banner

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 842 বার পঠিত

 

অভাব মোকাবেলায় কৃষিকাজে নারী

একটা সময় যে নারীরা ব্যস্ত থাকতো শুধু গৃহের কাজ নিয়ে, বাড়ির বাইরে যেতে দ্বিধা করতো, সেসব নারী এখন পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করছে মাঠে-ময়দানে। অভাব মোকাবেলা করে ঘরে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে অবদান রাখছে সমানভাবে। সম্প্রতি সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্য।

নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সবাই সিলেটের খাদিম চা বাগানের বাসিন্দা এবং চা শ্রমিক। সারা বছর তারা চা পাতা তোলে। কিন্তু চা পাতা সংগ্রহ করেও পরিবারের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সংসারের আয় বাড়াতে আজ তারা কৃষি কাজে পুরুষের সঙ্গে মাঠে এসেছে।

কৃষি কাজ করছে এমন কয়েকজন জানান, সারা দিন চা পাতা তুলে মাত্র ৬৯ টাকা পান। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা ধান কাটলে তারা পুরুষদের মতো ৩০০ টাকা মজুরি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন। তাই চা বাগান থেকে তারা ধান কাটতে এসেছেন।

সরেজমিন খাদিম এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নারীরা পুরুষের সঙ্গে ধান কাটছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কাস্তে হাতে ধান কাটছেন। আবার কেউ কেউ আটিবাধা কাটা ধান মাথায় করে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন।

ধান কাটতে আসা খাদিম চা বাগানের বাসিন্দা রূপা রানী বলেন, বাগানে এখন কাজ কম। বৃষ্টি হয়েছে। মাত্র নতুন পাতা গজাচ্ছে। তাই আমি ধান কাটতে এসেছি।

তিনি বলেন, চা পাতা উত্তোলন করলে মাত্র ৬৯ টাকা মিলে। কিন্তু ধান কাটলে ৩০০ টাকা মজুরি মিলে। অভাবের সংসারে বাড়তি টাকা পেলে কিছু দিন আরাম করে থাকা যায়।

অনু রানী নামের আরেক চা শ্রমিক জানান, তিনি প্রতি বছরই খাদিমপাড়া এলাকায় ধান কাটতে আসেন। জামাল নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে ধান রোপন ও ধান কাটার এখানে কাজ মেলে।

তিনি জানান, একটু বাড়তি রোজগারের আশায় তারা বাগানের বাহিরে এসে কৃষি কাজ করেন। এই কাজ করতে কোনো সমস্যা হয় কি না জানতে চাইলে অনু বলেন, প্রথমে কিছু সমস্যা হতো। কিন্তু এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই ধান কাটতে বা রোপন করতে কোনো সমস্যা হয় না।

অনু ও রূপার সঙ্গে কথা বলার পর কথা হয় তাদেরকে নিয়ে আসা জামালের সঙ্গে। তিনি জানান, নিজেও কৃষি কাজ করে সংসার চালান। প্রতি বছর তিনি ধান কাটা ও রোপনের সময় একটি টিম নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতে যান।

জামাল জানান, অতীতে কৃষি কাজের জন্য শ্রমিকের অভাব হতো না। কিন্তু এখন কৃষি কাজের শ্রমিক মিলে না। তাই তিনি বিগত কয়েক বছর থেকে খাদিম চা বাগান থেকে চা শ্রমিক এনে ধান কাটান এবং রোপন করেন। বিনিময়ে নারী চা শ্রমিকদের তিনি রোজ ৩০০ টাকা করে দিতে হয়।

তিনি নারী শ্রমিকদের প্রসংশা করে বলেন, ‘চা বাগানের নারীরা খুবই পরিশ্রম করতে পারে। তারা পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কৃষি জমিতে কাজ করছে। তাই তাদের পুরুষদের রোজ যত টাকা (মজুরি) দিতে হয় নারীদেরও তত টাকা দিতে হয়।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চা শ্রমিকরা এখন আর বাগানের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তারা চা পাতা উত্তোলনের পাশাপাশি ইট ভাঙ্গার কাজ, মাটি কাটার কাজ, ধানের চারা রোপণ, জমি পরিচর্যা, সার-কীটনাশক ছিটানো, ধান কাটা, মাড়াই এসব কাজ করছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে চা শিল্পের ইতিহাস ১৫০ বছরের। সিলেটে চা বাগান তৈরির শুরুর দিকে উন্নত জীবনযাপনের আশা নিয়ে জন্মভিটা ছেড়ে চা বাগানে কাজ করতে আসে দক্ষিণ ও মধ্য ভারতের অভাবী মানুষ। কিন্তু কাজে এসে তাদের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যায়। তারা ফিরতে চায় নিজ দেশে। এ সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নির্বিচারে হাজার হাজার চা শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে। ১৯২১ সালের ২০ মের সেই রক্তাক্ত পরিণতিতে চা শ্রমিকদের দেশে ফেরার স্বপ্নও শেষ হয়ে যায়।

Facebook Comments