banner

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 172 বার পঠিত

 

জীবনজয়ী জেরিন

জীবনের সংকটময় মুহূর্তে হতাশা এসে ভর করে। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তি তা মোকাবিলা করতে সক্ষম। নুসরাত জেরিন তেমনই একজন। ক্যানসারের সঙ্গে ১০ মাস ধরে যুদ্ধ করে তিনি এখন সুস্থ তো বটেই, শিক্ষকতা করছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির ছাত্রী জেরিন। যখন তাঁর ক্যানসার ধরা পড়ে, তখন স্নাতকোত্তর পরীক্ষার তাত্ত্বিক অংশ শেষ হয়েছে। গবেষণাপত্র জমা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। হঠাৎ করে আসা ওই বিপদে বুঝতে পারেন না কী করবেন। স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। স্নাতকোত্তরেও তাঁর প্রথম হওয়ার স্বপ্ন। গবেষণাপত্র সময়ের মধ্যে জমা না দিলে পরীক্ষার ফল ভালো হবে না। এসবই মাথায় ঘুরছে জেরিনের।
পরিবার, বন্ধু ও শিক্ষকেরা সাহস দিলেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন। নুসরাত জেরিন চিকিৎসার জন্য প্রথমে ভর্তি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে ২২ দিন চিকিৎসা নিয়ে গেলেন ভারতে। নুসরাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গবেষণাপত্র চূড়ান্তের কাজ করেছি। আমার বিভাগের শিক্ষকেরা সহযোগিতা করছেন। ই-মেইলে গবেষণাপত্র পাঠানোর পর বন্ধুরা তা জমা দিয়েছেন। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছি।’ সম্প্রতি তাঁর স্নাতকোত্তরের ফল প্রকাশিত হয়েছে। ক্যানসার তাঁকে সেরা হওয়ার প্রতিযোগিতায় হারাতে পারেনি। এবারও তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন।
দুই ভাইয়ের একমাত্র বোন জেরিন। তাঁর অসুস্থতার সময় অফিসের নির্ধারিত ছুটি শেষ করে বিনা বেতনে ছুটি নিতে হয়েছে বড় ভাইকে। জেরিন বলেন, ‘পরিবারের মানুষজনের কথা কী বলব। সবাই অনেক করেছে আমার জন্য। হাসপাতালের পুরো সময় মা সঙ্গেই ছিলেন। ছোট ভাই এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।’
এখন কেমন আছেন, জানতে চাইলে নুসরাত জেরিন বলেন, ‘অনেক ভালো আছি। আসছে মে মাসে কিছু পরীক্ষার জন্য আবার ভারতে যেতে হবে। জীবনের কঠিন আর অনিশ্চিত সময়গুলোতে মানুষ নতুন করে দেখতে শেখে জীবন-জগৎ। বদলে যায় সবকিছুর অর্থ।’ কথার একপর্যায়ে তাঁর এই বদলে যাওয়ার কথা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আগে পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকতাম। বাইরে বের হওয়া বা মানুষের সঙ্গে তেমন একটা মেশা হতো না। কিন্তু এখন অনেক বদলে গেছি। এখন মনে হয়—জীবনটাকেও বোঝা উচিত, মানুষের কাছে যাওয়া উচিত।’
অসুস্থতার সময় চেনা-অচেনা যেসব মানুষের ভালোবাসা আর সহযোগিতা পেয়েছেন, কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার কথা জানান তাঁদের প্রতি। স্মরণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কথা। তিনি বলেন, ‘কৃতজ্ঞতার কথা তো ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তারপরও যাঁরা পাশে ছিলেন, তাঁদের প্রতি ভালোবাসা থাকবে আজীবন। আমার জন্যও দোয়া করবেন।’
কী করবেন সামনের দিনগুলোতে, জানতে চাইলে নুসরাত জেরিন বলেন, ‘জীবনের অনিশ্চয়তায় আমার স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে যায়নি। স্বপ্নগুলো পূরণ করতে চাই। পড়াশোনা আর গবেষণা নিয়েই থাকতে চাই।’

Facebook Comments