banner

বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫ ইং, ,

Monthly Archives: April 2025

 

ইসলামের দৃষ্টিতে দাম্পত্য জীবন

স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে এটি ইসলামী পারিবারিক জীবনের কাম্য বিষয়। স্বামী কিংবা স্ত্রী কারও অবিশ্বস্ততাকে ইসলাম অনুমোদন করে না। কোনো স্বামী-স্ত্রীর বদলে অন্য কোনো নারীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে তুললে তা ইসলামী অনুশাসনে মারাত্মক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। একইভাবে কোনো স্ত্রী পর পুরুষের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুললে সেটিও একই ধরনের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। রোজ কেয়ামতেও ব্যভিচারের অপরাধে জড়িত পুরুষ বা নারীর স্থান হবে জাহান্নাম।ইসলাম স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সদাচরণের ওপর গুরুত্ব দেয়। স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর অসদাচরণের জন্য তাকে যেমন রোজ কেয়ামতে জবাবদিহি করতে হবে, তেমন কোনো নারী স্বামীর সঙ্গে অসদাচরণ করলে তাকেও জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে বিরোধ মীমাংসা করা হবে তা হলো- এক স্বামী ও তার স্ত্রীর বিরোধ। আল্লাহর শপথ! (সে সময়) স্ত্রীর জিহ্বা কথা বলবে না, বরং তার হাত-পা সাক্ষ্য দেবে, পৃথিবীতে সে তার স্বামীর সঙ্গে এই এই আচরণ করেছে। আর স্বামীর হাত-পাও সাক্ষ্য দেবে, সে তার স্ত্রীর সঙ্গে এই এই ভালো আচরণ বা এই এই খারাপ আচরণ করেছে। অতঃপর আল্লাহর এজলাসে মনিব ও কর্মচারী সংক্রান্ত মামলা উঠবে। সেদিন কোনো আর্থিক জরিমানা করে বিরোধ মিটানো হবে না। বরং মজলুমকে জালিমের নেক আমলগুলো দিয়ে দেওয়া হবে এবং মজলুমের বদ আমলসমূহ জালিমের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হবে। অবশেষে প্রতাপশালী অহংকারী অত্যাচারীদের লোহার জিঞ্জিরে পেঁচিয়ে হাজির করা হবে। অনন্তর বলা হবে তাদের ধাবমান করে জাহান্নামে নিয়ে যাও।’ -তাবরানি।ইসলামের দৃষ্টিতে সেই ব্যক্তিই উত্তম, যে তার স্ত্রীর দৃষ্টিতে উত্তম। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি উত্তম হিসেবে বিবেচিত হবে কিনা তা তার স্ত্রীর সার্টিফিকেটের ওপর নির্ভর করবে। মানুষ যাতে স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকে তার আস্থা অর্জনের চেষ্টা করে পারস্পরিক ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয় তা উৎসাহিত করতে স্বামীর উত্তম হিসেবে বিবেচিত হওয়ার বিষয়টি স্ত্রীর বিবেচনার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ইসলামের এ বিধান পারিবারিক জীবনে স্ত্রীর মর্যাদাকে মহিমান্বিত করেছে।আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ সাল্লিল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম এর নির্দেশনা অনুযায়ী চললে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।

 

কেমন হওয়া উচিত একজন নারীশ্রমিকের কর্মক্ষেত্র?

নারীবান্ধব পরিবেশ হওয়ার কারণে কর্মক্ষমতাও বেড়ে যাবে বহুগুণ, ফলে রাষ্ট্রের অর্থনীতির চাকা আরো সচল হবে । পাশাপাশি সমাজ থেকে ইভটিজিং, এসিড ও ধর্ষণের মত অপরাধ অনেক কমে আসবে । নারী পুরুষ আলাদা কর্মক্ষেত্রে থাকায় অনৈতিক সম্পর্কের সুযোগ কমে আসাবে ফলে পারিবারিক বন্ধন আরো দৃঢ় হবে । সর্বোপরি আল্লাহব হুকুম ফরজ পর্দা পালন করার মাধ্যমে ইহ ও পারলৌকিক সমৃদ্ধিতে বলিয়ান হবেন নারী শ্রমীক ।

বাংলাদেশের শিল্প কারখানায় নানা পেশায় ক্রমশ জড়িয়ে পরছে নারী শ্রমিক, পোশাক শিল্পের সাথে জরিত শ্রমিকের মধ্যে প্রায় ৭৫/৮০ ভাগ নারীশ্রমিক । যে নারী বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা টেনে নিয়ে যাচ্ছে তার জন্য প্রথম প্রয়োজন নিরাপদ ও কর্মবান্ধব পরিবেশ , প্রয়োজন আলাদা কর্মক্ষেত্রের। যা তার জন্য পর্দার ফরজ হুকুম যথাযথ পালনের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করবে। পুরুষ নিয়ন্ত্রিত এই সব কর্মক্ষেত্রে নারিশ্রমিক প্রায়ই নিগৃহীত হচ্ছেন নানাভাবে । বৈতনিক অসমতা থেকে শুরু করে পুরুষ শ্রমিক দ্বারা মৌখিক ও শারিরিকভাবেও লাঞ্চিত হতে হচ্ছে অহরহ । পুরুষ শ্রমিকদের সাথে একই প্লাটফর্মে কাজ করার কারণে মানসিক চাপে ভোগেন অধিকাংশ নারীশ্রমিক । নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ থাকার কারণে শ্রমিকরা প্রায়শই জড়িয়ে যাচ্ছেন অনৈতিক সম্পর্কে। এতে সমাজের পারিবারিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে । অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে অনেকের ভবিষ্যৎ । অনেক সন্তান বাবা-মা হারিয়ে আর্তের মত জীবন যাপন করছে । ফলে সমাজে ইভটিজিং, এসিড, ধর্ষণের মত অপরাধ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। চলমান এ অবস্থার পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি । প্রয়োজন নারীশ্রমিকের জন্য নারী-বান্ধব আলাদা কর্মক্ষেত্র।

নারীশ্রমিকের জন্য কর্মবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে যা করা প্রয়োজন : ১. নারী শ্রমিকদের জন্য আলাদা শেডের ব্যাবস্থা করা। ২. মহিলা শ্রমিকদের জন্য মহিলা সুপারভাইজার, ইনচার্জ, ম্যানেজারের ব্যাবস্থা করা । ৩. উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা করা ও ভারী কাজ থেকে বিরত রাখা । ৪. উপযুক্ত আবাসন ও প্রয়োজনীয় পরিবহনের ব্যাবস্থা । ৫. মহিলা চিকিৎসকের মাধ্যমে নিয়মীত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা । ৬. অসুস্থতাকালীন সময়ে কাজের চাপ কমিয়ে দেয়া । ৭. হাতের নাগালে পর্যাপ্ত খাবার পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যাবস্থা রাখা । ৮. পরিচ্ছন্ন খাবার ঘর ও নামাজ ঘরের ব্যাবস্থা রাখা । ৯. বিনোদন, সাপ্তাহিক তালিম , কোরআন ও প্রয়োজনীয় মাস’আলা মাসায়েল শিক্ষার ব্যাবস্থা করা । ১০. প্রসূতিকালীন ছুটি, বেতন ভাতা প্রদান ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রদান । ১১. বাচ্চা লালন-পালনের জন্য অভিজ্ঞ বেবি সিটারের ব্যাবস্থা করা । ১২. দুগ্ধদাতা মায়ের জন্য উপযুক্ত ব্যাবস্থা প্রদান । ১৩. সার্বিক নিরাপত্তা বিধান ও উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রদান । ১৪. নারী কন্যা, জায়া, জননি। শিক্ষিত নারী যেমন শিক্ষিত জাতি উপহার দেয় তেমনি বর্তমানে রাষ্ট্রের অর্থনীতির বোঝাও টেনে চলেছে একজন নারীই । নারীর জন্য যদি নারীবান্ধব আলাদা কর্মক্ষেত্র দেয়া সম্ভব হয় তবে নারীর আংশগ্রহণ আরো বাড়বে । নারীবান্ধব পরিবেশ হওয়ার কারণে কর্মক্ষমতাও বেড়ে যাবে বহুগুণ, ফলে রাষ্ট্রের অর্থনীতির চাকা আরো সচল হবে । পাশাপাশি সমাজ থেকে ইভটিজিং, এসিড ও ধর্ষণের মত অপরাধ অনেক কমে আসবে । নারী পুরুষ আলাদা কর্মক্ষেত্রে থাকায় অনৈতিক সম্পর্কের সুযোগ কমে আসাবে ফলে পারিবারিক বন্ধন আরো দৃঢ় হবে । সর্বোপরি আল্লাহব হুকুম ফরজ পর্দা পালন করার মাধ্যমে ইহ ও পারলৌকিক সমৃদ্ধিতে বলিয়ান হবেন নারী শ্রমীক ।

 

সুতি পোশাক যে কারণে সেরা

প্রচন্ড গরম এখন চারিদিক। তাপমাত্রার বাড়তি চাপে জীবন যখন অতিষ্ঠ। তা বলে বাড়িতে বসে থাকা যায় না। স্কুল, কলেজ, অফিস, জরুরি কোনও কাজে বাইরে যেতেই হয়। গরমকালে রোদের তাপ এড়াতে প্রয়োজন সঠিক পোশাকের। এমন জামাকাপড় বেছে নিতে হবে, যা বেশ আরামদায়ক। এই সময়ে সুতির জামাকাপড়ই সবচেয়ে ভালো।

১. গরমে শরীরে প্রচণ্ড পরিমাণ ঘাম হয়। এর হাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে সুতির পোশাক।

২. সুতির জামাকাপড়ে হাওয়া চলাচল ভালো হয়। যা শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।শরীর ঠান্ডা রাখে।

৩. সুতির জামাকাপড় বেশ হালকা হয়। গরমকালে এমন হালকা পোশাক পরাই ভালো।

৪. সুতির জামাকাপড় সূর্যের তেজ শুষে নেয়। তাই গরম লাগার কোনও প্রশ্নই নেই।

৫. গরমকাল মানেই শরীরে ঘামাচি, অ্যালার্জি। জ্বালা যন্ত্রণায় ভুগতে হয়। এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে সুতির পোশাক ব্যবহার করা ভালো।

৬. কড়া রোদের হাত থেকে বাঁচতে বেছে নিতে হবে ফুলহাতা সুতির জামা। তাতে বেশি গরমও লাগবে না। হাতে ট্যান পড়ার ভয়ও থাকবে না।

 

উদ্বিগ্নতা যেভাবে নেতৃত্ব গুন বাড়ায়

অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন উদ্বিগ্নতার মত নেতিবাচক একটি বিষয় কিভাবে নেতৃত্বের জন্য ইতিবাচক হতে পারে? মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, উদ্বিগ্নতাকে কাজে লাগানো সম্ভব। শুধু আপনাকে হতে হবে একটু কৌশলী। উদ্বিগ্নতা যখন মানসিক ব্যাধি, তখন অবশ্যই এর চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। কিন্তু একটি মাত্রা পর্যন্ত আপনি এর সুবিধা নিতে পারেন! কীভাবে সম্ভব, আসুন জেনে নিই তার কয়েকটি ধাপ।
কাজের গতি বাড়ায় উদ্বিগ্নতা
“আমার অনেক কাজ, অনেক কিছু করতে হবে, কখন করব?” “আমি কি অসুস্থ হয়ে পড়ছি?” “আমার কি পেট ব্যথা? এই ব্যথা কি বাড়বে? তাহলে কি বিছানায় পড়ে থাকব? তাহলে আমার কাজের কী হবে?” এই অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তা আপনার কাজের গতি বাড়ায়। যে কাজ আপনি করতে হয়ত অনেকটা সময় ব্যয় করতেন, সেই কাজ আপনি করে ফেলেন অনেক দ্রুত। কারণ আপনার উদ্বিগ্নতা আপনাকে ঘুমাতে দেয় না, অস্থির করে রাখে। কাজ শেষ করতে না পারার অনিশ্চয়তা আপনাকে অপেক্ষা করতে দেয় না, অলসতা করতে দেয় না। বরং বলে, “যা কাল হতে পারে, তা আজ কেন নয়?”
উদ্বিগ্নতার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলুন
আপনি অল্পতেই উদ্বিগ্ন হয়ে যান এই নিয়ে চিন্তিত না হয়ে বরং উদ্বিগ্নতার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন। আপনার জীবন হয়তো আপনার কাছে খুবই কষ্টের, অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এই পর্যন্ত এসেছেন আপনি। এই নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগবেন না। বরং আপনার সংগ্রামের কথা সবাইকে বলুন। নিজের জীবন নিয়ে পর্যালোচনা করতে গিয়ে আপনি কিজেই দেখবেন, উগ্বিগ্নতা আপনাকে কীভাবে সহায়তা করেছে। আপনি যখনি হতাশ হয়েছেন, যখনই থেমে যেতে চেয়েছেন, আপনার ভেতর থেকে উদ্বিগ্নতা তৈরি হয়েছে। আপনার মনে হয়েছে, আপনাকে পারতেই হবে। এই তাড়না থেকেই আপনি এতদূর এসেছেন। এভাবেই নেতা হওয়ার গুণ তৈরি হয়েছে আপনার মধ্যে।
উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করুন
আপনি যে উদ্বিগ্ন তা আপনার কর্মীদের বুঝতে দিন। আপনার ভেতরের তাড়না তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিন। আপনি হয়তো ভাবছেন, কাজ নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা তো একটা বদভ্যাস। না। এই চিন্তাই আপনার কাজের গতি কীভাবে বাড়িয়ে দেয় তা আমরা দেখেছি। তাই একে বরং কাজে লাগান। আপনিও আপনার কাজ সময়মত করুন, অন্যদেরকেও কাজে উৎসাহী করে তুলুন। যে অনিশ্চয়তা আপনি বোধ করছেন, সেই অনিশ্চয়তা অন্যদের মনেও ঢুকিয়ে দিন। বার বার বলুন, কালকের জন্য ফেলে রাখা যাবে না কোন কাজ। আপনার কাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা দেখে তারাও দায়িত্বশীল হবে। আর এভাবেই আপনি এগিয়ে যেতে থাকবেন একজন যোগ্য নেতা হিসেবে।
মনোযোগের চর্চা করুন
উদ্বিগ্নতা যেন মনোযোগকে ধূলিস্যাত না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। আপনি আপনার কাজ নিয়ে, আপনার প্রতিষ্ঠানের উন্নতি নিয়ে চিন্তিত। খুবই ভাল কথা। কিন্তু অধিক চিন্তা যেন নার্ভাসনেস তৈরি না করে। মনে রাখবেন, উগ্বিগ্নতা আপনার এমন একটি গুণ যার নিয়ন্ত্রণ হারানো বিপজ্জনক। একে সামলে রাখতে হবে। তাই মনোযোগ হারাবেন না কোনভাবেই। কাজের সফলতা শুধু চিন্তা দিয়ে আসবে না। তাই পাশাপাশি মনোযোগ ধরে রাখার অনুশীলন করুন। সিদ্ধান্তগুলো চিন্তা করে, সময় নিয়ে, আলোচনা করে তারপর নিন। একটি সঠিক সিদ্ধান্ত আপনাকে অনেক বড় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে সবার চোখে। তাই উদ্বিগ্নতা এবং মনোযোগকে পাশাপাশি বজায় রাখুন।
মনে রাখুন, আপনি ঠিক আছেন
আপনি উদ্বিগ্ন, কিন্তু অসুস্থ নন। আপনি হয়ত অনেক ভুল করেন, কিন্তু তার চেয়েও অনেক বেশি সঠিক কাজ করেছেন, সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জীবনে। নিজেকে দেখুন এবং শ্রদ্ধা করুন। আপনি নিজেই নিজেকে অবমূল্যায়ণ করলে অনুএরা আপনাকে মূল্য দিতে শিখবে না। উদ্বিগ্নতা আপনার হাতিয়ার, ব্যাধি নয়। তাই নিজের উপর ভরসা রাখুন। যোগ্য নেতা হয়ে উঠুন।
লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব নারী ব্যবসায়ীদের

চলতি অর্থবছরের ন্যায় আগামী বাজেটে (২০১৬-১৭) নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে নারী ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিডব্লিউসিসিআই)।

একইসঙ্গে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য জাতীয় টাক্সফোর্স গঠন, সবক্ষেত্রে ৪ শতাংশ ভ্যাট ও সিআইপি নির্ধারণে আলাদা কোটা রাখাসহ ৩১টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।

সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় সংগঠনটির সভাপতি সেলিমা আহমাদ এসব প্রস্তাব করেন।

সেলিমা আহমাদ বলেন, বাংলাদেশের জন্য তৃণমূল নারী উন্নয়ন জরুরি। অর্থমন্ত্রী নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা ঋণের ব্যবস্থা করেছেন। তাই চলতি অর্থবছরের মতো এবারও জাতীয় বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ চলমান রাখা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, একইসঙ্গে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স ফি পূর্বের হারে ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে নতুন উদ্যোক্তা এগিয়ে আসবে না। নারী উদ্যোক্তারা অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন। ব্যবসা করতে গিয়ে মূসক, আয়কর দিয়ে দিন শেষে তাদের লাভের খাতা একেবারেই শূন্য থাকে। এ কারণে ব্যবসায় নারীদের অংশগ্রহণও অনেক কম।

নারীদের ব্যবসায় অন্তর্ভুক্ত করতে সর্বাবস্থায় ৪ শতাংশ ভ্যাট রাখা, নারীদের ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়কর সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আয় ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত রাখা ও মেশিনারি আমদানিতে কর মওকুফ করার প্রস্তাব করেন তিনি।

নারী উদ্যোক্তাদের হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে বিডব্লিউসিসিআই সভাপতি বলেন, নারীদের জন্য দেশের সব জায়গায় ব্যবসা সহজ নয়। এজন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাগুলোতে নিবন্ধন ফ্রি ও পাঁচ লাখ টাকার পণ্য ফি ছাড়া প্রবেশের সুযোগ দেওয়া দরকার। এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানকে রেয়াদ দেওয়া, সিআইপি নির্ধারণে নারী উদ্যোক্তা কোটা রাখার প্রস্তাব করছি।

নারী উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে অনেক সময় কাস্টমসে হয়রানির শিকার হন। তাই নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া দরকার বলে জানান তিনি।

সেলিমা আহমাদ বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সব ব্যাংকে ১৫ শতাংশ এসএমই লোন নির্ধারণ করে দেওয়া দরকার। সব কর্মাসিয়াল ব্যাংকে কমপক্ষে তিন শতাংশ পল্লী ঋণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি পৃথক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও সুদের হার ৭-৮ শতাংশ নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

প্রাক-বাজেট আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান।

 

আবারও জুটিবদ্ধ রিয়াজ-মৌ

‘এবং তারপর’ নামের একটি টেলিছবিতে জুটিবদ্ধ হলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ এবং মডেল ও অভিনেত্রী সাদিয়া ইসলাম মৌ। গল্প লিখেছেন ফ্যাশন ডিজাইনার এমদাদ হক। এর চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন মনসুর রহমান চঞ্চল ও পরিচালনা করেছেন নুজহাত আলভী। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার একসঙ্গে কাজ করলেন তারা। এতে আরও অভিনয় করেছেন সজল, হিমি, লায়লা হাসান, সুজন, চৈতি ও ইমরান।

টেলিছবিটির গল্পে দেখা যাবে, জীবনের একটা সময় প্রাণচাঞ্চল্যে, উদ্দীপনা আর উচ্ছ্বাসে ভরা ছিলো নবনীতার জীবন। ঠিক উল্টো অর্থাৎ চুপচাপ আর একটু নিজের মধ্যে গুটিয়ে থাকা স্বভাবের ছিলো অন্য বন্ধু পারভেজ। বিয়ের পর নবনীতা স্বামীর সঙ্গে আমেরিকায় চলে গেলেও দুটো কিডনিই বিকল হয়ে যাওয়ায় ফিরে আসে বাংলাদেশে। এভাবেই এগিয়ে যেতে থাকে নাটকের গল্প।

ইতিমধ্যেই টেলিছবিটির দৃশ্যধারণ শেষ হয়েছে ধানমন্ডি লেক ও পূবাইলে। আসছে ঈদুল ফিতরে একটি বেসরকারী চ্যানেলে প্রচার হবে টেলিছবিটি।

 

নারী উদ্যোক্তা ইফফাত ই ফারিয়ার সফলতার পেছনের গল্প

সাধারন মানুষের অসাধারন হয়ে ওঠার পেছনে একটা গল্প থাকে। সেই গল্পের বাঁকে বাঁকে থাকে সংগ্রাম। স্বাধীনচেতা মানুষেরা একটু বেশীই সংগ্রামী হয়। যেখানে সম্ভব নয় সেখানেই তারা বিজয়ের নিশান ওড়ান। কিন্তু সেই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রে যখন একজন নারী তখন তার পথটা বোধহয় আরও বেশী সংগ্রামের হয়। তেমনই একজন ইফফাত ই ফারিয়া (রঙ)।

নিজে কিছু করবে তেমনটাই ইচ্ছে ছোট থেকে। কিন্তু সেটা ঠিক কি তা নির্দিষ্ট না থাকলেও করতে হবে এতটুকু জানতেন। সারাদিন ফেসবুকিং করতে করতে হটাৎ করে ই-কমার্সের ব্যপারে ঘাটাঘাটি শুরু হয়। যতই জানার পরিধি বাড়তে থাকে ততই এ ব্যবসায়ের প্রতি আগ্রহ আরো বেড়ে যায়।

অন্যের কাছে নিজের পোশাক আশাকের প্রশংসা আর ভাল রান্না জানাটাকেই কাজে লাগাতে চাইলেন। এক দিনে ২টা পেজ খুলেন অনলাইনে। একটা ছিলো Pastels, আরেকটি Cookies, cupcakes & cardio. পোশাক আর ডেজার্ট দুটি ভিন্ন আইটেম  নিয়ে। আর এর পরবর্তীতে ভাললাগা আর সৃজনশীলতার জায়গা থেকে এখন পর্যন্ত কাজ করছেন পোশাক নিয়ে।

সফলতার দেখা পেয়েছেন ঠিকই কিন্তু তার পেছনে যে বাধা পেরিয়েছেন তা সত্যিই প্রেরণাদায়ক। প্রথম শুরুটা বাসা থেকেই। পুঁজি মাত্র ৬০০০ টাকা। পেজ খুলেই বেশ কিছু পোশাক আর খাবারের ছবি পেইজে আপলোড দেন। বুঝতে চেষ্টা করেন মানুষ কি চায়। দিন দিন তার পেইজে রেসপন্স বাড়তে থাকে। সেই সাথে জানান দেয় তার গ্রহন যোগ্যতা। পরিধি বাড়াতে একজন লোক আর কাজের জন্য একটি রুমও ভাড়া নেন।

কিন্তু যার মননে আরও বড় কিছু সে কিভাবে একটা রুমের মধ্যে আটকে থাকবে। তার ব্যবসা দিন দিন যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল তাতে সে সময়ে খুব প্রয়োজন অনুভব করছিলেন একটি শোরুমের। কিন্তু সার্মথ্য যা ছিল তাতে কোন মতেই সম্ভব ছিল না। পরিবার থেকে একমাত্র বাবা ছাড়া আর তেমন কারোও কোনো ধরনের সহায়তা পাননি।  বাবার সহায়তায় ট্রেড লাইসেন্স সহ সরকারি পারমিট নিয়ে হোম বেজড শোরুম দিলেন। সেই সাথে বন্ধু তানভীর অরণ্য, জিহাদ কবি, রাহা চৌধুরি, সারোয়াত বারি, মুবাসসির সাকিব এবং জয় আচার্য হাতে হাতে রাখলেন তার ব্যবসায়ে। দেখতে না দেখতে ব্যবসা পেল নতুন মাত্রা।

শুরু  হল প্যাস্টেলস শোরুমের চমক। দেশের গন্ডি পেরিয়ে পাকিস্তান, ভারত, চায়না, থাইল্যান্ড থেকে পোশাক আমদানি। সেই সাথে দেশের বাজারের পাশাপাশি ইসলামাবাদেও প্যাস্টেলস শোরুমের যাত্রা। সাজানো গোছানো ফ্যাক্টরিতে মেশিন আর কর্মী সংখ্যা বর্তমানে আট। কেউ করে কারচুপি, কেউ এম্ব্রয়ডারি, কেউ নকশীকাঁথা। সেই সাথে মাপ মতো কাটা এবং সেলাইয়ের জন্য আছে আলাদা মানুষ। প্যাস্টেলস এর জনপ্রিয়তার নেপথ্যে রয়েছে আপনার পছন্দমত বিয়ের পোশাক সহ যেকোন পোশাক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সল্প মূল্যে তৈরী করে দেওয়ার সুনাম।

যাত্রা পথের এই বাকেঁ সুনাম অজর্নের মধ্যেও  বিকৃত মনের মানুষের দ্বারা হ্যাক হয় তার ৬৫০০০ ফলোয়ারের ফেসবুক পেইজ। মুহুর্তেই থমকে যায় তার অনলাইন ব্যবসার গতি। কিন্তু দমে যাওয়ার পাত্রী সে নন। আর তাই পেইজ ফেরত আনার চেষ্টা না করে অদৃশ্যমান এ বিশাল ক্ষতি থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন পেইজ নিয়ে যাত্রা শুরু করে পরমুহুর্ত থেকেই। অফলাইনে ভাল পরিচিতি আর সুনামের কারনে অনলাইনের ধাক্কাটা সেভাবে বুঝতে না পারলেও মেধা দিয়ে হারানো বাজার ফিরে পেতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারপরও সল্প সময়ে তার এ অর্জন সত্যিই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে।

সংগ্রামী এ নারী উদ্যোক্তা বর্তমানে পড়াশুনা করছেন ইউনিভারসিটি অফ মেলবোর্ন, ফাউন্ডেশন ইয়ার, কেমিকৌশল বিভাগে। অনলাইন আলাপচারিতার একপর্যায়ে তিনি বলছিলেন আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি, ফ্যাশান ডিজাইনিং এ আমার কোনো জ্ঞান নাই। যেটা ভাল্লাগে করি, বানিয়ে দেখি সবাই পছন্দ করছে।

নতুন যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের কি করা উচিত জানতে চেয়েছিলাম তার কাছে। খুব সাচ্ছন্দেই বলে যাচ্ছিলেন নতুনদের জন্য পরামর্শ দেওয়ার তেমন কিছু নাই। শুধু মন যেটা চায় সেটাই মস্তিস্ক দিয়ে উদ্ধার করে সেই কাজটি করে ফেলতে  হবে।

মাসুদুর রহমান মাসুদ

 

গরমের আরাম ভিন্ন স্বাদের মিল্কশেক

গরমে প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত, তখন হাত বাড়াই গ্লাস ভর্তি ঠাণ্ডা পানির দিকে। ক্লান্ত শরীরে আরেকটু ফুর্তির আমেজ আনতে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা মিল্কশেকের তুলনা হয় না। নিজের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দিতে পারেন গরমে আরামদায়ক এই পানীয়। তীব্র গরমে তাদের তৃপ্তিভরা হাসি দেখতে পছন্দের মিল্কশেকই সেরা। মন জুড়ানো স্বাদে আর রূপ বাহারে আপনার হাতেই তৈরি হবে মিল্কশেক। এই গরমে অতিথি আপ্যায়নেও দারুণ উপযোগী এই পানীয়। তাই আসুন শিখে নেয়া যাক ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের কয়েক পদের মিল্কশেক প্রস্তুত প্রণালী।

আপেল মিল্কশেক- যা যা লাগবে

আপেল খোসাসহ টুকরো ৪ কাপ, দুধ ১ লিটার, কয়েক টুকরো কাজুবাদাম, কয়েক টুকরো দারুচিনি গুঁড়া, প্রয়োজনমতো বরফ ও চিনি।

যেভাবে করবেন

প্রয়োজনমতো চিনি দিয়ে টুকরো আপেলকে ব্লেন্ড করে নিন। এবার জ্বাল দিয়ে রাখা অর্ধেক পরিমাণ দুধ আপেলের মিশ্রণে দিয়ে আবার একটু ব্লেন্ড করতে হবে। সবশেষে বাকি অর্ধেক দুধ ঢেলে দিয়ে আবারও নেড়ে নিন। এবার গ্লাসে ঢেলে ২ থেকে ৩টি বরফের টুকরোসহ প্রয়োজনমত মিশ্রণটি নিন। এবার একটু দারুচিনি গুঁড়া ছিটিয়ে দিন। শেষে বাদাম এবং কাজুবাদামের টুকরোগুলো দিয়ে সুন্দরভাবে তা পরিবেশন করুন।

কলা ও চকলেট মিল্কশেক- যা যা লাগবে

চকলেট সিরাপ ১ থেকে ২ কাপ, কলা মাঝারি ২টি, ঘনদুধ ৪ কাপ, চিনি প্রয়োজনমতো, আইসক্রিম ১ কাপ।

যেভাবে করবেন

ছোট ছোট টুকরা করে কলা কেটে নিয়ে ব্লেন্ডারে নিন। এবার দুধ এবং চকলেট সিরাপ ঢেলে দিন। আপনি চাইলে প্রয়োজনমতো চিনি এবং আইসক্রিম যোগ করতে পারেন। উপকরণগুলো পুরো মিশে যাওয়া পর্যন্ত ব্লেন্ড করতে থাকুন। এবার গ্লাসে ঢেলে মিল্কশেকেও ওপর চকলেট সিরাপ এবং আইসক্রিম দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

ম্যাংগো মিল্ক শেক-যা যা লাগবে

ঘনদুধ ২ কাপ, চিনি ৪ চা চামচ, বরফ ১ কাপ, পাকা আম কুচি আধা কাপ, ম্যাংগো আইসস্ক্রিম ২ টেবিল চামচ।

যেভাবে করবেন

বারফ বাদে সব উপকরণ এক সঙ্গে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। পরিবেশনের আগে বরফ গুলোকে আলাদা ভেঙে মিশিয়ে দিন। চাইলে একসঙ্গে ব্লেন্ডও করতে পারেন। আম ছোট করে কেটে গ্লাসভর্তি মিল্কশেকের উপরে ছড়িয়ে সাজাতে পারেন। ব্যস হয়ে গেল সুস্বাদু ঠাণ্ডা ম্যাংগো মিল্ক শেক।

স্ট্রবেরি মিল্ক শেক-যা যা লাগবে

দুধ ২ কাপ, চিনি ৪ চা চামচ, বরফ ১ কাপ, স্ট্রবেরি ফ্লেভার ১ ফোঁটা, স্ট্রবেরি আইসস্ক্রিম ২ টেবিল চামচ, স্ট্রবেরি ৪ টি।

যেভাবে করবেন

সবগুলো উপকরণ এক সঙ্গে ব্লেন্ডারে নিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। পরিবেশনের আগে বরফ গুলোকে আলাদা ভেঙে দিতে পারেন। গ্লাসের উপরে কোনায় স্ট্রবেরি স্লাইস দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন স্ট্রবেরি মিল্ক শেক।

 

অভাব মোকাবেলায় কৃষিকাজে নারী

একটা সময় যে নারীরা ব্যস্ত থাকতো শুধু গৃহের কাজ নিয়ে, বাড়ির বাইরে যেতে দ্বিধা করতো, সেসব নারী এখন পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করছে মাঠে-ময়দানে। অভাব মোকাবেলা করে ঘরে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে অবদান রাখছে সমানভাবে। সম্প্রতি সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্য।

নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সবাই সিলেটের খাদিম চা বাগানের বাসিন্দা এবং চা শ্রমিক। সারা বছর তারা চা পাতা তোলে। কিন্তু চা পাতা সংগ্রহ করেও পরিবারের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সংসারের আয় বাড়াতে আজ তারা কৃষি কাজে পুরুষের সঙ্গে মাঠে এসেছে।

কৃষি কাজ করছে এমন কয়েকজন জানান, সারা দিন চা পাতা তুলে মাত্র ৬৯ টাকা পান। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা ধান কাটলে তারা পুরুষদের মতো ৩০০ টাকা মজুরি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন। তাই চা বাগান থেকে তারা ধান কাটতে এসেছেন।

সরেজমিন খাদিম এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নারীরা পুরুষের সঙ্গে ধান কাটছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কাস্তে হাতে ধান কাটছেন। আবার কেউ কেউ আটিবাধা কাটা ধান মাথায় করে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন।

ধান কাটতে আসা খাদিম চা বাগানের বাসিন্দা রূপা রানী বলেন, বাগানে এখন কাজ কম। বৃষ্টি হয়েছে। মাত্র নতুন পাতা গজাচ্ছে। তাই আমি ধান কাটতে এসেছি।

তিনি বলেন, চা পাতা উত্তোলন করলে মাত্র ৬৯ টাকা মিলে। কিন্তু ধান কাটলে ৩০০ টাকা মজুরি মিলে। অভাবের সংসারে বাড়তি টাকা পেলে কিছু দিন আরাম করে থাকা যায়।

অনু রানী নামের আরেক চা শ্রমিক জানান, তিনি প্রতি বছরই খাদিমপাড়া এলাকায় ধান কাটতে আসেন। জামাল নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে ধান রোপন ও ধান কাটার এখানে কাজ মেলে।

তিনি জানান, একটু বাড়তি রোজগারের আশায় তারা বাগানের বাহিরে এসে কৃষি কাজ করেন। এই কাজ করতে কোনো সমস্যা হয় কি না জানতে চাইলে অনু বলেন, প্রথমে কিছু সমস্যা হতো। কিন্তু এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই ধান কাটতে বা রোপন করতে কোনো সমস্যা হয় না।

অনু ও রূপার সঙ্গে কথা বলার পর কথা হয় তাদেরকে নিয়ে আসা জামালের সঙ্গে। তিনি জানান, নিজেও কৃষি কাজ করে সংসার চালান। প্রতি বছর তিনি ধান কাটা ও রোপনের সময় একটি টিম নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতে যান।

জামাল জানান, অতীতে কৃষি কাজের জন্য শ্রমিকের অভাব হতো না। কিন্তু এখন কৃষি কাজের শ্রমিক মিলে না। তাই তিনি বিগত কয়েক বছর থেকে খাদিম চা বাগান থেকে চা শ্রমিক এনে ধান কাটান এবং রোপন করেন। বিনিময়ে নারী চা শ্রমিকদের তিনি রোজ ৩০০ টাকা করে দিতে হয়।

তিনি নারী শ্রমিকদের প্রসংশা করে বলেন, ‘চা বাগানের নারীরা খুবই পরিশ্রম করতে পারে। তারা পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কৃষি জমিতে কাজ করছে। তাই তাদের পুরুষদের রোজ যত টাকা (মজুরি) দিতে হয় নারীদেরও তত টাকা দিতে হয়।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চা শ্রমিকরা এখন আর বাগানের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তারা চা পাতা উত্তোলনের পাশাপাশি ইট ভাঙ্গার কাজ, মাটি কাটার কাজ, ধানের চারা রোপণ, জমি পরিচর্যা, সার-কীটনাশক ছিটানো, ধান কাটা, মাড়াই এসব কাজ করছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে চা শিল্পের ইতিহাস ১৫০ বছরের। সিলেটে চা বাগান তৈরির শুরুর দিকে উন্নত জীবনযাপনের আশা নিয়ে জন্মভিটা ছেড়ে চা বাগানে কাজ করতে আসে দক্ষিণ ও মধ্য ভারতের অভাবী মানুষ। কিন্তু কাজে এসে তাদের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যায়। তারা ফিরতে চায় নিজ দেশে। এ সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নির্বিচারে হাজার হাজার চা শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে। ১৯২১ সালের ২০ মের সেই রক্তাক্ত পরিণতিতে চা শ্রমিকদের দেশে ফেরার স্বপ্নও শেষ হয়ে যায়।

 

৮০ বছরের প্রথা ভেঙে মসজিদে যাচ্ছেন নারীরা

ভারতের কেরলা রাজ্যের এক ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন মসজিদে প্রথমবারের মত প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন স্থানীয় মুসলিম নারীরা। গত ৮০ বছরের পুরনো অনিন্দ্য সুন্দর এই মজিদটিতে এতদিন ধরে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল বলে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে।

অপরূপ সুন্দর ‘তাজহাথানগাদি জুমা মসজিদটি’ কেরলার কোত্তায়াম এলাকায় অবস্থিত। মসজিদ কর্তৃপক্ষ ৮০ বছরের ঐতিহ্য ভেঙে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের নারীদের এই উপাসনালয়ে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন। তবে মাত্র একদিনের জন্য। আগামী ৯ মে রোববার সেখানকার নারীরা এই সুযোগ পাবেন। ওই দিন তারা কেবল মসজিদের স্থাপত্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। তারা এই সুন্নী মসজিদে নামাজ আদায় কিংবা অন্য কোনো ধরনের ধর্মীয় কাজে অংশ নিতে পারবেন না।

এ সম্পর্কে মসজিদের ইমাম মৌলবী সিরাজউদ্দীন হাসান এনডিটিভি’কে বলেছেন, ‘এই মসজিদে নারীদের নামাজ আদায়ের নিয়ম নেই। গত ৮০ বছর  ধরে প্রথাটি পালিত হয়ে আসছে। আমরা এটি ভাঙতে পারি না। প্রাচীন মসজিদের অপরূপ শৈলী উপভোগ করতে প্রতিদিন বিশ্বের নানা স্থান থেকে অসংখ্য পর্যটক এসে থাকে। ভারতের মুসলিম নারীরাও এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চায়। আমরা তাদের দাবি মেনে নিয়েছি এবং নারীদের জন্য একটি দিন নির্ধারন করেছি। যাতে তারা ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করে এর স্থাপত্য শৈলী উপভোগ করতে পারে।’

মসজিদ কমিটির এই সিদ্ধান্তে দারুণ খুশী কেরলার মুসলিম নারীরা। ১৯ বছরের মেহরিন আমেনা নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেছেন,‘আমরা প্রথম মসজিদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারছি। আমার বিশ্বাস একদিন আমি পুরুষদের মত এই মসজিদে নামাজ আদায়েরও সুযোগ পাব।’ অনেক দিনের সংগ্রামের পর এটুকু সুযোগ পেল কেরলার মুসলিম নারীরা।

 

আকাশপথে ভ্রমনের আগে

বাঙালিরা ঘরকুনো এই অপবাদ কাটিয়ে উঠেছে অনেকটাই। এখন ছুটি পেলেই ঘুরতে যাওয়া আর বিলাসিতা নয়, জীবনকে উপভোগ করার একটা পথও বটে। ছোট্ট একটা দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। তাই দেশের মাঝে ভ্রমণ করতে হলে স্থল বা জলপথটাই যথেষ্ট। তবে দেশের বাইরে যেতে হলে সেক্ষেত্রে আকাশ পথেই ভ্রমন করতে হয়। কাজের প্রয়োজনে হোক বা আনন্দের উদ্দেশ্যে, প্লেনে ভ্রমনের আগে যদি আপনার কিছু বিষয় জানা থাকে তবে আপনার ভ্রমনটি আরও আনন্দদায়ক ও নির্ঝঞ্ঝাট হতে পারে। আসুন জেনে নেই সেই সবই।

  • -ভ্রমনের আগে আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে রাখুন। এ জন্য ছোট পাউচ ব্যাগ বা হ্যান্ডব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। যদি বিদেশ ভ্রমন করতে যান তবে আগে থেকে আপনার পাসপোর্ট, টিকেট ও অন্যান্য কাগজ ঠিক করে রাখবেন। সেই সাথে আপনার ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে তা সাথে নিয়ে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে। হোটেল বুকিং দেয়া থাকলে তার কাগজটাও সাথে রাখবেন। এছাড়া অন্যান্য কোন দরকারি কাগজ থাকলে সব এক সাথে এক ব্যাগের মধ্যে রাখতে পারেন। এসব কাগজের ফটোকপি করে নিতে ভুলবেন না অবশ্যই, কেননা জিনিষটি কখন কি কাজে লেগে যেতে পারে তা বলা যায়না আগে থেকে। দেশের ভেতরে ভ্রমনের ক্ষেত্রে আপনার ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি সাথে রাখতে পারেন।
  • -যদি এয়ারপোর্টে ফ্লাইট ছাড়ার বেশ কিছুক্ষণ আগে পৌঁছান ভালো, তাই বলে বেশি আগে গিয়ে বসে থাকার কোন মানে নেই। বরং বেশি আগে পৌছে গেলে সময় কাটানো ঝামেলার বিষয় হয়ে যেতে পারে। তাই ফ্লাইটের সময়সূচী অনুযায়ী হিসাব করে ঘর থেকে বের হওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তবে যদি গভীর রাতের ফ্লাইট হয় তবে আগে পৌঁছানটাই ভালো হবে।
  • -এয়ারপোর্টে ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করতে করতে সময় কাটানো বেশ ঝামেলার হতে পারে। তাই সময় কাটানোর জন্য সাথে কোন বই রাখতে পারেন। সেই সাথে ব্যাগে হাল্কা খাবার যেমন চকলেট, চিপস রাখতে পারেন। এয়ারপোর্টে বাইরের খাবার নিয়ে প্রবেশ নিষেধ থাকলে ভেতরের দোকান থেকেও কিনে নিতে পারেন।
  • -আপনার সাথে কোন মূল্যবান জিনিষপত্র থাকলে তা আপনার লাগেজে না রেখে আপনার কাছে হাত ব্যাগে রাখবেন। মনে রাখবেন অনেক সময় কিন্তু এয়ারপোর্ট থেকে লাগেজ হারানো যায়। আপনারটা কোনদিন যায়নি ভালো কথা, কিন্তু তার মানে এই না যে হারানো যেতে পারেনা। তাই আগে থেকে সতর্ক থাকা জরুরি। সেই সাথে এমন কিছু যদি সাথে থাকে যা ভেঙ্গে গেলে বা হারিয়ে গেলে রিপ্লেস করা সম্ভব না- যেমন ল্যাপটপ বা ক্যামেরা- তা নিজের সাথে রাখুন।
  • -প্লেনে বসে লম্বা ভ্রমন করা কষ্টদায়ক বটে। তাই ভ্রমণকে আনন্দদায়ক করতে সাথে বই নিতে পারেন। এছাড়া সাথে ল্যাপটপ বা কোন গান শোনার যন্ত্র যেমন আইপড বা অন্য কিছু থাকলে তাতে আপনার পছন্দের গান ভরে নিতে পারেন, ল্যাপটপে নিতে পারেন সিনেমা ও ছোটদের জন্য কার্টুনের কালেকশন।
  • -সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে থাকলে ভ্রমনের জন্য পোশাকটিও ঠিক করে ফেলুন। ভ্রমনের জন্য ঢিলেঢালা পোশাক পড়তে চেষ্টা করবেন। জুয়েলারি, বেল্ট, অতিরক্ত সাজগোজ এসব পরিহার করার চেষ্টা করবেন। লম্বা ভ্রমনের সময় এসব জিনিষ শুধু ঝামেলাই বাড়াবে। ফ্ল্যাট জুতা বা স্যান্ডেল পরবেন যেন দরকার পরলে দ্রুত খুলতে পারেন। লাগেজে ও হ্যান্ড বাগে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছুই নিতে যাবেন না।
  • – সাথে ছোট শিশু থাকলে তাদের প্রয়োজনীয় সব কিছু, যেমন- ডায়পার, দুধের বোতল, ন্যাপকিন ইত্যাদি সব সাথে নিয়ে নিন। কোনও জরুরি ওষুধ নিজের বা বাচ্চার প্রয়োজনে লাগলে সেটাও নিয়ে নিন। হাঁপানি রোগীরা ইনহেলার নিতেও ভুলবেন না।

ভ্রমন হল আপনার মনের খোরাক। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত জীবন থেকে ছুটি নিয়ে দুই দণ্ড ভাল করে শ্বাস নেবার জন্যই ঘুরতে যাওয়া হয়। আপনার ঘোরাঘুরিকে আরও আরামদায়ক ও নিশ্চিন্ত করতে ও আকাশপথে ভ্রমনের ঝামেলা এড়াতে সব কিছু গুছিয়ে নিতে ভুলবেন না যেন।

 

ঘুরে আসুন পদ্মা রিসোর্ট

ঢাকা বিভাগের মুন্সিগঞ্জ জেলার পদ্মা নদীর পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে নয়নাভিরাম ও অপরূপ সুন্দর একটি রিসোর্ট যার নাম পদ্মা রিসোর্ট। যারা কর্ম চঞ্চল শহরের গন্ডি পেড়িয়ে প্রকৃতি আর নদীর সান্নিধ্য পেতে চান তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান। বর্ষা মৌসুমে জল ঘেরা রিসোর্টে চাঁদনী রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করার মজাই ভিন্ন।

এখানে আছে ১৬টি ডুপ্লেক্স কটেজ। প্রতিটি কটেজে আছে একটি বড় বেডরুম, দুটি সিঙ্গেল বেডরুম, একটি ড্রইংরুম। আছে দুটি ব্যালকনি এবং একটি বাথরুম। শীতে কটেজের চারপাশ রঙ-বেরঙের ফুলে ভরে ওঠে আর বর্ষায় পানির রাজ্য। রিসোর্টের উঠোনে ইজি চেয়ারে রাতের তারা গুনতে পারেন। দিনে পারেন দেশি নৌকায় পদ্মা বেড়াতে। রিসোর্ট রেস্টুরেন্টে টাটকা ইলিশ পাবেন। শাকসবজি, গরু, মুরগি আর হাঁসের মাংসও পাবেন। মৌসুমি ফলফলাদিও মিলবে। ঢাকা থেকে রিসোর্টের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। মাওয়া ফেরিঘাট থেকে রিসোর্টের নিজস্ব স্পিডবোট আছে।

যেভাবে যেতে হবে
ঢাকার গুলিস্থান হতে বাসে করে যেতে হবে লৌহজং। সেখান হতে মাওয়া ফেরীঘাট। মাওয়া ফেরিঘাট হতে রিসোর্টের নিজস্ব স্পীডবোটে করে সরাসরি রিসোটে।

যা যা আছে পদ্মা রিসোর্টে-

আউটডোরে
বাইরে আছে লেভিশ বিচ চেয়ার যেখানে হেলান দিয়ে আপনি উপভোগ করতে পারবেন নদীর পারের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। এছাড়াও আছে ঘোড়া, এই ঘোড়ায় চরেও ঘুরে বেরাতে পারবেন আপনি।

রেস্টুরেন্ট
রিসোর্টের ভিতরে বেশ অনেকখানি জায়গা নিয়ে আছে সুসজ্জিত রেস্টোরেন্ট। এখানে ১২০ জনের মতো বসার জায়গা আছে।

রিভার ক্রুজের ব্যবস্থা

যারা নৌকা ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তাঁদের জন্য আছে বিভিন্ন রকম ছোট বড় নৌকার ব্যবস্থা। এখানে আছে রাবার বোট যাতে অনায়াসে ২-৬ জন বসতে পারবে। স্পিড বোটের ব্যবস্থাও আছে এখানে। আর এক ধরনের নৌকা হচ্ছে কান্ট্রি বোট, একটু বড় হয় এই নৌকাটা, এখানে একসাথে ২০-২৫ জন উঠতে পারবে। আর যারা নদীতে মাছ ধরার শখ রাখেন তারা ফিশিং বোটেও চড়তে পারেন। সব বোটেই লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা আছে।

খেলাধুলা
এখানে আপনি চাইলে আপনার বন্ধুদের সাথে মেতে উঠতে পারেন বিভিন্ন খেলায়- ফুটবল, বিচ ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, ঘুড়ি উড়ানো, ফ্রিজবি, এমনকি দেশীয় খেলা হাডুডুও চাইলে খেলতে পারবেন।

খাবার
এখানে আপনি পাবেন ফ্রেশ এবং ফরমালিনমুক্ত পদ্মা নদীর ইলিশ ও অন্যান্য মাছ। আর পাবেন সবজি, গরুর মাংস, মুরগির মাংস ও হাঁসের মাংস আর থাকছে এখানকার লোকাল মৌসুমি ফলমূল। দুপুর বা রাতের খাবারের জন্য খরচ হবে ৩০০ টাকা। সকালের নাস্তা জনপ্রতি ১০০ টাকা

কোথায় থাকবেন
এখানে ১৬ট ডুপ্লেক্স কটেজ রয়েছে। প্রতিটিতেই রাত্রি যাপন করা যায়

ভাড়া ও অন্যান্য
এক দিনে কটেজ ভাড়া (সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা) ২৩০০ টাকা। ২৪ ঘণ্টার জন্য (সকাল ১০টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা) ৩০০০ টাকা।

যোগাযোগ করতে চাইলে
এস এম নজরুল ইসলাম
জেনারেল ম্যানেজার
মোবাইলঃ ০১৭১২-১৭০৩৩০, ০১৭৫২-৯৮৭৬৮৮
টেলিফোনঃ ৮৭৫২৬১৭

 

সাগরকন্যা কুয়াকাটা

প্রকৃতির সাথে কিছুক্ষন থাকতে চান? নিরিবিলি কিছুসময় কাটাতে চান? তাহলে বেড়িয়ে পড়ুন কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে। এমন শান্ত ও নিরিবিলি সৈকত কোথাও পাবেন না এটা বলতে পারি। অনেকেই কক্সবাজারের সাথে কুয়াকাটার মিল খুজতে চান। অনেকেই বলে থাকেন কুয়াকাটায় দেখার মত কিছু নেই, এর থেকে কক্সবাজার অনেক সুন্দর। এখানে বলে রাখি কক্সবাজার আর কুয়াকাটার সৌন্দর্য সম্পূর্ন ভিন্ন রকমের। জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য অথবা গাংচিলের ওড়াওড়ি দেখেতে পাবেন একটু নজর রাখলেই।

পথে যেতে যেতেঃ

অনেকেই হয়তো শুনে থাকবেন কুয়াকাটার রাস্তা খুবই খারাপ। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতাটা এই যে কুয়াকাটার যাবার রাস্তা আসলে খুবই ভাল। শুধু শেষের কয়েক কিলোমিটার রাস্তা মোটামুটি হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু ফেরিতে নদী পার হতে হয় চারটি। তবে আশার কথা হল তিনটি নদীতে সেতু নির্মান হচ্ছে।। একটির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। তাই অচিরেই ফেরী পারাপারের হ্যাপাও আর থাকবে না।

বরিশাল বিভাগ পুরোটাতে অসংখ্য নদী দিয়ে ঘেরা। তাই নদীপারের জীবন যাত্রা দেখে অবিভূত হতে পারেন। রাস্তার দুপাশে যতদূর চোখযায় শুধু ধান ক্ষেত। নদী, ধান, খাল এই নিয়ে বরিশাল কথাটার সার্থকতা খুজে পাবেন। যত কুয়াকাটার দিকে যেতে থাকবেন ততই পাল্টাতে থাকবে আশেপাশের দৃশ্য। দেখা পাবেন সাগরের মাছ ধরার ট্রলার হয়তো সাগর থেকে ফিরছে। এদিকের মানুষের অনেকেরই প্রধান জীবিকা মাছ ধরা।
দূরে দেখতে পাবেন ম্যনগ্রোভ বনের সারি। এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে সময় কেটে যাবে বুঝতেও পারবেন না।

অবশেষে কুয়াকাটায়ঃ

কুয়াকাটায় গিয়ে প্রথম কাজ হবে কোন একটি হোটেলে ওঠা। যারা একটু নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করেন তাদের জন্য পর্যটন করপোরেশনের হোটেল অনেক ভাল লাগবে। চারদিকে নারিকেল গাছে সারি। সামনে বিশাল বাগান। পর্যটন করপোরেশনের হোটেলে একটু বাড়তি নিরাপত্তা দেয়। তাছাড়াও আছে অসংখ্য হোটেল। তার যে কোন একটিতে উঠতে পারেন।

নিরিবিলি সৈকতঃ

দুপুরের খাবার পর বেড়িয়ে পড়ুন সৈকত দেখতে। অনেক শান্ত নিরিবিলি একটি সৈকত। হেঁটে হেঁটে বহুদূর পর্যন্ত যাওয়া যায়। কুয়াকাটার সমূদ্রের দৈর্ঘ্য মাত্র ২০ কিলোমিটার। কিন্তু সৈকতের প্রস্থ প্রায় দেড় কিলোমিটার। পূর্ব দিকে কয়েক কিঃমিঃ গেলে দেখা মিলবে ঝাউ গাছের বাগান। মাঝে মাঝে মাথা উচু করে আছে নারিকেল গাছ। সাগর পাড়ের ছোট ছোট বাচ্চারা সৈকতে ছোটাছুটি করে। ছোট ছোট কাঁকড়া মাটি খুড়ে তৈরী করছে সুন্দর সুন্দর নকশা। যেন কোন শিল্পী নিখুত আঁচড়ে এইসব শিল্পকর্ম তৈরী করছে। তাছাড়াও এখানে সৈকতে পেতে রাখা আছে কাঠের বেড। চাইলে এগুলো ভাড়া নিতে পারেন। প্রতিঘন্টা বেড ভাড়া ২০টাকা। দিনের কোলাহলের থেকে রাতের আঁধারে সমূদ্রের গর্জন বেশি শোনা যায়। চাইলে রাতেও কাঠের বেড গুলো ভাড়া নিতে পারেন। নিরাপত্তার কথা যদি বলি তাহলে দেখেছি রাতে পুলিশ সৈকতে পাহারা দেয়। তবুও রাতে সৈকতে থাকলে একটু সতর্ক থাকা ভাল।

হারিয়ে যান প্রকৃতির মাঝেঃ

ঘুরাঘুরির জন্য এখানে ভাড়াতে মটরসাইকেল পাওয়া যায়। মটরসাইকেল ভাড়ার নানান অফার পাবেন তাদের কাছ থেকে। দেখতে পাবেন সাগর পারের মানুষের মাছ ধরা ও তার জীবন যাত্রা। কেউবা ধরছে চিংড়ির পোনা। বিশাল সৈকতে রাখা আছে সারি সারি নৌকা। যেগুলো জেলেরা মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করেন।

জেলেদের সাথে উড়ে বেড়ায় গাংচিলের ঝাঁক। নিশ্চিন্তে হেঁটে বেড়ায় সি বিচে। এখানে তাদের কেউ উৎপাত করেনা। দেখা পাবেন গাংচিলের ঝাঁক মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত। সাথে আছে বিশাল আকাশ আর বিশাল সমূদ্র। হারিয়ে যান বিশালতার মাঝে।

ফাতরার চর ও লাল কাঁকড়ার চরঃ

ফাতরার চর মূলত সুন্দরবনের একটি অংশ। এখান থেকেই সুন্দরবনের এলাকা শুরু। চাইলে সুন্দরবনে ঘোরার সাধটি এখানেই অনেকটা মিটিয়ে নিতে পারেন। যদিও এখানে বন্যপ্রানী দেখার সম্ভাবনা অনেক কম। কিন্তু অনেক পাখি দেখতে পাবেন। এছাড়াও লাল কাঁকড়ার চরে যেতে পারেন। মূলত এই চরটির নাম গঙ্গামায়ার চর। এখানে হাজার হাজার লাল কাঁকড়া চোখে পড়বে আপনার। তাই অনেকে এটিকে লাল কাঁকড়ার চর বলে। এই দুই জায়গা ছাড়াও শুটকি পল্লীতে যাবার জন্য এখানকার সৈকত থেকে কয়েকটি ট্রলার ছেড়ে যায়। সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে ট্রলারগুলো ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ৩০০টাকা। ফাতরার চর,লাল কাঁকড়ার চর, শুটকি পল্লী ইত্যাদি কয়েকটি স্পটের প্যাকেজ অনুযায়ী ট্রলারগুলো চলাচল করে।

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তঃ

কুয়াকাটার বিশেষত্ব হচ্ছে এখান থেকে একই সাথে সূর্য উদয় আর সূর্য অস্ত দেখা যায়। দক্ষিন এশিয়ার এই একটি মাত্র জায়গা থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। ভোর বেলা সূর্য রক্তিম আভা ছড়িয়ে সমূদ্রের বুক চিড়ে উদয় হয় আবার সন্ধ্যায় অস্ত যায়। এই একটি বিশেষত্বের কারনে অনেকে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন। সূর্যাস্ত দেখার জন্য বিকেল থেকেই সৈকতে থাকতে হবে। সারাটা বিকেল জুড়ে কুয়াকাটার সৌন্দর্য পরিবর্তিত হতে থাকে। আকাশে মেঘ না থাকলে সহজেই সূর্যাস্ত দেখতে পারবেন। কিন্তু সূর্যদোয় দেখতে হলে খুব সকালে উঠতে হবে। সকালে উঠতে হলে তারাতারি ঘুমিয়ে পড়ুন। রাত জেগে থাকলে সূর্যদোয় মিস হয়ে যেতে পারে কিন্তু! সূর্যদোয় দেখার জন্য সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই যেতে হবে ঝাঊ বনের দিকে। এখান থেকেই সূর্যদোয় সব থেকে ভাল দেখা যায়।

আরো দেখুনঃ

হাতে সময় থাকলে ঘুরতে পারেন বৌদ্ধমন্দির ও রাখাইন পল্লী। এই বৌদ্ধমন্দিরের বৌদ্ধ মূর্তিটি ৩০ফুল লম্বা। আর রাখাইন পল্লী মূলত উপজাতীয়দের আবাসস্থল। যেতে পারেন জেলে পল্লীতে। মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলোকে কাছ থেকে দেখুন। এখান থেকে সুলভ মূল্যে ইলিশ কিনতে পারেন।

যাতায়াতঃ

ঢাকা থেকে বাস অথবা লঞ্চে কুয়াকাটা যেতে পারেন। এছাড়া সায়দাবাদ থেকে সরাসরি কিছু বাস যায় কুয়াকাটায়। সাকুরা পরিবহন ও বিআরটিসি পরিবহনের বাস গুলো একেবারে সিবিচের কাছেই নামিয়ে দেয়। লঞ্চে গেলে দুভাবে যেতে পারেন। ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা অথবা ঢাকা থেকে পটুয়াখালী হয়ে কুয়াকাটা। সদরঘাট থেকে লঞ্চে পটুয়াখালী হয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে পটুয়াখালীতে নেমে সেখান থেকে বাসে সোজা কুয়াকাটা যেতে হবে। লঞ্চে গেলে বরিশাল হয়ে যাওয়া অনেক সুবিধাজনক। বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যাবার বাস ভাড়া ২২০টাকা। বাস গুলো খুব বড় নয়। বরিশাল রূপাতলী বাসস্টান্ড ও বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে প্রতি ঘন্টায় বাস ছাড়ে। কুয়াকাটাতে গেলে হাতে কিছু সময় নিয়ে যান। দেখার মত অনেক কিছু আছে সেখানে। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হল ফাতরার চর। যেটা আসলে সুন্দরবনের একটি অংশ।

থাকা ও খাওয়াঃ

কুয়াকাটাতে অনেক ভাল মানের হোটেল আছে। যেগুলোতে খুব কম খরচে থাকতে পারেন। তবে যারা একটু নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করেন তারা পর্যটন মোটেলে উঠতে পারেন। এখানে পর্যটন মোটেল ও ইয়ূথ ইন এ সিঙ্গেল বেডের রুম ১০০০টাকা ও ডাবল বেডের রুম ১৫০০ টাকাতে পাবেন। এছাড়া ৪ বেডের রুম ভাড়া ১৬০০ টাকা। পর্যটন করপোরেশনের হোটেল পর্যটন হলিডে হোমস এ খবচ একটু কম পরবে। হোটেল গুলোতে খাবারের ব্যবস্থা আছে। চাইলে খাবার রুম সার্ভিসে নিতে পারেন। তাতে অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে। এছাড়াও কুয়াকাটার আশেপাশে আরো ৪০-৫০টি ব্যাক্তি মালিকানাধীন হোটেল আছে। সেগুলোতে খরচ অনেক কম। এগুলোতে ১৫০ থেকে ১০০০টাকার মধ্যে থাকতে পারবেন। এছাড়া সি বিচে কম খরচের অনেক হোটেল পাবেন খাবার জন্য। কুয়াকাটায় গেলে সামূদ্রিক মাছ খেতে ভুলবেন না। এখানকার সামুদ্রিক মাছের অসাধারন রান্না আপনার মুখে অনেকদিন লেগে থাকবে। এখানে শুঁটকি পল্লী থাকায় সেখান থেকে কম মূল্যে শুঁটকি কিনে ফিরতে পারেন।


ছবি- ইন্টারনেট

 

গরমের ফোস্কা থেকে রেহাই পাওয়ার ঘরোয়া উপায়

গরমের সময় শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোস্কা পড়তে দেখা যায়। এই ফোস্কাগুলো তরলে পূর্ণ থাকে এবং এরা গুচ্ছাকারে থাকে। সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রভাবে ফোস্কা পড়ে। এই ফোস্কা অস্বস্তিকর হয় এবং কখনো কখনো প্রচন্ড ব্যথা ও চুলকানি হয়। যদি এতে ইনফেকশন হয় তাহলে অনেক বেশি ব্যথা হয় ও ফুলে যায় এবং জ্বর আসে। এদের চামড়ার ভাঁজের মধ্যে হতে দেখা যায়। সাধারণত হাত বা পায়ে ফুসকুড়ি হতে দেখা যায় ঘষা বা চাপ দেয়া হয় বলে। চামড়ার নীচের ঘাম নালীর মধ্যে যদি ঘাম আটকে যায় তাহলে ছোট ফোলা অংশ বা ফুসকুড়ি হয়। সানবার্ন ব্লিস্টার সহজ ও ঘরোয়া উপায়ে নিরাময় করা যায়। ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমে ব্যথা কমে, ইনফেকশন প্রতিরোধ করে এবং দ্রুত নিরাময় হয়। ঘরোয়া প্রতিকারগুলো সম্পর্কে জেনে নিই চলুন।

১। ঠান্ডা চাপ

গরমের ফোস্কার ব্যথা ও প্রদাহ কমতে সাহায্য করে ঠান্ডা চাপ। এজন্য ঠান্ডা পানির মধ্যে একটি তোয়ালে ভিজিয়ে নিয়ে অতিরিক্ত পানিটুকু চেপে ফেলে দিন এবং আক্রান্ত স্থানে তোয়ালেটি দিয়ে রাখুন। দিনে কয়েকবার এই প্রক্রিয়াটি করুন। এতে ফুসকুড়ির জ্বালা যন্ত্রণা কমবে।

সতর্কতা- কখনোই সরাসরি বরফের টুকরো ফোস্কার উপর দিবেন না। কারণ এতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। যতদিন ফোস্কা থাকে ততদিন গোসলের সময় গরম পানি ব্যবহার না করাই ভালো। এর পরিবর্তে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করুন। এতে ব্যথা কমতে সাহায্য করবে।

২। অ্যালোভেরা

হালকা পুড়ে যাওয়ার চিকিৎসায় ও সান বার্ন ব্লিস্টার ভালো করতে অ্যালোভেরা অত্যন্ত কার্যকরী। এটি ব্যথা কমতে সাহায্য করে, ক্ষতিগ্রস্থ ত্বককে রি-হাইড্রেট করে এবং নিরাময়কে ত্বরান্বিত করে। একটি অ্যালোভেরার পাতার মাঝ বরাবর কেটে জেল বাহির করে নিন। ফুসকুড়ির উপরে এই জেল লাগান এবং শুকাতে দিন। অ্যালোভেরাতে এস্ট্রিঞ্জেন্ট বা কষাটে উপাদান থাকে যা ফুসকুড়ি পরিষ্কার রাখে ও সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।

৩। আলু

কাঁচা আলু ত্বককে ঠান্ডা করতে পারে, ব্যথা কমাতে পারে এবং নিরাময়কে ত্বরান্বিত করতে পারে। কাঁচা আলু ভালো করে ধুয়ে নিয়ে মোটা করে টুকরা করুন। তারপর এদের ব্লেন্ডারে দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট ফুসকুড়ির উপরে লাগিয়ে শুষ্ক হতে দিন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে প্রতিদিন লাগান ফুসকুড়ি ভালো হয়ে যাওয়া পর্যন্ত। আলুর সাথে শশার টুকরা মিশিয়ে নিতে পারেন।

এছাড়াও ভিনেগার, ওটমিল, হলুদ, ব্ল্যাক টি, টুথপেস্ট, টি ট্রি ওয়েল ও কর্ণস্টার্চ ব্যবহার করেও গরমের ফোস্কা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। গরম আর্দ্র আবহাওয়া ফোস্কা পড়ার জন্য উপযুক্ত। ফুসকুড়ি সুই দিয়ে ফুটো করা ঠিক নয়। এতে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় এবং আবারও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর পরিবর্তে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত এদের ব্যান্ডেজ করে রাখা ভালো। গরমের ফুসকুড়ি প্রতিরোধ করার জন্য সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঘরের ভিতরে থাকার চেষ্টা করুন। সব সময় হাইড্রেটেড থাকার চেষ্টা করুন পানি বা লেবুর জুস পান করে।

 

লিখেছেন-

সাবেরা খাতুন

 

শাহরুখের সমান পারিশ্রমিক দাবি করলেন রণবীর সিং

‘বাজিরাও মাস্তানি’ ছবি বদলে দিয়েছে রণবীর সিংয়ের ভাগ্যের চাকা। অসংখ্য পুরস্কারও জিতেছেন সঞ্জয় লীলা বানসালি পরিচালিত এই সিনেমার জন্য। সে কারণে নিজের পারিশ্রমিক বাড়াতেই পারেন এই অভিনেতা। খবরে প্রকাশ- ছবির জন্য নয়, লাইভ পারফরমেন্সের জন্য বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানের সম পরিমাণ পারিশ্রমিক দাবি করছেন রণবীর।

হিন্দি সিনেমার ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন তিন খান। সাধারণত লাইভ পারফরমেন্স করতে কিং খান নিয়ে থাকেন দুই কোটির মতো। ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, ঠিক সেই অঙ্কের পারিশ্রমিক রণবীর চাইছেন স্টেজ পারফরমেন্স করতে।

 

কাফন-দাফনের সময় মৃত নারীর চুল কিভাবে রাখবে ?

আদম সন্তান মারা গেলে তার জানাযার সাথে কিছু বিধান রয়েছে, যা বাস্তবায়ন করা জীবিতদের ওপর জরুরি। মৃত নারীর ক্ষেত্রে বিধান হলো, নারীর চুল তিনটি বেণী করে পিছনে ফেলে রাখবে।

উম্মে ‘আতিয়্যাহ [রা.] নবী [সা]-এর মেয়ের গোসলের বর্ণনা দিয়ে বলেন- অর্থাৎ- আমরা তার চুলকে সমান তিনটি বেণী বানিয়ে পিছনে রেখে দিয়েছি। সুতরাং কাফনে নিয়োজিত নারীদের এ বিধানটির দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা দরকার ।

মূল : ড. সালেহ ইবনে ফাওজান
ভাষান্তর : মাওলানা মনযূরুল হক

 

ছোটদের জুতা কিনতে যা খেয়াল রাখা দরকার

আপনার ছোট্ট সোনাটি যখন হাঁটতে শেখে, তখন আনন্দই আনন্দ। শিশুর প্রথম পদক্ষেপ প্রত্যেক বাবা-মায়ের কাছে স্মরণীয় হয়ে রয়ে যায়। কিন্তু এই সময় আপনাকে হতে হবে সতর্ক। ছোট্ট সোনাটির জন্য বেছে নিতে হবে সঠিক জুতা। যাতে তার ছোট্ট ছোট্ট পায়ে কোনও আঘাত না লাগে। আরও একটা কারণ হয়, ছোটোবেলা থেকে সঠিক জুতা না পরালে সমস্যা দেখা দিতে পারে পরবর্তীকালে। তাই ছোটো বাচ্চাদের জুতা কেনার আগে এই বিষয়গুলি মাথায় রাখুন-

১. ফ্যান্সি জুতার বদলে আরামদায়ক হবে এমন জুতা বেছে নিন। বাচ্চাদের ফ্যাশনের থেকে বেশি জরুরি তাদের সুস্বাস্থ্য।

২. চামড়া বা সুতি কাপড়ের তৈরি জুতা বেছে নিন। ফ্যান্সি প্লাস্টিকের জুতা প্রথম থেকেই এড়িয়ে চলুন। নয়তো তা ওই ছোট্ট পায়ে অস্বস্তির কারণ দেখা দিলেও দিতে পারে।  দেখবেন, জুতার ওজনও যাতে বেশি না হয়।

৩. শক্ত চামড়ার জুতা এড়িয়ে চলাই ভালো। যেহেতু এই সময় বাচ্চারা খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়, তাই খুব টাইট জুতা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে।

৪. জুতার সোল ভালো করে দেখে নিন। দেখে নিন বাচ্চা তাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে কি না।  খুব বেশি শক্ত সোল এড়িয়ে চলাই ভালো।

৫. ছোটো মেয়েদের হাইহিল স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।তাই বাচ্চাকে মনের মতো সাজাতে হলে বেছে নিন মনের মতো সুন্দর ও স্টাইলিশ জুতা।এমন জুতা যাতে হিল নেই, কিন্তু আরাম আছে।

৬. বাচ্চার জুতার সাইজ তার পায়ের মাপ বরাবর হওয়া প্রয়োজন।অতিরিক্ত বড় বা খুব টাইট জুতা একেবারেই পরাবেন না।

৭. ক্যানভাস জাতীয় জুতা কিনলে ভালো করে দেখে নিন, তা পায়ে ঠিক করে ফিট হয়েছে কি না।

৮. বাচ্চাদের বাড়ন্ত বয়সে সময় সময় জুতা বদলানো প্রয়োজন। একবার কিনে বহুদিন চলে যাবে এমন চিন্তাভাবনা জুতার ক্ষেত্রে না রাখাই ভালো।

 

নতুন চাকরি খুঁজছেন? এই ৬টি বিষয় মনে আছে তো?

পড়ালেখা শেষ করে একটি ভাল চাকরি পাবার চেষ্টা থাকে প্রতিটি মানুষের। কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাবার জন্য চলে কত চেষ্টা। প্রতিদিনই চাকরির জন্য বিভিন্ন কোম্পানিতে সিভি দিচ্ছেন। কিন্তু আপনি জানেন কি ছোট ছোট কিছু ভুল আপনার চাকরি খোঁজার কাজটি কঠিন করে দিচ্ছে? ভাল ফলাফল থাকার সত্ত্বেও এই ভুলগুলোর জন্য আপনি আপনার পছন্দের চাকরটি হারাচ্ছেন। প্রথম চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো অব্যশই বিবেচনা করবেন তা জেনে নিন আজকের ফিচারটি থেকে।

১। লক্ষ্য নির্ধারণ করা

চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে একজন ফ্রেশারকে প্রথম লক্ষ্য নির্ধারণ করে নেওয়া উচিত এমনটি মনে করেন Michael Provitera, associate professor of organizational behavior at Barry University. আপনি কোন ক্ষেত্রে চাকরি করতে চান, কোন স্থানে চাকরি পেলে আপনার সুবিধা হবে সেটি প্রথমে নির্ধারন করুন। নিজের পড়ালেখা সম্পৃক্ত কোম্পানিগুলো এবং পছন্দের প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পর্কে রিসার্চ করে নিজেকে সে অনুযায়ী প্রস্তুত করুন।

২। চাকরিক্ষেত্র সীমাহীন রাখুন

নিজের লক্ষ্য ঠিক রাখুন। তবে চাকরি ক্ষেত্রটির কোন সীমা রাখবেন না। ভবিষ্যৎ সবসময় অনিশ্চিত। আপনি জানেন না ভবিষ্যত কি হবে। হয়তো আপনার অপছন্দের চাকরটি করতে হতে পারে। সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখুন।

৩। ভাল মানের সিভি তৈরি

চাকরিদাতা আপনাকে দেখার আগে আপনার সিভি দেখে থাকেন। তাই কোন অবস্থাতে সিভিকে অবহেলা করবেন না। মনোযোগ দিয়ে সিভি তৈরি করুন। চেষ্টা করুন প্রফেশনাল সিভি তৈরি করতে। আর এই কাজটি করতে আপনাকে সাহায্য করবে ইন্টারনেট।

৪। প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন

প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগে  পড়ালেখার পাশাপাশি প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। প্রযুক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন কোর্স করতে পারেন। অনলাইনে নানা রকম কোর্স করানো হয়ে থাকে। এর অনেকগুলো কোর্সই ফ্রি। আপনি এর যেকোন একটি কোর্স করে নিতে পারেন।

৫। প্রতিষ্ঠান বিষয়ক জ্ঞান

কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ইন্টার্ভিউয়ের জন্য ডাক পেলে প্রথম কোন কাজটি করবেন? প্রথমে সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জেনে নিন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েব সাইট থাকে। সেই সাইট থেকে প্রতিষ্ঠান এবং তার কাজের ধরণ সম্পর্কে জেনে নিন।

৬। ইন্টার্ভিউয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি করুন

নিয়মিত খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস করুন। বিশ্ব সম্পর্কে আপডেট থাকুন। এই কাজগুলো ইন্টার্ভিউয়ের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। ইন্টার্ভিউয় দেওয়ার সময় নার্ভাস হবেন না। আত্নবিশ্বাসের সাথে ইন্টার্ভিউয় ফেইস করুন। নার্ভাসের ভাব কাটানোর জন্য বাসায় আয়নার সামনে অথবা পরিবারের সামনে ইন্টার্ভিউয় দেওয়া প্যাকটিস করে নিন। এতে আপনার জড়তা কেটে যাবে। আত্নবিশ্বাসের সাথে ইন্টার্ভিউয় দিতে পারবেন।

মনে রাখবেন প্রথম সাক্ষাৎ একটি চাকরি পাওয়ার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই চেষ্টা করবেন ইন্টার্ভিউয়তে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে।

লিখেছেন

নিগার আলম

 

চুড়িতে কবিতার স্বপ্ন

রাজধানীর ধানমন্ডির পুরাতন ২৭ নম্বর সড়কে একটি বিপণিবিতানের সামনে চলছে বৈশাখী মেলা। সেখানে সার বেঁধে চুড়ি বিক্রি করছেন কয়েকজন। তাঁদেরই একজন কবিতা। লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি রঙিন চুড়ির রিনিঝিনি শব্দের মাঝেই স্বপ্ন দেখেন। তবে চারপাশে রঙের খেলা থাকলেও নিজের জীবনে কোনো রং নেই।
কবিতার চার ছেলেমেয়ে। স্বপ্ন ছিল স্বামী-সন্তান নিয়ে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে সুন্দরভাবে জীবন কাটাবেন। তাই নেমেছেন জীবনযুদ্ধে। স্বামী কিছু করেন না। স্বামী-সন্তান সবার দায়িত্ব নেওয়াও সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে। তাই সন্তানদের নিয়ে আলাদা থাকেন।
শেরপুরের কলুরচর ব্যাপারীপাড়ায় বাড়ি কবিতার। চুড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগে। দুই মেয়ে কাজ করে অন্যের বাসায়। বেতন পায় না, শুধু তিনবেলা খাওয়া জোটে। ছোট ছেলেটা একটা দোকানে কাজ করে। সামান্য কিছু টাকা পায়। বলতে গেলে পরিবারে তিনি একাই উপার্জনক্ষম।
কবিতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পয়লা বৈশাখের আগে আগে প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার টাকার চুড়ি বিক্রি হয়। চৈত্র মাসের শেষ দিনে বিক্রিবাট্টা হয় আরও একটু বেশি। সেটা কখনো পাঁচ-ছয় হাজার টাকাও ছাড়িয়ে যায়। তাই শেরপুর থেকে চুড়ি বিক্রি করতে ঢাকায় আসি।’
পয়লা বৈশাখের আগের রাত পর্যন্ত বিপণিবিতানের সামনের ফুটপাতেই থাকেন তিনি। রাতে গাড়ির শব্দে ঠিকমতো ঘুমও হয় না। এপাশ-ওপাশ করে রাতটা পার করে দেন কোনো রকমে। আর প্রতিদিনের দুর্ভোগ তো আছেই। তারপরও পয়লা বৈশাখের আগে এই ১৩টি দিন কবিতার ঈদের মতোই লাগে। সারা বছর কবিতা চুড়ির পাশাপাশি তাঁর গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে মেয়েদের বিভিন্ন পোশাক, বিশেষ করে অন্তর্বাস বিক্রি করেন বাড়ি গিয়ে। কেননা গ্রামের নারীরা দোকান থেকে এ ধরনের জিনিস কিনতে অভ্যস্ত নন।
কবিতার দিনগুলো কষ্টেই কাটে। কোনো দিন এক বেলা আবার কোনো দিন দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেন। তারপরও কবিতা থেমে নেই, জীবনের পথে রঙিন চুড়ির পসরা নিয়ে কবিতা চলছেন…।

 

জীবনজয়ী জেরিন

জীবনের সংকটময় মুহূর্তে হতাশা এসে ভর করে। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তি তা মোকাবিলা করতে সক্ষম। নুসরাত জেরিন তেমনই একজন। ক্যানসারের সঙ্গে ১০ মাস ধরে যুদ্ধ করে তিনি এখন সুস্থ তো বটেই, শিক্ষকতা করছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির ছাত্রী জেরিন। যখন তাঁর ক্যানসার ধরা পড়ে, তখন স্নাতকোত্তর পরীক্ষার তাত্ত্বিক অংশ শেষ হয়েছে। গবেষণাপত্র জমা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। হঠাৎ করে আসা ওই বিপদে বুঝতে পারেন না কী করবেন। স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। স্নাতকোত্তরেও তাঁর প্রথম হওয়ার স্বপ্ন। গবেষণাপত্র সময়ের মধ্যে জমা না দিলে পরীক্ষার ফল ভালো হবে না। এসবই মাথায় ঘুরছে জেরিনের।
পরিবার, বন্ধু ও শিক্ষকেরা সাহস দিলেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন। নুসরাত জেরিন চিকিৎসার জন্য প্রথমে ভর্তি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে ২২ দিন চিকিৎসা নিয়ে গেলেন ভারতে। নুসরাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গবেষণাপত্র চূড়ান্তের কাজ করেছি। আমার বিভাগের শিক্ষকেরা সহযোগিতা করছেন। ই-মেইলে গবেষণাপত্র পাঠানোর পর বন্ধুরা তা জমা দিয়েছেন। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছি।’ সম্প্রতি তাঁর স্নাতকোত্তরের ফল প্রকাশিত হয়েছে। ক্যানসার তাঁকে সেরা হওয়ার প্রতিযোগিতায় হারাতে পারেনি। এবারও তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন।
দুই ভাইয়ের একমাত্র বোন জেরিন। তাঁর অসুস্থতার সময় অফিসের নির্ধারিত ছুটি শেষ করে বিনা বেতনে ছুটি নিতে হয়েছে বড় ভাইকে। জেরিন বলেন, ‘পরিবারের মানুষজনের কথা কী বলব। সবাই অনেক করেছে আমার জন্য। হাসপাতালের পুরো সময় মা সঙ্গেই ছিলেন। ছোট ভাই এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।’
এখন কেমন আছেন, জানতে চাইলে নুসরাত জেরিন বলেন, ‘অনেক ভালো আছি। আসছে মে মাসে কিছু পরীক্ষার জন্য আবার ভারতে যেতে হবে। জীবনের কঠিন আর অনিশ্চিত সময়গুলোতে মানুষ নতুন করে দেখতে শেখে জীবন-জগৎ। বদলে যায় সবকিছুর অর্থ।’ কথার একপর্যায়ে তাঁর এই বদলে যাওয়ার কথা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আগে পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকতাম। বাইরে বের হওয়া বা মানুষের সঙ্গে তেমন একটা মেশা হতো না। কিন্তু এখন অনেক বদলে গেছি। এখন মনে হয়—জীবনটাকেও বোঝা উচিত, মানুষের কাছে যাওয়া উচিত।’
অসুস্থতার সময় চেনা-অচেনা যেসব মানুষের ভালোবাসা আর সহযোগিতা পেয়েছেন, কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার কথা জানান তাঁদের প্রতি। স্মরণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কথা। তিনি বলেন, ‘কৃতজ্ঞতার কথা তো ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তারপরও যাঁরা পাশে ছিলেন, তাঁদের প্রতি ভালোবাসা থাকবে আজীবন। আমার জন্যও দোয়া করবেন।’
কী করবেন সামনের দিনগুলোতে, জানতে চাইলে নুসরাত জেরিন বলেন, ‘জীবনের অনিশ্চয়তায় আমার স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে যায়নি। স্বপ্নগুলো পূরণ করতে চাই। পড়াশোনা আর গবেষণা নিয়েই থাকতে চাই।’

 

‘পাচার হওয়া বহু বাংলাদেশী নারী ভারতের জেলে’

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে আসা বহু মহিলাকে আটক করার পর বেআইনিভাবে জেলে রাখা হচ্ছে – যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পষ্ট নির্দেশ আছে তাদের সরকারি হোমে রাখতে হবে।
বসিরহাট জেলে আটক এমনই তিনজন বাংলাদেশী মহিলার ব্যাপারে তারা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন।
রাজ্য পুলিশের কর্মকর্তারাও অবশ্য স্বীকার করছেন কে সত্যিকারের পাচার-হওয়া, সেটা নিরূপণ করা মুশকিল – আর এর দায় অনেকটাই সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফের।
যশোরের ঝিকরগাছা থানা এলাকার তিন মহিলা, শাহিনূর, সারিনা খাতুন ও আমিনা বেগম ভারতের রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করার উদ্দেশে সীমান্ত পেরোনোর পর বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ায়।
প্রথম রাতটা স্বরূপনগর থানার লকআপে কাটানোর পর এখন তাদের ঠিকানা বসিরহাটের জেল – যদিও মানবাধিকার কর্মীরা মনে করছেন এদের বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা দেওয়াটাই সম্পূর্ণ অন্যায় হয়েছে।
মাসুমের কিরীটি রায় বলছিলেন, ‘এই মহিলারা কাজের সন্ধানে ভারতে এসেছেন। দুর্নীতিগ্রস্ত বিএসএফ ও বিজিবি নিজেদের পোষা লাইনম্যানদের সাহায্যে পয়সা নিয়ে নিয়মিতই লোকজনদের সীমান্ত পারাপার করিয়ে থাকে। হতে পারে এই তিনজনের কাছ থেকে তারা পয়সা পায়নি বলেই বিএসএফের হাতে ধরা পড়েছে’।
কিন্তু এই মহিলারা পাচারের ভিকটিম কি না, সেটা নির্ণয় করার যে পদ্ধতি আছে তা প্রায় কখনওই মানা হয় না – আর তাই তাদের প্রাপ্য সুবিধাগুলোও কখনওই তাদের জোটে না।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অ্যান্টি-ট্র্যাফিকিং ইউনিটের প্রধান শর্বরী ভট্টাচার্যর মতে, বিএসএফ-ই এর জন্য প্রধানত দায়ী।
তিনি সরাসরি বলছেন, ‘বিএসএফ আইনকানুন কিচ্ছু জানে না, তাদের বোঝাতে যাওয়াও বৃথা। তাদের টাকা দিলে সীমান্ত পেরোতে কোনও সমস্যা হয় না – টাকা না-পেলেই হয় মুশকিল। তখনই ওরা গরিবগুর্বো মানুষগুলোকে ধরে – বিশ বা ত্রিশজনের একটা দল বানিয়ে কাছের থানায় – ধরুন বনগাঁতে – জমা দিয়ে যায় কোনও রিপোর্ট ছাড়াই!’
‘এবার বলুন থানার অফিসার কী করতে পারেন? হাজারটা কাজ সামলে তার কি উপায় থাকে এদের নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করার, আলাদা করে কথা বলার? তার কি অবকাঠামো আছে এদের আদালতে নিয়ে হোমে পাঠানোর নির্দেশ বের করার? আর সরকারি হোম থেকেও তো পুলিশকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়!’
‘ফলে প্রায় বাধ্য হয়েই পুলিশ তখন এদের বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা দিয়ে দেয় – আর এদের জেলে পচতে হয়!’, বলছিলেন শর্বরী ভট্টাচার্য।
                          বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত
অথচ সার্ক সম্মেলনে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুসারে, পাচার হওয়া নারী-শিশুদের এভাবে হেনস্থা হওয়ার কথাই নয়। কিরীটি রায় বলছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের স্পষ্ট নির্দেশ থাকলেও পশ্চিমবঙ্গেই কিন্তু উদাসীনতা সবচেয়ে বেশি।
তার কথায়, ‘এ রাজ্যে সরকারি পদাধিকারীরা – আদালত হোক বা পুলিশ, তারা এই নির্দেশের কথা হয় জানতে চাইছেন না, বা জানলেও মানতে চাইছেন না। ফলে সব কিছু আগের মতোই চরছে এখানে।’
তার কথা প্রায় অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে স্বরূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিবিসিকে বলছিলেন এমন কোনও নির্দেশ তারা খুঁজেই পাননি।
‘আমি নেটে গিয়ে মিনিস্ট্রির সাইট ঘেঁটে দেখেছি – যেখানে ফরেনার্সদের নিয়ে বলা আছে সেখানেও খুঁজেছি – মানবাধিকারের লোকজন যেটা বলছেন ওখানে ওরকম কিন্তু কিছু পাইনি’, বলছিলেন ওই কর্মকর্তা।
শুধু তাই নয়, এই বাংলাদেশী মহিলাদের ভিকটিম হিসেবেও মানতে আপত্তি আছে পুলিশ কর্তৃপক্ষের।
‘আঠারোর ওপর যাদের বয়স, যারা জেনেবুঝে একটা দেশের সীমান্ত পেরোচ্ছে – তাদের কীভাবে ভিক্টিম বলব বলুন তো? বাচ্চা ছেলে তো নয় – এরা প্রাপ্তবয়স্ক, জেনেবুঝে একটা অন্যায় করছে। কীসের ভিক্টিম?’ বলছিলেন স্বরূপনগর থানার কর্মকর্তা।
ফলে পশ্চিমবঙ্গের জেলে কেন আজও এমন শত শত বাংলাদেশী নারী ও শিশু অকারণে জেলে কাটাচ্ছেন – তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কারণ নেই।
 

 

টিএসসিতে নারীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ পুলিশ সদস্যের, পরে ক্ষমা প্রার্থনা

পুলিশের হাতে অপমানের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সহ-সভাপতি হাবিবা জান্নাত। পরে মহানগর পুলিশের কনস্টেবল রুহুল আমিন অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করার পর ক্ষমা চেয়েছেন। হাবিবা জান্নাত নামের ওই ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান, প্রাণ পরিসংখ্যান ও তথ্য পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে থাকেন।
ঘটনার পর অভিযোগ পেয়ে রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এম আমজাদ আলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়সহ রমনা জোনের পুলিশ কর্মকর্তারা প্রক্টরের কার্যালয়ে যান। সেখানে মেয়েটির বন্ধু ও রাজনৈতিক সহকর্মী, ছাত্র সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ঘটনার জন্য পুলিশ সদস্য রুহুল আমিন দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সন্ধ্যা সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট বরাবর স্থানে হাবিবাসহ কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় সেখানে দায়িত্ব পালনরত রহুল আমিন পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) গাড়ি যাবে বলে তাদের সরতে বলেন। রহুল আমিন সেখানে দাঁড়ানো হাবিবার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করেন এবং তাঁকে উদ্দেশে করে কটূক্তি করেন। এ নিয়ে সেখানে থাকা হাবিবাসহ অন্যদের সঙ্গে পুলিশের কথা-কাটাকাটি হয়।
ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক তাহসিন মাহমুদ বলেন, তাঁরা অভিযোগ করার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে আছেন। ওই পুলিশ সদস্য ক্ষমা চেয়েছেন। এখন আর কিছু বলার নেই।

 

বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে স্কুল ছাত্রীদের মানববন্ধন, ইউএনওর যুদ্ধ ঘোষনা

বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের শিবচরে পাচ্চরে কিলোমিটারব্যাপী এলাকা জুড়ে স্কুল ছাত্রীরা মানববন্ধন করেছে । এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ কর্মসুচীতে একাত্মতা প্রকাশ করে বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন।
জানা যায় , “সকল হাত এক করি , বাল্য বিবাহ বন্ধ করি ” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে রবিবার দুপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর এলাকায় পাঁচ্চর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় , পাঁচ্চর উচ্চ বিদ্যালয় , বাখরের কান্দি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় , মাদবরচর আর এম উচ্চ বিদ্যালয়সহ ৪টি স্কুলের সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অংশ গ্রহনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মহাসড়কের প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এ মানববন্ধন। এসময় শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইমরান আহমেদ মানববন্ধনে অংশ গ্রহন করেন ।এসময় শিবচর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হামিদা খানম , পাঁচ্চর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক মোঃ সামসুল হক , পাঁচ্চর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহালম সিরাজী , মাদবরচর আর এম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোতালেব মিয়া , বাখরের কান্দি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দূর্লভ চন্দ্র পাল , ব্রাকের শিবচর শাখার কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন । বেসরকারি সংস্থা ব্রাক মানববন্ধন অনুষ্ঠানে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন ।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইমরান আহমেদ বলেন , বাল্য বিবাহ একটি ব্যাধি যা শিক্ষিত সমাজ গঠনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ঠি করে মাতৃ মৃত্যু হার বৃদ্ধি করে । বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে আমরা সোচ্চার । যে কোন মূল্যে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করা হবে । আমি এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছি।

 

এক ভিন্নধর্মী ‘সীফুড’ উৎসব

ঢাকার গুলশান-১ এ শুরু হয়েছে এক ভিন্নধর্মী ‘সীফুড’ উৎসব !

এখানে আপনি পাবেন স্প্যানিশ সীফুড পায়ালা, মিশরীয় মাছের কোফতা, লেবাননের লাল স্ন্যাপার তাহিনী, ফ্রেঞ্চ বুলাবেইস এর মত অসংখ্য মজাদার সব ‘সীফুড’ নিয়ে ভিন্নধর্মী উৎসব আয়োজন করছে লা মেরিডিয়ান ঢাকা।

এখানে আপনি  বিভিন্ন দেশের সমুদ্রের তাজা মাছের  স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন।

২০ এপ্রিল ২০১৬ থেকে ২৪ এপ্রিল ২০১৬ রোজ সন্ধা ৭.০০টা থেকে রাত ১১.০০টা পর্যন্ত  সীফুডের নানান ধরনের স্বাদ উপভোগ করতে খরচ হবে প্রতি ব্যাক্তির জন্য ৪২০০ টাকা মাত্র।
লা মেরিডিয়ান ঢাকা-র মাষ্টার শেফ আবু নাসের এবং শামসের হোটেলের মেডিটেরিনিয়ান রুফটপ রেস্তোরা ‘ওলেয়া’ তে আধুনিক রন্ধনপ্রনালীর সাথে ভূমধ্যসাগর দেশীয় রন্ধনপ্রনালীর সংমিশ্রণে নানান স্বাদের সীফুড পরিবেশন করবেন।
অতিথিরা ঢাকায় পাবেন মরক্কোর কালামারি এবং শুকনো এপ্রিকোট দিয়ে চিংড়ির ত্যাজিন, ইতালীয় পদ্ধতিতে তৈরি জাফরান সস দিয়ে গলদা চিংড়ি, তিউনিসিয়ার হ্যারিসার স্বাদে ভাজা মাছ।
এই উৎসবের জন্য ওলেয়া রেস্তোরায় টেবিল রিজার্ভ করার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন +০১৯৯০৯০০৯০০ নম্বরে।

 

সংবাদপত্র খুললেই ধর্ষণ, নারীর প্রতি সহিংসতা

নারীর অগ্রগতির কথা বললেই হবে না, পাশাপাশি অগ্রগতির পথে যে বাধা আছে, সেগুলো চিহ্নিত করে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, সংবাদপত্র খুললেই ধর্ষণ, নারীর প্রতি সহিংসতা দেখতে হচ্ছে!

সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারীর অধিকার আদায়ের জন্য নারীদের একত্রিত করে কাজ করে যাচ্ছে। একদিকে মহিলা পরিষদের কাজ যেমন উল্লেখ করার মতো, অন্যদিকে এটাও ঠিক যে আজ আমরা সংবাদপত্র খুললেই ধর্ষণসহ নারীর প্রতি বিভিন্ন প্রকার সহিংসতার চিত্র দেখতে পাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে নারী-পুরুষের সমতার জন্য আমরা লড়ে যাচ্ছি। যতদিন না এদেশে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা হবে, ততদিন এর জন্য সবাইকে কাজ করে যেতে হবে।’

নরওয়ে রাষ্ট্রদূত মেরেতো লুনডেমো বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। সহিংসতা প্রতিরোধে বাংলাদেশ যদিও অনেক কাজ করছে, তারপরও সহিংসতা প্রতিরোধে এদেশে আরো অনেকটা পথ হাঁটতে হবে।’

সংগঠনের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, ‘অগ্রসর বাংলাদেশের যে চিত্র আমরা দেখি তার কাজ শুরু হয়েছিল রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সময় থেকে। সুলতানার স্বপ্ন’র একটি অংশ আজ সফল হচ্ছে। নারী রাষ্ট্র পরিচালনা করছে, নারী পাহাড়ে উঠছে আবার নারী পাথর ভাঙছে। কিন্তু অন্যদিকে দেখি, নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় আজ নারীরা আছে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের কাজ করছে, কিন্তু তারপরও নারী সহিংসতার শিকার। সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যদি আমরা কাজ না করি তাহলে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না।’

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ২০০৭ সাল থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য নারীদের সম্মাননা দিচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য ২৮ জন নারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

এতে চলচ্চিত্রকার ২ জন, চ্যালেঞ্জিং পেশায় ৭ জন, তথ্য ও প্রযুক্তিতে ২ জন, সাংবাদিকতা পেশায় ৯ জন, নারী উদ্যোক্তা/ব্যবসায়ী ২ জন, খেলাধুলায় ২ জনকে সম্মাননা দেয়া হয়।

সংগঠনের সভাপতি আয়শা খানমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ইউএন উইমেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি তপতী সাহা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের ছাত্র ও যুব বিষয়ক সহ-সম্পাদক চৈতালী ত্রিপুরা প্রমুখ।

 

শিশুকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল মা

পারিবারিক কলহের জের ধরেই খুন করা হয়েছে শিশু নেহাল সাদিককে। শিশুটিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করার পর আত্মহত্যারও চেষ্টা চালিয়েছিলেন মা মুক্তি বেগম। তিনি গলায় জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সোমবার দিবাগত রাত ১২টা বা এর কিছু পরে রাজধানীর উত্তরখানে মাস্টারপাড়া সোসাইটির একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটেছে। উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সিরাজুল হক বলেন, শিশুটির পেটের নাড়িভুড়ি বের হয়ে গেছে, যা দেখে ধারণা করা হচ্ছে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার পেট কাটা হয়েছে।

এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে গেছে। উত্তরখান থানা পুলিশ সূত্র জানায়, বাবা সাজ্জাদ হোসেন পেশায় একজন গার্মেন্টস কর্মী। স্বামী সাজ্জাদ হোসেন ও স্ত্রী মুক্তির উভয়ের ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। বেশ কিছু দিন ধরে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল।

সোমবার সকালে স্বামী সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে স্ত্রী মুক্তির ঝগড়া হয়। ঝগড়ার মধ্যেই সাজ্জাদ সকালে গার্মেন্টেসে চলে যান। রাতে বাসায় ফিরে দেখেন সন্তান নেহাল সাদিক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আর এসময় স্ত্রী মুক্তির গলাও রক্তাক্ত দেখেন। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন।

পরে রাতেই শিশুটিকে উদ্ধার কর ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারিও রাজধানীর বনশ্রীতে দুই শিশুকে হত্যা করেন মা মাহফুজা মালেক। এ ঘটনা সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় প্রথমে পরিবারের পক্ষ থেকে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর কথা বলা হলেও লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে শ্বাসরোধে খুনের আলামত পাওয়া যায়। এরপর তদন্তে জানা যায়, শিশুদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়েই দুই শিশুকে খুন করে মা।

 

চিনে নিন বিশ্বজুড়ে চমৎকার গোলাপী বিচগুলো

গোলাপী রং এর বিচ? অবাক হচ্ছেন শুনে? হ্যাঁ, আমাদের এই বিচিত্র পৃথিবীতে বিভিন্ন রং এর চমৎকার বিচের মধ্যে গোলাপী রং এর বিচও আছে। এই বিচগুলি গোলাপী হওয়ার কিছু ব্যাখ্যা আছে অবশ্য। ছোট্ট লাল এক প্রকারের জীব এই গোলাপী রং এর জন্য দায়ী। এই জীবগুলো শেল এবং মৃত কোরালের উপর জন্মায়। পরে এগুলো সমুদ্রের পানিতে পড়ে এবং ঢেউয়ের সাথে ধুয়ে বিচে চলে আসে। বিচের বালিতে মিশে গিয়ে একটা গোলাপী রং এর তৈরি করে। আবার কখনো কখনো কোরাল অথবা শেল থেকে অমেরুদন্ডী জলজ জীব যেমন হার্মিট ক্রাবের ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের প্রাকৃতিক ফর্মুলেশন থেকে এই গোলাপী রং তৈরী হয়। কিছু বীচ অনেক বেশী গোলাপী আবার কিছু বিচের রংটা একটু ফ্যাকাসে। আসুন বিস্ময়কর কয়েকটি গোলাপী বিচের কথা জেনে নিই।
 
গ্রেট সান্তা ক্রুজ আইল্যান্ড
ফিলিপাইনের জামবোঙ্গা শহরে ছোট্ট দ্বীপের নাম গ্রেট সান্তা ক্রুজ আইল্যান্ড। এটি কোরালিন বালির অপূর্ব গোলাপী বিচ হিসেবে বিখ্যাত। এরকম বিচ খুবই বিরল পৃথিবীতে। ফিলিপাইনের অসংখ্য চমৎকার সব বিচের মধ্যে গ্রেট সান্তা ক্রুজই একমাত্র গোলাপী রং এর বিচ। লাল পিপি কোরাল বালির সাথে মিশে বিচটি গোলাপী রং ধারণ করেছ।
 
বার্বুডার গোলাপী বিচ
ক্যারাবিয়ান সমুদ্রের এই দ্বীপটি আসলে একটি জমজ বিচ, বার্বুডা এবং এন্টিগুয়া যা ক্যারাবিয়ান সমুদ্র এবং আটলান্টিক মহা সাগরের মাঝে অবস্থিত। বীচের পশ্চিম দিকটি ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে এবং এর সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিচ্ছে চমৎকার গোলাপী বালি। দক্ষিণ-পশ্চীমের বিচটি সবচেয়ে সুন্দর। এরকম বিস্তৃত বিচ খুব একটা দেখা যায় না যা কিনা সূক্ষ্ম শঙ্খ-শেল রঙ, সাদা বালির প্যাচ দিয়ে বোনা।
 
বালোস লেগুন বিচ অফ ক্রীট
এই চমৎকার বিচটি অবস্থিত গ্রীসে। উপদ্বীপটি গ্রামভাউসা এবং কোস্ট অব ক্রীটের মাঝে রয়েছে। অগভীর এবং উষ্ণ জল গোলাপী বালির রেখা তৈরী করেছে, যা যে কোন ভ্রমণকারীকে অবাক করে দেবে। সূক্ষ এই গোলাপী রং তৈরি হয়েছে মিলিয়ন মিলিয়ন শেলের গুড়ো বালিতে মিশে। বিচে প্রচুর পাথর আর ক্লিফ রয়েছে যা উপদ্বীপটিকে ধরে রেখেছে।
টাংসি বিচ অফ লমবক
পশ্চীম নুসা টেঙ্গারার ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপ হল লমবক। এটি লেসার সান্দা দ্বীপের একটি অংশ। এর টাংগী বিচ বা গোলাপী বিচ একে পৃথিবীর অন্য সব বিচ থেকে আলাদা করে। এর এই অসাধারণ রংটি এসেছে কোরাল রীফের ভাঙন থেকে। এটি এতই প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত যে এখানে খুব একটা পর্যটক আসে না। তাই নির্জনতার সমূহ স্বাদ পাবেন এখানে আর দেখতে পাবেন প্যানারোমা ভিউ।
বোনাইর গোলাপী বিচ
ক্যারাবিয়ান দ্বীপে অবস্থিত লিউয়ার্ড এন্টাইলস-এর বিচ এটি, যা একত্রে আরুবা এবং কুরাকাও এর সাথে মিলে সাউথ আমেরিকার এ বি সি আইল্যান্ড তৈরি করেছে। বিচিত্র সব দৃশ্যের সমাহার এই বিচটি পর্যটক মনে তৈরী করে ভিন্ন এক আবেদন। মিহি গোলাপী বালি, অসীম আকাশ আর সমুদ্রের নীল সব মিলিয়ে বোনাইর বিচ মন ভরিয়ে দেয় স্নিগ্ধতায়।
লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

পেটের সমস্যা ও পানিশূন্যতা থেকে মুক্তি দেবে এই ৬টি পানীয়

গরমে অনেক সময় এমন অবস্থা হয় যখন আপনার প্রচণ্ড পেটে ব্যথা হয় তখন কিছু খেতেও ইচ্ছা করেনা। ইলেক্ট্রোলাইটের ব্যালেন্স যখন ক্ষতিগ্রস্থ হয় তখন পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে এবং পেটের সমস্যার উপসর্গগুলোকে কমাতে সাহায্য করে এমন কয়েকটি পানীয়ের কথা জেনে নেই আসুন।

১। চিনি ও লবণ পানি

অতি প্রাচীন কাল থেকেই আমাদের দাদী নানীরা এই পানীয়টি ব্যবহার করে আসছেন। চিনি ও লবণ মেশানো পানি পান করলে শুধু শরীরের তরলের ভারসাম্যই বজায় রাখতেই সাহায্য করেনা বরং তা ডায়রিয়ার ফলে সৃষ্ট দুর্বলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য এনার্জি সরবরাহ করে।

২। ঘোল

তাজা দই ও একচিমটি লবণ দিয়ে তৈরি করা ঘোল পান করলে যে শিথিলতা পাওয়া যায় তা আর অন্য কিছুতে পাওয়া যায়না। এই পানীয়টি যে শুধু পাকস্থলীতে শীতল অনুভূতি প্রদান করে তাই নয়। এটি পাকস্থলীর এসিড প্রতিরোধ করে এবং অন্ত্রের কাজের উন্নতি ঘটায়। কারণ এটি প্রকৃতিগত ভাবে একটি প্রোবায়োটিক।

৩। ডাবের পানি

স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টি সমৃদ্ধ ডাবের পানি পান করা ডায়রিয়া ও ডিহাইড্রেশনের জন্য অনেক উপকারি। এই পানীয়টি শুধুমাত্র হারিয়ে যাওয়া ইলেক্ট্রোলাইট ও মিনারেলের ক্ষতিপূরণই করেনা, বরং পাকস্থলীর pH  কমিয়ে পরিপাক নালীকে শান্ত করে।

৪। শিকাঞ্জি

মশলাযুক্ত লেবু পানিকে শিকাঞ্জি বলে। শিকাঞ্জিতে থাকে বিট লবণ, চিনি, লেবুর রস, পানি, জিরা, গোলমরিচ ও আদা। এতে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকে যা পেটের সমস্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে। পানি ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করে। ফলে পানিশূন্যতা প্রতিরোধ হয়।

৫। মেন্থল ও ক্যামোমিল চা

পেটের ব্যথা কমতে সাহায্য করে মেন্থল ও ক্যামোমিল চা। এরা উভয়েই পাকস্থলীর এসিডকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে এবং বমি বমি ভাব ও বুক জ্বালাপোড়া করা কমায়। মেন্থল বা ক্যামোমিল চায়ের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে নিলে মিষ্টতার পাশাপাশি পেটের সমস্যার নিষ্পত্তিতেও সাহায্য করবে।

৬। আদা চা

পেটের সমস্যা দূর করতে আদা অত্যন্ত চমৎকারভাবে কাজ করে। সকালে আদা চা খাওয়া ভালো। দুই কাপ পানি ফুটিয়ে এর মাঝে আদার ২টি টুকরা দিয়ে অল্প আঁচে ২০ মিনিট রাখুন। তারপর আদাটুকু ছেঁকে নিয়ে এর সাথে মধু মিশান। পেটের ব্যথা ১মিনিটেই উধাও হবে। আদা চায়ের মত পুদিনার চা ও পেটের ব্যথা প্রশমিত করতে পারে।

পানিশূন্যতা দূর করার জন্য প্রথমেই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। পানিশূন্যতার কারণেও শরীরে ব্যথা বেদনা ও অস্বস্তি হতে পারে। যখনই আপনি শরীরকে জলপূর্ণ করতে পারবেন তখনই দেখবেন সমস্ত অস্বস্তি দূর হয়ে গেছে। এছাড়াও সুপ খেতে পারেন। সুপে ভিটামিন ও মিনারেল থাকে যা ডিহাইড্রেশনের পড়ে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়।

লিখেছেন-

সাবেরা খাতুন

 

সুস্থ সন্তান জন্মদানে গর্ভবতীর খাবার

কর্মশক্তি সম্পন্ন জাতি গঠনে চাই সুস্থ শিশুর জন্মদান। তার আগে নিশ্চিত করা জরুরি মায়ের সুস্থতা। গর্ভাবস্থায় সুস্থ মায়ের দেহ থেকে শিশু প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি গ্রহণ করে। জন্মের পর বাচ্চা দরকারি সব পুষ্টি পায় মায়ের দুধ পানের ভেতর দিয়ে। তাই প্রসবের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে মা ও শিশুর যত্নে দরকার বিশেষ খাবার। যেমন-

ক্যালসিয়াম

গর্ভের শিশুর হাড় গঠনে এবং মায়ের হাড়ের ক্ষয় রোধে ক্যালসিয়াম খুব জরুরি। ক্যালসিয়াম মায়ের উচ্চ রক্ত চাপ প্রতিরোধেও সহায়তা করে। সেজন্য গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পরবর্তী সময়ে মাকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১ হাজার মি.গ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিৎ। ডিম, দুধ, মাছ, পালং শাক, বাদাম থেকে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

শর্করা

শর্করার উৎস হিসেবে ভাত, রুটি, আলুকে বুঝি। শর্করার যোগানে সারাদিনে গর্ভবতী মাকে ৩ থেকে ৪ কাপ ভাত খেতে হবে। কর্মজীবী মায়ের সারাদিনে বেশি ক্যালোরি খরচ হয়, তাই তাদের ক্ষেত্রে দিনে ৪ থেকে ৫ কাপ ভাত খাওয়া দরকার। ভাতের সঙ্গে রুটি আর আলুও খাওয়া যেতে পারে।

আমিষ

আমিষ গর্ভের শিশুর শরীরের নতুন টিস্যু তৈরিতে সাহায্য করে। গর্ভবতী মাকে দৈনিক অন্তত ৬০ গ্রাম আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। প্রতিদিনের আমিষের অভাব পূরণে ২ থেকে ৩ টুকরো মাছ, ৩ থেকে ৪ টুকরো মাংস ও কমপক্ষে একটি ডিম খেতে হবে। এছাড়া নিয়ম করে প্রতিদিন একগ্লাস উষ্ণ গরম দুধ পান করলে আমিষের অভাব পূরণ হবে।

ভিটামিন সি

ভিটামিন সি শরীরের চর্ম রোগ প্রতিরোধ করে। গর্ভবতী মায়ের উচিৎ প্রতিদিন ৭০ গ্রাম ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য খাওয়া। একটি করে ভিটামিন সি যুক্ত ফল খেতে পারেন। কমলা,লেবু,পেয়ারা,ব্রকলি ও টমেটো থেকে অনেক ভিটামিন সি পাওয়া যায়।

আয়রন

গর্ভের শিশুর স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য আয়রন এর ভূমিকা অপরিসীম। এছাড়া আয়রন শরীরের রক্ত বাড়াতেও সাহায্য করে। আয়রনের চাহিদা মেটাতে মাকে রোজ ২৭ গ্রাম আয়রন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। ডিমের কুসুম, ডাল, কলিজা, মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ থেকে আয়রনের চাহিদা পূরণ হতে পারে।

ফলিক অ্যাসিড

গর্ভবতী মায়ের শরীরে দৈনিক ০.৪ গ্রাম ফলিক অ্যাসিড প্রয়োজন থাকে। ফলিক এসিড নিউরল টিউবের কোষ অসংগতি থাকলে তা দূর করে। লেটুস পাতা, পালং শাক, কমলা ফলিক অ্যাসিডের দারুণ উদাহরণ।

ফ্যাট

গর্ভবতী হওয়ার পর যথেষ্ট পরিমানে ফ্যাট জাতীয় খাদ্য খেতে হবে। ফ্যাট জাতীয় খাদ্য শিশুর মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে,তাই বেশি করে মাকে ফ্যাট জাতীয় খাদ্য খেতে হবে। দুধ, ঘি, মাখন ফ্যাট এর চাহিদা পূরণ করবে।

পানি

রোজ প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। পানি শরীরে রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। রক্তের মাধ্যমে বাচ্চার শরীরে পুষ্টি পৌঁছায়। এছাড়া পানি মূত্র থলির প্রদাহ ও অতিরিক্ত ঘাম রোধ করে। পানির সঙ্গে বিভিন্ন সুপ, টাটকা ফলের রসও খাওয়া যেতে পারে।

 

অধিকারের সঙ্গে চাই সম্মানও

সুদীর্ঘকাল ধরে নারীরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নানা বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হয়েছেন নারী। প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম করে নিজ যোগ্যতাবলে একটু একটু করে নারীকে অধিকার আদায় করে নিতে হচ্ছে। তবে নারী ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন রুখে দিতে যোগ হচ্ছে নতুন কৌশল।

নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের দীর্ঘ ইতিহাস। ঘটনার  শুরু ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে নারীর মজুরি বৈষম্য, শ্রমঘণ্টা ১২ ঘণ্টা কমিয়ে  ৮ ঘণ্টা করার দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। তার তিন বছর পর ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’।

একটা সময় ছিল নারীরা নিজেদের সুবিধা-অসুবিধার কথা জানাতে পারতেন না। সে সময় নারীরা নিজের কোনো বিষয়ে মতামত দিতে পারতেন না। পরিবারের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হতো তাদের। এমনকি কর্মক্ষেত্রে নারীরা সমান পরিশ্রম করেও সমান মজুরিতে ছিল বৈষম্য।

নারীর অবস্থান অনেকটা পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বে প্রতিটি দেশে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারীরা পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যোগ্যতার প্রমাণ করে যাচ্ছে।

তবে পরিবর্তনের এ প্রেক্ষাপটে নারীর প্রতি সহিংসতা বা নির্যাতন বন্ধ নেই। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চেষ্টা করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে পদক্ষেপ নিলেও তার বাস্তবায়নে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।

মহিলা পরিষদের এক জরিপে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ৪৩৬টি। ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। ২০১৫ সালে ১ হাজার ৯২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। যৌন নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, নারীর আত্মহত্যা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন অত্যাধুনিক যুগেও নারীর প্রতি এ ধরনের বর্বর নির্যাতনগুলো  হচ্ছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম দীর্ঘদিন ধরে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, নারীর সমঅধিকারভিত্তিক সমাজ গড়ার কাজে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন।

বাংলাদেশে বর্তমান নারী অবস্থান ও দীর্ঘ নারী আন্দোলনের ফলাফল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজকে যে পাহাড়ে উঠছে, ভার উত্তোলন করছে। সমাজ-সংসার ও কৃষিতে অবদান রাখছে, এসব ১০০ বছরের নারী আন্দোলনের ফল। শুধু আমরা নই, আমাদের পূর্বসূরি বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামালসহ অনেক নারীর অবদান। বর্তমানে সাড়ে ৪ হাজার নারী পুলিশে কাজ করছে। এগুলো শতাব্দীর নারী আন্দোলনের ফল। সুতরাং ইঞ্চি ইঞ্চি করে এগোচ্ছে নারী।’

পুরুষ-নারী উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো গেলে এ অগ্রযাত্রা আরও হবে বলে জানান তিনি। পলিসি মেকিংয়ে নারীর আবদান রাখার সুযোগ দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বড় বড় পদে দরকার নারীর আরও প্রবেশ করা দরকার। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতারা ভূমিকা রাখতে পারে। তারা নারীকে সুযোগ করে দিতে পারে।’

মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী ও নারীনেত্রী এলিনা খান বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে বা তারও আগে নারীরা ঘরে বন্দি ছিল, বাইরে আসতে পারত না। পড়াশোনা করতে পারত না, শারীরিক-মানসিক সমস্যার সমুখীন হয়েছে। এখন বাইরে আসার সুযোগ হয়েছে। কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তবে নির্যাতনের জায়গায় নতুন নতুন কৌশল যোগ হয়েছে।

‘আগের থেকে নারীরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও কথা বলার স্বাধীনতা পেয়েছে। তবে নির্যাতনের চিত্র থেকে বেরোতে পারেনি। আগে নারীরা ভোগ বিলাসের শিকার হতো মুষ্টিমেয় লোকের হাতে। এখন ঘরেবাইরে সবখানে নারীরা রেপের শিকার হচ্ছে।’

তিনি বলেন, এখনও অনেক নারী নিজেই নিজের সম্মান বিকিয়ে দেন। একটা সংসারে একজন নারী আরেকজন নারীকে সম্মান করেন না। নারীদের সম্মান করার বিষয়টি পরিবার থেকে শেখানো দরকার। ঘর স্কুল থেকে দুজনকেই নারীকে সম্মান করা শেখাতে হবে। সন্তানদের শেখাতে হবে। সেই সঙ্গে অধিকারও দিতে হবে।’

এলিনা খান বলেন, ‘আজকাল নারীরা সমধিকারের কথা বললে বাসে বা বিভিন্ন জায়গা শুনতে হয়, আপনারা সব জায়গায় সম অধিকার চান, তাহলে আলাদা সিট আলাদা, আলাদা পরিবেশ চান কেন? তাদের বলতে চাই, সমঅধিকার চাওয়া মানে এই নয় যে তুমি আমাকে প্রাপ্য সম্মানটুকু দেবে না। সম-অধিকার মানে অধিকারের সঙ্গে সম্মানটুকু দেয়া। আমার আলাদা সিট সেদিন লাগবে না, যেদিন কোনো ছেলে পাশে বসলে কোনো মেয়েকে টিজ করবে না, কুৎসিত দৃষ্টিতে তাকাবে না।’

নির্যাতনের পর নারীরা সুষ্ঠু বিচার পাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি নির্যাতনের পর একজন নারী থানায় গেলে তাকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করানো হচ্ছে। সে জানে না কোন মামলাটি করলে সে সঠিক বিচার পাবে। এ ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি, পুলিশের চাপে মিথা মামলা করছে। আবার মামলা হলেও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সঠিক বিচার পাচ্ছে না।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের শিল্প ও কৃষি ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ শতাংশ নারী নিয়োজিত আছে। কিন্তু কৃষিখাতে নিয়োজিত নারীর মধ্যে প্রায় ৯৪.৮ শতাংশ নারীই বিনাশ্রমে কাজ করে। অন্যদিকে শিল্পখাতেও নারী পুরুষের চেয়ে কম মজুরি পেয়ে থাকে। এ ছাড়া পোশাক খাতে মোট শ্রমিকের ৮০ শতাংশই নারী। এ খাতে নারী শ্রমিকদের অবদান বেশি থাকলেও এখানেই সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার নারী। পোশাক খাতে বেশিরভাগ নারীই শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। উঁচুস্তরে নারীর অংশ্রগ্রহণ হাতেগোনা।

 

কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে খুবই সামান্য

বিশ্বজুড়ে গত ২০ বছরে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে খুবই সামান্য। এক্ষেত্রে সামান্য কিছু প্রান্তিক অগ্রগতি ছাড়া আর তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি বললেই চলে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক জরিপে বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য।

১৯৯৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের পার্থক্য কমেছে মাত্র ০.৬ শতাংশ। যেসব দেশে নারীদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ বেশি সেসব দেশেও তাদের চাকরির মান এখনো উদ্বেগের একটি বিষয়।

বিশ্বের ১৭৮টি দেশে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের হার, কর্মপরিবেশসহ নানা তথ্য সংগ্রহ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

আইএলও প্রধান গাই রাইডার বলেছেন, ’নারীরা যে এখনো উপযুক্ত কাজ খুঁজে পেতে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন তারই প্রমাণ এই প্রতিবেদন। নারীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের ব্যাপারে যে অগ্রগতি হয়েছে তা একেবারেই প্রান্তিক পর্যায়ে’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ পুরুষদের চেয়ে ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ কম ছিল। ১৯৯৫ সালে এ পার্থক্য ছিল ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ। আর এ হার ২০ বছর আগের হারের চেয়ে মাত্র ০.৬ শতাংশ কম।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়- বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নারীরাই বেশি বেকারত্বে ভোগেন। বিশ্বজুড়ে নারী বেকারের হার ৬.২ শতাংশ যেখানে পুরুষদের বেকারত্বের হার ৫.৫ শতাংশ। চাকরির অভাবে প্রায়ই নারীদের নিম্ন মানের চাকরিতে যোগ দিতে হয়।

উচ্চ ও নিম্ন -সব ধরনের আয়ের দেশেই নারীর গৃহস্থালী কাজের জন্য কোনও পারিশ্রমিক হিসেব করা হয় না। মূলত, নারীরা কর্মক্ষেত্রে ও গৃহস্থালী কাজ মিলিয়ে পুরুষের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করে থাকেন বলেও গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বেশিরভাগ নারীকেই তার যোগ্যতার চেয়ে নিম্নমানের চাকরিতে যোগদান করতে হয়। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে নারীকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গৃহস্থালী কাজে জড়িত থাকতে হয় যার জন্য আর্থিক প্রতিদানও পান না তারা। গবেষকদের মতে, এসব চিত্র নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। আর তা থেকে উত্তরণের হারও আশানুরূপ নয়। এজন্য নারী-পুরুষ উভয়েরই ঐকান্তিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

বাবা ডাকতে বাধ্য করা হয় শাহানারাকে

চাঁদা না দেয়ায় নোয়াখালীর হাতিয়ার শাহানারাকে বিবস্ত্র করে দুই ধাপে পেটানোর পর কান ধরে উঠ-বস করানো হয়। এ সময় শাহজাহানকে ‘বাবা’ ডাকতে বাধ্য করা হয় শাহানারাকে। বেদম মারধরের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে শাহানারা তাকে ‘বাবা’ বলে ডেকে ওঠেন এবং কান ধরে উঠবস করেন।
রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় চিকিৎসা নিতে আসা শাহানারা নিজেই বাংলামেইলকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

তবে শাহানারার মর্যাদার বিষয়টি বিবেচনা করে তা প্রকাশ করা হলো না।

রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাহানারা বাংলামেইলকে বলেন, ঘটনার দিন আমি বাজার থেকে টাকা নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে আমাকে পেছন থেকে ঘুষি ও লাথি মেরে যখন গলার গয়না ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় শাহজাহান। তখন আমি তাকে বাধা দিই। এরপর সে আমাকে আরেক লাথি দিয়ে রাস্তার পাশের গর্তে ফেলে দেয়। এরপর আমাকে লাঠি দিয়ে বেদম মারতে থাকে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে এলে আমাকে জোর করে তাকে ‘বাবা’ ডাকতে বাধ্য করা হয়।

সে বলে, ‘আমি তোর বাবা’। বল.., বল…, …বল। পরে আমি বাধ্য হয়েই তাকে ‘বাবা’ ডাকি।

এতেও ক্ষান্ত হয়নি শাহজাহান। চলে আবারও নির্মম নির্যাতন। শত শত মানুষের সামনে তিন সন্তানের এই জননীকে কান ধরে ওঠ-বস করানো হয়। কয়েক ব্যক্তি এগিয়ে এলে তিনি (শাহজাহান) আরো অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন। লাঠির আঘাতে এক সময় জ্ঞান হারান শাহানারা।

শাহানারা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এতগুলা মানুষের সামনে আমাকে কান ধরে ওঠ-বস করতে হয়েছে। ভয়ে কেউ আমাকে বাঁচাতে আসেনি। তবে একজন বৃদ্ধা ও যুবক চেষ্টা করেছিল। সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন। তারা এলাকায় এতটাই প্রভাবশালী যে, এ সব মানুষের আর করার কিছুই ছিল না।

স্থানীয়রা জানান, থানার এই কথিত দালাল শাহজাহানের ভয়ে আতঙ্কিত এলাকাবাসীও। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পান না। থানা-পুলিশের সাথে সখ্যতা থাকায় গ্রেপ্তারের ভয় দেখান তিনি।

এদিকে, ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সদর সার্কেল) নবজ্যোতি খীসা রোববার হাতিয়ায় গেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নিয়েছেন। এ সময় শাহানারাকে পেটানোর লাঠিটির ভাঙা অংশ জব্দ করেন তিনি।

এ বিষয়ে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আরিসুল হক বলেন, আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য সবখানেই অভিযান অব্যাহত আছে। তাকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না।

চাঁদা না দেয়ায় গত সোমবার ( এপ্রিল) নোয়াখালীর হাতিয়া থানার ‘দালাল’ শাহজাহান দুই ধাপে পেটান  হাতিয়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিন সন্তানের জননী শাহানারাকে। তাকে বিবস্ত্র করে দুইধাপে পেটানো হয়। ঘটনাটি এক যুবক মোবাইল ফোনে ধারণ করেন।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে শাহানারাকে নির্যাতনের লোমহর্ষক এক চিত্র।

 

বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে হয়ে উঠুন আরো বেশি দক্ষ

হাতে অনেক কাজ? কোনটা করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না? সমস্যাটা কেবল আপনার একার নয়। এই ধরনের ঝামেলায় পড়তে হয় নিত্যদিন আপনি আমিসহ আরো অনেককেই। অনেক অনেক কাজের ভীড়ে একে তো কোন কাজই ঠিকমতন করা হয় না। তারওপর পুরো ব্যাপারটা গুবলেট করে দিয়ে যায় আমাদেরই করা কিছু কর্মকান্ড। চলুন দেখে আসি এমনই কিছু ব্যাপারকে যেগুলো বাদ দিতে পারলে খুব সহজেই নিজের কর্মদক্ষতা বাড়াতে পারবেন আপনি।

১. একসাথে সব কাজ করা

অনেকসময় দেখবেন একজন মানুষ  অফিসের এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। না পাচ্ছে কোন কাজে ঠিকঠাকভাবে মন দেওয়ার সুযোগ, না একটু শান্তিতে নিঃশ্বাস ফেলার অবসর। কী ভাবছেন? একসাথে অনেক কাজ হাতে নেওয়া এই মানুষগুলোই আসলে সফল? তারাই বুঝি অনেককিছু করে ফেলতে পারছে তাড়াতাড়ি? একটু গভীরে তলিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবেন যে, আসলে এরা কিন্তু মোটেও এগোতে পারছেনা। বরং সব কাজ করতে গিয়ে আটকে যাচ্ছে একটা জায়গাতেই। তাই একটা সময়ে কেবল একটা কাজই করতে চেষ্টা করুন। এটাতো সত্যি যে, একটা কাজে সফল হতে হলে অন্যগুলোকে তখনকার মতন না বলে দিতে হবে আপনার। তাই মনযোগ একদিকে রাখুন।

২. অন্যের কাজে হাত দেওয়া

আপনার পাশের ডেস্কে বসে কেউ কোন একটা কাজ করছে, হঠাত্ মনে হল নাহ! ও কাজটা ঠিক করে করতে পারছেনা। এই ভেবে নিজেই হয়তো আপনি চলে গেলেন সেটাকে নিজের মতন করে ঠিক করে দেওয়ার জন্যে। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, আপনার এই অভ্যাসই আপনাকে থামিয়ে দিতে পারে কর্মক্ষেত্রে? পেছনে নিয়ে যেতে পারে অনেকখানি? শুধু তাই নয়। আপনার এই অহেতুক অনুপ্রবেশকে হয়তো ভালোভাবে নাও নিতে পারে আপনার কলিগ। নিজের কাজকে যথাযথ সম্মানিত হতে না দেখে মনে খারাপ হতে পারে তারও। তাই চারপাশে কার কাজে কি হচ্ছে সেটা না ভেবে নিজের কাজটা ঠিক করে করে ফেলতে চেষ্টা করুন।

৩. ঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া

অনেককেই বলতে শোনা যায় যে কাজ করতে করতে খাবারেরই সময় পাননি। কিন্তু সত্যিই কি খাবার না খেয়ে অনেক বেশি কাজ করে ফেলেন তারা? বাস্তবে খাবারের অভাব আমাদের শরীর ও মনে এমনিতেই খানিকটা অলসতা আর অবসাদ এনে দেয়। ফলে মাথা কাজ করেনা। ধীর হয়ে যায় কাজের গতি। তাই যতই কাজ থাকুক সময়ের খাবার ঠিক সময়ে খেয়ে নিন।

৪. নিজেকে সময় না দেওয়া

অনেকের ধারণা করে থাকেন যে, সফলরা দিন-রাত কেবল কাজ করে। কিন্তু সত্যি বলতে গেলে মানুষ রোবট না। তাই প্রতিটি মানুষেরই দরকার পড়ে বিশ্রামের। অবসরের। সেটা খানিকটা সময়ের জন্যে হলেও। আর তাই প্রচুর কাজ করার মাঝেও বেছে বেছে নিজেকে খানিকটা হলেও সময় দিন। এতে করে মন চাঙা হয়ে উঠবে। কাজের গতি বাড়বে।

লিখেছেন

সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

 

বৈশাখের সুস্বাদ: সরিষা বাটা দিয়ে পাবদা মাছের ঝোল

দেখতে দেখতে চলে এসেছে বৈশাখ মাস। এই কাঠ ফাটা গরমের মৌসুমে মাছের ঝোল ছাড়া কি চলে? না, সরিষা ইলিশ নয়, চলুন আজ শিখে নিই আতিয়া আমজাদের রেসিপিতে সরিষা বাটা দিয়ে পাবদা মাছের ঝোলের রেসিপি।

 

উপকরণ

– পাবদা মাছ ১০ টি

– সরিষা বাটা ৪ টে চামচ ( কালো ও হলুদ সরিষা মিশিয়ে নিলে ভালো)

– পিঁয়াজ মাঝারি ৩ টি কুচি করা

– রসুন বাটা ১ চা চামচ

– আদা বাটা দেড় চা চামচ

– হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ

– মরিচ গুঁড়ো ১ চা চামচ বা পরিমান মতো

– ধনিয়া গুঁড়ো ১ চা চামচ

– জিরা গুঁড়ো ১ চা চামচ

– কাঁচা মরিচ ৪/৫ টি মাঝে ফালি করে কাটা

– তেজপাতা ১ টি, দারচিনি ১ পিস

– কালো জিরা ১ চা চামচ

– ধনেপাতা কুচি ১ মুঠ

– লবণ ১ চা চামচ

– চিনি ১ চা চামচ

– সরিষার তেল ৪ টে চামচ

– গরম পানি ২ কাপ

– বেরেস্তা আধা কাপ

প্রনালী

– মাছ কেটে আলাদা করে লবণ দিয়ে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে । এরপর অর্ধেকটা হলুদ, লবণ ও ১ চা চামচ তেল দিয়ে মাখিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। এবার ফ্রাই প্যান গরম করে ৩ টে চামচ তেল দিয়ে মাছগুলোর উভয় পাশ ১ মিনিট করে ভেজে নিতে হবে, মাঝারি আঁচে ।

– তেল থেকে মাছগুলো তুলে কালোজিরা, তেজপাতা, দারুচিনি দিন একই তেলে । এবার পিঁয়াজ বাদামী করে বেটে বাটা ও গুঁড়া মশলা দিয়ে কষাতে হবে। এ সময় একটু পানি দিয়ে নেবেন।

-কষানো হয়ে গেলে গরম পানি দিয়ে ঢেকে দিন। বলক এলে চুলার আঁচ কমিয়ে ভাজা মাছ গুলো ঝোলে বিছিয়ে দিন এক এক করে।লবণ দিন।

– চিনি, বেরেস্তা ও কাঁচামরিচ দিয়ে ঢেকে ৫ মিনিট রান্না করুন। নামানোর সময় ধনে পাতা দিয়ে নামিয়ে নিন।

 

শিল্পকলায় শুরু ‘চার্লি চ্যাপলিন চলচ্চিত্র উৎসব’

পুরো বিশ্বের সবার প্রিয় চার্লি চ্যাপলিন। যিনি শুধুমাত্র নির্বাক চলচ্চিত্র দিয়ে পৃথিবীকে হাসাতে পেরেছিলেন। একের পর এক সুপার স্যাটায়ার কমেডি ফিল্ম উপহার দিয়ে তিনি হয়েছিলেন হাসির আতংক।

বিশ্বসেরা এই কৌতুক অভিনেতার জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের নিয়মিত চলচ্চিত্র প্রদর্র্শনীর ধারাবাহিকতায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার ইন্টারন্যাশনাল ডিজিটাল কালচারাল র্আকাইভে ১৬ থেকে ২২ এপ্রিল আয়োজন করা হয়েছে ‘চার্লি চ্যাপলিন চলচ্চিত্র উৎসব’।

ধারাবাহিকভাবে ১৬ এপ্রিল ‘চ্যাপলিন ইউ টার্ন’, ১৭ এপ্রিল ‘মডারন টাইমস’, ১৮ এপ্রিল  ‘ইন দ্যা গোল্ড রাশ’, ১৯ এপ্রিল ‘চারলট এটলি ম্যানি কুইন’,‘লাফিং গ্যাস’, ‘ফেইস  অন দ্যা বাররুম ফ্লোর রিঅ্যাকশন’, ‘দ্যা ম্যাস কুয়ারাদার’, ‘গুড ফর নাথিং’,  ‘দ্যা রাউন্ডারস’, ২০ এপ্রিল ‘দ্যা ফায়ার ম্যান’, ‘দ্যা এ্যাডভেনচারার’, ‘এ ডগস লাইফ’, ২১ এপ্রিল ‘এ উইম্যান’, ‘দ্যা ব্যাংক’, ‘দ্যা রিংক’, ২২ এপ্রিল ‘দ্যা পনশপ’, ‘বাই দ্যা সি’ এবং ‘দ্যা ইমিগ্রান্ট’ প্রদর্শীত হবে।

প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট থেকে শুরু হবে প্রদর্শনী। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত।

 

নারীকে মাটিতে ফেলে পেটালো থানার দালাল

চাঁদা না দেয়ায় তিরিশোর্ধ এক নারীকে রাস্তায় পেটাতে পেটাতে মাটিতে শুইয়ে দিল থানার এক দালাল। স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্যের মীমাংসা করে দেয়ার বিনিময়ে টাকা দাবি করেছিল শাহজাহান নামের ওই দালাল। বিচারপ্রার্থী শাহানারা বেগম (৩২) সেই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত সোমবার রাস্তায় একা পেয়ে বেদম প্রহার করে সে। এতে শাহানারার শরীরে অনেক স্থান ফেটে রক্ত বেরিয়ে যায়। এই দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করেন এক যুবক। শুক্রবার ভিডিওটি বাংলামেইলের কাছে এসেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার হাতিয়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহানারা বেগম ৫নং ওয়ার্ডের রিয়াজ উদ্দিনের স্ত্রী। শাহানারা বেগমের এটি দ্বিতীয় বিয়ে। তার প্রথম স্বামী ধনু মিয়া মারা যান ২০০২ সালে। একই সালে রিয়াজ উদ্দিনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তবে বিয়ের কোনো কাবিন হয়নি, ঘরোয়াভাবে মৌলবির সামনে কলেমা পড়ে বিয়ে হয়। প্রথম ঘরে তার দুই মেয়ে আছে। দু’জনেরই বিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় ঘরে আরেকটি মেয়ে রয়েছে। মেয়েটি এএম উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

শাহানারা বেগম বেশ কিছু পৈত্রিক সম্পত্তি পেয়েছেন। এছাড়াও সুদে টাকা কর্জ দিয়েও উপার্জন করেন। দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে তিনি প্রথমে স্থানীয় এক উকিলের কাছে গিয়ে বিচ্ছেদের জন্য অ্যাফিডেভিট করতে চান। কিন্তু কাবিন না থাকায় তিনি পৌরসভার মেয়রের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। মেয়র মীমাংসাও করে দেন। এই সুযোগে থানার দালাল শাহজাহানসহ আরো তিনজন তার বাসায় গিয়ে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। মীমাংসার আশ্বাসে এক কাউন্সিলরকে ১০ হাজার টাকা তিনি দিয়েছেনও।

এর আগেও বিভিন্ন সময় শাহজাহান এলাকায় চাঁদাবাজি করেছেন বলে দাবি করেন শাহানারা বেগম। বাড়ি নির্মাণের সময়ও তিনি তাকে ১৪ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছেনও।

গত শনিবার রাতে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা চাওয়া হয়। এবারও দিতে অস্বীকৃতি জানান। সোমবার শাহানারা ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা ঋণ তোলেন। এর আড়াই লাখ টাকা নিজের নামে এবং এক লাখ টাকা মেয়ের নামে। টাকা নিয়ে বাড়ি আসার পথে একা পেয়ে শাহজাহান পেছন থেকে তিনটি ঘুষি মেরে ফেলে দেয়। এরপর রাস্তা থেকে তুলে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে শাহানারা রাস্তা থেকে ছিটকে সংস্কারাধীন  রাস্তার পাশের গর্তে পড়ে যান।

ঘটনাস্থলে লোকজন জড়ো হতে থাকে। এসময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক ভিডিও করতে থাকেন। ভিডিওতে দেখা যায়, শাহজাহান গাছের ডাল দিয়ে শাহানারা বেগমকে পেটাচ্ছে। এসময় স্থানীয় এক যুবক তাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও কোনো কাজ হয়নি। এক পর্যায়ে স্থানীয় এক প্রবীণ এগিয়ে আসেন কিন্তু তার কথাও শোনেনি শাহজাহান।

এভাবেই পেটানো হয়েছে শাহানারাকে

এ ব্যাপারে শাহানারা বেগমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বাংলামেইলকে বলেন, চাঁদা দিতে না চাইলে শাহজাহান আমার ব্যাগ কেড়ে নেয়। ব্যাগে সাড়ে তিন লাখ টাকা ছিল। এছাড়াও সে আমার গলায় থাকা দেড় ভড়ি স্বর্ণের চেন টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। প্রহারের এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞানের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। গর্ত থেকে তুলে আমাকে পাশের একটি বাড়ির সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর রড দিয়ে মারে শাহজাহান। আমার নাকফুল কেড়ে নেয়। কয়েকটা থাপ্পর দিয়ে আমার বুকে লাথি দেয়। এসময় স্থানীয় লোকরা আমাকে উদ্ধার করে। স্থানীয় লোকেরা আসলে সে আমাকে অর্ধেক চেন ফেরত দেয়। পরে একটি রিকশায় করে আমাকে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।

 

শেয়ারবাজারে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ছে

দিন দিন নারীরা দেশের শেয়ারবাজারে সক্রিয় হয়ে উঠছেন, বিনিয়োগে তাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধস পরবর্তী সময়ে নানা অস্থিরতার মধ্যেও নারী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, স্থিতিশীল শেয়ারবাজারই নারীর অংশগ্রহণকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে।

গত ছয় বছরে নারী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৬৮ হাজার। মঙ্গলবার (৮ মার্চ) নারী বিনিয়োগকারীর বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৭০ হাজার ১৮৯টি।  ২০১০ সালের এই দিনে ছিল ৬ লাখ ১ হাজার ৪০০টি।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল) সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় বছরে নারী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৬৮ হাজার। নারী দিবসে মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে মোট বেনিফিশিয়ারি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ৩ হাজার ৪৪২টি। এর মধ্যে পুরুষদের বিও অ্যাকাউন্ট  ২৩ লাখ ২২ হাজার ৫৯৪টি এবং নারী বিনিয়োগকারীদের বিও সংখ্যা ৮ লাখ ৭০ হাজার ১৮৯ টি এবং কোম্পানির বিও ১০ হাজার ৬৫৯টি।

২০১০ সালে শেয়ার বাজার ধসের পূর্বে ৮ মার্চ মোট বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুরুষদের বিও সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৪১ হাজার, নারী বিনিয়োগকারীদের বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ১ হাজার ৪০০ টি এবং কোম্পানির বিও ছিল ৬ হাজার ৩০০টি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, পুঁজিবাজারের ওপর নারী বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এতে শেয়ারবাজারের প্রতি উৎসাহ বাড়ছে নারীদের। পাশাপাশি ধসের পরবর্তী সময়ে সরকার অনেক প্রণোদনা ঘোষণা করে। ফলে আগের চেয়ে বর্তমান শেয়ারবাজারে অনেকটাই বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে। এ কারণে পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারীর অংশগ্রহণ সমান তালে বাড়ছে।

ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, নারীকে ব্রোকারেজ হাউজে সরাসরি লেনদেন করতে তেমন দেখা না গেলেও তাদের পক্ষে বাবা, ভাই, স্বামী অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করছে। সেই সঙ্গে স্মার্ট ফোনের কল্যাণে বাসায় বসে একজন নারী মার্কেট সম্পর্কে জানতে পারছে এবং প্রয়োজনে শেয়ার বেচাকেনা অর্ডার দিচ্ছে। ডিএসইতে মোবাইলে বেচাকেনা চালু হলে নারী বিনিয়োগকারীরা বাসায় বসে সেল বাই অর্ডার দিতে পারবেন। এতে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।

একাধিক নারী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, বেশিরভাগ নারী নিজেরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছেন। বাজারে আগে অনেকটা গতি ছিল। তাই সেকেন্ডারি মার্কেটে নারীর অংশগ্রহণ ছিল বেশ ভালো। অনেক সিকিউরিটিজ হাউজে নারীর উপস্থিতি লক্ষ করার মতো ছিল। কিন্তু বাজার ধসের পর নারীরা সরাসরি সিকিউরিটিজ হাউজে লেনদেন করতে আসেন না। তবে তাদের বেশির ভাগই প্রাইমারি শেয়ারে আবেদন করেন।

তারা আরও বলেন, ২০১০ সালে অনেক নারী বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আইপিওতে ঘোষিত ক্ষতিগ্রস্ত কোটায় তারা শেয়ার বারাদ্দ পেলেও সম্প্রতি অনেকেই তা পাচ্ছেন না। তাই এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তারা।

রুমা আক্তার নামে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, ‘অনেকে মনে করেন নারীরা শুধু আইপিওতে ব্যবসা করেন। কিন্তু আমি মূল মার্কেটের শেয়ারে বিনিয়োগ করে ২০১০ সালে ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী হিসেবে আইপিও আবেদনের কোটা পেতাম। কিন্তু গত এক বছর ধরে আমার আইপিও কোটায় শেয়ার বরাদ্দ পাই না।’ বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করার পরও কোনো প্রতিকারও পাচ্ছেন না তিনি।

তিনি বলেন, ‘শুধু আমি নই, আমার মতো আরও অনেকে আছেন যারা আগে ক্ষতিগ্রস্ত কোটায় আইপিওতে শেয়ার বরাদ্দ পেতেন কিন্তু এখন পাচ্ছেন না।’ তাই আইপিওতে ক্ষতিগ্রস্তদের যাতে কোটাসুবিধা নিশ্চিত হয়, সে বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নজরদারি দাবি করেন তিনি।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘ডিএসইর পক্ষ থেকে নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এতে নারীরা তাদের বিনিয়োগের বিষয়ে খুঁটিনাটি বুঝতে পারছেন।’ এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনে নতুন সিস্টেম ‘মোবাইল লেনদেন’ চালু হচ্ছে। এতে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।

 

সমাজ বদলাতে পারে নারীরাই

নিলম বেহেঙ্গরা সমাজের একজন প্রগতিশীল নারী। তার স্বামী তার আগে ঘুম থেকে ওঠলে নিজেই চা বানিয়ে ফেলেন এবং স্ত্রীর সামনে চা নিয়ে হাজির হয়ে যান। কিন্তু কিছুদিন আগেও এমনটি মোটেও ছিল না। স্বামীর জন্য সকালের চা বানিয়ে তাকেই বরং হাজির হতে হতো। তাহলে এমন কি পরিবর্তন হলো যে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর চিন্তাধারা পাল্টে গেল। জানতে চাইলে ঝাড়খণ্ডের নিলাম তার রূপান্তরিত জীবনের গল্পটুকু টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাংবাদিকের কাছে তুলে ধরেন। প্রতিবেদনটি বাংলামেইলের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

নিলমের জীবনের পরিবর্তনটা হয়েছিল ঠিক তখনই যখন তিনি আত্মনির্ভরশীল একটি সংস্থার সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে যোগ দেয়ার পর থেকেই তার মন মানসিকতায় ব্যাপক পরিবর্তন হল। যা পরে তার পরিবারকেও বদলে দিতে সাহায্য করেছিল। আত্মবিশ্বাসী নিলম এখন তার পরিবারের সবার শ্রদ্ধার পাত্রী হয়ে উঠেছেন। এমনকি তার ছোট ছেলেটিও বেশ গর্ব করে মায়ের এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে। ফসলের জন্য তার স্বামীও তাকে বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি এনে দিয়েও সাহায্য করে।

নিলম বলেন, ‘আমার কাজ এবং আমার পরিবার আমাকে যে শুধু অনুপ্রাণিত করে তা কিন্তু নয় বরং আমাকে সমানে কাজ করার দৃঢ় মনবোল জোগায়। সমাজ পরিবর্তনে নারীর যে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে আমি এটা সবাইকে জানাতে চাই। আর এই কারণে আমি গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করতে চাই এবং সমাজে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে অবহিত করতে চাই’। তবে নিলমের এই ঘটনাটি সবার দৃষ্টান্ত হবে বলে মনে করেন অনেকে। নারীর ক্ষমতায়ন শুধু নারীর উপর নির্ভর করে না এর জন্য পুরুষকে একযোগে কাজ করতে হয়। তিনি আরো বলেন, বাবা, ভাই, সন্তান এমনকি স্বামীর সহযোগীতা ছাড়া একা করো পক্ষে পরিবর্তন আনা সম্ভব না।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পরুষেরা সমাজের নানরকম নিয়মকানুন তোয়াক্কা না করে নারীর পাশে এসে দাঁড়ায়। যেমন একটি উদাহরন দিয়ে নিলম বলেন, ‘আমি অনেক গর্ভবতী নারীর সঙ্গে কথা বলেছি, গর্ভধারণের ওই সময়টাতে তাদের শরীর স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক ভারী হয়ে যায়। সেই সময় অনেক পুরুষই তাদের স্ত্রীকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না এমনকি ঠিকমতো দেখাশোনাও করে না। পুরুষেরা অনেক ক্ষেত্রে পরিবার পরিকল্পনা মেনে চলে না। যার ফলে একের পর এক সন্তান জন্মে দেয়ার ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে নারী। তবে এক্ষেত্রে নারী যদি একটু সোচ্চার ও সচেতন হয় তাহলে এমন ঘটনা কখনোই সম্ভব না।

তার চেয়েও বড় কথা একটি নারী যখন স্বামীর পাশাপাশি পরিবারে অর্থ যোগান দিতে সক্ষম হয় তখন সেই পরিবারটিতে তার দাম বেড়ে যায় বহুগুন। এমনকি পরিবারের সদস্যদের চোখেও তার সম্মান বেড়ে যায় অনেক। তবে এমন পরিবর্তনের জন্য সবার আগে যেটা প্রয়োজন বলে সবাই মনে করেন তা হলো সচেতনতা। স্কুল কলেজগুলোতে যদি ছোটবেলা থেকে ছেলেমেয়েদের নারীর মূল্য এবং নারীর প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত এ নিয়ে যদি আলোচনা করা হয় তাহলে অনেক্ষেত্রে নারীরা সমাজে শোষিত কম হবে। শুধু নীলম নয় এমন অনেক সফল নারীর গল্প রয়েছে পুরো পৃথিবীর আনাচে কানাচে। তার মধ্যে বেশিরভাগই থেকে যায় আমাদের জানার বাইরে। সেইসব নারীদের আত্মবিশ্বাসী গল্প সবার মাঝে ছড়িয়ে দিত পারলে সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

 

তালিকাভুক্ত কোম্পানির ১৭% নারী পরিচালক

দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে ১৭ শতাংশ নারী পরিচালক রয়েছে। তবে তাদের পদায়ন বেশির ভাগই পারিবারিক ভাবে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষ্যে করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিভিলিটি (সিএসআর)সেন্টার, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি)যৌথ উদ্যোগে ‘রিং দ্য বেল ফর জেন্ডার ইক্যুয়িটি শীর্ষক’আলোচনা সভায় শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে কোম্পানিগুলো ১৭ শতাংশ পরিচালক নারী রয়েছে। যা অন্যান্য দেশের চেয়ে তুলনামূলকভাবে ভালো। তবে বেশিরভাগই পারিবারিক ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। তারা দক্ষতা ও যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে ওই পদে আসেনি। এছাড়া ইউরোপের অনেক দেশ থেকে নারীর পদায়নে যোগ্যতা ও দক্ষতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটা পিছিয়ে আছে।

শিক্ষিত, দক্ষ নারী কর্মী নিয়োগের আহবান জানান তারা। আর তাই নারীদের প্রশিক্ষন প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা। এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন তারা।

তাদের মতে, কোটা ভিত্তি ও পারিবারিকভাবে নিয়োগ না দিয়ে দক্ষ কর্মী হিসেবে নারীদের নিয়োগ দেয়া উচিত। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে কোনো কোম্পানির বোর্ডে একজন পরিচালক নারী থাকা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশেও প্রাইভেট সেক্টরে ৫ শতাংশ দক্ষ নারীকে কোম্পানির বোর্ডে রাখার পরামর্শ দেন তারা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারী ব্যবসায়ী থাকলেও বাংলাদেশে নারী ব্যবসায়ী খুব কম। আর যারা ব্যবসায় আসছে তারাও পরিবারের উত্তোরাধীকার সূত্রে আসছে। স্বেচ্ছায় ব্যবসা খাতে নারীদের আনার উদ্যোগ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন তারা।

সঠিক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ এবং সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে এদেশের নারীরাও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে সিএসআর সেন্টারের সিইও শাহামিন এ জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক রাশেদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

 

পরিবার বিষয়ক প্রবন্ধ – স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টি করেন, অতঃপর সুঠাম করেন, যিনি নির্ধারণ করেন, অতঃপর পথনির্দেশ করেন; আমি তার প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তিনি শেষে ও প্রথমে সকল প্রশংসার প্রাপ্য মালিক। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, যাঁর কোনো শরীক নেই; আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নেতা ও নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, যিনি নির্বাচিত নবী ও বান্দা; আল্লাহ তাঁর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীগণ এবং যে ব্যক্তি তাঁর দা‘ওয়াতের মাধ্যমে দা‘ওয়াত দান করে ও যে ব্যক্তি তাঁর পদ্ধতির অনুসরণে জীবনযাপন করে, সে ব্যক্তিসহ উল্লেখিত সকলের উপর রহমত, শান্তি ও বরকত বর্ষণ করুন।

অতঃপর:

জেনে রাখুন, আল্লাহ আপনাকে তাওফীক দিন— আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম মহান নিয়ামত ও নিদর্শন হল ঘর-সংসার, যা আশ্রয়স্থল ও শান্তি নিকেতন; তার ছায়াতলে মানবগোষ্ঠী ভালবাসা ও অনুকম্পা, নিরাপত্তা ও পবিত্রতা এবং মহৎ জীবন ও শালীনতা লাভ করবে … তার কোলে শিশু-কিশোর ও তরুণ সমাজ বেড়ে উঠবে, আত্মীয়তার সম্পর্ক বিস্তার লাভ করবে এবং পারস্পরিক দায়বদ্ধতা শক্তিশালী হবে। অন্তরের সাথে অন্তর যুক্ত হবে … এবং মনের সাথে মনের আলিঙ্গন হবে; আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ هُنَّ لِبَاسٞ لَّكُمۡ وَأَنتُمۡ لِبَاسٞ لَّهُنَّۗ ﴾ [البقرة: ١٨٧]

“তারা তোমাদের পোষাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের পোষাকস্বরূপ।” – ( সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭ )।

এই মজবুত সম্পর্ক ও উন্নত সংসারের মধ্যে উত্তম বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটবে এবং ঐসব পুরুষ ব্যক্তিগণ বেড়ে উঠবে, যাদেরকে আমানতস্বরূপ মহান দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে; আর ঐসব নারীদেরকে শিক্ষা দেওয়া হবে, যারা বংশমূল তথা জাতির ভবিষ্যতকে দেখাশুনার দায়িত্ব পালন করে।

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দ্বন্দ্বের কতিপয় কারণ

জীবনের বাস্তবতা এবং মানুষ (যেমনটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন; আর যা তিনি সৃষ্টি করেছেন, সে সম্পর্কে তিনি সবচেয়ে বেশি ভাল জানেন) সে মানুষের স্বভাব-প্রকৃতিতে কখনও কখনও (জীবনের বাস্তবতায়) এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যাতে দিক-নির্দেশনা কাজ করে না এবং ভালবাসা ও প্রশান্তি সুদৃঢ় হয় না; যার কারণে কখনও কখনও দাম্পত্য সম্পর্ক অটুট রাখা কষ্টকর ও কঠিন হয়ে যায়। ফলে তাতে দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয় না এবং তার দ্বারা নবীন সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে সমর্থ হয় না। আর এ বিশৃঙ্ল ও অনৈক্যের অবস্থা বা পরিস্থিতিসমূহের কারণসমূহ কখনও কখনও হয়ে থাকে আভ্যন্তরীণ আবার কখনও কখনও হয় বহিরাগত।

যেমন কখনও কখনও এ সমস্যার উত্থান হয়: স্বামী-স্ত্রীর অভিভাবক অথবা তাদের আত্মীয়-স্বজনের মধ্য অনভিজ্ঞ ব্যক্তির হস্তক্ষেপ, অথবা স্বামী-স্ত্রীর সকল ছোট বড় কর্মকাণ্ডের পশ্চাদ্ধাবন; আবার কখনও কখনও পরিবারের কোনো কোনো অভিভাবক এবং পরিবারের বড়দের পক্ষ থেকে তাদের অধিনস্থদের উপর এত বেশি নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দেওয়া হয় যে, তা কখনও কখনও বিচারকের নিকট বিচার নিয়ে যাওয়ার পর্যন্ত গড়ায়; ফলে আড়ালে ঢাকা রহস্যসমূহ প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং গোপন বিষয়সমূহ উম্মোচন হয়ে যায়, আর এগুলো হয় নিছক ছোট-খাট বিষয় অথবা তুচ্ছ কিছু কারণে; যার উৎপত্তি হয়ত অনুপযুক্ত অথবা প্রজ্ঞাশূন্য হস্তক্ষেপ অথবা তাড়াহুড়া ও দ্রুততা অবলম্বন বা গুজব ও আজে-বাজে কথায় কান দেওয়া ও সেটাকে সত্য বলে বিশ্বাস করা।

আর কখনও কখনও সমস্যার উৎসস্থল হয়: দীনের ব্যাপারে দূরদর্শিতার স্বল্পতা ও মহানুভব শরী‘য়তের বিধিবিধানসমূহের ব্যাপারে অজ্ঞতা এবং পুঞ্জীভূত কুঅভ্যাস ও দুর্বল চিন্তাধারা লালন করা।

ফলে কোনো কোন স্বামী বিশ্বাস করে বসে যে, তালাকের দ্বারা হুমকি দেওয়া অথবা তা উচ্চারণ করা হল দাম্পত্য বিরোধ ও পারিবারিক সমস্যার একটি সঠিক সমাধান; সুতরাং সে তার প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় এবং তার নির্দেশ প্রদান ও নিষেধাজ্ঞার সময়ে, এমনকি তার সকল অবস্থায় (স্ত্রীর সাথে) কথাবার্তার ক্ষেত্রে তালাকের শব্দগুলো ব্যতীত অন্য কিছু জানে না বা বুঝে না; আর সে এও জানে না যে, এর দ্বারা সে প্রকারান্তরে আল্লাহর আয়াতসমূহকে উপহাস হিসেবে গ্রহণ করেছে; সে তার কর্মকাণ্ডে অপরাধী বা পাপী হচ্ছে, তার সংসার ধ্বংস করছে এবং তার পরিবার-পরিজন হারাচ্ছে।

হে মুসলিমগণ! এটাই কি দীনের ফিকহ তথা সুক্ষ্ম জ্ঞান হতে পারে?!

নিশ্চয়ই শরী‘য়ত কর্তৃক অনুমোদিত সুন্নাত পদ্ধতি যে তালাকের বিধান রয়েছে তার উদ্দেশ্য দাম্পত্য সম্পর্কের বন্ধন বা রশি কর্তন করা নয়, বরং বলা যায় যে, এ পদ্ধতির তালাক হচ্ছে এই সম্পর্ক সাময়িকভাবে আটকে রাখা এবং প্রতীক্ষা, চিন্তাভাবনা ও সংশোধনের একটি পর্যায়; আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ … لَا تُخۡرِجُوهُنَّ مِنۢ بُيُوتِهِنَّ وَلَا يَخۡرُجۡنَ إِلَّآ أَن يَأۡتِينَ بِفَٰحِشَةٖ مُّبَيِّنَةٖۚ وَتِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ ٱللَّهِ فَقَدۡ ظَلَمَ نَفۡسَهُۥۚ لَا تَدۡرِي لَعَلَّ ٱللَّهَ يُحۡدِثُ بَعۡدَ ذَٰلِكَ أَمۡرٗا ١ فَإِذَا بَلَغۡنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمۡسِكُوهُنَّ بِمَعۡرُوفٍ أَوۡ فَارِقُوهُنَّ بِمَعۡرُوفٖ … ﴾ [الطلاق: ١،  ٢]

“ … তোমরা তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বহিষ্কার করো না এবং তারাও বের হবে না, যদি না তারা লিপ্ত হয় স্পষ্ট অশ্লীলতায়। আর এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা; যে আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে, সে নিজেরই উপর অত্যাচার করে। আপনি জানেন না, হয়ত আল্লাহ এর পর কোনো উপায় করে দেবেন। অতঃপর তাদের ইদ্দত পূরণের কাল আসন্ন হলে তোমরা হয় যথাবিধি তাদেরকে রেখে দেবে, না হয় তাদেরকে যথাবিধি পরিত্যাগ করবে। …” – (সূরা আত-তালাক, আয়াত: ১-২)।

এটাই হচ্ছে শরী‘য়ত। বরং বিষয়টি এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; নিশ্চয়ই সুন্নাত পদ্ধতিতে তালাক প্রদানের বিধানটি প্রতিকারের সর্বশেষ অস্ত্র এবং এর পূর্বে অনেকগুলো উপায় রয়েছে।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের কতিপয় উপায়

আমার মুসলিম ভাই ও বোন:

যখন বিরোধের আলামত, অবাধ্যতা, মতানৈক্যের লক্ষণ প্রকাশ পাবে, তখন তালাক বা তালাকের হুমকি প্রদান করা তার প্রতিকার নয়।

প্রতিকারের জন্য যা দাবি করা হয়, তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল: ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, বিবেক ও বুদ্ধির ক্ষেত্রে বিভিন্নতা এবং স্বভাব-প্রকৃতির ক্ষেত্রে ভিন্নতার বিষয়টি অনুধাবন করা; সাথে আরও জরুরি হল অনেক বিষয়ে উদারতার পরিচয় দেওয়া এবং দেখেও না দেখার ভান করা; কারণ সব সময় সে যা পছন্দ ও কামনা করে, তার মধ্যে মঙ্গল ও কল্যাণ হয় না, বরং কখনও কখনও সে যা পছন্দ ও কামনা করে না, তার মধ্যেই কল্যাণ হয়; আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ … وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ فَإِن كَرِهۡتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡ‍ٔٗا وَيَجۡعَلَ ٱللَّهُ فِيهِ خَيۡرٗا كَثِيرٗا ١٩ ﴾ [النساء: ١٩]

“আর তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে; তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন, তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ।” – (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯ )।

কিন্তু যখন সমস্যা প্রকাশ পাবে, পারস্পরিক দায়বদ্ধতার বন্ধনে শিথিলতা দেখা দিবে এবং স্ত্রীর পক্ষ থেকে অবাধ্যতা, তার স্বভাব চরিত্রে অহমিকা এবং তার দায়িত্ব থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রবণতা প্রকাশ পাবে; যেমন- ঘৃণার প্রকাশ পাওয়া, স্বামীর অধিকারের ব্যাপারে কমতি করার বিষয় এবং স্বামীর মর্যাদাকে অবজ্ঞা করার বিষয় প্রকাশ করা, তখন ইসলামে এর চিকিৎসা বা প্রতিকার সুস্পষ্ট; তাতে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ কোনোভাবেই তালাক প্রসঙ্গ আসবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সুস্পষ্ট কিতাবে বলেন:

﴿ …  وَٱلَّٰتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَٱهۡجُرُوهُنَّ فِي ٱلۡمَضَاجِعِ وَٱضۡرِبُوهُنَّۖ فَإِنۡ أَطَعۡنَكُمۡ فَلَا تَبۡغُواْ عَلَيۡهِنَّ سَبِيلًاۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيّٗا كَبِيرٗا ٣٤ ﴾ [النساء: ٣٤]

“ … আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশংকা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাদেরকে প্রহার কর। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অন্বেষণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, মহান।” – (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪ )।

তাই বুঝা গেল যে, উক্ত অবস্থার প্রতিকার হবে উপদেশ ও দিক-নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে, ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে, অধিকারসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে এবং আল্লাহর গজব ও ঘৃণা থেকে ভয় প্রদর্শন করার মাধ্যমে; সাথে আরও প্রয়োজন বুদ্ধিমত্তা ও ধৈর্যের পথে চলার জন্য উৎসাহ প্রদান ও ভয় প্রদর্শন করা।

আর কখনও কখনও অহমিকা ও অবাধ্যতার মোকাবিলায় শয্যা বর্জন ও বয়কট করা হচ্ছে এর প্রতিকার; আপনারা লক্ষ্য করুন যে, শয্যা বর্জন করার অর্থ শয়নকক্ষ বর্জন করা নয়; … তা হল শয্যা বর্জন করা, ঘর বয়কট করা নয় … পরিবার বা সন্তান বা অপরিচিত লোকজনের সামনে নয়।

উদ্দেশ্য হল প্রতিকার করা, ঘোষণা করা অথবা অপমান করা অথবা গোপন বিষয় প্রকাশ করা নয়; বরং উদ্দেশ্য হল বর্জন ও বয়কটের মাধ্যমে অবাধ্যতা ও অহংকারের মোকাবিলা করা, যা পারস্পরিক ঐক্য, সংহতি ও সমতার দিকে পরিচালিত করে।

আর কখনও কখনও কিছু কঠোর ও রূঢ় মনোভাবের মাধ্যমে প্রতিকার হতে পারে; কারণ, কিছু মানুষ এমনও রয়েছে, যাদেরকে সোজা করার ক্ষেত্রে উত্তম ব্যবহার ও ভদ্র কথায় কোনো কাজ হয় না; বরং তারা এমন শ্রেণীর মানুষ যাদেরকে অধিকাংশ সময় নম্র ব্যবহার ও সহিষ্ণুতা অবাধ্য করে তোলে … সুতরাং যখন কঠোরতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে, তখন অবাধ্য ব্যক্তি থেমে যাবে এবং বিক্ষুব্ধ ব্যক্তি শান্ত হয়ে যাবে।

হ্যাঁ, কখনও কখনও কিছু চাপ প্রয়োগের আশ্রয় নেয়াটাও কার্যকর প্রতিষেধক হতে পারে; আর কেনই বা সে তার আশ্রয় নিবে না, অথচ দায়িত্বের প্রতি বৈরী ভাব ও স্বভাব-প্রকৃতি থেকে বের হওয়ার মত পরিস্থিতির উদ্ভব হয়ে যাচ্ছে?

আর সকল বিবেকবান ব্যক্তির নিকট বিদিত যে, কঠোরতা যখন সংসারের জন্য তার শৃঙ্খলা ও মজবুত বন্ধনকে ফিরিয়ে দিবে এবং পরিবারকে ফিরিয়ে দিবে ভালবাসা ও হৃদ্যতা, তখন তা নিঃসন্দেহে তালাক ও বিচ্ছেদের চেয়ে উত্তম; তা হবে ইতিবাচক, শিক্ষামূলক ও অর্থবহ সমাধান; ঘায়েল করা ও প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে নয়; বরং তার দ্বারা অবাধ্যতাকে দমন করা হয় এবং বিশৃঙ্খলাকে সংযত করা করা হয়।

আর যখন স্ত্রী তার স্বামীর পক্ষ থেকে দুর্ব্যবহার ও উপেক্ষার আশঙ্কা করবে, তখন আল-কুরআনুল কারীম তার প্রতিকারের দিক নির্দেশনা প্রদান করে তাঁর বাণীর মাধ্যমে, আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ وَإِنِ ٱمۡرَأَةٌ خَافَتۡ مِنۢ بَعۡلِهَا نُشُوزًا أَوۡ إِعۡرَاضٗا فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِمَآ أَن يُصۡلِحَا بَيۡنَهُمَا صُلۡحٗاۚ وَٱلصُّلۡحُ خَيۡرٞۗ … ﴾ [النساء: ١٢٨]

“আর কোনো স্ত্রী যদি তার স্বামীর দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, তবে তারা আপোস-নিষ্পত্তি করতে চাইলে তাদের কোনো গোনাহ নেই এবং আপোস-নিষ্পত্তিই শ্রেয়।” – (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৮ );

প্রতিকার হবে আপোস-নিষ্পত্তি ও শান্তি স্থাপনের মাধ্যমে, তালাক ও সম্পর্ক বাতিলের মাধ্যমে নয়। আবার কখনও কখনও বিবাহ বন্ধনকে সুরক্ষার জন্য আর্থিক অথবা ব্যক্তিগত অধিকারের কিছু কিছু বিষয় ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিকার হতে পারে।

﴿ وَٱلصُّلۡحُ خَيۡرٞۗ  ﴾ [আপোস-নিষ্পত্তি উত্তম]। অবাধ্যতা, দুর্ব্যবহার, বিদ্বেষ ও তালাকের চেয়ে আপোস-নিষ্পত্তি উত্তম।

আমার মুসলিম ভাই ও বোন:

এটা একটা গতিশীল আবেদন এবং আল্লাহর দীনের ফিকহের দিক থেকে ও তাঁর বিধিবিধানের উপর ভিত্তি করে আচার-আচরণের একটি সংক্ষিপ্ত স্মারক; সুতরাং তার থেকে মুসলিমগণ কোথায় যাচ্ছে?

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার বিরোধের ব্যাপারে কেন সালিস নিয়োগ করা হয় না?  এ সমাধান থেকে কেন সংস্কারকগণ বিরত থাকে? সে কি প্রকৃত সংশোধনের ব্যাপারে অমনোযোগী, নাকি পরিবার ভাঙ্গন ও সন্তানদেরকে বিভক্ত করার ব্যাপারে উৎসাহী?

নিশ্চয়ই আপনি তাকে নির্বুদ্ধিতা, বাড়াবাড়ি, আল্লাহর ভয় ও তাঁর নজরদারী থেকে দূরুত্বে অবস্থান, তাঁর বিধিবিধানের অধিকাংশকে প্রত্যাখ্যান এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা রেখার ব্যাপারে ছিনিমিনি খেলা ছাড়া অন্য কিছু মনে করবেন না।

ইমাম ইবনু মাজাহ ও ইবনু হিব্বান প্রমূখ গ্রন্থকারগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন:

« ما بال أقوام يلعبون بحدود الله . يقول أحدهم : قد طلقتك . قد راجعتك . قد طلقتك ؟ أيلعب بحدود الله و أنا بين أظهركم » . ( رواه ابن ماجه و ابن حبان  ) .

“কিছু লোকের কি হল যে তারা আল্লাহর নির্ধারিত সীমানা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে; তাদের কেউ কেউ বলে: আমি তোমাকে তালাক দিলাম, আমি তোমাকে ফিরিয়ে আনলাম, আমি তোমাকে তালাক দিলাম? সে কি আল্লার নির্ধারিত সীমানা নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, অথচ আমি তোমাদের মাঝেই রয়েছি?”[1]

দ্বন্দ্ব নিরসনের সর্বশেষ উপায়

দ্বন্দ্ব নিরসনের ব্যাপারে যখন সকল উপায় ব্যর্থ হবে এবং দাম্পত্য সম্পর্ক বহাল রাখা যখন কঠিন ও কষ্টকর হয়ে যাবে, এমনকি যখন তার সাথে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত অভিষ্ট লক্ষ্য ও মহান তাৎপর্য বাস্তবায়ন করা না যায়, তখন শরী‘য়তের উদারতা ও তার বিধানসমূহের পরিপূর্ণতার প্রমাণ হচ্ছে যে, এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য উপায় রাখা হয়েছে। তবে মুসলিমগণের অনেকেই শরী‘য়ত কর্তৃক অনুমোদিত সুন্নাত পদ্ধতির তালাকের সম্পর্কে অজ্ঞ এবং আল্লাহর সীমারেখা ও তাঁর শরী‘য়তের প্রতি লক্ষ্য রাখা ছাড়াই তালাক শব্দটি উচ্চারণ করে থাকে।

ঋতুবর্তীকালীন সময়ে তালাক দেয়া হারাম, (একসাথে) তিন তালাক প্রদান করা হারাম এবং এমন ঋতুমুক্তকালীন সময়ে তালাক প্রদান করাও হারাম, যাতে উভয়ের মাঝে মিলন (সহবাস) হয়েছে; সুতরাং এ ধরনের সকল তালাক বিদ‘আত ও হারাম (নিষিদ্ধ)। এ ধরনের তালাকদাতার পাপ হবে; কিন্তু আলেমগণের বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী তালাক সংঘটিত হয়ে যাবে।

যে সুন্নাত পদ্ধতির তালাক সম্পর্কে অবহিত হওয়া মুসলিমগণের উপর ওয়াজিব, তা হলো:  ঋতুমুক্তকালীন সময়ে মাত্র এক তালাক প্রদান করা যাতে উভয়ের মিলন (সহবাস) হয়নি, অথবা গর্ভকালীন সময়ের মাঝে তালাক প্রদান করা।

এ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তালাক প্রদান করা নিঃসন্দেহে একটি প্রতিকার হিসেবে বিবেচিত। কারণ, এতে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই বেশ কিছু সময় পায়, সে সময়ে তারা চিন্তা-ভাবনা কিংবা পর্যালোচনা করতে পারে।

আর এই পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তালাক প্রদানকারীকে ঋতুমুক্তকালীন সময়ের আগমন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে; আর হতে পারে যে, তখন তার মন পরিবর্তন হবে, হৃদয় জগ্রত হবে এবং আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী তাদের জন্য নতুন কোনো উপায় করে দেবেন, ফলে তাদের সম্পর্ক তালাক পর্যন্ত গড়াবে না।

আর ইদ্দতের সময়কাল, — চাই তা মাসিক জনিত ইদ্দত হউক, অথবা নির্দিষ্ট মাসসমূহের ইদ্দত হউক, অথবা গর্ভস্থ সন্তানের প্রসব সংশ্লিষ্ট ইদ্দত হউক— এ সময়ের মধ্যে স্ত্রীকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা ও আত্মপর্যালোচনার যথেষ্ট সুযোগ থাকে; যা কখনও কখনও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ভালবাসার বন্ধন ও দাম্পত্য সম্পর্ককে মিলিয়ে দিতে পারে।

আর মুসলিমগণ যা জানে না তন্মধ্যে অন্যতম হল: স্ত্রীকে যখন রেজ‘য়ী (প্রত্যাবর্তনযোগ্য) তালাক দেওয়া হবে, তখন তার উপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হল স্বামীর ঘরে অবস্থান করা; সে বের হবে না এবং তাকে বের করে দেওয়া হবে না।

বরং আল্লাহ তা‘আলা তাকে (স্বামীর ঘরকে) তার (স্ত্রীর) জন্য ঘর হিসেবে বরাদ্দ দিয়ে দিলেন; আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ لَا تُخۡرِجُوهُنَّ مِنۢ بُيُوتِهِنَّ ﴾ [الطلاق: ١]

“তোমরা তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বহিষ্কার করো না” – (সূরা আত-তালাক, আয়াত:১);

এই আয়াতটি (ঘরে) অবস্থান করার বিষয়টিকে দৃঢ়তার সাথে তাদের অধিকার বলে ঘোষণা করেছে। সুতরাং তার স্বামীর ঘরে তার অবস্থান করার মানে তার পুনরায় প্রত্যাবর্তনের একটা পথ, ভালবাসার সহনুভূতি উত্থাপন করার ক্ষেত্রে আশার সূচনা এবং সম্মিলিত জীবনযাপনের বিষয়টি স্মরণ করানো। ফলে এই অবস্থায় তালাকের হুকুমের ক্ষেত্রে স্ত্রীর অবস্থান দূরে প্রতীয়মান হলেও চোখের দৃশ্যপট থেকে তার অবস্থান স্বামীর নিকটে।

আর এর দ্বারা মূলত উদ্দেশ্য হল তাদের মধ্যে ঘটে যাওয়া অশান্ত ঝড়কে শান্ত করা, হৃদয়ে নাড়া দেওয়া, অবস্থানসমূহ পুণ পর্যালোচনা এবং ধীরে-সুস্থে নিজ সংসার, শিশু ও পরিবারের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ লাভ। আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ … لَا تَدۡرِي لَعَلَّ ٱللَّهَ يُحۡدِثُ بَعۡدَ ذَٰلِكَ أَمۡرٗا ١ ﴾ [الطلاق: ١ ]

“ … আপনি জানেন না, হয়ত আল্লাহ এর পর কোনো উপায় করে দেবেন।” – ( সূরা আত-তালাক, আয়াত: ১ )।

সুতরাং হে মুসলিমগণ! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর … এবং তোমাদের ঘর-সংসারসমূহকে হেফাযত কর; আর তোমাদের দীনের বিধানসমূহ জানতে ও বুঝতে শিখ … আর আল্লাহর সীমারেখা যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখ এবং তা লঙ্ঘন করো না; আর তোমারা তোমাদের নিজেদের মাঝে (সম্পর্কের) সংশোধন ও সংস্কার করে নাও।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে দীনের ব্যাপারে সঠিক বুঝ এবং শরী‘য়তের ব্যাপারে দূরদর্শিতা দান করুন; হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার কিতাবের হিদায়াতের মাধ্যমে উপকৃত করুন; আর আপনার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা আচার-আচরণ আমাদেরকে দান করুন।


[1] সুনানু ইবনে মাজাহ: ২০১৮; সহীহু ইবনে হিব্বান: ৪২৬৫
লেখকঃ ড. সালেহ ইবন আবদিল্লাহ ইবন হুমাইদ | অনুবাদ : মোঃ আমিনুল ইসলাম |  সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

 

আমি কি সঠিক মানুষটিকে বিয়ে করছি?

কাউকে বিয়ে করার আগে অবশ্যই নিজেকে এ প্রশ্নটি করবেন। জেনে বিস্মিত হবেন যে, উপযুক্ত মানুষটি বেঁচে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় কাজ করলেও, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই প্রশ্নটির উত্তর হয়ে থাকে আবেগ এবং অনুভূতি নির্ভর। হরেক রকম মানুষ সম্পর্কে জানার মধ্য দিয়ে আপনি বিচিত্র ধরনের ব্যক্তিত্বের সন্ধান পাবেন। মানুষ সম্পর্কে জানার গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনি যে ধরণের মানুষের সান্নিধ্যে সবচেয়ে বেশি স্বস্তি এবং আরামবোধ করেন, সেইসব মানুষদের খুঁজে পাবেন। আর বয়স এবং মানসিক পরিপক্কতা বাড়ার সাথে সাথে নিজের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কেও আপনার ভেতর গভীরতর উপলব্ধির বিকাশ ঘটবে।

এক পর্যায়ে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এমন একজনের দেখা পেয়ে যাবেন এবং তাকে বিয়ে করার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারবেন। অনিবার্যভাবেই আপনার মনে প্রশ্ন আসবে, “তিনি কি আমার জন্য সঠিক মানুষটি?” সূরা আন-নূরে আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেছেন, “সুচরিত্রা নারী সুচরিত্র পুরুষের জন্য এবং সুচরিত্র পুরুষ সুচরিত্রা নারীর জন্য। লোকে যা বলে এরা তা থেকে পবিত্র; এদের জন্য আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।” (কুর’আন; ২৪ : ২৬) এই আয়াত আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় কে, কোন ধরণের মানুষের জন্য, তা আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নীচে কিছু অনুভূতির বর্ণনা দেওয়া হলো যেগুলো আপনি সঠিক মানুষটিকে বেছে নিয়েছেন কিনা তা জানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সঠিক মানুষ হবেন এমন কেউ আপনি যার সান্নিধ্যে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন — এমন কেউ যার হতে নিজেকে নিশ্চিন্তে তুলে দেওয়া যায়। সঠিক মানুষটি আপনাকে আপনার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রাণিত করবেন। এটা হতে পারে আপনার সুষ্ঠু জীবনযাত্রার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে, হতে পারে পরিবার ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় আপনার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উদ্যমী হতে আপনি অনুপ্রাণিত বোধ করবেন এবং মানসিক অবলম্বন খুঁজে পাবেন যখন জানবেন যে, আপনি যে মানুষটিকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন সে নেতিবাচক, স্বার্থপর বা খুঁতখুঁতে মানসিকতার নয়। আপনি যখন সেই মানুষটির সাথে থাকবেন তখন নিজের ভাবনা এবং অনুভুতিগুলো তার সাথে ভাগাভাগি করতে নিরাপদ বোধ করবেন। আপনি তার সহযোগিতায় নিজের সম্পর্কে সমুন্নত ধারণা পোষণ করতে পারবেন। সঠিক মানুষটি হবেন এমন যার সাথে আপনার নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে উঠবে এবং আপনারা উভয়েই উভয়ের সঙ্গ উপভোগ করবেন। বন্ধুত্বের উপর দাম্পত্য সম্পর্ক গড়ে ওঠা জরুরি কারণ বন্ধুত্বের উপর ভিত্তি করেই ভালোবাসার বিকাশ ঘটে।

আপনি এবং আপনার জন্য উপযুক্ত মানুষটির জীবনের লক্ষ্য ও মূল্যবোধগুলো হবে একই ধরণের। এর অর্থ এই নয় যে, উভয়ের জীবনের লক্ষ্য ও মূল্যবোধগুলো হুবহু এক হতে হবে। এর অর্থ হলো, দু’জনের জীবনযাত্রায় সাংঘর্ষিক কোনোকিছু থাকবে না। ফলে আপনারা দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে সম্মত হতে পারবেন এবং একসাথে অর্জনও করতে পারবেন। সঠিক মানুষটির কাছে আপনি অনুভূতি ও উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারবেন। ফলে নিজের আবেগ অনুভূতিগুলোকে মনের মধ্যে চেপে রাখার কোনো প্রয়োজন বোধ হবে না। কোনো বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দিলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে পারবেন। একে অপরের মতামত শুনবেন এবং একটা সমঝোতায় পোঁছতে পারবেন। সেই মানুষটির সাথে আলোচনা হবে উপভোগ্য যা বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য সহায়ক। স্বাভাবিকভাবেই দম্পতিদের বিবাহিত জীবনে বিভিন্ন পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন ঘটে থাকে। এসব পরিবর্তনের সাথে সুষ্ঠুভাবে খাপ খাওয়ানোর জন্য দরকার নিজেদের ভেতর কার্যকর এবং সফল বোঝাপড়া।

সঠিক মানুষটি হবেন আপনার ও আপনার চারপাশের মানুষের প্রতি সদয়, সুবিবেচক এবং বিনয়ী। তার এই বৈশিষ্ট্যগুলো আপনাকে শুধু মুগ্ধ করার জন্যই নয়। এই মানুষটি আপনাকে আপনার পরিবার পরিজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে উৎসাহিত করেন। আপনারা দু’জনই বুঝতে পারবেন যে, বিয়ে হলো দুটি পরিবার মাঝে সম্পর্কের একটি সেতুবন্ধন এবং কখনোই তা বিচ্ছিন্ন দাম্পত্য জীবনের কারণ নয়। আপনার পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি এমন আচরণ একজন মানুষের আসল চরিত্রেরই স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ। শুধু আপনাকে সহৃদয়তায় সিক্ত করে রাখল কিন্তু আপনার পরিবার ও স্বজনদের গুরুত্ব দিলো না — এটা অসামঞ্জস্য চরিত্রের লক্ষণ। চরিত্র হলো তা-ই যা স্থান, কাল এবং পাত্র নির্বিশেষে ব্যক্তির স্বতঃস্ফূর্ত কর্ম এবং আচরণের মধ্য দিয়ে আমাদের সামনে ধরা দেয়।

আপনারা উভয়েই মুখে যা-ই বলুন না কেন, কর্মের মাধ্যমেই আপনাদের চরিত্র প্রকাশিত হবে। আপনার জন্য উপযুক্ত মানুষটি কখনো অমার্জিত, অপরিপক্ক মানসিকতার, উদ্ধত অথবা স্বার্থপর হবেন না; বরং তিনি হবেন বিবেকবান এবং তার আশেপাশের প্রত্যেকের প্রতি যত্নশীল। যেমন : শুধু বাবা-মা, এবং অফিসের বসের প্রতিই নয়, এমনকি হোটেলের ওয়েটার এবং অফিসের পিওন বা কেরানীর প্রতিও তিনি বিনয়ী হবেন। বিয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতার উপর প্রতিষ্ঠিত। এসব যদি ভেতর থেকে স্বাভাবিকভাবে না আসে, তবে বিয়ের আগে আপনাকে মুগ্ধ করার জন্য যে যত সুন্দর ব্যবহারই করুক না কেন, প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডে তার আসল রূপটা বের হয়ে পড়বে।

পরিশেষে, উপযুক্ত মানুষটি হবেন সৎ — এমন একজন কাজে বিশ্বাস করা যায় এবং যার উপর আস্থা রাখা যায়। জীবনের বিভিন্ন উদ্বেগ এবং সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তিনি আপনার সাথে সত্যবাদী থাকবেন। তাকে বিয়ে করলে তিনি আপনার জীবনের উপর খবরদারি করবেন না; বরং নিজের জীবনকে আপনার সাথে ভাগাভাগি করে নেবেন। তিনি আপনাকে বিশ্বাস করবেন এবং আপনার সবকিছুকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবেন না অথবা আপনি আপনার প্রতিটি কাজকে তার কাছে গ্রহণযোগ্য করবেন এমন প্রত্যাশাও তিনি করবেন না। তার সাথে থাকলে নিজেকে নিরপদ মনে হবে এবং আপনার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যেগুলো নিয়েই তিনি আপনাকে গ্রহণ করে নেবেন। মনে হবে আপনি আপনার ভুলগুলো নিয়ে তার সাথে আলোচনা করতে পারেন এবং যৌথ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে নিজের দুর্বলতাগুলো শুধরে নিতে চেষ্টা করতে পারেন।

এখানে অনিবার্যভাবেই বলা দরকার যে, অসৎ অথবা আপনার নীতি ও মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত কোনো ব্যক্তিকে আপনার কখনোই বিয়ে করা উচিত নয়। দু’জন মানুষের সততা এবং পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার উপর ভিত্তি করে একটি সুষ্ঠু দাম্পত্য জীবন বিকাশ লাভ করে।

অনেকগুলো বিষয় বিয়ের উপযুক্ততা নির্ধারনে কাজ করে। তবে সবচেয়ে অস্পষ্ট অথচ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো সেই মানুষটির প্রতি আপনার ভালো লাগার অনুভূতি। কিছু মানুষ আছে যাদেরকে আমরা  তাৎক্ষনিকভাবে পছন্দ করে বসি; আবার কাউকে আমাদের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয় এবং তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে শুরু করি। এগুলো হচ্ছে প্রাথমিক আবেগ অনুভূতি। কিন্তু যখনই আমরা কারও সম্পর্কে জানতে চাইব এবং উপযুক্ততা যাচাই করব, আমাদেরকে মূল্যবোধ ও লক্ষ্যের উপর জোর দিতে হবে। তাদের অনুভূতির গভীরতাকে সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

সঠিক মানুষটির সাথে থাকার আরেকটি অর্থ হলো নিজের নৈতিক বা মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো। সুসম্পর্ক শান্তি বয়ে আনে, কুর’আনে বলা হয়েছে :

“এবং তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্যে হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে যাতে তোমরা তাদের নিকট প্রশান্তি পাও। এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক দয়া ও ভালোবাসার সঞ্চার করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।” (সূরা রুম : ২১)

যেহেতু কোন মানুষই নিখুঁত বা ত্রুটিমুক্ত নয়, তাই অবাস্তব গুণসম্পন্ন মানুষ খোঁজা আমাদের উচিত হবে না। আপনার উচিত আপনার মতো একজন মানুষকে খুঁজে বের করা। মনে রাখবেন, সঠিক মানুষটি খুঁজে পাওয়া চ্যালেঞ্জের অর্ধেক মাত্র। বাকি অর্ধেক হলো নিজেকে সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যাতে অন্য কেউ আপনাকে সঠিক মানুষ হিসেবে বিয়ে করতে চায়।

লিখেছেন : মুনিরা লেকোভিচ এযেলডিন | ভাষান্তর : জহিরুল কাইয়ূম | সম্পাদনা : আব্‌দ আল-আহাদ

 

ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ

ভূমিকা

নববর্ষ বা New Year’s day – এই শব্দগুলো নতুন বছরের আগমন এবং এ উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব-অনুষ্ঠানাদিকে ইঙ্গিত করে। এতদুপলক্ষে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, হাসিঠাট্টা ও আনন্দ উপভোগ, সাজগোজ করে নারীদের অবাধ বিচরণ ও সৌন্দর্যের প্রদর্শনী, রাতে অভিজাত এলাকার ক্লাব ইত্যাদিতে মদ্যপান তথা নাচানাচি, পটকা ফুটানো – এই সবকিছু কতটা ইসলাম সম্মত? ৮৭ ভাগ মুসলিম যে আল্লাহতে বিশ্বাসী, সেই আল্লাহ কি মুসলিমদের এইসকল আচরণে আনন্দ-আপ্লুত হন, না ক্রোধান্বিত হন ? নববর্ষকে সামনে রেখে এই নিবন্ধে এই বিষয়টি আলোচিত হয়েছে ।

 ইসলাম ধর্মে উৎসবের রূপরেখা

অনেকে উপলব্ধি না করলেও, উৎসব সাধারণত একটি জাতির ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে সম্পৃক্ত হয়। উৎসবের উপলক্ষগুলো খোঁজ করলে পাওয়া যাবে উৎসব পালনকারী জাতির ধমনীতে প্রবাহিত ধর্মীয় অনুভূতি, সংস্কার ও ধ্যান-ধারণার ছোঁয়া। উদাহরণস্বরূপ, খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন তাদের বিশ্বাসমতে স্রষ্টার পুত্রের জন্মদিন।

মধ্যযুগে ইউরোপীয় দেশগুলোতে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালিত হত ২৫শে মার্চ, এবং তা পালনের উপলক্ষ ছিল এই যে, ঐ দিন খ্রীস্টীয় মতবাদ অনুযায়ী মাতা মেরীর নিকট ঐশী বাণী প্রেরিত হয় এই মর্মে যে, মেরী ঈশ্বরের পুত্রের জন্ম দিতে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে ১৫৮২ সালে গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডারের সূচনার পর রোমক ক্যাথলিক দেশগুলো পয়লা জানুয়ারী নববর্ষ উদযাপন করা আরম্ভ করে। ঐতিহ্যগতভাবে এই দিনটি একটি ধর্মীয় উৎসব হিসেবেই পালিত হত। ইহুদীদের নববর্ষ ‘রোশ হাশানাহ’ ওল্ড টেস্টামেন্টে বর্ণিত ইহুদীদের ধর্মীয় পবিত্র দিন সাবাত হিসেবে পালিত হয়। এমনিভাবে প্রায় সকল জাতির উৎসব-উপলক্ষের মাঝেই ধর্মীয় চিন্তা-ধারা খুঁজে পাওয়া যাবে। আর এজন্যই ইসলাম ধর্মে নবী মুহাম্মাদ (সা.) পরিষ্কারভাবে মুসলিমদের উৎসবকে নির্ধারণ করেছেন, ফলে অন্যদের উৎসব মুসলিমদের সংস্কৃতিতে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:

প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ রয়েছে, আর এটা আমাদের ঈদ।” [বুখারী, মুসলিম]

বিখ্যাত মুসলিম পণ্ডিত ইমাম ইবনে তাইমিয়া এ সম্পর্কে বলেন:

“উৎসব-অনুষ্ঠান ধর্মীয় বিধান, সুস্পষ্ট পথনির্দেশ এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেরই একটি অংশ, যা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:

তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান এবং সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি।’ [আলমায়িদাহ :৪৮]

প্রতিটি জাতির জন্য আমি ধর্মীয় উপলক্ষ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি যা তাদেরকে পালন করতে হয়।’ [আলহাজ্জ্ব :৬৭]

যেমনটি কিবলাহ, সালাত এবং সাওম ইত্যাদি। সেজন্য তাদের [অমুসলিমদের] উৎসব-অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া আর তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এই উৎসব-অনুষ্ঠানের সাথে একমত পোষণ করা অর্থ কুফরের সাথে একমত পোষণ করা। আর এসবের একাংশের সাথে একমত পোষণ করা অর্থ কুফরের শাখাবিশেষের সাথে একমত হওয়া। উৎসব-অনুষ্ঠানাদি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যার দ্বারা ধর্মগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়।…নিঃসন্দেহে তাদের সাথে এসব অনুষ্ঠান পালনে যোগ দেয়া একজনকে কুফরের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আর বাহ্যিকভাবে এগুলোতে অংশ নেয়া নিঃসন্দেহে পাপ। উৎসব অনুষ্ঠান যে প্রতিটি জাতির স্বকীয় বৈশিষ্ট্য, এর প্রতি রাসূলুল্লাহ(সা.) ইঙ্গিত করেছেন, যখন তিনি বলেন:

প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ রয়েছে, আর এটা আমাদের ঈদ।’ [বুখারী, মুসলিম]

এছাড়া আনাস ইবনে মালিক(রা.) বর্ণিত:

 

রাসূলুল্লাহ(সা.) যখন [মদীনায়] আসলেন, তখন তাদের দুটো উৎসবের দিন ছিল। তিনি(সা.) বললেন, ‘ দুটো দিনের তাৎপর্য কি?’ তারা বলল, ‘জাহিলিয়াতের যুগে আমরা দুটো দিনে উৎসব করতাম।রাসূলুল্লাহ(সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে এদের পরিবর্তে উত্তম কিছু দিয়েছেন: ইয়াওমুদ্দুহা ইয়াওমুল ফিতর ’ ” [সূনান আবু দাউদ]

হাদীস থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ইসলাম আগমনের পর ইসলাম বহির্ভূত সকল উৎসবকে বাতিল করে দেয়া হয়েছে এবং নতুনভাবে উৎসবের জন্য দুটো দিনকে নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সাথে অমুসলিমদের অনুসরণে যাবতীয় উৎসব পালনের পথকে বন্ধ করা হয়েছে।

ইসলামের এই যে উৎসব – ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা – এগুলো থেকে মুসলিম ও অমুসলিমদের উৎসবের মূলনীতিগত একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য স্পষ্ট হয়, এবং এই বিষয়টি আমাদের খুব গুরুত্বসহকারে লক্ষ্য করা উচিৎ, যা হচ্ছে:

অমুসলিম, কাফির কিংবা মুশরিকদের উৎসবের দিনগুলো হচ্ছে তাদের জন্য উচ্ছৃঙ্খল আচরণের দিন, এদিনে তারা নৈতিকতার সকল বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, আর এই কর্মকান্ডের অবধারিত রূপ হচ্ছে মদ্যপান ও ব্যভিচার। এমনকি খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বহুলোক তাদের পবিত্র বড়দিনেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে মদ্যপ হয়ে ওঠে, এবং পশ্চিমা বিশ্বে এই রাত্রিতে কিছু লোক নিহত হয় মদ্যপ অবস্থায় গাড়ী চালানোর কারণে।

অপরদিকে মুসলিমদের উৎসব হচ্ছে ইবাদতের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। এই বিষয়টি বুঝতে হলে ইসলামের সার্বিকতাকে বুঝতে হবে। ইসলাম কেবল কিছু আচার-অনুষ্ঠানের সমষ্টি নয়, বরং তা মানুষের গোটা জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী বিন্যস্ত ও সজ্জিত করতে উদ্যোগী হয়। তাই একজন মুসলিমের জন্য জীবনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইবাদত, যেমনটি কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা দিচ্ছেন:

 

আমি জ্বিন মানুষকে আমার ইবাদত করা ছাড়া অন্য কোন কারণে সৃষ্টি করিনি।” [সূরা যারিয়াত:৫৬]

 

সেজন্য মুসলিম জীবনের আনন্দ-উৎসব আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ ও অশ্লীলতায় নিহিত নয়, বরং তা নিহিত হচ্ছে আল্লাহর দেয়া আদেশ পালন করতে পারার মাঝে, কেননা মুসলিমের ভোগবিলাসের স্থান ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী নয়, বরং চিরস্থায়ী জান্নাত। তাই মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে থাকবে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাদের ঈমান, আখিরাতের প্রতি তাদের অবিচল বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালবাসা ।

তাইতো দেখা যায় যে, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা – এ দুটো উৎসবই নির্ধারণ করা হয়েছে ইসলামের দুটি স্তম্ভ পালন সম্পন্ন করার প্রাক্কালে। ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ সাওম পালনের পর পরই মুসলিমরা পালন করে ঈদুল ফিতর, কেননা এই দিনটি আল্লাহর আদেশ পালনের পর আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার ও ক্ষমার ঘোষণা পাওয়ার দিন বিধায় এটি সাওম পালনকারীর জন্য বাস্তবিকই উৎসবের দিন – এদিন এজন্য উৎসবের নয় যে এদিনে আল্লাহর দেয়া আদেশ নিষেধ কিছুটা শিথিল হতে পারে, যেমনটি বহু মুসলিমদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তারা এই দিনে আল্লাহর আদেশ নিষেধ ভুলে গিয়ে অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, বরং মুসলিমের জীবনে এমন একটি মুহূর্তও নেই, যে মুহূর্তে তার ওপর আল্লাহর আদেশ নিষেধ শিথিলযোগ্য। তেমনিভাবে ঈদুল আযহা পালিত হয় ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হাজ্জ পালনের প্রাক্কালে। কেননা ৯ই জিলহজ্জ হচ্ছে ইয়াওমুল আরাফা, এদিনটি আরাফাতের ময়দানে হাজীদের ক্ষমা লাভের দিন, আর তাই ১০ই জিলহজ্জ হচ্ছে আনন্দের দিন – ঈদুল আযহা। এমনিভাবে মুসলিমদের উৎসবের এ দুটো দিন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করার দিন, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন এবং শরীয়তসম্মত বৈধ আনন্দ উপভোগের দিন – এই উৎসব মুসলিমদের ঈমানের চেতনার সাথে একই সূত্রে গাঁথা।

 নতুন বছরের সাথে মানুষের কল্যাণের সম্পর্ক

নতুন বছর নতুন কল্যাণ বয়ে আনে, দূরীভূত হয় পুরোনো কষ্ট ও ব্যর্থতার গ্লানি – এধরনের কোন তত্ত্ব ইসলামে আদৌ সমর্থিত নয়, বরং নতুন বছরের সাথে কল্যাণের শুভাগমনের ধারণা আদিযুগের প্রকৃতি-পুজারী মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণার অবশিষ্টাংশ। ইসলামে এ ধরনের কুসংস্কারের কোন স্থান নেই। বরং মুসলিমের জীবনে প্রতিটি মুহূর্তই পরম মূল্যবান হীরকখন্ড, হয় সে এই মুহূর্তকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করে আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয় করবে, নতুবা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে শাস্তির যোগ্য হয়ে উঠবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বছরের প্রথম দিনের কোন বিশেষ তাৎপর্য নেই। আর তাই তো ইসলামে হিজরী নববর্ষ পালনের কোন প্রকার নির্দেশ দেয়া হয়নি। না কুরআনে এর কোন নির্দেশ এসেছে, না হাদীসে এর প্রতি কোন উৎসাহ দেয়া হয়েছে, না সাহাবীগণ এরূপ কোন উপলক্ষ পালন করেছেন। এমনকি পয়লা মু্হাররামকে নববর্ষের সূচনা হিসেবে গণনা করা শুরুই হয় নবীজীর(সা.) মৃত্যুর বহু পরে, উমার ইবনুল খাত্তাবের (রা.) আমলে। এ থেকে বোঝা যায় যে, নববর্ষ ইসলামের দৃষ্টিতে কতটা তাৎপর্যহীন, এর সাথে জীবনে কল্যাণ-অকল্যাণের গতিপ্রবাহের কোন দূরতম সম্পর্কও নেই, আর সেক্ষেত্রে ইংরেজি বা অন্য কোন নববর্ষের কিই বা তাৎপর্য থাকতে পারে ইসলামে?

কেউ যদি এই ধারণা পোষণ করে যে, নববর্ষের প্রারম্ভের সাথে কল্যাণের কোন সম্পর্ক রয়েছে, তবে সে শিরকে লিপ্ত হল, অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করল। যদি সে মনে করে যে আল্লাহ এই উপলক্ষের দ্বারা মানবজীবনে কল্যাণ বর্ষণ করেন, তবে সে ছোট শিরকে লিপ্ত হল। আর কেউ যদি মনে করে যে নববর্ষের আগমনের এই ক্ষণটি নিজে থেকেই কোন কল্যাণের অধিকারী, তবে সে বড় শিরকে লিপ্ত হল, যা তাকে ইসলামের গন্ডীর বাইরে নিয়ে গেল। আর এই শিরক এমন অপরাধ যে, শিরকের ওপর কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে চিরতরে হারাম করে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন:

নিশ্চয়ই যে কেউই আল্লাহর অংশীদার স্থির করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন, আর তার বাসস্থান হবে অগ্নি। এবং যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।” [সূরা মায়িদাহ :৭২]

নববর্ষ উদযাপনের সাথে মঙ্গলময়তার এই ধারণার সম্পর্ক রয়েছে বলে কোন কোন সূত্রে দাবী করা হয় , যা কিনা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। মুসলিমদেরকে এ ধরনের কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলে ইসলামের যে মূলতত্ত্ব: সেই তাওহীদ বা একত্ববাদের ওপর পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।

নববর্ষের অনুষ্ঠানাদি: শয়তানের পুরোনো কূটচালের নবায়ন

আমাদের সমাজে নববর্ষ যারা পালন করে, তারা কি ধরনের অনুষ্ঠান সেখানে পালন করে, আর সেগুলো সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য কি? নববর্ষের অনুষ্ঠানাদির মধ্যে রয়েছে: পটকা ফুটিয়ে বা আতশবাজি পুড়িয়ে রাত ১২টায় হৈ হুল্লোড় করে পরিবেশ ও প্রতিবেশের শান্তি বিনষ্ট করে নববর্ষকে স্বাগত জানানো, ব্যান্ড সঙ্গীত বা অন্যান্য গান-বাজনার ব্যবস্থা, সম্ভ্রান্ত পল্লীর বাড়ীতে বা ক্লাবে গান-বাজনা, মদ্যপান ও পান শেষে ব্যভিচারের আয়োজন ইত্যাদি – এছাড়া রেডিও টিভিতে বিশেষ অনুষ্ঠান ও পত্রপত্রিকার বিশেষ ক্রোড়পত্র ও “রাশিফল” প্রকাশ।

এবারে এ সকল অনুষ্ঠানাদিতে অনুষ্ঠিত মূল কর্মকান্ড এবং ইসলামে এগুলোর অবস্থান সম্পর্কে পর্যালোচনা করা যাক:

নতুন দিন তথা সূর্যকে স্বাগত জানানো:

এ ধরনের কর্মকান্ড মূলত সূর্য-পূজারী ও প্রকৃতি-পূজারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অনুকরণ মাত্র, যা আধুনিক মানুষের দৃষ্টিতে পুনরায় শোভনীয় হয়ে উঠেছে। তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সমাজের অনেকেরই ধর্মের নাম শোনামাত্র গাত্রদাহ সৃষ্টি হলেও প্রকৃতি-পূজারী আদিম ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নকল করতে তাদের অন্তরে অসাধারণ পুলক অনুভূত হয়। সূর্য ও প্রকৃতির পূজা বহু প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন জাতির লোকেরা করে এসেছে। যেমন খ্রীস্টপূর্ব ১৪ শতকে মিশরীয় “অ্যাটোনিসম” মতবাদে সূর্যের উপাসনা চলত। এমনি ভাবে ইন্দো-ইউরোপীয় এবং মেসো-আমেরিকান সংস্কৃতিতে সূর্য পূজারীদেরকে পাওয়া যাবে। খ্রীস্টান সম্প্রদায় কর্তৃক পালিত যীশু খ্রীস্টের তথাকথিত জন্মদিন ২৫শে ডিসেম্বরও মূলত এসেছে রোমক সৌর-পূজারীদের পৌত্তলিক ধর্ম থেকে, যীশু খ্রীস্টের প্রকৃত জন্মতারিখ থেকে নয়। ১৯ শতাব্দীর উত্তর-আমেরিকায় কিছু সম্প্রদায় গ্রীষ্মের প্রাক্কালে পালন করত সৌর-নৃত্য এবং এই উৎসব উপলে পৌত্তলিক প্রকৃতি পূজারীরা তাদের ধর্মীয়-বিশ্বাসের পুনর্ঘোষণা দিত। মানুষের ভক্তি ও ভালবাসাকে প্রকৃতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টির সাথে আবদ্ধ করে তাদেরকে শিরক বা অংশীদারিত্বে লিপ্ত করানো শয়তানের সুপ্রাচীনক্লাসিকাল ট্রিক বলা চলে। শয়তানের এই কূটচালের বর্ণনা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে তুলে ধরেছেন:

আমি তাকে তার জাতিকে দেখেছি, তারা আল্লাহকে ছেড়ে সূর্যকে সিজদা করছে এবং শয়তান তাদের কার্যাবলীকে তাদের জন্য শোভনীয় করেছে…”[সূরা আন নামল :২৪]

 

নারীকে জড়িয়ে বিভিন্ন অশ্লীলতা:

নববর্ষের পার্টি বা “উদযাপন আয়োজনের” অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে নারীর সহজ-লভ্যতা – নিউ-ইয়র্কের টাইম স্কোয়ারে অথবা ঢাকার গুলশান ক্লাবে – পশ্চিমেও এবং তাদের অনুকরণে এখানেও ব্যাপারটা একটা অলিখিত প্রলোভন। নববর্ষের অনুষ্ঠানাদির মধ্যে সমাজ-বিধ্বংসী যে বিষয়গুলো পাওয়া যাবে, তার মাঝে অন্যতম হচ্ছে নারীকে জড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীলতা। নববর্ষের পার্টি বা উদযাপন আয়োজনের সবর্ত্রই সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী নারীকে পুরুষের সাথে অবাধ মেলামেশায় লিপ্ত দেখা যাবে। পৃথিবীতে আল্লাহ মানুষকে যে সকল আকষর্ণীয় বস্তু দ্বারা পরীক্ষা করে থাকেন, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নারী। রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেন:

আমি পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বড় কোন ফিতনা রেখে যাচ্ছি না।” [বুখারী মুসলিম]

সমাজ নারীকে কোন অবস্থায়, কি ভূমিকায়, কি ধরনের পোশাকে দেখতে চায় – এ বিষয়টি সেই সমাজের ধ্বংস কিংবা উন্নতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। নারীর বিচরণক্ষেত্র, ভূমিকা এবং পোশাক এবং পুরুষের সাপেক্ষে তার অবস্থান – এ সবকিছুই ইসলামে সরাসরি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ দ্বারা নির্ধারিত, এখানে ব্যক্তিগত বা সামাজিক প্রথা, হালের ফ্যাশন কিংবা ব্যক্তিগত শালীনতাবোধের কোন গুরুত্বই নেই। যেমন ইসলামে নারীদের পোশাকের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দেয়া আছে, আর তা হচ্ছে এই যে একজন নারীর চেহারা ও হস্তদ্বয় ছাড়া দেহের অন্য কোন অঙ্গই বহিরাগত পুরুষেরা দেখতে পারবে না।

বহিরাগত পুরুষ কারা? স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীদের পুত্র, ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নীপুত্র, মুসলিম নারী, নিজেদের মালিকানাধীন দাসী, যৌনকামনাহীন কোন পুরুষ এবং এমন শিশু যাদের লজ্জাস্থান সম্পর্কে সংবেদনশীলতা তৈরী হয়নি, তারা বাদে সবাই একজন নারীর জন্য বহিরাগত। এখানে ব্যক্তিগত শালীনতাবোধের প্রশ্ন নেই। যেমন কোন নারী যদি বহিরাগত পুরুষের সামনে চুল উন্মুক্ত রেখে দাবী করে যে তার এই বেশ যথেষ্ট শালীন, তবে তা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হলেও ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা শালীনতা-অশালীনতার সামাজিক মাপকাঠি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়, আর তাই সমাজ ধীরে ধীরে নারীর বিভিন্ন অঙ্গ উন্মুক্তকরণকে অনুমোদন দিয়ে ক্রমান্বয়ে এমন পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারে যে, যেখানে বস্তুত দেহের প্রতিটি অঙ্গ নগ্ন থাকলেও সমাজে সেটা গ্রহণযোগ্য হয় – যেমনটা পশ্চিমা বিশ্বের ফ্যাশন শিল্পে দেখা যায়। মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা ভারতবর্ষে যা শালীন, বাংলাদেশে হয়ত এখনও সেটা অশালীন – তাহলে শালীনতার মাপকাঠি কি? সেজন্য ইসলামে এধরনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে মানুষের কামনা-বাসনার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়নি, বরং তা কুরআন ও হাদীসের বিধান দ্বারা নির্ধারণ করা হয়েছে। তেমনি নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও অবাধ কথাবার্তা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেননা এই অবাধ মেলামেশা ও অবাধ কথাবার্তাই ব্যভিচারের প্রথম ধাপ। যিনাব্যভিচার ইসলামী শরীয়াতের আলোকে কবীরাহ গুনাহ, এর পরিণতিতে হাদীসে আখিরাতের কঠিন শাস্তির বর্ণনা এসেছে। এর প্রসারে সমাজ জীবনের কাঠামো ভেঙ্গে পড়ে, ছড়িয়ে পড়ে অশান্তি ও সন্ত্রাস এবং কঠিন রোগব্যাধি। আল্লাহর রাসূলের হাদীস অনুযায়ী কোন সমাজে যখন ব্যভিচার প্রসার লাভ করে তখন সে সমাজ আল্লাহর শাস্তির যোগ্য হয়ে ওঠে। আর নারী ও পুরুষের মাঝে ভালবাসা উদ্রেককারী অপরাপর যেসকল মাধ্যম, তা যিনা-ব্যভিচারের রাস্তাকেই প্রশস্ত করে।

এ সকল কিছু রোধ করার জন্য ইসলামে নারীদেরকে পর্দা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, নারী ও পুরুষের বিচরণ ক্ষেত্র পৃথক করা এবং দৃষ্টি অবনত রাখার বিধান রাখা হয়েছে। যে সমাজ নারীকে অশালীনতায় নামিয়ে আনে, সেই সমাজ অশান্তি ও সকল পাপকাজের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়, কেননা নারীর প্রতি আকর্ষণ পুরুষের চরিত্রে বিদ্যমান অন্যতম অদম্য এক স্বভাব, যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখাই সামাজিক সমৃদ্ধির মূলতত্ত্ব। আর এজন্যই ইসলামে সুনির্দিষ্ট বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে যে কোন প্রকার সৌন্দর্য বা ভালবাসার প্রদর্শনী ও চর্চা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শনের ফলাফল দেখতে চাইলে পশ্চিমা বিশ্বের দিকে তাকানোই যথেষ্ট, গোটা বিশ্বে শান্তি, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ঝান্ডাবাহী খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ছয় মিনিটে একজন নারী ধর্ষিত হয় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত তথাকথিত সভ্য দেশে মানুষের ভিতরকার এই পশুকে কে বের করে আনল? অত্যন্ত নিম্নবুদ্ধিসম্পন্ন লোকেও সহজেই বুঝতে পারে যে, স্রষ্টার বেঁধে দেয়া শালীনতার সীমা যখনই শিথিল করা শুরু হয়, তখনই মানুষের ভিতরকার পশুটি পরিপুষ্ট হতে শুরু করে। পশ্চিমা বিশ্বের অশালীনতার চিত্রও কিন্তু একদিনে রচিত হয়নি। সেখানকার সমাজে নারীরা একদিনেই নগ্ন হয়ে রাস্তায় নামেনি, বরং ধাপে ধাপে তাদের পোশাকে সংক্ষিপ্ততা ও যৌনতা এসেছে, আজকে যেমনিভাবে দেহের অংশবিশেষ প্রদর্শনকারী ও সাজসজ্জা গ্রহণকারী বাঙালি নারী নিজেকে শালীন বলে দাবী করে, ঠিক একইভাবেই বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে দেহ উন্মুক্তকরণ শুরু হয়েছিল তথাকথিত নির্দোষ পথে।

নারীর পোশাক-পরিচ্ছদ ও চাল-চলন নিয়ে ইসলামের বিধান আলোচনা করা এই নিবন্ধের আওতা বহির্ভূত, তবে এ সম্পর্কে মোটামুটি একটা চিত্র ইতিমধ্যেই তুলে ধরা হয়েছে। এই বিধিনিষেধের আলোকে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, নববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারীর যে অবাধ উপস্থিতি, সৌন্দর্য প্রদর্শন এবং পুরুষের সাথে মেলামেশাতা পরিপূর্ণভাবে ইসলামবিরোধী, তা কতিপয় মানুষের কাছে যতই লোভনীয় বা আকর্ষণীয়ই হোক না কেন। এই অনুষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের ধ্বংসের পূর্বাভাস দিচ্ছে। বছরের বালিকা ধর্ষণ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বিদ্যাপীঠে ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপন, পিতার সম্মুখে কন্যা এবং স্বামীর সম্মুখে স্ত্রীর শ্লীলতাহানি – বাংলাদেশের সমাজে এধরনের বিকৃত ঘটনা সংঘটনের প্রকৃত কারণ ও উৎস কি? প্রকৃতপক্ষে এর জন্য সেইসব মা-বোনেরা দায়ী যারা প্রথমবারের মত নিজেদের অবগুন্ঠনকে উন্মুক্ত করেও নিজেদেরকে শালীন ভাবতে শিখেছে এবং সমাজের সেইসমস্ত লোকেরা দায়ী, যারা একে প্রগতির প্রতীক হিসেবে বাহবা দিয়ে সমর্থন যুগিয়েছে।

ব্যভিচারের প্রতি আহবান জানানো শয়তানের ক্লাসিকাল ট্রিকগুলোর অপর একটি, যেটাকে কুরআনে “ফাহিশাহ” শব্দের আওতায় আলোচনা করা হয়েছে, শয়তানের এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন:

হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল পবিত্র বস্তু আছে তা থেকে তোমরা আহার কর আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু সে তো তোমাদের নির্দেশ দেয় মন্দ অশ্লীল কাজ [ব্যভিচার, মদ্যপান, হত্যা ইত্যাদি] করতে এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন সব বিষয় বলতে যা তোমরা জান না।” [সূরা আল বাকারা :১৬৮১৬৯]

এছাড়া যা কিছুই মানুষকে ব্যভিচারের দিকে প্রলুব্ধ ও উদ্যোগী করতে পারে, তার সবগুলোকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াতের দ্বারা:

তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। অবশ্যই এটা অশ্লীল কাজ নিকৃষ্ট পন্থা।” [সূরা বনী ইসরাঈল: ৩২]

ব্যভিচারকে উৎসাহিত করে এমন বিষয়, পরিবেশ, কথা ও কাজ এই আয়াত দ্বারা নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে।

বিভিন্ন সাজে সজ্জিত পর্দাবিহীন নারীকে আকর্ষণীয়, প্রগতিশীল, আধুনিক ও অভিজাত বলে মনে হতে পারে, কেননা, শয়তান পাপকাজকে মানুষের দৃষ্টিতে শোভনীয় করে তোলে। যেসব মুসলিম ব্যক্তির কাছে নারীর এই অবাধ সৌন্দর্য প্রদর্শনকে সুখকর বলে মনে হয়, তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের বক্তব্য:

. ছোট শিশুরা অনেক সময় আগুন স্পর্শ করতে চায়, কারণ আগুনের রং তাদের কাছে আকর্ষণীয়। কিন্তু আগুনের মূল প্রকৃতি জানার পর কেউই আগুন ধরতে চাইবে না। তেমনি ব্যভিচারকে আকর্ষণীয় মনে হলেও পৃথিবীতে এর ধ্বংসাত্মক পরিণতি এবং আখিরাতে এর জন্য যে কঠিন শাস্তি পেতে হবে, সেটা স্মরণ করলে বিষয়টিকে আকর্ষণীয় মনে হবে না।

. প্রত্যেকে নিজেকে প্রশ্ন করে দেখি, একজন নারী যখন নিজের দেহকে উন্মুক্ত করে সজ্জিত হয়ে বহু পুরুষের সামনে উপস্থিত হয়ে তাদের মনে যৌন-লালসার উদ্রেক করে, তখন সেই দৃশ্য দেখে এবং সেই নারীকে দেখে বহু-পুরুষের মনে যে কামভাবের উদ্রেক হয়, সেকথা চিন্তা করে এই নারীর বাবার কাছে তার কন্যার নগ্নতার দৃশ্যটি কি খুব উপভোগ্য হবে? এই নারীর সন্তানের কাছে তার মায়ের জনসম্মুখে উন্মুক্ততা কি উপভোগ্য? এই নারীর ভাইয়ের কাছে তার বোনের এই অবস্থা কি আনন্দদায়ক? এই নারীর স্বামীর নিকট তার স্ত্রীর এই অবস্থা কি সুখকর? নিশ্চয়ই নয়। তাহলে কিভাবে একজন ব্যক্তি পরনারীর সৌন্দর্য প্রদর্শনকে পছন্দ করতে পারে? এই পরনারী তো কারও কন্যা কিংবা কারও মা, কিংবা কারও বোন অথবা কারও স্ত্রী? এই লোকগুলোর কি পিতৃসুলভ অনুভূতি নেই, তারা কি সন্তানসুলভ আবেগশূন্য, তাদের বোনের প্রতি ভ্রাতৃসুলভ স্নেহশূন্য কিংবা স্ত্রীর প্রতি স্বামীসুলভ অনুভূতিহীন?

নিশ্চয়ই নয়। বরং আপনি-আমি একজন পিতা, সন্তান, ভাই কিংবা স্বামী হিসেবে যে অনুভূতির অধিকারী, রাস্তার উন্মুক্ত নারীটির পরিবারও সেই একই অনুভূতির অধিকারী। তাহলে আমরা আমাদের কন্যা, মাতা, ভগ্নী কিংবা স্ত্রীদের জন্য যা চাই না, তা কিভাবে অন্যের কন্যা, মাতা, ভগ্নী কিংবা স্ত্রীদের জন্য কামনা করতে পারি? তবে কোন ব্যক্তি যদি দাবী করে যে, সে নিজের কন্যা, মাতা, ভগ্নী বা স্ত্রীকেও পরপুরুষের যথেচ্ছ লালসার বস্তু হতে দেখে বিচলিত হয় না, তবে সে তো পশুতুল্য, নরাধম। বরং অধিকাংশেরই এধরনের সংবেদনশীলতা রয়েছে। তাই আমাদের উচিৎ অন্তর থেকে এই ব্যভিচারের চর্চাকে ঘৃণা করা। এই ব্যভিচার বিভিন্ন অঙ্গের দ্বারা হতে পারে, যেমনটি নবীজী(সা.) বর্ণনা করেছেন:

“…চোখের যিনা হচ্ছে তাকানো, জিহ্বার যিনা হচ্ছে কথা বলা, অন্তর তা কামনা করে এবং পরিশেষে যৌনাঙ্গ একে বাস্তবায়ন করে অথবা প্রত্যাখ্যান করে।” [বুখারী মুসলিম]

দৃষ্টি, স্পর্শ, শোনা ও কথার দ্বারা সংঘটিত যিনাই মূল ব্যভিচার সংঘটিত হওয়াকে বাস্তব রূপ দান করে, তাই জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য সে সকল স্থান থেকে শতহস্ত দূরে থাকা, যে সকল স্থানে দৃষ্টি, স্পর্শ, শোনা ও কথার ব্যভিচারের সুযোগকে উন্মুক্ত করা হয়।

সঙ্গীত বাদ্য:

নববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকে সংগীত ও বাদ্য। ইসলামে নারীকন্ঠে সংগীত নিঃসন্দেহে নিষিদ্ধ – একথা পূর্বের আলোচনা থেকেই স্পষ্ট। সাধারণভাবে যে কোন বাদ্যযন্ত্রকেও ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া, যেমন বিশেষ কিছু উপলক্ষে দফ নামক বাদ্যযন্ত্র বাজানোর অনুমতি হাদীসে এসেছে। তাই যে সকল স্থানে এসব হারাম সংগীত উপস্থাপিত হয়, সে সকল স্থানে যাওয়া, এগুলোতে অংশ নেয়া, এগুলোতে কোন ধরনের সহায়তা করা কিংবা তা দেখা বা শোনা সকল মুসলিমের জন্য হারাম। কিন্তু কোন মুসলিম যদি এতে উপস্থিত থাকার ফলে সেখানে সংঘটিত এইসকল পাপাচারকে বন্ধ করতে সমর্থ হয়, তবে তার জন্য সেটা অনুমোদনযোগ্য। তাছাড়া অনর্থক কথা ও গল্প-কাহিনী যা মানুষকে জীবনের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে, তা নিঃসন্দেহে মুসলিমের জন্য বর্জনীয়। অনর্থক কথা, বানোয়াট গল্প-কাহিনী এবং গান-বাজনা মানুষকে জীবনের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য শয়তানের পুরোনো কূটচালের একটি, আল্লাহ এ কথা কুরআনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন:

এবং তাদের মধ্যে যাদেরকে পার পর্যায়ক্রমে বোকা বানাও তোমার গলার স্বরের সাহায্যে, … ” [সূরা বনী ইসরাঈল :৬৪]

যে কোন আওয়াজ, যা আল্লাহর অবাধ্যতার দিকে আহবান জানায়, তার সবই এই আয়াতে বর্ণিত আওয়াজের অন্তর্ভুক্ত। [তফসীর ইবন কাসীর]

আল্লাহ আরও বলেন:

এবং মানুষের মাঝে এমন কিছু লোক আছে যারা আল্লাহর পথ থেকে [মানুষকে] বিচ্যুত করার জন্য কোন জ্ঞান ছাড়াই অনর্থক কথাকে ক্রয় করে, এবং একে ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে, এদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” [সূরা লোকমান :]

রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেছেন:

আমার উম্মাতের মধ্যে কিছু লোক হবে যারা ব্যভিচার, রেশমী বস্ত্র, মদ এবং বাদ্যযন্ত্রকে হালাল বলে জ্ঞান করবে।” [বুখারী]

এছাড়াও এ ধরনের অনর্থক ও পাপপূর্ণ অনুষ্ঠান সম্পর্কে বহু সতর্কবাণী এসেছে কুরআনের অন্যান্য আয়াতে এবং আল্লাহর রাসূলের হাদীসে।

যে সকল মুসলিমদের মধ্যে ঈমান এখনও অবশিষ্ট রয়েছে, তাদের উচিৎ এসবকিছুকে সর্বাত্মকভাবে পরিত্যাগ করা।

আমাদের করণীয়

সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নববর্ষ সংক্রান্ত যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এজন্য যে, এতে নিম্নোলিখিত চারটি শ্রেণীর ইসলাম বিরোধী বিষয় রয়েছে:

. শিরকপূর্ণ অনুষ্ঠানাদি, চিন্তাধারা সংগীত
. নগ্নতা, অশ্লীলতা, ব্যভিচারপূর্ণ অনুষ্ঠান
. গান বাদ্যপূর্ণ অনুষ্ঠান
. সময় অপচয়কারী অনর্থক বাজে কথা এবং কাজ

এ অবস্থায় প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে, নিজে এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকা এবং মুসলিম সমাজ থেকে এই প্রথা উচ্ছেদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো নিজ নিজ সাধ্য ও অবস্থান অনুযায়ী। এ প্রসঙ্গে আমাদের করণীয় সম্পর্কে কিছু দিকনির্দেশনা দেয়া যেতে পারে:

বিষয়ে দেশের শাসকগোষ্ঠীর দায়িত্ব হবে আইন প্রয়োগের দ্বারা নববর্ষের যাবতীয় অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা

যেসব ব্যক্তি নিজ নিজ ক্ষেত্রে কিছুটা ক্ষমতার অধিকারী, তাদের কর্তব্য হবে অধীনস্থদেরকে কাজ থেকে বিরত রাখা। যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এই নির্দেশ জারি করতে পারেন যে, তার প্রতিষ্ঠানে নববর্ষকে উপলক্ষ করে কোন ধরনের অনুষ্ঠান পালিত হবে না, নববর্ষ উপলক্ষে কেউ বিশেষ পোশাক পরতে পারবে না কিংবা শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারবে না

মসজিদের ইমামগণ বিষয়ে মুসল্লীদেরকে সচেতন করবেন বিরত থাকার উপদেশ দেবেন

পরিবারের প্রধান বিষয়টি নিশ্চিত করবেন যে তার পুত্র, কন্যা, স্ত্রী কিংবা অধীনস্থ অন্য কেউ যেন নববর্ষের কোন অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়। (এটুকু ইনশাআল্লাহ্ চাইলে সবাই/অনেকেই করতে পারবেন)

এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকে তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী, সহকর্মী পরিবারের মানুষকে উপদেশ দেবেন এবং নববর্ষ পালনের সাথে কোনভাবে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবেন

আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক দান করুন, এবং কল্যাণ ও শান্তি বর্ষিত হোক নবী(সা.)-এঁর ওপর, তাঁর পরিবার ও সাহাবীগণের ওপর।


এবং তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা সেই জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার পরিধি আসমান জমীনব্যাপী, যা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য।” [সূরা আলেইমরান:১৩৩]

লেখক : ইঞ্জিনিয়ার মো: এনামুল হক | সম্পাদক : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া – মো: আব্দুল কাদের

 

ওভেন ছাড়াই তৈরি করে ফেলুন সুস্বাদু গার্লিক ব্রেড

প্রতিদিন সকালের নাস্তায় যে খাবারটি প্রায় সব বাসায়ই খাওয়া হয়, তা হল পাউরুটি। বাজারের অস্বাস্থ্যকর পাউরুটি খাওয়াটা অনেকেরই অপছন্দের। আবার পাউরুটি ওভেন ছাড়া তৈরি করা যায় না বলে, ইচ্ছা থাকলেও পাউরুটি ঘরে তৈরি করতে পারেন না। এই সমস্যার সমাধান করে দেবে আজকের এই রেসিপি। ওভেন ছাড়াই তৈরি করে নিতে পারবেন গার্লিক ব্রেড।

উপকরণ:

২ কাপ ময়দা

১ চা চামচ ইস্ট

৩/৪ কাপ গরম পানি

১ টেবিল চামচ চিনি

৩/৪ চা চামচ লবণ

২ টেবিল চামচ তেল

গার্লিক বাটার তৈরির জন্য

২ টেবিল চামচ মাখন

৪ কোয়া রসুন কুচি

লবণ স্বাদমত

গোলমরিচ গুঁড়ো

১ চা চামচ ওরিগেনো, বেসলি এবং পার্সলি পাতা গুঁড়ো

 

প্রণালী:

১। একটি পাত্রে ১/২ কাপ গরম পানি, চিনি এবং ইস্ট মিশিয়ে ৫ মিনিট রেখে দিন।

২। ৫ মিনিট পর পানিতে বুদবুদ উঠলে এতে ময়দা, তেল, লবণ এবং বাকী ১/৪ কাপ পানি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন।

৩। ডো নরম হয়ে গেলে একটি প্লাস্টিকের প্যাকেট অথবা সুতির কাপড় দিয়ে ২ ঘন্টা ঢেকে রাখুন।

৪। আরেকটি পাত্রে রসুন কুচি, মাখন, ওরিগেনো, ব্রাসলি,পার্সলি পাতা গুঁড়ো, লবণ এবং গোল মরিচ গুঁড়ো ভাল করে মিশিয়ে নিন।

৫। এবার ডোটিকে দুই ভাগ করে নিন। এবার একটি ভাগ নিয়ে বড় রুটির মত বেলে নিই।

৬। রুটির মাঝে মাখন রসুনের মিশ্রণটি দিন। এবার রুটিটি রোল করুন।

৭। রোল করা রুটিটি ছুড়ি দিয়ে কয়েক টুকরো করে নিন।

৮। এখন নন-স্টিক প্যানে তেল দিয়ে কাটা ডোর টুকরোগুলো দিন।

৯। একটি কাপড় দিয়ে প্যানের ঢাকনাটি পেঁচিয়ে নিন, তারপর সেটি দিয়ে প্যানটি ঢেকে দিন।

১০। এবার প্যানটি গরম কোন স্থানে এক ঘন্টা রেখে দিন। এক ঘন্টা পর দেখবেন ডোটি ফুলে ডাবল হয়ে গেছে।

১১। এবার অল্প আঁচে প্যানটি ১০-১২ মিনিট চুলায় রাখুন।

১২। ১০ মিনিট পর পাউরুটির পাশ পরিবর্তন করে ৫-৬ মিনিট রান্না করুন।

১৩। দুই পাশ সোনালী রং হয়ে আসলে চুলা বন্ধ করুন।

১৪। পাউরুটির উপরে মাখন ব্রাশ এবং ধনেপাতা কুচি করে নামিয়ে ফেলুন।

১৫। ব্যস তৈরি হয়ে গেল গার্লিক ব্রেড।

 

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় নারীর প্রতি অতিরিক্ত গুরুত্বের দাবি

জলবায়ু পরির্বতন জনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় নানা করণীয় ঠিক করলেও, নারীদের জন্য আলাদা কিছু করা হয়নি। অথচ জলবায়ু পরির্বতনজনিত প্রতিটি অভিঘাতেই নারীরাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকে। তাই এসব কর্মসূচিতে নারীর জন্য আলাদা পরিকল্পনা ও তহবিল বরাদ্দের প্রতি জোর দেয়া দরকার।

সোমবার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র- সিআরটি’র আয়োজিত ‘জলবায়ু পরির্বতনে গৃহিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি ও কর্মসূচিতে জেন্ডার’ বিষয়ক এক কর্মশালায় এ কথা বলেন বক্তারা।

বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সক্ষমতা বৃদ্ধি তহবিলের সহায়তায় আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন ইউএন উইমেনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্রিশ্চিন হান্টার, বিশেষ অতিথি ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারপার্সন এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ড. রফিকুল হুদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর এবং ইউএন উইমেনের ক্লাইমেট ও জেন্ডার সমন্বয়কারী দিলরুবা হায়দার।

জলবায়ু ও নারী বিষয়ে কর্মরত দেশ বিদেশের বিশেষজ্ঞদের অংশ গ্রহণে আয়োজিত এই কর্মশালায় দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপঠে নারীর জন্য সহাবস্থানমূলক পরিবশে তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করতে নীতি নির্ধারণের তাগিদ দেয়া হয়। সেই সঙ্গে পাঠ্যক্রমে নারীর প্রতি অবমাননাকর বিষয়গুলো দ্রুত অপসারণ করে জেন্ডার সহনশীল সিলেবাস ও শিক্ষকদের সেই মনোভাবে প্রস্তুতেরও পরামর্শ দেয়া হয়।

 

নারীর স্থায়ী উন্নয়নে চাই বিশেষ বিনিয়োগ

স্থায়ীত্বশীল নারী উন্নয়নে জেন্ডার বাজেট কোথায় খরচ হচ্ছে, কোথায় বরাদ্দ হচ্ছে এসব তদারকির জন্য মনিটরিং সেল গঠনসহ কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ বিনিয়োগের মাধ্যমে নারী উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পরামর্শ দিলেন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও নারী নেত্রীরা।

রোববার বিকেলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে আয়োজিত ‘স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে নারীর জন্য বিনিয়োগ : জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এ পরামর্শ দেন।

সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী।

এতে অংশ নিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘আমরা অনেক কিছু শুনি এবং তার ভিত্তিতে চেষ্টা করি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য কিন্তু হয়তো তা কখনো সম্ভব হয় কখনো হয় না। ঐতিহাসিকভাবে নারীরা সম্পদহীন। এ ক্ষেত্রে যদি পরিবর্তন আনা যায় তাহলে হয়তো নারীর পরিবর্তন হবে। সক্ষমতার ভিত্তিতে আমাদের অর্থ ব্যয় করতে হবে।’

সংগঠনের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, ‘চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনে নারীর ক্ষমতায়নে অর্থনৈতিক যোগান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে উল্লেখ করা হয়। ২০২১ সালের ভিশন অর্জন করতে হলে নারীকে এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য জেন্ডার বাজেট খুবই প্রয়োজন। পাশাপাশি এ বরাদ্দকৃত অর্থ কিভাবে কোথায় নারীর জন্য বরাদ্দ হচ্ছে, কোথায় খরচ হচ্ছে তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি মনিটরিং সেল হওয়া প্রয়োজন। কারণ, ৪০টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার বাজেট থাকলেও সেখানে অনেক মন্ত্রণালয় অর্থ খরচ করতে পারেনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘সমান অংশিদারিত্বের কথা সব জায়গায় বলা হলেও তার কোনো প্রতিফলন বাস্তবে আমরা দেখি না। নারীর অগ্রগতি সাধিত হয়েছে এটা সত্যি কিন্তু এই অগ্রগতি ও উন্নতির সুবাতাস কতটুকু নারী পাচ্ছে তাই আমাদের দেখতে হবে এবং এর ভিত্তিতে নতুন পরিকল্পনা নিতে হবে।’

ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমা বেগম বলেন, ‘আমরা অংশগ্রহণমূলক বাজেট চাই। আমরা বাজেটের আগে অনেক ধরনের আলোচনা দেখি কিন্তু এর প্রতিফলন আমরা অনেক সময়ই দেখি না। আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হয় নারীর জন্য অনেক বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন অনেক কম। আমাদের অনেক ভালো ভালো পলিসি আছে কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই। আর এর জন্য প্রয়োজন মনিটরিং।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মী মূল প্রবন্ধে বলেন,  ‘বাংলাদেশে অনেক অগ্রযাত্রা হওয়ার পরও নারীর জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা দেখি। বর্তমানে চল্লিশটি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার বাজেট বরাদ্দ রয়েছে। জেন্ডার বাজেটে নারীর জন্য আমরা চাই নিরাপত্তা, লাভজনক কাজ, নারীর চলাচলের সুবিধা, নারী স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং ওনারশিপ। লেবার ওয়েলফেয়ার সার্ভিস সেন্টারে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বিশেষ বিশেষ জায়গায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে নারীর উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে।’

সভায় আরো বক্তব্য দেন- অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক, বিআইডিএসর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো বিমল কুমার সাহা, অর্থ বিভাগ অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আজিজুল আলম, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু প্রমুখ।

 

রুখে দিতে আত্মরক্ষার কৌশল শিখছে তনুরা

প্রীতিলতা ব্রিগেডের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্য চত্বরে আজ (শুক্রবার) থেকে শুরু হয়েছে ‘তনুদের আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ’। প্রশিক্ষণ নিয়ে নারী ছিঁড়ে দেবে পুরুষ-আরোপিত শৃঙ্খল, অশুভর নাগপাশ থেকে মুক্ত করবে নিজেকে। নারীর ওপর যেকোনো বর্বর কর্মকাণ্ডও রুখে দেবে তারা।

বাংলাদেশ তায়কোয়ান্দো ফেডারেশনের সহযোগিতায় আয়োজিত এই আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণে প্রথম দিনে প্রীতিলতা ব্রিগেডের আহ্বায়ক লাকী আক্তারের নেতৃত্বে ১৭ নারী অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন তায়কোয়ান্দো ব্ল্যাকবেল্ট জেসমিন আক্তার রুমা।

আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণের এ আয়োজন সম্পর্কে লাকী আক্তার বলেন, ‘নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভরসায় বসে থাকার সুযোগ নেই। তাই আমরা নিজেরাই আত্মরক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’

প্রশিক্ষক জেসমিন আক্তার রুমা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘সবার মধ্যে দ্রুত শেখার আগ্রহ আছে। প্রথমদিনেই তারা অনেক ভাল পারফর্ম করেছে।’

প্রতি শুক্রবার নিয়মিত এই প্রশিক্ষণ চলবে বলে জানিয়েছে প্রীতিলতা ব্রিগেডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণে যেকোনো বয়সের নারী অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ ছাড়া খুব শিগগিরই দেশের অন্যান্য জেলাতেও এ প্রশিক্ষণ শুরু হবে।

 

২০০ সেকেন্ডের স্যান্ড আর্টে শাহরুখের জীবনের ৫০ বছর

১৫ এপ্রিল মুক্তি পাচ্ছে শাহরুখ খান অভিনীত ‘ফ্যান’ ছবি। ছবিটির ট্রেলার এবং গান মুক্তির পর থেকেই যেন শাহরুখ ভক্তরা অপেক্ষায় রয়েছেন ছবি মুক্তির। তারকা আর ভক্ত নিয়ে তার এই নতুন ছবি ‘ফ্যান’।

শুধু ভারত নয় পুরো বিশ্বে রয়েছে শাহরুখের কোটি কোটি ভক্ত। তাদের অনেকেই এই ছবির জন্য বিভিন্ন ভিডিও বানিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শাহরুখকে।

সম্প্রতি শাহরুখের এক ভক্ত স্যান্ড আর্ট নিয়ে একটি ভিডিও বানিয়েছেন। যেখানে শাহরুখের ৫০ বছরের জীবনী তুলে ধরা হয়েছে। ভিডিওতে শাহরুখের জন্ম থেকে শুরু করে তার সব হিট ছবি, বিখ্যাত ডায়লগ, হিট গান এবং আরও অনেক কিছু তুলে ধরা হয়েছে।

সবশেষে নতুন ছবি ‘ফ্যান’ এবং ‘রইস’ বিখ্যাত ডায়লগ দিয়ে শেষ হয়েছে ভিডিওটি। আর সেই স্যান্ড আর্টের মাধ্যমে শাহরুখের জীবনের এক ঝলক দেখালেন রাহুল আরিয়া।

 

পরিতৃপ্ত জীবন চান? নিন অপরাহ উইনফ্রের এই ৩০ দিনের চ্যালেঞ্জ!

মানুষ জীবনে কী চায়? বাড়ি, গাড়ি, ভালোবাসার মানুষ, সম্পদ- যেটার কথাই আপনি বলুন না কেন একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবেন যে আর কোন কারণে নয়, বরং একটু ভালো থাকার জন্য, নিজেকে খুশি রাখার জন্যেই এসবটা করছেন আপনি। করতে চাইছেন জীবনে। তাহলে জীবনের লক্ষ্য কি কেবলই খুশি থাকা? সম্প্রতি অপরাহ উইনফ্রের সাথে কথা বলার সময় খুশি বিশেষজ্ঞ শন অ্যাকর জানান, হ্যাঁ! মানুষ ভালো আর খুশি থাকতেই সবকিছু করে। তবে কেবল এটুকুই নয়, শন জানান এমন কিছু কাজের কথা যেগুলোর মাধ্যমে ৩০ দিনের ভেতরেই নিজেকে পুরোপুরি একজন সুখী ও খুশি মানুষে পরিণত করতে পারবেন আপনি। কী সেই পদ্ধতি? চলুন দেখে আসি নিঃসন্দেহে মাত্র ত্রিশ দিনে খুশি মানুষে পরিণত হওয়ার উপায়গুলো।

১ম দিন: সকালে ঘুম থেকে উঠেই এমন তিনটি জিনিসের কথা মনে করুন যেগুলোর জন্যে আপনি কৃতজ্ঞ। ( বাকী ২৯ দিন করুন। )

২য় দিন: গত ২৪ ঘন্টায় আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ভেতরে সবচাইতে অর্থবোধক ও ভালো ঘটনাটির কথা মনে করুন। ( বাকী ২৮ দিন একই কাজ করুন। )

৩য় দিন: পরিচিত কারো সাথে কথা বলুন ও তার প্রশংসা করুন। ( বাকী ২৭ দিন একই কাজ করুন। )

৪র্থ দিন: দিনের অন্তত ১৫ মিনিট কার্ডিও কিংবা যেকোন ধরনের শরীরচর্চা করা শুরু করুন। ( বাকী ২৬ দিন একই কাজ করুন। )

পঞ্চম দিন: অন্তত ৫ মিনিট ধরে যোগব্যায়াম করুন। ( বাকী ২৫ দিন একই কাজ করুন। )

ব্যস! এভাবেই বাকী দিনগুলোতে একই কাজ চালু রাখুন। এভাবে ৫,১০,১৫,২০,২৫ করে একেবারে ৩০ দিনের দিন গিয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন আর দেখুন কতটা ভালো রয়েছেন আপনি ৩০ দিন আগের তুলানায়। সত্যি বলতে গেলে, ততক্ষণ পর্যন্ত চেষ্টা করুন এগুলোকে যতক্ষণ না আপনার অভ্যাসে পরিণত হবে এগুলো। মানুষ একঘেঁয়েমী কিংবা রোমাঞ্চ- যে অবস্থার মধ্য দিয়েই যাক না কেন, একটা সময় গিয়ে চারপাশের সবকিছুই তুচ্ছ মনে হতে থাকে। কাছের মানুষের দেওয়া আঘাতে কিংবা নিজের প্রতি হতাশায় একটা সময় ভেঙে পড়ে সে। ভুলে যায় যে, এই একটা জিনিসের পাশাপাশি তার জীবনে আছে আরো হাজারটা ভালো ব্যাপার। যেগুলো হয়তো প্রতিনিয়ত তার সাথে ঘটে চলেছে অথচ কষ্টের কালো রংটা সরিয়ে সেগুলোকে দেখতে পাচ্ছেনা সে।

আর তাই এই পাঁচটি কাজ প্রতিটাদিন করে যান ঠিক ত্রিশদিন অব্দি। দেখবেন, আপনার সাথে ঘটে যাওয়া ভালো ব্যাপারগুলো ঠিকই চোখের সামনে আসতে শুরু করেছে আপনার আর পৃথিবীকে মনে হচ্ছে অনেক বেশি সুন্দর আর ভালোলাগার স্থান। নিজেকে মনে হচ্ছে প্রকৃত অর্থেই একজন খুশি মানুষ!

 

লিখেছেন-

সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

 

যে ৫টি জিনিস ভ্রমণে আপনার আনন্দকে করবে দ্বিগুণ!

আমরা বেড়াতে যাই, নিজেকে আনন্দ দিতে। শহরের ঝঞ্ঝাটময় কোলাহলের জীবন থেকে বেরিয়ে একটি শান্তিময় সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে ছুটে যাই প্রকৃতির কাছে। সেই সময়ে কোন ঝঞ্ঝাট কি ভাল লাগে? একদমই না। একেবারে ঝামেলাহীন ছুটি কাটাতে করুন এই কাজগুলো-
ঠিকমত ব্যাগ গোছান
আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো যত্নের সাথে গুছিয়ে নিন। কোন দরকারি জিনিস ভুলে ফেলে গেলে সেটি আবার কেনা একটি সমস্যা। আবার এমনও হতে পারে আপনি যেখানে যাচ্ছেন সেখানে আর কেনার সুযোগও নেই। যেমন ধরুন, ট্রাকিং এ গেছেন বন্ধুদের সাথে। ভুলে টাওয়াল নেন নি। যখন বুঝতে পারলেন যে এত দরকারি একটা জিনিস নেন নি, ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। এমন প্রত্যন্ত এলাকায় পৌছে গেছেন যে আর কেনার সুযোগ নেই। তখন? তাই ব্যাগে প্রত্যেকটি জিনিস ঠিকমত গুছিয়ে নিন। দরকারে লিস্ট করে নিন।
পর্যাপ্ত টাকা সাথে রাখুন
আপনার হয়ত একটা বাজেট ঠিক করা আছে, কত টাকায় আপনি আপনার ট্যুর শেষ করবেন। তবু সাথে কিছু বাড়তি টাকা রাখুন। আপনার যে কোন প্রয়োজনে হঠাৎ কিন্তু লাগতেই পারে। ক্রেডিট কার্ড সাথে নিন। আপনি যেখানে বেড়াতে যাচ্ছেন সেটা কিন্তু আপনার পরিমন্ডল না। সেখানে আপনার প্রয়োজনে টাকা দিয়ে পাশে দাড়ানোর কেউ নেই। তাই নিজেই সতর্ক থাকুন।
কাজ শেষ করে যান
আপনার কাজগুলো গুছিয়ে শেষ করুন। এতে বেড়ানোর সময়টা নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন। এখন ইন্টারনেটের যুগ। তাই চাইলেই বস কিন্তু কাজ ধরিয়ে দিতে পারেন আপনাকে। আর কোন কাজ যদি বাকি রেখে যান তাহলে তো কথাই নেই। বেড়ানোর মাঝেও ক্লায়েন্ট এর ফোন, বসের ঝাড়ি সব চলবে। তাই নিজেই কাজগুলো শেষ করে ফেলুন এবং জানিয়ে যান যে কাজ কোনটা বাকি নেই।
আবহাওয়ার খোজ নিন
অবশ্যই আবহাওয়ার খোজ নিন। ধরুণ, নেপাল যাচ্ছেন। পর্বতময় এলাকা, একেবারে হিমালয়ের কাছের দেশ নেপাল। আবহাওয়া ভাল না হলে একেবারে হোটেলেই কেটে যাবে আপনার পুরো ট্রিপ। এমন সব এলাকার কিছু বিশেষত্ত্ব আছে। কোথাও বৃষ্টির সময় যেতে হয়। আবার কোথাও গ্রীষ্ম-বর্ষার মাঝামাঝি গেলে চমৎকার দৃশ্য উপভোগ করা যায়। কোথাও আবার শীতে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। সেগুলো জেনে আপনার ট্রিপের পরিকল্পনা করুন।
বুঝে শুনে সঙ্গী নির্বাচন করুন
ভ্রমণে যথোপযুক্ত সঙ্গী নির্বাচন করা খুবই জরুরী। আপনি যদি পাহাড়ি পথে এমন মানুষ নিয়ে যান, যার কখনোই খুব বেশী হাঁটা বা স্ট্রেস নেওয়ার অভ্যেস নেই তাহলে সে আপনার পুরো ভ্রমণের আনন্দই নস্যাত করে দিতে পারে। আবার আপনার আগ্রহ হয়ত আরও ঘুরে দেখায়। কিন্তু আপনার সঙ্গীর আগ্রহ হোটেলেই আরামে ঘুমানোর আর নিজের ছবি তোলার। তাহলে? তাই আপনি যে ট্রিপে যাচ্ছেন তেমন মানানসই ভ্রমণসঙ্গী বেছে নিন।
লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

আকর্ষণীয়, অপ্রতিদ্বন্দী ব্যক্তিত্বের জন্য যা করবেন

আমরা সবসময়ই নিজেকে অন্যের কাছে এক বিশেষ ভাবমূর্তির সাথে প্রকাশ করতে চাই। আমরা চাই অন্যেরা আমাদের বুদ্ধিমান হিসেবে জানুক, আমাদের ব্যক্তিত্বে আকৃষ্ট হোক। সবার মাঝে আলাদা ভাবে গুরুত্ব পেতে পছন্দ করি আমরা সবাই। কিন্তু সবাই কি গুরুত্ব পায়? আসরে, আড্ডায় সবাই কি হতে পারে মধ্যমণি?
আপনি যদি সবার প্রিয় পাত্র হন সেক্ষেত্রেও কিন্তু সেই আকর্ষণ ধরে রাখার ব্যাপার থেকে যায়। নিজের একটি অপ্রতিদ্বন্দী ব্যক্তিত্ব তৈরি করা এবং তা ধরে রাখা উভয়ই একটি কঠিন কাজ। আপনার কাজে দেবে চমৎকার এই কৌশলগুলো-
নিজের লক্ষ্য ঠিক রাখুন
ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে মানুষের নিজস্ব গুণে। আপনার চরিত্রের দৃঢ়তাই কিন্তু ফুটে ওঠে আপনার প্রকাশভঙ্গিতে। নিজের বদভ্যাসগুলো শুধরে ফেলুন। লক্ষ্য নির্দিষ্ট করুন। যা করবেন ভেবেছেন, করে ফেলুন। সেটা যত ছোটখাট বিষয়ই হোক না কেন। হয়ত আপনি জিমে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু জিমে প্রথমদিন গিয়েই আর গেলেন না। কোন কাজ করবেন বলে হাতে নিয়েছেন, কিন্তু শেষ না করে রেখে দিলেন। এসবই আমরা করি যখন আমাদের লক্ষ্যের কোন ঠিক থাকে না। উদ্দেশ্যহীনভাবে আমরা সময় ব্যয় করে যাই। তাই, আমাদের একটি লক্ষ্য ঠিক করতে হবে এবং কাজ শুরু করার আগে অবশ্যই বুঝে নিতে হবে আমরা সেটি করতে পারব কিনা।
 
আপনার ব্যাপারে মতামত গড়ে তুলুন
আপনি যখন আত্মবিশ্বাসী এবং সৃষ্টিশীল তখন সহজেই সেটা আপনার চোখে মুখে ফুটে ওঠে। আপনার কন্ঠেও ফুটে ওঠে সাহস, দৃঢ়তা। আপনার বন্ধুরাও কিন্তু আপনার ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে আপনার সাথেই থাকবে। আপনি আরেকটু সচেতন হলেই গড়ে তুলতে পারেন আপনার ব্যাপারে সোজা সাপটা ইতিবাচক মতের একটি দল। আপনার ভক্তরা সবসময়ই সাহায্য করবে আপনাকে। এটা খুবই কাজে দেয়। কারণ, জীবনে তো সমস্যার শেষ নেই, শেষ নেই টানাপড়েনেরও। বিপর্যয় নেমে আসলে কাজে দেয় এই মানুষগুলোই। তখন সহজেই আপনি আবার ফিরে পেতে পারেন আত্মবিশ্বাস। নিজেকে রাখতে পারেন সতেজ।
 
নিজের মেধাকে কাজে লাগান
ব্যক্তিত্ব এমন এক বস্তু যা কৃত্রিম হতে পারে না। আপনার ভেতরে মেধা না থাকলে আপনি শুধু উপরে প্রকাশ সম্ভব নয়, সেটা ধরাও পড়ে যাবে মানুষের চোখে সহজেই। তাই একটু পরিশ্রমী হন, নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে প্রকাশ করুন এমন কিছু যা শুধু আপনিই পারেন। আপনাকে একক করে গড়ে তুলবে, সবার থেকে আলাদা করবে এমন গুণকে সামনে নিয়ে আসুন। এভাবেই সবার নজরে থাকবেন আপনি। প্রয়োজনে নিজেকে সময় দিন, গড়ে তুলুন। আত্মচর্চার মাধ্যমে বাড়ান নিজের দক্ষতা।
সময়মত কাজ করুন
যে কাজটিই শুরু করবেন অবশ্যই সময়মত শেষ করবেন। সময়ের সাথে সাথে অনেক কাজের আর আগের মত মূল্যমান থাকে না। যেমন আপনি কোন সময়ের প্রেক্ষিতে সেই বিষয় নিয়ে একটা গল্প লিখতে শুরু করলেন। কিন্তু শেষ আর করছেন না। বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। তাৎক্ষণিক মানুষের মনে সেই ঘটনার যে রেশ ছিল তা যখন কেটে যাবে তখন আপনার গল্পও কিন্তু মূল্য হারাবে। ইতিহাস তৈরি করে যেসব ঘটনা সেগুলোর কথা আলাদা। কিন্তু জীবনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সময়ের কাজ সময়েই শেষ করতে হবে আপনাকে। এই নিয়ম না মানলে পিছিয়ে পড়বেন, ভিড়ে হারিয়ে যাবেন।
 
রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন
একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষ অবশ্যই যে কোন জায়গায় তাঁর রাগ প্রকাশ করেন না বা ব্রাস্টাউট হন না। তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানেন। পরিস্থিতি সবসময়য় ইতিবাচক হবে না, এটাই স্বাভাবিক। আপনি যখন পথে বেড়োবেন তখন সব যে ভাল ঘটবে না তা জেনেই বের হতে হবে। আপনার কষ্ট করে দাঁড় করানো কাজটা বসের একদমই অপছন্দ হতে পারে, ঘটতে পারে এমন অনেক কিছুই। আপনাকে শিখতে হবে আত্মনিয়ন্ত্রণ।
বই পড়ুন
যতই পড়বেন, জানবেন ততই গড়ে তুলতে পারবেন নিজেকে। একটি ভাল বই মানুষের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে, বদলে দিতে পারে আপনার চোখে জীবনের মানে। ভাল ভাল বই পড়ুন, মানুষের জীবন সংগ্রামের গল্প পড়ুন। আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারে একজন চে গুয়েভারা, আপনাকে সাহসী করে তুলতে পারে আনা কারেনিনা। এমন অনেক মানুষের বাস্তব জীবনের গল্প হতে পারে আপনার শক্তি।
 
মেডিটেশন
নিজেকে শান্ত করতে, লক্ষ্যে স্থির থাকতে মেডিটেশনের বিকল্প নেই। আপনার মনকে স্থির করে ধ্যান পৌঁছে দিতে আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্যে। নিয়মিত ধ্যান করুন, নিজের ব্যক্তিত্বকে গড়ে তুলুন ভিন্নভাবে।
 
লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

গরম প্রাণ জুড়াতে ঝটপট ম্যাঙ্গো ডিলাইট

বাজারে খুঁজলে এখনই পাওয়া যাবে কিছু কিছু পাকা আম। একেবারে প্যাচপ্যাচে এই গরমের এই দিনে আপনি যদি ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা কোনো ডেজার্ট খেতে চান, তাহলে তৈরি করে নিতে পারেন মৌসুমের স্বাদে ম্যাঙ্গো ডিলাইট। সহজ এই রেসিপিতে খাবার তৈরির জন্য আপনাকে পাকা রাঁধুনি হতে হবে না। একদম অল্প কিছু উপাদানে খুব কম সময়ে তৈরি হয়ে যাবে চোখ জুড়ানো ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা এই ডেজার্ট।
উপকরণ
  • – ১ কাপ হেভি হুইপিং ক্রিম
  • – ১ চা চামচ ভ্যানিলা এক্সট্রাক্ট
  • – ৩ টেবিল চামচ অথবা স্বাদমতো গুঁড়ো চিনি
  • – ১ কাপ পাকা আমের পাল্প
  • – কয়েক টুকরো আম গার্নিশের জন্য
  • – পুদিনা পাতা গার্নিশের জন্য
প্রণালী
১) একটা পরিষ্কার, ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করা বোলে হেভি ক্রিম নিন এবং মিডিয়াম স্পিডে আধা মিনিট হুইপ করে নিন যাতে ঘন হয়ে আসে।
২) ভ্যানিলা এক্সট্রাক্ট এবং গুঁড়ো চিনি মিশিয়ে বিট করুন যতক্ষণ না “স্টিফ পিক” তৈরি হয়।
৩) সার্ভিং গ্লাস বা বাটিতে বড় এক চামচ হুইপড ক্রিম দিন। গ্লাসটা ধীরে ধীরে টেবিলে ঠুকে সমান করে নিন ক্রিম। এবার ওপরে এক স্তর আমের পাল্প দিয়ে নিন। আবারও সমান করে নিন।
৪) এবার ওপরে অল্প করে হুইপড ক্রিম দিন। একটু পুদিনা এবং কয়েক টুকরো আম দিয়ে পরিবেশন করুন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা!

 

নগরদোলার বর্ণিল বৈশাখী পোশাক সম্ভার

ফ্যাশন হাউজ নগরদোলা এবারের বৈশাখকে সামনে রেখে পোশাক সংগ্রহে এনেছে বর্ণিলতা ও ভিন্নতার সমাহার। পোশাকের অলংকরণে ভিন্ন মাত্রার উপস্থাপন দেখা যাবে নগরদোলার এবারের বৈশাখী পোশাক সম্ভারে।

এবারের পোশাকগুলোয় কাজ করা হয়েছে ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, কাঁথা স্টিচ, এপ্লিক, এম্ব্রয়ডারী, কারচুপি ও অন্যান্য মাধ্যমের কারুকাজ। সব বয়সীদের পোশাক নিয়ে এবার নগরদোলার এবারের বৈশাখ উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ ফ্যামেলি ড্রেস। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বৈশাখ উদযাপন করতে একই কাপড়ে ও ডিজাইনে পুরো পরিবারের সবার জন্য পোশাক তৈরি করা হয়েছে। তরুণদের প্রাধান্য দিয়েই এবার পোষাকের ডিজাইন করা হয়েছে।

বিশেষ পোশাকের মধ্যে রয়েছে নতুন ডিজাইনে স্লিভলেস ফতুয়া। ছেলে-মেয়ে সবার কথা মাথায় রেখে বৈশাখ উপলক্ষে থাকছে নতুন ধূতি। বরাবরের মতোই সুতি কাপড়কে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বৈশাখী পোশাকসমূহ। সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে তাঁত, খাদি, মসলিন, এন্ডি সিল্ক, এন্ডি কটন ও অন্যান্য আরামদায়ক কাপড়। রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রচলিত লাল সাদার পাশাপাশি অন্যান্য উজ্জ্বল রংগুলোর সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। বর্তমান সময়ের ট্রেন্ডকে লক্ষ্য রেখে প্রচলিত পোশাকের পাশাপাশি নতুন ডিজাইনে থাকছে স্টাইলের নতুনত্ব। কাটিং ও প্যাটার্নেও বৈচিত্র আনা হয়েছে।  ক্রেতা সাধারনের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে পোশাকের মূল্য। পরিবারের সবাই একই কম্বিনেশনের পোশাক সংগ্রহ করতে পারবেন নগরদোলার বর্ণিল বৈশাখী পোশাক সম্ভার থেকে।

নগরদোলার বিক্রয়কেন্দ্র সমূহ – ধানমন্ডি-০১৬৭৬৭৯৫৫৭০, বসুন্ধরা সিটি-০১৯১৪৭৫৩৬৯১, গুলশান লিংক রোড-০২ ৯৮৯১৪২৪, যমুনা ফিউচার পার্ক-০১৭৫৭১১১৭৭৭, চট্টগ্রাম-০৩১২৫৫৬৮৯৫, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি-০১৬৭৬৭৯৫৫৭০, সিলেট- ১৬৮২৬২৯০৪০

 

হত্যা আতঙ্কে দেশ ছেড়েছেন ৩০ ব্লগার

টার্গেটে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট। তালিকা ধরে চলছে হত্যা। চলছে একের পর এক। তাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ অবস্থায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ব্লগাররা। যে যেভাবে পারছেন নীরবে দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত অন্তত ৩০ জন ব্লগার দেশ ছেড়ে গেছেন। দেশ ছাড়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছেন আরও অন্তত ১০-১২ জন। এ ছাড়া নিয়মিত হুমকি মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন অনেকেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও হুমকিতে থাকা ব্লগারদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি ‘আন-অফিশিয়ালি’ বিদেশ চলে যেতে বলা হচ্ছে। ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর খড়গ নেমে আসে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ওই বছরই ১৫ই ফেব্রুয়ারি রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবা নামে একজন ব্লগারকে হত্যা করা হয়। মূলত তখন থেকেই ব্লগারদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দানা বাঁধে। অনেকে ব্লগারই আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ ব্লগ লেখাও বন্ধ করে দেন কিছুদিন। পরের বছর ২০১৪ সাল মোটামুটি শান্তভাবে চললেও গত বছর মার্কিন নাগরিক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যার মাধ্যমে আবারও ব্লগারদের ওপর ধারাবাহিক আক্রমণ শুরু হয়। এ অবস্থায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন মুক্তমনা ব্লগাররা। আত্মগোপনে থেকেও রেহাই মেলেনি তাদের। ব্লগার ওয়াসিকুর রহমান বাবু ও নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় একাধিকবার হুমকি পেয়ে অনেকটা আত্মগোপনে থাকতেন। তার পরও দুর্বৃত্তরা তাদের কুপিয়ে হত্যা করেছে। ব্লগাররা বলছেন, একের পর এক ব্লগার হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে না পারার কারণে অনেকেই নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া ব্লগাররা হলেন- আসিফ মহিউদ্দিন, ওমর ফারুক লুক্স, অনন্য আজাদ, শাম্মী হক, মশিউর রহমান বিপ্লব, রাসেল পারভেজ, সৈকত চৌধুরী, সুব্রত শুভ, ক্যামেলিয়া কামাল, রতন (সন্ন্যাসী), সবাক, কৌশিক, পারভেজ আলম, অমি রহমান পিয়াল, শামীমা মিতু, আজম খান, মাহমুদুল হক মুন্সি ওরফে বাঁধন, তন্ময় প্রমুখ। ব্লগার সূত্র জানায়, ব্লগারদের বেশির ভাগই গত দুই বছরে বেশি দেশ ছেড়েছেন। গত বছর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ব্লগার নিরাপত্তাজিনত কারণে দেশ ছাড়েন। ব্লগার ও লেখক সৈকত চৌধুরী গত বছরের ২০মে দেশ ছেড়ে যান। ড. হুমায়ুন আজাদের ছেলে অনন্য আজাদ হুমকির কারণে দেশ ছাড়েন গত বছরের ২৯শে জুলাই। ব্লগার শাম্মী হক জার্মানিতে চলে যান গত বছরের অক্টোবরে। গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্ব দেয়া মাহমুদুল হক মুন্সী ওরফে বাঁধন ও অমি রহমান পিয়াল দেশ ছাড়েন গত বছরের নভেম্বরে।

প্রায় একই সময়ে দেশ ছেড়ে যান সাংবাদিক ও ব্লগার শামীমা মিতুও। ব্লগার সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্লগার ক্যামেলিয়া কামাল, অমি রহমান পিয়াল, সুব্রত শুভ ও আজম খান বর্তমানে সুইডেনে রয়েছেন। পারভেজ আলম রয়েছেন নেদারল্যান্ডসে। শাম্মী হক, অনন্য আজাদ, তন্ময়, আসিফ মহিউদ্দিন ও মাহমুদুল হক মুন্সী ওরফে বাঁধন রয়েছেন জার্মানিতে। সন্ন্যাসী রতন রয়েছেন নরওয়েতে। ব্লগার মনির রয়েছেন ফ্রান্সে। দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন ব্লগার ও প্রকাশক শুদ্ধশ্বরের কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলও সবার অগোচরে দেশ ছেড়ে আমেরিকায় চলে যান। জার্মানি চলে যাওয়া ব্লগার শাম্মী হক গতকাল মানবজমিনকে বলেন, ‘আমি আমার দেশে ফিরতে চাই, প্রাণ খুলে নিজের ভাষায় কথা বলতে চাই। আমার সহযোদ্ধাদের খুনের বিচার চাই।’

ক্ষমতাসীন সরকারকে উদ্দেশ করে শাম্মী বলেন, ‘যে রক্তে নিজের হাত লাল করেছে এবং মৌলবাদীদের হাতকে লাল করার জন্য প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে এর বিচার একদিন হবেই। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না।’ দেশ ছেড়ে যাওয়া মানে পরাজয় স্বীকার করা কি না- জানতে চাইলে ব্লগার শাম্মী হক বলেন, এটা একদিক থেকে সঠিক আবার ভুলও। প্রথমত, দেশ ছাড়ার পরও অসংখ্য থ্রেট আসছে। তারা যদি আমাদের দেশ ছাড়াটাকে তাদের সাফল্যও ভেবে নেয়, তাহলে হুমকি এমনকি বিদেশে অবস্থানরত ব্লগারদের হিটলিস্ট তৈরি করছে কেন? শাম্মী বলেন, বরং যে দেশ ছাড়তে পারছে, সে আরও বেশি লেখালেখি করার সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের মূল যুদ্ধই তো লেখার মাধ্যমে। শাম্মীর ভাষ্য, সরকারের পক্ষ থেকে শক্ত অবস্থান নেয়া হলে এত ব্লগারকে জীবন দিতে হতো না। বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্যই এভাবে একের পর এক ব্লগার খুন হচ্ছেন। শক্ত হাতে বিচার করলে এগুলো হতো না।’

ব্লগার-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সর্বশেষ নাজিমউদ্দিনকে হত্যার পর অনেক ব্লগার বিদেশ যাওয়ার জন্য আবার চেষ্টা শুরু করেছেন। নিজের জীবন বাঁচাতে দেশ ছাড়ার আর কোনো বিকল্প দেখছেন না তারা। এজন্য অনেকেই বিদেশে থাকা ব্লগারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আশ্রয় পাওয়ার প্রক্রিয়া জানার চেষ্টা করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত ১০-১২ জন ব্লগার দেশ ছাড়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে সহযোগী ব্লগার বা তারা নিজেদের নাম প্রকাশ করতে নিষেধ করছেন।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, যেসব ব্লগারের ওপর হুমকি বা থ্রেট রয়েছে তাদের নিরাপত্তা দেয়ার পাশাপাশি সতর্কতামূলক পরামর্শ দিচ্ছেন গোয়েন্দারা। একই সঙ্গে সর্বশেষ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমউদ্দিনকে হত্যার পর হুমকিতে থাকা ব্লগারদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশনা দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ব্লগারদের কেউ নিরাপত্তাজনিত কারণে জিডি করতে চাইলে সঙ্গে সঙ্গে থানা পুলিশকে জিডি নেয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বিধান করার নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। একই সঙ্গে ব্লগারদের মধ্যে কারা হুমকিতে বা থ্রেটের মধ্যে রয়েছেন তাদের অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

দৈনিক মানবজমিনের সৌজন্যে

 

জয়পুরহাটে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ, স্বামীসহ গ্রেফতার ৩

জয়পুরহাট সদরে রিমা (২৮) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগে স্বামীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতাররা হলেন-রিমার স্বামী হাসান আলী (৩২), শ্বশুর আব্দুল আলীম (৫৫) ও শাশুড়ি কলি বেগম (৫০)।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন জানান, প্রায় এক বছর আগে সদর উপজেলার চক জগদীশপুর গ্রামের মাদেছুর রহমানের মেয়ের সঙ্গে কোছনাপুর গ্রামের হাসান আলীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই রিমার ওপর তার স্বামী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে পারিবারিক কলহের জের ধরে হাসান আলী রিমাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।

এ ঘটনায় রিমার ভাই বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করলে পুলিশ রাতেই রিমার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রবিবার জেলা আধুনিক হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওসি ফরিদ হোসেন।

 

কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

রাজধানীর কেরাণীগঞ্জে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সকাল ১০টায় তিনি এ কারাগার উদ্বোধন করেন।

কারাগারটি এশিয়ার সর্বাধুনিক ও বৃহত্তম মডেল কারাগার। নতুন এ কারাগারটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কেরানীগঞ্জ’। প্রায় ৪ হাজার ৫৯০ জন বন্দীকে রাখার জন্য এ কারাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে কারাগারটি স্থানান্তরিত হচ্ছে।

কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সোয়া ২শত বছরের ঐতিহ্য ভেঙ্গে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড থেকে কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় কারাগারটি। একই সাথে বদলে যাচ্ছে কারা স্থাপনার লাল রং বা লাল দালানের কথাটি। যে কারণে বর্তমানের আধুনিক এ কারাগারটির দেয়ালের রং সাদা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নব নির্মিত এ কারাগারটিতে শুধু পুরুষবন্দীদের রাখা হবে। পুরুষ কারাগারটির পাশে নতুন একটি মহিলা কারাগার নির্মাণাধীন রয়েছে। মহিলা কারাগারটির নির্মাণ শেষ হলে নারী বন্দীরা থাকতে পারবেন।

বর্তমানে পুরনো ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডে স্থাপিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নতুন কারাগারটির দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। ১৭৮৮ সালে স্থাপিত পুরান ঢাকার এ কারাগারটি বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম এক সাক্ষী। উদ্বোধনের পরই কারা কর্তৃপক্ষ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা প্রায় ৮ হাজার বন্দীকে স্থানান্তরের কাজ শুরু করবে।

১৯৮০ সালে বর্তমানের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটি স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করার দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এটি কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরিত হচ্ছে। বিশ্বের আধুনিক সকল কারাগারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই কারাগারটি নির্মাণ করা হয়।

কারা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোট ১৯৪ দশমিক ৪১ একর জমির ওপর এ কারাগারটি অবস্থিত। এ এলাকায় মোট ৩টি কারাগার নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে পুরুষ কারাগার ২টি আর মহিলা কারাগার ১টি। মহিলা কারাগারটিতে ২শ’ বন্দীকে রাখা যাবে। প্রতিটি পুরুষ কারাগার ৩১ একর জমিতে তৈরি করা হচ্ছে। আর মহিলা কারাগারটি তৈরি হবে ১১ একর জমির ওপর। ২০০৬ সালের একনেকে এ কারাগারটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নতুন এ কারাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। কারাগারের চারপাশে ১৮ ফুট উচ্চতার বিশেষ প্যারামিটার দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। এর উপরে রেক্টিফাইড ক্যাবল দিয়ে কমপক্ষে ৬ ফুট উঁচু করে ঘিরে রাখা হয়েছে।

 

ভিসা ছাড়াই ইন্দোনেশিয়ায় হানিমুন ট্যুর

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের বল রুমে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা ‘নভোএয়ার-ঢাকা ট্রাভেল মার্ট-২০১৬’ শুরু হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় মেলায় প্রবেশ করতেই দেখা গেল, হানিমুন ট্যুরস অ্যান্ড  ট্রাভেলস এর স্টলে দর্শকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। দেশি-বিদেশি যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে নানা বয়সের দর্শকরা এই স্টলের দিকে ছুটছেন।

মানুষের এত ভিড় দেখে মেলায় আসা উৎসুক জনতাও ভিড়ে যাচ্ছেন সেখানে। কারণ একটাই- মেলা উপলক্ষে ভিসা ছাড়া ইন্দোনেশিয়া (বালি) ভ্রমণের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে হানিমুন ট্যুরস অ্যান্ড  ট্রাভেলস। জানা গেল, ভিসা ছাড়া হানিমুন ট্যুরে মাত্র ৫৯ হাজার ৯০০ টাকায় ৪ রাত ৫ দিনের জন্য পর্যটন শহর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে নেয়া ও আনার ব্যবস্থা রয়েছে। এই প্যাকেজের পাশাপাশি যে কোনো দেশের এয়ার টিকেটেরও ব্যবস্থা করে দিচ্ছে তারা।

হ্যানিমুন ট্যুরস অ্যান্ড  ট্রাভেলস এর ম্যানেজার মহিউদ্দিন সজল জানান, গত ৬ বছরে ৬০ হাজারেরও বেশি পর্যটক আমাদের সঙ্গে ভ্রমণ করেছেন। এবার এই আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা উপলক্ষে এই প্রথম ভিসা ছাড়া পর্যটকদের ভ্রমণের সুযোগ করেছি। শুধু পাসপোর্ট হলেই হবে। ইন্দোনেশিয়া ছাড়াও আরও ৩৫টি দেশে যাওয়ার প্যাকেজ ঘোষণা করেছি।

এর মধ্যে সিঙ্গাপুর+মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য ৫ রাত ৬ দিন ৫৪ হাজার ৯০০ টাকার প্যাকেজে নিয়ে যাবে রাখবে ঘুরাবে এবং ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। মালয়েশিয়া+ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুর ৬ রাত ৭ দিন জনপ্রতি ৯৫ হাজার টাকায়, সিঙ্গাপুর-ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়া ৬ রাত ৭দিন জনপ্রতি ৮৫ হাজার টাকায়, সিঙ্গাপুর+মালয়েশিয়া+ইন্দোনেশিয়া+থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া ৯ রাত ১০ দিন জন প্রতি ৯৯ হাজার টাকায় আশা-যাওয়া ব্যবস্থা করার বুকিং নেয়া হচ্ছে।

এছাড়া ইন্দোনেশিয়া+সিঙ্গাপুর+মালয়েশিয়া+থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে ১০ রাত ১১দিন মাত্র ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কা+মালদ্বীপ ৫ রাত ৬দিন মাত্র ৬৮ হাজার টাকায়, সিঙ্গাপুর ২ রাত ৩দিন ৩৯ হাজার টাকায় ভ্রমণ করা যাবে।

শুধু হানিমুন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসই নয় পর্যটন এ মেলায় স্বাগতিক বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ৫০টির অধিক সংস্থা অংশ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জাতীয় পর্যটন সংস্থা, বিমান সংস্থা, ট্রাভেল ও ট্যুর অপারেটর, হোটেল ও রিসোর্ট, পর্যটন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। অংশগ্রহণকারী সংস্থাগুলো দর্শনার্থীদের জন্য হ্রাসকৃত মূল্যে বিমান টিকেট, আকর্ষণীয় ট্যুর প্যাকেজসহ বিভিন্ন সেবা উপস্থাপন করছে।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা ‘নভোএয়ার-ঢাকা ট্রাভেল মার্ট-২০১৬’ উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। পর্যটন বিষয়ক পাক্ষিক ‘দি মনিটর’এর মেলাটির আযোজন করে এবং উদ্বোধনের পর পরই সকলের জন্য খুলে দেয়া হয়।

ট্যুরিজম মালয়েশিয়া এবং ট্যুরিজম অথোরিটি অব থাইল্যান্ড বিটুবি মিটিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ট্যুরিজম মালয়েশিয়ার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলসহ একটি সাংস্কৃতিক দলও এ মেলায় অংশ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

শুক্রবার প্রথমদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা এবং আগামীকাল শনিবার থেকে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ মেলা চলবে। মেলায় প্রবেশমূল্য রাখা হয়েছে জনপ্রতি ২৫ টাকা। প্রবেশ কুপনের ওপর মেলার শেষদিন (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গ্র্যান্ড র‌্যাফেল ড্র’র ব্যবস্থাও থাকবে। র‌্যাফেল ড্র বিজয়ীদের জন্য রয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গন্তব্যে এয়ার টিকেট, ট্যুর প্যাকেজ, তারকা হোটেলে রাত্রিযাপন, লাঞ্চ ও ডিনার কুপণসহ বিভিন্ন পুরস্কার।

 

বৈশাখী সাজে বাঙালি নারী

বাঙালি প্রাণের উৎসবে মাতে পহেলা বৈশাখে। সব ভেদাভেদ ভুলে সবার মনে বয়ে যায় একই আনন্দ। তাই মাতামাতিটা একটু বেশিই থাকে। পহেলা বৈশাখ মানেই ঘোরাঘুরি, আড্ডা অনুষ্ঠান আর একটু বাড়তি সাজ। দিনভর সুন্দর সাজে নিজেকে পরিপাটিও দেখতে চান সবাই। সেজন্য দরকার আরামদায়ক সুন্দর সাজ।

শাড়ি-ব্লাউজ

পহেলা বৈশাখে সাজটি হতে হবে অন্যান্য সময়ের থেকে বর্ণিল। বৈশাখে তীব্র গরমে শান্তি পেতে পোশাক নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। এক্ষেত্রে সুতির শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ বেশি আরামদায়ক। শাড়ির ক্ষেত্রে আপনি তাঁতের শাড়ি, ঢাকাই জামদানি বা টাঙ্গাইলের শাড়ির প্রাধান্য দিতে পারেন। বর্তমানে শাড়িতে ব্লক-বাটিক, এ্যাম্ব্রয়ডারি এবং স্ক্রিন প্রিন্টের কাজ বেশ চলছে। খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন একটু উজ্জ্বল রঙের হয়। সাদা-লাল, সাদা-সবুজ, অথবা সাদার সঙ্গে অন্য যে কোন রঙের মিশ্রণ হোক না কেন, সেটা অবশ্যই উজ্জ্বল হতে হবে। বৈশাখে শুধু যে সাদা-লালই পরতে হবে এমন কোন কথা নেই। আপনি আপনার পছন্দ মতো যে কোনো শাড়িই পরতে পারেন। শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজের রঙ এবং ডিজাইনেও আনতে পারেন কিছুটা চমক। এক্ষেত্রে আপনি ব্লাউজে বিভিন্ন ডিজাইন দিয়ে তৈরি করতে পারেন। ব্লাউজটি হতে হবে উজ্জ্বল রঙের। এটি আপনি আপনার পছন্দ মতো ছোট হাতা, থ্রি-কোয়ার্টার অথবা ফুলহাতা যেভাবে খুশি পরতে পারেন, এটি আপনার স্বাচ্ছন্দ্যের ওপর নির্ভর করবে। ব্লাউজের ক্ষেত্রেও সুতি কাপড় ব্যবহার হবে বুদ্ধিমানের কাজ, এটি গরমে বেশ আরামদায়ক হবে।

সাজগোজ

রমণীদের সাজগোজের অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে সুন্দর মেকআপ। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই আগের দিন ফেসিয়াল করে নিতে হবে, যার ফলে মেকআপ সহজেই মুখে বসে যাবে। যদি পার্লারে গিয়ে মেকআপ করা সম্ভব না হয়, তাহলে ঘরে বসেই ফেসিয়াল করে নিতে পারেন।

রেশমি চুড়ি

বঙ্গ ললনাকে চুড়ি ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। যেহেতু বৈশাখ, সেহেতু আপনি আপনার দুহাতে কাঁচের রেশমি চুড়ি পরতে পারেন। অথবা মাটির চুড়ি ও গহনা পরে নিজেকে সাজিয়ে নিতে পারেন।

চোখ

চোখের সাজ ছাড়া বাঙালি ললনাকে কল্পনাই করা যায় না। আর সেটা যদি হয় পহেলা বৈশাখ, তাহলে তো কথাই নেই। চোখ মানুষের সৌন্দর্যের আলাদা একটি আকর্ষণ। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে চোখে স্যাডো দিতে পারেন। এই সাজ আপনার চোখকে আকর্ষণীয় করে তুলবে।

ঠোঁট

নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ঠোঁটের সাজও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনার বৈশাখী পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে লিপিস্টিকের ব্যবহার করতে পারেন। এতে লাল বা অন্য কোন রঙের লিপিস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। তবে বৈশাখীতে লালের ব্যবহার বেশিই হয়।

চুল

চুল বাঙালি নারীর অহঙ্কার। পোশাকের সঙ্গে চুলের সাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি চুল স্ট্রেইট হয়, তাহলে চুলে খোপা বা বেণী করে নিতে পারেন। তবে সারা দিনের জন্য খোপা করাটাই বুদ্ধিমতির কাজ। এছাড়া আপনি বিভিন্ন সাজে আপনার চুলকে সাজাতে পারেন। তবে অবশ্যই চুলে ফুল থাকা চাই। এক্ষেত্রে গোলাপ, গাদা, গাজরা, বেলি কিংবা জুঁই ফুলের মালা লাগাতে পারেন।

 

একাকীত্ব পছন্দ করে ৩২ লাখ, ৮০ লাখ রোগা

দেশের ৮ শতাংশ শিশু একাকীত্ব নিয়ে বেড়ে উঠছে, যার সংখ্যা ৩২ লাখ। আর ২০ শতাংশ অর্থাৎ ৮০ লাখ শিশু রোগা, বাবা-মা রোগাক্রান্ত এমন শিশুর ক্ষেত্রে এর সংখ্যা ৩৪ শতাংশ বা ১ কোটি ৩৬ লাখ। সারা দেশে মোট ৪ কোটি শিশুর হিসাবে এই অনুপাত দেয়া হয়েছে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), পল্লীমা গ্রীণ এবং মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশন শিশু-কিশোরদের পরিবেশ, জীবনচর্চা এবং রোগ নিয়ে ঢাকার ৪টি স্কুলের ৭ থেকে ৯ বছর বয়সী ১ হাজার ৪৫১ শিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা পরিচালনা করে এ তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে ৮৫৮ জন মেয়ে এবং ৫৯৩ জন ছেলে।

বাংলাদেশের শিশুদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ এবং জীবনাচার পদ্ধতির বর্তমান পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরতেই এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। শুক্রবার পল্লীমা সংসদ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

সমীক্ষায় দেখা যায়, ৭ থেকে ১৫ বছরের বয়সী শিশু-কিশোরদের ৮ শতাংশ একাকী থাকতে পছন্দ করে। দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ধরা হলে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩২ লাখ। শিশু-কিশোরদের এই একাকীত্ব তাদেরকে সামাজিক নানা অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দেবে, যা ইদানীং অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।

সমীক্ষায় আরো দেখা গেছে, সময়মত খাবার খায় না ৭৪ শতাংশ শিশু। ২২ শতাংশ শিশু পড়ার টেবিল, বইখাতা গুছিয়ে রাখে না। দাঁত ব্রাশ করে না ৪ শতাংশ শিশু। শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করে না ৫৯ শতাংশ। কাপড়-চোপড় নিজে পরিষ্কার করে না ৫৯ শতাংশ। ১৮ শতাংশ শিশু মা-বাবার কাজে সহযোগিতা করে না। সন্তান নিজের কাজ করুক যেসব মা-বাবা চান না এর পরিমাণ ৩ শতাংশ। মা-বাবার মতে সন্তানের ওজন অস্বাভাবিক এমন শিশুর সংখ্যা ৩৩ শতাংশ।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান,  পল্লীমা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা হাফিজুর রহমান ময়না, সভাপতি প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান হাফিয, সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, পল্লীমা গ্রীণের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান লিটন, সদস্য সচিব আনিসুল হোসেন তারেক, মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আতিক মোরশেদ,  সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার, ডা. সমীর কুমার সাহা, শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সাদিয়া শারমিন উর্মী প্রমুখ।

এ থেকে উত্তোরণের জন্য বেশ কিছু সুপারিশও দিয়েছে সংগঠনগুলো। এর মধ্যে- শিশু-কিশোরদের সামাজিকতায় ফিরিয়ে আনতে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রের উদ্যোগ গ্রহণ করা; শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও শরীরচর্চার সুযোগ করে দেয়া; এজন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকায় খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা; সার্বক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রযুক্তিতে আসক্ত শিশুদেরকে তা থেকে দূরে রাখা।

 

বিপাশার অনামিকায় বিয়ের আংটি

অবশেষে ‘বং বিউটি’ বিপাশা বসুর অনামিকায় উঠেছে বিয়ের আংটি। করন সিং গ্রোভারের সঙ্গে বিপাশার বিয়ের দিনক্ষণও চূড়ান্ত। বিয়ে হচ্ছে ৩০ এপ্রিল। এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায়, আয়োজনে থাকবে ষোলো আনা বাঙালিয়ানা। আর বিষয়টি করন মেনে নিয়েছেন সানন্দেই।

যা হোক, হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, বলিউডের সংবাদমাধ্যমগুলো বিপাশা-করনের বিয়ের দিনক্ষণ জানানোর পাশাপাশি টুকিটাকি, করন-বিপাশার আশপাশের বিষয় নিয়েই এখন সরগরম করে তুলছে চারপাশ।

তবে এসব খবরের মধ্যে বিপাশার অনামিকায় জ্বলজ্বলে হিরের আংটিটি নজর কেড়েছে সবচেয়ে বেশি। হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, ‘বিপাশার বিয়ের আংটিটি স্বপ্নের মতো’। এ নিয়ে অবশ্য বিপাশার কোনো মন্তব্য মেলেনি।

এদিকে বিপাশা-করণ তাঁদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে যৌথভাবে সবাইকে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসা জানানোর পাশাপাশি ৩০ এপ্রিল তাঁদের বিয়ের খবরটি জানিয়ে ছবি পোস্ট করেছেন।

ইনস্টাগ্রামে এই জুটি জানিয়েছেন, তাঁরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে সবাইকে জানাচ্ছেন যে ৩০ এপ্রিল বিয়ে করতে যাচ্ছেন তাঁরা। এ বিয়ে হবে অত্যন্ত ঘরোয়া পরিবেশে। সবার আন্তরিকতা, সহযোগিতা আর ভালোবাসার জন্য বিপাশা-করন যারপরনাই কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতের পথচলায় সবার শুভেচ্ছা আর আশীর্বাদ চেয়েছেন এই জুটি।

 

‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান যেন ভুলে যেয়ো না…’

কেমন ছিল তনুর জীবনের শেষ দিনগুলো? তনুকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের একজন কর্মী।

ওকে প্রথম কবে দেখেছি, ঠিক মনে নেই। একদিন আবিষ্কার করলাম, আমাদের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারে একজন উচ্ছল নবীন কর্মী যুক্ত হয়েছে। নাটকের ব্যাপারে নিবেদিতপ্রাণ, নাচ-গানে পারদর্শী; এক কথায় সম্ভাবনাময়। ওর নাম সোহাগী জাহান, সবাই ডাকতাম তনু বলে। গত বছরেই থিয়েটারে যোগ দেয় ও, সদস্য হিসেবে। আমরাই অডিশন নিয়েছিলাম। তনু আমার গ্রুপে ছিল না। পরে শুনেছি, অডিশনের দিনই সবাই ওর প্রতিভার ঝলক দেখেছিল। প্রতিভার প্রমাণও তনু রেখেছিল অল্প কয়েক দিনেই। কলেজ ক্যাম্পাসে, মঞ্চে ও হয়ে উঠেছিল সবার প্রিয়মুখ।

থিয়েটারের সদস্য হওয়ার পর যা হয়, আমরা অর্থাৎ বড়রা নবীনদের প্রশিক্ষণ দিই। প্রশিক্ষণে মাঝেমধ্যে ও দেরি করে আসত। স্বাভাবিকভাবেই আমরা হয়তো বকাঝকা দেওয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু শেষমেশ পারতাম না! নামের সঙ্গে ওর চরিত্রের মিল ছিল, একটু আহ্লাদী ধরনের ছিল। বকা দিতে গেলেই বলে উঠত, ‘ভাইয়া ভাইয়া, প্লিজ বকা দেবেন না! আর কখনো দেরি হবে না!’ সত্যিই, তনু আর থিয়েটার ক্লাসে দেরি করে আসবে না! তনু ঘড়ির কাঁটার ঊর্ধ্বে চলে গেছে!

তনুকে কখনো গোমড়ামুখে দেখিনি। ওর মুখে হাসি লেগে থাকত। চমৎকার নাচত, ফলে ওর চোখেও হাসি হাসি ভাবটা থাকত সব সময়। ছোটবেলা থেকেই নাচ শিখত; ফলে থিয়েটারে এসে নতুন করে অনেক কিছুই শেখাতে হয়নি ওকে। কেবল কি নাচ? গানের গলাও ছিল মিষ্টি। থিয়েটারে একসঙ্গে এত গুণের একজনকে পেলে কার না ভালো লাগে! নবীন কর্মী বলে কোনো নাটকে অভিনয়ের জন্য মঞ্চে ওঠা হয়নি তনুর। প্রথম প্রথম যেটা হয়, মঞ্চের পেছনে কাজ করে নবীনরা। তনুও তা-ই করত। গোমতীর উপাখ্যানপাপ ডাকে অন্ধকার নাটক দুটির নেপথ্যসংগীত গেয়েছিল তনু। ১৩ ও ১৪ মার্চে আমরা পয়লা বৈশাখের প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। সেখানে বিপুল উৎসাহে অংশ নিয়েছিল তনু। আমাদের অনুষ্ঠানমালায় ওর নাচ ছিল গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। তনু নেই, এবারের পয়লা বৈশাখ আমাদের জন্য এত বিষাদের হবে, কে জানত!

ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের কর্মীদের সঙ্গে তনু। ছবি: সংগৃহীতকেবল থিয়েটারে নয়, অল্প কয়েক দিনে কলেজের অনেক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল তনু। শিক্ষকেরাও ওর নাম শুনলে নিশ্চিন্ত হতেন, ‘ও, তনু আছে? তাহলে তো চিন্তা নেই।’ নবীনবরণ অনুষ্ঠানে নিজে থেকেই গান গাওয়ার কথা বলেছিল ও। গত মার্চ মাসে কলেজের বার্ষিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। সর্বোচ্চ তিনটি বিভাগে অংশ নেওয়া যায়। তিনটিতে অংশ নিয়ে তনু পুরস্কার জিতেছিল তিনটি বিভাগেই! একক নৃত্যে প্রথম, দ্বৈত নৃত্য ও সংগীতে দ্বিতীয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার কথা ছিল ২৬ মার্চে। সে সুযোগ আর হলো না! কেবল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের গণ্ডিতেই নয়, তনুর প্রতিভা ছড়িয়ে পড়েছিল আরও বড় পরিসরে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলোর মধ্যে যে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হয়, সেখানেও তনু সফল। নৃত্যে প্রথম হয়েছিল জেলা পর্যায়ে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় পর্যায়ে অংশ নিতে গিয়েছিল চট্টগ্রামে। ভালো করেছিল সেখানেও।

খুব সাধারণ আর পরিপাটি ছিল তনু। এক বছরে ওকে আমি তিনটি পোশাকই পরতে দেখেছি। থিয়েটারের কর্মীদের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখতে হয় আমাদের। ফলে কর্মীরা ক্লাসে বা ক্যাম্পাসে ভালো-মন্দ কেমন করছে, তা-ও আমরা জানতাম। তনুর ব্যাপারে সব সময় ইতিবাচক মন্তব্যই শুনেছি। বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষকদের সঙ্গে ওর খুব ভালো সম্পর্ক ছিল।

ওর মৃত্যুর আগে আগে, ১৭ মার্চ আমরা গিয়েছিলাম শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়ায়। সেখানে আমাদের থিয়েটারের পালাবদল ও কর্মী মূল্যায়নের অনুষ্ঠান ছিল। খুব চমৎকার সময় কেটেছে সবার সঙ্গে। ১৮ মার্চ তনু এল আমার কাছে। লাফাতে লাফাতে এসে বলল, ‘ভাইয়া, আপনার সঙ্গে একটা ছবি তুলব।’ ছবি তুলল। সারা দিন কথায়, গানে মাতিয়ে রাখল সবাইকে। চা-বাগানের সবুজে ও ছিল আরও সবুজ, আরও উজ্জ্বল। সেখান থেকে ফিরতি বাসে উঠলাম আমরা ১৮ মার্চেই। বাসে ও একটা গান গাইল, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান যেন ভুলে যেয়ো না…’। কী যে চমৎকার গাইল! এখনো কানে লেগে আছে! কুমিল্লা শহরে ঢোকার আগেই ওর বাসা। বাস থেকে নামবে। ওর ভাই এসেছে নিতে। থিয়েটারের বড় ভাই হিসেবে দায়িত্বের জায়গা থেকে বললাম, ‘বাসায় গিয়ে ফোন করো।’ বাসায় গিয়ে ঠিকই ফোন করল। বলল, ‘ভাইয়া, বাসায় এসে পৌঁছেছি।’ সেটাই ওর সঙ্গে শেষ কথা হবে কে জানত!

 

সফলতার জন্য নূহার চ্যালেঞ্জ

মিষ্টি এই মেয়েটির ছোট বেলা থেকে চোখে মুখে লেগে থাকত আনন্দের ছোঁয়া।সেই মানুষটির জীবনের লক্ষ এমন কিছু করতে হবে যা মানুষের উপকারে আসে। যার মধ্যে থাকবে সৃষ্টিশীলতা আর আনন্দের অনুভূতি। অন্যদিকে তার পরিবারের ইচ্ছে মেয়েকে বড় হয়ে ডাক্তার হতে হবে।কিন্তু সৃজনশীলতা যার মন ও মগজে সে কি করে মানুষের শরীর কেঁটে অপারেশন করবে? সেখানে তো নতুনত্ব সৃষ্টি করা অসম্ভব। স্বাভাবিক ভাবেই এবার স্রোতের বিপরীতে চলার মত সাহস দেখাতে হল তাকে। হাঁটতে হল নিজের স্বপ্ন পূরনের পথে। যদিও তিনি তখনও জানতেন না কি করবেন বড় হয়ে। তবে এতটুকু জানতেন যা কিছুই করেন না কেন তা হবে সবার থেকে একটু আলাদা, একটু ব্যতিক্রম।

ফেসবুক ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসা করা সম্ভব তা যেন হটাত করেই মাথায় আসলো তার। কিন্তু ভাললাগার কাজে সফলতা পেতে বড় এই চ্যালেঞ্জকে শুধুমাত্র ফেসবুকের মাধ্যমে কিভাবে বাস্তবে রুপ দেওয়া সম্ভব বুঝতে পারছিলেন না। তার ওপর ব্যবসার পুঁজি বলতে হাত খরচের জমানো ৫০০০ টাকা ছাড়া আর কিছুই নেই। ফেসবুকে ওয়েডিং এক্স-কার্সন নামে একটি পেইজ ক্রিয়েট করলেন। ইনভাইট করলেন তার ফ্রেন্ডলিষ্টের সবাইকে। এবং কাছের কয়েকজনের বন্ধুদের সাথে আইডিয়াটি শেয়ার করলেন। বন্ধুরাও আগ্রহ প্রকাশ করে তার আইডিয়ার সাথে সংযুক্ত হয়ে কাজ করতে চাইলেন।

Uddoktaকিন্তু এই যাত্রার পথটি এতটা সহজ ছিল না নূহা হোসেন এর জন্য। অনেক বেশী কষ্ট করতে হয়েছে তার আইডিয়াকে বাস্তবে রুপ দিতে। সেই সাথে অবস্থান নিতে হয়েছে পরিবারের সবার বিপক্ষে। স্রোতের বিপরীতে চলতে গিয়ে কখনও কখনও যে ধাক্কা খেয়েছেন শুধু তাই নয় কাছের মানুষদের সাথে ভুল বোঝাবুঝিও হয়েছে অনেক। তবে তা সামলে নিয়েছেন নিজের বুদ্ধিমত্তার গুনেই। প্রথম কাজটি পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে চার মাসেরও বেশী সময় ধরে। ফেসবুক প্রচারণার পাশাপাশি পরিচিত এমন কেউ ছিল না যাকে বলা বাদ দিয়েছেন।

ধৈয্যহারা হয়ে যখন হাল ছাড়ার মত অবস্থা ঠিক তখনই সুখবরটা আসে। পেয়ে যান একটি কাজের সন্ধান। কিন্তু শুধুমাত্র অনভিজ্ঞ, ব্যবসায়ে নতুন এজন্য কাজ হিসেবে টাকার অঙ্ক ছিল এতটাই কম যে লাভের মুখ দেখতে পারেননি। প্রথম কাজটিতেই আর্থিক ক্ষতির স্বীকার হয়েছিলেন। তবে এরপর থেকে খুব বেশী পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি সহযোগী তিন বন্ধু সালমা আজমী, নীরব আহমেদ ও ইমতিয়াজ আহমেদ এর অক্লান্ত পরিশ্রমের কারনে। সকলেই পড়াশুনা করছেন আর স্বপ্ন লালন করে এগিয়ে চলেছেন তাদের কাজকে ভালবেসে। ফটোগ্রাফার বন্ধু ইমতিয়াজ মুহুর্ত গুলো ধরে রাখার জন্য সর্বদাই যেন মুখিয়ে থাকেন। অনুষ্ঠান গুলোকে ফুটিয়ে তুলতে সে নিত্য নতুন পরিকল্পনা সাজাতেই ব্যস্ত। অন্যদিকে বাকি দুজন অনুষ্ঠানের জন্য যা যা প্রয়োজন কাষ্টমারের চাহিদা অনুযায়ী সেইসব দিকে খেয়াল রাখেন। আর কেনাকাটা আর কাজ করার জন্য যথেষ্ট জনবলের কাজের তদারকি নিয়ে ব্যস্ততা তো তিনজনেরই থাকে। আর উদ্যোগী নুহা হোসেন তখন সবার কাজের সমন্বয় করতেই ব্যস্ত।

এত ব্যস্ততার মধ্যেই কাজের সমস্ত পরিকল্পনা আর সেলস এন্ড মার্কেটিং এর দায়িত্বটাও নিজেই পালন করছেন। তার মুখ থেকেই বলছিলেন যে কোন ব্যবসায়ের সফলতার জন্য সেলস এন্ড মার্কেটিং এর গুরুত্বের কথা। বিক্রি না থাকলে আমার অর্থ আসবে কোথা থেকে। আর অর্থের সোর্স খুজতে তো আমাকে মাঠে নামতেই হবে। আর তাই মার্কেটিংও করতে হবে। প্রচার না থাকলে তো আর আমাকে কেউ চিনবে না। কাজও দিবে না। কারন প্রচারেই তো প্রসার। যদিও নিজের বাড়িকে অফিস বানিয়ে শুরুটা হয়েছিল কাজের। পরিধি বাড়ছে দিন দিন। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সামনেও পড়তে হচ্ছে তাকে।

12935206_1359031530807683_1364389717_nতার প্রতিষ্ঠান ওয়েডিং এক্স-কার্সন বিয়ের অনুষ্ঠান, জন্মদিন কিংবা বিবাহ বার্ষিকী সেই সাথে ঘরোয়া অন্যান্য যে কোন ধরনের অনুষ্ঠানের কাজ করে চলেছে। প্রতিটা কাজকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সৃষ্টিশীলতার জ্ঞান আর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অসাধারন মুহুর্ত গুলোকে সাজানোর পাশাপাশি মান সম্মতভাবে সংরক্ষন করতে প্রচেষ্টার কোন কমতি থাকে না তার। আপনার যে কোন অনুষ্ঠানের জন্য তাদের ফেইসবুক পেইজ ওয়েডিং এক্স-কার্সন অথবা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত নাম্বার ০১৬৭-২০৪২২৪৮ যোগাযোগ করতে পারেন।

আগামীতে উদ্যোক্তা হতে চায় যারা তাদের জন্য পরামর্শ চাইতেই যেন তার পূর্ব অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে বলা শুরু করলেন কোন কিছু করতে টাকার চাইতে ইচ্ছা শক্তি আর চেষ্টাটা বেশী থাকতে হবে। অফিস নিয়েই ব্যবসা শুরু করতে হবে এ ধারনার বাইরে এসে কাজ শুরু করতে হবে। আপনার হয়ে যারা কাজ করবে তাদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করে কাজ এগিয়ে নিতে হবে। সেই সাথে ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে মার্জিত হয়ে কথা বলতে হবে। সব সময় শেখার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ভালবেসে কাজ করতে হবে। আর কাজকে টাকা দিয়ে বিচার না করে ভালবাসা দিয়ে বিচার করতে হবে। সফলতার মুখ না দেখা পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে হবে। কারন পরিশ্রম আর অধ্যবসায় ছাড়া কখনোই সফল হওয়া যায় না।

মাসুদুর রহমান মাসুদ

 

বিয়ে করতে চলেছেন? এই কাজগুলো করেছেন তো?

বিয়ে একজন মানুষের জীবনের খুব সুন্দর আর স্বপ্নময় একটা সময়,  যাকে ঘিরে অনেকেই মনে মনে অনেক কিছু ভেবে রাখেন। বিয়ে কোথায় হবে, কেমন হবে, কে কে আসবে, কী খাবার থাকবে, কতটা খরচ পড়বে, সংসারের খরচ কেমন করে চলবে, কতটা স্বাবলম্বী হতে হবে- এসবটাই মাথায় রেখে নিজের নিজের মতন করে ভাবতে পছন্দ করেন অনেকে। আপনি যদি হন তাদেরই ভেতরে একজন, তাহলে এই লেখাটি আপনারই জন্যে। আচ্ছা, কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, মানসিক আর পারিবারিক দিক থেকে বিয়ের জন্যে প্রস্তুত হলেও সত্যিই কোন কিছু বাদ পড়ে গেল কিনা? কিছু কি সত্যিই ছুটে গেল প্রস্তুতির অংশ থেকে? আপনাকেই বলছি, বিয়ের আগে একবার হলেও ভেবে দেখুন নিচের  কাজগুলো করেছেন কিনা। অন্যথায় বিয়ের জন্যে প্রস্তুত আপনি- একটু হলেও হয়তো সন্দেহ রয়েই যাবে! চলুন তাহলে দেখে নিই বিয়ে নিয়ে ভাববার আগে প্রস্তুতিমূলক অবশ্যই করণীয় কিছু কাজ।

১. নিজের হৃদয় ভাঙা

শুনতে খুবই পাগলাটে ধরনের মনে হলেও সত্যি যে পাকাপাকিভাবে কোন সম্পর্কে নিজেকে বাঁধবার আগে একবার হলেও অন্তত নিজের হৃদয়কে ভাঙার অভিজ্ঞতা থাকা উচিত আপনার। এতে করে সম্পর্কের ভুল-ঠিক, ভালো-খারাপ খুঁটিনাটি অনেকটাই জানা হয়ে যাবে আপনার। ফলে এরপরের সম্পর্কের জন্যে অনেকটাই সঠিক পথে চলতে পারবেন আপনি আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে।

২. মানুষকে চেনা

কাউকে সারাটা জীবনের জন্য নিজের সাথী করে নেওয়ার আগে আপনার নিশ্চয়ই উচিত হবে এটা জানা যে ঠিক কি ধরনের মানুষের সাথে আপনি আপনার জীবনটা কাটাতে চান? আর সেটা জানতে হলেই আপনাকে জানতে হবে মানুষের রকমফের সম্পর্কে। কোন মানুষ কেমন হয়, তাদের চিন্তা-ভাবনা, সঙ্গ, ভালো লাগা- মন্দ লাগা আর সেসবের সাথে নিজের চাওয়া-পাওয়ার মিল ঘটানো- এসব জানতে গেলে অবশ্যই মানুষের সাথে মিশতে হবে আপনাকে ( লাইফহ্যাক )।

৩. নিজেকে চেনা

অন্য কাউকে চিনতে যাওয়ার আগে নিজেকেও ভালো করে চিনে নিন। অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে অন্যদের ইচ্ছেমতন চলতে গিয়ে নিজে কি হতে চেয়েছিলেন, কি করতে চেয়েছিলেন- সেটা বেমালুম ভুলে যায়। ফলে নিজের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকায় অন্যদের সম্পর্কেও ধারণাটা ঠিকঠাকভাবে পায় না তারা। ভুল সিদ্ধান্ত নেয় আর সমস্যায় পড়ে। তাই আগে নিজেকে জানুন। কি করতে চান আপনি? কোন ব্যাপারগুলোতে কখনোই অন্যের জন্যে পিছু হটবেননা? আপনার স্বপ্ন কী? ভাবুন আর নিজেকে আবিষ্কার করুন।

৪. একলা সময় কাটানো

পুরোটা জীবন তো অন্যদের সাথেই কাটাতো হবে। তাই বিয়ের মতন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একলা কিছু সময় কাটান। ঘুরতে চলে যান কোথাও। নিজেকে সঙ্গ দিন। চেনা মানুষের বাইরে অন্য কোন বন্ধু বানান। অন্যদের সাথে নিজে কতটা সহজ সেটা দেখার চেষ্টা করুন। কে জানে, এই একলা কাটানো সময়গুলোই হয়তো আপনার কাছে নিজেকে আর অন্যকে প্রকাশ করবে ভিন্নভাবে।

৫. নিজের পরিচয় গড়া

কেন আপনি বিয়ে করতে চাইছেন? প্রথমে এই কারণটি খুঁজে বের করুন ( রলগাই )। এর সাথে যদি নিজের জীবন অন্য কাউকে পরিচালনার অধিকার দেওয়ার কোনরকম সম্পর্ক না থাকে তাহলে বিয়ের আগেই নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করুন। নিজের আলাদা একটা পরিচয় গড়ে তুলুন। যাতে করে আপনার ভবিষ্যত এই একটি মাত্র কাজে খুব বেশি প্রভাবিত না হয়।

৬. খুঁটিনাটি ব্যাপার শেখা

বিয়ের মাধ্যমে নানারকম সম্পর্কে পা রাখার আগেই শিখে নিন কিছু ছোটখাটো কাজ। এই যেমন- নিজের যত্ন নেওয়া, নিজেকে ভালোবাসা, টুকটাক ঘরের কাজ করতে পারা, মানুষকে বিশ্বাস করা, যৌক্তিকভাবে কোন ব্যাপারকে বিশ্লেষণ করা- ইত্যাদি। তাহলে আপনি নারী হোন বা পুরুষ, বিয়ের পরবর্তী সময়গুলো একটু হলেও স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠবে আপনার জন্যে।

 

লিখেছেন-

সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

 

নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকনের দাফন সম্পন্ন

বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন সোমবার সকাল সোয়া ৮টায় উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি।

প্রিয় কর্মস্থল বিএফডিসিতে বাদ আসর জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকনের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বাদ জোহর খোকনের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দ্বিতীয় জানাজা শেষে আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে উত্তরায় এই নির্মাতার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

উল্লেখ্য, চলচ্চিত্র নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকন দীর্ঘদিন ধরে নিউমোনিয়ার সমস্যা এবং শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে ভুগছিলেন।

শহীদুল ইসলাম খোকন দীর্ঘদিন ধরে মুখগহ্বরে মটর নিউরো ডিজিসে (এএলএস) ভুগছিলেন। গত ৭ জানুয়ারি তার কণ্ঠনালিতে একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে।

এর আগে ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হয়। সেখানকার বেলভিউ হাসপাতালের চিকিৎসকরা এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই বলে জানান। এরপর তিনি ফিরে আসেন দেশে।

 

বাচ্চাদের টিফিনে তৈরি করে ফেলুন পরোটা চিকেন ফ্র্যাঙ্কি

বাচ্চাদের টিফিনে কী খাবার দেওয়া হবে তা নিয়ে মায়েদের চিন্তার শেষ নেই। আজ বার্গার, কাল স্যান্ডউইচ, পরশু নতুন কোন খাবার। প্রতিদিন নতুন নতুন খাবার তৈরি করা খানিকটা কঠিন। এই সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন আজকের রেসিপি থেকে। চিকেন শর্মা সব বাচ্চারা পছন্দ করে থাকে। শর্মার মত মুরগি দিয়ে তৈরি একটি খাবার হল পরোটা চিকেন ফ্র্যাঙ্কি।

উপকরণ:

  • ১/২ কাপ আটা
  • ১টি ক্যাপসিকাম
  • ১/২ চা চামচ চাট মশলা
  • ৫০০ গ্রাম মুরগির মাংস
  • ১ টেবিল চামচ লাল মরিচ গুঁড়ো
  • ধনেপাতা কুচি
  • ১ চা চামচ ধনিয়া গুঁড়ো
  • ১ চা চামচ জিরা গুঁড়ো
  • ১টি ডিম
  • ১ টেবিল চামচ আদা রসুনের পেস্ট
  • ১টি লেবুর রস
  • ১ কাপ ময়দা
  • ২ টেবিল চামচ তেল
  • ১টি পেঁয়াজ কুচি
  • ৩টি টমেটো কুচি
  • হলুদ এক চিমটি
  • পানি
  • লবণ

প্রণালী:

১। একটি পাত্রে ময়দা, লবণ, আটা তেল দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। এরপর এতে পানি দিয়ে ভাল করে ডো তৈরি করুন। একটি পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে ১৫ মিনিট রেখে দিন।

২। নন-স্টিক প্যান চুলায় দিন। এতে তেল দিয়ে দিন। তেল গরম হয়ে আসলে জিরা, আদা কুচি,রসুন কুচি, পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ৫ মিনিট নাড়ুন।

৩। পেঁয়াজ বাদামী হয়ে আসলে এতে মুরগির মাংসগুলো দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়ুন।

৪। তারপর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে অল্প আঁচে রান্না করুন।

৫। মাংস নরম হয়ে আসলে এতে লেবুর রস, চ্যাট মশলা, ধনে পাতা কুচি, চ্যাট মশলা দিয়ে দিন।

৬। এরপর ডো দিয়ে পাতলা করে বেলে পরোটা তৈরি করে নিন [পরোটা ভাজঁটি দেখে নিন ভিডিওতে]।

৭। এখন প্যানে পরোটাটি দিয়ে তার উপর তেল এবং ডিম ছড়িয়ে দিন।

৮। পরোটা ফুলে উঠলে নামিয়ে ফেলুন।

৯। এবার পরোটার ভিতরে মুরগির মাংস, পেঁয়াজ কুচি, ক্যাপসিকাম কুচি, লেবুর রস দিয়ে দিন। পরোটাটা রোল করে পেঁচিয়ে নিন।

১০। ব্যস তৈরি হয়ে গেল মজাদার পরোটা চিকেন ফ্র্যাঙ্কি।

 

ফ্যাশনে হরেক রকমের রিফ্লেক্টর্স

বাইরে যা রোদ, চোখ খুলে তাকানো যাচ্ছে না। তবে এখনও তো সেই গরম পড়েনি। সবে এপ্রিল মাসের শুরু। এরই মধ্যে রোদের যা তেজ। বাইরে যাওয়ার আগে তাই যাবতীয় রোদ এড়ানোর সামগ্রী থাকা চাই। সঙ্গে মাস্ট সানগ্লাস। তবে সাদামাটা সানগ্লাসের বদলে রিফ্লেক্টর্স লেন্সযুক্ত সানগ্লাস এখন খুবই ফ্যাশনেবল। প্রচণ্ড গরমে কুল লুকস পেতে আপনিও বেছে নিতে পারেন নানা রকমের রিফ্লেক্টর্স-

ব্রিজ রিফ্লেক্টর্স : গোলাকৃতি এই ফ্রেমের সঙ্গে রিফ্লেক্টর্স লেন্সযুক্ত এই সানগ্লাস এখন খুবই জনপ্রিয়।

রাউন্ড রিফ্লেক্টর্স : গোলাকৃতি ফ্রেমের রিফ্লেক্টর্স আপনাকে দেবে ক্যাজুয়াল লুকস।

ডাবল-ফ্রেম রিফ্লেক্টর্স : সবকিছুতেই আপনি যদি একটু বেশি ফ্যাশনেবল হয়ে থাকেন, তবে এই রিফ্লেক্টর্স ব্যবহার করতে পারেন। ডাবল ফ্রেমযুক্ত রিফ্লেক্টর্স সকলের মাঝে নজর কাড়বে।

মেটাল অ্যাভিয়েটর রিফ্লেক্টর্স : মেটালের রিফ্লেক্টর্স এখন খুবই জনপ্রিয়। তার মধ্যে এটি অন্যতম।

রেট্রো রিফ্লেক্টর্স : এই গরমে ট্রাই করতে পারেন রেট্রো স্টাইল। মানানসই ড্রেসের সঙ্গে পরে নিতে পারেন রেট্রো স্টাইলের রিফ্লেক্টর্স।

আই ক্যাট রিফ্লেক্টর্স : ক্যাট আই স্টাইলের চশমার ফ্রেম কি আপনার পছন্দের? তবে বেছে নিতে পারেন ক্যাট ফ্রেম ও গোল্ড-রোজ় লেন্সের রিফ্লেক্টর্স।

ক্লাবমাস্টার রিফ্লেক্টর্স : মোস্ট ক্যাজ়ুয়াল লুকস পেতে পরতে পারেন ক্লাবমাস্টার রিফ্লেক্টর্স।

 

জীবনের উদ্দেশ্য জানুন ‘শর্টকাট’ উপায়ে

জীবনে সফল হতে চাই সবাই। আমাদের সবারই প্রয়োজন অর্থ, বিত্ত, সম্মান। কিন্তু কীভাবে? সামনে অনেক পথ। কিন্তু কোন পথটি একান্তই আমার? বিষয়টি নির্ধারণ করা কিন্তু খুব সহজ নয়। পরিবেশের প্রভাবে অনেক কিছুই আমরা করতে পারি না যেমন চাই।

আপনি হয়ত স্বপ্ন দেখেছে, চিত্রকর হবেন। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থা এমন যে, বাধ্য হয়ে হঠাৎই ঢুকে গেলেন যেমন-তেমন কোন একটা কাজে। হতাশা ঘিরে ধরবে আপনাকে, বোধ হবে জীবন অন্ধকার। কিন্তু একটু আগে থেকেই যদি গুছিয়ে নিই আমরা? আমরা যদি আমাদের লক্ষ্য অনেক আগে থেকেই জানি, তাহলে কিন্তু এগিয়ে যেতে পারি অনেকটা পথ আগে থেকেই। হঠাৎ বিপর্যয় এলে মোকাবেলা করাও সহজ হয়।

আসুন জেনে নিই কীভাবে নির্ধারণ করবেন, আপনার কী চাই!

কেন লক্ষ্য নির্ধারণ জরুরী?

আগে লক্ষ্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তাটা বুঝতে হবে আপনাকে। আপনি যখন একটি গোছানো জীবন পাচ্ছেন, যেখানে আপনার বাবা-মা ইতিমধ্যেই একটি সামাজিক মর্যাদা তৈরি করেছেন সমাজে, একটি আর্থিক অবস্থান আছে আপনার পরিবারের, সেখানে নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করাটা আপনার কাছে এখনই দরকারি মনে নাও হতে পারে। কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে, এর কোন কিছুই আপনার না। নিজের পরিচয় নিজে গড়তেই নিজেকে তৈরি করা প্রয়োজন।

বাস্তবতার দিকে খেয়াল করুন 

সময় আপনার আছে, কিন্তু সময় চিরকাল থাকবে না। যে কোন সময় যে কোন দূর্ঘটনা বদলে দিতে পারে জীবনের স্রোত। তাই লক্ষ্য ঠিক করার আগে বাস্তবতার দিকে নজর দিন। হ্যাঁ, কঠিন চ্যালেঞ্জিং একটি পেশা আপনি বেছে নিতেই পারেন। কিন্তু সেটির জন্য পর্যাপ্ত পরিশ্রম দিতে আপনি প্রস্তুত কিনা তাও ভাবুন।

আপনি কোথায় আছেন

মনে হতে পারে আপনি খুব ভাল আছেন। অথবা বিপরীত ভাবে খুব খারাপ অবস্থায় আছেন বলেও বোধ হতে পারে আপনার। কিন্তু বাস্তবতা হল, আপনি আমি আমরা সবাই এক শূন্য অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছি। এর পর কী আছে, জানি না আমরা কেউ। এই শূন্য অনিশ্চিত অবস্থা মেনেই যাত্রা শুরু করতে হবে আমাদের। তাই লক্ষ্য হতে হবে এমন যাতে নিজেদের দাঁড় করাতে পারি নিশ্চিত অবস্থানে, নিজের পায়ের নীচে তৈরি করতে পারি শক্ত মাটি।

সখ নাকি প্যাশন?

আপনার হয়ত ছবি আঁকতে ভাল লাগে, আবার হয়ত গান গাইতেও। আপনার নানান সখের মধ্যে হয়ত ভ্রমণ একটি। আবার রান্নাতেও আপনি পারদর্শী। যখন আঁকেন ভাবেন চিত্রশিল্পী হবেন, গান গাইতে গাইতে ভাবেন হবেন গায়ক। ট্র্যাকিং এ গিয়ে আপনার মনে হয় কোন একটা ট্র্যাভেল শো এর এংকর হবেন। আবার রান্না করতে নিলে মনে হয় রেস্টুরেন্ট দেওয়াই আপনার কাজ। এর কোনটি আপনার সখ আর কোনটি প্যাশন বুঝে নিতে হবে আপনাকে। আপনি যদি ভুল বিষয়ে শ্রম দেন হয়ত একঘেয়ে লাগবে কিছুদিন পরেই। কিন্তু তখন পেশা বদলাতে চাইলে আবার শুরু করতে হবে শুরু থেকে।

আপনার শারীরিক অবস্থা কেমন?

এটি অনেক বড় একটি ব্যাপার। আপনি শারিরিকভাবে কেমন কাজে শ্রম দিতে প্রস্তুত সেটি জানা জরুরী। অনেক মাথা খাটিয়ে কাজ করে যেতে পারেন ঘন্টার পর ঘন্টা। অনেকে কিছু সময় পরই বলেন, “মাথাটা আর কাজ করছে না।” অনেকে সারা দিন হাড় ভাঙা খাটুনীর পর বাসায় ফিরে আবার কাজ করে। অনেকে আবার যেমন তেমন অফিস করেও ফিরেই গা এলিয়ে দেয় বিছানায়। আপনার শারীরিক ক্ষমতাকে জানুন। আলসেমী ভিন্ন বিষয়। কিন্তু কোন শারীরিক সমস্যা থাকলে, সীমাবদ্ধতা থাকলে সেটাকে গুরুত্ব দিন।

আপনি কতটা সাবলীল?

আপনি যদি একজন সাংবাদিক হতে চান তাহলে আপনাকে নানান রকম মানুষের সাথে মিশতে হবে। আপনি যদি ব্যবসায়ী হন, কাস্টমারের নানান মনমর্জি সহ্য করতে হবে আপনাকে। আবার আপনি যদি লেখক হন, লেখার কাজ সবাইকে এড়িয়ে করতে পারলেও সেটা প্রকাশ করা বা এসব কাজে যোগাযোগ করতে হবে অনেক মানুষের সাথেই। মোট কথা, পৃথিবীটা রূঢ়। এর সাথে সাবলীল হয়ে মিশতে হবে আপনাকে। নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে সেভাবেই।

 

লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

ঘুরে আসুন বিশ্বের সবচেয়ে রঙিন শহরগুলোতে

রং আমাদের কার না প্রিয়? রঙ্গীন পোশাক, রঙের উৎসব, রঙ্গীন ঋতু সবই আমাদের মনকে টানে। উচ্ছল করে তোলে, আনন্দিত করে তোলে। আমরা ভালবাসি রংকে এর বৈচিত্রের জন্য, একটা চমৎকার রংধনু দেখতে আমরা বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে পারি। এই যে মানুষের রং এর প্রতি এত ভালবাসা, সেই ভালবাসার প্রকাশ ঘটে তার শিল্পে, সৃষ্টিতে। রংপ্রিয় মানুষেরা তাই কোথাও কোথাও রাঙিয়ে দিয়েছেন গোটা শহরকে, কোথাও বা সারি সারি নৌকাকে, কোথাও বা পীচ ঢালা পথকে। আসুন জেনে নিই বিশ্বের সবচেয়ে রঙিন কয়েকটি শহরের কথা।
 
ইযামাল, ম্যাক্সিকো
ইযামালকে বলা হয় যাদুর শহর। তবে নানান রঙে রঙিন নয়, বরং এক রঙেই আভিজাত্যপূর্ণ শহর এটি। সূর্য রঙা হলুদে আঁকা এখানকার বাড়িগুলো। একটা উষ্ণ অনুভূতি তৈরি করে এখানকার পথঘাট, যা আলাদাভাবে আপনার মনোযোগ কাড়বে। এখানকার পাথুরে রাস্তাগুলোর পাশে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে লাইমস্টোন চার্চ এবং সরকারি ভবন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১৬ শতকের সান এন্তোনিও দি পাদুয়ার বাসিলিকা ভবনটি। এটি শহরের মধ্যমণি আর একই সাথে ইতিহাস এবং মিথলজির জন্য খ্যাত।
 
সেন্ট জোনস, নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং লাব্রাডর, কানাডা
সেন্ট জোনস নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং লাব্রাডর এর রাজধানী। এটি কানাডার সবচেয়ে পুরাতন শহর যার রয়েছে ১৪০০ বছরের ঐতিহ্যের ইতিহাস। শহরটি খুবই সুন্দর এবং ভ্রমণের জন্য চমৎকার। এখানে একটি অঞ্চলের নাম জেলিবিন রোও, যেখানে প্রত্যেক জাহাজের ক্যাপ্টেনের উপর নির্দেশনা দেওয়া আছে যে তাদের প্রত্যেকের বাড়ি আলাদা আলদা ঝলমলে রং এর হতে হবে। ফলে যেটা হয়েছে, দূর সমূদ্র থেকেই বাড়িগুলো চেনা যায় এবং একটা দারুণ রঙিন দৃশ্যের অবতারনা করে। এভাবে পুরো অঞ্চলটিই একটি রঙিন নগরীতে পরিণত হয়েছে।
রিও ডি জেনেরিও, ব্রাজিল
২০১০ সালে ব্রাজিলের সরকার রিও ডি জেনেরিও এর বস্তিগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করার প্রয়াসে কিছু পরিকল্পনা হাতে নেন। ডাচ চিত্রশিল্পী হাছ এবং হান পুরো এলাকাকে তাদের ক্যানভাস হিসেবে নেন। এখন এই এলাকা রঙে রঙে রঙিন। এর স্ট্রীট আর্ট, রাঙানো দেয়াল যেন রংধনুর মত ছড়িয়ে পড়েছে শহরের বুকে। এই অঞ্চল এখন পর্যটক আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। এখানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এলাকা হল ফাভেলা সান্তা মারিয়া।
রকলো, পোল্যান্ড
পোল্যান্ডের একটি চমৎকার শহর রকলো। শত শত ব্রীজ, দারুণ সব রেস্তোরা, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যের মেলবন্ধন এই শহর এখন প্রচুর পর্যটকের আকর্ষণ কেন্দ্র। রঙিন বাড়ির সারিগুলো এখানকার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। পুরো শহরটি প্রাচীন স্থাপত্যের আদলে নকশা করা, উজ্জ্বল রাস্তাগুলো যেন শহরকে দেয় নতুন জীবন, নতুন আলো।
বুনোস এয়ার্স, আর্জেন্টিনা
বুনোস এয়ার্স এর দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত লা বকা, যা মুক্ত বায়ু যাদুঘর হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এখানে পথে পথে ঘুরে বেড়ালে দেখতে পাবেন আরও মজার অনেক কিছু। স্থানীয় চিত্রশিল্পীদের করা ম্যুরাল এবং গ্রাফিতি আর্ট চমতকৃত করবে আপনাকে। রাইচিউলো নদীর মুখে যেখানে শ্রমিকদের ছিটমহলগুলো অবস্থিত, সেগুলো বানানো হয়েছে স্ক্রেপ ম্যাটারিয়াল দিয়ে এবং শৈল্পিকভাবে রং করা হয়েছে। শহরের রূপটাই বদলে দিয়েছে এই বাড়িগুলো। দূর থেকে মনে হয় যেন এক বক্স ক্রেয়ন দাঁড়িয়ে আছে।
ভালপারাইজো, চিলি
বন্দর নগরীটি এর ইতিহাস এবং সংস্কৃতির জন্যেও বিখ্যাত। এখানে আছে বিশাল বিস্তৃত যাদুঘর, ক্যাথেড্রাল, চার্চ এবং কলোনিয়াল দালানের সারি। উপকূলীয় এলাকায় রং বেরঙের নৌকার সারি আর পানিতে তাদের প্রতিচ্ছবি যেন শিল্পীর হাতে আঁকা কোন চিত্র কর্ম। বাড়িগুলো আর বোহেমিয়ান ম্যুরালগুলো এখানকার নাগরিকদের শিল্পবোধের পরিচয় বহন করে।
লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

জানুন পৃথিবীর বিখ্যাত কিছু অ্যাকুয়ারিয়ামের কথা

স্থলের চেয়ে জলের বিস্ময় অনেক গুণ বেশি। বিশাল অ্যাকুয়ারিয়াম সেই সৌন্দর্যটাকেই আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। সামুদ্রিক প্রাণীদের দেখার আনন্দ উপভোগ করার আদর্শ স্থান হচ্ছে অ্যাকুয়ারিয়াম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে বিস্ময়কর অ্যাকুয়ারিয়ামগুলো আছে সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেই চলুন।

১। সাংহাই ওশান অ্যাকুয়ারিয়াম

এটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় অ্যাকুয়ারিয়াম। এই অ্যাকুয়ারিয়ামটি এক মিলিয়ন গ্যালন পানি ধারণ করে। এই অ্যাকুয়ারিয়ামটিকে ভৌগলিক অঞ্চল অনুযায়ী বিভক্ত করা হয়েছে যেমন- চীন জোন, অস্ট্রেলিয়ান জোন ইত্যাদি। এখানে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর সংগ্রহ আছে। সাংহাই ওশান অ্যাকুয়ারিয়ামে এই গ্রহের সবচেয়ে দীর্ঘ আন্ডার ওয়াটার টানেল আছে যার পরিমাণ ৫০৯ ফুট।

২। সি অ্যাকুয়ারিয়াম

সিঙ্গাপুরের দ্যা সাউথ ইস্ট এশিয়া অ্যাকুয়ারিয়াম ২০১২ সালে উদ্বোধন করা হয়। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অ্যাকুয়ারিয়াম। এই অ্যাকুয়ারিয়ামটি ওয়ার্ল্ড সেন্টোসা কমপ্লেক্স রিসোর্ট এর একটি অংশ। ১২ মিলিয়ন গ্যালন পানির ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই  অ্যাকুয়ারিয়ামটিতে ৮০০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী আছে।

৩। জর্জিয়া অ্যাকুয়ারিয়াম

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও চমৎকার অ্যাকুয়ারিয়াম হচ্ছে আটলান্টার জর্জিয়া অ্যাকুয়ারিয়াম। এই অ্যাকুয়ারিয়ামটিতে ৫০০ প্রজাতির ১ লক্ষ ২০ হাজার জলজ প্রানী আছে। ২০০৫ সালে উদ্বোধন করা হয় এটি। প্রদর্শনীর জন্য ৬০ টি বিভাগ আছে এখানে যা ৫টি জোনে বিভক্ত যেমন- ওশান ভয়েজার, জর্জিয়া এক্সপ্লোরার, ট্রপিক্যাল ড্রাইভার, রিভার স্কাউট এবং কোল্ড ওয়াটার কুইস্ট। ওশান ভয়েজার জোনে ৬.৩ গ্যালন পানি ধারণ করে এবং এখানে তিমি হাঙ্গরদের বাস।

৪। মন্টেরি বে অ্যাকুয়ারিয়াম

ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টেরি বে অ্যাকুয়ারিয়ামটি আমেরিকা মহাদেশের সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যময় ও আকর্ষণীয় অ্যাকুয়ারিয়াম। এই অ্যাকুয়ারিয়ামটিতে আছে সিল, তিমি, জেলিফিশ, সারডিন, ওলফ ঈল ও হাঙ্গর। ১৯৮৪ সালে এটি উন্মুক্ত করা হয়। এতে অনেক বিপন্ন প্রাণী ও সংরক্ষিত আছে। এখানে ৬০০ প্রজাতির ৩৫ হাজার জলজ প্রাণী আছে।

৫। দুবাই মল অ্যাকুয়ারিয়াম

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শপিং মলের একটি হচ্ছে দুবাই শপিং মল। এই শপিং মলেই আছে পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুবাই মল অ্যাকুয়ারিয়ামটি। ২.৬৪ মিলিয়ন গ্যালন পানির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই অ্যাকুয়ারিয়ামে ৯০ প্রজাতির ৩৩ হাজার সামুদ্রিক প্রাণী আছে। এটি ৮.৩ মিটার উঁচু এবং ৩২.৮৮ মিটার প্রশস্ত অ্যাক্রিলিক গ্লাসের তৈরি প্যানেল এর অ্যাকুরিয়াম, যা এই ধরণের অ্যাকুয়ারিয়ামগুলোর মধ্যে সবচেয়ে  বড়।

বিশ্বের আরো কিছু বিখ্যাত অ্যাকুয়ারিয়াম হচ্ছে – বার্লিনের দ্যা অ্যাকুয়াডম অ্যাকুয়ারিয়াম, ইস্তাম্বুলের টুরকুয়াজু অ্যাকুয়ারিয়াম, অস্ট্রেলিয়ার পার্থের অ্যাকুয়ারিয়াম অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া, ডারবানের উশাকা মেরিন ওয়ার্ল্ড, স্পেনের ভেলেন্সিয়ার এল ওশানোগ্রাফিক অ্যাকুয়ারিয়াম ইত্যাদি।

লিখেছেন-

সাবেরা খাতুন

 

পারিবারিক ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে দারুণ ৫টি জায়গা

বন্ধুরা মিলে ঝটপট পরিকল্পনা করা বেড়িয়ে আসা যায় যেকোন জায়গা থেকে। কিন্তু পরিবার নিয়ে বেড়ানো এক বিশাল বিপত্তি। কোথায় যাবেন, কিভাবে থাকবেন, নিরাপত্তা কেমন, সবার পছন্দ মিলবে কিনা এমন নানান সমস্যা তখন সামনে চলে আসে। পারিবারিক ট্যুরগুলোতে মূল মনোযোগ থাকে বাচ্চাদের দিকে। তাদের স্বাচ্ছন্দ্য, আনন্দে যেন কোন কমতি না থাকে সেটাই থাকে সবার মূল লক্ষ্য। শিশুদের নিয়ে চমৎকার উপভোগ্য ট্যুরে যেতে পারেন এই জায়গাগুলোয়-
লিগোল্যান্ড
লিগো মানেই সৃষ্টিশীলতা। লিগোর রাজ্যে শিশুদের নিয়ে হারিয়ে যাওয়ার চেয়ে দারুণ কি হতে পারে? সেই আয়োজন নিয়েই লিগোল্যান্ড। এটি পরিবারের সাথে সময় উপভোগ করার জন্য সবচেয়ে চমৎকার বিনোদন পার্ক। এ যেন এক যাদুর পৃথিবী। সব বয়সের বাচ্চাদের জন্য নানান আয়োজন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পার্কটি। একদিনে এর সমস্ত আনন্দ উপভোগ করা অসম্ভব। এখানে আলাদা আলাদা ১০টি জোন আছে। প্রত্যেকটাই বাচ্চাদের জন্য সাজানো, তবে পরিবারের অন্য সদস্যরাও হতাশ হবেন না নিশ্চিত। মিনিল্যান্ড এই পার্কের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ, যেখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সৃষ্টির সাথে দেখা হবে আপনার যেগুলো তৈরি করা হয়েছে ২০ মিলিয়ন লিগোর ব্লক ব্যবহার করে। এখানে ৭ থেকে ১৩ বছরের বাচ্চারা অভিভাবকের সাথে ঘুরে বেড়ায়, একদিনে তারা ড্রাইভ করাও শিখতে পারে! ড্রাইভিং ভাল হলে তাদেরকে পার্কের পক্ষ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়, যা শুধু পার্কের ভেতরে গ্রহণযোগ্য। আরও অনেক মজার আয়োজন আছে যা বাচ্চাদের জন্য শিক্ষণীয় তো বটেই আবার মজারও।
ডিজনিল্যান্ড পার্ক, প্যারিস
ডিজনিল্যান্ডে প্রবেশের সাথে সাথেই নানান রকম বিস্ময় স্বাগত জানাবে আপনাকে। তৈরি হন। আপনার সাথে দেখা হবে জলদস্যুদের, দেখা হবে পরীদের, কার্টুনের মজার মজার সব চরিত্রদের। ডিজনিল্যান্ডে আছে কল্পনার জগতের সব চরিত্রদের ভিড় যা এতদিন দেখেছি শুধু টিভির পর্দায়। এই পার্কে আছে দুইটি থিম পার্ক, একটি শপিং সেন্টার, একটি ডাইনিং ডিসট্রিক্ট এবং বিনোদনকেন্দ্র। শুধু যে স্বপ্নের চরিত্রগুলোর দেখা মিলবে তাই নয়, মজার মজার রোমাঞ্চকর রাইডের ব্যবস্থাও আছে।
একুয়া ফ্যান্টাসি
তুরষ্কের বিখ্যাত ওয়াটার পার্ক এটি। প্রতিদিন ৫০০০ মানুষ ভিড় জমায় এই বিনোদন পার্কে। বাচ্চাদের জন্য স্লাইড, ওয়েভ পুলসহ নানান ব্যবস্থা তো আছেই, আপনার জন্যও আছে মজার মজার আয়োজন। এটি তৈরি করা হয়েছে মধ্যযুগীয় নির্মাণশৈলীর আদলে, এর ক্যাসল, সিঁড়ি, টাওয়ার যেকোন জায়গা থেকে লাফিয়ে পড়তে পারেন সোজা পানিতে। এখানে একটি ক্লাব আছে যেখানে তরুণরা শিখতে পারে নতুন অনেক কিছু। বাচ্চাদের খেলাগুলো তৈরি গল্প, কল্পনা আর বাস্তবতার অনন্য মিশেলে। আবার তাদের জন্য আলাদা ক্লাবে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে তারা, প্রকাশ করতে পারে তাদের মেধা, সৃজনশীলতা।
কাভালিনো বিয়ানকো
এটি একটি বিলাসবহুল ৪ তারকা হোটেল। তবে পরিবার নিয়ে বেড়ানোর জন্য এটি যেন স্বর্গ। এটি ১২৫০ মিটার এলাকা জুড়ে করা, বিভিন্ন আয়োজনে ভরপুর একটি হোটেল। শুধু এখানেই একটি ট্রিপ কাটিয়ে যেতে পারেন নিশ্চিন্তে। সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার হল, শিশুরা এখানেই এতই নিরাপদ যে, আপনার সারাক্ষণ তাদের সাথে সাথে থাকার দরকার নেই। তাদের দেখাশোনা করার লোকই আছে আলাদা। মজার মজার সব খেলায় তাদের মাতিয়ে রাখে এই গাইডরা। আপনিও পেয়ে যাবেন অবসর। বিউটি স্যালনে একটা চমৎকার স্পা অথবা শপিং মলে সেরে ফেলতে পারেন কেনাকাটা এই সুযোগে।
হলিডে ভিলেজ রহডস
গ্রিসের দারুণ একটি রিসোর্ট হল এই হলিডে ভিলেজ। কলম্বিয়ার উপত্যকা ধরে এগিয়ে বিচ থেকে মাত্র ১৫০ মিটার দূরত্বে এর অবস্থান। সব বয়সের বাচ্চাদের জন্য চমৎকার সব আয়োজন আছে এখানে। আলাদা করে করা হয়েছে কিডস ক্লাব, টিন ক্লাব এবং সাঁতার একাডেমী। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এমন যে বড়রাও হতাশ হবেন না। আপনার শিশুকে রোমাঞ্চকর আনন্দের অনুভূতি দিতে নিশ্চিন্তে চলে যেতে পারেন এখানে। শত শত মনোমুগ্ধকর আয়োজনে সার্থক হবে বাৎসরিক ছুটি। ভলিবল খেলা থেকে শুরু করে নানান রকম ইন্ডোর আউটডোর খেলা, সিনেমা দেখা, রাইডে চড়া সবই হবে এখানে।
লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে যে ৬টি মশলা

অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত স্ট্রেস করোনারি হৃদরোগের (সিএইচডি) ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। হার্টের রোগীদের অনেক খাবারে নিষেধাজ্ঞা থাকে। আবার কিছু খাবার রয়েছে যা হার্টের রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। খাবারের পাশাপাশি কিছু মশলাও আছে যা হার্টের জন্য ভাল। এমনি কিছু উপকারী মশলার নাম জেনে নেওয়া যাক।

১। মৌরি

হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ রাখতে মৌরির ভূমিকা রয়েছে। প্রতিদিনের রান্নায় রুটি, পরোটা, তরকারিতে মৌরি যোগ করুন। এটি স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীর সুস্থ রাখবে।

২। দারুচিনি

প্রাচীনকাল থেকে স্বাস্থ্য রক্ষায় দারুচিনি ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। প্রতিদিনের খাবারে এক চিমটি দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে রান্না করুন।

৩। ধনিয়া

গবেষণায় দেখা গেছে ধনিয়া কোলেস্টেরল হ্রাস করে, রক্ত থেকে খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে থাকে। এর সাথে এটি শরীরে ভাল কোলেস্টেরল তৈরি করে থাকে। এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে রান্নায় এই মশলাটি বেশি ব্যবহার হতে দেখা যায়।

৪। জিরা

জিরা খাবার সুগন্ধ করার পাশপাশি হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

৫। আদা

আদায় থাকা এনজাইম রক্তে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে। এটি রক্তজমাট বাঁধতে সাহায্য করে। তাজা আদা কুচিতে জিঞ্জারল রয়েছে যা খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে।

৬। হলুদ

এটি ধমনীতে কলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে। এছাড়া ভিটামিন বি৬ রক্তের অ্যামিনো অ্যাসিডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখে। অতিরিক্ত অ্যামিনো অ্যাসিড রক্তকোষের দেওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে যা সিএইচডির ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

এছাড়া মেথি, আমচূর পাউডার হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

লিখেছেন

নিগার আলম

 

নামাজের ১১টি অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা

নামাজ হলো ইসলাম ধর্মের প্রধান উপাসনাকর্ম। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। কিন্তু অনেকেই জানেন না নামাজ সাস্থের জন্য অনেক উপকারী। নামাজ পড়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের বেশকিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নাড়াচাড়া হয় যা এক প্রকার ব্যায়াম। এই ব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। চলুন জেনে নেই নামাজ পড়ার ১১টি স্বাস্থ্যগত উপকারিতা:
১. নামাজে যখন সিজদা করা হয় তখন আমাদের মস্তিস্কে রক্ত দ্রুত প্রবাহিত হয়। ফলে আমাদের স্মৃতি শক্তি অনেক বাড়ে।
২. নামাজের যখন আমরা দাঁড়াই তখন আমাদের চোখ জায়নামাজের সামনের ঠিক একটি কেন্দ্রে স্থির অবস্থানে থাকে ফলে মনোযোগ বাড়ে।
৩. নামাজের মাধ্যমের আমাদের শরীরের একটি ব্যায়াম সাধিত হয়। এটি এমন একটি ব্যায়াম যা ছোট বড় সবাই করতে পারে।
৪. নামাজের মাধ্যমে আমাদের মনের অসাধারণ পরিবর্তন আসে।
৫. নামাজ সকল মানুষের দেহের কাঠামো বজায় রাখে। ফলে শারীরিক বিকলঙ্গতা লোপ পায়।
৬. নামাজ মানুষের ত্বক পরিষ্কার রাখে যেমন ওজুর সময় আমাদের দেহের মূল্যবান অংশগুলো পরিষ্কার করা হয় এর ফলে বিভিন্ন প্রকার জীবাণু হতে আমরা সুরক্ষিত থাকি।
৭. নামাজে ওজুর সময় মুখমণ্ডল তিন বার ধৌত করার ফল আমাদের মুখের ত্বক উজ্জল হয় এবং মুখের দাগ কম দেখা যায়।
৮. ওজুর সময় মুখমণ্ডল যেভাবে পরিষ্কার করা হয় তাতে আমাদের মুখে একপ্রকার মেসেস তৈরি হয় ফলে আমাদের মুখের রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং বলিরেখা কমে যায়।
৯. কিশোর বয়সে নামাজ আদায় করলে মন পবিত্র থাকে এর ফলে নানা প্রকার অসামাজিক কাজ থেকে সে বিরত থাকে।
১০. নামাজ আদায় করলে মানুষের জীবনীশক্তি বৃদ্ধি পায়।
১১. কেবলমাত্র নামাজের মাধ্যমেই চোখের নিয়ম মত যত্ন নেওয়া হয়। ফলে অধিকাংশ নামাজ আদায়কারী মানুষের দৃষ্টিশক্তি বজায় থাকে।

 

ওবামার নৈশভোজে আমন্ত্রিত প্রিয়াঙ্কা

ক্যারিয়ারে সাফল্যের একেবারে তুঙ্গে রয়েছেন বলি সুন্দরী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। একের পর এক সাফল্যের পালক জুড়েই চলেছে নায়িকার মুকুটে। বলিউডের গণ্ডী ছাড়িয়ে সোজা পাড়ি হলিউডে(কোয়ান্টিকোতে)। তারপর অস্কারের মঞ্চে। এবার একেবারে হোয়াইট হাউজে। খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে নৈশভোজে আমন্ত্রিত তিনি।

‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’য় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী চলতি মাসে হোয়াইট হাউজের করেসপনডেন্টস ডিনারে উপস্থিত থাকবেন তিনি। এই ডিনারের হোস্ট খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা।

তবে আপাতত কোয়ান্টিকোর শুটিং-এ ব্যস্ত প্রিয়াঙ্কা। কোয়ান্টিকোর নতুন সিরিজের শুটিং করছেন তিনি। পাশাপাশি, নতুন ছবি বেওয়াচের জন্যও সময় দেওয়া রয়েছে তাঁর। তাই প্রিয়াঙ্কা ডিনারে যোগ দিতে পারবেন কি না, সে বিষয়টি এখনও পরিস্কার নয়।

অবশ্য, এই নৈশভোজে উপস্থিত থাকবেন হলি তারকা ব্র্যাডলি কুপার, লুসি লিউ, জেন ফন্ডা প্রমুখ।

 

একটি ‘অচল’ আইনে তনুর ময়নাতদন্ত চাই!

সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে যা ঘটেছে, তা আমাদের দেশে বহুক্ষেত্রেই ঘটে থাকে, এমনকি এর চেয়েও অভাবনীয় অনিয়ম ঘটে থাকতে পারে। কিন্তু গণমাধ্যমে হইচই হওয়া কিছু ঘটনা ছাড়া অটোপসি বা ময়নাতদন্ত এবং হত্যা মামলার বিচারে তার কার্যকারিতা নিয়ে সমাজে তর্ক-বিতর্ক খুবই কম বা নেই বললেই চলে। তনু হত্যাকাণ্ডের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের সঙ্গে কোনো একজন ‘জুনিয়র’ চিকিৎসকের করা প্রথম ময়নাতদন্তের বড় অসংগতি নিয়ে গণমাধ্যমে খবর পড়ে জানতে ইচ্ছে হলো এ-সংক্রান্ত আইনকানুন কী বলে। কখনো তো এটা শুনি না যে অমুক হত্যা বা ধর্ষণের ঘটনার ময়নাতদন্তে অমুক আইন বা কোনো বিধিবিধান বা নীতিমালার কোনো লঙ্ঘন ঘটেছে। অনুসন্ধানে পাওয়া ফলাফলে স্তব্ধ হওয়ার দশা। আমাদের কোনো আইন নেই। অপরাধ, ফরেনসিক মেডিসিন ও বিচারজগতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা কখনো ময়নাতদন্ত আইন থাকা না-থাকা নিয়ে কখনো প্রশ্ন তুলেছেন বলে মনে পড়ে না।
আইন খুঁজতে গিয়ে পেয়ে যাই অবাক করা ২০০৭ সালের দিল্লি হাইকোর্টের একটি রায়। আর জানতে পারি বাংলাদেশে কখনোই প্রয়োগ না করা ১৮৭১ সালের করোনার্স অ্যাক্টের কথা। করোনার অর্থ হলো অপঘাতজনিত বা সন্দেহজনক মৃত্যুর কারণ তদন্তকারী বিচারক। ওই আইনটি এখনই প্রয়োগ করলে আমরা দেশে করোনার নিয়োগ করতে পারি। তখন আর কোনো হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধানের মর্জিনির্ভর কোনো ‘জুনিয়র’ চিকিৎসক দিয়ে যেনতেন প্রকারে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট করানোর সুযোগ থাকবে না। ওই আইনের ১২ ধারা যদি কার্যকর হতো, তাহলে তনুর লাশ উদ্ধারের পর করোনারকে ডাকা হতো। করোনার তখন অনধিক ১৫ জন বিশিষ্ট নাগরিককে ডাকতেন। তাঁরা হতেন জুরি। তনু কোন প্রেক্ষাপটে কখন নিহত হলেন, সে বিষয়ে যেকোনো এক রোববার শুনানি হতো। প্রথম শুনানির দিনেই করোনার জুরিদের উপস্থিতিতে তনুর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতেন। এরপর করোনার সাক্ষ্যদের নাম ঘোষণা করতেন। তাঁদের শপথ নিতে হতো। ১৮ ধারা অনুযায়ী ময়নাতদন্তকালে রাসায়নিক বিশেষজ্ঞেরও ডাক পড়ত। ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী করোনার একজন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে গণ্য হতেন। এই আইন মানা হলে ‘জুনিয়র’ চিকিৎসককে তনুর মাথার জখম ও আঁচড়ের দাগ উল্লেখ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকত না। আইনের সব শর্ত পূরণ ছাড়া তনুর লাশ দাফনের ওয়ারেন্ট জারি করাই সম্ভব হতো না।
এই আইনের গুরুত্ব অপরিসীম, বিশেষ করে যদি আমরা নিহতদের প্রতি কোনো দায় স্বীকার করি। এই সরকারের প্রথম ভাগে বছরে খুনের ঘটনা ঘটত তিন হাজার, এখন আমরা বছরে চার হাজার হত্যাকাণ্ডের দেশে পরিণত হয়েছি। এর দ্রুত বিচার দূরে থাক, যেসব পরিবার স্বজন হারায়, তাদের কত শতাংশ নিহত হওয়ার প্রকৃত কারণটা জানতে পারে, সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন। তনুর মৃত্যু সারা দেশে আলোড়ন তুলেছে, সর্বস্তরের মানুষের মানবিক অনুভূতিকে আঘাত দিয়েছে। তনুর ময়নাতদন্ত নিয়ে যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটল, তার যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সেই লক্ষ্যে কোনো উপযুক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ১৮৭১ সালের আইন বা তার আদলে করা নতুন কোনো আইন দ্রুত বাস্তবায়নের আবেদন জানাব।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত পাঁচ মাসের একটি শিশু ইংল্যান্ডে মারা গিয়েছিল। সেখানে দুবার ময়নাতদন্ত হয়। প্রথমটি করেছেন করোনার। দ্বিতীয়টি করেছে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেনসিক মেডিসিন অ্যান্ড সায়েন্স বিভাগ। কিন্তু মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুদ্ঘাটিত থাকে। বাবা-মা সন্তুষ্ট হন না, তাঁরা ‘মেডিকেল নেগলিজেন্স’ সন্দেহ করেন, কিন্তু প্রমাণ করতে বিফল থাকেন। এরপর নিরুপায় হয়ে তাঁরা মৃত্যুর সাত বছর পরে ২০০৭ সালে শিশুটির লাশ ভারতে আনেন। আর তখন তাঁরা শিশুটির ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নিলে আইন কী বলে, সেই প্রশ্ন ওঠে। সোশ্যাল জুরিস্ট নামে একটি সংগঠন দিল্লি হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করে। আদালত তাঁর রায়ে মন্তব্য করেন যে ইংল্যান্ডের ১৯৮৮ সালের করোনার্স অ্যাক্ট, যা দ্বারা ময়নাতদন্ত নিয়ন্ত্রিত হয়, তার সঙ্গে তুলনা করা চলে এমন কোনো আইন ভারতের নেই। অতঃপর তাঁরা ১৯৮৮ সালের ইংল্যান্ডের (ইতিমধ্যে সেখানে ২০০৯ সালের নতুন আইন এসেছে) ময়নাতদন্ত আইনের অনুরূপ একটি আইন করার সুপারিশ রেখে বিষয়টি আইন কমিশনে পাঠান।
এখানে উল্লেখ্য, ভারতীয় ময়নাতদন্ত করোনার আইন দিয়ে না চললেও তাদের সুপ্রিম কোর্ট গাইডলাইন করে দিয়েছে। একটি পোস্টমর্টেম কিট কেবল একটি লাশে ব্যবহার, অচিহ্নিত লাশের বাধ্যতামূলক ভিডিওগ্রাফি, ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ২০ মিলিলিটার রক্ত, ১০০ গ্রাম মাংস, একটি সম্পূর্ণ হাড়, চুল বা নখ রাখতে হবে। ভিসেরায় ব্যবহার করা যকৃৎ ও পাকস্থলির ৫০ মিলিলিটার সংরক্ষণ করতে হবে। আর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হবে এতটাই বিস্তারিত, যা পড়ে সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে। ময়নাতদন্ত বিষয়ে ভারতীয় বিশেষজ্ঞ ড. জয়সিং মোদির বইটিই আমাদের দেশে সবেধননিলমণি। ২০১১ সালে মাদ্রাজ হাইকোর্ট বলেছিলেন, মোদির বইয়ে বর্নিত গাইডলাইন ময়নাতদন্তে মানতে হবে। কিন্তু আমাদের চিকিৎসা শিক্ষায় সব থেকে অবহেলিত এই শাস্ত্র, খুবই কম নম্বর, তেমন করে পড়তে হয় না বললেই চলে। আসলে দেশের সবগুলো মেডিকেল, আইন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে সব থেকে অবহেলিত হলো আইনঘটিত চিকিৎসাবিদ্যা, যা ফরেনসিক মেডিসিন বা মেডিকেল জুরুসপ্রডেন্স হিসেবে পরিচিত। এ বিষয়ে সরকার ও বিচার বিভাগীয় আশু হস্তক্ষেপ দরকার।
বিচারপতি লক্ষ্মণানের নেতৃত্বাধীন ভারতের আইন কমিশন ২০০৮ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল যে দিল্লির হাইকোর্ট তাঁর রায়ে আইন না থাকার যে তথ্য উল্লেখ করেছেন, তা সঠিক নয়। যদিও ১৮৭১ আইনটি কেবল বোম্বে ও ‘কলকাতা প্রেসিডেন্সির’ জন্য প্রযোজ্য ছিল। এরপর আইন কমিশন যা বলেছে, তা আমাদের আইন কমিশনও বলতে পারে যে যদিও ময়নাতদন্তের বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৪ থেকে ১৭৬ বিধিতে উল্লেখ আছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও ‘একটি পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্ত আইন (করোনার্স অ্যাক্ট) করা সময়ের দাবি’।
আমরা, এই ভূখণ্ডের মানুষ কমবেশি ওই আইনের পূর্বসূরি ছিলাম। আমি একজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ আইনজীবীকে খুদে বার্তা পাঠালাম। বললাম, আমি যুক্তি দিতে চাই, ১৮৭১ সালের আইনটি বাংলাদেশ সংবিধানের আওতায় এখানে এখনই প্রয়োগ করা চলে। আমাকে গত শনিবার তিনি জানালেন, ওই আইনটি শুধু কলকাতা ও বোম্বের জন্য করা হয়েছিল। আইনটি প্রাদেশিক ছিল, সমগ্র ভারতের জন্য প্রযোজ্য ছিল না। তাই পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় আইনের তালিকায় সেটি বাদ পড়েছে, আমাদের তালিকায়ও সে কারণে নেই। তদুপরি বিনয়ের সঙ্গে এই যুক্তি দেখাতে চাই যে এই আইনটা অত্যন্ত দরকারি ও জনগুরুত্বসম্পন্ন। আর তা ভূখণ্ডগত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কোনো বিষয়সংক্রান্ত নয়, এটা সর্বজনীন। তাই করোনার্স অ্যাক্টকে বাংলাদেশে বলবৎ করা যেতে পারে কি না, তা ভেবে দেখার দাবি রাখে।
কারণ, বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে ‘আইন’ ও ‘প্রচলিত আইন’কে সংজ্ঞায়িত করেছে। প্রচলিত আইন হলো ‘সংবিধান প্রবর্তনের অব্যবহিত পূর্বে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানায় বা উহার অংশবিশেষে আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সক্রিয় থাকুক বা না থাকুক এমন যেকোনো আইন।’ আর আইনের সংজ্ঞায় ‘বাংলাদেশে আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন যেকোনো প্রথা বা রীতি’কে আইন বলা হয়েছে। তাই ১৮৭১ সালের আইন যদি পাকিস্তান সাতচল্লিশের পরে গ্রহণ না-ও করে, তাতেও আমার যুক্তি দুর্বল হয় না। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ১৮৬১ সালে সৃষ্ট ফোর্ট উইলিয়ামের হাইকোর্টেরই উত্তরসূরি। আমার দেশ সম্পাদকের মামলায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সংসদে করা আইনের শূন্যতা ‘কমোন ল’ দিয়ে পূরণের নীতি স্বীকার করেছিলেন। ১৮৭১ সালের আইনটি তেমনই একটি আইন বা রীতি হিসেবে গণ্য হোক, যা ‘আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন’ অথচ ‘কার্যক্ষেত্রে সক্রিয় না থাকা’। আর দরকার হলে যা যা করার তাই করতে হবে, ময়নাতদন্তে এ রকম আইনি শূন্যতা চলতে পারে না।
সরকার একান্তই শিথিল মনোভাব বজায় রাখলে জনস্বার্থে একটি মামলা সূত্রে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের মতো করে আমাদের একটি গাইডলাইন হলেও চলে। পেশাগত জীবনে সাত হাজারের বেশি লাশের ময়নাতদন্ত করেছেন এমন একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছি। তার মধ্যে কয়েক শ নিহত ব্যক্তির লাশ ছিল। বহু মামলায় আদালতে ইনকুয়েস্ট হিয়ারিং বা শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু কখনো করোনার্স আইন বা কোনো ধরনের অবশ্য পালনীয় নিয়মরীতি অনুসরণের কথা শোনেননি।
অনেকের কাছে খটকা লাগতে পারে, কিন্তু ময়নাতদন্ত এমন একটি বিষয় যে ব্যাপারে প্রাচীনকাল থেকে প্রধান বিচারপতির বিশেষ ভূমিকার (দেখুন, ফরেনসিক মেডিসিন অ্যান্ড ডেথ ইনভেস্টিগেশন ইন মেডিভিয়েল ইংল্যান্ড, সারা এম. বাটলার, রাউটলেজ, ২০১৪, পৃ. ৫৪) স্বীকৃতি দেখা যায়। কমোন ল–এর ধারণায় করোনার্স আইন অতীব প্রাচীন। ৮০০ বছর আগে ময়নাতদন্ত করার পারিশ্রমিক হিসেবে করোনার নিহতের পোশাকের উপরের অংশ নিতে পারতেন, জাঙ্গিয়া বা প্যান্ট নেওয়া বারণ ছিল। তনুর প্রথম ময়নাতদন্তে তনুর গুরুতর আঘাতগুলোর উল্লেখ বাদ পড়েছে, প্রাচীন করোনার্স আইনেই তা দণ্ডনীয় অপরাধ। ১৩২৯ সালে ইংল্যান্ডের প্রধান বিচারপতি স্যার জিওফ্রি স্ক্রুপ জরিমানা আদায়ের আগ পর্যন্ত একজন ময়নাতদন্তকারীকে কারাগারে বন্দী করে রেখেছিলেন। ওই করোনার লাশের
তদন্ত শেষে তাকে হত্যাকাণ্ডের শ্রেণিভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ১৩২১ সালে লন্ডনের করোনার আদালতের তলব পেয়েও হাজির হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। বিচারপতি স্টানটোন লন্ডনের করোনারের স্ত্রী ও সন্তানকে জিম্মি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল, করোনার ২৪ ঘণ্টা তাঁর দায়িত্ব পালনে সজাগ থাকবেন।

 

কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে খুবই সামান্য

বিশ্বজুড়ে গত ২০ বছরে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে খুবই সামান্য। এক্ষেত্রে সামান্য কিছু প্রান্তিক অগ্রগতি ছাড়া আর তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি বললেই চলে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক জরিপে বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য।

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আইএলও জানায়, ১৯৯৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের পার্থক্য কমেছে মাত্র ০.৬ শতাংশ। যেসব দেশে নারীদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ বেশি সেসব দেশেও তাদের চাকরির মান এখনো উদ্বেগের একটি বিষয়।

বিশ্বের ১৭৮টি দেশে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের হার, কর্মপরিবেশসহ নানা তথ্য সংগ্রহ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

আইএলও প্রধান গাই রাইডার বলেছেন, ’নারীরা যে এখনো উপযুক্ত কাজ খুঁজে পেতে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন তারই প্রমাণ এই প্রতিবেদন। নারীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের ব্যাপারে যে অগ্রগতি হয়েছে তা একেবারেই প্রান্তিক পর্যায়ে’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ পুরুষদের চেয়ে ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ কম ছিল। ১৯৯৫ সালে এ পার্থক্য ছিল ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ। আর এ হার ২০ বছর আগের হারের চেয়ে মাত্র ০.৬ শতাংশ কম।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়- বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নারীরাই বেশি বেকারত্বে ভোগেন। বিশ্বজুড়ে নারী বেকারের হার ৬.২ শতাংশ যেখানে পুরুষদের বেকারত্বের হার ৫.৫ শতাংশ। চাকরির অভাবে প্রায়ই নারীদের নিম্ন মানের চাকরিতে যোগ দিতে হয়।

উচ্চ ও নিম্ন -সব ধরনের আয়ের দেশেই নারীর গৃহস্থালী কাজের জন্য কোনও পারিশ্রমিক হিসেব করা হয় না। মূলত, নারীরা কর্মক্ষেত্রে ও গৃহস্থালী কাজ মিলিয়ে পুরুষের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করে থাকেন বলেও গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বেশিরভাগ নারীকেই তার যোগ্যতার চেয়ে নিম্নমানের চাকরিতে যোগদান করতে হয়। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে নারীকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গৃহস্থালী কাজে জড়িত থাকতে হয় যার জন্য আর্থিক প্রতিদানও পান না তারা। গবেষকদের মতে, এসব চিত্র নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। আর তা থেকে উত্তরণের হারও আশানুরূপ নয়। এজন্য নারী-পুরুষ উভয়েরই ঐকান্তিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

ইসলাম নারীকে সম্পদের অধিকার দিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

ইসলাম ধর্ম নারীদের সুযোগ দিয়েছে, সম্মান দিয়েছে। ইসলাম নারীকে সম্পদের অধিকারও করে দিয়েছে, যা অন্য কোনো ধর্মে নেই। এমনটাই বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহিলা এবং শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ‘অধিকার মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমানে সমান’  আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলাম ধর্ম নারীকে সম্পদের অধিকার করে দিয়েছে। এ ধর্মে স্বামীর এবং পিতার সম্পত্তিতে নারীদের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বিবি খাদিজা। ইসলামে প্রথম শহীদও ছিলেন একজন নারী তিনি বিবি সুমাইয়া।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর নির্যাতিত মা-বোনেরা কষ্টের মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করেছেন। বঙ্গবন্ধু সরকার তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। অনেক নির্যাতিতা মহিলাকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘বিয়ের সময় নাম লিখতে হয়। কিন্তু তখন অনেক পিতা আত্মসম্মানের ভয়ে তার সম্ভ্রমহারা মেয়ের পরিচয় দিতে চাননি। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- পিতার নাম লিখে দাও শেখ মুজিবুর রহমান। পিতার ঠিকানা ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি। আমার মাও দাঁড়িয়ে থেকে অনেক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।’

নারীরা মর্যাদা ও ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত, যুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগেও নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। তবে নারীদের নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে। নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই গড়তে হবে। নিজের কর্ম এবং আত্মবিশ্বাসের মধ্য দিয়ে নিজেদের মর্যাদা নিজেকেই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’

মেয়েরা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হলে সংসার-সমাজ সবাই তাকে দাম দেবে এ কথা বলে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। মেয়েরা ঘরে ও বাইরে সবই পারে এটা তাকে প্রমাণ করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমাজের সবার উন্নতি ছাড়া দেশ উন্নত হতে পারে না। নারী–পুরুষের সম্মিলিত শ্রম ও মেধা দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো।’

নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম এনডিসি।

 

নারীদের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি প্রয়োজন

প্রত্যেক নারী যাতে নিজেদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটাতে পারে সে জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং তাদের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সম্পদ ও সম্পত্তিতে সম-অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আর এসব করতে পারলে তবেই ২০৩০ এর মধ্যে নারী-পুরুষের সমতা আনা সম্ভব। নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠা করা গেলেই কেবল জাতি হিসেবে আমরা সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবো বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম ও বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের উদ্যোগে গেন্ডারিয়া ফজলুল হক মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ‘২০৩০ এর অঙ্গিকার, নারী-পুরুষের সমতার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা একথা বলেন।

তারা বলেন,  ‘২০৩০ এর অঙ্গীকার, নারী-পুরুষের সমতার’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আমরা পালন করছি এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

তারা আরও বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে নারীদের পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ এবং উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে তাদেরকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার সম-সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।

বক্তারা ২০৩০ সালের মধ্যে নারী-পুরুষের সমতার পরিবেশ তৈরিতে কয়েকটি অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো-

স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সকল স্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর সম-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, প্রত্যেক নারী যাতে নিজেদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটাতে পারে সে জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং তাদের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা, সম্পদ ও সম্পত্তিতে সম-অধিকার নিশ্চিত করা, অথনৈতিক কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর গৃহস্থালী কাজের অবদানকে স্বীকৃতি প্রদান, মেয়েদের বিয়ের বয়স নূন্যতম ১৮ বছর বহাল রেখে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন দ্রুত পাশ ও বাস্তবায়নে জনমত গড়ে তোলা, বাল্যবিবাহ, যৌতুক ও অ্যাসিড নিক্ষেপ-সহ নারীর প্রতি সকাল প্রকার নির্যাতন রোধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা, নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১’ পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সম্মিলিত ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

গেন্ডারিয়া ফজলুল হক মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ দিলারা জাহানের সভাপতিত্বে এসময় বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা  তাজিমা হোসেন মজুমদার প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন দি হাঙ্গার প্রজেক্টের আঞ্চলিক সমন্বয়কালী জনাব মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল, অ্যাডভোকেট রাশিদা আক্তার শেলী, সুহৃদ সমাবেশের মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও রাবেয়া আক্তার রুমি।

 

পুরস্কৃত হচ্ছেন ৩২ নারী পুলিশ

পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত নারীদের ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ছয়টি ক্যাটাগরিতে ৩২ নারী পুলিশ সদস্য ও একটি সংগঠনকে পুরস্কৃত করবে পুলিশ সদর দপ্তর। প্রথমবারের মতো প্রদান করা এই পুরস্কারের নাম ‘বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ অ্যাওয়ার্ড’। জাতীয় ও আর্ন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি এবং অনুপ্রেরণা দিতে আইজিপি একেএম শহীদুল হক এ উদ্যোগ নিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে পুরস্কার হিসেবে থাকছে একটি ক্রেস্ট, একটি সনদপত্র ও ১০ হাজার টাকা। আগামী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা’র (আইসিসিবি) রাজদর্শন হলে তাদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী।

প্রথমবার বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন- পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি মিলি বিশ্বাস, এসবির অ্যাডিশনাল ডিআইজি ইয়াসমিন গফুর, নরসিংদীর এসপি আমেনা বেগম, এসবির ফরিদা ইয়াসমিন, চাঁদপুরের এসপি শামসুন্নাহার, ডিএমপির এডিসি আবিদা সুলতানা, ডিএমপির এডিসি আসমা সিদ্দিকা মিলি ও ডিবির এসি মাহমুদা আফরোজ লাকী।

মেডেল অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন- ডিএমপির এসি হোসনে আরা বেগম, সিএমপির সিনিয়র এসি মাহমুদা বেগম, র‌্যাব-৭ এর এএসপি শাহেদা সুলতানা, ঢাকার এএসপি (ফোর্স) মাকসুদা লিমা, সিএমপির পরিদর্শক মর্জিনা আক্তার মর্জু, ডিএমপির কনস্টেবল মিতা রানী বিশ্বাস, চাঁদপুরের কনস্টেবল তাহমিনা আক্তার ও এপিবিএন-১১ এর কনস্টেবল স্বপ্না আক্তার।

এক্সেলেন্স ইন অ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন- এসবির সিনিয়র এসি মাকসুদা আকতার খানম, আরএমপির পরিদর্শক মোহতারেমা আশরাফী খানম, ডিএমপির এসআই কুইন আক্তার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসআই রাজিয়া বেগম, ডিএমপির এসআই মোছা. রেজিনা বেগম, ডিএমপির এএসআই নাসিমা আক্তার, এসবির কনস্টেবল তাসলিমা আক্তার ও কিশোরগঞ্জের কনস্টেবল তানজিনা মাসুদ।

কমিউনিটি সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন- পুলিশ সদর দপ্তরের এসপি শামীমা বেগম, সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার খন্দকার নূর রেজওয়ানা পারভীন ও ডিএমপির সিনিয়র এএসপি মেরিন সুলতানা।

পিসকিপিং মিশন স্পেশাল অনার অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন- হাইওয়ে রেঞ্জের এসপি শাহীনা আমীন, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার সামসুন নাহার, ডিএমপির এডিসি আল বেলী আফিফা, এসবির এএসপি এলিজা শারমীন ও এসবির এসআই রেহানা পারভীন।

এছাড়া এন্টারপ্রেণার উইমেন অর্গানাইজেশন অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)।

উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে ৬ জন নারী বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। বর্তমানে এই বাহিনীতে অ্যাডিশনাল আইজিপি থেকে শুরু করে ৮ হাজার ৮২৪ নারী সদস্য কর্মরত।

 

পাবলিক বাসে ৪১% নারীই হয়রানির শিকার

গণপরিবহন তথা পাবলিক বাসে নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত না হওয়ায় ৪১ শতাংশ নারী যাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়। তাই বিদ্যমান আইন ও নীতিমালার বাস্তবায়ন সাপেক্ষে নারীদের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে পাবলিক বাস ব্যবহার নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন নারী অধিকার আন্দোলন নেত্রীরা।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সভাকক্ষে পপুলেশন সার্ভিস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার, একশন এইড বাংলাদেশ ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে “গণপরিবহনে নারীদের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে যাতায়াত নিশ্চিত করতে করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, রাজধানী শহরে বসবাসকারী নারীদের মধ্যে ২০ দশমিক ৭ শতাংশ নারী পাবলিক বাসে যাতায়াত করেন। এসব নারী যাত্রীর মধ্যে ৪১ শতাংশ নারীই যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। এছাড়া ১৩ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির ভয়ে পাবলিক বাস এড়িয়ে চলাচল করেন।

সভায় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি বলেন, নারীদের যথাযথ উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রয়োজনে গণপরিবহনে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার করা যেতে পারে। নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে পুরুষদের দ্বারা। কাজেই তাদের আচরণগত পরিবর্তন আনা অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরও নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ যাতায়াত নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সচিব শওকত আলী বলেন, সকলের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ যাতায়াত নিশ্চিত করতে বিআরটিএ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছে। ১৯৯০ সালে ঢাকায় নারীদের জন্য ২টি বাস চালু করা হয়। বাসে ৬টি, ৯টি ও ১৩টি আসন সংরক্ষিত আছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সকল জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হচ্ছে, যেখানে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভার্সিটি প্রোগ্রাম এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার তাহমিনা ইয়াসমিন বলেন, বাংলাদেশের ৫১ শতাংশ নারী। এখানে নারীদের সুরক্ষার জন্য কেবলমাত্র আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়। আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বাসে মাত্র ৯টি সিট বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীদের জন্য অপ্রতুল। এ সংখ্যা বাড়াতে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীরের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন-পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী প্রমুখ। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন।

 

ফ্রাইপ্যানেই তৈরি করে ফেলুন মজাদার গ্রিলড ফিশ

গ্রিলড চিকেন নাম শুনলেই জিভে পানি চলে আসে। বাচ্চারা এই গ্রিলড চিকেন বেশ পছন্দ করে। কিন্তু বাচ্চাদের মাছ খাওয়া নিয়ে থাকে অনেক অনীহা। এই মাছ দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন গ্রিলড ফ্রিশ। গ্রিলের স্বাদ এখন পেয়ে যাবেন মাছে। মাছ দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন মজাদার গ্রিলড ফিশ। এই মজাদার খাবারটি তৈরি করে নিতে পারেন ফ্রাইপ্যানেই।

উপকরণ:

  • ১ টেবিল চামচ লাল মরিচ পেস্ট
  • ৪টি রুপচাঁদা মাছ
  • লবণ স্বাদমত
  • গোলমরিচ গুঁড়ো
  • ১/২ লেবুর রস
  • ১ চা চামচ শুকনো মরিচ গুঁড়ো
  • ১ টেবিল চামচ রসুন কুচি
  • ১ চা চামচ সয়াসস
  • ৩ টেবিল চামচ তেল

প্রণালী:

১। রুপচাঁদা মাছ মাঝখান থেকে অর্ধেক করে নিন। এর সাথে লবণ, গোলমরিচ গুঁড়ো, লেবুর রস মিশিয়ে রাখুন। এটি ৫-১০ মিনিট মেরিনেট করতে দিন।

২। এরসাথে লাল মরিচ পেস্ট, শুকনো মরিচ গুঁড়ো, রসুনের পেস্ট, সয়াসস লবণ এবং গোলমরিচ গুঁড়ো একটি পাত্রে মিশিয়ে নিন। এবার এতে ১ টেবিল চামচ তেল দিয়ে দিন।

৩। সবগুলো উপাদান মিশিয়ে ফ্রিজে ৩০-৪০ মিনিট মেরিনেট করে রাখুন।

৪। একটি নন-স্টিক প্যানে তেল দিয়ে দিন। এতে মেরিনেট করা মাছ গুলো দিয়ে দিন।

৫। মাছের একপাশ হয়ে গেলে অপরপাশ পরিবর্তন করে দিন।

৬। পেঁয়াজের রিঙ, ধনিয়া পাতা কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার স্পাইসি গ্রিলড ফিশ।

ইউটিউব চ্যানেল:Sanjeev Kapoor Khazana

 

ক্যাটস আই-এর নতুন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হলেন জোহাদ!

ফ্যাশন শব্দটির সঙ্গে তারুণ্যের উদ্দামতা জড়িয়ে রয়েছে সবসময়। ফ্যাশনের লাগাম মুঠিতে ধরে যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে নিয়ত ছুটে চলছে এবং নিত্য নতুন ফ্যাশনকে পরিচিত করছে তাদের অন্যতম ‘ক্যাটস আই’। যাত্রা শুরু হয়েছিল আশি দশকের প্রথম লগ্নে, দিনে দিনে সেই যাত্রা আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের একটি অন্যতম ফ্যাশন আইকন হিসাবে। সাঈদ সিদ্দিকী রুমী ও আশরাফুন সিদ্দিকী ডোরা দম্পতিও নেতৃত্বে  ক্যাটস আই দীর্ঘ ৩৬ বছরে এসেও দেশিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড হিসাবে তরুণ-তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। অলটারনেটিভ রক সংগীতের জনপ্রিয় গায়ক ও গিটারিস্ট  জোহাদ রেজা চৌধুরী, এবার তার জনপ্রিয়তা এবং প্রতিভাকে সঙ্গী করে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হতে যাচ্ছেন ক্যাটস আই-এর।

পাশ্চাত্যের সাথে দেশি ট্রেন্ড এবং রুচির সমন্বয় করে ফরমাল ও ক্যাজুয়াল ফ্যাশনে সবসময় ফোকাস ইন ক্যাটস আই। ক্যাটস আইয়ে তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি ক্যাটস আই কিডজ নামে রয়েছে আরো একটি লেবেল। তবে ইয়াং এট হার্ট, ক্যাটস আই-এর জনপ্রিয়তা সামাজিক মাধ্যম, ইউটিউব এবং অন্তর্জালসহ গোটা বাংলাদেশের ফ্যাশনপ্রেমী তরুণদের ফ্যাশনে আরো আলো ছড়াবে জোহাদ এর গ্রহণযোগ্য গায়কি স্মার্ট ও ট্রেন্ড উপস্থাপনার মাধ্যমে। ক্যাটস আই-এর  চেয়ারম্যান সাঈদ সিদ্দিকী রুমী জানান, ক্যাটস আই তরুণ প্রজন্মের ফ্যাশন ব্র্যান্ড তাই সবসময় তরুণ প্রজন্মের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে এবার ইয়াং ক্রেজ  ব্র্যান্ড এম্ব্যাসেডর ব্র্যান্ডিং-এর জন্য বেছে নেয়া হয়েছে। এখন থেকে ক্যাটস আই এর মিডিয়া প্রচারণা ও ফটোশ্যুটগুলোর প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি। নেমেসিস ব্র্যান্ড-এর ভোকাল জোহাদ রেজা চৌধুরী জানান, গানের মানুষ আমি। ৯৯ সালে যে গানের জন্য গড়ে তোলা নেমেসিস তাকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। বনেদি ফ্যাশন ব্র্যান্ড ক্যাটস আই-এর সাথে আমার যাত্রা নতুন ভাবে আমার ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করবে। নিত্যনতুন অনুপ্রেরণায় ক্যাটস আই- সাথে ভালো কিছুর প্রতিনিধিত্ব করতে পারবো বলে আশা করি। ক্যাটস আই-এর ব্র্যান্ড এম্ব্যাসেডর চুক্তি স্বাক্ষর ও নাম ঘোষণার অনুষ্ঠানের নতুন ব্র্যান্ড এম্ব্যাসেডর-এর সাথে ক্যাটস আই-এর ৫ পরিচালক এবং চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ক্যাটস আই ২০০৫ সালে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করেছে জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী হাবীব ওয়াহিদ। এরপর ক্যাটস আই ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া ও কক্সবাজার-এ ক্যাটস আই এর ২৫টি স্টোর রয়েছে। এছাড়া ক্যাটস আই-এর কো ব্র্যান্ড মুনসুন রেইন ও আনলিমিটেড নামে দুটি লাইফস্টাইল ফ্যাশন ব্র্যান্ড রয়েছে।

 

সন্তান-সন্তুতির ওপর বাবা-মায়ের অধিকার কি?

বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানদের সবসময় কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। জীবিত অবস্থায় তাদের নির্দেশ মান্য করা, সর্বোত্তম সেবাযত্ন করা এবং তাদের সন্তুষ্ট রাখা প্রতিটি সন্তানের দায়িত্ব। এমনকি সন্তানের ওপর বাবা-মায়ের এ অধিকার তাদের মৃত্যুর পরও শেষ হয়ে যায় না। পরলোকগত বাবা-মার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করা, তাদের ওয়াদা পূরণ করা, তাদের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা প্রতিটি সন্তানের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। আবু উসাইদ [রা.] থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, আমরা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, বাবা-মার মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার এমন কোনো উপায় আছে কী, যা আমি অনুসরণ করতে পারি? তিনি বলেন, হ্যাঁ, চারটি উপায় আছে : [১] তাদের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা, [২] তাদের কৃত ওয়াদা পূরণ করা, [৩] তাদের বন্ধু-বান্ধব ও অন্তরঙ্গ ব্যক্তিদের সম্মান প্রদর্শন করা এবং [৪] তাদের মাধ্যমে তোমার সঙ্গে আত্মীয়তার যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা অক্ষুণœ রাখা [আদাবুল মুফরাদ]।
বাবা-মা সন্তানের সন্তুষ্টির জন্য, তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য সাধ্যের সবটুকুই করার চেষ্টা করেন। সন্তানদেরও উচিত বাবা-মাকে সন্তুষ্ট রাখা। তাদের মুখে হাসি ফোটানো। রাসুল [সা.] আমাদের তেমন নির্দেশই দিয়েছেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর [রা.] থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তার বাবা-মাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় রেখে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হিজরতের উদ্দেশে বাইআত হওয়ার জন্য উপস্থিত হলো। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : বাবা-মার কাছে ফিরে যাও এবং তাদের যেমনিভাবে কাঁদিয়ে এসেছ, তেমনিভাবে তাদের মুখে হাসি ফোটাও [আদাবুল মুফরাদ]। উপরোক্ত হাদিসটির দ্বারা বোঝানো হয়েছে বাবা-মা যদি দুর্বল, বৃদ্ধ ও সন্তানের সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেন, তবে এ অবস্থায় তাদের সেবা-শুশ্রƒষা করা হিজরতের মতো উত্তম আমলের চেয়েও অধিক উত্তম।ইবনে আব্বাস [রা.] থেকে বর্ণিত : সাদ ইবনে উবাদা [রা.] তার মায়ের কৃত মানত সম্পর্কে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, যা তার মা পূর্ণ করার আগেই মারা যান। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মায়ের মানত পূর্ণ করার জন্য তাকে নির্দেশ দিলেন [বুখারি ও মুসলিম থেকে মিশকাতে]। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বাবা-মার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার, তাদের সেবা করার, তাদের নির্দেশ মেনে চলার ও সন্তুষ্টি বিধানের তওফিক দিন। আমিন।

মাওলানা মিরাজ রহমান

 

‘নারীদের জন্য বেশি সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হবে’

জাতীয় সংসদের স্পিকার ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের (সিপিএ) চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, ‘নারীদের জন্য আরো বেশি সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের অগ্রগতির পথকে সুগম করতে হবে। এতে নারী উন্নয়নের পথ সুগম ও জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব হবে।’
তিনি বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ নারী পুলিশ এ্যাওয়ার্ড-২০১৬ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে এই কথা বলেন।
স্পিকার নারী ও পুরুষকে এক সঙ্গে নতুন প্রত্যয়ে কাজ করার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘যে সাহসিকতা, দৃঢ়তা এবং সামাজিক বাধা অতিক্রম করে নারীরা পুলিশের পেশাকে গ্রহণ করেছে তা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। এই কাজে নিজেদের দৃঢ়তার পাশাপাশি তাদের পুরুষ সহকর্মীদের সহযোগিতা পাচ্ছে। ফলে তারা তাদের কর্মক্ষেত্রে সহজভাবে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন পেশায় নারীরা সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছে। তারা দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অবদান রাখছে। নারীদের দৃশ্যমান উপস্থিতি সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে।’
নারীরা কৃষিকাজ, সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ, আনসার, ব্যাংক, বীমা, সিভিল সার্ভিস, সাংবাদিকতা ও সাংবিধানিক বিভিন্ন পদসহ সমাজের সকল ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে বলে তিনি তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া উক্ত অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ৩২ নারী পুলিশ সদস্য ও পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতিকে ‘উইমেন পুলিশ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়েছে।

 

চাকরীতে বিতৃষ্ণা? ৫ টি প্রশ্নে বুঝে নিন কী করবেন

জীবিকা, সাচ্ছন্দ্য আর স্বনির্ভরতার প্রয়োজনে তরুণেরা যুক্ত হন বিভিন্ন রকমের পেশায়। দেখা যায়, কেউ কেউ সারাদিনই কাজ করছেন। কাজের চাপে পরিবারকে সময় দিতে পারছেন না। প্রিয়জনের মেসেজের উত্তর দেওয়া, ফোন করা এমনকি ফোন ধরার সময় পর্যন্ত পাচ্ছেন না। সবাই হয়ত তাকে অসামাজিক বলছে। আবার চাকরিক্ষেত্রেও কাজের মূল্যায়ণ পাচ্ছেন না যেমন চাইছেন। এতে কাজের চাপের সাথে যোগ হয় মানসিক চাপ।
এরকম পরিস্তিতিতে আমরা প্রচন্ড রেগে যাই আমাদের চাকরীর উপর। হতাশায় ভুগতে শুরু করি। প্রশ্ন করতে থাকি নিজের যোগ্যতাকে। বিশিষ্ট লেখক স্টিভ আলব্রেক্ট ডিভিএ চাকরিক্ষেত্রে কাজের প্রতি ক্ষোভকে বিশ্লেষণ করেছেন বিভিন্নভাবে। তার লেখা বই এর মধ্যে আছে, Defusing Violence in the Workplace, Fear and Violence on the Job, and Tactical Perfection for Street Cops ইত্যাদি। তার মতে, আপনার “জব বার্নাউট” কোন মাত্রায় আছে বুঝতে নিজেকে করুন এই ৬ টি প্রশ্ন। মাত্রা বুঝে নিজেকে সেখান থেকে বের করে আনতে পারবেন আপনি নিজেই।
 
“কাজের কোন দিকটি আমার প্রিয়?”
আপনার চাকরির কোন দিকটি আপনাকে আনন্দ দেয়? কেমন লাগে কাজের পরিবেশ? আপনার পরিশ্রমের স্বীকৃতি কি আপনি পান? সঠিক মূল্যায়ণ হয় যোগ্যতার? কাজের কোন দিকটি আপনার উৎসাহ বাড়ায়?
এসব প্রশ্নের উত্তরে যাদের জবাব ইতিবাচক হয় তারা তাদের চাকরিটি অনেক উপভোগ করছেন বোঝা যায়। তারা অনুভব করেন, তাদের চাকরিতে তাদের সঠিক বেতন এবং যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয়। এভাবে তারা নিজেরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের একটি অংশ ভাবতে শুরু করেন। এভাবে জীবনের প্রতিও সন্তুষ্ট থাকেন তারা।
“কাজের কোন দিকটি আপনার অপ্রিয়?”
আপনার অপছন্দগুলো কী কী? কাজের পরিবেশ? যে কাজ গুলো আপনাকে করতে হয়? চাপ বেশী? বসকে অপছন্দ নাকি সহকর্মীদের? আপনার অপছন্দের লিস্ট যত বড় হবে আপনি তত আপনি চাকরি থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করবেন। আপনার মনে হবে, আপনাকে কম বেতন দেওয়া হয়, আপনার মূল্যায়ণ হয় না ঠিক মত। এভাবে একটি ভাল চাকরিও অসহ্য হয়ে যেতে পারে। ভালদিকগুলো খুঁজে বের করুন। অথবা চাকরি খুজুন, পেলে ছেড়ে দিন।
“আমার সহকর্মীদের কোন কাজগুলো আমার কাজকে আরও সহজ করে?”
পুরোনো একটি কথা আছে, “আপনি আসলে আপনার চাকরি ছাড়েন না, আপনার বসকে ছাড়েন।” একজন ভাল, সহনশীল, প্রেরণাদায়ক নেতা আপনাকে যেমন অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, তেমনি বস যদি বদরাগী হয় সেক্ষত্রে সহজ কাজটিও হতে পারে যন্ত্রণাদায়ক। কিন্তু আপনার এক্ষেত্রে কিছুই করার নেই তা কিন্তু নেই। ঝটপট কাজ শেষ করে অবাক করে দিন বসকে। তাকে সময়ই দেবেন না আপনাকে পাল্টা প্রশ্ন করার। মুষড়ে না পড়ে এটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিন। সহকর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করুন। একসাথে খেতে বসা, কাজের ফাকে টুকটাক খোঁজ খবর আপনাকে অনেক সাহায্য করবে। তবে অবশ্যই সেটা ব্যাক্তিগত পর্যায়ে না গড়ানোই ভাল।
“সহকর্মীরা কি কর্মপরিবেশ কে জটিল করে তুলছে?”
সহকর্মীদের সাথে ঝগড়া, ক্লেশ আপনার কাজ করার আগ্রহকে নষ্ট করে দিতে পারে। হিংসা, নিজে উপরে উঠতে অপরকে ছোট করা এসব কাজের পাশাপাশিও সেক্সুয়াল এবিউজের ঘটনাও ঘটতে পারে। নারী কর্মীরা এসবের শিকার হন প্রায়ই। অনেক প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ করেও কোন ফল হয় না। এসব ক্ষেত্রে জব বার্ণ আউট স্বাভাবিক। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। কোন সমস্যা আপনার অবহেলার কারণেই তৈরি হয়েছে কিনা খেয়াল করুন।
“বস কি আমাকে সাহায্য করে?”
আপনার বস আপনাকে সাহায্য করলে আপনার কাজ অনেক সহজ হয়ে যাওয়ার কথা। বসের সাহায্য বলতে বোঝানো হচ্ছে, তার সহজ মানসিকতা। তিনি যদি আপনার সব কাজের ভুলকে বড় করে দেখেন, তাহলে আপনার কাজ করার পরিবেশ আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু পাশাপাশি ভাবুন, আপনার কাজের চ্যালেঞ্জ গুলো কী কী? সেগুলো আপনি কতটা পূরণ করছেন? বসের হয়ত আপনার প্রতি প্রত্যাশাও বেশী।
প্রশ্নগুলোর উত্তর আশা করি চাকরীর প্রতি বিতৃষ্ণার কারণ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে আপনাকে। এরপর নিজের এবং প্রতিষ্ঠানের উভয়ের সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করুন সময় নিয়ে। লিখে রাখুন। নতুন চাকরি খোঁজার সময় এবার আপনি জানবেন আপনার কী কী চাই, নিজের উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য, যোগ্যতাগুলোও বুঝতে পারবেন। তৈরি করতে পারবেন একটি চমৎকার সিভি, যা এক কথায় তুলে ধরে আপনাকে।
লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

ডায়াবেটিসের জটিলতা থেকে মুক্ত থাকার উপায়

স্নায়ু হচ্ছে শরীরের বার্তাবাহক। হাতের আঙ্গুল থেকে শুরু করে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত স্নায়ুই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে, সামান্য হাঁচি দেয়া থেকে শুরু করে হৃদস্পন্দন পর্যন্ত। কিন্তু কখনও কখনও ডায়াবেটিস এই জটিল নেটওয়ার্ককে  ক্ষতিগ্রস্থ করে। গবেষকদের মতে এটি তখনই হয় যখন মাত্রাতিরিক্ত গ্লুকোজ রক্তনালীর দেয়ালকে ধ্বংস করে দেয়। ডায়াবেটিস রোগীদের ৬০-৭০% এর নার্ভ ড্যামেজের সমস্যাটি হয়ে থাকে। একে নিউরোপ্যাথি বলে। বিশেষজ্ঞদের মতে নিউরোপ্যাথি ও ডায়াবেটিসের অন্য জটিলতা কমানো সম্ভব গ্লুকোজ এর মাত্রা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রেখে। ১৯৯৩ সালের এক গবেষণায় জানা যায় যে, রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ডায়াবেটিস রোগীদের নিউরোপ্যাথি হওয়ার ঝুঁকি ৬০% পর্যন্ত কমানো যায়। রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে জটিলতা কমানোর কয়েকটি উপায় জেনে নেই আসুন।

১। স্বাস্থ্যকর খাবার খান

আপনার টাইপ ১ অথবা টাইপ ২ যে ধরনেরই ডায়াবেটিস থাকুক না কেন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে আপনি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। সতর্কতার সাথে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কার্বোহাইড্রেট ব্লাড সুগারের উপর নাটকীয় প্রভাব ফেলতে পারে। একটি আদর্শ খাদ্য পরিকল্পনায় বিভিন্ন ধরণের রঙ্গিন সবজি ও ফল থাকে। সেইসাথে চর্বিহীন মাংস, দুগ্ধজাত খাবার, বাদাম ও শস্য অন্তর্ভুক্ত হয়।

২। ফিট থাকুন

স্বাস্থ্যকর খাবার ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম আপনাকে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। এর ফলে রক্তের সুগার লেভেল ও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এবং স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স যেমন- আপেল বা কলা রাখুন সাথে।

৩। চিকিৎসা ব্যবস্থা মেনে চলুন

আপনার চিকিৎসা পরিকল্পনা মেনে চলুন ও চিকিৎসক নির্দেশিত ঔষধগুলো সেবন করুন বা ইনসুলিন ইনজেকশন নিন। ইনসুলিন ইনজেকশন কখন ও কীভাবে নেবেন তা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন।

৪। গ্লুকোজের মাত্রা চেক করুন

নিয়মিত গ্লুকোজের মাত্রা চেক করুন। গ্লুকোজের মাত্রা জানা থাকলে আপনার প্রাত্যহিক যত্নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত সহজ হবে।

৫। বছরে দুইবার A1c  টেস্ট করান

A1c  টেস্টের মাধ্যমে তিন মাসের অধিক সময়ের রক্তের গ্লুকোজ স্তরের মাত্রার গড় নির্ণয় ও সঠিক স্ন্যাপশট পাওয়া যায়। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে এবং রক্তের গ্লুকোজ স্তরের মাত্রা যদি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই থাকে তাহলে বছরে দুইবার A1c  টেস্ট করান উচিৎ। আর যদি ঔষধ পরিবর্তন করা হয় বা রক্তের গ্লুকোজ স্তরের মাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে প্রায়ই এই পরীক্ষাটি করতে হবে।

গবেষকেরা নিরন্তর চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিউরোপ্যাথি প্রতিরোধের নিমিত্তে ঔষধের উন্নতি সাধনের জন্য। সেই পর্যন্ত রক্তের গ্লুকোজ স্তরের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখেই স্নায়ুর ক্ষতি রোধ করতে হবে।

লিখেছেন-

সাবেরা খাতুন

 

তাজমহলের অজানা কিছু তথ্য

আমরা সবাই জানি তাজমহল বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি। মোঘল  সম্রাট শাহজাহান তার তৃতীয় স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতি রক্ষার্থে তাজমহল তৈরি করিয়েছিলেন। ১৬৩১ সালে মমতাজ মহল ১৪তম সন্তান প্রসবের সময় মারা যান। এটি ভারতের আগ্রায় অবস্থিত। এই তথ্যগুলো বেশিরভাগ মানুষই জানে। তাজমহল সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য জেনে নেই আসুন।

১। দিনের বিভিন্ন সময়ে তাজমহলের বিভিন্ন রঙ দেখা যায়। তাজমহল খুব ভোরে গোলাপী, দিনে সাদা ও চাঁদের আলোয় সোনালী রঙের দেখায়। তাজমহলের সাদা মার্বেল ও প্রতিফলিত টাইলস এর রঙের পরিবর্তে সাহায্য করে।

২। তাজমহলের পিলারগুলো বাহিরের দিকে হেলানো। ভূমিকম্প হলে এগুলো যেনো সমাধির উপরে না পরে এজন্যই এভাবে তৈরি করা হয়েছে।

৩। এই অনন্য স্থাপনাটির স্থপতি ছিলেন আহমেদ লাহোরি। তাজমহল নির্মাণের জন্য  তিনি ২২ হাজার মানুষ নিযুক্ত করেন, যারা ছিলেন শ্রমিক, স্টোনকাটার, চিত্রশিল্পী, সূচিকর্মশিল্পী ও ক্যালিগ্রাফার। তাজমহলের নির্মাণ সামগ্রী বহনের জন্য ১০০০ হাতি  ব্যবহার করা হয়েছিলো।

৪। স্থাপত্যকলার এই বিশাল জাঁকজমকপূর্ণ কাজটি করার জন্য সম্রাট রাজস্থান, আফগানিস্থান, তিব্বত ও চীন থেকে মার্বেল পাথর আনিয়েছিলেন। এছাড়াও ২৮  ধরণের মূল্যবান ও আধামূল্যবান পাথর সাদা মার্বেলের উপর বসানো হয়েছিলো। যার মধ্যে আকর্ষণীয় নীলকান্তমণি ও ছিলো।

৫। তাজমহলের সব কিছুই প্রতিসম শুধুমাত্র একটি জিনিষ ছাড়া। আর সেটি হচ্ছে এর ভেতরের দুটি সমাধি। কারণ পুরুষের সমাধি মেয়েদের সমাধির চেয়ে বড় হয়।

৬। তাজমহলের মূল্য ৩২ মিলিয়ন রুপি। যার বর্তমান মূল্য ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

৭। তাজমহলের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিলো ১৬৩২ সালে এবং সম্পন্ন হয়েছিলো ১৬৫৩ সালে। এটি তৈরি করতে ২২০০০ শ্রমিকের ২২ বছর সময় লেগেছিলো।

৮। তাজমহল সম্পর্কে একটি প্রচলিত মিথ হচ্ছে- নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে প্রতিটা শ্রমিকের হাত কেটে ফেলার নির্দেশ দেন সম্রাট শাহজাহান। যাতে কেউ পুনরায় তাজমহল তৈরি করতে না পারে। তবে এটি সত্য নয়। আরেকটি মিথ হচ্ছে- তাজমহলের মতোই আরেকটি সমাধি এর বিপরীত পাশে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান কালো মার্বেল দিয়ে। কিন্তু ক্ষমতাচুত্য হওয়ায় সেটি আর সম্ভব হয়নি। কিন্তু এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

৯। মোঘল সম্রাটের সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও তাজমহলের স্থাপত্যকলা ছিলো বিশ্বব্যপী অনুপ্রাণিত। এটি পারস্য, মধ্য এশিয়া ও ইসলামী স্থাপত্যের সমন্বয় করেছিলো।

১০। তাজমহলের ভেতর ও বাহিরের ক্যালিগ্রাফির চমৎকার কাজ আছে। মমতাজ মহলের সমাধি ক্ষেত্রেও তাঁর পরিচিতি ও প্রশংসার শিলালিপি দেখা যায়। সমাধিক্ষেত্রের একপাশে আল্লাহর ৯৯ নাম ক্যালিগ্রাফিক শিলালিপিতে অঙ্কিত আছে।

১১। তাজমহলের উচ্চতা ১৭১ মিটার বা ৫৬১ ফুট দীর্ঘ যা কুতুবমিনারের চেয়েও বড়।

সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলের স্মৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা জানাতেই তাজমহল তৈরি করেছিলেন সম্রাট শাহজাহান। বর্তমানে তাজমহল বাগান, গেস্টহাউজ ও মসজিদ দিয়ে ঘেরা ১৭ হেক্টর জায়গা নিয়ে গঠিত। সম্রাট শাহজাহান যমুনা নদীতে বসে তাঁর এই স্বপ্নের সমাধীটিকে দেখতেন। বর্তমানে নদীটি শুষ্ক হয়ে গেছে।

লিখেছেন-

সাবেরা খাতুন

 

নবিজির [সা.] প্রিয় পোশাক কি ছিলো ?

মহানবি [সা.] অধিকাংশ সময়ে এ ধরনের পোশাক পরতে ভালোবাসতেন। [শামায়েলে তিরমিজি-২৮] যা অনেকাংশেই আমাদের সমাজে প্রচলিত পোশাক পায়জামা-পাঞ্জাবির মতো। বিশেষ কোনো সমস্যা না থাকলে আমরাও সার্বক্ষণিক এ ধরনের পোশাক পরিধান করতে পারি।

নবিজির [সা.] প্রতি ভালোবাসা ঈমানের অপরিহার্য অংশ। পরিপূর্ণ মুমিন হতে চাইলে তাঁকে [সা.] পিতামাতা সন্তান-সন্তুতি এবং সব মানুষ থেকে অধিক ভালোবাসতে হবে। ভালোবাসার অনেক দাবি আছে। তন্মধ্যে অন্যতম একটি দাবি হলো, তিনি যা ভালোবাসতেন আমরাও তা ভালোবাসবো। তিনি যা পছন্দ করতেন আমরাও তা পছন্দ করবো। সেই তো প্রকৃত আশেকে রাসুল যে তার মাহবুব ও প্রেমাস্পদ পেয়ারা হাবীবের ভালোবাসা ও প্রিয়-অপ্রিয়কে নিজের প্রিয়-অপ্রিয় হিসেবে গ্রহণ করতে পেরেছে। এ আলোচনায় নবিজির [সা.] প্রিয় পোশাক নিয়ে আলোচনা করা হলো।

কামিস ছিল নবিজির [সা.] প্রিয় পোশাক। পোশাক পরিধান করা কোনো ক্ষেত্রে ফরজ, কখনো হারাম আবার কোনো কোনো সময়ে মুস্তাহাব। ফরজ পোশাক হলো এতটুকু, যা দিয়ে সতর ঢাকা যায়। হারাম হলো, পুরুষের জন্যে পায়ের গোড়ালির নীচে পোশাক পরিধান করা। আর দুই ঈদে উত্তম পোশাক পরিধান করা মুস্তাহাব। সকলের জন্য পোশাকের একটি মার্জিত রূপ ও রুচি থাকা চাই। দেশের জাতিভেদের তারতম্য থাকলেও পোশাকের মাঝে একটা শালীনতা থাকা দরকার। যে ধরনের পোশাক পরলে মনে কুপ্রবৃত্তি জন্মে না, তেমন পোশাকই আমাদের পরিধান করা উচিত।

তবে এ কথাও সত্য যে, ইসলামের দৃষ্টিতে বিশেষ কোনো পোশাক নেই। এর ওপর কোনো বিধি-নিষেধও নবি- পয়গম্বরগণ দিয়ে যাননি। আবহাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে শরীরকে সুস্থ রাখবার জন্য যে কোনো পোশাকই ব্যবহার করা চলে। এর প্রমাণ আমরা পাই হজরত আব্বাস (রা.) এবং হজরত ওমরের (রা.) বাণী হতে- ‘যা ইচ্ছা আহার কর, পান কর ও পরিধান কর, যে পর্যন্ত অমিতব্যয়িতা ও অহঙ্কারের সাথে মিশ্রিত না হয়।’ এ প্রসঙ্গে মহানবি [সা.] বলেছেন, ‘গোড়ালির নিচে পায়ের যে অংশে কাপড় ঝোলে তা দোজখে যাবে।’

উম্মে সালমা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল [সা.] পোশাক হিসেবে সর্বাধিক পছন্দ করতেন ‘কামিস’। [ইবনে মাজাহ, হাদিস-৪০২৭] কামীসের বিবরণ সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসের ভিত্তিতে জানা যায়, এই পোশাকটি ছিলো হাঁটুর নিম্নভাগ পর্যন্ত লম্বা। হাতা ছিল হাতের আঙ্গুলের প্রান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ। এ পোশাকের দৈর্ঘ্য সবসময়ই পায়ের গোড়ালির উপরে থাকত। মহানবি [সা.] অধিকাংশ সময়ে এ ধরনের পোশাক পরতে ভালোবাসতেন। [শামায়েলে তিরমিজি-২৮] যা অনেকাংশেই আমাদের সমাজে প্রচলিত পোশাক পায়জামা-পাঞ্জাবির মতো। বিশেষ কোনো সমস্যা না থাকলে আমরাও সার্বক্ষণিক এ ধরনের পোশাক পরিধান করতে পারি।

ফয়জুল আল আমীন
[ফয়জুল আল আমীন- ধ্রুপদী এক লেখক। পুরো নাম- সৈয়দ মুহম্মদ ফয়জুল আল আমীন। সৈয়দ শিশির নামে যিনি সমধিক পরিচিত। প্রবন্ধ-নিবন্ধ, কলাম, সাহিত্য সমালোচনা, গল্প, গবেষণা, কবিতা, ছড়াসহ সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় যার সুদীপ্ত বিচরণ। দেশের প্রথম শ্রেণির প্রায় সব দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ও ছোটকাগজে নিয়মিত লিখছেন প্রায় ২০ বছর ধরে। ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে তাঁর গুরু হলেন বাবা। আর সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে প্রকৃতি। ইসলাম ধর্মের নানা দিক ও বিষয় নিয়ে সুদীর্ঘ গবেষণা করেছেন ফয়জুল আল আমীন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় রিপোর্টার, ফিচার লেখক, সাব-এডিটর, সহযোগী সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। একাধিক প্রকাশনা সংস্থায় সিনিয়র লেখক, সম্পাদক ও আরঅ্যা-ডি’র প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বর্তমানে পাঠকপ্রিয় একটি সাপ্তাহিকে চিফ রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।]

 

আত্মহত্যা করলেন টিভি অভিনেত্রী প্রত্যুষা

‘কালারস’ চ্যানেলের জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘বালিকা বধূ’র ‘আনন্দী’ আর নেই। নিজের বাসভবনেই আত্মহত্যা করেন প্রত্যুষা ব্যানার্জী। পরে তাকে মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিত্সকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পুরো অভিনয় জগত।

জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। সেকারণেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, নিজের বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়েছিলেন এই বাঙালি অভিনেত্রী। তাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছিল তখন শুধু মৃত্যুর কথাই তিনি বলছিলেন বলে জানা গেছে।

১৯৯১ সালের ১০ আগস্ট জামশেদপুরে তার জন্ম। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্সে তিনি পড়াশোনা করেন। কলেজে পড়াকালীনই তিনি মুম্বাইয়ে ‘বালিকা বধূ’ সিরিয়ালে ‘আনন্দী’ চরিত্রের জন্য প্রস্তাব পান। ‘বালিকা বধূর’ পর ‘বিগ বস ৭’ অনুষ্ঠানেও তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। সম্প্রতি তাকে দেখা যায় ‘শশুরাল সিমার কি’-তে। এমনকি স্বামীর সঙ্গে এই বছরের শুরুতে সনি চ্যানেলের ‘পাওয়ার কাপল’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এক আইনি ঝামেলায় জড়ান প্রত্যুষা। চার পুলিশকর্মী তার শ্লীলতাহানি করেন বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি।

ওদিকে অভিনেত্রী প্রত্যুষার মৃত্যুতে শোকের ছায়া টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে। তার সহ অভিনেতা অভিনেত্রীরাও স্তব্ধ। এমনকি টলিউডেও চলছে শোক। টলিউড অভিনেতা রজতাভ দত্ত থেকে শুরু করে অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা সরকার, সায়নী সহ অনেকেই প্রত্যুষার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন।

 

ফের ক্ষমতায় আসছেন মমতা ব্যানার্জি: জরিপ

নতুন এক জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় আসছে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। তবে এবার তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি করবে রাজ্যের বামেরা।

ইন্ডিয়া টিভি-সিভোটার পরিচালিত জরিপে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

টিভি-সিভোটার জরিপে জনানা যায়, তৃণমূল কংগ্রেস এবার ৪০ ভাগ ভোট পেতে পারে। বামপন্থী সিপিএম ৩১ ভাগ ভোট পেতে পারে।

কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এ রাজ্যে ভালো ফল করার জন্য মরিয়া হয়ে প্রচারণা চালালে তারা মাত্র ৪টি আসন তথা ১১ ভাগ ভোট পেতে পারে বলে জরিপে বলা হয়েছে।

জরিপে বলা হয়েছে, ২৯৪ আসনের বিধান সভায় তৃণমূল কংগ্রেস পেতে পারে ১৬০টির মত আসন। সিপিএম পেতে পারে ১০৬টি আর কংগ্রেস পেতে পারে ২১টি আসন।

তবে ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস যতগুলো আসন পেয়েছিল এবার তার চেয়ে ২৪টি আসন কম পেতে পারে।

আগামী ৪ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে প্রথম দফার প্রথম পর্বের নির্বাচন। এই পর্বে ভোট হবে পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার ১৮ আসনে। প্রায় এক মাস ধরে চলবে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া। ভোট শেষ আগামী ৫ মে। গণনা ১৯ মে।