banner

মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1445 বার পঠিত

 

বিয়ে প্রস্তুতি


কানিজ ফাতিমা


বিয়ে ব্যাপারটি জীবনের অতীব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এখানে ভুল হয়ে গেলে তার পরিণতি কঠিন হতে পারে যা শুধু দু’টি জীবন নয়, দু’টি পরিবারের জন্যও হয়ে উঠতে পারে কষ্টকর। কাজেই এ সিদ্ধান্তের জন্য কিছু পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। যদিও বিয়ের ব্যাপারটির সঙ্গে জড়িত থাকে আবেগ, স্বপ্ন আর সোনালী সব আশা, তথাপিও সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসব আবেগের ঊর্ধ্বে উঠে বাস্তবসম্মত চিন্তার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ছেলে ও মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য। তবে যেহেতু এখনও আমাদের সমাজে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় অসুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে সেহেতু মেয়েদের এক্ষেত্রে আরও বেশি সচেতন হওয়া জরুরী।

বিবাহপূর্ব সচেতন প্রস্তুতির কয়েকটি ধাপ রয়েছে।

সর্বপ্রথম ধাপটি হলো, নিজের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেয়া বা নিজেকে চেনা। আমাদের মনে হতে পারে যে, আমরা সবাই নিজেকে চিনি। কিন্তু বাস্তবে তা নাও হতে পারে। নিজের মনকে জানা থাকলে আপনার সহজ হবে আপনার নিজের বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে। কাজেই নিজেকে ও নিজের মনকে জানার জন্য গভীর চিন্তা করুন। সময় নিন। খুঁজে বের করুন আপনার ভিতরের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ভাল গুণ। এবার তা ক্রমানুসারে লিখে ফেলুন। যেমন ধরুন একজন এভাবে ভাবতে পারে-

ভাল গুণ-১ : আমি পরিশ্রমী।

ভাল গুণ-২ : আমি সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলতে পারি।

ভাল গুণ-৩ : আমি সৎ থাকতে পছন্দ করি।

আবার ভাবুন এবং নিশ্চিত হোন যে, আসলেই এই গুণ তিনটি আপনার মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে কি না।

দ্বিতীয়ত : খুঁজে বের করুন আপনার সবথেকে খারাপ তিনটি দোষ, সততার সঙ্গে খুঁজুন। এড়িয়ে যাবার কিছুই নেই। এ আপনার নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া। এবার ক্রমানুষারে লিখে ফেলুন দোষ। যেমন ধরুন কেউ এভাবে লিখতে পারে –

দোষ-১ : আমি অল্পতেই রেগে যাই।

দোষ-২ : আমি কৃপণ।

দোষ-৩ : আমি নিজের আত্মীয়দের ব্যাপারে অন্ধ কিন্তু অন্যদের দোষ বেশি দেখি।

এবার খুঁজে বের করুন কোন তিনটি জিনিস আপনি সব থেকে বেশি পছন্দ করেন। এরপর তা লিখি ফেলুন। যেমন :

পছন্দ-১ : বই পড়তে।

পছন্দ-২ : ভ্রমণ করতে।

পছন্দ-৩ : বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে।

সর্বশেষে লিখুন সেই তিনটি জিনিস যা আপনি খুবই অপছন্দ করেন বা সহ্য করতে পারেন না। যেমন হতে পারে –

অপছন্দ-১ : মিথ্যা কথা।

অপছন্দ-২ : প্রদর্শনেচ্ছা।

অপছন্দ-৩ : বেশি কথা বলা বা বাড়িয়ে বলা।

এবার দেখুন আপনি আপনাকে আগের চেয়ে অনেক বেশি জানেন। এভাবে নিজের সম্পর্কে সচেতনতা অর্জন বিয়ের পূর্বের মানসিক প্রস্তুতির প্রথম ধাপ।

এবার আসা যাক দ্বিতীয় ধাপে। দ্বিতীয় ধাপ হলো নিজের মূল্যায়ণ। আমরা অনেকক্ষেত্রেই নিজের মূল্যায়ণ না করেই নিজের চাওয়া নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এতে সিদ্ধান্ত ভুল হবার সম্ভাবনা অধিক। নিজের মূল্যায়ণ করতে হলে প্রথম খুঁজে বের করুন আপনার বায়োডাটার পজিটিভ পয়েন্টগুলো কী কী। ক্রমানুসারে তা লিখুন। যেমন-

পজিটিভ পয়েন্ট-১ : একটি ভাল চাকুরী।

পজিটিভ পয়েন্ট-২ : আর্থিক স্বচ্ছলতা।

পজিটিভ পয়েন্ট-৩ : উচ্চ শিক্ষা

পজিটিভ পয়েন্ট-৪ : শিক্ষিত ও রুচিশীল পরিবার।

এবার ভাবুন আপনার বায়োডাটার দুর্বল দিকগুলো কী কী। যেমন হতে পারে-

দুর্বলতা-১ : উচ্চতা কম।

দুর্বলতা-২ : আর্থিক অস্বচ্ছলতা।

দুর্বলতা-৩ : বড় পরিবার ও তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমার।

দুর্বলতা-৪ : পরিবারের অন্যান্যরা যথেষ্ট শিক্ষিত নয় ইত্যাদি।

এভাবে আপনার প্রতিটি পজেটিভ ও নেগেটিভ পয়েন্টকে মূল্যায়ণ করে নিজের অবস্থাটা ভাল করে বুঝে নিন।

এবার আসুন প্রস্তুতির ৩য় ধাপে। এ ধাপে জেনে নিন আপনি কী চান? মজার ব্যাপার হচ্ছে অধিকাংশ নারী -পুরুষই বিয়ের আগে জানেনই না যে আসলে তারা কি চান।খুব সাধারণ কয়েকটি ব্যাপার যা চাওয়া হয় পাত্র খোঁজার সময়। তাহলো ভাল মেয়ে, সুন্দরী , ফর্সা, শিক্ষিত ও ভাল পরিবার ও ভাল উচ্চতা, খেয়াল করে দেখুন এতে মোটামুটি সবই চাওয়া হয়েছে। তাছাড়া ভাল মেয়ের কী সর্বজনসম্মত কোন সংজ্ঞা আছে? এরকম চাওয়া আসলে কোন চাওয়া নয়। সুস্পষ্ট ও নির্দিষ্ট করে নিজের মন ও নিজের ক্যারিয়ারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গভীরভাবে ভাবুন আপনার আসলে কেমন সঙ্গী দরকার। আসলেই কোন বৈশিষ্ট্যগুলো আপনার খুবই প্রয়োজনীয় আর কোনগুলো ছাড় দিতে আপনি প্রস্তুত। এবার তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা লিখে ফেলুন যা আপনি অবশ্যই চান এবং যা আপনি কোন অবস্থাতেই ছাড় দেবেন না। যেমন-

আবশ্যক-১ : ধর্মের অনুশীলন।

আবশ্যক-২ : উচ্চশিক্ষিত (অনার্স বা মাস্টার্স)

আবশ্যক-৩ : চাকুরীজীবি।

এবার আরও তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা লিখুন যা আপনি চান তবে প্রয়োজনে ছাড় দিতে রাজি আছেন-

আবর্শক-৪ : উচ্চতা।

আবশ্যক-৫ : শিক্ষিত পরিবার।

আবশ্যক-৬ : সুন্দর।

মনে মনে ভেবে রাখুন যে, বাধ্যতামূলক তিনটি বৈশিষ্ট্যের পরে নীচে (৪ – ৬) তিনটি যে কোন দু’টি বা একটি ছাড় দিতে আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আপনি যখন এই চাওয়াগুলো ঠিক করেন তখন আপনাকে নিজের মূল্যায়ণ (দ্বিতীয় ধাপ)-এর দিকে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে আপনার দুর্বল পয়েন্টগুলোকে মনে রাখতে হবে। নয়তো আপনার চাওয়াগুলো বাস্তবসম্মত হবে না। আমি অনেক সময় এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি যার নিজের বায়োডাটায় পজেটিভ পয়েন্টের তুলনায় দুর্বল দিক অনেক বেশি কিন্তু চাওয়ার লিস্ট অনেক বড়। এরূপ অবাস্তব চাওয়া শুধু যে আপনার বিয়ের সময়ই সমস্যা তৈরি করবে তা নয় বরং পরবর্তী পারিবারিক জীবনেও অশান্তির কারণ হতে পারে। বিয়ের সময় সমাজে কোন পাত্র বা পাত্রীর দাম বেশি সে হিসেবে না গিয়ে বরং আপনার জন্য কে বেশি উপযোগী হবে সেটাই খোঁজার চেষ্টা করুন। বেশি আবেগী হয়ে অসচেতন সিদ্ধান্ত নেয়া বা অতি উচ্চাকাংখী হওয়া দুই-ই আপনার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।

Facebook Comments