banner

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: May 6, 2024

 

লিসা (পর্ব-১)

দ্য স্লেভ


একটি বিশাল তেল কোম্পানির ঊর্ধ্ব পদস্থ প্রকৌশলী হিসেবে ডেভিড, ইরাক গমন করেন আশির দশকের মাঝামাঝি। নতুন দেশ, ভিন্ন সাংস্কৃতিতে হঠাৎ মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। আগা-গোড়া ভদ্রলোক ডেভিড ধীরে ধীরে মুসলিমদের সাংস্কৃতি বুঝে ফেলে এবং তাদের সাথে মিশতে তার তেমন সমস্যা হয় না।

কলিগদের অনেকে বিবাহিত এবং স্বপরিবারে বসবাস করছে। তার নিজেরও বয়স হয়েছে বিয়ে করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সে। সে সময় ইন্টারনেট না থাকাতে অস্ট্রেলিয়ার গার্লফ্রেন্ডের সাথে তার খুব একটা যোগাযোগ হত না। প্রথম দিকে টেলিফোনে বেশ কথা হত,পরে আস্তে আস্তে কথা বলার সময় সংক্ষিপ্ত হতে থাকে। এ নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ ছিল না। তবে একদা তারা চুটিয়ে প্রেম করেছে।

একই ডিপার্টমেন্টে কর্মরত ইরাকী মেয়ে সাবিনা নিজেকে বেশ স্মার্ট হিসেবেই উপস্থাপিত করে। মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও সে তার পোশাক বা মানুসিকতায় মুসলিমদের আদর্শ লালন না করায় ডেভিড বেশ কৌতূহলী হয়ে ওঠে।

একদিন লাঞ্চে উভয়ে টেবিলে সামনাসামনি বসে টুকটাক দু একটি কথা বলে। কিছুদিন পর উভয়ের লাঞ্চ টাইম বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠল। উভয়ে উভয়ের ব্যক্তিত্ব দ্বারা প্রভাবিত হল। ডেভিড জানতে পারল সাবিনা মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলেও চিন্তা চেতনায় নাস্তিক। ডেভিড স্রষ্টা সংক্রান্ত বিষয়ে তেমন চিন্তা ভাবনা করেনি তবে পারিবারিকভাবে ক্যাথলিক।

জীবনে কখনই চার্চে গমন করেনি,তবে স্রষ্টা একজন আছে সে ব্যাপারে তার দ্বিমত নেই। আবার কেউ যদি যুক্তি খাটিয়ে স্রষ্টাকে ভ্যানিশ করে দেয় তাতেও তার কিছু এসে যায় না। ফলে সাবিনার নাস্তিকতা তার ভেতর কোনো প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে না।

দিন যায়,মাস যায় তারা একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। বিষয়টি ডেভিড তার প্রেমিকাকে টেলিফোনে জানায় এবং তার প্রেমিকা তাকে শুভকামনা জানায়। ডেভিড অস্ট্রেলিয়ার প্রেমিকাকে ভুলে সাবিনার প্রেমে হাবুডুবু খায় এবং বিয়ের সিদ্ধান্তে উপনিত হয়।

একসময় সাবিনা তার পরিবারের অমতে বিয়ে করে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করতে থাকে। উভয়ের চাকুরী জীবন ও পারিবারিক জীবন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই চলতে থাকে। কয়েক বছরের মধ্যে তাদের ঘরে আসে একটি সুশ্রী কন্যা সন্তান। সে ইরাকের আবহাওয়া কয়েক বছর লালিত পালিত হওয়ার পর স্ব-পরিবারে তারা অস্ট্রেলিয়া চলে আসে।

এখানেই তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে। অস্ট্রেলিয়াতে ডেভিডের পূর্বের প্রেমিকা তার সাথে নিয়মিত দেখা করতে থাকে এবং তাকে নিয়ে ডেভিড ডিনার করা, ঘুরতে যাওয়া, শপিংয়ে যাওয়া ইত্যাদি করতে থাকে। যেহেতু তাদের সাংস্কৃতি এটাকে সমর্থন করে তাই খুবই স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে তারা একাজ গুলি করতে থাকে।

পাশাপাশি ডেভিড পরিবারের সাথেও সুন্দর সময় অতিবাহিত করতে থাকে। পরিবার তার কাছে আগে,তবে সাবেক প্রেমিকাও তার পর নয়। উভয়টিই সে স্বাভাবিকভাবে চালাতে থাকে। কিন্তু বিষয়টি সাবিনার পছন্দ হয়না। যদিও ডেভিড তাকে পছন্দ করে,কিন্তু বিষয়টি সে জানার পর থেকে কেন যেন মনে হতে থাকে তার ভালবাসায় ভাগাভাগি হচ্ছে এবং তাকে কোনো ভাবে ঠকানো হচ্ছে।

ডেভিড তার প্রেমিকার সকল বিষয় স্ত্রীর সাথে শেয়ার করে। তাকে সে প্রেমিকা নয় বরং একজন ভাল বন্ধু ভাবে এমনটাই বলে।

কিন্তু সাবিনার এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়। সে নাস্তিক হলেও অন্য একটি সাংস্কৃতির মধ্যে লালিত হয়েছে। ফলে তার পারিবার,সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও ভেতরে এক ধরনের আবেগ রয়ে গেছে। তার পারিবারিক চিন্তা,বিষয় বিশ্লেষনের ধারা সবকিছুর মধ্যেই পূর্বের সমাজের আদর্শিক প্রভাব কিছুটা রয়ে গেছে। এবং সে এটাকে বিলিন করতে পারেনা। ফলে তার স্বামী যতই স্বচ্ছতার সাথে তার সাবেক প্রেমিকার বিষয় উপস্থাপন করতে থাকে,সাবিনা ততই সন্দেহের মধ্যে পড়তে থাকে। এবং এক পর্যায়ে তার ভেতর ক্রোধের জন্ম হয়।

শীঘ্রই বিষয়টি তাদের মানুসিকভাবে অশান্তির কারন হয়ে ওঠে। এক সময় ব্যাপক বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে এবং সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তে উপনিত হয়। মামলা কোর্টে চলে যায়। তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। সাবিনা তার সন্তানকে ফেলে নিজ দেশ ইরাকে ফিরে যায়।

সেখানে সে কিছু দিনের মধ্যে বিয়ে করে তার মত জীবন যাপন করতে থাকে। (একটা সত্য ঘটনাকে অবলম্বন করে গল্পটি। অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এক গল্প। ইচ্ছা হলে পড়তে পারেন। )

চলবে….

 

চিকিৎসা দিতে ভিনদেশী বিশেষজ্ঞ আসছে, প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে,খেলাপি ঋন কমাতে বিদেশী বিশেষজ্ঞ নয় কেন?

ডা. এম এস কবীর জুয়েল


বিদেশে যেয়ে চিকিৎসা এক রকম Status Symbol হয়ে গেছে, অনেকেই আবার ইহাকে এক ধরনের বাতিকে পরিণত করেছেন, সাধারণ মানুষের এই প্রবণতাকে আমরা থামাতে পারছি না, ফলে লাখ লাখ ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে, সম্প্রতি নাগরিক পরিষদ নামক একটি সংগঠন মানব বন্ধন করেছে যার বিষয় ছিল- ‘চিকিৎসা নিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ না যাওয়ার দাবি’।

আসুন আলোচনায় আসা যাক, ব্যাপার-টি কতোখানি গুরুত্ববহ, মাহাথীর মোহাম্মদ এ পর্যন্ত কোনদিন বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাননি। তিনি যখন প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলেন, সেই সময় মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নাজুক ছিলো, উনি অসুস্থতাজনিত কারণে শয্যাশায়ী হলেন, তাকে সবাই অন্তত পাশের দেশ সিংগাপুর যেতে অনুরোধ করলেন, কিন্তু তিনি নির্বিঘ্নে না করলেন এবং যুক্তি দেখালেন, উনি যদি এ রোগের জন্য বাহিরে যেয়ে চিকিৎসা নেন, মালয়েশিয়ায় ইহার প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে অনেক দেরী হয়ে যাবে। তাহলে গরীব মানুষগুলো আর কক্ষনো-ই এ ধরনের রোগের চিকিৎসা পাবেন না কারন তারা কথায় কথায় সিংগাপুর যেতে পারবেন না।

সুতরাং মালয়েশিয়ায় তিনি সেই সময় থেকেই ‘চিকিৎসা সেবা উন্নতকরণ প্রকল্প’ নিলেন, সফল ও হলেন। আমাদের অনেকেই এখন মালয়েশিয়ায় চিকিৎসা করতে যান, অন্যান্য দেশের মানুষ ও যান, আমাদের দেশে একবার ভূটানের এক মন্ত্রী চিকিৎসা নিতে এলেন, আমাদের দেশে কি চিকিৎসা ব্যবস্থা খারাপ। মোটেও না। আমাদের চিকিৎসক-রা কি নিম্ন মানের! আমি কক্ষনো-ই তা মনে করি না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি-টাই যতো প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে। এ ধরনের নেতিবাচক চিন্তা চেতনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র প্রধান-দের নজীর দেখাতে হবে। দেশাত্মবোধের নজীর, যা মাহাথীর দেখিয়েছেন, ইহাই প্রকৃত দেশপ্রেম। তখনি অন্য দেশের মানুষও আসবে। কথায় কথায় দু-দিন পর পর ভিন দেশে যেয়ে চিকিৎসা নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ ও পাশের দেশের রাম-সাম-যদু-মদু ডাক্তারদের এদেশে অবাধে রোগী দেখতে দেয়া কক্ষনো কি দেশপ্রেমিক দেশাচার-এর লক্ষণ।

তাহলে, আমরা কেন তা করছি?

আমদের দেশে তো চিকিৎসাক্ষেত্র ছাড়াও অন্যান্য জায়গায় আরো অনেক বেশী অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, কই প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে তো একজন বিদেশী বিশেষজ্ঞ আনতে দেখলাম না, সুষ্ঠু নির্বাচন সৃষ্টিতে সাহায্য নিতে আমরা ভারতের প্রখ্যাত নির্বাচন কমিশনার ‘টি.এন সেশান’ সাহেবকে তো ডাকতে পারি।

আইনের শাসন আরো সুদৃঢ় করতে মিসেস ‘কিরণ বেদী’-কে ডাকতে পারি।

খেলাপি ঋন কমাতে একজন প্রখ্যাত বিদেশী ব্যাংকার কেন আনছি না। ড.ইউনুস সাহেবকে যদি দায়িত্ব না দেওয়া যায়, সেক্ষেত্রে অমত্য সেনদের এনেও তো চেষ্টা করা যায়।

এ দেশে যা করা আবশ্যক তা না করে অপ্রয়োজনীয় ও কম গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে অধিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তাতে কারো কারো ব্যক্তিগত সুবিধে হয়, বেশ কিছু পয়সা পকেটে আসে কিন্তু গরীব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণ অধরা-ই থেকে যায়।

ডা. এম এস কবীর জুয়েল
এমবিবিএস, বিসিএস, এম.ফিল(নিউরো-সাইকিয়াট্রি), ডক্টর অফ মেডিসিন(এম.ডি) মনোরোগ
সৌদি বিশেষায়ীত স্বাস্থ্য কমিশন সার্টিফাইড ইন সাইকিয়াট্রি এন্ড সাইকোথেরাপী
ভূতপূর্ব মনোরোগ ও মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, আল জউফ, সৌদি আরব
ভূতপূর্ব সহযোগী অধ্যাপক
এশিয়ান ইনষ্টিটিউট অফ মেডিসিন, সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কেদাহ্, মালয়েশিয়া
ইউনিট প্রধান, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সিলিং ইউনিট, মনোরোগ বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল