banner

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 389 বার পঠিত

 

চুড়িতে কবিতার স্বপ্ন

রাজধানীর ধানমন্ডির পুরাতন ২৭ নম্বর সড়কে একটি বিপণিবিতানের সামনে চলছে বৈশাখী মেলা। সেখানে সার বেঁধে চুড়ি বিক্রি করছেন কয়েকজন। তাঁদেরই একজন কবিতা। লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি রঙিন চুড়ির রিনিঝিনি শব্দের মাঝেই স্বপ্ন দেখেন। তবে চারপাশে রঙের খেলা থাকলেও নিজের জীবনে কোনো রং নেই।
কবিতার চার ছেলেমেয়ে। স্বপ্ন ছিল স্বামী-সন্তান নিয়ে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে সুন্দরভাবে জীবন কাটাবেন। তাই নেমেছেন জীবনযুদ্ধে। স্বামী কিছু করেন না। স্বামী-সন্তান সবার দায়িত্ব নেওয়াও সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে। তাই সন্তানদের নিয়ে আলাদা থাকেন।
শেরপুরের কলুরচর ব্যাপারীপাড়ায় বাড়ি কবিতার। চুড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগে। দুই মেয়ে কাজ করে অন্যের বাসায়। বেতন পায় না, শুধু তিনবেলা খাওয়া জোটে। ছোট ছেলেটা একটা দোকানে কাজ করে। সামান্য কিছু টাকা পায়। বলতে গেলে পরিবারে তিনি একাই উপার্জনক্ষম।
কবিতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পয়লা বৈশাখের আগে আগে প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার টাকার চুড়ি বিক্রি হয়। চৈত্র মাসের শেষ দিনে বিক্রিবাট্টা হয় আরও একটু বেশি। সেটা কখনো পাঁচ-ছয় হাজার টাকাও ছাড়িয়ে যায়। তাই শেরপুর থেকে চুড়ি বিক্রি করতে ঢাকায় আসি।’
পয়লা বৈশাখের আগের রাত পর্যন্ত বিপণিবিতানের সামনের ফুটপাতেই থাকেন তিনি। রাতে গাড়ির শব্দে ঠিকমতো ঘুমও হয় না। এপাশ-ওপাশ করে রাতটা পার করে দেন কোনো রকমে। আর প্রতিদিনের দুর্ভোগ তো আছেই। তারপরও পয়লা বৈশাখের আগে এই ১৩টি দিন কবিতার ঈদের মতোই লাগে। সারা বছর কবিতা চুড়ির পাশাপাশি তাঁর গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে মেয়েদের বিভিন্ন পোশাক, বিশেষ করে অন্তর্বাস বিক্রি করেন বাড়ি গিয়ে। কেননা গ্রামের নারীরা দোকান থেকে এ ধরনের জিনিস কিনতে অভ্যস্ত নন।
কবিতার দিনগুলো কষ্টেই কাটে। কোনো দিন এক বেলা আবার কোনো দিন দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেন। তারপরও কবিতা থেমে নেই, জীবনের পথে রঙিন চুড়ির পসরা নিয়ে কবিতা চলছেন…।

Facebook Comments