All posts by Oporajita

 

সুস্থ সন্তান জন্মদানে গর্ভবতীর খাবার

কর্মশক্তি সম্পন্ন জাতি গঠনে চাই সুস্থ শিশুর জন্মদান। তার আগে নিশ্চিত করা জরুরি মায়ের সুস্থতা। গর্ভাবস্থায় সুস্থ মায়ের দেহ থেকে শিশু প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি গ্রহণ করে। জন্মের পর বাচ্চা দরকারি সব পুষ্টি পায় মায়ের দুধ পানের ভেতর দিয়ে। তাই প্রসবের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে মা ও শিশুর যত্নে দরকার বিশেষ খাবার। যেমন-

ক্যালসিয়াম

গর্ভের শিশুর হাড় গঠনে এবং মায়ের হাড়ের ক্ষয় রোধে ক্যালসিয়াম খুব জরুরি। ক্যালসিয়াম মায়ের উচ্চ রক্ত চাপ প্রতিরোধেও সহায়তা করে। সেজন্য গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পরবর্তী সময়ে মাকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১ হাজার মি.গ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিৎ। ডিম, দুধ, মাছ, পালং শাক, বাদাম থেকে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

শর্করা

শর্করার উৎস হিসেবে ভাত, রুটি, আলুকে বুঝি। শর্করার যোগানে সারাদিনে গর্ভবতী মাকে ৩ থেকে ৪ কাপ ভাত খেতে হবে। কর্মজীবী মায়ের সারাদিনে বেশি ক্যালোরি খরচ হয়, তাই তাদের ক্ষেত্রে দিনে ৪ থেকে ৫ কাপ ভাত খাওয়া দরকার। ভাতের সঙ্গে রুটি আর আলুও খাওয়া যেতে পারে।

আমিষ

আমিষ গর্ভের শিশুর শরীরের নতুন টিস্যু তৈরিতে সাহায্য করে। গর্ভবতী মাকে দৈনিক অন্তত ৬০ গ্রাম আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। প্রতিদিনের আমিষের অভাব পূরণে ২ থেকে ৩ টুকরো মাছ, ৩ থেকে ৪ টুকরো মাংস ও কমপক্ষে একটি ডিম খেতে হবে। এছাড়া নিয়ম করে প্রতিদিন একগ্লাস উষ্ণ গরম দুধ পান করলে আমিষের অভাব পূরণ হবে।

ভিটামিন সি

ভিটামিন সি শরীরের চর্ম রোগ প্রতিরোধ করে। গর্ভবতী মায়ের উচিৎ প্রতিদিন ৭০ গ্রাম ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য খাওয়া। একটি করে ভিটামিন সি যুক্ত ফল খেতে পারেন। কমলা,লেবু,পেয়ারা,ব্রকলি ও টমেটো থেকে অনেক ভিটামিন সি পাওয়া যায়।

আয়রন

গর্ভের শিশুর স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য আয়রন এর ভূমিকা অপরিসীম। এছাড়া আয়রন শরীরের রক্ত বাড়াতেও সাহায্য করে। আয়রনের চাহিদা মেটাতে মাকে রোজ ২৭ গ্রাম আয়রন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। ডিমের কুসুম, ডাল, কলিজা, মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ থেকে আয়রনের চাহিদা পূরণ হতে পারে।

ফলিক অ্যাসিড

গর্ভবতী মায়ের শরীরে দৈনিক ০.৪ গ্রাম ফলিক অ্যাসিড প্রয়োজন থাকে। ফলিক এসিড নিউরল টিউবের কোষ অসংগতি থাকলে তা দূর করে। লেটুস পাতা, পালং শাক, কমলা ফলিক অ্যাসিডের দারুণ উদাহরণ।

ফ্যাট

গর্ভবতী হওয়ার পর যথেষ্ট পরিমানে ফ্যাট জাতীয় খাদ্য খেতে হবে। ফ্যাট জাতীয় খাদ্য শিশুর মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে,তাই বেশি করে মাকে ফ্যাট জাতীয় খাদ্য খেতে হবে। দুধ, ঘি, মাখন ফ্যাট এর চাহিদা পূরণ করবে।

পানি

রোজ প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। পানি শরীরে রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। রক্তের মাধ্যমে বাচ্চার শরীরে পুষ্টি পৌঁছায়। এছাড়া পানি মূত্র থলির প্রদাহ ও অতিরিক্ত ঘাম রোধ করে। পানির সঙ্গে বিভিন্ন সুপ, টাটকা ফলের রসও খাওয়া যেতে পারে।

 

অধিকারের সঙ্গে চাই সম্মানও

সুদীর্ঘকাল ধরে নারীরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নানা বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হয়েছেন নারী। প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম করে নিজ যোগ্যতাবলে একটু একটু করে নারীকে অধিকার আদায় করে নিতে হচ্ছে। তবে নারী ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন রুখে দিতে যোগ হচ্ছে নতুন কৌশল।

নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের দীর্ঘ ইতিহাস। ঘটনার  শুরু ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে নারীর মজুরি বৈষম্য, শ্রমঘণ্টা ১২ ঘণ্টা কমিয়ে  ৮ ঘণ্টা করার দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। তার তিন বছর পর ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’।

একটা সময় ছিল নারীরা নিজেদের সুবিধা-অসুবিধার কথা জানাতে পারতেন না। সে সময় নারীরা নিজের কোনো বিষয়ে মতামত দিতে পারতেন না। পরিবারের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হতো তাদের। এমনকি কর্মক্ষেত্রে নারীরা সমান পরিশ্রম করেও সমান মজুরিতে ছিল বৈষম্য।

নারীর অবস্থান অনেকটা পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বে প্রতিটি দেশে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারীরা পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যোগ্যতার প্রমাণ করে যাচ্ছে।

তবে পরিবর্তনের এ প্রেক্ষাপটে নারীর প্রতি সহিংসতা বা নির্যাতন বন্ধ নেই। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চেষ্টা করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে পদক্ষেপ নিলেও তার বাস্তবায়নে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।

মহিলা পরিষদের এক জরিপে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ৪৩৬টি। ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। ২০১৫ সালে ১ হাজার ৯২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। যৌন নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, নারীর আত্মহত্যা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন অত্যাধুনিক যুগেও নারীর প্রতি এ ধরনের বর্বর নির্যাতনগুলো  হচ্ছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম দীর্ঘদিন ধরে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, নারীর সমঅধিকারভিত্তিক সমাজ গড়ার কাজে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন।

বাংলাদেশে বর্তমান নারী অবস্থান ও দীর্ঘ নারী আন্দোলনের ফলাফল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজকে যে পাহাড়ে উঠছে, ভার উত্তোলন করছে। সমাজ-সংসার ও কৃষিতে অবদান রাখছে, এসব ১০০ বছরের নারী আন্দোলনের ফল। শুধু আমরা নই, আমাদের পূর্বসূরি বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামালসহ অনেক নারীর অবদান। বর্তমানে সাড়ে ৪ হাজার নারী পুলিশে কাজ করছে। এগুলো শতাব্দীর নারী আন্দোলনের ফল। সুতরাং ইঞ্চি ইঞ্চি করে এগোচ্ছে নারী।’

পুরুষ-নারী উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো গেলে এ অগ্রযাত্রা আরও হবে বলে জানান তিনি। পলিসি মেকিংয়ে নারীর আবদান রাখার সুযোগ দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বড় বড় পদে দরকার নারীর আরও প্রবেশ করা দরকার। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতারা ভূমিকা রাখতে পারে। তারা নারীকে সুযোগ করে দিতে পারে।’

মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী ও নারীনেত্রী এলিনা খান বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে বা তারও আগে নারীরা ঘরে বন্দি ছিল, বাইরে আসতে পারত না। পড়াশোনা করতে পারত না, শারীরিক-মানসিক সমস্যার সমুখীন হয়েছে। এখন বাইরে আসার সুযোগ হয়েছে। কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তবে নির্যাতনের জায়গায় নতুন নতুন কৌশল যোগ হয়েছে।

‘আগের থেকে নারীরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও কথা বলার স্বাধীনতা পেয়েছে। তবে নির্যাতনের চিত্র থেকে বেরোতে পারেনি। আগে নারীরা ভোগ বিলাসের শিকার হতো মুষ্টিমেয় লোকের হাতে। এখন ঘরেবাইরে সবখানে নারীরা রেপের শিকার হচ্ছে।’

তিনি বলেন, এখনও অনেক নারী নিজেই নিজের সম্মান বিকিয়ে দেন। একটা সংসারে একজন নারী আরেকজন নারীকে সম্মান করেন না। নারীদের সম্মান করার বিষয়টি পরিবার থেকে শেখানো দরকার। ঘর স্কুল থেকে দুজনকেই নারীকে সম্মান করা শেখাতে হবে। সন্তানদের শেখাতে হবে। সেই সঙ্গে অধিকারও দিতে হবে।’

এলিনা খান বলেন, ‘আজকাল নারীরা সমধিকারের কথা বললে বাসে বা বিভিন্ন জায়গা শুনতে হয়, আপনারা সব জায়গায় সম অধিকার চান, তাহলে আলাদা সিট আলাদা, আলাদা পরিবেশ চান কেন? তাদের বলতে চাই, সমঅধিকার চাওয়া মানে এই নয় যে তুমি আমাকে প্রাপ্য সম্মানটুকু দেবে না। সম-অধিকার মানে অধিকারের সঙ্গে সম্মানটুকু দেয়া। আমার আলাদা সিট সেদিন লাগবে না, যেদিন কোনো ছেলে পাশে বসলে কোনো মেয়েকে টিজ করবে না, কুৎসিত দৃষ্টিতে তাকাবে না।’

নির্যাতনের পর নারীরা সুষ্ঠু বিচার পাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি নির্যাতনের পর একজন নারী থানায় গেলে তাকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করানো হচ্ছে। সে জানে না কোন মামলাটি করলে সে সঠিক বিচার পাবে। এ ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি, পুলিশের চাপে মিথা মামলা করছে। আবার মামলা হলেও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সঠিক বিচার পাচ্ছে না।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের শিল্প ও কৃষি ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ শতাংশ নারী নিয়োজিত আছে। কিন্তু কৃষিখাতে নিয়োজিত নারীর মধ্যে প্রায় ৯৪.৮ শতাংশ নারীই বিনাশ্রমে কাজ করে। অন্যদিকে শিল্পখাতেও নারী পুরুষের চেয়ে কম মজুরি পেয়ে থাকে। এ ছাড়া পোশাক খাতে মোট শ্রমিকের ৮০ শতাংশই নারী। এ খাতে নারী শ্রমিকদের অবদান বেশি থাকলেও এখানেই সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার নারী। পোশাক খাতে বেশিরভাগ নারীই শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। উঁচুস্তরে নারীর অংশ্রগ্রহণ হাতেগোনা।

 

কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে খুবই সামান্য

বিশ্বজুড়ে গত ২০ বছরে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে খুবই সামান্য। এক্ষেত্রে সামান্য কিছু প্রান্তিক অগ্রগতি ছাড়া আর তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি বললেই চলে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক জরিপে বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য।

১৯৯৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের পার্থক্য কমেছে মাত্র ০.৬ শতাংশ। যেসব দেশে নারীদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ বেশি সেসব দেশেও তাদের চাকরির মান এখনো উদ্বেগের একটি বিষয়।

বিশ্বের ১৭৮টি দেশে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের হার, কর্মপরিবেশসহ নানা তথ্য সংগ্রহ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

আইএলও প্রধান গাই রাইডার বলেছেন, ’নারীরা যে এখনো উপযুক্ত কাজ খুঁজে পেতে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন তারই প্রমাণ এই প্রতিবেদন। নারীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের ব্যাপারে যে অগ্রগতি হয়েছে তা একেবারেই প্রান্তিক পর্যায়ে’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ পুরুষদের চেয়ে ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ কম ছিল। ১৯৯৫ সালে এ পার্থক্য ছিল ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ। আর এ হার ২০ বছর আগের হারের চেয়ে মাত্র ০.৬ শতাংশ কম।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়- বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নারীরাই বেশি বেকারত্বে ভোগেন। বিশ্বজুড়ে নারী বেকারের হার ৬.২ শতাংশ যেখানে পুরুষদের বেকারত্বের হার ৫.৫ শতাংশ। চাকরির অভাবে প্রায়ই নারীদের নিম্ন মানের চাকরিতে যোগ দিতে হয়।

উচ্চ ও নিম্ন -সব ধরনের আয়ের দেশেই নারীর গৃহস্থালী কাজের জন্য কোনও পারিশ্রমিক হিসেব করা হয় না। মূলত, নারীরা কর্মক্ষেত্রে ও গৃহস্থালী কাজ মিলিয়ে পুরুষের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করে থাকেন বলেও গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বেশিরভাগ নারীকেই তার যোগ্যতার চেয়ে নিম্নমানের চাকরিতে যোগদান করতে হয়। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে নারীকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গৃহস্থালী কাজে জড়িত থাকতে হয় যার জন্য আর্থিক প্রতিদানও পান না তারা। গবেষকদের মতে, এসব চিত্র নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। আর তা থেকে উত্তরণের হারও আশানুরূপ নয়। এজন্য নারী-পুরুষ উভয়েরই ঐকান্তিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

বাবা ডাকতে বাধ্য করা হয় শাহানারাকে

চাঁদা না দেয়ায় নোয়াখালীর হাতিয়ার শাহানারাকে বিবস্ত্র করে দুই ধাপে পেটানোর পর কান ধরে উঠ-বস করানো হয়। এ সময় শাহজাহানকে ‘বাবা’ ডাকতে বাধ্য করা হয় শাহানারাকে। বেদম মারধরের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে শাহানারা তাকে ‘বাবা’ বলে ডেকে ওঠেন এবং কান ধরে উঠবস করেন।
রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় চিকিৎসা নিতে আসা শাহানারা নিজেই বাংলামেইলকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

তবে শাহানারার মর্যাদার বিষয়টি বিবেচনা করে তা প্রকাশ করা হলো না।

রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাহানারা বাংলামেইলকে বলেন, ঘটনার দিন আমি বাজার থেকে টাকা নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে আমাকে পেছন থেকে ঘুষি ও লাথি মেরে যখন গলার গয়না ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় শাহজাহান। তখন আমি তাকে বাধা দিই। এরপর সে আমাকে আরেক লাথি দিয়ে রাস্তার পাশের গর্তে ফেলে দেয়। এরপর আমাকে লাঠি দিয়ে বেদম মারতে থাকে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে এলে আমাকে জোর করে তাকে ‘বাবা’ ডাকতে বাধ্য করা হয়।

সে বলে, ‘আমি তোর বাবা’। বল.., বল…, …বল। পরে আমি বাধ্য হয়েই তাকে ‘বাবা’ ডাকি।

এতেও ক্ষান্ত হয়নি শাহজাহান। চলে আবারও নির্মম নির্যাতন। শত শত মানুষের সামনে তিন সন্তানের এই জননীকে কান ধরে ওঠ-বস করানো হয়। কয়েক ব্যক্তি এগিয়ে এলে তিনি (শাহজাহান) আরো অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন। লাঠির আঘাতে এক সময় জ্ঞান হারান শাহানারা।

শাহানারা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এতগুলা মানুষের সামনে আমাকে কান ধরে ওঠ-বস করতে হয়েছে। ভয়ে কেউ আমাকে বাঁচাতে আসেনি। তবে একজন বৃদ্ধা ও যুবক চেষ্টা করেছিল। সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন। তারা এলাকায় এতটাই প্রভাবশালী যে, এ সব মানুষের আর করার কিছুই ছিল না।

স্থানীয়রা জানান, থানার এই কথিত দালাল শাহজাহানের ভয়ে আতঙ্কিত এলাকাবাসীও। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পান না। থানা-পুলিশের সাথে সখ্যতা থাকায় গ্রেপ্তারের ভয় দেখান তিনি।

এদিকে, ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সদর সার্কেল) নবজ্যোতি খীসা রোববার হাতিয়ায় গেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নিয়েছেন। এ সময় শাহানারাকে পেটানোর লাঠিটির ভাঙা অংশ জব্দ করেন তিনি।

এ বিষয়ে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আরিসুল হক বলেন, আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য সবখানেই অভিযান অব্যাহত আছে। তাকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না।

চাঁদা না দেয়ায় গত সোমবার ( এপ্রিল) নোয়াখালীর হাতিয়া থানার ‘দালাল’ শাহজাহান দুই ধাপে পেটান  হাতিয়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিন সন্তানের জননী শাহানারাকে। তাকে বিবস্ত্র করে দুইধাপে পেটানো হয়। ঘটনাটি এক যুবক মোবাইল ফোনে ধারণ করেন।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে শাহানারাকে নির্যাতনের লোমহর্ষক এক চিত্র।

 

বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে হয়ে উঠুন আরো বেশি দক্ষ

হাতে অনেক কাজ? কোনটা করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না? সমস্যাটা কেবল আপনার একার নয়। এই ধরনের ঝামেলায় পড়তে হয় নিত্যদিন আপনি আমিসহ আরো অনেককেই। অনেক অনেক কাজের ভীড়ে একে তো কোন কাজই ঠিকমতন করা হয় না। তারওপর পুরো ব্যাপারটা গুবলেট করে দিয়ে যায় আমাদেরই করা কিছু কর্মকান্ড। চলুন দেখে আসি এমনই কিছু ব্যাপারকে যেগুলো বাদ দিতে পারলে খুব সহজেই নিজের কর্মদক্ষতা বাড়াতে পারবেন আপনি।

১. একসাথে সব কাজ করা

অনেকসময় দেখবেন একজন মানুষ  অফিসের এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। না পাচ্ছে কোন কাজে ঠিকঠাকভাবে মন দেওয়ার সুযোগ, না একটু শান্তিতে নিঃশ্বাস ফেলার অবসর। কী ভাবছেন? একসাথে অনেক কাজ হাতে নেওয়া এই মানুষগুলোই আসলে সফল? তারাই বুঝি অনেককিছু করে ফেলতে পারছে তাড়াতাড়ি? একটু গভীরে তলিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবেন যে, আসলে এরা কিন্তু মোটেও এগোতে পারছেনা। বরং সব কাজ করতে গিয়ে আটকে যাচ্ছে একটা জায়গাতেই। তাই একটা সময়ে কেবল একটা কাজই করতে চেষ্টা করুন। এটাতো সত্যি যে, একটা কাজে সফল হতে হলে অন্যগুলোকে তখনকার মতন না বলে দিতে হবে আপনার। তাই মনযোগ একদিকে রাখুন।

২. অন্যের কাজে হাত দেওয়া

আপনার পাশের ডেস্কে বসে কেউ কোন একটা কাজ করছে, হঠাত্ মনে হল নাহ! ও কাজটা ঠিক করে করতে পারছেনা। এই ভেবে নিজেই হয়তো আপনি চলে গেলেন সেটাকে নিজের মতন করে ঠিক করে দেওয়ার জন্যে। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, আপনার এই অভ্যাসই আপনাকে থামিয়ে দিতে পারে কর্মক্ষেত্রে? পেছনে নিয়ে যেতে পারে অনেকখানি? শুধু তাই নয়। আপনার এই অহেতুক অনুপ্রবেশকে হয়তো ভালোভাবে নাও নিতে পারে আপনার কলিগ। নিজের কাজকে যথাযথ সম্মানিত হতে না দেখে মনে খারাপ হতে পারে তারও। তাই চারপাশে কার কাজে কি হচ্ছে সেটা না ভেবে নিজের কাজটা ঠিক করে করে ফেলতে চেষ্টা করুন।

৩. ঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া

অনেককেই বলতে শোনা যায় যে কাজ করতে করতে খাবারেরই সময় পাননি। কিন্তু সত্যিই কি খাবার না খেয়ে অনেক বেশি কাজ করে ফেলেন তারা? বাস্তবে খাবারের অভাব আমাদের শরীর ও মনে এমনিতেই খানিকটা অলসতা আর অবসাদ এনে দেয়। ফলে মাথা কাজ করেনা। ধীর হয়ে যায় কাজের গতি। তাই যতই কাজ থাকুক সময়ের খাবার ঠিক সময়ে খেয়ে নিন।

৪. নিজেকে সময় না দেওয়া

অনেকের ধারণা করে থাকেন যে, সফলরা দিন-রাত কেবল কাজ করে। কিন্তু সত্যি বলতে গেলে মানুষ রোবট না। তাই প্রতিটি মানুষেরই দরকার পড়ে বিশ্রামের। অবসরের। সেটা খানিকটা সময়ের জন্যে হলেও। আর তাই প্রচুর কাজ করার মাঝেও বেছে বেছে নিজেকে খানিকটা হলেও সময় দিন। এতে করে মন চাঙা হয়ে উঠবে। কাজের গতি বাড়বে।

লিখেছেন

সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

 

বৈশাখের সুস্বাদ: সরিষা বাটা দিয়ে পাবদা মাছের ঝোল

দেখতে দেখতে চলে এসেছে বৈশাখ মাস। এই কাঠ ফাটা গরমের মৌসুমে মাছের ঝোল ছাড়া কি চলে? না, সরিষা ইলিশ নয়, চলুন আজ শিখে নিই আতিয়া আমজাদের রেসিপিতে সরিষা বাটা দিয়ে পাবদা মাছের ঝোলের রেসিপি।

 

উপকরণ

– পাবদা মাছ ১০ টি

– সরিষা বাটা ৪ টে চামচ ( কালো ও হলুদ সরিষা মিশিয়ে নিলে ভালো)

– পিঁয়াজ মাঝারি ৩ টি কুচি করা

– রসুন বাটা ১ চা চামচ

– আদা বাটা দেড় চা চামচ

– হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ

– মরিচ গুঁড়ো ১ চা চামচ বা পরিমান মতো

– ধনিয়া গুঁড়ো ১ চা চামচ

– জিরা গুঁড়ো ১ চা চামচ

– কাঁচা মরিচ ৪/৫ টি মাঝে ফালি করে কাটা

– তেজপাতা ১ টি, দারচিনি ১ পিস

– কালো জিরা ১ চা চামচ

– ধনেপাতা কুচি ১ মুঠ

– লবণ ১ চা চামচ

– চিনি ১ চা চামচ

– সরিষার তেল ৪ টে চামচ

– গরম পানি ২ কাপ

– বেরেস্তা আধা কাপ

প্রনালী

– মাছ কেটে আলাদা করে লবণ দিয়ে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে । এরপর অর্ধেকটা হলুদ, লবণ ও ১ চা চামচ তেল দিয়ে মাখিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। এবার ফ্রাই প্যান গরম করে ৩ টে চামচ তেল দিয়ে মাছগুলোর উভয় পাশ ১ মিনিট করে ভেজে নিতে হবে, মাঝারি আঁচে ।

– তেল থেকে মাছগুলো তুলে কালোজিরা, তেজপাতা, দারুচিনি দিন একই তেলে । এবার পিঁয়াজ বাদামী করে বেটে বাটা ও গুঁড়া মশলা দিয়ে কষাতে হবে। এ সময় একটু পানি দিয়ে নেবেন।

-কষানো হয়ে গেলে গরম পানি দিয়ে ঢেকে দিন। বলক এলে চুলার আঁচ কমিয়ে ভাজা মাছ গুলো ঝোলে বিছিয়ে দিন এক এক করে।লবণ দিন।

– চিনি, বেরেস্তা ও কাঁচামরিচ দিয়ে ঢেকে ৫ মিনিট রান্না করুন। নামানোর সময় ধনে পাতা দিয়ে নামিয়ে নিন।

 

শিল্পকলায় শুরু ‘চার্লি চ্যাপলিন চলচ্চিত্র উৎসব’

পুরো বিশ্বের সবার প্রিয় চার্লি চ্যাপলিন। যিনি শুধুমাত্র নির্বাক চলচ্চিত্র দিয়ে পৃথিবীকে হাসাতে পেরেছিলেন। একের পর এক সুপার স্যাটায়ার কমেডি ফিল্ম উপহার দিয়ে তিনি হয়েছিলেন হাসির আতংক।

বিশ্বসেরা এই কৌতুক অভিনেতার জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের নিয়মিত চলচ্চিত্র প্রদর্র্শনীর ধারাবাহিকতায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার ইন্টারন্যাশনাল ডিজিটাল কালচারাল র্আকাইভে ১৬ থেকে ২২ এপ্রিল আয়োজন করা হয়েছে ‘চার্লি চ্যাপলিন চলচ্চিত্র উৎসব’।

ধারাবাহিকভাবে ১৬ এপ্রিল ‘চ্যাপলিন ইউ টার্ন’, ১৭ এপ্রিল ‘মডারন টাইমস’, ১৮ এপ্রিল  ‘ইন দ্যা গোল্ড রাশ’, ১৯ এপ্রিল ‘চারলট এটলি ম্যানি কুইন’,‘লাফিং গ্যাস’, ‘ফেইস  অন দ্যা বাররুম ফ্লোর রিঅ্যাকশন’, ‘দ্যা ম্যাস কুয়ারাদার’, ‘গুড ফর নাথিং’,  ‘দ্যা রাউন্ডারস’, ২০ এপ্রিল ‘দ্যা ফায়ার ম্যান’, ‘দ্যা এ্যাডভেনচারার’, ‘এ ডগস লাইফ’, ২১ এপ্রিল ‘এ উইম্যান’, ‘দ্যা ব্যাংক’, ‘দ্যা রিংক’, ২২ এপ্রিল ‘দ্যা পনশপ’, ‘বাই দ্যা সি’ এবং ‘দ্যা ইমিগ্রান্ট’ প্রদর্শীত হবে।

প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট থেকে শুরু হবে প্রদর্শনী। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত।

 

নারীকে মাটিতে ফেলে পেটালো থানার দালাল

চাঁদা না দেয়ায় তিরিশোর্ধ এক নারীকে রাস্তায় পেটাতে পেটাতে মাটিতে শুইয়ে দিল থানার এক দালাল। স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্যের মীমাংসা করে দেয়ার বিনিময়ে টাকা দাবি করেছিল শাহজাহান নামের ওই দালাল। বিচারপ্রার্থী শাহানারা বেগম (৩২) সেই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত সোমবার রাস্তায় একা পেয়ে বেদম প্রহার করে সে। এতে শাহানারার শরীরে অনেক স্থান ফেটে রক্ত বেরিয়ে যায়। এই দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করেন এক যুবক। শুক্রবার ভিডিওটি বাংলামেইলের কাছে এসেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার হাতিয়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহানারা বেগম ৫নং ওয়ার্ডের রিয়াজ উদ্দিনের স্ত্রী। শাহানারা বেগমের এটি দ্বিতীয় বিয়ে। তার প্রথম স্বামী ধনু মিয়া মারা যান ২০০২ সালে। একই সালে রিয়াজ উদ্দিনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তবে বিয়ের কোনো কাবিন হয়নি, ঘরোয়াভাবে মৌলবির সামনে কলেমা পড়ে বিয়ে হয়। প্রথম ঘরে তার দুই মেয়ে আছে। দু’জনেরই বিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় ঘরে আরেকটি মেয়ে রয়েছে। মেয়েটি এএম উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

শাহানারা বেগম বেশ কিছু পৈত্রিক সম্পত্তি পেয়েছেন। এছাড়াও সুদে টাকা কর্জ দিয়েও উপার্জন করেন। দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে তিনি প্রথমে স্থানীয় এক উকিলের কাছে গিয়ে বিচ্ছেদের জন্য অ্যাফিডেভিট করতে চান। কিন্তু কাবিন না থাকায় তিনি পৌরসভার মেয়রের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। মেয়র মীমাংসাও করে দেন। এই সুযোগে থানার দালাল শাহজাহানসহ আরো তিনজন তার বাসায় গিয়ে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। মীমাংসার আশ্বাসে এক কাউন্সিলরকে ১০ হাজার টাকা তিনি দিয়েছেনও।

এর আগেও বিভিন্ন সময় শাহজাহান এলাকায় চাঁদাবাজি করেছেন বলে দাবি করেন শাহানারা বেগম। বাড়ি নির্মাণের সময়ও তিনি তাকে ১৪ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছেনও।

গত শনিবার রাতে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা চাওয়া হয়। এবারও দিতে অস্বীকৃতি জানান। সোমবার শাহানারা ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা ঋণ তোলেন। এর আড়াই লাখ টাকা নিজের নামে এবং এক লাখ টাকা মেয়ের নামে। টাকা নিয়ে বাড়ি আসার পথে একা পেয়ে শাহজাহান পেছন থেকে তিনটি ঘুষি মেরে ফেলে দেয়। এরপর রাস্তা থেকে তুলে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে শাহানারা রাস্তা থেকে ছিটকে সংস্কারাধীন  রাস্তার পাশের গর্তে পড়ে যান।

ঘটনাস্থলে লোকজন জড়ো হতে থাকে। এসময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক ভিডিও করতে থাকেন। ভিডিওতে দেখা যায়, শাহজাহান গাছের ডাল দিয়ে শাহানারা বেগমকে পেটাচ্ছে। এসময় স্থানীয় এক যুবক তাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও কোনো কাজ হয়নি। এক পর্যায়ে স্থানীয় এক প্রবীণ এগিয়ে আসেন কিন্তু তার কথাও শোনেনি শাহজাহান।

এভাবেই পেটানো হয়েছে শাহানারাকে

এ ব্যাপারে শাহানারা বেগমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বাংলামেইলকে বলেন, চাঁদা দিতে না চাইলে শাহজাহান আমার ব্যাগ কেড়ে নেয়। ব্যাগে সাড়ে তিন লাখ টাকা ছিল। এছাড়াও সে আমার গলায় থাকা দেড় ভড়ি স্বর্ণের চেন টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। প্রহারের এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞানের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। গর্ত থেকে তুলে আমাকে পাশের একটি বাড়ির সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর রড দিয়ে মারে শাহজাহান। আমার নাকফুল কেড়ে নেয়। কয়েকটা থাপ্পর দিয়ে আমার বুকে লাথি দেয়। এসময় স্থানীয় লোকরা আমাকে উদ্ধার করে। স্থানীয় লোকেরা আসলে সে আমাকে অর্ধেক চেন ফেরত দেয়। পরে একটি রিকশায় করে আমাকে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।

 

শেয়ারবাজারে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ছে

দিন দিন নারীরা দেশের শেয়ারবাজারে সক্রিয় হয়ে উঠছেন, বিনিয়োগে তাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধস পরবর্তী সময়ে নানা অস্থিরতার মধ্যেও নারী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, স্থিতিশীল শেয়ারবাজারই নারীর অংশগ্রহণকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে।

গত ছয় বছরে নারী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৬৮ হাজার। মঙ্গলবার (৮ মার্চ) নারী বিনিয়োগকারীর বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৭০ হাজার ১৮৯টি।  ২০১০ সালের এই দিনে ছিল ৬ লাখ ১ হাজার ৪০০টি।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল) সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় বছরে নারী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৬৮ হাজার। নারী দিবসে মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে মোট বেনিফিশিয়ারি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ৩ হাজার ৪৪২টি। এর মধ্যে পুরুষদের বিও অ্যাকাউন্ট  ২৩ লাখ ২২ হাজার ৫৯৪টি এবং নারী বিনিয়োগকারীদের বিও সংখ্যা ৮ লাখ ৭০ হাজার ১৮৯ টি এবং কোম্পানির বিও ১০ হাজার ৬৫৯টি।

২০১০ সালে শেয়ার বাজার ধসের পূর্বে ৮ মার্চ মোট বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুরুষদের বিও সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৪১ হাজার, নারী বিনিয়োগকারীদের বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ১ হাজার ৪০০ টি এবং কোম্পানির বিও ছিল ৬ হাজার ৩০০টি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, পুঁজিবাজারের ওপর নারী বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এতে শেয়ারবাজারের প্রতি উৎসাহ বাড়ছে নারীদের। পাশাপাশি ধসের পরবর্তী সময়ে সরকার অনেক প্রণোদনা ঘোষণা করে। ফলে আগের চেয়ে বর্তমান শেয়ারবাজারে অনেকটাই বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে। এ কারণে পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারীর অংশগ্রহণ সমান তালে বাড়ছে।

ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, নারীকে ব্রোকারেজ হাউজে সরাসরি লেনদেন করতে তেমন দেখা না গেলেও তাদের পক্ষে বাবা, ভাই, স্বামী অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করছে। সেই সঙ্গে স্মার্ট ফোনের কল্যাণে বাসায় বসে একজন নারী মার্কেট সম্পর্কে জানতে পারছে এবং প্রয়োজনে শেয়ার বেচাকেনা অর্ডার দিচ্ছে। ডিএসইতে মোবাইলে বেচাকেনা চালু হলে নারী বিনিয়োগকারীরা বাসায় বসে সেল বাই অর্ডার দিতে পারবেন। এতে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।

একাধিক নারী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, বেশিরভাগ নারী নিজেরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছেন। বাজারে আগে অনেকটা গতি ছিল। তাই সেকেন্ডারি মার্কেটে নারীর অংশগ্রহণ ছিল বেশ ভালো। অনেক সিকিউরিটিজ হাউজে নারীর উপস্থিতি লক্ষ করার মতো ছিল। কিন্তু বাজার ধসের পর নারীরা সরাসরি সিকিউরিটিজ হাউজে লেনদেন করতে আসেন না। তবে তাদের বেশির ভাগই প্রাইমারি শেয়ারে আবেদন করেন।

তারা আরও বলেন, ২০১০ সালে অনেক নারী বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আইপিওতে ঘোষিত ক্ষতিগ্রস্ত কোটায় তারা শেয়ার বারাদ্দ পেলেও সম্প্রতি অনেকেই তা পাচ্ছেন না। তাই এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তারা।

রুমা আক্তার নামে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, ‘অনেকে মনে করেন নারীরা শুধু আইপিওতে ব্যবসা করেন। কিন্তু আমি মূল মার্কেটের শেয়ারে বিনিয়োগ করে ২০১০ সালে ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী হিসেবে আইপিও আবেদনের কোটা পেতাম। কিন্তু গত এক বছর ধরে আমার আইপিও কোটায় শেয়ার বরাদ্দ পাই না।’ বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করার পরও কোনো প্রতিকারও পাচ্ছেন না তিনি।

তিনি বলেন, ‘শুধু আমি নই, আমার মতো আরও অনেকে আছেন যারা আগে ক্ষতিগ্রস্ত কোটায় আইপিওতে শেয়ার বরাদ্দ পেতেন কিন্তু এখন পাচ্ছেন না।’ তাই আইপিওতে ক্ষতিগ্রস্তদের যাতে কোটাসুবিধা নিশ্চিত হয়, সে বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নজরদারি দাবি করেন তিনি।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘ডিএসইর পক্ষ থেকে নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এতে নারীরা তাদের বিনিয়োগের বিষয়ে খুঁটিনাটি বুঝতে পারছেন।’ এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনে নতুন সিস্টেম ‘মোবাইল লেনদেন’ চালু হচ্ছে। এতে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।

 

সমাজ বদলাতে পারে নারীরাই

নিলম বেহেঙ্গরা সমাজের একজন প্রগতিশীল নারী। তার স্বামী তার আগে ঘুম থেকে ওঠলে নিজেই চা বানিয়ে ফেলেন এবং স্ত্রীর সামনে চা নিয়ে হাজির হয়ে যান। কিন্তু কিছুদিন আগেও এমনটি মোটেও ছিল না। স্বামীর জন্য সকালের চা বানিয়ে তাকেই বরং হাজির হতে হতো। তাহলে এমন কি পরিবর্তন হলো যে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর চিন্তাধারা পাল্টে গেল। জানতে চাইলে ঝাড়খণ্ডের নিলাম তার রূপান্তরিত জীবনের গল্পটুকু টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাংবাদিকের কাছে তুলে ধরেন। প্রতিবেদনটি বাংলামেইলের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

নিলমের জীবনের পরিবর্তনটা হয়েছিল ঠিক তখনই যখন তিনি আত্মনির্ভরশীল একটি সংস্থার সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে যোগ দেয়ার পর থেকেই তার মন মানসিকতায় ব্যাপক পরিবর্তন হল। যা পরে তার পরিবারকেও বদলে দিতে সাহায্য করেছিল। আত্মবিশ্বাসী নিলম এখন তার পরিবারের সবার শ্রদ্ধার পাত্রী হয়ে উঠেছেন। এমনকি তার ছোট ছেলেটিও বেশ গর্ব করে মায়ের এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে। ফসলের জন্য তার স্বামীও তাকে বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি এনে দিয়েও সাহায্য করে।

নিলম বলেন, ‘আমার কাজ এবং আমার পরিবার আমাকে যে শুধু অনুপ্রাণিত করে তা কিন্তু নয় বরং আমাকে সমানে কাজ করার দৃঢ় মনবোল জোগায়। সমাজ পরিবর্তনে নারীর যে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে আমি এটা সবাইকে জানাতে চাই। আর এই কারণে আমি গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করতে চাই এবং সমাজে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে অবহিত করতে চাই’। তবে নিলমের এই ঘটনাটি সবার দৃষ্টান্ত হবে বলে মনে করেন অনেকে। নারীর ক্ষমতায়ন শুধু নারীর উপর নির্ভর করে না এর জন্য পুরুষকে একযোগে কাজ করতে হয়। তিনি আরো বলেন, বাবা, ভাই, সন্তান এমনকি স্বামীর সহযোগীতা ছাড়া একা করো পক্ষে পরিবর্তন আনা সম্ভব না।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পরুষেরা সমাজের নানরকম নিয়মকানুন তোয়াক্কা না করে নারীর পাশে এসে দাঁড়ায়। যেমন একটি উদাহরন দিয়ে নিলম বলেন, ‘আমি অনেক গর্ভবতী নারীর সঙ্গে কথা বলেছি, গর্ভধারণের ওই সময়টাতে তাদের শরীর স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক ভারী হয়ে যায়। সেই সময় অনেক পুরুষই তাদের স্ত্রীকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না এমনকি ঠিকমতো দেখাশোনাও করে না। পুরুষেরা অনেক ক্ষেত্রে পরিবার পরিকল্পনা মেনে চলে না। যার ফলে একের পর এক সন্তান জন্মে দেয়ার ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে নারী। তবে এক্ষেত্রে নারী যদি একটু সোচ্চার ও সচেতন হয় তাহলে এমন ঘটনা কখনোই সম্ভব না।

তার চেয়েও বড় কথা একটি নারী যখন স্বামীর পাশাপাশি পরিবারে অর্থ যোগান দিতে সক্ষম হয় তখন সেই পরিবারটিতে তার দাম বেড়ে যায় বহুগুন। এমনকি পরিবারের সদস্যদের চোখেও তার সম্মান বেড়ে যায় অনেক। তবে এমন পরিবর্তনের জন্য সবার আগে যেটা প্রয়োজন বলে সবাই মনে করেন তা হলো সচেতনতা। স্কুল কলেজগুলোতে যদি ছোটবেলা থেকে ছেলেমেয়েদের নারীর মূল্য এবং নারীর প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত এ নিয়ে যদি আলোচনা করা হয় তাহলে অনেক্ষেত্রে নারীরা সমাজে শোষিত কম হবে। শুধু নীলম নয় এমন অনেক সফল নারীর গল্প রয়েছে পুরো পৃথিবীর আনাচে কানাচে। তার মধ্যে বেশিরভাগই থেকে যায় আমাদের জানার বাইরে। সেইসব নারীদের আত্মবিশ্বাসী গল্প সবার মাঝে ছড়িয়ে দিত পারলে সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

 

তালিকাভুক্ত কোম্পানির ১৭% নারী পরিচালক

দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে ১৭ শতাংশ নারী পরিচালক রয়েছে। তবে তাদের পদায়ন বেশির ভাগই পারিবারিক ভাবে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষ্যে করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিভিলিটি (সিএসআর)সেন্টার, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি)যৌথ উদ্যোগে ‘রিং দ্য বেল ফর জেন্ডার ইক্যুয়িটি শীর্ষক’আলোচনা সভায় শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে কোম্পানিগুলো ১৭ শতাংশ পরিচালক নারী রয়েছে। যা অন্যান্য দেশের চেয়ে তুলনামূলকভাবে ভালো। তবে বেশিরভাগই পারিবারিক ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। তারা দক্ষতা ও যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে ওই পদে আসেনি। এছাড়া ইউরোপের অনেক দেশ থেকে নারীর পদায়নে যোগ্যতা ও দক্ষতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটা পিছিয়ে আছে।

শিক্ষিত, দক্ষ নারী কর্মী নিয়োগের আহবান জানান তারা। আর তাই নারীদের প্রশিক্ষন প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা। এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন তারা।

তাদের মতে, কোটা ভিত্তি ও পারিবারিকভাবে নিয়োগ না দিয়ে দক্ষ কর্মী হিসেবে নারীদের নিয়োগ দেয়া উচিত। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে কোনো কোম্পানির বোর্ডে একজন পরিচালক নারী থাকা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশেও প্রাইভেট সেক্টরে ৫ শতাংশ দক্ষ নারীকে কোম্পানির বোর্ডে রাখার পরামর্শ দেন তারা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারী ব্যবসায়ী থাকলেও বাংলাদেশে নারী ব্যবসায়ী খুব কম। আর যারা ব্যবসায় আসছে তারাও পরিবারের উত্তোরাধীকার সূত্রে আসছে। স্বেচ্ছায় ব্যবসা খাতে নারীদের আনার উদ্যোগ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন তারা।

সঠিক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ এবং সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে এদেশের নারীরাও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে সিএসআর সেন্টারের সিইও শাহামিন এ জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক রাশেদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

 

পরিবার বিষয়ক প্রবন্ধ – স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টি করেন, অতঃপর সুঠাম করেন, যিনি নির্ধারণ করেন, অতঃপর পথনির্দেশ করেন; আমি তার প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তিনি শেষে ও প্রথমে সকল প্রশংসার প্রাপ্য মালিক। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, যাঁর কোনো শরীক নেই; আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নেতা ও নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, যিনি নির্বাচিত নবী ও বান্দা; আল্লাহ তাঁর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীগণ এবং যে ব্যক্তি তাঁর দা‘ওয়াতের মাধ্যমে দা‘ওয়াত দান করে ও যে ব্যক্তি তাঁর পদ্ধতির অনুসরণে জীবনযাপন করে, সে ব্যক্তিসহ উল্লেখিত সকলের উপর রহমত, শান্তি ও বরকত বর্ষণ করুন।

অতঃপর:

জেনে রাখুন, আল্লাহ আপনাকে তাওফীক দিন— আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম মহান নিয়ামত ও নিদর্শন হল ঘর-সংসার, যা আশ্রয়স্থল ও শান্তি নিকেতন; তার ছায়াতলে মানবগোষ্ঠী ভালবাসা ও অনুকম্পা, নিরাপত্তা ও পবিত্রতা এবং মহৎ জীবন ও শালীনতা লাভ করবে … তার কোলে শিশু-কিশোর ও তরুণ সমাজ বেড়ে উঠবে, আত্মীয়তার সম্পর্ক বিস্তার লাভ করবে এবং পারস্পরিক দায়বদ্ধতা শক্তিশালী হবে। অন্তরের সাথে অন্তর যুক্ত হবে … এবং মনের সাথে মনের আলিঙ্গন হবে; আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ هُنَّ لِبَاسٞ لَّكُمۡ وَأَنتُمۡ لِبَاسٞ لَّهُنَّۗ ﴾ [البقرة: ١٨٧]

“তারা তোমাদের পোষাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের পোষাকস্বরূপ।” – ( সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭ )।

এই মজবুত সম্পর্ক ও উন্নত সংসারের মধ্যে উত্তম বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটবে এবং ঐসব পুরুষ ব্যক্তিগণ বেড়ে উঠবে, যাদেরকে আমানতস্বরূপ মহান দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে; আর ঐসব নারীদেরকে শিক্ষা দেওয়া হবে, যারা বংশমূল তথা জাতির ভবিষ্যতকে দেখাশুনার দায়িত্ব পালন করে।

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দ্বন্দ্বের কতিপয় কারণ

জীবনের বাস্তবতা এবং মানুষ (যেমনটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন; আর যা তিনি সৃষ্টি করেছেন, সে সম্পর্কে তিনি সবচেয়ে বেশি ভাল জানেন) সে মানুষের স্বভাব-প্রকৃতিতে কখনও কখনও (জীবনের বাস্তবতায়) এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যাতে দিক-নির্দেশনা কাজ করে না এবং ভালবাসা ও প্রশান্তি সুদৃঢ় হয় না; যার কারণে কখনও কখনও দাম্পত্য সম্পর্ক অটুট রাখা কষ্টকর ও কঠিন হয়ে যায়। ফলে তাতে দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয় না এবং তার দ্বারা নবীন সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে সমর্থ হয় না। আর এ বিশৃঙ্ল ও অনৈক্যের অবস্থা বা পরিস্থিতিসমূহের কারণসমূহ কখনও কখনও হয়ে থাকে আভ্যন্তরীণ আবার কখনও কখনও হয় বহিরাগত।

যেমন কখনও কখনও এ সমস্যার উত্থান হয়: স্বামী-স্ত্রীর অভিভাবক অথবা তাদের আত্মীয়-স্বজনের মধ্য অনভিজ্ঞ ব্যক্তির হস্তক্ষেপ, অথবা স্বামী-স্ত্রীর সকল ছোট বড় কর্মকাণ্ডের পশ্চাদ্ধাবন; আবার কখনও কখনও পরিবারের কোনো কোনো অভিভাবক এবং পরিবারের বড়দের পক্ষ থেকে তাদের অধিনস্থদের উপর এত বেশি নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দেওয়া হয় যে, তা কখনও কখনও বিচারকের নিকট বিচার নিয়ে যাওয়ার পর্যন্ত গড়ায়; ফলে আড়ালে ঢাকা রহস্যসমূহ প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং গোপন বিষয়সমূহ উম্মোচন হয়ে যায়, আর এগুলো হয় নিছক ছোট-খাট বিষয় অথবা তুচ্ছ কিছু কারণে; যার উৎপত্তি হয়ত অনুপযুক্ত অথবা প্রজ্ঞাশূন্য হস্তক্ষেপ অথবা তাড়াহুড়া ও দ্রুততা অবলম্বন বা গুজব ও আজে-বাজে কথায় কান দেওয়া ও সেটাকে সত্য বলে বিশ্বাস করা।

আর কখনও কখনও সমস্যার উৎসস্থল হয়: দীনের ব্যাপারে দূরদর্শিতার স্বল্পতা ও মহানুভব শরী‘য়তের বিধিবিধানসমূহের ব্যাপারে অজ্ঞতা এবং পুঞ্জীভূত কুঅভ্যাস ও দুর্বল চিন্তাধারা লালন করা।

ফলে কোনো কোন স্বামী বিশ্বাস করে বসে যে, তালাকের দ্বারা হুমকি দেওয়া অথবা তা উচ্চারণ করা হল দাম্পত্য বিরোধ ও পারিবারিক সমস্যার একটি সঠিক সমাধান; সুতরাং সে তার প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় এবং তার নির্দেশ প্রদান ও নিষেধাজ্ঞার সময়ে, এমনকি তার সকল অবস্থায় (স্ত্রীর সাথে) কথাবার্তার ক্ষেত্রে তালাকের শব্দগুলো ব্যতীত অন্য কিছু জানে না বা বুঝে না; আর সে এও জানে না যে, এর দ্বারা সে প্রকারান্তরে আল্লাহর আয়াতসমূহকে উপহাস হিসেবে গ্রহণ করেছে; সে তার কর্মকাণ্ডে অপরাধী বা পাপী হচ্ছে, তার সংসার ধ্বংস করছে এবং তার পরিবার-পরিজন হারাচ্ছে।

হে মুসলিমগণ! এটাই কি দীনের ফিকহ তথা সুক্ষ্ম জ্ঞান হতে পারে?!

নিশ্চয়ই শরী‘য়ত কর্তৃক অনুমোদিত সুন্নাত পদ্ধতি যে তালাকের বিধান রয়েছে তার উদ্দেশ্য দাম্পত্য সম্পর্কের বন্ধন বা রশি কর্তন করা নয়, বরং বলা যায় যে, এ পদ্ধতির তালাক হচ্ছে এই সম্পর্ক সাময়িকভাবে আটকে রাখা এবং প্রতীক্ষা, চিন্তাভাবনা ও সংশোধনের একটি পর্যায়; আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ … لَا تُخۡرِجُوهُنَّ مِنۢ بُيُوتِهِنَّ وَلَا يَخۡرُجۡنَ إِلَّآ أَن يَأۡتِينَ بِفَٰحِشَةٖ مُّبَيِّنَةٖۚ وَتِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ ٱللَّهِ فَقَدۡ ظَلَمَ نَفۡسَهُۥۚ لَا تَدۡرِي لَعَلَّ ٱللَّهَ يُحۡدِثُ بَعۡدَ ذَٰلِكَ أَمۡرٗا ١ فَإِذَا بَلَغۡنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمۡسِكُوهُنَّ بِمَعۡرُوفٍ أَوۡ فَارِقُوهُنَّ بِمَعۡرُوفٖ … ﴾ [الطلاق: ١،  ٢]

“ … তোমরা তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বহিষ্কার করো না এবং তারাও বের হবে না, যদি না তারা লিপ্ত হয় স্পষ্ট অশ্লীলতায়। আর এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা; যে আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে, সে নিজেরই উপর অত্যাচার করে। আপনি জানেন না, হয়ত আল্লাহ এর পর কোনো উপায় করে দেবেন। অতঃপর তাদের ইদ্দত পূরণের কাল আসন্ন হলে তোমরা হয় যথাবিধি তাদেরকে রেখে দেবে, না হয় তাদেরকে যথাবিধি পরিত্যাগ করবে। …” – (সূরা আত-তালাক, আয়াত: ১-২)।

এটাই হচ্ছে শরী‘য়ত। বরং বিষয়টি এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; নিশ্চয়ই সুন্নাত পদ্ধতিতে তালাক প্রদানের বিধানটি প্রতিকারের সর্বশেষ অস্ত্র এবং এর পূর্বে অনেকগুলো উপায় রয়েছে।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের কতিপয় উপায়

আমার মুসলিম ভাই ও বোন:

যখন বিরোধের আলামত, অবাধ্যতা, মতানৈক্যের লক্ষণ প্রকাশ পাবে, তখন তালাক বা তালাকের হুমকি প্রদান করা তার প্রতিকার নয়।

প্রতিকারের জন্য যা দাবি করা হয়, তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল: ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, বিবেক ও বুদ্ধির ক্ষেত্রে বিভিন্নতা এবং স্বভাব-প্রকৃতির ক্ষেত্রে ভিন্নতার বিষয়টি অনুধাবন করা; সাথে আরও জরুরি হল অনেক বিষয়ে উদারতার পরিচয় দেওয়া এবং দেখেও না দেখার ভান করা; কারণ সব সময় সে যা পছন্দ ও কামনা করে, তার মধ্যে মঙ্গল ও কল্যাণ হয় না, বরং কখনও কখনও সে যা পছন্দ ও কামনা করে না, তার মধ্যেই কল্যাণ হয়; আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ … وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ فَإِن كَرِهۡتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡ‍ٔٗا وَيَجۡعَلَ ٱللَّهُ فِيهِ خَيۡرٗا كَثِيرٗا ١٩ ﴾ [النساء: ١٩]

“আর তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে; তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন, তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ।” – (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯ )।

কিন্তু যখন সমস্যা প্রকাশ পাবে, পারস্পরিক দায়বদ্ধতার বন্ধনে শিথিলতা দেখা দিবে এবং স্ত্রীর পক্ষ থেকে অবাধ্যতা, তার স্বভাব চরিত্রে অহমিকা এবং তার দায়িত্ব থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রবণতা প্রকাশ পাবে; যেমন- ঘৃণার প্রকাশ পাওয়া, স্বামীর অধিকারের ব্যাপারে কমতি করার বিষয় এবং স্বামীর মর্যাদাকে অবজ্ঞা করার বিষয় প্রকাশ করা, তখন ইসলামে এর চিকিৎসা বা প্রতিকার সুস্পষ্ট; তাতে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ কোনোভাবেই তালাক প্রসঙ্গ আসবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সুস্পষ্ট কিতাবে বলেন:

﴿ …  وَٱلَّٰتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَٱهۡجُرُوهُنَّ فِي ٱلۡمَضَاجِعِ وَٱضۡرِبُوهُنَّۖ فَإِنۡ أَطَعۡنَكُمۡ فَلَا تَبۡغُواْ عَلَيۡهِنَّ سَبِيلًاۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيّٗا كَبِيرٗا ٣٤ ﴾ [النساء: ٣٤]

“ … আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশংকা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাদেরকে প্রহার কর। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অন্বেষণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, মহান।” – (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪ )।

তাই বুঝা গেল যে, উক্ত অবস্থার প্রতিকার হবে উপদেশ ও দিক-নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে, ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে, অধিকারসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে এবং আল্লাহর গজব ও ঘৃণা থেকে ভয় প্রদর্শন করার মাধ্যমে; সাথে আরও প্রয়োজন বুদ্ধিমত্তা ও ধৈর্যের পথে চলার জন্য উৎসাহ প্রদান ও ভয় প্রদর্শন করা।

আর কখনও কখনও অহমিকা ও অবাধ্যতার মোকাবিলায় শয্যা বর্জন ও বয়কট করা হচ্ছে এর প্রতিকার; আপনারা লক্ষ্য করুন যে, শয্যা বর্জন করার অর্থ শয়নকক্ষ বর্জন করা নয়; … তা হল শয্যা বর্জন করা, ঘর বয়কট করা নয় … পরিবার বা সন্তান বা অপরিচিত লোকজনের সামনে নয়।

উদ্দেশ্য হল প্রতিকার করা, ঘোষণা করা অথবা অপমান করা অথবা গোপন বিষয় প্রকাশ করা নয়; বরং উদ্দেশ্য হল বর্জন ও বয়কটের মাধ্যমে অবাধ্যতা ও অহংকারের মোকাবিলা করা, যা পারস্পরিক ঐক্য, সংহতি ও সমতার দিকে পরিচালিত করে।

আর কখনও কখনও কিছু কঠোর ও রূঢ় মনোভাবের মাধ্যমে প্রতিকার হতে পারে; কারণ, কিছু মানুষ এমনও রয়েছে, যাদেরকে সোজা করার ক্ষেত্রে উত্তম ব্যবহার ও ভদ্র কথায় কোনো কাজ হয় না; বরং তারা এমন শ্রেণীর মানুষ যাদেরকে অধিকাংশ সময় নম্র ব্যবহার ও সহিষ্ণুতা অবাধ্য করে তোলে … সুতরাং যখন কঠোরতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে, তখন অবাধ্য ব্যক্তি থেমে যাবে এবং বিক্ষুব্ধ ব্যক্তি শান্ত হয়ে যাবে।

হ্যাঁ, কখনও কখনও কিছু চাপ প্রয়োগের আশ্রয় নেয়াটাও কার্যকর প্রতিষেধক হতে পারে; আর কেনই বা সে তার আশ্রয় নিবে না, অথচ দায়িত্বের প্রতি বৈরী ভাব ও স্বভাব-প্রকৃতি থেকে বের হওয়ার মত পরিস্থিতির উদ্ভব হয়ে যাচ্ছে?

আর সকল বিবেকবান ব্যক্তির নিকট বিদিত যে, কঠোরতা যখন সংসারের জন্য তার শৃঙ্খলা ও মজবুত বন্ধনকে ফিরিয়ে দিবে এবং পরিবারকে ফিরিয়ে দিবে ভালবাসা ও হৃদ্যতা, তখন তা নিঃসন্দেহে তালাক ও বিচ্ছেদের চেয়ে উত্তম; তা হবে ইতিবাচক, শিক্ষামূলক ও অর্থবহ সমাধান; ঘায়েল করা ও প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে নয়; বরং তার দ্বারা অবাধ্যতাকে দমন করা হয় এবং বিশৃঙ্খলাকে সংযত করা করা হয়।

আর যখন স্ত্রী তার স্বামীর পক্ষ থেকে দুর্ব্যবহার ও উপেক্ষার আশঙ্কা করবে, তখন আল-কুরআনুল কারীম তার প্রতিকারের দিক নির্দেশনা প্রদান করে তাঁর বাণীর মাধ্যমে, আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ وَإِنِ ٱمۡرَأَةٌ خَافَتۡ مِنۢ بَعۡلِهَا نُشُوزًا أَوۡ إِعۡرَاضٗا فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِمَآ أَن يُصۡلِحَا بَيۡنَهُمَا صُلۡحٗاۚ وَٱلصُّلۡحُ خَيۡرٞۗ … ﴾ [النساء: ١٢٨]

“আর কোনো স্ত্রী যদি তার স্বামীর দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, তবে তারা আপোস-নিষ্পত্তি করতে চাইলে তাদের কোনো গোনাহ নেই এবং আপোস-নিষ্পত্তিই শ্রেয়।” – (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৮ );

প্রতিকার হবে আপোস-নিষ্পত্তি ও শান্তি স্থাপনের মাধ্যমে, তালাক ও সম্পর্ক বাতিলের মাধ্যমে নয়। আবার কখনও কখনও বিবাহ বন্ধনকে সুরক্ষার জন্য আর্থিক অথবা ব্যক্তিগত অধিকারের কিছু কিছু বিষয় ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিকার হতে পারে।

﴿ وَٱلصُّلۡحُ خَيۡرٞۗ  ﴾ [আপোস-নিষ্পত্তি উত্তম]। অবাধ্যতা, দুর্ব্যবহার, বিদ্বেষ ও তালাকের চেয়ে আপোস-নিষ্পত্তি উত্তম।

আমার মুসলিম ভাই ও বোন:

এটা একটা গতিশীল আবেদন এবং আল্লাহর দীনের ফিকহের দিক থেকে ও তাঁর বিধিবিধানের উপর ভিত্তি করে আচার-আচরণের একটি সংক্ষিপ্ত স্মারক; সুতরাং তার থেকে মুসলিমগণ কোথায় যাচ্ছে?

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার বিরোধের ব্যাপারে কেন সালিস নিয়োগ করা হয় না?  এ সমাধান থেকে কেন সংস্কারকগণ বিরত থাকে? সে কি প্রকৃত সংশোধনের ব্যাপারে অমনোযোগী, নাকি পরিবার ভাঙ্গন ও সন্তানদেরকে বিভক্ত করার ব্যাপারে উৎসাহী?

নিশ্চয়ই আপনি তাকে নির্বুদ্ধিতা, বাড়াবাড়ি, আল্লাহর ভয় ও তাঁর নজরদারী থেকে দূরুত্বে অবস্থান, তাঁর বিধিবিধানের অধিকাংশকে প্রত্যাখ্যান এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা রেখার ব্যাপারে ছিনিমিনি খেলা ছাড়া অন্য কিছু মনে করবেন না।

ইমাম ইবনু মাজাহ ও ইবনু হিব্বান প্রমূখ গ্রন্থকারগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন:

« ما بال أقوام يلعبون بحدود الله . يقول أحدهم : قد طلقتك . قد راجعتك . قد طلقتك ؟ أيلعب بحدود الله و أنا بين أظهركم » . ( رواه ابن ماجه و ابن حبان  ) .

“কিছু লোকের কি হল যে তারা আল্লাহর নির্ধারিত সীমানা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে; তাদের কেউ কেউ বলে: আমি তোমাকে তালাক দিলাম, আমি তোমাকে ফিরিয়ে আনলাম, আমি তোমাকে তালাক দিলাম? সে কি আল্লার নির্ধারিত সীমানা নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, অথচ আমি তোমাদের মাঝেই রয়েছি?”[1]

দ্বন্দ্ব নিরসনের সর্বশেষ উপায়

দ্বন্দ্ব নিরসনের ব্যাপারে যখন সকল উপায় ব্যর্থ হবে এবং দাম্পত্য সম্পর্ক বহাল রাখা যখন কঠিন ও কষ্টকর হয়ে যাবে, এমনকি যখন তার সাথে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত অভিষ্ট লক্ষ্য ও মহান তাৎপর্য বাস্তবায়ন করা না যায়, তখন শরী‘য়তের উদারতা ও তার বিধানসমূহের পরিপূর্ণতার প্রমাণ হচ্ছে যে, এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য উপায় রাখা হয়েছে। তবে মুসলিমগণের অনেকেই শরী‘য়ত কর্তৃক অনুমোদিত সুন্নাত পদ্ধতির তালাকের সম্পর্কে অজ্ঞ এবং আল্লাহর সীমারেখা ও তাঁর শরী‘য়তের প্রতি লক্ষ্য রাখা ছাড়াই তালাক শব্দটি উচ্চারণ করে থাকে।

ঋতুবর্তীকালীন সময়ে তালাক দেয়া হারাম, (একসাথে) তিন তালাক প্রদান করা হারাম এবং এমন ঋতুমুক্তকালীন সময়ে তালাক প্রদান করাও হারাম, যাতে উভয়ের মাঝে মিলন (সহবাস) হয়েছে; সুতরাং এ ধরনের সকল তালাক বিদ‘আত ও হারাম (নিষিদ্ধ)। এ ধরনের তালাকদাতার পাপ হবে; কিন্তু আলেমগণের বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী তালাক সংঘটিত হয়ে যাবে।

যে সুন্নাত পদ্ধতির তালাক সম্পর্কে অবহিত হওয়া মুসলিমগণের উপর ওয়াজিব, তা হলো:  ঋতুমুক্তকালীন সময়ে মাত্র এক তালাক প্রদান করা যাতে উভয়ের মিলন (সহবাস) হয়নি, অথবা গর্ভকালীন সময়ের মাঝে তালাক প্রদান করা।

এ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তালাক প্রদান করা নিঃসন্দেহে একটি প্রতিকার হিসেবে বিবেচিত। কারণ, এতে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই বেশ কিছু সময় পায়, সে সময়ে তারা চিন্তা-ভাবনা কিংবা পর্যালোচনা করতে পারে।

আর এই পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তালাক প্রদানকারীকে ঋতুমুক্তকালীন সময়ের আগমন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে; আর হতে পারে যে, তখন তার মন পরিবর্তন হবে, হৃদয় জগ্রত হবে এবং আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী তাদের জন্য নতুন কোনো উপায় করে দেবেন, ফলে তাদের সম্পর্ক তালাক পর্যন্ত গড়াবে না।

আর ইদ্দতের সময়কাল, — চাই তা মাসিক জনিত ইদ্দত হউক, অথবা নির্দিষ্ট মাসসমূহের ইদ্দত হউক, অথবা গর্ভস্থ সন্তানের প্রসব সংশ্লিষ্ট ইদ্দত হউক— এ সময়ের মধ্যে স্ত্রীকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা ও আত্মপর্যালোচনার যথেষ্ট সুযোগ থাকে; যা কখনও কখনও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ভালবাসার বন্ধন ও দাম্পত্য সম্পর্ককে মিলিয়ে দিতে পারে।

আর মুসলিমগণ যা জানে না তন্মধ্যে অন্যতম হল: স্ত্রীকে যখন রেজ‘য়ী (প্রত্যাবর্তনযোগ্য) তালাক দেওয়া হবে, তখন তার উপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হল স্বামীর ঘরে অবস্থান করা; সে বের হবে না এবং তাকে বের করে দেওয়া হবে না।

বরং আল্লাহ তা‘আলা তাকে (স্বামীর ঘরকে) তার (স্ত্রীর) জন্য ঘর হিসেবে বরাদ্দ দিয়ে দিলেন; আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ لَا تُخۡرِجُوهُنَّ مِنۢ بُيُوتِهِنَّ ﴾ [الطلاق: ١]

“তোমরা তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বহিষ্কার করো না” – (সূরা আত-তালাক, আয়াত:১);

এই আয়াতটি (ঘরে) অবস্থান করার বিষয়টিকে দৃঢ়তার সাথে তাদের অধিকার বলে ঘোষণা করেছে। সুতরাং তার স্বামীর ঘরে তার অবস্থান করার মানে তার পুনরায় প্রত্যাবর্তনের একটা পথ, ভালবাসার সহনুভূতি উত্থাপন করার ক্ষেত্রে আশার সূচনা এবং সম্মিলিত জীবনযাপনের বিষয়টি স্মরণ করানো। ফলে এই অবস্থায় তালাকের হুকুমের ক্ষেত্রে স্ত্রীর অবস্থান দূরে প্রতীয়মান হলেও চোখের দৃশ্যপট থেকে তার অবস্থান স্বামীর নিকটে।

আর এর দ্বারা মূলত উদ্দেশ্য হল তাদের মধ্যে ঘটে যাওয়া অশান্ত ঝড়কে শান্ত করা, হৃদয়ে নাড়া দেওয়া, অবস্থানসমূহ পুণ পর্যালোচনা এবং ধীরে-সুস্থে নিজ সংসার, শিশু ও পরিবারের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ লাভ। আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ … لَا تَدۡرِي لَعَلَّ ٱللَّهَ يُحۡدِثُ بَعۡدَ ذَٰلِكَ أَمۡرٗا ١ ﴾ [الطلاق: ١ ]

“ … আপনি জানেন না, হয়ত আল্লাহ এর পর কোনো উপায় করে দেবেন।” – ( সূরা আত-তালাক, আয়াত: ১ )।

সুতরাং হে মুসলিমগণ! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর … এবং তোমাদের ঘর-সংসারসমূহকে হেফাযত কর; আর তোমাদের দীনের বিধানসমূহ জানতে ও বুঝতে শিখ … আর আল্লাহর সীমারেখা যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখ এবং তা লঙ্ঘন করো না; আর তোমারা তোমাদের নিজেদের মাঝে (সম্পর্কের) সংশোধন ও সংস্কার করে নাও।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে দীনের ব্যাপারে সঠিক বুঝ এবং শরী‘য়তের ব্যাপারে দূরদর্শিতা দান করুন; হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার কিতাবের হিদায়াতের মাধ্যমে উপকৃত করুন; আর আপনার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা আচার-আচরণ আমাদেরকে দান করুন।


[1] সুনানু ইবনে মাজাহ: ২০১৮; সহীহু ইবনে হিব্বান: ৪২৬৫
লেখকঃ ড. সালেহ ইবন আবদিল্লাহ ইবন হুমাইদ | অনুবাদ : মোঃ আমিনুল ইসলাম |  সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

 

আমি কি সঠিক মানুষটিকে বিয়ে করছি?

কাউকে বিয়ে করার আগে অবশ্যই নিজেকে এ প্রশ্নটি করবেন। জেনে বিস্মিত হবেন যে, উপযুক্ত মানুষটি বেঁচে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় কাজ করলেও, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই প্রশ্নটির উত্তর হয়ে থাকে আবেগ এবং অনুভূতি নির্ভর। হরেক রকম মানুষ সম্পর্কে জানার মধ্য দিয়ে আপনি বিচিত্র ধরনের ব্যক্তিত্বের সন্ধান পাবেন। মানুষ সম্পর্কে জানার গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনি যে ধরণের মানুষের সান্নিধ্যে সবচেয়ে বেশি স্বস্তি এবং আরামবোধ করেন, সেইসব মানুষদের খুঁজে পাবেন। আর বয়স এবং মানসিক পরিপক্কতা বাড়ার সাথে সাথে নিজের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কেও আপনার ভেতর গভীরতর উপলব্ধির বিকাশ ঘটবে।

এক পর্যায়ে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এমন একজনের দেখা পেয়ে যাবেন এবং তাকে বিয়ে করার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারবেন। অনিবার্যভাবেই আপনার মনে প্রশ্ন আসবে, “তিনি কি আমার জন্য সঠিক মানুষটি?” সূরা আন-নূরে আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেছেন, “সুচরিত্রা নারী সুচরিত্র পুরুষের জন্য এবং সুচরিত্র পুরুষ সুচরিত্রা নারীর জন্য। লোকে যা বলে এরা তা থেকে পবিত্র; এদের জন্য আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।” (কুর’আন; ২৪ : ২৬) এই আয়াত আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় কে, কোন ধরণের মানুষের জন্য, তা আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নীচে কিছু অনুভূতির বর্ণনা দেওয়া হলো যেগুলো আপনি সঠিক মানুষটিকে বেছে নিয়েছেন কিনা তা জানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সঠিক মানুষ হবেন এমন কেউ আপনি যার সান্নিধ্যে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন — এমন কেউ যার হতে নিজেকে নিশ্চিন্তে তুলে দেওয়া যায়। সঠিক মানুষটি আপনাকে আপনার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রাণিত করবেন। এটা হতে পারে আপনার সুষ্ঠু জীবনযাত্রার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে, হতে পারে পরিবার ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় আপনার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উদ্যমী হতে আপনি অনুপ্রাণিত বোধ করবেন এবং মানসিক অবলম্বন খুঁজে পাবেন যখন জানবেন যে, আপনি যে মানুষটিকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন সে নেতিবাচক, স্বার্থপর বা খুঁতখুঁতে মানসিকতার নয়। আপনি যখন সেই মানুষটির সাথে থাকবেন তখন নিজের ভাবনা এবং অনুভুতিগুলো তার সাথে ভাগাভাগি করতে নিরাপদ বোধ করবেন। আপনি তার সহযোগিতায় নিজের সম্পর্কে সমুন্নত ধারণা পোষণ করতে পারবেন। সঠিক মানুষটি হবেন এমন যার সাথে আপনার নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে উঠবে এবং আপনারা উভয়েই উভয়ের সঙ্গ উপভোগ করবেন। বন্ধুত্বের উপর দাম্পত্য সম্পর্ক গড়ে ওঠা জরুরি কারণ বন্ধুত্বের উপর ভিত্তি করেই ভালোবাসার বিকাশ ঘটে।

আপনি এবং আপনার জন্য উপযুক্ত মানুষটির জীবনের লক্ষ্য ও মূল্যবোধগুলো হবে একই ধরণের। এর অর্থ এই নয় যে, উভয়ের জীবনের লক্ষ্য ও মূল্যবোধগুলো হুবহু এক হতে হবে। এর অর্থ হলো, দু’জনের জীবনযাত্রায় সাংঘর্ষিক কোনোকিছু থাকবে না। ফলে আপনারা দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে সম্মত হতে পারবেন এবং একসাথে অর্জনও করতে পারবেন। সঠিক মানুষটির কাছে আপনি অনুভূতি ও উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারবেন। ফলে নিজের আবেগ অনুভূতিগুলোকে মনের মধ্যে চেপে রাখার কোনো প্রয়োজন বোধ হবে না। কোনো বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দিলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে পারবেন। একে অপরের মতামত শুনবেন এবং একটা সমঝোতায় পোঁছতে পারবেন। সেই মানুষটির সাথে আলোচনা হবে উপভোগ্য যা বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য সহায়ক। স্বাভাবিকভাবেই দম্পতিদের বিবাহিত জীবনে বিভিন্ন পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন ঘটে থাকে। এসব পরিবর্তনের সাথে সুষ্ঠুভাবে খাপ খাওয়ানোর জন্য দরকার নিজেদের ভেতর কার্যকর এবং সফল বোঝাপড়া।

সঠিক মানুষটি হবেন আপনার ও আপনার চারপাশের মানুষের প্রতি সদয়, সুবিবেচক এবং বিনয়ী। তার এই বৈশিষ্ট্যগুলো আপনাকে শুধু মুগ্ধ করার জন্যই নয়। এই মানুষটি আপনাকে আপনার পরিবার পরিজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে উৎসাহিত করেন। আপনারা দু’জনই বুঝতে পারবেন যে, বিয়ে হলো দুটি পরিবার মাঝে সম্পর্কের একটি সেতুবন্ধন এবং কখনোই তা বিচ্ছিন্ন দাম্পত্য জীবনের কারণ নয়। আপনার পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি এমন আচরণ একজন মানুষের আসল চরিত্রেরই স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ। শুধু আপনাকে সহৃদয়তায় সিক্ত করে রাখল কিন্তু আপনার পরিবার ও স্বজনদের গুরুত্ব দিলো না — এটা অসামঞ্জস্য চরিত্রের লক্ষণ। চরিত্র হলো তা-ই যা স্থান, কাল এবং পাত্র নির্বিশেষে ব্যক্তির স্বতঃস্ফূর্ত কর্ম এবং আচরণের মধ্য দিয়ে আমাদের সামনে ধরা দেয়।

আপনারা উভয়েই মুখে যা-ই বলুন না কেন, কর্মের মাধ্যমেই আপনাদের চরিত্র প্রকাশিত হবে। আপনার জন্য উপযুক্ত মানুষটি কখনো অমার্জিত, অপরিপক্ক মানসিকতার, উদ্ধত অথবা স্বার্থপর হবেন না; বরং তিনি হবেন বিবেকবান এবং তার আশেপাশের প্রত্যেকের প্রতি যত্নশীল। যেমন : শুধু বাবা-মা, এবং অফিসের বসের প্রতিই নয়, এমনকি হোটেলের ওয়েটার এবং অফিসের পিওন বা কেরানীর প্রতিও তিনি বিনয়ী হবেন। বিয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতার উপর প্রতিষ্ঠিত। এসব যদি ভেতর থেকে স্বাভাবিকভাবে না আসে, তবে বিয়ের আগে আপনাকে মুগ্ধ করার জন্য যে যত সুন্দর ব্যবহারই করুক না কেন, প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডে তার আসল রূপটা বের হয়ে পড়বে।

পরিশেষে, উপযুক্ত মানুষটি হবেন সৎ — এমন একজন কাজে বিশ্বাস করা যায় এবং যার উপর আস্থা রাখা যায়। জীবনের বিভিন্ন উদ্বেগ এবং সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তিনি আপনার সাথে সত্যবাদী থাকবেন। তাকে বিয়ে করলে তিনি আপনার জীবনের উপর খবরদারি করবেন না; বরং নিজের জীবনকে আপনার সাথে ভাগাভাগি করে নেবেন। তিনি আপনাকে বিশ্বাস করবেন এবং আপনার সবকিছুকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবেন না অথবা আপনি আপনার প্রতিটি কাজকে তার কাছে গ্রহণযোগ্য করবেন এমন প্রত্যাশাও তিনি করবেন না। তার সাথে থাকলে নিজেকে নিরপদ মনে হবে এবং আপনার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যেগুলো নিয়েই তিনি আপনাকে গ্রহণ করে নেবেন। মনে হবে আপনি আপনার ভুলগুলো নিয়ে তার সাথে আলোচনা করতে পারেন এবং যৌথ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে নিজের দুর্বলতাগুলো শুধরে নিতে চেষ্টা করতে পারেন।

এখানে অনিবার্যভাবেই বলা দরকার যে, অসৎ অথবা আপনার নীতি ও মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত কোনো ব্যক্তিকে আপনার কখনোই বিয়ে করা উচিত নয়। দু’জন মানুষের সততা এবং পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার উপর ভিত্তি করে একটি সুষ্ঠু দাম্পত্য জীবন বিকাশ লাভ করে।

অনেকগুলো বিষয় বিয়ের উপযুক্ততা নির্ধারনে কাজ করে। তবে সবচেয়ে অস্পষ্ট অথচ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো সেই মানুষটির প্রতি আপনার ভালো লাগার অনুভূতি। কিছু মানুষ আছে যাদেরকে আমরা  তাৎক্ষনিকভাবে পছন্দ করে বসি; আবার কাউকে আমাদের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয় এবং তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে শুরু করি। এগুলো হচ্ছে প্রাথমিক আবেগ অনুভূতি। কিন্তু যখনই আমরা কারও সম্পর্কে জানতে চাইব এবং উপযুক্ততা যাচাই করব, আমাদেরকে মূল্যবোধ ও লক্ষ্যের উপর জোর দিতে হবে। তাদের অনুভূতির গভীরতাকে সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

সঠিক মানুষটির সাথে থাকার আরেকটি অর্থ হলো নিজের নৈতিক বা মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো। সুসম্পর্ক শান্তি বয়ে আনে, কুর’আনে বলা হয়েছে :

“এবং তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্যে হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে যাতে তোমরা তাদের নিকট প্রশান্তি পাও। এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক দয়া ও ভালোবাসার সঞ্চার করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।” (সূরা রুম : ২১)

যেহেতু কোন মানুষই নিখুঁত বা ত্রুটিমুক্ত নয়, তাই অবাস্তব গুণসম্পন্ন মানুষ খোঁজা আমাদের উচিত হবে না। আপনার উচিত আপনার মতো একজন মানুষকে খুঁজে বের করা। মনে রাখবেন, সঠিক মানুষটি খুঁজে পাওয়া চ্যালেঞ্জের অর্ধেক মাত্র। বাকি অর্ধেক হলো নিজেকে সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যাতে অন্য কেউ আপনাকে সঠিক মানুষ হিসেবে বিয়ে করতে চায়।

লিখেছেন : মুনিরা লেকোভিচ এযেলডিন | ভাষান্তর : জহিরুল কাইয়ূম | সম্পাদনা : আব্‌দ আল-আহাদ

 

ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ

ভূমিকা

নববর্ষ বা New Year’s day – এই শব্দগুলো নতুন বছরের আগমন এবং এ উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব-অনুষ্ঠানাদিকে ইঙ্গিত করে। এতদুপলক্ষে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, হাসিঠাট্টা ও আনন্দ উপভোগ, সাজগোজ করে নারীদের অবাধ বিচরণ ও সৌন্দর্যের প্রদর্শনী, রাতে অভিজাত এলাকার ক্লাব ইত্যাদিতে মদ্যপান তথা নাচানাচি, পটকা ফুটানো – এই সবকিছু কতটা ইসলাম সম্মত? ৮৭ ভাগ মুসলিম যে আল্লাহতে বিশ্বাসী, সেই আল্লাহ কি মুসলিমদের এইসকল আচরণে আনন্দ-আপ্লুত হন, না ক্রোধান্বিত হন ? নববর্ষকে সামনে রেখে এই নিবন্ধে এই বিষয়টি আলোচিত হয়েছে ।

 ইসলাম ধর্মে উৎসবের রূপরেখা

অনেকে উপলব্ধি না করলেও, উৎসব সাধারণত একটি জাতির ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে সম্পৃক্ত হয়। উৎসবের উপলক্ষগুলো খোঁজ করলে পাওয়া যাবে উৎসব পালনকারী জাতির ধমনীতে প্রবাহিত ধর্মীয় অনুভূতি, সংস্কার ও ধ্যান-ধারণার ছোঁয়া। উদাহরণস্বরূপ, খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন তাদের বিশ্বাসমতে স্রষ্টার পুত্রের জন্মদিন।

মধ্যযুগে ইউরোপীয় দেশগুলোতে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালিত হত ২৫শে মার্চ, এবং তা পালনের উপলক্ষ ছিল এই যে, ঐ দিন খ্রীস্টীয় মতবাদ অনুযায়ী মাতা মেরীর নিকট ঐশী বাণী প্রেরিত হয় এই মর্মে যে, মেরী ঈশ্বরের পুত্রের জন্ম দিতে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে ১৫৮২ সালে গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডারের সূচনার পর রোমক ক্যাথলিক দেশগুলো পয়লা জানুয়ারী নববর্ষ উদযাপন করা আরম্ভ করে। ঐতিহ্যগতভাবে এই দিনটি একটি ধর্মীয় উৎসব হিসেবেই পালিত হত। ইহুদীদের নববর্ষ ‘রোশ হাশানাহ’ ওল্ড টেস্টামেন্টে বর্ণিত ইহুদীদের ধর্মীয় পবিত্র দিন সাবাত হিসেবে পালিত হয়। এমনিভাবে প্রায় সকল জাতির উৎসব-উপলক্ষের মাঝেই ধর্মীয় চিন্তা-ধারা খুঁজে পাওয়া যাবে। আর এজন্যই ইসলাম ধর্মে নবী মুহাম্মাদ (সা.) পরিষ্কারভাবে মুসলিমদের উৎসবকে নির্ধারণ করেছেন, ফলে অন্যদের উৎসব মুসলিমদের সংস্কৃতিতে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:

প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ রয়েছে, আর এটা আমাদের ঈদ।” [বুখারী, মুসলিম]

বিখ্যাত মুসলিম পণ্ডিত ইমাম ইবনে তাইমিয়া এ সম্পর্কে বলেন:

“উৎসব-অনুষ্ঠান ধর্মীয় বিধান, সুস্পষ্ট পথনির্দেশ এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেরই একটি অংশ, যা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:

তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান এবং সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি।’ [আলমায়িদাহ :৪৮]

প্রতিটি জাতির জন্য আমি ধর্মীয় উপলক্ষ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি যা তাদেরকে পালন করতে হয়।’ [আলহাজ্জ্ব :৬৭]

যেমনটি কিবলাহ, সালাত এবং সাওম ইত্যাদি। সেজন্য তাদের [অমুসলিমদের] উৎসব-অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া আর তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এই উৎসব-অনুষ্ঠানের সাথে একমত পোষণ করা অর্থ কুফরের সাথে একমত পোষণ করা। আর এসবের একাংশের সাথে একমত পোষণ করা অর্থ কুফরের শাখাবিশেষের সাথে একমত হওয়া। উৎসব-অনুষ্ঠানাদি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যার দ্বারা ধর্মগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়।…নিঃসন্দেহে তাদের সাথে এসব অনুষ্ঠান পালনে যোগ দেয়া একজনকে কুফরের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আর বাহ্যিকভাবে এগুলোতে অংশ নেয়া নিঃসন্দেহে পাপ। উৎসব অনুষ্ঠান যে প্রতিটি জাতির স্বকীয় বৈশিষ্ট্য, এর প্রতি রাসূলুল্লাহ(সা.) ইঙ্গিত করেছেন, যখন তিনি বলেন:

প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ রয়েছে, আর এটা আমাদের ঈদ।’ [বুখারী, মুসলিম]

এছাড়া আনাস ইবনে মালিক(রা.) বর্ণিত:

 

রাসূলুল্লাহ(সা.) যখন [মদীনায়] আসলেন, তখন তাদের দুটো উৎসবের দিন ছিল। তিনি(সা.) বললেন, ‘ দুটো দিনের তাৎপর্য কি?’ তারা বলল, ‘জাহিলিয়াতের যুগে আমরা দুটো দিনে উৎসব করতাম।রাসূলুল্লাহ(সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে এদের পরিবর্তে উত্তম কিছু দিয়েছেন: ইয়াওমুদ্দুহা ইয়াওমুল ফিতর ’ ” [সূনান আবু দাউদ]

হাদীস থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ইসলাম আগমনের পর ইসলাম বহির্ভূত সকল উৎসবকে বাতিল করে দেয়া হয়েছে এবং নতুনভাবে উৎসবের জন্য দুটো দিনকে নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সাথে অমুসলিমদের অনুসরণে যাবতীয় উৎসব পালনের পথকে বন্ধ করা হয়েছে।

ইসলামের এই যে উৎসব – ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা – এগুলো থেকে মুসলিম ও অমুসলিমদের উৎসবের মূলনীতিগত একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য স্পষ্ট হয়, এবং এই বিষয়টি আমাদের খুব গুরুত্বসহকারে লক্ষ্য করা উচিৎ, যা হচ্ছে:

অমুসলিম, কাফির কিংবা মুশরিকদের উৎসবের দিনগুলো হচ্ছে তাদের জন্য উচ্ছৃঙ্খল আচরণের দিন, এদিনে তারা নৈতিকতার সকল বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, আর এই কর্মকান্ডের অবধারিত রূপ হচ্ছে মদ্যপান ও ব্যভিচার। এমনকি খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বহুলোক তাদের পবিত্র বড়দিনেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে মদ্যপ হয়ে ওঠে, এবং পশ্চিমা বিশ্বে এই রাত্রিতে কিছু লোক নিহত হয় মদ্যপ অবস্থায় গাড়ী চালানোর কারণে।

অপরদিকে মুসলিমদের উৎসব হচ্ছে ইবাদতের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। এই বিষয়টি বুঝতে হলে ইসলামের সার্বিকতাকে বুঝতে হবে। ইসলাম কেবল কিছু আচার-অনুষ্ঠানের সমষ্টি নয়, বরং তা মানুষের গোটা জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী বিন্যস্ত ও সজ্জিত করতে উদ্যোগী হয়। তাই একজন মুসলিমের জন্য জীবনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইবাদত, যেমনটি কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা দিচ্ছেন:

 

আমি জ্বিন মানুষকে আমার ইবাদত করা ছাড়া অন্য কোন কারণে সৃষ্টি করিনি।” [সূরা যারিয়াত:৫৬]

 

সেজন্য মুসলিম জীবনের আনন্দ-উৎসব আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ ও অশ্লীলতায় নিহিত নয়, বরং তা নিহিত হচ্ছে আল্লাহর দেয়া আদেশ পালন করতে পারার মাঝে, কেননা মুসলিমের ভোগবিলাসের স্থান ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী নয়, বরং চিরস্থায়ী জান্নাত। তাই মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে থাকবে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাদের ঈমান, আখিরাতের প্রতি তাদের অবিচল বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালবাসা ।

তাইতো দেখা যায় যে, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা – এ দুটো উৎসবই নির্ধারণ করা হয়েছে ইসলামের দুটি স্তম্ভ পালন সম্পন্ন করার প্রাক্কালে। ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ সাওম পালনের পর পরই মুসলিমরা পালন করে ঈদুল ফিতর, কেননা এই দিনটি আল্লাহর আদেশ পালনের পর আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার ও ক্ষমার ঘোষণা পাওয়ার দিন বিধায় এটি সাওম পালনকারীর জন্য বাস্তবিকই উৎসবের দিন – এদিন এজন্য উৎসবের নয় যে এদিনে আল্লাহর দেয়া আদেশ নিষেধ কিছুটা শিথিল হতে পারে, যেমনটি বহু মুসলিমদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তারা এই দিনে আল্লাহর আদেশ নিষেধ ভুলে গিয়ে অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, বরং মুসলিমের জীবনে এমন একটি মুহূর্তও নেই, যে মুহূর্তে তার ওপর আল্লাহর আদেশ নিষেধ শিথিলযোগ্য। তেমনিভাবে ঈদুল আযহা পালিত হয় ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হাজ্জ পালনের প্রাক্কালে। কেননা ৯ই জিলহজ্জ হচ্ছে ইয়াওমুল আরাফা, এদিনটি আরাফাতের ময়দানে হাজীদের ক্ষমা লাভের দিন, আর তাই ১০ই জিলহজ্জ হচ্ছে আনন্দের দিন – ঈদুল আযহা। এমনিভাবে মুসলিমদের উৎসবের এ দুটো দিন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করার দিন, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন এবং শরীয়তসম্মত বৈধ আনন্দ উপভোগের দিন – এই উৎসব মুসলিমদের ঈমানের চেতনার সাথে একই সূত্রে গাঁথা।

 নতুন বছরের সাথে মানুষের কল্যাণের সম্পর্ক

নতুন বছর নতুন কল্যাণ বয়ে আনে, দূরীভূত হয় পুরোনো কষ্ট ও ব্যর্থতার গ্লানি – এধরনের কোন তত্ত্ব ইসলামে আদৌ সমর্থিত নয়, বরং নতুন বছরের সাথে কল্যাণের শুভাগমনের ধারণা আদিযুগের প্রকৃতি-পুজারী মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণার অবশিষ্টাংশ। ইসলামে এ ধরনের কুসংস্কারের কোন স্থান নেই। বরং মুসলিমের জীবনে প্রতিটি মুহূর্তই পরম মূল্যবান হীরকখন্ড, হয় সে এই মুহূর্তকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করে আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয় করবে, নতুবা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে শাস্তির যোগ্য হয়ে উঠবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বছরের প্রথম দিনের কোন বিশেষ তাৎপর্য নেই। আর তাই তো ইসলামে হিজরী নববর্ষ পালনের কোন প্রকার নির্দেশ দেয়া হয়নি। না কুরআনে এর কোন নির্দেশ এসেছে, না হাদীসে এর প্রতি কোন উৎসাহ দেয়া হয়েছে, না সাহাবীগণ এরূপ কোন উপলক্ষ পালন করেছেন। এমনকি পয়লা মু্হাররামকে নববর্ষের সূচনা হিসেবে গণনা করা শুরুই হয় নবীজীর(সা.) মৃত্যুর বহু পরে, উমার ইবনুল খাত্তাবের (রা.) আমলে। এ থেকে বোঝা যায় যে, নববর্ষ ইসলামের দৃষ্টিতে কতটা তাৎপর্যহীন, এর সাথে জীবনে কল্যাণ-অকল্যাণের গতিপ্রবাহের কোন দূরতম সম্পর্কও নেই, আর সেক্ষেত্রে ইংরেজি বা অন্য কোন নববর্ষের কিই বা তাৎপর্য থাকতে পারে ইসলামে?

কেউ যদি এই ধারণা পোষণ করে যে, নববর্ষের প্রারম্ভের সাথে কল্যাণের কোন সম্পর্ক রয়েছে, তবে সে শিরকে লিপ্ত হল, অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করল। যদি সে মনে করে যে আল্লাহ এই উপলক্ষের দ্বারা মানবজীবনে কল্যাণ বর্ষণ করেন, তবে সে ছোট শিরকে লিপ্ত হল। আর কেউ যদি মনে করে যে নববর্ষের আগমনের এই ক্ষণটি নিজে থেকেই কোন কল্যাণের অধিকারী, তবে সে বড় শিরকে লিপ্ত হল, যা তাকে ইসলামের গন্ডীর বাইরে নিয়ে গেল। আর এই শিরক এমন অপরাধ যে, শিরকের ওপর কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে চিরতরে হারাম করে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন:

নিশ্চয়ই যে কেউই আল্লাহর অংশীদার স্থির করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন, আর তার বাসস্থান হবে অগ্নি। এবং যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।” [সূরা মায়িদাহ :৭২]

নববর্ষ উদযাপনের সাথে মঙ্গলময়তার এই ধারণার সম্পর্ক রয়েছে বলে কোন কোন সূত্রে দাবী করা হয় , যা কিনা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। মুসলিমদেরকে এ ধরনের কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলে ইসলামের যে মূলতত্ত্ব: সেই তাওহীদ বা একত্ববাদের ওপর পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।

নববর্ষের অনুষ্ঠানাদি: শয়তানের পুরোনো কূটচালের নবায়ন

আমাদের সমাজে নববর্ষ যারা পালন করে, তারা কি ধরনের অনুষ্ঠান সেখানে পালন করে, আর সেগুলো সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য কি? নববর্ষের অনুষ্ঠানাদির মধ্যে রয়েছে: পটকা ফুটিয়ে বা আতশবাজি পুড়িয়ে রাত ১২টায় হৈ হুল্লোড় করে পরিবেশ ও প্রতিবেশের শান্তি বিনষ্ট করে নববর্ষকে স্বাগত জানানো, ব্যান্ড সঙ্গীত বা অন্যান্য গান-বাজনার ব্যবস্থা, সম্ভ্রান্ত পল্লীর বাড়ীতে বা ক্লাবে গান-বাজনা, মদ্যপান ও পান শেষে ব্যভিচারের আয়োজন ইত্যাদি – এছাড়া রেডিও টিভিতে বিশেষ অনুষ্ঠান ও পত্রপত্রিকার বিশেষ ক্রোড়পত্র ও “রাশিফল” প্রকাশ।

এবারে এ সকল অনুষ্ঠানাদিতে অনুষ্ঠিত মূল কর্মকান্ড এবং ইসলামে এগুলোর অবস্থান সম্পর্কে পর্যালোচনা করা যাক:

নতুন দিন তথা সূর্যকে স্বাগত জানানো:

এ ধরনের কর্মকান্ড মূলত সূর্য-পূজারী ও প্রকৃতি-পূজারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অনুকরণ মাত্র, যা আধুনিক মানুষের দৃষ্টিতে পুনরায় শোভনীয় হয়ে উঠেছে। তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সমাজের অনেকেরই ধর্মের নাম শোনামাত্র গাত্রদাহ সৃষ্টি হলেও প্রকৃতি-পূজারী আদিম ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নকল করতে তাদের অন্তরে অসাধারণ পুলক অনুভূত হয়। সূর্য ও প্রকৃতির পূজা বহু প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন জাতির লোকেরা করে এসেছে। যেমন খ্রীস্টপূর্ব ১৪ শতকে মিশরীয় “অ্যাটোনিসম” মতবাদে সূর্যের উপাসনা চলত। এমনি ভাবে ইন্দো-ইউরোপীয় এবং মেসো-আমেরিকান সংস্কৃতিতে সূর্য পূজারীদেরকে পাওয়া যাবে। খ্রীস্টান সম্প্রদায় কর্তৃক পালিত যীশু খ্রীস্টের তথাকথিত জন্মদিন ২৫শে ডিসেম্বরও মূলত এসেছে রোমক সৌর-পূজারীদের পৌত্তলিক ধর্ম থেকে, যীশু খ্রীস্টের প্রকৃত জন্মতারিখ থেকে নয়। ১৯ শতাব্দীর উত্তর-আমেরিকায় কিছু সম্প্রদায় গ্রীষ্মের প্রাক্কালে পালন করত সৌর-নৃত্য এবং এই উৎসব উপলে পৌত্তলিক প্রকৃতি পূজারীরা তাদের ধর্মীয়-বিশ্বাসের পুনর্ঘোষণা দিত। মানুষের ভক্তি ও ভালবাসাকে প্রকৃতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টির সাথে আবদ্ধ করে তাদেরকে শিরক বা অংশীদারিত্বে লিপ্ত করানো শয়তানের সুপ্রাচীনক্লাসিকাল ট্রিক বলা চলে। শয়তানের এই কূটচালের বর্ণনা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে তুলে ধরেছেন:

আমি তাকে তার জাতিকে দেখেছি, তারা আল্লাহকে ছেড়ে সূর্যকে সিজদা করছে এবং শয়তান তাদের কার্যাবলীকে তাদের জন্য শোভনীয় করেছে…”[সূরা আন নামল :২৪]

 

নারীকে জড়িয়ে বিভিন্ন অশ্লীলতা:

নববর্ষের পার্টি বা “উদযাপন আয়োজনের” অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে নারীর সহজ-লভ্যতা – নিউ-ইয়র্কের টাইম স্কোয়ারে অথবা ঢাকার গুলশান ক্লাবে – পশ্চিমেও এবং তাদের অনুকরণে এখানেও ব্যাপারটা একটা অলিখিত প্রলোভন। নববর্ষের অনুষ্ঠানাদির মধ্যে সমাজ-বিধ্বংসী যে বিষয়গুলো পাওয়া যাবে, তার মাঝে অন্যতম হচ্ছে নারীকে জড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীলতা। নববর্ষের পার্টি বা উদযাপন আয়োজনের সবর্ত্রই সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী নারীকে পুরুষের সাথে অবাধ মেলামেশায় লিপ্ত দেখা যাবে। পৃথিবীতে আল্লাহ মানুষকে যে সকল আকষর্ণীয় বস্তু দ্বারা পরীক্ষা করে থাকেন, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নারী। রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেন:

আমি পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বড় কোন ফিতনা রেখে যাচ্ছি না।” [বুখারী মুসলিম]

সমাজ নারীকে কোন অবস্থায়, কি ভূমিকায়, কি ধরনের পোশাকে দেখতে চায় – এ বিষয়টি সেই সমাজের ধ্বংস কিংবা উন্নতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। নারীর বিচরণক্ষেত্র, ভূমিকা এবং পোশাক এবং পুরুষের সাপেক্ষে তার অবস্থান – এ সবকিছুই ইসলামে সরাসরি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ দ্বারা নির্ধারিত, এখানে ব্যক্তিগত বা সামাজিক প্রথা, হালের ফ্যাশন কিংবা ব্যক্তিগত শালীনতাবোধের কোন গুরুত্বই নেই। যেমন ইসলামে নারীদের পোশাকের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দেয়া আছে, আর তা হচ্ছে এই যে একজন নারীর চেহারা ও হস্তদ্বয় ছাড়া দেহের অন্য কোন অঙ্গই বহিরাগত পুরুষেরা দেখতে পারবে না।

বহিরাগত পুরুষ কারা? স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীদের পুত্র, ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নীপুত্র, মুসলিম নারী, নিজেদের মালিকানাধীন দাসী, যৌনকামনাহীন কোন পুরুষ এবং এমন শিশু যাদের লজ্জাস্থান সম্পর্কে সংবেদনশীলতা তৈরী হয়নি, তারা বাদে সবাই একজন নারীর জন্য বহিরাগত। এখানে ব্যক্তিগত শালীনতাবোধের প্রশ্ন নেই। যেমন কোন নারী যদি বহিরাগত পুরুষের সামনে চুল উন্মুক্ত রেখে দাবী করে যে তার এই বেশ যথেষ্ট শালীন, তবে তা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হলেও ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা শালীনতা-অশালীনতার সামাজিক মাপকাঠি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়, আর তাই সমাজ ধীরে ধীরে নারীর বিভিন্ন অঙ্গ উন্মুক্তকরণকে অনুমোদন দিয়ে ক্রমান্বয়ে এমন পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারে যে, যেখানে বস্তুত দেহের প্রতিটি অঙ্গ নগ্ন থাকলেও সমাজে সেটা গ্রহণযোগ্য হয় – যেমনটা পশ্চিমা বিশ্বের ফ্যাশন শিল্পে দেখা যায়। মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা ভারতবর্ষে যা শালীন, বাংলাদেশে হয়ত এখনও সেটা অশালীন – তাহলে শালীনতার মাপকাঠি কি? সেজন্য ইসলামে এধরনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে মানুষের কামনা-বাসনার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়নি, বরং তা কুরআন ও হাদীসের বিধান দ্বারা নির্ধারণ করা হয়েছে। তেমনি নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও অবাধ কথাবার্তা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেননা এই অবাধ মেলামেশা ও অবাধ কথাবার্তাই ব্যভিচারের প্রথম ধাপ। যিনাব্যভিচার ইসলামী শরীয়াতের আলোকে কবীরাহ গুনাহ, এর পরিণতিতে হাদীসে আখিরাতের কঠিন শাস্তির বর্ণনা এসেছে। এর প্রসারে সমাজ জীবনের কাঠামো ভেঙ্গে পড়ে, ছড়িয়ে পড়ে অশান্তি ও সন্ত্রাস এবং কঠিন রোগব্যাধি। আল্লাহর রাসূলের হাদীস অনুযায়ী কোন সমাজে যখন ব্যভিচার প্রসার লাভ করে তখন সে সমাজ আল্লাহর শাস্তির যোগ্য হয়ে ওঠে। আর নারী ও পুরুষের মাঝে ভালবাসা উদ্রেককারী অপরাপর যেসকল মাধ্যম, তা যিনা-ব্যভিচারের রাস্তাকেই প্রশস্ত করে।

এ সকল কিছু রোধ করার জন্য ইসলামে নারীদেরকে পর্দা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, নারী ও পুরুষের বিচরণ ক্ষেত্র পৃথক করা এবং দৃষ্টি অবনত রাখার বিধান রাখা হয়েছে। যে সমাজ নারীকে অশালীনতায় নামিয়ে আনে, সেই সমাজ অশান্তি ও সকল পাপকাজের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়, কেননা নারীর প্রতি আকর্ষণ পুরুষের চরিত্রে বিদ্যমান অন্যতম অদম্য এক স্বভাব, যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখাই সামাজিক সমৃদ্ধির মূলতত্ত্ব। আর এজন্যই ইসলামে সুনির্দিষ্ট বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে যে কোন প্রকার সৌন্দর্য বা ভালবাসার প্রদর্শনী ও চর্চা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শনের ফলাফল দেখতে চাইলে পশ্চিমা বিশ্বের দিকে তাকানোই যথেষ্ট, গোটা বিশ্বে শান্তি, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ঝান্ডাবাহী খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ছয় মিনিটে একজন নারী ধর্ষিত হয় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত তথাকথিত সভ্য দেশে মানুষের ভিতরকার এই পশুকে কে বের করে আনল? অত্যন্ত নিম্নবুদ্ধিসম্পন্ন লোকেও সহজেই বুঝতে পারে যে, স্রষ্টার বেঁধে দেয়া শালীনতার সীমা যখনই শিথিল করা শুরু হয়, তখনই মানুষের ভিতরকার পশুটি পরিপুষ্ট হতে শুরু করে। পশ্চিমা বিশ্বের অশালীনতার চিত্রও কিন্তু একদিনে রচিত হয়নি। সেখানকার সমাজে নারীরা একদিনেই নগ্ন হয়ে রাস্তায় নামেনি, বরং ধাপে ধাপে তাদের পোশাকে সংক্ষিপ্ততা ও যৌনতা এসেছে, আজকে যেমনিভাবে দেহের অংশবিশেষ প্রদর্শনকারী ও সাজসজ্জা গ্রহণকারী বাঙালি নারী নিজেকে শালীন বলে দাবী করে, ঠিক একইভাবেই বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে দেহ উন্মুক্তকরণ শুরু হয়েছিল তথাকথিত নির্দোষ পথে।

নারীর পোশাক-পরিচ্ছদ ও চাল-চলন নিয়ে ইসলামের বিধান আলোচনা করা এই নিবন্ধের আওতা বহির্ভূত, তবে এ সম্পর্কে মোটামুটি একটা চিত্র ইতিমধ্যেই তুলে ধরা হয়েছে। এই বিধিনিষেধের আলোকে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, নববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারীর যে অবাধ উপস্থিতি, সৌন্দর্য প্রদর্শন এবং পুরুষের সাথে মেলামেশাতা পরিপূর্ণভাবে ইসলামবিরোধী, তা কতিপয় মানুষের কাছে যতই লোভনীয় বা আকর্ষণীয়ই হোক না কেন। এই অনুষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের ধ্বংসের পূর্বাভাস দিচ্ছে। বছরের বালিকা ধর্ষণ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বিদ্যাপীঠে ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপন, পিতার সম্মুখে কন্যা এবং স্বামীর সম্মুখে স্ত্রীর শ্লীলতাহানি – বাংলাদেশের সমাজে এধরনের বিকৃত ঘটনা সংঘটনের প্রকৃত কারণ ও উৎস কি? প্রকৃতপক্ষে এর জন্য সেইসব মা-বোনেরা দায়ী যারা প্রথমবারের মত নিজেদের অবগুন্ঠনকে উন্মুক্ত করেও নিজেদেরকে শালীন ভাবতে শিখেছে এবং সমাজের সেইসমস্ত লোকেরা দায়ী, যারা একে প্রগতির প্রতীক হিসেবে বাহবা দিয়ে সমর্থন যুগিয়েছে।

ব্যভিচারের প্রতি আহবান জানানো শয়তানের ক্লাসিকাল ট্রিকগুলোর অপর একটি, যেটাকে কুরআনে “ফাহিশাহ” শব্দের আওতায় আলোচনা করা হয়েছে, শয়তানের এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন:

হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল পবিত্র বস্তু আছে তা থেকে তোমরা আহার কর আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু সে তো তোমাদের নির্দেশ দেয় মন্দ অশ্লীল কাজ [ব্যভিচার, মদ্যপান, হত্যা ইত্যাদি] করতে এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন সব বিষয় বলতে যা তোমরা জান না।” [সূরা আল বাকারা :১৬৮১৬৯]

এছাড়া যা কিছুই মানুষকে ব্যভিচারের দিকে প্রলুব্ধ ও উদ্যোগী করতে পারে, তার সবগুলোকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াতের দ্বারা:

তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। অবশ্যই এটা অশ্লীল কাজ নিকৃষ্ট পন্থা।” [সূরা বনী ইসরাঈল: ৩২]

ব্যভিচারকে উৎসাহিত করে এমন বিষয়, পরিবেশ, কথা ও কাজ এই আয়াত দ্বারা নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে।

বিভিন্ন সাজে সজ্জিত পর্দাবিহীন নারীকে আকর্ষণীয়, প্রগতিশীল, আধুনিক ও অভিজাত বলে মনে হতে পারে, কেননা, শয়তান পাপকাজকে মানুষের দৃষ্টিতে শোভনীয় করে তোলে। যেসব মুসলিম ব্যক্তির কাছে নারীর এই অবাধ সৌন্দর্য প্রদর্শনকে সুখকর বলে মনে হয়, তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের বক্তব্য:

. ছোট শিশুরা অনেক সময় আগুন স্পর্শ করতে চায়, কারণ আগুনের রং তাদের কাছে আকর্ষণীয়। কিন্তু আগুনের মূল প্রকৃতি জানার পর কেউই আগুন ধরতে চাইবে না। তেমনি ব্যভিচারকে আকর্ষণীয় মনে হলেও পৃথিবীতে এর ধ্বংসাত্মক পরিণতি এবং আখিরাতে এর জন্য যে কঠিন শাস্তি পেতে হবে, সেটা স্মরণ করলে বিষয়টিকে আকর্ষণীয় মনে হবে না।

. প্রত্যেকে নিজেকে প্রশ্ন করে দেখি, একজন নারী যখন নিজের দেহকে উন্মুক্ত করে সজ্জিত হয়ে বহু পুরুষের সামনে উপস্থিত হয়ে তাদের মনে যৌন-লালসার উদ্রেক করে, তখন সেই দৃশ্য দেখে এবং সেই নারীকে দেখে বহু-পুরুষের মনে যে কামভাবের উদ্রেক হয়, সেকথা চিন্তা করে এই নারীর বাবার কাছে তার কন্যার নগ্নতার দৃশ্যটি কি খুব উপভোগ্য হবে? এই নারীর সন্তানের কাছে তার মায়ের জনসম্মুখে উন্মুক্ততা কি উপভোগ্য? এই নারীর ভাইয়ের কাছে তার বোনের এই অবস্থা কি আনন্দদায়ক? এই নারীর স্বামীর নিকট তার স্ত্রীর এই অবস্থা কি সুখকর? নিশ্চয়ই নয়। তাহলে কিভাবে একজন ব্যক্তি পরনারীর সৌন্দর্য প্রদর্শনকে পছন্দ করতে পারে? এই পরনারী তো কারও কন্যা কিংবা কারও মা, কিংবা কারও বোন অথবা কারও স্ত্রী? এই লোকগুলোর কি পিতৃসুলভ অনুভূতি নেই, তারা কি সন্তানসুলভ আবেগশূন্য, তাদের বোনের প্রতি ভ্রাতৃসুলভ স্নেহশূন্য কিংবা স্ত্রীর প্রতি স্বামীসুলভ অনুভূতিহীন?

নিশ্চয়ই নয়। বরং আপনি-আমি একজন পিতা, সন্তান, ভাই কিংবা স্বামী হিসেবে যে অনুভূতির অধিকারী, রাস্তার উন্মুক্ত নারীটির পরিবারও সেই একই অনুভূতির অধিকারী। তাহলে আমরা আমাদের কন্যা, মাতা, ভগ্নী কিংবা স্ত্রীদের জন্য যা চাই না, তা কিভাবে অন্যের কন্যা, মাতা, ভগ্নী কিংবা স্ত্রীদের জন্য কামনা করতে পারি? তবে কোন ব্যক্তি যদি দাবী করে যে, সে নিজের কন্যা, মাতা, ভগ্নী বা স্ত্রীকেও পরপুরুষের যথেচ্ছ লালসার বস্তু হতে দেখে বিচলিত হয় না, তবে সে তো পশুতুল্য, নরাধম। বরং অধিকাংশেরই এধরনের সংবেদনশীলতা রয়েছে। তাই আমাদের উচিৎ অন্তর থেকে এই ব্যভিচারের চর্চাকে ঘৃণা করা। এই ব্যভিচার বিভিন্ন অঙ্গের দ্বারা হতে পারে, যেমনটি নবীজী(সা.) বর্ণনা করেছেন:

“…চোখের যিনা হচ্ছে তাকানো, জিহ্বার যিনা হচ্ছে কথা বলা, অন্তর তা কামনা করে এবং পরিশেষে যৌনাঙ্গ একে বাস্তবায়ন করে অথবা প্রত্যাখ্যান করে।” [বুখারী মুসলিম]

দৃষ্টি, স্পর্শ, শোনা ও কথার দ্বারা সংঘটিত যিনাই মূল ব্যভিচার সংঘটিত হওয়াকে বাস্তব রূপ দান করে, তাই জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য সে সকল স্থান থেকে শতহস্ত দূরে থাকা, যে সকল স্থানে দৃষ্টি, স্পর্শ, শোনা ও কথার ব্যভিচারের সুযোগকে উন্মুক্ত করা হয়।

সঙ্গীত বাদ্য:

নববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকে সংগীত ও বাদ্য। ইসলামে নারীকন্ঠে সংগীত নিঃসন্দেহে নিষিদ্ধ – একথা পূর্বের আলোচনা থেকেই স্পষ্ট। সাধারণভাবে যে কোন বাদ্যযন্ত্রকেও ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া, যেমন বিশেষ কিছু উপলক্ষে দফ নামক বাদ্যযন্ত্র বাজানোর অনুমতি হাদীসে এসেছে। তাই যে সকল স্থানে এসব হারাম সংগীত উপস্থাপিত হয়, সে সকল স্থানে যাওয়া, এগুলোতে অংশ নেয়া, এগুলোতে কোন ধরনের সহায়তা করা কিংবা তা দেখা বা শোনা সকল মুসলিমের জন্য হারাম। কিন্তু কোন মুসলিম যদি এতে উপস্থিত থাকার ফলে সেখানে সংঘটিত এইসকল পাপাচারকে বন্ধ করতে সমর্থ হয়, তবে তার জন্য সেটা অনুমোদনযোগ্য। তাছাড়া অনর্থক কথা ও গল্প-কাহিনী যা মানুষকে জীবনের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে, তা নিঃসন্দেহে মুসলিমের জন্য বর্জনীয়। অনর্থক কথা, বানোয়াট গল্প-কাহিনী এবং গান-বাজনা মানুষকে জীবনের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য শয়তানের পুরোনো কূটচালের একটি, আল্লাহ এ কথা কুরআনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন:

এবং তাদের মধ্যে যাদেরকে পার পর্যায়ক্রমে বোকা বানাও তোমার গলার স্বরের সাহায্যে, … ” [সূরা বনী ইসরাঈল :৬৪]

যে কোন আওয়াজ, যা আল্লাহর অবাধ্যতার দিকে আহবান জানায়, তার সবই এই আয়াতে বর্ণিত আওয়াজের অন্তর্ভুক্ত। [তফসীর ইবন কাসীর]

আল্লাহ আরও বলেন:

এবং মানুষের মাঝে এমন কিছু লোক আছে যারা আল্লাহর পথ থেকে [মানুষকে] বিচ্যুত করার জন্য কোন জ্ঞান ছাড়াই অনর্থক কথাকে ক্রয় করে, এবং একে ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে, এদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” [সূরা লোকমান :]

রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেছেন:

আমার উম্মাতের মধ্যে কিছু লোক হবে যারা ব্যভিচার, রেশমী বস্ত্র, মদ এবং বাদ্যযন্ত্রকে হালাল বলে জ্ঞান করবে।” [বুখারী]

এছাড়াও এ ধরনের অনর্থক ও পাপপূর্ণ অনুষ্ঠান সম্পর্কে বহু সতর্কবাণী এসেছে কুরআনের অন্যান্য আয়াতে এবং আল্লাহর রাসূলের হাদীসে।

যে সকল মুসলিমদের মধ্যে ঈমান এখনও অবশিষ্ট রয়েছে, তাদের উচিৎ এসবকিছুকে সর্বাত্মকভাবে পরিত্যাগ করা।

আমাদের করণীয়

সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নববর্ষ সংক্রান্ত যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এজন্য যে, এতে নিম্নোলিখিত চারটি শ্রেণীর ইসলাম বিরোধী বিষয় রয়েছে:

. শিরকপূর্ণ অনুষ্ঠানাদি, চিন্তাধারা সংগীত
. নগ্নতা, অশ্লীলতা, ব্যভিচারপূর্ণ অনুষ্ঠান
. গান বাদ্যপূর্ণ অনুষ্ঠান
. সময় অপচয়কারী অনর্থক বাজে কথা এবং কাজ

এ অবস্থায় প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে, নিজে এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকা এবং মুসলিম সমাজ থেকে এই প্রথা উচ্ছেদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো নিজ নিজ সাধ্য ও অবস্থান অনুযায়ী। এ প্রসঙ্গে আমাদের করণীয় সম্পর্কে কিছু দিকনির্দেশনা দেয়া যেতে পারে:

বিষয়ে দেশের শাসকগোষ্ঠীর দায়িত্ব হবে আইন প্রয়োগের দ্বারা নববর্ষের যাবতীয় অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা

যেসব ব্যক্তি নিজ নিজ ক্ষেত্রে কিছুটা ক্ষমতার অধিকারী, তাদের কর্তব্য হবে অধীনস্থদেরকে কাজ থেকে বিরত রাখা। যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এই নির্দেশ জারি করতে পারেন যে, তার প্রতিষ্ঠানে নববর্ষকে উপলক্ষ করে কোন ধরনের অনুষ্ঠান পালিত হবে না, নববর্ষ উপলক্ষে কেউ বিশেষ পোশাক পরতে পারবে না কিংবা শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারবে না

মসজিদের ইমামগণ বিষয়ে মুসল্লীদেরকে সচেতন করবেন বিরত থাকার উপদেশ দেবেন

পরিবারের প্রধান বিষয়টি নিশ্চিত করবেন যে তার পুত্র, কন্যা, স্ত্রী কিংবা অধীনস্থ অন্য কেউ যেন নববর্ষের কোন অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়। (এটুকু ইনশাআল্লাহ্ চাইলে সবাই/অনেকেই করতে পারবেন)

এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকে তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী, সহকর্মী পরিবারের মানুষকে উপদেশ দেবেন এবং নববর্ষ পালনের সাথে কোনভাবে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবেন

আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক দান করুন, এবং কল্যাণ ও শান্তি বর্ষিত হোক নবী(সা.)-এঁর ওপর, তাঁর পরিবার ও সাহাবীগণের ওপর।


এবং তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা সেই জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার পরিধি আসমান জমীনব্যাপী, যা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য।” [সূরা আলেইমরান:১৩৩]

লেখক : ইঞ্জিনিয়ার মো: এনামুল হক | সম্পাদক : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া – মো: আব্দুল কাদের

 

ওভেন ছাড়াই তৈরি করে ফেলুন সুস্বাদু গার্লিক ব্রেড

প্রতিদিন সকালের নাস্তায় যে খাবারটি প্রায় সব বাসায়ই খাওয়া হয়, তা হল পাউরুটি। বাজারের অস্বাস্থ্যকর পাউরুটি খাওয়াটা অনেকেরই অপছন্দের। আবার পাউরুটি ওভেন ছাড়া তৈরি করা যায় না বলে, ইচ্ছা থাকলেও পাউরুটি ঘরে তৈরি করতে পারেন না। এই সমস্যার সমাধান করে দেবে আজকের এই রেসিপি। ওভেন ছাড়াই তৈরি করে নিতে পারবেন গার্লিক ব্রেড।

উপকরণ:

২ কাপ ময়দা

১ চা চামচ ইস্ট

৩/৪ কাপ গরম পানি

১ টেবিল চামচ চিনি

৩/৪ চা চামচ লবণ

২ টেবিল চামচ তেল

গার্লিক বাটার তৈরির জন্য

২ টেবিল চামচ মাখন

৪ কোয়া রসুন কুচি

লবণ স্বাদমত

গোলমরিচ গুঁড়ো

১ চা চামচ ওরিগেনো, বেসলি এবং পার্সলি পাতা গুঁড়ো

 

প্রণালী:

১। একটি পাত্রে ১/২ কাপ গরম পানি, চিনি এবং ইস্ট মিশিয়ে ৫ মিনিট রেখে দিন।

২। ৫ মিনিট পর পানিতে বুদবুদ উঠলে এতে ময়দা, তেল, লবণ এবং বাকী ১/৪ কাপ পানি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন।

৩। ডো নরম হয়ে গেলে একটি প্লাস্টিকের প্যাকেট অথবা সুতির কাপড় দিয়ে ২ ঘন্টা ঢেকে রাখুন।

৪। আরেকটি পাত্রে রসুন কুচি, মাখন, ওরিগেনো, ব্রাসলি,পার্সলি পাতা গুঁড়ো, লবণ এবং গোল মরিচ গুঁড়ো ভাল করে মিশিয়ে নিন।

৫। এবার ডোটিকে দুই ভাগ করে নিন। এবার একটি ভাগ নিয়ে বড় রুটির মত বেলে নিই।

৬। রুটির মাঝে মাখন রসুনের মিশ্রণটি দিন। এবার রুটিটি রোল করুন।

৭। রোল করা রুটিটি ছুড়ি দিয়ে কয়েক টুকরো করে নিন।

৮। এখন নন-স্টিক প্যানে তেল দিয়ে কাটা ডোর টুকরোগুলো দিন।

৯। একটি কাপড় দিয়ে প্যানের ঢাকনাটি পেঁচিয়ে নিন, তারপর সেটি দিয়ে প্যানটি ঢেকে দিন।

১০। এবার প্যানটি গরম কোন স্থানে এক ঘন্টা রেখে দিন। এক ঘন্টা পর দেখবেন ডোটি ফুলে ডাবল হয়ে গেছে।

১১। এবার অল্প আঁচে প্যানটি ১০-১২ মিনিট চুলায় রাখুন।

১২। ১০ মিনিট পর পাউরুটির পাশ পরিবর্তন করে ৫-৬ মিনিট রান্না করুন।

১৩। দুই পাশ সোনালী রং হয়ে আসলে চুলা বন্ধ করুন।

১৪। পাউরুটির উপরে মাখন ব্রাশ এবং ধনেপাতা কুচি করে নামিয়ে ফেলুন।

১৫। ব্যস তৈরি হয়ে গেল গার্লিক ব্রেড।

 

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় নারীর প্রতি অতিরিক্ত গুরুত্বের দাবি

জলবায়ু পরির্বতন জনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় নানা করণীয় ঠিক করলেও, নারীদের জন্য আলাদা কিছু করা হয়নি। অথচ জলবায়ু পরির্বতনজনিত প্রতিটি অভিঘাতেই নারীরাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকে। তাই এসব কর্মসূচিতে নারীর জন্য আলাদা পরিকল্পনা ও তহবিল বরাদ্দের প্রতি জোর দেয়া দরকার।

সোমবার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র- সিআরটি’র আয়োজিত ‘জলবায়ু পরির্বতনে গৃহিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি ও কর্মসূচিতে জেন্ডার’ বিষয়ক এক কর্মশালায় এ কথা বলেন বক্তারা।

বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সক্ষমতা বৃদ্ধি তহবিলের সহায়তায় আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন ইউএন উইমেনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্রিশ্চিন হান্টার, বিশেষ অতিথি ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারপার্সন এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ড. রফিকুল হুদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর এবং ইউএন উইমেনের ক্লাইমেট ও জেন্ডার সমন্বয়কারী দিলরুবা হায়দার।

জলবায়ু ও নারী বিষয়ে কর্মরত দেশ বিদেশের বিশেষজ্ঞদের অংশ গ্রহণে আয়োজিত এই কর্মশালায় দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপঠে নারীর জন্য সহাবস্থানমূলক পরিবশে তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করতে নীতি নির্ধারণের তাগিদ দেয়া হয়। সেই সঙ্গে পাঠ্যক্রমে নারীর প্রতি অবমাননাকর বিষয়গুলো দ্রুত অপসারণ করে জেন্ডার সহনশীল সিলেবাস ও শিক্ষকদের সেই মনোভাবে প্রস্তুতেরও পরামর্শ দেয়া হয়।

 

নারীর স্থায়ী উন্নয়নে চাই বিশেষ বিনিয়োগ

স্থায়ীত্বশীল নারী উন্নয়নে জেন্ডার বাজেট কোথায় খরচ হচ্ছে, কোথায় বরাদ্দ হচ্ছে এসব তদারকির জন্য মনিটরিং সেল গঠনসহ কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ বিনিয়োগের মাধ্যমে নারী উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পরামর্শ দিলেন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও নারী নেত্রীরা।

রোববার বিকেলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে আয়োজিত ‘স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে নারীর জন্য বিনিয়োগ : জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এ পরামর্শ দেন।

সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী।

এতে অংশ নিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘আমরা অনেক কিছু শুনি এবং তার ভিত্তিতে চেষ্টা করি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য কিন্তু হয়তো তা কখনো সম্ভব হয় কখনো হয় না। ঐতিহাসিকভাবে নারীরা সম্পদহীন। এ ক্ষেত্রে যদি পরিবর্তন আনা যায় তাহলে হয়তো নারীর পরিবর্তন হবে। সক্ষমতার ভিত্তিতে আমাদের অর্থ ব্যয় করতে হবে।’

সংগঠনের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, ‘চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনে নারীর ক্ষমতায়নে অর্থনৈতিক যোগান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে উল্লেখ করা হয়। ২০২১ সালের ভিশন অর্জন করতে হলে নারীকে এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য জেন্ডার বাজেট খুবই প্রয়োজন। পাশাপাশি এ বরাদ্দকৃত অর্থ কিভাবে কোথায় নারীর জন্য বরাদ্দ হচ্ছে, কোথায় খরচ হচ্ছে তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি মনিটরিং সেল হওয়া প্রয়োজন। কারণ, ৪০টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার বাজেট থাকলেও সেখানে অনেক মন্ত্রণালয় অর্থ খরচ করতে পারেনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘সমান অংশিদারিত্বের কথা সব জায়গায় বলা হলেও তার কোনো প্রতিফলন বাস্তবে আমরা দেখি না। নারীর অগ্রগতি সাধিত হয়েছে এটা সত্যি কিন্তু এই অগ্রগতি ও উন্নতির সুবাতাস কতটুকু নারী পাচ্ছে তাই আমাদের দেখতে হবে এবং এর ভিত্তিতে নতুন পরিকল্পনা নিতে হবে।’

ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমা বেগম বলেন, ‘আমরা অংশগ্রহণমূলক বাজেট চাই। আমরা বাজেটের আগে অনেক ধরনের আলোচনা দেখি কিন্তু এর প্রতিফলন আমরা অনেক সময়ই দেখি না। আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হয় নারীর জন্য অনেক বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন অনেক কম। আমাদের অনেক ভালো ভালো পলিসি আছে কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই। আর এর জন্য প্রয়োজন মনিটরিং।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মী মূল প্রবন্ধে বলেন,  ‘বাংলাদেশে অনেক অগ্রযাত্রা হওয়ার পরও নারীর জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা দেখি। বর্তমানে চল্লিশটি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার বাজেট বরাদ্দ রয়েছে। জেন্ডার বাজেটে নারীর জন্য আমরা চাই নিরাপত্তা, লাভজনক কাজ, নারীর চলাচলের সুবিধা, নারী স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং ওনারশিপ। লেবার ওয়েলফেয়ার সার্ভিস সেন্টারে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বিশেষ বিশেষ জায়গায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে নারীর উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে।’

সভায় আরো বক্তব্য দেন- অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক, বিআইডিএসর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো বিমল কুমার সাহা, অর্থ বিভাগ অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আজিজুল আলম, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু প্রমুখ।

 

রুখে দিতে আত্মরক্ষার কৌশল শিখছে তনুরা

প্রীতিলতা ব্রিগেডের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্য চত্বরে আজ (শুক্রবার) থেকে শুরু হয়েছে ‘তনুদের আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ’। প্রশিক্ষণ নিয়ে নারী ছিঁড়ে দেবে পুরুষ-আরোপিত শৃঙ্খল, অশুভর নাগপাশ থেকে মুক্ত করবে নিজেকে। নারীর ওপর যেকোনো বর্বর কর্মকাণ্ডও রুখে দেবে তারা।

বাংলাদেশ তায়কোয়ান্দো ফেডারেশনের সহযোগিতায় আয়োজিত এই আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণে প্রথম দিনে প্রীতিলতা ব্রিগেডের আহ্বায়ক লাকী আক্তারের নেতৃত্বে ১৭ নারী অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন তায়কোয়ান্দো ব্ল্যাকবেল্ট জেসমিন আক্তার রুমা।

আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণের এ আয়োজন সম্পর্কে লাকী আক্তার বলেন, ‘নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভরসায় বসে থাকার সুযোগ নেই। তাই আমরা নিজেরাই আত্মরক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’

প্রশিক্ষক জেসমিন আক্তার রুমা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘সবার মধ্যে দ্রুত শেখার আগ্রহ আছে। প্রথমদিনেই তারা অনেক ভাল পারফর্ম করেছে।’

প্রতি শুক্রবার নিয়মিত এই প্রশিক্ষণ চলবে বলে জানিয়েছে প্রীতিলতা ব্রিগেডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণে যেকোনো বয়সের নারী অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ ছাড়া খুব শিগগিরই দেশের অন্যান্য জেলাতেও এ প্রশিক্ষণ শুরু হবে।

 

২০০ সেকেন্ডের স্যান্ড আর্টে শাহরুখের জীবনের ৫০ বছর

১৫ এপ্রিল মুক্তি পাচ্ছে শাহরুখ খান অভিনীত ‘ফ্যান’ ছবি। ছবিটির ট্রেলার এবং গান মুক্তির পর থেকেই যেন শাহরুখ ভক্তরা অপেক্ষায় রয়েছেন ছবি মুক্তির। তারকা আর ভক্ত নিয়ে তার এই নতুন ছবি ‘ফ্যান’।

শুধু ভারত নয় পুরো বিশ্বে রয়েছে শাহরুখের কোটি কোটি ভক্ত। তাদের অনেকেই এই ছবির জন্য বিভিন্ন ভিডিও বানিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শাহরুখকে।

সম্প্রতি শাহরুখের এক ভক্ত স্যান্ড আর্ট নিয়ে একটি ভিডিও বানিয়েছেন। যেখানে শাহরুখের ৫০ বছরের জীবনী তুলে ধরা হয়েছে। ভিডিওতে শাহরুখের জন্ম থেকে শুরু করে তার সব হিট ছবি, বিখ্যাত ডায়লগ, হিট গান এবং আরও অনেক কিছু তুলে ধরা হয়েছে।

সবশেষে নতুন ছবি ‘ফ্যান’ এবং ‘রইস’ বিখ্যাত ডায়লগ দিয়ে শেষ হয়েছে ভিডিওটি। আর সেই স্যান্ড আর্টের মাধ্যমে শাহরুখের জীবনের এক ঝলক দেখালেন রাহুল আরিয়া।

 

পরিতৃপ্ত জীবন চান? নিন অপরাহ উইনফ্রের এই ৩০ দিনের চ্যালেঞ্জ!

মানুষ জীবনে কী চায়? বাড়ি, গাড়ি, ভালোবাসার মানুষ, সম্পদ- যেটার কথাই আপনি বলুন না কেন একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবেন যে আর কোন কারণে নয়, বরং একটু ভালো থাকার জন্য, নিজেকে খুশি রাখার জন্যেই এসবটা করছেন আপনি। করতে চাইছেন জীবনে। তাহলে জীবনের লক্ষ্য কি কেবলই খুশি থাকা? সম্প্রতি অপরাহ উইনফ্রের সাথে কথা বলার সময় খুশি বিশেষজ্ঞ শন অ্যাকর জানান, হ্যাঁ! মানুষ ভালো আর খুশি থাকতেই সবকিছু করে। তবে কেবল এটুকুই নয়, শন জানান এমন কিছু কাজের কথা যেগুলোর মাধ্যমে ৩০ দিনের ভেতরেই নিজেকে পুরোপুরি একজন সুখী ও খুশি মানুষে পরিণত করতে পারবেন আপনি। কী সেই পদ্ধতি? চলুন দেখে আসি নিঃসন্দেহে মাত্র ত্রিশ দিনে খুশি মানুষে পরিণত হওয়ার উপায়গুলো।

১ম দিন: সকালে ঘুম থেকে উঠেই এমন তিনটি জিনিসের কথা মনে করুন যেগুলোর জন্যে আপনি কৃতজ্ঞ। ( বাকী ২৯ দিন করুন। )

২য় দিন: গত ২৪ ঘন্টায় আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ভেতরে সবচাইতে অর্থবোধক ও ভালো ঘটনাটির কথা মনে করুন। ( বাকী ২৮ দিন একই কাজ করুন। )

৩য় দিন: পরিচিত কারো সাথে কথা বলুন ও তার প্রশংসা করুন। ( বাকী ২৭ দিন একই কাজ করুন। )

৪র্থ দিন: দিনের অন্তত ১৫ মিনিট কার্ডিও কিংবা যেকোন ধরনের শরীরচর্চা করা শুরু করুন। ( বাকী ২৬ দিন একই কাজ করুন। )

পঞ্চম দিন: অন্তত ৫ মিনিট ধরে যোগব্যায়াম করুন। ( বাকী ২৫ দিন একই কাজ করুন। )

ব্যস! এভাবেই বাকী দিনগুলোতে একই কাজ চালু রাখুন। এভাবে ৫,১০,১৫,২০,২৫ করে একেবারে ৩০ দিনের দিন গিয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন আর দেখুন কতটা ভালো রয়েছেন আপনি ৩০ দিন আগের তুলানায়। সত্যি বলতে গেলে, ততক্ষণ পর্যন্ত চেষ্টা করুন এগুলোকে যতক্ষণ না আপনার অভ্যাসে পরিণত হবে এগুলো। মানুষ একঘেঁয়েমী কিংবা রোমাঞ্চ- যে অবস্থার মধ্য দিয়েই যাক না কেন, একটা সময় গিয়ে চারপাশের সবকিছুই তুচ্ছ মনে হতে থাকে। কাছের মানুষের দেওয়া আঘাতে কিংবা নিজের প্রতি হতাশায় একটা সময় ভেঙে পড়ে সে। ভুলে যায় যে, এই একটা জিনিসের পাশাপাশি তার জীবনে আছে আরো হাজারটা ভালো ব্যাপার। যেগুলো হয়তো প্রতিনিয়ত তার সাথে ঘটে চলেছে অথচ কষ্টের কালো রংটা সরিয়ে সেগুলোকে দেখতে পাচ্ছেনা সে।

আর তাই এই পাঁচটি কাজ প্রতিটাদিন করে যান ঠিক ত্রিশদিন অব্দি। দেখবেন, আপনার সাথে ঘটে যাওয়া ভালো ব্যাপারগুলো ঠিকই চোখের সামনে আসতে শুরু করেছে আপনার আর পৃথিবীকে মনে হচ্ছে অনেক বেশি সুন্দর আর ভালোলাগার স্থান। নিজেকে মনে হচ্ছে প্রকৃত অর্থেই একজন খুশি মানুষ!

 

লিখেছেন-

সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

 

যে ৫টি জিনিস ভ্রমণে আপনার আনন্দকে করবে দ্বিগুণ!

আমরা বেড়াতে যাই, নিজেকে আনন্দ দিতে। শহরের ঝঞ্ঝাটময় কোলাহলের জীবন থেকে বেরিয়ে একটি শান্তিময় সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে ছুটে যাই প্রকৃতির কাছে। সেই সময়ে কোন ঝঞ্ঝাট কি ভাল লাগে? একদমই না। একেবারে ঝামেলাহীন ছুটি কাটাতে করুন এই কাজগুলো-
ঠিকমত ব্যাগ গোছান
আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো যত্নের সাথে গুছিয়ে নিন। কোন দরকারি জিনিস ভুলে ফেলে গেলে সেটি আবার কেনা একটি সমস্যা। আবার এমনও হতে পারে আপনি যেখানে যাচ্ছেন সেখানে আর কেনার সুযোগও নেই। যেমন ধরুন, ট্রাকিং এ গেছেন বন্ধুদের সাথে। ভুলে টাওয়াল নেন নি। যখন বুঝতে পারলেন যে এত দরকারি একটা জিনিস নেন নি, ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। এমন প্রত্যন্ত এলাকায় পৌছে গেছেন যে আর কেনার সুযোগ নেই। তখন? তাই ব্যাগে প্রত্যেকটি জিনিস ঠিকমত গুছিয়ে নিন। দরকারে লিস্ট করে নিন।
পর্যাপ্ত টাকা সাথে রাখুন
আপনার হয়ত একটা বাজেট ঠিক করা আছে, কত টাকায় আপনি আপনার ট্যুর শেষ করবেন। তবু সাথে কিছু বাড়তি টাকা রাখুন। আপনার যে কোন প্রয়োজনে হঠাৎ কিন্তু লাগতেই পারে। ক্রেডিট কার্ড সাথে নিন। আপনি যেখানে বেড়াতে যাচ্ছেন সেটা কিন্তু আপনার পরিমন্ডল না। সেখানে আপনার প্রয়োজনে টাকা দিয়ে পাশে দাড়ানোর কেউ নেই। তাই নিজেই সতর্ক থাকুন।
কাজ শেষ করে যান
আপনার কাজগুলো গুছিয়ে শেষ করুন। এতে বেড়ানোর সময়টা নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন। এখন ইন্টারনেটের যুগ। তাই চাইলেই বস কিন্তু কাজ ধরিয়ে দিতে পারেন আপনাকে। আর কোন কাজ যদি বাকি রেখে যান তাহলে তো কথাই নেই। বেড়ানোর মাঝেও ক্লায়েন্ট এর ফোন, বসের ঝাড়ি সব চলবে। তাই নিজেই কাজগুলো শেষ করে ফেলুন এবং জানিয়ে যান যে কাজ কোনটা বাকি নেই।
আবহাওয়ার খোজ নিন
অবশ্যই আবহাওয়ার খোজ নিন। ধরুণ, নেপাল যাচ্ছেন। পর্বতময় এলাকা, একেবারে হিমালয়ের কাছের দেশ নেপাল। আবহাওয়া ভাল না হলে একেবারে হোটেলেই কেটে যাবে আপনার পুরো ট্রিপ। এমন সব এলাকার কিছু বিশেষত্ত্ব আছে। কোথাও বৃষ্টির সময় যেতে হয়। আবার কোথাও গ্রীষ্ম-বর্ষার মাঝামাঝি গেলে চমৎকার দৃশ্য উপভোগ করা যায়। কোথাও আবার শীতে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। সেগুলো জেনে আপনার ট্রিপের পরিকল্পনা করুন।
বুঝে শুনে সঙ্গী নির্বাচন করুন
ভ্রমণে যথোপযুক্ত সঙ্গী নির্বাচন করা খুবই জরুরী। আপনি যদি পাহাড়ি পথে এমন মানুষ নিয়ে যান, যার কখনোই খুব বেশী হাঁটা বা স্ট্রেস নেওয়ার অভ্যেস নেই তাহলে সে আপনার পুরো ভ্রমণের আনন্দই নস্যাত করে দিতে পারে। আবার আপনার আগ্রহ হয়ত আরও ঘুরে দেখায়। কিন্তু আপনার সঙ্গীর আগ্রহ হোটেলেই আরামে ঘুমানোর আর নিজের ছবি তোলার। তাহলে? তাই আপনি যে ট্রিপে যাচ্ছেন তেমন মানানসই ভ্রমণসঙ্গী বেছে নিন।
লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

আকর্ষণীয়, অপ্রতিদ্বন্দী ব্যক্তিত্বের জন্য যা করবেন

আমরা সবসময়ই নিজেকে অন্যের কাছে এক বিশেষ ভাবমূর্তির সাথে প্রকাশ করতে চাই। আমরা চাই অন্যেরা আমাদের বুদ্ধিমান হিসেবে জানুক, আমাদের ব্যক্তিত্বে আকৃষ্ট হোক। সবার মাঝে আলাদা ভাবে গুরুত্ব পেতে পছন্দ করি আমরা সবাই। কিন্তু সবাই কি গুরুত্ব পায়? আসরে, আড্ডায় সবাই কি হতে পারে মধ্যমণি?
আপনি যদি সবার প্রিয় পাত্র হন সেক্ষেত্রেও কিন্তু সেই আকর্ষণ ধরে রাখার ব্যাপার থেকে যায়। নিজের একটি অপ্রতিদ্বন্দী ব্যক্তিত্ব তৈরি করা এবং তা ধরে রাখা উভয়ই একটি কঠিন কাজ। আপনার কাজে দেবে চমৎকার এই কৌশলগুলো-
নিজের লক্ষ্য ঠিক রাখুন
ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে মানুষের নিজস্ব গুণে। আপনার চরিত্রের দৃঢ়তাই কিন্তু ফুটে ওঠে আপনার প্রকাশভঙ্গিতে। নিজের বদভ্যাসগুলো শুধরে ফেলুন। লক্ষ্য নির্দিষ্ট করুন। যা করবেন ভেবেছেন, করে ফেলুন। সেটা যত ছোটখাট বিষয়ই হোক না কেন। হয়ত আপনি জিমে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু জিমে প্রথমদিন গিয়েই আর গেলেন না। কোন কাজ করবেন বলে হাতে নিয়েছেন, কিন্তু শেষ না করে রেখে দিলেন। এসবই আমরা করি যখন আমাদের লক্ষ্যের কোন ঠিক থাকে না। উদ্দেশ্যহীনভাবে আমরা সময় ব্যয় করে যাই। তাই, আমাদের একটি লক্ষ্য ঠিক করতে হবে এবং কাজ শুরু করার আগে অবশ্যই বুঝে নিতে হবে আমরা সেটি করতে পারব কিনা।
 
আপনার ব্যাপারে মতামত গড়ে তুলুন
আপনি যখন আত্মবিশ্বাসী এবং সৃষ্টিশীল তখন সহজেই সেটা আপনার চোখে মুখে ফুটে ওঠে। আপনার কন্ঠেও ফুটে ওঠে সাহস, দৃঢ়তা। আপনার বন্ধুরাও কিন্তু আপনার ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে আপনার সাথেই থাকবে। আপনি আরেকটু সচেতন হলেই গড়ে তুলতে পারেন আপনার ব্যাপারে সোজা সাপটা ইতিবাচক মতের একটি দল। আপনার ভক্তরা সবসময়ই সাহায্য করবে আপনাকে। এটা খুবই কাজে দেয়। কারণ, জীবনে তো সমস্যার শেষ নেই, শেষ নেই টানাপড়েনেরও। বিপর্যয় নেমে আসলে কাজে দেয় এই মানুষগুলোই। তখন সহজেই আপনি আবার ফিরে পেতে পারেন আত্মবিশ্বাস। নিজেকে রাখতে পারেন সতেজ।
 
নিজের মেধাকে কাজে লাগান
ব্যক্তিত্ব এমন এক বস্তু যা কৃত্রিম হতে পারে না। আপনার ভেতরে মেধা না থাকলে আপনি শুধু উপরে প্রকাশ সম্ভব নয়, সেটা ধরাও পড়ে যাবে মানুষের চোখে সহজেই। তাই একটু পরিশ্রমী হন, নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে প্রকাশ করুন এমন কিছু যা শুধু আপনিই পারেন। আপনাকে একক করে গড়ে তুলবে, সবার থেকে আলাদা করবে এমন গুণকে সামনে নিয়ে আসুন। এভাবেই সবার নজরে থাকবেন আপনি। প্রয়োজনে নিজেকে সময় দিন, গড়ে তুলুন। আত্মচর্চার মাধ্যমে বাড়ান নিজের দক্ষতা।
সময়মত কাজ করুন
যে কাজটিই শুরু করবেন অবশ্যই সময়মত শেষ করবেন। সময়ের সাথে সাথে অনেক কাজের আর আগের মত মূল্যমান থাকে না। যেমন আপনি কোন সময়ের প্রেক্ষিতে সেই বিষয় নিয়ে একটা গল্প লিখতে শুরু করলেন। কিন্তু শেষ আর করছেন না। বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। তাৎক্ষণিক মানুষের মনে সেই ঘটনার যে রেশ ছিল তা যখন কেটে যাবে তখন আপনার গল্পও কিন্তু মূল্য হারাবে। ইতিহাস তৈরি করে যেসব ঘটনা সেগুলোর কথা আলাদা। কিন্তু জীবনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সময়ের কাজ সময়েই শেষ করতে হবে আপনাকে। এই নিয়ম না মানলে পিছিয়ে পড়বেন, ভিড়ে হারিয়ে যাবেন।
 
রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন
একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষ অবশ্যই যে কোন জায়গায় তাঁর রাগ প্রকাশ করেন না বা ব্রাস্টাউট হন না। তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানেন। পরিস্থিতি সবসময়য় ইতিবাচক হবে না, এটাই স্বাভাবিক। আপনি যখন পথে বেড়োবেন তখন সব যে ভাল ঘটবে না তা জেনেই বের হতে হবে। আপনার কষ্ট করে দাঁড় করানো কাজটা বসের একদমই অপছন্দ হতে পারে, ঘটতে পারে এমন অনেক কিছুই। আপনাকে শিখতে হবে আত্মনিয়ন্ত্রণ।
বই পড়ুন
যতই পড়বেন, জানবেন ততই গড়ে তুলতে পারবেন নিজেকে। একটি ভাল বই মানুষের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে, বদলে দিতে পারে আপনার চোখে জীবনের মানে। ভাল ভাল বই পড়ুন, মানুষের জীবন সংগ্রামের গল্প পড়ুন। আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারে একজন চে গুয়েভারা, আপনাকে সাহসী করে তুলতে পারে আনা কারেনিনা। এমন অনেক মানুষের বাস্তব জীবনের গল্প হতে পারে আপনার শক্তি।
 
মেডিটেশন
নিজেকে শান্ত করতে, লক্ষ্যে স্থির থাকতে মেডিটেশনের বিকল্প নেই। আপনার মনকে স্থির করে ধ্যান পৌঁছে দিতে আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্যে। নিয়মিত ধ্যান করুন, নিজের ব্যক্তিত্বকে গড়ে তুলুন ভিন্নভাবে।
 
লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

গরম প্রাণ জুড়াতে ঝটপট ম্যাঙ্গো ডিলাইট

বাজারে খুঁজলে এখনই পাওয়া যাবে কিছু কিছু পাকা আম। একেবারে প্যাচপ্যাচে এই গরমের এই দিনে আপনি যদি ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা কোনো ডেজার্ট খেতে চান, তাহলে তৈরি করে নিতে পারেন মৌসুমের স্বাদে ম্যাঙ্গো ডিলাইট। সহজ এই রেসিপিতে খাবার তৈরির জন্য আপনাকে পাকা রাঁধুনি হতে হবে না। একদম অল্প কিছু উপাদানে খুব কম সময়ে তৈরি হয়ে যাবে চোখ জুড়ানো ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা এই ডেজার্ট।
উপকরণ
  • – ১ কাপ হেভি হুইপিং ক্রিম
  • – ১ চা চামচ ভ্যানিলা এক্সট্রাক্ট
  • – ৩ টেবিল চামচ অথবা স্বাদমতো গুঁড়ো চিনি
  • – ১ কাপ পাকা আমের পাল্প
  • – কয়েক টুকরো আম গার্নিশের জন্য
  • – পুদিনা পাতা গার্নিশের জন্য
প্রণালী
১) একটা পরিষ্কার, ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করা বোলে হেভি ক্রিম নিন এবং মিডিয়াম স্পিডে আধা মিনিট হুইপ করে নিন যাতে ঘন হয়ে আসে।
২) ভ্যানিলা এক্সট্রাক্ট এবং গুঁড়ো চিনি মিশিয়ে বিট করুন যতক্ষণ না “স্টিফ পিক” তৈরি হয়।
৩) সার্ভিং গ্লাস বা বাটিতে বড় এক চামচ হুইপড ক্রিম দিন। গ্লাসটা ধীরে ধীরে টেবিলে ঠুকে সমান করে নিন ক্রিম। এবার ওপরে এক স্তর আমের পাল্প দিয়ে নিন। আবারও সমান করে নিন।
৪) এবার ওপরে অল্প করে হুইপড ক্রিম দিন। একটু পুদিনা এবং কয়েক টুকরো আম দিয়ে পরিবেশন করুন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা!

 

নগরদোলার বর্ণিল বৈশাখী পোশাক সম্ভার

ফ্যাশন হাউজ নগরদোলা এবারের বৈশাখকে সামনে রেখে পোশাক সংগ্রহে এনেছে বর্ণিলতা ও ভিন্নতার সমাহার। পোশাকের অলংকরণে ভিন্ন মাত্রার উপস্থাপন দেখা যাবে নগরদোলার এবারের বৈশাখী পোশাক সম্ভারে।

এবারের পোশাকগুলোয় কাজ করা হয়েছে ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, কাঁথা স্টিচ, এপ্লিক, এম্ব্রয়ডারী, কারচুপি ও অন্যান্য মাধ্যমের কারুকাজ। সব বয়সীদের পোশাক নিয়ে এবার নগরদোলার এবারের বৈশাখ উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ ফ্যামেলি ড্রেস। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বৈশাখ উদযাপন করতে একই কাপড়ে ও ডিজাইনে পুরো পরিবারের সবার জন্য পোশাক তৈরি করা হয়েছে। তরুণদের প্রাধান্য দিয়েই এবার পোষাকের ডিজাইন করা হয়েছে।

বিশেষ পোশাকের মধ্যে রয়েছে নতুন ডিজাইনে স্লিভলেস ফতুয়া। ছেলে-মেয়ে সবার কথা মাথায় রেখে বৈশাখ উপলক্ষে থাকছে নতুন ধূতি। বরাবরের মতোই সুতি কাপড়কে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বৈশাখী পোশাকসমূহ। সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে তাঁত, খাদি, মসলিন, এন্ডি সিল্ক, এন্ডি কটন ও অন্যান্য আরামদায়ক কাপড়। রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রচলিত লাল সাদার পাশাপাশি অন্যান্য উজ্জ্বল রংগুলোর সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। বর্তমান সময়ের ট্রেন্ডকে লক্ষ্য রেখে প্রচলিত পোশাকের পাশাপাশি নতুন ডিজাইনে থাকছে স্টাইলের নতুনত্ব। কাটিং ও প্যাটার্নেও বৈচিত্র আনা হয়েছে।  ক্রেতা সাধারনের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে পোশাকের মূল্য। পরিবারের সবাই একই কম্বিনেশনের পোশাক সংগ্রহ করতে পারবেন নগরদোলার বর্ণিল বৈশাখী পোশাক সম্ভার থেকে।

নগরদোলার বিক্রয়কেন্দ্র সমূহ – ধানমন্ডি-০১৬৭৬৭৯৫৫৭০, বসুন্ধরা সিটি-০১৯১৪৭৫৩৬৯১, গুলশান লিংক রোড-০২ ৯৮৯১৪২৪, যমুনা ফিউচার পার্ক-০১৭৫৭১১১৭৭৭, চট্টগ্রাম-০৩১২৫৫৬৮৯৫, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি-০১৬৭৬৭৯৫৫৭০, সিলেট- ১৬৮২৬২৯০৪০

 

হত্যা আতঙ্কে দেশ ছেড়েছেন ৩০ ব্লগার

টার্গেটে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট। তালিকা ধরে চলছে হত্যা। চলছে একের পর এক। তাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ অবস্থায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ব্লগাররা। যে যেভাবে পারছেন নীরবে দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত অন্তত ৩০ জন ব্লগার দেশ ছেড়ে গেছেন। দেশ ছাড়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছেন আরও অন্তত ১০-১২ জন। এ ছাড়া নিয়মিত হুমকি মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন অনেকেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও হুমকিতে থাকা ব্লগারদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি ‘আন-অফিশিয়ালি’ বিদেশ চলে যেতে বলা হচ্ছে। ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর খড়গ নেমে আসে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ওই বছরই ১৫ই ফেব্রুয়ারি রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবা নামে একজন ব্লগারকে হত্যা করা হয়। মূলত তখন থেকেই ব্লগারদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দানা বাঁধে। অনেকে ব্লগারই আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ ব্লগ লেখাও বন্ধ করে দেন কিছুদিন। পরের বছর ২০১৪ সাল মোটামুটি শান্তভাবে চললেও গত বছর মার্কিন নাগরিক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যার মাধ্যমে আবারও ব্লগারদের ওপর ধারাবাহিক আক্রমণ শুরু হয়। এ অবস্থায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন মুক্তমনা ব্লগাররা। আত্মগোপনে থেকেও রেহাই মেলেনি তাদের। ব্লগার ওয়াসিকুর রহমান বাবু ও নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় একাধিকবার হুমকি পেয়ে অনেকটা আত্মগোপনে থাকতেন। তার পরও দুর্বৃত্তরা তাদের কুপিয়ে হত্যা করেছে। ব্লগাররা বলছেন, একের পর এক ব্লগার হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে না পারার কারণে অনেকেই নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া ব্লগাররা হলেন- আসিফ মহিউদ্দিন, ওমর ফারুক লুক্স, অনন্য আজাদ, শাম্মী হক, মশিউর রহমান বিপ্লব, রাসেল পারভেজ, সৈকত চৌধুরী, সুব্রত শুভ, ক্যামেলিয়া কামাল, রতন (সন্ন্যাসী), সবাক, কৌশিক, পারভেজ আলম, অমি রহমান পিয়াল, শামীমা মিতু, আজম খান, মাহমুদুল হক মুন্সি ওরফে বাঁধন, তন্ময় প্রমুখ। ব্লগার সূত্র জানায়, ব্লগারদের বেশির ভাগই গত দুই বছরে বেশি দেশ ছেড়েছেন। গত বছর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ব্লগার নিরাপত্তাজিনত কারণে দেশ ছাড়েন। ব্লগার ও লেখক সৈকত চৌধুরী গত বছরের ২০মে দেশ ছেড়ে যান। ড. হুমায়ুন আজাদের ছেলে অনন্য আজাদ হুমকির কারণে দেশ ছাড়েন গত বছরের ২৯শে জুলাই। ব্লগার শাম্মী হক জার্মানিতে চলে যান গত বছরের অক্টোবরে। গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্ব দেয়া মাহমুদুল হক মুন্সী ওরফে বাঁধন ও অমি রহমান পিয়াল দেশ ছাড়েন গত বছরের নভেম্বরে।

প্রায় একই সময়ে দেশ ছেড়ে যান সাংবাদিক ও ব্লগার শামীমা মিতুও। ব্লগার সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্লগার ক্যামেলিয়া কামাল, অমি রহমান পিয়াল, সুব্রত শুভ ও আজম খান বর্তমানে সুইডেনে রয়েছেন। পারভেজ আলম রয়েছেন নেদারল্যান্ডসে। শাম্মী হক, অনন্য আজাদ, তন্ময়, আসিফ মহিউদ্দিন ও মাহমুদুল হক মুন্সী ওরফে বাঁধন রয়েছেন জার্মানিতে। সন্ন্যাসী রতন রয়েছেন নরওয়েতে। ব্লগার মনির রয়েছেন ফ্রান্সে। দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন ব্লগার ও প্রকাশক শুদ্ধশ্বরের কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলও সবার অগোচরে দেশ ছেড়ে আমেরিকায় চলে যান। জার্মানি চলে যাওয়া ব্লগার শাম্মী হক গতকাল মানবজমিনকে বলেন, ‘আমি আমার দেশে ফিরতে চাই, প্রাণ খুলে নিজের ভাষায় কথা বলতে চাই। আমার সহযোদ্ধাদের খুনের বিচার চাই।’

ক্ষমতাসীন সরকারকে উদ্দেশ করে শাম্মী বলেন, ‘যে রক্তে নিজের হাত লাল করেছে এবং মৌলবাদীদের হাতকে লাল করার জন্য প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে এর বিচার একদিন হবেই। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না।’ দেশ ছেড়ে যাওয়া মানে পরাজয় স্বীকার করা কি না- জানতে চাইলে ব্লগার শাম্মী হক বলেন, এটা একদিক থেকে সঠিক আবার ভুলও। প্রথমত, দেশ ছাড়ার পরও অসংখ্য থ্রেট আসছে। তারা যদি আমাদের দেশ ছাড়াটাকে তাদের সাফল্যও ভেবে নেয়, তাহলে হুমকি এমনকি বিদেশে অবস্থানরত ব্লগারদের হিটলিস্ট তৈরি করছে কেন? শাম্মী বলেন, বরং যে দেশ ছাড়তে পারছে, সে আরও বেশি লেখালেখি করার সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের মূল যুদ্ধই তো লেখার মাধ্যমে। শাম্মীর ভাষ্য, সরকারের পক্ষ থেকে শক্ত অবস্থান নেয়া হলে এত ব্লগারকে জীবন দিতে হতো না। বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্যই এভাবে একের পর এক ব্লগার খুন হচ্ছেন। শক্ত হাতে বিচার করলে এগুলো হতো না।’

ব্লগার-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সর্বশেষ নাজিমউদ্দিনকে হত্যার পর অনেক ব্লগার বিদেশ যাওয়ার জন্য আবার চেষ্টা শুরু করেছেন। নিজের জীবন বাঁচাতে দেশ ছাড়ার আর কোনো বিকল্প দেখছেন না তারা। এজন্য অনেকেই বিদেশে থাকা ব্লগারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আশ্রয় পাওয়ার প্রক্রিয়া জানার চেষ্টা করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত ১০-১২ জন ব্লগার দেশ ছাড়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে সহযোগী ব্লগার বা তারা নিজেদের নাম প্রকাশ করতে নিষেধ করছেন।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, যেসব ব্লগারের ওপর হুমকি বা থ্রেট রয়েছে তাদের নিরাপত্তা দেয়ার পাশাপাশি সতর্কতামূলক পরামর্শ দিচ্ছেন গোয়েন্দারা। একই সঙ্গে সর্বশেষ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমউদ্দিনকে হত্যার পর হুমকিতে থাকা ব্লগারদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশনা দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ব্লগারদের কেউ নিরাপত্তাজনিত কারণে জিডি করতে চাইলে সঙ্গে সঙ্গে থানা পুলিশকে জিডি নেয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বিধান করার নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। একই সঙ্গে ব্লগারদের মধ্যে কারা হুমকিতে বা থ্রেটের মধ্যে রয়েছেন তাদের অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

দৈনিক মানবজমিনের সৌজন্যে

 

জয়পুরহাটে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ, স্বামীসহ গ্রেফতার ৩

জয়পুরহাট সদরে রিমা (২৮) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগে স্বামীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতাররা হলেন-রিমার স্বামী হাসান আলী (৩২), শ্বশুর আব্দুল আলীম (৫৫) ও শাশুড়ি কলি বেগম (৫০)।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন জানান, প্রায় এক বছর আগে সদর উপজেলার চক জগদীশপুর গ্রামের মাদেছুর রহমানের মেয়ের সঙ্গে কোছনাপুর গ্রামের হাসান আলীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই রিমার ওপর তার স্বামী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে পারিবারিক কলহের জের ধরে হাসান আলী রিমাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।

এ ঘটনায় রিমার ভাই বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করলে পুলিশ রাতেই রিমার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রবিবার জেলা আধুনিক হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওসি ফরিদ হোসেন।

 

কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

রাজধানীর কেরাণীগঞ্জে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সকাল ১০টায় তিনি এ কারাগার উদ্বোধন করেন।

কারাগারটি এশিয়ার সর্বাধুনিক ও বৃহত্তম মডেল কারাগার। নতুন এ কারাগারটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কেরানীগঞ্জ’। প্রায় ৪ হাজার ৫৯০ জন বন্দীকে রাখার জন্য এ কারাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে কারাগারটি স্থানান্তরিত হচ্ছে।

কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সোয়া ২শত বছরের ঐতিহ্য ভেঙ্গে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড থেকে কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় কারাগারটি। একই সাথে বদলে যাচ্ছে কারা স্থাপনার লাল রং বা লাল দালানের কথাটি। যে কারণে বর্তমানের আধুনিক এ কারাগারটির দেয়ালের রং সাদা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নব নির্মিত এ কারাগারটিতে শুধু পুরুষবন্দীদের রাখা হবে। পুরুষ কারাগারটির পাশে নতুন একটি মহিলা কারাগার নির্মাণাধীন রয়েছে। মহিলা কারাগারটির নির্মাণ শেষ হলে নারী বন্দীরা থাকতে পারবেন।

বর্তমানে পুরনো ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডে স্থাপিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নতুন কারাগারটির দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। ১৭৮৮ সালে স্থাপিত পুরান ঢাকার এ কারাগারটি বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম এক সাক্ষী। উদ্বোধনের পরই কারা কর্তৃপক্ষ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা প্রায় ৮ হাজার বন্দীকে স্থানান্তরের কাজ শুরু করবে।

১৯৮০ সালে বর্তমানের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটি স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করার দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এটি কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরিত হচ্ছে। বিশ্বের আধুনিক সকল কারাগারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই কারাগারটি নির্মাণ করা হয়।

কারা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোট ১৯৪ দশমিক ৪১ একর জমির ওপর এ কারাগারটি অবস্থিত। এ এলাকায় মোট ৩টি কারাগার নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে পুরুষ কারাগার ২টি আর মহিলা কারাগার ১টি। মহিলা কারাগারটিতে ২শ’ বন্দীকে রাখা যাবে। প্রতিটি পুরুষ কারাগার ৩১ একর জমিতে তৈরি করা হচ্ছে। আর মহিলা কারাগারটি তৈরি হবে ১১ একর জমির ওপর। ২০০৬ সালের একনেকে এ কারাগারটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নতুন এ কারাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। কারাগারের চারপাশে ১৮ ফুট উচ্চতার বিশেষ প্যারামিটার দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। এর উপরে রেক্টিফাইড ক্যাবল দিয়ে কমপক্ষে ৬ ফুট উঁচু করে ঘিরে রাখা হয়েছে।

 

ভিসা ছাড়াই ইন্দোনেশিয়ায় হানিমুন ট্যুর

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের বল রুমে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা ‘নভোএয়ার-ঢাকা ট্রাভেল মার্ট-২০১৬’ শুরু হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় মেলায় প্রবেশ করতেই দেখা গেল, হানিমুন ট্যুরস অ্যান্ড  ট্রাভেলস এর স্টলে দর্শকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। দেশি-বিদেশি যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে নানা বয়সের দর্শকরা এই স্টলের দিকে ছুটছেন।

মানুষের এত ভিড় দেখে মেলায় আসা উৎসুক জনতাও ভিড়ে যাচ্ছেন সেখানে। কারণ একটাই- মেলা উপলক্ষে ভিসা ছাড়া ইন্দোনেশিয়া (বালি) ভ্রমণের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে হানিমুন ট্যুরস অ্যান্ড  ট্রাভেলস। জানা গেল, ভিসা ছাড়া হানিমুন ট্যুরে মাত্র ৫৯ হাজার ৯০০ টাকায় ৪ রাত ৫ দিনের জন্য পর্যটন শহর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে নেয়া ও আনার ব্যবস্থা রয়েছে। এই প্যাকেজের পাশাপাশি যে কোনো দেশের এয়ার টিকেটেরও ব্যবস্থা করে দিচ্ছে তারা।

হ্যানিমুন ট্যুরস অ্যান্ড  ট্রাভেলস এর ম্যানেজার মহিউদ্দিন সজল জানান, গত ৬ বছরে ৬০ হাজারেরও বেশি পর্যটক আমাদের সঙ্গে ভ্রমণ করেছেন। এবার এই আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা উপলক্ষে এই প্রথম ভিসা ছাড়া পর্যটকদের ভ্রমণের সুযোগ করেছি। শুধু পাসপোর্ট হলেই হবে। ইন্দোনেশিয়া ছাড়াও আরও ৩৫টি দেশে যাওয়ার প্যাকেজ ঘোষণা করেছি।

এর মধ্যে সিঙ্গাপুর+মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য ৫ রাত ৬ দিন ৫৪ হাজার ৯০০ টাকার প্যাকেজে নিয়ে যাবে রাখবে ঘুরাবে এবং ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। মালয়েশিয়া+ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুর ৬ রাত ৭ দিন জনপ্রতি ৯৫ হাজার টাকায়, সিঙ্গাপুর-ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়া ৬ রাত ৭দিন জনপ্রতি ৮৫ হাজার টাকায়, সিঙ্গাপুর+মালয়েশিয়া+ইন্দোনেশিয়া+থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া ৯ রাত ১০ দিন জন প্রতি ৯৯ হাজার টাকায় আশা-যাওয়া ব্যবস্থা করার বুকিং নেয়া হচ্ছে।

এছাড়া ইন্দোনেশিয়া+সিঙ্গাপুর+মালয়েশিয়া+থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে ১০ রাত ১১দিন মাত্র ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কা+মালদ্বীপ ৫ রাত ৬দিন মাত্র ৬৮ হাজার টাকায়, সিঙ্গাপুর ২ রাত ৩দিন ৩৯ হাজার টাকায় ভ্রমণ করা যাবে।

শুধু হানিমুন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসই নয় পর্যটন এ মেলায় স্বাগতিক বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ৫০টির অধিক সংস্থা অংশ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জাতীয় পর্যটন সংস্থা, বিমান সংস্থা, ট্রাভেল ও ট্যুর অপারেটর, হোটেল ও রিসোর্ট, পর্যটন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। অংশগ্রহণকারী সংস্থাগুলো দর্শনার্থীদের জন্য হ্রাসকৃত মূল্যে বিমান টিকেট, আকর্ষণীয় ট্যুর প্যাকেজসহ বিভিন্ন সেবা উপস্থাপন করছে।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা ‘নভোএয়ার-ঢাকা ট্রাভেল মার্ট-২০১৬’ উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। পর্যটন বিষয়ক পাক্ষিক ‘দি মনিটর’এর মেলাটির আযোজন করে এবং উদ্বোধনের পর পরই সকলের জন্য খুলে দেয়া হয়।

ট্যুরিজম মালয়েশিয়া এবং ট্যুরিজম অথোরিটি অব থাইল্যান্ড বিটুবি মিটিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ট্যুরিজম মালয়েশিয়ার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলসহ একটি সাংস্কৃতিক দলও এ মেলায় অংশ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

শুক্রবার প্রথমদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা এবং আগামীকাল শনিবার থেকে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ মেলা চলবে। মেলায় প্রবেশমূল্য রাখা হয়েছে জনপ্রতি ২৫ টাকা। প্রবেশ কুপনের ওপর মেলার শেষদিন (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গ্র্যান্ড র‌্যাফেল ড্র’র ব্যবস্থাও থাকবে। র‌্যাফেল ড্র বিজয়ীদের জন্য রয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গন্তব্যে এয়ার টিকেট, ট্যুর প্যাকেজ, তারকা হোটেলে রাত্রিযাপন, লাঞ্চ ও ডিনার কুপণসহ বিভিন্ন পুরস্কার।

 

বৈশাখী সাজে বাঙালি নারী

বাঙালি প্রাণের উৎসবে মাতে পহেলা বৈশাখে। সব ভেদাভেদ ভুলে সবার মনে বয়ে যায় একই আনন্দ। তাই মাতামাতিটা একটু বেশিই থাকে। পহেলা বৈশাখ মানেই ঘোরাঘুরি, আড্ডা অনুষ্ঠান আর একটু বাড়তি সাজ। দিনভর সুন্দর সাজে নিজেকে পরিপাটিও দেখতে চান সবাই। সেজন্য দরকার আরামদায়ক সুন্দর সাজ।

শাড়ি-ব্লাউজ

পহেলা বৈশাখে সাজটি হতে হবে অন্যান্য সময়ের থেকে বর্ণিল। বৈশাখে তীব্র গরমে শান্তি পেতে পোশাক নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। এক্ষেত্রে সুতির শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ বেশি আরামদায়ক। শাড়ির ক্ষেত্রে আপনি তাঁতের শাড়ি, ঢাকাই জামদানি বা টাঙ্গাইলের শাড়ির প্রাধান্য দিতে পারেন। বর্তমানে শাড়িতে ব্লক-বাটিক, এ্যাম্ব্রয়ডারি এবং স্ক্রিন প্রিন্টের কাজ বেশ চলছে। খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন একটু উজ্জ্বল রঙের হয়। সাদা-লাল, সাদা-সবুজ, অথবা সাদার সঙ্গে অন্য যে কোন রঙের মিশ্রণ হোক না কেন, সেটা অবশ্যই উজ্জ্বল হতে হবে। বৈশাখে শুধু যে সাদা-লালই পরতে হবে এমন কোন কথা নেই। আপনি আপনার পছন্দ মতো যে কোনো শাড়িই পরতে পারেন। শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজের রঙ এবং ডিজাইনেও আনতে পারেন কিছুটা চমক। এক্ষেত্রে আপনি ব্লাউজে বিভিন্ন ডিজাইন দিয়ে তৈরি করতে পারেন। ব্লাউজটি হতে হবে উজ্জ্বল রঙের। এটি আপনি আপনার পছন্দ মতো ছোট হাতা, থ্রি-কোয়ার্টার অথবা ফুলহাতা যেভাবে খুশি পরতে পারেন, এটি আপনার স্বাচ্ছন্দ্যের ওপর নির্ভর করবে। ব্লাউজের ক্ষেত্রেও সুতি কাপড় ব্যবহার হবে বুদ্ধিমানের কাজ, এটি গরমে বেশ আরামদায়ক হবে।

সাজগোজ

রমণীদের সাজগোজের অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে সুন্দর মেকআপ। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই আগের দিন ফেসিয়াল করে নিতে হবে, যার ফলে মেকআপ সহজেই মুখে বসে যাবে। যদি পার্লারে গিয়ে মেকআপ করা সম্ভব না হয়, তাহলে ঘরে বসেই ফেসিয়াল করে নিতে পারেন।

রেশমি চুড়ি

বঙ্গ ললনাকে চুড়ি ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। যেহেতু বৈশাখ, সেহেতু আপনি আপনার দুহাতে কাঁচের রেশমি চুড়ি পরতে পারেন। অথবা মাটির চুড়ি ও গহনা পরে নিজেকে সাজিয়ে নিতে পারেন।

চোখ

চোখের সাজ ছাড়া বাঙালি ললনাকে কল্পনাই করা যায় না। আর সেটা যদি হয় পহেলা বৈশাখ, তাহলে তো কথাই নেই। চোখ মানুষের সৌন্দর্যের আলাদা একটি আকর্ষণ। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে চোখে স্যাডো দিতে পারেন। এই সাজ আপনার চোখকে আকর্ষণীয় করে তুলবে।

ঠোঁট

নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ঠোঁটের সাজও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনার বৈশাখী পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে লিপিস্টিকের ব্যবহার করতে পারেন। এতে লাল বা অন্য কোন রঙের লিপিস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। তবে বৈশাখীতে লালের ব্যবহার বেশিই হয়।

চুল

চুল বাঙালি নারীর অহঙ্কার। পোশাকের সঙ্গে চুলের সাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি চুল স্ট্রেইট হয়, তাহলে চুলে খোপা বা বেণী করে নিতে পারেন। তবে সারা দিনের জন্য খোপা করাটাই বুদ্ধিমতির কাজ। এছাড়া আপনি বিভিন্ন সাজে আপনার চুলকে সাজাতে পারেন। তবে অবশ্যই চুলে ফুল থাকা চাই। এক্ষেত্রে গোলাপ, গাদা, গাজরা, বেলি কিংবা জুঁই ফুলের মালা লাগাতে পারেন।

 

একাকীত্ব পছন্দ করে ৩২ লাখ, ৮০ লাখ রোগা

দেশের ৮ শতাংশ শিশু একাকীত্ব নিয়ে বেড়ে উঠছে, যার সংখ্যা ৩২ লাখ। আর ২০ শতাংশ অর্থাৎ ৮০ লাখ শিশু রোগা, বাবা-মা রোগাক্রান্ত এমন শিশুর ক্ষেত্রে এর সংখ্যা ৩৪ শতাংশ বা ১ কোটি ৩৬ লাখ। সারা দেশে মোট ৪ কোটি শিশুর হিসাবে এই অনুপাত দেয়া হয়েছে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), পল্লীমা গ্রীণ এবং মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশন শিশু-কিশোরদের পরিবেশ, জীবনচর্চা এবং রোগ নিয়ে ঢাকার ৪টি স্কুলের ৭ থেকে ৯ বছর বয়সী ১ হাজার ৪৫১ শিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা পরিচালনা করে এ তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে ৮৫৮ জন মেয়ে এবং ৫৯৩ জন ছেলে।

বাংলাদেশের শিশুদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ এবং জীবনাচার পদ্ধতির বর্তমান পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরতেই এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। শুক্রবার পল্লীমা সংসদ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

সমীক্ষায় দেখা যায়, ৭ থেকে ১৫ বছরের বয়সী শিশু-কিশোরদের ৮ শতাংশ একাকী থাকতে পছন্দ করে। দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ধরা হলে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩২ লাখ। শিশু-কিশোরদের এই একাকীত্ব তাদেরকে সামাজিক নানা অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দেবে, যা ইদানীং অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।

সমীক্ষায় আরো দেখা গেছে, সময়মত খাবার খায় না ৭৪ শতাংশ শিশু। ২২ শতাংশ শিশু পড়ার টেবিল, বইখাতা গুছিয়ে রাখে না। দাঁত ব্রাশ করে না ৪ শতাংশ শিশু। শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করে না ৫৯ শতাংশ। কাপড়-চোপড় নিজে পরিষ্কার করে না ৫৯ শতাংশ। ১৮ শতাংশ শিশু মা-বাবার কাজে সহযোগিতা করে না। সন্তান নিজের কাজ করুক যেসব মা-বাবা চান না এর পরিমাণ ৩ শতাংশ। মা-বাবার মতে সন্তানের ওজন অস্বাভাবিক এমন শিশুর সংখ্যা ৩৩ শতাংশ।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান,  পল্লীমা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা হাফিজুর রহমান ময়না, সভাপতি প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান হাফিয, সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, পল্লীমা গ্রীণের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান লিটন, সদস্য সচিব আনিসুল হোসেন তারেক, মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আতিক মোরশেদ,  সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার, ডা. সমীর কুমার সাহা, শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সাদিয়া শারমিন উর্মী প্রমুখ।

এ থেকে উত্তোরণের জন্য বেশ কিছু সুপারিশও দিয়েছে সংগঠনগুলো। এর মধ্যে- শিশু-কিশোরদের সামাজিকতায় ফিরিয়ে আনতে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রের উদ্যোগ গ্রহণ করা; শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও শরীরচর্চার সুযোগ করে দেয়া; এজন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকায় খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা; সার্বক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রযুক্তিতে আসক্ত শিশুদেরকে তা থেকে দূরে রাখা।

 

বিপাশার অনামিকায় বিয়ের আংটি

অবশেষে ‘বং বিউটি’ বিপাশা বসুর অনামিকায় উঠেছে বিয়ের আংটি। করন সিং গ্রোভারের সঙ্গে বিপাশার বিয়ের দিনক্ষণও চূড়ান্ত। বিয়ে হচ্ছে ৩০ এপ্রিল। এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায়, আয়োজনে থাকবে ষোলো আনা বাঙালিয়ানা। আর বিষয়টি করন মেনে নিয়েছেন সানন্দেই।

যা হোক, হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, বলিউডের সংবাদমাধ্যমগুলো বিপাশা-করনের বিয়ের দিনক্ষণ জানানোর পাশাপাশি টুকিটাকি, করন-বিপাশার আশপাশের বিষয় নিয়েই এখন সরগরম করে তুলছে চারপাশ।

তবে এসব খবরের মধ্যে বিপাশার অনামিকায় জ্বলজ্বলে হিরের আংটিটি নজর কেড়েছে সবচেয়ে বেশি। হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, ‘বিপাশার বিয়ের আংটিটি স্বপ্নের মতো’। এ নিয়ে অবশ্য বিপাশার কোনো মন্তব্য মেলেনি।

এদিকে বিপাশা-করণ তাঁদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে যৌথভাবে সবাইকে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসা জানানোর পাশাপাশি ৩০ এপ্রিল তাঁদের বিয়ের খবরটি জানিয়ে ছবি পোস্ট করেছেন।

ইনস্টাগ্রামে এই জুটি জানিয়েছেন, তাঁরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে সবাইকে জানাচ্ছেন যে ৩০ এপ্রিল বিয়ে করতে যাচ্ছেন তাঁরা। এ বিয়ে হবে অত্যন্ত ঘরোয়া পরিবেশে। সবার আন্তরিকতা, সহযোগিতা আর ভালোবাসার জন্য বিপাশা-করন যারপরনাই কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতের পথচলায় সবার শুভেচ্ছা আর আশীর্বাদ চেয়েছেন এই জুটি।

 

‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান যেন ভুলে যেয়ো না…’

কেমন ছিল তনুর জীবনের শেষ দিনগুলো? তনুকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের একজন কর্মী।

ওকে প্রথম কবে দেখেছি, ঠিক মনে নেই। একদিন আবিষ্কার করলাম, আমাদের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারে একজন উচ্ছল নবীন কর্মী যুক্ত হয়েছে। নাটকের ব্যাপারে নিবেদিতপ্রাণ, নাচ-গানে পারদর্শী; এক কথায় সম্ভাবনাময়। ওর নাম সোহাগী জাহান, সবাই ডাকতাম তনু বলে। গত বছরেই থিয়েটারে যোগ দেয় ও, সদস্য হিসেবে। আমরাই অডিশন নিয়েছিলাম। তনু আমার গ্রুপে ছিল না। পরে শুনেছি, অডিশনের দিনই সবাই ওর প্রতিভার ঝলক দেখেছিল। প্রতিভার প্রমাণও তনু রেখেছিল অল্প কয়েক দিনেই। কলেজ ক্যাম্পাসে, মঞ্চে ও হয়ে উঠেছিল সবার প্রিয়মুখ।

থিয়েটারের সদস্য হওয়ার পর যা হয়, আমরা অর্থাৎ বড়রা নবীনদের প্রশিক্ষণ দিই। প্রশিক্ষণে মাঝেমধ্যে ও দেরি করে আসত। স্বাভাবিকভাবেই আমরা হয়তো বকাঝকা দেওয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু শেষমেশ পারতাম না! নামের সঙ্গে ওর চরিত্রের মিল ছিল, একটু আহ্লাদী ধরনের ছিল। বকা দিতে গেলেই বলে উঠত, ‘ভাইয়া ভাইয়া, প্লিজ বকা দেবেন না! আর কখনো দেরি হবে না!’ সত্যিই, তনু আর থিয়েটার ক্লাসে দেরি করে আসবে না! তনু ঘড়ির কাঁটার ঊর্ধ্বে চলে গেছে!

তনুকে কখনো গোমড়ামুখে দেখিনি। ওর মুখে হাসি লেগে থাকত। চমৎকার নাচত, ফলে ওর চোখেও হাসি হাসি ভাবটা থাকত সব সময়। ছোটবেলা থেকেই নাচ শিখত; ফলে থিয়েটারে এসে নতুন করে অনেক কিছুই শেখাতে হয়নি ওকে। কেবল কি নাচ? গানের গলাও ছিল মিষ্টি। থিয়েটারে একসঙ্গে এত গুণের একজনকে পেলে কার না ভালো লাগে! নবীন কর্মী বলে কোনো নাটকে অভিনয়ের জন্য মঞ্চে ওঠা হয়নি তনুর। প্রথম প্রথম যেটা হয়, মঞ্চের পেছনে কাজ করে নবীনরা। তনুও তা-ই করত। গোমতীর উপাখ্যানপাপ ডাকে অন্ধকার নাটক দুটির নেপথ্যসংগীত গেয়েছিল তনু। ১৩ ও ১৪ মার্চে আমরা পয়লা বৈশাখের প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। সেখানে বিপুল উৎসাহে অংশ নিয়েছিল তনু। আমাদের অনুষ্ঠানমালায় ওর নাচ ছিল গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। তনু নেই, এবারের পয়লা বৈশাখ আমাদের জন্য এত বিষাদের হবে, কে জানত!

ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের কর্মীদের সঙ্গে তনু। ছবি: সংগৃহীতকেবল থিয়েটারে নয়, অল্প কয়েক দিনে কলেজের অনেক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল তনু। শিক্ষকেরাও ওর নাম শুনলে নিশ্চিন্ত হতেন, ‘ও, তনু আছে? তাহলে তো চিন্তা নেই।’ নবীনবরণ অনুষ্ঠানে নিজে থেকেই গান গাওয়ার কথা বলেছিল ও। গত মার্চ মাসে কলেজের বার্ষিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। সর্বোচ্চ তিনটি বিভাগে অংশ নেওয়া যায়। তিনটিতে অংশ নিয়ে তনু পুরস্কার জিতেছিল তিনটি বিভাগেই! একক নৃত্যে প্রথম, দ্বৈত নৃত্য ও সংগীতে দ্বিতীয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার কথা ছিল ২৬ মার্চে। সে সুযোগ আর হলো না! কেবল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের গণ্ডিতেই নয়, তনুর প্রতিভা ছড়িয়ে পড়েছিল আরও বড় পরিসরে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলোর মধ্যে যে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হয়, সেখানেও তনু সফল। নৃত্যে প্রথম হয়েছিল জেলা পর্যায়ে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় পর্যায়ে অংশ নিতে গিয়েছিল চট্টগ্রামে। ভালো করেছিল সেখানেও।

খুব সাধারণ আর পরিপাটি ছিল তনু। এক বছরে ওকে আমি তিনটি পোশাকই পরতে দেখেছি। থিয়েটারের কর্মীদের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখতে হয় আমাদের। ফলে কর্মীরা ক্লাসে বা ক্যাম্পাসে ভালো-মন্দ কেমন করছে, তা-ও আমরা জানতাম। তনুর ব্যাপারে সব সময় ইতিবাচক মন্তব্যই শুনেছি। বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষকদের সঙ্গে ওর খুব ভালো সম্পর্ক ছিল।

ওর মৃত্যুর আগে আগে, ১৭ মার্চ আমরা গিয়েছিলাম শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়ায়। সেখানে আমাদের থিয়েটারের পালাবদল ও কর্মী মূল্যায়নের অনুষ্ঠান ছিল। খুব চমৎকার সময় কেটেছে সবার সঙ্গে। ১৮ মার্চ তনু এল আমার কাছে। লাফাতে লাফাতে এসে বলল, ‘ভাইয়া, আপনার সঙ্গে একটা ছবি তুলব।’ ছবি তুলল। সারা দিন কথায়, গানে মাতিয়ে রাখল সবাইকে। চা-বাগানের সবুজে ও ছিল আরও সবুজ, আরও উজ্জ্বল। সেখান থেকে ফিরতি বাসে উঠলাম আমরা ১৮ মার্চেই। বাসে ও একটা গান গাইল, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান যেন ভুলে যেয়ো না…’। কী যে চমৎকার গাইল! এখনো কানে লেগে আছে! কুমিল্লা শহরে ঢোকার আগেই ওর বাসা। বাস থেকে নামবে। ওর ভাই এসেছে নিতে। থিয়েটারের বড় ভাই হিসেবে দায়িত্বের জায়গা থেকে বললাম, ‘বাসায় গিয়ে ফোন করো।’ বাসায় গিয়ে ঠিকই ফোন করল। বলল, ‘ভাইয়া, বাসায় এসে পৌঁছেছি।’ সেটাই ওর সঙ্গে শেষ কথা হবে কে জানত!

 

সফলতার জন্য নূহার চ্যালেঞ্জ

মিষ্টি এই মেয়েটির ছোট বেলা থেকে চোখে মুখে লেগে থাকত আনন্দের ছোঁয়া।সেই মানুষটির জীবনের লক্ষ এমন কিছু করতে হবে যা মানুষের উপকারে আসে। যার মধ্যে থাকবে সৃষ্টিশীলতা আর আনন্দের অনুভূতি। অন্যদিকে তার পরিবারের ইচ্ছে মেয়েকে বড় হয়ে ডাক্তার হতে হবে।কিন্তু সৃজনশীলতা যার মন ও মগজে সে কি করে মানুষের শরীর কেঁটে অপারেশন করবে? সেখানে তো নতুনত্ব সৃষ্টি করা অসম্ভব। স্বাভাবিক ভাবেই এবার স্রোতের বিপরীতে চলার মত সাহস দেখাতে হল তাকে। হাঁটতে হল নিজের স্বপ্ন পূরনের পথে। যদিও তিনি তখনও জানতেন না কি করবেন বড় হয়ে। তবে এতটুকু জানতেন যা কিছুই করেন না কেন তা হবে সবার থেকে একটু আলাদা, একটু ব্যতিক্রম।

ফেসবুক ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসা করা সম্ভব তা যেন হটাত করেই মাথায় আসলো তার। কিন্তু ভাললাগার কাজে সফলতা পেতে বড় এই চ্যালেঞ্জকে শুধুমাত্র ফেসবুকের মাধ্যমে কিভাবে বাস্তবে রুপ দেওয়া সম্ভব বুঝতে পারছিলেন না। তার ওপর ব্যবসার পুঁজি বলতে হাত খরচের জমানো ৫০০০ টাকা ছাড়া আর কিছুই নেই। ফেসবুকে ওয়েডিং এক্স-কার্সন নামে একটি পেইজ ক্রিয়েট করলেন। ইনভাইট করলেন তার ফ্রেন্ডলিষ্টের সবাইকে। এবং কাছের কয়েকজনের বন্ধুদের সাথে আইডিয়াটি শেয়ার করলেন। বন্ধুরাও আগ্রহ প্রকাশ করে তার আইডিয়ার সাথে সংযুক্ত হয়ে কাজ করতে চাইলেন।

Uddoktaকিন্তু এই যাত্রার পথটি এতটা সহজ ছিল না নূহা হোসেন এর জন্য। অনেক বেশী কষ্ট করতে হয়েছে তার আইডিয়াকে বাস্তবে রুপ দিতে। সেই সাথে অবস্থান নিতে হয়েছে পরিবারের সবার বিপক্ষে। স্রোতের বিপরীতে চলতে গিয়ে কখনও কখনও যে ধাক্কা খেয়েছেন শুধু তাই নয় কাছের মানুষদের সাথে ভুল বোঝাবুঝিও হয়েছে অনেক। তবে তা সামলে নিয়েছেন নিজের বুদ্ধিমত্তার গুনেই। প্রথম কাজটি পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে চার মাসেরও বেশী সময় ধরে। ফেসবুক প্রচারণার পাশাপাশি পরিচিত এমন কেউ ছিল না যাকে বলা বাদ দিয়েছেন।

ধৈয্যহারা হয়ে যখন হাল ছাড়ার মত অবস্থা ঠিক তখনই সুখবরটা আসে। পেয়ে যান একটি কাজের সন্ধান। কিন্তু শুধুমাত্র অনভিজ্ঞ, ব্যবসায়ে নতুন এজন্য কাজ হিসেবে টাকার অঙ্ক ছিল এতটাই কম যে লাভের মুখ দেখতে পারেননি। প্রথম কাজটিতেই আর্থিক ক্ষতির স্বীকার হয়েছিলেন। তবে এরপর থেকে খুব বেশী পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি সহযোগী তিন বন্ধু সালমা আজমী, নীরব আহমেদ ও ইমতিয়াজ আহমেদ এর অক্লান্ত পরিশ্রমের কারনে। সকলেই পড়াশুনা করছেন আর স্বপ্ন লালন করে এগিয়ে চলেছেন তাদের কাজকে ভালবেসে। ফটোগ্রাফার বন্ধু ইমতিয়াজ মুহুর্ত গুলো ধরে রাখার জন্য সর্বদাই যেন মুখিয়ে থাকেন। অনুষ্ঠান গুলোকে ফুটিয়ে তুলতে সে নিত্য নতুন পরিকল্পনা সাজাতেই ব্যস্ত। অন্যদিকে বাকি দুজন অনুষ্ঠানের জন্য যা যা প্রয়োজন কাষ্টমারের চাহিদা অনুযায়ী সেইসব দিকে খেয়াল রাখেন। আর কেনাকাটা আর কাজ করার জন্য যথেষ্ট জনবলের কাজের তদারকি নিয়ে ব্যস্ততা তো তিনজনেরই থাকে। আর উদ্যোগী নুহা হোসেন তখন সবার কাজের সমন্বয় করতেই ব্যস্ত।

এত ব্যস্ততার মধ্যেই কাজের সমস্ত পরিকল্পনা আর সেলস এন্ড মার্কেটিং এর দায়িত্বটাও নিজেই পালন করছেন। তার মুখ থেকেই বলছিলেন যে কোন ব্যবসায়ের সফলতার জন্য সেলস এন্ড মার্কেটিং এর গুরুত্বের কথা। বিক্রি না থাকলে আমার অর্থ আসবে কোথা থেকে। আর অর্থের সোর্স খুজতে তো আমাকে মাঠে নামতেই হবে। আর তাই মার্কেটিংও করতে হবে। প্রচার না থাকলে তো আর আমাকে কেউ চিনবে না। কাজও দিবে না। কারন প্রচারেই তো প্রসার। যদিও নিজের বাড়িকে অফিস বানিয়ে শুরুটা হয়েছিল কাজের। পরিধি বাড়ছে দিন দিন। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সামনেও পড়তে হচ্ছে তাকে।

12935206_1359031530807683_1364389717_nতার প্রতিষ্ঠান ওয়েডিং এক্স-কার্সন বিয়ের অনুষ্ঠান, জন্মদিন কিংবা বিবাহ বার্ষিকী সেই সাথে ঘরোয়া অন্যান্য যে কোন ধরনের অনুষ্ঠানের কাজ করে চলেছে। প্রতিটা কাজকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সৃষ্টিশীলতার জ্ঞান আর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অসাধারন মুহুর্ত গুলোকে সাজানোর পাশাপাশি মান সম্মতভাবে সংরক্ষন করতে প্রচেষ্টার কোন কমতি থাকে না তার। আপনার যে কোন অনুষ্ঠানের জন্য তাদের ফেইসবুক পেইজ ওয়েডিং এক্স-কার্সন অথবা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত নাম্বার ০১৬৭-২০৪২২৪৮ যোগাযোগ করতে পারেন।

আগামীতে উদ্যোক্তা হতে চায় যারা তাদের জন্য পরামর্শ চাইতেই যেন তার পূর্ব অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে বলা শুরু করলেন কোন কিছু করতে টাকার চাইতে ইচ্ছা শক্তি আর চেষ্টাটা বেশী থাকতে হবে। অফিস নিয়েই ব্যবসা শুরু করতে হবে এ ধারনার বাইরে এসে কাজ শুরু করতে হবে। আপনার হয়ে যারা কাজ করবে তাদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করে কাজ এগিয়ে নিতে হবে। সেই সাথে ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে মার্জিত হয়ে কথা বলতে হবে। সব সময় শেখার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ভালবেসে কাজ করতে হবে। আর কাজকে টাকা দিয়ে বিচার না করে ভালবাসা দিয়ে বিচার করতে হবে। সফলতার মুখ না দেখা পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে হবে। কারন পরিশ্রম আর অধ্যবসায় ছাড়া কখনোই সফল হওয়া যায় না।

মাসুদুর রহমান মাসুদ

 

বিয়ে করতে চলেছেন? এই কাজগুলো করেছেন তো?

বিয়ে একজন মানুষের জীবনের খুব সুন্দর আর স্বপ্নময় একটা সময়,  যাকে ঘিরে অনেকেই মনে মনে অনেক কিছু ভেবে রাখেন। বিয়ে কোথায় হবে, কেমন হবে, কে কে আসবে, কী খাবার থাকবে, কতটা খরচ পড়বে, সংসারের খরচ কেমন করে চলবে, কতটা স্বাবলম্বী হতে হবে- এসবটাই মাথায় রেখে নিজের নিজের মতন করে ভাবতে পছন্দ করেন অনেকে। আপনি যদি হন তাদেরই ভেতরে একজন, তাহলে এই লেখাটি আপনারই জন্যে। আচ্ছা, কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, মানসিক আর পারিবারিক দিক থেকে বিয়ের জন্যে প্রস্তুত হলেও সত্যিই কোন কিছু বাদ পড়ে গেল কিনা? কিছু কি সত্যিই ছুটে গেল প্রস্তুতির অংশ থেকে? আপনাকেই বলছি, বিয়ের আগে একবার হলেও ভেবে দেখুন নিচের  কাজগুলো করেছেন কিনা। অন্যথায় বিয়ের জন্যে প্রস্তুত আপনি- একটু হলেও হয়তো সন্দেহ রয়েই যাবে! চলুন তাহলে দেখে নিই বিয়ে নিয়ে ভাববার আগে প্রস্তুতিমূলক অবশ্যই করণীয় কিছু কাজ।

১. নিজের হৃদয় ভাঙা

শুনতে খুবই পাগলাটে ধরনের মনে হলেও সত্যি যে পাকাপাকিভাবে কোন সম্পর্কে নিজেকে বাঁধবার আগে একবার হলেও অন্তত নিজের হৃদয়কে ভাঙার অভিজ্ঞতা থাকা উচিত আপনার। এতে করে সম্পর্কের ভুল-ঠিক, ভালো-খারাপ খুঁটিনাটি অনেকটাই জানা হয়ে যাবে আপনার। ফলে এরপরের সম্পর্কের জন্যে অনেকটাই সঠিক পথে চলতে পারবেন আপনি আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে।

২. মানুষকে চেনা

কাউকে সারাটা জীবনের জন্য নিজের সাথী করে নেওয়ার আগে আপনার নিশ্চয়ই উচিত হবে এটা জানা যে ঠিক কি ধরনের মানুষের সাথে আপনি আপনার জীবনটা কাটাতে চান? আর সেটা জানতে হলেই আপনাকে জানতে হবে মানুষের রকমফের সম্পর্কে। কোন মানুষ কেমন হয়, তাদের চিন্তা-ভাবনা, সঙ্গ, ভালো লাগা- মন্দ লাগা আর সেসবের সাথে নিজের চাওয়া-পাওয়ার মিল ঘটানো- এসব জানতে গেলে অবশ্যই মানুষের সাথে মিশতে হবে আপনাকে ( লাইফহ্যাক )।

৩. নিজেকে চেনা

অন্য কাউকে চিনতে যাওয়ার আগে নিজেকেও ভালো করে চিনে নিন। অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে অন্যদের ইচ্ছেমতন চলতে গিয়ে নিজে কি হতে চেয়েছিলেন, কি করতে চেয়েছিলেন- সেটা বেমালুম ভুলে যায়। ফলে নিজের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকায় অন্যদের সম্পর্কেও ধারণাটা ঠিকঠাকভাবে পায় না তারা। ভুল সিদ্ধান্ত নেয় আর সমস্যায় পড়ে। তাই আগে নিজেকে জানুন। কি করতে চান আপনি? কোন ব্যাপারগুলোতে কখনোই অন্যের জন্যে পিছু হটবেননা? আপনার স্বপ্ন কী? ভাবুন আর নিজেকে আবিষ্কার করুন।

৪. একলা সময় কাটানো

পুরোটা জীবন তো অন্যদের সাথেই কাটাতো হবে। তাই বিয়ের মতন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একলা কিছু সময় কাটান। ঘুরতে চলে যান কোথাও। নিজেকে সঙ্গ দিন। চেনা মানুষের বাইরে অন্য কোন বন্ধু বানান। অন্যদের সাথে নিজে কতটা সহজ সেটা দেখার চেষ্টা করুন। কে জানে, এই একলা কাটানো সময়গুলোই হয়তো আপনার কাছে নিজেকে আর অন্যকে প্রকাশ করবে ভিন্নভাবে।

৫. নিজের পরিচয় গড়া

কেন আপনি বিয়ে করতে চাইছেন? প্রথমে এই কারণটি খুঁজে বের করুন ( রলগাই )। এর সাথে যদি নিজের জীবন অন্য কাউকে পরিচালনার অধিকার দেওয়ার কোনরকম সম্পর্ক না থাকে তাহলে বিয়ের আগেই নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করুন। নিজের আলাদা একটা পরিচয় গড়ে তুলুন। যাতে করে আপনার ভবিষ্যত এই একটি মাত্র কাজে খুব বেশি প্রভাবিত না হয়।

৬. খুঁটিনাটি ব্যাপার শেখা

বিয়ের মাধ্যমে নানারকম সম্পর্কে পা রাখার আগেই শিখে নিন কিছু ছোটখাটো কাজ। এই যেমন- নিজের যত্ন নেওয়া, নিজেকে ভালোবাসা, টুকটাক ঘরের কাজ করতে পারা, মানুষকে বিশ্বাস করা, যৌক্তিকভাবে কোন ব্যাপারকে বিশ্লেষণ করা- ইত্যাদি। তাহলে আপনি নারী হোন বা পুরুষ, বিয়ের পরবর্তী সময়গুলো একটু হলেও স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠবে আপনার জন্যে।

 

লিখেছেন-

সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

 

নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকনের দাফন সম্পন্ন

বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন সোমবার সকাল সোয়া ৮টায় উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি।

প্রিয় কর্মস্থল বিএফডিসিতে বাদ আসর জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকনের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বাদ জোহর খোকনের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দ্বিতীয় জানাজা শেষে আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে উত্তরায় এই নির্মাতার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

উল্লেখ্য, চলচ্চিত্র নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকন দীর্ঘদিন ধরে নিউমোনিয়ার সমস্যা এবং শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে ভুগছিলেন।

শহীদুল ইসলাম খোকন দীর্ঘদিন ধরে মুখগহ্বরে মটর নিউরো ডিজিসে (এএলএস) ভুগছিলেন। গত ৭ জানুয়ারি তার কণ্ঠনালিতে একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে।

এর আগে ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হয়। সেখানকার বেলভিউ হাসপাতালের চিকিৎসকরা এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই বলে জানান। এরপর তিনি ফিরে আসেন দেশে।

 

বাচ্চাদের টিফিনে তৈরি করে ফেলুন পরোটা চিকেন ফ্র্যাঙ্কি

বাচ্চাদের টিফিনে কী খাবার দেওয়া হবে তা নিয়ে মায়েদের চিন্তার শেষ নেই। আজ বার্গার, কাল স্যান্ডউইচ, পরশু নতুন কোন খাবার। প্রতিদিন নতুন নতুন খাবার তৈরি করা খানিকটা কঠিন। এই সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন আজকের রেসিপি থেকে। চিকেন শর্মা সব বাচ্চারা পছন্দ করে থাকে। শর্মার মত মুরগি দিয়ে তৈরি একটি খাবার হল পরোটা চিকেন ফ্র্যাঙ্কি।

উপকরণ:

  • ১/২ কাপ আটা
  • ১টি ক্যাপসিকাম
  • ১/২ চা চামচ চাট মশলা
  • ৫০০ গ্রাম মুরগির মাংস
  • ১ টেবিল চামচ লাল মরিচ গুঁড়ো
  • ধনেপাতা কুচি
  • ১ চা চামচ ধনিয়া গুঁড়ো
  • ১ চা চামচ জিরা গুঁড়ো
  • ১টি ডিম
  • ১ টেবিল চামচ আদা রসুনের পেস্ট
  • ১টি লেবুর রস
  • ১ কাপ ময়দা
  • ২ টেবিল চামচ তেল
  • ১টি পেঁয়াজ কুচি
  • ৩টি টমেটো কুচি
  • হলুদ এক চিমটি
  • পানি
  • লবণ

প্রণালী:

১। একটি পাত্রে ময়দা, লবণ, আটা তেল দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। এরপর এতে পানি দিয়ে ভাল করে ডো তৈরি করুন। একটি পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে ১৫ মিনিট রেখে দিন।

২। নন-স্টিক প্যান চুলায় দিন। এতে তেল দিয়ে দিন। তেল গরম হয়ে আসলে জিরা, আদা কুচি,রসুন কুচি, পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ৫ মিনিট নাড়ুন।

৩। পেঁয়াজ বাদামী হয়ে আসলে এতে মুরগির মাংসগুলো দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়ুন।

৪। তারপর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে অল্প আঁচে রান্না করুন।

৫। মাংস নরম হয়ে আসলে এতে লেবুর রস, চ্যাট মশলা, ধনে পাতা কুচি, চ্যাট মশলা দিয়ে দিন।

৬। এরপর ডো দিয়ে পাতলা করে বেলে পরোটা তৈরি করে নিন [পরোটা ভাজঁটি দেখে নিন ভিডিওতে]।

৭। এখন প্যানে পরোটাটি দিয়ে তার উপর তেল এবং ডিম ছড়িয়ে দিন।

৮। পরোটা ফুলে উঠলে নামিয়ে ফেলুন।

৯। এবার পরোটার ভিতরে মুরগির মাংস, পেঁয়াজ কুচি, ক্যাপসিকাম কুচি, লেবুর রস দিয়ে দিন। পরোটাটা রোল করে পেঁচিয়ে নিন।

১০। ব্যস তৈরি হয়ে গেল মজাদার পরোটা চিকেন ফ্র্যাঙ্কি।

 

ফ্যাশনে হরেক রকমের রিফ্লেক্টর্স

বাইরে যা রোদ, চোখ খুলে তাকানো যাচ্ছে না। তবে এখনও তো সেই গরম পড়েনি। সবে এপ্রিল মাসের শুরু। এরই মধ্যে রোদের যা তেজ। বাইরে যাওয়ার আগে তাই যাবতীয় রোদ এড়ানোর সামগ্রী থাকা চাই। সঙ্গে মাস্ট সানগ্লাস। তবে সাদামাটা সানগ্লাসের বদলে রিফ্লেক্টর্স লেন্সযুক্ত সানগ্লাস এখন খুবই ফ্যাশনেবল। প্রচণ্ড গরমে কুল লুকস পেতে আপনিও বেছে নিতে পারেন নানা রকমের রিফ্লেক্টর্স-

ব্রিজ রিফ্লেক্টর্স : গোলাকৃতি এই ফ্রেমের সঙ্গে রিফ্লেক্টর্স লেন্সযুক্ত এই সানগ্লাস এখন খুবই জনপ্রিয়।

রাউন্ড রিফ্লেক্টর্স : গোলাকৃতি ফ্রেমের রিফ্লেক্টর্স আপনাকে দেবে ক্যাজুয়াল লুকস।

ডাবল-ফ্রেম রিফ্লেক্টর্স : সবকিছুতেই আপনি যদি একটু বেশি ফ্যাশনেবল হয়ে থাকেন, তবে এই রিফ্লেক্টর্স ব্যবহার করতে পারেন। ডাবল ফ্রেমযুক্ত রিফ্লেক্টর্স সকলের মাঝে নজর কাড়বে।

মেটাল অ্যাভিয়েটর রিফ্লেক্টর্স : মেটালের রিফ্লেক্টর্স এখন খুবই জনপ্রিয়। তার মধ্যে এটি অন্যতম।

রেট্রো রিফ্লেক্টর্স : এই গরমে ট্রাই করতে পারেন রেট্রো স্টাইল। মানানসই ড্রেসের সঙ্গে পরে নিতে পারেন রেট্রো স্টাইলের রিফ্লেক্টর্স।

আই ক্যাট রিফ্লেক্টর্স : ক্যাট আই স্টাইলের চশমার ফ্রেম কি আপনার পছন্দের? তবে বেছে নিতে পারেন ক্যাট ফ্রেম ও গোল্ড-রোজ় লেন্সের রিফ্লেক্টর্স।

ক্লাবমাস্টার রিফ্লেক্টর্স : মোস্ট ক্যাজ়ুয়াল লুকস পেতে পরতে পারেন ক্লাবমাস্টার রিফ্লেক্টর্স।

 

জীবনের উদ্দেশ্য জানুন ‘শর্টকাট’ উপায়ে

জীবনে সফল হতে চাই সবাই। আমাদের সবারই প্রয়োজন অর্থ, বিত্ত, সম্মান। কিন্তু কীভাবে? সামনে অনেক পথ। কিন্তু কোন পথটি একান্তই আমার? বিষয়টি নির্ধারণ করা কিন্তু খুব সহজ নয়। পরিবেশের প্রভাবে অনেক কিছুই আমরা করতে পারি না যেমন চাই।

আপনি হয়ত স্বপ্ন দেখেছে, চিত্রকর হবেন। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থা এমন যে, বাধ্য হয়ে হঠাৎই ঢুকে গেলেন যেমন-তেমন কোন একটা কাজে। হতাশা ঘিরে ধরবে আপনাকে, বোধ হবে জীবন অন্ধকার। কিন্তু একটু আগে থেকেই যদি গুছিয়ে নিই আমরা? আমরা যদি আমাদের লক্ষ্য অনেক আগে থেকেই জানি, তাহলে কিন্তু এগিয়ে যেতে পারি অনেকটা পথ আগে থেকেই। হঠাৎ বিপর্যয় এলে মোকাবেলা করাও সহজ হয়।

আসুন জেনে নিই কীভাবে নির্ধারণ করবেন, আপনার কী চাই!

কেন লক্ষ্য নির্ধারণ জরুরী?

আগে লক্ষ্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তাটা বুঝতে হবে আপনাকে। আপনি যখন একটি গোছানো জীবন পাচ্ছেন, যেখানে আপনার বাবা-মা ইতিমধ্যেই একটি সামাজিক মর্যাদা তৈরি করেছেন সমাজে, একটি আর্থিক অবস্থান আছে আপনার পরিবারের, সেখানে নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করাটা আপনার কাছে এখনই দরকারি মনে নাও হতে পারে। কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে, এর কোন কিছুই আপনার না। নিজের পরিচয় নিজে গড়তেই নিজেকে তৈরি করা প্রয়োজন।

বাস্তবতার দিকে খেয়াল করুন 

সময় আপনার আছে, কিন্তু সময় চিরকাল থাকবে না। যে কোন সময় যে কোন দূর্ঘটনা বদলে দিতে পারে জীবনের স্রোত। তাই লক্ষ্য ঠিক করার আগে বাস্তবতার দিকে নজর দিন। হ্যাঁ, কঠিন চ্যালেঞ্জিং একটি পেশা আপনি বেছে নিতেই পারেন। কিন্তু সেটির জন্য পর্যাপ্ত পরিশ্রম দিতে আপনি প্রস্তুত কিনা তাও ভাবুন।

আপনি কোথায় আছেন

মনে হতে পারে আপনি খুব ভাল আছেন। অথবা বিপরীত ভাবে খুব খারাপ অবস্থায় আছেন বলেও বোধ হতে পারে আপনার। কিন্তু বাস্তবতা হল, আপনি আমি আমরা সবাই এক শূন্য অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছি। এর পর কী আছে, জানি না আমরা কেউ। এই শূন্য অনিশ্চিত অবস্থা মেনেই যাত্রা শুরু করতে হবে আমাদের। তাই লক্ষ্য হতে হবে এমন যাতে নিজেদের দাঁড় করাতে পারি নিশ্চিত অবস্থানে, নিজের পায়ের নীচে তৈরি করতে পারি শক্ত মাটি।

সখ নাকি প্যাশন?

আপনার হয়ত ছবি আঁকতে ভাল লাগে, আবার হয়ত গান গাইতেও। আপনার নানান সখের মধ্যে হয়ত ভ্রমণ একটি। আবার রান্নাতেও আপনি পারদর্শী। যখন আঁকেন ভাবেন চিত্রশিল্পী হবেন, গান গাইতে গাইতে ভাবেন হবেন গায়ক। ট্র্যাকিং এ গিয়ে আপনার মনে হয় কোন একটা ট্র্যাভেল শো এর এংকর হবেন। আবার রান্না করতে নিলে মনে হয় রেস্টুরেন্ট দেওয়াই আপনার কাজ। এর কোনটি আপনার সখ আর কোনটি প্যাশন বুঝে নিতে হবে আপনাকে। আপনি যদি ভুল বিষয়ে শ্রম দেন হয়ত একঘেয়ে লাগবে কিছুদিন পরেই। কিন্তু তখন পেশা বদলাতে চাইলে আবার শুরু করতে হবে শুরু থেকে।

আপনার শারীরিক অবস্থা কেমন?

এটি অনেক বড় একটি ব্যাপার। আপনি শারিরিকভাবে কেমন কাজে শ্রম দিতে প্রস্তুত সেটি জানা জরুরী। অনেক মাথা খাটিয়ে কাজ করে যেতে পারেন ঘন্টার পর ঘন্টা। অনেকে কিছু সময় পরই বলেন, “মাথাটা আর কাজ করছে না।” অনেকে সারা দিন হাড় ভাঙা খাটুনীর পর বাসায় ফিরে আবার কাজ করে। অনেকে আবার যেমন তেমন অফিস করেও ফিরেই গা এলিয়ে দেয় বিছানায়। আপনার শারীরিক ক্ষমতাকে জানুন। আলসেমী ভিন্ন বিষয়। কিন্তু কোন শারীরিক সমস্যা থাকলে, সীমাবদ্ধতা থাকলে সেটাকে গুরুত্ব দিন।

আপনি কতটা সাবলীল?

আপনি যদি একজন সাংবাদিক হতে চান তাহলে আপনাকে নানান রকম মানুষের সাথে মিশতে হবে। আপনি যদি ব্যবসায়ী হন, কাস্টমারের নানান মনমর্জি সহ্য করতে হবে আপনাকে। আবার আপনি যদি লেখক হন, লেখার কাজ সবাইকে এড়িয়ে করতে পারলেও সেটা প্রকাশ করা বা এসব কাজে যোগাযোগ করতে হবে অনেক মানুষের সাথেই। মোট কথা, পৃথিবীটা রূঢ়। এর সাথে সাবলীল হয়ে মিশতে হবে আপনাকে। নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে সেভাবেই।

 

লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

ঘুরে আসুন বিশ্বের সবচেয়ে রঙিন শহরগুলোতে

রং আমাদের কার না প্রিয়? রঙ্গীন পোশাক, রঙের উৎসব, রঙ্গীন ঋতু সবই আমাদের মনকে টানে। উচ্ছল করে তোলে, আনন্দিত করে তোলে। আমরা ভালবাসি রংকে এর বৈচিত্রের জন্য, একটা চমৎকার রংধনু দেখতে আমরা বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে পারি। এই যে মানুষের রং এর প্রতি এত ভালবাসা, সেই ভালবাসার প্রকাশ ঘটে তার শিল্পে, সৃষ্টিতে। রংপ্রিয় মানুষেরা তাই কোথাও কোথাও রাঙিয়ে দিয়েছেন গোটা শহরকে, কোথাও বা সারি সারি নৌকাকে, কোথাও বা পীচ ঢালা পথকে। আসুন জেনে নিই বিশ্বের সবচেয়ে রঙিন কয়েকটি শহরের কথা।
 
ইযামাল, ম্যাক্সিকো
ইযামালকে বলা হয় যাদুর শহর। তবে নানান রঙে রঙিন নয়, বরং এক রঙেই আভিজাত্যপূর্ণ শহর এটি। সূর্য রঙা হলুদে আঁকা এখানকার বাড়িগুলো। একটা উষ্ণ অনুভূতি তৈরি করে এখানকার পথঘাট, যা আলাদাভাবে আপনার মনোযোগ কাড়বে। এখানকার পাথুরে রাস্তাগুলোর পাশে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে লাইমস্টোন চার্চ এবং সরকারি ভবন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১৬ শতকের সান এন্তোনিও দি পাদুয়ার বাসিলিকা ভবনটি। এটি শহরের মধ্যমণি আর একই সাথে ইতিহাস এবং মিথলজির জন্য খ্যাত।
 
সেন্ট জোনস, নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং লাব্রাডর, কানাডা
সেন্ট জোনস নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং লাব্রাডর এর রাজধানী। এটি কানাডার সবচেয়ে পুরাতন শহর যার রয়েছে ১৪০০ বছরের ঐতিহ্যের ইতিহাস। শহরটি খুবই সুন্দর এবং ভ্রমণের জন্য চমৎকার। এখানে একটি অঞ্চলের নাম জেলিবিন রোও, যেখানে প্রত্যেক জাহাজের ক্যাপ্টেনের উপর নির্দেশনা দেওয়া আছে যে তাদের প্রত্যেকের বাড়ি আলাদা আলদা ঝলমলে রং এর হতে হবে। ফলে যেটা হয়েছে, দূর সমূদ্র থেকেই বাড়িগুলো চেনা যায় এবং একটা দারুণ রঙিন দৃশ্যের অবতারনা করে। এভাবে পুরো অঞ্চলটিই একটি রঙিন নগরীতে পরিণত হয়েছে।
রিও ডি জেনেরিও, ব্রাজিল
২০১০ সালে ব্রাজিলের সরকার রিও ডি জেনেরিও এর বস্তিগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করার প্রয়াসে কিছু পরিকল্পনা হাতে নেন। ডাচ চিত্রশিল্পী হাছ এবং হান পুরো এলাকাকে তাদের ক্যানভাস হিসেবে নেন। এখন এই এলাকা রঙে রঙে রঙিন। এর স্ট্রীট আর্ট, রাঙানো দেয়াল যেন রংধনুর মত ছড়িয়ে পড়েছে শহরের বুকে। এই অঞ্চল এখন পর্যটক আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। এখানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এলাকা হল ফাভেলা সান্তা মারিয়া।
রকলো, পোল্যান্ড
পোল্যান্ডের একটি চমৎকার শহর রকলো। শত শত ব্রীজ, দারুণ সব রেস্তোরা, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যের মেলবন্ধন এই শহর এখন প্রচুর পর্যটকের আকর্ষণ কেন্দ্র। রঙিন বাড়ির সারিগুলো এখানকার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। পুরো শহরটি প্রাচীন স্থাপত্যের আদলে নকশা করা, উজ্জ্বল রাস্তাগুলো যেন শহরকে দেয় নতুন জীবন, নতুন আলো।
বুনোস এয়ার্স, আর্জেন্টিনা
বুনোস এয়ার্স এর দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত লা বকা, যা মুক্ত বায়ু যাদুঘর হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এখানে পথে পথে ঘুরে বেড়ালে দেখতে পাবেন আরও মজার অনেক কিছু। স্থানীয় চিত্রশিল্পীদের করা ম্যুরাল এবং গ্রাফিতি আর্ট চমতকৃত করবে আপনাকে। রাইচিউলো নদীর মুখে যেখানে শ্রমিকদের ছিটমহলগুলো অবস্থিত, সেগুলো বানানো হয়েছে স্ক্রেপ ম্যাটারিয়াল দিয়ে এবং শৈল্পিকভাবে রং করা হয়েছে। শহরের রূপটাই বদলে দিয়েছে এই বাড়িগুলো। দূর থেকে মনে হয় যেন এক বক্স ক্রেয়ন দাঁড়িয়ে আছে।
ভালপারাইজো, চিলি
বন্দর নগরীটি এর ইতিহাস এবং সংস্কৃতির জন্যেও বিখ্যাত। এখানে আছে বিশাল বিস্তৃত যাদুঘর, ক্যাথেড্রাল, চার্চ এবং কলোনিয়াল দালানের সারি। উপকূলীয় এলাকায় রং বেরঙের নৌকার সারি আর পানিতে তাদের প্রতিচ্ছবি যেন শিল্পীর হাতে আঁকা কোন চিত্র কর্ম। বাড়িগুলো আর বোহেমিয়ান ম্যুরালগুলো এখানকার নাগরিকদের শিল্পবোধের পরিচয় বহন করে।
লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

জানুন পৃথিবীর বিখ্যাত কিছু অ্যাকুয়ারিয়ামের কথা

স্থলের চেয়ে জলের বিস্ময় অনেক গুণ বেশি। বিশাল অ্যাকুয়ারিয়াম সেই সৌন্দর্যটাকেই আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। সামুদ্রিক প্রাণীদের দেখার আনন্দ উপভোগ করার আদর্শ স্থান হচ্ছে অ্যাকুয়ারিয়াম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে বিস্ময়কর অ্যাকুয়ারিয়ামগুলো আছে সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেই চলুন।

১। সাংহাই ওশান অ্যাকুয়ারিয়াম

এটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় অ্যাকুয়ারিয়াম। এই অ্যাকুয়ারিয়ামটি এক মিলিয়ন গ্যালন পানি ধারণ করে। এই অ্যাকুয়ারিয়ামটিকে ভৌগলিক অঞ্চল অনুযায়ী বিভক্ত করা হয়েছে যেমন- চীন জোন, অস্ট্রেলিয়ান জোন ইত্যাদি। এখানে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর সংগ্রহ আছে। সাংহাই ওশান অ্যাকুয়ারিয়ামে এই গ্রহের সবচেয়ে দীর্ঘ আন্ডার ওয়াটার টানেল আছে যার পরিমাণ ৫০৯ ফুট।

২। সি অ্যাকুয়ারিয়াম

সিঙ্গাপুরের দ্যা সাউথ ইস্ট এশিয়া অ্যাকুয়ারিয়াম ২০১২ সালে উদ্বোধন করা হয়। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অ্যাকুয়ারিয়াম। এই অ্যাকুয়ারিয়ামটি ওয়ার্ল্ড সেন্টোসা কমপ্লেক্স রিসোর্ট এর একটি অংশ। ১২ মিলিয়ন গ্যালন পানির ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই  অ্যাকুয়ারিয়ামটিতে ৮০০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী আছে।

৩। জর্জিয়া অ্যাকুয়ারিয়াম

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও চমৎকার অ্যাকুয়ারিয়াম হচ্ছে আটলান্টার জর্জিয়া অ্যাকুয়ারিয়াম। এই অ্যাকুয়ারিয়ামটিতে ৫০০ প্রজাতির ১ লক্ষ ২০ হাজার জলজ প্রানী আছে। ২০০৫ সালে উদ্বোধন করা হয় এটি। প্রদর্শনীর জন্য ৬০ টি বিভাগ আছে এখানে যা ৫টি জোনে বিভক্ত যেমন- ওশান ভয়েজার, জর্জিয়া এক্সপ্লোরার, ট্রপিক্যাল ড্রাইভার, রিভার স্কাউট এবং কোল্ড ওয়াটার কুইস্ট। ওশান ভয়েজার জোনে ৬.৩ গ্যালন পানি ধারণ করে এবং এখানে তিমি হাঙ্গরদের বাস।

৪। মন্টেরি বে অ্যাকুয়ারিয়াম

ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টেরি বে অ্যাকুয়ারিয়ামটি আমেরিকা মহাদেশের সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যময় ও আকর্ষণীয় অ্যাকুয়ারিয়াম। এই অ্যাকুয়ারিয়ামটিতে আছে সিল, তিমি, জেলিফিশ, সারডিন, ওলফ ঈল ও হাঙ্গর। ১৯৮৪ সালে এটি উন্মুক্ত করা হয়। এতে অনেক বিপন্ন প্রাণী ও সংরক্ষিত আছে। এখানে ৬০০ প্রজাতির ৩৫ হাজার জলজ প্রাণী আছে।

৫। দুবাই মল অ্যাকুয়ারিয়াম

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শপিং মলের একটি হচ্ছে দুবাই শপিং মল। এই শপিং মলেই আছে পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুবাই মল অ্যাকুয়ারিয়ামটি। ২.৬৪ মিলিয়ন গ্যালন পানির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই অ্যাকুয়ারিয়ামে ৯০ প্রজাতির ৩৩ হাজার সামুদ্রিক প্রাণী আছে। এটি ৮.৩ মিটার উঁচু এবং ৩২.৮৮ মিটার প্রশস্ত অ্যাক্রিলিক গ্লাসের তৈরি প্যানেল এর অ্যাকুরিয়াম, যা এই ধরণের অ্যাকুয়ারিয়ামগুলোর মধ্যে সবচেয়ে  বড়।

বিশ্বের আরো কিছু বিখ্যাত অ্যাকুয়ারিয়াম হচ্ছে – বার্লিনের দ্যা অ্যাকুয়াডম অ্যাকুয়ারিয়াম, ইস্তাম্বুলের টুরকুয়াজু অ্যাকুয়ারিয়াম, অস্ট্রেলিয়ার পার্থের অ্যাকুয়ারিয়াম অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া, ডারবানের উশাকা মেরিন ওয়ার্ল্ড, স্পেনের ভেলেন্সিয়ার এল ওশানোগ্রাফিক অ্যাকুয়ারিয়াম ইত্যাদি।

লিখেছেন-

সাবেরা খাতুন

 

পারিবারিক ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে দারুণ ৫টি জায়গা

বন্ধুরা মিলে ঝটপট পরিকল্পনা করা বেড়িয়ে আসা যায় যেকোন জায়গা থেকে। কিন্তু পরিবার নিয়ে বেড়ানো এক বিশাল বিপত্তি। কোথায় যাবেন, কিভাবে থাকবেন, নিরাপত্তা কেমন, সবার পছন্দ মিলবে কিনা এমন নানান সমস্যা তখন সামনে চলে আসে। পারিবারিক ট্যুরগুলোতে মূল মনোযোগ থাকে বাচ্চাদের দিকে। তাদের স্বাচ্ছন্দ্য, আনন্দে যেন কোন কমতি না থাকে সেটাই থাকে সবার মূল লক্ষ্য। শিশুদের নিয়ে চমৎকার উপভোগ্য ট্যুরে যেতে পারেন এই জায়গাগুলোয়-
লিগোল্যান্ড
লিগো মানেই সৃষ্টিশীলতা। লিগোর রাজ্যে শিশুদের নিয়ে হারিয়ে যাওয়ার চেয়ে দারুণ কি হতে পারে? সেই আয়োজন নিয়েই লিগোল্যান্ড। এটি পরিবারের সাথে সময় উপভোগ করার জন্য সবচেয়ে চমৎকার বিনোদন পার্ক। এ যেন এক যাদুর পৃথিবী। সব বয়সের বাচ্চাদের জন্য নানান আয়োজন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পার্কটি। একদিনে এর সমস্ত আনন্দ উপভোগ করা অসম্ভব। এখানে আলাদা আলাদা ১০টি জোন আছে। প্রত্যেকটাই বাচ্চাদের জন্য সাজানো, তবে পরিবারের অন্য সদস্যরাও হতাশ হবেন না নিশ্চিত। মিনিল্যান্ড এই পার্কের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ, যেখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সৃষ্টির সাথে দেখা হবে আপনার যেগুলো তৈরি করা হয়েছে ২০ মিলিয়ন লিগোর ব্লক ব্যবহার করে। এখানে ৭ থেকে ১৩ বছরের বাচ্চারা অভিভাবকের সাথে ঘুরে বেড়ায়, একদিনে তারা ড্রাইভ করাও শিখতে পারে! ড্রাইভিং ভাল হলে তাদেরকে পার্কের পক্ষ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়, যা শুধু পার্কের ভেতরে গ্রহণযোগ্য। আরও অনেক মজার আয়োজন আছে যা বাচ্চাদের জন্য শিক্ষণীয় তো বটেই আবার মজারও।
ডিজনিল্যান্ড পার্ক, প্যারিস
ডিজনিল্যান্ডে প্রবেশের সাথে সাথেই নানান রকম বিস্ময় স্বাগত জানাবে আপনাকে। তৈরি হন। আপনার সাথে দেখা হবে জলদস্যুদের, দেখা হবে পরীদের, কার্টুনের মজার মজার সব চরিত্রদের। ডিজনিল্যান্ডে আছে কল্পনার জগতের সব চরিত্রদের ভিড় যা এতদিন দেখেছি শুধু টিভির পর্দায়। এই পার্কে আছে দুইটি থিম পার্ক, একটি শপিং সেন্টার, একটি ডাইনিং ডিসট্রিক্ট এবং বিনোদনকেন্দ্র। শুধু যে স্বপ্নের চরিত্রগুলোর দেখা মিলবে তাই নয়, মজার মজার রোমাঞ্চকর রাইডের ব্যবস্থাও আছে।
একুয়া ফ্যান্টাসি
তুরষ্কের বিখ্যাত ওয়াটার পার্ক এটি। প্রতিদিন ৫০০০ মানুষ ভিড় জমায় এই বিনোদন পার্কে। বাচ্চাদের জন্য স্লাইড, ওয়েভ পুলসহ নানান ব্যবস্থা তো আছেই, আপনার জন্যও আছে মজার মজার আয়োজন। এটি তৈরি করা হয়েছে মধ্যযুগীয় নির্মাণশৈলীর আদলে, এর ক্যাসল, সিঁড়ি, টাওয়ার যেকোন জায়গা থেকে লাফিয়ে পড়তে পারেন সোজা পানিতে। এখানে একটি ক্লাব আছে যেখানে তরুণরা শিখতে পারে নতুন অনেক কিছু। বাচ্চাদের খেলাগুলো তৈরি গল্প, কল্পনা আর বাস্তবতার অনন্য মিশেলে। আবার তাদের জন্য আলাদা ক্লাবে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে তারা, প্রকাশ করতে পারে তাদের মেধা, সৃজনশীলতা।
কাভালিনো বিয়ানকো
এটি একটি বিলাসবহুল ৪ তারকা হোটেল। তবে পরিবার নিয়ে বেড়ানোর জন্য এটি যেন স্বর্গ। এটি ১২৫০ মিটার এলাকা জুড়ে করা, বিভিন্ন আয়োজনে ভরপুর একটি হোটেল। শুধু এখানেই একটি ট্রিপ কাটিয়ে যেতে পারেন নিশ্চিন্তে। সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার হল, শিশুরা এখানেই এতই নিরাপদ যে, আপনার সারাক্ষণ তাদের সাথে সাথে থাকার দরকার নেই। তাদের দেখাশোনা করার লোকই আছে আলাদা। মজার মজার সব খেলায় তাদের মাতিয়ে রাখে এই গাইডরা। আপনিও পেয়ে যাবেন অবসর। বিউটি স্যালনে একটা চমৎকার স্পা অথবা শপিং মলে সেরে ফেলতে পারেন কেনাকাটা এই সুযোগে।
হলিডে ভিলেজ রহডস
গ্রিসের দারুণ একটি রিসোর্ট হল এই হলিডে ভিলেজ। কলম্বিয়ার উপত্যকা ধরে এগিয়ে বিচ থেকে মাত্র ১৫০ মিটার দূরত্বে এর অবস্থান। সব বয়সের বাচ্চাদের জন্য চমৎকার সব আয়োজন আছে এখানে। আলাদা করে করা হয়েছে কিডস ক্লাব, টিন ক্লাব এবং সাঁতার একাডেমী। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এমন যে বড়রাও হতাশ হবেন না। আপনার শিশুকে রোমাঞ্চকর আনন্দের অনুভূতি দিতে নিশ্চিন্তে চলে যেতে পারেন এখানে। শত শত মনোমুগ্ধকর আয়োজনে সার্থক হবে বাৎসরিক ছুটি। ভলিবল খেলা থেকে শুরু করে নানান রকম ইন্ডোর আউটডোর খেলা, সিনেমা দেখা, রাইডে চড়া সবই হবে এখানে।
লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে যে ৬টি মশলা

অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত স্ট্রেস করোনারি হৃদরোগের (সিএইচডি) ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। হার্টের রোগীদের অনেক খাবারে নিষেধাজ্ঞা থাকে। আবার কিছু খাবার রয়েছে যা হার্টের রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। খাবারের পাশাপাশি কিছু মশলাও আছে যা হার্টের জন্য ভাল। এমনি কিছু উপকারী মশলার নাম জেনে নেওয়া যাক।

১। মৌরি

হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ রাখতে মৌরির ভূমিকা রয়েছে। প্রতিদিনের রান্নায় রুটি, পরোটা, তরকারিতে মৌরি যোগ করুন। এটি স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীর সুস্থ রাখবে।

২। দারুচিনি

প্রাচীনকাল থেকে স্বাস্থ্য রক্ষায় দারুচিনি ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। প্রতিদিনের খাবারে এক চিমটি দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে রান্না করুন।

৩। ধনিয়া

গবেষণায় দেখা গেছে ধনিয়া কোলেস্টেরল হ্রাস করে, রক্ত থেকে খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে থাকে। এর সাথে এটি শরীরে ভাল কোলেস্টেরল তৈরি করে থাকে। এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে রান্নায় এই মশলাটি বেশি ব্যবহার হতে দেখা যায়।

৪। জিরা

জিরা খাবার সুগন্ধ করার পাশপাশি হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

৫। আদা

আদায় থাকা এনজাইম রক্তে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে। এটি রক্তজমাট বাঁধতে সাহায্য করে। তাজা আদা কুচিতে জিঞ্জারল রয়েছে যা খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে।

৬। হলুদ

এটি ধমনীতে কলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে। এছাড়া ভিটামিন বি৬ রক্তের অ্যামিনো অ্যাসিডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখে। অতিরিক্ত অ্যামিনো অ্যাসিড রক্তকোষের দেওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে যা সিএইচডির ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

এছাড়া মেথি, আমচূর পাউডার হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

লিখেছেন

নিগার আলম

 

নামাজের ১১টি অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা

নামাজ হলো ইসলাম ধর্মের প্রধান উপাসনাকর্ম। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। কিন্তু অনেকেই জানেন না নামাজ সাস্থের জন্য অনেক উপকারী। নামাজ পড়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের বেশকিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নাড়াচাড়া হয় যা এক প্রকার ব্যায়াম। এই ব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। চলুন জেনে নেই নামাজ পড়ার ১১টি স্বাস্থ্যগত উপকারিতা:
১. নামাজে যখন সিজদা করা হয় তখন আমাদের মস্তিস্কে রক্ত দ্রুত প্রবাহিত হয়। ফলে আমাদের স্মৃতি শক্তি অনেক বাড়ে।
২. নামাজের যখন আমরা দাঁড়াই তখন আমাদের চোখ জায়নামাজের সামনের ঠিক একটি কেন্দ্রে স্থির অবস্থানে থাকে ফলে মনোযোগ বাড়ে।
৩. নামাজের মাধ্যমের আমাদের শরীরের একটি ব্যায়াম সাধিত হয়। এটি এমন একটি ব্যায়াম যা ছোট বড় সবাই করতে পারে।
৪. নামাজের মাধ্যমে আমাদের মনের অসাধারণ পরিবর্তন আসে।
৫. নামাজ সকল মানুষের দেহের কাঠামো বজায় রাখে। ফলে শারীরিক বিকলঙ্গতা লোপ পায়।
৬. নামাজ মানুষের ত্বক পরিষ্কার রাখে যেমন ওজুর সময় আমাদের দেহের মূল্যবান অংশগুলো পরিষ্কার করা হয় এর ফলে বিভিন্ন প্রকার জীবাণু হতে আমরা সুরক্ষিত থাকি।
৭. নামাজে ওজুর সময় মুখমণ্ডল তিন বার ধৌত করার ফল আমাদের মুখের ত্বক উজ্জল হয় এবং মুখের দাগ কম দেখা যায়।
৮. ওজুর সময় মুখমণ্ডল যেভাবে পরিষ্কার করা হয় তাতে আমাদের মুখে একপ্রকার মেসেস তৈরি হয় ফলে আমাদের মুখের রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং বলিরেখা কমে যায়।
৯. কিশোর বয়সে নামাজ আদায় করলে মন পবিত্র থাকে এর ফলে নানা প্রকার অসামাজিক কাজ থেকে সে বিরত থাকে।
১০. নামাজ আদায় করলে মানুষের জীবনীশক্তি বৃদ্ধি পায়।
১১. কেবলমাত্র নামাজের মাধ্যমেই চোখের নিয়ম মত যত্ন নেওয়া হয়। ফলে অধিকাংশ নামাজ আদায়কারী মানুষের দৃষ্টিশক্তি বজায় থাকে।

 

ওবামার নৈশভোজে আমন্ত্রিত প্রিয়াঙ্কা

ক্যারিয়ারে সাফল্যের একেবারে তুঙ্গে রয়েছেন বলি সুন্দরী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। একের পর এক সাফল্যের পালক জুড়েই চলেছে নায়িকার মুকুটে। বলিউডের গণ্ডী ছাড়িয়ে সোজা পাড়ি হলিউডে(কোয়ান্টিকোতে)। তারপর অস্কারের মঞ্চে। এবার একেবারে হোয়াইট হাউজে। খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে নৈশভোজে আমন্ত্রিত তিনি।

‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’য় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী চলতি মাসে হোয়াইট হাউজের করেসপনডেন্টস ডিনারে উপস্থিত থাকবেন তিনি। এই ডিনারের হোস্ট খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা।

তবে আপাতত কোয়ান্টিকোর শুটিং-এ ব্যস্ত প্রিয়াঙ্কা। কোয়ান্টিকোর নতুন সিরিজের শুটিং করছেন তিনি। পাশাপাশি, নতুন ছবি বেওয়াচের জন্যও সময় দেওয়া রয়েছে তাঁর। তাই প্রিয়াঙ্কা ডিনারে যোগ দিতে পারবেন কি না, সে বিষয়টি এখনও পরিস্কার নয়।

অবশ্য, এই নৈশভোজে উপস্থিত থাকবেন হলি তারকা ব্র্যাডলি কুপার, লুসি লিউ, জেন ফন্ডা প্রমুখ।

 

একটি ‘অচল’ আইনে তনুর ময়নাতদন্ত চাই!

সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে যা ঘটেছে, তা আমাদের দেশে বহুক্ষেত্রেই ঘটে থাকে, এমনকি এর চেয়েও অভাবনীয় অনিয়ম ঘটে থাকতে পারে। কিন্তু গণমাধ্যমে হইচই হওয়া কিছু ঘটনা ছাড়া অটোপসি বা ময়নাতদন্ত এবং হত্যা মামলার বিচারে তার কার্যকারিতা নিয়ে সমাজে তর্ক-বিতর্ক খুবই কম বা নেই বললেই চলে। তনু হত্যাকাণ্ডের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের সঙ্গে কোনো একজন ‘জুনিয়র’ চিকিৎসকের করা প্রথম ময়নাতদন্তের বড় অসংগতি নিয়ে গণমাধ্যমে খবর পড়ে জানতে ইচ্ছে হলো এ-সংক্রান্ত আইনকানুন কী বলে। কখনো তো এটা শুনি না যে অমুক হত্যা বা ধর্ষণের ঘটনার ময়নাতদন্তে অমুক আইন বা কোনো বিধিবিধান বা নীতিমালার কোনো লঙ্ঘন ঘটেছে। অনুসন্ধানে পাওয়া ফলাফলে স্তব্ধ হওয়ার দশা। আমাদের কোনো আইন নেই। অপরাধ, ফরেনসিক মেডিসিন ও বিচারজগতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা কখনো ময়নাতদন্ত আইন থাকা না-থাকা নিয়ে কখনো প্রশ্ন তুলেছেন বলে মনে পড়ে না।
আইন খুঁজতে গিয়ে পেয়ে যাই অবাক করা ২০০৭ সালের দিল্লি হাইকোর্টের একটি রায়। আর জানতে পারি বাংলাদেশে কখনোই প্রয়োগ না করা ১৮৭১ সালের করোনার্স অ্যাক্টের কথা। করোনার অর্থ হলো অপঘাতজনিত বা সন্দেহজনক মৃত্যুর কারণ তদন্তকারী বিচারক। ওই আইনটি এখনই প্রয়োগ করলে আমরা দেশে করোনার নিয়োগ করতে পারি। তখন আর কোনো হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধানের মর্জিনির্ভর কোনো ‘জুনিয়র’ চিকিৎসক দিয়ে যেনতেন প্রকারে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট করানোর সুযোগ থাকবে না। ওই আইনের ১২ ধারা যদি কার্যকর হতো, তাহলে তনুর লাশ উদ্ধারের পর করোনারকে ডাকা হতো। করোনার তখন অনধিক ১৫ জন বিশিষ্ট নাগরিককে ডাকতেন। তাঁরা হতেন জুরি। তনু কোন প্রেক্ষাপটে কখন নিহত হলেন, সে বিষয়ে যেকোনো এক রোববার শুনানি হতো। প্রথম শুনানির দিনেই করোনার জুরিদের উপস্থিতিতে তনুর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতেন। এরপর করোনার সাক্ষ্যদের নাম ঘোষণা করতেন। তাঁদের শপথ নিতে হতো। ১৮ ধারা অনুযায়ী ময়নাতদন্তকালে রাসায়নিক বিশেষজ্ঞেরও ডাক পড়ত। ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী করোনার একজন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে গণ্য হতেন। এই আইন মানা হলে ‘জুনিয়র’ চিকিৎসককে তনুর মাথার জখম ও আঁচড়ের দাগ উল্লেখ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকত না। আইনের সব শর্ত পূরণ ছাড়া তনুর লাশ দাফনের ওয়ারেন্ট জারি করাই সম্ভব হতো না।
এই আইনের গুরুত্ব অপরিসীম, বিশেষ করে যদি আমরা নিহতদের প্রতি কোনো দায় স্বীকার করি। এই সরকারের প্রথম ভাগে বছরে খুনের ঘটনা ঘটত তিন হাজার, এখন আমরা বছরে চার হাজার হত্যাকাণ্ডের দেশে পরিণত হয়েছি। এর দ্রুত বিচার দূরে থাক, যেসব পরিবার স্বজন হারায়, তাদের কত শতাংশ নিহত হওয়ার প্রকৃত কারণটা জানতে পারে, সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন। তনুর মৃত্যু সারা দেশে আলোড়ন তুলেছে, সর্বস্তরের মানুষের মানবিক অনুভূতিকে আঘাত দিয়েছে। তনুর ময়নাতদন্ত নিয়ে যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটল, তার যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সেই লক্ষ্যে কোনো উপযুক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ১৮৭১ সালের আইন বা তার আদলে করা নতুন কোনো আইন দ্রুত বাস্তবায়নের আবেদন জানাব।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত পাঁচ মাসের একটি শিশু ইংল্যান্ডে মারা গিয়েছিল। সেখানে দুবার ময়নাতদন্ত হয়। প্রথমটি করেছেন করোনার। দ্বিতীয়টি করেছে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেনসিক মেডিসিন অ্যান্ড সায়েন্স বিভাগ। কিন্তু মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুদ্ঘাটিত থাকে। বাবা-মা সন্তুষ্ট হন না, তাঁরা ‘মেডিকেল নেগলিজেন্স’ সন্দেহ করেন, কিন্তু প্রমাণ করতে বিফল থাকেন। এরপর নিরুপায় হয়ে তাঁরা মৃত্যুর সাত বছর পরে ২০০৭ সালে শিশুটির লাশ ভারতে আনেন। আর তখন তাঁরা শিশুটির ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নিলে আইন কী বলে, সেই প্রশ্ন ওঠে। সোশ্যাল জুরিস্ট নামে একটি সংগঠন দিল্লি হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করে। আদালত তাঁর রায়ে মন্তব্য করেন যে ইংল্যান্ডের ১৯৮৮ সালের করোনার্স অ্যাক্ট, যা দ্বারা ময়নাতদন্ত নিয়ন্ত্রিত হয়, তার সঙ্গে তুলনা করা চলে এমন কোনো আইন ভারতের নেই। অতঃপর তাঁরা ১৯৮৮ সালের ইংল্যান্ডের (ইতিমধ্যে সেখানে ২০০৯ সালের নতুন আইন এসেছে) ময়নাতদন্ত আইনের অনুরূপ একটি আইন করার সুপারিশ রেখে বিষয়টি আইন কমিশনে পাঠান।
এখানে উল্লেখ্য, ভারতীয় ময়নাতদন্ত করোনার আইন দিয়ে না চললেও তাদের সুপ্রিম কোর্ট গাইডলাইন করে দিয়েছে। একটি পোস্টমর্টেম কিট কেবল একটি লাশে ব্যবহার, অচিহ্নিত লাশের বাধ্যতামূলক ভিডিওগ্রাফি, ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ২০ মিলিলিটার রক্ত, ১০০ গ্রাম মাংস, একটি সম্পূর্ণ হাড়, চুল বা নখ রাখতে হবে। ভিসেরায় ব্যবহার করা যকৃৎ ও পাকস্থলির ৫০ মিলিলিটার সংরক্ষণ করতে হবে। আর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হবে এতটাই বিস্তারিত, যা পড়ে সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে। ময়নাতদন্ত বিষয়ে ভারতীয় বিশেষজ্ঞ ড. জয়সিং মোদির বইটিই আমাদের দেশে সবেধননিলমণি। ২০১১ সালে মাদ্রাজ হাইকোর্ট বলেছিলেন, মোদির বইয়ে বর্নিত গাইডলাইন ময়নাতদন্তে মানতে হবে। কিন্তু আমাদের চিকিৎসা শিক্ষায় সব থেকে অবহেলিত এই শাস্ত্র, খুবই কম নম্বর, তেমন করে পড়তে হয় না বললেই চলে। আসলে দেশের সবগুলো মেডিকেল, আইন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে সব থেকে অবহেলিত হলো আইনঘটিত চিকিৎসাবিদ্যা, যা ফরেনসিক মেডিসিন বা মেডিকেল জুরুসপ্রডেন্স হিসেবে পরিচিত। এ বিষয়ে সরকার ও বিচার বিভাগীয় আশু হস্তক্ষেপ দরকার।
বিচারপতি লক্ষ্মণানের নেতৃত্বাধীন ভারতের আইন কমিশন ২০০৮ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল যে দিল্লির হাইকোর্ট তাঁর রায়ে আইন না থাকার যে তথ্য উল্লেখ করেছেন, তা সঠিক নয়। যদিও ১৮৭১ আইনটি কেবল বোম্বে ও ‘কলকাতা প্রেসিডেন্সির’ জন্য প্রযোজ্য ছিল। এরপর আইন কমিশন যা বলেছে, তা আমাদের আইন কমিশনও বলতে পারে যে যদিও ময়নাতদন্তের বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৪ থেকে ১৭৬ বিধিতে উল্লেখ আছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও ‘একটি পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্ত আইন (করোনার্স অ্যাক্ট) করা সময়ের দাবি’।
আমরা, এই ভূখণ্ডের মানুষ কমবেশি ওই আইনের পূর্বসূরি ছিলাম। আমি একজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ আইনজীবীকে খুদে বার্তা পাঠালাম। বললাম, আমি যুক্তি দিতে চাই, ১৮৭১ সালের আইনটি বাংলাদেশ সংবিধানের আওতায় এখানে এখনই প্রয়োগ করা চলে। আমাকে গত শনিবার তিনি জানালেন, ওই আইনটি শুধু কলকাতা ও বোম্বের জন্য করা হয়েছিল। আইনটি প্রাদেশিক ছিল, সমগ্র ভারতের জন্য প্রযোজ্য ছিল না। তাই পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় আইনের তালিকায় সেটি বাদ পড়েছে, আমাদের তালিকায়ও সে কারণে নেই। তদুপরি বিনয়ের সঙ্গে এই যুক্তি দেখাতে চাই যে এই আইনটা অত্যন্ত দরকারি ও জনগুরুত্বসম্পন্ন। আর তা ভূখণ্ডগত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কোনো বিষয়সংক্রান্ত নয়, এটা সর্বজনীন। তাই করোনার্স অ্যাক্টকে বাংলাদেশে বলবৎ করা যেতে পারে কি না, তা ভেবে দেখার দাবি রাখে।
কারণ, বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে ‘আইন’ ও ‘প্রচলিত আইন’কে সংজ্ঞায়িত করেছে। প্রচলিত আইন হলো ‘সংবিধান প্রবর্তনের অব্যবহিত পূর্বে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানায় বা উহার অংশবিশেষে আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সক্রিয় থাকুক বা না থাকুক এমন যেকোনো আইন।’ আর আইনের সংজ্ঞায় ‘বাংলাদেশে আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন যেকোনো প্রথা বা রীতি’কে আইন বলা হয়েছে। তাই ১৮৭১ সালের আইন যদি পাকিস্তান সাতচল্লিশের পরে গ্রহণ না-ও করে, তাতেও আমার যুক্তি দুর্বল হয় না। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ১৮৬১ সালে সৃষ্ট ফোর্ট উইলিয়ামের হাইকোর্টেরই উত্তরসূরি। আমার দেশ সম্পাদকের মামলায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সংসদে করা আইনের শূন্যতা ‘কমোন ল’ দিয়ে পূরণের নীতি স্বীকার করেছিলেন। ১৮৭১ সালের আইনটি তেমনই একটি আইন বা রীতি হিসেবে গণ্য হোক, যা ‘আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন’ অথচ ‘কার্যক্ষেত্রে সক্রিয় না থাকা’। আর দরকার হলে যা যা করার তাই করতে হবে, ময়নাতদন্তে এ রকম আইনি শূন্যতা চলতে পারে না।
সরকার একান্তই শিথিল মনোভাব বজায় রাখলে জনস্বার্থে একটি মামলা সূত্রে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের মতো করে আমাদের একটি গাইডলাইন হলেও চলে। পেশাগত জীবনে সাত হাজারের বেশি লাশের ময়নাতদন্ত করেছেন এমন একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছি। তার মধ্যে কয়েক শ নিহত ব্যক্তির লাশ ছিল। বহু মামলায় আদালতে ইনকুয়েস্ট হিয়ারিং বা শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু কখনো করোনার্স আইন বা কোনো ধরনের অবশ্য পালনীয় নিয়মরীতি অনুসরণের কথা শোনেননি।
অনেকের কাছে খটকা লাগতে পারে, কিন্তু ময়নাতদন্ত এমন একটি বিষয় যে ব্যাপারে প্রাচীনকাল থেকে প্রধান বিচারপতির বিশেষ ভূমিকার (দেখুন, ফরেনসিক মেডিসিন অ্যান্ড ডেথ ইনভেস্টিগেশন ইন মেডিভিয়েল ইংল্যান্ড, সারা এম. বাটলার, রাউটলেজ, ২০১৪, পৃ. ৫৪) স্বীকৃতি দেখা যায়। কমোন ল–এর ধারণায় করোনার্স আইন অতীব প্রাচীন। ৮০০ বছর আগে ময়নাতদন্ত করার পারিশ্রমিক হিসেবে করোনার নিহতের পোশাকের উপরের অংশ নিতে পারতেন, জাঙ্গিয়া বা প্যান্ট নেওয়া বারণ ছিল। তনুর প্রথম ময়নাতদন্তে তনুর গুরুতর আঘাতগুলোর উল্লেখ বাদ পড়েছে, প্রাচীন করোনার্স আইনেই তা দণ্ডনীয় অপরাধ। ১৩২৯ সালে ইংল্যান্ডের প্রধান বিচারপতি স্যার জিওফ্রি স্ক্রুপ জরিমানা আদায়ের আগ পর্যন্ত একজন ময়নাতদন্তকারীকে কারাগারে বন্দী করে রেখেছিলেন। ওই করোনার লাশের
তদন্ত শেষে তাকে হত্যাকাণ্ডের শ্রেণিভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ১৩২১ সালে লন্ডনের করোনার আদালতের তলব পেয়েও হাজির হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। বিচারপতি স্টানটোন লন্ডনের করোনারের স্ত্রী ও সন্তানকে জিম্মি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল, করোনার ২৪ ঘণ্টা তাঁর দায়িত্ব পালনে সজাগ থাকবেন।

 

কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে খুবই সামান্য

বিশ্বজুড়ে গত ২০ বছরে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে খুবই সামান্য। এক্ষেত্রে সামান্য কিছু প্রান্তিক অগ্রগতি ছাড়া আর তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি বললেই চলে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক জরিপে বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য।

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আইএলও জানায়, ১৯৯৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের পার্থক্য কমেছে মাত্র ০.৬ শতাংশ। যেসব দেশে নারীদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ বেশি সেসব দেশেও তাদের চাকরির মান এখনো উদ্বেগের একটি বিষয়।

বিশ্বের ১৭৮টি দেশে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের হার, কর্মপরিবেশসহ নানা তথ্য সংগ্রহ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

আইএলও প্রধান গাই রাইডার বলেছেন, ’নারীরা যে এখনো উপযুক্ত কাজ খুঁজে পেতে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন তারই প্রমাণ এই প্রতিবেদন। নারীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের ব্যাপারে যে অগ্রগতি হয়েছে তা একেবারেই প্রান্তিক পর্যায়ে’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ পুরুষদের চেয়ে ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ কম ছিল। ১৯৯৫ সালে এ পার্থক্য ছিল ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ। আর এ হার ২০ বছর আগের হারের চেয়ে মাত্র ০.৬ শতাংশ কম।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়- বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নারীরাই বেশি বেকারত্বে ভোগেন। বিশ্বজুড়ে নারী বেকারের হার ৬.২ শতাংশ যেখানে পুরুষদের বেকারত্বের হার ৫.৫ শতাংশ। চাকরির অভাবে প্রায়ই নারীদের নিম্ন মানের চাকরিতে যোগ দিতে হয়।

উচ্চ ও নিম্ন -সব ধরনের আয়ের দেশেই নারীর গৃহস্থালী কাজের জন্য কোনও পারিশ্রমিক হিসেব করা হয় না। মূলত, নারীরা কর্মক্ষেত্রে ও গৃহস্থালী কাজ মিলিয়ে পুরুষের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করে থাকেন বলেও গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বেশিরভাগ নারীকেই তার যোগ্যতার চেয়ে নিম্নমানের চাকরিতে যোগদান করতে হয়। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে নারীকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গৃহস্থালী কাজে জড়িত থাকতে হয় যার জন্য আর্থিক প্রতিদানও পান না তারা। গবেষকদের মতে, এসব চিত্র নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। আর তা থেকে উত্তরণের হারও আশানুরূপ নয়। এজন্য নারী-পুরুষ উভয়েরই ঐকান্তিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

ইসলাম নারীকে সম্পদের অধিকার দিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

ইসলাম ধর্ম নারীদের সুযোগ দিয়েছে, সম্মান দিয়েছে। ইসলাম নারীকে সম্পদের অধিকারও করে দিয়েছে, যা অন্য কোনো ধর্মে নেই। এমনটাই বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহিলা এবং শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ‘অধিকার মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমানে সমান’  আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলাম ধর্ম নারীকে সম্পদের অধিকার করে দিয়েছে। এ ধর্মে স্বামীর এবং পিতার সম্পত্তিতে নারীদের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বিবি খাদিজা। ইসলামে প্রথম শহীদও ছিলেন একজন নারী তিনি বিবি সুমাইয়া।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর নির্যাতিত মা-বোনেরা কষ্টের মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করেছেন। বঙ্গবন্ধু সরকার তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। অনেক নির্যাতিতা মহিলাকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘বিয়ের সময় নাম লিখতে হয়। কিন্তু তখন অনেক পিতা আত্মসম্মানের ভয়ে তার সম্ভ্রমহারা মেয়ের পরিচয় দিতে চাননি। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- পিতার নাম লিখে দাও শেখ মুজিবুর রহমান। পিতার ঠিকানা ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি। আমার মাও দাঁড়িয়ে থেকে অনেক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।’

নারীরা মর্যাদা ও ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত, যুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগেও নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। তবে নারীদের নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে। নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই গড়তে হবে। নিজের কর্ম এবং আত্মবিশ্বাসের মধ্য দিয়ে নিজেদের মর্যাদা নিজেকেই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’

মেয়েরা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হলে সংসার-সমাজ সবাই তাকে দাম দেবে এ কথা বলে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। মেয়েরা ঘরে ও বাইরে সবই পারে এটা তাকে প্রমাণ করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমাজের সবার উন্নতি ছাড়া দেশ উন্নত হতে পারে না। নারী–পুরুষের সম্মিলিত শ্রম ও মেধা দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো।’

নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম এনডিসি।

 

নারীদের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি প্রয়োজন

প্রত্যেক নারী যাতে নিজেদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটাতে পারে সে জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং তাদের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সম্পদ ও সম্পত্তিতে সম-অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আর এসব করতে পারলে তবেই ২০৩০ এর মধ্যে নারী-পুরুষের সমতা আনা সম্ভব। নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠা করা গেলেই কেবল জাতি হিসেবে আমরা সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবো বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম ও বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের উদ্যোগে গেন্ডারিয়া ফজলুল হক মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ‘২০৩০ এর অঙ্গিকার, নারী-পুরুষের সমতার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা একথা বলেন।

তারা বলেন,  ‘২০৩০ এর অঙ্গীকার, নারী-পুরুষের সমতার’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আমরা পালন করছি এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

তারা আরও বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে নারীদের পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ এবং উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে তাদেরকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার সম-সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।

বক্তারা ২০৩০ সালের মধ্যে নারী-পুরুষের সমতার পরিবেশ তৈরিতে কয়েকটি অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো-

স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সকল স্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর সম-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, প্রত্যেক নারী যাতে নিজেদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটাতে পারে সে জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং তাদের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা, সম্পদ ও সম্পত্তিতে সম-অধিকার নিশ্চিত করা, অথনৈতিক কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর গৃহস্থালী কাজের অবদানকে স্বীকৃতি প্রদান, মেয়েদের বিয়ের বয়স নূন্যতম ১৮ বছর বহাল রেখে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন দ্রুত পাশ ও বাস্তবায়নে জনমত গড়ে তোলা, বাল্যবিবাহ, যৌতুক ও অ্যাসিড নিক্ষেপ-সহ নারীর প্রতি সকাল প্রকার নির্যাতন রোধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা, নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১’ পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সম্মিলিত ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

গেন্ডারিয়া ফজলুল হক মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ দিলারা জাহানের সভাপতিত্বে এসময় বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা  তাজিমা হোসেন মজুমদার প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন দি হাঙ্গার প্রজেক্টের আঞ্চলিক সমন্বয়কালী জনাব মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল, অ্যাডভোকেট রাশিদা আক্তার শেলী, সুহৃদ সমাবেশের মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও রাবেয়া আক্তার রুমি।

 

পুরস্কৃত হচ্ছেন ৩২ নারী পুলিশ

পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত নারীদের ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ছয়টি ক্যাটাগরিতে ৩২ নারী পুলিশ সদস্য ও একটি সংগঠনকে পুরস্কৃত করবে পুলিশ সদর দপ্তর। প্রথমবারের মতো প্রদান করা এই পুরস্কারের নাম ‘বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ অ্যাওয়ার্ড’। জাতীয় ও আর্ন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি এবং অনুপ্রেরণা দিতে আইজিপি একেএম শহীদুল হক এ উদ্যোগ নিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে পুরস্কার হিসেবে থাকছে একটি ক্রেস্ট, একটি সনদপত্র ও ১০ হাজার টাকা। আগামী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা’র (আইসিসিবি) রাজদর্শন হলে তাদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী।

প্রথমবার বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন- পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি মিলি বিশ্বাস, এসবির অ্যাডিশনাল ডিআইজি ইয়াসমিন গফুর, নরসিংদীর এসপি আমেনা বেগম, এসবির ফরিদা ইয়াসমিন, চাঁদপুরের এসপি শামসুন্নাহার, ডিএমপির এডিসি আবিদা সুলতানা, ডিএমপির এডিসি আসমা সিদ্দিকা মিলি ও ডিবির এসি মাহমুদা আফরোজ লাকী।

মেডেল অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন- ডিএমপির এসি হোসনে আরা বেগম, সিএমপির সিনিয়র এসি মাহমুদা বেগম, র‌্যাব-৭ এর এএসপি শাহেদা সুলতানা, ঢাকার এএসপি (ফোর্স) মাকসুদা লিমা, সিএমপির পরিদর্শক মর্জিনা আক্তার মর্জু, ডিএমপির কনস্টেবল মিতা রানী বিশ্বাস, চাঁদপুরের কনস্টেবল তাহমিনা আক্তার ও এপিবিএন-১১ এর কনস্টেবল স্বপ্না আক্তার।

এক্সেলেন্স ইন অ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন- এসবির সিনিয়র এসি মাকসুদা আকতার খানম, আরএমপির পরিদর্শক মোহতারেমা আশরাফী খানম, ডিএমপির এসআই কুইন আক্তার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসআই রাজিয়া বেগম, ডিএমপির এসআই মোছা. রেজিনা বেগম, ডিএমপির এএসআই নাসিমা আক্তার, এসবির কনস্টেবল তাসলিমা আক্তার ও কিশোরগঞ্জের কনস্টেবল তানজিনা মাসুদ।

কমিউনিটি সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন- পুলিশ সদর দপ্তরের এসপি শামীমা বেগম, সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার খন্দকার নূর রেজওয়ানা পারভীন ও ডিএমপির সিনিয়র এএসপি মেরিন সুলতানা।

পিসকিপিং মিশন স্পেশাল অনার অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন- হাইওয়ে রেঞ্জের এসপি শাহীনা আমীন, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার সামসুন নাহার, ডিএমপির এডিসি আল বেলী আফিফা, এসবির এএসপি এলিজা শারমীন ও এসবির এসআই রেহানা পারভীন।

এছাড়া এন্টারপ্রেণার উইমেন অর্গানাইজেশন অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)।

উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে ৬ জন নারী বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। বর্তমানে এই বাহিনীতে অ্যাডিশনাল আইজিপি থেকে শুরু করে ৮ হাজার ৮২৪ নারী সদস্য কর্মরত।

 

পাবলিক বাসে ৪১% নারীই হয়রানির শিকার

গণপরিবহন তথা পাবলিক বাসে নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত না হওয়ায় ৪১ শতাংশ নারী যাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়। তাই বিদ্যমান আইন ও নীতিমালার বাস্তবায়ন সাপেক্ষে নারীদের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে পাবলিক বাস ব্যবহার নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন নারী অধিকার আন্দোলন নেত্রীরা।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সভাকক্ষে পপুলেশন সার্ভিস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার, একশন এইড বাংলাদেশ ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে “গণপরিবহনে নারীদের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে যাতায়াত নিশ্চিত করতে করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, রাজধানী শহরে বসবাসকারী নারীদের মধ্যে ২০ দশমিক ৭ শতাংশ নারী পাবলিক বাসে যাতায়াত করেন। এসব নারী যাত্রীর মধ্যে ৪১ শতাংশ নারীই যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। এছাড়া ১৩ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির ভয়ে পাবলিক বাস এড়িয়ে চলাচল করেন।

সভায় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি বলেন, নারীদের যথাযথ উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রয়োজনে গণপরিবহনে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার করা যেতে পারে। নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে পুরুষদের দ্বারা। কাজেই তাদের আচরণগত পরিবর্তন আনা অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরও নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ যাতায়াত নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সচিব শওকত আলী বলেন, সকলের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ যাতায়াত নিশ্চিত করতে বিআরটিএ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছে। ১৯৯০ সালে ঢাকায় নারীদের জন্য ২টি বাস চালু করা হয়। বাসে ৬টি, ৯টি ও ১৩টি আসন সংরক্ষিত আছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সকল জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হচ্ছে, যেখানে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভার্সিটি প্রোগ্রাম এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার তাহমিনা ইয়াসমিন বলেন, বাংলাদেশের ৫১ শতাংশ নারী। এখানে নারীদের সুরক্ষার জন্য কেবলমাত্র আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়। আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বাসে মাত্র ৯টি সিট বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীদের জন্য অপ্রতুল। এ সংখ্যা বাড়াতে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীরের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন-পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী প্রমুখ। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন।

 

ফ্রাইপ্যানেই তৈরি করে ফেলুন মজাদার গ্রিলড ফিশ

গ্রিলড চিকেন নাম শুনলেই জিভে পানি চলে আসে। বাচ্চারা এই গ্রিলড চিকেন বেশ পছন্দ করে। কিন্তু বাচ্চাদের মাছ খাওয়া নিয়ে থাকে অনেক অনীহা। এই মাছ দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন গ্রিলড ফ্রিশ। গ্রিলের স্বাদ এখন পেয়ে যাবেন মাছে। মাছ দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন মজাদার গ্রিলড ফিশ। এই মজাদার খাবারটি তৈরি করে নিতে পারেন ফ্রাইপ্যানেই।

উপকরণ:

  • ১ টেবিল চামচ লাল মরিচ পেস্ট
  • ৪টি রুপচাঁদা মাছ
  • লবণ স্বাদমত
  • গোলমরিচ গুঁড়ো
  • ১/২ লেবুর রস
  • ১ চা চামচ শুকনো মরিচ গুঁড়ো
  • ১ টেবিল চামচ রসুন কুচি
  • ১ চা চামচ সয়াসস
  • ৩ টেবিল চামচ তেল

প্রণালী:

১। রুপচাঁদা মাছ মাঝখান থেকে অর্ধেক করে নিন। এর সাথে লবণ, গোলমরিচ গুঁড়ো, লেবুর রস মিশিয়ে রাখুন। এটি ৫-১০ মিনিট মেরিনেট করতে দিন।

২। এরসাথে লাল মরিচ পেস্ট, শুকনো মরিচ গুঁড়ো, রসুনের পেস্ট, সয়াসস লবণ এবং গোলমরিচ গুঁড়ো একটি পাত্রে মিশিয়ে নিন। এবার এতে ১ টেবিল চামচ তেল দিয়ে দিন।

৩। সবগুলো উপাদান মিশিয়ে ফ্রিজে ৩০-৪০ মিনিট মেরিনেট করে রাখুন।

৪। একটি নন-স্টিক প্যানে তেল দিয়ে দিন। এতে মেরিনেট করা মাছ গুলো দিয়ে দিন।

৫। মাছের একপাশ হয়ে গেলে অপরপাশ পরিবর্তন করে দিন।

৬। পেঁয়াজের রিঙ, ধনিয়া পাতা কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার স্পাইসি গ্রিলড ফিশ।

ইউটিউব চ্যানেল:Sanjeev Kapoor Khazana

 

ক্যাটস আই-এর নতুন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হলেন জোহাদ!

ফ্যাশন শব্দটির সঙ্গে তারুণ্যের উদ্দামতা জড়িয়ে রয়েছে সবসময়। ফ্যাশনের লাগাম মুঠিতে ধরে যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে নিয়ত ছুটে চলছে এবং নিত্য নতুন ফ্যাশনকে পরিচিত করছে তাদের অন্যতম ‘ক্যাটস আই’। যাত্রা শুরু হয়েছিল আশি দশকের প্রথম লগ্নে, দিনে দিনে সেই যাত্রা আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের একটি অন্যতম ফ্যাশন আইকন হিসাবে। সাঈদ সিদ্দিকী রুমী ও আশরাফুন সিদ্দিকী ডোরা দম্পতিও নেতৃত্বে  ক্যাটস আই দীর্ঘ ৩৬ বছরে এসেও দেশিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড হিসাবে তরুণ-তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। অলটারনেটিভ রক সংগীতের জনপ্রিয় গায়ক ও গিটারিস্ট  জোহাদ রেজা চৌধুরী, এবার তার জনপ্রিয়তা এবং প্রতিভাকে সঙ্গী করে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হতে যাচ্ছেন ক্যাটস আই-এর।

পাশ্চাত্যের সাথে দেশি ট্রেন্ড এবং রুচির সমন্বয় করে ফরমাল ও ক্যাজুয়াল ফ্যাশনে সবসময় ফোকাস ইন ক্যাটস আই। ক্যাটস আইয়ে তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি ক্যাটস আই কিডজ নামে রয়েছে আরো একটি লেবেল। তবে ইয়াং এট হার্ট, ক্যাটস আই-এর জনপ্রিয়তা সামাজিক মাধ্যম, ইউটিউব এবং অন্তর্জালসহ গোটা বাংলাদেশের ফ্যাশনপ্রেমী তরুণদের ফ্যাশনে আরো আলো ছড়াবে জোহাদ এর গ্রহণযোগ্য গায়কি স্মার্ট ও ট্রেন্ড উপস্থাপনার মাধ্যমে। ক্যাটস আই-এর  চেয়ারম্যান সাঈদ সিদ্দিকী রুমী জানান, ক্যাটস আই তরুণ প্রজন্মের ফ্যাশন ব্র্যান্ড তাই সবসময় তরুণ প্রজন্মের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে এবার ইয়াং ক্রেজ  ব্র্যান্ড এম্ব্যাসেডর ব্র্যান্ডিং-এর জন্য বেছে নেয়া হয়েছে। এখন থেকে ক্যাটস আই এর মিডিয়া প্রচারণা ও ফটোশ্যুটগুলোর প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি। নেমেসিস ব্র্যান্ড-এর ভোকাল জোহাদ রেজা চৌধুরী জানান, গানের মানুষ আমি। ৯৯ সালে যে গানের জন্য গড়ে তোলা নেমেসিস তাকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। বনেদি ফ্যাশন ব্র্যান্ড ক্যাটস আই-এর সাথে আমার যাত্রা নতুন ভাবে আমার ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করবে। নিত্যনতুন অনুপ্রেরণায় ক্যাটস আই- সাথে ভালো কিছুর প্রতিনিধিত্ব করতে পারবো বলে আশা করি। ক্যাটস আই-এর ব্র্যান্ড এম্ব্যাসেডর চুক্তি স্বাক্ষর ও নাম ঘোষণার অনুষ্ঠানের নতুন ব্র্যান্ড এম্ব্যাসেডর-এর সাথে ক্যাটস আই-এর ৫ পরিচালক এবং চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ক্যাটস আই ২০০৫ সালে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করেছে জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী হাবীব ওয়াহিদ। এরপর ক্যাটস আই ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া ও কক্সবাজার-এ ক্যাটস আই এর ২৫টি স্টোর রয়েছে। এছাড়া ক্যাটস আই-এর কো ব্র্যান্ড মুনসুন রেইন ও আনলিমিটেড নামে দুটি লাইফস্টাইল ফ্যাশন ব্র্যান্ড রয়েছে।

 

সন্তান-সন্তুতির ওপর বাবা-মায়ের অধিকার কি?

বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানদের সবসময় কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। জীবিত অবস্থায় তাদের নির্দেশ মান্য করা, সর্বোত্তম সেবাযত্ন করা এবং তাদের সন্তুষ্ট রাখা প্রতিটি সন্তানের দায়িত্ব। এমনকি সন্তানের ওপর বাবা-মায়ের এ অধিকার তাদের মৃত্যুর পরও শেষ হয়ে যায় না। পরলোকগত বাবা-মার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করা, তাদের ওয়াদা পূরণ করা, তাদের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা প্রতিটি সন্তানের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। আবু উসাইদ [রা.] থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, আমরা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, বাবা-মার মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার এমন কোনো উপায় আছে কী, যা আমি অনুসরণ করতে পারি? তিনি বলেন, হ্যাঁ, চারটি উপায় আছে : [১] তাদের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা, [২] তাদের কৃত ওয়াদা পূরণ করা, [৩] তাদের বন্ধু-বান্ধব ও অন্তরঙ্গ ব্যক্তিদের সম্মান প্রদর্শন করা এবং [৪] তাদের মাধ্যমে তোমার সঙ্গে আত্মীয়তার যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা অক্ষুণœ রাখা [আদাবুল মুফরাদ]।
বাবা-মা সন্তানের সন্তুষ্টির জন্য, তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য সাধ্যের সবটুকুই করার চেষ্টা করেন। সন্তানদেরও উচিত বাবা-মাকে সন্তুষ্ট রাখা। তাদের মুখে হাসি ফোটানো। রাসুল [সা.] আমাদের তেমন নির্দেশই দিয়েছেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর [রা.] থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তার বাবা-মাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় রেখে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হিজরতের উদ্দেশে বাইআত হওয়ার জন্য উপস্থিত হলো। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : বাবা-মার কাছে ফিরে যাও এবং তাদের যেমনিভাবে কাঁদিয়ে এসেছ, তেমনিভাবে তাদের মুখে হাসি ফোটাও [আদাবুল মুফরাদ]। উপরোক্ত হাদিসটির দ্বারা বোঝানো হয়েছে বাবা-মা যদি দুর্বল, বৃদ্ধ ও সন্তানের সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেন, তবে এ অবস্থায় তাদের সেবা-শুশ্রƒষা করা হিজরতের মতো উত্তম আমলের চেয়েও অধিক উত্তম।ইবনে আব্বাস [রা.] থেকে বর্ণিত : সাদ ইবনে উবাদা [রা.] তার মায়ের কৃত মানত সম্পর্কে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, যা তার মা পূর্ণ করার আগেই মারা যান। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মায়ের মানত পূর্ণ করার জন্য তাকে নির্দেশ দিলেন [বুখারি ও মুসলিম থেকে মিশকাতে]। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বাবা-মার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার, তাদের সেবা করার, তাদের নির্দেশ মেনে চলার ও সন্তুষ্টি বিধানের তওফিক দিন। আমিন।

মাওলানা মিরাজ রহমান

 

‘নারীদের জন্য বেশি সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হবে’

জাতীয় সংসদের স্পিকার ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের (সিপিএ) চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, ‘নারীদের জন্য আরো বেশি সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের অগ্রগতির পথকে সুগম করতে হবে। এতে নারী উন্নয়নের পথ সুগম ও জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব হবে।’
তিনি বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ নারী পুলিশ এ্যাওয়ার্ড-২০১৬ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে এই কথা বলেন।
স্পিকার নারী ও পুরুষকে এক সঙ্গে নতুন প্রত্যয়ে কাজ করার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘যে সাহসিকতা, দৃঢ়তা এবং সামাজিক বাধা অতিক্রম করে নারীরা পুলিশের পেশাকে গ্রহণ করেছে তা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। এই কাজে নিজেদের দৃঢ়তার পাশাপাশি তাদের পুরুষ সহকর্মীদের সহযোগিতা পাচ্ছে। ফলে তারা তাদের কর্মক্ষেত্রে সহজভাবে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন পেশায় নারীরা সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছে। তারা দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অবদান রাখছে। নারীদের দৃশ্যমান উপস্থিতি সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে।’
নারীরা কৃষিকাজ, সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ, আনসার, ব্যাংক, বীমা, সিভিল সার্ভিস, সাংবাদিকতা ও সাংবিধানিক বিভিন্ন পদসহ সমাজের সকল ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে বলে তিনি তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া উক্ত অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ৩২ নারী পুলিশ সদস্য ও পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতিকে ‘উইমেন পুলিশ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়েছে।

 

চাকরীতে বিতৃষ্ণা? ৫ টি প্রশ্নে বুঝে নিন কী করবেন

জীবিকা, সাচ্ছন্দ্য আর স্বনির্ভরতার প্রয়োজনে তরুণেরা যুক্ত হন বিভিন্ন রকমের পেশায়। দেখা যায়, কেউ কেউ সারাদিনই কাজ করছেন। কাজের চাপে পরিবারকে সময় দিতে পারছেন না। প্রিয়জনের মেসেজের উত্তর দেওয়া, ফোন করা এমনকি ফোন ধরার সময় পর্যন্ত পাচ্ছেন না। সবাই হয়ত তাকে অসামাজিক বলছে। আবার চাকরিক্ষেত্রেও কাজের মূল্যায়ণ পাচ্ছেন না যেমন চাইছেন। এতে কাজের চাপের সাথে যোগ হয় মানসিক চাপ।
এরকম পরিস্তিতিতে আমরা প্রচন্ড রেগে যাই আমাদের চাকরীর উপর। হতাশায় ভুগতে শুরু করি। প্রশ্ন করতে থাকি নিজের যোগ্যতাকে। বিশিষ্ট লেখক স্টিভ আলব্রেক্ট ডিভিএ চাকরিক্ষেত্রে কাজের প্রতি ক্ষোভকে বিশ্লেষণ করেছেন বিভিন্নভাবে। তার লেখা বই এর মধ্যে আছে, Defusing Violence in the Workplace, Fear and Violence on the Job, and Tactical Perfection for Street Cops ইত্যাদি। তার মতে, আপনার “জব বার্নাউট” কোন মাত্রায় আছে বুঝতে নিজেকে করুন এই ৬ টি প্রশ্ন। মাত্রা বুঝে নিজেকে সেখান থেকে বের করে আনতে পারবেন আপনি নিজেই।
 
“কাজের কোন দিকটি আমার প্রিয়?”
আপনার চাকরির কোন দিকটি আপনাকে আনন্দ দেয়? কেমন লাগে কাজের পরিবেশ? আপনার পরিশ্রমের স্বীকৃতি কি আপনি পান? সঠিক মূল্যায়ণ হয় যোগ্যতার? কাজের কোন দিকটি আপনার উৎসাহ বাড়ায়?
এসব প্রশ্নের উত্তরে যাদের জবাব ইতিবাচক হয় তারা তাদের চাকরিটি অনেক উপভোগ করছেন বোঝা যায়। তারা অনুভব করেন, তাদের চাকরিতে তাদের সঠিক বেতন এবং যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয়। এভাবে তারা নিজেরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের একটি অংশ ভাবতে শুরু করেন। এভাবে জীবনের প্রতিও সন্তুষ্ট থাকেন তারা।
“কাজের কোন দিকটি আপনার অপ্রিয়?”
আপনার অপছন্দগুলো কী কী? কাজের পরিবেশ? যে কাজ গুলো আপনাকে করতে হয়? চাপ বেশী? বসকে অপছন্দ নাকি সহকর্মীদের? আপনার অপছন্দের লিস্ট যত বড় হবে আপনি তত আপনি চাকরি থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করবেন। আপনার মনে হবে, আপনাকে কম বেতন দেওয়া হয়, আপনার মূল্যায়ণ হয় না ঠিক মত। এভাবে একটি ভাল চাকরিও অসহ্য হয়ে যেতে পারে। ভালদিকগুলো খুঁজে বের করুন। অথবা চাকরি খুজুন, পেলে ছেড়ে দিন।
“আমার সহকর্মীদের কোন কাজগুলো আমার কাজকে আরও সহজ করে?”
পুরোনো একটি কথা আছে, “আপনি আসলে আপনার চাকরি ছাড়েন না, আপনার বসকে ছাড়েন।” একজন ভাল, সহনশীল, প্রেরণাদায়ক নেতা আপনাকে যেমন অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, তেমনি বস যদি বদরাগী হয় সেক্ষত্রে সহজ কাজটিও হতে পারে যন্ত্রণাদায়ক। কিন্তু আপনার এক্ষেত্রে কিছুই করার নেই তা কিন্তু নেই। ঝটপট কাজ শেষ করে অবাক করে দিন বসকে। তাকে সময়ই দেবেন না আপনাকে পাল্টা প্রশ্ন করার। মুষড়ে না পড়ে এটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিন। সহকর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করুন। একসাথে খেতে বসা, কাজের ফাকে টুকটাক খোঁজ খবর আপনাকে অনেক সাহায্য করবে। তবে অবশ্যই সেটা ব্যাক্তিগত পর্যায়ে না গড়ানোই ভাল।
“সহকর্মীরা কি কর্মপরিবেশ কে জটিল করে তুলছে?”
সহকর্মীদের সাথে ঝগড়া, ক্লেশ আপনার কাজ করার আগ্রহকে নষ্ট করে দিতে পারে। হিংসা, নিজে উপরে উঠতে অপরকে ছোট করা এসব কাজের পাশাপাশিও সেক্সুয়াল এবিউজের ঘটনাও ঘটতে পারে। নারী কর্মীরা এসবের শিকার হন প্রায়ই। অনেক প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ করেও কোন ফল হয় না। এসব ক্ষেত্রে জব বার্ণ আউট স্বাভাবিক। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। কোন সমস্যা আপনার অবহেলার কারণেই তৈরি হয়েছে কিনা খেয়াল করুন।
“বস কি আমাকে সাহায্য করে?”
আপনার বস আপনাকে সাহায্য করলে আপনার কাজ অনেক সহজ হয়ে যাওয়ার কথা। বসের সাহায্য বলতে বোঝানো হচ্ছে, তার সহজ মানসিকতা। তিনি যদি আপনার সব কাজের ভুলকে বড় করে দেখেন, তাহলে আপনার কাজ করার পরিবেশ আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু পাশাপাশি ভাবুন, আপনার কাজের চ্যালেঞ্জ গুলো কী কী? সেগুলো আপনি কতটা পূরণ করছেন? বসের হয়ত আপনার প্রতি প্রত্যাশাও বেশী।
প্রশ্নগুলোর উত্তর আশা করি চাকরীর প্রতি বিতৃষ্ণার কারণ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে আপনাকে। এরপর নিজের এবং প্রতিষ্ঠানের উভয়ের সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করুন সময় নিয়ে। লিখে রাখুন। নতুন চাকরি খোঁজার সময় এবার আপনি জানবেন আপনার কী কী চাই, নিজের উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য, যোগ্যতাগুলোও বুঝতে পারবেন। তৈরি করতে পারবেন একটি চমৎকার সিভি, যা এক কথায় তুলে ধরে আপনাকে।
লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

ডায়াবেটিসের জটিলতা থেকে মুক্ত থাকার উপায়

স্নায়ু হচ্ছে শরীরের বার্তাবাহক। হাতের আঙ্গুল থেকে শুরু করে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত স্নায়ুই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে, সামান্য হাঁচি দেয়া থেকে শুরু করে হৃদস্পন্দন পর্যন্ত। কিন্তু কখনও কখনও ডায়াবেটিস এই জটিল নেটওয়ার্ককে  ক্ষতিগ্রস্থ করে। গবেষকদের মতে এটি তখনই হয় যখন মাত্রাতিরিক্ত গ্লুকোজ রক্তনালীর দেয়ালকে ধ্বংস করে দেয়। ডায়াবেটিস রোগীদের ৬০-৭০% এর নার্ভ ড্যামেজের সমস্যাটি হয়ে থাকে। একে নিউরোপ্যাথি বলে। বিশেষজ্ঞদের মতে নিউরোপ্যাথি ও ডায়াবেটিসের অন্য জটিলতা কমানো সম্ভব গ্লুকোজ এর মাত্রা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রেখে। ১৯৯৩ সালের এক গবেষণায় জানা যায় যে, রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ডায়াবেটিস রোগীদের নিউরোপ্যাথি হওয়ার ঝুঁকি ৬০% পর্যন্ত কমানো যায়। রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে জটিলতা কমানোর কয়েকটি উপায় জেনে নেই আসুন।

১। স্বাস্থ্যকর খাবার খান

আপনার টাইপ ১ অথবা টাইপ ২ যে ধরনেরই ডায়াবেটিস থাকুক না কেন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে আপনি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। সতর্কতার সাথে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কার্বোহাইড্রেট ব্লাড সুগারের উপর নাটকীয় প্রভাব ফেলতে পারে। একটি আদর্শ খাদ্য পরিকল্পনায় বিভিন্ন ধরণের রঙ্গিন সবজি ও ফল থাকে। সেইসাথে চর্বিহীন মাংস, দুগ্ধজাত খাবার, বাদাম ও শস্য অন্তর্ভুক্ত হয়।

২। ফিট থাকুন

স্বাস্থ্যকর খাবার ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম আপনাকে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। এর ফলে রক্তের সুগার লেভেল ও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এবং স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স যেমন- আপেল বা কলা রাখুন সাথে।

৩। চিকিৎসা ব্যবস্থা মেনে চলুন

আপনার চিকিৎসা পরিকল্পনা মেনে চলুন ও চিকিৎসক নির্দেশিত ঔষধগুলো সেবন করুন বা ইনসুলিন ইনজেকশন নিন। ইনসুলিন ইনজেকশন কখন ও কীভাবে নেবেন তা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন।

৪। গ্লুকোজের মাত্রা চেক করুন

নিয়মিত গ্লুকোজের মাত্রা চেক করুন। গ্লুকোজের মাত্রা জানা থাকলে আপনার প্রাত্যহিক যত্নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত সহজ হবে।

৫। বছরে দুইবার A1c  টেস্ট করান

A1c  টেস্টের মাধ্যমে তিন মাসের অধিক সময়ের রক্তের গ্লুকোজ স্তরের মাত্রার গড় নির্ণয় ও সঠিক স্ন্যাপশট পাওয়া যায়। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে এবং রক্তের গ্লুকোজ স্তরের মাত্রা যদি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই থাকে তাহলে বছরে দুইবার A1c  টেস্ট করান উচিৎ। আর যদি ঔষধ পরিবর্তন করা হয় বা রক্তের গ্লুকোজ স্তরের মাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে প্রায়ই এই পরীক্ষাটি করতে হবে।

গবেষকেরা নিরন্তর চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিউরোপ্যাথি প্রতিরোধের নিমিত্তে ঔষধের উন্নতি সাধনের জন্য। সেই পর্যন্ত রক্তের গ্লুকোজ স্তরের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখেই স্নায়ুর ক্ষতি রোধ করতে হবে।

লিখেছেন-

সাবেরা খাতুন

 

তাজমহলের অজানা কিছু তথ্য

আমরা সবাই জানি তাজমহল বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি। মোঘল  সম্রাট শাহজাহান তার তৃতীয় স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতি রক্ষার্থে তাজমহল তৈরি করিয়েছিলেন। ১৬৩১ সালে মমতাজ মহল ১৪তম সন্তান প্রসবের সময় মারা যান। এটি ভারতের আগ্রায় অবস্থিত। এই তথ্যগুলো বেশিরভাগ মানুষই জানে। তাজমহল সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য জেনে নেই আসুন।

১। দিনের বিভিন্ন সময়ে তাজমহলের বিভিন্ন রঙ দেখা যায়। তাজমহল খুব ভোরে গোলাপী, দিনে সাদা ও চাঁদের আলোয় সোনালী রঙের দেখায়। তাজমহলের সাদা মার্বেল ও প্রতিফলিত টাইলস এর রঙের পরিবর্তে সাহায্য করে।

২। তাজমহলের পিলারগুলো বাহিরের দিকে হেলানো। ভূমিকম্প হলে এগুলো যেনো সমাধির উপরে না পরে এজন্যই এভাবে তৈরি করা হয়েছে।

৩। এই অনন্য স্থাপনাটির স্থপতি ছিলেন আহমেদ লাহোরি। তাজমহল নির্মাণের জন্য  তিনি ২২ হাজার মানুষ নিযুক্ত করেন, যারা ছিলেন শ্রমিক, স্টোনকাটার, চিত্রশিল্পী, সূচিকর্মশিল্পী ও ক্যালিগ্রাফার। তাজমহলের নির্মাণ সামগ্রী বহনের জন্য ১০০০ হাতি  ব্যবহার করা হয়েছিলো।

৪। স্থাপত্যকলার এই বিশাল জাঁকজমকপূর্ণ কাজটি করার জন্য সম্রাট রাজস্থান, আফগানিস্থান, তিব্বত ও চীন থেকে মার্বেল পাথর আনিয়েছিলেন। এছাড়াও ২৮  ধরণের মূল্যবান ও আধামূল্যবান পাথর সাদা মার্বেলের উপর বসানো হয়েছিলো। যার মধ্যে আকর্ষণীয় নীলকান্তমণি ও ছিলো।

৫। তাজমহলের সব কিছুই প্রতিসম শুধুমাত্র একটি জিনিষ ছাড়া। আর সেটি হচ্ছে এর ভেতরের দুটি সমাধি। কারণ পুরুষের সমাধি মেয়েদের সমাধির চেয়ে বড় হয়।

৬। তাজমহলের মূল্য ৩২ মিলিয়ন রুপি। যার বর্তমান মূল্য ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

৭। তাজমহলের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিলো ১৬৩২ সালে এবং সম্পন্ন হয়েছিলো ১৬৫৩ সালে। এটি তৈরি করতে ২২০০০ শ্রমিকের ২২ বছর সময় লেগেছিলো।

৮। তাজমহল সম্পর্কে একটি প্রচলিত মিথ হচ্ছে- নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে প্রতিটা শ্রমিকের হাত কেটে ফেলার নির্দেশ দেন সম্রাট শাহজাহান। যাতে কেউ পুনরায় তাজমহল তৈরি করতে না পারে। তবে এটি সত্য নয়। আরেকটি মিথ হচ্ছে- তাজমহলের মতোই আরেকটি সমাধি এর বিপরীত পাশে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান কালো মার্বেল দিয়ে। কিন্তু ক্ষমতাচুত্য হওয়ায় সেটি আর সম্ভব হয়নি। কিন্তু এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

৯। মোঘল সম্রাটের সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও তাজমহলের স্থাপত্যকলা ছিলো বিশ্বব্যপী অনুপ্রাণিত। এটি পারস্য, মধ্য এশিয়া ও ইসলামী স্থাপত্যের সমন্বয় করেছিলো।

১০। তাজমহলের ভেতর ও বাহিরের ক্যালিগ্রাফির চমৎকার কাজ আছে। মমতাজ মহলের সমাধি ক্ষেত্রেও তাঁর পরিচিতি ও প্রশংসার শিলালিপি দেখা যায়। সমাধিক্ষেত্রের একপাশে আল্লাহর ৯৯ নাম ক্যালিগ্রাফিক শিলালিপিতে অঙ্কিত আছে।

১১। তাজমহলের উচ্চতা ১৭১ মিটার বা ৫৬১ ফুট দীর্ঘ যা কুতুবমিনারের চেয়েও বড়।

সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলের স্মৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা জানাতেই তাজমহল তৈরি করেছিলেন সম্রাট শাহজাহান। বর্তমানে তাজমহল বাগান, গেস্টহাউজ ও মসজিদ দিয়ে ঘেরা ১৭ হেক্টর জায়গা নিয়ে গঠিত। সম্রাট শাহজাহান যমুনা নদীতে বসে তাঁর এই স্বপ্নের সমাধীটিকে দেখতেন। বর্তমানে নদীটি শুষ্ক হয়ে গেছে।

লিখেছেন-

সাবেরা খাতুন

 

নবিজির [সা.] প্রিয় পোশাক কি ছিলো ?

মহানবি [সা.] অধিকাংশ সময়ে এ ধরনের পোশাক পরতে ভালোবাসতেন। [শামায়েলে তিরমিজি-২৮] যা অনেকাংশেই আমাদের সমাজে প্রচলিত পোশাক পায়জামা-পাঞ্জাবির মতো। বিশেষ কোনো সমস্যা না থাকলে আমরাও সার্বক্ষণিক এ ধরনের পোশাক পরিধান করতে পারি।

নবিজির [সা.] প্রতি ভালোবাসা ঈমানের অপরিহার্য অংশ। পরিপূর্ণ মুমিন হতে চাইলে তাঁকে [সা.] পিতামাতা সন্তান-সন্তুতি এবং সব মানুষ থেকে অধিক ভালোবাসতে হবে। ভালোবাসার অনেক দাবি আছে। তন্মধ্যে অন্যতম একটি দাবি হলো, তিনি যা ভালোবাসতেন আমরাও তা ভালোবাসবো। তিনি যা পছন্দ করতেন আমরাও তা পছন্দ করবো। সেই তো প্রকৃত আশেকে রাসুল যে তার মাহবুব ও প্রেমাস্পদ পেয়ারা হাবীবের ভালোবাসা ও প্রিয়-অপ্রিয়কে নিজের প্রিয়-অপ্রিয় হিসেবে গ্রহণ করতে পেরেছে। এ আলোচনায় নবিজির [সা.] প্রিয় পোশাক নিয়ে আলোচনা করা হলো।

কামিস ছিল নবিজির [সা.] প্রিয় পোশাক। পোশাক পরিধান করা কোনো ক্ষেত্রে ফরজ, কখনো হারাম আবার কোনো কোনো সময়ে মুস্তাহাব। ফরজ পোশাক হলো এতটুকু, যা দিয়ে সতর ঢাকা যায়। হারাম হলো, পুরুষের জন্যে পায়ের গোড়ালির নীচে পোশাক পরিধান করা। আর দুই ঈদে উত্তম পোশাক পরিধান করা মুস্তাহাব। সকলের জন্য পোশাকের একটি মার্জিত রূপ ও রুচি থাকা চাই। দেশের জাতিভেদের তারতম্য থাকলেও পোশাকের মাঝে একটা শালীনতা থাকা দরকার। যে ধরনের পোশাক পরলে মনে কুপ্রবৃত্তি জন্মে না, তেমন পোশাকই আমাদের পরিধান করা উচিত।

তবে এ কথাও সত্য যে, ইসলামের দৃষ্টিতে বিশেষ কোনো পোশাক নেই। এর ওপর কোনো বিধি-নিষেধও নবি- পয়গম্বরগণ দিয়ে যাননি। আবহাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে শরীরকে সুস্থ রাখবার জন্য যে কোনো পোশাকই ব্যবহার করা চলে। এর প্রমাণ আমরা পাই হজরত আব্বাস (রা.) এবং হজরত ওমরের (রা.) বাণী হতে- ‘যা ইচ্ছা আহার কর, পান কর ও পরিধান কর, যে পর্যন্ত অমিতব্যয়িতা ও অহঙ্কারের সাথে মিশ্রিত না হয়।’ এ প্রসঙ্গে মহানবি [সা.] বলেছেন, ‘গোড়ালির নিচে পায়ের যে অংশে কাপড় ঝোলে তা দোজখে যাবে।’

উম্মে সালমা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল [সা.] পোশাক হিসেবে সর্বাধিক পছন্দ করতেন ‘কামিস’। [ইবনে মাজাহ, হাদিস-৪০২৭] কামীসের বিবরণ সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসের ভিত্তিতে জানা যায়, এই পোশাকটি ছিলো হাঁটুর নিম্নভাগ পর্যন্ত লম্বা। হাতা ছিল হাতের আঙ্গুলের প্রান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ। এ পোশাকের দৈর্ঘ্য সবসময়ই পায়ের গোড়ালির উপরে থাকত। মহানবি [সা.] অধিকাংশ সময়ে এ ধরনের পোশাক পরতে ভালোবাসতেন। [শামায়েলে তিরমিজি-২৮] যা অনেকাংশেই আমাদের সমাজে প্রচলিত পোশাক পায়জামা-পাঞ্জাবির মতো। বিশেষ কোনো সমস্যা না থাকলে আমরাও সার্বক্ষণিক এ ধরনের পোশাক পরিধান করতে পারি।

ফয়জুল আল আমীন
[ফয়জুল আল আমীন- ধ্রুপদী এক লেখক। পুরো নাম- সৈয়দ মুহম্মদ ফয়জুল আল আমীন। সৈয়দ শিশির নামে যিনি সমধিক পরিচিত। প্রবন্ধ-নিবন্ধ, কলাম, সাহিত্য সমালোচনা, গল্প, গবেষণা, কবিতা, ছড়াসহ সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় যার সুদীপ্ত বিচরণ। দেশের প্রথম শ্রেণির প্রায় সব দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ও ছোটকাগজে নিয়মিত লিখছেন প্রায় ২০ বছর ধরে। ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে তাঁর গুরু হলেন বাবা। আর সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে প্রকৃতি। ইসলাম ধর্মের নানা দিক ও বিষয় নিয়ে সুদীর্ঘ গবেষণা করেছেন ফয়জুল আল আমীন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় রিপোর্টার, ফিচার লেখক, সাব-এডিটর, সহযোগী সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। একাধিক প্রকাশনা সংস্থায় সিনিয়র লেখক, সম্পাদক ও আরঅ্যা-ডি’র প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বর্তমানে পাঠকপ্রিয় একটি সাপ্তাহিকে চিফ রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।]

 

আত্মহত্যা করলেন টিভি অভিনেত্রী প্রত্যুষা

‘কালারস’ চ্যানেলের জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘বালিকা বধূ’র ‘আনন্দী’ আর নেই। নিজের বাসভবনেই আত্মহত্যা করেন প্রত্যুষা ব্যানার্জী। পরে তাকে মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিত্সকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পুরো অভিনয় জগত।

জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। সেকারণেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, নিজের বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়েছিলেন এই বাঙালি অভিনেত্রী। তাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছিল তখন শুধু মৃত্যুর কথাই তিনি বলছিলেন বলে জানা গেছে।

১৯৯১ সালের ১০ আগস্ট জামশেদপুরে তার জন্ম। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্সে তিনি পড়াশোনা করেন। কলেজে পড়াকালীনই তিনি মুম্বাইয়ে ‘বালিকা বধূ’ সিরিয়ালে ‘আনন্দী’ চরিত্রের জন্য প্রস্তাব পান। ‘বালিকা বধূর’ পর ‘বিগ বস ৭’ অনুষ্ঠানেও তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। সম্প্রতি তাকে দেখা যায় ‘শশুরাল সিমার কি’-তে। এমনকি স্বামীর সঙ্গে এই বছরের শুরুতে সনি চ্যানেলের ‘পাওয়ার কাপল’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এক আইনি ঝামেলায় জড়ান প্রত্যুষা। চার পুলিশকর্মী তার শ্লীলতাহানি করেন বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি।

ওদিকে অভিনেত্রী প্রত্যুষার মৃত্যুতে শোকের ছায়া টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে। তার সহ অভিনেতা অভিনেত্রীরাও স্তব্ধ। এমনকি টলিউডেও চলছে শোক। টলিউড অভিনেতা রজতাভ দত্ত থেকে শুরু করে অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা সরকার, সায়নী সহ অনেকেই প্রত্যুষার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন।

 

ফের ক্ষমতায় আসছেন মমতা ব্যানার্জি: জরিপ

নতুন এক জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় আসছে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। তবে এবার তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি করবে রাজ্যের বামেরা।

ইন্ডিয়া টিভি-সিভোটার পরিচালিত জরিপে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

টিভি-সিভোটার জরিপে জনানা যায়, তৃণমূল কংগ্রেস এবার ৪০ ভাগ ভোট পেতে পারে। বামপন্থী সিপিএম ৩১ ভাগ ভোট পেতে পারে।

কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এ রাজ্যে ভালো ফল করার জন্য মরিয়া হয়ে প্রচারণা চালালে তারা মাত্র ৪টি আসন তথা ১১ ভাগ ভোট পেতে পারে বলে জরিপে বলা হয়েছে।

জরিপে বলা হয়েছে, ২৯৪ আসনের বিধান সভায় তৃণমূল কংগ্রেস পেতে পারে ১৬০টির মত আসন। সিপিএম পেতে পারে ১০৬টি আর কংগ্রেস পেতে পারে ২১টি আসন।

তবে ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস যতগুলো আসন পেয়েছিল এবার তার চেয়ে ২৪টি আসন কম পেতে পারে।

আগামী ৪ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে প্রথম দফার প্রথম পর্বের নির্বাচন। এই পর্বে ভোট হবে পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার ১৮ আসনে। প্রায় এক মাস ধরে চলবে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া। ভোট শেষ আগামী ৫ মে। গণনা ১৯ মে।

 

সমরেশের ‘মাধবীলতা’র প্রেমে রিয়াজ

কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের ‘কালবেলা’ উপন্যাসের অসাধারণ এক চরিত্র ‘মাধবীলতা’। এই চরিত্রের প্রেমে পড়েছেন অভিনেতা রিয়াজ। তবে বাস্তবে নয়, এমন ঘটনা ঘটেছে নাটকে। নাটকের নাম ‘মাধবীলতা, শুধু তোমার জন্য’। নাটকটি রচনা করেছেন রাইসুল তমাল, পরিচালনা করেছেন আসাদুজ্জামান সবুজ। রিয়াজের সঙ্গে নাটকটিতে অভিনয় করেছেন প্রভা ও নাবিলা ইসলাম।

নাটকের গল্প প্রসঙ্গে পরিচালক বলেছেন, ‘রূপম ও নাফার বিয়ে হয়েছে এক বছর হলো, ভালোই চলছে তাদের সংসার। অফিস থেকে ফেরার পর রূপমের অনেকটা সময় কেটে যায় বই পড়ে। স্বাভাবিক নিয়মে একদিন রূপম সমরেশ মজুমদারের ‘কালবেলা’ বইটি পড়ছিল। বইটি তার নেশা ধরিয়ে দেয়। গল্পের নায়িকা মাধবীলতার প্রেমে পড়তে থাকে রূপম।
বইটি শেষ হওয়ার পর থেকে রুপমের আচার-ব্যবহারে বেশ খানিকটা পরিবর্তন চলে আসে। রূপম বইটির চরিত্র মাধবীলতার সঙ্গে নাফার তুলনা খুঁজতে থাকে। কিন্তু কোনো মিলই খুঁজে পায় না। কিন্তু একদিন ঠিকই রূপম আবিষ্কার করে গল্পের মাধবীলতাকে। বাড়তে থাকে রূপম ও নাফার দূরত্ব…. । এই নিয়েই এগিয়েছে নাটকটির গল্প।’
‘মাধবীলতা, শুধু তোমার জন্য’ নাটকটির শুটিং হয়েছে গেল সপ্তাহে। খুব তাড়াতাড়ি এটি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হবে।

 

তনুর লাশ পড়ে থাকার স্থান পরিষ্কার অস্বাভাবিক

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন, সোহাগী জাহান তনুর মরদেহে যে জায়গাটি পড়ে ছিল, সেই জায়গাটি পরিষ্কার করা হয়েছে। এটি অস্বাভাবিক। তাঁদের কাছে থাকা প্রথম ছবিতে ওই স্থানে ঘাস ও ছোট গাছ ছিল। কিন্তু পরে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে জায়গাটি পরিষ্কার করা হয়েছে। প্রকৃত অবস্থার এই পরিবর্তন কাম্য নয়। সাক্ষ্য আইন অনুযায়ীও সেটি কাঙ্ক্ষিত নয়।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা সেনানিবাসে তনুর লাশ যেখানে পাওয়া গেছে সেই স্থান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে মিজানুর রহমান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আলামত নষ্ট হতে পারে। এটি বিচারকে ভিন্ন খাতে নিতে পারে, বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এটি ঘটে থাকলে যারা এমনটা করেছেন তাদেরও বিচারের আওতায় আনা দরকার। বিশেষ করে যে জায়গায় তনুর মৃতদেহ পড়ে ছিল তা এখন পরিষ্কার করা হয়েছে। মাটি তুলে ফেলা হয়েছে। এতে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হতে পারে। যদি এটা হয়ে থাকে, তবে কেন এটা করা হয়েছে, কে বা কারা করেছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। এটা অবশ্যই জানা দরকার।’
তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত সম্পর্কে ​মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, কেন দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। কমিশন মনে করে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের প্রয়োজন ছিল। কেননা প্রথমবারে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন ছিল। লক্ষ্য রাখতে হবে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত যেন বাড়তি কোনো প্রশ্ন উত্থাপন যেন না করে। বরং সব প্রশ্নের উত্তর যেন পাওয়া যায়। তিনি বিচারক ও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে আহ্বান জানান, ‘প্রথমবার ময়নাতদন্তের সময় যদি কোনো গাফিলতি, তথ্য গোপনের চেষ্টা হয়ে থাকে তবে এর সঙ্গে এবং পেছনে যারা যুক্ত তাদের বিচারের আওতায় আনুন।’
অধ্যাপক মিজানুর বলেন, তনুর পরিবারকে সাহায্য করা উচিত। ন্যায়বিচারের নামে বা তথ্য সংগ্রহের নামে তাদের যেন হয়রানির স্বীকার হতে না হয় সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তনুর পরিবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর অগাধ ও অসীম আস্থা আছে, তাঁরা বিশ্বাস করেন ন্যায়বিচার পাবেন। তিনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দেন, কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন ন্যায়বিচারের স্বার্থে পূর্ণ সহযোগিতা দেবেন। যে ধরনের তথ্য লাগে তা দেওয়া হবে। কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে তাতে ‘আমরা এবং তারা’ এই বিভেদ করা প্রত্যাশিত হবে না। এখানে পক্ষ হচ্ছে অপরাধী এবং ন্যায়বিচার প্রার্থী। দুই ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে। এর বাইরে কোনো বিভেদ সৃষ্টি জাতীয় স্বার্থে কাম্য নয়। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, তদন্ত দলকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। যেখানে হয়েছে সেটা একটি বিশেষ এলাকা। সেখানে প্রবেশে বিধিনিষেধ আছে। এই বিধিনিষেধ যেন তদন্ত বাধা তৈরি করতে না পারে সে জন্য সেনাবাহিনীকে আহ্বান জানাব তদন্তের জন্য তারা যেন সব ধরনের সুবিধা দেয়। তিনি বলেন, তনুকে হত্যা করা হয়েছে। এর বিচার হতে হবে। প্রকৃত অপরাধীকে ন্যায় বিচারের আওতায় আনা হলে সবার ভাবমূর্তি উন্নত হবে। কোনো জজমিয়া নাটক, তদন্ত ভিন্ন দিকে নেওয়া হলে তা কেউ গ্রহণ করবে না। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তনু হত্যার তদন্তে সফলতা পেতেই হবে। যারা এখন তদন্ত করছেন তারা আলামত পেয়েছেন ভিন্ন একটি সংস্থা থেকে। সরাসরি আলামত সংগ্রহ করতে পারেননি। এ কারণে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করতে হবে।
মিজানুর রহমান বলেন, সংরক্ষিত এলাকায় ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনা ঘটেছে কিন্তু এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অপরাধীকে কত দ্রুত ধরা যায়। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী কোনো তদন্ত করছে না। এক প্রশ্নের জবাবে মিজানুর বলেন, মধ্য রাতে কেন তনুর বাবা মা ও ভাইকে র‍্যাব নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল তা জানান অধিকার দেশের মানুষের আছে। কমিশন এটি জানতে চাইবে।

 

হত্যার আগে ধর্ষণ

কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু যে হত্যার শিকার, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। লাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার তনুর লাশ তোলার পর কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন প্রথম আলোকে এ কথা বলেছেন।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য এবং পারিপার্শ্বিক আলামত থেকে পুলিশ সুপার এ ধারণা করছেন বলে জানিয়েছেন। এ জন্য দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তে এ-সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদন চেয়েছেন তিনি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর সব বিষয় স্পষ্ট হবে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তিনি মনে করছেন, তনুকে অন্য কোথাও হত্যা করে ঝোপের মধ্যে ফেলা হয়েছে। ঘটনাস্থলে যে আলামত রাখা হয়েছে, তা সাজানো মনে হয়েছে। একই কথা তিনি বিবিসিকেও বলেছেন।
তনুর লাশ তোলার পর এ কাজে যুক্ত একাধিক ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে কথা বলে জানা গেছে, তাঁর মাথার পেছনে জখমের দাগ আছে। নাক থেঁতলানো। কানের নিচে আঁচড়ের দাগ ও চুল কাটা।
তবে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রথম দফা সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তে তনুর মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হয়নি। ওই দুই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তনুর মৃতদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না, কেবল নাক দিয়ে রক্ত বের হয় এবং কানের নিচে আঁচড়ের দাগ ছিল। চুল কাটা ছিল।
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, তিনি প্রথম যখন তনুকে উদ্ধার করেন, তখন তাঁর মাথার পেছনে ও নাকে জখম দেখেছেন। এ ছাড়া তনুর জামার দুই বাহুর নিচের দিকে ছেঁড়া ছিল। তনুকে প্রথম দফা কবর দেওয়ার আগে যাঁরা শেষ গোসল দিয়েছেন, এমন একজনও তনুর মাথার পেছনে ও নাকে জখম এবং কানের নিচের আঁচড় ও চুল এলোমেলোভাবে কাটা দেখেছেন।
প্রথম দফা সুরতহাল প্রতিবেদন করেছিলেন কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম। তিনি গতকাল প্রথম আলোর কাছে প্রথম দফা সুরতহাল প্রতিবেদনে মাথার জখমের কথা গোপন করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, ময়নাতদন্তের জন্য মাথার খুলি কাটতে হয়, হয়তো সেটাকে এখন জখম মনে হচ্ছে।
কিন্তু এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল অন্য সূত্রগুলো বলছে ভিন্ন কথা। ময়নাতদন্তের জন্য মাথার খুলির যে বরাবর কাটা হয়, সেটা আর পেছনের জখম ভিন্ন।
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন গতকাল জানিয়েছেন, তিনি মেয়েকে খোঁজার সময় ঘটনাস্থল থেকে তিন ব্যক্তিকে পালিয়ে যেতে দেখেছেন। ওরা কারা, সেটা জানার জন্য তিনি তখন উপস্থিত এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেসও করেছিলেন। এরপর একটু সামনে এগিয়েই মেয়ের লাশ দেখতে পান তিনি। ততক্ষণে ওই তিনজন দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়। এ তথ্য তিনি শুরুতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জানিয়েছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মনজুর আলমও প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেন, তাঁকে তনুর বাবা একই কথা বলেছিলেন।
সোহাগী জাহান তনুর লাশ গতকাল কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান থেকে তোলা হয় l ছবি: প্রথম আলোআদালতের নির্দেশে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের জন্য তিনটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের প্রধান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা। অন্য দুজন হলেন গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. করুণা রানী কর্মকার ও ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক মো. ওমর ফারুক। তাঁরা গতকাল বিকেলে তনুর দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করেন। ময়নাতদন্তের বিষয়ে এখনই কিছু বলতে রাজি হননি তাঁরা।
এর আগে ২১ মার্চ প্রথম দফা ময়নাতদন্ত করেছিলেন একই মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগেরই একজন চিকিৎসক। ওই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে তনুর মাথায় জখমের কথা আসেনি বলে অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে গতকাল প্রশ্ন করা হলে কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না। আমরা আদালতের নির্দেশে মেডিকেল বোর্ড করে আবার ময়নাতদন্ত করছি।’
গতকাল সকালে মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান থেকে তনুর লাশ তোলা হয়। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ছিলেন আদর্শ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার। এ ছাড়া পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন, সিআইডির বিশেষ সুপার (এসএস) নাজমুল করিম খান, সিআইডির প্রধান কার্যালয়ের ক্রাইম সিন ইউনিটের (ফরেনসিক আলামত) সহকারী সুপার আবদুস সালাম, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধিসহ গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আশপাশের গ্রামের বিপুলসংখ্যক মানুষ জড়ো হয়। স্থানীয় যাত্রাপুর এ কে উচ্চবিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে কবরস্থানের কাছে আসে। তারা তনু হত্যার বিচারের দাবিতে স্লোগান দেয়।
দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত শেষে গত রাতেই একই কবরে তনুকে দাফন করা হয়। পুলিশ সুপার জানান, মামলাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য সিআইডির বিশেষ সুপার আবদুল কাহার আকন্দকে প্রধান করে তদন্ত-সহায়ক একটি দল গঠন করা হয়েছে।
২০ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী তনুর লাশ কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে পাওয়ার হাউসের অদূরে কালভার্টের পাশের ঝোপের মধ্যে পাওয়া যায়।

 

রেস্টুরেন্ট স্বাদের বার্গার তৈরি করে ফেলুন আলু দিয়ে

বার্গার ছোট বড় সবার পছন্দের একটি খাবার। অনেকে দুপুরের খাবার হিসেবে বার্গার খেয়ে থাকেন। আর বাচ্চাদের তো কথাই নেই, বার্গার হলে আর কিছুই লাগে না তাদের। কিন্তু প্রতিদিন বাইরের বার্গার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই ঘরে তৈরি করে নিতে পারেন রেস্টুরেন্ট স্বাদের বার্গার। তবে এই বার্গারটি একটু ভিন্ন ধরণের। সবজি খাওয়া নিয়ে প্রায় সব বাচ্চারাই বিরক্ত করে থাকে। কিন্তু আলু সব বাচ্চাদেরই পছন্দের সবজি। এই আলু দিয়েই তৈরি করুন মজাদার আলু টিক্কা বার্গার। টিফিনেও তৈরি করে দিতে পারেন এই খাবারটি।

উপকরণ

  • ২টি সিদ্ধ আলুর ভর্তা
  • ২ কাপ সিদ্ধ সবজি (পছন্দের যেকোন সবজি)
  • ১ চা চামচ আদা মরিচ পেস্ট
  • ধনেপাতা কুচি
  • লবণ
  • ১/৪ চা চামচ গরম মশলা
  • লেবুর রস
  • ২ টেবিল চামচ কর্ণ ফ্লাওয়ার
  • কর্ণ ফ্লাওয়ার পেস্ট
  • ৩ টেবিল চামচ কর্ণ ফ্লাওয়ার
  • লবণ
  • পানি
  • ভাজা ব্রেড ক্রাম্বস
  • কোলস্ল তৈরির জন্য
  • ১ কাপ মেয়নিজ
  • ১/২ কাপ গাজর কুচি
  • ১টি পেঁয়াজ লম্বা করে কাটা
  • সরিষার সস
  • গোলমরিচ
  • লবণ
  • বার্গার বন
  • মাখন
  • চিজ
  • টমেটো কেচাপ
  • লেটুস পাতা
  • শসার টুকরো
  • টমেটোর টুকরো

প্রণালী:

১। প্রথমে সিদ্ধ আলু, আদা মরিচের পেস্ট, সিদ্ধ সবজি (মটরশুঁটি, বিনস, গাজর, ফুলকপি), ধনেপাতা কুচি, লবণ, গরম মশলা, লেবুর রস, কর্ণ ফ্লাওয়ার ভাল করে মিশিয়ে নিন।

২। হাতের তালুতে অল্প করে তেল লাগিয়ে নিন। তারপর সবজিগুলো দিয়ে বড় চপ তৈরি করুন।

৩। আরেকটি পাত্রে কর্ণ ফ্লাওয়ার, লবণ এবং পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।

৪। সবজির চপটি কর্ণ ফ্লাওয়ারে ডুবিয়ে তারপর ব্রেড ক্রাম্বসে জড়িয়ে তেলে দিয়ে দিন। বাদামী রং হয়ে আসলে তেল থেকে নামিয়ে ফেলুন।

৫। এখন মেয়নিজ, গাজর কুচি, পেঁয়াজ, সরিষার সস, গোল মরিচ, লবণ একসাথে মিশিয়ে ক্লোসোল তৈরি করুন।

৬। বার্গার বনে মাখন লাগিয়ে নন-স্টিক প্যানে সেঁকুন। তারসাথে সবজির চপটি দিয়ে দিন।

৭। সবজি চপটির উপর চিজ দিয়ে একটি ছোট বাটি দিয়ে চিজসহ চপটি ঢেকে দিন।

৮। বার্গার বনে টমেটো কেচাপ, লেটুস, শসা, টমেটোর টুকরো, অল্প একটু লবণ এবং গোলমরিচ গুঁড়ো, আলুর চপ, তার উপর কোলস্ল সালাদ দিয়ে দিন।

৯। ব্যস তৈরি হয়ে গেল মজাদার আলু টিক্কা বার্গার।

 

দাঁত সুস্থ রাখতে যা করবেন

খাবার যত সুস্বাদুই হোক না কেন, দাঁত সুস্থ না থাকলে খেয়ে মজা নেই। আবার এমন খাবারও খাওয়া উচিত নয়, যা দাঁতের বারোটা বাজিয়ে দেয়। কাজেই দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাবার-দাবার একটু বেছে নেওয়াই ভালো। দাঁত সুস্থ রাখতে যা যা করতে পারেন, তা এখানে তুলে ধরা হলো:
১. এমন খাবার না খাওয়াই ভালো, যা খেলে দাঁতের ‘অমর্যদা’ হয়! তাই খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন। ব্ল্যাক টি, রেড ওয়াইনজাতীয় পানীয়কে ‘না’ বলুন। ধূমপান তো আপনার সাদা দাঁত হলদেটে বানানোর জন্য যথেষ্ট। এ ছাড়া কোমলপানীয়, চাটনি, সয়া সস এবং ঘন জুসও দাঁতের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
২. চেঞ্জ উই নিড—প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এটাই ছিল বারাক ওবামার মূলমন্ত্র। আপনার টুথব্রাশের বেলায়ও এই মূলমন্ত্র প্রয়োগ করুন। ব্রাশের বয়স দু-তিন মাস হলেই সেটাকে অবসরে পাঠান। না হলে সেই ব্রাশই আপনার মুখে ছড়িয়ে দেবে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, দাঁত মাজার সময় মুখের ভেতর ব্রাশ রাখতে হবে ৪৫ ডিগ্রি কোণে। শরীরের সব শক্তি দিয়ে ঘষলেই দাঁত পরিষ্কার হয় না। ফলে দাঁতের সঙ্গে কুস্তি না লড়ে আস্তে-ধীরে মাজুন। ব্রাশ ধরুন ঠিক পেনসিল যেভাবে ধরা হয়।
৩. ‘যার মুখে গন্ধ, তার ভোট বন্ধ’—এমন একটা স্লোগান শোনা যায় দাঁতের মাজনের বিজ্ঞাপনে। বিজ্ঞাপনের বাণী ফেলনা নয়। মুখে দুর্গন্ধ মানেই বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া। জিব পরিষ্কার না থাকা এর অন্যতম কারণ। তাই প্রতি সকালে জিব পরিষ্কার করুন। এর জন্য টুথব্রাশ ব্যবহারের চেয়ে স্ক্র্যাপার ব্যবহার করাই ভালো।

৪. ‘ডিটারজেন্ট’ খাবার খান! আঁতকে ওঠার কোনোই কারণ নেই। ডিটারজেন্ট খাবার সেগুলোই, যেগুলো খেলে দাঁত পরিষ্কার হয়। এই খাবারগুলোর মধ্যে আছে মূলত ফলমূল, শাক-সবজি। খেতে পারেন আপেল, গাজর, পেয়ারা। পপকর্নও বেশ কাজে দেয়। সবচেয়ে ভালো হয় এ ধরনের খাবার মূল খাবারের পর খেলে। মানে সকাল, দুপুর বা রাতের খাবার খেয়ে একটা আপেল বা গাজর খেলেই দাঁত মোটামুটি পরিষ্কার!
৫. একটা পরীক্ষা চালাতে পারেন। শুনতে বিদঘুটে লাগলেও, এটা বেশ কেজো। হাতের তালু জিব দিয়ে ভেজান। ভেজা থাকতে থাকতে শুঁকে দেখুন। বাজে গন্ধ পেলে ব্যবস্থা নিন। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাউথওয়াশ পাবেন হাতের কাছেই। তবে মাউথওয়াশ যেন অ্যালকোহলমুক্ত হয়। বেশি অ্যালকোহলযুক্ত মাউথওয়াশ উল্টো আপনার দাঁতের বারোটা বাজাতে ওস্তাদ!
৬. দিনে দুবার দাঁত মাজুন। একবার সকালে, আরেকবার রাতে। মুখের লালা দাঁতের প্লাক (ময়লা) ধরে রাখে। ঘুমানোর সময় এই প্লাক শুকিয়ে দাঁতে জমে যায়। ঘুমানোর আগে দাঁত মাজলে প্লাক জমে না। আর সকালে নাশতার পর দাঁত মাজাই ভালো। এতে রাত আর সকালের প্লাক একসঙ্গে দূর হবে। রিডার্স ডাইজেস্ট অনলাইন অবলম্বনে

 

নিরবের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সেনাকুঞ্জে হয়ে গেল চলচ্চিত্র অভিনেতা নিরবের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা। আর এ অনুষ্ঠানে শোবিজ ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের তারাকারা উপস্থিত ছিলেন। এর পাশপাশি পারিবারিক আরও্ অনেক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর পালিয়ে তিনি বিয়ে করেছিলেন প্রেমিকা তাশফিয়া তাহের ঋদ্ধিকে। তিনি এখন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্রী। এর আগে গত শনিবার রাজধানীর গুলশানে একটি রেস্তোরাঁয় নিরব-ঋদ্ধির গায়ে হলুদ সম্পন্ন হয়। রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের সেনাকুঞ্জে নিরব-ঋদ্ধির বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয় রাত ৮টার দিকে। অবশ্য নিরব আগে এসে একাই অংশ নিয়েছেন ফটোসেশনে।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে অনেকটা সিনেমার মতই নিরব ও ঋদ্ধির পরিচয় হয়। দিনাজপুরের মেয়ে ঋদ্ধি সেদিন অটোগ্রাফ নিতে এসেছিলেন নিরবের। এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি তাঁদের প্রথম ফোনে কথা হয়। আর একুশে ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় প্রথম দেখা করেন তাঁরা। তারপর ধীরে ধীরে তাঁদের প্রেম রূপ নেয় প্রণয়ে।

 

‘আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার’ গ্রহণ করলেন সারা হোসেন

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ‘আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার’ (ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড) গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের মানবাধিকারকর্মী ও বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন।

মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন।

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছরই বিশ্বের সাহসী নারীর পুরস্কার ঘোষণা করে। যারা শান্তি, বিচার, মানবাধিকার, লৈঙ্গিক সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন তাদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এ বছর সারা হোসেনসহ বিভিন্ন দেশের ১৪ জন নারীকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে।

২০০৭ সালে চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৬০টি দেশের ১০০ জন সাহসী নারী এ পুরস্কার পেয়েছেন।

সারা হোসেনের পরিচিতি তুলে ধরে জন কেরি বলেন, ‘একজন দক্ষ আইনজীবী হিসেবে সারা হোসেন বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষের, বিশেষত নারীদের পক্ষে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে লড়াই করেছেন। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে ২০১০ সালে বাংলাদেশে যে আইন গৃহীত হয়েছে, সেটির খসড়া প্রণয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন সারা হোসেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নারীবিরোধী বিভিন্ন ঘটনার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করে জয়ী হয়েছেন সারা হোসেন। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাকে প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছে। জ্ঞান ও প্রবল সাহসের জন্য বিশ্বের মানবাধিকার কর্মীদের শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন সারা হোসেন।’

সারা হোসেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের মেয়ে।

আগামী পহেলা এপ্রিল সম্মানপ্রাপ্তরা যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শহর ভ্রমণ করবেন। এর মধ্যে রয়েছে মিসৌরি, কেনটাকি, আলাবামা, ক্যালিফোর্নিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, মিশিগান, মিনোসোটা এবং পেনসিলভানিয়া। ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে তারা আমেরিকান মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। বিভিন্ন রাজ্য ভ্রমণ করে লসঅ্যাঞ্জেলসে তারা পুনরায় একসঙ্গে মিলিত হবেন এবং নারী ও মেয়েদের জীবনমান উন্নয়নে কী ধরনের ভূমিকা পালন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করবেন।

 

তনুর লাশ তোলা হচ্ছে

দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের জন্য সোহাগী জাহান তনুর লাশ কবর থেকে তোলা হচ্ছে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের কবর থেকে তাঁর লাশ উত্তোলন শুরু হয়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছেন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহ আবিদ হোসেন, আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী হাকিম লুৎফুন নাহার, সিআইডির কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল করিম খান, তনুর বাবা মো. ইয়ার হোসেন প্রমুখ।

তনুর লাশ কবর থেকে তোলার জন্য গত সোমবার পুলিশ আদালত থেকে অনুমতি পায়। সে অনুযায়ী আজ তাঁর লাশ উত্তোলন করা হচ্ছে।

এসপি মো. শাহ আবিদ হোসেন গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলা। আসামি শনাক্তকরণে যেসব বিষয় প্রয়োজন, সেগুলো আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য লাশ তোলা হচ্ছে। আমরা চাচ্ছি, আসামিকে শনাক্ত করার জন্য ছোটখাটো একটা আলামতও যেন বাদ না পড়ে।’

২০ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর লাশ কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতর একটি কালভার্টের পাশের ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর বাবা মো. ইয়ার হোসেন কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলাটির প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই ও সেনানিবাস ফাঁড়ির কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম। গত শুক্রবার মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তরিত হয়। গতকাল মামলাটি পাঠানো হয় সিআইডিতে।

 

এক বছরে নারী নির্যাতন বেড়েছে ৭৪ শতাংশ

দেশে ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে নারী নির্যাতনের ঘটনা ৭৪ শতাংশ বেড়েছে। ৫৫টি জেলায় নিজস্ব কর্মীদের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে ব্র্যাকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নারীর প্রতি সহিংস ঘটনার ৬৮ শতাংশই নথিভুক্ত হয় না। নথিভুক্ত হলে সংখ্যাটি আরও বাড়ত।
আরও কয়েকটি সংস্থার নিজস্ব পরিসংখ্যানও নারী নির্যাতন পরিস্থিতির অবনতির চিত্র দিচ্ছে। পুলিশের মামলার হিসাবও বলছে, নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। নারী আন্দোলনকর্মী, মানবাধিকারকর্মীরা প্রতিনিয়তই এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
তবে মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম, গণমাধ্যমে প্রচার—সব মিলিয়ে আগে মানুষ যে বিষয়গুলোকে নির্যাতন বলেই মনে করত না, এখন তা যে নির্যাতন, সেই সচেতনতা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে নির্যাতন নিয়ে মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছে। ফলে নারী নির্যাতনের সংখ্যাটি বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে।
এরই মধ্যে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ড নিয়ে সারা দেশে বিক্ষোভ চলছে।
ব্র্যাকের পরিসংখ্যান: দেশের বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক তাদের সামাজিকÿক্ষমতায়ন কর্মসূচির আওতায় দেশের ৫৫টি জেলা থেকে নির্যাতনের ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গত বছরের জুন মাসে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ২ হাজার ৮৭৩টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। পরের বছর সংখ্যাটি ৫ হাজার ৮টিতে পৌঁছায়। এই এক বছরে নারীর প্রতি প্রায় সব ধরনের সহিংসতাই বেড়েছে। এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, দরিদ্র নারীরা সচ্ছল নারীদের থেকে বেশি (৫৪ শতাংশ) সহিংসতার শিকার হয়েছেন। আর নারী নির্যাতনকারীদের ৮৮ শতাংশই পুরুষ। এই পুরুষেরা নির্যাতনের শিকার নারীর পরিবারের সদস্য বা প্রতিবেশী। ব্র্যাকের জরিপ অনুযায়ী, নির্যাতনের বেশি ঘটনা ঘটে কুমিল্লা, বগুড়া, রাজশাহী, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায়। বছরের মে মাসে নির্যাতনের সংখ্যা বাড়ে। অন্যদিকে জানুয়ারি মাসে নির্যাতনের ঘটনা কম থাকে।
ব্র্যাকের পল্লিসমাজ নামের ওয়ার্ডভিত্তিক ও নারীকেন্দ্রিক সংগঠনের নেটওয়ার্কের সদস্যদের কাজে লাগিয়ে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কোথাও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে ভুক্তভোগীর পরিবার, প্রতিবেশী, পল্লিসমাজের সদস্যরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেসব তথ্য রাজধানীতে ব্র্যাকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠান এবং প্রধান কার্যালয় এ তথ্য ডেটাবেইসে সংরক্ষণ করে।
ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচির পরিচালক আন্না মিন্স প্রথম আলোকে বলেন, নির্যাতনের পর পরিবারগুলো আইনি সেবা নিতে উৎসাহ দেখায়। তবে প্রভাবশালী মহলের চাপে দরিদ্র পরিবারগুলোর পক্ষে আইনি লড়াইয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত যায় মাত্র এক-চতুর্থাংশ মামলা। তবে এর মধ্যে মামলার দীর্ঘসূত্রতাসহ বিভিন্ন কারণেই ভিকটিমের পরিবার আসামিপক্ষের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে বা বিভিন্নভাবে আপস করে ফেলে।
অন্যান্য পরিসংখ্যান: বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের মোট মামলা ছিল ১৭ হাজার ৭৫২টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ২২০টি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়েবসাইটেও গুরুত্বপূর্ণ মামলার তালিকায় ‘নারী নিপীড়ন’ শিরোনামে মামলার তথ্য দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এ শিরোনামে ১০০ মামলার কথা উল্লেখ আছে।
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা ‘ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন (ভিএডব্লিউ) সার্ভে ২০১১’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দেশের বিবাহিত নারীদের ৮৭ শতাংশই স্বামীর মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হন। ২০১৪ সালে এ জরিপ প্রকাশ করা হয়।
নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জাতিসংঘের নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ বা সিডও কমিটির সাবেক চেয়ারপারসন সালমা খান বলেন, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের এক জরিপে পুরুষদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁরা নারীদের অধস্তন মনে করেন কি না। এর উত্তরে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সব ধরনের বেশির ভাগ পুরুষই জানান, তাঁরা নারীদের অধস্তন মনে করেন। অর্থাৎ এখানে নারীদের নিয়ে পুরুষদের মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত নারী নির্যাতনের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সাল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ গত ১১ বছর দুই মাসে বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হত্যা ও আত্মহত্যা করেছেন ৫৬ হাজার ৬৫৬ জন নারী। পরিষদ যৌতুক, বাল্যবিবাহ, ধর্ষণ ও অন্যান্য নির্যাতনের পর হত্যা, নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা এবং অন্যান্যসহ মোট ৩৪টি নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১০৫ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে তিনজনকে। আর গত বছর পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ৩৭৩টি। এর মধ্যে ২১২ জনকেই স্বামী হত্যা করেন। বছরটিতে ৫৪ জন নারী বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নারী অধিকার কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, আগের তুলনায় নারী নির্যাতনের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। দেশের নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়েছেন, তা যেমন সত্য; তেমনি নির্যাতন পিছু ছাড়ছে না, তা-ও সত্য। আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, ডিজিটাল সংস্কৃতি, আইনের কঠোর প্রয়োগ না হওয়া, ধনতান্ত্রিক সমাজের অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে নির্যাতন বাড়ছে।
গত রোববার রাজধানীর উত্তর বাড্ডার গৃহবধূ পূর্ণিমা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা গেছেন। স্বামী মিজানুর রহমান কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে রান্নাঘর থেকে গরম পানি এনে ঢেলে দেন পূর্ণিমার মাথায়। ঘটনার পর থেকে মিজানুর পলাতক।
২৭ মার্চ পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নে সালিস বৈঠকে এক গৃহবধূ ও এক যুবককে কক্ষে আটকে রেখে মারধর করে তাঁদের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়।
পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধে ‘আমরাই পারি’ জোটের চেয়ারপারসন সুলতানা কামালও মনে করেন, নারী নির্যাতনের মূল কারণ সমাজ ও পরিবারে নারীর অধস্তন অবস্থা। অনেক মৌলিক মানবাধিকারের প্রশ্নেও নারীরা পুরুষতান্ত্রিকতার সঙ্গে আপস করছেন। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ) আইনসহ সরকার বিভিন্ন উদ্যোগও নিয়েছে। তবে আইন ও অন্যান্য উদ্যোগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে যা যা করা দরকার, তা সেভাবে হচ্ছে না।
মন্ত্রণালয়ের কিছু উদ্যোগ: গতকাল মঙ্গলবার মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও নারী নির্যাতন পরিস্থিতি আলোচনায় আসে। এতে বলা হয়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দ্রুততার সঙ্গে মামলা নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২৪ মার্চ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আইন ও বিচার বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতনকারীদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করার কাজে সহযোগিতা করার জন্য মহিলা-বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই মন্ত্রণালয়ের নারী ও শিশু নির্যাতন কেন্দ্রীয় প্রতিরোধ সেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে তনু হত্যাসহ মোট নয়টি মামলা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে নারী নির্যাতনের মামলা তিনটি। হেলপ লাইন নম্বর ১০৯২১। আটটি বিভাগীয় শহরে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি), জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৬০টি ওসিসি সেলসহ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ ও সমাজকর্মী হিসেবে সালমা খান বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে দেশের অগ্রগতিতে নারীর অবদানকে দৃশ্যমান করতে হবে। পারিবারিক মূল্যবোধ ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি মানবিক করতে হবে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন জোরদার করতে হবে। সেই সঙ্গে বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে গণমাধ্যম ও রাজনীতিবিদদের সোচ্চার হতে হবে।

 

ট্রাভেল এজেন্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান?

আপনি যদি ভ্রমণ প্রিয় হন তাহলে একজন ট্রাভেল এজেন্ট হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভাবতে পারেন সানন্দ্যে। একজন ট্রাভেল এজেন্ট ভ্রমণ বিষয়ে পরামর্শ দেন, ট্রাভেল প্যাকেজ তৈরী করেন, কোথায় কোন সময় বেড়ানো যায় ও কেমন খরচ এসব বিষয়ে খোঁজ খবর রাখেন, রিজার্ভেশন এবং ভিসার ব্যবস্থা করেন। এখন মানুষ অনেক বেড়াতে পছন্দ করেন। আগের তুলনায় পারিবারিক ট্যুর, বন্ধুদের সাথে বেড়ানো এমনকি একা ঘুরতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এদের সবারই প্রয়োজন পড়ে একজন ট্রাভেল এজেন্টকে। আপনার বুদ্ধিমত্তা এবং শ্রম দিয়ে পেশাটিকে আরও চমকপ্রদ অবস্থায় নিতে পারেন আপনি নিজেই।
একাডেমিক যোগ্যতা
একজন ট্রাভেল এজেন্ট হতে হলে অবশ্যই আপনাকে শিক্ষিত হতে হবে। চাকরীর বাজার এখন খুব খারাপ। পোস্ট কম, প্রার্থী অনেক। তাই পড়াশোনা, ভাল রেজাল্ট, আপনার সার্টিফিকেট আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
ট্রাভেল প্লানিং কোর্স
এখন বিভিন্ন জায়গায় ট্রাভেল প্লানিং কোর্স চালু আছে। এখানে রিজার্ভেশন সিস্টেম, ট্রাভেলের নিয়মকানুন (দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক), মার্কেটিং এই সব বিষয়ে জানতে পারবেন। এটি আপনার চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বাড়তি সুবিধা হিসেবে যোগ হবে। অনলাইনেও অনেক ট্রেইনিং কোর্স পাবেন, যা আপনাকে সহযোগিতা করবে। কিছু প্রোগ্রামে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থাও থাকে!
জ্ঞান বাড়ান
ভাষা শিখুন। জনপ্রিয় অন্তত ২ টি ভাষা জানা থাকলে এটি আপনার অনেক কাজে দেবে। চাকরির জন্য তো বটেই, নিজস্ব ট্রাভেল এজেন্সি খুলতে চাইলে এই ভাষাজ্ঞান আপনাকে অনেক সাহায্য করবে।
দক্ষতা বাড়ান
একজন ট্রাভেল এজেন্টকে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী, পরিশ্রমী হতে হবে। আপনাকে আপনার ক্লায়েন্টকে আশ্বস্ত করতে পারতে হবে যে আপনিই সবচেয়ে ভাল ট্যুর প্ল্যান দিচ্ছেন, সবচেয়ে কম খরচে কিন্তু সবচেয়ে বেশী সুবিধার সাথে। আপনার যোগাযোগ ও অনেক ভাল হতে হবে। কারণ ডেস্কে বসেই বেশিরভাগ কাজ যেমন ইমেইল করা, ফোনে যোগাযোগ করা, খোঁজ নেওয়া এসব করতে হবে আপনাকে।
গ্রাহকের চাহিদা
প্রত্যেক গ্রাহকের আলাদা আলাদা চাহিদা থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। যার যার কাজ, ছুটি অনুযায়ী সে তার ভ্রমণ সাজাতে চাইবে এবং সেই সময়ের সবচেয়ে ভাল অফারটি চাইবে। আপনাকে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি রাখতে হবে।
 
সংযোগ তৈরি করুন
আপনাকে গ্রাহককে কমিশন দিতে হবে। তাই অনেকের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখতে হবে। বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ তো বাড়াবেনই, সাথে তাদের মাধ্যমে এমন যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করবেন যা আপনার কাজে লাগে।
ভ্রমণ করুন
সব জ্ঞান তো আর ফোনে বা ইন্টারনেটে নেওয়া যাবে না। আপনিও ভ্রমণ করুন। আপনি নিজে যদি ভ্রমণপ্রিয় হন, তাহলে সহজেই এই পেশাকে বুঝতে পারবেন। চাক্ষুষ ভ্রমণ আপনার জ্ঞান বাড়াবে, বিভিন্ন এলাকায় আপনাকে পরিচিত করবে, সেসব এলাকার সুবিধা অসুবিধা আপনি নিজেই জানতে পারবেন। কোন ৩য় পক্কের সাহায্য নিতে হবে না আপনাকে।
শুরু করুন
ক্যারিয়ারের শুরুতেই ভাল পজিশন নাও পেতে পারেন আপনি। অনেকে রিসেপশনিস্ট হিসেবে ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি শুরু করেন। ধীরে ধীরে ভাল অবস্থানে আসেন। এমনকি পরে নিজে একটা ট্রাভেল এজেন্সি খুলে ফেলেন। তাই আগে শুরু করুন।
লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

এই গরমে মজাদার টক ঝাল মিষ্টি স্বাদের কাঁচা আমের কারি

এই গরমে ভাতের সাথে একটি টক জাতীয় খাবার থাকলে মন্দ হয় না। আর তা যদি হয় কাঁচা আমের টক তবে তো কোন কথা নেই। অনেকে কাঁচা আম দিয়ে টক রান্না করেন, আবার ডালের সাথেও কাঁচা আম দিয়ে থাকেন। এই কাঁচা আম দিয়ে তৈরি করা যায় কাঁচা আমের কারি। টক, ঝাল, মিষ্টি স্বাদের এই কারিটি খেতে কিন্তু দারুন। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক মজাদার এই রান্নার রেসিপিটি।

উপকরণ:

  • ৪টি খোসা ছাড়ানো আম
  • ২ টেবিল চামচ তেল
  • ১ চা চামচ সরিষা
  • ১ চা চামচ জিরা
  • ১০টি কারি পাতা
  • ২-৩টি এলাচ
  • ১ ইঞ্চি দারুচিনি
  • ১টি মাঝারি আকৃতির পেঁয়াজ কুচি
  • ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
  • ১ চা চামচ মরিচ গুঁড়ো
  • ১ চা চামচ কারি পাউডার
  • ১ চা চামচ আদা রসুনের পেস্ট
  • ১/২ কাপ নারকেল কুচি
  • ১ টেবিল চামচ ভাজা ধনিয়া
  • ২-৩ টি শুকনো মরিচ
  • ১ চা চামচ ব্রাউন সুগার বা সাধারণ চিনি
  • লবণ স্বাদমত

প্রণালী:

১। নন-স্টিক প্যানে তেল গরম করতে দিন। এবার এতে সরিষা, জিরা দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়ুন।

২। তারপর এতে কারি পাতা, এলাচ, দারুচিনি এবং পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভাঁজুন।

৩। বাদামী রং হয়ে আসলে এতে হলুদ গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো, এবং কারি পাউডার দিয়ে নাড়ুন। তারপর এতে আদা রসুনের পেস্ট দিয়ে আরও কিছুক্ষণ নাড়ুন।

৪। এবার এতে কাঁচা আম দিয়ে দিন।

৫। মাঝারি আঁচে আধা কাপ পানি দিয়ে তিন থেকে চার মিনিট রান্না করুন।

৬। এখন নারকেল কুচি, ধনিয়া, শুকনো মরিচের সাথে পানি দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন।

৭। এই পেস্টটি আমের মিশ্রণের সাথে মিশিয়ে নিন।

৮। এরপর চিনি দিয়ে এক মিনিট রান্না করুন।

৯। ভাত বা পোলাও এর সাথে গরম গরম পরিবেশন করুন কাঁচা আমের কারি।

Sanjeev Kapoor Khazana

 

গৃহবধূকে ন্যাড়া করলেন চেয়ারম্যান

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নে কথিত পরকীয়ার অপরাধে সালিস বৈঠকে এক গৃহবধূ ও এক যুবককে মারধর করে তাঁদের মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে গতকাল রোববার গজালিয়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান এস এ কুদ্দুস মিয়া ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান গলাচিপা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি খালিদুল ইসলামসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। এদিকে নির্যাতনের খবর পেয়ে গলাচিপা থানার পুলিশ শনিবার রাতেই গৃহবধূকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যায়। গতকাল রোববার দুপুরে তাঁকে গলাচিপা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
মামলায় নাম উল্লেখ করা অন্য আসামিরা হলেন বাহের গজালিয়া গ্রামের সামসুল হক ডাকুয়া, আশরাফুল হোসেন ও মো. নাসির এবং দক্ষিণ ইচাদি গ্রামের মো. নিজাম ও আবদুল মান্নান।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী বলেন, পাশের বাড়ির তাঁর এক চাচাতো ভাইয়ের ছেলে তাঁদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই যুবক তাঁদের বাড়িতে যান। এ ঘটনা দেখে এলাকার কিছু লোক খালিদুল ইসলাম ও এস এ কুদ্দুসের কাছে অভিযোগ করেন যে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ওই যুবকের পরকীয়া রয়েছে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের নির্দেশে গ্রামপুলিশ আশরাফুল হোসেন ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর স্ত্রী ও ওই যুবককে ডেকে গজালিয়া ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে যান। পরে তাঁদের ইউপি ভবনের দোতলার একটি কক্ষে আটক করে রাখা হয়। ওই দিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে ইউপি ভবনের দোতলার হলরুমে খালিদুল ইসলাম ও এস এ কুদ্দুসের নেতৃত্বে সালিস বৈঠক হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন দুই ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সালিস বৈঠকে রাত আটটার দিকে ওই যুবক ও গৃহবধূকে লাঠিপেটা করা, তাঁদের মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া ও যুবকের ৩০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানার রায় ঘোষণা করা হয়।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী বলেন, সালিস বৈঠকের পর রাত সোয়া আটটার দিকে তাঁর স্ত্রী ও ওই যুবককে ইউপি ভবনের দক্ষিণ পাশের মাঠে নামানো হয়। সেখানে খালিদুল ইসলাম তাঁদের দুজনকে লাঠিপেটা করেন। এরপর খালিদুল ইসলামের নির্দেশে গজালিয়া বাজারের এক সেলুন-কর্মী ক্ষুর দিয়ে তাঁদের মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেন।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য খালিদুল ইসলামের মুঠোফোনে সাত-আটবার ফোন করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন ধরছেন না।
তবে এস এ কুদ্দুস মিয়া দাবি করেন, শনিবার সন্ধ্যায় তাঁকে ইউপি কার্যালয়ে ডাকা হলে সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খালিদুল ইসলামের উদ্যোগে সালিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি (কুদ্দুস) এ ঘটনা নিয়ে তাঁদের বাড়াবাড়ি না করার অনুরোধ করেন। ওই দুজনের চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া বা তাঁদের মারধর করার ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি সালিসের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন না।
গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক মোল্লা বলেন, ‘লোকমুখে খবর পেয়ে শনিবার রাতেই নির্যাতনের শিকার গৃহবধূকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছি। এ ঘটনায় করা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। রোববার দুপুরে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূকে গলাচিপা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’

 

সেনা কর্মকর্তার মেয়ে বলছি

সীমানা রহমান আঁচল: আমি একজন সম্মানিত আর্মি অফিসারের মেয়ে।জীবনের পুরাটা সময় বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টেই কাটসে।এখনও আর্মির সবচেয়ে নিরাপদ এলাকাতেই বসবাস আমার।আর্মি অফিসারের মেয়ে বলেই হয়তো এতোটা নিরাপদ ছিলাম। কিন্তু যদি বাবা বা ভাই আর্মি অফিসার না হয়, সেক্ষেত্রে একটা মেয়ের ক্যান্টনমেন্টে থাকাটা কতটা নিরাপদ তা নিয়ে আশংকা অনেক।

ক্যান্টনমেন্ট এ বাইরের মানুষের ঢুকতে পরিচয় ও সাথে যৌক্তিক কারণ দেওয়া লাগে।এতে মানুষ বিরক্তও হয়। কিন্তু এগুলো নিরাপত্তার জন্যই করা হয়। সেখানে বাইরের থেকে কেউ এসে ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে কোন মেয়েকে রেপ করে হত্যা করার মত অসাধ্য সাধন করা কারো পক্ষেই সম্ভব না।
মানুষ তো এত বোকা না। সবাই বুঝতেসে এটা ভিতরের কারোরই কাজ।ফুল প্ল্যানিং এর মাধ্যমে করা এই হত্যা একটা পরিবারকে ধ্বংস করে দিল।আর যদি এটা কোন সিভিলিয়ান করে তাইলে কোথায় ক্যান্টনমেন্টের নিরাপত্তা?
হ্যাঁ এই রেপ-হত্যা আমাদের দেশে এখন সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। প্রতিদিনই শুনতে হয়। কিন্তু যদি তা আর্মির এলাকায় হয়ে থাকে তাইলে আর্মির কীসের এতো অহংকার? একটা মেয়েকে নিরাপত্তা দিতে পারে না, তাইলে কী নিয়ে এতো গর্ব?
সোহাগী জাহান তনু যদি কোন অফিসারের মেয়ে হয়ে থাকতো তাইলে এতোক্ষণে ওর অপরাধীদের বের করে তিনবার ফাঁসিতে ঝুলানো হয়ে যেতো। দোষ তার বাবার ৪র্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা হওয়ার। দোষ তাদের ভাগ্যের।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
#‎justice for Tonu‬

 

অভিনয়কে বিদায়?

গতকাল সকালে নিজেই জানালেন খবরটা। মিডিয়াকে বিদায় জানাচ্ছেন মডেল ও অভিনেত্রী হাসিন রওশন। নতুন করে আর কোনো বিজ্ঞাপন বা নাটকে দেখা যাবে না তাঁকে। কিন্তু কেন? হাসিন বললেন, ‘এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। পুরো সময়টা আমি পরিবারের সঙ্গে কাটাতে চাই। সবার আগে আমার পরিবার।’
অবশ্য কথা প্রসঙ্গে হাসিন জানালেন, অনেক দিন ধরেই এমন সিদ্ধান্ত নেবেন বলে ভাবছিলেন। কিন্তু হাতে কয়েকটি ধারাবাহিক নাটকের কাজ থাকায় চাইলেও অভিনয়কে বিদায় জানানো সম্ভব হচ্ছিল না। এখন সব ধারাবাহিকের কাজ শেষ। তাই তো সিদ্ধান্ত নিতে আর দেরি করলেন না তিনি।
হাসিন বললেন, ‘ঈদের আগে অভিনয় বন্ধ করে দেওয়ায় অনেকেই হয়তো অবাক হবেন। কিন্তু সত্যি বলতে, আমি আর মিডিয়ায় কাজ করব না। ঈদের আগে দেশের বাইরে যাব। তা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।’
২০১১ সালে ভিট–চ্যানেল আই টপ মডেল প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে মিডিয়ায় পা রাখেন হাসিন। গত পাঁচ বছরে বেশ কিছু বিজ্ঞাপন, একক নাটক এবং ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। এখনো তাঁর অভিনীত কয়েকটি ধারাবাহিক নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে এবং কিছু একক নাটকও আছে প্রচারের অপেক্ষায়।

 

যামিনী রায়ের রঙচিত্র নিয়ে ভিন্নরকম বৈশাখ

বছর ঘুরে আবার দরজায় কড়া নাড়ছে বাঙালির প্রাণের বৈশাখ। ভেতরে ভেতরে নিজেকে প্রস্তুত করছে সবাই নতুন বছরকে বরণ করে নিতে। সেই রেশ ছড়িয়ে যাচ্ছে সবখানে। নানা সমস্যা, যন্ত্রণা সত্ত্বেও বাঙালি ঠিকই বৈশাখের প্রথম প্রহরে বরণ করে নেবে বছরের প্রথম দিনটিকে। পুরনোকে বিদায় জানিয়ে সবাই মেতে উঠবে নতুনের আবাহনে। এই আবাহন নতুন পোশাক ছাড়া একেবারেই অসম্ভব। উদযাপনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাচার এই পোশাক নিয়ে বাঙালির ভাবনার শেষ নেই। ফ্যাশন হাউজগুলো নিজেদের মতো করেই সংগ্রহ সাজাচ্ছে। এই ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধি রঙ বাংলাদেশও চলছে অভিন্ন লক্ষ্যে।

সময়কে রাঙানোর ব্রত নিয়ে। ফলে বৈশাখ নিয়ে রয়েছে বিস্তৃত আয়োজন। রঙ বাংলাদেশ বরাবরই বাংলার কথা বলে। বাঙালির কথা বলে। তাই এবারের অভিযাত্রায় সৃজনের প্রেরণা হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে যামিনী রায়ের অঙ্কনশৈলীকে। আপাদমস্তক বাঙালি চিত্রকর যামিনী রায়ের ক্যানভাসে মূর্ত অবয়ব, রেখা ও রঙের উপস্থিতি আমাদের ঐতিহ্যের পরিচায়ক। রঙ বাংলাদেশের পোশাক ক্যানভাসে এবার উজ্জ্বলরূপে উপস্থিত যামিনী রায়। তবে কেবল বৈশাখ সংগ্রহ নয় বরং যামিনী রায়ের প্রেরণায় তৈরি পোশাক বৈশাখ পরবর্তীতেও মিলবে।

বাংলাদেশের পোশাক সংস্কৃতিকে সচেতনভাবে বিবেচনায় রেখেই রঙ বাংলাদেশ তাদের সংগ্রহ সাজিয়ে থাকে। এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বরং এই সময়, প্রকৃতির অবস্থা, পারিপার্শ্ব, আবহাওয়াও পোশাকের উপকরণ নির্বাচনে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।

চার ধরণের শাড়িই বলা যেতে পারে এবারের বৈশাখ সংগ্রহের মূল আকর্ষণ। সূতি, হাফসিল্ক, এন্ডি ও মসলিনে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া সালোয়ার-কামিজের রেঞ্জটিও উল্লেখযোগ্য। সবগুলোই সুতিপ্রধান।  বৈশাখ সংগ্রহের অন্যান্য পোশাক যেমন মেয়েদের সিঙ্গল কামিজ, ছেলেদের পাঞ্জাবি ইত্যাদিও সুতি কাপড়ে তৈরি।

পাঠকের জ্ঞাতার্থে নিচের তথ্যাবলী সংযুক্ত করা হলো:

#সংগ্রহ প্রেরণা: 

যামিনী রায়ের সৃজনকর্ম।

#ব্যবহৃত মূল রঙ: 

অফ হোয়াইট ও লাল।

#সাহায্যকারী অন্যান্য রঙ: 

সোনালী হলুদ, কমলা, নীল, সবুজ,  মেরুন, জলপাই সবুজ, কফি ।

#সংগ্রহে যা রয়েছে: 

শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ-ওড়না, সিঙ্গল কামিজ, পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের পোশাক, যুগল পোশাক (সালোয়ার-কামিজ + পাঞ্জাবী, শাড়ী + পাঞ্জাবী), ওড়না ও উত্তরীও। এছাড়া আরো রয়েছে শাড়ীর সঙ্গে ম্যাচিং গয়না ও মেয়েদের ব্যাগ। উপহার সামগ্রী হিসাবে রয়েছে নানা ডিজাইনের  মগ ।

#বৈশাখ সংগ্রহে ব্যবহৃত ভ্যালু অ্যাডেড মিডিয়া: 

ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, হ্যান্ড এম্ব্রয়ডারি ও মেশিন এম্ব্রয়ডারি

#পোশাকের মূল্য: 

নারী : ৫০০-৫০০০ টাকা, পুরুষ: ৮০০-২৫০০ টাকা, শিশু : ৩০০-১২০০ টাকা, উপহার সামগ্রী: ২৫০-৩০০ টাকা, মেয়েদের ব্যাগ: ৫০০-১২০০ টাকা, গয়না: ৫০-৭৫০ টাকা ।

#ডিজাইনের সংখ্যা: 

১. শাড়ি: মোট ৬০ ধরণের ডিজাইনের শাড়ি তৈরি করা হয়েছে।

২. পাঞ্জাবি: মোট ৪০ ডিজাইনের পাঞ্জাবি তৈরি করা হয়েছে।

৩. সালোয়ার কামিজ: মোট ২৫ ধরণের ডিজাইনের সালোয়ার-কামিজ তৈরি করা হয়েছে।

৪. সিঙ্গল কামিজ: মোট ডিজাইনের সংখ্যা ৩৫।

৫. বাচ্চাদের পোশাক: এর ডিজাইন সংখ্য ২৫।

৬. মগ: মগ রয়েছে ৫ ধরনের ডিজাইনের।

#অতিরিক্ত তথ্য: 

১.২০ মার্চ থেকে বৈশাখ সংগ্রহের পোশাক সব আউটলেটে পাওয়া যাবে।

২.বৈশাখের পোশাক উৎসব চলবে ২০ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত।

৩.শোরুমের পাশাপাশি অনলাইনেও কেনাকাটা করা যাবে। আছে হোম ডেলিভারীর সুবিধা।

 

মেয়েদের নামের শেষে ‘খাতুন’ শব্দ যুক্ত করার রহস্য!

এ খাতুন শব্দ নামের শেষে যুক্ত করার ব্যাপারে ইসলামের কোন বিধিনিষেধ নেই।‘আল-মাউসু‘আ আলফিকহিয়া কুয়েতিয়া’ তথা ‘কুয়েতস্থ ফিকহ বিষয়ক বিশ্বকোষ’ গ্রন্থে বলা হয়েছে- “ইসলামে নাম রাখার মূলনীতি হচ্ছে- নবজাতকের যে কোনো নাম রাখা জায়েয; যদি না শরিয়তে এ বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকে।

‘নামের বড়াই করো নাকো নাম দিয়ে কী হয়’-পংক্তিটা অনেকাংশে সত্য হলেও সুন্দর অর্থবোধক, মার্জিত ও রুচিসম্পন্ন নামের প্রভাবও গৌণ নয় । হজরত আবুদারদা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের নামে এবং তোমাদের পিতার নামে।অতএব, তোমাদের নামগুলো সুন্দর করে রাখ। (আবুদাউদ, বায়হাকী)

তেমনিভাবে নামের শুরুতে বা শেষে বিভিন্ন উপাধিও আমরা যুক্ত করি, সেগুলোও সুন্দর অর্থবহ হওয়া বাঞ্ছনীয়। আমাদের পাক-ভারত উপমহাদেশে মেয়েদের নামের শেষে খাতুন যুক্ত করা হয়। এ শব্দটির অর্থ, উৎপত্তি ও ব্যবহার সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেই।

বিখ্যাত আরবি অভিধান আল মুজামুল ওয়াসিতে এসেছে- খাতুন মূলত তুর্কি ভাষার শব্দ এর বহুবচন খাওয়াতিন, এটি তুর্কি শব্দ খান বা খাকান এর স্ত্রীলিঙ্গ। আর খান শব্দের অর্থ অভিজাত ব্যক্তি, শাসক ইত্যাদি । বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে খান বা খাঁ একটি উপাধি যা বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। উৎপত্তিগত ভাবে মঙ্গোলীয় ও ও তুর্কী ভাষায় এর অর্থ সেনানায়ক, নেতা বা শাসক। খান বলতে গোত্রপতিও বোঝায়। খাতুন এবং খানম হলো এর স্ত্রী বাচক রূপ। সে হিসেবে খাতুন মঙ্গোলীয় ও তুর্কীতে রাজার রানী সমপর্যায়ের শব্দ। খান এবং খাতুন হিসাবে ঘোষণার পরে এই উপাধি দ্বারা একজন খান -এর রাজরানী (স্ত্রী) খানের সমপর্যায়ের সম্মান পাওয়ার যোগ্য হন ।

বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে খাতুন শব্দের অর্থ রয়েছে, গৃহিণী, অভিজাত মহিলা ইত্যাদি । আরবি নামকোষ আল মাউসুয়াতুল আলামিয়্যাতে ড. মাহমুদ আল আক্কাম বলেন, সেলজুক শাসনামলে খাতুন শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে । তখনকার সেলজুক সুলতানদের স্ত্রীদের খাতুন নামে ডাকা হতো, যেমন খাতুনে সুলতান সোলায়মান । তবে এর আগে ৭০০ হিজরির শুরুতে তুর্কিদের সাথে আরবদের মেলামেশা শুরু হলে আরবদের মাঝেও খাতুন শব্দটির ব্যবহার শুরু হয় । যেমন বিখ্যাত আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রীর নাম ছিল জুবাইদা খাতুন ।

পরবর্তীতে কালের পরিক্রমায় খাতুন শব্দটি তুর্কিদের সূত্র ধরে ভারত উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে । মোগল শাসনামলে ফার্সি ভাষায় খাতুনের অনুপ্রবেশ ঘটে। তখন এই শব্দটি অভিজাত মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল । এরই ধারাবাহিকতায় উর্দু এবং বাংলা ভাষায় তুর্কি খাতুন শব্দটি ঢুকে পড়ে । এখানকার মেয়েদের নামের পরে খাতুন শব্দের ব্যবহার অনেক লক্ষ করা যায় ।

তবে এ খাতুন শব্দ নামের শেষে যুক্ত করার ব্যাপারে ইসলামের কোন বিধিনিষেধ নেই। আল-মাউসুআ আলফিকহিয়া কুয়েতিয়া তথা ‘কুয়েতস্থ ফিকহ বিষয়ক বিশ্বকোষ গ্রন্থে বলা হয়েছে- ইসলামে নাম রাখার মূলনীতি হচ্ছে- নবজাতকের যে কোনো নাম রাখা জায়েজ; যদি না শরিয়তে এ বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকে। [খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা- ৩৩১।] তাছাড়া ভালো অর্থবোধক নাম রাখা এটাও ইসলামের শিক্ষা । এর ফলে সেই ভালো অর্থটি নবজাতকের মাঝে প্রভাব ফেলার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যায়। এ ধরনের আশাবাদ ইসলামে বৈধ। এটাকে তাফাউল (تَفَاؤُلٌ) বলা হয়।

মুফতি মাহফুজ তানিম

 

পৃথিবী বিখ্যাত ৫ জন নার্স

বর্তমান বিশ্বে নার্সিং বিষয়ে পড়াশুনা করাটা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে  উঠছে এবং নার্সিং পেশার চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এর সম্মান ও স্বীকৃতি অর্জনের জন্য কয়েক দশক অপেক্ষা করতে হয়েছে। নার্সিং পেশাটি যে সত্যিই মূল্যবান তা উনবিংশ শতাব্দীর পূর্বে স্বীকৃত ছিলো না যতক্ষণ না কিছু অসাধারণ ব্যক্তি বিশেষ করে  মহিলারা আহত ও অসুস্থ মানুষের সেবা করার জন্য এই পথটি বেছে নেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরেই নার্সের অবস্থান। পৃথিবী বিখ্যাত এমন কিছু নার্স বা  সেবিকাদের কথাই আজ আমরা জেনে নেই আসুন যারা নার্সিং পেশার ক্ষেত্রটিকেই পরিবর্তন করে দিয়েছেন।

 

১। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল
১৮২০ সালের ১২ই মে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল। ছোটবেলা থেকেই নার্সিং এর প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ ছিলো। কিন্তু তাঁর পিতামাতা তাকে এই বিষয়ে শিক্ষা দিতে অসম্মতি জানান। কারণ তখন এটি তেমন কোন মূল্যবান পেশা ছিলোনা। অবশেষে তাঁর পিতামাতা তাঁর ইচ্ছা পূরণের জন্য অনুমতি দেন। ১৮৫১ সালে তিনি নার্সিং এর উপর তিন মাসের প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণের জন্য জার্মানিতে যান। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন “জেন্টল ওমেন” হিসেবে। কিছুদিন পর ক্রিমিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়। নাইটিংগেল তখন নার্সদের একটি দলকে প্রশিক্ষণ দেন যারা তুরস্কের সামরিক হাসপাতালে যুদ্ধাহত সৈনিকদের সেবা শুশ্রূষা করেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে তিনি লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে “নাইটিংগেল ট্রেইনিং স্কুল ফর নার্সিং” প্রতিষ্ঠা করেন যা বিশ্বে মহিলাদের প্রথম নার্সিং স্কুল। এইখান থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ইংল্যান্ডের সব হাসপাতালে নার্সদের পাঠানো হত।  ১৮৬০ সালে নাইটিংগেল নার্সিং প্রশিক্ষণের তত্ত্ব বা মতবাদ প্রকাশ করেন যা ব্যপক  প্রভাব বিস্তার করে। সেই বইটিতে তিনি স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে তাঁর উদ্বেগ, সামরিক স্বাস্থ্য এমনকি হাসপাতালের পরিকল্পনার বিষয়েও আলোচনা করেন যা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় এখনও অনুসরণ করা হয়।
২। কারলা বারটন
ইতিহাসের পরিচিত ব্যক্তিত্ব কারলা বারটন। তিনি ১০ বছর বয়সেই সেবার কাজ শুরু করেছিলেন তাঁর বড় ভাইয়ের শুশ্রূষা করার মাধ্যমে। ১৫ বছর বয়সে সুশিক্ষিতা কারলা পাশের স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৮৫৩ সালে তিনি আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিতে প্যাটেন্ট অফিসে অনুলিপিকর হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬১ সালে যখন আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি সেবার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। যুদ্ধের সময়ে তিনি একজন পুরুষের মতই সম্মুখে থেকে কাজ করেছেন। ১৮৭৭ সালে তিনি আমেরিকাতে রেডক্রসের প্রথম শাখার প্রস্তাব করেন। ১৮৮১ সালে আমেরিকান রেডক্রসের সভাপতি মনোনিত হন। রেডক্রসের কর্মী হিসেবে তিনি প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট অনেক দুর্যোগে আহত মানুষের সেবা করেছেন ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত।
৩। মারগারেট সেঙ্গার  
১৮৭৯ সালে জন্ম গ্রহণ কারা মারগারেট সেঙ্গার খুবই সাহসী নারী ছিলেন। ১৮ তম গর্ভধারণের ফলে তাঁর মায়ের মৃত্যু তাকে নার্সের পেশায় আসতে উদ্বুদ্ধ করে এবং তিনি গর্ভবতী মহিলাদের সেবার ক্ষেত্রে হয়ে উঠেন বিশেষজ্ঞ। তিনি ১৯০০সালে নিউইয়র্কের হোয়াইট প্লেইন হাসপাতালে নাসিং এর উপর পড়াশুনার জন্য ভর্তি হন। তিনি মহিলাদের স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলার জন্য “হোয়াট এভরি গার্ল শুড নো” শিরোনামে আর্টিকেল লিখেন দ্যা নিউ ইয়র্ক কল পত্রিকায়। ১৯১৬ সালে তিনি আমেরিকাতে প্রথম বার্থ কন্ট্রোল ক্লিনিক খুলেন। কিছুদিন পরেই সেঙ্গার এবং তাঁর স্টাফদের গ্রেফতার করা হয় যার ফলে বার্থ কন্ট্রোলের বিষয়টি জনসম্মুখে চলে আসে এবং তিনি একদল সমর্থক পেয়ে যান। অবশেষে সেঙ্গার ও আমেরিকান বার্থ কন্ট্রোল লীগ “ক্লিনিক্যাল রিসার্চ ব্যুরো” নামে প্রথম বার্থ কন্ট্রোল ক্লিনিক স্থাপন করেন ১৯২১ সালে। তিনি তাঁর লেখা অব্যাহত রাখেন এবং “মাই ফাইট ফর বার্থ কন্ট্রোল এন্ড মারগারেট সেঙ্গার” নামের আত্মজীবনী লিখেন।
৪। মেরী ব্রেকেনরিজ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার এক্সপেডিশনারি ফোরসে কাজ করতেন। তিনি মারগারেটের চেয়ে ভিন্ন ভাবে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি ইউরোপিয়ান ধাত্রীদের সাথে দেখা করেন এবং উপলব্ধি করেন যে তাঁদের পদ্ধতি মার্কিন মূলকের প্রত্যন্ত অংশে বসবাসকারী মহিলাদের প্রয়োজন পূরণে সক্ষম। তিনি ঘোড়ার পিঠে চড়ে উত্তর আমেরিকার অ্যাল্পাইন অঞ্চলের গর্ভবতী মহিলাদের জন্মপূর্ব ও জন্মকালীন সেবা প্রদান করতেন। এর জন্য তিনি রোগীর সামর্থ্য অনুযায়ী পারিশ্রমিক নিতেন। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে অনেক নার্স এই কাজ শুরু করেন। কেন্টাকির নার্সিং পরিষেবা কেন্দ্র এখনও এই কাজ করছে।
৫। মেরী এলিজা মাহনি
মেরী এলিজা মাহনি একজন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা যিনি কখনোই না বলতেন না। তিনি প্রথম রেজিস্টার্ড আফ্রিকান আমেরিকান নার্স। তিনি নিউ ইংল্যান্ড হসপিটাল ফর ওমেন এন্ড চিলড্রেন এ ১৫ বছর কাজ করেন এর নার্সিং স্কুলে ভর্তি হওয়ার পূর্বে। তিনি ১৯০৫ সালে গ্র্যাজুয়েট হন এবং একজন সুপরিচিত ও সম্মানিত প্রাইভেট কেয়ার নার্স হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। কৃষ্ণাঙ্গ নার্সদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা দেয়ার জন্য তিনি সব সময় চেষ্টা করে গেছেন। তিনি বর্তমানের আমেরিকান নার্স এ্যাসোসিয়েশনে জয়েন করেন। তিনি বোস্টনের প্রথম মহিলা যিনি ভোটের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন ১৯২০ সালে।
নার্স বা সেবিকারা শুধুমাত্র হাসপাতালের রোগীদের সেবাই করেন না তারা বিশ্ব ব্যাপী অনগ্রসর মানুষের সহায়তায়ও কাজ করেন। সমাজের উন্নতির জন্য বর্তমানে এইচআইভি সংকট মোকাবিলায় অথবা জনবহুল বিশ্বে ক্রমবর্ধমান নগরায়নের কুফল  অথবা দরিদ্র মানুষের মধ্যে খাওয়ার পানির মাধ্যমে রোগের বিস্তারের ক্ষেত্রে কাজ করছেন অনেক সেবিকারা। ভবিষ্যতে যারা এই মহীয়সী নারীদের মতোই ইতিহাসে নাম রেখে যাবেন।
লিখেছেন- সাবেরা খাতুন

 

কিভাবে পাবেন এসএমই লোন ???

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এস.এম.ই)। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র বিমোচন, বেকারত্ব দূরীকরণ, আঞ্চলিক বৈষম্য কমানো, নারী পুরুষের সমতা বিধান ও নারীক্ষমতায়ন বাস্তবায়নে এস.এম.ই খাত এক অসীম ভূমিকা রেখে চলেছে। এশিয়ার শিল্পোন্নত ও উদীয়মান দেশগুলো যেমন- তাদের সমৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে ঠিক তেমনি বাংলাদেশ ও তার উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছাতে পারে এই  এস.এম.ই খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে।

শ্রমঘন শিল্পের পরিকল্পিত অবস্থার ভারসাম্য,  উন্নয়নকে আজ বিশ্ব শিল্পায়নের চালিকাশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করছে। ঠিক তেমনি বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল থেকে উন্নত করতে এস.এম.ই খাতকে শক্তিশালী করতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সুষ্ঠু বিকাশ ও উন্নয়নই অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে। আমাদের দেশের বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের মধ্যে উদ্ভাবনী ক্ষমতা অপরিসীম। দুর্বার পরিশ্রম আর প্রবল আত্মবিশ্বাস এ খাতকে প্রভাবিত করে দেশের আর্থ-সামাজিক আবস্থাকে আরও গতিশীল করে তুলতে পারে। কেননা দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০% ই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প।

আমাদের দেশে একটি প্রচলিত ধ্যান-ধারণা বিদ্যমান রয়েছে যে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রাপ্তিতে সহায়তার পরিবর্তে অহেতুক জটিলতার সৃষ্টি করে। বিষয়টি ঢালাওভাবে কিংবা একতরফাভাবে বলা সমাচীন নয়। উদ্যোক্তা হিসেবে শিল্প কারখানা পরিচালনার জন্য যেমন নিয়মনীতি অনুসরন করতে হয় তেমনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে পদ্ধতিগতভাবে নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়।

অনেক সময় উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাস্তব জ্ঞান এবং ব্যাংকের নিয়মকানুন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারনে অহেতুক অসুবিধার সম্মুখীন হয়। সম্প্রতি দেশের অনেক সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান শিল্পোদ্যোক্তা বিশেষ করে এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ ও অর্থায়নের সুবিধা প্রদানের জন্য এসএমই ব্যাংকিং ব্যাবস্থা চালু করেছে। অনেক ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পৃথক সেল/ ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছে।

ব্যাংক (Bank)

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থবাজারে এসএমই খাতে অর্থায়নে যে সমস্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এসএমই ব্যাংকিং শুরু করেছে তাদের তালিকা নিম্নরূপঃ

(১) ব্র্যাক ব্যাংক (২) বেসিক ব্যাংক (৩) ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (৪) ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড (৫) প্রাইম ব্যাংক লিঃ (৬) এবি ব্যাংক (৭) মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (৮) প্রিমিয়ার ব্যাংক (৯) ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (১০) সিটি ব্যাংক লিমিটেড (১১) মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিঃ (১২) স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক (১৩) ট্রাষ্ট ব্যাংক লিঃ (১৪) ব্যাংক এশিয়া (১৫) ডাচ বাংলা ব্যাংক লিঃ (১৬) সোনালী ব্যাংক লিঃ (১৭) জনতা ব্যাংক লিঃ (১৮) অগ্রনী ব্যাংক লিঃ (১৯) পূবালী ব্যাংক লিঃ (২০) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রভৃতি।

ব্যাংক একাউন্ট খোলা (Opening Bank Account)

ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য আপনার পছন্দ মতো ব্যাংক হতে ফরম সংগ্রহ করতে হবে। ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন জমা দিতে হবে। বিভিন্ন ব্যাংকে এই কাগজপত্রের চাহিদা ভিন্ন রকমের হয়। এছাড়া নিয়মের কিছু কিছু ক্ষেত্রেও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

১.     ব্যাংক কর্তৃক সরবরাহকৃত ফরমে ব্যাংক একাউন্ট করার দরখাস্ত ।

২.     দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

৩.     হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স এর সত্যায়িত কপি।

৪.     লিমিটেড বা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হলে বোর্ড অব ডাইরেক্টরস-এর রেজুলেশন কপি  অর্থাৎ ব্যাংক একাউন্ট খোলার সিদ্ধান্তসহ কে কে ব্যাংক একাউন্ট অপারেট করবেন তাদের নাম উল্লেখসহ গৃহীত সিদ্ধান্তের কপি।

৫.     সার্টিফাইড Join Stock থেকে কার্যারম্ভের অনুমতিপত্র (Certificate of Incorporation)।

৬.     মেম্বার বা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সমিতি হতে নেয়া সদস্য সার্টিফিকেট।

৭.     ঐ ব্যাংকের অন্য কোন একাউন্ট হোল্ডার কর্তৃক আপনার ছবি ও আবেদন পত্রে স্বাক্ষর প্রয়োজন হবে এবং তাকে  সনাক্তকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রাথমিক পদক্ষেপ

(ক) প্রতিটি ব্যাংকের উদ্যোক্তা/ ব্যবসায়ীদের ঋণ ও অর্থায়নের ক্ষেত্রে প্রকল্প দলিল তৈরীর ফরমেট রয়েছে। আপনি যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে ইচ্ছুক সে ব্যাংকের ফরমেট অনুযায়ী প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত পূর্বক প্রয়োজনীয় কাগজ ও দলিলপত্রাদিসমেত প্রকল্প ব্যাংকে দাখিল করতে হবে।

(খ) একটি উপযুক্ত প্রোজেক্ট প্রোফাইল প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে আপনি বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন এবং কনসালটেন্সী ফার্মের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ব্যাপারে এসএমই ফাউন্ডেশনের এডভাইজারী সার্ভিস সেন্টারে যোগাযোগ করলে বিস্তারিত তথ্য ও পরামর্শ পেতে পারেন।

(গ)  যখন কোন ব্যবসায়ী যৌক্তিকভাবে মনে করেন ব্যবসায়ের উন্নতির জন্য তার ব্যাংক ঋণের প্রয়োজন তখন তিনি ব্যাংক ব্যবস্থাপকের বরাবরে প্রয়োজনীয় বিবরণ সম্বলিত দরখান্ত পেশ করবেন।

এতে নিম্নলিখিত কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে

১.       ব্যাংকের নিজস্ব ফরম সংগ্রহকরন এবং তা যথাযথভাবে পূরন।

২.       হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি।

৩.       ব্যবসায়ের টিন নম্বর।

৪.       সম্পত্তির বর্তমান মূল্যের সনদপত্র (যেখানে শিল্পটি বিদ্যমান/ প্রতিষ্ঠা করা হবে)।

৫.       সম্পত্তি বন্ধক নেয়া হলে তার বৈধ চুক্তিনামা (যেখানে প্রতিষ্ঠান রয়েছে বা প্রতিষ্ঠা করা হবে)।

৬.       ব্যাংকের হিসাব নং এবং জামানত স্থিতি।

৭.       পৌরসভার বাসিন্দা হলে কমিশনারের সনদ। স্থানীয় পর্যায়ের হলে চেয়ারম্যান অথবা উপজেলা নির্বাহী  কর্মকর্তার সনদ।

৮.       লিমিটেড কোম্পানি হলে মেমেরেন্ডাম এবং আর্টিক্যাল অব এসোসিয়েশনের কপি। অংশীদারী প্রতিষ্ঠান  হলে অংশীদারী চুক্তিপত্রের সত্যায়িত কপি।

৯.       প্রতিষ্ঠান চালু থাকা অবস্থায় ঋণ গ্রহনে ইচ্ছুক হলে ব্যবসার ১ বছরের লাভ ক্ষতির হিসাব বিবরনী।

১০.       প্রতি ব্যাংকের ফর্মে উল্লেখযোগ্য একটি দিক রয়েছে যাকে লেটার অব গেরান্টি বলা হয়। এক্ষেত্রে   আপনাকে দুইজন যোগ্য গেরান্টারের সনদ প্রদানের ব্যবস্থা রাখতে হয়।

১১.       প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পূর্বে কোন ব্যাংক থেকে ঋণ করে থাকলে তার হিসাবের একটি হালনাগাদ ও   যথাযথ বিবরন থাকতে হবে।

১২.       এসএমই খাতে কতিপয় ব্যাংক কোলেটারেল ফ্রি (জামানতবিহীন) লোন চালু করেছে। এক্ষেত্রে আগ্রহী ক্ষুদ্র ও  মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অগ্রাধিকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার জারী করেছে। এসএমই ফাউন্ডেশনের এডভাইজারী সার্ভিস সেন্টারে এ বিষয়ে তথ্য ও পরামর্শ প্রাপ্তির সুযোগ রয়েছে।

১৩.      কিছু কিছু ব্যাংকে বর্ণিত বিষয়াদির বহির্ভূত দলিলপত্রাদি প্রয়োজন হতে পারে।

ইক্যুইটি এন্ড এন্ট্র্যাপ্র্যানারশীপ ফান্ড (BBGd)

ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু সম্ভাবনাময় শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে সরকারি অর্থায়নে শিল্প উদ্যোক্তাদের নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় ইক্যুইটি এন্ড এন্ট্র্যাপ্র্যানারশীপ ফান্ড ( ইইএফ) এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সম্প্রতি কৃষিভিত্তিক ও খ্যদ্য প্রাক্রিয়াজাতকরন প্রকল্পে ইইএফ সহায়তা প্রদান করা হয়। এসমস্ত প্রকল্পের অগ্রাধিকার খাতসমূহ উল্লেখ করা হলোঃ

১.        কৃষিঃ (ক) হাইব্রীড বীজ উৎপাদন (ধান, ভূট্রা, সব্জী ও তরমুজ), (খ) বাণিজ্যিকভাবে টিস্যু কালচার প্রযুক্তির মাধ্যমে আলু বীজ উৎপাদন, (গ) বাণিজ্যিকভাবে ফুল, অর্কিড চাষ (রপ্তানি বাজারের জন্য), (ঘ) বাণিজ্যিকভাবে সরু/ সুগুন্ধী চাল (রপ্তানি বাজারের জন্য এবং প্রকৃত রপ্তানিকারক যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে), (ঙ) মাশরুম চাষ প্রকল্প।

২.      মৎস্যঃ  মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরনভিত্তিক শিল্পঃ (ক)     IQF Found স্থাপন (Individual Quick Freezing/Fish Processing),  (খ) মূল্য সংযোজিত মৎসজাত খাদ্য উৎপাদন ( Value Added Fish Product Development and Marketing), (গ) আধুনিক পদ্ধতিতে শুটকীমাছ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরন ও বাজারজাতকরন (Dehydrated Fish Plant ),

মৎস্য চাষ ও হ্যাচারীঃ  (ক) বাণিজ্যিকভাবে high value  মাছের খামার ও হ্যাচারী স্থাপন।

খাদ্য উৎপাদনভিত্তিক শিল্পঃ মৎস ও পশুজাত গুনগত মানসম্পন্ন (Balance feed) খাদ্য উৎপাদনভিত্তিক শিল্প।

৩.      পশুসম্পদঃ পশুজাত খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরনভিত্তিক শিল্প স্থাপনঃ (ক) দুধ, ডিম প্রক্রিয়াজাতকরন প্ল্যান্ট, (খ) মাংস প্রক্রিয়াজাতকরন প্ল্যান্ট (আধুনিক কসাইখানাসহ।

প.    স্বাস্থ্য রক্ষা ও ব্যবস্থাপনাভিত্তিক শিল্প স্থাপনঃ গবাদি পশু/ হাঁস-মুরগীর রোগ নির্ণয়/ চিকিৎসার জন্য ল্যাবরেটরী ও হাসপাতাল স্থাপন।

পোল্ট্রি উৎপাদনভিত্তিক শিল্পঃ গ্রেট-গ্র্যান্ট প্যারেন্ট ও প্যারেন্ট স্টক খামার।

সুদঃ সুদ নেই। প্রকল্পের অর্জিত লাভ-লোকসান উদ্যোক্তার এবং ইইএফ এর মূলধনের আনুপাতিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বন্টিত হবে।

প্রকল্প ব্যয়ঃ  মোট প্রকল্প ব্যয় সর্বনিম্ন ৫০.০০ লক্ষ টাকা হতে সর্বোচ্চ ১০.০০ কোটি টাকা হতে পারে।

বিস্তারিত তথ্যের জন্যঃ

ইক্যুইটি এন্ড ইন্ট্র্যাপ্র্যান্যারশীপ ফান্ড ইউনিট

বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রধান কার্যালয়, ঢাকা-১০০০

ফোনঃ ৭১২৬২৮০-৯৫, ৭১২৬১০১-২০

ওয়েবসাইটঃ www.bangladesh-bank.org

স্মল এন্টারপ্রাইজ ফান্ড

(ক) বিভিন্ন ব্যাংকে শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ সহায়তার ব্যবস্থা থাকলেও ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের ঋণ পেতে বেশ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। ক্ষুদ্র শিল্পকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি বিশেষ ফান্ডের ব্যবস্থা রয়েছে।  আলোচ্য তহবিলের আওতায় ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তারা স্পল্প সুদে এবং অপেক্ষাকৃত সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ পায়। এটি এসইএফ ফান্ড  নামে পরিচিত। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের এসইএফ ঋণ সহায়তা প্রদান করে না। নিম্নলিখিত ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিসমূহের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে ক্ষুদ্র  শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সুনির্দিষ্টভাবে এ ঋণ প্রদান করা হয়ঃ

(১) ওয়ান ব্যাংক (২) ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (৩) প্রাইম ব্যাংক লিঃ (৪) ঢাকা ব্যাংক (৫) এনসিসি ব্যাংক  (৬) উত্তরা ব্যাংক (৭) মাইডাস  (৮) আইডিএলসি (৯) পিপলস্ লিজিং (১০) ইন্টারন্যাশনাল লিজিং  (১১) প্রিমিয়ার লিজিং। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ঋণ সহায়তা লাভের জন্য উল্লেখিত ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিসমূহের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

ইন্স্যুরেন্স (Insurance)

একটি শিল্প কারখানায় দুই ধরনের ইন্স্যুরেন্স পলিসি গ্রহণ করতে হয়। মূল কারখানা, বিল্ডিং, মেশিন, কাঁচামালের জন্য যে কোন মালিককে ফায়ার ও ফ্লাড (Fire and Flood ) পলিসি গ্রহণ করতে হয়। বিপদকালীন সময় এই  Insurance Policy একটি শিল্প কারখানাকে রক্ষা করতে পারে। আর কারখানা চালু হওয়ার পর কাঁচামাল আমদানি ও রপ্তানির জন্য মেশিন পলিসি করতে হয়। আপনি পছন্দসই যে কোন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে বেছে নিতে পারেন। রেফারেন্সঃ ড. নূরুল কাদির ও অন্যান্য (২০০৯) এসএমই বিজনেস ম্যানুয়াল, ১ম এডিশন., ঢাকা: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন.

লেখকঃ এস. এম. শহিদুল ইসলাম,

 

বুকের এদিক–ওদিক ব্যথা?

বুকে ব্যথা হলেই হৃদ্রোগের ব্যথা ভেবে আঁতকে ওঠার কিছু নেই। হৃদ্রোগজনিত ব্যথার কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর বাইরেও নানান কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে।
সাধারণত বুকের মাঝের অংশে প্রচণ্ড ব্যথা, বুক ভারী লাগা, বুকে তীব্র চাপ বা মোচড় দিয়ে ধরার মতো অনুভূতি, ৩০ মিনিটের অধিক সময় ধরে ব্যথা থাকা, বিশ্রাম নিলেও ব্যথা না কমা, ব্যথার সঙ্গে ঘাম বা বমি বমি ভাব হৃদ্রোগজনিত ব্যথার লক্ষণ। হাঁটাচলা, পরিশ্রম ও ভারী খাবারের পরে এ ব্যথা বাড়তে পারে। ঘাড়, হাত বা চোয়ালের দিকেও ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বুকে ব্যথার অন্যান্য কারণ
ফুসফুস ও বক্ষপিঞ্জরের বিভিন্ন সমস্যায় বুকে ব্যথা হতে পারে। নিউমোনিয়া, ফুসফুসের পর্দার প্রদাহ, হাঁপানি, ফুসফুসে রক্তসঞ্চালন কমে যাওয়া, ফুসফুসের পর্দায় বাতাস জমা, বক্ষপিঞ্জরের তরুণাস্থি বা পেশির প্রদাহের কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে। ফুসফুসের ক্যানসার ছড়িয়ে গিয়ে ফুসফুসের পর্দা ও বক্ষপিঞ্জর আক্রান্ত হলেও বুকের একপাশে ব্যথা হতে পারে।
যকৃতে সংক্রমণ বা পুঁজ, পিত্তথলির প্রদাহ এবং তীব্র রক্তশূন্যতা হলে বুকে ব্যথা হতে পারে। পেটের প্রদাহ ও কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণেও বুকে চিন চিন ব্যথা হতে পারে। মনে রাখতে হবে, বুকের বাম দিকে ইনফ্রাম্যামারি লাইনের নিচে ব্যথা হওয়াটা মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার লক্ষণ।
কী করবেন?
বুকে ব্যথা হলেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন না। সমস্যাগুলো গুছিয়ে চিন্তা করুন। হৃদ্রোগের ব্যথার যেকোনো বৈশিষ্ট্য দেখা দিলে, হাঁটাচলা করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠলে কিংবা ব্যথার পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট হলে বা জ্বর ও কাশি থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ
মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

 

দুঃখ-যন্ত্রণা ও অশান্তি লাঘবে দোয়া ইউনুসের আমল

হজরত ইউনুস আলাইহিস সালাস আল্লাহর নবী ছিলেন। কোরআনে কারিমের ১০ নম্বর সূরার নামকরণ তার নামে রাখা হয়েছে। তিনি সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হলে একটি প্রকাণ্ড মাছ তাকে গিলে ফেলে। কিন্তু আল্লাহতায়ালার রহমতে ওই মাছ তাকে হজম করতে সমর্থ হয়নি, এমনকি তার দেহের সামান্যতম অংশেও কোনোরূপ ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারেনি। সেই মাছের উদর-অন্ধকারে বসে আল্লাহর নবী হজরত ইউনুস (আ.) অত্যন্ত সম্মান, বিনয় ও কাতর স্বরে যে দোয়াটি পড়েছিলেন তা দোয়া ইউনুস নামে বহুল পরিচিত। সেই দোয়াটি হচ্ছে- ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজজলিমীন।’

কোরআনে কারিমে হজরত ইউনুস (আ.)-এর নামে যেমন একটি সূরা রয়েছে তেমনি ইউনুস নামটিও অন্ততপক্ষে পাঁচ স্থানে উল্লেখিত হয়েছে। কোরআনে হজরত ইউনুস (আ.) কে ‘যুন্নুন সাহিবুল হূত’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। যুন্নুন শব্দের অর্থ মাছের সঙ্গে সম্পৃক্ত আর সাহিবুল হূত শব্দের অর্থ মৎস্য সহচর।

হজরত ইউনুস (আ.) নিনেভা নামক জনপদে প্রেরিত হন। কিন্তু নিনেভার লোকজন তার ডাকে সাড়া না দেওয়ায় তিনি তাদের আল্লাহর গজবের খবর দিয়ে আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষা না করে নিনেভা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য রওনা হন। পথিমথ্যে সমুদ্র পড়লে তা পাড়ি দেওয়ার জন্য একটি জাহাজে ওঠেন। জাহাজটি মাঝ সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ে পড়ে। তখন জাহাজের চালক ধারণা করে যে, জাহাজে কোনো অপরাধী আছে, যে কারণে জাহাজটি বিপাকে পড়েছে। পরে সেকালের নিয়ম অনুযায়ী অপরাধীকে চিহ্নিত করতে লটারির ব্যবস্থা করা হয়। লটারিতে বার বার হজরত ইউনুস (আ.)-এর নাম ওঠে। তখন বাধ্য হয়ে তাকে সমুদ্রে ফেলে দিলে জাহাজটি বিপাক থেকে রক্ষা পায়, আর একটি বিরাট মাছ তাকে গিলে ফেলে।

এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘ইউনুসও ছিল রাসূলদের একজন। স্মরণ করো, যখন সে পালিয়ে বোঝাই নৌযানে পৌঁছল, অতঃপর সে লটারিতে যোগদান করল এবং পরাভূত হলো। পরে এক বৃহদাকার মাছ তাকে গিলে ফেলল। তখন সে নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগল। সে যদি আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা না করত, তাহলে তাকে কিয়ামত পর্যন্ত ওই উদরে থাকতে হতো।’ -সূরা সাফফাত : ১৩৯-১৪৪

হজরত ইউনুস (আ.) অক্ষত অবস্থায় ৪০ দিন সেই বৃহদাকার মাছের উদরে বসে তাসবিহ-তাহলিল, তওবা-ইস্তিগফার করেছিলেন এবং আল্লাহর বিনানুমতিতে স্বদেশ ত্যাগ করার জন্য অনুশোচনা ব্যক্ত করে কান্নাকাটি করেছিলেন। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘এবং স্মরণ করো যুন্নূনের কথা যখন সে রেগেমেগে বের হয়ে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল আমি তাকে পাকড়াও করব না। অতঃপর সে (ইউনুস) অন্ধকার হতে আহবান করেছিল, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আপনি পবিত্র সুমহান। নিশ্চয়ই আমি সীমা লঙ্ঘনকারী।’-সূরা আম্বিয়া : ৮৭

আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নবীকে পরীক্ষা করেছেন। পরীক্ষার অংশ হিসেবে মাছের উদরের সেই নিকষকালো অন্ধকারে ৪০ দিন ভীষণ কষ্টের মধ্যে থেকে হজরত ইউনুস (আ.) আল্লাহর প্রেমের এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তখন আমি তার (ইউনুসের) ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে উদ্ধার করেছিলাম দুশ্চিন্তা থেকে এবং আমি মুমিনদের নাজাত দিয়ে থাকি।’ -সূরা আম্বিয়া : ৮৮

হজরত ইউনুস (আ.) ৪০ দিন মাছের উদরে ছিলেন। এর পর আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন এবং আল্লাহর হুকুমে মাছটি তাকে সমুদ্রের কিনারে উগরে দেয়। কোরআনে কারিমে হজরত ইউনুস (আ.)-এর মুক্তি পাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে, ‘অতঃপর আমি ইউনুসকে নিক্ষেপ করালাম এক তৃণহীন প্রান্তরে এবং সে ছিল রুগ্ন। আর আমি তার ওপর একটি লাউগাছ গজালাম।’ -সূরা সাফফাত : ১৪৫-১৪৬

উল্লেখ যে, হজরত ইউনুস (আ.) দীর্ঘ ৪০ দিন মাছের পেটে পানি-খাদ্যবিহীন অবস্থায় থাকায় ফ্যাকাসে এবং ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন, যে কারণে এই অবস্থা থেকে নিরাময়ের জন্য আল্লাহ্তায়ালা পরিবেশ দূষণমুক্তকারী এবং নির্মল ছায়াদানকারী লাউগাছ সেখানে গজিয়ে দেন। সেই লাউগাছটি এত দ্রুত গজিয়ে ওঠে যে, মুহূর্তের মধ্যে ঘন লতাপাতায় তা তাঁবুর আকার ধারণ করে। তিনি কচি লাউ খাবার হিসেবে গ্রহণ করেন।

দোয়া ইউনুস- লাইলাহা ইল্লা আন্তা সুব্হানাকা ইন্তি কুন্তু মিনাজজলিমীন এর মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহর নবী হজরত ইউনুস (আ.) এই দোয়া পাঠ করেই আল্লাহর রহমতে মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।

যদি কেউ দোয়া ইউনুস কয়েকবার পড়ে দোয়া করে তার দোয়া কবুল হয়। কেউ যদি বিপন্ন বা বিপদগ্রস্ত অবস্থায় এই দোয়া পাঠ করে আল্লাহর রহমতে সে বিপদ থেকে উদ্ধার পায়।

কোনো কোনো বুজুর্গ বলেন, সিজদায় যেয়ে ৪০ বার দোয়া ইউনুস পাঠ করে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন।

আরও বর্ণিত আছে, দৈনিক এক হাজার বার দোয়া ইউনুস পড়লে পদমর্যাদা সমুন্নত হয়, আল্লাহ তার রুজি-রোজগারে সমৃদ্ধি দান করেন, তার দুঃখ-যন্ত্রণা, পেরেশানি, অশান্তি, কষ্ট প্রভৃতি নিবারিত করেন, সকল প্রকার কল্যাণের দ্বার তার জন্য খুলে দেন, শয়তানের প্ররোচনা হতে তাকে রক্ষা করেন।

এ দোয়া এক লাখ পঁচিশ হাজার বার পড়লে (খতমে ইউনুস) সব ধরনের অপকার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, রোগ-শোক থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

সূরা ইউনুসে রয়েছে আল্লাহর তাওহিদের সুস্পষ্ট ঘোষণা, তার পবিত্রতার ঘোষণা এবং নিজের অপরাধের স্বীকারোক্তি, যে কারণে এটা এত মাহাত্ম্যপূর্ণ হয়েছে।

নিয়মিত সূরা ইউনুস আমলের মধ্যে অনেক ফায়দা রয়েছে। হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! এই দোয়ার গ্রহণীয়তা কি কেবল হজরত ইউনুস (আ.)-এর জন্যই প্রযোজ্য, না সব মুসলিমের জন্য? জবাবে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে তার জন্য এই দোয়াটি খাসভাবে কবুল হলেও কবুলের ব্যাপারে এটা সব মুসলিমের জন্য সব সময়ই প্রযোজ্য। তুমি কি কোরআনে পাঠ করোনি- ‘ওয়া কাজালিকা নুনজিল মুমিনিন- আর এভাবেই আমি আল্লাহ মুমিনদের উদ্ধার করে থাকি।’

 

মানসিক চাপমুক্ত ও মন ভালো রাখতে একা থাকুন

একা থাকা মানেই অলস জীবন-যাপন, দুশ্চিন্তা আর সময়ের অপচয় মনে করেন অনেকে। কিন্তু Solitude আর Loneliness শব্দ দু’টি কিন্তু ভিন্ন। বেশিরভাগই এ দু’টোকে এক বলে ভুল করেন।

Solitude অর্থ নির্জনতা যেখানে Loneliness মানে একাকিত্ব। একা থাকা মানেই একাকিত্ব নয়। নির্জনে শুধুমাত্র নিজেকে সঙ্গ দেওয়া একটি শারীরিক ও মানসিক চাহিদা। এতে ফিজিকাল ও মেন্টাল রিল্যাক্সমেন্ট হয়।

Loneliness এর ফলশ্রুতিতে তৈরি হতে পারে মানসিক অবসাদ। কিন্তু মনোবিজ্ঞান বলে, Solitude শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ফলদায়ক। জীবনকে আরও চিন্তাশীল, গতিশীল, সফল ও উৎপাদনশীল করতে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় নির্জনে একা থাকা উচিত বলে মনে করে মানসিক বিশেষজ্ঞরা। এর কিছু সফলতা রয়েছে-

চিন্তার জট মুক্তি
গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা যেটুকু সময় নির্জনে একা থাকি সেসময় আমাদের মস্তিষ্ক ভালো ভালো সিদ্ধান্ত তৈরি ও জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারে এবং উদ্যম ফিরে আসে। যা কোলাহল বা লোকজনপূর্ণ স্থানে সম্ভব নয়।

মানসিক চাপ দূর
দৈনন্দিন কাজ, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, মিটিং ইত্যাদিতে মস্তিষ্কে চাপ তৈরি হয়। দিনে নির্দিষ্ট সময়ে একা থাকুন। এ সময়টায় নিজের যা ভালো লাগে, যা ভালো অনুভব করেন তাই করুন। ক্লান্তি দূর হয়ে শরীর ও মনে জোর ফিরে আসবে।

সূক্ষ্ম চিন্তা ও বিচারশক্তি
সারাক্ষণ অন্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বা আলোচনা করলেও অনেক সময় সমাধান পাবেন না। কারণ আপনার মস্তিষ্ক তথ্য নিতে থাকবে কিন্তু তা বিশ্লেষণের জন্য, ভুল-ঠিক বিচারের সময় প্রয়োজন। সে সময়টি নিন।

ইতিবাচক চিন্তা ও সহজ জীবনবোধ
নির্জনতা জীবনকে সহজ করে। সারাদিন কী কী করলেন, আপনার দিনের পরিকল্পনা কতোটুকু সফল হলো, কতোটুকু অসম্পূর্ণ থাকলো, সফল হতে আর কী করা যেতে পারে তা ভাবার ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দিনের এ ভাগটাই। এসব ছাড়াও সম্পর্কের জটিলতা ও সমস্যাগুলো সমাধানের পথ হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ এ সময়টি।

বিছিন্নতা
আপনি একাধারে ঘরে-বাইরে দায়িত্ব পালন করছেন। সামলে নিচ্ছেন বিভিন্ন ধারার সম্পর্ক। দিনের যেকোনো একটি ভাগে নিজেকে সব বন্ধন থেকে মুক্ত করুন। নির্জন বারান্দায় সময় কাটান, ছাদে বা প্রিয় স্থানে একা সময় পার করুন। ভাবুন এই মুহূর্তে আপনি একমাত্র সত্ত্বা যাকে আপনি চেনেন ও জানার চেষ্টা করছেন। দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার সব সমীকরণগুলো মিলে যাবে।

একটুখানিই তো সময়, এরপর না হয় ফের যুক্ত হবেন প্রিয় মানুষদের সঙ্গে ও ব্যস্ত পৃথিবীতে।
ভালো থাকুন।

 

স্বীকৃতির আনন্দ ম্লান

স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর সরকার বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকজনকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছে। সরকারের গেজেট তালিকা অনুযায়ী, সারা দেশে প্রথম দফায় ৪১ জনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১১ জন রয়েছে। কিন্তু গত সাড়ে পাঁচ মাসেও কোনো অনুদান, ভাতা বা সম্মানী তাঁরা পাননি। ফলে স্বীকৃতি পেয়ে যে আনন্দ তাঁরা পেয়েছিলেন, অব্যাহত কষ্টে তা ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের রাবিয়া বেগম, হাসনা বেগম, জলো বেগম, সফেদা বেগম, আয়েশা বেগম, রেনু বেগম, হাজেরা বেগম, আরবী বেগম, রাহেলা বেগমসহ সদরের লিলি বেগম ও শিবগঞ্জের মালেকা বেগম স্বীকৃতি পেয়েছেন। এই বীরাঙ্গনাদের মধ্যে ৯ জনই বোয়ালিয়া ইউনিয়নের।
এ ইউনিয়নের নরশিয়া, চকমজুমদার ও সাহাপুরে পাকিস্তানি বাহিনী এবং রাজাকাররা হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া ও সম্ভ্রমহানির ঘটনা ঘটায় বেশি। এ এলাকায় সম্ভ্রম হারানোর সংখ্যা কয়েক শ। অনেকে লজ্জায় ভয়ে মুখ খোলেনি আজও।
গত বছরের ১২ অক্টোবর সরকার এ-সংক্রান্ত গেজেট তালিকাটি প্রকাশ করে। গত মঙ্গলবার সরেজমিনে গেলে হাজেরা বেওয়ার সন্তান কেতাউর রহমান ও রাবেয়া বেওয়ার সন্তান নাসিম বলেন, ‘গত বিজয় দিবসে জেলা প্রশাসক আমাদের মাসহ বোয়ালিয়ার সাত বীরাঙ্গনা মাকে একটি করে শাড়ি, একটি তোয়ালে ও একটি চাদর দিয়েছিলেন। ঘর করার জন্য টিন দিতে চেয়েছিলেন। তাঁদের পরামর্শে স্থানীয় সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। কোনো টাকা আসেনি ব্যাংকে, টিনও পাননি কেউ।’
তাঁরা জানান, বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে পরের জমিতে কোনো মতে খুপরি চালা তুলে বসবাস করছেন। তাঁদের সংসার চলে জমিতে ধান কুড়িয়ে, ঝিয়ের কাজ ও ভিক্ষা করে। কেউ কেউ দিন যাপন ও বাস করছেন ছেলে-মেয়ে বা মেয়ে জামাইয়ের দয়ায়। বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হাসনা বেওয়ার ভিক্ষা করে সংসার চলে। বাড়ি করার জন্য দ্রুত জমি, টিন ও ভাতা দেওয়ার জোর দাবি জানান তিনি।
মালেকা বেগমের সাত সন্তান। কিন্তু থাকেন ননদের জমিতে খুপরি চালায়। ছেলেরা দেখে না। তাই চেয়েচিন্তে চলে চার মেয়ে ও তাঁর। এক টুকরা জায়গা ও একটি ঘরের দাবি তাঁর। রাহেলা বেগমের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলের নিজ সংসারেই টানাটানি। মাকে দিতে পারেন না খরচ। তাই মেয়ে ও পরের বাড়িতে কাজ করে ও ধান কুড়িয়ে চলে সংসার। বোয়ালিয়া এলাকায় একাত্তরের ২২ নভেম্বর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বেনজির আহমেদ বলেন, ‘স্থানীয় রহনপুরে এবি উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপিত পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের ক্যাম্প ছিল। তারা নরশিয়া, চকমজুমদার ও সাহাপুর এলাকায় নেমে ১৭ মুক্তিযোদ্ধা ও ১৮ জন নিরীহ মানুষকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। বহু নারীর সম্ভ্রমহানি করে তারা, যা আজও ভুলতে পারেননি সম্ভ্রম হারানো ও শহীদদের স্বজনরা।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অস্ত্রহাতে যুদ্ধ না করলেও এসব বীরাঙ্গনা আমাদের মতোই বীর। লোকলজ্জা আর ধর্মীয় গোঁড়ামির শিকার এসব নারী মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক।’ এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। আপনার মাধ্যমে জানলাম, তাঁদের আশ্বস্ত করা টিন দেওয়া হয়নি। এক সপ্তাহের মধ্যে এসব বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার জন্য টিন পৌঁছে দেওয়া হবে। ভাতা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হবে।’

 

সোহাগী জাহান হত্যাকাণ্ড, তদন্তে অগ্রগতি নেই, পরিবারকে জেরা

কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান (তনু) হত্যাকাণ্ডের তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। শুক্রবার রাতে ও গতকাল শনিবার দুপুরে সোহাগীর পরিবারের সদস্যদের বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা।
হত্যার বিচার চেয়ে গতকাল শনিবারও ছাত্র-জনতা কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় বিক্ষোভ করেছে। প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অব্যাহত আছে রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে।
২০ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা সেনানিবাসের পাহাড় হাউস এলাকায় সোহাগ ী জাহানের লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। নিহত শিক্ষার্থীর বাবা ইয়ার হোসেন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। হত্যা মামলাটি শুক্রবার পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহ আবিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই। সংরক্ষিত এলাকায় কিছু আইনগত বিধিনিষেধ থাকে। বলছি না যে আমরা সহযোগিতা পাচ্ছি না। তবে তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অন্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।’
সোহাগী হত্যার বিচারের আশ্বাস দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘আমরা অনেক বড় বড় ঘটনার রহস্য বের করেছি। এটিরও রহস্য উদ্ঘাটন হবে। হয়তো একটু সময় লাগছে। এ ঘটনায় শিগগিরই সুখবর দেওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।’
শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লার মুরাদনগরের মির্জাপুরে গ্রামের বাড়িতে অবস্থানরত সোহাগীর বাবা মো. ইয়ার হোসেন ও বড় ভাই নাজমুল হোসেনকে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কর্মকর্তারা নিয়ে যান। রাত সাড়ে ১২টার দিকে সোহাগীর মা আনোয়ারা বেগম, ভাই আনোয়ার হোসেন ও চাচাতো বোন লাইজু আক্তারকে র্যাব-১১-এর একটি দল কুমিল্লার শাকতলা কার্যালয়ে নিয়ে যায়।
গতকাল সকালে মুরাদনগরের মির্জাপুরে সোহাগীর চাচা আলাল হোসেন এসব তথ্য জানান। এ সময় তাঁদের প্রতিবেশী মো. হুমায়ূন কবীর বলেন, গভীর রাতে র্যাব আসায় পরিবারের সদস্যরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তাই প্রতিবেশী দুজনও তাঁদের সঙ্গে যান।
রাতে র্যাব কার্যালয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়েছিল বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১১ কুমিল্লার অধিনায়ক মো. খুরশীদ আলম।
গতকাল দুপুরে সোহাগীর পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ডিবির সদস্যরা। ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের পর সোহাগীর পরিবারের সদস্যরা এখন ক্যান্টনমেন্টের বাসায় রয়েছেন।
সোহাগী হত্যার তদন্ত সব বাহিনীর সমন্বয়ে হচ্ছে, নাকি আলাদা আলাদাভাবে বাহিনীগুলো করছে—এ সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো তথ্য মেলেনি। জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে। র্যাব কেন তাদের বাড়ি থেকে তুলে এনেছে আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।’
কুমিল্লায় প্রতিবাদ অব্যাহত: হত্যার বিচার চেয়ে গতকালও ছাত্র-জনতা নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় বিক্ষোভ করেছে। এ সময় তারা ‘একাত্তরের বিচার হচ্ছে ৪০ বছর পর, তনু হত্যার বিচার পাব কত বছর পর?’ ‘আপনি দেখে চলে যাবেন, কারণ তনু আপনার বোন না’ ইত্যাদি লেখা প্লাকার্ড বহন করছিল।
হত্যার বিচার চেয়ে আজ রোববার সকাল ১০টায় নগরের কান্দিরপাড় থেকে মিছিল করে পদুয়ার বাজার ও আলেখার চর এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সোহাগীর সহপাঠীরা। বেলা তিনটায় গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মীরা সোহাগীর হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিল। সে সময় পেরিয়ে গেছে গত শুক্রবার।
আরও প্রতিবাদ: সোহাগী হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানীর উত্তরায় হাউস বিল্ডিংয়ের সামনের সড়কে মানববন্ধন করে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ‘আমরা সবাই তনুর ভাই, তনু হত্যার বিচার চাই’ স্লোগান দিয়ে বিচারের দাবি করে শিক্ষার্থীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নীলফামারীর সৈয়দপুরেও মানববন্ধন হয়েছে।
লন্ডন প্রতিনিধি জানান, এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গত শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের একটি রেস্তোরাঁয় প্রতিবাদ সভা করেছে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত কুমিল্লাবাসীর সংগঠন গ্রেটার কুমিল্লা অ্যালায়েন্স। সভায় বক্তারা এই হত্যার রহস্য উন্মোচন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য দেন নুরুল আলম, লেয়াকত আলী, সংস্কৃতিকর্মী স্মৃতি আজাদ প্রমুখ।
আসকের নিন্দা ও উদ্বেগ: সোহাগী হত্যায় এখন পর্যন্ত কোনো অপরাধী গ্রেপ্তার না হওয়ায় নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আসক বলেছে, সেনানিবাসের মতো নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকায় এ ধরনের নৃশংস ঘটনা এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে আইনের আওতায় আনতে না পারা জনমনে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। সংগঠনটি অবিলম্বে দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

 

মুস্তাফিজে মেতেছে ক্রিকেট বিশ্ব

ওয়ানডে ক্রিকেটে জীবনের প্রথম দুই ম্যাচে পাঁচ বা তার চেয়ে বেশি উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। গত বছর জুনে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১৩ উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন এই তরুণ বাঁহাতি পেসার।

সেই সিরিজে তিনি গড়েছিলেন দারুণ একটি রেকর্ডও। ১২টি করে উইকেট নিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে সফল বোলারের তালিকায় যৌথভাবে শীর্ষে ছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভ্যাসবার্ট ড্রেকস। দুজনকে পেছনে ফেলে মুস্তাফিজ অন্য উচ্চতায় উঠেছিলেন।

২০০২ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফরে ১২ উইকেট নিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে সাফল্যের রেকর্ড গড়েছিলেন ড্রেকস। ২০০৬ সালের আগস্টে কেনিয়ার বিপক্ষে ১২ উইকেট নিয়ে ড্রেকসের পাশে দাঁড়ান মাশরাফি।

ধোনিদের বিপক্ষে সেই সিরিজে প্রথম ম্যাচে পাঁচ, দ্বিতীয় ম্যাচে ছয়ের পর তৃতীয় ম্যাচে দুই উইকেট নিয়ে রেকর্ডটা নিজের করে নিয়েছেন বাংলাদেশের ভারত-বধের নায়ক।

এবার টি-টোয়েন্টিতেও নতুন এক মুস্তাফিজকে দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। বিশ্বকাপের ফেভারিট নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়েছন এই তরুণ পেসার।

টি-টোয়েন্টিতে এটি তাঁর সেরা সাফল্য। এর আগে সাত ম্যাচে দুটি করে উইকেট নিয়েছিলেন বিশ্বক্রিকেটের এই নতুন বোলিং সেনসেশন। শনিবার ২২ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে ব্যক্তিগত সেরা সাফল্য পান তিনি।

শুধু তাই নয়, এবারের বিশ্বকাপেরও সেরা সাফল্য এটি। অস্ট্রেলিয়ার বোলার জেমস ফকনার শুক্রবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ২৭ রানে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন। মুস্তাফিজও এদিন পাঁচ উইকেট নিয়েছেন তবে কম রান খরচ করে।

শুধু পাঁচ উইকেটই নেননি মুস্তাফিজ, তার মধ্যে মধ্যে চারটিই তিনি বোল্ড করেছেন- হেনরি নিকোলস, কেন উইলিয়ামসন, স্যান্টনার ও নাথান ম্যাককালামকে। আর একটিতে ক্যাচ- গ্রান্ট ইলিয়ট।

তিন ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে এবারের আসরে শীর্ষ বোলারদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন তিনি। আর দশ উইকেট করে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান ও আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবি যৌথভাবে শীর্ষে।

 

বিনম্র শ্রদ্ধায় স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন

বিনম্র শ্রদ্ধায় স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের স্মরণ করেছে জাতি।

সাভার : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে যৌথভাবে ফুল দিয়ে দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।

রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানোর পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা।

এরপর ক্রমান্বয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার,প্রধান বিচারপতিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সর্বস্তরের জনগণ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
নেতাকর্মী নিয়ে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

হাজারো মানুষের শ্রদ্ধা,ভালোবাসায় ফুলে ফুলে শোভিত হয় শহীদ বেদি।

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহে ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে শুরু হয় দিবসের প্রথম প্রহর। প্রথম প্রহরে শহরের পাটগুদামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, বিভাগীয় কমিশনার জি এম সালেহ উদ্দিন, ময়মনসিংহ রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, পৌরসভাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

সকালে রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ, শারীরিক কসরত প্রদর্শন ও পুরস্কার বিতরণ করা হয় । এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

ফরিদপুর : ফরিদপুরে নানা কর্মসুচির মধ্যে দিয়ে ৪৬তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করেছে সর্বস্তরের মানুষ। আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শহরের গোয়ালচামট এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় স্বাধীনতা স্থম্ভে প্রথমে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাঁদের উদ্দেশ্য দোয়া করা হয়।

দোয়া শেষে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশারফ হোসেনের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) সরদার সরাফত আলী, পুলিশ সুপার (এসপি) জামিল হাসান প্রমুখ।

এরপর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা আওয়ামী লীগ ও সব অঙ্গসংগঠন, জেলা বিএনপি ও সব অঙ্গসংগঠন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট ছাড়াও সাহিত্য-সাংকৃতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কেন্দ্রীয় স্বাধীনতা স্থম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

চট্টগ্রাম : বিউগলের করুন সুর ও রাষ্ট্রীয় সালামের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে স্বাধীনতা দিবসের দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয়। শনিবার রাত ১২টা এক মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্বাধীনতার মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠান।

দিনের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথম ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। পরে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, নগর আওয়ামী লীগের পক্ষে সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চেীধুরী, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, বিভাগীয় কমিশনার রুহুল আমিন, জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শহীদ উল আলম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান স্বাধীনতার বীর শহীদদের।

নেত্রকোনা : নেত্রকোনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে মহান স্বাধীনতা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, পৌরসভা,  বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে নেত্রকোনা ও আটপাড়ায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিফলকে ফুলদিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

সকালে নেত্রকোনার মোক্তার মাঠে  জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও আটপাড়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ মাঠে শারীরিক কসরত ও কুচকাওয়াজ প্রদর্শিত হয় ।

শেরপুর : যথাযোগ্য মর্যাদায় শেরপুরে পালিত হচ্ছে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। প্রত্যুষে শেরপুর সদর থানা প্রাঙ্গণে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির শুরু হয়।

সকালে শেরপুর মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় হুইপ আতিউর রহমান আতিক, ডিসি ডা. এ এম পারভেজ রহিম, এসপি মেহেদুল করিম। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। সকাল ৮টায় শেরপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় কুচকাওয়াজ ও শরীর চর্চা প্রদর্শনী। দুপুরে শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভাসহ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

নরসিংদী : নরসিংদীতে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নরসিংদীর মোছলেউদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ডিসি আবু হেনা মোরশেদ জামান ও এসপি আমেনা বেগম। এ সময় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। কুচকাওয়াজ শেষে মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে অনুষ্ঠিত হয়।

মুন্সীগঞ্জ : দিবসের প্রথম প্রহরে শহরর কাচারি চত্বরে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ‡জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা, মুন্সীগঞ্জ মুক্তিযাদ্ধা সংসদ, মুন্সীগঞ্জ †প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্নœ সংগঠন। এ ছাড়া দিনে মুন্সীগঞ্জ †জেলা স্টেডিয়াম বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণে বর্ণিল কুচকাওয়াজ ও শরীরচর্চা প্রদর্শনীর আয়াজন করা হয়।

খুলনা : দিবসের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে খুলনার গল্লামারী স্মৃতিস্তম্ভ প্রাঙ্গণে  মোমবাতি প্রজ্বালন করে মহানগর  আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। পরে স্বাধীনতার বীর শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান, সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস প্রমুখ। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল, বিশ্ব বিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের মানুষ আজ ভোরে  গল্লামারী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

মংলা : মংলায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে সকালে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বের হওয়া র‌্যালি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় কুচকাওয়াজসহ স্বাধীনতার যুদ্ধের নানা কর্মকাণ্ডের প্রদর্শনী, ক্রীড়া, চিত্রাঙ্কন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর আগে ২৫ মার্চের কালো রাতে স্থানীয় শহীদ মিনারে প্রদীপ প্রজ্বালন করে বিভিন্ন সংগঠন। এদিকে দিবসটি উপলক্ষে দিগরাজে অবস্থিত নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের দপ্তরে সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত রাখা হয়েছে দুটি যুদ্ধজাহাজ। যুদ্ধ জাহাজ দেখতে দুপুর থেকে সেখানে ভিড় জমে বিভিন্ন বয়সের বিপুল লোকজনের।

চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। আজ ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল ৮টায় স্থানীয় স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস ও পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান পুলিশ আনসার- ভিডিপি এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন। এরপর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শিত হয়।

এ সময় চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ হামীম হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) আনজুমান আরা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুর রাজ্জাক, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান, সদর উপজেলার ইউএনও কে এম মামুনুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কুষ্টিয়া : দিবসের প্রথম প্রহর রাত ১২টা এক মিনিটে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরে কেন্দ্রীয় স্মৃতিস্তম্ভে ৩১ বার তোপধ্বনির পর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন ডিসি সৈয়দ বেলাল হোসেন ও এসপি প্রলয় চিসিম। পরে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। এ সময় তাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে শহীদদের মাগফিরাত কামনায় সুরা ফাতেহা পাঠ ও দোয়া করা হয়। একইভাবে মজমপুর এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে পুষ্পমাল্য দেওয়া হয়।

মাগুরা : যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মাগুরায় মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টায় বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অভিবাদন মঞ্চে সালাম গ্রহণ করেন ডিসি মাহবুবুর রহমান ও এসপি এ কে এম এহসান উল্লাহ। সকাল  ৭টায় শহরের নোমানী ময়দানে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট বীরেন শিকদার, ডিসি মাহবুবর রহমান, এসপি এ কে এম এহসান উল্লাহ, জেলা পরিষদের প্রশাসক সৈয়দ শরিফুল ইসলাম, মাগুরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।

মেহেরপুর : নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মেহেরপুরে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত হচ্ছে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা করা হয়। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের কলেজ মোড়ে অবস্থিত শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ডিসি শফিকুল ইসলাম। এরপর মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে সভাপতি ফরহাদ হোসেনের নেতৃত্বে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসপি হামিদুল আলম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পর্যায়ক্রমে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মেহেরপুর স্টেডিয়াম মাঠে কুচকাওয়াজ ও শরীর চর্চা প্রদর্শনসহ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

সিলেট : বীর শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধা ও ফুলেল ভালোবাসায় সিলেটে উদযাপিত হচ্ছে মহান স্বাধীনতা দিবস। রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। দিবসের প্রথম প্রহরে পর্যায়ক্রমে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান শহীদ মিনার বাস্তবায়ন পরিষদ, জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ড, মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সিলেট প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন।

জয়পুরহাট : জয়পুরহাটে নানা আয়োজনে মহান স্বাধীনতা  ও জাতীয় দিবস পালিত হচ্ছে। ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে রাত ১২টা ১ মিনিটে দিবসের প্রথম প্রহরে শহরের শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানের স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু, ডিসি আবদুর রহিম, এসপি মোল্যা নজরুল ইসলাম ও জেলা পরিষদের প্রশাসক এস এম সোলায়মান আলী। পরে একে একে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, জেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সকালে জয়পুরহাট স্টেডিয়ামে পুলিশ, স্কাউটস, গার্লস গাইড, কাবস্ স্কাউটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে, বীর মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।

Collected: NTV

 

তনু হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ওই কলেজের নাট্য সংগঠন ‘ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটার’র সদস্য সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণপূর্বক হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র।

বুধবার (২৩ মার্চ) বিকেলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সীমা দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক মর্জিনা খাতুন এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে নারী নেতৃদ্বয় বলেন, ‘সারাদেশে ভয়াবহ নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার চিত্র দেখলে যেকোন বিবেকবান মানুষ শিউরে উঠবে। দেশে বছরে ৪ হাজার ৪৩৬ জন নারী ধর্ষণসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু রাষ্ট্র এই ধর্ষণকারী-নির্যাতনকারীদেরকে বিচারের আওতায় আনেনি। বরং বর্ষবরণে নারী লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার নিয়ে প্রহসন চলছে। রাষ্ট্রের মন্ত্রীরা তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে লাঞ্ছনাকারীদের মদদ দিয়েছে, পৃষ্ঠপোষকতা দান করছে।’

তারা বলেন, ‘মন্ত্রীদের দায়িত্বহীন বক্তব্য শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত দুর্বৃত্তদের অপরাধ সংঘটনে উৎসাহী করেছে। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি নারীসমাজসহ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কেড়ে নিয়েছে। তাই তনু হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার-বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আর এর মধ্য দিয়ে দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে- তার অবসান ঘটবে।’

উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ রাত সাড়ে ৭টায় টিউশন শেষে বাসায় ফেরার পথে সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণপূর্বক নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর ময়নামতি সেনানিবাসের অলিপুর এলাকায় একটি কালভার্টের কাছ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

তনুর ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যায় কতটা সুহাসিনী ছিল মেয়েটি। ছিল চোখেমুখে রাশি রাশি স্বপ্ন। পৃথিবী জয় করার সে স্বপ্নের ছোঁয়া পেত সবাই। মুখ দেখলেই কেমন মায়া লেগে যেত। এমন একটা মেয়েকে নরপশুরা খুবলে খেয়েছে। গলাকেটে হত্যার পর অর্ধনগ্ন অবস্থায় ফেলে রেখে গেছে ঝোপঝাড়ে।

গত ২০ মার্চ রাতে ময়নামতি সেনানিবাসের অলিপুর এলাকার একটি কালভার্টের কাছ থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে তনুর  অর্ধলগ্ন লাশ।

পুরো নাম সোহাগী জাহান তনু (১৯)। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের (সম্মান) ছাত্রী। শুধু তাই নয়, একই কলেজের নাট্য সংগঠন ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের (ভিসিটি) সদস্যও।

তনুর এভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছে না কেউ। প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে গোটা দেশ। চলছে নানা কর্মসূচি। একইভাবে ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মধ্যম ফেসবুকেও।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক ওয়াহেদ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন: ‘সবার উপরে ময়নামতি’- এই ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে ’৭২ সনে অস্ত্র জমা দিয়েছিলাম। জীবনের প্রথম ময়নামতি ঘুরে ঘুরে দেখি- এতো নয়নাভিরাম ক্যান্টনমেন্ট মনে হয় পৃথিবীতে আর নেই। কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনায় অপরাধীই শুধু অপরাধী- তার পরিচয় যাই হোক না কেন? ভিক্টোরিয়ার ছাত্রী সোহাগীর হত্যাকাণ্ডে শোক জানানোর ভাষা নেই- ‘কোথা থেকে কখন যে কি হয়ে গেল/ সাজানো ফুলের বনে ঝড় বয়ে গেল/ সে ঝড় থামার পরে পৃথিবী আঁধার হলো/ তবু দেখি দ্বীপ গেছো জ্বেলে/ তুমি চলে গেলে।’

তনুর হত্যাকারীদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ আর ঘৃণা প্রকাশ করে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন নিজাম উদ্দিন রাব্বি নামে আরেক ব্যক্তি। তিনি লিখেছেন, ‘কুমিল্লা সেনানিবাসে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনুকে। ভাবতেই অবাক লাগে আজ আমরা কোথায় বাস করি। আমাদের প্রাণের নিরাপত্তা নেই। কুকুরের মত মরতে হচ্ছে আমার প্রিয়তম বোন, সহকর্মী, বন্ধুকে। ছিঃ! ধিক্কার এই সমাজের ঘৃণিত মানুষরূপী পশু আর দায়িত্বহীন মহামানবদের! আমরা সকল জাগ্রত জনতা অতি শিগগিরিই তনু হত্যার সঠিক বিচার চাই।

পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারাও হতবাক হয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন তনুর ঘটনায়। ইমতিয়াজ নামে পুলিশের এক ইন্সপেক্টর তার ফেসবুক স্ট্যাটাস লিখেছেন, Proper investigation, The accused must be arrested, demand justice. Need a massive Anti-crime march country wide.

তনুর হত্যাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তার পরিবারের পাশে থাকার অঙ্গীকার করে হাসান কবীর নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘—–প্রসঙ্গঃ তনু হত্যা—— ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের মেধাবী ছাত্রী এবং ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের দক্ষ নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধনে, শিক্ষক, সাবেক নেতৃবৃন্দ, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি থেকে আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগ এবং কবি নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে জানাই আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।

আশা করি, এভাবেই আমার প্রিয় সংগঠন ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগ তনু হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তার পরিবারের পাশে থাকবে। সর্বশেষ আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং  আল্লাহ যেন তাকে পরকালে সুখে শান্তিতে রাখেন সেজন্য সবার দোয়া কামনা করছি।’

সোহাগী জাহান তনু কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বাসিন্দা ইয়ার হোসেনের মেয়ে। তনুর বাবা ময়নামতি সেনানিবাস এলাকায় অলিপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। সেই সুবাদে তনুরা অনেক দিন ধরেই অলিপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তনু মেজো। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে তনু পাড়াশোনার পাশিপাশি বাসার কাছে অলিপুর গ্রামেই এক বাসায় টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে আসছিলেন।

ঘটনার দিন (২০ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে প্রতিদিনের মতো তনু ঘর থেকে বের হন। বাসায় ফিরতে দেরি হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে। কিন্তু চেষ্টা ব্যর্থ হলে যে বাসায় টিউশনি করতেন সেখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় ওই বাসা থেকে তিনি বের হয়ে গেছেন।

খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ময়নামতি সেনানিবাসের অভ্যন্তরে পাওয়ার হাউসের পানির ট্যাংক সংলগ্ন স্থানে তনুর মৃতদেহ পাওয়া যায়। গলাকাটা মৃতদেহ নগ্ন অবস্থায় কালভার্টের পাশে ঝোপঝাড়ের ভেতর পড়েছিলো। নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিলো। মোবাইল ফোনটিও পড়েছিল পাশে।

লাশ উদ্ধারের পর কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বাংলামেইলকে জানিয়েছিলেন, মরদেহ দেখে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে ধর্ষণ ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

>ধর্ষণের পর ভিক্টোরিয়ার ছাত্রীকে হত্যা 
>তনু মাফ করে দিস আমাদের….
>মা, কাল নতুন জামা পরে কলেজে যাবো
>কুমিল্লায় তনু ধর্ষণ-হত্যা : প্রতিবাদের ঝড়
>নাট্যকর্মী তনু ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে কুমিল্লায় জনসমুদ্র
>তনু ধর্ষণ-হত্যা : কুমিল্লায় দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ

সূত্রঃ বাংলামেইল২৪.কম

 

যত্ন নিন প্রিয় ফোনের

কথা বলে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা, ছবি দেখা, গান শোনা, ইন্টারনেট ব্যবহার, সময় দেখা, সকালে অ্যালার্মে ঘুম থেকে উঠে দিন শুরু করাসহ আমাদের জীবনের প্রতিটি সময়ের সঙ্গী এখন মোবাইল ফোন। আমরা পছন্দের সেট ব্যবহার করি নিজের রুচি সামর্থ অনুযায়ী।

প্রতিমুহূর্ত যে যন্ত্রটি আমাদের সঙ্গে থাকে, সেই প্রিয় এবং প্রয়োজনীয় ফোন সেটটি ব্যবহারে যত্নশীল হতে হবে। কারণ গুরুত্বপূর্ণ এ যন্ত্রটি বিকল হয়ে গেলে ঝামেলার শেষ থাকে না। আমাদের অসচেতনতা এবং যত্নের অভাবে অনেক সময় মোবাইল সেট নষ্ট হয়ে যায়।

ফোন সেট দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে যা করতে হবে:
•    সেটে চার্জ অবশিষ্ট থাকতেই, চার্জ দিন। তবে চার্জ না ফুরালেও ঘন ঘন চার্জ দিলে কিংবা মোবাইলের ব্যাটারির ভোল্টের চেয়ে বেশি ভোল্ট সম্পন্ন চার্জার দিয়ে চার্জ দিলে সেটের ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে
•    অনেক সময় প্রিয় সেটটি হাত ফসকে পড়ে যেতে পারে। তাই পড়ে গেলেও যেন সেটটি নিরাপদ থাকে এজন্য পছন্দ মতো কোনো কভার ব্যবহার করুন
•    গরম চলে এসেছে এখন প্রায়ই বৃষ্টি হবে মোবাইলে পানি ঢুকলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটারি খুলে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন
•    তবে বৃষ্টির দিনে বাইরে বেরুনোর সময় সেটটি ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ কিংবা কাগজের ভেতরে নিয়ে বের হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ
•    বাচ্চারা মোবাইলের ব্যাপারে অতি উৎসাহী হয়ে থাকে। কিন্তু শিশুদের হাত থেকে পড়ে গিয়ে আপনার প্রিয় সেটটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ফোন সেটটি শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন
•    কম্পিউটার থেকে মোবাইলে গান বা অন্যান্য ফাইল নেওয়ার সময় সতর্ক থাকুন যেন সেটে ভাইরাস আক্রমণ না করে
•    টাচ স্ক্রিন ফোন হলে ব্যবহারে অতিরিক্ত সতর্কতা জরুরি। এ ধরনের সেট কখনও ভেজা হাতে ধরবেন না। জোরে চাপ দিয়ে কমান্ড দেওয়াও ঠিক নয়। অনেক সময় ধুলাবালি কিংবা তেল, পানির সংস্পর্শে এসে পর্দার স্পর্শকাতরতা নষ্ট হয়ে যায়, তাই টাচ স্ক্রিন ফোন ব্যবহার করতে হবে সাবধানে
•    অনেক সময় ধুলাবালি গিয়ে মোবাইলের স্ক্রিন ঝাপসা হয়ে যায়। এ ধরনের সমস্যা হলে সাবধানে সেট খুলে স্ক্রিন ও কি প্যাড আলাদা করে পাতলা কাপড় দিয়ে মুছে নিন
•    পাবলিক বাসে যাতায়াত করার সময় অথবা ভীড়ের মধ্যে ফোন সেট চুরি হওয়ার আশংকা থাকে। এসব স্থানে ফোনটি হাতে রাখতে পারেন
•    ব্যাগে বা পকেটে রাখার সময় সেটের কি প্যাড লক করে রাখুন
•    মোবাইল সেটে বেশি গেমস খেলা ঠিক নয়
•    সেটে কোনো ধরণের সমস্যা দেখা দিলে নিদির্ষ্ট সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে দেখান।

প্রিয় ফোন সেটটি যত্নের সঙ্গে ব্যবহার করুন। তাহলেই সেটটিও আপনাকে অনেক দিন সঙ্গ দেবে।

 

চাপ-পরোটা

রাতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে যখন ক্ষুধা লেগেছে অনেকদিনই হয়তো ছুটে গেছেন পুরান ঢাকার খাবারের দোকানগুলোতে। প্রায়ই অনেকের মুখে এই গল্প শুনি। তাদের কথায়ই বোঝা যায় এখনও সেই আড্ডা আর গরুর মাংসের চাপ আর পরোটা ভীষণ মিস করেন সবাই।

সব সময় তো পুরান ঢাকায় গিয়ে সেই মজার খাবার খাওয়া সম্ভব হয় না,  কিন্তু মাঝে মাঝে ঘরেই তো তৈরি করা যায়।

উপকরণ:

হাড়ছাড়া গরুর মাংস ৫০০ গ্রাম, কাবাব মসলা ২ চা চামচ, আদা ও রসুনবাটা ২ চা চামচ, পেঁয়াজ বাটা ২ চা চামচ, কাঁচা মরিচবাটা ২ চা চামচ, জিরা ও ধনে গুঁড়া ১ চা চামচ, সাদা গোলমরিচ গুঁড়া ১ চামচ, শুকনা মরিচ গুঁড়া ১ চামচ, পেঁপে বাটা এক কাপ, টক দই এক কাপ, লবণ স্বাদমতো, তেজপাতা ২টি, গরম মসলা গুড়াঁ ১ চা চামচ, লেবুর রস ২ চা চামচ, সয়াবিন তেল প্রয়োজনমতো।

প্রণালী:

গরুর মাংস পাতলা করে কেটে নিয়ে ছেঁচে নিতে হবে। এর সঙ্গে পেঁয়াজ-রসুন-আদা-কাঁচা মরিচ বাটা, লবণ, কাবাব মসলা, জিরা, ধনে গুঁড়া, তেজপাতা, গরম মসলা, টক দই ও লেবুর রস দিয়ে মেখে ২ ঘণ্টা মেরিনেট করে রাখুন।

এবার ফ্রাই প্যানে তেল গরম হলে মাংস দিয়ে অল্প আঁচে রান্না করুন। মাংস সিদ্ধ হলে আ‍ঁচ বাড়িয়ে ভাজতে থাকুন। মাংসের রঙ কালচে হয়ে এলে নামিয়ে নিন। পরোটার সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।

জেনে নিন পরোটা কীভাবে তৈরি করবেন।

উপকরণ:

ময়দা ৪ কাপ, দুধ ২ টেবিল চামচ, ঘি ১ কাপ, চিনি ১ টেবিল চামচ, লবণ ১ চা চামচ, পানি পরিমাণমতো, তেল পরিমাণমতো।

প্রণালী:

ময়দা, চিনি, লবণ, অর্ধেক ঘি ও দুধ দিয়ে মেখে পরিমাণমতো পানি দিয়ে পরোটার ডো তৈরি করুন। এবার গোল রুটি বেলে তেলের প্রলেপ দিয়ে তার ওপর ময়দার ছিটিয়ে দিয়ে মাঝ থেকে পেঁচিয়ে পরোটার লেচি করে নিন। এভাবে ২০ মিনিট রেখে দিন। পছন্দের আকারে পরোটা বেলে ডুবো তেল ও ঘি তে সোনালী করে ভেজে তুলুন।

সালাদের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

বন্ধুরা একটি টিপস, প্রিয়জনের কাছে আরও প্রিয় হওয়ার সহজ উপায় হচ্ছে সে যে খাবারটি পছন্দ করে সেটা ঘরে তৈরি করে টেবিলে সাজিয়ে তাকে সারপ্রাইজ দেওয়া।

 

প্রতি ভিজিটে তিনটি রুমে বিশেষ ছাড়

ভ্রমণ রসিকদের জন্য সু-খবর নিয়ে এলো বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। পর্যটন বর্ষে সরকারি এই সংস্থাটির অধীন সব হোটেল-মোটেলে পাওয়া যাবে বিশেষ এই সুবিধা।

মাত্র ৩০০ টাকা দিয়ে একটি প্রিভিলেজ কার্ড করতে হবে। এতে প্রতি ভিজিটে বাংলাদেশের যেকোন প্রান্তে পর্যটন করপোরেশনের হোটেল-মোটেলে তিনটি রুমে ২৫ শতাংশ ছাড় পাওয়া যাবে। এই সুবিধা শুধুমাত্র পর্যটন বর্ষকে কেন্দ্র করে দেওয়া হচ্ছে।

শুধু নিজে নয় কার্ডটি দিয়ে সুবিধা নিতে পারবেন পরিচিত যে কেউ। একবার ভিজিট করে আসার পর নিজের প্রিয়জন, বন্ধু, বান্ধবের কাছে এই কার্ডটি হস্তান্তর যোগ্য। কার্ডের মেয়াদ এক বছর, পরবর্তীতে কার্ড রিনিউ করার সুযোগও থাকছে।

প্রিভিলেজ কার্ড করতে কোনো বেগ পেতে হবে না ভ্রমণপ্রেমীদের। পর্যটন করপোরেশনের যেকোন মোটেলে গিয়ে ৩০০ টাকা দিলেই নির্ধারিত ফরম পূরণের মাধ্যমে মিলে যাবে বিশেষ এই কার্ডটি।

মাত্র একটি কার্ড-ই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ আনন্দকে আরো কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। ২০১৬  সালের পর্যটন বর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানগুলোতে পরিদর্শন করে এই সুযোগ গ্রহণ করা যাবে।

ভিজিট বাংলাদেশের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে দিতে এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী তিন বছরে ১০ লাখ বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণ করবে বলে প্রত্যাশা পর্যটন করপোরেশনের।

পর্যটন বর্ষে বাংলাদেশ বিমান ও নভো এয়ারে থাকছে ১০ শতাংশ ছাড়। কোনো বিদেশি পর্যটক এই দুটি বিমানে বাংলাদেশে আসার পর যদি পর্যটন করপোরেশনের হোটেল-মোটেলে অবস্থান করেন তাহলে পাবেন ছাড়ের সুবিধা।

পর্যটন করপোরেশনের অপরূপ চৌধুরী (পিএইচ,ডি) বাংলানিউজকে বলেন, এই তিন বছরে ১০ লাখ ট্যুরিস্ট টার্গেট। আমাদের মূল টার্গেট বিদেশে বাংলাদেশের পরিচিতি বাড়ানো, সেই লক্ষে নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এর একটি প্রিভিলেজ কার্ড। যদিও এই কার্ডের সুবিধা অন্যান্য সময়ও পাওয়া যাবে।

বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশে পরিদর্শনের জন্য এখনই উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন তিনি, কেননা এখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক ভাল।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের বিপনন ব্যবস্থাপক ও ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (এনএইচটিটিআই) অধ্যাপক পারভেজ আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, প্রিভিলেজ কার্ড ভিজিটরদের জন্য বাড়তি সুবিধা। এই কার্ড হস্তান্তরযোগ্য করা হয়েছে, যেন বেশি লোক পরিদর্শন করতে পারে। আমরা চাই এই দেশটাকে মানুষ ভাল করে দেখুক, কত অপার সম্ভাবনাময় আমাদের এই দেশ। আশা করি, দেশি-বিদেশি পর্যটক এ বছর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করবে।

 

কিভাবে পাবেন ড্রাইভিং লাইসেন্স…?

12020029_623714807732311_6324553752856843460_nড্রাইভিং লাইসেন্স করা দরকার কিন্তু

জানেন না কিভাবে পাবেন ড্রাইভিং লাইসেন্স…?গাড়ি চালানো জানলেই আপনি কি চাইলেই রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হতে পারবেন? গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতে হলে আপনার প্রয়োজন হবে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করে থাকে।

আজ আপনাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব। আমন্ত্রন জানাচ্ছি আপনাদের আমি মাসুদুর রহমান মাসুদ এ আয়োজনে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে বিআরটিএ’র ওয়েবসাইট থেকে লার্নার বা শিক্ষানবিস ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে। বিআরটিএ অফিসেও বিনামূল্যে লার্নার ফর্ম দেওয়া হয়। এটি পূরণ করে লার্নার অর্থাৎ শিক্ষানবিস লাইসেন্সের জন্য নির্দিষ্ট ব্যাংকে সরকার নির্ধারিত ফি জমা দিতে হয়।

মোটরসাইকেল ও গাড়ির লাইসেন্স ফি একই। তবে মোটরসাইকেলের কোনো পেশাদার লাইসেন্স দেওয়া হয় না।

শিক্ষানবিস ফি
একটি যানের জন্য ৩৪৫ টাকা(১৫% ভ্যাটসহ)।
দু’টি (গাড়ি ও মোটরসাইকেল) যানের জন্য ৫১৮ টাকা (১৫% ভ্যাটসহ)।
লার্নার নবায়ন ফি ৮৭ টাকা (১৫% ভ্যাটসহ)।
শিক্ষানবিস থেকে পূর্ণমেয়াদের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য নির্ধারিত পরীক্ষা দিতে হয়। এর জন্যও রয়েছে আলাদা ফি।

অপেশাদার লাইসেন্স ফি : ২,৩০০ টাকা (১৫% ভ্যাটসহ)।
পেশাদার লাইসেন্স ফি : ১,৪৩৮ টাকা (১৫% ভ্যাটসহ)।

প্রথমে লার্নার বা, শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হবে আপনাকে অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য।

আবেদনকারীর স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানা বিআরটিএ’র যে সার্কেলের আওতাভূক্ত তাকে সেই সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। সার্কেল অফিস কর্তৃপক্ষ তাকে একটি শিক্ষানবিস বা লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করে, যা দিয়ে আবেদনকারী ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন।

প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তাকে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে অতিরিক্ত জেলা মেজিস্ট্রেটের তত্ত্ববধানে পরীক্ষা নেওয়া হয়। ঢাকা জেলা সার্কেলের পরীক্ষা দিতে হলে যেতে হবে কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়ায়।

নির্ধারিত কেন্দ্রে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্টে অংশগ্রহণ করতে হয়। ট্রাফিক আইন, ট্রাফিক সংকেত সম্পর্কিত বিষয়ে সংক্ষিপ্ত উত্তর লিখতে হয়। ফিল্ড টেস্টে সামনে-পেছনে, ডানে-বাঁয়ে ও পরীক্ষকের নির্দেশনা মতো গাড়ি চালিয়ে দেখাতে হয়। এ ধাপে পাশ করলে লাইসেন্স দেওয়া হয়।

শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে যেসব কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে আপনাকে

১. নির্ধারিত ফরমে আবেদন।
২. রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
৩. ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি।
৪. নির্ধারিত ফি জমাদানের রশিদ।
৫. সদ্য তোলা ৩ কপি স্ট্যাম্প ও ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।

তিনটি পরীক্ষায় পাশ করার পর নির্ধারিত ফর্মে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি দিয়ে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে।

নির্ধারিত দিনে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙুলের ছাপ) দেওয়ার জন্য উপস্থিত হতে হয়। এসব প্রক্রিয়া শেষে বিআরটিএ স্মার্ট কার্ড ইস্যু করে। স্মার্ট কার্ড পাওয়ার তারিখ এসএমএস-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ করতে হলে আরও কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হবে আপনাকে।

পেশাদার হালকা (মোটরযানের ওজন ২৫০০ কেজি’র নিচে) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে।

পেশাদার মধ্যম (মোটরযানের ওজন ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজি) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৩ বছর হতে হবে।

পেশাদার ভারী (মোটরযানের ওজন ৬৫০০ কেজির বেশি) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৬ বছর হতে হবে।

এছাড়া পেশাদার ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য প্রার্থীকে প্রথমে হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে। এর ন্যূনতম তিন বছর পর তিনি পেশাদার মিডিয়াম ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

আর মিডিয়াম ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার কমপক্ষে তিন বছর পর ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়।

অপেশাদার হলে ১০ বছর, পেশাদার হলে ৫ বছর মেয়াদে লাইসেন্স ইস্যু হয়। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলে তা নবায়ন করতে হয়। বিআরটিএ-তে নির্ধারিত ফি দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়।

নবায়নের জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে আপনাকে
১. নির্ধারিত ফরমে আবেদন।
২. রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সাটিফিকেট।
৩. ন্যাশনাল আইডি কার্ড এর সত্যায়িত ফটোকপি।
৪. নির্ধারিত ফি জমাদানের রশিদ।
৫. পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর ক্ষেত্রে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন।
৬. সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট ও ১ কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি।

প্রয়োজনে আবেদনের মাধ্যমে লাইসেন্স এক এলাকার লাইসেন্স অন্য এলাকায় স্থানান্তর করা যায়।

প্রথমে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএ’র নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র ও সংযুক্ত কাগজপত্র ঠিকভাবে পাওয়া গেলে একইদিনে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙুলের ছাপ) গ্রহণ করা হয়। স্মার্ট কার্ড প্রিন্টিং সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে পুনরায় ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে উপস্থিত হতে হয়।

আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ সকলকে। এ বিষয়টি আপনার বন্ধুদের জানাতে পোষ্টটি শেয়ার করতে পারেন। সকলের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।

 

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প লাইসেন্স পদ্ধতি

শিল্পনীতি ২০১০ এর আলোকে শিল্প নিবন্ধনের জন্য শিল্প উদ্যোক্তা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন দাখিল করেন। অতঃপর সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কর্তৃক কারখানার স্থান পরিদর্শন ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে গ্রহণযোগ্য হলে নির্ধারিত ফি গ্রহণসাপেক্ষে নিবন্ধন প্রদান করা হয়। সাধারনত সর্বোচ্চ নয় কার্য দিবসের মধ্যে সেবা নিশ্চিত করা হয়ে থাকে।  জেলা কার্যালয় থেকে এ সেবা পাওয়া যাবে।

কার্যদিবস প্রয়োজনীয় ফি

১০০ – ৩০০০ টাকা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অনুমোদিত নিবন্ধন ফি ও নবায়ন ফি এর বিবরণ

• কুটির শিল্প নিবন্ধন ফরমের মূল্য: ৫০/=

• ক্ষুদ্র শিল্প নিবন্ধন ফরমের মূল্য: ১০০/-

• কুটির শিল্প নিবন্ধন ফি: সকল শ্রেণি ১৫০/-

• ক্ষুদ্র শিল্প নিবন্ধন ফি: সকল শ্রেণি ১. ১০.০০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত-১০০০/- শ্রেণি ২. ১০,০০,০০১/- লক্ষ টাকা হতে ২০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ২০০০/- শ্রেণি ৩. ২০,০০,০০০/- লক্ষ টাকার উপরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০০০/-

• ক্ষুদ্র শিল্প নবায়ন ফি: সকল শ্রেণি ১. ১০.০০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১০০০/- শ্রেণি ২. ১০,০০,০০১/- লক্ষ টাকা হতে ২০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত- ২০০০/- শ্রেণি ৩. ২০,০০,০০০/- লক্ষ টাকার উপরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০০০/-

 

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারী
সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও উপ-মহাব্যবস্থাপক/জেলা শিসকে প্রধান

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১. আবেদনপত্র ও তার ক্রয়ের রসিদ

২. জমি/দালানকোঠার মালিকানা/ভাড়ার উপযুক্ত প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি।

৩. যন্ত্রপাতির তালিকা, নাম, পরিমাণ, মূল্য (লক্ষ টাকায়) (সাদা কাগজে কিংবা প্যাডে স্বাক্ষরসহ)/বৈদেশিক যন্ত্রপাতি হলে এল সি কপি, প্রফরমা ইনভয়েস কপি ব্যাংক কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত।

৪. কারখানার হালসনের ট্রেড লাইসেন্স

৫. উদ্যোক্তার জাতীয়তার সনদপত্র

৬. ঋণে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানের বেলায় ঋণ মঞ্জুরীপত্র সত্যায়িত কপি

৭. আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি- ১ কপি

৮. কোম্পানির বা নিজ নামে আপ-টু-ডেট টিন

৯. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পরিবেশ এবং ফায়ার সনদ আপ-টু-ডেট

১০. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্যের মান, গুণাগুণ ও ধরন যাচাইয়ের জন্য STI, DRUGS, BSCIR কিংবা সংশ্লিষ্ট দপ্তর হতে আপ-টু-ডেট সনদ

১১. লি. কোম্পানি হলে মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল এবং মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশনের আপ-টু-ডেট সনদ বা অংশীদারি হলে অংশীদারি চুক্তিনামা দলিল

১২. কাঁচামালের বিবরণ, নাম, পরিমাণ, মূল্য (লক্ষ টাকায়) (সাদা কাগজে কিংবা প্যাডে স্বাক্ষরসহ)
সেবা প্রদানে ব্যর্থ হলে প্রতিকারকারী কর্মকর্তা
শিল্প সহায়ক কেন্দ্র প্রধান অথবা সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক পরিচালক অথবা পরিচালক (উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ)

 

শুভকামনা রইল সকলের জন্য।  আমাদের সাথে থেকে নিয়মিত আপডেট পেতে ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন। সেই সাথে আপনার মতামত জানাতে ভুল করবেন না।

 

শূন্য হাতে শুরু, এখন সফল উদ্যোক্তা

ঘটনাটা ৩১ বছর আগের। এক তরুণী জীবিকার তাগিদে কাজ নেন পোশাক কারখানায়। মাননিয়ন্ত্রণকর্মী  হিসেবে ৮০০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু। কাজে যোগ দিয়ে কিছু সময় যেতেই নিজের ভেতরই যেন পরিবর্তনের ডাক পেলেন—এভাবে হবে না।

এগোতে হলে শিখতে হবে মেশিনের কাজ। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ধরলেন মেশিন। কাজের দক্ষতায় পেতে থাকেন পদোন্নতি। এবার সচল হলো স্বপ্নও। পোক্ত হয়ে একসময় কাজ ছেড়ে নিজেই গড়লেন প্রতিষ্ঠান। শূন্য হাতে শুরু করে তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা। তাঁর নাম বেবি হাসান। বিএস অ্যাপারেল নামের একটি বায়িং হাউসের কর্ণধার তিনি।নিজের শ্রম ও মেধা দিয়ে সফল উদ্যোক্তাদের একজন হয়েছেন বেবি হাসান। তাঁর অধীনেই কাজ করছেন প্রায় অর্ধশত কর্মী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পোশাক রপ্তানির কাজ করে তাঁর প্রতিষ্ঠান। বছরে লেনদেন প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।সফল ব্যবসায়ী হবেন, এমন কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করে কর্মজীবন শুরু করেননি বেবি। অনেকের মতো তাঁরও শুরুটা জীবিকার তাগিদেই। এসএসসি পাস করার পর পারিবারিক সিদ্ধান্তে ১৯৮১ সালে বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। বিয়ের পরবর্তী বছর জন্ম নেয় কন্যাসন্তান। স্বামীর আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তাই সংসারে কিছুটা স্বস্তি আনতে নিজেই চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেন। শুরুতে পরিবারের কেউ উৎসাহ না দেখালেও পরে অবশ্য মেনে নিয়েছেন। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত পোশাক কারখানায় কাজ করেন বেবি। একসময় উৎপাদন পরিচালকের দায়িত্বও পান।

সে সময়গুলোর কথা উঠতেই বেবি হাসানের চেহারায় দৃঢ়তা। বললেন, ‘দিনে ১৪ ঘণ্টা করে কাজ করতাম। সকাল আটটায় কাজ শুরু হতো, ফিরতাম রাত ১০টার দিকে। কোনো দিন কাজে অবহেলা করিনি। শুরুতে অনেক দূর যেতে হবে এমন লক্ষ্য ছিল না, তবে যখন কাজটাকে ভালোবেসে ফেললাম, তখন স্থির করলাম একটা পর্যায়ে যেতে হবে।’
নব্বইয়ে দশকের মাঝামাঝি প্রতিষ্ঠান বদলে একটি বায়িং হাউসে যোগ দেন বেবি। পাশাপাশি টুকটাক এ–সংক্রান্ত ব্যবসাও শুরু করেন।

২০০০ সালে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের একটি সংগঠনের সদস্য হন তিনি। হাতে তেমন নগদ টাকা ছিল না, তাই দ্বারস্থ হন ব্যাংকের। দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে হালিশহর কে ব্লকে ‘বিতনু’ নামের একটি বুটিকের শোরুম খোলেন। ওই বছরই চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন উইম্যান এন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাসোসিয়েশন (উই)। ওই সংগঠনের সদস্য হন বেবি।

২০০০ সালের শেষের দিকে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রায় ২০ জন অংশ নেন কলকাতার একটি কুটিরশিল্প মেলায়। সেখানে গিয়েই চোখ খুলে যায় তাঁর। তিনি বলেন, ‘ওই মেলায় গিয়েই ব্যবসা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। কী করে জানি সেদিনই ব্যবসার পোকা ঢুকে যায় মাথায়। মনস্থির করি, আমাকে ব্যবসায় সফল হতে হবে।’

২০০২ সালে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে একটি বায়িং হাউস দাঁড় করানো শুরু করেন। এরপর ২০০৯ সালে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন বিএস অ্যাপারেল নামের পৃথক বায়িং হাউস। বছর বছর এই প্রতিষ্ঠানের কলেবর বাড়ছে। মা বেবি হাসানের সঙ্গে ছেলে সালাহউদ্দিন চৌধুরীও সম্প্রতি ব্যবসায় যোগ দিয়েছেন।

প্রায় শূন্য থেকে আজকের অবস্থানে আসার কৃতিত্বের ভাগ বেবি হাসান দিতে চান আরও দুজন নারীকে। একজন তাঁর মা ফরিদা খাতুন, অন্যজন ব্যবসায়ী নেতা মনোয়ারা হাকিম আলী। ১৯৯৮ সালে অসুস্থতায় ভুগে বেবি হাসানের মা মারা যান। মেয়ের চূড়ান্ত সাফল্য মা দেখে যেতে পারেননি, এই কষ্টই এখন তাড়িয়ে বেড়ায় তাঁকে। বেবি হাসানের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে হলেও তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরে।

চাকরির পাশাপাশি সংসারের দেখভাল করতে হয়েছে। ফলে অবসর বলে কিছু ছিল না। কিন্তু তাতে দুঃখ নেই বেবির। তিনি বলেন, চাকরি বা ব্যবসা মেয়েদের জন্য খুব কঠিন, এমনটি কখনো মনে হয়নি। চেষ্টা থাকলে যেকোনো নারীই ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে সফল হতে পারবেন।’ এসব কথা যখন বলছিলেন, তখন বেবির মুখে সাফল্যর তৃপ্তির হাসি। বললেন, ‘পরিচিত কোনো মেয়ে যখন চাকরি করার কথা বলেন, আমি তাঁদের উৎসাহ দিই ব্যবসা করো। কারণ, আমাদের একটাই লক্ষ্য, চাকরি করব না, চাকরি দেব।’

লিখাটি প্রথম আলো প্রকাশ করেছে। আশা করছি লিখাটি থেকে আপনারা প্রেরণা পাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে…..

 

 

আপনার শিশু, আপনার ভবিষ্যৎ- শেষ পর্ব

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।” হযরত আলী(আঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, “নিজেকে, পরিবারকে ও সন্তান-সন্ততিকে উত্তম জ্ঞান শিক্ষা দাও এবং তাদেরকে প্রশিক্ষণ দাও-যাতে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পেতে পারো।”
সত্যি-সত্যিই বর্তমান বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং প্রশিক্ষণের জগতে যে বিষয়টি বেশ আলোচিত তা হলো মানব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। মানব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী হলো-ব্যক্তিত্বের যথাযথ বিকাশের মাধ্যমে ইনসানে কামেল বা পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত করা। তাই জন্ম পরবর্তী সময়তো বটেই, এমনকি জন্মপূর্বকালেও ইসলাম বিভিন্নভাবে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। জন্ম-পূর্ববর্তীকালের প্রশিক্ষণটি হলো একটি সুশৃঙ্খল পরিবার গড়ে তোলা। আর জন্ম-পরবর্তীকালে নবজাতকের প্রশিক্ষণের ব্যাপারেও ইসলাম দিয়েছে চমৎকার কালজয়ী দিক-নির্দেশনা।

জন্ম পরবর্তী একটি সন্তানের জীবনকালকে পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন শিশুকাল, কিশোরকাল, যৌবনকাল, মধ্যবয়স বা বয়োপ্রাপ্তকাল এবং বার্ধক্যকাল। আমরা এখানে প্রথম তিনটি পর্যায় নিয়ে আলোচনা করবো। রাসূলে কারীম(সাঃ) মানব সন্তানের বেড়ে ওঠার প্রাথমিক কালগুলোকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বে ভাগ করে বলেছেন, “সন্তান তার প্রথম সাত বছরে হলো সাইয়্যেদ বা মহোদয়, দ্বিতীয় সাত বছরে হলো আনুগত্যকারী বা আদেশ মান্যকারী আর তৃতীয় সাত বছরে হলো মন্ত্রী বা দায়িত্বশীল। কী সুন্দর উপমা দিয়ে, পরিভাষা দিয়ে রাসূল শিশুর বেড়ে ওঠার কাল এবং আচরণগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে তুলে ধরেছেন। আমরা তাঁর এই পরিভাষাগুলোকে খানিকটা ব্যাখ্যা করে বলার চেষ্টা করবো
একুশ বছর বয়স পর্যন্ত একটি সন্তানের বেড়ে ওঠার পর্বগুলোকে রাসূল (সাঃ) যেভাবে নির্দেশ করেছেন, তাকে শিশুকাল, কিশোরকাল এবং যৌবনকালের বৃত্তে ফেলা যেতে পারে। শিশুকালটিকে যদি আমরা কর্তৃত্বের অর্থে ধরে নিই, যেমনটি রাসূল বলেছেন, তাহলে তার অর্থ দাঁড়াবে, শিশু এ সময় যা খুশি তা-ই করবে। এ সাত বছর শিশু সম্পূর্ণ স্বাধীন। তার সকল কর্তৃত্ব মেনে নিতে হবে। এভাবেই শিশু সাত বছর কাটিয়ে দ্বিতীয় সাতে গিয়ে পড়বে। দ্বিতীয় সাত মানে হলো আনুগত্য বা আদেশ পালন করার পর্ব। অর্থাৎ এই পর্বে শিশুকে আর স্বাধীনভাবে কর্তৃত্ব করতে দেয়া যাবে না। বরং তাকেই বাবা-মা বা অন্যান্য মুরুব্বীদের কথা মেনে চলতে হবে। এই দ্বিতীয় সাত অর্থাৎ সাত বছর থেকে চৌদ্দ বছর পর্যন্ত সময়কাল যদি একটি শিশু যথাযথ নির্দেশনা মেনে বেড়ে ওঠে, তাহলে তৃতীয় সাত বছর অর্থাৎ চৌদ্দ থেকে একুশ বছর বয়সকাল পর্যন্ত শিশুটি হয়ে উঠতে পারে সংসার পরিচালনায় বাবা-মায়ের একজন যথার্থ সহযোগী। রাসূল(সাঃ)এর আরেকটি হাদীসে এ পর্ব তিনটিতে সন্তানদের প্রশিক্ষণ এবং বাবা-মায়ের করণীয় আরো পরিস্কারভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর পর্যন্ত খেলাধূলা করতে দাও, পরবর্তী সাত বছর তাদেরকে সংশোধনীমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দাও এবং পরবর্তী সাত বছর তাদেরকে তোমাদের পরামর্শদাতা ও সহযাত্রী কর। জীবনের প্রথম সাতটি বছরে একটি শিশুর অনুধাবনশক্তি কিংবা স্মৃতিশক্তি থাকে একেবারেই অপক্ক। তার শারীরিক অবস্থাও থাকে অত্যন্ত নাজুক পর্যায়ে। তাই এ সময়টায় বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল আচরণ করা। তার চাহিদাগুলোকে সাধ্যমতো পূরণ করা এবং তাঁর জিজ্ঞাসাগুলোর ইতিবাচক জবাব দেয়া। শিশু তার প্রথম সাত বছর পর্যন্ত স্বাধীন। তাই স্বাধীনভাবে সে খেলাধূলা করবে, নাচানাচি-দৌড়াদৌড়ি করবে, আদেশের পর আদেশ দেবে-যা খুশি তাই করবে। এসবের মাধ্যমে তার মধ্যে ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠবে। তাই তার ওপর এ সময় কোন নিষেধাজ্ঞা বা সীমাবদ্ধতা আরোপ করা অনুচিত। এমনকি তাকে এসময় কোন কিছু সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়াও ঠিক নয়। শিশু তার বাবা-মা তথা পরিবারের সকল মুরব্বী, পাড়া-প্রতিবেশী, আশে-পাশের লোকজন এবং অন্যান্য শিশুদের প্রভাবেই বড়ো হয়ে উঠবে।
নিঃসন্দেহে, জীবনের প্রাথমিক পর্বের বছরগুলোই যে-কোন মানুষের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাব সৃষ্টিকারী। কারণ এ সময়টাই মানুষের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠার সময়। অতীতে মনে করা হতো যে, শৈশবে একটি শিশুর শারীরিক সুস্থতার প্রতিই কেবল মনযোগী হওয়া দরকার। এর বাইরে শিশুর আবেগ-অনুভূতি, সামাজিকতা, এবং তার মেধাকে প্রতিপালনের ক্ষেত্রে কোন গুরুত্বই দেয়া হতো না। তাদের চিন্তা ছিল এমন যে, শিশু যদি অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে টানাপোড়েনে না ভোগে, তাহলে তার শারীরিক, মানসিক এবং মেধার বিকাশ অন্যদের তুলনায় দ্রুত লাভ হবে। কিন্তু আধুনিককালে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, শিশুর বেড়ে ওঠার সকল পর্যায়েই শুধুমাত্র শারীরিক বিকাশ নয় বরং তার আবেগ-অনুভূতি, বোধ-উপলদ্ধি, তার কল্পনা-স্মরণশক্তি এবং সেই সাথে শিশুর কথা বলার দক্ষতার ব্যাপারেও সচেতন দৃষ্টি রাখা অনিবার্য।
শিশুদের বেড়ে ওঠার সময় তাদের শারীরিক এবং আচার-আচরণে যেসব অসংলগ্নতা দেখা দেয়, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তা ঘটে থাকে শিশুর বেড়ে ওঠার পর্যায়গুলো সম্পর্কে যথার্থ ধারণার অভাবে এবং পর্যায়ক্রমিক সঠিক ব্যবস্থা ও পদপে গ্রহণ না করার কারণেই। যৌবনে পৌঁছে মানুষ সন্ত্রাসী-মাস্তানী, রাহাজানীসহ যেসব অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপ করে থাকে, গবেষণায় দেখা গেছে জীবনের প্রাথমিক পর্যায়গুলোতে যথার্থ নার্সিং এর অভাবই এ ধরণের ক্রিয়াকলাপের মূল কারণ।
তাই শিশুর প্রতিপালনে বাবা-মায়ের সচেতনতা খুবই জরুরী। রাসূল(সাঃ) যে সূক্ষ্ম দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, আমরা তা ধীরে ধীরে বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করবো-শিশুর বেড়ে ওঠার পর্যায়গুলোতে তার যথার্থ যত্ম নিতে হবে কীভাবে। বলাবাহুল্য: রাসূলের নির্দেশনা যে অকাট্য, তাঁর পরিচর্যারীতি যে বিজ্ঞানোত্তীর্ণ, তা জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নত আধুনিক এ বিশ্বের গবেষকরাও প্রমাণ করতে সম হয়েছেন। তাই আমরা রাসূলের নির্দেশনাকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেবো।

 

আপনার শিশু, আপনার ভবিষ্যৎ -1

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।” হযরত আলী(আঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, “নিজেকে, পরিবারকে ও সন্তান-সন্ততিকে উত্তম জ্ঞান শিক্ষা দাও এবং তাদেরকে প্রশিক্ষণ দাও-যাতে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পেতে পারো।”
সত্যি-সত্যিই বর্তমান বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং প্রশিক্ষণের জগতে যে বিষয়টি বেশ আলোচিত তা হলো মানব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। মানব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী হলো-ব্যক্তিত্বের যথাযথ বিকাশের মাধ্যমে ইনসানে কামেল বা পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত করা। তাই জন্ম পরবর্তী সময়তো বটেই, এমনকি জন্মপূর্বকালেও ইসলাম বিভিন্নভাবে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। জন্ম-পূর্ববর্তীকালের প্রশিক্ষণটি হলো একটি সুশৃঙ্খল পরিবার গড়ে তোলা। আর জন্ম-পরবর্তীকালে নবজাতকের প্রশিক্ষণের ব্যাপারেও ইসলাম দিয়েছে চমৎকার কালজয়ী দিক-নির্দেশনা। জন্ম পরবর্তী একটি সন্তানের জীবনকালকে পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন শিশুকাল, কিশোরকাল, যৌবনকাল, মধ্যবয়স বা বয়োপ্রাপ্তকাল এবং বার্ধক্যকাল।

আমরা এখানে প্রথম তিনটি পর্যায় নিয়ে আলোচনা করবো। রাসূলে কারীম(সাঃ) মানব সন্তানের বেড়ে ওঠার প্রাথমিক কালগুলোকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বে ভাগ করে বলেছেন, “সন্তান তার প্রথম সাত বছরে হলো সাইয়্যেদ বা মহোদয়, দ্বিতীয় সাত বছরে হলো আনুগত্যকারী বা আদেশ মান্যকারী আর তৃতীয় সাত বছরে হলো মন্ত্রী বা দায়িত্বশীল। কী সুন্দর উপমা দিয়ে, পরিভাষা দিয়ে রাসূল শিশুর বেড়ে ওঠার কাল এবং আচরণগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে তুলে ধরেছেন। আমরা তাঁর এই পরিভাষাগুলোকে খানিকটা ব্যাখ্যা করে বলার চেষ্টা করবো।
একুশ বছর বয়স পর্যন্ত একটি সন্তানের বেড়ে ওঠার পর্বগুলোকে রাসূল (সাঃ) যেভাবে নির্দেশ করেছেন, তাকে শিশুকাল, কিশোরকাল এবং যৌবনকালের বৃত্তে ফেলা যেতে পারে। শিশুকালটিকে যদি আমরা কর্তৃত্বের অর্থে ধরে নিই, যেমনটি রাসূল বলেছেন, তাহলে তার অর্থ দাঁড়াবে, শিশু এ সময় যা খুশি তা-ই করবে। এ সাত বছর শিশু সম্পূর্ণ স্বাধীন। তার সকল কর্তৃত্ব মেনে নিতে হবে। এভাবেই শিশু সাত বছর কাটিয়ে দ্বিতীয় সাতে গিয়ে পড়বে। দ্বিতীয় সাত মানে হলো আনুগত্য বা আদেশ পালন করার পর্ব। অর্থাৎ এই পর্বে শিশুকে আর স্বাধীনভাবে কর্তৃত্ব করতে দেয়া যাবে না। বরং তাকেই বাবা-মা বা অন্যান্য মুরুব্বীদের কথা মেনে চলতে হবে। এই দ্বিতীয় সাত অর্থাৎ সাত বছর থেকে চৌদ্দ বছর পর্যন্ত সময়কাল যদি একটি শিশু যথাযথ নির্দেশনা মেনে বেড়ে ওঠে, তাহলে তৃতীয় সাত বছর অর্থাৎ চৌদ্দ থেকে একুশ বছর বয়সকাল পর্যন্ত শিশুটি হয়ে উঠতে পারে সংসার পরিচালনায় বাবা-মায়ের একজন যথার্থ সহযোগী। রাসূল(সাঃ)এর আরেকটি হাদীসে এ পর্ব তিনটিতে সন্তানদের প্রশিক্ষণ এবং বাবা-মায়ের করণীয় আরো পরিস্কারভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর পর্যন্ত খেলাধূলা করতে দাও, পরবর্তী সাত বছর তাদেরকে সংশোধনীমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দাও এবং পরবর্তী সাত বছর তাদেরকে তোমাদের পরামর্শদাতা ও সহযাত্রী কর। জীবনের প্রথম সাতটি বছরে একটি শিশুর অনুধাবনশক্তি কিংবা স্মৃতিশক্তি থাকে একেবারেই অপক্ক। তার শারীরিক অবস্থাও থাকে অত্যন্ত নাজুক পর্যায়ে। তাই এ সময়টায় বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল আচরণ করা। তার চাহিদাগুলোকে সাধ্যমতো পূরণ করা এবং তাঁর জিজ্ঞাসাগুলোর ইতিবাচক জবাব দেয়া। শিশু তার প্রথম সাত বছর পর্যন্ত স্বাধীন। তাই স্বাধীনভাবে সে খেলাধূলা করবে, নাচানাচি-দৌড়াদৌড়ি করবে, আদেশের পর আদেশ দেবে-যা খুশি তাই করবে। এসবের মাধ্যমে তার মধ্যে ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠবে। তাই তার ওপর এ সময় কোন নিষেধাজ্ঞা বা সীমাবদ্ধতা আরোপ করা অনুচিত। এমনকি তাকে এসময় কোন কিছু সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়াও ঠিক নয়। শিশু তার বাবা-মা তথা পরিবারের সকল মুরব্বী, পাড়া-প্রতিবেশী, আশে-পাশের লোকজন এবং অন্যান্য শিশুদের প্রভাবেই বড়ো হয়ে উঠবে।
নিঃসন্দেহে, জীবনের প্রাথমিক পর্বের বছরগুলোই যে-কোন মানুষের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাব সৃষ্টিকারী। কারণ এ সময়টাই মানুষের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠার সময়। অতীতে মনে করা হতো যে, শৈশবে একটি শিশুর শারীরিক সুস্থতার প্রতিই কেবল মনযোগী হওয়া দরকার। এর বাইরে শিশুর আবেগ-অনুভূতি, সামাজিকতা, এবং তার মেধাকে প্রতিপালনের ক্ষেত্রে কোন গুরুত্বই দেয়া হতো না। তাদের চিন্তা ছিল এমন যে, শিশু যদি অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে টানাপোড়েনে না ভোগে, তাহলে তার শারীরিক, মানসিক এবং মেধার বিকাশ অন্যদের তুলনায় দ্রুত লাভ হবে। কিন্তু আধুনিককালে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, শিশুর বেড়ে ওঠার সকল পর্যায়েই শুধুমাত্র শারীরিক বিকাশ নয় বরং তার আবেগ-অনুভূতি, বোধ-উপলদ্ধি, তার কল্পনা-স্মরণশক্তি এবং সেই সাথে শিশুর কথা বলার দক্ষতার ব্যাপারেও সচেতন দৃষ্টি রাখা অনিবার্য।
শিশুদের বেড়ে ওঠার সময় তাদের শারীরিক এবং আচার-আচরণে যেসব অসংলগ্নতা দেখা দেয়, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তা ঘটে থাকে শিশুর বেড়ে ওঠার পর্যায়গুলো সম্পর্কে যথার্থ ধারণার অভাবে এবং পর্যায়ক্রমিক সঠিক ব্যবস্থা ও পদপে গ্রহণ না করার কারণেই। যৌবনে পৌঁছে মানুষ সন্ত্রাসী-মাস্তানী, রাহাজানীসহ যেসব অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপ করে থাকে, গবেষণায় দেখা গেছে জীবনের প্রাথমিক পর্যায়গুলোতে যথার্থ নার্সিং এর অভাবই এ ধরণের ক্রিয়াকলাপের মূল কারণ।
তাই শিশুর প্রতিপালনে বাবা-মায়ের সচেতনতা খুবই জরুরী। রাসূল(সাঃ) যে সূক্ষ্ম দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, আমরা তা ধীরে ধীরে বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করবো-শিশুর বেড়ে ওঠার পর্যায়গুলোতে তার যথার্থ যত্ম নিতে হবে কীভাবে। বলাবাহুল্য: রাসূলের নির্দেশনা যে অকাট্য, তাঁর পরিচর্যারীতি যে বিজ্ঞানোত্তীর্ণ, তা জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নত আধুনিক এ বিশ্বের গবেষকরাও প্রমাণ করতে সম হয়েছেন। তাই আমরা রাসূলের নির্দেশনাকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেবো। ২য় পর্বভোরের নরম আলোর মতো শিশুর গালে সুপ্রভাতের প্রথম আদরটি দিয়ে, বিকশমান ফুলের মতো অনাবিল হাসিটি দেখতে কার না ভালো লাগে বলুন: কিন্তু শিশুর এই নির্মল হাসিটিকে তার প্রাপ্ত বয়স পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে পিতামাতার অনেক করণীয় রয়েছে। বিশেষ করে জীবনের প্রথম সাত বছরের পর্বটি হলো তার মানস বিকাশের সময়। নবীন কিশলয় অর্থাৎ গাছের সুগন্ধিময় নতুন পাতার মতো বয়স তার, নবীন পাতাটির মতোই সে নাজুক এবং স্বচ্ছ। অন্যভাবে বলা যায়, জীবনের প্রথম পর্বটি কাঁচা মাটির মতো। এ মাটি দিয়ে বাবা-মায়ের মতো জীবনশিল্পীরা যা গড়তে চান, তা-ই পারবেন। এ কথা থেকে সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, বাবা-মা কে শিল্পী হতে হবে, জীবন গড়ার শিল্পী। আর শিল্পী হতে হলে জানতে হবে শিল্পের কলা-কৌশল। এর আগের আলোচনায় এইসব কৌশলগত জ্ঞান নিয়ে খনিকটা আলোচনা করা হয়েছে। এবারও তা অব্যাহত রাখবো।
রাসূল(সাঃ) একটি সন্তানের জীবনকে তিনটি ‘সপ্তবর্ষে‘ ভাগ করেছেন। প্রথম সাত বছরকে শিশুর স্বাধীনতার কাল বলে ঘোষণা করেছেন। এই স্বাধীনতার সময়ে শিশুর সাথে কী ধরণের আচরণ করা উচিত-সে সম্পর্কেই আমরা আলোচনা করছিলাম। প্রথম সাথ বছর একটি শিশুর মেধা যেহেতু পর্যাপ্ত পরিমাণ বিকাশ লাভ করে না, সেহেতু এ বয়সের একটি শিশুর মেধা নিয়ে বিশ্লেষণ না করে বরং তার পঞ্চ-ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি এবং প্রতিক্রিয়ার প্রতিই মনযোগী হওয়া উচিত। অনুভূতিগত দিক থেকে দেখলে দেখা যাবে যে, শিশুরা পঞ্চ-ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কাজে এ সময় ব্যাপক তৎপর হয়ে ওঠে। সে দৌড়াতে পছন্দ করে, খেলাধুলা পছন্দ করে ,কোন বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে পড়লে প্রশ্ন করতে পছন্দ করে, সর্বোপরি নতুন নতুন বিষয়কে তার অভিজ্ঞতার ভান্ডারে জমাতে পছন্দ করে। আর এ কারণেই সে তার চারপাশে যা কিছুই দেখে, তা-ই ধরতে চায় এবং একাকী নিজস্ব অনুভূতি দিয়ে তাকে বুঝতে চায়, শিখতে চায়, অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চায়। শিশুর স্বাধীনতা মানে তার অনুভূতির স্বাধীনতা, তার মাংসপেশীর স্বাধীনতা। এ দুয়ের যথেচ্ছা ব্যবহারের ফলে শিশুর চলাফেরা তার সৃজনশীলতা এবং তার ইন্দ্রিয়ের বিকাশের ভিত্তিভূমি রচিত হয়। তাই শিশুর প্রথম সাত বছরে তার সাথে এমন কোন কাজ করা উচিত নয়, যাতে তার স্বাধীনতা বিঘ্নিত হয় এবং পরিণামে তার ইন্দ্রিয় ও সৃষ্টিশীলতা বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, শিশুর মানসিক তথা সৃজনশীলতার বিকাশ যদি বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে শিশুর মনোবিকার ঘটতে পারে। আর তা যদি একবার ঘটেই যায়, তাহলে তার ভবিষ্যত হবে বাবা-মায়ের একেবারেই অপ্রত্যাশিত। তাই বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে। শিশু যখন তার সঙ্গী-সাথী এবং খেলার সাথিদের সাথে আমোদ-প্রমোদ বা খেলাধূলায় ব্যস্ত থাকে, তখন তাকে কোন ব্যাপারে আদেশ দেয়া উচিত নয়। এমনও বলা উচিত নয়-এটা করো না, ওটা করো না.. ইত্যাদি। তাকে তার আনন্দের ভূবন থেকে হুট করে ফিরিয়ে নেয়াটাও ঠিক নয়। তবে হ্যাঁ, যেসব পিতামাতা আপন সন্তানের প্রশিক্ষণের জন্যে সময় দেয়, তারাই সন্তান প্রতিপালনে সফল।
একই ভাবে যেসব দেশ শিশুদের খেলাধূলা, আমোদ-প্রমোদ বা বিনোদনের জন্যে প্রয়োজনীয় ও যথোপযুক্ত জিনিসপত্র সরবরাহ করতে সম, সেসব দেশই মূলত উন্নয়নশীল বা উন্নত দেশ হিসেবে পরিগণিত।
শিশু যদি তার বেড়ে ওঠার জন্যে একটা মুক্ত পরিবেশ পায় এবং যথার্থ শক্তি বা এ্যানার্জি লাভের জন্যে উপযুক্ত পরিবেশ ও গাইড লাইন পায়, তাহলে তার মানসিক, শারীরিক এবং আচার-আচরণগত বিকাশ বিজ্ঞানসম্মতভাবেই অর্জিত হবে। বাবা-মায়ের এই বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়া বাঞ্চনীয়। আগেই বলেছি যে, শিশুদেরকে মুক্ত পরিবেশে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া উচিত। তাদের এই স্বাধীনতায় সামান্যতম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলেও শিশুদের আত্মিক, মনস্তাত্ত্বিক ও আচার-আচরণগত ভারসাম্য লঙ্ঘিত হয়। স্কুলে অধিকাংশ শিশুর মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাই তাদের পারিবারিক পরিবেশের পরিণতি। অর্থাৎ সন্তান প্রতিপালনে বাবা-মায়ের যথাযথ ব্যবস্থা বা গাইডেন্সের অভাবেই ঐসব সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। নবজাতকের সাথে বাবা-মায়ের সংবেদনশীল আচরণ করা উচিত। অর্থাৎ সন্তানের আরাম-আয়েশ এবং স্বাধীনতার বিষয়টি অনুভব করা উচিত। অত্যন্ত যতেœর সাথে শিশুকে ঘুম পাড়ানো উচিত। ঘুম থেকে জাগার সময় শিশুর প্রতি রুষ্ট হওয়া ঠিক নয়। শিশুকে আদরের সাথে দুধ খাওয়ানো, তার নষ্ট করে দেয়া জামা-কাপড় পরিস্কারের কাজ আন্তরিকতার সাথে আঞ্জাম দেয়া উচিত। এমনকি শিশু যদি কান্নাকাটিও করে, তবুও তার ওপর রেগে যাওয়া ঠিক হবে না বরং কান্নার একটা ইতিবাচক জবাব দিতে হবে। শিশুর বেড়ে ওঠার প্রাথমিক পর্যায়ে বাবা-মা যদি শিশুর সাথে যথাযথ ব্যবহার করে, তাহলে ভবিষ্যতে শিশুর চারিত্রিক বিকাশ, মানস গঠন এবং তার ব্যক্তিত্বের ওপর বাবা-মায়ের ব্যবহার ও প্রতিক্রিয়ার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর যথার্থ ব্যবহার করা না হলে তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়বে শিশুর ভবিষ্যত জীবনের ওপর।
শিশুর জীবন বিকাশের প্রাথমিক পর্বে তার শরীর-মন-আত্মা সব কিছুই অত্যন্ত কোমল ও নরম প্রকৃতির থাকে। তার কোমল মন তাই আদর-যত্ম , স্নেহ-ভালোবাসাই প্রত্যাশা করে। সে খেলতে চায়, দৌড়াদৌড়ি করতে চায়। প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াতে চায়। এ সময় তার হাসিতে যেন বংধনু ছড়ায়, পাথরের দিকে তাকালে পাথরও যেন গলে যায়। গাছের দিকে তাকালে যেন ফুল ফোটে, প্রকৃতি যেন তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে ভরিয়ে দেয় তার মন। তাই বাবা-মায়ের মতো তার আশেপাশের সবারই উচিত এমন স্নেহ ও ভালোবাসাপূর্ণ এবং আদরপূর্ণ ব্যবহার করা, যাতে শিশুর মুখে সর্বদা লেগে থাকে অনাবিল হাসি, আর মন পরিপূর্ণ থাকে আদর-আপ্যায়নে। কোনভাবেই তার সাথে এমন আচরণ করা ঠিক নয় যাতে সে মনে কষ্ট পায়। হাদীস অনুযায়ী প্রথম সাত বছর হলো শিশুর স্বাধীনতার পর্যায়, আনুগত্যের পর্যায় নয়। তারপরও কোন কোন বাবা-মা মনে করেন যে, এ সময় শিশুর উচিত বাবা- মায়ের সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলা অর্থাৎ বাবা-মায়ের পূর্ণ আনুগত্য করা। তারা ভাবেন যে, সন্তানের কাজ হলো কথা শোনা, অন্য কোন কাজ করা উচিত নয়। নিজের জায়গা থেকে তাদের নড়া ঠিক নয়, লাফালাফি করা উচিত নয়, বেশী কৌতুহলী দেখানো ঠিক নয়। সন্তান কেবল চুপচাপ বসে থাকবে, প্রতিবেশীকে বিরক্ত করবে না-এই হলো সন্তানের করণীয়। কিন্তু ইসলাম এবং আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে শিশুর স্বাধীনতার পর্যায়ে বাবা-মায়ের এ ধরনের খবরদারী একদম অনুচিত।  ৩য় পর্বশিশুর বেড়ে ওঠার প্রথম পর্ব অর্থাৎ প্রথম সাত বছরে, শিশুর যথাযথ বিকাশের জন্যে বৈজ্ঞানিক ও রাসূল(সাঃ) নির্দেশিত প্রতিপালন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছি। শিশুর জীবনের প্রথম সাত বছর হলো, স্বাধীনতার চর্চার কাল। এ সময়টা শিশুর সুপ্ত প্রতিভার উন্মেষ ও বিকাশ লাভ করে। এ সময়টাতে তাই বাবা-মায়ের সচেতনতা খুবই জরুরী। এ পর্বে আমরা শিশুর প্রতিভার উন্মেষকালে পিতা-মাতার করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করব।
যে শিশু তার চারপাশের পরিবেশকে মুক্ত-স্বাধীন ও শান্তিময় মনে করে এবং যা চায় তা-ই পায়, সেই শিশুর ব্রেইন বা মেধার উন্মেষ স্বাভাবিক গতিতেই ঘটবে, সেই সাথে সে তার সাধ্যমতো স্বাভাবিক এই মেধার আত্ম-প্রকাশ ঘটাতে চাইবে। কারণ হলো সে তার ব্যক্তিত্ব ও মেধার বিকাশের পথে কোন রকম প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়নি। ভবিষ্যতেও তার জ্ঞান-বুদ্ধি, মেধা ও সৃষ্টিশীলতায় এই অবাধ পরিবেশের প্রভাব পড়বে। পান্তরে, শিশু যদি তার পরিপার্শ্বকে মুক্ত ও স্বাধীন না পায়, তার শিশুসুলভ চাহিদাগুলো যদি না মেটে, অর্থাৎ তার চাহিদা পূরণের পথে যদি কোন রকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়, তাহলে তার মেধা বিকাশের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, এ অবস্থায় শিশুর সুপ্ত প্রতিভাগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তার প্রতিভার উন্মেষ বা বিকাশের আর কোন অবকাশই থাকবে না। এ ধরণের শিশুর ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে পড়ে এবং তারমধ্যে আর কোন সৃষ্টিশীলতাই অবশিষ্ট থাকে না।
একটি শিশু তার প্রথম সাত বছর বয়সে ভাবে, বাবা-মায়ের কাছে সে যা চাইবে, তাই পাবে। অর্থাৎ বাবা-মা তার চাহিদাগুলোকে প্রশ্নহীনভাবে বাস্তবায়ন করবে। সেজন্যে এ সময়টায় বাবা-মায়ের প্রতি শিশুর বিশ্বাস থাকে অগাধ। বাবা-মাকে সে তার বন্ধু, সহযোগী এবং তার একান্ত আশ্রয় মনে করে। তাদেরকে সে নিরাপদ মনে করে এবং সেজন্যেই তাদেরকে সে ভীষণ ভালোবাসে। শিশু যখন বড় হয় তখনও সে বাবা-মায়ের ভালোবাসার কথা ভোলে না। বাবা-মা তাকে যে কী পরিমাণ ভালোবাসতো, আদর-যত্ন করত, সে তা উপলদ্ধি করে এবং তাদের ভালোবাসার কাছে যে ঋণী সে তা অনুভব করে। বড়ো হয়ে তাই এই সন্তান বাবা-মায়ের কথা বেশ মনযোগের সাথে শোনে। তাদের দিক-নির্দেশনা, তাদের জীবন অভিজ্ঞতা থেকে সে লাভবান হয়। যে কোন জটিল ও বিরুপ পরিস্থিতিতে বাবা-মাকেই সে আপন ভাবে এবং তাদের সাথে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা ও পরামর্শ করে। তাদেরকেই নিজের একান্ত পৃষ্ঠপোষক বলে মনে করে।
সন্তান যেহেতু বাবা-মায়ের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করে, সেহেতু বাবা-মায়ের সকল যুক্তি ও পরামর্শ আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করে। তাদের যথাযথ আনুগত্য করে এবং সর্বাবস্থায় তাদের নির্দেশ মেনে চলে। শিশু জীবনের প্রথম পর্বে বাবা-মায়ের আচরণগত ত্রুটিই যুব সমাজের অধিকাংশ সমস্যার জন্য দায়ী। বাবা-মা, সন্তানের আত্মিক ও মনস্তাত্ত্বিক চাহিদাগুলোর প্রতি কোন রকম মনযোগ না দেয়ার কারণে সন্তান ও বাবা-মায়ের প্রতি আস্থাহীনতায় ভোগে। আর বাবা-মায়ের প্রতি সন্তান যদি আস্থা-বিশ্বাস, নির্ভরতা স্থাপন করতে না পারে, তাহলেই বাবা-মায়ের সাথে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এই দুরত্ব সন্তানকে বিপথগামী করে তোলে। এ আলোচনায় নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে, সন্তানের বেড়ে ওঠার প্রাথমিক পর্বে বাবা-মাকে কতোটা সচেতন থাকতে হবে। সন্তানের বিপথগামীতা এবং বাবা-মায়ের সাথে তাদের দূরত্ব সৃষ্টির জন্য কিন্তু তারা নিজেরাই দায়ী। ফলে সন্তানকে ভালবাসতে হবে। তার আত্মিক এবং মনস্তাত্ত্বিক চাহিদাগুলো পূরণের ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে। তার বেড়ে ওঠার যথার্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি, শিশুর ভবিষ্যত যে পিতা-মাতার ওপরই নির্ভর করে-তা মনে প্রাণে উপলদ্ধি করতে হবে।
আসরের এ পর্যায়ে, শিশুর বিকাশের প্রাথমিক পর্ব অর্থাৎ সাত বছরে বাবা-মায়ের কর্তব্যগুলো সম্পর্কে সংপ্তি আলোচনা করবো। আসলে শিশুদের সমস্যাগুলো বাবা-মায়েরই সৃষ্টি। তাই শিশুর সমস্যা এড়াতে বাবা-মায়ের উচিত-
১) সন্তানের জন্যে একটা সময় নির্দিষ্ট করা। তার সমস্যা, তার জিজ্ঞাসা, তার কৌতূহলের যথাযথ উত্তর দেয়া।
২) তার বেড়ে ওঠার জন্যে যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সন্তানের চাহিদাগুলো পূরণে সচেষ্ট হওয়া।
৩) শিশুর ওপর খবরদারী করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এটা করো না, ওটা ধরো না, এটা করো, সেটা ধরো-এসব করা ঠিক নয়। তারচে বরং এসব কথা যাতে বলতে না হয়, সে ব্যাপারে আগেই সচেতন থাকা উচিত। এসব করা হলে শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।
৪) শিশুর জন্যে যেসব জিনিসপত্র তিকর ও ভয়াবহ, সেসব জিনিস তার হাতের নাগালে রাখা অনুচিত। অন্যথায় শিশু যদি ঐসব জিনিস দিয়ে কোন জরুরী কিছু নষ্ট করে, তাহলে ঐসব জিনিস নষ্ট করার জন্যে শিশুকে কোনভাবেই দোষারোপ করা যাবে না। অর্থাৎ তার ওপর রাগ দেখানো যাবে না।
৫) বাবা-মায়ের উচিত বাসায় তাদের জরুরী জিনিসগুলো যথাযথ জায়গায় রাখা। ছুরি-চাকু বা এ ধরণের ধারালো জিনিসগুলো, বিষাক্ত ঔষধপত্র, কীট নাশক জাতীয় জিনিস, কাঁচের জিনিসপত্র, দামী তৈজসপত্র, জরুরী কাগজপত্র প্রভৃতি শিশুর হাতের নাগালের বাইরে রাখা উচিত।
৬) শিশু যখন জেগে থাকে, তখন এমন কোন জিনিস বের করা বা মেরামত করার জন্যে খোলা ঠিক নয়, যার ছোট্ট একটি যন্ত্রাংশ হারালে বা নষ্ট হলে পুরো জিনিসটাই নষ্ট হয়ে যাবে। অন্যকথায় শিশু এসব যন্ত্রপাতি নষ্ট করলে তার ওপর রেগে যাওয়া ঠিক নয়। কারণ শিশু এ সময়টায় কৌতূহলী হবে-এটাই স্বাভাবিক। তার কৌতূহল থেকে তাকে নিবৃত্ত করা যাবে না। অর্থাৎ এ দিকে এসো না, এটা ধরো না-এরকম বলা যাবে না। পরিবারে যদি স্কুলগামী কোন সন্তান থাকে, তাহলে তার বই-পুস্তকসহ অন্যান্য শিক্ষা-উপকরণ এমনভাবে রাখতে হবে, যাতে শিশু সেগুলো ধরতে না পারে, নষ্ট করতে না পারে। মায়ের যদি সেলাই কাজের অভ্যাস থাকে, তাহলে তা করতে হবে শিশু যখন ঘুমোয় তখন, অথবা এমন কোন জায়গায় যেখানে শিশুর উপস্থিতির সম্ভাবনা নেই। আর সুঁই-সূতা-ব্লেড ইত্যাদি রাখতে হবে নিরাপদ দূরত্বে।
ধরা যাক, বহু সতর্কতার পরও শিশু ব্লেড বা ছুরি-চাকু জাতীয় কিছু একটা হাতে নিল। এ অবস্থায় কী করতে হবে? না, কোন অবস্থাতেই চীৎকার চেঁচামেচি করা যাবে না, বরং তার সামনে এমন অন্য একটা জিনিস এনে হাজির করতে হবে, যাতে শিশুর মনযোগ সেদিকে যায় এবং সুযোগমতো ঐ ভয়ানক বস্তুটি তার হাত থেকে সরিয়ে নেয়া যায়। এমন ভাবে নিতে হবে যাতে শিশুটি একদম টের না পায়।
বাবা-মায়ের এতো সতর্কতার কারণ হলো, এ সময়টা শিশুর পরিপূর্ণ স্বাধীনতার পর্ব। তার যা খুশী তা-ই করবে সে। তাকে আদেশ দেয়া যাবেনা, বারণও করা যাবে না। শিশুর মেধা বিকাশের স্বার্থে বাবা-মা ভালোবেসে, আদর করে এটুকু ছাড় দেবেন-এটাই প্রত্যাশা। ৪র্থ পর্ব‘আজ যে শিশু পৃথিবীর আলোয় এসেছে, আমরা তার তরে একটি সাজানো বাগান চাই।‘ কিংবা ‘এ পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি‘-গীতিকার বা কবির এই যে আকুলতা, এই যে প্রতিশ্রুতি, তা শিশুর প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা এবং তার সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করারই প্রয়াসমাত্র। সমস্যা হলো, শিশুর ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ল সবারই আছে। কিন্তু কিভাবে তা গড়তে হবে, সেটা যথার্থভাবে অনেকেরই জানা নেই। তাই এবারের পর্বে আমরা শিশু জীবনের দ্বিতীয় পর্ব অর্থাৎ সাত থেকে চৌদ্দ বছর বয়সকালীন তার আচার-আচরণগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করবো।
শিশু জীবনের দ্বিতীয় পর্বটি হলো সাত থেকে চৌদ্দ বছর বয়স পর্যন্ত। এই বিভাজন রাসূল(সাঃ) নিজেই করে গেছেন। প্রথম সাত বছর হলো শিশুর স্বাধীনতার কাল। আর দ্বিতীয় পর্ব হলো শিশুর আনুগত্যের কাল। এই দ্বিতীয় সাত বছরে শিশুর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন লংঘনীয় পর্যায়ে যায়। তার শরীর আগের তুলনায় একটু শক্ত-সামর্থ হয়, স্মৃতিশক্তি বিকশিত হয়, তার জ্ঞান-বুদ্ধি-উপলব্ধিও বৃদ্ধি পায়। একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত শিশু ভালো-মন্দও বুঝতে পারে। এ কারণে শিশু তার মুরব্বীদেরকে তার কৌতূহল মেটানোর জন্যে বিভিন্ন প্রশ্ন করে বেড়ায়। তবে তার বুদ্ধির যেহেতু পূর্ণ বিকাশ ঘটেনি, সেহেতু কীসে তার কল্যাণ, আর কীসে অকল্যাণ-তা যথার্থভাবে বুঝে উঠতে পারে না। আর বুঝতে পারে না বলেই বাবা-মা বা মুরব্বীদের উচিত হলো, এ সময় তাকে বোঝানো, শেখানো। অর্থাৎ তার কোন্টা করা উচিত, আর কোন্টা করা উচিত নয়-সে ব্যাপারে তাকে দিক-নির্দেশনা দেয়া এ মুহূর্তে অভিভাবকদের কর্তব্য। শিশু এ সময় বাবা-মায়ের কথাবর্তা শনুবে, আনুগত্য করবে-এটাই স্বাভাবিক। বাবা-মা এসময় শিশুকে ভদ্রতা-শিষ্টাচার এসব শেখাবে। শিশুকে জ্ঞান দান ও প্রশিক্ষণ দানের উপযুক্ত বয়সই হলো এই দ্বিতীয় সাত বছর। এ পর্বের শুরু থেকেই শিশুর আনুষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনের সূচনা ঘটবে। শিশু স্কুলে যেতে শুরু করবে। তার ওপর পাঠ-অনুশীলনসহ সীমিত পর্যায়ের কিছু কিছু দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া হবে। শিশু যদি তার জীবনের প্রথম পর্বটি যথার্থ পরিবেশের মধ্যে কাটাতে সম হয়ে থাকে অর্থাৎ যথার্থ স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে যদি বেড়ে উঠে থাকে, তাহলে আনুগত্যের পর্বে তার একধরণের মানসিক ভারসাম্য সৃষ্টি হবে। তাই অত্যন্ত আন্তরিকতা ও আনন্দের সাথে সে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং আরো বেশী জীবনাভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যে শিশু তার বাবা-মা বা মুরব্বীদের আনুগত্য করবে। তারা যা বলেন, তা শুনবে। যা আদেশ করেন তা পালন করবে। একটা শিশু যখন তার দ্বিতীয় সপ্তবর্ষে পা দেয়, তখন সে উপলব্ধি করতে পারে যে, অভিভাবকদের তুলনায় জ্ঞান এবং যোগ্যতায় সে অনেক পিছিয়ে আছে। অর্থাৎ বাবা-মা যা জানে, সে তা জানে না। তখনই তার মনে নানা রকম প্রশ্ন জাগে। কিন্তু শিশু যেহেতু তার ক্ষুদ্র জ্ঞানের মাধ্যমে সেসব প্রশ্নের সমাধান করতে পারে না, তাই তার প্রয়োজন পড়ে এমন কাউকে-যে তার প্রশ্নগুলোর জবাব দেবে। শিশু চায়, যে তার কৌতূহলগুলোর জবাব দেবে, সে যেন তার প্রতি পরিপূর্ণ মনযোগী হয়, সে যেন কোন রকম দ্বিধা-সংকোচ ছাড়াই তাকে প্রশ্ন করতে পারে এবং জবাব পেতে পারে। সাত থেকে চৌদ্দ বছর বয়সে একটা শিশুর মেধা, জ্ঞান-বুদ্ধি কিছুটা বৃদ্ধি পায়। ফলে তার চাহিদা, তার প্রত্যাশাও আগের তুলনায় কিছুটা উৎকর্ষ লাভ করে। আগের মতো একেবারে শিশুসুলভ আর থাকে না। তাই এ সময়টায় শিশুকে শিক্ষা দেয়া যায়, প্রশিক্ষণ দেয়া যায়। তাকে আর পুরোপুরি স্বাধীনতা দেয়া যাবে না। বরং তার সকল কর্মসূচী ছকে বেধে দিতে হবে, যেন সে শৃঙ্খলা শিখতে পারে। এ সময় তাকে একটু একটু ইবাদত সম্পর্কে শেখানো যেতে পারে।
শিশু জীবনের দ্বিতীয় সপ্তবর্ষে তার মেধা ও স্মৃতিশক্তির বিকাশ ঘটে। তাই এ সময়টাই হলো শিশুকে শেখানোর সময়। বিশেষ করে এই বয়সটাতেই শিশুকে আদব-কায়দা বা শিষ্টাচার এবং ইসলামী আচার-আচরণ পদ্ধতি শেখাতে হবে। স্কুলে শিকদের কাছ থেকে এবং বাসায় বাবা-মায়ের কাছ থেকে এই দ্বিতীয় সাত বছর অর্থাৎ ৭ থেকে ১৪ বছর বয়সকালে শিশু যেসব শিষ্টাচার শিখবে, তা কিশোর ও যৌবনকালে তার চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শিশুর জ্ঞান-বুদ্ধি, স্মৃতিশক্তি, মেধার বিকাশ এবং শেখার গতি এ সময় খুব প্রখর থাকে। প্রাপ্ত বয়সে তার মানবিক বোধ, আবেগ-অনুভূতি, আচার-আচরণগত বৈশিষ্ট্য এই দ্বিতীয় সাত বছরের শিক্ষারই ফলাফল। ইসলামের আচরণ পদ্ধতি ও শিষ্টাচার সম্পর্কে হাদীসে যেসব বর্ণনা বা নির্দেশনা এসেছে, শিকদের উচিত কাসে ছাত্রদের সামনে সেই সব আচরণ পদ্ধতি কৌশলে, গল্পাকারে বা অন্য যেকোন আকর্ষণীয় উপায়ে বর্ণনা করা, যাতে কোমলমতী শিশু-ছাত্ররা সে সব শিখে তাদের স্বভাবগত উৎসাহেই নিজের জীবনে কাজে লাগাতে পারে।
দ্বিতীয় সপ্তবর্ষে কোমলমতী ছাত্ররা স্কুলে যেসব গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার শিখতে পারে বা শিকদের যেটা শেখানো উচিত তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। শিশুকে শেখানো যেতে পারে কী ভাবে সালাম করতে হবে, কীভাবে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হয়, আল্লাহর নামে সকল কাজ শুর করা, খাওয়ার নিয়ম, পানিয় বস্তু গ্রহণ করার নিয়ম, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, বাবা-মা ও মুরব্বীদের সম্মান করা, অন্যদের সাথে চলাফেরা বা মেলামেশার নিয়ম, কথাবার্তা বলার শালীনতা, ঘুমানোর পদ্ধতি, যেকোন কাজে অপরের অধিকার সংরণ করা। এছাড়া অজু করার নিয়ম, গোসল করার নিয়ম, নামায পড়া এবং দোয়া করার পদ্ধতির সাথে পরিচয় করানো যেতে পারে। তাকে রোযা রাখা, কোরআন পড়া, ভ্রমণে যাবার ক্ষেত্রে করণীয় এবং বন্ধুত্বের নিয়ম-শৃঙ্খলার বিষয়েও জ্ঞান দেয়া যেতে পারে। এই সব শিষ্টাচার বা নিয়ম-শৃঙ্খলা শেখানোর পাশাপাশি চারিত্রিক গুণাবলী ও উত্তম স্বভাব অর্জনের ক্ষেত্রেও শিশুকে দিক-নির্দেশনা দিতে হবে। তাকে সব ধরণের মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখতে হবে, যাতে তার চরিত্রের ওপর ঐসব মন্দ কাজের প্রভাব পড়তে না পারে। এটাও দ্বিতীয় সপ্তবর্ষের একটি শিশুকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই শিশুকে সুন্দর ও যথার্থভাবে গড়ে তোলার জন্যে প্রথমতঃ নিজেরা প্রশিতি হবেন এবং তারপর শিশুদেরকে প্রশিক্ষণ দেবেন। মনে রাখতে হবে যথার্থ দিক-নির্দেশনার অভাবেই কিন্তু শিশুর ভবিষ্যত হয় বাবা-মায়ের অপ্রত্যাশিত। #  ৫ম পর্বসন্তানের ভবিষ্যৎ সুন্দরভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জন্মের পর থেকেই তাকে কীভাবে প্রশিক্ষিত করতে হবে-সেই দিক-নির্দেশনা দেয়াই এ আলোচনার উদ্দেশ্য। অনেক বাবা-মা আছেন যারা সন্তানকে ভালোবাসেন ঠিকই, কিন্তু জানেন না শিশু প্রতিপালনের যথার্থ পদ্ধতি। মুরব্বীদের পরামর্শ অনুযায়ী সন্তানের তত্ত্বাবধান করে থাকেন তারা। কিন্তু সমস্যা হলো মুরব্বীদের পরামর্শ যদি বিজ্ঞান সম্মত হয়, তাহলে তো ভালই আর অবৈজ্ঞানিক বা মনগড়া হয়ে থাকলে তা শিশুর বেড়ে ওঠার স্বাভাবিকতায় বিঘ্ন ঘটাবে। তাই বাবা-মায়ের উচিত, শিশুর জীবন বিকাশের প্রকৃতি সম্পর্কে জানা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। আমরা শিশুর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য এবং সে অনুযায়ী বাবা-মায়ের করণীয় সম্পর্কে কথা বলছিলাম। দ্বিতীয় সপ্তবর্ষে শিশুর আচরণগত বৈশিষ্ট্য এবং তাকে কী কী শিষ্টাচার এ বয়সে শেখাতে হবে তা এর আগের পর্বে উল্লেখ করেছিলাম। এবারের পর্বেও সে আলোচনা অব্যাহত রাখবো। সাত থেকে চৌদ্দ বছর বয়সে একটি শিশু স্কুলে যেসব আদব-কায়দা বা শিষ্টাচার শিখবে, সেগুলোকে সাথে সাথেই বাস্তবায়নের পরিবেশ তৈরী করতে হবে। এমনভাবে তাদেরকে শেখাতে হবে, যাতে তারা তাদের বাবা-মা বা অন্যান্য মুরব্বীদের সাথে কথাবার্তা বা আচার-আচরণ করতে গিয়ে সেসব শিক্ষাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে লাগায়। তাদেরকে যেসব শেখানো হয়, সেগুলোর ব্যবহারিক প্রয়োগ যদি না থাকে, তাহলে ঐসব শিক্ষা কোন কাজেই আসবে না। ফলে শিশুদের ব্যক্তিত্ব গঠনে এই সব শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের কোন প্রভাবই পড়বে না। এ বয়সে শিশুর জীবনে যেসব চারিত্রিক ও নৈতিক গুণ দৃঢ় হওয়া উচিত কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে আচার-আচরণগত ত্রুটির সংশোধন হওয়া উচিত, সেগুলো সম্পর্কে এবার আলোচনা করা যাক।
এ বয়সে শিশুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে যে গুণগুলো থাকা উচিত, সেগুলো হলো সততা ও সত্যকথা বলা, মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকা, হিংসা বা ঈর্ষা করা থেকে বিরত থাকা, গীবত বা কারো অনুপস্থিতিতে দোষ বলে বেড়ানোর মতো শয়তানী আচরণ থেকে বিরত থাকা, ভালো কাজ করা এবং অন্যের উপকার করা, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ কিংবা গুজব রটনা থেকে বিরত থাকা, প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা এবং ফালতু কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি। এই যে কতগুলো নৈতিকগুণের কথা আমরা উল্লেখ করলাম এগুলো নিরন্তর অনুশীলনের ব্যাপার। বাবা-মা কে অসম্ভব সতর্কতার সাথে খেয়াল রাখতে হবে এবং এগুলোর ব্যতিক্রম নজরে পড়লেই তা সংশোধন করার যুক্তিযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। রেগে-মেগে ভয় দেখিয়ে কিছু করা ঠিক হবে না। এ বয়সে শিশুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে আরো কিছু গুণের সমাবেশ ঘটা উচিত। যেমন, অন্যের প্রতি জুলুম বা অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকা এবং অন্যদেরকে বিরক্ত করা বা যন্ত্রণা দেওয়া থেকে বিরত থাকা, অপচয় বা অপব্যয়মূলক কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকা, কথা দিয়ে কথা রাখার গুরুত্ব উপলদ্ধি করা, অন্যদের সাথে একগুঁয়েমি বা জেদি মনোভাব পোষণ করা থেকে বিরত থাকা, দান করা, দয়াশীল ও উদার হওয়া, মা ও মহানুভবতা দেখানো, নিজ ও অন্যান্যদের ব্যাপারে যথার্থ বিচারবোধ জাগা, জালিমের শত্রু এবং মজলুমের বন্ধু হওয়া এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণ নিজের মধ্যে জাগ্রত রাখা।
এখন কথা হচ্ছে এইসব গুণাবলী কি শিশু প্রাকৃতিকভাবেই অর্জন করবে? না, শিশুকে এসবের ব্যাপারে যথার্থ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যখনি শিশু এইসব গুণাবলীর বিপরীত আচরণ করবে, তখনি বাবা-মায়ের উচিত হবে
মনস্তাত্ত্বিক পরিচর্যার মাধ্যমে শিশুকে এমনভাবে সেগুলো সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান দেওয়া যাতে শিশু বিরক্ত না হয় কিংবা বাধ্য না হয়। জোর করে কোন কিছু শেখালে শিশুর মনে বাবা-মা ভীতি কাজ করবে। ফলে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মূল ল্যই ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ধরা যাক বাবা-মা যদি শিশুকে কোন কথা দিয়ে না রাখে, তাহলে শিশুও তা করতে শিখবে। ফলে শিশুকে শেখানোর আগে গুণগুলো বাবা-মায়ের ভেতরে অর্জিত হওয়া প্রয়োজন। একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, তাহলো ৭ থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত একটি শিশু আনুগত্যের পর্যায় অতিক্রম করে। অর্থাৎ এ সময় বাবা-মা, মুরব্বী, শিক তথা শ্রদ্ধেয়দের কথা মেনে চলাই হলো শিশুর প্রধান কর্তব্য। এটা একটা কঠিন পর্যায়। শিশুর জন্যেও কঠিন, অভিভাবকদের জন্যেও কঠিন। শিশুর জন্যে কঠিন, কারণ সর্বাবস্থায় শিশুর কাজ হলো আনুগত্য করা। আর বাবা-মা বা অভিভাবকদের জন্যে কঠিন, কারণ শিশু এ সময় বাবা-মা বা মুরব্বীদেরকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করবে। ফলে বাবা-মা, শিক-অভিভাবকদের অবশ্যই আদর্শস্থানীয় হতে হবে।
এখন কথা হলো, একটি শিশু যদি কোন মুরব্বী সম্পর্কে কিংবা ধরা যাক তার কোন শিক সম্পর্কে বাবা-মায়ের সামনে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল করে, আর বাবা-মা যদি তা শুনে মজা নেয়, তাহলে পরিণতিটা কী হবে? পরিণতি দাঁড়াবে এই-শিশুটি ঐ শিককে আর শ্রদ্ধা করবে না। ফলে পড়ালেখা থেকে তার মন উঠে যাবে। অন্যদিকে শিক সম্পর্কে কথা বলার অভ্যাস যেহেতু হয়ে গেছে, তাই ধীরে ধীরে অন্যদের ব্যাপারেও কথা বলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে পরিণতিতে এই শিশু ভবিষ্যতে বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে যেতে পারে। বাবা-মাকে তাই সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি শিকদেরও উচিত শিশুদের মনস্তত্ত্ব বোঝা এবং নিজেদের ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে শিশুদের সাথে আচরণ করা। সর্বোপরি নিজেদের মেধা কাজে লাগিয়ে শিশুদের মন জয় করা।
শিশু জীবনের প্রথম সপ্তবর্ষ হলো স্বাধীনতার পর্যায়। সাত-সাতটি বৎসর স্বাধীনতা ভোগ করার পর একটি শিশু আনুগত্যের পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে। দ্বিতীয় সাত বছর আনুগত্য করার ফলে শিশুর জীবনের এখন কিছুটা দায়িত্ব জ্ঞান, নৈতিকতাবোধ জেগেছে। শিশু যদি যথার্থভাবে তার আনুগত্যের পর্যায় অতিক্রম করে থাকে, তাহলে শিশুটি এখন এমন কিছু মেধা ও জ্ঞান-বুদ্ধি অর্জন করতে সম হয়েছে যা দিয়ে সে তার মুরব্বীদেরকে কাজে-কর্মে সহযোগিতা করতে পারে । এভাবেই শিশুটি তার জীবনের তৃতীয় সপ্তবর্ষে এসে পৌঁছুবে । এ পর্যায়টি শিশুর দায়িত্বশীলতার পর্যায়, বাবা-মা বা পরিবারকে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করার পর্যায় । ফ্রান্সের একজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব মৌরীস রব্সের একটি উক্তির মধ্য দিয়ে এ পর্বের আলোচনা শেষ করবো। তিনি বলেছেন প্রতিটি ঘরের দরোজা হয়ে উঠুক শিক উন্মুখ, আর প্রতিটি বিদ্যালয়ের দরজা পরিবারের জন্য উন্মুক্ত হয়ে থাকুক। আমরা চাই এককভাবে কোন স্কুল বা কোন পরিবার যেন একটি শিশুর পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ না করে। অর্থাৎ গৃহ এবং স্কুল পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠুক। এ উক্তির ব্যাখ্যা এভাবেও করা যেতে পারে যে, শিশুকে স্কুলে পাঠিয়ে দিয়েই বাবা-মা যেন এরকম মনে না করেন যে তাদের দায়িত্ব শেষ। আবার বাসায় শিশুকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েই যেন কেউ এরকম না ভাবেন যে তাকে আর স্কুলে পাঠানোর দরকার নেই। আমরা এসব ব্যাপারে যৌক্তিক হব, সচেতন হব-এ কামনা করছি।

 

চিত্রনায়িকা দিতি আর নেই

কোনো আশাই ছিলো না। তবুও মিরাকেল যদি কিছু হয়! কিন্তু হলো না। চলে গেলেন চিত্রনায়িকা পারভীন সুলতানা দিতি। রোববার (২০ মার্চ) বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)।

হাসপাতালটির চিফ কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট শাগুফা আনোয়ার বাংলানিউজকে খবরটি নিশ্চিত করেছেন। দিতি বেশ কিছুদিন ধরে এখানে কোমায় ছিলেন। তার মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তিনি এক কন্যা (লামিয়া চৌধুরী) ও এক পুত্র দীপ্ত এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়ায় গত বছরের ২৬ জুলাই ভারতে চেন্নাইয়ের মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ট্রামাটোলজিতে (এমআইওটি) ভর্তি হয়েছিলেন দিতি। এরপর ২৯ জুলাই প্রথম অস্ত্রোপচারের পর কেমো নিয়ে ২০১৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরেন জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। কিন্তু কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ কারণে ৩০ অক্টোবর তাকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে।

অবস্থা অপরিবর্তিত থাকার কারণে গত বছরের ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় দিতিকে চেন্নাই নেওয়া হয়। এর দু’দিনের মাথায় ৫ নভেম্বর তার মস্তিষ্কে দ্বিতীয়বারের মতো সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মস্তিষ্কে জমে থাকা পানি অপসারণ করা হয়। কিন্তু তখনও পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত ছিলেন না। তার অবস্থা এতোই গুরুতর ছিলো যে, মাসখানেক নিজের দুই সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের চিনতে পারছিলেন না তিনি।

১৯৬৫ সালের ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে জন্মছিলেন দিতি। ১৯৮৪ সালে নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেন তিনি। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘ডাক দিয়ে যাই’। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। দিতি অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ছিলো আজমল হুদা মিঠু পরিচালিত ‘আমিই ওস্তাদ’।

জীবদ্দশায় প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন দিতি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘হীরামতি’, ‘দুই জীবন’, ‘ভাই বন্ধু’, ‘উছিলা’, ‘লেডি ইন্সপেক্টর’, ‘খুনের বদলা’, ‘দুর্জয়’, ‘আজকের হাঙ্গামা’, ‘স্নেহের প্রতিদান’, ‘শেষ উপহার’, ‘চরম আঘাত’, ‘স্বামী-স্ত্রী’, ‘অপরাধী’, ‘কালিয়া’, ‘কাল সকালে’, ‘মেঘের কোলে রোদ’, ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’, ‘মুক্তি’, ‘কঠিন প্রতিশোধ’, ‘জোনাকীর আলো’, ‘তবুও ভালোবাসি’, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’, ‘হৃদয় ভাঙা ঢেউ’, ‘মাটির ঠিকানা’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’।

সর্বশেষ গত মাসে মুক্তি পায় দিতি অভিনীত ‘সুইটহার্ট’ (রিয়াজ, মিম, বাপ্পি চৌধুরী)। এ ছাড়া মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ‘ধূমকেতু’ (শাকিব খান, পরীমনি) ছবিটি। সুভাষ দত্তর ‘স্বামী স্ত্রী’ ছবিতে আলমগীরের স্ত্রীর চরিত্রে দারুণ অভিনয় নৈপুণ্যের জন্য প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।

ছোট পর্দায়ও দিতি ছিলেন নিয়মিত আর সপ্রতিভ। অসংখ্য একক নাটক, টেলিছবি ও ধারাবাহিক নাটকে দেখা গেছে তাকে। এ ছাড়া রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করেছেন। গায়িকা হিসেবেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন দিতি। বেরিয়েছে তার একক অ্যালবামও। অনেক বিজ্ঞাপনচিত্রেও মডেল হন তিনি।

ব্যক্তিজীবনে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন দিতি। তাদের সংসার আলো করেছে লামিয়া ও দীপ্ত। সোহেলের মৃত্যুর পর চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে ঘর বাঁধেন দিতি। কিন্তু সে বিয়ে টেকেনি।

 

ইসলাম ধর্মে প্রতিবেশীর অত্যধিক গুরুত্ব

সাধারণভাবে বাড়ীর আশপাশে যারা বসবাস করে তাদেরকে প্রতিবেশী বলা হয় । তবে কখনও কখনও সফর অথবা কাজের সঙ্গীকেও প্রতিবেশী বলা হয়। প্রতিবেশীই হচ্ছে মানুষের সবচে‘ নিকট জন , যিনি তার খবরাখবর সম্পর্কে অন্যদের তুলনায় বেশি জানেন। তাই ইসলাম ধর্মে প্রতিবেশীর অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং তার অধিকারকে খুব বড় করে দেখা হয়েছে। তো প্রতিবেশীর গুরুত্ব ও মর্যাদা, প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা তুলে ধরবো।

আগেই বলেছি যে, বাড়ীর আশপাশে যারা বসবাস করে তাদেরকে প্রতিবেশী বলা হয়। তবে এ নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, নিজের বাড়ীর চতুর্দিকে চল্লিশ ঘর পর্যন্ত হচ্ছে প্রতিবেশীর সীমানা। আবার কেউ বলেন, যে তোমার সাথে ফজর পড়ল সেই তোমার প্রতিবেশী, ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতামত হচ্ছে , নিজের বাড়ীর পাশে যার বাড়ী সেই আসল প্রতিবেশী। সে হিসেবে নিজ বাড়ীর সাথে লাগানো বা কাছাকাছি প্রতিবেশীর প্রতি, দূরের প্রতিবেশীর চেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে প্রতিবেশীর প্রতি কেন এত গুরুত্ব দিতে হবে ? এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও রাসূল (সাঃ) কি বলেছেন, সে সম্পর্কে খানিকটা আলোচনা করা যাক।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা আন নিসার ৩৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ”তোমরা সবাই আল্লাহর ইবাদত কর। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না । পিতা-মাতার সাথে ভাল ব্যবহার কর । নিকটাত্মীয়, এতীম- মিসকীনদের সাথে সদ্ব্যবহার করো। আত্মীয়-সম্পর্কীয় প্রতিবেশী, আত্মীয়তা বিহীন প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সহচর, তোমাদের মালিকানাধীন দাসী ও গোলামদের প্রতি সদয় ব্যবহার করো ।
অন্যদিকে রাসুল (স.) বলেছেন, জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আমাকেপ্রতিবেশী সম্পর্কে এতো বেশী অসীয়ত করছিলেন যে, এক পর্যায়ে আমার ধারণাহয়েছিল যে, আল্লাহ তাআলা মনে হয় প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী করে দেবেন।
প্রতিবেশীর ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসের বক্তব্যের পর এবার আমরা প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরবো।
প্রথমত :কথা ও কাজের মাধ্যমে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া যাবে না। অর্থাৎ তাকে অভিশাপদেওয়া, গালী দেওয়া, তার গীবত করা, তার বাড়ির সামনে আবর্জনা ফেলা, তাকেবিরক্ত করা, ছেলে মেয়েদেরকে তার ঘরের জিনিস নষ্ট করতে উদ্বুদ্ধ করা বা বাধানা দেওয়া- এসব করা যাবে না। মহানবী (সা) এ সম্পর্কে বলেছেন, যে আল্লাহরপ্রতি এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।তিনি আরো বলেছেন, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার প্রতিবেশী তারকষ্ট থেকে মুক্ত নয়।

প্রতিবেশীর প্রতি অন্যকর্তব্যগুলো হলো : প্রয়োজনে সাহায্য করা, কোন জিনিস ব্যবহার করতে চাইলে তাদেয়া। প্রতিবেশীকে উপহার দেওয়া, তার বাড়িতে খাবার ইত্যাদি পাঠানো ইত্যাদি।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বলেছেন, যখন তুমি তরকারীরান্না করবে তাতে বেশি করে পানি দেবে এবং তোমার প্রতিবেশীকে তা থেকে কিছুদেবে। এছাড়া প্রতিবেশী ঋণ চাইলে তাকে ঋণ দেয়া, তার প্রয়োজনে তাকে সাহায্যসহযোগিতা করার ব্যাপারেও ইসলামে তাগিদ দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেট ভরেখায়, অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।

একজনমুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের অনেক অধিকার রয়েছে। সেসব অধিকার কিন্তুআমরা প্রথমেই প্রতিবেশীর ব্যাপারে আদায় করতে পারি। তাহলে ইসলামের নির্দেশযেমন মানা হবে তেমনি প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্কও বৃদ্ধি পাবে। এসব অধিকারবা কর্তব্যের কয়েকটি হলো, প্রতিবেশীকে সালাম দেওয়া, তার সালামের উত্তরদেয়া, কেউ অসুস্থ হলে তার সেবা-সুশ্রুষা করা, বিভিন্ন উপলক্ষে তাকে দাওয়াতদেয়া এবং তার দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করা ইত্যাদি।

প্রতিবেশীর দুঃখ-কষ্টে যেমন সহমর্মিতা দেখাতে হবে তেমনি তার ভাল কোন সংবাদ যেমন-সন্তান জন্ম নিলে, তার সন্তান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে,কারো বিয়ে হলে এবং এ জাতীয় উপলক্ষে তাকে মোবারকবাদ জানানো এবং বরকতের দোয়া করতে হবে।
আমরাযদি নবী পরিবারের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো তাঁরা নিজের পরিবারের চেয়েপ্রতিবেশীদের প্রতি বেশী লক্ষ্য রাখতেন,তাদের মঙ্গলের জন্য আল্লাহর দরবারেদেয়া করবেন। এ সম্পর্কে এবারে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা শোনাচ্ছি।

“প্রতিদিন শেষ রাতে ছেলেটির ঘুম ভেঙ্গে যায়। অবাক হয়ে লক্ষ্য করে মা তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছেন। ছেলেটিও অভ্যাসবশত বিছানা থেকে উঠে ওজু করে মায়ের পাশে নামাজে দাঁড়ায়। মায়ের সাথে নামাজ পড়ার সময় সে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করে। মা নামাজ শেষে মোনাজাত করছেন, কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন প্রতিবেশীদের মঙ্গলের জন্য,তাদের গোনাহ মাফের জন্য। কিন্তু নিজেদের জন্য কিছুই প্রার্থনা করছেন না!
এভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর ছেলেটি তার কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারলো না। সে মাকে জিজ্ঞেস করলো, “মা, মোনাজাতের সময় তুমি কেবল পাড়া-প্রতিবেশীর মঙ্গল কামনা করো। তোমার নিজের জন্য বা আমাদের কারও জন্য তো দোয়া করো না! এর কারণ কি? “

স্নেহময়ী মা এবার ছেলেকে আদর করে বুকে টেনে নিয়ে বললেন, বাছা আমার! আমি কেন ওরকম করি ? তুমি জেনে রেখো, প্রতিবেশীর হক আগে। প্রতিবেশীর মঙ্গল কামনা করলে, তাদের খোঁজখবর নিলে আল্লাহ তায়ালা খুব খুশী হন। তাই আমি তাদের জন্য দোয়া করি। তবে তোমাদের জন্যও দোয়া করি। তবে প্রতিবেশীর অধিকার আগে,এটা মনে রাখবে-কেমন ?
পাঠক! আপনারা নিশ্চয়ই এইমহিয়সী মা ও তাঁর ছেলেটির পরিচয় জানতে চাচ্ছেন! হ্যাঁ বলছি, এই মহিয়সী মাছিলেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কন্যা হযরত ফাতিমা (সাঃ আঃ)এবং যে ছেলেটির কথা বলা হলো তিনি হলেন ইমাম হাসান। হযরত ফাতিমারই আদরেরসন্তান।

প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্যেরব্যাপারে তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও অনেকেই প্রতিবেশীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, তাদেরকে অযথা কষ্ট দেয়।

একবার একজন আনসার সাহাবী মদীনায় একটি নতুন বাড়ী কিনে সেখানে বসবাস করতে লাগলেন। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি টের পেলেন যে, তার প্রতিবেশী লোকটি সুবিধার নয়। তাই তিনি রাসূলুল্লাহ্র কাছে হাজির হয়ে বললেন, ” হে আল্লাহর রাসূল! আমি কিছুদিন আগে একটি বাড়ী কিনে সেখানে বসবাস শুরু করেছি। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, আমার প্রতিবেশী শুধু একজন অভদ্র লোকই নয়, সে অত্যন্ত ঝগড়াটে। আমি বারবার চেষ্টা করেও তার অনিষ্টতা থেকে রক্ষা পাচ্ছি না। “
সব শুনে মহানবী হযরত আলী , সালমান, আবু যর ও মেকদাদ (রাঃ) এর মতো চারজন বিশিষ্ট সাহাবীকে বললেন, তোমরা মসজিদে গিয়ে নারী-পুরুষ সকলের মধ্যে উচ্চস্বরে ঘোষণা করবে যে, যে ব্যক্তির ঝগড়াটে চরিত্রের কারণে তার প্রতিবেশী কষ্ট পাবে, সে ঈমানদার নয়।
রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী পর পর তিনবার এ ঘোষনাটি দেয়া হলো। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর পবিত্র হাত চারদিকে ঘুরিয়ে বললেন, ” চারদিকের চল্লিশ ঘরের লোক প্রতিবেশী হিসেবে গণ্য হবে। “

প্রতিবেশীর ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল। এ আলোচনা তখনই স্বার্থক হবে যখন আমরা প্রতিবেশীদের সাথে উত্তম আচরণ করবো, তাদের দুঃখে দুঃখী হবো এবং তাদের সুখে সুখী হবো।

 

সফল নারী উদ্যোক্তা ফারজানা গাজী

ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকি করতে ভীষণ ভালো লাগত মেয়েটির। তখন মাত্র এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করেছেন। শখ করে আত্বীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের জন্মদিন, বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে ডেকোরেশন করতে পছন্দ করতেন। তখন ইন্টেরিয়র সবেমাত্র আমাদের দেশে চালু হয়েছে। কিন্তু একেতো এটা নতুন পেশা তার ওপর মানুষের স্ব”ছ তেমন ধারণাও ছিল না।

ভাল ছাত্রী হওয়ার কারণে বাবার ইচ্ছা ছিল মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু মেয়ে যে রক্ত দেখলে প্রচণ্ড ভয় পায় সে কথা বোধ হয় বাবার জানা ছিল না। কি আর করা, মেয়ের আর ডাক্তার হয়ে ওঠা হয়নি। কথা বলছিলাম ফারজানা’স ব্লিস্ এর সত্ত্বাধীকারি ও ডিজাইনার  ফারজানা গাজীকে নিয়ে।

যিনি অন্যের কাজগুলো সানন্দে নিজের কাঁধে তুলে নিতে ভালবাসেন।

ফারজানা গাজী দি পিপলস্ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর চার বছরের বিএসসি অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস থার্ড পে¬স করাতে ইউনিভার্সিটি থেকে লেকচারের অফার পেলেন। কিন্তু একটু বোরিং লাগাতেই তখন আর ইচ্ছা হলো না নিজেকে সেখানে বেঁধে রাখতে। ভালো লাগবে কী করে, ছোটবেলা থেকেই যে মেয়েটি শৌখিন এবং শিল্পীমনের অধিকারী, সবসময় নেশায় থাকত নানা ধরনের ক্রিয়েটিভ কাজ, তার কী আর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মন টেকে?

তাই বাইরের একটা অরগানাইজেশন থেকে ১ বছরের ডিপ্লোমা শেষ করেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ওপর। কিš‘ শেখারতো আসলে শেষ নেই। পরবর্তীতে আবার ১ বছরের ডিপ্লোমা করেন রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইন থেকে। এরপর কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে তিনি আলকভের ইন্টেরিয়র ডিজাইনার, সারওয়াত ইন্টেরিয়ার এন্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের চিফ কন্সালট্যান্ট, রেডিয়েন্ট ইনিস্টিটিউট অব ডিজাইনের হেড অব এডমিন হিসেবে কাজ করেছেন।

আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে নিজের অনুপ্রেরণার জায়গার কথা জানতে চাইলে ফারজানা বলেন, আমার মা অনেক শৌখিন এবং শৈল্পিক মনের একজন মানুষ তাকে দেখেই এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পেয়েছি।

ইন্টেরিয়র ডিজাইনকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া প্রসঙ্গে ফারজানা বলেন, আসলে আমাদের দেশে ডিজাইনারদের মূল্যায়ন কম। অথচ বিদেশে একজন ডিজাইনারকে অনেক বেশি সম্মান ও মূল্যায়ন করা হয়, যেহেতু আমাদের দেশের মানুষের কাছে এই পেশা সম্পর্কে তেমন স্বচ্ছ ধারণা নেই, তাই আমার মনে হয়েছে কাউকে না কাউকে তো নিতে হবে এর দায়িত্ব, তারই প্রচেষ্টা এটা। আমার কাছে ইন্টেরিয়র ডিজাইন পেশাটা যথেষ্ট সম্মানজনক একটি পেশা মনে হয় এবং কিছু চ্যালেঞ্জিংও বটে। আর আমাদের দেশে এই পেশার ভবিষ্যত এবং নতুন প্রজন্মের কাছে এই পেশার গ্রহণযোগ্যতার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে এই পেশাটা বেশ জনপ্রিয়। ইন্টেরিয়র ডিজাইন পেশা কেবল আধুনিক নয়, সময়োপযোগী এবং সম্মানজনকও বটে। দরকার শুধু সময়মতো দিক নির্দেশনা।

আর নতুন যারা ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ে আসছে তাদের কাজ অনেক ভালো হচ্ছে। তারা শুধু বিদেশি নয়, আমাদের দেশীয় মেটেরিয়াল ব্যবহার করেও অনেক ভালো এবং নান্দনিক কাজ করছেন। নতুনদের ভালো করার জন্য আমার পরামর্শ একটাই, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি থাকতে হবে আন্তরিকতা দক্ষতা, সৃজনশীলতা, আগ্রহ, ধৈর্য, মনোযোগ, সর্বোপরি অন্যের পছন্দকে বোঝার ক্ষমতা থাকা।

নিজের স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে ফারজানা বলেন, নারীদেরকে কর্মক্ষেত্রে সুযোগ করে দিতে চাই। কারণ আমাদের দেশে নারীরা অসহায় এবং বঞ্চিত। নারীদের উত্সাহিত করার জন্যই আমার এই ছোট্ট উদ্যোগ। দেশকে ভালোবেসেই দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই।

ফারজানার স্বর্গ রাজ্যে আছে ইন্টেরিয়র ডিজাইন, ফ্যাশন ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, জুয়েলারি ডিজাইন, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, আইকেবানা, বনসাই প্রভৃতি। সবার মাঝে ঘর সাজানোর সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে ফারজানা বাংলানিউজের লাইফস্টাইল বিভাগে নিয়মিত লেখেন।

 

উপবৃত্তিতে অদম্য গঙ্গাচড়ার রোজিনারা

গ্রামবাংলার নারী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উপবৃত্তি প্রকল্প। উপবৃত্তি শুধু মেয়েদের ক্লাসরুমেই ফেরত আনছে না, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তাদের ক্ষমতায়নেও। পাশাপাশি বাল্যবিবাহ রোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উপবৃত্তি। অনেকটা এই উপবৃত্তির কাঁধে ভর দিয়ে নারী শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চলগুলোতেও। উত্তরবঙ্গের রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলো ঘুরে চোখে পড়লো এই চিত্র।

অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ এসব এলাকায় একটা সময় মেয়েদের স্কুল কলেজে যাওয়াকে ভালো চোখে দেখা হতো না। কিংবা স্কুলে গেলেও মা বাবার আর্থিক অস্বচ্ছলতা কিংবা সচেতনতার অভাবে ঝড়ে পড়তে হতো অকালেই। সেই পরিস্থিতির এখন পরিবর্তন হয়েছে ব্যাপক। মেয়েরা শুধু স্কুল-কলেজেই যাচ্ছে না পারিবারিক বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও মেয়েটির মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে পরিবার।

তাইতো রংপুরের প্রত্যন্ত গঙ্গাচড়ার তিস্তা নদীর তীরের বড় বিলের মাঝখানে কৃষকদের বলতে শোনা যায় “বেটি ছাওয়াল ঘরের খ্যামোতাই এখন বেশি”।

অফিসের অ্যাসাইনমেন্টে ঘুরে বেড়াচ্ছি উত্তরবঙ্গের মাঠঘাটে। রংপুর থেকে গাইবান্ধার গ্রাম থেকে গ্রামে। ব্রহ্মপুত্রের বালাসী ঘাট থেকে তিস্তার দ্বারকাডোবা ঘাট। উত্তরের পথে প্রান্তরে চলার পথে কথা বলছি নারী থেকে শিশু, কৃষক থেকে শ্রমিক নানা পেশার সাধারণ মানুষের সঙ্গে।

স্মরণে আছে বসের নির্দেশ ‘কথা বলো মানুষের সঙ্গে, তুলে ধরো তাদের কথা’। আরও বলেছিলেন, কোনো এলাকার সত্যিকারের চিত্র তুলে ধরতে যেতে হবে ওই জেলার সবচেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তিনিই বললেন, গঙ্গাচড়ার তিস্তার চরে যেতে। নদীভাঙ্গন আর মঙ্গাপীড়িত এলাকা হিসেবেই সারাদেশে পরিচিত এই এলাকা।

গঙ্গাচড়ার উপজেলারই একটি গ্রামের নাম ধামুর। চলার পথে এখানেই কথা হলো গঙ্গাচড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রোজিনা বেগমের সঙ্গে।

রোজিনারা দুই ভাই দুই বোন। পিতা পানের দোকানদার ও বর্গাচাষি। পানের দোকানের আয় দিয়েই সংসার চলে তাদের। তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে নিঃস্ব পরিবারটির নিজের জমি নেই। বর্গা নেয়া সামান্য জমিতে কিছু আবাদ হয়।

তবে দরিদ্র পিতার সামর্থ্য না থাকলেও থেমে থাকেনি রোজিনার পড়াশোনা। এ জন্য উপবৃত্তির কথাই কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করলেন রোজিনা। উপবৃত্তির কারণে প্রাথমিক থেকেই তার পড়াশোনার খরচ চালাতে কোনো সমস্যা হয়নি। বই খাতা নোট কেনার পাশাপাশি এমনকি স্কুল কলেজে যাওয়ার জন্য বছরে একটা দুটো পোশাকও বানাতে পেরেছেন তিনি।

উপবৃত্তির কারণে বাল্যবিয়ের হাত থেকেও রক্ষা পাওয়ার কথা জানালেন রোজিনা। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় একবার দাদা দাদীর মাধ্যমে তার বিয়ের কথা হয়। কিন্তু রোজিনার মায়ের দৃঢ়তা এবং উপবৃত্তির কল্যাণে বিয়েটা আর হয়নি। উপবৃত্তি পাওয়ার বেশ কিছু শর্তের মধ্যে একটি হলো এসএসসি পর্যন্ত অবিবাহিত থাকা। তাই যখন বিয়ের কথা এলো তখন রোজিনা ও তার মায়ের অমত দেখে তার বাবাও খুব একটা তোড়জোড় করেননি। ‘মেয়ে যখন পড়ছে তখন পড়ুক। পড়াশোনার খরচ তো আর লাগছে না।’ এই ছিলো রোজিনার পিতার মনোভাব। এভাবেই বাল্য বিয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া রোজিনা এখন স্বপ্ন দেখছেন পড়াশোনা শিখে আরও বড় হওয়ার।

কথা হয় গঙ্গাচড়ার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহনাজ বেগমের সঙ্গে। জানালেন, আগের থেকে স্কুল কলেজে মেয়েদের উপস্থিতি বেড়েছে। কোন কোনো ক্ষেত্রে উপস্থিতির দিক থেকে ছেলেদের থেকে এখন মেয়েদের সংখ্যাই এখন বেশি। এজন্য তিনি কৃতিত্ব দিলেন সরকারের উপবৃত্তি কার্যক্রমকে।

ডিগ্রি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হওয়ায় নারী শিক্ষার্থীদের তো বেতন লাগছেই না উল্টো ডিগ্রি পর্যন্ত উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছেন অস্বচ্ছল ও দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা।

আগের থেকে সহজ হয়েছে উপবৃত্তির শর্তও। আগে উপবৃত্তি পেতে কোনো শিক্ষার্থীকে শতকরা ৪৫ শতাংশ নাম্বার পেতে হতো। এখন তা নামিয়ে আনা হয়েছে ৩৩ এ। এছাড়া প্রায় ২৭টি ক্রাইটেরিয়ার আওতায় ‍উপবৃত্তি প্রদান করায় এর আওতা থেকে বাদ যাচ্ছে না দরিদ্র ও অস্বচ্ছল পরিবারগুলোর কোনো মেয়ে। শাহনাজ বেগম জানালেন, এই মুহূর্তে গঙ্গাচড়ার দরিদ্র নারী শিক্ষার্থীদের প্রায় শতভাগই উপবৃত্তির আওতায়।

উপবৃত্তির আওতায় এসএসসির ফরম পূরণ পর্যন্ত মাধ্যমিকে একজন নারী শিক্ষার্থী পাচ্ছেন ৬ হাজার ৪৫০ টাকা। এছাড়া ডিগ্রিতে মেয়েদের উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে ৪ হাজার ৯শ’ টাকা। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগই উপবৃত্তির আওতায়। অস্বচ্ছল নারী শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই এর আওতায়।

শাহনাজ বেগম জানালেন, উপবৃত্তি রোধ করছে বাল্য বিবাহের প্রসারও। উপবৃত্তি পাওয়ার শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এসএসসি পর্যন্ত অবিবাহিত থাকা। ফলে দরিদ্র পরিবারগুলোর পিতামাতারা আল বাল্যবিবাহে আগ্রহী হচ্ছে না। ধামুর গ্রামের নারী শিক্ষার্থী রোজিনাও ঠিক এই কথাগুলোই বলেছিলেন।

উপবৃত্তি প্রসার ঘটাচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়েরও। উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি পর্যায়ে উপবৃত্তির টাকা দেয়া হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেই।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহনাজ বেগম গঙ্গাচড়ায় কর্মরত আছেন প্রায় ৫ বছর। নারীর ক্ষমতায়নের তিনি নিজেও একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত। জানালেন গঙ্গাচড়ায় আগের থেকে মেয়েদের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বেড়েছে নারীর ক্ষমতায়ন।

বাল্য বিয়ে এখন আর নেই বললেই চলে। বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে উপবৃত্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করলেন তিনিও।

সব মিলিয়ে ‘মেয়ে মানুষ’ হিসেবে পিছিয়ে নেই নারীরা। আত্মশক্তিতে বলীয়ান হওয়ার পথে কোনো বাধাই আর তাদের থামিয়ে দিতে পারছে না। এমনকি গঙ্গাচড়ার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতেও জ্বলজ্বল করে জ্বলছে নারী শিক্ষার আলো। শিক্ষা, ক্ষমতায়ন এবং কর্মসংস্থানে গ্রাম বাংলার নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। এই এ গতির নৌকায় পালে বাতাস দিচ্ছে উপবৃত্তি প্রকল্প।

 

 

বাবার কবরের পাশে সমাহিত হলেন দিতি

সহকর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য অভিনেত্রী দিতির মরদেহ তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থায় (বিএফডিসি) আনার কথা ছিল সকাল সাড়ে দশটায়। কিন্তু তারও এক ঘণ্টা আগে দিতির মরদেহ পৌঁছে যায় সেখানে। সহকর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ১০টা ২০ মিনিটে দিতির জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। আজ সোমবার এফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাবের সামনে জানাজায় দিতির আত্মীয়-স্বজন, চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলী এবং শুভানুধ্যায়ীরা অংশ নেন।

জানাজায় অংশ নেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। দিতির অন্য সহকর্মীদের মধ্যে ছিলেন অভিনয়শিল্পী আলমগীর, রুবেল, ওমর সানী, চম্পা, আহমেদ শরীফ, মিজু আহমেদ, জাহিদ হোসাইন শোভন, আজমেরী বাঁধন, আফসানা বিন্দু, খালেদা আকতার কল্পনা, নাসরিন, সাবরিনা নিসা, মুনিয়া, পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এ হক অলীক, ইদ্রিস হায়দার, শাহ আলম কিরণ, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু প্রমুখ।

এফডিসিতে জানাজা ও সহকর্মী এবং বিভিন্ন সংগঠনের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দিতির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ‍গ্রামের বাড়িতে। বাদ জোহর জানাজা শেষে দিতির ইচ্ছে অনুযায়ী তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হবে।
গতকাল রোববার বিকেল চারটায় ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দিতি। এরপর বাদ এশা রাজধানীর গুলশানের আজাদ মসজিদে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে দিতির মরদেহ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। আজ সকালে নিয়ে যাওয়া হয় দিতির গুলশানের বাসায়।

শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন চিত্রনায়িকা পারভীন সুলতানা দিতি।

সোমবার (২১ মার্চ) দুপুর পৌনে ২টার পর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার দত্তরপাড়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

এরআগে দত্তরপাড়ার নিজ বাড়ির সামনে মসজিদের মাঠে তার শেষ নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন দিতির মামা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন।

জানাজায় দিতির ছেলে সাফায়েত হোসেন দীপ্ত চৌধুরী, তার বড় ভাই মনির হোসেন, পারভেজ হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও টিপু ও তার পরিবারের সদস্যরা এবং সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু নাসের ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার, সোনারগাঁও থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর কাদের, পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, সনমান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন সাবু, সোনারগাঁও নাগরিক কমিটির সভাপতি এটিএম কামালসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।

এর আগে ঢাকার এফডিসি ও গুলশানে নামাজে জানাজা শেষে লাশবাহী গাড়িতে করে দুপুর সাড়ে ১২টায় দিতির মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়। জোহরের নামাজের আগে মরদেহ দত্তরপাড়া জামে মসজিদের মাঠে আনা হয়।

প্রিয় অভিনেত্রীকে শেষবারের মতো দেখতে তার সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধবসহ এলাকার শত অসংখ্য নারী-পুরুষ ভিড় জমান। এ সময়  দিতির পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

রোববার (২০ মার্চ) বিকেল ৪টায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতি।

** সোনারগাঁওয়ের নিজ বাড়িতে দিতির মরদেহ
** সোনারগাঁওয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দিতির দাফনের প্রস্তুতি সম্পন্ন
** দিতির দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন, মরদেহ সোনারগাঁর পথে
** ব্যথাটা বেদনা হবে বুঝিনি ।। ফাহমিদা নবী
** দিতির সঙ্গে রোমান্টিক সিন করতে সমস্যা হতো: আলমগীর
** দিতি নাই কিছু নাই!
** চিরবিদায় দিতি, ফেসবুকে শোক
** দিতির প্রথম জানাজা সম্পন্ন, ১০টায় মরদেহ যাবে এফডিসিতে
** বাবার কবরের পাশে সমাহিত হবেন দিতি
** বাদ এশা দিতির প্রথম জানাজা, সোমবার দুপুরে দাফন
** চিত্রনায়িকা দিতি আর নেই

 

দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পরে? খুব সহজেই সমস্যার সমাধান করুন

মানুষের দাঁতের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া। এই সমস্যাটি ডাক্তার দেখানোর পরও পুরোপুরি ভালো হয় না, শুধুমাত্র অবহেলার কারণে। আপনি যদি একটু সচেতন হন, তাহলেই মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যাটি থেকে রেহাই পেতে পারেন। একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রায় ৫৫% পূর্ণবয়স্ক মানুষ আলসেমি করে অথবা ঘুমের কারণে রাতের বেলা দাঁত ব্রাশ করেন না। এর কারণে দাঁতে এবং মাড়িতে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া রোধ করতে আপনি বেশ কিছু পন্থা অবলম্বন করতে পারেন। এই কাজগুলো তাৎক্ষণিক আপনার উপকার করবে। চলুন দেখে নেই পন্থাগুলো কি কি।

• লবণ পানির কুলকুচা

মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করতে এবং মাড়ির সুরক্ষায় সব চাইতে সহজ একটি ঘরোয়া কাজ হচ্ছে লবণ ও কুসুম গরম পানির কুলকুচা করা। ১ মগ কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবণ দিয়ে মিশিয়ে নিয়ে দিনে ৩ বার কুলকুচা করুন। মাড়ির রক্ত পড়া সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন।

• নিয়মিত ব্রাশ এবং ফ্লস করা

অনিয়মিত ব্রাশ করার কারণে অনেক সময় দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। তাই নিয়মিত ব্রাশ করার অভ্যাস করা উচিৎ। ব্রাশের পাশাপাশি ফ্লস করা অত্যন্ত জরুরী। কারণ ফ্লসের মাধ্যমে মাড়িতে লেগে থাকা খাদ্যকনা দূর হয় যা ব্রাশ করার পরও রয়ে যায়। তাই মাড়ি থেকে রক্ত পরার হাত থেকে বাঁচতে চাইলে ব্রাশের পাশাপাশি ফ্লস করুন।

• ফল এবং কাঁচা সবজি খাওয়া

আপেল, পেয়ারা, গাজর, পেঁপে ইত্যাদি ধরণের ফল দারে মাড়ির জন্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। এই ধরনের ফলমূল এবং কাঁচা সবজি খাওয়ার সময় দাঁতের মাড়ির ভেতর রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এতে মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার মতো সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

• লবঙ্গ

ঘরে থাকা সবচাইতে সহজলভ্য এবং মাড়ির রক্ত পরার উপশমে কার্যকরী উপাদানটি হচ্ছে লবঙ্গ। লবঙ্গের অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান মাড়ির রক্ত পড়া দ্রুত বন্ধ করে এবং দাঁতের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করে। মাড়ির রক্ত পড়া রোধে দুটো লবঙ্গ মুখে নিয়ে চিবিয়ে চুষতে থাকুন। দেখবেন মাড়ির রক্ত পড়ার সমস্যা দূর হবে।

• অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরার নানা ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে তা আমরা অনেকেই জানি। এরই মধ্যে মাড়ির সুরক্ষার গুনটিও পড়ে। অ্যালোভেরা পাতা নিয়ে এর ভেতরকার অ্যালোভেরা জেল বের করে মাড়িতে ঘষে নিন। এরপর অ্যালোভেরার জেলটি খানিকক্ষণ মুখে রেখে দিন। তারপর মুখ কুলি করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।