banner

সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: May 16, 2024

 

জননী

সার্জিল খান


হাশরের ময়দান দেখতে কেমন? এটা কি হাশরের ময়দান? চারপাশটা এমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে কেন? কেমন যেন লালচে মাটির দেয়াল, মনে হচ্ছে যেন আগুনের ফুলকি। মাথার উপরে কালো অন্ধকার আকাশ। সেইসাথে বৃষ্টিও হচ্ছে। আশেপাশে অনেক মানুষ আছে মনে হচ্ছে কিন্তু কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। হাশরের ময়দানের সাথে পুল সিরাতের সম্পর্ক আছে। ঐ তো সুতার মতো কি যেন একটা। দূর থেকে কেউ পার হয়ে এদিকটায় আসছে। তারমানে কি শামিয়া পুল সিরাত পার হয়ে এসে পড়েছে কোনমতে, এটাই তাহলে হাশরের ময়দান? চারদিকে কেমন যেন ভয়ংকর অট্টহাসির শব্দ। কে হাসছে হাসিটা? সোহান না? সোহান এভাবে হাসবে কেন? এটাই কি সেই জায়গা, যেখানে বাবা তার সন্তানকে চিনবে না, মা তার সন্তানকে, সন্তান তার বাবা, মা, ভাই, বোন কাউকেই চিনবে না। সবাই সবাইকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। তাহলে শামিয়া সোহানকে নিয়ে ভাবছে কেন? আরে ঐ তো একটা বাচ্চা, হামাগুড়ি দিয়ে কাছে এগিয়ে আসছে। যতই এগিয়ে আসছে ততই যেন মনে হচ্ছে বাচ্চাটা বড় হচ্ছে। এই বাচ্চাটার জন্যও তার মায়া হচ্ছে কেন? কে এই বাচ্চা? তাহলে কি এটা হাশরের ময়দান না? নাকি হাশরের ময়দান?

ঘুম ভেঙ্গে গেল। শামিয়া দপদপ করে ঘামছে। প্রেশার বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে। সবুজ রঙয়ের ডিম লাইটের আলোয় চারপাশটা দেখে নিলো সে। সোহান এখনো ঘুমোচ্ছে। শামিয়াকেই উঠে পানি খেতে যেতে হবে। বিছানার পাশের টেবিলে পানি রাখা যায় না, ঘুমের ঘোরে হাত লেগে গ্লাস পড়ে ভেঙ্গে যায়।

আলতো করে শামিয়া তার পেটে হাত রাখলো। নিদির এখন সাত মাস চলছে। আর অল্প কদিন। লোকে বলে দশমাস দশদিন নাকি বাচ্চাদের পেটে ধরতে হয়। বড় আপার তো নয়মাসের মাথাতেই হয়ে গেল। শামিয়ার কবে হবে কে জানে?

তেষ্টা খুব পেয়েছে। মনে হচ্ছে যেন পানি না খেতে পারলে কিছুক্ষণের মধ্যেই সে জ্ঞান হারাবে। বিছানা থেকে নামতে গিয়ে হঠাৎই চমকে উঠলো শামিয়া। শক্ত একটা হাত শামিয়ার বাম হাতটা চেপে ধরেছে। ওহ! সোহানেরই হাত। ও কি তাহলে ঘুমোয়নি?

-পানি খাবে?
-হু।
-দাঁড়াও এনে দিচ্ছি।
-না থাক, আমি আনতে পারব।
-যা বলছি তা করতে দাও। তুমি ফুল রেস্টে থাকো।

শামিয়া ডিম লাইটের আবছা আলোয় সোহানের মুখটা দেখে নিলো। কি মায়া মায়া ভাব। মনে হয় যেন ধরে গাল দুটো ছুয়ে দেই। মায়াকাড়া চেহারার লোকেদের দেখলে দ্বিধা কাজ করে। তাদের কথার বিপক্ষে কিছু বলার ক্ষমতা কেন যেন ভেতর থেকে আসে না। মনে হয় মানুষটা কি অভিমান করবে না রাগ করবে?

শামিয়া চুপ করে বিছানায় বসে আছে। সোহান পানি আনতে গেলো। অন্ধকারে লোকটা কি এই বাড়ির সবকিছু চিনে উঠতে পারবে? সোহান মাঝে মাঝে শ্বশুড় বাড়িতে আসে।

ঘন ঘন কোন বাড়িতে ঘুমের ঘোরে চলাফেরা করলে রুম, সুইচ বোর্ড, বাথরুম সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যায় না। শামিয়ার ছোট ভাই সাইফ একবার ভুল করে গ্রামে মামা বাড়িতে বাথরুমের বদলে রান্নাঘরে টয়লেট সেরে ফেলেছিল। নানী সে কি রাগ?

-হ্যাহ, এত্তবড় বুইড়া ছ্যামড়া, এহনো ঘরে মুতে। ছ্যা ছ্যা ছ্যা! যেই পাতে খাইলি, সেই পাতেই হাগলি?
-বড়টা কোথায় করলাম, ছোটটাই তো করলাম, তাও তো ঘুমের ঘোরে।
-নিশা পানি ধরছস হারামজাদা? টাল হস ক্যা রে?

নানী কথা বলতেন সুর করে। শুনলেই কেমন যেন হাসি পেত শামিয়ার। নানীর ঘরে চার মেয়ে সাত ছেলে ছিল। প্রত্যেকেই এখন প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু হায়, নানী কারোরই কিছু দেখে যেতে পারেননি। সেই আমলের লোকেরা একসাথে এত সন্তান নিতো কিভাবে শামিয়া ভাবে। নিদিকে পেটে ধরার পর থেকেই শামিয়ার যে দুশ্চিন্তা বেড়েছে, সেই সময়ে নানী-দাদীরা কিভাবে এতজনকে বছরের পর বছর পেটে ধরে রাখার মানসিক শক্তি পেত আল্লাহ জানেন।

‘ধরো’ বলে সোহান গ্লাস এগিয়ে দেয়। শামিয়া বাধ্য মেয়ের মতো গ্লাস বাড়িয়ে পানি খেতে লাগলো। সোহান ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আহা! কি দরকার ছিলো? শামিয়া ভাবে। সোহান সপ্তাহে একদিনই কেবল আসে। গত সপ্তাহে শামিয়া শ্বশুড় বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে এসেছে। বাড়ির প্রথম মেয়ের প্রথম সন্তান নাকি বাবার বাড়িতে থেকেই হওয়া নিয়ম। এসব অদ্ভুত নিয়ম কে বানায় কে জানে? তবে শামিয়ারও শ্বশুড় বাড়িতে থাকতে ভালো লাগে না। কিন্তু কি আর করা, মেয়েদের বিয়ের পর শ্বশুড় বাড়িই তো আসল বাড়ি। গত শুক্রবার বাবার বাড়িতে আসার সময়েও শ্বাশুড়ী মা বলছিলেন,

-যাচ্ছো কেন? এখানে কি আদর যত্ন কম হচ্ছে?
-ছি! আম্মা কি বলেন? হিয়াও তো আসলো, ওরও তো বাচ্চা হবে। বাবার বাড়িতেই মেয়েদের প্রথম বাচ্চা হওয়ার নিয়ম কি না?

শ্বাশুড়ী মা আর কথা বলেননি। মুখ কালো হয়ে গিয়েছিলো। কোন এক অজানা কারণে তার শ্বাশুড়ী মা তাকে সহ্য করতে পারে না। না সোহান, শামিয়া প্রেম করে বিয়ে করেছিলো, না শামিয়া তার সঙ্গে বেয়াদবি করে। কেন এই অপছন্দ শামিয়া জানে না।

শামিয়ার মনে হয় এসব কথা সারাদিনই সে সোহানের সাথে বলে। ইচ্ছা করে সারারাত জেগে কথা বলতে। কিন্তু কেন যেন সোহানের সামনে গেলেই শামিয়া চুপসে যায়। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হয় না। তাদের সন্তান এখন তার পেটে, এতবছর সংসার করলো, তারপরেও শামিয়ার তাকে দেখলে কেন যেন সব কথা হারিয়ে যায়।

কেন এমন হয়? প্রচণ্ড ভালোবাসার মাঝে কি কোন দুর্বলতা আছে? যা মানুষকে বোবা করে দেয়?

গল্পঃ জননী
গ্রন্থঃ পাণ্ডুলিপি
প্রকাশকালঃ একুশে বইমেলা ২০১৬
প্রকাশনীঃ বর্ষাদুপুর
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১২
গল্প সংখ্যাঃ ২৫
লেখকের পরিচয়:লেখক/প্রকাশক/সম্পাদক/সংগঠক।

 

নারীদের উপর নারী নেত্রীর হামলা

নারী সংবাদ


কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রীদের মারধর ও এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয়ার অ‌ভি‌যোগ উঠে‌ছে কবি সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান ইশার বিরু‌দ্ধে। এ ঘটনার পরপরই ‌গোটা ক্যাম্পাস উত্তেজনা ছ‌ড়ি‌য়ে প‌ড়ে। মঙ্গলবার দিবাগত রা‌তে ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের (ঢা‌বি) ক‌বি সু‌ফিয়া কামাল হ‌লে এ ঘটনা ঘ‌টে।

আহত মোর‌শেদা আক্তার ‌বিশ্ববিদ্যাল‌য়ের উ‌দ্ভিদ‌ বিজ্ঞান বিভা‌গের ৪র্থ ব‌র্ষের শিক্ষার্থী। এ সময় আরো পাঁচ শিক্ষার্থী‌কে মারধর করা হ‌য়ে‌ছে ব‌লে হল সূ‌ত্রে জানা যায়। মারধ‌রের শিকার হওয়া অন্য ছাত্রীরা হ‌লেন ইসলা‌মিক স্টা‌ডিজ বিভা‌গের শার‌মিন সুলতানা তমা, তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভা‌গের আ‌ফিফা আক্তার রিভু, ভূতত্ত্ব বিভাগের ঋতু ও স্বর্ণা।

হ‌লের আবা‌সিক ছাত্রীরা জানান, সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশা মোরশেদার পায়ের রগ কেটে দিয়েছেন। তাকে জরুরি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া ছাত্রীদের পাঠানো ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, হলের সিঁড়ি ও রুমের মেঝেতে রক্তের ফোঁটা জমে আছে।

এ ঘটনায় হলের ছাত্রীরা ক্ষিপ্ত হলে ওই ছাত্রলীগ নেত্রীর রুমের দরজা বন্ধ করে আটক থাকলে তাকে বের করে আনার চেষ্টা করা হয়। ঘটনার সময় হলের আবাসিক শিক্ষক উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেও প‌রি‌স্থি‌তি ক্রমেই অস্বাভা‌বিক অবস্থা ধারণ ক‌রে।

এদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোল‌নকারীদের ওপর ছাত্রলীগ নেত্রীদের হামলা খবর ছ‌ড়িয়ে পড়‌লে বিশ্ববিদ্যাল‌য়ের বি‌ভিন্ন হ‌লের শিক্ষার্থীরাও বি‌ক্ষোভে ফে‌টে প‌ড়ে। প‌রে তারা হল নেতা‌দের প্রতি‌রোধ উপেক্ষা ক‌রে সু‌ফিয়া কামাল হ‌লের সাম‌নে এসে জ‌ড়ো হয়। এ সময় তারা ছাত্রলীগ নেত্রী ইশার কর্মকাণ্ড‌কে ক্রি‌মিনাল অ্যাক্ট আখ্যা দি‌য়ে তা‌কে বিশ্ববিদ্যালয়ে থে‌কে ব‌হিষ্কা‌র এবং ভুক্ত‌ভোগী ছাত্রীর রগকাটার অপরা‌ধে তার শা‌স্তি নি‌শ্চি‌তের দা‌বি জানান।

এরই প্রে‌ক্ষাপটে ইশাকে বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ বহিষ্কার থে‌কে ব‌হিষ্কান করা হয়।
ইশা‌কে ব‌হিষ্কা‌রের বিষ‌য়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর তার সাথে যারা জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পরে ছাত্রলীগ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
সুত্র: নয়াদিগন্ত, ছবি:ফেসবুুক