banner

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 479 বার পঠিত

 

সফলতার জন্য নূহার চ্যালেঞ্জ

মিষ্টি এই মেয়েটির ছোট বেলা থেকে চোখে মুখে লেগে থাকত আনন্দের ছোঁয়া।সেই মানুষটির জীবনের লক্ষ এমন কিছু করতে হবে যা মানুষের উপকারে আসে। যার মধ্যে থাকবে সৃষ্টিশীলতা আর আনন্দের অনুভূতি। অন্যদিকে তার পরিবারের ইচ্ছে মেয়েকে বড় হয়ে ডাক্তার হতে হবে।কিন্তু সৃজনশীলতা যার মন ও মগজে সে কি করে মানুষের শরীর কেঁটে অপারেশন করবে? সেখানে তো নতুনত্ব সৃষ্টি করা অসম্ভব। স্বাভাবিক ভাবেই এবার স্রোতের বিপরীতে চলার মত সাহস দেখাতে হল তাকে। হাঁটতে হল নিজের স্বপ্ন পূরনের পথে। যদিও তিনি তখনও জানতেন না কি করবেন বড় হয়ে। তবে এতটুকু জানতেন যা কিছুই করেন না কেন তা হবে সবার থেকে একটু আলাদা, একটু ব্যতিক্রম।

ফেসবুক ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসা করা সম্ভব তা যেন হটাত করেই মাথায় আসলো তার। কিন্তু ভাললাগার কাজে সফলতা পেতে বড় এই চ্যালেঞ্জকে শুধুমাত্র ফেসবুকের মাধ্যমে কিভাবে বাস্তবে রুপ দেওয়া সম্ভব বুঝতে পারছিলেন না। তার ওপর ব্যবসার পুঁজি বলতে হাত খরচের জমানো ৫০০০ টাকা ছাড়া আর কিছুই নেই। ফেসবুকে ওয়েডিং এক্স-কার্সন নামে একটি পেইজ ক্রিয়েট করলেন। ইনভাইট করলেন তার ফ্রেন্ডলিষ্টের সবাইকে। এবং কাছের কয়েকজনের বন্ধুদের সাথে আইডিয়াটি শেয়ার করলেন। বন্ধুরাও আগ্রহ প্রকাশ করে তার আইডিয়ার সাথে সংযুক্ত হয়ে কাজ করতে চাইলেন।

Uddoktaকিন্তু এই যাত্রার পথটি এতটা সহজ ছিল না নূহা হোসেন এর জন্য। অনেক বেশী কষ্ট করতে হয়েছে তার আইডিয়াকে বাস্তবে রুপ দিতে। সেই সাথে অবস্থান নিতে হয়েছে পরিবারের সবার বিপক্ষে। স্রোতের বিপরীতে চলতে গিয়ে কখনও কখনও যে ধাক্কা খেয়েছেন শুধু তাই নয় কাছের মানুষদের সাথে ভুল বোঝাবুঝিও হয়েছে অনেক। তবে তা সামলে নিয়েছেন নিজের বুদ্ধিমত্তার গুনেই। প্রথম কাজটি পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে চার মাসেরও বেশী সময় ধরে। ফেসবুক প্রচারণার পাশাপাশি পরিচিত এমন কেউ ছিল না যাকে বলা বাদ দিয়েছেন।

ধৈয্যহারা হয়ে যখন হাল ছাড়ার মত অবস্থা ঠিক তখনই সুখবরটা আসে। পেয়ে যান একটি কাজের সন্ধান। কিন্তু শুধুমাত্র অনভিজ্ঞ, ব্যবসায়ে নতুন এজন্য কাজ হিসেবে টাকার অঙ্ক ছিল এতটাই কম যে লাভের মুখ দেখতে পারেননি। প্রথম কাজটিতেই আর্থিক ক্ষতির স্বীকার হয়েছিলেন। তবে এরপর থেকে খুব বেশী পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি সহযোগী তিন বন্ধু সালমা আজমী, নীরব আহমেদ ও ইমতিয়াজ আহমেদ এর অক্লান্ত পরিশ্রমের কারনে। সকলেই পড়াশুনা করছেন আর স্বপ্ন লালন করে এগিয়ে চলেছেন তাদের কাজকে ভালবেসে। ফটোগ্রাফার বন্ধু ইমতিয়াজ মুহুর্ত গুলো ধরে রাখার জন্য সর্বদাই যেন মুখিয়ে থাকেন। অনুষ্ঠান গুলোকে ফুটিয়ে তুলতে সে নিত্য নতুন পরিকল্পনা সাজাতেই ব্যস্ত। অন্যদিকে বাকি দুজন অনুষ্ঠানের জন্য যা যা প্রয়োজন কাষ্টমারের চাহিদা অনুযায়ী সেইসব দিকে খেয়াল রাখেন। আর কেনাকাটা আর কাজ করার জন্য যথেষ্ট জনবলের কাজের তদারকি নিয়ে ব্যস্ততা তো তিনজনেরই থাকে। আর উদ্যোগী নুহা হোসেন তখন সবার কাজের সমন্বয় করতেই ব্যস্ত।

এত ব্যস্ততার মধ্যেই কাজের সমস্ত পরিকল্পনা আর সেলস এন্ড মার্কেটিং এর দায়িত্বটাও নিজেই পালন করছেন। তার মুখ থেকেই বলছিলেন যে কোন ব্যবসায়ের সফলতার জন্য সেলস এন্ড মার্কেটিং এর গুরুত্বের কথা। বিক্রি না থাকলে আমার অর্থ আসবে কোথা থেকে। আর অর্থের সোর্স খুজতে তো আমাকে মাঠে নামতেই হবে। আর তাই মার্কেটিংও করতে হবে। প্রচার না থাকলে তো আর আমাকে কেউ চিনবে না। কাজও দিবে না। কারন প্রচারেই তো প্রসার। যদিও নিজের বাড়িকে অফিস বানিয়ে শুরুটা হয়েছিল কাজের। পরিধি বাড়ছে দিন দিন। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সামনেও পড়তে হচ্ছে তাকে।

12935206_1359031530807683_1364389717_nতার প্রতিষ্ঠান ওয়েডিং এক্স-কার্সন বিয়ের অনুষ্ঠান, জন্মদিন কিংবা বিবাহ বার্ষিকী সেই সাথে ঘরোয়া অন্যান্য যে কোন ধরনের অনুষ্ঠানের কাজ করে চলেছে। প্রতিটা কাজকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সৃষ্টিশীলতার জ্ঞান আর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অসাধারন মুহুর্ত গুলোকে সাজানোর পাশাপাশি মান সম্মতভাবে সংরক্ষন করতে প্রচেষ্টার কোন কমতি থাকে না তার। আপনার যে কোন অনুষ্ঠানের জন্য তাদের ফেইসবুক পেইজ ওয়েডিং এক্স-কার্সন অথবা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত নাম্বার ০১৬৭-২০৪২২৪৮ যোগাযোগ করতে পারেন।

আগামীতে উদ্যোক্তা হতে চায় যারা তাদের জন্য পরামর্শ চাইতেই যেন তার পূর্ব অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে বলা শুরু করলেন কোন কিছু করতে টাকার চাইতে ইচ্ছা শক্তি আর চেষ্টাটা বেশী থাকতে হবে। অফিস নিয়েই ব্যবসা শুরু করতে হবে এ ধারনার বাইরে এসে কাজ শুরু করতে হবে। আপনার হয়ে যারা কাজ করবে তাদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করে কাজ এগিয়ে নিতে হবে। সেই সাথে ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে মার্জিত হয়ে কথা বলতে হবে। সব সময় শেখার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ভালবেসে কাজ করতে হবে। আর কাজকে টাকা দিয়ে বিচার না করে ভালবাসা দিয়ে বিচার করতে হবে। সফলতার মুখ না দেখা পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে হবে। কারন পরিশ্রম আর অধ্যবসায় ছাড়া কখনোই সফল হওয়া যায় না।

মাসুদুর রহমান মাসুদ

Facebook Comments