All posts by Oporajita

 

রমজান মাসের ফজিলত – ১


বিশেষ প্রতিবেদন


রমজান মাসের আগমনে মুসলিমগণ আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন। আনন্দ প্রকাশ করাই স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : বল, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়ায়। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক। তারা যা সঞ্চয় করে এটা তার চেয়ে উত্তম। [সূরা ইউনুস : ৫৮]

পার্থিব কোন সম্পদের সাথে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না, তা হবে এক ধরনের অবাস্তব কল্পনা। যখন রমজানের আগমন হত তখন রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিশয় আনন্দিত হতেন, তার সাহাবাদের বলতেন : তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে।  এরপর তিনি এ মাসের কিছু ফজিলত বর্ণনা করে বলতেন : আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা হয়। এ মাসে রয়েছে একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল। [ বর্ণনায় : নাসায়ী ]রমজান মাসের ফজিলত – ১

রমজান মাসের আগমনে মুসলিমগণ আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন। আনন্দ প্রকাশ করাই স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : বল, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়ায়। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক। তারা যা সঞ্চয় করে এটা তার চেয়ে উত্তম। [সূরা ইউনুস : ৫৮]

পার্থিব কোন সম্পদের সাথে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না, তা হবে এক ধরনের অবাস্তব কল্পনা। যখন রমজানের আগমন হত তখন রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিশয় আনন্দিত হতেন, তার সাহাবাদের বলতেন : তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে।  এরপর তিনি এ মাসের কিছু ফজিলত বর্ণনা করে বলতেন : আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা হয়। এ মাসে রয়েছে একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল। [ বর্ণনায় : নাসায়ী ]

আমাদের কর্তব্য : আল্লাহর এ অনুগ্রহের মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করা, এ মাসের ফজিলত ও তাৎপর্য অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া ও ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত থাকা।

এ মাসের যে সকল ফজিলত রয়েছে তা হল :

এক. এ মাসের সাথে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকনের সম্পর্ক রয়েছে ; আর তা হলে সিয়াম পালন।
হজ যেমন জিলহজ মাসের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে সে মাসের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে এমনি সিয়াম রমজান মাসে হওয়ার কারণে এ মাসের মর্যাদা বেড়ে গেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : হে মোমিনগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর-যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। [সূরা বাকারা : ১৮৩]

রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ইসলাম যে পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত তার একটি হল সিয়াম পালন। এ সিয়াম জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম ; যেমন হাদিসে এসেছে : যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনল, সালাত কায়েম করল, জাকাত আদায় করল, সিয়াম পালন করল রমজান মাসে, আল্লাহ তাআলার কর্তব্য হল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো। [ বোখারি ]

সুত্র: কুরআনের আলো ডট কম।

 

গণপরিবহনকে নারীবান্ধব করলে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ আরো বাড়বে


নারী সংবাদ


বাসা থেকে বেরিয়েছেন আটটা দশ মিনিটে। সোয়া আটটায় এসে পৌঁছেছেন কমলাপুর বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে। আর এখন বাজে পৌনে নয়টা। এতক্ষণ পর্যন্ত প্রায় ২৫ টির মত তার রুটের গাড়ি চলে গেলেও উঠা সম্ভব হয়নি মনিকার। যাবেন কাওরান বাজার। আর বেশি দেরী হলে তখন অফিসে যাওয়া-না যাওয়া সমান। কারণ আধঘন্টা লেইট হলে অফিসের রেজিস্ট্রি খাতায় নামের পাশে লাল কালি পড়ে যাবে। উপায় না দেখে এখন সিএনজি চালিত অটো রিকশার (সিএনজি নামে পরিচিত বাহন) দিকে এগোয় মনিকা। অন্যসময়ে সে সিএনজির দিকে ভুলেও যায়না। কারণ এই সময় সিএনজির ভাড়া আকাশ ছোঁয়া। আর সেই ভাড়া দেওয়ার মত অবস্থা মনিকার নেই। আর তাই এমন সময় সিএনজিই একমাত্র ভরসা। এতে বেশ কিছু টাকা গেলেও উপায় নেই।
মনিকা বলেন, এটা প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। এভাবে রিকশা ভাড়া দিয়ে যেতে গেলে বেতনের একটা মোটা অংকই গাড়ী ভাড়ার পেছনে ব্যয় করে ফেলতে হয়। আর সকাল বেলা এমন অবস্থা হয় যে আমার অন্য কোন উপায় থাকে না। আর এসময় অফিসগামী মানুষের পাশাপাশি থাকে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়ে আর তাদের অভিভাবকরা। আবার কোন কোন দিন গাড়ীতে উঠতে পারলেও সেখানে পড়তে হয় ঝামেলায়। সিটতো পাওয়াই যায় না। আবার অনেকসময় পুরুষ বসে থাকে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে। তাদের উঠতে বললে কেউ কেউ উঠে গেলেও প্রায়ই সময়ই ঝগড়া করতে হয়। আবার অনেকে বাজে মন্তব্যও করে।
সায়মা ইসলাম নামের স্কুলগামী এক ছাত্রীর মা জানান, প্রতিদিনই যুদ্ধ করে বাসে উঠতে হয়। আর আমাদের সেই সামর্থ্য নাই যে প্রতিদিন সিএনজি রিকশা বা স্কুলের গাড়ী ব্যবহার করব। তাই এই পাবলিক বাসই আমাদের ভরসা। মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আমি চলে যাই অফিসে।
উপরের ঘটনা দুটি শুধু এই দুই নারীর ক্ষেত্রেই নয়, গণপরিবহন ব্যবহারকারী নারীদের নিত্যসঙ্গী এই বিড়ম্বনা। অনেক নারী যাত্রীর অভিযোগ বাসে উঠার সময় যেমন বিড়ম্বনার শিকার হন তেমনি বাসের ভেতরে যাত্রীদের দ্বারাও অনেক সময় হয়রানির শিকার হন তারা। আবার নারী আসনে পুরুষ বসে থাকলে তাদের উঠাতে গিয়েও নানা ধরণের বাজে মন্তব্যের শিকার হতে হয় তাদের।
তবে এবার এই চিত্র পাল্টানোর আশা করছেন নারীরা। কারণ এখন থেকে তাদের নির্ধারিত আসনের আইনী সুরক্ষা পাবেন তারা। নারী আসনে পুরুষ বসলে বা বসতে দিলে জেল জরিমানার আইনে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৭ এর খসড়ায় বলা হয়েছে, কেউ যদি বাসে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত আসনে বসেন বা বসতে দেয়া হয় তবে তাকে এক মাসের জেল অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে।
নতুন এই আইনকে স্বাগত জানিয়েছেন নারীর অধিকার আদায়ে কাজ করার বিভিন্ন সংস্থা, মানবাধিকারকর্মী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। মানবিধকারকর্মী এডভোকেট মনোয়ারা হক বলেন, এই আইনের বিষয়ে প্রচারণা, মানুষকে সচেতন করা এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কিছু অভিযান চালিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া গেলে গণপরিবহণ আরও নারীবান্ধব হবে।প্রচলিত অনেক আইন রয়েছে যা নারীর সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট। গণপরিবহণে হেল্প লাইনগুলোর নাম্বার টানিয়ে দেয়া উচিত। আর নারীদেরও প্রতিবাদ করতে হবে, কারণ জরিপে আমরা দেখেছি হয়রানির ঘটনায় অর্ধেক নারীই কোন প্রতিবাদ করেন না।
একশনএইড’র এক গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকা শহরে গণপরিবহণে যাতায়াত করেন মাত্র ২১ শতাংশ নারী। আবার এসব নারীর অধিকাংশই (৪৭ শতাংশ) চলাচল করেন সিএনজি রিকশায়, আর ১৯ শতাংশ নারীর হেঁটে যাতায়ত করেন। কারণ হিসেবে গবেষণায় বলা হয়েছে গণপরিবহণে হয়রানির ভয়ে নারীরা এই বিকল্প পরিবহণ ব্যবহার করছেন। সিএনজি অটোরিক্সায় যাতায়াত করছেন সাত শতাংশ নারী। কাজেই গণপরিবহণকে আমরা নারীবান্ধব করতে পারলে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ আরো বাড়বে।
এছাড়াও বর্তমানে অ্যাপস ভিত্তিক যাতায়াত সেবা চালু হওয়ায় নারীরা কিছুটা স্বত্ত্বি পেয়েছেন বলে মনে করেন এই নারী মানবাধিকার কর্মী। তিনি বলেন, এখন অনেক নারীই এসব অ্যাপস ব্যবহার করে যাতায়াত করছেন, যা সত্যিই আশাব্যাঞ্জক। তবে এসব সেবার মান আরো বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কতৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত তারা দেড় লাখ চালককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যেখানে যাত্রীদের প্রতি বিশেষ করে নারীদের প্রতি আচরণের বিষয়টিও তাদের প্রশিক্ষণে আলোচনা করা হয়। (বাসস)

 

শিশু ধর্ষণ : কিছু ভয়ঙ্কর তথ্য


নারী সংবাদ


চলতি বছরে প্রথম চার মাসে (২৯ এপ্রিল পর্যন্ত) ২৯০টি শিশু ধর্ষিত হয়েছে। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে যথাক্রমে ৫২, ৬০, ৫২টি করে মোট ১৬৪টি শিশু ধর্ষিত হয়েছে। আর শুধু এপ্রিল মাসেই ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১৫টি শিশু। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ৭০টির বেশি শশু ধর্ষিত হয়েছে, যা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বিএসএএফের তথ্য অনুযায়ী গত ৪ মাসে সর্বনিম্ন আড়াই বছর বয়সের শিশুও ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের (বিএসএএফ) এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ১৫টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত শিশু অধিকার লঙ্ঘনের সংবাদ পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

বিএসএএফের তথ্যে আরো বলা হয়েছে, গত বছরের চেয়ে এ বছর (প্রথম চার মাসে) শিশু ধর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪%। উল্লেখ্য, সব ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশ পায় না। তাই প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে বলে বিএসএএফ মনে করে।

গত বেশ কিছুদিন ধরে গণমাধ্যমে শিশু ধর্ষণের নানা মর্মান্তিক চিত্র উঠে আসছে। ধারাবাহিকভাবে এসব ঘটনা ঘটতে থাকায় এবং এসব ঘটনার নৃশংসতায় নাগরিক হিসেবে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এসব ঘটনা আমাদের সমাজে শিশুদের অসহায় অবস্থার সার্বিক চিত্রটাই তুলে ধরছে।

বিএসএএফের মতে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধির কারণ মূলত, অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া, দুর্বল চার্জশিট, শিশুর পক্ষে সাক্ষী-সাবুদ না পাওয়া, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে দরিদ্র অভিভাবকের আসামির সাথে আপস করতে বাধ্য হওয়া এবং সর্বোপরি সামাজিক মূল্যবোধের ব্যাপক অবক্ষয় ইত্যাদি। এসব প্রতিহত করতে আরো ত্বরিত হস্তক্ষেপ এবং জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ ও দফতরগুলোকে অনুরোধ জানানো হয় বিএসএএফের পক্ষ থেকে। তারা বলেন, শিশু যৌন নির্যাতন বন্ধে দ্রুত বিচারের আওতায় শিশু নির্যাতনের মামলাগুলো নিতে হবে। প্রচলিত আইন সংশোধন করে শিশু ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়ে সেই সাথে রায় দ্রুতগতিতে কার্যকর করতে হবে। প্রয়োজনে আইনের সংশোধন করতে হবে। বিষয়টি এখন আর কোনোভাবেই উপেক্ষা করার পর্যায়ে নেই। শিশু ধর্ষণের অপরাধ জামিন অযোগ্য করা খুবই জরুরি।

তারা আশা প্রকাশ করে বলেন, সরকার অতি দ্রুত এসব ঘটনার প্রকৃতি ও পুনরাবৃত্তিকে বিবেচনায় রেখে বিদ্যমান সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলোকে পর্যালোচনা করবে এবং প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সব এজেন্সিগুলোকে সে অনুযায়ী নির্দেশনা দেবে। প্রতিটি শিশু যেন নিরাপদে তার শৈশব কাটাতে পারে, সে পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রশাসন ও সর্বস্তরের জনসাধারণের সচেতন ও অধিকতর দায়িত্বশীল আচরণ এখন সময়ের দাবি। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত

 

শিশুর যত্নে প্যারেন্টিং


প্যারেন্টিং


বাসায় বাবা বা মা কেউ যদি কাঁচের জিনিস ভেঙ্গে ফেলে রাগ প্রকাশ করেন। তাহলে তা বাচ্চাও শিখে ফেলে। সুতরাং বাবা মা যা করে তা বাচ্চারাও শেখে। তাই প্রতিটি কাজই সতর্কতার সাথে বাচ্চাদের সামনে করতে হবে। আসুন দেখি কিছু কৌশল:

কথা বলবে কম

মন দিয়ে সত্যিকার অর্থ্যেই সন্তানকে বুঝতে চান। কথা শুনুন। আপনি সৎভাবেই তাকে বুঝতে চেষ্টা করুন। এমনকি নিজেকে আপনার সঙ্গে মেলে নাও নেয়, তবুই আপনি মহমর্মিতা দিয়ে শুনবেন। আপনি তার হৃদয়কে বুঝতে পারবেন, আপনি তার ক্ষতটা বুঝতে পারবেন।

ভুল করলে মাফ করা

বাচ্চারা যখন ভুল করলে মাফ করে দেওয়া। ভবিষ্যৎ এটা নিয়ে খোটা না দেওয়া। আমরা মূল্যায়ন করি (ইভালুয়েশন)। আমরা কারও কথা শুনে তার সঙ্গে একমত হই, নয়তো দ্বিমত পোষণ করি। একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।

তৈরি করতে হবে ভালবাসাময় শান্তি পূর্ণ পরিবেশ

ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে কোনো বিষয়ে কথা বলতে গেলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আছে কিনা খেয়াল করুণ, সেই ছেলে বা মেয়েটি কি আপনার সঙ্গে খোলামনে নিজেকে প্রকাশ করতে পারছে? সে মুখ দিয়ে যা বলছে তার উপর ভিত্তি করেই আপনি তাকে মূল্যায়ন করছেন, নাকি ভালোবেসে বুঝার চেষ্টা করছেন।

শর্তহীন ভাবে ভালবাসো

“ভালোবাসা’ অভ্যাসটি খুবই কার্যকরী এবং ক্ষমতাশালী। আপনার সন্তান মানুষের সঙ্গে সমস্যায় পড়লে একা সমাধান করা শিখুক, মতের অমিল হলে নিজের মত প্রকাশ করুক, সকল প্রকার সমস্যা মোকাবেলা করা শিখুক, এমন অসংখ্য বিষয় আছে যেগুলো আপনার সন্তান দক্ষতার সঙ্গে সমাধান করতে পারবে। তাহলে শর্তহীন ভালোবাসুন।

সাহায্য  করতে উৎসাহ দিন

বাসায় ছোটখাটো কাজে সাহায্য করা একত্রে। প্রত্যেক বাচ্চার কোন না কোন দক্ষতা আছে তা কাজে লাগিয়ে ঘরের কাজ করতে দিন। প্রশংসা করুন ঘরের কাজে সহযোগিতা করলে। ভালোভাবে কাজটা বুঝিয়ে।

 

টিপস দাম্পত্য কাউন্সেলিং

 


দাম্পত্য


দাম্পত্য জীবনে সুন্দর সম্পর্ক নিজে থেকেই তৈরি হয় না, সেটি তৈরি করতে হয়। তাই আপনাকেও সেটি তৈরি করতে হবে। কর্মক্ষেত্রেই যদি আপনার সবটুকু কর্মক্ষমতা নিঃশেষ করে ফেলেন, তাহলে আপনার দাম্পত্য জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ক্ষমা করুন
সুন্দর বৈবাহিক সম্পর্কের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা প্রয়োজন। এমনটি করতে পারলে, আপনি আপনার ত্যাগের চেয়ে ভোগই বেশি করতে পারবেন। ক্ষমা কোন সাময়িক গুণ নয়; বরং ক্ষমা একটি চলমান প্রক্রিয়ার নাম।

কঠিন সময়ে পাশে থাকুন

দাম্পত্য জীবনের কঠিন সময়গুলো আপনাকে একজন ভালো মানুষ করে তুলবে। বিয়ে অনেকটা রকেট উৎক্ষেপণের মতো। যখন তাতে মাধ্যাকর্ষণ টান পূর্ণ থাকে, তখন ফ্লাইট চলতে খুব সামান্য জ্বালানীর প্রয়োজন হয়।

কৃতজ্ঞতা বোধ প্রকাশ করুন

দাম্পত্য জীবনে সাফল্য পেতে হলে, অতীতে কী হয়েছে তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে, ভবিষ্যতের করণীয় নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কৃতজ্ঞতা বোধকে নিজের ভেতর চেপে রাখবেন না।

সঙ্গীকে প্রশ্ন করুন

বাস্তবতার খাতিরে মাঝে মাঝে নীরবতা পালন করা একটি অসাধারন উপায়। আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর কাছে আপনার সর্বোত্তম প্রশ্নগুলোর একটি হতে পারে, “আমি কীভাবে তোমাকে আরও বেশি ভালোবাসতে পারি?”

যৌক্তিক অনুমান

যৌক্তিক অনুমানের ভিত্তিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। তবে পদক্ষেপ নেওয়ার পূর্বে অনুমানকে যাচাই করা। মনে রাখবেন অহেতুক অনুমান করা থেকে বিরত থাকুন তাহলে দাম্পত্য জীবনকে চিরসবুজ করে রাখা যায়।

সুত্র: ছবি ও তথ্য ইন্টারনেট। অনুবাদ অংশ।

 

মাতৃগর্ভে যমজ শিশুর মারামারি!


অন্যান্য


দুই ছোট্ট সদস্য, দেখতে অবিকল এক, বাড়িতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে৷ কে না চায় বলুন তো? যমজ সন্তান পছন্দ করেন না এমন মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম৷ বড় হলেও দু’জনের মধ্যে কখনো ঝগড়া আবার কখনো ভাব৷ এই দেখতে দেখতে বেশ সময় কেটে যায়৷ ভাইবোনেদের খুনসুটি ছাড়া আর কি-ই বা আছে? এত কাণ্ড তো নয় ঘটবে পৃথিবীতে আসার পর৷ কিন্তু জন্ম নেয়ার আগে অর্থাৎ গর্ভস্থ অবস্থায় ঝগড়াঝাটি কিংবা মারামারি করছে তারা, এটা শুনেছেন কখনো? শোনেননি তো৷ না শুনলেও, এটাই সত্যি৷ কারণ আলট্রাসাউন্ড রিপোর্টেই ধরা পড়েছে সেই দৃশ্য৷ পরিষ্কার দেখা গেছে যমজ দুই সন্তান পেটের ভিতরে বক্সিং করছে৷ ওই ভিডিওটি নেটদুনিয়ায় ভাইরাল৷ তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা৷ অবাক হয়ে মা-দাদিরা একটাই প্রশ্ন করছেন, এ-ও সম্ভব?

বছর আঠাশের মিস্টার তাও বর্তমানে দুই মেয়ে চেরি ও স্ট্রবেরির বাবা৷ সদ্যই তার স্ত্রীর চার মাসের সন্তানসম্ভবা অবস্থার অবাক করা এক কাহিনী নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়৷ চীনের ইয়ানচুয়ান প্রদেশের একটি হাসপাতালে তার স্ত্রীর আলট্রাসাউন্ড হচ্ছিল৷ অধীর আগ্রহে স্ক্রিনের দিকে চোখ রেখেছিলেন হবু মা-বাবা৷ বাচ্চাদের অবস্থা জানতে নজর রেখেছিলেন চিকিৎসকও৷ আর সেই সময়ে অবাক করা মুহূর্তের সাক্ষী রইলেন সবাই৷ ভিডিওতে তারা দেখলেন পেটের ভিতরে বক্সিং করছে দু’জনে৷ একজন থামছে তো আরেকজন শুরু করছে৷ কেউই হার মানার পাত্রী নয়৷ ফুটফুটে কন্যাসন্তানদের জন্মের পরই এই ভিডিও সোশ্যাল সাইটে আপলোড করেন ওই চিকিৎসক৷ তারপর যদিও তা ভাইরাল হতে বেশি সময় নেয়নি৷ চীনা একটি দৈনিকেও প্রকাশিত হয়েছে এমন আশ্চর্য ঘটনার কথা৷

এই ভিডিও যে-ই দেখছেন সেই অবাক হয়েছেন৷ অনেকেই বলছেন, জন্মের আগে এমন বক্সিং করলেও, দুই বোনের নাকি দারুণ ভাবও হবে৷ আবার নেটিজেনদের একাংশ তো গর্ভস্থ ওই দুই সন্তানের মধ্যে কে বড় আর কে ছোট, তাও ওই আলট্রাসাউন্ড রিপোর্ট দেখেই নির্ধারণ করতে শুরু করেছেন৷ তাদের দাবি, যে বক্সিংয়ে জিতে গিয়েছে সেই বড়৷ চেরি-স্ট্রবেরিকে নিয়ে বেজায় খুশি তাদের বাবা-মা৷

তাও দম্পতির দাবি, বক্সিং করতে যেমন দেখা গেছে৷ তেমনই আবার জানুয়ারির আলট্রাসাউন্ড রিপোর্টে দু’জনকে জড়িয়ে থাকার ছবিও দেখেছেন বাবা-মা৷ জন্মানোর পর যদিও চেরি-স্ট্রবেরির বেজায় ভাব৷ কান্না, খিদে, ঘুম-সবই নাকি এখন একসঙ্গে করতেই বেশি ভালোবাসে দুই খুদে৷ সুত্র: নয়া দিগন্ত। ছবিসুত্র: চেরি ও স্ট্রবেরি – সংগৃহীত।

 

রাস্তার ধারের মজাদার কাঁচা আম ভর্তা


ঘরকন্যা


বাজারে এখন কাঁচা আম প্রচুর দেখা যায়। আর কাঁচা আমের ভর্তা এখন রাস্তায় পাওয়া যায়! ঘরেরও মজাদার কাঁচা আমের ভর্তা বানানো যায়।
আসুন দেখি কিভাবে?

উপকরণঃ
কাঁচা আম ৩ টি,
লেবুর চাল ২টি
কাসুন্দি বাটা ২ টেবিল চামচ,
শুকনা মরিচ গুড়া ১/২ টি,
কাঁচা মরিচ ১/৩ টি,
লবণ পরিমাণ মত,
বিট লবণ পরিমাণ মত,
চিনি পরিমাণ মত,
সরিষার তেল ১ টেবিল চামচ,

কাঁচা আম ভর্তা বানানোর প্রনালীঃ
আমগুলো খোসা ফেলে ধুয়ে নিন। এবার আম গুলোকে পাতলা স্লাইস করে কেটে
কাসুন্দি দিয়ে রাখুন। পরে লবন দিয়ে কচলে ধুয়ে ফেলতে হবে বা ৫/১০ মিনিট লবন মেখে রেখে দিতে পারেন মজা লাগবে। আমগুলো র পানি চেপে ফেলে সব উপকরণ লবণ, গুড়া মরিচ, কাঁচা মরিচ এবং সরিষা বাটা, এবং চিনি দিয়ে মাখি। টক, ঝাল, মিষ্টি কাঁচা আম ভর্তা।

 

পুরনো ডায়রী


কানিজ ফাতিমা


সকালে হিথ্রো থেকে সরাসরি স্টার্টফোর্ড এ এলাম। পিকাডিলীতে সেন্ট্রাল লাইন ধরে স্টার্টফোর্ডএ পৌছুলাম। দুপুরে রেস্ট নিয়ে বিকালের শেষে বের হলাম এক ভাইয়ের বাসার উদ্দেশ্য, অলগেট ইস্টে।

ক’বছর আগে দেখা লন্ডন যেন একইরকম আছে; ঢাকার মত দ্রুত চেহারা বদলে যায়নি। ২৫ নম্বর বাস ধরে যেতে হবে অলগেটে। পিট পিট বৃষ্টি হচ্ছে , সাথে লন্ডনের বিখ্যাত বা কুখ্যাত বাতাস ঠান্ডাকে আরো কয়েকগুনে কষ্টকর করে তুলেছে। বাস স্টপেজে দাড়িয়ে আছি- আমার সালোয়ার কামিজের উপর গলা তোলা ফুলহাতা সোয়েটার, তার ওপর জিন্সের ওভার কোট, মাথা স্কার্ফে ভালো করে মোড়ানো – তারপরও মনে হচ্ছে ঠান্ডা বাতাস নাক দিয়ে ঢুকে রক্ত হিম করে দিচ্ছে। টেম্পারেচর কত হবে? জানিনা। তবে আরামদায়ক নয় নিশ্চিত। সামনে থেকে একটা মেয়ে যাচ্ছে – পরনে ফুল হাতা টপস, শর্ট স্কার্ট আর দু’পায়ে কালো ফিনফিনে মুজা। প্রায় পুরো পা দু’টোই মোজার ভেতরেও দেখা যাচ্ছে।

এত ঠান্ডায় এত পাতলা মোজা ? আমি উত্সুক হলাম। তবে কি আমার সহ্য শক্তি কম? বোঝার জন্য দাড়িয়ে দাড়িয়ে অন্য সবার পোশাকও লক্ষ্য করাতে শুরু করলাম। এক জোড়া তরুণ তরুনী আসছে। ছেলেটা জ্যাকেট, জিন্সের প্যান্ট ,পায়ে কেডস আর মাথায় হ্যাট পরেছে। মনে হলো তার পোশাকের পুরুত্ব আর আমার পোশাকের পুরুত্ব কাছাকাছি , পরিধিও প্রায় সমান। পাশের মেয়েটি স্লীভ লেস (হাত হীন) আটসাট একটা মাত্র গেঞ্জি পরেছে যা শুরু হয়েছে বুকের মাঝামাঝি থেকে – অর্থাত গলা , কাধ আর অর্ধেক বুক উন্মুক্ত- শীতে আমার শরীরে কাপুনী লাগলো যেন।

বাস এসে গেছে- বাসে উঠে আবারও পর্যবেক্ষণ শুরু করলাম। একটা কালো মেয়ে আমার সামনে – উপরের পাতলা জামাটা নাভীর দুই ইঞ্চি উপরে শেষ হয়েছে আর জিন্সের প্যান্টটা শুরু হয়েছে কোমরের দুই ইঞ্চি নীচে। উত্সুক দৃষ্টি আরো প্রশস্ত করলাম – মাথা ঘুরিয়ে আমার শেষ বিকেলের সব সহযাত্রীকে দেখার চেষ্টা করছি। প্রায় প্রতিটা মেয়েরই পোশাকের অবস্থা একই রকম- হয় পা জোড়া খোলা নয়তো কাধ আর বুকের উপরের অংশ।অন্যদিকে প্রায় প্রতিটা ছেলেই টিশার্টএর উপরে জ্যাকেট পরেছে, নীচে ফুলপ্যান্ট আর কেডস বা জুতা। এই আবহাওয়াকে আমি যেভাবে নিয়েছি লন্ডনের তরুণ ছেলেরাও সেভাবে নিয়েছে। কিন্তু মেয়েরা নিজের প্রায় অর্ধেক শরীর উন্মুক্ত রেখেছে আর ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে।

আমি আর ছেলেরা আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পড়েছি – নিজেদের সুবিধা আর আরাম খুঁজে নিয়েছি। মেয়েগুলো কেন কষ্ট করছে? মেয়ে গুলো কি ফ্যাশনের কাছে অসহায় ? ঠান্ডায় নিজের শরীর-মন যা চাইছে সেটুকু করার স্বাধীনতা থেকেও বঞ্চিত?

কে স্বাধীন? আমি নাকি ওই মেয়েরা – যারা বাধ্য হচ্ছে এই ঠান্ডার মধ্যেও পরুষের আগ্রহ ধরে রাখার জন্য নিজেদের শরীর খোলা রাখছে? ওদের পরাধীনতা কার কাছে, কিসের কাছে?

 

অন্তরে জাগাই জ্ঞানো পিপাসা……২


আফরোজা হাসান


রাহমা বলল, আর তোর রেজাল্ট আমাকে খুব বেশি বিমর্ষ করে। প্রতিবার এভাবে টেনেটুনে কোন মতে পাশ করলে হবে? কেন তুই মন দিয়ে একটু পড়াশোনা করিস না বল তো? আমাদের পুরো ফ্যামেলিতে তোর মত এত্তো খারাপ রেজাল্ট আর কেউ করেনি কোনদিন।

সাহিলের হাস্যেজ্জল চেহারাটি সাথে সাথে আঁধারে ঢেকে গেলো। ভাইয়ের চেহারার এই পরিবর্তন রাহমা চোখ এড়িয়ে গেলো না। সাহিল ঘুরে চলে যাচ্ছিলো রাহমা টেনে ধরে বলল, সরি ভাইয়া আমি তোকে কষ্ট দেবার জন্য এমন বলিনি।

সাহিল অভিমানী কন্ঠে বলল, আমার আসলে এই পরিবারে জন্মগ্রহণ করাটাই ঠিক হয়নি।

ছিঃ সাহিল এটা কি ধরণের কথা? তুই জানিস এমন কথা বললে আল্লাহ নারাজ হন?

ক্ষোভের স্বরে সাহিল বলল, তোমরা সবাই মিলে আমাকে বাধ্য করেছো এমন বলতে। যেখানেই যাই সবাই সারাক্ষণ বিভিন্ন ভাবে আকার ইঙ্গিতে একথাই মনে করিয়ে দেবার চেষ্টায় করে আমাকে। আমি পরিবারের সম্মান নষ্ট করে দিচ্ছি। বাইরে সারাক্ষণই বড় ভাইয়াদের আর তোমাদের বোনদের গুনগান শুনতে হয় আমাকে।

কিন্তু শুধুমাত্র জ্ঞানার্জন কেন করা উচিত সেই বিষয়ে বোঝানো ছাড়া আমরা কি তোকে কখনো অন্য কিছু বলেছি?

কিন্তু মানুষ তো বলে। আর একথা তো আসলেই সত্যই। তোমরা দেশে বিদেশে যে যেখানেই পড়াশোনা করেছো সেরা স্টুডেন্ট এর খেতাব অর্জন করে নিয়ে এসেছো। বড় ভাইয়ার রুমে ঢুকে মুগ্ধ হয়ে যাই সেলফে রাখা নানা ধরণের মেডেল, গোল্ড মেডেল আর ট্রফি দেখে। কিন্তু আমার নিজের কোন অর্জনই তো নেই। আমি তো কোনদিন দৌড় প্রতিযোগিতাতেও ফাস্ট, সেকেন্ড না থার্ড হতে পারিনি। আমাদের উইনারে ভরা পরিবারে আমিই একমাত্র লুজার।

হেসে ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো রাহমা। আচ্ছা সত্যি করে বল তো তোর ক্ষোভটা আসলে কোথায়? আমরা উইনার এটাতে নাকি তুই লুজার সেটাতে?

আমার নিজের উপরই বিরক্ত আমি। কিন্তু আপা আমি কি করবো চেষ্টা করো করছি কিন্তু কেন জানি না মনোযোগ ধরেই রাখতে পারি না বেশীক্ষণ পড়ার ব্যাপারে।

এর কারণ তুই পড়তে হবে বা পড়া উচিত এই বোধ থেকে পড়াশোনা করিস। প্রয়োজন উপলব্ধি করে ভালোবাসা থেকে জ্ঞানার্জন করতে চাস না। কোন কিছু আমাদেরকে তখনই আকর্ষণ করে যখন সেই জিনিসটা মধ্যে আমরা ভালোলাগা, আনন্দ ইত্যাদি খুঁজে পাই। যেমন ধর তুই ফেসবুকে যে আনন্দটা খুঁজে পাচ্ছিস সেটা হয়তো বইয়ের ভেতর পাচ্ছিস না। তাই বই নিয়ে বসলেও তোর মন পড়ে থাকছে ফেসবুকে। ফলে যেই একটু দেখে আসি কি করছে বন্ধুরা, একটু দুষ্টুমি করে রিলাক্স হয়ে আসি। ইত্যাদি ভাবনা থেকে বার বার বই বন্ধ করে একটু উঁকি দেখতে গিয়ে হাতছাড়া করে ফেলিস সময়।

লজ্জা মেশানো হাসি দিয়ে সাহিল বলল, আসলেই তো এমন করি আমি। ভাবি বেড়িয়ে যাব একটু দেখেই কিন্তু কিভাবে সে সময় পার হয়ে যায় টেরই পাই না।

নিজের সমস্যা কোথায় এটা বুঝতে পারাটা কিন্তু অনেক বড় একটা বিষয়। সমস্যা বুঝতে পারা মানে সমাধানের পথে চলার পথ তোর জন্য তৈরি। তুই এখন যা পড়তে বোস। এগজাম শেষ হলে আমি তোকে সাহায্য করবো ইনশাআল্লাহ।

কোন ব্যাপারে সাহায্য করবে আপা?

রাহমা হেসে বলল, তোর অন্তরে জ্ঞানের পিপাসা জাগানোর ব্যাপারে।

সাহিলও হাসলো। আপার সাথে কথা বলার পর অনেক হালকা লাগছে মনের ভেতরটা। নিশ্চয়ই এখন পড়া মাথায় ঢুকবে এই আশা নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো।
(চলবে)

 

অন্তরে জাগাই জ্ঞানো পিপাসা……১


আফরোজা হাসান


অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই ফিজিক্সের বাংলা কি মনে করতে পারছে না সাহিল। এক সময় হতাশ হয়ে আশা ছেড়ে দিয়ে বইয়ের দিকে তাকিয়েই আঁতকে উঠলো। ইয়া আল্লাহ! একি দেখছে?! সব দেখি সাদা! সেকি বইয়ের বদলে খাতা খুলে বসেছে নাকি? চোখ বন্ধ করে মাথাটাকে ডানে-বামে, উপরে-নীচে বার কয়েক ঝাঁকি দিয়ে তাকানোর পর দেখলো অক্ষর ফুটতে শুরু করেছে বইয়ে কিন্তু সবই ঝাপসা। কেমন যেন মাথা ঘুরতে শুরু করলো সাহিলের। সবসময় পরীক্ষার আগের দিন এমন হয় তার। মনেহয় কিছুই বোঝে না, কিছুই জানে। আগে যা পড়েছিল সেসবও মাথার ভেতর থেকে একদম হাওয়া হয়ে যায়। রিলাক্স হওয়া উচিত আসলে আমার ভাবলো সাহিল। বই বন্ধ করে ভাইবারে ঢুকে কিছুক্ষণ বন্ধুদের সাথে দুষ্টুমি করলো। ঠিক করেছিল পরীক্ষার শেষ হবার আগে ফেসবুকে যাবে না। কিন্তু অটল থাকতে পারলো না। গত দু’দিন ঢোকেনি লগিন করতেই দেখলো ইনবক্সে দশ বারো জনের ম্যাসেজ। জাস্ট একটু ঘুরে দেখেই চলে যাবে এই নিয়্যাতে ঢুকলেও কিভাবে যে পনে দুইঘন্টা পেড়িয়ে গেলো টেরই পেলো না। ঢুকেছিল রিলাক্স হতে কিন্তু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে যখন দেখলো রাত এগারোটা বাজে। চোখের সামনে আবারো সব ধোঁয়া ধোঁয়া লাগতে লাগলো। এখনো ছয়টা চ্যাপ্টার রিভাইস দেয়া বাকি তার!

ধূর, কেন যে ঢুকতে গিয়েছিল এই সময় ফেসবুকে? নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিলো সাহিল। নিজের সেল্ফ কন্ট্রোল পাওয়ার আরো বাড়ানো দরকার ফিল করলো। এমন না যে সে পড়তে চায় না বা পড়ার প্রতি আকর্ষণ ফিল করে না। জ্ঞানার্জন করতে হবে এটা নিয়ে কোনই দ্বিমত নেই সাহিলের। তার সমস্যা শুধু একটাই মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না বেশিক্ষণ। পড়তে বসলে কিছুক্ষণ পরই শুধু মনেহয় যাই একটু দেখে আসি কি করছে বন্ধুরা ফেসবুকে। এভাবে করেই সময়গুলো যে কিভাবে কেটে যায় টেরই পায় না। টের পায় পরীক্ষার আগের দিন। তখন এমন চোখে মুখে আঁধার দেখে। নিজের উপরই মেজাজ খারাপ হতে শুরু করলো। এখন চেষ্টা করলেও পড়া হবে না। বই বন্ধ করে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো সাহিল। ক্ষুধার সামান্য নড়াচড়া অনুভব করছে পেটের মধ্যে। খাবারের সন্ধানে রান্নাঘরে রওনা দিলো। ফ্রীজ খুলেই মন ভালো হয়ে গেলো। বিকেলেই অবশ্য ঘ্রান পেয়েছিল লেয়ার পুডিংয়ের। তার সবচেয়ে পছন্দের মিষ্টি খাবার এটা। প্লেটে বড় বড় দু পিস পুডিং নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হতেই ল্যাপটপ হাতে বিরক্ত মুখে রুম থেকে বড় আপাকে বেড়িয়ে আসতে দেখলো সাহিল। বোনের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল, তোমার বেয়াদ্দব লেপুকে কি আবারো বোবায় ধরেছে আপা?

ছোট ভাইয়ের প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললো রাহমা। বলল, কবে দেখবি এইটারে ধরে একটা আছাড় দিয়ে ভেঙে গুড়া গুড়া করে দেব আমি।

সাহিল হাসতে হাসতে বলল, তোমাকে কষ্ট করে আছাড় দেয়া লাগবে না আপা। তুমি এভাবে তোমার লেপুকে হাতে করে দু’চারদিন ঘরের এদিক সেদিক ঘোরো। দেখবে ও নিজ থেকেই জাম্প দিয়ে পড়ে গিয়েছে তোমার হাত থেকে।

কপট রাগ দেখিয়ে রাহমা বলল, বেশি ফাজলামো শিখেছিল তাই না? ধোলাই খেতে না চাইলে সামনে থেকে যা। এই দাঁড়া তোর এগজামের প্রিপারেশনের কি অবস্থা সেটা বলে যা?

আপা তোমাকে হান্ডেড পার্সেন্ট গ্যারান্টি দিচ্ছি পাশ করবো ইনশাআল্লাহ।

তুই কি শুধু পাশ করার জন্য পড়িস নাকি?

আপারে দুঃখের কথা কি বলবো। আমি পড়তে তো জ্ঞানার্জন করার জন্যই চাই। কিন্তু শেষ মেষ শুধু কোন মতে পাশ করাটাকেই বিশাল বড় অর্জন মনেহয়।

চিন্তা ও কর্মের ভারসাম্য না থাকলে এমনই হয়। যা তুই সামনে থেকে আমার। এমনিতেই নানান যন্ত্রণায় আছি। ফাঁকিবাজ টাইপ বাচ্চাকাচ্চা আশেপাশে থাকলে সেই সমস্যা আরো ঘনীভূত হবে।

সাহিল হেসে বলল, আপা তুমি সমস্যা মোকাবিলা করো কিভাবে?

সমস্যা দিয়ে।

সাহিল অবাক হয়ে বলল, মানে?

মানে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার কথা শুনিসনি? আমি তেমন সমস্যা দিয়ে সমস্যার মোকাবিলা করি। পরে তোকে বুঝিয়ে বলবো। এখন তুই যা তো। আচ্ছা শোন আমাদের কম্পু বিশেষজ্ঞ কোথায় বলতে পারবি?

সাহিল হেসে বলল, ভাইয়া না তোমাকে নতুন ল্যাপটপ এনে দিলো। তারপরও এটা ব্যবহার করার দরকার কি?

রাহমা বলল, সেটা তুই বুঝবি না। চার বছর ধরে সুখে দুঃখে আমার সাথে সাথে থেকেছে। আমার কত অত্যাচার সহ্য করেছে রাত-দিন। শুধুমাত্র মাঝে মাঝে শব্দ বন্ধ হয়ে যায় বলে আমি মুহুর্তেই তাকে বিদায় করে নতুন একটাকে কোলে তুলে নেবো? বিপদেই বন্ধুর পরিচয়। আমি তাই ততক্ষণ পর্যন্ত ওকে আমার জীবন থেকে বের করে ফেলে দেবো না যতক্ষণ পর্যন্ত না ওকে সুস্থ্য করার শেষ চেষ্টাটাও ব্যর্থ হয়ে যাবে।

সাহিল হাসতে হাসতে বলল, তুমি তো এমন ভাবে বলছো যেন এটা কোন যন্ত্র না বরং মানুষ।

আজ যন্ত্রের সাথে এমন নির্দয় হতে পারলে, কাল মানুষের সাথেও যে হয়ে যাবো না সেই গ্যারান্টি কে দেবে? তাই আজ যন্ত্রের সাথে দরদী হবার চেষ্টা করছি। যাতে ভবিষ্যতে মানুষের ব্যাপারেও হতে পারি।

সাহিল হেসে বলল, তোমার কথা আমাকে খুব মুগ্ধ করে আপা।

(চলবে)

 

ডা. ফাতেমা “৬ হাজার শিশুর সফল হার্ট সার্জারি”


স্বাস্থ্যকথা


বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নুরুন নাহার ফাতেমা। যিনি নবজাতক শিশুর হৃদরোগ, হৃৎপিণ্ড এবং রক্তবাহক সম্পর্কিত রোগ নিয়ে ককাজ করেন। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম শিশু হৃদরোগ সার্জারি হিসেবে পথপ্রদর্শক।

সফলতার সঙ্গে প্রায় ৬ হাজার হৃদরোগ শিশুর চিকিৎসা করেছেন। এ বছর চিকিৎসাক্ষেত্রে অবদান রাখায় দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ পেয়েছেন।

মানুষের ভালোবাসা তার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান। শিশুর জন্মগত হৃদরোগ সারিয়ে তোলার পর যে আনন্দ পান, তা সব আনন্দের চেয়ে বহুগুণ বড়।

বিনামূল্যে শিশুদের চিকিৎসা করবেন। ডা. ফাতেমা শিশু চিকিৎসার আরেক প্রতিকৃত অধ্যাপক ডা. এমআর খানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন ‘চাইল্ড হার্ট ট্রাস্ট বাংলাদেশ’।

ডা. ফাতেমা স্বপ্ন দেখেন রোজ। দেশের মাটিতে শিশুদের চিকিৎসায় একটি বিশেষায়িত জাতীয় কার্ডিয়াক হাসপাতাল তৈরি করার। যেখানে এসব রোগীর যথাযথ চিকিৎসা করানো সম্ভব হবে। যেখানে অসচ্ছল মা-বাবার সন্তানরা বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে পারবে।

 

নাড়া দিলো যে মৃত্যু (শোক আর ভালোবাসায় রাফির বিদায়)


নারী সংবাদ


নুসরাত জাহান রাফি চলে গেছেন। শোক আর ভালোবাসায় তাকে চিরবিদায় জানিয়েছেন তার স্বজনেরা। মৃত্যু এসে তার অগ্নিদগ্ধ শরীরের সব যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়েছে। কিন্তু এই মৃত্যু নাড়া দিয়ে গেছে গোটা দেশকে। ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে সমাজের সর্বস্তরে।

নুসরাতের জীবনটাই ছিল প্রতিবাদের। যখন বখাটেরা তাকে উত্ত্যক্ত করত, তখনো সে প্রতিবাদ করেছে। আবার যখন তারই শিক্ষক তাকে লাঞ্ছিত করেছে তখনো সে প্রতিবাদ করেছে। যখন দুর্বৃত্তরা তার প্রায় পুরো শরীর আগুনে ঝলসে দিয়েছে, তখন মৃত্যু শয্যায় সে প্রতিবাদ করে বলেছে আমি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যাবো…। নুসরাত তা-ই করেছে। তার মৃত্যুই এখন শ্রেষ্ঠ প্রতিবাদ। গতকাল তাকে তার দাদীর কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।

রাফি গতকাল ভালোবাসায় চিরবিদায় নিয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাকে বহনকারী ফ্রিজারভ্যান গতকাল বিকেল ৫টায় পৌর শহরের উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের মৌলভী বাড়িতে পৌঁছে। ওই বাড়ির মাওলানা এ কে এম মূসার একমাত্র মেয়ে রাফি। তাকে বহনকারী গাড়ি যখন কাশ্মিরবাজার সড়ক হয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। দুপুর থেকে সেখানে হাজার হাজার নারী-পুরুষ জড়ো হয়। ভিড় ছিল গণমাধ্যমকর্মীদেরও। সবার চোখেমুখে শোকের পাশাপাশি ছিল ক্ষোভও। উৎসুক মানুষের ভিড় সামলাতে পুলিশ সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। একপর্যায়ে লাশ গাড়িতে রেখেই শেষবারের মতো বাবা এ কে এম মূসা, মা শিরীন আকতার, ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানসহ নিকটাত্মীয়দের দেখানো হয়। পরে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় সোনাগাজী মোহাম্মদ ছাবের মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। নামাজে জানাজা পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, জেলা প্রশাসক মো: ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বি কম, সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিফটন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল পারভেজ, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন, রাফির বাবা এ কে এম মুসা, ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। বক্তারা রাফি হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

রাফির বাবা এ কে এম মূসার ইমামতিতে হাজার হাজার মুসল্লি নামাজে জানাজায় অংশ নেন। পরে ভূঁইয়া বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাদীর কবরের পাশেই দাফন করা হয়।

পপি ও জোবায়েরের ৫ দিনের রিমান্ড : রাফি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন গ্রেফতার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার শ্যালিকার মেয়ে উম্মে সুলতানা পপি ও এজাহারভুক্ত আসামি জোবায়ের আহম্মেদকে পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরাফউদ্দিন আহমেদ এ আদেশ দেন।

ফেনী কোর্ট পুলিশের ওসি মো: গোলাম জিলানি এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো জানান, এ মামলায় গ্রেফতার সাতজনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। এর মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার সাত দিন এবং বাকি ছয়জনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে পপিকে মঙ্গলবার সকালে আটক করেছে পুলিশ। রাফির দেয়া জবানবন্দী অনুযায়ী শম্পা হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে এ পপিকে। তার সহপাঠীদের মধ্যে শম্পা নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। তদন্তকারী সূত্রের সন্দেহ হয়তো ঘটনার সময় অন্য কেউ ‘শম্পা’ ছদ্দনাম ব্যবহার করেছে।
আসামিদের আইনি সহায়তা দেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকে অব্যাহতি : মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টা মামলায় (পরবর্তীতে নিহত) গ্রেফতারকৃতদের আইনি সহায়তা দেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সদর উপজেলা সভাপতি করিম উল্লাহ বি কম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগকে সংগঠনবিরোধী কার্যক্রমের দায় ও সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির খুনিদের আইনি সহযোগিতা দেয়ায় স্বীয় দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তদস্থলে আবদুর রৌফকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। সোহাগ ওই ইউনিয়ন পরিষদেরও চেয়ারম্যান।

ফেনী কলেজছাত্র সংসদের মানববন্ধন :

সোনাগাজী (ফেনী) সংবাদদাতা জানান, নুসরাত জাহান রাফির নামাজে জানাজায় অংশ নিতে আত্মীয়স্বজন বন্ধু-বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশীসহ সোনাগাজীর সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছিল। কান্না আর চাপা ক্ষোভ নিয়ে তারা বলছিল সবই আছে নেই শুধু আমাদের রাফি। বাঁচতে দিলো না পাষণ্ডরা আমাদের রাফিকে। সন্ধ্যা ৬টায় হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে সোনাগাজী মডেল ছাবের পাইলট হাইস্কুল মাঠে রাফির নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। নামাজে জানাজা শেষে রাফিকে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাদীর কবরের পাশে দাফন করা হয়। (নয়াদিগন্ত)

 

গা ঘেঁসে দাঁড়াবেন না



শামছুন নাহার মলি


সময়টা ২০১০ বা ২০১১ এর দিকে।বলে রাখি ঢাকায় ৬/৭ বছর থেকেও আমার বাসে ওঠার অভিজ্ঞতা খুব বেশি না।ভার্সিটির ক্লাস শেষে কলা বাগান থেকে রংধনু বাসে করে মিরহাজীরবাগ ভাইয়ার বাসায় ফেরার পথের ঘটনা।বাসে সব সময় মহিলা সিটে বসার চেষ্টা করতাম।কিছু লোকাল বাসে সিট না থাকলে উঠতাম ও না।

সেদিন আমি মহিলা সিটে বসা।সামনের সিটে দুজন কলেজ পড়ুয়া মেয়ে।তাদের সাইডে দাঁড়ানো ৫৫/৬০ বয়সী একজন দাড়ী ওয়ালা পান্জাবী পরা মুরুব্বী।ব্রেক করার কারণে পাশের মেয়েটার গায়ে মুরব্বী টার একটু ধাক্কা লেগে যায়।আর যায় কোথায়।মেয়ে দুটোর মুখে যা আসে সব বলা হয়ে যাচ্ছে।তখন মুরুব্বী টা বল্লো দেখো মা ব্রেক করার কারনে এই ধাক্কাটা লেগেছে।এটার জন্য দুঃখীত।আমি তোমার বাপ বয়সী।মেয়ে দুইটা বলে উঠলো মুখে দাড়ী রাখছেন,পান্জাবী,পরছেন চুল দাড়ী পাকছে তাও লুচ্চামী যায়নি না?মেয়ে দেখলে গায়ের উপর এসে পড়তে মন চায় না?

এবার আমি ২য় সারির জানলার পাশের সিট থেকে বের হয়ে ঐ মেয়েদের সামনে গেলাম।বল্লাম উনাকে দেখে মনে হয় আপনার যে উনি ইভ টিজার?বাবার মত একজন কে এত নোংরা কথা বলতে বিবেকে বাধছেনা?নাকি উনার দাড়ী পান্জাবী দেখে রাগ টা বেশি দেখাচ্ছেন?
মুরুব্বী টা কাঁপতেছিলো অপমানে কথা বলতে পারছিলেন না মেয়েদের কথায়।একজন লোক উনার জায়গা দিলেন বসার।মেয়েরা আর কথা বাড়ায়নি।

আরেকবার মগবাজার থেকে আমি আর ফাতিমা ফিরছিলাম।আমি মীরহাজিরবাগ যাবো আর ফাতিমা যাবে জিগাতলা।পরে ফাতিমা বলছিলো সেদিন বাসে সিট না পাওয়ায় তাকে দাঁড়ীয়ে যেতে হয়েছিলো।একজন লোক তার জন্য যথেষ্ট জায়গা রেখে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো যেন কারো ধাক্কা ওর গায়ে না লাগে।আলহামদুলিল্লাহ্‌।

এখন দেশে টিশার্টে লেখা “গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না”
এই প্রতিবাদ টা কিন্তু সব মানুষের জন্য না।ভীড়ে দাঁড়ালে ধাক্কা লাগবেই।দেশের মানুষ বাস চড়বেই।এই ধাক্কাটা কারা দেন,গা ঘেঁষে কারা দাঁড়ান?নিশ্চয় সবাই না?যারা দৃষ্টিই অবনমিত করেন গা ঘেঁষে দাঁড়ানো তাদের আদর্শে যায় না।বার্তাটা অবশ্যই তাদের জন্য না।যারা গা ঘেঁষে দাঁড়ায় তাদের আতে ঘা লাগার কথা ছিলো।ঢালাও ভাবে সবার না।

টি শার্টে কেন এই বার্তা লেখা,বোরখায় কেন লেখা না আমি এ বিতর্কে যাবোনা।কারণ পরিসংখানে দেখা গেছে ৭০/৮০% মেয়েই নাকি এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে।বাসে কিংবা লেগুনায়।হোক সে
বোরখা পরিহিত কিংবা টিশার্ট পরা।

শুধু বাসে না,আজ মেয়েরা ভীড়ের মধ্যেও যেতে পারে না,না গিয়েও উপায় থাকেনা।এই ধাক্কা বন্ধের কথা ভাবুন,এগিয়ে আসুন মেয়েদের সম্মান ও নিরাপত্তা কিভাবে দেওয়া যায়।কারা মেয়েদের সাথে এমন করে তাদের কে পাকড়াও করুন পারলে।

নীলক্ষেতে বই কিনতে যেতে হতো প্রায়ই।অসম্ভব ভীড় ঠেলে যেতে হতো।আমি বোরখা পরিহিতা,ব্যাগটা সামনে জড়িয়ে ধরে হাটতাম সব সময় নিজেকে সেইভ করার জন্য।আলহামদুলিল্লাহ্‌ আজ পর্যন্ত একটা মোবাইল বা টাকা পয়সা হারায়নি এবং কোন খারাপ পরিস্থিতি তে পড়তে হয়নি আমার।

নারীদের অযথা হয়রানী করার মানসিকতার সকল পশুদের কলিজায় এই প্রতিবাদ পৌছে যাক “মেয়েদের গায়ে ঘেঁষে দাঁড়াবেন না”।
আর সকল নিঃষ্পাপ ভাইয়েরা পারলে নিজের মা বোনের কাছ থেকে নরপশুদের ধাক্কা খাওয়া বা গা ঘেষে দাঁড়ানোর গল্পটা শুনুন।তারপর কি পদক্ষেপ নিবেন ভাবুন।কারণ কদিন পর আপনাদের কন্যারাও বাইরে যাবে।

#গাঘেঁসেদাঁড়াবেননা

 

The Dream of Life (অনুবাদ) – শেষ পর্ব


মুল: ইয়াসমিন মোজাহেদ
অনুবাদ: রাহনুমা সিদ্দিকা


আর দ্বিতীয়দল যাদের লক্ষ্য ছিলো অনন্ত জীবন, তাদের কাছে ভালো মন্দের স্বরূপ এই যে, যা কিছু আমাদের স্রষ্টার সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা পেতে সাহায্য করে, আমাদের তাঁর নিকটে নিয়ে যায় তা-ই হলো ভালো আর যা আমাদের স্রষ্টা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় তা-ই হলো মন্দ।

তারা জানে যে তাদের পালনকর্তা বলেছেন, “আমি এদের বিভিন্ন প্রকার লোককে পরীক্ষা করার জন্যে পার্থিবজীবনের সৌন্দর্য স্বরূপ ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, আপনি সেই সব বস্তুর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না। আপনার পালনকর্তার দেয়া রিযিক উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী।” (কুর’আন ২০:১৩১)

একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি মনে করেন, অর্থ, খ্যাতি, সম্পদ, সৌন্দর্য তা যে আরাধ্য বস্তুই হোক না কেন, তা যদি আমায় স্রষ্টার কাছে নিয়ে যায় তাহলে তাকে আমি ‘ভালো’ বলে চিহ্নিত করবো, অন্যথায় তা মন্দ। খ্যাতি/যশ কিংবা সম্পদের ক্ষতি, অসুস্থতা, চাকুরি হারানো ইত্যাদি অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদগুলোও যদি কোনভাবে আমাকে স্রষ্টার সন্তুষ্টি পেতে সাহায্য তাহলে তা-ই আমার জন্য মঙ্গলময়!

“তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না।” (Qur’an 2:216)

এই-ই হলো আমাদের সহজ-সরল বিশ্বাস, ভালো লোকের জীবনেই ভালো ঘটনাগুলো ঘটে, আর মন্দের ক্ষেত্রে মন্দগুলোই!
নির্ভর করছে আপনি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন,তার ওপর! একজন বিশ্বাসীর? নাকি একজন অবিশ্বাসীর? অথবা, একজন সংশয়বাদীর?

মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “মুমিনদের ব্যাপারটি কী আশ্চর্যজনক! কারণ, সর্বাবস্থায়ই তার জন্য মঙ্গলময়। আর এটা মুমিন ছাড়া আর কারোর পক্ষেই সম্ভবপর নয়। তার জীবনে সুখময় কিছু ঘটলে সে আল্লাহ্ তাআলার কৃতজ্ঞতা আদায় করে যা তার জন্য কল্যাণকর। তেমনিভাবে তার জীবনে দুঃখকর কোন কিছু ঘটলে সে তাও ধৈর্যের সাথে মেনে নেয় যা তার জন্য অবশ্যই কল্যাণকর।”

(সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৯৯)

সুবহান’আল্লাহ! মুমিন জীবনই আমাদের নিয়ে যেতে পারে চুড়ান্ত কল্যাণের পথে।

এই ক্ষণিক জীবনটা আসলে একটা বিভ্রম ছাড়া আর কি! তারপরেও কি এই পার্থিব প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চাওয়া-পাওয়াগুলো আমাদের আলোড়িত করবে? যেদিন আমরা সেই অনন্ত জগতে প্রবেশ করবো সেদিনই কেবল পরিপূর্ণভাবে বুঝতে পারবো ‘জীবনটা আসলে একটা স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু ছিলো না’।

 

The Dream of Life (অনুবাদ)- ১ম পর্ব


মুল: ইয়াসমিন মোজাহেদ
অনুবাদ: রাহনুমা সিদ্দিকা


আচ্ছা, মন্দ জিনিষগুলো কেন ভালো মানুষদের জীবনে ঘটে? কোথায় থাকে ঈশ্বর যখন নিষ্পাপ শিশুটা না খেতে পেয়ে মারা যায়, অপরাধী মানুষগুলো স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়? কোথায় থাকেন তিনি? কীভাবে সেই প্রেমময়, সর্বশক্তিমান প্রভুকে স্বীকার করবো আমি? আমার কষ্ট… আমার হতাশা… ব্যর্থতা, দুর্ভাগ্য কেন দিলেন তিনি? Why do we suffer? ঈশ্বর নিশ্চয়ই ন্যায়-পরায়ণ, তাহলে কেন ভালো লোকের জীবনে শুধু ভালো ঘটনা ঘটে না? আর মন্দলোকের জীবনে মন্দ?

আপনার মনে কখনো কি এ প্রশ্নগুলো উদিত হয়েছে?

বহু মানুষের জীবনে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর তাদের নিয়ে যায় বিশ্বাসের পথে… অথবা বিশ্বাস থেকে দূরে, স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস, জীবনের উদ্দেশ্যে বিশ্বাস, জীবনে শেষ গন্তব্যের প্রতি বিশ্বাস, অথবা বিশ্বাসহীনতা।

একজন বিশ্বাসী বলবেন, “হ্যাঁ, অবশ্যই! আসলে ভালো লোকের জীবনেই ভালো ঘটনাগুলো ঘটে, আর মন্দের ক্ষেত্রে মন্দগুলোই!”

কেন? কারণ ঈশ্বর আমাদের রব তিনি সর্বজ্ঞাত, সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী, তিনি পরিপূর্ণ সত্তা,তিনি সর্বাপেক্ষা ন্যায়পরায়ণ ও প্রেমময়।

আসুন আগে বুঝে নি-ই, “ভালো লোকের জীবনেই ভালো ঘটনাগুলো ঘটে, আর মন্দের ক্ষেত্রে মন্দগুলোই!” বলতে আমরা কী বুঝাতে চাইছি। আর ভালো – মন্দ বলতেই বা আমরা কী বুঝাতে চাই। আপনারা অনেকেই হয়তো আমার সাথে একমত হবেন যে, অভীষ্ট কোন লক্ষ্য অর্জনে সফলতা…এটা ভালো, আর অন্যদিকে ব্যর্থতাটা হলো মন্দ।

ধরুন, যদি আমার লক্ষ্য হয় ওজন বাড়ানো কারণ আমি ভীষণভাবে ক্ষীণকায়, ওজন বৃদ্ধি তাহলে মঙ্গল। অপরদিকে যদি এমন হয় যে আমার লক্ষ্য হলো ওজন কমানো কারণ আমি স্থুলকায়, ওজন বৃদ্ধি তাহলে মন্দ। আমরা কী দেখি, একই ঘটনাকে একসময় আমি বলবো, ভালো আরেকসময় বলবো মন্দ, নির্ভর করছে আমার লক্ষ্যের ওপর!! তাহলে, আমার দৃষ্টিকোন থেকে ভালো কী সেটা নির্ভর করবে আমার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যগুলো বা লক্ষ্যের ওপর, এটা চিরকালীন সত্য। একারণেই চূড়ান্ত মঙ্গল নির্ভর করে আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য এর ওপর।

আমার জীবনের লক্ষ্য কী?

ছোট্ট একটা প্রশ্ন, কিন্তু আপনি উত্তর দিন, দেখুন আমরা জেনে যাবো আপনি কে। কারণ এর উত্তরটা বেঁচে থাকা সম্পর্কে আপনার ধারণা প্রকাশ করে দেবে। পুরো পৃথিবীতে জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে দু’ধরণের চিন্তাধারা আছে।

একদল মনে করেন যে, বেঁচে থাকার কারণ হলো আমাদের প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম দিয়ে পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালোভাবে দিন কাটানো। আরেকদল মনে করেন, উঁহু, জীবন শুধুই একটা সেতু/সাঁকো ছাড়া আর কিছুই না! আর এমন একটা সেতু যার স্থায়ীত্ব কাল ক্ষণকালের, তারা মনে করেন এটাই স্রষ্টার infinite Reality, যা কিছু হচ্ছে তাঁর নির্দেশেই হচ্ছে, এপার থেকে ওপারে যাওয়ার সাঁকোকে চিরকালীন আবাস ভাবতে চান না তারা।

প্রথমদলের জন্য, এই জীবনই *Everything*, এটাই শুরু এটাই শেষ , তারা মনে করেন, সমস্ত চেষ্টা-সংগ্রাম-ভালোলাগা-ভালোবাসা-অনুভূতি একে ঘিরেই আবর্তিত হওয়া উচিত। আর দ্বিতীয়দলের কাছে *this life tends towards zero*!! কেন?? আচ্ছা, অসীমের তুলনার সবচেয়ে বড় সংখ্যাটাও কি একেবারে তুচ্ছ নয়? কিচ্ছু না!

তাই তাদের কাছে জীবনের উদ্দেশ্য হলো, যেমনটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন, ” আমি জ্বীন ও মানব জাতিকে এছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য সৃষ্টি করি নি যে *তারা কেবল আমার দাসত্ব করবে*।” (ক্বুর’আন ৫১:৫৬) এখানে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই অন্য কোন উদ্দেশ্যের কথা নাকচ করে দিয়েছেন। তার মানে ত এই-ই দাঁড়ায় যে, একজন বিশ্বাসী হিসেবে আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হবে সেই সত্তাকে জানা, ভালোবাসা ও তাঁর নিকটাবর্তী হওয়া। এই জন্যেই আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছিলো। এই বিশ্বাসটাই নির্ধারণ করে দেবে আমার জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও আশপাশের ঘটনাগুলো সম্পর্কে আমি কীভাবে ভাববো।

আসুন, আমরা এখন আবার সেই ভালো মন্দের সংজ্ঞার দিকে ফিরে তাকাই। সেই যে বলেছিলাম, সামগ্রিক ভাবে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্থাৎ কাম্য কিছু পেতে সমর্থ হওয়াকেই আমরা বলতে পারি ভালো। আর আপেক্ষিকভাবে তাহলে নিশ্চয়ই বলা যায় কারো লক্ষ্য যদি হয় এই পার্থিব জীবন , তাহলে তার জন্য অর্থ উপার্জন, খ্যাতি, সম্পদ, সৌন্দর্য … ইত্যাদি হলো ‘ভালো’ বা ‘মঙ্গল’ এর উদাহরণ, আর এগুলোর ক্ষয় হলো ‘মন্দ’। এই ধারণা যারা পোষণ করেন তাদের মতে, একজন নিরপরাধ ব্যক্তি যদি তার কোন পার্থিব সম্পদের ক্ষতি (তা হতে পারে দারিদ্র, স্বাস্থ্যের ক্ষতি, বিকলাঙ্গতা, প্রতিবন্ধিত্ব…) প্রত্যক্ষ করেন, এই-ই হলো ‘ভালো লোকের জীবনে মন্দ জিনিষ ঘটা’।

আর দ্বিতীয়দল যাদের লক্ষ্য ছিলো অনন্ত জীবন, তাদের কাছে ভালো মন্দের স্বরূপ এই যে, যা কিছু আমাদের স্রষ্টার সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা পেতে সাহায্য করে, আমাদের তাঁর নিকটে নিয়ে যায় তা-ই হলো ভালো আর যা আমাদের স্রষ্টা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় তা-ই হলো মন্দ।

চলবে…

 

পাঁকা পেঁপের মজাদার হালুয়া

 


ঘরকন্যা


মিষ্টি পাকা পেপেতে প্রচুর ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে। তবে আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ এই পাকা পেপে অপছন্দ করেন। পাকা পেপের হালুয়া খুব মজাদার। পাকা পেপের হালুয়া অনেক টেস্টি যে যারা পাকা পেপে খান না তারাও পছন্দ করবেন।

পাকা পেপের হালুয়া বানাতে উপকরণ সমুহ

পাকা পেপে ২ কাপ
চিনি ৪ টেবিল চামচ
আস্ত এলাচ ১টি থেকে ২টি, আস্ত কাজু বাদাম, কিসমিস,
ঘি ২ টেবিল চামচ
ডিম ২ টি
পাউডার দুধ হাফ কাপ

হালুয়া যে পদ্ধতিতে বানাবেন

প্রথমে পাকা পেপে ছিলে নিয়ে গ্রেট করে নিতে হবে। আপনি চাইলে এটি ছোট ছোট করে কেটে নিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করেও নিতে পারেন। চুলোয় দিন। ফ্রাইং প্যানে অল্প একটু ঘি নিতে হবে। এর মধ্যে কাজু বাদাম, প্সতা বাদাম, চিনা বাদাম ও কাঠ বাদাম, কিশমিশ গুলোও দিয়ে দিতে হবে। মাঝে ডিম আর পাউডার দুধ দিবেন।
এরপর আপনি হালুয়ার মধ্যে ছোট ছোট বাদামের টুকরা দিতে পারেন। বড় কড়াতে বাকি ঘি টুকু দিয়ে দিতে হবে। ঘি গরম হয়ে গেলে এর মধ্যে গ্রেট করা কিংবা ব্লেন্ড করা পাকা পেপে দিয়ে দিতে হবে। এই সময়ে পরিমাণ মত চিনি দিয়ে দিতে হবে। লাল হওয়ার আগ পর্যন্ত নাড়তে থাকুন।
খুব সুন্দর একটি ঘ্রাণ ছড়াবে।

নেমে কাজু বাদাম দিয়ে পরিবেশন করুন।

 

নারী গার্মেন্টকর্মীকে গলা কেটে হত্যা


নারী সংবাদ


ময়মনসিংহের ভালুকায় তানিয়া আক্তার (১৬) নামে এক গার্মেন্টকর্মীকে রাতের ডিউটি শেষে সকালে বাসায় যাওয়ায় পথে ছুরিকাঘাতে গলা কেটে খুন করেছে এক বখাটে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উপজেলার জামিরদিয়া এসএমসি ফ্যাক্টরীর সামনে। পুলিশ ঘাতককে আটক করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার রামভদ্রপুর গ্রামের হোসেন আলীর মেয়ে তানিয়া আক্তার বোনদের নিয়ে উপজেলার হবিরবাড়ি এলাকার আমতলীতে জনৈক জহুরার বাসা ভাড়ায় থেকে রিদিশা গার্মেন্ট ফ্যাক্টরীতে চাকরী করে আসছিলেন।

শনিবার সকালে তিনি রাতের ডিউটি শেষে বাসায় যাওয়ার পথে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর এসএমসি ফ্যাক্টরীর সামনে শাহিদ (২২) নামে এক বখাটে তাকে ছুরিকাঘাতে গলা কেটে খুন করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় টের পেয়ে স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘাতক শাহিদকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। ঘাতক শাহিদ ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামের জনাব আলীর ছেলে বলে পুলিশ জানায়।

নিহতের বড় বোন কাকলী আক্তার জানান, তানিয়াসহ তারা তিন বোন একই বাসায় ভাড়ায় থেকে গার্মেন্টে চাকুরি করছেন। প্রতিদিনকার মতো শুক্রবার রাতে সে ফ্যাক্টরিতে যায়। সকালে লোকমুখে জানতে পারি রাতের ডিউটি শেষে তানিয়া বাসায় আসার পথে কেউ তাকে খুন করে ফেলে গেছে।

লাশ উদ্ধারকারী ভালুকা মডেল থানার এসআই ফিরোজ জানান, নিহতের লাশ উদ্ধার ও ঘাতককে আটক করা হয়েছে। তবে কি কারণে তানিয়াকে খুন করা হয়েছে তা এই মুহুর্তে ঘাতকের কাছ থেকে স্পষ্ট করে জানা যাচ্ছেনা। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (শনিবার বেলা ১২ টা) থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছিলো। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিচ্ছেদে গেলেন অ্যামাজনের বেজোস ও তার স্ত্রী ম্যাকেনজি


দাম্পত্য


বিশ্বের অন্যতম অনলাইন রিটেইল প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন ডটকম প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ও তার স্ত্রী ম্যাকেনজি বৃহস্পতিবার ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিচ্ছেদ চুক্তি চূড়ান্ত করেছেন। খবর এএফপি’র।
অ্যামাজনে জেফ বেজোসের ১৬.৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বিচ্ছেদ চুক্তি অনুযায়ী এর ৭৫ ভাগ শেয়ার থাকবে বেজোসের নামে এবং বাকি শেয়ার পাবেন ম্যাকেনজি। ম্যাকেনজির এই শেয়ারের মূল্য দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৬শ’ কোটি ডলার। এর পাশাপাশি অ্যামাজন স্টকের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বেজোসের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার সার্বিক ক্ষমতা পাবেন ম্যাকেনজি।
এছাড়া ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় এবং বিশ্বের সেরা ধনী বেজোসের মহাকাশ ভ্রমণ বিষয়ক কোম্পানি ব্লু অরিজিনে ম্যাকেনজির যে শেয়ার রয়েছে তিনি তা ত্যাগ করবেন।
৫৫ বছর বয়সী জেফ বেজোস ও ৪৮ বছর বয়সী ম্যাকেনজি ১৯৯৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির চার সন্তান রয়েছে।
জেফ বেজোস ২৫ বছর আগে ১৯৯৪ সালে তাদের সিয়াটল গ্যারেজে অ্যামাজন প্রতিষ্ঠা করেন। এরপরের ইতিহাস হচ্ছে তাদেরকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে অনলাইনে ব্যবসায় বিশাল একটি প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি ২৩ হাজার ২৮০ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে।
সাবেক টিভি উপস্থাপিকা লরা সানচেজের সঙ্গে বেজোসের গোপন সম্পর্ক প্রকাশের পরে এই বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা চূড়ান্ত হলো।
উল্লেখ্য, ম্যাকেনজি এবারই প্রথম দু’জনের মধ্যে বিচ্ছেদের বিষয়টি নিজের টুইটারে ঘোষণা করলেন। এতে তিনি লিখেছেন জেফ বেজোসের সঙ্গে বিচ্ছেদের ইতি ঘটানোর সব প্রক্রিয়া শেষ করে এনেছি। পারস্পরিক সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। (বাসস ডেস্ক)

 

শিশুদের কুরআন শিক্ষা


কানিজ ফাতিমা


সচরাচর মুসলমানেরা তাদের শিশুদের ছোটবেলা থেকেই শুধু জাহান্নামের আগুনের ভয় দেখান, কিন্তু আল্লাহর ভালোবাসা, দয়া এবং সমবেদনা অথবা জান্নাতের সৌন্দর্যের কথা সেভাবে তুলে ধরেননা । আমরা শিশুদেরকে ভয় যতটা জোর দিয়ে দেখাই যে তারা যদি আল্লাহর অমান্য করে, মা-বাবার কথা নাশুনে , বা পাপ কাজে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের দোজখের আগুনে জ্বালানো হবে; ততটা তাদেরকে আশাবাদ দেই না যে তারা যদি সৎ কাজ করে, আল্লাহ ও মা-বাবাকে মান্য করে এবং কোনো ভালো কাজ করে তবে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে। আমরা সবসময় তাদেরকে ভয় দেখাই, জাহন্নামের হুমকি দেই অথচ খুব কমই তাদেরকে সাহস যোগাই অথবা ভালো আচরণের জন্য আল্লাহ’র ভালোবাসার কথা, পুরুষ্কারের কথা উল্লেখ করি। এমন পরিবেশে, শিশুরা আতঙ্কগ্রস্ত ও ভীতু হিসাবে বেড়ে উঠে। ফলে তাদের মধ্যে নেতীবাচক মানসিকতা জন্মায় এবং আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেয় এবং তদেপেক্ষাও খারাপ যে তারা তাদের বিশ্বাসের প্রতি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে।

শিক্ষকরা সাধারণত: কুরআনের শেষ অধ্যায় থেকে (ত্রিশ পারা) শিশুদের পড়ানো শুরু করে। এই অধ্যায় ছোট ছোট সূরা সম্বলিত যেগুলো ওহী আসার প্রাথমিক পর্যায়ে মক্কায় নাযিল হয়। মূলত কুরাইশ গোত্রের বিপথগামী, অহংকারী এবং অত্যাচারী পৌত্তলিক নেতাদের (আবু জেহেল, আবু লাহাব) উদ্দেশ্যে এই সূরা গুলো নাযিল হয়েছিলো। তাছাড়া যারা মুসলমানদের অত্যাচার করছিলো, মুসলমানদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে হত্যা করেছিলো, নবীজী (সাঃ)কে হত্যার পরিকল্পনা করছিলো এবং বিশ্বাসীদের ধ্বংস করতে যুদ্ধ বাধিয়ে ছিলো-কুরআন নাযিলের সূচনার অধ্যায়গুলো মুলত তাদের উদ্দেশ্যেই। এই সূরা গুলো এসব অত্যাচারীদের তাদের হুশ/জ্ঞান ফিরিয়ে আনার জন্য ছিলো। এদিকে আয়াতের দৃঢ় কথাগুলো তাদের কানে বজ্রধ্বনি হিসাবে কাজ করতো কারণ আয়াতগুলো ভয়ানক সতর্কবার্তা সম্বলিত ছিলো। যেমন নিচের আয়াতগুলো-

“আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজে” (সূরা লাহাব, ১)

“প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ” (সূরা হুমাজাহ, ১)

“আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী কেয়ামতের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি? অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে লাঞ্ছিত, ক্লিষ্ট, ক্লান্ত। তারা জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে। তাদেরকে ফুটন্ত নহর থেকে পান করানো হবে। কন্টকপূর্ণ ঝাড় ব্যতীত তাদের জন্যে কোন খাদ্য নেই” (সূরা গাসিয়া, ১-৬)

“যারা মাপে কম করে, তাদের জন্যে দুর্ভোগ (সূরা মুতাফফিফিন, ১)

“বলুন, হে কাফেরকূল” (সূরা কাফিরুন, ১)

“যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে” (সূরা যিলযাল, ১)

এটা খুবই দুঃখজনক যে এসব কঠিন বার্তা কোমলমতি শিশুদের উদ্দ্যেশে নাযিল না হলেও এগুলোই শিশুদের সর্বপ্রথম শিখানো হয়। হ্যা, প্রথমেই এ সূরাগুলো শিখানোর একটা কারণ হচ্ছে এগুলো ছোট এবং সহজে মুখস্ত করা যায়। তবুও শিশুদের এ বয়সে জাহান্নাম ও শাস্তির ভয় দেখানোর বদলে আমাদের উচিত তাদেরকে আল্লাহর ভালোবাসা, মা-বাবার দয়া এবং জান্নাতের সৌন্দর্য প্রভৃতি বিষয়ে বুঝানো।এর ফলে শিশুকাল থেকে তাদের মনে নিরাপত্তার অনুভুতি, ভালোবাসা, দয়া, কোমলতা, মহত্ত্ববোধ, উদারতা এবং সহানুভুতি প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যগুলো ধীরে ধীরে প্রবেশ করবে। আল্লাহর ভালোবাসা, দয়া, মমতা, ক্ষমাশীলতা, ধৈর্যশীলতা এবং উদারতা ইত্যাদি আল্লাহর সুন্দর গুণাবলীগুলোর শিক্ষার মধ্য দিয়েই শিশুদের প্রথম পাঠ শুরু করা উচিত। প্রথমে তাদের মনে এই বিশ্বাস দিতে হবে যে তারা ভালো এবং আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন। এরপর তাদেরকে শেখাতে হবে যে তাদেরও উচিত আল্লাহকে ভালবাসা। শিক্ষার ক্রমটি এমন হতে হবে যে , প্রথমত তাদের প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা সম্পর্কে তাদের অবগত করা, তারপরে তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসতে হবে সেই বাধ্যবাধকতা শেখানো।

এরপর যখন সন্তান কিছুটা বড় হবে এবং বুঝতে শিখবে, তখন মা-বাবা ধীরে ধীরে তাদেরকে খারাপ কাজের জন্য জাহান্নামের শাস্তির কথা বলতে শুরু করবেন। যেসব সূরাগুলো বড় বড় গুনাহের জন্য শাস্তির আগাম সতর্ক বার্তা দেয়- সেসব সূরাগুলো এসময় শুরু করা উচিত, যাতে তারা এসব থেকে ভয়ে সন্ত্রস্ত না হয়ে বরং শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।এটা তাদের শৈশবের শেষ পর্যায় কিংবা টিনেজ (১৩-১৯) বয়সের দিকে হতে পারে যখন তারা কিছুটা বড় হয়েছে এবং কিছুটা জটিল বিষয়গুলো ও কর্মের ফলাফল বুঝতে সক্ষম।

কুরআনের শিক্ষা দেবার সময় আমদের সচেতন থাকতে হবে যে আমরা শিশুর দর্শন ও মানসিকতাকে কিভাবে তৈরী করছি। এটা আবশ্যক যে, শিশুদের বেড়ে উঠার সাথে সাথে বাবা- মাকে সচেতনতার সাথে তাদের বয়সের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সুরা বা আয়াত নির্ধারণ করতে হবে।রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বেশির ভাগ সাহাবী তাদের প্রপ্তবয়সে (শিশু বয়সে নয়) কুরআনের সাথে পরিচিত হন। সেই বয়সে কুরআন তাদের ওপর অভূত প্রভাব ফেলেছিলো। কুরআন তাদের চরিত্রকে আরো বেশী মজবুত ও সাহসী করেছিল এবং তাদেরকে উচ্চতর নৈতিকতার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলো। শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষাবিদ, সামাজিক বিজ্ঞানী ও কুরআন বিশেষজ্ঞরা মিলে কুরআন শিক্ষার একটা ক্রম ঠিক করা জরুরী যাতে অভিভাবকরা কিভাবে সন্তানদের বয়স অনুযায়ী তাদেরকে আয়াত বা সুরা শিক্ষা দিবেন সেটা জানতে পারেন। এটা অনস্বীকার্য যে ব্যক্তিজীবনে কুরআনের সবগুলো আয়াতেরই শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।তবে প্রশ্ন হলো কোন ক্রম বা ধারায় এটা শেখা বেশী কার্যকর? কোন আয়াত বা সুরাগুলিকে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে এবং কোন বয়সে কোন আয়াতের শিক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন? ৩৭টি ছোট সূরা আছে বলেই প্রথমেই সম্পূর্ণ ৩০ পারা দিয়ে শুরু করা নিঃসন্দেহে উপযুক্ত নয়। তাছাড়া কেবলমাত্র মুখস্ত করার ক্ষেত্রে সহজতার ভিত্তিতে সূরা বিবেচনা করা সঠিক পন্থা নয়। – Translation Parent-Child Relations.

———

” শিক্ষাবিদ, সামাজিক বিজ্ঞানী ও কুরআন বিশেষজ্ঞরা মিলে কুরআন শিক্ষার একটা ক্রম ঠিক করা জরুরী যাতে অভিভাবকরা কিভাবে সন্তানদের বয়স অনুযায়ী তাদেরকে আয়াত বা সুরা শিক্ষা দিবেন সেটা জানতে পারেন।” – কেউ কি আছেন এই গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টটি হাতে নেয়ার ?

 

শিশুর প্রতি যত্ন


প্যারেন্টিং


চড়-থাপ্পর মারবেন না
শাস্তি বলতে আমরা বুঝি বাচ্চাকে চড় মারার বিষয়টি। খেয়াল রাখবেন বাচ্চার গায়ে হাত তুলছেন যে কারণটির জন্য তা তার স্বভাবে স্থায়ী করে দিচ্ছেন কিনা অজান্তে। মার সাধারণ শরীরে লাগে এবং মানুষ ভুলে যায় সময়ের সাথে সাথে। তবে এর মানসিক প্রভাবটি থেকে যায় দীর্ঘ দিন।

খারাপ কাজে শাস্তি
অন্যায় করলে শাস্তি দেওয়া। বাচ্চা একদিন দেরি করে বাসায় এসেছে তাকে প্রচুর শাস্তি দিলেন কিন্তু আরেকদিন দেরি করে আসায় আর শাস্তি দিলেন না ফলে তার কাছে ভুল মেসেজ চলে যায়। তাই শাস্তি দিন বিষয়টি আপনি বুঝে।

শুয়ে খাওনো নিষেধ 
ছোটবেলায় বাচ্চা খেয়ে না চাইলে শুয়ে অনেক সময় মা খাওয়ান। এই অভ্যাসটি আপনার মাঝে থাকলে ছেড়ে দিন। বাচ্চাকে টেবিলে বসিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।

হাসাহাসি & ছুটাছুটি করুন
সময় পেলে বাচ্চার সাথে খেলুন। দৌড়াদৌড়ি করুন। আদর করুন। বাচ্চাকে জড়িয়ে রাখুন আপনার ভালোবাসার চাদরে।

শিশুদের সরি বলুন
বাচ্চারা ভুল করলে বড়রা চান তাদের সরি বলা হোক। আপনাকে দেখে ও শেখে। সুতরাং আপনি ভুল করলে বাচ্চাকে সরি বলুন। তারাও আপনাকে দেখেই শিখবে।

গোপনীয়তা বজায় রাখুন
খেয়াল রাখবেন আপনি অন্যের কাছে আপনার দূর্বলতা প্রকাশ করতে চান না। তেমনি বাচ্চাও তার দুর্বলতা অন্যের সামনে বলে দেওয়া হলে তার অপমানে লাগে। সুতরাং নিজের পাশাপাশি বাচ্চাদের দুর্বলতা যত সামান্য হোক গোপনীয়তা বজায় রাখুন।

নতুন কাজ শিখানো
নতুন মূল্যবোধ, নতুন খেলা, নতুন জায়গার সাথে পরিচয় করে দিন বাচ্চার সাথে। আপনি তাদের সাথে শিখুন নতুন কিছু।

 

মানুষ কাকে ভালবাসে?


কানিজ ফাতিমা


আমার ছোট ভাই বিয়ের কথা ভাবছে। খুশীর খবর। কিন্তু একটা ব্যাপার আমাকে ভাবাচ্ছে। আর তাহলো, সে কি আসলেই বিয়ের জন্য প্রস্তুত? কেমন প্রস্তুতি নিয়ে আমি ভাবছি? টাকা পয়সা ? বিয়ের খরচ?এগুলো অবশ্যই ভাবার বিষয়। কিন্তু এগুলোর সমাধান করা তেমন কঠিন হবে না। আমি ভাবছি, পারিবারিক বা দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে তার যথেষ্ট জানা আছে কিনা। অনেককে বলতে শুনি বিয়ে হলে সবাই ঠিক হয়ে যায়। আমার অভিজ্ঞতা তা বলে না। মানুষ প্রাকৃতিক নিয়মে কিছু জ্ঞান পায় কিন্তু জীবন চলার পথে বেশীর ভাগ জ্ঞান ও যোগ্যতা (Knowledge and skill) মানুষকে অর্জন করতে হয়। যেমন প্রাকৃতিক নিয়মে মানুষ রাগ করতে শেখে কিন্তু রাগ কে ম্যানেজ করার যোগ্যতা তাকে শিখতে হয় ও অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। জীবন সঙ্গী পাবার আগ্রহ মানুষের প্রাকৃতিক কিন্তু সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও জীবন চলার জ্ঞান ও যোগ্যতা প্রাকৃতিক নিয়মে আসেনা; এটা শিখতে হয়। আমাদের দেশের ছেলে মেয়েরা এটা কোথা থেকে শিখবে ? আমাদের দেশ কেন, পৃথিবীর কথাও কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এর উপরে পড়ানো হয় বলে আমার জানা নেই। উন্নত বিশ্বে এর উপরে চার্চ, মসজিদ বা সামাজিক কিছু প্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং কোর্স করানো হয়। আমাদের দেশে এমন কিছু নেই। উন্নত বিশ্বে এর উপরে অনেক বই পাওয়া যায় আমাদের দেশে এমন গবেষণা মূলক বই নেই বললেই চলে। আর দু/একটা থাকলেও তা পরার প্রয়োজন মানুষ খুব একটা বোধ করে না . তাহলে এ জ্ঞান ও যোগ্যতা তারা কোথা থেকে পাবে। বাবা-মা বা পরিবারের অন্যদের দাম্পত্য জীবন তারা দেখে কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দাম্পত্য জীবন নিয়ে তাদের সঙ্গে কেউই আলোচনা করে না। ফলে এ জ্ঞান তাদের অজানাই রয়ে যায়। নাটক সিনেমা থেকে যা তারা জানে তাই তাদের সম্বল আর আমাদের নাটক সিনেমায় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বিয়েই হয় শেষ দৃশ্য। অর্থাত বিয়ে হলো তো সব সমস্যার শেষ – এর পর তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো। এত সামান্য জ্ঞান (তার কিছুটা আবার অবাস্তব) এর উপর নির্ভর করে তারা একটি ভারসাম্যপূর্ণ দাম্পত্য জীবন যাপন করবে এটা আমার ঠিক ভরসা হয় না। কাজেই আমি ঠিক করলাম আমি আমার ভাইকে আগে থেকেই আমার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান শেয়ার করব যেহেতু আমি দেশের বাইরে সেহেতু আমি মাঝে মেঝে তাকে ইমেইল করব যা হয়ত তার প্রয়োজন কিছুটা পূরণ করবে আমি পাঠকদের সাথে সেই ইমেইল গুলোই শেয়ার করছি।

Dear…..,

আসসালামু আলাইকুম

তোমার অবসর সময়ে এ লেখাগুলো পড়ো। এগুলো মুছে ফেলনা , save করে রেখো পরবর্তী জীবনের জন্য। যখনি কোনো পারিবারিক সমস্যায় পড়বে এগুলো কাজে আসবে। সবার আগে মনে রেখো বিয়ে কোনো ” romantic saga” নয়। এটা প্রচন্ড বাস্তবধর্মী একটা অধ্যায় যাতে রোমান্স কিছুটা বাড়তি সৌন্দর্য দান করে (marriage is not a “romantic saga”- it is very much realistic with a touch of romance, like dressings on salad).

আমাদের চারপাশে আমরা তিন ধরনের মানুষ দেখতে পাই –

এক , কিছু মানুষ যারা অন্যদের জীবন থেকে শিক্ষা নেয়। এরা নিজেদের জীবনের অনেক সমসা এড়িয়ে যেতে পারে;

দুই , কিছু মানুষ (অন্যের জীবন থেক শিক্ষা নেয়না তবে ) নিজের জীবন থেকে শিক্ষা নেয়, এরা কিসু সমস্যায় পরে তবে কিছু সমস্যা এড়িয়ে যেতে পারে;

তিন, কিছু মানুষ নিজের জীবনের শিক্ষাও কিছুদিন পর ভুলে যায় , এরা বার বার একই গর্তে পরে

আমি আশা করি তুমি প্রথম ধরনের মত হবে – তাই তোমার জন্য কিছু তথ্য।

মানুষ কাকে ভালবাসে? কৈশোরে মনে হত দেখতে সুন্দর আর চৌকষ এমন কাউকে – কারণ সিনেমা নাটকের সব নায়ক নায়িকাই দেখতে ওই সিনেমায় অভিনয়কারী অন্য সবার থেকে বেশী সুন্দর। না, ঠিক না। তাহলে মানুষ কাকে ভালবাসে ? মনে হলো মানুষ তাকেই ভালবাসে যার জীবন দৃষ্টিভঙ্গী তার নিজের জীবন দৃষ্টিভঙ্গীর মত। অনেকটা সত্যি, কিন্তু দু’জন একই দৃষ্টিভঙ্গীতে বিশ্বাসী মানুসের বিয়ের কয়েক বছর পর আর ভালবাসা খুঁজে পাওয়া যায় না এমন উদহরণ চারপাশে ভরা। আবার খোজা শুরু হলো – মানুষ কাকে ভালবাসে? ভাবলাম মানুষ তাকে ভালবাসে যে তার জন্য ত্যাগ স্বীকার করে। মারাত্বক ভুল প্রমানিত হলো। কারণ যার জন্য ত্যাগ করা হচ্ছে সে হয়ত বুঝতেই পারছে না যে আরেকজন তার জন্য কতটা ত্যাগ করছে,উল্টো এটা অনেক সময় তার চাহিদাকে বাড়িয়ে দেয় , expectation level অনেক উপরে উঠে যায়, ত্যাগকারীর হতাশা বেড়ে যায় , ভালবাসার কাটা উপরে ওঠার বদলে নীচে নামতে থাকে। তাহলে মানুষ কাকে ভালবাসে ? এখন মনে হচ্ছে মানুষ তাকেই ভালবাসে যে তাকে ভালো অনুভব (feel) করায় (who makes me feel good).

-আমি অসুস্থ হলে যে আমার জন্য তা করে যাতে আমি ভালো feel করি তাকে আমি ভালবাসি

-যে সামাজিক পরিবেশে আমার সঙ্গে সেভাবে কথা বলে যাতে আমি ভালো feel করি তাকে আমি ভালবাসি

-যে সেই ভাবে dress-up করে যাতে আমি ভালো feel করি তাকে আমি ভালবাসি

-যে ঘরে মেহমান আনার সময় ভাবে এসময় এই মেহমান আসলে আমি ভালো feel করব কিনা তাকে আমি ভালবাসি

-কথাও বেড়াতে যাবার আগে যে ভাবে এসময় এজায়গায় আমি ভালো feel করব কিনা তাকে আমি ভালবাসি

-যে অন্যকে সময় দেয়ার ( time commitment করার) আগে ভাবে আমি কেমন feel করব তাকে আমি ভালবাসি

-আমি কাজ থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসলে কাউকে ফোন বা skype করার সময় যে ভাবে আমি কেমন feel করব তাকে আমি ভালবাসি

-কেউ কোনো occasion এ ভাবে কোন gift টা হাতে করে নিয়ে আসলে আমার ভালো লাগবে তাকে আমি ভালবাসি

-খাবার কিনতে গেলে যে ভাবে কোন খাবারটা কিনলে আমি ভালো feel করব তাকে আমি ভালবাসি

-তার আত্মীয় বা বন্ধুরা আমাকে অপমান বা উপেক্ষা করার চেষ্টা করলে যে বুঝতে পারে আমি কেমন feel করব তাকে আমি ভালবাসি

-যে আমার আত্মীয় বা বন্ধুদের সঙ্গে সেভাবে কথা বলে যাতে আমি ভালো feel করব তাকে আমি ভালবাসি

-যে আমার কাছাকাছি থাকলে আমি নিশ্চিন্ত feel করি তাকে আমি ভালবাসি।

কেউ যদি আমার ভালবাসা চায় তবে তাকে এভাবেই তা পেতে হবে। আমি যদি কারো ভালবাসা চাই তবে আমার জন্যও এই একটাই রাস্তা।

 

একটু বুকে টেনে নাও না মা…


আফরোজা হাসান


মার সাথে রাস্তায় সিগন্যাল পার হচ্ছিলো ছয় বছর বয়সি বাচ্চাটা। হাতে ধরা ছিল দুটা বই। ছোট মানুষ তাই কৌতূহলী চোখে বিভিন্ন দিকে তাকাতে তাকাতে হাঁটছিল। হঠাৎ হাত থেকে বইগুলো পরে গেলো। ঘাবড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির দিকে, আর অসহায় চোখে মায়ের দিকে তাকালো বাচ্চাটি। মা বাচ্চাটিকে উঠিয়ে হিড়হিড় করে টেনে রাস্তা পার করেই ধমকে বললেন, কত বার বলেছি তোমাকে রাস্তা পার হবার সময় সাবধানে চলতে। যদি গাড়ি চলা শুরু করতো? আর যদি কখনো এমন করো দেখো তোমাকে কি করি। বাচ্চাকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মা’টি কাঁধ ধরে ঝাঁকি দিয়ে বললেন, তাকিয়ে থাকতে হবে না, যাও হাঁটো।

কয়েকটি বাচ্চা মিলে ছুটোছুটি খেলছিল আর মায়েরা পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন। খুব জোরে ছুটতে দেখে একজন মা বার বার তার ছেলেকে সাবধান করছিলেন। কিছুক্ষণ পর সেই ছেলেটিই পড়ে গেলো। মা ছুটে গিয়ে বাচ্চাকে টেনে উঠিয়ে গালে এক চড় দিয়ে বললেন, বলেছিলাম না তোমাকে এভাবে না ছুটতে? খুব ভালো হয়েছে। একদম উচিত শিক্ষা হয়েছে তোমার। আর কখনো হবে আমার অবাধ্য? বাচ্চাটির চোখ দিয়ে ঝরঝর অশ্রু নেমে এলো তখন।

উপরের ঘটনা দুটি আমার চোখে দেখা। ঘরে বাইরে সব জায়গাতেই শিশুরা এমন অনিচ্ছাকৃত ভুল বা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। কিছু কিছু বাবা-মার আচরণ তখন উপরের ঘটনার মতো হয়ে থাকে। যে সময় বুকে জড়িয়ে ধরে আশ্বস্ত করার দরকার, সেই সময় এমন নিষ্ঠুর আচরণ করা হয় বাচ্চাদের সাথে। আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করেছি পিঠাপিঠি ভাই-বোনরা কোনকিছু নিয়ে ঝগড়া বা মারামারি করলে বাবা-মা বেশির ভাগ সময় ছোটজনকে সাপোর্ট করেন। ভুল ছোটজনের থাকলেও বকা বড়জনকেই খেতে হয় বা মাফ বড়জনকেই চাইতে হয়।

এই সমস্ত ঘটনা বা আচরণ একটা শিশুর মনোজগতে কি ধরণের প্রভাব ফেলে তা আমরা চিন্তাও করে দেখি না। বাবা-মা যে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় এই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে বাচ্চাটা ধীরে ধীরে। যে কোন বিপদ, কষ্ট কিংবা ব্যর্থতায় বাবা-মার কাছে ছুটে আসতে পারে না কিংবা বলা যায় আসার সাহস পায় না। কারণ তার মনের আকাশে গুড়গুড় করে নিরাশার মেঘ। অনিচ্ছাকৃত অন্যায় বা ভুলের জন্য বাচ্চাদের সাথে কখনোই এমন আচরণ করা ঠিক না। এরফলে বাবা-মা আর বাচ্চাদের মধ্যে যে অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়, পরবর্তিতে এই দেয়ালের কারণেই বাচ্চারা নিজেদের দোষ-ভুল ইত্যাদি গোপন করতে শেখে আর কমে যায় তাদেরকে সংশোধনের সুযোগ।

আমার ছেলেটা যখন এই ধরণের অনিচ্ছাকৃত ভুল বা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে, তখন ওর ভীত চোখের দিকে তাকালে আমি অনুভব করি ভয়-অপরাধবোধ সবকিছু মিলিয়ে সে বলতে পারছে না যে, আমাকে একটু বুকে টেনে নাও না মা…..!!! কিন্তু আমি তো মা তাই বুঝি, সব মায়েরাই বুঝতে পারেন। কারণ সৃষ্টিকর্তা এই ক্ষমতা দিয়ে দেন একটি মেয়েকে যখন সে মা হয়। নেতিবাচক পরিস্থিতি গুলোতে আমরা যেন আমাদের বাচ্চাদের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হতে পারি, কারণ তখনই একটি শিশুর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় মায়ের মমতার আশ্রয়ের।

 

ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা ও কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজন


নারী সংবাদ


‘আমার মা জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। চতুর্থ স্টেজে ছিলেন। উনি বুঝতেই পারেনি তার শরীরে নীরবে দানা বেঁধেছে মরণব্যাধী। মধ্যবিত্তের সংসার, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে লড়াই করা সহজ ছিল না। আর্থিক ও মানসিকভাবে তাকে ভরসা দিতে পারিনি, কারণ উনি এই বিষয়টা শুনলে ভেঙ্গে পড়বেন, জানানো হয়নি তাই। সাড়ে তিনবছর লড়াই করেছেন এর বিরুদ্ধে। সাতবছর হলো মা চলে গেছেন। এখন মনে হয় তিনি অভিমান নিয়ে চলে গেছেন। হয়তো আর্থিক ও মানসিকভাবে তাকে সহায়তা করা গেলে তিনি আরো কিছুদিন আমাদের মাঝে থাকতে পারতেন।’ এমন মর্মস্পর্শী কথা বলছিলেন বাগেরহাটের সাবেরা।
কুমিল্লার লাকি জানান, ‘আমার মা স্তন ক্যান্সারে মারা গেছেন। তার স্তনে টিউমার হয়েছিল। সার্জারির মাধ্যমে তা অপসারণ করা হয়। পরবর্তীতে কেমোথেরাপি চললেও তা শেষ করা যায়নি। ব্যায়বহুল চিকিৎসায় আমরা সর্বশান্ত হয়েছি। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। জানিনা আমাদের পরিবার কতদিনে আর্থিক ও মানসিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো।’
শুধু সাবেরা কিংবা লাকিই নয়, ক্যান্সার রোগে প্রিয়জনকে হারিয়েছেন অনেকে। ক্যান্সারের চিকিৎসায় আর্থিকভাবে সর্বশান্ত হয়েছেন অনেক পরিবার। বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা কারণে এই ব্যাধি ক্রমশ বাড়ছে।
ক্যান্সার বিশেজ্ঞদের মতে, দেশে প্রায় ১২ লাখ ক্যান্সার রোগী রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ মানুষ নতুন করে কোন না কোন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। মারা যাচ্ছে বছরে প্রায় দেড় লাখ রোগী। যে কোন বয়সেই ক্যান্সার হতে পারে। কিছু-কিছু ক্যান্সারে খুব অল্প বয়সে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তবে সাধারণত অপেক্ষাকৃত মধ্যবয়সী মানুষের মধ্যে ক্যান্সারের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
বাংলাদেশে পুরুষদের মাঝে কোলন ও ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রবণতা দেখা যায়। নারীদের জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে। কি কারণে ক্যান্সার হয় এর পুরোপুরি কারণ জানা না গেলেও পারিবারিক ক্যান্সারের ইতিহাস, জীবনযাত্রার মান, খাদ্যাভাস বিবিধ কারণে ক্যান্সার হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ক্যান্সার ছোঁয়াচে নয়। শব্দটি শুনলে আঁতকে ওঠেন অনেকে। কিন্তু সঠিক সময়ে সনাক্ত করা সম্ভব হলে এর নিরাময় সম্ভব। মানবদেহের কিছু কোষের স্ফিত হওয়ার মধ্যেই এর বীজ লুকিয়ে থাকে। এঘুলো কখনো চাকা, পিন্ড আকারে দেখা যায়। পরবর্তীতে তা নীরবেই ছড়িয়ে পড়ে শরীরের বিভিন্নস্থানে। ধীরে-ধীরে শরীরের প্রয়োজনীয় অঙ্গগুলো অকেজো হয়ে যায়।
দেশে যেভাবে ক্যান্সারের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তার তুলনায় হাসপাতাল, চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানের অপ্রতুলতা রয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা(হু)এর মতে দেশে চিকিৎসা কেন্দ্র থাকা প্রয়োজন ১৬০ টি। রয়েছে মাত্র ১৫ টি। ক্যান্সার চিকিৎসায় বিশেষায়িত জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল ৫০টি শয্যা নিয়ে চালু হলেও এ ধরনের রোগীর চাপে বর্তমানে ১৫০ টিতে উন্নীত করা হয়েছে। শুধু হাসপাতালের চিকিৎসাই নয়, আক্রান্ত রোগীর প্রয়োজন হয় সহযোগিতা ও সহমর্মীতার। ক্যান্সারেরই যে রোগীর মৃত্যু হয় এমন নয়, কখনো কখনো স্ট্রোক বা যে কোন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হতে পারে। তবে এ ধরনের রোগীর এই মরণব্যাধি হলে নানা মানসিক চাপে থাকেন। অনেক সময় রোগীর চারপাশের স্বজনেরা নানা নেতিবাচক কথা বলে তাকে ভীত করে তোলেন। অনেকে আত্মহত্যা করার কথাও ভেবে বসেন। নিজেকে গুটিয়ে নেন অপরাধবোধে। সেজন্য চিকিৎসকের রোগ নির্দেশনার পাশাপাশি, পরিবারের ও কাছের মানুষরা রোগীকে একান্তে নিবিড়ভাবে সময় দিতে হবে। যেন রোগের কারণে ভীতির সঞ্চার না হয়, তাকে সাহস দিয়ে মানসিক লড়াইয়ে সামিল হবার কাজটাও করতে হবে।
জাতীয় ক্যান্সার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোশারফ হোসেন বলেন, বর্তমানে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারিÑবেসরকারিসহ দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণের সচেতনতা প্রয়োজন। বর্তমান সরকার সারাদেশে প্রায় বিনামূল্যে এধরনের রোগীদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সুলভে ওষুধের প্রাপ্যতা দিতে উদ্যোগ নিচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ)মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ডা. এবিএম আবদুল্লাহ জানান,আধুনিক বিজ্ঞানের কারণে ক্যান্সার মানেই অবধারিত মৃত্যু নয়। চিকিৎসাও এখন আর অজেয় নয়। শুরুতে সনাক্ত করা গেলে চিকিৎসায় এর নিরাময় সম্ভব। নিত্যনতুন অধিক কার্যকরী কেমোথেরাপি জাতীয় ওষুধ আবিস্কার এবং রেডিওথেরাপির ব্যাবস্থা থাকায় ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব হচ্ছে।
তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বে মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে ক্যান্সার দ্বিতীয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তৃতীয়। ক্যান্সারের লক্ষণ নির্ভর করে কোথায় কী ধরনের ক্যান্সার হচ্ছে তার উপর। তাই শরীরে কোন অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন্ হতে হবে।
সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ নুরুল কবির জানান, ক্যান্সার নিয়ে আতংক যেমন রয়েছে তেমনি আছে আশার বাণীও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী ইশতেহারে ক্যান্সারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছেন। দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া ক্যান্সার আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবার সহায়তায় দেয়া হচ্ছে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা। গত অর্থবছরে এ খাতে বাজেট ধরা হয়েছিল ৫০ কোটি টাকা। এ অর্থবছরে ৭৫ কোটি এবং আগামী অর্থবছরে ১৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার। গতবছর ছিল ১০ হাজার। তার আগের বছর ছিল সাড়ে সাত হাজার। এপর্যন্ত সাড়ে ১৪ হাজার দরখাস্ত জমা পড়েছে। এই কিস্তিতে পৌনে চার হাজার জনকে এই টাকা দেয়া হবে। এরমধ্যে আরো দরখাস্ত জমা পরবে। চলতি অর্থবছরে টার্গেট ধরা হয়েছে ১৫ হাজার জনকে এই সহায়তা প্রদান করা হবে।
সুত্র: (বাসস)।

 

পরিবারে দ্বন্দ নিরসন


কানিজ ফাতিমা


বিয়ে দু’জন মানুষের মধ্যে জীবনকে ভাগাভাগি করে নেয়ার চুক্তি। জীবনে একসাথে চলার পথে বহু বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়। এই বাস্তবতার অন্যতম বাস্তবতা হল Conflict বা দ্বন্দ, সংঘাত, বিরোধ ইত্যাদি। বিয়ের পূর্বে এ ব্যাপারটি নিয়ে খুব একটা চিন্তা ভাবনা করা হয় না। বিয়ের পূর্বে সম্পর্কের মধুর(Romantic) দিকটি নিয়েই বেশি জল্পনা-কল্পনা হয়। ফলে বিয়ের পরে যখন এই দ্বন্দ বা Conflict দেখা দেয় তখন অনেকেই এটিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না। অনেকে হতাশা বোধ করে, অনেকে নানা প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে।
এজন্য বিরোধ ব্যবস্থাপনা বা Conflict management সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরী। Conflict management বা বিরোধ ব্যবস্থাপনার প্রথম কথা হল সমাজে, সংগঠনে বা পরিবারে বিরোধ থাকা একটি বাস্তবতা। কেউ যদি মনে করে দু’জন মানুষ একত্রে বসবাস করবে আর তাদের মধ্যে কোন বিরোধ থাকবে না তবে তা একমাত্র রূপকথাতেই সম্ভব। বাস্তবতা হল দু’জন মানুষ একত্রে থাকলে বিরোধ বাঞ্ছনীয় তাতে দু’জনের সম্পর্ক যাই হোকনা কেন। স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, বাবা-পুত্র সবার মধ্যেই বিরোধ থাকবে। তবেপ্রশ্ন হল সেই বিরোধের মাত্রা কতটুকু? যেমন ধরা যাক বাবা জমি কিনতে চাচ্ছেন আর পুত্র ব্যবসার টাকা বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন। মা মেয়ের জন্য সালোয়ার কামিজ কিনতে চাচ্ছেন কিন্তু মেয়ে প্রসাধন সামগ্রী চাচ্ছে। মানুষে মানুষে বিরোধ না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। বিরোধ, মতের পার্থক্য, চিন্তার ভিন্নতা এ পৃথিবীর অপরিহার্য একটি বৈশিষ্ট্য। Conflict সম্পর্কে দ্বিতীয় কথা হল সব Conflict বা বিরোধই খারাপ নয়। Conflict বা বিরোধ শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে বিরূপ চিত্র ভেসে ওঠে। কিন্তু চিন্তা করে দেখুনConflict বা বিরোধের ফলে অনেক ভাল জিনিসের তৈরী হয়। যেমন Conflict সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। যেমন ধরুন বাবা বললেন আমরা অমুক এলাকায় বাসা ভাড়া নিবো, মা বললেন না, এখানে বৃষ্টি হলেই পানি জমে। আমরা ওমুক এলাকায় যাবো। ছেলে বললো না, এখান থেকে আমার কলেজ অনেক দূরে, আমাদের কলেজের কাছাকাছি এলাকায় থাকা উচিত। এভাবে ভিন্ন মতামতের কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয় সব তথ্য বের হয়ে আসবে এবং একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে। অপর পে অতিমাত্রায় বিরোধ, হিংসা ও সংঘর্ষ জীবনে অশান্তির কারণ। কাজেই আমরা বলতে পারি সহনশীল মাত্রার বিরোধ পরিবারের জন্য উপকারী। একজন স্বামী বা স্ত্রীকে এটি মেনে নিতে হবে যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ ঘটবেই। তবে তাকে সহনশীল পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করাই হচ্ছে Conflict management বা বিরোধ ব্যবস্থাপনা। দ্বন্দ বা বিরোধ পুরোপুরি নিরসন বা নির্মূলকরণ অসম্ভব বা অবাস্তব। মূলতঃ দ্বন্দ বা বিরোধ ব্যবস্থাপনাই সঠিক পন্থা। তাই স্বামী ও স্ত্রীকে Conflict management বা দ্বন্দ ও বিরোধ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। স্কলারগণ Conflict management এর নিম্নরূপ মডেল প্রদান করেছেন-

১. Forcing- বিরোধের সময়ে আপনি অন্যপক্ষরে মতামত বা স্বার্থকে আমলে না এনে যদি শুধুমাত্র নিজের অবস্থানে অটল থাকেন, নিজের স্বার্থ ও মতামতকেই প্রাধান্য দেন তবে একে বলা হয় চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে দ্বন্দ নিরসন করা। আপনি যদি অন্য পক্ষরে তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হন তবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে চাইবেন। এতে অন্যপক্ষ মন থেকে নয় বরং বাধ্য হয়ে আপনার কথা মেনে নেবে। এ পদ্ধতি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের জন্য বিরোধ নিরসনের সঠিক পন্থা নয়। হুমকি ধমকীর মাধ্যমে নিজের ইচ্ছাকে স্থাপন করার চেষ্টা নির্যাতনের আওতায় পড়ে।

২. Accommodating বা আত্মসমর্পন করা- এটি Forcing এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আপনি যদিনিজের অবস্থান থেকে সরে আসেন এবং অপর পকে পুরোপুরি মেনে নেন তবে তাকে Accommodating পদ্ধতি বলে। দুই ক্ষেত্রে সাধারণত মানুষ এটা করে থাকে।ক. আপনি যদি দুর্বল হন এবং আপনার প্রতিপক্ষ যদি শক্তিশালী হয় তবে আপনি বাধ্য হবেন এ পদ্ধতি অবলম্বন করতে।খ. আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আপনার অবস্থান ভুল এবং আপনার প্রতিপক্ষ সঠিক তখন আপনি স্বেচ্ছায় নিজ অবস্থান থেকে সরে আসবেন।

 

ভালোবাসার স্বভাব, ভালোবাসার অভাব


রেহনুমা বিনত আনিস


১/
কাজ থেকে ফিরছিলাম। ট্রেন স্টেশন থেকে বেরোবার পথে বেশিরভাগ মানুষ ডানদিকে চলে গেল, বামদিকে আমার সামনে কেবল এক মহিলা ছাড়া আর কেউ নেই। আমি সাধারনত খুব দ্রুত হাঁটি, এই মহিলা বুঝলাম আমার চেয়েও দ্রুত হাঁটছেন, কারণ পেছন থেকে কেবল তাঁর ঋজু দেহখানা দেখতে পাচ্ছি, চেহারা দেখছিনা। দু’জনেই বাঁয়ে মোড় ঘুরলাম। দেখি মহিলার হাঁটার গতি আরো বেড়ে গেল। রাস্তার পাশে একখানা লাল গাড়ী, স্টিয়ারিং উইলে এক বৃদ্ধ দাদামশায় উৎসুক ভঙ্গিতে বসে আছেন, মুখের হাতের চামড়ায় কুঁচকানো দেখে বোঝা যাচ্ছে ভালোই বয়স হয়েছে। মহিলা দ্রুত হেঁটে গাড়িতে ওঠার পর খেয়াল করলাম তিনি হলেন দাদামশায়ের স্ত্রী, মাথার সব চুলই শ্বেতবর্ণ ধারণ করেছে, আজন্ম স্নো ক্রীমে লালিত মুখখানাতেও ভাঁজ পড়েছে ভালই। দাদীমা গিয়ে বসতেই দাদামশায় একগাল হাসি দিয়ে গাড়ীতে স্টার্ট দিলেন, দাদীর মুখ থেকে সারাদিনের ক্লান্তির সব চিহ্ন উবে গেল। তাঁদের এই চৌম্বকীয় ভালোবাসার দৃশ্যের সাক্ষীটির মনটা পরম মমতায় ভরে উঠল। আজকের যুগের দেহসর্বস্ব ভালোবাসার ভিড়ে এমন নিখাদ ভালোবাসার গভীরতা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ কি প্রতিদিন মেলে?

২/
কেউ ভাবেনি বিয়েটা টিকবে। মেয়েটি নিজেও না। স্বামী প্রবাসী, বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে কিন্তু স্ত্রীকে নিতে পারছেনা। মেয়েটি অত্যন্ত মেধাবী, যতদিনে স্বামীর তাকে নেয়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হোল ততদিনে সে লেখাপড়ার মধ্যাবস্থায়, পড়াশোনা শেষ না করে সে কিছুতেই যাবেনা। স্বামী বলতে শুরু করল সে আবার বিয়ে করবে, মেয়েটি বলল, ‘তাহলে আমি আর গিয়ে কি করব?’ স্বামী ছুটিতে দেশে এসেছে, স্ত্রী যাবেনা। আত্মীয়স্বজন ভাবছে এই বিয়ে কিছুতেই টিকবেনা। এমন এক অবস্থায় ওরা দু’জনেই এলো আমার কাছে। মেয়েটিকে বললাম সবকিছু ছেড়ে চলে যাও।

সে হতবাক হয়ে বলল, ‘আপনি একজন শিক্ষক হয়ে কি করে এমন একটি কথা বলতে পারলেন?’

বললাম, ‘শোন, শিক্ষক বলেই এ’কথা বলতে পারলাম। তোমার মেধা আছে। এই মেধা কেউ কেড়ে নিতে পারবেনা। আমি জানি একদিন তোমার লেখাপড়া ডিগ্রী ভবিষ্যত সব হবে। কিন্তু সেদিন এই সম্পর্কের জন্য তোমার আফসোস হবে, ‘যদি আমি চেষ্টা করতাম, হয়ত আমার সংসারটা টিকত!’

সে বলল, ‘কিন্তু সে তো বলছে সে আবার বিয়ে করবে, তাহলে ওর সাথে গিয়ে আমার লাভ কি?’

বললাম, ‘রাগের মাথায় মানুষ অনেক কথাই বলে। তুমি পাশে নেই তাই তোমাকে ভয় দেখিয়ে সাথে নিতে চায়। এগুলো ভালোবাসাপ্রসূত অভিমান, বদনিয়ত নয়’।

সে আমার কথা বিশ্বাস করল। আমি আত্মীয় নই, স্বজন নই, নই কিছুই। কিন্তু সে আমার কথার ওপর ভরসা করে এত সাধের লেখাপড়া অসম্পূর্ন রেখে চলে গেল প্রবাসে, স্বামীর সাথে থাকার জন্য।

ক’দিন আগে সে জানালো সে দেশের এক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে সে ভর্তি পেয়েছে। ফেসবুক প্রোফাইলে ওর ফুটফুটে সন্তান দু’টির মুখচ্ছবি সাক্ষ্য দিচ্ছে আজ সে সব পেয়েছে- স্বামী, সন্তান, শিক্ষার সুযোগ, সাফল্য, সুখ। সামান্য একটু ধৈর্য্য, সামান্য একটু অপেক্ষা, অনেক অনেক বিশ্বাস- এটাই ওর সাফল্যের চাবিকাঠি ছিল। কিন্তু আমরা অনেকেই এই ধৈর্য্যটুকু রাখতে পারিনা, যা চাই তার জন্য অপেক্ষা করতে রাজী থাকিনা, ভাবতে পারিনা যে অনেকসময় ভালোটুকু পাওয়া যায় খারাপের পরেই- এ’টুকু সময় স্থির থাকতে পারলে হয়ত আমরা অনেক কিছুই অর্জন করতে পারতাম যা অনেকে আজীবন সাধনা করেও অর্জন করতে পারেনা।

৩/
সেই চেনা পরিচিত রোগগুলো আবার ফিরে আসছিল। ভোরে অ্যালার্ম বাজবে বলে অ্যালার্ম বাজার আগেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। স্কুলে যখন বীজগণিত করতাম, কোন অংক না মিললে ঘুমের ভেতরেও মগজ অংক কষতে থাকত। ঘুমের মধ্যে সব অংক ঠিক ঠিক মিলে যেত, অনেক সময় ঘুম থেকে উঠে সেভাবে অংক করলে সত্যিই মিলে যেত! এখন ঘুমের মধ্যে কেবল কোম্পানীর ফাইলপত্র ঘাটতে থাকি, ঘুম শেষ হয়ে যায় কিন্তু কিছুতেই সব কাজ গুছানো শেষ হয়না।

প্রথম যেদিন কাজে গেলাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট কন্ট্রোলার ডেভ বলল, ‘তোমাকে মাটিতে অবতরণ করার আগেই দৌড় শুরু করতে হবে বলে আমি দুঃখিত, কিন্তু আমরা খুব বেকায়দায় পড়ে গেছি, তোমার সাহায্য আমাদের খুব প্রয়োজন’।

সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে দিতে বলল, ‘এখানে আমাদের জাতিসংঘের মত সব দেশের প্রতিনিধিই আছে। সবাই তোমাকে সাহায্য করবে’।

তবু অনেক অনেকদিন পর কাজ শুরু করেছি, নতুন জায়গা- শরীরের ওপর, মনের ওপর চাপ যাচ্ছিল। তাই রোগগুলো প্রভাব বিস্তার করছিল বেশ।

প্রথমদিনই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এসেছিলো ক্যানাডার জর্ডান, হং কং- এর নেলসন আর পাকিস্তানের ফ্র্যান্সেসকা। লাজুক স্বভাবের ভারতীয় জেকব থাকে আশেপাশেই, প্রয়োজন হলেই এগিয়ে আসে, তারপর আবার ঢুকে পড়ে নিজের গর্তে। ক’দিনের মধ্যেই ভাব জমে গেল ভারতের স্বর্না, ঘানার জেরাল্ড, চীনের সানি, ক্যানাডার ডনার সাথে। অন্যরা থাকে আশেপাশেই, সুযোগ এলেই এগিয়ে আসে। আজ সকালে গ্রুপলিডার লিন বলল, ‘আমরা কিছুদিনের মধ্যেই তোমাকে একজন সহযোগী দিতে যাচ্ছি। সে পর্যন্ত একটু কষ্ট করে চালিয়ে যাও’।

কিন্তু বেশিক্ষণ চালাতে হোলনা। কিছুক্ষণ পরই জেরাল্ড, নেলসন আর ফ্র্যান্সেসকা মিলে আমার বাকী কাজগুলো ভাগ করে নিয়ে বলল, ‘আজ তুমি বিশ্রাম নাও, কাজ আমরা করছি’। আস্তে আস্তে রোগমুক্ত হয়ে যাচ্ছি নিজের অজান্তেই!

এই বৈশ্বিক ভ্রাতৃত্বের রূপ দেখে ভাবি, যে ফুলটিকে বাঁচাব বলে আমরা একদিন রক্ত ঝরিয়েছিলাম সে ফুলটিকে আজ আমরা নিজেরাই রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন করে ফেলছি। পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে এসে একটি ভিনদেশে আমরা একত্রিত হতে পারি, অথচ নিজের দেশে নিজের মাটিতে আমরা ভাই ভাই এক হতে পারিনা! হা কপাল!

 

দাদুর পাঠশালা


আফরোজা হাসান


ক’দিন থেকেই আরমান সাহেব তাঁর নাতি-নাতনীদের নিয়ে খুব চিন্তিত। বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করার জন্য মন মতো কাউকে পাচ্ছেন না। অপেক্ষা করছিলেন তার বড় ছেলে রিসাবকে কখন ফ্রি পাওয়া যায়। প্রচণ্ড ব্যস্ত তাই চাইলেই ছেলেটিকে সবসময় পাওয়া যায় না। আজ ছেলেটা বাইরে যায়নি তাই সকাল থেকেই অপেক্ষায় আছেন কখন ছেলে রুম থেকে বেরোবে। খবরের কাগজ নিয়ে বাগানে বসেছেন ঠিকই কিন্তু তাতে মনোযোগ দিতে পারছেন না। বার বার আড়চোখে তাকাচ্ছেন দোতলা থেকে নিচে নামার সিঁড়ির দিকে। অবশেষে তাঁর প্রতীক্ষার পালা শেষ হলো। ছেলে বাবার কাছে এসে সালাম দিয়ে বলল-

-তোমাকে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন বাবা? শরীর খারাপ করেছে?

-আলহামদুলিল্লাহ! শরীর ভালো আছে আমার। তবে চিন্তিত এটা ঠিকই ধরেছো। আমি আমার নাতী-নাতনীদেরকে নিয়ে খুবই চিন্তিত। ভাবছি ওদের জন্য একটা পাঠশালা বানাবো।

-(হেসে) পাঠশালা বানাবে?

-এটা হাসির কথা না রিসাব। একথা তো তুমিও জানো যে অমীয় সম্ভাবনার আলো নিয়ে পৃথিবীতে আসে প্রতিটি শিশু। এই সম্ভাবনার বিকাশ নির্ভর করে তাদেরকে কিভাবে গড়ে তোলা হয় তার উপর। শিশুদের মধ্যের সম্ভাবনা বিকাশের জন্য প্রচুর সহমর্মিতাময় আবেগের প্রয়োজন। শিশুর বেড়ে উঠার পরিবেশ যদি ভালোবাসা, আন্তরিকতা, সহমর্মিতাময় হয় তাহলে তারা আত্মবিশ্বাসী, মহৎ ও মুক্তমনা হয়ে বড় হয়। আর মানবজীবনের উদ্দেশ্যে সফল হওয়ার জন্য নম্র ও বিনয়ী হতে হবে। কারন মানুষ যত নম্র ও বিনয়ী হয় ততই তার মর্যাদা উন্নত হয়। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন-“ আমি তাদের পরকালে শাস্তি দেবোনা, যারা উদ্ধত স্বভাবের নয়, আর যারা অন্যের অনিষ্ঠ করার ইচ্ছে পোষণ করেনা।” বর্তমানের স্কুলগুলোতে কি এসব শিক্ষা দেয়া হয় বলো?

-আমি দুঃখিত বাবা। তুমি আসলে কি করতে চাচ্ছ বলো।

-কি করতে হবে বুঝতে পারছি না বলেই তো তোমার অপেক্ষায় বসে আছি। আমি গত কয়েকদিন থেকে বাচ্চাদের ক্লাসের বইপত্র ঘেঁটে দেখেছি অনেক কিছু শেখানো হয় ওদেরকে। কিন্তু জীবনের জন্য যা কিছু দরকার তার বেশির ভাগই অনুপস্থিত। ওদেরকে সবার আগে শেখাতে হবে সু-শিক্ষাই জাতি গঠনের চাবিকাঠি, পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি, অন্যায়ের কাছে পরাজয় স্বীকার না করাই জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা, বড়দের সম্মান করা, ছোটদের ভালোবাসা, কখনো লোভ না করা, মিথ্যা বলা, কাউকে ঠকানো, চুরি করা মহাপাপ, সততাই সবথেকে ভালো পন্থা, জীবনে দুঃখ-কষ্ট-ব্যথা- বেদনা আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা স্বরূপ।

-আমরা তো বাচ্চাদেরকে এসব শেখাতে চেষ্টা করি বাবা। তবে তোমার কথা শুনে মনেহচ্ছে এই বিষয়গুলোকে যতটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত তা হয়তো আমরা করছি না। ইনশাআল্লাহ! আমি তোমার সাথে আছি। তোমার কিছু একটা প্ল্যান তো আছে সেটা আমাকে বলো।

-দেখো আমি আর তোমার মা তো সারাটা দিন শুয়ে বসেই কাটাই। আমাদের কিছু বন্ধু-বান্ধবও আছে। আমরা সবাই ভাবছি অন্তত নিজেদের নাতী-নাতনীদেরকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করবো। এতে করে আমাদের সময়টাও ভালো একটা কাজে ব্যয় হবে। বার্ধক্য আমাদের মনকে নিস্তেজ করে দিতে পারবে না। আর ওদেরকে শেখাতে গিয়ে আমাদেরও জ্ঞানার্জন করা হবে। আমি চাইনা যে আমার নাতী-নাতনীরা জ্ঞানার্জনকে কিছু বইপত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলুক। ওদের মধ্যে জ্ঞানার্জনের পিপাসা তৈরি করে দিতে হবে। তাহলে ওরাই ছুটে বেড়াবে সেই পিপাসা মেটানোর সন্ধানে।

-(হেসে) তোমার কথা শুনে পরমহংস যোগানন্দের একটা বাণী মনে পড়ছে-“চিরন্তন সত্যের প্রজাপতি হও। তোমার আত্মজ্ঞানের পাখা রাঙিয়ে নাও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে।” আমি অবশ্যই চাই আমাদের বাচ্চারা চিরন্তন সত্যের প্রজাপতি হোক। তুমি কাজ শুরু করো তোমার পাঠশালার।

-কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাচ্চাদের কিভাবে শেখাতে হবে সেই সম্পর্কে তো আমাদের ধারণা কম। আমার এক বন্ধু বলছিলো মাইক্রোটিচ নামে নাকি কি একটা ট্রেনিং আছে শিক্ষকদের জন্য। তুমি কি জানো নাকি মাইক্রোটিচ ব্যাপারটা আসলে কি?

-মাইক্রোটিচ একটি শিক্ষাদান পদ্ধতি বাবা। এই পদ্ধতিতে অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে ছোট কোন বিষয়বস্তু সম্পর্কে সল্পসময়ে পাঠাদান করা হয়। মাইক্রোটিচিং পদ্ধতির তিনটি অংশ। মাইক্রো লেসন, মাইক্রো ক্লাস এবং মাইক্রো টাইম।

-কিন্তু পদ্ধতিটা আসলে কি?

-(হেসে) এটা আসলে শিক্ষাদানের সব কৌশলকে একত্রে আয়ত্ত না করে বরং পুরো শিক্ষার বিষয়বস্তুকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয়। এটি শিক্ষকদের শিখন দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যকারী কৌশল হিসেবে বিবেচিত। এর লক্ষ্য শিক্ষাদান পদ্ধতিকে শক্তিশালী করা, ব্যক্তিগত সবল দিক ও উন্নয়নের ক্ষেত্র চিহ্নিত করা এবং এছাড়াও আরো কিছু পয়েন্ট আছে। প্রত্যাশিত দক্ষতা অর্জনের জন্য তিনটি ধাপ অনুসরণ করা হয় এই পদ্ধতিতে। প্রথম ধাপ হচ্ছে- জ্ঞান আহরণ বা জ্ঞান অর্জন, দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে দক্ষতা অর্জনের ধাপ আর তৃতীয় ধাপটি হচ্ছে স্থানান্তর ধাপ।

-তারমানে এটি মূলত শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির একটা শিক্ষা পদ্ধতি। এটাই তো আমাদের দরকার সবার আগে। নিজেরা দক্ষ না হয়ে তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ার কাজে হাত দেয়া ঠিক হবে না। তুমি আগে আমাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করো।

 

আত্মহত্যা


জিয়াউল হক


একাকিত্ব বা নিসঙ্গতা আজ সারা বিশ্বের বয়স্কদের মধ্যে এক মহামারী হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের দেশ, আমাদের ধর্মনিষ্ঠ সমাজও এ থেকে বেঁচে থাকতে পারেনি। বিশ্বের আনাচে কানাচে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও বয়স্কদের দিকে নজর দিলেই তাদের চেহারায় একাকিত্ব বা নিঃসঙ্গতাজনিত মানসিক রোগের চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়।

মানসিক রোগের কারণে চিন্তা-চেতনা, বোধ ও বিশ্বাসে যে বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা নেমে আসে, তা মানুষের সকল কর্মকা- ও আচার-আচরণকে কমবেশি নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবিত করে থাকে। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনরকম পথ না পেয়ে অনেক রোগী শেষ পর্যন্ত নিজেই নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার পথ বেছে নেয়; আত্মহত্যা করে। এটা বিশ্বের উন্নত বা অনুন্নত সবদেশেই ঘটে থাকে।
একাকিত্ব হলো এর অন্যতম একটা কারণ, এ কারণেই সম্ভবত (অবশ্য অন্যান্য কারণও আছে) ইংল্যন্ডে প্রতিবছর ৪৫০০ জন আত্মহত্যা করে। এদের বেশিরভাগেরই বয়স ৪৫ বছরের নীচে।

বিষয়টা এতটাই জটিল আকার ধারণ করেছে যে, শেষপর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার জনগণের মাঝে আত্মহত্যা রোধ করতে তার কেবিনেটে তথা মন্ত্রীপরিষদে আলাদা একটা মন্ত্রণালয় করে Minister for Suicide Prevention নামে আলাদা একজন মন্ত্রীই নিয়োগ দিয়েছেন। ব্রিটিশ সরকার তার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছাড়াও পাশাপাশি জনগণের মানসিক স্বাস্থ্য দেখাশোনার জন্য একজন প্রতিমন্ত্রী তথা Under Secretary of State (Mental Health and Inequalities) পদ সৃষ্টি করেছে। স্কটল্যান্ডেও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রী রয়েছেন। এর মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সেসব দেশে কতটা গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হচ্ছে তার একটা ধারণাও পাওয়া যায় বটে।

আত্মহত্যা এ জটিল সমাজ ও জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে একটা অসুস্থ ও চরমতম পন্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বে প্রতিবছর আট লক্ষ লোক আত্মহত্যা করে থাকে। অর্থাৎ প্রতি চল্লিশ সেকেন্ড সময়ে একজন আত্মহত্যা করছে। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশই হলো আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে।৩৬ (এনডিটিভি নিউজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৮) ভারতের আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ১৫ বছর থেকে ২৯ বছরের মানুষই বেশি। ৩৭(ঐ) আগেই বলেছি, আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে একাকিত্ব, হতাশা ও মানসিক অসুস্থতা।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের দেওয়া তথ্য মতে, বিগত ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ অর্থাৎ পাঁচ কোটি মানুষ কোন না কোন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। আর এ বিশাল সংখ্যক মানুষের জন্য দেশে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছে মাত্র আড়াই শত বা একটু বেশি।

এ বিশাল সংখ্যক মানসিক রোগীর জন্য এত কম সংখ্যক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ থাকার কারণে আমাদের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ মনোরোগের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত থাকে। ফলে তাদের সে রোগ জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে। সময়োচিত ও যথাযথ চিকিৎসা পেলে এসব হতভাগা মানুষদের অধিকাংশই সুন্দর সুস্থ জীবনযাপন করতে পারতো। কিন্তু তারা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন।

এর ফলে তাদের পরিবারের লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ ও শিশুরা তাদের বাবা-মা, ভাই ও বোনের ভালোবাসা, আদর ও সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত থেকে গেল সারাটা জীবনের জন্য।

আমাদের দেশেও এটা অহরহ ঘটে চলেছে। বাংলাদেশে বিগত ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে সর্বমোট ১১০৯৫ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছে। গড়ে প্রতিদিন ৩০ জন! আত্মহত্যার কারণ হিসেবে যে তথ্যটা উঠে এসেছে, তাও খুবই ভয়ানক ও দুঃখজনক!

জরীপ বলছে, অত্যন্ত ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ অবস্থা ও মানসিক চাপের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করতে ব্যর্থ হয়ে এবং কোনরকম সহায়তা না পেয়ে তারা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।৩৮ (The Dhaka Tribune, 27 March, 2018 ২০১৮ সংখ্যা দ্রষ্টব্য)

এটি খুব দুঃখের বিষয় যে, একটি মুসলিম প্রধান দেশেও এত বিশাল সংখ্যক মানুষ আত্মহত্যা করবে, অথচ মহান আল্লাহ্ বলছেন- ‘তোমরা আত্মহত্যা করো না।’ (আল কুরআন, সুরা নিসা: ২৯)

 

মাতৃত্বের উপলব্ধি – শেষ পর্ব


আফরোজা হাসান


কখনো বৃষ্টি, কখনো রোদ, কখনো দক্ষিণা হাওয়া, কখনো বসন্ত হয়ে দোলা দিয়ে যায় প্রাণে। দুর্বল মুহুর্তগুলোতে ভাবব্যক্তির দ্বারা শক্তি ও প্রাণ সঞ্চার করে মনেতে। অন্বেষণ করতে শেখায় জীবনের চাঞ্চল্য ও বৈচিত্র্যেকে। এঁকে দেয় জীবনকে গভীর ভাবে উপলব্ধি করার নীল নকশা।নানা রকম বৈচিত্র্যটায় ভরপুর জীবন যখন মনে ক্লান্তির সুর বেজে উঠে! এরা মনে করিয়ে দেয় আমরা নিজেরাই নিজের মনের মিউজিক ডিরেক্টর! জীবন বীণার তন্ত্রীতে প্রশান্তির সুর তোলার দায়িত্বও তাই নিজেকেই নিতে হবে!

উপমা দিয়ে আসলে জীবনে এই মায়ের স্থান, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বোঝানো সম্ভব নয়। আসলে সব মানুষের ভেতরেই কম বা বেশি কিন্তু হিলিং ক্ষমতা আছে। কিন্তু সবাই সেই ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে পারে না কিংবা জানে না। কিন্তু মায়েরা এটা এতটাই চমৎকার পারেন যে, জীবনের নানা অপুর্ণতায় সৃষ্ট ক্ষতগুলোকে পূরণ করে দেন শব্দের কারুকার্যে।

আমার মামণি তো এমন একজন মানুষ আমার জন্য যে, যখনই অসহায়ত্ব মনকে আঁকড়ে ধরে… মনেহয় শূন্যতায় ভাসছি…বাতাসের হালকা পরশই যথেষ্ট গভীর সমুদ্রে পতিত করার জন্য! গ্লানিময়- ক্লান্তিকর পরিস্থিতি যখন মনের কোমল অনুভূতিগুলো কেড়ে নিতে চায়! জোনাকির মত ছোট ছোট আশার আলো জ্বেলে মনের ভুবনকে করে তোলেন স্বপ্নিল! আকুলতা বিহীন উদ্যমহীন মেঘে ঢাকা মনের আকাশে বৃষ্টি ও রোদের সংমিশ্রনে সাজিয়ে যান রংধনু! আমাকে সর্বদা মনে করিয়ে দেন গোধূলির আবছা আলোছায়ার সূর্য ডুবে গেলেও, পরদিন ঠিকই এক বুক আলো নিয়ে আবার ফিরে আসে পৃথিবীর বুকে……

জানি না আমি কতটুকু ভালো সন্তান হতে পেরেছি মামণির কাছে। কিন্তু মনেহয় এই উপলব্ধিগুলো যদি পাথেয় থাকতো হয়তো অনেক বেশি ভালো সন্তান হতে পারতাম। কোথায় যেন পড়েছিলাম-“ তাত্ত্বিক জ্ঞান এক বছরে যা শেখায়, ব্যবহারিক জ্ঞান একদিনে তারচেয়ে বেশি শেখায় মানুষকে। সত্যিই মাকে নিয়ে পড়া অসংখ্য সাহিত্যের তুলনায়, আমার সন্তানের সাথে কাটানো একটি মুহুর্তকে অনেক বেশি ভারী মনেহয় আমার কাছে। যা সমৃদ্ধ করে তুলছে আমার মাতৃত্বকে এবং উপলব্ধি করতে সহায়তা করছে মায়ের মহত্ত্বকে।

হাদিসে বলা হয়েছে—‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’। এই হাদিসে যেমন সুসংবাদ রয়েছে সন্তানদের জন্য, তেমনি দুঃসংবাদও রয়েছে তাদের জন্য। কেননা মাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে বেহেশতে প্রবেশ করা সম্ভব হবে। কিন্তু তিনি অসন্তুষ্ট হলে রুদ্ধ হবে বেহেশতের দ্বার। তাই মায়ের সন্তুষ্টি অর্জন একজন সন্তানের অপরিহার্য দায়িত্ব।

কুরআনে আল্লাহ বলেছেন- “তোমার রব আদেশ করছেন, তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কারও ইবাদত করো না এবং তোমরা (তোমাদের) পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করো; তাদের একজন কিংবা উভয়ই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহলে তাদের সঙ্গে বিরুক্তিসূচক কিছু বলো না এবং কখনও তাদের ধমক দিও না, তাদের সঙ্গে সম্মানজনক ভদ্রজনোচিত কথা বলো। অনুকম্পায় তুমি তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো এবং বলো, হে আমার রব! তাদের ওপর তুমি (ঠিক সেভাবেই) দয়া করো, যেমনিভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছিলেন।” (সূরা বনী ইসরাইল ২৩-২৪)।

 

বসুন্ধরা গেট ও যমুনা ফিউচার পার্কের জন্য আলাদা ফুট ওভার ব্রিজ চাই


ডা. এম এস কবীর জুয়েল


বসুন্ধরা আবাসিক ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ৪টি প্রাইভেট ভার্সিটি, ৩টি নামি দামী স্কুল, দুই-তিনটি হাসপাতাল, গ্রামীণ ফোনের প্রধান কার্যালয়সহ শতাধিক নামে বেনামে অফিস রয়েছে,যাদের সিংহভাগ ছাত্র ছাত্রী ও কর্মচারীগণ আশপাশের অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের বাসা ভাড়া-র এলাকায় থাকেন, ডিভাইডারহীন অবস্থায় তারা পূর্বে সিগনাল মেনে যথারীতি রাস্তা পার হতেন, বছর তিন আগে যমুনা ফিউচার পার্ক চালু হলে, ছোট্ট ডিভাইডার দিয়ে যানবাহন পারাপার(ইউ টার্ন) বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে স্থানীয় বাসিন্দাসহ বাহিরে থেকে বসুন্ধরায় পড়তে আসা আবরারের মতো শিক্ষার্থীরা, চাকুরীরত মানুষজন ও চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ লোকজন খুব বিপদে পড়েন, তাদের গাড়ী/সিএনজি নিয়ে ৩০০ ফিট রোড দিয়ে ঘুরে আসতে হয় নতুবা মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে আজকে নিহত আবরারের মতোই চোখ কান খোলা রেখে এইটুকু রাস্তা পার হতে হয়। পদব্রজে গমনকারীদের জন্য বারবার সেতু নির্মানের অনুরোধ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাতে ভ্রক্ষেপ করেননি।

আশা করি, কর্তৃপক্ষ এবার অবশ্য-ই একটি ‘Foot Over Bridge’ তৈরী করবেন। কোন অতিব প্রয়োজনীয় জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণের জন্য দেশে একেকটি প্রাণের আত্মাহুতি দিতে হচ্ছে, আমাদের এই কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে,রাজপথের প্রাণঘাতি স্থানগুলো চিহ্নিত করে, আবরার কিংবা দিয়া খানম মীম-দের মতো কচি পাতা ঝড়ে পড়ার পূর্বেই তাদের সুরক্ষা কল্পে ট্রাফিক ও সড়ক বিভাগের সমন্নয়

কমিটি দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন, এ প্রত্যাশা সকলের। আব রার ও তার সহপাঠিরা গত জুলাইয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনেও শান্তিপূর্ণভাবে এই স্থানে অবস্থান নিয়েছিলো,আজ সে নিজেই ওপারে চলে গেলো, আমরা বসুন্ধরা বাসী অনতিবিলম্বে এখানে একটি ফুট ওভার ব্রিজ প্রত্যাশা করছি, যা যমুনা ফিউচার পার্কের জন্যও নিরাপত্তা বিধান করবে।

সড়কের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণের জন্য দেশে একেকটি প্রাণের আত্মাহুতি দিতে হচ্ছে, আমাদের এই কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

ইতিমধ্যেই তড়িৎ সিদ্ধান্তঃ ক্রমে উক্ত বাসের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে, আমরা আশা রাখছি, খুব শীঘ্রই সেই চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

ডা. এম এস কবীর জুয়েল
এমবিবিএস, বিসিএস, এম.ফিল(নিউরো-সাইকিয়াট্রি), ডক্টর অফ মেডিসিন(এম.ডি) মনোরোগ
সৌদি বিশেষায়ীত স্বাস্থ্য কমিশন সার্টিফাইড ইন সাইকিয়াট্রি এন্ড সাইকোথেরাপী
ভূতপূর্ব মনোরোগ ও মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, আল জউফ, সৌদি আরব
ভূতপূর্ব সহযোগী অধ্যাপক
এশিয়ান ইনষ্টিটিউট অফ মেডিসিন, সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কেদাহ্, মালয়েশিয়া
ইউনিট প্রধান, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সিলিং ইউনিট, মনোরোগ বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা 

 

মাতৃত্বের উপলব্ধি-১


আফরোজা হাসান


মাতৃত্বের উপলব্ধি কি?

প্রশ্নটির জবাবে বলেছিলাম, মামণির যে কথা কাজ ও আচরনগুলো বিরক্তির সূচনা করতো সেগুলোকেই এখন ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ মনে হয়। খাবার নিয়ে মামণির পেছন পেছন ঘোরা, রাত জাগা নিয়ে আপত্তি করা, মাঝরাতে একবার উঠে এসে দেখে যাওয়া, কলেজ থেকে বাসায় ফিরতে দেরী হয়ে অস্থির হয়ে ফোন করা ইত্যাদির পেছনে যে মার সদা কল্যাণকামী সত্ত্বাই কাজ করে সেটা এখন বুঝি। কারণ আমিও নিজেও যে এখন মা…আমার সন্তানকে ঘিরে আমার মনেও যে খেলা করে নানারঙের অনুভূতি। ছোটবেলায় মাকে নিয়ে কত ছড়া-কবিতা-গল্প-গান পড়েছি, শুনেছি, লিখেছিও সামান্য কিছু। কিন্তু নিজে মা হবার পরই মনেহয় সত্যিকার ও প্রকৃত অর্থে মাতৃত্বকে উপলব্ধি করেছি। চোখ বন্ধ করে আরেকবার নিজের মা হবার সফরটা ঘুরে দেখতে ইচ্ছে হলো।

অপারেশন শেষ করে যখন ডাক্তার আমার কোলে দিয়েছিলেন আমার ছেলেকে…! সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে যে ক্লান্তি মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছিল তা উবে গিয়ে ঝিলমিলিয়ে উঠেছিল পূর্ণিমা রাতের স্নিগ্ধ সজিব চন্দ্রিমা। নাহ! কোন উপমা দিয়েই সেই মুহুর্তকে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব না। মাতৃত্বের প্রথম স্পর্শ ঘেরা সেই ক্ষণ এতটাই দুর্লভ যে শব্দে ধারণ করার ক্ষমতা আমার নেই! ওর কান্নার ধ্বনি মনের থরথরে ভীতু অনুভূতিকে রূপান্তরিত করেছিলো চরম প্রাপ্তির আনন্দাশ্রুতে। মাত্র একমিনিট পরই কোল থেকে নিয়ে গিয়েছিলো বেবীকে। কিন্তু সেই একমিনিটের ক্ষমতা কতটাই না বিস্ময়কর ছিল, দূর করে দিয়েছিল সমস্ত ভীতি, ব্যথা, দুর্বলতা।

আমার শারীরিক অপরাগতার কারণে যখন খাবারের অভাবে ক্ষুধায় কান্না করছিলো ছোট্ট বাবাটা হাত-পা ছুঁড়ে, অশ্রুর ঢল নেমে এসেছিলো আমার চোখেও। ক্ষুধার্ত সন্তানের মুখে খাবার তুলে না দিতে পারার কষ্টের প্রচণ্ডতা কিছুটা হলেও উপলব্ধি করেছিলাম সেদিন। এই উপলব্ধিটা আমার জীবন ভান্ডারের অমূল্য এক রত্ন। যা এখনো আমাকে প্রেরণা যুগিয়ে যায় অনেক কাজের…

সেই যে শুরু হলো মাতৃত্বের সফর তারপর থেকে চলছি তো চলছিই। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হয়তো এমনি করেই চলতে হবে। তবে এই পথ চলার প্রতি মুহুর্তে আমি শিখছি কিছু না কিছু। যে শিক্ষা আমাকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করছে মাতৃত্বকে, মায়েদের অনুভূতিকে। সন্তানের জন্য মায়ের মনের আকুতির রঙ এখন তাই আমি চিনি।

পড়াশোনা ব্যাপারে মার বারবার তাগাদা দেয়া খুব বিরক্ত করে সন্তানদেরকে। কিন্তু সন্তানরা কি জানে তাদের সাফল্য কত বড় অর্জন মায়ের জন্য? যখন শিক্ষকরা মার কাছে এসে প্রশংসা করেন তাঁর সন্তানের, প্রশান্তির কেমনতর হাওয়া বয়ে যায় মার অন্তর জুড়ে? প্রতিটা মায়ের কাছে তার সন্তান সবচেয়ে স্পেশাল, তাই হয়তো তিনি চান সবাই তাঁর সন্তানকে সেভাবেই দেখুক, ভাবুক।

মা তো আমাদের জীবনে এমন একজন যিনি মনে উৎসাহের দিয়া জ্বেলে তাতে নিরবধি অনুপ্রেরণা দেবার কাজটি করে যান খুব যত্নের সাথে। নানারকম ব্যর্থতা- হতাশায় আমরা যখন থমকে দাঁড়িয়ে যাই, শক্তি হারিয়ে ফেলি উঠে দাঁড়ানোর, জীবনটাকে মনেহয় তপ্ত দাহ! তখন হাজির হয় এক টুকরো ছায়াদানকারী মেঘ হয়ে। যার সুশীতল কণ্ঠ বাতাস ও আলো সঞ্চার করে মনের শুকিয়ে যাওয়া পল্লবগুলোতে।

চলবে..

 

মনের জানালা


বৃত্তের বাইরে


ছোটবেলায় পাঠ্য বইতে পন্ডশ্রম কবিতাটা পড়েছিলাম। চিলে কান নিয়ে গেছে, কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা। সারাদিন খালে-বিলে, পাড়ায় নানান জায়গায় সবাই মিলে কানের খোঁজে ঘুরে দেখা গেল কান কানের জায়গাতেই আছে। স্কুলেও আমরা এমন খেলা খেলতাম যার নাম ছিল চাইনিজ হুইস্পার। কথা যে এ-কান ও-কান করে পরিবর্তন হয় তার প্রমাণ হিসেবে দশ-বারোজন মিলে কোন একটা গান বা কবিতার লাইন একজনের কানে বলে সবার কান ঘুরে নিজের কানে এলে দেখা যেত লাইনটির অর্থ পুরোপুরি পাল্টে গেছে। এর আরো বড় প্রমান পেলাম বাবার চাকরির কারণে যখন আবুধাবি ছিলাম সেই সময়।

সময়টা ঠিক মনে নেই তবে সম্ভবত ২০০০ সালের গোড়ার দিকে। আমাদের এক পরিচিত বাংলাদেশী ফোন করে আমার মাকে জানালেন,’ভাবী শুনেছেন দুবাইয়ে ভূমিকম্প হয়েছে। আমরা আবুধাবি থাকাকালীন একদিন হঠাৎ বৃষ্টি দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম। স্থানীয় লোকজনের কাছেও মরুভূমিতে বৃষ্টি হওয়াটা খুবই অবাক ব্যাপার ছিল। শেখদের দেখেছিলাম গাড়ি নিয়ে হৈচৈ করে বৃষ্টি দেখার জন্য রাস্তায় বের হয়েছিল। এই হিসেবে তখন ভূমিকম্পের ব্যাপারটাও অনেকের কাছে বেশ অবাক করার মত ঘটনা ছিল যদিও আমাদের দেশে আমরা এসব দেখে অভ্যস্ত। যাই হোক দুবাইয়ের ভূমিকম্পের খবরটা মুহূর্তে ফোনের মাধ্যমে এই কান সেই কান হতে হতে আবুধাবিতে বাঙ্গালীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লো। প্রথমে খবরটা ছিল দুবাইতে হয়েছে, এরপর শোনা গেল আবুধাবিতে হতে পারে, দুপুরের মধ্যে শুনলাম আবুধাবিতে ভুমিকম্প হবে সবাই যেন যে যার বিল্ডিঙয়ের নিচে রাস্তায় চলে আসে। এর মধ্যে আবার যেসব ভাইরা চাকরির কারনে দূরে অবস্থান করছিলেন তারা ভাবিদের পরামর্শ দিলেন ঘরের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, পাসপোর্ট, গয়নাসহ যেন ঘর থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে যান । আমি মায়ের সাথে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম ফেরার সময় দেখি মরুভূমির এই কাঠ ফাঁটা রোদে আমাদের এক পরিচিত স্ট্রলারে দুই বাচ্চা নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছেন। জিজ্ঞাসা করে জানলাম উনি ভাইয়ের পরামর্শ অনুযায়ী বাচ্চা আর প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ৩/৪ ঘণ্টা থেকে দাঁড়ানো। বাইরে ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে তিনি সমানে ঘামছেন আর ভূমিকম্পের অপেক্ষা করছেন। মা দেখে বললেন, শিগগির বাসায় যান, এই গরমে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়বে। একটা কথা শুনলেন আর অমনি বিশ্বাস করলেন! ভূমিকম্প কখনো বলে কয়ে আসে! পরদিন শুনেছিলাম ভুমিকম্পের ভয়ে সেদিন বিভিন্ন বিল্ডিঙয়ের নিচে অনেক বাঙ্গালীরা এমন রাস্তায় বেরিয়ে অপেক্ষা করছিলেন যা পরে সবার মধ্যে কৌতুকের সৃষ্টি করেছিল। মজার ব্যাপার হল মহিলারা না হয় আবেগপ্রবন বেশী, না বুঝে অনেক কিছু করে কিন্তু পুরুষরা! ঘটনাটা বলার উদ্দেশ্য হল আমরা বাঙালীরা হুজুগে মাতি। কোন কিছু শুনলে পুরুষ মহিলা উভয়েই ঘটনার সত্যতা যাচাই বাছাই না করে সহজে বিশ্বাস করে ফেলি।

ভার্চুয়াল জগতটাও অদ্ভুত। কোন একটি খবর যখন একজন মানুষ অন্য একজনকে বলে তখন কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয় কেননা প্রত্যেক মানুষেরই নিজেকে প্রকাশ করার স্ব-স্ব স্টাইল থাকে। এই খবরটাই যখন অন্য একজনকে বলতে যাই তখন কিভাবে বললে তা অন্যের কাছে সত্য, বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য হবে সেই চিন্তায় আমরা আসল কথার সাথে নিজেদের মনগড়া আরো কিছু যোগ করে অন্যের কাছে প্রকাশ করি। এভাবে যদি খবরটা একজন মানুষ থেকে অন্য আরেকজন মানুষের কাছে যেতে সামান্য পরিবর্তনও হয়ে যায় তবে ঐ খবরটা হাজার মানুষের মাঝে বা পুরো মহল্লায় জানাজানি হলে কি অবস্থা হবে! মূল কথাটা শেষে গিয়ে কতটুকু সত্য হয়ে দাঁড়াবে? তাই যে কোন ধরনের উসকানিমূলক বা হঠকারী পোষ্ট দেবার আগে একটু চিন্তা করুন খবরের উতস সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন? চলুন, প্রথমে আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি কি এগুলোর সাথে জড়িত? আমি কি মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছি? আমার আচরণে কি অন্য কেউ কষ্ট পাচ্ছে? আমি যে খবরটা প্রচার করছি তার সত্যতা কতটুকু? আমি কি অন্যের কাছে প্রচার করার আগে ঠিকমত যাচাই করে নিয়েছি? মানুষ হিসেবে এইটুকু দায়িত্ববোধ আশা করাটা অন্যায় নয় নিশ্চয়ই।

 

অসুস্থ স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান সিলেটের পারভীন


নারী সংবাদ


নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বাংলাদেশী নারী হুসনে আরা পারভীন (৪২)-এর বাড়ি সিলেটে। তিনি স্বামীর সাথে নিউজিল্যান্ড থকতেন। অসুস্থ স্বামী ফরিদ উদ্দিনের খোঁজ নিতে গিয়েই পারভীন মারা যান বলে জানা গেছে।

ফরিদ উদ্দিন আহমদের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার মিরেরচক গ্রামে। আর হুসনে আরা পারভীন সিলেটের গোলাপগঞ্জের জাঙ্গাল হাটা গ্রামের মৃত নুরুদ্দিনের মেয়ে। ১৯৯৪ সালে বিয়ে হওয়া এই দম্পত্তির এক কন্যা সন্তান রয়েছে।। সর্বশেষ ২০০৯ সালে তারা বাংলাদেশে এসেছিলেন।

ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে এই সন্ত্রাসী হামলায় তিনজন বাংলাদেশী নিহতের খবর পাওয়া গেছে। হামলায় পারভীন মারা গেলেও বেঁচে গেছেন তার স্বামী ফরিদ উদ্দিন।

পারভিনের ভাগ্নে মাহফুজ চৌধুরী জানান, বিয়ের পর স্বামীর সাথে নিউজিল্যান্ড যান হুসনে আরা পারভীন । তারা ক্রাইস্টচার্চ এলাকায় বসবাস করতেন। তার স্বামী ফরিদ উদ্দিন কিছুদিন দিন ধরে প্যারালাইজড অবস্থায় আছেন। হামলার প্রায় আধঘন্টা আগে মসজিদে অসুস্থ স্বামীকে রেখে পার্শ্ববর্তী নারীদের জন্য মসজিদে যান হুসনে আরা। প্রায় ১৫ মিনিট পর পুরুষদের মসজিদের ভেতরে গুলির শব্দ শুনে পারভীন তার স্বামীর খোঁজ নিতে যান। এসময় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তাকে গুলি করলে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান।

নিজের খালু বেঁচে আছেন জানিয়ে মাহফুজ চৌধুরী বলেন, মসজিদের বাইরে গুলির শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন মুসল্লি হুইল চেয়ারে করে তাকে (ফরিদ উদ্দিনকে) মসজিদ থেকে বের করে নেওয়ায় তিনি বেঁচে গেছেন। নিউজিল্যান্ডে বসবাসকারী নিহত পারভীনের ভাবী হিমা বেগম ঘটনার পর টেলিফোনে সিলেটে থাকা পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানান।

মাহফুজ চৌধুরী বলেন, সন্ত্রাসী হামলার প্রায় একঘণ্টা পর হিমা বেগম ফোন করে পারভীন খালার নিহতের খবরটি আমাদের জানিয়েছেন। তখন বাংলাদেশ সময় আনুমানিক সকাল ১০টা।
সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

শিশুদের প্রতি যত্ন (খেলাধুলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়)


প্যারেন্টিং


খেলাধূলার প্রতি অধিক গুরুত্ব শিশুর বুদ্ধিমত্তার উন্নতিতে সাহায্য করে। যে শিশুরা বেশি বেশি সৃজনশীল উপায়ে খেলাধূলা করে তাদের দক্ষতা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। তবে যদি একটু একটু বই কিনে দেওয়া যায় শিশুদেরকে স্মার্ট হতে সাহায্য করে।

জেনে নিই চলুন কিছু নিয়ম:

গুছিয়ে রাখা

গবেষণায় বলা হয়েছে যে, গুছিয়ে রাখা শিখলে শিশুরা অনেক বেশি স্মার্ট হয়। শিক্ষার্থীরা গড়ে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে এবং সার্বিকভাবে অনেক বেশি জিপিএ অর্জন করে।

শিশুর জন্য সময়

ব্যক্তির শারীরিক ফিটনেস তার আইকিউ এর সাথে সম্পর্কিত। শিশুর জন্য সময় কীভাবে মস্তিষ্কের গঠন ও বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার। সুতরাং শিশুকে বেশি বেশি সময় দিন।

খেলাধূলা

শিশুর শিশু হওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে অনির্দিষ্ট খেলাধুলা।মুক্তভাবে খেলাধুলা করলে শিশুর জ্ঞানীয় এবং সামাজিক দক্ষতার উন্নতি ঘটে। এর ফলে সে সুখি ও স্বাস্থ্যবান হয়ে গড়ে উঠে।

ভাষা শিক্ষা

দুটি ভাষায় দক্ষ শিশুরা চাপের মধ্যেও ভালো ফোকাস করতে পারে।বয়ঃসন্ধিকালের পূর্বে ভাষা শিক্ষার ক্ষমতা বেশি থাকে। দেখা গেছে যে ছোট শিশুরা অনেক নিখুঁতভাবে ও সাবলীলভাবে নতুন ভাষা শিখতে পারে।

শিশুর পছন্দ

শিশুর পছন্দের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। ভিডিও গেম খেলতে বিভিন্ন দক্ষতার উন্নতি হয়। যেমন- হাত ও চোখের সমন্বয়, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, সম্পদের ব্যবস্থাপনা, দ্রুত চিন্তা ও প্রতিক্রিয়া, স্মৃতিশক্তি, স্থানিক উপলব্ধি, বিচার করার ক্ষমতা, নির্ভুল হিসাব, যুক্তি ইত্যাদি।

এক সাথে খাওয়া

পড়াশুনা শিশুর বুদ্ধিমত্তার উন্নতিতে সাহায্য করে বটে তা সবাই জানেন কিন্তু এক সাথে খাওয়া শিশুদের বেশি বেশি সামাজিক শিক্ষা ও দক্ষতাকে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে।

পজিটিভ কথা বলা

পজিটিভ কথা বলুন বেশি বেশি শিশুকে মার্জিত ও ভদ্র হতে সাহায্য করবে। যে শিশুদের বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রশংসা করা হয় তারা মনে করে যে এটা তাদের জন্য নির্ধারিত।

 

কাঁঠালিয়ায় স্বামীর হাতে স্ত্রী নিহত


নারী সংবাদ


ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলায় পারিবারিক কলহে স্বামীর দা-এর কোপের আঘাতে স্ত্রী নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত পারভিন আক্তার (৫২) ওই উপজেলার উত্তর চেঁচরী রামপুর গ্রামের শহীদুল ইসলাম জমাদ্দারের (৬০) প্রথম স্ত্রী এবং তিন সন্তানের মা। বুধবার দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে জানায় পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই ঘাতক স্বামী পলাতক রয়েছে।

ভান্ডারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, নিহতের উরুতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়।

নিহতের প্রতিবেশী স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ সোহেল বলেন, দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে কলহ লেগেই থাকতো। কয়েক দিন ধরেই শুনছি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়।

কাঁঠালিয়া থানার ওসি মোঃ এনামুল হক বলেন, পারভিনের অনুমতি ছাড়াই আরেক নারীকে বিয়ে করেন শহীদুল। আর তা নিয়ে পারভিনের সাথে শহীদুলের ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো।

তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার দুপুরে ঘরে থাকা ধারালো গাছ কাটার দা দিয়ে পারভিনকে কুপিয়ে আহত করে স্বামী শহীদুল। এসময় এলাকাবাসী পারভিনকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার ভান্ডারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরে তার মৃত্যু হয়।

অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে পারভিনের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন ঘাতক শহীদুলকে আটকের অভিযান চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ পিরোজপুর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

ছাত্রীর শ্নীলতাহানি প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার


নারী সংবাদ


বেলাব উপজেলার চরআমলাব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্নীলতাহানি করার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গত সোমবার বিকেলে উপজেলার চরআমলাব এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষ ঘেরাও করলে পুলিশ তাকে আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে যায়।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরআমলাব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সোমবার বিকেলে একটি অনুষ্ঠান চলছিল। এ সময় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্নীলতাহানি ঘটান প্রধান শিক্ষক। পরে ছাত্রীটিকে ঘটনা কাউকে না জানাতে হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। দুই মাস আগেও ওই ছাত্রীকে প্রধান শিক্ষক শ্নীলতাহানি ঘটালে লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলেনি ওই ছাত্রী। সোমবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে ছাত্রী পুরো ঘটনা তার পরিবারের লোকজনকে জানায়। পরে পরিবারের লোকজন স্থানীয়দের নিয়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে অফিস কক্ষ ঘেরাও করলে প্রধান শিক্ষক ভেতর থেকে তার কক্ষ আটকে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তাকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা গণপিটুনি দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকে বাঁচাতে গিয়ে কয়েক পুলিশ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সমশের ভূঁইয়া জামান রিটন আহত হন। বেলাব থানার ওসি ফখরুদ্দীন ভূঁইয়া বলেন, প্রধান শিক্ষককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

সুত্র: সমকাল।

 

বিয়ে প্রস্তুতি


কানিজ ফাতিমা


বিয়ে ব্যাপারটি জীবনের অতীব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এখানে ভুল হয়ে গেলে তার পরিণতি কঠিন হতে পারে যা শুধু দু’টি জীবন নয়, দু’টি পরিবারের জন্যও হয়ে উঠতে পারে কষ্টকর। কাজেই এ সিদ্ধান্তের জন্য কিছু পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। যদিও বিয়ের ব্যাপারটির সঙ্গে জড়িত থাকে আবেগ, স্বপ্ন আর সোনালী সব আশা, তথাপিও সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসব আবেগের ঊর্ধ্বে উঠে বাস্তবসম্মত চিন্তার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ছেলে ও মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য। তবে যেহেতু এখনও আমাদের সমাজে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় অসুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে সেহেতু মেয়েদের এক্ষেত্রে আরও বেশি সচেতন হওয়া জরুরী।

বিবাহপূর্ব সচেতন প্রস্তুতির কয়েকটি ধাপ রয়েছে।

সর্বপ্রথম ধাপটি হলো, নিজের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেয়া বা নিজেকে চেনা। আমাদের মনে হতে পারে যে, আমরা সবাই নিজেকে চিনি। কিন্তু বাস্তবে তা নাও হতে পারে। নিজের মনকে জানা থাকলে আপনার সহজ হবে আপনার নিজের বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে। কাজেই নিজেকে ও নিজের মনকে জানার জন্য গভীর চিন্তা করুন। সময় নিন। খুঁজে বের করুন আপনার ভিতরের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ভাল গুণ। এবার তা ক্রমানুসারে লিখে ফেলুন। যেমন ধরুন একজন এভাবে ভাবতে পারে-

ভাল গুণ-১ : আমি পরিশ্রমী।

ভাল গুণ-২ : আমি সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলতে পারি।

ভাল গুণ-৩ : আমি সৎ থাকতে পছন্দ করি।

আবার ভাবুন এবং নিশ্চিত হোন যে, আসলেই এই গুণ তিনটি আপনার মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে কি না।

দ্বিতীয়ত : খুঁজে বের করুন আপনার সবথেকে খারাপ তিনটি দোষ, সততার সঙ্গে খুঁজুন। এড়িয়ে যাবার কিছুই নেই। এ আপনার নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া। এবার ক্রমানুষারে লিখে ফেলুন দোষ। যেমন ধরুন কেউ এভাবে লিখতে পারে –

দোষ-১ : আমি অল্পতেই রেগে যাই।

দোষ-২ : আমি কৃপণ।

দোষ-৩ : আমি নিজের আত্মীয়দের ব্যাপারে অন্ধ কিন্তু অন্যদের দোষ বেশি দেখি।

এবার খুঁজে বের করুন কোন তিনটি জিনিস আপনি সব থেকে বেশি পছন্দ করেন। এরপর তা লিখি ফেলুন। যেমন :

পছন্দ-১ : বই পড়তে।

পছন্দ-২ : ভ্রমণ করতে।

পছন্দ-৩ : বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে।

সর্বশেষে লিখুন সেই তিনটি জিনিস যা আপনি খুবই অপছন্দ করেন বা সহ্য করতে পারেন না। যেমন হতে পারে –

অপছন্দ-১ : মিথ্যা কথা।

অপছন্দ-২ : প্রদর্শনেচ্ছা।

অপছন্দ-৩ : বেশি কথা বলা বা বাড়িয়ে বলা।

এবার দেখুন আপনি আপনাকে আগের চেয়ে অনেক বেশি জানেন। এভাবে নিজের সম্পর্কে সচেতনতা অর্জন বিয়ের পূর্বের মানসিক প্রস্তুতির প্রথম ধাপ।

এবার আসা যাক দ্বিতীয় ধাপে। দ্বিতীয় ধাপ হলো নিজের মূল্যায়ণ। আমরা অনেকক্ষেত্রেই নিজের মূল্যায়ণ না করেই নিজের চাওয়া নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এতে সিদ্ধান্ত ভুল হবার সম্ভাবনা অধিক। নিজের মূল্যায়ণ করতে হলে প্রথম খুঁজে বের করুন আপনার বায়োডাটার পজিটিভ পয়েন্টগুলো কী কী। ক্রমানুসারে তা লিখুন। যেমন-

পজিটিভ পয়েন্ট-১ : একটি ভাল চাকুরী।

পজিটিভ পয়েন্ট-২ : আর্থিক স্বচ্ছলতা।

পজিটিভ পয়েন্ট-৩ : উচ্চ শিক্ষা

পজিটিভ পয়েন্ট-৪ : শিক্ষিত ও রুচিশীল পরিবার।

এবার ভাবুন আপনার বায়োডাটার দুর্বল দিকগুলো কী কী। যেমন হতে পারে-

দুর্বলতা-১ : উচ্চতা কম।

দুর্বলতা-২ : আর্থিক অস্বচ্ছলতা।

দুর্বলতা-৩ : বড় পরিবার ও তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমার।

দুর্বলতা-৪ : পরিবারের অন্যান্যরা যথেষ্ট শিক্ষিত নয় ইত্যাদি।

এভাবে আপনার প্রতিটি পজেটিভ ও নেগেটিভ পয়েন্টকে মূল্যায়ণ করে নিজের অবস্থাটা ভাল করে বুঝে নিন।

এবার আসুন প্রস্তুতির ৩য় ধাপে। এ ধাপে জেনে নিন আপনি কী চান? মজার ব্যাপার হচ্ছে অধিকাংশ নারী -পুরুষই বিয়ের আগে জানেনই না যে আসলে তারা কি চান।খুব সাধারণ কয়েকটি ব্যাপার যা চাওয়া হয় পাত্র খোঁজার সময়। তাহলো ভাল মেয়ে, সুন্দরী , ফর্সা, শিক্ষিত ও ভাল পরিবার ও ভাল উচ্চতা, খেয়াল করে দেখুন এতে মোটামুটি সবই চাওয়া হয়েছে। তাছাড়া ভাল মেয়ের কী সর্বজনসম্মত কোন সংজ্ঞা আছে? এরকম চাওয়া আসলে কোন চাওয়া নয়। সুস্পষ্ট ও নির্দিষ্ট করে নিজের মন ও নিজের ক্যারিয়ারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গভীরভাবে ভাবুন আপনার আসলে কেমন সঙ্গী দরকার। আসলেই কোন বৈশিষ্ট্যগুলো আপনার খুবই প্রয়োজনীয় আর কোনগুলো ছাড় দিতে আপনি প্রস্তুত। এবার তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা লিখে ফেলুন যা আপনি অবশ্যই চান এবং যা আপনি কোন অবস্থাতেই ছাড় দেবেন না। যেমন-

আবশ্যক-১ : ধর্মের অনুশীলন।

আবশ্যক-২ : উচ্চশিক্ষিত (অনার্স বা মাস্টার্স)

আবশ্যক-৩ : চাকুরীজীবি।

এবার আরও তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা লিখুন যা আপনি চান তবে প্রয়োজনে ছাড় দিতে রাজি আছেন-

আবর্শক-৪ : উচ্চতা।

আবশ্যক-৫ : শিক্ষিত পরিবার।

আবশ্যক-৬ : সুন্দর।

মনে মনে ভেবে রাখুন যে, বাধ্যতামূলক তিনটি বৈশিষ্ট্যের পরে নীচে (৪ – ৬) তিনটি যে কোন দু’টি বা একটি ছাড় দিতে আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আপনি যখন এই চাওয়াগুলো ঠিক করেন তখন আপনাকে নিজের মূল্যায়ণ (দ্বিতীয় ধাপ)-এর দিকে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে আপনার দুর্বল পয়েন্টগুলোকে মনে রাখতে হবে। নয়তো আপনার চাওয়াগুলো বাস্তবসম্মত হবে না। আমি অনেক সময় এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি যার নিজের বায়োডাটায় পজেটিভ পয়েন্টের তুলনায় দুর্বল দিক অনেক বেশি কিন্তু চাওয়ার লিস্ট অনেক বড়। এরূপ অবাস্তব চাওয়া শুধু যে আপনার বিয়ের সময়ই সমস্যা তৈরি করবে তা নয় বরং পরবর্তী পারিবারিক জীবনেও অশান্তির কারণ হতে পারে। বিয়ের সময় সমাজে কোন পাত্র বা পাত্রীর দাম বেশি সে হিসেবে না গিয়ে বরং আপনার জন্য কে বেশি উপযোগী হবে সেটাই খোঁজার চেষ্টা করুন। বেশি আবেগী হয়ে অসচেতন সিদ্ধান্ত নেয়া বা অতি উচ্চাকাংখী হওয়া দুই-ই আপনার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।

 

বিশেষ অবদান রাখায় ১৫ নারীকে সম্মাননা প্রদান


নারী সংবাদ


প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করল গুলশান সোসাইটি। গতকাল রবিবার এ উপলক্ষে নগরীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে প্রথম নারী জাতীয় অধ্যাপক ড. সুফিয়া আহমেদ এবং বাংলাদেশে পক্ষাঘাতগ্রস্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র ‘সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড’ (সিআরপি)-এর পরিকল্পক ও প্রতিষ্ঠাতা ভেলরি টেইলরকে আজীবন সম্মাননাসহ ১৫ নারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হাইকোর্টের বিচারপতি কাশেফা হোসেন বলেন, দেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন আছে, বাল্যবিয়ে রোধেও আইন আছে। তারপরও নারী নির্যাতন ও বাল্যবিয়ে বেড়ে চলছে। সমাজে ধর্ষণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। অবস্থা পরিবর্তনে আইনের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিতে পারিবারিক শিক্ষার উপর জোর দেন তিনি।

বিশেষ অতিথি দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, গণমাধ্যমে এবছর নারী দিবসে ব্যাপক প্রচারণা প্রমাণ করে নারীর অগ্রযাত্রা মানুষকে সচেতন করতে পারছে। মানুষ নারীর দক্ষতাকে স্বীকার করতে বাধ্য। নারীকে আজ আর কম বুদ্ধি, তারা পারে না বলা যাবে না। কারণ তারা সব ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে। যদিও সমাজ ধর্মের দোহাই আর নানা রকম শব্দ ব্যবহারে জব্দ করে পেছনে টেনে রাখতে সচেষ্ট আছে।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সোসাইটির প্রথম নির্বাচিত নারী মহাসচিব শুক্লা সারওয়াত সিরাজ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সভাপতি সাখাওয়াত আবু খায়ের মোহাম্মদ। প্রথা ভেঙে সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখায় যে নারীরা সম্মাননা পান তারা হলেন, প্রথম নারী পাইলট (বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার) আলেয়া মান্নান, সিভিল সার্ভিস পুলিশের প্রথম নারী ক্যাডার ফাতেমা বেগম, কমনওয়েলথ স্বর্ণজয়ী ভারোত্তোলনকারী মাবিয়া আক্তার, তৃতীয় লিঙ্গ-এর অধিকারকর্মী জয়া সিকদার, প্রকাশক মাহরুখ মহিউদ্দিন, ছেলেদের ফুটবল কোচ মিরনা খাতুন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল বই করা প্রতিষ্ঠান স্পর্শ-এর নাজিয়া জাবিন, প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার, নারী-পুরুষের জন্য অ্যাপসভিত্তিক বাইক চালক শাহনাজ আক্তার, ডিজিটাল নারী উদ্যোক্তা মলিহা মালেক কাদের, নিজের বাল্যবিবাহ প্রতিরোধকারী মিতালী বিশ্বাস, প্রকৌশলী আফশিন মোজ্জামেল। সম্মাননা প্রাপ্তদের সম্মাননা স্মারক ও উত্তরীয় প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ড. নাশিদ কামাল ও তার মেয়ে আরমিন মুসা।

সুত্র: ইত্তেফাক রিপোর্ট।

 

পায়েস রান্না


ঘরকন্যা


পায়েস খেতে সবাই পছন্দ করে। পায়েস মজাদার হলে তা খেতে চায় বাসার সবাই। তবে সময় বেশি লাগে ভেবে ইদানীং পায়েস রান্না সময় কমে গেছে। কিন্তু পায়েস রান্না করা খুবই সহজ। সহজে আপনি দ্রুত পায়েস রান্না করতে পারেন।

পায়েস তৈরির সহজ নিয়ম

উপকরণ
১. দুধ ১-১/২ লিটার ঘন করে নিন,
২. পোলাও এর চাল ১৫০ গ্রাম,
৩. দারুচিনি ১,১/২ ইঞ্চি,
৪. এলাচ কয়েকটি,
৫. তেজপাতা ২টি, চিনি স্বাদমতো, বাদাম, লবণ সামান্য।

প্রস্তুত প্রণালী
ঘন দুধ করে নিন। অল্প আগে চাল ধুয়ে রাখতে হবে। ১৫০ গ্রাম পোলওয়ের চাল ভিজিয়ে রাখতে হবে।

অন্যদিকে দুধ জ্বাল দিতে হবে। দুধ যখন ফুটতে থাকে, তখন চাল ও লবণ দুধের মধ্যে দিয়ে দিতে হয়। এরপর চাল ভাল করে সিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এবং একটু পর পর নেড়ে দিতে হবে। পুড়ে গেলে গন্ধ হবে মনে রাখবেন।

পরিবেশন
সব কিছু ভালোভাবে মিশে গেলে নামিয়ে কিসমিস ও বাদাম দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

 

নারী দিবসে “নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য, ক্যান্সার ও অধিকার”


নারী সংবাদ


আজকে ৯-ই মার্চ রোজ শনিবার “নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য, ক্যান্সার ও অধিকার” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে। কমিউনিটি অনকোলজি ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ – এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। সহযোগিতায় আরও ছিলেন, বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরাম ও মার্চ ফর মাদার।

সভায় মূল আলোচনায় অংশ নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাবেরা খাতুন ও জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের ক্যান্সার-ইপিডিমিওলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি- জাইকার বাংলাদেশ অফিসের প্রধান উপদেষ্টা Yukie Yoshimura।

অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেড এর ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট নাঈমা জান্নাত, ক্যান্সার সারভাইভার রোকেয়া রুমি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হীল-এর প্রতিষ্ঠাতা মিসেস জেবুন্নেসা, অপরাজিতার জ্যেষ্ঠ সদস্য হোসনে আরা হান্নান, সাংবাদিক জান্নাতুল এনা, মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল, ক্যাপ-এর উম্মে হানি মেঘলা, কুমিল্লা কমিউনিটি অনকোলজি ফোরামের রুহুল আমিন, জুম বাংলাদেশের কাজী সদরুল ইসলাম, ওয়ারেস আলী প্রমুখ।

বক্তারা নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের সাথে ক্যান্সারের গভীর সম্পর্ক আছে বলে জানান। জরায়ুমুখের ক্যান্সার, ডিম্বাশয় ক্যান্সার, কোরিওকারসিনোমা, স্তন ক্যান্সার এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা, সূচনায় ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে নারীরা অবহেলিত ও বঞ্চিত। পাশাপাশি বক্তব্যতে হসপিটালের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ কথাও উঠে আসে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে নারীর প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা, গর্ভবতী নারীর সন্তান রাখা না রাখা, অপারেশনের মাধ্যমে প্রজনন অঙ্গহানির মতো গুরুতর সিদ্ধান্ত গ্রহণে, নারীর অধিকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয়। বক্তিতায় বক্তাদের কথায় উঠে আসে।

 

খোলা জানালার হাতছানি


আফরোজা হাসান


আমার ছেলের সাথে নিয়মিত যে কাজগুলো করা হয় তারমধ্যে একটা হচ্ছে গল্পের বই পড়া। আমি যে শুধু ছেলেকে সঙ্গ দেবার জন্য ছোটদের বই পড়ি তা কিন্তু না, আমি ভীষণ রকম উপভোগ করি গল্পগুলো। তাছাড়া নিজে আনন্দ না পেয়ে বাচ্চার মনে আনন্দ ছড়িয়ে দেয়াটা অনেক মুশকিল বলে মনেহয় আমার কাছে। গতরাতে আমরা দুজন ছোট্ট একটা বাচ্চা ছেলের আত্মকথন মূলক একটা বই পড়েছি। একটা বাচ্চা নিজের মনে অক্লান্ত ভাবে কত রকমের কল্পনার জাল যে বুনে চলে সেটাই ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন লেখিকা। গল্পে বাচ্চাটার নিজস্ব একটা আকাশ আছে, একটা সমুদ্র আছে, একটা পাহাড় আছে, পাহাড়ে চড়ার লম্বা একটা সিঁড়ি আছে। আর এসবকে ঘিরে শিশুসুলভ কথোপকথনের ছড়াছড়ি পুরো বইতে। কিন্তু বইয়ের শেষে লেখিকা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে, সবার মনেই প্রকৃতি আছে, আছে প্রকৃতির প্রতিটি রঙ-রূপ…। যেগুলোর অস্তিত্বকে অনুধাবন করতে হলে সবার আগে মনের বন্ধ জানালার কপাটগুলো খুলতে হবে।

ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম থোকা থোকা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। আকাশের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর উপলব্ধি করলাম আমার মনের মাঝেও একটুকরো আকাশ আছে। তাতেও হয় সুর্যাস্ত…সুর্যোদয়…ভেসে বেড়ায় থোকা থোকা মেঘ, ঝরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, কখনো বাঁধ ভাঙ্গে জোছনা, চমকে ওঠে বিজলী, খসে পরে তারা…….! খেয়াল করলাম কোন কারণ ছাড়াই এক এক করে খুলে যাচ্ছে মনের জানালার কপাটগুলো। দেখতে পাচ্ছি মনের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা সুউচ্চ হিমালয়কে, যাকে জয় করার জন্য আছে প্রলম্ব সিঁড়ি। আছে স্বপ্নপুরী, বিষাদের কারাগার, ফুলের বাগান, শান্ত দীঘি, আছে খাঁদা-খন্দ…… ঘৃণার জাল, নিরাশার গলি-ঘুপচি, মিথ্যার চোরাবালি….!

খুলে গেলো আরেকটি জানালা দেখলাম আমারো একটা নিজস্ব সমুদ্র আছে, আছে বাঁকা চাঁদের মতো রুপালি সৈকত। তাতে আছড়ে পড়ে হীরকের ফোয়ারা ছোটাচ্ছে নীলচে সাদা ঢেউরাশি। নীলাকাশ ছায়া ফেলে যার পানিকেও করে তুলেছে একই রকমের নীল। সৈকতের কিনার জুড়ে আছে সারি সারি নারকেল আর পাম গাছ। চারিদিকে অর্কিড, জেসমিন, বুগেনভিলা, কার্নেশান আর ফরগিভ মি নট ফুলের ছড়াছড়ি। বাতাসে ঝিঁঝিঁ পোকার গুঞ্জন আর পাখীদের কিচির মিচির। আর সমুদ্রের গভীরে আছে হাঙ্গর রূপি হতাশা, নীল তিমির মতো উচ্চাশা, লন্ঠন মাছের মতো টিমটিম জ্বলতে থাকা আশা, রংবেরঙের প্রবালের মতো স্বপ্ন……!

আচ্ছা মনের মাঝে মহাকাশ কি আছে…..? নিশ্চয়ই আছে নয়তো মাঝে মাঝে এতো শূন্যতা এতো হাহাকার ঘিরে ধরে কেন মনকে…..? কেমন যেন একটা দমবন্ধ করা পরিস্থিতি, সব থাকতেও কিছুই নেই এমন এক অনুভূতি! মধ্যাকর্ষন বলের অভাবে মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্ন-ভালোবাসা যেখানে ভাসতে থাকে চোখের সামনে কিন্তু তাদেরকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। মনকে ঘিরে ধরে একরাশ শূন্যতা।

 

কেন নারী দিবস সম্পর্কে জানবো?


সম্পাদকীয়


২০১৯ এর প্রতিপাদ্য : ‘‘সবাই মিলে ভাবো, নতুন কিছু করো নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ্ব গড়ো’’।

১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ।

কেন?
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন।আর সেই থেকেই
নারী দিবসের শুরু।

এখন কি বৈষম্য নেই

আছে
(বিশ্ব বাংকের তথ্য—-)
# মজুরিবৈষম্য,
# কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট,
# কাজের অমানবিক পরিবেশ-এখনও নারীরা এই সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তি ও পুরো সমাজকে আঘাত করার কৌশল হিসেবে সংঘাতে যৌন সহিংসতার পথ বেছে নেওয়া অব্যাহত রয়েছে।

সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি -নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে। তবুও কি আমরা নারীরা সত্যিকার অধিকার আদায় করতে পারছি?

নারীদের মধ্যে থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ানো অপরিহার্য। কিন্তু ক্ষমতা প্রাপ্তি ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের এখনো বড় ধরনের বাধার মুখোমুখি হতে হয়।

এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হলো সমান চিন্তা, বুদ্ধিদীপ্ত নির্মাণ, পরিবর্তনের জন্য উদ্ভাবন, যা সেই সব পরিকাঠামো, ব্যবস্থা ও অবকাঠামোকে চিহ্নিত করে, যেগুলো গড়ে উঠেছে পুরুষ নির্ধারিত সংস্কৃতির আলোকেই। আমাদের এই বিশ্বটাকে পুনঃকল্পনা ও পুনর্নির্মাণের জন্য আমাদের একটি উদ্ভাবনী প থ খুঁজে বের করা প্রয়োজন, যা সবার জন্যই সমান কার্যকর হবে। নগরায়ন নকশা, পরিবহন ও জনপ্রশাসনের মতো ক্ষেত্রে নারী সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা এসব খাতে নারীর প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি, হয়রানি ও সহিংসতা প্রতিহত এবং সবার জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে পারেন। (জাতিসংঘ মহাসচিব)

পরিশেষে বলা যায় যে, আসুন আমরা নিশ্চিত করি। যে প্রতিটি নারী ও প্রতিটি কিশোরীও আমাদের সবার জীবনের ওপর প্রভাব ফেলে, এবং তাদের ভূমিকা আমাদের জীবনে অনেক, সুতরাং সমাজকে পরিষেবা ও অবকাঠামোর আকার দিতে পারে।

 

ভিডিও ধারণ করে গৃহবধূকে গণধর্ষণ, মামলা দায়ের


নারী সংবাদ


মাদরাসায় পড়ুয়া সন্তানকে খাবার দিয়ে আসার পথে দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধূ (২৫) কে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে।

এদিকে গণধর্ষণের অভিযোগে মঙ্গলবার বালিয়াকান্দি থানায় ৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ। গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে।

ধর্ষিতা ওই গৃহবধূ জানান, তার ৮ বছর বয়সী ছেলে উপজেলার ঠেঙ্গাবাড়িয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার পড়ে। ছেলের জন্য বাড়ি থেকে তিনি ওই মাদ্রাসায় দুই বেলা খাবার দিয়ে আসেন। গত ৩ জানুয়ারী সন্ধ্যায় ছেলেকে খাবার দিয়ে ফেরার পথে কুরশী গ্রামের মোজাইর কলাবাগানের কাছে অভিযুক্ত শামীম, মর্তুজা, মনির, সোহেল, সাব্বির তাকে ঘিরে ধরে।

এ সময় মনির তার গায়ের চাদর দিয়ে মুখ বেঁধে কলাবাগানের মধ্যে নিয়ে যায়। এরপর অভিযুক্তরা তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে ও ছবি তোলে।

তিনি আরো জানান, পালাক্রমে ধর্ষণের পর অভিযুক্ত ধর্ষকরা তাকে হুমকি দিয়ে চলে যায়। এরপর অসুস্থ্য অবস্থায় তিনি বাড়ি গিয়ে স্থানীয় ডাক্তারের চিকিৎসা নেন।

এ ঘটনার দুইদিন পর মর্তুজা ধর্ষিতা গৃহবধূর বাড়িতে এসে ধর্ষণের ভিডিও দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে ভিডিও ও ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়। একপর্যায়ে লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু না বলে ওই গৃহবধূ তাকে ২৫ হাজার টাকা দেয়। এদিকে টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে অভিযুক্ত ধর্ষকদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে গণধর্ষণের বিষয়টি জানা-জানি হয়।

এ ব্যাপারে মঙ্গলবার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের ঠেঙ্গাবাড়ীয়ার মৃত আবু বক্করের ছেলে শামীম (২৫), কুরশীর সোনাইডাঙ্গী গ্রামের মমিন মন্ডলের ছেলে মর্তুজা (২০), আয়ুব আলীর ছেলে মনির (২৫), খালেক শেখের ছেলে সোহেল (২৬) ও একই গ্রামের মাজেদের ছেলে সাব্বির (২০) কে আসামী করে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন ওই গৃহবধূ।

বালিয়াকান্দি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ওবায়দুল হক জানান, গণধর্ষণের বিষয়ে শনিবার দুপুরে রাজবাড়ী পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি, বিপিএম, পিপিএম, সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) ফজলুল করিম, থানার ওসি একেএম আজমল হুদা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মঙ্গলবার ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

তিনি আরো বলেন, তাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন থানার ওসি একেএম আজমল হুদা। আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

জোসনার দিন বদলের চেষ্টা


নারী সংবাদ


বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে এক সময় সমাজ ব্যবস্থায় সনাতনী ধ্যান-ধারণা, মূল্যবোধে ও লিঙ্গ বৈষম্য ছিল প্রকট। বর্তমানে সেই ধ্যান-ধারণা তথা দৃষ্টি ভঙ্গীতে এসেছে অনেক পরিবর্তন। তারপরও গ্রামের লোকজনের মধ্যে এখনো সেকেলে চিন্তাধারা বিরাজমান। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং শিক্ষার অভাবে এত দিন পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে গ্রামে বসবাসরত নারীরা সেই অচলায়তন ভেঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে এগিয়ে আসছে। বিশেষ করে গত দশ বছরে এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন এবং অগ্রগতি আজ বিশ্বে প্রশংসিত। নারীর ক্ষমতায়ন একটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও লিঙ্গ সমতার প্রতিফলক। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের কাছ থেকে বিশ্বের বেশ কিছু শেখার আছে। বর্তমান সরকার লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য এমডিজি ২০১৫ অর্জন ও নারীর প্রতি সকল বৈষম্য বিলোপ (সিডও) এর বিভিন্ন ধারা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে এমডিজি ৩ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তার প্রতিফলন হলোÑ বাংলাদেশের গ্রামীণ অনগ্রসর নারীদের ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ।
দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা দিনাজপুর। এক সময় উত্তর বঙ্গকে দেশের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চল বলা হলেও এখন চিত্র পুরোটাই উল্টো। এখন সংসারে নারী-পুরুষ সমানভাবে অর্জন করে । আবার কখনো কখনো নারীরাই চালাচ্ছেন সংসার। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার একইর গ্রামের নারীদের কাছে একটি প্রেরণার নাম হলেন জোসনা আরা (৪৪)। সংসারের কাজের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি নিজেও সংসারের ব্যয় নির্বাহে ভূমিকা রাখছেন। তিনি বলেন, ‘মোর জামাই যা টাকা কামায় ওলা দিয়ে হামার সংসার চলে না। দুই বেটা-বেটির খিলানোর ভার হামার উপরি’। জোসনা এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী। বিয়ের পর থেকেই তার অভাবের সংসার। স্বামী বুদা মাঠে কাজ করে যে আয় রোজগার করতেন তা দিয়ে বেশ টানাপোড়নের মধ্যেই সংসার চলতো তাদের। তিনি কখনও শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে পারেননি। কিন্তু তিনি নিজের ছেলে মেয়েকে এই আলো থেকে বঞ্ছিত হতে দিতে চাননি। তাই তিনি তার ছেলে এবং মেয়ে দুজনকেই স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। স্কুলে ভর্তি করানোর পর তাদের অভাবের মাত্রা আরও বেড়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ঘরের গন্ডি থেকে বের হয়ে তিনি নিজেও সংসারের হাল ধরবেন। তাই তিনি স্থানীয় এক ফার্মে গরু পরিচর্যার কাজ নেন যেখানে তিনি পারিশ্রমিক হিসেবে মাসিক তিন হাজার টাকা পেতেন। এই টাকার পুরোটা তিনি সংসারের ব্যয় নির্বাহে খরচ করতেন না। জোসনা বললেন, ‘জিলা টাকা মুই কামাছুনু ওলাত্তে কিছু সংসারোতও দিছিনু। বাকি যা টাকা আছলো ওলা জমে থুয়ে দিছিনু। কারণ মোর মনোত্ত আছোলো নিজে নিজে কেছু এটা করার’। যখন তার কাছে জমানো মোটামোটি ১৫ হাজার টাকার মত হয় তখন তিনি যে ফার্মে কাজ করতেন তার মালিকের কাছে তার পরিকল্পনার কথা বলেন এবং আর্থিক সহায়তা চান। পরবর্তীতে ফার্মের মালিক তাকে আরও ২০ হাজার টাকা ঋণ দেন। এই ঋণের টাকা আর তার সঞ্চয় করা টাকা দিয়ে তিনি একটি উন্নত জাতের গাভী কিনেন এবং এভাবেই একটি গাভী দিয়ে তিনি তার স্বাবলম্বী হওয়ার যাত্রা শুরু করেন। এই গরুর দুধ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে তিনি মাসে আরও কিছু আয় রোজগার করা শুরু করলেন। গরু কেনার দুই বছরের মাথায় তিনি যে ফার্ম থেকে ঋণ নেন তা তিনি পরিশোধ করে ফেলেন। ইতিমধ্যে তার বাড়িতে গরুর সংখ্যা দাঁড়িয়ে যায় দু’টিতে।
এখানেই তার স্বাবলম্বী হওয়ার যাত্রা শেষ হয়নি। তিনি বললেন, ‘ঋণ শোধ করার পর মুই ফার্মেত কাজ করা ছাড়ে দিছিনু। মর জামাই জি টাকা কামাসোলো আর মুই দুধ থিকে জি টাকা পাছুনু ওলা দিয়ে হামার সংসার ভাল চলছোলো। এই বছর মুই এনা এনা করে টাকা জমে ফির ৫০ হাজার টাকা দিয়ে একটা ফ্রিজিয়ান জাতের বকনা কিনি। তার সাথে হামার বাড়িত ৬০টা রাজ হাঁস আর ৩০টা মুরগি পালি’। তিনি এই মুরগি ও রাজ হাঁসের ডিম এবং গরুর দুধ বাজারে বিক্রি করে বর্তমানে মাসে ১৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা আয় করেন।
জোসনা খুব বিচক্ষণতা এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে মাত্র চার বছরেরও কম সময়ে সাফল্য পেয়েছেন। তার স্বামী এবং তার আয় রোজগারে তাদের সংসার এখন ভালোভাবেই চলছে। বসত বাড়িটি করেছেন পাকা। কথায় আছে যে রাধে, সে চুলও বাঁধে! একটা সময় পর্যন্ত এ প্রবাদটা সত্যি হলেও কালের পরিক্রমায় নারীরা এখন শুধু রেঁধে কিংবা চুল বেঁধে নয়, তারা পুরুষের সাথে সংসারের হাল ধরে নিজের অবস্থার পরিবর্তন করেছেন। তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হলেন জোসনা।

সুত্রঃ বাসস।

 

আমার রঙে রাঙিয়ে যাব………..


আফরোজা হাসান


ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে মেঘলা আকাশ দেখে হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেলো নুশেরার। বৃষ্টি অসম্ভব পছন্দ করলেও গুমোট ধরা মেঘলা আকাশ সবসময়ই তার মন খারাপ করে দেয়। রুমে এসে ডায়েরী নিয়ে বসলো। গতরাতের লেখাতে চোখ বুলাতেই খুব হাসি পেলো। ভাবলো…ধ্যাত কি সব লিখেছি! ডায়েরী বন্ধ করে আবারো বারান্দায় এসে দাঁড়ালো নুশেরা। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেঘ আর সূর্য জমিয়ে লুকোচুরি খেলছে। দুরন্ত দুটি শিশু যেন কেউ কারো চেয়ে কম না। মামণি এসে পেছন থেকে কাঁধে হাত রাখতেই মনের জগত থেকে বাইরে বেড়িয়ে এলো নুশেরা। মার দিকে তাকিয়ে আদুরে গলায় বলল, আমি কিন্তু আজ ক্লাসে যাবো না মামণি। এমন দিনে ক্লাসে গিয়ে কোন মজা নেই। মামণি হেসে বললেন, ঠিকআছে ইচ্ছে না হলে যাবি না। এখন চল নাস্তা করবি। নাস্তা সেরে গতরাতের অর্ধেক করে রাখা ফুলের তোড়াটা শেষ করতে বসলো সে। ছোট ভাইয়া বাইরে যাবার সময় নুশেরাকে দেখে কাছে এসে বসে বলল, কিরে সাত সকালেই ফুল নিয়ে বসেছিস যে?

-তোমার বিয়ের সময় যাতে নিজ হাতে ফুল দিয়ে সবকিছু সাজাতে পারি তাই ফ্লাওয়ার ডেকোরেশনের কোর্স করছি ভাইয়া।

-(হেসে) তাহলে বরং তুই গহনাগাঁটি বানানোর কাজ শেখ। কারণ এখনকার মেয়েরা শরীর ভর্তি গহনা না হলে বিয়ে করতে চায় না। কয়েক বছর পর দেখবি আবদার করবে বাড়িঘর ডেকোরেশনও করতে হবে হিরা-মণি-মুক্তা দিয়ে।

-মেয়েদের চাহিদা সম্পর্কে এমন ধারণার পেছনে কারণ কি তোমার?

-বন্ধুদের অবস্থা দেখে এমন ধারণা হয়েছে। এখন তো বিয়ে করতে চাওয়াটাই বিপদ।

-তুমি তাহলে এইসব বিপদে না গিয়ে মহৎ কিছু করো। শত শত অসহায় কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা-মাতা আছেন যারা সামর্থ্য নাই তাই মেয়েদের বিয়ে দিতে পারছেন না, তাদের কাউকে বিয়ে করো। অনেক মেয়ে আছে দেখতে খুব একটা সুন্দর না, কারো গায়ের রঙ কালো, কেউ খুব বেশি খাটো, নাহয় তাদের কাউকে বিয়ে করো। এইসব অসহায় মেয়েরা তোমাদের কাছে কিছুই চাইবেনা একটু ভালোবাসা আর আশ্রয় ছাড়া।

-(হেসে) চাইবে না নিশ্চিত হচ্ছিস কিভাবে?

-নিশ্চিত হচ্ছি না জাস্ট ধারণা করছি। তুমি তোমার ধারণা বলেছো তাই আমি আমারটা বললাম।

-(হেসে) তোর সাথে কথায় পারবো না তাই আগেই সারেন্ডার করলাম। হঠাৎ ফ্লাওয়ার ডেকোরেশনের কোর্স করার কারণ কি তোর?

-সত্যিই তোমাদের বিয়ের সময়ের কথা চিন্তা করে ভর্তি হয়েছি কোর্সে। আমি নিজ হাতে সাজাতে চাই আমার ভাইয়াদের নতুন জীবনের শুভ সূচনার প্রথম অধ্যায়কে।

-তোকে দেখি সারাক্ষণই পরিবারের সবাইকে নিয়ে নানা ধরণের স্বপ্ন দেখতে। আচ্ছা নিজেকে নিয়ে কোন স্বপ্ন নেই তোর মনে?

-(হেসে) অবশ্যই আছে। তবে আমার স্বপ্নের কথা কাউকে বলতে চাই না আমি।

-কেন?

-কারণ আমি আমার স্বপ্নকে ধরে রাখতে চাই ভাইয়া। আর আপনজনদেরকে স্বপ্নের কথা বললে, তারা সেটা পূরণ করার চেষ্টা করে। এতে বেশির ভাগ সময়ই স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায়। আর আমার ধারণা স্বপ্ন অপুর্ণ থাকার চেয়ে স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়াটা বেশি কষ্টের। যদিও স্বপ্ন মানে আশা। তাই স্বপ্ন অপুর্ণ থাকা মানে আশা পূরণ না হওয়া। কিন্তু অপুর্ণ স্বপ্নের পুর্ণ হবার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু ভেঙ্গে গেলে তো সেই সম্ভাবনার আশাটুকুও থাকে না।

-(হেসে) তোর চিন্তা-ভাবনাগুলো সত্যিই অন্যরকম। ভালো লাগে যখন তোর মতো মেয়েদের দেখি।

-(অবাক কণ্ঠে) তোর মতো মেয়ে মানে? ভাইয়া শোন আমি দুনিয়াতে সিঙ্গেল পিস। অনেক সময় তো আমার নিজের কাছেই দুঃসাধ্য মনেহয় আমার মতো মেয়ে হতে পারাটাকে।

-(হেসে বোনের কান টেনে) তোর মতো চিড়িয়া আসলে দুনিয়াতে সিঙ্গেল পিসই আছে। আর সেটা হচ্ছিস তুই নিজে। আচ্ছা ফ্লাওয়ার ডেকোরেশন কর আমি যাই।

-আমার প্রস্তাবটা কেমন লাগলো বললে নাতো?

-কোন প্রস্তাব?

-অসহায় কাউকে বিয়ে করার।

-(হেসে) অসহায় কাউকে ঝুলাতে চাইছিস মনেহচ্ছে আমার গলায়?

-ভাইয়া আমার এক ক্লাসমিট আছে। এককথায় অসাধারণ একটি মেয়ে। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় রোড এক্সিডেন্টে ওর স্বামী মারা গিয়েছে। সাথে সাথে হারিয়ে গিয়েছে মেয়েটির জীবনের সব রঙ সব স্বপ্ন-হাসি-আনন্দ। তুমি কি পারো না ওকে বিয়ে করে ওর জীবনটাকে আবারো স্বপ্নের রঙে রাঙিয়ে দিতে?

-তুই কি সিরিয়াস?

-আমার কি ধারণা জানো ভাইয়া? আমাদের সবার মনেই একটি করে রংধনু আছে। আর সেই রংধনুর ক্ষমতা আছে নিজের সাথে সাথে অন্যের জীবনকেও রাঙিয়ে দেয়ার। তাই নিজ নিজ গণ্ডির ভিতরে কারো জীবন থেকে যদি রঙ হারিয়ে যায়, আর আমাদের যদি সুযোগ থাকে, তাহলে উচিত নিজের রঙয়ে তাকে রাঙানোর চেষ্টা করা। কথা বলছো না কেন?

-তোর কথাটা হজম করতে সময় লাগছে।

-বেশি কষ্ট হলে হজমী খাও।

-(হেসে) হজমী খেতে হবে না। আমার হজম শক্তি খুব ভালো। তবে ভেবে দেখতে চাচ্ছি তোর কথাটা।

-ভাবো। ভাবতে ভাবতে ভাবুক হয়ে যাও। তবে জেনে রাখো যখনই আমার সামনে সুযোগ আসবে নিজের রঙে কাউকে রাঙানোর আমি ভেবে সময় নষ্ট করবো না। বরং আমার রঙে রাঙিয়ে যাবো কারো মন কিংবা জীবন……………

(কাউকে নিজের রঙে রাঙিয়ে দেবার জন্য আসলে খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন পরে না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। একটু আশার বাণী, উৎসাহমূলক কিছু কথা, কষ্টের সময় একটু পাশে থেকে ভরসা দেয়া, বিপদে পড়লে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করা ইত্যাদি দ্বারা সম্ভব অন্যেকে রাঙিয়ে দেয়া।)

 

গোসলের সময় একা পেয়ে ধর্ষণ চেষ্টা, স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা


মোঃ জাকির হোসেন


নবম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী সুমি রাণী। ক্লাসের যে কয়েকজন শিক্ষার্থী পড়ালেখাকে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছিল, সুমি রাণী তাদের অন্যতম। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। সম্প্রতি এক বখাটের কুনজর পড়ে সুমির (১৪) উপর। নিজের বাড়ি ও স্কুলে যাওয়া আসার রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে সুমিকে উত্যক্ত করতো এই বখাটে যুবকের। অভিযুক্ত বখাটের নাম সূর্য রায় (৩৫)।

সর্বশেষ শনিবার সুমিকে বাড়ির গোসলখানায় একা পেয়ে ধর্ষণ চেষ্টা করে লম্পট সূর্য। একপর্যায়ে সুমির ভাই এসে লম্পটের হাত থেকে তাকে রক্ষা করলেও পরে লজ্জায় ও আতঙ্কে গলায় আত্মহত্যা করে সে। ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নে। নিহত সুমি ওই ইউনিয়নের ভুজারীপাড়ার দিনমজুর হরেন চন্দ্র রায়ের কন্যা। সে বাঙ্গালীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল।

এদিকে অভিযুক্ত বখাটে সূর্য রায় একই গ্রামের বাসিন্দা। সে দুই সন্তানের জনক এবং পেশায় একজন ইজিবাইক চালক বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ২ মার্চ শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিহত স্কুলছাত্রী সুমির মা ময়না রাণী বাদী হয়ে সৈয়দপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

নিহত স্কুলছাত্রী সুমির পরিবারের সদস্যরা জানায়, শনিবার বিকেলে বাড়ি এসে গোসলখানায় গোসল করতে যায় সুমি। এসময় তাকে বাড়িতে একা পেয়ে গোসলখানায় সুমিকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় বখাটে সূর্য। একপর্যায়ে সুমির পালিত ভাই বকুল চন্দ্র বাড়িতে এলে বখাটে সূর্য রায় পালিয়ে যায়।

এসময় সূর্যকে আটক করার জন্য সুমির ভাই বকুল চন্দ্র বাড়ির বাইরে আসে। এরই ফাঁকে লজ্জা ও আতঙ্কে সুমি নিজ শোয়ার ঘরে গিয়ে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে তাকে উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়।

নিহত সুমির মা ময়না রাণী জানান, দীর্ঘদিন থেকে তার মেয়ে সুমিকে উত্যক্ত করতো বখাটে সূর্য। এ উত্যক্ত করার ঘটনা ইতোপূর্বে সূর্য ও তার পরিবারকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো কর্ণপাত করেনি।

প্রতিবেশী শিল্পী রাণী ও সুমীর পিসি জোসনা রাণী জানান, বখাটে ও লম্পট চরিত্রের সূর্য অনেক দিন থেকেই সুমিকে উত্যক্ত করে আসছে। স্কুলে যাওয়ার পথে প্রায়ই সে সুমির হাত ধরে টানা হেচড়া করতো। আমরাও বেশ কয়েকবার এমন ঘটনা দেখেছি। কিন্তু সূর্যকে তার পরিবারের লোকজন বাধা না দেয়ায় সে আরও বেশী বেপরোয়া হয়ে উঠে।

তারা আরো বলেন, একারণেই শনিবার বিকেলে সুমিকে একা পেয়ে স্নানের (গোসলের) সময় জাপটে ধরে শ্লীলতাহানী ও ধর্ষণের চেষ্টা করে সূর্য। বখাটে সূর্যের কারণে একজন মেধাবী ছাত্রী অকালে ঝরে গেলো। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

এদিকে দায়েরকৃত মামলা তুলে নেয়ার জন্য সুমির পরিবারের সদস্যদের ওপর বখাটে সূর্য রায়ের লোকজন চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি ওয়ার্ড মেম্বার বজু নিহত সুমির বাবাকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ঘটনা আপস-মীমাংসা করার জন্যও চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সৈয়দপুর সার্কেল) অশোক কুমার পাল বলেন, হত্যার মামলায় ৩০৬ ধারায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করার জোর চেষ্টা চলছে। প্রাথমিক তদন্তে আসামী একজন লম্পট চরিত্রের বলে জানা গেছে।

ধর্ষণ চেষ্টার পর আত্মহত্যা করে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমি রাণী

– নয়া দিগন্ত

 

মাছের চপ


রেসিপি


উপকরণ :
১. যেকোনো মাছ (ভেটকি, রুই বা ইলিশ) পাঁচছয়টি বড় টুকরা,
২. আলু মাঝারি ৩টি,
৩. একটি বড় পাউরুটির টুকরা,
৪. পেঁয়াজ মিহিকুচি আধা কাপ,
৫. আদাবাটা ১ চা-চামচ,
৬. রসুনবাটা ১ চা-চামচ,
৭. কাঁচামরিচ-কুচি ১ টেবিল-চামচ,
৮. মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ,
৯. হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১০. ধনিয়াগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১১. ভাজা জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ,
১২. লবণ স্বাদমতো,
১৩. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি :
মাছের টুকরাগুলো ভাপে সেদ্ধ করে কাঁটা বেছে নিতে হবে। সেদ্ধআলু ভালোভাবে চটকে নিন। এবার পাউরুটি পানিতে ভিজিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তুলে নিতে হবে। তারপর মাছ, আলু, রুটি খুব ভালো করে মেখে নিতে হবে। একে একে তেল বাদে সব উপকরণ খুব ভালো করে মিশিয়ে হাতে পছন্দ মতো আকার দিন। এবার গরম তেলে চপগুলো ছেড়ে দিয়ে মাঝারি আঁচে ভাজতে হবে। হালকা বাদামী রঙ আসলে নামিয়ে নিলেই হল। ইফতার, সাদাভাত, পোলাও বা বিরিয়ানির সঙ্গে খেতে মাছের চপের জুড়ি নেই।

রেসিপি : বাংলাদেশী রেসিপি।

 

শিশুদের কুরআন শিক্ষা – ভাবনার বিষয়


কানিজ ফাতিমা


সচরাচর মুসলমানেরা তাদের শিশুদের ছোটবেলা থেকেই শুধু জাহান্নামের আগুনের ভয় দেখান, কিন্তু আল্লাহর ভালোবাসা, দয়া এবং সমবেদনা অথবা জান্নাতের সৌন্দর্যের কথা সেভাবে তুলে ধরেননা । আমরা শিশুদেরকে ভয় যতটা জোর দিয়ে দেখাই যে তারা যদি আল্লাহর অমান্য করে, মা-বাবার কথা নাশুনে , বা পাপ কাজে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের দোজখের আগুনে জ্বালানো হবে; ততটা তাদেরকে আশাবাদ দেই না যে তারা যদি সৎ কাজ করে, আল্লাহ ও মা-বাবাকে মান্য করে এবং কোনো ভালো কাজ করে তবে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে। আমরা সবসময় তাদেরকে ভয় দেখাই, জাহন্নামের হুমকি দেই অথচ খুব কমই তাদেরকে সাহস যোগাই অথবা ভালো আচরণের জন্য আল্লাহ’র ভালোবাসার কথা, পুরুষ্কারের কথা উল্লেখ করি। এমন পরিবেশে, শিশুরা আতঙ্কগ্রস্ত ও ভীতু হিসাবে বেড়ে উঠে। ফলে তাদের মধ্যে নেতীবাচক মানসিকতা জন্মায় এবং আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেয় এবং তদেপেক্ষাও খারাপ যে তারা তাদের বিশ্বাসের প্রতি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে।

শিক্ষকরা সাধারণত: কুরআনের শেষ অধ্যায় থেকে (ত্রিশ পারা) শিশুদের পড়ানো শুরু করে। এই অধ্যায় ছোট ছোট সূরা সম্বলিত যেগুলো ওহী আসার প্রাথমিক পর্যায়ে মক্কায় নাযিল হয়। মূলত কুরাইশ গোত্রের বিপথগামী, অহংকারী এবং অত্যাচারী পৌত্তলিক নেতাদের (আবু জেহেল, আবু লাহাব) উদ্দেশ্যে এই সূরা গুলো নাযিল হয়েছিলো। তাছাড়া যারা মুসলমানদের অত্যাচার করছিলো, মুসলমানদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে হত্যা করেছিলো, নবীজী (সাঃ)কে হত্যার পরিকল্পনা করছিলো এবং বিশ্বাসীদের ধ্বংস করতে যুদ্ধ বাধিয়ে ছিলো-কুরআন নাযিলের সূচনার অধ্যায়গুলো মুলত তাদের উদ্দেশ্যেই। এই সূরা গুলো এসব অত্যাচারীদের তাদের হুশ/জ্ঞান ফিরিয়ে আনার জন্য ছিলো। এদিকে আয়াতের দৃঢ় কথাগুলো তাদের কানে বজ্রধ্বনি হিসাবে কাজ করতো কারণ আয়াতগুলো ভয়ানক সতর্কবার্তা সম্বলিত ছিলো। যেমন নিচের আয়াতগুলো-

“আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজে” (সূরা লাহাব, ১)

“প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ” (সূরা হুমাজাহ, ১)

“আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী কেয়ামতের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি? অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে লাঞ্ছিত, ক্লিষ্ট, ক্লান্ত। তারা জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে। তাদেরকে ফুটন্ত নহর থেকে পান করানো হবে। কন্টকপূর্ণ ঝাড় ব্যতীত তাদের জন্যে কোন খাদ্য নেই” (সূরা গাসিয়া, ১-৬)

“যারা মাপে কম করে, তাদের জন্যে দুর্ভোগ (সূরা মুতাফফিফিন, ১)

“বলুন, হে কাফেরকূল” (সূরা কাফিরুন, ১)

“যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে” (সূরা যিলযাল, ১)

এটা খুবই দুঃখজনক যে এসব কঠিন বার্তা কোমলমতি শিশুদের উদ্দ্যেশে নাযিল না হলেও এগুলোই শিশুদের সর্বপ্রথম শিখানো হয়। হ্যা, প্রথমেই এ সূরাগুলো শিখানোর একটা কারণ হচ্ছে এগুলো ছোট এবং সহজে মুখস্ত করা যায়। তবুও শিশুদের এ বয়সে জাহান্নাম ও শাস্তির ভয় দেখানোর বদলে আমাদের উচিত তাদেরকে আল্লাহর ভালোবাসা, মা-বাবার দয়া এবং জান্নাতের সৌন্দর্য প্রভৃতি বিষয়ে বুঝানো।এর ফলে শিশুকাল থেকে তাদের মনে নিরাপত্তার অনুভুতি, ভালোবাসা, দয়া, কোমলতা, মহত্ত্ববোধ, উদারতা এবং সহানুভুতি প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যগুলো ধীরে ধীরে প্রবেশ করবে। আল্লাহর ভালোবাসা, দয়া, মমতা, ক্ষমাশীলতা, ধৈর্যশীলতা এবং উদারতা ইত্যাদি আল্লাহর সুন্দর গুণাবলীগুলোর শিক্ষার মধ্য দিয়েই শিশুদের প্রথম পাঠ শুরু করা উচিত। প্রথমে তাদের মনে এই বিশ্বাস দিতে হবে যে তারা ভালো এবং আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন। এরপর তাদেরকে শেখাতে হবে যে তাদেরও উচিত আল্লাহকে ভালবাসা। শিক্ষার ক্রমটি এমন হতে হবে যে , প্রথমত তাদের প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা সম্পর্কে তাদের অবগত করা, তারপরে তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসতে হবে সেই বাধ্যবাধকতা শেখানো।

এরপর যখন সন্তান কিছুটা বড় হবে এবং বুঝতে শিখবে, তখন মা-বাবা ধীরে ধীরে তাদেরকে খারাপ কাজের জন্য জাহান্নামের শাস্তির কথা বলতে শুরু করবেন। যেসব সূরাগুলো বড় বড় গুনাহের জন্য শাস্তির আগাম সতর্ক বার্তা দেয়- সেসব সূরাগুলো এসময় শুরু করা উচিত, যাতে তারা এসব থেকে ভয়ে সন্ত্রস্ত না হয়ে বরং শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।এটা তাদের শৈশবের শেষ পর্যায় কিংবা টিনেজ (১৩-১৯) বয়সের দিকে হতে পারে যখন তারা কিছুটা বড় হয়েছে এবং কিছুটা জটিল বিষয়গুলো ও কর্মের ফলাফল বুঝতে সক্ষম।

কুরআনের শিক্ষা দেবার সময় আমদের সচেতন থাকতে হবে যে আমরা শিশুর দর্শন ও মানসিকতাকে কিভাবে তৈরী করছি। এটা আবশ্যক যে, শিশুদের বেড়ে উঠার সাথে সাথে বাবা- মাকে সচেতনতার সাথে তাদের বয়সের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সুরা বা আয়াত নির্ধারণ করতে হবে।রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বেশির ভাগ সাহাবী তাদের প্রপ্তবয়সে (শিশু বয়সে নয়) কুরআনের সাথে পরিচিত হন।

 

জীবন


কাব্যানুবাদ: আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব


কারো ভাঙা বুকে যদি দিতে পারি গাঢ় মমতার ছোঁয়া
সার্থক হবে জীবন আমার, বৃথাই যাবে না খোয়া।
বিপন্ন কোন জীবনকে যদি স্বপ্ন দেখাতে পারি,
ব্যথাতুর মনে যদি হতে পারি প্রশান্তি-সঞ্চারী;
মূর্ছিত যেই দোয়েলটা চায় ফিরতে আপন নীড়ে
আমার হাতেই সে যদি আবার সুখনীড় পায় ফিরে-
সার্থক হবে বেঁচে থাকা এই অর্থহীনের ভীড়ে।

 

ফিলিপাইনকে গোল বন্যায় ভাসাল মেয়েরা


নারী সংবাদ


প্রতি বছর একাধিক ভয়াবহ ঝড়ের জন্য নামকরা হাজার দ্বীপের দেশ ফিলিপাইন। বুধবার এই ফিলিপিনোরা দেখলো বাংলাদেশ ঝড়। লাল সবুজ জার্সীধারী বাংলার মেয়েদের তাণ্ডেবে স্রেফ খড়কুটোর মতো উড়ে গেছে আসিয়ান অঞ্চলের দেশটি। এই বাংলা টর্নেডোর নেতৃত্বে তহুরা খাতুন। ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের এই ফরোয়ার্ডের ৪ গোল ছোটন বাহিনীকে বিশাল জয়ে সাহায্য করেছে।

১০-০ গোলের জয়ে বাংলাদেশের দারুন শুরুও হলো এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবলের দ্বিতীয় রাউন্ডে। যা তাদের ফাইনাল রাউন্ডের পথে খানিকটা এগিয়ে নিলো। শুক্রবার মারিয়া মান্ডাদের দ্বিতীয় ম্যাচ স্বাগতিক মায়ানমারের বিপক্ষে।

মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াংগুন থেকে ৪০০ মাইল উত্তরে ৯ ঘন্টা বাস ভ্রমণের পথ মান্ডালা শহরের। এই মান্ডলার থিরি স্টেডিয়ামে বুধবার প্রথমার্ধেই বাংলাদেশ দল তাদের জয় নিশ্চিত করে। এই পঁয়তাল্লিশ মিনিটেই হাফ ডজন গোল। বিরতির পর দুই ফরোয়ার্ড তহুরা এবং ছোট শামসুন্নাহারকে তুলে নেন কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন। এরপরও থামেনি বাংলার বাঘিনীদের সাঁড়াশি আক্রমণ। যার ফলশ্রুতিতে বিরতির পর আরো চার বার ফিলিপাইনের জালে বল যাওয়া।

এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের বাছাই পর্বে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামে চার খেলায় ২৭ গোল করলেও ওপেন চান্স মিস করেছিল অগনিত। বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় ( স্থানীয় সময় তিনটা) শুরু হওয়া ম্যাচে লাল-সবুজ মেয়েরা তেমন সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেনি। বরং কিছু হাফ চান্স থেকেও গোল আদায়। ছোটন বাহিনী আরো কয়েকটি গোল পায়নি বিপক্ষ গোলরক্ষকের দৃঢ়তায়।

বয়স ভিত্তিক মহিলা ফুটবলে এতো দিনের অচেনা প্রতিপক্ষকে (সিনিয়র লেভেলে ২০১৪ সালে দেখা এবং ০-৪- এ বাংলাদেশের হার) নিয়ে যে আতঙ্ক ছিল তা এদিন ২ মিনিটইে উধাও হয়ে যায় বড় শামসুন্নাহার – তহুরা কম্বিনেশনে। এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বাম দিক থেকে শামসুন্নাহারের ক্রসে ফাঁকা পোস্টে বল জালে পাঠান তহুরা খাতুন। ১৬ মিনিটে তহুরা ব্যবধান দ্বিগুণ করেন অধিানায়ক মারিয়া মান্ডার থ্রু পাস থেকে বল পেয়ে। ১৮ মিনিটে মারিয়ার কর্নারে ছোট শামসুন্নাহারের হেড বিপক্ষ গোলরক্ষক মারগ্রিধির হাতে লেগে জালে জড়ায়। ২৪ মিনিটে তহুরার হ্যাটট্রিক পূর্ন ছোট শামসুন্নাহারের ক্রসে হেড করে।

৩৬ মিনিটে এই ফরোয়ার্ড তার চতুর্থ গোল পান শামসুন্নাহারের ডান দিক থেকে করা ক্রসে। দুই গোলের উৎস বড় শামসুন্নাহার ৪২ মিনিটে নিজে প্রথম বারের মতো ফিলিপিনো কিপাকে পরাস্ত করেন পেনাল্টি থেকে। বক্সে হ্যান্ডবল হলে স্পট কিকের নির্দেশ হিজাব পরা ইরানী রেফারির।

বিরতির পর দুই নতুন ফরোয়ার্ড রিতুপর্না এবং রোজিনা মাঠে নামেন। তখন জ্বলে উঠে তহুরার মাঠ ত্যাগের অভাব বুঝতে দেননি স্ট্রাইকার আনুচিং মগিনি। অবশ্য ৪৮ এবং ৮৬ মিনিটে তার করা দুটি গোলেই অবদান প্রতিপক্ষ কিপারের। দুই বারই তিনি ভুল শটে বল জমা দেন আনু চিং য়ের পায়ে। তা থেকে গোল রাঙ্গামাটির ফুটবলারটি। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ শুরু করেছিল আত্মঘাতী গোলে। ৪৭ মিনিটে নীলার শট ফিলিপিনো ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে দিক বদল করে গোল লাইন অতিক্রম করে। অধিনায়ক মারিয়া ৬৪ মিনিটে দলের স্কোর লাইন ৯-০তে উন্নীত করেন। তা বক্সের বাইরে থেকে তার ট্রেড মার্ক দূরপাল্লার শটে।

দুর্বল ফিলিপাইনের বিপক্ষে বাংলাদেশ সহজ জয় পেলেও ডিফেন্সে ফাটল ধরা পড়ে। এটা সংশোধন করতে না পারলে পরের দুই ম্যাচে মিয়ানমার এবং ৩ মার্চ চীনের বিপক্ষে সমস্যা হতে পারে। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

ছোট ছোট বালুকণা – ৬


রেহনুমা বিনত আনিস


সামিয়া সিদ্ধান্ত নেয় এবার সাহস করে মাসরুরের সাথে কথা বলতেই হবে, আর এভাবে চলতে পারেনা। তবে বান্ধবী পরামর্শ দিয়েছে সুস্থিরভাবে কথা বলতে হবে, কারণ ঝগড়ার মুডে চলে গেলে দু’জনই কথা বলতে থাকে, কিন্তু কেউ কারো কথা শোনেনা। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পাঁচ মিনিট ভেবে নেয় সামিয়া কিভাবে কথা শুরু করা যায়, তারপর দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে। মাসরুর মাথা তুলেও তাকায়না। ঢোঁক গিলে সামিয়া। তারপর গলাটাকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে বলে, ‘আপনার পড়া শেষ হলে একবার ভেতরে আসবেন প্লিজ। কথা আছে’।

মাসরুর অবাক হয়ে তাকায়, ‘কি কথা? এখনই বলতে পারো’।

সামিয়া মাথা দুলিয়ে বলে, ‘নাহ। আপনি শেষ করেই আসুন’।

মাসরুরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় সামিয়া। পাঁচ মিনিট পর দেখে মাসরুর এসে উপস্থিত। অভাবনীয় এই ঘটনায় বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে বেচারাকে।

দরজার দুই ইঞ্চি ভেতরে দাঁড়িয়ে মাসরুর জিজ্ঞেস করে, ‘কোন সমস্যা হয়েছে সামিয়া?’

সামিয়া মুচকি হেসে বলে, ‘আহা, এভাবে কি কথা বলা যায়? আসুন, এখানে এসে বসুন। নইলে যে চিৎকার করতে হবে!’

মাসরুর এসে বিছানার পায়ের কাছে বসে। সামিয়ার মাথায় দুষ্টুমী চাপে, বলে, ‘আরাম করে বসুন প্লিজ। ভয় পাবেন না, আমি কোন হিংস্র পশু নই যে সুযোগ পেয়েই শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ব’।

এবার মাসরুরের গম্ভীর মুখেও হাসি ফোটে।

সামিয়া এবার সিরিয়াস হয়ে বলে, ‘আমি বুঝতে পারছি আমি কিছু একটা অন্যায় করেছি, কোনভাবে আপনার মনে কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু তাই বলে এভাবে দিনের পর দিন আপনি আমাকে চার্জ গঠন, তদন্ত বা সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া শাস্তি দিয়ে যাবেন এটাও তো কোন কাজের কথা না। আপনি যদি আমাকে খোলাখুলিভাবে বলতেন আমার কোন জিনিসটি আপনাকে কষ্ট দিয়েছে তাহলে আমি অন্তত নিজেকে সংশোধনের সুযোগ পেতাম। এটুকু অধিকার তো আমার থাকা উচিত, না’কি?’

মাসরুর অবাক হয়, ‘শাস্তি?!’

‘আমাদের বিয়ে হয়েছে আজ তিনমাস। আপনি আমার সাথে কাজের বাইরে ক’টা কথা বলেছেন? আমরা একসাথে কবে কোথায় বেড়াতে গিয়েছি? মারযান আজ জিজ্ঞেস করছিলো আমরা আলাদা থাকি কেন। আমি কোন উত্তর দিতে পারিনি, কারণ আমি নিজেই জানিনা …’

মাসরুর মনের ভেতর কথাগুলো গুছিয়ে নেয়, তারপর ধীরে ধীরে বলে, ‘সামিয়া, বিশ্বাস কর, বিয়ের রাতেই প্রথম আমি বুঝতে পারি আমার কারণে তোমার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। কিন্তু তখন আমার আর কিছুই করার ছিলোনা, তোমার অধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া। একদিন আগেও যদি তুমি আমাকে জানাতে তাহলে আমি নিজে তোমাকে আবদুল্লাহ ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু তখন আর আমার পরিবারকে এসব কথা জানানো সম্ভব ছিলোনা। তাই আমি চেষ্টা করেছি এখানে সবার সাথে যেন তুমি মিলেমিশে থাকতে পারো, এতে হয়ত তোমার এখানে মানিয়ে নেয়াটা সহজ হবে। ওদের আমি তোমার কষ্ট বোঝাতে পারতাম না, কিন্তু অন্তত চেষ্টা করেছি আমার নিজেকে তোমার ওপর বোঝা হিসেবে চাপিয়ে না দিতে …’।

রাগে মুখ লাল হয়ে যায় সামিয়ার, ‘আপনি কি ভেবেছেন, ভেবেছেন কি আপনি? আবদুল্লাহ ভাইয়ের সাথে আমার প্রেম ছিলো? আমি আপনাকে আমার মনের কথা খুলে বললাম যেন আমাদের বন্ধুত্ব দৃঢ় হয়, আপনাকে আমার গোপন ইচ্ছার কথা জানালাম যা আমি কোনদিন আমার বাবামার সাথেও শেয়ার করিনি। আপনাকে উদাহরণ হিসেবে একজন চালচুলোহীনের কথা বললাম, যে এমন কেউ হলে হয়ত আমি তাঁর অভাব পূরণ করতে পারতাম, আর ওমনি আপনি ধরে নিলেন …’

বেশি রেগে গেলে সামিয়ার মুখে কথা জোগায়না, মাসরুরের মনোযোগী ভঙ্গিতে কথা শোনা ওকে আরো ক্ষেপিয়ে তোলে, নিজের অক্ষমতায় চোখের কোণে জল জমতে থাকে ওর, কিন্তু সে দাঁতে দাঁত চেপে সামলাতে থাকে, এই মূহূর্তে কিছুতেই দুর্বলতা প্রকাশ করা চলবেনা।

মাসরুর সব শুনে বলে, ‘সরি, এখন বুঝতে পারলাম আমি তোমার কথার ভুল ব্যাখ্যা করেছিলাম। কিন্তু তুমিও তো আমার অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণে আমাকে ভুল বুঝেছ! তুমি আমাকে একজন মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন না করে টাকায় মেপেছ, যেন যার টাকা আছে তার আর কিছুর অভাব থাকতে পারেনা! সামিয়া, আবদুল্লাহ ভাইয়ের অনেক কিছুর অভাব ছিলো যা স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। কিন্তু তুমি কি একবারও ভাবোনি প্রাচুর্যের মাঝেও আমার কিছু অভাব থাকতে পারে, একজন ভালো বন্ধুর প্রয়োজন থাকতে পারে যার কাছে আমি আমার মনটাকে মেলে ধরতে পারি যেন সেখানে তুমি তোমার মমতার পরশ বুলিয়ে কষ্টগুলো মুছে দিতে পারো?’

সামিয়া মুখ নামিয়ে নীচুস্বরে বলে, ‘আমি আমার ভুলটা পরদিনই বুঝতে পেরেছি, আপনাকে না বুঝে কষ্ট দেয়ার জন্য প্রতিটা দিন অনুশোচনায় দগ্ধ হয়েছি, কিন্তু আপনার গড়ে তোলা প্রাচীর পেরিয়ে আপনার কাছে স্বীকার করতে পারিনি’।

(চলবে ইনশা আল্লাহ)

 

‘ব্যাকবেঞ্চার সবুজ -২’


মেহেদী আরিফ


ক্লাসে চুপচাপ অবস্থায় থাকে সবুজ। খুব দরকার ছাড়া কোন কথা বলে না সে। ক্লাসের সবাই ওকে খুব করে পঁচাতো। কিন্তু ও কাউকে কিছুই বলতো না, শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতো। আমি ওকে পাশে বসাতাম, কিন্তু স্যাররা এসে ওকে শেষ বেঞ্চে বসিয়ে দিতো। আমারও ভীষণ খারাপ লাগতো কিন্তু কিছুই করতে পারতাম না। ওকে শেষ বেঞ্চেই বসতে হবে এমন একটা রীতি হয়ে গিয়েছিলো। আমি ওকে হেল্প করার চেষ্টা করতাম খুব। ছেলেটার মেধা আছে বেশ, পড়লে ও পারবে। কিন্তু মিতুল ওকে দেখলেই মুখ বাঁকা করে একটা কটাক্ষের হাসি হাসতো, ওর গায়ের পরে গিয়ে পড়তো যেন আর বলতো, “আমার বাপ স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, আমার যা ইচ্ছা তাই করবো। পারলি তুই কিছু করিস! আর শোন! যদি আমার কিছু করিস তাইলে সান্ডে মান্ডে ক্লোস করি দোবো”। আমার একদম সহ্য হত না মিতুলের কাজকর্ম। কিন্তু সে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ছেলে বলে কথা!
সবুজ সবকিছুকে মুখ বুজে সহ্য করে পড়াশুনা করতে লাগলো। আমি আর সবুজ টিফিন পিরিয়ডে স্কুলের দোতলা ছাদের পর উঠে সিংগারা খেতে খেতে গল্প করতাম। সবুজ খুব সুন্দর সুন্দর গল্প করতো। ওর নানার বাড়ির গল্প শুনে আমি হতবাক হয়ে যেতাম। সবুজের মা খুব সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে, ভাগ্য দোষে এক টাউটের সংসার করছে জেনে আমার ও খুব খারাপ লাগলো। ওর বাবা একজন মাদকসেবী। জমিজমা বিক্রি করে মদের আড্ডায় পড়ে থাকে। অনেক জমি বেচে এখন তারা নিঃস্ব প্রায়। প্রায়ই তাই ওর মাকে মারধর করে, বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিতে থাকে। জামাইয়ের এই অাচরণের কারণে সবুজের মামাবাড়ি থেকে কেউ আসতো না তাদেরকে দেখতে। ওর মা খুব কষ্ট সহ্য করে স্বামীর সংসার করে। সবুজের মনের আকাশের কালো মেঘ সরে না যেন।
ডিসেম্বর মাস। স্কুলের বিজয় দিবসের জন্য ও প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রাকটিস সেশনে সবুজ মিতুলের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হল। পরে হেড স্যার এসে অন্যায়ভাবে সবুজকে মারলেন। এক বারের জন্যও উনি জানতেই চাইলেন না যে আসল ঘটনা কি! বেধড়ক পিটাতে লাগলেন আর বললেন,” ব্যাকবেঞ্চার কোথাকার! ভালো ছেলেদের গায়ে হাত দিতে পয়সা লাগে না, না?” মিতুলকে হেডস্যার কিছুই বললেন না দেখে স্যারের প্রতি আমার সম্মান ও ভক্তি কমে গেলো, খুব ব্যথিত হলাম। আমি সবুজকে একপাশে নিয়ে ওর কান্না থামানোর চেষ্টা করছি। সবুজের কান্না দেখে আমারও খুব কান্না পেলো। শিক্ষকদের থেকে এমন একপক্ষ সমর্থন করার সংস্কৃতি আমার ভিতরটাকে দারুণভাবে আন্দোলিত করলো। হেডস্যার এর আগেও সবুজকে কত অন্যায়ভাবে মেরেছেন। তাঁর দেখাদেখি অন্যান্য স্যাররাও সবুজকে কত বার ভৎসনা করেছেন। এগুলি আমার কাছে শিক্ষকসুলভ আচরণ বলে মনে হত না। শিক্ষকতা পেশাকে খুব ঘৃণা করতে লাগলাম।
বিনা বেঘে বজ্রপাতের মত এক ঘটনা ঘটে গেলো। সবুজের মা আত্মহত্যা করেছে। আমার ক্লাসমেট কবিরের মায়ের থেকে সংবাদ শুনে সবুজদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম আমি আর অপু। ভীতুর ডিম অপুর হাতে লাইট। রাত তখন সাড়ে নয়টা বাজে। আমি আর অপু বাঁশবাগানের ভিতর দিয়ে দৌঁড়াইতে দৌঁড়াইতে চলে আসলাম সবুজদের বাড়িতে। কান্না আর প্রিয়জনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস মুখরিত যেন। সবুজ নির্বাক! পৃথিবীর কোনো এক অজানা শক্তি তাকে স্থিমিত করে দিয়েছে। কোনো সুমধুর ডাক সবুজকে ওর নির্জীব অবস্থা থেকে সজীব করবে না। আমি আর অপু ওকে জড়িয়ে ধরলাম। সবুজ কান্নার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। আহ! কোন শক্তি বলে আমরা সবুজকে হাসিতে ভরিয়ে রাখবো। এ ব্যথার কি কোন ওষুধ আছে! সবুজের বাবাকে দেখে ভীষণ মেজাজ গরম হলো। সিগারেটে টান দিতে দিতে আত্মীয় স্বজনদের সাথে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলে চলেছেন যেন। যেন বাসায় বিয়ের রমরমা আয়োজন চলছে।

সবুজের মায়ের মৃত্যুর তেরো দিন পর ওর নানা এসে ওকে নিয়ে গেলো। ও যাওয়ার সময় একটা চমৎকার কম্পাস দিয়ে গেল আর বলে গেল, “আমাকে মনে পড়লে কম্পাসটির দিকে তাকাবি, দেখবি তুই আর আমি কত কাছাকাছি।” এতটুকু ছেলের এই বয়সে এমন অনুভূতি সেদিন যেমন বিস্মিত করেছিল আজ করে তার চেয়েও বেশি। ও নানাবাড়িতে যাওয়ার পর অনেক দিন ওর কোন খোঁজ খবর পেলাম না। হঠাৎ একদিন একটা চমৎকার চিঠি পেলাম। তার চিঠিটা এমন:
প্রিয় ভদ্র ছেলে,
অাশাকরি, ভালো আছিস। তোর পড়াশুনা কেমন চলছে রে? তুই না অসাধারণ শিক্ষক হবি! তবে শিক্ষক হলে হেড স্যারের মত হবি না। আচ্ছা! মিতুল কেমন আছে রে? হেড স্যার, মিতুল, ওদেরকে ভীষণ মিস করি রে। জানিস, এখানে আমার কেউ মারে না, কেউ বকে না, মিতুলের মত কেউ গায়ে ধাক্কা মারে না। ঐ দিন গুলো খুব মিস করি, জানিস? এখানে সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। কেউ তোর মত করে পাশে বসতে বলে না, কেউ শোনে না সকালে ভাত খেয়েছি কি না, কেউ ভুলেও জিজ্ঞাসা করে না আমার মা কেমন আছে! তোদের অনেক মিস করি। তোকে আমি কখনও ভুলতে পারবো না। তুই আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা বন্ধু।
ভালো থাকিস বন্ধু। অনেক ভালো। আচ্ছা আমার কম্পাসটা ঠিকঠাক মত আছে কি?
ইতি———
ব্যাকবেঞ্চার সবুজ।
চিঠিটি পড়ার পর সেদিন অনেকক্ষণ কেঁদেছিলাম আর ভেবেছিলাম সবুজ কত পরিণত হয়েছে আচার-আচরণ, চিন্তা-চেতনায়।
এক যুগ কেটে গেছে সবুজের সাথে আর কোনো যোগাযোগ নেই আমার। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। নতুন পরিবেশ, বন্ধুবান্ধব পেয়ে আমি সবুজকে ভুলেই গিয়েছিলাম। হঠাৎ একদিন বাক্সের মধ্যে রাখা কম্পাসটার দিকে নজর যেতেই বুক কেঁপে উঠল। সবুজকে ভীষণ মিস করতে লাগলাম। সবচেয়ে অবাক হলাম যে, জীবনের খেলাঘরে ইতোমধ্যে একটি যুগের বেশি পার হয়ে গেছে অথচ সবুজের কোনো খোঁজ খবর পেলাম না। পড়াশুনা শেষ করে আমি শিক্ষকতা করি রসুলপুর শহীদ স্মৃতি কলেজে। নিজেকে নিয়ে অনেক ব্যস্ত সময় কাটাই। আমাদের স্কুলের হেড স্যারের বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আমাকে দাওয়াতপত্র পাঠানো হয়েছে। দিনটি ছিল রবিবার। আমি গিয়েছিলাম আমাদের প্রাইমারী স্কুলে হেডস্যার কাদের মিয়াকে বিদায় জানাতে। বিদায় অনুষ্ঠানে জেলার গণ্যমান্য অনেক ব্যক্তি হাজির হয়েছেন। একজন এএসপি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। খুব স্মার্ট দেখাচ্ছিল তাকে। নেম প্লেটে লেখা আফতাব। আমি একটা বিষয় অবলোকন করলাম যে, হেড স্যার চেয়ারে না বসা পর্যন্ত এএসপি সাহেব চেয়ারে বসছেন না। হেডস্যার ওনাকে চেয়ারে বসতে বললেন কিন্তু উনি বসছেন না, বরং প্রধান অতিথির আসন ছেড়ে উনি বাইরে এসে দাঁড়িয়েছেন। হেড স্যার তখন বললেন,”আমি সামান্য প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক, আপনি বড় পুলিশ অফিসার! প্লিজ, বসেন না, স্যার, প্লিজ”। এএসপি আফতাব বললেন,” আপনি না বসলে যে আপনার স্টুডেন্ট বসতে পারে না, স্যার”। “স্টুডেন্ট! তুমি কে বাবা?” হেডস্যার বললেন। আফতাব বললেন,” আমাকে চিনতে পারেন নি, স্যার? আমি ব্যাকবেঞ্চার সবুজ”!

(সমাপ্ত) ——– মেহেদী আরিফ।

 

শিশুর চোখের সমস্যার ব্যাপারে সচেতনতা প্রয়োজন


স্বাস্থ্যকথা


আরাফকে (১১) নিয়ে তার বাবা-মা ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিত ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে এসেছেন চোখ পরীক্ষা করাতে। জন্মের পর এটাই আরাফের প্রথম চোখ পরীক্ষা। কারণ, ক’দিন থেকে তার মা দেখছিলেন আরাফ খানিকটা বাঁকাভাবে টেলিভিশন দেখে। এতেই তারা তাকে চোখের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
চিকিৎসক প্রাথমিকভাবে আরাফের চোখ পরীক্ষা করার পর তার পাওয়ার (চোখের শক্তি) পরীক্ষা করার জন্য একজন টেকনিশিয়ানকে নির্দেশ দেন। টেকনিশিয়ান বলেন, আরাফের চোখের পাওয়ার অনেক বেশি এবং তার একটি চোখ অলস (লেজি) হয়ে গেছে।
বিষয়টি কী জানার জন্য চিকিৎসকে বললে তিনি আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, আরাফের ডান দিকের চোখটি অলস হয়ে গেছে এবং বাম চোখ ভালো আছে। তার ডান চোখে চশমার পাওয়ার মাইনাস চার এবং বাম চোখের পাওয়ার মাইনাস দুই। চিকিৎসক জানান, আরাফ অনেক আগে থেকেই দূরের জিনিস কম দেখত। বিষয়টি সে হয়ত বুঝতে পারেনি। অনেক ক্ষেত্রে শিশুরা এ ধরনের সমস্যা বুঝতে পারে না।
এই লেজি আই বা অলস চোখ আসলে কী? জানতে চাইলে ঐ হাসপাতালের চক্ষু শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও কনসালটেন্ট ডা. সাজ্জাদ জানান, এটা সাধারণত কম বয়সী শিশুদের হয়ে থাকে। এটা মূলত চোখের সমস্যা নয়, এটা ব্রেনের সাথে চোখের নার্ভের যে সম্পর্ক সেখানে কিছু সমস্যা হয়ে থাকে। বইয়ের ভাষায় এটাকে অ্যামব্ল্যায়োপিয়া বলা হয়। জন্মের পর প্রত্যেক শিশুর দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক থাকে না। শিশু দেখতে দেখতে তা পরিপূর্ণতা লাভ করে। শিশুর রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলোর ওপর আলো পড়লে আলোর উপস্থিতিতে সেগুলো পরিপূর্ণতা লাভ করতে থাকে। সাধারণত ছয় থেকে নয় বছরের মধ্যে তা পরিপূর্ণতা লাভ করে অর্থাৎ চোখ স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি প্রাপ্ত হয়। কিন্ত কোনো কারণে চোখের রেটিনায় যদি আলো না পড়ে কিংবা জন্মগত ছানি হলে অথবা লেন্স ঘোলা হলে রেটিনায় আলো পড়ে না। আবার জন্মগত ভাবে চোখের পাতা নিচের দিকে পড়ে গেলে চোখের যে স্বচ্ছ অংশ কর্ণিয়া দিয়ে আলো প্রবেশ করে, তা যদি ঢেকে যায় তাহলে পর্যাপ্ত আলো চোখে প্রবেশ করতে পারে না। এভাবে কোনো একটি চোখ ব্যবহার না হলে বা জন্মগত ট্যারা হলে ঐ চোখের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এক সময় দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে গিয়ে সে অন্ধ হয়ে যায়। এটাই হলো অলস চোখ বা অ্যামব্ল্যায়োপিয়া।
শিশুদের চোখে নানা ধরণের সমস্যা হতে পারে। এর মধ্যে পাওয়ারের সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে অলস চোখের বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সময়মতো চিকিৎসা না করালে সারাজীবন তাকে ভুগতে হয়। এমনকি সে এক সময় অন্ধ হয়ে যেতে পারে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ‘পৃথিবীতে ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন শিশু অন্ধত্বে ভুগছে। এরমধ্যে চার ভাগের তিন ভাগ শিশু এশিয়া ও আফ্রিকার গরীব দেশগুলোতে বাস করে। বাংলাদেশে শিশু অন্ধত্বের বিষয়টি তেমনভাবে পরিচিত নয়। এখানে প্রায় ৪০ হাজার শিশু অন্ধত্বের শিকার।’
ডা. সাজ্জাদ আরো বলেন, ‘চোখ অলস হলে, নয় বছরের মধ্যে চিকিৎসা করানো হলে, সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তÍু অবহেলা বা অজ্ঞতার কারণে যদি এ সময় পার হয়ে যায় তাহলে চিকিৎসা করেও ভালো ফল পাওয়া সম্ভব নয়। যেসব কারণে চোখ অলস হয়ে যায় তার সঠিক চিকিৎসা করালে পুরোপুরি ভালো হয়। জন্মগতভাবে যদি শিশুর চোখে ছানি থাকে, তাহলে দ্রুত ছানির অপারেশন করাতে হবে। বয়স নয় বছর পেরিয়ে গেলে অপারেশন করেও তেমন ফল পাওয়া যায় না। এ রোগের চিকিৎসা হিসেবে শিশুকে চশমা ব্যবহার এবং প্যাচ থেরাপি দুটোই দিতে হয়।’
ডা. সাজ্জাদ বলেন, ‘প্যাচ থেরাপি কঠিন কিছু নয়। ভালো চোখটি কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে বা বন্ধ করে রাখা হয়। আর অলস চোখটি দিয়ে শিশুকে কাজ করাতে হয়। এসময় শিশু অলস চোখ দিয়ে হোমওয়ার্ক, ছবি আঁকা, গেম খেলা বা টেলিভিশন দেখার কাজ করবে। মনে রাখতে হবে এসময় যা কিছু করা হোক না কেন তা গভীর মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। এভাবে কাজ করালে চোখের রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলো আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ ধরণের চোখের ব্যায়াম বা অ্যাকুলেশন থেরাপি করে দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। এ রোগে অনেক সময় শিশুর চোখ ট্যারা হয়ে যায়। চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে ট্যারা চোখের চিকিৎসা করানো যায়।’
চিকিৎসকরা বলেছেন, শিশু যদি চোখে ঝাঁপসা দেখে, তার চোখের কালো মনি ধূসর বা সাদা হয়, দূরের বা কাছের জিনিস ভালো না দেখে, টেলিভিশন খুব কাছ থেকে দেখে কিংবা স্কুলে ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা বুঝতে না পারে তাহলে দেরি না চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
আরাফের মা বলেন, যে কোনো সমস্যা হলেই আরাফ তাকে জানাতো। কিন্তু চোখের সমস্যার বিষয়ে কখনো কিছু বলেনি এবং চোখে কম দেখার বিষয়ে নেতিবাচক কিছু তাদের চোখেও পড়েনি। হঠাৎ করেই এ ধরণের সমস্যা হওয়ায় তারা অনেক ঘাবড়ে গেলেও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলছেন এবং দিন দিন ছেলের চোখের অগ্রগতি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এখন বুঝতে পারছি চিকিৎসকরা কেন পাঁচ বছরের মধ্যে শিশুকে চোখের ডাক্তার দেখার কথা বলেন এবং কোনো সমস্যা না থাকলেও প্রত্যেক বছর একবার করে চোখের ডাক্তার দেখা কেন জরুরি। এতে শিশু একেবারে অন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে অনেক সময় পাওয়া যায়। সময়মতো চিকিৎসা এবং যত্ন নিলে শিশু অন্ধতে¦র হাত থেকে শিশু বাঁচতে পারে। এজন্য সচেতনতা প্রয়োজন। চিকিৎসকরা বলেছেন, পাঁচ বছর বয়সে বা স্কুলে দেয়ার আগে শিশুর চোখ পরীক্ষা করে নেয়া উচিৎ এবং নিয়ম করে প্রতি বছর একবার করে শিশুকে চোখের ডাক্তারের কাছে চোখ পরীক্ষা করে নিতে হবে।

সুত্র: বাসস।

 

‘ব্যাকবেঞ্চার সবুজ -১’


মেহেদী আরিফ


আমি আর সবুজ, আমরা একই ক্লাসে পড়তাম। সবুজ খুব দুরন্ত ছিল, তেমন পড়া পারতো না। ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্ট ছেলে হিসেবে ওর সুনাম ছিল। মেধাবী ছিল সে, কিন্তু পড়া করে ক্লাসে আসতো না। ওকে দেখলেই ক্লাসের সব ছেলেমেয়েরা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিতো, কেউ পাশে বসতে নিত না। এতে ওর অবশ্য মন খারাপ হতো না, সয়েই গিয়েছিল একরকম। আমি ক্লাসে ফাস্ট বয় ছিলাম। বোধকরি সব শিক্ষকরা আমাকে অনেক বেশি আদর করতেন। কিন্তু সবুজের সাথে সখ্যতা তারা মেনে নিতে পারেন নি। আমাকে সবসময় হেড স্যার কাদের মিয়া সংকেত করে দিতেন যাতে আমি সবুজের সাথে না মিশি। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
আমার সাথে সবুজের সখ্যতা কিভাবে হয়েছিল তার একটা ছোট্ট ইতিহাস আছে। আমি তখন ফাইভে পড়ি। সাধারণত স্কুল ছুটির পর স্কুলের পাশের কালভার্টের পাশে দাঁড়িয়ে অন্যদের মাছ ধরা দেখতাম। কত মাছ! পুটি, টেংরা, শোল, বাইন, চিংড়ি, কৈ। আমরা তন্ময় হয়ে দেখতাম। হঠাৎ একদিন আমার স্কুল ব্যাগ কালভার্টের উপর থেকে পড়ে গেল পানিতে। আমি চিৎকার করে উঠলাম। তখন পুরো বর্ষার মৌসুম চলছে। পানি দুকূল ছাপিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যেন। যে খালে ব্যাগ পড়েছে ওখানে পানির স্রোত খুব বেশি। আমার ব্যাগ ভেসে যাচ্ছে, অথচ কেউ পানিতে নামার কোন ইচ্ছায় পোষণ করছে না। আমি সম্পূর্ণ নিরুপায়। দুচোখ বেয়ে আমার অশ্রুর ফোয়ারা নেমেছে। হঠাৎ দেখি একজন পানিতে লাফ দিয়েছে। এ কারণে শোরগোল পড়ে গেলো। এত পানিতে যে কেউ ডুবে যাবে, তাই আগে কেউ সাহস করে নামেনি। কিয়ৎক্ষণ পরে উপলব্ধি করলাম এতো আর কেউ নয়, ক্লাসের দুরন্ত ছেলে সবুজ। প্রায় আধা কিলোমিটার দূর থেকে সাঁতরিয়ে আমার ব্যাগ উদ্ধার করেছিল সে। আমার ব্যাগের ভিতরের বইগুলি অনেক ভিজে গিয়েছিল বটে কিন্তু আমি সবকিছু পেয়েছিলাম। এরপর থেকে সবুজের সাথে আমার বন্ধুত্ব। মিতুল নামে আমার এক ক্লাসমেট ছিল যে একদিন আমার একটি কলম চুরি করেছিল। আমি খুব মন খারাপ করে বসে আছি। মিতুল যে কলম চুরি করেছিল তা আমি পরে জেনেছিলাম। সে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ছেলে হওয়াতে কোন বড় ধরনের অপরাধ করেও প্রায়ই মুক্তি পেত। আবার ক্লাসে তার রোল নম্বরও ছিল দুই। কিভাবে তার রোল দুই হতো বারেবারে তার গাণিতিক হিসাব করার মত ক্ষমতা আমার ঐ ক্ষুদ্র বয়সে হয় নি। যাইহোক, কলম চুরির ঘটনা সবুজ জেনেছিলো। মিতুলের কাছে সবুজ ঐ কলম দেখার পর ওকে বলেছিল, ” কিরে, লালমিয়া! কলম পাইলি কই?” মিতুলকে সবুজ লাল মিয়া বলে ডাকতো হরহামেশাই। এর জন্য স্যারদের কাছে কত বকাই না খেয়েছে সে। মিতুল ঢং করে বলল, “আমার কি কওয়া লাগবে নাই তোর?” এই কথা শোনামাত্র মিতুলের কানের নিচে সশব্দে দুইটি চড় বসিয়ে দিল সে। মিতুলের তীব্র কান্নার চিৎকারে হেডস্যার সহ অন্যান্য স্যারেরা দৌঁড়ায়ে আসলেন। কান্নার হেতু আবিষ্কারে তারা অপারেশন সার্চলাইট শুরু করলেন। অবশেষে যখন জানতে পারলেন যে, সবুজই নাটের গুরু তখন হেডস্যার জোড়া বেত দিয়ে তার পিঠে পাঁচটি কসিয়ে দিলেন। সবুজ কাঁতরাচ্ছে মার খেয়ে, অন্যদিকে মিতুল কান্না থামিয়ে পুতুলের মত বসে আছে।
স্কুল ছুটির পর সবাই বাড়িতে চলে গেল, গেল সবুজও। প্রায় এক সপ্তাহ তার কোন হদিস মিলল না। আমাদের বাড়ি আরেক পাড়ায় হওয়াতে তাদের বাড়িতে যাওয়া কষ্টকর হলো। ক্লাসের ফাস্ট বয় হওয়াতে আমাকে অনেক নিয়মনীতি মেনে চলতে হতো পরিবারে। সবার আশা ছিল আমি দেশের সবচেয়ে সেরা মানুষ হই। তাই সবুজদের মত বখাটে ছেলের সাথে আমি মিশি এটা পরিবার কখনও চাইতো না। তারপরও স্কুলের ক্লাস শেষ করে অপুকে নিয়ে চলে গেলাম সবুজদের বাড়িতে। একটা বিশাল বাঁশ বাগানের পর দিঘি, তারপর সবুজদের বাড়ি। বাঁশ বাগানের মধ্য দিয়ে খস খস আওয়াজ করে হেঁটে চলেছি আমি আর অপু। সবুজদের বাসায় কখনও যাই নি আমি। অনেক সময় লাগলো ওর বাসায় পৌঁছাতে। বিছানায় সবুজ কাতরাচ্ছে! দূর থেকে কাতরানোর আওয়াজ অনুসরণ করে তার বাসায় পৌঁছালাম। আহ্ কত ব্যথা পেয়েছে বেচারা ছেলেটা! আমরা যাওয়ার সাথে সাথে ওর মা পিড়ি ঠেলে দিলেন। আমি ভয়ে ভয়ে বসলাম কিন্তু অপু ভীতুর ডিমটা বসলোই না। ও কাঁপছিলো যেন। হঠাৎ করে সবুজ চিৎকার করে অপুকে বলল, “বস্! ভীতুর ডিম, তা না হলি তোরে ভেজি খেয়ি ফ্যালবো।” এ কথা শুনে অপু পালিয়ে চলে যাওয়ার উপক্রম। অমনি আমি আমার ছোট হাত দিয়ে ওর ব্যাগ টেনে ধরলাম, কোনো মতে ওকে বসালাম পিড়িতে। সবুজ বকবক করেই চলেছে, আর ওর মা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আমি আন্টিকে স্বান্তনা দিয়ে বিদায় নিলাম। ঐ দিন বাড়ি ফেরার পর আমার উপর দিয়ে টর্নেডো বয়ে গেল যেন। ঠিক কি ঘটেছিল তা না জানলেও চলবে। তবে এতটুকু বলে রাখি, আমার নাক দিয়ে অনেক রক্ত পড়েছিল।
প্রতিদিন স্কুলে গিয়ে আমি আগে খুঁজতাম সবুজকে। দিন পনেরো পর ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে একটা ছেলেকে হাঁটতে হাঁটতে স্কুল অভিমুখে আসতে দেখলাম। সে আর কেউ নয়, সবুজ! অন্য দিনের মত তার মাঝে চঞ্চলতার কোনো চিহ্ন পেলাম না আজ। হেতু না খুঁজে পেয়ে বেশ অবাক হলাম। ক্লাসে সবার পিছনে বসলো সে। বাংলা ক্লাসে হেডস্যার প্রবেশ করেই সবুজের খোঁজ নেওয়া শুরু করলেন। তিনি বললেন,”সেই জানোয়ারটা কোথায়?” সবুজ কোনো উত্তর না করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে গেল। হেডস্যার কটাক্ষ করে বললেন,”বসে পড়ো শুদ্ধোধন!” সবুজ একবারও স্যারের দিকে তাকালো না। ওর মনটা খুব খারাপ দেখে আমার মনটা খুব খারাপ হল। কারণ সবুজ যতই দুষ্টামি করুক অন্যদের সাথে, ও আমার খুব প্রিয় বন্ধু। ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে সবুজকে আস্তে আস্তে বললাম,”সবুজ! তোর মন খারাপ?” সবুজ যা শোনালো তাতে আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। সবুজের মাকে ওর বাবা খুব মারধোর করে যা সবুজের মোটেও সহ্য হয় না। নিজের বাবা তো, তাই বাবার গায়ে হাত তোলে না ও। কিন্তু ওর হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়, মাথায় খুন চাপে কিন্তু মায়ের দিকে তাকিয়ে ও কিছুই করতে পারে না। সবুজ আমাকে বলল,” দোস্ত, তুই আমার হেল্প করবি? আমাকে তে কেউ ভালবাসে না! তুই আমার পড়ালিখায় হেল্প করবি? আমি বড় হয়ি একজন পুলিশ হবো, আমার আব্বার ধরি নে থানায় বন্দি করি রাখবো”। এ কথা বলে ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি ওকে হেল্প করার আশ্বাস দিলাম।

চলবে……

 

“এই জীবন আর রাখব না”


ফাতিমা খান


Obsessive love বলে একটা কথা আছে যেখানে কারো প্রতি আকর্ষণ এবং possessiveness এমন এক পর্যায়ে এসে পৌছায় যে ” তাকে ছাড়া বাঁচব না” বা “এই জীবন আর রাখব না” জাতীয় একটা মানসিক সমস্যার তৈরী হয়। অবশ্য কোন ব্যাপারে মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া অসুস্থতা অথবা অপরাধ বলে আমি মনে করি। এই প্রবনতা নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলো অহরহ ভুল করে। হয়ত নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নয়ত সংগীর বড় কোন ক্ষতি করে ফেলে।
আবেগেরও একটা সীমারেখা আছে যার অন্যপাশটা প্রাণঘাতী। আপনার সাথে কেউ অন্যায় বা প্রতারণা করেছে, হোক কাছের বা দূরের – তার সমাধান অবশ্যই আছে! আত্নাহুতি দেয়া মানে নিজে হেরে যাওয়া আর অন্যায়কে জিতিয়ে দেওয়া। অনেকেই বলছে “আত্নহত্যার জন্য ছাতিতে সাহস লাগে, সবাই পারেনা”….তো এই সাহস তবে বেঁচে থাকার জন্য কাজে লাগালে কি হত? সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে তারচেয়েও বেশি সাহস লাগে!
দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল ধরার জন্য সবসময়ই একটা তৃতীয় পক্ষ কাজ করে যার অন্যায় অবদারগুলোকে আপনি প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলেই আপনি দিনকে দিন বৈধ সম্পর্কের কাছে তথা জীবনের কাছে হেরে যাচ্ছেন। এই তৃতীয় পক্ষ কোন এক্সট্রা ম্যারিটাল এ্যাফেয়ার /পার্টনারই হতে হবে এমনটা জরুরী না। আপনার নিজের কুচরিত্র, অন্য কোন চাপিয়ে দেয়া দায়িত্ব অথবা আপনার উপর মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব খাটানো তৃতীয় কোন ব্যাক্তিও হতে পারে যার বা যাদের অন্যায় আবদার আর চাহিদাগুলো টিউমারের মত আপনাকে আঁকড়ে ধরেছে, যার ফলে আপনার দাম্পত্য সম্পর্কটা দিনকে দিন প্রাণহীন হয়ে পড়ছে।
প্রত্যেকটি সম্পর্কের শুরু হয় দুইপাতার চারাগাছটার মত। নাজুক সম্পর্কটাকে নিত্যদিন প্র‍য়োজনীয় সব খোরাকের যোগান দিয়ে একটু একটু করে বাড়তে দিতে হয়। দূর্বল দিকগুলোতে মনোযোগ দিতে হয় অনেক বেশি। প্রয়োজনে একে অপরের সাথে কাউন্সিলিং করে নিলে সম্পর্কের ভিত মজবুত হয়। যে সম্পর্কের শুরু হয় অবিশ্বাস বা ভুল বুঝাবুঝি দিয়ে, বলাবাহুল্য সে সম্পর্ক অস্থায়ী।
এখন কথা হল, দাম্পত্য জীবনে হাজার রকম সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু এই সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করা বা সমাধানের চেষ্টা করাটা আমাদের সুশীল সমাজের জনগণ মানহানীকর বলে মনে করেন। “মানুষ কি বলবে”, ” ছিঃ আমার বংশে কেউ কোনদিন বউ/ স্বামী তালাক দেয়নি”, ” চুপ, মেয়ে মানুষের এত কথা বলতে নেই, মানিয়ে নিতে হয়”, ” তুই না পুরুষ মানুষ, বউ সামলে রাখতে পারিস না!”…..কথাগুলো শোনার ভয়ে অনেকেই নীরবতার আশ্রয় নেন। নীরবে প্রতি মুহুর্তে যন্ত্রণা সহ্য করতে গিয়ে মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেন। লোক সমাজে লাঞ্চিত হওয়ার চেয়ে পরকীয়া বা অন্য নেশায় ডুবে যান, নয়ত আত্নাহুতি দেন।
ডাঃ আকাশ আর ডাঃ মিতুর কেইসটা যদি আদ্যোপান্ত ভেবে দেখা হয় তাহলে বলব ( মিতু অবশ্যই অপরাধী) ডাঃ আকাশ কোন মহানায়ক ছিলনা ( মিডিয়া আকাশেকে সত্যি সত্যি আকাশে তুলেছ)। প্রেমকে অমর করতে গিয়ে নিজেকেই শেষতক বলি দিল… এরকম যারা ভাবছেন তারা অবশ্যই ভুল করছেন।
প্রথমত, একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ জেনেবুঝে কোন চরিত্রহীনাকে বিয়ে করার কথা না। ( আকাশের ভাষ্যমতে বিয়ের আগেই সে জেনেছিল তার হবুস্ত্রী ও প্রেমিকা একজন ব্যাভিচারিনী) ।
দ্বিতীয়ত, বিয়ে যখন করেই ফেলেছে, সম্পর্কটাকে বলিষ্ঠ করার জন্য তার নিজের সর্বাত্নক চেষ্টা করা উচিৎ ছিল। ( এমনি এমনি বলা হয়নাই ” দায়ুস জান্নাতে প্রবেশ করবেনা”)। যদি তারপরও স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হয়, তবে সসম্মানে বিদায় করে দেয়াটাই সমিচীন হত ( ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী) ।
ডাঃ আকাশের ভাই এর বয়ানানুযায়ী মিতুকে তার স্বামী প্রায়ই মারধর করত। যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে ( মিতুর স্বীকারোক্তি) সেখানেও এটা স্পষ্ট যে তাকে বেদম মারধর করে জবাব নেয়া হচ্ছে। (ভিডিওটির অংশবিশেষ ভাইরাল হয়েছে, পুরাটা নয়। এর কারণ আমার অজানা).
একজন মানুষ সমাজে সবার চোখে অত্যন্ত সহজ, সরল, মেধাবী ও দায়িত্বশীল বলে পরিচিত হলেও দরজার আড়ালে প্রায়ই তার ঠিক বিপরীত একটা চেহারা দেখতে পাওয়া যায় যা তার খুব নিকটজন ছাড়া আর কেউ জানতে পারেনা। শুধুমাত্র আবেগের বশীভুত হয়ে সমাজ আর মানসম্মানের ভয়ে মানসিকভাবে সুস্থ একজন মানুষ কোনভাবেই আত্নহত্যা করতে পারেনা। আত্নহত্যা মহাপাপ, অনেকগুলো বছর একটু একটু অপরাধের ধারাবাহিকতায় আজ এই মহা অপরাধটা করে বসেছে ডাঃ আকাশ । আল্লাহ তাকে মাফ করুন- এইটুকুই এখন বলতে পারি।
মিতুর শাস্তি হোক, তবে যেটুকু তার পাওনা সেটুকু। মিডিয়া তাকে আবর্জনার মত রাস্তায় ছুড়ে দিয়েছে, একদল নষ্ট মানুষ আবার ভার্চুয়াল জগতে তাকে অগণিত বার বলাতকার করছে শুধুমাত্র কমেন্ট দিয়ে।
অন্যের জীবন নিয়ে আমাদের চরম উৎসাহ বরাবরই। প্রত্যেকটা ঘটনা আর তার কন্সেকুয়েন্স আমাদের জীবনের জন্য এক বিশাল শিক্ষা ( যারা শিক্ষা নিতে চায় তাদের জন্য আরকি!)। দেখে, শুনে, ঠেকে তারপরও যদি আমরা কিছু উপলব্ধি করি/ শিক্ষা নেই, তাহলে হয়ত কিছুটা হলেও আমাদের সম্পর্কগুলোর ও মন মানসিকতার সংস্কার হবে।

 

দ্বৈত


কানিজ ফাতেমা


নারীরা বসে নেই; এগিয়ে যাচ্ছে নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গনে। মুসলিম নারীরা সচেতন হয়ে উঠছে তাদের হক বা অধিকার সম্পর্কে যা আল্লাহ স্বয়ং তাদের দিয়েছেন। তারা বুঝতে শিখছে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসুল (স: ) প্রবর্তিত এ হক কেড়ে নেবার অধিকার কারও নেই; নারীরাও আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত, ঠিক যেমনি পুরুষেরা।

আমি ‘শিখেছে’, ‘উঠেছে’- এ ক্রিয়াগুলো ব্যবহার না করে ‘শিখছে’, ‘উঠছে’ ক্রিয়াগুলো ব্যবহার করেছি। কারণ আমার মতে এখনো এ প্রক্রিয়ার মাঝামাঝি কোনো একস্থানে আমরা অবস্থান করছি। পূর্ণতা অর্জন এখনও বেশ দূর। মুসলিম নারী জাগরণের, নারীর অবস্থান পরিবর্তনের এ জোয়ার মুসলিম পুরুষদের গায়েও লেগেছে। নারীদের প্রতি তাদের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গীর বেশ একটা পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা এ অবস্থাকে বলতে পারি একটা Transition Period। এ অবস্থানে অধিকাংশ পুরুষের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায় একটি দ্বৈত চরিত্র। একদিকে নারী জাগরণের এ সময় তারা তাদের সঙ্গীনীকে কল্পনা করেন বিদুষী, শিক্ষিত, কর্মচঞ্চল, ও সচেতন এক নারী রূপে। অন্যদিকে তাদের মনের কোঠরে বাস করে তাদের শৈশবে দেখে আসা সেসব নারী চরিত্র যারা স্বামী সেবাকেই জীবনের একমাত্র কাজ ও লক্ষ্য মনে করতেন; স্বামী বা স্বামীপক্ষের সব অন্যায়, অত্যাচার, গঞ্জনা মুখবুজে সয়ে যেতেন, মুখে ‘রা’ টি করতেন না। তাদের মনে রয়ে গেছে সেই ‘বুক ফাটেতো মুখ ফোটেনা’ – গোছের নিরীহ বধূটি। অর্থাৎ তারা এর একাংশ আর ওর অপরাংশ মিলিয়ে অদ্ভুত এক কল্পিত নারী চরিত্র তৈরী করেন যা স্বভাবগতভাবেই পরস্পর বিপরীত। যে নারী সচেতন, যে নারী বহির্জগতের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস রাখেন, সে নারী নিজ স্বামীর অবহেলা-অসম্মানকে চিহ্নিত করতে অসমর্থ হবেন, বা বুঝতে পেরেও সমাজের রক্তচক্ষুর ভয়ে গুটিশুটি মেরে যাবেন এমনটা আশা করা যুক্তিহীন।

অনেককে দেখেছি বিয়ে করার সময় বুদ্ধিমতী, চৌকষ, যোগ্য মেয়ে খোঁজেন। কিন্তু বিয়ের পরে সেই বুদ্ধিমতী মেয়েটি যখন তাকে কোনো ব্যাপারে পরামর্শ দেয় তখন অন্যদের সম্মুখে সেই পরামর্শকে মেনে নেয়াকে কাপুরুষতা মনে করেন। ভাবেন –

স্ত্রীর কথা শুনলে অন্যরা কি মনে করবে ?

সবাই বলবে আমি স্ত্রীর কোথায় উঠি-বসি।

ওরা বলবে আমি একটা স্ত্রৈণ।

অথচ এটা তো খুব স্বাভাবিক যে, যেকোনো শিক্ষিত বুদ্ধিমতী মেয়েই আশা করবে যে, তার স্বামী তার সঙ্গে পরামর্শ করবে, তার মতামতের গুরুত্ব দেবে। একদিকে বুদ্ধিমতী স্ত্রী চাওয়া অন্যদিকে স্ত্রীর মতামতকে (তা যতটা মানসম্মতই হোকনা কেন) মেনে নিলে মান যাবে এমনটা ভাবা পরস্পর বিরোধী মানসকতারই লক্ষণ।

আমার ধারণা এই Transition Period এ অনেক পুরুষই আসলে কি চাইছেন এ ব্যাপারে নিজেরাই যথেষ্ট স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না বা একধরনের দোটানায় ভোগেন। একদিকে তারা আমাদের দেশের নারীদের অন্যদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাইছেন, তাদেরকে সচেতন নারী রূপে দেখতে চাইছেন, আবার একই সাথে বাস্তব জীবনে নিজের ঘরের নারীটিকে নিজ অধিকার সম্পর্কে নীরব, নিশ্চুপ, বোধহীন দেখতে ভালবাসছেন। এ দ্বৈততার ফল খুব একটা সুখকর হয়না।

নারী স্বভাবতই ধৈর্যশীল। তবে ধৈর্য্য- সহিষ্ণুতা আর উপর্যুপরী অন্যায়-অবহেলা- অসম্মান চুপচাপ মেনে নেয়া এক কথা নয়। নারীর যেমন স্বামীর সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরী, তেমনি স্ত্রীর সন্তুষ্টির প্রতিও স্বামীর লক্ষ্য রাখা জরুরী। স্ত্রীর অধিকার সচেতনতাকে ‘বিদ্রোহ’ হিসাবে দেখার সুযোগ নেই। ‘স্ত্রীর আনুগত্য নয়’ নয় , বরং পরস্পরের প্রতি সম্মান ও সহানুভূতিই আমাদের পারিবারিক জীবনকে সফল করে তুলতে পারে।

 

ছোট ছোট বালুকণা – ৫


রেহনুমা বিনত আনিস


একদিন কলেজে গিয়ে সামিয়া জানতে পারে আজ ক্লাস হবেনা। বাসায় চলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে। এমন সময় একটা মেয়ের সাথে দেখা। সামিয়া আর্টসে পড়ে আর ঐ মেয়েটা সায়েন্সে। কিছু ক্লাস ওদের একসাথে হলেও অধিকাংশই ওদের দেখা হয় বারান্দায় বা মাঠে, কথা হয় কালেভদ্রে। আজ হাতে সময় আছে। দু’জনে গল্প করতে করতে হঠাৎ সামিয়া নিজের বিবাহপূর্ব স্বপ্ন থেকে বর্তমান অচলাবস্থা পর্যন্ত সবকিছু উগড়ে দেয় অকপটে। সে নিজেই অবাক হয়, যে কথা সে তার বাবামা ভাইদের বলেনি, এমনকি একসাথে থেকেও বাড়ীর কেউ টের পায়নি, তা সে কেন ওকে বলতে গেল। সম্ভবত যাদের সাথে লেনাদেনা থাকে তাদের প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে মানুষ অনেক কথাই বলতে পারেনা, কিন্তু একজন অপরিচিতের সাথে সেটা শেয়ার করা যায় নির্দ্বিধায়। নাকি কারো কারো চেহারা দেখলেই মনে হয় তাকে বিশ্বাস করা যায়? সে কথাগুলো বলল নিজেকে নির্ভার করার জন্য, কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটা ব্যাপারটাকে খুব সুন্দর করে বিশ্লেষণ করে ওকে বুঝিয়ে দিলো সমস্যাটা ঠিক কোথায় এবং এর সমাধানের ব্যাপারেও একটা দিকনির্দেশনা দিলো। সব শুনে মেয়েটির কথাগুলো ওর কাছে যৌক্তিক মনে হোল। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? বাঁধার প্রাচীর পেরোনোর জন্য কথা বলার বিকল্প নেই। কিন্তু সেই কথাই তো সে বলতে পারছেনা আজ তিনমাস ধরে!

বান্ধবীর পরামর্শমত সামিয়া প্রতি রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে লাগল। সাতদিন পর, রাতে খাবার পর যথারীতি বাবাকে রুমে দিয়ে এসে মাসরুর অফিস রুমে পড়তে বসল। ওদিকে সামিয়া আর মারযান রান্নাঘরের খাবার গুছিয়ে গল্প করতে করতে যার যার রুমের দিকে এগোলো। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে মারযান হঠাৎ সামিয়াকে প্রশ্ন করল, ‘আচ্ছা ভাবী, একটা প্রশ্ন করি? তুমি কিছু মনে করবেনা তো?’

সামিয়া ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলে, ‘তোর সাথে কি আমার কিছু মনে করাকরির সম্পর্ক? বল, কি বলবি?’

মারযান কিঞ্চিত ইতস্তত করে বলে, ‘তোমাদের বিয়ে হয়েছে তিনমাস। কিন্তু আজ পর্যন্ত ভাইয়া আর তোমাকে একসাথে থাকতে দেখিনি। তোমাদের মাঝে কি কোন সমস্যা হচ্ছে?’

প্রমাদ গোণে সামিয়া, তারপর মুখে হাসি টেনে বলে, ‘না তো! তোর ভাইয়া রাত জেগে পড়ে, আবার ভেতরে যেতে গেলে আমার ঘুমের ডিস্টার্ব হবে বলে ওখানেই শুয়ে যায়। সমস্যা না করার স্বার্থেই এই ব্যাবস্থা’।

মারযান হাসল, কিন্তু বিশ্বাস করল বলল মনে হোল না।

(চলবে ইনশা আল্লাহ)

 

পানি খাওয়ার ছলে ঘরে ঢুকে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ধর্ষণ


নারী সংবাদ


পানি খাওয়ার অজুহাতে ঘরে ঢুকে এসএসসি পরীক্ষার্থী এক স্কুলছাত্রীকে (১৬) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের চাঙ্গুরিয়া গ্রামে।

এ ঘটনায় ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রী নিজেই বাদী হয়ে শনিবার রাতে অভিযুক্ত বেল্লাল সরদারের (২২) বিরুদ্ধে উজিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত মাহেন্দ্র চালক বেল্লাল সরদার উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের চাঙ্গুরিয়া গ্রামের বজলু সরদারের ছেলে এবং ধর্ষণের শিকার মেয়েটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ওই স্কুলছাত্রীকে গুরুত্বর আহতাবস্থায় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ওই স্কুল ছাত্রী চলমান এসএসসি পরীক্ষায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন। গত শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজ ঘরেই লেখাপড়া করছিল ওই ছাত্রী। এ সময় তার মা পাশের বাড়িতে গেলে মাহেন্দ্র চালক বেল্লাল সরদার পানি খাওয়ার ছলে ঘরে ঢুকে ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে। তখন মেয়েটির চিৎকারে তার মা ঘরে চলে আসলে বেল্লাল দ্রুত পালিয়ে যায়।

উজিরপুর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ওই স্কুলছাত্রী নিজেই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। সেই সাথে অভিযুক্ত বেল্লালকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

ছোট ছোট বালুকণা – ৪


রেহনুমা বিনত আনিস


সবাই খেতে বসে। সামিয়ার শ্বশুর টেবিলের মাথায়, একপাশে স্ত্রী একপাশে বড়ছেলে, স্ত্রীর পাশে ছোটছেলে, মারযান অভ্যাসবশত বড় ভাইয়ের পাশে বসতে গিয়ে জিভ কেটে উঠে দাঁড়ায়, সামিয়াকে হাত ধরে টেনে এনে বলে, ‘আরে ভাবী, এটা তো তোমার জায়গা!’ ওর আত্মত্যাগ সামিয়ার দৃষ্টি এড়ায়না। সে আপত্তি জানালে মারযান চোখ টিপে বলে, ‘টেবিলের মাথায় বসার শখ আমার বহুদিনের। তুমি আসতে দেরী করছিলে বলেই তো এতদিন বসতে পারিনি। এখনও যদি বসতে না দাও!’ আসিয়া রুটি নিয়ে সবার প্লেটে দিতে শুরু করেন, মাসরুর আলুভাজি বেড়ে দিতে থাকে। আনোয়ারা প্রথম রুটিটা দেন স্বামীকে, তারপর সামিয়াকে, তারপর ক্রমান্বয়ে তাঁর তিন সন্তানকে, সব শেষে নেন নিজের পাতে, ছেলেও তাঁকে অনুসরন করে। সামিয়া একটু লজ্জাই পায়, কিন্তু এই পরিবারে সবার পরার্থপরতা ওকে মুগ্ধ করে। খাবার বাড়া শেষ হতেই শুরু হয় গল্প। শ্বশুর সাহেব প্রথম শুরু করেন সামিয়ার বাসায় নাস্তায় কি খাওয়া হয়, ক’টায় নাস্তা খাওয়া হয় ইত্যাদি প্রশ্ন দিয়ে। উত্তর দিতে দিতে সামিয়া খেয়াল করে শাশুড়ি শ্বশুরের প্লেটের দিকে হাত বাড়াতে যাচ্ছিলেন, সম্ভবত রুটি ছিঁড়ে দেয়ার জন্য, কিন্তু মাসরুরের চোখের ইশারায় তিনি আবার হাত সরিয়ে নেন।

খাওয়া শেষে মাসরুর আর মাসউদ আগের পদ্ধতিতেই বাবাকে নিয়ে যায় সামনের আঙ্গিনায়, ফুলবাগানে হাঁটতে। মারযান বলে, ‘চল ভাবী, তোমার জিনিসগুলো স্যুটেকেস থেকে আলমারীতে তুলতে সাহায্য করি’। কিন্তু শাশুড়ি বলেন, ‘আমাকেও কিছু কথা বলার সুযোগ দিবি তো! মেয়েটা এসেই লেগে গেল রান্নাঘরে! তুই যা, নিজের রুম গুছিয়ে এসে তোর ভাবীকে নিয়ে যা’।

মারযান চলে গেলে তিনি সামিয়াকে বললেন, ‘শোন মা, তুমি আমার কাছে আমার তিনটা সন্তানের চেয়ে আলাদা নও। তুমি আসার আগেও ত্রিশ বছর আমার সংসারের সব কাজকর্ম চলেছে, আরো কিছুদিন এভাবে চললে কোন ক্ষতি নেই। এখন তোমার প্রয়োজন ঘরের সবার সাথে বন্ধুত্ব করার, সবার পছন্দ অপছন্দ বুঝে নেয়ার, আমাদের তোমার পছন্দ অপছন্দ বুঝার সুযোগ দেয়ার, বিশেষ করে মাসরুরের সাথে অ্যাডজাস্ট করার’।

নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে যায় তাঁর, ‘আট বছর আগে মাসরুরের বাবা ব্যাবসায় বিরাট লস করেন। কিন্তু নিজের ক্ষতির চাইতেও তাকে পীড়া দিতে থাকে শেয়ার হোল্ডারদের লস, কর্মচারীদের কি হবে এইসব ভাবনা। একদিন সারারাত চিন্তা করার পর সকালে উঠে দেখেন আর হাতপা নাড়তে পারছেন না। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ওরা বলল রাতে কোন একসময় স্ট্রোক হয়েছে, বেঁচে আছেন এটাই বেশি, হয়ত সুস্থ হবেন, কিন্তু আর কোনদিনই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে পারবেন না। ভাবলাম ব্যাবসা বাণিজ্য সব বিক্রি করে দেই, যা পাওয়া যাবে তা দিয়ে হয়ত মাসরুরের লেখাপড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত সংসার চালিয়ে নিতে পারব। কিন্তু ছেলে আমার বেঁকে বসল। বলল, ‘না মা, মানুষের টাকা কর্জ থাকা পর্যন্ত বাবা সুস্থ হবেন না। তাছাড়া এতগুলো পরিবার আমাদের ওপর নির্ভরশীল, তাদের কথা ভুলে গেলেই বা কিভাবে চলবে?’ ছেলে সব ছেড়েছুড়ে ব্যাবসার হাল ধরল, হাল ধরল পরিবারেরও। কুড়ি বছর বয়স ছিলো ওর, হুট করেই বড় হয়ে যেতে হোল ছেলেটাকে। সেই থেকে পরিশ্রম করে ব্যাবসাটাকে আবার টেনেটুনে ঠিক করল, সবার ধার দেনা শোধ করল, ব্যাবসা বর্ধিত করল, নিজে আরেকটা নতুন ব্যাবসা শুরু করল, যেসব কর্মচারীরা এই বিপদের দিনে আমাদের পাশে ছিলো তাদের সবার জন্য বাড়ীর পেছনে ঘর করল, এখন ওরা আমাদের পরিবারেরই অংশ। পরিবারের গায়েও আঁচড়টি লাগতে দেয়নি আমার মাসরুর। বছরের পর বছর আমরা ডাল ভাত ভর্তা খেয়ে সংসার চালিয়েছি ঋণের টাকা শোধ করার জন্য, ঈদেও একটা কাপড় কিনতে পারিনি; কিন্তু ওর বাবার চিকিৎসা কিংবা ভাইবোনদের লেখাপড়ার জন্য কখনও টাকার অভাব বুঝতে দেয়নি মাসরুর। আমার ছেলেটা সারাদিন পরিশ্রম করে এসে বাবার মাথায় হাত না বুলিয়ে, ভাইবোনদের সাথে খুনসুটি করে তাদের মুখে হাসি না ফুটিয়ে কোনদিন ঘুমাতে যেতনা। ক্লাসের প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্র ছিলো আমার ছেলে। ব্যাবসার ফাঁকে ফাঁকে, রাত জেগে পড়ে অনার্সটা তো শেষ করল, কিন্তু মাস্টার্সটা করব করব করেও এখনো করা হোলনা’।

আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন তিনি, ‘মাগো, কেউ যখন সবার মাথার ওপর ছাতা হয়ে তাদের নিরাপদ রাখতে যায়, তখন রোদ বৃষ্টি তুফানের ঝাপ্টা সব তার ওপর দিয়েই যায়। আমার ছেলেটা সবসময় হাসিখুশি, কিন্তু ওর মনের কষ্টগুলো সে আমাকেও বলেনা; সারাক্ষণ বকবক করে, কিন্তু এর মাঝে নিজের কথা একটিও বলেনা, সব অন্যের সুবিধা অসুবিধার কথা। তুমি যদি ওর মনের গোপন কুঠুরীতে সঞ্চিত কষ্টগুলো বের করে এনে ওখানে আলোয় ভরিয়ে দিতে পারো, সেটাই হবে আমার পরম পাওয়া। তোমার কাছে আমি এর বাইরে আর কিছুই চাইনা’।

তন্ময় হয়ে শুনতে শুনতে সামিয়া খেয়ালই করেনি কখন মারযান পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। ওদের সামিয়ার রুমে গিয়ে জিনিসপত্র গুছাতে বলে আনোয়ারা বেগম বাগানে যান যেখানে তাঁর স্বামী ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে একটা ফুটবলে লাথি মারতে পেরে আনন্দে কিশোরদের মত হুঙ্কার ছাড়ছেন!

নিজের রুমে যেতে যেতে সামিয়ার মনটা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আসে। সে গতরাতে মাসরুরকে বলেছে, ‘আপনার ঝোঁক টাকার প্রতি, আমার পড়ার প্রতি’। অথচ এখন সে বুঝতে পারছে টাকা সে নিজের জন্য উপার্জন করেনা, বা লেখাপড়ার প্রতি ওর আগ্রহ নেই এই কথাটাও সত্য নয়। না জেনে কত বড় একটা আঘাত দিয়ে ফেলেছে সে! একজন কষ্ট হরণকারীকে কষ্ট দিয়ে ভীষণ অনুশোচনায় ভুগছে সামিয়া। কিন্তু কথাটা সে বলবে কি করে?

তিনমাস কেটে যায়। সামিয়ার শ্বশুর শাশুড়ি দেবর ননদ এমনকি প্রতিবেশীরাও ওকে ভীষন ভালোবাসে, ওদের উদারতা ওকে আপ্লুত করে। কিন্তু যাকে কেন্দ্র করে এই ভালবাসা সে পাচ্ছে তার মতিগতি সে কিছুই বুঝতে পারেনা। মাসরুর ওর সুবিধা অসুবিধা খেয়াল রাখে, বাড়ীর সবার সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার ব্যাপারে উপদেশ উৎসাহ দেয়, বাপের বাড়ী বা কলেজে আসা যাওয়ার সব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে। কিন্তু এর বাইরে সে সামিয়ার সাথে কোন কথাই বলেনা, ঘুমায় অফিসরুমের সেই সিঙ্গেল খাটে। মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে, সারাদিন কাজ শেষে রাতের খাবার খেয়ে পড়তে বসে। ভোরবেলা নামাজের আগে কুর’আন পড়ে, নামাজ পড়ে ঘুমায়। সামিয়া সুযোগ পায়না কোন কথা বলার, আবার লজ্জাবোধের কারণে বলতে পারেনা ভেতরে এসে ঘুমোতে। এক অস্বস্তিকর পরিবেশে কাটতে থাকে তার দিনরাত। ঘরের কেউ কিছু টের না পেলেও মারযান বুঝতে পারে কিছু একটা অমিল হচ্ছে, কিন্তু সে ঠিক ধরতে পারেনা সেটা কি।

(চলবে- ইনশাআল্লাহ)

 

কই ভাত বানানোর আগ মূহুর্তে…


তাহনিয়া খান


আমার শাশুড়ি শিখেছেন আমার শশুড়ের কাছ থেকে… এটা আমার শশুড়ের দেশী রান্না… আমার শশুড় শাশুড়ি দুজনেই মাশা আল্লাহ্‌ ভালো রান্না করেন… আমি এখনো নিজে কই ভাত বানাইনি… শিখে নিয়েছি আর বানানোর সময় শাশুড়িকে হেল্প করি… আজকে আমার মেয়েকে বললাম শিখে নাও… আজকে সে তার দাদী’র হেল্পিং হ্যান্ড… এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম শিখে নেয় সবকিছু… সেটা খাবার হোক, আচারব্যবহার হোক বা যা কিছুই হোক না কেন… এভাবেই ঐতিহ্য বজায় থাকে।

উপকরণ

১.কই মাছ
২.কদু পাতা
৩.অর্ধেক রান্না করা চাল
৪.পেয়াজ
৫.জিরা বাটা,
৬.সরিষা তেল
৭.আদা বাটা,
৮.রসুন বাটা,
৯.হলুদ গুড়া,
১০.মরিচ গুড়া,
১১.লবণ,
১২.কাঁচামরিচ মিসিং।

প্রক্রিয়া
কই মাছগুলো সরিষার তেল এর সাথে আদা, রসুন, পেয়াজ আর জিরা বাটা ,হলুদ গুড়া, মরিচের গুড়া, লবণ ও কাঁচামরিচ দিয়ে কিছুক্ষন মেরিনেট করে রেখে কদু পাতায় মুড়িয়ে রাখতে হবে। ভাত বসাতে হবে। ভাতে লবণ দিতে হয়। ভাত কিছুটা হয়ে গেলে অর্ধেক ভাত নামিয়ে তার মাঝে মাছগুলো দিতে হবে । বাকি ভাত উপরে দিয়ে দিতে হবে। দমে রেখেই বাকি ভাত সিদ্ধ হবে, মাছও হয়ে যাবে। কদু পাতায় মাছ রাখার আগে একটু সরিষার তেল মাখিয়ে নিতে হবে।

 

বাচ্চাদের প্রশ্নের উত্তর


কানিজ ফাতিমা


বাচ্চাদের সরাসরি উত্তর না দিয়ে পাল্টা চিন্তা উদ্রেককারী প্রশ্ন করুন। বাচ্চাকে তার প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিলে বাচ্চা শুধু তথ্যই পায় কিন্তু তার জ্ঞানের গভীরতা বাড়ে না। তথ্য যাচাই বাছাই করে গ্রহনের দক্ষতা তৈরী হয় না। আপনার সন্তান হতে যাচ্ছে “তথ্য” যুগের বাসিন্দা। সে তথ্যের সাগরে বসবাস করবে- হাতের মোবাইলে তথ্য, মিডিয়ায় তথ্য , বাসের গায়ে তথ্য স্টিকার ফ্লাইয়ারে তথ্য। চারিদিকে তথ্যের ছড়াছড়ি – যা আমদের বেড়ে ওঠার সময় থেকে আলাদা। এসব তথ্যের সবটাই কি ঠিক?- না, তা হতে পারে না। সত্য, মিথ্যা , অর্ধসত্য, সত্যের রঙ্গে মিথ্যা – এমন কোটি কোটি তথ্য সাগরে ভাসবে আপনার সন্তান। কাজেই আপনার সন্তানকে সেই দক্ষতা নিয়ে বড় হতে হবে যাতে সে জানে কিভাবে তথ্যের যাচাই বাছাই করে গ্রহণ বর্জন করতে হয়।

বাচ্চার প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন করে বাচ্চার তথ্য যাচাইয়ের শক্তিকে বাড়িয়ে দিতে পারেন।

একটা উদাহরণ দিচ্ছি-

রিনি- আম্মু, কুকুররা ছেলে আর বিড়ালরা মেয়ে, তাই না আম্মু?

(বলেননা যে, না আম্মু। কুকুর – বিড়ালরা ছেলে মেয়ে দুই হতে পারে)

মা- কেনো তোমার এমন মনে হচ্ছে? ( এরূপ প্রশ্নে আপনার বাচ্চা নিজের চিন্তার পেছনের কারণ চিন্তা করতে শিখবে – একে বলে Meta cognition, যা উচ্চ পর্যায়ের জ্ঞান)

রিনি – কুকুরগুলো বড় আর অনেক জোরে ডাকে ছেলেদের মতো। আর বেড়ালগুলো ছোট আর নরম আর মিউ মিউ করে ডাকে – মেয়েদের মত।

এবার আপনি যা করতে পারেন তাহলো বাচ্চাকে ছোট কুকুরের ছবি বা ভিডিও দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারেন –

মা-এগুলো কি ?

রিনি- এগুলো কুকুর।

মা- এরা কি বড়?

রিনি- না ছোট।

মা- তারমানে কুকুররা সব সময়ে বড় হয়না।

এবার আপনার বাচ্চাকে বাচ্চাসহ মা-কুকুর দেখান বা অন্তত ছবি দেখান ।

মা- এটা কি?

রিনি- কুকুর

মা- ছেলে নাকি মেয়ে ?

রিনি- মা কুকুর

এভাবে সরাসরি উত্তর বা তথ্য না দিয়ে প্রশ্নের মাধ্যমে আপনার সন্তানকে কিভাবে জ্ঞান আহরণ করতে হয় তা শিখিয়ে দিন।

চাইনিজ একটা প্রবাদ আছে –

‘কাউকে একটা মাছ দেবার পরিবর্তে মাছ ধরা শিখিয়ে দিন। সে সারা জীবন মাছ খেতে পারবে।’

আপনার সন্তানের সামনে তথ্য দেবার পরিবর্তে শিখিয়ে দিন কিভাবে সঠিক তথ্য পেতে হয় – সারা জীবন এটা তার কাজে লাগবে ।

 

সমুদ্রজয়েও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলার সাহসী নারীরা


নারী সংবাদ


বাংলার নারীরা এখন শুধু করপোরেট কিংবা স্কুল-কলেজেই নয় আকাশে যেমন শান্তির পায়রা ওড়ান তেমনই উত্তাল সমুদ্রও পাড়ি দেন। তারা হাজার নর্টিক্যাল মাইল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বিশ্বের বড় বড় বন্দরে নোঙর করাচ্ছেন লাল-সবুজের পতাকাবাহী জাহাজগুলোকে।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) অত্যাধুনিক এসব জাহাজ শুধু পণ্য পরিবহন-ই নয়, বিশ্বজুড়ে বার্তা দিচ্ছে বাংলার নারীদের অগ্রযাত্রার গৌরবগাঁথা, নারীর ক্ষতায়নের কথা।
বিএসসি সূত্র জানায়, সংস্থাটির ‘এমভি বাংলার জয়যাত্রা’, ‘এমভি বাংলার অর্জন’, ‘এমটি বাংলার অগ্রযাত্রা’ নামের তিনটি বড় জাহাজে ১৭ জন নারী অফিসার ও ক্যাডেট রয়েছেন।
বহরে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় থাকা ‘এমটি বাংলার অগ্রদূত’ জাহাজের জন্য তৈরি রয়েছেন আরও ছয়জন নারী ক্যাডেট ও অফিসার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব জাহাজে কর্মরত কর্মকর্তাদের মাসিকভিত্তিতে এবং ক্যাডেটরা দৈনিকভিত্তিতে তাদের ভাতা পান। যা বেশ সম্মানজনকও বটে। এর বাইরে জাহাজে ওঠার জন্য চীন যাওয়ার ফ্লাইট ভাড়া, কর্মরত থাকাবস্থায় থাকা-খাওয়া, ইউনিফর্মসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র বিনামূল্যে পান তারা।
মেরিটাইম আইন অনুযায়ী, সমুদ্রে জাহাজে কর্মরতদের প্রত্যেকের ইন্স্যুরেন্স রয়েছে এবং রয়েছে প্রোটেকশন অ্যান্ড ইনডেমনিটি (পিঅ্যান্ডআই) কাভারেজও।
বিএসসির মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন জামাল হোসাইন তালুকদার বলেন, এছাড়া বন্দরে অবস্থানকালে ক্যাডেট ও কর্মকর্তারা ইন্টারনেটের আওতায় থাকলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ই-মেইল ও টেলিফোনে পরিবারের সদস্যদের কুশল জানতে পারে। যে কোন জরুরি মুহূর্তে স্যাটেলাইট ফোনে জাহাজ থেকে স্বজনদের সঙ্গে কথাও বলতে পারেন তারা ।
তিনি বলেন, ‘বাংলার মেয়েরা এখনও সব ক্ষেত্রেই ভালে করছে। আকাশ, সমুদ্রসহ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও তারা বেশ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এটা নারীর ক্ষমতায়নেরই একটি প্রতীক।’ বিএসসি’র তিনটি নতুন জাহাজ বিশ্বের বিভিন্ন বন্দর ও সমুদ্রে অবস্থান করছে। এসব জাহাজে কর্মরত আমাদের নারী অফিসার ও ক্যাডেটরা সব চ্যালেঞ্জ জয় করে সততা, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে ক্যাপ্টেন জামাল বলেন, বর্তমান সরকারের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমুদ্রগামী জাহাজে সাহসী নারীরা কাজ করে তাদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পেয়েছেন। এটি একটি বড় মাইলফলক।
‘বাংলার জয়যাত্রা’ জাহাজে রয়েছেন ক্যাডেট আতিয়া সৈয়দা, আনজুমান আরা, সৈয়দা সাবরিনা বাবুর, সোহানা পারভিন ও শতাব্দী হোসাইন। আর ‘বাংলার অর্জন’ জাহাজে চীনের সাংহাই থেকে উঠেছেন থার্ড অফিসার বিউটি আক্তার, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার লাভলী দাস, ক্যাডেট মৌটুসি তালুকদার বৃষ্টি, ইসরাত জাহান সেতু, তাসনিমুল বাহার ও সাজিয়া আফরিন। বেশ দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন তারা।
‘বাংলার অগ্রযাত্রা’য় নিয়োগ পেয়ে বর্তমানে চীনে অবস্থান করছেন ফোর্থ অফিসার ফারজানা আক্তার ফাইজা, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার খাদিজা আক্তার, ক্যাডেট কানিজ ফাতেমা, মেমি আফরোজা, নাফিসা আহমেদ নোভা ও ফারজানা ইয়াসমিন।
চলতি মাসেই বিএসসির বহরে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে ‘এমটি বাংলার অগ্রদূতে’র। এ জাহাজে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে ক্যাডেট সানজিদা করিম মুমু, বিলকিস আক্তার, আয়েশা সিদ্দিকা এলিনুর, সাবিনা ইয়াসমিন, সুস্মিতা দাস ও রিক্তা আজিজকে। প্রশিক্ষণে বেশ দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন তারা।
তাদের একজন মেরিন একাডেমির ৪৯তম ব্যাচের ক্যাডেট সানজিদা করিম মুমু। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের অর্থাৎ ৪৯ তম ব্যাচের ক্যাডেট আমরা। নারী ক্যাডেটদের এটি দ্বিতীয় ব্যাচ।
‘বিএসসি’র জাহাজে আমাদের এক বছরের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের সুযোগ দিলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করার সুযোগ মেলেনি। পরিবারের সদস্য, অভিভাবক ও স্বজনরা প্রেরণা দিয়েছেন, আমাদের শিক্ষকরা সাহস দিয়েছেন। আজ আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।’
আরেক ক্যাডেট রিক্তা আজিজ বলেন, ক্যাডেট হিসেবে বেশ পরিশ্রম করে এই পর্যায়ে এসেছি। এখন যোগ্যতা প্রমাণের অপেক্ষায় আছি। কাজটা চ্যালেঞ্জের হলেও আমরা সমুদ্রেও জয়ী হবো।
এ বিষয়ে মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, নারীরা বাইরে বেরিয়ে আসছেন এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। তবে সমতা এখনও নিশ্চিত হয়নি। একদিকে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ পুরস্কার পাচ্ছে, অন্যদিকে যত্রতত্র যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারী। কারণ, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না আমরা। ফলে ক্ষমতায়নের সুফল পাচ্ছেন না নারী।
তবে, স্থলে, আকাশে এবং সমুদ্রে নারীদের সাফল্যের প্রমাণ বেশ ভালো খবর বলেই মনে করেন এই নারী নেত্রী। সুত্র: ॥ তাসলিমা সুলতানা (বাসস)।

 

ট্রাম্পকে কড়া জবাব দিলেন ইলহান


নারী সংবাদ


কংগ্রেস থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো সংবলিত বক্তব্যের কড়া সমলোচনা করেছেন ডেমোক্র্যাটিক দলের মুসলিম সদস্য ইলহান ওমর।

এক টুইটে তিনি বলেন, হাই@রিয়েলডোনাল্ডট্রাম্প! আপনি আপনার জীবনভর শুধু ঘৃণা ছড়িয়ে গেছেন, ইহুদি, মুসলিম, আদিবাসী, অভিবাসী, কৃষ্ণাঙ্গসহ সবার বিরুদ্ধেই আপনি ঘৃণা ছড়িয়েছেন। আমি শিখেছি মানুষকে একত্র করতে।

এর আগে এক টুইটার যুদ্ধে ইলহান ওমরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। তবে বলা হয়, অ্যামেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (আইপ্যাক) মার্কিন রাজনীতিকদের ইসরাইলপন্থী হওয়ার জন্য অর্থ প্রদান করে।

ডেমোক্র্যাট এই সদস্য তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে বলেন, আমি কখনোই এ বক্তব্যের দ্বারা সকলকে ইঙ্গিত করা উদ্দেশ্য ছিল না। একই সাথে আমি আবারো মার্কিন রাজনীতিতে এইসব লবিস্টদের ভূমিকা পুনর্বিবেচনা করতে চাই। এসব লবিস্টের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আইপ্যাক, এনআরএ ইত্যাদি।

তবে ট্রাম্প তার এই ক্ষমাপ্রার্থনাকে খোঁড়া ও অসম্পূর্ণ আখ্যা দিয়ে বলেন, মার্কিন কংগ্রেসে ইহুদীবিদ্বেষীদের কোনো স্থান নেই। একই সময় তিনি ওমরের মন্তব্যকে ভয়াবহ বলেও মন্তব্য করেন।

ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি, হয় তিনি কংগ্রেস থেকে অথবা কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করবেন। কারণ তিনি যা বলেছেন, আসলে এগুলো তার অন্তরে গভীরভাবে বসে আছে।
সূত্র : সিয়াসত ডেইলি

 

‘আমি দুঃখিত’: থাই রাজকন্যা


নারী সংবাদ


থাই রাজকন্যা উবলরাতানা নির্বাচনে তার প্রার্থী ঘোষণার জন্যে ক্ষমা চেয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে ইনস্ট্রগ্রামে দেয়া এক পোস্টে ৬৭ বছর বয়সী রাজকন্যা রাজনৈতিক নাটকে তার ভূমিকার জন্যে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, ‘দেশের জন্যে কাজ করার আমার আন্তরিক ইচ্ছের কারণে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে এই সময় তা উচিত হয়নি। আমি দুঃখিত। ’
থাই রাজকন্যা উবলরাতানা গত শুক্রবার আগামী ২৪ মার্চ অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে থাই রাকসা চার্ট পার্টি থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে লড়াইয়ের ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই দেশটির রাজনৈতিক নাটক বেশ জমে ওঠে। তিনি যে থাই রাকসা চার্ট পার্টি থেকে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন সে পার্টি দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিত। থাকসিন বর্তমানে কারাদন্ড এড়াতে স্বেচ্ছানির্বাসনে রয়েছেন।
এদিকে উবলরাতানার প্রার্থীতা ঘোষণার পরপরই তার ভাই ও থাই রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন এক বিবৃতিতে বলেন, রাজপরিবারের উচ্চপর্যায়ের কোন সদস্যের নির্বাচনে অংশগ্রহণ সংবিধান পরিপন্থী।
এর পর থাই রাজকন্যাকে সোমবার প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে অযোগ্য ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। সুত্রঃ বাসস।

 

ছোট ছোট বালুকণা – ৩


রেহনুমা বিনত আনিস


সে জামা পাল্টে রেডি হবার একটু পরই দরজা ঠেলে মাসরুর ঘরে ঢুকল, ‘চল, আমি তোমাকে রান্নাঘর দেখিয়ে দিচ্ছি’।

রুম থেকে বেরিয়ে সামিয়া দেখল ওর ঘরটা আসলে একটা সুইটের মত। গতরাতে এত বড় বাড়ীর আগামাথা ঠাহর করতে পারেনি, সবকিছু দেখতে দেখতে কেমন ধাঁধাঁ লেগে গেছিল। ওর ঘর দু’টো রুম আর একটা বাথরুম মিলিয়ে। বাইরের অংশে মাসরুরের অফিস – রুমের মধ্যখানে একটা বড় টেবিল, টেবিলের একপাশে একটা আরামদায়ক রিভলভিং চেয়ার আরেকপাশে দু’টো গেস্ট চেয়ার, রিভলভিং চেয়ারের পেছনে ফ্লোর থেকে ছাদ পর্যন্ত উঁচু একটা বুকশেলফ নানান রকম বইপত্রে ঠাঁসা, টেবিলের ডানপাশে একটা সোফা আর বাঁপাশে একটা সিঙ্গেল খাট যেটা দেখে বোঝা যাচ্ছে রাতে মাসরুর কোথায় ছিল। সামিয়া ধরে নিল ওকে লজ্জা পেতে দেখে ওকে আশ্বস্ত করার জন্য মাসরুর এখানে ছিল। সুতরাং, সে আর কোন প্রশ্ন করলনা।

রান্নাঘরে গিয়ে তো সামিয়া পুরাই হতভম্ব! এই ভোর সকালেই পুরো রান্নাঘর লোকে গমগম করছে। রান্নাঘরের দু’টো দরজা- একটা খাবার ঘরের সাথে, আরেকটা বাড়ীর পেছনে উঠোনে। উঠোনে বটি নিয়ে বসে একজন মুরগী কাটছে, একজন মাছ, একজন নানান জাতের সব্জী। দরজায় বসে একজন মসলা বাটছে। রান্নাঘরের ভেতর একজন রুটি বেলছে, একজন চিরল চিরল করে আলু কাটছে, দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভাজি করা হবে। মধ্যখানে চুলোর পাশে বসে ওর শাশুড়ি এক চুলোয় রুটি ভাজছেন, আরেক চুলায় কড়াইয়ে তেল দেয়া, আলুভাজির জন্য প্রস্তুত- কিছুক্ষণ পর পর একে ওকে ডেকে কাজের তাড়া দিচ্ছেন। সামিয়াকে দেখে তিনি ভীষণ অবাক হলেন, তারপর ওর পেছনে থেকে মাসরুরকে সরে যেতে দেখে সব বুঝে নিলেন। তিনি একজনকে ডাক দিয়ে বললেন, ‘শায়লা, তোর ভাবীকে একটা মোড়া দে তো!’

সামিয়াকে বললেন, ‘শোন মা, আমার ছেলেটা বেশি বেশি করে। এটা তো তোমারই সংসার, তুমি আস্তেধীরে সব বুঝে নেবে। কিন্তু এখনই রান্নাঘরে নিয়ে আসার কি হোল? তুমি চুপচাপ বোস, আমরা কথা বলি’।

সামিয়া মোড়ায় বসে বলল, ‘মা, আম্মু কাজ করার সময় আমি সবসময় হাত লাগাতাম। সবাই কাজ করছে, এর মধ্যে আমি চুপ করে বসে থাকলে কি করে হবে? আমি অন্তত রুটিগুলো ভাজি!’

শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম ছেলের কান্ডে যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছেন সেটা তাঁর চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু তিনি সায়মাকে সস্নেহে বললেন, ‘মা, চল তোমাকে আগে আমাদের প্রতিবেশীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই’।

শায়লাকে রুটি দেখতে বলে তিনি সামিয়াকে নিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলেন। সামিয়া দেখল উঠোনে নানান জাতের সব্জীর বাগান আর বাড়ীর দু’পাশে ফলের বাগান, বাড়ীর সামনে ফুলের বাগান গতকাল এই বাড়ীতে ঢোকার সময়ই চোখে পড়েছে। উঠোনের ওপাশে কতগুলো ঘর দেখা গেল, একই বাউন্ডারীর ভেতর। গ্যারেজ আর দারোয়ানের ঘর বাড়ীর দু’পাশে। সুতরাং, ওগুলো কিসের ঘর সে বুঝতে পারলনা। আনোয়ারা বেগম সবাইকে প্রতিবেশী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেও সামিয়া বুঝতে পারল এরা সবাই এই বাসার কাজ করে- কিন্তু তাঁর ব্যাবহার থেকে সামিয়ার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল এদের সাথে কেমন আচরন করতে হবে, ওর খুব ভাল লাগল শাশুড়ি মায়ের এই অভ্যাসটি। সে সবার সাথে অল্পসল্প কথা বলে শাশুড়ির সাথে চুলোর কাছে ফিরে এলো। কিছু না বলেই শায়লার কাছ থেকে খুন্তি নিয়ে রুটি ভাজতে শুরু করল। আনোয়ারা বেগম আর কিছু বললেন না। তিনি ভাজির জন্য তেলে পেঁয়াজ দিলেন।

হঠাৎ কে যেন সামিয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চটাস চটাস দুই গালে চুমো দিল। সামিয়া অবাক হয়ে পেছন ফিরে মারযানকে দেখে হেসে ফেলল। ননদিনি যে কখন চুপি চুপি ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে সামিয়া টেরই পায়নি! সামিয়া আলতো করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। এই সুযোগে আনোয়ারা বেগম ওর হাত থেকে খুন্তিটা নিয়ে মারযানকে বললেন, ‘তোরা দু’জন গিয়ে টেবিলে বস। মাসউদকে বল মাসরুরকে ডেকে আনতে, ওকে বল এত কাজ করতে হবেনা। একটা দিন হয়নি বিয়ে হয়েছে আর বৌটাকে রান্নাঘরে ছেড়ে দিয়ে পালিয়েছে!’

মারযান ভাবীকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল, ‘মা ভালই ক্ষেপেছে। ভাইয়া মনে হয় কাজ ছাড়া কিছু বোঝেনা। কোথায় বাগানে বসে তোমাকে নিয়ে গল্প করবে, আমরা চা নিয়ে যাবার ভান করে আড়ি পেতে শোনার চেষ্টা করব! বেরসিক একটা …’

ডাইনিং রুমে এক কোণে চুপচাপ ছায়ামূর্তির মত বসে থাকা ছেলেটাকে খেয়ালই করতনা সামিয়া সে সালাম না দিলে। মারযান বলল, ‘এই নাও ভাবী, তোমার দেবর মহাশয়, মাসউদ উল হাসান। যা, এবার গিয়ে ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আয়’।

মাসউদকে বিয়েতে দেখেছে বলে মনে করতে পারেনা সামিয়া। বয়স চৌদ্দ হবে হয়ত, নতুন গোঁফ গজাচ্ছে, তাই হয়ত লজ্জায় কারো সামনে আসেনা, ওকে দেখেই বোঝা যার ছেলেটা খুব লাজুক টাইপের, এই ছাড়া সে যেন মাসরুরের ছোটবেলার সংস্করণ। বোনের কথামত ভাইকে ডাকতে চলে গেল মাসউদ।

মারযান বলল, ‘ভাগ্য ভাল, তুমি ছিলে। নইলে সে আমার চুল টেনে দিত হুকুম দেয়ার অপরাধে। আমি ওর তিনবছরের বড়, কিন্তু একটুও মানতে চায়না আমাকে’।

ননদের পাকা পাকা কথা শুনে হাসি পায় সামিয়ার। ভাবখানা যেন সে মাসরুরের বড় বোন!

মাসরুরের সাথে ওর বাবাও এলেন, ছেলের হাত ধরে, কিঞ্চিত ভর ছেলের গায়ে ছেড়ে দিয়ে। তাঁর চলাফেরা তেমন স্বচ্ছন্দ নয়। পেছন পেছন মাসউদ এলো বাবার উইলচেয়ার নিয়ে। মারযান সামিয়াকে কানে কানে বলল, ‘বাবার উইলচেয়ারে বসা ভাইয়ার একদম পছন্দ না। ভাইয়া থাকলে বাবা না হেঁটে পার পায়না। কিন্তু আবার বাবা উইলচেয়ার ছাড়া সাহস পায়না বলে ওটা কেউ পেছন পেছন নিয়ে আসে। বাবা ভাইয়ার উপর প্রচন্ড ক্ষেপলেও আসল কথা হোল বাবার স্ট্রোকের পর যেখানে আমরা ভেবেছিলাম বাবা বিছানা থেকেই কোনদিন উঠতে পারবেনা, সেখানে আজ বাবা হাঁটতে পারছেন!’

সামিয়ার আবছা আবছা মনে পড়ে, সম্ভবত বছর দশেক আগে সে ভাইদের সাথে লুডো খেলার সময় শুনতে পায় বাবা মায়ের কাছে আহাজারি করছেন, ‘আহারে! ছেলেটা এই বয়সেই সব হারিয়ে ফেলল! বিজনেসের লস তো তবু পোষানো যেত, কিন্তু এই বয়সে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে সে কিভাবে সংসার চালাবে? তিনটা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে আনোয়ারা এখন কি করবে?’

(চলবে ইনশা আল্লাহ)

 

সৌন্দর্য বদলায় না, বদলায় কেবল দেখার চোখ


জান্নাতুন নুর দিশা


আমার কৈশোরে আমাকে কেউ কখনো প্রপোজ করে নি। কেউ আমার জন্য গোলাপ হাতে পথের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে নি। স্কুল থেকে ফেরার পথে কখনোই কেউ আমার পিছু নেয় নি। এমনকি ক্লাসের যে ছেলেগুলো প্রত্যেক সহপাঠিনীকেই প্রপোজ করে বেড়াতো, দেখা গেছে তারাও কখনো আমার দিকে তাকায় নি।
সে সময় বিষয়গুলো আমাকে কখনো ভাবায় নি। এমনকি এটা ভেবেও আমার তখন আফসোস হতো না যে আমাকে কেন কেউই প্রপোজ করলো না।

কৈশোরে আসলে এসব নিয়ে ভাববার মত মানসিক পরিপক্বতাই আমার হয় নি। বাবা-মায়ের কঠোর নিয়ন্ত্রণে বড় হওয়া মেয়ে আমি। যেসব সন্তানদের বাবা-মায়েরা বেশি নিয়ন্ত্রণে রাখে তাদের মানসিক পরিপক্বতা আসে দেরীতে। এই নিয়ন্ত্রণটুকুর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
যৌবনে পদার্পণের পর আমার যখন মানসিক পরিপক্বতা এলো, কৈশোরে একটিও প্রেমের আহবান না পাবার বিষয়টি আমাকে বেশ ভাবিয়েছে।
ভেবে ভেবে আমি কারণটা বের করেছি।
খেয়াল করে দেখলাম, পারিবারিক এলবামে আমার শৈশবের অসংখ্য ছবি, সে সময় আমি ছিলাম তুমুল ফ্যাশনাবল শিশু। মূলত আমার মা অত্যন্ত ফ্যাশন সচেতন রমণী। তিনি নিজের বাচ্চাকে বেশ ফ্যাশনদুরস্ত চালচলনে রাখতেন।
আশ্চর্যজনকভাবে, এলবামে আমার কৈশোরের ছবি খুব কম। সে সময় আমি তেমন একটা ছবিই তুলতাম না। এই বয়সের সন্তানের পোশাক, সাজসজ্জা ইত্যাদির উপর মায়ের নিয়ন্ত্রণ কমতে থাকে। আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
আমি কৈশোরেই ছিলাম সবচেয়ে ক্ষ্যাত! ক্ষ্যাত মানে চরম ক্ষ্যাত! ঢোলা ঢোলা জামাকাপড় পরতাম, কাজল দিতে জানতাম না, লিপস্টিক দিলে ঠোঁটের দুপাশে লেপ্টে থাকতো। সমসাময়িক মেয়েরা যেখানে চুলে বেণী করে স্কুলে যেতো, আমি কোনো রকম কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুলটায় ব্যান্ড লাগিয়ে মারতাম দৌড়।
তার উপর আমি ছিলাম চরম হেলদি। আমার মত মাঝামাঝি উচ্চতার মেয়েরা পায়ে পেন্সিল হিল পরে। আমি পেন্সিল হিল কিনেছি জীবনে একবার। পরিধানের প্রথম দিনেই পড়ে গিয়ে এলাহি কান্ড বাঁধিয়েছিলাম নানাবাড়ীতে। ফ্ল্যাট স্যান্ডেলে মাঝামাঝি উচ্চতার আমাকে মোটামুটি খাটোই তো লাগতো! গায়ের রঙও ময়লা। মেকআপ টেকঅাপ আমি এখনো চিনি না। তখন রঙ কিছুটা খোলানোর জন্য একমাত্র জিনিশই যা আমি চিনতাম তা হল ট্যালকম পাউডার! সেই টেলকম পাউডার মুখে দিলে ধোঁয়াশার মত ঘামে ভেজা মুখে লেপ্টে লেপ্টে থাকতো।
এরকম মদনমার্কা সাজসজ্জার মেয়েকে কেউ প্রপোজ করার কথাও না।
প্রথম যৌবনে ছেলেরা ক্রাশ খায় লিকলিকে ধবধবা মেয়েদের উপর, এদের কোমরের বাঁকেবাঁকে যৌবন খেলে। কাজল টেনেটেনে এরা চোখকে করে হরিণীর মত। ঠোঁটে লালটাল মেখে সদ্য ফুটন্ত গোলাপের মত বানিয়ে ফেলে। বেণী দুলিয়ে হাঁটে।
এমন সুন্দরী মেয়েরা কৈশোরে অসংখ্য প্রপোজাল পায়। তাদের কেউ কেউ আঠারো-ঊনিশে পা রাখতে রাখতেই দশবারোজনকে ছ্যাঁকাও দিয়ে ফেলে! এতে অবশ্য দোষের কিছু নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক একটা মেয়ের স্কুলজীবনে যাকে ভালো লেগেছে, কলেজে উঠেই সে দেখে ছেলেটি তার চেয়ে সামাজিক অবস্থানে, পড়ালেখায়, যোগ্যতায় অনেক নিচে। মেয়েরা এসব বিষয়ে অনেক সচেতন। অসফল পুরুষদের মেয়েরা নিজেদের জীবনে রাখে না, আবেগের উপর মেয়েদের প্রচণ্ড নিয়ন্ত্রণ। তাছাড়া সুন্দরীদের হাতে অসংখ্য অপশন, পেছনে অসংখ্য আসিক!
যাই হোক, যৌবনে আসার পরই যে আমি ব্যাপক ফ্যাশনদুরস্ত হয়ে গেছি তা নয়। আমি এখনো হেলদি, এখনো আমার উচ্চতা মাঝামাঝিই, এখনো আমার গায়ের রঙ ময়লা। পরিবর্তন এসেছে সামান্য, যেমন পোশাকে। এখন আমি গুছিয়ে শাড়ি পরতে জানি।
আমি কাজল লাগাতে জানি, লিপস্টিক লাগালে ঠোঁটের দুপাশে লেপ্টে যায় না। কপালে মধ্যম আকারের উজ্জ্বল রঙের টিপ পরি।
যৌবনে আমি অসংখ্য প্রপোজ পেয়েছি! কিন্তু কেন! গুছিয়ে সাজি বলে?
এই প্রশ্ন মনে বারবার ঘুরপাক খেয়েছে। তাই কেউ প্রপোজ করলে জানতে চেয়েছি আমাকে কেন ভালো লাগে।
কেউ বলেছে আমার চোখ সুন্দর, কেউ বলেছে নাক বা ঠোঁট, চাহনি, চুল, হাসি, কন্ঠ, কথা!
এসব কি কৈশোরে ছিলো না আমার? আমি কি যৌবনে এসে আমার নাক, চোখ, ঠোঁট, কন্ঠ পরিবর্তন করেছি?
এ প্রশ্ন তাদের অবশ্য করি নি। করলে তারা বলতো, কৈশোরে কেন আপনার সাথে পরিচয় ঘটলো না? তখনই প্রেমে পড়তাম!
পুরুষ প্রচণ্ড রকম ফ্লাটারার জাতি! এরা মেয়ে পটাতে মিথ্যের পর মিথ্যে বলতে পারে।
কৈশোর আর যৌবনের এই দুই চলন আমাকে মিথ্যে ধরতে শিখিয়েছে।
আমি যা ছিলাম, তাই আছি, তাই থাকবো।
যারা বলে আমি সুন্দর তাই প্রেমে পড়েছে, সৌন্দর্য ফুরোলেই ওদের প্রেম ফুরোবে জানি।
যারা বলে আমার কন্ঠে কবিতা শুনে প্রেমে পড়েছে, কন্ঠা হারালেই তারা হারাবে জানি।
যারা বলে আমার লেখা পড়ে প্রেমে পড়েছে, লেখা ছেড়ে দিলেই ওরা ফিরবে না আর জানি।
পুরুষের প্রেমে কি তবে আমার বিশ্বাস নেই তবে?
অবশ্যই আছে।
পুরুষ পরিপক্ব হলে লিকলিকে ধবধবে সাদা আর খোঁজে না। তারা খোঁজে একজন ব্যক্তিত্ববান, দায়িত্ববান প্রেয়সী।
আসলে প্রেম আসে এক মুহূর্তের জন্য। সেই প্রেমটা সৌন্দর্য দেখে আসে না, আসে অকারণেই, অহেতুক।
তারপর মোহ আসে, মায়া বাড়ে। এক সময় সেসবও কেটে যায়। তারপর যা থাকে তার নাম দায়িত্ববোধ। এটাই বাস্তবতা। কোনো প্রেমই স্থায়ী নয়। স্থায়ী হয় নির্ভরতা।
আমি যদি কৈশোরে অসুন্দর ছিলাম, এখনো আমি তাই।আসলে তা নয়।
আমি তখনও সুন্দর ছিলাম, এখনো সুন্দর।
সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি মানুষকেই গড়েছেন সুন্দর গড়নে। আর নারীকে গড়েছেন আরো বেশি সৌন্দর্য দিয়ে।
প্রতিটি নারীই সুন্দর। শুধু দেখার চোখটাই বদলায় পুরুষের।

জান্নাতুন নুর দিশা
১৭/০৫/২০১৮

 

বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নারী ও বালিকাদের অধিক সুযোগ সৃষ্টি করতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতি বাংলাদেশের আহবান


নারী সংবাদ


বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নারী ও বালিকাদের অধিক সুযোগ সৃষ্টি করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।
আজ ঢাকায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন গত ১১ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘে ‘নারী ও বালিকাদের বিজ্ঞান বিষয়ক চতুর্থ আন্তর্জাতিক দিবস’ উদযাপন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে এই আহবান জানান।
জাতিসংঘ এবং এর সদস্যরাষ্ট্রসমূহ, এনজিও ও সিভিল সোসাইটি যৌথভাবে এই দিবসটি উদযাপন করে।
‘সামগ্রিক সবুজ প্রবৃদ্ধিতে নারী ও বালিকাদের জন্য বিনিয়োগের মূল্যায়ন’ বিষয়ক আলোচনায় মাসুদ বিন মোমেন আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ নারী ক্ষমতায়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বালিকাদের উচ্চ বিদ্যালয়ের ভর্তির ক্ষেত্রে সাফল্য এবং গত এক দশক ধরে নারী ও বালিকারা ধারাবাহিকভাবে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছে।
স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, “কলেজ পর্যায়ে মেয়েরা প্রায় সমপর্যায়ে উঠে এসেছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ করে চিকিৎসা ও জীবন সম্বন্ধীয় বিজ্ঞানে তারা ছেলেদের থেকেও ভাল করছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত রেজ্যুলেশন ৭০/২১২ অনুযায়ী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ প্রতিবছর ১১ ফেব্রুয়ারিকে নারী ও বালিকাদের বিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। দিবসটি ২০১৬ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে। সুত্র: বাসস।

 

ছোট ছোট বালুকণা – ২


রেহনুমা বিনত আনিস


সামিয়ার বিয়ে হয়ে গেল মাসরুরের সাথে। বিয়ের অনুষ্ঠানে মাসরুরকে দেখে মনে হচ্ছিল সে আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে, কিন্তু সামিয়াকে দেখে মনে হচ্ছিল ওর আকাশের চাঁদটা কোথাও খোয়া গিয়েছে। ব্যাপারটা সবাই নববধূর স্বাভাবিক লজ্জাবোধ মনে করলেও মাসরুরের দৃষ্টি এড়ায়নি। রাতে শ্বশুরবাড়ীতে নিজের রুমে বসে ননদ মারযানের সাথে কথা বলছিল সামিয়া। মারযানের নতুন ভাবীর সম্পর্কে জানার আগ্রহের শেষ নেই। কিন্তু সামিয়াকে প্রচন্ড ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দেখাচ্ছিল। ভাইয়াকে ঘরে প্রবেশ করতে দেখে কেটে পড়ল মারযান। সামিয়া সচকিত হয়ে সোজা হয়ে উঠে বসল। মাসরুর ঘরের দরজা বন্ধ করতে গিয়ে সামিয়ার বিচলিত চেহারা দেখে আধখোলা রেখে দিলো। ওর মায়া হোল সামিয়ার জন্য। বেচারী না জানে বাসর রাতের ব্যাপারে কি ভয়ানক সব কথা শুনে এসেছে! সে কাছে এসে বলল, ‘সামিয়া, আমি জানি তুমি খুব ক্লান্ত, আমি নিজেও টায়ার্ড। চল আমরা জামাকাপড় বদলে এশার নামাজটা পড়ে ঘুমিয়ে পড়ি। আর তুমি যদি চাও তাহলে আমরা কিছুক্ষণ গল্প করতে পারি। তুমি তো জানোই আমি গপ্পবাজ মানুষ!’

তারপর একটু ইতস্তত করে বেদনার্ত কন্ঠে বলল, ‘আর শোন, তোমার ভয় পাওয়া চেহারাটা দেখে আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি। সামিয়া, আমি কোন হিংস্র পশু নই যে সুযোগ পেয়েই শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ব। তুমি আমার বিবাহিতা স্ত্রী, আমরা সারাজীবন একসাথে থাকব। আমরা একে অপরকে জেনে বুঝে বন্ধু হবার সময় নিই। বাকীটা যখন সময় হবে তখন দেখা যাবে’।

কাপড় বদলাতে বাথরুমে চলে যায় মাসরুর। অবাক হয় সামিয়া। মাসরুরের খোলামেলা স্বভাব দেখে প্রকৃতপক্ষে মনের গোপন কুঠুরীতে এমনই একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল সামিয়ার, কিন্তু ওর প্রকৃত মানসিকতা বুঝতে পেরে মনে মনে লজ্জাই পায় সে।

দু’জনে নামাজ পড়ে জায়নামাজে বসেই গল্প শুরু করে। মাসরুর দেয়ালে হেলান দিয়ে আরাম করে বসে, সামিয়া দুই হাঁটুর ওপর মুখ গুঁজে বসে। মাসরুর জানায় ওর বাবামা ভাই বোন কি কি পছন্দ করে, কি তাদের অপছন্দ, যেন সামিয়া তাদের বুঝতে পারে। ওর কথাবার্তায় সামিয়ার বাবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়। নিজের কথা শেষ করে মাসরুর সামিয়াকে বলে, ‘এবার তোমার ব্যাপারে কিছু বল যা আমি জানিনা’।

সামিয়া লজ্জা পায়। ওর কথা তো কেউ কখনো জানতে চায়নি! কিন্তু মাসরুরের বন্ধুসুলভ আচরনে ওর মনের কথাগুলো ভুরভুর করে বেরিয়ে আসে যা সে নিজের বাবাকেও বলতে পারেনি, ‘জানেন, আমি না স্বপ্ন দেখতাম আমি কোন দরিদ্র হতভাগা লোককে বিয়ে করব, ধরেন আবদুল্লাহ ভাইয়ের মত। তারপর আমার যত্ন দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে তার জীবনের সমস্ত দুঃখ কষ্ট মুছে দেব। কিন্তু আমার তাক্কদীরে ছিলেন আপনি যার কোন অভাবই নেই! আপনার সাথে বিয়ের কথা আমি কোনদিন কল্পনাই করিনি!’

‘আমার কথা তোমার কল্পনায়ও আসেনি! কেন সামিয়া?’

সামিয়া খুব স্বাভাবিকভাবেই বলল, ‘নাহ! ভাবিইনি কোনদিন। আপনার জন্য বুঝি মেয়ের অভাব হত? তাছাড়া আপনারা অনেক বড়লোক, আমরা গরীব; আপনি দেখতে ভাল, আমি খুবই সাধারন; আপনার ঝোঁক টাকার প্রতি, আমার পড়ার প্রতি- সব মিলেই ভাবিনি আমাদের বিয়ে হবার কোন সম্ভাবনা থাকতে পারে’।

মাসরুর আর কথা বাড়ালোনা, বলল, ‘অনেক রাত হয়েছে, চল শুয়ে পড়ি’।

সামিয়া জায়নামাজ ভাঁজ করে টেবিলের ওপর রেখে পেছন ফিরে দেখে মাসরুর কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও মাসরুরের দেখা নেই। একসময় সে বসা অবস্থাতেই ঘুমের কোলে ঢলে পড়ল।

ঘুম ভাঙ্গলো ফজরের আজান শুনে। তখনও মাসরুরের হদিস নেই। সামিয়া বুঝে পায়না একটা লোক বিয়ের রাতে বৌকে কিছু না বলে কোথায় হাওয়া হয়ে যেতে পারে? নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ কুর’আন তিলাওয়াত করে সামিয়া। মনটা একটু শান্ত হয়ে আসে, যদিও সে জানেনা ওর বিবাহিত জীবনের প্রথম লগ্নেই এমন অদ্ভুত ঘটনা কেন ঘটছে। এমন সময় দরজা ঠেলে ঘরে ঢোকে মাসরুর, চোখেমুখে গভীর ঘুমের চিহ্ন। ওর দিকে তাকিয়ে আছে সামিয়া, কিন্তু সে মনে হোলনা খেয়াল করল। বাথরুমে ওজু করে এসে নামাজে দাঁড়াল সে। সামিয়া ভাবল নামাজ শেষ হলে কথা বলবে, মনকে শান্ত রাখার জন্য আবার কুর’আন পড়ায় মনোযোগ দিল সে। একটু পর চোখ তুলে দেখে আবার মাসরুর উধাও!

ঘুম আর নির্ঘুমের মাঝে এক অদ্ভুত অবস্থায় কাটল সামিয়ার পরবর্তী কয়েক ঘন্টা। সাতটার সময় মাসরুরের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো সামিয়ার, ‘সামিয়া, আমি জানি গত রাতে নিশ্চয়ই তোমার ভাল ঘুম হয়নি। নতুন জায়গায় গেলে প্রথম প্রথম ঘুমোতে একটু কষ্ট হয়। তবু অনুরোধ করব উঠে রান্নাঘরে যাও। মা নাস্তা বানাচ্ছেন। তোমার কিছু করতে হবেনা, মা তোমাকে কিছু করতে দেবেনও না। তুমি শুধু পাশে দাঁড়িয়ে ওনার সাথে কথাবার্তা বল। এটা তোমাদের মাঝে গুড আন্ডারস্ট্যান্ডিং তৈরী করার একটা ভাল সুযোগ। এখন সবাই ঘুম। তোমাদের কথাবার্তায় কেউ ডিস্টার্ব করবেনা’।

সামিয়া ভালভাবে চোখ খোলার আগেই আবার মাসরুর উধাও। লোকটা বার বার যায় কোথায়?

চলবে……

 

ইডেনের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজার শ্বাসরোধে খুন


নারী সংবাদ


রাজধানীর ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীনের মৃত্যু শ্বাসরোধে হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের এসব দিক তুলে ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে আমরা দেখতে পাই, মৃত নারীর ঠোঁটে, মুখে, আঙুলে ধস্তাধস্তির চিহ্ন পাওয়া গেছে। একটা আঙুল ভাঙা ছিল। তাকে মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড একজনের পক্ষে সম্ভব না। একাধিক ব্যক্তি এই হত্যার সঙ্গে জড়িত।’

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাহফুজা চৌধুরী পারভীনের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। সাংবাদিকদের ময়নাতদন্তের ব্যাপারে অবহিত করেন চিকিৎসক।

সায়েন্স ল্যাব এলাকায় সুকন্যা টাওয়ারের ১৬/সি নম্বর ফ্ল্যাটে থাকতেন মাহফুজা চৌধুরী পারভীন। তিনি সত্তরের দশকের ছাত্রলীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহসভাপতি ইসমত কাদির গামার স্ত্রী। গতকাল রাত ৮টায় বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনার পর থেকেই ওই বাসায় কর্মরত দুই গৃহকর্মী রেশমা (৩০) ও স্বপ্না (৩৬) নিখোঁজ রয়েছেন। পুলিশের ধারণা, তারাই মাহফুজা চৌধুরীকে হত্যা করে পালিয়েছে।

গতকাল রাতেই তাদের দুজনকে আসামি করে মামলা করেন ইসমত কাদির গামা। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত

 

শিশুদের প্রতি যত্নবান হই-১


ফাতেমা শাহরিন


পরিবার হল প্রথম এবং প্রধান স্থান বাচ্চাদের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য। তাই বাচ্চাদের প্রতি যত্নশীল হওয়া চেষ্টা অবিরত প্রক্রিয়া। একটি সন্তান পৃথিবীতে আসে সুন্দর জীবনবোধ নিয়ে, পরবর্তীতে সমাজে উপযুক্ত নৈতিকতার সহিত গড়ে তোলার দায়িত্ববহন করে পরিবারের সব সদস্য। পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু টিপস,

১. চিঠি লিখুন
খুব ছোট করে হলেও বাচ্চাকে চিঠি লিখতে পারেন, আবার নিজেও চিঠি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন! এতে সে লেখার প্রতি আগ্রহ পাবে।

২. কাঁদতে দিন
হাসির মতো কান্নাও একটি স্বাভাবিক আবেগ। বাচ্চা ব্যথা পেলে বা জেদ করলে তাকে কাঁদতে দিন। জোর করে তার কান্না থামাবেন না যদি না তা খুব বেশি দীর্ঘ না হয়। ধৈর্য ধরুণ সে থেমে যাবে।

৩. টিভি & মোবাইল
টিভিতে বিশেষ কোন প্রোগ্রাম এক সাথে বসে দেখন। হতে পারে খেলা। মোবাইলে শিক্ষণীয় ভিডিও কালেক্ট করে এক সাথে দেখতে পারেন।

৪. গানের সুরে শেখানো
বাচ্চারা গানের সুরে পড়তে ভালোবাসে। এবং সহজে আয়ত্ত করে নিতে পারে। গানের সুরে কবিতা এবং কঠিন সুত্র গুলো, নামগুলো শেখাতে পারেন।

৫. ঝাঁকিয়ে বা ছুঁড়ে মারা
বাচ্চারা বড়দের মতো খুব ভাল চিন্তাভাবনা করে ভুল করে না সুতরাং সেই দুষ্টমির জন্য বাচ্চাদের গায়ে কিছু ছুঁড়ে মারা বা ঝাঁকিয়ে আঘাত করা থেকে বিরত থাকুন।

৬. পড়ানো
বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয়। আপনি যখন পড়েন ওর বয়স উপযোগী একটি বই ওর সামনে দিতে পারেন। এতে পড়ার আগ্রহ বাড়বে।

৭. কার্টুন দেখা
শিক্ষামুলক কার্টুন ‘মিনা কার্টুন বা সিসিমপুর’ বাচ্চার সাথে বসে মাঝেমধ্যে দেখুন এবং বর্নণা করুন আপনি কি কি দেখছেন।

৮. শিশুর নাম
বাচ্চাকে তার আসল অর্থবহ নাম ধরে ডাকুন। তাকে আজেবাজে নিক নামে ডাকবে না।

রেফারেন্স:
প্যারেন্টিং বই এবং নেট

 

মানব পাচারকারী চক্রের ২ সদস্যকে আটক: তরুণী উদ্ধার


নারী সংবাদ


মানব পাচারকারী শেফালী বেগম ও মামুন – নয়া দিগন্ত

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে আটক করেছে র্যাব-১১। আটককৃতরা হলো শেফালী বেগম (৫০) ও মামুন (৩৫)। এ সময় পাচারের শিকার ২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে উদ্ধার করে র্যাব। রোববার বিকেলে র্যাব-১১ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

র‌্যাব জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জ ভূমিপল্লী আবাসিক এলাকায় শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় অভিযান চালিয়ে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যে শেফালী বেগমকে (৫০) আটক করা হয়। পরে শেফালী বেগমের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কদমতলী এলাকা হতে মামুন (৩৫) নামের মানব পাচারকারী চক্রের আরেক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

শেফালী বেগম বেশ কয়েক বছর যাবৎ নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ফ্যামিলি বাসার ছদ্মবেশে পতিতাবৃত্তির ব্যবসা করে আসছে।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে একটি সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের মাধ্যমে যুবতী মেয়েদের অধিক বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে এসে জিম্মি করে জোরপূর্বক অসামাজিক কাজে ব্যবহার করত।

গ্রেফতারকৃত মামুন তার একজন সহযোগী ও নিয়মিত খদ্দের। পরিচয়ের সূত্রে মামুন উদ্ধারকৃত ভিকটিমকে অধিক বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসে। প্রথমে ভিকটিমকে ঢাকার কমলাপুর এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে রাখে।

মামুন হোটেল কক্ষে জোরপূর্বক ভিকটিমের শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। পরে চাকরি দেয়ার নামে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভিকটিমকে শেফালী বেগমের হাতে তুলে দেয়। শেফালী বেগম ভিকটিমকে তার বাসায় জিম্মি ও মারধর করে নিয়মিত অসামাজিক কাজে বাধ্য করত।

গ্রেফতারকৃত শেফালী বেগম ও মামুনের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মানবপাচার আইনে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 

ছোট ছোট বালুকণা – ১


রেহনুমা বিনত আনিস


সামিয়া ছিল একেবারেই অন্য ধাঁচের একটা মেয়ে। শিক্ষক পিতার সন্তান বলেই হয়ত ওর মাঝে পার্থিব কামনা বাসনার উর্ধ্বে স্থান পেয়েছিল মানবিকতাবোধ এবং পরোপকারের অদম্য ইচ্ছা। যেখানে ওর সহপাঠিনীরা স্বপ্ন দেখত কোন বড়লোকের ছেলেকে বিয়ে করে লন্ডন প্যারিস অ্যামেরিকা ঘুরে ঘুরে জীবন কাটিয়ে দেয়ার, সামিয়ার জীবনের লক্ষ্য ছিল এমন কাউকে বিয়ে করার যার জীবনের সকল অভাব এবং শূন্যতাবোধ সে ভালোবাসা এবং যত্ন দিয়ে কানায় কানায় পরিপূর্ণ করে দেবে। মনের সঙ্গোপনে ওর একটা সুপ্ত ইচ্ছা ছিল ওর বাবার প্রিয় ছাত্র আবদুল্লাহ ভাইকে বিয়ে করার। ছেলেটি জীবনের কাছে কিছুই পায়নি। বাবামা ছিলোনা, মানুষ হয়েছে চাচা চাচীর কাছে। একটা বিয়ে করেছিল, বউটা মরে গেল এক বছরের মাথায়। মেধার অভাব ছিলোনা মোটেই, কিন্তু তদবীর করার কেউ ছিলোনা, সামান্য একটা চাকরী করে, চলে কোনক্রমে। ওর শার্টের ছেঁড়া পকেটটা দেখলে সামিয়ার ইচ্ছে করে সেলাই করে দিতে। ওর ঘর্মাক্ত, ক্লান্ত, বিষন্ন মুখটা দেখলে সামিয়ার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে, ইচ্ছে করে আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দিতে। আবার আবদুল্লাহ যখন নামাজে দাঁড়িয়ে সুমধুর স্বরে তিলাওয়াত করে তখন ওর মনটা এক স্নিগ্ধ প্রশান্তিতে ভরে যায়। আবদুল্লাহ কখনো ওর দিকে তাকায়না, চোখ পড়লে দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয়, কথা বলার তো প্রশ্নই ওঠেনা। এতে বরং আবদুল্লাহর প্রতি ওর শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। তবে সামিয়া নিজেও ওর বাবার ছাত্রদের সামনে তেমন আসেনা।

শুধু একজনের সাথে সে পেরে ওঠেনা – মাসরুর ভাই। এই ছাত্রটি যেমন আমুদে তেমন গপ্পবাজ। বাবা না থাকলে রান্নাঘরে এসে মায়ের সাথে গল্প জুড়ে দেয়। সামিয়া মাকে সাহায্য করতে গেলে ওর সাথেও গল্প শুরু করে দেয়, সে হুঁ হাঁ করে পালিয়ে বাঁচে। বিরাট বড়লোকের ছেলে মাসরুর। কিন্তু সেটাই তার একমাত্র পরিচয় নয়, অল্প বয়সেই সে নিজেও প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী। দেখতে সুন্দর, ভাল পোশাক আর সুগন্ধী তাকে আরো আকর্ষনীয় করে তোলে। সামিয়াদের বাসার সামনে মাসরুরের গাড়ী দেখলেই কিভাবে যেন পাড়ার চাচী, খালা, ফুপুরা দলে দলে তাদের মেয়ে, ভাগনী, ভাতিজিদের নিয়ে ওদের বাসায় বেড়াতে আসতে থাকে। বাসায় কাজ বাড়ে প্রচুর। তাই মাসরুরের আসাটা সামিয়ার পছন্দ নয়। বান্ধবীরা বলে, ‘আহা, উনি আমাদের বাসায় এলে আমরা ধন্য হয়ে যেতাম! তুই একটা নিরামিষ’।

একদিন বিকালে মাসরুর বেড়াতে এসেছে ওর মা বাবাকে নিয়ে। মেহমান দেখেই সামিয়া রান্নাঘরে ছুটলো মাকে সাহায্য করতে। গিয়ে দেখে মা ফ্রিজ থেকে সেমাই, মিষ্টি, দই ইত্যাদি বের করছেন। বুঝলো মাসরুর মাকে আগে জানিয়েছে। যাক, লোকটার কিছু হুঁশজ্ঞান আছে তাহলে! সামিয়াকে দেখে মা বললেন, ‘তুই একটা ভাল কিছু পর, মাসরুরের আম্মাকে ভিতরের ঘরে নিয়ে বসাই। আর শোন, সাইফ সাইদকে বল বাসায় মেহমান এসেছে, সামনের ঘরে গিয়ে বসতে’।

সামিয়া আঁতকে উঠে বলে, ‘ও মাগো! আমি ভাইয়াদের কিছু বলতে পারবনা। ওরা দু’জনই পড়ছে, কিছু বলতে গেলে হত্যাকান্ড হয়ে যাবে! বসার ঘরে আব্বুর গলা শুনেছি, ওদের যেতে হবেনা। ’

মা জোর দিয়ে বললেন, ‘বল, আমি বলেছি সামনের ঘরে যেতে, কিছু বলবেনা’।

বুকের ভেতর হৃৎপিন্ডটার ধড়াস ধড়াস শব্দ যেন কানে শুনতে পাচ্ছে সামিয়া। দুই ভাই মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। সে দরজায় দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে সাহস করে বলে ফেলল, ‘ভাইয়া, মা বলেছে ঘরে মেহমান এসেছে, সামনের ঘরে যেতে’। চোখ খুলে দেখে সাইদ আয়নার সামনে চুলে চিরুনী বুলাচ্ছে, সাইফ পাশে দিয়ে যেতে যেতে মাথায় হাত বুলিয়ে ওর চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো। যাক, তবু বকা তো দেয়নি!

নিজের ঘরে গিয়ে কাঠের আলমারিটা খুলল সামিয়া। এককালে এটা ওর দাদীর ছিল, এখন এটা ওর সম্পত্তির আধার। আলমারীর অর্ধেকটা জুড়ে বই। বাকীটায় ক’খানা জামাকাপড় আর কিছু ইমিটেশনের গহনা, নিজের আঁকা কিছু ছবি আর কিছু ডায়রী যার পাতায় পাতায় ওর লেখা কবিতা। গতকাল যে জামাটা নাবিহার বাসায় পরে গেছিল সে জামাটা ভাঁজ করা হয়ে ওঠেনি, ওটাই গায়ে চাপিয়ে নিলো সে। কাপড় বদলে রুমের দরজা খুলতেই দেখে মাসরুরের মাকে নিয়ে আম্মু হাজির। সালাম দিয়ে ওনাকে বিছানায় বসার ব্যাবস্থা করে দিয়ে চলে যাচ্ছিল সামিয়া, মা ডেকে বললেন, ‘তুই ওনার সাথে গল্প কর, আমি নাস্তা দিয়ে আসছি’।

সামিয়া বলল, ‘আমি ভাইয়াদের দিয়ে সামনের ঘরে নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি, তুমি ওনার সাথে বোস’।

কিন্তু মা ওকে বসিয়ে রেখে চলে গেলেন। সামিয়া মাসরুরের মায়ের সাথে কি কথা বলবে? উনি নানারকম কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, কি পড় কি কর জাতীয়,যা সচরাচর মুরুব্বীরা জিজ্ঞেস করে থাকেন, সে উত্তর দিয়ে গেল।

খাওয়া দাওয়া গল্পগুজব শেষ, মেহমান চলে গেল। কিছুক্ষণ পর বাবা এসে সামিয়াকে ডাকলেন, ‘মা, কি করিস?’

‘কিছু না আব্বু, পড়তে বসব’।

‘আচ্ছা। আগে চল তোর সাথে কিছু কথা বলি। তুই এখানে আমার সামনে বস’।

বাবাকে বিছানায় বসতে দেখে সামিয়া সামনে দাঁড়িয়ে রইল। বাবা ওকে হাত ধরে পাশে বসালেন।

‘শোন মা, মেয়ে বড় হলে বাবামায়ের চিন্তার অন্ত থাকেনা – একটা ভাল ছেলে পাব তো? শ্বশুরবাড়ীতে মেয়েটাকে আদর যত্ন করবে তো? মেয়েটা ভাল থাকবে তো? আল্লাহ আমাদের চিন্তা শুরু করার আগেই সেই চিন্তা থেকে মুক্তি দিলেন। মাসরুরের আগে ওর বাবা আমার ছাত্র ছিল। তখন আমি মাত্র শিক্ষকতা শুরু করেছি। সে ছিল আমার বছর চারেকের ছোট। ওর বিয়ে, মাসরুরের জন্ম সব আমার চোখের সামনে। ওর মা খুব ভাল মেয়ে রে। আজ ওরা যখন মাসরুরের জন্য তোকে চাইল আমি তোর সাথে কথা না বলেই হ্যাঁ করে দিলাম। তোর মা, সাইফ, সাইদ সবাই খুশি। কি রে মা? আমরা তোকে জিজ্ঞেস না করেই সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলাম বলে মনে খুব কষ্ট পেয়েছিস?’

সামিয়ার পাংশুটে মুখ দেখে বাবা ভাবলেন ওর সাথে আলাপ না করেই সিদ্ধান্ত দেয়ায় সে মর্মাহত হয়েছে। কিন্তু তিনি বুঝলেন না ঐ মূহূর্তে সামিয়ার সারা জীবনের লালিত স্বপ্ন ধূলিস্যাত হয়ে গেল, সে তো রাজরানী হতে চায়নি কখনো, চেয়েছিল ঘুঁটেকুড়ানী হতে! কিন্তু ওর ভুল হয়েছিল এই ভেবে যে পরিবারের সবাই ওর মত করে ভাববে। কিন্তু ওদেরই বা দোষ কোথায়? যার জন্য ঘুঁটেকুড়ানী হতে পারে তেমন কেউ তো আজও আসেনি! রাজা রানী যদি যেচে রাজপুত্রের জন্য ঘুঁটেকুড়ানীকে নিতে চায় তাহলে কোন স্বাভাবিক পরিবার কোন যুক্তিতে মানা করবে? সে জানে মাসরুরের বাবা মা ওর বাবার প্রতি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতাবশত ওকে বৌ করে নিতে চেয়েছেন, নইলে আর্থিক এবং সামাজিক দিক থেকে ওদের পার্থক্য আকাশ পাতাল। কিন্তু যে মাসরুরের জন্য দুনিয়ার সুন্দরী মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে সে কেন ওকে বিয়ে করতে রাজী হোল সেটা কিছুতেই ওর মাথায় এলোনা।

‘কি মা, কিছু বলবিনা?’

বাস্তবতায় ফিরে এলো সামিয়া। মাথা নাড়লো, ‘তোমরা যা ভাল মনে কর আব্বু’।

…..(চলবে)

 

করি পুষ্প রে বিকশিত-৪

আফরোজা হাসান


নাস্তা করা শেষ হলে বাচ্চাদেরকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে বের হলো অন্তরা আর নায়লা। বাচ্চাদেরকে খেলা করতে বলে দুজন এক পাশে গিয়ে বসলো। ছুটোছুটি করে খেলতে থাকা বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে নায়লা হেসে বলল, যখনই বাচ্চাদেরকে নিয়ে পার্কে আসি খুব ছোট হয়ে যেতে ইচ্ছে করে জানো? নিজের ছোটবেলাটাকে তখন খুব মনে পড়ে। কত ধরণের খেলা খেলেছি আমরা। আর আমাদের বাচ্চারা খেলা বলতে বোঝে নানা ধরণের ইলেক্ট্রনিক্স গেমস। যান্ত্রিকতা বাচ্চাদের মধ্যে আনন্দ, উচ্ছ্বাসকে কেমন যেন হ্রাস করে দিচ্ছে দিনকে দিন, তাই না?

অন্তরা বলল, বাচ্চাদের মধ্যে যাতে আনন্দ, উচ্ছ্বাস অক্ষুণ্ণ থাকে সেই দায়িত্ব বাবা-মাকেই পালন করতে হয়। আর তুমি যেভাবে ওদেরকে বড় করছো তা কিন্তু মুগ্ধ হবার মত। তুমি তোমার সবটা সময় বাচ্চাদের পিছনেই ব্যয় করো। আমি তো যখনই তোমাকে দেখি অনুভব করি তাশফিনকে আরো সময় দেয়া প্রয়োজন আমার।

এত ব্যস্ততার পরও তুমি ছেলেকে অনেক সুন্দর ভাবে বড় করেছো। অবশ্য তোমার তাশফিন তো এমনিতেই সবকিছু বোঝে। যে সুন্দর করে যুক্তি দেয়, মাশাআল্লাহ। আমার গুলোর মত হলে পাগল হয়ে যেতে।

অন্তরা হেসে বলল, তাশফিনের কর্মকান্ড তুমি দেখো না তাই এভাবে ভাবছো। মাছের কাঁটার কথাই ধরো। ওর কান্না বন্ধ করার জন্য আমি হাদিসটা বলেছিলাম। সাথে সাথে কাজও হয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন পর তাশফিন ইচ্ছে করে মাছের কাঁটা গলায় বাঁধিয়েছিল গোনাহ মাফ হবে সেজন্য। শুধু তাই না বাগানে গিয়ে গায়ে গোলাপের কাঁটার খোঁচা লাগাতো, ক্যাকটাসের খোঁচা লাগাতো। এরপর যখন বুঝিয়ে বললাম যে, নিজেই নিজেকে কষ্ট দিলে আল্লাহ গোনাহ তো মাফ করবেনই না উল্টো তোমার উপর আরো বিরক্ত হবেন, তখন গিয়ে এসব বন্ধ করেছে।

নায়লা হাসতে হাসতে বলল, আমি তো আরো মনেকরি তাশফিন তোমাকে একদম যন্ত্রণা করে না। যা বলো সবই বুঝে নিতে দেখি তো তাশফিনকে।

অন্তরা হেসে বলল, এমনিতে তো আর সব বোঝে না ভাবী। সারাটা ক্ষণ কিভাবে প্রশ্ন করতে থাকে সেটা তো দেখোই। যদিও বাচ্চাদের প্রশ্ন করার স্বভাবটা খুবই ভালো। এতে ওদের মনে কি ভাবনা চিন্তা চলছে সেটা জানা যায়। বুঝিয়ে বলে দেয়া সম্ভব হয় সবকিছু। এখনো আমার মনেআছে যখন চাইল্ড সাইকোলজির উপর কোর্স করেছিলাম প্রফ ক্লাসে ঢুকে বলেছিলেন, তোমরা কি তৈরি এই পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত, সবচেয়ে বুদ্ধিমান, সবচেয়ে চিন্তাশীল প্রাণীটির নতুন প্রজন্মকে জানা-বোঝা ও চেনার জন্য? তাদের মনের রাজ্যে অবাধ বিচরণের জন্য? তাদের কল্পনার রাজ্যে হাবুডুবু খাওয়ার জন্য? তাদের সাথে আকাশে উড়ার জন্য? খন্ড খন্ড মেঘের উপর লাফিয়ে লাফিয়ে চলার জন্য? ছোট্ট থেকে ছোট্ট বিষয়ে বিস্ময়ে বিকশিত হবার জন্য? প্রশ্ন বিশারদ হয়ে যাবার জন্য? এই যেমন, পাখী কেন উড়ে, ফুল কেন ফোটে, প্রজাপতি কেন এত রঙিন? আমার কেন ডানা নেই? দাদুর কেন দাঁত নেই? বাবা কেন রোজ অফিসে যায়? ধূর ছাই সব্জি কেন খেতে গোশতের মত লাগে না? আচ্ছা দিদার চামড়াকে প্রেস করে দিলে কি কুঁচকানো ভাব কেটে যাবে?

হেসে ফেললো নায়লা। বাহ! বেশ মজার ছিলেন তো তোমাদের প্রফ।

 

চলবে…

 

গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ


নারী সংবাদ


তিনজনকে আসামি করে মামলা।
পানি দিতে দেরী হওয়ায় লক্ষ্মীপুরে গৃহবধূ শিল্পী আক্তারকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার ভোররাতে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের চরভূতা এলাকা থেকে ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। নিহত গৃহবধূ কুমিল্লার লালমাই উপজেলার আবদুল জব্বারের মেয়ে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই আমির হোসেন বাদী হয়ে গৃহবধূর দেবর নিরব হোসেন, শ্বশুর মোসলেম মিয়া ও শাশুড়িসহ তিনজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সকালে সদর থানায় এ মামলা দায়ের করেন তিনি। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে সবাই।

লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. লোকমান হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আসামি সবাই পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

ওরস্যালাইন বানানো নিয়ে কিছু কথা


ডা. মারুফ রায়হান খান


আজকে একজন ডাক্তার সাহেবের স্টেটাস মারফত জানতে পারলাম তার কাছে আসা এক ছোট্ট শিশু মারা গেছে। কারণ কী? অনুসন্ধান করে জানা গেলো শিশুটির ডায়রিয়া হয়েছিল। মা ওরস্যালাইন খাবার যে নিয়মটি তা জানতেন না অথবা মানেননি। ফলে শিশুটির শরীরের লবণের মাত্রা ভীষণ রকমের বেড়ে যায় এবং অবধারিতভাবে মারা যায়। একটি ফুটফুটে শিশুর জীবনবাতি চিরতরে নিভে গেলো।

একটা ছোট্ট শিশু পৃথিবীর কোনোকিছু বোঝে না, তার লালন-পালনের সমস্ত দায়িত্ব পালন করে তার মা-বাবা। ফলে একজন মা কিংবা বাবার কিন্তু কিছু প্রিলিমিনারি জ্ঞান থাকা প্রয়োজন শিশুর লালন-পালন সম্পর্কে এবং অতি অবশ্যই শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে। আমি কোনোভাবেই বলব না এই মা’টির ভালোবাসা, স্নেহ বা ডেইডিকেশানের কোনো অভাব ছিল তবে খুব সম্ভবত জ্ঞান বা সচেতনতার অভাব ছিল। যদিও জীবন-মৃত্যু সবকিছু আল্লাহর ইশারায় হয়, তবুও বোধহয় তিনি নিজেকে কিছুটা অপরাধী ভাববেন।

আসলে ঘটনাটা কী হয়েছে। সবার বোঝার জন্যে খুব সিম্পলিফাই করে বলা যাক। ওরাল রিহাইড্রেশান সল্টের (যাকে পানিতে মেশানোর পর আমরা স্যালাইন বলছি) মধ্যে থাকে লবণ অর্থাৎ সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম ক্লোরাইড, থাকে গ্লুকোজ এবং ট্রাইসোডিয়াম সাইট্রেট৷ নিয়ম হচ্ছে আমাদের যে স্যালাইনের প্যাকেটটি পাওয়া যায় তা হাফ লিটার পানির মধ্যে মিশিয়ে খাওয়তে হয়। এখন কেউ যদি এরচেয়ে অল্প পানিতে মিশিয়ে খাওয়ায় তাহলে কী হবে? শরীরে লবণের মাত্রা বেড়ে যাবে অনেক বেশি। এর প্রভাবে কোষ থেকে পানি বেরিয়ে আসবে, বিশেষ করে ব্রেইনের। কোষগুলো নষ্ট হবে। এবং তা থেকে মৃত্যু হওয়া অস্বাভাবিক না৷ যেমনটি হয়েছে এই শিশুর ক্ষেত্রে। সোডিয়াম ক্লোরাইডে রক্তে থাকার কথা ১৩৫-১৪৫ মিলিমোল/লিটার, সেখানে শিশুটির হয়ে গিয়েছিল ১৬৫ মিলিমোল/লিটার! তার মা না কি একটু একটু করে সল্ট নিয়ে একটু একটু করে পানিতে মেশাচ্ছিলেন৷ ফলে লবণ পানির যে রেশিওটি মেইন্টেইন করার কথা ছিল তা সম্ভব হয়নি।

প্রশ্ন : তাহলে স্যালাইন কীভাবে বানাতে হবে?

উত্তর : হাফ লিটার পানি নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় হাফ লিটারের একটা বোতল দিয়ে মেপে নিলে। এবার পুরো প্যাকেটটির সবটুকু ঢেলে দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে৷ এরপর পরিমাণমতো খাওয়াতে হবে।

প্রশ্ন : কী ধরনের পানির সাথে মেশাব? ডিসটিলড ওয়াটার না কি আমরা যে পানি খাই সেটা?

উত্তর : আমরা রেগুলার যে ট্যাপ ওয়াটার খাই সেটাই ব্যবহার করব; ডিসটিলড ওয়াটার না। কারণ সে পানিতে বেশ কিছু মিনারেল আছে। ডায়রিয়ার সাথে মিনারেল বেরিয়ে যায় শরীর থেকে।

প্রশ্ন : একটু একটু করে সল্ট পানির সাথে মেশালে হবে না?

উত্তর : না, হবে না। লবণের তুলনায় পানি কম-বেশি হয়ে উপরের কেইসের মতো ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। তাই পুরোটা একসাথেই বানাতে হবে।

প্রশ্ন : স্যালাইন বানিয়ে কতোক্ষণ রাখা যাবে?

উত্তর : ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত খাওয়ানো যাবে।

প্রশ্ন : ১২ ঘণ্টা পর স্যালাইন রয়ে গেলে সেটা কী করব?

উত্তর : ফেলে দিতে হবে।

প্রশ্ন : টাকা দিয়ে কিনেছি নষ্ট কেন করব?

উত্তর : এটা নষ্ট করা না। এরমধ্যে গ্লুকোজ থাকে। যে পানিতে গ্লুকোজ থাকে তা জীবাণু বেড়ে ওঠার জন্যে একটা চমৎকার মিডিয়া হিসেবে কাজ করে। আর ১২ ঘণ্টা পর সেখানে জীবাণুর সংক্রমণ হবার সম্ভাবনা খুব বেশি। এই স্যালাইন খাওয়ালে শরীরে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে।

প্রশ্ন : গ্লুকোজ যখন খারাপই, তাহলে এখানে গ্লুকোজ দেবারই বা কী দরকার ছিল?

উত্তর : একটা মানুষের যখন বারবার লুজ স্টুল পাস হতে থাকে, সে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই গ্লুকোজ তাকে এনার্জি দেয়। তাছাড়া ডায়রিয়ার সময় প্রচুর লবণ বেরিয়ে যায় শরীর থেকে, এখন স্যালাইনের মধ্যে যে লবণ (সোডিয়াম) থাকে তা কোষের ভেতরে ঢোকাতে গ্লুকোজের সহায়তা লাগে।

প্রশ্ন : এতো যখন ঝামেলা তো স্যালাইন বারবার খাওয়াবার দরকার কী? শুনেছি বাজারে ইমোটিল নামে একটা ওষুধ পাওয়া যায় সেটা খেলে না কি ডায়রিয়া বন্ধ হয়ে যায়? সেটা খাইয়ে দিই?

উত্তর : না। ২০ বারের বেশি ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকরা এটা দিয়ে থাকেন। তাছাড়া এই ওষুধটার কিছু সমস্যা আছে। ডায়রিয়ার সাথে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ/জীবাণুগুলো বেরিয়ে যায়, এখন আমরা যদি এই ওষুধ দিই তাহলে স্টুল পাস হওয়াই বন্ধ হয়ে যাবে৷ ফলে সেগুলো শরীর থেকে বের হবে না, যা ক্ষতিকর। এছাড়া ছোট বাচ্চাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের মুভমেন্ট বন্ধ করে দিয়ে ‘প্যারালাইটিক আইলিয়াস’-এর মতো ভয়াবহ অবস্থা করতে পারে।

আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন সবসময়। মনে রাখবেন আপনার চিকিৎসক আপনার আপনজন। তিনি কোনোভাবেই চান না তার রোগী খারাপের দিকে যাক। এটা তার জন্যে গ্লানিকর। না জানা দোষের কিছু না, জানতে চেষ্টা না করা দোষের কিছু হবার সম্ভাবনা বেশি। আমাদের আপনজনদের জানানো আমাদেরই দায়িত্ব।

ডা. মারুফ রায়হান খান
লেকচারার, ডিপার্টমেন্ট অফ ফার্মাকোলজি
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

মেহেদী রং না মুছতেই লাশ নববধূ, স্বামী আটক


নারী সংবাদ


হাতের মেহেদী রং এখনো রয়েছে তাজা। স্বপ্ন ছিল স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসারে বসবাস করবে। কিন্তু সেই আশা চুরমার করে দিয়ে বিয়ের এক মাসের মাথায় দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলো এক নববধূ। নিহত নববধূর নাম নাঈমা আক্তার(২১)।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের নতুন বাজার এলাকার হান্নান মিয়ার ভাড়া বাসা থেকে নাঈমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় নববধূ নাঈমা আক্তারের ঝুলন্ত লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ নাঈমার লাশ উদ্ধার ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহত নাঈমার স্বামী শহিদুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ।

জানা গেছে, মাসখানেক পূর্বে বাগেরহাট জেলার দেলোয়ারের কন্যা নাঈমা আক্তারকে বিয়ে করেন খুলনা জেলার রূপসা থানার তালিমপুরের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে শহিদুল ইসলাম। বিয়ের পর সিদ্ধিরগঞ্জের নতুন বাজার এলাকায় ছোটভাই আমিনুল ইসলামের বাসায় স্ত্রী নাঈমাকে নিয়ে বসবাস করছিল সে। বৃহস্পতিবার সকালে খাবারের জন্য আমিনুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম ডাক দিতে গেলে হাত, মুখ ও পা বাঁধা অবস্থায় ঘরের আড়ার সাথে নাঈমা আক্তারের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায়।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম জানান, ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী শহিদুল নববধূ নাঈমাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাবে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোঃ শাহীন শাহ্ পারভেজ বলেন, গৃহবধূ নাঈমার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এটা আত্মহত্যা নাকি হত্যা তা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। তবে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামীকে থানায় আনা হয়েছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

চৌগাছায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা


নারী সংবাদ


যশোরের চৌগাছায় এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। নিহত স্কুলছাত্রীর নাম আখি আক্তার (১৩)। নিহত আখি খুলনা জেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের প্রবাসি নজরুল ইসলামের কন্যা এবং চৌগাছা ছারা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী। নিহত স্কুল ছাত্রী আখি চৌগাছায় বড় বোন তামান্না ইয়াসমিনের বাসায় থেকে লেখাপড়া করতো।

জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় স্কুলছাত্রী আখির মা পারিবারিক কলহের কারণে মোবাইল ফোনে তাকে বকাঝকা করে। এতে মায়ের ওপর অভিমান করে সিলিং ফ্যানের সাথে গালায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে আখি। স্থানীয় লোকজন বুঝতে পেরে ঘরের দরজা ভেঙ্গে তাকে উদ্ধার করে চৌগাছা মডেল সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ব্যাপারে নিহত স্কুলছাত্রীর নানা রুহুল আমিন জানান, কি নিয়ে মায়ের সাথে আখির মোবাইলে ঝগড়া হয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে দুপুরের পরে বাসায় কেউ ছিল না। সে সময় সে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দেয়। বুঝতে পেরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

চৌগাছা থানার ডিউটি অফিসার এএসআই রবিউল ইসলাম এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে চৌগাছা থানার পুলিশ মেয়েটির লাশ উদ্ধার করে। মঙ্গলবার মেয়েটির পরিবারের লোকজন তাদের কোনো অভিযোগ নেই, মর্মে থানায় লিখিত দিয়ে লাশ নিয়ে গেছে।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

বয়স হার মেনেছে বৃদ্ধা মালঞ্চির জীবন সংগ্রামের কাছে


নারী সংবাদ


বর্তমানে বাংলাদেশের লোক সংখ্যা সাড়ে ষোল কোটির উপড়ে। যার মধ্যে ৬ দশমিক শতাংশের বয়স ৬০ বছরের ওপড়ে। বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি যখন ৫৫ কিংবা ৫৭ বছরে পা রাখেন তখন তাঁকে সাধারণত প্রবীণ কিংবা বৃদ্ধ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। কর্মক্ষম থাকলেও তাকে চাকরি এবং কাজ থেকে অব্যাহত দেয়া হয়। অনেক সময়ই তিনি কাজ করতে চাইলেও তাকে কাজে নেয়া হয় না। যে কারণে বৃদ্ধ বয়সে একজন মানুষের ভরসার পাত্র হয় তার সন্তান। তবে এ ক্ষেত্রে সমাজে গরীব মানুষের বেলায় ঘটে ভিন্ন কিছু। গরীবদের বেলায় কিছু কিছু সন্তানের নিষ্ঠুরতার কাছে মানবিকতা হার মানে। হার মানে অনেক বৃদ্ধ মা-বাবা। কারও নতুন ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম। গরীবদের বেলায় কারও ঠাঁই মেলে রাস্তার ফুটপাতে। আবার কেহ কেহ সন্তানের ধিক্কার এবং নিষ্ঠুরতার কাছে না হেরে নিজেরাই নিজেদের বাকি জীবনটাকে নতুনভাবে গোছাতে শুরু করে। কেহ কেহ সফল হয়। তাদেরই একজন ৬৬ বছর বয়সী মালঞ্চি । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মালঞ্চি বেশ পরিচিত মুখ।
চারুকলা অনুষদের সামনে একটি বড় কাঠের বাক্সে চুড়ি নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে। প্রায় ১৮ বছর ধরে চুড়ির ব্যবসা করছেন মালঞ্চি। স্বামী, তিন ছেলে এবং দুই মেয়েকে নিয়ে ছিল মালঞ্চির সংসার। অভাব অনটনের কারণে তিন ছেলেকে অষ্টম শ্রেণীর পর আর পড়াতে পারেননি তিনি। সংসারের টানাপোড়নের মধ্যেই তিনি তার ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। এরপর মালঞ্চি এবং তার স্বামীর জীবন অনাকাঙ্খিত মোড় নেয়। তাদের ছেলে-মেয়ে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। মালঞ্চি এবং তার স্বামীকে দেখাশোনা করতে চাইতো না তারা। তখন মালঞ্চি এবং তার স্বামীকে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার হতে হয়। এই বুড়ো-বুড়ি আলাদা একটি বস্তিতে থাকা শুরু করল। হাতে যে শেষ সম্বল নিয়ে তারা বের হয়েছিলেন তাও শেষ হবার পথে। পূর্ব থেকেই মালঞ্চির সংসারে অভাব-অনটন ছিল। তবে বুড়ো বয়সে সন্তানের সেবা পাবেন সেই আশায় ছিলেন তারা। তাদের আশা ছিল, ‘আমগো ছাওয়াল এই বুড়া-বুড়ীরে দেখব। জীবনে বড় কিছু হইব’। কিন্তু এই আশা যখন ভেঙ্গে গেল তখন তারা চোখের সামনে সরষে ফুল দেখতে লাগলেন। পরবর্তীতে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘আবার সংসারের হাল ধরন লাগব। এমনে বয়সের দোহাই দিয়া বইসা থাকলে চলবো না। আল্লাহ্ দিলে অহনও শরীরে যে শক্তি আছে কাজ কাম কইরা খাইতে পারমু’। চুড়ির ব্যবসা শুরু করার নিদ্ধান্ত নিলেন মালঞ্চি। কিন্তু তাদের এই সিদ্ধান্তে প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ায় মূলধনের অভাব। তিনি বললেন, ‘ঐ সময় খাওনের পর্যন্ত টেকা আছিল না। কিন্তু একটা কাজ শুরু করন লাগব। আমার জামাই(স্বামী)তখন রিক্সা চালাইত। কিন্তু বুড়া মানুষটার কষ্ট বেশি হইত। বেশি একটা আয়-রোজগারও হইত না। পরে আল্লাহর নাম নিয়া নামলাম এই ব্যবসায়ে। মাইনষের থেইক্কা সাত হাজার টেকা ধার নিয়া শুরু করছিলাম’।
ব্যবসায়ী হিসেবে মালঞ্চিকে বেশ দূরদর্শী বলা যেতে পারে। তিনি ব্যবসায়ের জন্য এমন স্থান বেছে নিলেন যেখানে হরহামেশা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিশোরীদের আনাগোনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন হওয়ায় বেচা-কেনাও ভাল হয়। এখানে কোন প্রকার সমস্যারও সমুখীন হতে হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এহানের পোলাপানগুলাই আমার মাইয়া, হ্যারাই আমার পোলা। আমার কোন সমস্যা হইলে এরাই আমার দেখভাল করে। এই শীতে আমি যহন কম্বল চাইছি তহনই দিছে। এত বছর হইয়া গেলো এরা কেউ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনাই।’ তিনি ৪০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা দামের চুরি বিক্রি করেন। তাঁর দৈনিক এক থেকে দুই হাজার টাকা আয় হয়। প্রথম দুই বছর কোন লাভের মুখ দেখতে পাননি মালঞ্চি। তিনি তার ব্যবসার মালামাল আনতেন চকবাজার থেকে বাকিতে। মাস শেষে যে আয় হত তা পাওনা পরিশোধ করতেই ফুঁড়িয়ে যেত। তবে পরবর্তীতে মালঞ্চি তার দক্ষতা এবং একাগ্রতার মাধ্যমে সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। বর্তমানে তার এই ব্যবসা থেকে যা লাভ হয় তা দিয়ে এই বুড়ো-বুড়ীর সংসার চলছে। মালঞ্চির বয়স প্রায় ৬৬। এই বয়সেও তিনি যেভাবে এই ব্যবসা অকপটে চালিয়ে যাচ্ছেন তা আমাদের সমাজের মানুষের জন্য একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি প্রমাণ করেছেনÑ বয়স তো একটি সংখ্যা মাত্র। মনোবল থকালে একটি মানুষের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব।
কেবলমাত্র মালঞ্চি নন, আমাদের দেশে অনেক গরীব মানুষ আছেন যারা পরের কাছে হাত না পেতে পরিশ্রম করে নিজেদের সংসার চালান। এমন কাজ সত্যিই অনুকরণীয়। সুত্র: আবিদা হক লোরা (বাসস)

 

এক ধনী মহিলার গল্প


সাহিত্য


একবার এক ধনী মুসলিম মহিলার সাথে আমার আজব এক কথোপকথন হয়েছিল। আমেরিকার একটি অঙ্গরাজ্যে যার নাম আমি বলবো না, একটি প্রোগ্রামে আলোচনার পর আমাকে রাতের খাবার খেতে এক বাসায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। আর সেটি ছিল ১৫ হাজার বর্গ ফুটের বিশাল এক প্রাসাদ। আমি গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করার সময় বাড়ির সৌন্দর্য দেখে মনে মনে ভাবতে লাগলাম, কে এই এল-ক্যাপনের (আমেরিকার এক বিখ্যাত গ্যাংষ্টার) বাড়িতে বাস করে!!! তারপর আমরা ম্যানশনে প্রবেশ করলাম। আমাদেরকে ডিনার পরিবেশন করা হয়েছিল কিং আর্থারের টেবিলের মত প্রকান্ড এক টেবিলে। সম্ভবত টেবিলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে কথা পৌঁছাতে হলে মাইক্রোফোনের প্রয়োজন হবে, এত লম্বা এক টেবিল!

যাইহোক, আমরা সবাই এক পাশে বসে খাবার খেলাম। তারপর কথা-বার্তা বলতে লাগলাম। বাড়ির কর্তী বললো – “আমার একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন আছে।” আমি বললাম – “ঠিকাছে, বলুন।” তিনি বললেন – “না, আমি সবার সামনে এটা বলতে পারবো না।” তখন আমি অন্য সবাইকে বললাম – “আপনারা টেবিলের অপর প্রান্তে গিয়ে বসুন, (যার অবস্থান ভিন্ন আরেকটি জিপ কোডে 🙂 ) যেন আমি তার সাথে কথা বলতে পারি।” সবাই দূরে গিয়ে বসলো।

তারপর ঐ মহিলা বললেন – “আমি জানি, আমাদের সবাইকে মরতে হবে, এবং কিয়ামতের দিন উঠতে হবে….কিন্তু আমি এই বাড়ি ছেড়ে যেতে চাই না।”

তাদের লিভিং রুমের আয়তন হবে এই মসজিদের আয়তনের মত। পেছনে রয়েছে কৃত্রিম ঝর্ণা, প্রায় সব ওয়ালে গ্লাস লাগানো। তাদের বাসার ভেতরের সিঁড়িটি ছিল অসম্ভব সুন্দর মার্বেল পাথরে ঝড়ানো, দেখে মনে হয় যেন উপর থেকে সিল্ক গড়িয়ে পড়ছে। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি এটা আসলে কী? পরে বুঝতে পেরে চমৎকৃত হয়ে গেলাম। তারা আমাকে জানালো, বাড়িতে ২৭ টি বেড রুম রয়েছে। আমি ভাবলাম – ঘুমান তো এক রুমে, বাকিগুলো দিয়ে কী করেন।

কিন্তু ঐ মহিলা ম্যানসনটি নিয়ে এতো বেশি আচ্ছন্ন এবং সম্মোহিত…. প্রতিটি ফার্নিচার সে অনেক যত্ন করে কিনেছে। তাই সে বললো – “আমি এই বাড়ি ছেড়ে যেতে চাই না, আমি এখন কী করি?” আমি বললাম – “আপনার যা ইচ্ছা করতে পারেন, কিন্তু আপনাকে এটা একদিন ছাড়তেই হবে। দুঃখিত, আপনার এ ক্ষেত্রে কিছু করার নেই। “

এই দুনিয়াতে এমন অনেক জিনিস আছে যা আমাদেরকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমাদেরকে এই বিষয়টা হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। এমনকি এই শরীরও একদিন ছেড়ে দিতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে নতুন শরীর দিবেন। যখন আপনি এটা উপলব্ধি করতে পারবেন তখন আপনি আর এমনসব বিষয় নিয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন না, যা এক সময় এমনিতেই ছেড়ে দিতে হবে। এটাই বাস্তবতা। আপনি তখন আর আপনার শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন না। গাড়ি নিয়ে, বাড়ি নিয়ে বা জামা-কাপড় নিয়ে আর আচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন না।

এসব বিষয় ভোগ করতে পারেন, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এসব জিনিস আপনার জীবনের সবকিছু হয়ে পড়া উচিত নয়। অনেকেই বাসা থেকে বের হওয়ার পূর্বে আয়নাতে তাদের কেমন দেখায় সেটাতে অনেক মনোযোগ এবং গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আপনি এ সম্পর্কে যা ইচ্ছা বলতে পারেন, কিন্তু আপনার কাজ বলে দিচ্ছে আপনার প্রায়রিটি কোথায়। আমি বলছি না যে, আপনি শরীরের যত্ন নিবেন না, দাঁত ব্রাশ করবেন না, শুধু পরকাল নিয়ে পড়ে থাকবেন….আমি এটা বলছি না। আপনি অবশ্যই শরীরের যত্ন নিবেন…..কিন্তু আপনার জীবন যদি মুভি, ভিডিও গেইমস, শারীরিক সৌন্দর্য, আর বিনোদনে আবর্তিত হতে থাকে এবং আপনার আচরণ দেখে মনে হয় যেন এসব জিনিস চিরকাল থাকবে …তাহলেই সেটা সমস্যাপূর্ণ। কিয়ামতের দিন আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন কিসব জিনিস আপনি সামনে প্রেরণ করেছেন আর কিসব জিনিস পেছনে ফেলে এসেছেন।

[সূরা ইনফিতারের ৫ নাম্বার আয়াত – عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ وَأَخَّرَتْ – “তখন প্রত্যেকে জেনে নিবে সে কি অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং কি পশ্চাতে ছেড়ে এসেছে।” আয়াতের আলোচনায় উস্তাদ নোমান আলী খান।]

সংগৃহীত

 

হারিয়ে ফেলা পরিচয়

কানিজ ফাতিমা

প্রকৃতিতে আমার কোনো ক্লান্তি নাই, ঘন্টা কেন, দিনের পর দিন একই দৃশ্যে তাকিয়ে থেকেও চোখ ফেরেনা আমার। কেউ হয়ত ভাববে, কি দেখে এত চেয়ে চেয়ে ? নিরত দু’চোখ মেলে পথের ধারের বনফুল দেখি,ছোট্ট ডোবায় হাসের নিস্তব্দ ভেসে যাওয়া দেখি, আকাশের মেঘ দেখি- সাদা মেঘ, ধুসর মেঘ, ঘন মেঘ, তুলির ছোপ মেঘ আর চপলা মেঘ – ক্লান্তিরা কখন ক্লান্ত হয়ে ফিরে যায় আমার অক্লান্ত চেয়ে থাকা দেখে। সাদা কয়েকটা মেঘের টুকরায় এত দেখার কি আছে ? আমার আছে। একটা কালো পাখির লেজ দোলানো, গাছের ডালে মৃদু-মন্দ বাতাসে পলকা বরফের ঝুর ঝুর ঝরে পরা, শীতের বাতাসে শুকনো পাতার ফুরুত ফুরুত ওড়া, পথিকের হেটে যাওয়া, হাত নাড়ানো, স্কুলের সামনের গাছটার সোজা উপরের দিকে উঠতে উঠতে হতাঠ বেঁকে যাওয়া, গাড়ীর দরজা খুলে একজন মহিলার বের হয়ে আসা – এসব সাধারণ দৃশ্যেও আমার বিস্তর আগ্রহ। সিনেমা দেখে, গল্প করে, আড্ডা দিয়ে আমার বিনোদনের দরকার হয় না, চারপাশই আমার বিনোদনের উত্স। প্রকৃতির পানে নীরব চাহনীতেই লুকিয়ে থাকে আমার মনের খোরাক।

স্টাফ রুমের পুরো দেয়াল জুড়ে কাচের জানালাটা আমার খুব প্রিয়। অতি ব্যস্ত সিডিউলেও সুযোগ করে জানলার ধরে বসে একটু জিরিয়ে নেই। কলিগরা সবাই যখন গল্পে বা পেশাগত আলাপচারিতায় ব্যস্ত, আমি তখন হারিয়ে যাই আমার গোপন দৃষ্টির ভুবনে, পেছনের কিছুই টানেনা আর – জেগে থাকে শুধু সামনের দিগন্তে দু’চোখের তাপসী ধ্যান। দু’টো বাচ্চা নিয়ে এক মা বেরিয়ে এলো গাড়ী থেকে, মাঝারী ঠান্ডা, তাই ওদের কারো পায়েই ভারী বুট নেই, হালকা জুতো। ওরা হেটে আসছে আমার দিকে। মানুষের হাটাও যে কত বিচিত্র! – উলম্ব হাটা, ঝুলন্ত হাটা , ক্লান্ত হাটা, আত্ববিশ্বাসী হাটা, বিষন্ন হাটা , কৃত্রিম হাটা- আরো কত কী ! মহিলাটি অত্ববিশাসী হাটা হাটছে, বাচ্চা দু’টোকে একটু আগলে নিয়ে। তার মুখ আমি দেখতে পাচ্ছিনা , কিন্তু এত দূর থেকেও তার বাচ্চা আগলে দৃঢ় হাটার ভঙ্গীতে তাকে অপূর্ব লাগছে। ওই যে পেছনের পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে এলেন আরেক মহিলা। বয়স পূর্বের মহিলার মতই হবে বোধ করি, কিন্তু হাটছেন কিশোরী ছন্দে, জ্যাকেটের জীপার এর মধ্যখান থেকে বেরিয়ে এসে একটা সরু সাদা রেখা দুভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়ে দু’ কানে মিশেছে – আশংকা করি সে গাড়ী চালানোর সময়ও এ দু’টোকে কান থেকে নামাননি। অদ্ভুত ভাবে হাটছেন মহিলা। বরফ কিছুটা গলে গেলেও এখানে সেখানে স্তুপ স্নো এখনো রয়ে গেছে, আর তার নীচে লুকিয়ে থাকা ছোপ ছোপ বরফ জমে আছে কোথাও কোথাও। এর মাঝ দিয়ে মহিলাটা একে বেকে হাটছে, নতুন হাটতে শেখা বাচ্চদের মত – পার্থক্য শধু এইযে তার পুরোটাই কৃত্তিম, বাচ্চদের অকৃত্তিম টলমলে হাটা নয়। দোতলার জানালায় বসে দেখলাম পার্কিং লটের মাঝা মাঝি থেকে স্কুলের গেটে ঢোকা পর্যন্ত এতগুলো পদক্ষেপের একটিতেও মহিলার দৃঢ়তা ছিলনা একফোটা। ভাবছিলাম এই বয়সের এক মহিলা কেন বরফের পিচ্ছিল পথে হাটার জন্য বেছে নিয়েছেন সরু হিলের বুট, কেন তিনি নিজেই নিজের চলাকে করেছেন বিপজ্জনক, কেন তিনি তার নিজের কোমরে, মেরুদন্ডে সৃষ্টি করছেন অতিরিক্ত ক্ষতিকর চাপ? এবং সর্বপরি যে “সৌন্দর্য” বা “স্মার্ট নেস” এর জন্য তিনি এই কষ্ট ও বিপদকে মেনে নিয়েছেন সেটার লেশ মাত্রও তো দেখতে পাচ্ছিনা আমি তার ভীরু, আত্ববিশ্বাসহীন, অনেকটা ভাড়ীয় হাটায়। তারপরও কেনো তিনি এটাকেই মনে করছেন “ফ্যাশন”?

ফেসবুকে ঢাকার উঠতি বয়সের কিছু তরুনীদের ছবি দেখি টাইট জিন্সের প্যান্টে। এসব প্যান্ট তৈরী করা হয় শীতের দেশের জন্য। বাংলাদেশের গরম আবহাওয়ায় যে তাদের অনেক কষ্টে এই “ফ্যাশন” কে ধারণ করতে হচ্ছে তা বুঝতে কারো কষ্ট হবার কথা নয়। কষ্ট হোক তবু “স্মার্ট” তো হতে হবে।

আচ্ছা, স্মার্টনেসের সংগাটা কি? বরফের ওপর বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর উচু হিল? গরমে মোটা টাইট প্যান্ট? নাকি আবহাওয়া অনুযায়ী সঠিক পোশাক নির্ধারণের মত মগজের ক্ষমতা? কে বেশী স্মার্ট, যে টিভির বিজ্ঞাপন দেখে বরফের মধ্যেও হিল পরে ভাড়ীয় হাটা হাটে নাকি যে আবহাওয়া সম্পর্কে অবগত থাকে এবং নিজের মাথার ব্যাবহার করে সঠিক জুতা নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে? যে হকার্সে গিয়ে টাইট জিন্স কিনে টেনে টুনে শরীরে ঢুকায়, নাকি যে জানে যে গরম আবহাওয়ায় ঢিলা ঢালা পোষাক আর হালকা মেকআপ বেশী উপযোগী? কে বেশী স্মার্ট, যে নিজের মাথার ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নেয়, নাকি যে নিজের চোখের মাথা খেয়ে মিডিয়ায় দেখানো অখ্যাদ্য কুখাদ্যকে বিশেষ “সুখাদ্য” হিসাবে চোখ বুজে গেলে?

সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান প্রাণী হয়েও আমরা কিভাবে নিজের মস্তিস্কের হালটা নিশ্চিন্তে ছেড়ে দিতে পারি মিডিয়ার ওপরে? আমরা যখন নিজের ভাবনা নিজে নাভেবে মিডিয়াকে ভাবিয়ে নিতে দেই তখনই মিডিয়ার প্রচারে মিথ্যা আর অসুন্দর গুলো আমাদের মস্তিস্ককোষে বাসা বাধে সুন্দর আর সত্য রূপে। ক্রমে ক্রমে আমরা মানুষেরা হারিয়ে ফেলি আমাদের দৃষ্টিশক্তি, ক্ষয়ে যায় আমাদের চিন্তাশক্তি- চরম অসুন্দর দৃশ্যগুলো রুপান্তরিত হর সুন্দরতমে; দৃষ্টিকটু হয়ে ওঠে আকর্ষনীয়, মিথ্যা রুপান্তরিত হয় একমাত্র সত্যে, চক্রান্ত মূর্ত হয় চেতনায়। অবশেষে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান মানুষ হয়ে যায় বুদ্ধিহীন মিডিয়াধীন এক পরজীবীতে, এভাবেই হারিয়ে যায় তার স্বাধীনতা আর শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয়।

 

হিজাবে ভিন্নমাত্রার নান্দনিকতায় নারী


ঘরকন্যা


রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে গতকাল শুক্রবার বিকেলে দেখা গেল যানবাহনে ও হাঁটা বহু নারীর মাথায় হিজাব। সর্বাধুনিক ডিজাইনের বাহারি রঙের হিজাবে সব বয়সী নারীর মুগ্ধ পদচারণা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আড্ডারত দুই তরুণীর কাছে মাথায় হিজাবের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানালেন মাথার চুল আবৃত করতেই হিজাব পরি। এটা এখন আমার ফ্যাশন। এক দিকে চুলও আবৃত করা হলো। চুলও ধুলাবালু থেকে রেহাই পেল। ধর্মীয় অনুশাসনও মানা হলো অন্য দিকে আধুনিক ফ্যাশনও করা হলো। তবে ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব হিজাব দিবস সম্পর্কে কিছু জানা নেই তাদের। বস্তুত নানা রঙের নানা ডিজাইনের হিজাবে আবৃত নারীদের ফ্যাশনে এনে দিয়েছে ভিন্নমাত্রার নান্দনিকতা। নারী পোশাকে এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আবহমান বাংলার চিরায়ত সাংস্কৃতিতে এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হিজাবকে স্মরণীয় করে রাখা এবং পর্দার ব্যাপারে ইসলামী বিধান অনুসরণকারী সব মুসলিম নারীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে বিশ্ব হিজাব দিবস। এবার হিজাব দিবসের স্লোগান ‘হিজাব ইজ মাই ফ্রিডম’, ‘হিজাব ইজ মাই প্রটেকশন’, ‘হিজাব ইজ মাই চয়েস’, ‘হিজাব ইজ মাই কভার’। কয়েক বছর আগে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক সিটিতে নাজমা খান নামে এক বাংলাদেশী ছাত্রী পোশাকের কারণে জ্যামাইকায় আক্রান্ত হন। ওই ঘটনার প্রতিবাদ, নিন্দা এবং সর্বসাধারণকে সচেতন করার জন্য গত ছয় বছর থেকে আমেরিকায় হিজাব দিবস পালন শুরু হয়।
রংপুর মহানগরসহ এখন সারা দেশে সব বয়সী নারীরাই নানা রঙের শাড়ি কিংবা জামার সাথে মাথায় নানা ডিজাইন-রঙের হিজাব ব্যবহার করছেন। হিজাব দিবসের সাথে ইতোমধ্যে সংহতি প্রকাশ করেছেন ৪৫টি দেশের ৭০ জনের অধিক রাষ্ট্রদূত, খ্যাতনামা রাজনীতিক ও স্কলারসহ টাইম ম্যাগাজিন, সিএনএনের মতো বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যম। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ওয়ার্ল্ড হিজাব ডে ডট কম পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৯৪ ভাগ নারী হিজাবে নিজেদের নিপীড়িত মনে করেন না। শতকরা ৯৩ ভাগ নারী মনে করেন তাদের ওপর হিজাব চাপিয়ে দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশে নারীদের হিজাবের দিকে আকৃষ্ট হওয়ার মাত্রা বেড়ে গেছে বহুগুণ। এক সময় রাস্তায় পাশ্চাত্যের আদলে শর্ট কামিজ, খোলামেলা পোশাক পরিধানের যে ধুম পড়েছিল, তা থেকে এখন বেরিয়ে আসছেন নারীরা।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে জানা গেল নানান কথা। হিজাব শুধু নান্দনিক ফ্যাশনই নয়, এটি নারীদের মর্যাদাকেও বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে হিজাবে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে। শাড়ি, জামার সাথে হিজাব পরে কর্মক্ষেত্রসহ সব ক্ষেত্রে নারীদের সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। প্রাচীন বাংলার জনগণ দেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি টিকিয়ে রেখে যা করেছিলেন হালের নারীরাও তা আবার ফিরিয়ে আনছেন। যে দেশের নারীরা বেশি বোরকা কিংবা হিজাব পরবেন তারা অধিকতর ডান, গোঁড়া বা রক্ষণশীল বলে কথিত যে বুলি আওড়ানো হচ্ছিল একবিংশ শতাব্দীতে। বাংলাদেশের নারীরা সেই বুলিকে অগ্রাহ্য করে হিজাবকে নান্দকিভাবে উপস্থাপন করেছেন। হিজাব এখন নারীদের কাছে এতটাই গ্রহণযোগ্য পোশাক হয়েছে যে বাংলাদেশের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের প্রচারেও মডেল হিসেবে হিজাব পরিহিতা নারীকে বেছে নিয়েছে।
জানতে চাইলে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুমা আখতার নদী নয়া দিগন্তকে জানান, জাতি হিসেবে মুসলিমরা সেরা। তাই তাদের ফ্যাশনের নান্দনিকতাও ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে সেরা হওয়া উচিত। এখন তাই আমরা মুসলিম নারীরা শালীন পোশাকের সাথে হিজাব ব্যবহার করে বিশ্বের সর্বাধুনিক নারী হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছি। আমরা শাড়ি ও জামার সাথে হিজাব পরে সব উৎসবকে নান্দনিক করে তুলছি। এর মাধ্যমে ইসলামের প্রগতিশীলতাকে আমরা রিপ্রেজেন্ট করছি।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী লুবনা হক জানালেন, মুসলিম নারীদের যারা গোঁড়া রক্ষণশীল বলে গালমন্দ করার চেষ্টা করে থাকেন মুসলিম নারীরা সর্বাধুনিক হিজাব পরিধান করে বড় বড় অনুষ্ঠানসহ সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করে তাদের মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছে।
রংপুর হোমিও কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুমতাহিনা কাউছার নয়া দিগন্তকে জানান, প্রথমত আমি একজন মুসলিম নারী হিসেবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতেই হিজাব পরি। এর বাস্তব সুবিধা অনেক। যেমন এক দিকে হালের সবচেয়ে ফ্যাশন হচ্ছে এই হিজাব। অন্য দিকে চলতে-ফিরতে খারাপ মানসিকতার লোকদের থেকে রক্ষা করা যায়। এ ছাড়াও হিজাব পরা নারীদের চলতে-ফিরতে সম্মান করে সবাই। কিন্তু খোলামেলাভাবে পোশাক পরলে মানুষ একটু অন্যভাবে দেখে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় উপকার হয় স্বাস্থ্যের। ধুলাবালু থেকে নিরাপদ থাকা যায়। কারণ নারীদের ত্বক নরম। ধুলাবালুতে দ্রুত ত্বক নষ্ট হয়ে যায়। বাড়তি পরিচর্যার দরকার হয়। কিন্তু হিজাবের কারণে চুল এবং ত্বক রক্ষা পায়। বাড়তি পরিচর্যার সময় বেঁচে যায়।
কারমাইকেল কলেজ ইসলামের ইতিহাসের ছাত্রী ফারহানা আখতার নয়া দিগন্তকে জানান, কথিত খোলামেলা পোশাকের এই সময়ে নারীরা যে সর্বাধুনিক ফ্যাশন হিসেবে হিজাব ব্যবহার করছে, এটা খবুই তাৎপর্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে মুসলিম নারী হিসেবে আধুনিক বিশ্বকে প্রভাবিত করতে পারছি আমরা।
জাতীয়ভাবে স্বীকৃত সেরা ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রংপুর ধাপসাতপাড়া মডেল কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আনম হাদিউজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, নারীদের হিজাব পরার এই মানসিকতা একটি সভ্যসমাজ বিনির্মাণের জন্য ইতিবাচক দিক। বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে এখন নৈতিকতাবোধ সৃষ্টি হচ্ছে। তারা গড্ডালিকা প্রবাহে থাকতে চান না। এ ছাড়াও মানুষের মধ্যে এখন যে ধর্মই পালন করুক না কেন সেই ধর্মের অনুশাসন মেনে চলার আগ্রহ বেড়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন স্টাডিজ সেন্টার সব থেকে প্রিয় পোশাক কী তা জানতে একটি সমীক্ষা করে। ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পরিচালিত সমীক্ষায় ৩২ শতাংশ পাকিস্তানি নারী-পুরুষ বলেছেন, তাদের প্রিয় পোশাক নেকাব। সমীক্ষায় থাকা দেশগুলো ছিলথÑ তিউনিসিয়া, পাকিস্তান, মিসর, ইরাক, লেবানন, সৌদি আরব ও তুরস্ক। ওই সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়, ইরান, ইরাক ও লেবাননে এই পোশাকের চল রয়েছে। এতে হাত ও মুখের কিছু অংশ খোলা থাকে। তবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে যে পোশাকটি রয়েছে, সেটা মাথায় স্কার্ফ ধরনের এবং লম্বা পোশাকের সাথে পুরো মুখাবয়ব খোলা থাকে। মিসরের নারীদের ৫২ শতাংশ এটি পরেন। রিপোর্টে বলা হয়, বর্তমান মুসলিম বিশ্বের নারীরা সব থেকে আধুনিক হিসেবে এই পোশাকটিকেই বেছে নিয়েছেন। বিশেষ করে ইরান ও তুরস্কের আধুনিক নারীরা এই পোশাক পছন্দ করছেন। এর সাথে আরো একটি স্টাইল রয়েছে। সেটি হলো হাল ফ্যাশনের রঙিন লম্বা ধরনের পোশাক, কিন্তু মাথায় বড় মাপের ওড়না দিয়ে মাথা শিথিলভাবে মোড়ানো। আর পাশ্চাত্য রীতির মিশেলে সালোয়ার কামিজসহ যেকোনো ধরনের পোশাক। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

বউ-শাশুড়ি মেলা রংপুরে


নারী সংবাদ


সমাজে যখন শাশুড়ি ও পুত্রবধূর সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কথা ওঠে, ঠিক তখনই এই দু’জনের সম্পর্কের মধ্যে নিবিড় সেতুবন্ধন তৈরি করে দিতে রংপুরের মিঠাপুকুরে অনুষ্ঠিত হলো শাশুড়ি-পুত্রবধূ মেলা। গত বৃহস্পতিবার দিনভর মেলায় শতাধিক জোড়া বউ-শাশুড়ির উপস্থিতি তাদের আন্তরিকতায় সেখানে সৃষ্টি হয় ভিন্ন রকম এক নান্দনিকতার ঢেউ।

মিঠাপুকুরের চেংমারী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির আয়োজনে এবং ল্যাম্ব বর্ণ অন টাইম প্রকল্পের সহায়তায় বউ-শাশুড়ি মেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক ডা: শেখ মো: সাইদুল ইসলাম। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করীম টুটুলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ কে এম রেজাউল করীম ও এফপিআই মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন।

উদ্বোধনের পরই বউ-শাশুড়িরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তারা একে অপরের প্রতি আরো নিবিড় হয়ে যান। পুরো চত্বরে ধ্বনিত হয় পুত্রবধূ ও শাশুড়ির নির্ভেজাল নিবিড় সম্পর্কের দ্যোতনা। এ সময় উপস্থিত দর্শনার্থীরা বিমুগ্ধ হন।

দর্শনার্থী মাইদুল ইসলাম জানান, আমাদের সমাজে এখন প্রতিনিয়ত পুত্রবধূ ও শাশুড়িদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে টানাপড়েন দৃশ্যমান। এ ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে এ মেলা। আমি মনে করি এ ধরনের মেলা আয়োজন করতে পারলে সমাজে এ বিষয়ে আরো সচেতনতা তৈরি হবে।

মেলায় অংশগ্রহণকারী শাশুড়ি মালেকা বেগম জানান, আমার তিন ছেলের তিনটি বউ। সবার সাথেই আমার সম্পর্ক মায়ের মতো। মেলায় এসেও দেখলাম, আয়োজকেরাও বললেন শাশুড়িকে পুত্রবধূদের মনে করতে হবে মা। আর পুত্রবধূদের শাশুড়িদের মনে করতে হবে মেয়ে। এভাবেই পারস্পরিক বোঝাপাড়ার মাধ্যমে শাশুড়ি ও পুত্রবধূদের সম্পর্ক হবে মা ও মেয়ের মতো। এটি হলে সমাজে ও পরিবারে অনেক ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকা যাবে বলে মনে করেন এই শাশুড়ি।
অন্য দিকে মেলায় অংশ নেয়া কোহিনুর বেগম নামের এক পুত্রবধূ বলেন, আমার শাশুড়ির সাথে আমার অনেক দূরত্ব ছিল। আজকে মেলায় এসে আমার সেই দূরত্বটা কমলো। আজ থেকে আমাদের মাঝে আর কোনো দূরত্বই থাকবে না। মা ও মেয়ে হয়ে বাকি জীবন কাটাবো আমরা।
মেলার প্রধান অতিথি রংপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক ডা: শেখ মো: সাইদুল ইসলাম জানান, এ সমাজের বউ-শাশুড়ি সম্পর্কে সমাজের প্রচলিত ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে এ মেলা। এর মাধ্যমে এই দু’টি সম্পর্কের যে নেতিবাচক ধারণা আছে তা থেকে সবাইকে বের করে আনতে এ ধরনের আয়োজন ভূমিকা রাখবে। মেলায় বিভিন্ন ধরনের আলোচনা ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বউ-শাশুড়ির মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পজেটিভ ধারণা দেয়া হয়েছে।
মেলা আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম ল্যাম্ব বর্ণ অন টাইম প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার লিটন বালা জানান, আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্যে বউ ও শাশুড়িদের মধ্যে নিবিড় সেতুবন্ধন তৈরি করতে আমাদের এ প্রকল্প। আশা করি অংশগ্রহণকারীরা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। তারা বাড়িতে ফিরে তাদের আশপাশের বউ-শাশুড়িদের মধ্যে এই সেতুবন্ধনের বার্তা পৌঁছে দেবেন।

আয়োজনে শতাধিক বউ-শাশুড়ি, সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধি ও গর্ভবতী মা, কিশোর-কিশোরী, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন। মেলায় বউ-শাশুড়ি সম্পর্কে স্বাস্থ্য বিভাগ, পবিবার পরিকল্পনা বিভাগ, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেবা ও ল্যাম্ব বিভিন্ন স্টল এবং নাটক প্রদর্শন করে। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজন সচেতনতা


নারী সংবাদ


গভীর রাত। সবাই ঘুমে অচেতন। হঠাৎ পাশের বাড়ির তিনতলা থেকে বাচাঁও বাচাঁও বলে চিৎকার করে ওঠে মধ্য বয়সী এক নারী। তাঁর চিৎকারে ঘুম থেকে জেগে ওঠে অনেকেই। মুহূর্তের মধ্যেই স্পষ্ট বোঝা গেল যে, মধ্যরাতে ঘরে ফিরে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে প্রহার করছে। এক পর্যায়ে ঐব্যক্তি চিৎকার করে কাটা চামচ দিয়ে তার স্ত্রীর চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দিলে, ঘরের বাইরে এসে আক্রান্ত নারী তার সর্ব শক্তি দিয়ে বলে বাচাঁও বাচাঁও বলে চিৎকার করতে থাকে। ওই মহিলার স্বামী মাঝে মধ্যেই তাকে এই ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন করে। অসহায় স্ত্রী মান-সম্মানের ভয়ে কাউকে কিছু না বলে নীরবে সব যন্ত্রণা সহ্য করে যায়।

আমাদের দেশে নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। শারীরিক নির্যাতন, যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, পাচার, খুন বা হত্যার মতো নানান ঘটনার খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যদিও দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী নারী ও শিশু নির্যাতন জঘন্য একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। বৈষম্যমুলক সমাজ কাঠামোর ভেতরে দেশের নারীরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তারা কর্মস্থলে বৈষম্য ও হয়রানীর শিকার হচ্ছে, ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে কিশোরীদের কেউ কেউ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। নারী ও কিশোরীদের অপহরণ করে সীমান্ত পার করে বিদেশে পাঁচার করা হচ্ছে।

এ ধরনের নির্যাতনের ফলে নারীর যেমন শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয় তেমনি তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়।
দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার অন্যতম কারণ হচ্ছে ‘যৌতুক’। সমাজে যৌতুক প্রথা একটি বড় অভিশাপ। আমাদের দেশে যৌতুক প্রথা যে সব কারণে এখন পর্যন্ত টিকে আছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, অর্থনৈতিক পরনির্ভরশীলতা, সামাজিক কুসংস্কার, বাল্য বিয়ে, রেজিষ্ট্রিবিহীন বিয়ে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা প্রভৃতি।

অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন (এএসএফ)-এর তথ্য অনুযায়ী গত ১৯ বছরে প্রায় দেড় হাজার নারী ও শিশু অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। এই অপরাধের দায়ে সাজা হয়েছে মাত্র ৩৪৩ জনের। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী অ্যাসিডের মামলায় গত ১৬ বছরে ১৪ আসামীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত কারও সাজা কার্যকর করা হয়নি। অ্যাসিড অপরাধ দমন আইন, ২০০২ অনুযায়ী ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার কথা বলা আছে।

জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। দেশটিতে নারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত কোটি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সূচকে গত এক দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। গত এক দশকে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে, নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত হয়েছে, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে নারীর প্রবেশ ঘটেছে।
তবে, দুর্ভাগ্যক্রমে এই অগ্রগতির যাত্রার মধ্যেও এদেশের নারীরা নানাভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১১ এর প্রতিবেদন দেখা যায়, এ দেশের ৮৭ শতাংশ নারী ও কন্যা শিশু সহিংসতার শিকার হচ্ছে। লিঙ্গভিত্তিক অসমতার সূচকে ১৮৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম।

বাংলাদেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ১৯৮৩ সালে প্রথম প্রণীত হয় নারী নির্যাতন (ন্যূনতম শাস্তি) অধ্যাদেশ ১৯৮৩ (১৯৮৩ সালের ৬০ নম্বর অধ্যাদেশ)। অন্যান্য আইনের ওপর প্রাধান্য দিয়ে প্রণীত এই আইনটিতে মোট নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিতকরণ ও এর শাস্তি নির্ধারণ করার বিধান আছে এবং ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ছাড়াও বখাটেদের উৎপাতের জন্য দন্ডবিধি আইন প্রচলিত আছে। প্রচলিত আইনে বখাটেদের যে শাস্তির বিধান আছে তা হলো- ঢাকা মহানগর পুলিশ আইনের ৭৬ ধারা ও দ-বিধির ৫০৯ ধারা অনুযায়ী এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদ-সহ ২ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ নম্বর ধারায় যৌন নিপীড়ন ও শ্লীলতাহানীর জন্য ১০ বছরের কারাদ- দেয়ার বিধান আছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এই নির্যাতন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সমাজে বসবাসরত সকল শ্রেণীর মানুষকে সচেতন করতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ তার সাড়ে সাত কোটি নারী ও কন্যা শিশুর জন্য অনুকূল পরিবেশে সৃষ্টি করতে পারে, যাতে তারা দেশের সামগ্রিক উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে।
সুত্র: মুসলিমা খাতুন ॥ (বাসস)।

 

এক দিনের রেসিপি


ঘরকন্যা


করলা ভাজি

উপকরণ,

১. বড় সাইজের করলা ২টি,
২. কাঁচা মরিচ,
৩. পেঁয়াজ ৪টা,
রসুন কয়েকটি কোয়া,
৫. লবণ স্বাদমতো ও তেল ৪ টেবিল চামচ।

প্রণালি, করলা পাতলা করে কুচিয়ে নিন। এবার চুলায় তেল গরম হলে পেঁয়াজ, রসুন ও মরিচ দিয়ে একটু ভেজে হালকা লাল হলে করল্লা দিন। লবণ দিয়ে নেড়ে অল্প সময় ঢেকে রাখুন। চুলায় রেখে ভাজা ভাজা হলে তুলে নিন। করলা বেশি নাড়বেন না।

মাছের ভাজি

উপকরণ,
১. ছোট মাছ ৫০০গ্রাম,
২. পেঁয়াজ কুচি ১.৫ কাপ,
৩. কাঁচা মরিচ পরিমাণ মত,
৪. হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ,
৫. মরিচ গুঁড়া হাফ চামচ,
৬. তেল ৩ টেবিল চামচ,
৭. ধনেপাতা ও লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি,  কড়াই গরম হলে তাতে তেল দিন। কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে নাড়ুন। একটু পানিতে মসলাগুলো গুলিয়ে ঢেলে দিন। তারপর একটু পানি দিয়ে মসলা কষিয়ে মাছ ঢেলে দিন। ঢেকে রাখুন। পানি শুকিয়ে গেলে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে নিন। আপনি ভাজাভাজা পছন্দ করলে লালসে রং হলে নামিয়ে ফেলতে পারেন।

পোড়া বেগুন ভর্তা

উপকরণ,
১. বেগুন পোড়া ১টি,
২. শুকনা মরিচ ২টি,
৩. পিঁয়াজ হাফ কাপ,
৪. লবণ স্বাদমতো ও সরিষার তেল ১ চা-চামচ।

প্রণালি, পোড়া বেগুন করতে পারেন গ্যাসের চুলাতেই। পোড়া অংশ পরিষ্কার করে ফেলে চটকে নিন। লবণ, মরিচ, পেঁয়াজ ও তেল দিয়ে একসঙ্গে ডলে নিয়ে বেগুন দিন। সব একসঙ্গে মিশিয়ে আবার খানিকটা চটকে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে বেগুন ভর্তা।

 

৯ বন্ধু মিলে গলা টিকে হত্যা করল তরুণীকে


নারী সংবাদ


৯ বন্ধু মিলে শ্বাসরোধে হত্যা করে এক তরুণীকে। ঘটনার ২০ দিন পর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত জুয়েল আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে। জুয়েলকে গ্রেফতারের পর গত মঙ্গলবার আদালতে তোলা হয়। সে ১৬৪ ধারায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবিরের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেয়। জবানবন্দীতে জুয়েল জানায়, সে এবং তার আট বন্ধু মিলে তরুণীকে হত্যা করেছে। যৌনকর্মের পর টাকা নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে তারা শ্বাসরোধে ওই তরুণীকে হত্যা করে। তবে তরুণীর নাম ঠিকানা জানা যায়নি।

গত ৮ জানুয়ারি অসামাজিক কাজ করার জন্য রাতে রাস্তা থেকে ২২ বছরের এক তরুণীকে ফতুল্লার ভোলাইলের একটি মাঠে নিয়ে যায় জুয়েল ও তার বন্ধুরা। পরে টাকা নিয়ে ওই তরুণীর সাথে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। একপর্যায়ে জুয়েল ও তার বন্ধুরা মিলে মেয়েটিকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই তরুণীকে হত্যা করে মাঠেই ফেলে রেখে যায় তারা। গত ৯ জানুয়ারি ওই তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার ২০ দিনের মাথায় জুয়েলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

জুয়েল জবানবন্দীতে জানান, ওই রাতে তারা ৯ জন ছিল। টাকা নিয়ে ঝামেলা হওয়াতে একপর্যায়ে সবাই মিলে ওই তরুণীকে খুন করে। জুয়েল আদালতে বাকি আসামিদেরও নাম প্রকাশ করেছে। গ্রেফতার জুয়েল ভোলাইল এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (আইসিপি) গোলাম মোস্তফা জানান, আসামি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছে ও কিলিংমিশনে থাকা বাকিদের নাম জানিয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে সবার নাম প্রকাশ করা সম্ভব নয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেফতার ও নিহতের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।
সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

করি পুষ্প রে বিকশিত-৩


আফরোজা হাসান


সেটা কিভাবে?

হেসে, এই যে মুসআব আর মাশফিয়া কিছু করার আগে চিন্তা করে তোমার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। এই চিন্তাটাই যদি ওদের আল্লাহকে ঘিরে হত তাহলে ব্যাপারটা কেমন হত ভেবে দেখো! বাবা-মার কাছে চাইলেই কোন কিছু গোপন করা যায়, মিথ্যা বলা যায়। কিন্তু এটা শিশুরাও জানে যে আল্লাহর কাছে কিছুই গোপন রাখা সম্ভব নয়। আল্লাহ সবকিছু জানেন ও দেখেন। আমি তো আসফিনকে এভাবেই ভাবতে শিখিয়েছি। ভাবী এই কথা তো আমরা খুব ভালো করে জানি যে মানুষকে খুশি করা কতটা কঠিন। আর মানুষকে খুশি করার প্রবনতা যে কোন মুহুর্তে ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে। তাই ছোটবেলা থেকেই বাবা-মার উচিত সন্তানদের ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে যাতে আল্লাহ থাকেন সেই চেষ্টা করা। কোন কিছু করার আগে যাতে ওদের মনে এই চিন্তার উদ্রেক হয় এরফলে আল্লাহর প্রতিক্রিয়া কেমন হবে।

হুম…আসলেই আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে এই ব্যাপারে। আমি বাচ্চাদেরকে নিয়ে ভীষণ ভয়ের মধ্যে আছি।

অন্তরা হেসে বলল, সন্তানের শৈশবে বাবা-মার প্রথম উল্লেখযোগ্য কাজ সমূহের মধ্যে প্রথমেই থাকা উচিত ওদের কচি মনে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার বীজ বুনে দেয়া। তারপর নিয়মিত আদর-যত্নের মাধ্যমে সেই বীজ থেকে চারা, চারা থেকে পুস্পকে বিকশিত হতে সহায়তা করা। ইনশাআল্লাহ আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করবো ভাবী। এখন আগে চলো পিজা বানাতে সাহায্য করি তোমাকে। তুমি প্লিজ আমার জন্য একটু চা করো।

হেসে ননদের জন্য চায়ের আয়োজনে মন দিলো নায়লা। কিছুটা স্বস্থি বোধ করছে এখন। ফুপ্পিকে প্রচন্ড ভালোবাসে মুসআব আর মাশফিয়া। আর শুধু নিজের বা পরিবারের বাচ্চারাই না, দুনিয়ার সব বাচ্চাদের ঘিরে অন্তরার মনে বয়ে চলে মায়া-মমতা ও ভালোবাসার নিরবধি ঝর্ণাধারা। আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা যে কোন কাজকে অনেক বরকতময় করে দেয়। কারণ তাতে সমন্বিত থাকে আল্লাহর রাহমাহ।

@
নাস্তা করতে এসে টেবিলে পিজা দেখে বিশাল হাসি ফুটে উঠলো মুসআবের চেহারাতে। ছুটে এসে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলো। নায়লাও আদর করে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। তাশফিন আর মাশফিয়ারও পিজা অনেক পছন্দ। দেরি না করে তিনজনই তাই বসে গেলো নাস্তা করতে। তাড়াহুড়া করে গরম পিজাতেই কামড় বসিয়ে দিলো মুসআব। সাথে সাথেই চিৎকার করে উঠলো। কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, খুব জ্বালা করছে মুখ। মনেহয় আমার জিভ পুড়ে গিয়েছে।

তাশফিন আনন্দিত কণ্ঠে বলল, মুসআব ভাইয়া মামীর কাছে কথা গোপন করে তুমি যে দুষ্টু কাজ করেছিলে সেটা আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ বলো।

কেন এমন করো বাবা? জানোই তো যে অনেক গরম! বলতে বলতে ছেলের দিকে ছুটে যাচ্ছিলো নায়লা কিন্তু তাশফিনের কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেল। হাসি চেপে একরাশ কৌতুক ভরা চোখে অন্তরাও তাকালো ছেলের দিকে।

মাশফিয়া বিরক্ত কণ্ঠে বলল, তাশফিন তুমি সবসময় শুধু বেশি কথা বলো। ভাইয়ার জিভ পুড়ে গিয়েছে আর তুমি বলছো আল্লাহ দুষ্টু কাজ মাফ করে দিয়েছেন। আর দিলেও তুমি কিভাবে জানো? ছোট্ট বয়সে বাচ্চারা অ্যাঞ্জেল থাকে। তুমি এখন আর অ্যাঞ্জেল নাই। তুমি হচ্ছো মহা পাজী।

তাশফিন নিজের স্বপক্ষে প্রবলভাবে মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল, আপ্পি আমি সত্যি বলছি। তুমি আম্মুতাকে জিজ্ঞেস করো। আমি মাছ খেতে গিয়ে গলায় কাঁটা বেঁধে গিয়েছিল। আমি অনেক কান্না করছিলাম। আম্মুতা তখন আমাকে বলেছিল, “রাসূল(সঃ বলেছেন, মুসলিমদের যে কোন অসুখ, মনখারাপ, এমনকি কাঁটা বিধলেও সে কারনে আল্লাহ্ তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন।” আমি তখন আর কান্না করিনি। পরে ডক্টর আঙ্কেল আমার কাঁটা বের করে দিয়েছিলেন। ঠিক বলেছি না আম্মুতা?

অন্তরা হেসে বলল, হ্যা বাবা তুমি একদম ঠিক বলেছো। আচ্ছা এখন তোমরা খেয়ে চাপ চুপচাপ। পরে তোমাদের সবাইকে বুঝিয়ে বলবো এই বিষয়ে, ইনশাআল্লাহ। এখনো অনেক গরম তাই আস্তে আস্তে সাবধানে খাও।

চলবে…..

 

প্রেমিক’ ও সহযোগীদের গণধর্ষণের শিকার এসএসসি পরীক্ষার্থী


নারী সংবাদ


রাজবাড়ী জেলা শহরে ড্রাইআইস ফ্যাক্টরি এলাকায় এক এসএসসি পরীক্ষার্থী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। ওই ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে পাঁচ ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে।

এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ওই ছাত্রী বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে রাজবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। মেয়েটি বর্তমানে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো, সুজন খা, আল আমিন ফকির, আকাশ সরকার, ফজলুর রহমান ও বাবু ব্যাপারী। তবে এজাহারভুক্ত আসামি মোস্তফা ফকিরকে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এদের সকলের বাড়ি জেলা শহরের ড্রাইআইস ফ্যাক্টরি ও বড়লক্ষিপুর গ্রামে।

রাজবাড়ী থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, প্রায় ৪ মাস আগে সুজন খা’র সাথে ওই ছাত্রীর পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই সম্পর্কের অংশ হিসেবে গত সোমবার বিকালে সুজন জেলা শহরের ড্রাইআইস ফ্যাক্টরি এলাকার একটি পরিত্যক্ত মেসে নিয়ে যায় ওই ছাত্রীটিকে। সেখানে সে ও তার সহযোগীরা মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। সে সময় বাঁচতে মেয়েটি কান্নাকাটি করে।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেই সাথে রাজবাড়ীর এসপি আসমা সিদ্দিকা মিলির নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে তারা ওই পাঁচজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

ধর্ষিতা শিশুর মায়ের আহাজারি


নারী সংবাদ


‘আমার মা কই। তোমরা আমার মায়েরে ফিরায়া দাও। কে আছো আমার পাশে, দেখ আমার মা (ব্যানারের ছবি দেখিয়ে) সবার দিকে তাকিয়ে হাসছে। কোথায় আমার সরকার। আমারে সাহায্য করতে বলো। আমি আমার মায়ের ধর্ষণকারীর বিচার চাই, ফাঁসি চাই। আসামির হয়ে সবাই আমারে হুমকি দেয়, টাকা নিয়া পুলিশও আসামির পক্ষে কথা কয়। আমার কেউ নাই, আমি কী করুম, কার কাছে বিচার চামু।’ এভাবেই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাথে গতকাল বিলাপ করছিলেন ধর্ষণের পর হত্যার শিকার দুই বছরের শিশু আয়েশা মনির মা রাজিয়া সুলতানা।

গতকাল দুপুর থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তিনি প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে ধর্ষকের বিচার দাবি করেন। তিন শিশুসন্তান নিয়ে অবস্থানের পুরো সময়টাই তিনি চিরতরে চলে যাওয়া সন্তানের স্মৃতিচারণ করে পাগলের মতো বিলাপ করছিলেন। অনেকে এসে তার আর্তনাদ থামাতে পারেননি। অবশেষে পুলিশ অনেক বুঝিয়ে রিকশায় তুলে দিয়ে তাকে গেণ্ডারিয়ায় বাড়িতে পাঠায়।

এর আগে রাজিয়া সুলতানা সাংবাদিকদের প্রশ্নে জানান, তার মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যাকারী এলাকায় খুব প্রভাবশালী। তাকে পুলিশ আটক করলেও সে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে তার স্বামী মো: ইদ্রিস তাকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেছে। অবশেষে তিনি স্বামীর অগোচরে এখানে এসেছেন। তার ধারণা ধর্ষকের বিচার হবে না। সে যেকোনো সময় বের হয়ে তার এবং সন্তানদের ক্ষতি করবে।

গত ৫ জানুয়ারি রাজধানীর গেন্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডের ৫৩/১/ছ নম্বর চারতলা বাড়ির পাশে টিনশেড বস্তিতে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় শিশু আয়েশা মণিকে। মা-বাবা ও তিন বোনের সাথে থাকত শিশুটি। প্রতিদিন সকালে আয়েশার মা-বাবা কাজে যেতেন। এ সময় গেন্ডারিয়ার সাধনা ঔষধালয়ের সামনের গলিতে খেলে বেড়াত শিশুটি। অন্য দিনের মতো বিকেলে খেলতে বের হয় আয়েশা। সন্ধ্যার দিকে টিনশেড বস্তির পাশের চারতলা বাড়ির সামনে আয়েশার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। আয়েশার পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। চারতলা বাড়ির চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া নাহিদ (৪৫) শিশুটিকে ধর্ষণ করে। পরে ভবনের তিনতলা থেকে নিচে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় ৬ জানুয়ারি শিশুটির বাবা ইদ্রিস আলী বাদি হয়ে গেন্ডারিয়া থানায় একটি মামলা করেন। এরপর নাহিদকে আটক করে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গেন্ডারিয়া থানার এসআই হারুন অর রশিদ। নাহিদ স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু পরে নাহিদ জবানবন্দী দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর ঢাকা মহানগর হাকিম নিবারা খায়ের জেসি তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

শিশুদের সাথে সংলাপ


কানিজ ফাতিমা


কথা বলুন! আপনার সন্তানের সাথে আলোচনা করুন যে কোনো বিষয়ে এবং সকল বিষয়ে, আপনি সারা দিনে কী করেছেন তা নিয়ে, বিভিন্ন বিষয়ে আপনার অনুভূতি কী এবং আপনার সন্তান এটা-সেটা নিয়ে কী ভাবছে সে বিষয়ে। যোগাযোগকে অগ্রাধিকার দিন; আপনার সন্তানকে চিনুন, জানুন। আপনি আপনার চিন্তাকে কিভাবে প্রকাশ করছেন তা আপনার সন্তানের জানা জরুরী। সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো ছাড়াও ভাষার উন্নয়ন এবং স্পষ্টভাষিতার জন্যও কথা বলা জরুরী। আপনাকে যাতে ‘বিরক্ত’ না করতে পারে সেইজন্য দূরে রাখার উদ্দেশ্যে টেলিভিশন, ইন্টারনেট অথবা কম্পিউটার গেম দিয়ে তাকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন কথা বলার অভাবের ফল হলো নির্জীব মেধা এবং জড়তা।

যোগাযোগের মধ্যে যেমন থাকা উচিত গুরুগম্ভীর আলোচনা তেমনি এবং পারস্পরিক হাসি-কৌতুক। মা-বাবার অবশ্যই সন্তানদের সাথে হাসি-কৌতুক এবং খেলাধুলা করা উচিত। কারণ হাসি-কৌতুক সম্পর্ক মজবুত করে এবং একঘেয়েমি ভাব দূর করে। অনেকসময় বাচ্চাদেরকে বড় করার কাজে বাবা-মা এত বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, তারা এ বিষয়টিকে উপভোগ করতে ভুলে যান । এটা একটি বড় ভুল। শিশুদের ভুবন আনন্দ আর খেলায় পরিপূর্ণ। তাদের আনন্দ করার এবং খেলাধুলার চাহিদা অসীম। সেসব বাবা-মা বাচ্চাকে নিয়ে খেলতে বা বাইরে ঘুরতে যাওয়ার বদলে টিভি বা কম্পিউটারে মুখ গুজে পরে থাকতে পছন্দ করেন বাচ্চারা তাদের প্রতি বিরক্ত হয়। জীবন যখন নানামুখী চাপ আর উদ্বেগে পরিপূর্ণ, তখন শিশুরাই পারে কিছুক্ষণের জন্য হলেও চাপ কমানোর সর্বোত্তম ওষুধ দিতে (মা-বাবাকে তাদের শিশুসুলভ জগতে হারিয়ে যেতে সাহায্য করার মাধ্যমে)। কিছু মা-বাবা মনে করেন বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা নিজেদের গাম্ভীর্য ও সিরিয়াস ব্যক্তিত্বের জন্য ক্ষতিকর; এর মানে হলো জীবনের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কাজকে অবহেলা করা। বাস্তবতা হলো, আপনি যখন শিশুদের সাথে হাসেন, তখন তারা আপনার সঙ্গে সহজ ও নির্ভয় হতে ভরসা পায়। এতে আপনার সঙ্গে তাদের ভালোবাসার এক অদৃশ্য বন্ধন তৈরী হয় এবং বাচ্চারা তাদের আত্মপ্রকাশে সাবলীল হয়। কৌতুক এবং হাসি-ঠাট্টা করা যোগাযোগের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

অনুবাদ Parent Child Relations

 

সন্তানদের জিম্মি করে গৃহবধূকে ধর্ষণ


নারী সংবাদ


সাতক্ষীরার তালায় দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধূ ধর্ষনের শিকার হয়েছে। রোববার ভোর রাত ২টার দিকে তালা উপজেলার বালিয়াদহ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ধর্ষিতা গৃহবধূকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ধর্ষক পলাতক রয়েছে।

ধর্ষকের নাম মোঃ মনিরুল সরদার (৩০)। তালা উপজেলার বালিয়াদহ গ্রামের মোঃ আফছার আলী সরদারের ছেলে।

গৃহবধূর চাচা স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা করিম সরদার জানান, গৃহবধূর স্বামী বরিশালে একটি ইটভাটায় কাজ করেন। স্বামী বাড়ি না থাকার সুযোগে প্রতিবেশী লম্পট ও মাদক ব্যবসায়ী মনিরুল তাকে প্রায়ই উত্তক্ত করতো। এরই জের ধরে রোববার ভোর রাত ২টার দিকে মনিরুল লোহার সাবল দিয়ে দরজার ছিটকিনি ভেঙ্গে গৃহবধূর ঘরে ঢোকে।

এসময় সে গৃহবধূর দুই সন্তান সুমনা (৭) ও সোহানাকে (আড়াই বছর) ছুরি দিয়ে হত্যা করার ভয় দেখিয়ে তাকে জোর পূর্বক ধর্ষন করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। ডাক্তারি পরিক্ষা শেষে বর্তমানে সেখানে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় ধর্ষিতার স্বামী আলামিন সরদার থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তিনি জানান।

তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী রাসেল জানান, বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি। তবে, এ ঘটনায় থানায় এখনও পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

সুইসাইড প্রতিক্রিয়া


হাবিবা মৃধা


সুইসাইড নিয়ে অনেক গবেষণা প্রবন্ধ বই বের হয়েছে, প্রতিরোধী অনেক সংগঠন কাজ করছে। তাছাড়া পবিত্র কোরআন ও হাদীস শরীফে অসংখ্য নিষেধাজ্ঞা বাণী এসেছে।মহান আল্লাহ বলেনঃ
তোমরা নিজেদের হত্যা করোনা! অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু!
যে কেউই বাড়াবাড়ি ও যুলুম করতে গিয়ে এই হত্যার কাজ করে অচিরেই আমি তাকে আগুনে পুড়িয়ে দিব, আল্লাহর পক্ষে এটা একেবারেই সহজ!
সুরা নিসা(আয়াত আংশিক ২৯ -৩০)

আবু হোরায়রা [রা.] থেকে বর্ণিত মহানবী [সা.] বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে অনুরূপভাবে আত্মহত্যা করতেই থাকবে এবং এটিই হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সর্বক্ষণ বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢুকাতে থাকবে, আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।’ [বোখারি ও মুসলিম]

সুইসাইড প্রতিক্রিয়ায় কেন জানি আমি কিছু লিখতে গেলেই থেমে যাই, আমার কাছে মনে হয় ধর্মীয় চিন্তা, আল্লাহর প্রতি ভরসা বা ভয় কোনটিই থাকেনা তার!শুধু পৃথিবীর অনিয়ম অনাচারের প্রতি ক্ষোভ রেখে নিজেকে সরিয়ে নেয়।

কয়েকমাস আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লাইফকেয়ার হাসপাতালের ছাদ থেকে সন্তান ফেলে দিয়ে, পরে মায়ের ও একই ভাবে আত্মহত্যার ভিডিও দেখেছিলাম ২৪ এর নিউজে।

রিপোর্টে দেখলাম সিজারের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে মা মেয়ের বাকবিতণ্ডা এবং প্রবাসী স্বামীর দ্বায়িত্ব অবহেলায় এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে!
একজন মা একটা সন্তান কত কষ্টে পৃথিবীতে এনে আবার নিজ হাতে শেষ করে দিতে পারেন? যাদের প্রতি ক্ষোভে এরকম করলেন তাদের আদৌ কিছু হবে কি?

কোরিয়ান একটা ভিডিও পাঠিয়েছিল কে যেন, সেখানে দৃশ্য ছিল সদ্যভূমিষ্ট মৃতবাচ্চাটা কোলে নিয়ে আদর করছেন মা! কারণ একজন মা ই কেবল অনুভব  করেন মাতৃত্ব ও এর পিছনের কষ্টের গল্প গুলো!

গত ডিসেম্বরে চাঁদ পুরে ফুটফুটে দুই সন্তান ও স্ত্রী সহ যে যুবক আত্মহত্যা পূর্ববর্তী ভিডিও আপলোড করেন সেখানে বলেন  আমার পরিবারের এ অবস্থার জন্য শশুর বাড়ির লোকজন দায়ী!

আজ আবার একজনকে বলতে শুনলাম তার সহকর্মীকে উদ্দেশ্য করে ভাই আমার কিছু হয়ে গেলে অমুক দায়ী, আপনি সাক্ষী থাকেন!
আমার প্রশ্ন হল মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা
কেন আসছে যে চলে গেলেই কেউ  দায়ী থাকে? আর দায়ী থাকলেও তো যে চলে যায় তার কোনকালে দেখার সুযোগ হলোনা!
সম্প্রতি আত্মহত্যা প্ররোচনাকারী ও আত্মহত্যা চেষ্টা কারী উভয়ের জন্যই শাস্তির বিধান চালু হয়েছে! কিন্তু সে বিধান কতটুকু কার্যকর তা প্রতিদিন আত্মহত্যার গড় রিপোর্ট দেখলে বোঝা যায় !

মরে গেলেই কেহ অমর হয়ে যায়? আর যারা সৃষ্টি কর্ম দ্বারা অমর হয়ে আছেন তাদের ই তো এজাতির মনে রাখার সময় নেই! ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ সবার প্রতি ক্ষোভ আর নিজের প্রতি ঘৃণা নিয়ে কেউ চলে গেল তবে সমাজের কি হল?

এনিয়ে যারা কাজ করছেন তারও হয়ত এ প্রশ্ন খুঁজছেন! প্রথমত সমাজ সচেতনতা জরুরী ব্যক্তি স্বার্থে যারা মানুষকে অন্ধকুপে ঠেলে দেয় তাদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন দরকার
দ্বিতীয়ত মানুষের মধ্যে মৃত্যু পরবর্তী শাস্তি অনুভব করানো।

আত্মহত্যা মহাপাপ একথা সকল ধর্ম স্বীকৃত এমনকি অনেক আত্মহত্যাকারীর শেষ বক্তব্য ও এটা।
প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে কতজন কতভাবে চলে যাচ্ছে, কেউ যে ফিরছেনা এও স্বীকার করছি তবে কেন মৃত্যুকে এত সহজ মনে হয়?
ক্ষনিকের নরক থেকে বাঁচার জন্য মানুষ চিরস্থায়ী জাহান্নামে জায়গা করে নেয়।

মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় কথায় কথায় যারা মরে যাবার কথা বলে তাদের মৃত্যুপরবর্তী শাস্তি দুনিয়ায়  প্রাকটিকাল দিয়ে বোঝানো।
কেউ যেমন নিজের ইচ্ছায় পৃথিবীতে আসেনি, তাকে যে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা পালনের শেষ চেষ্টা পর্যন্ত তিনি চলে যাবার অধিকার রাখেন না।পৃথিবীতে অনেক মানুষ সর্বহারা হয়েও জীবনযুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন কারণ আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হতে পারলে চিরসুখী জান্নাত কি করে অর্জন হবে।

একজন মানুষ যখন ক্ষয়ে যেতে শুরু করে, ভিতরে ভিতরে  মরে যায় দিনের আলোয় তারাও স্বাভাবিক মানুষ! তখন প্রয়োজন চারপাশের মানুষের সহযোগিতা কিন্তু আমরাই শেয়ার করিনা অথবা শেয়ার করার মত আস্হাবান জায়গা পাওয়া যায়না।

ঢাবি শিক্ষিকা তাওহীদা আপুর প্রতিটা লেখায় তার আত্মহত্যাকারী ভাইয়ের প্রতি করুণ আকুতি প্রকাশ পায়! ভাই কি জানতনা যে তার চলে যাওয়া আপনজনদের অস্বাভাবিক জীবনে ঠেলে দিবে?

হ্যা জানলেও তার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের জবাব তিনি এভাবে দিয়েছেন?
আসলে কি তাই হয়েছে?

যুক্তরাষ্ট্র তারকা মেরেলিনা আত্মহত্যা পরবর্তী সময়ে যেমন সেখানকার স্বেচ্ছায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে  গিয়েছিল ঠিক বাংলাদেশেও মিডিয়ায় প্রচার, ফেসবুকে ডিপ্রেশন স্ট্যাটাস,  মৃত্যু পূর্ববর্তী ভিডিও আপলোড আত্মহত্যা প্ররোচনা হিসাবে কাজ করছে! যে সকল মিডিয়া
আত্মহত্যা কারীদের সাহসী হিসাবে তুলে ধরেন তাদের প্রতি ধিক্বার জানাই!

মানুষকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিচার না করে সাধারণ জীবনেও যে বেঁচে থাকার সৌন্দর্য আছে এজায়গা গুলো নিয়ে কাজ করা দরকার, মৃত্যুই শেষ কথা নয়! বেঁচে থাকতে যাদের মুল্যায়ন পাওয়া যায়নি মরে গেলেও তাদের কিছু আসে যায়না।

এমনকি আমাদের সমাজ, বিচার কোন কিছুতে তাদের নুনতম অনুশোচনা ও আসবেনা! সাময়িক জেদ /ক্ষোভ/অভিমানে নিজেকে ধ্বংস করা ছাড়া আর  কিছুই না।

নিজের জন্য বাঁচতে হয় নয়ত পরিবার সমাজের জন্য! সমাজের যে জায়গাগুলো পঁচন ধরছে বেঁচে থেকেই তার প্রতিষেধক হতে হবে! একজনের অনুপস্থিতিতে দিনশেষে কেউই দায়ী থাকেনা ঠিক কবরেও কেহ কারো শাস্তি ভোগ করবেনা।

 

করি পুষ্প রে বিকশিত-২


আফরোজা হাসান


আম্মুকে মন খারাপ করে বড় ভাইয়ার সাথে কথা বলতে দেখে বই নিয়ে পড়তে বসে গেলো মাশফিয়া। কিছুক্ষণ যেতেই মনে মনে অস্থির হয়ে উঠলো। এখনো আসছে না কেন ভাইয়া? কি এত কথা বলছে আম্মুর সাথে? সেকি গিয়ে দেখবে? কিন্তু আম্মু বলে দিয়েছে যখন একজনের সাথে কথা বলা হয় তখন যাতে অন্যজন সেখানে না যায়। মামীমা কি মুসআব ভাইয়াকে মারবে আপ্পি? প্রশ্নটা শুনে পাশে বসে থাকা দুই বছরের ছোট ফুপাতো ভাইয়ের দিকে তাকালো মাশফিয়া। চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে জবাবের অপেক্ষা করছে তাশফিন।

মাশফিয়া বিরক্ত কন্ঠে বলল, আম্মু কখনোই আমাদেরকে মারে না বুঝেছো?

ডানে বামে মাথা নাড়াতে নাড়াতে তাশফিন বলল, আমার আম্মুতাও আমাকে কক্ষনো মারে না। কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলল, আপ্পি মুসআব ভাইয়া পঁচা কাজ করেছে তাই না? আম্মুতাকে সব বলতে হয়। আমি আম্মুতাকে সব বলি।নয়তো আল্লাহ বিরক্ত হন।আর আল্লাহ বিরক্ত হলে মারা যাবার পর আমাদেরকে জান্নাত দেবেন না। জান্নাতে যেতে না পারলে তো সব শেষ। আমি কত কিছু লিখে রেখেছি জান্নাতে গিয়ে আল্লাহর কাছে চাইবার জন্য।

মাশফিয়া বিরক্ত কণ্ঠে বলল, তুমি কথা বেশি বলো, বুঝেছো? মুসআব ভাইয়া আর আমিও আম্মুকে সব বলি। মুসআব ভাইয়া আম্মুকে কষ্ট দিতে চাইনি তাই ক্লাসে মারামারি করার কথা বলেনি।

তাশফিন মনখারাপ করে বলল, আম্মুতা বলেছে কোন কাজ করার আগে ভেবে দেখতে সেটা করলে আল্লাহ খুশি হবেন নাকি কষ্ট পাবেন! কারণ আম্মুতা-বাবা আমাকে সবসময় দেখতে পায় না। কিন্তু আল্লাহ সবসময় আমাকে দেখতে পায়। তাই আমাকেও আল্লাহর খুশি আর কষ্ট দেখতে হবে।তুমি জানো আমাদের দুই কাঁধে দুইটা অ্যাঞ্জেল আছে? তারা সবকিছু লিখে রাখেন। তুমি যদি চুপিচুপি কিছু করো সেটাও লিখে ফেলেন। আর অ্যাঞ্জেলরা কক্ষনো ঘুমায়ও না। বলে লম্বা একটা দীর্ঘাশ্বাস ছাড়ল তাশফিন।

মাশফিয়ার বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে ভাতিজী আর ছেলের কথোপকথন চুপচাপ শুনছিল অন্তরা। ছেলের দীর্ঘশ্বাস শুনে হেসে ফেললো। উঠে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বলল, অ্যাঞ্জলরা ঘুমায় না বলে কি তোমার মনখারাপ লাগে তাশফিন?

তাশফিন বলল, মাঝে মাঝে একটু একটু লাগে আম্মুতা?

অন্তরা হেসে বলল, তারমানে তো তোমারো অনেক দুষ্টু কাজ করতে ইচ্ছে করে?

মনের ইচ্ছারা আম্মুতার কাছে ধরা পরে যাচ্ছে বুঝতে পেরে নিজেকে তাড়াতাড়ি সামলে নিলো তাশফিন। কথার মোড় ঘুরিয়ে দেবার জন্য বলল, আজ আমি যে গল্পটা পড়েছি সেটা থেকে কি শিখেছি জানো আম্মুতা?

অন্তরা হাসি চেপে বলল, কি শিখেছো?

কখনোই আমাদের স্বার্থপর হওয়া উচিত না। স্বার্থপর হয়ে অন্যের ক্ষতি করতে গেলে নিজেরই ক্ষতি হয়।

অন্তরা বলল, মাশাআল্লাহ। অনেক সুন্দর কথা শিখেছো তো। আচ্ছা এখন তুমি লিখো যে পুরো গল্পটা থেকে তুমি কি বুঝেছো। রাতে আমরা বাসায় ফেরার পর আম্মুতা দেখবো, ইনশাআল্লাহ।

বিছানা থেকে নেমে মাশফিয়া আর তাশফিনকে আদর করে দিয়ে রুম থেকে বের হলো অন্তরা। করিডোরে মুসআবের সাথে দেখা হলে ফুপ্পিকে জড়িয়ে ধরলো মুসআব।

অন্তরা আদর করে বলল, কি আম্মু বেশি বকা দিয়েছে?

মুসআব বলল, না আম্মু কিছুই বলেনি। তুমি কিন্তু আজ যেতে পারবে না ফুপ্পি। আরো দু’দিন থাকতে হবে তোমাকে।

হাত দিয়ে মুসআবের চুল এলোমেলো করে দিয়ে অন্তরা হেসে বলল, আচ্ছা এই ব্যাপারে আমরা পরে কথা বলবো। তুমি যাও হোমওয়ার্ক সেরে ফেলো। এরপর আমরা সবাই মিলে পার্কে ঘুরতে যাবো।

রান্নাঘরে ঢুকে পিজা বানানোর জন্য সবকিছু তৈরি করছিল নায়লা। দরজায় নক শুনে তাকিয়ে ননদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, সেকি তুমি উঠে এলে কেন? তোমার না মাথা ব্যথা করছে বলে ঘুমোতে গেলে কিছুক্ষণ!

অন্তরা রান্নাঘরে ঢুকে হেসে বলল, ঘুমিয়েছি কিছুটা। মাথা ব্যথাও কমে গিয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। পিজা বানানো হবে বুঝি?

নায়লা বলল, হুম…মুসআবের খুব পছন্দ। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আচ্ছা অন্তরা আমার চেহারাটা কেমন বলো তো?

অন্তরা হেসে বলল, মাশাআল্লাহ একদম পরে না চোখের পলক ধরনের। সাধে তো আর আমার ভাইয়া এমন পাগল না তোমার জন্য।

নায়লা হেসে বলল, ধাৎ, তোমার সবকিছুতেই শুধু দুষ্টুমি। আমি বুঝি না আমার চেহারাতে এমন কি আছে যার কারণে বাচ্চারা আমাকে এত ভয় পায়। তুমি জানো মুসআব ওর কথা গোপন করার পেছনে কি কারণ বলেছে?

আমি জানি ভাবী। মুসআবের সাথে আমার কথা হয়েছে। আমার তো মনেহয় এখানে তোমার মন খারাপ না করে বরং আনন্দিত হওয়া উচিত তোমার বাচ্চারা তোমাকে এতটা ভালোবাসে যে তোমাকে কষ্ট দিয়ে চায় না। ভাবী বাচ্চাদের মনের এই ভালোবাসাটাই যদি তুমি আল্লাহর দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারতে তাহলেই অনেক সমস্যা কমে যেত।

 

বাচ্চাদের সাথে সক্রিয় সময় কাটান


কানিজ ফাতিমা


মা-বাবা অনেক সময় দাবি করেন যে, তারা তাদের বাচ্চাদের সাথে প্রচুর সময় কাটান। আসলে তারা যেটা বোঝাতে চান, তা হলো তারা তাদের বাচ্চাদের ‘সাথে’ নয়, বরং তাদের কাছাকাছি থাকেন।

অর্থাৎ তাদের বাচ্চারা যে ঘরে আছে, তারাও সে ঘরেই আছেন; কিন্তু টিভি দেখছেন, পড়ায় মগ্ন আছেন, ফোনে আছেন, ই-মেইল চেক করছেন অথবা অন্য মেহমানদের সাথে আলাপ করছেন।

দরকার হচ্ছে বাচ্চাদের সাথে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা। এ কথার মানে হলো একসাথে পড়া, একসাথে খেলাধুলা করা, একসাথে ধাঁধার সমাধান করা, একসাথে রান্না করা ও খাওয়া, একসাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা, একসাথে কৌতুক করা, একসাথে বাজার করা, একসাথে বিল্ডিং ব্লক খেলা এবং একইসাথে থালা-বাসন পরিষ্কার করা।

অন্য কথায়, বাচ্চাকে একা ছেড়ে দিয়ে বাচ্চার কাছে থাকা নয়; বরং সক্রিয় অংশগ্রহণ করা এবং বাচ্চার কর্মকান্ডে অংশীদার হওয়া।

একেই বলে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে যথেষ্ট পরিমাণ সময় দেয়া। যাকে খুব সুন্দর সময় বা good quality of time বলা যায়।

আর হ্যা, বেবি সিটিং বা অন্য কারো সময় দান বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের পারস্পরিক কার্যকলাপের বিকল্প হতে পারে না। সুত্র অনুবাদ- হাসান আল তালিব।

 

ফাইটিং ফোর্সের প্রথম ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক হলেন চার নারী


নারী সংবাদ


সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে গতকাল পদোন্নতিপ্রাপ্ত দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের মেজর সানজিদা হোসেন, আর্টিলারি; মেজর সৈয়দা নাজিয়া রায়হান, আর্টিলারি; মেজর ফারহানা আফরীন, আর্টিলারি এবং মেজর সারাহ্ আমির, ইঞ্জিনিয়ার্স লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদের র্যাংক ব্যাজ পরিধান শেষে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সঙ্গে এক ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেন। ছবি : আইএসপিআর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আরেকটি অধ্যায়ের সূচনা হলো। চারজন নারী সেনা কর্মকর্তা প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর আর্টিলারি এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ পেলেন।

সেনাবাহিনীতে পেশাগত দক্ষতা প্রদর্শনে সফল এই চার নারী কর্মকর্তাকে মেজর থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের এত দূর পথ হাঁটার গল্পের শুরু ১৯ বছর আগে অর্থাত্ ২০০০ সালে। ওই বছর ৪৭ বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে প্রথমে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় শুধু পুরুষ কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য। পরে এ কোর্সে নারী কর্মকর্তা নিয়োগের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই কোর্সের জন্য পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মনোনীত হন তাঁরা। পরের বছর জানুয়ারি থেকে তাঁদের দুই বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা নিয়মিত কমিশন লাভ করেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, অধ্যায়টিকে স্মরণীয় রাখতে গতকাল বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে পদোন্নতিপ্রাপ্ত এই চারজন নারী কর্মকর্তাকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদের র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন। এ সময় ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পদোন্নতিপ্রাপ্ত চারজন নারী কর্মকর্তা হলেন আর্টিলারির সানজিদা হোসেন, সৈয়দা নাজিয়া রায়হান ও আর্টিলারির ফারহানা আফরীন এবং ইঞ্জিনিয়ার্সের সারাহ্ আমির।

আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর নারীর ক্ষমতায়নের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে নিয়মিতভাবে নারী অফিসার নিয়োগ করা হচ্ছে। ৪৭তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্স থেকে শুরু হওয়া এই নারী অফিসাররা এরই মধ্যে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে পেশাগত দক্ষতা প্রদর্শনে সফল হয়েছেন। তাঁদের এই সক্ষমতার অংশ হিসেবে চারজন নারী অফিসারকে মেজর থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। ’

জানা যায়, ৪৭তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমানের মেয়েও ছিলেন। ওই কোর্সে মোট ৩০ জন মনোনীত

হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২০০২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম ২০ জন তরুণী নিয়মিত কমিশন লাভ করেন। ওই কোর্সের বাকি ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন ৪৮তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে অংশ নিয়ে প্রশিক্ষণ শেষ করার সুযোগ পান। দ্বিতীয় এ কোর্স শেষে ২০০৩ সালের জুলাইয়ে আরো ২১ জন নারী কমিশন লাভ করেন। এরপর ৪৯তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স শেষে ২২ জন এবং ৫০তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স শেষে আরো ১৩ জন নারী কমিশন লাভ করেন। এরপর প্রতি ছয় মাস পরপরই সেনাবাহিনীতে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেনাবাহিনী ছাড়াও নারী কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ছে নৌ ও বিমানবাহিনীতেও।

সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক হয়ে রয়েছে ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি। এদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথম সংযোজিত ৮৭৯ জন নারী সৈনিকের মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে শপথ গ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীতে মেডিক্যাল কোরে সর্বোচ্চ মেজর জেনারেল পদে রয়েছেন একজন নারী কর্মকর্তা। তিনি হলেন ডা. সুসানে গীতি।

আইএসপিআরের গত বছর ৬ মার্চের তথ্য অনুসারে, সেনাবাহিনীতে ওই সময় নারী কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল চিকিৎসকসহ এক হাজার ২৮০ জনের কাছাকাছি। এ ছাড়া নারী সৈনিকের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৮৬০ জনের কাছাকাছি। ) সুত্র: কালের কন্ঠ।

 

চ্যানেল ২৪-এর নারী নিরাপত্তাকর্মীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা, বাঁচালেন পুলিশ কর্তা


নারী সংবাদ


চ্যানেল ২৪-এর এক নারী নিরাপত্তাকর্মীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা ও মারধরের অভিযোগে আলমগীর নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার ভোর ৬টায় রাজধানীর মহাখালী এলাকার আমতলী ক্রসিংয়ে ওই তরুণী অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় তাকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আলমগীর কুপ্রস্তাব দেয়। এতে ওই তরুণী প্রতিবাদ করায় সড়কেই তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে ওই বখাটে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়, ওই তরুণীকে পিটিয়ে জখম করে বখাটে আলমগীর। এ সময় আশপাশে অনেক সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশাচালক থাকলেও কেউই ওই তরুণীকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। অনেকেই এই দৃশ্য দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, আবার কেউ কেউ দেখে এড়িয়ে চলে যান।

তখনই রাতের ডিউটি শেষে অফিস থেকে গাড়িতে বাড়ি ফিরছিলেন ডিএমপির ক্যান্টনমেন্ট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) তাপস কুমার দাস। এ সময় ওই তরুণীর চিৎকার শুনে এগিয়ে যান তিনি। তরুণীকে উদ্ধার করেন এবং হাতেনাতে আটক করেন বখাটে যুবককে।

এডিসি তাপস কুমার দাস বলেন, গুলশান ডিভিশনের ছয়টা থানার নাইট রাউন্ডে ছিলাম। ভোরে আমতলী দিয়ে যাওয়ার সময় এক তরুণীর চিৎকার শুনতে পাই। দেখি এক যুবক ওই তরুণীকে লাঠি দিয়ে পিটাচ্ছে। তখন বডিগার্ড ও ড্রাইভারসহ আমি নেমে দৌড়ে আলমগীরকে ধরে ফেলি। ওই তরুণীর ঠোঁট দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। তাকে দ্রুত কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠাই।

এ ঘটনায় বনানী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আলমগীর নামের এক বখাটে ওই তরুণীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে ও তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করতে থাকে। ওই সময় এডিসি তাপস কুমার দাস তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান এবং বনানী থানা পুলিশ আলমগীরকে গ্রেফতার করে।

জানা গেছে, আসামি আলমগীর কড়াইল বস্তিতে মাছের ব্যবসায় করে। বস্তির বৌবাজারে তার বাসা। গ্রামের বাড়ি শেরপুর। আলমগীরের বাবার নাম আশরাফ আলী। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

করি পুষ্প রে বিকশিত- ১


আফরোজা হাসান


মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের রুমে ঢুকে কম্পিউটারের সামনে বসে নিজের কাজে মন দিল নায়লা। বাচ্চাদেরকে সঠিক ভাবে গড়ে তুলতে যা যা করণীয় সবকিছু করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে সে। বাচ্চারা ভুল করবে, দুষ্টুমি করবে এসব স্বাভাবিক। এসব নিয়ে তাই কোন আপত্তি নেই নায়লার। কিন্তু বাচ্চারা মিথ্যা বলবে বা কোন কিছু গোপন করবে এটাতে প্রচন্ড আপত্তি তার। সবসময়ই স্কুল থেকে ফেরার পর স্কুলে কি কি হয়েছে জানতে চায় বাচ্চাদের কাছে। কিন্তু গতকাল সব কথা বললেও ক্লাসে মারামারি করেছে সেকথা চেপে গিয়েছে মুসআব। আজ স্কুলের টিচারের কাছ থেকে জানতে পেরেছে নায়লা সেই ঘটনা। কেন বাসায় এসে কিছু বলেনি জানতে চাইলে কোন জবাব না দিয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো মুসআব। সাথে সাথে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো নায়লার। বাচ্চারা মিথ্যা বলে বা গোপন করে যখন বাবা-মাকে সর্বাবস্থায় নিজের আশ্রয় ভাবতে পারে না তখন। কিন্তু সেতো আদর-ভালোবাসা ও মমতার দেবার সাথে সাথে সব ব্যাপারেই ভীষণ রকম আন্তরিক। তাহলে? প্রশ্নের জবাব খুঁজে না পেয়ে তাই রুমে চলে এসেছে।

মায়ের পেছন পেছন মুসআবও রুমে ঢুকলো। এমনিতে আম্মুই তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। কিন্তু আম্মু যখন রাগ করে তখন খুব ভয় লাগে মুসআবের। কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে খুকখুক করে কয়েকবার কাশি দিয়ে মায়ের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করে ব্যর্থ মুসআব বলল, আম্মু আমি সরি তো! আমি আর কখনো তোমার কাছে কিছু গোপন করবো না। আম্মু ও আম্মু তুমি কথা বলছো না কেন? আমি কিন্তু কান্না করে দেব বলছি। এই যে তুমি শুধু রাগ করো সেজন্যই তো আমি তোমার কাছে বলিনি।

এবার ঘুরে ছেলের দিকে তাকালো নায়লা। আমি কি কোনদিন অকারণে তোমার উপর রাগ করেছি?

আমতা আমতা করে মুসআব বলল, নাতো আম্মু।

তাহলে কেন বললে আমি রাগ করি বলে তুমি কথা গোপন করো?

সব কথা গোপন করি না তো। শুধু ক্লাসে মারামারি করেছি সেটা গোপন করেছি।

নায়লা বলল, ক্লাসে মারামারি করে তুমি একটা অন্যায় করেছো আর সেটা গোপন করে করেছো আরেকটা অন্যায়। আম্মু যদি সেজন্য রাগ করি সেটা ভুল হবে?

মুসআব কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, কিন্তু তুমি যখন মুখ কালো করে কথা বলো আমার একটুও ভালো লাগে না।

নায়লা বলল, তাহলে তোমার কাজও তেমন হওয়া উচিত যাতে আম্মু মুখ কালো না করে। ছেলেকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নায়লা বলল, আম্মু যখন তোমাকে আদর করি, কোন উপহার দেই তুমি কি খুব আনন্দিত হও?

মুসআব বলল, হ্যা অনেক বেশি।

আর আম্মু রাগ করলে বা বকা দিলে খুব কষ্ট পাও তাই না?

মুহুর্তে চেহারা আবার কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো মুসআবের। অনেক অনেক অ-নে-ক বেশি কষ্ট পাই আম্মু।

ছেলেকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করে নায়লা বলল, ঠিক তেমনি তুমি যখন ভালো কাজ করো আম্মু অনেক খুশি হই। আর যখন দুষ্টু কাজ করো আম্মু বিরক্ত হই। এমনটা কেন হয় জানো?

কেন হয় আম্মু?

কারণ ভালো কিছু হলে মানুষ খুশি হবে আর খারাপ কিছু হলে মানুষ কষ্ট পাবে এটা হচ্ছে নিয়ম। আচ্ছা ক্ষুধা পেলে তুমি কি করো?

আমি খাবার খাই।

আর ঘুম পেলে কি করো?

ঘুমাই আম্মু।

একদম ঠিক। এখন দেখো ক্ষুধা পেলে আমরা খাই আর ঘুম পেলে ঘুমাই। আমাদের ঠিক তেমনই আরেকটা স্বভাব হচ্ছে খুশিতে চেহারায় আলো আলো হয়ে উঠে আর রাগে চেহারা কালো হয়ে যায়। বুঝেছো?

হ্যা আম্মু।

কি বুঝেছো?

খুশিতে চেহারায় আলো আলো হয়ে উঠে আর রাগে চেহারা কালো হয়ে যায়।

মাশাআল্লাহ। এই তো তুমি বুঝে ফেলেছো। তারমানে তো এটাও বুঝেছো যে, তোমার দুষ্টু কাজ শুনে আম্মুর চেহারা যে কালো হয় সেটাই স্বাভাবিক?

জ্বী আম্মু।

কিন্তু তুমি যে আম্মুর কাছে কথা গোপন করেছো সেটা অস্বাভাবিক। দেখো সোনা তুমি তো এখনো অনেক ছোট। তুমি দুষ্টুমি করবে, ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তুমি যদি সেসব আমাকে না বলো তাহলে আমি তোমাকে কিভাবে বুঝিয়ে বলবো কোনটা ঠিক আর কোন ভুল? তুমি তো গুডু বয় হতে চাও তাই না?

হ্যা আম্মু।

এখন বলো আম্মুর সাহায্য ছাড়া তুমি কি একা একা গুডু বয় হতে পারবে?

কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে মুসআব বলল, না।

তাহলে তুমি কেন আম্মুকে বলোনি? আম্মু যদি না জানি তাহলে কিভাবে তোমাকে ভুল বুঝিয়ে বলবো?

আমি আর তোমার কাছে কিছু গোপন করবো না আম্মু। প্রমিস।

নায়লা ছেলে কাছে টেনে আদর করে হেসে বলল, ঠিকআছে এখন তুমি যাও পড়তে বোস।

ছেলে চলে গেলে ঘুরে আয়নায় নিজের দিকে তাকালো নায়লা। মনের অনুভূতিগুলো সবসময় চেহারাতে ফুটে ওঠা ঠিক না। বিশেষ করে বাচ্চাদের সাথে কথা বলার সময়। এরআগেও খেয়াল করেছে বাচ্চারা প্রথমেই চেহারার দিকে তাকিয়ে পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা নিতে চেষ্টা করে। সুতরাং, এই ব্যাপারে তাকে আরো সতর্ক হতে হবে বুঝতে পারলো। কাজ বন্ধ করে রান্নাঘরের রওনা করলো। বাচ্চাদের জন্য নাস্তা বানাতে হবে। মুসআব পিজা খুব পছন্দ করে। আজ সবার জন্য তাই পিজা বানানোর সিদ্ধান্ত নিলো।

 

মারা গেলেন রাশিয়ার সবচেয়ে বয়স্ক নারী


নারী সংবাদ


রাশিয়ার সবচেয়ে বয়স্ক নারী নানু শাওভা ১২৮ বছর বয়সে মারা গেছেন। দেশটির কাবারদিনো বালকারিয়ার নর্থ ককেশিয়ান রিপাবলিকের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। সোমবার স্থানীয় প্রশাসন একথা জানিয়েছে। খবর তাসের।

রাশিয়া বুক অব রেকর্ডস অনুযায়ী, কাবারদিনো-বালকারিয়ার বকসান জেলার জায়ুকোভো গ্রামের শতবর্ষী নানু শাওভা রাশিয়ার সবচেয়ে বয়স্ক নারী ছিলেন। তিনি ১২৮ বছর বয়সে মারা যান।

এক প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মে মাসে তার বয়স ১২৯ বছর হতো। বাকসান জেলা প্রশাসন তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে।’

নানুকে ২০১৭ সালে রাশিয়া বুক অব রেকর্ডস সনদ দেয়া হয়।

 

স্বাবলম্বিতা ও সহযোগিতাই ঠেকাতে পারে ডিভোর্স

জান্নাতুন নুর দিশা


অনেকেই মনে করেন ধর্মীয় অনুশাসনের সাথে ডিভোর্স হওয়া না হওয়ার বিষয়টা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
ডিভোর্স নিয়ে বিভিন্ন সময়ে লিখতে গেলেও দেখা যায় অনেকেই ধর্মীয় অনুশাসনের কথা টেনে আনেন, অনেকেই ঢালাওভাবে দোষারোপ করেন নারীদের স্বাধীনচেতা মানসিকতার উত্থানকে।
ডিভোর্স বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া যে মোটেও ধর্মীয় অনুশাসনের সাথে সম্পর্কিত কোনো বিষয় নয় তা এই দুটো ছবি থেকেই পরিষ্কার হওয়ার কথা।
বিবাহ, সংসার, বিচ্ছেদ এই বিষয়গুলো যতটা না ধর্ম সম্বন্ধীয়, তার চেয়ে বেশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক। বৈবাহিক বন্ধন টিকে থাকা এবং না টিকে থাকার বিষয়টি একটি সমাজের অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও সামাজিক সংস্কার-কুসংস্কারের উপর নির্ভর করে।
পৃথিবীতে সবচেয়ে কম ডিভোর্স হয় ভারতে। ধর্মীয় দিক থেকে হিন্দু ধর্মালম্বীদের ডিভোর্সের হার অন্য ধর্মাবলম্বীদের তুলনায় অনেক অনেক কম।
তারমানে কি এই দাঁড়ায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তুলনায় অন্য ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের ধর্মীয় অনুশাসন কম মানেন? বিষয়টা কিন্তু মোটেও তেমন নয়।
হিন্দু ধর্মে গত শতকেও সতীদাহপ্রথার মত ভয়াবহ কুসংস্কার ছিল। ছিল না বিধবাদের বিবাহের অনুমতি। হিন্দু ধর্মের সংস্কারকরাই এসব রদে রেখেছিলেন ভূমিকা।
এখনো হিন্দু ধর্মালম্বীরা বিয়েকে জন্ম-জন্মান্তরের বন্ধন মনে করে। সাত জন্মের জন্য সঙ্গী হবার ধারণাও রয়েছে অনেকের মধ্যে।
ভারতের নাটকগুলো দেখলেই বুঝা যায় পারিবারিক কলহ, দাম্পত্য কলহ, সাংসারিক অশান্তি নিয়ে এক একটা পরিবার কতটা ভোগে। কিন্তু বিচ্ছেদের কথা তারা ভাবতে পারে না। পারিবারিক কলহ থেকে সহিংসতার পর্যায়ে চলে গেলেও উপমহাদেশে পরিবারগুলো বিচ্ছেদের কথা ভাবতে পারে না।
বিচ্ছেদ হচ্ছে না মানেই একটি সমাজ আদর্শ সমাজ আর বিচ্ছেদ বাড়লেই সমাজ ধ্বংস হয়ে গেছে এই ধারণা ভ্রান্ত। সাংসারিক কলহ, পারস্পরিক অন্তর্দ্বন্দ্ব, ভুল বুঝাবুঝি, অশান্তি, খুনাখুনি, মেরিটাল রেইপ, পারিবারিক সহিংসতা না কমিয়ে কেবল বিচ্ছেদ ঠেকিয়ে রাখা গেলেই মূল্যবোধ ঠিক থাকে এমনটা ভাবা অনেকটা “উপরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট” প্রবাদের মতই হয়ে যায়।
হিন্দু ধর্ম ছাড়া অন্যান্য ধর্মে ডিভোর্সের ব্যাপারে ফ্লেক্সিবিলিটি থাকায় এসব ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী পারিবারিক সংঘাতের চেয়ে বিচ্ছেদকে উত্তম সমাধান মনে করছে। যে কারণে এসব ধর্মের মানুষের ডিভোর্স রেট কাছাকাছিই।
অনেক ধর্ম বিচ্ছেদ নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করে নি। তাই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের জাতিগতভাবে নিয়ম তৈরি করে নেয় বিভিন্ন দেশে। ইসলাম ধর্মে বিচ্ছেদের ব্যাপারে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম দিয়ে দেয়া হয়েছে।
ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা সৌদি আরবেও ডিভোর্সের হার খুব যে কম তা কিন্তু নয়। তারাও সংঘাতের চেয়ে বিচ্ছেদকেই বেছে নিতে পছন্দ করে। মোহরানা পরিশোধ বিয়ের সময়ই হয়ে যাওয়ায় তাদের বিচ্ছেদে বিশেষ আইনি জটিলতাও পোহাতে হয় না।
আমাদের দেশে যে বিয়েতে উচ্চ মোহরানা ধার্য করা হয়, এটা কিন্তু বিচ্ছেদ আটকে রাখতেই করা হয়। পাত্রের সামর্থ্যের বাইরে একটি অর্থ ধরা হলে এবং বাকির খাতায় রেখে দেয়া গেলে সহজে ডিভোর্স দেয়া যাবে না, করা যাবে না বহুবিবাহ। অর্থাৎ দিনশেষে বিয়ে অর্থনৈতিক চুক্তিই! এভাবেই আর্থিক চুক্তিনামায় বৈবাহিক সমস্যাদির বিচার-আচার আগে সামাজিক ভাবে এবং এখন কোর্ট-কাচারিতে হয়। মোহরানা বাকি রাখা ধর্মীয় অনুশাসন না হলেও উভয়পক্ষই নিজেদের স্বার্থ বিবেচনায় এই নিয়ম মেনে নিচ্ছে।
তাই দিনশেষে বিবাহবিচ্ছেদ বা বৈবাহিক সম্পর্কের স্থায়িত্ব নির্ভর করছে উভয়পক্ষের সামাজিক ও আর্থিক স্ট্যাটাসের উপর। খেয়াল করে দেখবেন পত্রিকায় ডিভোর্সি পাত্রীর জন্য “পাত্র চাই” বিজ্ঞাপন দেয়ার সময় “ধনী, প্রবাসী অভিজাত ডিভোর্সি পাত্রী” এইভাবে সামাজিক আর্থিক ব্যাপারগুলো ফলাও করে লেখা হয়। অর্থাৎ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী পাত্রীর ডিভোর্সি হলেও ঠিকই পাত্র মিলছে। অথচ দরিদ্র হলে কুমারীর পিতার কাছেও চাওয়া হচ্ছে যৌতুক।
ছেলের অর্থনৈতিক অবস্থান দেখা তো বিয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য। উপার্জনহীন পুরুষের সংসারে সুখ থাকেনা।
মানুষ যত বাড়ছে, একজনের উপার্জনে একটা সংসার চালিয়ে নেয়া তত চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে। তাই সংসারে প্রাপ্তবয়স্ক উপার্জনহীন নারী বা পুরুষ যত বেশি, সংসারে অন্তঃসংঘাত তত বাড়ছে।
গার্মেন্টস শিল্প গড়ে উঠবার পর দরিদ্র পরিবারগুলোতেও কলহ, সংঘাত কমে গেছে। মধ্যবিত্তের চেয়ে দরিদ্রদের সংসারে এখন টানাপোড়ন কম। নারীদের উপার্জনহীন বসে থাকবার প্রবণতা এদেশে মধ্যবিত্ত সমাজেই বেশি। আর যারা ক্যারিয়ারে আসছে, তাদের হাজবেন্ডের ফেক্সিবল মেনটালিটি না রাখা ও রুলিং মাইন্ড জন্ম দিচ্ছে আরেক ধরণের সংঘাতের। একে বলে ব্যক্তিত্বের সংঘাত।
মধ্যবিত্তের এসব ঘুণে ধরা সেন্টিমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসা খুব জরুরী।
সম্প্রতি ছেলেদের ওয়ালে ওয়ালে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি নিউজ। “সৌদি নারীদের পছন্দের তালিকায় বাংলাদেশী ছেলেরা।” যদিও এই নিউজের কোনো নির্ভরযোগ্য সোর্স খুঁজে পাই নি, তবু কেন এত উৎসাহ নিয়ে এই ফান নিউজ শেয়ার করছেন ছেলেরা?
যদি নিউজটা হত আফ্রিকান কোনো দরিদ্র দেশের মেয়েদের পছন্দের তালিকায় বাংলাদেশের ছেলেরা। এত পুলকিত হতো কেউ?
সৌদিআরব, কাতার এসব দেশ এদেশের মানুষের কাছে আর্থিক স্বাবলম্বী হবার একটা নির্ভরযোগ্য গন্তব্য। তাই সৌদি নারীরা তাদের পছন্দ করলে সেখানে যে বঞ্চনা সহ্য করতে হয় তা আর করতে হবে না। তাই সৌদি নারী মানে কেবল নারী নয়, সৌদি নারী মানে আর্থিক নিশ্চয়তার প্রতীক। তাই এই অনির্ভরযোগ্য খবরটিও এত মুখরোচক।
মজার ব্যাপার হল, সৌদি নারীরা আসলেও বিদেশী বিবাহে ঝুঁকেছেন।তাদের পরিসংখ্যান বলছে ইদানীংয়ে মোট বিয়ের প্রায় দশ ভাগ বিয়ে হয়েছে বিদেশি পুরুষের সাথে।
এর কারণ হিসেবে ভাবা হচ্ছে সেখানে প্রচলিত বহুবিবাহ এবং ডিভোর্স হার। অর্থাৎ বিদেশী বিশেষ করে এশিয়ান পুরুষদের আরবদের মত অধিক বিবাহ প্রবণতা কম থাকা ও সৌদি স্ত্রীর প্রতি অনুগত থাকার মনোভাবই এশিয়ানদের প্রতি তাদের আকৃষ্ট করছে।
সবশেষে বলা যায়, পরিবারে প্রত্যেক সক্ষম ব্যক্তির আর্থিক উপার্জন ও স্বাবলম্বিতা, পরস্পরের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, সহযোগিতামূলক ও সহনশীল আচরণ ও ব্যক্তিত্ব গঠনই পারিবারিক ভাঙন এবং বিবাহ বিচ্ছেদ কমাতে পারে। মানসিক উৎকর্ষ সাধন করে এসব গুণাবলী আনতে না পারলেও পারিবারিক সংঘাতে প্রতিনিয়ত লিপ্ত থাকার চেয়ে বিচ্ছেদেরই তো উত্তম!

আসলেই কি বিচ্ছেদ উত্তম? নাকি স্বাবলম্বিতা ও সহযোগিতা জরুরী?

সিদ্ধান্ত আপনার!

 

আবার বিয়ে করলেন কণ্ঠশিল্পী সালমা


নারী সংবাদ


আবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন ক্লোজআপ ওয়ান খ্যাত কণ্ঠশিল্পী সালমা। তার বর সানাউল্লাহ নূরে সাগর। যিনি ঢাকা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট। তিনি ময়মনসিংহ হালুয়াঘাটের ছেলে। বর্তমানে লন্ডনে ‘বার অ্যাট ল’ করছেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদকর্মীদের ডেকে সালমা তার দ্বিতীয় বিয়ের খবর জানান। তিনি বলেন, ৩১ ডিসেম্বর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাগর আবার ফিরে গেছেন লন্ডনে।

সালমা জানান, চারমাস পর তার স্বামী ‘বার অ্যাট ল’ শেষ করে দেশে ফিরবেন। তখন ঘটা করে অনুষ্ঠান হবে।

কুষ্টিয়ার মেয়ে মৌসুমি আক্তার সালমা ‘ক্লোজআপ ওয়ান’ দ্বিতীয় সিরিজের বিজয়ী ছিলেন। এরপর কয়েকটি লোকগীতি দিয়ে সালমা সারা দেশে ব্যাপক পরিচিতি পান। ২০১১ সালে পারিবারিকভাবে শিবলী সাদিককে বিয়ে করেন সালমা।

২০১১ সালে দিনাজপুর-৬ আসনের এমপি শিবলী সাদিকের সঙ্গে বিয়ে হয় সালমার। ২০১৬ সালে বনিবনা না হওয়া সেই সংসারে বিচ্ছেদ ঘটে। তাদের সংসারে স্নেহা নামের এক কন্যা রয়েছে। স্নেহা এখন মায়ের কাছেই থাকে।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

বাবা-মায়ের মানসিক প্রস্তুতি


কানিজ ফাতিমা


সন্তান আগমনের সাথে সাথে পরিবারের ওপর একটা চাপের সৃষ্টি হয়। একথা সত্যি যে পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব একটি অসামান্য পাওয়া, কিন্তু এর অভিজ্ঞতা সবসময় রোমাঞ্চকর হয় না। বাবা-মা হবার সাথে সাথে দম্পতিকে মেনে নিতে হবে যে, জীবনটা আর আগের মত থাকবে না; সেই সাথে সামনে যেসব সমস্যা আসবে তার জন্যও নিজেদেরকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করতে হবে। বাবা-মাকে সন্তানদের স্বার্থে নিজেদের অনেক স্বার্থকেই বিসর্জন দিতে হবে, এমনকি তাদের পিতা -মাতা হবার যোগ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। বাবা-মা’দের জন্য, বিশেষ করে মা’দের জন্য শিশুর অবিরাম চাহিদা পূরণের ধকল ও ক্লান্তিকে মেনে নেয়া সহজ ব্যাপার হবে না। অপরদিকে বাবারা ঘরে ফিরে হয়তো দেখবেননা স্ত্রীর আনন্দময় মুখ, হাসিখুশী শিশু অথবা গুছালো পরিপাটি ঘরদোর। অনেক বাবাই নিজের স্ত্রীকে অধিক কাজের চাপে বিধ্বস্ত দেখবেন এবং পূর্বের মতো স্ত্রীকে তাদের প্রতি অতটা যত্নশীল পাবেননা।

মাতৃত্বের সাথে যুক্ত থাকে শারীরিক, আবেগ-আনুভূতিক ও মানসিক ক্লান্তি। অল্প ঘুম এবং অবিরত শিশুর যত্ন অনেক মজবুত সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে বৈবাহিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।

সন্তানের যত্নের পাশাপাশি দম্পতি যখন পরিবার ও কর্মক্ষেত্রের দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খায় তখন অর্থনৈতিক বিষয়গুলোও বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। বিবাহিত জীবনের উপর এসব কিছুর প্রতিকূল প্রভাব পড়তে পারে। ফুল টাইম চাকরী করেন এমন বাবা-মায়েদের জন্য এসময়টা অনেক বেশী কঠিন হয়ে পড়ে। আবার কিছু বাবা-মা সন্তানদের চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে (Child care centre) না রেখে পালাক্রমে ভিন্ন ভিন্ন শিফটে চাকরী করেন যাতে সবসময় কোনো একজন শিশুর সঙ্গে বাসায় থাকতে পারেন। যদিও এটা শিশুর জন্য ভালো, কিন্তু স্বামী স্ত্রীর জন্য সবসময় অনুকুল হয় না। এক্ষেত্রে বাবা মার মধ্যে দ্রুত সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। কার ভাগে ঘর পরিস্কার করা বা বাসন কোসন ধোয়া পড়েছে এ ধরনের তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিবাদ এবং অসম্মানজনক মানহানিকর প্রতিদ্বন্দিতা দেখা দিতে পারে। অপরদিকে যেসব বাবা মার মধ্যে সন্তানের সাথে পর্যাপ্ত সময় কাটাতে না পারার অপরাধবোধ কাজ করে – তারা ‘দাম্পত্য সময়’টা কমিয়ে ‘সন্তানের জন্য সময়’কে বর্ধিত করতে পারেন। আবার কিছু মা-বাবা সেটা পুষিয়ে নিতে চান সন্তানদের উপহার, টাকা এবং অস্বাস্থ্যকর ফাস্ট ফুড দিয়ে যা পরিনামে বাচ্চাদের নষ্ট করে, আর বাবা-মা আরো বেশী সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপের মুখে পরেন।

এ ধরনের চাপ বৈবাহিক সম্পর্ককেই প্রতিকূলতার মুখে ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন দম্পতি তাদের সীমিত সময় আন্তরিক আলাপের চেয়ে পরস্পরের প্রতি অনুযোগ-অভিযোগ করেই অতিবাহিত করে। বাবা-মার মধ্যকার বৈবাহিক দ্বন্দ সন্তানের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। যথেষ্ট পরিমান পারস্পারিক যোগাযোগের অভাবে অনেক বাবা-মায়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয় এবং তা তাদের অবিরত দ্বন্দ্বের দিকে ঠেলে দেয়।

নিচে কিছু পরামর্শ দেয়া হলো- বাবা-মাকে তাদের প্যারেন্টহুড তথা অভিভাবকত্বে উত্তরণের ক্ষেত্রে সাহায্য করবার জন্য: আশা করা যায় স্বামী-স্ত্রী থেকে বাবা-মা হওয়ার পথে পরিবারের গতিময় পরিবর্তনে এই পরামর্শগুলো অনেকটা চাপ কমাবে।

১. দৈনিক কিংবা সপ্তাহে স্বামী-স্ত্রী একসাথে নিজস্ব সময় কাটানোর জন্য কিছু সময় বরাদ্দ করুন। একসাথে বেড়াতে যান, কিছু কাজ একসাথে করুন, কিংবা রাতের খাবারটা একসাথে খান। দিনের বেলা প্রয়োজনীয় ফোনালাপ সেড়ে ফেলে অথবা সকালে কিছুটা আগে জেগে কিছু সময় সঞ্চয় করুন- যাতে পরষ্পরের দিকে দৃষ্টি দেয়ার কিছুটা সময় বের করতে পারেন। শিশুর দেখাশুনার দায়িত্বটা অন্য কোনো বিশ্বস্ত বাবা-মার সঙ্গে নেয়াটাও একটা ভালো ব্যবস্থা।(যেমন ধরুন সেই দম্পতির সাপ্তাহিক বেড়াতে যাবার সময়টায় আপনারা তাদের সন্তানদের দেখাশোনা করলেন আবার তারা আপনাদের সময়ে আপনাদের সন্তানদের ভার নিলেন)।

২. জীবনসঙ্গীর সাথে প্রত্যাশাগুলো ভাগাভাগি করে নিন। প্যারেন্ট হিসাবে নতুন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যা আপনি লক্ষ্য করছেন সেইসব উদ্বেগের বিষয় তার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন। আপনার স্বাস্থ্য, পারষ্পারিক সম্পর্ক এবং চাকুরীর উপর প্যারেন্টহুডের প্রভাব নিয়ে কথা বলুন।

৩. জীবনসঙ্গীর সাথে একত্রে খাদ্য গ্রহণ, ইবাদত, যৌন মিলন এবং শরীর চর্চায় সময় দিন। যদিও শিশুর চাহিদা আপনার সময়ের প্রায় সবটুকু নিয়ে নেয় তারপরও জীবনসঙ্গীর জন্য সময় বের করে নিন। এমনকি ময়লা কাপড় অথবা অপরিষ্কার বাসনকোসন ধোয়ার জন্য পড়ে থাকলে তেমন ক্ষতি নেই ।

৪. আপনার মতবিরোধ প্রকাশ করুন; দ্বন্ধকে গুরুত্বহীন ভেবে এড়িয়ে যাবেন না। কোনো ব্যাপারে বিবাদকে সম্পর্কের মধ্যকার কোন ফাটলের ইঙ্গিত হিসাবে নিন এবং দুজনে মিলে পরামর্শ (counselling) পাবার চেষ্টা করুন।

৫. বিশ্বস্ত বন্ধু বা অভিজ্ঞ সহকর্মীর সাথে কথা বলুন যার- বাবা/মা হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। এটা আপনার বিষন্নতা দূর করতে সাহায্য করবে। কথা বলার জন্য একই লিঙ্গের ব্যক্তি নির্বাচন করুন এবং কোনো অবস্থাতেই আপনার স্বামী বা স্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত ও গোপনীয় কোনো বিষয় প্রকাশ করবেন না।

রেফারেন্স অনুবাদ: Parent-child relations.