banner

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ ইং, ,

Monthly Archives: May 2025

 

‘ফটোগ্রাফি নারীদের কি ক্যারিয়ার হতে পারে’


মেইক ইউরসেলফ


বর্তমান সময়ে ছবির অনেক ক্ষমতা। মানে ছবি কথা বলে দেশ, সমাজ, এবং পরিবার পাশাপাশি ব্যক্তিগত মুহুর্ত্বের। একটা ছবি দিয়ে অনেক সত্যকে তুলে ধরা যায় কথা ছাড়া। আজকের দুনিয়ায় মিডিয়া থেকে শুরু করে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, এমনকি ব্যক্তিগত জীবনে, বিয়ে, জন্মদিনসহ নানান উৎসবে ছবি আমাদের জীবনের একটি অংশ। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও ক্যারিয়ার হিসেবে ফটোগ্রাফি পছন্দ করেন বর্তমান সময়ে। কিন্তু কোথায় তা শিখবেন বা এর হালচাল সম্পর্কে অনেকের কোন ধারণা নেই। সুতরাং আসুন জেনে নেই ফটোগ্রাফি ক্যারিয়ার হিসেবে কতটুকু সম্ভাবনা রাখতে নারীদের জন্যও।

নারী ফটোগ্রাফার ইতিহাস

ফটোগ্রাফিতে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক দিন ধরে। প্রাচীনতম নারী আলোকচিত্রীকারীনীদের মধ্যে বেশিরভাগ ব্রিটেন বা ফ্রান্সের। মুলত পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা প্রাথমিকভাবে নারীরা এই পেশায় আসেন। উত্তর ইউরোপে এটি সর্বাধিক ছিল। পরে ১৮৪০ সালের দিকে নারীগণ প্রথমে ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি এবং সুইডেনের স্টুডিওতে ফটোগ্রাফি ব্যবসা শুরু করেন। ব্রিটেনের তাদের পরিবার থেকে নারীরা ফটোগ্রাফিকে একটি শিল্প হিসেবে গড়ে তুলেন। এরি ধারাবাহিতায় বর্তমানে দিনে দিনে নারী ফটোগ্রাফার বেড়ে চলছে বাংলাদেশেও।

কতরকম ক্যারিয়ার

ফ্যাশন ফটোগ্রাফাররা (ফ্যাশন শুট করে)
ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফাররা(জীবজন্তুর ছবি তুলে),
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফটোগ্রাফাররা (মেশিনের ছবি তুলে),
আবার ফরেনসিক ফটোগ্রাফাররাদের কাজ (বিভিন্ন অ্যাসপেক্ট থেকে কোন ক্রাইমের ছবি তোলা),
ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফাররা, (তাদের কাজ শুধু বিভিন্ন স্থানকে দর্শনীয় স্থানের মত করে ছবি তোলা।)

সুতরাং যেকোনো ফটোগ্রাফিই পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া যায়।

নারী ফটোগ্রাফারদের পুরষ্কার গ্রহণ

এমা বার্টন ছিলেন প্রথম মহিলা যিনি রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির পদক লাভ করেছিলেন ১৯০৩ সনে। এটি একটি কার্বন মুদ্রণের জন্য দ্য Awakening এনটাইটেলমেন্ট।

ফটোগ্রাফির জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন ভার্জিনিয়া স্কাউ ১৯৪২ সালে। প্রেস ফটোগ্রাফিতে অসাধারণ কাজ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে পুরস্কার প্রাপ্ত প্রথম মহিলা ছিলেন একজন অপেশাদার যিনি ক্যালিফোর্নিয়ার রেডিংয়ের একটি সেতু থেকে ঝুলন্ত ট্র্যাক্টরের ট্রেলারের ক্যাব থেকে উদ্ধারকৃত দুইজন পুরুষের ছবি তোলেন।

এছাড়া ২০০০ সালে, মার্সিয়া রেড, প্রথম মহিলা ছবির পরিচালক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রগ্রাহক গিল্ডে যোগদান করেন ২০০০ সালে এখনও ছবির জন্য অপারেটিং ক্যামেরাম্যান লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডের সোসাইটি জিতেছিলেন তিনিই।

আয়

ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফারদের তেমন কোন ফিক্সড বেতন হয় না। ৩০-৩৫০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হতে পারে। আর ব্যক্তিগতভাবে যদি কেউ ফটো বিক্রি করে, তাহলে অনেক উপার্জন।

ফটোগ্রাফির পেশায় শুরুতেই কি করবেন?

একটা ক্যামেরা সংগ্রহ করুন তবে বেশিদামি না কমদামি। পাশাপাশি ক্যামেরা লেন্স, ফোকাস এবং শ্যাডো সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা গ্রহণ করুন।

ফটোগ্রাফি নিয়ে বই পড়ুন

ফটোগ্রাফি নিয়ে পড়ালেখা কোন বিকল্প নেই পড়াশুনার জন্য প্রচুর বই পাওয়া যায় নীলক্ষেতসহ নানান বই এর দোকানে। ফটোগ্রাফি নিয়ে দেশি-বিদেশি অনেক ম্যাগাজিন রয়েছে। সেগুলো পড়ুন এবং মনোযোগ দিয়ে দেখুন।

সফটওয়্যারগুলো সম্পর্কে ধারণা

ছবি তোলার সাথে সাথে ফটোগ্রাফিক সফটওয়্যারগুলো সম্পর্কে ধারণা নিন। অ্যাডোবি ফটোশপ, লাইটরুম প্রভৃতি প্রভৃতি সফটওয়্যারের ব্যবহার ফটোগ্রাফিতে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা 

আমাদের দেশে ফটোগ্রাফি শেখানোর অনেক প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:

পাঠশালা: তিন বছরের প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি কোর্সের (ছয় সেমিস্টার) সেমিস্টার ফি বর্তমানে ৩৫ হাজার টাকা। ঠিকানা: পাঠশালা, ১৬, শুক্রাবাদ, ঢাকা। ফোন: ৯১২৯৮৪৭।

কাউন্টার ফটো: তরুণ ফটোগ্রাফারদের জন্য রয়েছে ছয় মাসের ‘মেন্টর প্রোগ্রাম’। এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্সের ফি ৬৫ হাজার টাকা। ঠিকানা: ১৪ পূর্ব শেওড়াপাড়া, মিরপুর। ফোন: ৯০১৩০২৬, ০১৬৭৭০৬৮৭৩৫।

বেগার্ট ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফি: এক বছরমেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি ফি ১০ হাজার টাকা। আর প্রতি মাসে টিউশন ফি দুই হাজার টাকা। ঠিকানা: ৮৩ ল্যাবরেটরি রোড (কফি হাউসের গলি), ঢাকা। ফোন: ০১৭১৬৬৬৩৭৫৭।

ঢাকা ফটোগ্রাফি ইনস্টিটিউট: এখানে ভিডিও কোর্স ফি ১০ হাজার টাকা এবং ডিপ্লোমা কোর্স ফি ২০ হাজার টাকা। ঠিকানা: সাহেরা ট্রপিক্যাল সেন্টার (ষষ্ঠ তলা), ২১৮ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা। ফোন: ৯০১৪২১৩, ০১৮১৯২৮৫৫৮৪।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (ডিইউপিএস): ডিইউপিএসে ফটোগ্রাফির ওপরে শুধু বেসিক কোর্স করানো হয়। তিন মাসের বেসিক কোর্স ফি তিন হাজার টাকা। প্রশিক্ষণ কোর্সে যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন, তাঁরাও অংশ নিতে পারবেন। ঠিকানা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, নিচতলা। ফোন: ০১১৯৭২৬০৫৫২-৫৪।

নিত্য নতুন ফটোগ্রাফিক টার্মগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখুন। তবে পেশা হিসেবে ফটোগ্রাফিকে নিতে চাইলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থাকা জরুরি।

 

‘মাদকের টাকা না দেওয়ায় ঘুমন্ত অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যা’


নারী সংবাদ


সাহেরা বেগম (২৪) নামে একজন অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন তার স্বামী।

নিহত সাহেরা বেগম উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের ধোপারটেক এলাকার আপেল মিয়ার স্ত্রী। ঘটনার পর থেকে স্বামী আপেল মিয়া পলাতক রয়েছে।

ঘটনাটি ঘটে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায়। মাদকের টাকা না দিতে পারায় ঘুমন্ত অবস্থায় সাহেরাকে তার স্বামী আপেল মিয়া বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। শুক্রবার রাতে উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের ধোপারটেক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

গতকাল শনিবার সকালে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় পুলিশ।‍

স্থানীয়রা জানান, গত কিছুদিন ধরে আচরণে তাকে অপ্রকৃতিস্থ বলে মনে হয়েছে। রাতে বা সকালে স্ত্রীর সঙ্গে তাকে প্রায় ঝগড়া করতে দেখেছে প্রতিবেশীরা।

বিয়ের পর থেকে মাদকের টাকার জন্য সাহেরাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত আপেল। এর মধ্যে সাহেরা অন্তঃসত্ত্বা হয়। শুক্রবার রাতে মাদকের টাকা না দিতে পারায় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে সাহেরা ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাতে স্বামী আপেল ঘুমন্ত সাহেরাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

শনিবার সকালে পরিবারের সদস্যরা খবর দিলে ঘটনাস্থল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান এসআই আবুল কাসেম।

 

মাকে সন্তানরা বাঁশবাগানে ফেলে গেল


নারী সংবাদ


ফুজলী বেগম (৮৬)। বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুচিয়াবাড়ি গ্রামে।৫ সন্তানের জননী ফুজলী বেগম। ৩০ বছর আগে তার স্বামী ছামাদ শেখ মারা যান। তখন থেকে সংসারের হাল ধরেন তিনি। তিন ছেলে এবং দুই মেয়ে এই জননী অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে তাদের বড় করেছেন। সবার বিয়েও দিয়েছেন মা। এখন সবারই আলাদা সংসার। কিন্তু বৃদ্ধা মায়ের দায়িত্ব কেউই নিতে চায় না।

৮৬ বছরের বৃদ্ধা মা ফুজলী বেগমকে
২৬ সেপ্টেম্বর বুধবার সন্ধ্যার দিকে কিছুটা দূরে রাস্তার পাশের বাঁশবাগানে ফেলে দিয়ে আসে সন্তানরা কারণ এই বৃদ্ধ মার নড়াচড়া করতে পারেন না ফলে তাকে দেখা শোনা করতে হত।

এর ঘটনার পর প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে ছোট ছেলে রাবু শেখের বাড়ি নিয়ে আসে। পরিত্যক্ত ঘরের বারান্দায় রাতে থাকার ব্যবস্থা করেন তারা।

বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল হলে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে লোহাগড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। খবর পেয়ে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটু বিকেলে বৃদ্ধা মাকে দেখতে ছুটে যান ওই বাড়িতে। তার দায়িত্ব নিতে চান তিনি। চেয়ারম্যান বৃদ্ধা মায়ের প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা করে দেবেন বলে ঘোষণা দেন।

লোহাগড়া থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই সিদ্দিক জানান, ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ সময় সকল বউদেরকে শাশুড়ীর প্রতি নৈতিক দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। ছেলেরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়েছে।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে তিন ছেলে-মেয়েকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলো- বড় ছেলে ডাহু শেখ, ছোট ছেলে রাবু শেখ ও বড় মেয়ে কুলসুম বেগম।

তবে ঘটনার মূল হোতা মেঝো ছেলে বাবু শেখকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

লোহাগড়া থানা … ৮৬ বছরের অসহায় বৃদ্ধা মাকে রাস্তার পাশে বাঁশবাগানে ফেলে গেলেন তার ছেলে ও পূত্রবধূ এই নির্মম সত্যকে দেখছে গোটা দেশ ও গোটা জাতি।

 

স্কুটি-নারী : নিজের বাহন পেতে আগ্রহ বাড়ছে


নারী সংবাদ


কলেজ পড়ুয়া, চাকরিজীবী কিংবা ব্যবসায়ী- নারীদের পছন্দের বাহনের তালিকায় বেশ আগেই জায়গা করে নিয়েছে দুই চাকার বাহন স্কুটি। আজকাল নগরজুড়ে প্রায়ই চোখে পড়ে নারীদের স্কুটি চালিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার দৃশ্য। শখে নয়, প্রয়োজনের তাগিদেই নারীরা বেছে নিচ্ছেন এ বাহন। বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট।
যানজট সমস্যা, গণপরিবহনের অপর্যাপ্ততা তো আছেই। তার ওপর দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাসে উঠতে পারলেও সেখানে নেই পর্যাপ্ত সিট। লোকাল বাসে নারীদের বিড়ম্বনার শিকার হওয়ার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক।
গবেষণা থেকে জানা যায়, গণপরিবহনে ৮৪ ভাগ নারী যৌন হেনস্তার শিকার হন। এসব সমস্যা সমাধানে সমাজ ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ তৎপরতা চোখে পড়ে না। অগত্যা তারা নিজেরাই বেছে নিচ্ছেন আপন গতিছন্দ, চলার পথ, পথপরিক্রমণের উপায়। কবির ভাষায় বলা যেতে পারে, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রেÑ আতিকা রোমা, আমবারিন খান, মোনালিসা ও স্বপ্না ইসলাম তেমনই স্বনির্ভর, আত্মপ্রত্যয়ী চার নারী।
১৯৯০ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় আতিকা রোমার বাইক চালানো শুরু। তবে মাঝে ছিল বিশাল একটা সময়ের ব্যবধান। শিক্ষাজীবনের গ-ি পেরিয়ে ২০০৪ সালে তার কর্মজীবনের শুরু। তখন বাস, সিএনজিই ছিল ভরসা। তবে তা বেশি দিন ভালো লাগেনি তার। ২০০৯ সালে ব্যাটারিচালিত মোটরসাইকেল দিয়ে শুরু করলেন যাতায়াত। ওই সূচনা। রোমা এখন চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। নিজের উদ্যোগে নারীদের জন্য গড়ে তুলেছেন ‘যাব বহুদূর’ নামে একটি স্কুটি ড্রাইভিং প্রতিষ্ঠান। রোমার দৃঢ় বিশ্বাস, যাত্রাপথে নারীরা স্বাবলম্বী হলে নারী স্বাধীনতার পথে তারা এগিয়ে যাবে আরো একধাপ।
আমবারিন কাজ করেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে। চার বছর ধরে স্কুটি চালাচ্ছেন। যখন চালানো শুরু করেন, তখনো তার গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন হয়নি। আলাপচারিতায় জানালেন, বাসের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা, রিকশা ও সিএনজির অতিরিক্ত ভাড়া আর যানজটের নিত্য ভোগান্তি তাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। তবে তার বেশ ভয় লাগত বাসের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিগুলোকে। বেশ কয়েকবার সেই অনভিপ্রেত পরিস্থিতিতে পড়তেও হয়েছে তাকে। অনেকটা জেদের বশেই স্কুটি চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন শেষতক। তবে ছোটবেলা থেকেই বাইক চালানোর প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল তার। বাবাকে বাইক চালাতে দেখে সে আকাক্সক্ষা ক্রমে ক্রমে আরো জোরদার হয় তার।
বাসা থেকে খুব একটা আপত্তি না থাকলেও প্রথম প্রথম তারা বিষয়টি সহজভাবে নেয়নি। তিনি বলেন, স্কুটি ছাড়া একটা দিনও এখন আমি ভাবতে পারি না। স্কুটি আমার জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে।
বেসরকারি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন মোনালিসা। ২০১২ সাল থেকে স্কুটি চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমার কাজের ধরনটা একেবারেই ভিন্ন। অফিসে সময়মতো উপস্থিত হতে হয়। বাস, সিএনজি, রিকশার জন্য অনির্দিষ্ট কাল অপেক্ষা করে থাকলে অফিসে ঠিকমতো যাওয়া যায় না। কাজের প্রয়োজনেই আমি স্কুটি চালানো শুরু করি। এখন তো স্কুটি ছাড়া চলার কথা ভাবতেই পারি না।
বেসরকারি ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা স্বপ্না ইসলাম। অফিসে যাতায়াত এবং দুই সন্তানকে স্কুলে আনা -নেওয়ার দৈনন্দিন কাজটা তিনি স্কুটিতেই করেন। বলেন, বর্তমানে ঢাকায় নারী বাইক চালকের সংখ্যা যে ঠিক কত, তার সঠিক তথ্য নেই। তবে নারী বাইকারদের নিয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংগঠনের তথ্যানুযায়ী, এ সংখ্যা বর্তমানে পাঁচ-ছয়শ’র কাছাকাছি। দিন দিন বাড়ছে এ সংখ্যা। যাদের বেশিরভাগই চাকরিজীবী কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলো বিশেষ করে ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো এলাকায় মেয়েদের স্কুটি চালাতে বেশি দেখা যায়।
নারীদের বাইক চালানোর ব্যাপারে প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলো কি? এ সম্পর্কে জানতে চাইলে নারী বাইক চালকরা জানান, পরিবারের সম্মতি পাওয়াটাই এ ক্ষেত্রে মুখ্য বিষয়। কারণ আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনো কোনো নারীকে দুই চাকার যানের চালকের আসনে ভাবতে বা দেখতে ঠিক অভ্যস্ত নন। এ কারণে পরিবারের অনাপত্তি পাওয়াটাই হলো বড় কথা। পরিবারের সম্মতিটা প্রাথমিকভাবে সবচেয়ে বড় সাহসের ব্যাপার হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় অনেকেই কটূক্তি করেন, আড়চোখে তাকান। এসব প্রতিবন্ধকতাকে প্রত্যয় ও সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারলে স্কুটি হবে নারীর জন্য নিজের বৈশিষ্ট্য ও স্বয়ম্ভরতা প্রকাশের বড় এবং বলিষ্ঠ মাধ্যম।ঢাকা,সুত্র: (বাসস)।

 

সুবহে সাদিক


কামরুল হাসান তুহিন


আঁধার রাতের তারা গুলো
ঘুমিয়ে পড়া মেঘ গুলো
মেঘের মাঝে দুঃখ গুলো
কেউ দেখেনি, কেউ দেখেনি।

আকাশ ভরা বৃষ্টি গুলো
বৃষ্টি ভেজা পাখি গুলো
পাখির কন্ঠে গান গুলো
কেউ শোনেনি, কেউ শোনেনি।

সুবহে সাদিকের ক্ষণ গুলো
মুয়াজ্জিনের সুর গুলো
সুরের মাঝে মায়া গুলো
কেউ বোঝেনি, কেউ বোঝেনি।

ভোরে ওঠা নক্ষত্র গুলো
নিবিষ্ট মনের সালাত গুলো
সিজদারত অশ্রু গুলো
কেউ মোছেনি, কেউ মোছেনি।।

© ধ্রুব নীল

 

“সত্যিকারের মা” আবার কি !



তাসলিমা শাম্মী


” তোমার জানাশুনা কেউ যদি মা হতে চায় আমাদের গল্পটা বইলো । গর্ভধারিণী হতে চাইলে না ,মা হতে চাইলে । বুঝছো ? আমার নাম্বারটা রাখো । বাসায় আসো একদিন সময় করে , গল্প হবে অনেক । কর্ণফুলী নদীর ওপাড়ে যেখান থেকে সবুজের শুরু , কয়েক মিনিট গেলেই আমাদের বাড়িটা। একদম রাস্তার পাশেই , সড়ক থেকে দেখা যায় “।

একজন সত্যিকারের মা র সাথে কথা হচ্ছিল। ”সত্যিকারের মা “ আবার কি ! সেই গল্পটাই শুনতে আমার ভীষণ ইচ্ছে করছিল উনার নিজের মুখে। তাই এক ছুটির দিনের বিকেলে আমি শহরের বিচ্ছিরি রকমের কোলাহল আর কালো ধোঁয়া পার হয়ে কর্ণফুলী ব্রিজটার ওপাশে সবুজে মোড়ানো ধান ক্ষেতের মাঝখানটায় দাঁড়িয়ে থাকা একতলা বাড়িটায় গিয়ে কড়া নাড়লাম।

” আমিতো শুধু মা হতে চেয়েছিলাম। খুব সাধারণ আর দশজন মেয়ের মতই মাতৃত্বের অনুভূতির স্বাদ পেতে চেয়েছিলাম। বান্ধবী আর কলিগদের দেখে দেখে আমার খুব ইচ্ছে করত প্রথম অনুভব করতে কেমন লাগে “আমি মা হতে চলেছি”!
তারপর থেকে প্রতিটা দিন, প্রতিটা সপ্তাহ গুনে গুনে নিজের ভিতরে আরেকটা প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করতে, সুখ সুখ সেই অসুখটাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে নয়মাস ধরে উপভোগ করতে চেয়েছিলাম। নয়মাস পর একদিন মৃত্যু যন্ত্রণার খুব কাছাকাছি গিয়ে স্বর্গীয় সুখ নিয়ে তীব্র চিৎকারে আকাশ বাতাস ফাটিয়ে জন্ম দিতে চেয়েছিলাম আমার ভিতরের ছোট্ট আরেকটা আমি কে। তারপর তো অবাক হবার পালা আমার , কিভাবে আমার রক্ত মাংস দিয়ে আমারই ভিতরে গড়ে উঠা সেই ‘আমিটা’ ভিন্ন এক নিজস্ব স্বত্বা নিয়ে সম্পূর্ণ একজন মানুষ হয়ে উঠছে আমি সেটা অবাক হয়ে হয়ে দেখব !!

কিন্তু না। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে ছিল অন্যরকম। দীর্ঘ দশবছর ধরে ছোটাছুটি করার পর এই দেশের এবং পার্শ্ববর্তি দেশের নামকরা সব স্পেশালিষ্ট রা যখন আমাকে আর আমার স্বামী মাসুমকে গম্ভীর মুখে কনফার্ম করে দিল যে আমি আর কোনদিনই মা হতে পারবো না তখন আমার মনে হয়েছিল এই পৃথিবীতে থেকেই বা আর লাভ কি যদি নিজের নিজস্ব কিছু পৃথিবীটাকে দিয়ে যেতে না পারি!! সেদিন যখন আমি আমার মা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলাম তখন মা আমাকে স্বান্তনা দিতে দিতে বলেছিল, “গর্ভধারিণী হওয়া কিন্তু সহজ মা হবার চেয়ে!! গর্ভধারিণী অনেকে ইচ্ছে করলেই হতে পারে কিন্তু মা সবাই হতে পারেনা রে “।

আমি মা র কথার ইঙ্গিতটা ধরতে ঠিকই পেরেছিলাম সেদিন। খুব রাগ হয়েছিল মা র উপর আমার। মা কে আমার হিংসা হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, আমার মা তো অনুভব করতে ঠিকই পেরেছিল সেই স্বর্গীয় অনুভুতিটুকু তাই আমার মনের ব্যাথা কিভাবে বুঝবে ?

আমার সেই শুন্যতার দিনগুলোতে আমার স্বামী মাসুম ছিল নির্বিকার! সন্তান নাই বলে যে মানুষের একটা দুঃখ থাকতে পারে সেই জিনিসটা মাসুমের জানা ছিল না! শুধু আমিই একা কেঁদে মরতাম। শুধু মাসুম না , ওর মা , ভাই, বোন কারোই কোন মাথাব্যাথা ছিল না আমার এসব ছোটাছুটি আর কান্নাকাটি নিয়ে!!
আমি এর ওর কাছ থেকে তথ্য যোগাড় করে করে দেশ বিদেশের ডাক্তার খুঁজে বের করছি, এই টেস্ট সেই টেস্ট করছি, অলিগলি খুঁজে ঝাড়ফুঁক করা পানি এনে খাচ্ছি কিন্তু আমার শ্বশুর বাড়ির একটা মানুষও আমাকে বাঁধা না দিলেও এসব ব্যাপারে কোন ধরনের আগ্রহ দেখায়নি।
আমার স্কুল টিচার শাশুড়ি বরং বিভিন্ন ভাবে আমাকে বুঝাতে চাইতেন এটাকে তেমন সিরিয়াস ভাবে নেবার কিছু নাই। কি আশ্চর্য !! মা হতে না পারাটা সিরিয়াস কিছু না !! আমার দেবর পিয়াল দেশী বিদেশী প্রচুর পুরষ্কার পাওয়া একজন মেধাবী ফটোগ্রাফার , সে আমাকে এই ব্যাপারটা নিয়ে বিচ্ছিরি রকমের খেপাত !! একমাত্র ননদ রিমি , যাকে আমি বোনের মত আদর করি সে আমার কান্না দেখে বলত আমি নাকি দুঃখ বিলাস করতে ভালবাসি !! অসহ্য লাগত আমার এই পুরা পরিবারটাকে!!

এমনিতেই বিয়ের পর থেকে আমি অনেক ধরনের অস্বাভাবিক ব্যাপার লক্ষ্য করতাম এই বাড়িতে। ষোল বছর আগে আমার বিয়ের পরপর একদিন মা মানে আমার শাশুড়িকে চুপিচুপি বলেছিলাম, ” মা , আমার পিয়াল কে কেমন জানি অন্যরকম লাগে “। মা একদম স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিল, ‘ অন্যরকম কেন লাগবে বৌমা! সেও তোমার আমার মত মানুষ ‘। আমি মা কে জোর দিয়ে বুঝাতে চাইলাম যে পিয়াল আমার উনার মত বা মাসুমের মত নরমাল নয়। মা আমার কথা পাত্তাই দিলেন না!! খুব স্বাভাবিক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বল্ল, ‘ তুমি নরমাল তো? আমারতো মনে হয় তোমারি মন নরমাল না’!! কি অপমান !! সেদিনের পর থেকে আমি পিয়ালকে নিয়ে কোন ধরনের কথা বলা বাদ দিয়েছিলাম । তারপর আসি রিমির কথায়। রিমি, আমার একমাত্র ননদ। খুব মেধাবী ছাত্রী। একদিন অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, রিমির ডান কানের লতিতে একটা গভীর ক্ষত! আমি চুল বেঁধে দিতে দিতে রিমিকে জিজ্ঞেস করলাম, ” রিমি , তোর কান কে খাইছে রে”? রিমি হাত নেড়ে গল্প বলার মত করে আমাকে বলে, ‘ ভাবি জান ! আমার জন্মের পর আমাকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেয়া হয় , তখন কাক এসে মাংসের টুকরা মনে করে ঠুকরে আমার কান খেয়ে ফেলে ‘ !!
কি অসভ্যরে বাবা !! শাঁকচুন্নি একটা ! আমি মনে মনে ভাবলাম !! বেয়াদবের পরিবার !! দূর! আর কোন আগ্রহ নাই এদের নিয়ে আমার , আমি মরছি আমার চিন্তায় তখন। একটা বাচ্চার জন্য আমার মন প্রাণে তখন মরুভূমির হাহাকার !!
দীর্ঘ দশবছর ধরে চিকিৎসা করার পর যেদিন আমি আর মাসুম ভারতের বিখ্যাত এক ডাক্তারের কাছ থেকে নিরাশ হয়ে দেশে ফিরে আসলাম , ঘরের সবাই সেদিন আমাকে কাউন্সিলিং করা শুরু করল । আমার তখন দুনিয়াদারি অসহ্য লাগছিল। চোখের সামনে আমাকে সহানুভূতি দেখানো মানুষগুলোকে অমানুষের মতোই লাগছিল। ততদিনে পিয়াল দেশের অনেক নামকরা একজন ফটোগ্রাফার , রিমি ইউনিভার্সিটিতে পড়ায়, মা রিটায়ার্ড করে একটা এন জি ও তে সময় দিচ্ছিল ।

সেদিন আমি শোবার ঘরের বাতি নিভিয়ে অন্ধকারে কাঁদছিলাম । মাসুম কে বলছিলাম, ” মাসুম আমি কি আল্লাহর কাছে বেশী কিছু চেয়েছিলাম? একটা বাচ্চাইতো চেয়েছিলাম ! মা হতে চেয়েছিলাম “। আমি আঝোরে কাঁদছিলাম।

মাসুম আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিল, ‘ তোমাকে আজকে এমন একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব যাকে গর্ভবতী হতে না পারার অপরাধে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল । কিন্তু উনি আজকে একজন সত্যিকারের মা , তিন তিনজন সফল সন্তানের গর্বিত মা ‘। আমি অবাক হয়েছিলাম, মাসুম কি শোকে দুক্ষে পাগল হয়ে গেল নাকি! কি বলে এসব!!

আমাকে হাত ধরে টেনে মাসুম বসার ঘরে আনল। ঘরের সবাই তখন সেখানে বসে টিভি দেখছিল । আমি তখন অন্য কাউকে খুঁজছিলাম। মাসুম আমার শাশুড়ি মা কে দেখিয়ে দিয়ে বল্ল, দেখ উনিই সেই মা ।
মাসুম সবার সামনেই আমাকে বলা শুরু করল , ‘ খুব ছোট বেলায় আমার মা বাবা এক্সিডেন্টে মারা যাবার পর আমি চাচা চাচির কাছে অযন্তে অবহেলায় বড় হতে থাকি , আমার এই মা কে তখন উনার স্বামী ত্যাগ করেছেন । মা উনার বাবার দেয়া এই বাড়িটায় উনার বৃদ্ধ মা কে নিয়ে থাকেন আর একটা স্কুলে চাকরি করেন । আমাকে মা দত্তক নিয়ে আমার মা হলেন। আমার বয়স যখন পাঁচ , একদিন মা খবর পেলেন এক পরিবার তাদের সদ্য জন্ম নেয়া একটা বাচ্চাকে হাসপাতালে ফেলে চলে গেছে কারণ বাচ্চাটা তৃতীয় লিঙ্গ নিয়ে জন্মেছে। আমার মা সেদিন সেই বাচ্চার মা হয়ে তাকে বাসায় নিয়ে আসলেন , বাচ্চাটার কি অপরাধ ছিল বল? তারপর এক শীতের ভোরে বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময়ে ডাস্টবিনের ময়লার ভিতরে একজন মানবশিশুর কান্না শুনতে পেয়ে মা তাকেও বুকে টেনে নেয়। সেদিন কাঁক ফেলে দেয়া রক্তমাখা নবজাতকটার কান ঠুকরে খাওয়া শুরু করে দিয়েছিল। তুমি নিশ্চয় সবই বুঝতে পারছ! পুরো গল্পটাই এখন তোমার চোখের সামনে ‘।

সেদিন থেকে আমার নতুন করে জন্ম হল। আমি চোখ ভরা অপরাধবোধ নিয়ে ওদের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছিল। রিমি শয়তানটা চিমটা দিয়ে বলছিল ,” ইশ ! কি ঢং ! আমি কি মিথ্যে গল্প বলেছিলাম “? আমি মা কে জড়িয়ে ধরেছিলাম প্রচন্ড অপরাধবোধ নিয়ে !! এমন একজন মা কিভাবে আমার চোখে পড়ল না এতগুলো বছর !! আমি কাঁদতে কাঁদতে অপূর্ব সুন্দর এই পরিবারটাকে মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছি। ফটোগ্রাফারটা তখন আমার বোকার মতন কাঁদার ছবি তুলছিল একটার পর একটা।

আমি এখন দুই দুইটা বাচ্চার মা। এত ব্যস্ত থাকি ওদের নিয়ে আর বইলো না । তোমার চেনা জানা যদি কেউ আমার মত মা হতে চায় তাদেরকে আমাদের গল্পটা বইলো। বলবা ,” গর্ভধারন অনেকেই করতে পারে,সত্যিকারের মা হতে সবাই পারেনা।

সন্তানহীন মানুষ যেমন আছে এই পৃথিবীতে , মা বাবাহীন অসংখ্য সন্তানও রয়েছে আমাদের আশেপাশে। তাদের মা বাবা হতে পারাটা আরো আনন্দের , আরো তৃপ্তির। সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয় ব্যালেন্স করার জন্যই এই ব্যবস্থা করে রেখেছেন ” !!

[Courtesy : Taslima Shammi]

 

আমার রঙে রাঙিয়ে যাব


আফরোজা হাসান


ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে মেঘলা আকাশ দেখে হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেলো নুশেরার। বৃষ্টি অসম্ভব পছন্দ করলেও গুমোট ধরা মেঘলা আকাশ সবসময়ই তার মন খারাপ করে দেয়। রুমে এসে ডায়েরী নিয়ে বসলো। গতরাতের লেখাতে চোখ বুলাতেই খুব হাসি পেলো। ভাবলো…ধ্যাত কি সব লিখেছি! ডায়েরী বন্ধ করে আবারো বারান্দায় এসে দাঁড়ালো নুশেরা। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেঘ আর সূর্য জমিয়ে লুকোচুরি খেলছে। দুরন্ত দুটি শিশু যেন কেউ কারো চেয়ে কম না। মামণি এসে পেছন থেকে কাঁধে হাত রাখতেই মনের জগত থেকে বাইরে বেড়িয়ে এলো নুশেরা। মার দিকে তাকিয়ে আদুরে গলায় বলল, আমি কিন্তু আজ ক্লাসে যাবো না মামণি। এমন দিনে ক্লাসে গিয়ে কোন মজা নেই। মামণি হেসে বললেন, ঠিক আছে ইচ্ছে না হলে যাবি না। এখন চল নাস্তা করবি। নাস্তা সেরে গতরাতের অর্ধেক করে রাখা ফুলের তোড়াটা শেষ করতে বসলো সে। ছোট ভাইয়া বাইরে যাবার সময় নুশেরাকে দেখে কাছে এসে বসে বলল, কি রে সাত সকালেই ফুল নিয়ে বসেছিস যে?

-তোমার বিয়ের সময় যাতে নিজ হাতে ফুল দিয়ে সবকিছু সাজাতে পারি তাই ফ্লাওয়ার ডেকোরেশনের কোর্স করছি ভাইয়া।

-(হেসে) তাহলে বরং তুই গহনাগাঁটি বানানোর কাজ শেখ। কারণ এখনকার মেয়েরা শরীর ভর্তি গহনা না হলে বিয়ে করতে চায় না। কয়েক বছর পর দেখবি আবদার করবে বাড়িঘর ডেকোরেশনও করতে হবে হিরা-মণি-মুক্তা দিয়ে।

-মেয়েদের চাহিদা সম্পর্কে এমন ধারণার পেছনে কারণ কি তোমার?

-বন্ধুদের অবস্থা দেখে এমন ধারণা হয়েছে। এখন তো বিয়ে করতে চাওয়াটাই বিপদ।

-তুমি তাহলে এইসব বিপদে না গিয়ে মহৎ কিছু করো। শত শত অসহায় কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা-মাতা আছেন যারা সামর্থ্য নাই তাই মেয়েদের বিয়ে দিতে পারছেন না, তাদের কাউকে বিয়ে করো। অনেক মেয়ে আছে দেখতে খুব একটা সুন্দর না, কারো গায়ের রঙ কালো, কেউ খুব বেশি খাটো, নাহয় তাদের কাউকে বিয়ে করো। এইসব অসহায় মেয়েরা তোমাদের কাছে কিছুই চাইবেনা একটু ভালোবাসা আর আশ্রয় ছাড়া।

-(হেসে) চাইবে না নিশ্চিত হচ্ছিস কিভাবে?

-নিশ্চিত হচ্ছি না জাস্ট ধারণা করছি। তুমি তোমার ধারণা বলেছো তাই আমি আমারটা বললাম।

-(হেসে) তোর সাথে কথায় পারবো না তাই আগেই সারেন্ডার করলাম। হঠাৎ ফ্লাওয়ার ডেকোরেশনের কোর্স করার কারণ কি তোর?

-সত্যিই তোমাদের বিয়ের সময়ের কথা চিন্তা করে ভর্তি হয়েছি কোর্সে। আমি নিজ হাতে সাজাতে চাই আমার ভাইয়াদের নতুন জীবনের শুভ সূচনার প্রথম অধ্যায়কে।

-তোকে দেখি সারাক্ষণই পরিবারের সবাইকে নিয়ে নানা ধরণের স্বপ্ন দেখতে। আচ্ছা নিজেকে নিয়ে কোন স্বপ্ন নেই তোর মনে?

-(হেসে) অবশ্যই আছে। তবে আমার স্বপ্নের কথা কাউকে বলতে চাই না আমি।

-কেন?

-কারণ আমি আমার স্বপ্নকে ধরে রাখতে চাই ভাইয়া। আর আপনজনদেরকে স্বপ্নের কথা বললে, তারা সেটা পূরণ করার চেষ্টা করে। এতে বেশির ভাগ সময়ই স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায়। আর আমার ধারণা স্বপ্ন অপুর্ণ থাকার চেয়ে স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়াটা বেশি কষ্টের। যদিও স্বপ্ন মানে আশা। তাই স্বপ্ন অপুর্ণ থাকা মানে আশা পূরণ না হওয়া। কিন্তু অপুর্ণ স্বপ্নের পুর্ণ হবার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু ভেঙ্গে গেলে তো সেই সম্ভাবনার আশাটুকুও থাকে না।

-(হেসে) তোর চিন্তা-ভাবনাগুলো সত্যিই অন্যরকম। ভালো লাগে যখন তোর মতো মেয়েদের দেখি।

-(অবাক কণ্ঠে) তোর মতো মেয়ে মানে? ভাইয়া শোন আমি দুনিয়াতে সিঙ্গেল পিস। অনেক সময় তো আমার নিজের কাছেই দুঃসাধ্য মনেহয় আমার মতো মেয়ে হতে পারাটাকে।

-(হেসে বোনের কান টেনে) তোর মতো চিড়িয়া আসলে দুনিয়াতে সিঙ্গেল পিসই আছে। আর সেটা হচ্ছিস তুই নিজে। আচ্ছা ফ্লাওয়ার ডেকোরেশন কর আমি যাই।

-আমার প্রস্তাবটা কেমন লাগলো বললে নাতো?

-কোন প্রস্তাব?

-অসহায় কাউকে বিয়ে করার।

-(হেসে) অসহায় কাউকে ঝুলাতে চাইছিস মনে হচ্ছে আমার গলায়?

-ভাইয়া আমার এক ক্লাসমেট আছে। এককথায় অসাধারণ একটি মেয়ে। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় রোড এক্সিডেন্টে ওর স্বামী মারা গিয়েছে। সাথে সাথে হারিয়ে গিয়েছে মেয়েটির জীবনের সব রঙ সব স্বপ্ন-হাসি-আনন্দ। তুমি কি পারো না ওকে বিয়ে করে ওর জীবনটাকে আবারো স্বপ্নের রঙে রাঙিয়ে দিতে?

-তুই কি সিরিয়াস?

-আমার কি ধারণা জানো ভাইয়া? আমাদের সবার মনেই একটি করে রংধনু আছে। আর সেই রংধনুর ক্ষমতা আছে নিজের সাথে সাথে অন্যের জীবনকেও রাঙিয়ে দেয়ার। তাই নিজ নিজ গণ্ডির ভিতরে কারো জীবন থেকে যদি রঙ হারিয়ে যায়, আর আমাদের যদি সুযোগ থাকে, তাহলে উচিত নিজের রঙয়ে তাকে রাঙানোর চেষ্টা করা। কথা বলছো না কেন?

-তোর কথাটা হজম করতে সময় লাগছে।

-বেশি কষ্ট হলে হজমী খাও।

-(হেসে) হজমী খেতে হবে না। আমার হজম শক্তি খুব ভালো। তবে ভেবে দেখতে চাচ্ছি তোর কথাটা।

-ভাবো। ভাবতে ভাবতে ভাবুক হয়ে যাও। তবে জেনে রাখো যখনই আমার সামনে সুযোগ আসবে নিজের রঙে কাউকে রাঙানোর আমি ভেবে সময় নষ্ট করবো না। বরং আমার রঙে রাঙিয়ে যাবো কারো মন কিংবা জীবন……………

(কাউকে নিজের রঙে রাঙিয়ে দেবার জন্য আসলে খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন পরে না বেশির ভাগ সময়। একটু আশার বাণী, উৎসাহমূলক কিছু কথা, কষ্টের সময় একটু পাশে থেকে ভরসা দেয়া, বিপদে পড়লে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করা ইত্যাদি দ্বারা সম্ভব অন্যেকে রাঙিয়ে দেয়া।)

 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন


নারীর জন্য আইন


‘নারীর অধিকার’ একটি বহুল আলোচিত বিষয় বাংলাদেশে সব মহলে। আমাদের সংবিধানেও এর সমর্থন পাওয়ওয়া যায়। যেমন, সংবিধানে বলা হয়েছে – ‘ রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষ সমান অধিকার লাভ করিবেন ‘ [ অনুচ্ছেদ ২৮ এর ধারা (২)]। ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী’ ( অনুচ্ছেদ – ২৭)। ‘ জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করিবার ব্যবস্থা করিতে হইবে’ (অনুচ্ছেদ – ১০)। ‘ প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে’ ( অনুচ্ছেদ – ১১)।

এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল  বালংদের‍্শেরে

২৬৷ (১) এই আইনের অধীন অপরাধ বিচারের জন্য প্রত্যেক জেলা সদরে একটি করিয়া ট্রাইব্যুনাল থাকিবে এবং প্রয়োজনে সরকার উক্ত জেলায় একাধিক ট্রাইব্যুনালও গঠন করিতে পারিবে; এইরূপ ট্রাইব্যুনাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নামে অভিহিত হইবে৷

(২) একজন বিচারক সমন্বয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হইবে এবং সরকার জেলা ও দায়রা জজগণের মধ্য হইতে উক্ত ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিযু্‌ক্ত করিবে৷

(৩) সরকার, প্রয়োজনবোধে, কোন জেলা ও দায়রা জজকে তাহার দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিযুক্ত করিতে পারিবে৷

(৪) এই ধারায় জেলা জজ ও দায়রা জজ বলিতে যথাক্রমে অতিরিক্ত জেলা জজ ও অতিরিক্ত দায়রা জজও অন্তর্ভুক্ত৷

তাহলে দেখা যাচ্ছে অধিকারের প্রশ্নে নারী বা পুরুষ নয়, একজন নাগরিক মানুষ হিসাবে কি অধিকার ভোগ করবে তা উল্লেখিত হয়েছে অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে। সংবিধানের এ বলিষ্ঠতা আমাদের আশান্বিত ও অনুপ্রাণিত করে।

 

প্যারেন্টিং এর মূলনীতি


কানিজ ফাতিমা


অনেকেই অভিযোগ করেন যে বাচ্চার পড়ার অভ্যাস নেই। দোষটা সবসময় বাচ্চার না, আসলে বাচ্চার পড়ার অভ্যাস তৈরীতে বাবা-মায়ের সক্রিয় ভূমিকা নিতে হয় এবং সেটা হতে হয় একেবারে ছোট বয়স থেকেই। ছয়মাস বয়স থেকেই বাচ্চাকে (অনেকের মতে আরো আগে থেকে) বইয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলুন। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আপনি বই পড়ুন। মনে করছেন এতো ছোট বয়সে বাচ্চা বইয়ের কি বুঝবে? এটাই বাচ্চার সঙ্গে বইয়ের সম্পর্ক তৈরীর সময়। বাচ্চাকে বইয়ের রঙ্গীন ছবি দেখান; বাচ্চা কিছুটা বড় হলে তাকে বইয়ের গল্প পড়ে শোনান; ঘুমানোর আগে বাচ্চার সঙ্গে শুয়ে বই পড়ুন। বইয়ের সাথে এই অল্প বয়সে যে সম্পর্ক তৈরী হয় সেটা সারা জীবন তার থেকে যায়।

অন্যদিকে বাচ্চা ছোট বয়সে যদি বাড়ীতে বই না দেখে, বাবা-মাকে বই পড়তে না দেখে তবে এটা আশা করা যায় না যে সেই বাচ্চা বইকে ভালোবাসতে শিখবে। এর বিপরীতে বাচ্চা ছোট থেকেই যদি বইয়ের চেয়ে ভিডিও (কার্টুন, ভিডিও গেম) বেশী দেখে, বাবা- মাকে টিভি, বা অন্য স্ক্রিনে মগ্ন দেখে, তবে বাচ্চা বইয়ের প্রতি কখনোই আকর্ষণ বোধ করবে না এবং খুব সম্ভাবনা থাকবে বাচ্চার অস্থির প্রকৃতির হবে ।

শুধু স্কুলের কারিকুলামের বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে অন্যান্য উপকারী বই বাচ্চাকে নিয়ে পড়বেন। বাসায় বাচ্চার জন্য ও নিজেদের জন্য ছোট করে হলেও লাইব্রেরী রাখুন । মনে করছেন, অনেক জায়গা লাগবে? একটা আলমারী এমনকি আপনার ড্রেসিং টেবিলের এক পাশকেও ব্যবহার করতে পারেন লাইব্রেরী হিসাবে।

– প্যারেন্টিং এর মূলনীতি

 

‘নিজের কাজকে সন্মান করুন’


ফাতেমা শাহরিন


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্যবস্থাপনা’ বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্রী অর্পিতা ব্যানার্জী। তার আরও একটি পরিচয় হল তিনি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বিনিসুঁতো’। ‘বিনিসুঁতো’ মুলত একটি অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা প্রকল্প। তিনি মুলত স্বত্তাধিকারী এবং ডিজাইনার হিসাবে কাজ করছেন।

‘বিনিসুঁতো’ র যাত্রা শুরু হয় তার ভাষ্যমতে, ‘আজ থেকে এক বছর আগে।’ মূলত, হাতে তৈরি গয়না ও ক্রাফটিং এর প্রতি ভালোবাসা থেকেই এই কাজের প্রতি আগ্রহ জন্মে বলে তিনি জানান। আর তাই তিনি ক্ষুদ্র জ্ঞান, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের প্রচন্ড উৎসাহ ও নিজের আত্মবিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে এই উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।

অর্পিতা বলেন, “একটি মানুষ তখনই সফলতা অর্জন করতে পারে যখন সে তার কাজকে ভালোবাসে।”

আর তাই, বিনিসুঁতোর  প্রতিটি কাজ কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে গয়না ক্রেতার হাতে পৌছানো পর্যন্ত সকল কাজ তিনি অত্যন্ত ভালোবাসা ও যত্নের সাথে করার চেষ্টা করেন।

‘যেকোন উদ্যোগ গ্রহনের ক্ষেত্রেই প্রতিটি মানুষকে প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আর নারী উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হল পারিবারিক ও সামাজিক গ্রহনযোগ্যতার অভাব।’ বলেও অর্পিতা জানান।

তিনি মনে করেন যে, ‘ব্যবসা করার ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান পারিবারিক ও সামাজিকভাবে এখনো সম্পূর্ণভাবে গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠেনি। যার ফলে অনেক নারীই তাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিবার ও সমাজের সহযোগিতার অভাবে দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও কাজে এগিয়ে আসতে পারেন না।’

অর্পিতা ব্যানার্জী আরও বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, আর নতুন উদ্যোক্তাদেরকেও একটা কথা বলব, ‘আপনার ইচ্ছা শক্তিকেই মূল পুঁজি  করুন,  নিজের কাজকে সন্মান করুন এবং ভালোবাসুন দেখবেন সফলতা আসবেই।”

সকলের জন্য বিনিসুঁতোর পক্ষ থেকে আন্তরিক  শুভকামনা অর্পিতা সবশেষে জানান।

বিনিসুঁতোর দুটো পণ্য:

১.২.

 

রাস্তায় নারী গাড়ি চালকের সংখ্যা বাড়ছে


নারী সংবাদ


ঘনবসতিপূর্ণ এই ঢাকা শহরে রাস্তায় জ্যামের পরিমাণ এতো বেশি যে, চলাচল করাটই প্রায় দুরুহ হয়ে পড়েছে। তারপর রয়েছে গণপরিবহন সংকট। বিশেষ করে নারীর গাড়িতে ওঠা যেন যুদ্ধের শামিল। কিন্তু তাতে তো চলবে না। জীবনের তাগিদে অফিস কিংবা নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতেই হবে। কেন না, রুটি-রুজির জন্য আজ মহিলারাও পুরুষের সমান তালে এগিয়ে চলছে। সড়কের এই বিশাল জ্যামের কারণে অনেক নারীই আজ নিজেই গাড়ি চালিয়ে অফিস করছেন কিংবা নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন। যে কারণে দিন দিন রাস্তায় বাড়ছে নারী গাড়ি চালকের সংখ্যা। অবশ্য এ জন্য পুরুষশাসিত সমাজে একজন নারীকে অনেক সময়ই বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছেন দিয়া।
বাংলা মোটর সিগন্যালের জ্যামে অনেকক্ষণ ধরেই বসে আছে দিয়া। কিছুক্ষণ পর তার গাড়ির পাশে একটি মোটর সাইকেল এসে দাঁড়ালো। মোটর সাইকেলের পেছনে বসা ছেলেটি সামনের জনকে দেখিয়ে বলছে, ওই দ্যাখ্, মাইয়া মানুষ গাড়ী চালায়। এমন কথা শুনলে এখন আর মাথা গরম হয় না। বরং তাদের প্রতি করুণা হয়। গত কয়েক মাস ধরে নিজেই ড্রাইভিং করে অফিসে আসা-যাওয়া করছেন দিয়া। আর এ ক’মাসে হাজারবারের বেশি শুনতে হয়েছে এ কথা।
রাস্তায় মানুষের বিদ্রপাত্মক কথা শুনতে হলেও দিয়ার অফিস সতীর্থরা কিন্তু তাকে খুব সাহস যুগিয়েছেন। দিয়া বলেন, প্রথমদিকে রাস্তায় খুব ভয় পেতাম। যতক্ষণ স্টিয়ারিংয়ে থাকতাম, সারাক্ষণ খুব সতর্ক থাকতাম। প্রায় সময়ই মেয়ে ড্রাইভার বলে অনেকেই রাস্তার সাইডে চাপতে চাইতো। বিশেষ করে বাস আর ট্রাকের ড্রাইভাররা তো কখনোই ছাড় দিতে না।
সানজিদা পারুল একজন সংবাদকর্মী। তিনি প্রায় প্রতিদিনই উত্তরা থেকে পুরানা পল্টন অফিসে আসেন স্কুটি চালিয়ে। এ ছাড়াও সপ্তাহের প্রায় তিন থেকে চারদিনই বিভিন্ন এসাইনমেন্ট থাকে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে।
পারুল বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে সাংবাদিকতা করতে এসেছি। কিন্তু বাসা দূরে হওয়ায় আমার অফিসে যাতায়াতে খুব কষ্ট হতো। পরে টাকা জমিয়ে একটা স্কুটি কিনলাম। আজ প্রায় বছরখানেক হলে াআমি স্কুটি চালিয়ে অফিস করছি। শুরুতে ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট হতো। বিশেষ করে ট্রাক ড্রাইভাররা ফাঁকা রাস্তা পেলে আমাকে রাস্তার একপাশে চাপিয়ে দিতো। যেনো মনে হতো, এই বুঝি আমাকে চাপা দিয়ে দিলো। অনেকবার রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাদের যেতে দিতাম। তবে এখন অনেক আত্মবিশ্বাষ নিয়ে গাড়ী চালাই।
তিনি বলেন, এখনো আমাদের সমাজের চিন্তা-ভাবনা সেই আগের মতো রয়ে গেছে। অনেকের ধারণা, মেয়েদের নির্দিষ্ট কিছু কাজের বাইরে আর অন্য কিছু করার নেই। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। ঘর আর বাচ্চা সামলিয়েও মেয়েরা এখন এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।
পারুলের মতে, ঢাকা শহরে সময়ের কাজ সময়ে করতে চাইলে নিজস্ব একটা যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকা খুবই জরুরি। আর স্কুটি এ ক্ষেত্রে ভালো একটি যোগাযোগ মাধ্যম। তার মতে, অফিস সময়ে ঢাকার পাবলিক বাসে উঠতে পারা মানে যুদ্ধ জয় করা। এ সময় কর্মজীবী মহিলাদের কষ্টের সীমা থাকে না।
মূলত এ দেশে ড্রাইভিংয়ে নারীরা নতুন নয়। তবে সংখ্যাটা এখন আগের তুলনায় বেড়েছে। তারপরও তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে অনেক নারীই এখন স্কুটি চালায়। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সূত্রমতে, বর্তমানে মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহিতার সংখ্যা হচ্ছে এক শতাংশ।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগে কর্মরত নারী ড্রাইভার সানজিদা খানম বলেন, নারীদের প্রতি আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। আমি যখন প্রথম চাকরিতে যোগদান করি তখন আমার অনেক পুরুষ সহকর্মী আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকাতো। তাদের একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিলো, মেয়ে মানুষ আবার ড্রাইভিং করে নাকি! কিন্তু অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আমি তাদের ধারণা পাল্টে দিয়েছি। এমনকি তাদের অনেকেই এখন আমাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে।
এদিকে, সুমনার গল্পটা কিছুটা ভিন্ন। তার বাবা ছিলেন একজন ড্রাইভার। প্রায় সময়ই তিনি দুপুরে বাসায় খেতে আসার সময় তার বসের গাড়ীটি নিয়ে আসতেন। এ সময় সুমনা খুব বায়না ধরতো সেও গাড়ী চালানো শিখবে। বাবাও তাকে খুব আদর করে গাড়ী চালানো শিখিয়েছিলেন। কিন্তু বিধি বাম। এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার বাবা মারাত্মক আহত হন। সেই থেকে তিনি আর বিছানা থেকে উঠতে পারেন না।
তখন পরিবারের বড় হিসেবে সুমনার কাঁধেই চলে আসে পুরো সংসারের দায়িত্ব। অনেক চেষ্টা করেও কোন চাকরি যোগাড় করতে না পেরে সুমনা সিদ্ধান্ত নেয় সেও তার বাবার মতো গাড়ী চালাবে। চলে যায় তার বাবার অফিসে। তারাও খুব আন্তরিক হয়ে সুমনাকে তার বাবার চাকরিটি দিয়ে দেয়। তারপর থেকে আজ দু’বছর হতে চললো সুমনা ড্রাইভিং করছে।
মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মনোয়ারা বেগম বলেন, আমরা আসলে আমাদের সমাজে নারীদের একভাবে দেখতে অভ্যস্ত। আমাদের বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছেÑ নারীরা স্বামী, সংসার আর বাচ্চা সামলাবে। কিন্তু দিন পাল্টে গেছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ, নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া কখনোই একটি রাষ্ট্র উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে না। সুত্র: (বাসস)।

 

লাউ শাকের রেসিপি


ঘরকন্যা


লাউ শাক

উপকরন
১.লাউ শাক,
২.আলু ১-২ টি,
৩.কাঁচামরিচ,
৪.রসুন কুচি (পরিমানটা একটু বেশি হতে হবে),
৫.পেঁয়াজ কুচি,
৬.লবণ,
৭ পাঁচ ফোড়ন ও
৮.রান্নার তেল।

প্রনালী
লাউশাক ও কচি ডগাসহ কুচি করে কেটে ভাল করে ধুয়ে নিন। ১-২ টা আলু টুকরা করে কেটে ধুয়ে লাউ শাকের মধ্যে দিন এবং লবণ, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ কুচি ও রসুন কুচি দিয়ে চুলায় সিদ্ধ করতে দিন। শাকের পানি শুকিয়ে গেলে ও সিদ্ধ হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন। এবার অন্য একটি পাত্রে পরিমাণ মত তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি ও রসুন কুচি দিয়ে ভাজতে থাকুন। পেঁয়াজ ও রসুন বাদামী রঙ এ ভাজা হলে পাঁচ ফোড়ন দিয়ে একটু নেড়ে শাক ঢেলে নাড়তে থাকুন প্রায় ২ মিনিট। যখন শাক কড়াইতে লেগে আসবে তখন চুলার আঁচ কমিয়ে নামিয়ে ফেলুন। গরম গরম ভাতের সাথে লেবু ও কাঁচামরিচ দিয়ে পরিবেশন করুন।

লাউশাকের ভর্তা

উপকরণ
১. লাউয়ের পাতা ৬-৭টা,
২. পেঁয়াজ কুচি ১ টেবিল চামচ,
৩. কাঁচামরিচ– ৪/৫ টা (কুচি করা বা সেদ্ধ করা),
৪. সরিষার তেল স্বাদমত,
৫. লবণ স্বাদ মতো।

প্রণালী
লাউশাক ভালো করে ধুয়ে সেদ্ধ করুন। শাকের সাথে কাঁচামরিচও সেদ্ধ করুন। শাক সেদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিন। এবার পেঁয়াজ, মরিচ, লবণ ও তেল একসঙ্গে মাখুন। মাখা হলে সেদ্ধ লাউশাক দিয়ে ভালো করে মেখে গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

মহিলা মাদরাসার বাথরুমে ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ


নারী সংবাদ


রাজধানীর রামপুরার উলন রোডে একটি মহিলা মাদরাসা থেকে এক ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের নাম সানজিদা রশিদ মিম (১৪)। গতকাল বেলা সাড়ে ১২টায় মাদরাসার ছাদের ওপরের একটি বাথরুম থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত মিমের মা সিমা আক্তার জানান, তার মেয়ে রামুপরা মহিলা মাদরাসায় বোডিংয়ে থেকে হাফেজি লাইনের নাজেরায় পড়াশুনা করত। গত বৃহস্পতিবার রাতে সে বাসা থেকে মাদরাসায় চলে যায়। প্রতিদিনের মতো শনিবার বেলা ১১টায় মিমের জন্য ভাত নিয়ে মাদরাসায় যান তিনি। তখন মাদরাসা কর্তৃপ তার কাছে জানতে চায়, মিমের সাথে কারুর প্রেমের সম্পর্ক আছে কিনা। হঠাৎ এমন প্রশ্ন করা হলো কেন জানতে চাইলে তারা মিমের মৃত্যুর সংবাদ দেন।
হাতিরঝিল থানার ওসি আবু মো: ফজলুল করিম জানান, মিমের মৃত্যুর কারণ জানতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এ জন্য মাদরাসার এক শিক্ষিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।

 

মোগল সম্রাজ্ঞী নূরজাহান কেন নারীবাদীদের ‘আইকন’


নারী সংবাদ


মোগল সম্রাজ্ঞী নূর জাহান ছিলেন আঠারো শতকের ভারতের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী নারীদের একজন। তাকে কেন একালের নারীবাদীরা একজন ‘আইকন’ হিসেবে দেখতে চাইছে? ইতিহাসবিদ রুবি লাল বোঝার চেষ্টা করেছেন এই লেখায় :

জন্মের সময় তার নাম দেয়া হয়েছিল মিহরুন নিসা। কিন্ত স্বামী মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর পরে তার নাম পাল্টে রেখেছিলেন নূর জাহান (জগতের আলো)। ইংল্যান্ডে রানি প্রথম এলিজাবেথের জন্মের কয়েক দশক পরে তার জন্ম। কিন্তু রানি এলিজাবেথের চেয়ে অনেক বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ এক সাম্রাজ্য শাসন করেছেন নূর জাহান।

ষোড়শ শতকের শুরু হতে পরবর্তী প্রায় তিন শ’ বছর ধরে ভারতবর্ষ শাসন করেছে মোগলরা। তারা ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী রাজবংশ। মোগল সম্রাট এবং মোগল রাজপরিবারের নারীরা ছিলেন শিল্প, সঙ্গীত এবং স্থাপত্যকলার বিরাট সমঝদার। তারা বিশাল সব নগরী, প্রাসাদোপম দূর্গ, মসজিদ এবং সৌধ তৈরিতে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে।

কিন্তু পুরো মোগল রাজবংশের একমাত্র নারী শাসক নূর জাহানকে নিয়ে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশে এখনো ছড়িয়ে রয়েছে অনেক লোকগাঁথা।

উত্তর ভারতের আগ্রা এবং উত্তর পাকিস্তানের লাহোর, মোগল আমলের দুটি বড় নগরী। এই দুই জায়গাতেই নূর জাহান সম্পর্কে শোনা যাবে অনেক কিংবদন্তী।

প্রবীন নারী এবং পুরুষ, ট্যুর গাইড থেকে শুরু করে ইতিহাসে আগ্রহী মানুষ আপনাকে জানাবে কিভাবে জাহাঙ্গীর এবং নুর জাহান পরস্পরের প্রেমে পড়েন। কিভাবে নূর জাহান একটি মানুষ খেকো বাঘকে মেরে রক্ষা করেছিলেন একটি গ্রামের মানুষকে।

যদিও নূর জাহানের প্রেম, তার সাহসিকতার অনেক কাহিনী ছড়িয়ে আছে, মোগল প্রাসাদের অন্দরমহলে তার রাজনৈতিক ক্ষমতা, প্রতিপত্তি এবং আকাঙ্ক্ষার সম্পর্কে বিস্তারিত খুব কমই জানা যায়।

নূর জাহান ছিলেন কবি, এদক্ষ শিকারি এবং খুবই সৃজনশীল এক স্থপতি। আগ্রায় তার তৈরি করা নকশাতেই নির্মাণ করা হয়েছিল তার বাবা-মার সমাধি সৌধ। পরে এই স্থাপত্য রীতিই নাকি তাজ মহলের স্থাপত্য নকশার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

মোগলদের পুরুষ শাসিত জগতে নূর জাহান ছিলেন এক অসাধারণ নারী। কোনো রাজকীয় পরিবার থেকে তিনি আসেননি। কিন্তু তারপরও সম্রাটের হারেমে তার উত্থান ঘটে এক দূরদর্শী রাজনীতিক হিসেবে। তিনি সম্রাট জাহাঙ্গীরের সবচেয়ে প্রিয়তম স্ত্রীতে পরিণত হন। বিশাল মোগল সাম্রাজ্য আসলে তিনি এবং সম্রাট জাহাঙ্গীর মিলে একসঙ্গেই শাসন করতেন।

কিন্তু যে যুগে অন্দর মহলের বাইরে নারীর কোনো স্থান ছিল না, সেই যুগে তিনি কিভাবে এত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন?

নূর জাহানের জন্ম হয়েছিল ১৫৭৭ সালে কান্দাহারের কাছে (আজকের আফগানিস্তানে)। তার পরিবার ছিল ইরানের এক অভিজাত বংশের। কিন্ত সাফাভিদ রাজবংশের অসহিষ্ণুতার কারণে তাদের সেখান থেকে পালিয়ে মোগল সাম্রাজ্যে এসে আশ্রয় নিতে হয়।

পিতা-মাতার জন্ম স্থানের ঐতিহ্য আর মোগল রীতি-নীতি, এই দুটির আবহে বেড়ে উঠেন তিনি। নুর জাহানের প্রথম বিয়ে হয় এক মোগল রাজকর্মচারীর সঙ্গে। তার স্বামী ছিলেন এক সেনা কর্মকর্তা। স্বামীর সঙ্গে তিনি পূর্ব ভারতের বাংলায় চলে আসেন। সেখানেই তার একমাত্র ছেলের জন্ম হয়।

তবে সম্রাট জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে নূর জাহানের স্বামীর চাকরি যায়। এক লড়াইয়ে নিহত হন নূর জাহানের স্বামী।

বিধবা নূর জাহানকে পাঠানো হয় মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের হারেমে। সেখানে নূর জাহান অন্য মোগল নারীদের আস্থা এবং বিশ্বাসের পাত্র হয়ে উঠেন। ১৬১১ সালে সম্রাজ জাহাঙ্গীর তাকে বিয়ে করেন। তিনি ছিলেন জাহাঙ্গীরের বিশতম পত্নী।

সেই সময়ের মোগল রাজদরবারের রেকর্ডে খুব কম নারীর কথাই উল্লেখ আছে। তবে সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্মৃতিকথায় ১৬১৪ সালের পর থেকে তার সঙ্গে নূর জাহানের বিশেষ সম্পর্কের উল্লেখ আছে বার পার। তিনি নূর জাহানের এক অনুরাগময় চিত্রই একেঁছেন তাতে। নূর জাহান সেখানে বর্ণিত হয়েছেন একজন বিশ্বস্ত সঙ্গী, চমৎকার সেবাদাত্রী, বিজ্ঞ পরামর্শদাতা, দক্ষ শিকারি, বিচক্ষণ কূটনীতিক এবং শিল্পবোদ্ধা হিসেবে।

অনেক ইতিহাসবিদের মতে জাহাঙ্গীর ছিলেন এক মদমত্ত সম্রাট, যার সাম্রাজ্য পরিচালনায় কোনো মনোযোগ ছিল না। আর সে কারণেই নাকি তিনি এর ভার ছেড়ে দিয়েছিলেন স্ত্রীর হাতে। কিন্তু এটি পুরোপুরি সত্য নয়।

এটি সত্য যে জাহাঙ্গীর পানাসক্ত ছিলেন, তিনি আফিমও গ্রহণ করতেন। কিন্তু তিনি একই সঙ্গে তার স্ত্রী নূর জাহানকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। কিন্তু সেটার কারণেই নুর জাহান মোগল সাম্রাজ্য শাসনের সুযোগ পেয়েছিলেন ব্যাপারটা তা নয়। কার্যত নূর জাহান এবং জাহাঙ্গীর ছিলেন পরস্পরের পরিপূরক। স্ত্রী যে সাম্রাজ্য শাসনে তার পাশে আসন নিয়েছিলেন, সেটি নিয়ে জাহাঙ্গীরের কোনো অস্বস্তি ছিল না।

তাদের বিয়ের পরপরই নূর জাহান প্রথম যে রাজকীয় ফরমান জারি করেছিলেন তা ছিল এক রাজকর্মচারীর জমির অধিকার রক্ষায়। সেখানে তিনি স্বাক্ষর করেন নূর জাহান পাদশাহ বেগম নামে, যার অর্থ নূর জাহান, সাম্রাজ্ঞী। তিনি যে সার্বভৌম এবং তার ক্ষমতা যে বাড়ছে, এটি ছিল তারই ইঙ্গিত।

১৬১৭ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং তার নাম লেখা মূদ্রা স্বর্ণ এবং রৌপ্য ছাড়া হয়। সে সময়ের মোগল রাজদরবারের লেখক, বিদেশি কূটনীতিক, বণিক এবং পর্যটকরা উপলব্ধি করতে শুরু করেন যে মোগল সাম্রাজ্য পরিচালনায় তার একটা বিরাট প্রভাব আছে।

একজন রাজকর্মচারী একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছিলেন তার লেখায়। নূর জাহান একদিন রাজপ্রাসাদের বারান্দায় দেখা দিয়েছিলেন। এটি এর আগে পর্যন্ত কেবল পুরুষদের জন্যই সংরক্ষিত ছিল।

তবে পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে নূর জাহানের এটিই একমাত্র বিদ্রোহ ছিল না।

শিকারে বের হওয়া থেকে শুরু করে নিজের নামে রাজকীয় মূদ্রা এবং রাজকীয় ফরমান জারি, বড় বড় রাজকীয় ভবনের নকশা তৈরি, দরিদ্র নারীদের কল্যাণে ব্যবস্থা গ্রহণ, এরকম নানা কাজে নুর জাহান তার স্বাক্ষর রেখেছেন। যা ছিল সেকালের নারীদের মধ্যে ব্যতিক্রম।

তার স্বামীকে যখন জিম্মি করা হয়, তখন নুর জাহান তাকে রক্ষায় সেনাবাহিনীর অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন, যা তাকে ইতিহাসের পাতায় আর জনমানস চিরদিনের জন্য স্থায়ী জায়গা করে দিয়েছে।

রুবি লাল ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক। তার সর্ব সাম্প্রতিক প্রকাশিত গ্রন্থ “দ্য এস্টোনিশিং রেন অব নুর জাহান।” বইটি প্রকাশ করেছে পেঙ্গুইন ইন্ডিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে ডাব্লিউডাব্লিউ নর্টন।

সুত্রঃ বিবিসি।

 

ছাত্রীকে ধর্ষণ, শিক্ষককে নগ্ন করে ঘুরিয়ে থানায় দিল জনতা

নারী সংবাদ


দুই বছর ধরে নিজের ছাত্রীকে ধর্ষণ করে আসছিলেন তিনি। অবশেষে ধরা পড়ে যান। তবে প্রচলিত আইনের শাস্তি ছাড়াও তাকে মুখোমুখি হতে হয় জনরোষের। এলাকাবাসীই তাকে গণধোলাইয়ের পর নগ্ন করে সারা শহর ঘুরিয়ে পুলিশে সোপার্দ করে।

ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের ইলুরু শহরে। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, রামবাবু নামের এক ইংরেজির শিক্ষকের বিরুদ্ধে দু’বছর ধরে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি ওই ছাত্রী গর্ভবতী হয়ে পড়লে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। গর্ভপাত করানোর জন্য রামবাবু ওই ছাত্রীকে ওষুধ দেন। তারপরই ওই ছাত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে পুরো বিষয়টি নিজের বাড়িতে জানায় ওই ছাত্রী।

তার কাছে এসব কথা জানার পর ওই শিক্ষকের বাড়িতে হানা দেয় ছাত্রীর পরিজনরা। তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। নগ্ন করে হাঁটিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় থানায়। থানায় পৌঁছনোর পর অভিযুক্ত রামবাবুকে জামা-কাপড় দেয় পুলিশ। ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সূত্র : এনডিটিভি

 

দাম্পত্য জীবনে অশান্তি

 


দাম্পত্য


যে ৮ টি বিষয় আপনার দাম্পত্য জীবনকে অশান্তিময়, দুর্বল এবং দাম্পত্য জীবনে অশান্তি অকার্যকর করতে পারে।

আসুন জেনে নেই,

খারাপ ব্যবহার করা : তাকে এমন কিছু নিয়ে ঠাট্টা করা যাতে সে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এমন ধমক দেয়া যা অন্যদের সামনে তার অসম্মান হয়ে যায়। তাকে অপমান করা আপনার প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধকে কমিয়ে দিবে।

উপেক্ষা করা : তার পছন্দ, ভালোলাগা কিংবা তার কথাবার্তাকে গোণায় না ধরা বা পাত্তা না দেয়া। হয়ত সে সালাম দিয়েছেন আপনাকে, আপনি উত্তর দিলেন না। বেশ কিছুদিন যাবৎ খুব আগ্রহ নিয়ে হয়ত সে কিছু বলছে কিন্তু আপনি বিশেষ কারণ ছাড়াই তার কথার পাত্তা দিচ্ছেন না।

মিথ্যা বলা : দুষ্টামি করেও মিথ্যা বলা সঠিক নয়। আল্লাহ মিথ্যাকে নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের এই ওয়াসওয়াসা থেকে রক্ষা করুন।

কথা দিয়ে কথা না রাখা : কথা দিয়ে কথা রাখা বা ওয়াদা রক্ষা করা একজন মু’মিনের বৈশিষ্ট্য। বিষয়টি দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রেও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এড়িয়ে চলা : অনেকদিন পর দেখা হলে বন্ধুদেরকে বা ভাইদের আমরা জড়িয়ে ধরি, কোলাকুলি করি। আপনার স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরতে পারেন না? পারবেন, অস্বস্তি লাগলেও তা ভেঙ্গে ফেলুন। ভালোবাসার প্রকাশ থাকা খুবই প্রয়োজন।

সন্দেহ ও গীবত করা : কখনো সন্দেহ করতে যাবেন না। সন্দেহ সম্পর্ককে ধ্বংস করে। আপনার জীবনসঙ্গী আপনার খুব কাছের মানুষ এটা সত্যি। কিন্তু খুঁতখুঁত করে যদি তার বিষয়ে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেন, আপনি নিঃসন্দেহে হতাশ হবেন। মানুষ কখনো নিখুঁত নয়। আর মনে রাখবেন, প্রত্যেকে তার নিজ নিজ হিসাব দিবে। তাই সন্দেহ দূর করুন। স্বামী বা স্ত্রী একে অপরের চাদরস্বরূপ, ছোট-খাটো ভুলত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা নিয়ে অন্যদের কাছে বলে বেড়াবেন না, গীবত করবেন না।
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেছেন :
“হে মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান কর না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমার তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।” — [আল হুজুরাত, ৪৯ : ১২]

খুব বেশি ব্যস্ততা : অপরজনের জন্য কিছু সময় রাখবেন। পারস্পরিক কথাবার্তা আর সময়গুলো সম্পর্ককে প্রগাঢ় করে। তার প্রতি আপনার কর্তব্য রয়েছে, আপনার কিছু দায়িত্ব রয়েছে। কিছুটা সময় তিনি পাওয়ার অধিকার রাখেন। এই বিষয়টি খেয়াল রাখুন।

নামাজ এবং অন্যান্য ইবাদাত না করা : যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদাত না করে, নামাজ না পড়ে এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে না চলে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট নন। নিয়মিত নামাজ না পড়া, অশ্লীল কাজ, হারাম উপার্জনগুলো থেকে সরে না আসার কারণে অনেক সংসার ভেঙ্গে গেছে। আল্লাহর প্রতি কর্তব্য পালনে অলসতা-উপেক্ষা করার কারণে মুসলিম সংসারে অত্যন্ত দ্রুত ভাঙ্গন ধরে যায়।
আল্লাহ আমাদেরকে ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন এবং আমাদের সরল সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমাদের পরিবারগুলোতে রাহমাত এবং বারাকাহ দান করুন। সুত্র: দাম্পত্য | dampotto পেজ।

 

‘গায়ের রঙ এবং আমাদের মানসিকতা’


 সাজেদা হোমায়রা


খুব ছোটবেলা থেকেই আমরা এটা জেনেই বড় হই, সুন্দর হওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে তার গায়ের রঙ সাদা। আর যার গায়ের রঙ সাদা নয় সে তথাকথিত সুন্দরের সংজ্ঞার বাইরে।
যার গায়ের রঙ সাদা নয়, কালো বা শ্যামলা সে প্রতিনিয়তই হীনমন্যতায় ভুগছে বা আফসোস করছে।
অবশ্য করবেইবা না কেন?এ আফসোস তো আর একদিনে তৈরি হয়নি।
যখন দিনের পর দিন গায়ের রঙের জন্য সে অবজ্ঞার শিকার হয়….
যখন প্রকৃত মেধা/যোগ্যতার চেয়ে ফর্সা না কালো এটিই মূল্যায়নের মাপকাঠি হয়ে উঠে…..
যখন ভাই বোনদের মধ্যে যার গায়ের রঙ সবচেয়ে অনুজ্জ্বল, সে ছোটবেলা থেকেই এটা মনের ভিতর ধারণ করতে করতে বড় হয়…..
যখন একটা ছোট বাচ্চা যার গায়েব রঙ ফর্সা নয় সে এটা জেনেই বড় হতে থাকে যে কলোত্বের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে তাকে extra ordinary হতে হবে…..
যখন রঙ ফর্সাকারী ক্রিমের ভীড়ে বাজার সয়লাব হয়ে যায়…..
যখন একটা মেয়ে তার মনের আলোতে চারপাশ দ্যুতিময় করেও শশুর বাড়িতে প্রিয় হতে পারেনা শুধু তার গায়ের রঙের জন্য…..
তখন আসলে নিজের রঙের উপর সন্তুষ্ট থাকাটা কঠিনই হয়ে পড়ে। তখন মনে হয় এই পৃথিবীতে সুন্দর না হওয়াটা ভীষণ অপরাধ।
আশেপাশে আবার সান্ত্বনামূলক কিছু কথাও শোনা যায়।
যেমন: কালো হলেও তার মনটা ভালো বা কালো হলেও সে মেধাবী…. ইত্যাদি।
তার মানে ‘কালো হলেও’ এ কথার মাধ্যমে আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি, কালো একটা ঘাটতি।
হ্যাঁ, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় সৌন্দর্যেরই দরকার আছে। তবে তথাকথিত সৌন্দর্যের সংজ্ঞা দিয়ে সুন্দর/অসুন্দর নিরুপন করা কখনোই কাম্য নয়।
আসলে প্রত্যেকটি মানুষের সৌন্দর্যের ধরণ আলাদা।
একেক মানুষ একেক রকম সুন্দর।
একেক মানুষ একেক কারণে সুন্দর।
পরিবর্তন আসুক মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে!

 

বর্জ্যজীবী নারী ও শিশুরা ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে


পারভীন সুলতানা কাকন (নারী সংবাদ)


বাংলাদেশে অত্যন্ত দরিদ্র একজনগোষ্ঠী নানা ধরণের গৃহস্থালী বর্জ্য থেকে পুনব্যবহার যোগ্য নানা সামগ্রী সংগ্রহের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। সারাদেশে প্রায় ৪ লাখ মানুষ এই ঝূঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়েজিত রয়েছে। শুধু ঢাকা মহানগরীতেই এই সংখ্যা ১ লাখের ওপর। এদের মধ্যে কেউ রয়েছে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে, কেউ বাছাই করার কাজে, আবার কেউ বা রয়েছে এসব বিক্রি করার কাজে। যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
সমাজে এদের পরিচয় ময়লা কুড়ানি নামে। যারা রাস্তা, ডাস্টবিন বা ডাম্পসাইট থেকে বর্জ্য সংগ্রহ ও তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এদেরই একজন ত্রিশোর্ধ হালিমা। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় স্বামী তালাক দেয়। এরই মধ্যে দু’টি সন্তানের জন্ম দেয় সে। কিন্তু সংসারের হাল ধরতে তাকে বেছে নিতে হয় এই পেশা। ভোর থেকে সন্ধ্যা সারাদিন চলে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ। বর্জ্য বিক্রি করেই চলে তার সংসার। কখনো খাবার জোটে দু’বেলা কখনো একবেলা।
তিন সন্তানের জননী চল্লিশ উর্ধ্ব রোকসানা বেগমের স্বামী মাদকাসক্ত। সাত সদস্যের সংসারে উপার্জনক্ষম বলতে রোকসানা। দুই ছেলে, এক মেয়েকে এ কাজে লাগিয়ে চলছে তাদের সংসার। একটি শিশু বর্জ্য থেকে দিনে প্রায় ১শ’ থেকে ৩’শটাকা উপার্জন করে থাকে।
হালিমা-রুখসানার মত এই পেশায় নিয়োজিত অনেকেরই গল্প একই রকম। খেয়ে না খেয়ে দুটো টাকা পাওয়ার আশায় নিরন্তর ছুটছে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে। কিন্তু একবারও ভেবে দেখছে না কি অপেক্ষা করছে এসব দরিদ্র মানুষের ভাগ্যে। ডাম্পিং সাইটে ট্রাকে করে বর্জ্য ফেলার পর ক্ষতিকর বর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্য রাসায়নিক দ্রব্য, পঁচা, বাসী গৃহস্থালীর বর্জ্য, মানুষ ও পশুর মলমুত্র সব মিলিয়ে মারাত্বক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এসব কাজের সঙ্গে সম্পৃক্তরা। ডাম্পিং সাইটে কাজ বর্জ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সেখানে ফেলে দেয়া সুঁই, বে¬ড, সিরিঞ্জ দিয়ে প্রতিনিয়ত জখম হচ্ছে তারা। ফেলে দেয়া দূষিত পদার্থের সংস্পর্শে প্রায়শই আক্রান্ত হচ্ছে আমাশয়, ডাইরিয়া, হেপাটাইটিস ভাইরাস ও চমর্রোগসহ বিভিন্ন রোগে।
ডাম্পিং সাইটে দীর্ঘক্ষণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থেকে সেখান থেকে ফেরার পর শিশুরা হাত না ধুয়েই সেরে নিচ্ছে তাদের দুপুরের খাবার। ফলে এসব শিশু ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব ও মাথা ঘুরানোসহ নানা সমস্যায় ভুগছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রচন্ড দুর্গন্ধের মধ্যে কাজ করে তারা সবসময় ভুগছে গ্যাস্ট্রিকে। ডাম্পিং সাইটে কাজ করার সময় তারা অনেক সময় বর্জ্যবাহী ট্রাক ও লেভেলিং মেশিন দিয়ে বা বুলডুজার দিয়ে দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে। এতে করে অনেক শিশুর অঙ্গহানির মতো ঘটনা ঘটছে।
বর্জ্য সংগ্রহের সময় তারা সবসময়ই নুয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করে এতে মেরুদন্ডের ও ঘাড়ের চাপে ভোগে তারা। পঁচা দুর্গন্ধের মধ্যে কাজ করায় শরীরের সবখানে ব্যথা, বমি বমি ভাব মাথা ঘুড়ানোসহ অনেক ধরনের অস্বস্তিতে ভোগে তারা। ফলে, একদিন কাজ করলে তিন দিন বিশ্রাম নিতে হয় তাদের। শুধু তাই নয় খালি পায়ে কাজ করে বলে চর্ম রোগ লেগেই থাকে এসব মানুষের।
চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: এম এন হুদা বলেন, দীর্ঘক্ষণ বর্জ্য সংগ্রহের কাজে যারা নিয়োজিত থাকছে তারা সবসময়ই কোন না কোন চর্ম রোগ যেমনঃ একজিমা, চুলকানি, ফুসকুড়ি, দাউদ ও ফাঙ্গাস জাতীয় চর্মরোগে ভুগছে। তাই দেরি না করে সবাইকে ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন এ বিশেষজ্ঞ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ঢাকা শহরেই প্রায় দেড়লাখ দরিদ্র মানুষ ফেলে দেয়া বর্জ্যসামগ্রী পুনঃব্যবহার করে থাকে যার মূল্য বছরে প্রায় এক হাজার ৭১ কোটি টাকা।
আর্ন্তজাতিক সংস্থা উইমেন ইন ইনফরমাল এমপ্লয়মেন্ট গে¬াবালাইজিং এন্ড অর্গানাইজিং-এর মতে, বর্জ্য সংগ্রহকারীরা জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা এবং টেকসই পরিবেশ উন্নয়নে উল্লে¬খযোগ্য ভূমিকা রেখে থাকে। তবে তারা সর্বদাই নিম্নশ্রেনীর সামাজিক মর্যাদা লাভের পাশাপাশি নিম্ন মানের জীবন যাপন করে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্বাস্থ্য হচ্ছে শারিরিক, মানসিক, সামাজিক কল্যাণকর পরিস্থিতি, যা শুধু অসুস্থতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটা মানব উন্নয়ন সূচকের একটি অন্যতম মাপকাঠি। তাই, প্রতিটি নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুস্বাস্থ্যের সুযোগ প্রাপ্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও সবচেয়ে বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন উপেক্ষা করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি-৩ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু বলেন, নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠী যারা বস্তি বা ফুটপাতে বসবাস করে তারা স্বাস্থ্য পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা থেকে বঞ্চিত। এতে প্রতিনিয়তই বঞ্চনার স্বীকার হচ্ছে অনগ্রসর এ জনগোষ্ঠী। এ থেকে পরিত্রাণে শিশুবান্ধব সহায়ক কার্যক্রম বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক ঘোষণা ও চুক্তিনামায় অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ। এর মধ্যে রয়েছে সবার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আলমা আতা ঘোষণা, সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি, নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ বিষয়ক সনদ, শিশু অধিকার সনদ। বাংলাদেশ এসব চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এছাড়াও বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি বাস্তবায়ন জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৬ তে বলা হয়েছে যে, শিশু শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য পুষ্টি শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং ১৮ বছরের নীচে সকল শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বিরত রাখতে ও যৌন নির্যাতন থেকে মুক্ত রাখতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের ভিশন-২০২১ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের একটি বৃহৎ রূপকল্প। এই রূপকল্পের অধীনে জনগণের তথা দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়নের একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে যেখানে দেশের খাদ্য ঘাটতি কমিয়ে শতকরা ৮৫ ভাগ জনগোষ্ঠীর পুষ্টি নিশ্চিত করা হবে। সেইসাথে সংক্রামক রোগ নির্মুল করা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ও পয়ঃনিষ্কাষণ সুবিধা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১-এর অন্যতম মূল নীতি হিসেবে বলা হয়েছে যে, স্বাস্থ্যসমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সুবিধা বঞ্চিত গরিব, প্রান্তিক, বয়স্ক, শারিরিক, ও মানসিক প্রতিবন্ধী জনগণের অধিক গুরুত্বপূর্র্ণ স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া।
বর্জজীবীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের সংবিধান স্বাস্থ্যনীতি ২০১১ ও জাতীয় নগর স্বাস্থ্য কৌশল ২০১৪-তে উল্লেখিত নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও সেবার অধিকার বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। বর্জ্যজীবীদের জন্য শিগগিরই সরকারের বিশেষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কমর্সূচি প্রনয়ন ও তা বাস্তবায়ন প্রয়োজন। তবেই নিশ্চিত হবে বর্জ্যজীবী শিশুর পরিপূর্ণ শারিরিক, সামাজিক ও মানসিক বিকাশ।
সুত্র: বাসস।

 

স্তন ক্যান্সার : সচেতনতাই যার প্রতিকার


নুসাইবা ইয়াসমীন


ক্যান্সার মূলত একটি অনাকাঙ্ক্ষিত জীবনের গল্প। খুব সাধারন সাজানো জীবনটা মুহুর্ত্বের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে বদলে যেতে পারে ক্যান্সার নামক ব্যাধির কারনে। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমান বিশ্বে ক্যান্সারকে মৃত্যুর দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য কারন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং চলতি বছর ক্যান্সারজনিত কারনে সারা বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৯৬ লাখ।

নারীদের ক্ষেত্রে অন্যান্য ক্যানসারের তুলনায় স্তন ক্যান্সার এ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কিছুটা বেশি দেখা যায়।
স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত দেশের শীর্ষে বেলজিয়াম, নেদারল্যানড, ফ্রান্স ইত্যাদি থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশেও এর প্রকোপ লক্ষণীয়।

অন্যান্য ক্যান্সারের তুলনায় স্তন ক্যান্সারের মৃত্যুর হার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব যদি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি সনাক্ত করা সম্ভব হয়।

মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের সঠিক ধারনার অভাব প্রতি মূহুর্তেই হাজারও নারীকে ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর মুখে। একটু সচেতনতা এবং সঠিক সময়ে রোগ সনাক্ত করা সম্ভব হলে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ সনাক্ত হলে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব ৯০ শতাংশ।

স্তন ক্যান্সারের মৌলিক ধারনার ক্ষেত্রে প্রথমেই যে বিষয়গুলো জানা দরকার তা হলো কে বা কারা এই ঝুঁকিতে রয়েছে এবং স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি হতে পারে!

যাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে যাদের:

* যেসব নারীর বয়স ৪০ বছরের বেশি তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
* স্তন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে
* অবিবাহিতা বা সন্তানহীনা নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
* যেসব মায়েরা সন্তানকে কখনও স্তন্যপান (breast feeding) করাননি।
* ৩০ বছরের পরে যারা প্রথম মা হয়েছেন।
* যাদের তুলনামূলক কম বয়সে মাসিক শুরু হয় ও দেরিতে মাসিক বন্ধ (menopause) হয় তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
* একাধারে অনেকদিন (১০ বছর বা বেশি) জন্ম নিরোধক বড়ি খেলেও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
* অতিরিক্ত মদ্যপান ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনপদ্ধতি।

যদিও উল্লেখিত বিষয়গুলো ক্যানসারের ঝুঁকির কারন হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তবে বাস্তব চিত্র অনুযায়ী প্রতিটি নারীই এই ঝুঁকির আওতায় রয়েছে।

লক্ষণ বা উপসর্গ

• স্তনের কোন অংশে চাকা চাকা হয়ে যাওয়া অথবা কোন লাম্প দেখা যাওয়া।
• স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন।
• স্তনবৃন্তের আকারে পরিবর্তন।
• স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা তরল পদার্থ বের হওয়া।
• স্তনবৃন্তের আশেপাশে রাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যাওয়া।
• বগলে ফুলে যাওয়া বা চাকা দেখা দেয়া।
• স্তনের ভেতরে গোটা ওঠা বা শক্ত হয়ে যাওয়া।

প্রাথমিক সচেতনতা অনুযায়ী প্রত্যেকেই উচিত নিয়মিত স্তনের স্বাভাবিক আকারকে লক্ষ্য রাখা এবং অন্তত প্রতি দুই সপ্তাহে নিজে নিজে বাসায় পরীক্ষা করা। যাদের বয়স ৪০ উর্ধ্ব তাদের বছরে একবার ম্যামগ্রাম করা প্রয়োজন। একমাত্র সচেতনতাই পারে ক্যান্সারকে জয় করে একটি সুস্থ সুন্দর জীবন ফিরিয়ে দিতে।

ক্যান্সার মরন ব্যাধি হিসেবে পরিচিত হলেও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের খাতিরে ক্যান্সার রোগীরাও সঠিক চিকিৎসা গ্রহন করে পরিচালনা করতে পারেন সুস্থ স্বাভাবিক জীবন।

 

মেয়ের পড়াশোনায় ১২ জন সহায়ক


নারী সংবাদ


অর্থের ঝনঝনানি বোধ হয় একেই বলে। মেয়ের পড়াশোনায় যাতে অসুবিধা না হয় তাই ব্রিটেনে ১২ জন সহায়ক কর্মী নিয়োগ করলেন এক ভারতীয় ব্যবসায়ী। আর সেই সুবাদে সবচেয়ে ‘ধনী ছাত্রী’র তকমা জুটেছে ওই ছাত্রীর।

দ্য সান সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রীর জন্য একজন ম্যানেজার, ঘরে সাহায্যের জন্য তিনজন কর্মী, একজন মালি, একজন মহিলা পরিচারিকা, একজন প্রধান সহকারী, তিনজন পদচারী, ব্যক্তিগত রাঁধুনি ও একজন গাড়ি চালকের ব্যবস্থা করেছেন ওই ব্যবসায়ী।

সাধারণ ছাত্রীর মতো যাতে তাকে থাকতে না হয়, সেজন্য স্কটল্যান্ডের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন তার মা-বাবা।

ওই ১২ জন কর্মী চার বছর ধরে ওই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটেই থাকবেন। রীতিমতো খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে কর্মী সংগ্রহ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপনেই বলা ছিল, অভিজ্ঞ কর্মী পেলে বছরে ৩০ হাজার পাউন্ড দিতেও তারা রাজি।

সুত্র: ইন্টারনেট।

 

স্বামীর দেয়া উপহার স্ত্রীর দেনমোহর নয়


সিরাজ প্রামাণিক


বিয়ের পর স্বামী তার স্ত্রীকে অনেক কিছুই দিতে পারে। স্বামী যদি দেনমোহর হিসেবে স্ত্রীকে কিছু দেয়, তবেই তা দেনমোহর বলে বিবেচিত হবে। এ ক্ষেত্রে ‘দেনমোহর বাবদ’ কথাটি লেখা থাকতে হবে। যেমন: জমি হস্তান্তর দলিলে ‘দেনমোহর বাবদ’ কথাটি লেখা না থাকলে এরূপ জমি প্রদান দেনমোহর হিসেবে ধরা হবে না।
হাইকোর্ট বিভাগের একটি মামলায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, বিয়ের সময় স্বামী তার স্ত্রীকে দেনমোহর হিসেবে পাঁচ বিঘা জমি দিতে চায়। সে মতে স্বামী ওই জমি স্ত্রী বরাবর প্রদানও করেন। পরে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে এ মর্মে মধ্যস্থতা করে যে, ওই পাঁচ বিঘা জমি বিক্রি করে ভালো জায়গায় ১৩ বিঘা জমি ক্রয় করবে। সেখান থেকে স্ত্রীকে পাঁচ বিঘা জমি ফেরত দেবে। কথা দিয়ে কথা না রাখলে স্ত্রী স্বামীর কাছে দেনমোহর চেয়ে মামলা করে। স্বামী ওই মামলায় প্রতিযোগিতা করে। স্বামী এই মর্মে অজুহাত উত্থাপন করে যে, পারিবারিক আদালতে ওই মামলা অচল। কারণ তিনি জমিটি ঋণ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন এবং মামলাটি দেওয়ানি আদালতে বিচার্য। মামলাটিতে পারিবারিক আদালত স্ত্রীর পক্ষে ডিক্রি প্রদান করলেও স্বামী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়ের করে। মহামান্য হাইকোর্ট নি¤œ আদালতের আদেশ বহাল রাখে ১৩ বিঘা জমির মধ্যে পাঁচ বিঘা জমি তার স্ত্রীকে প্রদানের নির্দেশ দেন। (রওশন আরা বেগম বনাম মাসক আহমেদ ২৩ বিএলডি হাইকোর্ট, পৃষ্ঠা- ৩০২)
তবে মোহরানার পরিবর্তে হিবা বিল অ্যাওয়াজের রীতিও রয়েছে। ১৯৫৫ সালে ঢাকা হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, মোহরানার পরিবর্তে হিবা-বিল-অ্যাওয়াজ তখনই বৈধ হবে যখন স্ত্রী কোনো প্রতিদান ছাড়াই স্বামীকে মোহরানা দান করে দেয় এবং পরে স্বামী স্ত্রীর দানের ‘অ্যাওয়াজ’ স্বরূপ কোনো সম্পত্তি আলাদাভাবে দান করে। কারণ এটা মুসলিম আইনে একটি বিশুদ্ধ হিবা বিল অ্যাওয়াজ। এমনকি স্বামী যদি স্ত্রীকে কোনো কিছু দান করেন এবং স্ত্রী স্বামীর বরাবরে প্রতিদান স্বরূপ অন্য কোনো দলিল মূল্যে মোহরানার অধিকার ছেড়ে দেয় তবে তা আধুনিক প্রকৃতির একটি হিবা বিল অ্যাওয়াজ বলে গণ্য হবে (পিএলডি ১৯৫৫, ঢাকা. পৃষ্ঠা ৩৯)। দেনমোহরের পরিবর্তে স্ত্রীর বরাবর জমি সম্পত্তি হস্তান্তর এক শত টাকা মূল্যের অধিক হলে অবশ্যই রেজিস্ট্রি দলিল দ্বারা হস্তান্তর করতে হবে (৪ ডিএলআর, পৃষ্ঠা-৫১)।
বিয়ের সময়ে দেয়া শাড়ি, গয়না ইত্যাদি কখনো দেনমোহরের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে না। অনেক ক্ষেত্রে বিয়ের সময় গয়না, শাড়ি ইত্যাদির মূল্য দেনমোহরের একটি অংশ ধরে উসুল লিখে নেয়া হয়। আসলে বিয়েতে দেয়া উপহার বা উপঢৌকন দেনমোহর নয়। এগুলোকে দেনমোহরের অংশ বলে ধরা যাবে না এবং উসুল বলা যাবে না। (আ: কাদের বনাম সালিমা, ১৮৮৬, ৮ অল. পৃষ্ঠা-১৪৯)।
ভরণপোষণ দেনমোহর বলে বিবেচিত হবে না : দেনমোহরের সাথে ভরণপোষণের কোনো সম্পর্ক নেই। বিবাহিত অবস্থায় স্ত্রীকে ভরণপোষণের জন্য স্বামীর যে খরচ তা কোনোভাবেই দেনমোহরের অংশ বলে বিবেচিত হবে না। আবার বিয়ে-বিচ্ছেদের ফলে স্বামী, স্ত্রীকে যে ভরণপোষণ দেয় তা-ও দেনমোহরের অংশ নয়। দেনমোহর এবং ভরণপোষণ দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। একটি পরিশোধ করলে অপরটি মাফ হয়ে যায় না।
জামিনদার : যদি কোনো ব্যক্তি একজনের স্বামী-স্ত্রীর মোহরানার দায়িত্ব নেয় তবে সে তা পরিশোধের জন্য দায়ী হবে। বিবাহোত্তর দেনমোহরের জন্য জামিনদার থাকলে সে ক্ষেত্রেও জামিনদার দায়ী হবে। স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। বিধবা স্ত্রী তার দেনমোহরের জন্য মৃত স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলে রাখার অধিকারিণী। (বিবি বাচান বনাম শেখ হামিদ, ১৮৭১, ১৪ এমআইএ পৃষ্ঠা-৩৭৭)। দেনমোহরের দাবিতে কোনো বিধবা স্ত্রী তার স্বামীর সম্পত্তি দখল করে থাকলে যদি তাকে ওই সম্পত্তি থেকে অন্যায়ভাবে বেদখল করা হয়, তবে সে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য মামলা দায়ের করতে পারে (মজিদ মিয়া বনাম বিবি সাহেব ১৯১৬, ৪০ বম. পৃষ্ঠা-৩৪)।
যদি স্বামীর উত্তরাধিকারীরা স্বামীর সম্পত্তি থেকে দেনমোহর দিতে অস্বীকার করেন তাহলে স্বামীর উত্তরাধিকারীদের বিরুদ্ধে স্ত্রী পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, যদি স্বামীর আগে স্ত্রীর মৃত্যু হয় এবং স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকে তাহলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা ওই দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী। ফলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা দেনমোহর পাওয়ার জন্য আদালতে মামলা করতে পারেন।
লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী,
seraj.prama nik@gmail.com

 

“আমাকে পারতেই হবে”


ফাতেমা শাহরিন


স্টুডেন্ট অবস্থায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে নাম লিখেছে অনামিকা দাশ। তার প্রতিষ্ঠানের নাম “কন্যে কারিগর”। “কন্যে কারিগর” এ রয়েছে, হাতের তৈরী চুড়ি, বালা, নেকলেস, ব্রেসলেট, কানের দুল ঘর সাজানোর পন্যসহ নানা রকম আইটেম। যার পুরোটাই অনামিকা দাশ নিজ হাতে করে থাকেন। প্রতিটি কাজই স্বপ্ন, স্বপ্নীল মনের বর্ণিল রং, ছবি আঁকে তার প্রতিটি সৃষ্টি।
তিনি একজন স্টুডেন্ট, পড়াশুনা মৃৎশিল্প, মাস্টার্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন।পড়াশুনার ব্যস্ততার পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন এই সাহসী নারী।

ছোট বেলা থেকেই তার আকাঁ-আকিঁ ক্রাফ্টিং এর প্রতি অনেক শখ ছিল। বড় হওয়ার পর তার ইচ্ছাটা স্বপ হয়ে বেড়ে উঠতে থাকে। আর তা হলো, নিজের কিছু করতে হবে এবং একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ হতে হবে। আর তাই উদ্যোগ নেন একাই।

গত বছরের জুনের ৩১ তারিখে ফেইসবুকে “কারিগর…..” গ্রুপটি খুলেন। প্রথমে তিনি কাঠের উপর হ্যান্ড পেইন্ট করা গহনা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ভগবানের কৃপায় বেশ সাড়া পান।এর কিছু দিনপর একটা ফেইসবুক পেইজ খুলেনন তিনি আর নাম দেন “কন্যে কারিগর”। এভাবেই যাত্রাশুরু হয় অনামিকা দাশের “কন্যে কারিগর”।

গয়নার পাশাপাশি ঘর সাজানোর কিছু পন্য হাতে বানানো শুরু করেন,তাছাড়া হ্যান্ড পেইন্ট করা পাঞ্জবীও তৈরী করেন।

কাজের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতাও ছিল অনামিকার। যেহেতু অনামিকা ভার্সিটির হলে থাকতেন তাই তিনি কাজের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পেতেন না। তবুও গ্রাহকের চাহিদা ও রুচি অনুযায়ী কাজ করে সঠিক সময়ের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।তাছাড়া পন্য ডেলিভারী দেওয়া নিয়েও অনেক সময় সমস্যার মুখে পরতে হয় তাকে।

যেহেতু তিনি এখনও ছাত্রী তাই পন্যের দাম এমন ভাবে নির্ধারন করার চেষ্টা করেন যাতে সবার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে।

গহনা ৬০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে।আর পাঞ্জবী ১০০০টাকা থেকে ১৪০০ টাকার মধ্যে। তার ব্যবসাটি এখন শুধুমাত্র অনলাইন ভিত্তিক। অনামিকার চাকরি করার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। আর তাই নিজ উদ্যোগেই স্বল্প পুজিঁ বিনিয়োগ ব্যবসাটি শুরু করেন।

অনামিকার মতে, ‘কোন মেয়ে যদি স্বনির্ভর হতে চায় তবে তার নিজ উদ্যোগটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

ভবিষ্যতে একটি সমবায়সমিতির মাধ্যমে গ্রামের অস্বচ্ছ পরিবার নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে অনামিকার।

তার ভাষ্য মতে, “একজন নারী হিসেবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, আমাকে পারতেই হবে আর যদি ভয় বা পিছিয়ে পরি তাহলে হেরে যাবো। আমাকে আমার কাঙ্খিত অবস্থান অর্জন করতেই হবে এই মনোভাব টাই সব সময় হৃদয়ে ধারণ করি।”

 

ছবিঘর:

১.

২.

৩.

 

 

মাতৃমৃত্যু রোধে সকলকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে : স্পিকার


নারী সংবাদ


মাতৃমৃত্যু রোধে সকলকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
আজ রোববার সংসদ ভবনের শপথকক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপি)-এর যৌথ উদ্যোগে এসপিসিপিডি প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক পলিসি ডায়লগে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই আহবান জানান।
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি এক লাখে মাতৃমৃত্যুহার ১৭৬ জন। ২০৩০ সালের মধ্যে এ হার ৭০ জনে নামিয়ে আনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
দুর্গম এলাকা বিশেষ করে পাহাড়ী এলাকা,হাওরাঞ্চল ও চরাঞ্চলে মাতৃমৃত্যুর হার বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের যে সকল অঞ্চলে মাতৃমৃত্যুর হার বেশি সে অঞ্চলকে চিহ্নিত করে কারণ অনুসন্ধান করে সঠিক কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সাথে অন্যান্য অঞ্চলে অর্জিত সাফল্য ধরে রাখতে পারলে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক একটি সার্বজনীন মানদন্ড এসডিজি এর লক্ষ্যও নির্ধারিত হয়েছে। এ দু’য়ের সমন্বয়ে প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট কাজগুলো বাস্তবায়নের দিকে আমাদের দৃষ্টি স্থির করতে হবে।
মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, এ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে যাতে জনগণ আরও বেশি সেবা গ্রহণ করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবাদানকারী জনবলকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
স্পিকার বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন সূচকে বাংলাদেশ এশিয়ার আঞ্চলিক অগ্রগতি থেকে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশ এমডিজি এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফলতা দেখিয়েছে, সে ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালের মধ্যে অবশ্যই এসডিজি এর অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করবে।
চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপি) এর রিপ্রেজেনটেটিভ ড. আসা টরকেলসন, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো: আবদুর রব হাওলাদার, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক এমপি, হুইপ শহিদুজ্জামান এমপি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। পলিসি ডায়লগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত এমপি।

সুত্র: (বাসস)

 

রান্নার জন্য রান্নাঘর পরিচ্ছন্নতা


ঘরকন্যা


সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রান্নাঘর। কারণ এ ঘরে যে রান্না করা হয় তার পরিচ্ছন্নতা ও ভেজালহীনতার ওপর নির্ভর করে পরিবারের সবার স্বাস্থ্য। তাই রান্নাঘরে কাজ করার সময় কিছু বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে, তাহলে রান্নাঘরে থাকবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। এমনই কিছু টিপস দেয়া হলো এই প্রতিবেদনে-

ময়লা জমা করা:
কয়েকদিনের ময়লা জমা করবেন না রান্না ঘরে। বরং ময়লা জমা করলে

ঢাকনা দেওয়া আবর্জনা:

রান্নাঘরে ঢাকনা দেয়া আবর্জনা ফেলার বালতি ব্যবহার করুন, এতে দুর্গন্ধ ছড়াবে না।

দেওয়ালে চর্বি দূর করুন:

থালাবাসন এর পাশাপাশি দেওয়ালের তেল-চর্বি পরিষ্কার করতে সাবানের সাথে গরম পানি ব্যবহার করুন। এতে চর্বি ভাব দূর হবে।

মাছির ও পোকামাকড়ের উপদ্রপের জন্য:

প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করুন। যেমন, চিনির কৌটায় কয়েকটি লবঙ্গ রাখলে পিঁপড়া আসে না। মাছি পুদিনা পাতা আর তুলশী পাতার গন্ধ সহ্য করতে পারে না।

ঝুল পরিষ্কার করুন:

সপ্তাহে একদিন করে রান্নাঘরের ঝুল পরিষ্কার করুন। দিনের অনেকটা সময় কাটে রান্নাঘরে। তাই রান্নাঘরটা হওয়া চাই পরিষ্কার আর জীবাণুমুক্ত।

 

গরু পালনে চরাঞ্চলে নারীর ভাগ্যবদল


তাসলিমা সুলতানা


পৃথিবীতে সব মানুষ সোনার চামচ নিয়ে কিংবা ধনীর ঘরে জন্মগ্রহণ করে না। অর্থাৎ ধনীর দুলাল হয়ে সকলে জন্মগ্রহণ করে না। অনেকেই গরীবের ঘরে জন্মালেও কর্ম দিয়ে নিজেদের ভাগ্য বদল করতে পারে। সে জন্য প্রয়োজন কেবল সদিচ্ছা এবং একাগ্রতা। এমনটা যে কেবল সমাজে পুরুষের বেলায় ঘটে তেমনটা নয়। আজকাল দেশের নারী সমাজও নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারে। তাদেরই একজন ফাতেমা বেগম। বাড়ি লালমনিরহাটের তিস্তার চরাঞ্চলে। মহাজনের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে গরু লালন-পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি।
শুধু ফাতেমা-ই নন জেলার আদিতমারীর মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন দ্বীপচরে বেড়ানো আরো অনেকেরই গরু কেনার সামর্থ্য নই। তাই মহাজনের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে গরু পোষেণ সম্ভাবনাময় চরে। বর্তমানে বর্গা গরুতে ভরে উঠেছে চরাঞ্চল।
সম্প্রতি লালমনিরহাটের তিস্তা চর ঘুরে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে যাওয়া নারী-পুরুষ জেগে ওঠা চরে বাসা গড়েছেন। এখানকার বাড়িগুলোর বেশির ভাগ পুরুষ সদস্য অন্যের জমিতে দিন মজুরির কাজ করেন।
কেউ কেউ পরিবার-পরিজন রেখে পাড়ি জমিয়েছেন দেশের বিভিন্ন শহরে, যেখানে মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। সংসার চলে স্বামীর উপার্জনে। আর বাড়িতে অনেকটাই কর্মহীন সময় কাটান নারীরা।
চরের নারীরা এই প্রতিবেদককে জানান, সংসারে বাড়তি আয় করতে তারা স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে ছোট গরু বর্গা নেন। সেই গরু দিনভর চরাঞ্চলের খোলা মাঠে ঘাস ও লতাপাতা খাইয়ে বড় করে বিক্রি করেন। সেখান থেকে পাওনা টাকা মহাজনকে ক্রয় মূল্য দিয়ে বাকি যে টাকা থাকে তার অর্ধেক নিজেরা রাখেন, বাকি অর্ধেক মহাজনকে দেন।
কর্মহীন না থেকে এভাবে গরু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন চরাঞ্চলের নারীরা।
জানা যায়, গোবর্ধন চরে দুই থেকে তিনশ’ পরিবার বাস করে। এর মধ্যে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই রয়েছে ৩ থেকে ৪টি গরু; যার সবগুলোই বর্গা নেওয়া।
চরের বাসিন্দারা বলেন, চুরি-ডাকাতির কোনো ভয় নেই। চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় দিনভর চড়ে বেড়ায় এসব গরু। ফলে অল্পতেই বেশ মোটা-তাজা হয়ে ওঠে। এতে দামও মেলে বেশ ভালো।
চরের বাবু মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বলেন, ‘চরে গরু পোষার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমাদের গরু কেনার টাকা নেই। তাই মূল ভূখন্ডে এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ৪৮ হাজার টাকা নিয়ে দু’টি ছোট গরু কিনে নিয়েছি। এক বছর লালন-পালন করার পর বর্তমানে গরু দু’টির বাজার মূল্য প্রায় লাখ টাকা।’
তিনি আরো বলেন, ‘গরু বিক্রির লভ্যাংশের অর্ধেক দিয়ে জমি বন্ধক নেবো চাষাবাদের জন্য। ঘরে চাল থাকলে পেটের চিন্তা থাকে না।’
সকাল-সকাল পরিবারের সদস্যদের রান্না-বান্না শেষে প্রতিদিন গরু নিয়ে মাঠে যান চরের আছিয়া বেগম (৪০)। দিনভর গরুর পেছনেই কেটে যায় তার। গরু মাঠে নিয়ে যাওয়া এবং দুপুরে ও সন্ধ্যায় বালতি ভরে পানি খাওয়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তিনি। জানালেন, নিজেদের গরু কেনার টাকা নাই। তাই চারটি গরু বর্গা নিযেছেন। গত দুই বছরের গরুর লভ্যাংশ দিয়েই এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি।
আগামী দুই বছরের মধ্যে গরু বিক্রির লভ্যাংশ দিয়ে মূল ভূখন্ডে বাড়ি করার মতো দুই-তিন শতাংশ জমি কেনার স্বপ্ন দেখছেন এই চল্লিশোর্ধ নারী।
আছিয়া বলেন, দুই দিকে নদী থাকায় চরে চোর-ডাকাতের ভয় নেই। ভয় শুধু বন্যা আর নদী ভাঙনের কারণে আমরা সর্বশান্ত হয়ে পড়েছি।
বাসিন্দারা বলছেন, তিস্তা নদী শাসন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে স্থায়ী বসবাসের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু বার বার আশ্বাস পেলেও কোনো ফল পাচ্ছেন না দারিদ্র্যের শিকার এসব মানুষ।
চরের বাসিন্দা সালেহা আক্তার বলেন, নদী আমাদের সবই কেড়ে নিয়েছে। ব্যাংক থেকেও কোনো ঋণ পাই না। কারণ, চরের জমি খাস খতিয়ানে হওয়ায় ব্যাংক ঋণ দেয় না।
অন্যদিকে যোগাযোগের সমস্যায় কিস্তি আদায় না হওয়ার আশঙ্কায় চরাঞ্চলের মানুষকে অনেক বেসরকারি সংস্থাও (এনজিও) ঋণ দিতে চায় না বলে জানিয়েছেন চরের বাসিন্দারা।
চরের বাসিন্দা মো. আবদুল আলিম বলেন, আসলে কোনো কোনো এনজিও ঋণ দেয়। তবে এ টাকায় গরু পালন সম্ভব নয়। কারণ, তাদের ঋণের কিস্তি পরের সপ্তাহে শুরু হয়। আর গরুর লাভ আসতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগে। এতে আরো ঋণের বোঝা বাড়ে। তাই সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের জন্য আবেদন জানিয়েছেন চরাঞ্চলের নারী-পুরুষরা।

সুত্র: (বাসস)

 

টাঙ্গাইলে কন্যাশিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় যুবকের মৃত্যুদণ্ড


নারী সংবাদ


টাঙ্গাইলে আট বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় এক যুবককে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিনে দেন।
দন্ডিত-প্রাপ্ত আসামি হচ্ছে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ভুটিয়া গ্রামের সাবান আলী ওরফে ফজলুল হকের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৪)। বর্তমানে সে জেলহাজতে রয়েছে।
টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাছিমুল আক্তার নাছিম বলেন, ২০১৪ সালের ১৯ মে বিকেলে মধুপুর উপজেলার ভুটিয়া গ্রামের আবুল কালামের মেয়ে বীথি (৮) হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির পাশের রাস্তায় গেলে কামরুল ইসলাম তাকে লিচু দেয়ার কথা বলে আকরাচনা খেলার মাঠের পাশের এক জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে কামরুল ওই শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে যায়। এ ঘটনার ওই দিনই বীথির পিতা আবুল কালাম বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। বীথিকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা স্বীকার করে কামরুল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়।
এ মামলায় মোট ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিচারক একমাত্র আসামি কামরুলের বিরুদ্ধে মৃত্যুদের আদেশ দেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

বিয়ে ও পরিবার সমকালীন জিজ্ঞাসা- ৮


কানিজ ফাতিমা


মেনোপজে যে মানসিক সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হয় তা নারীর কর্মক্ষমতা ও পারস্পরিক সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে নারীর পরিবারের সদস্যরা ও সহকর্মীরা তার আচরণে আহত ও বিরক্ত বোধ করতে পারে।

গতপর্বে বলেছিলাম এ সময়ের প্রধান তিনটি মানসিক সমস্যা হলঃ
দুঃখবোধ বা বিষন্ন হওয়া, অস্থিরচিত্ত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া। এ পর্বে থাকবে এ নিয়ে আরও কিছু আলোচনা।

সব মহিলা তার জীবনের এই পরিবর্তিত অবস্থাকে সমানভাবে মেনে নিতে পারেনা। যারা আগে থেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে এবং পরিবার থেকে সহযোগিতা ও নিশ্চয়তা পায় তারা অন্যদের তুলনায় এই পরিস্থিতি অধিক সহজভাবে মোকাবিলা করে। যেমন কোন মহিলা যদি মনে করে যে, সে তার নারীত্ব হারিয়ে ফেলছে ফলে সে মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে, তবে তার মানসিক সমস্যা অন্যদের থেকে বেশি হবার সম্ভাবনা থাকে। যদি সে আশঙ্কা করে যে তার স্বামী আর একটি বিয়ের দিকে আগাতে পারে তবে সে আরও বেশি বিচলিত হতে পারে। এমতাবস্থায় সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যও নিজেকে মূল্যবান প্রমাণের জন্য সে স্বামী, পুত্র-কন্যা ও পুত্রবধুর সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে। যদি এমনটা হয় তবে পরিবারের অন্যদের দায়িত্ব হল তাকে নিশ্চয়তা দান করা ও তার সঙ্গে এমন আচরণ করা যাতে সে বুঝতে পারে পৃথিবীতে সে মূল্যহীন হয়ে যায়নি। এ সময় মা তার পুত্রের উপর অধিক নিয়ন্ত্রণ চাইতে পারে এবং স্বাভাবিকভাবেই পুত্রবধুকে তার প্রতিদ্বন্দী মনে করতে পারে। এক্ষেত্রে পুত্রকে সচেতনতার সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। একদিকে মা আঘাত পায় এমন কাজ থেকে যেমন তাকে বিরত থাকতে হয় আবার অন্যদিকে মায়ের অযাচিত আবদারকেও সচেতনভাবে পাশ কাটিয়ে যেতে হয়। এ সময় মানসিকভাবে প্রস্তুত করার জন্য তাকে (মাকে)মেনপজের ওপর বই, আর্টিকেল পড়তে দেয়া যেতে পারে ।
কর্মজীবী মহিলা, যারা তার চাকুরী ও আয় নিয়ে সন্তুষ্ট, তাদের ওপর মেনোপজের প্রভাব তুলনামূলকভাবে গৃহিনী ও যারা কোন প্রকার সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নয় সেসব নারীদের থেকে সাধারণত কম হয়ে থাকে। ফলে এ সময় তাকে সমাজসেবামূলক কোন কাজে উৎসাহী করা যেতে পারে; বাগান করা বা বাড়ীর অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও তাকে দেয়া যেতে পারে। এতে সে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা শুরু করবে এবং আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে। ফলে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ করার অস্বাভাবিক পন্থাগুলো থেকে নিজে থেকেই সরে আসবে।
মেনোপজ নারীদেহের বার্ধক্যের নির্দেশক। শৈশব থেকে কৈশোর ও যৌবনে পদার্পণ করার সব ক’টি বয়সের ধাপকেই মানুষ স্বাগত জানায়। কিন্তু যৌবনের পরে বার্ধক্য আসাকে মানুষ কখনওই স্বাগত জানায় না। ফলে অধিকাংশ নারীই এ সময়ে জীবনের মানে হারিয়ে ফেলে। সে তার যৌবন ও সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলার শোকে ভোগে। ফলে কখনও সে অসহায় বোধ করে এবং পরমুহূর্তে রাগ অনুভব করে। একারণে সে খেয়ালী ও জেদী আচরণ করে। তাছাড়া মেনোপজে যে শারীরিক সমস্যার তৈরি হয় সেগুলো অনেক সময় নিদ্রাহীনতার জন্ম দেয় এবং নিদ্রাহীনতা থেকে মেজাজ খারাপ ও খিটখিটে ভাবের জন্ম হয়।
মেনোপজের সঙ্গে যে মানসিক অবস্থাগুলো যুক্ত তার বিস্তারিত একটি তালিকা নীচে দেয়া হল-
0 Less energy and drive (শক্তি ও উদ্যম কমে যাওয়া)
0 Irritability (বিরক্তি ভাব)
0 Mood changes (মেজাজের ভারসাম্যহীনতা)
0 Headaches (মাথাব্যথা)
0 Feeling of unworthiness (নিজেকে মূল্যহীন মনে করা)
0 Loss of self-esteem (আত্মসম্মানবোধের অভাব)
0 Loss of self-confidence (আত্মবিশ্বাসের অভাব)
0 Feeling unable to cope (খাপ খাওয়াতে না পারা)
0 Difficulty in concentrating (মনোযোগ দিতে না পারা)
0 Feelings of aggressiveness (ঝগড়াটে বা আক্রমণাত্মক হওয়া)
0 Depression (হতাশ বোধ)
0 Anxiety (দুশ্চিন্তা বোধ)
0 Forgetfulness (ভুলোমনা)
0 Fear of loneliness (একাকীত্বের ভয়)
0 Unusually prove to tears (কারণে অকারণে কান্না পাওয়া)
0 Tired (ক্লান্তিবোধ)
মেনোপজের এই লক্ষণগুলো কার ক্ষেত্রে কতটুকু হবে তার অনেকখানি নির্ভর করে দেশীয় সংস্কৃতি ও পারিবারিক সংস্কৃতির উপর। সাধারণত যেসব দেশে নারীরা নিজেদেরকে অভিজ্ঞতার আসনে দেখতে পছন্দ করে ও সৌন্দর্য সম্পর্কে অত্যধিক সচেতন না, সেসব দেশের নারীরা মেনোপজে কম মানসিক সমস্যা বোধ করে। উপরন্তু অনেক সময়ই বার্ধক্যকে তারা অধিক সম্মান ও যত্ন পাবার সুযোগ হিসাবে মনে করে। তাছাড়া যেসব দেশে সন্তানরা বাবা-মা’র কাছাকাছি থাকে (Collective Society) সেসব দেশেও মেনোপজের সমস্যা নারীরা তুলনামূলকভাবে কম অনুভব করে। অপরপক্ষে, Individualistic Society- যেখানে নারীরা শরীর ও সৌন্দর্য সম্পর্কে প্রচণ্ড সচেতন এবং যারা সন্তান সন্তুতির থেকে দূরত্ব বজায় রাখে তাদের মধ্যে মেনোপজের সমস্যা তুলনামূলক বেশি হয়। একারণে গবেষণায় দেখা গেছে জাপানের নারীরা পশ্চিমা নারীদের তুলনায় এ সম্পর্কিত সমস্যায় কম ভোগে।
এ থেকে সহজেই বোঝা যায় সচেতনতার সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা এ ব্যাপারটি মোকাবিলা করলে বা সামলে নিলে নারীদের জন্য মেনোপজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়া সহজ হয় এবং এ কারণে সৃষ্ট পারিবারিক অশান্তিগুলো সহজেই কমিয়ে আনা যায়।

পর্ব-৭

 

দক্ষ নারীর কর্মের প্লাটফর্ম ‘টু আওয়ার জব’


মাহবুব আলম


নারী মমতাময়ী মা, কখনো নারী বোন, আবার এই নারী-ই প্রাণের প্রিয়তমা; সেই নারী উদ্যোক্তাও। যিনি স্বাবলম্বী হয়ে হাল ধরেন সংসারের। সে ক্ষেত্রে নারীর কর্মক্ষেত্র হওয়া চাই নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক। তেমনই ঘরে বসে নারীর নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের প্লাটফর্ম ‘দ্য টু আওয়ার জব’। এর মাধ্যমে দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন নারীরা ঘরে বসে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই ঘণ্টা কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারছেন।
এই উদ্যোগটি গড়ে তুলেছেন নারী উদ্যোক্তা সানজিদা খন্দকার। প্রথমে বহুজাতিক কোম্পানিতে উচ্চপদে চাকরি করলেও সংসার ও ছেলে-মেয়েকে সময় দিতে গিয়ে একসময় তা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। তার মতো অন্য নারীদের কথা চিন্তা করেই গড়ে তোলেন অনলাইন উদ্যোগ ‘দ্য টু আওয়ার জব.কম।’
অনলাইন এই পোর্টালে ৯টা থেকে ৫টা অফিস নয়, নিজের ঘরে বসেই নারী পছন্দের কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এখানে নিজ যোগ্যতায় সময় ও সুবিধা মতো কাজ করে পছন্দের ক্যারিয়ার গড়তে পারছেন নারীরা।
সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ‘টু আওয়ার জব’-এর কার্যালয়ে বসেই নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেন সানজিদা খন্দকার।
‘টু আওয়ার জব’-এর এই প্রতিষ্ঠাতা বলেন, প্রফেশনাল মেয়েদের মধ্যেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিয়ের পর তারা চাকরি ছেড়ে দেন। সন্তান-পরিবারসহ নানা কারণে আর সেটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। এমনকি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পরও ক্যারিয়ার হারিয়ে ফেলেন তারা। যোগ্যতাসম্পন্ন এসব নারী যাতে তাদের সুবিধামতো কাজ করতে পারেন ও তার ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন সে লক্ষ্য থেকেই ‘দ্য টু আওয়ার জব.কমে’র প্রতিষ্ঠা।
তিনি বলেন, ‘নিজের পরিস্থিতি থেকেই আমার মতো অন্যদের কথা বিবেচনা করে এই পোর্টাল তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। আমার বিয়ের পরও আমি ট্রান্সকম কোম্পানির একটি শাখার ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতাম। সেখানে অফিস ছিল ৯টা থেকে ৬টা। আমার প্রথম সন্তান জন্মের পর তাকে বেশি সময় দিতে হতো। তখন দেখলাম এটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাসায় সন্তানকে দেখার মতোও কেউ নেই। তাই বাধ্য হয়েই জব ছাড়তে হয় আমাকে।’
সানজিদা বলেন, ‘পরে আমাকে সারাদিন সন্তান ও সংসার নিয়ে থাকতে হতো। মনে হতো আমার ক্যারিয়ার বুঝি শেষ। এই বিষয়টি নিয়ে আমি খুব হতাশায় ভুগতাম। একজন নারীর জীবনে সবচেয়ে আনন্দের সময় হলো তার মা হওয়া। কিন্তু সেই সন্তান কেনো তার হতাশার কারণ হবে? কোনো নারীর সংসার ও সন্তানকে তার ক্যারিয়ার গড়ার পথে বাধা মনে না করে, তাদের জন্যই এই ‘টু আওয়ার জব’।’
জানালেন, ‘টু আওয়ার জব’র ওয়েবসাইটে পেশাদার লেখা, ব্যবসায় সহায়তা, প্রোগ্রামিং, প্রযুক্তি, গ্রাফিকস, ডিজিটাল মার্কেটিং, অডিও সাপোর্ট, মার্কেট রিসার্চ, বিনোদন, গবেষণা, বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন ধরনের সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে অর্ডার করলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব কাজ সম্পন্ন করে দেন দক্ষ নারী প্রফেশনালরা।
এসব বিষয়ে কাজ করতে চাইলে প্রথমে ‘টু আওয়ার জব’-এর ওয়েবসাইটে দক্ষ প্রফেশনালদের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। অর্ডার আসার পর যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যক্তিদের কাজ দেওয়া হবে।
বর্তমানে ঢাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছেন বলে জানান সানজিদা খন্দকার।
ওয়েবসাইটে কাজ পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া খুবই সহজ। ওয়েবসাইটটা সেভাবেই তেরি করা হয়েছে। কারণ, আমরা চিন্তা করে দেখেছি যারা এখানে কাজ করবে তারা হয়তো কখনো ফ্রিল্যান্সিং করেনি। কারণ, একজন ডাক্তার কখনোই ফ্রিল্যান্সার হবেন না। তিনি হয়তো অনলাইন কনসালট্যান্ট হবেন। তাই স্টেপ বাই স্টেপ সাজিয়ে এটা তৈরি করা হয়েছে। এখানে শুধু নাম, মোবাইল নম্বর এবং ঠিকানা দিয়েই সাইন ইন করা যাবে। এরপর শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অনান্য তথ্য দিয়ে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। এর মাঝ থেকেই বেছে নিই যোগ্যতাসম্পন্নদের।
এ জন্য একটি টিম সব সময় অ্যালার্ট রয়েছে বলেও জানান এই নারী উদ্যোক্তা। তার মতে, এই টিমের কাজ হলো সবসময় ফোনে অ্যাকটিভ থেকে কাজ করা। যাতে যে কোনো সমস্যার সমাধান ফোন করার সঙ্গে সঙ্গেই দেওয়া সম্ভব হয়। অনেক সময় মেয়েরা ছেলে-মেয়ের কারণে বাইরে বের হতে পারেন না। তখন প্রয়োজনে তাদের বাসায় গিয়ে ওই সমস্যার সমাধান করাই হচ্ছে ওই টিমের কাজ।
এ উদ্যোগে এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া মিলেছে জানিয়ে সানজিদা বলেন, প্রথমে ভাবিনি এভাবে এই উদ্যোগ নারীরা গ্রহণ করবেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও আমাদের সহযোগিতা করেছেন।

যেহেতু অন-লাইনে বায়ারদের সঙ্গে কাজ করছি, তাই নারী কর্মীদের তথ্য খুব সতর্কভাবে পরিচালনা করতে হয়। কারণ, কেউ কোনো ধরনের সমস্যায় পড়ছেন কিনা তাও দেখতে হয়।

সূত্রঃ বাসস।

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৮


তাহনিয়া খান


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জুম্মার নামাযের জন্য হারাম শরীফে চলে আসলাম। এত মানুষ যে হাটার জায়গা পর্যন্ত নেই। বসা তো দুরের কথা। ঠিক করলাম দোতালায় যাব। সেখানেও একি অবস্থা। চলে গেলাম ছাদে। সেখানে গিয়ে বসার জায়গা পেলাম। জীবনের প্রথম জুম্মার নামায পড়বো, তাও আবার হারাম শরীফে। খুবই এক্সাইটেড ছিলাম। নামাযের অনেক দেরি। অথচ সবাই বসে আছি কখন নামায শুরু হবে তার আশায়। কত ধরনের মানুষ। কালো, মোটা, ফর্সা, চিকন, লম্বা, খাটো। পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষকে যদি কেউ একসাথে দেখতে চায় , তাহলে এই হারাম শরীফে এসে দাড়ালেই হবে। কেউ কাউকে চিনি না, জানি না, তারপরেও মনে হয়েছে কত আপন। নিজের পাশের মানুষটার যাতে সমস্যা না হয়, সবাই এটা খেয়াল রাখে।

বসে থেকে কেউ দোয়া পড়ছে, কেউ একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছে। কেউ খাচ্ছে। যখন কেউ কিছু খায় , তখন পাশের মানুষটাকেও তারা আপ্যায়ন করে। খুব ভাল লেগেছিল ব্যাপারটা। সবচেয়ে ভাল লেগেছে ইন্দোনেশিয়ানদের। সব সময় হাসিখুশী অবস্থায় থাকে এবং খুব হেল্পফুল। আমি সবসময় তাদের পাশে বসার চেষ্টা করতাম। একবার আসরের নামাযের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমার পাশের এক ইন্দোনেশিয়ান মহিলা দেখি তার হিজাবটা এমন ভাবে টেনে নিল যে, তার চেহারা থেকে শুরু করে সব শরীর ঢেকে ফেললো। একটু পর দেখি ‘পিস পিস’ আওয়াজ। আর তার হিজাবের কিছু অংশ ভিজে যাচ্ছে। আমি বুঝতেই পারছি না কি হচ্ছে। তার পাশের জন আমার অবাক চাহনি দেখে মিট মিট করে হাসছিল। কিছুক্ষন পর মহিলা তার হিজাব ঠিক করে বসলেন এবং দেখলাম যে তার হাতে স্প্রে করার বোতল। সে স্প্রে করে পানি হাতে নিয়ে এতক্ষন ওজু করছিল। ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই আমি বড় একটা হাসি দিলাম। সেও প্রতি উত্তরে হাসলো। বেশ ভালো বুদ্ধি তো ! ওজু ভেঙ্গে গেলে জায়গাতে বসেই ওজুর ফরজগুলো পালন করে ওজু করে ফেলা যায়। খেয়াল করলাম সব ইন্দোনেশিয়ানদের সাথে একটা পানি স্প্রে করার বোতল থাকে। তাদের দেখা দেখি আমিও পরে কিনে নিয়েছিলাম। এখনো কোথাও ট্র্যাভেল করার সময় সেটা সাথে রাখি। এটা খুবই ভালো বুদ্ধি, কারণ হারাম শরীফে যে ভিড় থাকে, একবার ওজু করার জন্য উঠে গেলে আর সেখানে জায়গা পাওয়া যাবে না।

একজন বয়স্ক মহিলাকে দেখেছিলাম যার কপালে ছেলেদের যেমন নামায পড়লে দাগ হয়, সেরকম দাগ হয়ে আছে। আমি উনার চেহারা কোনদিন ভুলবো না। কপালের ঐ দাগ দেখলেই বুঝা যায় দাগটা নামাযের কারনেই হয়েছে। চোখে নির্লিপ্ত ভাব। নাইজেরিয়ান ছেলেমেয়েদের দেখতাম কি লম্বা আর গায়ে কি শক্তি। আসলে নাইজেরিয়ান বলা সঠিক হবে না, আফ্রিকান কোন এক কান্ট্রি বলাই মনে হয় শ্রেয়। তারা তাদের জিনিসপত্র মাথায় করে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এত তাড়াতাড়ি হাটে কিন্তু মাথার জিনিস পরে যায় না। আমরা দু’ ভাই বোন খেয়াল করলাম যে, তাদের বডি যতই নড়াচড়া করুক না কেন, ঘাড় সব সময় সোজা থাকে। ডানে বামে তাকালেও ঘাড় সোজা রেখে ঘুরায়। তাদের অনেকের ঘাড়ে, মুখে বিভিন্ন চিহ্ন দেখতাম। এসব চিহ্ন দিয়ে নাকি বুঝা যায় কে কোন গোত্রের।

ইরানীদের দেখতাম সবসময় চুপচাপ। দল বেধে থাকলেও তারা নিজেদের দোয়া দরুদ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। কিছু ইরানী মহিলাদের কপালে, গালে ট্যাটু আঁকা দেখে অবাক হয়েছি। আর রাশিয়ান বেল্টের দিকের দেশগুলোর মানুষদের দেখতাম ছেলে মেয়ে সব এক কাতারে দাড়িয়ে নামায পড়তে। এক কাতারে কীভাবে ছেলে মেয়দের নামায হয় তা আল্লাহ্‌ই জানেন। ব্যাপারটা শুধু মক্কাতেই ঘটেছে। কারণ মদিনাতে মেয়েদের নামাযের জায়গা একদম আলাদা করা। ছেলেরা চাইলেও ঢুকতে পারবে না। আমার ভাই আর আমি খেয়াল রাখতাম ছেলে মেয়ে মিশানো কাতারে যেন না দাড়াই। অনেক সৌদি পুলিশ তাদের সরিয়ে দিত। পুলিশ চলে গেলেই আবার তারা হাজির হতো।

একবার এক আফ্রিকান মহিলা কাতার ফাঁকা না রাখার জন্য সবাইকে ইশারা করে বলছিল। তারপর আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আমার ডান পায়ের সাথে তার বাম পা ঘষা দিয়ে রাখলো। আর অন্যদিকে আরেক মহিলা এত দূরে দাঁড়িয়েছিল যে তাকেও উনি কাছে ডাকছিল। কাছে না আসায় তার বাম পায়ের সাথে আফ্রিকান মহিলা নিজের ডান পা এমনভাবে রাখলো যে, সে কি নামায পড়বে নাকি জিমন্যাস্টিক খেলবে বুঝতে পারছিলাম না। আমার তো হাসি চলে আসছিল। এমনিতেই আমার একটুতেই হাসির ব্যারাম আছে। এত বড় পা ফাঁকা করে সে যে কীভাবে নামায পড়লো , আল্লাহ্‌ মালুম।

কত বয়স্ক মানুষ যে দেখেছি হজ্জে। হজ্জ করতে গায়ে অনেক অনেক শক্তি লাগে। তারপরেও আল্লাহ্‌ এদেরকে দিয়ে হজ্জ করিয়ে নিয়েছিলেন। একবার আমার পাশে এক কাজাখিস্তানের এক মহিলা বসেছিলেন। তার ব্যাগ দেখে বুঝেছিলাম তিনি কাজাখিস্তানের। মাগরিবের সময় কাছে চলে আসছিল। নামাযের জায়গা সহজে কেউ ছাড়ে না। তাই অনেক আগে থেকেই সবাই জায়নামাজ বিছিয়ে জায়গা দখল করে বসে থাকে। জায়নামাজের এই এক সুবিধা, জায়গা দখল করা যায়। আমার বাম পাশে তখনো ফাঁকাই ছিল।

আমার বাম পাশে তখনো ফাঁকাই ছিল। কোন ফাকে সেই মহিলা এসে বসলেন খেয়াল করিনি। একটু পর আমার খিদা লাগার কারনে ব্যাগ থেকে খেজুর আর বাদাম বের করে খেলাম। পাশের সবাইকেও দিলাম। ঐ মহিলার পোশাক আশাক দেখে মনে হলো উনি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না। আমি যেহেতু তাকে খেজুর আর বাদাম দিলাম উনিও তার ব্যাগ থেকে নাড়ু টাইপের একটা জিনিস বের করে দিলেন। দেখে খেতে ইচ্ছা করলো না। আবার ভাবলাম মাত্র দুই তিনিটা নাড়ু উনার কাছে। হয়তো এটাই উনার এক মাত্র খাবার হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। উনার চাহনি দেখে মনে হলো খুব শখ করে দিলেন , না নিলে মনে কষ্ট নিতে পারে। তাই ভেঙ্গে অর্ধেক নিলাম। উনি নিজের ভাষায় আর আকার ইংগিতে বুঝাতে চেষ্টা করলেন কি দিয়ে সেটা বানিয়েছেন। আমার হাতের বাদাম আর খেজুর দেখিয়ে ইশারা করলেন। নাড়ুটা মুখে দিয়েই বুঝলাম ছাতু, খেজুর,বাদাম আর গুড় দিয়ে বানানো। কেন জানি না উনি আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। খেয়াল করলাম তার একটা পা স্বাভাবিক, আরেকটাতে গোদ রোগ। এত মোটা আর ফুলে আছে পা টা। ভাবলাম কীভাবে এই পা নিয়ে এত হেঁটে উনি হজ্জ করবেন ? যখন নামায পড়লাম উনার উঠা বসায় কষ্টের চিহ্ন আমি দেখিনি। হয়তো আমার নামায পড়ার মনোযোগের কারণে সেভাবে উনাকে খেয়াল করিনি। সালাম ফেরানোর পর দোয়া পড়তে পড়তে পাশে তাকাতেই দেখি উনি নেই। আশেপাশে তাকালাম , কোথাও নেই। এত তাড়াতাড়ি ঐ পা নিয়ে উনি কীভাবে চলে গেলেন আমি আজও ভাবি সেটা। কত অসুস্থ মানুষকে দেখেছি, কত দরিদ্র মানুষকে দেখেছি। অবাক হয়েছি। অনেকের থাকার জায়গা নেই। মসজিদে থেকেছেন তারা। আল্লাহ্‌ এমন সব মানুষদেরকে দিয়েও হজ্জ করিয়েছেন।

এক চাইনিজ মহিলাকে দেখেছিলাম সবাইকে একটা করে মলম দিতে। প্রায় অনেকেরই ঠাণ্ডা লাগে সেখানে। আমিও একটা পেয়েছিলাম। কেউ কিছু দিলে খুশী মনে নিতাম, যাতে সেই ব্যক্তি কষ্ট না পায়। আমি সহজে কোন মলম লাগাই না। তারপরেও নিয়ে রাখলাম। রাতে রুমমেট ঘুমাতে পারছিল না ঠাণ্ডার জন্য। নিঃশ্বাসই নিতে পারছিল না। আমি সেই মলম বের করে দিলাম তাকে। শান্তিতে ঘুমালো তখন। অবাক লেগেছে আল্লাহ্‌র প্ল্যান দেখে। কোথাকার কোন চাইনিজ এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌ আমার রুমমেটের জন্য মলম পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

শুধু তাওয়াফ করার সময় মানুষের ধাক্কাধাক্কি ভালো লাগেনি।হাজরে আসওয়াদ কে ধরার জন্য, কাবা ঘরকে ধরার জন্য আরেকজন মানুষকে কষ্ট দিয়ে, ব্যথা দিয়ে মানুষ কি পুণ্য অর্জন করতে চায় তা আমার জানা নেই। এমন অনেক মানুষকে দেখেছি যাদের ৬/৭ টা বাচ্চা। বাবা-মা তাওয়াফ করে, সায়ি করে, বাচ্চাগুলোও সাথে সাথে থাকে। এক বাবাকে দেখেছি দু মাসের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে তাওয়াফ করতে।
বিচিত্র সব মানুষ, বিচিত্র তার জীবন যাপন। শুধু এক আল্লাহ্‌র ডাকে সবাই এক সাথে হয়েছে। জুম্মার নামাযের প্রথম রাকআতে সূরা ফাতেহার পর সবাই একসাথে যখন ‘আমিন’ বলে উঠলো , সে সময়ের সেই শিহরণ আজীবন মনে থাকবে।

হজ্জের ৮ম শিক্ষা– জীবনে কখনো আগে জামাতে নামায পড়িনি। খোলা আকাশের নীচে এত মানুষের ‘আমিন’ বলা শুনে মনে হয়েছিল, মুসলিম উম্মাহ যদি আজ ঐক্য বজায় রাখতো , তাহলে আজ পৃথিবীর বুকে মুসলিমদের এত দুঃখ আর বঞ্চনা থাকতো না। কালো, ফর্সা , ধনী, গরীব, লম্বা, বেঁটে, সুস্থ, অসুস্থ, যুবক, বৃদ্ধ যে যেমনই হোক না কেন, হজ্জের সময় সবাই কিন্তু হাসিখুশি অথবা সামান্য মন মালিন্য হলেও এক থাকার চেষ্টা করেছে। অন্যের ভুলগুলো নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করেনি। অনেক কিছুই ছাড় দিয়েছে। শুধু হজ্জের সময় না করে সারা বছর যদি এমন মন মানসিকতা আমাদের থাকতো ! এক  কষ্টে কোটি মুসলিম ভাই এগিয়ে আসতো , যেমন করে আল্লাহ্‌র আনুগত্য স্বীকার করে একসাথে আমরা ‘আমিন’ বলেছিলাম।

পর্ব-৭

 

মানবসেবায় আন্তর্জাতিক সম্মাননা পাচ্ছেন তুর্কি ফার্স্টলেডি


নারী সংবাদ


মানব সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য গ্লোবাল ডোনারস ফোরামের সম্মাননা পদক পাচ্ছেন তুরস্কের ফার্স্টলেডি আমিনা এরদোগান। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার লন্ডনে এই পুরস্কারটি গ্রহণ করার কথা তার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ভিত্তিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব মুসলিম ফিলানথ্রপিস্ট’ দুই বছর পর পর গ্লোবাল ডোনারস ফোরামের আয়োজন করে। এবার এই ফোরামে অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করবেন আমিনা এরদোগান।

দাতব্য কাজে তুর্কি ফার্স্টলেডির অবদান বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তার ভুমিকা আন্তর্জাতিক মহলে খুবই প্রশংসিত হয়েছে, যার জন্য এই পদক পাচ্ছেন তিনি। ২০১২ সালে প্রাণনাশের হুমকি উপেক্ষা করেও তিনি মিয়ানমার সফর করেন শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়ানোর জন্য। সে সময় তিনি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন নিপীড়নের খবর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন। রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠিটির জন্য সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে আমিনা এরদোগানই পথপ্রদর্শক।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবিরে আমিনা এরদোগান(ফাইল ছবি)

এছাড়া গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর তিনি তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবির পরিদর্শন করেন। সেখানে তারা তুর্কি সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বাস্তুদের জন্য ব্যাপক ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন। কক্সবাজার থেকে ফিরে গিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর সিএনএন ইন্টারন্যাশনালে একটি নিবন্ধ লেখেন আমিনা এরদোগান যার শিরোনাম ছিলো, ‘রোহিঙ্গাদের আকুতি উপেক্ষা করতে পারে না মুসলিম বিশ্ব’। এই লেখার মাধ্যেমে তিনি আরো একবার বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে রোহিঙ্গাদের দুরাবস্থা তুলে ধরেন।

এছাড়া জাতিসঙ্ঘে তুর্কি পার্লামেন্ট মিশনের আয়োজনে ‘উদ্বাস্তুদের প্রতি সংহতি: ভূমধ্যসাগর, আফ্রিকা ও মিয়ানমারে মানবিক সহায়তা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানেও তিনি রোহিঙ্গাদের দুর্দশার বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরেন। এখানেই থেমে থাকেননি তুর্কি ফার্স্টলেডি, বিশ্বনেতাদের স্ত্রীদের কাছে তিনি চিঠি লেখেন রোহিঙ্গাদের প্রতি সদয় হতে।

এছাড়া ২০০৯ সালে ফিলিস্তিন ও গাজা উপত্যকায় আক্রমণের পর মানবিক দুরাবস্থার বিষয়টি নিয়েও কাজ করেন আমিনা এরদোগান। ওই সময় তিনি ইস্তাম্বুলে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেন যার শিরোনাম ছিলো, ‘শান্তির পক্ষে ফিলিস্তিনি নারীরা’। ওই সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বনেতাদের স্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধের দাবি জানানো হয় সম্মেলন থেকে।

তুরস্কের অভ্যন্তরেও আমিনা এরদোগান প্রচুর দাতব্য কাজ করেছেন বিভিন্ন সময়ে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করেছেন তিনি। তুরস্কে আশ্রয় নেয়া উদ্বাস্তুদের জন্যও বিভিন্ন দাতব্য রয়েছে তার।

উল্লেখ্য, গ্লোবাল ডোনারস ফোরাম হচ্ছে ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব মুসলিম ফিলানথ্রপিস্ট’এর একটি দ্বিবার্ষিক উদ্যোগ। বিভিন্ন দেশের দাতা, ব্যবসায়ী, সামাজিক উদ্যোক্তা ও সরকারের প্রতিনিধিরা অংশ নেবে এই ফোরামে। বিশ্বে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও রাজনৈতিক বিভেদের উর্ধ্বে উঠে অর্থসামাজিক বন্ধন তৈরির এর উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উপকরণ বৃদ্ধি এর উদ্দেশ্য। গত ৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনে শুরু হয়েছে তিন দিন ব্যাপী গ্লোবাল ডোনারস ফোরামের ৮ম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। ব্রিটিশ মিউজিয়াম, হাউজ অব লর্ডস ও ম্যানসন হাউজের মতো জায়গাগুলোতে আলোচনা হবে মানুষের মর্যাদা, বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও মানব কল্যানে অনুদানের বিষয় নিয়ে।

সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

মেয়েকে অপহরণের দায়ে মায়ের জেল


নারী সংবাদ


ব্রিটিশ নারী ইন্ডিয়া ফোর্ড স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের পর একজন আমেরিকানকে বিয়ে করেন এবং তার সাথে আলাস্কাতে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন।

সেইসাথে নিজের দুই সন্তানকেও তিনি আলাস্কায় নিয়ে যাবেন বলে ঠিক করেন। কিন্তু সেজন্য তিনি বেছে নেন নিজ সন্তানদের অপহরণের বুদ্ধি।

এরপর ফোর্ড তাদের নিয়ে যায় সিটকাতে। সেটা ২০১৫ সালের অক্টোবরের কথা।

৩৪ বছর বয়সী ওই নারী স্বীকার করেছেন, তিনি তার দুই শিশু সন্তানকে অপহরণ করেছেন এবং তাদের আলাস্কা নিয়ে গেছেন নিজের নতুন সঙ্গীর সাথে বসবাসের জন্য।

কিন্তু এর কিছুই জানতেন না বাচ্চাদের বাবা, তার অনুমতিও নেয়া হয়নি।

ফোর্ডকে এই অপরাধের জন্য তিনবছর ছয়মাসের কারাদণ্ডের সাজা দেয়া হয়েছে।

প্রায় ১০ বছর আগে বাচ্চাদের বাবার সাথে সাক্ষাত হয়েছিল ইন্ডিয়া ফোর্ডের। তাদের ঘরে দুই কন্যা সন্তান হয়। তবে স্বামীর সাথে তার সম্পর্ক ভেঙে যায় ২০১২ সালে।

তখন ডার্টফোর্ডের এক পারিবারিক আদালত রায়ে বলেছিল, বায়োলজিক্যাল বাবা-মাকে এই দুই শিশুর দায়িত্ব পালন করতে হবে।

শুনানিতে আদালত বলে, বাবা-মাকে মেয়েদের একজনের পাসপোর্ট সংরক্ষণ করতে হবে। ফোর্ড তখন দ্বিতীয় সন্তানের পাসপোর্ট ‘হারিয়ে গেছে’ উল্লেখ করে একটি নতুন পাসপোর্ট তোলেন।

তিনি এরপর একজন মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করেন এবং পরের বছর শিশুদের আলাস্কা নিয়ে যাওয়া হয় । সেটা ছিল পারিবারিক আদালতের রায় এবং ভরণপোষণ সংক্রান্ত আদেশের লঙ্ঘন।

এরপর বাচ্চাদের বাবা আদালতের দ্বারস্থ হন তার সন্তানদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে।

পরবর্তীতে ফোর্ডকে গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনা হয়।

বাচ্চারা এখনো তাদের সৎ বাবার সাথে আলাস্কাতে আছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

 

“মেঘমাল্য” রূপদাতা ফারিয়া


ফাতেমা শাহরিন


ফারিয়া ইসলাম শশী-University of Liberal Arts Bangladesh থেকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় (Human Resource Management) এমবিএ শেষ করেছেন গত বছর। Summerfield International School এর সাথে যুক্ত আছেন প্রায় দুই বছর। বর্তমানে তার ব্যস্ততা নিজেরই প্রতিষ্ঠিত “মেঘমাল্য”র সাথে।

ছোটবেলা থেকেই দুরন্ত ফারিয়ার মুল আকর্ষণ ছিল দেশীয় সংস্কৃতিতে লালিত গহনা , ছিমছাম হলেও তারা যেন স্বমহিমায় অনিন্দ্য সুন্দর। প্রত্যেকেই যেন নিজে থেকেই গল্প বলে। কিন্তু এমন গহনা মেলা ভার। তাই নিজের জন্য, সবার জন্য  নতুনভাবে কিছু নিয়ে আসা, হারিয়ে যাওয়া সেই হাজার বছরের সংস্কৃতিকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরার অদম্য ইচ্ছা থেকেই জন্ম হল “মেঘমাল্য”র ।

ফারিয়ার ভাষ্যমতে,  “প্রায় বছরখানেক আগের কথা শুরুটা ছিল হুট করেই, মূলত চাকরির বাইরে নিজের আলাদা সত্ত্বা বানানোর জন্যই ছিল উদ্যোগটা নেওয়া। গহনা নিয়ে আমার উৎসাহের মূল কারণ ছিল আংটি- নানা ধরণের এন্টিক আংটির প্রতি ছিল আমার আকর্ষণ। সেই থেকে গহনা নিয়ে কাজ করার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি। নিজের ছোট পুঁজি নিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্পটা হয়তো সেই থেকেই শুরু। কাউকে না জানিয়েই হুট করে কিনে আনলাম বেশ কিছু গহনা। সেখান থেকেই কিভাবে জানি শুরু হয়ে গেল সবকিছু।”

তবে বর্তমানে তার লক্ষ্য “মেঘমাল্য”কে আরো সম্প্রসারিত করা। এজন্য অতি শীঘ্রই তিনি অলংকার তৈরিতে মন দিচ্ছেন। পাশাপাশি নিজস্ব আউটলেট বানানোর কাজ চলছে।

নারী হিসেবে উদ্যোক্তা হওয়াটাকে কতোটুকু চ্যালেঞ্জিং বলবেন ?

এ প্রসঙ্গে ফারিয়া বলেন , “যেকোনো নতুন কিছু তৈরিতে , স্রোতের বিপরীতে গিয়ে কোন কাজ করা কখনই মসৃণ নয়। তবে এর আনন্দ অতুলনীয়। নিজের ভালোবাসার কাজ করতে পারাটাই এর পারিশ্রমিক। তবে কখনই হাল ছাড়া যাবে না। আপনার সময় আসবেই। আসলে সবকিছুর মূলকথা হচ্ছে ইচ্ছা, পরিশ্রম এবং ভালবাসা। যেকোনো কিছুর মূলে থাকে ইচ্ছাশক্তি। সাথে অবশ্যই আপনার নিজের কাজকে ভালবাসা চাই , আর তারপর চাই এগিয়ে যাওয়ার জন্য একনিষ্ঠ একাগ্রতা ও পরিশ্রম। সফল আপনি হবেনই, সফল আপনিই হবেন। সকলের জন্য “মেঘমাল্য”র পক্ষ থেকে একরাশ শুভকামনা।

ফেসবুক লিংক:

https://m.facebook.com/meghmalya/

“মেঘমাল্য”র কিছু সামগ্রীর ছবি ১:

 

নারীর আকাশে উজ্জ্বল ‘শুকতারা’


তাসলিমা সুলতানা


ছোট থেকেই ভাবতেন ভিন্ন কিছু করার। সেই ভাবনা থেকেই বাবার অনুপ্রেরণায় এগিয়ে চলা। যার পরিচিতি এখন দেশ ছাড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। নারীরাও যে বিশ্ব দরবারে সমান তালে ব্যাট-বল হাতে ক্রিকেটবিশ্ব ‘শাসন’ করতে পারে তা দেখিয়ে দিয়েছেন শুকতারা। তিনি বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের আয়শা রহমান শুকতারা।
স্কুল জীবন থেকেই ভলিবল-হ্যান্ডবলে ছিল তার পারঙ্গমতা। স্কুলেরই এক শিক্ষিকার পরামর্শে হাতে তুলে নেন ব্যাট-বল। পরিবারকে রাজি করানোর ভারও নেন ওই শিক্ষক। তবে বাবারও স্বপ্ন ছিল, যদি বাংলাদেশে কখনো নারী ক্রিকেট দল হয়, তার মেয়ে সেখানে খেলবে। বাবার স্বপ্নের পথেই যেনো পা বাড়ালেন মেয়ে শুকতারা। শুরু হলো ক্রিকেটের পানে ছুটে চলা।
ভাগ্য এতটাই পক্ষে ছিল যে, কিছুদিনের মধ্যেই খুলনা বিভাগে নারী ক্রিকেটার হান্ট শুরু হলো। শুকতারার থেকে যেনো তার বাবাই বেশি রোমাঞ্চিত এই খবরে। ফুটবলার বাবার মেয়ে ক্রিকেটার হবেন, এই স্বপ্ন তিনি সফল হতে দেখছিলেন খোলা চোখেই। নিজেই মেয়েকে নিয়ে গেলেন বাছাই পর্বের জন্য। বাছাই পর্ব পার হয়ে গেলেন খুব সহজেই। জাতীয় দলের পথটা গেল সহজ হয়ে।
বাছাই পর্ব পার হওয়ার পর একটি ওপেন টুর্নামেন্টে অংশ নিলেন শুকতারা। এরপরই এলো জাতীয় দলে খেলার সুযোগ। ভালোবাসা থেকে যে ক্রিকেটের শুরু সেটিই হয়ে গেল শুকতারার পেশা। অন্য কিছু করার আর চিন্তাই আসেনি মাথায়। হয়ে উঠলেন পুরোদস্তুর ক্রিকেটার।
ডানহাতি ব্যাটসম্যান শুকতারা ক্রিকেট খেলাটা বেশ উপভোগ করে চলেছেন। বাংলাদেশ দলের সদস্য হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বিদেশে জয় নিয়ে ঘরে ফিরছেন তিনি।
বললেন, খুলনাকে অনেকেই ক্রিকেটের আঁতুরঘর বলেন। এখানে জন্ম মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ বাংলাদেশের আরো অনেক তারকা ক্রিকেটারের। পারিবারিক উৎসাহ ও সামাজিক বাধা না থাকায় নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছি।
২০০৭ সালে জাতীয় দলের হয়ে শুরু করলেও পথ যেনো সামনে এগোচ্ছিলো না। খেলছেন ঠিকই কিন্তু বের হতে পারছিলেন না হারের বৃত্ত থেকে। নারী ক্রিকেট নিয়ে নেই তেমন কোনো আলোচনা, নেই কোনো পরিকল্পনাও। তবু দলের প্রতিটি সদস্যের মতোই হাল ছাড়েননি শুকতারাও।
তার ভাষায়, সবার মনেপ্রাণে বিশ্বাস ছিল, এক দিন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল এমন কিছু করে দেখাবে যেখান থেকে শুধুই আলোই ছড়াবে, অন্ধকার আর ছুঁতে পারবে না তাদের।
আর সেই বিশ্বাস নিয়ে পথ চলার ফসল হিসেবেই যেনো পেয়েছেন এশিয়া কাপের শিরোপা, আয়ারল্যান্ড সিরিজ জয়, বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে হয়েছে সেরা দল । শুকতারা অন্তত এটাই মনে করেন, দলের প্রতিটি সদস্যের অখ- বিশ্বাস, একাগ্রতা ও পরিশ্রমই আজকের নারী দলের সাফল্যের মূলমন্ত্র।
দলের খারাপ সময়টা যেমন দেখেছেন তেমনি দেখছেন ভালো সময়টাও। নিজের জায়গা নড়বড়ে হওয়াটাও দেখেছেন। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে বাদ পড়েন দল থেকে। সে বছর জায়গা হয়নি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বেও। নিজেকে বুঝিয়েছেন। শক্ত থেকেছেন। পরিশ্রম করেছেন। আবারও ফিরেছেন দলে। নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন মারকুটে এই ব্যাটসম্যান।
এখন পাল্টে গেছে অনেক কিছুই। দল ও ক্রিকেটারদের উন্নতির পাশাপাশি নারী ক্রিকেট দলের প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিন্তাধারায়ও এসেছে পরিবর্তন। বেড়েছে সুযোগ-সুবিধা। দেশের ও বিদেশে প্রিয় ক্রিকেটারের নাম জানতে চাইলে যেনো একটু দ্বন্দ্বেই পরে যান শুকতারা।
একটু ভেবে বললেন, ‘আসলে ফলো তেমন কাউকে করা হয় না তবে দেশের মধ্যে তামিম (ইকবাল) ভাইয়ের খেলা ভালো লাগে। দেশের বাইরে শচীন টেন্ডুলকার ও রিকি পন্টিং। দল হিসেবে তেমন কোনো দেশ প্রিয় নেই। আমি আসলে সব দেশের সব ধরনের ক্রিকেট দেখি। সেখান থেকেই অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করি।’
মারকুটে এই ব্যাটসম্যান দারুণ একজন ফিল্ডারও। একই সঙ্গে একজন নারী, একজন স্ত্রী। ক্রিকেটার শুকতারার স্বামীও জড়িয়ে আছেন ক্রিকেটেই। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের প্রশিক্ষক ইফতেখারুল ইসলাম। দু’জন মানুষ ক্রিকেট নিয়ে এতটাই ব্যস্ত সময় কাটান যে নিজেদের দেওয়ার মতো সময়টা পান না।
তাই ভবিষ্যতে নিজেদের সময় দিতে চান শুকতারা। ক্যারিয়ার শেষে জীবনটা নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে চান এই সফল নারী।
॥ তাসলিমা সুলতানা ॥
ঢাকা, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : ছোট থেকেই ভাবতেন ভিন্ন কিছু করার। সেই ভাবনা থেকেই বাবার অনুপ্রেরণায় এগিয়ে চলা। যার পরিচিতি এখন দেশ ছাড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। নারীরাও যে বিশ্ব দরবারে সমান তালে ব্যাট-বল হাতে ক্রিকেটবিশ্ব ‘শাসন’ করতে পারে তা দেখিয়ে দিয়েছেন শুকতারা। তিনি বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের আয়শা রহমান শুকতারা।
স্কুল জীবন থেকেই ভলিবল-হ্যান্ডবলে ছিল তার পারঙ্গমতা। স্কুলেরই এক শিক্ষিকার পরামর্শে হাতে তুলে নেন ব্যাট-বল। পরিবারকে রাজি করানোর ভারও নেন ওই শিক্ষক। তবে বাবারও স্বপ্ন ছিল, যদি বাংলাদেশে কখনো নারী ক্রিকেট দল হয়, তার মেয়ে সেখানে খেলবে। বাবার স্বপ্নের পথেই যেনো পা বাড়ালেন মেয়ে শুকতারা। শুরু হলো ক্রিকেটের পানে ছুটে চলা।
ভাগ্য এতটাই পক্ষে ছিল যে, কিছুদিনের মধ্যেই খুলনা বিভাগে নারী ক্রিকেটার হান্ট শুরু হলো। শুকতারার থেকে যেনো তার বাবাই বেশি রোমাঞ্চিত এই খবরে। ফুটবলার বাবার মেয়ে ক্রিকেটার হবেন, এই স্বপ্ন তিনি সফল হতে দেখছিলেন খোলা চোখেই। নিজেই মেয়েকে নিয়ে গেলেন বাছাই পর্বের জন্য। বাছাই পর্ব পার হয়ে গেলেন খুব সহজেই। জাতীয় দলের পথটা গেল সহজ হয়ে।
বাছাই পর্ব পার হওয়ার পর একটি ওপেন টুর্নামেন্টে অংশ নিলেন শুকতারা। এরপরই এলো জাতীয় দলে খেলার সুযোগ। ভালোবাসা থেকে যে ক্রিকেটের শুরু সেটিই হয়ে গেল শুকতারার পেশা। অন্য কিছু করার আর চিন্তাই আসেনি মাথায়। হয়ে উঠলেন পুরোদস্তুর ক্রিকেটার।
ডানহাতি ব্যাটসম্যান শুকতারা ক্রিকেট খেলাটা বেশ উপভোগ করে চলেছেন। বাংলাদেশ দলের সদস্য হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বিদেশে জয় নিয়ে ঘরে ফিরছেন তিনি।
বললেন, খুলনাকে অনেকেই ক্রিকেটের আঁতুরঘর বলেন। এখানে জন্ম মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ বাংলাদেশের আরো অনেক তারকা ক্রিকেটারের। পারিবারিক উৎসাহ ও সামাজিক বাধা না থাকায় নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছি।
২০০৭ সালে জাতীয় দলের হয়ে শুরু করলেও পথ যেনো সামনে এগোচ্ছিলো না। খেলছেন ঠিকই কিন্তু বের হতে পারছিলেন না হারের বৃত্ত থেকে। নারী ক্রিকেট নিয়ে নেই তেমন কোনো আলোচনা, নেই কোনো পরিকল্পনাও। তবু দলের প্রতিটি সদস্যের মতোই হাল ছাড়েননি শুকতারাও।
তার ভাষায়, সবার মনেপ্রাণে বিশ্বাস ছিল, এক দিন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল এমন কিছু করে দেখাবে যেখান থেকে শুধুই আলোই ছড়াবে, অন্ধকার আর ছুঁতে পারবে না তাদের।
আর সেই বিশ্বাস নিয়ে পথ চলার ফসল হিসেবেই যেনো পেয়েছেন এশিয়া কাপের শিরোপা, আয়ারল্যান্ড সিরিজ জয়, বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে হয়েছে সেরা দল । শুকতারা অন্তত এটাই মনে করেন, দলের প্রতিটি সদস্যের অখ- বিশ্বাস, একাগ্রতা ও পরিশ্রমই আজকের নারী দলের সাফল্যের মূলমন্ত্র।
দলের খারাপ সময়টা যেমন দেখেছেন তেমনি দেখছেন ভালো সময়টাও। নিজের জায়গা নড়বড়ে হওয়াটাও দেখেছেন। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে বাদ পড়েন দল থেকে। সে বছর জায়গা হয়নি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বেও। নিজেকে বুঝিয়েছেন। শক্ত থেকেছেন। পরিশ্রম করেছেন। আবারও ফিরেছেন দলে। নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন মারকুটে এই ব্যাটসম্যান।
এখন পাল্টে গেছে অনেক কিছুই। দল ও ক্রিকেটারদের উন্নতির পাশাপাশি নারী ক্রিকেট দলের প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিন্তাধারায়ও এসেছে পরিবর্তন। বেড়েছে সুযোগ-সুবিধা। দেশের ও বিদেশে প্রিয় ক্রিকেটারের নাম জানতে চাইলে যেনো একটু দ্বন্দ্বেই পরে যান শুকতারা।
একটু ভেবে বললেন, ‘আসলে ফলো তেমন কাউকে করা হয় না তবে দেশের মধ্যে তামিম (ইকবাল) ভাইয়ের খেলা ভালো লাগে। দেশের বাইরে শচীন টেন্ডুলকার ও রিকি পন্টিং। দল হিসেবে তেমন কোনো দেশ প্রিয় নেই। আমি আসলে সব দেশের সব ধরনের ক্রিকেট দেখি। সেখান থেকেই অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করি।’
মারকুটে এই ব্যাটসম্যান দারুণ একজন ফিল্ডারও। একই সঙ্গে একজন নারী, একজন স্ত্রী। ক্রিকেটার শুকতারার স্বামীও জড়িয়ে আছেন ক্রিকেটেই। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের প্রশিক্ষক ইফতেখারুল ইসলাম। দু’জন মানুষ ক্রিকেট নিয়ে এতটাই ব্যস্ত সময় কাটান যে নিজেদের দেওয়ার মতো সময়টা পান না।
তাই ভবিষ্যতে নিজেদের সময় দিতে চান শুকতারা। ক্যারিয়ার শেষে জীবনটা নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে চান এই সফল নারী। সূত্র: বাসস।

 

পানির বোতল, গ্লাস এবং কিছু উপলব্ধি…


আফরোজা হাসান


গতকাল দুপুরের খাবারটা আমাকে একা একাই খেতে হয়েছিল! একা টেবিলে বসে খেতে ভালো লাগে না তাই খাবারের প্লেট নিয়ে নাকীবের কাছে গিয়ে বসেছিলাম! নাকীব কার্টুন দেখছিল আর জাম্পিং জাম্পিং করছিল! খাবার কিছুটা শুকনো ছিল তাই মুখে দেবার পর একটু পানি পান করে নেবার প্রয়োজন অনুভব করলাম! নাকীবকে বললাম যে, বাবা আম্মুতাকে একটু পানি এনে দাও। টেবিলে থাকা পানির বোতলে অল্প একটুখানি পানি ছিল! নাকীবকে বললাম পানি ভরে আনতে! কিন্তু যেহেতু স্পাইডারম্যান কার্টুন চলছিল! যে কার্টুনের এক মূহুর্তও নাকীব মিস করতে নারাজ! তাই যে বোতল উপুড় করে সবটুকু পানি গ্লাসে ঢাললো! কয়েকবার ঝাঁকিও দিলো বোতলে যাতে পানির শেষ বিন্দুটিও গড়িয়ে গ্লাসে এসে পড়ে! এভাবে সবটুকু পানি গ্লাসে ঢেলে আমার কাছে নিয়ে এসে হাসি দিয়ে বলল, দেখেছো গ্লাস প্রায় ভরে গিয়েছে! পানি বড় বোতলে ছিল তো তাই অনেক কম দেখাচ্ছিলো বুঝলে আম্মুতা! কিন্তু দেখো গ্লাসে ঢালার পর কত বেশি দেখাচ্ছে! কথা শেষ করে আমার হাতে গ্লাস দিয়ে নাকীব আবারো নিজের কাজে ফিরে গেলো! কিন্তু আমি একবার বোতল আরেকবার গ্লাসের দিকে তাকালাম! আমার কাছেও মনেহলো বড় বোতলে থাকার কারণেই আসলে মনেহচ্ছিলো খুবই অল্প পানি! অথচ যখন গ্লাসে ঢালা হলো ঠিকই প্রায় পুরো গ্লাসটি ভরিয়ে দিলো সেই অল্প একটু পানিটুকুই।

অনেকগুলো ভাবনা এসে জড়ো হয়েছিল মনের মাঝে! গত পরশু আমার সাথে সংঘটিত আরেকটি ঘটনা মনে পড়লো। নাকীবকে আনতে যাচ্ছিলাম স্কুল থেকে। পথে ছোট্ট একটা বাচ্চাদের পার্ক আছে। প্রায়ই পার্কটির সামনে একজন বয়স্কা মহিলা বসে থাকেন। রাস্তা দিয়ে চলা প্রতিটি পথিকের দিকে তাকিয়ে মুখের কাছে হাত নিয়ে ঈশারায় বলেন, খাওয়ার জন্য তাকে কিছু দিতে। অন্যের দুঃখে দুঃখী এবং অসহায়কে সাহায্য করতে হবে এই বোধ নাকীবের মনে জাগ্রত করার লক্ষ্যে প্রায়ই ঐ মহিলাকে সাহায্য দেয়াই ওকে দিয়ে। তখন দান-সাদাকা বিষয়েও বুঝিয়ে বলি! যাকাতের ব্যাপারে বোঝাতে গিয়ে বলেছিলাম যে, পাঁচ ইউরো আমাদের কাছে হয়তো তেমন একটা ম্যাটার না! কাউকে দিতেও তেমন কষ্ট হয় না যেহেতু আল্লাহ রহমতে আমাদের কাছে আরেকটু বেশি অর্থ আছে! কিন্তু যার কাছে একটি ইউরোও নেই সে এই পাঁচ ইউরো দিয়েই অনেক কিছু করে ফেলতে পারবে ইনশাআল্লাহ! এইজন্যই আল্লাহ যাদের অর্থ আছেন তাদেরকে একদমই অর্থহীন যারা তাদেরকে সাহায্য করতে বলেছেন! যাইহোক, আমাদের বাসা থেকে নাকীবের স্কুলে যাওয়ার পথটুকু বেশ ঢালু। যাবার সময় নীচের দিকে নামতে অনেক সহজ কিন্তু ফেরার পথে উপরের দিকে উঠতে বেশ কষ্ট। গত পরশু আমার শরীরটা সামান্য অসুস্থ্য ছিল। ফেরার পথে তাই বাসে আসার ইচ্ছে ছিল। তাই যাবার পথে সেই মহিলাটি যখন সাহায্য চাইলেন নাকীবকে দিয়ে সাহায্য দেয়ানো সম্ভব হবে না ভেবে আমিই দিতে গেলাম। কিন্তু পার্স খুলে দেখি টাকা না নিয়েই বেড়িয়ে পড়েছি! আর খুচরা পয়সা যা আছে সব মিলিয়ে এক ইউরো পুরো হতেও কয়েক সেন্থ কম। মহিলার দিকে তাকিয়ে, ‘সরি আপনাকে পরে দেব’ বলে পা বাড়াতে যাচ্ছিলাম উনি তখন বলল, তোমার কাছে যা আছে তাই আমাকে দাও।

খুব সংকোচ হচ্ছিলো এত কম সাহায্য দিতে। কিন্তু আবার নাও বলতে পারলাম না। উনাকে তখন পার্স থেকে সবগুলা খুচরা পয়সা বের করে দিলাম। মহিলার চোখে মুখের সেই আনন্দের কথা কোন বাক্যে প্রকাশ করবো বুঝতে পারছি না। কোন কিছু পেয়ে হারিয়ে ফেলার পর, আবারো ফিরে পাবার আনন্দ বোধকরি এমনই হয়। ফেরার পথে বাসের জানালা দিয়ে দেখলাম মহিলাটি বসে রুটি খাচ্ছেন। উনার মুখের কাছে হাত নিয়ে ক্ষুধার অনুভূতি প্রকাশের কথাটি মনে পড়ে গেলো। মনে পড়লো পঞ্চাশ সেন্থ দিয়ে নরম্যল মানের একটি রুটি কিনতে পাওয়া যায়, সত্তর সেন্থ দিয়ে অনেক মজার ডোনাট কেনা সম্ভব, চল্লিশ সেন্থ দিয়ে ছোট এক বোতল জ্যুস পাওয়া যায়। এমন আরো কিছু খাবার আছে যা খুব সহজেই কিনে খাওয়া সম্ভব ঐ পয়সা দিয়ে যা দিতে আমি লজ্জিত ও সংকোচ বোধ করছিলাম। সেদিন সারাটা দিনই আমার মাথায় এই চিন্তাটা ঘুরপাক খেয়েছে যে, কেন আমি একদম কিছু না দেবার চেয়ে কিছু অন্তত দেয়া থেকে বিরত থাকতে চেয়েছিলাম?! আমাদেরকে ছোটবেলা থেকে শেখানো হয়েছে দানের পরিমাণ কোন ম্যাটার না। তোমার কাছে যা বিন্দু একজন অসহায়ের কাছে সেটাই হয়তো সিন্ধু হয়ে ধরা দেবে! অথচ তারপরও কেন আমি সংকোচ করেছিলাম এই ভাবনাটা খোঁচাতে লাগলো থেকে থেকে! “অল্প দান করতে লজ্জাবোধ করো না! কেননা বিমুখ করা অপেক্ষায় অল্প দান অনেক ভালো!” আমার সবচেয়ে প্রিয় বাণীর মধ্যে তো হযরত আলী(রা)বলা এই বাণীটাও আছে। তাহলে কেন এই অনুভূতিটা ভোঁতা হয়ে গিয়েছিল আমার?!

সব মিলিয়ে একসময় মনেহলো দান-সাদাকা বিষয়ে অনেকদিন কোন আলোচনা শোনা হয়নি, নিজেরও করা হয়নি! বেশ কিছুদিন এই বিষয়ে কোন চর্চা হয়নি বলেই কি তবে অল্প কিছু দান করতে আমি লজ্জিত বোধ করেছিলাম?! একটা গল্পের কথা মনে পড়লো তখন। এক যুবক ইসলামী আলোচনার মজলিসে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল ঘুরে ফিরে রোজ প্রায় একই ধরণের কথা শুনতে হয় সেজন্য। সেই মজলিস যিনি পরিচালনা করতেন তিনি একদিন যুবকের বাড়ি এলেন। কেন মজলিসে যায় না সেটা শোনার পর উনি মুখে কিছুই বললেন না। শুধু চলে যাওয়ার সময় ফায়ার প্লেস থেকে একটা কয়লার টুকরো লাঠি দিয়ে বের করে আনলেন। কিছুক্ষণ জ্বলে থাকলো ঠিকই কিন্তু এরপর ধীরে ধীরে কয়লার টুকরোটি উত্তাপহীন হয়ে গেলো। যুবকও উপলব্ধি করলো সে কি ভুল করতে বসেছিল। ইসলামি মজলিস থেকে দূরে থাকার ফলে তার ঈমানের দীপ্ততাও তো এমনি করে মিলিয়ে যেত এক সময়! অথচ নিয়মিত মজলিসে গেলে ঈমানের উজ্জ্বলতা হ্রাস পাবার সম্ভাবনা কম এবং বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক! আমি নিজেও আবারো উপলব্ধি করলাম যে, শরীয়তের বিষয়সমূহকে যত বেশি চর্চা করা হয় ব্যবহারিক জ্ঞান ততই শানিত থাকে। কর্মের আগে নিয়্যাত নির্ধারণ হয়ে যায়, নিয়্যাতে খুলুসিয়াত বৃদ্ধি পায়। অন্তরও অনেক বেশি তৃপ্ত ও প্রফুল্ল থাকে।

ভেবে দেখলাম ঐ মহিলাকে দান করার মূল উদ্দেশ্যেটা আসলে নাকীবকে দান করে দেখানো ও শেখানোতেই পরিণত হয়ে গিয়েছিল আমার কাছে! একজন অসহায় মানুষকে আমি সাহায্য করতে পারছি! এই যে ক্ষমতাটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাকে দিয়েছেন সেজন্য শুকরিয়া আদায় করার কথা তাই স্মরণে আসেনি আমার! ঐ মহিলার জায়গায় আজ আমিও থাকতে পারতাম! এই উপলব্ধি থেকে কৃতজ্ঞ হতেও ভুলে গিয়েছিলাম! শুধু ভাবছি আমার এই অকৃতজ্ঞ দান থেকে কি সত্যিই আমার ছেলে কোন শিক্ষা নিতে পেরেছে গত দুই মাসে?! আমলের প্রতিদান দেয়া হবে নিয়্যাতের ভিত্তিতে! আমার নিয়্যাত কি ছিল? যতই ভাবছি, নিজেকে বিবেকের আয়নায় দেখার চেষ্টা করছি, ততই লজ্জিত বোধ করছি! কাজের পেছনে আসলে নিয়্যাতটা কি সেটা চিন্তা করতে অনেক সময় আমরা ভুলেই যাই। অভ্যাস বশত, বা করতে হবে তাই করে ফেলি। এরফলে হয়তো আমাদের অনেক ভালো কাজ প্রকৃত এবং কাঙ্ক্ষিত সুফল বয়ে আনতে ব্যর্থ হয় আমাদের জন্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের হৃদয়ে লুকায়িত আমলের ভিত্তিতে আমাদেরকে পুরষ্কৃত করবেন! কোন কাজ করার আগে তাই পুনঃপুন নিয়্যাত বিবেচনা করে দেখা উচিত আমাদের। কেননা নিয়্যাতের স্বচ্ছতার অভাবে আমাদের অনেক কল্যাণমূলক কাজ হয়তো বিফলে চলে যাবে! রবের কাছে তাই আজ আকূল হয়ে প্রার্থনা করছি, প্রবাহমান দীনতার স্রোতে অন্তরের আলো মোর নিভু নিভু, তাওফীক দিও নিয়্যাতের খুলুসিয়াত অর্জনে হে দয়াময়, পরম করুণাময় প্রভু……..।

 

বালিয়াকান্দিতে গৃহবধূকে অপহরণের পর গণধর্ষণ


নারী সংবাদ


কিস্তির টাকা উত্তোলন করে বাড়ি ফেরার পথে এক গৃহবধূকে অপহরণ করে মাইক্রোবাসে তুলে ঢাকায় নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি থানায় ধর্ষণ ও সহায়তা করার অভিযোগে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
বালিয়াকান্দি থানার এসআই হাবিবুর রহমান জানান, ওই গৃহবধূ গত ৯ আগস্ট উপজেলার নারুয়া বাজার ব্র্যাক অফিস থেকে কিস্তির ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে তেকাঠি গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় তেকাঠি জামে মসজিদের সামনে পৌঁছলে কিছু দুর্বৃত্ত তাকে জোরপূর্বক সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ করে ঢাকায় নিয়ে যায়। ঢাকায় নিয়ে তাকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে সিরাজ মণ্ডল ও আরো দুইজন অজ্ঞাত ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করে। দুই দিন আটকে রেখে ধর্ষণের ফলে গৃহবধূ অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত ১১ আগস্ট রাত ৯টার দিকে তাকে মোক্তার হোসেনের বাড়িতে আনলে তার অভিভাবকেরা খোঁজা পেয়ে সেখান থেকে উদ্ধার করেন। এ ব্যাপারে ওই গৃহবধূ বাদি হয়ে গত ১৪ আগস্ট রাজবাড়ী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে উপজেলা খালিয়া মধুপুর গ্রামের তায়জাল মণ্ডলের ছেলে সিরাজ মণ্ডল, সেকেন মণ্ডলের ছেলে মোস্তফা মণ্ডল, তায়জাল মোল্যার ছেলে ইউনুছ মোল্যা, বড়হিজলী গ্রামের মৃত সামাদ মোল্যার ছেলে মোক্তার হোসেনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বিচারক বালিয়াকান্দি থানার ওসিকে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। সূত্র: নয়াদিগন্ত।

 

ডিমভাজির নানান রেসিপি


 ঘরকন্যা


স্প্যানিশ অমলেট

উপকরণঃ
» ১ টি চিকেন সসেজ টুকরো করে কাটা
» ১টেবিল চামচ জলপাইয়ের তেল
» ১/২ চা চামচ পাপরিকা
» মোজারেল্লা চীজ হাফ কাপ
» ১ টি বড় পেঁয়াজ পাতলা করে কাটা
» ২ টি রসুন কুঁচি করে কাটা
» ১টি ক্যাপসিকাম স্লাইস করে কাটা
» ১ টি টমেটো স্লাইস করে কাটা
» ৬ টি ডিম
» ১/২ কাপ পানি

প্রস্তুত প্রণালীঃ
মাঝারি তাপে প্রথমে একটি নন স্টিক ফ্রাই প্যান গরম করে নিতে হবে। চিকেন সসেজটি বাদামী রঙ না হওয়া পর্যন্ত ভাজতে হবে। ভাজা হয়ে গেলে সসেজ উঠিয়ে রেখে প্যানে তেল দিয়ে পেঁয়াজ, রসুন ও ক্যাপসিকাম ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। একটি বাটিতে ডিম ফেটে নিয়ে তাতে পানি, লবণ, মরিচ,টমেটো ও পাপরিকা মিক্স করে নিতে হবে। প্যানে তেল গরম করে দিয়ে ডিমের মিক্সার ঢেলে দিতে হবে।এর উপর সসেজের টুকরাগুলো ও চীজ দিয়ে ভাজুন। ভাজা হলে পেঁয়াজ, রসুন ও ক্যাপসিকাম উপরে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

ডিম-টমেটো পাকোড়া

উাপকরণঃ
» বড় টমেটো ২টি।
» চালের গুঁড়া ১ কাপ।
» কাঁচামরিচ ৩টি।
» ডিম ২টি।
» পেঁয়াজ বড় ১টি।
» ধনেপাতা-কুচি আধা আটি।
» অল্প হলুদ।
» বেকিং পাউডার আধা চা-চামচ।
» তেল ও লবণ পরিমাণমতো।

পদ্ধতিঃ
টমেটো ও পেঁয়াজ কুচি করে এতে ২টি ডিম ফেটিয়ে মেশান। চালের গুঁড়া ও ধনেপাতাও এই মিশ্রণে মেশান। হলুদ, লবণ ও বেকিং পাউডার দিন। কড়াইতে তেল গরম করে হাতায় করে গোলা তুলে লাল করে ভেজে নিন। এরপর সসের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

জিডিপিতে নারীর অবদান বিস্ময়করভাবে বাড়ছে


নারী সংবাদ


নারীদের সম্পর্কে কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতায় লিখেছেন ‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ তাঁর কবিতার এই মর্মবাণী শতভাগ সত্যি প্রমাণ হলো বাংলাদেশের নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে। নারীরা শুধু সংসারে পারঙ্গম নয়,ঘরে-বাইরে সব খানে তাদের দৃপ্ত ও সাহসী পদচারণায় সমৃদ্ধ হচ্ছে পরিবার,সামাজরাষ্ট্র,সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতির গবেষণায়ও এর প্রতিফলন দেখা যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলধারার কর্মক্ষেত্র গুলোতে নারীর অবদান বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ি ১ কোটি ৬৮ লাখ নারী কৃষি, শিল্প ও সেবা অর্থনীতির বৃহত্তর এই তিন খাতে কাজ করছেন। অর্থনীতিতে নারীর আরেকটি বড় সাফল্য হলো, দেশের সামগ্রীক উৎপাদন ব্যবস্থায় নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বেড়েছে। বর্তমানে জিডিপিতে নারীর অবদান ২০ শতাংশের কিছুটা বেশী। কিন্তু বাস্তবে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারীর অবদান স্বীকার করলে এই হার দাঁড়ায় ৪০ শতাংশের উর্ধ্বে।
অর্থনীতির অন্যতম রপ্তানীমুখী পোষাক খাতের মোট কর্মীর প্রায় অর্ধেকই এখন নারী। এ খাতে ৫০ লাখ ১৫ হাজার নারী-পুরুষ কাজ করেছেন। তাঁদের মধ্যে নারী ২২ লাখ ১৭ হাজার। তাছাড়া, কৃষি, হাস-মুরগি, মৎস্য খামার, হস্তশিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তা, আটি সংশ্লিষ্ট খাতে আউট সোর্সিংসহ যাবতীয় কাজে সম্পৃক্ত নারীরা নীরবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। বাকিদের মধ্যে কেউ উদ্যোক্তা, কেউ চিকিৎসক, কেউ প্রশাসনে, প্রকৌশলী, কেউ শিক্ষক, কেউ বৈমানিক, কেউ পুলিশ, কেউ সৈনিক হিসেবে বিভিন্ন স্তরে কর্মরত আছেন।
বর্তমানে কৃষি খাতে নিয়োজিত আছেন ৯০ লাখ ১১ হাজার নারী। এ ছাড়া শিল্প ও সেবা খাতে কাজ করেন যথাক্রমে ৪০ লাখ ৯০ হাজার এবং ৩৭ লাখ নারী। দেশের কলকারখানায় পুরুষের চেয়ে এক লাখ বেশি নারী শ্রমিক কাজ করেন। চলতি বছরের হিসেব অনুযায়ি কারখানায় ২১ লাখ ১ হাজার ৮৩০ জন নারী শ্রমিক রয়েছেন আর পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা ১৯ লাখ ৯৫ হাজার ৫৫৭ জন। গত এক যুগে বাংলাদেশে কৃষির নারীকরণ হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার মতোই দেশের কৃষি খাতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এখন নারীরা। বিবিএসের তথ্য হলো গত ১০ বছরে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে ১০৮ শতাংশ। আর পুরুষের অংশগ্রহণ কমেছে দুই শতাংশ। খাদ্যনীতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ২০১৫ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৯০ শতাংশ বাড়িতে মুরগি পালন নিয়ন্ত্রণ করেন নারী। ছাগল ও গরু পালনে নারীদের নিয়ন্ত্রণ ৫৫ শতাংশ।
রপ্তানিমুখী শিল্পে নারী শ্রমিকের চাহিদা ও অংশগ্রহণ সর্বাধিক। তৈরি পোশাক শিল্প, হিমায়িত চিংড়ি, চামড়া, হস্ত শিল্পজাত দ্রব্য, চা ও তামাক শিল্পসহ অন্যান্য পণ্য। মোট রপ্তানি আয়ের ৭৫ ভাগ অর্জনকারী শিল্পের মূল চালিকাশক্তিই হচ্ছে নারী। পোশাকশিল্পের সঙ্গে জড়িত চার মিলিয়ন বা ৪০ লাখ কর্মীর মধ্যে ৮০ ভাগই নারী। মোট শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ১৯৯৫-৯৬ সালে ১৫.৮ শতাংশ, ২০০২-০৩ সালে ২৬.১ শতাংশ, ২০০৫-০৬ সালে ২৯.২ শতাংশ এবং ২০১১-১২ সালে ৩৯.১ শতাংশ।
সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, গৃহস্থালিতে নারীর যে কাজ জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হয় না সেই শ্রমের প্রাক্কলিত বার্ষিক মূল্য (২০১৩-১৪ অর্থবছর) জিডিপির ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ। অবশ্য গৃহস্থালি কাজে দেশের নারীরা বছরে ১৬ হাজার ৬৪১ কোটি ঘণ্টা সময় ব্যয় করছেন, যার আর্থিক মূল্যমান দুই লাখ ৪৯ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। জিডিপিতে এই আর্থিক মূল্য যোগ হলে নারীর হিস্যা বর্তমানের ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশ। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের নারীরা। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সালের জুনে এ দেশে ক্ষুদ্রঋণের গ্রাহকের সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৫২ লাখ ৮০ হাজার। এর ৯০ শতাংশই নারী গ্রাহক। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, দেশের মোট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের ৩৫ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা। ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৮৬০ মিলিয়ন ডলার ৫৭ হাজার ৭২২ জন নারীকে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এতে তারা গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ৯৭ থেকে ৯৯ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাই ব্যাংক থেকে জামানতবিহীন ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেন। এটি একটি বিরাট সাফল্য।
নারী শ্রমশক্তির ৬৮ শতাংশই কৃষি উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত। দেশের কৃষি আর গৃহে নারীরা দৈনন্দিন যে কাজ করে তার অবদান অসামান্য হলে এর স্বীকৃতি নেই। জিডিপিতেও এই অবদান উল্লেখ করা হয়না। নারীদের এই দুই খাতের অবদানকে স্বীকার করে নিলে দেশের সামগ্রীক উন্নয়নে, অর্থনীতিতে নারীর অবদান আরো উচ্চস্থানে যাবে। সেই হিসেবে জিডিপিতে নারীর আর্থিক অবদান ২০% হলেও বাস্তবে এই পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো নারীদের অবদানকে স্বীকার করে নিয়ে সমাজ বিনির্মাণ ও জাতির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে তাদের আরো বেশী অংশগ্রহণ এবং সম্পৃক্তায় এগিয়ে যাবে উন্নত সম্বৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সেই প্রত্যাশা থাকলো।
সুত্র: বাসস: ঢাকা, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮।

 

আকর্ষণীয় মানুষ হবেন কিভাবে


মেইক ইউরসেলফ


পৃথিবীর সব মানুষই আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে চান। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা সবারই থাকে।
এক ঘেয়ে হবেন না। নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার খুব সহজ এই কাজগুলো কাজ করবে অবশ্যই।

আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক,

ভাল শ্রোতা

একজন ভলো শ্রোতা সমস্যা সমাধানে অতুলনীয় ক্ষমতার অধিকারী হন। চমৎকার ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন। ভালো শ্রোতা সহজেই অন্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করতে পারেন। ভালো শ্রোতাকে সবাই পছন্দ করে। অজানা অনেক কিছু জানা যায়। অনেক ধৈর্যশীল হন।

অন্যদের বিষয় আগ্রহ

পারস্পারিক পরিচর্যার জন্য উত্তম প্রস্তুতির জন্য অন্যদের প্রতি আমাদের ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখানো। যখন আমরা উত্তমভাবে প্রস্তুতি নিই, তখন আমরা আমাদের উপস্থাপনা নিয়ে কম চিন্তা করে থাকি আর এর ফলে গৃহকর্তার প্রতি আমরা বেশি মনোযোগ দিতে পারি। তখন অন্যের আচরণ এর প্রতি আগ্রহ দেখানো উচিত।

বই পড়ুন

আপনি যদি বই পড়ার ভক্ত হন তাহলে যত বই পড়বেন ততই আরও পড়ার ইচ্ছে জাগবে। আর এ অতৃপ্তি থেকেই আপনার বই পড়ার আগ্রহ বাড়তে থাকবে। এতে যেমন জ্ঞানার্জন হবে তেমন আপনি অনাবিল আনন্দও লাভ করবেন।

পরিচ্ছন্ন রাখুন

মানুষকে আকর্ষণ করার অন্যতম একটি উপায় হলো পরিচ্ছন্ন থাকা। নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করা। সব সময় সুন্দর হালকা কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। পোশাক পরিচ্ছদেও রাখুন পরিচ্ছন্নতার ছোঁয়া।

সূত্র:Health knowledge

 

পাবলিক টয়লেট সমস্যা নারীদের


মৌসুমী ইসমাত আরা (নারী সংবাদ)


স্কুলগুলোতে এসএসসি পরীক্ষা চলছে। স্কুলের চারপাশে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ রকমই একটি স্কুলের কাছাকাছি রাস্তার পাশে বসে আছেন মায়েরা। কেউ কেউ খবরের কাগজ, আবার কেউ কেউ বিছানার চাদর নিয়ে এসেছেন সাথে, তা বিছিয়ে বসেছেন। এখন ঘর থেকে বাইরে বের হলেই পানির বোতল, ছাতা আর নাস্তার বক্স মহিলাদের অনুষঙ্গ। অনেকে আবার একটু ছায়ার আশায় কাছাকাছি আবাসিক এলাকার বহুতল ভবনগুলোর ফটকের পাশে গিয়ে বসেছেন। তিন ঘন্টার পরীক্ষা। আসতে হয়েছে হাতে একটু সময় নিয়েই। যানজট এখানে নিত্যনৈমিত্তিক, তাই পরীক্ষার সময় কোন অভিভাবকই ঝুঁকি নিয়ে চান না। তাই বাসা থেকে একটু আগেই বের হতে হয়। আবার পরীক্ষা শেষে ছাত্র-ছাত্রীদের হল থেকে বের হতেও আধ ঘন্টা সময় লেগে যায়। তারপর বাড়ি ফেরা। সবমিলিয়ে ৬/৭ ঘন্টার ধাক্কা। এই পুরোটা সময় বাথরুমে না গিয়ে থাকাটা একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। অপেক্ষমান মায়েদের অনেকেই রীতিমত বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এটি স্কুলগুলোর সামনে অপেক্ষমাণ নারীদের টয়লেট সমস্যার নৈমিত্তিক চিত্র।
এটি কেবল সমস্যাই না একই সঙ্গে বিড়ম্বনাও। তাহলে এখানে স্কুল কর্তৃপক্ষ এসব দেখেও দেখেন না। আর পাবলিক টয়লেট তো আশেপাশে নেই বললেই চলে।
পাবলিক টয়লেটের সমস্যাটি কোনভাবেই নতুন নয়, অনেক পুরনো একটি বিষয়। ২০১৭ সালের এক সমীক্ষায় জানা যায়, ঢাকায় ৫০ লাখ পথচারীর জন্য টয়লেট আছে মাত্র ৪৭টি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যবহারের অযোগ্য। কতগুলো আবার বন্ধ থাকে। যেগুলো চালু আছে সেগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বলতে কিছু নেই। প্রায় পৌনে দুই কোটি ঢাকাবাসীর মধ্যে প্রায় অর্ধেক নারী হলেও তাদের জন্য পৃথক কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। টয়লেটের অভাবে ঢাকার অলিতে-গলিতে মানুষ প্র¯্রাব পায়খানা করে থাকে। এতে করে পরিবেশের মারাত্মক দূষণ হচ্ছে। টয়লেট নিয়ে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের শেষ নেই।
ডিএসসিসির একজন কর্মকর্তা জানান, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উন্নতমানের বেশ কয়েকটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে কয়েকটি চালুও হয়ে গেছে। বাকিগুলোর কাজ শেষ হলে টয়লেট সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।
অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁয় বাথরুমের ব্যবস্থা থাকে না। আবার মহিলাদের পক্ষে সবসময় দূরে দূরে যাওয়াও সম্ভব নয়। ছয়-সাত ঘন্টা সময় কিন্তু বেশ দীর্ঘ একটি সময়। অভিভাবকরা কেউই নিশ্চিন্তে কোথাও বসতে পারেন না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘসময় টয়লেটে না গেলে রোগ সংক্রমণ হতে পারে এবং ইউরিন ইনফেকশন ও কিডনি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মহিলাদের অনেককেই বয়স অথবা শারীরিক সমস্যার কারণে পড়তে হয় অস্বস্তি আর লজ্জার মুখে। তাই অনেক সময় অনেক নারীকে ভবন মালিকদের কাছে অনুনয়-বিনয় করতে হয় তাদের ওয়াশরুম ব্যবহারের জন্য।
অনেক বয়স্ক মহিলা অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে ডায়াপার ব্যবহার করে। কিন্তু এই সমস্যা হাতে গোণা। ডায়াপার সহজলভ্য পণ্য নয় সবার জন্য, আবার এ দেশের মহিলারা এটি ব্যবহারে একেবারেই অভ্যস্ত নয়। শয্যাশায়ী রোগীরা অনেকেই এখন ডায়াপার ব্যবহারে কিছুটা অভ্যস্ত হয়েছেন। কিন্তু অবশ্যই ডায়াপার পাবলিক টয়লেটের কোন বিকল্প নয়। পরিচ্ছন্নতার জন্য পানির ব্যবহার এ দেশের অরিহার্য ।
যেখানে গণসমাবেশের প্রয়োজন থাকে, সেসব স্থানে, বিশেষ করে মহিলাদের জন্য পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করা জরুরি।
ফার্মগেটে এক বিকেলে ঘরমুখী মানুষের প্রচন্ড ভিড়। বাসগুলোও থামার কোন চেষ্টা না করেই শাঁ করে ছুটে চলে যাচ্ছে গন্তব্যের দিকে। একটি দুটি লেগুনা যাত্রী নিয়ে আসছে, কিন্তু ভেতর থেকে যাত্রীরা ফার্মগেটে নামার আগেই তাতে লাফিয়ে উঠে পড়ছে। ভিড়ের মধ্যে বিভিন্ন বাসের মহিলা যাত্রীও অনেক। নিরূপায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকেই এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। এর মধ্যে একজন বয়স্ক নারীকে একটু এগিয়ে গিয়ে ইন্দিরা রোডের এক ভবনের দারোয়ানকে অনুরোধ করলেন তাকে একটু ওয়াশরুম ব্যবহারের অনুমতি দিতে। দারোয়ান টেলিফোনে কারো অনুমতি নিয়ে মহিলাকে তাদের জন্য নির্দিষ্ট বাথরুমে নিয়ে গেলেন। দেখাদেখি আরো কয়েকজন মহিলাও এই সুযোগটুকু নিলেন। অপরিচিত কাউকে সবসময় অনুমতি দেয়া সম্ভব হয় না বাড়ির দারোয়ানের পক্ষে। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যার সমাধান হতে পারে এসব জায়গায় যথোপোযুক্ত পাবলিক টয়লেট স্থাপন।
পহেলা ফাল্গুনের উৎসব অথবা পহেলা বৈশাখের বিশাল আয়োজন হাজার হাজার মানুষ খোলা জায়গায় অংশ নেন। সেখানেও নারী ও শিশুদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। এমন অনেকেই আছেন, যাদের বয়স একটু বেশির দিকে, ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে এবং এসব উৎসবে গাড়ি অনেক দূরে রেখে অনেকখানি পথ হেঁটে যেতে হয় অনুষ্ঠানস্থলে। এসব কারণে তারা এখন ইচ্ছে থাকলেও উৎসবে অংশ নিতে পারেন না। এ সমস্যা সমাধানে সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এসব বিনোদোনে অংশ নিতে চান না। সমস্যাগুলোর সাথে মানসম্মানের বিষয়টিও জড়িত। সেখানে আয়োজকরা ওপেন প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করেন, সেখানে অবশ্যই পাবলিক টয়লেট বড় একটা চোখে পড়ে না।
কিছুদিন আগে রাজধানীর একটি রাজনৈতিক সমাবেশে দূর থেকে আসা নারী কর্মীদের এই বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়। সমাবেশস্থলের কাছে বেশ কয়েকটি মোবাইল টয়লেট ছিল। কিন্তু এই মোবাইল টয়লেটগুলোর ব্যবস্থাপনা ভালো ছিলো না। চার চাকার বিকশা ভ্যানের ওপরে স্থাপিত মোবাইল টয়লেটগুলোর উচ্চতা একটি বড় রকমের ঝামেলার বিষয় এবং সেখানে ওঠার জন্য ছিল একটি উঁচু প্লাস্টিকের টুল। টুলে পা রেখে সরাসরি ঢুকে পড়তে হয় টয়লেটের ভেতরে। পুরো বিষয়টি অস্বস্তিকর।
গুলিস্তানে এবং ফার্মগেটে স্থায়ী টয়লেট রয়েছে কিন্তু সবাই এগুলোর খবর জানেন না। আরো বেশ কয়েকটি জায়গায় স্থায়ী ওয়াশরুম থাকলেও সেগুলো ব্যবহার উপযোগী নয়। কোনটার দরজা-জানালা সব ভাঙ্গা, কোনটায় পানির ব্যবস্থা নেই, কোনটায় আবর্জনা স্তূপ হয়ে আছে। স্থায়ী ওয়াশরুমগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে ছিন্নমূল ভবঘুরে মানুষ আর নেশাখোরদের একটি দল। মহিলাদের অনেকেই, বিশেষ করে যারা জানেন, সেখানে বাথরুম আছে, তারা নেশাখোরদের উপদ্রবের ভয়ে যেতে চান না।
এসব সমস্যার ভালো সমাধান হচ্ছে নাÑ এটা দুর্ভাগ্যজনক। মোবাইল টয়লেটগুলো কেমন হলে তা সবাই ব্যবহার করতে পারবেন এবং স্থায়ী টয়লেটের সংখ্যা আরো বাড়ানো ও এগুলোর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যক্তিপর্যায়ে আগ্রহীদের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। এতে করে সর্বস্তরের মানুষের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ কমবে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যেমন মোবাইল টয়লেট থাকতে পারে, সেভাবে জেলা শহরগুলোতেও একই ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে। রেলস্টেশনে ও বাস স্ট্যান্ডগুলোর টয়ালেটগুলোকে পরিচ্ছন্ন ও ব্যববহার উপযোগী রাখার জন্য প্রয়োজন কেবল একটু সজাগ দৃষ্টি।
এসব টয়লেট যাতে প্রয়োজনে ছিণœমূল মানুষও ব্যবহার করতে পারেন, সেজন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকতে পারে। টয়লেট ব্যবহারের বিনিময়ে অর্থের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। যারা মোবাইল টয়লেট চালুর উদ্যোগ নেবেন বা নিচ্ছেন, তারা যেন অতিরিক্ত অর্থ আদায় না করেন তার সুষ্ঠু তত্ত্বাবধান থাকতে হবে। আর এতে করেই গড়ে উঠতে পারে একটি পরিচ্ছন্ন এলাকা, পরিচ্ছন্ন দেশ।
পাবলিক টয়লেট পরিচ্ছন্ন ও তাতে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থাকলে তা একদিকে যেমন সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা দেবে, অন্যদিকে পবিত্রতাও নিশ্চিত হবে। সর্বোপরি মা-বোনেরা রেহাই পাবেন অবশ্যম্ভাবী বিড়ম্বনার হাত থেকে। তাই সুস্থ নাগরিকের সুস্থ জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
সূত্র: বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)।

 

রাজধানীতে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন


নারী সংবাদ


রাজধানীর মিরপুরের শাহআলী এলাকায় স্বামীর মারধরে শাহিনা আক্তার (৩২) নামে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। গতকাল সকালে সেকশন-১ এর ডি-ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর টিনশেড বাড়ি থেকে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেমের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, শাহিনার বাড়ি মিরপুর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন কাউন্দিয়া এলাকায় এবং তার স্বামী নিরবের বাড়ি ভোলায়। ওই দম্পতির তিনটি সন্তান রয়েছে।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, নিহতের স্বামী নিরব কবুতর বেচাকেনা করে। যৌতুকের জন্য সে শাহিনাকে প্রায়ই মারধর করত। যৌতুকের টাকা না পেয়ে নিরব এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
শাহআলী থানার এসআই খন্দকার মনিরুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার রাতে পারিবারিক বিষয় নিয়ে শাহিনা ও নিরবের মধ্যে ঝগড়া বাধে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে নিরব স্ত্রী শাহিনাকে মারধর করে এবং গলায় তার পেঁচিয়ে ধরলে শাহিনা শ্বাসরোধে মারা যান। ঘটনার পর থেকেই নিরব পলাতক রয়েছে। তাকে ধরতে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাবু মিয়া বাদি হয়ে নিরবকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৭


তাহনিয়া খান


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

উমরাহ্‌ করার জন্য তাওয়াফ করা শুরু করলাম। সাতবার কাবা ঘরকে ঘড়ির উল্টা দিকের মত করে ঘুরলে একবার তাওয়াফ করা হয়। এত মানুষের ভিড়ে আমরাও আস্তে আস্তে মিশে গেলাম। ঘোরার সময় যা দোয়া মনে আসছিল তাই পড়ছিলাম। সাথে বই ছিল, সেটা দেখেও দোয়া পড়ছিলাম।

আমি যতবার তাওয়াফ করেছি ততবার আমার ভাইয়ের কষ্ট হয়েছে। মানুষের ধাক্কা যেন না লাগে, সেজন্য সে আমাকে আমার পিছন থেকে তার দু’হাত দিয়ে আগলে রেখে চলতো। আল্লাহ্‌র কি রহমত, এত মানুষের ভিতরে আমার এক ফোঁটাও ধাক্কা লাগেনি। যখনি মানুষের ভিড় দেখেছি তখনই আমি ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ পড়া শুরু করে দিতাম। কখনো জোরে , কখনো বা মনে মনে। আর আল্লাহ্‌ যে কীভাবে এত ভিড়ের মাঝে আমাকে রাস্তা তৈরি করে দিতেন, তা আল্লাহ্‌ই জানেন।

নীচে তাওয়াফের সময় একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটতো। যতবার নীচে তাওয়াফ করতাম, ততবার ভিড়ের মাঝে হঠাত করে সামনে ফাঁকা হয়ে যেত আর কোথা থেকে যেন ঠাণ্ডা বাতাস আসতো।

যাইহোক, তাওয়াফের পর মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দুই রাকাআত নামাজ পড়ে জমজমের পানি খেয়ে শুরু করলাম সায়ী করা। সায়ী করার সময় আমার হাঁটার স্পীড বেড়ে গেলো। আমি কোন দিকে না তাকিয়ে হেঁটে যাচ্ছি আর দোয়া পড়ছি। ভাবছিলাম আমরা এখন সায়ী করি টাইলস দেওয়া ঠান্ডা রাস্তায়। আর বিবি হাজেরা (র: ) যখন সাতবার দৌড়িয়েছিলেন সাফা পাহাড় থেকে মারওয়া পাহাড় পর্যন্ত ঠিক এই রাস্তাতেই, তখন তো এমন টাইলস দেওয়া রাস্তা ছিল না, ফ্যান আর এসিও ছিল না। প্রখর রোদ্রে পানির খোঁজে বাচ্চাকে রেখে দুই পাহাড়ের মাঝে দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। এসব চিন্তা করতে করতে কেমন এক ঘোর লাগা অবস্থায় ছিলাম আমি। আমার মাঝে সেই হাঁটার জোশ চলে আসছিল। একটা সময় দেখলাম আমাকে পিছন থেকে ডাকা হচ্ছে। আমি ফিরে তাকিয়ে দেখি দলের অনেক আগে চলে এসেছি। আমার ভাইও আমার সাথে নেই। আবার দলের ভিতর এসে একসাথে সায়ী করা শেষ করলাম।

উমরাহ্‌ শেষ, এখন হোটেলে গিয়ে চুল কেটে এহরাম মুক্ত হবার পালা। হোটেলের পথে যেতেই অনেক নাপিতের দোকান। আমার ভাই এক দোকানে ঢুকলো চুল কাটতে। আমি বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। এত পানির পিপাসা পেয়েছিল যে সামনে কিছু দোকানে গিয়ে জুসের খোজ করছিলাম। ফ্রেশ দুই গ্লাস জুস কিনে আবার আসলাম ভাই যেখানে চুল কাটছিল সেখানে। চুল কাঁটা শেষ নাকি দূর থেকে উকি দিলাম। দোকান খালি। শুধু একজন কাস্টমার। আত্মা ধক করে উঠলো । আমার ভাই গেল কই ? আমি কি ঠিক দোকানের সামনেই আসলাম ? ভাইয়ের নতুন ফোন নাম্বারটাও তো নেওয়া হয়নি। এখন কি করবো ? ভাইকে খুজব নাকি হোটেলে ফিরে যাব ? কয়েক সেকেন্ডের মাঝে এত কিছু ভেবে ফেললাম। ভাবতে ভাবতেই দেখি সেই কাস্টমার নাপিতের সাথে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছে। গলা তো ভাইয়ের মতই লাগছে দেখি। দোকান থেকে বের হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বড় এক হাসি দিল। ইয়া আল্লাহ্‌ ! এইটা দেখি আমার ভাই। পুরো বেল মাথা। আমি কি বোকা, তাকে চিনতেই পারিনি। সে যে এমন নেড়া হবে ভাবতেই পারিনি। ভেবেছিলাম চুল ছোট করবে। সে বলেছিল নেড়া হবে না। কিন্তু চুল কাটার সময় সে মত পরিবর্তন করে। আমার জানে পানি ফিরে আসলো। আমার অবস্থা শুনে সে হাসছিল।

হোটেলে গিয়ে সে আমার চুল কেটে দিল। গোসল করেই আবার মসজিদের দিকে রওনা দিলাম জুম্মার নামাজের জন্য। অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছিল মনে। এত সহজে উমরাহ্‌ করে ফেলেছি, ভাবতেই অবাক লাগছিল।

হজ্জের সপ্তম শিক্ষা- মানুষ যখন কোন ভাল কাজ করার চেষ্টা করে, আল্লাহতায়ালা সেই চেষ্টার জন্য কাজটাকে সহজ করে দেন। উমরাহ্‌ শেষে মনে হচ্ছিল, এত সহজ উমরাহ্‌ করা ? আসলে আল্লাহ্‌ই সহজ করে দিয়েছিলেন।

পর্ব-৬

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৬

তাহনিয়া খান


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

আমাদের বাস চলা শুরু করলো মক্কার দিকে। পথ আর শেষ হয় না। মরুভূমির মাঝখান দিয়ে পিচ ঢালা রাস্তা। হঠাত করে একটা দুটো বাড়ি চোখে পরে। মাঝে মাঝে উট দেখা যায়। পথেই মাগরিবের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়াতে বাসেই নামাজ পড়ে ফেললাম। আমার ভাই নামাজ পড়ে লম্বা এক ঘুম দিল। আমি চলন্ত বাসে বা ট্রেনে ঘুমাতে পারিনা। অন্ধকার ঘন হয়ে আসাতে দূরে তেমন কিছু দেখাও যাচ্ছিল না। শুধু মক্কার ভিতরে ঢোকার সময় রাস্তায় যে বড় করে রেহালে কোরআন শরীফ রাখার আকৃতি করে গেইট বানানো হয়েছিল সেটা দেখতে পেলাম। ভাইকে ডেকে বললাম মক্কায় ঢুকে গিয়েছি।

মক্কায় ঢুকেও নিয়মের শেষ নেই। কতবার যে বাস থামলো আর আমাদের মাথা গুনলো আর খাবার দিল, হিসাব নেই। খাবারের বাক্সের মাঝে থাকতো বিস্কিট, খেজুর, মধু আর কেক। প্রথমে একবার দু’বার এই খাবার খিদার সময় ভালোই লাগতো। কিন্তু পরবর্তিতে এই খাবারের বক্স এত পেয়েছি যে কেউ সেধে দিলেও নিতাম না।

মক্কায় যখন আমাদের হোটেলের সামনে এনে রাখা হলো, তখনই হারাম শরীফরে থেকে এশার আজান শুনতে পেলাম। মন তো আর মানে না, মনে হচ্ছিল সব ফেলে ছুটে চলে যাই মসজিদে। কিন্তু উপায় নেই। কিছু ফর্মালিটিস শেষ করে আমাদের মোয়াল্লেম সবাইকে বিশ্রাম নিতে বললেন এবং পরেরদিন সকালের জন্য প্রস্তুত থাকতে বললেন। সকালে তিনি আমাদের উমরাহ্‌ করতে নিয়ে যাবেন। তারপর আমরা নিজেদের ইচ্ছামত চলাফেরা করতে পারবো।

পরের দিন ছিল শুক্রবার। অদ্ভুত এক ঘটনা হয়েছিল আমাদের। মক্কায় প্রথম নামাজ পড়লাম জুম্মার নামাজ। মদিনায় প্রথম ও শেষ নামাজ পড়েছিলাম জুম্মার নামাজ। আমরা হোটেলে এসেই এশার নামাজ পড়ে শুয়ে গেলাম। ঘুম কি আর আসে। ফজরের নামাজ পড়েই সবাই হোটেলের নীচে চলে আসলাম। আমাদের মোয়াল্লেম আমাদের কে একটা করে কমলা রঙের কাপড়ের টুকরো দিলেন, যেখানে এজেন্সির নাম বড় করে লেখা ছিল। যাতে সবাই এক সাথে থাকতে পারি আর হারিয়ে না যাই দল থেকে, সেজন্য এই ব্যবস্থা।

হোটেল থেকে বের হয়েই ইবরাহীম খলিল রোড। একটু হাঁটলেই হারাম শরিফের দুটো মিনার দেখা যায়। হোটেল থেকে হারাম শরীফ যেতে ৫-৬ মিনিট লাগতো। একটু আগালেই দেখলাম কবুতর চত্বর। মক্কা মদিনায় এত কবুতর দেখেছি, তারা মানুষকে এক ফোঁটাও বিরক্ত করতো না, এমনকি কোথাও বাথরুমও করতো না। আশ্চর্য লেগেছে ব্যাপারটা। নামাজের সময় যখন মানুষজন নামাজ পড়তো , তখন কোথায় যেন এসব কবুতর চলে যেত।

যাই হোক, কবুতর চত্বর পার হতেই উত্তেজনায় বুক কাঁপছিল। আমার ভাই তার ডান হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুধু বলছিল, আপু, আল্লাহ্‌ নিয়ে আসছে আমাদের, আল্লাহ্‌ নিয়ে আসছে। সে যতবার এই কথা বলছিল , ততবার আমি আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলছিলাম। ভাবছিলাম, দুনিয়াতে তো কত লোক আছে, সবার মাঝখান থেকে আল্লাহ্‌ আমাদের এখানে উনার মেহমান করে নিয়ে এসেছেন। এত সম্মান তিনি আমাদের দিয়েছেন। সারা জীবন সেজদায় পড়ে থাকলেও তো এর শুকরিয়া আদায় হবে না।

মসজিদের ভিতর ঢুকলাম। দূর থেকেই একটা পিলারের আড়াল থেকে কালো ঘরটা দেখা যাচ্ছে। আমি লিখে প্রকাশ করতে পারবোনা আমার মনের অবস্থা। অনেক কিছু প্ল্যান করে রেখেছিলাম যে আমি এই দোয়া করবো, সেই দোয়া করবো। আমি সব ভুলে গেলাম। শুধু বলে যেতে লাগলাম আল্লাহ্‌ আমার গুনাহ মাফ কর, প্লিজ মাফ কর। যতক্ষন পর্যন্ত না মন স্থির না হলো, আমি এই একই দোয়া পড়েই যাচ্ছিলাম। মন স্থির হওয়ার পর অন্য দোয়া করেছিলাম। দোয়া শেষে পিছনে ফিরে দেখলাম আমার ভাই তখনো দোয়া করছে। আর আমার দলের লোকেরা নেই। একটু এগিয়ে দেখি তারা সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এর মাঝে আমার ভাই চলে আসলো।

যে কালো ঘরটা প্রায়ই টেলিভিশনে দেখতাম, সেটা এখন চোখের সামনে। এত সুন্দর ! এত বড় ! তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে। আমি সারা জীবন এই ঘরের দিকে তাকিয়ে থাকলেও আমার চোখ কখনোই ক্লান্ত হবে না, কোন দিন না।

হজ্জের ষষ্ঠ শিক্ষা- আম্মু বলেছিল, আমরা যেই দোয়াই করি না কেন সেটা কবুল হবে। যা চাই আল্লাহ্‌ সেটাই দিবেন। যখন প্রয়োজন তখন দিবেন। যে জিনিস চাই সেটা যদি আমার দরকার না লাগে, তাহলে যেটা আমার দরকার সেটাই দিবেন। আর এই দুনিয়াতে যদি কিছু না পাই তাহলে পরকালে এই দোয়ার বিনিময় পাবো। মানে দোয়া কবুল হবেই হবে। আমার আব্বু আম্মু সবসময় দোয়া করেছেন যেন আমরা তিন ভাই বোন হজ্জ করতে পারি। আমি নিজেও দোয়া করেছি। আল্লাহ্‌র স্পেশাল রহমতে দোয়া তো কবুল হয়ে গিয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি যে বয়সে হজ্জ করতে গিয়েছি সেটা আমার জন্য একদম সঠিক সময়। শারীরিক ও মানসিক ভাবে আমি ছিলাম পরিপুর্ন। আল্লাহ্‌র কাছে চেয়েছিলাম কাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো। আল্লাহ্‌ আমাকে সেই ঘরের সামনে নিয়ে দাড়া করিয়েছেন। এত বড় স্বপ্ন পূরণের পর আমার হদয়ে ও মস্তিষ্কে গেঁথে গেল দোয়া কখনোই ব্যার্থ হয় না। কখনোই না।

পর্ব-৫

 

জ্ঞানার্জন আমাকে বিনয়ী করছে তো?


আফরোজা হাসান


ছোটবেলা থেকে যদি জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার থাকে তাহলে সামনে এগিয়ে যাওয়াটা অনেক সহজ হয়ে যায়। তেমনি শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যটা জানা থাকলে জ্ঞানার্জন করাটাও অনেক আনন্দদায়ক হতে পারে। কিন্তু এরজন্য শিক্ষায় থাকতে হবে গভীর নিষ্ঠা। কোনমতে দু’চার দিন শিখেই বাজিমাত করে দেয়া কখনোই সম্ভব নয়। মানুষের স্বভাব হচ্ছে কোন একদিকে মনকে স্থির রাখতে চেষ্টা করেনা। নানা দিকে মনকে ছড়িয়ে দেয়। তাই শেষ পর্যন্ত কিছুই করতে পারেনা। শিক্ষা দ্বারা না পারে নিজেকে গড়তে, না পারে অন্যকে সাহায্য করতে। আমার মতে জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্য হতে হবে নিজের পা দুটোকে মাটিতে শক্তভাবে স্থাপন করা। জ্ঞান দ্বারা প্রথমে একনিষ্ঠ ভাবে নিজের উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে। নিজেকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে সবার আগে। তাহলেই কেবল সম্ভব হবে জ্ঞানকে যথাযথ কাজে লাগানো।

মানবজীবনের উদ্দেশ্যে সফল হওয়ার জন্য আমাদেরকে নম্র ও বিনয়ী হতে হবে। কারন মানুষ যত নম্র ও বিনয়ী হয় ততই তার মর্যাদা উন্নত হয়। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন-“ আমি তাদের পরকালে শাস্তি দেবোনা, যারা উদ্ধত স্বভাবের নয়, আর যারা অন্যের অনিষ্ঠ করার ইচ্ছে পোষণ করেনা।” ঔদ্ধত্য মানুষের চরিত্র মাধুর্য নষ্ট করে, অহংকার বাড়িয়ে দেয়। আর অহংকার মানুষকে অধঃপতনের সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে যায়। অহংকার মানুষকে আত্মচিন্তায় বিভোর রাখে। কিন্তু কর্তব্যবোধ ও পরমতসহিষ্ণুতা মানুষকে কল্যাণকামী মানুষে পরিণত করে। কৃতজ্ঞতাবোধ যেমন সকল সৎ গুনের জননী, শিক্ষা তেমন বিনয়ের জননী।

শিক্ষা অর্জনে জ্ঞানের প্রসারতা বাড়ে, আর জ্ঞান মানুষকে বিনয়ী, নম্র ও ভদ্র হতে শেখায়। যিনি অহংকার পরিত্যাগ করে ফলবান বক্ষের ন্যায় গুনভারে নুয়ে পড়ে এবং ছোট বড়, ধনী দরিদ্র সকলকে সমভাবে ভালবাসতে পারেন তিনিই প্রকৃত মানুষ। অহংকার সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য। কেননা আল্লাহ অহংকারীদের ভালোবাসেন না। রাসুল সঃ বলেছেন-“ যারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য বিনয়ী মনোভাব পোষণ করে, আল্লাহ তাদের সম্মান ও মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।” তাই সবার আগে লক্ষ্য রাখতে হবে জ্ঞান বিনয়ী হতে ও নম্র হতে সহায়তা করছে কিনা। কারণ বিনয় ও নম্রতা দ্বারা মানুষ পরম শত্রুকেও বন্ধুতে পরিণত করতে পারে।আর উদ্ধত বা অহংকারে বন্ধুও পরিণত হয় শত্রুতে। তাই বিনয় ও নম্রতার প্রয়োজনিতা অপরিসীম।

জীবনের সর্বক্ষেত্রে অবশ্যই বিনয়ী আচরণ করতে হবে কিন্তু সাথে সাথে মনে রাখতে হবে বিনয়ী মানে এমন নয় যে অনুচিত কাজ বা ভ্রান্ত কথা শুনেও চুপ করে থাকবে হবে। মানুষের প্রতি মানুষের সুবিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, সুন্দর ও কল্যাণের জন্য, সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জন্য বিনয় ও নম্র ব্যবহার যতখানি প্রয়োজন, ঠিক ততখানিই প্রয়োজন অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। একথা স্মরণ রেখেই নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী হতে হবে।

 

মিতু চলে গেলো


জুয়াইরিয়া জাহরা হক


চাচা দুই দিন পরপর বাসায় আসেন ।
বক্স ভরে খাবার আনেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। সব শেষে বাসাটা বদলানোর কথা বলে যান। আমি শুনি। চলে গেলে এক কড়াইয়ে ভাত তরকারি গরম বসাই। জানালা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে প্রায় প্রতিবারই খাবার পুড়িয়ে ফেলি।
বিল্ডিংটার পাশে একটা নর্দমা। প্রচুর মশা আসে রাত্রে। আমি মশারি টাঙাই না। মিতু থাকলে একদিন পর একদিন টাঙাতেই হত। দিন ভাগ করা ছিলো। যেদিন আমি মশারি টাঙাবো, সেদিন কোলবালিশ আমার। পরেরদিন আবার ওর। হাটু ব্যাথা-কোমর ব্যাথার জন্য মাসে দুই দিন বোনাস। সেদিন মশারিও টাঙানো লাগবে না আবার কোলবালিশও পাবো!
রাতে আমার ঘুম হয় না। বাতি নিভিয়ে দিলে সিলিং এ তারা জ্বলে। সাথে অনেকগুলো গ্রহ। নীলক্ষেত থেকে আলো জ্বলা এই স্টিকারগুলো আমিই এনে দিয়েছিলাম মিতুকে। পকেটে চিরকুট দিয়ে দিতো। টিফিন ক্যারিয়ারে চিঠি লিখে দিতো। শেষমেশ যেদিন মনে করে নিয়ে গেলাম, সেদিন তো কেঁদেই দিলো!
‘দরকার নাই। কেন আনলেন? ফেলে দেন সব ‘, এসব বলার পর চোঁখ মুছতে মুছতে চেয়ার – মোড়া দিয়ে উঠে সিলিংটা আমার সৌরমণ্ডল বানিয়ে ফেললো!
শেষরাতে একটু ঘুম হলে খুব ভাল্লাগে! যদি মিতুকে
স্বপ্নে দেখি! গত সপ্তাহে একবার দেখেছিলাম। কালো শাড়ি গায়ে। ছাদে কাপড় নাড়ছে। কি যে সুন্দর লাগছে!

মিতুর সাথে আমার বিয়েটা দেন চাচা। বাপ-মা মরা ছেলে, নীলক্ষেতের ফটোকপির দোকানের কর্মচারীর জন্য এর চাইতে ভালো রিশতা আর হয় না। মেয়েরও বাপ মা নাই। নানির কাছে থাকে। দেখতে ভয়াবহ সুন্দর। সমস্যা সামান্য, কোন এক বখার সাথে দুই একবার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলো!
প্রথমে একটু খুতখুত লাগলেও মিতুকে দেখার পর বেমালুম সব ভুলে গেলাম। কোন সুস্থ মস্তিষ্ক এতো সুন্দর মানুষ দেখার পর ঠিক থাকতে পারে না। আমিও পারি নি! হকার্স মার্কেট থেকে সুন্দর দেখে শাড়ি কিনলাম। পায়ের মাপ আন্দাজ করে পুতি বসানো একজোড়া জুতা সাথে মায়ের একটা নাকফুল। ট্রাংক ঘেটে একটা ছোট টিকলিও পাওয়া গেলো!
এই বাসায় মিতুকে নিয়ে উঠি। এক রুমের বাসা এখন আlর পাওয়া যায় না। সাবলেট ভালো লাগে না। কার্ডবোর্ড দিয়ে আলাদা করা। একপাশ থেকে আরেকপাশের কথা দিব্যি শোনা যায়! অনেক কষ্টে শনির আখড়ার এই বাসাটা পেয়েছিলাম।
বাসায় উঠার পর মিতু সুন্দর করে ঘর গুছিয়ে ফেললো। একটা আলনা, একটা ছোট কাঠের টেবিল আর ঘুমাবার জন্য একটা তোষক। এই ছিলো সব মিলিয়ে। কিন্তু কি কারনে যেন ঘরটা অসাধারণ সুন্দর লাগতো!
এখন কেমন এলোমেলো করে রাখি। মিতু থাকলে খুব রাগ করতো। মিতু খুব গোছানো মেয়ে। চলে যাওয়ার দিনও ঘরটা গুছিয়ে রেখেছিলো।
পরিষ্কার মনে পড়ে, আমি রাত করে বাড়ি ফিরেছি। দেখি দরজা খোলা। ভেতরে ঢুকে দেখি ফ্যান ঘুরছে। একটু যেন কেমন লাগলো। মিতু বিছানা পেতে ঘুমিয়ে আছে। ডাক দিতে যেয়ে দেখলাম মুঠ করা একটা কাগজ। হাতে ছোঁয়া লাগতেই বুকটা ধক করে উঠলো! এতো ঠান্ডা কেন!
চিরকুটে কিসব আজেবাজে কথা লিখে রেখেছে! মাফ চেয়েছে। বিয়ের আগের সেই ছেলেটাকে ভুলতে পারেনি! বিষ খেয়েছে!
হাসপাতাল নিবো। হাতে একদম টাকা ছিলো না। আলনার পেছনে একটা মাটির ব্যাংকে মিতুর জমানো টাকা ছিলো। প্রতিদিন আমার থেকে নিয়ম করে ও পাঁচ টাকা নিতো। পাঁচ হাজার টাকা হলে একটা পুরান খাট কেনার প্ল্যান ছিলো।
মিতু জানতে পারলো না ও চার হাজার পঁচাত্তর টাকা জমিয়েছিলো!

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৫


তাহনিয়া খান


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

বোর্ডিং হয়ে গিয়েছে, ইমিগ্রেশন হয়ে গিয়েছে, বসে আছি প্লেনে উঠার অপেক্ষায়। এর মাঝে ফজরের নামাজের সময় হয়ে গেলো। হ্যান্ডব্যাগ থেকে জায়নামাজ বের করে নামাজ পড়ে নিলাম। নামাজের জন্য একটা পার্টিশন দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অযু করাই ছিল। পালা করে মেয়েরা সব নামাজ পড়ে নিল। ছেলেরা সবাই জামাত করে নামাজ পড়ে নিল। খুব ভালো লাগছিল। সবাই এহরামের কাপড় পরা।

আমার ভাই তাপস একটু পর পর বলছিল, আপু, কাপড় ঠিক আছে তো ? শরীর দেখা যাচ্ছে না তো ? তার অস্বস্থি কাটে না। সে হজ্জে যাওয়ার আগে নতুন কেডস, মুজা কিনে বাসায় আনে। আমি দেখে বলেছিলাম, তুই সেখানে কেডস নিয়ে কি করবি? সে বললো, কেনো হাটতে হবে না অনেক, কেডস পরে স্পীডে হাটতে পারবো। তখনো সে এহরামের নিয়ম কানুন জানে না। আমি তাকে বললাম, তুই কাফনের কাপড়ের মত দুই টুকরা কাপড় আর দুই ফিতার স্যান্ডেল ছাড়া কিছুই পরতে পারবি না। সে আকাশ থেকে পরলো যেনো। বলে, কি বল এসব? নীচে কিছুই পরা যাবে না ? আমি হাসতে হাসতে শেষ। এখন এয়ারপোর্টে এসে সে অস্বস্থিতে ভুগছে। তার শুধু মনে হচ্ছে শরীর দেখা যাচ্ছে। একটু কেমন বিরক্ত। অথচ এই ছেলে, হজ্জের পড়ে বলেছে, এখন থেকে মাঝে মাঝে এহরামের কাপড় পরে বসে থাকবো। সে খুব সুন্দর করে খুব তাড়াতাড়ি এহরামের কাপড় পরতে পারে।

ফজরের নামাজের পরে প্লেনে উঠার জন্য লাইন দিয়ে আমাদের দাঁড়াতে বলা হোল। একদম প্রথমে এক ভদ্রলোক, তারপর আমি, এরপর আমার ভাই। ভদ্রলোক আগে উঠতে যাবেন প্লেনে, হঠাত কি মনে করে পিছন ঘুরে আমাকে বললেন, আপনি উঠুন আগে। আমার এত খুশী লাগলো। বিসমিল্লাহ বলে উঠে পরলাম সবার আগে। সিট খুঁজে বসে গেলাম। জানালার পাশেই সিট। আহ ! আলহামদুলিল্লাহ্‌, যাত্রা শুরু। আমাদের রুট ছিল ঢাকা থেকে কুয়েত, কুয়েত থেকে জেদ্দা। সকালের আলো চারদিকে দেখা যাচ্ছে। ঢাকা শহর আমাদের নীচে। আমার ভাই জোর করে আমার মাথা ঘুরিয়ে দিয়ে বললো, দেখো, কত সুন্দর। আমার আবার এক্রোফোবিয়া আছে। উপর থেকে নীচে তাকাতে পারি না। আমার ভাই দুষ্টমি করে বলছে, এখন যদি প্লেন ধপ্পাস করে নীচে পরে যায়, তখন কি হবে ? আমি শুধু বললাম, বাজে কথা না বলে দোয়া পড়তে থাক। সে হাসে। তার হাসির শব্দে অন্যরা ফিরে তাকালো আমাদের দিকে। আমাদের এই হজ্জ গ্রুপের মাঝে হাতে গোনা কয়েকজন ছিলাম কম বয়সের। আর সবাই ছিল বয়স্ক মানুষ। আমরা দুই ভাই বোন এত মজা করে, হাসি আনন্দ করে হজ্জ করেছিলাম যে, আমাদের সবাই আপন করে নিয়েছিল।

কুয়েত এয়ারপোর্টে নেমে যারা এহরাম পরেননি তারা এহরাম পরে নিলেন। হাজীদের জন্য যাওয়ার রাস্তা আলাদা। হাজীদের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য সব ফর্মালিটিস তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলা হোল। সেখানেই যোহরের নামাজ পড়ে আবার প্লেনে উঠলাম। জেদ্দা এয়ারপোর্টে এসে শুরু হোল নিয়ম কানুন। বয়স্কদের খুব তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেয়। কিন্তু কম বয়সি ছেলেদের দুই হাতের ছাপ নেওয়া সহ হাজারটা নিয়ম কানুন শেষ করে ঢুকতে হোল। আমার ভাইকে বার বার বলে দেওয়া হোল আমাকে একা ছাড়া যাবে না। আসলে তাদেরও কোন দোষ নেই। অনেকেই হজ্জ করতে এসে আর দেশে ফিরে যায় না। অবশেষে ইমিগ্রেশন পার হয়ে লাগেজ খুঁজে চলে গেলাম বাংলাদেশের তাঁবুর কাছে। আমাদের সবার কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে মাথা গুনে গুনে বাসে উঠানোর জন্য লাইন করানো হোল। কতবার যে এরা মাথা গুনে আর লাইন ঠিক করে। এখনো অনেক পথ বাকি, তার মাঝে লেগেছে খিদা। এদের নিয়ম কানুন শেষ হয় না। এই ফাঁকে আসরের নামাজ পড়ে ফেললাম। মোবাইলের সিম কার্ড কিনে আনলো আমার ভাই। আর এর মাঝে এজেন্সির সৌদি মোয়াল্লেমের একেকজন লোক আসে আর নতুন লাইন করা হয়, নতুন ভাবে আমাদের মাথা গুনা হয়।

হজ্জের পঞ্চম শিক্ষা- ধৈর্য। যে যত ধৈর্য ধরতে পারবে , তার তত সমস্যা কম হবে, সমস্যা তাড়াতাড়ি মিটবে। যারা বেশী হুড়াহুড়ি করে , আগে আগে প্লেনে আর বাসে উঠতে গিয়েছে, মাথা গুনার জন্য আর নতুন লাইন হওয়ার জন্য বার বার তারা পিছিয়ে গিয়েছে। অযথা মানুষের হুড়াহুড়ি দেখে অবাক লেগেছে। পরবর্তি সময়ে যে আরো ধৈর্য ধরতে হবে আর বিরক্ত হওয়া যাবে না, তখনই বুঝে গিয়েছিলাম।

চলবে….

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৪