All posts by Oporajita

 

অভিমানী মনের আত্মদহন… শেষ খন্ড

অভিমানী মনের আত্মদহন… শেষ খন্ড


আফরোজা হাসান


আফরা হেসে বলল, জ্বি আপি। আমি গতকাল ধরতে চেষ্টা করেছিলাম। ধরতে যাচ্ছিলাম তখনই প্রজাপতি উড়ে অন্য আরেকটি ফুলে বসছিল। আমি পা টিপে টিপে সেই ফুলের কাছে গিয়ে ধরতে চেষ্টা করলাম প্রজাপতিটি আবারো উড়ে গেলো। এমন কয়েকবার করার পর শেষপর্যন্ত প্রজাপতিটি উড়তে উড়তে আমাদের বাগান থেকেই বাইরে চলে গেলো।
মারওয়া হেসে বলল, গতকাল তোমার আর প্রজাপতির কর্মকান্ড আমি দেখেছিলাম। জানো আফরা আমাদের মন বাগিচায়ও এমন বর্ণিল প্রজাপতির রূপে সুখ-শান্তি বসে থাকে চুপটি করে। সেই বর্ণিল প্রজাপতির সৌন্দর্যে লালায়িত হয়ে আমরা ছুটে যাই ধরার জন্য। সুখকে হাতের মুঠোয় পুরে ফেলতে চাইলে বেশির ভাগ সময়ই সেটা উড়ে আরেকটু দূরে সরে বসে। ধরে ফেলার চেষ্টা অব্যহত থাকলে একসময় বিরক্ত হয়ে সুখ মন বাগিচা ছেড়েই চলে যায়। সুখকে তাই কখনোই ধরতে চাওয়া ঠিক না। তাছাড়া মনের বাগিচাটা যেহেতু তোমার সেহেতু বাগিচার ফুল, পাখী, ফড়িং, প্রজাপতি, জোনাকি সবকিছুও তোমার। যা তোমার তাকে শুধু শুধু খাঁচায় কিংবা স্বচ্ছ কাঁচের জারে বন্দি করতে যাবে কেন? আকাশে ডানা মেলা পাখী আর খাঁচায় বন্দি পাখীর আনন্দ কি কখনো একই রকম হতে পারে? ফুলের বুকে প্রজাপতি আর তোমার দুই আঙ্গুলের মাঝে ছটফট করতে থাকা প্রজাপতি সৌন্দর্য কি এক? আমরা জানি এক না। অনেক পার্থক্য বিদ্যমান দু’য়ের মাঝে। কিন্তু তবুও শুধু নিজের করে পাবার লোভে আমরা কোন কিছুকে তার স্বকীয়তা থেকে আলাদা করতে দ্বীধা করি না। আমাদের জীবনের সম্পর্কের বন্ধনগুলোও কিন্তু এমনই। নিজের করে পেতে গিয়ে, নিজের মনের মত করে চাইতে গিয়ে আমরা সম্পর্কগুলোর প্রকৃত সৌন্দর্য ও আনন্দানুভূতি হারিয়ে ফেলি।
আমিও কি এমনটা করছি আপি?
মারওয়া হেসে বলল, আমার কাছে অভিমানে সবচেয়ে খারাপ দিক কি মনেহয় জানো? অভিমানের ভেতর সুপ্ত অবস্থায় থাকে জেদ। সেই জেদ মনে একধরণের প্রতিযোগী মনোভাবের জন্ম দেয়। মানে হচ্ছে, অপর পক্ষকেই আগে নিজের ভুল বুঝে সরি বলতে হবে। আমি কেন আগে যাবো? তাকেই আগে আসতে হবে! এই যে একটা হার-জিতের মনোবাসনা তৈরি হয়! এটাই আসলে যত সমস্যার মূলে। আমাকেই কেন সবসময় বুঝতে হবে? আমাকেই কেন ত্যাগ স্বীকার করতে হবে? সবসময় কি আমিই ছাড় দিয়ে যাবো? আমার আবেগই কেন সবসময় এমন মূল্যহীন থেকে যাবে? ইত্যাদি আরো নানা প্রশ্নের উদ্রেক ঘটে অভিমানী মনে! অভিমান মনকে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় জমিয়ে দেয়। সমস্যা হচ্ছে, সেই বরফকে গলানোর মত সঠিক উষ্ণতা বেশির ভাগ সময়ই অপর পক্ষ দিতে ব্যর্থ হয়। যেহেতু অপর পক্ষের জানা থাকা না মনের ঠিক কতটা তাপমাত্রা প্রয়োজন। মনকে তাই কখনোই বরফ হতে দিও না। তো কি হয়েছে স্বামী কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেনি?! চোখ পাকিয়ে কঠিন করে একটা ধমক এবং সাথে পরবর্তীতে এমন করলে শাস্তি দেয়া হবে সেই থ্রেট দিয়ে দুষ্টুমি করেই তো মিটিয়ে দেয়া সম্ভব ঘটনাটি। আমার এক যুগের দাম্পত্য অভিজ্ঞতা বলে যে, ভালোবাসার চেয়েও পার্টনার আমার ব্যর্থতা, অপারগতা, অসহায়ত্ব বোঝে, প্রতিকূল পরিবেশে আমাকে সাপোর্ট করে। এটা অনেক বেশি প্রভাব ও শ্রদ্ধাবোধের জন্ম দেয় তার মনে অপর পার্টনারের প্রতি।
আমি বুঝতে পেরেছি আপি।
মারওয়া হেসে বলল, না তুমি এখনো বুঝতে পারোনি। এত দ্রুত আসলে বোঝার দরকারও নেই। তবে প্রথম যে জিনিসটা তোমাকে বুঝতে হবে সেটা হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর ভিন্ন গ্রহ থেকে আসা কোন সম্পর্কের নাম নয়। আমাদের জীবনে বিদ্যমান অন্যান্য সম্পর্কের মতই এটি আরেকটি সম্পর্ক। আমার কথাই যদি বলি। এমন কতবার হয়েছে বাবা কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাবার কথা বলে নিয়ে যাননি। ভাইয়ারা পছন্দের মূল্য না দিয়ে জোড় করে অপছন্দনীয় কিছু চাপিয়ে দিয়েছেন। বোনেরা নষ্ট করে ফেলেছে খুব প্রিয় কিছু। মামণি অকারণেই বকাঝকা করেছেন। সেসব কি মেনে নেইনি আমি? ভুলে যাইনি কি? ছেড়ে দিয়েছি কি তাদেরকে অন্যায় আচরণের জন্য? এর কারণ কি বাবা-মা-ভাই-বোনকে ডিভোর্স দেয়া যায় না এটা? নাকি অকৃত্রিম ভালোবাসা? তাহলে স্বামীর ভুল কথা বা ভুল কাজ মেনে নিতে সমস্যা কোথায়? যেখানে সেই মানুষটাকে জড়িয়েই আমার জীবনের সবকিছু। নাকি ছেড়ে দেয়ার অপশন থাকার কারণেই এই সম্পর্কটির ক্ষেত্রে আমাদের মন ত্যাগ স্বীকার করতে এত বেশি কার্পণ্য করে? এটাই আসলে ফ্যাক্ট বুঝলে। জীবনের অংশ করে নিতে পারি না বলেই ছোট ছোট কথা, কাজকে ইস্যু করে একে অন্যেকে জীবন থেকে বের করে দিতে পারি। তাই এটা বোঝার চেষ্টা করো তোমার স্বামী তোমার জীবনের জন্য কতটা জরুরি। এই বিষয়টা বুঝতে পারলেই বাকি সবকিছু বোঝাটা তোমার জন্য সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আফরা হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ আপি আমি এখন থেকে এভাবেই ভাবতে চেষ্টা করবো। অভিমানের অনলে নিজেদের সম্পর্ককে আর কখনোই জ্বালাবো না। বরং যখনই কোন কিছু আমাদের মাঝে সমস্যার উদ্রেক করতে চেষ্টা করবে, আমরা দুজন মিলে সেটা নিয়ে মন খুলে কথা বলবো। এবং দুজন মিলে সেটার সমাধান করার চেষ্টা করবো।
মারওয়া হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ। এখন চলো আমরা রান্নায় মনোযোগ দেই।

লিখেছেন- আফরোজা হাসান

 

ছায়াদানকারী বট বৃক্ষ

ছায়াদানকারী বট বৃক্ষ


শামছুন নাহার মলি


২০১২ সালে প্রথম যে বার দেশ ছাড়লাম।আব্বা আমার জিপি নাম্বারে কল দিতেই থাকতেন।দুঃক্ষিত আপনার কাঙ্খিত নাম্বারে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা,অনুগ্রহপূর্বক আরেক টু পর আবার ডায়াল করুন। আব্বা আরেকটু পর আবার ডায়াল করছিলেন।বারবার,যদি মলির ফোনে কল যায়।এখন কি মলি আকাশে?নেটওয়ার্কেরর বাইরে?আবার কল দেয়।কল আসলে অন্যদের বলে মলিকে কল দিচ্ছি,একজন মেয়ে বলে একটুপর আবার কল করুন।এতবার কল দিচ্ছি মলি তো ধরেনা। অনেক পরে আব্বাকে বোঝানো গেছিলো মলি এখন নেটওয়ার্কেরর বাইরে।
ফিনল্যান্ডে আসার পর বুঝলাম আব্বা কতটা ভালবাসে,আমার একাকিত্বে কতটা ভয় পায়।প্রতিদিন কল দিলে আব্বা কথা বলতেন।আমি কি বলবো, কেমন আছেন আব্বা?ব্যাথা কমেছে?গরম কেমন?
এর পর আর কিছু বলার আসতো না।
আব্বার প্রশ্নের পর্ব শুরু।বাছা,ওখানে কি কি পাওয়া যায়?কি মাছ খাও?স্যালমন ফিস?স্যালমনের মাথা দিয়ে মুড়ো ঘন্ট করো খুব ভাল লাগে।লন্ডনে গিয়ে তোমার ভাইয়ার বাসায় খেতাম।বাছা বাংলাদেশি সবজি,ফল পাও তো?আরো কত কি?
সাম্মান কে পেটে নিয়ে দেশে গেলাম ৫ মাসের জন্য,একটা সেমিস্টার করবো।আগে আব্বাকে ফল কেটে আমি খাওয়াতাম।এবার অবাক করে দিয়ে আব্বা নিজেই আমাকে এলাকার মিষ্টি পেয়ারা ভাত খাওয়ার পর ঔষধের মত নিয়ম করে কেটে খাওয়াতেন। কারণ ভাত খাওয়ার পর পেয়ারা না খেলে মলির বমি বমি লাগতো।
দেশি ফল কেটে দিতেন পাশে বসিয়ে।আমার কি যে অস্বস্থি লাগতো।তারা নিজেই অসুস্থ।আমি তাদের সেবা করার চান্স পাইনি সেবার।৭ মাসে চলে আসবো ঢাকা থেকে।আব্বা আম্মা নাতির জন্য কাঁথা,আমার জন্য খাবার নিয়ে মেজ আপুকে নিয়ে রওনা হবেন ঢাকার উদ্দেশ্যে।দেশে তখন ভয়ংকর পরিস্থিতি।পরদিন সকালে সারা দেশে হরতাল।রাতের গাড়িতে সাতক্ষীরা থেকে রওনা হলে সকালে গাবতলি থেকে মীরহাজির বাগ যাওয়াটা কঠিন হবে।সিএনজি,বাসে আগুন জ্বালিয়ে দিতো,গুলি,এ্যারেস্ট ও তুমুল ভাবে।
আমি কাঁদলাম প্লিজ আসবেন না আব্বা ঢাকায়,এই পরিস্থিতিতে আপনারা ঢাকায় আসলে বিপদ।আমরা টেনশনে মরে যাবো।আব্বা আম্মা টিকেট নিয়ে গাড়ীতে উঠবে,আমি আর ছোট ভাইয়া হাতে পায়ে ধরে বল্লাম আব্বা বাড়িতে নিরাপদ এ থাকলে তাতেই আমাদের শান্তি।দেশের এ পরিস্থিতি তে বের হয়েন না।আম্মা বলে,মলি পরীক্ষা দিয়ে আর বাড়ি এলো না।আমি একটু না দেখে অসুস্থ মেয়েকে কিভাবে যেতে দিই।
আমার মণ কে পাষাণ বানিয়ে বল্লাম,আম্মা বাড়ি ফিরে যাও,আমার জন্য তোমাদের কিছু হয়ে গেলে সারা জীবনেও শান্তনা খুঁজে পাবোনা।আব্বা আম্মা বল্লেন এত টাকা দিয়ে টিকেট কাটলাম।বল্লাম জীবনের দাম আরো বেশি।কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে গেলেন।আমি ফিনল্যান্ডে আসার পর ডিলিভারি রুমে যাওয়ার পরও আব্বার সাথে কথা বলা লাগছে।
সাম্মান হলো,আব্বা সহ সবাই কি খুশি।আলহামদুলিল্লাহ্‌।আব্বার আর কথা বলার তোড়জোড় নাই।দু তিন দিন হয়ে গেলো।আম্মাকে বল্লাম আব্বা কই?বলেন,আছে।এখন তোমার একটা খেলার সাথি হয়েছে,ব্যস্ত থাকার সম্পদ হয়েছে তাই তোমার আব্বা নিশ্চিন্তে আছে তোমাকে নিয়ে।বাবা নামের মানুষ গুলো আসলেই অন্যরকম।আল্লাহ সকল মাকে নেক হায়াত দিন।সন্তানদের ছায়াদান কারী বটবৃক্ষ গুলো ভালো থাকুন দুনিয়া ও আখিরাতে।আমিন।

 

আমার ডাক্তার বাবা

আমার ডাক্তার বাবা


সুমাইয়া চৌধুরী


তিনি মূলত রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপক। তাঁর ডিগ্রী “Applied chemistry” এর উপর। কিন্তু তাঁর “Applied Homeopathy” দেখে আসছি সেই শৈশব থেকে ……হোমিওপ্যাথির উপর ভদ্রলোকের অগাধ আস্থা এবং শারীরিক অসুস্থতায় তিনি হোমিওপ্যাথিকেই বেছে নেন। সাগুদানার মতো দেখতে মিষ্টি ওষুধগুলো আমার কাছে চকলেটের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হতো আর শিশুচোরের উপদ্রবে এক ডোজের ওষুধ ৫-৬ বার কিনতে হতো ভদ্রলোককে।

অবসরে যাওয়ার পর ১ বছর বাসায় অবস্থান করলেন,,,,,পত্রিকা পড়েন , কোরআন পড়েন , মসজিদে যান সবই ঠিকমতো চলছে কিন্তু কোথায় যেন একটা অভাববোধ , শিক্ষকতাকালীন যে পড়াশোনা করতেন সেটার জন্য মন হাহাকার করে। অবশেষে ৬৭ বছর বয়সের আমার যুবক বাবা শিক্ষক থেকে ছাত্রে রূপান্তরিত হলেন ,ভর্তি হয়ে গেলেন হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজে ৪ বছরের DMHS (Diploma in Homeopathy Medicine and Surgery) কোর্সে।

কি তাঁর আনন্দ আর পড়াশোনার আগ্রহ !!! ক্লাসের ফাঁকে খাবে বলে মায়াবতী স্ত্রী নিয়ম করে টিফিন রেডি করে দেয়। আম্মা দেখি মাঝে মাঝে জানতেও চায় “ কয়টা বান্ধবী হলো তোমার ?” আব্বা নায়ক রাজ্জাকের মতো রহস্যময় হাসি দেয়।

আব্বা বরাবরই ম্যাথমেটিক্সে ভালো ছিলেন , বায়োলজি সাবজেক্ট টাই ছিলোনা তাঁর আর সেজন্য এনাটমি বা ফিজিওলজির এক্সাম এর সময় খুব স্টাডি করতে হতো। ২য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষে অভিভাবক হিসেবে জানতে চাইলাম “ ছাত্রের খবর কি ? রেজাল্ট খারাপ হলে পড়াশোনার খরচ বন্ধ।’’ আব্বা খুবই উদ্বিগ্ন স্বরে বললেন , “মা রে , এনাটমিতে পাস নিয়া চিন্তায় আছি”

আব্বা এখন ৪র্থ বর্ষের মেধাবী ছাত্র। কলেজে তাঁর যথেষ্ঠ সুনাম….পরীক্ষায় কোন অসুদপায় অবলম্বন না করে এই বয়সেও কঠোর অধ্যয়ন করার জন্য। চিকিৎসাও শুরু করেছেন , পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজনদের ওষুধ দিচ্ছেন নিয়মিত। বিশ্বস্তসূত্রে জানলাম তাঁর ওষুধ ভালো কাজ করে। বড় আপিও একদিন কথায় কথায় জানালো তাঁর বাচ্চাদের নাকি নানুভাইয়ের ওষুধ ছাড়া দেশের বাইরের ওষুধেও কাজ কাজ হয়না।

আব্বাকে কল দিলাম……..
-“কি ডাক্তার সাহেব, আপনারতো সেই নাম ডাক!!!! ”

আব্বা খুশিতে শরমে গদগদ কন্ঠে …….
– শোনো আমিতো বায়োকেমিক মেডিসিন দেই,এক ডোজেই হুম….

আমি বেশ সিরিয়াস হয়ে বললাম ,
—ফ্রী ফ্রী ওষুধ দেয়া যাবেনা , ওষুধের কার্যক্ষমতা কমে যাবে , আম্মাকে ওষুধ দিলেও মাথা টিপায়ে নিবেন , গা চুলকায়ে নিবেন।

কয়েকমাস আগে আমার পায়ে একটা ইনজুরি হয় , আব্বার কি আফসোস ,
— “ইসস , তুমি দেশে থাকলে এক ডোজ দিলেই ………”

আমি বললাম,
—আচ্ছা ঠিক আছে , দেশে এসে হাত পা কিছু একটা ভেঙে আপনার ওষুধ খাবো ”

আব্বা আমার সস্তা ফাইজলামিতে মহাবিরক্ত হয়।

মার্চে দেশে গেলাম। এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা পাতলা আবহাওয়ার মুখোমুখি। আম্মার মুখ শুকনো , মেয়ের জামাইকে ডাবের পানি আর স্যালাইন ছাড়া কিছুই খাওয়াতে পারছেনা। আব্বার চোখে মুখে চাপা আনন্দ….

ওর কাছে গিয়ে বলছে
—বাবাজি , চিন্তার কিচ্ছু নাই ……এক ডোজেই ……ইনশাআল্লাহ। ”

জামাইবাবাজি শ্বশুরের ডোজে সুস্থ হলো। আমি শুধু রাইস স্যালাইন খেয়েই সুস্থ হলাম বলে আমার উপর বেশ অভিমান করলেন। আব্বার পড়াশোনা চলছে , চিকিৎসাসেবাও চলছে। খুব আন্তরিকতার সাথে ওষুধ দেন। রোগীর জন্য দোয়া করেন।

সবার শেষ বয়সটা সুন্দর কাটেনা …..৭০ বছর বয়সে আমার শিক্ষানবিশ ডাক্তার বাবা মানুষের সেবা করার আনন্দময় ইচ্ছা নিয়ে সময় পার করছে আলহামদুলিল্লাহ !!!!

ইদানিং আমার শরীরটাও ভালো যাচ্ছেনা। ভাবছি ডাক্তার সাহেবের কাছে এপোয়েনমেন্ট নিবো।

 

শুধু শিশু নয় বরং বাবা-মা নতুনভাবে জন্ম নেন

শুধু শিশু নয় বরং বাবা-মা নতুনভাবে জন্ম নেন


ফাতেমা শাহরিন


একজন শিশুর জন্মের সাথে সাথে জন্ম নেয় একজন বাবা-মা। বর্তমানে ‘গুড প্যারেন্টিং’ শব্দটা বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। বাচ্চা মা বাবার কাছে সবচেয়ে দামী উপহার যেমন তদ্রূপ মা-বাবাও সন্তানের জন্য পৃথিবীতে বড় নিয়ামত। বাচ্চা আমাদের কাছ থেকে জেনে ও শিখে বড় হয়। একবারেই তো আর সবটা জানানো যায় না, আমরাও জানি না। জানতে হবে ধাপে ধাপে। এই ধাপগুলো নির্ধারণের সময় অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করে করে বাবা মা প্যারেন্টিং কিভাবে করতে হবে শিখেন।

এই ধাপগুলো সম্পর্কে জানুন ও তাদের সঙ্গে সবসময় একই আচরণ না করে ওই ধাপগুলো অনুযায়ী আচরণে পরিবর্তন আনুন।

বাচ্চার ব্যক্তিত্ব কেমন তা বুঝার চেষ্টা করুন

কোন বাচ্চা মিশুক কেউবা চুপচাপ, কেউবা শান্ত, কেউবা চঞ্চল। সুতরাং বাচ্চার মর্জি বুঝে সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার পক্ষে অনেক বেশি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করুন। বাচ্চা যদি বিদ্যুৎ চমকানি বা তেলাপোকা দেখে ভয় পায়, তখন সেটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া জরুরি। এটা অবহেলা করা অনুচিত।

প্রচুর সময় দিন

নিয়মতান্ত্রিক আর ধরা বাধা সময় না বরং বাচ্চাকে পর্যাপ্ত সময় দিন। বাইরেও তাদের নিজের ইচ্ছামতো ঘুরতে নিয়ে যাও। এটা তাদের সৃষ্টিশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও ভুমিকা রাখবে।

বাচ্চাকে বুঝতে শিখুন
আপনি যদি আপনার বাচ্চাকে বুঝার জন্য গুরুত্ব দেন এবং তা তুলে ধরতে পারেন, সেটা আপনাদের উভয়ের জন্যেই অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের হবে। শিশুরা চায়, বড়রা তাদের কথাগুলো আগে শুনুক। অনেক পরিস্থিতিই তাকেই সমাধান করতে দিন।

বাচ্চার কাছে নানান পরিচয়ে নিজেকে প্রকাশ করুন

মা বা বাবার পরিচয়টি আপনার কাছে অনেক বেশি আবেগময় অথবা সবচেয়ে পছন্দের হলেও কখনও বন্ধু, কখন শিক্ষক, কখনওবা দর্শক বা কখনওবা আপনার সন্তানকের স্টুডেন্ট হিসেবে বাচ্চার কাছে পরিচিত হোন।

বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয়

কিছু বলার চেয়ে করে দেখানোটা বাচ্চাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্ববহ।মনোযোগী বা কল্পনাশক্তিসম্পন্ন বলে ধারণা করি, তারা তার চেয়েও ঢের ক্ষমতা রাখে তাই আপনি আপনার বাচ্চাকে যেমন ভাবে গড়ে তুলতে চান তেমন আচরণ করুণ।

সুত্রঃ Parenting Guid. ছবির মডেলঃ আমান।

 

বার্ধ্যক্যের সীমাবদ্ধতা : ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম পর্ব -১

বার্ধ্যক্যের সীমাবদ্ধতা : ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম পর্ব -১


জিয়াউল হক


স্মৃতি লোপ পাওয়া : এর উৎপত্তিটা খুব ধীরে হয়। প্রথম প্রথম অতি সাধারণ কথাও মানুষ ভুলে যায়। ঘরের চাবিটা, হাতের কলমটা কিংবা একটু আগে ব্যবহার করা চশমাটা কোথায় রেখেছে, তা তারা ভুলে যান।
-এভাবেই শুরু। এরপর এর মাত্রা ও ব্যপ্তি বাড়তে থাকে ক্রমেই। এ ধারায় আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে কোন কাজে বা পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া বা তা ধরে রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ে।
– রোগটা আরও একটু এগিয়ে গেলে আক্রান্ত ব্যক্তি কারও সাথে আলাপচারিতায় বা কথোপোকথনের সময় সঠিক শব্দটিই খুঁজে পান না, বা সহজে মনে করতে পারেন না। অথচ তার কাছে শব্দটি াতি পরিচিত এবং সারাজীবন তা তিনি কথাবার্তায় ব্যবহার করেছেন অহরহ।
– এরপরে একটা পর্যায় এসে উপস্থিত হয় যেখানে তিনি সেই দিনটিতে করেছেন বা বলেছেন, এমন কোন কাজ বা কথা স্মরণ করতে অসুবিধা বোধ করেন বা স্মরণই করতে পারেন না।
– এরকম অবস্থা যখন হচ্ছে, তখন তিনি কারও কাছে তা স্বীকারও করতে পারছেন না, আবার এ থেকে কোন নিস্তারও পাচ্ছেন না, ফলে তিনি মনে মনে বিরক্ত হচ্ছেন। তার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। কথায় কথায় রেগে যাচ্ছেন।
– এ পর্যায়ে এসে তার স্বাভাবিক বিচার বিবেচনা লোপ পেতে শুরু করবে। কখনো কখনো তিনি এমনসব আচরণ করবেন যে, তার অতি নিকটজন, যারা তাকে খুব কাছে থেকে চেনেন, জানেন (যেমন- নিজের সন্তান বা স্ত্রী, এরা) বিশ্বাস করতে চাইবেন না যে তিনি এমন কাজ করতে পারেন বা এমন কথা বলতে পারেন।
– এরও পরে এসে কনফিউজড হতে শুরু করবেন। এ পর্যায়ে এসে দিনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম মানসিকতার প্রকাশ ঘটবে। কখনো চরম বিরক্ত (Irritable) হবেন।
– কখনো বা খুব মনমরা (Apathetic or Withdrawn) হয়ে বসে থাকবেন।
– কখনো বা তার আচার-আচরণে একরাশ হতাশা (Frustrated) প্রকাশ পাবে।
– আবার কখনো তার মন দুশ্চিন্তায় (Anxious) ছেয়ে যাবে।
– কখনো কখনো এমনসব জিনিস চোখে দেখতে পাচ্ছেন বলে দাবি করবেন আসলে তখন তার সামনে ঐসব জিনিসের কোন অস্তিত্বই নেই (Visual Hallucinations)।
– আবার এমন সব ধারণার কথা বলবেন যা অমূলক (Delusions), বাস্তবে যার কোন সংগত কারণ নেই।
– কোন ঘটনা বা কোন কিছু একটা বলতে গেলে তারা মাঝপথে ভুলে যান, ফলে তারা যা বলতে গিয়েছিলেন, তা বলতে থাকেন, তবে, এ ক্ষেত্রে তারা যে কাজটি করেন তাহলো- তারা ঘটনার যতটুকু মনে আছে তার সাথে কল্পনাপ্রসূত, অবাস্তব ও অসত্য কিছু কথা মিশিয়ে তাদের কথাগুলো পূর্ণ করেন। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকেই Confabulation বলা হয়ে থাকে।

চলবে…

 

বার্ধ্যক্যের সীমাবদ্ধতা : ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম পর্ব -২

বার্ধ্যক্যের সীমাবদ্ধতা : ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম পর্ব -২


জিয়াউল হক


সারা বিশ্বে প্রায় প্রতিটি প্রৌঢ় নারী-পুরুষর ক্ষেত্রেই কমবেশি এমনটা (Confabulation এর ঘটনা) ঘটে। আমাদের দেশে (এবং যে দেশে বা যে সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে গণসচেতনতা নেই, সেসব দেশ ও সমাজে) এসব প্রৌঢ়রা তাদের এ ধরনের আচরণের কারণে অনেক বিড়ম্বনা, অপমান ও নিগ্রহের শিকার হন।
আমার নিজের দেখা বেশ কিছু ঘটনা মনে পড়ছে এ সময়। প্রায় অশীতিপর বৃদ্ধ কিছুক্ষণ আগেও খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, এমন সময়, দূরের গ্রাম থেকে তার বড় মেয়ে বাবাকে দেখতে এসেছেন। বাবাকে পাশে বসিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কিছু খেয়েছেন কি না, বাবার সোজা সাপ্টা উত্তর হলো, না কিছু খাননি।
ষাটোর্ধ বিধবা কন্যা ছোট ভাইয়ের বাড়িতে, তারই আদরের ভ্রাতৃবধুর হাতে বৃদ্ধ বাবার প্রতি এ ধরনের অযতœ আর অবহেলা (!) দেখে ও স্বয়ং বাবার মুখে শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পাশে দাঁড়ানো বৃদ্ধের নাতি নাতনীর প্রদত্ত সাক্ষ্যও সেদিন সেই নারীকে এটা বিশ্বাস করাতে পারেনি যে, তার বাবা একটু আগেই নাতি-নাতনীদের সাথে বসে একত্রে খাবার খেয়েছেন। বৃদ্ধের পুত্রবধু তাকে কোনরকম অবজ্ঞা বা অবহেলা করেননি।
বেচারা বৃদ্ধ নাতি-নাতনীর চোখে পাক্কা মিথ্যাবাদী, তাদের মায়ের ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপকারী হয়ে রইলো। আর পুত্রবধুর চোখে তো এক পা কবরে রাখা বুড়ো বদমাশ (!) হয়ে গেল সেদিন থেকেই!
সম্ভাব্য সব ধরনের আদর যতেœ থাকা বৃদ্ধ মনের ভুলে এক সময় বলে ফেলা একটা কথার কারণে আমৃত্যু কি নিদারুণ নিগ্রহ আর মানসিক পীড়নের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এরকম অবস্থায় পরিবারের কর্তার সাথে পুত্রবধুর, আর পুত্রবধুর সাথে সংসারের অন্যন্য আত্মীয়-স্বজনের সামাজিক সম্পর্ক কোন পর্যায়ে যেতে পারে তা অতি সহজেই আমরা অনুধাবন করতে পারি। ডিমনেশিয়া বা স্মৃতিভ্রষ্টতা যে একটা অসুখ, এবং বৃদ্ধের কথাবার্তা, কাজকর্ম ও আচার-আচরণ যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই অসুখের কারণে প্রভাবিত হতে থাকবে, সে ধারণা আমাদের অধিকাংশেরই নাই।
এর ফলে আমাদের আদরের, শ্রদ্ধার বাবা-মা, বৃদ্ধ আত্মীয়-স্বজনরা অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমাদের অজান্তেই নিগ্রহ (Elderly Abuse) ও মানসিক পীড়নের (Psychological Abuse) শিকার হচ্ছেন। সমাজে এসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অত্যন্ত নাজুক (Vulnerable) অবস্থায় তাদের দিন কাটান।
অথচ আল-কুরআনে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন তাদের সাথে সদাচারণ ও উত্তম ব্যবহার করার জন্য। যেমন- নির্দেশ দেওয়া হয়েছে :
তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যাবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উফ’ শব্দটিও বোলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বলো। তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, বিন¤্র হও এবং বল- ‘হে আমাদের রব! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন’।২২ (সুরা আল ইসরা, ২৩-২৪)
অথচ বাস্তব সত্য হলো, আমাদের বাবা-মা যখন বুড়ো বয়সে উপনীত হন, যখন তারা নিজেদের উদ্যোগে যথাযথ কমিউনিকেশন করতে পরেন না, যখন তাদের নিজেদের প্রয়োজনটাকেও তারা প্রকাশ করতে পারেন না পূর্ণরূপে বা ঠিকভাবে, যখন তারা শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতার কারণে নিজেদের প্রয়োজন সময়মত ও যথাযথ মেটাতে পারেন না, যখন তাদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য, সাহচর্য, সান্নিধ্য আর মনোযোগ প্রয়োজন, সেসময়টাতেই আমরা তাদের প্রতি সবচেয়ে কম মনোযোগ দেই, তাদের সাথে সবচেয়ে কম সময় অতিবাহিত করি।
এতে করে আমরা যেমন তাদের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে যাই, তেমনি তারা নিজেরাও দুর্বোধ্য হন পরিবারের কাছে, সমাজের কাছে। তদের মানসিক শান্তি ও স্থিতির ভিতটাই নড়বড়ে হয়ে যায়। তারা নিঃসঙ্গতায় ভুগতে শুরু করেন।

 

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৬ষ্ঠ খন্ড

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৬ষ্ঠ খন্ড


আফরোজা হাসান


শরীয়তের পরিভাষায়,ইসলামের বিধান অনুযায়ী নারী- পুরুষ প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ ঢেকে রাখার নামই হিযাব বা পর্দা। এখন কথা হচ্ছে, টপস-জিন্স/স্কার্ট ইত্যাদি পড়েও নির্ধারিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূকে ঢেকে রাখা সম্ভব। কিন্তু তাতে কি পর্দার উদ্দেশ্য রক্ষা করা হবে? আবরণ বা অন্তরাল কিসের জন্য? যাতে দর্শনে নারী-পুরুষের একে অন্যের প্রতি সহজাত আকর্ষণের সেতার স্পর্শিত না হয়। তুমি যদি এমন ড্রেস পড়ো যাতে তোমার শারীরিক অবয়ব বোঝা যায়, তাহলে কেবল মাত্র মাথা ঢাকা থাকার কারণে তোমাকে পর্দানশীল নারী বলা যাবে না। ড্রেসটাকে তোমার শারীরিক গঠন ও সৌন্দর্যে অন্তরাল সৃষ্টি করার উপযোগী হতে হবে। এখন তুমিই ভেবে দেখো তুমি যেভাবে হিযাব করছো তাতে তোমার পরিপূর্ণ পর্দা হচ্ছে কিনা!
আমি বুঝতে পেরেছি আপি। ইনশাআল্লাহ আমি এখন থেকে পরিপূর্ণ পর্দা করার চেষ্টা করবো।
আমার কথা শুনে কি মন কিছুটা খারাপ হয়েছে?
আফরা হেসে বলল, না আপি আপনি তো সঠিক কথাই বলেছেন। আবির যদি এভাবে বুঝিয়ে বলতো তাহলে তো এত বেশি কষ্ট হতো না আমার। বা মনে হতো না আমার সাথে বাড়াবাড়ি করছে।
আসলে সবার তো বুঝিয়ে বলার ক্ষমতা একরকম থাকে না। তাছাড়া আমাদের একটা সমস্যা হচ্ছে বাইরের মানুষকে বুঝিয়ে বললেও আপনজনদেরকে আমরা সেভাবে বুঝিয়ে বলার চাইতে হুকুম করতে বেশি পছন্দ করি। আন্তরিক ভাবে এটা করা উচিত না বা ওভাবে করলে ভালো ইত্যাদি বলার চাইতে, করতে হবে বলে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এই মানসিকতার যেমন পরিবর্তন প্রয়োজন। তেমনি যখন আপনজনেরা আমাদের কোন কাজের সমালোচনা করে বা কোন বিষয়ে সংশোধনের পরামর্শে দেয়। বিরোধ না করে বা রেগে না গিয়ে প্রথমেই ভেবে দেখা উচিত এর পেছনে তাদের ইনটেনশন আসলে কি। তারা কি আমাদের কল্ল্যাণ কামনা করে এমনটা চাইছে নাকি অন্যকিছু। যদি দেখা যায় যে তাদের ইনটেনশন আমাদের জন্য কল্যাণময়। সেক্ষেত্রে তাদের পরামর্শ ইতিবাচক ভাবে নিতে হবে। আফরা এদিকে এসো।
এগিয়ে গেলো আফরা মারওয়ার কাছে। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাগানের দিকে আঙ্গুল তুলে মারওয়া বলল, দেখো ঐ ফুলের উপর প্রজাপতি বসে আছে কত আরামে, কত নিশ্চিন্তে। তুমি যদি এখন প্রজাপতিটিকে ধরতে যাও তাহলে উড়ে যাবার সম্ভাবনাই নাইনটি ফাইভ পার্সেন্ট তাই না?!

চলবে..

 

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৪র্থ খন্ড

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৪র্থ খন্ড


আফরোজা হাসান


মারওয়া হেসে বলল, যেসব বিষয়ে আবির তোমাকে বুঝতে চায় না বা বুঝতে পারে না। সেসব বিষয়ে তুমি আবিরকে বোঝার চেষ্টা করবে। এটাই তো রিলেশনশীপের চার্ম।
এটা রিলেশনশীপের চার্ম? অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো আফরা।
হুম! একে অন্যের দোষ, অপরগতা, ব্যর্থতা মেনে নেয়া, মানিয়ে চলা এসবের মাঝেই লুকায়িত থাকে সম্পর্কের চার্ম। এসবের দ্বারাই তো আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। একে অন্যেকে মুগ্ধ করার যাদুমন্ত্র হচ্ছে ছোট ছোট ত্যাগ করা।
আপনার কথা অনেক কঠিন লাগছে আপি।
আচ্ছা ঠিকআছে চলো তোমাকে বুঝিয়ে বলছি। আমাকে এমন দু’একটা বিষয়ে বলো যেসব ক্ষেত্রে আবির তোমাকে বুঝতেই চায় না।
পর্দার বিষয়টা নিয়ে আবির একদমই বুঝতে চায় না আমাকে। সারাক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করে আমার সাথে। বলে, আমার পর্দা নাকি ঠিকমতো হচ্ছে না। আমি যেভাবে হিযাব করি এতে নাকি পর্দার হক আদায় হয় না। আপি আপনি বলেন আমার পর্দা করা কি হচ্ছে না?
মারওয়া হেসে বলল, আবির যেদিন আমাকে প্রথম জানিয়েছিল ক্লাসের একটি মেয়েকে ওর খুব ভালো লেগে গিয়েছে। এবং যেহেতু শরীয়তে অনুমোদিত নয় এমন সবকিছু থেকে দূরে থাকতে চায় তাই চায় আমরা যাতে তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করি। আমি মনে মনে বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম ভেবে না জানি কেমন মেয়ে পছন্দ করেছে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ হিযাব পরিহিতা অবস্থায় যখন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম খুব ভালো লেগেছিল আমার।
আনন্দের হাসি ফুটে উঠলো আফরার মুখে মাওয়ারার কথা শুনে। বলল, আমি প্রাইমারীর পর থেকেই হিযাব করি আপি।
হিযাব মুসলিম মেয়েদের স্পেশালিটি। আলহামদুলিল্লাহ এই স্পেশালিটি তুমি বুঝে নিজের মাঝে ধারণ করতে পেরেছো। আর আবিরের কথা যদি বলি তাহলে বলবো যে, তোমাকে পছন্দ করার পেছনে অনেক কারণ হয়তো আছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি তোমার পর্দা করাটা সেইসবের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ ছিল। যেহেতু আবির আমাদের পরিবারের সবাইকে সবসময় পর্দা করতে দেখেছে। এছাড়া নিজেও সর্বাবস্থায় চেষ্টা করে শরীয়তের বিধান মেনে চলতে।
আমিও তো চেষ্টা করি শরীয়তের বিধান মেনে চলতে আপি।
এটাই আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সর্বাবস্থায় শরীয়তের বিধান মেনে চলতে চেষ্টা করাটা। তাই কোন বিষয়ে মানুষ কি বললো সেটার চেয়ে জরুরি হচ্ছে শরীয়ত কি বললো। ধরো কেউ যদি তোমাকে বলে, ফজরের ফরজ নামাজ দুই রাকআত না চার রাকআত পড়তে হবে তোমাকে। কিংবা যোহরে চারের বদলে দুই রাকআত ফরজ নামাজ পড়লেই যথেষ্ট। তুমি কি এটা মেনে নেবে?
কক্ষনো না।
কেন?
কারণ কোরআন ও হাদীস থেকে আমরা নামাজের ব্যাপারে যে নির্দেশ পেয়েছি সেটাই মানতে হবে আমাদেরকে।
একদম ঠিক বলেছো। এবং এটাই হচ্ছে মূল পয়েন্ট। কে কি বললো, না বললো তাতে কিছুই এসে যায় না। আমাদেরকে সর্বাবস্থায় দেখতে হবে শরীয়ত কি বলেছে। ঠিক তেমনি তোমার পর্দার বিষয়ে আবির বা আমি কি বলছি সেটার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শরীয়ত কিভাবে পর্দা করতে বলেছে এবং তুমি কিভাবে করছো। জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমাদের মানদন্ড কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত আদেশ-নিষেধ। যেখানে ভুল-শুদ্ধ প্রমাণের জন্য শরীয়ত বর্তমান। সেখানে মানুষ কি বলছে তাতে কিছু এসে যায় না।
জ্বি আপি।
মারওয়া হেসে বলল, আফরা তুমি নিজেকে আয়নায় দেখো। এরপর আবির তোমাকে কিভাবে দেখতে চাইছে আর শরীয়ত তোমাকে কিভাবে থাকতে বলেছে এবং তুমি কিভাবে আছো সেটা বিবেচনা করে দেখো। তোমার যদি মনেহয় যে, শরীয়ত যেভাবে বলেছে তোমার পর্দা তেমনিই আছে তাহলে আবির কি বললো, না বললো শোনার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি দেখো তোমার পর্দাতে ঘাতটি রয়েছে এবং আবির সেটাই দূর করার পরামর্শ দিচ্ছে তোমাকে। এর অর্থ আবির তোমাকে সেই রুপে দেখতে চাইছে যেই রুপে শরীয়ত তোমাকে থাকতে বলেছে। অর্থাৎ, স্বামী হবার সাথে সাথে আবির তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও সঠিক পথের প্রদর্শকও। এমন স্বামী পাওয়া তো যে কোন মেয়ের জন্যই সৌভাগ্যের। তাই না?
চেহারায় হাসির রেখা ফুটে উঠলেও মুখে কিছু বললো না আফরা। নিজের সাথে ওকে কিছুটা বোঝাপড়া করে নেবার সময় দিয়ে মারওয়াও আর কিছু না বলে রান্নার আয়োজনে মন দিলো।

চলবে…

 

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৩য় খন্ড

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৩য় খন্ড


আফরোজা হাসান


মারওয়া হেসে বলল, যেসব বিষয়ে আবির তোমাকে বুঝতে চায় না বা বুঝতে পারে না। সেসব বিষয়ে তুমি আবিরকে বোঝার চেষ্টা করবে। এটাই তো রিলেশনশীপের চার্ম।
এটা রিলেশনশীপের চার্ম? অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো আফরা।
হুম! একে অন্যের দোষ, অপরগতা, ব্যর্থতা মেনে নেয়া, মানিয়ে চলা এসবের মাঝেই লুকায়িত থাকে সম্পর্কের চার্ম। এসবের দ্বারাই তো আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। একে অন্যেকে মুগ্ধ করার যাদুমন্ত্র হচ্ছে ছোট ছোট ত্যাগ করা।
আপনার কথা অনেক কঠিন লাগছে আপি।
আচ্ছা ঠিকআছে চলো তোমাকে বুঝিয়ে বলছি। আমাকে এমন দু’একটা বিষয়ে বলো যেসব ক্ষেত্রে আবির তোমাকে বুঝতেই চায় না।
পর্দার বিষয়টা নিয়ে আবির একদমই বুঝতে চায় না আমাকে। সারাক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করে আমার সাথে। বলে, আমার পর্দা নাকি ঠিকমতো হচ্ছে না। আমি যেভাবে হিযাব করি এতে নাকি পর্দার হক আদায় হয় না। আপি আপনি বলেন আমার পর্দা করা কি হচ্ছে না?
মারওয়া হেসে বলল, আবির যেদিন আমাকে প্রথম জানিয়েছিল ক্লাসের একটি মেয়েকে ওর খুব ভালো লেগে গিয়েছে। এবং যেহেতু শরীয়তে অনুমোদিত নয় এমন সবকিছু থেকে দূরে থাকতে চায় তাই চায় আমরা যাতে তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করি। আমি মনে মনে বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম ভেবে না জানি কেমন মেয়ে পছন্দ করেছে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ হিযাব পরিহিতা অবস্থায় যখন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম খুব ভালো লেগেছিল আমার।
আনন্দের হাসি ফুটে উঠলো আফরার মুখে মাওয়ারার কথা শুনে। বলল, আমি প্রাইমারীর পর থেকেই হিযাব করি আপি।
হিযাব মুসলিম মেয়েদের স্পেশালিটি। আলহামদুলিল্লাহ এই স্পেশালিটি তুমি বুঝে নিজের মাঝে ধারণ করতে পেরেছো। আর আবিরের কথা যদি বলি তাহলে বলবো যে, তোমাকে পছন্দ করার পেছনে অনেক কারণ হয়তো আছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি তোমার পর্দা করাটা সেইসবের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ ছিল। যেহেতু আবির আমাদের পরিবারের সবাইকে সবসময় পর্দা করতে দেখেছে। এছাড়া নিজেও সর্বাবস্থায় চেষ্টা করে শরীয়তের বিধান মেনে চলতে।
আমিও তো চেষ্টা করি শরীয়তের বিধান মেনে চলতে আপি।
এটাই আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সর্বাবস্থায় শরীয়তের বিধান মেনে চলতে চেষ্টা করাটা। তাই কোন বিষয়ে মানুষ কি বললো সেটার চেয়ে জরুরি হচ্ছে শরীয়ত কি বললো। ধরো কেউ যদি তোমাকে বলে, ফজরের ফরজ নামাজ দুই রাকআত না চার রাকআত পড়তে হবে তোমাকে। কিংবা যোহরে চারের বদলে দুই রাকআত ফরজ নামাজ পড়লেই যথেষ্ট। তুমি কি এটা মেনে নেবে?
কক্ষনো না।
কেন?
কারণ কোরআন ও হাদীস থেকে আমরা নামাজের ব্যাপারে যে নির্দেশ পেয়েছি সেটাই মানতে হবে আমাদেরকে।
একদম ঠিক বলেছো। এবং এটাই হচ্ছে মূল পয়েন্ট। কে কি বললো, না বললো তাতে কিছুই এসে যায় না। আমাদেরকে সর্বাবস্থায় দেখতে হবে শরীয়ত কি বলেছে। ঠিক তেমনি তোমার পর্দার বিষয়ে আবির বা আমি কি বলছি সেটার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শরীয়ত কিভাবে পর্দা করতে বলেছে এবং তুমি কিভাবে করছো। জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমাদের মানদন্ড কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত আদেশ-নিষেধ। যেখানে ভুল-শুদ্ধ প্রমাণের জন্য শরীয়ত বর্তমান। সেখানে মানুষ কি বলছে তাতে কিছু এসে যায় না।
জ্বি আপি।
মারওয়া হেসে বলল, আফরা তুমি নিজেকে আয়নায় দেখো। এরপর আবির তোমাকে কিভাবে দেখতে চাইছে আর শরীয়ত তোমাকে কিভাবে থাকতে বলেছে এবং তুমি কিভাবে আছো সেটা বিবেচনা করে দেখো। তোমার যদি মনেহয় যে, শরীয়ত যেভাবে বলেছে তোমার পর্দা তেমনিই আছে তাহলে আবির কি বললো, না বললো শোনার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি দেখো তোমার পর্দাতে ঘাতটি রয়েছে এবং আবির সেটাই দূর করার পরামর্শ দিচ্ছে তোমাকে। এর অর্থ আবির তোমাকে সেই রুপে দেখতে চাইছে যেই রুপে শরীয়ত তোমাকে থাকতে বলেছে। অর্থাৎ, স্বামী হবার সাথে সাথে আবির তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও সঠিক পথের প্রদর্শকও। এমন স্বামী পাওয়া তো যে কোন মেয়ের জন্যই সৌভাগ্যের। তাই না?
চেহারায় হাসির রেখা ফুটে উঠলেও মুখে কিছু বললো না আফরা। নিজের সাথে ওকে কিছুটা বোঝাপড়া করে নেবার সময় দিয়ে মারওয়াও আর কিছু না বলে রান্নার আয়োজনে মন দিলো।

চলবে…

 

সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি?(পর্ব-২)

সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি?(পর্ব-২)


আফরোজা হাসান


অংক, ইংরেজি, ফিজিক্স, কেমেস্ট্রিতে নাম্বার কখনো কম পেলে নাকীবকে অবশ্যই আমার জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। কারণ এসব ওর পছন্দের বিষয়। তাছাড়া একদমই যদি জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে নাহয় তাহল নিজের মান উন্নয়নে গাফেল হয়ে যাবে। কিন্তু ভূগোল, ইতিহাসে পাশ মার্ক কিংবা তারচেয়ে এক দুই বেশি পেলেই আমি খুশি। অনেক সময় একটি দুটি অপছন্দনীয় বিষয়ের চাপের কারণে অন্যান্য সব বিষয়ের এমনকি সবচেয়ে পছন্দের বিষয়ের রেজাল্টও খারাপ হয়ে যায়।এক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় সন্তানের পাশে থাকা, সাহস যোগানো এবং অনর্থক আশা চাপিয়ে না দেয়া। সন্তানের রেজাক্ট আশানুরূপ না হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ পিতামাতার বিচার বিবেচনাহীন অতি আশা, উচ্চাশা।

তবে স্কুলের রেজাল্টের চাইতেও আমার কাছে অন্য একটি বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ণ। সেটি হচ্ছে শরীয়তের মানদন্ডে আমার সন্তানের অ্যাক্টিভিটি। একটা বাচ্চা সবদিক দিয়ে কখনোই পার্ফেক্ট হবে না। আমার ছেলে হয়তো ভূগোলে টপ করেনি কিন্তু রমজানে সে এক মাস রোজা রেখেছে, তারাবীহ আদায় করেছে কোন রকম আলসেমি ছাড়া আলহামদুলিল্লাহ। সেই সময় যখন তার স্কুল খোলা ছিল, ফাইনাল এগজাম চলছিল। ইউরোপে সামার শুরু হয়ে গিয়েছিল। রোজার দৈর্ঘ্য প্রায় সতেরো ঘন্টা। স্কুলে স্পোর্টস ক্লাসে নানান ধরণের অ্যাক্টিভিটি করতে হয়। আমি বাসায় বসে শঙ্কিত অনুভব করতাম রোজা রেখে না জানি কিভাবে আমার ছেলেটা স্পোর্টস ক্লাস করছে। কিন্তু নাকীব মাশাআল্লাহ হাসতে হাসতে বাসায় ঢুকেছে স্কুল থেকে। কখনোই বলেনি ক্ষুধা লেগেছে, পিপাসা পেয়েছে কিংবা আজকে রোজা রাখতে, তারাবীহ পড়তে চাইনা। আমার ছেলে হয়তো ইতিহাস পড়া নিয়ে গড়িমসি করে কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে কখনো গড়িমসি করতে দেখিনি আলহামদুলিল্লাহ। হয়তো কখনো সখনো দু’একদিন হোমওয়ার্ক করতে ভুলে যায়। কিন্তু আমাকে সাহায্য করার ব্যাপারে কখনোই ওর ভেতর কার্পণ্য, বিরক্তি দেখিনি। আমি ভুলোমনা স্বভাবের। বাজারের লিস্ট করার পরও দেখা যায় দরকারি অনেক কিছু লিখতে ভুলে গিয়েছি। এমনও হয় আমার ভুলো মনা স্বভাবের কারণে নাকীবকে একবারের জায়গায় তিন চারবার সুপার মার্কেটে যেতে হয় পরাপর। কখনো দেখিনি বিরক্ত হচ্ছে, মুখের উপর বলছে আমি পারবো না। বরং হাসে, মজা পায় মায়ের মেমোরির দশা দেখে, আলহামদুলিল্লাহ। আমি আমার ছেলের এই সমস্ত উত্তম গুণাবলীকে কিভাবে অবমূল্যায়ন করবো শুধুমাত্র ওর রেজাল্ট আমার মানদণ্ডকে ছুঁয়ে না দিলে?! এটা কি সন্তানের উপর সুস্পষ্ট অবিচার করা হবে না? আমার এই অবিচার কি আমার সন্তানের উত্তম গুণাবলীকে প্রভাবিত করবে না? ভাবতেই পারে আমি আম্মুতার জন্য একবারের জায়গায় চারবার সুপার মার্কেটে যেতে পারি, অথচ আম্মুতা আমার একটা ভুল কিংবা অপারগতা মেনে নিতে পারলো না?!

আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে আমরা কতটুকু সময় দিচ্ছি বাচ্চার পেছনে। প্রি স্কুল, কিন্ডার গার্ডেনে আমরা সারাক্ষণ লেগে থাকি বাচ্চার পেছনে। প্রতিটা বিষয় হাতে ধরে শেখাই। একবারের জায়গায় দশবার বলতে,বোঝাতে আমাদের বিরক্ত লাগে না। কিন্তু বাচ্চা যত বড় হতে থাকে আমাদের লেগে থাকা, হাতে ধরে কোন কিছু বোঝানোর মাত্রা ততই কমতে থাকে। আমরা তখন এটা করো, ওটা করো, সেটা করো না, ওমনটা করতে হয়না এই সমস্ত হুকুম দিয়েই দায়িত্ব পালন হয়ে গিয়েছি মনে করি। হ্যা সন্তান যখন বড় হয় তখন তাকে নিজের দায়িত্ব সমূহ পালন করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কিন্তু তাই বলে পিতামাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন ছেড়ে দেয়া যাবে না। নাকীব একদিন হোমওয়ার্ক নিতে ভুলে গিয়েছিল বিধায় ওর এক পয়েন্ট কেটে নেয়া হয়েছে। আমি এজন্য নাকীবকে নেতিবাচক কিছু বলিনি। বলেছি আর কখনো যাতে এমনটা নাহয় সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। কারণ আমার মনে হয়েছে ভুলের পেছনে আমিও নাকীবের সমান কিংবা ওর চেয়ে বেশি দায়ী। প্রাইমারিতে যেমন প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাবার আগে নাকীবের স্কুল ব্যাগ চেক করে দেখতাম সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। এখন নিজে না করলেও ঘুমোতে যাবার আগে নাকীবকে অন্তত মনে করিয়ে দেয়া উচিত আগামীকাল স্কুলের জন্য পরিপুর্ণ ভাবে প্রস্তুত কিনা। কেননা কখনো ভুল করে, কখনো অনিচ্ছায়, কখনো অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাচ্চারা তো ভুল করবেই। পিতামাতা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সেই ভুল সমহুকে প্রতিহত করা, সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। শুধু সঠিক পথের দিশা বাতলে দিলেই কিন্তু হবে না। হাত ধরে সঠিক পথে চলতে হবে ঠিক সেই সময়ের মতো যখন সন্তান কেবল মাত্র পিতামাতার হাত ধরে একপা দুপা করে হাঁটতে শিখেছিল। হাত ছাড়লেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাবার ভয় ছিল।

(শেষ পর

 

সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি? (পর্ব-১)

সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি? (পর্ব-১)


আফরোজা হাসান


অমনোযোগ, অবহেলা, গাফলতি, ফাঁকিবাজি কিংবা কারণ যেটাই হোক সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি? পিতামাতার অ্যাকশন কেমন হওয়া উচিত সন্তানের সাথে? সন্তানকে সান্ত্বনা দেয়া উচিত নাকি তিরষ্কার করা? সন্তানকে উৎসাহ দেয়া উচিত যাতে পরবর্তীতে লেখাপড়ায় মনোযোগী হয় নাকি হুমকি, ধামকি দেয়া উচিত? কি উচিত আর কি অনুচিত এই প্রশ্ন থাক আপাতত। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অ্যাকশন কেমন হয়? আমার মনেহয় এই সময়টাতেই সন্তানদের সবচেয়ে বেশি সাপোর্টের প্রয়োজন হয় পিতামাতার। আমার পুত্রের কথা যদি বলি ছোটবেলা থেকেই নাকীবের ভালো লাগা, মন লাগা, ভীতি, আনন্দ, খুশি আমার কাছে নিজের এই সমস্ত আবেগের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নাকীব যখন তেলাপোকা দেখে ভীত হয় তখন ওর মনে সাহস যোগানোর জন্য আমি ছোটবেলায় যেমন ওর পাশে থাকতাম, এখনো থাকি। পাশে থেকে ওকে সাহস যোগাই, এই ভয় থেক বেরিয়ে আসার ব্যাপারে উৎসাহ দেই। কিন্তু আমি কখনোই বলি না এখন তো তুমি বড় হয়েছো, সামান্য একটা তেলাপোকাকে ভয় পাওয়ার কি আছে? কিংবা ছেলে হয়ে তেলাপোকাকে ভয় পাও? কি লজ্জা! কি লজ্জা! হয়তো আমার সাপোর্ট আর পাশে থাকার কারণেই বেশ কিছুদিন আগে নাকীব একটা মৃত তেলাপোকাকে টিস্যু দিয়ে ধরে ডাস্টবিনে ফেলার মতো বিশ্বজয় করে ফেলেছিল। এই কর্ম সাধনের পর নাকীবের উল্লাস বিশ্বজয়ের চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না। নাকীবের সাথে উল্লাসিত আমি তখন বলেছিলাম, দেখেছো তুমি চাইলেই পারো। নাকীবও সমর্থন সূচক মাথা ঝাঁকিয়েছিল। সবজি খাওয়াটা খুবই জরুরি। কিন্তু নাকীবের সবজি ভীষণ অপছন্দ। জোর করে, বাধ্য না করে আমি আমি আমার রাঁধুনি সত্ত্বার ক্রিয়েটিভিটি কাজে লাগিয়ে এমন ভাবে সবজি রান্না করেছি নাকীব খুশি মনেই খেয়ে নিয়েছে। এমনটা শুধু আমি না, বেশিরভাগ মায়েরাই করেন সন্তানের খুশির জন্য, কমফোর্টের জন্য।

নাকীব সেকেন্ডারি স্কুলে উঠার পর নতুন নতুন অনেক বিষয় পাঠ্যসূচিতে সামিল হয়েছে। তারমধ্যে ভূগোল আর ইতিহাস নাকীবের কাছে আতঙ্কের বিষয়। নাকীব যখন ওর আতঙ্কের কথা আমাকে জানিয়েছিল আমি ওকে চাপ প্রয়োগ করিনি এই বিষয় দুটোকে ভালো লাগানোর জন্য। আমি যখন সেকেন্ডারিতে ছিলাম অর্থনীতি আর পৌরনীতি এমন আতঙ্কের ছিল আমার কাছে। তাই নাকীবের অবস্থাটা অনুভব করতে পারছিলাম। পাঠ্যসূচিতে থাকা প্রতিটা বিষয় একজন স্টুডেন্টের কাছে সমান প্রিয় হওয়াটা অসম্ভব। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে আমার সন্তানের টার্গেট যদি থাকে প্রোগ্রামার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা গবেষক হওয়ার। সেক্ষেত্রে আমি কেন তাকে জোর করে ভূগোল, ইতিহাসে মনোযোগী করার চেষ্টা করবো? সব বিষয়ে কেন তাকে জোর করে দশে দশ পেতে বাধ্য করবো? অপছন্দীয় বিষয়ে কম পেলে কেন তাকে শাস্তি দেবো, তিরষ্কার করবো, অন্যের সাথে তুলনা করবো? আমি নাকীবকে বলেছি তুমি তোমার সাধ্যমতো চেষ্টা করো। ঠিকআছে তুমি দশে দশ না পাও কিন্তু ইতিহাস ও ভূগোল সম্পর্কেও তোমাকে জানতে হবে। আর জানার জন্য তো তোমাকে পড়তেই হবে। আমার কথা শুনে নাকীব অনেকটাই আশ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। ( চলবে)

 

আবারো বোরকা পরে স্কুলছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা!

আবারো বোরকা পরে স্কুলছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা!
রাজবাড়ী ও বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী)


নারী সংবাদ


ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসা ছাত্রী নুসরাতকে বোরকা পড়ে পুড়িয়ে হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই এক স্কুলছাত্রীকে (১৬) গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাচুরিয়া ইউনিয়নের খোলাবাড়িয়া গ্রামে। দগ্ধ কিশোরী খানখানাপুর তমিজউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

এ ঘটনায় শনিবার সকালে রাজবাড়ী সদর থানায় ভূক্তভোগী স্কুল ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে তার এলাকার স্বামী প্রবাসী শিল্পী বেগম নামের এক মহিলাসহ অজ্ঞাত ৪ ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করেছেন।

স্কুল ছাত্রীর মা নাসিমা বেগম বলেন, ঈদের দিন (বুধবার) স্থানীয় প্রতিবেশী শিল্পী বেগম আমার মেয়ের কাছে অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক ও আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এতে আমার মেয়ে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বাড়িতে দুই বোন জাম খাচ্ছিল আর আমি তখন ঘরের মধ্যে ঘুমাচ্ছিলাম।

এসময় আমার ছোট মেয়ের চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। পরে বড় মেয়ের কথা জিজ্ঞাসা করতেই বোরখা পড়া দুইজন লোক তাকে তুলে নিয়ে গেছে বলে জানায়। তখন আমিও চিৎকার করতে থাকি। আমার চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে অনেক খোজাখুজির পর ঘরের পিছনের পাটক্ষেত থেকে বড় মেয়েকে উদ্ধার করা হয়।

দগ্ধ স্কুলছাত্রীর বড় ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র মোঃ সোহেল ব্যাপারী বলেন, এ ঘটনায় গত (শুক্রবার) রাতে আমি নিরাপত্তাহীনতার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করি। কিছুক্ষণ পর রাজবাড়ী সদর থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার পুলিশ পাঠিয়ে থানায় ডেকে নিয়ে বিস্তারিত শোনেন। পরে আমাকে মামলা দায়েরের পরামর্শ প্রদান করেন।

ওই স্কুল ছাত্রী বলেন, পাশের গ্রামের রাজু নামে একটি ছেলে আমাকে পছন্দ করতো। এ পছন্দের কথা স্থানীয় বাসিন্দা শিল্পী বেগম জানতো আর এটাকে কেন্দ্র করেই সে আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি বিষয়টি পরিবারকে জানাই। পরদিন বৃহস্পতিবার সে ওড়না দিয়ে আমার হাত-পা বেঁধে গায়ের জামায় আগুন ধরিয়ে দেয়।

পাশের বাড়ির বাসিন্দা সাথী সরকার জানান, চিৎকার চেচামেচিতে আমরাও এগিয়ে গিয়ে স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করি। তার মাথায় আঘাতের চিহ্নসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং গায়ের জামা কাপড় ছেড়া ছিল।

এ বিষয়ে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি জানান, এ ঘটনায় রাজবাড়ী সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্পর্শকাতর এ বিষয়টি নিয়ে পুলিশের দুইটি টিম মাঠে কাজ করছে এবং আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

 

বাচ্চাদের শাস্তি দেয়া

বাচ্চাদের শাস্তি দেয়া


আফরোজা হাসান


গতকাল আমার এক ক্ষুদে স্টুডেন্ট অনেক মন খারাপ করে ছিল সারা ক্লাসে। ক্লাস শেষে ওকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে তোমার? এতো মন খারাপ করে আছো কেন? কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল, আমি দুষ্টুমি করেছিলাম তাই আম্মু আমাকে বলেছে দুইদিন কার্টুন দেখতে পারবো না। এরপর তো সে কত অল্প একটু দুষ্টুমি করেছে আর আম্মু তাকে কত বড় শাস্তি দিয়েছেন তার লম্বা ফিরিস্তি দিলো। তার প্রিয় কার্টুন গুলো দেখতে পারবে না সেই আহাজারি করলো। আকার ইঙ্গিতে বোঝাল যে আম্মু তার সাথে অন্যায় করেছেন। ইচ্ছে করলেই আম্মু মাফ করে দিতে পারতেন তাকে সেটাও বুঝিয়ে দিলো কথা দিয়ে।

আমি মাঝে মধ্যে বাচ্চাদের শাস্তি দেয়ার পক্ষে। কারণ সবসময় যদি ক্ষমা করে দেয়া হয় তাহলে ভুলের প্রতি সাবধানতা বা সতর্কতা তৈরি হয় না বাচ্চাদের মনে। বরং বিশ্বাস জন্মে যায় যে সে যাই করবে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। এই বিশ্বাস তার ছোট ছোট ভুলগুলোকে বড় বড় ভুলের পথে টেনে নিয়ে যাবে। কিন্তু শাস্তি হিসেবে পছন্দের জিনিস বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে নই আমি। কারণ এতে বাচ্চাদের মনে চাপ পড়ে। অন্যায় করেছে সেই অনুশোচনার চেয়েও প্রিয় কিছু না পাবার কষ্ট বেশি কাজ করে মনে। বাবা-মা তাকে বোঝে না, ভালোবাসে না ইত্যাদি নানা ধরণের ভাবনা দানা বাঁধে মনে। অনেক সময় এই ধরণের শাস্তি ইমোশনালি অ্যবিউজের মধ্যেও পড়ে যায়।

বাচ্চারা দুষ্টুমি, ভুল, অন্যায় করবেই আর শাস্তিও তাদের দিতেই হবে মাঝে মধ্যে। আমি শাস্তি হিসেবে আমার বাচ্চাদের পছন্দের জিনিস কখনোই বন্ধ করি না। আমি যা করি তা হচ্ছে ওদের সবচেয়ে অপছন্দের কাজটি করাই শাস্তি হিসেবে। নাকিবের সবচেয়ে অপছন্দ হচ্ছে মাছ আর সব্জি। নুহেরির অপছন্দ ফল আর দুধ। নাকিব যদি কোন অন্যায় করে আমি মুখে কিছুই বলি না। খাবারের সময় হলে বিশাল বড় একটা মাছ ফ্রাই আর বড় এক বাটি সব্জি দিয়ে বসিয়ে দেই টেবিলে। মিষ্টি করে হেসে মাছ আর সব্জির পুষ্টিগুণ আর কেন এসব খেতে হবে বুঝিয়ে বলি। নুহেরির ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই করি। শাস্তি হচ্ছে বুঝতে পেরে খাবো না বলারও সাহস পায় না ওরা।

আমরা বোনেরা যখন ছোট ছিলাম ঠিক এই পদ্ধতিতেই আমাদেরকে শাস্তি দিতেন আমাদের বড় ভাইয়ারা। মুখে কোনদিনও কিছু বলতেন না। অপছন্দের জিনিস করিয়ে নিতেন শাস্তি স্বরূপ। আমারো নুহেরির মতোই দুধ আর ফল হচ্ছে সবচেয়ে অপছন্দ। বিশাল বড় এক গ্লাস দুধ আর ফলের বাটি যখন সামনে আসতো মনে মনে প্রতিজ্ঞা করতাম এই ভুল আর জীবনে করবো না। ভাইয়াদের প্রতি রাগ বা বিরক্তি আসতো না মনে কারণ উনারা হাসি মুখে পাশে বসে গল্প গুজব করতেন। খাদ্যের পুষ্টিগুণ শোনাতেন। নিজের উপরই বিরক্তি আসতো। মনেহতো কেন যে করতে গিয়েছিলাম এমন বোকার মতো কাজ। নয়তো এসব খেতে হতো না।

আমার মতে শাস্তি হতে হবে এমন যা বাচ্চাদেরকে তাদের ভুলকে উপলব্ধি করতে সহায়তা করবে। আর যাতে এমন ভুল না হয় সে ব্যাপারে সাবধানী হতে সাহায্য করবে। এবং যারা শাস্তি দিচ্ছেন তাদের প্রতিও কোন বিদ্বেষের জন্ম হবে না মনে। কারণ বড়রা তো আসলে মঙ্গলের জন্যই শাস্তি দেন। কিন্তু বাচ্চারা যদি এটা অনুভব না করে তাহলে শাস্তি তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে। তাই শাস্তি এমন হওয়া উচিত যা অভিভাবক এবং বাচ্চা উভয়ের জন্য ফলপ্রসূ।

 

সিরাজদিখানে ৭০ হাজার টাকায় নবজাতক বিক্রি, সন্তান ফেরত চাচ্ছেন মা

সিরাজদিখানে ৭০ হাজার টাকায় নবজাতক বিক্রি, সন্তান ফেরত চাচ্ছেন মা


নারী সংবাদ


সিরাজদীখান উপজেলার নিমতলা এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে নবজাতক বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি ওই এলাকার আইডিয়াল জেনারেল হাসপাতালে ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে এক নবজাতক বিক্রি করার খবর পাওয়া যায়। এছাড়া অপর আরেকটি নবজাতক বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়।

আইডিয়াল জেনারেল হাসপাতালে প্রায় ১৫ দিন আগে হাবিবা বেগম (২৫) নামে এক গৃহবধূ সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করার পর ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়া হয়। বেসরকারি ওই হাসপাতালের ম্যানেজার ইয়াসমিন আক্তার নীলা নবজাতকের মা হাবিবা বেগমকে টাকার প্রলোভনে ফেলে জনৈক এক ব্যক্তির কাছে নবজাতক বিক্রি করে। মা হাবিবা বেগম এখন তার সন্তান ফেরত চাইছেন।

তিনি অভিযোগ করেন-তার সন্তান বিক্রি করে দেয়ার পর তিনি কোন টাকা পাননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার কাছ শুধু মাত্র সিজার করার বিল নেয়নি। গৃহবধূ হাবিবা উপজেলার কাজীশাল গ্রামের বাবু মিয়ার স্ত্রী। হাসপাতালের ম্যানেজার ইয়াসমিন আক্তার নীলা বলেন,‘এর সাথে আমি জড়িত না, স্ট্যাম্প করে তারা নিজেরাই বিক্রি করেছে ।’

এদিকে, ঈদের দিন একই হাসপাতালে উপজেলার বাসাইল গ্রামের লিটন শেখের স্ত্রী কুলসুম বেগম এক সন্তান প্রসব করে। এর আগেই তার নবজাতক বিক্রির জন্য প্রলোভন দেখায় নিমতলা এলাকার হলি কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডি ল্যাব নামে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালের একজন নার্স। কুলসুম বেগম আলট্রসনোগ্রাম করতে গেলে নবজাতক প্রসবের সাথে সাথে তা অবগত করার জন্য ওই নার্স হলি কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডি ল্যাব এর নাম্বার দিয়ে দেন। জন্মের দুই দিন পর নবজাতক বিক্রির জন্য বাবা লিটন শেখ হলি কেয়ারের ওই নাম্বারে কল করলে কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে কেউ আর নবজাতক কেনার জন্য আসেনি। এতে নবজাতক বিক্রির হাত থেকে বেঁচে যান মা কুলসুম বেগম।

নবজাতক বিক্রি প্রসঙ্গে আইডিয়াল জেনারেল হাসপাতালের মালিক মো. সালাহউদ্দিন জানান, ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে স্ট্যাম্প করে নবজাতক বিক্রি করার খবর শুনেছি। এর উপযুক্ত বিচার হওয়া উচিত।

অপর বেসরকারি হাসপাতাল হলি কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডি ল্যাবের মালিক শহীদুল মোড়ল বলেন- ‘আমার হাসপাতালের কোন কর্মকর্তা নবজাতক বিক্রির জন্য মোবাইল নাম্বার দিয়ে থাকলে তার উপযুক্ত বিচার করা হবে।’

মুন্সীগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা: শেখ ফজলে রাব্বী বলেন, এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করলে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ঈদ মোবারক । মেয়েদের হাতে মেহেদী লাগানো ও মেয়েদের ঈদের নামাজ।

ঈদ মোবারক । মেয়েদের হাতে মেহেদী লাগানো ও মেয়েদের ঈদের নামাজ।


সত্যলিখন


আসসালামুআলাইকুম ।
ঈদ মোবারক ঈদ মুবারক ঈদ মুবারক

প্রবাসী দেশি দুরের কাছে আত্নীয় ও আত্নার সাথে সম্পর্কিয় সকল প্রান প্রিয় ব্লগার ভাই বোন ছেলে মেয়ে সবাইকে জানাই আমার প্রান ঢালা ঈদুল আযহার আন্তরিক শুভেচ্ছা ।ঈদুল আযহা বয়ে নিয়ে আসুক আমার আপনার জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।

আমাদের কে আল্লাহ সকল গুনা খাতা মাফ সহ সকল পাপপংকিলতা দূর করে দিয়ে চরম ধৈর্যশীল , তাকয়াবান , আল্লাহর হুকুম পালনে নিষ্টাবান , পিতা মাতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল , আদর্শ স্বামী আর সেই স্বামীর আদেশ পালনে বিনয়ী ও আনুগত্যশীল স্ত্রী হওয়া সহ সকল প্রকার ঈমানী এলেমী ও আমলী অর্জন করার তাওফিক দান করুন । আল্লাহ নিরীহ পশুটার সাথে আমাদের মনের পশুত্ব আচরন টাও কোরবানী করে খতম করে দিক ।

“তাকাব্বাল আল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম (মহান আল্লাহ আমার ও আপনার ভাল কাজগুলো কবুল করুন)। আমীন ।

মেয়েদের হাতে মেহেদী লাগানোঃ

শুধু ঈদে নয়, মেয়েদের হাতে সারাবছরই মেহেদী লাগানো উচিত । রাসূল (ছাঃ) মেহেদী ছাড়া মেয়েদের হাত কে, পুরুষের হাতের সাথে তুলনা করেছেন । তবে মেয়েদের মত পুরুষদের মেহেদী ব্যবহার করা জায়েয নয় । কারণ মেহেদী এক ধরণের রঙ । আর পুরুষদের জন্য রঙ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ ।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, জেনে রাখো যে, পুরুষদের খোশবূ (সৌন্দর্য) এমন, যাতে সুগন্ধি আছে রং নেই । পক্ষান্তরে নারীদের খোশবূ এমন, যাতে রং আছে কিন্তু তা থেকে সুগন্ধি বিচ্ছুরিত হয় না” (তিরমিযী, নাসাঈ, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৪৪৪৩)

তবে পুরুষদের জন্য পাকা দাড়ি ও চুলে মেহেদী ব্যবহার করার কথা হাদীছে এসেছে কিন্তু তাতে কালো রং (কলপ) ব্যবহার করতে রাসূল (ছাঃ) কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন” (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪২৮) মহিলাদের জন্য হাতে-পায়ে মেহেদী ব্যবহার করা জায়েয (আবুদাঊদ হা/৪১৬৫)। মেহেদীর রং ওযূর কোন ক্ষতি করে না। পুরুষের জন্য মেহেদী ব্যবহার করা নিষিদ্ধ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৫/২১৮)।

মেয়েদের ঈদের নামাজঃ

বোন ! ঈদের নামাজ পড়ার জন্য মানষিকভাবে প্রস্ত্তত হচ্ছেন তো ??

উম্মে আতিয়্যা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বৃদ্ধা, ঋতুবতী ও পর্দানশীল সকলের জন্য আদেশটি বহাল ছিল। তবে ঋতুবতী নারী ঈদের নামাজ থেকে বিরত থাকবে এবং কল্যাণ (নসিহত শ্রবণ) ও মুসলমানদের সাথে দুআয় শামিল থাকবে।

তিনি বললেন: হে আল্লাহর রাসূল; আমাদের মধ্যে কারো বড় চাদর না থাকলে সে কী করবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : তার কোন বোন তাকে নিজের চাদর পরিধান করতে দেবে। (সহীহ মুসলিম)

রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন: “কর্তব্য হল, পর্দানশীন কুমারী মেয়েরা; এমন কি ঋতুবতী মহিলারাও ঈদগাহে যাবে। তবে ঋতুবর্তী মহিলাগণ নামাযের স্থান থেকে দূরে অবস্থান করে কল্যাণময় কাজ এবং মুমিনদের দু’আতে শরীক হবে।” (বুখারীঃ হাদীস নং ৯২৭)

এ সুন্নাত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং বাংলাদেশের জাতীয় ঈদগাহ সহ অনেক এলাকায় আজো প্রচলিত আছে। সুতরাং যে সব এলাকায় তা চালু নেই সেসব স্থানের সচেতন আলেম সমাজ এবং নেতৃস্থানীয় মুসলমানদের কর্তব্য হল, আল্লাহর রাসূলের সুন্নতকে পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে মহিলাদেরকেও ঈদের এই আনন্দঘন পরিবেশে অংশ গ্রহণের সুযোগ প্রদানের জন্য এগিয়ে আসা।

তবে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, পর্দা হীনতা, উচ্ছৃঙ্খলতা ইত্যাদি যাতে না ঘটে তার জন্য আগে থেকে সকলকে সচেতন ও সাবধান করা জরুরী। মহিলাগণ যখন বাড়ি থেকে বের হবে সর্বাঙ্গ কাপড় দ্বারা আবৃত করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে।

সংগ্রহঃ বিডি টুডে ব্লগ থেকে….।

 

অন্ধের চাঁদ দেখা

অন্ধের চাঁদ দেখা


কানিজ ফাতিমা


এক অন্ধ লোক ঈদের সকালে বাড়ীর সামনে মনমরা হয়ে বসে আছে –

এক যুবক পাজামা পাঞ্জাবী পরে নামাজে যাচ্ছিলো।
বৃদ্ধকে দেখতে পেয়ে বললো,
” চাচা ঈদের নামাজে যাবেন না ?”

– কিভাবে যাই ? চাদ তো দেখি নাই।
“কেন চাচা, আমরা তো দেখেছি।”

– হ্যা তা দেখেছো – তাই এটা তোমাগো ঈদ। তোমার দেখনে আমার হইবে না। আমার দেখোন লাগবো, খালি চক্ষে।

“তা চাচা আপনি তো অন্ধ, দেখবেন কেমনে?”

– সেই জন্যইতো আমার ঈদ নাই। হাদিসে বলছে তোমরা চাঁদ দেখে ঈদ করো।

“চাচা, রাসূল সাঃ তো “দেখা” বলতে হিসাব বুঝাইছেন। তোমরা চাঁদ দেখে ঈদ করো মানে তোমার চাঁদের হিসাবে ঈদ করো। “

– বেশী বুঝছ ? বেশী আধুনিক হইছোছ? হাদিসে স্পষ্ট আইছে দেখার কথা।

” চাচা, নামাজ কি সূর্য দেইখা পড়েন? নাকি ঘড়ি দেইখা? হাদিসে তো সূর্যের হিসাব আইসে। যাকাত কি ফসলে দেন নাকি টাকায় ? হাদিসে তো ফসলের হিসাব আইছে। সেহেরীর সময় কি বাইরে গিয়া লাল আর কালা সুতার তফাৎ করেন নাকি চার্ট দেইখা করেন? হাদিসে তো সুতার রঙের তফাতের কথা আইসে। যাউকগা আপনারে বুঝাইতে গিয়া ঈদের আনন্দ মাটি করতে চাই না। হাদিস বোঝার ক্ষমতা আল্লাহ সবাইরে সমান দেন নাই। নবীদের আল্লাহ প্রজ্ঞা দিছেন , তাদের কথা বুঝতেও প্রজ্ঞা লাগে। হেইডা আল্লাহ সবাইরে দেন নাই।”

“ঈদ মোবারক।”

 

ঈদের রাতের ইবাদত

ঈদের রাতের ইবাদত


অন্যান্য


হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে আল্লাহ তাআলা চার রাতে সব ধরনের কল্যাণের দরজা খুলে দেন। যেমন- ঈদুল আজহার রাত, ঈদুল ফিতরের রাত ও ১৫ শাবানের রাত ও আরাফার রাত। আর তা এভাবে ফজরের আজান পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
ঈদ আমাদের মাঝে আনন্দের নিয়ে আসে এবং আল্লাহর নৈকট্যলাভের মহাসুযোগ এই ঈদের রাত।

হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি,

হজরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাত জাগবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। যেদিন (হাশরের দিন) সবার অন্তর মারা যাবে, সেদিন তার অন্তর মরবে না।

পাঁচ রাত জেগে থাকবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। সেই পাঁচটি রাত হলো-
এক. জিলহজ মাসের আট তারিখের রাত।
দুই. জিলহজের ৯ তারিখের রাত।
তিন. ঈদুল আজহার রাত।
চার. ঈদুল ফিতরের রাত।
পাঁচ. ১৫ শাবানের রাত।

হাদিসের মর্মার্থ তো এই, কেয়ামতে ভয়াবহ তাণ্ডবের সময় প্রতিটি মানুষের অন্তর যখন হাশরের ময়দানে ভয় আশঙ্কা অস্থিরতায় মৃতপ্রায় হয়ে থাকবে। মানুষের হুশ-জ্ঞান বলতে থাকবে না কিছু। ঈদের রাতে আমলকারীর হৃদয় তখনও সজীব ও সতেজ থাকবে। সেদিন তার অন্তর মারা পড়বে না। বরং থাকবে সদা প্রফুল্ল।

ঈদের রাতের আরেকটি বড় প্রাপ্তি হলো, এ রাতে দোয়া কবুল করা হয়। আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা চাইব। কবরের আজাব থেকে মুক্তি চাইব।
আজকের রাত আমাদের জন্য, এই দুনিয়ার যাবতীয় কল্যাণ লাভ এবং মঙ্গল কামনা করার রাত।

“ঈদ মোবারক”
আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের নিকট থেকে ইবাদতসমুহ কবুল করুন।
“আমিন”

 

অভিমানী মনের আত্মদহন… ২য় খন্ড

অভিমানী মনের আত্মদহন… ২য় খন্ড


আফরোজা হাসান


রান্নাঘরে ঢুকে মারওয়া চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। দেখে মনেহচ্ছে পুরো রান্নাঘরের উপর দিয়ে ছোট ছাট ঝড় বয়ে গিয়েছে। আফরা লাজুক স্বরে বলল, আমি নাস্তা বানানোর পর রান্নাঘর গোছানোর সময় পাইনি আপি।
মারওয়া হেসে বলল, কোন সমস্যা নেই। আমি রান্না করার সময় এরচেয়েও ভয়াবহ অবস্থা হয় রান্নাঘরের।
আফরা হেসে বলল, আমাকে সান্ত্বনা দেবার জন্য এমন বলছেন আপি সেটা জানি। গতকাল যখন আপনি রান্না করেছেন আমি দেখেছি সবকিছু কত সুন্দর করে গোছানো ছিল।
মারওয়া হেসে বলল, যখন রান্না করছিলাম তখন তুমি দেখেছো। যখন রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন তো দেখোনি। আমি আগে রান্নার সমস্ত উপকরণ রেডি করে নেই। এরপর রান্নাঘর গুছিয়ে তারপর রান্না করি। আমার মনেহয় রান্নাঘর গোছানো থাকলে রান্না করার আনন্দ অনেক বেড়ে যায়। সেই আনন্দের কিছুটা রান্নার উপকরণের সাথে মিশে স্বাদও বাড়িয়ে দেয় খাবারের।
আপনি অনেক মজা করে কথা বলেন আপি। আবির এখানে আসার সময় আমাকে বলেছে আপির কাছ থেকে আর কিচ্ছু শিখতে হবে না তোমাকে। শুধু সর্বাবস্থায় মজা করে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা শিখবে।
মারওয়া হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ! তবে আমি কিন্তু মজা করার উদ্দেশ্যে কিছু বলি না। যেটা মনে আসে সেটাই বলি। তবে এটা কিন্তু সত্যি যে সাজানো গোছানো পরিবেশ আমাদের মনে সুন্দর ও শান্তি শান্তি ভাবের উদ্রেক করে। বাইরে থেকে ফিরে আমি যদি ঘর এলোমেলো দেখি আমার শরীরের ক্লান্তি তো বেড়ে যায়ই, সাথে মেজাজও খিটপিটে হয়ে যায়। এজন্য আমি কি করি জানো?
কি করেন আপি?
বাইরে বের হবার আগে পুরো বাসা সুন্দর করি সাজিয়ে গুছিয়ে নেই। দরজা বন্ধ করবার আগে এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে করি। যাতে দরজা খোলার পর মিষ্টি ফুলেল ঘ্রাণ আমাকে স্বাগতম জানায়। আবার রান্না করার সময় একদিকে মসলা, সবজি রেডি করবো, অন্যদিকে চুলায় রান্না চাপিয়ে দেবো এমনটাও কখনোই করি না। আমি আগে সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে গুছিয়ে নিয়ে রান্না শুরু করি। এতে সবটুকুন মনোযোগ রান্নাতেই থাকে। পরিবেশটা সাজানো গোছানো টিপটপ ফিটফাট থাকার কারণে মনটাও ভালো থাকে।
সবসময় এমন নিয়ম মাফিক চলতে পারেন আপি?
না তা অবশ্য পারি না। ব্যস্ততার কারণে অনেকসময় ব্যতিক্রম হয়। অর্থাৎ, একদিক দিয়ে কাটতে থাকি, আরেকদিক দিয়ে চুলায় দিতে থাকি, অন্যদিক দিয়ে গোছাতে থাকি। সেদিন খাবারের স্বাদে তারতাম্য হয়ে যায়। আবার বাসা এলোমেলো রেখে যেদিন বেড়িয়ে যেতে হয় কোন কারণে। ফিরে আসার পর ভালো কথা শুনলেও মেজাজ গরম হয়ে যায়। অকারণেই সবার সাথে চিৎকার-চেঁচামেচি করি। এইসব অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার জন্য আমি একটা পন্থা বের করেছি। ব্যস্ততা থাকলে আমি রেডিমেড কোন খাবারের আয়োজন করি কিংবা একদম শর্টকার্ট কিছুর। যেমন ধরো ডিমভাজি, আলুভর্তা, ডাল। গোছানোর সময় না থাকলে এলোমেলো সব কিছু নিয়ে আলমারিতে ঢুকিয়ে রেখে বিছানাগুলো ঠিকঠাক করে পারফিউম স্প্রে করে বেড়িয়ে যাই। বাসায় ফিরে কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে এরপর সব বের করে গুছিয়ে নেই। এমনটা আমি করি কারণ মনের শান্তি বজায় রাখাটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যাপারটা আমি তোমাদের ভাইয়াকে দেখে শিখেছি। উনি এমন সবকিছু এড়িয়ে চলেন যা উনার মনের শান্তিতে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
আমাকেও শিখিয়ে দেন আপি কিভাবে সর্বক্ষণ মনে শান্তি ভাব বজায় রাখতে হয়।

চলবে

 

সুস্থ দাম্পত্য টিপস

সুস্থ দাম্পত্য টিপস


দাম্পত্য


দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক বন্ধন ও সুসম্পর্ক উপর নির্ভর করে, সুস্থ দাম্পত্য জীবন ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনে সহায়তা করে। এবং এর বিপরীতে গেলে ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরে।

সম্পর্ক নিয়ে সন্তুষ্ট, পরিতৃপ্ত ও সুখীবোধ

ব্যক্তি তার প্রতিদিনকার ঘটনাবলিতে পরিতৃপ্ত। স্বাভাবিকভাবেই উভয়েই সন্তুষ্ট ফলে মানসিক চাপ(stresses) গুলোর মুখোমুখি হলেও মোকাবেলা করতে পারেন। নিজের ব্যক্তিগত দক্ষতা এবং সমস্যা সমাধান করার কৌশল বুঝতে পারেন এবং রোজকার দিনের কাজ গুলো ঠিকভাবে গুছিয়ে করতে পারেন।

নিরাপদ এবং আরামদায়ক বোধ করবে

শুধু নিজের ভালো থাকাকে প্রাধান্য দেওয়া ছাড়াও অন্যের ভালো থাকাটাকে নিশ্চিত করেন ফলে নিরাপদ এবং আরামদায়ক সম্পর্কের জন্ম নেয়।

আচরণ সম্মানপূর্ণ হবে

সন্মান হলো সন্মানিত ব্যক্তির চাদর। সুতরাং পরস্পরের বন্ধন তখনই সবচেয়ে বেশি মজবুত হয় যখন সন্মান সহিত আচরণ করেন পরস্পর।

নিজেদের সঙ্গে কাটানো সময় আনন্দপূর্ণ হবে

কাটানো সময় আনন্দপূর্ণ হবে বলেই পরস্পরের জীবনের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। (যেমন: বন্ধুবান্ধব, ভালো লাগার বিষয়, পরিবার, জীবন নিয়ে ভাবনা, স্কুল-কলেজ, কর্মক্ষেত্র ইত্যাদি)।

দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের প্রতি আস্থা/বিশ্বাস থাকবে

দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের প্রতি আস্থা ও পাশাপাশি পরিবার ও পরিবারের বাইরে সমাজ কমিউনিটি ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গনে অবদান গড়বে।

*দাম্পত্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, মমতা, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদির ভিত্তিতে পরস্পরকে প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে।

 

মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর

মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর


ড. মেহরান মাহমুদ


মুসলিম জীবনে লাইলাতুল কদর অতিপুণ্যময় ও অনন্য এক রজনী। মর্যাদাময় এ রাতটিতে রয়েছে শান্তি, সান্ত¡না এবং সার্বিক কল্যাণ। এ রজনী ভাস্বর হয়ে আছে পবিত্র কুরআন নাজিলের মহিমায়, ভাস্বর হয়ে থাকবে স্বল্প সময়ে অধিক পুণ্য লাভের নিশ্চয়তায়। এ রাতের সম্মানেই পবিত্র কুরআনে ‘সূরা কদর’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা অবতীর্ণ হয়েছে।

লাইলাতুল কদরের অর্থ

‘লাইলাতুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে রাত। ‘কদর’ শব্দের অর্থ হচ্ছে পরিমাপ, পরিমাণ, নির্ধারণ ও ভাগ্য নিরূপণ। ‘কদর’ থেকেই ‘তাকদির’ শব্দ। অবশ্য কদর শব্দের অন্য অর্থ সম্মান, গৌরব, মর্যাদা ও মহিমা। সুতরাং ‘লাইলাতুল কদর’ মহিমান্বিত রজনী, সম্মানিত রাত্রি, ভাগ্য নিরূপণ, বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ রজনী অর্থে সাধারণত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। হজরত আবুবকর আররাক রা: বর্ণনা করেন, এ রাতকে এ জন্য ‘লাইলাতুল কদর’ বলা হয় যে, যে ব্যক্তি ইতঃপূর্বে কোনো ইবাদত বন্দেগি করে ‘কদর’ বা সম্মানের অধিকারী হয়নি, সে ব্যক্তি এ রাতে তওবা ইস্তিগফার করে ইবাদত-বন্দেগি করলে ‘কদর’ বা সম্মানের অধিকারী হতে পারবে।

লাইলাতুল কদরের উৎপত্তি

ইবনে জারির র.-এর বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সা: একবার ইসরাঈল গোত্রের জনৈক ইবাদতকারী সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, তিনি একাধারে এক হাজার মাস যাবত সমস্ত রাত্রি ইবাদতে মশগুল থাকতেন এবং সকাল হলেই জেহাদে বের হয়ে যেতেন। মুসলমানরা এ কথা শুনে বিস্মিত হন। রাসূলুল্লাহ সা: তার উম্মতের জন্য শুধু এক রাত্রির ইবাদতকেই সে ইবাদাতকারীর এক হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করেছেন। (তাফসিরে মাজহারি)

কদর কোন রজনীতে

পবিত্র কুরআনের সুস্পষ্ট বর্ণনায় লাইলাতুল কদর রমজান মাসেই। তবে কবে? এ নিয়ে আলেমদের একাধিক মতামত পরিলক্ষিত হয়। তাফসিরে মাজহারির বর্ণনা মতে, ‘এ রাত রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের মধ্যে আসে। কিন্তু এরও কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নেই। সহিহ হাদিস দৃষ্টে এই ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে ‘লাইলাতুল কদর’ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মহানবী সা: বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরকে রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে তালাশ করো।’ (বুখারি)
মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের রমজনর শেষ ১০ দিন অধিক ইবাদত করার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্যই মূলত লাইলাতুল কদরকে প্রচ্ছন্ন রেখেছেন। তারপরও অধিক সম্ভাব্য রাত হিসেবে ২৭তম রাতকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: গণিত সূত্র দিয়ে এর অধিক সম্ভাব্যতা প্রমাণ করেছেন। যেমন ‘সূরা কদর’-এ ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দটি তিনবার উল্লেখ আছে। আরবি বর্ণমালা অনুযায়ী ‘লাইলাতুল কদর’ লিখতে ৯টি অক্ষরের প্রয়োজন হয়। ৩ কে ৯-এর সাথে গুণ করলে গুণফল ২৭ হয়। উপর্যুক্ত হিসেবে ‘লাইলাতুল কদর’ রমজানের ২৭ তারিখ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। (তাফসিরে রুহুল বয়ান)

লাইলাতুল কদরের ইবাদাত

রাসূলুল্লাহ সা: যেভাবে এ রাত কাটাতেন এর পূর্ণ অনুসরণ করাই হবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে আমাদের নি¤œ বর্ণিত কাজগুলো করা আবশ্যক।
নিজে রাত জেগে ইবাদত করা এবং পরিবারের সদস্য ও অধীনস্থদের ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করা।
তারাবিহের সালাত আদায়ের পর রাতে তাহাজ্জুদ ও সালাতুত তাসবিহ আদায় করা।
নফল নামাজের সিজদার মধ্যে তাসবিহ পাঠ শেষে দোয়া করা। কেননা, সেজদাবনত অবস্থায় মানুষ তার রবের অতি নিকটে চলে যায়। ফলে তখন দোয়া কবুল হয়।
নিজের কৃত পাপরাশির জন্য বেশি বেশি তওবা করা। ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো পাপ না হয় তার জন্য দৃঢ়সঙ্কল্প করা।
অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা। উত্তম হবে অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ কুরআন অধ্যায়ন করা।
সাধ্য অনুযায়ী জিকির আজকার ও তসবিহ তাহলিল আদায় করা।
কবুল হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে নিজ, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, জীবিত-মৃত ব্যক্তিদের জন্য সর্বপরি দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করে একাগ্রচিত্তে দোয়া করা। বিশেষ করে মহানবী সা:-এর শিখানো এই দু’আটি বেশি বেশি করে পড়া, ‘হে আল্লাহ তুমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে তুমি ভালোবাস, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দাও।’
লাইলাতুল কদরের ফজিলত : অগণিত ফজিলতে পূর্ণ এ রাতটির কতিপয় ফজিলত নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

এ রাতের ফজিলত বর্ণনা

এ রাতের ফজিলত বর্ণনা করে এ রাতেই একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা অবতীর্ণ হয়েছে, যার নাম সূরাতুল কদর। এ এক রজনীর ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। এ রাতে পৃথিবীতে অসংখ্য ফেরেশতা নেমে আসেন এবং তারা তখন দুনিয়ায় কল্যাণ, বরকত ও রহমত বর্ষণ করতে থাকেন। এ রাতে ইবাদতে লিপ্ত বান্দাদেরকে ফেরেশতারা জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তির বাণী শোনান।
এ রাতে নফল সালাত আদায় করলে মুমিনদের অতীতের সগিরা গুনাহগুলো মাফ করে দেয়া হয়।
মহানবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় কদরের রাতে নফল সালাত আদায় ও রাত জেগে ইবাদত করে আল্লাহ তার ইতঃপূর্বের যাবতীয় সগিরা গোনাহ ক্ষমা করে দেন’। (বুখারি, মুসলিম)।

এ রাতে তওবা কবুল করা হয়।

রাতটি চিহ্নিত করার কিছু আলামত 

এ রাতকে চিহ্নিত করার কিছু আলামত হাদিস শরিফে পাওয়া যায়। যেমন রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না। নাতিশীতোষ্ণ হবে।
মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে। ইবাদাতে অধিক তৃপ্তি পাবে। বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে। হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে, যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো। (বুখারি, মুসলিম)
লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির উত্তম মাধ্যম : লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির সুবর্ণ সুযোগ হচ্ছে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। মহানবী সা: প্রতি রমজানের শেষ ১০ দিন নিয়মিত ইতিকাফ করতেন।

মুমিন বান্দাদের জন্য লাইলাতুল কদর অত্যন্ত মঙ্গলময় এবং বরকতময় রাত। এক রাত ইবাদত করে এক হাজার মাসেরও অধিক সময়ের ইবাদতের সাওয়াব পাওয়া যাবে, এর চেয়ে বড় সুবর্ণ সুযোগ আর কী হতে পারে? এ রাতের ইবাদত হতে বিমুখ ব্যক্তি সত্যিই হতভাগা। মহানবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শবে কদর থেকে বঞ্চিত হয়েছে সে ব্যক্তি সর্ব প্রকার মঙ্গল থেকেই বঞ্চিত হলো। আর যে বঞ্চিত হলো প্রকৃতপক্ষে সে সব কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো’ (নাসাঈ)।
লেখক : গবেষক
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

 

বয়স হার মেনেছে বৃদ্ধা মালঞ্চির জীবন সংগ্রামের কাছে


নারী সংবাদ


বর্তমানে বাংলাদেশের লোক সংখ্যা সাড়ে ষোল কোটির উপড়ে। যার মধ্যে ৬ দশমিক শতাংশের বয়স ৬০ বছরের ওপড়ে। বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি যখন ৫৫ কিংবা ৫৭ বছরে পা রাখেন তখন তাঁকে সাধারণত প্রবীণ কিংবা বৃদ্ধ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। কর্মক্ষম থাকলেও তাকে চাকরি এবং কাজ থেকে অব্যাহত দেয়া হয়। অনেক সময়ই তিনি কাজ করতে চাইলেও তাকে কাজে নেয়া হয় না। যে কারণে বৃদ্ধ বয়সে একজন মানুষের ভরসার পাত্র হয় তার সন্তান। তবে এ ক্ষেত্রে সমাজে গরীব মানুষের বেলায় ঘটে ভিন্ন কিছু। গরীবদের বেলায় কিছু কিছু সন্তানের নিষ্ঠুরতার কাছে মানবিকতা হার মানে। হার মানে অনেক বৃদ্ধ মা-বাবা। কারও নতুন ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম। গরীবদের বেলায় কারও ঠাঁই মেলে রাস্তার ফুটপাতে। আবার কেহ কেহ সন্তানের ধিক্কার এবং নিষ্ঠুরতার কাছে না হেরে নিজেরাই নিজেদের বাকি জীবনটাকে নতুনভাবে গোছাতে শুরু করে। কেহ কেহ সফল হয়। তাদেরই একজন ৬৬ বছর বয়সী মালঞ্চি । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মালঞ্চি বেশ পরিচিত মুখ।
চারুকলা অনুষদের সামনে একটি বড় কাঠের বাক্সে চুড়ি নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে। প্রায় ১৮ বছর ধরে চুড়ির ব্যবসা করছেন মালঞ্চি। স্বামী, তিন ছেলে এবং দুই মেয়েকে নিয়ে ছিল মালঞ্চির সংসার। অভাব অনটনের কারণে তিন ছেলেকে অষ্টম শ্রেণীর পর আর পড়াতে পারেননি তিনি। সংসারের টানাপোড়নের মধ্যেই তিনি তার ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। এরপর মালঞ্চি এবং তার স্বামীর জীবন অনাকাঙ্খিত মোড় নেয়। তাদের ছেলে-মেয়ে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। মালঞ্চি এবং তার স্বামীকে দেখাশোনা করতে চাইতো না তারা। তখন মালঞ্চি এবং তার স্বামীকে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার হতে হয়। এই বুড়ো-বুড়ি আলাদা একটি বস্তিতে থাকা শুরু করল। হাতে যে শেষ সম্বল নিয়ে তারা বের হয়েছিলেন তাও শেষ হবার পথে। পূর্ব থেকেই মালঞ্চির সংসারে অভাব-অনটন ছিল। তবে বুড়ো বয়সে সন্তানের সেবা পাবেন সেই আশায় ছিলেন তারা। তাদের আশা ছিল, ‘আমগো ছাওয়াল এই বুড়া-বুড়ীরে দেখব। জীবনে বড় কিছু হইব’। কিন্তু এই আশা যখন ভেঙ্গে গেল তখন তারা চোখের সামনে সরষে ফুল দেখতে লাগলেন। পরবর্তীতে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘আবার সংসারের হাল ধরন লাগব। এমনে বয়সের দোহাই দিয়া বইসা থাকলে চলবো না। আল্লাহ্ দিলে অহনও শরীরে যে শক্তি আছে কাজ কাম কইরা খাইতে পারমু’। চুড়ির ব্যবসা শুরু করার নিদ্ধান্ত নিলেন মালঞ্চি। কিন্তু তাদের এই সিদ্ধান্তে প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ায় মূলধনের অভাব। তিনি বললেন, ‘ঐ সময় খাওনের পর্যন্ত টেকা আছিল না। কিন্তু একটা কাজ শুরু করন লাগব। আমার জামাই(স্বামী)তখন রিক্সা চালাইত। কিন্তু বুড়া মানুষটার কষ্ট বেশি হইত। বেশি একটা আয়-রোজগারও হইত না। পরে আল্লাহর নাম নিয়া নামলাম এই ব্যবসায়ে। মাইনষের থেইক্কা সাত হাজার টেকা ধার নিয়া শুরু করছিলাম’।
ব্যবসায়ী হিসেবে মালঞ্চিকে বেশ দূরদর্শী বলা যেতে পারে। তিনি ব্যবসায়ের জন্য এমন স্থান বেছে নিলেন যেখানে হরহামেশা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিশোরীদের আনাগোনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন হওয়ায় বেচা-কেনাও ভাল হয়। এখানে কোন প্রকার সমস্যারও সমুখীন হতে হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এহানের পোলাপানগুলাই আমার মাইয়া, হ্যারাই আমার পোলা। আমার কোন সমস্যা হইলে এরাই আমার দেখভাল করে। এই শীতে আমি যহন কম্বল চাইছি তহনই দিছে। এত বছর হইয়া গেলো এরা কেউ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনাই।’ তিনি ৪০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা দামের চুরি বিক্রি করেন। তাঁর দৈনিক এক থেকে দুই হাজার টাকা আয় হয়। প্রথম দুই বছর কোন লাভের মুখ দেখতে পাননি মালঞ্চি। তিনি তার ব্যবসার মালামাল আনতেন চকবাজার থেকে বাকিতে। মাস শেষে যে আয় হত তা পাওনা পরিশোধ করতেই ফুঁড়িয়ে যেত। তবে পরবর্তীতে মালঞ্চি তার দক্ষতা এবং একাগ্রতার মাধ্যমে সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। বর্তমানে তার এই ব্যবসা থেকে যা লাভ হয় তা দিয়ে এই বুড়ো-বুড়ীর সংসার চলছে। মালঞ্চির বয়স প্রায় ৬৬। এই বয়সেও তিনি যেভাবে এই ব্যবসা অকপটে চালিয়ে যাচ্ছেন তা আমাদের সমাজের মানুষের জন্য একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি প্রমাণ করেছেন বয়স তো একটি সংখ্যা মাত্র। মনোবল থকালে একটি মানুষের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব।
কেবলমাত্র মালঞ্চি নন, আমাদের দেশে অনেক গরীব মানুষ আছেন যারা পরের কাছে হাত না পেতে পরিশ্রম করে নিজেদের সংসার চালান। এমন কাজ সত্যিই অনুকরণীয়।

সুত্রঃ (আবিদা হক লোরা) বাস

 

রেসিপি ( পিঁয়াজু এবং কাঁচা আমের শরবত)


রেসিপি


ঠান্ডা ঠান্ডা কাঁচা আমের শরবত

কাঁচা আমের শরবত ইফতারিতে খেতে মজা। গরমকালের জন্য পারফেক্ট শরবত কাঁচা আম।

উপকরণ

কাঁচা আমের টুকরো এক বাটি, ৪ চামচ লেবুর রস, পরিমান মত চিনি, স্বাদ মত লবণ, দুটো কাঁচা মরিচ, আদা কুচি, জিরাগুঁড়ো, বরফকুচি, পুদিনা পাতা।

বানানোর পদ্ধতি

কাঁচা আমের টুকরোর সাথে অল্প লেবুর রস, পরিমান মত চিনি, স্বাদ মত লবণ, দুটো কাঁচা মরিচ, আদা কুচি, জিরাগুঁড়োসহ পানি দিয়ে ব্লেন্ড করুন ভালো করে। এবার একটি বাটিতে লেবুর রস নিন। যে গ্লাসে শরবত খাবেন সেই গ্লাসটি উল্টো করে গ্লাসের মুখটা লেবুর রসে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন। এবার লেবুর রস থেকে গ্লাসটিকে সরিয়ে ঠিক একই ভাবে বিটনুন ও জিরের গুঁড়ো অল্প লাগিয়ে নিন। এর ফলে শরবত খাওয়ার সময় বেশি স্বাদ পাবেন।

পরিবেশন
পুদিনাপাতাসহ, বরফকুচি দিয়ে পরিবেশনের করতে পারেন।

মচমচে পিঁয়াজু

ইফতারির সবচেয়ে মজাদার আইটেম হলো পিঁয়াজু। আর সেই পিঁয়াজু যদি মচমচে হয় তাহলে কত মজা হতে।

 উপকরণ
মসুর ডাল, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচামরিচ চালের গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, আদা বাটা, পাউরুটি, রসুন বাটা, ধনিয়া পাতা কুচি, লবণ, তেল।

প্রস্তত প্রণালী 
মসুর ডাল ভাল করে ধুয়ে ২-৩ ঘণ্টা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর পানি ফেলে দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। একটু দানাদার থাকতে নিয়ে নিন। ব্লেন্ড করা বা বাটা ডাল একটি বাটিতে নিয়ে তেল ছাড়া সব উপকরণ দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। এবার প্যানে তেল গরম করে ১ টেবিল চামচ মত ডালের মিশ্রণ নিয়ে গোল করে তেলে ছাড়ুন।

পরিবেশন

প্যানে জায়গা অনুযায়ী আরও পিঁয়াজু তেলে দিন এবং মাঝারি আঁচে উভয় পাশ হাল্কা বাদামী করে ভেজে নিন।
ভাজা হয়ে গেলে কিচেন টিস্যুতে তুলে নিন। এভাবে সব পিঁয়াজু ভেজে গরম গরম পরিবেশন করুন আপনার ইফতারির টেবিলে।

 

চান্দিনায় সেহেরী রান্নার সময় গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা : বাধা দেয়ার স্বামী খুন

চান্দিনায় সেহেরী রান্নার সময় গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা : বাধা দেয়ার স্বামী খুন


নারী সংবাদ


কুমিল্লার চান্দিনায় সেহেরী রান্নার সময় এক গৃহবধূকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এতে বাধা দেয়ায় ছুরিকাঘাতে ওই গৃহবধূর স্বামীকে খুন করেছে প্রতিবেশি মামা। এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করেছে চান্দিনা থানা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চান্দিনা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড ছায়কোট এলাকায় এ ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ঘটে।

গৃহবধূর স্বামী নিহত ফারুক হোসেন (২৬) ছায়কোট এলাকার মৃত বাচ্চু মিয়ার ছেলে।

এ ঘটনায় নিহতের প্রতিবেশি দুই মামা- হত্যাকারী জানে আলম (৩৫) ও তার ভাই মোর্শেদকে (৩৭) আটক করেছে চান্দিনা থানা পুলিশ। তারা একই এলাকার রহমান ড্রাইভারের ছেলে।

স্থানীয় ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনাটি ঘটে গত সোমবার দিবাগত রাত ২টায়। আর ওই ঘটনার রেশ ধরে বৃহস্পতিবার ইফতারের পর গৃহবধূর স্বামীকে ছুরিকাঘাত করে ধর্ষণের চেষ্টাকারী জানে আলম। পরে রাত ১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু ঘটে তার।

নিহতের মা নাছিমা বেগম জানান, ‘গত সোমবার দিবাগত রাত ২টায় আমার পুত্রবধূ রান্না ঘরে সেহেরী তৈরি করছিল। এসময় প্রতিবেশী জানে আলম আমার পুত্রবধূকে রান্নাঘর থেকে মুখ চেপে ধরে পাশের একটি জমিতে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এসময় পুত্রবধূর চিৎকার শুনে আমার দুই ছেলে ফারুক ও জালালসহ বাড়ির লোকজন বের হয়। এ সময় জানে আলম তাকে ছেড়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পরপর আমার দুই ছেলেসহ অন্যান্যরা জানে আলমের বাড়িতে গেলে জানে আলম উল্টো আমার ছেলেদের মেরে ফেরার হুমকি দেয়।

পরদিন মঙ্গলবার সকালে আমরা এলাকার কাউন্সিলরসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি জানাই এবং তারা জানে আলমের বাড়িতে গিয়ে তাকে পায়নি। মঙ্গলবার ভোর থেকেই জানে আলম আত্মগোপন করে।

বৃহস্পতিবার ইফতারের পর প্রচন্ড গরমে আমার ছেলে ফারুক হোসেন আমাদের বসতঘর সংলগ্ন একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল। এসময় জানে আলম ও তার ভাই মোর্শেদ এসে বিষয়টি কেন এলাকায় জানাজানি হলো বলেই আমার ছেলের পেটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।’

ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল সালাম জানান, ‘দুটি পরিবারই হতদরিদ্র। তবে জানে আলম মাদকাসক্ত এবং চরিত্রহীন। ভোর রাতের সেহেরী তৈরি করার উদ্দেশ্যেই গৃহবধূ বাইরের রান্না ঘরে রান্না করছিল। এসময় গৃহবধূকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে জানে আলম। ঘটনার পর সে আত্মগোপন করে এবং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফারুককে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই ছুরি নিয়ে বাড়িতে আসে।’

এ ব্যাপারে চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবুল ফয়সল জানান, ছুরিকাঘাত করার পরপর নিহতের মা নাছিমা বেগম বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা রাত ৯টায় ধর্ষণের ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগে মামলা গ্রহণ করি। রাত সাড়ে ১২টার মধ্যে ঘটনার মূলহোতা জানে আলমসহ তার বড় ভাই মোর্শেদকে আটক করি। রাত অনুমান ১টার দিকে ঢামেকে মৃত্যু হয় ছুরিকাঘাতে আহত ফারুক হোসেনের। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

 

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-৪

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-৪


সাদিয়া মুকিম 


আমরা যা করতে পারি – অন্য সময়ের মতই রমজানে বারে বারে অল্প করে পরিমিত পরিমানে খাওয়ার অভ্যাস করা । যেমন: ইফতার অল্প করা,

একটু পরে অল্প রাতের খাবার খাওয়া , সেহেরীতেও পরিমিত খাওয়া । ইফতার, রাতের খাবার ও সেহেরী এই তিন বেলাই খাবার আমরা খাবো কোনো বেলা খাবার খাওয়া বাদ না দিয়ে বরং অল্প অল্প করে বার বার পরিমিত এবং ক্যালরি মান অনুযায়ী খেতে হবে। না হলে কিন্তু শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে ।

সেহেরী না খাওয়া: – সেহেরি একেবারেই না খাওয়া ঠিক নয় , প্রথমত, সেহেরী খাওয়া সুন্নত এবং এতে বরকত রাখা হয়েছে। রহমতের ফেরেশতারা এ সময় সেহেরী কারীদের জন্য দোয়া করেন। তাই এই সুবর্ণ সুযোগ হারানো ঠিক নয় । আর সেহরী না খেলে সারা দিনের ঘাটতিতে শরীর ও দুর্বল হয়ে যাবে ।

অনেকে মনে করেন, সেহরি না খেয়ে এক বেলা শুধু ইফতারে খেলে ওজন কমবে।কিন্তু এতে হিতে তাছাড়া সেহেরী না খেলে বিপকক্রিয়া পরিবর্তন হয়ে শরীরের সঞ্চিত শক্তি ক্ষয় হয়, ফলে দেহে ক্লান্তিআসে ও রোজা রাখতে অনেক কষ্ট হয় । আমাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ওজন কমানো না বরং সিয়াম পালনে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ এ কথা ভুলে গেলে চলবে না।

আমাদের করণীয় হলো কষ্ট হলেও সেহেরি খেতে হবে । একান্ত অরুচী হলে একটু পানি, ফল বা দুধ হলেও খাওয়া চাই । অনেকেই আম -দুধ -চিড়া খেয়ে থাকেন ।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরির মাঝে বরকত রয়েছে। (বুখারী)

এবং তিনি (সাঃ) বলেছেনঃ

“আমাদের সাওম আর আহলে কিতাবদের সাওম পালনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হচ্ছে সেহরী গ্রহণ।” (মুসলিম)

ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় : সারাদিনের রোযা শেষে অনেকেই প্রতীক্ষায় থাকি গরম এক কাপ চা এর জন্য । এমনকি অনেকে সেহরী এবং ইফতার উভয় সময়েই চা পান করেন। খেয়াল রাখতে হবে রোজায় চা, কফির মাত্রা যেনো কম হয় । তা না হলে পানিশুণ্যতা , কোষ্ঠকাঠিন্য, ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

কারণ, ক্যাফেইন হলো diuretic, যা শরীর থেকেপানি বের করে দেয়।

একান্ত না পারলে বা চা বা ক্যাফেইন যদি খেতেই

হয় , তবে হালকা ক্যাফেইনযুক্ত খাওয়া যেমন:গ্রিন টি। সেহেরিতে ক্যাফেইন না খাওয়াই ভালো, সারাদিন তাহলে পানি পিপাসা লাগবে এবং শরীরে পানি শুন্যতা তৈরী হবে।

রোজা রাখাকে ওজন কমানোর উপায় মনে করা :অনেকে মনে করেন রোজা রেখে ডায়েট করবেন ও ওজন কমাবেন। এটি ভুল, কারণ রোজা রেখে আমরা আল্লাহর ইবাদত করছি , আল্লাহ রোজার মাস দিয়েছেন বেশি বেশি ইবাদাত বন্দেগী করতে, আত্মশুদ্ধি করতে । তাই রোজার মাসকে ডায়েটিং এর মাস না মনে করে আল্লাহতায়ালা আখিরাতকে লাভ করার, গুনাহ মোচন করার যে অপূর্ব সুযোগ দিয়েছেন, তা আমাদের গ্রহণ করা উচিত।

অন্যান্যদের ও ইফতারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া — আমরা নিজেরাতো সামর্থ্যের মধ্যে সবচাইতে ভালো খাবারগুলো সেহরি ও ইফতারে খাচ্ছি, আসুন না তাঁদের পাশেও দাঁড়াই যারা এক মুঠো খাবার ও খেতে পারছেন না অভাবের তাড়ণায়!

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কেউ একজন রোযাদারের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করে, তাহলে তার জন্যও রোযাদার ব্যক্তির অনুরূপ সওয়াব

রয়েছে যদিও রোযাদারের সওয়াব থেকে কোনো কমতি হবে না।(তিরমিযী)
অনেক পুষ্টিমান যুক্ত, ক্যালরি যুক্ত, স্বাস্থ্যমান বজায় রেখে সেহরি ও ইফতার করছি কিন্তু এই আমি আর আপনি যেনো আল্লাহ তায়ালার দেয়া রিজিক স্বরুপ আমানতকে অপচয় যেনো না করি!

আমরা যেখানে খাদ্যের পুষ্টি মান নিয়ে এতো আলোচনায় মুখর আমাদের এই পৃথিবীর আরেক প্রান্তে ই কোনো মা এই মুহূর্তে তার সন্তানের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে এই কষ্টে যে তাদের কাছে এমন কোনো খাবার নেই যা দিয়ে ক্ষিদে নিবারণ সম্ভব ! সুবহানাল্লাহ। আল্লাহ আমাদের শুকর আদায় করার তৌফিক দান করুন।

খাওয়ার সময় যে খাবারটুকু প্লেটের কোনায় রয়ে যায়, পাতিল ধোয়ার সময় নিচে যে ভাত টুকু লেগে থাকে, ময়লা ফেলার সময় যে উচ্ছিষ্ট ফেলতে যাচ্ছি তখন যেনো আমরা প্রত্যেকেই মনে রাখি إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ আল্লাহ অপচয় কারীকে ভালোবাসেন না!

“.وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ﴾….তোমরা খাও এবং পান করো, এবং কোনো অবস্থাতেই অপচয় করো না, আল্লাহ্ তাআলা কখনোই অপচয়কারীদের ভালো বাসেন না ।” (সূরা আ’রাফঃ৩১)

রমাদ্বানের বরকতময় সময় চলে যাচ্ছে, আল্লাহ আমাদের ঠিকভাবে ইবাদাত করে উনার সন্তুষ্টি এবং আমাদের পাপ মোচন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

(কৃতজ্ঞতা স্বীকার- ওয়েবসাইট সমূহ)

 

উপবাসী ভোজন

উপবাসী ভোজন


ফাতিমা মারিয়াম


বাদল অনেকদিন পর চাচাতো বোন কেয়া আপার বাসায় এসেছে। ছোট বাচ্চারা মামাকে কাছে পেয়ে ভীষণ খুশি।মামার সাথে কিছুক্ষণ খেলা করার পর তারা নিজেদের রুমে চলে গেল। এবার কেয়া আপা এসে বাদলের সাথে গল্প শুরু করল। কথার এক পর্যায়ে কেয়া বাদলকে বলল-‘আম খাবি বাদল? তোর দুলাভাই রাজশাহী থেকে আম আনিয়েছে। একেবারে বাগান থেকে আনা, ফর্মালিন মুক্ত। কাল পাটিসাপটা পিঠা বানিয়েছিলাম, ফ্রিজে আছে। দিব তোকে?’

-‘আপা কী বলছ? আমি রোজা রেখেছি!’

-বাহ! ভালো, তুই তাহলে এখন রোজা রাখিস?

-হুমমম…আমি এখন বড় হয়ে গেছি।

এমন সময় পাশের বাসার ভদ্রমহিলা আসলেন। তিনি আসার পর বাদল উঠে অন্য রুমে গেল। উনি কিছুক্ষণ গল্প করে চলে যাওয়ার পর কেয়া আপা বাদলের কাছে এসে বসলেন। ‘আর বলিস না ভাই, এদের নিয়ে হয়েছে জ্বালা। পাশের বাসার ভাবী আসলেন না? উনি এসেই শুরু করলেন উনার ঈদের শাড়ির বাজেট কত? ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোন মার্কেট থেকে শপিং করবেন? উনার স্বামী উনাকে কত টাকা দিয়েছেন কেনাকাটার জন্য? এসব হাবিজাবি। আরে বাপু, আমরাও তো শপিং করি এইভাবে তো মানুষকে বলে বেড়াই না…হুঁহ!

বাদল মাথা নাড়িয়ে বলল- আপা কিছু মানুষের কাজই হল নিজেকে জাহির করা। এদের থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখাই ভালো।

– হুম ঠিক বলেছিস! এখন বল তোরা বাসার সবাই কেমন আছিস? বাবুলের বউ কেমন? সবার সাথে মানিয়ে চলে?

বাবুল হল বাদলের বড় ভাই। কয়েকমাস আগে বিয়ে হয়েছে।

-আর কি বলব আপা! ভাবী সংসারের কোন কাজই পারেনা। আম্মাকেই সব কিছু করতে হয়! ভাবীকে কিছু কাজ করতে বললেই সে আম্মাকে এসে বলবে আম্মা আপনি দেখিয়ে দেন। আরে! এত বড় মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে এসেছে কোন কাজ না শিখেই! আম্মার হয়েছে যত জ্বালা!

-হুম তুই ঠিকই বলেছিস। আমাদের পরিবারের বউগুলি একটাও ভালো পড়েনি। আমাদের মইন কে তো ওর বউ ভেড়া বানিয়ে রেখেছে। বউয়ের কথায় উঠে বসে।

– তারপর দেখনা আপু ভাবীর বিয়ের পর এইটা প্রথম রমজান। ভাবীর বাবার বাড়ি থেকে এখনও আমাদের বাসায় ইফতারি পাঠায়নি।
………

এসব কথোপকথন এভাবেই দীর্ঘায়িত হতে থাকে; আমার, আপনার এবং আমাদের সবার। এখানে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বাদল কিন্তু বোনের আহবানে কিছুই খায়নি। কারণ সে রোজা রেখেছে। কিন্তু কথার এক পর্যায়ে যখনই অন্যের সমালোচনা বা গীবত চলে এলো তখনই তারা দুজন একে অন্যকে উৎসাহিত করে যায়। এভাবেই আমরা আমাদের সিয়ামের মূল শিক্ষা থেকে দূরে চলে যাই। খাদ্যপানীয় গ্রহণ না করেও নিজেদের সিয়ামকে শুধুমাত্র উপবাসে পরিণত করে দিই।

অথচ আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত হাদিসে আমরা জানি যে আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (রোযা রাখার পরও) মিথ্যা বলা ও খারাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকে না তার পানাহার ত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।’ (বুখারী ও মুসলিম)

কিন্তু আমাদের বাস্তব জীবনে এর অনুশীলন আমরা করিনা। এই রোজার দিনে কেউ এক প্লেট সুস্বাদু খাবার দিলে সেটা এড়িয়ে যেতে পারলেও এক ঝুড়ি মন্দ কথা সানন্দে গ্রহণ করি এবং তাকেও এক ঝুড়ি বা তারচেয়েও বেশি উপহার দিই।

অথচ সূরা আল হুজুরাতে আল্লাহ গীবতকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। ‘হে ঈমানদারগণ, বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গোনাহ। দোষ অন্বেষণ করো না। আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে। এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু।’ [আল হুজুরাত-আয়াত নং-১২]

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করে আমাদের সব ইবাদাত কবুল করে নিন। আমীন।

 

রেসিপি (ভেজা ভেজা ছোলা বুট)

(ভেজা ভেজা ছোলা বুট)


রেসিপি


ভেজা ভেজা ছোলা বুট
ছোলা বুট হলো ইফতারির মুল আকর্ষণ। সাথে মচমচে মুড়ি। আসুন রমজানের শেষে আবার নতুন করে দেখে আসি ভেজা ভেজা ছোলা বুট তৈরি করার নিয়মটি

উপকরণে যা লাগবে

ছোলা সিদ্ধ পরিমাণ মত, পেঁয়াজ কুচি,
টমেটো কিউব করে কাটা, কাঁচামরিচ কুচি, তেল, ধনে গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, লেবুর রস, আদা-রসুন বাটা, গরম মসলা গুঁড়ো, লবণ স্বাদমতো এবং ধনে পাতা কুচি ইচ্ছে।

পদ্ধতি
সামান্য লবণ ও হলুদ গুঁড়ো দিয়ে ছোলা বুট সেদ্ধ করবেন, তেল দিয়ে গরম করে আদা-রসুন বাটা দিয়ে একটু লালচে হয়ে এলে এতে পেঁয়াজ কুচি দিবেন। পেঁয়াজ কুচি নরম হয়ে এলে বাকি সকল মসলা একের পর এক প্যানে দিয়ে সামান্য পানি দিয়ে মসলা কষাতে থাকুন। মসলা কষে আসার পর টমেটো কুচি দিয়ে ভালো করে নেড়ে ছোলা বুট ঢেলে দিন। ভালোমতো নাড়াতে থাকুন মসলা মাখা মাখা হয়ে যাওয়া পর্যন্ত। এরপর লেবুর রস দিয়ে ভালো করে নেড়ে উপরে ধনে পাতা কুচি ছিটিয়ে নামিয়ে নিন। ব্যাস, তৈরি মজাদার ছোলা বুট।

স্পেশাল আলুর চপ

উপকরণ

আলু ৫০০ গ্রাম,
ডিম ১টি সিদ্ধ করে ভর্তা করতে হবে,
কাঁচামরিচ কুচি ১ চা চামচ,
ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ,
পেয়াজ বেরেস্তা করা ২ টেবিল চামচ,
গরম মশলা গুঁড়ো ১ চা চামচ,
ডিম ১টি ফেটানো,
বিস্কুটের গুঁড়ো পরিমাণমতো,
তেল ভাজার জন্য পরিমাণমতো,
লবণ স্বাদ অনুযায়ী।

প্রস্তুত প্রণালী
প্রথমে আলু সিদ্ধ করে লবণ দিয়ে কিছুক্ষণ মেখে রাখতে হবে। একটি কড়াইয়ে তেল গরম করে একে একে তাতে আলু ভর্তা, ডিমের ভর্তা, কাঁচামরিচ কুচি, ধনেপাতা কুচি, গরম মশলা গুড়ো, স্বাদ অনুযায়ী লবণ এবং পেয়াজ বেরেস্তা দিয়ে ভালোভাবে ভাজা ভাজা করে আবার মেখে নিতে হবে। হাল্কা হাতে চ্যাপটা আকারের চপগুলো প্রায় ১০-১২টি করে ফ্রিজে প্রায় ৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর ডিমের গোলায় ডুবিয়ে বিস্কুটের গুঁড়ো মিশিয়ে গরম ডুবন্ত তেলে ভেজে টিস্যু পেপারে তুলে রাখতে হবে। ব্যাস তৈরি হয়ে গেলো মজাদার আলুর চপ।

 

এক গুচ্ছ মুক্তো-১ (কুরআন থেকে)


সাদিয়া মুকিম 


৩৪) প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানীর একটি নিয়ম ঠিক করে দিয়েছি, যাতে (সে উম্মতের) লোকেরা তাদের পশুদের উপর আল্লাহ্‌র নাম উচ্চারণ করতে পারে । কেননা তোমাদের ইলাহ একমাত্র আল্লাহ্‌, অতএব তোমরা তার [ ইচ্ছার ] নিকট আত্ম সমর্পন কর। এবং সুসংবাদ দিয়ে দাও বিনয়ের নীতি অবলম্বন কারীদেরকে ।

ব্যাখ্যা – এই আয়াতের অর্থ এই যে, এই উম্মতকে কোরবাণীর যে আদেশ দেয়া হয়েছে তা কোন নূতন আদেশ নয়। পূর্ববর্তী উম্মতদেরও কোরবাণীর আদেশ দেয়া হয়েছিলো। এই কোরবাণী হতে হবে শুধু মাত্র এক আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য। কোরবাণীর পশুর রক্ত মাংস কিছুই আল্লাহ্‌র কাম্য নয়। বান্দার একাগ্রতা ও নিজেকে উৎসর্গ করার মানসিকতা হচ্ছে কোরবাণীর প্রতীক যা পশু কোরবাণী ও তার মাংস গরীবদের সাথে অংশগ্রহণের মাধ্যমে উদ্‌যাপন করা হয়। কোরবাণীর পশুর উপরে আল্লাহ্‌র নাম উচ্চারণ করা হজ্জ্বের আনুষ্ঠানিকতার এক প্রধান অংশ।

“সুসংবাদ দাও ” তাদের জন্যই সুসংবাদ যারা বিনয়ী। দম্ভ বা অহংকার যাদের উদ্ধত ও অত্যাচারী করে তোলে নাই। যারা জাগতিক অর্থ সম্পদ ক্ষমতা সব কিছুর জন্য সর্বশক্তিমানের কাছে কৃতজ্ঞ এবং আল্লাহ্‌ সন্তুষ্টি লাভের জন্য গরীব ও নির্যাতিতের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে, যারা সুখে – দুঃখে স্বাচ্ছন্দে ও অভাব অনটনে আল্লাহ্‌র কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং সন্তুষ্ট থাকে তারাই বিণীত।

বিনয় এমন একটা গুণ যা আল্লাহ্‌র নিকট অত্যন্ত প্রিয়। মোমেন বান্দার চরিত্রে এই গুণটির প্রকাশ ঘটবে।

৩৫) যাদের অবস্থা এই যে, আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে, যে বিপদই তাদের ওপর আসে তার ওপর তারা সবর করে, নামায কায়েম করে এবং যাকিছু রিযিক তাদেরকে আমি দিয়েছি তা থেকে খরচ করে৷

ব্যাখ্যা -আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যে পাক-পবিত্র রিযিক ও যে হালাল উপার্জন আমি তাদেরকে দান করেছি তা থেকে তারা খরচ করে৷ আবার খরচ করা মানেও সব ধরনের যা-তা খরচ নয় বরং নিজের ও নিজের পরিবার পরিজনদের বৈধ প্রয়োজন পূর্ণ করা,আত্মীয়, প্রতিবেশী ও অভাবীদেরকে সাহায্য করা, জন কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করা এবং আল্লাহর কালেমা বুলন্দ করার জন্য আর্থিকত্যাগ স্বীকার করা৷ অভাবগ্রস্থদের মাঝে দান করা আল্লাহ্‌র প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর শ্রেষ্ঠ ভাষা।

 

বিবাহের উদ্দেশ্য-১

বিবাহের উদ্দেশ্য-১


কানিজ ফাতিমা


যদিও মানুষের জৈবিক চাহিদা শালীন উপায়ে পূরণ বিবাহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য তথাপি এটি বিবাহের একমাত্র মূল উদ্দেশ্য নয়। কুরআনের স্পষ্ট ভাষা অনুযায়ী দু’জন মানুষের মিলনের মাধ্যমে শান্তি ও স্বস্তি অর্জন করাই বিবাহের মূল লক্ষ্য।

“তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আর রূম : ২১)

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম নর ও নারীর সম্পর্ককে একে অপরের সাহায্যকারী রূপে বর্ণনা করেছেন যেখানে পরস্পর পরস্পরকে ভাল কাজে ও আল্লাহর দেয়া খেলাফতের দায়িত্ব পালনে সাহায্য করবে।

“আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক তারা পরস্পরকে ভাল কাজে সহায়তা করে ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সূরা আত তাওবাহ : ৭১)

বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ইউসুফ আল কারযাবী (রহ.)র মতে, “একটি জাতি গঠনের মূল ভিত্তি প্রস্তর হিসেবে ইসলাম যেমন সৎ ব্যক্তি গঠনকে উৎসাহিত করে, ঠিক তেমনি একটি সুষম সমাজ গঠনের অপরিহার্য শর্ত হিসেবে সুসংহত পরিবার গঠনকেও ইসলাম অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করে। এটা সর্বজন সম্মত যে, বিবাহ, যা একজন নারী ও একজন পুরুষকে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করে, একটি পরিবারের গোড়া পত্তন ঘটায়। বিবাহ ব্যতীত সত্যিকার অর্থে সুসংহত পরিবার গঠনের আর কোন পথ নেই। এটিই একমাত্র বৈধ যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কর্তৃক অনুমোদিত।

বিভিন্ন যুগে বিবাহের বিপক্ষে কিছু দর্শন বা মতবাদ সমাজে প্রচলিত ছিল এবং এখনও আছে। পারস্যে (বর্তমান ইরান) ইসলামের আগমন ঘটার পূর্বে মানির দর্শন (Mani’s Philosophy) প্রচলিত ছিল, সেখানে মনে করা হতো এ পৃথিবীর সবকিছু হচ্ছে শয়তানের প্ররোচনা। কাজেই পার্থিব সব ভোগ বিলাস ত্যাগ করতে হবে। এ ধারণার বশবর্তীরা বিবাহ বর্জনকেও নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের একটি উপায় বলে মনে করতো।

খ্রীস্ট ধর্মেও গোড়া সন্নাসবাদের অনুপ্রবেশ ঘটে- যেখানে পার্থিব সবকিছু ত্যাগ করে বৈরাগ্য বরণ করার কথা বলা হয়। এতে মহিলাদের সব ধরনের প্ররোচনার উৎস এবং শয়তানের মূর্ত প্রতীক হিসেবে চি‎িহ্নত করা হতো। নারীসঙ্গ আত্মাকে কলুষিত করে এবং স্বর্গ থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে নেয়।

এই আধুনিক যুগেও পশ্চিমা বিশ্বে একদল লোক রয়েছে যারা মহিলাদের বিষাক্ত সাপের সাথে তুলনা করেন, যাদের স্পর্শ মধুর কিন্তু ছোবল ভয়াবহ বিষাক্ত। তারা আরও দাবী করে যে বিবাহের মাধ্যমে নারী-পুরুষের হাতের মুঠোয় ভরে ফেলে এবং তাকে দায়িত্বের শেকলে বন্দী করে। কাজেই একজন পুরুষ যে স্বাধীনভাবে জন্মগ্রহণ করেছে, কেন স্বেচ্ছায় নিজ গলায় বিবাহ নামক বন্দীত্বের শিকল জড়িয়ে নেবে- দুঃখজনক হলেও সত্যি বর্তমান যুগের কিছু মুসলমান যুবক এই গোষ্ঠির বিকৃত চিন্তাকে গ্রহণ করেছে এবং বিবাহের দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্যের বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে চাচ্ছে। যদি তারা তাদের জৈবিক চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয় তবে তাদের জন্য সে চাহিদা পূরণের যে পথটি খোলা থাকে তা হলো- ব্যভিচার, যা ঘৃণ্য ও অবৈধ। অথচ তারা বিবাহের মাধ্যমে শালীন উপায়েই তা লাভ করতে পারতো

 

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-৩

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-৩


সাদিয়া মুকিম


আমরা যা করতে পারি চিনি মুক্ত খাবার ও পানীয় পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি। যেমন: ফলের শরবত, বিভিন্ন রকমের ফ্রেশ ফল , চিনি যুক্ত না করে দই এর শরবত ইত্যাদি। কোমল পানীয় পান না করে করে ইফতার থেকে সেহেরী পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা উচিত। এক্ষেত্রে ইসুবগুল এর ভুষির শরবত এবং ডাবের পানি অনেক সহায়ক ।

জটিল শর্করা না খাওয়া: শর্করা জাতীয় খাবার

আমাদের শরীরে শক্তি যোগায়, তাই অনেকে মনে করি রোজায় বেশি বেশি শর্করা খাওয়া উচিত। অনেকেই অন্যান্য সময়ের চাইতে রমাদ্বানেই বেশী ভাত খান । আমাদের দেশে সাধারনত: সাদা ভাত

বা সাদা আটা খাওয়া হয়। যা শরীরে ইনসুলিন এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে একটু পরেই আবার খেতে ইচ্ছা করে, তাছাড়া এগুলো হজম হতে সময় কম লাগে, ফলে ক্ষুধাও তাড়াতাড়ি লাগে।

আমরা যা করতে পারি সম্ভব হলে সাদা শর্করা বাদ দিয়ে লাল শর্করা: যেমন: লাল আটা, লাল চাল খেতে অভ্যাস করতে পারি। এগুলোতে low-glycaemic index থাকে,তাই হজম হয় আস্তে আস্তে এবং ক্ষুধা লাগে দেরীতে । রক্তে চিনির পরিমান তাড়াতাড়ি বাড়তে দেয় না। সম্ভব হলে সব সময়ের জন্য অভ্যাসে পরিণত করলে আমাদের ই কল্যাণ বয়ে আনবে ইনশা আল্লাহ।

একেবারেই বেশী না খাওয়া – ইফতার বা সেহরীতে যেনো মনে না করি সারা দিন খাই নি বা অনেক ক্ষণ না খেয়ে থাকতে হবে এজন্য বেশী করে খাই – এটা একেবারেই সঠিক না । এভাবে খাবার টেবিলের উপর পাগলের মতো ঝাপিয়ে পড়ে হাপুশ হুপুশ খাওয়া রোজার যে আসল উদ্দেশ্য–সংযম,সেই সংযম কিন্তু নষ্ট হয়ে যায়। সেই সাথে নষ্ট হয়

আমাদের শরীরের হজম প্রক্রিয়া । তাছাড়া একসাথে এতরকমের ও এত বেশি খাবার খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা,গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি বেড়ে যাতে পারে । আবার অনেকে সেহেরিতেও অনেক বেশি খান,মনে করেন, বেশি খেলে পরে ক্ষুধা লাগবে না, এটিও ভুল ধারণা।

 

প্যারেন্টিং (সন্তানের না বলা কথা বুঝি)

প্যারেন্টিং (সন্তানের না বলা কথা বুঝি)


ফাতেমা শাহরিন


সন্তানকে বাবা মা প্রাথমিকভাবে চান যাতে মা বাবার মনের মত ভাল সন্তান(?) সন্তান হোক। নিজেদেরকে শান্ত রাখুক। তার জন্য দরকার উপযুক্ত প্ল্যানিং। প্রথম থেকেই যদি সন্তানের না বলা অভিমান, আবেগ, চাওয়া বুঝেন মা-বাবা তাহলে সমাধান হয়ে যায় গোড়ার থেকেই অনেক সমস্যায়।

নিজেকে স্থিতিশীল রাখুন

মা বাবা ও পরিবারের সবাইকে খুব শান্ত ও সংঘবদ্ধ থাকতে হবে। যদি বাড়ীর লোকের মধ্যে মতের অমিল হয় তার কথা না বুঝে, প্রকাশ করতে না দেয় ওদের বিকাশে সুন্দর হবে না। সন্তানরা খুব সহজেই পরিবারের মেরুকরন বুঝতে পারে এবং সেই পরিস্থিতির সদ্ব্যবহার করে।

নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রাখুন

বাড়ীর মধ্যে সন্তানের সাথে কথা বলুন। সন্তানকে কিছু খেলনা দিয়ে আলাদা করে জানতে চান কেমন কাটলো সারাদিন। লক্ষ্য রাখবেন জায়গাটি যেন সুরক্ষিত হয় কারণ এই সময় সন্তান অনেক কথায় বলতে পারেন। সন্তানের ব্যবহারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবার চেষ্টাও করবেন। অ্যাটেনশন পেলে ওদের মধ্যে শান্ত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে।

ধীরে ধীরে সময় নিন

সন্তান প্রয়োজনীয় কিছু বলতে চাইছে বা বলা শুরু করেছে সময়টা প্যারেন্টিং এ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই সময় বাচ্চাকে স্নেহের সাথে বোঝাতে হবে সে যা ব্যবহার করছে তা পরিবারের কারোর কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। তার নিজস্ব চাহিদা নিশ্চয় করে, তা প্রকাশ করতে হবে সংযতভাবে।

সন্তানকে সবসময় উপদেশ নয়

অনেকসময় চুপ হয়ে যায় সন্তানরা এরকম বহি:প্রকাশ ঘটানোর কারণ হল উপদেশ আর শাসন। এখনকার সন্তানরা গন্তব্যস্থল বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় শপিং মল। সেখানে সার সার সুন্দর করে সাজানো খেলনাপাতির সামনে নি:সন্দেহে তাদের চাহিদার পরিমান হয়ে যায় আকাশছোঁয়া। বার বার কাউন্সেলিং করে বুঝাতে হবে আপনারা উপদেশ বা শাসন নয় বরং জানতে চান ওকে বুঝার জন্য।

রেফারেন্সঃ
প্যারেন্টিং আর্টিকেল অনলাইন।

 

গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা

গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা | প্রেগনেন্সিতে সিয়াম পালন ও করণীয়।


সোহানা তাসনিম অনুভা


অনেক মায়েদের প্রশ্ন থাকে যে গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কিনা কিংবা রাখলে করণীয় কী হবে। প্রকৃতপক্ষে গর্ভবতী মায়েরা রোজা রাখতে পারবেন কিনা তা নির্ভর করবে তার এবং তার গর্ভস্থ সন্তানের সুস্থতার উপরে। ইসলামে সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে কিছু শিথিলতা রয়েছে, যেমন ভ্রমণকারী, অসুস্থ ব্যক্তি, গর্ভবতী মা, সন্তানকে দুগ্ধ পান করা অবস্থা ইত্যাদি। হাদীসে বর্ণিত রয়েছে-“যদি কোন গর্ভবতী মায়ের গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হবার আশঙ্কা তৈরি করে, তবে সে রোজা থেকে বিরত থাকতে পারবে এবং পরবর্তীতে তার সুবিধাজনক সময়ে সে ওই রোজাগুলো কাজা আদায় করে নেবেন।” এখন যদি কোন মা মনে করেন তিনি রোজা রাখবেন, তবে তাকে প্রথমে একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। জেনে নিতে হবে গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা তার এবং গর্ভস্থ সন্তানের কোন ক্ষতির আশঙ্কা সৃষ্টি করছে কিনা।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ৪-৭ মাস প্রেগনেন্সি পিরিয়ড রোজা রাখার জন্য বেশি নিরাপদ, কারণ প্রথম ৩ মাসে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব হলে কম ওজনের শিশুর জন্ম হতে পারে এবং প্রেগনেন্সির শেষের দিকে পানি এবং খাদ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এছাড়া প্রেগনেন্সিতে যদি অন্যান্য সমস্যা থেকে থাকে, যেমন ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন/উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি ডিজিজ, ঘন ঘন প্রস্রাবের ইনফেকশন ইত্যাদি থাকলে রোজা থেকে বিরত থাকাই উত্তম।

গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা ও করণীয়

১) সেহরি এবং ইফতারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানীয় ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। বিভিন্ন ধরনের তাজা ফলের রস, ডাবের পানি শরীরে পানির চাহিদা দূর করবে।

২) ফলের মধ্যে খেজুর এবং কলায় প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে, যা দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে।

৩) প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো সেহরি এবং ইফতারের সময় খেতে হবে।
৪) বেশিক্ষণ রোদে ঘোরাঘুরি করা উচিত হবে না।

৫) দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।

রোজাদার মায়েদের যে সমস্যাগুলো দেখা
দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
১. বমি হলে।

২. অজ্ঞান হয়ে গেলে।

৩. বাচ্চার নড়াচড়া কম অনুভূত হলে, সাধারণত বলা হয় গর্ভের বাচ্চা ১২ ঘন্টায় ১০-১২ বার মুভমেন্ট করবে। এর থেকে কমে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

৪. লেবার পেইন বা পেটে ব্যথা অনুভূত হলে, কারণ ডিহাইড্রেশন-এর কারণে অনেক সময় ইউটেরাস-এর কনস্ট্রাকশন শুরু হতে পারে।

৫. প্রস্রাবের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলে ইত্যাদি।
এই ছিল গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা ও করনীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি।

সবাই ভালো আর সবাই সুস্থ থাকুন।
সবার জন্য শুভকামন

 

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-২

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-২


সাদিয়া মুকিম


আমাদের করনীয় হবে যথাসম্ভব ভাজাপোড়া খাবার বাদ দিয়ে সহজপাচ্য খাবার, যেমন: কাঁচা ছোলা , চিড়া- দই, লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, নুডুলস, নরম খিচুড়ি ,জাউ ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা । সাথে মৌসুমী ফল, সালাদ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

সেহরীতে,ডাল বা ডিম, স্বজি,মাছ ,গোশত যোগ করা যেতে পারে। বাদাম, বিনস, শস্য, ছোলা, দুধ, মিষ্টি আলু, ডাল, ফল, সবজি, সালাদ ইত্যাদি খেতে হবে । প্রতিবেলা মাংস না খেয়ে অন্তত এক বেলা মাছ খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত । সুষম খাবার (balance diet) এর আয়ত্ত্বে নিয়ে আসতে খাবার মেন্যু । যেমন: আমিষ, শর্করা, ফ্যাট, ভিটামিন, দুধ, দই, মিনারেলস, ফাইবার ইত্যাদি খেতে হবে সঠিক নিয়ম অনুযায়ী ।অতিরিক্ত ঝাল মশলা যুক্ত, ভুনা ও লবনাক্ত খাবার বাদ দেয়ার চেষ্টা করা উচিত।

যেসব খাবার, ফল, স্বজি পানি কন্টেইন করে সেসব খাবার ইফতারিতে প্রায়োরিটি দেয়া উচিত। যেমন- তরমুজ, পেঁপে,বাংগী,জাম্বুরা, কমলা, শশা, স্ট্রবেরী, বেরীস,সালাদপাতা, আভোকাডো, পীচ, চেরী, ঝুক্কিনী, আসপারাগাস, সেলারি, গাজর, টমেটু , ফুলকপি, ডাটা, ব্রোকলি ইত্যাদি ।

অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত – ইফতারের জন্য খেজুর অত্যন্ত উপযোগী কারণ এতে আছে শর্করা ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভ্যাস ছিল খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা ।

‘‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র ’’ [সুনান আবু দাউদ : ২৩৫৭,সহীহ]।

চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় খাওয়া: – আমাদের ইফাতরের টেবিলে রং বে রং এর পানীয় বা শরবত থাকেই । খুব বেশী চিনি যুক্ত খাদ্য ও পানীয় আমাদের শরীরে দরকার নেই, তাই নিয়মিত চিনি যুক্ত খাবার খাওয়া যথাসম্ভব বাদ দিতে হবে। কারণ এটা খুব তাড়াতাড়ি রক্তে চিনির(ইনসুলিন) মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে সাময়িকভাবে ব্রেইনে শক্তি জোগালেও একটু পরেই তা স্তিমিত হয়ে যায় এবং শক্তিহীন মনে হয়।

যেমন: ট্যাং, ট্রাডিশনাল মিষ্টি , পায়েশ, ফালুদা, শাহী জিলাপি, কেক, বিস্কিট ইত্যাদি রোজায় খাওয়া হয়, কিন্তু এগুলো প্রচন্ড চিনিযুক্ত ও উচ্চ ক্যালোরীযুক্ত । এগুলো রোজায় প্রতিদিন না খেয়ে মাঝে মাঝে হাওয়া যেতে পারে। এছাড়া যাদের এসিডিটির সমস্যা আছে তাদের লেবুর শরবত দিয়ে ইফতার শুরু না করাই ভালো।

 

দোয়াই হলো ইবাদত !

কোন মুসলমানের দোয়া বৃথা যায় না তোমরা যত প্রার্থনাই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করবেন


কুয়েত


বিসমিল্লাহ-হির-রাহ’মানির রাহীম।

কোনো মুসলিম ব্যক্তির দুআ কখনোই বৃথা যায় না দুয়া তিনভাবে কবুল হতে পারে দুয়া কবুল না হওয়ার কয়েকটি কারণ কোনো মুসলিম ব্যক্তির দুআ কখনোই বৃথা যায় না

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কোন ব্যক্তির দুয়া কবুল করা হয়; যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাড়াহুড়ো করে। (তাড়াহুডা করার অর্থ হচ্ছে, দুয়া করতে করতে ক্লান্ত হয়ে সে) বলে, আমার প্রভুর নিকট দুয়া তো করলাম, কিন্তু তিনি আমার দুয়া কবুল করলেন না।”

সহীহ মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, বান্দার দুয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয়, যতক্ষণ সে গুনাহর জন্য বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার জন্য দুয়া না করে, আর যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়ো করে। জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রসুল! তাড়াহুড়ো মানে কি?

তিনি বললেন, কোন দুয়াকারী ব্যক্তি বলে, দুয়া করলাম, আবার দুয়া করলাম, অথচ দেখলাম না যে, তিনি আমার দুয়া কবুল করছেন। কাজেই সে তখন ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে বসে পড়ে ও দুয়া করা ত্যাগ করে দেয়। সহীহ বুখারীঃ ৬৩৪০, সহীহ মুসলিমঃ ২৭২৯।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পৃথিবীর বুকে যেকোনো মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দুয়া করে (তা ব্যর্থ যায় না) হয় আল্লাহ (সে যা চায়) তাকে তাই দান করেন, অথবা অনুরূপ কোন মন্দ তার উপর থেকে অপসারণ করেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে (দুয়াকারী) গুনাহ বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার দুয়া না করবে। একটি লোক বলল, তাহলে তো আমরা অধিক মাত্রায় দুয়া করব। তিনি বললেন, আল্লাহ সর্বাধিক অনুগ্রহশীল। তিরমিযীঃ ৩৫৭৩, আহমাদ ২২২৭৯, হাদীসটি হাসান সহীহ।

দুয়া তিনভাবে কবুল হতে পারে

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি দুয়া করে, যে দুয়াতে কোনো পাপ থাকে না ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দুয়া অবশ্যই কবুল করে নেন।

(১) যে দুয়া সে করেছে, হুবহু সেভাবে তাই কবুল করেন, অথবা

(২) তার দুয়ার প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন, কিংবা

(৩) এই দুয়ার মাধ্যমে তার উপর আগত কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবীগণ বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দুয়া করতে থাকবো।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা যত প্রার্থনাই করবে, আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন। আদাবুল মুফরাদঃ ৭১০ ও মুসনাদে আহমদ।

দুয়া কবুল না হওয়ার কয়েকটি কারণ

কিছু পাপ আছে যা বান্দার মাঝে উপস্থিত থাকলে তার দুয়া কবুল হওয়ার জন্য বাঁধা হয়ে যায়। তাই খেয়াল রাখতে হবে, এই পাপগুলো এড়িয়ে চলতে হবে, যদি কেউ চায় তার দুয়া কবুল করা হোক।

দুআ কবুলের অন্তরায় সমূহ

(১) হারাম খাদ্য, হারাম পানীয় ও হারাম বস্ত্র
(২) সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ বর্জন করা
(৩) দুয়া কবুলে তাড়াহুড়ো করা
(৪) অন্তরের উদাসীনতা
(৫) ব্যক্তিত্বের এক বিশেষ ধরনের দুর্বলতা

সংগ্রহঃ বিডি টুডে ব্লগ।

 

শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা-২

শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা-২


আফরোজা হাসান 


যারা সীটে বসে ছিল তাদের একজন বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে। আমরা তো চুপ করে বসে ছিলাম। প্রফেসর বললেন, অন্যের কষ্ট, বিপদ দেখে তোমাদের মনে এতটুকু দয়া-মায়ার সৃষ্টি হয়নি এটা তো সবচেয়ে বড় অন্যায়। মনেরেখো তুমি অন্যের সাথে যে আচরণ করবে তোমার সাথেও অন্যেরা সেই আচরণই করবে। আজ তুমি অন্যের কষ্ট দেখে হাসলে, কাল তোমার কষ্টে অন্যেরা হাসবে। আজ তুমি কাউকে সাহায্য করতে কার্পন্য করলে, কাল তোমার বিপদে কাউকে খুঁজে পাবে না পাশে। এখানে তোমরা সবাই বন্ধু। একসাথে পড়বে, খেলবে, হাসবে, একের বিপদে অন্য সাহায্য করবে। আর যদি এমন না করো তাহলে কখনোই তোমরা ভালো মানুষ হতে পারবে না জীবনে। এখন বলো তোমরা কি ভুল করেছো? সবাই স্বীকার করে নিলো যে তারা ভুল করেছে। প্রফেসর বললেন, এখন যদি আমি তোমাদেরকে শাস্তি না দেই তাহলে তোমরা এই ভুলটা মনেরাখতে পারবে না এবং আবারো যখন এমন কোন পরিস্থিতি আসবে একই ভুল করবে। বাচ্চারা তখন খুশি মনে ওদের শাস্তি মেনে নিয়েছিলো।

এমন অনেক বাচ্চা আছে যারা বাবা-মা বা পরিবারের কারো কোন কথা শোনে না কিন্তু সেই কথাটা যদি স্কুলের টিচাররা করতে বলে তাহলে বিনা ঝামেলাতে করতে রাজী হয়ে যায়। আগে আমি বেশ অবাক হতাম এর কারণ কি হতে পারে চিন্তা করে। কিন্তু স্কুলে জয়েন করার পর বুঝেছি কেন বাচ্চারা এতো পাগল টিচারদের জন্য। কেন এতো ভালোবাসে টিচারদেরকে। কারণ উনারা সেই ভালোবাসা অর্জন করে নেন তাদের কথা, কাজ আর আচরণের দ্বারা। টিচিং কোর্স করার সময় আমাদেরকে বলা হয়েছিলো টিচারদের প্রতি ভালোবাসা বাচ্চাদেরকে অনেক বেশী উৎসাহিত করতে পারে পড়াশোনার প্রতি। বাচ্চাদের মনে যদি এই বিশ্বাস তৈরি করা যায় যে টিচাররা তাদেরকে ভালোবাসেন আর তাদের ভালো চান বলেই প্রয়োজনে তাদেরকে বকা দেন আর শাস্তি দেন এবং এরফলে উপকার তাদেরই হয় তাহলে স্কুল ও পড়াশোনার প্রতি বাচ্চাদের আগ্রহ অনেক বেশি থাকে।এ

ই চমৎকার আইডিয়াটা কিন্তু পারিবারিক জীবনেও এপ্লাই করা যায়। বাচ্চার মনে যদি বাবা-মা আর পরিবারের লোকজন এই বিশ্বাস ও ভরসা তৈরি করতে পারেন যে, তারা যা বলেন তাদের উপকার ও মঙ্গলের জন্যই বলেন তাহলে বাচ্চাদের মনে অকারণ রাগ, ক্ষোভ বা হতাশা সৃষ্টির সুযোগ অনেক কমে যায়। বাবা-মা যা করছেন আমার ভালো জন্য করছেন এবং আমার প্রতি ভালোবাসা থেকেই করছেন বাচ্চার মনে এই নিশ্চয়তা সৃষ্টির দায়িত্ব বাবা-মাকেই পালন করতে হবে। কথা, কাজ ও আচরণ দিয়ে বাচ্চার কাছে নিজেদেরকে কল্যাণকামী হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।

 

শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা-১

শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা-১


আফরোজা হাসান 


ছয়মাস ভলান্টিয়ার টিচার হিসেবে স্কুলে কাটানোর সময় গুলোতে অনেক কিছু নতুন করে শিখেছি আমি। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ একটি জিনিস হচ্ছে শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা। ইউরোপের স্কুলগুলোতে স্টুডেন্ট আর টিচারদের সম্পর্ক এতো সুন্দর আর বন্ধুত্বপুর্ণ যা নিজের স্কুল লাইফের দিকে তাকালে খুঁজে পাইনা। এখানকার টিচাররাও বাচ্চাদেরকের সাথে রাগ করেন, ওদেরকে বকাঝকা করেন, শাস্তি দেন। পার্থক্য শুধু পদ্ধতিতে। শাস্তি দেবার সময় কেন শাস্তি দিচ্ছেন, শাস্তিটা কেন দেয়া উচিত, দেয়ার ফলে কি উপকার হবে এবং না দিলে কি ক্ষতি হতো এই প্রতিটা বিষয় চমৎকার করে বুঝিয়ে বলেন টিচাররা স্টুডেন্টদেরকে। যারফলে বাচ্চাদের মনে টিচারদের প্রতি কোন ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে না এবং শাস্তির কারণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা জানার ফলে নিজেকে সংশোধন করাটাও সহজ হয়।

একদিন ক্লাসে একটা বাচ্চার হঠাৎ পেট ব্যথা শুরু হলে সে মেঝেতে শুয়ে ছটফট করতে লাগলো। স্বভাবতই কিছু বাচ্চার হাসির খোড়াক যোগালো দৃশ্যটি, কিছু বাচ্চা প্রশ্ন করলো ও কি এখন মারা যাবে? কয়েকজন ছুটে এলো বন্ধুর পাশে আর কয়েকজন নির্বিকার বলে রইলো নিজের সীটে। বাচ্চাটি সুস্থ হবার পর প্রফেসর বললেন যে কয়জন সাহায্যর জন্য ছুটে এসেছিলো তারা ছাড়া বাকি সবার আজকে টিফিন বন্ধ। কেউ টিফিন পিরিয়ডে পার্কে যেতে পারবে না। বাচ্চারা সবাই তখন চিৎকার করে বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে তাহলে কেন আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছো? প্রফেসর বললেন, তোমাদের অন্যায় তোমরা তোমাদের বন্ধুর বিপদে ছুটে আসোনি, তার কষ্টে সমব্যথী না হয়ে হেসেছো, সান্ত্বনা বা আশ্বাস দেবার বদলে মারা যাবে বলে ওকে আরো ঘাবড়ে দিয়েছো। একবার ওর জায়গায় নিজেকে চিন্তা করে দেখো তো। তুমি কষ্টে ছটফট করছো আর কেউ তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, কেন এতো ব্যথা করছে তুমি ভেবে পাচ্ছো না আর পাশ থেকে একজন বলছে তুমি এখন মারা যাবে। বাচ্চারা তখন চুপ হয়ে গেলো।

 

ডালে সজিনা

উপকরণ :  ডাল সিদ্ধ করা ২ কাপ, সজিনা ১০ টি সাইজ করে কাটা, আদা কুচি ১ টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ-তেল পরিমাণ মতো।

প্রস্তুত প্রণালি : সজিনা দিয়ে তেল বাদে বাকি সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে চুলায় চড়িয়ে দিন। পরে নামার আগে ধনিয়া পাতা দিয়ে গরম গরম রুটি বা ভাতের সাথে পরিবেশন করতে হবে।

 

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-১

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-১


সাদিয়া মুকিম 


আসসালামুআলাইকুম। আশা করি আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এই রমাদ্বানে সিয়াম, কিয়াম, তিলাওয়াত, দোআ, সাদাকাহ ইত্যাদি পবিত্র ও বহুল সওয়াবের কাজে নিয়োজিত রেখেছেন।

অন্যান্য ইবাদতের পাশাপাশি সেহরি এবং ইফতার এ দুটোও গুরুত্বপূর্ন ইবাদাত । তবে এ দুটোকে ঘিরে আমাদের উপমাহাদেশে রয়েছে বিরাট খাদ্য বিভ্রান্তি। বিষয়টি ইবাদতের পরিবর্তে ভোজোৎসব হয়ে দাঁড়িয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রেই ।

সেহরি এবং ইফতার নিয়ে রমাদ্বানের আগে ব্যাক্তিগত ভাবে আমি বেশ কিছু আর্টিকেল পড়েছিলাম। এর মাঝে বেশিরভাগ ছিলো স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক। যেগুলো পড়ে আমরা নিজেরা উপকৃত হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। সেখান থেকে সংগৃহ করে কিছুটা সংযোজনা করে আজকের এই সচেতনতা পোস্ট টির অবতারণা।

রমাদ্বানে সারাদিন সিয়াম সাধনার পর ইফতারের মুহূর্ত যখন আসে স্বভাবতঃ আমাদের চোখে ভেসে উঠে রকমারি বাহারি ভোজ্যবিলাসী ইফতারি সামগ্রী । অনেকেই আছি ভাজা পোড়া ছাড়া ইফতার মুখে ও নিতে না পারার কঠিন (? ) অভ্যাস। এটা ঠিক দীর্ঘ ক্ষণ না খেয়ে থাকার পর মুখ রোচক খাবার খাওয়ার আগ্রহ জন্মায় তবু নিজেদের স্বাস্থ্যের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে ইফতার ও সেহরিতে আমরা কী ধরণের খাবার মেন্যুতে রাখছি !

ভাজা -পোড়া, গুরুপাচক খাবার :- ইফতারে ভাজা পোড়া না থাকলে আমাদের যাদের কপাল কুঁচকে যায় ,তাদের উদ্দেশ্যে বলছি- একটু চিন্তা করলেই সহজবোধ্য হবে যে, আমাদেরকে বাংলাদেশে প্রায় ১৫ ঘন্টা আর ইউরোপে প্রায় ১৮ ঘন্টা সিয়াম করতে হচ্ছে। সারাদিনের সিয়ামে আমাদের পাকস্থলি ক্ষুধার্ত ও দুর্বল অবস্থায় থাকে । অনেক সময় ধরে না খেয়ে থাকার ফলে শরীরের এনজাইম, যা হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরী হয়,তা বন্ধ থাকে । তাছাড়া পাকস্থলীর ভিতরের মিউকাস আবরণও সংকুচিত অবস্থায় থাকার ফলে যখন ইফতার শুরু হয় ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত, গরম, গুরুপাক খাবার দিয়ে তখন পাকস্থলি নাজুক অবস্থায় পড়ে যায় । এতে যাদের গ্যাস্ট্রিক আছে সেটার পরিমাণ যায় বেড়ে আর যাদের নেই তাদেরও লক্ষণ শুরু হয়ে যাবে স্বল্প সময়ে । তাছাড়া পেটে জ্বালা পোড়া করা , পেটের সমস্যা,

কোষ্ঠকাঠিন্য, দুর্বলতা, অবসাদ, হজমের সমস্যা ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা শুরু হয়ে যাবে অল্প দিনে । এই সমস্যা ছাড়াও এই খাবারগুলোর ক্যালোরি মান অতি উচ্চ থাকায় আমরা অল্প খেলেও পেট ভরা অনুভূত হবে দ্রুত । যেমন- পিঁয়াজু,বেগুনী, আলু চপ, সমুচা, সিংগারা, বিরিয়ানি, তেহারি, হালিম, ছোলা ভুনা, ফাস্টফুড ইত্যাদি ।

 

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —(আল-বাক্বারাহ) ৫…

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —আল-বাক্বারাহ ১৮৩-১৮৫,১৮৭
৫…
ওমর আল জাবির

আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটাই চান, তিনি তোমাদের জন্য কঠিনটা চান না।

এই আয়াতটি একজন মুসলিমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ আয়াত। আমাদের অনেকের ভেতরেই একটা ভুল ধারণা আছে যে, আমরা মনে করি: আমরা আল্লাহর تعالى জন্য যত কষ্ট করবো, তত সওয়াব। ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। আল্লাহর تعالى কাছে সবচেয়ে পছন্দের ইবাদত হচ্ছে ফরজ ইবাদতগুলো। তিনি কখনই চান না আমরা যেন নিজেদেরকে জোর করি, ইচ্ছা করে কষ্ট দেই। তিনি চান আমাদের জীবনটা যেন সহজ, সুন্দর হয়। আমরা যেন দুনিয়ার হাজারো প্রলোভন থেকে নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তারপর একদিন জান্নাতে গিয়ে চিরজীবন আনন্দে থাকতে পারি। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে অনেকে ইসলাম ধর্মের মধ্যে কঠিন সব ইবাদত, হাজারো শর্ত জুড়ে দিয়ে ধর্মকে অনেক কঠিন করে গেছেন। যার ফলাফল হয়েছে, গত কয়েক প্রজন্ম ইসলাম থেকে দূরে সরে গেছে।

আজকাল অনেকেই বলেন, “ধর্ম মানলে জীবন অনেক কঠিন হয়ে যায়। এটা করা যাবে না, ওটা দেখা যাবে না, এটা বলা যাবে না, ওটা খাওয়া যাবে না। জীবনের প্রতি পদে বাঁধা। ধর্ম মানলে জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে যায়। ধর্ম ছাড়াই অনেক ভালো আছি।”

আপনারা যদি পাশ্চাত্যের অমুসলিমদের মুসলিম হওয়ার ঘটনাগুলো পড়েন, দেখবেন তাদের ঘটনায় একটি ব্যাপার বার বার ঘুরে ফিরে আসে: তাদের অনেকেই দিনরাত ফুর্তি করত, ব্যভিচার, মদ ছিল তাদের জীবনে খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা। শনি-রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বার-এ গিয়ে সারারাত ড্রিঙ্ক করে মাতাল হয়ে আসত। তারপর যখন সোমবারে হুঁশ ফিরত, এক ভয়ংকর হতাশা, বিষণ্ণতায় ডুবে যেত। নানা ধরণের অসুখে ভুগত। জীবনটা তাদের কাছে অসহ্য মনে হতো। নিজের কাছে নিজেকে একটা পশু মনে হতো। “জীবন কি এটাই? জীবনে কি এর চেয়ে বড় কিছু নেই? এভাবে নিজেকে শেষ করে দিয়ে কী লাভ?”—এই ধরনের প্রশ্ন তাদেরকে পাগলের মতো তাড়িয়ে বেড়াত। তাদের জীবনে কোনো সুখ ছিল না, ছিল কিছু ক্ষণস্থায়ী ফুর্তি। হতাশা, বিষণ্ণতা, অশান্তি এবং নিজেকে শেষ করে দেওয়ার একটা অসহ্য ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখার জন্য তাদেরকে দিনরাত নিজের সাথে সংগ্রাম করতে হতো।

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে ইসলাম দিয়েছেন, যেন আমাদের জীবনটা সহজ হয়, এরকম কঠিন না হয়। তিনি আমাদেরকে যে জীবন-বিধান দিয়ে দিয়েছেন, সেভাবে জীবন পার করলে এই দুনিয়াতেই আমরা হাসিখুশি থাকতে পারব, নিজের জীবনে, পরিবারে, সমাজে, দেশে শান্তি নিয়ে আসতে পারব। একই সাথে মৃত্যুর পরে অনন্তকাল পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে অনাবিল, অফুরন্ত শান্তিতে জান্নাত উপভোগ করতে পারব। তিনি আমাদেরকে বলেননি এই দুনিয়াতে নিজেদের উপরে ইচ্ছা করে কষ্ট দিতে। বরং তিনি পৃথিবীতে অসংখ্য হালাল আনন্দের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এবং সেগুলো উপভোগ করার নির্দেশ কু’রআনেই দিয়েছেন—

আল্লাহ তোমাদেরকে এই জীবনে যা দিয়েছেন, তা ব্যবহার করে এর পরের জীবনকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করো, কিন্তু সেই সাথে এই দুনিয়াতে তোমার যে প্রাপ্য রয়েছে, সেটা ভুলে যেও না। অন্যের সাথে ভালো কাজ করো, যেভাবে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দিয়েছেন। এই পৃথিবীতে দুর্নীতি ছড়ানোর চেষ্টা করবে না। দুর্নীতিবাজদের আল্লাহ পছন্দ করেন না! [আল-কাসাস ২৮:৭৭]

বল, “কে তোমাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট সৌন্দর্য এবং ভালো-পবিত্র খাবার উপভোগ করতে মানা করেছে, যা তিনি তার বান্দাদের জন্যই তৈরি করেছেন?” বলে দাও, “এগুলো তাদেরই জন্য যারা এই দুনিয়াতে বিশ্বাস করে: কিয়ামতের দিন এগুলো শুধুমাত্র তাদেরই হবে।” এভাবেই আমি আমার বাণীকে পরিষ্কার করে দেই বুদ্ধিমান লোকদের জন্য। [আল-আরাফ ৭:৩২]

ও প্রভু, আমাদেরকে এই দুনিয়াতে কল্যাণ দিন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দিয়েন। আর আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করেন। [আল-বাকারাহ ২:২০১]

উপরের আয়াতগুলো এবং বাকারাহ-এর আলোচ্য আয়াতের মূলকথা একটাই: জীবনকে উপভোগ করতে হবে আল্লাহর প্রতি অনুগত থেকে, কৃতজ্ঞ থেকে এবং পাপের ব্যাপারে সবসময় সাবধান থেকে। মনে রাখতে হবে, দুনিয়াতে আমরা যা কিছুই উপভোগ করব, কিয়ামতের দিন সেগুলোর সবকিছুর হিসাব দিতে হবে। সুতরাং, আমরা যেন উপভোগ করতে গিয়ে আল্লাহর تعالى অবাধ্য না হই। এমন কিছু যেন করে না ফেলি, যেটা কিয়ামতের দিন আমাদেরকে দেখানো হলে আমরা লজ্জায় কিছু বলতে পারব না।

রোজা নিয়ে সূরা আল-বাক্বারাহ’র শেষ আয়াতটি এসেছে একটি আয়াত পরে—

রোজার রাতে স্ত্রীদের সাথে ঘনিস্ট হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পোশাক, তোমরা তাদের পোশাক। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা নিজেদের সাথে প্রতারণা করছিলে। তাই তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন, তিনি তোমাদেরকে নিঃশর্তে মাফ করে দিয়েছেন। এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও, আর আল্লাহ তোমাদের জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, তা পাওয়ার চেষ্টা করো। খাও, পান করো, যতক্ষণ না ভোরের সাদা রেখা অন্ধকারের রেখা থেকে স্পষ্টভাবে আলাদা না হয়। তারপর রাত আসা পর্যন্ত রোজা সম্পূর্ণ করো। মসজিদে ইতিকাফ করা অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হবে না। এই হলো আল্লাহর দেওয়া সীমা, এর কাছেও যাবে না। এভাবে আল্লাহ তার বাণীকে মানুষের জন্য পরিস্কার করে দেন, যেন মানুষ অন্যায় থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে। [আল-বাক্বারাহ ১৮৭]

মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

সূত্র:

[১] নওমান আলি খানের সূরা আল-বাকারাহ এর উপর লেকচার এবং বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর।[২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ।[৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি।[৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী।[৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran[৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran[৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি।[৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী।[৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ।[১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি[১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি[১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ।[১৩] তাফসির ইবন আব্বাস।[১৪] তাফসির আল কুরতুবি।[১৫] তাফসির আল জালালাইন।[১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ।

সুত্র: কুরআনের কথা

 

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —(আল-বাক্বারাহ) ৪…

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —আল-বাক্বারাহ ১৮৩-১৮৫,১৮৭
৪…
ওমর আল জাবির

এরপরের আয়াতে আমরা জানবো রমজান মাসের আসল গুরুত্ব কী—

রমজান মাস, যখন নাজিল হয়েছিল কুর’আন —মানুষের জন্য পথনির্দেশ, পরিস্কার বাণী যা পথ দেখায় এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। তাই তোমাদের মধ্যে যে সেই মাসটি পাবে, সে যেন রোজা রাখে। আর কেউ যদি অসুস্থ থাকে, বা সফরে থাকে, তাহলে সে যেন পরে একই সংখ্যক দিন রোজা রেখে পূরণ করে নেয়। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটাই চান, তিনি তোমাদের জন্য কঠিনটা চান না। তিনি চান তোমরা যেন নির্ধারিত সময় পূরণ করো, তোমাদেরকে পথ দেখানোর জন্য তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো, আর যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো। [আল-বাক্বারাহ ১৮৫]

রমজান মাসের আসল গুরুত্ব হচ্ছে যে, এই মাসে কুর’আন নাজিল হয়েছে। এই মাসেই আল্লাহ تعالىমানবজাতিকে পথ দেখানোর জন্য সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারি পরিস্কার বাণী পাঠিয়েছেন। একারণেই এই মাসটি মুসলিমদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাস হচ্ছে কুর’আন উদযাপনের মাস। এই মাসে আমাদের কুর’আনের সাথে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। যেই বাণী মানুষের কাছে প্রচার করার জন্য একজন মানুষ ২৩ বছর কঠিন সংগ্রাম করেছেন, শত শত মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, হাজার হাজার মানুষ নির্যাতন সহ্য করেছেন, যেন এই বাণী একদিন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছুতে পারে, আপনি-আমি তা জানতে পারি, সেই বাণী আমাদেরকে গভীরভাবে বুঝতে হবে। যদি আমরা তা ভালো করে বুঝে, নিজেকে পরিবর্তন করতে না পারি, তাহলে সেটা হবে রাসুল (সা) এবং সাহাবাদের (রা) এত বড় ত্যাগের প্রতি চরম অবমাননা।

সুত্র: কুরআনের কথা

 

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —(আল-বাক্বারাহ) ৩…

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —আল-বাক্বারাহ ১৮৩-১৮৫,১৮৭
৩…
ওমর আল জাবির

নিজের উপর জোর করে, অসুস্থতা বাড়িয়ে রোজা রাখতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে বলেননি। আমাদের মধ্যে অনেকেই চেষ্টা করি জোর করে আল্লাহকে تعالىখুশি করার। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কোনো জবরদস্থি করতে বলেননি।

তাফসিরগুলোতে এই নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। একাধিক সাহাবি (রা) থেকে আসা মত অনুসারে: কারো যদি অসুস্থতা বাড়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তার জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়। গর্ভবতী বা শিশু বাচ্চাকে দুধ পান করান এমন মা, বৃদ্ধ, অসুস্থ মানুষরা রমজান মাসে রোজা রাখতে কষ্ট হলে বা স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি থাকলে, প্রতিটি রোজার বদলে একদিন করে একজন গরিব মানুষকে সাধ্যমত খাওয়াবে। একইভাবে সফরে থাকলেও রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়, যদি রোজা রাখার ফলে কষ্টের সৃষ্টি হয়।[১১][৩][৬] তবে একাধিক মাযহাবের মত অনুসারে কেউ যদি রমজানের পরে রোজা রাখতে সক্ষম হয়, তাহলে গরিব খাওয়ানো যাবে না, নিজে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। সুতরাং অসুস্থতা সাময়িক হলে এবং মা’দের রমজানের পরে রোজা রাখতে হবে, গরিব খাওয়ালে হবে না।

কী ধরণের অসুস্থতা হলে এবং কী ধরণের সফর হলে রোজা না রাখলেও হবে, এনিয়ে বিভিন্ন ফিকহ-এর আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।[১১][৩][৬]যেহেতু আল্লাহ تعالى এখানে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি, তাই তারা আশংকা করেছেন যে, মানুষ ব্যাপারটাকে সহজভাবে নেবে এবং একটু অসুস্থ হলেই, বা সামান্য সফরে গেলেই রোজা রাখা ছেড়ে দেবে। তাই তারা সফরের দৈর্ঘ্য কতটুকু, কতদিনের হতে হবে, এনিয়ে কিছু শর্ত দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো গ্রহণযোগ্য হাদিস থেকে এই শর্তগুলোর পক্ষে ইজমা হওয়ার মতো যথেষ্ট দলিল পাওয়া যায়নি বলে একাধিক তাফসিরবিদদের মত।[৩][৬] তাদের বক্তব্য হচ্ছে: আল্লাহ تعالى এখানে কোনো শর্ত দেননি, কারণ রোজা রাখার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন। কেউ যদি আল্লাহর تعالى সাথে প্রতারণা করতেই চায়, নিজের প্রবৃত্তির কাছে নিজেকে বিক্রি করে দিতে চায়, তাহলে তার জন্য এই সব শর্ত থাকা বা না থাকাটা একই কথা। যে সবসময় সুযোগ খুঁজে কীভাবে আইনের ফাঁকফোকর বের করে পার পেয়ে যাওয়া যায়, তাকে হাইকোর্ট দেখিয়ে খুব একটা লাভ হয় না। বরং এই সব মানুষকে ঠিক করতে গিয়ে অন্য সবার জন্য ধর্মের মধ্যে অতিরিক্ত কড়াকড়ি করলে, তা উলটো মানুষকে ধর্মের প্রতি নিরুৎসাহিত করে।[৬]

আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে, ইসলাম ধর্ম আল্লাহই تعالى আমাদেরকে দিয়েছেন, কোনো মানুষ তা নির্ধারণ করেনি। কখন মানুষকে শক্ত নিয়ম দিতে হবে, কখন ছাড় দিতে হবে, ছাড় দিলে তার সুদূর প্রসারি ফলাফল কী হবে —এটা আল্লাহ تعالى যে কোনো মানুষের থেকে ভালো জানেন। সুতরাং কোনো এক প্রজন্মের ইসলামকে হালকা ভাবে নিয়ে অবহেলা করা দেখে, সে প্রজন্মের আলেমরা যদি ইসলামে নানা শক্ত নিয়ম, শর্ত যোগ করেন, তাহলে সেটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সবসময় কল্যাণকর নাও হতে পারে, বরং তাদের প্রতি অন্যায় হয়ে যেতে পারে। একারণে আল্লাহ تعالى যদি কোনো নিয়ম মানার বেলায় শিথিলতা দেন, তাহলে আমাদের আল্লাহর تعالى প্রজ্ঞার উপর আস্থা রাখতে হবে।[৬]

সুত্র: কুরআনের কথা

 

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —(আল-বাক্বারাহ) ২…

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —আল-বাক্বারাহ ১৮৩-১৮৫,১৮৭
২…

ওমর আল জাবির

এখন প্রশ্ন হলো, রোজার সাথে তাকওয়ার সম্পর্ক কী?

একজন মানুষ যখন রোজা রাখে, সে একটা বিরাট সময় নিজেকে তার শারিরিক চাহিদা, কামনা থেকে নিজের ইচ্ছায় দূরে রাখে। ক্ষুধায় তার পেট মোড়ায়। হাত বাড়ালেই খাবার। ইচ্ছে করলেই সে মুখে একটু খাবার দিয়ে ক্ষুধাটা দমিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু না! সে নিজেকে বোঝায়: “মাগরিব হোক, তারপরে ইফতার, এর আগে কোনো খাবার নয়।” পিপাসায় তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। হাত বাড়ালেই এক গ্লাস পানি, কোমল পানীয়। শুকনো গলা দিয়ে ঠাণ্ডা পানি নেমে যাওয়ার সুখকর চিন্তা তার মনে ঘুরপাক খায়। কিন্তু না, সে নিজেকে বোঝায়, “মাগরিব আসুক। এর আগে এক ফোঁটাও পানি না।” সারাদিন অফিস-স্কুল-কলেজে তার চোখের সামনে নানা প্রলোভন ঘুরে বেড়ায়। কিছুক্ষণ পর পর বিপরীত লিঙ্গের হাতছানি। টিভি ছাড়লেই অশ্লীলতা। ইন্টারনেটে গেলেই কামনার সাগরে ডুবে যাওয়া যায়। কিন্তু না, সে নিজেকে বোঝায়, “আমি রোজাদার। আমি এখন কোনো খারাপ কিছু দেখতে পারি না, কোনো খারাপ কিছু করতে পারি না।” দিনে কয়েকবার সে সুযোগ পেয়েছে মিথ্যা বলে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার, নিজের দোষ ঢাকার, অন্যায়ভাবে সুবিধা হাতিয়ে নেওয়ার, অন্যের গীবত করার। কিন্তু না, সে নিজেকে সংযত করে, “আমি রোজাদার, আমি এখন মিথ্যা বলতে পারি না। আমার রোজা ভেঙ্গে যাবে।”

যখন আমরা রোজা রাখি না, তখন আমাদের শারীরিক চাহিদা আসলেই আমরা সেটা মিটিয়ে ফেলি, পাপ কাজের ইচ্ছা জাগলে করে ফেলি। ক্ষুধা লাগলেই খাই। পিপাসা পেলেই পান করি। কামনা জাগলে, তা পূরণ করে ফেলি। সুযোগ পেলেই মিথ্যা বলি, ঘুষ খাই, অন্যায় করি, গীবত করি। এভাবে আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে ক্রমেই প্রবৃত্তির দাস বানিয়ে ফেলি। যার ফলে দিনে দিনে কুপ্রবৃত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকি। প্রবৃত্তি জিততে থাকে, আর আমরা হারতে থাকি। কিন্তু যখন আমরা রোজা রাখি, প্রতিদিন একটা বিরাট সময় আমরা আমাদের প্রবৃত্তিকে শক্ত হাতে দমন করে রাখি। কিছুক্ষণ পর পর প্রবৃত্তি চাড়া দিয়ে উঠে, আমাদের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে চায়। কিন্তু তখনি আমরা সেটাকে পরাজিত করে নিজের উপর আবার নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেই। এভাবে দিনের পর দিন আমরা প্রবৃত্তির উপর জিততে থাকি। তখন সেটা আস্তে আস্তে দুর্বল হতে থাকে। আল্লাহর تعالى নির্দেশ মানা, অন্যায় থেকে দূরে থাকাটা তখন আমাদের জন্য আরও সহজ হতে থাকে। এভাবেই আমরা রোজা রেখে তাকওয়া অর্জন করি।[১]

প্রাচীন আরবরা ঘোড়া নিয়ে যুদ্ধ করতে যেত। কিন্তু ঘোড়া উটের মতো উত্তপ্ত মরুভূমিতে দীর্ঘ সময় থাকার জন্য ঠিক উপযুক্ত নয়। এরা পানি ছাড়া বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। একারণে আরবরা ঘোড়াকে মরুভূমির প্রখর উত্তাপে বার বার দৌড়িয়ে মরুভূমিতে টিকে থাকার প্রশিক্ষণ দিত। এভাবে ঘোড়াকে প্রচণ্ড তাপে যুদ্ধ করার জন্য তৈরি করাকে তারা সিয়াম বলত। সিয়াম, যাকে আমরা রোজা বলি, মুমিনদের জন্য একধরনের মিলিটারি ট্রেনিং। এটি আমাদের শক্ত করে, কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য শারীরিক এবং মানসিক ট্রেনিং দেয়।[১][১৬]

এরপরের আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে শেখাবেন, কোন পরিস্থিতিতে রমজানে রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়—

রোজা নির্দিষ্ট কিছু দিন। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ থাকে, বা সফরে থাকে, তাহলে পরে একই সংখ্যক দিন পূরণ করবে। আর যাদের জন্য রোজা রাখা ভীষণ কষ্টের, তাদের জন্য উপায় রয়েছে — তারা একই সংখ্যক দিন একজন গরিব মানুষকে খাওয়াবে। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়তি ভালো কাজ করে, সেটা তার জন্যই কল্যাণ হবে। রোজা রাখাটাই তোমাদের জন্যই ভালো, যদি তোমরা জানতে। [আল-বাক্বারাহ ১৮৪]

সুত্র: কুরআনের কথা

 

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —(আল-বাক্বারাহ) ১…

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —আল-বাক্বারাহ ১৮৩-১৮৫,১৮৭
১…

ওমর আল জাবির

সূরা আল-বাক্বারাহ’র নিচের কয়েকটি আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে সিয়াম অর্থাৎ রোজা রাখার নির্দেশ দেবেন এবং কেন আমরা রোজা রাখি, রোজা রেখে কী লাভ, তা শেখাবেন।

তোমরা যারা বিশ্বাস করেছ, শোনো, উপর রোজা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যে রকম তোমাদের পূর্বপুরুষদের উপর করা হয়েছিল। যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও। [আল-বাক্বারাহ ১৮৩]

এখানে আল্লাহ تعالى বলছেন যে, রোজা রাখার উদ্দেশ্য না খেয়ে থাকা নয়, বরং রোজা রাখার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি সচেতনতা বাড়ানো। প্রথমে বোঝা দরকার তাকওয়া কী।

তাকওয়া শব্দটির অর্থ সাধারণত করা হয়—আল্লাহকে ভয় করা। এটি পুরোপুরি সঠিক অনুবাদ নয়, কারণ ‘ভয়’ এর জন্য আরবিতে ভিন্ন শব্দ রয়েছে—যেমন খাওফ خوف, খাশিয়া خشي, হিযর حذر; শুধু কু’রআনেই ১২টি আলাদা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন গভীরতার ভয়, সতর্কতা, আতঙ্ক ইত্যাদি তুলে ধরার জন্য। এর মধ্যে ‘তাক্বওয়া’ হচ্ছে ‘সবসময় পূর্ণ সচেতন’ থাকা বা আল্লাহর কথা মনে রেখে নিজেকে অন্যায় থেকে দূরে রাখা।[১][২]

ধরুন, আপনি প্রতিদিন কী করেন, সেটা নিয়ে একটা ‘রিয়েলিটি টিভি শো’ বানানো হচ্ছে। আপনার বাসার সবগুলো রুমে ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আপনি ঘুম থেকে ওঠার পর ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত সবসময় আপনার সাথে একজন ক্যামেরাম্যান আপনার দিকে ক্যামেরা তাক করে রেখেছে। আপনি কী বলছেন, কী করছেন, কী খাচ্ছেন, কী দেখছেন, সবকিছু প্রতি মুহূর্তে রেকর্ড করা হচ্ছে। কল্পনা করুন, যদি এরকম কোনো ঘটনা ঘটে তাহলে আপনার মানসিক অবস্থা কী হবে? আপনি প্রতিটা কথা বলার আগে চিন্তা করবেন যে, আপনার কথাগুলো মার্জিত হচ্ছে কি না, আপনার হাঁটার ধরন ঠিক আছে কি না, আপনি উল্টোপাল্টা দিকে তাকালে সেটা আবার রেকর্ড হয়ে গেলো কি না। আপনি টিভিতে যেসব হিন্দি সিরিয়াল, বিজ্ঞাপন, মুভি দেখেন, যেসব গান শুনেন, ইন্টারনেটে যে সব সাইট ঘুরে বেড়ান, সেগুলো ক্যামেরায় রেকর্ড হয়ে গেলে লোকজনের কাছে মান-সন্মান থাকবে কি না। এই যে ক্যামেরাম্যানের প্রতি আপনার চরম সচেতনতা, এটাই তাক্বওয়া। আল্লাহর تعالى প্রতি আপনার ঠিক একই ধরনের সচেতনতা থাকার কথা।

সুত্র: কুরআনের কথা

 

রমজান মাসের ৩০ আমল (পর্ব- ১)

রমজান মাসের ৩০ আমল (পর্ব- ১)


হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল


এ মাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো পালন করার মাধ্যমে আমরা জান্নাতে যেতে পারি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি। নিম্নে রমাদান মাসের আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। তবে এ আমলগুলো করার জন্য শর্ত হলো:

এক. ইখলাস অর্থাৎ ‘‘একনিষ্ঠতার সাথে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যে আমল করা। সুতরাং যে আমল হবে টাকা উপার্জনের জন্য, নেতৃত্ব অর্জনের জন্য ও সুনাম-খ্যাতি অর্জনের জন্যে সে আমলে ইখলাস থাকবে না অর্থাৎ এসব ইবাদাত বা নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে না বরং তা ছোট শির্কে রূপান্তরিত হতে পারে।

আল-কুরআনে এসেছে,
“আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে” [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ : ৫]

দুই. ইবাদাতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ। সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে সকল ইবাদাতের কথা উল্লেখ আছে সেগুলো পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো বাড়ানো বা কমানোর সুযোগ নেই। কারণ, ইবাদাত হচ্ছে তাই যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দিয়েছেন।

কুরআনে এসেছে,
‘এবং রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও’ [সূরা হাশর: ৭]

এ বিষয়ে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘যে এমন ইবাদত করল যাতে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই তা পরিত্যাজ্য হিসাবে গণ্য হবে’’। [সহীহ মুসলিম : ৪৫৯০]
রমাদান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো হলো-

সিয়াম পালন করা

ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি রুকন হল সিয়াম। আর রমাদান মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। সেজন্য রমাদান মাসের প্রধান আমল হলো সুন্নাহ মোতাবেক সিয়াম পালন করা। মহান আল্লাহ বলেন,
“সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে, মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে” [সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৫]

সিয়াম পালনের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ইখলাস নিয়ে অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য রমাদানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’ [সহীহ বুখারী : ২০১৪]

‘‘যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য) একদিন সিয়াম পালন করবে, তাদ্বারা আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তীস্থানে রাখবেন’’। [সহীহ মুসলিম : ২৭৬৭]

সময় মত সালাত আদায় করা

সিয়াম পালনের সাথে সাথে সময় মত নামায আদায় করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,
‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।’ [সূরা নিসা : ১০৩]

এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে,
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, সময় মত নামায আদায় করা। [সহীহ মুসলিম : ২৬৩]”

সহীহ্ভাবে কুরআন শেখা

রমাদান মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। এ মাসের অন্যতম আমল হলো সহীহভাবে কুরআন শেখা। আর কুরআন শিক্ষা করা ফরয করা হয়েছে। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে,
‘‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’’ [সূরা আলাক : ১]
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন শেখার নির্দেশ দিয়ে বলেন,
‘‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর’’ [মুসনাদ আলজামি : ৯৮৯০]

চলবে…..
.

 

ভুলে ভরা জীবন


জাহেদ উদ্দীন মোহাম্মদ


(১)
আমি বাবা-মা’র পঞ্চম সন্তান। আমরা তিন ভাই দুই বোন। আমি সবার ছোট । বড়গুলো শহরে পড়াশোনা করে। আমি গ্রামের বাড়িতে থাকি। গ্রামের বাড়িতে এমন কোন কাজ নাই, যা আমাকে দিয়ে করানো হয় না।
প্রতিদিন সকালে লঙ্কাপোড়া দিয়ে পানতা খেয়ে মক্তবে যাই। তারপর স্কুল। স্কুল ছুটি হলে প্রতিদিন বাজারের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাবার সাথে বাজারে যাওয়া রুটিন কাজ। বাজার হতে এক বস্তা সস্তা তরকারি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। সন্ধ্যায় মুড়ি-চা খেয়ে পড়তে বসি। ছুটির দিনেও বাড়িতে অনেক কাজ। কোন রেহাই নাই। বাবাও সারাক্ষণ একাজ সেকাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অথচ, বাবা চাইলে এই কাজের জন্য একটা শক্ত সামর্থ্যেবান লোক রাখতে পারে। সে টাকা তাঁর আছে। কিন্তু খালি পয়সা বাঁচানোর ধান্ধা।
দাদা-দাদির একমাত্র সন্তান বাবা। উত্তরের বিলে কানি কানির ধানী জমি আছে। সবগুলো দো’ফসলি। বাড়ির এক পাশে বিরাট পুকুর। বিকালবেলা পুকুরে বড় বড় রুই-কাতলা ভুশ ভুশ করে ভাসে। কিন্তু এই মাছ আমাদের কপালে জোটে না। মোটা দাগে বিক্রি হয়, স্থানীয় স্কুল-কলেজের হোস্টেলে। বাড়ির জন্য বরাদ্দ ছোট মাছ।
গ্রামে লোকজন আড়ালে বাবাকে হাড় কিপ্টে, বখিল বলে। পথে-ঘাটে আমাকে “পোতাইয়ার পোলা” বলে। কাউকে লজ্জায় মুখ দেখাতে ইচ্ছে করে না।

মানুষের দোষ দিয়ে লাভ নেই। বাবা আসলে কিপটা। মাত্র দুইটা পাঞ্জাবি। একটার কলার ছেঁড়া অন্যটার বগলের তলে জোড়াতালি দেয়া। এইসব বাইরের যে কারো চোখে পড়ে।
একবার ছোট মামা মস্করা করে পাঞ্জাবির ফুটোতে আঙুল দিয়ে ছিড়ে দিল, বাবা তাকে বাড়ি ছাড়া করেছিল। মামা আর কখনো বাবার সামনে পড়েননি।
পরিবারে কারো দু’টার বেশী জামা-প্যান্ট নেই। অথচ গ্রামে আমাদের চেয়ে কয়েকগুণ গরীব গৃহস্থের ছেলেমেয়েদের কত রঙিন জামা! এই নিয়ে মনে মনে রাগ পুষে রাখি বটে বাবার মুখোমুখি হবার সাহস হয় না।

আমার অন্য ভাইবোন, যারা শহরে পড়াশোনা করে, সবাইকে বাবা নিয়মিত মানি-অর্ডার করেন। হিসাব পাক্কা। মাস শেষে কত টাকা বাঁচলো তার চুলচেরা হিসাব চাই।
পড়ালেখার খরচ দিতে কোন কার্পণ্য নেই। তবে কড়ায়-গন্ডায় তার হিসাব চাইই। নইলে পরের মাসে টাকা পাঠানো বন্ধ।
বাবা বাজারে গেলে, সব্জিওয়ালা, মাছওয়ালা হাসি-ঠাট্টা করে। সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,
– হাক্কু, অনে পরে আইসসুন। এহনো বড় মাছ বেচা শেষ ন অয়।
সবার শেষে উনি মাছ কিনবেন। এটা জেলেরাও জানে।কি লজ্জ্বার কথা! একবার ভাবুন তো! বাবা বাজারে গিয়ে পাহাড়ি লোকজনের ভাগে বেচা শাক-সবজি খুঁজে বেড়ান। সস্তার জন্য নয়তো আর কি হতে পারে?
মাংসের দোকানে গিয়েও সস্তা খুঁজে মরেন। আমি বন্ধু-বান্ধবের সামনে পড়ে যাই। ওদের বাবা কিনেন গরুর রানের মাংশ আর বাবা কিনেন সস্তা গরুর নলা-পায়া আর হাড়ওয়ালা মাংশ। লজ্জ্বায় মাথা হেটঁ হয়ে আসে। পরদিন বন্ধুরা স্কুলের এ নিয়ে আলোচনা করে আর হাসাহাসি করে।
অথচ ধান বেচা, মাছ বেচা আর বাগানের ফল বেচা টাকায় আমাদের রাজকীয় হালে চলার কথা কিন্তু বাবার এইসব কিপ্টামির কারণে আজ ফকিন্নী হালতে চলাফেরা। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে সমস্যা নেই। তবে জিনিসপত্র একটার বেশি দুটো কারো নেই। নতুন কিছু কেনার আগে পুরানোটা তিনি বারবার চেক করেন। কাপড় না ছেঁড়া পর্যন্ত কোন নিস্তার নাই। ইচ্ছেকৃত ছিঁড়লে,তিনি ঠিক ঠিক ধরে ফেলন। শাস্তি হিসাবে বাধ্যতামূলক ঐ ছেঁড়া কাপড় পরতে হবে।

মা যেন কেমন। দু’টোর বেশী শাড়ি নাই। এইসব নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নাই। বাবার সব কাজের এ যেন অন্ধ সমর্থক।
আমি প্রতিদিন এই কারাগার হতে মুক্তি চাই। কবে ম্যাট্রিক দিয়ে শহরে পা দেব, এই চিন্তায় দিন যায়। এই রকম কিপ্টা বাবাকে আমি ঘৃনা করি। আমি এভাবে মানুষের হাসি-ঠাট্টার পাত্র হতে চাই না।

(২)
সময়ের সাথে টেক্কা দিয়ে বয়স বাড়ে। বড় বোনদের বিয়ে হয়ে গেল। খুবই সাধারণ বিয়ে। অনেকটা গছিয়ে দেয়ার মতো। কোন ঢাকঢোল নেই, মাইকের গানবাজনা নেই,। কেবলমাত্র পঞ্চাশ জনের মতো লোকের খাওয়া-দাওয়া।ভাগ্য ভালো, বোনদের গায়ের সুন্দর রঙের কারণে বিয়ে আটকায় নি। বড় ভাই বৃত্তি নিয়ে বিদেশে পড়াশোনা করছে। হাড়কিপটে লোকের ছেলেকে কোন পাগলে মেয়ে বিয়ে দেবে? ওরা বিদেশি মেম বিয়ে করে ভালো কাজ করেছে।

আমি পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরিতে যোগ দিই। আজ এই জেলা, কাল এই জেলা। এখন নিজের টাকা নিজে ইচ্ছেমতো খরচ করি। মাকে দামী শাড়ি কিনে দিই। বাবার জন্য কিছু কিনতে ইচ্ছে করে না। কিনলে রাগারাগি করেন। বাড়তি খরচ তাঁর সহ্য হয় না। হাতে নগদ টাকা পেলে খুশি। তিনি জমিয়ে রাখেন।

তিনি সহজে গাড়ি চড়েন না। চা খান না। পান-বিড়ির অভ্যাস নেই। এতে নাকি খালি পয়সা খরচ হয়। আত্মীয় স্বজনের বাড়ি যান না, পাছে কিছু কিনতে খরচ হয়। বাটা কোম্পানির অক্ষয় সেন্ডেল জোড়ার ফিতে ছিঁড়ে গেলে, নতুন ফিতে লাগিয়ে নেন। সেন্ডেল ক্ষয় হয়ে মাটি স্পর্শ না করা পর্যন্ত কোন তালাক নাই।
-এই শালার পুত টাকা জমিয়ে কি করবে বুঝি না।
মাঝে মাঝে রাতেরবেলা ঘর ফিরতি মাছওয়ালা বাড়িতে হাঁক দেয়, কাক্কু, বাড়ি আছোনি?
তিনি ধড়পড় করে উঠে বলেন, হ বাজি; আছি।
-একটা বড় মাছ আছিল। অনর লাই রাহি দি।
এটা সম্ভবত পঁচা মাছ। খুবই সস্তা। বাবা মাছটা কেনার জন্য লাফিয়ে উঠেন।
-আইচ্ছা। রাহি জ। টেঁয়া পরে লইয়ু।
মা দ্রুত হাত চালিয়ে মাছ কুটেন আর রান্না ছড়িয়ে দেন। কোন ক্লান্তি নেই। কোন অভিযোগ নেই।
মাঝে মাঝে চমকে উঠি, কিভাবে এইরকম এক কিপটে লোকের সাথে ৪০ বছর একটা মেয়ে সংসার করে!
আমার কোন মান -সম্মান নেই। স্কুলে আমার সাথে জেলে-মুচি-কামার-কুমারের ছেলেমেয়েরাও পড়ে। অথচ গ্রামে একটু সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরা কিন্ডারগার্টেন-এ পড়ে। কি সুন্দর ড্রেস পড়ে, মাথায় ক্যাপ আর উজ্জ্বল রঙের ব্যাগ পিঠে স্কুলে যায়। আর আমি পড়ি অতি সাধারণ এক স্কুলে,যেখানে লুঙ্গি পরে টিচাররা স্কুলে আসে।
বাবার কোন রুচি নেই। টাকা বাঁচাতে গিয়ে ছেলের ইজ্জতের দিকে খেয়াল নেই।।
বাবার প্রতি কেমন বিতৃষ্ণা জমে রইল। মাঝে মাঝে একটু আধটু পত্র যোগাযোগ হয়। বছরে দুইটা ঈদের যে কোন একটাতে বাড়ি যাই। বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে না। দশজনে মন্দ বলবে, এই ভয়ে তবু বাড়ি যাওয়া।

(৩)
বাবার মৃত্যুর খবরে চমকে উঠি। আমার তখন সিলেটে পোস্টিং। মাইক্রোবাস নিয়ে বাড়ি ফিরি। বাড়ি লোকে লোকারণ্য। পা ফেলার জো নেই। বোনেরা ফ্যামিলি নিয়ে আগেই হাজির। লোকজন সামলাচ্ছে। বোনের জামাইরাও ব্যস্ত। প্রবাসী ভাই দ্রুত বিমানের টিকেটের অভাবে আসতে পারে না।
এত কিপ্টামির পরও এখানে মানুষের ঢল নামে। শেষ পর্যন্ত ভালোই ভালোই দাফন কাফনের কাজ শেষ হলো। পথে হরি কাকার সাথে দেখা, তিনি কাঁদছেন।
-বাবু, তোয়ার বাপর নান মানুষ আর নইবু। ইবা উগগা ফেরেশতা আছিল।
আমি দোটানায় পড়ি। জানি, মানুষ মারা গেলে, সবাই ভালো ভালো কথা বলে, কত কত তারিফ করে! অথচ জীবিতকালে সবাই তাঁরে কিপটে ছাড়া কিছু ভাবল না। তিনি কেঁদে কেঁদে হিক্কা তোলেন। বললেন,
-বাবু, তোয়ার বাপ আত্তুন মাছ কিনিতো। টেঁয়া আছে তবু হনোদিন ধুম গরি মাছ ন লইতো। একদিন আঁই পুচ গরনের পরে কি হওইয়ে জানো না?
– ওডা, আঁই যদি বেয়াগ মাইনসের আগে মাছ লই ফেলি, মাইনষে বদ দোয়া দিব। মনে গরিবু টেঁয়ার গরমে বড় মাছ আগে লই ফেলাই। আঁই এতাল্লাই আস্তে ধীরে মাছ লই। কেউত্তুন বড় মাছ খাইতু মন চাইলে, ইতারা আগে লই ফেলক।

বাড়িতে এতগুলো পাহাড়ি লোকজন বাবাকে শেষ দেখা দিতে এসেছে দেখে অবাক হই। তাদের মধ্যে বয়স্ক একজন বলল,
-বাবু, তোয়ার বাপ আরারঁতুন বেয়াক সময় শাক-সব্জি কিনিতো। আরাঁর লগে হনোদিন দরদাম ন গইরতো। দামের তুন বেশি টেঁয়া দিতো। আঁরা ত ভিক্ষা ন গরি; এতাল্লাই আঁরারে বেশি দয়া গইরতু। তোয়ার বাপ বেশি গম মানুষ আছিল।

বোডিং স্কুলের হল সুপার আমাকে অনেক্ষণ জড়িয়ে ধরলেন। বললেন,
-তোমার বাবা আমাদের হোস্টেলে তোমাদের পুকুরের মাছ অর্ধেক দামে দিতো। আমাদেরকে বলতেন,
-মাস্টার সাব, বাপ-মা ছাড়া ছেলেরা এখানে একা একা থাকে। আমি না হয়,অর্ধেক দামে মাছ দিয়ে একটু সাহায্য করি। ওরা এখানে কিইবা খেতে পায়, তাতো জানি না।

গ্রামের অনেকগুলো এতিমখানাগুলো কিভাবে চলে,আমরা কোন্দিন ভুলেও টের পাইনি। আমরা এতদিন জানতে পারিনি, আমাদের জমিনের অর্ধেক ধান কোথায় যায়? একজন কিপটে মানুষের জানাজায় হাজার হাজার মানুষ শরীক হবার আগে কেউ বাবাকে চিনতে পারিনি। আমরা কখনো তাঁর ভেতরটা পড়তে পারেনি। তিনি হয়তো নিজেকে আড়াল করেছিলেন নতুবা আমরা ছিলাম নির্ঘাত অন্ধ। এই যে ভুলেভরা জীবন! বাবাকে কখনো বলা হয়নি, তাঁকে কত্ত ভালোবাসি।

আমরা ভীষণ স্বার্থপর। আমরা শুধু নিজের সুখের কথা, আরামের কথা ভেবেছি।

ছবির উৎস : ইন্টারনেট।

 

গল্পে গল্পে শিশুদের কুরআন শেখা……১

গল্পে গল্পে শিশুদের কুরআন শেখা……১


আফরোজা হাসান


আজ মিহিরের মনে অনেক আনন্দ কারণ দেড়মাস পর দাদুভাই আর দাদুমনিকে আবার কাছে পেয়েছে। দুজনই হজ্জ করতে সৌদিআরব গিয়েছিলেন। মিহিরের জন্য অনেক উপহার নিয়ে এসেছেন তারা। সব উপহারের মধ্যে থেকে কাবা ঘরের শোপিস হাতে নিয়ে মিহির বলল, এটা দিয়ে আমি কি করবো দাদুভাই? দাদুভাই মিহিরকে কাছে টেনে হেসে বললেন, তুমি জানো এটা কি?

হুম জানি তো এটা হচ্ছে আল্লাহর কাবা ঘর। এখানেই তো তোমরা গিয়েছিলে হজ্জ করতে। আচ্ছা দাদুভাই আল্লাহই কি এই ঘর বানিয়েছেন?

হেসে, না দাদুভাই। তবে আল্লাহর নির্দেশে ইবরাহীম(আ)তাঁর ছেলে ইসমাইল(আ)কে নিয়ে কাবা ঘর বানিয়েছিলেন। সে এখন থেকে বহু বহু বছর আগের কথা। একবার কি হয়েছিলো জান?

কি হয়েছিলো দাদুভাই?

আবরাহা নামে এক দুষ্টু রাজা ছিল। সে ঠিক করেছিল সেই কাবাটা সে ভেঙে ফেলবে। কারণ তার ছিল অনেক শক্তি। ইবরাহীম(আ) আর ইসমাইল(আ) আল্লাহর কথা মত কাবা বানানোর পর থেকে অনেক দূর থেকে মানুষরা আল্লাহর ইবাদত করার জন্য কাবায় আসতো। তাই তার মনে কাবাকে ঘিরে খুব হিংসার সৃষ্টি হলো। সে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে দামি দামি জিনিসপত্র দিয়ে ভীষণ সুন্দর একটা উপাসনালয় বানালো। তারপরে মানুষকে দাওয়াত দিলো যাতে সবাই তার উপাসনালয়ে আসে। কিন্তু কেউ এলো না বরং সবাই আগের মতোই কাবা ঘরেই যাচ্ছিল ইবাদতের করতে। তাই সে ভীষণ রেগে ঠিক করলো কাবা ঘর ধ্বংস করে দিবে।

দুষ্টু রাজাটা তখন কি করলো দাদুভাই?

সে তখন অনেক সৈন্য সামন্ত আর বিশাল এক হাতির বহর নিয়ে কাবা ধ্বংসের উদ্দেশ্যে রওনা করলো।

তারপর কি হলো দাদুভাই?

আবরাহা তার সৈন্য বাহিনী আর বিশাল এক হাতির বহর নিয়ে কাবা ধ্বংস করতে আসছে শুনে তো মক্কার মানুষেরা অনেক ভয় পেয়ে গেল। তাদের তো অস্ত্র বলতে ছিল শুধু ঢাল, তলোয়ার আর বর্ষা। এত বিশাল সেনাবাহিনীর সাথে কিভাবে লড়াই করবে তারা ভেবে পাচ্ছিলো না। তাই তারা দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের কোন বাঁধা দিতে চেষ্টা করলো না।

মিহির ভীত কণ্ঠে বলল,তাহলে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যরা কাবা ঘর ভেঙ্গে ফেলেছিল?

না দাদুভাই দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের সেই ক্ষমতা কোথায় যে তারা আল্লাহর ঘর ভেঙ্গে ফেলবে। আল্লাহ তো সর্ব শক্তিমান। নিজের ঘরকে দুষ্টুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ আকাশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট ছোট আবাবীল পাখী পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

হাসি ফুটে উঠলো মিহিরের চেহারাতে। উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলল,আবাবীল পাখীরা দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের সাথে লড়াই করেছিল?

হেসে, তা বলতে পারো।পাখীদের প্রত্যেকের কাছে ছিল তিনটি করে পাথর। যা তারা সেনা বাহিনীর উপরে ছুড়ে দিয়েছিল। সেই ছোট্ট ছোট্ট নূরী পাথর বৃষ্টির ফোঁটার ঝরে পড়েছিল দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের উপর। যারফলে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

আনন্দে লাফিয়ে উঠে হাততালি দিয়ে মিহির বলল, খুব ভালো হয়েছে। কত্তো বোকা আল্লাহর ঘর ভাঙতে এসেছিল। উচিত শিক্ষা হয়েছে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের।

হেসে নাতীকে কোলে টেনে নিয়ে, ঠিক বলেছো দাদুভাই দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যরা ভীষণ বোকা ছিল। এমন অনেক বোকা মানুষ আছে যারা ক্ষমতা ও সম্পদের কারণে নিজেদেরকে অনেক বিশাল কিছু মনে করে। যারফলে তারা আল্লাহ্‌র সাথে লড়াই করতে চায়। কিন্তু…

দাদার মুখ থেকে কথা ছিনিয়ে নিয়ে বলল,আল্লাহ তো সর্বশক্তিমান তাই কেউ জিততে পারে না লড়াইতে।

হেসে,একদম ঠিক বলেছো। আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে যারা লড়াই করতে আসে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের মতই করুণ অবস্থা হয় তাদের।

চোখের সামনে কাবাঘরের শোপিসটা তুলে ধরলো মিহির। কিছুক্ষণ দেখে বলল, আমি আল্লাহর ঘরকে কোথায় রাখবো দাদাভাই?

তুমি কোথায় রাখতে চাও?

একটু চিন্তা করে মিহির বলল, আমার পড়ার টেবিলের উপর। এক্ষুনি রেখে আসি আমি। দাদার কোল থেকে নেমে নিজের ঘরের দিকে ছুট লাগালো মিহির।

 

ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য রোজার উপহার- শেষ পর্ব


ডা. মারুফ রায়হান খান


যারা নিয়মিত Sulfonylureas (Glipizide, Gliclazide, Glimeperide –ওষুধের প্যাকেটের গায়ে ছোট্ট করে ওষুধের এই জেনেরিক নেইম লেখা থাকে) প্রতিদিন সকালে খেতেন, তারা একই ডোজে ইফতারের সময় সেটা খাবেন। আর যারা এ ওষুধটি দুবেলা খেতেন, সকালে ও রাতে–তারা সকালের ডোজের পুরোটা ইফতারের সময় খাবেন। তবে রাতের ডোজের কেবল ‘অর্ধেকটা’ সেহরির সময় খাবেন।

যারা Metformin (Oramet, Comet, Metfo, Met, Informet ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়) ৩ বেলা ৫০০ মিলিগ্রামের একটি করে ট্যাবলেট খেতেন, তারা ইফতারে একসাথে দুটো ট্যাবলেট অর্থাৎ মোট ১০০০ মিলিগ্রাম খাবেন। আর সেহরিতে ৫০০ মিলিগ্রামের ১টি ট্যাবলেট খাবেন।

যারা দুবেলা ইনসুলিন নিয়ে থাকেন, সকালের ডোজটা সমপরিমাণ ইফতারের আগে নেবেন। আর রাতের ডোজের ‘অর্ধেক’ পরিমাণ সেহরির সময় নেবেন। ধরা যাক, কেউ সকালে ৩০ ইউনিট এবং
রাতে ২০ ইউনিট ইনসুলিন পেতেন। রমাদানে তিনি ইফতারের আগে সকালের ডোজের পুরোটা অর্থাৎ ৩০ ইউনিট ইনসুলিনই নেবেন। আর সেহরির সময় রাতের ডোজের অর্ধেক (২০/২=১০) অর্থাৎ ১০ ইউনিট ইনসুলিন পাবেন।

আপনি ডায়াবেটিক হোন কিংবা নন-ডায়াবেটিক, সুস্থ অবস্থায় সুষ্ঠুভাবে যেন সবগুলো রোজা রাখতে পারেন সে দু’আই করি। তবে মারাত্নক শারীরিক অসুবিধার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে যদি একান্তই রোজা রাখতে না পারেন, তাহলে দয়া করে মন খারাপ করবেন না। আপনার নিয়্যাত তো নিষ্কলুষ ছিল, আর আল্লাহ তো অন্তরের খবরও জানেন। পরবর্তী সময়ে সে রোজাগুলো কাজা আদায় করা যাবে। এই রমাদানটি হোক এ যাবতাকালের আমাদের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ রমাদান। আমীন।

 

চলতি মাসে ৯ দিনে ৩ জনের মৃত্যুসহ ধর্ষণের শিকার ৪১ শিশু !!!


নারী সংবাদ


শিশু ধর্ষণ! মে মাসের ১ তারিখ থেকে ৯ তারিখ, এই প্রথম নয় দিনে রাজধানীসহ সারাদেশে ৪১ শিশু ধর্ষণের শিকার। নিষ্পাপ তিনটি শিশু মারা গিয়েছে। এসব শিশুর মধ্যে মেয়ে শিশু ৩৭ জন এবং ছেলে শিশু চারজন। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। ছয়টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

সংস্থাটি জানায়, ধর্ষণের শিকার শিশুদের মধ্যে তিন শিশু লাশ পাওয়া যায়। আহত হয়েছে ৪১ শিশু। এছাড়া ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে আরও তিন শিশু। ফলে মোট নির্যাতনের শিকার ৪৪ জন শিশু।

শাহানা হুদা রঞ্জনা মতে, ‘ছয়টি পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে আমরা ধর্ষণের শিকার শিশুদের সংখ্যাটি নির্ণয় করেছি। আসল সংখ্যাটি হয়ত আরও বেশি। এ সংখ্যাটি অস্বাভাবিক।’ (মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক)

নারী ও শিশু র্ধষণ বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিমও। তিনি বলেন, ‘শিশুধর্ষণের ঘটনাগুলো খুবই অ্যালার্মিং। আমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। বিশেষ করে যারা নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে রয়েছে তাদের আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা নিতে হবে। শাস্তির বিষয়টি পরে, সবার আগে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে, সবাইকেই এ নিয়ে আরও বেশি কথা বলতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুঃখজনক হলে সত্য দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটি হয়নি। এটি হতাশাজনক ব্যাপার।’

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন সংস্থাটি তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, ‘শিশুদের প্রতি চলমান সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।’

 

সেহেরিতে টমেটো ভর্তার রেসিপি


রেসিপি


উপকরণ
আপনি টমেটো – ২ টা মাঝারি আকারের
নিতে পারেন। কাঁচামরিচ – ৩-৪ টা বা আপনার স্বাদ মত। পেঁয়াজকুচি- ৩ টেবিল চামচ নিবেন। আর লবন স্বাদমত।
সরিষার তেল- ১ চা চামচ এবং ধনিয়াপাতা কুচি – ১ টেবিল চামচ নিন।

পদ্ধতি
টমেটোর গায়ে সামান্য তেল মাখিয়ে একটি প্যানে নিয়ে মাঝারি আঁচে টেলে নিন (মাঝে মাঝে টমেটো নেড়ে দিন)। আপনি চাইলে প্যান ঢেকে দিয়ে টমেটো পুড়াতে পারেন। টমেটো নরম ও পোড়া পোড়া হয়ে আসলে চুলা বন্ধ করে ঠান্ডা হতে রাখুন। প্যানে কাঁচামরিচ নিয়ে মাঝারি আঁচে নরম ও হাল্কা পোড়া পোড়া হয়ে আসা পর্যন্ত টেলে নিন। এবার টমেটোর চামড়া ছাড়িয়ে একটি বাটিতে নিন। তাতে মরিচ পোড়া, পেঁয়াজকুচি, ধনিয়াপাতাকুচি, লবন ও সরিষার তেল দিয়ে একটি চামচ বা হাত দিয়ে ভাল করে ভর্তা করে নিন। আপনি চাইলে চপারে দিয়েও ভর্তা করতে পারেন।

পরিবেশন
টমেটো ভর্তার মধ্যে ধনিয়া পাতা দিয়ে পরিবেশন করুন।

 

গল্পে গল্পে শিশুদের হাদীস শেখা


আফরোজা হাসান


দুপুর থেকে ছেলের কর্মকাণ্ড দেখে খুবই মজা পাচ্ছিলো তাইয়্যেবাহ। বছর খানেক আগে আরিশকে একটি পিগি ব্যাংক কিনে দিয়েছিল। দুপুরে সেটা ভাঙার পর হিসাব করে দেখা গিয়েছে সব মিলিয়ে আরিশের জমানো টাকার পরিমাণ চারশো ইউরো। জমানো টাকার পরিমাণ চারশো ইউরো দেখে যতটা আনন্দিত হয়েছে আরিশ তারচেয়ে অনেকগুণ বেশি আনন্দিত হয়েছে এই তথ্য জানার পর যে, চারশো ইউরো মানে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা। এরপর থেকে টাকা দিয়ে কি করবে সেই পরিকল্পনা করছে আরিশ। একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হতে না হতেই সেটা বাদ দিয়ে নতুন আরেকটি পরিকল্পনার জন্য চিন্তাভাবনা শুরু করে দিচ্ছে। তাইয়্যেবাহ চুপচাপ ছেলের কান্ড দেখে আনন্দ নিচ্ছিলো। নিজ থেকে কোন পরামর্শ দেবার চেষ্টা করেনি। জানা আছে শেষমেশ তার কাছেই আসবে আরিশ ঘুরে ফিরে। এবং তাইয়্যেবাহর জানাকে সত্য প্রমাণিত করে বিকেলবেলা আরিশ হাজির হলো তার জমানো অর্থ সম্পদ সহ। খানিকটা চিন্তিত কন্ঠে বলল, আম্মু আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না আমার টাকা দিয়ে কি করবো। তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?

তাইয়্যেবাহ হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ অবশ্যই সাহায্য করবো বাবা। কিন্তু তারআগে বলো তোমার কি কি করতে ইচ্ছে করছে তোমার টাকা দিয়ে।

গড়গড় করে নিজের পছন্দের একগাদা গেমসের নাম বললো আরিশ। যেগুলো কিনতে ইচ্ছে করছে। এছাড়া আগামী রামাদানের ঈদ উপলক্ষ্যে বাবা তাকে যে গেমসটা কিনে দেবার কথা বলেছেন সেটাও এখনই কিনে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ঈদের সময় বাবার কাছ থেকে অন্যকিছু নেবে। নতুন যে হালাল খাবারের বুফে রেস্টুরেন্টটা হয়েছে তাদের বাসায় কাছে সেখানে বাবা, আম্মু, ভাইবোন আর খুব প্রিয় দুজন বন্ধুকে নিয়ে খেতে যেতেও ইচ্ছে করছে। নানাভাই, নানুমণি, দাদাভাই, দাদুমণিকে তাদের পছন্দের কোন উপহার দিতে ইচ্ছে করছে। এমন আরো অনেক কিছু করার ইচ্ছের কথা জানালো আরিশ।

ছেলের পরিকল্পনা শুনে তাইয়্যেবাহ হাসি মুখে বলল, তোমার টাকা তুমি অবশ্যই নিজের মতো খরচ করতে পারো। আম্মুর এতে কোনই আপত্তি নেই। কিন্তু তোমার নিশ্চয়ই মনেআছে বেশ কয়েকদিন আগে আম্মু তোমাকে বলেছিলাম, কোন কাজ করার সময় আমাদের সম্মুখে যখন অনেকগুলো অপশন খোলা থাকে। তখন আমাদের চেষ্টা করা উচিত সবচেয়ে উত্তম কাজটি করার।

হ্যা, আম্মু আমার মনেআছে তো তোমার কথা। সেজন্যই তো আমি তোমার কাছে এসেছি। তুমি বলে দাও কি করবো আমি।

তুমি কি ভেবে দেখেছো তোমার টাকা দিয়ে সবচেয়ে উত্তম কি কাজ করা যায়?

বুঝতে পারছি না। তুমি বলে দাও।

তোমার মনেআছে আরিশ গতবার যখন আমরা দেশে গিয়েছিলাম তখন আমার এক খালামণির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম তোমাকে? ঐ যে যার দুই ছেলের সাথে তুমি অনেক খেলা করেছিলে।

মনে নেই আবার। উফফ, ওরা আমাকে অনেক বিরক্ত করেছে। বিশেষ করে ছোট ছেলেটা।

তাইয়্যেবাহ হেসে বলল, বিরক্ত করেছে ঠিক। কিন্তু তোমার সাথে খেলাও তো করেছে। তা না হলে তোমাকে তো একাই খেলা করতে হতো। তাই না?

হ্যা তাও ঠিক।

কিছুদিন আগে কি হয়েছে শুনবে?

কি হয়েছে আম্মু?

আমার সেই খালামণির হাজবেন্ড মারা গিয়েছেন। খালামণি এখন খুবই বিপদে আছেন উনার দুই ছেলে নিয়ে। ওদের লালন-পালন, পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদিতে অনেক খরচ। খালামণির এখন এতটা খরচ বহন করার সামর্থ্য নেই। ওদের দুজনের স্কুলে যাওয়াটাই এখন অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরিশের হাস্যেজ্জ্বল চেহারায় ধীরে ধীরে আঁধার ছেয়ে গেলো। মন খারাপ করা কন্ঠে বলল, ওদেরকে সাহায্য করার কেউ নেই? তুমি আর বাবা সাহায্য করছো না কেন?

তাইয়্যেবাহ হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ আমি আর তোমার বাবা মিলে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। তুমি যদি চাও তাহলে তুমিও আমাদের সাথে যোগ দিতে পারো। তুমিও ওদেরকে সাহায্য করতে পারো।

আমি? আমি কিভাবে সাহায্য করবো আম্মু?

তোমার মনে নেই সেদিন আমরা দান-সাদাকাহর উপরে হাদীস পড়েছিলাম?

হ্যা আম্মু আমার মনে আছে তো। রাসূল (সঃ) বলেছেন, ”যে ব্যক্তি কোন অভাব গ্রস্তের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তার দু’নিয়া ও আখিরাতের সকল বিষয় সহজ করে দিবেন।” এরপর থেকে আমাদের স্কুলের পাশে মেট্রো স্টেশনের কাছে গরীব যারাই সাহায্যের জন্য বসে থাকে আমি তাদেরকে দেখতে পেলেই সাহায্য করি। গত সপ্তাহে তুমি যে আমাকে অনেক বেশি করে কুকিস দিয়েছিলে ফ্রেন্ডদের সাথে নিয়ে খাওয়ার জন্য। আমি ফ্রেন্ডদের না দিয়ে ওখানে যে দুজন গরীব মানুষ ছিলেন তাদেরকে দিয়েছি। অনেক খুশি হয়েছিল।

তাইয়্যেবাহ ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বলল, আলহামদুলিল্লাহ।সবসময় এমন চেষ্টা করবে অভাবী মানুষদেরকে সাহায্য করার। জানো রাসূল (সঃ) আরো কি বলেছেন? বলেছেন, “সালাত (আল্লাহর) নৈকট্য দানকারী, সিয়াম ঢাল স্বরূপ এবং দান-ছাদকা গুনাহ মিটিয়ে ফেলে যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে।” রাসূল (সঃ) আরো বলেছেন, “খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা কর।” আর সবচেয়ে আনন্দের কি জানো?

কি আম্মু?

রাসূল (সঃ) বলেছেন, “মিসকিনকে দান করলে তা শুধু একটি দান হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু গরীব নিকটাত্মীয়কে দান করলে তাতে দ্বিগুণ ছওয়াব হয়। একটি সাদাকাহ’র; অন্যটি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার।” মানে হচ্ছে, তুমি যদি কোন গভীর দুঃখীকে দান করো তাহলে তোমার যে সওয়াব হবে, তুমি যদি আত্মীয়দের কাউকে দান করো তার দ্বিগুণ সওয়াব হবে।

একটুক্ষণ চিন্তা করে আরিশ বলল, তারমানে আমি যদি উসমান আর উসামাকে সাহায্য করি তাহলে মেট্রো স্টেশনে যারা থাকেন তাদেরকে সাহায্য করার চেয়ে দ্বিগুণ সওয়াব হবে?

ইনশাআল্লাহ অবশ্যই দ্বিগুণ সওয়াব হবে তোমার।

তাহলে আমি এখন থেকে উসমান আর উসামাকেই সাহায্য করবো। কিন্তু ওদেরকে আমি কিভাবে সাহায্য করবো আম্মু? ওরা তো বাংলাদেশে থাকে।

তুমি যদি সত্যিই ওদেরকে সাহায্য করতে চাও তাহলে এখান থেকেও করতে পারবে।

আমি সত্যিই ওদেরকে সাহায্য করতে চাই আম্মু।

তাহলে তুমি তোমার জমানো টাকা থেকে কিছু টাকা উসমান আর উসামার জন্য পাঠাতে পারো। জানো পঁয়ত্রিশ হাজার টাকায় ওদের দুজনের প্রায় এক বছরের পড়াশোনার খরচ চলে যাবে। তবে তোমাকে সব টাকা দিতে হবে না। তুমি চাইলে যে কোন একজনকে সাহায্য করতে পারো।

না না আম্মু আমি দুজনকে ই সাহায্য করতে চাই। তাহলে আমার অনেক বেশি সওয়াব হবে। কিন্তু ওদেরকে টাকা কিভাবে দেবো?

তাইয়্যেবাহ হেসে বলল, এখান থেকে টাকা পাঠিয়ে দেয়া যাবে বাংলাদেশে। তোমার বাবাকে দিলেই উনি পাঠিয়ে দেবেন।

তাহলে এক্ষুণি আমি বাবাকে আমার জমানো সব টাকা দিয়ে আসছি। বলতে বলতেই উঠে ছুট লাগালো আরিশ। তাইয়্যেবাহও আলহামদুলিল্লাহ বলে রব্বের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে করতে ছেলের পিছু নিলো।

 

ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য রোজার উপহার-২


ডা. মারুফ রায়হান খান


রোজাতে ডায়াবেটিক রোগীর যে সমস্যাটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন চিকিৎসকরা–তা হচ্ছে ‘হাইপোগ্লাইসেমিয়া’ (Hypoglycemia)।সহজ ভাষায় বলতে গেলে রক্তে গ্লুকোজ/সুগারের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৩.৫ মিলিমোল/লিটারের নিচে নেমে গেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হিসেবে ধরা হয়। হাইপোগ্লাইসেমিয়া এতো মারাত্নক হতে পারে যে রোগী কোমায় চলে যেতে পারে, মস্তিষ্কের মারাত্নক ক্ষতি হতে পারে। তাই প্রতিজন ডায়াবেটিস রোগীর এবং তার পরিবার-পরিজনের হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে কী কী লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং করণীয় কী তা জানা অবশ্যই প্রয়োজন।

সচরাচর যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় :

– অতিরিক্ত ঘাম
– হাত-পা কাঁপা
– বুক ধড়ফড় করা
– বেশি ক্ষুধা লাগা
– উদ্বিগ্নতা
– ঝিমাতে থাকা
– কথা জড়িয়ে যাওয়া
– মনোযোগ প্রদানে বিঘ্ন ঘটা
– অল্পতে রেগে যাওয়া
– বমি বমি ভাব
– মাথা ব্যথা/ মাথা ঘোরা ইত্যাদি।

রোগীর হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে সাথে সাথে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। তা যদি ইফতারের ১০ মিনিট আগেও হয়।

৪. শারীয়াহগত দিক থেকে রোজা রেখে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করতে কোনো বাধা নেই। ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা থাকা অবস্থায় নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে সেহরির ঘণ্টা দুয়েক পর এবং ইফতারের ঘণ্টাখানেক আগে গ্লুকোজের মাত্রা দেখা উচিত। এছাড়া অন্যান্য সময়েও পরীক্ষা করা যেতে পারে।

৫. যেকোনো সময় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৩.৩ মিলিমোল/লিটারের নিচে নেমে গেলে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। এছাড়া সেহরি করার প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যদি ৩.৯ মিলিমোল/লিটারের নিচে নেমে যায় তখনও রোজা ভাঙতে হবে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ১৬.৭ মিলিমোল/লিটারের বেশি বেড়ে গেলেও রোজা ত্যাগ করতে হবে।

৬. ক্যালোরি এবং খাবারের গঠনগত দিক থেকে রমাদানের আগে যেমন স্বাস্থ্যকর ও ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খেতেন, রমাদানেও তেমনটাই চলবে। সেহরির সময় অপেক্ষাকৃত জটিল শর্করা যেগুলো হজম ও শোষণ ধীরে ধীরে হয় তেমন খাবার খেতে হবে। সেহরির সময় ভাত, রুটি, নান, সবজি, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ফল ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

ইফতারের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে :

– অনেক বেশি পরিমাণ শর্করা ও চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।

– মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খেতে হবে।

– মিষ্টি পানীয় পরিহার করতে হবে। মিষ্টি শরবতের বদলে আল্লাহর দেওয়া ‘প্রাকৃতিক শরবত’ ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে।

– ইফতার থেকে সেহরির মধ্যবর্তী সময়ে প্রচুর পানি খেতে হবে।

আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। সেহরি যতোটা সম্ভব দেরিতে খেতে হবে আর ইফতার যতোটা সম্ভব তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমাদের ধর্মীয় বিধানও তা-ই শিক্ষা দেয়। হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধে এটি একটি খুবই কার্যকরী উপায়।

৭. রোজাতে প্রাত্যহিক জীবনের স্বাভাবিক কাজগুলো করতে কোনো বাধা নেই। তবে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম হাইপোগ্লাইসেমিয়া করতে পারে। তাই দিনের বেলায় অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম না করাই ভালো। ইফতার এবং সেহরির মধ্যবর্তী সময়ে ঘণ্টাখানেকের জন্যে শরীরচর্চা করা যেতে পারে। তারাবীহ, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি অতিরিক্ত নামাজও শরীরচর্চা হিসেবে বিবেচনায় রাখা উচিত।

৮. সবশেষে আসা যাক ওষুধ/ইনসুলিন কীভাবে নিতে হবে। প্রত্যেকটা রোগীকে চিকিৎসকই ঠিক করে দেবেন এটা। তবে খুব সাধারণভাবে একটু আলোচনা করা যাক।

চলবে…

 

কাঁচা আমের পাতলা ডাল


রেসিপি


গরমে ইফতারির পর রাতের খাবার খেতে বসে এমন একটা আইটেম পেলে নিশ্চিত আপনার মন ভাল হয়ে যাবে। আমের টক এবং হালকা পাতলা ডাল ভাব আপনার খাবারের মজা অনেক গুন বেশী করে দিবেই। গরমে মুখে স্বাদ বাড়িয়ে দেবে কয়েক গুন।

প্রয়োজনীয় উপকরনঃ (উপকরণের অনুমান আপনি নিজেও করে নিতে পারেন)

– হাফ কাপ মুশরী ঢাল।
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ
– হাফ চামচ গুড়া হলুদ
– কয়েকটা পেঁয়াজ কুচি
– সামান্য ধনিয়া পাতা
– লবণ (পরিমাণ মত)
– পানি (কিছু গরম পানি আগে করে রাখলেই ভাল, প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে)
– কিছু রসুন কুচি (বাগার দেয়ার জন্য)
– সামান্য তেল

প্রণালীঃ
কাঁচা আম ফালা করে নেই।
মুশরী ডাল ভাল করে ধুয়ে হলুদ গুড়া, পেঁয়াজ কুচি, পরিমাণ মত লবণ ও কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাল করে জাল দিতে থাকুন। ডাল গলে গলে আসলে গুটনি দিয়ে আরো গলে মিহিন করে ফেলুন। একটা অনুমান করে কাঁচা আম দিতে হবে।

পরিবেশন
আরো কিছু সময় জাল দিতে হবে। থাকলে কিছু ধনিয়া পাতা কুঁচে দিন, খেতে ভাল লাগবে।

 

ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য রোজার উপহার-১


ডা. মারুফ রায়হান খান


আপনার আব্বু-আম্মু বা আত্নীয় কেউ ডায়াবেটিসের রোগী হলে আপনার জন্যে আমার পক্ষ থেকে রমাদানের উপহার এটি।

১. ডায়াবেটিসের রোগীরা কি রোজা রাখতে পারবে? কোন কোন ক্ষেত্রে পারবে না?

২. রোজা রাখলে কী কী উপকার হবে?

৩. কী কী ঝুঁকি থেকে যায়? কী করণীয় তখন?

৪. রোজা থাকা অবস্থায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা মাপা যাবে কি?

৫. কোন অবস্থায় রোজা অবশ্যই ভেঙে ফেলতে হবে?

৬. রোজাতে খাবার-দাবার কেমন হবে?

৭. রোজাতে শরীরচর্চা করা যাবে কীভাবে?

৮. ওষুধ/ইনসুলিন কীভাবে, কখন, কতোটুকু নিতে হবে?

মুসলিমদের জন্যে ইবাদাতের এক ভরা মৌসুম রমাদান। কে না শরীক হতে চায় এই মহিমান্বিত মাসের রহমাতে-বারাকাহতে-মাগফিরাতে-নাজাতে! তবে কিছুটা বিপাকে পড়ে যান ডায়াবেটিসের রোগীরা। অনেকগুলো প্রশ্ন আর সংশয় তাদের মনে উঁকি দিতে থাকে।

এবার চলুন এক এক করে আমরা প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

১. সারা বিশ্ব জুড়ে ৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ রোজা রাখেন। প্রচুর পরিমাণ লিটারেচারে এসেছে যে, অধিকাংশ ডায়াবেটিক রোগীরাই রোজা রাখতে পারেন। তবে এটা নির্দিষ্ট ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে তার রোজা রাখতে পারা বা না পারা। সেজন্যে প্রয়োজন রোজা শুরু হবার বেশ কিছুদিন আগেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে যাচাই-বাছাই (Pre-Ramadan Assessment) করিয়ে নেয়া যে তিনি রোজা রাখতে সক্ষম কিনা, রোজাতে কী কী নিয়মকানুন মেনে চলবেন, ওষুধ/ইনসুলিন কীভাবে নেবেন ইত্যাদি। রোগীর বিগত দিনগুলোতে ডায়াবেটিসের অবস্থা, জটিলতা, অন্যান্য রোগ, রক্তে চর্বির পরিমাণ, রক্তচাপ ইত্যাদি সবকিছু বিবেচনা করে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন রোগীটি রোজা রাখতে পারবে কি পারবে না। তবে খুব সাধারণভাবে বলতে গেলে যেসব ডায়াবেটিস রোগীরা ডায়াবেটিস অনেক কমে গেলেও বুঝতে পারেন না, যাদের ডায়াবেটিস একেবারেই নিয়ন্ত্রণে থাকে না, সম্প্রতি ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস হয়েছে–তাদেরকে রোজা না রাখতে বলা হয়। তাছাড়া যেসব ডায়াবেটিস রোগীদের কোনো অর্গান ফেইলিউর (যেমন : হার্ট ফেইলিউর, কিডনি ফেইলিউর, লিভার ফেইলিউর) আছে তাদেরও রোজা না রাখাই শ্রেয়। এছাড়াও যাদের মারাত্নক চোখের রেটিনায় সমস্যা, স্নায়ুতে সমস্যা, বড় ধরনের রক্তনালীতে সমস্যা, একিউট পেপটিক আলসার, মারাত্নক ধরনের ফুসফুসে যক্ষ্ণা, মারাত্নক ইনফেকশান, মারাত্নক হাঁপানি, বারবার পাথর হওয়া, যেসব ক্যান্সার রোগীদের শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ, সম্প্রতি হার্ট এটাক হয়েছে, লিভারে সমস্যা রয়েছে এবং মারাত্নক মানসিক সমস্যা যাদের রয়েছে–তাদেরও রোজা রাখতে নিরুৎসাহিত করা হয়। গর্ভবতী এবং শিশুকে বুকের দুধ পান করান তারা রোজা রাখবে না।

২. ডায়াবেটিস রোগীদেরও রোজা রাখলে বেশ কিছু উপকার হয়ে থাকে। যেমন :

– রোজা শরীরের বিপাকীয় (Metabolic) কাজের উন্নতি ঘটায়।

– শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে।

– উচ্চ রক্তচাপের নিয়ন্ত্রণ ভালো হয়।

– শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে।

– রোগ প্রতিরোধ-ক্ষমতা শক্তিশালী করে।

– সর্বোপরি রোজাতে নিয়মানুবর্তিতার এক অনন্য চর্চা হয়। আর আমরা সবাই জানি নিয়মানুবর্তিতা ডায়াবেটিসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা।

৩. ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা রাখলে যেসব ঝুঁকি থাকে :

– রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অতিরিক্ত কমে যাওয়া (হাইপোগ্লাইসেমিয়া)।

– রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া (হাইপারগ্লাইসেমিয়া)।

– পানিশূন্যতা।

– ওজনের তারতম্য ঘটা।

চলবে….

 

কটিয়াদীতে চলন্ত বাসে নার্সকে ধর্ষণের পর হত্যা

 


নারী সংবাদ


কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে স্বর্ণলতা যাত্রীবাহী বাসে শাহিনুর আক্তার তানিয়া (২৪) নামে এক নার্সকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষণকারীরা তাকে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের গজারিয়া জামতলী নামক স্থানে।

নিহত শাহিনুর কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শাহিনুর আক্তার তানিয়া ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে চাকরি করেন। সোমবার বিকালে তিনি এয়ারপোর্ট কাউন্টার থেকে টিকেট নিয়ে স্বর্ণলতা পরিবহনে উঠেন। স্বর্ণলতা বাস মহাখালী-থেকে কটিয়াদী হয়ে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত চলাচল করে। পিরিজপুর থেকে তার বাড়ির দূরত্ব মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা।

শাহিনুর বিকালে বাসে উঠার পর থেকে তার বাবা এবং ভাইদের সাথে মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কথা হয়। রাত ৮ টার দিকে তিনি যখন মঠখোলা বাজার অতিক্রম করেন তখন তার বাবার সাথে ফোনে জানান, আধা ঘন্টার মধ্যে বাড়ি পৌঁছতে পারবেন। তার বাবা তখন এশা এবং তারাবির নামাজের জন্য মসজিদে যাচ্ছেন।

সাড়ে আটটার দিকে বাসটি কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলে তখনো তার ভাইয়ের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয়। বলেন, আর মাত্র পাঁচ-সাত মিনিট লাগবে পিরিজপুর পৌঁছতে।

কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে বাসের সমস্ত যাত্রী নেমে যায়। কিন্তু গাড়ির ড্রাইভার এবং হেলপার কৌশলে কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড থেকে তাদের সাথের চার-পাঁচজনকে যাত্রীবেশে গাড়িতে তোলেন। কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড পার হয়ে দুই কিলোমিটার দূরবর্তী ভৈবর-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের গজারিয়া জামতলী নামক নীরব জায়গায় শাহিনুরকে জোরপূর্বক চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণ করে এবং গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে হত্যা করে বলে স্বজনরা ধারণা করছেন।

তার মৃত্যুর পর ধর্ষণকারীরা রাত পৌনে এগারোটার দিকে কটিয়াদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে দুর্ঘটনা কথা বলে লাশ ফেলে রেখে যায়।

হাসপাতাল রেজিস্ট্রার সূত্রে আনয়নকারীর নাম পাওয়া যায় আল আমিন, বাবা ওয়াহিদুজ্জামান, গ্রাম ভেঙ্গারদি, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

এদিকে পাঁচ মিনিটের কথা বলে দীর্ঘ সময়েও তানিয়া পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ডে স্বর্ণলতা বাস না পৌঁছায় তার ভাই মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। গভীর রাতে সংবাদ পায় শাহিনুরের লাশ কটিয়াদী হাসপাতাল থেকে থানায় নিয়ে রাখা হয়েছে।

তানিয়ার ভাই কফিল উদ্দিন সুমন জানায়, শাহিনুরের সাথে একটি এলইডি ১৯ ইঞ্চি টেলিভিশন, একটি স্যামসং এনড্রয়েট মোবাইল ফোন ও বেতনের ১৫-১৬ হাজার টাকা ছিল।

কটিয়াদী থানার ওসি (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ড্রাইভার নূরুজ্জামান (৩৯), হেলপার লালন মিয়াকে (৩৩) আটক করা হয়েছে। শাহিনুরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ব্যাগ, কাপড় চোপড় পাওয়া গেছে। ময়না তদন্তের জন্য লাশ কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।

তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে ওসি বলেন, ময়না তদন্তের রিপোর্টে বিস্তারিত প্রতিবেদন চাওয়া হবে। তবে তার হাত, মুখ ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

 

ইফতারিতে দই-চিড়া-কলা


রেসিপি


উপকরণ

১. মিষ্টি দই ২ কাপ
২. চিড়া ১কাপ
৩. পাকাকলা ২টি (চৌকো করে কাটা)। ৪. লবণ ১ চিমটি
৫.মসলার গুড়া

প্রক্রিয়া

প্রথমে চিড়া ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। তারপর একটি বাটিতে দই, লবণ, এবং সামান্য মসলা দিয়ে ভালোভাবে ফেটে নিবেন।

ফেটানো দইয়ে চিড়া মেখে এক ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে দিন।

পরিবেশন

ঠিক ইফতারির ৬ থেকে ১০ মিনিট আগে কলার সঙ্গে দই-চিড়া চামচ দিয়ে মেশাতে হবে। বরফ টুকরা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

 

আসুন রমজানের হক আদায় করি


আকলিমা ফেরদৌসি আখি


এ মাসের প্রস্তুতির জন্য যা করা যেতে পারে তা হলো-

১)ঈমান ও এহতেসাবের সাথে রোজার নিয়ত করা।

২)ইচ্ছা শক্তি দৃঢ় করে নেওয়া যে,‘ ইনশাল্লাহ রমজান মাসে আল্লাহর ক্ষমা ও নাজাত হাসিল করে নিবোই।’

৩)রমজানের প্রয়োজনীয় মাসলা মাসায়েল জানা ও দোয়া গুলো মুখস্ত করে নেওয়া।

৪)রমজান মাসে কি কি নেক আমল করা যায় তার একটা তালিকা তৈরি করে রাখা। যেমন-

-কোরআন অধ্যায়ন করা(অধ্যায়ন বলতে কোরআনের তাফসীর সহ পড়াকে বুঝায়)তিন/চারটি সূরা ঠিক করে নেওয়া এবং পুরো মাসে এই তিনটি/চারটি সূরা সর্ম্পকে একটি পরিপূর্ণ ধারনা নেবার চেষ্ঠা করা।

-কোরআন তেলওয়াত করা।প্রতি ওয়াক্ত নমিাজের পরে চার পৃষ্ঠা কোরআন তেলওয়াত করলে মাসে একটি খতম দেওয়া যায়।

-কয়েক টি ইসলামী ও হাদিস বই ঠিক করে রাখা এবং সারা মাস ধরে পড়া।

-ওয়াক্তের শুরুতেই নামাজ আদায়ের চেষ্ঠা করা এবং সুন্নত ও নফল নামাজ আদায়ে মনোযোগী হওয়া।

-নিয়মিত সালাতুল দুহা,তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা।

-তাহাজ্জুদ নামাজের আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকু তেলাওয়াত করা।

-দৈনিন্দন জীবনে প্রতিটি কাজে রাসুল(সা:) এর শিখিয়ে দেওয়া দোয়াগুলো পড়া।

-সহীহ করে কোরআন তেলওয়াত শেখার চেষ্ঠা করা।

-প্রতিদিন অন্তত: একজন ব্যক্তিকে ইফতার করানো।

-প্রতিদিন অন্ত:ত একজন ব্যক্তিকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া।ইত্যাদি

৫)নিজের কমপক্ষে দশটি দোষ চিহ্নিত করে তার তালিকা তৈরী করা এবং এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যে রমজানে এ দোষগুলো থেকে নিজেকে বাচিঁয়ে রাখার চেষ্ঠা করাএবং পরির্পূণভাবে দোষগুলি থেকে নিজেকে মুক্ত করা।

৬)পরিবারের সদস্যদের রমজানের হক আদায়ের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত করা।

৭)রমজানের প্রতিটি দিন ঠিক ভাবে কাজে লাগানো জন্য একটি রুটিন করে রাখা।

৮)শেষের দশদিন পরিপূর্ণভাবে হক আদায়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।(প্রয়োজনে ইত্তেকাফের নিয়ত করা যেতে পারে।ঈদের কেনাকাটা আগে থেকেই করে রাখা যাতে শেষের দিনগুলো ফ্রি থাকা যায়।)

৯)যাকাতের হিসাব করে রাখা।

১০)অভাবীদের মধ্যে ঈদের উপহার বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করা।

এবারে আসুন একজন রোজাদার হিসাবে নিজের কাজগুলি গুছিয়ে নিয়ে কিভাবে প্রতিটি সময়কে ইবাদতে পরিণত করে নেওয়া যায় তার একটা নমুনা দেখে নেয়া যাক-

রাতের শেষাংশে

সালাতুল তাহাজ্জুদ-২:৩০-৩:১৫
(তাহাজ্জুদ নামাজের আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে রাসূল সা: সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকু তেলওয়াত করতেন।এই আমলটির অভ্যাস করা যেতে পারে।)
সেহেরী গ্রহন-৩:১৫-৩:৫০মি:
সালাতুল ফজর ও সকালবেলার আযকার পাঠ-
৩:৫০মি:-৪:৩০মি: (হিসনূল মুসলিম অথবা কতিপয় প্রয়োজনীয় দোয়া বই গুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে)
কোরআন তেলওয়াত(চার পৃষ্ঠা)-৪:৩০-৬:০০টা
সালাতুল দুহা বা ইশরাক-৬:০০টা থেকে-৬:১৫মি:
বিশ্রাম ও ঘুম-৬:২০-৮:৩০মি:

সকাল বেলা

ঘুম থেকে উঠা-৮:৩০ থেকে ৯:৩০টা
দৈনিন্দন কাজ শেষ করা-৯:৩০টা থেকে-১১:৩০
(এ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের জন্য সারাদিনের খাবার রেডি করা,ইফতার কি হবে ,রাতের খাবার ও সেহেরী কি হবে তা রেডি করে রাখা।মাছ, সবজি কেটে ধুয়ে রাখা যেতে পারে)
কোরআন অধ্যায়ন,ইসলামী বই পড়া,হাদিস ইত্যাদি-১১:৩০ থেকে-১২:৩০

দুপুর বেলা

বিশ্রাম ও সালাতুল জহুরের প্রস্তুতি সালাত পরবর্তী মুস্তাহাব তাসবীহ ও যিকির পাঠ-১২:৩০- ১:০০
কোরআন তেলওয়াত(চার পৃষ্ঠা)-১:০০-২:০০মি:
সন্তানদের নিয়ে রমজান স্কুল
(প্রতিবেশীর সন্তানদেরও সাথে নেওয়া যেতে পারে)কোরআন পড়ানো,হাদিসের গল্প বলা,ইসলামী বই পড়িয়ে শুনানো,স্কুলের পড়া ইত্যাদি-২:০০-৩:৩০
ইস্তেগফার পাঠ(আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ ১০০বার তওবার অনুভুতি নিয়ে)-৩:৩০-৪:১৫
বিশ্রাম-৪:১৫-৫;০০
কোরআনের সূরা মুখস্ত(এ ক্ষেত্রে আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে কোন সূরা গুলো মুখস্ত করা হবে।)
প্রতিদিন অন্তত: একটি দোয়া মুখস্ত করা (রাসূল সা: যে গুলো দৈনিন্দন জীবনে পড়েছেন)

বিকেল বেলা

সালাতুল আসর,সালাত পরবর্তী মুস্তাহাব তাসবীহ ও যিকির এবং কোরআন পাঠ
রাতের খাবার,ইফতার ও সেহেরীর জন্য প্রস্তুতি এবং রান্না শেষ করে ফেলা-৫:০০-৬:১৫মি:
এ সময় মায়েরা যেহেতু রান্না বা ইফতারের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত থাকেন তাই বাবারা সন্তানদেরকে কিছুটা সময় দিতে পারেন।গল্পের বই পড়ে শুনানো, হাতের লেখা প্রেকটিস করানো,টিভিতি ভালো কোন অনুষ্ঠান দেখানো,আল্লাহর নিরানব্বইটা নাম থেকে প্রতিদিন পাচঁটি করে শিখানো ,সৃজনশীল লিখা ইত্যাদি।

ইফতার ও সন্ধ্যা বেলা

ইফতারের প্রস্তুতি নিয়ে পরিবারের সবাই একসাথে বসা:৬:২০-সময় হওয়ার আগ পযর্ন্ত
এ সময় পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে কেউ অথসহ কোরআন তেলওয়াত করতে পারে। একটি/দুইটি হাদিস পড়ে শোনানো এবং সবশেষে সবাই মিলে বা ব্যক্তিগত ভাবে দোয়ার পরিবেশ তৈরী করা যেতে পারেএবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা যেতে পারে।
ইফতার গ্রহন–৬:২০(ইফতারের সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সময়টা মিলেয়ে নিতে হবে।}
সালাতুল মাগরীব ও সন্ধ্যাকালীন আযকার পাঠ ৭:০০-৭:৩০
(হিসনূল মুসলিম অথবা কতিপয় প্রয়োজনীয় দোয়া বই গুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে)
বিশ্রাম ও প্রয়োজনীয় কাজ ৭:৩০-৮:০০

রাতে

সালাতুল এশা ,তারাবীহ ও কোরআন তেলওয়াত(চার পৃষ্ঠা)-৮:০০-১০:০০
রাতের খাবার-১০:০০-১০:৩০
সূরা মূলক তেলওয়াত ও এক আয়াত মুখস্ত-১০;৩০-১১:০০
ঘুমের প্রস্তুতি ও ঘুম-১১:০০-২:৩০
মহান আল্লাহ আমাদের রোজার যথাযথ হক আদায়ের তৌফিক দিন।আমীন।
(এটি একটি নমুনামাত্র যারা চাকুরিজীবি বা ছোট ছোট কয়েকটি বাচ্চার মা তাদেরজন্য এ রুটিন মেনে চলা কঠিন । তবে তারা যা করতে পারেন তা হলো সময় নয় কাজগুলি গুছিয়ে নিন তারপর সুযোগ মত কাজটি শেষ করুন আর লিস্টে টিক দিয়ে দিন )

আল্লাহ আমাদের রমজানের হক যথাযথভাবে আদায় করার তৌফিক দিন। আমীন।

 

রমজান মাসের ফজিলত – শেষ পর্ব


বিশেষ সংখ্যা মাহে রমজান


সাত. রমজান জাহান্নাম থেকে মুক্তির লাভের মাস,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : রমজান মাসের প্রথম রজনির যখন আগমন ঘটে তখন শয়তান ও অসৎ জিনগুলোকে বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, এ মাসে আর তা খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এ মাসে তা আর বন্ধ করা হয় না। প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে ঘোষণা দিতে থাকে যে, হে সৎকর্মের অনুসন্ধানকারী তুমি অগ্রসর হও ! হে অসৎ কাজের অনুসন্ধানকারী তুমি থেমে যাও ! এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।  [ তিরমিজি ]

আট. রমজান মাসে সৎকর্মের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। যেমন হাদিসে এসেছে যে, রমজান মাসে ওমরাহ করলে একটি হজের সওয়াব পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, বরং, রমজান মাসে ওমরাহ করা আল্লাহর রাসূলের সাথে হজ আদায়ের মর্যাদা রাখে। এমনিভাবে সকল ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল সৎকাজের প্রতিদান কয়েক গুণ বেশি দেয়া হয়।

নয়. রমজান ধৈর্য ও সবরের মাস। এ মাসে ঈমানদার ব্যক্তিগণ খাওয়া-দাওয়া, বিবাহ-শাদি ও অন্যান্য সকল আচার-আচরণে যে ধৈর্য ও সবরের এত অধিক অনুশীলন করেন তা অন্য কোন মাসে বা অন্য কোন পর্বে করেন না। এমনিভাবে সিয়াম পালন করে যে ধৈর্যের প্রমাণ দেয়া হয় তা অন্য কোন ইবাদতে পাওয়া যায় না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন : ধৈর্যশীলদের তো বিনা হিসাবে পুরস্কার দেয়া হবে। [সূরা যুমার : ১০]

সুত্র: কুরআনের আলো ডট কম।

 

রমজান মাসের ফজিলত – ৩


বিশেষ প্রতিবেদন


চার. রমজান মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তাআলা  বলেন : লাইলাতুল কদর সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সে রজনি উষার আবির্ভাব পর্যন্ত। [সূরা আল-কদর : ৩-৫]

পাঁচ. রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়। [ মুসনাদ আহমদ ]

অন্য হাদিসে এসেছে : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রতি রাত ও দিবসে মুসলিমের দোয়া-প্রার্থনা কবুল করা হয়। [ সহি আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ]

তাই প্রত্যেক মুসলমান এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের কল্যাণের জন্য যেমন দোয়া-প্রার্থনা করবে, তেমনি সকল মুসলিমের কল্যাণ, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জ্ঞাপন করবে।

ছয়. রমজান পাপ থেকে ক্ষমা লাভের মাস। যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপসমূহ ক্ষমা করানো থেকে বঞ্চিত হলো আল্লাহর রাসূল তাকে ধিক্কার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন : ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করা হয়নি। [ তিরমিজি ]

সত্যিই সে প্রকৃত পক্ষে সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত যে এ মাসেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল।

সুত্র: কুরআনের আলো ডট কম।

 

রমজান মাসের ফজিলত – ২


বিশেষ প্রতিবেদন


দুই. রমজান হল কোরআন নাজিলের মাস। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : রমজান মাস, এতে নাজিল হয়েছে আল-কোরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী।

 [ সূরা বাকারা : ১৮৪ ]

রমজান মাসে সপ্তম আকাশের লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে বায়তুল ইজ্জতে পবিত্র আল-কোরআন একবারে নাজিল হয়েছে। সেখান হতে আবার রমজান মাসে অল্প অল্প করে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি নাজিল হতে শুরু করে। কোরআন নাজিলের দুটি স্তরই রমজান মাসকে ধন্য করেছে। শুধু আল-কোরআনই নয় বরং ইবরাহিম আ.-এর সহিফা, তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল সহ সকল ঐশী গ্রন্থ এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে বলে তাবরানী বর্ণিত একটি সহি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। (সহি আল-জামে)

এ মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাজিল হয়েছে তেমনি আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছে সিয়াম। তাই এ দুই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বেশি বেশি করে কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত। প্রতি বছর রমজান মাসে জিবরাইল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ও তাকে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন। আর জীবনের শেষ রমজানে আল্লাহর রাসূল দু বার পূর্ণ কোরআন তিলাওয়াত করেছেন। সহি মুসলিমের হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত।

তিন. রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় শয়তানদের। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যখন রমজান মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে-শয়তানের শিকল পড়ানো হয়। [ মুসলিম ]

তাই শয়তান রমজানের পূর্বে যে সকল স্থানে অবাধে বিচরণ করত রমজান মাস আসার ফলে সে সকল স্থানে যেতে পারে না। শয়তানের তৎপরতা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে দেখা যায় ব্যাপকভাবে মানুষ তওবা, ধর্মপরায়ণতা, ও সৎকর্মের দিকে অগ্রসর হয় ও পাপাচার থেকে দূরে থাকে। তারপরও কিছু মানুষ অসৎ ও অন্যায় কাজ-কর্মে তৎপর থাকে। কারণ, শয়তানের কু-প্রভাবে তারা অনেক বেশি প্রভাবিত হয়ে পড়েছে।

সুত্র: কুরআনের আলো ডট কম।

 

রমজান মাসের ফজিলত – ১


বিশেষ প্রতিবেদন


রমজান মাসের আগমনে মুসলিমগণ আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন। আনন্দ প্রকাশ করাই স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : বল, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়ায়। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক। তারা যা সঞ্চয় করে এটা তার চেয়ে উত্তম। [সূরা ইউনুস : ৫৮]

পার্থিব কোন সম্পদের সাথে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না, তা হবে এক ধরনের অবাস্তব কল্পনা। যখন রমজানের আগমন হত তখন রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিশয় আনন্দিত হতেন, তার সাহাবাদের বলতেন : তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে।  এরপর তিনি এ মাসের কিছু ফজিলত বর্ণনা করে বলতেন : আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা হয়। এ মাসে রয়েছে একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল। [ বর্ণনায় : নাসায়ী ]রমজান মাসের ফজিলত – ১

রমজান মাসের আগমনে মুসলিমগণ আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন। আনন্দ প্রকাশ করাই স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : বল, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়ায়। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক। তারা যা সঞ্চয় করে এটা তার চেয়ে উত্তম। [সূরা ইউনুস : ৫৮]

পার্থিব কোন সম্পদের সাথে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না, তা হবে এক ধরনের অবাস্তব কল্পনা। যখন রমজানের আগমন হত তখন রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিশয় আনন্দিত হতেন, তার সাহাবাদের বলতেন : তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে।  এরপর তিনি এ মাসের কিছু ফজিলত বর্ণনা করে বলতেন : আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা হয়। এ মাসে রয়েছে একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল। [ বর্ণনায় : নাসায়ী ]

আমাদের কর্তব্য : আল্লাহর এ অনুগ্রহের মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করা, এ মাসের ফজিলত ও তাৎপর্য অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া ও ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত থাকা।

এ মাসের যে সকল ফজিলত রয়েছে তা হল :

এক. এ মাসের সাথে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকনের সম্পর্ক রয়েছে ; আর তা হলে সিয়াম পালন।
হজ যেমন জিলহজ মাসের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে সে মাসের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে এমনি সিয়াম রমজান মাসে হওয়ার কারণে এ মাসের মর্যাদা বেড়ে গেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : হে মোমিনগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর-যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। [সূরা বাকারা : ১৮৩]

রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ইসলাম যে পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত তার একটি হল সিয়াম পালন। এ সিয়াম জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম ; যেমন হাদিসে এসেছে : যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনল, সালাত কায়েম করল, জাকাত আদায় করল, সিয়াম পালন করল রমজান মাসে, আল্লাহ তাআলার কর্তব্য হল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো। [ বোখারি ]

সুত্র: কুরআনের আলো ডট কম।

 

গণপরিবহনকে নারীবান্ধব করলে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ আরো বাড়বে


নারী সংবাদ


বাসা থেকে বেরিয়েছেন আটটা দশ মিনিটে। সোয়া আটটায় এসে পৌঁছেছেন কমলাপুর বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে। আর এখন বাজে পৌনে নয়টা। এতক্ষণ পর্যন্ত প্রায় ২৫ টির মত তার রুটের গাড়ি চলে গেলেও উঠা সম্ভব হয়নি মনিকার। যাবেন কাওরান বাজার। আর বেশি দেরী হলে তখন অফিসে যাওয়া-না যাওয়া সমান। কারণ আধঘন্টা লেইট হলে অফিসের রেজিস্ট্রি খাতায় নামের পাশে লাল কালি পড়ে যাবে। উপায় না দেখে এখন সিএনজি চালিত অটো রিকশার (সিএনজি নামে পরিচিত বাহন) দিকে এগোয় মনিকা। অন্যসময়ে সে সিএনজির দিকে ভুলেও যায়না। কারণ এই সময় সিএনজির ভাড়া আকাশ ছোঁয়া। আর সেই ভাড়া দেওয়ার মত অবস্থা মনিকার নেই। আর তাই এমন সময় সিএনজিই একমাত্র ভরসা। এতে বেশ কিছু টাকা গেলেও উপায় নেই।
মনিকা বলেন, এটা প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। এভাবে রিকশা ভাড়া দিয়ে যেতে গেলে বেতনের একটা মোটা অংকই গাড়ী ভাড়ার পেছনে ব্যয় করে ফেলতে হয়। আর সকাল বেলা এমন অবস্থা হয় যে আমার অন্য কোন উপায় থাকে না। আর এসময় অফিসগামী মানুষের পাশাপাশি থাকে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়ে আর তাদের অভিভাবকরা। আবার কোন কোন দিন গাড়ীতে উঠতে পারলেও সেখানে পড়তে হয় ঝামেলায়। সিটতো পাওয়াই যায় না। আবার অনেকসময় পুরুষ বসে থাকে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে। তাদের উঠতে বললে কেউ কেউ উঠে গেলেও প্রায়ই সময়ই ঝগড়া করতে হয়। আবার অনেকে বাজে মন্তব্যও করে।
সায়মা ইসলাম নামের স্কুলগামী এক ছাত্রীর মা জানান, প্রতিদিনই যুদ্ধ করে বাসে উঠতে হয়। আর আমাদের সেই সামর্থ্য নাই যে প্রতিদিন সিএনজি রিকশা বা স্কুলের গাড়ী ব্যবহার করব। তাই এই পাবলিক বাসই আমাদের ভরসা। মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আমি চলে যাই অফিসে।
উপরের ঘটনা দুটি শুধু এই দুই নারীর ক্ষেত্রেই নয়, গণপরিবহন ব্যবহারকারী নারীদের নিত্যসঙ্গী এই বিড়ম্বনা। অনেক নারী যাত্রীর অভিযোগ বাসে উঠার সময় যেমন বিড়ম্বনার শিকার হন তেমনি বাসের ভেতরে যাত্রীদের দ্বারাও অনেক সময় হয়রানির শিকার হন তারা। আবার নারী আসনে পুরুষ বসে থাকলে তাদের উঠাতে গিয়েও নানা ধরণের বাজে মন্তব্যের শিকার হতে হয় তাদের।
তবে এবার এই চিত্র পাল্টানোর আশা করছেন নারীরা। কারণ এখন থেকে তাদের নির্ধারিত আসনের আইনী সুরক্ষা পাবেন তারা। নারী আসনে পুরুষ বসলে বা বসতে দিলে জেল জরিমানার আইনে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৭ এর খসড়ায় বলা হয়েছে, কেউ যদি বাসে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত আসনে বসেন বা বসতে দেয়া হয় তবে তাকে এক মাসের জেল অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে।
নতুন এই আইনকে স্বাগত জানিয়েছেন নারীর অধিকার আদায়ে কাজ করার বিভিন্ন সংস্থা, মানবাধিকারকর্মী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। মানবিধকারকর্মী এডভোকেট মনোয়ারা হক বলেন, এই আইনের বিষয়ে প্রচারণা, মানুষকে সচেতন করা এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কিছু অভিযান চালিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া গেলে গণপরিবহণ আরও নারীবান্ধব হবে।প্রচলিত অনেক আইন রয়েছে যা নারীর সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট। গণপরিবহণে হেল্প লাইনগুলোর নাম্বার টানিয়ে দেয়া উচিত। আর নারীদেরও প্রতিবাদ করতে হবে, কারণ জরিপে আমরা দেখেছি হয়রানির ঘটনায় অর্ধেক নারীই কোন প্রতিবাদ করেন না।
একশনএইড’র এক গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকা শহরে গণপরিবহণে যাতায়াত করেন মাত্র ২১ শতাংশ নারী। আবার এসব নারীর অধিকাংশই (৪৭ শতাংশ) চলাচল করেন সিএনজি রিকশায়, আর ১৯ শতাংশ নারীর হেঁটে যাতায়ত করেন। কারণ হিসেবে গবেষণায় বলা হয়েছে গণপরিবহণে হয়রানির ভয়ে নারীরা এই বিকল্প পরিবহণ ব্যবহার করছেন। সিএনজি অটোরিক্সায় যাতায়াত করছেন সাত শতাংশ নারী। কাজেই গণপরিবহণকে আমরা নারীবান্ধব করতে পারলে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ আরো বাড়বে।
এছাড়াও বর্তমানে অ্যাপস ভিত্তিক যাতায়াত সেবা চালু হওয়ায় নারীরা কিছুটা স্বত্ত্বি পেয়েছেন বলে মনে করেন এই নারী মানবাধিকার কর্মী। তিনি বলেন, এখন অনেক নারীই এসব অ্যাপস ব্যবহার করে যাতায়াত করছেন, যা সত্যিই আশাব্যাঞ্জক। তবে এসব সেবার মান আরো বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কতৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত তারা দেড় লাখ চালককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যেখানে যাত্রীদের প্রতি বিশেষ করে নারীদের প্রতি আচরণের বিষয়টিও তাদের প্রশিক্ষণে আলোচনা করা হয়। (বাসস)

 

শিশু ধর্ষণ : কিছু ভয়ঙ্কর তথ্য


নারী সংবাদ


চলতি বছরে প্রথম চার মাসে (২৯ এপ্রিল পর্যন্ত) ২৯০টি শিশু ধর্ষিত হয়েছে। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে যথাক্রমে ৫২, ৬০, ৫২টি করে মোট ১৬৪টি শিশু ধর্ষিত হয়েছে। আর শুধু এপ্রিল মাসেই ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১৫টি শিশু। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ৭০টির বেশি শশু ধর্ষিত হয়েছে, যা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বিএসএএফের তথ্য অনুযায়ী গত ৪ মাসে সর্বনিম্ন আড়াই বছর বয়সের শিশুও ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের (বিএসএএফ) এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ১৫টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত শিশু অধিকার লঙ্ঘনের সংবাদ পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

বিএসএএফের তথ্যে আরো বলা হয়েছে, গত বছরের চেয়ে এ বছর (প্রথম চার মাসে) শিশু ধর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪%। উল্লেখ্য, সব ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশ পায় না। তাই প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে বলে বিএসএএফ মনে করে।

গত বেশ কিছুদিন ধরে গণমাধ্যমে শিশু ধর্ষণের নানা মর্মান্তিক চিত্র উঠে আসছে। ধারাবাহিকভাবে এসব ঘটনা ঘটতে থাকায় এবং এসব ঘটনার নৃশংসতায় নাগরিক হিসেবে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এসব ঘটনা আমাদের সমাজে শিশুদের অসহায় অবস্থার সার্বিক চিত্রটাই তুলে ধরছে।

বিএসএএফের মতে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধির কারণ মূলত, অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া, দুর্বল চার্জশিট, শিশুর পক্ষে সাক্ষী-সাবুদ না পাওয়া, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে দরিদ্র অভিভাবকের আসামির সাথে আপস করতে বাধ্য হওয়া এবং সর্বোপরি সামাজিক মূল্যবোধের ব্যাপক অবক্ষয় ইত্যাদি। এসব প্রতিহত করতে আরো ত্বরিত হস্তক্ষেপ এবং জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ ও দফতরগুলোকে অনুরোধ জানানো হয় বিএসএএফের পক্ষ থেকে। তারা বলেন, শিশু যৌন নির্যাতন বন্ধে দ্রুত বিচারের আওতায় শিশু নির্যাতনের মামলাগুলো নিতে হবে। প্রচলিত আইন সংশোধন করে শিশু ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়ে সেই সাথে রায় দ্রুতগতিতে কার্যকর করতে হবে। প্রয়োজনে আইনের সংশোধন করতে হবে। বিষয়টি এখন আর কোনোভাবেই উপেক্ষা করার পর্যায়ে নেই। শিশু ধর্ষণের অপরাধ জামিন অযোগ্য করা খুবই জরুরি।

তারা আশা প্রকাশ করে বলেন, সরকার অতি দ্রুত এসব ঘটনার প্রকৃতি ও পুনরাবৃত্তিকে বিবেচনায় রেখে বিদ্যমান সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলোকে পর্যালোচনা করবে এবং প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সব এজেন্সিগুলোকে সে অনুযায়ী নির্দেশনা দেবে। প্রতিটি শিশু যেন নিরাপদে তার শৈশব কাটাতে পারে, সে পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রশাসন ও সর্বস্তরের জনসাধারণের সচেতন ও অধিকতর দায়িত্বশীল আচরণ এখন সময়ের দাবি। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত

 

শিশুর যত্নে প্যারেন্টিং


প্যারেন্টিং


বাসায় বাবা বা মা কেউ যদি কাঁচের জিনিস ভেঙ্গে ফেলে রাগ প্রকাশ করেন। তাহলে তা বাচ্চাও শিখে ফেলে। সুতরাং বাবা মা যা করে তা বাচ্চারাও শেখে। তাই প্রতিটি কাজই সতর্কতার সাথে বাচ্চাদের সামনে করতে হবে। আসুন দেখি কিছু কৌশল:

কথা বলবে কম

মন দিয়ে সত্যিকার অর্থ্যেই সন্তানকে বুঝতে চান। কথা শুনুন। আপনি সৎভাবেই তাকে বুঝতে চেষ্টা করুন। এমনকি নিজেকে আপনার সঙ্গে মেলে নাও নেয়, তবুই আপনি মহমর্মিতা দিয়ে শুনবেন। আপনি তার হৃদয়কে বুঝতে পারবেন, আপনি তার ক্ষতটা বুঝতে পারবেন।

ভুল করলে মাফ করা

বাচ্চারা যখন ভুল করলে মাফ করে দেওয়া। ভবিষ্যৎ এটা নিয়ে খোটা না দেওয়া। আমরা মূল্যায়ন করি (ইভালুয়েশন)। আমরা কারও কথা শুনে তার সঙ্গে একমত হই, নয়তো দ্বিমত পোষণ করি। একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।

তৈরি করতে হবে ভালবাসাময় শান্তি পূর্ণ পরিবেশ

ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে কোনো বিষয়ে কথা বলতে গেলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আছে কিনা খেয়াল করুণ, সেই ছেলে বা মেয়েটি কি আপনার সঙ্গে খোলামনে নিজেকে প্রকাশ করতে পারছে? সে মুখ দিয়ে যা বলছে তার উপর ভিত্তি করেই আপনি তাকে মূল্যায়ন করছেন, নাকি ভালোবেসে বুঝার চেষ্টা করছেন।

শর্তহীন ভাবে ভালবাসো

“ভালোবাসা’ অভ্যাসটি খুবই কার্যকরী এবং ক্ষমতাশালী। আপনার সন্তান মানুষের সঙ্গে সমস্যায় পড়লে একা সমাধান করা শিখুক, মতের অমিল হলে নিজের মত প্রকাশ করুক, সকল প্রকার সমস্যা মোকাবেলা করা শিখুক, এমন অসংখ্য বিষয় আছে যেগুলো আপনার সন্তান দক্ষতার সঙ্গে সমাধান করতে পারবে। তাহলে শর্তহীন ভালোবাসুন।

সাহায্য  করতে উৎসাহ দিন

বাসায় ছোটখাটো কাজে সাহায্য করা একত্রে। প্রত্যেক বাচ্চার কোন না কোন দক্ষতা আছে তা কাজে লাগিয়ে ঘরের কাজ করতে দিন। প্রশংসা করুন ঘরের কাজে সহযোগিতা করলে। ভালোভাবে কাজটা বুঝিয়ে।

 

টিপস দাম্পত্য কাউন্সেলিং

 


দাম্পত্য


দাম্পত্য জীবনে সুন্দর সম্পর্ক নিজে থেকেই তৈরি হয় না, সেটি তৈরি করতে হয়। তাই আপনাকেও সেটি তৈরি করতে হবে। কর্মক্ষেত্রেই যদি আপনার সবটুকু কর্মক্ষমতা নিঃশেষ করে ফেলেন, তাহলে আপনার দাম্পত্য জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ক্ষমা করুন
সুন্দর বৈবাহিক সম্পর্কের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা প্রয়োজন। এমনটি করতে পারলে, আপনি আপনার ত্যাগের চেয়ে ভোগই বেশি করতে পারবেন। ক্ষমা কোন সাময়িক গুণ নয়; বরং ক্ষমা একটি চলমান প্রক্রিয়ার নাম।

কঠিন সময়ে পাশে থাকুন

দাম্পত্য জীবনের কঠিন সময়গুলো আপনাকে একজন ভালো মানুষ করে তুলবে। বিয়ে অনেকটা রকেট উৎক্ষেপণের মতো। যখন তাতে মাধ্যাকর্ষণ টান পূর্ণ থাকে, তখন ফ্লাইট চলতে খুব সামান্য জ্বালানীর প্রয়োজন হয়।

কৃতজ্ঞতা বোধ প্রকাশ করুন

দাম্পত্য জীবনে সাফল্য পেতে হলে, অতীতে কী হয়েছে তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে, ভবিষ্যতের করণীয় নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কৃতজ্ঞতা বোধকে নিজের ভেতর চেপে রাখবেন না।

সঙ্গীকে প্রশ্ন করুন

বাস্তবতার খাতিরে মাঝে মাঝে নীরবতা পালন করা একটি অসাধারন উপায়। আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর কাছে আপনার সর্বোত্তম প্রশ্নগুলোর একটি হতে পারে, “আমি কীভাবে তোমাকে আরও বেশি ভালোবাসতে পারি?”

যৌক্তিক অনুমান

যৌক্তিক অনুমানের ভিত্তিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। তবে পদক্ষেপ নেওয়ার পূর্বে অনুমানকে যাচাই করা। মনে রাখবেন অহেতুক অনুমান করা থেকে বিরত থাকুন তাহলে দাম্পত্য জীবনকে চিরসবুজ করে রাখা যায়।

সুত্র: ছবি ও তথ্য ইন্টারনেট। অনুবাদ অংশ।

 

মাতৃগর্ভে যমজ শিশুর মারামারি!


অন্যান্য


দুই ছোট্ট সদস্য, দেখতে অবিকল এক, বাড়িতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে৷ কে না চায় বলুন তো? যমজ সন্তান পছন্দ করেন না এমন মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম৷ বড় হলেও দু’জনের মধ্যে কখনো ঝগড়া আবার কখনো ভাব৷ এই দেখতে দেখতে বেশ সময় কেটে যায়৷ ভাইবোনেদের খুনসুটি ছাড়া আর কি-ই বা আছে? এত কাণ্ড তো নয় ঘটবে পৃথিবীতে আসার পর৷ কিন্তু জন্ম নেয়ার আগে অর্থাৎ গর্ভস্থ অবস্থায় ঝগড়াঝাটি কিংবা মারামারি করছে তারা, এটা শুনেছেন কখনো? শোনেননি তো৷ না শুনলেও, এটাই সত্যি৷ কারণ আলট্রাসাউন্ড রিপোর্টেই ধরা পড়েছে সেই দৃশ্য৷ পরিষ্কার দেখা গেছে যমজ দুই সন্তান পেটের ভিতরে বক্সিং করছে৷ ওই ভিডিওটি নেটদুনিয়ায় ভাইরাল৷ তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা৷ অবাক হয়ে মা-দাদিরা একটাই প্রশ্ন করছেন, এ-ও সম্ভব?

বছর আঠাশের মিস্টার তাও বর্তমানে দুই মেয়ে চেরি ও স্ট্রবেরির বাবা৷ সদ্যই তার স্ত্রীর চার মাসের সন্তানসম্ভবা অবস্থার অবাক করা এক কাহিনী নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়৷ চীনের ইয়ানচুয়ান প্রদেশের একটি হাসপাতালে তার স্ত্রীর আলট্রাসাউন্ড হচ্ছিল৷ অধীর আগ্রহে স্ক্রিনের দিকে চোখ রেখেছিলেন হবু মা-বাবা৷ বাচ্চাদের অবস্থা জানতে নজর রেখেছিলেন চিকিৎসকও৷ আর সেই সময়ে অবাক করা মুহূর্তের সাক্ষী রইলেন সবাই৷ ভিডিওতে তারা দেখলেন পেটের ভিতরে বক্সিং করছে দু’জনে৷ একজন থামছে তো আরেকজন শুরু করছে৷ কেউই হার মানার পাত্রী নয়৷ ফুটফুটে কন্যাসন্তানদের জন্মের পরই এই ভিডিও সোশ্যাল সাইটে আপলোড করেন ওই চিকিৎসক৷ তারপর যদিও তা ভাইরাল হতে বেশি সময় নেয়নি৷ চীনা একটি দৈনিকেও প্রকাশিত হয়েছে এমন আশ্চর্য ঘটনার কথা৷

এই ভিডিও যে-ই দেখছেন সেই অবাক হয়েছেন৷ অনেকেই বলছেন, জন্মের আগে এমন বক্সিং করলেও, দুই বোনের নাকি দারুণ ভাবও হবে৷ আবার নেটিজেনদের একাংশ তো গর্ভস্থ ওই দুই সন্তানের মধ্যে কে বড় আর কে ছোট, তাও ওই আলট্রাসাউন্ড রিপোর্ট দেখেই নির্ধারণ করতে শুরু করেছেন৷ তাদের দাবি, যে বক্সিংয়ে জিতে গিয়েছে সেই বড়৷ চেরি-স্ট্রবেরিকে নিয়ে বেজায় খুশি তাদের বাবা-মা৷

তাও দম্পতির দাবি, বক্সিং করতে যেমন দেখা গেছে৷ তেমনই আবার জানুয়ারির আলট্রাসাউন্ড রিপোর্টে দু’জনকে জড়িয়ে থাকার ছবিও দেখেছেন বাবা-মা৷ জন্মানোর পর যদিও চেরি-স্ট্রবেরির বেজায় ভাব৷ কান্না, খিদে, ঘুম-সবই নাকি এখন একসঙ্গে করতেই বেশি ভালোবাসে দুই খুদে৷ সুত্র: নয়া দিগন্ত। ছবিসুত্র: চেরি ও স্ট্রবেরি – সংগৃহীত।

 

রাস্তার ধারের মজাদার কাঁচা আম ভর্তা


ঘরকন্যা


বাজারে এখন কাঁচা আম প্রচুর দেখা যায়। আর কাঁচা আমের ভর্তা এখন রাস্তায় পাওয়া যায়! ঘরেরও মজাদার কাঁচা আমের ভর্তা বানানো যায়।
আসুন দেখি কিভাবে?

উপকরণঃ
কাঁচা আম ৩ টি,
লেবুর চাল ২টি
কাসুন্দি বাটা ২ টেবিল চামচ,
শুকনা মরিচ গুড়া ১/২ টি,
কাঁচা মরিচ ১/৩ টি,
লবণ পরিমাণ মত,
বিট লবণ পরিমাণ মত,
চিনি পরিমাণ মত,
সরিষার তেল ১ টেবিল চামচ,

কাঁচা আম ভর্তা বানানোর প্রনালীঃ
আমগুলো খোসা ফেলে ধুয়ে নিন। এবার আম গুলোকে পাতলা স্লাইস করে কেটে
কাসুন্দি দিয়ে রাখুন। পরে লবন দিয়ে কচলে ধুয়ে ফেলতে হবে বা ৫/১০ মিনিট লবন মেখে রেখে দিতে পারেন মজা লাগবে। আমগুলো র পানি চেপে ফেলে সব উপকরণ লবণ, গুড়া মরিচ, কাঁচা মরিচ এবং সরিষা বাটা, এবং চিনি দিয়ে মাখি। টক, ঝাল, মিষ্টি কাঁচা আম ভর্তা।

 

পুরনো ডায়রী


কানিজ ফাতিমা


সকালে হিথ্রো থেকে সরাসরি স্টার্টফোর্ড এ এলাম। পিকাডিলীতে সেন্ট্রাল লাইন ধরে স্টার্টফোর্ডএ পৌছুলাম। দুপুরে রেস্ট নিয়ে বিকালের শেষে বের হলাম এক ভাইয়ের বাসার উদ্দেশ্য, অলগেট ইস্টে।

ক’বছর আগে দেখা লন্ডন যেন একইরকম আছে; ঢাকার মত দ্রুত চেহারা বদলে যায়নি। ২৫ নম্বর বাস ধরে যেতে হবে অলগেটে। পিট পিট বৃষ্টি হচ্ছে , সাথে লন্ডনের বিখ্যাত বা কুখ্যাত বাতাস ঠান্ডাকে আরো কয়েকগুনে কষ্টকর করে তুলেছে। বাস স্টপেজে দাড়িয়ে আছি- আমার সালোয়ার কামিজের উপর গলা তোলা ফুলহাতা সোয়েটার, তার ওপর জিন্সের ওভার কোট, মাথা স্কার্ফে ভালো করে মোড়ানো – তারপরও মনে হচ্ছে ঠান্ডা বাতাস নাক দিয়ে ঢুকে রক্ত হিম করে দিচ্ছে। টেম্পারেচর কত হবে? জানিনা। তবে আরামদায়ক নয় নিশ্চিত। সামনে থেকে একটা মেয়ে যাচ্ছে – পরনে ফুল হাতা টপস, শর্ট স্কার্ট আর দু’পায়ে কালো ফিনফিনে মুজা। প্রায় পুরো পা দু’টোই মোজার ভেতরেও দেখা যাচ্ছে।

এত ঠান্ডায় এত পাতলা মোজা ? আমি উত্সুক হলাম। তবে কি আমার সহ্য শক্তি কম? বোঝার জন্য দাড়িয়ে দাড়িয়ে অন্য সবার পোশাকও লক্ষ্য করাতে শুরু করলাম। এক জোড়া তরুণ তরুনী আসছে। ছেলেটা জ্যাকেট, জিন্সের প্যান্ট ,পায়ে কেডস আর মাথায় হ্যাট পরেছে। মনে হলো তার পোশাকের পুরুত্ব আর আমার পোশাকের পুরুত্ব কাছাকাছি , পরিধিও প্রায় সমান। পাশের মেয়েটি স্লীভ লেস (হাত হীন) আটসাট একটা মাত্র গেঞ্জি পরেছে যা শুরু হয়েছে বুকের মাঝামাঝি থেকে – অর্থাত গলা , কাধ আর অর্ধেক বুক উন্মুক্ত- শীতে আমার শরীরে কাপুনী লাগলো যেন।

বাস এসে গেছে- বাসে উঠে আবারও পর্যবেক্ষণ শুরু করলাম। একটা কালো মেয়ে আমার সামনে – উপরের পাতলা জামাটা নাভীর দুই ইঞ্চি উপরে শেষ হয়েছে আর জিন্সের প্যান্টটা শুরু হয়েছে কোমরের দুই ইঞ্চি নীচে। উত্সুক দৃষ্টি আরো প্রশস্ত করলাম – মাথা ঘুরিয়ে আমার শেষ বিকেলের সব সহযাত্রীকে দেখার চেষ্টা করছি। প্রায় প্রতিটা মেয়েরই পোশাকের অবস্থা একই রকম- হয় পা জোড়া খোলা নয়তো কাধ আর বুকের উপরের অংশ।অন্যদিকে প্রায় প্রতিটা ছেলেই টিশার্টএর উপরে জ্যাকেট পরেছে, নীচে ফুলপ্যান্ট আর কেডস বা জুতা। এই আবহাওয়াকে আমি যেভাবে নিয়েছি লন্ডনের তরুণ ছেলেরাও সেভাবে নিয়েছে। কিন্তু মেয়েরা নিজের প্রায় অর্ধেক শরীর উন্মুক্ত রেখেছে আর ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে।

আমি আর ছেলেরা আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পড়েছি – নিজেদের সুবিধা আর আরাম খুঁজে নিয়েছি। মেয়েগুলো কেন কষ্ট করছে? মেয়ে গুলো কি ফ্যাশনের কাছে অসহায় ? ঠান্ডায় নিজের শরীর-মন যা চাইছে সেটুকু করার স্বাধীনতা থেকেও বঞ্চিত?

কে স্বাধীন? আমি নাকি ওই মেয়েরা – যারা বাধ্য হচ্ছে এই ঠান্ডার মধ্যেও পরুষের আগ্রহ ধরে রাখার জন্য নিজেদের শরীর খোলা রাখছে? ওদের পরাধীনতা কার কাছে, কিসের কাছে?

 

অন্তরে জাগাই জ্ঞানো পিপাসা……২


আফরোজা হাসান


রাহমা বলল, আর তোর রেজাল্ট আমাকে খুব বেশি বিমর্ষ করে। প্রতিবার এভাবে টেনেটুনে কোন মতে পাশ করলে হবে? কেন তুই মন দিয়ে একটু পড়াশোনা করিস না বল তো? আমাদের পুরো ফ্যামেলিতে তোর মত এত্তো খারাপ রেজাল্ট আর কেউ করেনি কোনদিন।

সাহিলের হাস্যেজ্জল চেহারাটি সাথে সাথে আঁধারে ঢেকে গেলো। ভাইয়ের চেহারার এই পরিবর্তন রাহমা চোখ এড়িয়ে গেলো না। সাহিল ঘুরে চলে যাচ্ছিলো রাহমা টেনে ধরে বলল, সরি ভাইয়া আমি তোকে কষ্ট দেবার জন্য এমন বলিনি।

সাহিল অভিমানী কন্ঠে বলল, আমার আসলে এই পরিবারে জন্মগ্রহণ করাটাই ঠিক হয়নি।

ছিঃ সাহিল এটা কি ধরণের কথা? তুই জানিস এমন কথা বললে আল্লাহ নারাজ হন?

ক্ষোভের স্বরে সাহিল বলল, তোমরা সবাই মিলে আমাকে বাধ্য করেছো এমন বলতে। যেখানেই যাই সবাই সারাক্ষণ বিভিন্ন ভাবে আকার ইঙ্গিতে একথাই মনে করিয়ে দেবার চেষ্টায় করে আমাকে। আমি পরিবারের সম্মান নষ্ট করে দিচ্ছি। বাইরে সারাক্ষণই বড় ভাইয়াদের আর তোমাদের বোনদের গুনগান শুনতে হয় আমাকে।

কিন্তু শুধুমাত্র জ্ঞানার্জন কেন করা উচিত সেই বিষয়ে বোঝানো ছাড়া আমরা কি তোকে কখনো অন্য কিছু বলেছি?

কিন্তু মানুষ তো বলে। আর একথা তো আসলেই সত্যই। তোমরা দেশে বিদেশে যে যেখানেই পড়াশোনা করেছো সেরা স্টুডেন্ট এর খেতাব অর্জন করে নিয়ে এসেছো। বড় ভাইয়ার রুমে ঢুকে মুগ্ধ হয়ে যাই সেলফে রাখা নানা ধরণের মেডেল, গোল্ড মেডেল আর ট্রফি দেখে। কিন্তু আমার নিজের কোন অর্জনই তো নেই। আমি তো কোনদিন দৌড় প্রতিযোগিতাতেও ফাস্ট, সেকেন্ড না থার্ড হতে পারিনি। আমাদের উইনারে ভরা পরিবারে আমিই একমাত্র লুজার।

হেসে ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো রাহমা। আচ্ছা সত্যি করে বল তো তোর ক্ষোভটা আসলে কোথায়? আমরা উইনার এটাতে নাকি তুই লুজার সেটাতে?

আমার নিজের উপরই বিরক্ত আমি। কিন্তু আপা আমি কি করবো চেষ্টা করো করছি কিন্তু কেন জানি না মনোযোগ ধরেই রাখতে পারি না বেশীক্ষণ পড়ার ব্যাপারে।

এর কারণ তুই পড়তে হবে বা পড়া উচিত এই বোধ থেকে পড়াশোনা করিস। প্রয়োজন উপলব্ধি করে ভালোবাসা থেকে জ্ঞানার্জন করতে চাস না। কোন কিছু আমাদেরকে তখনই আকর্ষণ করে যখন সেই জিনিসটা মধ্যে আমরা ভালোলাগা, আনন্দ ইত্যাদি খুঁজে পাই। যেমন ধর তুই ফেসবুকে যে আনন্দটা খুঁজে পাচ্ছিস সেটা হয়তো বইয়ের ভেতর পাচ্ছিস না। তাই বই নিয়ে বসলেও তোর মন পড়ে থাকছে ফেসবুকে। ফলে যেই একটু দেখে আসি কি করছে বন্ধুরা, একটু দুষ্টুমি করে রিলাক্স হয়ে আসি। ইত্যাদি ভাবনা থেকে বার বার বই বন্ধ করে একটু উঁকি দেখতে গিয়ে হাতছাড়া করে ফেলিস সময়।

লজ্জা মেশানো হাসি দিয়ে সাহিল বলল, আসলেই তো এমন করি আমি। ভাবি বেড়িয়ে যাব একটু দেখেই কিন্তু কিভাবে সে সময় পার হয়ে যায় টেরই পাই না।

নিজের সমস্যা কোথায় এটা বুঝতে পারাটা কিন্তু অনেক বড় একটা বিষয়। সমস্যা বুঝতে পারা মানে সমাধানের পথে চলার পথ তোর জন্য তৈরি। তুই এখন যা পড়তে বোস। এগজাম শেষ হলে আমি তোকে সাহায্য করবো ইনশাআল্লাহ।

কোন ব্যাপারে সাহায্য করবে আপা?

রাহমা হেসে বলল, তোর অন্তরে জ্ঞানের পিপাসা জাগানোর ব্যাপারে।

সাহিলও হাসলো। আপার সাথে কথা বলার পর অনেক হালকা লাগছে মনের ভেতরটা। নিশ্চয়ই এখন পড়া মাথায় ঢুকবে এই আশা নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো।
(চলবে)

 

অন্তরে জাগাই জ্ঞানো পিপাসা……১


আফরোজা হাসান


অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই ফিজিক্সের বাংলা কি মনে করতে পারছে না সাহিল। এক সময় হতাশ হয়ে আশা ছেড়ে দিয়ে বইয়ের দিকে তাকিয়েই আঁতকে উঠলো। ইয়া আল্লাহ! একি দেখছে?! সব দেখি সাদা! সেকি বইয়ের বদলে খাতা খুলে বসেছে নাকি? চোখ বন্ধ করে মাথাটাকে ডানে-বামে, উপরে-নীচে বার কয়েক ঝাঁকি দিয়ে তাকানোর পর দেখলো অক্ষর ফুটতে শুরু করেছে বইয়ে কিন্তু সবই ঝাপসা। কেমন যেন মাথা ঘুরতে শুরু করলো সাহিলের। সবসময় পরীক্ষার আগের দিন এমন হয় তার। মনেহয় কিছুই বোঝে না, কিছুই জানে। আগে যা পড়েছিল সেসবও মাথার ভেতর থেকে একদম হাওয়া হয়ে যায়। রিলাক্স হওয়া উচিত আসলে আমার ভাবলো সাহিল। বই বন্ধ করে ভাইবারে ঢুকে কিছুক্ষণ বন্ধুদের সাথে দুষ্টুমি করলো। ঠিক করেছিল পরীক্ষার শেষ হবার আগে ফেসবুকে যাবে না। কিন্তু অটল থাকতে পারলো না। গত দু’দিন ঢোকেনি লগিন করতেই দেখলো ইনবক্সে দশ বারো জনের ম্যাসেজ। জাস্ট একটু ঘুরে দেখেই চলে যাবে এই নিয়্যাতে ঢুকলেও কিভাবে যে পনে দুইঘন্টা পেড়িয়ে গেলো টেরই পেলো না। ঢুকেছিল রিলাক্স হতে কিন্তু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে যখন দেখলো রাত এগারোটা বাজে। চোখের সামনে আবারো সব ধোঁয়া ধোঁয়া লাগতে লাগলো। এখনো ছয়টা চ্যাপ্টার রিভাইস দেয়া বাকি তার!

ধূর, কেন যে ঢুকতে গিয়েছিল এই সময় ফেসবুকে? নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিলো সাহিল। নিজের সেল্ফ কন্ট্রোল পাওয়ার আরো বাড়ানো দরকার ফিল করলো। এমন না যে সে পড়তে চায় না বা পড়ার প্রতি আকর্ষণ ফিল করে না। জ্ঞানার্জন করতে হবে এটা নিয়ে কোনই দ্বিমত নেই সাহিলের। তার সমস্যা শুধু একটাই মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না বেশিক্ষণ। পড়তে বসলে কিছুক্ষণ পরই শুধু মনেহয় যাই একটু দেখে আসি কি করছে বন্ধুরা ফেসবুকে। এভাবে করেই সময়গুলো যে কিভাবে কেটে যায় টেরই পায় না। টের পায় পরীক্ষার আগের দিন। তখন এমন চোখে মুখে আঁধার দেখে। নিজের উপরই মেজাজ খারাপ হতে শুরু করলো। এখন চেষ্টা করলেও পড়া হবে না। বই বন্ধ করে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো সাহিল। ক্ষুধার সামান্য নড়াচড়া অনুভব করছে পেটের মধ্যে। খাবারের সন্ধানে রান্নাঘরে রওনা দিলো। ফ্রীজ খুলেই মন ভালো হয়ে গেলো। বিকেলেই অবশ্য ঘ্রান পেয়েছিল লেয়ার পুডিংয়ের। তার সবচেয়ে পছন্দের মিষ্টি খাবার এটা। প্লেটে বড় বড় দু পিস পুডিং নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হতেই ল্যাপটপ হাতে বিরক্ত মুখে রুম থেকে বড় আপাকে বেড়িয়ে আসতে দেখলো সাহিল। বোনের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল, তোমার বেয়াদ্দব লেপুকে কি আবারো বোবায় ধরেছে আপা?

ছোট ভাইয়ের প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললো রাহমা। বলল, কবে দেখবি এইটারে ধরে একটা আছাড় দিয়ে ভেঙে গুড়া গুড়া করে দেব আমি।

সাহিল হাসতে হাসতে বলল, তোমাকে কষ্ট করে আছাড় দেয়া লাগবে না আপা। তুমি এভাবে তোমার লেপুকে হাতে করে দু’চারদিন ঘরের এদিক সেদিক ঘোরো। দেখবে ও নিজ থেকেই জাম্প দিয়ে পড়ে গিয়েছে তোমার হাত থেকে।

কপট রাগ দেখিয়ে রাহমা বলল, বেশি ফাজলামো শিখেছিল তাই না? ধোলাই খেতে না চাইলে সামনে থেকে যা। এই দাঁড়া তোর এগজামের প্রিপারেশনের কি অবস্থা সেটা বলে যা?

আপা তোমাকে হান্ডেড পার্সেন্ট গ্যারান্টি দিচ্ছি পাশ করবো ইনশাআল্লাহ।

তুই কি শুধু পাশ করার জন্য পড়িস নাকি?

আপারে দুঃখের কথা কি বলবো। আমি পড়তে তো জ্ঞানার্জন করার জন্যই চাই। কিন্তু শেষ মেষ শুধু কোন মতে পাশ করাটাকেই বিশাল বড় অর্জন মনেহয়।

চিন্তা ও কর্মের ভারসাম্য না থাকলে এমনই হয়। যা তুই সামনে থেকে আমার। এমনিতেই নানান যন্ত্রণায় আছি। ফাঁকিবাজ টাইপ বাচ্চাকাচ্চা আশেপাশে থাকলে সেই সমস্যা আরো ঘনীভূত হবে।

সাহিল হেসে বলল, আপা তুমি সমস্যা মোকাবিলা করো কিভাবে?

সমস্যা দিয়ে।

সাহিল অবাক হয়ে বলল, মানে?

মানে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার কথা শুনিসনি? আমি তেমন সমস্যা দিয়ে সমস্যার মোকাবিলা করি। পরে তোকে বুঝিয়ে বলবো। এখন তুই যা তো। আচ্ছা শোন আমাদের কম্পু বিশেষজ্ঞ কোথায় বলতে পারবি?

সাহিল হেসে বলল, ভাইয়া না তোমাকে নতুন ল্যাপটপ এনে দিলো। তারপরও এটা ব্যবহার করার দরকার কি?

রাহমা বলল, সেটা তুই বুঝবি না। চার বছর ধরে সুখে দুঃখে আমার সাথে সাথে থেকেছে। আমার কত অত্যাচার সহ্য করেছে রাত-দিন। শুধুমাত্র মাঝে মাঝে শব্দ বন্ধ হয়ে যায় বলে আমি মুহুর্তেই তাকে বিদায় করে নতুন একটাকে কোলে তুলে নেবো? বিপদেই বন্ধুর পরিচয়। আমি তাই ততক্ষণ পর্যন্ত ওকে আমার জীবন থেকে বের করে ফেলে দেবো না যতক্ষণ পর্যন্ত না ওকে সুস্থ্য করার শেষ চেষ্টাটাও ব্যর্থ হয়ে যাবে।

সাহিল হাসতে হাসতে বলল, তুমি তো এমন ভাবে বলছো যেন এটা কোন যন্ত্র না বরং মানুষ।

আজ যন্ত্রের সাথে এমন নির্দয় হতে পারলে, কাল মানুষের সাথেও যে হয়ে যাবো না সেই গ্যারান্টি কে দেবে? তাই আজ যন্ত্রের সাথে দরদী হবার চেষ্টা করছি। যাতে ভবিষ্যতে মানুষের ব্যাপারেও হতে পারি।

সাহিল হেসে বলল, তোমার কথা আমাকে খুব মুগ্ধ করে আপা।

(চলবে)

 

ডা. ফাতেমা “৬ হাজার শিশুর সফল হার্ট সার্জারি”


স্বাস্থ্যকথা


বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নুরুন নাহার ফাতেমা। যিনি নবজাতক শিশুর হৃদরোগ, হৃৎপিণ্ড এবং রক্তবাহক সম্পর্কিত রোগ নিয়ে ককাজ করেন। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম শিশু হৃদরোগ সার্জারি হিসেবে পথপ্রদর্শক।

সফলতার সঙ্গে প্রায় ৬ হাজার হৃদরোগ শিশুর চিকিৎসা করেছেন। এ বছর চিকিৎসাক্ষেত্রে অবদান রাখায় দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ পেয়েছেন।

মানুষের ভালোবাসা তার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান। শিশুর জন্মগত হৃদরোগ সারিয়ে তোলার পর যে আনন্দ পান, তা সব আনন্দের চেয়ে বহুগুণ বড়।

বিনামূল্যে শিশুদের চিকিৎসা করবেন। ডা. ফাতেমা শিশু চিকিৎসার আরেক প্রতিকৃত অধ্যাপক ডা. এমআর খানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন ‘চাইল্ড হার্ট ট্রাস্ট বাংলাদেশ’।

ডা. ফাতেমা স্বপ্ন দেখেন রোজ। দেশের মাটিতে শিশুদের চিকিৎসায় একটি বিশেষায়িত জাতীয় কার্ডিয়াক হাসপাতাল তৈরি করার। যেখানে এসব রোগীর যথাযথ চিকিৎসা করানো সম্ভব হবে। যেখানে অসচ্ছল মা-বাবার সন্তানরা বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে পারবে।

 

নাড়া দিলো যে মৃত্যু (শোক আর ভালোবাসায় রাফির বিদায়)


নারী সংবাদ


নুসরাত জাহান রাফি চলে গেছেন। শোক আর ভালোবাসায় তাকে চিরবিদায় জানিয়েছেন তার স্বজনেরা। মৃত্যু এসে তার অগ্নিদগ্ধ শরীরের সব যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়েছে। কিন্তু এই মৃত্যু নাড়া দিয়ে গেছে গোটা দেশকে। ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে সমাজের সর্বস্তরে।

নুসরাতের জীবনটাই ছিল প্রতিবাদের। যখন বখাটেরা তাকে উত্ত্যক্ত করত, তখনো সে প্রতিবাদ করেছে। আবার যখন তারই শিক্ষক তাকে লাঞ্ছিত করেছে তখনো সে প্রতিবাদ করেছে। যখন দুর্বৃত্তরা তার প্রায় পুরো শরীর আগুনে ঝলসে দিয়েছে, তখন মৃত্যু শয্যায় সে প্রতিবাদ করে বলেছে আমি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যাবো…। নুসরাত তা-ই করেছে। তার মৃত্যুই এখন শ্রেষ্ঠ প্রতিবাদ। গতকাল তাকে তার দাদীর কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।

রাফি গতকাল ভালোবাসায় চিরবিদায় নিয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাকে বহনকারী ফ্রিজারভ্যান গতকাল বিকেল ৫টায় পৌর শহরের উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের মৌলভী বাড়িতে পৌঁছে। ওই বাড়ির মাওলানা এ কে এম মূসার একমাত্র মেয়ে রাফি। তাকে বহনকারী গাড়ি যখন কাশ্মিরবাজার সড়ক হয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। দুপুর থেকে সেখানে হাজার হাজার নারী-পুরুষ জড়ো হয়। ভিড় ছিল গণমাধ্যমকর্মীদেরও। সবার চোখেমুখে শোকের পাশাপাশি ছিল ক্ষোভও। উৎসুক মানুষের ভিড় সামলাতে পুলিশ সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। একপর্যায়ে লাশ গাড়িতে রেখেই শেষবারের মতো বাবা এ কে এম মূসা, মা শিরীন আকতার, ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানসহ নিকটাত্মীয়দের দেখানো হয়। পরে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় সোনাগাজী মোহাম্মদ ছাবের মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। নামাজে জানাজা পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, জেলা প্রশাসক মো: ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বি কম, সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিফটন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল পারভেজ, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন, রাফির বাবা এ কে এম মুসা, ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। বক্তারা রাফি হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

রাফির বাবা এ কে এম মূসার ইমামতিতে হাজার হাজার মুসল্লি নামাজে জানাজায় অংশ নেন। পরে ভূঁইয়া বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাদীর কবরের পাশেই দাফন করা হয়।

পপি ও জোবায়েরের ৫ দিনের রিমান্ড : রাফি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন গ্রেফতার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার শ্যালিকার মেয়ে উম্মে সুলতানা পপি ও এজাহারভুক্ত আসামি জোবায়ের আহম্মেদকে পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরাফউদ্দিন আহমেদ এ আদেশ দেন।

ফেনী কোর্ট পুলিশের ওসি মো: গোলাম জিলানি এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো জানান, এ মামলায় গ্রেফতার সাতজনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। এর মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার সাত দিন এবং বাকি ছয়জনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে পপিকে মঙ্গলবার সকালে আটক করেছে পুলিশ। রাফির দেয়া জবানবন্দী অনুযায়ী শম্পা হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে এ পপিকে। তার সহপাঠীদের মধ্যে শম্পা নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। তদন্তকারী সূত্রের সন্দেহ হয়তো ঘটনার সময় অন্য কেউ ‘শম্পা’ ছদ্দনাম ব্যবহার করেছে।
আসামিদের আইনি সহায়তা দেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকে অব্যাহতি : মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টা মামলায় (পরবর্তীতে নিহত) গ্রেফতারকৃতদের আইনি সহায়তা দেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সদর উপজেলা সভাপতি করিম উল্লাহ বি কম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগকে সংগঠনবিরোধী কার্যক্রমের দায় ও সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির খুনিদের আইনি সহযোগিতা দেয়ায় স্বীয় দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তদস্থলে আবদুর রৌফকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। সোহাগ ওই ইউনিয়ন পরিষদেরও চেয়ারম্যান।

ফেনী কলেজছাত্র সংসদের মানববন্ধন :

সোনাগাজী (ফেনী) সংবাদদাতা জানান, নুসরাত জাহান রাফির নামাজে জানাজায় অংশ নিতে আত্মীয়স্বজন বন্ধু-বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশীসহ সোনাগাজীর সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছিল। কান্না আর চাপা ক্ষোভ নিয়ে তারা বলছিল সবই আছে নেই শুধু আমাদের রাফি। বাঁচতে দিলো না পাষণ্ডরা আমাদের রাফিকে। সন্ধ্যা ৬টায় হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে সোনাগাজী মডেল ছাবের পাইলট হাইস্কুল মাঠে রাফির নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। নামাজে জানাজা শেষে রাফিকে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাদীর কবরের পাশে দাফন করা হয়। (নয়াদিগন্ত)

 

গা ঘেঁসে দাঁড়াবেন না



শামছুন নাহার মলি


সময়টা ২০১০ বা ২০১১ এর দিকে।বলে রাখি ঢাকায় ৬/৭ বছর থেকেও আমার বাসে ওঠার অভিজ্ঞতা খুব বেশি না।ভার্সিটির ক্লাস শেষে কলা বাগান থেকে রংধনু বাসে করে মিরহাজীরবাগ ভাইয়ার বাসায় ফেরার পথের ঘটনা।বাসে সব সময় মহিলা সিটে বসার চেষ্টা করতাম।কিছু লোকাল বাসে সিট না থাকলে উঠতাম ও না।

সেদিন আমি মহিলা সিটে বসা।সামনের সিটে দুজন কলেজ পড়ুয়া মেয়ে।তাদের সাইডে দাঁড়ানো ৫৫/৬০ বয়সী একজন দাড়ী ওয়ালা পান্জাবী পরা মুরুব্বী।ব্রেক করার কারণে পাশের মেয়েটার গায়ে মুরব্বী টার একটু ধাক্কা লেগে যায়।আর যায় কোথায়।মেয়ে দুটোর মুখে যা আসে সব বলা হয়ে যাচ্ছে।তখন মুরুব্বী টা বল্লো দেখো মা ব্রেক করার কারনে এই ধাক্কাটা লেগেছে।এটার জন্য দুঃখীত।আমি তোমার বাপ বয়সী।মেয়ে দুইটা বলে উঠলো মুখে দাড়ী রাখছেন,পান্জাবী,পরছেন চুল দাড়ী পাকছে তাও লুচ্চামী যায়নি না?মেয়ে দেখলে গায়ের উপর এসে পড়তে মন চায় না?

এবার আমি ২য় সারির জানলার পাশের সিট থেকে বের হয়ে ঐ মেয়েদের সামনে গেলাম।বল্লাম উনাকে দেখে মনে হয় আপনার যে উনি ইভ টিজার?বাবার মত একজন কে এত নোংরা কথা বলতে বিবেকে বাধছেনা?নাকি উনার দাড়ী পান্জাবী দেখে রাগ টা বেশি দেখাচ্ছেন?
মুরুব্বী টা কাঁপতেছিলো অপমানে কথা বলতে পারছিলেন না মেয়েদের কথায়।একজন লোক উনার জায়গা দিলেন বসার।মেয়েরা আর কথা বাড়ায়নি।

আরেকবার মগবাজার থেকে আমি আর ফাতিমা ফিরছিলাম।আমি মীরহাজিরবাগ যাবো আর ফাতিমা যাবে জিগাতলা।পরে ফাতিমা বলছিলো সেদিন বাসে সিট না পাওয়ায় তাকে দাঁড়ীয়ে যেতে হয়েছিলো।একজন লোক তার জন্য যথেষ্ট জায়গা রেখে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো যেন কারো ধাক্কা ওর গায়ে না লাগে।আলহামদুলিল্লাহ্‌।

এখন দেশে টিশার্টে লেখা “গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না”
এই প্রতিবাদ টা কিন্তু সব মানুষের জন্য না।ভীড়ে দাঁড়ালে ধাক্কা লাগবেই।দেশের মানুষ বাস চড়বেই।এই ধাক্কাটা কারা দেন,গা ঘেঁষে কারা দাঁড়ান?নিশ্চয় সবাই না?যারা দৃষ্টিই অবনমিত করেন গা ঘেঁষে দাঁড়ানো তাদের আদর্শে যায় না।বার্তাটা অবশ্যই তাদের জন্য না।যারা গা ঘেঁষে দাঁড়ায় তাদের আতে ঘা লাগার কথা ছিলো।ঢালাও ভাবে সবার না।

টি শার্টে কেন এই বার্তা লেখা,বোরখায় কেন লেখা না আমি এ বিতর্কে যাবোনা।কারণ পরিসংখানে দেখা গেছে ৭০/৮০% মেয়েই নাকি এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে।বাসে কিংবা লেগুনায়।হোক সে
বোরখা পরিহিত কিংবা টিশার্ট পরা।

শুধু বাসে না,আজ মেয়েরা ভীড়ের মধ্যেও যেতে পারে না,না গিয়েও উপায় থাকেনা।এই ধাক্কা বন্ধের কথা ভাবুন,এগিয়ে আসুন মেয়েদের সম্মান ও নিরাপত্তা কিভাবে দেওয়া যায়।কারা মেয়েদের সাথে এমন করে তাদের কে পাকড়াও করুন পারলে।

নীলক্ষেতে বই কিনতে যেতে হতো প্রায়ই।অসম্ভব ভীড় ঠেলে যেতে হতো।আমি বোরখা পরিহিতা,ব্যাগটা সামনে জড়িয়ে ধরে হাটতাম সব সময় নিজেকে সেইভ করার জন্য।আলহামদুলিল্লাহ্‌ আজ পর্যন্ত একটা মোবাইল বা টাকা পয়সা হারায়নি এবং কোন খারাপ পরিস্থিতি তে পড়তে হয়নি আমার।

নারীদের অযথা হয়রানী করার মানসিকতার সকল পশুদের কলিজায় এই প্রতিবাদ পৌছে যাক “মেয়েদের গায়ে ঘেঁষে দাঁড়াবেন না”।
আর সকল নিঃষ্পাপ ভাইয়েরা পারলে নিজের মা বোনের কাছ থেকে নরপশুদের ধাক্কা খাওয়া বা গা ঘেষে দাঁড়ানোর গল্পটা শুনুন।তারপর কি পদক্ষেপ নিবেন ভাবুন।কারণ কদিন পর আপনাদের কন্যারাও বাইরে যাবে।

#গাঘেঁসেদাঁড়াবেননা

 

The Dream of Life (অনুবাদ) – শেষ পর্ব


মুল: ইয়াসমিন মোজাহেদ
অনুবাদ: রাহনুমা সিদ্দিকা


আর দ্বিতীয়দল যাদের লক্ষ্য ছিলো অনন্ত জীবন, তাদের কাছে ভালো মন্দের স্বরূপ এই যে, যা কিছু আমাদের স্রষ্টার সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা পেতে সাহায্য করে, আমাদের তাঁর নিকটে নিয়ে যায় তা-ই হলো ভালো আর যা আমাদের স্রষ্টা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় তা-ই হলো মন্দ।

তারা জানে যে তাদের পালনকর্তা বলেছেন, “আমি এদের বিভিন্ন প্রকার লোককে পরীক্ষা করার জন্যে পার্থিবজীবনের সৌন্দর্য স্বরূপ ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, আপনি সেই সব বস্তুর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না। আপনার পালনকর্তার দেয়া রিযিক উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী।” (কুর’আন ২০:১৩১)

একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি মনে করেন, অর্থ, খ্যাতি, সম্পদ, সৌন্দর্য তা যে আরাধ্য বস্তুই হোক না কেন, তা যদি আমায় স্রষ্টার কাছে নিয়ে যায় তাহলে তাকে আমি ‘ভালো’ বলে চিহ্নিত করবো, অন্যথায় তা মন্দ। খ্যাতি/যশ কিংবা সম্পদের ক্ষতি, অসুস্থতা, চাকুরি হারানো ইত্যাদি অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদগুলোও যদি কোনভাবে আমাকে স্রষ্টার সন্তুষ্টি পেতে সাহায্য তাহলে তা-ই আমার জন্য মঙ্গলময়!

“তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না।” (Qur’an 2:216)

এই-ই হলো আমাদের সহজ-সরল বিশ্বাস, ভালো লোকের জীবনেই ভালো ঘটনাগুলো ঘটে, আর মন্দের ক্ষেত্রে মন্দগুলোই!
নির্ভর করছে আপনি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন,তার ওপর! একজন বিশ্বাসীর? নাকি একজন অবিশ্বাসীর? অথবা, একজন সংশয়বাদীর?

মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “মুমিনদের ব্যাপারটি কী আশ্চর্যজনক! কারণ, সর্বাবস্থায়ই তার জন্য মঙ্গলময়। আর এটা মুমিন ছাড়া আর কারোর পক্ষেই সম্ভবপর নয়। তার জীবনে সুখময় কিছু ঘটলে সে আল্লাহ্ তাআলার কৃতজ্ঞতা আদায় করে যা তার জন্য কল্যাণকর। তেমনিভাবে তার জীবনে দুঃখকর কোন কিছু ঘটলে সে তাও ধৈর্যের সাথে মেনে নেয় যা তার জন্য অবশ্যই কল্যাণকর।”

(সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৯৯)

সুবহান’আল্লাহ! মুমিন জীবনই আমাদের নিয়ে যেতে পারে চুড়ান্ত কল্যাণের পথে।

এই ক্ষণিক জীবনটা আসলে একটা বিভ্রম ছাড়া আর কি! তারপরেও কি এই পার্থিব প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চাওয়া-পাওয়াগুলো আমাদের আলোড়িত করবে? যেদিন আমরা সেই অনন্ত জগতে প্রবেশ করবো সেদিনই কেবল পরিপূর্ণভাবে বুঝতে পারবো ‘জীবনটা আসলে একটা স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু ছিলো না’।

 

The Dream of Life (অনুবাদ)- ১ম পর্ব


মুল: ইয়াসমিন মোজাহেদ
অনুবাদ: রাহনুমা সিদ্দিকা


আচ্ছা, মন্দ জিনিষগুলো কেন ভালো মানুষদের জীবনে ঘটে? কোথায় থাকে ঈশ্বর যখন নিষ্পাপ শিশুটা না খেতে পেয়ে মারা যায়, অপরাধী মানুষগুলো স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়? কোথায় থাকেন তিনি? কীভাবে সেই প্রেমময়, সর্বশক্তিমান প্রভুকে স্বীকার করবো আমি? আমার কষ্ট… আমার হতাশা… ব্যর্থতা, দুর্ভাগ্য কেন দিলেন তিনি? Why do we suffer? ঈশ্বর নিশ্চয়ই ন্যায়-পরায়ণ, তাহলে কেন ভালো লোকের জীবনে শুধু ভালো ঘটনা ঘটে না? আর মন্দলোকের জীবনে মন্দ?

আপনার মনে কখনো কি এ প্রশ্নগুলো উদিত হয়েছে?

বহু মানুষের জীবনে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর তাদের নিয়ে যায় বিশ্বাসের পথে… অথবা বিশ্বাস থেকে দূরে, স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস, জীবনের উদ্দেশ্যে বিশ্বাস, জীবনে শেষ গন্তব্যের প্রতি বিশ্বাস, অথবা বিশ্বাসহীনতা।

একজন বিশ্বাসী বলবেন, “হ্যাঁ, অবশ্যই! আসলে ভালো লোকের জীবনেই ভালো ঘটনাগুলো ঘটে, আর মন্দের ক্ষেত্রে মন্দগুলোই!”

কেন? কারণ ঈশ্বর আমাদের রব তিনি সর্বজ্ঞাত, সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী, তিনি পরিপূর্ণ সত্তা,তিনি সর্বাপেক্ষা ন্যায়পরায়ণ ও প্রেমময়।

আসুন আগে বুঝে নি-ই, “ভালো লোকের জীবনেই ভালো ঘটনাগুলো ঘটে, আর মন্দের ক্ষেত্রে মন্দগুলোই!” বলতে আমরা কী বুঝাতে চাইছি। আর ভালো – মন্দ বলতেই বা আমরা কী বুঝাতে চাই। আপনারা অনেকেই হয়তো আমার সাথে একমত হবেন যে, অভীষ্ট কোন লক্ষ্য অর্জনে সফলতা…এটা ভালো, আর অন্যদিকে ব্যর্থতাটা হলো মন্দ।

ধরুন, যদি আমার লক্ষ্য হয় ওজন বাড়ানো কারণ আমি ভীষণভাবে ক্ষীণকায়, ওজন বৃদ্ধি তাহলে মঙ্গল। অপরদিকে যদি এমন হয় যে আমার লক্ষ্য হলো ওজন কমানো কারণ আমি স্থুলকায়, ওজন বৃদ্ধি তাহলে মন্দ। আমরা কী দেখি, একই ঘটনাকে একসময় আমি বলবো, ভালো আরেকসময় বলবো মন্দ, নির্ভর করছে আমার লক্ষ্যের ওপর!! তাহলে, আমার দৃষ্টিকোন থেকে ভালো কী সেটা নির্ভর করবে আমার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যগুলো বা লক্ষ্যের ওপর, এটা চিরকালীন সত্য। একারণেই চূড়ান্ত মঙ্গল নির্ভর করে আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য এর ওপর।

আমার জীবনের লক্ষ্য কী?

ছোট্ট একটা প্রশ্ন, কিন্তু আপনি উত্তর দিন, দেখুন আমরা জেনে যাবো আপনি কে। কারণ এর উত্তরটা বেঁচে থাকা সম্পর্কে আপনার ধারণা প্রকাশ করে দেবে। পুরো পৃথিবীতে জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে দু’ধরণের চিন্তাধারা আছে।

একদল মনে করেন যে, বেঁচে থাকার কারণ হলো আমাদের প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম দিয়ে পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালোভাবে দিন কাটানো। আরেকদল মনে করেন, উঁহু, জীবন শুধুই একটা সেতু/সাঁকো ছাড়া আর কিছুই না! আর এমন একটা সেতু যার স্থায়ীত্ব কাল ক্ষণকালের, তারা মনে করেন এটাই স্রষ্টার infinite Reality, যা কিছু হচ্ছে তাঁর নির্দেশেই হচ্ছে, এপার থেকে ওপারে যাওয়ার সাঁকোকে চিরকালীন আবাস ভাবতে চান না তারা।

প্রথমদলের জন্য, এই জীবনই *Everything*, এটাই শুরু এটাই শেষ , তারা মনে করেন, সমস্ত চেষ্টা-সংগ্রাম-ভালোলাগা-ভালোবাসা-অনুভূতি একে ঘিরেই আবর্তিত হওয়া উচিত। আর দ্বিতীয়দলের কাছে *this life tends towards zero*!! কেন?? আচ্ছা, অসীমের তুলনার সবচেয়ে বড় সংখ্যাটাও কি একেবারে তুচ্ছ নয়? কিচ্ছু না!

তাই তাদের কাছে জীবনের উদ্দেশ্য হলো, যেমনটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন, ” আমি জ্বীন ও মানব জাতিকে এছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য সৃষ্টি করি নি যে *তারা কেবল আমার দাসত্ব করবে*।” (ক্বুর’আন ৫১:৫৬) এখানে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই অন্য কোন উদ্দেশ্যের কথা নাকচ করে দিয়েছেন। তার মানে ত এই-ই দাঁড়ায় যে, একজন বিশ্বাসী হিসেবে আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হবে সেই সত্তাকে জানা, ভালোবাসা ও তাঁর নিকটাবর্তী হওয়া। এই জন্যেই আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছিলো। এই বিশ্বাসটাই নির্ধারণ করে দেবে আমার জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও আশপাশের ঘটনাগুলো সম্পর্কে আমি কীভাবে ভাববো।

আসুন, আমরা এখন আবার সেই ভালো মন্দের সংজ্ঞার দিকে ফিরে তাকাই। সেই যে বলেছিলাম, সামগ্রিক ভাবে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্থাৎ কাম্য কিছু পেতে সমর্থ হওয়াকেই আমরা বলতে পারি ভালো। আর আপেক্ষিকভাবে তাহলে নিশ্চয়ই বলা যায় কারো লক্ষ্য যদি হয় এই পার্থিব জীবন , তাহলে তার জন্য অর্থ উপার্জন, খ্যাতি, সম্পদ, সৌন্দর্য … ইত্যাদি হলো ‘ভালো’ বা ‘মঙ্গল’ এর উদাহরণ, আর এগুলোর ক্ষয় হলো ‘মন্দ’। এই ধারণা যারা পোষণ করেন তাদের মতে, একজন নিরপরাধ ব্যক্তি যদি তার কোন পার্থিব সম্পদের ক্ষতি (তা হতে পারে দারিদ্র, স্বাস্থ্যের ক্ষতি, বিকলাঙ্গতা, প্রতিবন্ধিত্ব…) প্রত্যক্ষ করেন, এই-ই হলো ‘ভালো লোকের জীবনে মন্দ জিনিষ ঘটা’।

আর দ্বিতীয়দল যাদের লক্ষ্য ছিলো অনন্ত জীবন, তাদের কাছে ভালো মন্দের স্বরূপ এই যে, যা কিছু আমাদের স্রষ্টার সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা পেতে সাহায্য করে, আমাদের তাঁর নিকটে নিয়ে যায় তা-ই হলো ভালো আর যা আমাদের স্রষ্টা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় তা-ই হলো মন্দ।

চলবে…

 

পাঁকা পেঁপের মজাদার হালুয়া

 


ঘরকন্যা


মিষ্টি পাকা পেপেতে প্রচুর ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে। তবে আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ এই পাকা পেপে অপছন্দ করেন। পাকা পেপের হালুয়া খুব মজাদার। পাকা পেপের হালুয়া অনেক টেস্টি যে যারা পাকা পেপে খান না তারাও পছন্দ করবেন।

পাকা পেপের হালুয়া বানাতে উপকরণ সমুহ

পাকা পেপে ২ কাপ
চিনি ৪ টেবিল চামচ
আস্ত এলাচ ১টি থেকে ২টি, আস্ত কাজু বাদাম, কিসমিস,
ঘি ২ টেবিল চামচ
ডিম ২ টি
পাউডার দুধ হাফ কাপ

হালুয়া যে পদ্ধতিতে বানাবেন

প্রথমে পাকা পেপে ছিলে নিয়ে গ্রেট করে নিতে হবে। আপনি চাইলে এটি ছোট ছোট করে কেটে নিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করেও নিতে পারেন। চুলোয় দিন। ফ্রাইং প্যানে অল্প একটু ঘি নিতে হবে। এর মধ্যে কাজু বাদাম, প্সতা বাদাম, চিনা বাদাম ও কাঠ বাদাম, কিশমিশ গুলোও দিয়ে দিতে হবে। মাঝে ডিম আর পাউডার দুধ দিবেন।
এরপর আপনি হালুয়ার মধ্যে ছোট ছোট বাদামের টুকরা দিতে পারেন। বড় কড়াতে বাকি ঘি টুকু দিয়ে দিতে হবে। ঘি গরম হয়ে গেলে এর মধ্যে গ্রেট করা কিংবা ব্লেন্ড করা পাকা পেপে দিয়ে দিতে হবে। এই সময়ে পরিমাণ মত চিনি দিয়ে দিতে হবে। লাল হওয়ার আগ পর্যন্ত নাড়তে থাকুন।
খুব সুন্দর একটি ঘ্রাণ ছড়াবে।

নেমে কাজু বাদাম দিয়ে পরিবেশন করুন।

 

নারী গার্মেন্টকর্মীকে গলা কেটে হত্যা


নারী সংবাদ


ময়মনসিংহের ভালুকায় তানিয়া আক্তার (১৬) নামে এক গার্মেন্টকর্মীকে রাতের ডিউটি শেষে সকালে বাসায় যাওয়ায় পথে ছুরিকাঘাতে গলা কেটে খুন করেছে এক বখাটে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উপজেলার জামিরদিয়া এসএমসি ফ্যাক্টরীর সামনে। পুলিশ ঘাতককে আটক করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার রামভদ্রপুর গ্রামের হোসেন আলীর মেয়ে তানিয়া আক্তার বোনদের নিয়ে উপজেলার হবিরবাড়ি এলাকার আমতলীতে জনৈক জহুরার বাসা ভাড়ায় থেকে রিদিশা গার্মেন্ট ফ্যাক্টরীতে চাকরী করে আসছিলেন।

শনিবার সকালে তিনি রাতের ডিউটি শেষে বাসায় যাওয়ার পথে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর এসএমসি ফ্যাক্টরীর সামনে শাহিদ (২২) নামে এক বখাটে তাকে ছুরিকাঘাতে গলা কেটে খুন করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় টের পেয়ে স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘাতক শাহিদকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। ঘাতক শাহিদ ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামের জনাব আলীর ছেলে বলে পুলিশ জানায়।

নিহতের বড় বোন কাকলী আক্তার জানান, তানিয়াসহ তারা তিন বোন একই বাসায় ভাড়ায় থেকে গার্মেন্টে চাকুরি করছেন। প্রতিদিনকার মতো শুক্রবার রাতে সে ফ্যাক্টরিতে যায়। সকালে লোকমুখে জানতে পারি রাতের ডিউটি শেষে তানিয়া বাসায় আসার পথে কেউ তাকে খুন করে ফেলে গেছে।

লাশ উদ্ধারকারী ভালুকা মডেল থানার এসআই ফিরোজ জানান, নিহতের লাশ উদ্ধার ও ঘাতককে আটক করা হয়েছে। তবে কি কারণে তানিয়াকে খুন করা হয়েছে তা এই মুহুর্তে ঘাতকের কাছ থেকে স্পষ্ট করে জানা যাচ্ছেনা। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (শনিবার বেলা ১২ টা) থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছিলো। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিচ্ছেদে গেলেন অ্যামাজনের বেজোস ও তার স্ত্রী ম্যাকেনজি


দাম্পত্য


বিশ্বের অন্যতম অনলাইন রিটেইল প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন ডটকম প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ও তার স্ত্রী ম্যাকেনজি বৃহস্পতিবার ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিচ্ছেদ চুক্তি চূড়ান্ত করেছেন। খবর এএফপি’র।
অ্যামাজনে জেফ বেজোসের ১৬.৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বিচ্ছেদ চুক্তি অনুযায়ী এর ৭৫ ভাগ শেয়ার থাকবে বেজোসের নামে এবং বাকি শেয়ার পাবেন ম্যাকেনজি। ম্যাকেনজির এই শেয়ারের মূল্য দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৬শ’ কোটি ডলার। এর পাশাপাশি অ্যামাজন স্টকের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বেজোসের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার সার্বিক ক্ষমতা পাবেন ম্যাকেনজি।
এছাড়া ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় এবং বিশ্বের সেরা ধনী বেজোসের মহাকাশ ভ্রমণ বিষয়ক কোম্পানি ব্লু অরিজিনে ম্যাকেনজির যে শেয়ার রয়েছে তিনি তা ত্যাগ করবেন।
৫৫ বছর বয়সী জেফ বেজোস ও ৪৮ বছর বয়সী ম্যাকেনজি ১৯৯৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির চার সন্তান রয়েছে।
জেফ বেজোস ২৫ বছর আগে ১৯৯৪ সালে তাদের সিয়াটল গ্যারেজে অ্যামাজন প্রতিষ্ঠা করেন। এরপরের ইতিহাস হচ্ছে তাদেরকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে অনলাইনে ব্যবসায় বিশাল একটি প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি ২৩ হাজার ২৮০ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে।
সাবেক টিভি উপস্থাপিকা লরা সানচেজের সঙ্গে বেজোসের গোপন সম্পর্ক প্রকাশের পরে এই বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা চূড়ান্ত হলো।
উল্লেখ্য, ম্যাকেনজি এবারই প্রথম দু’জনের মধ্যে বিচ্ছেদের বিষয়টি নিজের টুইটারে ঘোষণা করলেন। এতে তিনি লিখেছেন জেফ বেজোসের সঙ্গে বিচ্ছেদের ইতি ঘটানোর সব প্রক্রিয়া শেষ করে এনেছি। পারস্পরিক সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। (বাসস ডেস্ক)

 

শিশুদের কুরআন শিক্ষা


কানিজ ফাতিমা


সচরাচর মুসলমানেরা তাদের শিশুদের ছোটবেলা থেকেই শুধু জাহান্নামের আগুনের ভয় দেখান, কিন্তু আল্লাহর ভালোবাসা, দয়া এবং সমবেদনা অথবা জান্নাতের সৌন্দর্যের কথা সেভাবে তুলে ধরেননা । আমরা শিশুদেরকে ভয় যতটা জোর দিয়ে দেখাই যে তারা যদি আল্লাহর অমান্য করে, মা-বাবার কথা নাশুনে , বা পাপ কাজে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের দোজখের আগুনে জ্বালানো হবে; ততটা তাদেরকে আশাবাদ দেই না যে তারা যদি সৎ কাজ করে, আল্লাহ ও মা-বাবাকে মান্য করে এবং কোনো ভালো কাজ করে তবে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে। আমরা সবসময় তাদেরকে ভয় দেখাই, জাহন্নামের হুমকি দেই অথচ খুব কমই তাদেরকে সাহস যোগাই অথবা ভালো আচরণের জন্য আল্লাহ’র ভালোবাসার কথা, পুরুষ্কারের কথা উল্লেখ করি। এমন পরিবেশে, শিশুরা আতঙ্কগ্রস্ত ও ভীতু হিসাবে বেড়ে উঠে। ফলে তাদের মধ্যে নেতীবাচক মানসিকতা জন্মায় এবং আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেয় এবং তদেপেক্ষাও খারাপ যে তারা তাদের বিশ্বাসের প্রতি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে।

শিক্ষকরা সাধারণত: কুরআনের শেষ অধ্যায় থেকে (ত্রিশ পারা) শিশুদের পড়ানো শুরু করে। এই অধ্যায় ছোট ছোট সূরা সম্বলিত যেগুলো ওহী আসার প্রাথমিক পর্যায়ে মক্কায় নাযিল হয়। মূলত কুরাইশ গোত্রের বিপথগামী, অহংকারী এবং অত্যাচারী পৌত্তলিক নেতাদের (আবু জেহেল, আবু লাহাব) উদ্দেশ্যে এই সূরা গুলো নাযিল হয়েছিলো। তাছাড়া যারা মুসলমানদের অত্যাচার করছিলো, মুসলমানদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে হত্যা করেছিলো, নবীজী (সাঃ)কে হত্যার পরিকল্পনা করছিলো এবং বিশ্বাসীদের ধ্বংস করতে যুদ্ধ বাধিয়ে ছিলো-কুরআন নাযিলের সূচনার অধ্যায়গুলো মুলত তাদের উদ্দেশ্যেই। এই সূরা গুলো এসব অত্যাচারীদের তাদের হুশ/জ্ঞান ফিরিয়ে আনার জন্য ছিলো। এদিকে আয়াতের দৃঢ় কথাগুলো তাদের কানে বজ্রধ্বনি হিসাবে কাজ করতো কারণ আয়াতগুলো ভয়ানক সতর্কবার্তা সম্বলিত ছিলো। যেমন নিচের আয়াতগুলো-

“আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজে” (সূরা লাহাব, ১)

“প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ” (সূরা হুমাজাহ, ১)

“আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী কেয়ামতের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি? অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে লাঞ্ছিত, ক্লিষ্ট, ক্লান্ত। তারা জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে। তাদেরকে ফুটন্ত নহর থেকে পান করানো হবে। কন্টকপূর্ণ ঝাড় ব্যতীত তাদের জন্যে কোন খাদ্য নেই” (সূরা গাসিয়া, ১-৬)

“যারা মাপে কম করে, তাদের জন্যে দুর্ভোগ (সূরা মুতাফফিফিন, ১)

“বলুন, হে কাফেরকূল” (সূরা কাফিরুন, ১)

“যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে” (সূরা যিলযাল, ১)

এটা খুবই দুঃখজনক যে এসব কঠিন বার্তা কোমলমতি শিশুদের উদ্দ্যেশে নাযিল না হলেও এগুলোই শিশুদের সর্বপ্রথম শিখানো হয়। হ্যা, প্রথমেই এ সূরাগুলো শিখানোর একটা কারণ হচ্ছে এগুলো ছোট এবং সহজে মুখস্ত করা যায়। তবুও শিশুদের এ বয়সে জাহান্নাম ও শাস্তির ভয় দেখানোর বদলে আমাদের উচিত তাদেরকে আল্লাহর ভালোবাসা, মা-বাবার দয়া এবং জান্নাতের সৌন্দর্য প্রভৃতি বিষয়ে বুঝানো।এর ফলে শিশুকাল থেকে তাদের মনে নিরাপত্তার অনুভুতি, ভালোবাসা, দয়া, কোমলতা, মহত্ত্ববোধ, উদারতা এবং সহানুভুতি প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যগুলো ধীরে ধীরে প্রবেশ করবে। আল্লাহর ভালোবাসা, দয়া, মমতা, ক্ষমাশীলতা, ধৈর্যশীলতা এবং উদারতা ইত্যাদি আল্লাহর সুন্দর গুণাবলীগুলোর শিক্ষার মধ্য দিয়েই শিশুদের প্রথম পাঠ শুরু করা উচিত। প্রথমে তাদের মনে এই বিশ্বাস দিতে হবে যে তারা ভালো এবং আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন। এরপর তাদেরকে শেখাতে হবে যে তাদেরও উচিত আল্লাহকে ভালবাসা। শিক্ষার ক্রমটি এমন হতে হবে যে , প্রথমত তাদের প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা সম্পর্কে তাদের অবগত করা, তারপরে তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসতে হবে সেই বাধ্যবাধকতা শেখানো।

এরপর যখন সন্তান কিছুটা বড় হবে এবং বুঝতে শিখবে, তখন মা-বাবা ধীরে ধীরে তাদেরকে খারাপ কাজের জন্য জাহান্নামের শাস্তির কথা বলতে শুরু করবেন। যেসব সূরাগুলো বড় বড় গুনাহের জন্য শাস্তির আগাম সতর্ক বার্তা দেয়- সেসব সূরাগুলো এসময় শুরু করা উচিত, যাতে তারা এসব থেকে ভয়ে সন্ত্রস্ত না হয়ে বরং শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।এটা তাদের শৈশবের শেষ পর্যায় কিংবা টিনেজ (১৩-১৯) বয়সের দিকে হতে পারে যখন তারা কিছুটা বড় হয়েছে এবং কিছুটা জটিল বিষয়গুলো ও কর্মের ফলাফল বুঝতে সক্ষম।

কুরআনের শিক্ষা দেবার সময় আমদের সচেতন থাকতে হবে যে আমরা শিশুর দর্শন ও মানসিকতাকে কিভাবে তৈরী করছি। এটা আবশ্যক যে, শিশুদের বেড়ে উঠার সাথে সাথে বাবা- মাকে সচেতনতার সাথে তাদের বয়সের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সুরা বা আয়াত নির্ধারণ করতে হবে।রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বেশির ভাগ সাহাবী তাদের প্রপ্তবয়সে (শিশু বয়সে নয়) কুরআনের সাথে পরিচিত হন। সেই বয়সে কুরআন তাদের ওপর অভূত প্রভাব ফেলেছিলো। কুরআন তাদের চরিত্রকে আরো বেশী মজবুত ও সাহসী করেছিল এবং তাদেরকে উচ্চতর নৈতিকতার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলো। শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষাবিদ, সামাজিক বিজ্ঞানী ও কুরআন বিশেষজ্ঞরা মিলে কুরআন শিক্ষার একটা ক্রম ঠিক করা জরুরী যাতে অভিভাবকরা কিভাবে সন্তানদের বয়স অনুযায়ী তাদেরকে আয়াত বা সুরা শিক্ষা দিবেন সেটা জানতে পারেন। এটা অনস্বীকার্য যে ব্যক্তিজীবনে কুরআনের সবগুলো আয়াতেরই শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।তবে প্রশ্ন হলো কোন ক্রম বা ধারায় এটা শেখা বেশী কার্যকর? কোন আয়াত বা সুরাগুলিকে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে এবং কোন বয়সে কোন আয়াতের শিক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন? ৩৭টি ছোট সূরা আছে বলেই প্রথমেই সম্পূর্ণ ৩০ পারা দিয়ে শুরু করা নিঃসন্দেহে উপযুক্ত নয়। তাছাড়া কেবলমাত্র মুখস্ত করার ক্ষেত্রে সহজতার ভিত্তিতে সূরা বিবেচনা করা সঠিক পন্থা নয়। – Translation Parent-Child Relations.

———

” শিক্ষাবিদ, সামাজিক বিজ্ঞানী ও কুরআন বিশেষজ্ঞরা মিলে কুরআন শিক্ষার একটা ক্রম ঠিক করা জরুরী যাতে অভিভাবকরা কিভাবে সন্তানদের বয়স অনুযায়ী তাদেরকে আয়াত বা সুরা শিক্ষা দিবেন সেটা জানতে পারেন।” – কেউ কি আছেন এই গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টটি হাতে নেয়ার ?

 

শিশুর প্রতি যত্ন


প্যারেন্টিং


চড়-থাপ্পর মারবেন না
শাস্তি বলতে আমরা বুঝি বাচ্চাকে চড় মারার বিষয়টি। খেয়াল রাখবেন বাচ্চার গায়ে হাত তুলছেন যে কারণটির জন্য তা তার স্বভাবে স্থায়ী করে দিচ্ছেন কিনা অজান্তে। মার সাধারণ শরীরে লাগে এবং মানুষ ভুলে যায় সময়ের সাথে সাথে। তবে এর মানসিক প্রভাবটি থেকে যায় দীর্ঘ দিন।

খারাপ কাজে শাস্তি
অন্যায় করলে শাস্তি দেওয়া। বাচ্চা একদিন দেরি করে বাসায় এসেছে তাকে প্রচুর শাস্তি দিলেন কিন্তু আরেকদিন দেরি করে আসায় আর শাস্তি দিলেন না ফলে তার কাছে ভুল মেসেজ চলে যায়। তাই শাস্তি দিন বিষয়টি আপনি বুঝে।

শুয়ে খাওনো নিষেধ 
ছোটবেলায় বাচ্চা খেয়ে না চাইলে শুয়ে অনেক সময় মা খাওয়ান। এই অভ্যাসটি আপনার মাঝে থাকলে ছেড়ে দিন। বাচ্চাকে টেবিলে বসিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।

হাসাহাসি & ছুটাছুটি করুন
সময় পেলে বাচ্চার সাথে খেলুন। দৌড়াদৌড়ি করুন। আদর করুন। বাচ্চাকে জড়িয়ে রাখুন আপনার ভালোবাসার চাদরে।

শিশুদের সরি বলুন
বাচ্চারা ভুল করলে বড়রা চান তাদের সরি বলা হোক। আপনাকে দেখে ও শেখে। সুতরাং আপনি ভুল করলে বাচ্চাকে সরি বলুন। তারাও আপনাকে দেখেই শিখবে।

গোপনীয়তা বজায় রাখুন
খেয়াল রাখবেন আপনি অন্যের কাছে আপনার দূর্বলতা প্রকাশ করতে চান না। তেমনি বাচ্চাও তার দুর্বলতা অন্যের সামনে বলে দেওয়া হলে তার অপমানে লাগে। সুতরাং নিজের পাশাপাশি বাচ্চাদের দুর্বলতা যত সামান্য হোক গোপনীয়তা বজায় রাখুন।

নতুন কাজ শিখানো
নতুন মূল্যবোধ, নতুন খেলা, নতুন জায়গার সাথে পরিচয় করে দিন বাচ্চার সাথে। আপনি তাদের সাথে শিখুন নতুন কিছু।

 

মানুষ কাকে ভালবাসে?


কানিজ ফাতিমা


আমার ছোট ভাই বিয়ের কথা ভাবছে। খুশীর খবর। কিন্তু একটা ব্যাপার আমাকে ভাবাচ্ছে। আর তাহলো, সে কি আসলেই বিয়ের জন্য প্রস্তুত? কেমন প্রস্তুতি নিয়ে আমি ভাবছি? টাকা পয়সা ? বিয়ের খরচ?এগুলো অবশ্যই ভাবার বিষয়। কিন্তু এগুলোর সমাধান করা তেমন কঠিন হবে না। আমি ভাবছি, পারিবারিক বা দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে তার যথেষ্ট জানা আছে কিনা। অনেককে বলতে শুনি বিয়ে হলে সবাই ঠিক হয়ে যায়। আমার অভিজ্ঞতা তা বলে না। মানুষ প্রাকৃতিক নিয়মে কিছু জ্ঞান পায় কিন্তু জীবন চলার পথে বেশীর ভাগ জ্ঞান ও যোগ্যতা (Knowledge and skill) মানুষকে অর্জন করতে হয়। যেমন প্রাকৃতিক নিয়মে মানুষ রাগ করতে শেখে কিন্তু রাগ কে ম্যানেজ করার যোগ্যতা তাকে শিখতে হয় ও অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। জীবন সঙ্গী পাবার আগ্রহ মানুষের প্রাকৃতিক কিন্তু সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও জীবন চলার জ্ঞান ও যোগ্যতা প্রাকৃতিক নিয়মে আসেনা; এটা শিখতে হয়। আমাদের দেশের ছেলে মেয়েরা এটা কোথা থেকে শিখবে ? আমাদের দেশ কেন, পৃথিবীর কথাও কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এর উপরে পড়ানো হয় বলে আমার জানা নেই। উন্নত বিশ্বে এর উপরে চার্চ, মসজিদ বা সামাজিক কিছু প্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং কোর্স করানো হয়। আমাদের দেশে এমন কিছু নেই। উন্নত বিশ্বে এর উপরে অনেক বই পাওয়া যায় আমাদের দেশে এমন গবেষণা মূলক বই নেই বললেই চলে। আর দু/একটা থাকলেও তা পরার প্রয়োজন মানুষ খুব একটা বোধ করে না . তাহলে এ জ্ঞান ও যোগ্যতা তারা কোথা থেকে পাবে। বাবা-মা বা পরিবারের অন্যদের দাম্পত্য জীবন তারা দেখে কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দাম্পত্য জীবন নিয়ে তাদের সঙ্গে কেউই আলোচনা করে না। ফলে এ জ্ঞান তাদের অজানাই রয়ে যায়। নাটক সিনেমা থেকে যা তারা জানে তাই তাদের সম্বল আর আমাদের নাটক সিনেমায় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বিয়েই হয় শেষ দৃশ্য। অর্থাত বিয়ে হলো তো সব সমস্যার শেষ – এর পর তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো। এত সামান্য জ্ঞান (তার কিছুটা আবার অবাস্তব) এর উপর নির্ভর করে তারা একটি ভারসাম্যপূর্ণ দাম্পত্য জীবন যাপন করবে এটা আমার ঠিক ভরসা হয় না। কাজেই আমি ঠিক করলাম আমি আমার ভাইকে আগে থেকেই আমার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান শেয়ার করব যেহেতু আমি দেশের বাইরে সেহেতু আমি মাঝে মেঝে তাকে ইমেইল করব যা হয়ত তার প্রয়োজন কিছুটা পূরণ করবে আমি পাঠকদের সাথে সেই ইমেইল গুলোই শেয়ার করছি।

Dear…..,

আসসালামু আলাইকুম

তোমার অবসর সময়ে এ লেখাগুলো পড়ো। এগুলো মুছে ফেলনা , save করে রেখো পরবর্তী জীবনের জন্য। যখনি কোনো পারিবারিক সমস্যায় পড়বে এগুলো কাজে আসবে। সবার আগে মনে রেখো বিয়ে কোনো ” romantic saga” নয়। এটা প্রচন্ড বাস্তবধর্মী একটা অধ্যায় যাতে রোমান্স কিছুটা বাড়তি সৌন্দর্য দান করে (marriage is not a “romantic saga”- it is very much realistic with a touch of romance, like dressings on salad).

আমাদের চারপাশে আমরা তিন ধরনের মানুষ দেখতে পাই –

এক , কিছু মানুষ যারা অন্যদের জীবন থেকে শিক্ষা নেয়। এরা নিজেদের জীবনের অনেক সমসা এড়িয়ে যেতে পারে;

দুই , কিছু মানুষ (অন্যের জীবন থেক শিক্ষা নেয়না তবে ) নিজের জীবন থেকে শিক্ষা নেয়, এরা কিসু সমস্যায় পরে তবে কিছু সমস্যা এড়িয়ে যেতে পারে;

তিন, কিছু মানুষ নিজের জীবনের শিক্ষাও কিছুদিন পর ভুলে যায় , এরা বার বার একই গর্তে পরে

আমি আশা করি তুমি প্রথম ধরনের মত হবে – তাই তোমার জন্য কিছু তথ্য।

মানুষ কাকে ভালবাসে? কৈশোরে মনে হত দেখতে সুন্দর আর চৌকষ এমন কাউকে – কারণ সিনেমা নাটকের সব নায়ক নায়িকাই দেখতে ওই সিনেমায় অভিনয়কারী অন্য সবার থেকে বেশী সুন্দর। না, ঠিক না। তাহলে মানুষ কাকে ভালবাসে ? মনে হলো মানুষ তাকেই ভালবাসে যার জীবন দৃষ্টিভঙ্গী তার নিজের জীবন দৃষ্টিভঙ্গীর মত। অনেকটা সত্যি, কিন্তু দু’জন একই দৃষ্টিভঙ্গীতে বিশ্বাসী মানুসের বিয়ের কয়েক বছর পর আর ভালবাসা খুঁজে পাওয়া যায় না এমন উদহরণ চারপাশে ভরা। আবার খোজা শুরু হলো – মানুষ কাকে ভালবাসে? ভাবলাম মানুষ তাকে ভালবাসে যে তার জন্য ত্যাগ স্বীকার করে। মারাত্বক ভুল প্রমানিত হলো। কারণ যার জন্য ত্যাগ করা হচ্ছে সে হয়ত বুঝতেই পারছে না যে আরেকজন তার জন্য কতটা ত্যাগ করছে,উল্টো এটা অনেক সময় তার চাহিদাকে বাড়িয়ে দেয় , expectation level অনেক উপরে উঠে যায়, ত্যাগকারীর হতাশা বেড়ে যায় , ভালবাসার কাটা উপরে ওঠার বদলে নীচে নামতে থাকে। তাহলে মানুষ কাকে ভালবাসে ? এখন মনে হচ্ছে মানুষ তাকেই ভালবাসে যে তাকে ভালো অনুভব (feel) করায় (who makes me feel good).

-আমি অসুস্থ হলে যে আমার জন্য তা করে যাতে আমি ভালো feel করি তাকে আমি ভালবাসি

-যে সামাজিক পরিবেশে আমার সঙ্গে সেভাবে কথা বলে যাতে আমি ভালো feel করি তাকে আমি ভালবাসি

-যে সেই ভাবে dress-up করে যাতে আমি ভালো feel করি তাকে আমি ভালবাসি

-যে ঘরে মেহমান আনার সময় ভাবে এসময় এই মেহমান আসলে আমি ভালো feel করব কিনা তাকে আমি ভালবাসি

-কথাও বেড়াতে যাবার আগে যে ভাবে এসময় এজায়গায় আমি ভালো feel করব কিনা তাকে আমি ভালবাসি

-যে অন্যকে সময় দেয়ার ( time commitment করার) আগে ভাবে আমি কেমন feel করব তাকে আমি ভালবাসি

-আমি কাজ থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসলে কাউকে ফোন বা skype করার সময় যে ভাবে আমি কেমন feel করব তাকে আমি ভালবাসি

-কেউ কোনো occasion এ ভাবে কোন gift টা হাতে করে নিয়ে আসলে আমার ভালো লাগবে তাকে আমি ভালবাসি

-খাবার কিনতে গেলে যে ভাবে কোন খাবারটা কিনলে আমি ভালো feel করব তাকে আমি ভালবাসি

-তার আত্মীয় বা বন্ধুরা আমাকে অপমান বা উপেক্ষা করার চেষ্টা করলে যে বুঝতে পারে আমি কেমন feel করব তাকে আমি ভালবাসি

-যে আমার আত্মীয় বা বন্ধুদের সঙ্গে সেভাবে কথা বলে যাতে আমি ভালো feel করব তাকে আমি ভালবাসি

-যে আমার কাছাকাছি থাকলে আমি নিশ্চিন্ত feel করি তাকে আমি ভালবাসি।

কেউ যদি আমার ভালবাসা চায় তবে তাকে এভাবেই তা পেতে হবে। আমি যদি কারো ভালবাসা চাই তবে আমার জন্যও এই একটাই রাস্তা।

 

একটু বুকে টেনে নাও না মা…


আফরোজা হাসান


মার সাথে রাস্তায় সিগন্যাল পার হচ্ছিলো ছয় বছর বয়সি বাচ্চাটা। হাতে ধরা ছিল দুটা বই। ছোট মানুষ তাই কৌতূহলী চোখে বিভিন্ন দিকে তাকাতে তাকাতে হাঁটছিল। হঠাৎ হাত থেকে বইগুলো পরে গেলো। ঘাবড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির দিকে, আর অসহায় চোখে মায়ের দিকে তাকালো বাচ্চাটি। মা বাচ্চাটিকে উঠিয়ে হিড়হিড় করে টেনে রাস্তা পার করেই ধমকে বললেন, কত বার বলেছি তোমাকে রাস্তা পার হবার সময় সাবধানে চলতে। যদি গাড়ি চলা শুরু করতো? আর যদি কখনো এমন করো দেখো তোমাকে কি করি। বাচ্চাকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মা’টি কাঁধ ধরে ঝাঁকি দিয়ে বললেন, তাকিয়ে থাকতে হবে না, যাও হাঁটো।

কয়েকটি বাচ্চা মিলে ছুটোছুটি খেলছিল আর মায়েরা পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন। খুব জোরে ছুটতে দেখে একজন মা বার বার তার ছেলেকে সাবধান করছিলেন। কিছুক্ষণ পর সেই ছেলেটিই পড়ে গেলো। মা ছুটে গিয়ে বাচ্চাকে টেনে উঠিয়ে গালে এক চড় দিয়ে বললেন, বলেছিলাম না তোমাকে এভাবে না ছুটতে? খুব ভালো হয়েছে। একদম উচিত শিক্ষা হয়েছে তোমার। আর কখনো হবে আমার অবাধ্য? বাচ্চাটির চোখ দিয়ে ঝরঝর অশ্রু নেমে এলো তখন।

উপরের ঘটনা দুটি আমার চোখে দেখা। ঘরে বাইরে সব জায়গাতেই শিশুরা এমন অনিচ্ছাকৃত ভুল বা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। কিছু কিছু বাবা-মার আচরণ তখন উপরের ঘটনার মতো হয়ে থাকে। যে সময় বুকে জড়িয়ে ধরে আশ্বস্ত করার দরকার, সেই সময় এমন নিষ্ঠুর আচরণ করা হয় বাচ্চাদের সাথে। আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করেছি পিঠাপিঠি ভাই-বোনরা কোনকিছু নিয়ে ঝগড়া বা মারামারি করলে বাবা-মা বেশির ভাগ সময় ছোটজনকে সাপোর্ট করেন। ভুল ছোটজনের থাকলেও বকা বড়জনকেই খেতে হয় বা মাফ বড়জনকেই চাইতে হয়।

এই সমস্ত ঘটনা বা আচরণ একটা শিশুর মনোজগতে কি ধরণের প্রভাব ফেলে তা আমরা চিন্তাও করে দেখি না। বাবা-মা যে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় এই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে বাচ্চাটা ধীরে ধীরে। যে কোন বিপদ, কষ্ট কিংবা ব্যর্থতায় বাবা-মার কাছে ছুটে আসতে পারে না কিংবা বলা যায় আসার সাহস পায় না। কারণ তার মনের আকাশে গুড়গুড় করে নিরাশার মেঘ। অনিচ্ছাকৃত অন্যায় বা ভুলের জন্য বাচ্চাদের সাথে কখনোই এমন আচরণ করা ঠিক না। এরফলে বাবা-মা আর বাচ্চাদের মধ্যে যে অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়, পরবর্তিতে এই দেয়ালের কারণেই বাচ্চারা নিজেদের দোষ-ভুল ইত্যাদি গোপন করতে শেখে আর কমে যায় তাদেরকে সংশোধনের সুযোগ।

আমার ছেলেটা যখন এই ধরণের অনিচ্ছাকৃত ভুল বা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে, তখন ওর ভীত চোখের দিকে তাকালে আমি অনুভব করি ভয়-অপরাধবোধ সবকিছু মিলিয়ে সে বলতে পারছে না যে, আমাকে একটু বুকে টেনে নাও না মা…..!!! কিন্তু আমি তো মা তাই বুঝি, সব মায়েরাই বুঝতে পারেন। কারণ সৃষ্টিকর্তা এই ক্ষমতা দিয়ে দেন একটি মেয়েকে যখন সে মা হয়। নেতিবাচক পরিস্থিতি গুলোতে আমরা যেন আমাদের বাচ্চাদের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হতে পারি, কারণ তখনই একটি শিশুর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় মায়ের মমতার আশ্রয়ের।

 

ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা ও কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজন


নারী সংবাদ


‘আমার মা জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। চতুর্থ স্টেজে ছিলেন। উনি বুঝতেই পারেনি তার শরীরে নীরবে দানা বেঁধেছে মরণব্যাধী। মধ্যবিত্তের সংসার, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে লড়াই করা সহজ ছিল না। আর্থিক ও মানসিকভাবে তাকে ভরসা দিতে পারিনি, কারণ উনি এই বিষয়টা শুনলে ভেঙ্গে পড়বেন, জানানো হয়নি তাই। সাড়ে তিনবছর লড়াই করেছেন এর বিরুদ্ধে। সাতবছর হলো মা চলে গেছেন। এখন মনে হয় তিনি অভিমান নিয়ে চলে গেছেন। হয়তো আর্থিক ও মানসিকভাবে তাকে সহায়তা করা গেলে তিনি আরো কিছুদিন আমাদের মাঝে থাকতে পারতেন।’ এমন মর্মস্পর্শী কথা বলছিলেন বাগেরহাটের সাবেরা।
কুমিল্লার লাকি জানান, ‘আমার মা স্তন ক্যান্সারে মারা গেছেন। তার স্তনে টিউমার হয়েছিল। সার্জারির মাধ্যমে তা অপসারণ করা হয়। পরবর্তীতে কেমোথেরাপি চললেও তা শেষ করা যায়নি। ব্যায়বহুল চিকিৎসায় আমরা সর্বশান্ত হয়েছি। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। জানিনা আমাদের পরিবার কতদিনে আর্থিক ও মানসিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো।’
শুধু সাবেরা কিংবা লাকিই নয়, ক্যান্সার রোগে প্রিয়জনকে হারিয়েছেন অনেকে। ক্যান্সারের চিকিৎসায় আর্থিকভাবে সর্বশান্ত হয়েছেন অনেক পরিবার। বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা কারণে এই ব্যাধি ক্রমশ বাড়ছে।
ক্যান্সার বিশেজ্ঞদের মতে, দেশে প্রায় ১২ লাখ ক্যান্সার রোগী রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ মানুষ নতুন করে কোন না কোন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। মারা যাচ্ছে বছরে প্রায় দেড় লাখ রোগী। যে কোন বয়সেই ক্যান্সার হতে পারে। কিছু-কিছু ক্যান্সারে খুব অল্প বয়সে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তবে সাধারণত অপেক্ষাকৃত মধ্যবয়সী মানুষের মধ্যে ক্যান্সারের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
বাংলাদেশে পুরুষদের মাঝে কোলন ও ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রবণতা দেখা যায়। নারীদের জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে। কি কারণে ক্যান্সার হয় এর পুরোপুরি কারণ জানা না গেলেও পারিবারিক ক্যান্সারের ইতিহাস, জীবনযাত্রার মান, খাদ্যাভাস বিবিধ কারণে ক্যান্সার হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ক্যান্সার ছোঁয়াচে নয়। শব্দটি শুনলে আঁতকে ওঠেন অনেকে। কিন্তু সঠিক সময়ে সনাক্ত করা সম্ভব হলে এর নিরাময় সম্ভব। মানবদেহের কিছু কোষের স্ফিত হওয়ার মধ্যেই এর বীজ লুকিয়ে থাকে। এঘুলো কখনো চাকা, পিন্ড আকারে দেখা যায়। পরবর্তীতে তা নীরবেই ছড়িয়ে পড়ে শরীরের বিভিন্নস্থানে। ধীরে-ধীরে শরীরের প্রয়োজনীয় অঙ্গগুলো অকেজো হয়ে যায়।
দেশে যেভাবে ক্যান্সারের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তার তুলনায় হাসপাতাল, চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানের অপ্রতুলতা রয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা(হু)এর মতে দেশে চিকিৎসা কেন্দ্র থাকা প্রয়োজন ১৬০ টি। রয়েছে মাত্র ১৫ টি। ক্যান্সার চিকিৎসায় বিশেষায়িত জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল ৫০টি শয্যা নিয়ে চালু হলেও এ ধরনের রোগীর চাপে বর্তমানে ১৫০ টিতে উন্নীত করা হয়েছে। শুধু হাসপাতালের চিকিৎসাই নয়, আক্রান্ত রোগীর প্রয়োজন হয় সহযোগিতা ও সহমর্মীতার। ক্যান্সারেরই যে রোগীর মৃত্যু হয় এমন নয়, কখনো কখনো স্ট্রোক বা যে কোন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হতে পারে। তবে এ ধরনের রোগীর এই মরণব্যাধি হলে নানা মানসিক চাপে থাকেন। অনেক সময় রোগীর চারপাশের স্বজনেরা নানা নেতিবাচক কথা বলে তাকে ভীত করে তোলেন। অনেকে আত্মহত্যা করার কথাও ভেবে বসেন। নিজেকে গুটিয়ে নেন অপরাধবোধে। সেজন্য চিকিৎসকের রোগ নির্দেশনার পাশাপাশি, পরিবারের ও কাছের মানুষরা রোগীকে একান্তে নিবিড়ভাবে সময় দিতে হবে। যেন রোগের কারণে ভীতির সঞ্চার না হয়, তাকে সাহস দিয়ে মানসিক লড়াইয়ে সামিল হবার কাজটাও করতে হবে।
জাতীয় ক্যান্সার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোশারফ হোসেন বলেন, বর্তমানে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারিÑবেসরকারিসহ দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণের সচেতনতা প্রয়োজন। বর্তমান সরকার সারাদেশে প্রায় বিনামূল্যে এধরনের রোগীদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সুলভে ওষুধের প্রাপ্যতা দিতে উদ্যোগ নিচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ)মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ডা. এবিএম আবদুল্লাহ জানান,আধুনিক বিজ্ঞানের কারণে ক্যান্সার মানেই অবধারিত মৃত্যু নয়। চিকিৎসাও এখন আর অজেয় নয়। শুরুতে সনাক্ত করা গেলে চিকিৎসায় এর নিরাময় সম্ভব। নিত্যনতুন অধিক কার্যকরী কেমোথেরাপি জাতীয় ওষুধ আবিস্কার এবং রেডিওথেরাপির ব্যাবস্থা থাকায় ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব হচ্ছে।
তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বে মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে ক্যান্সার দ্বিতীয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তৃতীয়। ক্যান্সারের লক্ষণ নির্ভর করে কোথায় কী ধরনের ক্যান্সার হচ্ছে তার উপর। তাই শরীরে কোন অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন্ হতে হবে।
সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ নুরুল কবির জানান, ক্যান্সার নিয়ে আতংক যেমন রয়েছে তেমনি আছে আশার বাণীও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী ইশতেহারে ক্যান্সারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছেন। দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া ক্যান্সার আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবার সহায়তায় দেয়া হচ্ছে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা। গত অর্থবছরে এ খাতে বাজেট ধরা হয়েছিল ৫০ কোটি টাকা। এ অর্থবছরে ৭৫ কোটি এবং আগামী অর্থবছরে ১৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার। গতবছর ছিল ১০ হাজার। তার আগের বছর ছিল সাড়ে সাত হাজার। এপর্যন্ত সাড়ে ১৪ হাজার দরখাস্ত জমা পড়েছে। এই কিস্তিতে পৌনে চার হাজার জনকে এই টাকা দেয়া হবে। এরমধ্যে আরো দরখাস্ত জমা পরবে। চলতি অর্থবছরে টার্গেট ধরা হয়েছে ১৫ হাজার জনকে এই সহায়তা প্রদান করা হবে।
সুত্র: (বাসস)।

 

পরিবারে দ্বন্দ নিরসন


কানিজ ফাতিমা


বিয়ে দু’জন মানুষের মধ্যে জীবনকে ভাগাভাগি করে নেয়ার চুক্তি। জীবনে একসাথে চলার পথে বহু বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়। এই বাস্তবতার অন্যতম বাস্তবতা হল Conflict বা দ্বন্দ, সংঘাত, বিরোধ ইত্যাদি। বিয়ের পূর্বে এ ব্যাপারটি নিয়ে খুব একটা চিন্তা ভাবনা করা হয় না। বিয়ের পূর্বে সম্পর্কের মধুর(Romantic) দিকটি নিয়েই বেশি জল্পনা-কল্পনা হয়। ফলে বিয়ের পরে যখন এই দ্বন্দ বা Conflict দেখা দেয় তখন অনেকেই এটিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না। অনেকে হতাশা বোধ করে, অনেকে নানা প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে।
এজন্য বিরোধ ব্যবস্থাপনা বা Conflict management সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরী। Conflict management বা বিরোধ ব্যবস্থাপনার প্রথম কথা হল সমাজে, সংগঠনে বা পরিবারে বিরোধ থাকা একটি বাস্তবতা। কেউ যদি মনে করে দু’জন মানুষ একত্রে বসবাস করবে আর তাদের মধ্যে কোন বিরোধ থাকবে না তবে তা একমাত্র রূপকথাতেই সম্ভব। বাস্তবতা হল দু’জন মানুষ একত্রে থাকলে বিরোধ বাঞ্ছনীয় তাতে দু’জনের সম্পর্ক যাই হোকনা কেন। স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, বাবা-পুত্র সবার মধ্যেই বিরোধ থাকবে। তবেপ্রশ্ন হল সেই বিরোধের মাত্রা কতটুকু? যেমন ধরা যাক বাবা জমি কিনতে চাচ্ছেন আর পুত্র ব্যবসার টাকা বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন। মা মেয়ের জন্য সালোয়ার কামিজ কিনতে চাচ্ছেন কিন্তু মেয়ে প্রসাধন সামগ্রী চাচ্ছে। মানুষে মানুষে বিরোধ না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। বিরোধ, মতের পার্থক্য, চিন্তার ভিন্নতা এ পৃথিবীর অপরিহার্য একটি বৈশিষ্ট্য। Conflict সম্পর্কে দ্বিতীয় কথা হল সব Conflict বা বিরোধই খারাপ নয়। Conflict বা বিরোধ শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে বিরূপ চিত্র ভেসে ওঠে। কিন্তু চিন্তা করে দেখুনConflict বা বিরোধের ফলে অনেক ভাল জিনিসের তৈরী হয়। যেমন Conflict সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। যেমন ধরুন বাবা বললেন আমরা অমুক এলাকায় বাসা ভাড়া নিবো, মা বললেন না, এখানে বৃষ্টি হলেই পানি জমে। আমরা ওমুক এলাকায় যাবো। ছেলে বললো না, এখান থেকে আমার কলেজ অনেক দূরে, আমাদের কলেজের কাছাকাছি এলাকায় থাকা উচিত। এভাবে ভিন্ন মতামতের কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয় সব তথ্য বের হয়ে আসবে এবং একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে। অপর পে অতিমাত্রায় বিরোধ, হিংসা ও সংঘর্ষ জীবনে অশান্তির কারণ। কাজেই আমরা বলতে পারি সহনশীল মাত্রার বিরোধ পরিবারের জন্য উপকারী। একজন স্বামী বা স্ত্রীকে এটি মেনে নিতে হবে যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ ঘটবেই। তবে তাকে সহনশীল পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করাই হচ্ছে Conflict management বা বিরোধ ব্যবস্থাপনা। দ্বন্দ বা বিরোধ পুরোপুরি নিরসন বা নির্মূলকরণ অসম্ভব বা অবাস্তব। মূলতঃ দ্বন্দ বা বিরোধ ব্যবস্থাপনাই সঠিক পন্থা। তাই স্বামী ও স্ত্রীকে Conflict management বা দ্বন্দ ও বিরোধ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। স্কলারগণ Conflict management এর নিম্নরূপ মডেল প্রদান করেছেন-

১. Forcing- বিরোধের সময়ে আপনি অন্যপক্ষরে মতামত বা স্বার্থকে আমলে না এনে যদি শুধুমাত্র নিজের অবস্থানে অটল থাকেন, নিজের স্বার্থ ও মতামতকেই প্রাধান্য দেন তবে একে বলা হয় চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে দ্বন্দ নিরসন করা। আপনি যদি অন্য পক্ষরে তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হন তবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে চাইবেন। এতে অন্যপক্ষ মন থেকে নয় বরং বাধ্য হয়ে আপনার কথা মেনে নেবে। এ পদ্ধতি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের জন্য বিরোধ নিরসনের সঠিক পন্থা নয়। হুমকি ধমকীর মাধ্যমে নিজের ইচ্ছাকে স্থাপন করার চেষ্টা নির্যাতনের আওতায় পড়ে।

২. Accommodating বা আত্মসমর্পন করা- এটি Forcing এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আপনি যদিনিজের অবস্থান থেকে সরে আসেন এবং অপর পকে পুরোপুরি মেনে নেন তবে তাকে Accommodating পদ্ধতি বলে। দুই ক্ষেত্রে সাধারণত মানুষ এটা করে থাকে।ক. আপনি যদি দুর্বল হন এবং আপনার প্রতিপক্ষ যদি শক্তিশালী হয় তবে আপনি বাধ্য হবেন এ পদ্ধতি অবলম্বন করতে।খ. আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আপনার অবস্থান ভুল এবং আপনার প্রতিপক্ষ সঠিক তখন আপনি স্বেচ্ছায় নিজ অবস্থান থেকে সরে আসবেন।

 

ভালোবাসার স্বভাব, ভালোবাসার অভাব


রেহনুমা বিনত আনিস


১/
কাজ থেকে ফিরছিলাম। ট্রেন স্টেশন থেকে বেরোবার পথে বেশিরভাগ মানুষ ডানদিকে চলে গেল, বামদিকে আমার সামনে কেবল এক মহিলা ছাড়া আর কেউ নেই। আমি সাধারনত খুব দ্রুত হাঁটি, এই মহিলা বুঝলাম আমার চেয়েও দ্রুত হাঁটছেন, কারণ পেছন থেকে কেবল তাঁর ঋজু দেহখানা দেখতে পাচ্ছি, চেহারা দেখছিনা। দু’জনেই বাঁয়ে মোড় ঘুরলাম। দেখি মহিলার হাঁটার গতি আরো বেড়ে গেল। রাস্তার পাশে একখানা লাল গাড়ী, স্টিয়ারিং উইলে এক বৃদ্ধ দাদামশায় উৎসুক ভঙ্গিতে বসে আছেন, মুখের হাতের চামড়ায় কুঁচকানো দেখে বোঝা যাচ্ছে ভালোই বয়স হয়েছে। মহিলা দ্রুত হেঁটে গাড়িতে ওঠার পর খেয়াল করলাম তিনি হলেন দাদামশায়ের স্ত্রী, মাথার সব চুলই শ্বেতবর্ণ ধারণ করেছে, আজন্ম স্নো ক্রীমে লালিত মুখখানাতেও ভাঁজ পড়েছে ভালই। দাদীমা গিয়ে বসতেই দাদামশায় একগাল হাসি দিয়ে গাড়ীতে স্টার্ট দিলেন, দাদীর মুখ থেকে সারাদিনের ক্লান্তির সব চিহ্ন উবে গেল। তাঁদের এই চৌম্বকীয় ভালোবাসার দৃশ্যের সাক্ষীটির মনটা পরম মমতায় ভরে উঠল। আজকের যুগের দেহসর্বস্ব ভালোবাসার ভিড়ে এমন নিখাদ ভালোবাসার গভীরতা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ কি প্রতিদিন মেলে?

২/
কেউ ভাবেনি বিয়েটা টিকবে। মেয়েটি নিজেও না। স্বামী প্রবাসী, বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে কিন্তু স্ত্রীকে নিতে পারছেনা। মেয়েটি অত্যন্ত মেধাবী, যতদিনে স্বামীর তাকে নেয়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হোল ততদিনে সে লেখাপড়ার মধ্যাবস্থায়, পড়াশোনা শেষ না করে সে কিছুতেই যাবেনা। স্বামী বলতে শুরু করল সে আবার বিয়ে করবে, মেয়েটি বলল, ‘তাহলে আমি আর গিয়ে কি করব?’ স্বামী ছুটিতে দেশে এসেছে, স্ত্রী যাবেনা। আত্মীয়স্বজন ভাবছে এই বিয়ে কিছুতেই টিকবেনা। এমন এক অবস্থায় ওরা দু’জনেই এলো আমার কাছে। মেয়েটিকে বললাম সবকিছু ছেড়ে চলে যাও।

সে হতবাক হয়ে বলল, ‘আপনি একজন শিক্ষক হয়ে কি করে এমন একটি কথা বলতে পারলেন?’

বললাম, ‘শোন, শিক্ষক বলেই এ’কথা বলতে পারলাম। তোমার মেধা আছে। এই মেধা কেউ কেড়ে নিতে পারবেনা। আমি জানি একদিন তোমার লেখাপড়া ডিগ্রী ভবিষ্যত সব হবে। কিন্তু সেদিন এই সম্পর্কের জন্য তোমার আফসোস হবে, ‘যদি আমি চেষ্টা করতাম, হয়ত আমার সংসারটা টিকত!’

সে বলল, ‘কিন্তু সে তো বলছে সে আবার বিয়ে করবে, তাহলে ওর সাথে গিয়ে আমার লাভ কি?’

বললাম, ‘রাগের মাথায় মানুষ অনেক কথাই বলে। তুমি পাশে নেই তাই তোমাকে ভয় দেখিয়ে সাথে নিতে চায়। এগুলো ভালোবাসাপ্রসূত অভিমান, বদনিয়ত নয়’।

সে আমার কথা বিশ্বাস করল। আমি আত্মীয় নই, স্বজন নই, নই কিছুই। কিন্তু সে আমার কথার ওপর ভরসা করে এত সাধের লেখাপড়া অসম্পূর্ন রেখে চলে গেল প্রবাসে, স্বামীর সাথে থাকার জন্য।

ক’দিন আগে সে জানালো সে দেশের এক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে সে ভর্তি পেয়েছে। ফেসবুক প্রোফাইলে ওর ফুটফুটে সন্তান দু’টির মুখচ্ছবি সাক্ষ্য দিচ্ছে আজ সে সব পেয়েছে- স্বামী, সন্তান, শিক্ষার সুযোগ, সাফল্য, সুখ। সামান্য একটু ধৈর্য্য, সামান্য একটু অপেক্ষা, অনেক অনেক বিশ্বাস- এটাই ওর সাফল্যের চাবিকাঠি ছিল। কিন্তু আমরা অনেকেই এই ধৈর্য্যটুকু রাখতে পারিনা, যা চাই তার জন্য অপেক্ষা করতে রাজী থাকিনা, ভাবতে পারিনা যে অনেকসময় ভালোটুকু পাওয়া যায় খারাপের পরেই- এ’টুকু সময় স্থির থাকতে পারলে হয়ত আমরা অনেক কিছুই অর্জন করতে পারতাম যা অনেকে আজীবন সাধনা করেও অর্জন করতে পারেনা।

৩/
সেই চেনা পরিচিত রোগগুলো আবার ফিরে আসছিল। ভোরে অ্যালার্ম বাজবে বলে অ্যালার্ম বাজার আগেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। স্কুলে যখন বীজগণিত করতাম, কোন অংক না মিললে ঘুমের ভেতরেও মগজ অংক কষতে থাকত। ঘুমের মধ্যে সব অংক ঠিক ঠিক মিলে যেত, অনেক সময় ঘুম থেকে উঠে সেভাবে অংক করলে সত্যিই মিলে যেত! এখন ঘুমের মধ্যে কেবল কোম্পানীর ফাইলপত্র ঘাটতে থাকি, ঘুম শেষ হয়ে যায় কিন্তু কিছুতেই সব কাজ গুছানো শেষ হয়না।

প্রথম যেদিন কাজে গেলাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট কন্ট্রোলার ডেভ বলল, ‘তোমাকে মাটিতে অবতরণ করার আগেই দৌড় শুরু করতে হবে বলে আমি দুঃখিত, কিন্তু আমরা খুব বেকায়দায় পড়ে গেছি, তোমার সাহায্য আমাদের খুব প্রয়োজন’।

সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে দিতে বলল, ‘এখানে আমাদের জাতিসংঘের মত সব দেশের প্রতিনিধিই আছে। সবাই তোমাকে সাহায্য করবে’।

তবু অনেক অনেকদিন পর কাজ শুরু করেছি, নতুন জায়গা- শরীরের ওপর, মনের ওপর চাপ যাচ্ছিল। তাই রোগগুলো প্রভাব বিস্তার করছিল বেশ।

প্রথমদিনই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এসেছিলো ক্যানাডার জর্ডান, হং কং- এর নেলসন আর পাকিস্তানের ফ্র্যান্সেসকা। লাজুক স্বভাবের ভারতীয় জেকব থাকে আশেপাশেই, প্রয়োজন হলেই এগিয়ে আসে, তারপর আবার ঢুকে পড়ে নিজের গর্তে। ক’দিনের মধ্যেই ভাব জমে গেল ভারতের স্বর্না, ঘানার জেরাল্ড, চীনের সানি, ক্যানাডার ডনার সাথে। অন্যরা থাকে আশেপাশেই, সুযোগ এলেই এগিয়ে আসে। আজ সকালে গ্রুপলিডার লিন বলল, ‘আমরা কিছুদিনের মধ্যেই তোমাকে একজন সহযোগী দিতে যাচ্ছি। সে পর্যন্ত একটু কষ্ট করে চালিয়ে যাও’।

কিন্তু বেশিক্ষণ চালাতে হোলনা। কিছুক্ষণ পরই জেরাল্ড, নেলসন আর ফ্র্যান্সেসকা মিলে আমার বাকী কাজগুলো ভাগ করে নিয়ে বলল, ‘আজ তুমি বিশ্রাম নাও, কাজ আমরা করছি’। আস্তে আস্তে রোগমুক্ত হয়ে যাচ্ছি নিজের অজান্তেই!

এই বৈশ্বিক ভ্রাতৃত্বের রূপ দেখে ভাবি, যে ফুলটিকে বাঁচাব বলে আমরা একদিন রক্ত ঝরিয়েছিলাম সে ফুলটিকে আজ আমরা নিজেরাই রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন করে ফেলছি। পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে এসে একটি ভিনদেশে আমরা একত্রিত হতে পারি, অথচ নিজের দেশে নিজের মাটিতে আমরা ভাই ভাই এক হতে পারিনা! হা কপাল!

 

দাদুর পাঠশালা


আফরোজা হাসান


ক’দিন থেকেই আরমান সাহেব তাঁর নাতি-নাতনীদের নিয়ে খুব চিন্তিত। বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করার জন্য মন মতো কাউকে পাচ্ছেন না। অপেক্ষা করছিলেন তার বড় ছেলে রিসাবকে কখন ফ্রি পাওয়া যায়। প্রচণ্ড ব্যস্ত তাই চাইলেই ছেলেটিকে সবসময় পাওয়া যায় না। আজ ছেলেটা বাইরে যায়নি তাই সকাল থেকেই অপেক্ষায় আছেন কখন ছেলে রুম থেকে বেরোবে। খবরের কাগজ নিয়ে বাগানে বসেছেন ঠিকই কিন্তু তাতে মনোযোগ দিতে পারছেন না। বার বার আড়চোখে তাকাচ্ছেন দোতলা থেকে নিচে নামার সিঁড়ির দিকে। অবশেষে তাঁর প্রতীক্ষার পালা শেষ হলো। ছেলে বাবার কাছে এসে সালাম দিয়ে বলল-

-তোমাকে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন বাবা? শরীর খারাপ করেছে?

-আলহামদুলিল্লাহ! শরীর ভালো আছে আমার। তবে চিন্তিত এটা ঠিকই ধরেছো। আমি আমার নাতী-নাতনীদেরকে নিয়ে খুবই চিন্তিত। ভাবছি ওদের জন্য একটা পাঠশালা বানাবো।

-(হেসে) পাঠশালা বানাবে?

-এটা হাসির কথা না রিসাব। একথা তো তুমিও জানো যে অমীয় সম্ভাবনার আলো নিয়ে পৃথিবীতে আসে প্রতিটি শিশু। এই সম্ভাবনার বিকাশ নির্ভর করে তাদেরকে কিভাবে গড়ে তোলা হয় তার উপর। শিশুদের মধ্যের সম্ভাবনা বিকাশের জন্য প্রচুর সহমর্মিতাময় আবেগের প্রয়োজন। শিশুর বেড়ে উঠার পরিবেশ যদি ভালোবাসা, আন্তরিকতা, সহমর্মিতাময় হয় তাহলে তারা আত্মবিশ্বাসী, মহৎ ও মুক্তমনা হয়ে বড় হয়। আর মানবজীবনের উদ্দেশ্যে সফল হওয়ার জন্য নম্র ও বিনয়ী হতে হবে। কারন মানুষ যত নম্র ও বিনয়ী হয় ততই তার মর্যাদা উন্নত হয়। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন-“ আমি তাদের পরকালে শাস্তি দেবোনা, যারা উদ্ধত স্বভাবের নয়, আর যারা অন্যের অনিষ্ঠ করার ইচ্ছে পোষণ করেনা।” বর্তমানের স্কুলগুলোতে কি এসব শিক্ষা দেয়া হয় বলো?

-আমি দুঃখিত বাবা। তুমি আসলে কি করতে চাচ্ছ বলো।

-কি করতে হবে বুঝতে পারছি না বলেই তো তোমার অপেক্ষায় বসে আছি। আমি গত কয়েকদিন থেকে বাচ্চাদের ক্লাসের বইপত্র ঘেঁটে দেখেছি অনেক কিছু শেখানো হয় ওদেরকে। কিন্তু জীবনের জন্য যা কিছু দরকার তার বেশির ভাগই অনুপস্থিত। ওদেরকে সবার আগে শেখাতে হবে সু-শিক্ষাই জাতি গঠনের চাবিকাঠি, পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি, অন্যায়ের কাছে পরাজয় স্বীকার না করাই জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা, বড়দের সম্মান করা, ছোটদের ভালোবাসা, কখনো লোভ না করা, মিথ্যা বলা, কাউকে ঠকানো, চুরি করা মহাপাপ, সততাই সবথেকে ভালো পন্থা, জীবনে দুঃখ-কষ্ট-ব্যথা- বেদনা আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা স্বরূপ।

-আমরা তো বাচ্চাদেরকে এসব শেখাতে চেষ্টা করি বাবা। তবে তোমার কথা শুনে মনেহচ্ছে এই বিষয়গুলোকে যতটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত তা হয়তো আমরা করছি না। ইনশাআল্লাহ! আমি তোমার সাথে আছি। তোমার কিছু একটা প্ল্যান তো আছে সেটা আমাকে বলো।

-দেখো আমি আর তোমার মা তো সারাটা দিন শুয়ে বসেই কাটাই। আমাদের কিছু বন্ধু-বান্ধবও আছে। আমরা সবাই ভাবছি অন্তত নিজেদের নাতী-নাতনীদেরকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করবো। এতে করে আমাদের সময়টাও ভালো একটা কাজে ব্যয় হবে। বার্ধক্য আমাদের মনকে নিস্তেজ করে দিতে পারবে না। আর ওদেরকে শেখাতে গিয়ে আমাদেরও জ্ঞানার্জন করা হবে। আমি চাইনা যে আমার নাতী-নাতনীরা জ্ঞানার্জনকে কিছু বইপত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলুক। ওদের মধ্যে জ্ঞানার্জনের পিপাসা তৈরি করে দিতে হবে। তাহলে ওরাই ছুটে বেড়াবে সেই পিপাসা মেটানোর সন্ধানে।

-(হেসে) তোমার কথা শুনে পরমহংস যোগানন্দের একটা বাণী মনে পড়ছে-“চিরন্তন সত্যের প্রজাপতি হও। তোমার আত্মজ্ঞানের পাখা রাঙিয়ে নাও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে।” আমি অবশ্যই চাই আমাদের বাচ্চারা চিরন্তন সত্যের প্রজাপতি হোক। তুমি কাজ শুরু করো তোমার পাঠশালার।

-কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাচ্চাদের কিভাবে শেখাতে হবে সেই সম্পর্কে তো আমাদের ধারণা কম। আমার এক বন্ধু বলছিলো মাইক্রোটিচ নামে নাকি কি একটা ট্রেনিং আছে শিক্ষকদের জন্য। তুমি কি জানো নাকি মাইক্রোটিচ ব্যাপারটা আসলে কি?

-মাইক্রোটিচ একটি শিক্ষাদান পদ্ধতি বাবা। এই পদ্ধতিতে অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে ছোট কোন বিষয়বস্তু সম্পর্কে সল্পসময়ে পাঠাদান করা হয়। মাইক্রোটিচিং পদ্ধতির তিনটি অংশ। মাইক্রো লেসন, মাইক্রো ক্লাস এবং মাইক্রো টাইম।

-কিন্তু পদ্ধতিটা আসলে কি?

-(হেসে) এটা আসলে শিক্ষাদানের সব কৌশলকে একত্রে আয়ত্ত না করে বরং পুরো শিক্ষার বিষয়বস্তুকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয়। এটি শিক্ষকদের শিখন দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যকারী কৌশল হিসেবে বিবেচিত। এর লক্ষ্য শিক্ষাদান পদ্ধতিকে শক্তিশালী করা, ব্যক্তিগত সবল দিক ও উন্নয়নের ক্ষেত্র চিহ্নিত করা এবং এছাড়াও আরো কিছু পয়েন্ট আছে। প্রত্যাশিত দক্ষতা অর্জনের জন্য তিনটি ধাপ অনুসরণ করা হয় এই পদ্ধতিতে। প্রথম ধাপ হচ্ছে- জ্ঞান আহরণ বা জ্ঞান অর্জন, দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে দক্ষতা অর্জনের ধাপ আর তৃতীয় ধাপটি হচ্ছে স্থানান্তর ধাপ।

-তারমানে এটি মূলত শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির একটা শিক্ষা পদ্ধতি। এটাই তো আমাদের দরকার সবার আগে। নিজেরা দক্ষ না হয়ে তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ার কাজে হাত দেয়া ঠিক হবে না। তুমি আগে আমাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করো।

 

আত্মহত্যা


জিয়াউল হক


একাকিত্ব বা নিসঙ্গতা আজ সারা বিশ্বের বয়স্কদের মধ্যে এক মহামারী হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের দেশ, আমাদের ধর্মনিষ্ঠ সমাজও এ থেকে বেঁচে থাকতে পারেনি। বিশ্বের আনাচে কানাচে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও বয়স্কদের দিকে নজর দিলেই তাদের চেহারায় একাকিত্ব বা নিঃসঙ্গতাজনিত মানসিক রোগের চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়।

মানসিক রোগের কারণে চিন্তা-চেতনা, বোধ ও বিশ্বাসে যে বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা নেমে আসে, তা মানুষের সকল কর্মকা- ও আচার-আচরণকে কমবেশি নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবিত করে থাকে। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনরকম পথ না পেয়ে অনেক রোগী শেষ পর্যন্ত নিজেই নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার পথ বেছে নেয়; আত্মহত্যা করে। এটা বিশ্বের উন্নত বা অনুন্নত সবদেশেই ঘটে থাকে।
একাকিত্ব হলো এর অন্যতম একটা কারণ, এ কারণেই সম্ভবত (অবশ্য অন্যান্য কারণও আছে) ইংল্যন্ডে প্রতিবছর ৪৫০০ জন আত্মহত্যা করে। এদের বেশিরভাগেরই বয়স ৪৫ বছরের নীচে।

বিষয়টা এতটাই জটিল আকার ধারণ করেছে যে, শেষপর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার জনগণের মাঝে আত্মহত্যা রোধ করতে তার কেবিনেটে তথা মন্ত্রীপরিষদে আলাদা একটা মন্ত্রণালয় করে Minister for Suicide Prevention নামে আলাদা একজন মন্ত্রীই নিয়োগ দিয়েছেন। ব্রিটিশ সরকার তার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছাড়াও পাশাপাশি জনগণের মানসিক স্বাস্থ্য দেখাশোনার জন্য একজন প্রতিমন্ত্রী তথা Under Secretary of State (Mental Health and Inequalities) পদ সৃষ্টি করেছে। স্কটল্যান্ডেও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রী রয়েছেন। এর মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সেসব দেশে কতটা গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হচ্ছে তার একটা ধারণাও পাওয়া যায় বটে।

আত্মহত্যা এ জটিল সমাজ ও জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে একটা অসুস্থ ও চরমতম পন্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বে প্রতিবছর আট লক্ষ লোক আত্মহত্যা করে থাকে। অর্থাৎ প্রতি চল্লিশ সেকেন্ড সময়ে একজন আত্মহত্যা করছে। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশই হলো আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে।৩৬ (এনডিটিভি নিউজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৮) ভারতের আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ১৫ বছর থেকে ২৯ বছরের মানুষই বেশি। ৩৭(ঐ) আগেই বলেছি, আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে একাকিত্ব, হতাশা ও মানসিক অসুস্থতা।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের দেওয়া তথ্য মতে, বিগত ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ অর্থাৎ পাঁচ কোটি মানুষ কোন না কোন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। আর এ বিশাল সংখ্যক মানুষের জন্য দেশে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছে মাত্র আড়াই শত বা একটু বেশি।

এ বিশাল সংখ্যক মানসিক রোগীর জন্য এত কম সংখ্যক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ থাকার কারণে আমাদের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ মনোরোগের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত থাকে। ফলে তাদের সে রোগ জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে। সময়োচিত ও যথাযথ চিকিৎসা পেলে এসব হতভাগা মানুষদের অধিকাংশই সুন্দর সুস্থ জীবনযাপন করতে পারতো। কিন্তু তারা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন।

এর ফলে তাদের পরিবারের লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ ও শিশুরা তাদের বাবা-মা, ভাই ও বোনের ভালোবাসা, আদর ও সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত থেকে গেল সারাটা জীবনের জন্য।

আমাদের দেশেও এটা অহরহ ঘটে চলেছে। বাংলাদেশে বিগত ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে সর্বমোট ১১০৯৫ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছে। গড়ে প্রতিদিন ৩০ জন! আত্মহত্যার কারণ হিসেবে যে তথ্যটা উঠে এসেছে, তাও খুবই ভয়ানক ও দুঃখজনক!

জরীপ বলছে, অত্যন্ত ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ অবস্থা ও মানসিক চাপের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করতে ব্যর্থ হয়ে এবং কোনরকম সহায়তা না পেয়ে তারা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।৩৮ (The Dhaka Tribune, 27 March, 2018 ২০১৮ সংখ্যা দ্রষ্টব্য)

এটি খুব দুঃখের বিষয় যে, একটি মুসলিম প্রধান দেশেও এত বিশাল সংখ্যক মানুষ আত্মহত্যা করবে, অথচ মহান আল্লাহ্ বলছেন- ‘তোমরা আত্মহত্যা করো না।’ (আল কুরআন, সুরা নিসা: ২৯)

 

মাতৃত্বের উপলব্ধি – শেষ পর্ব


আফরোজা হাসান


কখনো বৃষ্টি, কখনো রোদ, কখনো দক্ষিণা হাওয়া, কখনো বসন্ত হয়ে দোলা দিয়ে যায় প্রাণে। দুর্বল মুহুর্তগুলোতে ভাবব্যক্তির দ্বারা শক্তি ও প্রাণ সঞ্চার করে মনেতে। অন্বেষণ করতে শেখায় জীবনের চাঞ্চল্য ও বৈচিত্র্যেকে। এঁকে দেয় জীবনকে গভীর ভাবে উপলব্ধি করার নীল নকশা।নানা রকম বৈচিত্র্যটায় ভরপুর জীবন যখন মনে ক্লান্তির সুর বেজে উঠে! এরা মনে করিয়ে দেয় আমরা নিজেরাই নিজের মনের মিউজিক ডিরেক্টর! জীবন বীণার তন্ত্রীতে প্রশান্তির সুর তোলার দায়িত্বও তাই নিজেকেই নিতে হবে!

উপমা দিয়ে আসলে জীবনে এই মায়ের স্থান, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বোঝানো সম্ভব নয়। আসলে সব মানুষের ভেতরেই কম বা বেশি কিন্তু হিলিং ক্ষমতা আছে। কিন্তু সবাই সেই ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে পারে না কিংবা জানে না। কিন্তু মায়েরা এটা এতটাই চমৎকার পারেন যে, জীবনের নানা অপুর্ণতায় সৃষ্ট ক্ষতগুলোকে পূরণ করে দেন শব্দের কারুকার্যে।

আমার মামণি তো এমন একজন মানুষ আমার জন্য যে, যখনই অসহায়ত্ব মনকে আঁকড়ে ধরে… মনেহয় শূন্যতায় ভাসছি…বাতাসের হালকা পরশই যথেষ্ট গভীর সমুদ্রে পতিত করার জন্য! গ্লানিময়- ক্লান্তিকর পরিস্থিতি যখন মনের কোমল অনুভূতিগুলো কেড়ে নিতে চায়! জোনাকির মত ছোট ছোট আশার আলো জ্বেলে মনের ভুবনকে করে তোলেন স্বপ্নিল! আকুলতা বিহীন উদ্যমহীন মেঘে ঢাকা মনের আকাশে বৃষ্টি ও রোদের সংমিশ্রনে সাজিয়ে যান রংধনু! আমাকে সর্বদা মনে করিয়ে দেন গোধূলির আবছা আলোছায়ার সূর্য ডুবে গেলেও, পরদিন ঠিকই এক বুক আলো নিয়ে আবার ফিরে আসে পৃথিবীর বুকে……

জানি না আমি কতটুকু ভালো সন্তান হতে পেরেছি মামণির কাছে। কিন্তু মনেহয় এই উপলব্ধিগুলো যদি পাথেয় থাকতো হয়তো অনেক বেশি ভালো সন্তান হতে পারতাম। কোথায় যেন পড়েছিলাম-“ তাত্ত্বিক জ্ঞান এক বছরে যা শেখায়, ব্যবহারিক জ্ঞান একদিনে তারচেয়ে বেশি শেখায় মানুষকে। সত্যিই মাকে নিয়ে পড়া অসংখ্য সাহিত্যের তুলনায়, আমার সন্তানের সাথে কাটানো একটি মুহুর্তকে অনেক বেশি ভারী মনেহয় আমার কাছে। যা সমৃদ্ধ করে তুলছে আমার মাতৃত্বকে এবং উপলব্ধি করতে সহায়তা করছে মায়ের মহত্ত্বকে।

হাদিসে বলা হয়েছে—‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’। এই হাদিসে যেমন সুসংবাদ রয়েছে সন্তানদের জন্য, তেমনি দুঃসংবাদও রয়েছে তাদের জন্য। কেননা মাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে বেহেশতে প্রবেশ করা সম্ভব হবে। কিন্তু তিনি অসন্তুষ্ট হলে রুদ্ধ হবে বেহেশতের দ্বার। তাই মায়ের সন্তুষ্টি অর্জন একজন সন্তানের অপরিহার্য দায়িত্ব।

কুরআনে আল্লাহ বলেছেন- “তোমার রব আদেশ করছেন, তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কারও ইবাদত করো না এবং তোমরা (তোমাদের) পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করো; তাদের একজন কিংবা উভয়ই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহলে তাদের সঙ্গে বিরুক্তিসূচক কিছু বলো না এবং কখনও তাদের ধমক দিও না, তাদের সঙ্গে সম্মানজনক ভদ্রজনোচিত কথা বলো। অনুকম্পায় তুমি তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো এবং বলো, হে আমার রব! তাদের ওপর তুমি (ঠিক সেভাবেই) দয়া করো, যেমনিভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছিলেন।” (সূরা বনী ইসরাইল ২৩-২৪)।

 

বসুন্ধরা গেট ও যমুনা ফিউচার পার্কের জন্য আলাদা ফুট ওভার ব্রিজ চাই


ডা. এম এস কবীর জুয়েল


বসুন্ধরা আবাসিক ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ৪টি প্রাইভেট ভার্সিটি, ৩টি নামি দামী স্কুল, দুই-তিনটি হাসপাতাল, গ্রামীণ ফোনের প্রধান কার্যালয়সহ শতাধিক নামে বেনামে অফিস রয়েছে,যাদের সিংহভাগ ছাত্র ছাত্রী ও কর্মচারীগণ আশপাশের অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের বাসা ভাড়া-র এলাকায় থাকেন, ডিভাইডারহীন অবস্থায় তারা পূর্বে সিগনাল মেনে যথারীতি রাস্তা পার হতেন, বছর তিন আগে যমুনা ফিউচার পার্ক চালু হলে, ছোট্ট ডিভাইডার দিয়ে যানবাহন পারাপার(ইউ টার্ন) বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে স্থানীয় বাসিন্দাসহ বাহিরে থেকে বসুন্ধরায় পড়তে আসা আবরারের মতো শিক্ষার্থীরা, চাকুরীরত মানুষজন ও চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ লোকজন খুব বিপদে পড়েন, তাদের গাড়ী/সিএনজি নিয়ে ৩০০ ফিট রোড দিয়ে ঘুরে আসতে হয় নতুবা মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে আজকে নিহত আবরারের মতোই চোখ কান খোলা রেখে এইটুকু রাস্তা পার হতে হয়। পদব্রজে গমনকারীদের জন্য বারবার সেতু নির্মানের অনুরোধ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাতে ভ্রক্ষেপ করেননি।

আশা করি, কর্তৃপক্ষ এবার অবশ্য-ই একটি ‘Foot Over Bridge’ তৈরী করবেন। কোন অতিব প্রয়োজনীয় জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণের জন্য দেশে একেকটি প্রাণের আত্মাহুতি দিতে হচ্ছে, আমাদের এই কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে,রাজপথের প্রাণঘাতি স্থানগুলো চিহ্নিত করে, আবরার কিংবা দিয়া খানম মীম-দের মতো কচি পাতা ঝড়ে পড়ার পূর্বেই তাদের সুরক্ষা কল্পে ট্রাফিক ও সড়ক বিভাগের সমন্নয়

কমিটি দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন, এ প্রত্যাশা সকলের। আব রার ও তার সহপাঠিরা গত জুলাইয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনেও শান্তিপূর্ণভাবে এই স্থানে অবস্থান নিয়েছিলো,আজ সে নিজেই ওপারে চলে গেলো, আমরা বসুন্ধরা বাসী অনতিবিলম্বে এখানে একটি ফুট ওভার ব্রিজ প্রত্যাশা করছি, যা যমুনা ফিউচার পার্কের জন্যও নিরাপত্তা বিধান করবে।

সড়কের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণের জন্য দেশে একেকটি প্রাণের আত্মাহুতি দিতে হচ্ছে, আমাদের এই কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

ইতিমধ্যেই তড়িৎ সিদ্ধান্তঃ ক্রমে উক্ত বাসের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে, আমরা আশা রাখছি, খুব শীঘ্রই সেই চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

ডা. এম এস কবীর জুয়েল
এমবিবিএস, বিসিএস, এম.ফিল(নিউরো-সাইকিয়াট্রি), ডক্টর অফ মেডিসিন(এম.ডি) মনোরোগ
সৌদি বিশেষায়ীত স্বাস্থ্য কমিশন সার্টিফাইড ইন সাইকিয়াট্রি এন্ড সাইকোথেরাপী
ভূতপূর্ব মনোরোগ ও মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, আল জউফ, সৌদি আরব
ভূতপূর্ব সহযোগী অধ্যাপক
এশিয়ান ইনষ্টিটিউট অফ মেডিসিন, সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কেদাহ্, মালয়েশিয়া
ইউনিট প্রধান, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সিলিং ইউনিট, মনোরোগ বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা 

 

মাতৃত্বের উপলব্ধি-১


আফরোজা হাসান


মাতৃত্বের উপলব্ধি কি?

প্রশ্নটির জবাবে বলেছিলাম, মামণির যে কথা কাজ ও আচরনগুলো বিরক্তির সূচনা করতো সেগুলোকেই এখন ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ মনে হয়। খাবার নিয়ে মামণির পেছন পেছন ঘোরা, রাত জাগা নিয়ে আপত্তি করা, মাঝরাতে একবার উঠে এসে দেখে যাওয়া, কলেজ থেকে বাসায় ফিরতে দেরী হয়ে অস্থির হয়ে ফোন করা ইত্যাদির পেছনে যে মার সদা কল্যাণকামী সত্ত্বাই কাজ করে সেটা এখন বুঝি। কারণ আমিও নিজেও যে এখন মা…আমার সন্তানকে ঘিরে আমার মনেও যে খেলা করে নানারঙের অনুভূতি। ছোটবেলায় মাকে নিয়ে কত ছড়া-কবিতা-গল্প-গান পড়েছি, শুনেছি, লিখেছিও সামান্য কিছু। কিন্তু নিজে মা হবার পরই মনেহয় সত্যিকার ও প্রকৃত অর্থে মাতৃত্বকে উপলব্ধি করেছি। চোখ বন্ধ করে আরেকবার নিজের মা হবার সফরটা ঘুরে দেখতে ইচ্ছে হলো।

অপারেশন শেষ করে যখন ডাক্তার আমার কোলে দিয়েছিলেন আমার ছেলেকে…! সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে যে ক্লান্তি মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছিল তা উবে গিয়ে ঝিলমিলিয়ে উঠেছিল পূর্ণিমা রাতের স্নিগ্ধ সজিব চন্দ্রিমা। নাহ! কোন উপমা দিয়েই সেই মুহুর্তকে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব না। মাতৃত্বের প্রথম স্পর্শ ঘেরা সেই ক্ষণ এতটাই দুর্লভ যে শব্দে ধারণ করার ক্ষমতা আমার নেই! ওর কান্নার ধ্বনি মনের থরথরে ভীতু অনুভূতিকে রূপান্তরিত করেছিলো চরম প্রাপ্তির আনন্দাশ্রুতে। মাত্র একমিনিট পরই কোল থেকে নিয়ে গিয়েছিলো বেবীকে। কিন্তু সেই একমিনিটের ক্ষমতা কতটাই না বিস্ময়কর ছিল, দূর করে দিয়েছিল সমস্ত ভীতি, ব্যথা, দুর্বলতা।

আমার শারীরিক অপরাগতার কারণে যখন খাবারের অভাবে ক্ষুধায় কান্না করছিলো ছোট্ট বাবাটা হাত-পা ছুঁড়ে, অশ্রুর ঢল নেমে এসেছিলো আমার চোখেও। ক্ষুধার্ত সন্তানের মুখে খাবার তুলে না দিতে পারার কষ্টের প্রচণ্ডতা কিছুটা হলেও উপলব্ধি করেছিলাম সেদিন। এই উপলব্ধিটা আমার জীবন ভান্ডারের অমূল্য এক রত্ন। যা এখনো আমাকে প্রেরণা যুগিয়ে যায় অনেক কাজের…

সেই যে শুরু হলো মাতৃত্বের সফর তারপর থেকে চলছি তো চলছিই। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হয়তো এমনি করেই চলতে হবে। তবে এই পথ চলার প্রতি মুহুর্তে আমি শিখছি কিছু না কিছু। যে শিক্ষা আমাকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করছে মাতৃত্বকে, মায়েদের অনুভূতিকে। সন্তানের জন্য মায়ের মনের আকুতির রঙ এখন তাই আমি চিনি।

পড়াশোনা ব্যাপারে মার বারবার তাগাদা দেয়া খুব বিরক্ত করে সন্তানদেরকে। কিন্তু সন্তানরা কি জানে তাদের সাফল্য কত বড় অর্জন মায়ের জন্য? যখন শিক্ষকরা মার কাছে এসে প্রশংসা করেন তাঁর সন্তানের, প্রশান্তির কেমনতর হাওয়া বয়ে যায় মার অন্তর জুড়ে? প্রতিটা মায়ের কাছে তার সন্তান সবচেয়ে স্পেশাল, তাই হয়তো তিনি চান সবাই তাঁর সন্তানকে সেভাবেই দেখুক, ভাবুক।

মা তো আমাদের জীবনে এমন একজন যিনি মনে উৎসাহের দিয়া জ্বেলে তাতে নিরবধি অনুপ্রেরণা দেবার কাজটি করে যান খুব যত্নের সাথে। নানারকম ব্যর্থতা- হতাশায় আমরা যখন থমকে দাঁড়িয়ে যাই, শক্তি হারিয়ে ফেলি উঠে দাঁড়ানোর, জীবনটাকে মনেহয় তপ্ত দাহ! তখন হাজির হয় এক টুকরো ছায়াদানকারী মেঘ হয়ে। যার সুশীতল কণ্ঠ বাতাস ও আলো সঞ্চার করে মনের শুকিয়ে যাওয়া পল্লবগুলোতে।

চলবে..

 

মনের জানালা


বৃত্তের বাইরে


ছোটবেলায় পাঠ্য বইতে পন্ডশ্রম কবিতাটা পড়েছিলাম। চিলে কান নিয়ে গেছে, কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা। সারাদিন খালে-বিলে, পাড়ায় নানান জায়গায় সবাই মিলে কানের খোঁজে ঘুরে দেখা গেল কান কানের জায়গাতেই আছে। স্কুলেও আমরা এমন খেলা খেলতাম যার নাম ছিল চাইনিজ হুইস্পার। কথা যে এ-কান ও-কান করে পরিবর্তন হয় তার প্রমাণ হিসেবে দশ-বারোজন মিলে কোন একটা গান বা কবিতার লাইন একজনের কানে বলে সবার কান ঘুরে নিজের কানে এলে দেখা যেত লাইনটির অর্থ পুরোপুরি পাল্টে গেছে। এর আরো বড় প্রমান পেলাম বাবার চাকরির কারণে যখন আবুধাবি ছিলাম সেই সময়।

সময়টা ঠিক মনে নেই তবে সম্ভবত ২০০০ সালের গোড়ার দিকে। আমাদের এক পরিচিত বাংলাদেশী ফোন করে আমার মাকে জানালেন,’ভাবী শুনেছেন দুবাইয়ে ভূমিকম্প হয়েছে। আমরা আবুধাবি থাকাকালীন একদিন হঠাৎ বৃষ্টি দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম। স্থানীয় লোকজনের কাছেও মরুভূমিতে বৃষ্টি হওয়াটা খুবই অবাক ব্যাপার ছিল। শেখদের দেখেছিলাম গাড়ি নিয়ে হৈচৈ করে বৃষ্টি দেখার জন্য রাস্তায় বের হয়েছিল। এই হিসেবে তখন ভূমিকম্পের ব্যাপারটাও অনেকের কাছে বেশ অবাক করার মত ঘটনা ছিল যদিও আমাদের দেশে আমরা এসব দেখে অভ্যস্ত। যাই হোক দুবাইয়ের ভূমিকম্পের খবরটা মুহূর্তে ফোনের মাধ্যমে এই কান সেই কান হতে হতে আবুধাবিতে বাঙ্গালীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লো। প্রথমে খবরটা ছিল দুবাইতে হয়েছে, এরপর শোনা গেল আবুধাবিতে হতে পারে, দুপুরের মধ্যে শুনলাম আবুধাবিতে ভুমিকম্প হবে সবাই যেন যে যার বিল্ডিঙয়ের নিচে রাস্তায় চলে আসে। এর মধ্যে আবার যেসব ভাইরা চাকরির কারনে দূরে অবস্থান করছিলেন তারা ভাবিদের পরামর্শ দিলেন ঘরের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, পাসপোর্ট, গয়নাসহ যেন ঘর থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে যান । আমি মায়ের সাথে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম ফেরার সময় দেখি মরুভূমির এই কাঠ ফাঁটা রোদে আমাদের এক পরিচিত স্ট্রলারে দুই বাচ্চা নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছেন। জিজ্ঞাসা করে জানলাম উনি ভাইয়ের পরামর্শ অনুযায়ী বাচ্চা আর প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ৩/৪ ঘণ্টা থেকে দাঁড়ানো। বাইরে ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে তিনি সমানে ঘামছেন আর ভূমিকম্পের অপেক্ষা করছেন। মা দেখে বললেন, শিগগির বাসায় যান, এই গরমে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়বে। একটা কথা শুনলেন আর অমনি বিশ্বাস করলেন! ভূমিকম্প কখনো বলে কয়ে আসে! পরদিন শুনেছিলাম ভুমিকম্পের ভয়ে সেদিন বিভিন্ন বিল্ডিঙয়ের নিচে অনেক বাঙ্গালীরা এমন রাস্তায় বেরিয়ে অপেক্ষা করছিলেন যা পরে সবার মধ্যে কৌতুকের সৃষ্টি করেছিল। মজার ব্যাপার হল মহিলারা না হয় আবেগপ্রবন বেশী, না বুঝে অনেক কিছু করে কিন্তু পুরুষরা! ঘটনাটা বলার উদ্দেশ্য হল আমরা বাঙালীরা হুজুগে মাতি। কোন কিছু শুনলে পুরুষ মহিলা উভয়েই ঘটনার সত্যতা যাচাই বাছাই না করে সহজে বিশ্বাস করে ফেলি।

ভার্চুয়াল জগতটাও অদ্ভুত। কোন একটি খবর যখন একজন মানুষ অন্য একজনকে বলে তখন কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয় কেননা প্রত্যেক মানুষেরই নিজেকে প্রকাশ করার স্ব-স্ব স্টাইল থাকে। এই খবরটাই যখন অন্য একজনকে বলতে যাই তখন কিভাবে বললে তা অন্যের কাছে সত্য, বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য হবে সেই চিন্তায় আমরা আসল কথার সাথে নিজেদের মনগড়া আরো কিছু যোগ করে অন্যের কাছে প্রকাশ করি। এভাবে যদি খবরটা একজন মানুষ থেকে অন্য আরেকজন মানুষের কাছে যেতে সামান্য পরিবর্তনও হয়ে যায় তবে ঐ খবরটা হাজার মানুষের মাঝে বা পুরো মহল্লায় জানাজানি হলে কি অবস্থা হবে! মূল কথাটা শেষে গিয়ে কতটুকু সত্য হয়ে দাঁড়াবে? তাই যে কোন ধরনের উসকানিমূলক বা হঠকারী পোষ্ট দেবার আগে একটু চিন্তা করুন খবরের উতস সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন? চলুন, প্রথমে আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি কি এগুলোর সাথে জড়িত? আমি কি মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছি? আমার আচরণে কি অন্য কেউ কষ্ট পাচ্ছে? আমি যে খবরটা প্রচার করছি তার সত্যতা কতটুকু? আমি কি অন্যের কাছে প্রচার করার আগে ঠিকমত যাচাই করে নিয়েছি? মানুষ হিসেবে এইটুকু দায়িত্ববোধ আশা করাটা অন্যায় নয় নিশ্চয়ই।

 

অসুস্থ স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান সিলেটের পারভীন


নারী সংবাদ


নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বাংলাদেশী নারী হুসনে আরা পারভীন (৪২)-এর বাড়ি সিলেটে। তিনি স্বামীর সাথে নিউজিল্যান্ড থকতেন। অসুস্থ স্বামী ফরিদ উদ্দিনের খোঁজ নিতে গিয়েই পারভীন মারা যান বলে জানা গেছে।

ফরিদ উদ্দিন আহমদের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার মিরেরচক গ্রামে। আর হুসনে আরা পারভীন সিলেটের গোলাপগঞ্জের জাঙ্গাল হাটা গ্রামের মৃত নুরুদ্দিনের মেয়ে। ১৯৯৪ সালে বিয়ে হওয়া এই দম্পত্তির এক কন্যা সন্তান রয়েছে।। সর্বশেষ ২০০৯ সালে তারা বাংলাদেশে এসেছিলেন।

ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে এই সন্ত্রাসী হামলায় তিনজন বাংলাদেশী নিহতের খবর পাওয়া গেছে। হামলায় পারভীন মারা গেলেও বেঁচে গেছেন তার স্বামী ফরিদ উদ্দিন।

পারভিনের ভাগ্নে মাহফুজ চৌধুরী জানান, বিয়ের পর স্বামীর সাথে নিউজিল্যান্ড যান হুসনে আরা পারভীন । তারা ক্রাইস্টচার্চ এলাকায় বসবাস করতেন। তার স্বামী ফরিদ উদ্দিন কিছুদিন দিন ধরে প্যারালাইজড অবস্থায় আছেন। হামলার প্রায় আধঘন্টা আগে মসজিদে অসুস্থ স্বামীকে রেখে পার্শ্ববর্তী নারীদের জন্য মসজিদে যান হুসনে আরা। প্রায় ১৫ মিনিট পর পুরুষদের মসজিদের ভেতরে গুলির শব্দ শুনে পারভীন তার স্বামীর খোঁজ নিতে যান। এসময় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তাকে গুলি করলে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান।

নিজের খালু বেঁচে আছেন জানিয়ে মাহফুজ চৌধুরী বলেন, মসজিদের বাইরে গুলির শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন মুসল্লি হুইল চেয়ারে করে তাকে (ফরিদ উদ্দিনকে) মসজিদ থেকে বের করে নেওয়ায় তিনি বেঁচে গেছেন। নিউজিল্যান্ডে বসবাসকারী নিহত পারভীনের ভাবী হিমা বেগম ঘটনার পর টেলিফোনে সিলেটে থাকা পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানান।

মাহফুজ চৌধুরী বলেন, সন্ত্রাসী হামলার প্রায় একঘণ্টা পর হিমা বেগম ফোন করে পারভীন খালার নিহতের খবরটি আমাদের জানিয়েছেন। তখন বাংলাদেশ সময় আনুমানিক সকাল ১০টা।
সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

শিশুদের প্রতি যত্ন (খেলাধুলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়)


প্যারেন্টিং


খেলাধূলার প্রতি অধিক গুরুত্ব শিশুর বুদ্ধিমত্তার উন্নতিতে সাহায্য করে। যে শিশুরা বেশি বেশি সৃজনশীল উপায়ে খেলাধূলা করে তাদের দক্ষতা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। তবে যদি একটু একটু বই কিনে দেওয়া যায় শিশুদেরকে স্মার্ট হতে সাহায্য করে।

জেনে নিই চলুন কিছু নিয়ম:

গুছিয়ে রাখা

গবেষণায় বলা হয়েছে যে, গুছিয়ে রাখা শিখলে শিশুরা অনেক বেশি স্মার্ট হয়। শিক্ষার্থীরা গড়ে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে এবং সার্বিকভাবে অনেক বেশি জিপিএ অর্জন করে।

শিশুর জন্য সময়

ব্যক্তির শারীরিক ফিটনেস তার আইকিউ এর সাথে সম্পর্কিত। শিশুর জন্য সময় কীভাবে মস্তিষ্কের গঠন ও বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার। সুতরাং শিশুকে বেশি বেশি সময় দিন।

খেলাধূলা

শিশুর শিশু হওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে অনির্দিষ্ট খেলাধুলা।মুক্তভাবে খেলাধুলা করলে শিশুর জ্ঞানীয় এবং সামাজিক দক্ষতার উন্নতি ঘটে। এর ফলে সে সুখি ও স্বাস্থ্যবান হয়ে গড়ে উঠে।

ভাষা শিক্ষা

দুটি ভাষায় দক্ষ শিশুরা চাপের মধ্যেও ভালো ফোকাস করতে পারে।বয়ঃসন্ধিকালের পূর্বে ভাষা শিক্ষার ক্ষমতা বেশি থাকে। দেখা গেছে যে ছোট শিশুরা অনেক নিখুঁতভাবে ও সাবলীলভাবে নতুন ভাষা শিখতে পারে।

শিশুর পছন্দ

শিশুর পছন্দের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। ভিডিও গেম খেলতে বিভিন্ন দক্ষতার উন্নতি হয়। যেমন- হাত ও চোখের সমন্বয়, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, সম্পদের ব্যবস্থাপনা, দ্রুত চিন্তা ও প্রতিক্রিয়া, স্মৃতিশক্তি, স্থানিক উপলব্ধি, বিচার করার ক্ষমতা, নির্ভুল হিসাব, যুক্তি ইত্যাদি।

এক সাথে খাওয়া

পড়াশুনা শিশুর বুদ্ধিমত্তার উন্নতিতে সাহায্য করে বটে তা সবাই জানেন কিন্তু এক সাথে খাওয়া শিশুদের বেশি বেশি সামাজিক শিক্ষা ও দক্ষতাকে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে।

পজিটিভ কথা বলা

পজিটিভ কথা বলুন বেশি বেশি শিশুকে মার্জিত ও ভদ্র হতে সাহায্য করবে। যে শিশুদের বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রশংসা করা হয় তারা মনে করে যে এটা তাদের জন্য নির্ধারিত।

 

কাঁঠালিয়ায় স্বামীর হাতে স্ত্রী নিহত


নারী সংবাদ


ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলায় পারিবারিক কলহে স্বামীর দা-এর কোপের আঘাতে স্ত্রী নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত পারভিন আক্তার (৫২) ওই উপজেলার উত্তর চেঁচরী রামপুর গ্রামের শহীদুল ইসলাম জমাদ্দারের (৬০) প্রথম স্ত্রী এবং তিন সন্তানের মা। বুধবার দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে জানায় পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই ঘাতক স্বামী পলাতক রয়েছে।

ভান্ডারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, নিহতের উরুতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়।

নিহতের প্রতিবেশী স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ সোহেল বলেন, দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে কলহ লেগেই থাকতো। কয়েক দিন ধরেই শুনছি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়।

কাঁঠালিয়া থানার ওসি মোঃ এনামুল হক বলেন, পারভিনের অনুমতি ছাড়াই আরেক নারীকে বিয়ে করেন শহীদুল। আর তা নিয়ে পারভিনের সাথে শহীদুলের ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো।

তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার দুপুরে ঘরে থাকা ধারালো গাছ কাটার দা দিয়ে পারভিনকে কুপিয়ে আহত করে স্বামী শহীদুল। এসময় এলাকাবাসী পারভিনকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার ভান্ডারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরে তার মৃত্যু হয়।

অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে পারভিনের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন ঘাতক শহীদুলকে আটকের অভিযান চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ পিরোজপুর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

ছাত্রীর শ্নীলতাহানি প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার


নারী সংবাদ


বেলাব উপজেলার চরআমলাব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্নীলতাহানি করার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গত সোমবার বিকেলে উপজেলার চরআমলাব এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষ ঘেরাও করলে পুলিশ তাকে আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে যায়।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরআমলাব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সোমবার বিকেলে একটি অনুষ্ঠান চলছিল। এ সময় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্নীলতাহানি ঘটান প্রধান শিক্ষক। পরে ছাত্রীটিকে ঘটনা কাউকে না জানাতে হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। দুই মাস আগেও ওই ছাত্রীকে প্রধান শিক্ষক শ্নীলতাহানি ঘটালে লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলেনি ওই ছাত্রী। সোমবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে ছাত্রী পুরো ঘটনা তার পরিবারের লোকজনকে জানায়। পরে পরিবারের লোকজন স্থানীয়দের নিয়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে অফিস কক্ষ ঘেরাও করলে প্রধান শিক্ষক ভেতর থেকে তার কক্ষ আটকে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তাকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা গণপিটুনি দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকে বাঁচাতে গিয়ে কয়েক পুলিশ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সমশের ভূঁইয়া জামান রিটন আহত হন। বেলাব থানার ওসি ফখরুদ্দীন ভূঁইয়া বলেন, প্রধান শিক্ষককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

সুত্র: সমকাল।

 

বিয়ে প্রস্তুতি


কানিজ ফাতিমা


বিয়ে ব্যাপারটি জীবনের অতীব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এখানে ভুল হয়ে গেলে তার পরিণতি কঠিন হতে পারে যা শুধু দু’টি জীবন নয়, দু’টি পরিবারের জন্যও হয়ে উঠতে পারে কষ্টকর। কাজেই এ সিদ্ধান্তের জন্য কিছু পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। যদিও বিয়ের ব্যাপারটির সঙ্গে জড়িত থাকে আবেগ, স্বপ্ন আর সোনালী সব আশা, তথাপিও সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসব আবেগের ঊর্ধ্বে উঠে বাস্তবসম্মত চিন্তার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ছেলে ও মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য। তবে যেহেতু এখনও আমাদের সমাজে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় অসুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে সেহেতু মেয়েদের এক্ষেত্রে আরও বেশি সচেতন হওয়া জরুরী।

বিবাহপূর্ব সচেতন প্রস্তুতির কয়েকটি ধাপ রয়েছে।

সর্বপ্রথম ধাপটি হলো, নিজের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেয়া বা নিজেকে চেনা। আমাদের মনে হতে পারে যে, আমরা সবাই নিজেকে চিনি। কিন্তু বাস্তবে তা নাও হতে পারে। নিজের মনকে জানা থাকলে আপনার সহজ হবে আপনার নিজের বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে। কাজেই নিজেকে ও নিজের মনকে জানার জন্য গভীর চিন্তা করুন। সময় নিন। খুঁজে বের করুন আপনার ভিতরের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ভাল গুণ। এবার তা ক্রমানুসারে লিখে ফেলুন। যেমন ধরুন একজন এভাবে ভাবতে পারে-

ভাল গুণ-১ : আমি পরিশ্রমী।

ভাল গুণ-২ : আমি সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলতে পারি।

ভাল গুণ-৩ : আমি সৎ থাকতে পছন্দ করি।

আবার ভাবুন এবং নিশ্চিত হোন যে, আসলেই এই গুণ তিনটি আপনার মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে কি না।

দ্বিতীয়ত : খুঁজে বের করুন আপনার সবথেকে খারাপ তিনটি দোষ, সততার সঙ্গে খুঁজুন। এড়িয়ে যাবার কিছুই নেই। এ আপনার নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া। এবার ক্রমানুষারে লিখে ফেলুন দোষ। যেমন ধরুন কেউ এভাবে লিখতে পারে –

দোষ-১ : আমি অল্পতেই রেগে যাই।

দোষ-২ : আমি কৃপণ।

দোষ-৩ : আমি নিজের আত্মীয়দের ব্যাপারে অন্ধ কিন্তু অন্যদের দোষ বেশি দেখি।

এবার খুঁজে বের করুন কোন তিনটি জিনিস আপনি সব থেকে বেশি পছন্দ করেন। এরপর তা লিখি ফেলুন। যেমন :

পছন্দ-১ : বই পড়তে।

পছন্দ-২ : ভ্রমণ করতে।

পছন্দ-৩ : বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে।

সর্বশেষে লিখুন সেই তিনটি জিনিস যা আপনি খুবই অপছন্দ করেন বা সহ্য করতে পারেন না। যেমন হতে পারে –

অপছন্দ-১ : মিথ্যা কথা।

অপছন্দ-২ : প্রদর্শনেচ্ছা।

অপছন্দ-৩ : বেশি কথা বলা বা বাড়িয়ে বলা।

এবার দেখুন আপনি আপনাকে আগের চেয়ে অনেক বেশি জানেন। এভাবে নিজের সম্পর্কে সচেতনতা অর্জন বিয়ের পূর্বের মানসিক প্রস্তুতির প্রথম ধাপ।

এবার আসা যাক দ্বিতীয় ধাপে। দ্বিতীয় ধাপ হলো নিজের মূল্যায়ণ। আমরা অনেকক্ষেত্রেই নিজের মূল্যায়ণ না করেই নিজের চাওয়া নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এতে সিদ্ধান্ত ভুল হবার সম্ভাবনা অধিক। নিজের মূল্যায়ণ করতে হলে প্রথম খুঁজে বের করুন আপনার বায়োডাটার পজিটিভ পয়েন্টগুলো কী কী। ক্রমানুসারে তা লিখুন। যেমন-

পজিটিভ পয়েন্ট-১ : একটি ভাল চাকুরী।

পজিটিভ পয়েন্ট-২ : আর্থিক স্বচ্ছলতা।

পজিটিভ পয়েন্ট-৩ : উচ্চ শিক্ষা

পজিটিভ পয়েন্ট-৪ : শিক্ষিত ও রুচিশীল পরিবার।

এবার ভাবুন আপনার বায়োডাটার দুর্বল দিকগুলো কী কী। যেমন হতে পারে-

দুর্বলতা-১ : উচ্চতা কম।

দুর্বলতা-২ : আর্থিক অস্বচ্ছলতা।

দুর্বলতা-৩ : বড় পরিবার ও তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমার।

দুর্বলতা-৪ : পরিবারের অন্যান্যরা যথেষ্ট শিক্ষিত নয় ইত্যাদি।

এভাবে আপনার প্রতিটি পজেটিভ ও নেগেটিভ পয়েন্টকে মূল্যায়ণ করে নিজের অবস্থাটা ভাল করে বুঝে নিন।

এবার আসুন প্রস্তুতির ৩য় ধাপে। এ ধাপে জেনে নিন আপনি কী চান? মজার ব্যাপার হচ্ছে অধিকাংশ নারী -পুরুষই বিয়ের আগে জানেনই না যে আসলে তারা কি চান।খুব সাধারণ কয়েকটি ব্যাপার যা চাওয়া হয় পাত্র খোঁজার সময়। তাহলো ভাল মেয়ে, সুন্দরী , ফর্সা, শিক্ষিত ও ভাল পরিবার ও ভাল উচ্চতা, খেয়াল করে দেখুন এতে মোটামুটি সবই চাওয়া হয়েছে। তাছাড়া ভাল মেয়ের কী সর্বজনসম্মত কোন সংজ্ঞা আছে? এরকম চাওয়া আসলে কোন চাওয়া নয়। সুস্পষ্ট ও নির্দিষ্ট করে নিজের মন ও নিজের ক্যারিয়ারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গভীরভাবে ভাবুন আপনার আসলে কেমন সঙ্গী দরকার। আসলেই কোন বৈশিষ্ট্যগুলো আপনার খুবই প্রয়োজনীয় আর কোনগুলো ছাড় দিতে আপনি প্রস্তুত। এবার তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা লিখে ফেলুন যা আপনি অবশ্যই চান এবং যা আপনি কোন অবস্থাতেই ছাড় দেবেন না। যেমন-

আবশ্যক-১ : ধর্মের অনুশীলন।

আবশ্যক-২ : উচ্চশিক্ষিত (অনার্স বা মাস্টার্স)

আবশ্যক-৩ : চাকুরীজীবি।

এবার আরও তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা লিখুন যা আপনি চান তবে প্রয়োজনে ছাড় দিতে রাজি আছেন-

আবর্শক-৪ : উচ্চতা।

আবশ্যক-৫ : শিক্ষিত পরিবার।

আবশ্যক-৬ : সুন্দর।

মনে মনে ভেবে রাখুন যে, বাধ্যতামূলক তিনটি বৈশিষ্ট্যের পরে নীচে (৪ – ৬) তিনটি যে কোন দু’টি বা একটি ছাড় দিতে আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আপনি যখন এই চাওয়াগুলো ঠিক করেন তখন আপনাকে নিজের মূল্যায়ণ (দ্বিতীয় ধাপ)-এর দিকে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে আপনার দুর্বল পয়েন্টগুলোকে মনে রাখতে হবে। নয়তো আপনার চাওয়াগুলো বাস্তবসম্মত হবে না। আমি অনেক সময় এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি যার নিজের বায়োডাটায় পজেটিভ পয়েন্টের তুলনায় দুর্বল দিক অনেক বেশি কিন্তু চাওয়ার লিস্ট অনেক বড়। এরূপ অবাস্তব চাওয়া শুধু যে আপনার বিয়ের সময়ই সমস্যা তৈরি করবে তা নয় বরং পরবর্তী পারিবারিক জীবনেও অশান্তির কারণ হতে পারে। বিয়ের সময় সমাজে কোন পাত্র বা পাত্রীর দাম বেশি সে হিসেবে না গিয়ে বরং আপনার জন্য কে বেশি উপযোগী হবে সেটাই খোঁজার চেষ্টা করুন। বেশি আবেগী হয়ে অসচেতন সিদ্ধান্ত নেয়া বা অতি উচ্চাকাংখী হওয়া দুই-ই আপনার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।

 

বিশেষ অবদান রাখায় ১৫ নারীকে সম্মাননা প্রদান


নারী সংবাদ


প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করল গুলশান সোসাইটি। গতকাল রবিবার এ উপলক্ষে নগরীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে প্রথম নারী জাতীয় অধ্যাপক ড. সুফিয়া আহমেদ এবং বাংলাদেশে পক্ষাঘাতগ্রস্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র ‘সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড’ (সিআরপি)-এর পরিকল্পক ও প্রতিষ্ঠাতা ভেলরি টেইলরকে আজীবন সম্মাননাসহ ১৫ নারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হাইকোর্টের বিচারপতি কাশেফা হোসেন বলেন, দেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন আছে, বাল্যবিয়ে রোধেও আইন আছে। তারপরও নারী নির্যাতন ও বাল্যবিয়ে বেড়ে চলছে। সমাজে ধর্ষণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। অবস্থা পরিবর্তনে আইনের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিতে পারিবারিক শিক্ষার উপর জোর দেন তিনি।

বিশেষ অতিথি দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, গণমাধ্যমে এবছর নারী দিবসে ব্যাপক প্রচারণা প্রমাণ করে নারীর অগ্রযাত্রা মানুষকে সচেতন করতে পারছে। মানুষ নারীর দক্ষতাকে স্বীকার করতে বাধ্য। নারীকে আজ আর কম বুদ্ধি, তারা পারে না বলা যাবে না। কারণ তারা সব ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে। যদিও সমাজ ধর্মের দোহাই আর নানা রকম শব্দ ব্যবহারে জব্দ করে পেছনে টেনে রাখতে সচেষ্ট আছে।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সোসাইটির প্রথম নির্বাচিত নারী মহাসচিব শুক্লা সারওয়াত সিরাজ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সভাপতি সাখাওয়াত আবু খায়ের মোহাম্মদ। প্রথা ভেঙে সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখায় যে নারীরা সম্মাননা পান তারা হলেন, প্রথম নারী পাইলট (বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার) আলেয়া মান্নান, সিভিল সার্ভিস পুলিশের প্রথম নারী ক্যাডার ফাতেমা বেগম, কমনওয়েলথ স্বর্ণজয়ী ভারোত্তোলনকারী মাবিয়া আক্তার, তৃতীয় লিঙ্গ-এর অধিকারকর্মী জয়া সিকদার, প্রকাশক মাহরুখ মহিউদ্দিন, ছেলেদের ফুটবল কোচ মিরনা খাতুন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল বই করা প্রতিষ্ঠান স্পর্শ-এর নাজিয়া জাবিন, প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার, নারী-পুরুষের জন্য অ্যাপসভিত্তিক বাইক চালক শাহনাজ আক্তার, ডিজিটাল নারী উদ্যোক্তা মলিহা মালেক কাদের, নিজের বাল্যবিবাহ প্রতিরোধকারী মিতালী বিশ্বাস, প্রকৌশলী আফশিন মোজ্জামেল। সম্মাননা প্রাপ্তদের সম্মাননা স্মারক ও উত্তরীয় প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ড. নাশিদ কামাল ও তার মেয়ে আরমিন মুসা।

সুত্র: ইত্তেফাক রিপোর্ট।

 

পায়েস রান্না


ঘরকন্যা


পায়েস খেতে সবাই পছন্দ করে। পায়েস মজাদার হলে তা খেতে চায় বাসার সবাই। তবে সময় বেশি লাগে ভেবে ইদানীং পায়েস রান্না সময় কমে গেছে। কিন্তু পায়েস রান্না করা খুবই সহজ। সহজে আপনি দ্রুত পায়েস রান্না করতে পারেন।

পায়েস তৈরির সহজ নিয়ম

উপকরণ
১. দুধ ১-১/২ লিটার ঘন করে নিন,
২. পোলাও এর চাল ১৫০ গ্রাম,
৩. দারুচিনি ১,১/২ ইঞ্চি,
৪. এলাচ কয়েকটি,
৫. তেজপাতা ২টি, চিনি স্বাদমতো, বাদাম, লবণ সামান্য।

প্রস্তুত প্রণালী
ঘন দুধ করে নিন। অল্প আগে চাল ধুয়ে রাখতে হবে। ১৫০ গ্রাম পোলওয়ের চাল ভিজিয়ে রাখতে হবে।

অন্যদিকে দুধ জ্বাল দিতে হবে। দুধ যখন ফুটতে থাকে, তখন চাল ও লবণ দুধের মধ্যে দিয়ে দিতে হয়। এরপর চাল ভাল করে সিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এবং একটু পর পর নেড়ে দিতে হবে। পুড়ে গেলে গন্ধ হবে মনে রাখবেন।

পরিবেশন
সব কিছু ভালোভাবে মিশে গেলে নামিয়ে কিসমিস ও বাদাম দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

 

নারী দিবসে “নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য, ক্যান্সার ও অধিকার”


নারী সংবাদ


আজকে ৯-ই মার্চ রোজ শনিবার “নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য, ক্যান্সার ও অধিকার” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে। কমিউনিটি অনকোলজি ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ – এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। সহযোগিতায় আরও ছিলেন, বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরাম ও মার্চ ফর মাদার।

সভায় মূল আলোচনায় অংশ নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাবেরা খাতুন ও জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের ক্যান্সার-ইপিডিমিওলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি- জাইকার বাংলাদেশ অফিসের প্রধান উপদেষ্টা Yukie Yoshimura।

অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেড এর ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট নাঈমা জান্নাত, ক্যান্সার সারভাইভার রোকেয়া রুমি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হীল-এর প্রতিষ্ঠাতা মিসেস জেবুন্নেসা, অপরাজিতার জ্যেষ্ঠ সদস্য হোসনে আরা হান্নান, সাংবাদিক জান্নাতুল এনা, মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল, ক্যাপ-এর উম্মে হানি মেঘলা, কুমিল্লা কমিউনিটি অনকোলজি ফোরামের রুহুল আমিন, জুম বাংলাদেশের কাজী সদরুল ইসলাম, ওয়ারেস আলী প্রমুখ।

বক্তারা নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের সাথে ক্যান্সারের গভীর সম্পর্ক আছে বলে জানান। জরায়ুমুখের ক্যান্সার, ডিম্বাশয় ক্যান্সার, কোরিওকারসিনোমা, স্তন ক্যান্সার এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা, সূচনায় ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে নারীরা অবহেলিত ও বঞ্চিত। পাশাপাশি বক্তব্যতে হসপিটালের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ কথাও উঠে আসে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে নারীর প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা, গর্ভবতী নারীর সন্তান রাখা না রাখা, অপারেশনের মাধ্যমে প্রজনন অঙ্গহানির মতো গুরুতর সিদ্ধান্ত গ্রহণে, নারীর অধিকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয়। বক্তিতায় বক্তাদের কথায় উঠে আসে।

 

খোলা জানালার হাতছানি


আফরোজা হাসান


আমার ছেলের সাথে নিয়মিত যে কাজগুলো করা হয় তারমধ্যে একটা হচ্ছে গল্পের বই পড়া। আমি যে শুধু ছেলেকে সঙ্গ দেবার জন্য ছোটদের বই পড়ি তা কিন্তু না, আমি ভীষণ রকম উপভোগ করি গল্পগুলো। তাছাড়া নিজে আনন্দ না পেয়ে বাচ্চার মনে আনন্দ ছড়িয়ে দেয়াটা অনেক মুশকিল বলে মনেহয় আমার কাছে। গতরাতে আমরা দুজন ছোট্ট একটা বাচ্চা ছেলের আত্মকথন মূলক একটা বই পড়েছি। একটা বাচ্চা নিজের মনে অক্লান্ত ভাবে কত রকমের কল্পনার জাল যে বুনে চলে সেটাই ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন লেখিকা। গল্পে বাচ্চাটার নিজস্ব একটা আকাশ আছে, একটা সমুদ্র আছে, একটা পাহাড় আছে, পাহাড়ে চড়ার লম্বা একটা সিঁড়ি আছে। আর এসবকে ঘিরে শিশুসুলভ কথোপকথনের ছড়াছড়ি পুরো বইতে। কিন্তু বইয়ের শেষে লেখিকা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে, সবার মনেই প্রকৃতি আছে, আছে প্রকৃতির প্রতিটি রঙ-রূপ…। যেগুলোর অস্তিত্বকে অনুধাবন করতে হলে সবার আগে মনের বন্ধ জানালার কপাটগুলো খুলতে হবে।

ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম থোকা থোকা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। আকাশের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর উপলব্ধি করলাম আমার মনের মাঝেও একটুকরো আকাশ আছে। তাতেও হয় সুর্যাস্ত…সুর্যোদয়…ভেসে বেড়ায় থোকা থোকা মেঘ, ঝরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, কখনো বাঁধ ভাঙ্গে জোছনা, চমকে ওঠে বিজলী, খসে পরে তারা…….! খেয়াল করলাম কোন কারণ ছাড়াই এক এক করে খুলে যাচ্ছে মনের জানালার কপাটগুলো। দেখতে পাচ্ছি মনের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা সুউচ্চ হিমালয়কে, যাকে জয় করার জন্য আছে প্রলম্ব সিঁড়ি। আছে স্বপ্নপুরী, বিষাদের কারাগার, ফুলের বাগান, শান্ত দীঘি, আছে খাঁদা-খন্দ…… ঘৃণার জাল, নিরাশার গলি-ঘুপচি, মিথ্যার চোরাবালি….!

খুলে গেলো আরেকটি জানালা দেখলাম আমারো একটা নিজস্ব সমুদ্র আছে, আছে বাঁকা চাঁদের মতো রুপালি সৈকত। তাতে আছড়ে পড়ে হীরকের ফোয়ারা ছোটাচ্ছে নীলচে সাদা ঢেউরাশি। নীলাকাশ ছায়া ফেলে যার পানিকেও করে তুলেছে একই রকমের নীল। সৈকতের কিনার জুড়ে আছে সারি সারি নারকেল আর পাম গাছ। চারিদিকে অর্কিড, জেসমিন, বুগেনভিলা, কার্নেশান আর ফরগিভ মি নট ফুলের ছড়াছড়ি। বাতাসে ঝিঁঝিঁ পোকার গুঞ্জন আর পাখীদের কিচির মিচির। আর সমুদ্রের গভীরে আছে হাঙ্গর রূপি হতাশা, নীল তিমির মতো উচ্চাশা, লন্ঠন মাছের মতো টিমটিম জ্বলতে থাকা আশা, রংবেরঙের প্রবালের মতো স্বপ্ন……!

আচ্ছা মনের মাঝে মহাকাশ কি আছে…..? নিশ্চয়ই আছে নয়তো মাঝে মাঝে এতো শূন্যতা এতো হাহাকার ঘিরে ধরে কেন মনকে…..? কেমন যেন একটা দমবন্ধ করা পরিস্থিতি, সব থাকতেও কিছুই নেই এমন এক অনুভূতি! মধ্যাকর্ষন বলের অভাবে মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্ন-ভালোবাসা যেখানে ভাসতে থাকে চোখের সামনে কিন্তু তাদেরকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। মনকে ঘিরে ধরে একরাশ শূন্যতা।

 

কেন নারী দিবস সম্পর্কে জানবো?


সম্পাদকীয়


২০১৯ এর প্রতিপাদ্য : ‘‘সবাই মিলে ভাবো, নতুন কিছু করো নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ্ব গড়ো’’।

১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ।

কেন?
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন।আর সেই থেকেই
নারী দিবসের শুরু।

এখন কি বৈষম্য নেই

আছে
(বিশ্ব বাংকের তথ্য—-)
# মজুরিবৈষম্য,
# কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট,
# কাজের অমানবিক পরিবেশ-এখনও নারীরা এই সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তি ও পুরো সমাজকে আঘাত করার কৌশল হিসেবে সংঘাতে যৌন সহিংসতার পথ বেছে নেওয়া অব্যাহত রয়েছে।

সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি -নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে। তবুও কি আমরা নারীরা সত্যিকার অধিকার আদায় করতে পারছি?

নারীদের মধ্যে থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ানো অপরিহার্য। কিন্তু ক্ষমতা প্রাপ্তি ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের এখনো বড় ধরনের বাধার মুখোমুখি হতে হয়।

এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হলো সমান চিন্তা, বুদ্ধিদীপ্ত নির্মাণ, পরিবর্তনের জন্য উদ্ভাবন, যা সেই সব পরিকাঠামো, ব্যবস্থা ও অবকাঠামোকে চিহ্নিত করে, যেগুলো গড়ে উঠেছে পুরুষ নির্ধারিত সংস্কৃতির আলোকেই। আমাদের এই বিশ্বটাকে পুনঃকল্পনা ও পুনর্নির্মাণের জন্য আমাদের একটি উদ্ভাবনী প থ খুঁজে বের করা প্রয়োজন, যা সবার জন্যই সমান কার্যকর হবে। নগরায়ন নকশা, পরিবহন ও জনপ্রশাসনের মতো ক্ষেত্রে নারী সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা এসব খাতে নারীর প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি, হয়রানি ও সহিংসতা প্রতিহত এবং সবার জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে পারেন। (জাতিসংঘ মহাসচিব)

পরিশেষে বলা যায় যে, আসুন আমরা নিশ্চিত করি। যে প্রতিটি নারী ও প্রতিটি কিশোরীও আমাদের সবার জীবনের ওপর প্রভাব ফেলে, এবং তাদের ভূমিকা আমাদের জীবনে অনেক, সুতরাং সমাজকে পরিষেবা ও অবকাঠামোর আকার দিতে পারে।