banner

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: May 6, 2024

 

‘নারী মুক্তি’ সময়ের অপরিহার্য দাবি!

সাজেদা হুমায়রা হিমু


নারী কেবলমাত্র একটি সত্তার নাম নয় বরং একটি চালিকা শক্তি যাকে ছাড়া পুরো পৃথিবী স্তব্ধ, স্থবির। তবুও নারীর কাঙ্ক্ষিত মূল্যায়ন হচ্ছে না কোনো ভাবেই।

তাই একবিংশ শতাব্দীর আলো ঝলমলে পৃথিবীতে দাঁড়িয়েও নারী আজ বড় অসহায়! বড়ই পরাধীন!

প্রতিনিয়তই নারী নির্যাতিত শারীরিকভাবে….মানসিক ভাবে।
নারীকে কখনো একজন মা, কখনো একজন স্ত্রী, কখনো ছেলের বউ, কখনো বোন বা কন্যা, কখনোবা একজন সাধারণ মেয়ে হিসেবে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। এ নির্যাতন শুধু পুরুষ কর্তৃক হচ্ছে তা নয়, নারী কর্তৃকও হচ্ছে।

সত্যি নারীরা আজ ভালো নেই। নারী কেন্দ্রীক বিভিন্ন সমস্যার বিষবাষ্পে জর্জরিত আমাদের প্রিয় এ জন্মভূমি।

বেশিরভাগ পরিবারেই নেই নারীর মত প্রকাশের স্বাধীনতা…নেই তার অবদান আর কষ্টের স্বীকৃতি…
যৌতুক, তালাক নারী নির্যতনের রেকর্ডে যোগ করেছে এক চরম নির্মমতা!
বিগত কয়েক বছরে জ্যামিতিক হারে বেড়েছে ধর্ষনের ঘটনা!
নারীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে সম্পত্তি থেকে…..বঞ্চিত করা হচ্ছে উপার্জনের ক্ষেত্রে।
পথে পথে চলছে নারীর শ্লীলতাহানি!
কন্যা শিশু থেকে বৃদ্ধা নারীরা পর্যন্ত প্রতিনিয়তই শিকার হচ্ছে যৌন নির্যাতনের….
বাস, অফিস, গৃহ কোন স্থানই আজ নিরাপদ নয়।
বিভিন্ন বয়সের পুরুষের দ্বারা ইভটিজিং এর শিকার নারীরা প্রচণ্ড মানসিক পীড়নে থাকছে।
আর ইতি ঘটাতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষা জীবন, কর্ম জীবন এমনকি নিজেদের জীবনেরও!

কেন আজ নারীর এই অসহায়ত্ব? কেন হচ্ছে এই নির্যাতন? তা নির্ণয়ের চেষ্টা করছেনা কেউ।

নারীর অবস্থার উন্নয়নে সময়ের সাথে সাথে প্রণিত হচ্ছে বিভিন্ন নীতিমালা, বিভিন্ন পদক্ষেপ… তবুও পরিবর্তিত হচ্ছে না নারীর অবস্থার।

তাই আল্লাহ প্রদত্ত নারীর মর্যাদা ও অধিকারের ব্যাপারে সচেতনতা আজ বড় প্রয়োজন…..প্রয়োজন সমাজের সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন….প্রয়োজন নারী নির্যাতনকারীদের প্রতিরোধে শক্তিশালী আইনের প্রয়োগ।

অযৌক্তিক সমানিধিকারের দাবীর মাধ্যমে নারীর কাঁধে কয়েক গুন বোঝা চাপিয়ে দিয়ে নারীমুক্তি কখনোই সম্ভব নয়।

তাই..
সম অধিকার নয়,
প্রাপ্য অধিকার চাই।
প্রাপ্য স্বাধীনতা চাই।

নারী দিবসের শুভেচ্ছা।

 

মনের প্রকৃতি

আফরোজা হাসান


বুঝতে শেখার পর থেকে যখনই অকারণ জেদ করেছি ভাইয়া বলতেন, “মনের যে ইচ্ছা শক্তির দ্বারা মানুষ আত্নসমালোচনা করে আত্নসংশোধনের পথে চলে আত্মোন্নয়ন করার কথা, মনের সেই ইচ্ছা শক্তিরই ভুল প্রয়োগে মানুষ অধঃপতনের দিকে ধাবিত হয়।” তখন ভাইয়ার কথা বুঝতে না পারলেও এখন জানি কারো জন্য তার নিজের মনটাই হতে পারে পরম বন্ধু কিংবা চরম শত্রু।

মনের অনেক সংজ্ঞা পড়েছি। কিন্তু মনের যেই সংজ্ঞাটি মনকে ছুঁয়ে দিয়েছিল সেটি হচ্ছে, ” মন মানুষের ভেতরে এক টুকরো প্রকৃতি।” সত্যিই মনের মাঝে দেখা মেলে প্রকৃতির সব রুপ-রঙ-বৈচিত্র্যর। মনের আছে ঋতু চক্র, বদলায় মৌসুম। মন বাগিচায় ফুল ফোটে, পাখি গায়, ভ্রমর তোলে গুঞ্জন, ঝরে পরে পাতা, শুকিয়ে যায় ফুল। মনের আঙিনা কখনো বরষায় হয় স্নাত, কখনো হয় বন্যায় প্লাবিত।

মনের আছে অতলান্ত সাগর, বহতা নদী, বদ্ধ পুকুর, টলটলে দীঘি। আছে বিশাল নীলাকাশ, মেঘমালা, নক্ষত্র, পূর্ণিমা, বিজলীর চমক। গহীন বন, চোরাবালি, নগর-বন্দর, মরুভূমি, আছে মরিচীকাও। আছে হিংস্র বাঘ, চতুর শেয়াল, মায়াবী হরিণ, দুষ্টু বানর, বিষাক্ত সাপ। ফসলের ক্ষেত, মেঠো পথ, সূর্যাস্ত, সূর্যোদয় সব সবকিছু। তাই মনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ায় জন্যও দরকার যথাযথ পূর্ব প্রস্তুতির……।

প্রায় এক যুগ আগে প্রচন্ড রকম কালবৈশাখীর ঝড় দেখে ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ভাইয়া পাশে দাঁড়িয়ে অভয় দেয়ার সুরে বলেছিলেন, মানুষের মনে মাঝে মাঝে এমন ঝড় বয় তা যদি প্রকৃতি দেখতো স্তম্ভিত হয়ে যেত তার সর্বগ্রাসী ক্ষমতা দেখে। এমন সর্বগ্রাসী সর্বনাশী ঝড়ের কবলে পতিত কিছু মনকে খুব কাছ থেকে দেখার, জানার, বোঝার ও চেনার সুযোগ হয়েছে পরবর্তীতে।

ঠিক তেমনি দেখেছি ঝড়ে তছনছ হয়ে যাওয়া মনকে আবারো নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে। বিরান হয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষেত আবারো সবুজে সবুজে ছেঁয়ে যেতে। তাই হয়তো প্রচন্ড খরায় ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া ভূমির বুকে আবারো প্রাণের পরশ বুলিয়ে যায় আকাশ থেকে নেমে আসা অঝোর পানিরাশি।

নদীর এক কূল ভাংগলে যেমন অপর কূল গড়ে। মনের অবস্থাও অনেকটা তাই। তাই আধাঁর দেখে থমকে গিয়ে পা পিছনে টেনে নেবার অবকাশ নেই। আড়াঁলে যে সূর্য প্রতীক্ষমান…….।

 

‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’একটি সম্ভাবনাময় দিন

অপরাজিতা ডেক্স


বিশ্বব্যাপী নারীদের স্বীকৃতি সরূপ তাঁদের অবিশ্বাস্য প্রতিভা, কর্মদক্ষতা, ভূমিকা এবং সৃষ্টিশীল মানবসম্পদে পরিণত হতে যে সংগ্রাম তা তুলে ধরতে এবং পাশাপাশি অন্যদের জন্য পথ তৈরি করার মন-মানসিকতায় সহযোগিতা জন্য ‘নারী দিবস’ একটি সম্ভাবনাময় দিন।

মূলত ১৯৭৫ সালের ৮ই-মার্চ এর দিনটিকে, আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ‘নারী দিবস’ পালনকারী বিশ্বব্যাপী পুরুষ ও নারী উভয়ই।

জাতিসংঘে এই বছরের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হল, ‘Press for Progress’. স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘সময় এখন নারীর : উন্নয়নে তারা, বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরের কর্ম-জীবনধারা।’ গোটা বিশ্বের নারীদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য এ বছর এরূপ প্রতিপাদ্য রাখা হয়েছে।

ইতিহাসের পাতায় নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে গুরুত্ববহন করলেও বর্তমানে নারীদের সার্বিক দিক উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসটি মানচিত্রে ক্যালেন্ডারে রাখাটি যদিও একটি কৃত্রিম পদ্ধতি, তবুও নারীদের সফলতার গল্প, বিফলতার কারণ এবং নারীদের মতামত, উদ্যোক্তা হিসাবে ভূমিকা, যুগের যুদ্ধে নারী সংগ্রামীদের সামনে আনার চেষ্টা। অধিকার শুধু নয় সচেতনা বাড়ানো মুল উদ্দেশ্য ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবসের।

কারণ, আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের ২০০৯-এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে পুরুষের চেয়ে নারী ১৬ শতাংশ পারিশ্রমিক কম পায়। অন্য এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে নারীরা কাজ করছে প্রায় শতকরা ৬৫ ভাগ।

নারীর জন্য সচেতনতা:
নারী দিবসকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক ভাবে চারটি সেক্টরের উপর নারীদের সচেতনতাকে জোরদার করা হচ্ছে,

১.শিক্ষা অর্জন
২.সহযোগিতা
৩.প্রচারণা
৪.নিজের কর্মে প্রস্ফুটিত হওয়া(সুত্র:VOGUL)।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে নারী: নারী-পুরুষের মর্যাদা নির্ণয়ে সাধারণ মানুষ মুলত দৃষ্টিপট খুঁজেন ইসলামে অর্থাৎ আল কোরআনে। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের সফলতা ও ব্যর্থতা সুস্থ চিন্তা ও সঠিক কর্মের সাথে সম্পৃক্ত। আদর্শ ও মতবাদ নারীকে শুধু নারী হওয়ার কারণে নিচু ও লাঞ্ছনার যোগ্য মনে করে। ইসলামে মর্যাদা লাঞ্ছনা এবং মহত্ত্ব ও হীনতার মাপকাঠি হলো চরিত্র ও নৈতিকতা। সুতরাং চরিত্র ও নৈতিকতা আলোকে নারী ও পুরুষ যার যত বেশি থাকবে সেই ব্যক্তিই সফলকাম।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে কথা হল ক-জন মনোবিজ্ঞানীর সাথে। একজন বলছিলেন, ‘নারী হিসেব একজন মানুষের মৌলিক দিক বললে আমি বলব, ‘আত্মমর্যাদাবোধ’। আত্মনির্ভরশীলতা, পাশাপাশি বিনয়, নিজের উপর আত্মবিশ্বাস, অধিকারের ব্যাপারে সচেতনতা যা আমার কাছে নারী হিসেবে খুব দরকারি কিছু বৈশিষ্ট্য। আমার কাছে আমার আদর্শ নারী যেমন ‘মা’। আমার সকল সমস্যার আশ্চর্য জনক সমাধান থাকে যেখানে। তিনি একজন নারী, এক-টুকর আমার রাষ্ট্রের নাম। সাইকোলজিস্ট হিসেবে পেশা জীবনটি শুরু হয়েছে। সেই যায়গায় পৌছতে সময়ের সাথে এগিয়ে গিয়েছি, পথে বাধাগুলতে পরিবার আর বন্ধুদের শক্ত হাত আমার নারী শক্তিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ফাহমিদা আফরোজ (এডুকেশনাল সাইকোলজিস্ট)

বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তন্মধ্যে – আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজানসহ, আরও অনেক দেশ। এছাড়া, চীন, মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার,নেপালে শুধুমাত্র নারীরাই সরকারী ছুটির দিন উপভোগ করেন।