All posts by Oporajita

 

লা রিভে ফাল্গুন-ভ্যালেন্টাইনের নতুন কালেকশন

সাসটেইনেবল। মানানসই। উজ্জল কিন্তু রুচিশীল রঙ। স্প্রিং/সামারের ফ্যাশন-অভিধানে প্রকৃতির পাশাপাশি এই শব্দগুলো ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবার। এই প্রেক্ষাপটে দেশি স্টাইল ও আন্তর্জাতিক ট্রেন্ডের মিশেলে ফাল্গুন-ভ্যালেন্টাইনের বাস্তবধর্মী বা সফিস্টিকেটেড ফ্যাশনের বিশেষ একটি কালেকশন নিয়ে এসেছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থনীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড লা রিভ। সেই সঙ্গে পাওয়া যাবে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতি মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন।

লা রিভ এর প্রধান নির্বাহী পরিচালক মন্নুজান নার্গিস বলেন, ‘কোভিড-১৯ আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। পোশাকে ইউটিলিটি ও একাধিক উপলক্ষ্যে পরার উপযোগিতা, উজ্জল কিন্তু চোখে শান্তি দেবে এমন রঙের প্রতি আমাদের আগ্রহ বেড়েছে। তাই এবারের ফাল্গুন-ভ্যালেন্টাইন কালেকশনে বছরজুড়ে পরার মত মানানসই বা সাসটেইনেবল পোশাক তৈরির চেষ্টা করেছি আমরা। লা রিভের পোশাক মানেই আন্তর্জাতিক যা র‍্যাম্পের জনপ্রিয় প্রিন্টগুলোর বৈচিত্রময় উপস্থাপনা। নতুন কালেকশনেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কালার প্যালেটে শ্যাওলা সবুজ, গেরুয়া, হলুদ, ছাই, গোলাপি, কমলা, মেরুন, কালো, এবং নীলের নানারকম শেড ব্যবহার করা হয়েছে। বসন্তের নানারকম উজ্জল ফুল যেমন সূর্যমুখি, টিউলিপ, চেরি, পপির পাশাপাশি ইস্টার্ন বোটানিক, ফ্লোরাল টাইডাই ফর্ম, ফোক ফ্লোরাল এবং সবুজ পাতার বিভিন্ন শেড নিয়ে কাজ করা হয়েছে। বসন্তের প্রকৃতি ছাড়াও অন্যতম আকর্ষন ট্রেন্ডি ইক্কাত প্রিন্ট। ভিসকোস, ফেইলি, মসলিন, কটন, হাফ সিল্ক, এবং নিটের এই পোশাকগুলি ফাল্গুন-ভ্যালেন্টাইন ও একুশের আয়োজন ছাড়াও বছরজুড়ে যেকোন আয়োজনে পরা যাবে।’

এই কালেকশনে নারী, পুরুষ ও শিশু, তিনটি বিভাগেই দারুণ সব নতুন স্টাইল আনা হয়েছে। নারীদের জন্য থাকছে এম্ব্রয়ডারি, ফ্রিল, প্যটার্ন ও লেয়ারে সাজানো সালোয়ার কামিজ, সিঙ্গেল কামিজ, নিট ও উভেন টিউনিক, শার্ট ও টিশার্ট, ম্যাক্সি ড্রেস, গাউন ও শ্রাগ। কটন, হাফসিল্ক ও মসলিন শাড়ির অসাধারণ একটি কালেকশন রাখা হয়েছে এবার। পুরুষের জন্য থাকবে শর্ট ও ফুলহাতা শার্ট, ক্যাজুয়াল ও কমফোর্ট শার্ট, পোলো, টিশার্ট এবং সেমি ও ফিটেড পাঞ্জাবি। এছাড়াও থাকছে যেকোন অনুষ্ঠানে পরার উপযোগি আকর্ষনীয় কাবলি সেট।

লা রিভের নতুন এই কালেকশনে শিশুদের জন্য থাকছে বিশেষ আয়োজন। ছেলেশিশুদের জন্য পাঞ্জাবি, পোলো ও টিশার্ট, ক্যাজুয়াল শার্ট রাখা হয়েছে। মেয়েশিশুদের জন্য এবারের বিশেষ আকর্ষন উৎসবে পরার শাড়ি। ফ্রক, ঘাগরা-চোলি, সালোয়ার কামিজ, টিউনিক ও উভেন সেটের নতুন স্টাইলেও থাকবে ফাল্গুন ও একুশের ছোঁয়া। বাবা-মায়ের সাথে মিলিয়ে পরার জন্য মিনি-মি কালেকশনেও থাকছে নতুন সব স্টাইল।

বটমস কালেকশনে নারীদের প্যান্ট পাজামা, হারেম ও লেগিংস থাকছে। ছেলেদের জন্য ঘরে-বাইরে, পাঞ্জাবি ও শার্টের সাথে পরার মত পাজামা প্যান্টের বর্ণিল একটি কালেকশন নিয়ে আসা হয়েছে। আরামদায়ক কটন টুইল, টেনসেল, রেমি কটনে তৈরি এই পাজামাগুলোর আরাম ও বৈচিত্র ক্রেতাদের মুগ্ধ করবে। শিশুদের জন্য ম্যাচিং পালাজ্জো, পাজামা প্যান্টস, নিটেড, উভেন ও ক্যামোফ্লেজ বারমুডা ও ক্যামোফ্লেজ প্যান্টস সংযোজন করা হয়েছে।

লা রিভ লাইফস্টাইল সেগমেন্টে থাকছে গয়না, ম্যাচিং মাস্ক ও স্যান্ডেল এবং পুরুষের প্রয়োজনীয় ফ্যাশন অনুষঙ্গ।

নতুন কালেকশন পাওয়া যাবে লা রিভের ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, খুলনা, সিলেট দর্শন দেউরি ও নয়া সড়কসহ মোট ১৬টি আউটলেটে। এছাড়া দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে ক্যাশ অন ডেলিভারি সুবিধায় কেনা যাবে www.lerevecraze.com- এই সাইট থেকে। বিস্তারিত জানতে লগইন করুন।

 

ব্রিটেন সাময়িকী প্রসপেক্টাসের তালিকায় বিশ্বসেরা নারী চিন্তাবিদ

২০২০ আলের ১৪ জুলাই ৫০ সেরা চিন্তাবিদের তালিকা প্রকাশ করেছে ব্রিটেনের সাময়িকী প্রসপেক্টাস। সেখান থেকে শীর্ষ ১০ জনকে বাছাই করতে ২০ হাজার ভোট গ্রহণ করা হয়। সেই বিশ্বসেরা নারী চিন্তাবিদদের কয়েকজন হলেন-

কে কে সাইলাজা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী, কেরালা, ভারত

বিশ্বের সেরা ১০ চিন্তাবিদের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছেন ভারতের কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে সাইলাজা। তিনি সাইলাজা টিচার হিসেবে বেশি পরিচিত। ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি আন্তর্জাতিকভাবেও ব্যাপক প্রশংসিত। করোনা মোকাবেলায় ভারতের কেরালা এখন বিশ্বে মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে। জানুয়ারির শুরুতে কেরালায় তিন ছাত্রের করোনাভাইরাস সংক্রমণ চিহ্নিত হয়। ওই তিন ছাত্রই চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গেই চীন থেকে আগত ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। কেন্দ্রীয় সরকারের আগেই সাইলাজার নেতৃত্বে করোনা মোকাবেলায় সাফল্য অর্জন করেছে কেরালা রাজ্য।

জাসিন্ডা আরডার্ন
প্রধানমন্ত্রী, নিউজিল্যান্ড

বিশ্বের সেরা ১০ চিন্তাবিদের মধ্যে জাসিন্ডা আরডার্ন দ্বিতীয়। পুরো নাম জাসিন্ডা কেট লরেল আরডার্ন। নিউজিল্যান্ডের দু’-দু’বারের প্রধানমন্ত্রী থেকে তিনি এখন পরিণত হয়েছেন বিশ্বকে শান্তির পথে নেতৃত্ব দেয়ার দূত হিসেবে। মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন। গোটা বিশ্বে শান্তির পথে নেতৃত্ব দেয়ার দূত হিসেবে আলোচিত হচ্ছেন জাসিন্ডা অরডার্ন।

মেরিনা তাবাসসুম

স্থপতি

বিশ্বের সেরা ১০ চিন্তাবিদের মধ্যে মেরিনা তাবাসসুম তৃতীয়। তিনি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মিল রেখে ভবন নির্মাণ এবং পরিবেশের দ্বারা উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলো গ্রহণ করে নকশা তৈরিতে অবদান রেখেছেন। তার নকশা করা স্থানীয় উপকরণের হালকা ওজনের বাড়িগুলো স্টিলের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম এবং পানির মাত্রা বেড়ে গেলে সেগুলো সরানো যায়। বিষয়গুলো আন্তর্জাতিকভাবে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে।

ইলোনা জ্যাবো দে কার্ভালহো
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ব্রাজিল

বিশ্বের সেরা চিন্তাবিদদের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইলোনা জ্যাবো দে কার্ভালহো। তিনি একজন নাগরিক উদ্যোক্তা, ইগারাপা ইন্সটিটিউটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইন্সটিটিউটটি সুরক্ষা, জলবায়ু এবং উন্নয়নের ছেদগুলো নিয়ে অগ্রণী গবেষণা, নতুন প্রযুক্তি এবং নীতি তৈরি করেছে।

ওলিভেট ওটেলে
ইতিহাসবিদ

ব্রিটেনের ইতিহাসবিদ ওলিভেট ওটেলে বিশ্বের নারী চিন্তাবিদদের মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন। তিনি কালো নারীদের মধ্যে প্রথম যিনি ব্রিসটল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক।

রুথ উইলসন গিলমোর
ভূগোলবিদ, মার্কিন

বিশ্বের সেরা চিন্তাবিদদের মধ্যে মার্কিন ভূগোলবিদ রুথ উইলসন গিলমোর স্থান সপ্তম। তিনি সেন্ট্রার ফর প্লেসের পরিচালক, সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ এবং নিউইয়র্কের সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের পৃথিবী এবং পরিবেশবিজ্ঞানের অধ্যাপক। এ বছর তিনি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব জিওগ্রাফারস আজীবন সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড পান।

গ্রেটা সেলেস্ট গারউইগ
চলচ্চিত্র নির্মাতা

গ্রেটা সেলেস্ট গারউইগ। বিশ্বসেরা চিন্তাবিদদের তালিকায় রয়েছেন তিনিও। তিনি একজন মার্কিন অভিনেত্রী, লেখক, পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার। ২০১৭ সালে ‘লেডি বার্ড’ চলচ্চিত্র দিয়ে গ্রিটা গারউইগের একক পরিচালক হিসেবে অভিষেক হয়। ছবিটি সমাদৃত হয়। ৭৫তম গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারে সেরা সঙ্গীতধর্মী বা হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র বিভাগে পুরস্কার লাভ করে। ‘লেডি বার্ড’ ছবিতে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যের জন্য তিনি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। অর্জন করেন একাডেমি অ্যাওয়ার্ডও। গারউইগ অস্কারের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে মনোনীত পঞ্চম নারী।

হিলারি ম্যানটেল
ঔপন্যাসিক

সাহিত্যিক হিলারি ম্যানটেলের লেখা বই ‘উল্ফ হল’ ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয়। এ বইয়ের জন্য তিনি ম্যান বুকার পুরস্কার লাভ করেন। তার সাহিত্যকর্মগুলো ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক উপন্যাস পর্যন্ত বিস্তৃত। ইংল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রে তিনি বেশ কিছু পত্রিকা ম্যাগাজিনে সমালোচক হিসেবেও কাজ করছেন। সমাজের নানা বিষয় উঠে এসেছে তার লেখায়। বিশ্বসেরা চিন্তাবিদের তালিকায় এর আগেও ছিলেন তিনি। এবারও তিনি তালিকায় রয়েছেন।

সারাহ গিলবার্ট
বিজ্ঞানী

বিজ্ঞানী সারাহ গিলবার্ট। কোভিড-১৯ নিরসনের ভ্যাকসিনের খোঁজে পৃথিবী যখন তোলপাড় তখন সর্বপ্রথম ‘সুখবর’ দেন এই সারাহ গিলবার্টই। লন্ডনের জেনার ইন্সটিটিউট ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হচ্ছে নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন। এ গবেষণার পুরোভাগে রয়েছেন সারাহ গিলবার্ট। বিশ্বসেরা চিন্তাবিদদের তালিকায় তিনি জায়গা করে নিয়েছেন।

এস্তের ডুফলো
অর্থনীতিবিদ

ফরাসি অর্থনীতিবিদ এস্তের ডুফলো ২০১৯ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন। নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে তিনি সর্বকনিষ্ঠ অর্থনীতিবিদ। তার স্বামী ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। এ বছর তিনি বিশ্বসেরা চিন্তাবিদের তালিকায় রয়েছেন। তিনি ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়ন অর্থনীতির অধ্যাপক।

কোরনেল ওয়েস্ট
দার্শনিক আফ্রিকান-আমেরিকান

বিশ্বের সেরা ১০ চিন্তাবিদের মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন কোরনেল রোনাল্ড ওয়েস্ট। তিনি একজন আমেরিকান দার্শনিক, রাজনৈতিক কর্মী, সামাজিক সমালোচক, লেখক এবং বুদ্ধিজীবী। পশ্চিম আমেরিকার বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে তিনি যুক্ত। তিনি বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারিতে অভিনয় করেছেন।

ফিলিপ্পে ভ্যান প্যারিস
দার্শনিক, বেলজিয়াম

বিশ্বের সেরা চিন্তাবিদদের মধ্যে অষ্টম স্থানে রয়েছেন ফিলিপ্পে ভ্যান প্যারিস। তিনি একজন বেলজিয়ামের রাজনৈতিক দার্শনিক এবং রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ। তিনি একটি মৌলিক আয়ের ধারণার এবং ভাষাগত ন্যায়বিচারের প্রথম পদ্ধতিগত চিকিৎসার জন্য অন্যতম প্রবক্তা। প্রধান প্রতিরক্ষাকারী হিসেবে পরিচিত।

 

একজীবনে সফলতার প্রধান শর্ত সুপরিকল্পনা

সারা বিশ্বের রাজনৈতিক আলোচনায় এখন বাইডেন সর্বাধিক আলোচিত। আর তার নব্য ঘরানার প্রশাসন নিয়েও জল্পনা-কল্পনা অন্তহীন। তারই ধারাবাহিকতায় জেনিফার গ্রানহাম নামটি এখন আলোচনার শীর্ষে।

শুধু গ্রানহাম নামেই সারা বিশ্বে আলোচিত। পুরো নাম জেনিফার গ্রানহাম। জন্ম ১৯৫৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। জন্ম ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ভ্যানকোভারে। বর্তমানে রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, লেখক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার হিসেবে সুখ্যাত। ২০০৩ সাল থেকে ২০১১ সাল অবধি ছিলেন মিশিগানের গভর্নর। ২০১৭ সালে প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনে রাজনৈতিক ভাষ্যকার হিসেবে যুক্ত হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিন সন্তানের মা।

মাত্র চার বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে কানাডা থেকে অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রেও এসেছিলেন। আনাহিম, সান জোসে এবং সান কার্লোসে তিনি বেড়ে ওঠেন। ১৯৭৭ সালে সান কার্লোস হাইস্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার আগে ইদা প্রাইস জুনিয়র হাই এবং ডেল মার হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। মিস সান কার্লোস সুন্দরী প্রতিযোগিতায় তিনি জয়ী হয়েছেন।

শৈশব থেকেই হলিউডে অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তেমন সফল হতে না পেরে অভিনয় ছেড়ে দেন। ১৯৭৮ সালে ট্যুর গাইড হিসেবে চাকরি করেন। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসে পরিসেবা এবং রেডউড সিটিতে মেরিন ওয়ার্ল্ড আফ্রিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম নারী ট্যুর গাইড হিসেবেও কাজ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নতুন মন্ত্রিসভার জ্বালানিমন্ত্রী হিসেবে জেনিফার গ্রানহামের নাম ঘোষণা করেছেন। ইতোমধ্যে বাইডেন নিজে গ্রানহামকে সবার সামনে উপস্থিত করে তার যোগ্যতা সম্পর্কে সবাইকে ধারণা দেন। মূলত এরপর থেকেই গ্রানহাম নামটি আরও বেশি গুরুত্ব পায়।

সাবেক গভর্নর জেনিফার গ্রানহাম সম্পর্কে জো বাইডেন বলেন, আমার ভালো বন্ধু তিনি। জ্বালানি ও পরিবেশ বিভাগের সদস্যরা মেধাবী, যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছেন। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে প্রশাসনে গ্রানহাম ভবিষ্যতে সুদক্ষতার সঙ্গে কাজ করে নিজেকে আরও যোগ্য প্রমাণ করবেন।

সম্ভাব্য নতুন মন্ত্রিসভার পরিচিতি অনুষ্ঠানে জ্বালানিমন্ত্রী করায় ও তার প্রতি আস্থা রাখায় শুরুতেই জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান গ্রানহাম।

সামনের সময়ে সব দেশ ও গাড়ি কোম্পানিগুলো বৈদ্যুতিক গাড়ি ও ব্যাটারি তৈরিতে ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে। সৃষ্টি হবে লাখ লাখ কর্মসংস্থান। সুতরাং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে অপার সম্ভাবনা সামাল দিতে পারা দেশগুলোই থাকবে করোনা অর্থনীতি জয়ী দেশগুলোর সামনের কাতারে। যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে কোনোভাবেই পিছিয়ে থাকবে না বলে জানান ৬১ বছর বয়সি গ্রানহাম।

বাইডেন প্রশাসন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নির্বাচনের আগে থেকেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাই জ্বালানির উৎস বিশেষ করে গ্যাস, কয়লা আর তেলের ব্যবহার কমিয়ে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে এমন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করবে বাইডেন প্রশাসন। এ ব্যাপারে গ্রানহাম এখন সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। অতীতে তিনি দেশের জ্বালানি শিল্পকে কীভাবে গ্যাস, তেল ও কয়লানির্ভরতা থেকে বায়ু ও সৌর জ্বালানিতে রূপান্তরিত করা যায় তার ওপর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড্যান কামম্যান জেনিফার গ্রানহাম সম্পর্কে বলেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তিনি অসাধারণ ও অভাবনীয়। কারণ তিনি ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি বোঝেন এবং জানেন। কীভাবে বড় দায়িত্ব পরিকল্পনার সঙ্গে এগিয়ে নিতে হয় তাও তার অজানা নয়। ২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বারাক ওবামা নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়ার কথা আলোচনায় এসেছিল।

চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হবে। সফল হতে হলে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সুস্পষ্ট আর সম্যক ধারণা থাকাটা প্রথম শর্ত। সময় যেমনই আসুক ব্যবস্থাপনা আর সুপরিকল্পনা থাকলে তা থেকে উতরিয়ে যাওয়া কঠিন নয়। করোনা জয় করে জীবন একদিন স্বাভাবিক হবেই। বিশ্বাস নিয়ে একটু একটু করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। প্রতিদিনের কাজেও সফলতা আর না পারা থাকে। তাই জয়-পরাজয় নিয়ে থমকে না থেকে শুধু কাজ করে গেলে সফলতার পথ আপনা থেকেই অনুকূলে আসে। নিজের কথাগুলো এভাবেই জানিয়েছেন জেনিফার গ্রানহাম।

 

গরম ভাতে বেলে-টমেটোর টক

মাছে ভাতে বাঙালি। গরম ভাতের সঙ্গে মাছের বিভিন্ন পদ খিদে আরও বাড়িয়ে তোলে। মাছ খেতে সবাই কমবেশি পছন্দ করে থাকেন। মাছ দিয়ে বিভিন্ন পদ তৈরি করা যায়।

বেলে মাছ অনেকেরই পছন্দের। এ মাছের টক খেয়েছেন কখনো। রান্না করতেও কম সময় লাগে; আর স্বাদেও অনন্য বেলে-টমেটোর টক।

টমেটো ও মাছ দিয়ে দুর্দান্ত এই পদ চাইলেই দুপুরে রান্না করতে পারেন। উপকরণও লাগবে সামান্য। চলুন তবে জেনে নিন রেসিপি-

উপকরণ

১. বেলে মাছ ৪০০ গ্রাম
২. টমেটো কুচি ১টি
৩. পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ
৪. রসুন বাটা ১ চা-চামচ
৫. জিরা বাটা ১ চা-চামচ
৬. কাঁচা মরিচ ফালি ২-৩টি
৭. হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ
৮. মরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ
৯. লবণ স্বাদমতো
১০. তেল প্রয়োজনমতো
১১. পানি আধা কাপ।

পদ্ধতি

প্রথমে মাছ কেটে ধুয়ে নিন ভালোভাবে। এর সঙ্গে লবণ, হলুদ ও রসুন বাটা মেখে ফ্রাইপ্যানে তেল দিয়ে ভেজে তুলে রাখুন।

এবার প্যানে তেল গরম করে বাটা ও গুঁড়ো মশলাসহ লবণ দিয়ে কষিয়ে নিন। সামান্য পানি দিয়ে নিবেন।

মশলা কষানো হলে টমেটো কুচি দিয়ে একটু নেড়েচেড়ে পানি দিন। পানি ফুটে উঠলে বেলে মাছগুলো ঢেলে দিন।

ঝোল ঘন হলে কাঁচা মরিচ দিয়ে নামিয়ে নিন। চাইলে ধনেপাতা কুচিও নামানোর আগে দিতে পারেন। গরম ভাতের সঙ্গে এই পদ খেতে খুবই মজাদার।

 

প্রয়োজন পারিবারিক সচেতনতা

সম্প্রতি রাজধানীর কলাবাগানে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ১৭ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে সদ্য কিশোর বয়স পার করা তার ১৮ বছরের এক বন্ধু।

চলতি বছরের শুরুর দিকেই রাজধানীর কামরাঙ্গী চরের কয়লাঘাট এলাকায় পায়ে পাড়া দেওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হত্যা করা হয়েছে সিফাত নামের ১২ বছর বয়সি এক শিশুকে।

এ ঘটনায় যে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়- তাদের সবার বয়সও ১০ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। শুধু এ দুটি ঘটনাই নয়, প্রায়ই ধর্ষণ, ইভটিজিং, চুরি, আত্মহত্যা, মাদকসেবন, হত্যা থেকে শুরু করে এমন সব লোমহর্ষক কর্মকাণ্ড আমরা আশপাশে দেখি কিংবা পত্রিকা বা সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি যেখানে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্ত দু’জনই অপ্রাপ্তবয়স্ক।

এ বিষয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালের মনস্তত্ত্ববিদ তারানা আনিস বলেন, ‘কিশোর-কিশোরীরা অপরাধ প্রবণতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। শিশু বিকাশের কয়েকটি ধাপ রয়েছে এবং প্রতিটি ধাপের কিছু চাহিদা বা বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। কিশোর বয়সে মনের মাঝে নানারকম অ্যাডভেঞ্চার কাজ করে। এ বয়সে তারা নিজেকে প্রকাশ করতে চায়। আত্মপ্রকাশের চাহিদা তাদের কৌতূহলপ্রিয় করে তোলে। কৌতূহলের বশে তারা নতুন কিছু জানতে চায়, করতে চায়। তাদের একটা আলাদা জগৎ থাকে, মতামত থাকে। তারা চায় তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হোক। সামান্য প্রলোভন, কৌতূহল, আনন্দ ও ক্রোধ তাদের আলোড়িত করে। যা অনেক সময় কিশোর-কিশোরীদের বিপথগামী করে তোলে। তাদের বাধা দেওয়া হলে, তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া না হলে তারা সেই কাজটি করার জন্য আক্রমণাত্মক ও অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে।’

করোনার কারণে অনেকদিন ধরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এখন ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট থেকে শুরু করে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজ অনলাইনে করতে হচ্ছে। আবার বাইরে যাওয়ার সুযোগ কমে যাওয়ায়, ইনডোর-আউটডোর গেমের সুযোগ কমে যাওয়ায় বর্তমানে ইন্টারনেটেই শিশু-কিশোরদের বেশিরভাগ সময় কাটছে। এ সুযোগে তারা ইন্টারনেটে নানা ধরনের প্রাপ্তবয়স্ক মুভি দেখছে, গেম খেলছে, সামাজিক মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। ইন্টারনেটে মারামারি, ধ্বংসাত্মক গেম খেলে কিশোরীরা বাস্তবেও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে। সিনেমা, অপরাধবিষয়ক বিভিন্ন সিরিয়াল দেখে তারা অপরাধ সংঘটনের বিভিন্ন কৌশল শিখছে। চাওয়া-পাওয়া বা মতের মিল না হলে, ধর্ষণে বাধা দিলে খুন করে ফেলছে বন্ধু বা সহপাঠীকেই।

মনস্তত্ত্ববিদ তারানা আনিস জানান, ‘বয়ঃসন্ধিক্ষণে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে হরমোনাল চেঞ্জ হয়। এ বয়সে তাদের সেক্সের প্রতি আগ্রহ, কৌতূহল তৈরি হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সেক্স রিলেটেড বিষয়গুলো নিয়ে আমরা সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করি না। সচেতন করারও প্রয়োজন বোধ করি না। এতে করে তারা সেক্স রিলেটেড বিষয়গুলো বন্ধুবান্ধব, সহপাঠীদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করে। এতে অনেক ক্ষেত্রেই এ বিষয়ে তারা ভুল ইনফরমেশন পায়। যেটা তাদের ভুলের দিকেই প্রভাবিত করে। এমনও হচ্ছে কিশোর বা কিশোরীরা হয়তো শিক্ষামূলক কোনো কনটেন্ট গুগলে সার্চ করছে কিন্তু পাশে প্রাপ্তবয়স্ক বা নিষিদ্ধ কোনো কনটেন্ট চলে আসছে- এসব কনটেন্ট কিন্তু তাদের কৌতূহল প্রবণ করে তোলে। আবার ওই কনটেন্টটি সামনে চলে আসার মুহূর্তে অনেক সময় মা-বাবা তা দেখে ফেলছে এবং সন্তানকে এসব দেখার কারণে বকাঝকা করছে। এতে কিন্তু ওর মধ্যে মা-বাবা ওকে ভুল বুঝল এমন একটা ধারণা জšে§, সঙ্গে লুকোচুরি করে এ জিনিসগুলো দেখার প্রতি আগ্রহ তৈরি করে।’

শুধু ইন্টারনেট বা বাবা-মায়ের অতিশাসন নয়, মাতা-পিতার অযত্ন-অবহেলা, উদাসীনতা, সন্তানকে প্রয়োজনীয় ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা না দেওয়া, পিতা-মাতার ঝগড়া বিবাদ, ভাঙন, দারিদ্র্য, আর্থিক প্রাচুর্যতা, সুষ্ঠু বিনোদনের সংকট, মাদকসেবন, খারাপ সঙ্গসহ আরও বিভিন্ন কারণ কিশোরদের অপরাধী করে তোলে।

‘কিশোর বয়সে সন্তানকে খারাপ সঙ্গ থেকে দূরে রাখতে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। তাকে তার মতো করেই বুঝতে হবে, মিশতে হবে। মনে করুন আপনি আপনার মেয়ের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশলেন। সেই বন্ধুত্ব থেকে আপনার মেয়ে আপনাকে এসে বলল মা ওই ছেলেটা আমাকে প্রোপোজ করেছে। এটা শুনে আপনি তাকে বকাঝকা করলেন কিংবা এ জন্য তাকেই দোষারোপ করলেন- এটা কিন্তু সঠিক পদ্ধতি নয়। আপনার সন্তানের সঙ্গে বন্ধু হয়েই তাকে ধীরে ধীরে বিষয়টির নেগেটিভ দিকগুলো বুঝাতে হবে। সন্তানের সঙ্গে ইভেকটিভ কমিউনিকেশন বাড়াতে হবে। অর্থাৎ তাদের কথাগুলো মন দিয়ে শুনতে হবে। তারা কী বলতে চাচ্ছে সেটা বোঝার চেষ্টা করতে হবে এবং জাজমেন্টাল না হয়ে অনেক বিষয় চিন্তা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পাশাপাশি তাকে সমান হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। বাসার কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার মতামতকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে’- বলে তিনি মনে করেন ।

বাবা-মায়ের মধ্যে যদি সব সময় ঝগড়া বিবাদ লেখে থাকে, তাদের মধ্যে যদি সম্মানসূচক সম্পর্ক না থাকে তাহলে সন্তানরাও এ ধরনের নেতিবাচক আচরণ শিখে। কারণ তারা যত না শুনে শেখে তার চেয়ে অনেক বেশি দেখে শেখে। আপনি সন্তানকে বলছেন মোবাইল না চালাতে, টিভি না দেখতে কিন্তু আপনি নিজে সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে পড়ে আছেন, সিরিয়াল দেখছেন। এতে কিন্তু আপনার কথাগুলো আপনার সন্তান মান্য করবে না। কারণ বড়রা বা বাবা-মা যেটা করে না শিশুরা ধরেই নেয় যে, তারা সেটা না করলেও চলবে।

সন্তানকে রক্ষা করা বাবা-মায়ের দায়িত্ব। তবে সন্তানকে বিপদ থেকে রক্ষার জন্য সর্বক্ষণ চোখে চোখে রাখা কোনো ভালো অভ্যাস নয়। সন্তান কার সঙ্গে মিশল, ইন্টারনেটে কী করছে এ বিষয়গুলো অবশ্যই মনিটরিং করতে হবে। কিন্তু এ মনিটরিং যেন টর্চারের মতো না হয়। সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সেই সঙ্গে শুধু সন্তান ঠিকমতো খাচ্ছে কিনা বা ঘুমাচ্ছে কিনা এ বিষয়গুলো চিন্তা না করে তার সঙ্গে কানেকশন বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। কারণ সন্তানকে কারেক্ট করার চেয়ে তার মনোজগতের সঙ্গে কানেকশন বাড়ানো বেশি জরুরি। এতে করে সে ভুল পথে পা বাড়ানোর আগেই আপনি তা বুঝতে পারবেন এবং সংশোধনের সুযোগ পাবেন।

হাজার ব্যস্ততার মাঝেও বাবা-মায়েদের সন্তানের সঙ্গে গুণগত সময় ব্যয় করতে হবে। তাদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। ছোটবেলা থেকে ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে মিশতে দিতে হবে। এতে বড় হলে কিশোরদের সহপাঠী বন্ধু বা মেয়েদের প্রতি অতি কৌতূহল তৈরি হবে না। স্কুলগুলোতে পাঠ্যসূচিতে সেক্স এডুকেশন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং ক্লাসে আলোচনা করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।-যুগান্তর

 

গ্রেটার বিরুদ্ধে ভারতে মামলা

ভারতের নতুন কৃষি আইনের বিরোধিতা করে দেশটির কৃষকদের পক্ষে কথা বলায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী গ্রেটা থুনবার্গের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দিল্লি পুলিশ।

এর আগে বুধবার রাতে সিএনএনের একটি নিউজ টুইটারে শেয়ার করে সেখানে কৃষকদের পক্ষে কথা বলে গ্রেটা। এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দিল্লি পুলিশ তার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও শত্রুতা ছড়ানোর অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে।

এর আগে একই লিংক শেয়ার করে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সংগীতশিল্পী পপস্টার রিহানা। তিনি কৃষক আন্দোলনের সংবাদ শেয়ার করে লেখেন, ‘কেন আমরা এই বিষয় নিয়ে কথা বলছি না?’

এদিকে সর্বেশেষ একটি টুইটে গ্রেটা লেখেন, আমি এখনো কৃষক এবং তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সমর্থন করছি। কোনো হুমকি, ঘৃণা অথবা মানবাধিকার লঙ্ঘন আমাকে সরাতে পারবে না।

সূত্র: এনডিটিভি

 

উইঘুর ‘নারী ধর্ষণ’: চীনকে ফল ভোগের হুশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের

চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিম সংখ্যালঘুদের আটক রাখার বন্দিশিবিরগুলোতে নারীরা ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এমন খবরে ‘গভীরভাবে উদ্বেগের’ কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি চীনকে এর ফল ভোগ করতে হবে বলেও হুশিয়ারি দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।

বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে শিনজিয়াংয়ে সংঘটিত ‘বর্বরতার জন্য চীনের মারাত্মক পরিণতি ভোগ করা উচিত’ বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, উইঘুর নারীদের ওপর চলা অবিচার দেখে তারা বিচলিত হয়ে পড়েছে। চীনের আটককেন্দ্রের সাবেক ভুক্তভোগী ও প্রহরীর বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া জানায় যুক্তরাষ্ট্র।

একসময় বন্দি হিসেবে থাকা কয়েকজন ও একজন নিরাপত্তারক্ষী বিবিসিকে ক্যাম্পে সংগঠিতভাবে দলবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রমাণ দেখা কিংবা এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন।

গত বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতিবেদনটি পুরোটাই মিথ্যা। তবে চীনে বন্দিশিবিরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনেও বিস্তারিত বিবরণ উঠে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, চীনের জিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘু উইঘুর ও অন্য মুসলিমদের আটকে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং নারীদের ওপর অত্যাচার চালানোর খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

তিনি আরো বলেছেন, এই নৃশংসতা বিবেককে নাড়া দেয় এবং এর গুরুতর ফল অবশ্যই তাদের ভোগ করতে হবে।

 

শিক্ষিকা এখন মুদি-দোকানি

চন্দনা সাহা, দুই সন্তানের জননী। ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ভালকুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা। চাকরি করতেন স্থানীয় গোবিন্দাসী ক্যাডেট স্কুলে। বিগত আট বছর ধরে স্কুলে চাকরি করে আসছিলেন।

স্বামী বিপ্লব সাহা দুই বছর আগে ব্রেইন স্ট্রোক করে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়। কিন্তু তাতেও অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। এরই মাঝে শুরু হয় বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় চন্দনা-বিপ্লবের সুখের সংসার। সন্তানদের মুখের আহার ও অসুস্থ স্বামীর ওষুধের টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেয়ে যান চন্দনা।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত ৩৫টি কিন্ডারগার্টেনের কর্মজীবী ৫০০ শিক্ষক-কর্মচারী বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। চন্দনা সাহা (৩৫) তাদেরই একজন সংগ্রামী নারী।

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশের মতো এ উপজেলার কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছেন চন্দনা সাহার মত অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা। অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী ঋণ করে সংসার চালাচ্ছেন। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় অনেকে বিভিন্ন পেশার কাজ করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

করোনা ভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। সর্বশেষ ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলে চরম হতাশায় পড়েছেন চন্দনার মতো অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীরা। প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতা না পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

চন্দনা সাহা জানান, আমি আট বছর ধরে গোবিন্দাসী ক্যাডেট স্কুলে চাকরি করি এবং স্বামী বিপ্লব সাহা একটি ফ্লেক্সিলোডের দোকান চালিয়ে যা রোজগার হতো তা দিয়ে আমাদের চার সদস্যের সংসার ভালোই চলতো। কিন্তু বিগত দুই বছর আগে হঠাৎ আমার স্বামীর ব্রেইন স্ট্রোক হয়। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। কিন্তু তাতে তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। এছাড়া তিনি কাজ কর্মও করতে পারেন না। বর্তমানে আমার সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই কোনো উপায় না দেখে ধারদেনা করে নিজ বাড়িতেই একটি মুদি দোকান দিয়েছি। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দোকানে বিক্রি করে কোন রকম সংসার চালাচ্ছি।

গোবিন্দাসী ক্যাডেট স্কুলের পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, সরকারি যাবতীয় কার্যক্রমের সঙ্গে কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষকরা জড়িত। বৈশ্বিক এ মহামারির কবলে পড়ে উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন উপজেলার কয়েকশ শিক্ষক-কর্মচারী। বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান বন্ধ থাকায় অভিভাবকরা বেতন পরিশোধ না করায় স্কুল মালিকরা শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারছেন না। যার ফলে এমন নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেক কিন্ডার গার্টেনের বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে না পাড়ায় আসবাব পত্র বিক্রি করে দিয়ে দায় দেনা পরিশোধ করা হয়েছে। এমন দুর্দিনে কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খোলার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

 

ঈশ্বরদীর রত্নগর্ভা আমেনা খাতুনের ইন্তেকাল

ঈশ্বরদীর মহিয়সী নারী, রত্নগর্ভা মাতা এবং বিশিষ্ট ঠিকাদার মরহুম মোজাহার আলীর স্ত্রী আমেনা খাতুন (৯০) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টায় ঈশ্বরদীর চরসাহাপুর নতুন হাট মোড়ে নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারনে তিনি মারা যান।

সম্প্রতি ঈশ্বরদীর খ্যাতিমান এই নারী মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে পাবনা জেলার সফল নারী জননী হিসেবে ‘জয়ীতা’ পদকে ভূষিত হন। জীবদ্দশায় তিনি ৭ ছেলে এবং ১ মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করেছেন। যারা প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

রত্নগর্ভা মা আমেনা খাতুনের বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পুলিশের সাবেক ডিআইজি মাহফুজুল ইসলাম, মেজ ছেলে সড়ক ও জনপথের বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম (মরহুম), তৃতীয় ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনোয়ারুল ইসলাম, চতুর্থ ছেলে অতিরিক্ত সচিব মনোয়ারুল ইসলাম, পঞ্চম ছেলে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নাজমুল হাসান, ষষ্ঠ ছেলে পুলিশের এসপি সাইফুল ইসলাম এবং ছোট ছেলে ঠিকাদার ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নাহিদুল ইসলাম। একমাত্র মেয়ে মাহফুজা ইসলাম মিনু মাস্টার্স পাশ ও সমাজ সেবক।

সফল ও গুণী এই নারীর নামাজে জানাজা শুক্রবার বাদ মাগরিব চরসাহাপুর কেন্দ্রীয় গোরস্থানে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি ছেলে-মেয়ে, নাতি নাতনী, আত্নীয় স্বজন ও প্রচুর গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

 

 

কুমড়া বড়ি বানানোর সহজ পদ্ধতি

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এক খাবার হলো কুমড়া বড়ি। শীত এলেই কুমড়া বড়ি বানানোর ধুম পড়ে যায়। অনেকে একে ডালের বড়িও বলে থাকেন। তরকারির স্বাদ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় বড়ি। মজাদার বড়ি তরকারির পাশাপাশি ভর্তা করেও খাওয়া হয়।

কুমড়া বড়ি বানানো বেশ ঝামেলার বলে মনে করেন অনেকেই! তবে চাইলেই কিন্তু সহজ উপায়ে বাসায় তৈরি করে নিতে পারবেন কুমড়ার বড়ি। বড়ি অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করেও খাওয়া যায়। জেনে নিন রেসিপি-

উপকরণ
১. মাসকলাইয়ের ডাল ১ কাপ
২. চালকুমড়া একটার অর্ধেক
৩. পাঁচফোড়নের গুঁড়া আধা চা চামচ
৪. কালোজিরা সামান্য

পদ্ধতি: প্রথমে চালকুমড়া মিহি করে কুচি করে নিন। তারপর ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। যেন এর টক কস ভাব না থাকে। মিহি ভালো না হলে বেটেও নিতে পারেন। এদিকে সারারাত ভিজিয়ে রাখা মাসকলাইয়ের ডাল ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

যতক্ষণ না ডাল থেকে পরিষ্কার পানি বের হবে; ততক্ষণ ধুতেই হবে। যখন ডালগুলো সাদা হয়ে যাবে; তখন বুঝবেন হয়ে গেছে। তারপর পাটায় বা ব্লেন্ডারে বেটে নিতে হবে।

একটা বড় গামলায় বাটা ডাল ও চালকুমড়া ভালোভাবে অল্প অল্প করে মিশিয়ে মাখাতে হবে। ডাল মাখাতে মাখাতে একটা ফ্লাপি ভাব আনতে হবে।

মাথায় রাখবেন, এ মিশ্রণটি অনেকক্ষণ ধরে মাখাতে হবে। তারপর ছাদে পরিষ্কার পাতলা কাপড় পেতে ছোট ছোট করে বড়ি দিতে হবে। দু’দিন ভালোভাবে রোদ লাগলেই শুকিয়ে হয়ে যাবে বড়ি।

প্রথম দিন দুপুরের দিকে হাত দিয়ে দেখে যদি মনে হয় একটু শক্ত ভাব হয়ে গেছে। তাহলে কাপড় উল্টে বড়ির উল্টোপাশে রোদে দিবেন। ৫-৭ দিন পর থেকে রান্নায় ব্যবহার করতে পারবেন।

 

ঘরেই তৈরি করুন মজাদার ‘নাচোস’

বিভিন্ন ফাস্টফুড হাউস কিংবা রেস্টুরেন্টে বিদেশি খাবার নাচোসের দেখা মেলে। ছোট-বড় সবারই পছন্দ মেক্সিকান খাবারটি। এরই মধ্যে বাঙালির কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মুচমুচে নিমকি বা কর্ন চিপসের সঙ্গে সালাদ, চিকেন, মেয়োনিজ ও সসের দুর্দান্ত মিশেলে তৈরি হয় নাচোস।

এ খাবারে অনেক সস ও মেয়োনিজ থাকে, তাই বেশি ঝাল হয় না। এ কারণেই কম ঝালপ্রেমী ও শিশুদের কাছে নাচোস পছন্দের খাবার। তাই আপনি চাইলে কিছু উপকরণ দিয়ে ঘরেই তৈরি করে নিতে পারবেন খাবারটি। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক রেসিপি-

চিপসের উপকরণ
১. ভুট্টার আটা ২ কাপ
২. ময়দা আধা কাপ
৩. পনির গুঁড়া ২০০ গ্রাম
৪. কাঁচা মরিচ কুচি ১ টেবিল চামচ
৫. লবণ পরিমাণমতো
৬. মাখন ২৫ গ্রাম
৭. কুসুম গরম পানি পরিমাণমতো।

 

শীতে রুটি দীর্ঘক্ষণ নরম রাখার উপায়

স্বাস্থ্য সচেতনরা ভাতের বদলে এখন রুটি খেতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে রুটি ঠান্ডা হলে খেতে ভালো লাগে না। তাই বলে তো, দিনে ২-৩ বার রুটি বানিয়ে খাওয়া সম্ভব নয়। এজন্য অনেকেই এখন কিচেন হ্যাকস মেনে রুটি বেশি করে বানিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করেন। এতে যখন প্রয়োজন; তখনই বের করে চুলায় সেঁকে নিলেই হয়ে যায়।

তবে শীতের দিনে রুটি বানানোর কিছুক্ষণ পরই তা শক্ত হয়ে যায়। যদিও বানানোর কারিশমার ওপর নির্ভর করে রুটি মখমলের মতো হবে, না-কি চামড়ার মতো শক্ত হবে। অনেকেই রুটি তৈরির সঠিক উপায় কিংবা সংরক্ষণের উপায় জানেন না, এজন্যই বাধে বিপত্তি।

আটা যেভাবে মাখবেন: ভুষিযুক্ত আটায় বেশি ফাইবার থাকে, যা স্বাস্থ্যকর। এজন্য এমন আটা নিন পরিমাপ অনুযায়ী। এর মধ্যে লবণ মিশিয়ে নিন এক চিমটি। সামান্য তেল মিশিয়ে গরম পানি দিয়ে মাখিয়ে নিন। গরম পানি দিয়ে রুটি তৈরি করলে তা যেমন নরম হয়; তেমনই হজমেও সাহায্য করে।

আটা যাতে খুব বেশি শক্ত বা নরম না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। আটা ভালো করে মথে নিতে হবে। যখন দেখবেন, আঙুলে যাতে না লেগে থাকে ততক্ষণ মথতে হবে। এরপর পাতলা ভেজা কাপড় দিয়ে অন্তত ১৫ মিনিট ঢেকে রাখুন।

জেনে নিন কোন উপায়ে রুটি বানালে ৪-৫ ঘণ্টা পরে খেলেও রুটি একই রকম নরম থাকবে-

>> রুটি বানানোর আগে একবার ভালো করে মেখে নিন আটার মণ্ড।

>> লেচি কাটার আগে দেখুন, তা নরম আছে কি-না! আটা বা ময়দা বেশি টাইট মাখলে কিন্তু রুটি ফুলবেও না, নরমও থাকবে না। তাই মণ্ডটা একটু নরম আছে কি-না দেখে নিন।

>> বেলার সময় লক্ষ্য করুন রুটি ঘুরছে কি-না। যতটা সম্ভব পাতলা করে রুটি বেলবেন।

>> আগুনের উপর রেখে যদি রুটি ফুলিয়ে নিতে পারেন, তা সবচেয়ে ভালো হবে। এজন্য রুটির একেকটা দিক আগুনের উপরে ১৫-২০ সেকেন্ডের বেশি রাখবেন না। এতে রুটি পুড়ে শক্ত হয়ে যাবে।

>> রুটি সেঁকা হয়ে গেলে, গরম তাওয়ায় অল্প পানি দিয়ে রুটিগুলো সেই জলে একবার বুলিয়ে নিয়েই তুলে নিন। তারপর এয়ারটাইট পাত্রে রেখে দিন।

>> হটপটে কিংবা লাঞ্চ বক্সে একটি ভেজা নরম কাপড় বিছিয়ে রাখুন। রুটি সেঁকা হয়ে গেলে তার মধ্যে রেখে, ভালো করে কাপড়টি দিয়ে মুড়ে নিন।

>> তন্দুরি রুটি দোকান থেকে কিনে এনে কয়েক ঘণ্টা পর খেলে তা শক্ত হয়ে যায়। তন্দুরি গরম করতে একটা পাত্রে গরম পানি নিয়ে তার উপরে জালি রেখে তন্দুরিতে একটু স্টিম দিয়ে নিতে হবে। এতে তন্দুরি রুটি গরম ও নরম হবে।

>> রুটি কখনো দ্বিতীয়বার গরম করবেন না। তাহলে তা আরও শক্ত হয়ে যাবে।

 

মা হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধনে ২ মাসের শিশু

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার গৃহবধূ খাদিজা নাসরিন হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।

সোমবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে চরফ্যাশনের সদর রোডে নিহতের ৫৩ দিনের শিশুকে নিয়ে পরিবারের সদস্য, শিক্ষক, সাংবাদিক, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন সংগঠন এ মানববন্ধেনে অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন চরফ্যাশন পৌর কাউন্সিলর আকতারুল আলম সামু, চরফ্যাশন সরকারি টিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শামসুন্নাহার স্নিগ্ধা, মহিলা কলেজের প্রভাষক মাহমুদা খানম মিলি প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, চরফ্যাশন উপজেলার চরফ্যাশন সরকারি কলেজের অফিস সহকারী গৃহবধূ নাসরিন হত্যার পর ৫৩ দিন অতিবাহিত হয়েছে। তারপরও মামলার মূল আসামি তার স্বামী কামাল হোসেনসহ জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। দ্রুত প্রধান আসামি কামালসহ জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।

গৃহবধূ খাদিজা নাসরিন চরফ্যাশন পৌর ১ নম্বর ওয়ার্ডের হাদিস মিস্ত্রির বড় মেয়ে ও চরফ্যাশন উপজেলার চরফ্যাশন সরকারি কলেজের অফিস সহকারী ছিলেন।

গত বছরের ২২ নভেম্বর রাতে কালিয়াকান্দি এলাকায় শ্বশুর বাড়িতে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয় খাদিজার। এর দুদিন আগে তিনি এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।

নিহতের ভাই সাইফুল ইসলাম নাসরিনের স্বামী কামাল হোসেন ও তার পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগে গত ১ জানুয়ারি একটি হত্যা মামলা করেন।

 

বাংলাদেশের কোন ঘটনাগুলো ধর্ষণ বলে বিবেচিত হয়

বাংলাদেশে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন বিরোধী কঠোর আইন থাকলেও এ নিয়ে বিভ্রান্তিও কম নেই। প্রায়ই স্বামীর দ্বারা স্ত্রী ধর্ষণের শিকার কিংবা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ, আবার সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক হওয়া সত্ত্বেও সেটা ধর্ষণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের নারী ও শিশু দমন নির্যাতন আইনে শিশুকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ১৬ বা তার কম বছর বয়সী ছেলে ও মেয়ে উভয়কে।

মানবাধিকার সংস্থা ব্লাস্টের গবেষণা বিশেষজ্ঞ তাকবির হুদার মতে, এই সংজ্ঞায় শিশুকে ভুক্তভোগী হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই বয়সে মৌখিক বা লিখিত কোন সম্মতি দেয়ার মতো ক্ষমতা শিশুর গড়ে ওঠেনা।

তাই এই বয়সী কেউ যদি যৌন সম্পর্কে সম্মতি দিয়েও থাকে সেটা আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে না। নারী ও শিশু দমন নির্যাতন আইনে যদি কোন পুরুষ ১৬ বছরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে যদি তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ছাড়া যৌন সম্পর্ক করেন তারপরও তিনি ওই নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবে।

আবার বিবাহ বন্ধন ছাড়া ১৬ বছরের বেশি বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতি ছাড়া, ভয় দেখিয়ে বা প্রতারণা করে কেউ যদি যৌন সম্পর্ক করে সেটা ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে।

ভুক্তভোগীর বয়স ১৬ বছরের বেশি হলেও যদি প্রতারণা করে বা ব্ল্যাকমেইল করে তার সম্মতি আদায় করে যৌন সম্পর্ক করা হয়, সেটাও ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে।
আইনে দোষী সাব্যস্ত হলে দায়ী ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কিন্তু শিশু আইনে শিশুর সংজ্ঞায় বয়সের সীমা রাখা হয়েছে ১৮ বছর বা তার কম।

সেক্ষেত্রে অপরাধীর ক্ষেত্রে এই বয়স প্রাধান্য পাচ্ছে। ভুক্তভোগীর বয়স এখানে মুখ্য নয় বলে জানিয়েছেন মি. হুদা।

তিনি বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তির বয়স যদি ১৮ বা তার কম থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হলেও সেটার বিচার হবে শিশু আইনে।

অন্যদিকে, নারী ও শিশু দমন নির্যাতন আইনে মামলা সত্ত্বেও ভুক্তভোগী যদি বেঁচে থাকেন এবং তার বয়স যদি ১৮ বছরের নীচে থাকে তাহলে তার শিশু আইনের আওতায় শিশু আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসার সুযোগ আছে। তবে বিচার হবে নারী ও শিশু দমন নির্যাতন আইন অনুসারেই।

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ

বাংলাদেশে অনেক নারী বিয়ের আশ্বাসে সম্মতি দিয়ে তার সঙ্গীর সাথে যৌন সম্পর্ক করে থাকেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেই পুরুষ তাকে বিয়ে করতে না চাইলে অনেকেই বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

নারী ও শিশু দমন নির্যাতন আইনে যেহেতু বলা আছে, যদি প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি আদায় করে যৌন সম্পর্ক করা হয়, তাহলে সেটা ধর্ষণ হিসেবে দেখা হবে।

এখন বিয়ের প্রলোভন দেখানোর বিষয়টি আইনানুযায়ী প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি আদায়ের মধ্যে পড়লেও আদালতে অনেক সময় সেটা নাও টিকতে পারে।

এটা নির্ভর করে কতদিন ধরে বিয়ের আশ্বাস দেয়া হয়েছে, সম্পর্কের গভীরতা কেমন ছিল, লিখিতভাবে বিবাহিত না থাকলেও ধর্মীয় রীতিতে বিয়ে করেছিলেন কিনা, কোন সাক্ষী আছেন কিনা সেগুলোর ওপরেও নির্ভর করে বলে জানান তাকবির হুদা।

তবে বাংলাদেশের আইনে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কোন নারীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনার কোন সুযোগ নেই।
আইন।

স্বামী দ্বারা স্ত্রী ধর্ষণ

বাংলাদেশের নারী ও শিশু দমন নির্যাতন আইনে, বৈবাহিক ধর্ষণের বিষয়টি কোথাও উল্লেখ নেই।

তবে স্ত্রীর বয়স যদি ১৩ বছরের কম হয়, এবং তার স্বামী যদি জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক করেন তাহলে ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে বৈবাহিক ধর্ষণের অভিযোগ আনতে পারেন।

সেক্ষেত্রে শাস্তি শুধুমাত্র অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্লাস্টের গবেষণা বিশেষজ্ঞ তাকবীর হুদা।

স্ত্রীর বয়স যদি ১৩ বছর বা তার বেশি হয় তাহলে বৈবাহিক ধর্ষণের ফৌজদারি মামলা দায়েরের কোন সুযোগ নেই।

সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পারিবারিক সহিংসতা আইনের অধীনে যৌন সহিংসতার মামলা করলে কিছু প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে।

শুধু দেওয়ানি আদালতে প্রতিকার পাওয়া যাবে অর্থাৎ আদালত স্বামীর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ, ভরণপোষণের আদেশ দিতে পারে।

তবে অভিযুক্ত স্বামী এসব আদেশ লঙ্ঘন করলে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যাবে।

গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান যোগ করা হয়।

এর ফলে বাংলাদেশে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধর্ষণ, ধর্ষণ জনিত কারণে মৃত্যুর শাস্তি প্রসঙ্গে ৯(১) ধারায় এতদিন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

তবে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর যদি মৃত্যু হয় বা গণধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হয় বা আহত হন, তাহলেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছিল।

সেই সঙ্গে উভয় ক্ষেত্রেই ন্যূনতম এক লক্ষ টাকা করে অর্থ দণ্ডের বিধান ছিল।

সেই আইনে পরিবর্তন এনে ধর্ষণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেই মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবনের বিধান রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে অর্থদণ্ডের বিধানও থাকছে।

এর ফলে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান দেয়া সপ্তম দেশ হল বাংলাদেশ।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, ধর্ষণ বা ধর্ষণ-পরবর্তী অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটলেও একই শাস্তি হবে।

যদি কোন ব্যক্তি তার যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে শ্লীলতাহানি করেন তাহলে এটি যৌন নিপীড়ন বলে বিবেচিত হবে।

এজন্য ওই ব্যক্তির অনধিক ১০ বছর এবং ন্যূনতম তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা হবে।

এছাড়া পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে যদি কোন নারী ধর্ষণের শিকার হন, তাহলে যাদের হেফাজতে থাকাকালীন ওই ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে, তিনি বা তারা প্রত্যেকে হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য, সর্বোচ্চ ১০ বছর কিন্তু ন্যূনতম পাঁচ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং ন্যূনতম ১০,০০০ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

তবে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান কার্যকর করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিবৃতি প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

তাদের অভিমত: “চরম শাস্তি সহিংসতাকে অব্যাহত রাখে, তা প্রতিরোধ করে না।”  বিবিসি বাংলা

 

ঢাকা নর্থ লেডিস ক্লাবের পিঠা উৎসব

রাজধানীর উত্তরা-৪ নম্বর সেক্টর পার্কে পৌষ পার্বণ পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকা নর্থ লেডিস ক্লাব উদ্যোগে আয়োজিত এই পিঠা উৎসব পরিণত হয় মিলনমেলায়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ আয়োজনের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় বলি, সবাইকে নিয়ে আমাদের সবার ঢাকা। বর্তমানে শহুরে জীবনে বেশিরভাগ মানুষেরই প্রতিবেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। সামাজিক মেলবন্ধন বাড়াতে পিঠা উৎসবের পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায় আমাদের পাড়া-মহল্লা উৎসব করা দরকার।’

ঢাকা-১৮ আসনের সাংসদ হাফেজ হাবিব হাসান বলেন, ‘এই আয়োজনের জন্য ঢাকা নর্থ লেডিস ক্লাবের সব সদস্যদের ধন্যবাদ জানাই। দিনের শুরুতেই এত সুন্দর একটি পিঠা উৎসবের আয়োজন। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক আনন্দিত। ঢাকা নর্থ লেডিস ক্লাবের সাফল্য কামনা করছি।’

ক্লাবের সভাপতি আরফিনা বিলাল বলেন, ‘ঋতু বৈচিত্র্যের এই দেশে শীত আমাদের অনেকের কাছেই প্রিয়। ঐতিহ্যগত কারণে এই ঋতুর সঙ্গে পিঠার অন্যরকম যোগসূত্র আছে। তাই প্রতিবছর এই শীতকে বরণ করে নেয় পিঠা উৎসবের মাধ্যমে।’

অনুষ্ঠানে সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব খান মোহাম্মদ বিলালসহ ঢাকা নর্থ লেডিস ক্লাবের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

 

কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে স্বামী-স্ত্রীর লড়াই

আগামী ৩০ জানুয়ারি কলারোয়া পৌরসভার অনুষ্টিতব্য নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সাময়িক বরখাস্তকৃত পৌর মেয়র ও উপজেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আক্তারুল ইসলাম ও তার সহধর্মিনী নার্গীস সুলতানা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিয়েছেন।

ইতোমধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে উভয় প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধতা লাভ করেছে। এর ফলে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার চায়ের দোকান, কফি সপ, রেস্টুরেন্টে ভোটারদের মধ্যে একটাই আলোচ্য বিষয় স্বামী-স্ত্রীর প্রার্থী হওয়া নিয়ে।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মেয়র পদে একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন নাকি দুইজনই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে আক্তারুল ইসলামের স্ত্রী নার্গীস সুলতানা বলেন, স্বামীর নামে মামলা থাকায় আমিও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে চাই।

আক্তারুল ইসলাম জানান, প্রয়োজনে দুজনই মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে থাকব। তবে স্ত্রীর প্রচারণায় অগ্রাধিকার রেখে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখব। আমার বিশ্বাস স্বামী-স্ত্রী দুজনই যদি মাঠে থাকি অন্য প্রার্থীর চেয়ে আমরা এগিয়ে থাকব।

 

করোনার ভ্যাকসিন নিলেন রানি এলিজাবেথ

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়েছেন ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও তার স্বামী ডিউক অব অ্যাডিনবার্গ প্রিন্স ফিলিপ। ব্রিটিশ রাজপরিবারের সূত্রে বিবিসি এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার (৯ জানুয়ারি) উইন্ডসের প্রাসাদে রাজ পরিবারের একজন চিকিৎসকের কাছে রানী এবং তার স্বামী করোনার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়া হয়।

লকডাউনের পর থেকে ৯৪ বছর বয়সী রানী এবং ৯৯ বছর বয়সী ফিলিপ উইল্ডসর প্রসাদেই অবস্থান করছেন। মহামারি করোনা থেকে বাঁচতে যুক্তরাজ্যে এরই মধ্যে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ করোনার টিকা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন।

এদিকে যুক্তরাজ্যে নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সংক্রমণ ঠেকাতে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

 

সাদা এপ্রোন রক্ষায় সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে নার্সদের মানববন্ধন

‘নার্সবিদ্বেষী সিভিল সার্জন নিপাত যাক’, ‘আমাদের শরীর থেকে সুরক্ষা পোশাক খুলে নিতে দেব না’ ও ‘সাদা এপ্রোন নিয়ে হয়রানি চলবে না’ স্লোগানসহ নানা প্ল্যাকার্ড নিয়ে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামানের রিুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন নার্সরা।

রোববার (১০ জানুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী কুমিল্লা জেনারেল (সদর) হাসপাতালের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধনে নার্সরা জানান, কর্মস্থলে সাদা এপ্রোন পরিধান করা যাবে না সম্প্রতি এমন নির্দেশনা জারি করেছেন সিভিল সার্জন। তিনি জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না করে আমাদের এপ্রোন নিয়ে টানাটানি করছেন। মানববন্ধনে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) কুমিল্লা শাখার সহ-সভাপতি জাহানারা বেগম, আভা রানী মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌসী আক্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক বুলবুলী আক্তারসহ অন্যান্য উপস্থিত ছিলেন।

তারা বলেন, করোনায় সুরক্ষা হিসেবে সাদা এপ্রোন পরিধান করে আসছি। কিন্তু বর্তমান সিভিল সার্জন এ এপ্রোন পরিধান না করতে নির্দেশ দেন। এ জন্য প্রধান সহকারী হিসাবরক্ষক মো. আতিকুর রহমানের মাধ্যমে কর্মরত অবস্থায় ছবি তুলে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়ে হয়রানি করছেন।

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাতৃকালীনসহ ছুটিসহ বিভিন্ন আবেদন নিয়ে সিভিল সার্জনের দফতরে গেলে প্রধান সহকারী আতিকুর রহমানকে উৎকোচ না দিলে হয়রানির শিকার হতে হয়।

অভিযোগের বিষয়ে প্রধান সহকারী আতিকুর রহমান বলেন, ‘তিন বছর ধরে এখানে আছি। আমার বিরুদ্ধে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।’

কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সাদা এপ্রোন ব্যবহার না করে নার্স ও মিডওয়াইফদের জাতীয় ইউনিফরম পরিধান নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রধান সহকারীর মাধ্যমে উৎকোচ গ্রহণ ও হয়রানির অভিযোগ মিথ্যা।’

 

কন্যাশিশু ভূমিষ্ঠের খবরে নানা উপহার নিয়ে দরজায় পুলিশ

‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ স্লোগান সামনে রেখে মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে ভূমিকা রেখে চলছেন তিনি।

এরই ধারাবাহিকতায় নারীর ক্ষমতায়ন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ এবং লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজে ‘কন্যাসন্তান জন্ম হলে ফোন করুন, উপহার পৌঁছে যাবে সাথে সাথে’ শিরোনামে একটি পোস্ট দেয়া হয় সম্প্রতি। ওই পোস্টে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুমের একটি ফোন নম্বরও দেয়া হয়।

রোববার (১০ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার কেদারগঞ্জ মালোপাড়ার মফিজুল হক ও সুলতানা পারভিন দম্পতির পরিবারে একটি কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। স্বজনরা পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ওই নম্বরে ফোন দিয়ে বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার বিষয়টি জানায়। এর পরই চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা নিউবর্ন বেবি প্যাকেজ, পোশাক, মিষ্টি, ফল এবং ফুলের তোড়া নিয়ে তাদের বাসায় উপস্থিত হন।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার (এসপি) জাহিদুল ইসলাম বলেন, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নারী। এই বিপুল সংখ্যক নারী পিছিয়ে থাকলে সামগ্রিক উন্নয়ন অসম্ভব। তিনি চুয়াডাঙ্গা সর্বস্তরের জনসাধারণের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ এবং লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে সহযোগিতা কামনা করেন।

 

জার্মানিতে নতুন আইন : কার্যনির্বাহী বোর্ডে রাখতে হবে নারী সদস্য

জার্মানিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কার্যনির্বাহী বোর্ডে নারী সদস্য রাখা বাধ্যতামূলক করে নতুন আইন পাস হতে যাচ্ছে। বুধবার দেশটির ক্ষমতাসীন জোট সরকার এই ঐতিহাসিক বিলে সম্মতি জানিয়েছে। খবর এএফপির।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো, যাদের কার্যনির্বাহী বোর্ডে চার বা তার বেশি সদস্য রয়েছে, সেখানে অন্তত একজন নারী সদস্য রাখতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বিচার বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস্টিন ল্যাম্ব্রেখট এই আইনকে ‘একটি শক্তিশালী সংকেত’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি ‘যোগ্যতাসম্পন্ন নারীদের প্রতিনিধিত্বের এই সুযোগ কাজে লাগানোর’ আহ্বান জানান কর্পোরেশনগুলোকে।

পরিবার বিষয়ক মন্ত্রী ফ্রাঞ্জিসকা গিফে বলেন, ‘আমরা দেখাতে পারব যে জার্মানি ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত আধুনিক সমাজের পথে রয়েছে।’

ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানিতে উচ্চপদে নারীদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম। অলব্রাইট ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, জার্মানির ৩০টি বড় তালিকাভুক্ত কোম্পানির ব্যবস্থাপনা বোর্ডে মাত্র ১২.৮ শতাংশ নারী রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ২৮.৬ শতাংশ, ব্রিটেনে ২৪.৫ ও ফ্রান্সে ২২.২ শতাংশ।

করোনাভাইরাস মহামারির সময় জার্মানিতে নারীদের প্রতিনিধিত্ব আরও কমেছে। অক্টোবরে অলব্রাইট জানায়, ১১টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির কার্যনির্বাহী বোর্ড শুধুমাত্র পুরুষদের দ্বারা পরিচালিত হয়।

জার্মানিতে পুরুষদের তুলনায় নারীরা ২০ শতাংশ কম আয় করে থাকে, যা সমগ্র ইউরোপীয় ইউনিউয়নের চেয়ে ১৪ শতাংশ কম। যেসব কোম্পানির মালিকানার অধিকাংশ সরকারের হাতে সেগুলোতে আরও কঠোর হবে এই আইন। এসব কোম্পানির ব্যবস্থাপনা বোর্ডে দুই জনের বেশি সদস্য থাকলে সেখানে অন্তত একজন নারী থাকতে হবে।

 

ছুটির দিনে পাতে রাখুন সুগন্ধি পোলাও

ছুটির দিন মানেই ভরপেট খাওয়া-দাওয়া। পোলাও, বিরিয়ানি, কোফতা, কারি, ডেজার্ট সব কিছুর আয়োজনই থাকে ছুটির দিনটি ঘিরে। এবারের ছুটির দিন পরিবারসহ উপভোগ করতে পাতে রাখুন সুগন্ধি পোলাও। যেকোনো মাংসের সঙ্গে এ পোলাও দারুণ মানিয়ে যাবে। জেনে নিন রেসিপি-

উপকরণ
১. বাসমতি চাল ২ কাপ
২. ঘি ৫ টেবিল চামচ
৩. মাঝারি ২টি পেঁয়াজ কুচি
৪. গরম মশলা গুঁড়া ১ টেবিল চামচ
৫. লবণ প্রয়োজনমতো
৬. চিনি ৫০ গ্রাম
৭. কাজুবাদাম কুচি ২০ গ্রাম
৮. কিশমিশ ২০ গ্রাম
৯. গরম দুধে ভেজানো এক চিমটি জাফরান
১০. মটরশুটি এক মুঠো

পদ্ধতি: প্রথমে ২০ মিনিট চাল ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ভালো করে চাল ধুয়ে নিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। একটি বড় প্যানে ঘি গরম করে তাতে পেঁয়াজ কুচি ও গরম মশলার গুঁড়া দিয়ে ভেজে নিন। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে চাল দিয়ে পাঁচ মিনিট ভাজুন।

পরিমাণমতো পানি ও লবণ দিয়ে ঢেকে রান্না করুন। এরপর জাফরান ভেজানো দুধ, চিনি, কাজু বাদাম ও কিশমিশ দিয়ে ভালোমতো নেড়ে ঢাকনা দিয়ে রান্না করুন। ততক্ষণে পোলাও থেকে সুগন্ধ বের হতে থাকবে। এবার ভাত ফুটলে গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

কনের ইচ্ছায় এক টাকা দেনমোহরে বিয়ে

এটি কোনো চলচ্চিত্রের ঘটনা নয়। ফরিদপুরে একটি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে এক টাকা দেনমোহরে। আজ শুক্রবার দুপুরে শহরের ঝিলটুলী মহল্লার মেজবান পার্টি সেন্টারে কনের দাবির মুখে এবং কনের পরিবারের প্রস্তাবে এক টাকার দেনমোহরে কাবিন সম্পন্ন হয়। এরপর সেখানে আয়োজিত হয় বিয়ে–পরবর্তী ভোজের।

কনে বিপাশা আজিজ (২৫) মাদারীপুরের সাহেবের চর মহল্লার বাসিন্দা আজিজুল হক ও নাসরিন সুলতানার একমাত্র মেয়ে। তবে পরিবারটি ফরিদপুর শহরের আলীপুর মহল্লায় বসবাস করে। বিপাশা ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা পদে কর্মরত। বর আশীকুজ্জামান চৌধুরী (৩০) ব্যবসা করেন। ফরিদপুর শহরের কুঠিবাড়ি কমলাপুর মহল্লার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান চৌধুরী ও তাহমিনা চৌধুরীর ছেলে তিনি।

এ বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কনে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন, তিনি যেহেতু আর্থিকভাবে সচ্ছল, তাই তাঁর বিয়ের কাবিনে দেনমোহর ধরা হবে এক টাকা। কিন্তু ওই বিয়ের অনুষ্ঠানের কাজি দেনমোহরের জায়গায় দুই লাখ টাকা লেখেন। এ ঘটনা জানার পর মেয়ের মা তাঁর মেয়ের সিদ্ধান্ত জানিয়ে এক টাকা দেনমোহর লেখান।

বিয়েতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুরের সামাজিক ফোরাম নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন। তিনি বলেন, সাধারণত দেখা যায় কনেপক্ষই দর-কষাকষি করে কাবিনের সময় দেনমোহর বাড়িয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে এটি একটি ব্যতিক্রম ঘটনা। পাশাপাশি আর্থিকভাবে সচ্ছল এক নারীর আত্মমর্যাদা রক্ষার দৃষ্টান্তও বটে।

তবে এক টাকার দেনমোহরের দৃষ্টান্তকে সাধুবাদ জানাতে পারেননি নারী নেত্রী বেসরকারি আইনি সহায়তা প্রদান প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ফরিদপুরের সমন্বয়কারী শিপ্রা গোস্বামী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মুসলিম বিয়ে একটি চুক্তি। মোহরানা নারীর হক। স্বামীর আর্থিক সংগতি ও নারীর সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে দেনমোহর নির্ধারিত হয়ে থাকে।

শিপ্রা গোস্বামী বলেন, মোহরানার ব্যাপারে আবেগের কোনো স্থান নেই। আবেগের বশে মোহরানায় এক টাকা লেখা যেতে পারে। কিন্তু এটি মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। কেননা, নারী বর্তমানে সচ্ছল হতে পারেন, কিন্তু ভবিষ্যতে তিনি সচ্ছল না–ও থাকতে পারেন।

 

অনলাইনে নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিয়ে প্রচার দরকার

বয়সে কিশোরী সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর টিকটকে ভিডিও বানানোর শখ। তাকে এই জগতে তারকা বানানোর লোভ দেখান কয়েকজন তরুণ। নানাবাড়ি যাওয়ার কথা বলে কিশোরী বাড়ি থেকে বেরোয়। এরপর গণধর্ষণের শিকার হয় সে। এরপর মেয়েটি ভর্তি হয়ে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি)। এই কিশোরীই শুধু না, ইন্টারনেট দুনিয়ায় দ্রুত জনপ্রিয় হতে বা তারকা হতে গিয়ে কিশোরীরা অপরাধের শিকার হচ্ছে। টিকটক, লাইকির মতো ভিডিও প্রকাশের অ্যাপ কিংবা বিগোর মতো লাইভ ভিডিওর অ্যাপে দ্রুত তারকা হওয়ার ইচ্ছা থাকে কমবয়সী অনেক ছেলেমেয়ের। লাখ লাখ অনুসারী, লাইকের আশায় অনেকেই এসব মাধ্যমে যায়। আর এর সুযোগ নেয় অপরাধীরা। এখন নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার অন্যতম মাধ্যম হয়েছে অনলাইন দুনিয়া।

প্রায় দুই বছর আগে ইউনিসেফের জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ৩২ শতাংশ শিশু অনলাইন সহিংসতা, অনলাইনে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ডিজিটাল উৎপীড়নের শিকার হওয়ার মতো বিপদের মুখে রয়েছে। সেখানে ৬৩ শতাংশ ছেলে এবং ৪৮ শতাংশ মেয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এ ছাড়া বলা হয়, ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ ছেলে ও ৪৪ শতাংশ মেয়ে অনলাইনে অপরিচিত মানুষের বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করে।

প্রথম আলো ও বেসরকারি সংগঠন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ গত বছরের ২১ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে সহিংসতার মাত্রা বুঝতে অনলাইনে একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে দেখা যায়, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৫৩ শতাংশ নারী কখনো না কখনো অনলাইনে হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেড চিলড্রেনের (এনসিএমইসি) তথ্য অনুযায়ী, শিশুদের দিয়ে যৌন-দৃশ্যে কাজ করানো, তাদের যৌন নিপীড়নের ছবি ও ভিডিও ধারণ এবং তা আদান–প্রদানের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।

নারী ও শিশুর প্রতি সাইবার বুলিং এখন অন্যতম সমস্যা বলে জানান ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ শাবনাজ জাহেরিন। তিনি বলেন, অনলাইনে নিরাপত্তার বিষয়গুলো অনেকেই জানে না। সে কারণেই তারা বিভিন্ন সময়ে প্রতারণা ও অপরাধের শিকার হয়। দেখা যায়, অনেকে সরাসরি যেগুলো করতে সাহস পেত না, তা অনলাইনের মাধ্যমে করছে। অনলাইন সহিংসতায় মেয়েদের ক্ষেত্রে যৌন হয়রানির অভিযোগই বেশি।

শাবনাজ জাহেরিন ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা এবং নিজের নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রাখার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, অপরিচিত কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করা, দেখা করা, ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি শেয়ার করা—এ বিষয়গুলো করা যাবে না। অনলাইনে সুরক্ষিত থাকতে হলে কী করতে হবে, সেসব নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা দরকার। কেউ হয়রানি বা অপরাধের শিকার হলে কোথায় অভিযোগ করা যায়, সেগুলো নিয়েও সরকারকে প্রচারণা চালাতে হবে। ভুক্তভোগী সবার পক্ষে সব সময় পুলিশের কাছে যাওয়া হয়তো সম্ভব না। সে ক্ষেত্রে অভিযোগ করার উপায়গুলো সহজ করে দিতে হবে। বিচার-প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও যেন দীর্ঘসূত্রতা না হয়। সরকারের ডিজিটাল উন্নয়নের যেমন প্রচারণা আছে, পাশাপাশি অনলাইনে সুরক্ষিত থাকার বিষয়ে তেমন প্রচারণা চালাতে হবে। শিক্ষকেরাও যেন ক্লাস শেষে এসব নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

‘প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা নারীদের স্বাবলম্বী দেখতে চাচ্ছি এবং এটা সম্ভব। কিন্তু নারীদের জন্য সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে,’ বললেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারহানা এ রহমান। তিনি আরও যোগ করলেন, ছোট থেকে কঠোর পরিবেশে মেয়ে শিশুকে বড় করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে তাদের আর কিছু জানা বা বোঝার সুযোগ খুব কম দেওয়া হয়। কিন্তু সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ছোট থেকেই মেয়েদের মেশার সুযোগ দিতে হবে। তখন নিজেরাই মানুষ সম্পর্কেও ধারণা পাবে। নয়তো নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আটকে রেখে বড় করলে এই মেয়েরা যখন হঠাৎ হাতে প্রযুক্তি পায়, তখন তার জন্য ভালো–মন্দ বোঝা সম্ভব হয় না। সে অনেক ফাঁদে পড়ে যায়। অনলাইনে নারীরা নানান বিষয়ে প্রতারিত হচ্ছে। তাই ছোট থেকেই সব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।

সাইবার বুলিং বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার পেয়েছে সাদাত রহমান। নিজেদের তৈরি সাইবার টিনস নামের অ্যাপের মাধ্যমে সাইবার বুলিংয়ের ভুক্তভোগীদের সহায়তা করার চেষ্টা করে। নড়াইল জেলা-ভিত্তিক কাজই বেশি করেন সাদাত রহমানেরা। নিজেদের একটি কেসের উদাহরণ দিয়ে সাদাত প্রথম আলোকে বলে, নবম শ্রেণির এক মেয়ের ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে বেশি যোগাযোগ ছিল। অন্য জেলার এক ছেলের সঙ্গে তার অনেক সখ্য হয়। একপর্যায়ে ছেলেটি তার কাছ থেকে বিপদের কথা বলে কিছু টাকা নেয়। পরে ছেলেটি যোগাযোগই বন্ধ করে দেয়।

সাদাত জানায়, এসব ছাড়াও ব্ল্যাকমেলিংয়ের ঘটনা অনেক ঘটে। ব্যক্তিগত ছবি ছড়িয়ে দেওয়া, ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলার মতো অপরাধের শিকার হয় কিশোরীরা। নিজেদের অভিজ্ঞতার থেকে সাদাতের পরামর্শ, অনলাইনে এমন একটা জায়গা, যেখানে সবকিছুই তৃতীয় পক্ষের কাছে তথ্য চলে যায়। এখানে কখনোই ব্যক্তিগত কোনও তথ্য শেয়ার করা উচিত না। অপরিচিত কারও সঙ্গে শুধু অনলাইন বন্ধু হতে গিয়ে নিজের স্কুলের নাম পর্যন্তও জানানো উচিত না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার অপরাধ তদন্ত বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বললেন, ‘প্রযুক্তির অনেক উন্নয়ন হয়েছে। দেশে এখন টিকটক, লাইকি, নানা অ্যাপের ব্যবহার জনপ্রিয়। এসব ব্যবহার করে অনেক অপরাধের শিকার হওয়ার অনেক অভিযোগ পাচ্ছি আমরা। এ ধরনের অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে কিছু সামাজিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশ অবগত, আমরা চেষ্টা করছি মানুষকে সচেতন করতে। ইন্টারনেটের ব্যবহার যেন ভালো হয়। ভালো কাজে যেন এটা ব্যবহার করতে পারি।’

 

সাতক্ষীরায় দুই সন্তানসহ গৃহবধূ ১০ দিন ধরে নিখোঁজ

দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন গৃহবধূ শিল্পী রাণী ঘোষ (৩৪)। এরপর ১০ দিন কেটে গেলেও তাঁদের আর সন্ধান মিলছে না। স্ত্রী–সন্তানদের খোঁজ না পেয়ে পাগলপ্রায় হয়ে উঠেছেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ধান্দিয়া ইউনিয়নের ঝড়গাছা গ্রামের দীপংকর ঘোষ।

দীপংকর ঘোষ বলেন, কয়েক দিন আগে বড় মেয়ে চুমকি (১৩) ও ছেলে রুদ্রকে (৭) নিয়ে শিল্পী রাণী তালা উপজেলার খেসরা ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামে বাবার বাড়ি যান। গত ২৫ ডিসেম্বর সেখান থেকে শিল্পী তাঁর ছেলেমেয়েকে নিয়ে নিজ বাড়ি ঝড়গাছার আসার জন্য বের হন। এরপর থেকে তাঁদের কাছে থাকা দুটি মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

দীপংকর ঘোষ বলেন, তিনি তাঁর আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজখবর নিয়েও সন্ধান পাননি। এ বিষয়ে তাঁর শ্বশুর গোবিন্দলাল ঘোষ ২৭ ডিসেম্বর তালা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। পুলিশ তাঁদের খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে এখনো কোন ইতিবাচক তথ্য দিতে পারেনি। এমনকি তাঁদের ভাগ্যে কি ঘটেছে, তা–ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী রাসেল বলেন, তাঁরা জিডির সূত্র ধরে খোঁজাখুঁজি শুরু করছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

 

ব্যাংকে নারী কর্মী কমছে

ব্যাংক খাতে এমনিতেই নারী কর্মী কম। তার মধ্যে করোনার সময়ে গত ছয় মাসে সেই সংখ্যা আরও কমে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ৪০২ জন নারী ব্যাংকার কমে গেছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, করোনার কারণে নিয়োগ বন্ধ। এর মধ্যে অনেকে অবসরে গেছেন। আবার কোনো কোনো ব্যাংকে ‘স্বেচ্ছায় পদত্যাগ’ হয়েছে। আবার করোনার এ সময়ে অনেকে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়েছেন। এর ফলে বছরের প্রথম ছয় মাসে নারী ব্যাংকারের সংখ্যা কমে গেছে। আবার করোনার কারণে খুব শিগগির নতুন নিয়োগও হবে না। তাই ব্যাংকে নারী কর্মী শিগগির বৃদ্ধির পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন না ব্যাংকাররা।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লৈঙ্গিক সমতাভিত্তিক সূচক পর্যালোচনা করে জানুয়ারি-জুনভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখান থেকেই নারী কর্মী কমে যাওয়ার তথ্য মিলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুনে ব্যাংক খাতে কর্মীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৭৫। এর মধ্যে নারী কর্মকর্তা ছিলেন ২৫ হাজার ৭৭১ ও পুরুষ কর্মকর্তা ১ লাখ ৪৪ হাজার ১০৪ জন। গত ডিসেম্বর ব্যাংক কর্মী বেড়ে হয় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৩০ জন। এর মধ্যে নারী কর্মী ২৮ হাজার ৪৮০ জন ও পুরুষ কর্মী ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫০ জন। আর জুন শেষে ব্যাংকে মোট কর্মী ছিল ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫১০ জন। এর মধ্যে নারী কর্মী ২৮ হাজার ৭৮ ও পুরুষ ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৩২ জন।

গত ডিসেম্বরে বেসরকারি ব্যাংকে নারী কর্মী ছিল ১৭ হাজার ৭৯১ জন, জুনে তা কমে হয়েছে ১৭ হাজার ৬০৩ জন। বিদেশি ব্যাংকে নারী কর্মী ১ হাজার ৯৪ থেকে কমে হয়েছে ৯৭৮ জন। সব মিলিয়ে গত ৬ মাসে নারী কর্মী কমেছে ৪০২ জন।

জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান প্রথম আলোকে বলেন, কেন এত নারী কর্মী কমে গেল, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ব্যাংকগুলোতে ৩০ বছরের বেশি বয়সের নারী কর্মী প্রায় ২১ শতাংশ হলেও পঞ্চাশোর্ধ্ব কর্মী মাত্র ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২৯টি ব্যাংক নারী কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য পরিবহন সুবিধা দিচ্ছে। ৪৪ ব্যাংক লৈঙ্গিক হয়রানি রোধে নীতিমালা করেছে।

 

সরকারি নারী কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার

রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে আজ বুধবার বিকেলে পুলিশ সুব্রতা অধিকারী (৩৩) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে। তিনি ডেপুটি ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব অ্যাকাউন্টস অফিসার ছিলেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, সুব্রতা অধিকারী ধানমন্ডি ১-এর ২১ নম্বর বাড়ির ৪ নম্বর ফ্ল্যাটে থাকতেন। আজ বিকেলে পুলিশ ওই বাসা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। সুব্রতার গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন

তবে মর্গে স্বজনেরা সুব্রতার মৃত্যু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

যোগাযোগ করা হলে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. সাজ্জাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সুব্রতার স্বামী সঞ্জীব কর্মকার বরিশালে চাকরি করেন। ঘটনার সময় তিনি বাসায় ছিলেন না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে সুব্রতার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

 

নারী উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে কোভিড-১৯

একটা সময় নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টি ভাবাই যায়নি। বিভিন্ন গল্প-উপন্যাসে নারীকে সম্পত্তি হিসেবে উপস্থাপনের ঘটনাও কম দেখা যায়নি। অনেক দেশেই নারীরা তাদের পুরুষ অভিভাবকের কথার বাইরে এক চুলও নড়তে পারেন না। এসব দেশে জন্মের পর থেকেই বাবার কথামত চলতে হয়। আর বিয়ের পর স্বামীই যেন সব ধ্যান-জ্ঞান। খুব কম মানুষই নারীদের শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারে। একজন নারী যে জার্মানির মতো দেশের সরকার প্রধান বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান হতে পারেন অথবা কোনো নারী ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারেন এটা প্রাচীন ধ্যান-ধারণার খুব কম মানুষই বিশ্বাস করবেন হয়তো।

তবে আগের এই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। অনেক দেশেই নারীকে এখন নারী বলে ছোট করা বা ছেলে সন্তানের চেয়ে কম গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টিতে সেকেলে ধারণা বা কল্পনার বাইরেই মনে করা হয়। এখন বিশ্বের বেশিরভাগ ধনী দেশেই বাবা-মায়েরা তাদের ছেলে সন্তানের মতোই মেয়েদেরও একই রকমভাবে গুরুত্ব দিয়ে বড় করছেন। এমনকি তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রচুর অর্থও ব্যয় করছেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পুরুষদের তুলনায় এগিয়ে আছেন নারীরা। পাঁচ দশক আগে নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের দেশগুলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল মাত্র ৪৯ শতাংশ। সে সময় ছেলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল ৭১ শতাংশ। বর্তমানে বিদ্যালয়গুলোতে ছেলে-মেয়ের উপস্থিতি ৯০ শতাংশ। মাধ্যমিক স্তরেও মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

এক সময় মেয়ে সন্তানের জন্মে বাবা-মা খুশি হতে পারতেন না। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি বদলেছে। এখন ছেলে সন্তানের তুলনায় অনেক বাবা-মা একটি
মেয়ে সন্তানের আশা করেন। চীনের মতো দেশেও এই চিত্র পাল্টেছে। সেখানে লিঙ্গের ভিত্তিতে ভ্রূণ হত্যার প্রচলন অনেক আগে থেকেই আছে।

অপরদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মেয়েদের বাল্যবিয়ের সংখ্যাও আগের চেয়ে অনেক কমেছে। ১৯৯৫ সালের দিকে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ছয়জন মেয়ে ১৮ বছরের আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। এই সংখ্যা এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে।

মেয়েদের সার্বিক উন্নতির বিষয়টি অনেকাংশে সমাজের ওপর নির্ভর করে। নারীরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেলে তারাও পুরুষের মতোই সমান অবদান রাখতে পারবে এটা ভুলে গেলে চলবে না। যে মেয়েটি মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে সে অল্প বয়সেই বিয়ে করে সংসার জীবনে প্রবেশ করতে চাইবে না বা অল্প বয়সেই মা হয়ে সন্তান পালনের মতো কঠিন দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাইবে না। শিক্ষা মানুষকে আলোকিত করে, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। মানুষ নিজের জীবন সম্পর্কে ভাবতে শেখে এবং তার পছন্দের পরিধি বাড়ে। ফলে শিক্ষিত একজন নারী নিজেকে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ রেখে দরিদ্র জীবন-যাপন করতে চাইবেন না। বরং তিনি সাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করবেন। একজন অশিক্ষিত নারীর চেয়ে তিনি দ্বিগুণ উপার্জন করতে সক্ষম।

সাম্প্রতিক সময়ে সারাবিশ্বেই ভয়াবহ সঙ্কট তৈরি করে রেখেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এমন পরিস্থিতিতে দরিদ্র দেশগুলোতে করোনার কারণে নারীদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আগের সময়গুলোতেও একই পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। যে কোনো বিপর্যয়ে নারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় যখন ইবোলার প্রাদুর্ভাব ঘটে সে সময় প্রচুর মেয়ে শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থীই আর স্কুলে ফিরে আসেনি। পরবর্তীতে তাদের হয় অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে গেছে অথবা তারা শিশু শ্রমিক হিসেবে উপার্জনে নামতে বাধ্য হয়েছে।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, করোনা মহামারির কারণেও একই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের সংখ্যা আগের তুলনায় বেশি হবে। কারণ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। আর অল্প কিছু দেশ ছাড়া বাকি সব দেশেই করোনার কারণে ভয়াবহ বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, আগামী দশকে বাল্যবিয়ের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যেতে পারে। প্রায় দেড় কোটি মেয়ে শিশু বাল্যবিয়ের বলি হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দরিদ্র দেশগুলো শিক্ষা এবং নারীদের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিলেও বিভিন্ন দাতা সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে নারীদের স্কুলে ধরে রাখতে পারলেই তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা অর্জিত হয়ে যাবে না। বরং তাদের ভ্যাকসিন প্রদান, জন্মনিয়ন্ত্রণ, যে কোনো বিষয়ে তাদের সম্মতির বিষয়গুলো শেখানোর সুযোগও এটি। একই সঙ্গে বাবা-মাকেও সন্তানের বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া যায়।

বয়ঃসন্ধিকাল নারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়ই নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যার সম্মুখীন হয় তারা। মস্তিষ্কের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়কে কাজে লাগাতে পারলেই কয়েক লাখ নারী তাদের সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হবেন। কিন্তু যদি এক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তবে তাদের জীবন দরিদ্রের ছকেই আটকে থাকবে এবং তারা নিজেদের আত্মবিশ্বাস নিয়ে শক্তভাবে দাঁড়াতে পারবেন না। তাই সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত সময়েই নিতে হবে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

 

ভারতে দুই বছর কারাভোগ শেষে ফিরলেন ১৭ বাংলাদেশি নারী

ভালো কাজের প্রলোভনে পড়ে অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে দুই বছর কারাভোগ করে বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরেছেন ১৭ বাংলাদেশি নারী।

রোববার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে তাদেরকে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে রাত ৮টার দিকে থানা থেকে দুইটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য ওই ১৭ জনকে যশোর শেল্টার হোমে নিয়ে যায়।

ফেরত আসা নারীরা হলেন- বাগেরহাট জেলার আব্দুর রশিদের মেয়ে মরিয়ম খাতুন, মুজিবুর রহমানের মেয়ে তানিয়া খাতুন, যশোরের আব্দুল লতিফের মেয়ে ফাতেমা খাতুন, কাশেম আলী খার মেয়ে আফরোজা খাতুন, মুক্ত ফকিরের মেয়ে সনিয়া বেগম, নড়াইলের শওকত শেখের মেয়ে খাদিজা খাতুন, পারভেজ মোল্লার মেয়ে পলি খাতুন, তরফু মোল্লার মেয়ে বিউটি খাতুন, তোতা মোল্লার মেয়ে রুনা বেগম, বখতিয়ার রহমানের মেয়ে রুমানা খাতুন, সালমান মোল্লার মেয়ে সেফালি বেগম, আমির আলীর মেয়ে তহমিনা খাতুন, চাঁদপুরের সফিক মোল্লার মেয়ে রুমা বেগম, চুয়াডাঙ্গার মহিন আলীর মেয়ে রহিমা খাতুন, পটুয়াখালীর নাসির সিকদারের মেয়ে নাসরিন বেগম, সুনামগঞ্জের মোকারম আলীর মেয়ে শিল্পী বেগম ও খুলনার ছলেমান হোসাইন এর মেয়ে আসমা খাতুন।
তাদের সবার বয়স ২০ থেকে ২৮ বছর এর মধ্যে।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব বলেন, এই নারীরা পাসপোর্ট ছাড়াই বিভিন্ন সীমান্ত পথে ভারতের পুনে শহরে গিয়ে কাজ করার সময় সেদেশের পুলিশের হাতে আটক হয়। এরপর আদালতের মাধ্যেমে তারা জেল হাজতে যায়। পরে ভারতের রেসকিউ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা তাদের জেল থেকে ছাড়িয়ে নিজেদের শেল্টার হোমে রাখে। ভারত সরকারের বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে তারা দেশে ফিরেছে। ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদেরকে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

বেনাপোল পোর্ট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসব নারীরা সীমান্তের অবৈধ পথে দালালদের খপ্পরে পড়ে ভালো কাজের আসায় ভারত যায়। এরপর তারা সেদেশের পুলিশের হাতে আটক হয়। পরে দুদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় চিঠি চালাচালির এক পর্যায় বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যেমে রবিবার তারা দেশে ফেরেন। থানার আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদেরকে জাস্টিস কেয়ার ও যশোর রাইটস নামে দুটি এনজিওর হাতে তুলে দেয়া হবে।

যশোর রাইটস এর এরিয়া কোয়ার্ডিনেটর আব্দুল মুহিত জানান, থানার আনুষ্ঠানিকতা শেষে এই নারীদের যশোর নেয়া হবে। পরে যোগাযোগ করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

 

টানা ৩ বার ব্যর্থ, চতুর্থবারে সহকারী জজ পরীক্ষায় অষ্টম আরিফা

‘মারে, পড়াশোনার ভাগ কাউকে দিতে হবে না। আর কেউ তোমাকে পড়া করেও দিতে পারবে না। তাই নিজের মতো করে পড়াশোনা করো আর মানুষের মতো মানুষ হও’-কথাটি বাবা আমাকে প্রায়ই বলতেন। তিনি পেশায় কৃষক ছিলেন। বাবার পুঁজি বলতে শুধু তার ছেলেমেয়েই এবং এ পুঁজি তাদের পেছনেই বিনিয়োগ করতেন। কিন্তু আশানুরূপ ফল পাননি। তাই তার সর্বশেষ ভরসার জায়গা হলাম আমি। তিনি আমাকে দিয়ে বাকি ছেলেমেয়েদের অসম্পূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিলেন। আজ তার স্বপ্নটা বাস্তবে রূপ দিতে পারলেও তিনি আমাকে ছেড়ে সেই ১৮ বছর বয়সেই বহুদূর চলে গেছেন। আমার এ বিজয়ের ভাগিদার তিনি হতে পারলেন না।

অনেকটা ভেজা ভেজা কণ্ঠে নিজের স্বপ্ন পূরণের কথা এভাবে ব্যক্ত করছিলেন ১৩তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (সহকারী জজ) পরীক্ষায় অষ্টম মেধাতালিকায় মনোনীত কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফা আক্তার।

আরিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। কুষ্টিয়ার মিরপুরের সন্তান আরিফা ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা-দূরন্তপনা সবকিছুতেই তিনি প্রথম স্থানে থাকতেন।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন পার করেছেন গ্রামের স্কুল থেকেই। শিক্ষকদের প্রতি তার অন্যরকম আকর্ষণ কাজ করত। তাদের সান্নিধ্য পেতে সবসময় উৎসুক থাকতেন, কারণ তারাই তাকে মোটিভেট করতেন। তাই ষষ্ঠ শ্রেণি ব্যতীত তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বরাবরই প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন আরিফা।

অনেকটা আবেগের স্বরে আরিফা আক্তার বললেন, ‘প্রত্যেক নতুন ক্লাসে ওঠার সময় স্কুল পরিবর্তনের জন্য জিদ করতাম কিন্তু আমি বুঝতাম না যে ভালো স্কুলে পড়ানোর সামর্থ্য আমার পরিবারের নেই। আমার ভাইয়েরা বলত ক্লাসে প্রথম হলে স্কুল পরিবর্তন করাবে। আমিও প্রচুর পড়াশোনা করে প্রথম হতাম কিন্তু স্কুল আর পরিবর্তন হতো না। এভাবে প্রথম হতে হতে একসময় স্কুলজীবন শেষ হয়ে গেল।’
২০০৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৫০ নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়ে চিকিৎসক হওয়ার। তাই ভালো কলেজে পড়তে হবে। কিন্তু পরিবারের অসচ্ছলতা ও আর্থিক অনটনের কারণে এবারো উপজেলা শহরের মিরপুর মাহমুদ চৌধুরী কলেজে ভর্তি হতে হলো তাকে।

‘কলেজজীবন ছিল আমার সবথেকে কষ্টের। সবসময় ডিপ্রেশন কাজ করত, তাই রেজাল্টও খারাপ হলো। জিপিএ ৩.৮০ নিয়ে আমি এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হলাম। এবার মেডিকেলের স্বপ্ন একেবারই ভেস্তে গেল’-যোগ করলেন আরিফা।

প্রথম বছরে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং করতে না পারায় আর পরীক্ষা দেননি আরিফা। দ্বিতীয়বার বন্ধুদের উৎসাহে অনুপ্রাণিত হয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ওই বছরে তিনি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চান্স পান। ইবিতে ‘ছ’ ইউনিট তথা আইনে ৬১তম মেধাতালিকায় স্থান পান। আইনে চান্স পাওয়ায় আর কোনোদিকে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। জজ হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই ইবিতে ভর্তি হন।

তিনি বলেন, ‘আইনে ভর্তি হলে বাবা সবাইকে বলে বেড়াতেন যে, আমি জজ হবোই এবং তিনি আমাকে এ ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। আমিও প্রথম থেকেই জুডিশিয়ারির প্রস্তুতি নিতে থাকলাম। এরমাঝে আমার জীবনে নেমে আসল বড় বিপর্যয়। জীবনের বড় অনুপ্রেরণাদাতা (বাবা) আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন। বাবার মৃত্যুতে আমি মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়ি এবং একা হয়ে যায়।’
‘তখন থেকে আমার আপুই আমাকে দেখাশোনা করেন এবং ভাইয়েরা পরিবারে খরচ জোগান। দ্বিতীয়বার আমার রুমমেট শারমিন নাহার আপু থেকে অনুপ্রাণিত হয় যখন তিনি ১০তম সহকারী জজ পরীক্ষায় মনোনীত হন। তখন থেকেই আমি সিরিয়াস হয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাই। টানা তিনবছর সেশনজটে থেকে এলএলবিতে (স্নাতক) ৩.৪২ এবং এলএলএমে (স্নাতকোত্তর) ৩.৩৩ সিজিপিএ পেয়ে গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করি। বাবার স্বপ্ন পূরণে ২০১৬ সালের জুনে ঢাকায় পাড়ি জমাই। ৩৬ ও ৩৭তম বিসিএসে অংশ নিলেও কোনো রেজাল্ট আসেনি। পরে একমাত্র জুডিশিয়ারির জন্যই পড়ালেখা চালিয়ে যাই এবং জুডিশিয়ারি পরীক্ষার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হক ল’ একাডেমিতে ভর্তি হই।’

‘১০ম বিজেএস পরীক্ষায় নামমাত্র অংশগ্রহণ করি। ১১তম-তে অংশ নিলেও প্রিলিতে ফেল আসে। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। নিজের অবস্থানে অটল থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাই। অবশেষে ১২তম-তে প্রিলি-রিটেনে পাস করলেও ভাইভা বোর্ডে বাদ পড়ি। তখন মনটা আরও খারাপ হয়ে যায়। চারটি বছর জীবন থেকে এমনিতেই চলে গেছে। প্রচণ্ড মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যদিয়ে তখন বেকার অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছিলাম। এরই মধ্যে ২০১৮ সালে বার কাউন্সিলের সনদ পাই এবং ঢাকা জজকোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করি। কিন্তু জজ সাহেবদের সামনে দেখলে বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠত। মনে মনে ভাবতাম আমিও তো ওই চেয়ারে বসতে পারি। আরেকবার চেষ্টা করে দেখি। মনে অনেকটা জেদ-সাহস নিয়ে দিনরাত অধ্যবসায় চালিয়ে যাই। অবশেষে বিজয়ের হাসি।’

আবেগাপ্লুত কণ্ঠে কুষ্টিয়ার মেয়ে আরিফা আক্তার বলেন, ‘মহান রবের প্রতি কৃতজ্ঞতা যিনি আমাকে সম্মানিত করেছেন। কৃতজ্ঞতা পোষণ করছি আমার পরিবারের প্রতি, বিশেষ করে আপুর প্রতি। পরিবারের বাইরে শিক্ষকমণ্ডলী, বন্ধু-বান্ধবের প্রতি। বিশেষ কৃতজ্ঞতা পোষণ করছি শারমিন নাহার আপু (সহকারী জজ), নুরুল হক ভাই (হক ল’ একাডেমি) ও শরিফুল ভাইয়ের প্রতি। যারা আমাকে সর্বদা সাহস জুগিয়েছেন। আমি তাদের অবদান কখনো ভুলতে পারব না।’

স্বপ্নজয়ের অনুভূতির কথা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমি খুব মেধাবী সেটা কখনোই দাবি করি না। আমার মনে হয় যেকোনো প্রাপ্তির পেছনে আল্লাহর সন্তুষ্টি, চেষ্টা ও বাবা-মায়ের দোয়া কাজ করে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে চাকরি এখন মেধার চেয়ে ধৈর্যের ওপর বেশি নির্ভর করে। তাই ধৈর্য ধরে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে নিজের সর্বোত্তম চেষ্টা চালিয়ে গেলে সফলতা আসবেই।’

‘সমস্যা থাকবেই। এগুলো উপেক্ষা করতে পারলে জীবনযাত্রা সহজ হবে। বাধাবিহীন সফলতার আনন্দ কম তাই বাধাটা থাকাই ভালো। দুঃখগুলোকে পুঁজিতে রূপ দিতে পারলে সুখ আসতে সময় লাগে না’-বলেন সাহস না হারানো এই নারী।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে আরিফা আক্তার বলেন, ‘সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীদের কাছে ন্যায়বিচার পৌঁছে দিতে চাই। সামর্থ্যের মধ্যে নিজ এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানো। নিজ গ্রামকে একটি আদর্শ গ্রামে পরিণত করা। সর্বশেষ আমার স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে মেধার ভিত্তিতে বৃত্তি প্রদান করতে চাই।’

 

ভারতে কৃষক আন্দোলনের ‘পাওয়ারহাউস’ নারীরা

জীবনের বেশিরভাগ সময় কৃষিকাজে কাটিয়েছেন বলজিৎ কৌর। ৫০ বছর বয়সী এ নারীর কাছে শস্য উৎপাদন আর জমির যত্নআত্তি যেন আশীর্বাদ। কৃষিকাজ শুধু পেশাই নয়, এটি তার রক্তে মিশে গেছে। আর দশটা সাধারণ দিনে হয়তো মাঠে কাজ করেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতেন বলজিৎ, কিন্তু আজ দিল্লির প্রবেশদ্বার তিকরি সীমান্তে ঘাঁটি গেঁড়ে বসেছেন তিনি। শত শত কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে হাজারও কৃষকের সঙ্গে নেমেছেন ‘কালো আইন’ বাতিলের আন্দোলনে।

বয়স্ক এ নারী আল জাজিরাকে বলেন, নরেন্দ্র মোদি যে কালো আইন করেছেন তার বিরুদ্ধে আমরা আমাদের জমির জন্য আন্দোলন করছি। বলজিতের ভয়, ভারতে পাস হওয়া নতুন কৃষি আইনে তাদের জমির মালিকানা ঝুঁকিতে পড়বে। কিন্তু দেহে প্রাণ থাকতে এটি তিনি কিছুতেই হতে দিতে পারেন না।

ভারতীয় কৃষকদের মতে, দেশটিতে পাস হওয়া নতুন আইনগুলোতে শস্যের সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া নেই। তাদের শঙ্কা, এর কারণে কৃষকদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতে বাধ্য করা হতে পারে, প্রতিষ্ঠানগুলোর কথামতোই তাদের শস্য উৎপাদন করতে হতে পারে। নতুন আইনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কৃষিজমি কেনা ও পণ্য মজুতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়েছে।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসব আইনকে কৃষিখাত আধুনিকায়নের জন্য বলে দাবি করেছেন। তবে কৃষকদের বিশ্বাস, এর মাধ্যমে সংকটাপন্ন খাতটিতে চুক্তিভিত্তিক কাজের বিস্তার এবং ব্যাপক বেসরকারিকরণের দুয়ার খুলে দেওয়া হয়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতে চলছে কৃষকদের এই আন্দোলন। দেশটির তিন কৃষিপ্রধান রাজ্য পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ থেকে লাখ লাখ কৃষক এসে জড়ো হয়েছেন ভারতীয় রাজধানীর প্রধান প্রবেশপথ সিংহু ও কিতরি সীমান্তে। সরকারপক্ষ আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করলেও কৃষকদের এক কথা, এক দাবি, ‘ক্ষতিকর আইন বাতিল চাই’।

‘পুরুষের চেয়ে নারীর কাজ বেশি’

সারা ভারতেই পুরুষরা কৃষিকাজের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠলেও এক্ষেত্রে নারীদের অবদানও কম নয়। বরং, কাজের ক্ষেত্রে তো বটেই, নতুন আইনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে নারীদের। ভারতীয় সংগঠন মহিলা কিষাণ অধিকার মঞ্চের (মাকাম) হিসাবে, দেশটির ৭৫ শতাংশ কৃষিকাজ নারীরা করলেও ভূমির মালিকানায় তাদের অংশ মাত্র ১২ শতাংশ।

পাঞ্জাবের জালান্দর থেকে প্রায় ৬৪৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তিকরি সীমান্তে এসেছেন কুলবিন্দর কৌর ও পরমিন্দর কৌর। আরও কয়েকজন নারীর সঙ্গে রাত কাটাচ্ছেন একটি ট্রাকের ওপর। সেখনেই তাদের সঙ্গে কথা হয় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার।

সরকারের নতুন কৃষি আইনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে কুলবিন্দর বলেন, যদি নির্ধারিত মূল্য বা বাজার না থাকে, আমরা সন্তানদের রুটি খাওয়াব কী করে? শস্য বিক্রি করব বা কী করে?

পরমিন্দর বলেন, কোনও কাজই সহজ নয়। খাবার জোগাতে আপনাকে কাজ করতে হবে। কিন্তু কাজ করার পরেও যদি আমরা খাবার না পাই, সেটাই হবে সমস্যা।

৬০ বছরের জীবনে প্রায় ৩০ বছরই কৃষিকাজে কাটিয়েছেন মুলকিৎ কৌর। তার দাবি, পাঞ্জাবে তার গ্রামে অনেক নারীই পুরুষের চেয়ে বেশি কাজ করেন। এমনকি এই আন্দোলনের মধ্যেও অনেক নারী কৃষককে পরিবারের দেখাশোনার জন্য বাড়িতে থেকে যেতে হয়েছে। তবে পুরোপুরি নিবৃত্ত হননি, সেখান থেকেই আন্দোলনে মূল্যবান সমর্থন দিচ্ছেন তারা।

আন্দোলনরত মুলকিৎ পরের দিন বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও এ বৃদ্ধা জানান, তিনি যাওয়ার পর পরিবারের কোনও সদস্য এসে তার জায়গা নেবেন। তিনি বলেন, আমরা এত দূর এসেছি। আশা করি, ঈশ্বর আমাদের ডাক শুনবেন।

‘শিশুরা কষ্ট পেলে বেঁচে থেকে লাভ কী?’

ভারতের অনেক বয়স্ক নারী কৃষকের কাছেই এই আন্দোলন শুধু জমির মালিকানা বা অর্থের ইস্যু নয়। তাদের কাছে কয়েক প্রজন্ম ধরে থাকা জমি পূর্বপুরুষদের চিহ্ন, তাদের সংস্কৃতির অংশ, সন্তানদের ভবিষ্যৎ।

বলজিৎ বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কী বলবে, আমরা আওয়াজ তুলিনি? এর জন্যই রাস্তায় বসে রয়েছি, আমাদের নাতি-নাতনিদের জমি রক্ষা করতে।

তিকরি সীমান্তে আরও দুই নারীর সঙ্গে মাটিতে বসে ছিলেন জসপাল কৌর। তার কথায়, নাতি-নাতনিদের সম্পদ চুরি ঠেকাতে এসেছেন তারা। ৫৮ বছর বয়সী এ নারী বলেন, আমাদের সন্তানরা যদি কষ্ট পায় তাহলে জীবনের আর কী দাম থাকল?

অবশ্য তার এই কথা শুধু মুখের বুলি নয়, এর গুরুত্ব অনেক। দরিদ্র্যতা আর ঋণে জর্জরিত হয়ে ২০১৯ সালে ভারতে ১০ হাজারের বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন।

জসপাল বলেন, আমরা পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাব। তার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছিল, এধরনের মানুষগুলো এত সহজে পিছপা হওয়ার পাত্র নয়।

যৌথ রান্নাঘর আর নিঃস্বার্থ সেবা
সরকারের নতুন আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনস্থলে একসঙ্গে নেচে, গেয়ে, অভিনয়ের মাধ্যমে চলছে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আন্দোলনকারীরা থাকছেন দলবেঁধে, রান্না-খাওয়া সবই করছেন একসঙ্গে।

স্বঘোষিত কৃষককন্যা জাসসি সাংহা বলেন, আন্দোলনের একাধিক স্থানে লঙ্গর (সাম্প্রদায়িক রান্নাঘর) খোলা হয়েছে। সেগুলো চলছে শিখদের স্বপ্রণোদিত সেবায়। বিক্ষোভকারীরা কয়েক সপ্তাহের খাবার নিয়ে এসেছেন। তারা এত খাবার এনেছেন যে স্থানীয়রাও তাদের সঙ্গে খাচ্ছেন।

পাঞ্জাবের অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী সোনিয়া মানও যোগ দিয়েছেন কৃষকদের আন্দোলনে। তিনি বলেন, হরিয়ানা, রাজস্থানসহ অন্য রাজ্যের কৃষকরা এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তারা সবাই একসঙ্গে এসেছেন এবং একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তারা সবাইকে সমম্মান করেন। হিন্দু, মুসলিম, শিখ- সবাই এখানে এসেছেন।

নিজে কৃষক আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণ প্রসঙ্গে সোনিয়া বলেন, আমি কৃষকের মেয়ে। আমার বাবা ছিলেন কৃষক ইউনিয়নের নেতা। তিনি কৃষকদের জন্য নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। এজন্য আমিও এখানে এসেছি।

টিয়ারগ্যাস ও জলকামান
ভারতে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আন্দোলনরত কৃষকদের ‘দেশবিরোধী’ বলে উল্লেখ করছে। এমনকি তাদের কিছু নেতা কৃষকদের ‘সন্ত্রাসী’ পর্যন্ত বলেছেন।

সোনিয়া বলেন, তারা (বিজেপি) আমাদের আন্দোলন নষ্ট করতে চায়। তার বিশ্বাস, সরকার ও গণমাধ্যম কৃষকদের আন্দোলনকে ধর্মীয় ও দেশবিরোধী প্রমাণের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

এজন্য আন্দোলনরত কৃষকরা ক্ষুব্ধ ও রাগান্বিত হলেও একইসঙ্গে তারা যথেষ্ট ধৈর্য ও সতকর্তা অবলম্বন করছেন। কৃষকদের পক্ষে কে কী বলছেন, তা খুব সাবধানতার সঙ্গে খেয়াল রাখা হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের কথায়, মাত্র একটিবার ‘খালিস্তান’ (শিখ বিদ্রোহীদের দাবি করা স্বাধীন রাষ্ট্র) শব্দের উচ্চারণ গণমাধ্যম ও সরকারের জন্য কৃষক আন্দোলন ধ্বংসের অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।

আন্দোলনস্থলে দায়িত্বরত সাংবাদিক নিকিতা জেইন বলেন, মতামত থাকা মানেই সে দেশবিরোধী নয়। যে কৃষকরা সবচেয়ে বড় দেশপ্রেমিক, তাদেরই কীভাবে আপনারা দেশবিরোধী বলতে পারেন?

শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারগ্যাস ও জলকামান ব্যবহারের প্রতিবাদ জানিয়ে জাসসি বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ভারত। কিন্তু সেখানে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে যা হয়েছে, তা স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন।

‘সরকারের ঘাড়ে পা আমাদের’
ভারতীয় পুলিশের তথ্যমতে, দেশটিতে কৃষক আন্দোলনে এপর্যন্ত অন্তত ২৫ জন মারা গেছেন। তাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া, হাইপোথারমিয়া ও সড়ক দুর্ঘটনার কথা বলা হয়েছে।

আন্দোলনকারী কৃষকদের অনেকেই রাতে তীব্র শীতের মধ্যে মাটিতে ঘুমাচ্ছেন, কেউ ঘুমাচ্ছেন ট্রাকের ওপর। টয়লেট ব্যবহার করছেন স্থানীয়দের সাহায্যের ওপর নির্ভর করে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও সনোবল হারাননি নারী কৃষকরা।

গত সপ্তাহে কৃষক ইউনিয়নের নেতা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ষষ্ঠ আলোচনা বাতিল করা হয়েছে। দুই পক্ষই নিজ নিজ দাবিতে অনড়। কিন্তু কৃষকদের ইচ্ছাশক্তি প্রবল এবং তাদের পক্ষে ক্রমাগত জনসমর্থন বাড়ছে।

পরবিমন্দর ও কুলবিন্দর বলেন, আমরা যেখানে শুরু করেছিলাম, সেখানেই রয়েছি। আমরা এখানেই থাকব। কোনও সমস্যা নেই, আমাদের বাড়ির কথা মনে হচ্ছে না।

পরিবারের সদস্যরাও আন্দোলন চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিচ্ছেন জানিয়ে কুলবিন্দর বলেন, তারা আমাদের ফোন করে বলছে, শক্ত থাকো, হাল ছেড়ো না।

আন্দোলনে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু জানতে চাইলে পরমিন্দর ও কুলমিন্দর দু’জনই জোর গলায় বলেন, আমরা যখন তাদের ঘাড়ে পা দিয়ে রেখেছি, তারা এটা (নতুন আইন) ফেরাবে না কেন?

জাসসির কথায়, জমি মায়ের মতো। আর ভারতের মা, মেয়ে, কন্যারাই এই আন্দোলনের মেরুদণ্ড।

দৃঢ়কণ্ঠে বলজিৎ বলেন, আমরা আওয়াজ তুলেছি। আমরা আমাদের অধিকার নেবোই।

 

শীতে ত্বকের যত্নে জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ

শীতে ত্বককে দুটি জিনিসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। সেটি হল- তাপমাত্রা ও আদ্রতা। দুটোই কমে যায়। যার কারণে স্বাভাবিক ত্বক হয়ে ওঠে শুষ্ক এবং শুষ্ক ত্বক হয়ে ওঠে সংবেদনশীল। তাই নিতে হবে বিশেষ যত্ন।

ক্লিনজার: ঠাণ্ডার ভয়ে অনেকেই গোসল করতে চান না। প্রতিদিন না করলেও অন্তত একদিন অন্তর গোসল করতে হবে। এক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন। তবে মনে রাখবেন, খুব ঠাণ্ডা বা বেশি গরম পানি দুটোই ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। বেশি গরম পানি ত্বক থেকে অয়েল বা ময়েশ্চারকে ধুয়ে ফেলে। ত্বকের প্রোটিন ও ফ্যাটের জন্যও গরম পানি ক্ষতিকর। ফলে ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে ওঠে। দশ মিনিট বা তার কম সময় ধরে গোসল করুন। গোসলে সুগন্ধিবিহীন সাবান অথবা কোনো ক্লিনজার ব্যবহার করলে ভালো হয়।

ময়েশ্চারাইজার: গোসলের পর যত দ্রুত সম্ভব ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। সেটি হতে পারে লোশন, ক্রিম বা কোনো অয়েল। কিন্তু এ জিনিসগুলো হতে হবে কোনো ধরনের সুগন্ধিবিহীন ও রঙবিহীন। অন্তত দিনে একবার ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার ব্যবহার করতে হবে।

সানব্লক: শীতে স্বভাবতই সবাই রোদে বসতে পছন্দ করেন। তাই ত্বকে রোদে পোড়া একটা ভাব কিন্তু অনেকেরই আসে। তাই সঠিক নিয়মে সানব্লক ব্যবহার খুবই প্রয়োজন। বাসা থেকে বের হওয়ার দশ মিনিট আগে এক চা চামচ আন্দাজ করে মুখে লাগাতে হবে। সানব্লক ব্যবহার করুন, যেটি SPF 50+ অথবা ন্যূনতম SPF 30+ হতে পারে।SPF containing moisturizer ব্যবহার করতে পারেন। একবার লাগালে দুই থেকে তিন ঘণ্টা কাজ করে। পরবর্তীতে যদি রোদে থাকা হয় পুনরায় লাগাতে পারলে ভালো হয়। ক্রিম, লোশনসহ বিভিন্ন রকমের সানব্লক পাওয়া যায়। তাই যাদের স্কিন শুষ্ক এবং শীতে আরও শুষ্ক হয়ে যায়, তারা ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন।

মেকআপ ক্লিনজার: মেকআপ তোলার ক্ষেত্রে খুব সচেতন হতে হবে। কোনো ধরনের অ্যালকোহলযুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করা যাবে না। সেটি স্কিনকে অনেক বেশি শুষ্ক করে তুলে। এজন্য নারিকেলের তেল ব্যবহার করুন।

শুষ্ক ঠোঁট: ঠোঁট শুষ্ক হবে বলে বারবার জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভেজানো যাবে না। তাতে ঠোঁট আরও শুষ্ক হবে। রাতে মোটা করে ভ্যাসলিন লাগান। সকালে মুখ ধোয়ার সময় আলতো করে ঘষে শুকনো চামড়া তুলে ফেললেই ঠোঁট থাকবে সুন্দর। পাশাপাশি লিপ বাম অথবা ভ্যাসলিন লাগান; যা হবে কোনো রঙ ও সুগন্ধিবিহীন।

শুষ্ক হাত: একদিকে শীত অন্যদিকে করোনা। এ মহামারী পরিস্থিতিতে হাতে বারবার লাগাতে হয় স্যানিটাইজার বা হ্যাক্সিসল কিংবা হাত ধুতে হয়। সুতরাং যতবার এগুলো ব্যবহার করবেন ততবার ময়েশ্চারাইজার লোশন লাগান।

শুষ্ক পা: শক্ত কোনো কিছু দিয়ে পা ঘষা যাবে না। খুব হালকাভাবে ঘষতে হবে। মরা কোষগুলোকে তুলে ফেলুন। সপ্তাহে দুই দিন কুসুম গরম পানিতে পা ভিজিয়ে নিয়ে হালকা করে ঘষে পরিষ্কার করুন এবং নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার লাগান। অন্তত দিনে ও রাতে দুইবার ময়েশ্চারাইজার লাগাতে পারেন। যাদের খুব বেশি পা ফাটে তারা রাতে ভ্যাসলিন লাগিয়ে মোজা ব্যবহার করুন। যুগান্তর

লেখক: ডা. তাসনীম খান, অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজিস্ট ও লেজার স্পেশালিস্ট

 

নিউজিল্যান্ডে যৌন হয়রানি মামলা জিতে ক্ষতিপূরণ পেলেন যৌনকর্মী

নিউজিল্যান্ডে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা জিতে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ পেলেন এক যৌনকর্মী। আইনি লড়াইয়ে তার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করা এক মানবাধিকার সংগঠন এ তথ্য জানিয়েছে। সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) আদালতের এ সিদ্ধান্তকে যৌনকর্মীদের অধিকারের পক্ষে এক বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে গোপনীয়তার কারণে মামলার সঙ্গে জড়িতদের নাম ও অন্যান্য বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। খবর বিবিসি।

নিউজিল্যান্ড-ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মানসিক ক্ষতির পাশাপাশি আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যৌনকর্মীর যে ক্ষতি হয়েছে— তারই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। অভিযোগকারী যৌনকর্মী ছয় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ পেতে যাচ্ছেন। তবে তিনি ঠিক কত টাকা পেতে যাচ্ছেন তা জানানো হয়নি।

সোমবার নিউজিল্যান্ডের হিউম্যান রাইটস প্রসেডিংস-এর পরিচালক মাইকেল টিমিনস বলেন, “যে কোনো পেশার কর্মী, তিনি যে ধরনের কাজই করুণ, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে লড়াই করার অধিকার তার আছে। আমরা সব মালিক ও কর্মীদের উৎসাহিত করছি, তারা যেন এই অধিকারের বিষয়টি বুঝেন ও সম্মান করেন”।
বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, নিউজিল্যান্ডে যৌন পেশা আইনত বৈধ। যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষায় ২০০৩ সালে আইন পাশ হয়েছিল। ওই আইনে নিউজিল্যান্ডে যৌন পেশাকে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল।

নিউজিল্যান্ড সেক্স ওয়ার্কার্স কালেক্টিভের জাতীয় সমন্বয়কারী ডেম ক্যাথরিন হিলি বলেন, “যৌন পেশার ক্ষেত্রে এরকম ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে, এটি অনেক বড় ব্যাপার। যে কোনো কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস প্রয়োজন”।

 

৫ সূচকে কর্মজীবী নারীর ওপর মহামারির অভিঘাতের চিত্র

মহামারি করোনাভাইরাসের আঘাতে এক সময়কার সবল চাকরি-বাজার লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। মহামারির অভিঘাতে চাকরিক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন নারীরা। যুক্তরাষ্ট্রে গত মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর পরের এই সাত মাসে হারানো এসব চাকরির অর্ধেক অবশ্য আবার ফিরে এসেছে। তবে নভেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে— চাকরিক্ষেত্রে নারী পুরুষের মধ্যে ব্যবধান বড় হয়েছে। মহামারির ফলে ৫৩ লাখ নারী চাকরিহারা হয়েছেন, যেখানে পুরুষের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ৪৬ লাখ।
বিজ্ঞাপন

মহামারিটি চাকরি-বাজারে সবার আগে সেবা খাতে আঘাত হানে— বিশেষত যেসব চাকরিতে গ্রাহকের সঙ্গে সামনাসামনি সংযোগ প্রয়োজন— যেমন: রেস্টুরেন্ট, হোটেল, চিকিৎসা, সুপারশপ ইত্যাদি। যুক্তরাষ্ট্রে এসব চাকরির বেশিরভাগই নারীদের দখলে। তবে মহামারির শুরুতেই এসব শাখার কর্মী ছাটাই শুরু হয়, যার ধকল এখনও কাটেনি। এসব শাখায় হাজার হাজার পুরুষও চাকরি হারিয়েছেন— তবে নারীদের তুলনায় কম।

এই মহামারিকালেও যেসব নারীদের চাকরি টিকে আছে তাদের অবস্থাও এখন আর আগের মতো নেই। লক্ষ লক্ষ নারী করোনাভাইরাস দুর্যোগে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন। উদাহরণস্বরূপ— আমেরিকার হাসপাতালগুলোতে কর্মীদের শতকরা ৭৭ ভাগ নারী, এবং কিন্ডারগার্টেনের ৭৪ ভাগ কর্মীও নারী। তারা প্রবল মানসিক চাপ ও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও রোগীদের সেবা ও বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছেন।

কর্মজীবী মায়েদের জন্য সমস্যা আরও বাড়িয়েছে চাইল্ড কেয়ারের স্বল্পতা। যাদের বাচ্চা রয়েছে— এমন কর্মীরা বড় সমস্যায় পড়েছেন। মহামারি শুরুর প্রথম দুই মাসের মধ্যেই আমেরিকার চাইল্ড কেয়ার সেন্টারগুলো তাদের ৩৫ ভাগ স্টাফকে চাকরিচ্যুত করে। (উল্লেখ্য, এই চাইল্ড কেয়ার সেক্টরর সিংহভাগ কর্মী নারী: আমেরিকার চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে ৯৩ শতাংশ চাকরি নারীদের দখলে)। তবে সম্প্রতি এ সেক্টরে আবার কর্মী নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু গত নভেম্বর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এ সেক্টরে এখন পর্যন্ত ১৭ ভাগ হারানো চাকরি ফিরে আসেনি। এর অর্থ হলো— কর্মজীবী মা-বাবার জন্য বাচ্চার লালন-পালনের বিকল্প আগের চেয়ে কমে এসেছে। দীর্ঘদিন চাকরিহারা থাকার পর এখন যারা চাকরি পাচ্ছেন তাদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা। এর উপর আরেক সমস্যা হলো— চাইল্ড কেয়ারে বাচ্চা ভর্তি করানোর খরচও বেড়ে গেছে।

মহামারির কারণে স্কুল ও চাইল্ড কেয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাসায় বাচ্চাদের যত্ন ও লেখাপড়ার কাজে নারীদেরকেই বেশি সময় দিতে হচ্ছে। শুরুর দিকে করা কিছু সমীক্ষায় এমন চিত্র উঠে এসেছে। বাড়িতে বাচ্চাদের পড়ানো, লালন-পালন ইত্যাদি কাজে পুরুষের চেয়ে নারীদেরকেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে— ফলে কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে পুরুষের চেয়ে নারীর দূরত্ব বাড়ছে।

ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব ডালাসের অর্থনীতিবিদরা আমেরিকার শ্রম পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, মহামারিকালে শিশুদের যত্ন-আত্তি বনাম চাকরিতে মনোযোগের ব্যাপারে মা ও বাবার কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, ১৩ বছরের কম বয়েসি বাচ্চার মায়েরা, বাচ্চা ছাড়া নারীদের চেয়ে বেশি চাকরি হারিয়েছেন। বিপরীতে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা আরও কম। বাচ্চার মায়েরা সর্বোচ্চ ৩ পার্সেন্টিজ পয়েন্টে হারে চাকরি হারালেও বাচ্চা ছাড়া নারীরা চাকরি হারিয়েছেন ১.৮ পার্সেন্টিজ পয়েন্ট হারে। এদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা যথাক্রমে ১.৪ ও ১.২।

ডালাস ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের অর্থনীতিবিদরা তাদের বিশ্লেষণে দেখান, কর্মজীবী মায়েদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাকরি হারানোর হার কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনা নারীদের— সে তুলনায় শ্বেতাঙ্গ নারীদের চাকরি হারানোর হার কম। করোনা মহামারিতে ভুক্তভোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ কর্মজীবী মায়েরা। গত ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা চাকরি হারিয়েছেন ৬.৪ পার্সেন্টিজ পয়েন্ট হারে।

বর্তমানে চাকরির বাজার কিছুটা চাঙা হতে শুরু করেছে। তবে অগ্রগতির বর্তমান হার অনুযায়ী— চাকরির বাজার পুরোপুরি আগের অবস্থায় ফিরে যেতে অন্তত ৪০ মাস সময় লাগবে। অর্থনীতিবিদরা ইতিমধ্যে হুশিয়ার করেছেন— চাকরি থেকে দূরে থাকার সময় যত লম্বা হবে, তাদের চাকরিতে ফেরাও ততো কঠিন হবে। স্থায়ী চাকরি হারানো বা আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে কর্মক্ষেত্রে ও সমাজে লিঙ্গসমতার অগ্রগতির ধারায় বড় ছেদ পড়বে।
-সিএনএন অবলম্বনে

 

ভারি ঝুমকা পরে কান ব্যথা হলে করণীয়

যেকোনো অনুষ্ঠানে বেশিরভাগ নারী শাড়ি, চুড়িদার, শালোয়ারের সাথে একটু ভারি ঝুমকা বা কানের দুল পরতে পছন্দ করেন। যা দেখতে খুবই সুন্দর। তবে এ কথাও সত্য যে, ভারি ঝুমকা বেশিক্ষণ পরে থাকলে কানে ব্যথা হতে পারে।

ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে ভারি ঝুমকা পরতে চান না। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। এমন কিছু উপায় রয়েছে, যা সঠিকভাবে মেনে চললে কানের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাহলে আসুন জেনে নেই সেসব উপায় সম্পর্কে-

ক্রিম বা তেল: ভারি ঝুমকা পরার আগে কানে ক্রিম বা তেল লাগাতে পারেন। এতে কানের ত্বক নরম হবে। ঝুমকা পরার কারণে কানে জ্বালা বা ব্যথা হবে না।

সব সময় পরবেন না: এখন বিয়ের মৌসুম চলছে। এক্ষেত্রে যদি পরপর সব অনুষ্ঠানে ভারি ঝুমকা পরেন, তাহলে কানের ব্যথা বাড়তে পারে। তাই সব অনুষ্ঠানে ভারি ঝুমকা না পরে হালকা কানের দুলও পরতে পারেন।

বেশিক্ষণ পরে থাকবেন না: পুরো অনুষ্ঠানে ভারি ঝুমকা পরে থাকবেন না। ছবি তোলার পর বা অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি হালকা কানের দুল পরতে পারেন। এতে কানে খুব বেশি ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

ভারি দুলের সঙ্গে চেন: ভারি কানের দুলের ওজন কমাতে দুলের সঙ্গে চেন ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার কানে ব্যথা হবে না। কারণ ওজনের কিছু অংশ চেনও বহন করতে পারবে।

 

‘ভোগ বাই প্রিন্স’ এখন কুমিল্লায়

‘দেশের টাকা দেশে রাখুন’ স্লোগান নিয়ে বিজয়ের মাসে কুমিল্লায় উদ্বোধন হলো ‘ভোগ বাই প্রিন্স’- এর ১৩ তম শাখার। ১৫ ডিসেম্বর কুমিল্লার বাদুরতলায় প্রতিষ্ঠানটির ১৩তম শাখাটির উদ্বোধন করেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহারউদ্দিন বাহার, এম পি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল গ্রুপ ও আরটিভির পরিচালক ফিরোজ আলম, ভোগ বাই প্রিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসিম আক্তার, জাগ্রত মানবিকতার প্রতিষ্ঠাতা তাহসিন বাহার সূচনা ও সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শ্রাবণ্য তৌহিদা।

প্রতিষ্ঠানটির হেড অব মার্কেটিং শাকিল ইবনে সুলতান বলেন, ‘বাজারে বিদেশি পণ্যের রাজত্ব ঠেকিয়ে দেশের টাকা দেশে রাখতে সম্পূর্ণ দেশীয় নিজস্ব পণ্য নিয়ে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। ইতিমধ্যে ঢাকার ১০টি শাখাসহ সারাদেশে মোট ১৩টি শাখায় ক্রেতা সাধারণের ব্যাপক সাড়া মেলেছে। কুমিল্লার এই শাখাটিও ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে বলে আশা করি।’

জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটাতে দেশের মানুষকে দেশীয় তৈরি পণ্য ব্যবহার করার আহ্বান জানান প্রধান অতিথি।

এদিকে উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ক্রেতা সাধারণকে ৪০% ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। এই শোরুমটিতে ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি, প্যান্ট, জুতা এবং মেয়েদের জন্য ব্যাগ, জুয়েলারি, থ্রি পিসসহ বাহারি পোশাকের সমাহার রয়েছে।

 

গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাওয়া ক্ষতিকর

লাইফস্টাইল ডেস্ক

গর্ভাবস্থায় অন্তঃসত্ত্বার চাই বাড়তি যত্ন। এ সময়ে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি কিছু নির্দিষ্ট খাবার খাওয়া এড়ানো উচিত। কারণ মা যা কিছু খায়, তার সরাসরি প্রভাব পড়ে সন্তানের ওপর। তাই কোনো কিছু খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

আসুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাবেন না-

১. গর্ভাবস্থায় জাঙ্ক ফুড খাওয়া উচিত নয়। জাঙ্ক ফুড খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে ওষুধ খেতে হবে, যার প্রভাব পড়বে গর্ভের শিশুর ওপর। তাই স্ট্রিট ফুড, জাঙ্ক ফুড খাবেন না।

২. যদি প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল সেবন করেন, তবে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ধূমপান বা অ্যালকোহল কোনোটাই এ সময় নেয়া উচিত না। অতিরিক্ত ডোপামিন হরমোন ক্ষরণ এই সময় শিশুর ক্ষতি করে।

৩. গর্ভবতী মায়েদের হাঙর, সওয়ার্ডফিশ, টুনা, কিং ম্যাকেরেল এবং টাইল ফিশ খাওয়া উচিত নয়।

৪. কাঁচা স্প্রাউটস খুব স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। তবে রান্না না করা স্প্রাউটস গর্ভবতী নারীদের পক্ষে ভালো নয়। কাঁচা স্প্রাউটসে ব্যাক্টেরিয়া থাকতে পারে। রান্না করার পর এটি দূর হতে পারে।

৫. তৈলাক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ এতে উচ্চ পরিমাণে লবণ, চিনি থাকে ও প্রচুর প্রিজারভেটিভ কেমিক্যালও উপস্থিত থাকে, যা গর্ভবতী নারী ও শিশুকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই টাটকা খাবার খাওয়া উচিত এবং ক্যালসিয়াম ও আয়রনের পরিমাণ বাড়ানো উচিত।

তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই

 

ঠোঁট ফাটা সারানোর ঘরোয়া উপায়

লাইফস্টাইল ডেস্ক

শীতে ঠোঁট ফাটা একটি কমন সমস্যা। সবাই কমবেশি এই সমস্যায় ভোগেন। কিছু নিয়ম মেনে চললে সহজেই আপনি এ সমস্যার সমাধান করতে পারেন।

আসুন জেনে নিই ঠোঁট ফাটা সারানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে-

১. আধা চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ার সঙ্গে মধু, অলিভ অয়েল ও চিনি মিশিয়ে ঠোঁটে ঘষুণ। ঠোঁট ধুয়ে লিপবাম লাগান।

২. ১ চা চামচ নারিকেল তেল আর ১ চা চামচ চিনি দিয়ে বানিয়ে নিন লিপ স্ক্রাব। কয়েকবার ঠোঁট স্ক্রাব করে ধুয়ে ফেলুন।

৩. নারিকেল দুধ আর গোলাপজল মিশিয়ে লিপ ক্লিনজার বানিয়ে নিন। প্রতিদিন সকালে এটি ব্যবহার করুন।

৪. কয়েকটি গোলাপের পাপড়ি কাঁচা দুধে ভিজিয়ে রাখুন ঘণ্টা তিনেক। পাপড়িগুলোর পেস্ট বানিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৫. ২ চা চামচ দই আর ১ চা চামচ লেবুর রস দিয়ে লিপ মাস্ক বানাতে পারেন।

 

ত্বক ভালো রাখবে যেসব খাবার

ত্বক ভালো রাখতে চাই প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। কিছু ভিটামিনও ত্বক ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে, যা আপনি পাবেন খাবার থেকে।

আসুন জেনে নিই ত্বক ভালো রাখতে কী খাবেন-

১. শরীর সুস্থ রাখতে ভিটামিন ‘সি’ খুবই প্রয়োজন। এতে পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ত্বককে সূর্যালোকের কারণে হওয়া ক্ষতি থেকে বাঁচায়। এ ছাড়া ত্বক উজ্জ্বল করে ও রোদ থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখে।

পালংশাক, টমেটো, লেবু, আঙুর, কমলা, ক্যাপসিকাম, পেঁপে ও লেবুতে পাবেন ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বক উজ্জ্বল করে, রঙের ভারসাম্য বজায় রাখে।

২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের রোদে পোড়াভাব কমায়, অকাল বলিরেখা ও মৃত কোষের সমস্যার সমাধান করে।

শক্তিশালী কয়েকটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হলো– ক্যারোটিনয়েড যেমন- বিটা ক্যারোটিন, লাইকোপিন, আইসোফ্লেভোন্স, রেসভারাট্রোল, আলফা লিপোইক অ্যাসিড, গ্লুটাথিওন ইত্যাদি।

ক্যারোটিনয়েড’য়ের ভালো উৎস হচ্ছে– গাজর, মিষ্টি আলু, হলুদ ক্যাপসিকাম, পালংশাক, কুমড়া ও ব্রকলি।

৩. ভিটামিন ‘ই’ খুব ভালো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা ত্বককে উন্মুক্ত রেডিকেল থেকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে। এ ভিটামিন ত্বককে রোদ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে, কোলাজেনের ভাঙন রোধেও ভূমিকা রাখে।

বীজ ও বাদাম– আখরোট, সূর্যমুখীর বীজ ও তিসির বীজে পাবেন ভিটামিন ই। এই ভিটামিন সূর্যালোক থেকে রক্ষা, আর্দ্রতা রক্ষা ও ত্বক মসৃণ রাখে।

৪. জিংক ত্বকের ক্ষত দূর করে ও নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে। জিংকসমৃদ্ধ খাবার ত্বককে ব্রণ ও দাগ মুক্ত রাখতে সহায়তা করে। আখরোট, সূর্যমুখীর বীজ ও ব্রকলিতে পাবেন জিংক।

৫. ত্বক ভালো রাখে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে আর্দ্র রাখে ও ত্বকের সুরক্ষার স্তর নিশ্চিত করে। এর প্রদাহনাশক উপাদান ব্রণ, লালচেভাব ও এরিথিমা কমাতে সাহায্য করে।

ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ যেমন- স্যামন। এ ছাড়া তিসির বীজ ও অ্যাভোকাডো।

এসব খাবার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখুন। ফলে ত্বক দীর্ঘদিন সুস্থ ও সুন্দর থাকবে।

ডা. লুবনা খন্দকার
সহযোগী অধ্যাপক
চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

 

শীতে জিভে জল আনা দুধ খেজুর পিঠা

শীতকালে পিঠা খেতে কার না ভালো লাগে। সেটি যদি হয় দুধ খেজুর পিঠা, তবে তো কথাই নেই। নাম শুনলেই জিভে জল এসে যায়।

খুব সহজে ঘরেই তৈরি করতে পারেন সুস্বাদু এ পিঠা।

উপকরণ

খামির জন্য, ময়দা ১ কাপ, নারিকেলের দুধ ১ কাপ, লবণ ১/৪ চা চামচ, ডিম ১টি ও ঘি ২ টেবিল চামচ।

দুধের সিরার জন্য

দুধ ২ কাপ, চিনি ২ টেবিল চামচ, এলাচ ২টি।

প্রণালি

পাত্রে নারিকেলের দুধ গরম করে চুলায় দুধের ভেতর ময়দা ও লবণ দিয়ে খামির বানাতে হবে। এবার চুলা বন্ধ করে খামির একটু ঠাণ্ডা হলে ঘি ও ফেটানো ডিম মিশিয়ে মথতে হবে।

ছোট ছোট বল বানিয়ে পিঁড়িতে রেখে বেলুন দিয়ে বেলে একটু লম্বা করে হাত দিয়ে পেঁচিয়ে মুখ চেপে লাগিয়ে দিন।

এবার অল্প তাপে ডুব তেলে লাল করে ভেজে নিন পিঠাগুলো। ২ কাপ দুধ জ্বাল দিয়ে ১ কাপ করে নিন।

এতে চিনি ও এলাচ দিয়ে নাড়ুন। চুলা বন্ধ করে এবার পিঠাগুলো দুধে দিয়ে ঢেকে রাখুন কমপক্ষে চার ঘণ্টা। পরিবেশনের সময় পিঠার ওপর দুধের সর দিয়ে পরিবেশন করুন।

লেখক: নাজমা নাহার, শিক্ষক ও গৃহিণী।

 

ঘুরে আসুন সবুজে ঢাকা হেরিটেজ রিসোর্টে

সবুজে শ্যামল ছায়া ঢাকা প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে বিনোদন পার্ক ‘হেরিটেজ রিসোর্ট লিমিটেড’। রাজধানী ঢাকা থেকে অল্প দূরে নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলার নওপাড়ায় আন্তর্জাতিক মানের সুবিধা নিয়ে ভ্রমণ বিলাসী ও বিনোদন পিয়াসী মানুষের কাছে আস্থা অর্জন করেছে এই রিসোর্টটি।

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৩০০ ফুট রাস্তা ধরে কাঞ্চন ব্রিজ অতিক্রম করে ভুলতা গাউছিয়া হয়ে এই রিসোর্টটিতে পৌঁছা যাবে। এছাড়া সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে হয়েও এ রিসোর্টটিতে পৌঁছা যাবে।

এখানে অবকাশ যাপনের আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ৫০ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। পানির ওপরে ভাসমান কটেজগুলো এ রিসোর্টটির সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিয়ে, জন্মদিন কিংবা অফিসিয়াল কাজের জন্য একাধিক সুপরিসর কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে এখানে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য রয়েছে ডিজিটাল স্টেজ।

খেলার মাঠের পাশাপাশি আছে শিশুদের জন্য আলাদা প্লে-গ্রাউন্ড। সুপরিসর সুইমিং পুলে একসঙ্গে অনেক মানুষের গোসলের ব্যবস্থা আছে। স্পিড বোটে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ঢেউ তৈরি করা ওয়েববিচ আছে রিসোর্টে। অত্যাধুনিক জিমনেশিয়ামের পাশাপাশি এ রিসোর্টটিতে রয়েছে কম্পিউটারাইজড গেমস খেলার সুবিধা। আধুনিক সুবিধা নিয়ে বিনোদনের চাহিদা পূরণ করার জন্য রয়েছে সিনেপ্লেক্স।

এছাড়া ক্লাব কারে চড়ার সুযোগ পাবেন রিসোর্টে আসা অতিথিরা। রয়েছে বারবিকিউ জোন। অত্যাধুনিক জিমনেশিয়ামে আগত অতিথিরা ফিটনেস প্রাকটিস করতে পারবেন। এছাড়া রয়েছে নিরাপদ হ্যালিপ্যাড। যেখানে অতিথিরা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে রিসোর্টে আসতে পারবেন। আর অতিথিদের বিনোদনের চাহিদা পূরনের জন্য রয়েছে বিশ্বমানের প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি করা সিনেপ্লেক্স।

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় বিষয় করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে রিসোর্টটিতে।

রিসোর্টের কর্ণধার মিনহাজুল রহমান রাজু ভুঁইয়া বলেন, ‘আসলে মানুষ প্রতিনিয়ত বিনোদন কিংবা অবকাশ যাপনের জন্য ঘরের বাইরে বের হচ্ছে। দেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে ভ্রমণপ্রিয় মানুষের সংখ্যা। আমরা সেই মানুষের বিনোদনের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এ রিসোর্টটি প্রতিষ্ঠা করেছি।

তিনি বলেন, রাজধানীর কোলাহল থেকে বেরিয়ে শান্ত নিবিড় পরিবেশে অতিথিরা আমাদের এ রিসোর্টে এলে নির্মল প্রশান্তি পাবেন। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের মানুষের সেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

 

শীতে সোনামুনিকে উষ্ণ রাখতে কী করবেন

শীতে শিশুর জন্য চাই বাড়তি যত্ন। এ সময় তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে ঠাণ্ডা, জ্বর ও সর্দি-কাশি লেগেই থাকে সোনামুনিদের।

শিশুদের শরীর গরম রাখা, ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং শীতের বাতাস থেকে রক্ষা করার জন্য তাদের শীতের পোশাক পরাতে হবে।

আসুন জেনে নিই শীতে শিশুর শরীর গরম রাখতে কী করবেন-

মাথা ঢেকে রাখা জরুরি

শীতের সময়ে শিশুর মাথা ঢেকে রাখা উচিত। যদি মাথার তাপমাত্রা কম থাকে তা হলে এর প্রভাব পুরো শরীরে পড়ে। তাই শিশুকে ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করতে টুপি পরান বা কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন। এ ছাড়া খেয়াল রাখবেন যে, শিশুর টুপিটি যাতে খুব আঁটসাঁট না হয় এবং নরম কাপড়ের হয়।

নাক উষ্ণ রাখুন

জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া ও ক্ষতিকারক ধোঁয়া নাক দিয়েই শরীরে প্রবেশ করে। তাই শিশুর নাক সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হালকা গরম তেল দিয়ে শিশুর নাক মালিশ করতে পারেন। ঘরের তাপমাত্রা যাতে খুব কম না থাকে সেদিকেও নজর দিতে পারেন।

পা ঢেকে রাখুন

শিশুর শরীরের নিচের দিকেও ঠাণ্ডা লাগতে পারে। তাপমাত্রা তার পায়ের দিকটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও শিশুরা বেশিরভাগ সময় বিছানায় শুয়ে থাকে, মাটিতে পা রাখে না, তা হলেও তাদের দেহের নিচের দিকে ঠাণ্ডা লাগতে পারে। তাই শিশুকে মোজা পরানো বা পায়ের দিকে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা প্রয়োজন।

ম্যাসাজ করুন
শিশুর শরীর উষ্ণ রাখতে ম্যাসাজ করতে পারেন। শরীর উষ্ণ রাখার জন্য সরিষার তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন।

হাত ঠাণ্ডা

শিশুর হাত ঠাণ্ডা হয়ে গেলে নরম গ্লাভস পরান এবং ফুল হাতা পোশাক পরান। তবে রাতে ঘুমানোর সময় শিশুর মুখ কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখবেন না এবং গ্লাভস পরাবেন না।

তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই

 

করোনাকালে বিয়ে: সুরক্ষিত থাকতে যা করবেন

শীত এলেই সামাজিক অনুষ্ঠানের ধুম পড়ে যায়। বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো এ সময়েই বেশি হয়ে থাকে। তবে কোভিড-১৯ মহামারী দেখা দেয়ায় বহু সামাজিক অনুষ্ঠানে কড়াকড়ি চলছে। তবে এসব কড়াকড়ির মধ্যেও থেমে নেই বিয়েশাদি।

করোনার মধ্যেই যদি কারও বিয়ের অনুষ্ঠান থাকে, তা হলে কিছু বিষয় অবশ্যই মেনে চলতে হবে। কারণ শীতে করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলছে।

আসুন জেনে নিই সংক্রমণ এড়াতে কী করবেন-

১. বিয়ের অনুষ্ঠানে অবশ্যই মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রত্যেকের মুখেই যাতে মাস্ক থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।

২. যত্নসহ অতিথিদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। ক্যাটারিংয়ের জন্য এমন কাউকে ঠিক করতে হবে, যিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখবেন।

৩. মহামারীর সময়ে বিয়ের পরিকল্পনা থাকলে অতিথিদের সংখ্যায় কাটছাঁট করুন। নিমন্ত্রিতদের তালিকায় শুধু কাছের লোকদেরই রাখুন।

৪. করোনার এ সময়ে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সরকারি নির্দেশিকা অনুসারে কতজন লোককে অনুষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে সেটিও মানার চেষ্টা করুন।

 

করোনাভাইরাস: অন্তঃসত্ত্বা মাকে সুরক্ষিত রাখার ৭ উপায়

করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের নিতে হবে বিশেষ যত্ন। সংক্রমণ রোধে নিয়মিত মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।

আসুন জেনে নিই অন্তঃসত্ত্বা মাকে সুরক্ষিত রাখার ৭ উপায়-

১. খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। সঙ্গে রাখতে হবে স্যানিটাইজার।

২. সন্তান পেটে আসার পর নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। চিকিৎসকের কাছে গেলে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। ২ ফুট দূরত্ব মানতেই হবে, ভালো হয় ৬ ফুট দূরত্ব মেনে চললে। বাইরে বেরিয়ে চোখ, নাকে হাত দেয়া যাবে না।

৩. বাইরে থেকে ঘরে এসে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। যে জামাকাপড় পরে গিয়েছিলেন সেগুলো ধুয়ে ফেলুন।

৪. গর্ভাবস্থায় খাবারের বিষয়ে নজর দেয়া জরুরি। হবু মা যা খাবেন সেখান থেকেই পুষ্টি পাবে গর্ভস্থ শিশু। প্রোটিন, ফাইবার, ফলিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার খেতে হবে। শাকসবজি, মাছ, মাংস, দুধ সব যেন থাকে খাদ্যতালিকায়।

৫. প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। ফলে আপনার শরীর যেমন ভালো থাকবে, তেমন মনও।

৬. খাওয়ার আগে হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি। এতে হাতে থাকা জীবাণু আপনার পেটে পৌঁছতে পারবে না।

৭. পরিবারের কারও জ্বর, সর্দি, কাশি বা হাঁচি হলে তার থেকে দূরে থাকুন। আলাদা ঘরে থাকলে খুব ভালো হয়।

তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই

 

নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে সরকার অত্যন্ত কঠোর : প্রতিমন্ত্রী

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর বলে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। তিনি বলেন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার বদ্ধপরিকর। এক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর।

বুধবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীতে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সভাকক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ইউনাইটেড ন্যাশনস ইন বাংলাদেশ-এর যৌথ আয়োজনে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ১৬ দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার নারী নির্যাতন বন্ধ, নারী নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি “যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’-এর বদলে “মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের” বিধান রাখা হয়েছে। সংশোধিত আইনের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডিএনএ প্রোফাইলিং ও স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আন্তঃমন্ত্রণালয় এবং বিভাগীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা হয়েছে।’

নারীর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতা নারীর মানবাধিকারের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন, ‘এই নির্যাতন ও সহিংসতা বন্ধে সরকারের সঙ্গে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তবেই সবার সম্মিলিত উদ্যোগে আমরা নারী ও শিশুর প্রতি সব ধরনের নির্যাতন ও সহিংসতামুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারব।’

ইউএন উইমেন প্রকাশিত তথ্য তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে ৩৫ শতাংশ নারী বা প্রায় প্রতি তিনজনে একজন নারী তার জীবন পরিক্রমায় শারীরিক, মানসিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা ঘটে আপনজনের দ্বারা। সহিংসতার স্বীকার ৪০ শতাংশের কম নারী সহায়তা পেয়ে থাকে। বিশ্বে মোট মানব পাচারের ৭২ শতাংশ নারী ও শিশু। তাই নারীর প্রতি সংঘটিত সব ধরনের নির্যাতন ও অপরাধ নির্মূল করার জন্য বিশ্বব্যাপী সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা রাখেন বাংলাদেশে ইউএন রেসিডেন্ট কোর্ডিনেটর মিয়া সেপ্পো ও বাংলাদেশে নিযুক্ত কমনওয়েলথ উন্নয়ন পরিচালক জুডিথ হারবার্টসন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মাল্টিসেক্টোরাল প্রোগ্রামের পরিচালক ড. আবুল হোসেন।

 

বেগম রোকেয়া : নারী জাগরণের অগ্রদূত

ইয়ামিন আকন্দ

বাঙালি মুসলমান সমাজ যখন সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতায় আবদ্ধ ছিল; তৎকালীন নারী সমাজের শিক্ষার আলো নিয়ে এসেছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। বেগম রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে।

আজ বাঙালি লেখক, শিক্ষাবিদ, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়াকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। তার কর্ম ও আদর্শকে উদযাপনের লক্ষ্যে জন্ম ও মৃত্যুদিন ৯ ডিসেম্বরকে ‘বেগম রোকেয়া দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।

অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তিনি হয়েছিলেন বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত। তার বাবা আবু আলী হায়দার সাবের বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী হলেও মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে ছিলেন রক্ষণশীল। বড় দুই ভাই-বোনের সহযোগিতায় তিনি গোপনে শিক্ষালাভ ও সাহিত্যচর্চা করেন।

১৮৯৮ সালে বিহারের ভাগলপুরের সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন একজন উদার মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তি। স্বামীর সুদূরপ্রসারী প্রভাবের কারণেই তার জ্ঞানচর্চার পরিধি বিস্তৃত হয়। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের লেখকদের রচনার সাথে পরিচিতি ঘটতে থাকে। ১৯০৯ সালে স্বামী মারা গেলে বেগম রোকেয়া নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন।

১৯০২ সালে নভপ্রভা পত্রিকায় ‘পিপাসা’ প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতি পান। ১৯৫০ সালে মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য রচনা ‘সুলতানাস ড্রিম’ যার অনূদিত রূপ ‘সুলতানার স্বপ্ন’ প্রকাশের মাধ্যমে সর্বজন পরিচিত হয়ে ওঠেন। এটিকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইলফলক ধরা হয়। তার অন্যান্য গ্রন্থ হলো- পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী, মতিচুর। প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসের মধ্যদিয়ে তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আর লিঙ্গসমতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। হাস্যরস আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সাহায্যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসম অবস্থান ফুটিয়ে তোলেন।

২০০৪ সালে বিবিসি বাংলা একটি জরিপের আয়োজন করে। ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ তিরিশ দিনের ওপর চালানো জরিপে শ্রোতাদের ভোটে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ২০ জনের জীবন নিয়ে বিবিসি বাংলায় বেতার অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়। সেই শ্রেষ্ঠ কুড়ি জনের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে ছিলেন আমাদের বেগম রোকেয়া।

বিবিসি বাংলার প্রথম তথ্যচিত্র নির্মাতা বাণী দত্ত জানান, কিভাবে কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে তিনি নারীদের শিক্ষাদানে ব্রতী হয়েছিলেন, কিভাবে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ বিসর্জন দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাই স্কুল। যেটি আজ কলকাতার লর্ড সিনহা রোডের প্রথম সারির স্কুল। বেগম রোকেয়ার সাংগঠনিক কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ততা ছিল। ১৯১৬ সালে তিনি আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম নামে একটি মহিলা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এটি নারীদের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করতো।

বেগম রোকেয়ার অসামান্য অবদানের জন্য তিনি এখনো সর্বজন স্মরণীয় হয়ে আছেন। বেগম রোকেয়া ১৩৭তম জন্মদিনে গুগল তার নামে একটি ডুডল তৈরি করে। ২০০৮ সালের ৮ অক্টোবর রংপুর বিভাগের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা ২০০৯ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নামকরণ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীদের জন্য আবাসিক হল বেগম রোকেয়ার নামে নির্মাণ করে। বাংলাদেশ সরকার বেগম রোকেয়া স্মরণে গণউন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে স্থাপন করা হয় বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র। যা বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।

তিনি প্রথম নারীদের সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার কথা ভেবেছিলেন। বেগম রোকেয়া ছিলেন আত্মশক্তিতে বলীয়ান। অনেক দুঃখের বোঝা মাথায় নিয়েও নিজেকে কখনো অসহায় ভাবেননি। নারী শিক্ষার গুরুত্ব তিনি তার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝেছিলেন। তিনি কখনোই নারীতান্ত্রিক কিংবা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে চাননি।

তিনি চেয়েছিলেন, নারী ও পুরুষ উভয়ই যেন সমান মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে বাঁচেন। তিনি নারী-পুরুষকে একটি গাড়ির দুটি চাকার সঙ্গে তুলনা করেছেন। নারীকে জাগিয়ে তুলেছিলেন, নারীর পরাধীনতায় হয়েছিলেন সোচ্চার। বর্তমানে নারীদের ভোটাধিকার, শিক্ষার অধিকার, কর্মসংস্থানের সুযোগ হতো না। যদি কেউ নিজ থেকে উদ্যোগ না নিতেন। অথবা নারীশিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে না পারতেন।

বেগম রোকেয়া তার লেখনীর মাধ্যমে, সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দকে বিসর্জন দিয়ে হাজার নারীর মাঝে তার চেতনা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার অনুপ্রেরণামূলক কাজ বর্তমান নারীদের এতদূর নিয়ে এসেছে। নারীদের কাছে একজন অনুপ্রেরণীয় ব্যক্তিত্ব।

তাই তো ৯ ডিসেম্বরকে বেগম রোকেয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়। নারীদের শিক্ষা অর্জনের পথের কাঁটা সরাতে পেরেছিলেন বলেই আজ নারীদের সর্বক্ষেত্রে বিচরণ রয়েছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, লোক প্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

বাবার ওষুধ কিনতে সকাল-সন্ধ্যা ভ্যান চালায় শিশু শম্পা

জামালপুর সদর উপজেলার নাকাটি গ্রামের শফিকুল ওরফে ভাসানীর শিশু কন্যা শম্পা। দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে শয্যাশায়ী বাবার চিকিৎসা ও ওষুধের টাকার জন্য দেড় বছর ধরে ভ্যান চালাচ্ছে সে। শম্পা নাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।

সম্প্রতি বিষয়টি নজরে এলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে সরেজমিন পরিদর্শন করেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক। সোমবার সকালে শম্পা, তার বাবা-মা ও স্বজনদের সংখ্যা কথা বলেছেন তিনি। ওই সময় জামালপুর সদরের ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে শম্পার বাবা শফিকুল ওরফে ভাসানীর চিকিৎসার দায়িত্ব ও পরিবারের ব্যয়-ভার গ্রহণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।

শম্পার বাবা শফিকুল ওরফে ভাসানী বলেন, আমি আগে ভ্যান চালাতাম। পাঁচ বছর আগে জামালপুর শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় আমার এক পা ভেঙে যায়। এরপর পঙ্গু হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। সবকিছু বিক্রি করে প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ করেছি। তবু পা ভালো না হওয়ায় দেড় বছর ধরে ঘরে পরে আছি। প্রতিদিন আমার ১০০-১৫০ টাকার ওষুধ লাগে। কোনো উপায় না পেয়ে আমি ও আমার স্ত্রী সবজি বিক্রি করি ও আমার ছোট মেয়ে শম্পা ভ্যান চালায়। স্ত্রী-মেয়ের জন্যই এখনো বেঁচে আছি।

শম্পার মা নেবুজা বেগম বলেন, পঙ্গু হাসপাতাল থেকে জানিয়েছে আমার স্বামীর পা ভালো করার জন্য আরো অন্তত তিন লাখ টাকা প্রয়োজন। এ কারণে ছোট মেয়ে শম্পা ভ্যান চালায়। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে শম্পা। ওর হাত-পায়ে ব্যথা হয়। প্রতিরাতেই ওর হাত-পা টিপে দিতে হয়। তবু বাবার জন্য সকাল-সন্ধ্যা ভ্যান চালিয়ে টাকা নিয়ে আসে মেয়েটা।

ভ্যান চালাতে খুব কষ্ট হয় জানিয়ে শম্পা বলে, প্রতিদিন সকালে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হই। ২০০-৩০০ টাকা কামাই করে বাড়ি ফিরি। সেই টাকা দিয়ে বাবার ওষুধ কিনি।

শরিফুলের প্রতিবেশী হযরত আলী বলেন, দেড় বছর আগে শম্পা একবেলা পড়াশোনা করত, এক বেলা ভ্যান চালাত। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হওয়ার পর সারাদিন ভ্যান চালায় মেয়েটি।

জামালপুর সদরের ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। পরিবারটির খোঁজ নিয়েছি। স্থানীয়রা সাধ্যমতো তাদের সহযোগিতা করছে। অসহায় পরিবারটির দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে শিশু শম্পা ও তার বাবার খোঁজ নিয়েছি। অসহায় পরিবারটিকে সহযোগিতার বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

 

বাল্যবিয়ের অভিশাপে দুঃসহ জীবন কাটছে বৃষ্টির

বাল্যবিবাহের অভিশাপে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে এখন দুঃসহ জীবনযাপন করছে কিশোরী বৃষ্টি খাতুন। সে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের কাটাগাড়ি আদর্শ গ্রামের মৃত নুর হোসেন ও মোছা. বাঁচা খাতুনের মেয়ে।

বৃষ্টি খাতুন জানায়, উপজেলার বলদিপাড়া দাখিল মাদরাসায় ৭ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে পার্শ্ববর্তী দেশিগ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে আব্দুল মমিনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিন্তু কোনোভাবেই সে স্বামী, সংসার ও পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারছিল না। স্বামীকে দেখলেই তার খুব ভয় লাগত। এ বিষয়টা কেউই বুঝতে চাইত না। আবার কেউ মেনেও নিত না। এতো ভয়ের মধ্যে বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়ে সে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে কীটনাশক পানে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। অনেক চিকিৎসার পর প্রাণে বেঁচে গেলেও তার দুই পায়ের শক্তি হারিয়ে যায়। সে এখন পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারে না। ফলে লাঠিতে ভর দিয়ে কোনো রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে।

বৃষ্টির মা বাঁচা খাতুন জানান, দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছি যে, মেয়েকে এতো অল্প বয়সে বিয়ে দেয়া আমার মোটেও ঠিক হয়নি। তাই মেয়েকে আরো কিছুদিন নিজের কাছে নিয়ে এসে রাখতে চেয়েছিলাম। জামাই আবদুল মোমিন ও বেয়াই আবদুল মতিনকে অনুরোধও করেছিলাম। আরো কিছুদিন আমার বাড়িতে রেখে দিতে। তারপর ঠিক হলে পাঠাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা রাজি হয়নি। সপ্তাহ পার না হতেই জামাই চলে আসতো আমার বাড়িতে। এতে মেয়ে আরো ভয়ে পেয়ে যেতো। ফলে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

তিনি আরো জানান, মেয়ের জীবনটা দুঃসহ হয়ে উঠেছে। মমিন আবারো বিয়ে করেছে। তাকে নিয়ে সংসার করছে। আমার মেয়েটা আমার বাড়িতে এভাবে পড়ে আছে। তার কোনো খোঁজ-খবরও নেয় না। মেয়েটা এখন শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পাশাপাশি মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে। দু’জনের বয়স না হওয়ায় বিয়ের নিবন্ধন করাও সম্ভব হয়নি। ফলে আমরা কোথাও কোনো আইনি সহায়তা পাচ্ছি না।

এ বিষয়ে বৃষ্টির স্বামী আব্দুল মমিন জানায়, বৃষ্টিকে এক লাখ টাকা দিতে চেয়েছি। কিন্তু তার অভিভাবকরা তা নেয়নি।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে বৃষ্টির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সে নিজ বাড়ির উঠানে লাঠিতে ভর দিয়ে বসে আছে।

তাড়াশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে জানা যায়, তাড়াশে কন্যা সন্তানের অভিভাবকরা মেয়ে একটু বড় হলেই বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে। এর নেতিবাচক প্রভাবের শিকার বৃষ্টি।

তাড়াশ ইউএনও মো. মেজবাউল করিম বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাল্যবিয়ে সাময়িক বন্ধ করা গেলেও তা শেষ পর্যন্ত আটকে থাকছে না। পরে গোপনে বিয়ে দিয়ে দেয়। মাঝে মধ্যেই এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দোষীদের জেল-জরিমানা করা হয়। অভিভাবকরা সচেতন না হওয়ায় গোপনে এ কাজ চলছে। বৃষ্টির বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে অচিরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। -ডেইলি বাংলাদেশ

 

ব্যর্থতা থেকে জান্নাতের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

ফেসবুকে তিনি ‘অপরাজিতা জান্নাত’ নামেই বেশি পরিচিত। তার উদ্যোগের নাম ‘অপরাজিতা’। দেশি পণ্যকে তুলে ধরার প্রয়াস তার। অপরাজিতা এ নারীর পুরো নাম জান্নাতুল ফিরদাউস। বাবা ব্যবসায়ী আবু জাহির, মা সুলতানা সুফিয়া। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সিলেটের হবিগঞ্জে। পূর্বপুরুষ পারিবারিকভাবে ব্যবসায়ী ছিলেন; তাই ছোটবেলা থেকেই ব্যবসার সাথে পরিচিত তিনি। পাঁচ বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়।

জান্নাতুল বলেন, ‘আমার ভাই সবার ছোট। আমাদের বড় ভাই ছিল না। তাই বাবাকে সব কিছু একা সামলাতে হতো। দু’জন কর্মচারী থাকা সত্ত্বেও বাবার একজন বিশ্বস্ত লোকের প্রয়োজন ছিল। তখন আমার বয়স মাত্র ৮ বছর। একদিন একা একা বাবার দোকান দেখতে গিয়েছিলাম। বাবা আমাকে দেখে অনেক খুশি হন এবং ক্যাশ কাউন্টারে বসিয়ে দেন। তখন টুকটাক হিসাব জানতাম। বাবার কাছ থেকে কী করে পোশাক ভাঁজ করতে হয়, এগুলো শিখতাম। এভাবেই আমার ব্যবসার হাতেখড়ি।’

তিনি বলেন, ‘এভাবে প্রায় ৮ বছর বাবার সাথে কাজ করি। এমনকি বাবা যখন অসুস্থ; তখন পুরো দোকান সামলেছি। যখন মাধ্যমিকে পড়ি; তখন কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না। কারণ আমি একজন মেয়ে আর সামনে এসএসসি পরীক্ষা। সবদিক চিন্তা করে আমি ব্যবসার কাজ থেকে সরে আসি। এর একবছর পর আমার বাবা দোকানটি ছেড়ে দেন। দোকানের সম্পূর্ণ মালামাল বিক্রি করে ফেলেন।’

জান্নাত বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৫ বছর ব্যবসা করার পরও বাবা মাঝে মাঝে আক্ষেপ করে বলতেন, আমার মেয়েটা যদি আজ ছেলে হতো, তবে হয়তো আমার ব্যবসাটা আজ টিকে থাকত। বাবার সেই আক্ষেপ আর ব্যবসার প্রতি ভালোবাসা থেকেই মূলত ব্যবসায় কিছু একটা করার চিন্তা-ভাবনা করি। বাবার ইচ্ছে ছিল, আমি ঢাকায় পড়াশোনা করি। তাই ২০১৬ সালে ঢাকার লালমাটিয়া মহিলা কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হই।’

দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে অপরাজিতা জান্নাত বলেন, ‘১ম বর্ষের ফরম ফিলাপের আগের দিন পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে হয়। স্বামী এমদাদুল হক রুবেল পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার। তারপর থেকে মূলত উদ্যমী জীবন শুরু। বিয়ের পর হোস্টেল ছেড়ে নতুন জীবন শুরু। ছোট একটা বাসা নিয়ে সংসার আমাদের। এরই মধ্যে ১ম বর্ষের ফলাফল প্রকাশ হয়, আমি ফার্স্ট ক্লাস পাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাস থেকে বাসা দূরে হওয়ায় রেগুলার ক্লাস করা সম্ভব হয়নি। তাই বাসায় বসে না থেকে আমি চিন্তা করি চাকরি করব। স্বামীর মতামত নিয়ে একটি প্রাইভেট অফিসে জয়েন করি। কিন্তু পড়াশোনা, অফিস, সংসার সবকিছু সামলানো চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছিল। তখন ফ্রি টাইমে আমি বিভিন্ন নারী উদ্যোক্তার গল্প শুনতাম। এরপরই স্বপ্ন দেখতে শুরু করি ব্যবসা করার।’

ব্যবসা শুরুর গল্প জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বামীর উৎসাহে বাবা, স্বামী ও নিজের কিছু জমানো টাকা নিয়ে বাসার কাছে একটি দোকান ভাড়া করেন। ডেকোরেশনের কাজ শেষে সেখানে তিনি মেয়েদের ড্রেসসহ অন্যান্য আইটেমের পোশাক তোলেন। যেহেতু এটি মেয়েদের দোকান ছিল এবং সুন্দর সুন্দর কালেকশন ছিল; তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এলাকায় ভালো পরিচিতি পাই।’

জান্নাত বলেন, ‘এভাবে যখন একটু একটু করে দোকানটি বড় হচ্ছিল; তখনই বেবি কনসিভ হয়। আমাদের প্রথম সন্তান যেহেতু; তার প্রতি আমাদের অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করছিল। কিন্তু অন্যদিকে আমার স্বপ্ন কেবলমাত্র যাত্রা শুরু করেছে। সেই মূহূর্তে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আমার পক্ষে খুবই কষ্টকর ছিল। স্বামীর কথা ভেবে, সন্তানের কথা চিন্তা করে ব্যবসার পরিকল্পনা স্থগিত করি।’

প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আসলে প্রতিটি মানুষের জীবনেই কিছু স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্ন যদি চোখের সামনে ভেঙে যায়; তখন সেই পরিস্থিতিটা যে কতটা কষ্টের, সেটা আমি প্রথমবার উপলব্ধি করি। ডেকোরেশন ও মালামাল মিলিয়ে আমার লস হয়েছিল প্রায় লক্ষাধিক টাকা। মানসিকভাবে যে ক্ষতি হয়েছিল, তা ছিল অনেক বেশি। নিজেকে তখন শুধু ব্যর্থ মনে হতো। ডিসেম্বরের ৬ তারিখে আমার ছেলের জন্ম হয়। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে একটি কথা মনে হতো, একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমি ব্যর্থ হলেও একজন মা হিসেবে আমি সফল।’

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বলতে গিয়ে জান্নাত বলেন, ‘ফ্রেব্রুয়ারিতে আমার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়। মার্চ মাসে যখন করোনার প্রকোপ বেড়ে যায়, তখন চারটি পরীক্ষা স্থগিত রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে স্বামীর অফিস কার্যক্রমও বন্ধ ছিল। ওই সময়ে আমার স্বামী বলতেন, তুমি ঘরে বসে কাজ করা যায় এমন কিছু একটা চিন্তা করো। কিন্তু সেই সময়ে আমার মন-মানসিকতা এতটাই দুর্বল ছিল যে, আমি কিছু ভাবতে পারছিলাম না। তখন আমার একজন শিক্ষকের কথা মনে পড়ে যায়, তিনি ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার। যিনি সব সময় বলতেন, স্বপ্ন দেখুন, লেগে থাকুন, সফল হবেন। স্যারের এ উক্তি আমার মনোবলকে জাগিয়ে তোলে।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু অনলাইনে কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছিলাম না। সেই মূহূর্তে আরও একজন শিক্ষকের দেখা পাই। তিনি রাজীব আহমেদ স্যার। যিনি বলেন, পার্সোনাল ব্রান্ডিংয়ের দিকে গুরুত্ব দিতে। স্যারের কথা অনুযায়ী আমার মনে হলো, আমার আগে নিজেকে ব্রান্ডিং করতে হবে। আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডরা সবাই যেহেতু আমার পরিচিত ছিলেন; সেক্ষেত্রে আমি নতুন করে আবার সবার সাথে পরিচিত হওয়া শুরু করলাম। আমার আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিলাম।’

স্বপ্নের হাতছানি সম্পর্কে জান্নাত বলেন, ‘তারপর একদিন আমার একজন ফেসবুক ফ্রেন্ড আমাকে নক করলেন কিছু ড্রেস কেনার জন্য। কারণ তিনি জানতেন আমার নিজের একটা শপ আছে। আমার কাছে যেহেতু ড্রেস কালেকশন ছিল না, তাই আমি আমার একজন ফ্রেন্ডের কিছু ড্রেস কালেকশন তাকে দেখাই। তিনি সেখান থেকে ২ হাজার টাকার ব্লক এবং স্ক্রিন প্রিন্ট ড্রেস অর্ডার করেন। অর্ডারটা আমার ফ্রেন্ডকে কনফার্ম করার পর, সে এগুলো পাঠিয়ে দেয়। ড্রেস হাতে পেয়ে আমার সেই কাস্টমার ফ্রেন্ড অনেক খুশি হন। সেই অর্ডারে আমার লাভ ছিল মাত্র ৮০ টাকা। কিন্তু আনন্দ ছিল এত বেশি যে, আমার মনে হয়েছিল আমি কোটি টাকা হাতে পেয়েছি। কারণ তিনি আমার প্রথম অনলাইন কাস্টমার ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘তখন যেহেতু আমি ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছিলাম। তার পরের দিন আমার একজন প্রিয় বান্ধবীর সাথে বিষয়টি শেয়ার করি। সে তখন আমার কথা শুনে কালেকশনগুলোর ছবি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমি তাকে ছবিগুলো দিলে সে সেখান থেকে ৫ হাজার টাকার পণ্য অর্ডার করে। আমি প্রডাক্ট কনফার্ম করে আমার সেই সেলার ফ্রেন্ডকে অর্ডার দিলে, তিনি সবগুলো প্রডাক্ট তার কাছ থেকে নেন। আমার যেহেতু নতুন ব্যবসা আর ব্যবসায় প্রতিশ্রুতি রক্ষা যেহেতু বড় বিষয়, তাই আমি প্রথমবার অল্প কিছু টাকার প্রডাক্ট স্টক করি এবং সেই বান্ধবীর চাহিদা অনুযায়ী তার ড্রেসগুলো পাঠিয়ে দেই। সেই বান্ধবী ড্রেসগুলো পেয়ে অনেক খুশি হন এবং তিনি আমাকে পরামর্শ দেন অনলাইনে একটা গ্রুপ খোলার জন্য।’

এরপর তিনি তার বান্ধবীর পরামর্শ অনুযায়ী একটি পার্সোনাল গ্রুপ খোলেন তার শপের নাম অনুযায়ী। গ্রুপের নাম দেন ‘অপরাজিতা’। একই নামে একটি পেইজও খোলেন তিনি। পেজ এবং গ্রুপ খোলার পর পরিচিতদের থেকে ভালো সাড়া পান। গ্রুপ খোলার পর দুই মাসে তার পোশাক বিক্রি হয় ১ লাখ টাকা। অথচ তখন গ্রুপের সদস্য ছিল মাত্র ২৫০ জনের কাছাকাছি। এভাবে গত ৪ মাসে শুধু গ্রুপ এবং পেজ থেকে জান্নাতুলের পণ্য বিক্রি হয় আড়াই লাখ টাকারও বেশি। এর মধ্যে ব্লক এবং স্ক্রিন প্রিন্টের ড্রেস বিক্রি হয়েছে ২ লাখ টাকা। তাই তিনি সিগনেচার প্রোডাক্ট হিসেবে ব্লকের শাড়ি তৈরি করেছেন।

এ ছাড়াও তার উদ্যোগে সামিল হয়েছেন প্রতিবশী থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন এবং বিভিন্ন সময়ের বন্ধু-বান্ধব। তার এ সফলতার সবচেয়ে বড় অংশীদার তার স্বামী। বাবা-মায়ের দোয়া এবং ভালোবাসা সব সময় জান্নাতুলকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তিনি এমন দু’জন শিক্ষকের সান্নিধ্য পেয়েছেন; যাদের প্রতিটি কথা এবং কাজ তার ব্যক্তিগত জীবন ও ব্যবসায়িক জীবনের চিন্তা-ভাবনাকে বদলে দিয়েছে। জাগো নিউজ

 

ভরিতে ১১৬৬ টাকা কমল স্বর্ণের দাম

ভরিপ্রতি ১ হাজার ১৬৬ টাকা ক‌মি‌য়ে স্ব‌র্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) বাজুসের সভাপতি এনামুল হক খান ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বুধবার (২ ডিসেম্বর) থেকে স্বর্ণের এ নতুন দর কার্যকর হবে। এর আগে গত ২৫ নভেম্বর থেকে প্র‌তিভরিতে ২ হাজার ৫০৭ টাকা ক‌মি‌য়ে স্ব‌র্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে এক সপ্তাহে দুই দফায় ভরিতে ৩ হাজার ৬৭৩ টাকা কমল স্বর্ণের দাম।

বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় শঙ্কিত বৈশ্বিক অর্থনীতি, ডলার ও তেলের দরপতন, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় স্বর্ণবাজারে দামের উত্থান-পতন সত্ত্বেও এক সপ্তাহের মধ্যে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাজুসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার (২ ডিসেম্বর) থেকে বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম ভরিপ্রতি ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানো হলো।

তবে রুপার দাম অপরিবর্তিত থাকবে। নতুন দাম অনুযায়ী, ২ ডিসেম্বর থেকে ভালো মানের, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা ক‌মি‌য়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ হাজার ৬৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৯ হাজার ৫১৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬০ হাজার ৭৬৯ টাকায় ও সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি স্বর্ণ ৫০ হাজার ৪৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হ‌য়ে‌ছে।

স্ব‌র্ণের দাম কম‌লেও রুপার পূর্বনির্ধা‌রিত দাম বহাল রয়েছে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি রুপার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫১৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের রুপার দাম ১৪৩৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ১২২৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রূপার দাম ৯৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হ‌য়েছে।

এ‌দি‌কে আজ‌ ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দে‌শের বাজা‌রে ভালো মানের, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি স্বর্ণ বি‌ক্রি হ‌য়ে‌ছে ৭৩ হাজার ৮৩৩ টাকা। ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৭০ হাজার ৬৮৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬১ হাজার ৯৩৬ টাকায় ও সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি স্বর্ণ ৫১ হাজার ৬১৩ টাকা ভরি বিক্রি হয়েছে।

এদিকে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হলেও বিশ্ববাজারে আজ দাম বেড়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩৫ দশমিক ৮৮ ডলার বা ২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৮১২ দশমিক ৯০ ডলারে উঠেছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা তখন সিদ্ধান্ত নেয় যখন বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কম ছিল। আমরা সবসময় চেষ্টা করছি বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশের বাজারে স্বর্ণের দামের সমন্বয় রাখতে।

 

মডেলিং ছাড়লেন আলোচিত মডেল হালিমা আদেন

পশ্চিমা বিশ্বের আলোচিত হিজাবী র‌্যাম্প মডেল হালিমা আদেন। সম্প্রতি তিনি ফ্যাশন দুনিয়াকে চিরতরে বিদায় জানিয়েছেন। তিনি এই খবর ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ইসলামী মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছিলো এ ইন্ডাস্ট্রি।

ব্রিটিশ ফ্যাশন ম্যাগাজিন- ভোগ, ভোগ অ্যারাবিয়া এবং মার্কিন জনপ্রিয় পত্রিকা- আলুউরের প্রচ্ছদে জায়গা করে নিয়েছিলেন সোমালিয়ান বংশোদ্ভুত এ মার্কিনী।

প্রথাগত মডেলিং ধারার বাইরে গিয়ে হিজাব পরিহিত অবস্থায় ক্যাটওয়াক করে সবার নজর কাড়েন হালিমা। ধীরে-ধীরে নিজের স্বতন্ত্র স্টাইল নিয়েই হয়ে ওঠেন ফ্যাশন আইকন। আর ক্যারিয়ারের চূড়ায় থাকা অবস্থায়ই হালিমা ঘোষণা দিলেন, আর ফিরবেন না মডেলিংয়ে। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করলেন ‘হিজাব স্টোরি’ নামে সিরিজ বার্তা। জানান- এ সিদ্ধান্তের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তার মা।

মার্কিন হিজাবী মডেল হালিমা আদেন বলেন, বহু আগেই মা মডেলিং ছাড়ার কথা বলেছিলেন। এখন মনে হচ্ছে, সেসময় এতোটা প্রতিবাদী না হলেও পারতাম। কারণ, তিনিই একমাত্র মানুষ যে সবসময় আমার কল্যাণ কামনা করেন। দ্বীন ও দুনিয়ার ব্যাপারে তার পরামর্শে বরাবর অটল ছিলেন মা।

হালিমার দাবি- চোখ ধাঁধানো ফ্যাশন দুনিয়া ইসলামিক মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে তাকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে নিয়েছিলো। বিশেষ করে চলমান মহামারি পরিস্থিতি ধর্ম সম্পর্কে বেশি প্রভাবিত করেছে তাকে।

হালিমা আদেন বলেন, একজন মুসলিম নারী হিসেবে কী করা উচিৎ- সেটা চিন্তার সুযোগ তৈরি করে দিলো করোনা মহামারি। হিজাব পরে ফ্যাশন দুনিয়ায় টিকে থাকতে বহু চড়াই-উৎড়াই পার করেছি। আর হিজাবের মর্ম বুঝতে পারেন, এমন মুসলিম স্টাইলিস্টেরও বড় অভাব ইন্ডাস্ট্রিতে।

কেনিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করা হালিমা মাত্র ছয় বছর বয়সে পা দেন মার্কিন মুলুকে। ২০১৬ সালে প্রথমবার, মিস মিনেসোটা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় হিজাব পড়ে অংশ নেন হালিমা। এর পরে কেবলই সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। সেটাই ছিলো তার ক্যারিয়ারের শুরু। জায়গা করে নেন ‘ভোগ’ ‘আলুউরে’র মতো জনপ্রিয় ফ্যাশন ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে। প্রথমবার, বুরকিনি পড়ে পোজ দিয়েছিলেন ‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেডের’ জন্যেও।

 

যেকারণে ভাঙলো শবনম ফারিয়ার সংসার

দুই বছরও টিকল না অভিনেত্রী শবনম ফারিয়ার সংসার। মাত্র এক বছর নয় মাসের মাথায় সংসার জীবন থেকে ছুটি নিলেন শবনম ফারিয়া ও হারুন অর রশীদ অপু। গতকাল শুক্রবার তাদের বিচ্ছেদ হয়। দু’জনই তালাকনামায় সই করেছেন। বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গণমাধ্যমকে ফারিয়া বলেন, ‘‘আমার মা সব সময় একটা কথা বলে, ‘আল্লাহর হুকুম ছাড়া একটা গাছের পাতাও নড়ে না, আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারি!’ ঠিক সেভাবেই আমি আর অপু অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করেছি একসাথে থাকতে! কিন্তু বিষয়টা একটা পর্যায়ে খুব কঠিন হয়ে যায়! ‘মানুষ কি বলবে’ ভেবে নিজেদের উপর একটু বেশিই টর্চার করে ফেলছিলাম আমরা! ‘জীবনটা অনেক ছোট, এতো কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকার কি দরকার’? এইটা ভেবে আমরা এ বছরের শুরু থেকেই সিদ্ধান্তে আসি আমরা আর একসাথে থেকে কষ্টে থাকতে চাই না!’’

গত বছর ১ ফেব্রুয়ারি জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী হারুন অর রশীদ অপু। বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই সম্পর্ক শিথিল হতে শুরু করে তাদের। অনেক দিন আলাদা থাকতেন দুজন। অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হলেন তারা।

 

পাঞ্জাবি পরা বর, প্যান্ট-স্যুট পরা কনে

বিয়েতে সাধারণত সিল্কের শাড়ি অথবা লেহেঙ্গা পরেন ভারতীয় নারীরা। অনেকে লাল রঙের শাড়ি-লেহেঙ্গা পরতে পছন্দ করেন। অনেকে আবার সোনা বা রুপার সুতা দিয়ে এমব্রয়ডারি করা লেহেঙ্গা পরেন। এবার সাঞ্জানা রিশি নামের এক নারী বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন প্যান্ট-স্যুট পরে।

চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর দিল্লির ব্যবসায়ী ধ্রুব মহাজনের সঙ্গে ধুমধাম করে বিয়ে হয় ২৯ বছর বয়সী ভারতীয়-আমেরিকান উদ্যোক্তা সাঞ্জানা রিশির। এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আইনজীবী হিসেবে কাজ করতেন। গত বছর দেশে ফেরেন রিশি।

বিয়েতে সাঞ্জানা রিশি হালকা নীল রঙের প্যান্ট-স্যুট পরেন। ধ্রুব মহাজন পরেন পাঞ্জাবি। তার প্যান্ট-স্যুট পরার বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ফ্যাশন ডিজাইনার ও ফ্যাশন সচেতন ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন। ভারতীয় নারীরা বিয়েতে ঐতিহ্যবাহী পোশাক ছেড়ে প্যান্ট-স্যুট পরা ধরে কি-না, সাঞ্জানা রিশির এ ঘটনার পর সেটা নিয়েও ভাবছেন অনেকে।

বিয়ের পোশাক নিয়ে সাঞ্জানা রিশি বলেন, প্যান্ট-স্যুট তার খুব পছন্দের। এ কারণে বিয়েতে হালকা নীল রঙের প্যান্ট-স্যুট পরেছিলেন তিনি।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক বছর ধরে পশ্চিমা কনেদের প্যান্ট-স্যুট পরতে দেখা যাচ্ছে। ডিজাইনাররা বিয়ের পোশাক হিসেবে ট্রাউজার ও প্যান্ট-স্যুট প্রমোট করছেন। এ ব্যাপারে তারকাদের সমর্থনও পাচ্ছেন তারা।

গত বছর লাস ভেগাসে ‘গেম অব থ্রোনস’র নায়িকা সোফি টার্নারের বিয়ে হয়। তিনি সংগীতশিল্পী জো জোনোসকে বিয়ে করেন। বিয়েতে সাদা ট্রাউজার পরেন সোফি টার্নার। সম্প্রতি বিয়েতে অনেক তারকায় এ ধরনের পোশাক পরছেন। তবে রাঞ্জানা রিশি যে পোশাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন, তা সচরাচর ভারতীয়দের নারীদের বিয়ের পোশাক হিসেবে পরতে দেখা যায় না।

রিশির বিয়ের পোশাক নিয়ে ভারতের বিবাহবিষয়ক এক ম্যাগাজিনের সাবেক সম্পাদক নুপুর মেহতা পুরি বলেন, ‘আমি কখনো বিয়েতে ভারতীয় নারীদের এ ধরনের পোশাক পরতে দেখিনি। তারা বিয়েতে সাধারণত ভারতের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন। সেই সঙ্গে মা-দাদির কাছ থেকে পাওয়া গয়না পরেন। বিয়েতে রিশির প্যান্ট-স্যুট পরার বিষয়টি এখানে একেবারে নতুন।’

গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ের কাজ সম্পন্নের পরিকল্পনা করেছিলেন সাঞ্জানা রিশি। সেখানে তার ভাই ও অধিকাংশ আত্মীয়-স্বজন থাকেন। চলতি মাসে ভারতীয় রীতিতে দ্বিতীয় দফা বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসে কারণে এসব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

রিশি ও ধ্রুবর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ভারতে প্রেমের সম্পর্কগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো স্বাভাবিকভাবে দেখা হয় না। এ ব্যাপারে রিশি বলেন, যদিও তার বাবা-মা প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ, তারপরও তার বন্ধু ও প্রতিবেশীদের দিক থেকে বিয়ে নিয়ে একটু চাপ ছিল।

রিশি আরও বলেন, ‘গত আগস্টের এক সকালে ঘুম থেকে উঠেই সিদ্ধান্ত নিলাম, বিয়েটা সেরে ফেলব। তবে যখনই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলাম তখন একটা বিষয় মাথায় আসল, বিয়েতে আমি কোন পোশাক পরবো। আমি জানি আমার প্যান্ট-স্যুট পছন্দ। তাই সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললাম।’

রিশির স্বামী ধ্রুব মহাজন বলেন, ‘বিয়ের দিন তাকে দেখার আগে আমি ভাবিনি যে আসলে সে কোন ধরনের পোশাক পরবে। আমার কাছে এটা কোনো ব্যাপার ছিল না। কারণ আমি জানি সাঞ্জানা রিশি যাই-ই পরুক না কেন, সে একটা সাড়া জাগাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম যখন আমি তাকে দেখলাম, সে যে ট্রাউজার পরেছে তা লক্ষ্য করিনি। পরে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম, তাকে খুব সুন্দর লাগছে, একেবারে পরীর মতো।’

 

শখের বশে শুরু করে এখন লাখ টাকার মালিক

মেঘলা ভৌমিক থাকেন ধানমন্ডির জিগাতলায়। বর্তমানে এমবিএ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাশাপাশি একটি আইটি কোম্পানিতে বিজনেস অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। বাবা-মা ও দুই বোন নিয়ে মেঘলার পরিবার।

ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকির প্রতি ছিল প্রবল ঝোঁক। শৈশবে ২ বছর একটি স্কুলে ড্রইং শিখেছিলেন। তারপর থেকেই নিজের ইচ্ছায় ছবি আঁকা অব্যাহত রাখেন।

রংতুলির সাথে একটি অন্যরকম গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে মেঘলার। কারণ রঙিন সব কিছুই তার অনেক ভালো লাগে। নিজের ঘর থেকে শুরু করে আসবাবপত্র- সব কিছুই রঙিন রাখতে চান।

১০ বছর ধরে ছবি আঁকছেন মেঘলা। ২০১৬ সাল থেকে তার আঁকা ছবিগুলো অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি শুরু করেন। এ ছাড়াও মেঘলার কিছু নির্দিষ্ট কাস্টমার আছেন; যারা তার কাছ থেকে নিয়মিত আঁকা ছবিগুলো কিনে নেন।

মেঘলা ভৌমিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা মহামারীতে চাকরি নিয়ে একটু আতঙ্কে ছিলাম। যেকোনো কারণে যদি চাকরি চলে যায়, তখন আমি কী করব? কখনো হ্যান্ড পেইন্টিং নিয়ে কাজ শুরু করব ভাবিনি। এ ভাবনা মূলত লকডাউনে মাথায় আসে।’

তিনি বলেন, ‘তখন মনে হলো যে, এটাকে আমি এখন আমার কাজে লাগাতে পারি। এসব কিছুর পেছনে আমার বড় বোনের অনুপ্রেরণা অনেক বেশি। বড় বোন আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন এবং এখনো দিয়ে যাচ্ছেন।’

মেঘলা আরও বলেন, ‘প্রথমে আমি ১৫ হাজার টাকা দিয়ে কাপড় কিনে তাতে হ্যান্ড পেইন্ট করে বিক্রি শুরু করি। আমার হ্যান্ড পেইন্ট পণ্য বিক্রি হয় মোট ১ লাখ ৭৬ হাজার ১৯০ টাকা।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে- এটাকে অনেক দূর নিয়ে যাওয়া এবং চারুকুটির নামে একটি শো-রুম দেওয়া। আমি চাই, আমার পণ্য যেন দেশে-বিদেশে সুনাম অর্জন করে।’

তিনি মনে করেন, মানুষ যেন ভবিষ্যতে এখান থেকে এসে নিজে দেখে ঘুরে জিনিস কিনে নিয়ে যেতে পারেন। এ ছাড়াও চারুকুটিরের মাধ্যমে যেন আরও ১০ জনের কর্মসংস্থান হয়। জাগো নিউজ

 

শীতের রেসিপি: সবজি পনির কারি

বাজারে এখন হাত বাড়ালেই পাবেন শীতের সবজি। সবজি দিয়ে ঘরেই তৈরি করতে পারেন সুস্বাদু সবজি পনিরের কারি।

আসুন জেনে কীভাবে তৈরি করবেন-

উপকরণ

মটরশুটি এক কাপ, গাজর কিউব করে কাটা এক কাপ, ক্যাপসিকাম কিউব করে কাটা এক কাপ, পনির কিউব করে কাটা এক কাপ, ফুলকপি এক কাপ, মটর ডাল এক কাপ, টমেটো কিউব করে কাটা দুটি, কেসোনাট ১০টি, কাঁচামরিচ চার থেকে পাঁচটি, গরম মসলা এক চা চামচ, হলুদ গুঁড়া এক চা চামচ, মরিচের গুঁড়া এক চা চামচ, তেজপাতা একটি, জিরা আধা চা চামচ, আদা বাটা আধা চা চামচ, ধনেপাতা কুচি সামান্য, মাখন এক টেবিল চামচ, তেল পরিমাণমতো ও লবণ স্বাদমতো।

প্রস্তুত প্রণালি

প্রথমে একটি প্যানে তেল দিয়ে ফুলকপি ও পনির ভেজে নিন। এর পর একই প্যানে মটরশুটি, গাজর, মটর ডাল ও ক্যাপসিকাম ভেজে নিন। ভাজা সব সবজি অলাদা করে প্লেটে তুলে রাখুন।

এবার টমেটো ও কাজুবাদাম আলাদা করে ব্লেন্ডারে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। আর অন্য একটি প্যানে তেল দিয়ে তাতে জিরা, তেজপাতা, হলুদ গুঁড়া, আদা বাটা ও কাঁচামরিচ দিয়ে কষিয়ে নিন।

এর পর এতে গরম মসলা, মরিচের গুঁড়া ও পানি দিয়ে নেড়ে দিন। পাঁচ মিনিট পর এতে ব্লেন্ড করা টমেটো ও বাদাম বাটা দিয়ে নাড়তে থাকুন।

এখন এতে একে একে সব সবজি ও পনির দিয়ে দিন। এবার এতে লবণ ও মাখন দিয়ে সবজির সঙ্গে মিশিয়ে নিন। চাইলে সামান্য পানি দিতে পারেন। ঘন হয়ে এলে এর ওপরে ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে চুলা থেকে নামিয়ে প্লেটে ঢেলে গরম গরম পরিবেশন করুন দারুণ সুস্বাদু সবজি পনির কারি।

লেখক: গৃহিণী

 

সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর কন্টেন্ট থেকে শিশুদের বাঁচাবেন যেভাবে

সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে নানা ধরনের রেকমেনডেশন পাঠানোর জন্য যেসব প্রোগ্রাম দেয়া থাকে, তা শিশুদের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। মানসিক অবসাদ কিংবা আত্মহত্যার জন্য তথ্য খুঁজছে যে টিনএজার তার কাছে এসব রেকমেনডেশন ইঞ্জিনগুলো আরও বেশি করে তথ্য পাঠায়।

অনেক শিশু অনলাইনে ভিডিও দেখে সেগুলো থেকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা পেতে পারে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর কন্টেন্ট ও ভিডিও থেকে শিশুদের দূরে রাখতে বাবা-মায়ের সচেতনতাটাই সবচেয়ে জরুরি।

ব্রিটেনের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ অফকমের হিসাব অনুযায়ী, ১২-১৫ বছর বয়সীদের ৯০ শতাংশের হাতে মোবাইল ফোন রয়েছে। এদের মধ্যে প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনের এখন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টও রয়েছে।

আইন অনুযায়ী, জনপ্রিয় অ্যাপগুলোতে ১৩ বছর বয়সের নিচে কাউকে অ্যাকাউন্ট খুলতে দেয়ার কথা না। কিন্তু তা সত্ত্বেও শিশুরা এসব অ্যাকাউন্ট তৈরি করছে এবং তাদের ঠেকাতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো কিছুই করছে না।

ব্রিটেনের শিশু রক্ষা চ্যারিটি ন্যাশনাল সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েল্টি টু চিলড্রেন্স (এনএসপিসিসি) শিশুরক্ষা নীতি বিভাগের প্রধান এন্ডি বারোস জানান, শিশুরা এসব কন্টেন্ট দেখে যে ঝুঁকির মুখে পড়ছে তা বিবেচনা করার জন্য আইন তৈরি করে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করা উচিত।

চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে ফেসবুক ঘোষণা করেছে, আত্মহত্যা ও ক্ষতিকর কন্টেন্ট খুঁজে বের করতে এবং দূর করতে তারা ইনস্টাগ্রামে তাদের অটোমেটেড টুলের পরিধি আরও বাড়িয়ে দেবে।

কিন্তু ফেসবুক বলছে, ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার ওপর ইউরোপের আইন এতই কঠোর যে এ ক্ষেত্রে তাদের খুব বেশি কিছু করার থাকে না।

শিশুদের প্রযুক্তির ভালো ও খারাপ বিষয়গুলো বোঝাতে হবে। নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য অন্যান্য বিষয়ে যেভাবে শিশুদের শিক্ষা দেয়া হয়, তেমনি অনলাইনে নিরাপদ থাকার দক্ষতাও শিশুদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা

 

যে কারণে শিশুরা করোনায় কম আক্রান্ত হয়

সফলভাবে সংক্রমণ ঘটানোর জন্য করোনাভাইরাসকে ফুসফুসের ‘এপিথেলিয়াল সেল’ ভেদ করতে হয়। আর যে ‘এনজাইম’ বা ‘কো-রিসেপ্টর’য়ের মাধ্যমে ভাইরাসটি এই কাজ করে সেটি প্রাপ্তবয়স্ক ও বৃদ্ধদের তুলনায় শিশুদের থাকে কম।

গবেষণায় বলা হয়, ওই ‘এনজাইম’কে দমন করতে পারলে প্রাপ্তবয়স্কদের ‘কোভিড-১৯’ থেকে সুরক্ষা দেয়া এবং রোগ সারিয়ে তোলাও সম্ভব হবে।

করোনাভাইরাস সম্পর্কে আমাদের এখনও অনেকটা জানা বাকি। তবে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তা হল ‘ভাইরাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করার পর এর প্রোটিনের তৈরি ‘স্পাইক’ বা অভিক্ষেপগুলো ‘এসিই টু’ নামক ‘রিসেপ্টর’য়ের সঙ্গে আটকে যায়। এই ‘রিসেপ্টর’গুলো ফুসফুসের নির্দিষ্ট কিছু কোষের উপরিভাগে থাকে।

পরে কোষের ‘টিএমপিআরএসএস ‍টু’ নামক এনজাইম ওই প্রোটিনের অভিক্ষেপগুলো কেটে ধ্বংস করে। এতে ভাইরাস কোষের ‘মেমব্রেন’ বা ঝিল্লির সঙ্গে মিশে যায় এবং একপর্যায়ে কোষের ভেতরে প্রবেশ করে।

একবার কোষের ভেতরে প্রবেশ করতে পারলে ভাইরাস কোষের অভ্যন্তরীণ জিনগত নিয়ন্ত্রণ নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয় এবং নিজের ‘আরএনএ’য়ের ‘কপি’ তৈরি করা শুরু করে।

এই গবেষণার নেতৃত্তে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভ্যানডারবেল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকাল সেন্টার’য়ের ‘পিডিয়াট্রিকস’ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জেনিফার সুক্রে। তার সঙ্গে আরও ছিলেন এই সংস্থার ‘মেডিসিন’ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাথন ক্রপস্কি।

তারা মনে করেন, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ‘কোভিড-১৯’য়ের তীব্রতা বেশি আর শিশুদের ক্ষেত্রে তা কম হওয়ার পেছনে ‘টিএমপিআরএসএস ‍টু’ এনজাইমের ভূমিকা আছে।

ভ্যান্ডারবেল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকাল সেন্টার’য়ের প্যাথলজিস্টদের সাহায্য নিয়ে গবেষকরা বিভিন্ন বয়সের মানুষের ফুসফুস কোষের নমুনা সংগ্রহ করেন।

‘সিঙ্গেল সেল আরএনএ’ সিকোয়েন্সিং’য়ের মাধ্যমে বয়সের সঙ্গে ফুসফুসের বিকাশবিষয়ক তথ্য বের করা হয়।

দেখা যায়, বয়স যত বাড়ে, ততই বাড়ে ‘টিএমপিআরএসএস ‍টু’ সক্রিয়তা।

‘জিন ও প্রোটিন দুই ক্ষেত্রেই ওই এনজাইমের প্রভাব বিদ্যমান’, বলেন সুক্রে।

 

শীতে গরম গরম মাশরুম মাসালা

মাশরুম হলো খাবার উপযোগী ছত্রাকের ফলন্ত অঙ্গ, যা অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধি গুণসম্পন্ন। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ মুখরোচক খাবার হিসেবে মাশরুম খেয়ে আসছেন। এ ছাড়া বর্তমান বিশ্বে সব দেশের মানুষই মাশরুম খেয়ে থাকেন।

মাশরুম দিয়ে মজাদার অনেক খাবার তৈরি করা যায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো মাশরুম মাসালা।

আসুন জেনে নিই কীভাবে তৈরি করবেন মাশরুম মাসালা-

উপকরণ

মাশরুম ২০০ গ্রাম, পেঁয়াজ ২টি (স্লাইস), টমেটো ১টি (কুচি), কাঁচামরিচ ১টি (কুচি), রসুন ৬ কোয়া (কুচি), আদা ১ ইঞ্চি (কুচি), কারি পাতা কয়েকটি, তেল দেড় টেবিল চামচ, জিরা আধা চা চামচ, হলুদ গুঁড়া ১/৪ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া আধা চা চামচ, ধনিয়া গুঁড়া ১ চা চামচ, গরম মসলা গুঁড়া আধা চা চামচ, জিরার গুঁড়া আধা চা চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিনি ১/৪ চা চামচ, টকদই ১/৩ কাপ, পানি ১/৪ কাপ, ধনিয়া পাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, ঘি ১ টেবিল চামচ, ক্যাশুনাট ১ টেবিল চামচ ও গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা চামচ।

যেভাবে তৈরি করবেন

প্যানে তেল গরম করে আস্ত জিরা দিন। এর পর ফুটতে শুরু করলে কাঁচামরিচ কুচি, আদা ও রসুন কুচি দিয়ে নাড়ুন। কাচা গন্ধ চলে গেলে কারি পাতা, পেঁয়াজ কুচি ও হলুদ দিয়ে দিন। পেঁয়াজ বাদামি রঙ ধারণ করলে টমেটো কুচি দিয়ে কয়েক মিনিট নাড়ুন।

টমেটো নরম হয়ে গেলে গুঁড়া মসলা দিয়ে দিন। ভালো করে কষিয়ে মাশরুম দিয়ে দিন। চিনি ও লবণ দিয়ে নেড়ে নিন।

কয়েক মিনিট নেড়ে ঢেকে দিন প্যান। ৫ থেকে ৬ মিনিট মাঝারি আঁচে রান্না করুন। ঢাকনা তুলে জ্বাল কমিয়ে টকদই দিয়ে মিশিয়ে নিন। কয়েক মিনিট নেড়ে ১/৪ কাপ পানি দিয়ে রান্না করুন।

আরেকটি প্যানে ঘি গরম করে ক্যাশুনাট ভেজে নিন। বাদামি রঙ হয়ে গেলে গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মাশরুমের প্যানে ঢেলে নেড়ে নিন। ধনিয়া পাতা কুচি দিয়ে নেড়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

 

খুসখুসে কাশি সারানোর ঘরোয়া উপায়

শীতে বহু রোগব্যাধি দেখা দেয়। ঋতু পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ গরম থেকে ঠাণ্ডা অনেকের শরীর নিতে চায় না। ফলে একটু এদিক-ওদিক হলেই সর্দি ও খুসখুসে কাশি হয়ে থাকে।

এমনও হয় যে, খুসখুসে কাশির কারণে সারারাত ঘুমাতে পারেন না। এই সময়ে কাশির সঙ্গে গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টও হতে পারে।

ঘরোয়া উপায়েও এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। আসুন জেনে নিই খুসখুসে কাশি সারানোর ঘরোয় উপায়-

১. সর্দি, কাশি ও ঋতু পরিবর্তনের জ্বর থেকে মুক্তি দিতে পারে এলাচ। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরা এলাচ জীবাণুনাশকও৷ গলাব্যথা এবং শুকনো কাশি হলে নিরাময়ে এলাচ খেতে পারেন। এ জন্য এক কাপ পরিমাণে পানি নিন। পানি হালকা গরম হলে তাতে মধু এবং বেশ কয়েকটি ছোট এলাচ দিন৷ ফুটে গেলে এলাচ ছেঁকে ওই পানি পান করুন৷

২. ঠাণ্ডা ও শুকনো কাশি সমস্যায় মধু খেতে পারেন। ছোট থেকে বড় সবার জন্যই মধু উপকারী। এক টেবিল চামচ মধু সারা দিনে তিন থেকে চারবার খেতে পারেন। শুধু মধু খেতে পারেন, আবার কখনও হালকা গরম পানি কিংবা চায়ের সঙ্গে।

৩. সর্দি, কাশি দূর করতে তুলসি পাতার রস খুবই উপকারী। শিশুদের জন্য কয়েকটি তাজা তুলসি পাতার রসের সঙ্গে একটু আদার রস ও মধু দিয়ে খেলে খুব উপকার পাবেন।

তুলসি পাতা শুকনো কাশির জন্য খুবই কার্যকরী। সকালে খালি পেটে তিন থেকে চারটি তুলসি পাতা খেতে পারেন। তা ছাড়া তুলসি পাতা ফুটিয়ে চা তৈরি করে পান করতে পারেন।

৪. নিয়মিত দিনে তিন থেকে চার বার আদা দিয়ে পানি ফুটিয়ে সেই পানি ছেঁকে নিন। এর পর লবণ মিশিয়ে কুলিকুচি করুন। গলায় খুসখুসে ভাব দূর করতে আদা চাও খেতে পারেন।

 

ফাইজারের করোনা টিকা উদ্ভাবনে নেপথ্যে যে দম্পতি

ফাইজার দাবি করেছে, তাদের তৈরি টিকা ৯০ শতাংশ কার্যকরী। জার্মান সংস্থা বায়োএনটেকের সঙ্গে এই টিকা তৈরির কাজ করছে ফাইজার। এই টিকা তৈরিতে যারা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন, তারা হলেন উগুর শাহিন ও ওজলেম তুরেসি দম্পতি।

জার্মানির মেন্জ-এ বায়োএনটেক সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা উগুর ও ওজলেম। ২০০৮-এ অস্ট্রিয়ার ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফ হুবেরের সঙ্গে বায়োএনটেক সংস্থা তৈরি করেন তারা।

জন্মসূত্রে উগুর ও তুরেসি দুজনেই তুর্কি। শৈশব থেকেই মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখতেন উগুর। কোলঙের একটি হাসপাতালে কাজ করার সময় তুরেসির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তার।

দুজনেরই স্বপ্ন ছিল ক্যান্সার চিকিত্সা নিয়ে গবেষণা করা। ক্যান্সারের চিকিত্সায় ইমিউনোথেরাপি নিয়ে তাদের সংস্থা গবেষণা এখনও চালাচ্ছে।

সিএনএন এক প্রতিবেদনে বলেছে, বিজ্ঞানী উগুর শাহিন ও তুরেসিকে বিশ্ব দীর্ঘদিন মনে রাখবে। সংক্রামক রোগ ও টিউমারের চিকিৎসাক্ষেত্রে জীবন উৎসর্গ করেছেন এ জুটি। জীবনের দীর্ঘ সময় ক্যান্সার চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনে কাজ করেছেন দুজন। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে এ দুই বিজ্ঞানীর পরিবর্তিত জেনেটিক কোডের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উদ্ভাবন মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। বিশ্বের প্রথম কার্যকর করোনার টিকা হিসেবে যে ফাইজারের টিকাকে দাবি করা হচ্ছে, তার পেছনে রয়েছেন এ দুই বিজ্ঞানী।

২০০৮ সালে জার্মানির মেইঞ্জ শহরে শাহিন ও তুরেসি জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক প্রতিষ্ঠা করেন। গত সোমবার প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার করোনার টিকা নিয়ে সুখবর দিয়েছে। নতুন টিকা দিয়ে কোভিড-১৯ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষার দাবি করেছে উৎপাদনকারী দুটি প্রতিষ্ঠান।

করোনাভাইরাস মহামারীর শুরু থেকেই ফাইজার ও বায়োএনটেক নামের দুটি প্রতিষ্ঠান টিকা তৈরির চেষ্টা করে আসছিল। এবার প্রতিষ্ঠান দুটি জানিয়েছে, তাদের তৈরি টিকা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর।

 

গর্ভাবস্থায় প্রথম সপ্তাহে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়

প্রত্যেকটি নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে অন্তঃসত্ত্বা মুহূর্ত। গর্ভধারণের প্রথম সময়টায় নারীদের শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। গর্ভধারণের লক্ষণ সবার ক্ষেত্রে সমান হয় না।

গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় প্রথম সপ্তাহে কিছু লক্ষণ কমবেশি সব নারীর ক্ষেত্রে দেখা যায়।

আসুন জেনে নিই কী সেই লক্ষণগুলো-

১. রক্তক্ষরণ ঋতুচক্রের মতোই ৬ থেকে ১২ দিন হালকা রক্তপাত হতে পারে। এই লক্ষণ দেখলে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা অবশ্যই করে নিন।

২. প্রথম সপ্তাহে মুখে অন্য রকম স্বাদ বুঝতে পারবেন। অনেক সময় মুখে দুর্গন্ধও হতে পারে। আসলে গর্ভাবস্থার জেরে শরীরে হরমোনের মাত্রার তারতম্যের কারণেই এই তফাৎ হতে পারে।

৩. গর্ভে সন্তান এলে নারীরা অতিরিক্ত পরিমাণে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। তিনি গর্ভবতী হয়েছেন এমন স্বপ্নই দেখেন তারা।

৪. অনেক সময় মুখে বা হাত-পায়ে কালো কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা য়ায়। গর্ভধারণের সময় ত্বকের সংবেদনশীনতা বেড়ে যায়। এর ফলে চেহারায় এই কালো দাগ-ছোপ দেখা যায়।

৫. ক্লান্তি প্রেগন্যান্সির একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। যেহেতু শরীর এই সময় বাড়ন্ত শিশুকে পুষ্টি দেয়ার জন্য অতিরিক্ত রক্ত উৎপন্ন করে তার জেরে খুব অল্পতেই ক্লান্তি এসে যায়।

৬. প্রেগন্যান্সির সময় শরীর অতিরিক্ত পরিমাণ তরল উৎপাদন করে। আর তার জেরে কিডনি দ্বিগুণ পরিমাণে কাজ করে। আর সে কারণেই অতি ঘন ঘন শৌচাগারে যাওয়া প্রয়োজনীয় হয়।

৭. গর্ভাবস্থায় মাথার যন্ত্রণা হতে পারে। গর্ভধারণ করার প্রথম সপ্তাহের শুরুতেই মাথাব্যথা শুরু হতে থাকে। হরমোনের মাত্রা শরীরে বেড়ে যাওয়ার কারণেই এ সমস্যা হয়।

তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই

 

শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কী করবেন

ডা. মানিক কুমার তালুকদার

বড়দের মতো শিশুদেরও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। শিশুর বয়স দুই থেকে তিন বছরের সময় এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়। শৌচাগার ব্যবহারের অভ্যাস করানোর সময়ও এ সমস্যা হয়ে থাকে।

শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কী কারণে শিশুদের এ রোগ হয়?

এ বিষয়ে বাবা-মায়ের জানাটা খুবই জরুরি। শৌচাগার ব্যবহার করা শিখতে যে শিশুদের কষ্ট হয়, তাদেরই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। শিশু শৌচাগার ব্যবহারে সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন তাড়াহুড়ো না করে।

মলত্যাগের বেগ চেপে রাখা এবং পানি পানের ঘাটতির কারণে এই রোগ হতে পারে। তাই শিশুর মলত্যাগের অভ্যাসে বাবা-মায়ের নজরদারি প্রয়োজন। বাবা-মাকে অবশ্যই কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

কী করবেন

১. মলের পরিমাণ, রঙ, ধরন, মলত্যাগের সময় শিশু কোনো অস্বস্তি বোধ করে কিনা, কীভাবে শিশু বসে, বেগ চেপে রাখে কিনা– এসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। তাই শিশুদের শৌচাগার ব্যবহার শেখানো উচিত।

২. শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে দিনের যে কোনো সময় দুই থেকে তিনবার ভারী খাবার খাওয়ানোর আধা ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ থেকে ১০ মিনিটের জন্য ‘পট’ কিংবা শৌচাগারে বসাতে হবে। ‘অ্যানাল ফিশার’ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। যেন মলত্যাগ হয় ব্যথামুক্ত।

৩. শিশুদের শৌচাগার ‘লো-কমোড’ হলে হাঁটু ভাঁজ করে বসার অভ্যাস করাতে হবে। ‘হাই-কমোড’ হলে পায়ের নিচে পিঁড়ি দিলে ভালো হবে।

৪. শারীরিক কসরতের অনুশীলন শৈশব থেকে রপ্ত করানো উচিত। এতে হজমশক্তি জোরদার হবে ও স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

শিশুকে কেমন খাবার খাওয়াবেন

শিশুকে ফল, সবজি ও ভোজ্য আঁশযুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া শস্যজাতীয় খাবার, ডাল, যব ও সালাদ খাওয়াতে পারেন। আর শরীরের চাহিদামাফিক পানি পান করাতে হবে। এ ছাড়া দুধ অতিরিক্ত খাওয়ানো ঠিক নয়। আর ‘জাঙ্ক ফুড’ এড়িয়ে যেতে হবে।

লেখক: শিশু বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

 

রাতারগুল ভ্রমণে দিতে হবে ‘ফি’

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় বনটির বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকায় প্রবেশ, পার্কিং, ভিডিও ধারণ এবং নৌকা ভ্রমণের ফি নির্ধারণ করে গত ২৯ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ করেছে।

ফলে এখন থেকে রাতারগুলের বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকায় প্রবেশ করতে প্রাপ্তবয়স্কদের ৫০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক (১২ বছরের নিচে) ও পরিচয়পত্রধারী শিক্ষার্থীদের ২৫ টাকা করে ফি দিতে হবে। আর বিদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবেশ ফি ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা।

এ ছাড়া একদিন একটি ক্যামেরা দিয়ে রাতারগুলের বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকায় শুটিং করতে চাইলে ‘ফিল্মিং ফি’ দিতে হবে ১০ হাজার টাকা।

দেশি দর্শনার্থীদের প্রতিবার ইঞ্জিনবিহীন নৌকা ভ্রমণের ফি ১০০ টাকা। বিদেশিদের জন্য এই ফি ধরা হয়েছে এক হাজার টাকা।

এ ছাড়া বাস বা ট্রাকের প্রতিবারের পার্কিং ফি ২০০ টাকা। পিকআপ, জিপ, কার ও মাইক্রোবাসের পার্কিং ফি ১০০ টাকা এবং অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের পার্কিং ফি ধরা হয়েছে ২৫ টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বন অধিশাখা-১ থেকে এ আদেশ জারি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত ২৬ মার্চ থেকে রাতারগুলে দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি থাকলেও ১ নভেম্বর থেকে তা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুল, বাগবাড়ি ও পূর্ব মহেশখেড় এলাকার ৫০৪ দশমিক ৫০ একর নিয়ে মিঠাপানির এই জলাবন। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এই বনে হিজল, করচসহ ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৭৫ প্রজাতির পাখি ও ৯ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে।

 

কোয়ারেন্টিনে অলস সময় কীভাবে কাজে লাগাবেন?

মো. ইকরাম

হোম কোয়ারেন্টিন অবস্থাতে কঠিন মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সবাই। এ চাপ বেড়ে যায় তখনই, যখন সব কাজ বন্ধ করে আগত বিপদের অপেক্ষা করতে থাকেন। যত কাজ মুক্ত থাকবেন, ততই মানসিক চাপ বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে শরীর বিপদের সঙ্গে যুদ্ধ করার শক্তি হারিয়ে ফেলবে।

এই সময়টাতে সবার জন্য দৈনন্দিন কাজের একটা গাইডলাইন এ লেখাতে দেওয়ার চেষ্টা করবো। আশা করি লেখাটি পড়া শেষ করলে আপনার এ মুহূর্তের একটি বড় সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন। সমস্যাটি হচ্ছে, অনেকেই বলেন, সময় কাটে শুধু ঘুমে। ঘুম থেকে উঠে একবার ভাবি, কী কাজ করবো এখন? এটা ভেবে বের করার আগেই আবার ঘুমিয়ে পড়ি।

এ লেখাটি পড়ার পর ভাবনা শেষ হয়ে যাবে। পুরো ২৪ ঘণ্টার একটা রুটিনও পেয়ে যাবেন পুরো লেখাটি পড়া শেষ করলে। এ দুর্যোগে আমাদের মূলত ৩টি চ্যালেঞ্জ। সেই ৩টা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাতে ৩টি কাজ রুটিনে থাকতে হবে।

চ্যালেঞ্জ-১: বিপদ থেকে মুক্তি পেতে সৃষ্টিকর্তার করুণা পাওয়া।
চ্যালেঞ্জ জয়ে কর্তব্য: নিজ ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করার চেষ্টা করা। (সকল ধর্মের লোকেরা তাদের নিয়মেই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করবেন)।

চ্যালেঞ্জ-২: করোনা আক্রান্ত না হওয়া।
চ্যালেঞ্জ জয়ে কর্তব্য: স্বাস্থ্য বিষয়ক গাইডলাইনগুলো অনুসরণ করা।

চ্যালেঞ্জ-৩ : সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দাতে নিজেকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল রাখা।
চ্যালেঞ্জ জয়ে কর্তব্য: দক্ষতা অর্জনে বিশেষ সময় দেওয়া।

এটুকু পড়েই উঠে গেলে অনেক কিছু মিস করবেন। কারণ এখন এই ৩টি মূল কাজগুলো কিভাবে করবেন, সেটির পরিপূর্ণ গাইডলাইন দিবো।

চ্যালেঞ্জ-১: বিপদ থেকে মুক্তি পেতে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা

(এখানে মুসলিমদের জন্য গাইডলাইন দেওয়া হলো, অন্য ধর্মের লোকেরা নিজেদের মত করে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করুন।) বিশ্বের সকল উন্নত রাষ্ট্র করোনাকে ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে। কোনভাবেই তারা মৃত্যুর সংখ্যা ঠেকাতে পারছে না। এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর করুণা ছাড়া কোন উপায় নাই। তাই নিজের, পরিবারের, সমাজের ও দেশের মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। আল্লাহর সাহায্য পেতে তার সন্তুষ্টি অর্জনে তার নির্দেশগুলো পালন করতে হবে।

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে আমাদের কর্তব্যগুলোকে ৩টি ভাগে ভাগ করি-

১) আল্লাহর ইবাদত করা:

৫ ওয়াক্ত নামাজ, তাহাজ্জুদসহ অন্যান্য নফল ইবাদত, রোজা রাখা, কোরআন তেলাওয়াত করা।

২) দান করা:

দান মানুষের বিপদকে কমিয়ে দেয়। বর্তমান পরিস্থিতি দান করার সর্বোত্তম সময়। বাইরে লাইন ধরে দান করার পাশাপাশি, সবচেয়ে প্রথম দান পাওয়ার অধিকার নিজের গরীব আত্মীয়-স্বজন, গরীব প্রতিবেশী, বাসার কর্মচারী (বুয়া, দারোয়ান ইত্যাদি)। সেইসঙ্গে এই সময়ে বাজারে গেলে দাম কমানোর চেষ্টা না করে লস মনে হলেও সেই টাকা দিয়ে আসুন, রিকশাতে কিংবা কোন যানবাহনে চড়ে কোথাও যাওয়ার সময় দামাদামি না করে, উল্টো কিছু বাড়তি টাকা তাদের ধরিয়ে দিন। এটাতেও দান করার সওয়াব পাবেন।

৩) ইসলামিক জ্ঞান অর্জন:

ইসলামিক সঠিক জ্ঞান অর্জনের জন্য কোরআনে তাফসির পড়ার পাশাপাশি ইসলামিক সাহিত্য পড়ুন। এটাও আল্লাহর পছন্দনীয় অন্যতম কাজ। কুরআন হাদিসের বাইরেও ইসলামিক যেসব বই রয়েছে, সেগুলো বেশি বেশি পড়ে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যাবে, সময়টা ভালই কাটবে। এগুলো অনলাইনে সার্চ দিলেও প্রচুর বইয়ের পিডিএফ হয়তো খুঁজে পেতে পারেন।

চ্যালেঞ্জ-২: করোনা আক্রান্ত না হওয়া

করোনাভাইরাস নিজের শরীরে কিংবা ঘরে কারও শরীরে কিংবা এক বিল্ডিং এমনকি এক এলাকাতে একবার ঢুকে পড়লে সেই ভাইরাস সবার জন্য বিপদ ডেকে আনার সম্ভাবনা থাকে। তাই করোনাভাইরাসকে এলাকার কাছে ধারেও আসতে না দেওয়ার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিতে বলছে সারা বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা। তাই আপনার ২৪ ঘণ্টার রুটিনের কাজের লিস্টে অন্যতম প্রধান কাজ করোনা প্রতিরোধের জন্য নিম্নে বর্ণিত কিছু রুটিন কর্মকাণ্ড।

নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা:

মুখ, নাক এবং চোখ দিয়ে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে। বাতাসের মাধ্যমে নয়। এই মুখ, নাক এবং চোখে হাতের সংস্পর্শের মাধ্যমে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। তাই হাত ১ ঘণ্টা পরপর সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে পরিষ্কার করতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে এলে কোথাও না বসে কাপড়চোপড় ধুয়ে ফেলব বা একটা ঢাকনাওয়ালা বালতিতে ঢেকে রাখব এবং সময় মতো ধুয়ে নেব। কোনো কাপড় ধোয়া সম্ভব না হলে উজ্জ্বল রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে নেব। সম্ভব হলে ঘরে এসে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করে নেব অথবা হাত-মুখ পরিষ্কার করব।

শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো:

সুযোগ মতো লবণযুক্ত গরম পানি দিয়ে গলা পরিষ্কার (গড়গড়) করব। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার খাব। সবুজ শাকসবজি, সুষম খাবার, মাছ, মাংস, ডিম ভালো করে সিদ্ধ করে খাব (ডিমের পোঁচ খাওয়া যাবে না) যাতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনোভাবেই ঠাণ্ডা কোনো খাবার খাওয়া যাবে না। কিছু সময় পরপর গরম কফি, চা, গরম পানি বা স্যুপ খেলে ভালো হয়। এগুলোর পাশাপাশি নিয়মিত শরীর চর্চা চালাতে হবে।

চ্যালেঞ্জ-৩: সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দাতে নিজেকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল রাখা

মহামারী করোনাভাইরাস নাড়া দিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিকে। গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যে স্থবিরতা নেমে এসেছে, তাতে ৩৩০ কোটি কর্মক্ষম মানুষের আংশিক বা পুরোপুরি বেকার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। এই পরিস্থিতির কথা ভুলে গেলে হবে না।

সেই পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুতি নিতে এখনকার এই ফ্রি সময়টাকেই কাজে লাগাতে হবে। না হলে করোনা থেকে বাঁচলেও চাকরি হারিয়ে আরেক বড় ধরনের বিপদের মুখোমুখি হতে হবে। সেই বিপদকে মোকাবিলা করার প্রস্তুতি হিসেবে এই অবসর সময়টাতে নিজের দক্ষতাকে অনেক গুন বাড়িয়ে নিতে হবে।

প্রশ্ন হতে পারে, আমার যোগ্যতা বা দক্ষতা না থাকলে কি আমার চাকরি হয়েছে? হুম, কথা সত্য। যোগ্যতার কারণেই আপনার চাকরি করতে পারছেন। কিন্তু কিছুদিন আগে প্রকাশিত বিবিসির একটা সংবাদের শিরোনাম শেয়ার করে আপনাকে সতর্ক করছি।

‘ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের পাইলট চাকরি হারিয়ে ডেলিভারি ভ্যানের ড্রাইভার হিসেবে চাকরি নিয়েছেন’। আপনার বর্তমান চাকরিটি কোন কারণে চলে গেলে অন্য কোন যোগ্যতা দিয়ে হলেও অন্য ক্যাটাগরিতে হলেও একটি চাকরি যোগাড় করার মত দক্ষতা এখনই অর্জন করে নিতে হবে। আবার এমন হতে পারে আপনার অনেকগুলো যোগ্যতা থাকার কারণে হয়তো প্রতিষ্ঠানের ৮০% এর চাকরি চলে গেলেও আপনার চাকরি যাতে অন্তত টিকে যায়।

আর যদি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, তাহলেও যাতে অন্য কোন চাকরি যোগাড় করতে আপনার হাতে যাতে অনেকগুলো অপশন থাকে। কীভাবে কাজে লাগাবেন, তার একটি সংক্ষিপ্ত গাইডলাইন দিচ্ছি এবার।

৬টি বিশেষ গাইডলাইন

১. স্কিল বাড়ানোর চেষ্টা করেন। মাল্টি স্কিল হওয়ার চেষ্টা করেন। আপনাকে দিয়ে ২-৩ ধরনের কাজ করানো গেলে আপনাকে কোম্পানি বাদ দেওয়ার চিন্তা কম করবে। কিংবা চাকরি চলে গেলেও আপনার অনেকগুলো স্কিলের কোন একটা নতুন চাকরি পেতে সহায়ক হবে।

২. কমিউনিকেশন দক্ষতা বর্তমান যুগে খুব বড় একটা যোগ্যতা। যে কোন চাকরিতে ভাল অবস্থানে যেতে ভাল পারফরমেন্স করতে হয়। আর ভাল পারফরমেন্সের জন্য প্রয়োজন কমিউনিকেশন দক্ষতা। কমিউনিকেশন দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন বই কিংবা গুগল সার্চ করে কিংবা ইউটিউব থেকে শিখতে পারেন।

৩. প্রযুক্তি বিষয়ক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে গুরুত্ব দিন। কারণ পরবর্তী বিশ্বে সকল কিছুই প্রযুক্তি নির্ভর চলার সম্ভাবনাই বেশি দেখছে সবাই। এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট অবশ্যই জানা থাকতে হবে। গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিংটাও শিখে রাখতে পারেন। এ দক্ষতাগুলো থাকলে আপনার প্রতিষ্ঠানে ভাল একটা ভ্যালু থাকবে। আবার চাইলে অনলাইনেও বহির্বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠানেরও কাজ করার সুযোগ পাবেন। এগুলো শিখার জন্য ইউটিউবে বাংলাতেই ভালো ভালো অনেক রিসোর্স খুঁজে পাবেন।

৪. উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করুন। নিজে উদ্যোক্তা হতে পারবেন। উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা না থাকলে আপনি যেখানে চাকরি করেন, সেই বিজনেসেও নিজের উদ্যোক্তা বিষয়ক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সেই বিজনেসের সাফল্য নিয়ে আসতে পারবেন।

৫. যেকোন বিজনেসে ইনকাম বাড়াতে প্রয়োজন মার্কেটিং এবং ব্রান্ডিং। ভাবুনতো একবার, আপনার মাধ্যমেই যদি কোন প্রতিষ্ঠান অনেক ক্লায়েন্ট পায় এবং ব্যবসাতে ইনকাম বৃদ্ধি পায়, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানে আপনার ভ্যালু কী পরিমাণ বাড়বে? তাই বিজনেস বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে ডিজিটাল মার্কেটিং বা ব্রান্ডিং সম্পর্কে এ ছুটিতে শিখে নিতে পারেন।

৬. ইংরেজিতে যাদের জ্ঞান কম আছে, তারা এই ফ্রি সময়টাতে ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে পারেন। ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়াতে কয়েক বন্ধু মিলে চ্যাটিং গ্রুপ করে নিতে পারেন। সেই গ্রুপে ইংরেজিতে আড্ডা দিন। সময় কাটবে আড্ডা দিয়ে। সঙ্গে ইংরেজি ভয় দূর হবে, ইংরেজি জ্ঞানও বাড়বে।

আর কিছু লিখে বড় করবো না। সময় কাটানোর একটা গাইডলাইন তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কতটুকু কাজে লাগাবেন, সেটি আপনার বিষয়। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ রুটিন অনুযায়ী প্রতিদিন সময় কাটালে সময়টা ভাল কাটবে, সেইসঙ্গে নিজের জন্য ভাল কিছু অর্জন করতে পারবেন। লেখাটি দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণ থেকে সংগ্রহীত

 

রেসিপি: জিভে জল আনা খেজুর গুঁড়ের পায়েশ

শীতে খেজুর গুড়ের পায়েশের কথা শুনলে জিভে জল এসে যায়। এ সময়ে পোলাও চালের মম গন্ধের সঙ্গে গুড়ের মিষ্টি সুঘ্রাণযুক্ত এক বাটি পায়েশ খেলে মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। শীতের সময়ে প্রিয়জনদের জন্য ঘরেই তৈরি করতে পারেন খেজুর গুড়ের পায়েশ।

আসুন জেনে নিই কীভাবে তৈরি করবেন খেজুর গুড়ের পায়েশ–

উপকরণ

এক কাপ পোলাও চাল, তিন কাপ ঘন দুধ, দুই কাপ হেভি ক্রিম, চারটি সবুজ এলাচ, একটি তেজপাতা, এক মুঠো কিশমিশ, এক মুঠো কাজু বাদাম ও ৭-৮ টেবিল চামচ খেজুর গুড়।

যেভাবে তৈরি করবেন

পোলাও চাল পানিতে ধুয়ে ৩০ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখুন। বড় কড়াইতে দুধ ও ক্রিম জ্বাল দিয়ে এতে তেজপাতা দিয়ে বলক আনুন ও নাড়ুন। নাড়ার মাঝে জ্বাল কমিয়ে দিয়ে দুধ ঘন করে আনতে হবে।

চাল থেকে পানি ছেঁকে চালগুলো দুধে দিয়ে দিতে হবে এবং জ্বাল আরও কিছুটা কমিয়ে নাড়তে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কড়াইতে যেন লেগে না যায়।

এভাবে ১০ মিনিট নাড়ার পর এতে খেজুর গুড় ও এলাচ গুঁড়া দিয়ে আরও ১৫ মিনিট নাড়তে হবে। চাল সিদ্ধ হয়ে দুধ টেনে এলে এতে কাজুবাদাম ও কিশমিশ দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। কিছুক্ষণ পর সুন্দর করে পরিবেশন করতে হবে।

 

শীতের রেসিপি: মজাদার নকশি হাঁড়ি পিঠা

শীতে গরম গরম পিঠা কার না খেতে ভালো লাগে। গ্রাম-বাংলা থেকে শুরু করে শহরাঞ্চলেও শীতে রকমারি পিঠার চল বহুদিনের। এ সময়ে প্রিয়জনদের জন্য ঘরেই তৈরি করতে পারেন বাহারি পিঠা। হরেকরকম পিঠার মধ্যে নকশি হাঁড়ি পিঠা অন্যতম।

ঘরে খুব সহজেই তৈরি করতে পারেন নকশি হাঁড়ি পিঠা।

আসুন জেনে নিই এই পিঠা কীভাবে তৈরি করবেন-

যা যা লাগবে

পুরের জন্য: কোরানো নারিকেল ব্লেন্ড করে নেয়া ১ কাপ, গুড়/চিনি ১/২ কাপ, গুঁড়াদুধ ১/২ কাপ, সুজি ১ টেবিল চামচ, এলাচ গুঁড়া ১ চিমটি।

ডোয়ের জন্য: আতপ চালের গুঁড়া ২ কাপ, তরল দুধ ২১/২ কাপ, লবণ ১ চা চামচ।

যেভাবে করবেন

পুর তৈরি: মৃদু আঁচে ননস্টিক প্যানে ব্লেন্ড করা নারিকেল, সুজি ও গুঁড়াদুধ দিয়ে নেড়েচেড়ে জ্বাল দিন। সুজি সিদ্ধ হয়ে স্টিকি হয়ে গেলে খেজুর গুড়/চিনি মেশান। ঘন ঘন নাড়ুন। গায়ের পানি টানলে এলাচ গুঁড়া দিয়ে নামিয়ে ঠাণ্ডা করুন।

ডো ও পিঠা তৈরি: দুধে লবণ মিশিয়ে জ্বালে বসান। টগবগ করে ফুটলে চালের গুঁড়া দিয়ে পাত্রের মুখ ঢাকনা দিয়ে মৃদু আঁচে রেখে দিন ১০ মিনিট।

১০ মিনিট পর পাত্রের মুখ খুলে নেড়েচেড়ে নামিয়ে নিন। কিছুটা ঠাণ্ডা হলে ভালো করে মথে ডো তৈরি করুন। ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিন।

এক একটি ভাগ হাঁড়ির মতো তৈরি করে ভেতরে পুর ভরে দিন। আর একটি ভাগ দিয়ে ছবির মতো করে হাঁড়ির মুখ বানান। এবার একটু পানি মাখিয়ে হাঁড়ি এবং মুখ আটকে কাটা চামচ দিয়ে নকশা করে নিন।

স্টিমারে পানি ফুটিয়ে পিঠাগুলো ভাপে দিন ২০-৩০ মিনিটের জন্য। গরম গরম পরিবেশন করুন।

লেখক: মনিরা মাজিদ, গৃহিণী।

 

প্রেমের গুঞ্জন নিয়ে যা বললেন দীঘি

প্রার্থনা ফারদিন দীঘি আর শিশুশিল্পী নন। রূপালি জগতে তিনি এখন চিত্রনায়িকা। ‘বাবা জানো আমাদের ময়না পাখিটা’ বুলি আওড়ানো দিঘীর মুখে এখন শোনা যাবে রোমান্টিক সব ডায়ালগ।

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সিনেমায় চিত্রনায়িকা হিসেবে কাজ করতে যাচ্ছেন দীঘি। এর মধ্যে একটি সিনেমার শুটিং প্রায় শেষও করে ফেলেছেন।

আর এরইমধ্যে প্রেমবিষয়ক গুঞ্জনের মুখোমুখি হলেন দীঘি। তবে এতে মোটেই বিব্রত বা বিরক্ত হননি দীঘি।

এসব গুঞ্জনকে গুজব বলে উড়িয়ে দিলেন তিনি। উল্টো তিনি নিজেই সাংবাদিকদের জানালেন, এসব গুজব তাকে যেন আগে জানায়।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে দীঘি বলেন, ‘নায়িকাদের প্রেমের গুঞ্জন ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু মাত্র ছবিতে অভিনয় শুরু করেছি। সেপ্টেম্বরে শুটিং শুরু করেছি, সব মিলিয়ে দুই মাস হলো নায়িকা হলাম। প্রেমের গুঞ্জনটা আসতে তো বছরখানেক লেগে যায়। আর এরই মধ্যে এমন গুঞ্জন শুনতে হচ্ছে! ভেবেছিলাম, এসব গুজব উঠতে আরও এক বছর লাগবে। অবশ্য এসব গুজবে আমি কান দিই না। যখন প্রেম হবে, তখন এমনিই সবাই জানবে। ’

তবে প্রেমের গুঞ্জন এখনও তার কানে যায়নি বলে জানান এক সময়ের সুপরিচিত শিশুশিল্পী।

তিনি বলেন, ‘আমার নামে এমন কিছু নিজে শুনিনি। তো আমার মনে হয়, আমি শোনার আগে আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা, আমাদের আগে ভালো শুনতে পারেন। আপনাদের কাছে চলে যায় বা আপনাদের কাছে এমন গসিপ চলে যায়। আপনারা জানলে আমাকে আগে জানাবেন, তাহলে আমি বেশি খুশি হব।’

সম্প্রতি দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘তুমি আছ তুমি নেই’ সিনেমায় নায়িকা হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন দীঘি। এই সিনেমায় শুরুতে বাপ্পি চৌধুরীকে নায়ক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। পরে চুল বড় নেই বলে তাকে বাদ দিয়ে সাইমনকে নেয়া হয়। এরপর জানা যায়, সাইমন নয়, দীঘির নায়ক হতে চলেছেন আসিফ ইমরোজ। আমাগী ১৫ নভেম্বর থেকে গাজীপুরে শুরু হবে ‘তুমি আছো, তুমি নেই’-এর শুটিং।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এফডিসিতে ‘টুঙ্গিপাড়ার মিঞা ভাই’ নামে একটি ছবির শুটিং শুরু করেছেন দীঘি। এ ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করছেন নবাগত শান্ত খান। এটি ছাড়াও আরও পাঁচটি ছবিতে অভিনয়ের কথা রয়েছে দীঘির। এরই মধ্যে ‘ধামাকা’ নামে একটি ছবি পরিচালনা করবেন মালেক আফসারী। ‘যোগ্য সন্তান’ নামে আরেকটি ছবি নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছেন কাজী হায়াৎ।

 

শীতে নবজাতকের গায়ে কোন তেল মাখাবেন

ডা. বেদৌরা শারমিন

শীতের ঋতুতে আবহাওয়া বেশি শুষ্ক থাকে। এ সময় মায়েরা সদ্য নবজাতকের ত্বক সুন্দর রাখতে বিভিন্ন ধরনের ময়েশ্চারাইজ লোশন ও তেল ব্যবহার করে থাকেন।

অনেক মা জানেন না, কোন তেল শিশুর জন্য ভালো। বেশ কয়েকটি তেল রয়েছে, যা নবজাতকের ত্বকের জন্য উপকারী।

আসুন জেনে নিই কোন তেল নবজাতকের ত্বকের জন্য ভালো–

১. শীতে শিশুর জন্য সরিষার তেল খুবই উপকারী। কারণ এটি শরীর উষ্ণ রাখে এবং সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি থেকে দূরে রাখে।

২. শিশুর গায়ে অলিভ অয়েলও মাখতে পারেন। অলিভ অয়েল তেল শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। তবে শিশুর চর্মরোগ থাকলে অলিভ অয়েল ব্যবহার না করাই ভালো।

৩. অনেকে মনে করেন নারিকেল তেল শুধু চুলের যত্নে ব্যবহার করা হয়, এ ধারণা মোটেও ঠিক নয়। শিশুর ত্বক সহজেই এই তেল শুষে নিতে পারে। শীতে মালিশের জন্য এতে চমৎকার উপাদান রয়েছে। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাংগাল গুণ শিশুর ত্বকের জন্য উপকারী।

৪. সূর্যমুখী তেল ভিটামিন ‘ই’ সমৃদ্ধ। এতে যথেষ্ট পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা শীতকালে শিশুর ত্বকের সুরক্ষায় বিশেষভাবে কাজ করে।

৫. আয়ুর্বেদিক তেল সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই জানি। এই তেলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপাদান পাবেন। আয়ুর্বেদিক তেল শীতে শিশুর রুক্ষতা ও রোগ প্রতিরোধ করে রাখবে উষ্ণ।

ডা. বেদৌরা শারমিন, গাইনি কনসালট্যান্ট, সেন্ট্রাল হাসপাতাল লিমিটেড।

লেখাটি দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণ থেকে সংগৃহীত

 

যমজ সন্তানের যত্ন আত্তি

ধারণা করা হয়, পুরো পৃথিবীর ৩ শতাংশ মানুষ যমজ। এ ৩ শতাংশ নিয়ে মানুষের আগ্রহের কোনো শেষ নেই। চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী, দুটি শুক্রাণু একসঙ্গে দুটি ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করলে ভ্রাতৃসুলভ যমজ সন্তানের জন্ম হয়।

এরা ফ্যাটার্ন্যাল টুইন নামেও পরিচিত। সাধারণভাবে দেখা যায়, যমজের ক্ষেত্রে চেহারা হুবহু এক হয়। স্বভাব বা বৈশিষ্ট্যগতভাবেও তারা কিছুটা ভিন্ন হয়; কিন্তু দুটি শুক্রাণু একসঙ্গে একই ডিম্বাণুর সঙ্গে নিষিক্ত হয়ে সমান দু’ভাবে বিভক্ত হয়ে যে যমজ সন্তানের জন্ম হয় তারা আইডেন্টিক্যাল টুইন নামে পরিচিত। এরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হুবহু একইরকম দেখতে। তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও অনেকটা একইরকম।

আজকাল বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা আগের চেয়ে অনেক বেশি। প্রতি ৬৫ জনে একজন মায়ের সাধারণ প্রক্রিয়াতেই দুটি যমজ সন্তান হতে পারে। মায়ের পরিবারের কেউ যমজ থেকে থাকলে এর সম্ভাবনা বেশি।

আবার মায়ের বয়স বেশি বা ৩০-৩৫-এর মধ্যে হলেও যমজ বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বর্তমানে চিকিৎসার অগ্রগতির কারণে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার জন্য যে পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হয় যেমন- আইভিএফ; এ ধরনের চিকিৎসার মাধ্যমেও এখন যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে গেছে।

এজন্য শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা পৃথিবীতেই যমজ সন্তান জন্মানোর হার আগের চেয়ে বেশি। তবে যমজ সন্তান গর্ভে ধারণ করলে মা ও সন্তানের কিছু কিছু সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন- গর্ভবতী মায়ের শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়া, প্রেসার বেড়ে যাওয়া, রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, অপরিণত ও কম ওজনের শিশু, বাচ্চার জন্মগত ত্রুটিসহ ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ, গর্ভকালীন সঠিক পরিচর্যা এবং সতর্কতার মাধ্যমে এ ধরনের সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

সাবরিনা আহমেদ রিমি এবং সাকিব রহমান দম্পতির ঘর আলো করে এসেছে যমজ কন্যা। তাদের নাম রুহাইমা রহমান সিদরাহ এবং সারিজা রহমান সেহের। সিদরাহ এবং সেহেরের বয়স এখন ৪ মাস।

একদিকে দীর্ঘ ৭ বছর পর সংসারে সন্তানের আগমন, সেইসঙ্গে যমজ সন্তান হওয়ায় পরিবারে খুশির বন্যা নেমে এসেছে। সাবরিনা আহমেদ বলেন, ‘এত বছর পর একসঙ্গে দুই সন্তানের মা হওয়ার এ আনন্দ-অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ওদের দিকে তাকিয়ে সব কষ্ট ভুলে যেতে পারি। ওদের কিছু কাজে আমি খুব মজা পাই। যেমন খাবার দিতে একটু দেরি হলে বড়টার দিকে তাকালে খুব জিদ দেখায়। কিন্তু ছোটটার দিকে তাকালে ও হেসে দেয়। আমি ওদের ছড়া শোনালে ওরা দু’জনই তা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনে।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণ গর্ভবতী মায়েদের তুলনায় গর্ভে যমজ সন্তান থাকলে খাবার-দাবারের ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো যেমন পর্যাপ্ত খেতে হবে, তেমনি পর্যাপ্ত ডায়েটও মেনে চলতে হবে। গর্ভবতী মাকে পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। গর্ভকালীন জটিলতাগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পাশাপাশি নেটে সার্চ দিয়েও তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন; যেটি আমি করতাম। এখনও বাচ্চাদের পরিচর্যার ক্ষেত্রে নেটে সার্চ দিয়ে জেনে নেই। গর্ভবতী মাকে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে এবং নিয়মিত চেকআপ করতে হবে।’

সন্তান লালন-পালন করা অভিভাবকদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। দুটি সন্তান একসঙ্গে লালন-পালনের ক্ষেত্রে স্বভাবতই চ্যালেঞ্জটা দ্বিগুণ। তাই যমজ শিশুর পরিচর্যার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন:

  • বুকের দুধ পান করানো

মা বা পরিবারের ধারণা, যমজ দুই সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় বুকের দুধ মা দিতে পারবে না, এটি ভুল। মা যদি সবার সহযোগিতা পান, একসঙ্গে তিন নবজাতক সন্তানকে পূর্ণ ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধে পুষ্টি বজায় রাখতে সক্ষম থাকেন।

  • শিশুর খাবার

ছয় মাস বয়সের পর যখন শিশুকে বুকের দুধের বাইরে অন্য খাবার দেয়া শুরু করবেন তখন দু-তিন ঘণ্টা পরপর খাবার দিন। দু’জনই সমপরিমাণে খাবার খাবে না এটাই স্বাভাবিক; বকাঝকা করবেন না। প্রয়োজনে খাবারের মেন্যু বদলে দিন।

  • ঘুমের সময়

যমজ বাচ্চা হলেই যে দু’জনে একসঙ্গে সবকিছু করবে- এমন ভাবার কারণ নেই। হয়তো একজন ঘুমাল, অন্য শিশুটি হাত-পা মেলে খেলা করতে পারে। ঘুম পাড়ানোর জন্য জোর না করে তাকে সময় দিন, প্রয়োজনে কোলে করে একটু হাঁটুন।

  • আলাদা বিছানা

এক শিশুর কোনো কারণে অসুখ হলে অন্যজনের মধ্যেও তা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই একজন কোনো রোগে আক্রান্ত হলে অপরজনকে আলাদা বিছানায় রাখুন।

  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা

যেহেতু শিশুরা খুব অল্পতেই নানা রোগে আক্রান্ত হয়, তাই শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে বাইরে থেকে কেউ ঘরে ফিরলে বা বাড়িতে অতিথি এলে তিনি যেন হাত ভালোমতো না ধুয়ে, পোশাক না বদলে শিশুকে স্পর্শ না করে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখুন।

  • যেসব বিষয়ে নজর দেয়া প্রয়োজন

যমজ সন্তানদের কখনও যমজভাবে চিন্তা না করে, তাদের দুজনকে আলাদা ব্যক্তিত্বের মর্যাদা দিয়ে বড় করে তুলুন। যেমন প্রত্যেকের জন্য আলাদাভাবে জন্মদিনের উপহার বা পার্টির ব্যবস্থা করা। যমজ সন্তানের রেষারেষি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সামাল দিন।

  • চাই পরিবারের সহযোগিতা

যমজের যত্ন নিতে স্বভাবতই প্রত্যেক বাবা-মাকে হিমশিম খেতে হয়। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। যমজ সন্তানের মা সাবরিনা আহমেদ রিমি তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, পরিবারের সহযোগিতা ছাড়া যমজ সন্তান লালন-পালন করা কষ্টসাধ্য। আমি সৌভাগ্যবান, আমি যৌথ পরিবারে থাকি এবং আমার স্বামী, শ্বশুর, ননাস এমনকি ননাসের বাচ্চারাও আমার বাচ্চাদের দেখাশোনা করে। এতে আমি অনেকটা সময় বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ পাই।

রাতে ওদের ঘুম ভেঙে গেলে আমার স্বামী এবং আমি ভাগাভাগি করে ওদের সময় দেই। এতে আমার ঘুমের খুব বেশি ব্যাঘাত ঘটে না। আমি একজন কর্মজীবী নারী এবং ছুটি শেষে আমাকে আবার কর্মস্থলে ছুটতে হবে; কিন্তু আমি এ নিয়ে চিন্তিত নই।

কারণ আমার সন্তানদের দেখভালের জন্য আমার পরিবারের সদস্য রয়েছেন। আসলে এ সুযোগটা প্রতিটি নতুন মায়ের জন্য দরকার; বিশেষ করে যমজ সন্তানের মায়ের জন্যই অপরিহার্য। কারণ এ সময় শিশুর সুস্থতার জন্য মা-বাবা দু’জনেরই সুস্থ থাকা দরকার। মা-বাবার পর্যাপ্ত খাওয়া ও বিশ্রামের প্রয়োজন। একা সন্তান মানুষ করলে তা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। তাই যমজ সন্তান লালন-পালন করতে অবশ্যই পরিবারের সদস্যদের পূর্ণ সহযোগিতা প্রয়োজন। যাদের সেই সুযোগ নেই, তাদের প্রথম থেকেই অন্য কারও সহযোগিতা কীভাবে নেয়া যায় সেটি ভেবে দেখতে হবে।

 

শীতে সুস্থ থাকতে কী খাবেন

শীত এলেই বাড়ে অসুখ-বিসুখ। এ সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, এ সময় শরীরকে হাইড্রেট রাখাটা জরুরি। শরীরকে হাইড্রেট না রাখলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, দেহের তাপমাত্রার ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

কিছু সবজি রয়েছে যা শীতের সময় খুব সহজে বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। এসব খেলে শরীর সতেজ থাকে।

আসুন জেনে নিই কী খাবেন-

১. শীতের সময়ে খেতে পারেন পুষ্টিকর পালংশাক। পালংশাক ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী। অতিরিক্ত ওজনও কমায়। এই সবজি শীতে আমাদের শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করে।

২. খেতে পারেন টমেটো। এতে প্রায় ৯০ শতাংশ পানি থাকে, যা শরীরকে ভেতর থেকে পুষ্ট রাখতে সহায়তা করে। টমেটো ওজন কমাতে সাহায্য করে।

৩. হলুদ ও সবুজ ক্যাপসিকামে প্রচুর পানি থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করে। ক্যাপসিকামে ৯৩.৯ শতাংশ পানি রয়েছে। এ ছাড়া এতে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, বিটা ক্যারোটিন, থায়ামিন ও ফলিক অ্যাসিড রয়েছে।

৪. শীতের ফুলকপি দিয়ে স্যালাড, স্যুপ ও বিভিন্ন তরকারি তৈরি করে খেতে পারেন।

৫. অলিভ অয়েল ভিটামিন-ই, ভালো ফ্যাটজাতীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ, যা শরীরকে ভেতর থেকে ময়েশ্চারাইজ রাখে। ত্বক ভালো রাখতে অলিভ অয়েল দিয়ে শরীরে ম্যাসাজ করতে পারেন। এটি শরীর ঠিক রাখতে বেশ কার্যকর।

তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই

হারিয়ে যাচ্ছে শীতের খেজুর রস

মাগুরা জেলায় এক দশক আগেও শীতের মৌসুমে সকালে রসের হাড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছির ব্যস্ততার দৃশ্য চোখে পড়ত। শীতের মৌসুম শুরু হতেই বাড়ি বাড়ি চলত খেজুরের রস কিংবা রসের পাটালি গুড় দিয়ে মজাদার পিঠা-পুলির আয়োজন।

পাশাপাশি খেজুরের রস দিয়ে তৈরি ঝোলা গুড়ের সুনাম তো ছিলই। তবে গ্রামবাংলার সেই দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এসব অনুষঙ্গ। নানাবিধ কারণেই গ্রামের মানুষ যেন ভুলতে বসেছে এসব ঐতিহ্যবাহী উপাদান।

মাগুরা সদর উপজেলার ইছাখাদা গ্রামে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসা রহিমা বেগম জানান, তিনি প্রতিবছর শীতের সময় বাবার বাড়িতে ঢাকা থেকে বেড়াতে আসেন শুধু খেজুর রস ও রসের তৈরি পিঠা-পুলি খেতে। কিন্তু কয়েক বছর হলো এখন তিনি আর রস খেতে পান না।

তিনি জানান, তার চার ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে গেছে। কিন্তু তিনি এবছরও তার ছেলে-মেয়েদের এখন পর্যন্ত খেজুরের রসের তৈরি পিঠা-পুলি খাওয়াতে পারেননি।

মাগুরার শালিখা উপজেলার বুনাগাতি গ্রামের গাছি ওয়ালিয়ার জানান, ইটের ভাটায় ব্যাপকভাবে খেজুর গাছের খড়ি ব্যবহারের কারণে এ গাছ কমে যাচ্ছে। খেজুর গাছের খড়ি তুলনামূলকভাবে সস্তা হওয়ায় ইটের ভাটায় এ গাছের চাহিদা প্রচুর।

তিনি জানান, খেজুর গাছের ব্যাপক নিধনের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো মাগুরায়ও কমছে খেজুর গাছ। দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে খেজুরের রস। আসলে গাছ বাঁচাতে পারলেই রস পাওয়া সম্ভব।

এ বিষয়ে মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক বলেন, ‘মাগুরায় কিছু খেজুর গাছ থাকলেও গাছির সংকটে এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘কয়েক গ্রামের ব্যবধানে দু’একজন গাছি পাওয়া গেলেও গাছ তুলনামূলকভাবে কম থাকায় রস সংগ্রহের কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না তারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে কারণে খেজুরের রসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। একসময়ের ঐতিহ্যবাহী শীতের নবান্ন উৎসবের খেজুর রসের ক্ষির, পুলিপিঠা, রসের মন্ডা মিঠাইসহ নানা মুখরোচক খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। এ ঐতিহ্য বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’ জাগোনিউজ

কফি পান করলে কমবে চর্বি

বাড়তি চর্বি নিশ্চয়ই দুশ্চিন্তার কারণ। এই চর্বির কারণে হতে পারে নানা অসুখ। তাই শরীর থেকে বাড়তি চর্বি ঝরিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন প্রত্যেক সচেতন মানুষ। চর্বি কমাতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে কফি। তবে এই কফি দুধ-চিনি মেশানো নয়, হতে হবে ব্ল্যাক কফি।

এককাপ ব্ল্যাক কফিতে ক্যালোরির পরিমাণ ২। ডিক্যাফেইনেটেড বীজ থেকে বানান হলে তাতে আবার একেবারেই ক্যালোরি থাকে না। এছাড়াও ব্ল্যাক কফিতে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড নামে একটি উপাদান রয়েছে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। রাতের খাবার খাওয়ার পরে এককাপ ব্ল্যাক কফি খেলে শরীরে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড গ্লুকোজ উৎপাদনে বাধা দেয়। ফলে নতুন ফ্যাট কোষ তৈরি হয় না।

শুধুমাত্র ক্লোরোজেনিক অ্যাসিডই যে ওজন কমানোর জন্য কালো কফিকে আদর্শ করে তুলেছে তা নয়। ব্ল্যাক কফিতে বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস আছে যা দ্রুত ওজন কমানোর সহায়ক।

ব্ল্যাক কফিতে থাকে ক্যাফিন যা খুব দ্রুত বিপাকের ক্রিয়াকলাপ বাড়ায় এবং আমাদের শরীরের শক্তির জোগান দেয়। ফলে ক্ষুধা কম পায়। তবে চিনি বা অন্যান্য মিষ্টি যুক্ত করে একে লো-ক্যালোরি পানীয় বানাবেন না।

ব্ল্যাক কফির সঙ্গে যদি সামান্য মধু আর লেবু যোগ করে খেতে পারেন, তাহলে যেমন স্বাদ বাড়ে তেমনই তা ওজন কমাতেও সাহায্য করে। এমনিতেই লেবু আর মধু ওজন কমানোর সহায়ক। আর তার সঙ্গে যদি যুক্ত হল ব্ল্যাক কফি তাহলে ওজন কমবেই।

দুধ দিয়ে কফি পান করার খুব ইচ্ছা হলে আমন্ড কিংবা সয়া মিল্ক দিয়ে খান। তাতে শরীরও ভালো থাকবে। ওজনও কমবে।

ব্ল্যাক কফি সকালে খালি পেটে না খাওয়াই ভালো। লেবু-মধু মিশিয়ে এই কফি খাওয়ার আদর্শ সময় হলো সন্ধ্যাবেলা। এতে অতিরিক্ত ফ্যাট জমবে না। অনেকেই বলেন রাতে ব্ল্যাক কফি খেলে ঘুম আসে না। কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্যা হয় না। কফির সঙ্গে মধু আর লেবুর রস মেশালে হজম ভালো হয়।

যেভাবে তৈরি করবেন
প্রথমে এককাপ পানি গরম করুন। তাতে কফি মিশিয়ে কিছুটা সময় ফুটিয়ে নিন। এবার কাপে সামান্য গোলমরিচের গুঁড়া আর লেবু-মধুর মিশ্রণ বানিয়ে নিন। কফি ছেঁকে নিন। ৫ মিনিট রেখে একটু ঠান্ডা করে খান। মধুর বদলে ব্রাউন সুগারও ব্যবহার করতে পারেন।

 

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও কন্যা হত্যা: কাশিমপুর কারাগারে একজনের ফাঁসি কার্যকর

লক্ষীপুরে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও দুই বছরের এক কন্যাকে হত্যার দায়ে গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ২- এ বন্দি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। রোববার রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ২- এ ফাঁসি কার্যকর হয়।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ব্যক্তি হলেন, লক্ষীপুরের রামগতি থানার দক্ষিণ চরলরেন্স এলাকার মৃত শামসুল হক বাঘার ছেলে আব্দুল গফুর (৪৭)।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ২- এর জেলার মো. আবু সায়েম জানান, ২০০৬ সালে লক্ষীপুরের রামগতি থানার দক্ষিণ চর লরেন্স এলাকায় ৫ মাসের গর্ভবতী স্ত্রী ও দুই বছরের এক কন্যা শিশুকে হত্যা করে আব্দুল গফুর। পরে এ ঘটনায় রামগতি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় ২০০৮ সালে আদালত আব্দুল গফুরকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এরপর আসামি পক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করলেও তার মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। পরে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করলেও তা খারিজ করে দেন।

অবশেষে সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষে রোববার (১ নভেম্বর) রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে আব্দুল গফুরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে জল্লাদ ছিলেন শাহজাহান ভুইয়া। এসময় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ও জেলারসহ ঊর্ধ্বতন কারা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ফাঁসির পর মরদেহ নিহতের বড় ভাই মো. আব্দুল ও মো. হানিফের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বাচ্চাদের কৃমির সংক্রমণ – কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কৃমি এক ধরনের অন্ত্রের পরজীবী যা শিশুদের অন্ত্রে বসবাস করে এবং বাচ্চাদের খাদ্য থেকে তাদের পুষ্টি অর্জন করে, যার ফলে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। কৃমির সংক্রমণ, হেলমিন্থ সংক্রমণ নামেও পরিচিত, এটি শিশুদের মধ্যে পেটে ব্যথার প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি। এই সংক্রমণ খুব সাধারণ এবং সহজেই এর চিকিৎসা করা যেতে পারে। বিভিন্ন ধরনের কৃমি, তাদের কারণ, উপসর্গ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া সবসময় ভাল, যাতে আপনার বাচ্চার যদি কৃমির সংক্রামণ হয়ে থাকে তবে আপনি তাকে সময়মত চিকিৎসা পেতে সহায়তা করতে পারেন।

  • কৃমির সংক্রমণ কত রকমের হয়:
    মানুষের দেহের বিভিন্ন অংশে সংক্রামিত ও প্রজননকারী বিভিন্ন প্রকারের কৃমি আছে। সেগুলো বিভিন্ন সাইজের এবং প্রকারের হয়। ছোট বা বড়, চ্যাপ্টা না গোল হতে পারে এবং চোষক বা তিনটে ঠোঁট যুক্ত হয় এবং কোনো পা থাকে না। শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের সংক্রামিত সবচেয়ে সাধারণ কৃমিগুলি হল:
  •  ফিতাকৃমি

ফিতাকৃমি যাদের চ্যাপ্টাকৃমিও বলা হয়, তারা তাদের ত্বকের মাধ্যমে শ্বাস নিয়ে অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে তাদের হুক এবং চোষক আছে যা অন্ত্রের সাথে যুক্ত হয় এবং তারা আশ্রয়দাতার শরীরের আংশিক হজম হওয়া খাদ্যের উপর প্রজনন সম্পন্ন করে। একটি ফিতাকৃমির দৈর্ঘ্য কয়েক ইঞ্চি থেকে ৪০ ফুট বা তার বেশি হতে পারে। সাধারণত দূষিত খাবারের মাধ্যমে তাদের ডিম বা লার্ভা শিশুদের পাকস্থলীতে প্রবেশ করে।

  • গোলকৃমি

গোলকৃমির সংক্রমণ, যা “অ্যাস্কারিয়াসিস” নামেও পরিচিত, তা অ্যাস্কারিস লাম্ব্রিকয়েডস্ কৃমি দ্বারা সৃষ্ট। এগুলো ফাঁপা, কেঁচোর মতো একই রকম দেখতে এবং দৈর্ঘ্যে ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে। গোলকৃমি নোনাজল, মাটি বা পরিস্কার জলের মধ্যে বাস করে এবং এই কৃমিগুলি গৃহপালিত পশুদের মধ্যে সাধারণত দেখা যায় যেখান থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। গোলকৃমির লার্ভা প্রায়ই অন্ত্র থেকে রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে এবং ফুসফুস পর্যন্ত বাহিত হয়।

  • কুঁচোকৃমি বা সুতাকৃমি

কুঁচোকৃমিকে সুতাকৃমিও বলা হয়, কারণ তারা ক্ষুদ্র, পাতলা, সাদা এবং সর্বদা নড়াচড়া করে এমন কৃমি যা মলদ্বারে বসবাস করে। স্ত্রী কৃমি মলদ্বারের আশেপাশে ডিম পাড়ে। এই ডিম কাপড়, বিছানা এবং অন্যান্য উপকরণের উপর বেঁচে থাকতে পারে এবং স্পর্শ বা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। সুতাকৃমির সংক্রমণ শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

  •  হুকওয়ার্ম

হুকওয়ার্ম সাধারণত খারাপ নিকাশী ব্যবস্থাযুক্ত স্থানে পাওয়া যায়। হুকওয়ার্মগুলি ক্ষুদ্র পরজীবি কৃমি, তাদের মুখে কাটিং প্লেট থাকে, যার মাধ্যমে তারা অন্ত্রের প্রাচীরের সাথে সংযুক্ত হয়। দূষিত মাটির সংস্পর্শে শিশুটি সংক্রমিত হয়। হুকওয়ার্ম লার্ভা মানুষের পায়ের ত্বকের মাধ্যমে প্রবেশ করে রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করতে পারে।

  • কিভাবে জানা যাবে আমার বাচ্চা কৃমি দ্বারা সংক্রামিত কিনা?

প্রায়ই, শিশুর কৃমি সংক্রমণের কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। সংক্রমণ খুব হালকা হতে পারে সুতরাং উপেক্ষা করা হয়। আপনি যদি নিজেকে জিজ্ঞেস করেন, ‘বাচ্চাদের কি কৃমি হতে পারে?’ উত্তরটি হল হ্যাঁ; এমনকি শিশুরাও কৃমি দ্বারা সংক্রামিত হতে পারে। উপদ্রবের ধরণ এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে, আপনার নিম্নলিখিত সতর্কতা লক্ষণগুলি অনুসন্ধান করা উচিত:

  • থুথু ফেলা: শিশুটি বিনা কারণে প্রায়ই থুতু ফেলতে শুরু করে কারণ কৃমি মুখের মধ্যে লালা বাড়িয়ে দেয়।
    মারাত্মক দুর্গন্ধযুক্ত মল: শিশুর মারাত্মক দুর্গন্ধযুক্ত মলের অর্থ হল কৃমির কারণে পেটে সংক্রমণ।
    মলদ্বারের কাছাকাছি চুলকানি: স্ত্রী কৃমি সাধারণত ডিম দেওয়ার জন্য মলদ্বারে চলে যায়, যা মলদ্বারের চারপাশে জ্বালা ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
    পেট ব্যথা: এটি অন্ত্রে কৃমি থাকার সবচেয়ে সাধারণ চিহ্ন।
    ঘুম ব্যাহত হওয়াঃ চুলকানি, পেট ব্যথা এবং অস্থিরতা যৌথভাবে শিশুর ঘুমকে ব্যাহত করে।
  • বাচ্চাদের কৃমি সংক্রমণের অন্যান্য লক্ষণ ও উপসর্গ:
    শিশুরা কদাচিৎ সংক্রামিত হওয়ার লক্ষণগুলি প্রদর্শন করে, এবং যদি তাই হয়, তবে ক্ষতিকারকতা সর্বনিম্ন হতে পারে। এটা, তাই, নাও লক্ষণীয় হতে পারে। যাইহোক, লক্ষণগুলির বিষয়ে সচেতন হওয়ার সুপারিশ করা হয় এবং সন্দেহ থাকলে শিশুকে পরীক্ষা করা উচিত। বাচ্চাদের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরণের কৃমি সংক্রমণগুলি কমবেশি একই রকম উপসর্গ সৃষ্টি করে। সেগুলি নিম্নলিখিত:
  • পেট ব্যথা
  • অবসাদ
  • ডায়রিয়া
    ওজন হ্রাস পাওয়া
  • বমি
    ক্ষুধামান্দ্য
  • ঘুমের অভাব
    জন্ডিস
  • খিটখিটেভাব
    পেটে অস্বস্তি
  • পেট খারাপ
  • ফুসকুড়ি, আমবাত, কালশিটে এবং অন্যান্য এলার্জির মত ত্বকের অবস্থা
  • পরজীবী বিপাকীয় বর্জ্য দ্বারা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের জ্বালার কারণে সৃষ্ট অস্থিরতা এবং উদ্বেগ
  • ক্লান্তি এবং শক্তির অস্বাভাবিক পরিবর্তন
  • ঘন ঘন গ্যাস এবং পেট ফাঁপা
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • আচরণগত পরিবর্তন
  • শিশুদের কৃমি সংক্রমণের কারণ কী কী?

শিশুদের এবং অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের ক্রমাগত হামাগুড়ি দেওয়া এবং বাইরে খেলার কারণে কৃমি সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবারের জীবনধারার উপর নির্ভর করে, শিশুদের কৃমি হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। কৃমি সংক্রমণ হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলি নীচে তালিকাভুক্ত করা হল:

  • একটি সংক্রামিত পৃষ্ঠতলের সংস্পর্শে আসা
  • সংক্রামিত খাদ্য বা জল খাওয়া
    অনুপযুক্ত স্বাস্থ্যবিধি বা পরিচ্ছন্নতার অভাব
  • কাঁচা বা ভালোভাবে রান্না না করা খাদ্য গ্রহণ
  • অপর্যাপ্তভাবে হাত ধোওয়া
  • সংক্রামিত ব্যক্তির সান্নিধ্যে আসা

 

একটি কৃমি সংক্রমণ নির্ধারণ করার পরীক্ষা:

নিম্নলিখিত সহজ পরীক্ষাগুলি করে শিশুদের মধ্যে কৃমি সংক্রমণের সম্ভাবনা ডাক্তাররা নির্ধারণ করতে পারে:

  • মল পরীক্ষা
  • কৃমি বা কৃমির ডিমের উপস্থিতি নির্ধারণের জন্য মলের নমুনা ল্যাবে পাঠানো হয়।
    নখ পরীক্ষা করা
  • ডাক্তার শিশুদের নখের নিচে কৃমির বা মলের উপস্থিতি দেখতে বাচ্চাদের নখ পরীক্ষা করে দেখেন।
  • একটি আঠালো টেপ পরীক্ষা

এই পরীক্ষা বিশেষভাবে সুতাকৃমি সনাক্ত করার জন্য করা হয়। যদি কৃমির ডিম উপস্থিত থাকে, তবে তা সংগ্রহের জন্য বাচ্চাদের নীচে একটি টেপ রাখা হয়।
তুলোর ফালি দিয়ে মোছা

কৃমির ডিমের উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য বাচ্চার শরীরের নিচের অংশ একটি তুলোর ফালি দিয়ে মোছা হয়।
আল্ট্রাসাউন্ড টেস্ট

গুরুতর কোনও সংক্রমণের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা করা হয়, ডাক্তার আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে জীবাণুর অবস্থান শনাক্ত করেন।
শিশুদের কৃমির চিকিৎসা

কৃমি সংক্রমণ নির্মূল করা এমন কিছু বিশেষ সমস্যা নয়, চিকিৎসকের পরামর্শে কৃমির ওষুধ খাইয়ে তা সহজেই সম্ভব। শিশুদের কৃমিনাশক হিসেবে সবচেয়ে নিরাপদ হল কম মাত্রার অ্যালবেন্ডাজোল অথবা মেবেন্ডাজোল।

  • মূলধারার ঔষধ ব্যবহার করার পাশাপাশি, বাবা–মায়েরা শিশুদের কৃমির জন্য ঘরোয়া প্রতিকারগুলি বিবেচনা করতে পারেন, নিম্নলিখিত উপাদানগুলি শিশুর খাদ্যে মন্ড আকারে মিশিয়ে দিয়ে:
  • কাঁচা পেঁপে: এটির একটি এনজাইম আছে, পাপাইন, যেটি একটি কৃমিনাশক হিসাবে কাজ করে এবং অন্ত্রের মধ্যে কৃমিকে ধ্বংস করে।
  • রসুন: এটি একটি প্রাকৃতিক কৃমিনাশক এজেন্ট এবং পরজীবী কৃমিনাশ করতে অত্যন্ত কার্যকর।
  • ক্যারম বীজ: এই বীজ থাইমল সমৃদ্ধ, যা অন্ত্রের পরজীবী বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এগুলিকে গুড়ের সঙ্গে মিশ্রিত করে একটি শিশুকে দেওয়া হয়।
  • কুমড়ো বীজ: এই বীজে কিউকারবিটাসিন আছে যেটি কৃমিদেরকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে তোলে এবং শরীরের মধ্যে তাদের বেঁচে থাকা প্রতিরোধ করতে পারে।
  • কড়লা: এটি পেটের কৃমির সাথে যুদ্ধ করতে সহায়তা করে। জল এবং মধু দিয়ে মেশালে তিক্ত স্বাদ থাকে না।
  • নিম: এটির একটি পরজীবী–বিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে এবং বিভিন্ন অন্ত্রের কৃমি ধ্বংস করতে উপকারী।
  • গাজর: গাজরে ভিটামিন এ থাকে যা শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অন্ত্রের পরজীবীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে। খালি পেটে গাজর খাওয়া কৃমি পরিষ্কার করতে সাহায্য করতে পারে।
  • হলুদ: এটি একটি অভ্যন্তরীণ অ্যান্টিসেপটিক এবং এটি সমস্ত ধরনের কৃমি নির্মূল করার জন্য পরিচিত।
  • নারকেল: এটির একটি শক্তিশালী পরজীবী বিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে, এটি কৃমি চিকিত্সার জন্য উপকারী। এটিকে তেল হিসাবে সরাসরি খাওয়া যেতে পারে।
  • লবঙ্গ: লবঙ্গ বিদ্যমান কৃমি এবং তাদের ডিম ধ্বংস করতে পারে এবং ভবিষ্যতে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।

 

শিশুর বৃদ্ধির উপর কৃমির প্রভাব:
কৃমিগুলি পরজীবী এবং তাদের পালনকারীর শরীর থেকে পুষ্টি অর্জন করে। তারা নিম্নলিখিত উপায়ে সংক্রামিত হয়ে, শিশুদের পুষ্টির অবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে:
কৃমিগুলি ধারক কোষকলাতে বাস করে এবং সেগুলোকেই খায় এবং এমনকি রক্তেও থাকে এবং এভাবে লোহা ও প্রোটিন হ্রাস পায়, যা প্রায়শই রক্তাল্পতার দিকে নিয়ে যায়।
কিছু কৃমি যেমন গোলকৃমি অন্ত্রে কিছু ভিটামিনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, যার ফলে পুষ্টির শোষণ বিঘ্নিত হয়।
কৃমির কারণে ক্ষুধা হ্রাস, পুষ্টির অভাব এবং দুর্বলতা হয়।
ফলাফলস্বরূপ কৃমিগুলি ডায়রিয়ার সৃষ্টি করে এবং আমাশয় ঘটায় এইভাবে শরীর দুর্বল করে দেয়।
শিশুটির শারীরিক ও মানসিক বিকাশের উপর তাদের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে, যার ফলে শিশুটির ওজন হ্রাস পায় বা বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

শিশুদের কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধ

স্বাস্থ্যবিধি একাই ভবিষ্যতে সংক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে যে কৃমি সংক্রমণের কারণে শিশুদের পেট ব্যথা হয়। বাচ্চারা হামাগুড়ি দিতে এবং হাঁটতে শুরু করলে তাদের কৃমি সংক্রমণের ঝুঁকি সবথেকে বেশী। সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুশীলন করা গুরুত্বপূর্ণ:

নিয়মিত বাচ্চাদের ন্যাপিগুলি পরিবর্তন করুন এবং সাথে সাথে আপনার হাত ধুয়ে ফেলুন।
ঘর এবং আশপাশ পরিষ্কার রাখুন।
বাচ্চা যেন পা ঢাকা জুতো পরিধান করে বাইরে খেলতে যায় এবং বাড়ীতে ফিরে যেন হাত এবং পা ধুয়ে ফেলে তা নিশ্চিত করুন।
বাচ্চাদের জল জমা এলাকার কাছাকাছি খেলতে দেবেন না।
ঘন ঘন আপনার শিশুর নখ কেটে দিন।
আপনার শিশুকে ফোটানো এবং পরিশ্রুত জল পান করান।
বাচ্চাদের পাকস্থলীতে কৃমি প্রতিরোধের জন্য খাবার ভালভাবে রান্না করা উচিত এবং কাঁচা খাবার দেওয়া উচিত নয়।
ফল এবং সবজি পরিষ্কার জলে ভাল করে ধোওয়া উচিত।
গরম জল দিয়ে জামাকাপড় এবং বিছানার লিনেন কেচে দিন।

স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখলে কৃমি থেকে সংক্রমণ– যা শিশুদের মধ্যে সাধারণ– প্রতিরোধে দীর্ঘ পথে কাজে আসতে পারে। কিছু ডাক্তার সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং শিশুদের মধ্যে সর্বোত্তম বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রতি ৬ মাসে একবার করে কৃমিনাশক ওষুধ প্রদান করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। যদি আপনি কোনও উপসর্গ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হন তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

সুস্থ ত্বকের জন্য নিম

সৌন্দর্য প্রকাশের আছে নানা ভাষা, নানা উপমা। তবে সুস্থ ত্বকই হলো আসল সৌন্দর্য। আর মুখ হলো তা প্রকাশের অন্যতম অবয়ব। তবে দেহের অন্যান্য স্থানের তুলনায় মুখের ত্বক একটু বেশি নাজুক। তাই এর জন্য দরকার বাড়তি যত্ন, বাড়তি পরিচর্যা।

নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে প্রত্যেককেই দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হয়। সারা দিনের পরিশ্রম, ধকল ও ধুলাবালিতে লাবণ্য হারিয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে যায় ত্বক। তাই ত্বককে সতেজ, সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখতে সঠিক পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি।

আমাদের শরীরের ত্বক ও মুখের ত্বকের গঠন একেবারেই আলাদা। মুখের ত্বক অনেক বেশি নাজুক, অনেক বেশি কোমল। তাই শরীরের ত্বক বিভিন্ন রকম সাবান সহ্য করতে পারলেও মুখের ত্বক তা একদমই পারে না। সাবান ব্যবহারে ময়েশ্চার চলে গিয়ে ত্বক হয়ে যায় শুষ্ক। এছাড়াও ত্বকের পিএইচ স্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাবান ব্যবহারের কারণে যার হেরফের হয়। আর এজন্য নানা রকম ত্বকের সমস্যায় ভুগতে হতে পারে।

এই অঞ্চলে ত্বকের যত্নে হারবাল পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়। অনেক আগে থেকেই নিম ও হলুদের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। ঔষধি গাছ হিসেবে নিমের ব্যবহার হয়ে আসছে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে। ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ানাশক হিসেবে যা খুবই কার্যকর। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর জুড়ি মেলা ভার। এছাড়াও নিমপাতা ছত্রাক (ফাঙ্গাস) বিরোধী হওয়ায় ত্বককে সুরক্ষিত রাখে। অপরদিকে হলুদ মুখের নিষ্প্রাণ বিবর্ণভাব কাটিয়ে করে তোলে সতেজ ও উজ্জ্বল। কালো দাগ ও পিম্পল নির্মূল করতে হলুদের ব্যবহার বহু প্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসছে। তবে হলুদ সরাসরি ত্বকে মাখা উচিত নয়। শুধু কাঁচা হলুদ মুখে মাখলে ত্বক ভীষণ হলদে দেখায়। ত্বকের যত্নে ব্যবহূত যে কোনো উপাদান সঠিক উপায়ে ও পরিমাণে ব্যবহার করা খুব জরুরি। তাই ত্বক ভালো রাখতে ব্যবহার করতে পারেন নিম ও হলুদের প্রাকৃতিক নির্যাসে ভরপুর হিমালয়া পিউরিফাইং নিম ফেস ওয়াশ। এতে সব উপাদান আছে সঠিক মিশ্রণে। এর অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল গুণ ত্বককে রাখে সুরক্ষিত ও মোলায়েম। এছাড়াও হিমালয়া পিউরিফাইং নিম ফেস ওয়াশে আছে ভিটামিন ই এবং ফ্যাটি এসিড। যা মুখের ত্বকের জন্য উপকারী।

বর্তমান সময়ে পৃথিবীজুড়ে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া মরণঘাতী ভাইরাস করোনার সময়েও ‘হিমালয়া পিউরিফাইং নিম ফেস ওয়াশ’ তার প্রয়োজনীতা বুঝিয়ে দিচ্ছে। ভাইরাস প্রতিহত করতে মাস্ক পরে থাকার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। একটানা অনেকক্ষণ মাস্ক পরে থাকলে ত্বকে পিম্পল, অ্যালার্জি ও র্যাশের মতো বহু সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর সেজন্যই ত্বকের সঠিক যত্ন নিতে নির্দিষ্ট সময় পর পর ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন। এতে ত্বক থাকবে সুস্থ, সেইসঙ্গে জীবাণুমুক্ত। প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন হিমালয়া পিউরিফাইং নিম ফেস ওয়াশ ১৫ মি.লি প্যাকটি সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় যে কোনো সময় মুখ পরিষ্কারের কাজটি করা যাবে। এছাড়া এর দামও হাতের নাগালে। আপনার ত্বক শুষড় কিংবা তৈলাক্ত যেমনই হোক, হিমালয়া পিউরিফাইং নিম ফেস ওয়াশ-এর হারবাল উপাদানগুলো তা নিয়ন্ত্রণ করে ত্বককে রাখবে সুস্থ ও প্রাণবন্ত।

 

তেঁতুলিয়া থেকে অপরূপ পবর্তশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা

বরফ আচ্ছাদিত কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখতে কে না চায়? তাই, করোনা পরিস্থিতিতেও পর্যটকদের ভিড় এখন উত্তরের সীমান্ত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।

এই সীমান্ত উপজেলায় শহরের মহানন্দার পাড় থেকে ভারতের রূপালি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। ঝকঝকে কাঁচের মতো স্বচ্ছ নীল আকাশ আর পরিচ্ছন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশের ঋতু শরৎ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এমনই সময়ে পঞ্চগড় তেঁতুলিয়া থেকে প্রতি বছরের মতো এবারও দেখা মিলছে বিশ্বের তৃত্বীয় সর্বোচ্চ পবর্তশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার।

চলতি শীত মৌসুমের শুরুতে আকাশে তেমন মেঘ আর কুয়াশা না থাকায় উত্তরের এই সাদা পাহাড় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কোনো রকম কৃত্রিম যন্ত্র ব্যবহার না করে দূর পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য দেখে বিমোহিত দেশীয় পর্যটকরা। শনিবার সকালে তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্পষ্ট দেখা গেছে। তেঁতুলিয়া উপজেলার ডাকবাংলোসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখে দেখা মিলেছে কাঞ্চনজঙ্ঘা অপরূপ দৃশ্য।

করোনা পরিস্থিতিতে আকস্মিক অতিরিক্ত পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো এবং মহানন্দার পাড়ে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কথা হয় কয়েকজন স্থানীয়ের সাথে। তারা জানান, সাধারণত অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত শীতের আগে মেঘমুক্ত নীলাকাশে ভেসে ওঠে তুষার শুভ্র হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘা। বছরের এই নির্দিষ্ট সময়ে বাংলাদেশ থেকে দৃশ্যমান হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখতে প্রতি বছরই অসংখ্য পর্যটক আসে। তবে এবার করোনার কারণে পর্যটক কম হলেও গত দু’দিনে আকস্মিক বেড়েছে পর্যটক। একারণে হিমশিম খাচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসন।

শনিবার সকালে সূর্যোদয়ের পর থেকেই চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো চোখে ধরা পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার নয়নাভিরাম নৈসর্গিক রূপ। সূর্যকিরণের তেজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সকাল দশটা থেকে এগারটা পর্যন্ত বেশ ভালোভাবেই দেখা যায়। তারপর ক্রমান্বয়ে আবার ঝাপসা হয়ে হারিয়ে যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। তবে, শেষ বিকেলে সূর্যকিরণ যখন তির্যকভাবে বরফাচ্ছাদিত পাহাড়ে পড়ে তখন অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে আবারও ধরা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা।

কাঞ্চনজঙ্ঘা অপরূপ দৃশ্যে দেখা মেলে দুই মেরু রেখার বাইরে সবচেয়ে বেশি বরফ ধারণ করে রেখেছে হিমালয় পর্বতমালা। আর সুর্যের সব রঙেই যেন নিজের মধ্যে ধারণ করে রেখেছে হিমালয়ের সর্বোচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা। তাই সুর্যের আলো বাড়ার সাথে সাথে ক্ষণে ক্ষণে পাল্টাতে থাকে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ। প্রথমে লাল রঙ দেখা গেলেও সেই রং লাল থেকে পাল্টে গিয়ে কমলা রঙের হয়, তারপর হলুদ রঙ হয়ে সর্বশেষ সাদা দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা অপরূপ সৌন্দর্য।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস এবং উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ নেপাল ও ভারতের সিকিম সীমান্তে অবস্থিত। বাংলাদেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে নেপালের দূরত্ব ৬১ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব ৬৮ কিলোমিটার, চীনের দূরত্ব ২’শ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার, শিলিগুড়ির দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। অন্যদিকে হিমালয়ের এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। তাই, মেঘ-কুয়াশামুক্ত আকাশের উত্তর-পশ্চিমে তাকালেই দেখা মেলে বরফ আচ্ছাদিত সাদা পাহাড় কাঞ্চনজঙ্ঘার।হিমালয়ের পাদদেশে তেঁতুলিয়া উপজেলা অবস্থিত হওয়ায় খালি চোখে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।

প্রতিবছর নভেম্বর মাসের শুরু বা মাঝামাঝিতে দেখা গেলেও আকাশ পরিস্কার হওয়ার কারণে আজ শনিবার সকালে হঠাৎ করে দেখা গেছে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, আজ সকালে আকাশ পরিষ্কার থাকার কারণে খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলেছে। মেঘমুক্ত আকাশে রূপোলি চকচকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। আকাশ মেঘমুক্ত থাকা ও উত্তরবঙ্গে সাম্প্রতিক বৃষ্টির কারণে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ কমে যাওয়াতেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্যমান হয়েছে।

পর্বতশৃঙ্গ নেপাল ও ভারতের সিকিম সীমান্তে অবস্থিত এই কাঞ্চনজঙ্ঘা হিমালয় পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালা। এই পর্বতমালার তিনটি চূড়া আবার পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া। এর মধ্যে প্রথম অবস্থানে থাকা মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৮’শ ৪৮ মিটার বা ২৯ হাজার ২৯ ফিট। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চূড়া কেটু’র উচ্চতা ৮ হাজার ৬’শ ১১ মিটার বা ২৮ হাজার ২’শ ৫১ ফিট। তৃতীয় অবস্থানে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার বা ২৮ হাজার ১’শ ৬৯ ফিট। যদিও ১৮৫২ সালের আগে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বলে মনে করা হতো। ১৯৫৫ সালের ২৫ মে ব্রিটিশ পবর্তারোহী দলের সদস্য জোয়ে ব্রাউন এবং জর্জ ব্যান্ড সর্বপ্রথম কাঞ্চনজঙ্ঘায় আরোহণ করেন।

সুউচ্চ এই চূড়া দেখতে প্রতি বছর অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক ছুটে যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলা শহরের টাইগার হিল পয়েন্টে। টাইগার হিলই হচ্ছে,কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দেখার সবচেয়ে আদর্শ জায়গা। তবে, কেউ কেউ যান সান্দাকপু বা ফালুট। আবার কেউ কেউ সরাসরি নেপালে গিয়েও কাঞ্চনজঙ্ঘায় পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। তবে যাদের এসব সুযোগ মেলে না সেইসব বাংলাদেশি পর্যটকে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ অবলোকন করতে ছুটে আসেন তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধায়। এখানে মেঘমুক্ত আকাশে দিনের প্রথম সূর্যকিরণের সঙ্গে সঙ্গেই চোখে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা। একটু বেলা বাড়লেই তেজোদীপ্ত রোদ যখন ঠিকরে পড়ে বরফাচ্ছাদিত পাহাড়ের গায়ে, কাঞ্চনজঙ্ঘা তখন ভিন্নরূপে ধরা দেয় পর্যটকের চোখে। যে রূপের টানে প্রতি বছর হাজারো পর্যটক আসেন তেঁতুলিয়ায়।

স্থানীয়রা জানান, দিনের শুরুতে কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রথমে একটু কালচে, এরপর ক্রমান্বয়ে টুকটুকে লাল, কমলা, হলুদ এবং সাদা বর্ণ ধারণ করে। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ পরিবর্তন দেখতে দূরবীন বা বাইনোকুলারের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকলে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা মেলে। অনেকে তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়ার বিষয়টি অপেক্ষাকৃত কম সামর্থ্যবান পর্যটকদের জন্য “সৃষ্টিকর্তার উপহার” বলে অবহিত করেন।

শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে যাওয়া পর্যটকদের জন্যই তেঁতুলিয়া ও বাংলাবান্ধা এলাকার আশেপাশে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি হোটেল-মোটেল ও পিকনিক স্পট।

স্থানীয় জাবেদ উদ্দিন জানান, “হঠাৎ করেই এ মৌসুমে প্রথম কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য চোখে পড়েছে। তাই,বন্ধু-বান্ধবদের জানিয়েছি,তারা অনেকে তেঁতুলিয়া আসছে।”

তেঁতুলিয়া রওশনপুরের কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটের ব্যবস্থাপক এ কে এম ওয়াহিদুল হক বলেন “ কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখা গেছে। চা বাগান, আনন্দ ধারা (পিকনিক স্পট) এবং কাঞ্চনজঙ্গা দেখতে এখানে প্রতিবছর অনেক পর্যটক ভিড় করেন। শীত কেবল নামছে। পুরোপুরি শীত নামলে পর্যটকের সংখ্যাও বেড়ে যাবে।”

চিত্ত-বিনোদনের অন্যতম পর্যটন স্পট এখন তেঁতুলিয়া। মানচিত্রের সবার উপরে থাকায় একনামে সবাই জানে সীমান্তবেষ্টিত পর্যটন খ্যাত এ জায়গাটি। প্রতিবছর কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখতে অগণিত দেশি-বিদেশি ভ্রমণ পিপাসুরা পাড়ি জমান। পর্বতশৃঙ্গ হিমালয়, কাঞ্চনজঙ্ঘা আর দার্জিলিংকে কাছ থেকে দেখা মেলে তেঁতুলিয়ায় এলেই। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নতুন রূপে ঢেলে সাজানো হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে পিকনিক কর্নার জেলা পরিষদ ডাকবাংলো। এখান হতেই হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সুবিধা দিতে নির্মাণ করা হয়েছে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। এ ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে কাঙ্ক্ষিত আকাশচুম্বী হিমালয় পর্বত, মেঘকন্যা কাঞ্চনজঙ্ঘা, দার্জিলিং এবং নদীর ওপারে ভারতের বিস্তৃত সবুজ চা বাগানসহ নানান দৃশ্য।

এছাড়া পিকনিক স্পট ডাকবাংলোতে বিভিন্ন ভাস্কর্য স্থাপনের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। কৃত্রিম ভাস্কর্য ও পশুপ্রাণি স্থাপনসহ শিশুদের খেলনা স্থাপন করে দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা তৈরি করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ডাইনিং রূমও। আর পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়েছে নানান দৃষ্টি আকর্ষিত ভাস্কর্য। এসব ভাস্কর্যের মধ্যে মাঝিপাড়া বাইপাসে সারস পাখি, কালান্দিগঞ্জ বাজারে বাংলাদেশের প্রথম ১ টাকা নোট, ভজনপুরে শাপলা এবং তিরনই হাটে মাছসহ নানান ইতিহাস নির্ভর ভাস্কর্য।

উত্তরে বাংলাদেশের শেষ সীমানা বাংলাবান্ধায় জিরোপয়েন্ট। এখানে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর। ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু হওয়ায় এ বন্দর দিয়ে প্রবেশ করা যায় ভারত, নেপাল,ভূটান ও চীনে। পাসপোর্ট ভিসা থাকলে অনায়াসেই ঘুরে আসা যায় ভারতের শিলিগুঁড়ি, দার্জিলিংসহ নানান দর্শনীয় স্থান এবং নেয়া যায় উন্নত চিকিৎসা সেবা। তবে করোনা পরিস্থিতে এখন এ স্থলবন্দরে দিয়ে ইমিগ্রেশন সুবিধা বন্ধ রয়েছে।

হিমালয়, কাঞ্চনজঙ্ঘা কাছ হতে দর্শনের পর মনোমুগ্ধকর সন্ধ্যা উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। ডাকবাংলোর তীরে বসেই ঝিরিঝিরি শীতল হাওয়ায় চোখে পড়বে সন্ধ্যার উত্তরের আকাশের আরেক সৌন্দর্য। দার্জিলিং চুড়ার ঢালু বেয়ে গাড়ি চলাচল। ঢালু পাহাড়ের পথ জুড়ে রঙিন ল্যাম্পস্টের আলো। নদী মহানন্দার তীর ঘেঁষা ভারতের কাটাতারের বেড়ার সাথে সারিসারি সার্চলাইটের আলো। সে আলোয় ১৫ কিলোমিটার জুড়ে মহানন্দাকে মনে হবে গড়ে উঠা কোন এক আধুনিক শহর। নেমে আসা সন্ধ্যার সূর্যাস্ত মনে হবে সাগরকন্যা কুয়াকাটার সূর্যাস্তের অবিকল নান্দনিক রূপ। মধ্য দুপুরের মাথার উপর সূর্যের কিরণে হীরের মতো জ্বলজ্বল করে হাসতে দেখা যাবে মহানন্দার চরের একেকটি বালুকণা। মন ছুটে যাবে বালুচরে হাঁটতে। পায়ের নিচে বালুর ঝিরঝির শিহরণে আরেক অনুভূতিতে মোহিত করবে হিমালয়ের এই রাজলক্ষী মহানন্দা। দৃষ্টি কাড়বে সবুজ চা বাগান।

দেশের তৃতীয় সবুজ চা অঞ্চল এখন তেঁতুলিয়া। তিনদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে প্রতিবেশী ভারত। সীমান্ত জুড়ে ভারতীয় সবুজ চা-বাগান, কাটাতারের বেড়া,সার্চলাইট,সুউচ্চ টাওয়ার আর কর্মররত চা শ্রমিকদের পাতা কাটার দৃশ্যও মুগ্ধ করবে যে কাউকে। মুগ্ধ করবে ভারতের দার্জিলিংয়ের ২০৬০ মিটার উঁচু মহালিদ্রাম পাহাড় হতে প্রবাহিত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বয়ে আসা নদী মহানন্দায় হাজার হাজার শ্রমিকদের পাথর উত্তোলনের দৃশ্য।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের চিহ্ন হিসেবে এ অঞ্চল যুদ্ধের সময় ছিল সম্পূর্ণ নিরাপদ। কোন পাক বাহিনী এ অঞ্চলে প্রবেশ করতে না পারায় একাত্তরের মুক্তাঞ্চল হিসেবে খ্যাত স্বপ্নের মতো সুন্দর এ সীমান্ত জনপদটি। এছাড়াও পর্যটকদের ঘুরে দেখার মতো রয়েছে গ্রিন টি গার্ডেন, দর্জিপাড়া কমলা ও চা বাগান,আনন্দধারা, টি ফ্যাক্টরি, মিনা বাজার, সমতল ভূমিতে পাথর কোয়ারি এবং ভিতরগড়ের ঐতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব নগরী ও মহারাজা দিঘী।

পর্যটকদের জন্য রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্রমণ পিপাসুরা যাতে নির্বিঘ্নে পর্যটন স্পটের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে পারেন সে বিষয়ে নিরাপত্তা জোরদার করে রেখেছে মডেল থানার পুলিশ। পর্যটকদের মনে করা হয় এ অঞ্চলের স্বাগত অতিথি। তাই পর্যটকদের কোন প্রকার যেন সমস্যা না হয় , সে বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সদা রয়েছেন তৎপর।

সর্বোপরী সীমান্ত জনপদের নির্ভেজাল প্রকৃতির বিশুদ্ধ বাতাস যেমন শরীর-মন জুড়িয়ে যাবে, তেমনি এখানকার সুস্বাদু পানি, খাবারও তৃপ্তি এনে দেবে পর্যটকদের।

 

টাঙ্গাইলে গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় রোজিনা আক্তার (২১) নামের এক গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) রাতে উপজেলার মিরকুটিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত রোজিনা আক্তার নাগরপুর উপজেলার কোকাদাইর গ্রামের মৃত মজের আলীর মেয়ে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামী মো. জয়নাল আবেদিন ওরফে বাবুকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে স্বামীর বাড়িতে আগুনে দগ্ধ হন রোজিনা আক্তার। পরে তাকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য নেয়া হয় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর শনিবার সকালে উন্নত চিকিৎসা জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলে পথিমধ্যে মারা যান রোজিনা।

দুই বছরের কন্যা সন্তানের জননী ছিলেন রোজিনা আক্তার। মৃত্যুর পর তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় বাবার বাড়িতে। রোজিনার মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন নাগরপুর থানা পুলিশকে খবর দিলে দুপুরে স্বামী জয়নাল আবেদিন ওরফে বাবুকে আটক করে পুলিশ।

রোজিনা আক্তারের বড় বোন হুনুফা আক্তার বলেন, প্রায় চার আগে উপজেলার মিরকুটিয়া গ্রামের নশের আলীর ছেলে মো. জয়নাল আবেদিন ওরফে বাবুর সঙ্গে আমার বোনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য বারবার চাপ সৃষ্টি করতে থাকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও স্বামী। শুক্রবার রাতে পরিকল্পিতভাবে আমার বোনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

নাগরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলম চাঁদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামী জয়নাল আবেদিন ওরফে বাবুকে থানায় আনা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রোজিনা আক্তারের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

 

বিয়ের পিঁড়িতে রাসিক মেয়রকন্যা

 

বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বড় মেয়ে ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা।

বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক মো. রেজভী আহমেদ ভূঁইয়া।

রেজভী আহমেদ ভূঁইয়া লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ব্যবসায়ী আমির হোসেন ভূঁইয়া ও রাজিয়া বেগমের সন্তান।

বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় রাজশাহী নগরীর উপশহরে মেয়রের বাসভবনে ঘরোয়া পরিবেশে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

রাসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, করোনা মহামারির কারণে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সীমিত করা হয়েছে।

বিয়েতে দুই পরিবারের নিকটাত্মীয়রাই কেবল অংশ নিয়েছেন। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বড় পরিসরে সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে।

এর আগে বুধবার রাতে ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা ও রেজভী আহমেদ ভূঁইয়ার গায়ে হলুদের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের দৌহিত্র ডা. অর্ণা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

এদিকে, ডা. অর্ণার গায়ে হলুদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সেই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।

রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ডা. অর্ণা জামান ও রেজভী আহমেদ ভূঁইয়ার নতুনের জীবনের জন্য শুভ কামনা জানিয়েছেন।

শীতের আগে ত্বক ভালো রাখতে যা করবেন

ভোরে উঠলে আপনি কুয়াশার দেখা পাবেন। যদিও প্রকৃতিতে হেমন্ত ঋতু, কিন্তু জানান দিচ্ছে শীতের আগমনের। শুধু কি প্রকৃতিতেই পরিবর্তন? নিজের দিকে তাকান। পরিবর্তনের শুরুটা দেখতে পাবেন। হাত-পা কিছুটা খসখসে হতে শুরু করেছে। ঠোঁটও শুকিয়ে যাচ্ছে। শরীরেও কেমন শুকনোভাব। শীতের এই আগাম বার্তা আপনাকে বলছে ত্বকের যত্ন নিতে। এই সময় থেকেই ত্বকের বাড়তি পরিচর্যা শুরু করা প্রয়োজন। বিস্তারিত প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়া টাইমস-

ঠোঁটের যত্ন
রাতে ঘুমাতে যাওয়া আগে ঠোঁটে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। পেট্রোলিয়াম জেলিও এক্ষেত্রে বেশ কাজে দেয়। পেট্রোলিয়াম জেলি চামড়ার খসখসে ভাব দূর করে সহজেই। রোদে বের হলে এটি ব্যবহার করবেন না। কারণ তাতে খুব সহজেই শুকনো হয়ে যায় ঠৌঁট। এর বদলে লিপস্টিক ব্যবহার করুন।

ময়েশ্চারাইজার
গোসলের পরে ময়েশ্চারাইজার লাগান। এতে ত্বকের অর্দ্রতা বজায় থাকবে। এছাড়াও ময়দা, দুধ, মধু মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতেও ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। যাদের ত্বক একটু বেশি শুকনো তারা ভারী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।

সুগন্ধি সাবান নয়
শীতে অতিরিক্ত কেমিক্যাল আপনার ত্বককে আরও রুক্ষ করে তুলতে পারে। তাই খুব চড়া গন্ধযুক্ত সাবান বা পারফিউম ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনে বডি মিস্ট ব্যবহার করুন। সবথেকে ভালো গ্লিসারিন যুক্ত সাবান ব্যবহার করতে পারলে।

ভিটামিন সি
আমলকি, লেবু, বাদাম, মাছের তেল এসবে পাওয়া যায় ভিটামিন সি। তাই এসময় খাদ্যতালিকায় এসব খাবার রাখার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ফলের রস খান। সুস্থ ও সতেজ থাকবেন।

গরম পানি
একেবারে ঠান্ডা পানি পান না করুন চেষ্টা করুন হালকা গরম পানি পান করতে। গোসলের সময়ও হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। তবে পানি যেন ফুটন্ত গরম না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। গোসলের আগে গায়ে তেল মাখুন।

 

নবজাতক শিশুর যত্ন

আপনার নবজাতকের সাথে প্রথম কয়েক মাস প্রথমবার পিতামাতা হওয়া মানুষদের জন্য বিশৃঙ্খল এবং অভিভূতকারী হতে পারে। আপনি নবজাতক শিশুর যত্ন সম্পর্কে সবার কাছ থেকে সব ধরণের পরস্পর বিরোধী পরামর্শ পাবেন। নবজাতকের যত্ন সম্পর্কে কোন পরামর্শ অনুসরণ করতে হবে তা নির্ধারণ করা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। নবজাতকের যত্ন নেওয়া ক্লান্তিকর এবং চ্যালেঞ্জিং, তবে এটি আপনার জীবনের সবচেয়ে বিস্ময়কর এবং ফলপ্রসূ অভিজ্ঞতাও।

নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়ার কৌশল

এটি আপনার প্রথমবার হলে, একটি নবজাতকের যত্ন নেওয়া স্পষ্টতই একটি চ্যালেঞ্জ। সুতরাং, এখানে দশটি উপায় রয়েছে যা আপনাকে নবজাতকের যত্ন নিতে সহায়তা করবে:

খাওয়ানো
শিশুকে সঠিক সময়ে খাওয়ানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। নবজাতককে প্রতি ২ থেকে ৩ ঘণ্টায় খাওয়ানো উচিত, যার অর্থ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে ৮-১২ বার দুধ খাওয়াতে নিতে হবে। শিশুর জীবনের প্রথম ৬ মাসে, শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। স্তনের দুধের মধ্যে অত্যাবশ্যক পুষ্টি এবং অ্যান্টিবডি রয়েছে যা শিশুর বেঁচে থাকা এবং বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়। কমপক্ষে ১০ মিনিট ধরে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান। আপনার শিশুর ঠোঁটের কাছে স্তনটি ধরে রাখুন যতক্ষণ পর্যন্ত না সে দৃঢ়ভাবে সেটির সাথে সংযুক্ত হয় এবং চোষা শুরু করে। শিশুর সঠিকভাবে স্তনের সাথে সংযুক্ত হলে, মা তার স্তনে কোনো ব্যথা অনুভব করবে না। শিশুর খাওয়া শেষ হলে স্তনটি কম পূর্ণ বোধ করা উচিত। এই একটি ইঙ্গিত যে শিশু যথেষ্ট দুধ পাচ্ছে। স্তনের দুধ যদি না খাওয়ান, তবে শিশুকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে একটি ফরমুলা খাওয়ান। প্রতিবার খাওয়ানোতে বাচ্চাকে ৬০ থেকে ৯০ মিলিলিটার ফরমুলা খাওয়াতে হবে।

ঢেঁকুর তোলা

বাচ্চাকে খাওয়ানো হয়ে গেলে, তাকে ঢেঁকুর তোলাতে হবে। বাচ্চারা খাওয়ানোর সময় বায়ু গিলে ফেলে, যা তাদের পেটে গ্যাস এবং শূলবেদনা ঘটায়। ঢেঁকুর এই অতিরিক্ত বায়ু বের করে দেয়, এইভাবে পাচনে সাহায্য করে এবং উগরে দেওয়া ও পেট ব্যথা আটকায়। শিশুটিকে আস্তে আস্তে আপনার বুকের কাছে এক হাত দিয়ে ধরে রাখুন। তার চিবুক আপনার কাঁধে এলিয়ে দিন। আপনার অন্য হাত দিয়ে খুব আস্তে আস্তে তার পিঠে টোকা দিন বা চাপড়াতে থাকুন যতক্ষণ না সে ঢেঁকুর তোলে।

কিভাবে আপনার নবজাতককে ধরতে হবে

এটা নিশ্চিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে তাকে ধরে রাখার সময় আপনি তার মাথা এবং ঘাড়কে আপনার এক হাত দিয়ে অবলম্বন দেবেন। এর কারণ হল তার ঘাড়ের পেশী এতটা শক্তিশালী নয় যে মাথাকে কোনো অবলম্বন ছাড়াই ধরে রাখতে পারবে। মেরুদণ্ড এখনও বাড়ছে এবং শক্তিশালী হয়ে উঠছে। 3 মাস বয়স হলে তবেই ঘাড়টি নিজে নিজে মাথাকে অবলম্বন দিতে পারবে। সুতরাং নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়ার সময় আপনার শিশুর মাথা এবং ঘাড়কে অবলম্বন দেওয়ার দিকে মনোযোগ দিন।

আম্বিলিকাল কর্ডের গোঁড়াটির যত্ন

প্রথম মাসে নবজাতক শিশুর যত্নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল আম্বিলিকাল কর্ডের গোঁড়াটির যত্ন নেওয়া। প্রথম ২-৩ সপ্তাহে আপনার শিশুকে স্নান করাবেন না। তার বদলে অল্প উষ্ণ জল দিয়ে একটি স্পঞ্জ স্নান দিন। নাভি এলাকা পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখুন। বাচ্চাদের ডায়পারটি ভাঁজ করে নিচে নামিয়ে রাখুন যাতে নাভির গোঁড়াটি শুকিয়ে যায়। নাভি এলাকায় হাত দেওয়ার আগে আপনার হাত নির্বীজিত করুন। পরিষ্কার করতে, একটি আর্দ্র কাপড় ব্যবহার করুন এবং একটি পরিষ্কার, শোষক কাপড় দিয়ে শুকনো করুন। কর্ডের গোঁড়ায় সংক্রমণের লক্ষণ আছে কিনা দেখুন। যদি নাভি অঞ্চলে লাল-ভাব, ফোলা, গন্ধযুক্ত স্রাব বা পুঁজ থাকে এবং রক্তপাত হয়, তবে শিশুটিকে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান।

ডায়পার পরানো

প্রসবের পরে নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়ার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ঘন ঘন ডায়পার পরিবর্তন করা। আপনার শিশু পর্যাপ্ত বুকের দুধ বা ফরমুলা পেলে, নিয়মিত মলত্যাগের সাথে সাথে সে দিনে কমপক্ষে 6 থেকে 8 টি ডায়পার ভেজাবে। ডায়পারটি যেই ভর্তি মনে হবে, তখনই সেটি বদলে দিন। আপনাকে এমনকি এটি দিনে 10 বারও পরিবর্তন করতে হতে পারে। একটি নোংরা ডায়পার পরিবর্তন করার জন্য, আপনার একটি চেঞ্জিং শিট, মৃদু ডায়াপার ওয়াইপ, ডায়াপার ফুসকুড়ি ক্রিম বা শিশুর পাউডার এবং পরিষ্কার ডায়পার প্রয়োজন হবে। ইউটিআই প্রতিরোধের জন্য আপনার কন্যা সন্তানের শরীরের সামনে থেকে পিছনের দিক পর্যন্ত মুছে দিন, পিছনের দিক থেকে সামনের দিক পর্যন্ত নয়। এবং আপনার শিশুকে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা ডায়পার ছাড়া থাকতে দিন।

গোসল:

নবজাতককে গোসল করানো একটি সূক্ষ্ম কাজ। কর্ডের গোঁড়াটি শুকিয়ে খসে যাওয়ার পর, সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার শিশুকে স্নান করানো উচিত। আপনি স্নানের জন্য শিশুকে নিয়ে যাওয়ার আগে, গোসেল এবং পরিবর্তনের সব সামগ্রী প্রস্তুত রাখুন। ঘুমের ঠিক আগে গোসল করালে শিশুদের আরো গভীর ঘুমে সাহায্য করে। আপনার একটি শিশুর বাথটব, অল্প উষ্ণ জল, হালকা শিশুর সাবান বা বডি ওয়াশ, একটি ওয়াশক্লথ, নরম তোয়ালে, শিশুর লোশন বা ক্রিম, নতুন ডায়পার, এবং শিশুর পরিষ্কার কাপড় প্রয়োজন হবে। আপনার সঙ্গী বা পরিবারের সদস্যকে সাহায্যের জন্য ডেকে নিন, যাতে একজন ব্যক্তি শিশুর ঘাড় ও মাথা জলের উপরে ধরে রাখতে পারেন এবং অন্যজন শিশুকে স্নান করাতে পারেন। সাবধানে সাবান ব্যবহার করুন। বাচ্চাদের জননাঙ্গ, স্কাল্প, চুল, ঘাড়, মুখ, এবং নাকের চারপাশে জমে যাওয়া শুকনো সর্দি ওয়াশক্লথ দিয়ে পরিষ্কার করুন। অল্প উষ্ণ জল দিয়ে আপনার শিশুর শরীর ধুয়ে ফেলুন। এই কাজ হয়ে গেলে, শিশুর দেহ নরম তোয়ালে দিয়ে শুকিয়ে নিন, লোশন প্রয়োগ করুন এবং একটি নতুন ডায়পার এবং জামা পরিয়ে দিন।

মালিশ
মালিশ আপনার শিশুর সাথে বন্ধন তৈরি করার একটি দুর্দান্ত উপায়। এটি শিশুকে ঘুমাতে সাহায্য করে এবং রক্ত সঞ্চালন ও হজম উন্নতিতেও সহায়তা করে। আপনার হাতে অল্প পরিমাণে শিশুর তেল বা লোশন ছড়িয়ে নিন। তারপর, আস্তে আস্তে এবং ছন্দময় গতিতে তার শরীরে টোকা দিন। মালিশ করার সময় তার চোখে চোখ রাখুন এবং তার সাথে কথা বলুন। বাচ্চাকে মালিশ করার ভালো সময় হল তার স্নানের আগে।

আপনার নবজাতককে সামলানো

আপনার বাচ্চার সাথে খেলার সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। কখনো আপবার বাচ্চাকে ঝাঁকাবেন না, কারণ তার অভ্যন্তরীণ অঙ্গ কমনীয়, জোরে ঝাঁকালে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাচ্চাকে বাতাসে উপরের দিকে ছুঁড়ে দেবেন না, কারণ এটি বিপজ্জনক হতে পারে। শিশুকে স্পর্শ করার আগে সর্বদা হাত নির্বীজিত করুন বা ধুয়ে ফেলুন, কারণ তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিকশিত নয়, এবং এটি সহজেই সংক্রামিত হতে পারে। আপনি যদি আপনার শিশুকে বাইরে নিয়ে যান তবে অবশ্যই তাকে নিরাপদভাবে স্ট্রলার, গাড়ীর আসন বা বাচ্চার ক্যারিয়ারের সাথে বেঁধে রাখুন। প্রতিদিন কিছুক্ষণের জন্য আপনার বাচ্চাকে উপুড় করে শুইয়ে রাখুন। এটি তার ঘাড় এবং পিঠের পেশীকে শক্তিশালী করবে। এটি তার দৃষ্টিকেও উন্নত করবে, কারণ সে উপরের দিকে ও পাশের দিকে দেখতে পাবে।

ঘুমানো

নবজাতকদের প্রথম ২ মাসে প্রায় ১৬ ঘন্টা করে ঘুমাতে হবে। তারা সাধারণত ২ থেকে ৪ ঘন্টা ধরে ছোট ছোট করে ঘুম নেয় এবং তারা ক্ষুধার্ত হলে বা ভিজিয়ে ফেললে জেগে ওঠে। শিশুকে প্রতি ৩ ঘণ্টায় যেহেতু খাওয়ানোর প্রয়োজন হয়, তাই আপনাকে তাকে জাগিয়ে তুলে খাওয়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। সে নবজাতকদের আদর্শ ঘুমের প্যাটার্ন অনুসরণ না করলে চিন্তা করবেন না। প্রতিটি শিশু আলাদা এবং তার একটি ভিন্ন ঘুমচক্র আছে। ঘুমের সময় আপনার বাচ্চার মাথার অবস্থানটি পালটে দিতে ভুলবেন না। এটি মাথার উপর চ্যাপ্টা দাগ গঠনে বাধা দেয়। শিশুর যাতে দমবন্ধ না হয়ে যায়, তাই ঘুম পাড়ানোর সময় তাকে অবশ্যই চিত করিয়ে শোয়াবেন। মা যেন শিশুর সাথে সাথে ঘুমিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বাচ্চা ঘুমানোর সময়টিকে শান্তিতে স্নান করার জন্য বা খাবার খাওয়ার জন্যও ব্যবহার করতে পারেন।

নখ ছাঁটাই
নবজাতকের নখ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বাচ্চা তার হাত নাড়াচাড়া করে তার নিজের মুখ বা শরীর আঁচড়ে ফেলতে পারে। অতএব, শিশুর নখ ছাঁটাই রাখা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর নখ নরম হয়, তাই শিশুর নখের ক্লিপার ব্যবহার করুন। শিশুর ঘুমানোর সময় ধীরে ধীরে নখ ছেঁটে দেওয়ার চেষ্টা করুন। খুব গভীরভাবে ছাঁটবেন না কারণ শিশুর নখ খুব নমনীয় এবং এটি শিশুর জন্য বেদনাদায়ক হতে পারে। নখের প্রান্তগুলি ছাঁটবেন না কারণ এটি নখকুনির কারণ হতে পারে।

নতুন বাবা-মারা পরিবার বা বন্ধুদের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে পারেন যাতে তারা বিশ্রাম নিতে পারেন এবং নিজেদের যত্ন নিতে পারেন। প্রথমবার যারা বাবা-মা হয়েছেন তারা নবজাতক শিশুর যত্নের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে খুব বিহ্বল হতে পারেন। এই নিবন্ধটি নতুন মায়েদের সাহায্য করবে আস্থার সাথে তাঁদের নবজাতকদের যত্ন নিতে। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট

 

নভেম্বরের শেষ দিকে সীমিত পরিসরে খুলতে পারে স্কুল-কলেজ

চলতি বছরের নভেম্বরের শেষ দিকে সীমিত আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

তিনি বলেছেন, ‘আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এমন চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আগে করোনা পরিস্থিতির বিষয়টি আগে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহাবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক ও বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘গত মার্চ মাস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ জন্য সংসদ টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমে ক্লাস করানো হলেও সশরীরে ক্লাস করানো সম্ভব না হওয়ায় কেউ কেউ পিছিয়ে আছে। তাদের কথা চিন্তা করে সীমিত আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ করা হবে। এরপর একটি মূল্যায়ন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। এরপর যারা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত মনে করবেন তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন।’

আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষা পেছানো হবে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পরীক্ষা পেছানোর এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে হয়তো নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা না নিয়ে তা কিছুটা পিছিয়ে আয়োজন করা হবে। তার আগে আমরা সীমিত আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘নতুন করে আগামী দুই সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ে আমরা মনিটরিং করে সীমিত আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ফের বাড়ানো হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বাতিল করা হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। নেয়া হবে না বার্ষিক পরীক্ষাও।

 

দূরদর্শী জাসিন্ডা

সবচেয়ে কম বয়সী নারী সরকারপ্রধান হিসেবে প্রথম মেয়াদেই ইতিহাস গড়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন। সংকটের সময় সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন, নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন বারবার। আর এসব অর্জনের জোরেই দ্বিতীয় মেয়াদেও নির্বাচিত জাসিন্ডা। বিপুল ভোটে জয় পেয়ে শনিবার আবারও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হলেন তিনি।

নিউজিল্যান্ডের মাউরি আদিবাসী অধ্যুষিত একটি ছোট্ট শহর হামিলটনে ১৯৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন জাসিন্দা আর্ডার্ন। সে সময় ওই গ্রামের শিশুদের পায়ে পরার জুতো পেত না। এমনকি দুপুরের খাবারও জুটতো না। আর এ দুর্দশাই অল্প বয়সে রাজনীতিতে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করে তাকে। পুলিশ কর্মকর্তা বাবা আর স্কুল কর্মচারী মায়ের দ্বিতীয় সন্তান জাসিন্দা মাত্র ১৭ বছর বয়সেই এক আত্মীয়ার হাত ধরে নিউজিল্যান্ডের লেবার পার্টিতে যোগ দেন।

২০১৭ সালে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ৩৭ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করেন জাসিন্দা। এরপর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালেই সন্তান জন্ম দেয়া দ্বিতীয় নারী হিসেবে ২০১৮ সালে ইতিহাসের পাতায় আবারও লেখান নিজের নাম। কিন্তু ২০১৯ সালের মার্চে জুমার নামাজের সময় আলোচিত ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলার পরই তাকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

সংকটের সময় সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়ান এই নেতা। কার্যকর পরিবর্তন আনেন নিজ দেশের অস্ত্র আইনে। এরপর চলতি বছর করোনা মহামারি মোকাবিলায় সফলতার কারণে আরও একবার তার জয়জয়কার প্রতিধ্বনিত হয় সারা বিশ্বে। আর এসব অর্জনই দ্বিতীয় মেয়াদে তাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব এনে দিয়েছে।

চুল পড়া বন্ধ করবে বেদানার রস

 

দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও তেমন সুস্বাদু। রসে টইটম্বুর এর প্রতিটি দানা। বেদানা খেতে পছন্দ করেন না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বেদানায় আছে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আরও অনেকরকম শক্তিশালী উপাদান। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় বেদানা রাখলে অনেক উপকার মিলবে।

বেদানায় রয়েছে পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেদানা খেতে পারেন। বেদানায় রয়েছে তিন প্রকার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। ট্যানিন, অ্যান্থো সিয়ানিন ও এলাজিক অ্যাসিড। অ্যান্থোসিয়ানিন দেহ কোষ সুস্থ রাখার ফলে ভাইরাসের সংক্রমণ দূরে রাখতে পারে।

প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকার কারণে বেদানা সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, কমায় স্ট্রেসও। হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ও কমে অনেকটাই।

আর্টারি পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে বেদানা। বেদানার রস রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে দারুণ উপযোগী। এর পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হলে প্রতিদিন বেদানার রস খেতে পারেন।

ব্যথা ও বাত, অস্টিওআর্থারাইটিস, পেশির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে বেদানা। তরুণাস্থির ক্ষয় রোধ করতেও এই ফল দারুণ উপকারী।

চুল পড়া নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন না, এমন মানুষ কমই আছেন। আপনিও এমন সমস্যায় ভুগলে প্রতিদিন বেদানার রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন হেয়ার ফলের মাত্রা তো কমবেই, সেইসঙ্গে চুলের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পাবে চোখে পড়ার মতো।

নিয়মিত বেদানা খেলে ত্বকের নানা সমস্যা দূর হয়। দূর হয় বলিরেখাও। সেই সঙ্গে ডার্ক স্পট এবং ডার্ক সার্কেল দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় অনেকখানি।

 

পিনাট বাটার তৈরির সহজ রেসিপি

ফ্যাট ও প্রোটিন থাকার পরেও শরীরের জন্য উপকারী পিনাট বাটার। প্রোটিন এবং ফাইবার থাকায় পিনাট বাটার খেলে আপনার পূর্ণাঙ্গ খাদ্য গ্রহণ সম্ভব হবে। ফলে ফাস্ট ফুড এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে আসবে। একজন মানুষের দিনে দুই টেবিল চামচ পিনাট বাটার খাওয়া উচিত। এই দুই টেবিল চামচ পিনাট বাটারে আছে ৭ গ্রাম প্রোটিন। চলুন জেনে নেয়া যাক পিনাট বাটার তৈরির রেসিপি-

উপকরণ:
বাদাম-২ কাপ
তেল-২ চা চামচ
মধু- ২ চা চামচ
কোকো পাউডার- ২ চা চামচ
গরম মশলা গুঁড়া- ১/২ চা চামচ
চকোলেট চিপস- ২ চা চামচ
লবণ-স্বাদমতো।

প্রণালি:
প্রথমে একটি পাত্রে বাদামগুলো দিন। মাঝারি আঁচে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত ভেজে নিন। এবার ভাজা বাদামগুলো একটি ব্লেন্ডারে দিয়ে পাঁচ মিনিট ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। ব্লেন্ড করা ওই বাদামের সঙ্গে তেল, কোকো পাউডার, গরম মশলার গুঁড়া, মধু, চকলেট চিপস এবং লবণ দিয়ে আরও পাঁচ মিনিট ব্লেন্ড করুন। হাত দিয়ে দেখে নিন সবগুলো উপকরণ ঠিকমতো ব্লেন্ড হয়েছে কি-না। এরপর একটি বোতলে বাদামের এই মিশ্রণটি রেখে ফ্রিজে ঠান্ডা করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে স্বাস্থ্যকর পিনাট বাটার।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আবেদনের নিয়ম

 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) অধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সাড়ে ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানা গেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নিয়োগ শাখার সহকারী পরিচালক আতিক বিন সাত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এ বিষয়ে ডিপিই থেকে প্রকাশিcত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজস্বখাতভুক্ত ‘সহকারী শিক্ষক’র শূন্যপদ এবং জাতীয়করণ করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পিডিইপি-৪ এর আওতায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির জন্য রাজস্বখাতে সৃষ্ট ‘সহকারী শিক্ষক’ পদে জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ এর ১৩তম গ্রেডে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হবে। তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের প্রার্থীরা এতে আবেদন করতে পারবেন না।

আবেদন করবেন যেভাবে : বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৫ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে। শেষ হবে ২৪ নভেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে।

এ পদে প্রার্থীদের অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। http://dpe.telelalk.com.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে অনলাইনে আবেদনের ফরম পূরণের নির্দেশনা পাওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা অনুযায়ী অনলাইন আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে।

অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ করে জমা করার পর অ্যাপ্লিকেশন কপি প্রিন্ট করতে হবে। সঠিকভাবে পূরণকৃত অ্যাপ্লিকেশন কপির ইউজার আইডি দিয়ে আবেদন ফি জমা দিতে হবে। একবার আবেদন ফি জমা দেওয়ার পর অ্যাপ্লিকেশন ফরম কোনো অবস্থায়ই সংশোধন বা প্রত্যাহার করা যাবে না। শুধু ইউজার আইডিপ্রাপ্ত প্রার্থীরা এই সময় পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত এসএমএসের মাধ্যমে ফি প্রদান করতে পারবেন।

আবেদনকারীকে একটি ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দেওয়া হবে। এই ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড সব সময়ের জন্য প্রার্থীকে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রার্থীকে পরীক্ষার ফি বাবদ অফেরৎযোগ্য সার্ভিস চার্জসহ ১১০ টাকা যেকোনো টেলিটক প্রি-পেইড মোবাইল নম্বর থেকে এসএমএসের মাধ্যমে যথাসময়ে প্রেরণ করতে হবে।

বয়সসীমা : প্রার্থীদের বয়স ২০ অক্টোবর ২০২০ তারিখে সর্বনিম্ন ২১ বছর এবং ২৫ মার্চ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০ বছর হতে হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে এ বয়সসীমা হবে ৩২ বছর। বয়স নিরূপণে এফিডেভিট গ্রহণযোগ্য নয়।

শিক্ষাগত যোগ্যতা : যে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা সম্মান বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে।

আবেদন ফি : ১১০ টাকা। যার মধ্যে অফেরৎযোগ্য ১০০ টাকা আবেদন ফি ও ১০ টাকা টেলিটকের সার্ভিস চার্জ।

নির্বাচন পদ্ধতি : সহকারী শিক্ষক পদে এর আগে ৮০ নম্বরের এমসিকিউ পদ্ধতিতে লিখিত পরীক্ষা ও ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হতো। বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে প্রশ্ন থাকত। তবে এবারের নিয়োগে কত নম্বরের পরীক্ষা হবে এ বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এসব পরীক্ষার তারিখ পরে অধিদফতরের ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে বলে অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।

যেসব কাগজপত্র লাগবে : প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আবেদনপত্রের সঙ্গে অনলাইনে দাখিলকৃত আবেদনের ফটোকপি, পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি, প্রথম শ্রেণির গেজেটেড সরকারি কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কিত সব মূল বা সাময়িক সনদপত্র এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌরসভার মেয়র/সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিকত্ব সনদপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জমা দিতে হবে।

বেতন : ১১০০০-২৬৫৯০ টাকা (গ্রেড-১৩) (জাতীয় বেতনস্কেল, ২০১৫ অনুযায়ী)।

ডিপিই সূত্রে জানা গেছে, এবারের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারাদেশে ২৫ হাজার ৬৩০ জন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক এবং ৬ হাজার ৯৪৭ শূন্যপদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ( ডিপিই) অধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সাড়ে ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানা গেছে।

সোমবার (১৯ অক্টোবর) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নিয়োগ শাখার সহকারী পরিচালক আতিক বিন সাত্তার জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে ডিপিই থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজস্বখাতভুক্ত ‘সহকারী শিক্ষক’ এর শূন্যপদ এবং জাতীয়করণ করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পিডিইপি-৪ এর আওতায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির জন্য রাজস্বখাতে সৃষ্ট ‘সহকারী শিক্ষক’ পদে জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ এর ১৩তম গ্রেডে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হবে। তবে তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের প্রার্থীরা এতে আবেদন করতে পারবেন না।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৫ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে। শেষ হবে ২৪ নভেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে। সহকারী শিক্ষকদের বেতন হবে জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ এর গ্রেড ১৩ অনুযায়ী ১১০০০-২৬৫৯০ টাকা।

বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, প্রার্থীদের বয়স ২০ অক্টোবর পর্যন্ত সর্বনিম্ন ২১ বছর এবং গত ২৫ মার্চ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০ বছর। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে এ বয়সসীমা হবে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ৩২ বছর।

শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে যে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএ-সহ স্নাতক বা সম্মান বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে।

আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা। আগামীকাল চারটি জাতীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। বিজ্ঞপ্তির বিস্তারিত পাওয়া যাবে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে (http://dpe.teletalk.com.bd)।

ডিপিই সূত্রে জানা গেছে, এবারের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারাদেশে ২৫ হাজার ৬৩০ জন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক এবং ৬ হাজার ৯৪৭ শূন্যপদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।

দাফনকালে জীবিত সেই নবজাতকের অবস্থা আশঙ্কাজনক

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মৃত ঘোষণার পর কবরস্থানে দাফনের সময় জীবিত হওয়া সেই নবজাতকের অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক। নবজাতকটি পূর্ণ সময়ের অনেক আগেই জন্ম হয়। এখনো সে এনআইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে যেকোনো সময় তার অবস্থা খারাপ হতে পারে।

সোমবার (১৯ অক্টোবর) রাতে কথাগুলো বাংলানিউজকে জানান ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন।

নাসির উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা। আজকে তদন্ত কমিটির সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। তারা বলেছে, মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে রিপোর্টটি আমাদের হাতে দেওয়ার কথা। তদন্ত রিপোর্টে যদি কারো বিরুদ্ধে অবহেলার প্রমাণ হয়, সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এরআগেও আমাদের এখানে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। তখন ওই চিকিৎসককে আমরা আর এখানে ট্রেনিং দেয়নি। এক পর্যায়ে তিনি দেশের বাইরে চলে যান। তবে তদন্তে যে দোষি প্রমাণিত হবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত রিপোর্টে হাতে পেলেই বিস্তারিত মঙ্গলবার জানানো হবে।

ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে নবজাতক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মনীষা ব্যানার্জি সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ওই নবজাতকটিকে এখন ওপেন ইনকিউবেটরে অক্সিজেনের মাধ্যমে আছে। এখনো মুখে খাওয়ানোর সময় আসেনি। স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, একটি নবজাতক পরিপূর্ণভাবে জন্ম নিতে ৪০ সপ্তাহ লাগে। আর এই বাচ্চাটা ২৬ সপ্তাহের মধ্যেই জন্ম নিয়েছ। পরিপূর্ণ সময়ের অনেক আগেই তার জন্ম হয়েছে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। ওজন মাত্র ৯০০ গ্রাম।

তিনি আরও জানান, তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে এটুকু বলতে পারি, মঙ্গলবার রিপোর্টটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হবে।

 

লুনার কোমরতাঁতের পণ্য যাচ্ছে ভারতে

টিলার ওপরে নিভৃত ত্রিপুরা গ্রাম সুধীর মেম্বারপাড়া। এই গ্রামেই লুনা ত্রিপুরার (২৫) বাড়ি। গ্রামে এমনিতেই সবাই সবাইকে চেনেন। তার ওপর কোমরতাঁতে লুনার সাফল্য বাড়তি পরিচিতিও এনে দিয়েছে। বাড়ি খুঁজে পেতে সমস্যা হলো না। মাটির দেয়াল আর টিনের চালাঘর। উঠানে আম-কাঁঠালগাছের ছায়ায় বসে কোমরতাঁতে কাজ করছিলেন লুনা ত্রিপুরা। অতিথির আগমনে পাশের একজনকে কোমরতাঁতটি বুঝিয়ে দিয়ে কথা বলতে এলেন তিনি।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার সুধীর মেম্বারপাড়ার বাসিন্দা লুনা ত্রিপুরা নিজের তৈরি ত্রিপুরা নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক রিনাই ও রিসা অনলাইনে বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছেন। ফেসবুকে লুনার রিনাই-রিসার বিক্রির পাতাটি আগেই দেখা হয়েছিল। যে খবরের জন্য তাঁর বাড়িতে যাওয়া তা হলো, লুনা সম্প্রতি ভারত থেকেও রিনাই-রিসা তৈরির ফরমাশ পাচ্ছেন। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে একজন অনলাইন দেখে ইতিমধ্যে সাতটি রিনাই-রিসার ফরমাশ দিয়েছেন। রিসা হলো ওড়নার মতো পোশাক। আর রিনাই হলো নিচের অংশ, যা শাড়ির মতো পেঁচিয়ে পরতে হয়।
বিজ্ঞাপন

লুনা ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রামের শিবমন্দিরে মন্দিরভিত্তিক প্রকল্পে সাড়ে চার হাজার টাকা বেতনে শিক্ষকতা করছিলেন। স্বামী ইরিন ত্রিপুরা বেকার। এ টাকায় সংসার চলছিল না। ছোটকাল থেকে কোমরতাঁতের ওপর আমার অন্য রকম দক্ষতা ছিল। একদিন ছোট ভাই দিগন্ত ত্রিপুরা পরামর্শ দিলেন, বাড়িতে বসে না থেকে রিনাই-রিসা তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করলে ভালো হবে।’ যেই ভাবা, সেই শুরু। মার্চের শেষ সপ্তাহে রিনাই-রিসা ফেসবুক পেজ খুলে অনলাইনে পোশাকের ব্যবসা শুরু করেন। সাড়াও পান ভালো। এখন খরচ বাদে প্রতি মাসেই লুনার ১০-১২ হাজার টাকা আয় হচ্ছে, যাতে সংসারটা মোটামুটি চলে যাচ্ছে। এ জন্য অবশ্য সংসারের কাজ সামলে গভীর রাত পর্যন্ত তাঁত চালাতে হয়।

লুনা জানান, সম্প্রতি কোমরতাঁতে তৈরি করা রিনাই-রিসার কারুকাজ দেখে ভারতের আগরতলা থেকে একজন ১০ হাজার টাকায় দুটি রিনাই-রিসা কেনেন। সেটি তাঁদের ভালো লাগায় আরও সাতটির ফরমাশ দিয়েছেন। ভবিষ্যতে আরও ফরমাশ বাড়বে বলে তিনি মনে করছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও চাহিদা আসছে। বর্তমানে ১০ জন নারীকে দিয়ে কমিশনে কোমরতাঁতে রিনাই তৈরি করাচ্ছেন। আর তিনি নিজে মাসে চারটি রিসা তৈরি করছেন।

লুনার কাজে সাহায্য করছেন ছোট ভাই দিগন্ত ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ভারত থেকে ভবিষ্যতে আরও অর্ডার পাবেন বলে সেখানকার ক্রেতারা তাঁদের জানিয়েছেন।

টতবে তাঁরা জানান, কেবল কোনো আত্মীয় ভারতে বেড়াতে গেলে তাঁদের মাধ্যমে তাঁরা রিনাই-রিসা পাঠাতে পারেন। এর বাইরে তাঁদের লেনদেনের অন্য কোনো মাধ্যম নেই।

লুনার কাছ থেকে অনলাইনে রিনাই-রিসা কিনেছিলেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার মধুপুর এলাকার কোয়েলি ত্রিপুরা (২২)। তিনি বলেন, অনলাইনে কেনাকাটা নিয়ে একটা ভয় বা সন্দেহ কাজ করে। কারুকাজে মুগ্ধ হয়ে সন্দেহ নিয়েই তিনি অর্ডার করেছিলেন। পণ্য হাতে পেয়ে মনে হয়েছে ঠকেননি। লুনার কারুকাজ খুবই চমৎকার।

লুনার সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন নারীও। তাঁদের একজন চরণ দেবী ত্রিপুরা (২৪) বলেন, তিনি নয়টি রিনাই-রিসা তৈরি করে চারটি নিজে বিক্রি করেন। বাকি পাঁচটি অনলাইনে বিক্রির জন্য লুনাকে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের দীঘিনালা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকœহাশীষ ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, ত্রিপুরা নারীরা এমনিতেই অনেক পরিশ্রমী। সাধারণ পরিবারের অধিকাংশ নারী নিজেদের পোশাক (রিনাই-রিসা) নিজেরাই তৈরি করেন। লুনা ত্রিপুরা সংসারের কাজকর্ম সামলে কোমরতাঁতে রিনাই-রিসা তৈরি করে তা অনলাইনে বিক্রি করে এখানকার সবার কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন। আর পুঁজি গঠনে সরকারিভাবে সহায়তা পেলে তা এখানকার নারীদের খুবই উপকার হয়।

 

করোনাকালেও লাভের মুখ

আপা, কাজ কেমন চলছে?
হেসে জবাব দিলেন, ‘আপনাদের দোয়ায় ভালো চলছে। শিপমেন্ট শুরু করেছি।’
বেশির ভাগই নাকি প্রচণ্ড লোকসানে আছেন? অনেকের ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেছে?
‘এটা খুবই সত্যি। তবে ভাগ্যক্রমে আমি এই সময়ে অনেক অর্ডার পেয়েছি। কর্মীদের মুখেওহাসি ফুটেছে।’
কথা হচ্ছিল নারী উদ্যোক্তা কোহিনুর ইয়াসমিনের সঙ্গে। তাঁর প্রতিষ্ঠান তরঙ্গ পাট, কচুরিপানা, হোগলাপাতা, শণ আর সিমেন্টের বস্তা থেকে ব্যাগ, ঝুড়িসহ বিভিন্ন শৌখিন পণ্য তৈরি করে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের এক সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, করোনাকালে ৬৭ শতাংশ নারী উদ্যোক্তার আয় কমেছে। তবে এই হাহাকারের মধ্যেও কেউ কেউ আলোর দিশা পেয়েছেন। সুড়ঙ্গের শেষ মাথায় আলোর রেখা লক্ষ্য করে নিজেরা এগোচ্ছেন। অন্যদের অনুপ্রাণিত করছেন। এমন চারজন হস্তশিল্পজাত পণ্য উৎপাদনকারী নারী উদ্যোক্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁদের কারখানার চাকা আবার ঘুরছে। বিদেশ থেকে রপ্তানির চাহিদা আসা শুরু করেছে। কেউ দেশে কাজের আদেশ বা অর্ডার পেয়েছেন। কেউবা বিক্রি আর অর্ডার ধরতে ভিনদেশি অনলাইন মেলায় যোগ দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ হস্তশিল্প প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাক্র্যাফটে সমবেত ৪৫০ জন উদ্যোক্তা। তাঁদের ৯৫ জন অর্থাৎ এক-পঞ্চমাংশ নারী। উদ্যোক্তাদের সব প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে বাংলাক্র্যাফট ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ৪০৭ কোটি টাকা রপ্তানি আয়ের হিসাব দিচ্ছে। গত অর্থবছরে করোনার প্রভাবে রপ্তানি কমেছে। এই অর্থবছরে ৭০টি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করেছে ২৬৬ কোটি টাকার বেশি।

করোনাকালের শুরুতে প্রায় বন্ধ থাকার পরে সম্প্রতি কিছু কিছু করে বিক্রি বেড়েছে। গত জুলাই থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৮টি প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা।

বাংলাক্র্যাফটে সমবেত ৪৫০ জন উদ্যোক্তা। তাঁদের ৯৫ জন অর্থাৎ এক-পঞ্চমাংশ নারী। উদ্যোক্তাদের সব প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে বাংলাক্র্যাফট ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ৪০৭ কোটি টাকা রপ্তানি আয়ের হিসাব দিচ্ছে। গত অর্থবছরে করোনার প্রভাবে রপ্তানি কমেছে। এই অর্থবছরে ৭০টি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করেছে ২৬৬ কোটি টাকার বেশি।

ভাগ্যের চাকা ঘুরছে
তরঙ্গের কোহিনুর ইয়াসমিনের উৎপাদনকেন্দ্রগুলো আবার সচল হয়েছে গত ৫ জুন। সেই সঙ্গে ২ হাজার ৮০০ নারীর ভাগ্যের চাকাও ঘুরতে শুরু করেছে। তাঁর এই নারী কর্মীরা ঢাকাসহ ৯ জেলায় কাজ করছেন।

কোহিনুর বলছেন, করোনাকালে অনেক ক্ষতি হয়েছে, এখন অর্ডার আসতে থাকায় ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগও তৈরি হয়েছে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘অন্য সময়ের চেয়ে এবার আমি দেড় গুণ বেশি কাজ পেয়েছি। বিশেষ করে পরিবেশবান্ধব পাটের পণ্যের চাহিদা অনেক।’

নাজমা আহসানের প্রতিষ্ঠান সানট্রেড মাত্রই মার্কিন একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় একটি চালানের ঝুড়ি ও ব্যাগ তৈরি করেছিল। ঠিক তখনই এল করোনাকাল। শেষ মুহূর্তে কার্যাদেশটি বাতিল হয়ে যায়। সেই দুঃখ এখন অনেকখানি কেটেছে নতুন বড় কার্যাদেশ পাওয়ার পর।

টঙ্গী, বগুড়া ও নীলফামারীতে তিনটি কারখানা এবং ওই জেলাগুলোর বিভিন্ন গ্রামের ঘরে ঘরে নাজমার প্রতিষ্ঠানের চার হাজার নারী হস্তশিল্পী কাজ করেন। গত মে-জুন মাসে পুরোনো ও নতুন মিলিয়ে দেড় মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ পৌনে ১৩ কোটি টাকার অর্ডারের কাজ শুরু হয়েছে।

টঙ্গী, বগুড়া ও নীলফামারীতে তিনটি কারখানা এবং ওই জেলাগুলোর বিভিন্ন গ্রামের ঘরে ঘরে নাজমার প্রতিষ্ঠানের চার হাজার নারী হস্তশিল্পী কাজ করেন। গত মে-জুন মাসে পুরোনো ও নতুন মিলিয়ে দেড় মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ পৌনে ১৩ কোটি টাকার অর্ডারের কাজ শুরু হয়েছে।

আফসানা আসিফ হস্তশিল্পজাত পণ্যের উৎপাদক কারখানা এসিক্সের ব্যবসায়িক অংশীদার। ক্ষতি সামলে ওঠার আশা করছেন আফসানা। গত মাসে ফ্রান্সে পণ্য পাঠিয়েছেন। এখন জাপানের জন্য পোষা প্রাণীদের খাবার দেওয়ার পাত্র সরবরাহের কাজ করছেন।

মোহাম্মদ আবুল কালাম স্বায়ত্তশাসিত সরকারি সংস্থা জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) নির্বাহী পরিচালক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তাঁর সংস্থা করোনা দুর্যোগ কাটাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ই-বিপণন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। তাঁরা বহুমুখী পাটপণ্যের তথ্য প্রচার করবেন।

রপ্তানি করতে ৯ ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হয়। চাহিদাটা দুই ধরনের কাগজপত্রে নামিয়ে আনা দরকার। প্রণোদনা আরও বেশি প্রয়োজন। সব উদ্যোক্তা যেন পেতে পারেন, সে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

চাই সরকারের সহযোগিতা

উদ্যোক্তারা ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারে কাছে প্রণোদনা আর সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুযোগ চাইছেন। ‘কোভিড-১৯ মহামারিতে কুটির, অতি ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মজীবী নারীদের অবস্থা’ জরিপ করেছে ব্র্যাক। এই শিরোনামের জরিপ প্রতিবেদনটি বেরিয়েছে গত ১৭ সেপ্টেম্বর। ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি প্রোগ্রামের উদ্যোগে অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ প্রোগ্রাম এই সমীক্ষাটি পরিচালনা করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার এই শ্রেণির শিল্প-ব্যবসার জন্য এক হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা সহায়তা ঘোষণা করেছে। তবে প্রচার না থাকায় এবং পাওয়ার পথ জটিল হওয়ায় এ উদ্যোক্তারা সেভাবে তার নাগাল পাচ্ছেন না। প্রণোদনার মাত্র ১০ শতাংশ ছাড় হয়েছে। আর ৭১ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা এ সম্পর্কে জানেনই না। বেশির ভাগ নারী উদ্যোক্তা ব্যবসার জন্য এনজিওগুলোর ক্ষুদ্রঋণের দ্বারস্থ হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন

স্মিতা চৌধুরী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী মণিপুরি সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম ব্রিন্তা। তিনি শুধু পাটের পণ্য বানান। গত বছর জাপানে তিন দফায় ৭০ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করেছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতে শেষ চালান গিয়েছে ২৫ লাখ টাকার। গাজীপুরে ব্রিন্তার কারখানা। কর্মী হালিমা খাতুন বলেন, দুই মাস কাজ বন্ধ ছিল। জুন থেকে পাটের তৈরি বিভিন্ন পণ্য বানানো শুরু করেছেন। এসিক্সের আফসানা বললেন, তিনি কর্মীদের বেতন বাবদ ৪ শতাংশ সুদে প্রণোদনার ১৫ লাখ টাকা পেয়েছেন। জানুয়ারি থেকে ঋণ পরিশোধের শর্ত রয়েছে।

বাংলাক্র্যাফটের সভাপতি গোলাম আহসান প্রথম আলোকে বলেন, এই সংকটের মধ্যেও বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা কাজ পেয়েছেন এবং করছেন। তবে এখন উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। পণ্য পরিবহনেও ব্যাঘাত ঘটছে। এখন সরকারের মনোযোগ খুবই দরকার। গোলাম আহসান আরও বলেন, রপ্তানি করতে ৯ ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হয়। চাহিদাটা দুই ধরনের কাগজপত্রে নামিয়ে আনা দরকার। প্রণোদনা আরও বেশি প্রয়োজন। সব উদ্যোক্তা যেন পেতে পারেন, সে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সৌজন্যে: প্রথম আলো

 

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পথে জেসিন্ডা

লাখ লাখ ভোটার নিউজিল্যান্ডে সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে ভোট দিচ্ছেন। ব্যাপক জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের লেবার পার্টি। গত সেপ্টেম্বরে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নতুন করে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ভোট এক মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

নির্বাচনে লেবার পার্টির নেতা জেসিন্ডা আরডার্নের (৪০) মুখোমুখি হচ্ছেন ন্যাশনাল পার্টির প্রধান কলিন্স (৬১)। এটি নিউজিল্যান্ডের ৫৩তম পার্লামেন্ট নির্বাচন।

মতামত সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ের পথে। করোনাভাইরাস মহামারি সফল ব্যবস্থাপনা তাঁর পক্ষে কাজ করতে পারে। তবে এখন বড় প্রশ্ন হলো তিনি সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবেন কি না তা নিয়ে।

১৯৯৬ সালে মিক্সড মেম্বার প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেনটেশন (এমএমপি) নামে পরিচিত একটি সংসদীয় ব্যবস্থা চালু করার পর থেকে নিউজিল্যান্ডে কোনো দলই সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি।

সাধারণ নির্বাচনের ভোট দেওয়ার পাশাপাশি দুটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গণভোটও দিচ্ছেন নিউজিল্যান্ডবাসী। অধিকাংশ বিশ্লেষক বলছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসছেন জেসিন্ডা। কিছু মতামত জরিপে দেখা গেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠতাও পেতে পারেন তিনি। আজ শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটার পর ফলাফল জানা যাবে।

লেবার পার্টির পক্ষ থেকে কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায় জেসিন্ডার সফলতায় দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বী কলিন্স বলছেন, করোনা–পরবর্তী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি ভালো করতে পারবেন।

দেশটির নির্বাচন কমিশন বলেছে, গতকাল শুক্রবারই অর্ধেকের বেশি, অর্থাৎ ২০ লাখ ভোট দেওয়া হয়েছে। নিউজিল্যান্ডবাসী ইথেনাসিয়া ও গাঁজা বৈধ করতেও গণভোটে ভোট দিচ্ছেন।

৫০ লাখের বেশি জনসংখ্যার দেশ নিউজিল্যান্ডে মাস খানেকের বেশি সময় ধরে করোনায় গোষ্ঠী সংক্রমণের কোনো ঘটনা নেই। সেখানে লোকদের মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব অনুসরণ করতে হয় না।

 

কিছু ব্যাংক নারীদের জন্য পণ্য এনেছে, এটা লোকদেখানো

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক লীলা রশিদ বলেছেন, এসএমই খাত নিয়ে যত আলোচনা হয়, বাস্তবে ততটা না। আর নারী উদ্যোক্তা তো আরও কম। ব্যাংকগুলোতে সব বড় ঋণ নিয়ে আলোচনা হয়, সেখানে এসএমইর কোনো অবস্থান নেই। নারী উদ্যোক্তার ঋণ তো আরও নেই। কিছু ব্যাংক নারীদের জন্য নতুন পণ্য এনেছে, এটা লোকদেখানো। এসব ব্যাংকে নারীদের ঋণ সামান্যতম।

বাংলাদেশ ওমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিডব্লিউসিসিআই) আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল কর্মশালায় তিনি এমন মন্তব্য করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সঞ্চালনা করেন বিডব্লিউসিসিআইয়ের সভাপতি সেলিমা আহমাদ।

লীলা রশিদ বলেন, ‘সহজেই যেন ট্রেড লাইসেন্স খোলা যায়, এ জন্য আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছি। যাঁরা অনলাইনে ব্যবসা করেন, তাঁদের ট্রেড লাইসেন্স খোলার বিষয়টি তথ্যপ্রযুক্তি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখবে। ব্যবসায় নামতে হলে আগে নথিপত্র তৈরি করতে হবে। এ জন্য সবচেয়ে ভালো হলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা, যা নথিপত্র তৈরিতে সহায়তা করতে পারে।’

লীলা রশিদ আরও বলেন, ‘ব্যাংক খাত পুরুষ–নিয়ন্ত্রিত, ঠিক সমাজের মতোই। নারীরা ব্যবসা করলে অনেকে মনে করেন এর পেছনে স্বামী, বাবা বা ছেলে রয়েছেন। এই মিথ আমাদেরই ভাঙতে হবে। করোনায় প্রণোদনা প্যাকেজে এসএমই খাতের ঋণ কম বিতরণ হয়েছে। নারীদের ঋণ তো আরও কম। কেউ বলেন সুদহার কম। আবার কেউ বলছেন, বড়দের দেওয়া শেষ হলে ছোটদের দেওয়া হবে। নারী উদ্যোক্তাদের ঋণের জন্য ব্যাংকে যেতে হবে। ব্যাংক ঋণ না দিলে তাদের কাছে লিখিত নিতে হবে। এর কারণ জানতে হবে। নারী উদ্যোক্তারা এসব কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে পারেন।’

অনুষ্ঠানে নারী উদ্যোক্তারা বলেন, বিকাশ থেকে রকেটে টাকা নেওয়া যায় না। আবার খরচও অনেক বেশি। এদিকে ব্যাংকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির টাকা পেতে ২৪ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। যাঁরা অনলাইনে ব্যবসা করেন, তাঁরা কোনো ঋণ পাচ্ছেন না। নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংকগুলো ঋণ দিচ্ছে না। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে পণ্য পৌঁছাতে ৭ দিনের বেশি সময় লেগে যাচ্ছে।

ব্যাংক খাত পুরুষ–নিয়ন্ত্রিত, ঠিক সমাজের মতোই। নারীরা ব্যবসা করলে অনেকে মনে করেন এর পেছনে স্বামী, বাবা বা ছেলে রয়েছেন।

কর্মশালায় বিকাশের প্রধান নির্বাহী কামাল কাদির বলেন, ‘আমাদের সেবায় যত ডিজিটাল লেনদেন করবেন, খরচ ততই কমবে। তাই নিজ থেকেই খরচ কমানোর পরিকল্পনা করতে হবে। নারী উদ্যোক্তারা মার্চেন্ট হিসাব খুলতে পারেন। এসব হিসাবে লেনদেনের কোনো সীমা নেই। অনেকেই বলছেন, বিকাশ থেকে অন্য এমএফএসে টাকা পাঠানো যায় না। আশা করছি, আগামী সপ্তাহেই এই সুবিধা চালু হয়ে যাবে। আবার বিকাশ থেকে এখন ছোট আকারে ঋণও পাওয়া যাচ্ছে।’

কামাল কাদির আরও বলেন, এখন ঘরে বসে হিসাব খোলা যাচ্ছে। এর ফলে নারীদের হিসাব খোলা রাতারাতি বেড়ে গেছে। কারণ, অনেকেই নিজের পরিচয়পত্র ও ছবি অন্যের কাছে দিতে চান না। বিকাশের ৪ কোটি ৮০ লাখ হিসাবের মধ্যে ৩৯ শতাংশ নারীদের। মোবাইল ব্যবহারের চেয়ে বিকাশ ব্যবহার কোনো অংশেই কঠিন না। তাই ব্যবসার ক্ষেত্রে বিকাশ ব্যবহারে আহ্বান জানান তিনি।

বিডব্লিউসিসিআইয়ের সভাপতি সেলিমা আহমাদ বলেন, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য ডিজিটাল ইকোনমিকে এগিয়ে নিতে হলে নারী উদ্যোক্তাদের ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।

কর্মশালায় আরও অংশগ্রহণ করেন অতিরিক্ত সচিব খন্দকার আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদসহ আরও অনেকে।

 

জামদানি বিক্রি করে লাখপতি তানিয়া সুলতানা

করোনার অবসর কাজে লাগাতে দেশের অসংখ্য নারী ইতোমধ্যে অনলাইন ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। অন্যান্য ব্যবসার মতো সফলতা হাতছানি দিচ্ছে এসব নারীকে। দেশে অনলাইন ব্যবসা চালু হওয়ায় মানুষকে কষ্ট করে করোনার ঝুঁকি নিয়ে মার্কেটে যেতে হচ্ছে না। এ মাধ্যমে সফলতা পেয়ে উদ্যোক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন তারা। তেমনই একজন উদ্যোক্তা তানিয়া সুলতানা। তার সফলতার গল্প শোনাচ্ছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত—

একজন সংগ্রামী সফল নারী উদ্যোক্তা, বিরাজবৌ’র সত্ত্বাধিকারী তানিয়া সুলতানা। ময়মনসিংহের গৃহবধূ তানিয়া স্বামী-সন্তান সামলে অনলাইন পেজ ‘বিরাজবৌ’র মাধ্যমে বিক্রি করেন জামদানি শাড়ি। নিজস্ব কারিগর দ্বারা তৈরি করা শাড়িগুলোর মূল্য ৩,৭০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৮ হাজার টাকা।

শাড়িগুলো ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে ইএমআই সুবিধার মাধ্যমেও বিক্রি করেন। মাত্র ১৮ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন এ অনলাইন ব্যবসা। বর্তমানে তার মোট বিক্রির পরিমাণ ৪ লাখ ৮ হাজার ৭শ টাকা।

উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প শুনতে চাইলে তানিয়া সুলতানা বলেন, ‘অনেক দিনের স্বপ্ন ছিলো ব্যবসা করার। কিন্তু কী করবো ভেবে পাইনি। শেষে ই-কমার্স গ্রুপ উই’র মাধ্যমে লক্ষ্য স্থির করি। আসলে শুরু করাটাই ছিলো চ্যালেঞ্জিং। কিভাবে শুরু করবো, কী পণ্য নিয়ে কাজ করবো- লক্ষ্য স্থির করতে পারছিলাম না।’

তিনি বলেন, ‘অবশেষে ভাবলাম জামদানি শাড়ি নিয়ে কাজ করবো। সে লক্ষ্যে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘বিরাজবৌ’র চরিত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে ওই নামে ফেসবুক পেজ খুলি। সেখান থেকে অনলাইনের মাধ্যমে পণ্যের অর্ডার নিয়ে তা কুরিয়ারের মাধ্যমে পৌঁছে দেই।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনলাইনেই ব্যবসা করার। আমি ট্রেড লাইসেন্সও করেছি অনলাইন ব্যবসার পরিচয় দিয়ে। অনেকের স্বপ্নের শোরুমকে দুঃস্বপ্ন হতে দেখেছি। তাই ওয়েবসাইট খুলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জামদানি শাড়ি ছড়িয়ে দিতে চাই। এতে আমার স্বপ্নও ছড়িয়ে যাবে।’

সফল এ নারী উদ্যোক্তা জানান, তার এসব সফলতার পেছনে রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম, আনন্দ ও সুখের অনেক কাব্য।

লকডাউনে ৩১৭টি সার্টিফিকেট অর্জন তরুণীর

লকডাউনের দিনগুলোতে অখণ্ড অবসরের ‘সর্বোচ্চ’ ব্যবহার করে ৩১৭টি সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন ভারতের এক পিএইচডি স্কলার। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সুধন্যা নাথ নামের ওই তরুণী বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল এবং পাকিস্তানের মতো দেশ থেকে বিভিন্ন কোর্স করে এই সনদগুলো পেয়েছেন।

‘লকডাউনের দিনগুলোতে বাড়িতে থাকার সময় কিছু অনলাইন কোর্সে অংশ নেই। সবগুলো কোর্স ছিল আমার সাবজেক্ট-ভিত্তিক: অ্যানিমেল নিউট্রেশন,’ জানিয়ে সুধন্যা ইংরেজি গণমাধ্যমটিকে বলেন, ‘এরপর অন্য বিষয়ের ওয়েব সেমিনারেও অংশ নেই। এতে অনেক নতুন কিছু জানতে পেরেছি।’

২৫ বছর বয়সী এই তরুণীর অল্প বয়স থেকেই নানা বিষয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল। সেই অভ্যাসটা তিনি এখনো ধরে রেখেছেন, ‘অনেক শখর বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাইলেও সময়ের অভাবে পারিনি। কিন্তু লকডাউন আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। সঙ্গে ছিল প্রযুক্তির আশীর্বাদ।’

কোর্সের পাশাপাশি তিনি ক্রিয়েটিভ রাইটিং এবং ভিডিওগ্রাফির কয়েকটি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন।

‘আমি শুধু সার্টিফিকেটের জন্য বসে থাকিনি। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে অনেক কুইজ খেলেছি। বই পড়েছি। লেখালেখি করেছি।’

যুক্তরাষ্ট্রে সফল বাংলাদেশি রুদমীলা নওশীন

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো তাদের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে। তাদের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে গিয়ে একজন দেশকে তুলে ধরেছেন বিশ্বের প্রতাপশালী কোম্পানিগুলোর সামনে। তিনি হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি উদ্যোক্তা রুদমীলা নওশীন।

বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান স্কলাসটিকা থেকে এ লেভেল শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে যান আন্ডারগ্র্যাডের জন্য। ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান জোস স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্রাজুয়েশন করেন। পরবর্তীতে মাস্টার্স অব সায়েন্স ইন ডিজিটাল কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। অধ্যয়নরত অবস্থায়ই পেয়েছেন ‘স্যুমা কাম লড’র মতো বিশেষ সাফল্য। সম্প্রতি তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক মিডিয়া কোম্পানির ‘হেড অব প্রডাকশন’। তার কোম্পানি সিলিকন ভ্যালি ট্যালি- পোডকাস্ট শুরু করার পরিকল্পনা করছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক জোড়া প্রতিষ্ঠান কনফিগ ভিআর ও কনফিগ রোবটের ফাউন্ডার ও সিইও। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তার প্রতিষ্ঠান কাজ করছে অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, মিক্সড রিয়েলিটি, থ্রিডি মডেলিং, অ্যানিমেশন ও কন্টেন্ট নিয়ে। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কোম্পানির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ভার্চুয়ালাইজ ইওর ভিশন’। যার লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের বিভিন্ন ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাকে প্রযুক্তির মাধ্যমে বাস্তবে রূপ দেওয়া। কনফিগ ভিআর মূলত এআর (অগমেন্টেড রিয়েলিটি), ভিআর (ভার্চুয়াল রিয়েলিটি) এবং মিক্সড রিয়েলিটির ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। এ সম্পর্কে রুদমীলা নওশীন বলেন, ‘আমাদের মূলত রিয়েল স্পেসের ওপর কাজ। এটি কম্পিউটার জেনারেটেড স্টিমুলেশন, যা ক্যামেরার ডেপথ সেন্স ব্যবহার করে এবং যেকোনো অবজেক্ট রিয়েল স্পেসে প্রজেক্ট করতে সহায়তা করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রজেক্টগুলো নিকট ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তৈরি করে মানুষের বিভিন্ন বিষয়ে ফোবিয়া বা ভয়-ভীতি দূর করতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে কনফিগ রোবট অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, চ্যাটবট, সাইবার নিরাপত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) এবং দক্ষতা উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে থাকে। আমেরিকা, ইউরোপ ও বাংলাদেশে টিমে আছে।’ এ ছাড়া তারা বিভিন্ন উদ্যোক্তা ক্লাবের সাথে যুক্ত আছেন এবং বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করছেন। তিনি ইউএস-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও জোরালো করতে চান।

ছোটবেলা থেকে বাবা-মা দু’জনকেই দেখে এসেছেন সফল প্রযুক্তিগত উদ্যোক্তা হিসেবে। তার বাবা ফজলে সেলিম বাংলাদেশের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী। আর মা রুকসানা সেলিমের অবদান তার জীবনে অনেক। তার বড় চাচা ছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী ফজলে রাব্বী। দেশপ্রেম তাই তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শৈশব থেকেই বাবার অফিসে সিলিকন ভ্যালির নামকরা সব কোম্পানির ম্যাপ দেখতেন। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন, একদিন তার গড়ে তোলা কোনো প্রতিষ্ঠানও সেখানে জায়গা করে নেবে।

ছোটবেলার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া রুদমীলা জানান, বিদেশের মাটিতে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা তার জন্য সব সময়ই গর্বের। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে আসার শুরুটা পরিবারের ইচ্ছাতে হলেও এখন তিনি সেই সিদ্ধান্তকে নিজের জন্য আশীর্বাদ মনে করেন।

বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে জানান, ‘এখানকার রিটেইল, উৎপাদন, শিক্ষা, সরকারি কর্মক্ষেত্র ও মিলিটারির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে এআর, ভিআর ও মিক্সড রিয়েলিটির ব্যবহার দেশকে কয়েকগুণ এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন অ্যানিমেশন, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, ডকুমেন্টেশনকে নেটফ্লিক্স ও অ্যামাজনে প্রচার করতে চান। এর জন্য তিনি তার প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। অবসরে কী করা হয় জানতে চাইলে জানান, তিনি একজন ক্ল্যাসিক্যাল ড্যান্সার। হাইকিং ছাড়া হারমোনিয়াম ও তানপুরায় রয়েছে বিশেষ দক্ষতা। পেইন্ট আর ভ্রমণপিপাসু একজন মানুষ তিনি। স্বভাবতই সৃজনশীল কাজের প্রতি ঝোক রয়েছে তার।

ছাত্রাবস্থায় শিক্ষার্থী হিসেবে অধ্যয়নরত ছিলেন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। কিন্তু দমে যাননি। তার দৃঢ় ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ অবস্থানের কারণেই আজকের এ সফলতা। তার ইচ্ছা, কয়েক বছরের মধ্যে তিনি বাংলাদেশে রোবট তৈরির কোম্পানি খুলবেন। অথবা তার কিছু যন্ত্রপাতির উৎপাদন স্থল বানাবেন। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে কনফিগ রোবটের প্রতিষ্ঠা পরবর্তী কাজ শুরু হয়ে গেছে। এতে দেশীয় শিল্পে যেমন বিপ্লব ঘটবে, তেমন প্রযুক্তিতে আগ্রহীদের কর্মস্থলও সম্প্রসারিত হবে।

তিনি আশা করেন, ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে ধীরে ধীরে নারীরা আরও এগিয়ে আসবে। সর্বোপরি দেশের সব তরুণ প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে দেশকে বিশ্বের দরবারে সমাদৃত করবে। ১২ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর দেশে অপার সম্ভাবনা দেখছেন বাংলাদেশি এ প্রযুক্তিকন্যা। তিনি বিশ্বাস করেন, তার রোবট মানুষের চাকরি নেবে না বরং জীবন-মান করবে সহজ। জাগো নিউজ

 

ডাক্তার আর সংযোগের প্রচেষ্টায় রিমুর নতুন জীবন

তাসলিমা সিদ্দিকা রিমু। গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) লাইভ স্টক সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাবা নেই। সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ দুই মাস আগে রিমু জানলেন হার্টের একটি ভাল্ব নষ্ট। জন্ম থেকে বয়ে বেড়াচ্ছেন জন্মগত হার্টের এক কঠিন রোগ। যার নাম এবস্টেইন এনোমালি। হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে প্রথমে নিজ জেলা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখালো রিমুর পরিবার। তারপর ঢাকায়।

চিকিৎসা করতে অনেক টাকা লাগবে। কিন্তু এতো টাকা রিমুর পরিবার কোথায় পাবে? তারপর খুব জটিল অপারেশন। কোথায় করবে এই অপারেশন। সাধারণত ১ লাখ ভাল্ব অপারেশনের রোগীর মধ্যে একজনের এ ধরনের সমস্যা হয়। বন্ধু আর পরিবারের সদস্যরা মিলে কিছু টাকা জোগাড় করলেন। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে যে রিমুর পরির্পূণ অপারেশন সম্ভব নয়।

এ বাস্তবতায় রিমুর চিকিৎসার অর্থ সংগ্রহ করতে এগিয়ে এলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সংযোগ : কানেক্টিং পিপল’। সংযোগ প্লাজমা ও ব্লাড ডোনেশন টিমের নিরন্তর চেষ্টা আর গ্রুপের সদস্যসহ দেশ-বিদেশের কিছু মানুষের সহযোগিতায় অর্থের সংস্থান হলো। সংযোগের স্বেচ্ছাসেবী ডাক্তারদের সহযোগিতায় রিমুর অপারেশনের জন্য খুঁজে বের করা হলো ডাক্তার। অপারেশনের ঝুঁকি আর জটিলতা জানা সত্ত্বেও রিমুকে ভর্তি নিলেন মিরপুরের আল হেলাল হাসপাতালের সিনিয়র কার্ডিয়াক সার্জন সামির আযম। ডা. সামির আযমের নেতৃত্বে গত ৭ সেপ্টেম্বর দীর্ঘ ছয় ঘণ্টার অপারেশনের পর রিমুর হৃদযন্ত্র নতুন ভাল্ব পায়। পায় স্বাভাবিক ছন্দ।

এত দীর্ঘ সময়ের জটিল অপারেশন সত্ত্বেও কোনো অপারেশন চার্জ নেননি ডা. সামির আযম। রিমু গতকাল হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছেন। একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠছেন। অপারেশনের ধকল কাটিয়ে একটি সুস্থ হৃদযন্ত্রে নতুন জীবনের প্রহর গুনছেন। তাসলিমা সিদ্দিকা রিমুর অপারেশন বিষয়ে জানতে চাইলে ড. সামির আযম বলেন, ‘খুব গুরুতর হয়ে উঠেছিল রিমুর অবস্থা। দ্রুত অপারেশন করানোয় ঝুঁকি অনেকটা মোকাবিলা করা গেছে। রিমু এখন সুস্থ। সংযোগসহ সবার প্রচেষ্টাই রিমুকে নতুন জীবন দিয়েছে।’

সংযোগের ডাক্তার টিমের অন্যতম সদস্য ও ফেসবুক গ্রুপ অ্যাডমিন ডা. ফারজানা নাসরিন ইনা বলেন, ‘বাংলাদেশে সঠিক চিকিৎসা পরামর্শ পাওয়া অনেক সময় সাধারণ মানুষের জন্য মুশকিল হয়ে যায়। আমরা সংযোগের মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের কোভিডকালীন সঠিক চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে আসছি। পাশাপাশি রিমুসহ কয়েকজন রোগীর জন্য কম খরচে ভালো চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের চেষ্টা করছি। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছি, যাতে মানুষ অক্সিজেন পায়।’

সংযোগ: কানেক্টিং পিপল ফেসবুক গ্রুপের মডারেটর বুয়েট প্রকৌশলী মেহেদি হাসান বলেন, ‘সংযোগের কাজই হচ্ছে মানুষের সাথে মানুষকে যুক্ত করা। মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমরা নানাভাবে সবাই মিলে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’

তিনি ডা. সামির আযম, সংযোগ ফেসবুক গ্রুপের ২৪ হাজার সদস্যসহ সংযোগের ডাক্তার ও প্লাজমা টিমের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

৫০০ টাকার যবের ছাতু ও আটায় লাখপতি নিপা

তরুণ উদ্যোক্তা নিপা সেনগুপ্ত (২৩) কাজ শুরু করেন বরেন্দ্র অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী যবের ছাতু ও যবের আটা নিয়ে। তিনি শুরু করেন মাত্র ৫০০ টাকা মূলধন দিয়ে। আস্তে আস্তে পরিচিতি বাড়তে থাকে। আসতে থাকে পজিটিভ রিভিউ। কাস্টমারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পণ্যতালিকায় যুক্ত হয় গম, চাল, মসুর ও ছোলার মিশ্রণে ‘পঞ্চ-ব্যাঞ্জন ছাতু’।

এরপর ধীরে ধীরে যুক্ত হতে থাকে ভেজালমুক্ত আখের গুড়, পাবনার ঘি, গমের লাল আটা, দেশি ধানের চাল, মৌসুমী আচার, দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় ফলের গাছ। ব্যবসা শুরুর ৩ মাসের মধ্যে সব পণ্য মিলিয়ে নিপার আয় হয় প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার টাকার উপরে। সাথে সাথে উই গ্রুপেও পরিচিতি বাড়ে।

তরুণ নারী উদ্যোক্তা নিপা সেনগুপ্ত বলেন, ‘অনার্স শেষ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। পাঁচটি পরীক্ষাও শেষ হয়েছিল। এরমধ্যেই করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। আমিও বাসায় বন্দি হয়ে গেলাম। এসময় এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে উই গ্রুপে যুক্ত হই। এখানকার নারীদের কাজ দেখে আমি অভিভূত হয়ে যাই।’

সফল এ নারী আরও বলেন, ‘প্রথমেই ভালো লাগা তৈরি হয়। আস্তে আস্তে নিজের প্রতি বিশ্বাস তৈরি হয়। স্বামীর সহযোগিতায় রাজশাহী অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী যবের ছাতু নিয়ে কাজ শুরু করি। কিন্তু ভাবিনি, এই ছাতু নিয়েই আমি লাখপতি হতে পারব। বর্তমানের উই থেকে আমার সেল প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার টাকারও উপরে।’

নিপা সেনগুপ্তের কাজের সাথে এ অঞ্চলের দু’জন নারী যুক্ত হয়ে পরিবারকে সহযোগিতা করছেন। রাজশাহীর তানোর উপজেলার দুবইল গ্রামের আবেদা বেগম (৪৮) বলেন, ‘নিপা বাজার থেকে যব কিনে আমাদের কাছে দেয়। আমরা যবগুলো পরিষ্কার করে শুকিয়ে বালুতে ভেজে দেই। এর জন্য নিয়মিত টাকা পাই। যাতে সংসারের অনেক উপকার হয়। বাড়তি আয় করতে পারি।’

 

ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে সাইকোলজি কী বলে

 

ডা. মাহাবুবা রহমান

নারীর প্রতি সহিংসতা বিশ্বের ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। উনিশ শতকের সতীদাহ প্রথা থেকে শুরু করে একবিংশ সমাজের ডমেস্টিক ভায়োলেন্স, যুগে যুগে এভাবেই সহিংসতার রূপ বদলেছে। তবে সব যুগের সব সহিংসতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বর্তমান যুগের ধর্ষণ। হ্যাঁ, ধর্ষণ শব্দটি নতুন কিছু নয়। তারপরও ‘বর্তমান যুগের ধর্ষণ’ বলার কারণ এখন প্রতিনিয়ত যেসব ধর্ষণের খবর পাচ্ছি- এতটা বিকৃত, এতটা পাশবিক যৌনাচারের খবর কি আগে কখনো শুনেছেন?

আগে কয়টা ধর্ষণের খবর এমন শুনতেন, যেখানে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়? দুলাভাই তার নিজের ভাইদের নিয়ে শালীকে গণধর্ষণ করে? ৭২ বছরের বৃদ্ধা গোসল করতে গিয়ে ধর্ষিত হয়? সন্তানের বয়সী ছেলেরা মায়ের বয়সী নারীকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে, উল্লাস করে, আঘাত করতে করতে ধর্ষণ করে?

এমন একটি দিন নেই; যেদিন সোশ্যাল মিডিয়া বা পত্রিকা খুললে একটি ধর্ষণের খবর পাওয়া যায় না। ক্রমবর্ধমান হারের এ অপরাধ সম্পর্কে অনেকের অনেক মত, কেউ বলেন সামাজিক অবক্ষয়, কেউ বলেন ক্ষমতার অপব্যবহার। কিন্তু নিকৃষ্টতম এ আচরণের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা কী? একটু বোঝার চেষ্টা করি চলুন।

নারীর প্রতি সহিংসতার সাইকোলজি বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে ‘সহিংসতা’ বা সাইকোলজিতে আমরা যেটা পড়ে থাকি, ‘Aggression’ তার পেছনের তত্ত্ব ও ব্যাখ্যা। সাইকো অ্যানালাইসিসের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েড একটি সময় পর্যন্ত বিশ্বাস করতেন, মানবচরিত্রে জন্মগতভাবে একটি গুণ বিদ্যমান- যার অর্থ ভালোবাসা। এ ভালোবাসা আছে বলেই মানুষে মানুষে প্রেম হয়, তারা একে অপরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে, একসাথে থাকে, বংশবৃদ্ধি করে। মানবসভ্যতা টিকিয়ে রাখতে যার ভূমিকা অপরিহার্য। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে ফ্রয়েডের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসে। তিনি তখন দ্বিতীয় আরেকটি ড্রাইভের অবতারণা করেন, যার নাম দেন ‘থানাটস’।

থানাটস শব্দের অর্থ আত্মধ্বংসী মনোভাব। ফ্রয়েডের মতে, প্রতিটি মানুষের মাঝে জন্মগতভাবেই এ দুটি ড্রাইভ পাশাপাশি বিদ্যমান। মানবজাতি একইসাথে ভীষণ রকমের সৃষ্টিশীল এবং বিধ্বংসী। তার মতে, সময়ে সময়ে মানুষের এ বিধ্বংসী মনোভাব প্রকাশ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ঠিক যেমনইভাবে প্রয়োজন পড়ে তার ক্ষুধা, তৃষ্ণা এবং যৌন চাহিদা প্রকাশের।

পরবর্তীতে অনেক সাইকোলজিস্ট এবং সোশ্যিওলজিস্ট অ্যাগ্রেশন নিয়ে কিছু থিওরি দেন। উল্লেখযোগ্য থিওরিগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করছি-

ইন্সটিঙ্কট থিওরি: নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, জন্মগতভাবে মানুষের মাঝে যে অ্যাগ্রেশন থাকে, সেটাই ইন্সটিঙ্কট থিওরির আলোচ্য বিষয়। সে হিসেবে ফ্রয়েডের থিওরিটির অন্তর্ভুক্ত। পরবর্তীতে ইথিওলজিস্ট কোনার্ড লরেঞ্জ তার বই ‘অন অ্যাগ্রেশনে’ও এ থিওরি নিয়ে আলোচনা করেন।

ফ্রাস্টেশন-অ্যাগ্রেশন হাইপোথিসিস: ফ্রয়েডীয় ইন্সটিঙ্কট থিওরি দিয়ে প্রভাবিত সাইকোলজিস্ট জন ডলার্ড এবং তার কয়েকজন কলিগের সমন্বয়ে প্রকাশিত বই ‘ফ্রাস্টেশন অ্যান্ড অ্যাগ্রেশনে’ সর্বপ্রথম এ থিওরির প্রকাশ। এ থিওরি অনুযায়ী, জন্মগতভাবে মানুষ যে অ্যাগ্রেশন নিয়ে আসে, সেই অ্যাগ্রেশনের প্রকাশ ঘটে কিছু নির্দিষ্ট পরিবেশ বা পরিস্থিতিতে। তেমনই এক পরিস্থিতি হলো ‘হতাশা’। জন ডলার্ডের মতে, ফ্রাস্টেশন সব সময়ই অ্যাগ্রেশনে রূপ নেয়, মতান্তরে অ্যাগ্রেশন হল ফ্রাস্টেশনের একটি ফলাফল।

এ হতাশা বা ফ্রাস্টেশনের উৎস হতে পারে জীবনের মৌলিক চাহিদার অভাব কিংবা অন্য যেকোনো কিছু। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয়টি হচ্ছে, ফ্রাস্টেশন থেকে উদ্ভুত এ অ্যাগ্রেশন সব সময় ফ্রাস্টেশনের মূল উৎসের প্রতি না হয়ে হতে পারে অন্য কোনো বস্তুর প্রতি। একে বলে, ‘ডিসপ্লেসড অ্যাগ্রেশন’। সমাজে এটিই বরং অহরহ দেখা যায়।

উদাহরণস্বরূপ, অন্যান্য দিনের মত সকালে অফিসে যাওয়ার পর আপনি জানতে পারলেন, আগামী মাস থেকে আপনার চাকরিটা আর থাকছে না। আকস্মিক এ চাকরিচ্যুতির ঘোষণা আপনাকে ভয়াবহ রকমের ফ্রাস্টেশনে ফেলে দিলো। মনে মনে তৈরি হলো বসের প্রতি তীব্র ক্ষোভ। কিন্তু আপনার পক্ষে তো আর সম্ভব না বসের প্রতি ক্ষোভ দেখানো। তাই ক্ষোভটা ডিসপ্লেসড করলেন বাসায় ফিরে আপনার স্ত্রী বা সন্তানের ওপর। অর্থাৎ ফ্রাস্টেশন থেকে সৃষ্ট অ্যাগ্রেশনটি আপনি দেখালেন আপনার জন্য মোটামুটিভাবে নিরাপদ এবং আপনার চেয়ে কম ক্ষমতার অধিকারী একটি জায়গায়।

আরেকটি উদাহরণ দেই, প্রায়ই আমরা শুনি বা অনেকসময় নাটক-সিনেমায়ও দেখি, গ্রামের প্রতাপশালী চেয়ারম্যানের কুলাঙ্গার ছেলে অমুক বাড়ির দরিদ্র বাবার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এ ছেলে তার বাবার কাছে উঠতে-বসতে অপমানিত হয় এবং এরকম একটি ছেলে কখনো তার থেকে মোটামুটি ক্ষমতাবান কোনো পরিবারের মেয়েকে অত্যাচার করার সাহস দেখাবে না। তাহলে আপনারাই এখন ভাবুন, ফ্রাস্টেশন-অ্যাগ্রেশন থিওরি অনুযায়ী, এ ঘটনাটাকে ব্যাখ্যা দেওয়া যায় কি না। শিশুদের প্রতি যৌন সহিংসতাকেও আমি এর অন্তর্ভুক্ত করব।

অ্যারোস্যাল অ্যান্ড অ্যাগ্রেশন: ডলফ জিলম্যানের এ থিওরি বেশ ইন্টারেস্টিং। এর মূল বক্তব্য হলো, একটি উৎস থেকে সৃষ্ট উদ্দীপনা অন্য একটি বস্তুতে প্রবাহিত করা। উদাহরণস্বরূপ, রাস্তা-ঘাটে আসতে-যেতে দেখবেন চলন্ত অবস্থায় এক রিকশার সাথে আরেক রিকশার সামান্য একটু ধাক্কা লাগতেই রিকশাওয়ালা দুজনের মধ্যে গালাগালের ধুম পড়ে যায়। পারলে একজন আরেকজনকে মেরেই ফেলেন এমন অবস্থা আর কি। অথচ ঘটনা খুবই সামান্য। এর কারণ হলো, অলরেডি শারীরিক পরিশ্রমের দরুণ তারা ফিজিক্যালি অ্যারোসড বা এক্সাইটেড হয়ে আছেন। এমতাবস্থায় ধাক্কা লাগা বিষয়টি তাদের একটি সুযোগ এনে দিলো নিজের ফিজিক্যাল অ্যারোস্যালকে আরেকজনের ওপর চ্যানেলাইজ করার।

অন্যভাবে আরেকটি উদাহরণ দেই, ধরুন, আপনি রেস্টুরেন্টে বসে আপনার প্রিয় মানুষের জন্য অপেক্ষা করছেন। এ অপেক্ষা আপনার জন্য বিরক্তিকর নয়, আনন্দের। অর্থাৎ আপনি অলরেডি খুব রোমান্টিক মুডে আছেন। এমতাবস্থায় রেস্টুরেন্টে বাজতে থাকা একটি রোমান্টিক গান আপনার মাঝে এত বেশি ভালো লাগা তৈরি করবে, যেটি হয়তো এর আগে হাজারবার শুনেও আপনার মধ্যে তৈরি হয়নি। এখানে আপনার রোমান্টিক মুডটা চ্যানেলাইজড হয়ে গেল গানের প্রতি।

ধর্ষণের সাথেও অ্যাগ্রেশনের এ থিওরিকে খুব চমৎকারভাবে রিলেট করা যায়। যেমন ধরুন, যে ছেলে ইতোমধ্যে মাদক সেবন করে অথবা পর্নোগ্রাফিক মুভি দেখে ফিজিক্যালি অ্যারোসড হয়ে আছে, সেই ছেলে সুযোগ পাওয়া মাত্রই তার এই ফিজিক্যাল অ্যারোস্যালটি চ্যানেলাইজড করে দেবে একজন নারীর ওপর। সেক্ষেত্রে সেই নারীর সাথে তার পূর্বপরিচয়, ভালো লাগা, নারীর বয়স, নারীর কাপড় (যেহেতু সমাজের একটি বড় অংশ ধর্ষণ প্রসঙ্গে নারীর কাপড় টেনে আনেন) এসবের কিছুরই প্রয়োজন নেই।

সোশ্যাল লার্নিং অ্যান্ড অ্যাগ্রেশন: অ্যাগ্রেশনের সবগুলো হাইপোথিসিসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হাইপোথিসিস এটি। লার্নিং সাইকোলজির একেবারেই বেসিক একটা বিষয়। একটা শিশু বড় হয়ে কেমন মানুষ হবে, তার ব্যক্তিত্ব কেমন হবে, আচরণ কেমন হবে- সেই সবকিছু যতটা তার জেনেটিক মেকাপের ওপর নির্ভর করে, ততটাই নির্ভর করে লার্নিংয়ের ওপর। এ থিওরি অনুযায়ী, অ্যাগ্রেসিভ আচরণ গড়ে ওঠে রিইনফোর্সমেন্ট এবং অ্যাগ্রেসিভ মডেলদের অনুকরণের মাধ্যমে।

এখানে আলোচ্য বিষয় তাহলে দুটি-

লার্নিং থ্র রিইনফোর্সমেন্ট: রিইনফোর্সমেন্ট মানে সোজা বাংলায় যে জিনিস আপনার একটি আচরণকে বৃদ্ধি করে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু কিছু বাচ্চা আপনি দেখবেন যে কোনো কিছু চাইতে হলে চিৎকার-চেচামেচি করে চায়। এর কারণ হলো সে স্বাভাবিকভাবে হয়তো কখনো একটি জিনিস চেয়েছে, পায়নি। কিন্তু যখন সে চিৎকার করে মাটিতে গড়াগড়ি করেছে, তখন বাবা বা মা তাড়াতাড়ি তাকে থামানোর জন্য ওই জিনিসটি কিনে দিয়েছে। এখানে তার অভিভাবক যে তাকে ওই জিনিসটি কিনে দিলো, এটা হলো রিইনফোর্সমেন্ট। বাচ্চা যে চিৎকার করছিল, এটা বাচ্চার আচরণ এবং বাচ্চার লার্নিংটি হলো এরপর থেকে কিছু পেতে হলে অবশ্যই চিৎকার করতে হবে।

এবার আসি ধর্ষণের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি কিভাবে কাজ করে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটেই বলি। প্রথমত, আমাদের দেশে ম্যাক্সিমাম মেয়েরা সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের কথা প্রকাশ করে না, ধর্ষণও না। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের কেসটার কথাই ধরুন। ধর্ষণের ৩২ দিন পর ঘটনাটি প্রকাশিত হয়। তাও প্রকাশিত হয় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে, কয়েকজনের লেখালেখির মাধ্যমে।

তার আগ পর্যন্ত কিন্তু ধর্ষিতা বা ধর্ষিতার পরিবার কোনো মামলা করেনি। এখানে ধর্ষিতাকে আমি দোষ দেব না। আমাদের সমাজব্যবস্থাই এমন। এখানে মেয়েরা ধর্ষিতা হলে তাদের সম্মানহানি(!) হয়, মামলা করতে গেলে থাকে ক্ষমতাশীলদের হাতে প্রাণ হারানোর ভয়। সে যাই হোক, আমি আমার সাইকোলজিতে ফিরে আসি। এই যে চুপ থাকা, ব্যাপারটা ধর্ষকদের ক্ষেত্রে রিইনফোর্সমেন্ট হিসেবে কাজ করে। তাদের জানা হয় যে, এরকম কাজ বারবার করাই যায়, কেউ তো আর মুখ খুলবে না। দ্বিতীয়ত, বিচারহীনতা বা বিচার হলেও সুষ্ঠু বিচার না হওয়া এটাও ধর্ষকদের জন্য রিইনফোর্সমেন্ট। এতেও তাদের বারবার ধর্ষণ করার শিক্ষা হচ্ছে।

লার্নিং থ্র দ্য ইমিটেশন অব অ্যাগ্রেসিভ মডেলস: এটি আরেকটি ভয়ানক এবং আমি মনে করি, ধর্ষণের প্রথমসারির কারণগুলোর একটি। আমাদের দেশে ছোটবেলা থেকে একটা ছেলে এটা দেখে দেখে বড় হয় যে, তার বাবা তার মাকে উঠতে-বসতে গায়ে হাত তোলে, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পাড়ার সো কল্ড বড় ভাই পাড়ার মেয়েদের দেখলেই শিষ দেয়, ওড়না ধরে টান দেয়, অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে। এখানে যে ফাদার ফিগারের কথা বললাম, তিনি এবং এলাকার সেই বড় ভাই হচ্ছেন মূলত অ্যাগ্রেসিভ মডেলস।

যাদের ছোটবেলা থেকেই দেখে দেখে ছেলেটি শিখে নেয়, সমাজে মেয়েদের সাথে যা ইচ্ছা করা যায়, চাইলেই তার বুকে হাত দেওয়া যায় কিংবা তার সাথে যৌনক্রিয়া সম্পাদন করা যায়। এতে কোনো অসুবিধা নেই। এটাই নিয়ম।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যাগ্রেসিভ মডেল হচ্ছে পর্নোগ্রাফি। পর্নোগ্রাফিতে যে রোলগুলো দেখানো হয়, সেখানে কী হয়? মেইল রোলগুলো থাকে প্রচণ্ড রকমের ডমিনেটিং এবং ভায়োলেন্ট। যারা তাদের ফিমেল পার্টনারের সাথে ইচ্ছামত বিকৃত যৌনাচার চালিয়ে যায়। আর ফিমেল পার্টনারটিও যেন সেসব বিকৃতি বেশ উপভোগ করছে এমনটিই দেখানো হয়। বয়ঃসন্ধিকাল থেকে একজন ছেলে যখন তার জীবনের প্রথম সেক্স এডুকেশনই পায় এধরনের পর্নোফিল্ম দেখে, তখন তার এটাই লার্নিং হয় যে, এখানে এ মডেলরা যা করছে, এটাই স্বাভাবিক। যৌনসঙ্গম ব্যাপারটা এমনই। মেয়েদের সাথে এটাই করতে হয়। এমনকি একটি শিশুর সাথেও এগুলো করা যায়। এতে মেয়েদের কোনো কষ্ট হয় না বরং তারাও ব্যাপারটা এনজয় করে (যেটা একদমই সঠিক না)। মেয়েদের ক্ষেত্রে সেক্স ব্যাপারটা যতটা না ফিজিক্যাল তার থেকে অনেক অনেক বেশি মেন্টাল।

আমি যে শুরুতে বলেছিলাম, বর্তমান যুগের ধর্ষণ; যেখানে বিকৃত যৌনাচারের হার অনেকগুণ বেশি, তার পেছনে পর্নোগ্রাফি বা চটি বইয়ের বিকৃত যৌনাচারই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ী বলে আমি মনে করি।

এতক্ষণ তো বললাম শুধু অ্যাগ্রেশন হাইপোথিসিসের কথা। কিন্তু শুধু অ্যাগ্রেশন দিয়েই ধর্ষণকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায় না। যেকোনো অপরাধের পেছনে একজন মানুষের পার্সোনালিটির বিরাট গুরুত্ববহন করে। আর পার্সোনালিটি বা ব্যক্তিত্বের কথা বলতে গেলেই চলে আসে মেন্টাল স্ট্রাকচার নিয়ে ফ্রয়েডের সেই চমৎকার কনফিগারেশনের কথা-

ইড: ইড হচ্ছে সোজা বাংলায় মানুষের আদিম প্রবৃত্তি। যেখানে কোনো সামাজিক মূল্যবোধ, বিবেকবোধ এসবের বালাই নেই। যেমন আপনার প্রচণ্ড খিদা পেয়েছে এবং আপনার কাছে কোনো খাবার নেই, খাবার কেনার মত টাকাও নেই। কিন্তু আপনি দেখলেন একটু সামনেই একটা খাবারের দোকান। আপনি সেই দোকানে ঢুকলেন, দোকানিকে কিছু না বলেই একটা খাবারের প্যাকেট তুলে নিয়ে হাঁটা দিলেন। কাজটা ঠিক না বেঠিক সেসব চিন্তা আপনার মাথায় আসবে না। আপনার খিদা পেয়েছে, সেটা নিবারণ করাই এখন আপনার কাছে মুখ্য।

ইগো: ইগো হচ্ছে ইড এবং সুপার ইগো এ দুয়ের মধ্যে ব্যালেন্স। ইগো আমাদের বাস্তবধর্মী সিদ্ধান্ত নিতে শেখায়। বস্তুত, যে মানুষের ইগো যত ভালো; সে সামাজিকভাবে তত বেশি খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম। ইগো আমাদের শেখায় খিদা পেলে যদি আমার খাবার কেনার সামর্থ না থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা কী কী করতে পারি। আমরা কোনো বন্ধুর থেকে ধার নিয়ে খাবার কিনতে পারি, কিংবা দোকানি পরিচিত হলে অনুরোধ করতে পারি, আমাকে এক প্যাকেট খাবার আপাতত বাকিতে দিতে, আমি পরে পরিশোধ করে দেব।

সুপার ইগো: এটি হচ্ছে আমাদের নীতিবোধ বা বিবেকবোধ। এ বিবেকবোধ সামাজিক অথবা ধর্মীয় মূল্যবোধ যেকোনোটি থেকেই আসতে পারে। সুপার ইগো আমাদের শেখায় খিদা পেলেই একটি দোকানে ঢুকে নিজের ইচ্ছামত খাবার তুলে নিয়ে চলে যাওয়া যায় না। এটি নীতিগতভাবে সঠিক নয়।

ধর্ষকদের মাঝে এই ইগো বা সুপার ইগো কোনটিই কাজ করে না। তাদের সব কিছুকে ছাড়িয়ে যায় তাদের ইড। একজন নারীর শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার চেয়ে তার নিজের সেক্সুয়াল প্লেজার পাওয়ার বিষয়টিই তার কাছে মুখ্য।

সবশেষ আরেকটি ভিন্ন বিষয় নিয়ে একটু বলি। হিউম্যান সেক্সুয়াল রেসপন্স সাইকেলের অনেকগুলো সেক্সুয়াল মডেলের মধ্যে একটি হলো জন ব্যানক্রফটের ডুয়াল কন্ট্রল মডেল। মডেলের বিস্তারিত আলোচনায় আমি যাব না। এখানে যেটি মূলকথা সেটি হচ্ছে, সেক্সুয়াল অ্যাক্টিভিটি আমাদের নার্ভাস সিস্টেমের এক্সিটেটরি এবং ইনহিবিটরি দুই মেকানিজমের ব্যালেন্সের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এখন যাদের ক্ষেত্রে ‘Low excitation’ এবং ‘High inhibition’ থাকে, তাদের ক্ষেত্রে সেক্সুয়াল ডিসফাঙ্কশন হওয়ার একটি সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে যাদের ‘High excitation’ এবং ‘low inhibition’ থাকে, তাদের ক্ষেত্রে রিস্কি সেক্সুয়াল বিহেভিয়র’ (ধর্ষণ) হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর।

পরিশেষে একটি কথা না বললেই নয়। ধর্ষণের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ নিয়ে আমার লেখাটির পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্ষণ প্রতিরোধে ঠিক কোন কোন জায়গায় কাজ করা উচিত, কেন করা উচিত- সে বিষয়ে একটি বিজ্ঞানসম্মত ধারণা দেওয়া, ধর্ষণকে নরমালাইজ করা নয়। কারণ আমি জানি, আমাদের আশেপাশেই অনেক রেপিস্ট বা পটেনশিয়াল রেপিস্ট ভালো মানুষের চেহারা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।

তারা কেউ কেউ হয়তো এটা বলবে, সবই যখন সাইকোলজিকাল কারণে হয়, তাহলে মানুষের কী দোষ! দোষ অবশ্যই আছে। আপনি চাইলেই মাদকাসক্ত না হতে পারেন, চাইলেই পর্নোগ্রাফিক মুভি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারেন, চাইলেই ধর্মীয়, পারিবারিক, সামাজিক অনুশাসন মেনে আপনার ইগো, সুপার ইগোকে উন্নত করতে পারেন। তা না করে, সব দোষ সাইকোলজি আর মেয়েদের পোশাকের- এসব কথা বলে বলে নিজেকে পটেনশিয়াল রেপিস্ট থেকে রেপিস্টে উন্নীত করার দায়ভার অবশ্যই আপনার।

লেখক: রেসিডেন্ট, ডিপার্টমেন্ট অব চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডলোসেন্ট সাইকিয়াট্রি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সৌজন্যে : জাগোনিউজ

 

ধর্ষণ পরিক্রমা: ধর্ষণের ব্যধিতে আক্রান্ত স্বদেশ

নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে কলম, ফেসবুক, টুইটার, আর টিভিগুলো সারাদিন কথা বলছে। ধর্ষণের ব্যধিতে ভীষণভাবে সংক্রামিত হয়েছে দেশ। ব্যক্তি ধনী হোক বা দরিদ্র, শিক্ষার হার বেশি কিংবা কম; সবখানেই ধর্ষণ একটি মহামারি আকার ধারণ করেছে।

সম্প্রতি দেশজুড়ে ধর্ষণ, হত্যা, নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি মানুষের ভাবনার কেন্দ্রে চলে আসছে। নারীর প্রতি সমাজের মনোভাব, সমাজে নারীদের আরও অনিরাপদ করে তুলছে। বিশেষ করে ধর্ষণের দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া, বিচারহীনতা, ভিক্টিম ব্লেমিং, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত দায় কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।

নারীর প্রতি সহিংসতার বর্তমানে প্রায় লাগামহীন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১শ’ ৭ সেকেন্ডে একজন নারী ধর্ষণ অথবা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। যা বছরেয প্রায় ২ লাখ ৯৩ হাজার নারী ধর্ষণ অথবা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।

নারীর প্রতি সহিংসতায় বাংলাদেশের চিত্র আরো ভয়াবহ। মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের’ তথ্যমতে, ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সালে সেপ্টম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ মোট ধর্ষণের সংখ্যা ৭ হাজার ৫শ’ ২৭ টি।

এর মধ্যে শিশু ধর্ষণের সংখ্যা ৩ হাজার ২শ’ ৯০ টি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে মানবাধিকার সংস্থা- আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ৫ মাসে ৬শ’ ৩২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। একই সময় ১শ’ ৪২টি ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাও ঘটেছে। এর মধ্য থেকে ২৯ জন ভুক্তভুগি আত্মহত্যা করেছে। ৫ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। ধর্ষকদের বিষাক্ত দৃষ্টি থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশু, প্রতিবন্ধী থেকে ষাটোর্ধ্ব মহিলা কেউই। ২০২০ সালে গত ৯ মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯শ’ ৭৫ জন নারী। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২শ’ ৮ জন।

এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৩ জন। আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন নারী। সংগঠনটি আরো জানায়, গত ৯ মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৬১ নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানির কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ নারী এবং ৯ পুরুষ নিহত হয়েছেন।

১৪টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে করা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ সালে ধর্ষণের শিকার ৬৩৫ জনের মধ্যে ৯৬ জন , ২০১২ সালে ধর্ষণের শিকার ৫০৮ জনের মধ্যে ১০৬ জন, ২০১৩ সালে ধর্ষণের শিকার ৫শ’ ১৬ জনের মধ্যে ৬৪ জন, ২০১৪ সালে ধর্ষণের শিকার ৫শ’ ৪৪ জনের মধ্যে ৭৮ জন এবং ২০১৫ সালে ধর্ষণের শিকার ৮শ’ ৮ জনের মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৮৫ জনকে।

২০১৬ সালে বাংলাদেশে এক হাজারেরও বেশি নারী ও কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। ১৪ টি দৈনিক পত্রিকার খবর বিশ্লেষণ করে সংগঠনটি বলছে, গত বছরে ১ হাজার ৫০ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এটা আগের বছরের তুলনায় কম হলেও ধর্ষণ ও নির্যাতনের ধরণ ছিলো নির্মম। ঘটনাগুলোকে ‘ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা’ এই তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮শ’ ১৮ জন নারী। ২০১৭ সালে ৯শ’ ২ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ২০১৮ সালে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭শ’ ৩২ জন। ২০১৮ সালে শিশু ধর্ষণের মামলা ছিল ৭শ’ ২৭টি এবং নারী ধর্ষণের মামলা ছিল ৩ হাজার ৯০০টি।

২০১৮ সালে শিশু ধর্ষণের সংখ্যা ছিল ৩শ’ ৫৬ টি। ২০১৮ সালের চেয়ে গত বছর শিশু ধর্ষণ ৭৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেড়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ২০১৯ সালে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৪১৩ নারী। ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে ৮৪টি শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া এক বছরে যৌন নির্যাতন বেড়েছে ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৭৬ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ১০ জন।

বিশ্বজুড়ে প্রায়ই অধিকাংশ নারীই কোন না কোন ভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে প্রায় ২০ লাখ নারী ধর্ষণের শিকার হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ ও সংঘাত চলাকালে ধর্ষণের এই পরিসংখ্যান প্রায় একই রকম।

২ বছর আগেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৬ শতাংশ নারী কোন না কোন ভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন এবং ৭% নারী সরাসরি ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। উন্নত অথবা অনুন্নত দেশ, সবখানেই একই চিত্র। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ধর্ষণ কেন হচ্ছে? কেনই বা ধর্ষণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে হু হু করে? এই প্রশ্নের উত্তর কেবল শুধু মাদক-পর্নোগ্রাফি বা বিজাতীয় অপসংস্কৃতিকে দায়ী নয় বরং পুরো দায়টি রাষ্ট্রের ওপর এসে পড়ে। ধর্ষণ মামলায় পড়ছে হাজার হাজার বছরের পর বছর ধরে শুধু আলোড়ন তৈরি সাজা হচ্ছে দুই বা চার জনের।এই সমাজ সুদীর্ঘ সময় ধরে মনস্তাত্ত্বিক ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বছরের পর বছরজুড়ে।

ধর্ষণ তখনই থামবে যখন ধর্ষকের সাজা হবে চরমভাবে এবং প্রতিটি ধর্ষকের বিচার হবে। কঠোর পরিণতি দেখে ভয়ে ধর্ষনকামী হয়ে উঠা অমানুষগুলো মানুষ হয়ে উঠবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে ধর্ষণের যে পরিসংখ্যান আমরা দেখছি এর পিছনে লুকিয়ে আছে আরেকটি ছবি, সেই পরিসংখ্যানটি আমাদের অজানা। ধর্ষণের যে তথ্য-উপাত্ত দেয়া হয় সেটি কেবল পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগ অথবা গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের উপর ভিত্তি করে তৈরি। বিশাল কিন্তু একটি বিশাল সংখ্যা, লোকলজ্জার ভয়ে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর পরিবার যৌন নির্যাতনের কথা প্রকাশ করে না।

 

ফেসবুক পেজের মাধ্যমে নিশাতের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প

‘পাপড়ি’স ড্রিম’ –এর প্রতিষ্ঠাতা নিশাত তাসমিনের পরিবারে তার মা-ই ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কিন্তু তার মায়ের পক্ষে একা পুরো পরিবারের খরচ চালানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছিল।
তাই নিশাত তার মাকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন যাতে তাদের পরিবার একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার দু’বছর পর আমি লক্ষ্য করলাম যে অনেকেই ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বাসায় রান্না করা খাবার বিক্রি করছে, যা আমার কাছে খুব সময়োপযোগী ও ভালো ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বলে মনে হয়েছিল। তাই ফেসবুক পেজের মাধ্যমে যারা বাসায় রান্না করা খাবার বিক্রি করছে আমি সেই পেজগুলো সার্চ করতাম এবং তাদের ব্যবসার ধরণ বোঝার জন্য সেই পেজগুলোতে নিয়মিত দেখতাম। এসব করতেই করতেই রান্নাঘর থেকে আয় করার পরিকল্পনাটি আমার মাথায় আসে। – বলছিলেন নিশাত।

অনেক চিন্তাভাবনা করে অবশেষে ২০১৮ সালে নিশাত তার মায়ের রান্না করা খাবারের ছবি দিয়ে একটি ফেসবুক পেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি খাবারের ছবিগুলো ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপেও শেয়ার করেন।

এর কিছুদিন পরেই নিশাত তার প্রথম অর্ডারটি পান। প্রথম অর্ডারটি ছিল চিকেন রোস্টের, যেটি তার মায়ের হাতের রান্না করা প্রিয় খাবার। নিশাত আজও সেই দিনের কথা মনে করেন। প্রথম অর্ডারটি পাওয়ার পর আমি আমার মাকে ফেসবুক পেজটি সম্পর্কে বলি। প্রথমে তিনি অবাক হন এবং একই সঙ্গে বেশ খুশিও হন। তিনি যেহেতু বাড়ির বাইরে ছিলেন তাই তিনি আমাকে চিকেন রোস্ট রান্না করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বাজারে যেতে বলেন। আমি তার কথামতো সবকিছু কিনে আনি এবং মা কাজ থেকে বাড়ি ফিরে রোস্ট রান্না করলেন। এভাবেই আমরা প্রথম অর্ডারটি আমাদের গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলাম।

এরপর প্রায় দুই বছর কেটে গেছে। এখন যে কয়েকটি বাংলা খাবারের পেজ আছে সেগুলোর মধ্যে ‘পাপড়ি’স ড্রিম’ বেশ পরিচিত।

নিশাতের মা এখন চাকরি ছেড়ে তার পুরো সময় মেয়ের ব্যবসায় দিচ্ছেন। তারা যৌথভাবে পুরো ব্যবসার কার্যক্রম পরিচালনা, অর্ডার নেওয়া ও খাবার তৈরি করতে কাজ করছেন। পাপড়ি’স ড্রিম –এ চিকেন রোস্ট, বিরিয়ানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের দেশি ভর্তা পাওয়া যায়। তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিশেষ খাবার হলো ‘খুদের ভাত ভর্তা’।

২০১৯ সালে নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে সবচেয়ে বেশি খাবার বিক্রি করার জন্য নিশাত ‘হোমশেফ’ আয়োজিত ‘সেরা তরুণ উদ্যোক্তা’ পুরস্কারও পেয়েছেন।

তেলাপোকা তাড়াতে

তেলাপোকা তাড়াতে পারছেন না কিছুতেই? তেলাপোকার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে আজই ট্রাই করুন, এই ছোট পদ্ধতিগুলো:

• রান্নাঘরেই তেজপাতা থাকে৷ তেজপাতা গুঁড়া করে বিভিন্ন ঘরের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে দিতে পারেন৷ তেলাপোকারা পালাবে
• তেলাপোকা দূর করতে ঘরের চারপাশে বোরিক পাউডারের সঙ্গে আটা বা ময়দা মিশিয়ে ছড়িয়ে দিন।
• লবঙ্গও খুব কাজের তেলাপোকা তাড়াতে।
বেশ কয়েকটি লবঙ্গ রেখে দিন রান্নাঘরের বিভিন্ন জায়গায়। ছোট্ট এই মসলাটির ঝাঁঝালো গন্ধ তেলাপোকার শত্রু

• একটি মগে এক লিটার পানি নিন এবং এতে একটি রসুনের কোয়া, একটি পেঁয়াজের পেস্ট এবং এক টেবিল চামচ গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে মিশিয়ে নিন। এবার স্প্রে করে দিন সারা বাড়িতে বা যেসব জায়গায় তেলাপোকা বেশি আসে
• শুধু তেলাপোকা নয়, সব ধরনের পোকামাকড় তাড়াতে ঘরে রেখে দিন নিমপাতা। নিম তেল বা নিমপাতার গুঁড়াও রাখতে পারেন।

 

মায়ের জন্যই সন্তান হয় বুদ্ধিমান!

সন্তান কোনো ভুল করলে তখন বাবা মা একজন অন্য জনের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেন। প্রায়ই তাদের বলতে শোনা যায়, তোমার জন্য এমন হয়েছে বা তোমার সন্তান এমন করেছে। কিন্তু সন্তান যখন ভালো কোনো কিছু অর্জন করে তখন দৃশ্য বদলে যায় পুরোটাই।

সন্তানের বেড়ে ওঠার সময়গুলোতে দেখতে কেমন, তার স্বভাব সব কিছুতেই মা বাবার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। সন্তানের বেড়ে ওঠায় বাবা-মায়ের প্রায় সমান অবদান থাকলেও তার বুদ্ধি বিবেচনাবোধ কিন্তু মায়ের দিক থেকে আসে।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সন্তানের মাথায় যে বুদ্ধি তৈরি হয়, তা আসে মায়ের থেকে, বাবার থেকে নয়। যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১২ হাজার জনের ওপর একটি সমীক্ষা করা হয়। সেই জরিপে যারা অংশ নেন তাদের বয়স ছিল ১–২২ বছর। তাদের কাছে বিভিন্ন বিষয় জানতে চাওয়া হয়। আর সেসব প্রশ্নের উত্তর থেকেই বিশেষজ্ঞরা এই সিদ্ধান্তে আসেন।

সন্তানের বুদ্ধি কেমন হবে, সেটা নির্ভর করে মায়ের জিনের ওপরেই। সেখানে বাবার তেমন ভূমিকা নেই। আর এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, প্রায় প্রতিটি পরিবারে মায়ের সঙ্গে সন্তান বেশি সময় থাকে। এজন্য মায়ের আচরণ, ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধির প্রভাব সন্তানের ওপর বেশি।

তবে শিশুর আইকিউ বাবা-মা দু’জনের থেকেই তার কাছে আছে। মানুষের এক্স ক্রোমজমের ওপরেই নির্ভর করছে যে কতটা বুদ্ধি তৈরি হবে।