banner

রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 506 বার পঠিত

 

লিসা (শেষ পর্ব)

দ্য স্লেভ


যে বার লিসা মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়ার জন্যে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করল সেটা ছিল মুসলিমদের রমজান মাস। এক সন্ধ্যার অবসরে নিজ ঘরে বসে সে টিভি দেখতে থাকে। সেখানে এক চ্যানেলে সে নারীদের মার্জিত পোশাক, এটি কেন করা উচিৎ, নারীর দেহ কেন পণ্য নয়, তাকে কে সৃষ্টি করেছে, কেন সৃষ্টি করেছে, এখানে তার উদ্দেশ্য কি, তার গন্তব্য কোথায়, পৃথিবীতে তাকে কার বিধান মানতে হবে, ইত্যাদি সম্পর্কে অত্যন্ত চমৎকার একটি বক্তৃতা শোনে।

ওই সন্ধ্যায়ই তার মাথায় হঠাৎ করেই কিছু প্রশ্ন প্রবেশ করে- আমি কে ? আমি এখানে কেন ? আমার উদ্দেশ্য কি ? আমার গন্তব্য কোথায়?  উক্ত টিভি অনুষ্ঠানে যে ইমেইল এ্যাড্রেস লেখা ছিল সে ঠিকানায় সে মেইল করে দেখা করতে চায়। ঘন্টা খানিকের মধ্যেই শেখান থেকে তাকে ফিরতি মেইল করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং পরের দিন সকালে একটি সময় নির্ধারণ করেন। পরদিন লিসা শেইখের সাথে দেখা করেন এবং তার সারা জীবনের যত মৌলিক প্রশ্ন ছিল তা একে একে করতে থাকে। তার মনে হতে থাকে-সে যেন সদ্য ভূমিষ্ট শিশুর মত অজ্ঞ এবং জীবন সম্পর্কে এতকাল তার কোনো জ্ঞানই ছিল না। লিসার অন্ত:দৃষ্টি খুলে যায়। জীবনের সকল রহস্যের জট খুলতে থাকে।
সে রাতে লিসা তার মস্তিষ্কের পুরো সক্ষমতা নিয়ে গোটা বিশ্ব সৃষ্টি এবং তার মালিককে খুঁজতে থাকে। এখানে তার নিজের অবস্থান কোথায় তা জানার চেষ্টা করতে থাকে। যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি সকল বিষয়ে ওয়াকিবহাল, আর নিশ্চয়ই লিসাকেও তিনি অবলোকন করছেন। লিসার মস্তিষ্কে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতির সৃষ্টি হয় এবং তা ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত দেহাভ্যন্তরে। ঠিক সেসময় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার আয়োজক এবং স্থানীয় বিশেষ কমিটির পক্ষ থেকে ফোন কল আসে। লিসা ব্যস্ত আছি,পরে কথা বলব বলেই ফোনের লাইন কেটে দেয়। পরদিন সকালে লিসা দুটি ফোন কল করে। দুটিই যুগান্তকরী। সে সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজনকারীদেরকে ফোন করে বলে আমার পক্ষে মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগীতায় গমন করা সম্ভব নয়। আমি আপনাদের প্রতিষ্ঠান এবং এ সংক্রান্ত সকল বিষয় প্রত্যাখ্যান করলাম। আপনারা অন্য কাউকে নির্বাচিত করুন। আমি আপনাদের ফোনকল পেতে চাই না। আমি মডেলিংকে বিদায় জানালাম।
লিসা শেইখ বা স্কলারকে ফোন করে বলেন-আমি আপনার সাথে এখুনি দেখা করতে চাই। শেইখ তার নিজের একটি জরুরী কাজ বাতিল করে তাকে তৎক্ষণিক আসতে বললেন।

লিসা : আমি আল্লাহকে চিনেছি, কিন্তু তিনি কি আমাকে গ্রহন করবেন ? আমি তো পাপী !
শেখ: তিনি তো এমনই মহা পরাক্রমশালী ও দয়ালু স্রষ্টা, যিনি ক্ষমা করতেই পছন্দ করেন। বান্দা পাহাড় পরিমান পাপ নিয়ে উপস্থিত হলে তিনি পাহাড় পরিমান ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হন।
লিসা: আমি সেই একক স্রষ্টা আল্লাহর উপরই ঈমান আনলাম। আসহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াহদাহু লা শারিক্কালা, ওয়া আসহাদু আন্না মুহাম্মদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু। লিসা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল, যেন তার সারা জীবনের সমস্ত পাপ, ক্ষোভ, ব্যথা,বেদনা সবকিছু গলে দূর হয়ে গেল।
শেখ তাকে ইসলাম শেখানোর জন্যে ভিডিও, বই এবং কয়েকজন উত্তম মুসলিমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। লিসা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে ইসলাম শিখতে লাগল। তার ছোট পোশাকের স্থলে এখন সর্বাঙ্গ ঢাকা পোশাক শোভা পাচ্ছে। প্রথমবার নিজেকে তার অনেক দামী কিছু মনে হচ্ছে, যার শরীর, চিন্তা চেতনা মোটেও সস্তা নয়। এক মহা পরাক্রমশালী স্রষ্টার অনুগত বান্দা হওয়ার মধ্যে যে অস্বাভাবিক মানুসিক শান্তি রয়েছে তা সে পূর্ণমাত্রায় উপভোগ করতে থাকল। যার দিন , রাত কাটত সেরা মডেল হওয়ার স্বপ্নে ও শিক্ষায়,অনুশীলনে, তার সমস্ত সময় কাটে ইসলাম চর্চায়। রাতারাতি সে মুসলিমদের জন্যে একটি উত্তম মডেলে পরিনত হয় এবং বহু নওমুসলিমের জন্যে আদর্শ হয়ে ওঠে।

ইসলাম গ্রহনের মাত্র ২ দিন পর, একদিন লিসা ঘরের ফ্লোরে পড়ে যায়। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং ডাক্তার তার ব্রেইন ক্যান্সার নিশ্চিত করে। ডাক্তার জানায়- তার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ, খুব শীঘ্রই সে মারা যাবে, হয়ত কয়েক মাস টিকবে।হাসপাতাল থেকে লিসা শেইখকে চিঠি লিখে:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ

প্রিয় শেইখ,

আমি ২২ বছর আল্লাহকে ভুলে ছিলাম, আমি তাকে পেলাম মাত্র দু সপ্তাহ হল। আর যখন আমি তাকে পেলাম, তখন তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন। হে শেইখ ! আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান। আমি আল্লাহর সাথে মিলিত হতে উদগ্রীব। শেইখ ! আমি সারাজীবন আমার পিতা-মাতাকে খুঁজেছি। আমি তাদেরকে কোথাও পাইনি। যদি আপনি তাদেরকে খুঁজে পান, তাহলে বলবেন তাদের কন্যা মহা ভাগ্যবান, সে আল্লাহর কাছে চলে গেছে। আমার পিতা-মাতা যেন আল্লাহকে চিনতে পারে। আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত করুন ! আমার জন্যে দোয়া করুন। আল্লাহ যেন আমাকে ক্ষমা করেন এবং সম্মানিত করেন !

এর কয়েকদিন পর লিসা মৃত্যু বরণ করেন।
***”আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি আর তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে”। (বি:দ্র:একটি সত্য ঘটনার উপর নির্ভর করে গল্পটা।)

লিসা-১

লিসা-২

 

Facebook Comments