banner

বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1097 বার পঠিত

 

গা ঘেঁসে দাঁড়াবেন না



শামছুন নাহার মলি


সময়টা ২০১০ বা ২০১১ এর দিকে।বলে রাখি ঢাকায় ৬/৭ বছর থেকেও আমার বাসে ওঠার অভিজ্ঞতা খুব বেশি না।ভার্সিটির ক্লাস শেষে কলা বাগান থেকে রংধনু বাসে করে মিরহাজীরবাগ ভাইয়ার বাসায় ফেরার পথের ঘটনা।বাসে সব সময় মহিলা সিটে বসার চেষ্টা করতাম।কিছু লোকাল বাসে সিট না থাকলে উঠতাম ও না।

সেদিন আমি মহিলা সিটে বসা।সামনের সিটে দুজন কলেজ পড়ুয়া মেয়ে।তাদের সাইডে দাঁড়ানো ৫৫/৬০ বয়সী একজন দাড়ী ওয়ালা পান্জাবী পরা মুরুব্বী।ব্রেক করার কারণে পাশের মেয়েটার গায়ে মুরব্বী টার একটু ধাক্কা লেগে যায়।আর যায় কোথায়।মেয়ে দুটোর মুখে যা আসে সব বলা হয়ে যাচ্ছে।তখন মুরুব্বী টা বল্লো দেখো মা ব্রেক করার কারনে এই ধাক্কাটা লেগেছে।এটার জন্য দুঃখীত।আমি তোমার বাপ বয়সী।মেয়ে দুইটা বলে উঠলো মুখে দাড়ী রাখছেন,পান্জাবী,পরছেন চুল দাড়ী পাকছে তাও লুচ্চামী যায়নি না?মেয়ে দেখলে গায়ের উপর এসে পড়তে মন চায় না?

এবার আমি ২য় সারির জানলার পাশের সিট থেকে বের হয়ে ঐ মেয়েদের সামনে গেলাম।বল্লাম উনাকে দেখে মনে হয় আপনার যে উনি ইভ টিজার?বাবার মত একজন কে এত নোংরা কথা বলতে বিবেকে বাধছেনা?নাকি উনার দাড়ী পান্জাবী দেখে রাগ টা বেশি দেখাচ্ছেন?
মুরুব্বী টা কাঁপতেছিলো অপমানে কথা বলতে পারছিলেন না মেয়েদের কথায়।একজন লোক উনার জায়গা দিলেন বসার।মেয়েরা আর কথা বাড়ায়নি।

আরেকবার মগবাজার থেকে আমি আর ফাতিমা ফিরছিলাম।আমি মীরহাজিরবাগ যাবো আর ফাতিমা যাবে জিগাতলা।পরে ফাতিমা বলছিলো সেদিন বাসে সিট না পাওয়ায় তাকে দাঁড়ীয়ে যেতে হয়েছিলো।একজন লোক তার জন্য যথেষ্ট জায়গা রেখে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো যেন কারো ধাক্কা ওর গায়ে না লাগে।আলহামদুলিল্লাহ্‌।

এখন দেশে টিশার্টে লেখা “গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না”
এই প্রতিবাদ টা কিন্তু সব মানুষের জন্য না।ভীড়ে দাঁড়ালে ধাক্কা লাগবেই।দেশের মানুষ বাস চড়বেই।এই ধাক্কাটা কারা দেন,গা ঘেঁষে কারা দাঁড়ান?নিশ্চয় সবাই না?যারা দৃষ্টিই অবনমিত করেন গা ঘেঁষে দাঁড়ানো তাদের আদর্শে যায় না।বার্তাটা অবশ্যই তাদের জন্য না।যারা গা ঘেঁষে দাঁড়ায় তাদের আতে ঘা লাগার কথা ছিলো।ঢালাও ভাবে সবার না।

টি শার্টে কেন এই বার্তা লেখা,বোরখায় কেন লেখা না আমি এ বিতর্কে যাবোনা।কারণ পরিসংখানে দেখা গেছে ৭০/৮০% মেয়েই নাকি এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে।বাসে কিংবা লেগুনায়।হোক সে
বোরখা পরিহিত কিংবা টিশার্ট পরা।

শুধু বাসে না,আজ মেয়েরা ভীড়ের মধ্যেও যেতে পারে না,না গিয়েও উপায় থাকেনা।এই ধাক্কা বন্ধের কথা ভাবুন,এগিয়ে আসুন মেয়েদের সম্মান ও নিরাপত্তা কিভাবে দেওয়া যায়।কারা মেয়েদের সাথে এমন করে তাদের কে পাকড়াও করুন পারলে।

নীলক্ষেতে বই কিনতে যেতে হতো প্রায়ই।অসম্ভব ভীড় ঠেলে যেতে হতো।আমি বোরখা পরিহিতা,ব্যাগটা সামনে জড়িয়ে ধরে হাটতাম সব সময় নিজেকে সেইভ করার জন্য।আলহামদুলিল্লাহ্‌ আজ পর্যন্ত একটা মোবাইল বা টাকা পয়সা হারায়নি এবং কোন খারাপ পরিস্থিতি তে পড়তে হয়নি আমার।

নারীদের অযথা হয়রানী করার মানসিকতার সকল পশুদের কলিজায় এই প্রতিবাদ পৌছে যাক “মেয়েদের গায়ে ঘেঁষে দাঁড়াবেন না”।
আর সকল নিঃষ্পাপ ভাইয়েরা পারলে নিজের মা বোনের কাছ থেকে নরপশুদের ধাক্কা খাওয়া বা গা ঘেষে দাঁড়ানোর গল্পটা শুনুন।তারপর কি পদক্ষেপ নিবেন ভাবুন।কারণ কদিন পর আপনাদের কন্যারাও বাইরে যাবে।

#গাঘেঁসেদাঁড়াবেননা

Facebook Comments