All posts by Oporajita

 

রাতারগুল ভ্রমণে দিতে হবে ‘ফি’

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় বনটির বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকায় প্রবেশ, পার্কিং, ভিডিও ধারণ এবং নৌকা ভ্রমণের ফি নির্ধারণ করে গত ২৯ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ করেছে।

ফলে এখন থেকে রাতারগুলের বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকায় প্রবেশ করতে প্রাপ্তবয়স্কদের ৫০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক (১২ বছরের নিচে) ও পরিচয়পত্রধারী শিক্ষার্থীদের ২৫ টাকা করে ফি দিতে হবে। আর বিদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবেশ ফি ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা।

এ ছাড়া একদিন একটি ক্যামেরা দিয়ে রাতারগুলের বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকায় শুটিং করতে চাইলে ‘ফিল্মিং ফি’ দিতে হবে ১০ হাজার টাকা।

দেশি দর্শনার্থীদের প্রতিবার ইঞ্জিনবিহীন নৌকা ভ্রমণের ফি ১০০ টাকা। বিদেশিদের জন্য এই ফি ধরা হয়েছে এক হাজার টাকা।

এ ছাড়া বাস বা ট্রাকের প্রতিবারের পার্কিং ফি ২০০ টাকা। পিকআপ, জিপ, কার ও মাইক্রোবাসের পার্কিং ফি ১০০ টাকা এবং অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের পার্কিং ফি ধরা হয়েছে ২৫ টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বন অধিশাখা-১ থেকে এ আদেশ জারি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত ২৬ মার্চ থেকে রাতারগুলে দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি থাকলেও ১ নভেম্বর থেকে তা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুল, বাগবাড়ি ও পূর্ব মহেশখেড় এলাকার ৫০৪ দশমিক ৫০ একর নিয়ে মিঠাপানির এই জলাবন। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এই বনে হিজল, করচসহ ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৭৫ প্রজাতির পাখি ও ৯ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে।

 

কোয়ারেন্টিনে অলস সময় কীভাবে কাজে লাগাবেন?

মো. ইকরাম

হোম কোয়ারেন্টিন অবস্থাতে কঠিন মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সবাই। এ চাপ বেড়ে যায় তখনই, যখন সব কাজ বন্ধ করে আগত বিপদের অপেক্ষা করতে থাকেন। যত কাজ মুক্ত থাকবেন, ততই মানসিক চাপ বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে শরীর বিপদের সঙ্গে যুদ্ধ করার শক্তি হারিয়ে ফেলবে।

এই সময়টাতে সবার জন্য দৈনন্দিন কাজের একটা গাইডলাইন এ লেখাতে দেওয়ার চেষ্টা করবো। আশা করি লেখাটি পড়া শেষ করলে আপনার এ মুহূর্তের একটি বড় সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন। সমস্যাটি হচ্ছে, অনেকেই বলেন, সময় কাটে শুধু ঘুমে। ঘুম থেকে উঠে একবার ভাবি, কী কাজ করবো এখন? এটা ভেবে বের করার আগেই আবার ঘুমিয়ে পড়ি।

এ লেখাটি পড়ার পর ভাবনা শেষ হয়ে যাবে। পুরো ২৪ ঘণ্টার একটা রুটিনও পেয়ে যাবেন পুরো লেখাটি পড়া শেষ করলে। এ দুর্যোগে আমাদের মূলত ৩টি চ্যালেঞ্জ। সেই ৩টা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাতে ৩টি কাজ রুটিনে থাকতে হবে।

চ্যালেঞ্জ-১: বিপদ থেকে মুক্তি পেতে সৃষ্টিকর্তার করুণা পাওয়া।
চ্যালেঞ্জ জয়ে কর্তব্য: নিজ ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করার চেষ্টা করা। (সকল ধর্মের লোকেরা তাদের নিয়মেই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করবেন)।

চ্যালেঞ্জ-২: করোনা আক্রান্ত না হওয়া।
চ্যালেঞ্জ জয়ে কর্তব্য: স্বাস্থ্য বিষয়ক গাইডলাইনগুলো অনুসরণ করা।

চ্যালেঞ্জ-৩ : সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দাতে নিজেকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল রাখা।
চ্যালেঞ্জ জয়ে কর্তব্য: দক্ষতা অর্জনে বিশেষ সময় দেওয়া।

এটুকু পড়েই উঠে গেলে অনেক কিছু মিস করবেন। কারণ এখন এই ৩টি মূল কাজগুলো কিভাবে করবেন, সেটির পরিপূর্ণ গাইডলাইন দিবো।

চ্যালেঞ্জ-১: বিপদ থেকে মুক্তি পেতে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা

(এখানে মুসলিমদের জন্য গাইডলাইন দেওয়া হলো, অন্য ধর্মের লোকেরা নিজেদের মত করে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করুন।) বিশ্বের সকল উন্নত রাষ্ট্র করোনাকে ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে। কোনভাবেই তারা মৃত্যুর সংখ্যা ঠেকাতে পারছে না। এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর করুণা ছাড়া কোন উপায় নাই। তাই নিজের, পরিবারের, সমাজের ও দেশের মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। আল্লাহর সাহায্য পেতে তার সন্তুষ্টি অর্জনে তার নির্দেশগুলো পালন করতে হবে।

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে আমাদের কর্তব্যগুলোকে ৩টি ভাগে ভাগ করি-

১) আল্লাহর ইবাদত করা:

৫ ওয়াক্ত নামাজ, তাহাজ্জুদসহ অন্যান্য নফল ইবাদত, রোজা রাখা, কোরআন তেলাওয়াত করা।

২) দান করা:

দান মানুষের বিপদকে কমিয়ে দেয়। বর্তমান পরিস্থিতি দান করার সর্বোত্তম সময়। বাইরে লাইন ধরে দান করার পাশাপাশি, সবচেয়ে প্রথম দান পাওয়ার অধিকার নিজের গরীব আত্মীয়-স্বজন, গরীব প্রতিবেশী, বাসার কর্মচারী (বুয়া, দারোয়ান ইত্যাদি)। সেইসঙ্গে এই সময়ে বাজারে গেলে দাম কমানোর চেষ্টা না করে লস মনে হলেও সেই টাকা দিয়ে আসুন, রিকশাতে কিংবা কোন যানবাহনে চড়ে কোথাও যাওয়ার সময় দামাদামি না করে, উল্টো কিছু বাড়তি টাকা তাদের ধরিয়ে দিন। এটাতেও দান করার সওয়াব পাবেন।

৩) ইসলামিক জ্ঞান অর্জন:

ইসলামিক সঠিক জ্ঞান অর্জনের জন্য কোরআনে তাফসির পড়ার পাশাপাশি ইসলামিক সাহিত্য পড়ুন। এটাও আল্লাহর পছন্দনীয় অন্যতম কাজ। কুরআন হাদিসের বাইরেও ইসলামিক যেসব বই রয়েছে, সেগুলো বেশি বেশি পড়ে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যাবে, সময়টা ভালই কাটবে। এগুলো অনলাইনে সার্চ দিলেও প্রচুর বইয়ের পিডিএফ হয়তো খুঁজে পেতে পারেন।

চ্যালেঞ্জ-২: করোনা আক্রান্ত না হওয়া

করোনাভাইরাস নিজের শরীরে কিংবা ঘরে কারও শরীরে কিংবা এক বিল্ডিং এমনকি এক এলাকাতে একবার ঢুকে পড়লে সেই ভাইরাস সবার জন্য বিপদ ডেকে আনার সম্ভাবনা থাকে। তাই করোনাভাইরাসকে এলাকার কাছে ধারেও আসতে না দেওয়ার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিতে বলছে সারা বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা। তাই আপনার ২৪ ঘণ্টার রুটিনের কাজের লিস্টে অন্যতম প্রধান কাজ করোনা প্রতিরোধের জন্য নিম্নে বর্ণিত কিছু রুটিন কর্মকাণ্ড।

নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা:

মুখ, নাক এবং চোখ দিয়ে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে। বাতাসের মাধ্যমে নয়। এই মুখ, নাক এবং চোখে হাতের সংস্পর্শের মাধ্যমে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। তাই হাত ১ ঘণ্টা পরপর সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে পরিষ্কার করতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে এলে কোথাও না বসে কাপড়চোপড় ধুয়ে ফেলব বা একটা ঢাকনাওয়ালা বালতিতে ঢেকে রাখব এবং সময় মতো ধুয়ে নেব। কোনো কাপড় ধোয়া সম্ভব না হলে উজ্জ্বল রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে নেব। সম্ভব হলে ঘরে এসে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করে নেব অথবা হাত-মুখ পরিষ্কার করব।

শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো:

সুযোগ মতো লবণযুক্ত গরম পানি দিয়ে গলা পরিষ্কার (গড়গড়) করব। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার খাব। সবুজ শাকসবজি, সুষম খাবার, মাছ, মাংস, ডিম ভালো করে সিদ্ধ করে খাব (ডিমের পোঁচ খাওয়া যাবে না) যাতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনোভাবেই ঠাণ্ডা কোনো খাবার খাওয়া যাবে না। কিছু সময় পরপর গরম কফি, চা, গরম পানি বা স্যুপ খেলে ভালো হয়। এগুলোর পাশাপাশি নিয়মিত শরীর চর্চা চালাতে হবে।

চ্যালেঞ্জ-৩: সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দাতে নিজেকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল রাখা

মহামারী করোনাভাইরাস নাড়া দিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিকে। গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যে স্থবিরতা নেমে এসেছে, তাতে ৩৩০ কোটি কর্মক্ষম মানুষের আংশিক বা পুরোপুরি বেকার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। এই পরিস্থিতির কথা ভুলে গেলে হবে না।

সেই পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুতি নিতে এখনকার এই ফ্রি সময়টাকেই কাজে লাগাতে হবে। না হলে করোনা থেকে বাঁচলেও চাকরি হারিয়ে আরেক বড় ধরনের বিপদের মুখোমুখি হতে হবে। সেই বিপদকে মোকাবিলা করার প্রস্তুতি হিসেবে এই অবসর সময়টাতে নিজের দক্ষতাকে অনেক গুন বাড়িয়ে নিতে হবে।

প্রশ্ন হতে পারে, আমার যোগ্যতা বা দক্ষতা না থাকলে কি আমার চাকরি হয়েছে? হুম, কথা সত্য। যোগ্যতার কারণেই আপনার চাকরি করতে পারছেন। কিন্তু কিছুদিন আগে প্রকাশিত বিবিসির একটা সংবাদের শিরোনাম শেয়ার করে আপনাকে সতর্ক করছি।

‘ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের পাইলট চাকরি হারিয়ে ডেলিভারি ভ্যানের ড্রাইভার হিসেবে চাকরি নিয়েছেন’। আপনার বর্তমান চাকরিটি কোন কারণে চলে গেলে অন্য কোন যোগ্যতা দিয়ে হলেও অন্য ক্যাটাগরিতে হলেও একটি চাকরি যোগাড় করার মত দক্ষতা এখনই অর্জন করে নিতে হবে। আবার এমন হতে পারে আপনার অনেকগুলো যোগ্যতা থাকার কারণে হয়তো প্রতিষ্ঠানের ৮০% এর চাকরি চলে গেলেও আপনার চাকরি যাতে অন্তত টিকে যায়।

আর যদি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, তাহলেও যাতে অন্য কোন চাকরি যোগাড় করতে আপনার হাতে যাতে অনেকগুলো অপশন থাকে। কীভাবে কাজে লাগাবেন, তার একটি সংক্ষিপ্ত গাইডলাইন দিচ্ছি এবার।

৬টি বিশেষ গাইডলাইন

১. স্কিল বাড়ানোর চেষ্টা করেন। মাল্টি স্কিল হওয়ার চেষ্টা করেন। আপনাকে দিয়ে ২-৩ ধরনের কাজ করানো গেলে আপনাকে কোম্পানি বাদ দেওয়ার চিন্তা কম করবে। কিংবা চাকরি চলে গেলেও আপনার অনেকগুলো স্কিলের কোন একটা নতুন চাকরি পেতে সহায়ক হবে।

২. কমিউনিকেশন দক্ষতা বর্তমান যুগে খুব বড় একটা যোগ্যতা। যে কোন চাকরিতে ভাল অবস্থানে যেতে ভাল পারফরমেন্স করতে হয়। আর ভাল পারফরমেন্সের জন্য প্রয়োজন কমিউনিকেশন দক্ষতা। কমিউনিকেশন দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন বই কিংবা গুগল সার্চ করে কিংবা ইউটিউব থেকে শিখতে পারেন।

৩. প্রযুক্তি বিষয়ক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে গুরুত্ব দিন। কারণ পরবর্তী বিশ্বে সকল কিছুই প্রযুক্তি নির্ভর চলার সম্ভাবনাই বেশি দেখছে সবাই। এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট অবশ্যই জানা থাকতে হবে। গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিংটাও শিখে রাখতে পারেন। এ দক্ষতাগুলো থাকলে আপনার প্রতিষ্ঠানে ভাল একটা ভ্যালু থাকবে। আবার চাইলে অনলাইনেও বহির্বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠানেরও কাজ করার সুযোগ পাবেন। এগুলো শিখার জন্য ইউটিউবে বাংলাতেই ভালো ভালো অনেক রিসোর্স খুঁজে পাবেন।

৪. উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করুন। নিজে উদ্যোক্তা হতে পারবেন। উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা না থাকলে আপনি যেখানে চাকরি করেন, সেই বিজনেসেও নিজের উদ্যোক্তা বিষয়ক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সেই বিজনেসের সাফল্য নিয়ে আসতে পারবেন।

৫. যেকোন বিজনেসে ইনকাম বাড়াতে প্রয়োজন মার্কেটিং এবং ব্রান্ডিং। ভাবুনতো একবার, আপনার মাধ্যমেই যদি কোন প্রতিষ্ঠান অনেক ক্লায়েন্ট পায় এবং ব্যবসাতে ইনকাম বৃদ্ধি পায়, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানে আপনার ভ্যালু কী পরিমাণ বাড়বে? তাই বিজনেস বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে ডিজিটাল মার্কেটিং বা ব্রান্ডিং সম্পর্কে এ ছুটিতে শিখে নিতে পারেন।

৬. ইংরেজিতে যাদের জ্ঞান কম আছে, তারা এই ফ্রি সময়টাতে ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে পারেন। ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়াতে কয়েক বন্ধু মিলে চ্যাটিং গ্রুপ করে নিতে পারেন। সেই গ্রুপে ইংরেজিতে আড্ডা দিন। সময় কাটবে আড্ডা দিয়ে। সঙ্গে ইংরেজি ভয় দূর হবে, ইংরেজি জ্ঞানও বাড়বে।

আর কিছু লিখে বড় করবো না। সময় কাটানোর একটা গাইডলাইন তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কতটুকু কাজে লাগাবেন, সেটি আপনার বিষয়। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ রুটিন অনুযায়ী প্রতিদিন সময় কাটালে সময়টা ভাল কাটবে, সেইসঙ্গে নিজের জন্য ভাল কিছু অর্জন করতে পারবেন। লেখাটি দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণ থেকে সংগ্রহীত

 

রেসিপি: জিভে জল আনা খেজুর গুঁড়ের পায়েশ

শীতে খেজুর গুড়ের পায়েশের কথা শুনলে জিভে জল এসে যায়। এ সময়ে পোলাও চালের মম গন্ধের সঙ্গে গুড়ের মিষ্টি সুঘ্রাণযুক্ত এক বাটি পায়েশ খেলে মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। শীতের সময়ে প্রিয়জনদের জন্য ঘরেই তৈরি করতে পারেন খেজুর গুড়ের পায়েশ।

আসুন জেনে নিই কীভাবে তৈরি করবেন খেজুর গুড়ের পায়েশ–

উপকরণ

এক কাপ পোলাও চাল, তিন কাপ ঘন দুধ, দুই কাপ হেভি ক্রিম, চারটি সবুজ এলাচ, একটি তেজপাতা, এক মুঠো কিশমিশ, এক মুঠো কাজু বাদাম ও ৭-৮ টেবিল চামচ খেজুর গুড়।

যেভাবে তৈরি করবেন

পোলাও চাল পানিতে ধুয়ে ৩০ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখুন। বড় কড়াইতে দুধ ও ক্রিম জ্বাল দিয়ে এতে তেজপাতা দিয়ে বলক আনুন ও নাড়ুন। নাড়ার মাঝে জ্বাল কমিয়ে দিয়ে দুধ ঘন করে আনতে হবে।

চাল থেকে পানি ছেঁকে চালগুলো দুধে দিয়ে দিতে হবে এবং জ্বাল আরও কিছুটা কমিয়ে নাড়তে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কড়াইতে যেন লেগে না যায়।

এভাবে ১০ মিনিট নাড়ার পর এতে খেজুর গুড় ও এলাচ গুঁড়া দিয়ে আরও ১৫ মিনিট নাড়তে হবে। চাল সিদ্ধ হয়ে দুধ টেনে এলে এতে কাজুবাদাম ও কিশমিশ দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। কিছুক্ষণ পর সুন্দর করে পরিবেশন করতে হবে।

 

শীতের রেসিপি: মজাদার নকশি হাঁড়ি পিঠা

শীতে গরম গরম পিঠা কার না খেতে ভালো লাগে। গ্রাম-বাংলা থেকে শুরু করে শহরাঞ্চলেও শীতে রকমারি পিঠার চল বহুদিনের। এ সময়ে প্রিয়জনদের জন্য ঘরেই তৈরি করতে পারেন বাহারি পিঠা। হরেকরকম পিঠার মধ্যে নকশি হাঁড়ি পিঠা অন্যতম।

ঘরে খুব সহজেই তৈরি করতে পারেন নকশি হাঁড়ি পিঠা।

আসুন জেনে নিই এই পিঠা কীভাবে তৈরি করবেন-

যা যা লাগবে

পুরের জন্য: কোরানো নারিকেল ব্লেন্ড করে নেয়া ১ কাপ, গুড়/চিনি ১/২ কাপ, গুঁড়াদুধ ১/২ কাপ, সুজি ১ টেবিল চামচ, এলাচ গুঁড়া ১ চিমটি।

ডোয়ের জন্য: আতপ চালের গুঁড়া ২ কাপ, তরল দুধ ২১/২ কাপ, লবণ ১ চা চামচ।

যেভাবে করবেন

পুর তৈরি: মৃদু আঁচে ননস্টিক প্যানে ব্লেন্ড করা নারিকেল, সুজি ও গুঁড়াদুধ দিয়ে নেড়েচেড়ে জ্বাল দিন। সুজি সিদ্ধ হয়ে স্টিকি হয়ে গেলে খেজুর গুড়/চিনি মেশান। ঘন ঘন নাড়ুন। গায়ের পানি টানলে এলাচ গুঁড়া দিয়ে নামিয়ে ঠাণ্ডা করুন।

ডো ও পিঠা তৈরি: দুধে লবণ মিশিয়ে জ্বালে বসান। টগবগ করে ফুটলে চালের গুঁড়া দিয়ে পাত্রের মুখ ঢাকনা দিয়ে মৃদু আঁচে রেখে দিন ১০ মিনিট।

১০ মিনিট পর পাত্রের মুখ খুলে নেড়েচেড়ে নামিয়ে নিন। কিছুটা ঠাণ্ডা হলে ভালো করে মথে ডো তৈরি করুন। ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিন।

এক একটি ভাগ হাঁড়ির মতো তৈরি করে ভেতরে পুর ভরে দিন। আর একটি ভাগ দিয়ে ছবির মতো করে হাঁড়ির মুখ বানান। এবার একটু পানি মাখিয়ে হাঁড়ি এবং মুখ আটকে কাটা চামচ দিয়ে নকশা করে নিন।

স্টিমারে পানি ফুটিয়ে পিঠাগুলো ভাপে দিন ২০-৩০ মিনিটের জন্য। গরম গরম পরিবেশন করুন।

লেখক: মনিরা মাজিদ, গৃহিণী।

 

প্রেমের গুঞ্জন নিয়ে যা বললেন দীঘি

প্রার্থনা ফারদিন দীঘি আর শিশুশিল্পী নন। রূপালি জগতে তিনি এখন চিত্রনায়িকা। ‘বাবা জানো আমাদের ময়না পাখিটা’ বুলি আওড়ানো দিঘীর মুখে এখন শোনা যাবে রোমান্টিক সব ডায়ালগ।

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সিনেমায় চিত্রনায়িকা হিসেবে কাজ করতে যাচ্ছেন দীঘি। এর মধ্যে একটি সিনেমার শুটিং প্রায় শেষও করে ফেলেছেন।

আর এরইমধ্যে প্রেমবিষয়ক গুঞ্জনের মুখোমুখি হলেন দীঘি। তবে এতে মোটেই বিব্রত বা বিরক্ত হননি দীঘি।

এসব গুঞ্জনকে গুজব বলে উড়িয়ে দিলেন তিনি। উল্টো তিনি নিজেই সাংবাদিকদের জানালেন, এসব গুজব তাকে যেন আগে জানায়।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে দীঘি বলেন, ‘নায়িকাদের প্রেমের গুঞ্জন ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু মাত্র ছবিতে অভিনয় শুরু করেছি। সেপ্টেম্বরে শুটিং শুরু করেছি, সব মিলিয়ে দুই মাস হলো নায়িকা হলাম। প্রেমের গুঞ্জনটা আসতে তো বছরখানেক লেগে যায়। আর এরই মধ্যে এমন গুঞ্জন শুনতে হচ্ছে! ভেবেছিলাম, এসব গুজব উঠতে আরও এক বছর লাগবে। অবশ্য এসব গুজবে আমি কান দিই না। যখন প্রেম হবে, তখন এমনিই সবাই জানবে। ’

তবে প্রেমের গুঞ্জন এখনও তার কানে যায়নি বলে জানান এক সময়ের সুপরিচিত শিশুশিল্পী।

তিনি বলেন, ‘আমার নামে এমন কিছু নিজে শুনিনি। তো আমার মনে হয়, আমি শোনার আগে আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা, আমাদের আগে ভালো শুনতে পারেন। আপনাদের কাছে চলে যায় বা আপনাদের কাছে এমন গসিপ চলে যায়। আপনারা জানলে আমাকে আগে জানাবেন, তাহলে আমি বেশি খুশি হব।’

সম্প্রতি দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘তুমি আছ তুমি নেই’ সিনেমায় নায়িকা হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন দীঘি। এই সিনেমায় শুরুতে বাপ্পি চৌধুরীকে নায়ক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। পরে চুল বড় নেই বলে তাকে বাদ দিয়ে সাইমনকে নেয়া হয়। এরপর জানা যায়, সাইমন নয়, দীঘির নায়ক হতে চলেছেন আসিফ ইমরোজ। আমাগী ১৫ নভেম্বর থেকে গাজীপুরে শুরু হবে ‘তুমি আছো, তুমি নেই’-এর শুটিং।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এফডিসিতে ‘টুঙ্গিপাড়ার মিঞা ভাই’ নামে একটি ছবির শুটিং শুরু করেছেন দীঘি। এ ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করছেন নবাগত শান্ত খান। এটি ছাড়াও আরও পাঁচটি ছবিতে অভিনয়ের কথা রয়েছে দীঘির। এরই মধ্যে ‘ধামাকা’ নামে একটি ছবি পরিচালনা করবেন মালেক আফসারী। ‘যোগ্য সন্তান’ নামে আরেকটি ছবি নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছেন কাজী হায়াৎ।

 

শীতে নবজাতকের গায়ে কোন তেল মাখাবেন

ডা. বেদৌরা শারমিন

শীতের ঋতুতে আবহাওয়া বেশি শুষ্ক থাকে। এ সময় মায়েরা সদ্য নবজাতকের ত্বক সুন্দর রাখতে বিভিন্ন ধরনের ময়েশ্চারাইজ লোশন ও তেল ব্যবহার করে থাকেন।

অনেক মা জানেন না, কোন তেল শিশুর জন্য ভালো। বেশ কয়েকটি তেল রয়েছে, যা নবজাতকের ত্বকের জন্য উপকারী।

আসুন জেনে নিই কোন তেল নবজাতকের ত্বকের জন্য ভালো–

১. শীতে শিশুর জন্য সরিষার তেল খুবই উপকারী। কারণ এটি শরীর উষ্ণ রাখে এবং সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি থেকে দূরে রাখে।

২. শিশুর গায়ে অলিভ অয়েলও মাখতে পারেন। অলিভ অয়েল তেল শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। তবে শিশুর চর্মরোগ থাকলে অলিভ অয়েল ব্যবহার না করাই ভালো।

৩. অনেকে মনে করেন নারিকেল তেল শুধু চুলের যত্নে ব্যবহার করা হয়, এ ধারণা মোটেও ঠিক নয়। শিশুর ত্বক সহজেই এই তেল শুষে নিতে পারে। শীতে মালিশের জন্য এতে চমৎকার উপাদান রয়েছে। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাংগাল গুণ শিশুর ত্বকের জন্য উপকারী।

৪. সূর্যমুখী তেল ভিটামিন ‘ই’ সমৃদ্ধ। এতে যথেষ্ট পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা শীতকালে শিশুর ত্বকের সুরক্ষায় বিশেষভাবে কাজ করে।

৫. আয়ুর্বেদিক তেল সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই জানি। এই তেলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপাদান পাবেন। আয়ুর্বেদিক তেল শীতে শিশুর রুক্ষতা ও রোগ প্রতিরোধ করে রাখবে উষ্ণ।

ডা. বেদৌরা শারমিন, গাইনি কনসালট্যান্ট, সেন্ট্রাল হাসপাতাল লিমিটেড।

লেখাটি দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণ থেকে সংগৃহীত

 

যমজ সন্তানের যত্ন আত্তি

ধারণা করা হয়, পুরো পৃথিবীর ৩ শতাংশ মানুষ যমজ। এ ৩ শতাংশ নিয়ে মানুষের আগ্রহের কোনো শেষ নেই। চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী, দুটি শুক্রাণু একসঙ্গে দুটি ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করলে ভ্রাতৃসুলভ যমজ সন্তানের জন্ম হয়।

এরা ফ্যাটার্ন্যাল টুইন নামেও পরিচিত। সাধারণভাবে দেখা যায়, যমজের ক্ষেত্রে চেহারা হুবহু এক হয়। স্বভাব বা বৈশিষ্ট্যগতভাবেও তারা কিছুটা ভিন্ন হয়; কিন্তু দুটি শুক্রাণু একসঙ্গে একই ডিম্বাণুর সঙ্গে নিষিক্ত হয়ে সমান দু’ভাবে বিভক্ত হয়ে যে যমজ সন্তানের জন্ম হয় তারা আইডেন্টিক্যাল টুইন নামে পরিচিত। এরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হুবহু একইরকম দেখতে। তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও অনেকটা একইরকম।

আজকাল বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা আগের চেয়ে অনেক বেশি। প্রতি ৬৫ জনে একজন মায়ের সাধারণ প্রক্রিয়াতেই দুটি যমজ সন্তান হতে পারে। মায়ের পরিবারের কেউ যমজ থেকে থাকলে এর সম্ভাবনা বেশি।

আবার মায়ের বয়স বেশি বা ৩০-৩৫-এর মধ্যে হলেও যমজ বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বর্তমানে চিকিৎসার অগ্রগতির কারণে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার জন্য যে পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হয় যেমন- আইভিএফ; এ ধরনের চিকিৎসার মাধ্যমেও এখন যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে গেছে।

এজন্য শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা পৃথিবীতেই যমজ সন্তান জন্মানোর হার আগের চেয়ে বেশি। তবে যমজ সন্তান গর্ভে ধারণ করলে মা ও সন্তানের কিছু কিছু সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন- গর্ভবতী মায়ের শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়া, প্রেসার বেড়ে যাওয়া, রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, অপরিণত ও কম ওজনের শিশু, বাচ্চার জন্মগত ত্রুটিসহ ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ, গর্ভকালীন সঠিক পরিচর্যা এবং সতর্কতার মাধ্যমে এ ধরনের সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

সাবরিনা আহমেদ রিমি এবং সাকিব রহমান দম্পতির ঘর আলো করে এসেছে যমজ কন্যা। তাদের নাম রুহাইমা রহমান সিদরাহ এবং সারিজা রহমান সেহের। সিদরাহ এবং সেহেরের বয়স এখন ৪ মাস।

একদিকে দীর্ঘ ৭ বছর পর সংসারে সন্তানের আগমন, সেইসঙ্গে যমজ সন্তান হওয়ায় পরিবারে খুশির বন্যা নেমে এসেছে। সাবরিনা আহমেদ বলেন, ‘এত বছর পর একসঙ্গে দুই সন্তানের মা হওয়ার এ আনন্দ-অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ওদের দিকে তাকিয়ে সব কষ্ট ভুলে যেতে পারি। ওদের কিছু কাজে আমি খুব মজা পাই। যেমন খাবার দিতে একটু দেরি হলে বড়টার দিকে তাকালে খুব জিদ দেখায়। কিন্তু ছোটটার দিকে তাকালে ও হেসে দেয়। আমি ওদের ছড়া শোনালে ওরা দু’জনই তা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনে।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণ গর্ভবতী মায়েদের তুলনায় গর্ভে যমজ সন্তান থাকলে খাবার-দাবারের ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো যেমন পর্যাপ্ত খেতে হবে, তেমনি পর্যাপ্ত ডায়েটও মেনে চলতে হবে। গর্ভবতী মাকে পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। গর্ভকালীন জটিলতাগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পাশাপাশি নেটে সার্চ দিয়েও তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন; যেটি আমি করতাম। এখনও বাচ্চাদের পরিচর্যার ক্ষেত্রে নেটে সার্চ দিয়ে জেনে নেই। গর্ভবতী মাকে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে এবং নিয়মিত চেকআপ করতে হবে।’

সন্তান লালন-পালন করা অভিভাবকদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। দুটি সন্তান একসঙ্গে লালন-পালনের ক্ষেত্রে স্বভাবতই চ্যালেঞ্জটা দ্বিগুণ। তাই যমজ শিশুর পরিচর্যার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন:

  • বুকের দুধ পান করানো

মা বা পরিবারের ধারণা, যমজ দুই সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় বুকের দুধ মা দিতে পারবে না, এটি ভুল। মা যদি সবার সহযোগিতা পান, একসঙ্গে তিন নবজাতক সন্তানকে পূর্ণ ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধে পুষ্টি বজায় রাখতে সক্ষম থাকেন।

  • শিশুর খাবার

ছয় মাস বয়সের পর যখন শিশুকে বুকের দুধের বাইরে অন্য খাবার দেয়া শুরু করবেন তখন দু-তিন ঘণ্টা পরপর খাবার দিন। দু’জনই সমপরিমাণে খাবার খাবে না এটাই স্বাভাবিক; বকাঝকা করবেন না। প্রয়োজনে খাবারের মেন্যু বদলে দিন।

  • ঘুমের সময়

যমজ বাচ্চা হলেই যে দু’জনে একসঙ্গে সবকিছু করবে- এমন ভাবার কারণ নেই। হয়তো একজন ঘুমাল, অন্য শিশুটি হাত-পা মেলে খেলা করতে পারে। ঘুম পাড়ানোর জন্য জোর না করে তাকে সময় দিন, প্রয়োজনে কোলে করে একটু হাঁটুন।

  • আলাদা বিছানা

এক শিশুর কোনো কারণে অসুখ হলে অন্যজনের মধ্যেও তা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই একজন কোনো রোগে আক্রান্ত হলে অপরজনকে আলাদা বিছানায় রাখুন।

  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা

যেহেতু শিশুরা খুব অল্পতেই নানা রোগে আক্রান্ত হয়, তাই শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে বাইরে থেকে কেউ ঘরে ফিরলে বা বাড়িতে অতিথি এলে তিনি যেন হাত ভালোমতো না ধুয়ে, পোশাক না বদলে শিশুকে স্পর্শ না করে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখুন।

  • যেসব বিষয়ে নজর দেয়া প্রয়োজন

যমজ সন্তানদের কখনও যমজভাবে চিন্তা না করে, তাদের দুজনকে আলাদা ব্যক্তিত্বের মর্যাদা দিয়ে বড় করে তুলুন। যেমন প্রত্যেকের জন্য আলাদাভাবে জন্মদিনের উপহার বা পার্টির ব্যবস্থা করা। যমজ সন্তানের রেষারেষি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সামাল দিন।

  • চাই পরিবারের সহযোগিতা

যমজের যত্ন নিতে স্বভাবতই প্রত্যেক বাবা-মাকে হিমশিম খেতে হয়। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। যমজ সন্তানের মা সাবরিনা আহমেদ রিমি তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, পরিবারের সহযোগিতা ছাড়া যমজ সন্তান লালন-পালন করা কষ্টসাধ্য। আমি সৌভাগ্যবান, আমি যৌথ পরিবারে থাকি এবং আমার স্বামী, শ্বশুর, ননাস এমনকি ননাসের বাচ্চারাও আমার বাচ্চাদের দেখাশোনা করে। এতে আমি অনেকটা সময় বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ পাই।

রাতে ওদের ঘুম ভেঙে গেলে আমার স্বামী এবং আমি ভাগাভাগি করে ওদের সময় দেই। এতে আমার ঘুমের খুব বেশি ব্যাঘাত ঘটে না। আমি একজন কর্মজীবী নারী এবং ছুটি শেষে আমাকে আবার কর্মস্থলে ছুটতে হবে; কিন্তু আমি এ নিয়ে চিন্তিত নই।

কারণ আমার সন্তানদের দেখভালের জন্য আমার পরিবারের সদস্য রয়েছেন। আসলে এ সুযোগটা প্রতিটি নতুন মায়ের জন্য দরকার; বিশেষ করে যমজ সন্তানের মায়ের জন্যই অপরিহার্য। কারণ এ সময় শিশুর সুস্থতার জন্য মা-বাবা দু’জনেরই সুস্থ থাকা দরকার। মা-বাবার পর্যাপ্ত খাওয়া ও বিশ্রামের প্রয়োজন। একা সন্তান মানুষ করলে তা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। তাই যমজ সন্তান লালন-পালন করতে অবশ্যই পরিবারের সদস্যদের পূর্ণ সহযোগিতা প্রয়োজন। যাদের সেই সুযোগ নেই, তাদের প্রথম থেকেই অন্য কারও সহযোগিতা কীভাবে নেয়া যায় সেটি ভেবে দেখতে হবে।

 

শীতে সুস্থ থাকতে কী খাবেন

শীত এলেই বাড়ে অসুখ-বিসুখ। এ সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, এ সময় শরীরকে হাইড্রেট রাখাটা জরুরি। শরীরকে হাইড্রেট না রাখলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, দেহের তাপমাত্রার ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

কিছু সবজি রয়েছে যা শীতের সময় খুব সহজে বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। এসব খেলে শরীর সতেজ থাকে।

আসুন জেনে নিই কী খাবেন-

১. শীতের সময়ে খেতে পারেন পুষ্টিকর পালংশাক। পালংশাক ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী। অতিরিক্ত ওজনও কমায়। এই সবজি শীতে আমাদের শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করে।

২. খেতে পারেন টমেটো। এতে প্রায় ৯০ শতাংশ পানি থাকে, যা শরীরকে ভেতর থেকে পুষ্ট রাখতে সহায়তা করে। টমেটো ওজন কমাতে সাহায্য করে।

৩. হলুদ ও সবুজ ক্যাপসিকামে প্রচুর পানি থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করে। ক্যাপসিকামে ৯৩.৯ শতাংশ পানি রয়েছে। এ ছাড়া এতে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, বিটা ক্যারোটিন, থায়ামিন ও ফলিক অ্যাসিড রয়েছে।

৪. শীতের ফুলকপি দিয়ে স্যালাড, স্যুপ ও বিভিন্ন তরকারি তৈরি করে খেতে পারেন।

৫. অলিভ অয়েল ভিটামিন-ই, ভালো ফ্যাটজাতীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ, যা শরীরকে ভেতর থেকে ময়েশ্চারাইজ রাখে। ত্বক ভালো রাখতে অলিভ অয়েল দিয়ে শরীরে ম্যাসাজ করতে পারেন। এটি শরীর ঠিক রাখতে বেশ কার্যকর।

তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই

হারিয়ে যাচ্ছে শীতের খেজুর রস

মাগুরা জেলায় এক দশক আগেও শীতের মৌসুমে সকালে রসের হাড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছির ব্যস্ততার দৃশ্য চোখে পড়ত। শীতের মৌসুম শুরু হতেই বাড়ি বাড়ি চলত খেজুরের রস কিংবা রসের পাটালি গুড় দিয়ে মজাদার পিঠা-পুলির আয়োজন।

পাশাপাশি খেজুরের রস দিয়ে তৈরি ঝোলা গুড়ের সুনাম তো ছিলই। তবে গ্রামবাংলার সেই দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এসব অনুষঙ্গ। নানাবিধ কারণেই গ্রামের মানুষ যেন ভুলতে বসেছে এসব ঐতিহ্যবাহী উপাদান।

মাগুরা সদর উপজেলার ইছাখাদা গ্রামে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসা রহিমা বেগম জানান, তিনি প্রতিবছর শীতের সময় বাবার বাড়িতে ঢাকা থেকে বেড়াতে আসেন শুধু খেজুর রস ও রসের তৈরি পিঠা-পুলি খেতে। কিন্তু কয়েক বছর হলো এখন তিনি আর রস খেতে পান না।

তিনি জানান, তার চার ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে গেছে। কিন্তু তিনি এবছরও তার ছেলে-মেয়েদের এখন পর্যন্ত খেজুরের রসের তৈরি পিঠা-পুলি খাওয়াতে পারেননি।

মাগুরার শালিখা উপজেলার বুনাগাতি গ্রামের গাছি ওয়ালিয়ার জানান, ইটের ভাটায় ব্যাপকভাবে খেজুর গাছের খড়ি ব্যবহারের কারণে এ গাছ কমে যাচ্ছে। খেজুর গাছের খড়ি তুলনামূলকভাবে সস্তা হওয়ায় ইটের ভাটায় এ গাছের চাহিদা প্রচুর।

তিনি জানান, খেজুর গাছের ব্যাপক নিধনের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো মাগুরায়ও কমছে খেজুর গাছ। দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে খেজুরের রস। আসলে গাছ বাঁচাতে পারলেই রস পাওয়া সম্ভব।

এ বিষয়ে মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক বলেন, ‘মাগুরায় কিছু খেজুর গাছ থাকলেও গাছির সংকটে এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘কয়েক গ্রামের ব্যবধানে দু’একজন গাছি পাওয়া গেলেও গাছ তুলনামূলকভাবে কম থাকায় রস সংগ্রহের কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না তারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে কারণে খেজুরের রসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। একসময়ের ঐতিহ্যবাহী শীতের নবান্ন উৎসবের খেজুর রসের ক্ষির, পুলিপিঠা, রসের মন্ডা মিঠাইসহ নানা মুখরোচক খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। এ ঐতিহ্য বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’ জাগোনিউজ

কফি পান করলে কমবে চর্বি

বাড়তি চর্বি নিশ্চয়ই দুশ্চিন্তার কারণ। এই চর্বির কারণে হতে পারে নানা অসুখ। তাই শরীর থেকে বাড়তি চর্বি ঝরিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন প্রত্যেক সচেতন মানুষ। চর্বি কমাতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে কফি। তবে এই কফি দুধ-চিনি মেশানো নয়, হতে হবে ব্ল্যাক কফি।

এককাপ ব্ল্যাক কফিতে ক্যালোরির পরিমাণ ২। ডিক্যাফেইনেটেড বীজ থেকে বানান হলে তাতে আবার একেবারেই ক্যালোরি থাকে না। এছাড়াও ব্ল্যাক কফিতে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড নামে একটি উপাদান রয়েছে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। রাতের খাবার খাওয়ার পরে এককাপ ব্ল্যাক কফি খেলে শরীরে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড গ্লুকোজ উৎপাদনে বাধা দেয়। ফলে নতুন ফ্যাট কোষ তৈরি হয় না।

শুধুমাত্র ক্লোরোজেনিক অ্যাসিডই যে ওজন কমানোর জন্য কালো কফিকে আদর্শ করে তুলেছে তা নয়। ব্ল্যাক কফিতে বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস আছে যা দ্রুত ওজন কমানোর সহায়ক।

ব্ল্যাক কফিতে থাকে ক্যাফিন যা খুব দ্রুত বিপাকের ক্রিয়াকলাপ বাড়ায় এবং আমাদের শরীরের শক্তির জোগান দেয়। ফলে ক্ষুধা কম পায়। তবে চিনি বা অন্যান্য মিষ্টি যুক্ত করে একে লো-ক্যালোরি পানীয় বানাবেন না।

ব্ল্যাক কফির সঙ্গে যদি সামান্য মধু আর লেবু যোগ করে খেতে পারেন, তাহলে যেমন স্বাদ বাড়ে তেমনই তা ওজন কমাতেও সাহায্য করে। এমনিতেই লেবু আর মধু ওজন কমানোর সহায়ক। আর তার সঙ্গে যদি যুক্ত হল ব্ল্যাক কফি তাহলে ওজন কমবেই।

দুধ দিয়ে কফি পান করার খুব ইচ্ছা হলে আমন্ড কিংবা সয়া মিল্ক দিয়ে খান। তাতে শরীরও ভালো থাকবে। ওজনও কমবে।

ব্ল্যাক কফি সকালে খালি পেটে না খাওয়াই ভালো। লেবু-মধু মিশিয়ে এই কফি খাওয়ার আদর্শ সময় হলো সন্ধ্যাবেলা। এতে অতিরিক্ত ফ্যাট জমবে না। অনেকেই বলেন রাতে ব্ল্যাক কফি খেলে ঘুম আসে না। কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্যা হয় না। কফির সঙ্গে মধু আর লেবুর রস মেশালে হজম ভালো হয়।

যেভাবে তৈরি করবেন
প্রথমে এককাপ পানি গরম করুন। তাতে কফি মিশিয়ে কিছুটা সময় ফুটিয়ে নিন। এবার কাপে সামান্য গোলমরিচের গুঁড়া আর লেবু-মধুর মিশ্রণ বানিয়ে নিন। কফি ছেঁকে নিন। ৫ মিনিট রেখে একটু ঠান্ডা করে খান। মধুর বদলে ব্রাউন সুগারও ব্যবহার করতে পারেন।

 

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও কন্যা হত্যা: কাশিমপুর কারাগারে একজনের ফাঁসি কার্যকর

লক্ষীপুরে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও দুই বছরের এক কন্যাকে হত্যার দায়ে গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ২- এ বন্দি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। রোববার রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ২- এ ফাঁসি কার্যকর হয়।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ব্যক্তি হলেন, লক্ষীপুরের রামগতি থানার দক্ষিণ চরলরেন্স এলাকার মৃত শামসুল হক বাঘার ছেলে আব্দুল গফুর (৪৭)।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ২- এর জেলার মো. আবু সায়েম জানান, ২০০৬ সালে লক্ষীপুরের রামগতি থানার দক্ষিণ চর লরেন্স এলাকায় ৫ মাসের গর্ভবতী স্ত্রী ও দুই বছরের এক কন্যা শিশুকে হত্যা করে আব্দুল গফুর। পরে এ ঘটনায় রামগতি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় ২০০৮ সালে আদালত আব্দুল গফুরকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এরপর আসামি পক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করলেও তার মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। পরে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করলেও তা খারিজ করে দেন।

অবশেষে সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষে রোববার (১ নভেম্বর) রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে আব্দুল গফুরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে জল্লাদ ছিলেন শাহজাহান ভুইয়া। এসময় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ও জেলারসহ ঊর্ধ্বতন কারা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ফাঁসির পর মরদেহ নিহতের বড় ভাই মো. আব্দুল ও মো. হানিফের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বাচ্চাদের কৃমির সংক্রমণ – কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কৃমি এক ধরনের অন্ত্রের পরজীবী যা শিশুদের অন্ত্রে বসবাস করে এবং বাচ্চাদের খাদ্য থেকে তাদের পুষ্টি অর্জন করে, যার ফলে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। কৃমির সংক্রমণ, হেলমিন্থ সংক্রমণ নামেও পরিচিত, এটি শিশুদের মধ্যে পেটে ব্যথার প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি। এই সংক্রমণ খুব সাধারণ এবং সহজেই এর চিকিৎসা করা যেতে পারে। বিভিন্ন ধরনের কৃমি, তাদের কারণ, উপসর্গ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া সবসময় ভাল, যাতে আপনার বাচ্চার যদি কৃমির সংক্রামণ হয়ে থাকে তবে আপনি তাকে সময়মত চিকিৎসা পেতে সহায়তা করতে পারেন।

  • কৃমির সংক্রমণ কত রকমের হয়:
    মানুষের দেহের বিভিন্ন অংশে সংক্রামিত ও প্রজননকারী বিভিন্ন প্রকারের কৃমি আছে। সেগুলো বিভিন্ন সাইজের এবং প্রকারের হয়। ছোট বা বড়, চ্যাপ্টা না গোল হতে পারে এবং চোষক বা তিনটে ঠোঁট যুক্ত হয় এবং কোনো পা থাকে না। শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের সংক্রামিত সবচেয়ে সাধারণ কৃমিগুলি হল:
  •  ফিতাকৃমি

ফিতাকৃমি যাদের চ্যাপ্টাকৃমিও বলা হয়, তারা তাদের ত্বকের মাধ্যমে শ্বাস নিয়ে অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে তাদের হুক এবং চোষক আছে যা অন্ত্রের সাথে যুক্ত হয় এবং তারা আশ্রয়দাতার শরীরের আংশিক হজম হওয়া খাদ্যের উপর প্রজনন সম্পন্ন করে। একটি ফিতাকৃমির দৈর্ঘ্য কয়েক ইঞ্চি থেকে ৪০ ফুট বা তার বেশি হতে পারে। সাধারণত দূষিত খাবারের মাধ্যমে তাদের ডিম বা লার্ভা শিশুদের পাকস্থলীতে প্রবেশ করে।

  • গোলকৃমি

গোলকৃমির সংক্রমণ, যা “অ্যাস্কারিয়াসিস” নামেও পরিচিত, তা অ্যাস্কারিস লাম্ব্রিকয়েডস্ কৃমি দ্বারা সৃষ্ট। এগুলো ফাঁপা, কেঁচোর মতো একই রকম দেখতে এবং দৈর্ঘ্যে ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে। গোলকৃমি নোনাজল, মাটি বা পরিস্কার জলের মধ্যে বাস করে এবং এই কৃমিগুলি গৃহপালিত পশুদের মধ্যে সাধারণত দেখা যায় যেখান থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। গোলকৃমির লার্ভা প্রায়ই অন্ত্র থেকে রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে এবং ফুসফুস পর্যন্ত বাহিত হয়।

  • কুঁচোকৃমি বা সুতাকৃমি

কুঁচোকৃমিকে সুতাকৃমিও বলা হয়, কারণ তারা ক্ষুদ্র, পাতলা, সাদা এবং সর্বদা নড়াচড়া করে এমন কৃমি যা মলদ্বারে বসবাস করে। স্ত্রী কৃমি মলদ্বারের আশেপাশে ডিম পাড়ে। এই ডিম কাপড়, বিছানা এবং অন্যান্য উপকরণের উপর বেঁচে থাকতে পারে এবং স্পর্শ বা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। সুতাকৃমির সংক্রমণ শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

  •  হুকওয়ার্ম

হুকওয়ার্ম সাধারণত খারাপ নিকাশী ব্যবস্থাযুক্ত স্থানে পাওয়া যায়। হুকওয়ার্মগুলি ক্ষুদ্র পরজীবি কৃমি, তাদের মুখে কাটিং প্লেট থাকে, যার মাধ্যমে তারা অন্ত্রের প্রাচীরের সাথে সংযুক্ত হয়। দূষিত মাটির সংস্পর্শে শিশুটি সংক্রমিত হয়। হুকওয়ার্ম লার্ভা মানুষের পায়ের ত্বকের মাধ্যমে প্রবেশ করে রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করতে পারে।

  • কিভাবে জানা যাবে আমার বাচ্চা কৃমি দ্বারা সংক্রামিত কিনা?

প্রায়ই, শিশুর কৃমি সংক্রমণের কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। সংক্রমণ খুব হালকা হতে পারে সুতরাং উপেক্ষা করা হয়। আপনি যদি নিজেকে জিজ্ঞেস করেন, ‘বাচ্চাদের কি কৃমি হতে পারে?’ উত্তরটি হল হ্যাঁ; এমনকি শিশুরাও কৃমি দ্বারা সংক্রামিত হতে পারে। উপদ্রবের ধরণ এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে, আপনার নিম্নলিখিত সতর্কতা লক্ষণগুলি অনুসন্ধান করা উচিত:

  • থুথু ফেলা: শিশুটি বিনা কারণে প্রায়ই থুতু ফেলতে শুরু করে কারণ কৃমি মুখের মধ্যে লালা বাড়িয়ে দেয়।
    মারাত্মক দুর্গন্ধযুক্ত মল: শিশুর মারাত্মক দুর্গন্ধযুক্ত মলের অর্থ হল কৃমির কারণে পেটে সংক্রমণ।
    মলদ্বারের কাছাকাছি চুলকানি: স্ত্রী কৃমি সাধারণত ডিম দেওয়ার জন্য মলদ্বারে চলে যায়, যা মলদ্বারের চারপাশে জ্বালা ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
    পেট ব্যথা: এটি অন্ত্রে কৃমি থাকার সবচেয়ে সাধারণ চিহ্ন।
    ঘুম ব্যাহত হওয়াঃ চুলকানি, পেট ব্যথা এবং অস্থিরতা যৌথভাবে শিশুর ঘুমকে ব্যাহত করে।
  • বাচ্চাদের কৃমি সংক্রমণের অন্যান্য লক্ষণ ও উপসর্গ:
    শিশুরা কদাচিৎ সংক্রামিত হওয়ার লক্ষণগুলি প্রদর্শন করে, এবং যদি তাই হয়, তবে ক্ষতিকারকতা সর্বনিম্ন হতে পারে। এটা, তাই, নাও লক্ষণীয় হতে পারে। যাইহোক, লক্ষণগুলির বিষয়ে সচেতন হওয়ার সুপারিশ করা হয় এবং সন্দেহ থাকলে শিশুকে পরীক্ষা করা উচিত। বাচ্চাদের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরণের কৃমি সংক্রমণগুলি কমবেশি একই রকম উপসর্গ সৃষ্টি করে। সেগুলি নিম্নলিখিত:
  • পেট ব্যথা
  • অবসাদ
  • ডায়রিয়া
    ওজন হ্রাস পাওয়া
  • বমি
    ক্ষুধামান্দ্য
  • ঘুমের অভাব
    জন্ডিস
  • খিটখিটেভাব
    পেটে অস্বস্তি
  • পেট খারাপ
  • ফুসকুড়ি, আমবাত, কালশিটে এবং অন্যান্য এলার্জির মত ত্বকের অবস্থা
  • পরজীবী বিপাকীয় বর্জ্য দ্বারা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের জ্বালার কারণে সৃষ্ট অস্থিরতা এবং উদ্বেগ
  • ক্লান্তি এবং শক্তির অস্বাভাবিক পরিবর্তন
  • ঘন ঘন গ্যাস এবং পেট ফাঁপা
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • আচরণগত পরিবর্তন
  • শিশুদের কৃমি সংক্রমণের কারণ কী কী?

শিশুদের এবং অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের ক্রমাগত হামাগুড়ি দেওয়া এবং বাইরে খেলার কারণে কৃমি সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবারের জীবনধারার উপর নির্ভর করে, শিশুদের কৃমি হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। কৃমি সংক্রমণ হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলি নীচে তালিকাভুক্ত করা হল:

  • একটি সংক্রামিত পৃষ্ঠতলের সংস্পর্শে আসা
  • সংক্রামিত খাদ্য বা জল খাওয়া
    অনুপযুক্ত স্বাস্থ্যবিধি বা পরিচ্ছন্নতার অভাব
  • কাঁচা বা ভালোভাবে রান্না না করা খাদ্য গ্রহণ
  • অপর্যাপ্তভাবে হাত ধোওয়া
  • সংক্রামিত ব্যক্তির সান্নিধ্যে আসা

 

একটি কৃমি সংক্রমণ নির্ধারণ করার পরীক্ষা:

নিম্নলিখিত সহজ পরীক্ষাগুলি করে শিশুদের মধ্যে কৃমি সংক্রমণের সম্ভাবনা ডাক্তাররা নির্ধারণ করতে পারে:

  • মল পরীক্ষা
  • কৃমি বা কৃমির ডিমের উপস্থিতি নির্ধারণের জন্য মলের নমুনা ল্যাবে পাঠানো হয়।
    নখ পরীক্ষা করা
  • ডাক্তার শিশুদের নখের নিচে কৃমির বা মলের উপস্থিতি দেখতে বাচ্চাদের নখ পরীক্ষা করে দেখেন।
  • একটি আঠালো টেপ পরীক্ষা

এই পরীক্ষা বিশেষভাবে সুতাকৃমি সনাক্ত করার জন্য করা হয়। যদি কৃমির ডিম উপস্থিত থাকে, তবে তা সংগ্রহের জন্য বাচ্চাদের নীচে একটি টেপ রাখা হয়।
তুলোর ফালি দিয়ে মোছা

কৃমির ডিমের উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য বাচ্চার শরীরের নিচের অংশ একটি তুলোর ফালি দিয়ে মোছা হয়।
আল্ট্রাসাউন্ড টেস্ট

গুরুতর কোনও সংক্রমণের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা করা হয়, ডাক্তার আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে জীবাণুর অবস্থান শনাক্ত করেন।
শিশুদের কৃমির চিকিৎসা

কৃমি সংক্রমণ নির্মূল করা এমন কিছু বিশেষ সমস্যা নয়, চিকিৎসকের পরামর্শে কৃমির ওষুধ খাইয়ে তা সহজেই সম্ভব। শিশুদের কৃমিনাশক হিসেবে সবচেয়ে নিরাপদ হল কম মাত্রার অ্যালবেন্ডাজোল অথবা মেবেন্ডাজোল।

  • মূলধারার ঔষধ ব্যবহার করার পাশাপাশি, বাবা–মায়েরা শিশুদের কৃমির জন্য ঘরোয়া প্রতিকারগুলি বিবেচনা করতে পারেন, নিম্নলিখিত উপাদানগুলি শিশুর খাদ্যে মন্ড আকারে মিশিয়ে দিয়ে:
  • কাঁচা পেঁপে: এটির একটি এনজাইম আছে, পাপাইন, যেটি একটি কৃমিনাশক হিসাবে কাজ করে এবং অন্ত্রের মধ্যে কৃমিকে ধ্বংস করে।
  • রসুন: এটি একটি প্রাকৃতিক কৃমিনাশক এজেন্ট এবং পরজীবী কৃমিনাশ করতে অত্যন্ত কার্যকর।
  • ক্যারম বীজ: এই বীজ থাইমল সমৃদ্ধ, যা অন্ত্রের পরজীবী বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এগুলিকে গুড়ের সঙ্গে মিশ্রিত করে একটি শিশুকে দেওয়া হয়।
  • কুমড়ো বীজ: এই বীজে কিউকারবিটাসিন আছে যেটি কৃমিদেরকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে তোলে এবং শরীরের মধ্যে তাদের বেঁচে থাকা প্রতিরোধ করতে পারে।
  • কড়লা: এটি পেটের কৃমির সাথে যুদ্ধ করতে সহায়তা করে। জল এবং মধু দিয়ে মেশালে তিক্ত স্বাদ থাকে না।
  • নিম: এটির একটি পরজীবী–বিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে এবং বিভিন্ন অন্ত্রের কৃমি ধ্বংস করতে উপকারী।
  • গাজর: গাজরে ভিটামিন এ থাকে যা শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অন্ত্রের পরজীবীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে। খালি পেটে গাজর খাওয়া কৃমি পরিষ্কার করতে সাহায্য করতে পারে।
  • হলুদ: এটি একটি অভ্যন্তরীণ অ্যান্টিসেপটিক এবং এটি সমস্ত ধরনের কৃমি নির্মূল করার জন্য পরিচিত।
  • নারকেল: এটির একটি শক্তিশালী পরজীবী বিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে, এটি কৃমি চিকিত্সার জন্য উপকারী। এটিকে তেল হিসাবে সরাসরি খাওয়া যেতে পারে।
  • লবঙ্গ: লবঙ্গ বিদ্যমান কৃমি এবং তাদের ডিম ধ্বংস করতে পারে এবং ভবিষ্যতে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।

 

শিশুর বৃদ্ধির উপর কৃমির প্রভাব:
কৃমিগুলি পরজীবী এবং তাদের পালনকারীর শরীর থেকে পুষ্টি অর্জন করে। তারা নিম্নলিখিত উপায়ে সংক্রামিত হয়ে, শিশুদের পুষ্টির অবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে:
কৃমিগুলি ধারক কোষকলাতে বাস করে এবং সেগুলোকেই খায় এবং এমনকি রক্তেও থাকে এবং এভাবে লোহা ও প্রোটিন হ্রাস পায়, যা প্রায়শই রক্তাল্পতার দিকে নিয়ে যায়।
কিছু কৃমি যেমন গোলকৃমি অন্ত্রে কিছু ভিটামিনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, যার ফলে পুষ্টির শোষণ বিঘ্নিত হয়।
কৃমির কারণে ক্ষুধা হ্রাস, পুষ্টির অভাব এবং দুর্বলতা হয়।
ফলাফলস্বরূপ কৃমিগুলি ডায়রিয়ার সৃষ্টি করে এবং আমাশয় ঘটায় এইভাবে শরীর দুর্বল করে দেয়।
শিশুটির শারীরিক ও মানসিক বিকাশের উপর তাদের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে, যার ফলে শিশুটির ওজন হ্রাস পায় বা বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

শিশুদের কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধ

স্বাস্থ্যবিধি একাই ভবিষ্যতে সংক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে যে কৃমি সংক্রমণের কারণে শিশুদের পেট ব্যথা হয়। বাচ্চারা হামাগুড়ি দিতে এবং হাঁটতে শুরু করলে তাদের কৃমি সংক্রমণের ঝুঁকি সবথেকে বেশী। সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুশীলন করা গুরুত্বপূর্ণ:

নিয়মিত বাচ্চাদের ন্যাপিগুলি পরিবর্তন করুন এবং সাথে সাথে আপনার হাত ধুয়ে ফেলুন।
ঘর এবং আশপাশ পরিষ্কার রাখুন।
বাচ্চা যেন পা ঢাকা জুতো পরিধান করে বাইরে খেলতে যায় এবং বাড়ীতে ফিরে যেন হাত এবং পা ধুয়ে ফেলে তা নিশ্চিত করুন।
বাচ্চাদের জল জমা এলাকার কাছাকাছি খেলতে দেবেন না।
ঘন ঘন আপনার শিশুর নখ কেটে দিন।
আপনার শিশুকে ফোটানো এবং পরিশ্রুত জল পান করান।
বাচ্চাদের পাকস্থলীতে কৃমি প্রতিরোধের জন্য খাবার ভালভাবে রান্না করা উচিত এবং কাঁচা খাবার দেওয়া উচিত নয়।
ফল এবং সবজি পরিষ্কার জলে ভাল করে ধোওয়া উচিত।
গরম জল দিয়ে জামাকাপড় এবং বিছানার লিনেন কেচে দিন।

স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখলে কৃমি থেকে সংক্রমণ– যা শিশুদের মধ্যে সাধারণ– প্রতিরোধে দীর্ঘ পথে কাজে আসতে পারে। কিছু ডাক্তার সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং শিশুদের মধ্যে সর্বোত্তম বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রতি ৬ মাসে একবার করে কৃমিনাশক ওষুধ প্রদান করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। যদি আপনি কোনও উপসর্গ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হন তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

সুস্থ ত্বকের জন্য নিম

সৌন্দর্য প্রকাশের আছে নানা ভাষা, নানা উপমা। তবে সুস্থ ত্বকই হলো আসল সৌন্দর্য। আর মুখ হলো তা প্রকাশের অন্যতম অবয়ব। তবে দেহের অন্যান্য স্থানের তুলনায় মুখের ত্বক একটু বেশি নাজুক। তাই এর জন্য দরকার বাড়তি যত্ন, বাড়তি পরিচর্যা।

নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে প্রত্যেককেই দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হয়। সারা দিনের পরিশ্রম, ধকল ও ধুলাবালিতে লাবণ্য হারিয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে যায় ত্বক। তাই ত্বককে সতেজ, সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখতে সঠিক পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি।

আমাদের শরীরের ত্বক ও মুখের ত্বকের গঠন একেবারেই আলাদা। মুখের ত্বক অনেক বেশি নাজুক, অনেক বেশি কোমল। তাই শরীরের ত্বক বিভিন্ন রকম সাবান সহ্য করতে পারলেও মুখের ত্বক তা একদমই পারে না। সাবান ব্যবহারে ময়েশ্চার চলে গিয়ে ত্বক হয়ে যায় শুষ্ক। এছাড়াও ত্বকের পিএইচ স্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাবান ব্যবহারের কারণে যার হেরফের হয়। আর এজন্য নানা রকম ত্বকের সমস্যায় ভুগতে হতে পারে।

এই অঞ্চলে ত্বকের যত্নে হারবাল পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়। অনেক আগে থেকেই নিম ও হলুদের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। ঔষধি গাছ হিসেবে নিমের ব্যবহার হয়ে আসছে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে। ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ানাশক হিসেবে যা খুবই কার্যকর। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর জুড়ি মেলা ভার। এছাড়াও নিমপাতা ছত্রাক (ফাঙ্গাস) বিরোধী হওয়ায় ত্বককে সুরক্ষিত রাখে। অপরদিকে হলুদ মুখের নিষ্প্রাণ বিবর্ণভাব কাটিয়ে করে তোলে সতেজ ও উজ্জ্বল। কালো দাগ ও পিম্পল নির্মূল করতে হলুদের ব্যবহার বহু প্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসছে। তবে হলুদ সরাসরি ত্বকে মাখা উচিত নয়। শুধু কাঁচা হলুদ মুখে মাখলে ত্বক ভীষণ হলদে দেখায়। ত্বকের যত্নে ব্যবহূত যে কোনো উপাদান সঠিক উপায়ে ও পরিমাণে ব্যবহার করা খুব জরুরি। তাই ত্বক ভালো রাখতে ব্যবহার করতে পারেন নিম ও হলুদের প্রাকৃতিক নির্যাসে ভরপুর হিমালয়া পিউরিফাইং নিম ফেস ওয়াশ। এতে সব উপাদান আছে সঠিক মিশ্রণে। এর অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল গুণ ত্বককে রাখে সুরক্ষিত ও মোলায়েম। এছাড়াও হিমালয়া পিউরিফাইং নিম ফেস ওয়াশে আছে ভিটামিন ই এবং ফ্যাটি এসিড। যা মুখের ত্বকের জন্য উপকারী।

বর্তমান সময়ে পৃথিবীজুড়ে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া মরণঘাতী ভাইরাস করোনার সময়েও ‘হিমালয়া পিউরিফাইং নিম ফেস ওয়াশ’ তার প্রয়োজনীতা বুঝিয়ে দিচ্ছে। ভাইরাস প্রতিহত করতে মাস্ক পরে থাকার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। একটানা অনেকক্ষণ মাস্ক পরে থাকলে ত্বকে পিম্পল, অ্যালার্জি ও র্যাশের মতো বহু সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর সেজন্যই ত্বকের সঠিক যত্ন নিতে নির্দিষ্ট সময় পর পর ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন। এতে ত্বক থাকবে সুস্থ, সেইসঙ্গে জীবাণুমুক্ত। প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন হিমালয়া পিউরিফাইং নিম ফেস ওয়াশ ১৫ মি.লি প্যাকটি সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় যে কোনো সময় মুখ পরিষ্কারের কাজটি করা যাবে। এছাড়া এর দামও হাতের নাগালে। আপনার ত্বক শুষড় কিংবা তৈলাক্ত যেমনই হোক, হিমালয়া পিউরিফাইং নিম ফেস ওয়াশ-এর হারবাল উপাদানগুলো তা নিয়ন্ত্রণ করে ত্বককে রাখবে সুস্থ ও প্রাণবন্ত।

 

তেঁতুলিয়া থেকে অপরূপ পবর্তশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা

বরফ আচ্ছাদিত কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখতে কে না চায়? তাই, করোনা পরিস্থিতিতেও পর্যটকদের ভিড় এখন উত্তরের সীমান্ত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।

এই সীমান্ত উপজেলায় শহরের মহানন্দার পাড় থেকে ভারতের রূপালি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। ঝকঝকে কাঁচের মতো স্বচ্ছ নীল আকাশ আর পরিচ্ছন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশের ঋতু শরৎ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এমনই সময়ে পঞ্চগড় তেঁতুলিয়া থেকে প্রতি বছরের মতো এবারও দেখা মিলছে বিশ্বের তৃত্বীয় সর্বোচ্চ পবর্তশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার।

চলতি শীত মৌসুমের শুরুতে আকাশে তেমন মেঘ আর কুয়াশা না থাকায় উত্তরের এই সাদা পাহাড় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কোনো রকম কৃত্রিম যন্ত্র ব্যবহার না করে দূর পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য দেখে বিমোহিত দেশীয় পর্যটকরা। শনিবার সকালে তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্পষ্ট দেখা গেছে। তেঁতুলিয়া উপজেলার ডাকবাংলোসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখে দেখা মিলেছে কাঞ্চনজঙ্ঘা অপরূপ দৃশ্য।

করোনা পরিস্থিতিতে আকস্মিক অতিরিক্ত পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো এবং মহানন্দার পাড়ে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কথা হয় কয়েকজন স্থানীয়ের সাথে। তারা জানান, সাধারণত অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত শীতের আগে মেঘমুক্ত নীলাকাশে ভেসে ওঠে তুষার শুভ্র হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘা। বছরের এই নির্দিষ্ট সময়ে বাংলাদেশ থেকে দৃশ্যমান হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখতে প্রতি বছরই অসংখ্য পর্যটক আসে। তবে এবার করোনার কারণে পর্যটক কম হলেও গত দু’দিনে আকস্মিক বেড়েছে পর্যটক। একারণে হিমশিম খাচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসন।

শনিবার সকালে সূর্যোদয়ের পর থেকেই চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো চোখে ধরা পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার নয়নাভিরাম নৈসর্গিক রূপ। সূর্যকিরণের তেজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সকাল দশটা থেকে এগারটা পর্যন্ত বেশ ভালোভাবেই দেখা যায়। তারপর ক্রমান্বয়ে আবার ঝাপসা হয়ে হারিয়ে যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। তবে, শেষ বিকেলে সূর্যকিরণ যখন তির্যকভাবে বরফাচ্ছাদিত পাহাড়ে পড়ে তখন অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে আবারও ধরা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা।

কাঞ্চনজঙ্ঘা অপরূপ দৃশ্যে দেখা মেলে দুই মেরু রেখার বাইরে সবচেয়ে বেশি বরফ ধারণ করে রেখেছে হিমালয় পর্বতমালা। আর সুর্যের সব রঙেই যেন নিজের মধ্যে ধারণ করে রেখেছে হিমালয়ের সর্বোচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা। তাই সুর্যের আলো বাড়ার সাথে সাথে ক্ষণে ক্ষণে পাল্টাতে থাকে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ। প্রথমে লাল রঙ দেখা গেলেও সেই রং লাল থেকে পাল্টে গিয়ে কমলা রঙের হয়, তারপর হলুদ রঙ হয়ে সর্বশেষ সাদা দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা অপরূপ সৌন্দর্য।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস এবং উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ নেপাল ও ভারতের সিকিম সীমান্তে অবস্থিত। বাংলাদেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে নেপালের দূরত্ব ৬১ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব ৬৮ কিলোমিটার, চীনের দূরত্ব ২’শ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার, শিলিগুড়ির দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। অন্যদিকে হিমালয়ের এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। তাই, মেঘ-কুয়াশামুক্ত আকাশের উত্তর-পশ্চিমে তাকালেই দেখা মেলে বরফ আচ্ছাদিত সাদা পাহাড় কাঞ্চনজঙ্ঘার।হিমালয়ের পাদদেশে তেঁতুলিয়া উপজেলা অবস্থিত হওয়ায় খালি চোখে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।

প্রতিবছর নভেম্বর মাসের শুরু বা মাঝামাঝিতে দেখা গেলেও আকাশ পরিস্কার হওয়ার কারণে আজ শনিবার সকালে হঠাৎ করে দেখা গেছে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, আজ সকালে আকাশ পরিষ্কার থাকার কারণে খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলেছে। মেঘমুক্ত আকাশে রূপোলি চকচকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। আকাশ মেঘমুক্ত থাকা ও উত্তরবঙ্গে সাম্প্রতিক বৃষ্টির কারণে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ কমে যাওয়াতেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্যমান হয়েছে।

পর্বতশৃঙ্গ নেপাল ও ভারতের সিকিম সীমান্তে অবস্থিত এই কাঞ্চনজঙ্ঘা হিমালয় পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালা। এই পর্বতমালার তিনটি চূড়া আবার পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া। এর মধ্যে প্রথম অবস্থানে থাকা মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৮’শ ৪৮ মিটার বা ২৯ হাজার ২৯ ফিট। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চূড়া কেটু’র উচ্চতা ৮ হাজার ৬’শ ১১ মিটার বা ২৮ হাজার ২’শ ৫১ ফিট। তৃতীয় অবস্থানে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার বা ২৮ হাজার ১’শ ৬৯ ফিট। যদিও ১৮৫২ সালের আগে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বলে মনে করা হতো। ১৯৫৫ সালের ২৫ মে ব্রিটিশ পবর্তারোহী দলের সদস্য জোয়ে ব্রাউন এবং জর্জ ব্যান্ড সর্বপ্রথম কাঞ্চনজঙ্ঘায় আরোহণ করেন।

সুউচ্চ এই চূড়া দেখতে প্রতি বছর অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক ছুটে যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলা শহরের টাইগার হিল পয়েন্টে। টাইগার হিলই হচ্ছে,কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দেখার সবচেয়ে আদর্শ জায়গা। তবে, কেউ কেউ যান সান্দাকপু বা ফালুট। আবার কেউ কেউ সরাসরি নেপালে গিয়েও কাঞ্চনজঙ্ঘায় পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। তবে যাদের এসব সুযোগ মেলে না সেইসব বাংলাদেশি পর্যটকে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ অবলোকন করতে ছুটে আসেন তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধায়। এখানে মেঘমুক্ত আকাশে দিনের প্রথম সূর্যকিরণের সঙ্গে সঙ্গেই চোখে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা। একটু বেলা বাড়লেই তেজোদীপ্ত রোদ যখন ঠিকরে পড়ে বরফাচ্ছাদিত পাহাড়ের গায়ে, কাঞ্চনজঙ্ঘা তখন ভিন্নরূপে ধরা দেয় পর্যটকের চোখে। যে রূপের টানে প্রতি বছর হাজারো পর্যটক আসেন তেঁতুলিয়ায়।

স্থানীয়রা জানান, দিনের শুরুতে কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রথমে একটু কালচে, এরপর ক্রমান্বয়ে টুকটুকে লাল, কমলা, হলুদ এবং সাদা বর্ণ ধারণ করে। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ পরিবর্তন দেখতে দূরবীন বা বাইনোকুলারের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকলে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা মেলে। অনেকে তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়ার বিষয়টি অপেক্ষাকৃত কম সামর্থ্যবান পর্যটকদের জন্য “সৃষ্টিকর্তার উপহার” বলে অবহিত করেন।

শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে যাওয়া পর্যটকদের জন্যই তেঁতুলিয়া ও বাংলাবান্ধা এলাকার আশেপাশে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি হোটেল-মোটেল ও পিকনিক স্পট।

স্থানীয় জাবেদ উদ্দিন জানান, “হঠাৎ করেই এ মৌসুমে প্রথম কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য চোখে পড়েছে। তাই,বন্ধু-বান্ধবদের জানিয়েছি,তারা অনেকে তেঁতুলিয়া আসছে।”

তেঁতুলিয়া রওশনপুরের কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটের ব্যবস্থাপক এ কে এম ওয়াহিদুল হক বলেন “ কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখা গেছে। চা বাগান, আনন্দ ধারা (পিকনিক স্পট) এবং কাঞ্চনজঙ্গা দেখতে এখানে প্রতিবছর অনেক পর্যটক ভিড় করেন। শীত কেবল নামছে। পুরোপুরি শীত নামলে পর্যটকের সংখ্যাও বেড়ে যাবে।”

চিত্ত-বিনোদনের অন্যতম পর্যটন স্পট এখন তেঁতুলিয়া। মানচিত্রের সবার উপরে থাকায় একনামে সবাই জানে সীমান্তবেষ্টিত পর্যটন খ্যাত এ জায়গাটি। প্রতিবছর কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখতে অগণিত দেশি-বিদেশি ভ্রমণ পিপাসুরা পাড়ি জমান। পর্বতশৃঙ্গ হিমালয়, কাঞ্চনজঙ্ঘা আর দার্জিলিংকে কাছ থেকে দেখা মেলে তেঁতুলিয়ায় এলেই। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নতুন রূপে ঢেলে সাজানো হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে পিকনিক কর্নার জেলা পরিষদ ডাকবাংলো। এখান হতেই হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সুবিধা দিতে নির্মাণ করা হয়েছে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। এ ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে কাঙ্ক্ষিত আকাশচুম্বী হিমালয় পর্বত, মেঘকন্যা কাঞ্চনজঙ্ঘা, দার্জিলিং এবং নদীর ওপারে ভারতের বিস্তৃত সবুজ চা বাগানসহ নানান দৃশ্য।

এছাড়া পিকনিক স্পট ডাকবাংলোতে বিভিন্ন ভাস্কর্য স্থাপনের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। কৃত্রিম ভাস্কর্য ও পশুপ্রাণি স্থাপনসহ শিশুদের খেলনা স্থাপন করে দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা তৈরি করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ডাইনিং রূমও। আর পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়েছে নানান দৃষ্টি আকর্ষিত ভাস্কর্য। এসব ভাস্কর্যের মধ্যে মাঝিপাড়া বাইপাসে সারস পাখি, কালান্দিগঞ্জ বাজারে বাংলাদেশের প্রথম ১ টাকা নোট, ভজনপুরে শাপলা এবং তিরনই হাটে মাছসহ নানান ইতিহাস নির্ভর ভাস্কর্য।

উত্তরে বাংলাদেশের শেষ সীমানা বাংলাবান্ধায় জিরোপয়েন্ট। এখানে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর। ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু হওয়ায় এ বন্দর দিয়ে প্রবেশ করা যায় ভারত, নেপাল,ভূটান ও চীনে। পাসপোর্ট ভিসা থাকলে অনায়াসেই ঘুরে আসা যায় ভারতের শিলিগুঁড়ি, দার্জিলিংসহ নানান দর্শনীয় স্থান এবং নেয়া যায় উন্নত চিকিৎসা সেবা। তবে করোনা পরিস্থিতে এখন এ স্থলবন্দরে দিয়ে ইমিগ্রেশন সুবিধা বন্ধ রয়েছে।

হিমালয়, কাঞ্চনজঙ্ঘা কাছ হতে দর্শনের পর মনোমুগ্ধকর সন্ধ্যা উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। ডাকবাংলোর তীরে বসেই ঝিরিঝিরি শীতল হাওয়ায় চোখে পড়বে সন্ধ্যার উত্তরের আকাশের আরেক সৌন্দর্য। দার্জিলিং চুড়ার ঢালু বেয়ে গাড়ি চলাচল। ঢালু পাহাড়ের পথ জুড়ে রঙিন ল্যাম্পস্টের আলো। নদী মহানন্দার তীর ঘেঁষা ভারতের কাটাতারের বেড়ার সাথে সারিসারি সার্চলাইটের আলো। সে আলোয় ১৫ কিলোমিটার জুড়ে মহানন্দাকে মনে হবে গড়ে উঠা কোন এক আধুনিক শহর। নেমে আসা সন্ধ্যার সূর্যাস্ত মনে হবে সাগরকন্যা কুয়াকাটার সূর্যাস্তের অবিকল নান্দনিক রূপ। মধ্য দুপুরের মাথার উপর সূর্যের কিরণে হীরের মতো জ্বলজ্বল করে হাসতে দেখা যাবে মহানন্দার চরের একেকটি বালুকণা। মন ছুটে যাবে বালুচরে হাঁটতে। পায়ের নিচে বালুর ঝিরঝির শিহরণে আরেক অনুভূতিতে মোহিত করবে হিমালয়ের এই রাজলক্ষী মহানন্দা। দৃষ্টি কাড়বে সবুজ চা বাগান।

দেশের তৃতীয় সবুজ চা অঞ্চল এখন তেঁতুলিয়া। তিনদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে প্রতিবেশী ভারত। সীমান্ত জুড়ে ভারতীয় সবুজ চা-বাগান, কাটাতারের বেড়া,সার্চলাইট,সুউচ্চ টাওয়ার আর কর্মররত চা শ্রমিকদের পাতা কাটার দৃশ্যও মুগ্ধ করবে যে কাউকে। মুগ্ধ করবে ভারতের দার্জিলিংয়ের ২০৬০ মিটার উঁচু মহালিদ্রাম পাহাড় হতে প্রবাহিত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বয়ে আসা নদী মহানন্দায় হাজার হাজার শ্রমিকদের পাথর উত্তোলনের দৃশ্য।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের চিহ্ন হিসেবে এ অঞ্চল যুদ্ধের সময় ছিল সম্পূর্ণ নিরাপদ। কোন পাক বাহিনী এ অঞ্চলে প্রবেশ করতে না পারায় একাত্তরের মুক্তাঞ্চল হিসেবে খ্যাত স্বপ্নের মতো সুন্দর এ সীমান্ত জনপদটি। এছাড়াও পর্যটকদের ঘুরে দেখার মতো রয়েছে গ্রিন টি গার্ডেন, দর্জিপাড়া কমলা ও চা বাগান,আনন্দধারা, টি ফ্যাক্টরি, মিনা বাজার, সমতল ভূমিতে পাথর কোয়ারি এবং ভিতরগড়ের ঐতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব নগরী ও মহারাজা দিঘী।

পর্যটকদের জন্য রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্রমণ পিপাসুরা যাতে নির্বিঘ্নে পর্যটন স্পটের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে পারেন সে বিষয়ে নিরাপত্তা জোরদার করে রেখেছে মডেল থানার পুলিশ। পর্যটকদের মনে করা হয় এ অঞ্চলের স্বাগত অতিথি। তাই পর্যটকদের কোন প্রকার যেন সমস্যা না হয় , সে বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সদা রয়েছেন তৎপর।

সর্বোপরী সীমান্ত জনপদের নির্ভেজাল প্রকৃতির বিশুদ্ধ বাতাস যেমন শরীর-মন জুড়িয়ে যাবে, তেমনি এখানকার সুস্বাদু পানি, খাবারও তৃপ্তি এনে দেবে পর্যটকদের।

 

টাঙ্গাইলে গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় রোজিনা আক্তার (২১) নামের এক গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) রাতে উপজেলার মিরকুটিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত রোজিনা আক্তার নাগরপুর উপজেলার কোকাদাইর গ্রামের মৃত মজের আলীর মেয়ে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামী মো. জয়নাল আবেদিন ওরফে বাবুকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে স্বামীর বাড়িতে আগুনে দগ্ধ হন রোজিনা আক্তার। পরে তাকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য নেয়া হয় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর শনিবার সকালে উন্নত চিকিৎসা জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলে পথিমধ্যে মারা যান রোজিনা।

দুই বছরের কন্যা সন্তানের জননী ছিলেন রোজিনা আক্তার। মৃত্যুর পর তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় বাবার বাড়িতে। রোজিনার মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন নাগরপুর থানা পুলিশকে খবর দিলে দুপুরে স্বামী জয়নাল আবেদিন ওরফে বাবুকে আটক করে পুলিশ।

রোজিনা আক্তারের বড় বোন হুনুফা আক্তার বলেন, প্রায় চার আগে উপজেলার মিরকুটিয়া গ্রামের নশের আলীর ছেলে মো. জয়নাল আবেদিন ওরফে বাবুর সঙ্গে আমার বোনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য বারবার চাপ সৃষ্টি করতে থাকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও স্বামী। শুক্রবার রাতে পরিকল্পিতভাবে আমার বোনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

নাগরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলম চাঁদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামী জয়নাল আবেদিন ওরফে বাবুকে থানায় আনা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রোজিনা আক্তারের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

 

বিয়ের পিঁড়িতে রাসিক মেয়রকন্যা

 

বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বড় মেয়ে ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা।

বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক মো. রেজভী আহমেদ ভূঁইয়া।

রেজভী আহমেদ ভূঁইয়া লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ব্যবসায়ী আমির হোসেন ভূঁইয়া ও রাজিয়া বেগমের সন্তান।

বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় রাজশাহী নগরীর উপশহরে মেয়রের বাসভবনে ঘরোয়া পরিবেশে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

রাসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, করোনা মহামারির কারণে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সীমিত করা হয়েছে।

বিয়েতে দুই পরিবারের নিকটাত্মীয়রাই কেবল অংশ নিয়েছেন। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বড় পরিসরে সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে।

এর আগে বুধবার রাতে ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা ও রেজভী আহমেদ ভূঁইয়ার গায়ে হলুদের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের দৌহিত্র ডা. অর্ণা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

এদিকে, ডা. অর্ণার গায়ে হলুদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সেই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।

রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ডা. অর্ণা জামান ও রেজভী আহমেদ ভূঁইয়ার নতুনের জীবনের জন্য শুভ কামনা জানিয়েছেন।

শীতের আগে ত্বক ভালো রাখতে যা করবেন

ভোরে উঠলে আপনি কুয়াশার দেখা পাবেন। যদিও প্রকৃতিতে হেমন্ত ঋতু, কিন্তু জানান দিচ্ছে শীতের আগমনের। শুধু কি প্রকৃতিতেই পরিবর্তন? নিজের দিকে তাকান। পরিবর্তনের শুরুটা দেখতে পাবেন। হাত-পা কিছুটা খসখসে হতে শুরু করেছে। ঠোঁটও শুকিয়ে যাচ্ছে। শরীরেও কেমন শুকনোভাব। শীতের এই আগাম বার্তা আপনাকে বলছে ত্বকের যত্ন নিতে। এই সময় থেকেই ত্বকের বাড়তি পরিচর্যা শুরু করা প্রয়োজন। বিস্তারিত প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়া টাইমস-

ঠোঁটের যত্ন
রাতে ঘুমাতে যাওয়া আগে ঠোঁটে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। পেট্রোলিয়াম জেলিও এক্ষেত্রে বেশ কাজে দেয়। পেট্রোলিয়াম জেলি চামড়ার খসখসে ভাব দূর করে সহজেই। রোদে বের হলে এটি ব্যবহার করবেন না। কারণ তাতে খুব সহজেই শুকনো হয়ে যায় ঠৌঁট। এর বদলে লিপস্টিক ব্যবহার করুন।

ময়েশ্চারাইজার
গোসলের পরে ময়েশ্চারাইজার লাগান। এতে ত্বকের অর্দ্রতা বজায় থাকবে। এছাড়াও ময়দা, দুধ, মধু মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতেও ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। যাদের ত্বক একটু বেশি শুকনো তারা ভারী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।

সুগন্ধি সাবান নয়
শীতে অতিরিক্ত কেমিক্যাল আপনার ত্বককে আরও রুক্ষ করে তুলতে পারে। তাই খুব চড়া গন্ধযুক্ত সাবান বা পারফিউম ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনে বডি মিস্ট ব্যবহার করুন। সবথেকে ভালো গ্লিসারিন যুক্ত সাবান ব্যবহার করতে পারলে।

ভিটামিন সি
আমলকি, লেবু, বাদাম, মাছের তেল এসবে পাওয়া যায় ভিটামিন সি। তাই এসময় খাদ্যতালিকায় এসব খাবার রাখার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ফলের রস খান। সুস্থ ও সতেজ থাকবেন।

গরম পানি
একেবারে ঠান্ডা পানি পান না করুন চেষ্টা করুন হালকা গরম পানি পান করতে। গোসলের সময়ও হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। তবে পানি যেন ফুটন্ত গরম না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। গোসলের আগে গায়ে তেল মাখুন।

 

নবজাতক শিশুর যত্ন

আপনার নবজাতকের সাথে প্রথম কয়েক মাস প্রথমবার পিতামাতা হওয়া মানুষদের জন্য বিশৃঙ্খল এবং অভিভূতকারী হতে পারে। আপনি নবজাতক শিশুর যত্ন সম্পর্কে সবার কাছ থেকে সব ধরণের পরস্পর বিরোধী পরামর্শ পাবেন। নবজাতকের যত্ন সম্পর্কে কোন পরামর্শ অনুসরণ করতে হবে তা নির্ধারণ করা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। নবজাতকের যত্ন নেওয়া ক্লান্তিকর এবং চ্যালেঞ্জিং, তবে এটি আপনার জীবনের সবচেয়ে বিস্ময়কর এবং ফলপ্রসূ অভিজ্ঞতাও।

নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়ার কৌশল

এটি আপনার প্রথমবার হলে, একটি নবজাতকের যত্ন নেওয়া স্পষ্টতই একটি চ্যালেঞ্জ। সুতরাং, এখানে দশটি উপায় রয়েছে যা আপনাকে নবজাতকের যত্ন নিতে সহায়তা করবে:

খাওয়ানো
শিশুকে সঠিক সময়ে খাওয়ানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। নবজাতককে প্রতি ২ থেকে ৩ ঘণ্টায় খাওয়ানো উচিত, যার অর্থ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে ৮-১২ বার দুধ খাওয়াতে নিতে হবে। শিশুর জীবনের প্রথম ৬ মাসে, শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। স্তনের দুধের মধ্যে অত্যাবশ্যক পুষ্টি এবং অ্যান্টিবডি রয়েছে যা শিশুর বেঁচে থাকা এবং বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়। কমপক্ষে ১০ মিনিট ধরে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান। আপনার শিশুর ঠোঁটের কাছে স্তনটি ধরে রাখুন যতক্ষণ পর্যন্ত না সে দৃঢ়ভাবে সেটির সাথে সংযুক্ত হয় এবং চোষা শুরু করে। শিশুর সঠিকভাবে স্তনের সাথে সংযুক্ত হলে, মা তার স্তনে কোনো ব্যথা অনুভব করবে না। শিশুর খাওয়া শেষ হলে স্তনটি কম পূর্ণ বোধ করা উচিত। এই একটি ইঙ্গিত যে শিশু যথেষ্ট দুধ পাচ্ছে। স্তনের দুধ যদি না খাওয়ান, তবে শিশুকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে একটি ফরমুলা খাওয়ান। প্রতিবার খাওয়ানোতে বাচ্চাকে ৬০ থেকে ৯০ মিলিলিটার ফরমুলা খাওয়াতে হবে।

ঢেঁকুর তোলা

বাচ্চাকে খাওয়ানো হয়ে গেলে, তাকে ঢেঁকুর তোলাতে হবে। বাচ্চারা খাওয়ানোর সময় বায়ু গিলে ফেলে, যা তাদের পেটে গ্যাস এবং শূলবেদনা ঘটায়। ঢেঁকুর এই অতিরিক্ত বায়ু বের করে দেয়, এইভাবে পাচনে সাহায্য করে এবং উগরে দেওয়া ও পেট ব্যথা আটকায়। শিশুটিকে আস্তে আস্তে আপনার বুকের কাছে এক হাত দিয়ে ধরে রাখুন। তার চিবুক আপনার কাঁধে এলিয়ে দিন। আপনার অন্য হাত দিয়ে খুব আস্তে আস্তে তার পিঠে টোকা দিন বা চাপড়াতে থাকুন যতক্ষণ না সে ঢেঁকুর তোলে।

কিভাবে আপনার নবজাতককে ধরতে হবে

এটা নিশ্চিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে তাকে ধরে রাখার সময় আপনি তার মাথা এবং ঘাড়কে আপনার এক হাত দিয়ে অবলম্বন দেবেন। এর কারণ হল তার ঘাড়ের পেশী এতটা শক্তিশালী নয় যে মাথাকে কোনো অবলম্বন ছাড়াই ধরে রাখতে পারবে। মেরুদণ্ড এখনও বাড়ছে এবং শক্তিশালী হয়ে উঠছে। 3 মাস বয়স হলে তবেই ঘাড়টি নিজে নিজে মাথাকে অবলম্বন দিতে পারবে। সুতরাং নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়ার সময় আপনার শিশুর মাথা এবং ঘাড়কে অবলম্বন দেওয়ার দিকে মনোযোগ দিন।

আম্বিলিকাল কর্ডের গোঁড়াটির যত্ন

প্রথম মাসে নবজাতক শিশুর যত্নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল আম্বিলিকাল কর্ডের গোঁড়াটির যত্ন নেওয়া। প্রথম ২-৩ সপ্তাহে আপনার শিশুকে স্নান করাবেন না। তার বদলে অল্প উষ্ণ জল দিয়ে একটি স্পঞ্জ স্নান দিন। নাভি এলাকা পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখুন। বাচ্চাদের ডায়পারটি ভাঁজ করে নিচে নামিয়ে রাখুন যাতে নাভির গোঁড়াটি শুকিয়ে যায়। নাভি এলাকায় হাত দেওয়ার আগে আপনার হাত নির্বীজিত করুন। পরিষ্কার করতে, একটি আর্দ্র কাপড় ব্যবহার করুন এবং একটি পরিষ্কার, শোষক কাপড় দিয়ে শুকনো করুন। কর্ডের গোঁড়ায় সংক্রমণের লক্ষণ আছে কিনা দেখুন। যদি নাভি অঞ্চলে লাল-ভাব, ফোলা, গন্ধযুক্ত স্রাব বা পুঁজ থাকে এবং রক্তপাত হয়, তবে শিশুটিকে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান।

ডায়পার পরানো

প্রসবের পরে নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়ার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ঘন ঘন ডায়পার পরিবর্তন করা। আপনার শিশু পর্যাপ্ত বুকের দুধ বা ফরমুলা পেলে, নিয়মিত মলত্যাগের সাথে সাথে সে দিনে কমপক্ষে 6 থেকে 8 টি ডায়পার ভেজাবে। ডায়পারটি যেই ভর্তি মনে হবে, তখনই সেটি বদলে দিন। আপনাকে এমনকি এটি দিনে 10 বারও পরিবর্তন করতে হতে পারে। একটি নোংরা ডায়পার পরিবর্তন করার জন্য, আপনার একটি চেঞ্জিং শিট, মৃদু ডায়াপার ওয়াইপ, ডায়াপার ফুসকুড়ি ক্রিম বা শিশুর পাউডার এবং পরিষ্কার ডায়পার প্রয়োজন হবে। ইউটিআই প্রতিরোধের জন্য আপনার কন্যা সন্তানের শরীরের সামনে থেকে পিছনের দিক পর্যন্ত মুছে দিন, পিছনের দিক থেকে সামনের দিক পর্যন্ত নয়। এবং আপনার শিশুকে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা ডায়পার ছাড়া থাকতে দিন।

গোসল:

নবজাতককে গোসল করানো একটি সূক্ষ্ম কাজ। কর্ডের গোঁড়াটি শুকিয়ে খসে যাওয়ার পর, সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার শিশুকে স্নান করানো উচিত। আপনি স্নানের জন্য শিশুকে নিয়ে যাওয়ার আগে, গোসেল এবং পরিবর্তনের সব সামগ্রী প্রস্তুত রাখুন। ঘুমের ঠিক আগে গোসল করালে শিশুদের আরো গভীর ঘুমে সাহায্য করে। আপনার একটি শিশুর বাথটব, অল্প উষ্ণ জল, হালকা শিশুর সাবান বা বডি ওয়াশ, একটি ওয়াশক্লথ, নরম তোয়ালে, শিশুর লোশন বা ক্রিম, নতুন ডায়পার, এবং শিশুর পরিষ্কার কাপড় প্রয়োজন হবে। আপনার সঙ্গী বা পরিবারের সদস্যকে সাহায্যের জন্য ডেকে নিন, যাতে একজন ব্যক্তি শিশুর ঘাড় ও মাথা জলের উপরে ধরে রাখতে পারেন এবং অন্যজন শিশুকে স্নান করাতে পারেন। সাবধানে সাবান ব্যবহার করুন। বাচ্চাদের জননাঙ্গ, স্কাল্প, চুল, ঘাড়, মুখ, এবং নাকের চারপাশে জমে যাওয়া শুকনো সর্দি ওয়াশক্লথ দিয়ে পরিষ্কার করুন। অল্প উষ্ণ জল দিয়ে আপনার শিশুর শরীর ধুয়ে ফেলুন। এই কাজ হয়ে গেলে, শিশুর দেহ নরম তোয়ালে দিয়ে শুকিয়ে নিন, লোশন প্রয়োগ করুন এবং একটি নতুন ডায়পার এবং জামা পরিয়ে দিন।

মালিশ
মালিশ আপনার শিশুর সাথে বন্ধন তৈরি করার একটি দুর্দান্ত উপায়। এটি শিশুকে ঘুমাতে সাহায্য করে এবং রক্ত সঞ্চালন ও হজম উন্নতিতেও সহায়তা করে। আপনার হাতে অল্প পরিমাণে শিশুর তেল বা লোশন ছড়িয়ে নিন। তারপর, আস্তে আস্তে এবং ছন্দময় গতিতে তার শরীরে টোকা দিন। মালিশ করার সময় তার চোখে চোখ রাখুন এবং তার সাথে কথা বলুন। বাচ্চাকে মালিশ করার ভালো সময় হল তার স্নানের আগে।

আপনার নবজাতককে সামলানো

আপনার বাচ্চার সাথে খেলার সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। কখনো আপবার বাচ্চাকে ঝাঁকাবেন না, কারণ তার অভ্যন্তরীণ অঙ্গ কমনীয়, জোরে ঝাঁকালে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাচ্চাকে বাতাসে উপরের দিকে ছুঁড়ে দেবেন না, কারণ এটি বিপজ্জনক হতে পারে। শিশুকে স্পর্শ করার আগে সর্বদা হাত নির্বীজিত করুন বা ধুয়ে ফেলুন, কারণ তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিকশিত নয়, এবং এটি সহজেই সংক্রামিত হতে পারে। আপনি যদি আপনার শিশুকে বাইরে নিয়ে যান তবে অবশ্যই তাকে নিরাপদভাবে স্ট্রলার, গাড়ীর আসন বা বাচ্চার ক্যারিয়ারের সাথে বেঁধে রাখুন। প্রতিদিন কিছুক্ষণের জন্য আপনার বাচ্চাকে উপুড় করে শুইয়ে রাখুন। এটি তার ঘাড় এবং পিঠের পেশীকে শক্তিশালী করবে। এটি তার দৃষ্টিকেও উন্নত করবে, কারণ সে উপরের দিকে ও পাশের দিকে দেখতে পাবে।

ঘুমানো

নবজাতকদের প্রথম ২ মাসে প্রায় ১৬ ঘন্টা করে ঘুমাতে হবে। তারা সাধারণত ২ থেকে ৪ ঘন্টা ধরে ছোট ছোট করে ঘুম নেয় এবং তারা ক্ষুধার্ত হলে বা ভিজিয়ে ফেললে জেগে ওঠে। শিশুকে প্রতি ৩ ঘণ্টায় যেহেতু খাওয়ানোর প্রয়োজন হয়, তাই আপনাকে তাকে জাগিয়ে তুলে খাওয়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। সে নবজাতকদের আদর্শ ঘুমের প্যাটার্ন অনুসরণ না করলে চিন্তা করবেন না। প্রতিটি শিশু আলাদা এবং তার একটি ভিন্ন ঘুমচক্র আছে। ঘুমের সময় আপনার বাচ্চার মাথার অবস্থানটি পালটে দিতে ভুলবেন না। এটি মাথার উপর চ্যাপ্টা দাগ গঠনে বাধা দেয়। শিশুর যাতে দমবন্ধ না হয়ে যায়, তাই ঘুম পাড়ানোর সময় তাকে অবশ্যই চিত করিয়ে শোয়াবেন। মা যেন শিশুর সাথে সাথে ঘুমিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বাচ্চা ঘুমানোর সময়টিকে শান্তিতে স্নান করার জন্য বা খাবার খাওয়ার জন্যও ব্যবহার করতে পারেন।

নখ ছাঁটাই
নবজাতকের নখ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বাচ্চা তার হাত নাড়াচাড়া করে তার নিজের মুখ বা শরীর আঁচড়ে ফেলতে পারে। অতএব, শিশুর নখ ছাঁটাই রাখা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর নখ নরম হয়, তাই শিশুর নখের ক্লিপার ব্যবহার করুন। শিশুর ঘুমানোর সময় ধীরে ধীরে নখ ছেঁটে দেওয়ার চেষ্টা করুন। খুব গভীরভাবে ছাঁটবেন না কারণ শিশুর নখ খুব নমনীয় এবং এটি শিশুর জন্য বেদনাদায়ক হতে পারে। নখের প্রান্তগুলি ছাঁটবেন না কারণ এটি নখকুনির কারণ হতে পারে।

নতুন বাবা-মারা পরিবার বা বন্ধুদের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে পারেন যাতে তারা বিশ্রাম নিতে পারেন এবং নিজেদের যত্ন নিতে পারেন। প্রথমবার যারা বাবা-মা হয়েছেন তারা নবজাতক শিশুর যত্নের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে খুব বিহ্বল হতে পারেন। এই নিবন্ধটি নতুন মায়েদের সাহায্য করবে আস্থার সাথে তাঁদের নবজাতকদের যত্ন নিতে। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট

 

নভেম্বরের শেষ দিকে সীমিত পরিসরে খুলতে পারে স্কুল-কলেজ

চলতি বছরের নভেম্বরের শেষ দিকে সীমিত আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

তিনি বলেছেন, ‘আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এমন চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আগে করোনা পরিস্থিতির বিষয়টি আগে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহাবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক ও বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘গত মার্চ মাস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ জন্য সংসদ টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমে ক্লাস করানো হলেও সশরীরে ক্লাস করানো সম্ভব না হওয়ায় কেউ কেউ পিছিয়ে আছে। তাদের কথা চিন্তা করে সীমিত আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ করা হবে। এরপর একটি মূল্যায়ন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। এরপর যারা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত মনে করবেন তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন।’

আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষা পেছানো হবে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পরীক্ষা পেছানোর এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে হয়তো নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা না নিয়ে তা কিছুটা পিছিয়ে আয়োজন করা হবে। তার আগে আমরা সীমিত আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘নতুন করে আগামী দুই সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ে আমরা মনিটরিং করে সীমিত আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ফের বাড়ানো হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বাতিল করা হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। নেয়া হবে না বার্ষিক পরীক্ষাও।

 

দূরদর্শী জাসিন্ডা

সবচেয়ে কম বয়সী নারী সরকারপ্রধান হিসেবে প্রথম মেয়াদেই ইতিহাস গড়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন। সংকটের সময় সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন, নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন বারবার। আর এসব অর্জনের জোরেই দ্বিতীয় মেয়াদেও নির্বাচিত জাসিন্ডা। বিপুল ভোটে জয় পেয়ে শনিবার আবারও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হলেন তিনি।

নিউজিল্যান্ডের মাউরি আদিবাসী অধ্যুষিত একটি ছোট্ট শহর হামিলটনে ১৯৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন জাসিন্দা আর্ডার্ন। সে সময় ওই গ্রামের শিশুদের পায়ে পরার জুতো পেত না। এমনকি দুপুরের খাবারও জুটতো না। আর এ দুর্দশাই অল্প বয়সে রাজনীতিতে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করে তাকে। পুলিশ কর্মকর্তা বাবা আর স্কুল কর্মচারী মায়ের দ্বিতীয় সন্তান জাসিন্দা মাত্র ১৭ বছর বয়সেই এক আত্মীয়ার হাত ধরে নিউজিল্যান্ডের লেবার পার্টিতে যোগ দেন।

২০১৭ সালে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ৩৭ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করেন জাসিন্দা। এরপর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালেই সন্তান জন্ম দেয়া দ্বিতীয় নারী হিসেবে ২০১৮ সালে ইতিহাসের পাতায় আবারও লেখান নিজের নাম। কিন্তু ২০১৯ সালের মার্চে জুমার নামাজের সময় আলোচিত ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলার পরই তাকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

সংকটের সময় সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়ান এই নেতা। কার্যকর পরিবর্তন আনেন নিজ দেশের অস্ত্র আইনে। এরপর চলতি বছর করোনা মহামারি মোকাবিলায় সফলতার কারণে আরও একবার তার জয়জয়কার প্রতিধ্বনিত হয় সারা বিশ্বে। আর এসব অর্জনই দ্বিতীয় মেয়াদে তাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব এনে দিয়েছে।

চুল পড়া বন্ধ করবে বেদানার রস

 

দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও তেমন সুস্বাদু। রসে টইটম্বুর এর প্রতিটি দানা। বেদানা খেতে পছন্দ করেন না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বেদানায় আছে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আরও অনেকরকম শক্তিশালী উপাদান। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় বেদানা রাখলে অনেক উপকার মিলবে।

বেদানায় রয়েছে পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেদানা খেতে পারেন। বেদানায় রয়েছে তিন প্রকার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। ট্যানিন, অ্যান্থো সিয়ানিন ও এলাজিক অ্যাসিড। অ্যান্থোসিয়ানিন দেহ কোষ সুস্থ রাখার ফলে ভাইরাসের সংক্রমণ দূরে রাখতে পারে।

প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকার কারণে বেদানা সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, কমায় স্ট্রেসও। হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ও কমে অনেকটাই।

আর্টারি পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে বেদানা। বেদানার রস রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে দারুণ উপযোগী। এর পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হলে প্রতিদিন বেদানার রস খেতে পারেন।

ব্যথা ও বাত, অস্টিওআর্থারাইটিস, পেশির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে বেদানা। তরুণাস্থির ক্ষয় রোধ করতেও এই ফল দারুণ উপকারী।

চুল পড়া নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন না, এমন মানুষ কমই আছেন। আপনিও এমন সমস্যায় ভুগলে প্রতিদিন বেদানার রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন হেয়ার ফলের মাত্রা তো কমবেই, সেইসঙ্গে চুলের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পাবে চোখে পড়ার মতো।

নিয়মিত বেদানা খেলে ত্বকের নানা সমস্যা দূর হয়। দূর হয় বলিরেখাও। সেই সঙ্গে ডার্ক স্পট এবং ডার্ক সার্কেল দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় অনেকখানি।

 

পিনাট বাটার তৈরির সহজ রেসিপি

ফ্যাট ও প্রোটিন থাকার পরেও শরীরের জন্য উপকারী পিনাট বাটার। প্রোটিন এবং ফাইবার থাকায় পিনাট বাটার খেলে আপনার পূর্ণাঙ্গ খাদ্য গ্রহণ সম্ভব হবে। ফলে ফাস্ট ফুড এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে আসবে। একজন মানুষের দিনে দুই টেবিল চামচ পিনাট বাটার খাওয়া উচিত। এই দুই টেবিল চামচ পিনাট বাটারে আছে ৭ গ্রাম প্রোটিন। চলুন জেনে নেয়া যাক পিনাট বাটার তৈরির রেসিপি-

উপকরণ:
বাদাম-২ কাপ
তেল-২ চা চামচ
মধু- ২ চা চামচ
কোকো পাউডার- ২ চা চামচ
গরম মশলা গুঁড়া- ১/২ চা চামচ
চকোলেট চিপস- ২ চা চামচ
লবণ-স্বাদমতো।

প্রণালি:
প্রথমে একটি পাত্রে বাদামগুলো দিন। মাঝারি আঁচে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত ভেজে নিন। এবার ভাজা বাদামগুলো একটি ব্লেন্ডারে দিয়ে পাঁচ মিনিট ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। ব্লেন্ড করা ওই বাদামের সঙ্গে তেল, কোকো পাউডার, গরম মশলার গুঁড়া, মধু, চকলেট চিপস এবং লবণ দিয়ে আরও পাঁচ মিনিট ব্লেন্ড করুন। হাত দিয়ে দেখে নিন সবগুলো উপকরণ ঠিকমতো ব্লেন্ড হয়েছে কি-না। এরপর একটি বোতলে বাদামের এই মিশ্রণটি রেখে ফ্রিজে ঠান্ডা করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে স্বাস্থ্যকর পিনাট বাটার।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আবেদনের নিয়ম

 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) অধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সাড়ে ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানা গেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নিয়োগ শাখার সহকারী পরিচালক আতিক বিন সাত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এ বিষয়ে ডিপিই থেকে প্রকাশিcত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজস্বখাতভুক্ত ‘সহকারী শিক্ষক’র শূন্যপদ এবং জাতীয়করণ করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পিডিইপি-৪ এর আওতায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির জন্য রাজস্বখাতে সৃষ্ট ‘সহকারী শিক্ষক’ পদে জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ এর ১৩তম গ্রেডে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হবে। তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের প্রার্থীরা এতে আবেদন করতে পারবেন না।

আবেদন করবেন যেভাবে : বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৫ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে। শেষ হবে ২৪ নভেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে।

এ পদে প্রার্থীদের অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। http://dpe.telelalk.com.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে অনলাইনে আবেদনের ফরম পূরণের নির্দেশনা পাওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা অনুযায়ী অনলাইন আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে।

অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ করে জমা করার পর অ্যাপ্লিকেশন কপি প্রিন্ট করতে হবে। সঠিকভাবে পূরণকৃত অ্যাপ্লিকেশন কপির ইউজার আইডি দিয়ে আবেদন ফি জমা দিতে হবে। একবার আবেদন ফি জমা দেওয়ার পর অ্যাপ্লিকেশন ফরম কোনো অবস্থায়ই সংশোধন বা প্রত্যাহার করা যাবে না। শুধু ইউজার আইডিপ্রাপ্ত প্রার্থীরা এই সময় পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত এসএমএসের মাধ্যমে ফি প্রদান করতে পারবেন।

আবেদনকারীকে একটি ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দেওয়া হবে। এই ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড সব সময়ের জন্য প্রার্থীকে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রার্থীকে পরীক্ষার ফি বাবদ অফেরৎযোগ্য সার্ভিস চার্জসহ ১১০ টাকা যেকোনো টেলিটক প্রি-পেইড মোবাইল নম্বর থেকে এসএমএসের মাধ্যমে যথাসময়ে প্রেরণ করতে হবে।

বয়সসীমা : প্রার্থীদের বয়স ২০ অক্টোবর ২০২০ তারিখে সর্বনিম্ন ২১ বছর এবং ২৫ মার্চ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০ বছর হতে হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে এ বয়সসীমা হবে ৩২ বছর। বয়স নিরূপণে এফিডেভিট গ্রহণযোগ্য নয়।

শিক্ষাগত যোগ্যতা : যে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা সম্মান বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে।

আবেদন ফি : ১১০ টাকা। যার মধ্যে অফেরৎযোগ্য ১০০ টাকা আবেদন ফি ও ১০ টাকা টেলিটকের সার্ভিস চার্জ।

নির্বাচন পদ্ধতি : সহকারী শিক্ষক পদে এর আগে ৮০ নম্বরের এমসিকিউ পদ্ধতিতে লিখিত পরীক্ষা ও ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হতো। বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে প্রশ্ন থাকত। তবে এবারের নিয়োগে কত নম্বরের পরীক্ষা হবে এ বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এসব পরীক্ষার তারিখ পরে অধিদফতরের ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে বলে অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।

যেসব কাগজপত্র লাগবে : প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আবেদনপত্রের সঙ্গে অনলাইনে দাখিলকৃত আবেদনের ফটোকপি, পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি, প্রথম শ্রেণির গেজেটেড সরকারি কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কিত সব মূল বা সাময়িক সনদপত্র এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌরসভার মেয়র/সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিকত্ব সনদপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জমা দিতে হবে।

বেতন : ১১০০০-২৬৫৯০ টাকা (গ্রেড-১৩) (জাতীয় বেতনস্কেল, ২০১৫ অনুযায়ী)।

ডিপিই সূত্রে জানা গেছে, এবারের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারাদেশে ২৫ হাজার ৬৩০ জন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক এবং ৬ হাজার ৯৪৭ শূন্যপদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ( ডিপিই) অধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সাড়ে ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানা গেছে।

সোমবার (১৯ অক্টোবর) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নিয়োগ শাখার সহকারী পরিচালক আতিক বিন সাত্তার জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে ডিপিই থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজস্বখাতভুক্ত ‘সহকারী শিক্ষক’ এর শূন্যপদ এবং জাতীয়করণ করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পিডিইপি-৪ এর আওতায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির জন্য রাজস্বখাতে সৃষ্ট ‘সহকারী শিক্ষক’ পদে জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ এর ১৩তম গ্রেডে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হবে। তবে তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের প্রার্থীরা এতে আবেদন করতে পারবেন না।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৫ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে। শেষ হবে ২৪ নভেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে। সহকারী শিক্ষকদের বেতন হবে জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ এর গ্রেড ১৩ অনুযায়ী ১১০০০-২৬৫৯০ টাকা।

বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, প্রার্থীদের বয়স ২০ অক্টোবর পর্যন্ত সর্বনিম্ন ২১ বছর এবং গত ২৫ মার্চ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০ বছর। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে এ বয়সসীমা হবে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ৩২ বছর।

শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে যে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএ-সহ স্নাতক বা সম্মান বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে।

আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা। আগামীকাল চারটি জাতীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। বিজ্ঞপ্তির বিস্তারিত পাওয়া যাবে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে (http://dpe.teletalk.com.bd)।

ডিপিই সূত্রে জানা গেছে, এবারের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারাদেশে ২৫ হাজার ৬৩০ জন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক এবং ৬ হাজার ৯৪৭ শূন্যপদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।

দাফনকালে জীবিত সেই নবজাতকের অবস্থা আশঙ্কাজনক

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মৃত ঘোষণার পর কবরস্থানে দাফনের সময় জীবিত হওয়া সেই নবজাতকের অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক। নবজাতকটি পূর্ণ সময়ের অনেক আগেই জন্ম হয়। এখনো সে এনআইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে যেকোনো সময় তার অবস্থা খারাপ হতে পারে।

সোমবার (১৯ অক্টোবর) রাতে কথাগুলো বাংলানিউজকে জানান ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন।

নাসির উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা। আজকে তদন্ত কমিটির সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। তারা বলেছে, মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে রিপোর্টটি আমাদের হাতে দেওয়ার কথা। তদন্ত রিপোর্টে যদি কারো বিরুদ্ধে অবহেলার প্রমাণ হয়, সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এরআগেও আমাদের এখানে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। তখন ওই চিকিৎসককে আমরা আর এখানে ট্রেনিং দেয়নি। এক পর্যায়ে তিনি দেশের বাইরে চলে যান। তবে তদন্তে যে দোষি প্রমাণিত হবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত রিপোর্টে হাতে পেলেই বিস্তারিত মঙ্গলবার জানানো হবে।

ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে নবজাতক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মনীষা ব্যানার্জি সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ওই নবজাতকটিকে এখন ওপেন ইনকিউবেটরে অক্সিজেনের মাধ্যমে আছে। এখনো মুখে খাওয়ানোর সময় আসেনি। স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, একটি নবজাতক পরিপূর্ণভাবে জন্ম নিতে ৪০ সপ্তাহ লাগে। আর এই বাচ্চাটা ২৬ সপ্তাহের মধ্যেই জন্ম নিয়েছ। পরিপূর্ণ সময়ের অনেক আগেই তার জন্ম হয়েছে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। ওজন মাত্র ৯০০ গ্রাম।

তিনি আরও জানান, তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে এটুকু বলতে পারি, মঙ্গলবার রিপোর্টটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হবে।

 

লুনার কোমরতাঁতের পণ্য যাচ্ছে ভারতে

টিলার ওপরে নিভৃত ত্রিপুরা গ্রাম সুধীর মেম্বারপাড়া। এই গ্রামেই লুনা ত্রিপুরার (২৫) বাড়ি। গ্রামে এমনিতেই সবাই সবাইকে চেনেন। তার ওপর কোমরতাঁতে লুনার সাফল্য বাড়তি পরিচিতিও এনে দিয়েছে। বাড়ি খুঁজে পেতে সমস্যা হলো না। মাটির দেয়াল আর টিনের চালাঘর। উঠানে আম-কাঁঠালগাছের ছায়ায় বসে কোমরতাঁতে কাজ করছিলেন লুনা ত্রিপুরা। অতিথির আগমনে পাশের একজনকে কোমরতাঁতটি বুঝিয়ে দিয়ে কথা বলতে এলেন তিনি।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার সুধীর মেম্বারপাড়ার বাসিন্দা লুনা ত্রিপুরা নিজের তৈরি ত্রিপুরা নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক রিনাই ও রিসা অনলাইনে বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছেন। ফেসবুকে লুনার রিনাই-রিসার বিক্রির পাতাটি আগেই দেখা হয়েছিল। যে খবরের জন্য তাঁর বাড়িতে যাওয়া তা হলো, লুনা সম্প্রতি ভারত থেকেও রিনাই-রিসা তৈরির ফরমাশ পাচ্ছেন। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে একজন অনলাইন দেখে ইতিমধ্যে সাতটি রিনাই-রিসার ফরমাশ দিয়েছেন। রিসা হলো ওড়নার মতো পোশাক। আর রিনাই হলো নিচের অংশ, যা শাড়ির মতো পেঁচিয়ে পরতে হয়।
বিজ্ঞাপন

লুনা ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রামের শিবমন্দিরে মন্দিরভিত্তিক প্রকল্পে সাড়ে চার হাজার টাকা বেতনে শিক্ষকতা করছিলেন। স্বামী ইরিন ত্রিপুরা বেকার। এ টাকায় সংসার চলছিল না। ছোটকাল থেকে কোমরতাঁতের ওপর আমার অন্য রকম দক্ষতা ছিল। একদিন ছোট ভাই দিগন্ত ত্রিপুরা পরামর্শ দিলেন, বাড়িতে বসে না থেকে রিনাই-রিসা তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করলে ভালো হবে।’ যেই ভাবা, সেই শুরু। মার্চের শেষ সপ্তাহে রিনাই-রিসা ফেসবুক পেজ খুলে অনলাইনে পোশাকের ব্যবসা শুরু করেন। সাড়াও পান ভালো। এখন খরচ বাদে প্রতি মাসেই লুনার ১০-১২ হাজার টাকা আয় হচ্ছে, যাতে সংসারটা মোটামুটি চলে যাচ্ছে। এ জন্য অবশ্য সংসারের কাজ সামলে গভীর রাত পর্যন্ত তাঁত চালাতে হয়।

লুনা জানান, সম্প্রতি কোমরতাঁতে তৈরি করা রিনাই-রিসার কারুকাজ দেখে ভারতের আগরতলা থেকে একজন ১০ হাজার টাকায় দুটি রিনাই-রিসা কেনেন। সেটি তাঁদের ভালো লাগায় আরও সাতটির ফরমাশ দিয়েছেন। ভবিষ্যতে আরও ফরমাশ বাড়বে বলে তিনি মনে করছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও চাহিদা আসছে। বর্তমানে ১০ জন নারীকে দিয়ে কমিশনে কোমরতাঁতে রিনাই তৈরি করাচ্ছেন। আর তিনি নিজে মাসে চারটি রিসা তৈরি করছেন।

লুনার কাজে সাহায্য করছেন ছোট ভাই দিগন্ত ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ভারত থেকে ভবিষ্যতে আরও অর্ডার পাবেন বলে সেখানকার ক্রেতারা তাঁদের জানিয়েছেন।

টতবে তাঁরা জানান, কেবল কোনো আত্মীয় ভারতে বেড়াতে গেলে তাঁদের মাধ্যমে তাঁরা রিনাই-রিসা পাঠাতে পারেন। এর বাইরে তাঁদের লেনদেনের অন্য কোনো মাধ্যম নেই।

লুনার কাছ থেকে অনলাইনে রিনাই-রিসা কিনেছিলেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার মধুপুর এলাকার কোয়েলি ত্রিপুরা (২২)। তিনি বলেন, অনলাইনে কেনাকাটা নিয়ে একটা ভয় বা সন্দেহ কাজ করে। কারুকাজে মুগ্ধ হয়ে সন্দেহ নিয়েই তিনি অর্ডার করেছিলেন। পণ্য হাতে পেয়ে মনে হয়েছে ঠকেননি। লুনার কারুকাজ খুবই চমৎকার।

লুনার সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন নারীও। তাঁদের একজন চরণ দেবী ত্রিপুরা (২৪) বলেন, তিনি নয়টি রিনাই-রিসা তৈরি করে চারটি নিজে বিক্রি করেন। বাকি পাঁচটি অনলাইনে বিক্রির জন্য লুনাকে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের দীঘিনালা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকœহাশীষ ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, ত্রিপুরা নারীরা এমনিতেই অনেক পরিশ্রমী। সাধারণ পরিবারের অধিকাংশ নারী নিজেদের পোশাক (রিনাই-রিসা) নিজেরাই তৈরি করেন। লুনা ত্রিপুরা সংসারের কাজকর্ম সামলে কোমরতাঁতে রিনাই-রিসা তৈরি করে তা অনলাইনে বিক্রি করে এখানকার সবার কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন। আর পুঁজি গঠনে সরকারিভাবে সহায়তা পেলে তা এখানকার নারীদের খুবই উপকার হয়।

 

করোনাকালেও লাভের মুখ

আপা, কাজ কেমন চলছে?
হেসে জবাব দিলেন, ‘আপনাদের দোয়ায় ভালো চলছে। শিপমেন্ট শুরু করেছি।’
বেশির ভাগই নাকি প্রচণ্ড লোকসানে আছেন? অনেকের ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেছে?
‘এটা খুবই সত্যি। তবে ভাগ্যক্রমে আমি এই সময়ে অনেক অর্ডার পেয়েছি। কর্মীদের মুখেওহাসি ফুটেছে।’
কথা হচ্ছিল নারী উদ্যোক্তা কোহিনুর ইয়াসমিনের সঙ্গে। তাঁর প্রতিষ্ঠান তরঙ্গ পাট, কচুরিপানা, হোগলাপাতা, শণ আর সিমেন্টের বস্তা থেকে ব্যাগ, ঝুড়িসহ বিভিন্ন শৌখিন পণ্য তৈরি করে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের এক সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, করোনাকালে ৬৭ শতাংশ নারী উদ্যোক্তার আয় কমেছে। তবে এই হাহাকারের মধ্যেও কেউ কেউ আলোর দিশা পেয়েছেন। সুড়ঙ্গের শেষ মাথায় আলোর রেখা লক্ষ্য করে নিজেরা এগোচ্ছেন। অন্যদের অনুপ্রাণিত করছেন। এমন চারজন হস্তশিল্পজাত পণ্য উৎপাদনকারী নারী উদ্যোক্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁদের কারখানার চাকা আবার ঘুরছে। বিদেশ থেকে রপ্তানির চাহিদা আসা শুরু করেছে। কেউ দেশে কাজের আদেশ বা অর্ডার পেয়েছেন। কেউবা বিক্রি আর অর্ডার ধরতে ভিনদেশি অনলাইন মেলায় যোগ দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ হস্তশিল্প প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাক্র্যাফটে সমবেত ৪৫০ জন উদ্যোক্তা। তাঁদের ৯৫ জন অর্থাৎ এক-পঞ্চমাংশ নারী। উদ্যোক্তাদের সব প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে বাংলাক্র্যাফট ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ৪০৭ কোটি টাকা রপ্তানি আয়ের হিসাব দিচ্ছে। গত অর্থবছরে করোনার প্রভাবে রপ্তানি কমেছে। এই অর্থবছরে ৭০টি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করেছে ২৬৬ কোটি টাকার বেশি।

করোনাকালের শুরুতে প্রায় বন্ধ থাকার পরে সম্প্রতি কিছু কিছু করে বিক্রি বেড়েছে। গত জুলাই থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৮টি প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা।

বাংলাক্র্যাফটে সমবেত ৪৫০ জন উদ্যোক্তা। তাঁদের ৯৫ জন অর্থাৎ এক-পঞ্চমাংশ নারী। উদ্যোক্তাদের সব প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে বাংলাক্র্যাফট ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ৪০৭ কোটি টাকা রপ্তানি আয়ের হিসাব দিচ্ছে। গত অর্থবছরে করোনার প্রভাবে রপ্তানি কমেছে। এই অর্থবছরে ৭০টি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করেছে ২৬৬ কোটি টাকার বেশি।

ভাগ্যের চাকা ঘুরছে
তরঙ্গের কোহিনুর ইয়াসমিনের উৎপাদনকেন্দ্রগুলো আবার সচল হয়েছে গত ৫ জুন। সেই সঙ্গে ২ হাজার ৮০০ নারীর ভাগ্যের চাকাও ঘুরতে শুরু করেছে। তাঁর এই নারী কর্মীরা ঢাকাসহ ৯ জেলায় কাজ করছেন।

কোহিনুর বলছেন, করোনাকালে অনেক ক্ষতি হয়েছে, এখন অর্ডার আসতে থাকায় ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগও তৈরি হয়েছে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘অন্য সময়ের চেয়ে এবার আমি দেড় গুণ বেশি কাজ পেয়েছি। বিশেষ করে পরিবেশবান্ধব পাটের পণ্যের চাহিদা অনেক।’

নাজমা আহসানের প্রতিষ্ঠান সানট্রেড মাত্রই মার্কিন একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় একটি চালানের ঝুড়ি ও ব্যাগ তৈরি করেছিল। ঠিক তখনই এল করোনাকাল। শেষ মুহূর্তে কার্যাদেশটি বাতিল হয়ে যায়। সেই দুঃখ এখন অনেকখানি কেটেছে নতুন বড় কার্যাদেশ পাওয়ার পর।

টঙ্গী, বগুড়া ও নীলফামারীতে তিনটি কারখানা এবং ওই জেলাগুলোর বিভিন্ন গ্রামের ঘরে ঘরে নাজমার প্রতিষ্ঠানের চার হাজার নারী হস্তশিল্পী কাজ করেন। গত মে-জুন মাসে পুরোনো ও নতুন মিলিয়ে দেড় মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ পৌনে ১৩ কোটি টাকার অর্ডারের কাজ শুরু হয়েছে।

টঙ্গী, বগুড়া ও নীলফামারীতে তিনটি কারখানা এবং ওই জেলাগুলোর বিভিন্ন গ্রামের ঘরে ঘরে নাজমার প্রতিষ্ঠানের চার হাজার নারী হস্তশিল্পী কাজ করেন। গত মে-জুন মাসে পুরোনো ও নতুন মিলিয়ে দেড় মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ পৌনে ১৩ কোটি টাকার অর্ডারের কাজ শুরু হয়েছে।

আফসানা আসিফ হস্তশিল্পজাত পণ্যের উৎপাদক কারখানা এসিক্সের ব্যবসায়িক অংশীদার। ক্ষতি সামলে ওঠার আশা করছেন আফসানা। গত মাসে ফ্রান্সে পণ্য পাঠিয়েছেন। এখন জাপানের জন্য পোষা প্রাণীদের খাবার দেওয়ার পাত্র সরবরাহের কাজ করছেন।

মোহাম্মদ আবুল কালাম স্বায়ত্তশাসিত সরকারি সংস্থা জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) নির্বাহী পরিচালক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তাঁর সংস্থা করোনা দুর্যোগ কাটাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ই-বিপণন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। তাঁরা বহুমুখী পাটপণ্যের তথ্য প্রচার করবেন।

রপ্তানি করতে ৯ ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হয়। চাহিদাটা দুই ধরনের কাগজপত্রে নামিয়ে আনা দরকার। প্রণোদনা আরও বেশি প্রয়োজন। সব উদ্যোক্তা যেন পেতে পারেন, সে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

চাই সরকারের সহযোগিতা

উদ্যোক্তারা ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারে কাছে প্রণোদনা আর সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুযোগ চাইছেন। ‘কোভিড-১৯ মহামারিতে কুটির, অতি ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মজীবী নারীদের অবস্থা’ জরিপ করেছে ব্র্যাক। এই শিরোনামের জরিপ প্রতিবেদনটি বেরিয়েছে গত ১৭ সেপ্টেম্বর। ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি প্রোগ্রামের উদ্যোগে অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ প্রোগ্রাম এই সমীক্ষাটি পরিচালনা করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার এই শ্রেণির শিল্প-ব্যবসার জন্য এক হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা সহায়তা ঘোষণা করেছে। তবে প্রচার না থাকায় এবং পাওয়ার পথ জটিল হওয়ায় এ উদ্যোক্তারা সেভাবে তার নাগাল পাচ্ছেন না। প্রণোদনার মাত্র ১০ শতাংশ ছাড় হয়েছে। আর ৭১ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা এ সম্পর্কে জানেনই না। বেশির ভাগ নারী উদ্যোক্তা ব্যবসার জন্য এনজিওগুলোর ক্ষুদ্রঋণের দ্বারস্থ হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন

স্মিতা চৌধুরী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী মণিপুরি সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম ব্রিন্তা। তিনি শুধু পাটের পণ্য বানান। গত বছর জাপানে তিন দফায় ৭০ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করেছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতে শেষ চালান গিয়েছে ২৫ লাখ টাকার। গাজীপুরে ব্রিন্তার কারখানা। কর্মী হালিমা খাতুন বলেন, দুই মাস কাজ বন্ধ ছিল। জুন থেকে পাটের তৈরি বিভিন্ন পণ্য বানানো শুরু করেছেন। এসিক্সের আফসানা বললেন, তিনি কর্মীদের বেতন বাবদ ৪ শতাংশ সুদে প্রণোদনার ১৫ লাখ টাকা পেয়েছেন। জানুয়ারি থেকে ঋণ পরিশোধের শর্ত রয়েছে।

বাংলাক্র্যাফটের সভাপতি গোলাম আহসান প্রথম আলোকে বলেন, এই সংকটের মধ্যেও বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা কাজ পেয়েছেন এবং করছেন। তবে এখন উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। পণ্য পরিবহনেও ব্যাঘাত ঘটছে। এখন সরকারের মনোযোগ খুবই দরকার। গোলাম আহসান আরও বলেন, রপ্তানি করতে ৯ ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হয়। চাহিদাটা দুই ধরনের কাগজপত্রে নামিয়ে আনা দরকার। প্রণোদনা আরও বেশি প্রয়োজন। সব উদ্যোক্তা যেন পেতে পারেন, সে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সৌজন্যে: প্রথম আলো

 

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পথে জেসিন্ডা

লাখ লাখ ভোটার নিউজিল্যান্ডে সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে ভোট দিচ্ছেন। ব্যাপক জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের লেবার পার্টি। গত সেপ্টেম্বরে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নতুন করে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ভোট এক মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

নির্বাচনে লেবার পার্টির নেতা জেসিন্ডা আরডার্নের (৪০) মুখোমুখি হচ্ছেন ন্যাশনাল পার্টির প্রধান কলিন্স (৬১)। এটি নিউজিল্যান্ডের ৫৩তম পার্লামেন্ট নির্বাচন।

মতামত সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ের পথে। করোনাভাইরাস মহামারি সফল ব্যবস্থাপনা তাঁর পক্ষে কাজ করতে পারে। তবে এখন বড় প্রশ্ন হলো তিনি সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবেন কি না তা নিয়ে।

১৯৯৬ সালে মিক্সড মেম্বার প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেনটেশন (এমএমপি) নামে পরিচিত একটি সংসদীয় ব্যবস্থা চালু করার পর থেকে নিউজিল্যান্ডে কোনো দলই সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি।

সাধারণ নির্বাচনের ভোট দেওয়ার পাশাপাশি দুটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গণভোটও দিচ্ছেন নিউজিল্যান্ডবাসী। অধিকাংশ বিশ্লেষক বলছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসছেন জেসিন্ডা। কিছু মতামত জরিপে দেখা গেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠতাও পেতে পারেন তিনি। আজ শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটার পর ফলাফল জানা যাবে।

লেবার পার্টির পক্ষ থেকে কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায় জেসিন্ডার সফলতায় দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বী কলিন্স বলছেন, করোনা–পরবর্তী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি ভালো করতে পারবেন।

দেশটির নির্বাচন কমিশন বলেছে, গতকাল শুক্রবারই অর্ধেকের বেশি, অর্থাৎ ২০ লাখ ভোট দেওয়া হয়েছে। নিউজিল্যান্ডবাসী ইথেনাসিয়া ও গাঁজা বৈধ করতেও গণভোটে ভোট দিচ্ছেন।

৫০ লাখের বেশি জনসংখ্যার দেশ নিউজিল্যান্ডে মাস খানেকের বেশি সময় ধরে করোনায় গোষ্ঠী সংক্রমণের কোনো ঘটনা নেই। সেখানে লোকদের মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব অনুসরণ করতে হয় না।

 

কিছু ব্যাংক নারীদের জন্য পণ্য এনেছে, এটা লোকদেখানো

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক লীলা রশিদ বলেছেন, এসএমই খাত নিয়ে যত আলোচনা হয়, বাস্তবে ততটা না। আর নারী উদ্যোক্তা তো আরও কম। ব্যাংকগুলোতে সব বড় ঋণ নিয়ে আলোচনা হয়, সেখানে এসএমইর কোনো অবস্থান নেই। নারী উদ্যোক্তার ঋণ তো আরও নেই। কিছু ব্যাংক নারীদের জন্য নতুন পণ্য এনেছে, এটা লোকদেখানো। এসব ব্যাংকে নারীদের ঋণ সামান্যতম।

বাংলাদেশ ওমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিডব্লিউসিসিআই) আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল কর্মশালায় তিনি এমন মন্তব্য করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সঞ্চালনা করেন বিডব্লিউসিসিআইয়ের সভাপতি সেলিমা আহমাদ।

লীলা রশিদ বলেন, ‘সহজেই যেন ট্রেড লাইসেন্স খোলা যায়, এ জন্য আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছি। যাঁরা অনলাইনে ব্যবসা করেন, তাঁদের ট্রেড লাইসেন্স খোলার বিষয়টি তথ্যপ্রযুক্তি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখবে। ব্যবসায় নামতে হলে আগে নথিপত্র তৈরি করতে হবে। এ জন্য সবচেয়ে ভালো হলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা, যা নথিপত্র তৈরিতে সহায়তা করতে পারে।’

লীলা রশিদ আরও বলেন, ‘ব্যাংক খাত পুরুষ–নিয়ন্ত্রিত, ঠিক সমাজের মতোই। নারীরা ব্যবসা করলে অনেকে মনে করেন এর পেছনে স্বামী, বাবা বা ছেলে রয়েছেন। এই মিথ আমাদেরই ভাঙতে হবে। করোনায় প্রণোদনা প্যাকেজে এসএমই খাতের ঋণ কম বিতরণ হয়েছে। নারীদের ঋণ তো আরও কম। কেউ বলেন সুদহার কম। আবার কেউ বলছেন, বড়দের দেওয়া শেষ হলে ছোটদের দেওয়া হবে। নারী উদ্যোক্তাদের ঋণের জন্য ব্যাংকে যেতে হবে। ব্যাংক ঋণ না দিলে তাদের কাছে লিখিত নিতে হবে। এর কারণ জানতে হবে। নারী উদ্যোক্তারা এসব কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে পারেন।’

অনুষ্ঠানে নারী উদ্যোক্তারা বলেন, বিকাশ থেকে রকেটে টাকা নেওয়া যায় না। আবার খরচও অনেক বেশি। এদিকে ব্যাংকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির টাকা পেতে ২৪ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। যাঁরা অনলাইনে ব্যবসা করেন, তাঁরা কোনো ঋণ পাচ্ছেন না। নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংকগুলো ঋণ দিচ্ছে না। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে পণ্য পৌঁছাতে ৭ দিনের বেশি সময় লেগে যাচ্ছে।

ব্যাংক খাত পুরুষ–নিয়ন্ত্রিত, ঠিক সমাজের মতোই। নারীরা ব্যবসা করলে অনেকে মনে করেন এর পেছনে স্বামী, বাবা বা ছেলে রয়েছেন।

কর্মশালায় বিকাশের প্রধান নির্বাহী কামাল কাদির বলেন, ‘আমাদের সেবায় যত ডিজিটাল লেনদেন করবেন, খরচ ততই কমবে। তাই নিজ থেকেই খরচ কমানোর পরিকল্পনা করতে হবে। নারী উদ্যোক্তারা মার্চেন্ট হিসাব খুলতে পারেন। এসব হিসাবে লেনদেনের কোনো সীমা নেই। অনেকেই বলছেন, বিকাশ থেকে অন্য এমএফএসে টাকা পাঠানো যায় না। আশা করছি, আগামী সপ্তাহেই এই সুবিধা চালু হয়ে যাবে। আবার বিকাশ থেকে এখন ছোট আকারে ঋণও পাওয়া যাচ্ছে।’

কামাল কাদির আরও বলেন, এখন ঘরে বসে হিসাব খোলা যাচ্ছে। এর ফলে নারীদের হিসাব খোলা রাতারাতি বেড়ে গেছে। কারণ, অনেকেই নিজের পরিচয়পত্র ও ছবি অন্যের কাছে দিতে চান না। বিকাশের ৪ কোটি ৮০ লাখ হিসাবের মধ্যে ৩৯ শতাংশ নারীদের। মোবাইল ব্যবহারের চেয়ে বিকাশ ব্যবহার কোনো অংশেই কঠিন না। তাই ব্যবসার ক্ষেত্রে বিকাশ ব্যবহারে আহ্বান জানান তিনি।

বিডব্লিউসিসিআইয়ের সভাপতি সেলিমা আহমাদ বলেন, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য ডিজিটাল ইকোনমিকে এগিয়ে নিতে হলে নারী উদ্যোক্তাদের ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।

কর্মশালায় আরও অংশগ্রহণ করেন অতিরিক্ত সচিব খন্দকার আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদসহ আরও অনেকে।

 

জামদানি বিক্রি করে লাখপতি তানিয়া সুলতানা

করোনার অবসর কাজে লাগাতে দেশের অসংখ্য নারী ইতোমধ্যে অনলাইন ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। অন্যান্য ব্যবসার মতো সফলতা হাতছানি দিচ্ছে এসব নারীকে। দেশে অনলাইন ব্যবসা চালু হওয়ায় মানুষকে কষ্ট করে করোনার ঝুঁকি নিয়ে মার্কেটে যেতে হচ্ছে না। এ মাধ্যমে সফলতা পেয়ে উদ্যোক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন তারা। তেমনই একজন উদ্যোক্তা তানিয়া সুলতানা। তার সফলতার গল্প শোনাচ্ছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত—

একজন সংগ্রামী সফল নারী উদ্যোক্তা, বিরাজবৌ’র সত্ত্বাধিকারী তানিয়া সুলতানা। ময়মনসিংহের গৃহবধূ তানিয়া স্বামী-সন্তান সামলে অনলাইন পেজ ‘বিরাজবৌ’র মাধ্যমে বিক্রি করেন জামদানি শাড়ি। নিজস্ব কারিগর দ্বারা তৈরি করা শাড়িগুলোর মূল্য ৩,৭০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৮ হাজার টাকা।

শাড়িগুলো ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে ইএমআই সুবিধার মাধ্যমেও বিক্রি করেন। মাত্র ১৮ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন এ অনলাইন ব্যবসা। বর্তমানে তার মোট বিক্রির পরিমাণ ৪ লাখ ৮ হাজার ৭শ টাকা।

উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প শুনতে চাইলে তানিয়া সুলতানা বলেন, ‘অনেক দিনের স্বপ্ন ছিলো ব্যবসা করার। কিন্তু কী করবো ভেবে পাইনি। শেষে ই-কমার্স গ্রুপ উই’র মাধ্যমে লক্ষ্য স্থির করি। আসলে শুরু করাটাই ছিলো চ্যালেঞ্জিং। কিভাবে শুরু করবো, কী পণ্য নিয়ে কাজ করবো- লক্ষ্য স্থির করতে পারছিলাম না।’

তিনি বলেন, ‘অবশেষে ভাবলাম জামদানি শাড়ি নিয়ে কাজ করবো। সে লক্ষ্যে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘বিরাজবৌ’র চরিত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে ওই নামে ফেসবুক পেজ খুলি। সেখান থেকে অনলাইনের মাধ্যমে পণ্যের অর্ডার নিয়ে তা কুরিয়ারের মাধ্যমে পৌঁছে দেই।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনলাইনেই ব্যবসা করার। আমি ট্রেড লাইসেন্সও করেছি অনলাইন ব্যবসার পরিচয় দিয়ে। অনেকের স্বপ্নের শোরুমকে দুঃস্বপ্ন হতে দেখেছি। তাই ওয়েবসাইট খুলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জামদানি শাড়ি ছড়িয়ে দিতে চাই। এতে আমার স্বপ্নও ছড়িয়ে যাবে।’

সফল এ নারী উদ্যোক্তা জানান, তার এসব সফলতার পেছনে রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম, আনন্দ ও সুখের অনেক কাব্য।

লকডাউনে ৩১৭টি সার্টিফিকেট অর্জন তরুণীর

লকডাউনের দিনগুলোতে অখণ্ড অবসরের ‘সর্বোচ্চ’ ব্যবহার করে ৩১৭টি সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন ভারতের এক পিএইচডি স্কলার। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সুধন্যা নাথ নামের ওই তরুণী বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল এবং পাকিস্তানের মতো দেশ থেকে বিভিন্ন কোর্স করে এই সনদগুলো পেয়েছেন।

‘লকডাউনের দিনগুলোতে বাড়িতে থাকার সময় কিছু অনলাইন কোর্সে অংশ নেই। সবগুলো কোর্স ছিল আমার সাবজেক্ট-ভিত্তিক: অ্যানিমেল নিউট্রেশন,’ জানিয়ে সুধন্যা ইংরেজি গণমাধ্যমটিকে বলেন, ‘এরপর অন্য বিষয়ের ওয়েব সেমিনারেও অংশ নেই। এতে অনেক নতুন কিছু জানতে পেরেছি।’

২৫ বছর বয়সী এই তরুণীর অল্প বয়স থেকেই নানা বিষয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল। সেই অভ্যাসটা তিনি এখনো ধরে রেখেছেন, ‘অনেক শখর বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাইলেও সময়ের অভাবে পারিনি। কিন্তু লকডাউন আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। সঙ্গে ছিল প্রযুক্তির আশীর্বাদ।’

কোর্সের পাশাপাশি তিনি ক্রিয়েটিভ রাইটিং এবং ভিডিওগ্রাফির কয়েকটি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন।

‘আমি শুধু সার্টিফিকেটের জন্য বসে থাকিনি। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে অনেক কুইজ খেলেছি। বই পড়েছি। লেখালেখি করেছি।’

যুক্তরাষ্ট্রে সফল বাংলাদেশি রুদমীলা নওশীন

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো তাদের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে। তাদের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে গিয়ে একজন দেশকে তুলে ধরেছেন বিশ্বের প্রতাপশালী কোম্পানিগুলোর সামনে। তিনি হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি উদ্যোক্তা রুদমীলা নওশীন।

বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান স্কলাসটিকা থেকে এ লেভেল শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে যান আন্ডারগ্র্যাডের জন্য। ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান জোস স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্রাজুয়েশন করেন। পরবর্তীতে মাস্টার্স অব সায়েন্স ইন ডিজিটাল কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। অধ্যয়নরত অবস্থায়ই পেয়েছেন ‘স্যুমা কাম লড’র মতো বিশেষ সাফল্য। সম্প্রতি তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক মিডিয়া কোম্পানির ‘হেড অব প্রডাকশন’। তার কোম্পানি সিলিকন ভ্যালি ট্যালি- পোডকাস্ট শুরু করার পরিকল্পনা করছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক জোড়া প্রতিষ্ঠান কনফিগ ভিআর ও কনফিগ রোবটের ফাউন্ডার ও সিইও। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তার প্রতিষ্ঠান কাজ করছে অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, মিক্সড রিয়েলিটি, থ্রিডি মডেলিং, অ্যানিমেশন ও কন্টেন্ট নিয়ে। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কোম্পানির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ভার্চুয়ালাইজ ইওর ভিশন’। যার লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের বিভিন্ন ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাকে প্রযুক্তির মাধ্যমে বাস্তবে রূপ দেওয়া। কনফিগ ভিআর মূলত এআর (অগমেন্টেড রিয়েলিটি), ভিআর (ভার্চুয়াল রিয়েলিটি) এবং মিক্সড রিয়েলিটির ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। এ সম্পর্কে রুদমীলা নওশীন বলেন, ‘আমাদের মূলত রিয়েল স্পেসের ওপর কাজ। এটি কম্পিউটার জেনারেটেড স্টিমুলেশন, যা ক্যামেরার ডেপথ সেন্স ব্যবহার করে এবং যেকোনো অবজেক্ট রিয়েল স্পেসে প্রজেক্ট করতে সহায়তা করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রজেক্টগুলো নিকট ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তৈরি করে মানুষের বিভিন্ন বিষয়ে ফোবিয়া বা ভয়-ভীতি দূর করতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে কনফিগ রোবট অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, চ্যাটবট, সাইবার নিরাপত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) এবং দক্ষতা উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে থাকে। আমেরিকা, ইউরোপ ও বাংলাদেশে টিমে আছে।’ এ ছাড়া তারা বিভিন্ন উদ্যোক্তা ক্লাবের সাথে যুক্ত আছেন এবং বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করছেন। তিনি ইউএস-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও জোরালো করতে চান।

ছোটবেলা থেকে বাবা-মা দু’জনকেই দেখে এসেছেন সফল প্রযুক্তিগত উদ্যোক্তা হিসেবে। তার বাবা ফজলে সেলিম বাংলাদেশের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী। আর মা রুকসানা সেলিমের অবদান তার জীবনে অনেক। তার বড় চাচা ছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী ফজলে রাব্বী। দেশপ্রেম তাই তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শৈশব থেকেই বাবার অফিসে সিলিকন ভ্যালির নামকরা সব কোম্পানির ম্যাপ দেখতেন। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন, একদিন তার গড়ে তোলা কোনো প্রতিষ্ঠানও সেখানে জায়গা করে নেবে।

ছোটবেলার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া রুদমীলা জানান, বিদেশের মাটিতে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা তার জন্য সব সময়ই গর্বের। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে আসার শুরুটা পরিবারের ইচ্ছাতে হলেও এখন তিনি সেই সিদ্ধান্তকে নিজের জন্য আশীর্বাদ মনে করেন।

বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে জানান, ‘এখানকার রিটেইল, উৎপাদন, শিক্ষা, সরকারি কর্মক্ষেত্র ও মিলিটারির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে এআর, ভিআর ও মিক্সড রিয়েলিটির ব্যবহার দেশকে কয়েকগুণ এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন অ্যানিমেশন, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, ডকুমেন্টেশনকে নেটফ্লিক্স ও অ্যামাজনে প্রচার করতে চান। এর জন্য তিনি তার প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। অবসরে কী করা হয় জানতে চাইলে জানান, তিনি একজন ক্ল্যাসিক্যাল ড্যান্সার। হাইকিং ছাড়া হারমোনিয়াম ও তানপুরায় রয়েছে বিশেষ দক্ষতা। পেইন্ট আর ভ্রমণপিপাসু একজন মানুষ তিনি। স্বভাবতই সৃজনশীল কাজের প্রতি ঝোক রয়েছে তার।

ছাত্রাবস্থায় শিক্ষার্থী হিসেবে অধ্যয়নরত ছিলেন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। কিন্তু দমে যাননি। তার দৃঢ় ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ অবস্থানের কারণেই আজকের এ সফলতা। তার ইচ্ছা, কয়েক বছরের মধ্যে তিনি বাংলাদেশে রোবট তৈরির কোম্পানি খুলবেন। অথবা তার কিছু যন্ত্রপাতির উৎপাদন স্থল বানাবেন। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে কনফিগ রোবটের প্রতিষ্ঠা পরবর্তী কাজ শুরু হয়ে গেছে। এতে দেশীয় শিল্পে যেমন বিপ্লব ঘটবে, তেমন প্রযুক্তিতে আগ্রহীদের কর্মস্থলও সম্প্রসারিত হবে।

তিনি আশা করেন, ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে ধীরে ধীরে নারীরা আরও এগিয়ে আসবে। সর্বোপরি দেশের সব তরুণ প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে দেশকে বিশ্বের দরবারে সমাদৃত করবে। ১২ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর দেশে অপার সম্ভাবনা দেখছেন বাংলাদেশি এ প্রযুক্তিকন্যা। তিনি বিশ্বাস করেন, তার রোবট মানুষের চাকরি নেবে না বরং জীবন-মান করবে সহজ। জাগো নিউজ

 

ডাক্তার আর সংযোগের প্রচেষ্টায় রিমুর নতুন জীবন

তাসলিমা সিদ্দিকা রিমু। গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) লাইভ স্টক সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাবা নেই। সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ দুই মাস আগে রিমু জানলেন হার্টের একটি ভাল্ব নষ্ট। জন্ম থেকে বয়ে বেড়াচ্ছেন জন্মগত হার্টের এক কঠিন রোগ। যার নাম এবস্টেইন এনোমালি। হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে প্রথমে নিজ জেলা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখালো রিমুর পরিবার। তারপর ঢাকায়।

চিকিৎসা করতে অনেক টাকা লাগবে। কিন্তু এতো টাকা রিমুর পরিবার কোথায় পাবে? তারপর খুব জটিল অপারেশন। কোথায় করবে এই অপারেশন। সাধারণত ১ লাখ ভাল্ব অপারেশনের রোগীর মধ্যে একজনের এ ধরনের সমস্যা হয়। বন্ধু আর পরিবারের সদস্যরা মিলে কিছু টাকা জোগাড় করলেন। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে যে রিমুর পরির্পূণ অপারেশন সম্ভব নয়।

এ বাস্তবতায় রিমুর চিকিৎসার অর্থ সংগ্রহ করতে এগিয়ে এলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সংযোগ : কানেক্টিং পিপল’। সংযোগ প্লাজমা ও ব্লাড ডোনেশন টিমের নিরন্তর চেষ্টা আর গ্রুপের সদস্যসহ দেশ-বিদেশের কিছু মানুষের সহযোগিতায় অর্থের সংস্থান হলো। সংযোগের স্বেচ্ছাসেবী ডাক্তারদের সহযোগিতায় রিমুর অপারেশনের জন্য খুঁজে বের করা হলো ডাক্তার। অপারেশনের ঝুঁকি আর জটিলতা জানা সত্ত্বেও রিমুকে ভর্তি নিলেন মিরপুরের আল হেলাল হাসপাতালের সিনিয়র কার্ডিয়াক সার্জন সামির আযম। ডা. সামির আযমের নেতৃত্বে গত ৭ সেপ্টেম্বর দীর্ঘ ছয় ঘণ্টার অপারেশনের পর রিমুর হৃদযন্ত্র নতুন ভাল্ব পায়। পায় স্বাভাবিক ছন্দ।

এত দীর্ঘ সময়ের জটিল অপারেশন সত্ত্বেও কোনো অপারেশন চার্জ নেননি ডা. সামির আযম। রিমু গতকাল হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছেন। একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠছেন। অপারেশনের ধকল কাটিয়ে একটি সুস্থ হৃদযন্ত্রে নতুন জীবনের প্রহর গুনছেন। তাসলিমা সিদ্দিকা রিমুর অপারেশন বিষয়ে জানতে চাইলে ড. সামির আযম বলেন, ‘খুব গুরুতর হয়ে উঠেছিল রিমুর অবস্থা। দ্রুত অপারেশন করানোয় ঝুঁকি অনেকটা মোকাবিলা করা গেছে। রিমু এখন সুস্থ। সংযোগসহ সবার প্রচেষ্টাই রিমুকে নতুন জীবন দিয়েছে।’

সংযোগের ডাক্তার টিমের অন্যতম সদস্য ও ফেসবুক গ্রুপ অ্যাডমিন ডা. ফারজানা নাসরিন ইনা বলেন, ‘বাংলাদেশে সঠিক চিকিৎসা পরামর্শ পাওয়া অনেক সময় সাধারণ মানুষের জন্য মুশকিল হয়ে যায়। আমরা সংযোগের মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের কোভিডকালীন সঠিক চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে আসছি। পাশাপাশি রিমুসহ কয়েকজন রোগীর জন্য কম খরচে ভালো চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের চেষ্টা করছি। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছি, যাতে মানুষ অক্সিজেন পায়।’

সংযোগ: কানেক্টিং পিপল ফেসবুক গ্রুপের মডারেটর বুয়েট প্রকৌশলী মেহেদি হাসান বলেন, ‘সংযোগের কাজই হচ্ছে মানুষের সাথে মানুষকে যুক্ত করা। মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমরা নানাভাবে সবাই মিলে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’

তিনি ডা. সামির আযম, সংযোগ ফেসবুক গ্রুপের ২৪ হাজার সদস্যসহ সংযোগের ডাক্তার ও প্লাজমা টিমের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

৫০০ টাকার যবের ছাতু ও আটায় লাখপতি নিপা

তরুণ উদ্যোক্তা নিপা সেনগুপ্ত (২৩) কাজ শুরু করেন বরেন্দ্র অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী যবের ছাতু ও যবের আটা নিয়ে। তিনি শুরু করেন মাত্র ৫০০ টাকা মূলধন দিয়ে। আস্তে আস্তে পরিচিতি বাড়তে থাকে। আসতে থাকে পজিটিভ রিভিউ। কাস্টমারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পণ্যতালিকায় যুক্ত হয় গম, চাল, মসুর ও ছোলার মিশ্রণে ‘পঞ্চ-ব্যাঞ্জন ছাতু’।

এরপর ধীরে ধীরে যুক্ত হতে থাকে ভেজালমুক্ত আখের গুড়, পাবনার ঘি, গমের লাল আটা, দেশি ধানের চাল, মৌসুমী আচার, দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় ফলের গাছ। ব্যবসা শুরুর ৩ মাসের মধ্যে সব পণ্য মিলিয়ে নিপার আয় হয় প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার টাকার উপরে। সাথে সাথে উই গ্রুপেও পরিচিতি বাড়ে।

তরুণ নারী উদ্যোক্তা নিপা সেনগুপ্ত বলেন, ‘অনার্স শেষ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। পাঁচটি পরীক্ষাও শেষ হয়েছিল। এরমধ্যেই করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। আমিও বাসায় বন্দি হয়ে গেলাম। এসময় এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে উই গ্রুপে যুক্ত হই। এখানকার নারীদের কাজ দেখে আমি অভিভূত হয়ে যাই।’

সফল এ নারী আরও বলেন, ‘প্রথমেই ভালো লাগা তৈরি হয়। আস্তে আস্তে নিজের প্রতি বিশ্বাস তৈরি হয়। স্বামীর সহযোগিতায় রাজশাহী অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী যবের ছাতু নিয়ে কাজ শুরু করি। কিন্তু ভাবিনি, এই ছাতু নিয়েই আমি লাখপতি হতে পারব। বর্তমানের উই থেকে আমার সেল প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার টাকারও উপরে।’

নিপা সেনগুপ্তের কাজের সাথে এ অঞ্চলের দু’জন নারী যুক্ত হয়ে পরিবারকে সহযোগিতা করছেন। রাজশাহীর তানোর উপজেলার দুবইল গ্রামের আবেদা বেগম (৪৮) বলেন, ‘নিপা বাজার থেকে যব কিনে আমাদের কাছে দেয়। আমরা যবগুলো পরিষ্কার করে শুকিয়ে বালুতে ভেজে দেই। এর জন্য নিয়মিত টাকা পাই। যাতে সংসারের অনেক উপকার হয়। বাড়তি আয় করতে পারি।’

 

ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে সাইকোলজি কী বলে

 

ডা. মাহাবুবা রহমান

নারীর প্রতি সহিংসতা বিশ্বের ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। উনিশ শতকের সতীদাহ প্রথা থেকে শুরু করে একবিংশ সমাজের ডমেস্টিক ভায়োলেন্স, যুগে যুগে এভাবেই সহিংসতার রূপ বদলেছে। তবে সব যুগের সব সহিংসতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বর্তমান যুগের ধর্ষণ। হ্যাঁ, ধর্ষণ শব্দটি নতুন কিছু নয়। তারপরও ‘বর্তমান যুগের ধর্ষণ’ বলার কারণ এখন প্রতিনিয়ত যেসব ধর্ষণের খবর পাচ্ছি- এতটা বিকৃত, এতটা পাশবিক যৌনাচারের খবর কি আগে কখনো শুনেছেন?

আগে কয়টা ধর্ষণের খবর এমন শুনতেন, যেখানে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়? দুলাভাই তার নিজের ভাইদের নিয়ে শালীকে গণধর্ষণ করে? ৭২ বছরের বৃদ্ধা গোসল করতে গিয়ে ধর্ষিত হয়? সন্তানের বয়সী ছেলেরা মায়ের বয়সী নারীকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে, উল্লাস করে, আঘাত করতে করতে ধর্ষণ করে?

এমন একটি দিন নেই; যেদিন সোশ্যাল মিডিয়া বা পত্রিকা খুললে একটি ধর্ষণের খবর পাওয়া যায় না। ক্রমবর্ধমান হারের এ অপরাধ সম্পর্কে অনেকের অনেক মত, কেউ বলেন সামাজিক অবক্ষয়, কেউ বলেন ক্ষমতার অপব্যবহার। কিন্তু নিকৃষ্টতম এ আচরণের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা কী? একটু বোঝার চেষ্টা করি চলুন।

নারীর প্রতি সহিংসতার সাইকোলজি বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে ‘সহিংসতা’ বা সাইকোলজিতে আমরা যেটা পড়ে থাকি, ‘Aggression’ তার পেছনের তত্ত্ব ও ব্যাখ্যা। সাইকো অ্যানালাইসিসের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েড একটি সময় পর্যন্ত বিশ্বাস করতেন, মানবচরিত্রে জন্মগতভাবে একটি গুণ বিদ্যমান- যার অর্থ ভালোবাসা। এ ভালোবাসা আছে বলেই মানুষে মানুষে প্রেম হয়, তারা একে অপরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে, একসাথে থাকে, বংশবৃদ্ধি করে। মানবসভ্যতা টিকিয়ে রাখতে যার ভূমিকা অপরিহার্য। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে ফ্রয়েডের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসে। তিনি তখন দ্বিতীয় আরেকটি ড্রাইভের অবতারণা করেন, যার নাম দেন ‘থানাটস’।

থানাটস শব্দের অর্থ আত্মধ্বংসী মনোভাব। ফ্রয়েডের মতে, প্রতিটি মানুষের মাঝে জন্মগতভাবেই এ দুটি ড্রাইভ পাশাপাশি বিদ্যমান। মানবজাতি একইসাথে ভীষণ রকমের সৃষ্টিশীল এবং বিধ্বংসী। তার মতে, সময়ে সময়ে মানুষের এ বিধ্বংসী মনোভাব প্রকাশ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ঠিক যেমনইভাবে প্রয়োজন পড়ে তার ক্ষুধা, তৃষ্ণা এবং যৌন চাহিদা প্রকাশের।

পরবর্তীতে অনেক সাইকোলজিস্ট এবং সোশ্যিওলজিস্ট অ্যাগ্রেশন নিয়ে কিছু থিওরি দেন। উল্লেখযোগ্য থিওরিগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করছি-

ইন্সটিঙ্কট থিওরি: নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, জন্মগতভাবে মানুষের মাঝে যে অ্যাগ্রেশন থাকে, সেটাই ইন্সটিঙ্কট থিওরির আলোচ্য বিষয়। সে হিসেবে ফ্রয়েডের থিওরিটির অন্তর্ভুক্ত। পরবর্তীতে ইথিওলজিস্ট কোনার্ড লরেঞ্জ তার বই ‘অন অ্যাগ্রেশনে’ও এ থিওরি নিয়ে আলোচনা করেন।

ফ্রাস্টেশন-অ্যাগ্রেশন হাইপোথিসিস: ফ্রয়েডীয় ইন্সটিঙ্কট থিওরি দিয়ে প্রভাবিত সাইকোলজিস্ট জন ডলার্ড এবং তার কয়েকজন কলিগের সমন্বয়ে প্রকাশিত বই ‘ফ্রাস্টেশন অ্যান্ড অ্যাগ্রেশনে’ সর্বপ্রথম এ থিওরির প্রকাশ। এ থিওরি অনুযায়ী, জন্মগতভাবে মানুষ যে অ্যাগ্রেশন নিয়ে আসে, সেই অ্যাগ্রেশনের প্রকাশ ঘটে কিছু নির্দিষ্ট পরিবেশ বা পরিস্থিতিতে। তেমনই এক পরিস্থিতি হলো ‘হতাশা’। জন ডলার্ডের মতে, ফ্রাস্টেশন সব সময়ই অ্যাগ্রেশনে রূপ নেয়, মতান্তরে অ্যাগ্রেশন হল ফ্রাস্টেশনের একটি ফলাফল।

এ হতাশা বা ফ্রাস্টেশনের উৎস হতে পারে জীবনের মৌলিক চাহিদার অভাব কিংবা অন্য যেকোনো কিছু। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয়টি হচ্ছে, ফ্রাস্টেশন থেকে উদ্ভুত এ অ্যাগ্রেশন সব সময় ফ্রাস্টেশনের মূল উৎসের প্রতি না হয়ে হতে পারে অন্য কোনো বস্তুর প্রতি। একে বলে, ‘ডিসপ্লেসড অ্যাগ্রেশন’। সমাজে এটিই বরং অহরহ দেখা যায়।

উদাহরণস্বরূপ, অন্যান্য দিনের মত সকালে অফিসে যাওয়ার পর আপনি জানতে পারলেন, আগামী মাস থেকে আপনার চাকরিটা আর থাকছে না। আকস্মিক এ চাকরিচ্যুতির ঘোষণা আপনাকে ভয়াবহ রকমের ফ্রাস্টেশনে ফেলে দিলো। মনে মনে তৈরি হলো বসের প্রতি তীব্র ক্ষোভ। কিন্তু আপনার পক্ষে তো আর সম্ভব না বসের প্রতি ক্ষোভ দেখানো। তাই ক্ষোভটা ডিসপ্লেসড করলেন বাসায় ফিরে আপনার স্ত্রী বা সন্তানের ওপর। অর্থাৎ ফ্রাস্টেশন থেকে সৃষ্ট অ্যাগ্রেশনটি আপনি দেখালেন আপনার জন্য মোটামুটিভাবে নিরাপদ এবং আপনার চেয়ে কম ক্ষমতার অধিকারী একটি জায়গায়।

আরেকটি উদাহরণ দেই, প্রায়ই আমরা শুনি বা অনেকসময় নাটক-সিনেমায়ও দেখি, গ্রামের প্রতাপশালী চেয়ারম্যানের কুলাঙ্গার ছেলে অমুক বাড়ির দরিদ্র বাবার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এ ছেলে তার বাবার কাছে উঠতে-বসতে অপমানিত হয় এবং এরকম একটি ছেলে কখনো তার থেকে মোটামুটি ক্ষমতাবান কোনো পরিবারের মেয়েকে অত্যাচার করার সাহস দেখাবে না। তাহলে আপনারাই এখন ভাবুন, ফ্রাস্টেশন-অ্যাগ্রেশন থিওরি অনুযায়ী, এ ঘটনাটাকে ব্যাখ্যা দেওয়া যায় কি না। শিশুদের প্রতি যৌন সহিংসতাকেও আমি এর অন্তর্ভুক্ত করব।

অ্যারোস্যাল অ্যান্ড অ্যাগ্রেশন: ডলফ জিলম্যানের এ থিওরি বেশ ইন্টারেস্টিং। এর মূল বক্তব্য হলো, একটি উৎস থেকে সৃষ্ট উদ্দীপনা অন্য একটি বস্তুতে প্রবাহিত করা। উদাহরণস্বরূপ, রাস্তা-ঘাটে আসতে-যেতে দেখবেন চলন্ত অবস্থায় এক রিকশার সাথে আরেক রিকশার সামান্য একটু ধাক্কা লাগতেই রিকশাওয়ালা দুজনের মধ্যে গালাগালের ধুম পড়ে যায়। পারলে একজন আরেকজনকে মেরেই ফেলেন এমন অবস্থা আর কি। অথচ ঘটনা খুবই সামান্য। এর কারণ হলো, অলরেডি শারীরিক পরিশ্রমের দরুণ তারা ফিজিক্যালি অ্যারোসড বা এক্সাইটেড হয়ে আছেন। এমতাবস্থায় ধাক্কা লাগা বিষয়টি তাদের একটি সুযোগ এনে দিলো নিজের ফিজিক্যাল অ্যারোস্যালকে আরেকজনের ওপর চ্যানেলাইজ করার।

অন্যভাবে আরেকটি উদাহরণ দেই, ধরুন, আপনি রেস্টুরেন্টে বসে আপনার প্রিয় মানুষের জন্য অপেক্ষা করছেন। এ অপেক্ষা আপনার জন্য বিরক্তিকর নয়, আনন্দের। অর্থাৎ আপনি অলরেডি খুব রোমান্টিক মুডে আছেন। এমতাবস্থায় রেস্টুরেন্টে বাজতে থাকা একটি রোমান্টিক গান আপনার মাঝে এত বেশি ভালো লাগা তৈরি করবে, যেটি হয়তো এর আগে হাজারবার শুনেও আপনার মধ্যে তৈরি হয়নি। এখানে আপনার রোমান্টিক মুডটা চ্যানেলাইজড হয়ে গেল গানের প্রতি।

ধর্ষণের সাথেও অ্যাগ্রেশনের এ থিওরিকে খুব চমৎকারভাবে রিলেট করা যায়। যেমন ধরুন, যে ছেলে ইতোমধ্যে মাদক সেবন করে অথবা পর্নোগ্রাফিক মুভি দেখে ফিজিক্যালি অ্যারোসড হয়ে আছে, সেই ছেলে সুযোগ পাওয়া মাত্রই তার এই ফিজিক্যাল অ্যারোস্যালটি চ্যানেলাইজড করে দেবে একজন নারীর ওপর। সেক্ষেত্রে সেই নারীর সাথে তার পূর্বপরিচয়, ভালো লাগা, নারীর বয়স, নারীর কাপড় (যেহেতু সমাজের একটি বড় অংশ ধর্ষণ প্রসঙ্গে নারীর কাপড় টেনে আনেন) এসবের কিছুরই প্রয়োজন নেই।

সোশ্যাল লার্নিং অ্যান্ড অ্যাগ্রেশন: অ্যাগ্রেশনের সবগুলো হাইপোথিসিসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হাইপোথিসিস এটি। লার্নিং সাইকোলজির একেবারেই বেসিক একটা বিষয়। একটা শিশু বড় হয়ে কেমন মানুষ হবে, তার ব্যক্তিত্ব কেমন হবে, আচরণ কেমন হবে- সেই সবকিছু যতটা তার জেনেটিক মেকাপের ওপর নির্ভর করে, ততটাই নির্ভর করে লার্নিংয়ের ওপর। এ থিওরি অনুযায়ী, অ্যাগ্রেসিভ আচরণ গড়ে ওঠে রিইনফোর্সমেন্ট এবং অ্যাগ্রেসিভ মডেলদের অনুকরণের মাধ্যমে।

এখানে আলোচ্য বিষয় তাহলে দুটি-

লার্নিং থ্র রিইনফোর্সমেন্ট: রিইনফোর্সমেন্ট মানে সোজা বাংলায় যে জিনিস আপনার একটি আচরণকে বৃদ্ধি করে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু কিছু বাচ্চা আপনি দেখবেন যে কোনো কিছু চাইতে হলে চিৎকার-চেচামেচি করে চায়। এর কারণ হলো সে স্বাভাবিকভাবে হয়তো কখনো একটি জিনিস চেয়েছে, পায়নি। কিন্তু যখন সে চিৎকার করে মাটিতে গড়াগড়ি করেছে, তখন বাবা বা মা তাড়াতাড়ি তাকে থামানোর জন্য ওই জিনিসটি কিনে দিয়েছে। এখানে তার অভিভাবক যে তাকে ওই জিনিসটি কিনে দিলো, এটা হলো রিইনফোর্সমেন্ট। বাচ্চা যে চিৎকার করছিল, এটা বাচ্চার আচরণ এবং বাচ্চার লার্নিংটি হলো এরপর থেকে কিছু পেতে হলে অবশ্যই চিৎকার করতে হবে।

এবার আসি ধর্ষণের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি কিভাবে কাজ করে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটেই বলি। প্রথমত, আমাদের দেশে ম্যাক্সিমাম মেয়েরা সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের কথা প্রকাশ করে না, ধর্ষণও না। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের কেসটার কথাই ধরুন। ধর্ষণের ৩২ দিন পর ঘটনাটি প্রকাশিত হয়। তাও প্রকাশিত হয় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে, কয়েকজনের লেখালেখির মাধ্যমে।

তার আগ পর্যন্ত কিন্তু ধর্ষিতা বা ধর্ষিতার পরিবার কোনো মামলা করেনি। এখানে ধর্ষিতাকে আমি দোষ দেব না। আমাদের সমাজব্যবস্থাই এমন। এখানে মেয়েরা ধর্ষিতা হলে তাদের সম্মানহানি(!) হয়, মামলা করতে গেলে থাকে ক্ষমতাশীলদের হাতে প্রাণ হারানোর ভয়। সে যাই হোক, আমি আমার সাইকোলজিতে ফিরে আসি। এই যে চুপ থাকা, ব্যাপারটা ধর্ষকদের ক্ষেত্রে রিইনফোর্সমেন্ট হিসেবে কাজ করে। তাদের জানা হয় যে, এরকম কাজ বারবার করাই যায়, কেউ তো আর মুখ খুলবে না। দ্বিতীয়ত, বিচারহীনতা বা বিচার হলেও সুষ্ঠু বিচার না হওয়া এটাও ধর্ষকদের জন্য রিইনফোর্সমেন্ট। এতেও তাদের বারবার ধর্ষণ করার শিক্ষা হচ্ছে।

লার্নিং থ্র দ্য ইমিটেশন অব অ্যাগ্রেসিভ মডেলস: এটি আরেকটি ভয়ানক এবং আমি মনে করি, ধর্ষণের প্রথমসারির কারণগুলোর একটি। আমাদের দেশে ছোটবেলা থেকে একটা ছেলে এটা দেখে দেখে বড় হয় যে, তার বাবা তার মাকে উঠতে-বসতে গায়ে হাত তোলে, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পাড়ার সো কল্ড বড় ভাই পাড়ার মেয়েদের দেখলেই শিষ দেয়, ওড়না ধরে টান দেয়, অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে। এখানে যে ফাদার ফিগারের কথা বললাম, তিনি এবং এলাকার সেই বড় ভাই হচ্ছেন মূলত অ্যাগ্রেসিভ মডেলস।

যাদের ছোটবেলা থেকেই দেখে দেখে ছেলেটি শিখে নেয়, সমাজে মেয়েদের সাথে যা ইচ্ছা করা যায়, চাইলেই তার বুকে হাত দেওয়া যায় কিংবা তার সাথে যৌনক্রিয়া সম্পাদন করা যায়। এতে কোনো অসুবিধা নেই। এটাই নিয়ম।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যাগ্রেসিভ মডেল হচ্ছে পর্নোগ্রাফি। পর্নোগ্রাফিতে যে রোলগুলো দেখানো হয়, সেখানে কী হয়? মেইল রোলগুলো থাকে প্রচণ্ড রকমের ডমিনেটিং এবং ভায়োলেন্ট। যারা তাদের ফিমেল পার্টনারের সাথে ইচ্ছামত বিকৃত যৌনাচার চালিয়ে যায়। আর ফিমেল পার্টনারটিও যেন সেসব বিকৃতি বেশ উপভোগ করছে এমনটিই দেখানো হয়। বয়ঃসন্ধিকাল থেকে একজন ছেলে যখন তার জীবনের প্রথম সেক্স এডুকেশনই পায় এধরনের পর্নোফিল্ম দেখে, তখন তার এটাই লার্নিং হয় যে, এখানে এ মডেলরা যা করছে, এটাই স্বাভাবিক। যৌনসঙ্গম ব্যাপারটা এমনই। মেয়েদের সাথে এটাই করতে হয়। এমনকি একটি শিশুর সাথেও এগুলো করা যায়। এতে মেয়েদের কোনো কষ্ট হয় না বরং তারাও ব্যাপারটা এনজয় করে (যেটা একদমই সঠিক না)। মেয়েদের ক্ষেত্রে সেক্স ব্যাপারটা যতটা না ফিজিক্যাল তার থেকে অনেক অনেক বেশি মেন্টাল।

আমি যে শুরুতে বলেছিলাম, বর্তমান যুগের ধর্ষণ; যেখানে বিকৃত যৌনাচারের হার অনেকগুণ বেশি, তার পেছনে পর্নোগ্রাফি বা চটি বইয়ের বিকৃত যৌনাচারই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ী বলে আমি মনে করি।

এতক্ষণ তো বললাম শুধু অ্যাগ্রেশন হাইপোথিসিসের কথা। কিন্তু শুধু অ্যাগ্রেশন দিয়েই ধর্ষণকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায় না। যেকোনো অপরাধের পেছনে একজন মানুষের পার্সোনালিটির বিরাট গুরুত্ববহন করে। আর পার্সোনালিটি বা ব্যক্তিত্বের কথা বলতে গেলেই চলে আসে মেন্টাল স্ট্রাকচার নিয়ে ফ্রয়েডের সেই চমৎকার কনফিগারেশনের কথা-

ইড: ইড হচ্ছে সোজা বাংলায় মানুষের আদিম প্রবৃত্তি। যেখানে কোনো সামাজিক মূল্যবোধ, বিবেকবোধ এসবের বালাই নেই। যেমন আপনার প্রচণ্ড খিদা পেয়েছে এবং আপনার কাছে কোনো খাবার নেই, খাবার কেনার মত টাকাও নেই। কিন্তু আপনি দেখলেন একটু সামনেই একটা খাবারের দোকান। আপনি সেই দোকানে ঢুকলেন, দোকানিকে কিছু না বলেই একটা খাবারের প্যাকেট তুলে নিয়ে হাঁটা দিলেন। কাজটা ঠিক না বেঠিক সেসব চিন্তা আপনার মাথায় আসবে না। আপনার খিদা পেয়েছে, সেটা নিবারণ করাই এখন আপনার কাছে মুখ্য।

ইগো: ইগো হচ্ছে ইড এবং সুপার ইগো এ দুয়ের মধ্যে ব্যালেন্স। ইগো আমাদের বাস্তবধর্মী সিদ্ধান্ত নিতে শেখায়। বস্তুত, যে মানুষের ইগো যত ভালো; সে সামাজিকভাবে তত বেশি খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম। ইগো আমাদের শেখায় খিদা পেলে যদি আমার খাবার কেনার সামর্থ না থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা কী কী করতে পারি। আমরা কোনো বন্ধুর থেকে ধার নিয়ে খাবার কিনতে পারি, কিংবা দোকানি পরিচিত হলে অনুরোধ করতে পারি, আমাকে এক প্যাকেট খাবার আপাতত বাকিতে দিতে, আমি পরে পরিশোধ করে দেব।

সুপার ইগো: এটি হচ্ছে আমাদের নীতিবোধ বা বিবেকবোধ। এ বিবেকবোধ সামাজিক অথবা ধর্মীয় মূল্যবোধ যেকোনোটি থেকেই আসতে পারে। সুপার ইগো আমাদের শেখায় খিদা পেলেই একটি দোকানে ঢুকে নিজের ইচ্ছামত খাবার তুলে নিয়ে চলে যাওয়া যায় না। এটি নীতিগতভাবে সঠিক নয়।

ধর্ষকদের মাঝে এই ইগো বা সুপার ইগো কোনটিই কাজ করে না। তাদের সব কিছুকে ছাড়িয়ে যায় তাদের ইড। একজন নারীর শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার চেয়ে তার নিজের সেক্সুয়াল প্লেজার পাওয়ার বিষয়টিই তার কাছে মুখ্য।

সবশেষ আরেকটি ভিন্ন বিষয় নিয়ে একটু বলি। হিউম্যান সেক্সুয়াল রেসপন্স সাইকেলের অনেকগুলো সেক্সুয়াল মডেলের মধ্যে একটি হলো জন ব্যানক্রফটের ডুয়াল কন্ট্রল মডেল। মডেলের বিস্তারিত আলোচনায় আমি যাব না। এখানে যেটি মূলকথা সেটি হচ্ছে, সেক্সুয়াল অ্যাক্টিভিটি আমাদের নার্ভাস সিস্টেমের এক্সিটেটরি এবং ইনহিবিটরি দুই মেকানিজমের ব্যালেন্সের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এখন যাদের ক্ষেত্রে ‘Low excitation’ এবং ‘High inhibition’ থাকে, তাদের ক্ষেত্রে সেক্সুয়াল ডিসফাঙ্কশন হওয়ার একটি সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে যাদের ‘High excitation’ এবং ‘low inhibition’ থাকে, তাদের ক্ষেত্রে রিস্কি সেক্সুয়াল বিহেভিয়র’ (ধর্ষণ) হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর।

পরিশেষে একটি কথা না বললেই নয়। ধর্ষণের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ নিয়ে আমার লেখাটির পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্ষণ প্রতিরোধে ঠিক কোন কোন জায়গায় কাজ করা উচিত, কেন করা উচিত- সে বিষয়ে একটি বিজ্ঞানসম্মত ধারণা দেওয়া, ধর্ষণকে নরমালাইজ করা নয়। কারণ আমি জানি, আমাদের আশেপাশেই অনেক রেপিস্ট বা পটেনশিয়াল রেপিস্ট ভালো মানুষের চেহারা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।

তারা কেউ কেউ হয়তো এটা বলবে, সবই যখন সাইকোলজিকাল কারণে হয়, তাহলে মানুষের কী দোষ! দোষ অবশ্যই আছে। আপনি চাইলেই মাদকাসক্ত না হতে পারেন, চাইলেই পর্নোগ্রাফিক মুভি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারেন, চাইলেই ধর্মীয়, পারিবারিক, সামাজিক অনুশাসন মেনে আপনার ইগো, সুপার ইগোকে উন্নত করতে পারেন। তা না করে, সব দোষ সাইকোলজি আর মেয়েদের পোশাকের- এসব কথা বলে বলে নিজেকে পটেনশিয়াল রেপিস্ট থেকে রেপিস্টে উন্নীত করার দায়ভার অবশ্যই আপনার।

লেখক: রেসিডেন্ট, ডিপার্টমেন্ট অব চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডলোসেন্ট সাইকিয়াট্রি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সৌজন্যে : জাগোনিউজ

 

ধর্ষণ পরিক্রমা: ধর্ষণের ব্যধিতে আক্রান্ত স্বদেশ

নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে কলম, ফেসবুক, টুইটার, আর টিভিগুলো সারাদিন কথা বলছে। ধর্ষণের ব্যধিতে ভীষণভাবে সংক্রামিত হয়েছে দেশ। ব্যক্তি ধনী হোক বা দরিদ্র, শিক্ষার হার বেশি কিংবা কম; সবখানেই ধর্ষণ একটি মহামারি আকার ধারণ করেছে।

সম্প্রতি দেশজুড়ে ধর্ষণ, হত্যা, নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি মানুষের ভাবনার কেন্দ্রে চলে আসছে। নারীর প্রতি সমাজের মনোভাব, সমাজে নারীদের আরও অনিরাপদ করে তুলছে। বিশেষ করে ধর্ষণের দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া, বিচারহীনতা, ভিক্টিম ব্লেমিং, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত দায় কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।

নারীর প্রতি সহিংসতার বর্তমানে প্রায় লাগামহীন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১শ’ ৭ সেকেন্ডে একজন নারী ধর্ষণ অথবা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। যা বছরেয প্রায় ২ লাখ ৯৩ হাজার নারী ধর্ষণ অথবা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।

নারীর প্রতি সহিংসতায় বাংলাদেশের চিত্র আরো ভয়াবহ। মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের’ তথ্যমতে, ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সালে সেপ্টম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ মোট ধর্ষণের সংখ্যা ৭ হাজার ৫শ’ ২৭ টি।

এর মধ্যে শিশু ধর্ষণের সংখ্যা ৩ হাজার ২শ’ ৯০ টি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে মানবাধিকার সংস্থা- আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ৫ মাসে ৬শ’ ৩২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। একই সময় ১শ’ ৪২টি ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাও ঘটেছে। এর মধ্য থেকে ২৯ জন ভুক্তভুগি আত্মহত্যা করেছে। ৫ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। ধর্ষকদের বিষাক্ত দৃষ্টি থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশু, প্রতিবন্ধী থেকে ষাটোর্ধ্ব মহিলা কেউই। ২০২০ সালে গত ৯ মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯শ’ ৭৫ জন নারী। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২শ’ ৮ জন।

এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৩ জন। আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন নারী। সংগঠনটি আরো জানায়, গত ৯ মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৬১ নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানির কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ নারী এবং ৯ পুরুষ নিহত হয়েছেন।

১৪টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে করা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ সালে ধর্ষণের শিকার ৬৩৫ জনের মধ্যে ৯৬ জন , ২০১২ সালে ধর্ষণের শিকার ৫০৮ জনের মধ্যে ১০৬ জন, ২০১৩ সালে ধর্ষণের শিকার ৫শ’ ১৬ জনের মধ্যে ৬৪ জন, ২০১৪ সালে ধর্ষণের শিকার ৫শ’ ৪৪ জনের মধ্যে ৭৮ জন এবং ২০১৫ সালে ধর্ষণের শিকার ৮শ’ ৮ জনের মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৮৫ জনকে।

২০১৬ সালে বাংলাদেশে এক হাজারেরও বেশি নারী ও কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। ১৪ টি দৈনিক পত্রিকার খবর বিশ্লেষণ করে সংগঠনটি বলছে, গত বছরে ১ হাজার ৫০ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এটা আগের বছরের তুলনায় কম হলেও ধর্ষণ ও নির্যাতনের ধরণ ছিলো নির্মম। ঘটনাগুলোকে ‘ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা’ এই তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮শ’ ১৮ জন নারী। ২০১৭ সালে ৯শ’ ২ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ২০১৮ সালে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭শ’ ৩২ জন। ২০১৮ সালে শিশু ধর্ষণের মামলা ছিল ৭শ’ ২৭টি এবং নারী ধর্ষণের মামলা ছিল ৩ হাজার ৯০০টি।

২০১৮ সালে শিশু ধর্ষণের সংখ্যা ছিল ৩শ’ ৫৬ টি। ২০১৮ সালের চেয়ে গত বছর শিশু ধর্ষণ ৭৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেড়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ২০১৯ সালে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৪১৩ নারী। ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে ৮৪টি শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া এক বছরে যৌন নির্যাতন বেড়েছে ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৭৬ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ১০ জন।

বিশ্বজুড়ে প্রায়ই অধিকাংশ নারীই কোন না কোন ভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে প্রায় ২০ লাখ নারী ধর্ষণের শিকার হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ ও সংঘাত চলাকালে ধর্ষণের এই পরিসংখ্যান প্রায় একই রকম।

২ বছর আগেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৬ শতাংশ নারী কোন না কোন ভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন এবং ৭% নারী সরাসরি ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। উন্নত অথবা অনুন্নত দেশ, সবখানেই একই চিত্র। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ধর্ষণ কেন হচ্ছে? কেনই বা ধর্ষণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে হু হু করে? এই প্রশ্নের উত্তর কেবল শুধু মাদক-পর্নোগ্রাফি বা বিজাতীয় অপসংস্কৃতিকে দায়ী নয় বরং পুরো দায়টি রাষ্ট্রের ওপর এসে পড়ে। ধর্ষণ মামলায় পড়ছে হাজার হাজার বছরের পর বছর ধরে শুধু আলোড়ন তৈরি সাজা হচ্ছে দুই বা চার জনের।এই সমাজ সুদীর্ঘ সময় ধরে মনস্তাত্ত্বিক ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বছরের পর বছরজুড়ে।

ধর্ষণ তখনই থামবে যখন ধর্ষকের সাজা হবে চরমভাবে এবং প্রতিটি ধর্ষকের বিচার হবে। কঠোর পরিণতি দেখে ভয়ে ধর্ষনকামী হয়ে উঠা অমানুষগুলো মানুষ হয়ে উঠবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে ধর্ষণের যে পরিসংখ্যান আমরা দেখছি এর পিছনে লুকিয়ে আছে আরেকটি ছবি, সেই পরিসংখ্যানটি আমাদের অজানা। ধর্ষণের যে তথ্য-উপাত্ত দেয়া হয় সেটি কেবল পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগ অথবা গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের উপর ভিত্তি করে তৈরি। বিশাল কিন্তু একটি বিশাল সংখ্যা, লোকলজ্জার ভয়ে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর পরিবার যৌন নির্যাতনের কথা প্রকাশ করে না।

 

ফেসবুক পেজের মাধ্যমে নিশাতের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প

‘পাপড়ি’স ড্রিম’ –এর প্রতিষ্ঠাতা নিশাত তাসমিনের পরিবারে তার মা-ই ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কিন্তু তার মায়ের পক্ষে একা পুরো পরিবারের খরচ চালানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছিল।
তাই নিশাত তার মাকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন যাতে তাদের পরিবার একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার দু’বছর পর আমি লক্ষ্য করলাম যে অনেকেই ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বাসায় রান্না করা খাবার বিক্রি করছে, যা আমার কাছে খুব সময়োপযোগী ও ভালো ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বলে মনে হয়েছিল। তাই ফেসবুক পেজের মাধ্যমে যারা বাসায় রান্না করা খাবার বিক্রি করছে আমি সেই পেজগুলো সার্চ করতাম এবং তাদের ব্যবসার ধরণ বোঝার জন্য সেই পেজগুলোতে নিয়মিত দেখতাম। এসব করতেই করতেই রান্নাঘর থেকে আয় করার পরিকল্পনাটি আমার মাথায় আসে। – বলছিলেন নিশাত।

অনেক চিন্তাভাবনা করে অবশেষে ২০১৮ সালে নিশাত তার মায়ের রান্না করা খাবারের ছবি দিয়ে একটি ফেসবুক পেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি খাবারের ছবিগুলো ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপেও শেয়ার করেন।

এর কিছুদিন পরেই নিশাত তার প্রথম অর্ডারটি পান। প্রথম অর্ডারটি ছিল চিকেন রোস্টের, যেটি তার মায়ের হাতের রান্না করা প্রিয় খাবার। নিশাত আজও সেই দিনের কথা মনে করেন। প্রথম অর্ডারটি পাওয়ার পর আমি আমার মাকে ফেসবুক পেজটি সম্পর্কে বলি। প্রথমে তিনি অবাক হন এবং একই সঙ্গে বেশ খুশিও হন। তিনি যেহেতু বাড়ির বাইরে ছিলেন তাই তিনি আমাকে চিকেন রোস্ট রান্না করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বাজারে যেতে বলেন। আমি তার কথামতো সবকিছু কিনে আনি এবং মা কাজ থেকে বাড়ি ফিরে রোস্ট রান্না করলেন। এভাবেই আমরা প্রথম অর্ডারটি আমাদের গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলাম।

এরপর প্রায় দুই বছর কেটে গেছে। এখন যে কয়েকটি বাংলা খাবারের পেজ আছে সেগুলোর মধ্যে ‘পাপড়ি’স ড্রিম’ বেশ পরিচিত।

নিশাতের মা এখন চাকরি ছেড়ে তার পুরো সময় মেয়ের ব্যবসায় দিচ্ছেন। তারা যৌথভাবে পুরো ব্যবসার কার্যক্রম পরিচালনা, অর্ডার নেওয়া ও খাবার তৈরি করতে কাজ করছেন। পাপড়ি’স ড্রিম –এ চিকেন রোস্ট, বিরিয়ানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের দেশি ভর্তা পাওয়া যায়। তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিশেষ খাবার হলো ‘খুদের ভাত ভর্তা’।

২০১৯ সালে নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে সবচেয়ে বেশি খাবার বিক্রি করার জন্য নিশাত ‘হোমশেফ’ আয়োজিত ‘সেরা তরুণ উদ্যোক্তা’ পুরস্কারও পেয়েছেন।

তেলাপোকা তাড়াতে

তেলাপোকা তাড়াতে পারছেন না কিছুতেই? তেলাপোকার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে আজই ট্রাই করুন, এই ছোট পদ্ধতিগুলো:

• রান্নাঘরেই তেজপাতা থাকে৷ তেজপাতা গুঁড়া করে বিভিন্ন ঘরের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে দিতে পারেন৷ তেলাপোকারা পালাবে
• তেলাপোকা দূর করতে ঘরের চারপাশে বোরিক পাউডারের সঙ্গে আটা বা ময়দা মিশিয়ে ছড়িয়ে দিন।
• লবঙ্গও খুব কাজের তেলাপোকা তাড়াতে।
বেশ কয়েকটি লবঙ্গ রেখে দিন রান্নাঘরের বিভিন্ন জায়গায়। ছোট্ট এই মসলাটির ঝাঁঝালো গন্ধ তেলাপোকার শত্রু

• একটি মগে এক লিটার পানি নিন এবং এতে একটি রসুনের কোয়া, একটি পেঁয়াজের পেস্ট এবং এক টেবিল চামচ গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে মিশিয়ে নিন। এবার স্প্রে করে দিন সারা বাড়িতে বা যেসব জায়গায় তেলাপোকা বেশি আসে
• শুধু তেলাপোকা নয়, সব ধরনের পোকামাকড় তাড়াতে ঘরে রেখে দিন নিমপাতা। নিম তেল বা নিমপাতার গুঁড়াও রাখতে পারেন।

 

মায়ের জন্যই সন্তান হয় বুদ্ধিমান!

সন্তান কোনো ভুল করলে তখন বাবা মা একজন অন্য জনের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেন। প্রায়ই তাদের বলতে শোনা যায়, তোমার জন্য এমন হয়েছে বা তোমার সন্তান এমন করেছে। কিন্তু সন্তান যখন ভালো কোনো কিছু অর্জন করে তখন দৃশ্য বদলে যায় পুরোটাই।

সন্তানের বেড়ে ওঠার সময়গুলোতে দেখতে কেমন, তার স্বভাব সব কিছুতেই মা বাবার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। সন্তানের বেড়ে ওঠায় বাবা-মায়ের প্রায় সমান অবদান থাকলেও তার বুদ্ধি বিবেচনাবোধ কিন্তু মায়ের দিক থেকে আসে।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সন্তানের মাথায় যে বুদ্ধি তৈরি হয়, তা আসে মায়ের থেকে, বাবার থেকে নয়। যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১২ হাজার জনের ওপর একটি সমীক্ষা করা হয়। সেই জরিপে যারা অংশ নেন তাদের বয়স ছিল ১–২২ বছর। তাদের কাছে বিভিন্ন বিষয় জানতে চাওয়া হয়। আর সেসব প্রশ্নের উত্তর থেকেই বিশেষজ্ঞরা এই সিদ্ধান্তে আসেন।

সন্তানের বুদ্ধি কেমন হবে, সেটা নির্ভর করে মায়ের জিনের ওপরেই। সেখানে বাবার তেমন ভূমিকা নেই। আর এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, প্রায় প্রতিটি পরিবারে মায়ের সঙ্গে সন্তান বেশি সময় থাকে। এজন্য মায়ের আচরণ, ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধির প্রভাব সন্তানের ওপর বেশি।

তবে শিশুর আইকিউ বাবা-মা দু’জনের থেকেই তার কাছে আছে। মানুষের এক্স ক্রোমজমের ওপরেই নির্ভর করছে যে কতটা বুদ্ধি তৈরি হবে।

আমি ছিলাম আইএস নেতার বাঙালি বধূ

তানিয়া জয়া

আমরা জন্ম উত্তর লন্ডনে, ১৯৮৩ সালে। বেড়ে উঠেছিলাম এক বাংলাদেশী-বাঙালি পরিবারে। আমি মনেপ্রাণে ইংরেজ হতে চাইতাম; কিন্তু পরিবার থেকে চাপ ছিল একজন ‘গুড মুসলিম গার্ল’ হয়ে ওঠার, পশ্চিমা সমাজের সঙ্গে মিশে না যাওয়ার। এই টানাপোড়েনে আমার পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাচ্ছিল। যখন নিজের বাবা-মায়ের ওপর আস্থা রাখা যায় না, তখন আর কারো কর্তৃত্বই মেনে নেওয়া কঠিন।
আমার বয়স যখন ১৭, আমরা পূর্ব লন্ডনে গিয়ে থিতু হই। সেখানে আমার নতুন নতুন বন্ধুত্ব তৈরি হয়; কিন্তু তারা সবাই ছিল রক্ষণশীল, ধার্মিক তরুণী। আমার ‘অতি পশ্চিমা’ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তারা তিরস্কার করতো। আমার এক কাজিন, আমার ওপর যে তরুণীর প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই উগ্রপন্থায় জড়িয়ে যায়। সে আমাকে খেলাফত সম্পর্কে শিক্ষা দিত। তখন আমি অনলাইনে সৌদিআরব থেকে প্রচারিত ইসলামী ফতোয়া সম্পর্কে ব্যাপক পড়াশোনা করতাম। আমার ধারণা ছিল যে, আমি ‘সত্যের সন্ধান’ করছি।

২০০৩ সালে লন্ডনে আমি ইরাক যুদ্ধবিরোধী মিছিলে যোগ দেই। তখন কিছু তরুণ আমার হাতে এক ফালি কাগজ গুঁজে দেয়। সেখানে একটি ‘মুসলিম ডেটিং’ ওয়েবসাইটের ঠিকানা লেখা ছিল। ওই সাইটে গিয়েই জন জর্জেলাসের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। সে ছিল ইসলাম ধর্মান্তরিত আমেরিকান নাগরিক। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে। একাধিক ভাষা জানে এবং দেখতে বেশ স্মার্ট। আমি তার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠি। জন আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রথম যেবার লন্ডন এলো, সেবারই আমরা বিয়ে করে ফেলি। আমি জানতাম, রক্ষণশীল পরিবার ছাড়তে হলে এটাই একমাত্র সুযোগ। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমি জনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাই এবং আরও কিছুদিনের মধ্যে পুত্র সন্তানের মা হই। ততদিনে জন আরও বেশি উগ্রপন্থার দিকে ঝুঁকছে। আর আমি নেকাব পরা ছেড়ে দিয়েছি এবং আরও বেশি স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা করছি।

২০০৬ সালে একটি ইসরাইলপন্থী লবিয়িং গ্রুপের ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত হয় জন। বিচারে জন জর্জেলাস তিন বছরের কারাদণ্ড হয়। কিন্তু আমি তখনও অর্থনৈতিকভাবে তার প্রতি নির্ভরশীল ছিলাম এবং তখনো বুঝতে পারিনি যে এক নিবর্তনমূলক বিয়ের জালে আটকা পড়েছি।

কারাগারে ভালো ব্যবহারের জন্য জন খানিকটা আগেই মুক্তি পায়। আমরা তিন সন্তানসহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রথমে মিশর এবং তারপর ইস্তাম্বুল চলে যাই। জন একবার বলেছিল বটে, সে সিরিয়া যেতে চায়। কিন্তু আমি গোঁ ধরেছিলাম যে, আমার সন্তানদের যুদ্ধ কবলিত কোনো এলাকায় নিয়ে যাব না। ইস্তাম্বুলে থাকার ব্যয় যখন আমরা বহন করতে পারছিলাম না, তখন জন ও তার যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত পরিবার আমাকে অন্য প্রস্তাব দেয়। বলে যে, তুরস্কের মধ্যেই আন্তাকিয়া চলে যাওয়া ভালো হবে, সেখানে জীবনযাত্রার ব্যয় কম। যদিও বাস্তবে আমাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সিরিয়া সীমান্তে।

দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে সর্বশেষ মধ্যরাতে যখন আমরা একটি বাসে উঠি, আমার ধারণা ছিল না আসলেই কী ঘটতে যাচ্ছে। আমি তখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্তা। বাস দেখে বরং স্বস্তি হয়েছিল যে তিন সন্তানসহ বসতে পারবো এবং ঘুমিয়ে নেওয়া যাবে। সূর্য ওঠার পর যখন ঘুম ভাঙলো, আমাদের বাস একটি সিরিয় চেকপোস্টে দাঁড়ানো। জন আমাকে সতর্ক করে দিল, যাতে কোনো নাটকীয়তা তৈরির চেষ্টা না করি।

সিরিয়ায় গিয়ে যত দ্রুত সম্ভব একটি টেলিফোন খুঁজে নিয়েছিলাম এবং জনের মাকে ফোন করে বলেছিলাম যে তার পুত্র আমাদের মিথ্যা বলেছে। ফোনের এই পাশে আমি চিৎকার করে কাঁদছিলাম এবং আমার শাশুড়িকে বলছিলাম তিনি যেন শিগগিরই এফবিআই এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই এজেন্ট কয়েক বছর ধরে জনের গতিবিধি নজরদারির দায়িত্বে ছিলেন। তিনি আমাকে পরবর্তীতে ফোনে বলেন- আমি যদি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে পারি, তাহলে আমাকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে যোগ দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করা হবে না।

সিরিয়ায় আমরা পাইপ-ওয়াটার পেতাম না। বাড়ির ওপরের ওয়াটার-ট্যাঙ্ক গোলা লেগে ফুটো হয়ে গিয়েছিল। অপুষ্টিতে ভুগছিলাম; যেমন আমি, তেমনই শিশুরা। তাদের হারিয়ে ফেলার শঙ্কা ঘিরে ধরেছিল আমাকে। এফবিআই এজেন্টকে বলে দেওয়ার জন্য জন আমাকে দোষ দিত, আমিও তাকে পাল্টা রাগ দেখাতাম ধোঁকা দিয়ে সিরিয়ায় আনার জন্য। ক্ষোভ থেকে এক পর্যায়ে আমি মুখ ঢেকে রাখা ছেড়ে দিয়েছিলাম, সেটা ছিল জনের জন্য বিব্রতকর। সহযোদ্ধারা তাকে চাপ দিত- হয় আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, না হয় পরিত্যাগ করতে হবে।

শেষ পর্যন্ত জন ‘দয়া’ দেখায়। আমাদের জন্য সিরিয়া থেকে বের হয়ে আসার ব্যবস্থা করে। যদিও সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়েছে। কারণ বের হয়ে আসার রাস্তায় হয় অবরোধ না হয় লড়াই চলছিল। জন একজন মানব পাচারকারীর হাতে আমাদের তুলে দেয়। অর্থের বিনিময়ে সে আমাদের সিরিয়া সীমান্ত পার করে দেবে।
প্রথমে আমাদের কয়েক মাইল হাঁটতে হয়েছে। তারপর কাঁটাতারের ফোকর গলিয়ে বের হতে হয়েছে। সীমান্ত পার হয়ে কোনো রকমে যখন একটি ট্রাকে উঠে শুয়ে পড়ি, তখন মাথার ওপর দিয়ে ছুটে যাচ্ছিল স্নাইপারের গুলি। কথা ছিল পাচারকারী সীমান্ত পার করে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। কিন্তু সে আমাদের একটি প্রান্তরের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। আমি হতাশ ও উদ্বিগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। এ সময় একজন দয়ালু তুর্কি আমাদের পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

জীবন ফিরে পেয়ে আমি ছিলাম খুবই কৃতজ্ঞ। আমি কেবল চেয়েছিলাম আমার সন্তানরাও জীবন ফিরে পাবে। একটি পরিপূর্ণ জীবন কাটাবে এবং বিপুলা বিশ্বের কাছে ফিরে যাবে।
সিরিয়ায় আইএসের কথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠায় জন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং পশ্চিমা তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করতে শীর্ষস্থানীয় প্রচারক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিল। তার সঙ্গে আমার আর কখনোই দেখা হয়নি। পরিবর্তীতে জেনেছিলাম যে, সিরিয়ায় সে আবার বিয়ে করেছে। গত বছর আমি জানতে পারি যে, সে মারা গেছে। খুব সম্ভবত ২০১৭ সালে, মার্কিন বোমা হামলায়।

এখন আমি টেক্সাসে থাকি। জনের পিতা-মাতার বাড়ি থেকে কয়েকটি সড়ক দূরে। আমি জানি, নাতি-নাতনীরা দাদা-দাদীর কাছাকাছি থাকা উভয় পক্ষের জন্য ভালো। আমার বর্তমান স্বামী আমার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও মনোযোগী। নিজের অর্জিত স্বাধীনতা আমি উপভোগ করছি। দৈনিক সমকাল

দ্য গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তরিত

৬০তম জন্মদিনে স্থাপন হচ্ছে ডায়ানার ভাস্কর্য

যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় রাজবধূ প্রিন্সেস ডায়ানার ৬০তম জন্মদিনে তার একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হচ্ছে লন্ডনে কেনসিংটন রাজপ্রাসাদের বাগানে। তার দুই ছেলে ডিউক অব কেমব্রিজ প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি ওই ভাস্কর্য অনুমোদন করেছেন। খবর বিবিসির।

প্রিন্সেস ডায়ানা ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট প্যারিসে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তখন তার দুই ছেলে উইলিয়াম ও হ্যারির বয়স ছিল যথাক্রমে ১৫ ও ১২ বছর। ডায়ানার মৃত্যুর ২০ বছর পর ২০১৭ সালে তার একটি ভাস্কর্য তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ডায়ানার ‘ইতিবাচক প্রভাবকে’ স্বীকৃতি দিতেই তার ওই স্থায়ী মূর্তি তৈরিতে সায় দেন দুই ছেলে উইলিয়াম ও হ্যারি। আগামী সোমবার হবে ওই দুর্ঘটনার ২৩ বছর।

কেনসিংটন রাজপ্রাসাদ সূত্র জানিয়েছে, ডায়ানার সাবেক বাসভবন কেনসিংটন প্যালেসের বাগানে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হবে। আগামী বছরের ১ জুলাই ওই বাগানের ডায়ানা স্মৃতিঝরনার কাছে মূর্তিটি স্থাপন করা হবে। ডায়ানার স্মরণে এটি হবে লন্ডন এলাকায় নির্মিত চতুর্থ স্মারক।

প্রিন্স উইলিয়াম ও হ্যারি এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের মা অনেকের জীবনকে স্পর্শ করেছিলেন। আশা করি, ভাস্কর্যটি তার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানতে কেনসিংটন প্যালেসে আসা দর্শনার্থীদের জন্য সহায়ক হবে।

পথশিশু জিনিয়া নারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া ফুলবিক্রেতা শিশু জিনিয়াকে নারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। নিখোঁজ হওয়ার সাত দিন পর সোমবার রাতে তাকে উদ্ধার করো হয়।

ডিবি রমনা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মিশু বিশ্বাস ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে জিনিয়াকে উদ্ধারের খবর নিশ্চিত করেন। তিনি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, টিএসসির প্রিয়মুখ জিনিয়াকে নারায়ণগঞ্জ থেকে একটু আগে আমরা উদ্ধার করেছি। সে সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছে। আবারও সে তার হাসিমুখ দিয়ে ক্যাম্পাস আলোকিত করবে, টিএসসির এই মাথা থেকে ওই মাথা ছুটে বেড়াবে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক গণমাধ্যমকে জানান, সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটী থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেন তারা। এ ঘটনায় লোপা তালুকদার নামে এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কারা, কী উদ্দেশ্যে জিনিয়াকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল তা আমরা জানার চেষ্টা করছি।

এর আগে ১ লা সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফুল বিক্রেতা পথশিশু জিনিয়া আক্তার টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেট থেকে হারিয়ে যায়।

২ সেপ্টেম্বর তার মা সেনুরা বেগম রাজধানীর শাহবাগ থানায় হারিয়ে গেছে মর্মে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

হুমাযাহ্‌

নীলজোসনা

স্বর্ণার মন খারাপ! শুধু মন? মেজাজ গরম! কারণ সকালে উঠেই দেখেছে কপালের ওপর প্রমাণ সাইজের একটা ব্রণ। রাগী লাল চেহারা করে আছে। তার ওপর সারা রাতের টুকরো চিন্তাগুলো, উফ!

এম্নিতে স্বর্ণা বেশ সময় সচেতন। মানে, সুযোগের অভাবে সৎ যাকে বলে। বাচ্চাদের আর প্রফেসর স্বামীকে একই সাথে বিদেয় দিতে হয় সকাল সাড়ে সাতে। তার আগে পর্যন্ত এলোখোঁপা আর রাতের কাপড়েই দৌড় চলতে থাকে। এর মধ্যে শাশুড়ির চা, বিস্কিট আর পেপারটা দিয়ে এসে বুড়ি ছোঁর মত করে নিজের কালো কফিটা করে ফেলতে পারলে ব্যাস! নয়টা পর্যন্ত নিজের কয়েকটা কাজ নিশ্চিন্তে সেরে ফেলা যাবে।

সকালে বাথরুমের সময়টা আর সাইক্লিং মেশিনে কয়েকশো প্যাডলের সময়টায় মেয়েদের গ্রুপগুলোয় কাল রাতের আড্ডাগুলো দেখে ফেলা যায়। একেকজন শশুরবাড়ির কাহিনী নিয়ে মস্ত গল্প লেখে, কেউ ধারাবাহিকও লেখে। একেকজনের আবার নিজের গ্রুপও আছে, তাতে সেসব গল্পের দানা ছাড়ানো হয়। কিছুদূর দেখতেই ‘স্বর্ণার মা’ ছোট্ট একটা বেল দেয়। ‘এতোবার বলি তোমাকে, বাব্বাহ একটু বাজিয়ে বেল দাও’। সহজ সরল মহিলা, স্বর্ণা নামটা বদলে ‘রোজীর মা’ করে দিলেও মিষ্টি একটা হাসি দিয়েছে। রোজ আঙুল একটু ছুঁইয়েই বেল দিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশ পাতাল ভাবে, দুইবারে হয়ত স্বর্ণা টের পায়। কি যন্ত্রণা!

আজকের ব্রণ ওঠার রাগটা রোজির মা’টাকেও ছুঁয়ে গেছে। দরজা খুলেই মস্ত ধমক খেয়েও সেই বোকা হাসি। চোখ ফিরিয়ে নিলো স্বর্ণা, ‘কি সব পড়লাম কালকে? কি হবে এখন?’

পরের কয়েক ঘন্টা যেন ধুনুচির তুলো। উড়তে উড়তে শেষ। শাশুড়ির নাশতা দিয়ে, রান্নার আয়োজন সেরে বারোটায় গিয়ে শাড়ির পেইজের মেসেজ দেখে ও। মহিলারা আসলেই আশ্চর্য এক সৃষ্টি! এই সকালটাই সবাইর মহা ব্যস্ত সময়, আর এই সময়টাতেই সবচেয়ে বেশি মেসেজ আসে। আর আসে গভীর রাতে। স্বর্ণার রাত করে ফোন ধরতে ভালো লাগে না, বমি পায়। ওর এই দুপুর ছাড়া উপায় নেই।

এই সময়টায় মা আসেন গুটি গুটি পায়ে। কখনও বসার ঘরের বারান্দায়, কখনও স্বর্ণার মস্ত বেতের চেয়ারের কাছেকাছে হাঁটেন। কোন কমেন্ট পড়ে স্বর্ণা হেসে উঠলে উৎসুক তাকান। হয়ত কোনোদিন মাত্র পড়ে শেষ করা কোন শাশুড়ি-বউ-ননদের ট্রিলজি শোনায় স্বর্ণা। আশ্চর্য এক গুণ আছে তাঁর, নিষ্পলক মনযোগী চোখে গল্প শুনতে ভালোবাসেন। মাঝেমাঝে উস্কেও দেন, ‘ওই যে ওইদিনের মেয়েটা, তার গল্পটা আর দিয়েছে নাকি দেখ না’! স্বর্ণা খুঁজেপেতে বের করে পড়ে শোনায়। এম্নিতে শাশুড়ি বউর আশ্চর্য সুন্দর শ্রদ্ধার একটা সম্পর্ক। তবু এইসব গল্পে স্বর্ণার চোখে পানি আসে। নিজে পায় নি বলেই হয়ত, না দেখা কোন মেয়ের কষ্ট ওকে ছুঁয়ে যায়। সাদাচুলের মহিলাটা তখন কালো চুলভর্তি মাথাটায় হাত বুলান, ‘আহা থাক। অত ভাবে না। ওরা একদিন ঠিইক বুঝবে, দেইখো’।

এই এমন করেই কালও বউয়ের পড়ে শোনানো গল্প শুনছিলেন। মাঝেমাঝে থামে স্বর্ণা, মেসেঞ্জারের গ্রুপে টুং আসে। গ্রুপের কোন চেনা ভাবির গল্পের অন্য দিক আলোচনা হয় আবার এই গ্রুপে। ‘জানেন মা, ওই যে বউটা, সে নিজেই আস্ত এক…’ বেরিয়ে আসা গালিটা গিলে রাগ ফোটায় গলায় ‘আস্ত পাজী’। শাশুড়িকে আচ্ছামত চাপের ওপর রাখে, আবার মেয়েদের গ্রুপে কাঁদুনি গায়। নীলা ভাবীর বোনের জা, সত্যি’।

এই বলতে বলতে হঠাত ভয়ের চোরা স্রোত মনে, ‘আচ্ছা মহিলার বদনাম গাইছি তো, ঠিক হচ্ছে?’ ভাবনাটা উড়িয়ে দিলেও খুট খুট মনে বেজেই যাচ্ছিলো। আসরের আজানের পর টিভিতে একটা সূরার বাংলা অনুবাদটা দেখে সে অস্বস্তিটা বাড়লো। সন্ধ্যার পর বাচ্চাদের পড়াতে পড়াতে ফোনের স্ক্রীণে হারিয়ে যেতে যেতে ফিরলো স্বর্ণা। এ তো ভারি বিপদ। কারুর পেছনে তো বদনাম করাই যাবে না, সামনেও না? আরে বাবা, ভুল শুধরে দিবো কি করে তাহলে? এই যে এত গ্রুপ, এতো গল্প আড্ডা, সবকিছুতে তাহলে দুর্গন্ধ মিশে আছে?

সেই চিন্তা রাতভর, আর তার ফলাফল বিচ্ছিরি একটা ফুসকুঁড়ি। সকাল থেকে পেটটাও যেন ফুলে আছে, কারণ আজকে আর গ্রুপ বা মেসেজে প্রাণ পাচ্ছে না স্বর্ণা।

ফোনে বড় বেশি বিরক্ত করে মেসেজের টুং, তাই ছেলের কম্পিউটারে বসলো রাতের খাবারের পর। নতমস্তকে উঠে আসতে হল ঘন্টাখানিক পর। ইস, কত বড় অন্যায় হয়ে গেছে এদ্দিন। কাউকে শুধরানোর কাজটা এতো জটিল, কে জানতো! না করা যাবে হুমাযাহ বা সামনে তিরষ্কার, না বলা যাবে লুমাযাহ বা পেছনে। চারদিকে উঁচু থামে ঘেরা, আগুন ভর্তি জায়গাটায় ফেলে দেয়া হবে এইসব মানুষকে, তাও আবার স্বর্না যাদের দেখতে পারে না, এমন সুদখোরদের সাথে। উফ, মা গো!

তাহলে? ‘এই গল্পগাছা না হয় না শুনলাম, কাউকে তো টুকটাক উপদেশও দিতাম, তার কি হবে?’ খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেল আরেক আয়াত, ঘুণাক্ষরেও কুধারণা করা যাবে না, কারুর ব্যপারে জানতে চেয়ে তার অগোচরে ঘাঁটাঘাঁটি করা যাবে না। উপদেশ দিলেও দিতে হবে সামনে, সরাসরি তাকেই, খুব নরম ভাষায়, তিরষ্কার না করেই।

আর যায় কোথায়, সমস্ত গল্প, কমেন্ট, মেসেজের গ্রুপের স্পেশাল তথ্য সব যে কেমন তেতো লাগছে এখন। তাই তো, ওই ভাবিগুলোকে সবাই সামনে সে কী আহা উঁহু করে, আর পেছনে শুধু বিষ ঢালে। না মানুষগুলো শুধরাতে পায়, না সত্যিকারের বন্ধু পায়। আহারে!

আজকের মধ্য দুপুরের হালকা অবসর সময়টা পেয়েই একে একে টিপে টিপে সবগুলো গ্রুপ ছাড়লো স্বর্ণা। শাশুড়ি রুম থেকে বেরিয়েছেন, ‘স্বর্ণা, মশারি ধুতে দিবে মনে আছে? আমাকে বলেছিলা মনে করাতে।’ গলা তুলে রোজির মা’কে কথাটা শুনিয়ে এবার আবদার করলো, ‘মা আপনার বিয়ের গল্প বলেন’। শাশুড়ি ততোক্ষণে নিজের কুশনওয়ালা মোড়ায় বসে গেছেন। আজকের গল্পগুলো সাদা, স্বচ্ছ, পরিষ্কার হবে। অনেকক্ষণের আটকে রাখা বদ্ধ নিঃশ্বাসটা বেরিয়ে এসেছে নিজেই। উফফ!

‘রোজির মা’, বেল তুমি দুইবার দাও বা তিনবার, সাথেসাথেই দিও। নইলে তো বুঝতে পারি না গো! আচ্ছা দাঁড়াও, একবার দিয়ে দেখাও তো? হ্যাঁ, এমন করে তিনবার দিও। এখন যাও। এইইই, ভাতের হাঁড়িটা নাও, ইস কি ভুলো মন রে বাবা!’ রোজির মায়ের সরলতায় এখন সহানুভূতির প্রলেপ দিতে শিখে গেছে স্বর্ণা! আজকে কি দারুণ লাগছে মাঝবয়েসি সরল মহিলাটার হাসিটাও। বন্ধ দরজার এপাশেও এখন আলো, দুটো মানুষের মনেও।

পাকিস্তানে নারী সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা, ‘অনার কিলিং’-এর অভিযোগ

পাকিস্তানে স্বামীর হাতে খুন হলেন দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের নারী সাংবাদিক। শাহিনা শাহিন নামের ওই সাংবাদিকের মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ ধারণা করছে, এটি একটি ‘অনার কিলিং’ বা কথিত সম্মান রক্ষার্থে হত্যা। নিহতের পরিবারও পুলিশের কাছে করা অভিযোগে একে অনার কিলিং দাবি করেছে। শাহিনার স্বামীকে ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান পুলিশ। এ খবর দিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা।

পাকিস্তান সাংবাদিকদের জন্য সবথেকে ভয়ংকর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৯২ সালের পর থেকে দেশটিতে অন্তত ৬১ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতায়ও দেশটি শেষের দিকে।
সাংবাদিক শাহিনা হত্যাকাণ্ডটির তদন্ত করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সিরাজ আহমাদ। তিনি জানান, আমরা অপরাধীদের ধরতে সব ধরণের চেষ্টা চালাচ্ছি।

শাহিন পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে একটি টকশো এর সঞ্চালক ছিলেন। এছাড়া একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদকও ছিলেন তিনি। তাকে তার নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর তার স্বামী তাকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান। গত বছরের নভেম্বর মাসেও পাকিস্তানের লাহোরে এক ব্যাক্তি তার সাংবাদিক স্ত্রীকে হত্যা করে। নারীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা সূচকে বিশ্বের সবথেকে ভয়াবহ দেশগুলোর একটি পাকিস্তান। আল-জাজিরা জানিয়েছে, নারীদের জন্য সবথেকে ঝুঁকিপূর্ন দেশের তালিকায় ৪ নম্বরেই রয়েছে দেশটি। পাকিস্তানের পূর্বে রয়েছে সিরিয়া, আফগানিস্তান ও ইয়েমেন।

চুলের যত্নে কফির ব্যবহার

 

কফি কীসে ব্যবহার করেন? প্রশ্ন শুনে অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই। ভাবছেন, কফি তো সবাই পান করে, আবার কীসে ব্যবহার করবো! শুধু পানীয় হিসেবেই নয়, কফি ব্যবহার করা যায় ত্বক আর চুলের যত্নেও। কফি দিয়ে তৈরি হেয়ার প্যাক নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল দ্রুত বাড়ে। বিভিন্ন কারণে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হলে কফি কাজে লাগাতে পারেন। চলুন জেনে নেয়া যাক, কফি দিয়ে কীভাবে চুলের যত্ন নেবেন-

কফি দিয়ে চুল ধোয়া
কফি দিয়ে চুল ধুলে তা চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রথমে ২ টেবিল চামচ গ্রাউন্ড কফি ও ১ কাপ পানি নিন। এবার ১ কাপ কফি তৈরি করে তা ঠান্ডা হতে দিন। মাথায় ভালো করে শ্যাম্পু করে মাথা মুছে ফেলুন এবং চুল থেকে অতিরিক্ত পানি ঝরিয়ে ফেলুন। এরপর মাথার ত্বকে এবং চুলে ঠান্ডা কফি ঢালুন। পাঁচ মিনিট ম্যাসাজ করুন।৩০ মিনিট চুল ঢেকে রাখুন। তারপর হালকা গরম পানির সাহায্যে ভালো করে চুল ধুয়ে ফেলুন এবং শুকিয়ে নিন। দ্রুত ফলাফলের জন্য সপ্তাহে ২-৩ বার এটি করতে পারেন।

কফি, নারিকেল তেল ও দই
চুলে পুষ্টি জোগায় নারিকেল তেল। এটি চুলকে শক্তিশালী করতে চুলের ফলিকলগুলোকে পুষ্ট করে। আর দইয়ে আছে ল্যাকটিক অ্যাসিড, যা মাথার ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। প্রথমে ২ টেবিল চামচ কফি পাউডার, ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল ও ৩ টেবিল চামচ দই নিন। এবার একটি পাত্রে কফি পাউডার, নারিকেল তেল ও দই নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এরপর হাতে পরিমাণমতো এই মিশ্রণটি নিয়ে তা মাথার ত্বকে এবং চুলে ভালোভাবে লাগান। এরপর এক ঘণ্টা চুল ঢেকে রাখুন। এক ঘণ্টা পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২-৩ বার করতে পারেন।

কফি স্ক্রাব
মাথার ত্বকেও প্রয়োজন পড়ে স্ক্রাবের। এটি স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য এবং আপনার চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। প্রথমে ৮ টেবিল চামচ কফি ও ১ কাপ পানি নিন। এককাপ কফি তৈরি করে তা ঠান্ডা হতে দিন। এরপর পরিমাণমতো হাতে নিয়ে পাঁচ মিনিট ধরে মাথার ত্বকে ভালোভাবে স্ক্রাব করুন। মাথা ধুয়ে চুল শুকিয়ে নিন। এটি সপ্তাহে দু’বার করুন।

 

বিফ ফিঙ্গার তৈরির সহজ রেসিপি

বিকেলের নাস্তায় ঝটপট সুস্বাদু কিছু খেতে চাইলে বেছে নিন বিফ ফিঙ্গার। ফিশ ফিঙ্গার তো খাওয়া হয়-ই, একটু ব্যতিক্রমী এই খাবার নাহয় চেখে দেখলেন! চলুন জেনে নেয়া যাক সুস্বাদু বিফ ফিঙ্গার তৈরির রেসিপি-

উপকরণ:
এককাপ মাংসের কিমা
দেড় চা চামচ আদা ও রসুনের পেস্ট
এক টেবিল চামচ গরম মসলার গুঁড়া
এক চা চামচ শুকনো মরিচের গুঁড়া
এক চা চামচ জিরা বাটা
এক টেবিল চামচ লেবুর রস
এক টেবিল চামচ পেঁয়াজ কুঁচি
স্বাদমতো লবণ
একটি ডিম
প্রয়োজনমতো ব্রেডক্রাম্ব
ভাজার জন্য তেল।

প্রণালি:
পেঁয়াজ বাদে অন্যান্য সব মসলা, লবণ ও লেবুর রসের সাথে কিমা খুব ভালোভাবে মাখিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। ১৫ মিনিট পরে পেঁয়াজ কুঁচি ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে জেনে রাখা উচিত যে, কোনো মসলা মেশাতে হাত ব্যবহার করলে মেশানোটা সবচেয়ে ভালো হয়। এবার এই মিশ্রণটা আঙুলের মতো আকৃতিতে ডো তৈরি করতে হবে।

ভাজার জন্য অন্য একটি বাটিতে ফাটানো ডিম ও আরেকটি বাটিতে ব্রেডক্রাম্ব মিশিয়ে পরপর ডোগুলো এই দুই উপাদানে মাখিয়ে ডুবো তেলে ভাজতে হবে। লালচে হয়ে গেলেই প্রস্তুত হয়ে গেল মজাদার বিফ ফিঙ্গার। সস দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

মা-মেয়েকে নির্যাতন, তদন্তে গাফিলতি হলে ব্যবস্থা: হাইকোর্ট

কক্সবাজারে গরু চুরির অভিযোগে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের পাঁচজনকে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করার বিষয়ে নজর রাখছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, নির্যাতনের বিষয়ে তদন্তে গাফিলতি হলে হস্তক্ষেপ করবেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। মা-মেয়েসহ নির্যাতিতদের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট জেসমিন সুলতানা। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী এএম জামিউল হক ফয়সাল।

এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় ‘গরু চোর’ আখ্যা দিয়ে মা-মেয়েকে নির্দয়ভাবে পেটায় দুর্বৃত্তরা। পরে কোমরে রশি বেঁধে মা-মেয়েসহ তিনজনকে প্রকাশ্য সড়কে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে। একপর্যায়ে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পুলিশকে খবর দিয়ে বিপদাপন্ন মা-মেয়ে ও ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।

গত শুক্রবার রাতেই হারবাং বিন্দাবনখীল লাল ব্রিজ মাহবুবুল হক নামের একজন বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় একটি গরু চুরির মামলা করেন। এ মামলায় চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে গত শনিবার বিকালেই তাদের কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। -মানবজমিন

বিয়ের ৩ বছর পর গায়েহলুদ, কনের মোটরসাইকেল র‌্যালির ছবি ভাইরাল

বিয়ের তিন বছর পর গায়েহলুদের দিনে বাইক চালিয়ে শহরে শোডাউন করে নেট জগতে হইচই ফেলে দিয়েছেন যশোরের মেয়ে ফারহানা আফরোজ ড্রিমি। শহর জুড়ে বন্ধুবান্ধব ও সাথিদের নিয়ে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করার ১১ দিন পর ব্যতিক্রমী এ আয়োজনটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়।

তার এমন উদ্যোগে প্রশংসার পাশাপাশি কেউ কেউ বিরূপ মন্তব্য করেছেন ফেসবুকে। তবে অসম্মানজনক বক্তব্যের প্রতিবাদে ফারহানার মা মাহমুদা হাসান আইসিটি আইনে কোতোয়ালি থানায় মামলা করছেন বলে জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার রাতে মাহমুদা হাসান জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাককে জানান, ২০১৭ সালে নিজের পছন্দে তার মেয়ে পাবনার কাশিনাথপুরের হাসনাইন রাফিকে বিয়ে করে। এ বছরের ৩০ জুন এই দম্পতির ঘর আলো করে একটি পুত্রসন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু পারিবারিকভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়নি। তবে এতদিন এমনকি সন্তান হবার পরে কেন গায়েহলুদের অনুষ্ঠান—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ছেলের বাবা মাসখানেক আগে তাকে ফোন করে তার বৌমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে নেওয়ার কথা বলেন। ১৪ আগস্ট অনুষ্ঠানের তারিখ ঠিক হয়। আর তার মেয়ে গায়েহলুদের অনুষ্ঠান ছাড়া কোনো আনুষ্ঠানিকতা করবে না বলে জানায়। ফারহানা এটাও তার মাকে জানায় গায়েহলুদের অনুষ্ঠান তার ভীষণ শখের। এটা করতেই হবে। আর তাই বিয়ের তিন বছর পর মা হবারও পর মেয়ের শখ পূরণ করতে এমন অভিনব আয়োজন।

নারী ক্রিকেট : বেতন, ম্যাচ ফি বাড়ছে রুমানাদের

মুমিনুল হকরা আগামী মাসেই শ্রীলঙ্কা সফরে যাবেন। খেলবেন তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। করোনাকালে তামিম-মুশফিকদের মতোই বিসিবির ব্যবস্থাপনায় দেশের বিভিন্ন ভেন্যুতে অনুশীলন করছেন নারী ক্রিকেটাররা। যদিও তাদের সামনে কোনো লক্ষ্য নেই। ঘরোয়া, আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্টের সূচি নেই রুমানা আহমেদ, জাহানারা আলমদের জন্য। এমনকি কোনো ক্যাম্প আয়োজনেরও খবর নেই।

তবে করোনাকালে নারী ক্রিকেটারদের স্বস্তির খবর আছে। নিকট ভবিষ্যতেই সালমা-রুমানাদের বেতন, ম্যাচ ফি বাড়াবে বিসিবি। উইমেন্স উইং থেকে এ সম্পর্কিত প্রস্তাবনা পাঠানো হবে বোর্ড সভায়। বিসিবির অনুমোদন পেলেই তা কার্যকর হবে।

জানা গেছে, নারী ক্রিকেটারদের বেতন ১০-২০ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করবে উইমেন্স উইং। ওয়ানডে, টি-২০’র ম্যাচ ফিও কয়েক গুণ বাড়ানো হবে।

জানতে চাইলে উইমেন্স উইংয়ের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল গতকাল বলেছেন, ‘আমরা ওদের বেতন বাড়াবো, ম্যাচ ফিও বাড়ানো হবে। একেবারে অনেক হবে না। অল্প অল্প করে বাড়ানো হবে। বেতন ১০-২০ ভাগ বাড়ানো হবে। ম্যাচ ফি কয়েক গুণ বাড়বে।’ পরবর্তী বোর্ড সভায় এটি অনুমোদন হতে পারে।

তামিম-মুমিনুলদের তুলনায় নারী ক্রিকেটারদের বেতন, ম্যাচ ফির ফারাক অনেক। বর্তমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার তুলনায় সেটি অনেকটাই অপ্রতুল। তাই বাড়ানোর চিন্তা করছে উইমেন্স উইং। বর্তমানে চার ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে জাতীয় দলের নারী ক্রিকেটারদের। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৫০ হাজার, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ৪০ হাজার, ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ৩০ হাজার ও ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ২০ হাজার করে প্রতি মাসে বেতন পান নারী ক্রিকেটাররা। কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আছেন ২০ ক্রিকেটার।

আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ১০০ ডলার ও টি-২০ ৭৫ ডলার ম্যাচ ফি পেয়ে থাকেন জাহানারা আলমরা। বাড়ানোর পর ওয়ানডেতে ৪০০ ডলার হতে পারে ম্যাচ ফি। আর টি-২০ তে ৩০০ ডলার।

পারিশ্রমিকের এই পরিবর্তন নারী ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণিত করবে বলেই মনে করেন ওয়ানডে দলের অধিনায়ক রুমানা আহমেদ। গতকাল তিনি বলেছেন, ‘এটা অবশ্যই আমাদের অনুপ্রাণিত করবে। এমনিতে আমাদের সুযোগ-সুবিধা খারাপ না। যা দিচ্ছে বিসিবি। আরো ভালো করতে, আরো বেশি সুযোগ-সুবিধা দরকার। বেতন, ম্যাচ ফি বাড়ানো হয় যদি, তাহলে এটা ভালো পদক্ষেপ। পারিশ্রমিক বাড়ালে সবাই আত্মবিশ্বাস পাবে। এটা আমাদের ভালো খেলতে উৎসাহ দিবে।’

যারা একাধিক বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহী তাদেরকে বলছি…

এ এফ আখি

ইদানিং একাধিক বিয়ে নিয়ে অনেক নসিহত হচ্ছে। যারা একাধিক বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহী তাদেরকে বলছি-

1) আপনি আরেকটা বিয়ে করতে গেলে কুমারী খুজবেন না তো?

2)আপনার মেয়েকে আরেকটা বউ আছে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দিবেন তো?

3)আপনার বাবাকে আরেকটা বিয়ে করবেন তো?

4) বিধবা,তালাক প্রাপ্ত, দুই বাচ্চার মা,আপনাদের চেয়ে বয়সে বড় এমন নারীদের বিয়ে করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন তারপর নারীদের দোষ ধরবেন স্বামীকে বিয়ে করতে দিতে চায় না ।আজব!

5) মনে রাখবেন একাধিক বিয়ে ইসলামে বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনুমোদিত একটা বিষয়।ফরজ নয়।তাই ফরজ গুলো নিয়ে জনমত তৈরী করুন।

বিয়ে নিয়ে ফেসবুকে এত নসিহতের দরকার নাই। কারণ চার বিয়ের ব্যাপারে আমার জানামতে কোন পুরুষের দ্বিমত নাই তো নসিহত কাদের জন্য?

যখন আপনারা নজির স্থাপন করতে পারবেন অধিক বয়স ,বিধবা আর তালাক প্রাপ্ত নারীদের হুর হুর বিয়ে করবেন তখন দেখবেন অনেক মেয়েই তা মেনে নিবে।

আরেকটা বিষয় যদি কিছু করতে চান তো –

সমাজে কোটিপতিদের তালিকা করুন, অসহায় নারীদের খুজে বের করুন তারপর তাদেরকে একাধিক বিয়ে করতে বাধ্য করুন। যারা পতিতাদের কাছে যায় তাদের খুজে বের করুন এবং একেকটা পতিতার সাথে তাদের বিয়ে দিয়ে দিন।

যে ছেলেরা আথির্ক সামর্থ না থাকার জন্য বিয়ে করতে পারছে না তাদের সাহায্য করুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুন অন্তত কিছু মেয়ের তো গতি হবে।

যদি বলেন এ গুলো তো রাষ্ট্র করবে , তাহলে বলবো এবার তাহলে সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্ঠা করুন এটা ফরজ। আর দ্বিতীয় বিয়ে সুন্নত।

সামাজিক মাধ্যমে নারী ও শিশুদের ছবিতে কারা খারাপ মন্তব্য করে? কেন করে?

বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কন্যার ছবিতে খারাপ মন্তব্যকারীদের পুলিশ খুঁজতে শুরু করেছে। অরুচিকর মন্তব্যকারীদের খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে সাকিব সাকিব আল হাসানের স্ত্রী, উম্মে আহমেদ শিশির নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, পাবলিক ফিগার হিসাবে এসব বাজে মন্তব্য তারা পাত্তা দিচ্ছেন না, বরং এই ব্যাপারটিকে বড় করে আলোচনায় নিয়ে আসাটা পছন্দ হয়নি তাদের।

কিন্তু তারপরেও এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা চলছে। তবে ফেসবুকে নারী ও শিশুদের ছবিতে খারাপ মন্তব্যের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। তারকা বা জনপ্রিয় ব্যক্তিদের বাইরেও ফেসবুকে এরকম আপত্তিকর মন্তব্যের শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষও।

সম্প্রতি কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব) সিনহার সঙ্গী শিপ্রা দেবনাথের ছবি বা অভিনেত্রী রাফিয়াথ রশীদ মিথিলার ছবিতেও অনেককে অরুচিকর বা খারাপ মন্তব্য করতে দেখা গেছে।

কিন্তু কারো ছবিতে কেন অরুচিকর মন্তব্য করেন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা? এর পেছনে কি মনোভাব কাজ করে?
সাইবার হামলার শিকার বেশি নারীরা

যারা কারো ছবি বা স্ট্যাটাসে অরুচিকর মন্তব্য করেন, তাদের ভেতর কয়েকটি বিষয় কাজ করে বলে বলছেন সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞরা।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. মেখলা সরকার বলছেন, যারা এই ধরণের মন্তব্য করে, তাদের মধ্যে একটা মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা থাকে। মহিলাদের নিয়ে কথা বলতে তাদের ভালোই লাগে।

”তাদের মধ্যে আত্মসম্মানের সমস্যা থাকে। যেভাবে তারা বড় হয়েছেন, সেখানে সমস্যা থাকে, এটা যে একটা নেগেটিভ জিনিস, সেটা সে বুঝতে পারে না।”

তিনি মনে করেন, এ ধরণের মানুষজন সাধারণত অন্যদের কাছে মনোযোগ পায় না। ফলে এভাবে সামাজিক মাধ্যমে তারা অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে। সেটা নেতিবাচক হলেও সে মানুষের মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করে।

তবে যারা এরকম মন্তব্য করেন, তারাও আবার অনেক সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীর কাছ থেকে লাইক কমেন্টসও পান, সেটাও তাদের আবার একাজে উৎসাহিত করে।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. মেখলা সরকার বলছেন, যারা এরকম মন্তব্য করছেন, তারাও কিন্তু অনেকের কাছ থেকে লাইক, কমেন্ট পান। পজিটিভ-নেগেটিভ, যেকোনো ধরণের কমেন্টই তাকে উৎসাহিত করে।

”এটার সাথে তার শিক্ষা বা চাকরি বা অর্থনৈতিক অবস্থানের সম্পর্ক নেই। দেখা যাবে, সমাজের ভালো অবস্থানের একজন হয়তো এ ধরণের আচরণ করছে, কিন্তু কম শিক্ষিত একজন হয়তো সেটা করছে না। আসলে প্রকৃত শিক্ষা তো এখানে হচ্ছে না।” তিনি বলছেন।

শিশুদের জন্য মোবাইলের ব্যবহার নিরাপদ করতে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সিস্টেম চালু করার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সমাজবিজ্ঞানী সাদেকা হালিম বলেছেন, এক্ষেত্রে অসচেতনতা, মানসিক বিকৃতি এবং কট্টর পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ কাজ করে।

তার মতে, একজন নারী তিনি যে বয়সেই হন না কেন তাকে সমাজে এখনও যৌনবস্তু হিসেবে বিচার করা হয়।

এছাড়া তারকাদের জীবনের প্রতি ঈর্ষাবোধ ও হীনমন্যতা এই অরুচিকর মন্তব্যগুলোয় প্রতিফলিত হয় বলে তিনি মনে করেন।

“সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহজেই যা ইচ্ছা লেখা যায়। যেটা অন্য কোথাও সম্ভব না। যারা এ ধরণের মন্তব্য করে তারা নারীকে মানুষ হিসেবে দেখে না, নারী যে বয়সের হোক সে ভোগের বস্তু। মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি তাদের কোন সম্মানবোধ নেই,” বলেন সাদেকা হালিম।

কোন শ্রেণীর মানুষ এ ধরণের কটু মন্তব্য বেশি করে?

বাংলাদেশের একজন সাইবার বিশেষজ্ঞ জেনিফার আলম বলছেন, আসলে সব ধরণের শ্রেণীর মানুষই এ ধরণের মন্তব্য করে। তবে সবচেয়ে বেশি করে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষজন।

”এজন্য তাদের মধ্যে হতাশা ও বিনোদনের অভাব একটা প্রধান কারণ। এছাড়া আমাদের এখানে সাধারণ সৌজন্য বোধের অনেক অভাব রয়েছে। আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে মানুষের সাথে ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে, তেমনি ইন্টারনেটেও বিচরণের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে। কিন্তু এই ব্যাপারে আমাদের দেশের মানুষের সেই সচেতনতা তৈরি হওয়ার আগেই অনেকের হাতে ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি চলে গেছে।

”ফলে অনেকের মধ্যে যে হতাশার ব্যাপার থাকে, দিন শেষে সে সেটা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিচ্ছে। সেই হতাশার বহিঃপ্রকাশ এসব কটু মন্তব্য। যাকে নিয়ে মন্তব্য করা হচ্ছে, সে যে কষ্ট পাচ্ছে, এটা যে একধরণের সাইবার বুলিং, সেই সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। তারা মনে করেন, ফোন-ইন্টারনেট থাকলেই তারা যে কাউকে যেকোনো কিছু লিখে দিতে পারেন, ম্যাসেজ করতে পারেন। ” বলছেন জেনিফার আলম।
সাইবার অপরাধ ঠেকানোর মূল ওষুধ সচেতনতা বাড়ানো।

খারাপ মন্তব্য করার পেছনে কি যুক্তি দেখান মন্তব্যকারীরা
ফেসবুক বা সামাজিক মাধ্যমে খারাপ মন্তব্য করার কারণে বিভিন্ন সময় অনেককে আটক করেছে বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজমের সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

গ্রেপ্তারকৃতরা এরকম কর্মকাণ্ডের পেছনে কি যুক্তি দেন, জিজ্ঞেস করেছিলাম ইউনিটের প্রধান আ ফ ম আল কিবরিয়ার কাছে।

তিনি বলছেন, ”নিজেদের প্রচারণা বাড়ানোর জন্য কেউ কেউ এটা করে, পেজের ভিউ বাড়ানোর জন্য। আরেক ধরণের মানুষ মনে করে, এটা একটা আলোচনার টপিক হলো। আমি একটা কমেন্ট করলাম, তাতে আমাকে গালিগালাজ করলেও অনেক মানুষ আমার প্রোফাইলে ঢুকবে। হয়তো আমার ফলোয়ার বাড়লো, ফ্রেন্ড বাড়ল। এসব উদ্দেশ্যে অনেকে করে।”

”আরেক গ্রুপ আছে এমন এমনি করে। তাদের মধ্যে কিছু স্যাডিস্ট থাকে, মেন্টালি ডিস্টার্বড থাকে, তাদের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয়, কিছুটা বিকৃতি থাকে।”

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, অনেকে ভাবেন, ফেসবুক বা সামাজিক মাধ্যমে এরকম কিছু মন্তব্য করলে তার কিছু হবে না। অনেক সময় তারা ফেক আইডি ব্যবহার করে এসব মন্তব্য করেন। তারা ভাবেন, তাদের কেউ ধরতে পারবে না বা পরিচয় জানতে পারবে না।

যদিও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর তাদের সেই ভুল ভেঙ্গে যায়।
সাইবার বিশেষজ্ঞ এবং পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরকম বুলিংয়ের শিকার হওয়ার পরেও অনেকে আইনি সহায়তা নিতে চান না।

সাইবার বিশেষজ্ঞ এবং পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরকম বুলিংয়ের শিকার হওয়ার পরেও অনেকে আইনি সহায়তা নিতে চান না।

সাইবার বুলিংয়ের আইনি প্রতিকার

সাইবার বিশেষজ্ঞ এবং পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরকম বুলিংয়ের শিকার হওয়ার পরেও অনেকে আইনি সহায়তা নিতে চান না।

ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এরকম ব্যক্তিরা শাস্তির মুখোমুখিও হন না। তবে আইনি পদক্ষেপ নেয়ায় অনেককে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে।

সাইবার বিশেষজ্ঞ জেনিফার আলম বলছেন, সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়েও আমাদের মানুষ যে কাজটি সহজে করতে চান না, সেটি হলো আইনি প্রতিকার চাওয়া বা আইনি পদক্ষেপ নেয়া।

”আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ণ সক্ষমতা আছে যেকোনো ধরণের সাইবার বুলিং বা সাইবার হ্যারাজমেন্ট ট্র্যাক করার এবং তাদের আইনের আওতায় আনা। কিন্তু যিনি ভিকটিম, তিনি যদি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেন, তাহলে তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছু করতে পারবে না। তাই হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ করার ব্যাপারটা নিশ্চিত করা জরুরি।” তিনি বলছেন।

সাইবার ক্রাইম বিভাগের প্রধান আ ফ ম আল কিবরিয়া বলছেন, ‘ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী কিছু কিছু ধারা আছে কগনিজেবল অর্থাৎ পুলিশ চাইলে মামলা নিতে পারবে এবং গ্রেপ্তার করতে পারবে। আর কিছু ধারা আছে নন-কগনিজেবল, অর্থাৎ এখানে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল মামলা করতে হবে। আদালতের নির্দেশে পুলিশ তদন্ত করবে এবং ব্যবস্থা নেবে। ”

”ফেসবুকে গালি দেয়া বা কটু মন্তব্য করার বিষয়গুলো আইন অনুযায়ী নন-কগনিজেবল অপরাধের মধ্যে পড়েছে। ফলে ভিকটিমকে ট্রাইব্যুনাল বা আদালতে মামলা করতে হয়। অথবা থানায় জিডি করতে পারেন। কিন্তু আপনাকে অবশ্যই প্রতিকার চাইতে হবে।” তিনি বলছেন।

তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, যে কেউ সাইবার অপরাধ, হয়রানি বা বুলিং শিকার হলে অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নেবেন।

”আপনি থানায় জিডি করুন, সেটার তদন্ত করবে পুলিশ। অথবা চাইলে আপনি কোর্টেও মামলা করতে পারেন।” তিনি বলছেন- বিবিসি

ফ্রিজ কি করোনাভাইরাসের নিরাপদ আশ্রয়স্থল

গত বছরের শেষভাগে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সারাবিশ্বে চার লাখের বেশি মানুষ মারা গেলেও এই ভাইরাসের উৎস, চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য, গতিপ্রকৃতি বা বিবর্তনের ধরণ সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি বিজ্ঞানীরা।

এই ভাইরাস কোন ধরণের সমতলে কতক্ষণ বেঁচে থাকে, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে কত দ্রুত ছড়ায়, কোন ধরণের আবহাওয়া বা তাপমাত্রায় এর প্রকোপের কতটা তারতম্য হয়, এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা একেকবার একেক মত দিয়েছেন, আবার নতুন গবেষণা প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে দফায় দফায় বিশেষজ্ঞদের মত পরিবর্তন করার ঘটনাও ঘটেছে।

শুরুতে একসময় মানুষের ধারণা ছিল যে উচ্চ তাপমাত্রায় এই ভাইরাস বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারে না, তবে এই দাবির কোনো প্রমাণ বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি শেষ পর্যন্ত। সেরকম আরেকটি ধারণা হলো, ফ্রিজের ভেতরে অন্যান্য স্থানের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি সময় ভাইরাসটি বেঁচে থাকতে পারে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত অন্যান্য মতবাদের মত এই বিষয়টি নিয়েও শতভাগ নিশ্চিত হতে পারেনি বিজ্ঞানীরা।

ফ্রিজে কি করোনাভাইরাস বেশি সময় ধরে টিকে থাকে?

এর আগে যেসব করোনাভাইরাস পরিবেশে ছিল, সেগুলোর কয়েকটি প্রজাতি হিমাঙ্কের নীচে তাপমাত্রায় পুরোপুরি কার্যকরভাবে বেঁচে না থাকলেও স্থিতিশীল অবস্থায় টিকে থাকে বলে প্রমাণ পেয়েছিল বিজ্ঞানীরা।

২০১০ সালে আমেরিকান সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলোজি’র এক গবেষণায় উঠে আসে যে সার্স করোনাভাইরাস (যেটি অনেকটা কোভিড-১৯ ভাইরাসের মত) ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় (প্রায় ৪.৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) যেরকম আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা থাকে, ওই পরিবেশে টিকে থাকতে পারে।

সাধারণত গৃহস্থালিতে যেসব রেফ্রিজারেটর ব্যবহার করা হয়, সেগুলোতে এই তাপমাত্রা থাকে।

গবেষণায় উঠে আসে, তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আর্দ্রতা ২০ শতাংশের নীচে হলে সার্স করোনাভাইরাস প্রায় ২৮ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে, যেখানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর আর্দ্রতা ৮০ শতাংশ হলে ভাইরাসটির স্থায়িত্বকাল থাকে ৬ ঘণ্টার মত।

অনেক বিশেষজ্ঞ এই প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে আর পরবর্তী গবেষষণার জন্য অপেক্ষা না করে ফ্রিজ ব্যবহারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।

তারা বলছেন, কাছাকাছি প্রজাতির একটি করোনাভাইরাস যেহেতু ফ্রিজে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে, কাজেই নভেল করোনাভাইরাসেরও একই বৈশিষ্ট্য থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্যান ফ্র্যান্সিসকোর গ্ল্যাডস্টোন ইনস্টিটিউটের রিসার্চ সাইন্টিস্ট ও ভাইরোলজিস্ট ড. ওয়ার্নার গ্রিন গত এপ্রিলে মার্কিন সংবাদ সংস্থা এনবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন করোনাভাইরাস চরিত্রগতভাবে একটি ‘আঠালো’ ভাইরাস।

ওই সাক্ষাৎকারে ড. গ্রিন বলেছিলেন, ‘এই ভাইরাস (সার্স) বিভিন্ন সমতলে আশ্চর্জজনকভাবে লম্বা সময় টিকে থাকে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও ভাইরোলজিস্ট নজরুল ইসলাম বলেন, নভেল করোনাভাইরাস ফ্রিজে কতদিন বেঁচে থাকতে পারে সেসম্পর্ক না জানা গেলেও ফ্রিজের আবহাওয়ায় অন্য জায়গার তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি সময় বাঁচতে পারে বলে ধারণা করা যায়।

তিনি বলেন, ‘এটি যেই ধরণের ভাইরাস, তা সাধারণত ফ্রিজের পরিবেশে বেশি সময় বাঁচতে পারার কথা। কিন্তু সেখানে ঠিক কতদিন বাঁচতে পারবে, এ ধরণের কোনো গবেষণা এখনো নেই।’

তবে সার্স করোনাভাইরাস নিয়ে করা গবেষণার ভিত্তিতে নভেল করোনাভাইরাসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা তৈরি করতে চান না বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।

এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার এবিসি রেডিওকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি চিফ মেডিক্যাল অফিসার মাইকেল কিড বলেন নভেল করোনাভাইরাস ফ্রিজে টিকে থাকতে পারে কিনা আর থাকলেও কতক্ষণ টিকে থাকতে পারে, তা গবেষণার আগে বলা সম্ভব না।

তিনি বলেন, ‘সার্স করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা হলেও নভেল করোনাভাইরাস সম্পর্কে তেমন কোনো গবেষণা হয়নি। কাজেই আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না যে এই ভাইরাসটির বৈশিষ্ট্য সার্স করোনাভাইরাসের মত কি না।’ তাই তিনি ফ্রিজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন।

ফ্রিজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী ধরণের সতর্কতা নেবেন?

এবিসি রেডিওকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক মাইকেল কিড মন্তব্য করেছিলেন যে ফ্রিজে রাখার পরে তো বটেই, ফ্রিজে রাখার আগেও সব খাদ্যপণ্য অথবা পণ্যের প্যাকেট অন্তত একবার জীবাণুমুক্ত করে নেয়া জরুরি।

‘বাইরে থেকে বাজার ঘরে এনে ফ্রিজে রাখার আগে জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি বারবার হাত ধোয়ার বিষয়টিও মনে রাখতে হবে সবাইকে,’ বলেন মাইকেল কিড।

সার্স করোনাভাইরাসের মত, ফ্রিজে রাখা খাদ্যপণ্যের গায়ে বা প্যাকেটে নভেল করোনাভাইরাস লেগে থাকলে তা সপ্তাহ চারেক বেঁচে থাকতে পারে বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তাই বাজার করার পর পণ্য ফ্রিজে রাখার আগে ও ফ্রিজ থেকে বের করার পর তা জীবাণমুক্ত করার ব্যাপারে জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভাইরোলজিস্ট নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ফ্রিজে রাখা খাবারের প্যাকেট বের করার পর প্যাকেটটি জীবাণুনাশক মেশানো কাপড় দিয়ে ভালো করে মুছে নেয়া প্রয়োজন।’

ফ্রিজে রাখা শাকসবজি রান্না করার আগে কিছুক্ষণ সাবান মিশ্রিত পানিতে রেখে ধুয়ে নেয়ার উপদেশ দেন তিনি। তবে মাছ বা মাংসের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয় বলে মাছ-মাংস যেই প্যাকেটে বা পাত্রে রাখা হবে, সেটিকে জীবাণুমুক্ত করে নেয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘এছাড়া যারা ফ্রিজ থেকে বের করা মাছ-মাংস কাটাকাটির দায়িত্বে থাকবেন, তাদের আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।’

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফ্রিজ থেকে খাবার বের করা এবং রান্নার কাজ করার সময় বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস তৈরি করার উপদেশ দেন তিনি।

‘ফ্রিজ থেকে বের করা মাছ-মাংস নিয়ে কাজ করবেন যারা, তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং নিয়মিত ভিত্তিতে হাত ধোয়ার মত বিষয়গুলো মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। যেই কাজে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে, সেরকম প্রত্যেকটি ছোট ছোট কাজ শেষে মনে করে হাত ধোয়া জরুরি।’

সূত্র : বিবিসি

সাকিবকন্যাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যকারীরা আসছে আইনের আওতায়

বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের শিশুকন্যাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন।

শুক্রবার (২১ আগস্ট) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইমের এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণা দেয়।

সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন জানায়, বাংলাদেশের গর্ব সাকিব আল হাসানের কন্যার ছবি নিয়ে কিছু বিকৃত মানসিকতার লোক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে এবং অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

এসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিষ্টাচার বজায় রাখার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সূর্যমুখী ফুলের বাগানে কানে লাল ফুল গুঁজে পোস্ট করা ফুলের মতো সুন্দর একটি ছবির নিচে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন কয়েকজন বিকৃত মানসিকতার মানুষ। বিষয়টি সাধারণ মানুষকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়। চারদিক থেকে আসতে থাকে প্রতিবাদ। ইতোমধ্যে কয়েকজনের পরিচয়ও শনাক্ত হয়েছে।

পাইনাপেল ফ্রাইড রাইস তৈরির সহজ রেসিপি

ফ্রাইড রাইস অনেকের কাছে পছন্দের একটি খাবার। বিশেষ করে শিশুরা এটি খেতে দারুণ পছন্দ করেন। ফ্রাইড রাইস রান্নায় বৈচিত্র আনতে চাইলে রাঁধতে পারেন পাইনাপেল ফ্রাইড রাইস। চলুন জেনে নেয়া যাক রেসিপি-

উপকরণ:
পোলাও বা বাসমতির চাল দিয়ে রান্না ভাত ২ কাপ
পাকা-আনারস কিউব করে কাটা আধা কাপ
রসুনকুচি ১ টেবিল চামচ
পেঁয়াজকুচি ২ টেবিল চামচ
কাঁচামরিচ কুচি স্বাদমতো
তেল ৩/৪ টেবিল চামচ
ফিশ সস ১/২ টেবিল চামচ
সয়া সস ১/২ টেবিল চামচ
চিংড়ি মাছ ৮/১০টি
গাজর কিউব করে কাটা ২ টেবিল চামচ (সিদ্ধ করা)
মটরশুটি ২ টেবিল চামচ (সিদ্ধ করা)
গোলমরিচ গুঁড়া আধা চা চামচ
কিশমিশ ১ টেবিল চামচ
কাজুবাদাম ৭/৮টি (ভাজা)
কারি পাউডার ১ চা চামচ (ইচ্ছা)
পেঁয়াজপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ
ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ
ডিম ১টি
চিনি ১ চা চামচ

আম যেভাবে রেখে বছরজুড়ে খাওয়া যাবে

আমের চেয়ে মজার ফল হয়ত আর নেই। আর আমাদের দেশের আমের স্বাদ বিশ্বের সব ফলকেই হার মানাবে।
সবার প্রিয় আম বছরের মাত্র কিছু দিনই পাওয়া যায়। এইতো এবারের মতো শেষ হয়ে এসেছে আমের মৌসুম।

তবে কি পুরো বছর আম না খেয়েই কেটে যাবে? একদমই না। যদি সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন, তবে প্রায় বছরজুড়ে আম খেতে পারবেন। আর রাখতে চাইলে এখনই সময়, ক’দিন পরে ইচ্ছা থাকলেও আম কিন্তু থাকবে না।

সংরক্ষণ করবেন যেভাবে
• পাকা আমের খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরো করে জিপলক ব্যাগে রাখুন
• একটার ওপর আরেকটা রাখবেন না
• ভেতরের বাতাস বের করে আমের প্যাকেটগুলো ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন
• স্বাদ ও পুষ্টিগুণ অটুট থাকবে বহু দিন
• আম ব্লেন্ড করে আইস ট্রে-তে বরফ জমিয়ে জিপলক ব্যাগে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন
• বছরজুড়ে খেতে পারবেন এই মজার আম।

সংরক্ষণ করা আম দিয়ে বছরের যেকোনো সময় আমের মিল্কশেক কিংবা দুধ-আম খেতে পারেন। ফ্রিজারে আম এক বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।

 

ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ঐতিহাসিক মনোনয়ন পেলেন কমলা হ্যারিস

যুক্তরাষ্ট্রের আসছে নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দেশটির প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে ঐতিহাসিক এক মনোনয়ন পেয়েছেন কমলা হ্যারিস। তিনি বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত কৃষ্ণাঙ্গ ও ভারতীয় মিশ্রণের সিনেটর।

বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) বিবিসি জানিয়েছে, কমলা হ্যারিস জো বাইডেনের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটের ভাইরাস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনিত হয়েছেন। এর আগের দিন দলটির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনিত হন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

কমলা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন আরও ইতিহাস সৃষ্টি হবে। প্রথম কোনো নারী দেশটির দ্বিতীয় শীর্ষ পদে যাবেন। আবার কমলা হ্যারিস নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কোনো অশ্বেতাঙ্গ নারীর অভিষেক ঘটবে।

গত ১৭ আগস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে দলীয় কনভেনশন ডেকেছিল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। চার দিনব্যাপী এই কনভেনশনের তৃতীয় দিন রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে কমলা হ্যারিসকে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঘোষণা করেন ডেমোক্র্যাটরা। তবে এবার করোনা ভাইরাসের কারণে অনলাইনে ভোট দিয়ে তার প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেন দলের প্রতিনিধিরা।

চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়ে কমলা হ্যারিস কনভেনশনে বলেন, রিপাবলিকান নেতা ‘আমাদের ট্র্যাজেডিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে পরিণত করেছেন’। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ইঙ্গিত করে উইলমিংটনের হলরুমে তিনি বলেছেন, আমরা একটি প্রতিচ্ছবিতে এসে গেছি।

এছাড়া ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর এবং বড় একটি দল থেকে প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পাওয়া কৃষ্ণঙ্গ রানিং মেট কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘নেতৃত্বের ব্যর্থতা’ ধরিয়ে দিয়েছেন প্রথম দিনই।

এর আগের দিন রাতে জো বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঘোষণা করে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। জো বাইডেন এর আগেও দুই বার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। ১৯৯৮ ও ২০০৮ সালের সেই দুই লড়াইয়ে তিনি না পারলেও এবার তৃতীয়বারে এসে সফল হয়েছেন।

আসছে ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস জুটি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে লড়াই করবেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সঙ্গে।

চুল ও ত্বকের যত্নে আমলকী

সুস্বাস্থ্যেও জন্য ভেষজ গুণসম্পন্ন আমলকীর জুড়ি নেই। এ কথা সবাই কমবেশি জানেন। তবে রূপচর্চায় এই সস্তাদরের দেশি ফলটির ব্যবহার সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। ত্বক ও চুলে আমলকী ব্যবহার বিভিন্ন সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে। রূপচর্চায় আমলকী ব্যবহারের কিছু টিপস-

ব্রণের দাগ দূর করতে
প্রাকৃতিক উপায়ে ব্রণের দাগ দূর করতে সহায়তা করে আমলকী। আমলকীর রস মুখে মেখে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে নিতে হবে ঊষ্ণ পানিতে। অনুভূতিপ্রবণ ত্বক হলে আমলকীর রসের সঙ্গে মিশিয়ে নিন সামান্য পানি। ভালো ফলের জন্য ব্যবহার করতে হবে নিয়মিত।

মরা ত্বক দূর করতে
স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পাওে আমলকীর রস। এতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বক সজীব ও টানটান করতে সহায়তা করে। এক চামচ আমলা পাউডার গরম পানিতে মিশিয়ে তৈরি করা পেস্টে মুখ স্ক্রাব করতে হবে। স্ক্রাব করার পাঁচ মিনিট পর মুখ ধুয়ে নিলেই হলো। এই পেস্টের সঙ্গে সামান্য হলুদ মিশিয়ে নেয়া যেতে পারে।

চুল পড়া রোধে
চুল পড়া বন্ধ করতে আমলকী বেশ কার্যকর। প্রয়োজনীয় পরিমাণ শুকনো আমলকী পানিতে নিয়ে গরম করম করতে হবে। আমলকী ভালোভাবে সেদ্ধ হলে তা চটকে পেস্ট করে নিতে হবে। এই পেস্ট চুলের গোড়া ও পুরো চুলে লাগিয়ে কিছু সময় রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করতে হবে এই প্যাক। ঔজ্জ্বল্য বাড়ানোর জন্য শুধু আমলকীর রসও ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে আমলকীর রস চুলে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে ধুয়ে নিলেই হলো।

আমলকীর তেল তৈরির ঘরোয়া পদ্ধতি
তেল তৈরির জন্য প্রয়োজন টাটকা আমলকী ও নারকেল তেল। প্রথমে এক কাপ আমলকী ভালোভাবে ধুয়ে বিচি ছাড়িয়ে নিয়ে মিক্সারে গুঁড়া করে নিতে হবে। এতে পানি ব্যবহার করা যাবে না। এরপর একটি পাত্রে এক কাপ নারকেল তেল চুলায় গরম করতে দিতে হবে। তেল গরম হলে এতে দিয়ে দিতে হবে আমলকীর গুড়াঁ।

আমলকীর গুঁড়া মিশ্রিত নারকেল তেল ফুটে ওঠার ১০-১৫ মিনিট পর তেল চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে কাঁচের জারে রাখতে হবে। এই তেল চুলের গোড়া ও চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর চুল ধুয়ে নিতে হবে ভালো ব্র্যান্ডের মাইল্ড শ্যাম্পুর সাহায্যে।

গর্ভনিরোধক বড়ির ক্ষমতা ‘কমিয়ে দিতে পারে’ অ্যান্টিবায়োটিক

হরমোনাল গর্ভনিরোধক ওষুধ ব্যবহার করা নারীরা সাধারণ সমস্যায় অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন বলে সতর্ক করেছেন ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা।

বিশেষজ্ঞরা ৭৪ হাজার ৬২৩ নারীর ওষুধ সেবনের ডেটা বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ওষুধ গর্ভনিরোধক বড়ির কার্যক্ষমতা পুরোপুরি কমিয়ে দিতে পারে।

গবেষণায় অংশ নেয়া ৪৬ জন নারী গর্ভনিরোধক বড়ি সেবনের পরেও গর্ভধারণ করেন, তারা সবাই অ্যান্টিবায়োটিক নিচ্ছিলেন।

ফলাফলে গবেষকেরা লিখেছেন, ‘হরমোনাল গর্ভনিরোধকের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের যে একটা যোগসূত্র আছে, সেটি এই গবেষণায় দেখা গেল।’

‘হরমোনাল গর্ভনিরোধক ওষুধ সেবনকারী নারীদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।’

লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক স্টিফেন ইভান্স বলছেন, ‘আমার মনে হচ্ছে রোগীরা ওষুধের নির্দেশিকা ঠিকমতো পড়ে দেখেন না অথবা চিকিৎসক ঠিকমতো সতর্ক করছেন না।’

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে সাধারণ ওষুধ সেবনকারী নারীদের তুলনায় অ্যান্টিবায়োটিক সেবনকারী নারীদের (যারা গর্ভনিরোধক ওষুধ নিচ্ছেন) গর্ভধারণের শঙ্কা ৭ গুণ বেশি।

পার্ট-টাইম চাকরির সুযোগ পাবেন যেখানে

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতির প্রসারে বদলে গেছে চাকরির বাজারও। ফলে স্থায়ী (ফুল-টাইম) চাকরির বাইরে বেড়েছে অস্থায়ীভাবে (পার্ট-টাইম) কাজ করার সুযোগও।

মূলত শিক্ষার্থীরাই এসব পার্ট-টাইম চাকরি করে থাকে। পড়াশোনার পাশাপাশি আয়ের সুযোগ হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোও ছোটোখাটো চাকরির জন্য ফুল-টাইম কর্মী নিয়োগ না দিয়ে শিক্ষার্থীদের বাছাই করে থাকে। চাকরি খোঁজার ওয়েবসাইটগুলোতেই পাবেন পার্ট-টাইম চাকরির বিজ্ঞপ্তি বা খবরাখবর।

আসুন জেনে নিই, কোন কোন কাজে পার্ট-টাইম চাকরির সুযোগ মেলে।

সেলস অ্যাসিস্ট্যান্ট
সুপারশপ থেকে শুরু করে ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতে সেলস অ্যাসিস্ট্যান্ট বা বিক্রয়কর্মীর চাকরির সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন মৌসুমে এ পদের কর্মীর চাহিদা বাড়ে। তখন প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি লোক নিয়োগ দিয়ে থাকে। তাদের কাজ হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা বিক্রি বাড়ানো। ভালো যোগাযোগ দক্ষতা ও সুন্দর বাচিক ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিকে বাছাই

কপিরাইটার
বিভিন্ন অ্যাড ফার্ম, মার্কেটিং ও পিআর এজেন্সি, গবেষণা প্রতিষ্ঠানে জুনিয়র কপিরাইটার হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এর জন্য আগ্রহীকে ভাষাগত দক্ষতা ও কম্পিউটারের কারিগরী জ্ঞান থাকতে হবে।

কল সেন্টার অ্যাসিস্ট্যান্ট
এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাস্টমারদের অনলাইন সেবা দিয়ে থাকে। তাদের এ কাজ করে দেয় মূলত কল সেন্টারগুলো। সেখানে অনেক জনবলের দরকার হয়। যোগাযোগ দক্ষতা, পরিশ্রম করার মানসিকতা ও ধৈর্যশক্তি থাকলে কল সেন্টারগুলোতে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে পার্ট-টাইম চাকরি করতে পারবেন।

ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রেইনার
আপনি হয়তো একাধিক ভাষায় দক্ষ, সেটিকেই কাজে লাগিয়ে ভালো আয় করতে পারেন। দেশে অবস্থান করা অনেক বিদেশি নাগরিক বাংলা ভাষা শিখতে চায়; বাংলার ওপর ভাষাগত দক্ষতা থাকলে সে সুযোগ আপনি নিতে পারেন। এ ছাড়া ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ, জার্মান, জাপানিজ কিংবা চীনা- এসব বিদেশি ভাষার শেখার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে দেশে এখন। ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শুরু করে বিদেশি কোম্পানিগুলোতে ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রেইনার বা গাইড হিসেবে কাজ করতে পারেন।

টিউটর
বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং থেকে শুরু করে চাকরির জন্য পড়াশোনা বা কোচিং- এসব জায়গায় ক্লাস নিতে পারেন। বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারেন। এতে আপনার একাডেমিক রেজাল্ট এবং অন্যান্য সাফল্য সহায়তা করবে।

ওয়েটার
রেস্টুরেন্ট ও কফি শপগুলোতে ওয়েটার হিসেবে পার্ট-টাইম চাকরি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কাস্টমারদের খাবার পরিবেশনায় মনোযোগ ও মানসিক চাপ সামলানোর ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন।

ট্যুর গাইড
দেশের মানুষের মধ্যে এখন ঘোরাঘুরির প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আপনি যদি ঘুরতে পছন্দ করেন তাহলে অন্যদের ট্যুর গাইড হিসেবে কাজ করতে পারেন। দেশি বিদেশি ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন এর জন্য।

ডেলিভারি ম্যান
এখন প্রায়ই প্রতিষ্ঠান অনলাইন কেনাকাটার সার্ভিস দিয়ে থাকে। কাস্টমারদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে লাগে ডেলিভারি বয়ের। এ ক্ষেত্রে আপনার সাইকেল বা মোটরবাইক চালানোর দক্ষতা থাকতে হবে।

আইইডিসিআর’র নতুন পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর নতুন পরিচালক হিসেবে অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে একই প্রতিষ্ঠানে মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভাইরোলজি ) হিসেবে কর্মরত আছেন। ডা. তাহমিনা শিরীন অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার স্থলাভিষিক্ত হবেন।

বুধবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের পার-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব সারমিন সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীনের বদলি/পদায়নকৃত আদেশ ২০শে আগস্ট থেকে কার্যকর করা হবে। বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার/স্বাস্থ্য সার্ভিসের এই কর্মকর্তাকে পুনরায় আদেশ না দেয়া পর্যন্ত তার বদলি/পদায়নকৃত কর্মস্থলে থাকবেন।

তরুণ উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়া সহজ করতে হবে: সায়মা হক

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করার পর যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএসএস এবং নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শ্রম অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। দেশের শ্রমবাজার, দারিদ্র্য, খাদ্য নিরাপত্তা, জেন্ডার ও নারীর ক্ষমতায়ন, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড, তরুণ জনগোষ্ঠী ও অভিবাসন নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। ড. বিদিশা সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও নীতি কৌশল—যেমন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ইত্যাদি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সহায়তা করেছেন।

মহামারির এই সময়ে বিশ্বব্যাপী অনেক নেতিবাচক দিক থাকলেও নতুন নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াতে বিকল্প পণ্যের সন্ধান করছেন। এ সময় ব্যক্তি সুরক্ষা পণ্য ও অনলাইন ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এতে সম্পৃক্ত হয়েছে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী। সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে এসব কথা বলেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা।

তিনি বলেন, করোনাকালে টিকে থাকতে বিকল্প ব্যবসার সন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে অনেক ব্যবসায়ী যিনি চামড়ার ব্যগ তৈরি করতেন; তিনি এখন মাস্ক তৈরি করছেন। কেউ কেউ ব্যক্তি সুরক্ষার পণ্য পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য সুরক্ষা পণ্য তৈরিতে বিনিয়োগ করছেন। এখানে বড় উদ্যোক্তারা যেমন এগিয়ে এসেছেন; একই সঙ্গে ছোট ছোট তরুণ উদ্যোক্তাও জড়িত হয়ে পড়েছেন।

মহামারির এই সময়ে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি কিভাবে পুনরুদ্ধার হবে জানতে চাইলে সায়মা হক বিদিশা বলেন, ১৬ কোটি মানুষের দেশে বিশাল বাজার। মানুষের আয়ও ভালো। আর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুনরা প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে এগিয়ে আসছেন। তাঁদের ধরে রাখতে সরকার নীতি সহায়তাসহ স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে পাশে দাঁড়াতে পারে।

সম্প্রতি মাস্ক, পিপিইসহ অন্যান্য সুরক্ষা পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এ ক্ষেত্রে তরুণদের এই বিনিয়োগ কতটা টেকসই হবে এ সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে গুণগত মানের অনেক সমস্যা হচ্ছে। ফলে অনেক সময় ভোক্তাদের প্রতারিত হতে হচ্ছে। এ ধরনের ব্যবসায় ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করতে দরকার নীতিমালা।

এর পরও করোনাকালীন চূড়ান্ত সময়ের (এপ্রিল-জুলাই) চেয়ে বর্তমানে ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় আগের চেয়ে আস্থা ফিরতে শুরু করেছে উল্লেখ করে সায়মা বলেন, বিশেষ করে ওষুধ ব্যবসায় চাহিদা বেড়েছে। এ সময় ভিটামিন ও মাল্টিভিটামিন অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে।

নতুন করে গড়ে ওঠা ব্যবসাকে টেকসই করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন, মান সনদ, মানদণ্ড নিশ্চিত করতে পারে এমন একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে জরুরি একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা যেতে পারে।

নতুন উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাজারে টিকে থাকতে হলে পণ্যের মান নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে কিছুটা দাম কম নিয়ে হলেও সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায় ঠিকে থাকতে হলে বাজারে সুনামের বিকল্প নেই বলেও তিনি মনে করেন।

করোনা-পরবর্তী সময়ে বিকল্প পণ্যের চাহিদা সম্পর্কে তিনি বলেন, পণ্যের চাহিদা কিছুটা কমলেও এর ব্যবহার অনেকাংশেই থেকে যাবে। একসময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেউ ব্যবহার না করলেও এখন অবস্থা পাল্টেছে। মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ বাজার তৈরি হয়েছে।

করোনাকালে তরুণরা নতুন নতুন পণ্য নিয়ে অনলাইনের দিকে ঝুঁকেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে অনলাইনের প্রসার ঘটেছে। শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে ভোক্তা নিত্যদিনের বাজার করছে অনলাইনে। এ ক্ষেত্রে বড় একটি অংশজুড়ে জায়গা করে নিয়েছে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর বিকল্প পরিষেবার মধ্যে ‘ডেবিট ও ক্রেডিট’ কার্ডের বিল পরিশোধ, খাওয়াদাওয়ার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ—সবই হচ্ছে অনলাইনে। বিশেষ করে দেশের কুরিয়ার সার্ভিসগুলো মহামারির এই সময়ে বড় ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

অর্থনীতির চাকাকে বেগবান করতে বড় শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র খাতগুলোকে প্রণোদনার আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে নীতিমালা সহজ করতে হবে। এ ছাড়া তরুণ উদ্যোক্তা ও শ্রমিকদের স্বার্থও নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য ব্যবসার উন্নয়নে ব্যাকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকের সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলে স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র-মাঝারিদের ঋণ পাওয়া কঠিন হবে বলেও তিনি মনে করেন। কালের কণ্ঠ

মেয়ে হয়ে চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তার হওয়া সহজ ছিল না: শিমুর

বিরূপ পরিস্থিতিতেও থেমে থাকেননি দেশের নারী উদ্যোক্তার। যাঁরা নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার ভূমিকায় নিজেদের দাঁড় করিয়েছেন। এমন একজন নবীন উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের গল্প আজ তুলে ধরা হচ্ছে।

মাদারীপুরে জন্ম শাহানা আক্তার শিমুর। ছোটবেলায় মাকে হারিয়ে বড় হয় নানির স্নেহে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ্য ন্যাশনাল কলেজ অফ হোম ইকোনমিকস থেকে শিশু বন্ধন ও পারিবারিক সম্পর্ক বিষয়ে অর্নাস ও মাষ্টার্স শেষ করে শাহানা। বর্তমানে স্বামী সন্তান নিয়ে বাস করেন রাজধানীর মিরপুরে।

ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চাকরি করেন বেসরকারি এনজিও তে। নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ার লক্ষ্যে দীর্ঘ ১১ বছরের চাকরি ছেড়ে নতুন সিদ্ধান্তে পৌছেন শাহানা। মাত্র ৪ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে শুরু করেন উদ্যোক্তা জার্নী। ব্লক ও বাটিকের প্রতি ছিলো তার প্রচুর আগ্রহ, তাই নিজের উদ্যোগ শিমু’স কালেকশনে যুক্ত করেন ব্লক ও বাটিক। কাপড়রে মান নিয়ে নিজের মধ্যে সংশয় থাকায় ২০১৫ সালে নিজস্ব সোর্সের কাপড় ডিজাইন শুরু করেন শাহানা।

ই-কমার্স উদ্যোক্তা হওয়ার কারণ জানতে চাইলে শাহানা বলেন, ছোটবেলা বাবা-মাকে হারিয়ে বুঝতে পারি মায়ের অভাব, তাই নিজের একমাত্র পুত্র সন্তানকে সময় দেওয়া এবং স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করা ছিল ই-কমার্স ক্যারিয়ারের অন্যতম কারণ। এখন ঘরে বসে পরিবারের দেখাশোনা, সন্তানকে দেখা শোনা এবং যেকোন জায়গায় বসে ব্যবসায় সময় দিতে পারছি রাতদিন।

ব্লক ও বাটিকের প্রতি ভালোবাসা এবং ব্লক শিল্পে নিজের অবদান রাখতে শাহানা শুরু করে শিমু’স কালেকশন। নিজস্ব টেইলারিং সার্ভিস ও ডিজাইনের মাধ্যমে প্রস্তুত করেন প্রতিটি প্রোডাক্ট। গত ছয় বছর যাবৎ সুনামের সাথে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবী এবং বেবি প্রোডাক্ট বিক্রি করছেন শাহানা। দেশের পাশাপাশি ২০১৬ সাল থেকে বিদেশে যাচ্ছে শিমু’স কালেকশনের পণ্য। ব্লক ইন্ড্রাস্টিতে শিমু’স কালেকশনকে সুপরিচিত ও বিশ্বস্ত ব্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত করা শাহানার স্বপ্ন।

উদ্যোক্তা জীবনের চ্যালেঞ্জ গুলো জানতে চাইলে তিনি জানান, মেয়ে হয়ে চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তার হওয়া মসৃণ ছিল না। প্রতিটি পদে পদে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করত হয়েছে। পারিবারিক বাধা, পর্যাপ্ত অর্থ সংকট, ই-কমার্স নলেজ, মানসম্পন্ন প্রোডাক্ট সোর্সিং, বিদেশি পণ্যের সাথে দেশি পণ্যের প্রতিযোগীতায় টিকে থাকা ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সামনে আগাতে হয়েছে।

উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) এর অবদান স্বীকার করে শাহানা বলেন, দেশি পণ্যের উদ্যোক্তাদের জন্য ঢাল স্বরূপ উই। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। উইয়ের সাথে আমার পথচলা প্রায় একবছর। বাংলা ভাষায় ই-কমার্স জ্ঞান অর্জনের সেরা মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আমাদের চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবেলা করতেও দারুণ ভাবে ভূমিকা রাখছে। উইয়ের মাধ্যমে ই-কমার্স ট্রেনিং, নেটওয়ার্কিং ডেভেলেপ ও বিক্রি করতে পারছি, শুধু মাত্র সময় ইনভেস্ট করে। আমি কৃতজ্ঞ উই এর প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপু এবং ই-ক্যাব প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও উইয়ের এডভাইজর রাজিব আহমেদ স্যার এর কাছে, যারা আমাদের প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ ও সুবিধা নিয়ে জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

 

বিশ্বের শীর্ষ নারী উদ্যোক্তার তালিকায় মালিহা কাদির

সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ নারী স্টার্ট আপ ফাউন্ডার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ‘সহজ’-এর ফাউন্ডার ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মালিহা এম কাদির। বিজনেস-ফাইন্যান্স বিষয়ে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ওয়েবসাইট বিজনেস ফাইন্যান্সিং ইউকে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নারী ফাউন্ডারদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে।

সেই তালিকায় অ্যান্ট ফিন্যান্সিয়াল, গ্র্যাব, উইল্যাব-এর মতো বিখ্যাত এশিয়ান কম্পানির ফাউন্ডাররাও রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে শীর্ষ নারী ফাউন্ডার হিসেবে এককভাবে এই স্বীকৃতি পেয়েছেন সহজ-এর ফাউন্ডার ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মালিহা কাদির।

২০১৪ সালে দেশের ট্রাভেল ও টিকেটিং ইন্ডাস্ট্রিকে আরো গোছালো করতে মাত্র ৩০ জন কর্মী নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম ডিজিটালাইজড টিকেটিং সেবা প্রদান প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করা ‘সহজ’ এখন ৩৫০ জনের অধিক কর্মীর এক বিশাল শক্তিশালী পরিবার। দেশীয় অনলাইন প্লাটফর্ম হিসেবে নানামুখী সেবা নিয়ে সহজ ব্যবহারকারীদের জীবনকে করছে আরো সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। সব থেকে বেশি সেবা নিয়ে সহজ এখন বাংলাদেশের সব থেকে দ্রুত বর্ধমান স্টার্ট আপ। টিকেটিং প্রসেসকে ডিজিটালাইজড করার পর সহজ অনলাইন ফুড সার্ভিস, রাইড শেয়ারিং ও লজিস্টিক সেবা যুক্ত করেছে তাদের প্লাটফর্মে। ধীরে ধীরে সহজ হয়ে উঠছে দেশের শীর্ষস্থানীয় সুপার অ্যাপ; এক অ্যাপেই যেখানে পাওয়া যাচ্ছে অনেক সেবা।

কভিড-১৯ মহামারির সময়েও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে সহজ যুক্ত করেছে গ্রোসারি, মেডিসিন ডেলিভারি ও ই হেলথ (ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ) সেবা। এমনকি মহামারির এই সময়ে সরকারের সঙ্গে একাত্ম হয়ে সহজ কাজ করেছে ‘করোনা ট্রেসার অ্যাপ’ এর মতো চ্যালেঞ্জিং টেকনোলজিক্যাল অ্যাপ তৈরিতে। শুরু থেকেই সহজের লক্ষ্য একটিই- টেকনোলজি ব্যবহার করে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবন আরেকটু সহজ ও আরামদায়ক করা; যে চেষ্টা সামনেও অব্যাহত থাকবে।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের স্টার্ট আপ ইকো সিস্টেমে সব থেকে বেশি পরিমাণের ফান্ডিং পেয়েছে সহজ। বিভিন্ন ইউরোপিয়ান ও এশিয়ান বিনিয়োগকারিদের কাছ থেকে বিনিয়োগ পেয়েছে সহজ।

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ করা মালিহা কাদিরের আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথ কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। বাংলাদেশে ফিরে আসার আগে মালিহা কাদির প্রায় এক যুগ আমেরিকা ও সিংগাপুরে মরগান স্ট্যানলি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, নোকিয়া এবং ভিস্টাপ্রিন্টের মতো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্বনামধন্য ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং ও টেকনোলজি বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন

তালেবানের সঙ্গে দর কষাকষি করা নারী কর্মকর্তার ওপর জঙ্গি হামলা

তালেবানের সঙ্গে দর কষাকষি করা সরকারের এক নারী কর্মকর্তার ওপর জঙ্গি হামলা হয়েছে। বন্দুকধারী জঙ্গিরা শুক্রবার রাতে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে আহত হলেও বেঁচে গেছেন তিনি। এ খবর দিয়েছে সাউথ এশিয়ান মনিটর।

আফগান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই নারীর নাম ফাউজিয়া কুফি। ৪৫ বছর বয়স্ক এই নারী একজন সাবেক এমপি ও বিখ্যাত মানবাধিকার কর্মী। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় পার্শ্ববর্তী পারওয়ান প্রদেশ থেকে যখন কাবুলে ফিরছিলেন তখন রাজধানীর কাছে একটি বাজার এলাকায় ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গিরা তার গাড়ির উপর হামলা করে। তবে তারা তালেবান সদস্য কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তালেবানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সংঘাতের রাজনৈতিক নিস্পত্তির জন্য গঠিত ২১ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় টিমের প্রধান মোহাম্মদ মাসুম স্তানেকজাই।

তিনি এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে টুইট করেছেন। এতে তিনি বলেন, কুফি সামান্য আহত হয়েছেন তবে তিনি ভালই আছেন। কেউ এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি এই ঘটনাকে কাপুরুষের কাজ বলে অভিহিত করেছেন।

নতুন রূপে মিশেল ওবামা

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন রূপে ফিরে এলেন সাবেক ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা। সোমবার তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করলেন কড়া ভাষায়। মার্কিনিদের প্রতি আহ্বান জানালেন, গত ৪ বছর ক্ষমতার মেয়াদে যে বিশৃংখলা সৃষ্টি করেছেন ট্রাম্প তার ইতি ঘটাতে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনকে ভোট দিতে। ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনের প্রথম রাতে আবেগঘন বক্তব্য রাখেন তিনি। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি। সেখানে মিশেল ওবামা বলেন, ট্রাম্পের হাতে প্রচুর সময় ছিল। এ সময়ে তিনি প্রমাণ করতে পারতেন যে, তিনি প্রেসিডেন্সির দায়িত্ব পালন করতে পারেন। কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারি, অর্থনৈতিক টালমাটাল অবস্থা এবং বর্ণবাদী অবিচারের এই মুহূর্তে দেশ যখন কাঁপছে- তখন তিনি ব্যর্থ।

এ সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভুল প্রেসিডেন্ট বা ‘রং প্রেসিডেন্ট’ বলে আখ্যায়িত করেন। এদিন ডেমোক্রেটদের কনভেনশনে সবার দৃষ্টি ছিল মিশেল ওবামার দিকে। তিনি তার স্বামী, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মতোই বাগ্মী। তিনি বলেন, যখনই আমরা হোয়াইট হাউজের নেতৃত্বের দিকে তাকাই, শান্তনার জন্য তাকাই, অবিচল প্রস্তুতির জন্য তাকাই, তার পরিবর্তে আমরা দেখতে পাই বিশৃংখলা, বিভাজন, সহমর্মিতার পুরো অভাব। আমাদের জন্য যার প্রয়োজন, তিনি সেই ব্যক্তি হতে পারেন নি। তিনি দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, যদি আপনারা মনে করেন পরিস্থিতি এর চেয়ে খারাপ হবে না, তবে আমাকে বিশ্বাস করুন। আমি বলছি, পরিস্থিতি খারাপ হবে, যদি আপনারা এই নির্বাচনে পরিবর্তন না আনেন। যদি আমরা এই বিশৃংখল অবস্থার অবসান আশা করি, তাহলে জো বাইডেনকে ভোট দিতে হবে। এর ওপর নির্ভর করে আমাদের জীবন।

সোমবার অনাকাঙ্খিতভাবে অনলাইনে ডেমোক্রেটদের এই কনভেনশন শুরু হয়। এতে জো বাইডেনের প্রতি ডেমোক্রেটরা ঐক্য প্রকাশ করেন। ৭৭ বছর বয়সী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে যখন মনোনয়ন দেয়া নিয়ে এই কনভেনশন চলছিল, তখন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প করোনা ভাইরাসের ভয়কে উপেক্ষা করে উইসকনসিন এবং প্রতিবেশি মিনেসোটায় প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। উইসকনসিনে ট্রাম্প কনভেনশনের মডারেটর অভিনেত্রী ইভা লঙ্গোরিয়া তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, গত চারটি বছর আমরা গণতন্ত্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। এ বছরও আমরা তা অক্ষুন্ন রাখবো।

ওদিকে ডেমোক্রেটদের কনভেনশনে পরে বক্তব্য রাখেন ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের। এসব বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা বক্তব্যে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন এটি। আমাদের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত হুমকিতে। ট্রাম্পকে বাদ দিয়ে জো বাইডেনকে নির্বাচিত করা এখন চরমভাবে অত্যাবশ্যক।

শখের দ্বিতীয় বিয়ে

 

চলতি বছরের শুরুতেই মিডিয়া পাড়ায় গুঞ্জন ওঠে গোপনে বিয়ে করেছেন জনপ্রিয় মডেল-অভিনেত্রী আনিকা কবির শখ। কিন্তু বরাবরই বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন এই অভিনেত্রী।

তবে এবার জানা গেল ঘটনার সত্যতা। চলতি বছর ১২ মে ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ে করেছেন শখ। বর রহমান জন। বাড়ি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার বলিয়াদি গ্রামে। এক সময় টুকটাক মডেলিং করেছেন, এখন পেশায় ব্যবসায়ী। দু’জনে সংসার পেতেছেন উত্তরার একটি বাসায়।

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে স্বামী জনের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি বলিয়াদি গ্রামে বেড়াতে গিয়েছেন শখ। জানা যায়, শখ বর্তমানে শ্বশুরবাড়ি বলিয়াদি গ্রামে আছেন। করোনার প্রকোপ কমলে খুব শিগগিরই ঢাকায় ঘটা করে তাদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে। তবে বিয়ের প্রসঙ্গে জানতে শখের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি অভিনেতা নিলয় আলমগীরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন শখ। দুই বছরের মাথায় সেই বিয়ে ভেঙে যায়।

বিলে পড়ে ছিল নারীর বিচ্ছিন্ন মাথা ও শরীর

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার রাঙামাটিয়া বিলে পড়ে ছিল এক নারীর বিচ্ছিন্ন মাথা ও শরীর। মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে বিচ্ছিন্ন লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

লাশ উদ্ধার হওয়া ওই নারীর নাম মোসা. শ্যামলী ওরফে কাদনি (৪৫)। তিনি একই উপজেলার ঘাইবাড়ি গ্রামের মৃত এন্তাজ আলীর মেয়ে। প্রায় ২০ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর থেকে শ্যামলী বাবার বাড়িতেই থাকতেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাঙামাটিয়া বিলে ঘাস কাটার উদ্দেশ্যে গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন শ্যামলী। এরপর আর বাড়িতে ফেরেননি। স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাঁকে পাননি। আজ সকালে বিলে তাঁর মাথা বিচ্ছিন্ন লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পরিবারকে খবর দেন।

ভোলাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শ্যামলীকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর দেহ ও মাথা আলাদা জায়গায় পড়ে ছিল। এ ঘটনায় কারা জড়িত, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

পর্বতারোহী রত্নাকে গাড়িচাপা দেয়া ঘাতক গ্রেফতার

পর্বতারোহী রেশমা নাহার রত্নাকে চাপা দেয়া মাইক্রোবাসটি জব্দ করেছে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ। এ সময় ঘাতক চালককেও গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর ইব্রাহীমপুর থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়। তবে গ্রেফতারের স্থান এখনো জানায়নি পুলিশ।

শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সী জাগো নিউজকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানানো হবে। তবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, দুর্ঘটনার সময় সেই গাড়ি চালাচ্ছিল।

শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোবারক হোসেন ও রেশমার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, দুপুরে আটকের পর ওই যুবককে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ আগস্ট রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকার চন্দ্রিমা উদ্যান সংলগ্ন লেক রোডে সাইক্লিং করার সময় গাড়ির ধাক্কায় মারা যান তরুণ অভিযাত্রী রেশমা নাহার রত্না।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের উচ্চাভিলাষী মঙ্গল অভিযানের নেতৃত্বে যে নারী

যদি সবকিছু ঠিকঠাক চলে এ সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাম যুক্ত হবে বিশ্বের হাতে গোনা ক’টি দেশের তালিকায়। এই তালিকায় আছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপ আর ভারতের মতো কিছু দেশ, যারা মঙ্গলগ্রহে সফল মহাকাশ অভিযান পাঠাতে পেরেছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতও এ সপ্তাহে মঙ্গলগ্রহে অভিযান চালাতে তাদের স্যাটেলাইট পাঠাবে। এই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘হোপ মিশন।’

মঙ্গল গ্রহ, যেখানে একসময় পানি ছিল বলে ধারণা করা হয়, তা কীভাবে আজকের ধূলিধুসর নিস্প্রাণ লাল গ্রহে পরিণত হলো, সেটি জানার জন্য বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালানো হবে এই মিশনের লক্ষ্য।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো একটি ক্ষুদ্র উপসাগরীয় দেশের জন্য এ হবে এক অভাবনীয় সাফল্য। আর এই সাফল্যের পেছনের রূপকার এক নারী। তার নাম সারাহ আল-আমিরি।

মঙ্গল অভিযানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাম শুনে যেমন সবাই অবাক, তার চেয়েও অবাক করা ঘটনা একটি আরব দেশে একজন নারীর এরকম একটি মহাকাশ অভিযানে নেতৃত্ব দেয়ার ঘটনা।

সারাহ আল-আমিরি ‘হোপ মিশনের’ বৈজ্ঞানিক দলের প্রধান। একই সঙ্গে তিনি দেশটির এডভান্সড সায়েন্স বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী।

এই নবীন বিজ্ঞানী এরই মধ্যে আরব বিশ্বের নারীদের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। ‌‘হোপ মিশন’ পৃথিবী ছেড়ে যখন রওনা হতে চলেছে মঙ্গল অভিমুখে, তখন একই সঙ্গে সবার নজর তার দিকেও।

কে এই সারাহ আল-আমিরি?
১৯৮৭ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে তার জন্ম। বয়স মাত্র ৩২। কিন্তু মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন একেবারে ছোটবেলা থেকে।

বিবিসির আরবী বিভাগকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বর্ণনা করেছেন তার শৈশবের সেই স্বপ্নের কথা। তখন তার বয়স ছিল মাত্র নয় বছর।

সারাহ আল আমিরি মঙ্গল অভিযান সম্পর্কে ব্রিফিং দিচ্ছেন ২০১৫ সালে দুবাইয়ের প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে
“আমার স্বপ্ন ছিল মহাকাশ থেকে আমি পৃথিবীকে দেখবো। কিন্তু আপনাকে সব সময় শুনতে হতো এটা অসম্ভব। বিশেষ করে আপনি যদি এমন একটা দেশে থাকেন, যে দেশটা একেবারেই নতুন‍।”

“আমি যখন বলতাম আমি মহাকাশ নিয়ে কাজ করতে চাই, তখন লোকে ভাবতো আমি বুঝি কোন কল্পজগতে বাস করি,” বলছিলেন তিনি।

সারাহ আল-আমিরি পড়াশোনা করেছেন কম্পিউটার সায়েন্সে, আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব শারজাহতে। তার বরাবরই আগ্রহ ছিল এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার। কিন্তু তখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোন মহাকাশ কর্মসূচীই ছিল না।

পড়াশোনা শেষে তিনি যোগ দেন এমিরেটস ইনস্টিটিউশন ফর এডভান্সড সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে। সেখানে তিনি কাজ করেছেন দুবাইস্যাট-১ এবং দুবাইস্যাট-২ প্রকল্পে। ইউএই‌’র পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন এরপর। ২০১৬ সালে তাকে এমিরেটস সায়েন্স কাউন্সিলের প্রধান করা হয়।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের মঙ্গল অভিযানের শুরু থেকে এর সঙ্গে জড়িত তিনি। এখন এই মিশনের বৈজ্ঞানিক দলের প্রধান। ২০১৭ সালে তাকে একই সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এডভান্সড সায়েন্স বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী করা হয়।

সংযুক্ত আরব আমিরাত কেন মঙ্গল অভিযান চালাচ্ছে

সংযুক্ত আরব আমিরাতের মহাকাশ অভিযানের কোন অভিজ্ঞতাই নেই। এক্ষেত্রে তারা একেবারেই নতুন।

তারা এমন এক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়েছে, যেটা এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারত বা চীনের মতো বড় বড় দেশ নিতে পেরেছে।

তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত দেখাতে চাইছে, তাদের দেশের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এমন বড় চ্যালেঞ্জ নেয়ার ক্ষমতা তাদের আছে।

এই মহাকাশযান তৈরিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সময় লেগেছে সাড়ে ছয় বছর। আরও অনেক উপসাগরীয় দেশের মতোই সংযুক্ত আরব আমিরাতও এখন তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে। তাদের লক্ষ্য একটি ভবিষ্যতমুখী জ্ঞান-নির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলা। এই মহাকাশ প্রকল্প সেই লক্ষ্যে্ই নেয়া।

তবে দেশটির যেহেতু মহাকাশ অভিযানের কোন পূর্ব-অভিজ্ঞতা নেই, তাই এই কাজে তাদের প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞরা। এভাবে মা্ত্র ছয় বছরের মধ্যে তারা অত্যাধুনিক একটি স্যাটেলাইট তৈরি করতে পেরেছে।

কীভাবে এটা সম্ভব হলো
এই প্রকল্প যখন গ্রহণ করা হয় তখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার প্রকল্পের টিমকে বলেছিল যে তারা কোন একটা বিদেশী কোম্পানি থেকে এই স্পেসক্রাফট বা মহাকাশযান কিনতে পারবে না। তাদের নিজেদেরকেই এটি তৈরি করতে হবে।

একারণে প্রজেক্ট টিমকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পার্টনারশিপে যেতে হয়েছিল প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য।

যুক্তরাষ্ট্র এবং আমিরাতের প্রকৌশলীরা এজন্য একসঙ্গে কাজ করেছেন। স্যাটেলাইটটি তৈরির বেশিরভাগ কাজ করা হয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডোর ‘ল্যাবরেটরি ফর এটমোসফিয়ারিক এন্ড স্পেস ফিজিক্সে‌।’ তবে দুবাইর ‘মোহাম্মদ বিন-রশিদ স্পেস সেন্টারেও’ উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডোর সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার ব্রেট ল্যান্ডিন মনে করেন, আমিরাতের বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীরা এই কাজের মধ্য দিয়ে যে অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান অর্জন করেছে, তার ফলে এরকম আরেকটি অভিযান চালানোর জন্য তারা এখন বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।

‍“কিভাবে সাইকেল চালাতে হয় কাউকে তা বুঝিয়ে বলা আর সত্যি সত্যি সাইকেল চালিয়ে দেখার মধ্যে কিন্তু অনেক তফাৎ। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি সাইকেল না চালাচ্ছেন, আপনি আসলে জানেন না কাজটা কেমন। মহাকাশযান তৈরির কাজটাও সেরকমই। একটা মহাকাশযানে কিভাবে জ্বালানি ভরতে হয়, সেই প্রক্রিয়া আমি আপনাকে বলে দিতে পারি। কিন্তু আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত না একটি এসকেপ স্যুট পরে খুবই বিপদজনক ৮০০ কেজি রকেট জ্বালানি ট্যাংক থেকে মহাকাশযানে ভরছেন, ততক্ষণ আপনি বুঝতেই পারবেন না, কাজটা কেমন?”

জাপান থেকে উৎক্ষেপণ
সংযুক্ত আরব আমিরাত মঙ্গলগ্রহে যে স্যাটেলাইটটি পাঠাচ্ছে, সেটির ওজন ১ দশমিক ৩ টন। জাপানের দুর্গম তানেগাশিমা মহাকাশ বন্দর থেকে রকেটের মাধ্যমে এটি উৎক্ষেপণ করা হবে।

প্রায় ৫০০ মিলিয়ন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এই রোবটিক মহাকাশযানটি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার গন্তব্যে পৌঁছাবে। ঐ একই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত তার ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করবে বলে কথা রয়েছে।

এটি বুধবার উৎক্ষেপণ করার কথা ছিল। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় এখন উৎক্ষেপণের সময় শুক্রবার পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।

এই স্যাটেলাইটটি যখন মঙ্গলগ্রহে গিয়ে পৌঁছাবে তখন এটির মাধ্যমে এই গ্রহটি সম্পর্কে নতুন অনেক কিছু জানা যাবে বলে আশা করছেন আমিরাতের বিজ্ঞানীরা।

হোপ মিশন মূলত মঙ্গলগ্রহের জলবায়ু এবং আবহাওয়া নিয়ে কাজ করবে। তার বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের একটা প্রধান লক্ষ্য হবে, মঙ্গলগ্রহ কিভাবে একটি রুক্ষ ধূলিধুসর গ্রহে পরিণত হলো, সেটি জানা।

কিভাবে মঙ্গলগ্রহ পানিশূন্য হয়ে গেল, সেটি নিয়ে অনুসন্ধান চালাবে হোপ মিশন
হোপ মিশনের প্রকল্প পরিচালক ওমরান শরিফ বলেন, “আমরা এমন কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাতে চাইনি, যেটি এর আগে হয়ে গেছে। আগের কাজের পুনরাবৃত্তি করে আমরা বলতে চাইনি, আমরাও এটা করেছি।”

আমিরাতের বিজ্ঞানীরা তাই যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসার একটি এডভাইজারি কমিটির কাছে জানতে গিয়েছিলেন নতুন কোন ধরণের গবেষণা চালানো যায়, যেটি মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কে জ্ঞান প্রসারিত করবে।

নাসার এই কমিটির পরামর্শ অনুসারে হোপ মঙ্গল অভিযানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এই অভিযানের মাধ্যমে দেখা হবে, মঙ্গলগ্রহের আবহাওয়া এবং জলবায়ু কেন এতটা বদলে গেল।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, মঙ্গলগ্রহ একসময় পৃথিবীর মতোই সাগর আর নদীতে আবৃত ছিল। যদি মঙ্গলের পরিমন্ডল পর্যবেক্ষণ করা যায়, তাহলে কিভাবে এটি এখন এক শুস্ক এবং রুক্ষ গ্রহে পরিণত হলো, সেটার ক্লু হয়তো পাওয়া যাবে।

মঙ্গল গ্রহে কোন অভিযান চালানো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এ পর্যন্ত মঙ্গল গ্রহে যত অভিযান পাঠানো হয়েছে, তার অর্ধেকই আসলে ব্যর্থ হয়েছে।

হোপ মিশনের প্রকল্প পরিচালক ওমরান শরিফ স্বীকার করেন যে, এরকম ঝুঁকি আছে।

বিবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এটি হচ্ছে একটি গবেষণা মিশন এবং এখানে ব্যর্থতা একটা বিকল্প কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু একটি জাতি হিসেবে অগ্রগতি করতে ব্যর্থ হওয়া কোনো বিকল্প হতে পারে না।”

তিনি বলেন, “এখানে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো, এই মিশনের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত যে সক্ষমতা অর্জন করছে এবং যে জ্ঞান ও প্রযুক্তি দেশে নিয়ে আসতে পেরেছে।”

সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই অভিযানের রূপকার সারাহ আল-আমিরি এখন তার স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষায় ক্ষণ গুনছেন।

“আমি খুবই নার্ভাস বোধ করছি। এই অভিযানের জন্য আমরা সাড়ে ছয় বছর ধরে কাজ করেছি। মহাকাশের যে বিশালত্ব, এটিকে জানা এবং বোঝা যেরকম জটিল, সেটা আমাকে মোহিত করেছিল। এই মহাকাশযান নিয়ে আমরা পরীক্ষার পর পরীক্ষা চালিয়েছি, যাতে সব ধরণের পরিস্থিতিতে এটা টিকে থাকে। এখন আমাদের এসব কাজের ফসল এখন একটি লঞ্চপ্যাডে একটি রকেটের ওপর বসে আছে। এটি যাবে এমন এক গ্রহে, যে গ্রহটি আমাদের কাছ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে।”

অপরাজিতাবিডি/রবি

হরিয়ানায় মেয়েরা গ্র্যাজুয়েশন করলেই মিলবে পাসপোর্ট

একটা পাসপোর্ট হাতে পেতে কত না কাঠখড় পোহাতে হয়। জমা দিতে হয় ভুরি ভুরি কাগজপত্র। করতে হয় অফিসে অফিসে ধরনা। তারপরও এভাবে কয়েক মাস চলে গেলেও পেলে না পাসপোর্ট। তবে ভারতের একটি রাজ্যে পাসপোর্ট পেতে হলে শুধু একটা শর্ত পূরণ করতে হবে-আর তা হলো গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা। তবে এখানে একটা কথা আছে-ছেলেরা কিন্তু পাবে না এই পাসপোর্ট। শুধু মেয়েদের জন্য এই সুযোগ করে দিয়েছে ওই রাজ্য।

ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হরিয়ানায় মেয়েরা গ্র্যাজুয়েশন করলেই তারা পেয়ে যাবেন পাসপোর্ট। শনিবার এই ঘোষণা দেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর। নারীর ক্ষমতায়ন বাড়াতে শনিবার এই অভিনব ঘোষণা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

শনিবার রাজ্যের মঙ্গলসিং অডিটোরিয়ামে ‘হর সর হেলমেট’ অর্থাৎ ‘প্রত্যেকের জন্য হেলমেট’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে একটি হেলমেট প্রস্তুতকারক সংস্থা। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই পাসপোর্ট-সংক্রান্ত ঘোষণায় সকলকে চমকে দেন খট্টর। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ‘গ্র্যাজুয়েট হলেই ছাত্রীদের হাতে তাদের পাসপোর্ট তুলে দেয়া হবে।’ তিনি আরও বলেছেন, পাসপোর্ট তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটাই কলেজ চত্বরের মধ্যে করা হবে। এজন্য কোথাও দৌড়াতে হবে না।

অনুষ্ঠানে আসা স্কুল, কলেজ ও আইটিআইয়ের পাঁচজন শিক্ষার্থীর হাতে হেলমেট ও লাইসেন্স তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। খট্টর বলেন, ‘যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ট্র্যাফিক আইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে তার সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এজন্য রাজ্যের সব কলেজ শিক্ষার্থীদের ট্র্যাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন করার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। আগামী দিনে শুধুমাত্র কলেজগুলো থেকেই শিক্ষার্থীরা যাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করাতে পারেন তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।’

ভারতে যে কয়টি রাজ্য লিঙ্গ বৈষম্যে পিছিয়ে তারমধ্যে অন্যতম হরিয়ানা। উত্তর ভারতের এই রাজ্যে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা অনেক কম। নারী স্বাধীনতা নিয়েও বারবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে হরিয়ানাকে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শিক্ষিত মেয়েদের হাতে পাসপোর্ট তুলে দিয়ে নারী ক্ষমতায়নে জোর দিতে চাইছে খট্টর প্রশাসন।

 

অপরাজিতাবিডি/রবি

করোনাকালে ঢাকায় নারী ও শিশু নির্যাতনের দুই শতাধিক মামলা

করোনাভাইরাসের মহামারিতে থমকে গেছে বিশ্ব। থমকে গেছে দেশ। এই মহামারি রোধে ৬৬ দিন ছিল সাধারণ ছুটি। এ সময়ে অনেককে থাকতে হয়েছে নিজ পরিবার-পরিজনের সাথে। এ পরিস্থিতিতেও থেমে নেই নারী ও শিশু নির্যাতন।

করোনাকালে ঢাকা শহরে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে ২০০টি। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ধর্ষণ, তারপর যৌতুক ও অপহরণের।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার হিসাব মতে, গত ২৬ মার্চ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের ৫০টি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগের ২০০টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

এগুলোর মধ্যে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে ৫৮টি, গণধর্ষণের আটটি, ধর্ষণচেষ্টার ১৬টি, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনে অভিযোগে হয়েছে ৫৩টি, অপহরণের অভিযোগে ৩৭টি, শ্লীলতাহানির অভিযোগে ১৯টি, শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে ৯টি মামলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৪ জুন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্যমতে, মার্চ, এপ্রিল ও মে- এই তিন মাসে সারাদেশে ৪৮০ জন নারী ও শিশু বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৬৭ জন নারী ও ২১৩ জন শিশু। এর মধ্যে ২০৬ ঘটনায় ৯০ নারী ও ১১৬ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

 

অপরাজিতাবিডি/রবি

প্রথমবারের মতো মহাকাশে লোক পাঠানোর নেতৃত্বে নারী


প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মনুষ্যবাহী মহাকাশযান (হিউম্যান স্পেসফ্লাইট) পরিচালনার নেতৃত্ব দেবেন এক নারী। নাসার হিউম্যান এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড অপারেশনস মিশনের (এইচইও) প্রধান হিসেবে ক্যাথি লুয়েডার্সকে নিয়োগ দেওয়ার পর এই ইতিহাস তৈরি হলো। গত শুক্রবার নাসার প্রধান জিম ব্রাইডেনস্টাইন টুইটারে এই নিয়োগের ঘোষণা দেন। খবর এএফপির।

গত মাসে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মহাকাশযানে করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নভোচারী পাঠানোর মিশনের নেতৃত্ব দেন লুয়েডার্স। সেই সফলতার সূত্র ধরেই তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। নাসার প্রধান জিম ব্রাইডেনস্টাইন বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে মহাকাশচারী ও কার্গো পাঠানো—উভয় প্রকল্প সফলভাবে পরিচালনা করেছেন ক্যাথি। তাই ২০২৪ সালে চাঁদে মহাকাশচারী পাঠানোর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এইচইওকে পরিচালনার জন্য তাঁকেই আমরা উপযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে মনে করেছি।’

১৯৯২ সালে নাসায় যোগদান করেন লুয়েডার্স। গত ৩০ মে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের একটি মহাকাশযানে দুজন মহাকাশচারীকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠানো হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ফ্লাইটে মহাকাশে যান নভোচারীরা।

কৃষ্ণাঙ্গ নারীর নামে হেডকোয়ার্টারের নাম পাল্টাচ্ছে নাসা

শ্বেতাঙ্গ পুলিশের বর্বর নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ঘটনায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ। জনগণের ক্ষোভের মুখে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র পুলিশে সংস্কার আনতে বাধ্য হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৈশ্বিক জাতিগত অসমতা নিয়ে বিতর্কের কারণে ত্বক ফর্সা করার ক্রিম বিক্রি না করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক হেলথকেয়ার কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন।

তবে দেশটির বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা)। সংস্থাটি তাদের হেডকোয়ার্টার বিল্ডিংয়ের নাম পরিবর্তন করে একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারীর নামে নামকরণের ঘোষণা দিয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নাসার হেডকোয়ার্টার বিল্ডিংয়ের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিল্ডিংটির নাম রাখা হবে ‘মেরি উইলিয়াম জ্যাকসন’।

মেরি মার্কিন এই মহাকাশ সংস্থার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান-আমেরিকান নারী প্রকৌশলী। বুধবার সংস্থাটির প্রশাসক জিম ব্রিডেনস্টাইন এ ঘোষণা দেন।

’৫০-এর দশকে ভার্জিনিয়ার হ্যাম্পটনে অবস্থিত নাসার ল্যাংলে রিসার্চ সেন্টারে কর্মজীবন শুরু করেন মেরি জ্যাকসন।

এর আগে গতবছর নাসার এই প্রতিষ্ঠানটির আগের নাম পাল্টিয়ে নাম রাখা হয় ‘হিডেন ফিগারস ওয়ে’। মূলত নাসায় আগে যেসব আফ্রিকান-আমেরিকান নারী কর্মরত ছিলেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই নাম রাখে নাসা।

তবে মহাকাশ সংস্থা নাসা এমন এক সময়ে তাদের হেডকোয়ার্টারের নাম পরিবর্তনের কথা জানাল, যখন মিসিসিপিতে অবস্থিত তাদের ‘স্টেনিস স্পেস সেন্টারের’ নাম পরিবর্তনের জন্য চাপ দিচ্ছিল বিভিন্ন মহাকাশ সংস্থা। একই সময় জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দেশটিতে বৈষম্যমূলক বিভিন্ন স্মৃতিস্মম্ভ নামিয়ে ফেলার হিড়িক চলছে।

নাসার এই প্রতিষ্ঠানটির নাম রাখা হয়েছে মিসিসিপির দীর্ঘসময় ধরে সিনেটর থাকা জন সি.স্টেনিসের নামানুসারে। কঠোর জাতিবিদ্বেষী বলে পরিচিত এই সিনেটর।

অপরাজিতাবিডি/রবি

বাংলাদেশে প্রথম অনুষ্ঠিত হলো ‘নারী প্রকৌশলী সম্মেলন’

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘নারী প্রকৌশলী সম্মেলন-২০২০’। মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিট-১৯) কারণে অনলাইনে এই সম্মেলন হয়। ২৩ জুন রাত ৮টায় দ্য ইঞ্জিনিয়ার্স ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই সম্মেলন শুরু হয়ে রাত ১১টায় শেষ হয়।

এটি দেশে প্রথম নারী প্রকৌশলী সম্মেলন। প্রধান অতিথি হিসেবে এ সম্মেলন উদ্বোধন করেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর। সম্মেলনের সমাপনী করেন আইইবি’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ।

১৯১৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের উইমেন্স ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি ২৩ জুনকে নারী প্রকৌশলী দিবস হিসেবে পালন করত। পরে ২০১৭ সালে ইউনেস্কো দিনটিকে আর্ন্তজাতিক নারী প্রকৌশলী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এ দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা। তবে আইইবি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ৭ মে ’ইঞ্জিনিয়ার্স ডে’ হিসেবে পালন করা হয়।

এবারের নারী প্রকৌশলী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘শেপ দ্য ওয়ার্ল্ড’।

অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী বুলবুল আখতার, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী রওশন মমতাজ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নীরা মজুমদার, এলজিইডি প্রজেক্ট ডিরেক্টর প্রকৌশলী সালমা শহীদ, রাজউকের ডিরেক্টর সরকারের উপসচিব, আইবির সেন্ট্রাল কাইন্সিল মেম্বার প্রকৌশলী তানজিলা খানম।

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নারী প্রকৌশলীদের মধ্য আরও বক্তব্য দেন প্রকৌশলী মৌসুমী সালমীন, প্রকৌশলী সোনিয়া নওরীন এবং অধ্যাপক প্রকৌশলী সালমা আখতার। অনুষ্ঠানের মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দ্যা ইঞ্জিনিয়ারস ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক এবং আইইবির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের সেক্রেটারি প্রকৌশলী শেখ তাজুল ইসলাম তুহিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর বলেন, ’চাকরি জীবনে নারী প্রকৌশলীরা কর্তব্যনিষ্ঠ ও সৎ হিসেবে পরিচিত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা নেবার পর থেকেই বিভিন্ন পদে নারীদের পদায়ন করেছেন। প্রথম মহিলা বিচারপতি, প্রথম মহিলা সচিব, প্রথম মহিলা স্পিকার এবং এসবের ধারাবাহিকতায় প্রথম প্রধান প্রকৌশলীও বঙ্গবন্ধু কন্যার শাসন আমলের অবদান। এই সম্মেলনেও একজন প্রধান প্রকৌশলী উপস্থিত আছেন। শেখ হাসিনা মনে করেন, ‘নারীদের উন্নয়নের বাইরে রেখে কখনও প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়’।

তিনি আরও বলেন, নারী প্রকৌশলীরা তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে পরিকল্পনা করবেন কীভাবে আমাদের এ পৃথিবীটা আরও বাসযোগ্য, নিরাপদ, আরও সৃজনশীল ও আনন্দদায়ক করা যায়। আইইবি সবসময় নারী প্রকৌশলীদের সাথে থাকবে- আইইবির প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছি। সেই সাথে আইইবি থেকে নারী প্রকৌশলীদের কর্মক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরসহ সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে।

এর আগে নারী প্রকৌশলীরা নারীদের প্রকৌশলী পেশার যেসব প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজমান সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এ ছাড়া নারী প্রকৌশলীদের কর্মক্ষেত্র বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন নারী প্রকৌশলীরা। নারী প্রকৌশলীরা মনে করেন, নারীদের কর্মক্ষেত্রে আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে পারলে নারীরা প্রকৌশল পেশায় আগ্রহ হবেন। এ ক্ষেত্রে প্রকৌশল পেশায় বাংলাদেশের নারীদের আরও এগিয়ে নিতে আইইবি’র সহযোগিতা কামনা করেন নারী প্রকৌশলীরা।

 

অপরাজিতাবিডি/রবি

এক করোনা যোদ্ধার গল্প

মনোয়ারা আক্তার। করোনা উপসর্গ রোগীদের কাছে এক ভরসার নাম। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজি বিভাগের ল্যাব টেকনোলজিস্ট। তিনি ১৮ শ’ করোনার নমুনা সংগ্রহ করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। করোনা মহামারিতে নিরলসভাবে কাজে করে পুরো সোনারগাঁও উপজেলাবাসীর কাছে প্রশংসায় সিক্ত হয়েছেন এই করোনা যোদ্ধা।

তিনি বলেন, যারা করোনায় অসুস্থ হচ্ছে তারাও তো আমার মতো কোনো না কোনো মায়ের সন্তান। কারো বোন, ভাই, মেয়ে। এ করোনাকালে অনেকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করছে। আমিও আমার অবস্থান থেকে পরম করুণাময়ের ওপর আত্মবিশ্বাস রেখে মানুষের একটু সেবা করে যাচ্ছি।

সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কাজ শুরু হয় গত ৫ এপ্রিল। কাঁচপুর ইউনিয়নে এক বৃদ্ধ সর্দি কাশি নিয়ে মৃত্যুবরণ করার পর তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেই থেকে শুরু এখন পর্যন্ত ১৮০০ বার রোগীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন তিনি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ সন্দেহে আসা রোগীদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সোনারগাঁও উপজেলায় হাসপাতালে যখন করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত হয়, তখন দায়িত্ব দেয়া হয় এমটি ইপিআই, এমটি ল্যাবসহ আরো দু’জনকে। লোকবলের অভাবে অবশেষে নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পড়ে এমটি মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট মনোয়ারার উপর। সাথে তাকে সহযোগিতার জন্য দেয়া হয় সহকারী রায়হান ও হাসানকে। প্রথমে কিছুটা শঙ্কিত হলেও মনের ভেতর সাহস সঞ্চার করে মুহূর্তের মধ্যেই নমুনা সংগ্রহের কাজে রাজি হয়ে যান তিনি। এরপর ৫ এপ্রিল প্রথম একজন মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ দিয়ে শুরু হয় তার এগিয়ে চলা। গত আড়াই মাসে বিভিন্ন রোগীর কাছ থেকে ১৮শ’ বার নমুনা সংগ্রহ করেছেন তিনি। সবশেষ ২০ জুন ২২ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এসব নমুনা পরীক্ষা করে ৩৬২ কয়েকজন রোগীর শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শুধু সাধারণ মানুষই নন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তার সাথে কর্মরত হাসপাতালের কয়েকজন স্টাফও। তারপরও দমে যাননি মনোয়ারা।

মনোয়ারা আক্তার বলেন, আমাদের হাসপাতালে প্রথম থেকেই লোকবল সঙ্কট ছিল। সেজন্য আমি নিজেই একা মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্টের কাজটি করে আসছি। যখন দেশে করোনাভাইরাস শুরু হলো তখন টিএইচও স্যার আমাকে ডেকে বললেন সোনারগাঁওয়ের করোনা আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরএ পাঠানোর জন্য। আমি রাজি হওয়ার পর স্যাম্পল কালেকশন কিট-পিপিইসহ সব সরঞ্জাম আমাকে বুঝিয়ে দেয়া হলো। তখন একাই হাসপাতালে সহকারী মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত আমার স্বামী মোঃ হাবিলউদ্দিনের সাথে কথা বলে মা-বাবা ও শুভাকাঙ্খিদের দোয়ায় কাজ শুরু করি।

মনোয়ারা বলেন, প্রথম কয়েকদিন নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক ভয় পেয়েছি। কারণ টিভিতে দেখেছি পৃথিবীর অনেক দেশে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে মারা গেছেন। সেগুলো দেখে আমার মনেও ভয় তৈরি হয়েছিল। এছাড়া আমার ঘরে পাঁচ বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে। তাকে রেখে কীভাবে নমুনা সংগ্রহ করবো। আবার আমি যদি করোনায় আক্রান্ত হই, তাহলে তাকে কে দেখবে? এসব চিন্তা করে রাতে ঘুমাতে পারিনি। কিন্তু যখন চিন্তা করলাম যুদ্ধের ময়দানে নেমে মৃত্যুকে ভয় পেলে চলবে না, ভয়কে জয় করে যুদ্ধের ময়দানে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যদি ভয় পাই তাহলে মানুষের চিকিৎসা করবে কে? আমার উপর যে দায়িত্ব দিয়েছে সে দায়িত্ব যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারি সেজন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি। এছাড়া এ কাজে টিএইচও স্যার এবং আমার স্বামী সাহস জুগিয়েছেন। আল্লাহর উপর ভরসা ও তাদের দেয়া সাহস নিয়েই নমুনা সংগ্রহের কাজে নেমে পড়ি। নমুনা সংগ্রহের কাজে সহায়তার জন্য কর্তৃপক্ষ আমাকে সহায়তার জন্য সহকারী মোঃ রায়হান ও মোঃ হাসানকে সাথে দেন। যারা আমার কাজে প্রতিদিনই সহায়তা করে আসছেন। তাদের দু’জন পালা করে আমাকে সহায়তা করতেন। কাজটি যাতে বন্ধ না হয়ে যায় সেজন্য নিজের দিকে খেয়াল রেখেছি। সব সময় করোনা মুক্ত থাকতে যা যা করণীয় তা পালন করেছি।

তিনি আরো বলেন, প্রথমে হাসপাতালের বাইরে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতাম। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখন হাসপাতালেই নমুনা সংগ্রহ করা হয়। হাসপাতালে প্রতিদিনই নমুনা সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে। একদিনে সর্বোচ্চ ৭০ জনেরও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া কেউ যদি উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন শুনেই কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাৎক্ষণিক নমুনা সংগ্রহ করেছি। আর ইচ্ছে আছে যতদিন সুস্থ থাকবো, ততদিন নমুনা সংগ্রহের এ কাজ চালিয়ে যাবো। নিজের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করিনি, কারণ এখন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ দেখছি না। যদি অসুস্থ হয়েই যাই, তাহলে সুস্থ হয়ে আবার এসে কাজটি চালিয়ে যাবো। আমি সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।

সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. পলাশ কুমার সাহা বলেন, আমি হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকালে মনোয়ারাকে দেখেছি নিষ্ঠা ও মনোযোগের সাথে কাজ করতে। তাকে ধন্যবাদ জানাই সাহসিকতা এবং তার কাজের জন্য।

অপরাজিতাবিডি/রবি

পড়াশোনা না ছাড়ায় ঢাবি ছাত্রীকে হত্যার অভিযোগ, শাশুড়ি ও ননদ গ্রেপ্তার

সুমাইয়া বেগমকে সমাবর্তনের হ্যাট পরিয়ে দেন এক সহপাঠী। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। ছবি: সংগৃহীতসুমাইয়া বেগমকে সমাবর্তনের হ্যাট পরিয়ে দেন এক সহপাঠী। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। ছবি: সংগৃহীতমেয়ে অসুস্থ, শ্বশুরের কাছ থেকে ফোনে এমন সংবাদ পেয়ে যশোর থেকে নাটোরে ছুটে আসেন মা নুজহাত বেগম। এসে দেখলেন, হাসপাতালের মর্গে মেয়ের লাশ পড়ে আছে। শ্বশুর, স্বামী বা তাঁদের পরিবারের কেউই সেখানে নেই। নুজহাতের অভিযোগ, নির্যাতন করে তাঁর মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস সুমাইয়া বেগমকে হত্যা করেছেন স্বামীর বাড়ির লোকজন। সুমাইয়া বেগম যশোরের সিদ্দিকুর রহমান যশোরীর মেয়ে। বিয়ে হয়েছিল নাটোর শহরের হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকার প্রকৌশলী মোস্তাক হোসাইনের সঙ্গে।

মা নুজহাত বেগম বলেন, ‘গতকাল সোমবার সকালে সুমাইয়ার শ্বশুর জাকির হোসেন আমাকে ফোন দেন। তিনি মেয়ের অসুস্থতার কথা বলেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। খবর পেয়ে আমি দ্রুত নাটোরে চলে আসি। সদর হাসপাতালে এসে দেখি, আমার মেয়ের মৃতদেহ মর্গে পড়ে আছে। শ্বশুরবাড়ির কেউ হাসপাতালে নেই।’ তিনি আরও বলেন, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন সুমাইয়ার পড়ালেখা ও পরে চাকরি করার ইচ্ছা মেনে নিতে পারছিল না। এ কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ছয় মাস আগেও তাঁকে ঘরে আটকে রেখে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে মোস্তাকের সঙ্গে বিয়ে হয় সুমাইয়ার। বাবা সিদ্দিকুর ছিলেন একজন নামকরা ইসলামি বক্তা। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন সুমাইয়া। ভর্তির তিন বছরের মাথায় বাবার পছন্দেই মোস্তাককে বিয়ে করেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন পড়ালেখায় বাদ সাধে। পড়াশোনার বদলে গৃহস্থালির কাজে মনোযোগ দেওয়ার তাগিদ আসে। পড়ালেখার খরচ বাবা সিদ্দিকুরই দিতেন। তাই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়নি সুমাইয়াকে। প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন তিনি। ঢাকায় থেকে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ গত সেপ্টেম্বরে বাবা সিদ্দিকুর মারা যান। এতে আর্থিক সংকটে পড়েন সুমাইয়া। শ্বশুরবাড়ি থেকে সহযোগিতার পরিবর্তে চাকরির চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পুরোপুরি সংসারী হওয়ার নির্দেশ আসে। কিন্তু সবকিছু ভুলে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েই ডুবে ছিলেন সুমাইয়া। তবে শেষ পর্যন্ত জীবনের কাছে তাঁকে হার মানতে হয়েছে তাঁর।

পরিবারের অভিযোগ, গত রোববার রাতে সুমাইয়াকে তাঁর স্বামীর ঘরে মারপিট করে হত্যা করা হয়। এরপর ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলেছে। গতকাল দুপুরে মা নুজহাত বেগম যখন নাটোর সদর হাসপাতালে পৌঁছান, তখন সুমাইয়ার স্বামী মোস্তাক, শ্বশুর জাকির বা ওই পরিবারের কাউকে পাননি। সবাই গা-ঢাকা দিয়েছেন। ময়নাতদন্ত শেষে রাতে নাটোরের একটি কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম মঙ্গলবার সকালে বলেন, গতকাল রাতে নিহত নারীর মা নুজহাত বেগম থানায় মামলা করেছেন। এতে সুমাইয়ার স্বামীসহ চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা অভিযোগ করা হয়েছে। মামলা গ্রহণের পর আসামিদের ধরতে সারা রাত অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। সুমাইয়ার ননদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে দুপুরে আদালতে পাঠানো হবে।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’ তিনি আরও বলেন, যেহেতু স্বামীর বাড়িতে ঘটনাটা ঘটেছে, তাই সব দায় দায়িত্ব স্বামী ও তাঁর স্বজনদেরই বহন করতে হবে।

করোনায় নারীরা কম আক্রান্ত হচ্ছেন কেন?

নারী নয়, পুরুষদের মধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। তবে এর কারণ নিয়ে চিকিৎসকরা একমত নন। ভারতে নারীদের তুলনায় পুরুষরা অনেক বেশি করোনায়আক্রান্ত হচ্ছেন। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ(আইসিএমআর)-এর রিপোর্ট থেকে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। আইসিএমআর-এর গবেষক দল গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মার্চ দেশজুড়ে ২০টি রাজ্যের ৫২টি জেলায় প্রবল শ্বাসকষ্টে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের পরীক্ষা করে দেখেছিলেন। মোট পাঁচ হাজার ৯১১ জনকে পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, ১০৪ জন করোনায় আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে ৮৫ জন অর্থাৎ ৮৩ শতাংশেরও বেশি হলেন পুরুষ।

ভারতে নারীদের থেকে পুরুষরা এত বেশি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন কেন? চিকিৎসকদের মধ্যেও কারণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ফুসফুস বিশেষজ্ঞ পার্থ প্রতিম বোস ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ”যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের ফুসফুস এমনিতেই দুর্বল। ভারতে জেলা বা ছোট শহরগুলিতে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অনেক বেশি ধূমপান করেন। গ্রামের দিকে লোকে এখনও হুঁকো খান, বিড়ি, সিগারেটও খান। তাই মেয়েদের তুলনায় পুরুষদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ইটালিতেও এত বেশি সংখ্যক লোকের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ, সেখানে লোকের মধ্যে ধূমপানের অভ্যাস অনেক বেশি।”

আবার চিকিৎসক সুব্রত কুন্ডু মনে করেন, এর প্রধান কারণ, পুরুষরা অনেক বেশি বাইরের কাজ করেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন,” আসলে ভারতে পুরুষরা মেয়েদের থেকে অনেক বেশি বাইরে বের হন। তাই তাঁরা বেশি করে আক্রান্ত হয়েছেন। যেহেতু তাঁরা বাইরে বের হচ্ছেন, তাই তাঁরা করোনায় আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসছেন। সেখান থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। নিজামুদ্দিনের ঘটনাই তার উদাহরণ।”

ডয়চে ভেলের কাছে চিকিৎসক সাত্যকি হালদারের ব্যাখ্যা, ”বিশ্বের অন্য জায়গাতেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। করোনা হচ্ছে সামাজিক অসুখ। ভাইরাসটি সংক্রমক, অর্থাৎ, ছোঁয়াচে। তাই যিনি বাইরে যাচ্ছেন ও আক্রান্ত হচ্ছেন, তিনি ঘরে ফিরলে গোটা পরিবারে সংক্রমণ ঘটার কথা। ফলে নারীরা কম আক্রান্ত হচ্ছেন আর পুরুষরা বেশি, এই প্রবণতা বাইরে বেরনোর নিরিখে বিচার করলে ভুল হবে। আসলে যে কোনও ভাইরসের একটা জেনেটিক কাঠামো থাকে। করোনার ক্ষেত্রে সেই গঠন এখনও বোঝা যায়নি। পুরুষ ও নারীদের রোগ প্রতিরোধ করার সিস্টেমও আলাদা। বহু ক্ষেত্রে কারও প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, কারও কম। করোনা কী করে এই প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাঙছে, তা এখনও জানা যায়নি। জানা গেলে বোঝা যাবে কেন পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন!”

আইসিএমআরের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, করোনায় আক্রান্ত অধিকাংশ লোকের বয়স ৪০ বছরের বেশি। সমীক্ষা অনুসারে ৫০ বছরের বেশি বয়স্করা তুলনায় অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের মধ্যে করোনা বেশি হচ্ছে। আইসিএমআরের মতে, মধ্যরেখা হলো ৫৪ বছর। এর কারণ নিয়ে অবশ্য চিকিৎসকরা একমত। তাঁদের মতে, ৫০ এর পর থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। তাই তাঁদের মধ্যে সংক্রমণ সব চেয়ে বেশি। সাত্যকি হালদার মনে করেন, ”৫০ এর পর লোকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমলেও, ৬০-৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত বাইরে বেরনোর প্রবণতা আগের মতোই থাকে। তাই তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।” পার্থ প্রতিম বোসের মতে, ”একে তো ওই বয়সে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তার ওপর যাঁরা ধূমপায়ী, তাঁরাও অনেক দিন ধরে ধূমপান করে ফুসফুসের অনেকটা ক্ষতি করে ফেলেছেন। তাই তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।”

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রিপোর্ট থেকে উঠে এসেছে। প্রায় ৪০ শতাংশ আক্রান্ত কখনও বিদেশে যাননি। তাঁরা জ্ঞানত কোনও করোনা আক্রান্তের সঙ্গেও মেশেননি।

আইসিএমআর এখন নতুন করে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নীতিনির্দেশিকা জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে,

যাঁদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তাঁদের সকলের করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। যাঁরা করোনা আক্রান্ত ও সম্ভাব্য করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসছেন, তাঁদের পাঁচদিন ও ১৪ দিন পরে দুই বার পরীক্ষা করতে হবে। যে করোনা আক্রান্তরা কোনও জমায়েতে ছিলেন, সেখানে উপস্থিত সকলের করোনা পরীক্ষা করতে হবে। যে সব ল্যাবে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে সেখানে সব কর্মীর করোনা পরীক্ষা হবে। গত ১৪ দিনে যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাঁদেরও বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষা করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিহ্নিত করা হটস্পটে কারও সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর হলেই করোনা পরীক্ষা করা হবে। সূত্র ডিডব্লিউ

অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি নতুন চাকরি প্রত্যাশীরা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ২০১৮ স্নাতকোত্তর করছেন তানজিলা আক্তার। এরপর থেকেই তিনি একাধিক সরকারি চাকরিতে আবেদন করেছেন, বেসরকারি চাকরির চেষ্টাও করেছেন। আশা করছিলেন, এই বছর একটা ভালো চাকরি হয়ে যাবে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তার সেই স্বপ্ন থমকে গেছে।

‘এখন তো মহামারির কারণে সবকিছুই আটকে আছে। কোন সার্কুলার নাই, কোনো চাকরির পরীক্ষা নেই। এই মহামারি কবে শেষ হবে, কবে আবার চাকরির প্রক্রিয়া শুরু হবে জানি না।’

‘আমরা যারা বেকার আছি, চাকরির খুব প্রয়োজন, তাদের জীবনটা এই মহামারির কারণে একটা অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। কোনো কাজ নেই, যতদিন যাচ্ছে পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে যাচ্ছি। পরিবারের সদস্যদের মলিন চেহারা সেই হতাশা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।’

তিনি জানান, তার বাবা মায়ের বয়স হয়েছে, এখন তার পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার কথা। কিন্তু এই মহামারির কারণে তিনি সেটা করতে পারছেন না।

আরেকজন চাকরি প্রত্যাশী ফারিয়া আজাদ সমাজকর্মে পড়াশোনা শেষ করেছেন ২০১৭ সালে। গত কয়েকবছর ধরেই তিনি সরকারি চাকরির চেষ্টা করছেন।

‘আমি শুধু সরকারি চাকরির জন্যই অনেক বছর ধরে চেষ্টা করছি। এ বছর ৪১তম বিসিএসের পরীক্ষা হবে ভাবছিলাম। করোনার কারণে সব আটকে গেল। এদিকে চাকরির বয়সও শেষ হতে চলেছে। মেয়ে হিসাবে পারিবারিকভাবে বিয়ে-শাদির চাপও আছে। সব কিছু মিলিয়ে একটা মানসিক চাপের মধ্যে, হতাশার থাকতে হচ্ছে’, তিনি বলছেন।

প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ-তরুণী বাংলাদেশের চাকরির বাজারে যোগদান করে। এদের বড় একটি সংখ্যক স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন।

এমনিতেই দেশে বেকারত্বের হার অনেক। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেই সংকট আরো বেড়েছে।

বাংলাদেশে বেকার
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ ২০১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ নারী-পুরুষ আর ২৭ লাখ বেকার।

আর সম্ভাবনাময় কিন্তু সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পান না এরকম ব্যক্তি (লেবার আন্ডার ইউটিলাইজেশন), যাদের ছদ্ম-বেকার বর্ণনা করা হয়, এরকম মানুষ রয়েছেন প্রায় ৬৬ লাখ। এরা চাহিদা মাফিক কাজ না পেয়ে টিউশনি, রাইড শেয়ারিং, বিক্রয় কর্মী ইত্যাদি খণ্ডকালীন কাজ করেন।

বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ৪.২% হলেও যুব বেকারত্বের হার ১১.৬ শতাংশ। করোনাভাইরাসের কারণে জুন ২০২০ সাল নাগাদ সেটি কয়েকগুণে বেড়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস সংকটে বিশ্বে প্রতি ছয়জনের একজন বেকার হয়েছে আর বাংলাদেশের প্রতি চারজন যুবকের মধ্যে একজন কর্মহীন বা বেকার রয়েছে (২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ)। ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই এই বেকারত্ব বাড়ছে।

আইএলও বলছে, মহামারিতে তারা তিনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে বেকার, সেই সাথে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণও ব্যাহত হচ্ছে তাদের। এতে তাদের চাকরিতে প্রবেশ ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে।

আইএলও’র সংজ্ঞা অনুযায়ী, সপ্তাহে একদিন বা এক ঘণ্টা কাজের সুযোগ না পেলে ওই ব্যক্তিকে বেকার হিসাবে ধরা হয়। সেই হিসাবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সংখ্যা বাস্তবে অনেক বেশি।

নতুন চাকরির বিজ্ঞাপন কমে গেছে
করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি হওয়া মন্দায় ব্যাংকিং, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান খরচ কমাতে কর্মী ছাঁটাই করছে। আর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে।

বাংলাদেশের চাকরি সংক্রান্ত একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী একেএম ফাহিম মাশরুর বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ফেব্রুয়ারির পর থেকে চাকরির বিজ্ঞাপন অনেক কমে গেছে। যেসব চাকরির বিজ্ঞাপন আসছে, সেখানেও অভিজ্ঞ কর্মী চাওয়া হচ্ছে।

তিনি বলছেন, ‘আগে যেরকম বিজ্ঞাপন আসতো, করোনার কারণে সেটা ৬০%, ৭০% কমে গেছে। মে মাসে একটু বাড়লেও এখনো ৫০% কম আছে। যেসব বিজ্ঞাপন আসছে, সেখানে অভিজ্ঞ লোক চাওয়া হচ্ছে, ফ্রেশ গ্রাজুয়েটদের চাহিদা আরও অনেক কমে গেছে।’

‘আগামী ছয়মাস এরকমই থাকবে বলে মনে হচ্ছে’, তিনি বলছেন।

দুই বছর ধরে সরকারি চাকরির পাশাপাশি সম্প্রতি বেসরকারি চাকরি খুঁজতে শুরু করেছিলেন নাহিদুজ্জামান লিটু।

তিনি বলছেন, ‘শুরুতে তো সরকারি চাকরির চেষ্টাই করতাম। কিন্তু সম্প্রতি বেসরকারি চাকরির আবেদন করতে শুরু করেছিলাম। এক-দুইটা ইন্টারভিউ দিয়েছি। এর মধ্যেই তো সব আটকে গেল।’

তিনি বলছেন, এসব কারণে তিনি মানসিকভাবে চাপের মধ্যে পড়েছেন। একদিকে বন্ধুদের সাথে বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়, পড়াশোনা শেষ করার পরেও বাড়ি থেকে সাপোর্ট নিতে হচ্ছে। দুই-তিনমাসের মধ্যে একটা চাকরি পাওয়ার আশা করেছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তার সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।

নতুন কর্মী নেয়ার কথা ভাবছে না প্রতিষ্ঠানগুলো
বাংলাদেশের ব্যাংক, বহুজাতিক বা বড় কোম্পানিগুলো গত কয়েকমাস ধরে ব্যবসা না হওয়ায় কর্মী ছাঁটাই বা বর্তমান কর্মীদের বেতন কমিয়ে দিচ্ছে।

ব্যাংকগুলো বলছে, আগে থেকেই খেলাপি ঋণের চাপ, তারল্য সংকট, তার ওপর ব্যবসা বাণিজ্যের অবনতির কারণে করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবে তাদের ব্যবসা খাদের কিনারে। ব্যয় কমানো ছাড়া তাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই। বেতন না কমালে ছাঁটাই করতে হবে।

বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলছেন, ‘বড় প্রতিষ্ঠানগুলো হয়তো লোক ছাঁটাই করছে না, কিন্তু ছোট বা মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু অনেক কর্মী ছাঁটাই করছে। এখন ডেভেলপমেন্ট সেক্টর, এনজিও বা ই-কমার্স কোম্পানি ছাড়া আর কেউ এখন কর্মী নিয়োগ করছে না।’

বাংলাদেশের একটি বৃহৎ বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক অমিত বণিক বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘করোনাভাইরাসের ক্ষতি তো সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপরেই পড়েছে, আমাদের ওপরেও পড়েছে। আগের তুলনায় ব্যবসা অনেক কমে গেছে।’

‘যেহেতু আমাদের ব্যবসাটা আগের তুলনায় অনেক কমে আসছে, তাই নতুন করে কর্মী নিয়োগ আপাতত আগের মতো আর হচ্ছে না। বরং কাউকে কাউকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। কর্মী নিতে হলে, বেতনভাতা দিতে হলে সেজন্য তো ব্যবসা করতে হবে, আয় করতে হবে। অর্থনৈতিক অবস্থা যদি ঠিক না হয়, ব্যবসা যদি ভালো না হয়, তাহলে তো আর কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই নতুন করে কর্মী নেয়া সম্ভব হয় না।’

তিনি মনে করেন, করোনাভাইরাসের মন্দার কারণে আপাতত বেশ কিছুদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আর আগের মতো নতুন কর্মী নিয়োগ করতে পারবে না। কবে থেকে তারা আবার সেটা চালু করতে পারবে, সেটাও বলা যাবে না।

একাধিক প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, অত্যন্ত জরুরি না হলে তাদের প্রতিষ্ঠানে আপাতত কয়েকমাস কোনো রকম নিয়োগ কার্যক্রম না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে শীর্ষ পর্যায় থেকে।

একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অত্যন্ত জরুরি নয়, এমন কর্মীদের তালিকা চাওয়া হয়েছে মানবসম্পদ বিভাগ থেকে। তিনি জানাচ্ছেন, আপাতত তাদের বেতন কিছুটা কমিয়ে দিয়ে কর্মী ছাঁটাই না করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু মন্দা অব্যাহত থাকলে নতুন নিয়োগ তো বন্ধই, তিনি একপর্যায়ে কর্মী ছাঁটাই শুরু হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

মানবসম্পদ কর্মকর্তাদের একটি অ্যাসোসিয়েশন, গ্রিন এইচআর প্রফেশনাল বাংলাদেশের সভাপতি রওশন আলী বুলবুল বলছেন, ‘নতুন যারা পড়াশোনা শেষ করে বের হলো, তারা একটা বিপদে পড়বেই। কারণ বাংলাদেশের সব ধরণের কোম্পানিই এখন সংকটে আছে। যারা বর্তমানে চাকরিতে আছে, তাদের অনেকে চাকরিহীন হয়ে যাচ্ছে। তাদের সাথে এসে চাকরির লড়াই করতে হবে নতুন আসা ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটদের।’

‘সরকারের প্রতিবছর অনেকগুলো সার্কুলার থাকে। এই বছর ছয়মাস হয়ে গেল, সরকারি কিন্তু কোন নিয়োগ নেই। আবার বেসরকারি খাতে পুরোটাই বন্ধ আছে। যারা চালু আছে, তারাও সীমিত লোক নিয়ে কাজ করছে। ফলে নতুন করে লোকবল নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই।’

দীর্ঘায়িত হতে পারে বেকারত্বের সংকট
করোনাভাইরাস মহামারি কবে শেষ হবে, তা এখনো সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হচ্ছে না।

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, মহামারির কারণে আর্থিক মন্দা বহাল থাকবে আরো কিছুদিন। যার প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পড়বে চাকরির বাজারেও।

আইএলও’র একটি প্রতিবেদনে বলছে যে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এই বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে আগামী তিন মাসের মধ্যে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ তাদের পূর্ণকালীন চাকরি হারাতে যাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের পূর্ণ বা খণ্ডকালীন মোট কর্মশক্তির প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজনের পেশা কোনো না কোনভাবে কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ক্ষতির শিকার বড় একটি অংশ তরুণ-তরুণীরা।

আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেছেন, জরুরিভিত্তিতে তরুণদের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু করা না গেলে এই ক্ষতির জের টানতে হতে পারে পরবর্তী কয়েক দশক ধরে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের প্রধান নির্বাহী ড. ফাহমিদা খাতুন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, নতুন চাকরি তো নেই, যারা ছিল, তাদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। তার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে তরুণদের ওপর। যতদিন পর্যন্ত অর্থনীতি ঠিক না হবে, ততদিন তাদের সবার শ্রমবাজারে প্রবেশ করাটা কঠিন হবে।

‘এমনকি করোনা পরবর্তী সময়েও যেসব কাজের সৃষ্টি হবে, সেগুলোর ধরণ কিন্তু অন্যরকম হবে। এখন যেমন বেশিরভাগ কাজকর্ম ঘরে বসে হচ্ছে। ফলে ডিজিটাল বা আইটিবেজড কাজ বেশি হবে।’

‘ফলে আগের গতানুগতিক শিক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়া যাবে না। বাজার উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ, সেই সাথে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার দরকার হবে।’

সেই সাথে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, যুবকদের এই সমস্যা ও সংকটের ব্যাপারে এখনি গুরুত্ব দেয়া শুরু করা উচিত।

‘দীর্ঘদিন শ্রমবাজারের বাইরে অনেকদিন থাকলে তাদের মধ্যে হতাশার জন্ম নেবে, সামাজিক একটা প্রভাব তৈরি করবে। এর ফলে যে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, তাই নয়, এর ফলে সমাজের ওপরেও সামগ্রিকভাবে একটা প্রভাব পড়বে।’

বিকল্প কী
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা গত কয়েক বছরের মধ্যে পড়াশোনা শেষ করেছেন, নতুন চাকরির চেষ্টা করছেন, তাদের উচিত হবে শুধুমাত্র কাঙ্ক্ষিত চাকরির জন্য বসে না থেকে যা পাওয়া যায়, সেটা দিয়েই কর্মজীবন শুরু করা।

বিডিজবসের ফাহিম মাশরুর বলছেন, ‘ট্রাডিশনাল চাকরি অনেক কমে যাবে। সবাই যদি সরকারি, বড় প্রতিষ্ঠানে বা অফিসিয়াল চাকরির খোঁজেন, তাহলে হবে না। যেকোনো ধরণের চাকরি পেলেই সেটা শুরু করে দিতে হবে।’

গ্রীন এইচআর প্রফেশনালের রওশন আলী বুলবুল বলছেন, নতুন গ্র্যাজুয়েটদের প্রচলিত শিক্ষার ওপর নির্ভর করে না থেকে তাদের কোয়ালিটি বৃদ্ধি করতে হবে।

‘বেকার থাকার চেয়ে বেগার খাটা ভালো। এই দুঃসময়ে বসে না থাকে, যা পান, তাই নিয়ে শুরু করে দিন, অভিজ্ঞতা হোক। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অন্য চাকরির জন্য চেষ্টা করতে পারেন।’

সূত্র : বিবিসি

মৃত্যুর পরের কথা ভেবে মিডিয়া ছেড়ে ইবাদতে অ্যানি খান

‘দু’মিনিট পরে আমি বাঁচবো কিনা জানি না। মৃত্যুর পরে অনন্তকালের জন্য আমি কি সঞ্চয় করলাম? এ সব চিন্তা-ভাবনা মিলিয়ে আমি আর মিডিয়ায় ফিরতে চাইছি না। এজন্য কেউ আমাকে ভণ্ড বলতে পারেন, খারাপ বলতে পারেন। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার রিয়ালাইজেশনগুলো কেমন, সেটা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।’

ফেসবুক লাইভে এসে এই কথাগুলো বলছিলেন মিডিয়াতে কাজ করা মডেল ও অভিনেত্রী অ্যানি খান। সম্প্রতি তিনি মিডিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

শিশুশিল্পী হিসেবে মিডিয়ায় কাজ শুরু করেছিলেন অ্যানি খান। এ অঙ্গনে প্রায় তার ২৩ বছরের পথ চলা।

শোবিজ জগত ছেড়ে দেওয়া অ্যানি খান বলেন, ‘আল্লাহ যেন আমাকে আর কাজে না ফেরান। ঘরে থাকবো, ইবাদত করবো। আল্লাহ চাইলে সব কিছুই সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘গত বছর থেকেই মনে হচ্ছিল মিডিয়া থেকে দূরে সরে যাবো। জানুয়ারির ২৬ তারিখ থেকে নিজের মধ্যে সিদ্ধান্তটা বেশি করে নাড়া দিতে থাকে। মার্চের ১৯ তারিখ শেষবার শুটিং করেছি। তারপর তো করোনায় সবকিছু বন্ধ হলো। কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মিডিয়া ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেইনি। এ সিদ্ধান্ত আমার ব্যক্তিগত। কারণ মৃত্যুর পর আমার হিসেব আমাকেই দিতে হবে। সেই আত্ম উপলব্ধি থেকেই আমি মিডিয়ার কাজ থেকে সরে যাচ্ছি।’

মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছেন উল্লেখ করে অ্যানি খান বলেন, ‘শৈশব থেকেই টিভিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতাম। ২০১৫ সাল পর্যন্ত অভিনয়ে অনিয়মিত ছিলাম। তারপর থেকে এ পর্যন্ত টানা নাটকে কাজ করে মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। এবার একেবারেই মিডিয়ার কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত মৃত্যুর খবরগুলো যেভাবে শুনছি, আগে সেভাবে শোনা যেতো না। বাবাকে হারালাম। চোখের সামনে কাছের মানুষগুলো ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এসব কারণে ধর্মীয়বোধ জাগ্রত হয়েছে।’

বর্তমানে অনেক কিছুতে বিধিনিষেধ চলে আসছে উল্লেখ করে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি একজন মুসলিম। এ পরিচয়ে ধর্মীয় বিষয়গুলো যতোই জানার চেষ্টা করছি, ততই ধর্ম বিষয়ক জ্ঞান বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘চলমান করোনাকালে দেখছি, অনেকেরই সময় কাটছে না। কিন্তু আমি নিজে কোনো সময়ই পাচ্ছি না। জীবনে সময় এতো স্বল্প অনুভব করছি যে, মনে হচ্ছে দিনরাত ৪৮ ঘণ্টা হলে ভালো হতো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছি, নফল নামাজ পড়ছি, কোরআন হাদিস পড়ছি। এতদিন অনেক কিছু থেকে পিছিয়ে ছিলাম। সবকিছু আমাকে শিখতে হচ্ছে।’

বিয়ে প্রসঙ্গে অ্যানি খান বলেন, ‘ঢাকায় আমাদের থাকার একটা জায়গা আছে। বেঁচে থাকলে আগামী বছর বিয়ে করে ফেলবো।’

 

মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে কি শিশুতে করোনাভাইরাস ছড়ায়?

মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে কি শিশুতে করোনাভাইরাস ছড়ায়?


ডা. মারুফ রায়হান খান


১. মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে কি শিশুতে করোনাভাইরাস ছড়ায়?

উত্তর : এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোথাও কোনো মায়ের বুকের দুধে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। বুকের দুধের মাধ্যমে এটি ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

২. এই করোনা মহামারীর সময়েও কি মায়েদের শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত?

উত্তর : অবশ্যই উচিত৷ শিশুর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবার জন্যেই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের দুধে শিশুর প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে একদম সঠিক মাত্রায়। তার সারাজীবনের সুস্থতা নির্ভর করে বুকের দুধের ওপর। তার বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করে এটি। বুকের দুধে থাকা এন্টিবডি নানা ধরনের ইনফেকশানের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। বুকের দুধের মাধ্যমে পাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তেও শিশুকে সাহায্য করবে।

৩. চারিদিকে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং-এর কথা বলা হচ্ছে, এখনও কি নবজাতককে জন্মের পরপর মায়ের বুকে ‘স্কিন টু স্কিন’ কেয়ারের জন্য দিতে হবে?

উত্তর : হ্যাঁ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে এটি তাদের শরীরে নানামুখী উপকার করে নবজাতক মৃত্যুর হার অনেক কমিয়ে দেয়৷ তাছাড়া মায়ের বুকে দ্রুত দুধ আসাকেও এটি ত্বরান্বিত করে।

৪. যদি মা নিজে কোভিডে আক্রান্ত হন বা কোভিডের লক্ষণ থাকে, তাহলে কি তিনি বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন?

উত্তর : হ্যাঁ, পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে বিশেষ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

৫. কী কী সতর্কতা?

– শিশুকে দুধ খাওয়াবার আগে এবং পরে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

– মা একটি মাস্ক পরে নিয়ে দুধ খাওয়াবেন। মাস্কটি ভিজে গেলে সেটি নির্ধারিত স্থানে ফেলে দিয়ে অন্য একটি মাস্ক পরতে হবে। একটি ব্যবহৃত মাস্ক পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না। মাস্কের সামনের দিকে হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে না

– দুধ খাওয়াবার সময় হাঁচি-কাশি না দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। হাঁচি-কাশি এলে রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করে নির্ধারিত স্থানে ফেলতে হবে।

– মায়ের পরিধেয় কাপড়চোপড় পরিষ্কার থাকতে হবে।

– মা তার আশেপাশে যা কিছু স্পর্শ করবে তা নিয়মিত পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।

৬. কোভিডে আক্রান্ত বা লক্ষণযুক্ত মায়ের কি প্রতিবার দুধ পান করাবার আগে স্তন ধুয়ে নিতে হবে?

উত্তর : যদি তিনি উন্মুক্ত বুকে বা স্তনে হাঁচি-কাশি দিয়ে থাকেন, তাহলে বুকের দুধ পান করাবার আগে অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে সাবান-পানি দিয়ে স্তন ধুয়ে নিতে হবে৷

এমনিতে প্রতিবার বুকের দুধ পান করাবার আগে স্তন ধুয়ে নেয়া জরুরি না।

৭. যদি এমন হয় কোভিডে আক্রান্ত বা লক্ষণযুক্ত মায়ের কাছে কোনো মাস্ক নেই তবুও কি তিনি বুকের দুধ পান করাবেন?

উত্তর : আসলে বুকের দুধ এতো বেশি জরুরি যে, এ অবস্থাতেও মা শিশুকে বুকের দুধ পান করাবেন। তবে অন্যান্য সতর্কতাগুলো অবশ্যই মেনে চলার চেষ্টা করবেন।

৮. শিশুদের কোভিডে আক্রান্ত হবার হার কেমন?

উত্তর : এখন পর্যন্ত কোভিডে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

৯. তবুও যদি আক্রান্ত হয়ে যায় তখন?

উত্তর : আশার কথাটি হচ্ছে এখন পর্যন্ত যেসব শিশুরা আক্রান্ত হয়েছে তাদের বেশিরভাগেরই কোনো লক্ষণ ছিল না অথবা সাধারণ কিছু লক্ষণ ছিল। সুস্থ হয়ে ওঠার হার অনেক বেশি৷

১০. যদি মা এতোটা অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তিনি বুকের দুধ পান করাতে পারছেন না, তখন করণীয় কী?

উত্তর : সেক্ষেত্রে ‘এক্সপ্রেসড ব্রেস্টমিল্ক’ খাওয়ানো যেতে পারে শিশুকে। মা হাত দিয়ে চেপে বা পাম্পের মাধ্যমে একটি কাপে/বাটিতে দুধ সংগ্রহ করে দেবেন। অন্য একজন সুস্থ ব্যক্তি শিশুকে সে দুধটুকু খাইয়ে দেবে। তবে হাত, পাম্প, কাপ, চামচ যা যা ব্যবহার করা হবে সবই খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

ডা. মারুফ রায়হান খান
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
বসুন্ধরা কোভিড ডেডিকেটেড হসপিটাল

#প্রশ্নে_প্রশ্নে_সহজ_করে -৭

ইসলামকে গভীরভাবে উপলব্ধি, অভিনয় ছাড়লেন সুজানা

অভিনয় থেকে সরে দাঁড়ালেন মডেল ও অভিনেত্রী সুজানা জাফর। গত কয়েক বছর অভিনয়ে অনিয়মিত ছিলেন তিনি। কিন্তু এবার ঘোষণা দিয়েই অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুজানা।

গত শবিবার রাতে দুবাই থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। সুজানা বলেছেন, ‘করোনা না এলে জীবনের উদ্দেশ্য কী? তা হয়তো সঠিকভাবে জানাই হতো না। গত চার মাসে ইসলামকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছি। জেনেছি, এটাই আসল জীবন। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মিডিয়ায় আর কাজ করব না। আমার পরিবারও চায় না এখানে কাজ করি। এখন থেকে বুটিক ব্যবসা আর ধর্মকর্ম নিয়েই থাকতে চাই। সমাজের কিছু অবহেলিত মানুষের দায়িত্ব নিয়েছি। সমাজসেবামূলক কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গেও আছি। সেগুলোতেও সময় দিতে চাই। সব সময় সাধারণ মানুষ হয়ে থাকতে চেয়েছি। ভক্তরা যে ভালোবাসা দিয়েছেন সেটা মাথায় নিয়েই বাকি জীবন পার করব। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।’

সুজানা এখন দুবাইয়ে স্বজনদের সঙ্গে রয়েছেন। সাময়িক সময়ের জন্য গেলেও সেখানে লকডাউনে আটকা পড়েন তিনি। দুবাই থেকে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন সুজানা। সহযোগিতা করেছেন আরব আমিরাতের প্রবাসী বাংলাদেশিদের। ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে অসংখ্য বিজ্ঞাপন, মিউজিক ভিডিও, নাটকে কাজ করছেন সুজানা। তিন বছর আগে তিনি বুটিকের ব্যবসা শুরু করেন। ওই সময় জানিয়েছিলেন বছরে দু-একটির বেশি কাজ করবেন না। তাই গত দুই বছরে মাত্র একটি নাটক ও মিউজিক ভিডিও করেছেন। এবার পুরোপুরিই মিডিয়া ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন সুজানা।

করোনা এড়াতে ঘরে-বাইরে সতর্ক থাকতে কর্মজীবীরা কী করবেন

বেশিরভাগ জায়গা থেকে লকডাউন উঠে গেছে। গণপরিবহনও চালু হয়েছে। এবার ফিরতে হবে কাজে। যদিও কমেনি করোনার সংক্রমণ। তাই রাস্তায় বের হবার আগে আগে করোনা এড়াতে কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। যেমন-

১. রাস্তায় বের হবার আগে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। কর্মক্ষেত্রে যাবার আগে এটি পরা খুবই জরুরি। অনেকেরই অভ্যেস থাকে বারবার মুখে হাত দেওয়া, মোবাইলের মাউথপিস ঠোঁটের কাছে ধরে কথা বলা। মাস্ক পরা থাকলে সচেতন না থাকলেও এ সব থেকে বিরত হবেন। নোংরা হাত মুখে না গেলে অনেকটাই নিরাপদ থাকা যাবে। পাশাপাশি কেউ করোনায় আক্রান্ত হলেও তার হাঁচি, কাশি থেকে সংক্রমণের ভয় থাকবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু মাস্ক পরলেই হবে না, এর ব্যবহারবিধিটা জানাটাও জরুরি। তারা বলছেন, সুতির কাপড়ের মাস্ক পরলে মোটা কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। এটি ব্যবহারের পর প্রতিদিন ধুতে হবে। তা না হলে তিন -চারদিন পর একই মাস্ক ব্যবহার করা যাবে। মাস্ক পরার পরে তাতে আর হাত দেওয়া যাবে না।

বিশেষজ্ঞদের বলছেন, গন্তব্যে পৌঁছে মাস্ক খুলে রাখতে চাইলে ছোট ব্যাগ সঙ্গে রাখুন। মাস্ক খুলে টেবিলের উপরে ফেলে না রেখে ব্যাগে ভরে রাখুন। ফেরার সময়ে আবার পরে নিন। মাস্ক খোলা ও পরার আগে অবশ্যই হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

২. অনেকেরই কথায় কথায় চুলে হাত দেওয়ার প্রবণতা থাকে। অনেকে আবার চোখ কচলান। গ্লাভস পরে থাকলে চট করে চোখে বা মুখে হাত যাবে না। এ কারণে বাইরে বের হলে গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন। তবে গ্লাভস পরে বাইরের সব কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে এটা পরিষ্কার করতে হবে। ধোয়া গেলে সাবান পানিতে ধুয়ে নিয়ে আবার ব্যবহার করতে পারেন।

৩. রাস্তাঘাটে, বাজারে, কর্মক্ষেত্র সব জায়গাতেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলুন। অফিসে বসার ব্যবস্থা পাশাপাশি হলে চেয়ারের মাঝের ব্যবধান বাড়িয়ে নিন।

৪. বেশির ভাগ জিনিস হাত দিয়ে না ধরাই ভালো। যেমন- হাত দিয়ে কোনও দরজা না খুলে, পা দিয়ে ঠেলে খুলতে পারেন। একান্তই স্পর্শ করতে হলে আঙুলের মাথা দিয়ে করুন। পরে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন। কনুই বা হাতের উল্টো দিক দিয়ে রাস্তার জিনিস ধরবেন না। পাবলিক টয়লেটে ব্যবহারে সাবধান থাকুন। বেসিনের কল সাবান দিয়ে ধুয়ে ব্যবহার করুন।

৫. কর্মক্ষেত্রে অনেকেই সহকর্মীর সঙ্গে খাবার ভাগ করে খান। আপাতত তা বন্ধ করুন। জন্মদিন উপলক্ষে একই কেক কেটে সেই টুকরো সকলে খাওয়ার অভ্যাসও বদলান।

৬. কর্মক্ষেত্রে বা গন্তব্যে পৌঁছনোর পরে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। ব্যাগে রাখতে হবে ৬০-৭০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার। যদি কাজের জায়গায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে নিজের কাছে রাখা হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করুন। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করবেন।

প্রত্যেকের কাজের জায়গা আলাদা, কাজের ধরন আলাদা।তাই কর্মক্ষেত্রের সব জিনিস স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে কি না সে দিকেও নজর রাখুন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণে এড়াতে নিজেকেও কিছু দায়িত্ব নিতে হবে । এজন্য পাশের মানুষটির করোনা হয়েছে কি না যেমন খেয়াল রাখবেন, তেমনই নিজের শরীরের দিকেও চোখ রাখুন। নিজের বা পরিবারের কারো জ্বর, কাশি দেখা দিলে হোম কোয়ারেইন্টাইনের উদ্যোগ নিতে হবে।

করোনা এড়াতে কর্মক্ষেত্রে সতর্কতা গ্রহণের পাশাপাশি বাড়ি ফিরেও কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। যেমন-

১. বাইরের ব্যাগ নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরি। কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করলে ধুয়ে নিতে পারবেন। চামড়ার ব্যাগ হলে বাড়িতে ফিরে ব্যাগটা এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে কারও হাত পড়বে না।

২. জুতা মোজা খুলে সোজা বাথরুমে চলে যান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময় বাড়ির দরজায়, সুইচে -কোথাও দেবেন না। বাড়ির লোককেই বাড়ির ও বাথরুমের দরজা খুলে দিতে বলুন। হাত ধুয়ে মাস্ক ও চশমা খুলে পরিষ্কার করুন। এরপর পোশাক খুলে বালতিতে সাবান পানিতে ভিজিয়ে দিন। জামাকাপড় কেচে গরম পানিতে ধুয়ে নিন। রোদে জামাকাপড়গুলো শুকিয়ে নিন।

৩. সাবান মেখে, শ্যাম্পু দিয়ে গোসল সেরে নিন। বড় চুল হলে স্কার্ফ বেঁধে বেরোতে পারেন। পায়ের তলাও সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।

৪. মোবাইলটাও ভালো করে স্যানিটাইজ় করে নিতে হবে।

গণপরিবহন ব্যবহারে এবং বাইরে আরো কিছু সতর্কতা মেনে চলবেন। যেমন-

১. ভিড় যানবাহন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। এজন্য কিছুটা সময় নিয়ে বের হোন। একই রুটে হলে অফিসের কয়েক জন একটা গাড়ির ব্যবস্থাও করতে পারেন। তবে পিছনের সিটে দু’জনের বেশি বসবেন না।

২. অফিসের ল্যান্ডফোন কম ব্যবহার করাই ভালো। রিসিভার বেশি মুখের কাছে নিয়ে কথা বলবেন না। ফোনের কাজ শেষ হলে মাউথপিস স্যানিটাইজ় করে ব্যবহার করুন।

৩. রাস্তাঘাটে বাসে-গণপরিবহনে উঠলে অনেক জায়গায় হাত পড়ে। তাই মোবাইল ব্যাগে রাখুন। গন্তব্যে পৌঁছে হাত ধুয়ে মোবাইল বার করে চেক করে নিন।

৪. এটিএম থেকে টাকা তোলার পরে, সেই টাকা ও কার্ড মানিব্যাগের একটি আলাদা পকেটে রাখুন। হাতে স্যানিটাউজার ব্যবহার করুন।

করোনার সংক্রমণ কমাতে খুলে রাখুন ঘরের জানালা

গোটা বিশ্বে এখনও চলছে করোনাভাইরাসের দাপট। নানা ভাবে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে এই ভাইরাসে। এর গতিবিধি নিয়ে গবেষকরা নিয়মিতই জানাচ্ছেন নতুন নতুন তথ্য। তাদের মতে, যেখানে বাতাস থাকে সেখানে করোনা সংক্রমণের সম্ভবনা কম। এ কারণে গাড়িতে এসি না চালিয়ে ভ্রমণ করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

একই কথা তারা জানিয়েছেন ঘরের ব্যপারেও । গবেষকরা বলছেন,বাড়িতে যদি যথেষ্ট পরিমাণ আলো- বাতাস থাকে তাহলেই করোনা সংক্রমণের পরিমাণ কমতে পারে। আর হাওয়া বাতাস না চলাচল করলে বায়ুবাহিত করোনা সংক্রমণের পরিমাণ বাড়তে পারে। এ কারণে করোনা এড়াতে জানালা খুলে রাখার কথা বলেছেন তারা।

একটি গবেষণায় জানা গেছে, করোনাভাইরাসের আকৃতি ১০০ মাইক্রোনের থেকে কম কম। এটি হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর মধ্যে পানি, লবণ ইত্যাদি নানারকম উপাদান থাকে। কিন্তু এটি থেকে পানি বাস্প হয়ে গেলে অন্য উপাদান গুলি হাল্কা হয়ে যায় এবং সেটি বাতাসে উড়ে বেড়ানোর যোগ্য হয়ে ওঠে। এ কারণে যদি একটি ঘরে দরজা-জানালা বন্ধ করা থাকে, তাহলে ঘরের মধ্যে সহজে বাতাসে ঘুরে বেড়াতে পারে ভাইরাস। কিন্তু হাওয়া চলাচল করলে সেটি বাতাসের সঙ্গে ভেসে যেতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, অনেক সময়েই যান্ত্রিক ভেন্টিলেশনের ফলে ভাইরাস ঘরের মধ্যেই থেকে যেতে পারে। সেই কারণেই প্রাকৃতিক ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন। জানালা-দরজা খুলে দিলেই সেই প্রাকৃতিক ভেন্টিলেশন সহজে পাওয়া যাবে।

স্বর্ণের কালিতে হাতে পুরো কুরআন লিখলেন ইরানি নারী মরিয়ম

স্বর্ণের কালি দিয়ে পুরো কুরআন হাতে লিখলেন ইরানি নারী ক্যালিগ্রাফার মরিয়ম কাজেমি সাভাদকুহি। ক্যালিগ্রাফের নখশি লিপীতে তিনি পবিত্র কুরআনের একটি পাণ্ডুলিপি লিপিবদ্ধের কাজ সম্পন্ন করেছেন। বিশ্বাস করা হয়, মরিয়ম মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী ক্যালিগ্রাফার, যিনি পুরো কুরআন হাতে লিখেছেন।

ফারসি সংবাদ মাধ্যম হোনারঅনলাইনকে তিনি বলেন, ‘আমি পবিত্র কুরআনের পাণ্ডুলিপিটি সম্পন্ন করতে প্রায় একছর যাবত দিনের বেশিরভাগ সময় কাজ করেছি। পুরো কাজ আমি নিজেই করেছি। তবে বাঁধাইয়ের কাজ করেছেন আলি বেহদানি।’

শনিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫০ সেন্টিমিটার প্রস্থ ও ৭০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যর পাণ্ডলিপিটির প্রতিটি পৃষ্ঠা জাফরান দিয়ে রাঙানো হয়েছে। বইটি বাঁধাইয়ে অত্যন্ত মূল্যবান কাভার ব্যবহার করা হয়েছে, যেটি তৈরি করা হয়েছে ইরানের ঐতিহ্যবাহী ‘গোল-ও-মোরঘ’ চিত্রকলার ব্যবহারে। এটি ফারসি চিত্রকলার একটি অনন্য শৈলী যেখানে বিভিন্ন রঙে পাখি ও পুষ্পশোভিত নকশা চিত্রায়িত করা হয়।

কাজেমি জানান, ক্যালিগ্রাফের নখশি লিপী খুবই প্রাচুর্যপূর্ণ একটি লিপী। সে কারণে তিনি এই লিপীটিকে বেছে নেন। কুরআন লিপিবদ্ধে তিনি ১৮শতকের ক্যালিগ্রাফি মাস্টার আহমাদ নেইরিজির ক্যালিগ্রাফি শৈলী ব্যবহার করেছেন। স্বর্ণের প্রলেপের ব্যবহারে প্রতিটি পৃষ্ঠা খোদাই-করা আলোকসজ্জা দিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি আমার শৈল্পিক পেশায় একটি মূল্যবান ও চিরস্থায়ী শিল্পকর্মের অভাববোধ করছিলাম। আমি ভাবছিলাম আমাকে অবশ্যই এমন কিছু লিপিপদ্ধ করতে হবে যা আমাকে শান্তি ও প্রশান্তি দেবে। তাই কুরআন লিপিবদ্ধ করা আমার জন্য ছিল বিশাল তাৎপর্যের। আমি বিশ্বাস করি, আমার জীবনে এর আধ্যাত্মিক প্রভাব দেখতে পাবো।

কাজেমি ১৯৯০ সালে উত্তর ইরানে অবস্থিত ইরান ক্যালিগ্রাফার অ্যাসোসিয়েশনের চালাস শাখায় ক্যালিগ্রাফি শেখার কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি তেহরানে ক্যালিগ্রাফি অঙ্কনের কাজ অব্যাহত রাখেন।

ইরানি এই নারী ক্যালিগ্রাফার বলেন, আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে ক্যালিগ্রাফার হিসেবে কাজ করে আসছি। এপর্যন্ত আমি ক্যালিগ্রাফি এবং ক্যালিগ্রাফিক পেইন্টিংয়ের ওপর বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি।

ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কেরমানশাহের বাসিন্দা ফারিবা মাকসুদি প্রথম নারী ক্যালিগ্রাফার হিসেবে বিবেচিত হন যিনি ক্যালিগ্রাফির নাস্তালিক লিপীতে পুরো কুরআন লিখেছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি মুসলিম বিশ্বের প্রথম নারী ক্যালিগ্রাফার হিসেবে সম্মাননা লাভ করেন।

সূত্র: তেহরান টাইমস।

রাজনৈতিক দলের কমিটিতে ৩৩% নারী রাখার শর্ত বদলের ইঙ্গিত

চলতি বছরের মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব থাকার আইনি বাধ্যবাধকতাকে ‘অবাস্তব’ ও ‘অকার্যকর’ বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশনের কোনো কোনো সদস্য। এ কারণে ২০০৮ সালে বিগত শামসুল হুদা কমিশনের করা এই আইনি বাধ্যবাধকতাটি বাতিল বা পরিবর্তন করার চিন্তা করছে বর্তমান নূরুল হুদা কমিশন।

কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) আইনে থাকা রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের অংশটিকে নিয়ে আলাদা আইন করার কথা ভাবছে। সে ক্ষেত্রে কমিশনকে আরপিওতেও পরিবর্তন আনতে হবে। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, পুরো প্রক্রিয়া এখনো খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। গত সোমবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিষয়টি তোলা হলেও এ নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার টেলিফোনে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর বলেন, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কমিশনের সভায় নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। সভায় একজন বলেছেন, এ বিধানের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। তা ছাড়া যেসব বিষয় যেমন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিষয়টিও কোনো দলই মানছে না, এ বিষয়ে আলোচনা হবে। মো. আলমগীর বলেন, নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে কমিশন রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের মতামত নিতে ডাকতে পারে। আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় আছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বেশ কিছু সংশোধন আনা হয়। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এই অধ্যাদেশ সংসদে পাস করে।

২০০৮ সালে ভোটে অংশ নিতে দলগুলোর নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। ওই সময় নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলো প্রতিশ্রুতি করে, ২০২০ সালের মধ্যে দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখবে তারা। অবশ্য দলগুলো এই শর্ত বাতিলের দাবি না জানালেও কমিশনই মনে করছে, শর্ত অবাস্তব ও অকার্যকর।

২০১৮ সালে দলে এক-তৃতীয়াংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব রাখার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান জানতে চেয়ে ইসির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে ৪০টি দলের মধ্যে ১০টি দল কমিটিতে নারী নেতৃত্বের বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে কমিশনকে জানায়। এর মধ্যে একটিমাত্র দল গণফ্রন্ট তাদের নেতৃত্বে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি আনতে পেরেছিল। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কমিটিতে ৮১ জনের ১৯ জন নারী। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৫ শতাংশ এবং জাতীয় পার্টির কমিটিতে ২০ শতাংশ নারী রয়েছেন।

এ বিষয়ে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘শর্ত শিথিল করার আলোচনা হচ্ছে বলে আমিও শুনেছি। যদি এ শর্ত শিথিল করা হয় তবে তা হবে অবিশ্বাস্য। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিধান মানতে বাধ্য করার দায়িত্ব ছিল নির্বাচন কমিশনের। সে ক্ষমতাও আছে কমিশনের। কিন্তু রাজনৈতিক দল মানছে না, মানতে চাচ্ছে না এ ধরনের অজুহাতে কমিশন এ শর্ত থেকে সরে আসতে পারে না।’

এই সংবাদটি ০৩ জুন ২০২০ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত

জেনে নিন ঘরে মাস্ক বানানোর সহজ পদ্ধতি, দেখুন ভিডিওসহ

সারা বিশ্ব জুড়েই ছড়িয়েছে করোনা আতঙ্ক। এর মধ্যে মাস্কের সংকট দেখা যাচ্ছে ওষুধের দোকানে। এই অবস্থায় চাইলে বাড়িতেই বানিয়ে নেয়া যায় মাস্ক।

শুধু করোনার জীবাণু আটকাবে তাই-ই নয়, বাইরের দূষণ, ধুলাবালি আর নানা রোগের জীবাণু থেকে বাঁচতেও ছোট-বড় সবার প্রতিদিনই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।

জেনে নিন ঘরে মাস্ক বানানোর সহজ পদ্ধতি:

– চার ইঞ্চি করে দুই টুকরো সুতির কাপড় নিনি

– একটির সাথে আরেকটি সেলাই করুন

– সেলাই করার সময় ওপরের ছবিরমতো আধা ইঞ্চি পর পর ভাঁজ করে নিন

– এবার দুই পাশে রাবার লাগিয়ে নিন কান পর্যন্ত

এভাবেই তৈরি হয়ে গেল আপনার মাস্ক।

বাড়ির সবার জন্য একবারে বেশি করে তৈরি করে রাখুন, এগুলো ব্যবহার করলে সব সময়ই জীবাণু থেকে নিরাপদে থাকতে পারবেন। সূত্র: ইউএনবি।

 

মায়ের দুধে করোনা সংক্রমণ হয় না

যথাযথভাবে মায়েরা শিশুকে দুধ খাওয়ালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয় না। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস বিষয়ে নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘যে মায়েরা সন্তানকে দুগ্ধদান করে থাকেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে, দুগ্ধদানের মাধ্যমে কোন ভাইরাস ট্রান্সমিট বা ভাইরাসের সংক্রমণ হয় না। কাজেই আপনারা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে মায়েরা মুখে মাস্ক পরে বুকের দুধ দিতে পারেন। দেয়ার আগে স্তন ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেবেন। হাত ভালোভাবে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নেবেন। হাত ও স্তন পরিষ্কারের পরই বাচ্চাকে দুগ্ধ দান করতে পারেন।’

নাসিমা সুলতানা আরও বলেন, ‘আপনারা সবাই স্বাস্থ্য নিয়মগুলো মেনে চলুন। যারা বয়োজ্যেষ্ঠ আছেন, যাদের অন্যান্য অসুখ আছে যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের, ফুসফুসের, কিডনির অসুখ বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি অসুখে যারা ভুগছেন, তারা অত্যন্ত সাবধানে থাকবেন। পরিবারের সদস্যরাও যাদের এই সমস্যাগুলো আছে, তাদের দিকে খেয়াল রাখবেন।’

সবাইকে মানসিকভাবে উজ্জীবিত থাকার পরামর্শ দিয়ে নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘শিশুরাও যেন এ নিয়মগুলো মেনে চলতে অভ্যস্ত হয়, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন। সবক্ষেত্রেই মানসিকভাবে উজ্জীবিত থাকলে, আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের মনোবল দৃঢ় রাখলে, যিনি আক্রান্ত হননি, তিনিও মানসিকভাবে উজ্জীবিত থাকবেন। মানসিক মনোবল দৃঢ় রাখা ও মানসিকভাবে উজ্জীবিত থাকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়ার একটি মাপকাঠি।’

৬ মাস লকডাউনে ৭০ লাখ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের শঙ্কা

 

 

করোনাভাইরাসের থাবায় বিপর্যস্ত গোটা দুনিয়া। এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশে দেশে চলছে লকডাউন-কারফিউ। মুখ থুবড়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। ঘরবন্দী হওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে মানুষ। উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়বে। ঝুঁকিতে পড়বে নারী ও মেয়েশিশুর প্রজননস্বাস্থ্য। এছাড়াও এ লকডাউন ছয় মাস অব্যাহত থাকলে ৭০ লাখ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে ‘ইমপ্যাক্ট অব দ্য কোভিড ১৯ পেনডেমিক অন ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যান্ড এনডিং জেন্ডার বেজড ভায়োলেন্স ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন অ্যান্ড চাইল্ড ম্যারেজ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর কারণে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ১১৪টি দেশে প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ নারী আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং অনিরাপদ গর্ভপাতের হার বাড়বে। ধারণা করা হচ্ছে, করোনাভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন দেশের বিদ্যমান লকডাউন ছয় মাস অব্যাহত থাকলে বিশ্বে অতিরিক্ত ৭০ লাখ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং অতিরিক্ত ৩ কোটি ১০ লাখ সহিংসতার ঘটনা ঘটবে।

ইউএনএফপিএ বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশে পরিবার পরিকল্পনার চাহিদা পূরণে বাধা, স্বাস্থ্যকর্মীদের সংকট বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যথাযথ সেবাদানে বিঘ্ন ঘটতে পারে। অন্যদিকে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে সেবা নিতে যাওয়া নারীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।

ইউএনএফপিএর হেলথ সিস্টেম স্পেশালিস্ট দেওয়ান মো. ইমদাদুল হক বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ প্রজননক্ষম (১৫-৪৯ বছর) জনসংখ্যা। এই জনসংখ্যার মধ্যে গর্ভধারণ করে ১৫ শতাংশ। এদের মধ্যে গর্ভকালীন জটিলতায় অস্ত্রোপচারে সন্তান জন্ম দিতে হয় ৫ থেকে ১৫ শতাংশকে। তবে দেশের এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে গর্ভকালীন, প্রসবকালীন এবং প্রসব পরবর্তী সেবা নেয়ার হার কমবে। মায়েরা সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে চাইছেন না। আবার যে নারী কোভিড-১৯ আক্রান্ত, তাকে সেবা দেয়া নিয়েও জটিলতা দেখা দিচ্ছে।

করোনাভাইরাসের বিস্তারের ফলে বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে কি না, তা নিয়ে এখনো তেমন কোনো গবেষণা হয়নি। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মহানগর এলাকায় গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিনে ধর্ষণ, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন ও অপহরণের ২৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নয়টি ধর্ষণের, আটটি যৌতুকের জন্য নির্যাতন, পাঁচটি অপহরণ ও ছয়টি যৌন নিপীড়নের মামলা।

ব্র্যাকের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ উদ্যোগের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী বলেন, ‘এই সময়ে বিশেষভাবে নারীর অবস্থা বুঝতে যে জরিপ চালিয়েছি সেখানে দেখেছি, মাস্ক এমনকি সাবানের ব্যবহারেও নারী সমান অধিকার পাচ্ছেন না। ৭০ শতাংশ পুরুষ যেখানে মাস্ক ব্যবহার করছেন, নারীর ক্ষেত্রে তা ৩৫ শতাংশ। অর্থনৈতিক চাপ বেড়েছে, তাই মেয়ের ওপর বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার চাপ বেড়েছে।’ ব্র্যাকের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩২ শতাংশ বলেছেন, এই সময়ে পরিবারে এবং পাড়ায় নারীর প্রতি সহিংসতা আরও বেড়েছে।

ইউএনএফপিএর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাল্যবিবাহ বন্ধের পরিকল্পিত চেষ্টা বিঘ্নিত হবে। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের উপপরিচালক সাবিরা নূপুর জানান, করোনাভাইরাসের বিস্তার থামলে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেখা যাবে মেয়ে শিশুদের স্কুলে উপস্থিতি ছেলে শিশুদের চেয়ে কমে গেছে। এরপর যেকোনো উপায়েই হোক মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। ওয়ার্ল্ড ভিশনের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে ২১টি বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে।

 

কিসের ব্যর্থতায় খুন হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুরা

কিসের ব্যর্থতায় খুন হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুরা


ফাতিমা খান


এস এস সি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে আত্নহত্যা করেছে আটজন শিক্ষার্থী। আমি মনে করি আজকের দিনের সবচেয়ে খারাপ খবর এইটি।

এই শিক্ষার্থীদের মানসিক ভাবে অসুস্থ দাবী করবেন অনেকেই, হয়ত আমিও তাই বলব। কিন্তু ওরা কি আজন্ম অসুস্থ ছিল? তা কিন্তু না। ওদের ফুলের মত মনকে দিনে দিনে অসুস্থ করেছে আমাদের সমাজ যেখানে ভাল রেজাল্ট, কেবলমাত্র ভাল রেজাল্টই গুণাগুণ ও যোগ্যতা যাচাই এর একমাত্র মানদন্ড। এর জন্য তারা প্রতিনিয়ত তিরষ্কৃত হয়, ‘তুলনা’র অসুস্থ প্রতিযোগিতার শিকার হয়। দূর্ভাগ্যবশত, আমরা এখনো সেই আদিম সমাজে বসবাস করি যেখানে মেয়েদের গুণাগুণ বিচার করা হয় এই দেখে যে মাটির চুলায় রান্না করার পর সিলভারের পাতিল ঘষে কে কত ঝা চকচকে করে ফেলতে পারে। ওরা ট্যালেন্ট / মেধার সংগা বুঝবে কেমন করে?
আফসোস যে কোমলপ্রাণ বাচ্চাগুলো এই সমাজেরই বলি।
আমার প্রোফাইলে কাল থেকে আজ পর্যন্ত কাউকেই পেলাম না যাদের পরিবারের কেউ জিপিএ ফাইভের কম স্কোর করেছে। এর তিনটি কারণ হতে পারে –

১. পরীক্ষার্থীদের বেশিরভাগই মানে প্রায় সবাই জিপিএ ফাইভ পেয়েছে।
২. আমার পরিচিত জনদের সবাই সেই লেভেলের ট্যালেন্ট ( Lucky me! 😎)
৩. জিপিএ ফাইভের এই যুগে এর চেয়ে কম স্কোরকারীদের বাবা মা বা অভিভাবকেরা লজ্জিত। সংকোচের কারণে তারা সন্তানদের বা পরিজনদের রেজাল্ট জানাচ্ছেন না।

আমার কাছে তৃতীয়টিই সম্ভাব্য কারণ মনে হচ্ছে।

কিন্তু এর কারণ কি?
পরীক্ষার রেজাল্টই কি মেধা যাচাই এর মানদন্ড?
তাহলে যে পরীক্ষার্থী দুই বছর ছয়জন প্রাইভেট টিউটার এর কোচিং করে ভাল রেজাল্ট করল আর যে কিনা অভাবে, আধপেট খেয়ে, টিউটার ছাড়াই ঘরের গুরুদায়িত্ব গুলো পালন করে কোনরকমে পরীক্ষার খাতায় কলম চালালো – দুজনকে কি এক পাল্লায় বিচার করা যাবে?
অথবা, কারো হয়ত ছবি আঁকার বা গান করার অথবা লেখালেখির যোগ্যতা অসাধারণ, অংক হয়ত তার মাথায় কুলোয় না, সে কি মেধাবী নয়?
আমি মনে করি যা নিজস্ব গূণ তা-ই মেধা, হোক তা স্পোর্টস, আর্ট বা অন্য কোন যোগ্যতা। একে লালন করতে পারলেই একদিন তা সাফল্য হয়ে ধরা দেয়। ঠেলে, ধাক্কায়,চাপ দিয়ে যে ভাল রেজাল্ট করানো হয়, তা নিতান্তই লোকদেখানোর জন্য।

কাল আমার বড় ছেলেকে পড়াতে বসেছি। আমি অবশ্য এই যুগের সবচেয়ে খারাপ মা। পড়াশোনা নিয়ে কখনই পীড়াপীড়ি, চাপাচাপি করিনা, এজন্য অনেক কথা, উপদেশ বাণী প্রতিনিয়ত শুনি। তো যাহোক, ছেলে পড়তে বসে বলছে –
– আম্মু আমি গ্রেইড এইটে, এখনই কেন সবাই ‘ও লেভেল’ এর রেজাল্টের চিন্তা করে?
– এজন্য করে যে তোমার রেজাল্টের উপর গ্রাজুয়েশন লেভেলে ভাল কোন সাবজেক্ট এ চান্স পাওয়া নির্ভর করে।
– ভাল সাবজেক্ট মানে কি?
– মানে ডিম্যান্ডিং সাবজেক্ট, যেটায় পড়লে তুমি লাইফে শাইন করবে, বেটার লাইফ পাবে।
– এই পৃথিবীতে কোনটা ডিম্যান্ডিং না আম্মু? লিটারেচার, হিস্ট্রি, আর্ট এগুলার কি কোন ভ্যালু নাই?
– আছে, তবে কম।
– তাহলে কেউ যদি এসব সাবজেক্টে হাইয়েস্ট ডিগ্রি নেয়, ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করে, ইউনিভার্সিটির টিচার হয়, তার ভ্যালু কি কম?
– না তা না, সেটাও অবশ্যই ভাল। তবে তুমি যদি মোস্ট ডিম্যান্ডিং সাবজেক্ট গুলোতে পড়, কম ইফোর্টে বেটার জব পাবে, ভাল স্যালারি পাবে।
– ব্যাস,এইটুকুই? তাহলে আমি জবই খুঁজব না। আমি আন্টাপ্রিনিওর হব, অন্যকে জব দিব।
– আচ্ছা বাবা। এখন পড়াটা শেষ কর। কাজ আছে আমার।
– এই যে আম্মু, আপনি ডেন্টিস্ট হলেন, লাইফের সব এক্সামেই ভাল স্কোর করলেন, ডিম্যান্ডিং জবই তো করছেন, কিন্তু আমি তো আপনার মত এরকম লাইফস্টাইল কখনো, কখনোই চাইব না। আমি এমন কিছু করব যাতে লাইফ আর প্রফেশান দুইটাই এঞ্জয় করতে পারি।

আমি জানি আমার ছেলের কথা অনেকাংশেই ঠিক। কিন্তু সেও তো এ সমাজেরই অংশ। শেষ পর্যন্ত আমি বা আমরা হয়ত তাকে সেই আখেরি ঠ্যালা মারবই।

বি: দ্র : আমার প্রোফাইলে বা বন্ধু মহলের পরিবারের কেউ যদি জিপিএ ৫ এর কম স্কোর করে থাকে, তাদের জন্য অভিনন্দন ও অনেক দোয়া। পরীক্ষার রেজাল্টই সব কিছু না। সবচেয়ে বড় ফেইলিউর হল নিজেকে হারিয়ে ফেলা, আত্নবিশ্বাস ও আত্নমর্যাদা হারিয়ে ফেলা।

 

জীবনে কেন শান্তি নেই

জীবনে কেন শান্তি নেই


ডা. মারুফ রায়হান খান


২০০৬ সাল, আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। ফুটবল বিশ্বকাপ চলছিল তখন। সেই ফুটবল বিশ্বকাপটা আমার জন্য খুব আনন্দের স্মৃতি হতে পারতো, কারণ আমার ফেভারিট টিম ইটালি সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু তা ঘিরে আমার আনন্দ নেই, বরং রয়েছে একরাশ বেদনা আর কান্না। কারণ সেই বিশ্বকাপটি চলার সময় আমার একজন বন্ধু আত্নহত্যা করে। হ্যাঁ, এই ১৪/১৫ বছরের মানুষটিই ফ্যানে দড়ি ঝুলিয়ে আত্নহত্যা করে। ও নাকি পড়াশোনা না করে খেলা দেখতো, বাবা-মা সে রাতে নাকি বেশ বকাঝকা করেছিলেন, বন্ধু আমার আর সে জীবন রাখার কোনো মানে খুঁজে পায়নি।

আমাদের এই প্রজন্মের অজস্র দিক আছে যেগুলো বেশ পজিটিভ কিন্তু একটা ভয়ঙ্কর রকমের অন্ধকার দিক আছে। আমরা বোধহয় খুব অল্পতেই ধৈর্য হারাই, এই অতি মূল্যবান জীবনটিকে আমরা মূল্যায়ন করতে পারি না, তার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি না, জীবনটিকে হয়তো ঠুনকো ভাবি কিছু থেকে কিছু হলেই–কী হবে আর এ জীবন রেখে। তার প্রমাণ পাই যখন আমরা জানতে পারি, কাউকে ‘পাখি ড্রেস’ কিনে দেওয়া হয়নি বলে আত্নহত্যা করে, প্রিয় দল আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিল খেলায় হেরেছে বলে ঐ দেশের হাজার হাজার মাইল দূরে বসবাসরত বাঙালি যুবক যখন তার জীবন বিনষ্ট করে ফেলে, প্রিয় মানুষকে না পেলে আত্নহত্যা করে ফেলে, বাবা-মা একটুখানি বকাঝকা করলে গলায় দড়ি দেয়, পরীক্ষায় একবার কাঙ্খিত সাফল্য না পেলে সে জীবন রাখার আর কোনো অর্থ খুঁজে পায় না। এসবের কারণ কি এটা হতে পারে যে, আমাদের জীবনের আসলে ব্রড কোনো ভিশন নেই, আমাদের স্পেক্ট্রাম অফ থিঙ্কিংটা ন্যারো?

আমার সাথে এটা প্রায় সবাই হয়তো নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেবেন যে, আমাদের প্রজন্মের একটা বিশাল অংশ মারাত্নক রকমের ডিপ্রেশানে ভোগে। জীবনটাতে যেন কোনো শান্তি নেই, স্বস্তি নেই, ছন্দ নেই। আমাদের ‘নেই’-এর পাল্লাটাই যেন খুব ভারী, ‘আছে’-এর পাল্লাতে যেন কিছুই নেই। বাস্তবতাটা কি আসলেই তাই?

আচ্ছা, এ লেখাটি যারা পড়ছেন তাদের মধ্যে এমন একজন মানুষও কি আছেন, যিনি সকালে খেতে পান না, দুপুরে খেতে পান না, রাতে খেতে পাবেন কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই? ডায়েট কন্ট্রোলের জন্যে না, খাওয়ার সামর্থ্য নেই সেজন্যে? মনে হয় না এমন কোনো পাঠক এখানে আছেন। আমি আপনাদের একটা জরিপ শোনাই। ২০১১ সালে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক একটা জরিপ করে, সেখানে দেখা গেছে পৃথিবীতে প্রায় ১ বিলিয়ন মানুষ এরকম ‘Chronically hungry’ থাকে। পৃথিবীতে ৬ বিলিয়ন মানুষ আছে তার মধ্যে ১ বিলিয়নই এভাবে ক্রমাগত ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করে–প্রতি ৬ জনে ১ জন! এটা আমাদের প্রতি আল্লাহর কতো বড় রহমাত যে তিনি আমাদের অন্তত ৩ বেলা ভালোভাবে খাবার মতো তাওফিক দিয়েছেন।

ক্ষুধার কষ্ট যে কত বড় একটা কষ্ট, সেটা আমরা বুঝব না। বুঝেছিল ঐ পরিবারটা, বাংলাদেশেরই একটা পরিবার, দীপালিদের পরিবার। যে পরিবারে দুটো সন্তান; বড় মেয়ে আর ছোট ছেলে। সে পরিবারের নিয়ম ছিল দুপুরবেলা খাবে ছেলেটা আর রাতেরবেলা খাবে মেয়েটা। দুবেলা দুজন খেতে পারবে না, কারণ দুজনকে দুবেলা খাওয়ানোর মতো আর্থিক সঙ্গতি পরিবারটির ছিল না। একদিন দুপুরবেলা ছেলেটি খেলো, রাত হলে তার আবার ক্ষুধা লেগে গেলো, অসহনীয় ক্ষুধা–ছেলেটি তার বোনের জন্য বরাদ্দকৃত রাতের খাবারটা খেয়ে ফেলে। সারাদিন ক্ষুধায় কষ্ট করেছে বোন, রাতের বেলায় যখন সে দেখলো তার খাবারটুকু নেই, রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে সে রাতে আত্নহত্যা করে বোন।

ক্ষুধার কষ্টটা আমরা বুঝব না। বোঝে ঐ মানুষটা, সোমালিয়ার ঐ মানুষটা, যিনি রমাদানে একজন স্কলারকে প্রশ্ন করেছিলেন–আমাদের সাহরিতে খাবার মতো কিছু নেই, ইফতারেও খাবার মতো কিছু নেই; আমাদের রোজাটা কি হবে?!

আমার স্মৃতিপটে প্রায়শই গাজার ১১ বছরের এক শিশুর একটা গায়ে শিহরণ জাগিয়ে দেয়া প্রশ্ন ভেসে ওঠে। ২০১৪ সালে লাস্ট এটাকের সময় ছেলেটি একজন স্কলারকে প্রশ্ন করে, এই যে এতো বোমা হামলা হচ্ছে এর মধ্যকার ডাস্ট পার্টিকলগুলো যে আমাদের নাক দিয়ে মুখ দিয়ে যাচ্ছে –আমাদের রোজাটা কি হবে!?

আচ্ছা এবার এ লেখার পাঠকদের জন্যে আরেকটি প্রশ্ন। আপনাদের মধ্যে এমন একজনও কি আছেন যিনি জন্মগ্রহণের পর তার মা ছিলেন না, বাবা ছিলেন না, এমনকি অন্য কোনো নিকটাত্মীয় ছিলেন না আপনাদের দেখাশোনা করার জন্য? একজনও বোধহয় নেই। আপনি শুনে অবাক হবেন, ইউনিসেফের এক জরিপে উঠে এসেছে পৃথিবীতে ২২০ মিলিয়ন, দুইশত বিশ মিলিয়ন শিশু আছে যারা জন্মের পরে তাদের মা পায়নি, বাবা পায়নি, এমনকি কোনো নিকটাত্নীয় ছিল না তাদের দেখাশোনা করার জন্যে।

তবুও নাকি আমাদের জীবনটাতে কোনো শান্তি নেই, সুখ নেই, স্বস্তি নেই, ছন্দ নেই…

আমি বছর কয়েক আগে একটা পত্রিকায় সম্পাদনার কাজের সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজে বার্ণ ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ডা. সামন্ত লাল সেন স্যারের একটা সাক্ষাতকার পড়ছিলাম। সেখানে তিনি বলেছেন, তার মেয়ের ছোটবেলায় একবার মিজেলস (হাম) রোগ হয়েছিল, তারপর রোগ সারলেও চেহারায় দাগ পড়ে যায়। তার মেয়ের মনে খুব দুঃখ ছিল মুখে এই দাগের জন্য। তো একবার প্রফেসর সামন্ত লাল স্যার তার কাছে আসা আগুনে দগ্ধ হয়ে যাওয়া একটি মেয়ের ছবি তুলে এনে তার মেয়েকে দেখালেন। মেয়ে এবার অনুধাবন করলেন অন্য অনেকের চাইতে তিনি অনেক ভালো আছেন। তার বাবাকে বললেন, আমার চেহারার দাগ দূর করতে হবে না, তুমি বরং এই মেয়েটিকেই চিকিৎসা করো।

আসলে আমরা যখন আমাদের অবস্থানের চাইতে নিচের কারও দিকে তাকাব, তখন এই জীবনটাই আমাদের কাছে অনেক বেশি সুখের মনে হবে, অনেক মূল্যবান মনে হবে। সত্যি বলতে কী পৃথিবীতে অজস্র মানুষ আছে যারা আমাদের মতো একটা জীবন পেলে বর্তে যেতো, ধন্য হয়ে যেতো।

আরেকজন বিখ্যাত ব্যক্তির সাক্ষাতকারের জন্য কাজ করেছিলাম, তিনি হচ্ছেন প্রফেসর ডা. শুভাগত চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিষয়ক যারা লেখালেখি করেন, তিনিই বোধহয় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন, ৪০ টি বই উনার। তিনি তার সাফল্যের কথা বলছিলেন, তিনি জীবনে যতটুকু পেয়েছেন, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। তার অন্য বন্ধুরা কে কতো দ্রুত কতোটা এগিয়ে গেলো এসব নিয়ে তিনি কখনও চিন্তিত ছিলেন না। নিজের যতোটুকু আছে, তাই নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন। একজন বিখ্যাত স্কলার ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র.)-এর একটি চমৎকার  বাণী আছে, “Contentment is the paradise of this world.” অর্থাৎ, এই পৃথিবীর জান্নাত হচ্ছে সন্তুষ্টি। আমাদের যতোটুকু যা আছে তাই নিয়ে যদি আমরা পরিতুষ্ট থাকতে পারি, আমাদের জীবন সুখে ভরে উঠবে।

আমাদের মধ্যে একটা ব্যাপার খুব অহরহই দেখা যায়। আমাদের চলার পথে, সামনে এগোবার পথে কোথাও যদি বাধা চলে আসে, তবে আমরা সেখানেই হাল ছেড়ে দিই, নিরাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করে দেখুন, পৃথিবীতে যারাই বড় হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের জীবনেই কিন্তু অনেক স্ট্রাগল ছিল। পৃথিবীর বুকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ যিনি, সেই মুহাম্মাদ (স.) এর কথাই ধরা যাক। আমরা সবাই জানি তার মিশনের প্রাথমিক পর্যায়ে তাকে কতোটা বাধা-বিপত্তি-অত্যাচার-নিগ্রহ সইতে হয়েছিল। তিনি হাল ছেড়ে নিরাশ হয়ে যাননি, তার মিশন থামিয়ে দেননি–আজ পৃথিবীতে কোটি কোটি অনুসারী তাঁর। এন্ড্রু কার্নেগীর কথা বলতে পারি আমরা, যাকে নোংরা পোষাকের জন্য পার্কে ঢুকতে দেওয়া হয়নি,  ৩০ বছর পর সেই এন্ড্রু কার্নেগীই পুরো পার্কটি কিনে ফেলেন এবং সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন “সবার জন্য উন্মুক্ত “। বহুল জনপ্রিয় স্টিভ জবসের কথা বলা যেতে পারে, ৭ মাইল দূরের এক গির্জাতে প্রতি রবিবার ভালো খাবার-দাবারের ব্যবস্থা ছিল। সারা সপ্তাহ তার ভালো খাওয়া-দাওয়া করার মতো আর্থিক সঙ্গতি ছিল না। তাই প্রতি রবিবার তিনি পায়ে হেঁটে ৭ মাইল দূরের গির্জাতে যেতেন এক বেলা ভালো খাবার জন্য।

আমি বেশ কিছুদিন আগে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ডিপ্রেশানের উপর একটা সেমিনারে গিয়েছিলাম। সেখানে যিনি স্পিকার ছিলেন তিনি খুব সুন্দর করে ডিপ্রেশান কাটানোর একটা সহজ বুদ্ধি শিখিয়ে দিয়েছিলেন। আর তা হচ্ছে অন্য মানুষের জন্য কিছু করা, তাদের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। এখন তো আমাদের দেশে বিভিন্ন রকমের স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে –শীতবস্ত্র বিতরণ, বন্যা দুর্গতদের সহায়তা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, দুস্থদের খাদ্য বণ্টন, হেলথ ক্যাম্পেইন আরও কত কী। এসবের সাথে যদি আমরা নিজেদেরকে জড়িত করে নিতে পারি তবে জীবন নিয়ে খুব বেশি হতাশামূলক চিন্তাভাবনা করার সময়টা আমরা পাব না।

ওখানে আরেকটা জিনিস শিখেছিলাম যারা নিজের জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট, কৃতজ্ঞ, তাদের কর্টিসল হরমোন (স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত)  লেভেলটা কম থাকে তুলনামূলকভাবে। তারা বেশি সুখী থাকেন। আসুন না আমরা আমাদের চারপাশের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ হই, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি আমাদের স্রষ্টার প্রতি, মা-বাবার প্রতি, আত্নীয়-পরিজনের প্রতি, বন্ধু-বান্ধবের প্রতি। আপনার জীবন সুখী হোক।

ডা. মারুফ রায়হান খান

এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)

বসুন্ধরা কোভিড হসপিটাল

 

 

 

সব পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখার কৌশল কী?

সব পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখার কৌশল কী?


ইসরাত


প্রথম কৌশল হলো, মাথা যে গরম হতে পারে এটা মাথায় না রাখা। সব পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখা আসলে উচিত না। যখন আপনার কাউকে বোঝানো দরকার যে আপনি তার উপর রেগে আছেন কারন সে এমন কিছু করেছে যাতে আপনার রাগ হওয়া উচিত তখন কিন্তু খানিকটা রাগ আপনাকে দেখাতেই হবে। আপনার রাগ দেখানোটা যুক্তিযুক্ত কিনা তা নিরপেক্ষ হয়ে আগে বিবেচনা করুন।

ধুম করে রাগ হওয়াটা খুব খারাপ অভ্যাস। কাছের মানুষগুলোও আস্তে আস্তে দুরে চলে যায়। তারা কিন্তু দুরে যেতে চায়না তারপরেও বাধ্য হয়। হয়তো একই বাড়িতেই বাস করে একই ছাদের নিচে তবুও তাদের অন্তরে থাকে এক জীবনের ব্যবধান।

এবার কাজের কথা বলি, ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারা এবং সব রকম পরিস্থিতি সামলে নেয়াটা একটা বিশেষ গুন। এটা এমন একটি গুন যা চেষ্টা করে অর্জন করা যায়। আমরা কি কারো কাছে ছোট হতে চাই কখনো? চাইনা। যেকোনো অবস্থায় আপনি প্রথমেই চিন্তা করবেন, এখন আমার কি করা উচিত। ধরে নিন আপনি ঠিক এমন অবস্থায় পরলেন…

আপনি লকডাউনের মধ্যে ঘরে আটকে আছেন। অনেক কাজ জমে আছে, সেগুলো কবে শেষ করবেন, কতোদিন এভাবে চলবে, বাসার মানুষগুলো এমন কেন করছে, ছোট ভাইবোন দুটো এতো কেন বিরক্ত করছে। সব মিলিয়ে আপনি এমনিতেই যথেষ্ট বিরক্ত তার উপর আপনার ছোট বোনটা আপনার সাথে খুব বাজে ভাবে বেয়াদবি করে বসলো। আপনার ইচ্ছে করলো একটা চড় মেরে সবগুলো দাঁত ফেলে দিতে। কিন্তু আপনাকে কয়েকটি দিক ভাবতে হবে…

১. আপনি কোষে তাকে একটা চড় মারতে পারেন।

২. আপনি হেসে ফেলতে পারেন, তাহলে হয়তো উদারতা দেখানো হবে।

৩. আপনি আপনার মাকে গিয়ে বিচার দিতে পারেন। শাসন যা করার মা-ই করুন।

৪. আপনি তাকে বলতে পারেন ” আমরা পরে কথা বলি, এখন সঠিক সময় না।”

এখন আপনি ভেবে দেখবেন এই ৪টির মধ্যে কোন পদ্ধতিটা ভালো। আর আমি সাহায্য করছি এটা জানিয়ে যে কোনটি কেমন হবে।

১. আপনি যদি এখন চড় মারেন তাহলে আপনার বোন আরো বাজে আচরণ দিয়ে আপনাকে অসম্মান করতে পারে, কারন মেয়েটার আজকে কেন যেন মন বা মেজাজটা ভালো নেই। তাই এটা বাদ দেয়া খুবই জরুরী।

২. হেসে ফেলবেন তো সর্বনাশ। আপনার বোন আহ্লাদী স্বভাবের না হলেও আপনার হাসিতে প্রশ্রয় পেয়ে এই মেজাজ প্রতিদিন দেখাবে এবং তখন মহা সর্বনাশ।

৩. মা কে বিচার দিলেতো আপনিও ছোটবোনের বয়সে নেমে গেলেন। বড় ভাই হিসেবে নিজের জায়গাটা তো ঠিক রাখতে হবে।

৪.এটা উত্তম। আপনি যখন বলবেন ” আমরা পরে কথা বলি” তখন আপনার বোন আর কিছু বলার সাহস পাবেনা এবং সে কিছুটা লজ্জা এবং সংকোচবোধ করবে। তাছাড়া আপনারা দু’জনই মাথা ঠান্ডা রেখে চিন্তা করার সময় পাবেন। এতে আপনার বোন অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইতে আসবে আর আপনিও “আর যেন এমন না হয়” বলে ক্ষমা করে দেবেন।

আসলে কে কিভাবে পরিস্থিতি সামলাবে তা নির্ভর করে তার ব্যাক্তিত্বের ধরন কেমন তার উপর। সারাজীবন ধরে প্রতি মুহূর্তে এতোশত পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন তা কিন্তু আপনাকেই সামলাতে হবে। একটি উদাহরণ দিলাম কিছুটা হয়তো বোঝাতে পারবো সেই আশায়।

ইসরাত, প্রাক্তন জে.এস. কলেজ।
সুত্রঃ কোরা।

করোনাভাইরাস: লকডাউনের মধ্যে একাকী তিন নারীর ঘরবন্দী জীবন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে আরোপ করা লকডাউন অনেকের জীবনকেই আকস্মিকভাবে যেন স্তব্ধ করে দিয়েছে।

বিশেষ করে যারা একা থাকেন, তাদের জন্য সেল্ফ-আইসোলেশনের জীবন হতে পারে ভীষণই দুর্বিষহ এক অভিজ্ঞতা।

কিভাবে লকডাউনের মধ্যে নিজের মনকে চাঙ্গা রাখবেন? নিজেকে ব্যস্ত রেখে একাকীত্বকে দূরে সরিয়ে রাখবেন?

পৃথিবীর তিন প্রান্তের তিন নারীর সাথে কথা বলেছেন বিবিসির কেলি লেই-কুপার। এই তিন নারীর একজন ভারতের দিল্লিতে, একজন ইতালির মিলানে, আর শেষজন যুক্তরাষ্ট্রের মেইনে।

তারা তিনজনই একা, তিন জনই লকডাউনে আটকা পড়েছেন নিজ নিজ এ্যাপার্টমেন্টে।

গত কিছু দিনে তার বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষীরা ছাড়া আর কোন মানুষের চেহারা দেখেননি অপর্ণা।

ভারতের রাজধানী দিল্লির কাছে গুরগাঁওয়ে তার মায়ের পুরোনো এ্যাপার্টমেন্টে একা থাকেন তিনি।

পুরো এ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সটির গেট এখন তালা দেয়া, সাথে আছে নিরাপত্তা রক্ষীর সার্বক্ষণিক পাহারা।

অপর্ণার বয়স ২৬। লকডাউন শুরু হবার পর তিনি সেই গেট পার হয়েছেন মাত্র এক বার।

দিনে দু‌ই বার তিনি ঘর থেকে বের হন – তার দুটি কুকুর জুলস আর ইয়োগীকে হাঁটানোর জন্য।

বেশ কিছুকাল নিউইয়র্কে ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করার পর মিলানে ফিরে আসতে পেরে বেশ খুশি ছিলেন লুসিয়া।

সারা দিন ক্যামেরা নিয়ে ঘুরে ঘুরে কাজ করা , আর দিনের শেষে বন্ধুদের নিয়ে খেতে যাওয়া – ভালোই কাটছিল মিলানে লুসিয়ার দিনগুলো।

কিন্তু কয় ‌‌‍মাস পার না হতেই ইতালিতে ছড়িয়ে পড়লো করোনাভাইরাস, আর মিলান শহর পরিণত হলো ইতালিতে করোনাভাইরাসের এপিসেন্টারে।

লুসিয়া সহ লক্ষ লক্ষ ইতালিয়ান আটকা পড়লেন লকডাউনে, শুরু হলো দিনের পর দিনের জন্য তার ঘরবন্দী জীবন।

স্বাভাবিকভাবেই সারা দিন এ্যাপার্টমেন্টে বসে থাকাটা ছিল খুবই কষ্টকর। অন্তত: প্রথম দু‌এক সপ্তাহ।

তবে এখন – বাধ্য হয়েই – লুসিয়াকে মানিয়ে নিতে হচ্ছে এই একাকী ঘরবন্দী জীবনের সাথে।

তিনি এখনো মিস করেন তার স্বাধীনতা আর অন্যদের সাহচর্য।

কিন্তু সারা দেশে যখন এত মানুষ মারা যাচ্ছে তখন তার প্রিয়জনেরা যে সবাই সুস্থ আছে – এই বা কম কী? এমনটাই ভাবেন তিনি।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে যখন করোনাভাইরাস স‍ংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লো – তখন তার এই একাকী জীবনের সমস্যাগুলো যেন আচমকাই এসে তাকে আঘাত করলো।

সপ্তাহ দুয়েক আগে এ্যাঞ্জির চাকরিটা চলে যায়। ‍স্বাভাবিক সময়ে এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের কাছ থেকে একটা সান্ত্বনা মেলে, বা একজন বন্ধু হয়তো দাওয়াত করে আমাকে উৎফুল্ল করে তুলতে চেষ্টা করে। কিন্তু এখন এসব কিছুই নেই। এ্যাঞ্জি এখন একেবারেই একা।

সামাজিক সম্পর্ক এবং শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য

অনেক গবেষণাতেই দেখা গেছে যে মানুষের সামাজিক সম্পর্কগুলো আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের মতো শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ।

বিভিন্ন গবেষণায় তীব্র একাকীত্বের সাথে উচ্চ মৃত্যুহার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সম্পর্ক দেখা গেছে।

সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং যোগাযোগহীনতা কীভাবে মস্তিষ্কের আচরণকে প্রভাবিত করে – তার গবেষণার জন্য সুপরিচিত মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক নাওমি আইজেনবার্গার।

তিনি বলছেন, বর্তমানে এই যে শত শত কোটি লোক তাদের স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে – তা নজিরবিহীন এবং একাকী বসবাসকারী লোকদের জন্য প্রিয়জনদের সাথে যুক্ত থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পোষা প্রাণী অনেকটা ভুলিয়ে দিতে পারে একাকীত্ব

এ সময় মানুষ যেভাবে অনলাইনে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে – তা কি আসলে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা মানুষদের মানসিক প্রয়োজন মেটাতে পারছে? অধ্যাপক আইজেনবার্গারের গবেষণা দল এখন সেটারই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে ।

তিনি বলছেন, আপনার যদি কোন পোষা প্রাণী থাকে যাকে আপনি স্পর্শ করতে পারেন, জড়িয়ে ধরতে পারেন – তাহলে তা মানসিক চাপ অনেকটা কমাতে পারে।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টেফানি কাচিওপ্পো ‌বলছেন, নিজের ভাবনা-চিন্তা ও প্রত্যাশাগুলোকে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়া একাকীত্ব দূর করার জন্য খুবই জরুরি। তিনি বলছেন, এ সময়টাকে নানাভাবে কাজে লাগানো সম্ভব।

অনেকে ছবি আঁকছেন, ছবি তুলছেন, লিখছেন জার্নাল

এ্যাঞ্জি যেমন আবার ছবি আঁকা শুরু করেছেন। তার আঁকা ইলাস্ট্রেশন অনলাইনে পোস্ট করছেন, তাতে প্রকাশ করছেন তার আবেগ-অনুভূতি, মহামারির মধ্যে একাকী বাস করার অভিজ্ঞতা। তিনি বলছেন, এটা তাকে মানসিকভাবে স্থির রাখতে সহায়ক হচ্ছে।

ড. কাচিওপ্পো বলছেন, বিচ্ছিন্নতার এই সময় অনেকে জার্নাল লিখতে পারেন। এক একটি দিনে কী কী করবেন তার ছোট ছোট লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে পারেন। এতে আপনার মনে একটা শান্তির বোধ আসবে যে আগামীকালের জন্য আপনার করার কিছু আছে।

তিনি একটা কাজ করেছিলেন – গত ৩০শে মার্চ তিনি তারই একটা ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন। শিরোনাম ছিল, ‍‌”কোয়ারেন্টিনে থাকা একজন নারীর আত্মপ্রতিকৃতি।“

তার পর কয়েকদিনের মধ্যে আরো শত শত নারী পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে তাদের ছবি পোস্ট করেছেন।

গ্যাটউড এখন এসব ছবি দিয়ে একটা ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

দিল্লি থেকে অপর্ণাও তার একটা আত্মপ্রতিকৃতি পাঠিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি এই লকডাউনের মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় পর এই প্রথমবার হাতে তুলে নিয়েছেন তার ক্যামেরাটি, এবং তার ঘরবন্দী জীবনের ছবি তুলতে শুরু করেছেন।

তিনি বলছেন, সবাইকে তিনি এটাই বলতে চান যে কোন অপরাধবোধে না ভুগে যা খুশি করার জন্য এ সময়টাকে কাজে লাগানো যায়।

ড. কাচিওপ্পো বলছেন, এরকম এক ট্রাজেডির একটা ইতিবাচক পরিণাম হলো – এর মধ্যে দিয়ে অনেক জাতির লোকেরা পরস্পরের সাথে যুক্ত অনুভব করতে পারে।

দিল্লির অপর্ণা বলছেন, এ অবস্থায় বোঝা যাচ্ছে যে আমরা সবাই কতটা ঝুঁকির মুখে আছি। পৃথিবীর অন্য যে কোন প্রান্তের মানুষদের বুঝতে পারাটা এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। আমার মনে হয় এমন একটা কঠিন সময়েও এ উপলব্ধি একটা প্রয়োজনীয় এবং সুন্দর একটা ব্যাপার। বিবিসি

দিনে ছয়বার হাত ধুলে করোনা সংক্রমণ কমানো সম্ভব: গবেষণা

দিনে অন্তত ছয় থেকে ১০ বার হাত ধুলে করোনা ভাইরাসের মত জীবাণুর সংক্রমণ কমানো সম্ভব বলে এক গবেষণায় বলা হয়েছে।

ব্রিটেনের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়।

বর্তমানের করোনা ভাইরাসের মতো একই রকম প্রাণঘাতী মহামারির জীবাণুর ওপর ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত গবেষণা চালানো হয়। সেখান থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা হচ্ছে এমন গোষ্ঠীর ভাইরাস, যেগুলো থেকে সাধারণত সর্দি-জ্বরের মত উপসর্গ নিয়ে হালকা অসুস্থ দেখা দেয়। করোনা মহামারির মতো এ ধরণের সব রকম ভাইরাস সাবান পানি দিয়ে হাত ধুলে মরে যায়।

ওয়েলকাম ওপেন রিসার্চ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফল এবং পিয়ার রিভিউয়ের অপেক্ষায় থাকা সমীক্ষায় দেখা গেছে, দিনে অন্তত ছয়বার করে হাত ধুলে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে আসে। এই গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন ১৬৬৩ জন।

তবে দিনে ১০ বারের বেশি হাত ধোওয়ার ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি আরো কমে যাবে এমন কোনো তথ্যপ্রমাণ প্রকাশিত হয়নি।

২০ সেকেন্ডের ধরে কীভাবে হাত ধোবেন তা দেখিয়েছেন ওয়েস্টমিনিস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. অ্যাডেল ম্যাককর্মিক।

গবেষণা প্রতিবেদনের লেখক লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের ড. সারাহ বিল বলেছেন, ‘আপনার কোন উপসর্গ থাক বা না থাক, সবসময় ভালো ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হাত পরিষ্কার রাখার অভ্যাস করা উচিত।’

‘এটি নিজেকে রক্ষা এবং আপনার অজান্তে চারপাশের অন্যদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি কমাবে।’

ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি কমানোর জন্য অন্যতম উপায় হলো কমপক্ষে নিয়মিত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া। বিশেষ করে হাঁচি-কাশি বা ফুঁ দেওয়ার পর ও খাওয়া বা রান্না করার আগে।’

‘এছাড়া বাইরে বেরনোর পর বা গণপরিবহন ব্যবহারের পর হাত ভাল করে ধোয়ার অভ্যাস ভালো।’

লেবু খেলে কী হয়?

লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এবং দরকারি। ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ছাড়াও শরীরে আরো অনেক ধরনের উপকার করে থাকে। এর মধ্যে থাকা পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম শরীরে খনিজের অভাব মেটায়।

অনেকেই তাই তাঁদের দিন শুরু করেন এক গ্লাস লেবু পানি দিয়ে। যা নিয়মিত খেলে প্রচুর উপকার মেলে-

১. হজমশক্তি বাড়ায়
লেবু হজমশক্তি বাড়ায়। এতে ফাইবার রয়েছে। যা পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তাই অনেকেই সকালে খালিপেটে লেবুজল খান। কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও এটি সাহায্য করে।

২. আর্দ্রতা ধরে রাখে
লেবুর পানি শরীরে পানির শূন্যতা মেটায়। পানিতে তাই নির্দিষ্ট পরিমাণ লেবু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে ভিটামিন সি-র অভাব দূর হয়। শরীর থাকে আর্দ্র।

৩. ওজন কমায়
ওজন ঝরাতে লেবু খুবই দরকারি। রোজ সকালে খালিপেটে ইষদুষ্ণ পানিতে লেবু এবং মধু মিশিয়ে পান করুন। বাড়তি মেদ ঝরবে। হজমশক্তি বাড়বে।

৪. কিডনি স্টোন কমায়
লেবুর রস কিডনিতে জমে থাকা স্টোন বা পাথর গলিয়ে দিতে সাহায্য করে। যাঁরা এই সমস্যায় ভুগছেন তাঁরাও সকালে লেবুর পানি নিয়মিত খেতে পারেন এতে প্রস্রাবের আকারে স্টোন গলে বেরিয়ে যাবে। আপনি ব্যথামুক্ত সুস্থ জীবন যাপন করবেন।

৫. অ্যানিমিয়া কমায়
খাবার থেকে রক্তে আয়রন শোষণে সাহায্য করে ভিটামিন সি। তাই শরীরে যত ভিটামিন সি থাকবে ততই আয়রন শোষিত হবে। কমবে অ্যানিমিয়া।

 

করোনা পরিস্থিতিতে রাগ বেড়ে যাচ্ছে মানুষের পর্ব-১

করোনা পরিস্থিতিতে রাগ বেড়ে যাচ্ছে মানুষের পর্ব-১


ফাতেমা শাহরিন


আমাদের মনের বা মতের বিরুদ্ধে কিছু হলেই আমরা রেগে যাই। আমরা যখন আমাদের Need বা প্রয়োজন পূরণ করতে পারিনা তখনও রেগে যাই।

Need আবার অনেক ধরনের হতো পারে।
১. মানসিক চাহিদা
২. শারিরীক চাহিদা
৩. আর্থিক চাহিদা

রাগ হচ্ছে Natural Emotion আমাদের। আর পরিস্থিতিই কিন্তু রাগের সৃষ্টি করে তাই আমরা যতই বলি রাগ ভালো না, রাগা যাবে না কিন্তু কেউ অন্যায় করলে, পরিস্থিতি স্ট্রেসফুল হলে আমাদের রাগ হবেই।
রাগ ছিল, রাগ আছে এবং ভবিষ্যতেও রাগ থাকবে। আমরা আমাদের রাগ আবেগ মুর্হুত্বেই ভ্যানিশ করব না। আমরা আমাদের রাগকে কন্ট্রোল করব। আর অনেক ক্ষেত্রে রাগটাই জরুরী, রাগ খারাপ কোন আবেগ না।

আসুন জানি রাগ তাহলে কি?

‘রাগ’ হচ্ছে মানুষের একটি স্বাভাবিক আবেগ। মানুষ সাধারণভাবেই মনে করে ‘রাগ’ খুবই খারাপ।

এটা শুধু মানুষকে ক্ষতিই করে। কিন্তু কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়, আংশিক সত্যি। কারণ রাগ কারো ক্ষতি করে না বরং অনিয়ন্ত্রিত রাগ যা নিজের ক্ষতি করে আবার অন্যের ক্ষতি করে তা খারাপ।

আমরা যদি ‘রাগ’ নামক আবেগের ভাল দিকটি লক্ষ্য করি তবে অনেক কিছুই বুঝতে পারব। তাহলে positive কয়েকটা উদাহরণ:

যেমন- একটি ছোট শিশু প্লাস্টিক জারের মুখ খুলতে প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে দ্বিতীয়বার চেষ্টা করে। কিন্তু তখনও ব্যর্থ হলে তার মধ্যে ‘রাগ’ নামক আবেগের সৃষ্টি হতে থাকে এবং সে বেশি বেশি চেষ্টা করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে গিয়ে সফলও হয়। আবার ছাত্ররা বন্ধুর ওপর রাগ করে ভাল রেজাল্ট করে। আমরা কোন না জানা কঠিন বিষয় আত্মস্থ করতে চাই তাহলে ভেতরে এক ধরনের রাগ যা জিদ আকারে প্রকাশ পায়।

আবার কোন একটি মেয়ে বাসে উঠে বসল। পাশে একটি ভদ্রলোক মেয়েটিকে ইচ্ছেকৃত টার্চ করল। মেয়েটি রেগে গেলো। মেয়ে দৃঢ় কন্ঠে প্রতিবাদ করল। খারাপ আচরণটি থেমে গেলো।

চলবে…

 

‘জেগে উঠুন,সর্তক হোন!’

‘জেগে উঠুন,সর্তক হোন!’


আকলিমা ফেরদেৌসী


‘’আমাদের হয়ত দোষ ছিলো, এত রাতে একটা পার্টিতে কেন গেলাম! আমি বলছিনা যে ছেলেদের সাথে মিশা যাবে না। আমরা যেখানে পড়ছি ছেলেদের সাথে পড়ছি।ছেলেদের সাথে হয়ত মেশার প্রয়োজন হবে! তবে আমি বলব কেউ যেন আমাদের মতো বোকা না হয়! সবাইকে বিশ্বাস না করে। বিশেষ করে উচ্চবিত্ত শ্রেণীটা মনে হয় একটু বেশী অন্যরকম! এটা যাতে খেয়াল করে।‘’- এই কথাগুলো বলছিলেন বনানীর রেইনট্রিতে ধর্ষনের শিকার এক তরুণী একাত্তর চ্যানেলে একটি টক শোতে টেলি কনফারেন্সে।

তার প্রতি সমবেদনা রেখে বলছি, তিনি যে উপলব্ধি করেছেন এই উপলব্ধিটা আমাদের প্রত্যেক নারীর মধ্যেই আসা উচিত।

‘’কেউ যেন আমাদের মতো বোকা না হয়!’’ হ্যা সত্যিই তাই!

এখন সময় এসেছে নারীদের সচেতন হবার। বিশেষ করে একজন শিক্ষিত নারীকে তো অবশ্যই সচেতন হতে হবে। যে কথা বহু বছর আগে বেগম রোকেয়া বলে গেছেন- ভগিনীরা ! চক্ষু রগড়াইয়া জাগিয়া উঠুন, অগ্রসর হোন!”

আমরা নারীরা কি জাগ্রত?

আমরা কি আমাদের ক্ষমতা আর অধিকার সর্ম্পকে সচেতন? উত্তর গুলো অবশ্যই নেতিবাচক হবে । চোখ বন্ধ করে বলা যায় না আমরা সচেতন নই। যারা সচেতন তাদের সংখ্যা গুটিকতক।আমাদের নারীরা লেখাপড়ায় ভালো করছে, তথ্য-প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে, আত্ননির্ভশীল হিসেবে গড়ে উঠছে, বড় বড় পদে কর্মরত আছে, সব ঠিক। কিন্তু গোড়ায় গলদ!

দুঃখজনক হলে সত্য যে, উনিশ শতকে বেগম রোকেয়া যে বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন আজকের শিক্ষিত নারী সমাজের মাঝে এখন পযর্ন্ত সেই বোঝ তৈরী হয়নি!
তিনি বলেছিলেন-‘’আমরা সমাজের অর্ধাঙ্গ, আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কিরূপে? কোনো ব্যক্তি এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোড়াইয়া খোড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে। তাহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা আমাদের লক্ষ্য তাহাই।’
আমাদের নারীরা জানে না, তার ভিতরের ক্ষমতা কত! সে কি করতে পারে। সমাজ বিনির্মানে তাকে যে ভূমিকা রাখতে হবে সে খেয়াল কয়জনের আছে!

মাতৃত্বের মতো বিশাল দায়িত্বের গুরুভার সর্ম্পকে আমাদের নারীরা কতটুকু সচেতন?

‘বন্ধু ছাড়া লাইফটা ইম্পসিবল’, ফ্রি মিক্সিং, মডেলিং এর লোভনীয় অফার –এ সেন্সগুলো যে একধরনের লোভী পুরুয়ের ব্যবসায়ীক দৃষ্টিভংগিতে তৈরী তা কি জানে আমাদের নারীরা?

প্রয়োজনে বন্ধু নিবার্চনের ক্ষেত্রে হ্যান্ডসাম, বিত্ত-বৈভব ইত্যাদির চেয়ে ছেলেটি কতটা চরিত্রবান সেটা কয়জন ভেবে দেখেন?

আমাদের নারীরা কেন এটা ভাবে না যে, বাংলাদেশে বেহেশতি বাতাস বইছেনা। এখানে অনেক চোর বদমাইশ আছে যাদের মেয়ে দেখলেই ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে।

সুতরাং আমি নিরাপদ তো! নিজের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কেন সে সচেতন থাকবে না?

এমনিতর হাজারো প্রশ্ন রয়েছে, যার উত্তর খুজে দেখলে আমাদেরকে হতাশই হতে হয়। তাই নারীদেরকে বলবো-

‘জেগে উঠুন, সতর্ক হোন!
পরিবারে, আত্নীয়-স্বজনের সামনে, প্রতিবেশীদের মাঝে, যে প্রতিষ্ঠানে আপনি রয়েছেন সেখানে নিজের অবস্থান এমন ভাবে গড়ে তুলুন যাতে আপনাকে টোকা দিয়ে দেখা তো দুরের কথা আপনার দিকে চোখ তুলে তাকাতে দ্বিধা বোধ করে।
মনে রাখতে হবে আপনার অধিকার কেউ আপনাকে দিয়ে যাবে না, অধিকার আদায় করে নেয়ার মত যোগ্যতা আপনার মধ্যে থাকতে হবে।
নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে লোলুপ দৃষ্টির সামনে নিজেকে উপস্থাপনের চেয়ে মনোযোগী হোন আপনি আগামী প্রজন্মের কারিগর হিসাবে কতটা যোগ্য হয়ে গড়ে উঠছেন।সাবধান হয়ে যান আপনি যেন এমন মা না হন যার অবহেলা আর সঠিক পরিচর্যার অভাবে ছেলে ধর্ষক হয়ে গড়ে উঠে।

অবাধ মেলামেশা নয়, প্রয়োজনে ছেলেদের সাথে মিশতে হলে দুরত্ব বজায় রাখুন। কারন আপনি যে ছেলেটির সাথে মিশছেন সে যতই আপনাকে ‘তুই তুকারি‘ করুক না কেন, ছোট বা বড় বোন মনে করুক না কেন, আপনার ফিগার, হিপের মাপ, ঠোট, চোখ, হাসলে আপনাকে কেমন দেখায় ইত্যাদি সব কিছুই তার দৃষ্টি সীমানায় ভেসে বেড়াবেই! ছেলেদের দৃষ্টি বিপদজনক বলেই আল্লাহ এক্ষেত্রে সংযত থাকতে বলেছেন। একমাত্র কঠোর পরহেযগার পুরুষ ছাড়া আর যে কোন পুরুষেরই এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রন নেই তা হলফ করে বলা যায়।

নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখুন। কারো সাথে একা কোথা দেখা করতে যায়া থেকে বিরত থাকুন।কারন সেখানে তৃতীয়জন থাকে শয়তান! হোক সে বয়ফ্রেন্ড, চাকুরির ইন্টারভিউ, কোন সুপারিশ, বড় ভাইয়ের বন্ধু, ডাকুনে চাচা, মামা, খালু যে কেউ!

নারী শিল্পীদের বলছি, যারা নাটক সিনেমা আর মডেলিং করছেন, তারা আসুন একসাথে হোন আর যে সমস্ত স্ক্রীপ্টে নারীর অশ্লীল উপস্থাপন আছে তা বজর্ন করুন। নারীর মর্যাদাপূর্ণ উপস্থাপনকে হ্যা বলুন, অশ্লীল উপস্থাপনকে না বলুন।
নিজের আব্রু রক্ষার ব্যাপারে সচেতন হোন।
কেন আপনি নিজেকে জোড়া চোখের তীক্ষ্ম দৃষ্টি দ্বারা ক্ষত বিক্ষত করবেন?

কাদের জন্য আপনি চিত্তহরণী হবেন? যাদের জিভ সব সময় ঝুলে থাকে তাদের জন্য? অবশ্যই না।
থানা ,ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, বিভিন্ন মহিলা সংস্থা, সাংবাদিক ইত্যাদির ফোন নাম্বার সংগ্রহে রাখুন।আক্রান্ত হবার পূর্বাভাস দেখলেই তাদের অবগত করুন।
শিক্ষিত হয়েছেন, তো নিজের ব্যাপারে নিজে সচেতন হোন। যোগ্য হয়ে গড়ে উঠুন, এসব ধর্ষকদের লার্থি মারার জন্য।

 

বটবৃক্ষের গল্প

বটবৃক্ষের গল্প


জিনাত তাসনিম


প্রত্যেকটি মানুষের শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য কিংবা জীবনের যেকোনো স্তরে কাছের কিংবা দূরের কোনো মানুয হয়ে ওঠে তার পরম নির্ভরতার ঠিকানা।তার প্রেরণার বাতিঘর। নিজের শৈশবের ঝাপসা স্মৃতি গুলোতে একটু নির্জনে ডুব দিলে ভেসে ওঠে, কিছু প্রিয় মুখ।সেই শীতের সকাল,চারিধারে কুয়াশার চাদর,প্রিয় মানুষের হাত ধরে তিড়িং বিড়িং লাফিয়ে চলা সেই গাঁয়ের মেঠোপথে। তিনি মাঝেমাঝেই থেমে যাচ্ছেন, কুয়াশার ওপার থেকে ডাক আসে…মিয়াভাই,ওও নানা সাথে সালাম,তিনি দাড়াচ্ছেন, হাসিমুখে কথা বলছেন, তাদের সমস্যা শুনছেন। এদের মধ্যে কেউবা কখনো তাকে ঠকায়, কেউ তার ক্ষতি করে, কেউ তার সমালোচনা করেন।তিনি সবার সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক রাখতেন, কখনো কারো সমালোচনা করতে দেখিনি। জমির ফসল ঘরে এলে যে সাহায্যে চাইতেন তাকেই সাহায্য করতেন।বাসে বা রিকশায় তার সাথে ভ্রমণ ছিলো শিক্ষণীয়। বিভিন্ন রাস্তা চেনা,বিভিন্ন স্হানের ইতিহাস জানা।শৈশবের হাতেখড়ি হয়েছিল তার কাছে। আমার পুরো জীবনে আমি এত নিষ্ঠাবান শিক্ষক পাইনি।আমি খুব ফাঁকি বাজ ছাত্র, তিনি পড়ে যাচ্ছিন,আমি কখনো তার টাক মাথায় বসা মশার পিছনে ছুটছি, কখনো খেলার সাথী দের কথা ভাবছি। যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি,তিনি ঠিক করলেন আমি বৃত্তি পরীক্ষা দিবো।এ বিষয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নাই,উনি বইগুলো পড়ে শোনাচ্ছেন, আমি মাদুরে গড়াগড়ি দিচ্ছি। পরীক্ষার দিন আমরা পরীক্ষা দিতে গেলাম,প্রশ্নও কমন, কিন্তু আমার চিন্তা উনি আছেন না আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন?আমি প্রতি পনেরো মিনিট পর পর বের হচ্ছি,তার সাথে কথা বলছি। তিনি আমাকে আশস্ত করছেন তিনি আছেন। রোগ কাতুরে আমি ক্লাস ফোরের আগে স্কুলে যায়নি। আমার বৃটিশ আমলে মেট্রিকুলেশন পাশ করা,তুখোড় অংক শিক্ষক আমাকে আমার বেসিক তৈরী করে দিয়েন।তিনি কখনো রাগ করতেন না,খুব ধৈর্য সহকারে পড়াতেন।পাড়ার অন্যান্য বাচ্চারা যারা খেলার সাথী ছিলো। ওরা খারাপ কথা বলতো,কখনো অন্যের জিনিস না বলে নিয়ে যেতো।তিনি বুঝাইতে খারাপ কথা কেন বলা যাবেনা,কাউকে না বলে তার জিনিস আনা যাবেনা।প্রত্যন্ত গাঁয়ে আমাদের বাড়ি। তবু সেখানে দৈনিক সংবাদ পত্র পড়া হতো,সকাল সন্ধে ট্রানজিস্টার রেডিও তে বিবিসি সংবাদ শোনা হতো,প্রতিটি ঘর ছিলো বইপত্রে ঠাসা। সবাই পড়তে ভালোবাসি। গাঁয়ের অন্য ঘরগুলোতে যখন বৈষয়িক বিষয় নিয়ে তুমুল ঝগড়াঝাটি, আমাদের বাড়িতে বিতর্ক হতো ইতিহাস, ইসলাম, রাজনীতি নিয়ে।এমন একটা পরিবেশ তৈরি করে ছিলো আমার শিক্ষক। জীবনের যেকোনো সংকটে আভয় আর আশ্রয় স্হল ছিলেন তিনি।সবসময় উত্সাহো দিতেন।তার প্রিয় সূরা ছিলো সূরা রহমান। তিনি জীবনের শেষ দিন গুলিতে যখন খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন, বারবার বলতেন বাংলা তরজমা সহ সূরা রহমান পড়ে শুনাতে।দাদা দাদী মা যখন বিছানায় একদিন দাদী খুব অসুস্থ। দাদা বারান্দায় বসে বারবার তার খবর নিচ্ছেন। আমি সূরা রহমান পড়ছি।একটু পর দাদীকে নিতে এ্যাম্বুলেন্স এলো,দাদা আমাকে বললেন,তোমার দাদীকে আমার সালাম দাও।আমি অবচেতন দাদীকে সালাম পৌঁছে দিলাম।তার মতো বিনয়ী শিক্ষক আমি আর পাইনি। তার মৃত্যু র সময় আমি দূরে ছিলাম। যখন তার কাছে আসলাম,আমি তার নিথর দেহটার কাছে যেতে পারছিলাম না।বরাবরের মতো আমার অভিমান,আপনি আমাকে না বলে চলে গেলেন কেন?সবার অনুরোধে আমি তার সামনে দাড়ালাম। স্মিত হাস্যমুখ, মাথার কাছে একটা সবুজ প্রজাপতি বসে আছে।কি শান্ত আর সুখী দেখাচ্ছে তাকে।আমি নির্বাক হয়ে চেয়ে আছি, আমাদের শেষ বিদায়ের ক্ষণে। আমি অভিমান ভুলে মনে মনে বললাম, হে প্রশান্ত আত্মা যাও তোমার প্রিয় রবের কাছে, যিনিই উত্তম ফয়সালা কারি।

আপেল সাইডার ভিনেগার খেলে যে কাজগুলো করা যাবে না

 

আপেল সাইডার ভিনেগারের উপকারিতার কথা কম-বেশি সবারই জানা। সেইসব উপকারিতা পেতে নিয়মিতভাবে অনেকেই এটি খেয়ে থাকেন। কিন্তু সঠিক নিয়ম মেনে না খেলে আপেল সাইডার ভিনেগার হতে পারে আপনার ক্ষতির কারণ। কিছু কাজ আছে যা আপেল সাইডার ভিনেগার খেলে করা যাবে না। চলুন জেনে নেয়া যাক-

ভরপেট খাবার খাওয়ার ঠিক পরেই কি আপেল সাইডার ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস আপনার? তাহলে এই অভ্যাস এখনই ত্যাগ করুন। ভরাপেটে আপেল সাইডার ভিনেগার খেলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। খালি পেটে খেলে হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

অনেকেই কিছু খাওয়ার আগে তার গন্ধ শুঁকে দেখেন। আপেল সাইডার ভিনেগারের ক্ষেত্রে এটা করবেন না। কারণ আপেল সাইডার ভিনেগার শুঁকলে চোখ ও নাকের সমস্যা হতে পারে। তাই আপেল সাইডার ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে হালকা করেও খেতে পারেন। তাতে এর কড়া গন্ধ আপনার নাকে যাবে না।

আপেল সাইডার ভিনেগার খেয়েই দাঁত ব্রাশ করবেন না। এতে আপনার দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যেতে পারে। এর ফলে আপনার দাঁতে ক্যাভিটি দেখা দিতে পারে। তাই আপেল সাইডার ভিনেগার খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পরে দাঁত ব্রাশ করুন।

প্রথমেই অনেকটা আপেল সাইডার ভিনেগার খেয়ে নেবেন না। শরীরকে এর সঙ্গে অভ্যস্ত হতে সময় দিন। প্রথমে অল্প অল্প করে খাওয়া শুরু করুন। না হলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

রাতের বেলা শুতে যাওয়ার ঠিক আগে আপেল সাইডার ভিনেগার খাবেন না। এটি খাওয়ার পর অন্তত ৩০ মিনিট সোজা হয়ে বসে থাকবেন। নয়তো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।

আইসোলেশনের জন্য নিজেকে তৈরি করবেন যেভাবে

এ এক কঠিন সময়। শতাব্দীর সবচেয়ে বড় দুঃসময় বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। কোনো নির্দিষ্ট দেশ কিংবা জাতি নয়, পুরো বিশ্বই এখন আক্রান্ত, আতঙ্কিত। তাই নিজেকে একা ভাবার দরকার নেই। এখন প্রত্যেকেই আপনার মতো উদ্বিগ্ন। যেহেতু ভাইরাসটি নতুন, এখনও আবিষ্কার হয়নি এর ওষুধ কিংবা প্রতিষেধক, তাই ভয়টা বেশি। তবে ভয় দূর করতে চাইলে ইতিবাচকভাবে চিন্তা করতে হবে। এই রোগে আক্রান্ত হওয়া মানেই কিন্তু মৃত্যু নয়। অনেকেই আক্রান্ত হওয়ার পরে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। খুব কম সংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রেই এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। তাই ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখুন। এটিও কিন্তু আপনাকে অসুখের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের রসদ জোগাবে।

করোনাভাইরাস আসার পরে আমরা কিছু নতুন শব্দের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। যেমন কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, পিপিই ইত্যাদি। এই শব্দগুলোর ব্যবহার আগে এতটা হতো না যতটা এখন হচ্ছে। এর মধ্যে কোয়ারেন্টাইন আর আইসোলেশনকে গুলিয়ে ফেলছেন অনেকে। কোয়ারেন্টাইন হলো আপনার ভেতর অসুখটা আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য অন্তত দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা। যদি এমন কোনো আশঙ্কা তৈরি হয় যে, আপনি এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন, তখনই কেবল আপনাকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে। দুই সপ্তাহ পর যদি পরীক্ষায় করোনাভাইরাস নেগেটিভ আসে, তবে আপনি সুস্থ। কোয়ারেন্টাইন থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন। আর যদি পজেটিভ হন, তবে যেতে হবে আইসোলেশনে।

কারো শরীরে যখন করোনাভাইরাস ধরা পড়ে তখন তাকে আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। আইসোলেশনের সময় চিকিৎসক ও নার্সদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে থাকতে হবে রোগীকে। অন্য রোগীর কথা ভেবে হাসপাতালে আলাদা জায়গা তৈরি করা হয় তাদের জন্য। অন্তত দুই সপ্তাহের মেয়াদে আইসোলেশন চলে। অসুখের গতিপ্রকৃতি দেখে তা বাড়ানোও হয়। আইসোলেশনে থাকা রোগীর সঙ্গে বাইরের কারো যোগাযোগ করতে দেয়া হয় না। তাদের স্বজনদের সঙ্গেও এই সময় দেখা করতে দেয়া হয় না। একান্ত তা করতে দেয়া হলেও অনেক বিধিনিষেধ মানতে হয়।

যেহেতু এখনও এই অসুখের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি তাই আক্রান্ত ব্যক্তিকে এ সময় কিছু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দিয়ে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায় এমন কিছু ওষুধ ও পথ্য দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হয়। যাদের শরীরে এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ও করোনার প্রকোপ অল্প, তারা এই পদ্ধতিতে সুস্থও হন। যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ও রোগের হানা বড়সড় রকমের, তাদের পক্ষে সেরে ওঠা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

খুব বেশি উদ্বেগজনক অবস্থা না হলে রোগীর বাড়িতেও আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এটি অনেকটা কোয়ারেন্টাইনের মতোই। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পথ্য চলতে পারে এই সময়। ভাইরাসটি এমনই সংক্রামক যে, সেবার জন্য কাউকে কাছে পাওয়ার আশা না করাই ভালো। তবে আইসোলেশন সেন্টারে থাকলে চিকিৎসক ও নার্সের দেখা পাবেন, বাড়িতে থাকলে আপনজনদের মধ্য থেকে কেউ দেখাশোনা করতে চাইলে তাই অবশ্যই সবরকম স্বাস্থ্যবিধি মেনে তবেই তা করতে হবে।

যদি আপনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন, তবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। যেহেতু প্রতিষেধক নেই তাই মৃত্যুভয় আপনাকে আঁকড়ে ধরতেই পারে। এই অবস্থায় আপনাকে সাহায্য করতে পারে আপনার মনোবল। কিছুতেই মনোবল হারানো চলবে না। আইসোলেশন সেন্টার কিংবা বাড়িতে, যেখানেই আইসোলেশনে থাকুন না কেন আশা ধরে রাখতেই হবে।

ফিরতেই হবে- এমন মনোভাব ধরে রাখলে সহজে হারাবেন না। মনে রাখবেন, আমাদের শরীর কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই আমাদের মনের কথা শুনে চলে। তাই শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করতে মনের দিকটাও গুরুত্ব দিতে হবে। তাই জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তেও আশা বাঁচিয়ে রাখুন।

যা কিছু দরকারি জিনিস, তা হাতের কাছে রাখুন। কখন কোন ওষুধ খাওয়ার, তা জেনে নিন। যেন কেউ সাহায্য না করলেও নিজেই ওষুধ খেতে পারেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মানেই সব শেষ ধরে নেবেন না। হতে পারে এটাই নতুন করে শুরু। অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং তাদের আত্মবিশ্বাস আগের থেকে আরও বেড়েছে নিঃসন্দেহে। তাই যতটা সম্ভব খেয়াল রাখুন নিজের দিকে। যদি সুস্থ হয়ে ফেরেন তবে নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী হবেন আপনি। মৃত্যুকে জয় করে আসা কম কথা নয়! সৌজন্যে: জাগোনিউজ

হাসপাতালে যোগ দিয়েই করোনায় আক্রান্ত ৫ নার্স

সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঁচ নার্সের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. ইউনুছুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, করোনা শনাক্ত হওয়া নার্সরা সম্প্রতি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ওসমানী হাসপাতালে যোগ দেয়ার জন্য সিলেটে আসেন। বাইরে থেকে আসায় তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয় এবং রিপোর্ট পজেটিভ আসে।

করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশের ন্যায় ওসমানী হাসপাতালেও নতুন ১৩৯ নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত ১৩ মে কর্মস্থলে যোগদানের সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়।

এদিকে, শুক্রবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৩৫৮ জন। পুরো বিভাগে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ছয়জন আর সুস্থ হয়েছেন ৬৯ জন।

গত ৫ এপ্রিল সিলেটে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। ১৫ এপ্রিল তিনি মারা যান।

সূত্র : ইউএনবি