banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1007 বার পঠিত

 

The Dream of Life (অনুবাদ)- ১ম পর্ব


মুল: ইয়াসমিন মোজাহেদ
অনুবাদ: রাহনুমা সিদ্দিকা


আচ্ছা, মন্দ জিনিষগুলো কেন ভালো মানুষদের জীবনে ঘটে? কোথায় থাকে ঈশ্বর যখন নিষ্পাপ শিশুটা না খেতে পেয়ে মারা যায়, অপরাধী মানুষগুলো স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়? কোথায় থাকেন তিনি? কীভাবে সেই প্রেমময়, সর্বশক্তিমান প্রভুকে স্বীকার করবো আমি? আমার কষ্ট… আমার হতাশা… ব্যর্থতা, দুর্ভাগ্য কেন দিলেন তিনি? Why do we suffer? ঈশ্বর নিশ্চয়ই ন্যায়-পরায়ণ, তাহলে কেন ভালো লোকের জীবনে শুধু ভালো ঘটনা ঘটে না? আর মন্দলোকের জীবনে মন্দ?

আপনার মনে কখনো কি এ প্রশ্নগুলো উদিত হয়েছে?

বহু মানুষের জীবনে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর তাদের নিয়ে যায় বিশ্বাসের পথে… অথবা বিশ্বাস থেকে দূরে, স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস, জীবনের উদ্দেশ্যে বিশ্বাস, জীবনে শেষ গন্তব্যের প্রতি বিশ্বাস, অথবা বিশ্বাসহীনতা।

একজন বিশ্বাসী বলবেন, “হ্যাঁ, অবশ্যই! আসলে ভালো লোকের জীবনেই ভালো ঘটনাগুলো ঘটে, আর মন্দের ক্ষেত্রে মন্দগুলোই!”

কেন? কারণ ঈশ্বর আমাদের রব তিনি সর্বজ্ঞাত, সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী, তিনি পরিপূর্ণ সত্তা,তিনি সর্বাপেক্ষা ন্যায়পরায়ণ ও প্রেমময়।

আসুন আগে বুঝে নি-ই, “ভালো লোকের জীবনেই ভালো ঘটনাগুলো ঘটে, আর মন্দের ক্ষেত্রে মন্দগুলোই!” বলতে আমরা কী বুঝাতে চাইছি। আর ভালো – মন্দ বলতেই বা আমরা কী বুঝাতে চাই। আপনারা অনেকেই হয়তো আমার সাথে একমত হবেন যে, অভীষ্ট কোন লক্ষ্য অর্জনে সফলতা…এটা ভালো, আর অন্যদিকে ব্যর্থতাটা হলো মন্দ।

ধরুন, যদি আমার লক্ষ্য হয় ওজন বাড়ানো কারণ আমি ভীষণভাবে ক্ষীণকায়, ওজন বৃদ্ধি তাহলে মঙ্গল। অপরদিকে যদি এমন হয় যে আমার লক্ষ্য হলো ওজন কমানো কারণ আমি স্থুলকায়, ওজন বৃদ্ধি তাহলে মন্দ। আমরা কী দেখি, একই ঘটনাকে একসময় আমি বলবো, ভালো আরেকসময় বলবো মন্দ, নির্ভর করছে আমার লক্ষ্যের ওপর!! তাহলে, আমার দৃষ্টিকোন থেকে ভালো কী সেটা নির্ভর করবে আমার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যগুলো বা লক্ষ্যের ওপর, এটা চিরকালীন সত্য। একারণেই চূড়ান্ত মঙ্গল নির্ভর করে আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য এর ওপর।

আমার জীবনের লক্ষ্য কী?

ছোট্ট একটা প্রশ্ন, কিন্তু আপনি উত্তর দিন, দেখুন আমরা জেনে যাবো আপনি কে। কারণ এর উত্তরটা বেঁচে থাকা সম্পর্কে আপনার ধারণা প্রকাশ করে দেবে। পুরো পৃথিবীতে জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে দু’ধরণের চিন্তাধারা আছে।

একদল মনে করেন যে, বেঁচে থাকার কারণ হলো আমাদের প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম দিয়ে পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালোভাবে দিন কাটানো। আরেকদল মনে করেন, উঁহু, জীবন শুধুই একটা সেতু/সাঁকো ছাড়া আর কিছুই না! আর এমন একটা সেতু যার স্থায়ীত্ব কাল ক্ষণকালের, তারা মনে করেন এটাই স্রষ্টার infinite Reality, যা কিছু হচ্ছে তাঁর নির্দেশেই হচ্ছে, এপার থেকে ওপারে যাওয়ার সাঁকোকে চিরকালীন আবাস ভাবতে চান না তারা।

প্রথমদলের জন্য, এই জীবনই *Everything*, এটাই শুরু এটাই শেষ , তারা মনে করেন, সমস্ত চেষ্টা-সংগ্রাম-ভালোলাগা-ভালোবাসা-অনুভূতি একে ঘিরেই আবর্তিত হওয়া উচিত। আর দ্বিতীয়দলের কাছে *this life tends towards zero*!! কেন?? আচ্ছা, অসীমের তুলনার সবচেয়ে বড় সংখ্যাটাও কি একেবারে তুচ্ছ নয়? কিচ্ছু না!

তাই তাদের কাছে জীবনের উদ্দেশ্য হলো, যেমনটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন, ” আমি জ্বীন ও মানব জাতিকে এছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য সৃষ্টি করি নি যে *তারা কেবল আমার দাসত্ব করবে*।” (ক্বুর’আন ৫১:৫৬) এখানে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই অন্য কোন উদ্দেশ্যের কথা নাকচ করে দিয়েছেন। তার মানে ত এই-ই দাঁড়ায় যে, একজন বিশ্বাসী হিসেবে আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হবে সেই সত্তাকে জানা, ভালোবাসা ও তাঁর নিকটাবর্তী হওয়া। এই জন্যেই আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছিলো। এই বিশ্বাসটাই নির্ধারণ করে দেবে আমার জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও আশপাশের ঘটনাগুলো সম্পর্কে আমি কীভাবে ভাববো।

আসুন, আমরা এখন আবার সেই ভালো মন্দের সংজ্ঞার দিকে ফিরে তাকাই। সেই যে বলেছিলাম, সামগ্রিক ভাবে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্থাৎ কাম্য কিছু পেতে সমর্থ হওয়াকেই আমরা বলতে পারি ভালো। আর আপেক্ষিকভাবে তাহলে নিশ্চয়ই বলা যায় কারো লক্ষ্য যদি হয় এই পার্থিব জীবন , তাহলে তার জন্য অর্থ উপার্জন, খ্যাতি, সম্পদ, সৌন্দর্য … ইত্যাদি হলো ‘ভালো’ বা ‘মঙ্গল’ এর উদাহরণ, আর এগুলোর ক্ষয় হলো ‘মন্দ’। এই ধারণা যারা পোষণ করেন তাদের মতে, একজন নিরপরাধ ব্যক্তি যদি তার কোন পার্থিব সম্পদের ক্ষতি (তা হতে পারে দারিদ্র, স্বাস্থ্যের ক্ষতি, বিকলাঙ্গতা, প্রতিবন্ধিত্ব…) প্রত্যক্ষ করেন, এই-ই হলো ‘ভালো লোকের জীবনে মন্দ জিনিষ ঘটা’।

আর দ্বিতীয়দল যাদের লক্ষ্য ছিলো অনন্ত জীবন, তাদের কাছে ভালো মন্দের স্বরূপ এই যে, যা কিছু আমাদের স্রষ্টার সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা পেতে সাহায্য করে, আমাদের তাঁর নিকটে নিয়ে যায় তা-ই হলো ভালো আর যা আমাদের স্রষ্টা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় তা-ই হলো মন্দ।

চলবে…

Facebook Comments