banner

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 809 বার পঠিত

 

মাতৃত্বের উপলব্ধি – শেষ পর্ব


আফরোজা হাসান


কখনো বৃষ্টি, কখনো রোদ, কখনো দক্ষিণা হাওয়া, কখনো বসন্ত হয়ে দোলা দিয়ে যায় প্রাণে। দুর্বল মুহুর্তগুলোতে ভাবব্যক্তির দ্বারা শক্তি ও প্রাণ সঞ্চার করে মনেতে। অন্বেষণ করতে শেখায় জীবনের চাঞ্চল্য ও বৈচিত্র্যেকে। এঁকে দেয় জীবনকে গভীর ভাবে উপলব্ধি করার নীল নকশা।নানা রকম বৈচিত্র্যটায় ভরপুর জীবন যখন মনে ক্লান্তির সুর বেজে উঠে! এরা মনে করিয়ে দেয় আমরা নিজেরাই নিজের মনের মিউজিক ডিরেক্টর! জীবন বীণার তন্ত্রীতে প্রশান্তির সুর তোলার দায়িত্বও তাই নিজেকেই নিতে হবে!

উপমা দিয়ে আসলে জীবনে এই মায়ের স্থান, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বোঝানো সম্ভব নয়। আসলে সব মানুষের ভেতরেই কম বা বেশি কিন্তু হিলিং ক্ষমতা আছে। কিন্তু সবাই সেই ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে পারে না কিংবা জানে না। কিন্তু মায়েরা এটা এতটাই চমৎকার পারেন যে, জীবনের নানা অপুর্ণতায় সৃষ্ট ক্ষতগুলোকে পূরণ করে দেন শব্দের কারুকার্যে।

আমার মামণি তো এমন একজন মানুষ আমার জন্য যে, যখনই অসহায়ত্ব মনকে আঁকড়ে ধরে… মনেহয় শূন্যতায় ভাসছি…বাতাসের হালকা পরশই যথেষ্ট গভীর সমুদ্রে পতিত করার জন্য! গ্লানিময়- ক্লান্তিকর পরিস্থিতি যখন মনের কোমল অনুভূতিগুলো কেড়ে নিতে চায়! জোনাকির মত ছোট ছোট আশার আলো জ্বেলে মনের ভুবনকে করে তোলেন স্বপ্নিল! আকুলতা বিহীন উদ্যমহীন মেঘে ঢাকা মনের আকাশে বৃষ্টি ও রোদের সংমিশ্রনে সাজিয়ে যান রংধনু! আমাকে সর্বদা মনে করিয়ে দেন গোধূলির আবছা আলোছায়ার সূর্য ডুবে গেলেও, পরদিন ঠিকই এক বুক আলো নিয়ে আবার ফিরে আসে পৃথিবীর বুকে……

জানি না আমি কতটুকু ভালো সন্তান হতে পেরেছি মামণির কাছে। কিন্তু মনেহয় এই উপলব্ধিগুলো যদি পাথেয় থাকতো হয়তো অনেক বেশি ভালো সন্তান হতে পারতাম। কোথায় যেন পড়েছিলাম-“ তাত্ত্বিক জ্ঞান এক বছরে যা শেখায়, ব্যবহারিক জ্ঞান একদিনে তারচেয়ে বেশি শেখায় মানুষকে। সত্যিই মাকে নিয়ে পড়া অসংখ্য সাহিত্যের তুলনায়, আমার সন্তানের সাথে কাটানো একটি মুহুর্তকে অনেক বেশি ভারী মনেহয় আমার কাছে। যা সমৃদ্ধ করে তুলছে আমার মাতৃত্বকে এবং উপলব্ধি করতে সহায়তা করছে মায়ের মহত্ত্বকে।

হাদিসে বলা হয়েছে—‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’। এই হাদিসে যেমন সুসংবাদ রয়েছে সন্তানদের জন্য, তেমনি দুঃসংবাদও রয়েছে তাদের জন্য। কেননা মাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে বেহেশতে প্রবেশ করা সম্ভব হবে। কিন্তু তিনি অসন্তুষ্ট হলে রুদ্ধ হবে বেহেশতের দ্বার। তাই মায়ের সন্তুষ্টি অর্জন একজন সন্তানের অপরিহার্য দায়িত্ব।

কুরআনে আল্লাহ বলেছেন- “তোমার রব আদেশ করছেন, তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কারও ইবাদত করো না এবং তোমরা (তোমাদের) পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করো; তাদের একজন কিংবা উভয়ই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহলে তাদের সঙ্গে বিরুক্তিসূচক কিছু বলো না এবং কখনও তাদের ধমক দিও না, তাদের সঙ্গে সম্মানজনক ভদ্রজনোচিত কথা বলো। অনুকম্পায় তুমি তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো এবং বলো, হে আমার রব! তাদের ওপর তুমি (ঠিক সেভাবেই) দয়া করো, যেমনিভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছিলেন।” (সূরা বনী ইসরাইল ২৩-২৪)।

Facebook Comments