে দেখে বেশ অবাক হলাম। প্যাকেট হাতে নেবার পর বুঝলাম কিনতে চাইবার রহস্য। প্যাকেটের গায়ে লেখা ভেতরে খেলনা আছে। ওকে তখন দুপুরের সেই সারপ্রাইজের কথা মনে করিয়ে দিলাম। বিনা
তর্কে তাড়াতাড়ি প্যাকেট জায়গায় রেখে দিল। ফেরার পথে ওকে বোঝাতে বোঝাতে এলাম যে “চকচক করলেই সোনা হয় না”। এখন প্রতীক্ষা ভবিষ্যতে আবারো যদি কখনো এমন কোন পরিস্থিতিতে পড়ে তখন কিভাবে সিদ্ধান্ত নেয়।

আলহামদুলিল্লাহ আমি সবসময় চেষ্টা করি আমার সন্তান যাতে মনের এবং দেহের উভয় দৃষ্টি সবসময় খোলা রেখে জীবনের পথে চলে। যাতে একই গর্তে কখনোই দু’বার হোঁচট খেতে না হয় ওকে, একই ভুল যাতে বার বার না করে। তাই ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র বিষয় নিয়েও ওর সাথে কথা বলি, আলোচনা করি। ঐ বিষয়টাকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করি।

কারণ আমি চাই আমার সন্তান চিন্তাশীল হয়ে বেড়ে উঠুক। জীবনকে শুধু যাপন করে না যাক, সাথে সাথে উপলব্ধিও করুক। ভুলকে ভুল ভেবে ভুলে না যাক, বরং ভুল থেকে শিক্ষা খুঁজে নিয়ে চলার পথের পাথেয় সংগ্রহ করুক।

 

স্বাধীনতায় ফোটে ফুল জীবনে

আখতারুজ্জামান সেলিম


স্বাধীনতা নয় শুধু বচনে
ফাকা বুলি আর শুধু ভাষণে,
স্বাধীনতা হলো আম জনতার
নিজেদের শাসনের চয়নে।
স্বাধীনতা নয় শুধু শোষণের
গাড়ী বাড়ী আর ভুঁড়ি ভোজনের।
স্বাধীনতা মানে হলো সাম্য
নির্ভয়ে বেচে থাকা কাম্য।
স্বাধীনতা পাখিদের আকাশে
বারুদের ধোঁয়াহীন বাতাসে।
স্বাধীনতা নয় শুধু স্বাধীনে
স্বাধীনতায় ফোটে ফুল জীবনে,
স্বাধীনতা আমাদের মননে
আমি থাকি আমরই অধীনে।
স্বাধীনতা নয় শুধু ইথারে
টিভি আর দৈনিক খবরে,
স্বাধীনতা আলো দিক আঁধারে
কৃষকের শ্রমিকের কুঠিরে।
স্বাধীনতা নয় কারো অধীনে
স্বাধীনতা নয় শুধু স্বাধীনে,
স্বাধীনতা আমাদের মননে
আমি থাকি আমারই অধীনে।

 

ববিতার আহ্বান “সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে আসুন দাঁড়াই”

গত ২৩ মার্চ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার আদায় ও শিশুশ্রম রোধে সচেতনতামূলক কনসার্ট ‘কনসার্ট ফর চিলড্রেন’র আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ডিসট্রেস চিলড্রেন অ্যা- ইনফ্যান্টস ইন্টারন্যাশনাল-ডিসিআইআই।

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নায়িকা ববিতা। এই অনুষ্ঠানে ডিসিআইআই’র গুলউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়িকা ববিতা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই আমন্ত্রিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে সবাইকে উৎসাহিত করেন।

ববিতা বলেন, ‘প্রায় দশ বছর যাবত ডিসিআইআই’র গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও ডিসি আই আই’র হয়ে আমি আমার দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করে আসছি শুরু থেকেই।

যারা আমাকে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত রেখেছেন তাদের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। গত শুক্রবার ডিসিআইআই আয়োজিত অনুষ্ঠানে সবার আন্তরিক অংশগ্রহণ আমাকে মুগ্ধ করেছে।

আমি বিশ্বাস করতে ভালোবাসি যে আমরা চাইলেই যার যার অবস্থানে থেকে আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে পারি। সবাই পাশে দাঁড়ালেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠবে। আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে তারাও।’

ডিসিআইআই’র প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ড.এহসান হক বলেন, ‘ববিতা আপা শুরু থেকেই ডিসিআইআই’র সাথে আছেন। তিনি সবসময়ই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য স্বপ্রণোদিত হয়েই কাজ করছেন।’ ডিসিআইআই এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার আদায়ে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা সৃষ্টির করার মধ্য দিয়ে দারিদ্র বিমোচন করা।

ড. এহসান জানান ডিসিআইআই’র নিজস্ব অর্থায়নে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ৫০জনেরও বেশি এতিম শিশুদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষার সুযোগ দেবার পাশাপাশি দেশের সরকারী, বেসরকারী এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতা করে থাকে। এটা শুধু ঢাকায়ই নয় ঢাকার বাইরেও এই ধরনের সহযোগিতা করে থাকে ডিসিআইআই।

শুক্রবারের সচেতনতামূলক কনসার্টে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাবিনা ইয়াসমিন’সহ আরো অনেকে।
ছবি: দীপু খান

 

এক স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রহর গুনছি

ফাতিমা শাহীন


অনেকদিন ধরেই মেলবোর্ন বৃষ্টিবিহীন। সামার এখন শেষের পথে। গাছের পাতার সবুজ রঙের পেলবতাও উধাও সেই সঙ্গেই। বাগানের ছিটেফোঁটা শাকসবজির শেকড়ের তৃষ্ণা যেন মিটছিলো না হোস পাইপের মেপে দেয়া পানিতে। একটা বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা তাই ছিল সবার অন্তরে।

আজকের ওয়েদার ফোরকাস্টে বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিলো। চাতক মন তাই ছিল বৃষ্টির, আকাঙ্ক্ষায় উন্মুখ। তবুও ভোর সকালে আকাশের মেঘলা মন দেখে মনেও মেঘ এসে ভর করলো যেন। কি যে হবে! সব ঠিকঠাক থাকবে তো! কারণ আজকে MMC ( Melbourne Multicultural Centre) তে কংক্রিট ঢালাই হবে। পানিতে কোন সমস্যা না হয়ে যায়! একসময় শুরু হল মুষলধারে বৃষ্টি। আকাশে মেঘ রাজ্যের কোন শেষ দেখতে পাচ্ছি না। একসময় শেষ হল বৃষ্টি। মেঘ কেটে ঝলমল করে উঠল সূর্য। দেখতে গেলাম কাজ কেমন এগোচ্ছে। বুকের ভেতর দুরু দুরু। একশোটা ঢাক যেন একসঙ্গে বেজে চলেছে অন্তরে।

MMC চত্বরে ঢুকে তাকাতেই চোখ জুড়িয়ে এলো, মন প্রশান্ত হল। ঢালাই শেষে পরবর্তী কাজ করে চলেছেন নির্মাণ কর্মীরা। চারিদিকে কি প্রশান্ত পরিবেশ! ঘুরে ঘুরে বেড়ালাম সবদিকে, মহিলাদের নামাজের স্থানের দিকে এগুতেই কেন যেন অকারণেই বুক হু হু করে উঠল। এই নির্মাণ কাজ শেষে এখানে যখন বোনদের অবনত শির আল্লাহর দিকে সিজদাবনত হবে, তার মধ্যে একজন হিসেবে কি আল্লাহ আমায় কবুল করবেন!

চতুর্দিকে নির্মাণ সামগ্রীর নানারকম শব্দ, কিন্তু তার ভেতরেই সাদা সাদা প্রজাপতিরা যৎসামান্য হয়ে ফুটে থাকা জংলী ফুলগুলোয় উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে পরম নিশ্চিন্তে। আমার তখন কেবলি মনে হচ্ছিল, প্রকৃতি ও বাস্তবের এমন নিবিড় মেলবন্ধন আমাদেরকে প্রতি মুহূর্তে যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল, বাস্তবতায় আমরা যতই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকি না কেন, রবের রুবুবিয়াতের কাছে , তার সৃষ্ট প্রকৃতির কাছেই আমাদের আত্মসমর্পণ অবশ্যম্ভাবী।

সকালের বৃষ্টিতে ভেজা পথ , এখানে ওখানে অল্পস্বল্প পানি জমে আছে। ভেজা বালিতে পা ছোঁয়ালাম। আজ এখানে আমার পায়ের চিহ্ন, সেই দিন দূরে নেই , যেদিন আমাদের প্রজন্ম আমাদের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের কাজের দায়িত্ব বর্তাবে তাদের হাতে। তাদেরকে এখন থেকেই এই কাজের উপযুক্ত করে গড়ে তুলি। এই মসজিদের জন্য আমাদের হৃদয় গহীনে জমে থাকা একসমুদ্র ভালোবাসার উথাল পাথাল ঢেউ এর শব্দ যেন তারাও শুনতে পায়।

তাদের ভেতরে দানের অভ্যাস এখন থেকেই গড়ে তুলি। আমাদের সবরকম নেক পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন প্রচেষ্টা , আমাদের সন্তানদের দ্বীনের প্রতি ভালোবাসা ও আমলে সালেহের প্রতি অকুণ্ঠচিত্তে এগিয়ে যাওয়া আমাদের অন্ধকার কবরে আলো ছড়াতে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত, ইনশাআল্লাহ।

 

সলিমুল্লাহ মেডিকেলে ‘গর্ভাবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা’ বিষয়ক এক বৈজ্ঞানিক আলোচনা

অপরাজিতা ডেক্স


মানসিক সমস্যাগ্রস্থ মায়ের গর্ভকোষে শিশুর সুরক্ষায় ব্যবহৃত নিরাপদ ঔষধসমূহ ও বয়ঃসন্ধিকাল, গর্ভাবস্থা ও রজঃনিবৃত্তি জনিত মানসিক রোগের উপসর্গ সমূহ নিয়ে সম্প্রতি এক বৈজ্ঞানিক আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গত ২১শে মার্চ (বুধবার) রাজধানীর ২য় বৃহত্তম সরকারী মেডিকেল কলেজ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে,উক্ত কলেজের মানসিক বিভাগের সাইকোথেরাপী ইউনিট এর উদ্দ্যোগে নিম্নোক্ত বিষয়াদির বিষদ বর্ননা করা হয়,
1)Peri-partum disorders & its causes with Management
2)Ethnic Variations in prescription of Lurasidon
3) Interpersonal Psychotherapy VS Couple Therapy,
Which one preferable?

সেই আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্বে ডা.তৌহিদ মূল প্রবন্ধ পেপার উপস্থাপন করেন এবং সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভূতপূর্ব কনসাল্ট্যন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ও মালয়েশিয়ার AIMST -এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. কবীর জুয়েল সকলের নানাবিধ প্রশ্নের উত্তর দেন। এছাড়া আলোচনার উপসংহারে আরও বক্তব্য রাখেন মনোরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান ডা.শোয়েবুর রেজা চৌধুরী।

সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণে নারীর তিন রূপ
১.কন্যা, ২.জায়া ও ৩.জননী। তবে মানসিক বিশেষজ্ঞ গণের মতে নারীকূলকে আরো কয়েকধাপ বেশী স্তর পার হতে হয়। নারীর শরীরবৃত্তীয়
পরিবর্তনে বেশ কিছু হরমোন বিশেষ ভূমিকা পালন করে, তার-মধ্যে ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্ট্রন ও কর্টিসল অন্যতম, তাই নারীর বয়ঃসন্ধি হওয়া থেকে শুরু করে রজঃনিবৃত্তি পর্যন্ত তাদের Reproductive Life – এ বিভিন্ন চড়াই উতরাই লক্ষ্য করা যায়, সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কতোটুকু ভাবি,গর্ভকালীন সময়ে মা-কে সব ধরনের ঔষধ দেয়া যায় না,ভুলক্রমে দিয়ে দিলে নবজাতকের নানাবিধ সমস্যার মাধ্যমে সেই মাশুল গুনতে হয়।

গর্ভবতী মহিলারা সাধারণত অন্যান্য বয়সের তুলনায় বেশি মানসিক সমস্যা এবং গর্ভধারণ সংক্রান্ত নানান অসুবিধার সম্মুখীন হন। দুটি তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ:

১.গর্ভাবস্থায় মানসিক সমস্যার খুঁটিনাটি তথ্য।
২.কি ধরনের ওষুধ খাচ্ছেন তারা তা জানাও অবশ্যই জরুরি।

গর্ভাবস্থায় আনন্দের ও সুন্দর সময় তবে, কাঙ্ক্ষিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত যেভাবেই হোক, গর্ভধারণ সময় শারীরিক ও মানসিক স্বাভাবিকভাবেই নানান পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন বাবা ও মা এর বিশেষ করে ‘মায়ের’ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বেড়ে যায়। নারীর গর্ভকালীন সময়ের মানসিক চাপ ও উদ্বেগের পরিমান যদি স্বাভাবিকের থেকে বেশী হয়, তবে তা গর্ভাবস্থায় বিষণ্ণতা ও অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্ম দিতে পারে।

গর্ভাবস্থায় বিষণ্ণতা বলতে বোঝায়?

বিষণ্ণতা একধরনের আচরণগত সমস্যা যার ফলে মানুষের মন সার্বক্ষণিক খারাপ থাকে এবং কোন কাজেই আনন্দ খুঁজে পায় না। টানা এক সপ্তাহ বা এর বেশি সময় জুড়ে থাকে।

বিষণ্ণতার লক্ষনগুলো কি কি ?

১.কোন কিছুতে আগ্রহ ও আনন্দ না পাওয়া।
২.খুব পছন্দের কোন কাজ বা ঘটনাতেও আনন্দ অনুভূতি না পাওয়া।
৩.গভীর দুঃখবোধ এবং হতাশা
সবসময় কান্না আসা।
৪.খাবার আগ্রহ কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া।
৫.অকারণে বেশি অস্থির লাগা। খুব বিরক্ত বোধ ও ক্লান্ত, অল্পতেই রাগ উঠে যাওয়া
৬.কোন কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারা।
৭.খুব বেশী ঘুম অথবা সম্পূর্ণ ঘুমহীন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাওয়া।
৮.অপরাধ বোধে ভোগা,গ্লানি বোধ হওয়া, নিজেকে খুব খারাপ মনে হওয়া।
৯.বেঁচে থাকার আগ্রহ কমে যাওয়া বা বার বার মৃত্যুর কথা চিন্তা করা।

উপরোক্ত যেকোনো ৫ টি বা তার বেশি বৈশিষ্ট্য আপনার মধ্যে ২ সপ্তাহের বেশি অপরিবর্তনীয় অবস্থায় থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনি বিষণ্ণতায় ভুগছেন এবং আপনার সাহায্য দরকার।

গর্ভধারণের আগে এবং গর্ভাবস্থায় যে বিষণ্ণতা দেখা দেয় তা কিন্তু প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা (postpartum depression ) থেকে ভিন্ন। postpartum depression সাধারণত বাচ্চা প্রসবের পর দেখা যায়।

গর্ভাবস্থায়য় মানসিক রোগের প্রাদুর্ভাব বিগত ১০ বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে বর্তমানে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিষণ্নতা, উদ্বেগজনিত মানসিক রোগ, মনোদৈহিক মানসিক সমস্যা ইত্যাদি।

উক্ত গবেষণায় আরো দেখা যায় মানসিক রোগের প্রাদুর্ভাগ শহরে ও গ্রামে প্রায় একই রকম এবং মহিলাদের মধ্যে বিভিন্ন কারণে পুরুষদের তুলনায় মানসিক রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। এছাড়াও মানসিক রোগে আক্রান্তদের মধ্যে শারীরিক লক্ষণ যেমন- মাথা ব্যথা, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা, জ্বালাপোড়া, ঘুমের সমস্যা, অস্থিরতা, দুর্বলতা, খাবারের অরুচি নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে আসেন যা বেশিরভাগ সময়ই গুরুত্ত্ব পায় না।”

অনুষ্ঠানটিতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন মেডিকেল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও পরিচালক, শিক্ষক ও চিকিৎসকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

PMRH (Psychiatric Management for Reproductive Health) – এর মাধ্যমে বেসরকারীভাবে টিমের সদস্যরা তৃনমূল পর্যায়ে ‘মায়ের গর্ভকোষে শিশুর সুরক্ষায় ব্যবহৃত নিরাপদ ঔষধ ও বয়ঃসন্ধিকাল, গর্ভাবস্থা ও রজঃনিবৃত্তি জনিত মানসিক রোগের উপসর্গ’ সমূহ নিয়ে এ সেবা গুলো দিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত।

পরিবারের আসন্ন নতুন সদস্যটির জন্য সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ উপহার দিতে গর্ভাবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা উপর গুরুত্ব দিতে এরূপ আয়োজন করে আয়োজকবৃন্দ।

 

মানুষকে বিচার করার ক্ষমতা মানুষের কতটুকু

ডা. ফাতিমা খান


একজন মানুষের কথাবার্তা, আচার-আচরণ ও অভ্যাসগুলো তার শিশুকালের শিক্ষা, অভ্যাস, পারিপার্শ্বিকতা, তার পারিবারিক কালচার এবং নিজস্ব এলাকার সংস্কৃতি দিয়েই অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত হয়। অনেক বড় ডিগ্রীধারী কিংবা অনেক উচ্চস্তরের চাকুরীরত মানুষ গুলোও নিত্য দিনশেষে ঘরে ফিরে তার আদিম অভ্যাস গুলোর চর্চায় মেতে উঠে। তার নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা, খাওয়া, পরা, উঠা বসা, রসম রেওয়াজ সবকিছুতেই একটু “হাফ ছেড়ে বাচার” চেষ্টা করে। অনেকে চেষ্টা করেও, ভালটা জেনেও নিজের আদি অকৃত্রিম অভ্যাস বদলাতে পারে না।

এ ক্ষেত্রে আমরা কি সে মানুষটাকে আন- কালচার্ড বা ইনসেইন বলতে পারব? কিংবা বলা কি উচিৎ? বললে কাদের কে বলা যাবে?

লিখতে বসে ময়না খালার গল্প মনে পড়ল। ডেন্টাল কলেজে পড়ার সময় আমাদের হোস্টেলের মেয়েদের দেখাশোনা, ফুট ফরমায়েশ এর কাজ করত ময়না খালা। আমি তখন বিদেশ থেকে বাংলাদেশে গিয়ে একদম নতুন মানুষ। আমার অবস্থা প্রথমবার গ্রাম থেকে গাট্টি বোচকা নিয়ে আসা বেকুব মানুষটার মত যে ঢাকার রাস্তায় ডাবল-ডেকার বাসগুলো দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে। সব কিছুতেই তখন আমার বিস্ময়, পুরা নতুন দুনিয়ায় আমি এক এলিয়েন। তো হোস্টেলে এই ময়না খালাকে দেখতাম গড়ে পড়তা সবাইকে ‘তুই’ করে সম্বোধন করে কথা বলে। ওই সময়ে আমার কাছে সবচেয়ে বড় বিস্ময় ছিল এই ময়না খালা। ব্যাপক কৌতুহল নিয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলাম।

একদিন শুনি ময়না খালা হাসপাতালের এক ডাক্তারকে স্নেহের স্বরে বলছে, ‘তোর জ্বর কমছে? ওষুধ খাইছিস?’ আর সেই ডাক্তারও অনেক সমীহ করে উত্তর দিল ‘ জ্বী খালা, দোয়া কইর’। আমি তব্দা খেয়ে গেলাম! কিন্তু দিনে দিনে আমার পর্যবেক্ষণের যে ফলাফল পেলাম, তা হল ময়না খালার দেশের বাড়ি পঞ্চগড়, যেখানে সম্বোধনের জন্য তারা ‘তুই’ টাকেই সবচেয়ে আপনজনদের জন্য ব্যবহার করে। ডেন্টাল কলেজের আমার চার বছরের অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে স্নেহপ্রবণ আর মায়াবতী মহিলা ছিল এই ময়না খালা।

এবার হোস্টেলেরই এক সিনিয়র আপুর কথা বলি। তিনি হাসতে হাসতেই বন্ধুদের আদর করে ” বা***ত” বলে ডাকত। আমার কাছে এই ব্যাপারটা এতই অদ্ভুত আর অস্বস্তিকর মনে হত যে আমি তার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলতাম, পাছে কবে আমি তার এই আদরের ডাকের শিকার হই! অন্যদের কাছ থেকে জানলাম তার বাবা নাকি তাদের গ্রামের চেয়ারম্যান, অনেক নামডাক আর দাপট তার ওই গ্রামে। সে যার মেয়েই হোক- চেয়ারম্যান, ব্যাটম্যান বা সুপারম্যান, আমার তাতে কিছুই আসে যায় না। আমার শুধু মনে হত, নিশ্চয়ই একদিন রোগীদেরকেও সে বলবে, “মুখ খোল বা***ত”।

এছাড়া আরো কিছু এপিক অভ্যাস দেখি তথাকথিত ভদ্র শিক্ষিত লোকদের মধ্যেও। যেমন ফাইভ স্টার হোটেলে গিয়েও হাতের কবজি ডুবিয়ে উইন্ডমিল এর মত বিশাল শব্দ করে খাওয়া, গন্ধওয়ালা মোজা খুলে ঝাড়া দিয়ে খাবার টেবিলের একপাশে লম্বা করে রেখে দেওয়া, খাওয়া শেষে প্লেটেই হাত মুখ ধুয়ে সেই পানিটা চুমুক দিয়ে খেয়ে ফেলা ( খাবার নষ্ট হলে আল্লাহ গুনাহ দিবে বলে শেষ অনু পরমানুটাও শেষ করা লাগবে), জনসমক্ষে নাকের ভেতর আঙুল ঢুকায়ে ঘুটানি মেরে বের করে আবার তাকিয়ে দেখা, যেখানে সেখানে দুনিয়া কাঁপানো হাসি, হাঁচি, কাশীসহ আরো অনেক কিছু ছেড়ে দেওয়া…. এগুলোর ব্যাপারে কি যে বলব! সত্যিই আমি মূক, অভিভূত!

এইবার আসি আমাদের নিত্যদিনের বন্ধু, নোমোফোবিয়া আক্রান্ত এই আমাদের প্রতি মুহুর্তের অক্সিজেন, সোসাল মিডিয়া ফেইসবুকে। এখানে এত ভ্যারাইটিস মানুষ আর তাদের কৃষ্টি কালচার কথাবার্তা উপভোগ করি যা ফেইসবুক ছাড়া একাকি এই জীবনে দেখা কোনদিন সম্ভব হত না। এখানে মোঘল আমলের বাদশাহ বাবর থেকে বাদশাহ আওরঙ্গজেব পর্যন্ত সবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাবেন, তাদের অন্দরমহলের বেগম আর তাদের পরিচারিকা, পাইক পেয়াদা বরকন্দাজ কেউ বাদ যাবে না। তাদের একেক জনের কথাবার্তার ধরণও সেইরকম(?)। আমি তো তাদের রাজকীয় কথাবার্তার রকমফের দেখে ক্ষণে ক্ষণে অফিসে বসেও একাই হো হো করে হাসি আর আমার রোবটের মত নার্সটা ইতস্ততভাবে বলে ফেলে “আর ইউ অল রাইট ডক?”

শেষ গল্পটা বলি।
সেদিন একজন মিশরীয় রোগী এসেছে আমার কাছে। সে সাধারণ কথাই এতো বেশী উচুস্বরে বলছিল যে এডমিন থেকে আমাকে ফোন করে জিজ্ঞাস করল ” ইজ এভরিথিং অলরাইট ডক্টর? দা সিকিউরিটি ইজ জাস্ট আউটসাইড ইয়র ডোর “। আমি না হেসে পারলাম না। তাকিয়ে দেখি দরজায় আমাদের সুমো পালোয়ান এর মত হাট্টা গাট্টা সিকিউরিটি গার্ড উঁকি মেরে দেখছে। তাকে চলে যেতে বললাম।

রোগীর কথা শেষ হলে তাকে বললাম “আচ্ছা, তুমি এত উচ্চস্বরে কথা বল কেন?” সে কিছুটা লজ্জিত হয়েই বলল, ” আমি দুখিত ডক্টর, ছোটবেলার অভ্যাস। আমার বাবা সমুদ্রে জেলে ছিল। আমি তার কাজে সাহায্য করতাম। অনেক দূর থেকে জোরে জোরে কথা বলা লাগত। তাই অভ্যাস হয়ে গেছে।”

আমার মনে হয় মানুষকে বিচার করার কাজটা একটু সময় নিয়ে করা উচিত। একদম অমার্জনীয় অপরাধ বা অভ্যাসওয়ালা মানুষ ইন্সট্যান্টলি পরিত্যাজ্য। কিন্তু বাকীদের ব্যাপারে মানে যে দোষগুলো খুব সাংঘাতিক না সেগুলো ইগ্নোর করে সময় সুযোগ নিয়ে বুঝিয়ে বলাই ভাল। ক্ষতি তো নেই! এমনো হতে পারে তাকে কেউ কখনো ভালভাবে বুঝিয়ে বলেই নাই।

আল্লাহতায়ালা মানুষের বিচার করবেন তাদের শিক্ষা, সামর্থ্য আর জ্ঞানের গভীরতা অনুযায়ী। আমরা মানুষ হয়ে কেমন করে হুট করেই ফয়সালা শুনিয়ে দেই, বলেন!

লেখক কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

রেসিপি ঘর: সবজি খিচুড়ি ও কয়েক পদের ডাল

টমেটো ডাল

উপকরণ : মসুরের ডাল ২৫০ গ্রাম, টমেটো ২০০ গ্রাম, পেঁয়াজ টুকরো করা আধা কাপ, কাঁচামরিচ ফালি করা ৩-৪টি, ধনেপাতাকুচি ২ টেবিল চামচ, রসুন টুকরো ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদ অনুযায়ী এবং সরিষার তেল পরিমাণ মতো, হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, পানি পরিমাণ মতো।

প্রস্তুূত প্রণালি: মসুরের ডাল পানি দিয়ে ধুয়ে রাখুন। একটি কড়াইতে সরিষার তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজের টুকরো ভেজে, মসুরের ডাল, রসুন টুকরো, হলুদগুঁড়া এবং স্বাদ অনুযায়ী লবণ দিয়ে অর্ধেক রান্না করে তাতে টুকরো টমেটো, কাঁচামরিচ ফালি, ধনেপাতাকুচি এবং সামান্য পানি দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করে ডাল ঘন হয়ে এলে তা নামিয়ে পরিবেশন করুন।

লাউ ডাল

উপকরণ: একটি মাঝারি লাউয়ের অর্ধেক টুকরো করা, মসুর ডাল ২৫০ গ্রাম, হলুদ গুঁড়া অর্ধেক চা চামচ, মরিচ গুঁড়া অর্ধেক চা চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ স্বাদ অনুযায়ী, কাঁচামরিচ আস্ত ৪-৫টি, ধনেপাতাকুচি ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ এবং তেল পরিমাণ মতো।

প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে লাউ ও মসুর ডাল আলাদা করে ধুয়ে রাখুন। একটি পাতিলে তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজের টুকরো দিয়ে হালকা ভেজে একে একে তাতে উপকরণ দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে (মসুর ডাল ও লাউ ছাড়া) নিন। মসলা কষানো হয়ে গেলে তাতে মসুর ডাল দিয়ে আবার কষিয়ে সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে সেদ্ধ করে তাতে টুকরো করা লাউ দিয়ে আবার ঢেকে রান্না করুন। প্রায় ২০ মিনিট লাউডাল বেশ মাখা মাখা হয়ে এলে তাতে জিরা গুঁড়া, কাঁচামরিচ ও ধনেপাতাকুচি দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

ঝাল মশলায় বুটের ডাল

উপকরণ: বুটের ডাল ২ কাপ -পেয়াজ কুচি এক কাপ -পেয়াজ বাটা ১ চা চামচ -আদা বাটা ১ চা চামচ -রসুন বাটা ১ চ চামচ -জিরা গুড়া ১ চা চামচ -ধনে গুড়া ১ চ চামচ -লাল মরিচ গুড়া ১ চা চামচ -হলুদ গুড়া আধা চা চামচ -টমেটো সস ২ টেবিল চামচ – গরম মশলা আধা চা চামচ -ভাজা জিরা গুড়া ১ চা চামচ -কাঁচা মরিচ ৪/৫ টা -লবন স্বাদ অনুযায়ী -তেল ১/৪ কাপ
-পানি পরিমানমতো

প্রস্তত প্রণালী: ডাল ধুয়ে একটা পাত্রে ভিজিয়ে রাখুন। একটি পাত্রে বা প্রেসার কুকারে তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি বেরেস্তা করে অর্ধেক টা তুলে রাখুন রাখুন। এবার বাকি বেরেস্তায় সব বাটা মশলা দিয়ে কিছুক্ষণ কষানোর পর মরিচ গুড়া, হলুদ গুড়া, ধনে গুড়া ও জিরা গুড়া দিয়ে ভাল করে কষিয়ে নিন। এবার ডাল দিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে কিছুক্ষণ কষিয়ে টমেটো সস, গরম মশলা ও লবন দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে দেড়/দুই কাপ পানি দিয়ে ঢাকনা দিন। ১৫/২০ মিনিট পর দেখুন ডাল নরম হয়ে গেছে না কি। ভাজা জিরার গুড়া ও কাঁচা মরিচ দিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন। তেল উপরে উঠে আসলে বেরেস্তা ছিটিয়ে দিন।

সবজি খিচুড়ি

সময়টা এখন হরেক রকম তাজা সবজির। এসব সবজির মিশেলে সুস্বাদু খিচুড়ি হলে সকালের নাস্তাটা মন্দ হয় না। ছোট বড় সবার কাছে প্রিয় হতে পারে বিশেষ রেসিপিতে রান্না সবজি খিচুড়ি। স্বাদ আর গন্ধে মোহময় এমন খিচুড়ি রান্না হবে সহজে।

উপকরণ: বাসমতি চাল ২ কাপ, সবজি (গাজর, বরবটি, মটরশুঁটি, ফুলকপি) ছোট টুকরো সব মিলিয়ে ২ কাপ, আলু আধা কাপ, ভাজা মুগডাল ১ কাপ, আদা বাটা দেড় চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া দেড় চা চামচ, টক দই দুই টেবিল চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ ১ চা চামচ, চিনি ১ চা চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, এলাচ ২টি, দারুচিনি ২টি, তেজপাতা ২টি, গরম পানি ৬ কাপ, ঘি ২ টেবিল চামচ, তেল আধা কাপ।

প্রস্তত প্রণালী: মুগডাল ২ ঘণ্টা ও চাল আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে পানি ঝরিয়ে নিন। মটরশুঁটি ছাড়া সব সবজি একসঙ্গে সেদ্ধ করে নিন। কড়াইয়ে অর্ধেক তেল দিয়ে গরম হতে দিন। এবার তাতে গরম মসলা ও পেঁয়াজ দিয়ে ভেজে টক দই, চিনি ও আধা চা চামচ লবণ দিন। একটু পর মসলা কষিয়ে সবজি দিন। সবজি কষানো হলে আলাদা পাত্রে তুলে রাখুন। এবার ওই কড়াইয়ে চাল দিয়ে ভাজতে থাকুন। ভাজা হয়ে গেলে গরম পানি ও আধা চা চামচ লবণ দিয়ে ঢেকে দিন। চাল পানি সমান সমান হলে রান্না করা সবজি দিয়ে নেড়ে ঢেকে আঁচ কমিয়ে ১০ মিনিট রান্না করুন। এবার কাঁচামরিচ ও ঘি দিয়ে আরও ১৫ মিনিট চুলার আঁচে রেখে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

নক্ষত্রের নিজস্ব আলো থাকে, নিজস্ব আলো আছে ফাতিহা

জ্যাকসন হাইটস হঠাৎ আলোকিত হয়ে উঠলো। যেন মনে হচ্ছিল একসাথে অনেক গুলো নক্ষত্র তাদের সমস্ত আলো নিয়ে জ্বলে উঠেছে। সেই সব নক্ষত্রের নিজস্ব আলো আছে যে আলো দিয়ে তারা প্রতিনিয়তই আলোকিত করছে চারপাশ। সব গুলো নক্ষত্রের ভীড়ে একটি ছোট্ট নক্ষত্রও ছিল কিন্তু কে জানতো ছোট্ট নক্ষত্রের আলোর রোশনাই অন্য সব নক্ষত্রকে ছাপিয়ে যাবে। এই নক্ষত্রটির নাম ফাতিহা আয়াত। আমরা যাকে রাজকন্যা বলে ডাকি। ওর হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে যে কোন দুঃখ ব্যথা ভুলে থাকা যায় আর ও যখন ওর পুর্ন আলো ছড়িয়ে দেয় তখন চারদিকে যত অন্ধকার যত হতাশা থাকে সব দুর হয়ে যায়।

বাংলার আকাশের সব থেকে বড় সুর্য ডুবে গিয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট। যে সুর্যের আলোয় পথ দেখে একটি বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল যিনি এই ছোট্ট সুন্দর দেশটির নাম রেখেছিলেন বাংলাদেশ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলার আকাশের সব থেকে উজ্জল এই নক্ষত্রটির জন্ম হয়েছিল ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ। আলোর কারিগরের জন্মদিন উপলক্ষ্যে জ্যাকসন হাইটসে আয়োজন করা হয়েছিল “শিশু কিশোর মেলা-২০১৮”। জাতীয় শিশু দিবসের সেই আয়োজনে বাংলাপ্রেমীদের ভীড় ছিল আর ছিলো অগণিত শিশু কিশোর। যাদের নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল বাংলা লিখন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা সহ আরো অনেক কিছু। সেই প্রতিযোগিতায় দুটো বিভাগেই সেরাদের সেরা হয়েছে ছোট্ট ফাতিহা।

যারা অলরেডি জানেন এবং যারা জানেন না তাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে ফাতিহা হলো আমাদের ক্ষুদে বন্ধু সেই রাজকন্যাটি যে স্কুলে নিয়মিত ক্লাস করে আর মন দিয়ে সব শিখে নেয় তার পর বাসায় বাবাকে সাথে নিয়ে নিজেই শিক্ষক হয়ে গোটা পৃথিবীতে তার জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়। বার বার মুগ্ধ হয়ে শুনি “ওয়েলকাম টু ম্যাথ ম্যাজিক উইথ ফাতিহা” ছোট্ট ফাতিহা নিয়মিত গণিত এবং বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে ভিডিও তৈরি করে এবং গণিত ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলিকে খুব সহজে সবাইকে শিখিয়ে দেয়। সে মনে করে “সন্তানকে মুখস্থ করাবেন নাকি আবিস্কারের নেশা ধরিয়ে দেবেন সেই সিদ্ধান্ত আপনার”।জ্যাকসন হাইটসের আকাশ সেদিন ছায়া দিয়েছিল ছোট্ট ফাতিহাকে। বিদেশ বিভুইয়ে থেকেও ব্যরিষ্টার আফতাব আহমেদের কলিজার টুকরা আমাদের ছোট্ট রাজকন্যা ফাতিহা আয়াত বাংলাকে বুকে ধরেছে এবং সেটির প্রমাণ স্বরুপ শ্রেষ্ট আবৃত্তিশিল্পী এবং শ্রেষ্ঠতম লিখন শৈলী দেখিয়ে আমাদের মুগ্ধ করেছে।আমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি ফাতিহা একটি নক্ষত্র যার নিজস্ব আলো আছে এবং সেই আলো ক্রমাগত ভাবে বেড়েই চলেছে। ফাতিহার এই সাফল্যে আমরা আনন্দিত এবং ওকে অভিনন্দন জানাই।

প্রতিটি অভিভাবককে বলতে চাই আসুন আমরা আমাদের সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই নানা কিছুতে যুক্ত করি এবং উৎসাহ দেই। তাহলেই আমাদের ছোট্ট রাজকন্যা রাজপুত্ররা স্বপ্নের মত বেড়ে উঠবে এবং তাদের সাফল্যের খাতার প্রতিটি পাতা কানায় কানায় পুর্ণ হয়ে থাকবে।

সুত্র: ছোটদের বন্ধু

 

শৈশব কথন

সার্জিন খান


ছোটবেলায় আমার এক ধরণের অদ্ভুত খেলা ছিল। ছাদ থেকে লাফ দেওয়া। প্রথম প্র‍্যাক্টিস করতাম বাসার একতলা ছাদ থেকে লাফ দিয়ে। দেখতাম ব্যাথা পাই কি না! প্রথম প্রথম ভুল পজিশনে লাফ দেওয়ায় পা মচকে যেত। এরপর ব্যাথা পেতে পেতে ঠিকমতো লাফ দেওয়াটা শিখে ফেলেছিলাম।
তারপর দোতলা থেকে লাফ দেওয়ারও চেষ্টা করেছিলাম, এবং যথারীতি সেখানেও প্র‍্যাক্টিসের বদৌলতে সফল হয়েছিলাম।

আমাদের বাসাটা ছিল একতলা। তাই এলাকার বিভিন্ন দোতলা, তিনতলা বাসার ছাদে ভর দুপুরে যখন এলাকা নিশ্চুপ তখন চুপিচুপি উঠে লাফ দিতাম। তিনতলা থেকে মাত্র দুইবারই লাফ দিয়েছিলাম, প্রথম বার লাফ দিয়ে পায়ে সামান্য ব্যাথা পেয়েছিলাম, আর দ্বিতীয়বার ঠিকমতোই লাফ দিয়েছিলাম। তবে সেসময় বাবা দেখে ফেলেছিলেন।
আমি কাজটা করতাম বিকেলে। আমার কিছু বন্ধুরা যেদিন আমার সঙ্গে খেলতো না ঐসময় আমি একা একা এই কাজটা করতাম। বাসায় কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতাম, খেলতে গিয়েছি।

সেদিন বাবা অফিস শেষ করেই বাসায় চলে এসেছিলেন, আমাদের ব্যবসার শো-রুমে যাননি। অফিসের পর শো-রুম বন্ধ করে আসতে আসতে বাবার রাত হয়ে যেত। ঐদিন বাবা অসুস্থ ছিলেন। শরীরে জ্বর নিয়ে রিক্সা দিয়ে যখন এলাকায় ঢুকছেন, তখন দেখেন আমি তিনতলা একটা বাসার ছাদ থেকে লাফ দিচ্ছি। এরপর পরই দেখলেন আমি দৌড়ে জোড়পুকুরের দিকে(আমাদের জয়দেবপুরে শৈশবের বাড়ির ঠিকানা) ছুটে যাচ্ছি। তিনি এমনিতেই প্রেশারের রোগী। আমার এই অবস্থা দেখে তাঁর হার্টবিট বেড়ে গিয়েছিল। তিনি যে পুরো ব্যাপারটা দেখেছিলেন এবং আমি যে তাকে দেখিইনি এই ব্যাপারটা আমি জানতাম না। আমাকে কিচ্ছু না বলে তিনি সোজা বাসা চলে আসলেন।

বাসায় এসে সবুজ চিকন কাঁচা বাশের কঞ্চি পেছনে রেখে বসে ছিলেন। আমি অন্যান্য খেলা শেষ করে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে সন্ধ্যা নেমে গেল। তিনি চেয়ারে বসে ছিলেন। কোন কথা না বলেই সমানে শক্ত মার দেওয়া শুরু করলেন। তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি। বলা যায় একেবারে বাচ্চা মানুষই। ছাদ থেকে লাফ দিলে যে মানুষ মারা যায় এই সামান্য বোধটাও ছিল না। কেন যেন আমার ভয় লাগতো না। তাই বাবা কেন মারছিলেন সেটা ঠিক বুঝতেই পারিনি। বরং তখন বাবাকে ভিলেনের মতোই লাগছিলো। ছাদ থেকে লাফ দিলে কাউকে মারতে হয় নাকি? আশ্চর্য্য!

তখন দাদী ছুটে এলেন আমাকে বাঁচাতে। আমাকে জড়িয়ে ধরে বাবাকে বকতে শুরু করলেন। বাবা তখনও রাগে ফুঁসছেন। এরপর কিছু না বলে চুপচাপ সরে গেলেন নিজের ঘরে। সে রাতেই তাঁর জ্বর আরো ঝেঁকে এলো। আমারও জ্বর এলো। তাঁর এসেছিল আগে থেকেই, আমার এসেছিলো মার খেয়ে। মা বাবাকে আর আমাকে পাশাপাশি শুইয়ে দুইজনের সেবা করতে থাকলেন।

কিছুক্ষণ থাকতে থাকতে আমি ঘুমিয়ে গেলাম। অনেকক্ষণ পরে যখন ঘুম ভাঙলো তখন দেখি বাবা পাশে নেই। আমি অন্য বিছানায়। একটু নড়তেই খেয়াল করলাম পলিথিনের প্যাকেটের কিছু মচমচ শব্দ। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে বুঝতে পারছিলাম চকলেটের কোন প্যাকেট হবে।

বারান্দা দিয়ে লাইটের আলো আসছিলো। আধো আলো আদো আঁধারের মাঝে দেখে নিশ্চিতই হলাম যে এগুলো চকলেটেরই প্যাকেট। কোকোলা চকলেট জেমস আর মিমি চকলেট।
অনেকক্ষণ কারোর আসার শব্দ না পেয়ে আমি চকলেটগুলো খুলে কাঁথার তলে বসে একটার পর একটা খেতে থাকলাম। কিভাবে এগুলো আসলো, কে দিলো এসব কিছুই তখন মাথায় আসেনি।
কিছুক্ষণ পর বাবা-মায়ের গলা আবিষ্কার করলাম। খেতে বসেছিলেন। আমাদের বাসাটা ছিল একদম ছোট, এক রুমের মাঝে আরেক রুমের কথা শুনতে পেতাম।
– ছেলের সাহস দেখছো? কত বড় বিল্ডিং থেকে লাফ দেয়! কত্ত বড় কলিজা!
মা কোন কথা বলছিলেন না। চুপ করে ছিলেন।

এরপর কেটে গেল কতগুলো বছর। দাদী মারা গেলেন, বাবা-মা বৃদ্ধ হলেন। বাসা ভর্তি তাদের নাতি-নাত্নি এলো। আমার ছেলে পৃথিবীতে এলো। যেই আমি আগে এক থেকে দুইতলা, দুই থেকে তিনতলা; ঐদিন ধরা না খেলে হয়তো বা আরো উঁচু বাসার ছাদ থেকে লাফ দিতে পারতাম। সেই আমি জীবনের ট্র‍্যাজেডিতে পরে শরীরের সব অঙ্গকে কোনমতে ওষুধের বদৌলতে টিকিয়ে রেখে স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি আমার ছেলের ভবিষ্যৎকে গুছিয়ে রাখার।
তবুও মাঝে মাঝে মনে হয় আহা রে! কি দিনই না ছিল। আজকাল যখন দুরন্ত কোন শিশুদের দেখি মনের মাঝে উঁকি দেয় অতীতগুলো।

যখন দেখি কোন শিশুকে শাসণ করতে তখন যেন মনে হয় আহা রে! বাচ্চাটার মনে কি ঝড়টাই না যাচ্ছে, বাবা-মাদের বুকটা কতই না ফেটে যাচ্ছে।
অতীত স্মৃতির মাঝেও অনেকেই নিজেকে খুঁজে পায়। কিন্তু সেই অতীতগুলোকে ঘিরে থাকা সেই স্থানগুলোকে বদলে যেতে দেখলে কেন যেন মন চায় না। স্বার্থপরের মতো তখন মনে হয় দুনিয়া বদলে যাক, আমার শৈশবের ঘরবাড়িগুলো আগের মতোই থাকুক।
আজকে হঠাৎ করে আমাদের জোড়পুকুর পাড়ের সেই বাড়িটাকে অসম্ভব মিস করছি। আমার দুরন্ত শৈশবের পুরোটাই কেটেছে সেখানে। আজকে নিজেদের বাড়ি হয়েছে, কিন্তু এরপরেও প্রায়ই স্বপ্নে সেই বাড়িটাকে স্বপ্নে দেখি, আমার শৈশবকে স্বপ্নে দেখি।

লেখক পরিচিতি:
লেখক/প্রকাশক/সম্পাদক/সংগঠক।

 

মাতৃকথন_৪

ফারিনা মাহমুদ


বাবু তোমার কি নাম ?
– আমার পাতা আর পুত্তি (পশ্চাতদেশ, নরমাল ও সেলিম ওসমান ভার্সন )
এ মা, এইটা রেখে দাও … ভেঙ্গে যাবে তো …
– তুই কুতা বাতা (ট্রান্সলেশন নিষ্প্রয়োজন)
সবশেষে গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করে – ওই তালা তর (শালা সর ) ..
অথবা বাড়িতে বেড়াতে আসা অতিথির সামনে – গেসি, খাইসি, খেলতাসি, ভাষায় কথা বলে ওঠা ছোট্ট পুতুলের মতো বাচ্চাটা আমার উচ্চশিক্ষিত নিকটাত্মীয় দম্পতির ।

বাবা মা চাকুরিজীবি হওয়ার কারণে বাচ্চা দিনের বড় সময় থাকে দাদী, ফুফু, কাজের বুয়া, ড্রাইভার, দারোয়ান সবার মাঝখানে । বাচ্চার ভাষা শিক্ষায় কোনো এক অজানা কারণে গৃহকর্মী শ্রেনীর অবদান অত্যাধিক । সেই অবদান বাবা মাকে পাবলিক প্লেসে কি পরিমান বিব্রত করে তা আমি প্রথম বুঝতে পারি যখন আমার সেই আত্মীয়া তাঁর বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেন । আমি ততোধিক বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করি, বাচ্চা প্রতিবার একটা করে গালি দেয় আর বাচ্চার বাবা তার মায়ের দিকে এমনভাবে তাকায় যেন মা রোজ সকালে কবিতার মতো করে গালি মুখস্ত করায় বাচ্চাকে !

শুধু ভাষাই না, বাচ্চা আরো অনেক কিছুই পারিপার্শিকতা থেকে আত্মস্থ করে যা আমাদের পছন্দ না । মা চাকরি করলেও করে, না করলেও করে । কিন্তু দুর্ভাগ্য এমনই আমাদের, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দোষের বোঝাটা মায়ের দিকেই যায়, যাচ্ছে , যাবে ই !

উচ্চশিক্ষিতা, ক্যারিয়ারিস্ট মেয়েটা মাতৃত্বকালীন ছুটিতেই দ্বিধা দ্বন্দে পড়ে যায় – চাকরি করবো না ছেড়ে দিবো ? বাচ্চার যত্ন ঠিক মতো হবে তো ? কার কাছে রেখে যাবো ? নানী দাদীর কাছে কি সারা বছর বাচ্চা রাখা যায় ? বাচ্চাটার যত্ন হবে তো? বাচ্চাটা কি শিখবে ? তার উপরে আছে বুক ভাঙ্গা কষ্ট, অন্যের কাছে বাচ্চা রেখে কাজে মন দেয়া !
এইসব নানান ট্রমা পার হয়ে যদিও বা কাজে ফিরলেন, ঘরে ফিরে যখন শুনবেন বাচ্চার মুখে অশুদ্ধ কথা বার্তা, অপরাধবোধ গিলে খাবে আপনাকে ! আর সেই আগুনে ঘি ঢালতে, সেই দায়ের হিমবাহের নিচে আপনাকে পিষ্ট করতে আশেপাশের মানুষজন তো আছেই ! ক্ষেত্রবিশেষে দেখা যাবে মূল সমস্যা আপনার বাচ্চা না, আপনার শ্বাশুড়ির বাচ্চাটা, কবুল বলে একদা যাকে জীবনসঙ্গী করেছিলেন ! আপনার তখন মনে হবে – এই লোক কে? একে তো আমি চিনি না !!

এই মারাত্মক দ্বিধা-দ্বন্দের টানা পোড়নে পড়ে সংসারের সুখের জন্য অনেকেই চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে আসেন। কেউ কেউ হয়তো পরিস্থিতির কারণে বা সামগ্রিক বিবেচনায় কাজটা চালিয়ে যান, বা যেতে বাধ্য হন, কিন্তু ভিতরে ভিতরে একটা অপরাধবোধ ঠিক ই থাকে – ভুল করছি না তো?

এই চরম দুঃসময়ে আসলে কি করনীয় ?
আমার মন চায় ফিরিয়ে প্রশ্ন করতে – কার কি করনীয় ? করনীয় কি খালি মায়ের ? মা যদি বাইরে কাজ করেন, তিনি কি শুধু নিজের জন্য করেন ? সংসারের জন্য, সন্তানের জন্য কি করেন না ? খুব নগ্ন ভাবেই বলি, মায়ের আয়ের সুফল তো মা একা ভোগ করেন না, তাহলে সব দোষের দায় মায়ের একার ক্যানো ? করনীয় এর তালিকা যদি থাকে তা শুধু মায়ের না, সুবিধাভোগী সবার জন্যই তালিকা থাকতে হবে । মায়ের উপার্জিত অর্থের ভোগী উপভোগী সবই পাবেন, তবে ভুক্তভুগী শুধুই মা !!

এই কঠিন দুসময়ে মনে রাখবেন,
যেই সিদ্ধান্তেই যান না কেনো –
১. কিছু পাবেন, কিছু হারাবেন
২. সবাইকে খুশি করতে পারবেন না, কাজেই নিজের খুশিকেই ফোকাস করুন
এবং আপনার সিদ্ধান্ত আপনি নেবেন,

১. আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী, কারো কথায় না, কাউকে অনুসরণ করে না । তবে অন্যের অভিজ্ঞতা জেনে নেয়ায় দোষ নেই।
২. রিস্ক বাই বেনিফিটের রেশিওতে পাল্লা কোনদিকে ভারী তা চিন্তা করে ।
নিজের সিদ্ধান্তে কনফিডেন্ট থাকবেন, সিদ্ধান্ত পাল্টানোর প্রয়োজন পড়লে সেটাও কনফিডেন্টলি পাল্টাবেন । হীনমন্যতার দিন শেষ !

উপরের সবকিছু চিন্তা করে যদি আপনার মনে হয় চাকরি করবো না, বাচ্চাটাকে সময় দেবো, সু-স্বাগতম । অবশ্যই এটা অনেক বড় সিদ্ধান্ত, সাহসী সিদ্ধান্ত। এই সাথে আত্মত্যাগ তো যুক্ত আছেই। “এই সময়টা উপভোগ করুন।” আবার একসময় কাজে ফিরবেন এমন ইচ্ছা থাকলে নিজেকে সেভাবে প্রস্তূত করুন। বাসায় থাকেন বলেই আবার সন্তানের ব্যাপারে ওভার প্রটেক্টিভ হতে যাবেন না।

কারণ দু দিন পরে কিন্তু বাচ্চাকে স্কুলে দিতেই হবে । মানসিক ভাবে তৈরী থেকে বাচ্চাকে একটু স্বনির্ভরশীল করুন, কাজ সহজ হবে।

কিন্তু উপরের সবকিছু বিবেচনায় যদি মনে করেন কাজ চালিয়ে যাবেন, তাহলে এটা জেনে রাখুন যে পৃথিবীতে মিলিয়ন চাকুরিজীবি মায়ের সুসন্তান আছে, কুসন্তানও আছে। একইভাবে পৃথিবীর মিলিয়ন স্টে হোম মামের ক্ষেত্রেও এই কথা খাটে। কাজেই দোষ মায়ের আর মায়ের একার চাকরির না।

নিজে পালেন আর নানী দাদী কাজের মানুষ যার কাছেই বাচ্চা রেখে যান না কেন বাচ্চা কিছু উল্টো পাল্টা কথা আচরণ শিখলেই মুষড়ে পড়ার কিছু নেই । বরং “কিভাবে ওকে এই আচরণ থেকে সরিয়ে আনা যায়, সেটার যুক্তিযুক্ত সমাধান খোঁজাই জরুরি”। বাচ্চার কাছে “ভাত খাবো ” যেমন শব্দ, “কু*র বা*” ঠিক তেমনি একটি শব্দ। সে এর মানে বোঝে না। শুধু বোঝে কোন এক্সপ্রেশন দিতে কোন শব্দ কোন টোনে ব্যবহার করতে হয়। সে এটা জীবনে কোনো একদিন শিখবেই। অল্প বয়সে শিখে ফেলেছে দেখে লজ্জায় গ্লানিতে কুঁকড়ে গিয়ে তাকে বকাঝকা করার চেয়ে তাকে তার উপযোগী করে বুঝিয়ে ওখান থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন। শব্দটি যেন বারবার তার সামনে ব্যবহার না হয়, সম্ভব হলে তা নিশ্চিত করুন। কিছুই সম্ভব না হলে – ভালো মন্দ যাহাই আসুক, সত্যেরে লও সহজে !! ভালো খারাপ সব পরিবেশে মিশে মিশে যে ভালো মানুষ হয়, সে ই প্রকৃত ভালো মানুষ । মনে রাখতে হবে দিনশেষে মায়ের সাথে কোয়ালিটি টাইম অনেক বেশি জরুরি কোয়ান্টিটি অফ টাইমের চেয়ে । বাচ্চার সাথে একান্তে কিছু সময় কাটান, তাকে গল্পের বই পড়ে শোনানো, গল্প বলা, গান কবিতা বা খেলার মধ্য দিয়ে তার সাথে আত্তিক যোগাযোগ ঠিক রাখুন । ওকে একটু একটু করে বুঝতে সেখান যে আপনি আর বাবা যে কাজে যাচ্ছেন এতে করে সংসারে কি যোগ হচ্ছে । কাজে যাবার আগে বয়স অনুযায়ী বাচ্চার জন্য সেট অফ একটিভিটি রেখে যান, ছবি আঁকা বা খেলার জিনিস সহ সে যেন ব্যস্ত থাকে সেই আয়োজন করে রাখুন । দিনশেষে তার কাছে জানতে চান, সে সারাদিন কি করেছে । রিওয়ার্ড দিন। তার পরেও কথাও খটকা লাগলে, কোনকিছু ভালো দিকে যাচ্ছে না এমন মনে হলে শিশু বিশেষজ্ঞর সাথে কথা বলতে পারেন ।
সবচেয়ে আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি কিন্তু বাবাদের জন্য বরাদ্ধ থাকলো । অযথা মা-কে সবকিছুতে দোষ দেয়া বন্ধ করেন । বিশেষ করে বাচ্চার সামনে । স্টে হোম অথবা ওয়ার্কিং মাম কারো জীবনই খুব সহজ না । সংসারের প্রতি একজন বাবা হিসাবে দায় দায়িত্ব বাড়ানো অনেক জরুরি । জরুরি সংসারে আপনার ইনভলভমেন্ট । এতে করে বাচ্চা দায়িত্ববোধ শেখে । আর উল্টোটা যদি করেন তো বাচ্চা বেয়াদপি আর অসম্মান ছাড়া কিছুই শিখবে না, তাও শিক্ষক হবেন আপনি নিজেই । এরপর সেই অসম্মান যে সে আপনাকেই ফিরিয়ে দেবে না তার কিন্তু কোনো গ্যারান্টি নেই !
সংযুক্তি : আমি একজন চাকুরিজীবী মা । আমি যেখানে আমার বাচ্চা রেখে কাজে যাই, সেই জায়গা নিরাপদ, সেখানে প্রশিক্ষিত কেয়ারাররা আমার বাচ্চার দেখাশোনা করেন । এই সবকিছু জানার এবং চোখে দেখার পরেও ঠিক এক বছর আগে (১/৬/২০১৫) মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে যেদিন কাজে ফিরেছিলাম, বেশ বড় একটা তোয়ালে-তে মুখ ঢেকে কান্না করতে করতে ট্রেনে এসেছিলাম । আজ এক বছর পার করে দিয়ে আমি একটা কথা আবারও জোর দিয়ে বলি সব মা কে, আপনার সিচুয়েশন আপনি ই বুঝবেন । আপনার সিদ্ধান্ত আপনি ই নেবেন । শুনবেন সবার টাই, কিন্তু করবেন তা-ই যা আপনার ঠিক মনে হয় ।আপনি স্টে হোম মাম হন আর ওয়ার্কিং মাম, আপনার কনফিডেন্সই আপনার বাচ্চাকে কনফিডেন্ট হতে সাহায্য করবে !
স্টে হোম মাম অর ওয়ার্কিং মাম
দে ডোন্ট হ্যাভ টাইম টু রেস্ট
এন্ড বিফোর ইউ ডেয়ার টু ব্লেইম হার
রিমেম্বার, মাদার নো’স দি বেস্ট !!

 

অভিমান ও অহং

আফরোজা হাসান


মাঝে মাঝে মনে হয় প্রত্যেকটি মনই এক একটি সাম্রাজ্য। আর মনটিকে ধারণকারী ব্যক্তি সেই সাম্রাজ্যের সম্রাট। আর মনের অনুভূতিগুলো সেই সম্রাটের মন্ত্রী-উজির-নাজির-প্রজা-সৈন্য। সাম্রাজ্যের সকল কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবার জন্য যেমন সম্রাটের মন্ত্রী-উজির-নাজির-প্রজা-সৈন্যদের সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন, মনোজগতের ক্ষেত্রেও কিন্তু ঠিক তাই। অনুভূতিগুলোকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বিঘ্নিত হয় মন সাম্রাজ্যের কার্যাবলী।

মানবিক অনুভূতিগুলোকে কখনোই ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। ফুলের সৌরভের মত এগুলো শুধুই অনুভবের। কবি সাহিত্যিকরা যদিও উপমা বা রূপকের মাধ্যমে অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করতে চেষ্টা করেছেন। যেমন, ফুলের মত কোমল(কোমলতা), পাহাড়ের মত অনঢ়(অনঢ়তা), চাঁদের মত স্বিগ্ধ(স্বিগ্ধতা), হায়নার মত হিংস্র(হিংস্রতা), শেয়ালের মত ধূর্ত(ধূর্ততা)ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এই উপমা বা রূপকের দ্বারাও আসলে অনুভূতিগুলো ব্যক্ত হয় না বরং অনুভবই করা হয়।

যাইহোক, মন সাম্রাজ্যের সম্রাটের মন্ত্রী-উজির-নাজির-প্রজা-সৈন্যরা হচ্ছে অনুভূতিরা। কিন্তু কোন অনুভূতি কোন পদে আসন সেটা কি জানি? মন্ত্রীর আসনটা চিন্তা করার সাথে সাথেই মনেহলো সম্রাটের পাশে মাথা উঁচু করে বসে আছে ‘অহং’। আর সামনে হাঁটু গেঁড়ে মাথা নিচু করে বসে আছে অভিমান। অহং এর নাক ভীষণ উঁচু তাই মাঝে মাঝেই তর্জনী ঘষে তা দিয়ে যাচ্ছে নাকের ডগায়। আর অভিমান নাক টেনে টেনে রাশ টেনে ধরতে চেষ্টা করছে লাগামহীন অশ্রুর।

অহং আর অভিমানের মধ্যে পার্থক্য কি? যখন ভাবছিলাম মনের অভিধানে উল্লেখিত কথাগুলোর সন্ধান পেলাম। অহং আর অভিমান কখনোই এক না। কারণ এই দুটিই ভিন্ন দুটি মানসিক অনুভূতি। অভিমান হচ্ছে মনের কোনে লুকিয়ে থাকা ছোট্ট শিশুটি। যে কথায় কথায় গাল ফুলিয়ে বসে যায়। কনিষ্ঠা আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে আড়ি আড়ি আড়ি। আর অহং হচ্ছে সেই স্বৈরাচারী সত্তা যে নিজেকে অন্যের থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম মনে করে পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকে। যে যাই বলুক পা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে প্রদর্শন করে বৃদ্ধাংগুলি।

অভিমানকে আমার মনেহয় ঋতু পরিবর্তনের সময়কার উষ্ণতা ও শীতলতার সংমিশ্রণের আদুরে জ্বর। নাকে সর্দির বন্যা, গলায় খুকখুক ধ্বনি। রেশমি শালে জড়িয়ে, পশমি মাফলার গলায় ঝুলিয়ে, হাতে ধরিয়ে দিতে হয় একমগ মসলা চা। এতোই আহ্লাদী অভিমান। আর অহং মারাত্মক কোন মরণব্যাধি। এইডস, ক্যান্সার নাকি ডায়াবেটিস? হ্যা ডায়াবেটিস। একবার মনে বাসা বেঁধে ফেললে আর মুক্তি নেই। সবসময় তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বেড়ে গেলেও বিপদ আবার কমে গেলেও বিপদ। এ যেন জলে কুমীর আর ডাঙ্গায় বাঘ অবস্থা।

অভিমানের পেছনে লুকায়িত থাকে ভালোবাসা+ অনুযোগ+ অভিযোগ+ প্রত্যাশা-আশা-আকাঙ্ক্ষা, অর্থাৎ প্রাপ্তির আশা+ বিশ্বাস ও ভরসার অবমূল্যায়ন প্রসূত রাগ+ পছন্দ-অপছন্দের বিভেদ জনিত রাগের অভিনয় ইত্যাদি। আর অহং এর পেছনে থাকে নিজের কোন কিছুকে উপরে তুলে ধরে অন্যদের কাছে নিজেকে উপস্থাপন বা পেশ করা। যার উদ্দেশ্য থাকে অন্যকে অবমূল্যায়ন করা বা হেয় করা। এবং নিজেকে অন্যদের থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে আনন্দিত হওয়া।

সুতরাং, অহং ও অভিমান কখনোই একই অনুভূতি নয়। এই দুই অনুভূতিতে যোজন যোজন পার্থক্য বিরাজমান। তবে হ্যা অভিমানের পথ বেয়ে মনে অহং ঢুকে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। অভিমানের উপর যখন অবিরাম তুষার ঝরতে থাকে এবং পরশ পায় না সে রোদের। ধীরে ধীরে একসময় তা বরফের পাহাড়ে রুপান্তরিত হয়ে যায়। তখন সূর্যিমামার প্রখর কিরণও খুব সহজে সেই পাহাড়ের বুকে বইয়ে দিতে পারে না ঝর্ণাধারা।

আসলে মনের অনুভূতিগুলোর সাথে আমাদের স্বার্থ জড়িত। জড়িত আমাদের আত্মতৃপ্তি, বাসনা, সন্তুষ্টি। অহংকার ও আসক্তিমুক্ত, বিবেকবোধ সম্পন্ন, পরমার্থজ্ঞাননিষ্ঠ, জীবনের সুখ-দুঃখের অবস্থানকে ঘিরে নিয়তি প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী মানুষের পক্ষেই কেবল সম্ভব স্বার্থ নির্ভর না হওয়া। আর একজন মানুষকে নিজকে স্বার্থহীন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে পথে হাঁটতে হবে তার নাম শরীয়ত। যখন মনে আল্লাহর অবস্থান নির্দিষ্ট হয়ে যায় ব্যক্তি পারিপার্শ্বিক শত প্রতিকূলতার মাঝেও করে যেতে পারে অনুভূতির সঠিক প্রয়োগ।

আমি বিশ্বাস করি যে, শুধু যদি অহং বিসর্জন দেয়া যায় তাহলেই পৌছানো যায় মন সাম্রাজ্যের সেই কুটিরটিতে যার নাম প্রশান্তি। আর অভিমান? উহু সে থাকুক সঙ্গোপনে, মনে মনে, নীরবে-নির্জনে, একান্ত আপনে। অভিমান তো সেই অলংকার যা বন্ধনকে করে আরো রঙিন। কিছুটা বিষণ্ণ, সামান্য অবসন্ন, একবিন্দু বিরক্তি, অজানা আসক্তি, করে নিজের সাথে চুক্তি, এসব থেকে নেয়া যায় যদি মুক্তি। মনে বিরাজ করবে প্রশান্তি, অভিমানের এতটাই এই শক্তি………।

 

মুনতাহা: ‘বাধা আসবেই কিন্তু সাহস হারানো যাবে না’

ফাতেমা শাহরিন


একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মুনতাহা। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মনিহারী’। মনিহরীতে রয়েছে, হাতের তৈরী চুড়ি, বালা, নেকলেস, ব্রেসলেট, কানের দুলসহ নানা রকম আইটেম। যার পুরোটাই মুনতাহা নিজ হাতে করে থাকেন। চুমকি, পুথি ইত্যাদি দিয়ে মুনতাহা তার স্বপ্নীল মনের বর্ণিল ছবি আঁকেন তার প্রতিটি সৃষ্টিতে।
তিনি একজন স্টুডেন্ট, পড়াশুনা এইস এস সি শেষ করেছেন। সামনে ভার্সিটিতে ভর্তি হবেন। পড়াশুনার ব্যস্ততার পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন এই সাহসী নারী।

অপরাজিতার পক্ষ থেকে কথা হয়েছিল তার সঙ্গে:

অপরাজিতা: আপনি ঠিক কখন ভাবলেন হাতের কাজটিকে কন্টিনিউ করবেন?
মুনতাহা: যখন কাজ করে তা অনলাইনে আপলোড করলাম সাথে সাথে বেশ সারা পেতে শুরু করি। তখন থেকে কন্টিনিউ করার কথা ভেবেছি। যদিওবা ছোটবেলা থেকে টুকটাক কাজের প্রতি খুব আগ্রহ ছিল আমার। যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখন ওড়নায় কাজ করেছিলাম, সবাই খুব অবাক হয়ে যায়, এতটুকু মেয়ে কত সুন্দর করে কাজ করেছে। আর যখন আরেকটু বড় হহলাম তখন থেকেই আমার প্রচন্ড আগ্রহ, নেশা, আজ পেশার পরিণত হয়েছিল। পড়াশুনার পাশাপাশি আমি হাতের কাজ শিখেছি সম্পূর্ণ আমার নিজের চেষ্টায়। তবে আমার আম্মু আর নানু আমাকে সবসময় সাপোর্ট দিয়ে এসেছেন।

অপরাজিতা: মনিহারীর শুরুর গল্পটা আমাদেরকে বলুন?
মুনতাহা: মজার ব্যাপার ‘মনিহারী’ কাজ যখন শুরু করি তখন আমার কাছে কোন টাকা ছিল না। আমি এই কাজ একা একায় শিখি। তখন মুলত ফেসবুকে নানান পেজ ঘুরে ঘুরে দেখাটি খুবই আনন্দকর ছিল। একদিন এই গয়নাগুল দেখি। তখন বাবার কাছ থেকে পাওয়া হাত খরচের টাকা জমিয়ে সব মেটারিয়াল কিনি। এককভাবে টুকটাক বানিয়ে বিভিন্ন হাতের নকশা করে নিজেই পড়তাম। এরপর ফেসবুকে, এত সারা পেলাম আলহামদুলিল্লাহ।

অপরাজিতা: আমরা বলতে পারি উদ্দ্যোগটা ছিলো আপনার! নিজের! তারপর?
মুনতাহা: মুলত আমি একাই কাজ শুরু করেছি। এখনও একা করছি। তবুও কাজ থেমে থাকে না। থেমে যায়নি ‘মনিহারী’।সেই সময় অনলাইনে পেজ খোলার চিন্তা করি,অনলাইন পেজ ‘মনিহারী’ সফলভাবে যাত্রা শুরু করে। এর পর আলহামদুলিল্লাহ অনেক অর্ডার পাই। আসলে পুরো ব্যাপারটা ছিল অবশ্যই সংগ্রামের। আমি একা একা সিদ্ধান্ত নেই, কাজও শুরু করি এবং তারপর আমি বেশ ভাল সারাও পাই। সবকিছু নিয়ে আমি খুবই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠি। কোন কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত এবং সেই বিষয়ে অবিচল থাকাটি আমার কাছে বড় সংগ্রাম মনে হয়েছে।

অপরাজিতা: নিজ উদ্যোগেই স্বল্প পরিসরে এই ব্যবসা জানতে চাই আরও অনেক কিছু?
মুনতাহা: মুছকি হাসির সুর শুনা যায় সম্ভবত, আমি আসলে বাসায় একা একা অব্যবহারিত জিনিসপত্র দিয়েই বানানোর কাজটি শুরু করি। অতঃপর আরও মেটারিয়াল এবং প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বড় পরিসরি কাজ করার চেষ্টা করি। বিভিন্নজন তাদের মতামত শেয়ার করে। আগে ঘরে বসে নিজেই ব্যবহার শুরু করি। তারপর অনলাইনে বিভিন্ন কিছু বিক্রি করি। আত্নতৃপ্তির।

অপরাজিতা: আবার ‘মনিহারী’ ফিরে আসি, একজন নারী হিসেবে এ পথ চলা, কেমন ছিল, সহজ কিংবা কঠিন?
মুনতাহা: কোন কাজই খুব সহজ নয়। একজন নারী উদ্দ্যোক্তা হিসেবে বলব, যেকোন কাজে প্রথমে প্রচুর বাধা আসে এবং আসবে কিন্তু কখনও সাহস হারানো যাবে না। যদি সাহসের সাথে বাধা পেরিয়ে উঠা যায় ইনশাআল্লাহ আর কোন ভয় থাকে না।

অপরাজিতা: এ সেক্টরে অসহায় মেয়েদের কর্মস্থানের কতটুকু সুযোগ আছে?
মুনতাহা: হা অবশ্যই আছে, কেউ যদি হাতের কাজ পারেন তাদের জন্য প্রচুর সুযোগ আছে। অসহায় মেয়ে শুধু কেন আমার মত যারা ঘর থেকে বাইরে কাজ করতে যেতে পারে না তারা ঘরে বসেই তাদের কাজগুল অনলাইনে বিক্রি করতে পারে অনায়াসে। চাইলে এই কাজ করে সংসার চালাইতে পারেন। যে কোন কাজে লেগে থাকা দরকার।

অপরাজিতা: মূল ধারার ব্যবসার জন্য নারীরা সহযোগিতা কি আদৌ পাচ্ছে, কেন পাচ্ছে না বলে আপনি মনে করেন?
মুনতাহা: পাচ্ছে না। এমন বলার কারণ আসলে আমার এই কাজের জন্য আমি কয়েক জায়গায় সাহায্যের জন্য গিয়েছি কিন্তু বিফল হয়েছি। তাই আসলে এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।

অপরাজিতা: আপনার দৃষ্টিতে সফল নারী কে?
মুনতাহা: সফলতা হচ্ছে কোন একটা কাজ শুরু করে সফলভাবে তা করতে পারা। নারীদের জন্য সফলতাটি ভীষণ কঠিন ও সংগ্রামের। ছেলেরা যত সহজে বেরিয়ে পড়তে পারে বাধা কম, নারীদের প্রচুর বাধা অতিক্রম করতে হয়।

অপরাজিতা: নারী দিবস চলে গেল’ নারীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
মুনতাহা: নারীদের উদ্দেশ্যে নারী দিবসে বলতে চাই এতটুকুই, ‘যারা বসে আছেন কিন্তু কিছু করতে চান তাদের বলল, হাতের বিভিন্ন কাজ শিখুন এবং আত্ম-সবলম্বী হয়ে উঠুন। বাধা পেরিয়ে হাটতে পারলে আমরা সফল।

অপরাজিতা: নতুন উদ্দ্যোক্তাদের কিভাবে উৎসাহ দিবেন?
মুনতাহা: যারা নতুন উদ্যোক্তা হতে চান তাদের উদ্দেশ্যে বলব, ‘আপনারা এগিয়ে যান’। সফলতা আসবে ইনশাআল্লাহ। প্রথমে হয়ত আপনাকে কেউ সাপোর্ট করবে না, সবাই বাধাও দিতে পারে। কিন্তু যখন দেখবে আপনি আপনার যোগ্যতা দিয়ে সফলতার পথে হাটবেন তখন সবাই আপনাকে সাপোর্ট করবে।

অপরাজিতা: মনিহারী নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মুনতাহা: ‘মনিহারী’ নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। গ্রুপিং করে কাজ করার আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। অনেক বড় বড় উদ্দ্যোক্তাদের সাথে কাজ করার ইচ্ছে। আমি হাতের তৈরি জিনিস নিয়েই কাজ করতে চাই। সবাই দোয়া করবেন।

 

সুইসাইড: ‘আমরা অল্পতেই ধৈর্য হারাই’

ডা. মারুফ রায়হান খান


শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শ্রেয়া আত্নহত্যা করেছেন। আমি ৪র্থ বর্ষের স্টুডেন্টদের পড়াই। আমি জানি কী বিশাল পরিমাণ স্ট্রেস, এংজাইটি, ডিপ্রেশানে থাকা সম্ভব তাদের। তবে কোনোভাবেই আত্নহত্যা কোনো সমাধান হতে পারে না। এর মধ্যেই আমাদের ভালো থাকা শেখা প্রয়োজন। আমি যেকোনো ব্যাচে ক্লাস নিতে গেলে ক্লাসটা শুরু করি একটা কমন গল্প দিয়ে। জীবন ভালো না বুঝলে অতো পড়াশোনা দিয়ে আল্টিমেটলি কী হবে? আমি জানি শ্রেয়ার পথের পথিকের অভাব নেই।

২০০৬ সাল, আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। ফুটবল বিশ্বকাপ চলছিল তখন। সেই ফুটবল বিশ্বকাপটা আমার জন্য খুব আনন্দের স্মৃতি হতে পারতো, কারণ আমার ফেভারিট টিম ইটালি সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু তা ঘিরে আমার আনন্দ নেই, বরং রয়েছে একরাশ বেদনা আর কান্না। কারণ সেই বিশ্বকাপটি চলার সময় আমার একজন বন্ধু আত্নহত্যা করে। হ্যাঁ, এই ১৪/১৫ বছরের মানুষটিই ফ্যানে দড়ি ঝুলিয়ে আত্নহত্যা করে। ও নাকি পড়াশোনা না করে খেলা দেখতো, বাবা-মা সে রাতে নাকি বেশ বকাঝকা করেছিলেন, বন্ধু আমার আর সে জীবন রাখার কোনো মানে খুঁজে পায়নি।

আমাদের এই প্রজন্মের অজস্র দিক আছে যেগুলো বেশ পজিটিভ কিন্তু একটা ভয়ঙ্কর রকমের অন্ধকার দিক আছে। আমরা বোধহয় খুব অল্পতেই ধৈর্য হারাই, এই অতি মূল্যবান জীবনটিকে আমরা মূল্যায়ন করতে পারি না, তার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি না, জীবনটিকে হয়তো ঠুনকো ভাবি কিছু থেকে কিছু হলেই–কী হবে আর এ জীবন রেখে। তার প্রমাণ পাই যখন আমরা জানতে পারি, কাউকে ‘পাখি ড্রেস’ কিনে দেওয়া হয়নি বলে আত্নহত্যা করে, প্রিয় দল আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিল খেলায় হেরেছে বলে ঐ দেশের হাজার হাজার মাইল দূরে বসবাসরত বাঙালি যুবক যখন তার জীবন বিনষ্ট করে ফেলে, প্রিয় মানুষকে না পেলে আত্নহত্যা করে ফেলে, বাবা-মা একটুখানি বকাঝকা করলে গলায় দড়ি দেয়, পরীক্ষায় একবার কাঙ্খিত সাফল্য না পেলে সে জীবন রাখার আর কোনো অর্থ খুঁজে পায় না। এসবের কারণ কি এটা হতে পারে যে, আমাদের জীবনের আসলে ব্রড কোনো ভিশন নেই, আমাদের স্পেক্ট্রাম অফ থিঙ্কিংটা ন্যারো?

আমার সাথে এটা প্রায় সবাই হয়তো নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেবেন যে, আমাদের প্রজন্মের একটা বিশাল অংশ মারাত্নক রকমের ডিপ্রেশানে ভোগে। জীবনটাতে যেন কোনো শান্তি নেই, স্বস্তি নেই, ছন্দ নেই। আমাদের ‘নেই’-এর পাল্লাটাই যেন খুব ভারী, ‘আছে’-এর পাল্লাতে যেন কিছুই নেই। বাস্তবতাটা কি আসলেই তাই?

আচ্ছা, এ লেখাটি যারা পড়ছেন তাদের মধ্যে এমন একজন মানুষও কি আছেন, যিনি সকালে খেতে পান না, দুপুরে খেতে পান না, রাতে খেতে পাবেন কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই? ডায়েট কন্ট্রোলের জন্যে না, খাওয়ার সামর্থ্য নেই সেজন্যে? মনে হয় না এমন কোনো পাঠক এখানে আছেন। আমি আপনাদের একটা জরিপ শোনাই। ২০১১ সালে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক একটা জরিপ করে, সেখানে দেখা গেছে পৃথিবীতে প্রায় ১ বিলিয়ন মানুষ এরকম ‘Chronically hungry’ থাকে। পৃথিবীতে ৬ বিলিয়ন মানুষ আছে তার মধ্যে ১ বিলিয়নই এভাবে ক্রমাগত ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করে–প্রতি ৬ জনে ১ জন! এটা আমাদের প্রতি আল্লাহর কতো বড় রহমাত যে তিনি আমাদের অন্তত ৩ বেলা ভালোভাবে খাবার মতো তাওফিক দিয়েছেন।

ক্ষুধার কষ্ট যে কত বড় একটা কষ্ট, সেটা আমরা বুঝব না। বুঝেছিল ঐ পরিবারটা, বাংলাদেশেরই একটা পরিবার, দীপালিদের পরিবার। যে পরিবারে দুটো সন্তান; বড় মেয়ে আর ছোট ছেলে। সে পরিবারের নিয়ম ছিল দুপুরবেলা খাবে ছেলেটা আর রাতেরবেলা খাবে মেয়েটা। দুবেলা দুজন খেতে পারবে না, কারণ দুজনকে দুবেলা খাওয়ানোর মতো আর্থিক সঙ্গতি পরিবারটির ছিল না। একদিন দুপুরবেলা ছেলেটি খেলো, রাত হলে তার আবার ক্ষুধা লেগে গেলো, অসহনীয় ক্ষুধা–ছেলেটি তার বোনের জন্য বরাদ্দকৃত রাতের খাবারটা খেয়ে ফেলে। সারাদিন ক্ষুধায় কষ্ট করেছে বোন, রাতের বেলায় যখন সে দেখলো তার খাবারটুকু নেই, রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে সে রাতে আত্নহত্যা করে বোন।

ক্ষুধার কষ্টটা আমরা বুঝব না। বোঝে ঐ মানুষটা, সোমালিয়ার ঐ মানুষটা, যিনি রমাদানে একজন স্কলারকে প্রশ্ন করেছিলেন, আমাদের সাহরিতে খাবার মতো কিছু নেই, ইফতারেও খাবার মতো কিছু নেই; আমাদের রোজাটা কি হবে?!

আমার স্মৃতিপটে প্রায়শই গাজার ১১ বছরের এক শিশুর একটা গায়ে শিহরণ জাগিয়ে দেয়া প্রশ্ন ভেসে ওঠে। ২০১৪ সালে লাস্ট এ্যাটাকের সময় ছেলেটি একজন স্কলারকে প্রশ্ন করে, এই যে এতো বোমা হামলা হচ্ছে এর মধ্যকার ডাস্ট পার্টিকলগুলো যে আমাদের নাক দিয়ে মুখ দিয়ে যাচ্ছে –আমাদের রোজাটা কি হবে!?

আচ্ছা এবার এ লেখার পাঠকদের জন্যে আরেকটি প্রশ্ন। আপনাদের মধ্যে এমন একজনও কি আছেন যিনি জন্মগ্রহণের পর তার মা ছিলেন না, বাবা ছিলেন না, এমনকি অন্য কোনো নিকটাত্মীয় ছিলেন না আপনাদের দেখাশোনা করার জন্য? একজনও বোধহয় নেই। আপনি শুনে অবাক হবেন, ইউনিসেফের এক জরিপে উঠে এসেছে পৃথিবীতে ২২০ মিলিয়ন, দুইশত বিশ মিলিয়ন শিশু আছে যারা জন্মের পরে তাদের মা পায়নি, বাবা পায়নি, এমনকি কোনো নিকটাত্নীয় ছিল না তাদের দেখাশোনা করার জন্যে।

তবুও নাকি আমাদের জীবনটাতে কোনো শান্তি নেই, সুখ নেই, স্বস্তি নেই, ছন্দ নেই…।

আমি বছর কয়েক আগে একটা পত্রিকায় সম্পাদনার কাজের সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজে বার্ণ ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ডা. সামন্ত লাল সেন স্যারের একটা সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম। সেখানে তিনি বলেছেন, তার মেয়ের ছোটবেলায় একবার মিজেলস (হাম) রোগ হয়েছিল, তারপর রোগ সারলেও চেহারায় দাগ পড়ে যায়। তার মেয়ের মনে খুব দুঃখ ছিল মুখে এই দাগের জন্য। তো একবার প্রফেসর সামন্ত লাল স্যার তার কাছে আসা আগুনে দগ্ধ হয়ে যাওয়া একটি মেয়ের ছবি তুলে এনে তার মেয়েকে দেখালেন। মেয়ে এবার অনুধাবন করলেন অন্য অনেকের চাইতে তিনি অনেক ভালো আছেন। তার বাবাকে বললেন, আমার চেহারার দাগ দূর করতে হবে না, তুমি বরং এই মেয়েটিকেই চিকিৎসা করো।

আসলে আমরা যখন আমাদের অবস্থানের চাইতে নিচের কারও দিকে তাকাব, তখন এই জীবনটাই আমাদের কাছে অনেক বেশি সুখের মনে হবে, অনেক মূল্যবান মনে হবে। সত্যি বলতে কী পৃথিবীতে অজস্র মানুষ আছে যারা আমাদের মতো একটা জীবন পেলে বর্তে যেতো, ধন্য হয়ে যেতো।

আরেকজন বিখ্যাত ব্যক্তির সাক্ষাতকারের জন্য কাজ করেছিলাম, তিনি হচ্ছেন প্রফেসর ডা. শুভাগত চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিষয়ক যারা লেখালেখি করেন, তিনিই বোধহয় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন, ৪০ টি বই উনার। তিনি তার সাফল্যের কথা বলছিলেন, তিনি জীবনে যতটুকু পেয়েছেন, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। তার অন্য বন্ধুরা কে কতো দ্রুত কতোটা এগিয়ে গেলো এসব নিয়ে তিনি কখনও চিন্তিত ছিলেন না। নিজের যতোটুকু আছে, তাই নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন। একজন বিখ্যাত স্কলার ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র.)-এর একটি চমৎকার বাণী আছে, “Contentment is the paradise of this world.” অর্থাৎ, এই পৃথিবীর জান্নাত হচ্ছে সন্তুষ্টি। আমাদের যতোটুকু যা আছে তাই নিয়ে যদি আমরা পরিতুষ্ট থাকতে পারি, আমাদের জীবন সুখে ভরে উঠবে।

আমাদের মধ্যে একটা ব্যাপার খুব অহরহই দেখা যায়। আমাদের চলার পথে, সামনে এগোবার পথে কোথাও যদি বাধা চলে আসে, তবে আমরা সেখানেই হাল ছেড়ে দিই, নিরাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করে দেখুন, পৃথিবীতে যারাই বড় হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের জীবনেই কিন্তু অনেক স্ট্রাগল ছিল। পৃথিবীর বুকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ যিনি, সেই মুহাম্মাদ (স.) এর কথাই ধরা যাক। আমরা সবাই জানি তার মিশনের প্রাথমিক পর্যায়ে তাকে কতোটা বাধা-বিপত্তি-অত্যাচার-নিগ্রহ সইতে হয়েছিল। তিনি হাল ছেড়ে নিরাশ হয়ে যাননি, তার মিশন থামিয়ে দেননি–আজ পৃথিবীতে কোটি কোটি অনুসারী তাঁর। এন্ড্রু কার্নেগীর কথা বলতে পারি আমরা, যাকে নোংরা পোষাকের জন্য পার্কে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, ৩০ বছর পর সেই এন্ড্রু কার্নেগীই পুরো পার্কটি কিনে ফেলেন এবং সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন “সবার জন্য উন্মুক্ত “। বহুল জনপ্রিয় স্টিভ জবসের কথা বলা যেতে পারে, ৭ মাইল দূরের এক গির্জাতে প্রতি রবিবার ভালো খাবার-দাবারের ব্যবস্থা ছিল। সারা সপ্তাহ তার ভালো খাওয়া-দাওয়া করার মতো আর্থিক সঙ্গতি ছিল না। তাই প্রতি রবিবার তিনি পায়ে হেঁটে ৭ মাইল দূরের গির্জাতে যেতেন এক বেলা ভালো খাবার জন্য।

আমি বেশ কিছুদিন আগে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ডিপ্রেশানের উপর একটা সেমিনারে গিয়েছিলাম। সেখানে যিনি স্পিকার ছিলেন তিনি খুব সুন্দর করে ডিপ্রেশান কাটানোর একটা সহজ বুদ্ধি শিখিয়ে দিয়েছিলেন। আর তা হচ্ছে অন্য মানুষের জন্য কিছু করা, তাদের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। এখন তো আমাদের দেশে বিভিন্ন রকমের স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে –শীতবস্ত্র বিতরণ, বন্যা দুর্গতদের সহায়তা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, দুস্থদের খাদ্য বণ্টন, ফ্রি হেলথ ক্যাম্পেইন আরও কত কী। এসবের সাথে যদি আমরা নিজেদেরকে জড়িত করে নিতে পারি তবে জীবন নিয়ে খুব বেশি হতাশামূলক চিন্তাভাবনা করার সময়টা আমরা পাব না।

ওখানে আরেকটা জিনিস শিখেছিলাম যারা নিজের জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট, কৃতজ্ঞ, তাদের কর্টিসল হরমোন (স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত) লেভেলটা কম থাকে তুলনামূলকভাবে। তারা বেশি সুখী থাকেন। আসুন না আমরা আমাদের চারপাশের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ হই, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি আমাদের স্রষ্টার প্রতি, মা-বাবার প্রতি, আত্নীয়-পরিজনের প্রতি, বন্ধু-বান্ধবের প্রতি। আপনার জীবন সুখী হোক।

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

নেকলেস

জাহেদ উদ্দীন মোহাম্মদ


আমার নানার দুই মেয়ে। আমার মা আর এক খালা। মা থাকে চট্টগ্রামে আর খালা টেকনাফে।
মা বলে, আমরা জমজ দু’ভাই নাকি খালার কলিজার টুকরা। আমাদের কারো জ্বর হলে খালার পরান যায়-যায় অবস্থা। তিনি পড়ি-মরি করে আমাদের বাড়ী ছুটে আসতো। তাছাড়া, আমাদের কাছে খালা মানে অবাধ একখানি স্বাধীনতা আর অসীম আনন্দ।

এখন আমরা শৈশব হারিয়ে কৈশোরের শেষ পথে । খালারও বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ের পর খালা আমাদের বাড়ীতে এলেই বাবা “বার্মাইয়ার বৌ” বলে খালাকে খেপাত আর বাসায় রীতিমত আগুন জ্বেলে বাবা হাসতে হাসতে অফিসে চলে যেত।
তারপর খালার চোখের পানি আর নাকের সিন্নিতে বাসায় জলোচ্ছাস বয়ে যেত । খালা ভাত খায় না। কথা বলে না। বাবার কোন শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত এক রুমে গিয়ে রুদ্রমুর্তি ধরে বসে থাকত।
বাবার একটা কঠিন শাস্তি হোক, এটা আমরাও চাইতাম। কিন্তু বড়দের বিচার কে করে, জানতাম না। আমরা ছিলাম খালা-অন্ত:প্রান। কথিত আছে, খালার বিয়ের দিন আমরা দু’ভাই খালার বিয়ের শাড়ীর-কোনা ধরে, মা-মা বলে এতো এতো কেঁদেছি যে,খালু পর্যন্ত দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিল; শেষ পর্যন্ত দুই সন্তানের মা বৌ হিসাবে তাঁর কপালে জুটলো কিনা।
আমরা খালার রাগ ভাঙানোর জন্য, খাওয়ানোর জন্য এতো টানাটানি করি; খালার রাগ কোনভাবেই কমে না। আমরা ছোটবেলার মতো খালার গালের দুইদিকে দু’ভাই গাল লাগিয়ে ভাব দিই; বিনিময়ে খালা আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, কিন্তু রাগ ছাড়ে না।
মা একদম চুপচাপ। খালাকে কিছু বলছে না।
আমরা দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে আছি।
তারপর, বাবা অফিস ছেড়ে দুপুরে বাসায় খেতে এলো আর দুইবোন মিলে বাবাকে সে কি তুলাধুনা!
-তুমি কি পেয়েছ? আমার বোনকে মুখে যাই আসে, তাই বলবে! তোমাকে অনেক সহ্য করেছি। আর করবো না।
-দেখ বুবু, দুলাভাই তোর বাসায় এলে যখন তখন অপমান করে। সরাসরি আসতে না করে দিলেই তো পারে। তোদের বাড়ী আর আসবো না।
বাবার সামনে দুই বোনের অগ্নিমুর্তি আর বজ্রবর্ষন দেখে আমরা দুইভাই ইঁদুর ছানার মতো কাপঁতে থাকি। একটু আনন্দ যে পাই না, তা কিন্তু নয়। অথচ কি আশ্চায্য! বাবা দাঁত দেখিয়ে হাসতে থাকে।
-দ্যাখ, দোষ সব তোদের। এবার দ্যাখ, কি রকম এক অমানুষের সাথে তোরা আমাকে বিয়ে দিয়েছিস! – খালাকে উদ্দেশ্য করে মা কাঁদো কাদোঁ গলায় বলে।
মনে হলো,মা নাক টেনে একটু সিন্নি ফেলল।
-চল বুবু। তোকে বাড়ী নিয়ে যাবো। এই বদলোকের সাথে আর সংসার করতে হবে না। চল বাড়ী যাই।
-চল, আগে আমরা ভাত খেয়ে নিই। তারপর দুবোন মিলে শলা-পরামর্শ করে ঠিক করবো কিভাবে তোর দুলাভাইকে শায়েস্তা করা যায়?
তারপর ছহি-ছালামতে সকলে মিলে আমাদের দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ হয়।
আমরা রাতে কি হয়, দেখার অপেক্ষায় থাকি।
ওমা! একি! রাতের বেলা দেখি মা-খালা-বাবা ঠাট্টা-মশকরায় মেতে আছে। দুপুরে ঝড়-তুফানের কোন রেশ কোথাও নাই!
এই হলো আমার খালা; বয়স বাড়লেও এখনো শিশুর মতো সহজ-সরল। আমাদের জন্য সর্বদা অন্তরে লালন করা যানকবুল এক ভালোবাসা।
বিগত আট-দশ বছরে আমরা আরো দ্রুত বড় হয়ে গেছি। আমার ছোট জন থিতু হলো আমেরিকা আর আমি দেশে । একটা চাকুরী করি। বিয়েও করেছি।
কিছুদিন পর পর নতুন বৌকে নিয়ে টেকনাফে বেড়াতে যাবার জন্য খালা জোরাজুরি করে। ফোনে কান্নাকাটি করে। আমি সময় পাই না।খালার অনুযোগের শেষ নাই।
-তোরা বড়লোক হয়ে গেছিস। আমি গরীব বলে দেখতে পারিস না। তোর আপন মা নই বলে অবহেলা করছিস!
আরো কত কত কথা!
আমার খালু বড়লোক। দিলদরিয়া মানুষ। বাবার সাথে খুব ভাব। খালুর ১০টি ইলিশের বড় বোট আছে। বাৎসরিক হিসাবে আমাদের বাড়ীতে যত মাছ লাগত, সব মাছ খালু লোক দিয়ে চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দিতো।
বাবার জন্য রুপচান্দা শুটকি, মা’র জন্য বড় ইলিশ আর আমাদের জন্য রকমারী সামুদ্রিক মাছ।
আর এইসব মাছ খেয়ে-দেয়ে, বাবা সুযোগ পেলেই খালাকে “জাইল্যার বৌ” বলে খোচাঁত। শুনে খালাও হাসে, বাবাও হাসে। আমরাও হাসি।
গত কয়েক সিজন হতে খালার এক ধরনের মন্দা চলছিল। বছর-দুই আগে অপয়া এক ঘুর্নিঝড়ের কবলে পড়ে আমার খালুর ১০টি ইলিশ বোটই সাগরে তলিয়ে গেছে। এখন সকালের রাজা বিকালের ফকির।
এইবার বিয়ের তৃতীয় বার্ষিকীতে খালাকে চমকে দেয়ার প্লান করি। সেই মোতাবেক শুক্রবারের এক সকালে খালার বাসার দরজায় আমরা স্বামী-স্ত্রী হাজির।
খালা-খালু যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো। আমাদেরকে খালা অনেকক্ষন বুকের সাথে লেপ্টে রাখে। খুশিতে ঝরঝর করে কেদেঁ দিলো।
আমরা হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা করে শাহপরীর দ্বীপ সী-বীচে রওয়ানা দিলাম।
বিয়ের পর খালার বাড়ী এইবার আমার প্রথম যাওয়া। সেই হিসাবে নতুন বৌয়ের জমজমাট খাওয়ার বিরাট আয়োজন। দুপুরে আর রাতের খাওয়ার আয়োজনে কি ছিলো না; সেটাই ভাবছি। মাছের মধ্যে সাগরের এক কেজি ওজনের লবস্টার হতে শুরু করে বিরল প্রজাতির দশাসই লাক্ষা মাছের রোস্ট; বন মোরগের মাংস হতে শুরু করে টেকনাফের পাহাড়ী ছাগহরিনের মাংস বাদ যায়নি।
তারপরও খালার আফসোসের শেষ নেই।
রাতে ভাগিনা-বৌ আংটি আর দামী শাড়ী উপহার পেলো।
আমি পেলাম ১সেট কোর্ট-পেন্টের রেমন্ড কাপড়। খালা তাঁর বোন-দুলাভাইয়ের জন্যও নতুন কাপড় চোপড় দিলো। উপহার দিতে পারার খুশিতে খালা-খালুর চোখ-মুখ চিকচিক করছিল।
আমরা খালার বাড়ীতে স্বপ্নের মতো একটি রাত কাটলাম। দুপুরের চট্টগ্রাম ফিরব; তাই একটু সকাল সকাল টেকনাফ পৌরসভা মার্কেটে গেলাম, উদ্দেশ্য মুলত উইন্ডো শপিং। পছন্দ হলে টিকিটীকি কিছু শপিং করবো।
খালার বাড়ী হতে এক কিলোমিটারের মতো দুরত্ব। শপিং শেষে ফেরার পথে এক স্বর্নের দোকানে ঢুকি। দোকানের তালাঝুলা আলমিরার এক কোনে একটা নেকলেসে আমাদের চোখ আটকে গেলো।
যেমন ডিজাইন তেমন মনকাড়া। নেকলস েমুক্তার পুতি আর ছোট ছোট স্বর্নরেনুর ঝুলন্ত মায়াময় দুলুনি।
-ভাবী, এটা খুবই আনকমন নেকলেস; স্বনার্কার বলল।
-দেখে তো পুরানো বলে মনে হয়, আমি বললাম।
-ঠিকই ধরেছেন। আমাদের দোকানের বিরল জিনিস সংগ্রহে গুরুত্ব দেয়। এটা খুব খানদানী ও আনকমন ডিজাইন। আমরা গতকাল সংগ্রহ করেছি। আপনি বললে,একটু ওয়াশ করে দেবো। তখন মনে হবে একদম নতুন- স্বনার্কার বলল।
ডিজাইনটা খুবই বিরলও বটে। মনে হলো আগেকার জমিদার বা সৌখিন লোকজন ব্যবহার করতো। আমাদের খুব পছন্দ হলো। ওজন সোয়া এক ভরি। দরদাম করে নেকলেসটা কিনে ফেললাম।
চট্টগ্রাম ফিরতে বেশ রাত হলো।
পরদিন খালার দেয়া বিভিন্ন উপহার মা’কে দেখাই। আমার স্ত্রী খালার অবিশ্বাস্য আদর-আপ্যায়নের কথা বারবার বলছিল।
-ও ঐরকম, ভাগিনাদের জন্য প্রান দিয়ে ফেলে।
-এমন আদর কোন খালা করতে পারে? আমার তো এখনো বিশ্বাসই হচ্ছে না।
তারপর মায়ের জন্য কেনা সারপ্রাইজ গিফট নেকলেসটা মা’র হাতে দিলাম। মা নেকলেচটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষন আবেগরুদ্ধ হয়ে বসে রইলেন। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলেন।
-এটা কোত্থেকেকিনেছিস,বাবা?
-কেন মা? তোমার পছন্দ হয়নি?
-না বাবা। ঠিক তা নয়।
আমার স্ত্রী কাপড় পাল্টাতে ওর রুমে চলে গেল।
-বাবা, তোর খালা কি নেকলেসটা দেখেছে?
-না মা, আমরা কেবলমাত্র গাড়ীতে উঠার একটু আগে কিনেছি। দেখানোর সময় পাইনি।
-ও, আচ্ছা।
-কেন মা? কোন সমস্যা ?
মা কেমন জানি আনমনা হয়ে গেলেন। মনে হলো মা কিছু একটা বলতে ইতস্তত করছেন। একবার ডানে-বায়ে তাকালেন।
ফিসফিস করে বললেন, এটা তোর খালার নেকলেস,বাবা।
-কি!!!
এ যেন, প্রচন্ড হাসিখুশির কোন শিশুর মুখে হঠাৎ কালি মেখে দেয়া বিহবলতা…
আমার পুরো পৃথিবীটা দুলছে।
থমকে আছে চারপাশের বাতাস । অদৃশ্য শাসনে যেন স্থির হয়ে আছে, খানিক আগের উড়াউড়ি করা জানালায় পর্দা।
নিষ্ঠুর এক নীরবতা আমাদের গিলতে থাকে।

 

হিন্দি সিরিয়াল ও আমার ভাবনা.. শেষ পর্ব

শুরু করে দিন আজ থেকেই। চলেন এক্ষুনি একটা মেক্সিকান ডিশ রান্না করা শিখিয়ে দিচ্ছি আপনাকে। আপনার ভুলে রাগ করে বেড়িয়েছে আপনার স্বামী। তাই তাকে প্রশান্ত করার দায়িত্বও আপনার। সুন্দর করে রান্না করেন। তাড়াতাড়ি খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিন মেয়েকে। তারপর সুন্দর করে নিজেকেও সাজিয়ে অপেক্ষা করেন উনার জন্য। পরিবেশকে আরো রোম্যান্টিক করতে পারেন চাইলেই। নিভিয়ে দিন ঘরের সব বাতি। জ্বালিয়ে দিন কয়েকটি ক্যান্ডেল। হয়ে যাক আজ রোম্যান্টিক ক্যান্ডেল লাইট ডিনার। পাবেন খুঁজে এমন আনন্দময় একটা দৃশ্য আপনার সিরিয়ালে?

হাসলো আমার কথা শুনে বোনটি কিন্তু হাসিতে প্রফুল্লতার ছোঁয়া ছিলো না। বুঝলাম এত কড়া কথা যে শুনিয়ে গিয়েছে তার জন্য আয়োজন করা সত্যি কিছুটা কষ্টেরই বটে।
হেসে বললাম, আপনাকে মেক্সিকান ডিশ কেন রান্না করতে বললাম জানেন? মেক্সিকান খাবারে বেশ ঝাল থাকে। আপনি ইচ্ছানুযায়ী সেই ঝালের মাত্রা আরেকটু বাড়িয়ে দিতে পারেন। উনি আপনার মন জ্বালিয়েছে বদলে আপনি উনার জিভ জ্বালিয়ে দিন। হয়ে যাক শোধ বোধ। বুঝিয়ে না বলে হৈচৈ করার জন্য কিছু তো একটা শাস্তি হওয়া উচিত উনারও। মন খুলে হেসেছিলেন তখন বোনটি। যতদূর জানি উনি এখন সিরিয়াল দেখার বদভ্যাস ত্যাগ করেছেন। আসলে আমরা চাইলেই ইচ্ছা ও চেষ্টার দ্বারা আমাদের জীবনটাকেই করে তুলতে পারি আমাদের জন্য বিনোদনের একটা মাধ্যম।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সেই পন্থা জানা নেই আমাদের। যারফলে বিনোদনের জন্য আমাদেরকে চোখ রাখতে হয় টিভির পর্দায়। জীবনের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে কত শত চমক। সেগুলোকে খুঁজে বের করে উপভোগ করতে করতেই কেটে যেতে পারে আমাদের সমস্ত অবসর। অথচ জানা না থাকার কারণে অবসর কাটানোর জন্য আমাদেরকে এমন জিনিসের কাছে যেতে হয় যা মনকে প্রশান্ত করার বদলে করে আরো অশান্ত। তাই হিন্দি সিরিয়ালের বিরুদ্ধে বিশেধাগার গড়ে তোলার সাথে সাথে এর ক্ষতিকারক দিক গুলো সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে হবে সবার সামনে। পরিচিতজন যারা সিরিয়াল দেখেন তাদেরকে নিরুৎসাহিত করতে হবে সঠিক পদ্ধতিতে। এবং তাদেরকে জানাতে, বোঝাতে ও শেখাতে হবে কিভাবে নিজের জীবনটাকেই করে তোলা যায় বিনোদন ও অবসর কাটানোর মাধ্যম হিসেবে।

দুনিয়াটা একটা পরীক্ষাক্ষেত্র। মানুষকে তাই জীবন যাপন করতে হয় হাজারো পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে। ধন-সম্পদ, পরিজন সবই ফিতনার বস্তু। স্ত্রীরাও স্বামীদের জন্য বিরাট পরীক্ষার বস্তু। সিরিয়াল যেহেতু বোনেরা বেশি দেখেন তাই তাদেরকে বোঝানোর ক্ষেত্রে ভাইদেরকে মনে রাখতে হবে রাসূল (সঃ) কথা। আবু হুরায়রা রা থেকে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেছেন-“ উত্তম পন্থায় মহিলাদের সংশোধন করার চেষ্টা করো। কারণ মহিলাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে একটি বাঁকা হাড় থেকে। সে হাড়ের উপরের অংশ বাঁকা। যদি তাদেরকে বেশী সোজা করতে চাও তারা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি মোটেই সোজা করতে না চাও তাহলে বাঁকাই থেকে যাবে।” এই হাদিসটিতে মহিলাদের স্বভাবের বৈশিষ্ট্যর কথা উল্লেখ করে পুরুষদেরকে সাবধানতা অবলম্বন করার উপদেশ দান করা হয়েছে। সবর ও হিকমাহ অবলম্বন করার নসীহা দেয়া হয়েছে। যদিও নেককার মহিলারা এই উপদেশের কথা স্মরণে রেখে নিজেদেরকে সাধারণ মহিলাদের দোষত্রুটি থেকে উর্দ্ধে রাখার চেষ্টা করে। নিজেদেরকে স্বভাবগত বক্রতা থেকে বের হতে চেষ্টা করে। কিন্তু এরজন্য শরীয়তের যে জ্ঞানের দরকার হয় তা যেহেতু সবার থাকে না। ধীরে ধীরে অর্জিত হয় এই জ্ঞান। তাই ততদিন পর্যন্ত অবশ্যই সবর ও হিকমাহ অবলম্বন করতে হবে।

সংসার জীবনটা আসলে উভয়েরই। তাই একে অন্যকে দোষারোপ না করে, নিন্দা ও সমালোচনা না করে উচিৎ একে অন্যের সহযোগী হওয়া। একে অপরকে সাহায্য করা নিজ নিজ বদভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসার। পরিবারের প্রতিটি সদস্য যদি এমন একে অপরের সাহায্য সহযোগী হয়ে উঠে তাহলে জীবনকে সঠিক ও সুন্দরের পথে পরিচালনা করা আসলে মোটেই কঠিন কিছু নয়, ইনশাআল্লাহ।

 

হিন্দী সিরিয়াল ও আমার ভাবনা…১

আফরোজা হাসান


বর্তমান সময়ে খুব শুনি টিভি সিরিয়ালের ক্ষতিকর ও অশান্তিকর দিক নিয়ে অনেককে কথা বলতে। কিন্তু সবাই শুধু নিন্দা ও সমালোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন তাদের কথাবার্তা। সুন্দর ও সুষ্ঠু সমাধানের কথা এই পর্যন্ত কাউকেই বলতে শুনিনি আমি। মহিলারা সারাদিন ঘরে বসে সিরিয়াল দেখেন আর কুটনামী শেখেন। সুতরাং, এইসব বন্ধ করতে হবে। অবশ্যই বন্ধ করতে হবে কিন্তু কিভাবে? নিন্দা জ্ঞাপন করে কি মানুষকে সেই পথ থেকে ফেরানো সম্ভব যা সে মনের খোঁড়াক হিসেবে গ্রহণ করছে? তাহলে তো ড্রাগ নেয়া বন্ধ হয়ে যেত সেই কবেই। সিরিয়ালটাকে ড্রাগের সাথে তুলনা করলে মনেহয় খুব ভুল হবে না? কারণ ড্রাগের অভাবে যেমন শরীরে তৈরি হয় অস্থিরতা, ঠিক তেমনি গতকালের পর কি হলো জানার জন্য সিরিয়ালের সময় হলেই মন ছটফট করতে থাকে। একজন ড্রাগ অ্যাডিক্টকে অনেক বোঝানোর পরও নেশার সময় হলে সে ছুটে যায় ড্রাগের কাছে। ঠিক তেমনি একজন সিরিয়াল অ্যাডিক্টও শত নিন্দা শুনে ছুটে যান টিভির কাছে। আসলে নিন্দা ও সমালোচনা কখনোই কোন কিছুর সমাধান হতে পারে না। একজন ড্রাগ অ্যাডিক্টকে যেমন সে নিজে না চাইলে নেশার জগত থেকে বের করে নেয়া সম্ভব হয় না। ঠিক তেমনি সিরিয়াল অ্যাডিক্টকেও সে নিজে অকল্যাণ বুঝে দেখা বন্ধ না করলে ফেরানো সম্ভব নয়। মানুষের স্বভাব হচ্ছে সে যখন কোন কিছুতে আনন্দ খুঁজে পায়, অন্যরা যাই বলুক না কেন সেটা ছাড়তে পারে না বা চায় না। বরং নিন্দা ও সমালোচনা অনেক সময় ক্ষেপিয়ে তোলে মানুষকে। যারফলে জেদ করে সেই কাজ আরো বেশি করে মানুষ।

বেশ কিছুদিন আগে পরিচিত এক বোন ফোন করে রাগে গজগজ করতে করতে বললেন, ভাবী কি কি কারণে ঘরে রহমতের ফেরেশতা আসে না বলেন তো একটু আমাকে। কি হয়েছে জানতে চাইলে উনি জানালেন উনার স্বামী বলেছেন হিন্দী সিরিয়াল দেখলে ঘরে রহমতের ফেরেশতা ঢোকা ছেড়ে দেয়। জানালেন এই নিয়ে উনার স্বামী খুব খারাপ ব্যবহার করেছেন। স্বামী কাজ থেকে ফিরে দেখেন উনি হিন্দী সিরিয়াল দেখছে। আর তাতেই প্রচণ্ড ক্ষেপে যান। উনাকে বকাঝকা করতে করতে বলেছেন, এইসব দেখো বলেই আমার ঘরে রহমতের ফেরেশতা ঢুকতে পারে না। অভাব অনটন দূর হয় না আমাদের জীবন থেকে। তুমি আমার সংসারের সকল অশান্তির কারণ। ইত্যাদি ইত্যাদি। বললাম, এর আগেও শুনেছি সিরিয়াল দেখা নিয়ে ভাইয়ের সাথে আপনার ঝগড়ার কথা। সংসারের শান্তি নষ্ট হয় এমন জিনিস দেখতে যান কেন শুধু শুধু? বোনটি জবাবে বললেন, এখন থেকে আরো বেশি করে দেখবো। দেখি কি করে সে। আমি হেসে ফেললে কিছুক্ষণ পর সেই বোনটিও হাসলো এবং বলল, সিরিয়াল না দেখলে সময় কি করে কাটাবো আমি বলেন তো? স্বামী কাজে ও বাচ্চা স্কুলে চলে যাবার পর তো তেমন কোন কাজই থাকে না করার মত। তিনজন মানুষের ছোট্ট সংসার তাই রান্না ও কাজও তেমন থাকে না।

বললাম সময় কাটানোর জন্য টিভিই দেখতে হবে এমন তো কোন নিয়ম নেই। আপনি কোরআন পড়ুন অর্থ সহ, তাফসীর পড়ুন। হাদীস, সাহাবীদের জীবনী, ইসলামী ইতিহাস, ইসলামী সাহিত্য কত কিছু আছে সময় কাটানোর উপকরণ হিসেবে। এছাড়া বাংলা সাহিত্যের গল্প-উপন্যাস-কবিতা তো আছেই। স্বামী ও বাচ্চা বাইরে খেতে পছন্দ করে এমন নিত্যনতুন রান্না শিখুন। রান্না করে তাদেরকে সারপ্রাইজ দিন। বাইরে থেকে শোপিস না কিনে নিজের ভেতরের সৃজনশীলতাকে বের করে নিয়ে আসুন। বেতের ঝুড়ি কিনে এনে প্ল্যাস্টিকের লতা-পাতা-ফুল দিয়ে মনের মতো ডেকোরেশন করেন। তারপর ঝুলিয়ে দিন ঘরের এক কোণে। এভাবে নিজের হাতে বানানো বিভিন্ন ধরণের শোপিস দিয়ে সাজান আপনার ঘর। চাইলে করার মত এমন অনেক কিছু পাবেন। যা করতে গেলে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটতে হবে আপনাকে। তখন সিরিয়াল দেখা তো দূরে থাক টিভির দিকে তাকানোরই ফুরসত মিলবে না। উনি বললেন, এভাবে তো কেউ কখনো বুঝিয়ে বলেনি। হেসে বললাম, এই তো আমি বুঝিয়ে বললাম।

চলবে…′

 

পরীদের জন্য ভালবাসা

ডা.সাকলায়েন রাসেল


পরীটা আজ সারাদিন মনের কোণে ঘুরঘুর করছে।
ক্লাশ ফোরে পড়ে।
মাথায় ক্লিপ দিয়ে চুলগুলো পরিপাটি সাজানো…হাতে মেহেদী! এই মেহেদী নকশাটি তার নিজের করা..।পড়তে ভালোবাসে সে…। ভাল লাগে গান গাইতে! একটুস খানি অনুরোধ করতেই গান গেয়ে শোনাল।

‘অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন’

বাংলা সিনেমার গান…ভালোবাসা পেতে সাধনা লাগে..। অথচ এই পরীটার চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলা..একেবারর অজপাড়া গাঁয়ে বাড়ী হলেও কথায় শুদ্ধ বাংলার উপস্থিতি.. অল্পতেই আমার সবটুকু মন জয় করে নিল।
চোখ বন্ধ করেই গান শুনছিলাম ..কিন্তু হঠাৎ থেমে গেল পরী..গানের মাঝে শ্বাসকষ্ট! দম আটকে যাচ্ছে তার! পরী থেমে গেল। কিছুক্ষণ বসে বসে বিশ্রাম নিল! তারপর দম ফিরে এলো তার!
খুব খেলতে ভাল লাগে পরীর। সবাই যখন খেলে সে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে।
আফসোস হয়…
চোখ জলে ভিজে যায়!
খেলতে পারে না সে…খেলতে গেলেই তীব্র শ্বাসকষ্ট! হাত পা নীল হয়ে যায়…দম আটকে চোখ উল্টে যায়!

হার্টের ডাক্তাররা ইকো করে বলে দিয়েছে…তিনটি ছিদ্র আছে তার হার্টে..TOF! অপারেশনই একমাত্র সমাধান..অনেক ঝুঁকি!

হোক ঝুঁকি তবুও বাঁচতে চায় পরী।
বাবা সবজী বিক্রেতা।

ইতোমধ্যে গরু বিক্রি করেছেন..বাড়ীভিটে বন্দক রেখেছেন! তবুও যোগাড় হয়নি অপারেশনের টাকা!
পরীকে যখন জিজ্ঞেস করলাম…তুমি কি চাও?
পরীর হৃদয় চিরে বের হওয়া উত্তর…আমি সুস্থ হতে চাই!
-সুস্থ হতে অনেক টাকা লাগে…তোমার বাবার কি এত্তো টাকা আছে?
থেমে গেল পরী..মাথা নীচু করে অশ্রু মাখা মুখটা লুকালো!

একটু খানি আশ্বাস দিতেই ফিক করে হেসে উঠল..দাঁতের পিছনে দেখা গেল নীল জিহ্বাটা। হাসতেও যে পরী অক্সিজেনের অভাবে ভোগে!!
কপাল দোষে না হয় অর্থের অভাব হোক। কিন্তু বাতাসে এত্তো অক্সিজেন… তবুও কেন সেই অক্সিজেনের অভাবে ভোগে পরীরা?

শত কোলাহলের মাঝে হয়ত সেকারণেই নীরবতা আঁকড়ে ধরে। পরীদের পিতাদের.. আরিজের পিতাদের!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

ঘরের টুকিটাকি টিপস

অপরাজিতা ডেক্স


ফ্রিজের পঁচাগন্ধ দূর

একটা প্লেটে কিছুটা সর্ষেগুঁড়ো ঢেলে তাতে একটু জল দিয়ে রাতভর ফ্রিজে রাখুন এবং ফ্রিজ খোলাই রাখুন। ফ্রিজের বদগন্ধ দূর করতে সর্ষেগুঁড়ো ব্যবহার করতে পারেন। পরের দিন সকালে দেখবেন সব গন্ধ উধাও।

তেল টেট্রাপ্যাক
ব্যবহারের পর তেলের টেট্রাপ্যাক ফেলে দেবেন না। কেটে ডিপ ফ্রিজে আইস ট্রেতে পেতে দিন। মাছ মাংসের প্যাকেট আটকে যাবে না।

প্রেসার কুকার
প্রেসার কুকারের গ্যাসকেট মাঝে মাঝে ফ্রিজে পুরে রাখবেন। দীর্ঘদিন টিকবে।

ব্যাটারি
টর্চের ফেলে দেওয়া ব্যাটারি কিন্তু কোয়ার্টিজ ঘড়িতে এবং রেডিওতে আরও মাস খানেক চলবে।

নেলপালিশ ব্যবহার
বাড়িতে আঠা ফুরিয়ে গেছে। খামে স্ট্যাম্প লাগাবেন। ন্যাচারাল কালার নেলপালিশ ব্যবহার করুন।

সেলোটেপের রিল
সেলোটেপের মুখ খুঁজে পাচ্ছেন না? মিনিট দশেক ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখে দিন। সেলোটেপের রিলটা খুলে আসবে।

চিঠি ঠিকানা
খামের ওপর ঠিকানা লিখে একটু মোমবাতি ঘষে দেবেন। জল পড়ে কালি থেবড়ে ঠিকানা অস্পষ্ট হয়ে যাবে না।

মোম
টেবিল ড্রয়ার অনেক সময় আটকে যায়। স্বচ্ছন্দে খোলা বা বন্ধ করা যায় না। ড্রয়ারের ধারে মোম ঘষে রাখুন। সহজে আটকাবে না।

বাইসাইকেল
ব্যবহারের পর বাইসাইকেলের টায়ার ভিজে কাপড় দিয়ে মুছে রাখুন। সহজে কাটবে না।

দেশলাই কাঠি
নখের কোন ভেঙে গেছে। কিন্তু এমারি বোর্ড নেই। একটা দেশলাই কাঠি নিয়ে বারুদের দিকটা ভাঙা জায়গায় ঘষুন। নিমেষে নখ সমান হয়ে যাবে।

 

তাচ্ছিল্য

ফাতেমা শাহরিন


মনের অবস্থা ভয়ানক তিক্ত আবিরের। প্রায় কয়েক ঘন্টা হেটেছে, সন্ধ্যা বিকালকে গিলে ফেলেছে। এখন ঝর ঝর করে ঘাম ঝরছে। হবে কি আবার, নিরবতাকে আবার কেন আপমান করল ওরা। আবির ভাবছে, বোনটা ত আমার ভাল ছিল! এই নিয়ে ওদের এত সমস্যা কিসের? বুঝে না আবির।

নিরবতা। আমাদের ভালবাসা ও সন্মানের আরেক টুকর নাম। চুপচাপ শান্ত মেয়েটি।

গত বছর ওর বিয়েটা ভেঙ্গে যায় হবার দু ঘন্টা পর। হঠাৎ। কাবিল নামা হয়ে যাবার পরে, ছেলের বাবা ফোনে কথা শেষ করে, বলে উঠেন, যে পরিবারে এত লোক ড্রাগ এ্যাডিক্টেট। সেই ঘরের মেয়ের চরিত্র স্বভাব কখনও ভাল হতে পারেই না। কেন ওরা সব গোপন রেখেছে। ওরা জঘন্য খারাপ কাজ করেছে। শুরুতে এএ অবস্থা, এই মেয়েকে ঘরে তুললে আমার ছেলেটাও খারাপ হয়ে যাবে।

ছেলেটি, নিরবতার পক্ষে কোন কথা বলেনি।

কত অনুনয়বিনয় করেছে সবাই। কিন্তু নিরবতার পাশে বাবা ছিল। নিরবতা ধীরে বের হয়ে আসে, খুব লজ্জিত কন্ঠে বলে উঠে।

‘আমি খুব লজ্জিত। সত্যি বলতে বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র একজন এডাল্ট ছেলের আসক্তির ভয় আছে তা নয়। বরং এ পরিবারে আপনাদের পরবর্তী প্রজন্মের আনাগোনা হতে পারে, তা আরও ক্ষতিকর। আপনার পুরো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি ভেবেছিলাম, পরিবার বিষয়টিকে আপনাদের কাছে পরিষ্কার করেছে। আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আর এমন পরিবারে আমিও যেতে চায় না। যেখানে অসন্মান, ঘৃণা, আর সন্দেহের বীজ বুনে গিয়েছে জীবনের সূচনালগ্নে।’

শেষপর্যন্ত ছেলেটির একদম নিরব ছিল। নিরবতার বিয়ে ভেঙ্গে যায় সেদিনই।

আবির, নিরবতার মনের কথা ভেবে অজান্তে কেঁদেছে। আর অভিশাপ দিয়েছে সব নেশাখোরদের। সেই শান্ত, বলিষ্ঠ কন্ঠের নিরবতার আজ চোখে পানি। ঝর ঝর করে পানি নয় কেবল যেন উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ ছুটছে। কেন দরকার হল কেন?

মাঝে মাঝে দূরে জলন্ত আগুনের শিখা দেখলে এত ইচ্ছে যাকে কয়েক টান দেই, দূর হোক বিষণ্ণতা। ঠিক তখনি নিরবতায় হাসি মুখ ভাসে। কি দোষ ছিল ওর? কতগুল নেশাখোরের জন্য কেন ওলটপালট হল ও গোটা জীবন। কেউ বলতে পারে ওর স্বপ্নরা এখন কোথায়?

নিরবতা-ভাইয়া, প্লিজ আমি দেখা করব না। আমার পছন্দ হয়নি। প্লিজ, এ ব্যাপারে আমাকে আর কিছু বলবেন না আপনারা।

ভাবি- কিসের আবার পছন্দ-অপছন্দ এত বয়স হল, আরও বাপের বাড়ি পড়ে থাকমেন।

পাশ থেকে ভাইয়ের ছোট্ট ছেলেটিও বলছে: আধ আধ কন্ঠে, তুমি আমাদের সব খাবার খেয়ে খেলবা।

ভাবি-শোন, এখানে একটা বিশাল কাহিনী আছে। তুমি ছেলে পক্ষের সাথে দেখা করতে বল তোমার বোনকে।

বড় ভাই: দেখা করলে কি বিয়ে হয়ে যায়? দেখা কর।

ছলছল করে উঠে চোখ দুটি নিরবতার। আরও নিরব হয়ে যায়। প্রবল তাচ্ছিল্যতা হুড়মুড় করে ডুকছে। যেন প্রচন্ড শক্তিশালী ঝড় উঠেছে আত্মমর্যাদাবোধকে এবার ভেঙ্গে মুচড়ে তছনছ করে ফেলল বলে।

বাবা হঠাৎ দাড়িয়ে সামনে…..দূরে দরজায় ছোট ভাই আবির। ওই ত ভালবাসার বৃষ্টি নামল। প্রশান্তকণ্ঠে অফুরন্ত দোয়া আসছে। কে আছে এবার বাধা হয়ে দাড়াবে?

 

সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ : ‘নারীকে জীবন্ত বৃক্ষ হতে হবে’

ফাতেমা শাহরিন


সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ একজন ব্যবসায়ী। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘শুধুই কুরুশ’। তিনি বগুড়ায় একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের ‘প্রধান শিক্ষিকা’। পেশাগত ব্যস্ততার পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। অপরাজিতার পক্ষ থেকে কথা হয়েছিল তার সঙ্গে। সেই সব কথোপকথন নিয়ে আজকের সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো:

অপরাজিতা: ‘সেলাই কাজ’ কার কাছে হাতে খড়ি হয়েছিল?
রাজিয়া বিল্লাহ: আমার মায়ের কাছে শিখেছি। কুরুশের সেলাই কাজ শেখার পিছনে আমার মায়ের ভুমিকাই বলব পুরোটুকু। আমি আগ্রহ প্রকাশ করেছি, উনি স্কুল সামলে যেহেতু মা ছিলেন হাই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষিকা। সংসার সামলে, আমাকে হাতে ধরে শিখিয়েছেন।

অপরাজিতা: এই স্বপ্নের শুরুটা কিভাবে?
রাজিয়া বিল্লাহ: আমি সেলাই শিখি ১৯৯৭ সালে। তখন মুলত ব্লক, বাটিক, হাজারবুটি, সুচের কাজ, দর্জির কাজ সবই করেছি। সে সময় বিভিন্ন হাতের কাজ করে টুকটাক উপার্জনও করতাম । কখনো বাবা মার কাছে হাত খরচ বা অন্যান্য খরচের জন্য টাকা চাওয়ার দরকার হয়নি আলহামদুলিল্লাহ। সে সময় অন্যদের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে কাজ করতাম। এর মধ্যে নানা কারণে নানান সময় বাধ্য হয়েই সেলাই ছাড়তে হয়েছিল। কিন্তু সেলাই আমাকে এমনভাবে গ্রাস করেছে কোনভাবেই সেলাই ছেড়ে থাকতে পারতাম না। এককভাবে আবার কুরুশে ফিরে এসেছি ২০০৭ সালে। সরকারী প্রাইমাারী স্কুলে শিক্ষক হিসেবে ঢুকি ২০১০ সালে, কিন্তু জাতীয়করণের  ফলে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল অর্থাৎ আজ পর্যন্ত   বেতন পাই না। এ দিকে আমার বেতনের টাকা পুরোটাই  তখন মেয়ের দুধের খরচের পিছনে যেত। আমার স্বামী যদিও চাকুরীজীবী কিন্তু তার নির্ধারিত আয়ের মাঝে মেয়ের দুধের খরচ প্রায় বন্ধ হয়ে গেল, দিশেহারা না হয়ে সেই খরচ চালানোর জন্যই, ‘শুধুই কুরুশ’ এর যাত্রা শুরু করি। স্কুল করে এসে বাসায় সংসার সামলেছি, বাচ্চা সামলেছি অতঃপর সেলাই করেছি। অর্থাৎ আজও ‘শুধুই কুরুশ’ ব্যবসাটি আমাকে হাটতে সহযোগিতা করছে।

অপরাজিতা: শুরুর গল্পটির শুনলাম, এবার ‘শুধুই কুরুশ’ এর পরবর্তী যাত্রা সম্পর্কে জানতে চাই? কতজন কাজ করতেন, বর্তমানে কতজন করছেন? কিরূপ সংগ্রাম করতে হয়েছিল?
রাজিয়া বিল্লাহ: আমাকে ভীষণ পরিশ্রম করেই আগাতে হয়েছিল। ‘শুধুই কুরুশ’ থেমে যায়নি বরং তারপর কিছুদিন একা কাজ করি। এখন একটা মেয়ে আছে আমার সাথে। এক সময় অনলাইনে পেজ খোলার চিন্তা করি, অনলাইন পেজ ‘শুধুই কুরুশ’ এর যাত্রা শুরু ২০১৫ সালের ২৪ জুন। সেই সময় ছিল ১০ জন মেয়ে, মোটামুটি সবাই অবিবাহিত ছিল কিন্তু পরবর্তীতে তাদের বিয়ে হয়ে যায় এবং একে একে চলে যায়। তবুও কাজ থেমে থাকেনি। বরং আমার পেজ ‘শুধুই কুরুশ’ বর্তমানে ত্রিশ হাজারের উপর সদস্য। এর পর আলহামদুলিল্লাহ অনেক অর্ডার পাই। অনেক মেয়েদের সন্ধান পেয়েছি, যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকে এবং হাতের কাজ করতে যানে। এর ফলে অনেক মেয়েদের কর্মস্থানেরও ব্যবস্থা হয়। তখন মেয়ে আমার কয়েক মাস বয়সী মাত্র। তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের কাছে রেখে গিয়েছি মেয়েদের কাজ বুঝিয়ে, নতুন কাজ দিয়ে সামনে আনার জন্য চেষ্টা করেছি। যানবাহনের সমস্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। যেহেতু ভারী সুতা ভর্তি ব্যাগ একা টেনে নিয়ে যাওয়া আবার কাজ ভর্তি ব্যাগ একা নিয়ে আসা। এমনও হয়েছে বসার জায়গা তো দুরে থাক, বাসে দাঁড়াতেও পারি নাই ঠিক মতো। সময় ম্যানেজ করার জন্য অনেক সময় স্কুলে থেকেই চলে গেছি দুপুরে না খেয়ে। রাতে বাসায় ফিরে একে বারে খেয়েছি। কখনো বাচ্চাকে রাখার মতো কাউকে না পেয়ে ঘুমন্ত বাচ্চাকে কোলে করে গলার সাথে ব্যাগ ঝুলিয়েও হাঁটতে হয়েছে অনেকটা পথ।

অপরাজিতা: নিজ উদ্যোগেই স্বল্প পরিসরে ‘নারী গ্রুপ’ আবার ব্যবসা জানতে চাই?
রাজিয়া বিল্লাহ: মুলত নারী গ্রুপ করার উদ্দেশ্য, সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন বোন যারা অনেক সময় নানান রকম সমস্যা পড়েন, ভোগেন যেগুলো নিজের পরিবার বা কারো সাথে শেয়ার করা সম্ভব হয় না। ফলে গ্রুপে সবাই নির্দ্বিধায় শেয়ার করেন। বিভিন্নজন তাদের মতামত শেয়ার করে। এতে অনেকে তাদের সমস্যার সমাধান ও খুঁজে পায়। কিছু বোন আছে যারা ঘরে বসে অনলাইনে বিভিন্ন কিছু বিক্রি করে তাদের জন্য সপ্তাহে তিনদিন সেল পোস্ট দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমি জানি পরিবারের খারাপ সময়ে হাল ধরতে পারা কতটা আত্নতৃপ্তির। আমার গ্রুপের বোনদের মধ্যে আমি বাঙ্গালি জাতিসত্ত্বাকে কে জাগ্রত রাখার জন্য, কোন ধরনের বাংলিশ লেখা বা ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লেখা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ আমার এই জোরের জন্য অনেক বোনেরাই শুদ্ধভাবে বাংলা লিখতে পারে।

অপরাজিতা: আবার ‘শুধুই কুরুশ’ ফিরে আসি, একজন নারী হিসেবে এ পথ চলা, কেমন ছিল, সহজ কিংবা কঠিন?
রাজিয়া বিল্লাহ: খুব সহজ ছিল না,  অবশ্যই বলব। এই জন্য যে আমাকে একা একা বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতে হয়েছে, সত্যি অনেক কষ্টকর ছিল দিনগুলো, সেই ছোট্ট বাচ্চাটিকে রেখে। কাস্টমারের বিভিন্ন ধরনের কথা তো আছেই। তবে আমার জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট হল, যা আমাকে সাহস যুগিয়েছে, আমার পরিবারের ১০০% সাপোর্ট। যেটা অন্য অনেকের কাছে শুনেছি পায় না। আমি পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।

অপরাজিতা: এ সেক্টরে অসহায় মেয়েদের কর্মস্থানের কতটুকু সুযোগ আছে?
রাজিয়া বিল্লাহ: প্রচুর সুযোগ আছে। অসহায় মেয়েরা চাইলে এই কাজ করে সংসার চালাইতে পারেন। আমি নিজে চালিয়েছি কয়েকমাস। আমার বেতন বন্ধ হবার কিছুদিন পর আমার স্বামী তার চাকুরী ছেড়ে দেয়। তখন কয়েকমাস আমিই সংসার চালিয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু লেগে থাকতে হবে এই কাজে, হাল ছাড়লে চলবে না।

অপরাজিতা: মূল ধারার ব্যবসার জন্য নারীরা সহযোগিতা কি আদৌ পাচ্ছে, যদি না পান, কেন পাচ্ছে না বলে আপনি মনে করেন?
রাজিয়া বিল্লাহ: আমার মতে, পাচ্ছে না। এমন বলার কারণ আসলে আমার এই কাজের জন্য আমি কয়েক জায়গায় সাহায্যের জন্য গিয়েছি কিন্তু বিফল হয়েছি। তাই আসলে এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।

অপরাজিতা: মূলধন সংকটের ফলে কোন সমস্যা হতে পারে কি?
রাজিয়া বিল্লাহ: মূলধন সংকটের জন্য অবশ্যই সমস্যা হয়। তবে আমি যেহেতু আমার কাজের অর্ডার ভিত্তিতে করেছি এবং ৫০% অগ্রিম ক্রেতার কাছ থেকেই নিয়েছি। তাই মূলধনের সমস্যা বুঝতে হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ।

অপরাজিতা: সফল নারী আসলে কি আপনার মতে?
রাজিয়া বিল্লাহ: সফল নারী আমার একান্ত মতে, সেই যে তার নিজ ধর্মের বিধি-নিষেধ সঠিকভাবে মেনে পরিবারকে খুশী রেখে সমাজের অসহায় গরীব নারীদের, যারা বিভিন্ন ভাবে পিছিয়ে আছে, তাদের জন্য কিছু করতে চায়।

অপরাজিতা: নারী দিবসে নারীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
রাজিয়া বিল্লাহ: নারীদের উদ্দেশ্যে আমি বলব, ‘নারীকে জীবন্ত বৃক্ষ হতে হবে’ এই অর্থে নয় যে, সবাই এসে তার ছায়া নিয়ে ডাল ভেঙে নিয়ে যাবে বরং এই অর্থে যে, বড় বৃৃৃক্ষ সহজে কাটা যায় না, নোয়ানো যায় না। নরম গাছ যেমন এক টানেই উপরে ফেলা যায়। তেমন হওয়া যাবে না। মা হলে, এমন মা হতে হবে যার সন্তানের দিকে অন্য কেউ চোখ তুলে তাকাতে পারবে না। স্ত্রী হলে এমন স্ত্রী হতে হবে যাকে কখনও স্বামী নিজের বোঝা না ভেবে, জীবনের অপরিহার্য অংশ ভাবতে বাধ্য হবে। কন্যা হলে এমনই কন্যা হতে হবে, যাতে বাবা মা এর ভরসা যায়গায় হতে পারে।

অপরাজিতা: নতুন উদ্দ্যোক্তাদের কিভাবে উৎসাহ দিবেন?
রাজিয়া বিল্লাহ: আমাকে যখনই কেউ ইনবক্স করে বলেন, আপু জব খুঁজছি। তখন আমি বলি, চাকুরী করতেই হবে এমন কি মানে আছে বলুন? বরং ব্যবসা করার প্লান করুন। নিজের মধ্যে যে ক্রিয়েটিভিটি আছে, সেইটা দিয়েই শুরু করতে উৎসাহ দেই। এটাও বলি যে ব্যবসা করতে চায় না বলেই আজ বাঙ্গালি জাতি, অনেক পিছিয়ে আছে।

অপরাজিতা: শুধুই কুরুশ নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
রাজিয়া বিল্লাহ: আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনেক বড় বলতে পারেন। যেটা আমি জেগে এবং ঘুমিয়ে দুই-ভাবেই দেখি। তা হল কিছু গরীব অসহায় মেয়েকে নিয়ে আমি আগের মত কাজ করছি। বড় করে শোরুম দেয়ার ইচ্ছে আছে। ইনশাআল্লাহ। এর আগে যে মেয়েরা কাজ করত ওরা ছিল এইস এস সি পরীক্ষার্থী। আমার কাছে পাওয়া সেলাইয়ের টাকা দিয়েই ওরা ফরম ফিলাপ করেছে ও প্রাইভেট পড়েছে। নিজের পড়াশুনার খরচ নিজেই চালিয়েছে। কিছু অভাবী মেয়েকে নিয়ে কাজ করব। তাদের ভবিষ্যত আর বর্তমানের জন্য। একটা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দেয়ারও ইচ্ছে আছে ভীষণ। বাকীটা আল্লাহর ইচ্ছা।

‘শুধুই কুরুশ’ এর এই গুনি উদ্যোক্তা সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ (ইরা), আপনাকে অপরাজিতার পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 

নারী

রুবি


বড় আশা নিয়ে এসেছিলাম মাগো,
আজ আমায় অপয়া বলে তোমরা ডাকো।
বাবার সংসারে বোঝা আমি,
পুত্র সন্তান হলে বেশি দামি।
যতই থাকুক আমার গুন
পান থেকে একটু খসলেই চুন,
হয়ে যায় আমি কলঙ্কিনী,
বড় আশা নিয়ে এসেছিলাম মাগো,
আজ আমায় অবলা বলে তোমরা ডাকো।
লেখাপড়ায় বিদ্বান হলেও বলে না কেউ বিদুষী
ঘরের কাজ কেমন জানি, রান্নায় কত পটু আমি,
সেই প্রশ্নে হেরে গেলে হয়ে যাই দোষী,
গৃহ ছেড়ে কর্মে গেলে হয়ে যায় নির্লজ্জ,
পুরুষের পাশে একজন নারী বেমান-নিকৃষ্ট।
স্নেহ -মমতা কে দিয়েছে নারীর চেয়ে বেশি?
যুগে যুগে নারীর ত্যাগ হয়েছো তোমরা ঋষি।
আজ বস্ত্র হরণ করে বস্তুর মত দুমড়ে মুচড়ে ফেলো আমায়,
তবুও নও তোমরা দোষী,
চরিত্রহীনা আমি হারিয়ে সম্ভ্রম
সকলের উপরে আমিই বড় পাপী।
আমায় তোমরা মা বলে ডাকো,
তবুও আমার বুকের রক্ত দিয়ে রঙ তোমরা মাখো।
বড় আশা নিয়ে এসেছিলাম মাগো,
বেশি কিছু না একটু সন্মান ভাবি পাবো।
আর কিছু নাই বা পেলাম,
বাঁচতে শুধু দিও।
নারী আমি,বস্তু নয় এতটুকু জেনে নিও।

 

আমার জীবনের আদর্শ মানুষ ‘আদর্শ নারী’

মুক্তারা বেগম নদী


আমার জীবনের উজ্জ্বল নক্ষত্র, আমার ধ্রবতারা। নেপলিয়নের সেই বানী “আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটা শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।” যার জন্য এই বাক্যটি স্বার্থক তিনি আজ আর নেই আমাদের মাঝে আমার পথপ্রদর্শক , আমার প্রিয় মানুষ, প্রিয় ব্যক্তিদের একজন, আমার প্রথম শিক্ষক , যিনি ছিলেন মনে প্রানে আধুনিক, একজন প্রগতিশীল মানুষ, একজন মমতাময়ী মা, সমাজ সেবিকা, দানশীল , অতিথী পরায়ন, হাসী-খুশী ও প্রাণবন্ত, যাকে কোন দিন মলিন মুখে দেখিনি, দেখিনি কখনো রাগ করতে। শুধু নারী নয় ,যিনি আমাকে একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় সচেষ্ট ছিলেন । আমার দাদী যিনি গত ৪ঠা জানুয়ারী , ২০১০ সোমবার ১২টায় আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেছেন।

তার প্রচেষ্টা কতখানি স্বার্থক হয়েছে, কতটা মানুষ হতে পেরেছি, কতটা নারী জানি না । কিন্তু আজম্ম তার সেই প্রচেষ্টা স্বার্থক করবার চেষ্টা করেছি এবং করব।
আমার জম্ম আর দশটা মফস্বল শহরের মতই একটি শহরে । আর আমিও হয়ত বেড়ে উঠতাম আর দশটা মেয়ের মতই। কিন্তু তিনি তা কখোনোই চাননি এবং হতেও দেননি।

সেই ছোটবেলা থেকেই তার অনেকগুলো মন্ত্রের একটা ছিল – “তুমি শুধু নারী নও , মানুষও”।

আমার দাদী , যাকে দাদু বলে সম্বোধন করতাম । যিনি ছিলেন বাহ্যিক ও মানসিক দিক দিয়ে অসম্ভব সুন্দর মানুষ। বুঝতে শেখার আগে থেকেই তিনি আমাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন। সব সময় বলতেন, “সব সময় মনে রেখ তুমি আগে মানুষ, তারপর নারী।”
তোমার নারীত্ব তোমার দুর্বলতা নয় , এটা তোমার শক্তি। তিনি চাইতেন প্রত্যেক নারীর কমনীয়তা , রমনীয়তার পাশাপাশি তার মাঝে থাকবে সাহস , শক্তি, বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব , আত্মসম্মান। ঘরকন্নার পাশাপাশি তিনি উৎসাহ দিতেন দেশ-বিদেশের খোজ -খবর রাখতে যেমন-রাজনীতি, সমাজনীতি বিভিন্ন বিষয়ে।

তার কাছ থেকে সেই ছোটবেলা থেকেই জেনেছিলাম আমার প্রিয় ব্যক্তিদের সাহস , আত্মত্যাগ, উদারতার কথা যেমন- মাদার তেরেসা, নেলসল ম্যান্ডেলা, প্রীতিলতা। আরও জেনেছিলাম মহাত্তা গান্ধী , ইন্দিরা গান্ধী, মারগারেট থেচার , চন্দিকা কুমারাতাঙ্গার কথা। তারই ধারাবাহিকতায় আস্তে আস্তে জেনেছি জাহানারা ইমাম , পান্না কায়সার , সুফিয়া কামাল, ভেলরি টেলর এবং আরও অনেক সাহসী নারীদের জীবন গাথা।

যাদের কাছ থেকে পেয়েছি বেচে থাকার অনুপ্রেরনা, জীবন যুদ্ধে লড়াই করার সাহস, মানবতা, মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ , কর্তব্যবোধ।

তিনি নিজেকে কখনই দুর্বল মনে করতেন না। তার ছিল অপরিসীম প্রানশক্তি। নিজে সুন্দর করে বেচে থাকার পাশাপাশি অন্যের বেচে থাকাকেও তিনি আনন্দময় করে তুলতেন। তার প্রিয় কবি ছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম । কারন তার আধ্যিত্বকতা ও প্রতিবাদী মনোভাব দুটোই দাদুর পছন্দের ছিল। বিদ্রোহী কবির সেই বিখ্যাত দুটি লাইন “এই পৃথিবীতে যা কিছু সুন্দর অর্ধেক তার নারী অর্ধেক করিয়াছে নর।” বলতেন এই কথাগুলোর জন্যই সারাজীবন তার কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব।

আমার দাদা ছিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ করেছেন। দাদু একাই তার আট ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছেন। সহায় সম্পত্তি শুধু রক্ষাই করেননি সেটাকে সমৃদ্ধও করেছেন দাদুর যদিও নিজের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না কিন্তু তিনি খুব গোড়া ধার্মিক ছিলেন না। তার মাঝে আমি কখনই কোন কুসংস্কার দেখিনি। যার প্রতিফলন আমাদের মাঝেও ছড়িয়েছেন। তিনি তার নিজ সন্তান, পরবর্তীতে আমাদের ভাই-বোনদেরকে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষায়ও অনুপ্রানিত করেছেন। তার উৎসাহে আমি ক্লাস ফাইভে পড়ার সময়েই কোরআন তেলওয়াত করতে শিখি।

তিনি তার সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন মানসিকতায় ও চলাফেরা ও পোশাক আশাকে। আমাদের জুবুথুবু হয়ে চলাফেরা পছন্দ করতেন না। বলতেন যাই পড় না কেন সেটা যেন ফিটফাট, রুচিসম্পন্ন , আধুনিক ও একইসাথে মার্জিত ও শালীন হয়। দাদু খুব ম্যাচিং করে পড়তেন। ছোটবেলা থেকেই আমার জন্য নিজে ম্যাচিং করে কাপড় জুতো, গয়না কিনে আনতেন। যার জন্য আমি নিজে এখন খুব ম্যাচিং করে সব কিছু পড়ার অভ্যেস।
বাল্যবিবাহ তার একদম পছন্দ ছিল না, বলতেন আগে লেখাপড়া, তারপর ক্যারিয়ার, তারপর বিয়ে। যার ফলশ্র“তিতে আমার ঢাকায় এসে পড়াশুনা, চাকরী ইত্যাদি। মনে আছে ঢাকায় এসে যখন ভর্তি হলাম দু’মাস একটানা ক্লাস করার পরই ক্লাস বন্ধ হয়ে গেল ছাত্র রাজনীতি সংক্রান্ত ঝামেলায়। বাসায় ফোন করলাম আমাকে এসে নিয়ে যাবার জন্য । ফোনটা দাদুই রিসিভ করেছিলেন। আমি বললাম আব্বাকে পাঠাও আমাকে নেওয়ার জন্য । বললেন তুমি তো মানুষ হবার জন্য উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে গেছ তাই না , তাহলে মেয়ে মানুষের মত আচরন করছ কেন? তুমি যদি সারাজীবন দুর্বল অবলা নারী হয়ে থাকতে যাও তাহলে তোমার বাবাকে পাঠাব। আর যদি একজন আত্মসম্মান জ্ঞান সম্পন্ন একজন মানুষ হতে চাও তাহলে একা আস। দাদুর কথা শুনে সেই একা ঢাকা থেকে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেই। তারপর আর কোন দিন কেউ আমাকে নিতে আসেনি। আমি একা একাই সব জায়গায় চলাফেরা করি নির্ভয়ে।
আমার ছোটবেলা থেকেই দেখেছি, বাড়ী ভর্তি মেহমান, সব সময় লোকজন লেগেই থাকত , কত দূর দূরান্ত থেকে পরিচিত-অপরিচিতরা আসতেন, কেউ বেড়াতে , কেউ সাহায্য চাইতে , কখনোই তিনি কাউকেই ফিরিয়ে দিতেন না।

আমি অবাক হয়ে দেখলাম যে আমি লিখতে গেলে এক লাইন লিখে চুপ মেরে বসে থাকি সে আমি অকাতরে কেবল লিখেই যাচ্ছি। আমার কথা অফুরন্ত কিন্তু আমার আবেগ অতৃপ্ত, অনেক লিখেও মনে হচ্ছে আমি আরো অনেক কিছুই বুঝাতে চেয়েছি কিন্তু কিছু ভাষা প্রকাশ করতে পারিনি। ঝড়ের ছবি যেমন অনেক রঙ থেকে মানুষ ঝড় বুঝে নেয় কিন্তু কেবল শিল্পি বুঝেন সে ঝড়ের উদ্দ্যোম তার বুকে বাজে। দাদুকে নিয়ে লিখতে গিয়ে আমার সেই রকম কোন ছবি আকার মতই উপলব্ধি হচ্ছে।

দাদু মানুষ হও বলতে তুমি কি বোঝাতে আমি কতটা তা ছুঁতে পেরেছি জানিনা কিন্তু মানুষ বলে কাউকে দেখার সৌভাগ্য আমাকে অন্য দশ জন থেকে আলাদা করে কারন আমি তোমাকে দেখেছি।

[ কেন জানি আমার প্রিয় মানুষগুলো আমার কাছে থেকে বিদায় না নিয়েই চলে যান, দাদা, দাদু, বাবা কাউকেই আমি বিদায় জানাতে পারিনি] আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কেউ না কেউ থাকেন, আলোর দিশারী হয়ে, তারা তাদের সমস্ত জীবনের অভিজ্ঞাত আর শিক্ষা দিয়ে আমাদের পথ দেখান, ছায়া দেন, মানুষ হতে শেখান, হতে পারেন সে আপনার বা আমার, মা, বাবা, পরিবারের কেউ, শিক্ষক কিংবা সমাজের কেউ, তারা হন আমাদের আদর্শ, প্রিয় ব্যক্তিত্ব।
তো পাঠশালায় আমাদের প্রিয় ব্যক্তিত্বকে নিয়ে লিখলে কেমন হয়? আমিই শুরু করলাম।

আমাদের জীবনে যারা আমায় আলোর পথ দেখিয়েছেন, তাদের একজন আমার দাদু, আমার বাবার মা।

 

‘নারী মুক্তি’ সময়ের অপরিহার্য দাবি!

সাজেদা হুমায়রা হিমু


নারী কেবলমাত্র একটি সত্তার নাম নয় বরং একটি চালিকা শক্তি যাকে ছাড়া পুরো পৃথিবী স্তব্ধ, স্থবির। তবুও নারীর কাঙ্ক্ষিত মূল্যায়ন হচ্ছে না কোনো ভাবেই।

তাই একবিংশ শতাব্দীর আলো ঝলমলে পৃথিবীতে দাঁড়িয়েও নারী আজ বড় অসহায়! বড়ই পরাধীন!

প্রতিনিয়তই নারী নির্যাতিত শারীরিকভাবে….মানসিক ভাবে।
নারীকে কখনো একজন মা, কখনো একজন স্ত্রী, কখনো ছেলের বউ, কখনো বোন বা কন্যা, কখনোবা একজন সাধারণ মেয়ে হিসেবে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। এ নির্যাতন শুধু পুরুষ কর্তৃক হচ্ছে তা নয়, নারী কর্তৃকও হচ্ছে।

সত্যি নারীরা আজ ভালো নেই। নারী কেন্দ্রীক বিভিন্ন সমস্যার বিষবাষ্পে জর্জরিত আমাদের প্রিয় এ জন্মভূমি।

বেশিরভাগ পরিবারেই নেই নারীর মত প্রকাশের স্বাধীনতা…নেই তার অবদান আর কষ্টের স্বীকৃতি…
যৌতুক, তালাক নারী নির্যতনের রেকর্ডে যোগ করেছে এক চরম নির্মমতা!
বিগত কয়েক বছরে জ্যামিতিক হারে বেড়েছে ধর্ষনের ঘটনা!
নারীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে সম্পত্তি থেকে…..বঞ্চিত করা হচ্ছে উপার্জনের ক্ষেত্রে।
পথে পথে চলছে নারীর শ্লীলতাহানি!
কন্যা শিশু থেকে বৃদ্ধা নারীরা পর্যন্ত প্রতিনিয়তই শিকার হচ্ছে যৌন নির্যাতনের….
বাস, অফিস, গৃহ কোন স্থানই আজ নিরাপদ নয়।
বিভিন্ন বয়সের পুরুষের দ্বারা ইভটিজিং এর শিকার নারীরা প্রচণ্ড মানসিক পীড়নে থাকছে।
আর ইতি ঘটাতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষা জীবন, কর্ম জীবন এমনকি নিজেদের জীবনেরও!

কেন আজ নারীর এই অসহায়ত্ব? কেন হচ্ছে এই নির্যাতন? তা নির্ণয়ের চেষ্টা করছেনা কেউ।

নারীর অবস্থার উন্নয়নে সময়ের সাথে সাথে প্রণিত হচ্ছে বিভিন্ন নীতিমালা, বিভিন্ন পদক্ষেপ… তবুও পরিবর্তিত হচ্ছে না নারীর অবস্থার।

তাই আল্লাহ প্রদত্ত নারীর মর্যাদা ও অধিকারের ব্যাপারে সচেতনতা আজ বড় প্রয়োজন…..প্রয়োজন সমাজের সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন….প্রয়োজন নারী নির্যাতনকারীদের প্রতিরোধে শক্তিশালী আইনের প্রয়োগ।

অযৌক্তিক সমানিধিকারের দাবীর মাধ্যমে নারীর কাঁধে কয়েক গুন বোঝা চাপিয়ে দিয়ে নারীমুক্তি কখনোই সম্ভব নয়।

তাই..
সম অধিকার নয়,
প্রাপ্য অধিকার চাই।
প্রাপ্য স্বাধীনতা চাই।

নারী দিবসের শুভেচ্ছা।

 

মনের প্রকৃতি

আফরোজা হাসান


বুঝতে শেখার পর থেকে যখনই অকারণ জেদ করেছি ভাইয়া বলতেন, “মনের যে ইচ্ছা শক্তির দ্বারা মানুষ আত্নসমালোচনা করে আত্নসংশোধনের পথে চলে আত্মোন্নয়ন করার কথা, মনের সেই ইচ্ছা শক্তিরই ভুল প্রয়োগে মানুষ অধঃপতনের দিকে ধাবিত হয়।” তখন ভাইয়ার কথা বুঝতে না পারলেও এখন জানি কারো জন্য তার নিজের মনটাই হতে পারে পরম বন্ধু কিংবা চরম শত্রু।

মনের অনেক সংজ্ঞা পড়েছি। কিন্তু মনের যেই সংজ্ঞাটি মনকে ছুঁয়ে দিয়েছিল সেটি হচ্ছে, ” মন মানুষের ভেতরে এক টুকরো প্রকৃতি।” সত্যিই মনের মাঝে দেখা মেলে প্রকৃতির সব রুপ-রঙ-বৈচিত্র্যর। মনের আছে ঋতু চক্র, বদলায় মৌসুম। মন বাগিচায় ফুল ফোটে, পাখি গায়, ভ্রমর তোলে গুঞ্জন, ঝরে পরে পাতা, শুকিয়ে যায় ফুল। মনের আঙিনা কখনো বরষায় হয় স্নাত, কখনো হয় বন্যায় প্লাবিত।

মনের আছে অতলান্ত সাগর, বহতা নদী, বদ্ধ পুকুর, টলটলে দীঘি। আছে বিশাল নীলাকাশ, মেঘমালা, নক্ষত্র, পূর্ণিমা, বিজলীর চমক। গহীন বন, চোরাবালি, নগর-বন্দর, মরুভূমি, আছে মরিচীকাও। আছে হিংস্র বাঘ, চতুর শেয়াল, মায়াবী হরিণ, দুষ্টু বানর, বিষাক্ত সাপ। ফসলের ক্ষেত, মেঠো পথ, সূর্যাস্ত, সূর্যোদয় সব সবকিছু। তাই মনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ায় জন্যও দরকার যথাযথ পূর্ব প্রস্তুতির……।

প্রায় এক যুগ আগে প্রচন্ড রকম কালবৈশাখীর ঝড় দেখে ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ভাইয়া পাশে দাঁড়িয়ে অভয় দেয়ার সুরে বলেছিলেন, মানুষের মনে মাঝে মাঝে এমন ঝড় বয় তা যদি প্রকৃতি দেখতো স্তম্ভিত হয়ে যেত তার সর্বগ্রাসী ক্ষমতা দেখে। এমন সর্বগ্রাসী সর্বনাশী ঝড়ের কবলে পতিত কিছু মনকে খুব কাছ থেকে দেখার, জানার, বোঝার ও চেনার সুযোগ হয়েছে পরবর্তীতে।

ঠিক তেমনি দেখেছি ঝড়ে তছনছ হয়ে যাওয়া মনকে আবারো নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে। বিরান হয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষেত আবারো সবুজে সবুজে ছেঁয়ে যেতে। তাই হয়তো প্রচন্ড খরায় ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া ভূমির বুকে আবারো প্রাণের পরশ বুলিয়ে যায় আকাশ থেকে নেমে আসা অঝোর পানিরাশি।

নদীর এক কূল ভাংগলে যেমন অপর কূল গড়ে। মনের অবস্থাও অনেকটা তাই। তাই আধাঁর দেখে থমকে গিয়ে পা পিছনে টেনে নেবার অবকাশ নেই। আড়াঁলে যে সূর্য প্রতীক্ষমান…….।

 

‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’একটি সম্ভাবনাময় দিন

অপরাজিতা ডেক্স


বিশ্বব্যাপী নারীদের স্বীকৃতি সরূপ তাঁদের অবিশ্বাস্য প্রতিভা, কর্মদক্ষতা, ভূমিকা এবং সৃষ্টিশীল মানবসম্পদে পরিণত হতে যে সংগ্রাম তা তুলে ধরতে এবং পাশাপাশি অন্যদের জন্য পথ তৈরি করার মন-মানসিকতায় সহযোগিতা জন্য ‘নারী দিবস’ একটি সম্ভাবনাময় দিন।

মূলত ১৯৭৫ সালের ৮ই-মার্চ এর দিনটিকে, আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ‘নারী দিবস’ পালনকারী বিশ্বব্যাপী পুরুষ ও নারী উভয়ই।

জাতিসংঘে এই বছরের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হল, ‘Press for Progress’. স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘সময় এখন নারীর : উন্নয়নে তারা, বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরের কর্ম-জীবনধারা।’ গোটা বিশ্বের নারীদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য এ বছর এরূপ প্রতিপাদ্য রাখা হয়েছে।

ইতিহাসের পাতায় নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে গুরুত্ববহন করলেও বর্তমানে নারীদের সার্বিক দিক উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসটি মানচিত্রে ক্যালেন্ডারে রাখাটি যদিও একটি কৃত্রিম পদ্ধতি, তবুও নারীদের সফলতার গল্প, বিফলতার কারণ এবং নারীদের মতামত, উদ্যোক্তা হিসাবে ভূমিকা, যুগের যুদ্ধে নারী সংগ্রামীদের সামনে আনার চেষ্টা। অধিকার শুধু নয় সচেতনা বাড়ানো মুল উদ্দেশ্য ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবসের।

কারণ, আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের ২০০৯-এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে পুরুষের চেয়ে নারী ১৬ শতাংশ পারিশ্রমিক কম পায়। অন্য এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে নারীরা কাজ করছে প্রায় শতকরা ৬৫ ভাগ।

নারীর জন্য সচেতনতা:
নারী দিবসকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক ভাবে চারটি সেক্টরের উপর নারীদের সচেতনতাকে জোরদার করা হচ্ছে,

১.শিক্ষা অর্জন
২.সহযোগিতা
৩.প্রচারণা
৪.নিজের কর্মে প্রস্ফুটিত হওয়া(সুত্র:VOGUL)।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে নারী: নারী-পুরুষের মর্যাদা নির্ণয়ে সাধারণ মানুষ মুলত দৃষ্টিপট খুঁজেন ইসলামে অর্থাৎ আল কোরআনে। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের সফলতা ও ব্যর্থতা সুস্থ চিন্তা ও সঠিক কর্মের সাথে সম্পৃক্ত। আদর্শ ও মতবাদ নারীকে শুধু নারী হওয়ার কারণে নিচু ও লাঞ্ছনার যোগ্য মনে করে। ইসলামে মর্যাদা লাঞ্ছনা এবং মহত্ত্ব ও হীনতার মাপকাঠি হলো চরিত্র ও নৈতিকতা। সুতরাং চরিত্র ও নৈতিকতা আলোকে নারী ও পুরুষ যার যত বেশি থাকবে সেই ব্যক্তিই সফলকাম।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে কথা হল ক-জন মনোবিজ্ঞানীর সাথে। একজন বলছিলেন, ‘নারী হিসেব একজন মানুষের মৌলিক দিক বললে আমি বলব, ‘আত্মমর্যাদাবোধ’। আত্মনির্ভরশীলতা, পাশাপাশি বিনয়, নিজের উপর আত্মবিশ্বাস, অধিকারের ব্যাপারে সচেতনতা যা আমার কাছে নারী হিসেবে খুব দরকারি কিছু বৈশিষ্ট্য। আমার কাছে আমার আদর্শ নারী যেমন ‘মা’। আমার সকল সমস্যার আশ্চর্য জনক সমাধান থাকে যেখানে। তিনি একজন নারী, এক-টুকর আমার রাষ্ট্রের নাম। সাইকোলজিস্ট হিসেবে পেশা জীবনটি শুরু হয়েছে। সেই যায়গায় পৌছতে সময়ের সাথে এগিয়ে গিয়েছি, পথে বাধাগুলতে পরিবার আর বন্ধুদের শক্ত হাত আমার নারী শক্তিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ফাহমিদা আফরোজ (এডুকেশনাল সাইকোলজিস্ট)

বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তন্মধ্যে – আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজানসহ, আরও অনেক দেশ। এছাড়া, চীন, মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার,নেপালে শুধুমাত্র নারীরাই সরকারী ছুটির দিন উপভোগ করেন।

 

মাতৃকথন_৩

ফারিনা মাহমুদ


  • এতবার বললাম বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় লাউ আর কালিজিরা বাদে সব খাওয়া মানা । তারপরেও তুমি মাংস খাও কোন আক্কেলে? মা হওয়া এত্ত সোজা নাকি? এইজন্যই আজকে বাচ্চাটার মাসিপিসি উঠলো!
  • দেখতো, তুমি সরিষার তেল ডলে বাচ্চা রোদে রাখলে আজকে ওর ঠান্ডা লাগতো না !
  • কি গো, রাতে কান্দে ক্যানো ? নিশ্চই পেটে ব্যথা ! কতবার বললাম যে পেটে গরম স্যাক দাও !

বাচ্চা জন্মের পর আশেপাশের মানুষের দেখে মনে হয়, পৃথিবীতে এক মা ছাড়া বাকি সবাই সব জানে ! গোটা প্রেগন্যান্সি তো বটেই, বাচ্চা জন্মের পর সে কাঁদলে, নাভি দেরিতে পড়লে, গায়ে মাসিপিসি উঠলে, হালকা ঠান্ডা লাগলে, একটু বমি করলে, ২ বারের জায়গায় ৩ বার হাগু করলে বা স্বাস্থ্য একটু খারাপ হলে আর রক্ষা নাই । আশপাশ থেকে সমানে শুরু হয় মা-কে দোষারোপ!

এই গ্যাড়াকলে পড়ে পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশনে ভোগা (অল্প বিস্তর সবারই হয় এটা, হরমোনাল চেঞ্জের কারণে) মা টার নিশ্চই ইচ্ছে করে গঙ্গায় ডুবে মরতে ! এক একবার নিজেকে অপরাধী লাগে,মনে হয় আমার ভুলেই বাচ্চাটা কষ্ট পাচ্ছে !

পরো ক্ষণে যখন স্বামীও পাশে না দাঁড়িয়ে দোষারোপ করতে থাকে, তখন মনে হয়, মুগুর দিয়ে মাথায় বাড়ি দেই! কখনো রাগ গিয়ে পড়ে বাচ্চাটার উপর। নিজেকে খুব একা লাগে! অসহায় লাগে! মনে হয়, আমি কি আর কোনদিন ফিরতে পারবো স্বাভাবিক জীবনে ?

বাস্তবতা হচ্ছে আশেপাশের এসব মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেই মাতব্বরি গুলি করেন, সেইগুলি অনেক অভিজ্ঞতার আলোকে হলেও এর যুক্তিযুক্ত ভিত্তি সমসময় থাকে না । উপরন্তু, নতুন মাকে এই নাজুক সময়ে এ ধরনের অযথা দোষারোপ পরিস্থিতি জটিল ও দুর্বোধ্য করে তোলা ছাড়া আর কিছুই করে না !
তার অর্থ এই না যে সাহায্য বা উপদেশ দেয়া যাবে না।

যেটা করা উচিত না তা হচ্ছে আলগা মাতব্বরি, টিটকারী বা এমন কোনভাবে কিছু বলা, যাতে মা টা কষ্ট পায় । যে কোনো সদ্যজাত বাচ্চার মাকে “আলগা” উপদেশ দেবার আগে মাথায় রাখতে হবে

(১)শী ইস দি গড ড্যাম ওয়ান হু ক্যারিড দি চাইল্ড ফর নাইন মান্থস, প্রকৃতি বাচ্চা বহন করার ক্ষমতা যাকে দেয়, বাচ্চা পালার ক্ষমতাও তাকে দিয়ে দেয়। বাচ্চা পেটে থাকতে সে কি আপনার কাছে এসেছিলো আম্লিক্যাল কর্ড ধার করতে? আসে নাই! সে তার শরীরের নির্যাস দিয়ে পরিপূর্ণ একজন মানুষ যেহেতু পৃথিবীতে আনতে পেরেছে, আপনি ছাড়াও তার বাচ্চা বড় হবে, টেনশন নিয়েন না।

(২)একটা নতুন বাচ্চার সাথে মায়ের বন্ডিং টা গড়ে উঠা জরুরি। এই বন্ডিং গড়তে ২ টা জিনিস লাগে “সময়” ও “সহযোগিতা”।

উপদেশ দিয়ে এই বন্ডিং গড়া যায় না । কাজেই আশে পাশের মানুষের উচিত সময় এবং অনুপ্রেরণা দিয়ে সাহায্য করা।

বিজ্ঞান বলে নো টু হিউম্যান আর সেইম। জগতের আর সব মানুষের মতোই বাচ্চার ক্ষেত্রেও কিছু প্যাটার্ন থাকে। রিসার্চের পর রিসার্চ করে এই প্যাটার্ন গুলো তৈরী করেছেন গবেষকরা।
সময়ের প্রবাহে, যা টিকে গেছে, যাচ্ছে, তা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। মনে রাখতে হবে, সব বাচ্চার বেলায় সব দাওয়াই খাটে না, পুরো ব্যাপারটি ট্রায়াল এন্ড এরর কেইস। জন্মের পর পর একটা বাচ্চার আনসেটেল্ড থাকা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।

যেই বাচ্চা পানির ভিতর ভাসতো, টুপ করে তাকে বাতাসের মধ্যে ছেড়ে দিলে তার চুপ করে থাকার কোনো কারণ নাই। আপনারে যদি আমি আতিক্যা ধাক্কা মেরে ডাঙ্গা থেকে পানিতে ফালায়ে দিয়ে বলি, এইটাই এখন থেকে তোর বাসা, আপনি কি করবেন?

মাত্র জন্মানো বাচ্চার কমিউনিকেশনের একটাই উপায়, চিল্লানো। তার এক্সপ্রেশন বলতে ওই চিল্লানো ছাড়া কিছু থাকে না। সুখ দুঃখ আলাদা এক্সপ্রেস করার ক্ষমতা তার নাই। কাজেই সে ট্যা ট্যা করে উঠলেই মনে করার কোনো কারণ নাই তার সর্বাঙ্গে ব্যাথা অথবা সে ক্ষুধায় কাতর। তারে কোলে উঠায়ে ও ও ও…করে ঝাঁকাঝাঁকি করার ও কোনো মানে নাই । অকারনে ঝাঁকাঝাঁকিতে বাচ্চা শুধু বিরক্তই হয় না, তার ক্ষতিও হতে পারে। কারণ ওদের ব্রেন খুব নরম থাকে এবং এই ঝাঁকি ব্রেনে হিট করে।

নতুন পরিস্থিতি, আলো, বাতাসের সাথে খাপ খাওয়াতে বাচ্চার সময় লাগে। এছাড়া বাচ্চার ডাইজেস্টিভ সিস্টেম অপরিপক্ক থাকে বলে ওদের হিকাপ, গ্যাস ইত্যাদি বেশি হয় । ধীরে ধীরে ওদের বড় হবার সাথে সাথে অর্গ্যানগুলোর ফাংশন স্ট্রং হয়।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে বাচ্চা বমি করে, কাঁদে, অস্বস্তিতে ভোগে । আদতে খুব বেশি কিছু করার নাই কারণ এই প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে জগতের সব মানুষই গেছে। একটু আধটু টামি টাইম দেয়া, খাওয়ার পরে বার্প তোলা ছাড়া তেমন কোনো বিজ্ঞান সম্মত সমাধান নাই এর । তাছাড়া নিউবর্ণ বাচ্চার হাগুর সংখ্যা ২৪ ঘন্টায় শূন্য(০) থেকে (১২) পর্যন্ত যে কোনো নম্বর ই হতে পারে ।

বরং ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নেয়া দরকার পানিশূন্যতার সিমটম কি, কারণ এইটা একটা ভয়ংকর জিনিস।

হরমোন রাশ বা বাংলায় মাসিপিসি:

হরমোন রাশ বা বাংলায় মাসিপিসি একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মাতৃগর্ভ থেকে নিয়ে আসা অতিরিক্ত হরমোন বাচ্চা বের করে দেয়। এটাও সময়ের সাথে চলে যায় ।

হরমোন রাশ বা বাংলায় মাসিপিসি হলে কি করণীয়:

শিশুশাস্ত্র মতে, এই সময় তেল জাতীয় কিছু চামড়ায় দেয়া মানা কারণ তেল চামড়ার লোম কূপ বন্ধ করে দেয় এবং বিষয়টা আরো খারাপ হয় । এই সময় বাচ্চাকে পরিচ্ছন্ন রাখা, আরামের কাপড় পরানো, শরীর স্পঞ্জ করে দেয়া আর পারতপক্ষে কোনো লোশন পাউডার না দেয়াই ভালো । খুব প্রয়োজন পড়লে ওয়াটার বেইজ ময়েশ্চারাইজার দেয়া যায় সামান্য, তবে নন ফ্র্যগ্রান্ট হলে ভালো ।

উপরের একটা ব্যাপারের সাথেও মায়ের খাবার দাবারের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই । আমি সিনিয়র পিডিট্রিশিয়নের কাছ থেকে এবং একাধিক সিনিয়র ল্যাকটেশন কনসাল্টেন্ট এর ক্লাসে তাদেরকে প্রশ্ন করেছিলাম এই ব্যাপারে । উত্তরে তারা বলেছিলেন – নেচার ইস ভেরি ফরগিভিং মাই ডিয়ার। ফ্রম দি রিচেস্ট ওম্যান ইন দি প্যালেস আপটু দি পুওরেস্ট ওম্যান বিসাইড দি স্ট্রিট উইল প্রডিউস মিল্ক অফ সিমিলার নিউট্রিশন! ইউর ডায়েট হ্যাস অলমোস্ট নো কন্ট্রিবিউশন টু ইওর বেবি’স ডিস্কমফোর্ট !

তাহলে ব্যাপারগুলি কি শুধুই মিথ ? না, ব্যাপারগুলি অন্যভাবে কিছুটা সত্য । বলি কিভাবে । বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো মায়ের প্রচুর পানি খাওয়া দরকার । ওই যে লাউ এর ঝোল, বা অন্য ঝোল ওয়ালা তরকারী খাওয়ার ব্যাপারটা ওখান থেকেই আসা । আর আফটার বার্থ কনস্টিপেশন থেকে মুক্তি পেতে ফাইবার সম্বৃদ্ধ খাবার খুব জরুরি । শুধু মাংশ খেয়ে বসে থাকলে সেই অর্থে বিপদ আছে।

কাজেই মা অবশ্যই বুঝে খাবেন, কিন্তু সেটা নিজের রিকভারির জন্য । বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছেন বলে বাড়তি পানি খাওয়া ছাড়া খুব কিছু করার নেই!

আর নতুন বাবা-রা, দয়া করে সব কিছুতে মাকে দোষ দেয়া বন্ধ করুন । যে কোনো বিষয় অথেন্টিক সোর্স থেকে জেনে নিন, পরিবার যখন অকারণে দোষ দিচ্ছে মা কে, আপনিই তখন এগিয়ে এসে তার হাত ধরে দাঁড়িয়ে যান । মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে বলে ফেলুন – হুদাই মন খারাপ করো না তো ! বাবু তো দিব্যি ভালো আছে । এখন বলো কি খাবা? চটপটি না ফুচকা? মরিচ কি বাড়ায়ে দিতে বলবো মামা রে?

সংযুক্তি: লেখাটির উদ্দেশ্য বাচ্চা পালনে ঠিক ভুলের সবক দেয়া না, বরং সাপোর্টিং পার্সন দের রোল কি হওয়া উচিত তা বোঝানো। আমি ডাক্তার নই। একা বাচ্চা বড় করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে আমি প্যারেন্টিং ক্লাস, আর্লি চাইল্ডহুড সেন্টার, ল্যাক্টেশন কনসালটেন্ট, পিডিয়েট্রিশিয়ানের কাছ থেকে এসব জেনেছি। আমার জানা বা বোঝায় ভুল থাকতেই পারে। যে কোনো সমস্যায় উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানুষের কাছ থেকে জেনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
‘হ্যাপি প্যারেন্ট হুড অল’!

 

চলে গেলেন না ফেরার দেশে একজন নিখাঁদ প্রচারবিমুখ বিজ্ঞানমনস্ক মানবতাবাদী দেশপ্রেমিক বুদ্ধিগুণ সম্পন্ন চিকিৎসক

ডা. এম এস কবীর জুয়েল


আড়ালে আবডালে থেকে দেশের জন্য, দশের জন্য যিনি নিরবে নিভৃতে দেশের শিশুদের জন্য এমন এক আবিষ্কার করে তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন, তার অসুস্থতা বিষয়ে জাতির কি সামান্যতম সচেতনতা ছিল? আমরা কজন জানতাম এই গুনি মানুষটি যে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে পড়ে রয়েছিলেন। এমন একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানীকে রাষ্ট্র-ই বা কতোটুকু মূল্যায়ন করেছে? জাতীয় সম্পদ এই মানুষটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কি কেউ একবারের জন্যও দেখতে গেছেন, যে জাতি তার গুনী মানুষগুলোকে অবজ্ঞা করবে সে জাতিকোষে গুণীর বীজ রোপিত হবে না। পক্ষান্তরে, চাটুকার, দলান্ধ ভূয়া চটকদার লেখনীর বুদ্ধিজীবিতে ভরে যাবে সমাজ, বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করার মতো আবিষ্কর্তা আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা.রফিকুল ইসলাম ছিলেন একজন প্রকৃত বুদ্ধিজীবী (নির্দলীয়, সার্বজনীন, প্রচারবিমুখী,নির-অহংকারী) আবিষ্কারক যার আবিষ্কারে মুক্তি যুদ্ধের সময় শরনার্থী ক্যম্পে কলেরা জনিত মহামারী থেকে লাখ লাখ বাংলাদেশী পরিত্রাণ পায়। আমরা ক-জন ইনাদের কথা জানি, মিডিয়া কেন আমাদের সন্তানদের এগুলো জানায় না।

যে স্যালাইন খেয়ে এ দেশের কোটি কোটি শিশুর জীবন বেঁচে আছে। সেই শিশুরাই এই মানবতাবাদী নিবেদিত প্রাণ মানুষ-টিকে চিনে না কারণ আমাদের Yelow Electronic Media- গুলো ইনাদের জাতির বিবেক মনে করে না। আমাদের পত্রিকাদি এই সকল বিজ্ঞানীর কাহিনী ও জীবনী প্রকাশ করে না,তারা কল্প লেখক চক্রের কাহিনীকার।

কিন্তু ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যান্সেট (The Lancet) ডা.রফিকুল ইসলামের আবিষ্কৃত ‘খাবার স্যালাইন’কে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বলে আখ্যা দিয়েছিল।

চারিদিকে অলীক বুদ্ধিজীবীদের জয়জয়াকার, আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

ডা. এম এস কবীর জুয়েল

এমবিবিএস, বিসিএস, এম.ফিল(নিউরো-সাইকিয়াট্রি), ডক্টর অফ মেডিসিন(এম.ডি) মনোরোগ
সৌদি বিশেষায়ীত স্বাস্থ্য কমিশন সার্টিফাইড ইন সাইকিয়াট্রি এন্ড সাইকোথেরাপী
ভূতপূর্ব মনোরোগ ও মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, আল জউফ, সৌদি আরব
ভূতপূর্ব সহযোগী অধ্যাপক
এশিয়ান ইনষ্টিটিউট অফ মেডিসিন, সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কেদাহ্, মালয়েশিয়া
ইউনিট প্রধান, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সিলিং ইউনিট, মনোরোগ বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল

 

আমাদের মায়েরা যেন বিস্ময়!

ডা. মারুফ রায়হান খান


আমাদের মায়েরা একেকজন নিপুণ আর্টিস্ট। কতোটুকু চালের সাথে কতোটুকু ডাল, কতোটুকু তেল, কতোটুকু ঘি, কতোটুকু লবণ, কতোটুকু আদা-রসুন-পেঁয়াজ দিলে সেটা একটা পারফেক্ট খিচুড়ি হয়ে যাবে– এটা নিঃসন্দেহে একটা উচ্চমার্গের শিল্প। একটা দুটো না, এমন কতো কতো আইটেমের সবকটাই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানেন তারা কখন কোনটার পরে কী কতোটুকু দিতে হবে! পরিবারের কে কোনটা কীভাবে পছন্দ করে তা যেন তাদের মস্তিষ্কের একেকটা অঞ্চলে আলাদা করে খোদাইকৃত! অথচ তাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই এ বিষয়ে, নেই কোনো টেক্সটবুক যা দেখে দেখে প্র‍্যাক্টিস করবে কেবলমাত্র মা-শ্বাশুড়িদের কাছ থেকে দেখে দেখে শিখে ফেলা প্রচণ্ডমাত্রার মেধাবি না হলে সম্ভব নয়।

আমাদের মায়েরা একেকজন আর্কিটেক্ট। বাসা বানানোর সময়ে আমাদের মায়েরাই ডিজাইন করে দেন কোথায় কোথায় বেড রুম, ড্রয়িং-ডাইনিং-কিচেন, কার রুম কোনটা হবে…

আমাদের মায়েরা একেকজন ফ্যাশান ডিজাইনার। আমাদের ছোট বেলার ড্রেসগুলো তার প্রমাণ!

আমাদের মায়েরা একেকজন ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রোজেক্ট ম্যানেজার! ঘরের কোথায় কোন আসবাবপত্র থাকবে, কোন ঘরের সাজসজ্জা কেমন হবে তা তো আমাদের মায়েরাই নির্ধারণ করে দেন! অনবরত ক্লান্তিহীনভাবে কীভাবে তারা ঘরের সাজসজ্জা মেইন্টেইন করেন, গুছিয়ে রাখেন তীব্র মমতায় তা আমার কাছে এক বিস্ময়!

আমাদের মায়েরা একেকজন কুশলী জাজ! আমরা ভাই-বোনেরা মারামারি করলে, কোনো দুষ্টুমি করলে, কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে কাকে কতোটুকু শাস্তি দিতে হবে–কাকে শুধু সতর্কবাণী দিতে হবে, কাকে চোখ রাঙানি, কাকে বকাঝকা, আর কাকে মৃদু প্রহার করতে হবে তা আমাদের মায়েদের চেয়ে বেশি কে জানে!

আমাদের মায়েরা একেকজন সফল ইভেন্ট ম্যানেজার। বাসায় ছোট-বড় যতো প্রোগ্রামই হোক না কেন দায়িত্ব তো তার কাঁধেই এসে পড়ে! কাদের দাওয়াত করতে হবে, কী কী মেন্যু হবে, বাজারের লিস্ট, রান্না করা, পরিবেশন করা, সব সৌজন্যতা বজায় রাখা–কী নিপুণভাবেই না তারা সবগুলো প্রোগ্রাম সফলভাবে সম্পন্ন করেন।

আমাদের মায়েরা একেকজন কোচ-ট্রেইনার-কাউন্সেলর-সাপোর্টার। তারা আমাদের রুটিন তৈরি করে দেন, আমাদের ডায়েট প্ল্যান করে দেন, আমাদের নৈমিত্তিক কাজগুলো শেখান। কোথায় কেমন আচরণ করতে হবে, কার সাথে কীভাবে কথা বলতে হবে, কী কী করা যাবে, কী কী করা যাবে না সব তো প্রাথমিকভাবে তার কাছ থেকেই শেখা। আমাদের যেকোনো সমস্যায়, যেকোনো সংশয়ে আমাদের মায়েরা হয়ে ওঠেন শ্রেষ্ঠ কাউন্সেলর, অকৃত্রিম সাপোর্টার, অতুলনীয় শুভাকাঙ্ক্ষী।

আমাদের মায়েরা একেকজন বিচক্ষণ ডাক্তার। সন্তান যে অসুস্থ সবার আগে তো তার কাছেই ধরা পড়ে। আমাদের মায়েরা একেকজন অন্তঃপ্রাণ নার্স, কী ক্লান্তিবিহীন নিবিড় যত্নে তারা আমাদের সেবা-শুশ্রূষা করে যান। তারা ওষুধও বটে, অসুস্থ সন্তান মায়ের কাছে এলে পরেই অনেকটা ভালোবোধ করেন।

আমাদের মায়েরা আমাদের পরিবারের স্তম্ভ, তাদেরকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় আমাদের পরিবারগুলোর সমস্ত কার্যক্রম। তারা যেন খুঁটি, খুঁটিতে এক সূতোয় বাঁধনে বেঁধে রাখেন আমাদের পরিবারের সবাইকে। আমাদের মায়েরা একেকজন অলরাউণ্ডার। আমাদের মায়েরা পৃথিবীর একেকজন বিস্ময়। একেকজন গর্ব। একেকজন সুপারউইম্যান।

আমাদের মায়েরা আসলে কী নন!

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

লিসা (শেষ পর্ব)

দ্য স্লেভ


যে বার লিসা মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়ার জন্যে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করল সেটা ছিল মুসলিমদের রমজান মাস। এক সন্ধ্যার অবসরে নিজ ঘরে বসে সে টিভি দেখতে থাকে। সেখানে এক চ্যানেলে সে নারীদের মার্জিত পোশাক, এটি কেন করা উচিৎ, নারীর দেহ কেন পণ্য নয়, তাকে কে সৃষ্টি করেছে, কেন সৃষ্টি করেছে, এখানে তার উদ্দেশ্য কি, তার গন্তব্য কোথায়, পৃথিবীতে তাকে কার বিধান মানতে হবে, ইত্যাদি সম্পর্কে অত্যন্ত চমৎকার একটি বক্তৃতা শোনে।

ওই সন্ধ্যায়ই তার মাথায় হঠাৎ করেই কিছু প্রশ্ন প্রবেশ করে- আমি কে ? আমি এখানে কেন ? আমার উদ্দেশ্য কি ? আমার গন্তব্য কোথায়?  উক্ত টিভি অনুষ্ঠানে যে ইমেইল এ্যাড্রেস লেখা ছিল সে ঠিকানায় সে মেইল করে দেখা করতে চায়। ঘন্টা খানিকের মধ্যেই শেখান থেকে তাকে ফিরতি মেইল করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং পরের দিন সকালে একটি সময় নির্ধারণ করেন। পরদিন লিসা শেইখের সাথে দেখা করেন এবং তার সারা জীবনের যত মৌলিক প্রশ্ন ছিল তা একে একে করতে থাকে। তার মনে হতে থাকে-সে যেন সদ্য ভূমিষ্ট শিশুর মত অজ্ঞ এবং জীবন সম্পর্কে এতকাল তার কোনো জ্ঞানই ছিল না। লিসার অন্ত:দৃষ্টি খুলে যায়। জীবনের সকল রহস্যের জট খুলতে থাকে।
সে রাতে লিসা তার মস্তিষ্কের পুরো সক্ষমতা নিয়ে গোটা বিশ্ব সৃষ্টি এবং তার মালিককে খুঁজতে থাকে। এখানে তার নিজের অবস্থান কোথায় তা জানার চেষ্টা করতে থাকে। যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি সকল বিষয়ে ওয়াকিবহাল, আর নিশ্চয়ই লিসাকেও তিনি অবলোকন করছেন। লিসার মস্তিষ্কে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতির সৃষ্টি হয় এবং তা ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত দেহাভ্যন্তরে। ঠিক সেসময় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার আয়োজক এবং স্থানীয় বিশেষ কমিটির পক্ষ থেকে ফোন কল আসে। লিসা ব্যস্ত আছি,পরে কথা বলব বলেই ফোনের লাইন কেটে দেয়। পরদিন সকালে লিসা দুটি ফোন কল করে। দুটিই যুগান্তকরী। সে সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজনকারীদেরকে ফোন করে বলে আমার পক্ষে মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগীতায় গমন করা সম্ভব নয়। আমি আপনাদের প্রতিষ্ঠান এবং এ সংক্রান্ত সকল বিষয় প্রত্যাখ্যান করলাম। আপনারা অন্য কাউকে নির্বাচিত করুন। আমি আপনাদের ফোনকল পেতে চাই না। আমি মডেলিংকে বিদায় জানালাম।
লিসা শেইখ বা স্কলারকে ফোন করে বলেন-আমি আপনার সাথে এখুনি দেখা করতে চাই। শেইখ তার নিজের একটি জরুরী কাজ বাতিল করে তাকে তৎক্ষণিক আসতে বললেন।

লিসা : আমি আল্লাহকে চিনেছি, কিন্তু তিনি কি আমাকে গ্রহন করবেন ? আমি তো পাপী !
শেখ: তিনি তো এমনই মহা পরাক্রমশালী ও দয়ালু স্রষ্টা, যিনি ক্ষমা করতেই পছন্দ করেন। বান্দা পাহাড় পরিমান পাপ নিয়ে উপস্থিত হলে তিনি পাহাড় পরিমান ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হন।
লিসা: আমি সেই একক স্রষ্টা আল্লাহর উপরই ঈমান আনলাম। আসহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াহদাহু লা শারিক্কালা, ওয়া আসহাদু আন্না মুহাম্মদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু। লিসা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল, যেন তার সারা জীবনের সমস্ত পাপ, ক্ষোভ, ব্যথা,বেদনা সবকিছু গলে দূর হয়ে গেল।
শেখ তাকে ইসলাম শেখানোর জন্যে ভিডিও, বই এবং কয়েকজন উত্তম মুসলিমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। লিসা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে ইসলাম শিখতে লাগল। তার ছোট পোশাকের স্থলে এখন সর্বাঙ্গ ঢাকা পোশাক শোভা পাচ্ছে। প্রথমবার নিজেকে তার অনেক দামী কিছু মনে হচ্ছে, যার শরীর, চিন্তা চেতনা মোটেও সস্তা নয়। এক মহা পরাক্রমশালী স্রষ্টার অনুগত বান্দা হওয়ার মধ্যে যে অস্বাভাবিক মানুসিক শান্তি রয়েছে তা সে পূর্ণমাত্রায় উপভোগ করতে থাকল। যার দিন , রাত কাটত সেরা মডেল হওয়ার স্বপ্নে ও শিক্ষায়,অনুশীলনে, তার সমস্ত সময় কাটে ইসলাম চর্চায়। রাতারাতি সে মুসলিমদের জন্যে একটি উত্তম মডেলে পরিনত হয় এবং বহু নওমুসলিমের জন্যে আদর্শ হয়ে ওঠে।

ইসলাম গ্রহনের মাত্র ২ দিন পর, একদিন লিসা ঘরের ফ্লোরে পড়ে যায়। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং ডাক্তার তার ব্রেইন ক্যান্সার নিশ্চিত করে। ডাক্তার জানায়- তার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ, খুব শীঘ্রই সে মারা যাবে, হয়ত কয়েক মাস টিকবে।হাসপাতাল থেকে লিসা শেইখকে চিঠি লিখে:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ

প্রিয় শেইখ,

আমি ২২ বছর আল্লাহকে ভুলে ছিলাম, আমি তাকে পেলাম মাত্র দু সপ্তাহ হল। আর যখন আমি তাকে পেলাম, তখন তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন। হে শেইখ ! আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান। আমি আল্লাহর সাথে মিলিত হতে উদগ্রীব। শেইখ ! আমি সারাজীবন আমার পিতা-মাতাকে খুঁজেছি। আমি তাদেরকে কোথাও পাইনি। যদি আপনি তাদেরকে খুঁজে পান, তাহলে বলবেন তাদের কন্যা মহা ভাগ্যবান, সে আল্লাহর কাছে চলে গেছে। আমার পিতা-মাতা যেন আল্লাহকে চিনতে পারে। আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত করুন ! আমার জন্যে দোয়া করুন। আল্লাহ যেন আমাকে ক্ষমা করেন এবং সম্মানিত করেন !

এর কয়েকদিন পর লিসা মৃত্যু বরণ করেন।
***”আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি আর তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে”। (বি:দ্র:একটি সত্য ঘটনার উপর নির্ভর করে গল্পটা।)

লিসা-১

লিসা-২

 

 

লিসা-২

দ্য স্লেভ


এই ঘটনায় ডেভিডের সাবেক প্রেমিকা তার আরও কাছাকাছি চলে আসে। যদিও তারা শুধুমাত্র বন্ধুই ছিল কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতি তাদেরকে একে অন্যের বেশী কাছাকাছি নিয়ে আসে। ডেভিড পুরোনো প্রেমকে রিনিউ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু সমস্যা বাধে তার ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে। ডেভিডের প্রেমিকার পছন্দ নয় তার মেয়েকে। সে চায়, তার আর ডেভিডের মধ্যে যেন অন্য কেউ না থাকে। ডেভিড প্রেমিকার প্রতি নিবেদিত প্রাণ। তারা আলাদা হয়ে সময় উপভোগ করতে চায়। ডেভিড তার প্রেমকে একান্তে উপভোগ করাকেই নিজের জন্যে স্থির করে। তাছাড়া তার চাকুরী জীবন ছোট্ট এই মেয়েকে লালন পালন করার পক্ষে যথেষ্ট অন্তরায়। ডেভিড কন্যা লিসাকে আশ্রমে দিয়ে আসা হয়। সেখানে সে লালিত হতে থাকে।

ডেভিড প্রতি রবীবার তার কন্যাকে দেখতে যেত। সেদিন লিসা সকাল থেকেই বিভিন্ন পরিকল্পনা করত তার পিতার সাথে কি কি বিষয়ে গল্প করবে। পূর্বের সপ্তাহে কি কি বলতে ভুলে গেছে সেটাও সে নির্দিষ্ট করে রাখে। বিদায়ের সময় পিতার জন্যে একটি ছোট গিফট বক্স সে প্রস্তুত করে রাখে। সেখানে কিছু চকলেট,পি-নাট,ক্যান্ডী আর একটা হাতে লেখা চিঠি থাকে। সেসব চিঠিতে সে তার বাবাকে কতটা ভালবাসে সেটা জানায়। পিতাও তার জন্যে কিছু উপহার সামগ্রী নিয়ে যায়। ঘন্টা খানেক গল্প করে পিতা বিদায় গ্রহন করে। এই এক ঘন্টা সময়ের জন্যে লিসা সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করে এবং পিতাকে নিয়ে নানান পরিকল্পনায় মেতে ওঠে। কখনও কখনও তার ইচ্ছা হয় পিতার হাত ধরে লেকের ধারের সুন্দর রাস্তায় হাটতে। কখনও কল্পনা করে ব্লু মাউন্টেন যাবে,সেখানে সুন্দর সুন্দর পাহাড় আর গাছ গাছালিতে ঘেরা জঙ্গল আছে শুনেছে। আছে চমৎকার ঝর্না ,থ্রি সিস্টার পাহাড় আরও কত কি ! একটা দিন পিতার সাথে সেখানে কাটাতে পারার মত মজা আর কিছুই হতে পারেনা।
তার পিতা খুব একটা মজার নয় কিন্তু বেরসিকও নয়। কথা বলার সময় দু একটি কৌতুককর কথাও বলে। সেসব শুনতে লিসার খুব ভাল লাগে। লিসা তার পিতাকে আরও অনেক সময়ের জন্যে চায়, কিন্তু তার পিতা অনেক ব্যস্ত মানুষ। তাকে প্রত্যেকদিন অফিসে যেতে হয়, আরও কত কি! লিসার বয়স ১১ বছর হলেও তার অনেক জ্ঞান বুদ্ধি।

সে জানে পিতা তার মাকে পছন্দ করে না,তাই পিতার সামনে কখনও মায়ের কথা উচ্চারণ করে না,পাছে পিতা কষ্ট পেয়ে যদি তাকে দেখতে না আসে!

সপ্তাহের ওই এক ঘন্টা সে কোনো ভাবেই হারাতে চায়না। প্রথম দিকে আশ্রমে থাকতে তার কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে সে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এভাবেই চলতে থাকে সময়। স্কুলে লিসা অসম্ভব মেধার স্বাক্ষর রাখে। প্রত্যেকটি রেজাল্ট তার ভাল হয়। পড়াশুনার পাশাপাশি সে ভাল ছবি আঁকতে পারে,সুই সুতো দিয়ে কাপুড়ের উপর নানান নক্সা তৈরী করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়।তার পিতাও তার প্রশংসা করেছে। সে খুব গোছালো একটি মেয়ে।

লিসার বয়স যখন ১৩ তখন তার পিতার স্ত্রীর(প্রেমিকার) গর্ভ থেকে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। এর কিছুদিন পর থেকে তার পিতা প্রতি দুই সপ্তাহে একবার তাকে দেখতে আসে এবং কিছু দিনের মধ্যে সেটা মাসে এক বারে গিয়ে দাড়ায়। লিসার পিতা তাকে বলেছে সে অনেক ব্যস্ত এবং নতুন বাচ্চাকে অনেক সময় দিতে হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে আসা সম্ভব নয়। লিসা কখনও পিতাকে জোর করেনি,
শুধু একবার বলেছিল আগামী রবিবারে আসবে,স্কুলে একটি গানের অনুষ্ঠান আছে ? জবাবে পিতা বলেছিল-আমার অন্য একটি কাজ আছে। ওহ আচ্ছা, বলে লিসা চুপ হয়ে যায়। আবার বলে- আমার ছোট্ট বোনটাকে দেখতে নিয়ে যাবে? জবাবে পিতা বলে,আমার স্ত্রী এটা পছন্দ করেনা। সে রাতে লিসা অনেকক্ষণ কেঁদে ঘুমাতে যায় কিন্তু এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলে না। সে খুব চাপা স্বভাবের।

এক রবিবারে লিসা তার পিতার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকে কিন্তু তার পিতা আর আসে না। সন্ধ্যা হয়ে গেল কিন্তু তার পিতার কোনো খবর নেই। সে রাতে সে ঘুমাতে পারল না। অজানা আশঙ্কায় সে শিউরে উঠতে থাকল। তার পিতার কোনো ক্ষতি হয়নি তো ! পরদিন লিসার নামে একটি চিঠি আসে। সেখানে তার পিতা লিখেছে-আমাকে চাকুরীর প্রয়োজনে নাইজেরিয়া যেতে হচ্ছে। সেখানে অনেক দিন থাকতে হবে। তুমি ভাল থেকো।

লিসার পিতা নতুন স্ত্রী,সন্তান নিয়ে নাইজেরিয়া চলে যায়। এর পর বছরের পর বছর কাটতে থাকে। কিন্তু লিসার জন্যে তার পিতার পক্ষ থেকে একটি চিঠিও আসে না। পিতার ভবিষ্যৎ আগমন উপলক্ষ্যে লিসার গিফটের বাক্স জমতে জমতে স্তুপ হয়ে উঠতে থাকে। মাকে অনেক ছোটবেলায় হারানোর কারনে মায়ের স্মৃতি তার তেমন মনে পড়েনা,কিন্তু পিতাকে সে ভুলতে পারেনা,যদিও তার জীবনে পিতার অবদান মাত্র কিছু ঘন্টার।

কলেজে উঠে লিসা তার মেধার স্বাক্ষর রাখল। সকলের চাইতে ভাল রেজাল্ট করল সে। প্রত্যেকটা শিক্ষক তার প্রশংসা করে। লিসা অসম্ভব সুন্দরী একটি মেয়ে। সহপাঠীদের অনেকে তার পেছনে ঘুরঘুর করে বটে কিন্তু সে কারো দিকে ফিরেও তাকায় না,কাউকে পাত্তা দেয়না। এটা সে অহংকার বশে করে তা নয়,বরং ফ্রি মিক্সিং তার ভাল লাগে না।

একদিন সে তার বান্ধবীর সাথে একটি ফ্যাশন শো দেখতে যায়,আর সেখানে কিছু আয়োজকের নজরে পড়ে যায়। তাদেরই একজন বিখ্যাত মডেল তৈরী ও বিজ্ঞাপণ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্ণধর। বিভিন্নভাবে চাপাচাপির পর লিসা র্যাম্প মডেলিং শিখতে রাজি হয়। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই লিসা তার রূপ এবং গুন দিয়ে এ জগৎ মাতিয়ে ফেলে। স্থানীয় প্রতিযোগীতায় প্রথম হবার পর সে কিছু কালের মধ্যেই মিস অস্ট্রেলিয়া এবং মিস নিউজিল্যান্ড খেতাব প্রাপ্ত হয়। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। তার অর্থ বিত্ত, নাম যশ ব্যাপক বাড়তে থাকে।

এতদিন পরও তার পিতার কাছ থেকে কোনো চিঠি আসেনি। তার পিতা তাকে ঠিকানাও জানায়নি। পিতাকে সে খুঁজেছে কিন্তু কোনো হদিস মেলেনি। তার মাকেও সে অনেক খুঁজেছে কিন্তু তার ব্যাপারে সে সুনির্দিষ্ট কিছু মনে করতে পারেনা,ফলে তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

অর্থ,সম্পদ,মর্যাদা থাকার পরও তার কোথাও যেন একটা বাধা ছিল। সে তার জীবন নিয়ে নানান রকম চিন্তা করত। সমাজ,মানুষের আচরণ,পারিপার্শ্বিকতা সব কিছু নিয়ে সে গভীরভাবে চিন্তাযুক্ত ছিল। এভাবে ২২টি বছর পার হয়।

(একটা সত্য ঘটনাকে অবলম্বন করে গল্পটি। অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এক গল্প। ইচ্ছা হলে পড়তে পারেন। )

চলবে….

 

স্বপ্ন পূরনের অদম্য ইচ্ছা

তানিয়া ইসলাম ইতি


গত তিন বছর আগে স্কুল ফেরত এক বাচ্চা মেয়ের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। মেয়েটা বসে বসে কি যেন খুঁজছিল আর কাঁদতে ছিল। তারপরও গল্প আছে অনেক। ওর বাসায় আমি মাঝে মাঝে যাই।

আজকে রাস্তা ধরে হাটছিলাম তখন মেয়েটার সাথে হঠাৎ দেখা হল। আমাকে দেখে সামনে আসল।

বলল: আপু কেমন আছেন?

বললাম : ভালো তবে একটু অসুস্থ। তুমি? আর বাসার সবাই কেমন আছে?

আমার মনে হল, মেয়েটা কিছু একটা বলতে চাইছে। কিন্তু আমাকে খালি পায়ে বা জুতা হাতে দেখে বলতে পারছে না। বুঝতে পারলাম, আমি যে কতটা অসুস্থ তা ও বুঝতে পেরেছে।
যাইহোক, আবার বললাম: তোমার মা কেমন আছে?
তখন বলল: মায়ের অনেক অসুখ ৩ দিন দরে। কি হইছে বুজতাছি না। মা ৩ দিন দরে কাজে যায় না।

আমি  চলো: তোমাদের বাসায় যাই। এটা বলছি আর ভাবছি মনে মনে বস্তিতে এই অসুখ নিয়ে যাবো কিনা বা তাছাড়া বাসায় শুনলে বকবে। তারপরেও গেলাম। যখন আমি ওদের বাসায় উপস্থিত হই ওর মায়ের মুখে একটা শুকনো হাসি দেখলাম। অতিরিক্ত কাজ করার কারণে এ্যাজমা আর হাইপ্রেসার বেড়ে গিয়েছে। তিনটি সন্তানের পড়াশুনার খরচ আবার বস্তির ঘর ভাড়ার বাস্তবতা।

মনে হল যেন আমি ওনাদের অনেক দিনের পরিচিত। ভাল লাগল। তবে যাওয়ার পর আরও একটা দৃশ্য যা মন কেড়ে নিয়েছিল।

দেখলাম: ওর বড় ভাই ওর ছোট বোনকে অংক করাচ্ছে বর্গ মূলের। ওর ভাই এবার এইচ এস সি দিবে। ছোট বোন ক্লাস সেভেনে আর যে মেয়েটার সাথে আসলাম ও এবার ক্লাস নাইনে পড়ে। ওর বাবা মারা গেছে মা গার্মেন্টসে কাজ করে। ওর একটা মামা আছে যিনি ওদের মাঝে মাঝে পড়ালেখার খরচ দেয়।

আমি নিরবে দেখছি, ওর ভাই ওর বোনকে অংক করাচ্ছে কিন্তু বোন পারছে না। ক্যালকুলেটর নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। বারবার হিসাব করছে উত্তর মিলছে না। ভাই আরো বকছে, আর বলছে প্রশ্ন পড় ভালো করে। এই জন্যই পারস না একটা প্রশ্ন ৪/৫ বার পড়বি। তারপরেও ভাই, বোন কে বলছে না ওদের ক্যালকুলেটর টা ভাল না। আমি সামনে বলে। বার বার ভাই বলছে হাতে হিসাব কর। তখন আমার আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না। ভাই কমার্স এর ছাত্র ওর ক্যালকুলেটার টাই সব। ওরা কোন টিচারের এর কাছেও পড়ে না। তারপরেও রেজাল্ট অনেক ভাল ওদের।

প্রায় আধ ঘন্টা আমি এক অনাবিল আত্মসম্মানবোধ সম্পূর্ণ স্বপ্নময় বালক বালিকার সাথে ছিলাম। মানুষ বড় হয় তার স্বপ্নের সমান ছোট ছোট ভাবনা সাথে নিয়ে, ছোট ছোট স্বপ্ন আর ছোট ছোট কাজের সমষ্টিই জীবন। প্রতিটি চিন্তা, প্রতিটি স্বপ্ন প্রভাবিত করে জীবনকে সুন্দর করতে।

ওদের দেখলে মনে হয় বাচাঁর জন্য কি লাগে? শুধুমাত্র একটা সুন্দর সপ্ন লাগে। আর সেই স্বপ্ন পূরনের জন্য অদম্য ইচ্ছা শক্তিটাই যথেষ্ট। ছবি:স্কুল অফ হিউম্যানিটি।

 

লিসা (পর্ব-১)

দ্য স্লেভ


একটি বিশাল তেল কোম্পানির ঊর্ধ্ব পদস্থ প্রকৌশলী হিসেবে ডেভিড, ইরাক গমন করেন আশির দশকের মাঝামাঝি। নতুন দেশ, ভিন্ন সাংস্কৃতিতে হঠাৎ মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। আগা-গোড়া ভদ্রলোক ডেভিড ধীরে ধীরে মুসলিমদের সাংস্কৃতি বুঝে ফেলে এবং তাদের সাথে মিশতে তার তেমন সমস্যা হয় না।

কলিগদের অনেকে বিবাহিত এবং স্বপরিবারে বসবাস করছে। তার নিজেরও বয়স হয়েছে বিয়ে করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সে। সে সময় ইন্টারনেট না থাকাতে অস্ট্রেলিয়ার গার্লফ্রেন্ডের সাথে তার খুব একটা যোগাযোগ হত না। প্রথম দিকে টেলিফোনে বেশ কথা হত,পরে আস্তে আস্তে কথা বলার সময় সংক্ষিপ্ত হতে থাকে। এ নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ ছিল না। তবে একদা তারা চুটিয়ে প্রেম করেছে।

একই ডিপার্টমেন্টে কর্মরত ইরাকী মেয়ে সাবিনা নিজেকে বেশ স্মার্ট হিসেবেই উপস্থাপিত করে। মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও সে তার পোশাক বা মানুসিকতায় মুসলিমদের আদর্শ লালন না করায় ডেভিড বেশ কৌতূহলী হয়ে ওঠে।

একদিন লাঞ্চে উভয়ে টেবিলে সামনাসামনি বসে টুকটাক দু একটি কথা বলে। কিছুদিন পর উভয়ের লাঞ্চ টাইম বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠল। উভয়ে উভয়ের ব্যক্তিত্ব দ্বারা প্রভাবিত হল। ডেভিড জানতে পারল সাবিনা মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলেও চিন্তা চেতনায় নাস্তিক। ডেভিড স্রষ্টা সংক্রান্ত বিষয়ে তেমন চিন্তা ভাবনা করেনি তবে পারিবারিকভাবে ক্যাথলিক।

জীবনে কখনই চার্চে গমন করেনি,তবে স্রষ্টা একজন আছে সে ব্যাপারে তার দ্বিমত নেই। আবার কেউ যদি যুক্তি খাটিয়ে স্রষ্টাকে ভ্যানিশ করে দেয় তাতেও তার কিছু এসে যায় না। ফলে সাবিনার নাস্তিকতা তার ভেতর কোনো প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে না।

দিন যায়,মাস যায় তারা একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। বিষয়টি ডেভিড তার প্রেমিকাকে টেলিফোনে জানায় এবং তার প্রেমিকা তাকে শুভকামনা জানায়। ডেভিড অস্ট্রেলিয়ার প্রেমিকাকে ভুলে সাবিনার প্রেমে হাবুডুবু খায় এবং বিয়ের সিদ্ধান্তে উপনিত হয়।

একসময় সাবিনা তার পরিবারের অমতে বিয়ে করে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করতে থাকে। উভয়ের চাকুরী জীবন ও পারিবারিক জীবন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই চলতে থাকে। কয়েক বছরের মধ্যে তাদের ঘরে আসে একটি সুশ্রী কন্যা সন্তান। সে ইরাকের আবহাওয়া কয়েক বছর লালিত পালিত হওয়ার পর স্ব-পরিবারে তারা অস্ট্রেলিয়া চলে আসে।

এখানেই তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে। অস্ট্রেলিয়াতে ডেভিডের পূর্বের প্রেমিকা তার সাথে নিয়মিত দেখা করতে থাকে এবং তাকে নিয়ে ডেভিড ডিনার করা, ঘুরতে যাওয়া, শপিংয়ে যাওয়া ইত্যাদি করতে থাকে। যেহেতু তাদের সাংস্কৃতি এটাকে সমর্থন করে তাই খুবই স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে তারা একাজ গুলি করতে থাকে।

পাশাপাশি ডেভিড পরিবারের সাথেও সুন্দর সময় অতিবাহিত করতে থাকে। পরিবার তার কাছে আগে,তবে সাবেক প্রেমিকাও তার পর নয়। উভয়টিই সে স্বাভাবিকভাবে চালাতে থাকে। কিন্তু বিষয়টি সাবিনার পছন্দ হয়না। যদিও ডেভিড তাকে পছন্দ করে,কিন্তু বিষয়টি সে জানার পর থেকে কেন যেন মনে হতে থাকে তার ভালবাসায় ভাগাভাগি হচ্ছে এবং তাকে কোনো ভাবে ঠকানো হচ্ছে।

ডেভিড তার প্রেমিকার সকল বিষয় স্ত্রীর সাথে শেয়ার করে। তাকে সে প্রেমিকা নয় বরং একজন ভাল বন্ধু ভাবে এমনটাই বলে।

কিন্তু সাবিনার এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়। সে নাস্তিক হলেও অন্য একটি সাংস্কৃতির মধ্যে লালিত হয়েছে। ফলে তার পারিবার,সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও ভেতরে এক ধরনের আবেগ রয়ে গেছে। তার পারিবারিক চিন্তা,বিষয় বিশ্লেষনের ধারা সবকিছুর মধ্যেই পূর্বের সমাজের আদর্শিক প্রভাব কিছুটা রয়ে গেছে। এবং সে এটাকে বিলিন করতে পারেনা। ফলে তার স্বামী যতই স্বচ্ছতার সাথে তার সাবেক প্রেমিকার বিষয় উপস্থাপন করতে থাকে,সাবিনা ততই সন্দেহের মধ্যে পড়তে থাকে। এবং এক পর্যায়ে তার ভেতর ক্রোধের জন্ম হয়।

শীঘ্রই বিষয়টি তাদের মানুসিকভাবে অশান্তির কারন হয়ে ওঠে। এক সময় ব্যাপক বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে এবং সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তে উপনিত হয়। মামলা কোর্টে চলে যায়। তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। সাবিনা তার সন্তানকে ফেলে নিজ দেশ ইরাকে ফিরে যায়।

সেখানে সে কিছু দিনের মধ্যে বিয়ে করে তার মত জীবন যাপন করতে থাকে। (একটা সত্য ঘটনাকে অবলম্বন করে গল্পটি। অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এক গল্প। ইচ্ছা হলে পড়তে পারেন। )

চলবে….

 

চিকিৎসা দিতে ভিনদেশী বিশেষজ্ঞ আসছে, প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে,খেলাপি ঋন কমাতে বিদেশী বিশেষজ্ঞ নয় কেন?

ডা. এম এস কবীর জুয়েল


বিদেশে যেয়ে চিকিৎসা এক রকম Status Symbol হয়ে গেছে, অনেকেই আবার ইহাকে এক ধরনের বাতিকে পরিণত করেছেন, সাধারণ মানুষের এই প্রবণতাকে আমরা থামাতে পারছি না, ফলে লাখ লাখ ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে, সম্প্রতি নাগরিক পরিষদ নামক একটি সংগঠন মানব বন্ধন করেছে যার বিষয় ছিল- ‘চিকিৎসা নিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ না যাওয়ার দাবি’।

আসুন আলোচনায় আসা যাক, ব্যাপার-টি কতোখানি গুরুত্ববহ, মাহাথীর মোহাম্মদ এ পর্যন্ত কোনদিন বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাননি। তিনি যখন প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলেন, সেই সময় মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নাজুক ছিলো, উনি অসুস্থতাজনিত কারণে শয্যাশায়ী হলেন, তাকে সবাই অন্তত পাশের দেশ সিংগাপুর যেতে অনুরোধ করলেন, কিন্তু তিনি নির্বিঘ্নে না করলেন এবং যুক্তি দেখালেন, উনি যদি এ রোগের জন্য বাহিরে যেয়ে চিকিৎসা নেন, মালয়েশিয়ায় ইহার প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে অনেক দেরী হয়ে যাবে। তাহলে গরীব মানুষগুলো আর কক্ষনো-ই এ ধরনের রোগের চিকিৎসা পাবেন না কারন তারা কথায় কথায় সিংগাপুর যেতে পারবেন না।

সুতরাং মালয়েশিয়ায় তিনি সেই সময় থেকেই ‘চিকিৎসা সেবা উন্নতকরণ প্রকল্প’ নিলেন, সফল ও হলেন। আমাদের অনেকেই এখন মালয়েশিয়ায় চিকিৎসা করতে যান, অন্যান্য দেশের মানুষ ও যান, আমাদের দেশে একবার ভূটানের এক মন্ত্রী চিকিৎসা নিতে এলেন, আমাদের দেশে কি চিকিৎসা ব্যবস্থা খারাপ। মোটেও না। আমাদের চিকিৎসক-রা কি নিম্ন মানের! আমি কক্ষনো-ই তা মনে করি না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি-টাই যতো প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে। এ ধরনের নেতিবাচক চিন্তা চেতনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র প্রধান-দের নজীর দেখাতে হবে। দেশাত্মবোধের নজীর, যা মাহাথীর দেখিয়েছেন, ইহাই প্রকৃত দেশপ্রেম। তখনি অন্য দেশের মানুষও আসবে। কথায় কথায় দু-দিন পর পর ভিন দেশে যেয়ে চিকিৎসা নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ ও পাশের দেশের রাম-সাম-যদু-মদু ডাক্তারদের এদেশে অবাধে রোগী দেখতে দেয়া কক্ষনো কি দেশপ্রেমিক দেশাচার-এর লক্ষণ।

তাহলে, আমরা কেন তা করছি?

আমদের দেশে তো চিকিৎসাক্ষেত্র ছাড়াও অন্যান্য জায়গায় আরো অনেক বেশী অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, কই প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে তো একজন বিদেশী বিশেষজ্ঞ আনতে দেখলাম না, সুষ্ঠু নির্বাচন সৃষ্টিতে সাহায্য নিতে আমরা ভারতের প্রখ্যাত নির্বাচন কমিশনার ‘টি.এন সেশান’ সাহেবকে তো ডাকতে পারি।

আইনের শাসন আরো সুদৃঢ় করতে মিসেস ‘কিরণ বেদী’-কে ডাকতে পারি।

খেলাপি ঋন কমাতে একজন প্রখ্যাত বিদেশী ব্যাংকার কেন আনছি না। ড.ইউনুস সাহেবকে যদি দায়িত্ব না দেওয়া যায়, সেক্ষেত্রে অমত্য সেনদের এনেও তো চেষ্টা করা যায়।

এ দেশে যা করা আবশ্যক তা না করে অপ্রয়োজনীয় ও কম গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে অধিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তাতে কারো কারো ব্যক্তিগত সুবিধে হয়, বেশ কিছু পয়সা পকেটে আসে কিন্তু গরীব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণ অধরা-ই থেকে যায়।

ডা. এম এস কবীর জুয়েল
এমবিবিএস, বিসিএস, এম.ফিল(নিউরো-সাইকিয়াট্রি), ডক্টর অফ মেডিসিন(এম.ডি) মনোরোগ
সৌদি বিশেষায়ীত স্বাস্থ্য কমিশন সার্টিফাইড ইন সাইকিয়াট্রি এন্ড সাইকোথেরাপী
ভূতপূর্ব মনোরোগ ও মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, আল জউফ, সৌদি আরব
ভূতপূর্ব সহযোগী অধ্যাপক
এশিয়ান ইনষ্টিটিউট অফ মেডিসিন, সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কেদাহ্, মালয়েশিয়া
ইউনিট প্রধান, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সিলিং ইউনিট, মনোরোগ বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল