banner

বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 570 বার পঠিত

 

ছায়াদানকারী বট বৃক্ষ

ছায়াদানকারী বট বৃক্ষ


শামছুন নাহার মলি


২০১২ সালে প্রথম যে বার দেশ ছাড়লাম।আব্বা আমার জিপি নাম্বারে কল দিতেই থাকতেন।দুঃক্ষিত আপনার কাঙ্খিত নাম্বারে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা,অনুগ্রহপূর্বক আরেক টু পর আবার ডায়াল করুন। আব্বা আরেকটু পর আবার ডায়াল করছিলেন।বারবার,যদি মলির ফোনে কল যায়।এখন কি মলি আকাশে?নেটওয়ার্কেরর বাইরে?আবার কল দেয়।কল আসলে অন্যদের বলে মলিকে কল দিচ্ছি,একজন মেয়ে বলে একটুপর আবার কল করুন।এতবার কল দিচ্ছি মলি তো ধরেনা। অনেক পরে আব্বাকে বোঝানো গেছিলো মলি এখন নেটওয়ার্কেরর বাইরে।
ফিনল্যান্ডে আসার পর বুঝলাম আব্বা কতটা ভালবাসে,আমার একাকিত্বে কতটা ভয় পায়।প্রতিদিন কল দিলে আব্বা কথা বলতেন।আমি কি বলবো, কেমন আছেন আব্বা?ব্যাথা কমেছে?গরম কেমন?
এর পর আর কিছু বলার আসতো না।
আব্বার প্রশ্নের পর্ব শুরু।বাছা,ওখানে কি কি পাওয়া যায়?কি মাছ খাও?স্যালমন ফিস?স্যালমনের মাথা দিয়ে মুড়ো ঘন্ট করো খুব ভাল লাগে।লন্ডনে গিয়ে তোমার ভাইয়ার বাসায় খেতাম।বাছা বাংলাদেশি সবজি,ফল পাও তো?আরো কত কি?
সাম্মান কে পেটে নিয়ে দেশে গেলাম ৫ মাসের জন্য,একটা সেমিস্টার করবো।আগে আব্বাকে ফল কেটে আমি খাওয়াতাম।এবার অবাক করে দিয়ে আব্বা নিজেই আমাকে এলাকার মিষ্টি পেয়ারা ভাত খাওয়ার পর ঔষধের মত নিয়ম করে কেটে খাওয়াতেন। কারণ ভাত খাওয়ার পর পেয়ারা না খেলে মলির বমি বমি লাগতো।
দেশি ফল কেটে দিতেন পাশে বসিয়ে।আমার কি যে অস্বস্থি লাগতো।তারা নিজেই অসুস্থ।আমি তাদের সেবা করার চান্স পাইনি সেবার।৭ মাসে চলে আসবো ঢাকা থেকে।আব্বা আম্মা নাতির জন্য কাঁথা,আমার জন্য খাবার নিয়ে মেজ আপুকে নিয়ে রওনা হবেন ঢাকার উদ্দেশ্যে।দেশে তখন ভয়ংকর পরিস্থিতি।পরদিন সকালে সারা দেশে হরতাল।রাতের গাড়িতে সাতক্ষীরা থেকে রওনা হলে সকালে গাবতলি থেকে মীরহাজির বাগ যাওয়াটা কঠিন হবে।সিএনজি,বাসে আগুন জ্বালিয়ে দিতো,গুলি,এ্যারেস্ট ও তুমুল ভাবে।
আমি কাঁদলাম প্লিজ আসবেন না আব্বা ঢাকায়,এই পরিস্থিতিতে আপনারা ঢাকায় আসলে বিপদ।আমরা টেনশনে মরে যাবো।আব্বা আম্মা টিকেট নিয়ে গাড়ীতে উঠবে,আমি আর ছোট ভাইয়া হাতে পায়ে ধরে বল্লাম আব্বা বাড়িতে নিরাপদ এ থাকলে তাতেই আমাদের শান্তি।দেশের এ পরিস্থিতি তে বের হয়েন না।আম্মা বলে,মলি পরীক্ষা দিয়ে আর বাড়ি এলো না।আমি একটু না দেখে অসুস্থ মেয়েকে কিভাবে যেতে দিই।
আমার মণ কে পাষাণ বানিয়ে বল্লাম,আম্মা বাড়ি ফিরে যাও,আমার জন্য তোমাদের কিছু হয়ে গেলে সারা জীবনেও শান্তনা খুঁজে পাবোনা।আব্বা আম্মা বল্লেন এত টাকা দিয়ে টিকেট কাটলাম।বল্লাম জীবনের দাম আরো বেশি।কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে গেলেন।আমি ফিনল্যান্ডে আসার পর ডিলিভারি রুমে যাওয়ার পরও আব্বার সাথে কথা বলা লাগছে।
সাম্মান হলো,আব্বা সহ সবাই কি খুশি।আলহামদুলিল্লাহ্‌।আব্বার আর কথা বলার তোড়জোড় নাই।দু তিন দিন হয়ে গেলো।আম্মাকে বল্লাম আব্বা কই?বলেন,আছে।এখন তোমার একটা খেলার সাথি হয়েছে,ব্যস্ত থাকার সম্পদ হয়েছে তাই তোমার আব্বা নিশ্চিন্তে আছে তোমাকে নিয়ে।বাবা নামের মানুষ গুলো আসলেই অন্যরকম।আল্লাহ সকল মাকে নেক হায়াত দিন।সন্তানদের ছায়াদান কারী বটবৃক্ষ গুলো ভালো থাকুন দুনিয়া ও আখিরাতে।আমিন।

Facebook Comments