banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 443 বার পঠিত

 

বাবার ওষুধ কিনতে সকাল-সন্ধ্যা ভ্যান চালায় শিশু শম্পা

জামালপুর সদর উপজেলার নাকাটি গ্রামের শফিকুল ওরফে ভাসানীর শিশু কন্যা শম্পা। দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে শয্যাশায়ী বাবার চিকিৎসা ও ওষুধের টাকার জন্য দেড় বছর ধরে ভ্যান চালাচ্ছে সে। শম্পা নাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।

সম্প্রতি বিষয়টি নজরে এলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে সরেজমিন পরিদর্শন করেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক। সোমবার সকালে শম্পা, তার বাবা-মা ও স্বজনদের সংখ্যা কথা বলেছেন তিনি। ওই সময় জামালপুর সদরের ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে শম্পার বাবা শফিকুল ওরফে ভাসানীর চিকিৎসার দায়িত্ব ও পরিবারের ব্যয়-ভার গ্রহণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।

শম্পার বাবা শফিকুল ওরফে ভাসানী বলেন, আমি আগে ভ্যান চালাতাম। পাঁচ বছর আগে জামালপুর শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় আমার এক পা ভেঙে যায়। এরপর পঙ্গু হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। সবকিছু বিক্রি করে প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ করেছি। তবু পা ভালো না হওয়ায় দেড় বছর ধরে ঘরে পরে আছি। প্রতিদিন আমার ১০০-১৫০ টাকার ওষুধ লাগে। কোনো উপায় না পেয়ে আমি ও আমার স্ত্রী সবজি বিক্রি করি ও আমার ছোট মেয়ে শম্পা ভ্যান চালায়। স্ত্রী-মেয়ের জন্যই এখনো বেঁচে আছি।

শম্পার মা নেবুজা বেগম বলেন, পঙ্গু হাসপাতাল থেকে জানিয়েছে আমার স্বামীর পা ভালো করার জন্য আরো অন্তত তিন লাখ টাকা প্রয়োজন। এ কারণে ছোট মেয়ে শম্পা ভ্যান চালায়। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে শম্পা। ওর হাত-পায়ে ব্যথা হয়। প্রতিরাতেই ওর হাত-পা টিপে দিতে হয়। তবু বাবার জন্য সকাল-সন্ধ্যা ভ্যান চালিয়ে টাকা নিয়ে আসে মেয়েটা।

ভ্যান চালাতে খুব কষ্ট হয় জানিয়ে শম্পা বলে, প্রতিদিন সকালে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হই। ২০০-৩০০ টাকা কামাই করে বাড়ি ফিরি। সেই টাকা দিয়ে বাবার ওষুধ কিনি।

শরিফুলের প্রতিবেশী হযরত আলী বলেন, দেড় বছর আগে শম্পা একবেলা পড়াশোনা করত, এক বেলা ভ্যান চালাত। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হওয়ার পর সারাদিন ভ্যান চালায় মেয়েটি।

জামালপুর সদরের ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। পরিবারটির খোঁজ নিয়েছি। স্থানীয়রা সাধ্যমতো তাদের সহযোগিতা করছে। অসহায় পরিবারটির দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে শিশু শম্পা ও তার বাবার খোঁজ নিয়েছি। অসহায় পরিবারটিকে সহযোগিতার বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Facebook Comments