All posts by Oporajita

 

আত্মহত্যা ঠেকাতে কীটনাশক নিষিদ্ধ


স্বাস্থ্যকথা


প্রতি বছর আনুমানিক দেড় লাখের মতো মানুষ আত্মহত্যা করে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক পান করে। জাতিসঙ্ঘ এইসব পণ্যের সহজে পাওয়ার ব্যবস্থা কমাতে কঠোর নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছে।

প্রায় দুই দশক ধরে শ্রীলঙ্কা ধীরে ধীরে বেশকিছু কীটনাশক নিষিদ্ধ করেছে এবং দেখা গেছে আত্মহত্যায় মৃত্যুর পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে সেখানে। তবে অন্যান্য দেশে আত্মহত্যায় ব্যবহার করা হয় এমন বেশিরভাগ বিষাক্ত কীটনাশক এখনো সহজলভ্য।

১৯৯০ এর সময় থেকে সারা বিশ্বে কীটনাশক পানে আত্মহত্যার সংখ্যা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এলেও এশিয়ার দারিদ্রপীড়িত গ্রামাঞ্চলে এখনও এটি মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

১৯৮০ এবং ৯০-এর দশকে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বেশি আত্মহত্যার হার ছিল শ্রীলঙ্কায়। আর তার মধ্যে কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশই ছিল কীটনাশক পান করে।

তবে, এসব পণ্য নিষিদ্ধকরণে দুই দশকের বেশি সময় ধরে দেশটির সরকারের নেয়া পদক্ষেপের ফলে সামগ্রিক আত্মহত্যার হার হ্রাস পেয়েছে ৭০%।

কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করা মানুষের সংখ্যা এখনো কমেনি, বরং হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে। এতে প্রমাণ হয় যে, আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষের সংখ্যা কমেনি, তবে সেসব কীটনাশক কম বিষাক্ত ছিল।

কৃষিক্ষেত্রের জন্যে কীটনাশকের প্রতিস্থাপনে এসেছে কম বিষাক্ত কীটনাশক।

অত্যন্ত বিপদজনক কীটনাশকের নিরাপদ বিকল্পের ব্যবহারে কৃষির ফলন কম হয়েছে এমন প্রমাণ বেশি পাওয়া যায়নি, বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)।

এই সময়ে অবশ্য স্বাস্থ্য সেবার মানও উন্নত হয়েছে।

ভারতের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে আত্মহত্যা করে মারা গেছেন ১,৩৪,০০০ জন মানুষ। যার মধ্যে কীটনাশকের কারণে মারা গেছেন ২৪ হাজার। যদিও এই মৃত্যুগুলো দেশটিতে সেভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

ভারতের চন্ডীগড় মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিচার্স ইন্সটিটিউটের ডা. আশীষ ভাল্লা বলছেন, সাধারণ মানুষ প্রায়শই আত্মহত্যার বিষয়টিকে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বলে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করার ভয়ে লুকিয়ে রাখে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক একদল বিশ্লেষক দেখেছেনে যে, ভারতে নিবন্ধিত কীটনাশকের মধ্যে কমপক্ষে দশটি অত্যন্ত বিষাক্ত। আর সেগুলোই অধিকাংশক্ষেত্রে আত্মহত্যায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসবের অনেকগুলোই ভারত সরকার নিষিদ্ধ করছে বা ২০২০ সালের মধ্যে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার নির্দেশিকা অনুযায়ী এখনো এক ডজনেরও বেশি অত্যন্ত বিপজ্জনক কীটনাশক সহজলভ্য রয়ে গেছে।

এশিয়ার অন্য অঞ্চলগুলোর কী অবস্থা?
২০০০ সালের পর থেকে একই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বাংলাদেশেও। এর ফলে হ্রাস পেতে শুরু করেছে আত্মহত্যায় মৃত্যুর হার। তবে কীটনাশক-বিষক্রিয়ায় হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, ২০১৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০১২ সালে একধরনের অত্যন্ত বিষাক্ত আগাছানাশক নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে কীটনাশক-বিষক্রিয়াজনিত আত্মহত্যার সংখ্যা হ্রাস পায় তাৎক্ষণিকভাবেই। আর সামগ্রিক মৃত্যুহার হ্রাসেও এটি প্রভাব ফেলে।

২০০৬ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত চীনে চালানো এক সমীক্ষায় দেখা যায়, সেখানে আত্মহত্যার সংখ্যা কমেছে এবং কীটনাশক পানে মৃত্যুর হার অত্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।

এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়- এ বিষয়ে দেশটিতে কঠোর বিধি নিষেধ প্রয়োগ, কৃষিতে কমসংখ্যক মানুষের সংশ্লিষ্টতা, নগরায়ন বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন এবং বিশেষ করে জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন।

২০০১ সাল থেকে পাঁচ বছরে ২১টি কীটনাশককে নিষিদ্ধ করেছে চীন।

দেশটির কীটনাশক ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের প্রধান ডা. দিল্লী শর্মা বলেন, এর মধ্যে কয়েকটি স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত কারণে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

তবে কয়েকটি বর্জন করা হয় বিশেষ করে আত্মহত্যায় ব্যবহারের কারণে।

– বিবিসি

 

স্ত্রীর স্বীকৃতি না দেয়ায় ‘স্বামী’র বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা

স্ত্রীর স্বীকৃতি না দেয়ায় ‘স্বামী’র বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা


নারী সংবাদ


জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী একেএম নজমুল হাসানের নামে আদালতে ধর্ষণ মামলা দায়ের হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কাহালু উপজেলার পাল্লাপাড়া গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা এক মহিলা বাদী হয়ে বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলাটি দায়ের করেন ।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া সদরের সুত্রাপুর এলাকার রিয়াজকাজী লেনের মৃত নজিব উদ্দিন আহম্মেদের পুত্র জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী এ কে এম নজমুল হাসান (৬০) ওরফে জামান ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কাহালু উপজেলার পাল্লাপাড়া গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা দুই সন্তানের জননীর পরিচয় হয়। সেই সুবাদে প্রেম থেকে ২ নভেম্বর ২০১১ নজমুল হাসানের ভাড়া বাড়ি বগুড়া সদরের কালিতলায় জনৈক কাজীর মাধ্যমে ইজাব কবুলে বিবাহ হয়।

তারপর থেকে নজমুল হাসান ও সেই নারী স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে ঘর সংসার করে। সংসারকালীন সময়ে প্রায়ই ওই মহিলা নজমুল হাসানকে রেজিস্ট্রি কাবিননামা করতে চাপ প্রয়োগ করতো। কিন্তু নজমুল হাসান বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কৌশলে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে।

গত ফেব্রয়ারি মাসের ১২ তারিখে শাজাহানপুর উপজেলার লতিফপুর মধ্যপাড়ার মোজাম্মেল হকের স্ত্রী রাবেয়া সুলতানা রানীর বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাসকালে লিপি রেজিস্ট্রি কাবিননামা করার জন্য নজমুল হাসানকে ফের চাপ প্রয়োগ করে। এতে নজমুল হাসান ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নারীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে রাতে একাধিকবার দৈহিক মেলামেশা করে। ঘটনাস্থল থেকে চলে যাবার পর নজমুল হাসান ওই মহিলার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

মহিলা ভরণ পোষণ না পেয়ে নিরুপায় হয়ে আগস্ট মাসের ২ তারিখে নজমুল হাসানের বাড়িতে গিয়ে তার সাথে দেখা করে। তখন নজমুল হাসান সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে লিপিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেয়। উপায়ান্তর না পেয়ে বিচার ও স্ত্রীর মর্যাদার দাবি নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নেওয়ায় তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ বুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বগুড়াকে তদন্তের আদেশ দেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নজমুল হাসানের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি ওই স্বামী পরিত্যাক্তা মহিলার সাথে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে বলেন, ব্ল্যাক মেইলের চেষ্টা করে মহিলাটি মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পায়তারা করছে।

তবে বাদী বলেছেন, আমি ইমামের মাধ্যমে বিয়ের পর দীর্ঘদিন এক সাথে ঘর সংসার করেছি। এ সময়ে উনি (স্বামী) সংসারের আসবাপত্রসহ সবকিছু কিনে দিয়েছেন এবং পুরো খরচ দিয়েছেন। কিন্তু কাবিনের জন্য চাপ দেয়ার কারণে তিনি আর খরচ দেন না। স্বামী ও স্ত্রী হিসেবে ঘরসংসারের অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে যা আইনজীবীকে দিয়েছি।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

অতিমাত্রায় ভালোবাসেন?

অতিমাত্রায় ভালোবাসেন?


ডা. মারুফ রায়হান খান


গতকালের অভিজ্ঞতাটা বলতে চাই৷

অতিরিক্ত ভালোবাসা জিনিসটা বোধহয় কখনও কখনও খারাপ ফল নিয়ে আসে। শুধু খারাপ না, বেশ খারাপ। গতকালের অভিজ্ঞতা বলি।

মধ্যবয়স্ক রোগী। প্রচণ্ডমাত্রার বুকে ব্যথা। বুক ধড়ফড়। ঘাম। পেশেন্ট শকে। অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা করা যাচ্ছে সম্ভবত রোগীর হার্ট এটাক হয়েছে। ইসিজিতে চলে এলো ভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া। মনিটরে দেখাচ্ছে হার্ট রেইট ২৪৩ বিটস পার মিনিট! এটা এমনই এক খারাপ অবস্থা যে কার্ডিওলজিতে কাজ করে এমন কোনো চিকিৎসক আমি দেখিনি যিনি বিশেষভাবে এলার্ট না হয়ে যান এমন রোগী এলে। ব্রেইনের মাঝে অটোমেটিক্যালি ‘স্পেশাল ইমার্জেন্সি এটেনশান’-এর সাইরেন বেজে ওঠে। পেশেন্টের যা অবস্থা তা হৃদরোগ শাস্ত্র অনুযায়ী ডিসি শক দিয়ে তার হার্টের রিদম স্বাভাবিক আনার চেষ্টা করতে হবে অনতিবিলম্বে। ডিসি শক দেওয়ার আগে আমরা পেশেন্ট পার্টিকে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলি। পরে আবার অভিযোগ না যায় ডাক্তার শক দিয়ে আমার ভালো রোগী মেরে ফেলেছে। কে-ই বা চায় অনলাইন পত্রিকার “এ কী করলেন লোভী ডাক্তার : কারেন্টের শক দিয়ে কথা বলতে থাকা রোগীকে খুন (দেখুন ভিডিওসহ)” শিরোনাম হতে?

বুঝিয়ে বলা হলো বিস্তারিত। শক না দিলে মৃত্যুর সম্ভাবনা যে প্রবল তাও জানালাম। রোগীর স্ত্রী অসম্মতি জানালেন এবং যুক্তি হিসেবে যা দাঁড় করালেন তা আমাকে রীতিমতো বিস্মিত করেছে। বললেন উনি ‘নরম’, শক দেবেন না৷ পেশেন্ট পার্টি পারমিশান না চাইলে আমরা শক দিই না। ভাবলাম ওষুধ দিয়ে চেষ্টা করে দেখা যাক। প্রোটোকোল ম্যানেজমেন্টের সব ওষুধ দেওয়া হলো। এমিওডারোন (এ রোগের প্রধান ওষুধ) নামক ওষুধটি সাপ্লাই নেই। লিখে দিলাম বাইরে ফার্মেসি থেকে ৮ এম্পুল নিয়ে আসতে। রোগীর সাথের লোক গেলেন। এই যে গেলেন তার আর দেখা মেলে না৷ আমি আরও আড়াইশো রোগীর ব্যস্ততার মাঝেও চিন্তিতবদনে রোগীর কাছে যাই। সেই ওষুধ তো আর আসে না। রোগীর স্ত্রী বসে বসে পান খায়। মেজাজ চরমে উঠে গেলো। কিছু বললে বলবে রোগীর সাথে দুর্ব্যবহার করলেন ডাক্তার। ঘণ্টা যায় দুঘণ্টা যায় তিন ঘণ্টা যায়… সে তো আসে না। রোগীর অবস্থা খারাপ থেকে খারাপ হতে থাকে। এরমধ্যে একবার এসে বলে রোগীর এখানে অস্থির লাগছে, বাসায় চলে যেতে চায়, ছুটি দিতে! আক্কেল দেখলে! দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর তারা ওষুধ নিয়ে এসেছেন। ততোক্ষণে রোগী মৃতপ্রায়। শুরু করা হলো ওষুধ। কী ভাবছেন? বেঁচে গেলো? নাহ ডাক্তাররা ম্যাজিশিয়ান না। এই রোগী বাঁচানো যায় না। কোনো চিকিৎসকের পক্ষে সম্ভব না। মনিটরে প্রায় যখন স্ট্রেইট লাইন চলে এসেছে তখন রোগীর ওয়াইফ বলে আপনারা রোগী বাঁচাতে যেভাবে ভালো হয় করেন শক দিতে চাইলে দিন!! এই কথাটা সাড়ে ৪ ঘণ্টা আগে যদি বলতেন তিনি!

এই মৃত্যুর দায়টা আসলে কার? এই রোগের চিকিৎসা আমি জানি, আমার কাছে মেশিন ছিল আমি কেন দিতে পারলাম না? আমার চোখের সামনে কেন রোগী মারা গেলো? আপনি আপনার স্বজনকে অতিমাত্রায় ভালোবাসেন মানলাম, আমিও আমার রোগীকে কম ভালোবাসি না। জানপ্রাণ এক করে আমার রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। মাঝেমধ্যে আপনার ‘আলগা আজাইরা দরদ’-এর জন্য পারি না। লোকটা শুধু তড়পাচ্ছিল–এই স্মৃতি আমাকে দংশন করে। এটা তো শুধু একটা রোগীর কথা… গতকাল ডিউটিতে নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ ছিল না এমন অবস্থা ছিল। তবুও এক রোগীর লোক প্রায় তেড়ে এসেছিল তার সিরিয়াস রোগীর জন্যে আরেক রুমে অন্য ডাক্তারকে ডাকতে বলায়। আমি আর ইন্টার্ন–কয়জনকে একসাথে দেখা সম্ভব? …রাত সাড়ে এগারোটায় যখন ফিরলাম তীব্র মাথাব্যথা, ঘুমের ওষুধ খেয়েই আমাকে ঘুমাতে হয়েছে। আমি বিনা বেতনে কাজ করি।

#পোস্টগ্রেজুয়েশানের_দিনগুলো -১০

 

প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরী ধর্ষণ

প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরী ধর্ষণ


নারী সংবাদ


বগুড়ার শেরপুরে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের রণবীরবালা গ্রামে। উক্ত ঘটনায় রোববার দুপুরে ওই কিশোরীর বাবা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ধর্ষক ফটিক মিয়া ওরফে ফছিকে (৪৫) গ্রেফতার করে। সে ওই গ্রামের এমদাদ হোসেনের ছেলে।

শেরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) বুলবুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত ফটিক মিয়া স্থানীয় রণবীরবালা বাজারে নৈশপ্রহরীর চাকরি করতেন। এক পর্যায়ে ওই কিশোরীর বাবার সঙ্গে পরিচয় ঘটে। এরই সূত্রধরে ঐ বাড়িতেও যাতায়াত ছিল ফটিকের। নিয়মিত আসা-যাওয়ার সুযোগে ওই কিশোরীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে সে। এমনকি বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ফটিক ওই কিশোরীকে একাধিকবার ধর্ষণ করে। পরে বিষয়টি পরিবারের লোকজন জানার পর ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাবা থানায় এসে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

এরপর পুলিশ রণবীরবালা বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

 

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ঘরে বানাতে পারি

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ঘরে বানাতে পারি


ঘরকন্যা


রেস্টুরেন্টে গিয়ে কিংবা ফাস্টফুডের দোকান মানেই বাচ্চাদের পছন্দ ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বেশ মজার একটি খাবার। ঘরেই তৈরি করতে পারেন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। রেসিপি হলো

উপকরণঃ
১. আধা কেজি মাঝারি সাইজের আলু,
২. হলুদ,
৩. সামান্য লবণ,
৪. ২৫০ গ্রাম তেল।

প্রণালিঃ
ভালো মানের বড় আকারের আলু, খোসা ছাড়ানো আলুকে আংগুলের সাইজে ফালি ফালি করে কেটে নেই। এরপর ফালি করা আলুগুলো ঠান্ডা পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। ১০-১৫ মিনিট পর আলুর ফালিগুলো লবণ পানি থেকে ছেঁকে নিতে হবে। ভালোভাবে আলুর ফালি থেকে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। পানি ঝরানো হলে আলুর ফালিগুলোকে সামান্য লবণ ও হলুদ দিয়ে ভালোভাবে মাখিয়ে নিতে হবে। এরপর কড়াই বা ফ্রাই প্যানে ডুবো তেল দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিতে হবে। তেল গরম হলে অল্প অল্প করে মাখানো আলুর ফালিগুলো তেলে দিয়ে আস্তে আস্তে ভাজতে হবে।

পরিবেশনঃ
লালচে আর মুচমুচে হয়ে এলে ছাঁকনি ছেঁকে তেল থেকে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তুলে নিতে হবে। এভাবে খুব সহজে অল্প সময়ে তৈরি হয়ে যাবে মজার ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।

 

গল্পে গল্পে শিশুদের কুরআন শেখা……৩

গল্পে গল্পে শিশুদের কুরআন শেখা……৩


আফরোজা হাসান


হ্যা বাবা আল্লাহ সত্যি এমন বলেছেন।
আল্লাহ আর কি কি বলেছেন আম্মু?
আল্লাহ বলেছেন প্রতিবেশীদেরকে সাহায্য করতে। প্রতিবেশী হচ্ছে তারা যারা আমাদের আশেপাশে থাকে। যেমন ধরো, আমাদের পাশের বাসায় তাসনিয়া আর তাহসান। ওরা হচ্ছে তোমার প্রতিবেশী। ওরা যদি কখনো তোমার কাছে কিছু চায় বা ওদের কিছু প্রয়োজন হয় তাহলে তোমাকে ওদেরকে সেটা দিতে হবে। কেন দিতে হবে? কারণ আল্লাহ দিতে বলেছেন। আর তুমি যদি আল্লাহর কথা মেনে চলো তাহলে কি হবে বলো তো?
আয়াত বলল, তাহলে মারা যাবার পর আমরা যখন নতুন আরেকটা জগতে যাবো যাবো তখন আল্লাহ আমাকে জান্নাত দিবেন। যেখানে আমার যা ইচ্ছে আমি করতে পারবো। যা চাইবো তাই পাবো।
তানিয়া হেসে বলল, একদম ঠিক বলেছো। এবার আম্মুর একটা প্রশ্নের জবাব দাও। এই যে তুমি আমাকে সবসময় বলো তুমি বিজ্ঞানী হতে চাও। এখন বিজ্ঞানী হবার জন্য তোমাকে অনেক অনেক পড়াশোনা করতে হবে। কিন্তু তুমি যদি একটুও পড়াশোনা না করে শুধু মুখেই বলো আমি বিজ্ঞানী হবো, আমি বিজ্ঞানী হবো। তাহলে কি আম্মু তোমার কথা বিশ্বাস করবো?
পড়াশোনা না করলে তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে কেন?
সেটাই তো! ঠিক তেমনি এই যে তুমি বললে মারা যাবার পর আমরা নতুন আরেকটা জগতে যাবো। এখন তুমি যদি এই কাজগুলো সুন্দর মত করো তাহলেই আল্লাহ বুঝবেন তুমি সত্যিই এই কথা বিশ্বাস করো।
শুধু এই কাজ গুলো ঠিকমতো করলেই আমি জান্নাতে যেতে পারবো আম্মু?
তানিয়া হেসে বলল, আমাদেরকে এই কাজগুলো তো করতেই হবে সাথে সাথে আল্লাহ আমাদেরকে এছাড়াও যা যা করতে বলেছেন তা করতে হবে। এবং যা যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ আমাদেরকে সেই কাজগুলোই করতে বলেছেন যেগুলো ভালো কাজ। আর যেগুলো পচা কাজ সেগুলো করতেই নিষেধ করেছেন। এখন বলো আমরা যদি জান্নাতে যেতে চাই এবং সেখানে যাবার পর যদি সবকিছু মনের ইচ্ছা মত পেতে চাই তাহলে আমাদেরকে কি করতে হবে?
আয়াত বলল, আল্লাহর কথা মেনে চলতে হবে।
মাশাআল্লাহ এই তো তুমি বুঝতে পেরেছো। এখন যাও পড়তে বসো।
কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর আয়াত বলল, আম্মু আমি তাসনিয়া আর তাহসানকে খেলনা দিয়ে আসি?
কেন?
আল্লাহ দিতে বলেছেন যে! আমি দিয়ে আসি আম্মু প্লিজ নয়তো আল্লাহ আমাকে জান্নাত দেবেন না।
তানিয়া ছেলেকে আদর করে হেসে বলল, আচ্ছা ঠিকআছে যাও দিয়ে এসো।
আয়াত উঠে তার রুম থেকে খেলনা নিয়ে তাসনিয়া আর তাহসানকে ডাকতে ডাকতে পাশের বাসায় উদ্দেশ্যে ছুট লাগালো।

তানিয়াও হেসে আলহামদুলিল্লাহ বলে স্বস্থির নিঃশ্বাস ছাড়লো।

চলবে…

 

গল্পে গল্পে শিশুদের কুরআন শেখা……২

গল্পে গল্পে শিশুদের কুরআন শেখা……২


আফরোজা হাসান


দুহাতে খেলনা গাড়ি বুকে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রান্নাঘরে রওনা করলো তানিয়া। প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে কিন্তু আট বছর বয়সি বাচ্চা ছেলের উপর রাগ দেখানো অর্থহীন। নতুন খেলনা কেনার পর পুরনো খেলনা আর ধরে না আয়াত। তাই পাশের বাসার ভাবীকে বলেছিলো এসে কিছু খেলনা নিয়ে যেতে উনার বাচ্চাদের জন্য। ছোট চাকরি করেন বিধায় সংসার সামলাতেই হিমশিম খেতে হয় পরিবারটিকে। বাচ্চাদের জন্য খেলনা কেনা তেমন করে হয়ে উঠে না। একগাদা খেলনা স্টোররুমে পড়ে ছিল তাই এসে নিয়ে যেতে বলেছিল তানিয়া। আয়াতকে আগেই সেটা জানিয়েছিল কিন্তু যেই বাচ্চাদেরকে নিয়ে পাশের বাসায় ভাবী এলেন অমনি বেঁকে বসলো আয়াত। কিছুতেই দেবে না তার খেলনা। ঐ বাচ্চারাও শুরু করলো কান্না। শেষ মেশ অনেক বুঝিয়ে পছন্দের কিছু খেলনা বের করে রেখে বাকীগুলো দেয়ার জন্য আয়াতকে রাজী করে উভয় দিক সামাল দিয়েছে তানিয়া। বাচ্চারা মাঝে মাঝে এত বেশি অপ্রস্তুত করে। উফফ…!
আযান শুনে মনের সব বিরক্তি ঝেড়ে ফেলে ছেলেকে ডেকে নামাজ আদায় করে নিলো তানিয়া। নামাজ সেরেই নিজের কাজে ছুট দেয় আয়াত। ছুট দেবার আগেই ধরে ফেললো তানিয়া ছেলেকে। আদর করে কাছে বসিয়ে বলল, বাবা তোমাকে না সেদিন বুঝিয়ে বললাম নামাজের সময় নড়াচড়া করতে নেই, এদিক সেদিক তাকাতে নেই। কিন্তু তুমি তো আজও নামাজের মধ্যে অনেক নড়াচড়া করেছো।
আয়াত অপরাধী কণ্ঠে বলল, আই এম সরি আম্মু। আর এমন হবে না দেখো।
তানিয়া ছেলেকে আরো কাছে টেনে নিয়ে বলল, আম্মুকে এখন সূরা মাউন তেলাওয়াত করে শোনাবে বাবা?
সাথে সাথেই সূরা মাউন তিলাওয়াত করে শোনালো আয়াত।
তানিয়া ছেলেকে আদর করে হেসে বলল, মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর হয়েছে তোমার তিলাওয়াত। সূরা মাউনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে কি বলেছেন জানো বাবা?
আয়াত আগ্রহ ভরা কণ্ঠে বলল, কি বলেছে আম্মু?
আল্লাহ বলেছেন, আমাদেরকে খুব সুন্দর করে নামাজ পড়তে হবে। নামাজের সময় নড়াচড়া করা যাবে না, এদিক সেদিক তাকানো যাবে না। তুমি যেমন বাবার সাথে নামাজ পড়ার সময় খুব সুন্দর করে নামাজ পড়ো, যাতে বাবা তোমাকে গুড বয় বলেন। তেমনটিও করা যাবে না। বাবা, আম্মু বা অন্যকাউকে দেখানোর জন্য না তোমাকে সুন্দর করে নামাজ পড়তে হবে কারণ আল্লাহ তোমাকে দেখছেন। তোমাকে গুড বয় হতে হবে আল্লাহর কাছে। বুঝতে পেরেছো বাবা?
জ্বি আম্মু আমি বুঝতে পেরেছি। আমি এখন থেকে আল্লাহর কাছে গুড বয় হবো।
ইনশাআলাহ। সূরা মাউনে আল্লাহ আরো কি বলেছেন জানো?
কি বলেছেন আম্মু?
আল্লাহ বলেছেন, আমাদেরকে গরীব-দুঃখী-অভাবী ও অসহায়দেরকে সাহায্য করতে হবে। যাদের খাবার নেই তাদেরকে খাবার দিয়ে সাহায্য করতে হবে, যাদের পোশাক নেই তাদেরকে পোশাক দিয়ে সাহায্য করতে হবে। যাদের খেলনা নেই তাদেরকে খেলনা দিয়ে সাহায্য করতে হবে।
সাথে সাথে আম্মুর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালো আয়াত। সূক্ষ্ম অপরাধ বোধের ছায়া ভেসে উঠলো চেহারাতে।
তানিয়া সেটা দেখেও না দেখার ভান করে বলল, আরো কি করতে হবে জানো সোনামণি? নিজের সাথে সাথে অন্যকেও উৎসাহিত করতে হবে গরীব-দুঃখী-অভাবী ও অসহায়দেরকে সাহায্য করতে। যেমন ধরো আম্মু কাউকে তোমার পুরনো পোশাক বা খেলনা দিতে চাইলাম। তখন তোমাকেও হাসি মুখে আনন্দের সাথে আম্মুকে সেসব দিতে উৎসাহিত করতে হবে।
আয়াত চিন্তিত কণ্ঠে বলল, আল্লাহ সত্যি এমন বলেছেন আম্মু?

চলবে…

 

সন্তান হলে কি বাবা মায়ের প্রতি ভালবাসা কমে যায় 

সন্তান হলে কি বাবা মায়ের প্রতি ভালবাসা কমে যায়


শামসুন নাহার মলি


সমবয়সী এক ভাবি প্রায়ই অনেক কিছু জানতে চান দেখা হলে,
সে দিন বল্লেন,
“আচ্ছা মলি ভাবি সন্তান হলে কি বাবা মায়ের প্রতি ভালবাসা কমে যায়?”

এক চোট ভেবে নিয়ে বল্লাম,
“ভালবাসা কমে না,বরং আমার বেড়েছে।সন্তান হবার পর বুঝেছি বাবা মা কি জিনিস,কি নিয়ামত,কত টুকো নি:স্বার্থ ভাবে তারা ভালবাসেন,কতটা ভালো চান,প্রয়োজন মেটান,বোঝেন।এটাও বুঝেছি বাবা মা সন্তানের জন্য কতটা ভাবেন,রক্ত ঘাম ঝরিয়ে মানুষ করেন।ভালোবাসা কমেনি,শ্রদ্ধা বেড়ে গেছে,নিজেকে দিয়ে বুঝেছি কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছেন,এখনো করে যাচ্ছেন আমাদের জন্য।
তবে হ্যা,সন্তান হবার পর দায়িত্ব বোধ বেড়েছে।

ভাবি কিছু বাস্তব উদাহরণ চাইলেন,
বল্লেন,”দেশে গিয়ে যখন বাবা মা আর সন্তান কে দেখা শুনা করেন কোনটা বেশি গুরুত্ব দিয়ে করেন?”

একটু চমকে গেলাম,আসলেই তো আমরা এমন এক বিন্দুতে বসা যার এক মেরুতে সন্তান আরেক মেরুতে বাবা মা।সন্তান ছোট মানুষ,বাবা মা ছাড়া অচল,কর্তব্যের খাতিরেই তো আগেই সন্তানের প্রয়োজন বা কাঁন্না থামাই।তার মানে কি এই যে বাবা মাকে ভালোবাসিনা?

আসলে একজন বাচ্চার পাশে অনেক কেই পাওয়া যায়।ক্ষুধা লাগলে কতজন খাবার দেয়,কাঁদলে খেলনা দেয়,ললিপপ দেয়,ঘুরতে নিয়ে যায়।এমন কি পটি ক্লিন ও করে আপন কতজন ই।কিন্তু ঠিক অপর মেরুর আরেক জোড়া ভালোবাসার মানুষ দের জন্য কজন এমন করে?একজন বাবা মা ৮/১০ টা সন্তান কে হেসে হেসেই লালন পালন করে,অনুভব করে প্রতিটা প্রয়োজন,সমস্যা কে।
কই ৮/১০ জন সন্তান তো পারেনা ২ জন বাবা মায়ের বৃদ্ধকালে ঠিক ওভাবে ছোট বেলার মত করে পাশে থাকতে,ভালোবাসতে,প্রয়োজন মেটাতে?

কেন পারেনা?

কারণ হলো ঐ পিছুটান,সংসার সন্তানের দায়িত্ব বোধ।কোন কোন সন্তান এত টাই উদাসিন হয়ে যান যে বাবা মার সাথে ঠিক মত কথা বলা,সময় দেয়া,খোঁজ নেয়ার ও সময় পান না।

ভাবি,আপনার কি মনে হয় ভালোবাসা কমে গেছে বাবা মায়ের প্রতি?

না ভালোবাসা আসলে কমে না,কোন কোন সন্তান ব্যালেন্স করতে পারেনা।তাদের ভালোবাসার যায়গা অনেক।কোনটাকে কত টুকো গুরুত্ব দিতে হবে,প্রাধান্য দিতে হবে তারা খেয়াল করার সময় পান না।

আমি দেশে গেলে চেষ্টা করি বাবা মা আর সন্তানের জন্য সমান ভাবে করতে।বাচ্চাদের কিছু কাজ কমিয়ে বাবা মা কে সময় দিই।

আমার বড় ভাই আর বোন সেদিন বল্লেন,
“প্রতিবেশি,দীনি ভাই বোন এর জন্য আমরা যত টুকো করি বাবা মা,শ্বশুর,শাশুড়ির জন্যও করবো।দাওয়াতে তাদের মুখে মজার মজার খাবার তুলে দিই,বাবা মা,শ্বশুর-শাশুড়ী ও মাঝে মাঝে এরকম খাবার খাচ্ছে কিনা,পরিবেশ তৈরি করতে পারছেনা খোঁজ নিবো।এটাও আমাদের কর্তব্য তাদের জন্য সেরকম বা তার চেয়ে বেশি বেশি এরকম পরিবেশ তৈরী করা।”

মেইন থিম টা হলো,আমাদের বুঝতে হবে সন্তানের জন্য,প্রতিবেশির জন্য,দ্বীনি ভাই বোন দের জন্য করতে করতে আমাদের আসল নেয়ামাত যাদের জন্য দুনিয়াতে এসেছি তাদের বঞ্চিত করছি কিনা।কোনটার প্রায়োরিটি আগে সেটা বুঝতে হবে।সন্তান দের অভুক্ত রেখে মেহমান দের জন্য জান মাল উজাড় করে দিচ্ছি কিনা কিংবা বাবা মা কে অভুক্ত রেখে সংসার বা বাইরের জগৎ নিয়ে বেশি মাতামাতি করছি কিনা।

ভাবি,একটা সময় সব থাকবে,সব হবে কিন্তু বাবা মা থাকবে না,তাই তারা যতদিন আছেন তাদের সম্মান করি,ভালোবাসি।কারণ একজন বাচ্চার পেছনে কতজন খাটে,কিন্তু একজন মুরুব্বীর ডাকে কেউ সাড়া দেয়না।বিছানা নোংরা করলে ও পরিস্কার করার কেউ থাকেনা।যে সব সন্তান রা এত বড় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে হয়তো তারাই আশাবাদী যে তাদের বার্ধক্যেও তাদের সন্তানরা পাশে থাকবে।কিন্তু বাকিরা?

দুনিয়ার সব কিছু করার সময় হয়,বাবা মায়ের সাথে কথা বলার সময় হয়না,কিসের এত ব্যস্ততা?আমি বুঝিনা।

আমার ডক্টর বলেছিলেন,তোমার সাথে কাউন্সিলিং এর জন্য নার্স পাঠাবো?
গল্প করলে তোমার স্ট্রেস কমবে,ডিপ্রেশন কমবে।
আমি না করেছিলাম।আমার স্ট্রেস কমে আমার ২ জোড়া বাবা মার সাথে কথা বল্লে।আমার বড় ভাই বোনের সাথে কথা বল্লে।যারা আমাকে দ্বীন আর দুনিয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়,প্যারেন্টিং শেখায়।এদের চেয়ে বড় আর ভালো ডক্টর আমার জীবনে আসেনি।

সেজন্যই তো শত ব্যস্ততার ভিতর ও নিজের খবর দেই তাদের,আমিও খোঁজ নিই।খেয়াল করে দেখলাম এতেই আমি ভালো থাকি। আর ভালো থাকি ইবাদাহ বাড়াতে পারলে আর পরোপকার করলে।আরো কিছু মানুষের সাথে কথা বল্লে আমার স্ট্রেস কমে,শান্তি লাগে।কিন্তু ডমিনেটিং ক্যারেক্টার,অহংকারী মানুষ,কঠোর,জটিল স্বভাবের মানুষ,বদ রাগী,অগোছালো,ঝগড়াটে,কম প্রাক্টেজিং দের সাথে মিশলে,কথা বল্লে শান্তি লাগেনা।
তাই নিজের মানুষিক সুস্থতার জন্য এসব মানুষ থেকে ১০০ হাত দূরে থাকে।কম কথা বলি।

আমি বোকা হলেও এত টুকো বুঝে চলি কোনটা গুরুত্বপূর্ণ।কোনটা আমার দরকার।আগে আমার দ্বীন,তার পর বাবা মা সন্তান পরিবার তারপর সমাজ।

ভালোবাসা কমছে না বাড়ছে এটার চেয়ে দায়িত্ব পালনে আমি সফল না বিফল এটা আমায় ভাবায়।

ধন্যবাদ ভাবিকে,যার এই মুল্যবান প্রশ্নের উত্তর খুৃঁজতে গিয়ে আমার এই লম্বা ভাবনার সুজোগ হলো।

#এন্টিডিপ্রেশন

 

হিল বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ 

হিল বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ 


স্বাস্থ্যকথা


“যদি সুস্থ থাকতে চান

নিজের মনকে সুস্থ রাখুন”

আজ ‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস’। প্রায় প্রতি বছর ১০ই সেপ্টেম্বর ‘হিল বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ নামের সংগঠন দিবসটি পালন করছেন এবং সারা মাসব্যাপী আত্মহত্যা প্রতি সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে নানা কর্মকাণ্ডের আয়োজনও রেখেছেন। ২০১৯ এ বছরে দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধে একসঙ্গে কাজ করা’।

জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দিনটিকে সামনে রেখে আত্মহত্যা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নতুন এই রিপোর্ট বলছে, প্রতি ৯ মিনিটে ৯ জন মানুষ মারা যাচ্ছেন আত্মহত্যায়। যদিও বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যার হার হ্রাস পেয়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতিবছর ৮ লাখ মানুষ মারা যান শুধু আত্মহত্যায়, যা ম্যালেরিয়া, স্তন ক্যান্সার বা যুদ্ধ এমনকি হত্যাযজ্ঞের কারণে মারা যাওয়ার চেয়েও বেশি।

দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীতে সাইক্লিনিং মাধ্যমে ক্যাম্পেইন করেছে হিল বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। ভোরে সাইকেল র‍্যালির মধ্য দিয়ে শুরু হল আত্মহত্যা প্রতিরোধ সচেতনতার  প্রচারনা। সংসদ ভবন থেকে চাকায় চাকায় মাইল পাড়ি দিয়ে রমনা পার্কের কুসুম চত্বর ঘুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য –এর সামনে এসে শেষ হয়। ছেলে মেয়ে একসাথে সাইকেল র‍্যালিতে যোগদান করেন।

সাইকেল র‍্যালিতে আত্মহত্যাকে না বলে সবার মধ্যে আত্মবল নিয়ে সামনে এগিয়ে চলার মানসিকতা তৈরির কথা বলা হয়। আত্মহত্যার চিন্তা না করে সমস্যা সমাধানে সবাইকে মনোযোগী করে তোলার আহ্বান জানায় অংশগ্রহণকারী সবাই।

আজকের দিনই বেলা তিনটায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যত্নশীল যৌথ সহায়ক মঞ্চ গঠন অনুষ্ঠান। আত্মহত্যার ঝুকি ও পূর্বাভাস চিনতে খোলামেলা আলাপচারিতায় যুক্ত হবে সবাই। সংকোচ কাটিয়ে মনের গোপন কষ্ট, আত্মহত্যার চিন্তার কথা প্রকাশ করা জন্য জরুরী নিরাপদ ও সম্ভব স্বচ্ছন্দের জায়গা সুনিশ্চিত করা হবে। অন্ধকার ঘর থেকে নিজে বের হয়ে এসে অন্যকে বের করতে উৎসাহি হাত একসাথে কাজ করার জন্য যুক্ত হবে বেইলি রোডে।

পরবর্তিতে ২০ শে সেপ্টেম্বর আয়োজন করা হবে মনোসেবকদের দক্ষতা বৃদ্ধি জন্য বিশেষায়িত কর্মশালা।
এরই ধারাবাহিকতায় ২১শে সেপ্টেম্বর সকাল থেকে সাড়া দিন লালমাটিয়ায় এনজিও ফোরামে আয়োজন করা হবে তিনটা পৃথক মনোশালা। আত্নহত্যার প্রতিপক্ষে আশা জাগানোর জন্য সুস্থ মনের চর্চা করা হবে।

সবাই এই উন্মুক্ত মঙ্গলশালায় হাটতে হাটতে চলে এসে যোগ দিতে পারবে।

 

 

গল্পে গল্পে শিশুদের কুরআন শেখা……১

গল্পে গল্পে শিশুদের কুরআন শেখা……১


আফরোজা হাসান


আজ মিহিরের মনে অনেক আনন্দ কারণ দেড়মাস পর দাদুভাই আর দাদুমনিকে আবার কাছে পেয়েছে। দুজনই হজ্জ করতে সৌদিআরব গিয়েছিলেন। মিহিরের জন্য অনেক উপহার নিয়ে এসেছেন তারা। সব উপহারের মধ্যে থেকে কাবা ঘরের শোপিস হাতে নিয়ে মিহির বলল, এটা দিয়ে আমি কি করবো দাদুভাই? দাদুভাই মিহিরকে কাছে টেনে হেসে বললেন, তুমি জানো এটা কি?

হুম জানি তো এটা হচ্ছে আল্লাহর কাবা ঘর। এখানেই তো তোমরা গিয়েছিলে হজ্জ করতে। আচ্ছা দাদুভাই আল্লাহই কি এই ঘর বানিয়েছেন?

হেসে, না দাদুভাই। তবে আল্লাহর নির্দেশে ইবরাহীম(আ)তাঁর ছেলে ইসমাইল(আ)কে নিয়ে কাবা ঘর বানিয়েছিলেন। সে এখন থেকে বহু বহু বছর আগের কথা। একবার কি হয়েছিলো জান?

কি হয়েছিলো দাদুভাই?

আবরাহা নামে এক দুষ্টু রাজা ছিল। সে ঠিক করেছিল সেই কাবাটা সে ভেঙে ফেলবে। কারণ তার ছিল অনেক শক্তি। ইবরাহীম(আ) আর ইসমাইল(আ) আল্লাহর কথা মত কাবা বানানোর পর থেকে অনেক দূর থেকে মানুষরা আল্লাহর ইবাদত করার জন্য কাবায় আসতো। তাই তার মনে কাবাকে ঘিরে খুব হিংসার সৃষ্টি হলো। সে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে দামি দামি জিনিসপত্র দিয়ে ভীষণ সুন্দর একটা উপাসনালয় বানালো। তারপরে মানুষকে দাওয়াত দিলো যাতে সবাই তার উপাসনালয়ে আসে। কিন্তু কেউ এলো না বরং সবাই আগের মতোই কাবা ঘরেই যাচ্ছিল ইবাদতের করতে। তাই সে ভীষণ রেগে ঠিক করলো কাবা ঘর ধ্বংস করে দিবে।

দুষ্টু রাজাটা তখন কি করলো দাদুভাই?

সে তখন অনেক সৈন্য সামন্ত আর বিশাল এক হাতির বহর নিয়ে কাবা ধ্বংসের উদ্দেশ্যে রওনা করলো।

তারপর কি হলো দাদুভাই?

আবরাহা তার সৈন্য বাহিনী আর বিশাল এক হাতির বহর নিয়ে কাবা ধ্বংস করতে আসছে শুনে তো মক্কার মানুষেরা অনেক ভয় পেয়ে গেল। তাদের তো অস্ত্র বলতে ছিল শুধু ঢাল, তলোয়ার আর বর্ষা। এত বিশাল সেনাবাহিনীর সাথে কিভাবে লড়াই করবে তারা ভেবে পাচ্ছিলো না। তাই তারা দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের কোন বাঁধা দিতে চেষ্টা করলো না।

মিহির ভীত কণ্ঠে বলল,তাহলে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যরা কাবা ঘর ভেঙ্গে ফেলেছিল?

না দাদুভাই দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের সেই ক্ষমতা কোথায় যে তারা আল্লাহর ঘর ভেঙ্গে ফেলবে। আল্লাহ তো সর্ব শক্তিমান। নিজের ঘরকে দুষ্টুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ আকাশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট ছোট আবাবীল পাখী পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

হাসি ফুটে উঠলো মিহিরের চেহারাতে। উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলল,আবাবীল পাখীরা দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের সাথে লড়াই করেছিল?

হেসে, তা বলতে পারো।পাখীদের প্রত্যেকের কাছে ছিল তিনটি করে পাথর। যা তারা সেনা বাহিনীর উপরে ছুড়ে দিয়েছিল। সেই ছোট্ট ছোট্ট নূরী পাথর বৃষ্টির ফোঁটার ঝরে পড়েছিল দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের উপর। যারফলে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

আনন্দে লাফিয়ে উঠে হাততালি দিয়ে মিহির বলল, খুব ভালো হয়েছে। কত্তো বোকা আল্লাহর ঘর ভাঙতে এসেছিল। উচিত শিক্ষা হয়েছে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের।

হেসে নাতীকে কোলে টেনে নিয়ে, ঠিক বলেছো দাদুভাই দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যরা ভীষণ বোকা ছিল। এমন অনেক বোকা মানুষ আছে যারা ক্ষমতা ও সম্পদের কারণে নিজেদেরকে অনেক বিশাল কিছু মনে করে। যারফলে তারা আল্লাহ্‌র সাথে লড়াই করতে চায়। কিন্তু…

দাদার মুখ থেকে কথা ছিনিয়ে নিয়ে বলল,আল্লাহ তো সর্বশক্তিমান তাই কেউ জিততে পারে না লড়াইতে।

হেসে,একদম ঠিক বলেছো। আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে যারা লড়াই করতে আসে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের মতই করুণ অবস্থা হয় তাদের।

চোখের সামনে কাবাঘরের শোপিসটা তুলে ধরলো মিহির। কিছুক্ষণ দেখে বলল, আমি আল্লাহর ঘরকে কোথায় রাখবো দাদাভাই?

তুমি কোথায় রাখতে চাও?

একটু চিন্তা করে মিহির বলল, আমার পড়ার টেবিলের উপর। এক্ষুনি রেখে আসি আমি। দাদার কোল থেকে নেমে নিজের ঘরের দিকে ছুট লাগালো মিহির।

চলবে…

 

আসুন মাটির মানুষ হয়ে বেঁচে থাকি!

আসুন মাটির মানুষ হয়ে বেঁচে থাকি


ফাতেমা শাহরিন


“চিন্তাকে সুন্দরভাবে প্রকাশ না করতে পারলে
সুন্দরভাবে চিন্তাও করা যায় না।”
ফাতেমা শাহরিন
আমি এখন আমার সংসারের কথা বলব। DECP আমার বাড়ি, আমার স্বপ্ন ও সুখের অঙ্গন।
আসুন নতুন এক যাত্রার গল্প শুরু করি…

“নিয়ন আলোর রাজপথে
টিএসসির মোড়ে চায়ের দোকানে
বুলেট কিংবা কবিতায়, যদি ফেরার পথে ভুল হয়ে যায়…”

TSC যাচ্ছি। আগেও যেতাম। কখন গিয়েছি PGT একজন সদস্য, একটু ক্লান্তি কাটাতে চুমুক দিতে চায়ের কাপে। কখনও গিয়েছি ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করতে। কখনবা একটু রাহাত আপুর সাথে সময় কাটাতে। সেদিন গিয়েছিলাম স্টুডেন্ট হয়ে। জেনে নিচ্ছিলাম, কিভাবে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের স্টুডেন্টদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা করতে সহযোগিতা করব। আর আজকে যাচ্ছি একজন ট্রেনিং কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট হয়ে। স্টুডেন্টদের সেবা দিতে।

একেকবার যাওয়ার অনুভূতি একেক রকম। কখনও বুকে চিনচিন করে ব্যথা হতো, আমি কেন ঢাবিতে পড়াশুনা করলাম না। আবার কখন উদাস হাজার স্টুডেন্ট মাঝে মিশে যাওয়ার স্বাদ। আর এখন কর্মরত একজন পার্ট টাইম জব মেম্বার। আমাদের প্রতি মাসে একটি বেতন দেওয়া হবে। সুতরাং ‘জব’ করছি।

এখনকার গল্পটা একটু সচেতনতা।

মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে উদাসীনতা আমার ছিল না, তা কিন্তু বলব না। নিজের মনের যে নিজস্ব একটি রাজ্য আছে। সেখানেও যে সভা- সমাবেশ হরতাল এবং প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়। মনের চোখ না থাকলে দেখতে পারবেন না আপনি। আবার কেউ যদি বলে নাহ, না ‘আমার কোন মনের চোখ নেই’ একটু অবাক হবেন। কিছু বলবেন না, কারণ সবার মনের চোখ আছে।

এবার আসুন কেন DECP?

এডুকেশন & কাউন্সেলিং ডিপার্টমেন্ট হচ্ছে, সবচেয়ে আর্দশ উর্বর জমি। আর আমরা হলাম ‘বীজ’। জমি বলাতে মন খারাপ হচ্ছে? করবেন না। আমরা তো মাটি দিয়ে তৈরি সুতরাং জমির সাথে আমাদের গভীর সম্পর্ক।

* পড়তে ইচ্ছে করে না।
* প্রেজেন্টেশনে প্রচন্ড ভয়।
* প্রিয় মানুষটি হুট করে বিট্টে করল।
* সামনে ফাইনাল পরীক্ষা কোন পড়া হয়নি।
* এতো কষ্ট আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না।
* কেন একটি কাজ বার বার করি?
* কেন এতো চিন্তা বার বার আসে?
* ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে ভাবতে ভাবতে নিজে নিজে কষ্ট তৈরি করি কেন?
* আব্বু কেন বুঝতে পারছে না, আমার সাবজেক্টটি ভালো লাগছে না।
* প্রিয় বন্ধুটি এতো ভুল বুঝলো কেন আমাকে।
* আমারকে দিয়ে কোন কাজই হবে না।
* কোন কাজেই কেন কোন আনন্দ পাই না।
* আমি কি ওকে ভালো বাসব?
* বাবুটাকে নিব নাকি অ্যাবশন করব?
* কেন বাবা মা আমাকে জোর করে বিয়ে দিবেন?
* আমার পছন্দের কি কোন দাম নাই?
* চুল গুলো টেনে টেনে না ছিঁড়লে অস্বস্থি লাগে কেন?
* আমি কেন ঠিকভাবে ঘুমাতে পারছি না?
* কেন এখনও বিয়ে হচ্ছে না আমার বয়স তো থেমে নেই?
* আমি কি বিয়েটা করব?
* এতো রাগ আর আমার আচরণ কেউ এখন আমাকে ভালো বাসে না?
* আমি ওকে এতো সন্দেহ করি কেন?
* সংসারটি আর করা সম্ভব হবে না ওতো পরকীয়া করে?
* এভাবে কেন শশুড় বাড়ির সবাই আমাকে ভুল বুঝে আচরণ করে?
* আমি কেন আমার সন্তানের সাথে সুন্দরভাবে আচরণ করতে পারছি না?
* ছোট বেলায় যে পাশের বাড়ির আংকেল আমাকে সেক্সচুয়াল অ্যাবিউজ করেছিলেন তাই কি আমি স্বাভাবিক সম্পর্কে জড়াতে ভয় পাচ্ছি?
* আমাকে কেন কেউ ভালোবাসে না?
* আত্মহত্যার চিন্তে এতো তীব্র আসে বার বার?
* আমি তো কয়েকবার অ্যাটেম নিয়েছি, ঘুমের ঔষধ খেয়েছি, ছাদেও উঠেছিলাম, একবার ট্রেন লাইন ধরে হেটেছি।
* বেঁচে থাকতে আর কেন একটুও ভালো লাগে না?
* মা আমাকে কেন ভালো বাসে না?
* জবটা কেন পাচ্ছি না?
* এতো প্রেসার

এ রকম নানান সমস্যায় আমরা অনেকেই আছি। কেউ বা সচেতন বা কেউবা অবচেতন মনে। খেলছি নিজের সাথে রোজ। বেঁচে আছি, বাঁচতে হয় তাই।
অজস্র চিন্তার জাল। মাকড়সাও ঘর ছেড়েছে ভয়ে।

আমরূ, একটু একটু করে কাউন্সেলিং নলেজকে ঘষে মেঝে আলো ঢুকাচ্ছি প্রতিনিহত আমাদের টিচার রা কঠোর পরিশ্রম করছেন। আমরা প্রতিনিহত জ্ঞানের আলোর সমুদ্রে হাবুডুবু, সাতার কাটছি। বই এর পাতায় পাতায় আলো। এই আলো গুলো একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট চেয়ে কোন অংশে কম শক্তিশালী নয়।

মানসিক প্রশান্তির দুয়ার খুলতে শত শত কাউন্সিলর কাজ করছেন বাংলাদেশ জুড়ে।

জ্বর যেমন কোন রোগ নয়, নানান রোগের সিনটম। কখনও মরণঘাতি ক্যান্সারও হয়। তেমনি, মন খারাপও তাই। ড় মন খারাপ হলেই মরতে মন চাচ্ছে না। তবে অতিরিক্ত মন খারাপ পুষে পুষে জীবনটাকে আর জীবন মনে হবে না। জীবন্ত পাথর মনে হবে একদিন।

আসুন মাটির মানুষ হয়ে বেঁচে থাকি, পাথর হয়ে নয়।

ফাতেমা শাহরিন
স্টুডেন্টঃ এডুকেশন & কাউন্সেলিং সাইকোলজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

১৩ বছরের কিশোরকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা

১৩ বছরের কিশোরকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা


নারী সংবাদ


মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সুলেমান (১৩) নামক এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ২ নারীসহ একই পরিবারের ৩ জনকে আটক করেছে।

এ ঘটনায় নিহত কিশোরের বড় ভাই রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) ৫ জনের নামে কুলাউড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব ফটিগুলি গ্রামের মৃত বাজিদ আলীর পুত্র কিশোর সুলেমান গত ৬ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার সকালে নিজ বাড়ির উত্তর পাশে একটা বটগাছের নিচে বসা ছিলো। এসময় লোক মারফত একই গ্রামের আনু মিয়ার বাড়িতে ডেকে নেয়া হয় নিহত সুলেমানকে।

বাড়িতে যাওয়ার পর আনু মিয়ার ছেলে রেদোয়ান মিয়ার নেতৃত্বে সুলেমানকে তাদের ঘরের ভেতরে রশি দিয়ে হাত পা বেঁধে মারপিট করা হয়। এসময় তার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার মাসুক মিয়াসহ আরও লোকজন এসে সুলেমানকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়া সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

ঘটনার পরদিন শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুলেমানের মৃত্যু হয়। এদিকে রোববার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে কুলাউড়া থানা পুলিশ আনু মিয়া (৪৫), তার স্ত্রী পিয়ারা বেগম (৪০) ও মেয়ে আসলিমা বেগম (১৮) কে আটক করেছে।

কর্মধা ইউনিয়নের মেম্বার মো. মাসুক মিয়া জানান, পূর্ব শত্রুতা থাকতে পারে। আমি ছেলেকে উদ্ধার করে দ্রুত মৌলভীবাজার হাসপাতালে ভর্তি করি। এরপর সেখান থেকে ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এব্যাপারে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়ারদৌস হাসান জানান, ঘটনার সাথে জড়িত ৩ আসামীকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

বখাটের এসিডের ভয়ে স্কুলে যেতে পারছে না মেঘলা

বখাটের এসিডের ভয়ে স্কুলে যেতে পারছে না মেঘলা


নারী সংবাদ


টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে বখাটের এসিডের নিক্ষেপের ভয়ে প্রায় একমাস যাবৎ বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না স্কুলছাত্রী মেঘলা আক্তার। প্রেমের ডাকে সাড়া না দেয়ায় পৌরসভার গাড়াখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ফাস্টগার্ল মেঘলাকে এসিড মেরে মুখ জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে পাশের বান্দ্রা গ্রামের ফজল মিয়ার মাদকাসক্ত বখাটে ছেলে মানিক (১৫) ও নুর মোহাম্মদের বখাটে ছেলে সাখাওয়াত হোসেন (২০)। মেঘলা বন্দটাকুরিয়া গ্রামের মো: মফিজুর রহমানের একমাত্র মেয়ে। এ ব্যাপরে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছে না ভুক্তভোগী পরিবার।

শনিবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত বখাটে সাখাওয়াত ও মানিক দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার পথে স্কুলছাত্রী মেঘলাকে উত্যক্ত করে আসছিল। এরই জেরে ধরে গত জুলাই মাসে ধনবাড়ী নবাব ইনস্টিটিউডে প্রাইভেট পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে মেঘলাকে এসিডের বোতল ও চাকু দেখিয়ে ছবি তোলে সাখাওয়াত, মানিক ও তার বন্ধুরা। মেঘলার বাবা-মা এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় গত ১৫ আগস্ট মধুপুর আসার পথে মানিদের বাড়ির কাছে মেঘলার বাবা-মাকে মারধর করে মানিক ও তার বন্ধুরা। এ ঘটনা প্রথমে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মো: তোতা মিয়াকে জানালে তিনি সালিসী মীমাংসার করে দিতে চাইলে টালবাহানা করতে শুরু করে অভিযুক্ত বখাটে সাখাওয়াত ও মানিকের পরিবার।

মেঘলা জানায়, বখাটে মানিক প্রথমে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। এতে সে সাড়া না দিলে মানিকের বন্ধু সাখাওয়াতও তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। উভয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করার পর মানিক ও সাখাওয়াত উভয়ে মিলে এখন মেঘলাকে এসিড নিক্ষেপের ভয় দেখাচ্ছে। ফলে গত ১৫ আগস্ট থেকে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে মেঘলা। নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে চায় বলেও আকুতি জানায় মেঘলা।

ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী মেঘলার বাবা মো: মফিজুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বেনু সম্পর্কে বখাটে মানিকের চাচাতো ভাই হওয়ায় এবং মানিকের বাবা ধনবাড়ী থানার ওসির বাসার কেয়ারটেকার হওয়ার কারণে তার মেয়েকে উত্যক্তের ঘটনার কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

অভিযুক্ত বখাটে মানিকের বাবা ফজল জানান, জোর করে মেঘলার ছবি তুলে আমার ছেলে ভুল করেছে। সেজন্য তো মেয়ের বাবা মফিজ আমার ছেলেকে ‘মারধর’ করেছে। কিন্তু আমি কিছু বলিনি।

পৌর কাউন্সিলর মো: তোতা মিয়া জানান, ফেনীর নুসরাতের ঘটনা আমরা সবাই জানি। আমরা দ্বিতীয় নুসরাত দেখতে চাই না। ওসির সাথে আলোচনা করে অভিযুক্ত বখাটেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে গাড়াখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম (বেনু) জানান, বখাটেদের হাতে উত্যক্তের শিকার হওয়ার ঘটনাটি মেয়েটি (মেঘলা) আমাকে মুখে বলেছে। আমি তাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছিলাম। কিন্তু দেয়নি। ছেলেটি যেহেতু বহিরাগত, তাই অভিযোগ পেলে ম্যানেজিং কমিটির সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গাড়াখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন জানান, অভিযোগ পেলে ওসির সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা ধনবাড়ী থানার এসআই নূরে আলম জানান, উভয়পক্ষকে নিয়ে থানায় বসে মীমাংসা করে দেয়া হবে। এটাতে কাজ না হলে মামলা দায়ের করে অভিযুক্ত উক্তত্যকারীদের গ্রেফতার করা হবে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

গর্ভেই নির্ধারিত হয়ে যায় সন্তানের ব্যক্তিত্ব

গর্ভেই নির্ধারিত হয়ে যায় সন্তানের ব্যক্তিত্ব


স্বাস্থ্যকথা


নতুন এক গবেষণা বলছে, কোনো নারী যদি গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকেন, ঐ সন্তান ৩০ বছর বয়সের পৌঁছুনোর আগেই সে ‘পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার’ বা ব্যক্তিত্ব বৈকল্যে আক্রান্ত হতে পারে। ঐ ঝুঁকি স্বাভাবিকের তুলনায় ১০ গুণ বেশি হতে পারে। এমনকি গর্ভাবস্থায় মাঝারি মাত্রার মানসিক চাপ যদি দীর্ঘমেয়াদী হয়, তাহলেও সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

ফিনল্যান্ডে ৩,৬০০ গর্ভবতী নারী তাদের সন্তানদের ওপর ঔ গবেষণাটি চালানো হয়। গর্ভাবস্থায় ঐ নারীদের মানসিক চাপ নিরূপণ করা হয়। পরে তাদের সন্তান জন্ম নেওয়ার পর, ঐ সন্তানদের মানসিক বিকাশের ওপর নজর রাখা হয়।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, গর্ভবতী নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যকে বিশেষভাবে বিবেচনায় নেওয়া উচিৎ। কীভাবে সন্তানকে বড় করা হয়, পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা কী, শিশু বয়সে সে কোনো সহিংসতা বা অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হয়েছিল কিনা – এগুলোও ব্যক্তিত্বের ওপর প্রভাব ফেলে।

তবে ঐ গবেষণায় জড়িত মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাবও সন্তানের ব্যক্তিত্বে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।

‘পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার’ বা ব্যক্তিত্ব বৈকল্য কী

‘পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার’ এমন একটি মানসিক অবস্থা যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের জীবন তো বটেই, অন্যের জীবনেও বড় ধরণের সঙ্কট তৈরি করে। এরা অনর্থক এবং অতিমাত্রায় উদ্বিগ্ন হতে পারে, আবেগের ওঠানামার পেছনে কোনো যুক্তি থাকে না, অতিমাত্রায় সন্দেহ-প্রবণ হয়ে পড়ে। এমনকী অনেক সময় সমাজ-বিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এ ধরনের মানুষ প্রায়শই মানসিক চাপে ভোগে। অনেক সময় এরা মাদক এবং মদাসক্ত হয়ে পড়ে।

কীভাবে হয়েছিল এই গবেষণা

এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে মনোবিজ্ঞান বিষয়ক বিখ্যাত সাময়িকী ‘ব্রিটিশ জার্নাল অব সাইকিয়াট্রি’তে। গবেষণায় ৩,৬০০ গর্ভবতী নারীকে তাদের গর্ভাবস্থায় প্রত্যেক মাসে কিছু প্রশ্ন করে তাদের মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করা হয়। বিশেষ করে মানসিক চাপের মাত্রা নিরূপণের চেষ্টা করা হয়।

এই নারীরা ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কি এবং আশেপাশে থাকতেন। তারা ১৯৭৫ এবং ১৯৭৬ সালে সন্তানের জন্ম দেন। ঐ সন্তানদের বয়স তিরিশে পৌঁছুনোর পর দেখা যায় তাদের ৪০ জনের মধ্যে মারাত্মক ব্যক্তিত্বের সংকট তৈরি হয়েছে । তাদের মানসিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।

গবেষণায় ফলাফল

গবেষণায় দেখা যায় যে সব মায়েরা গর্ভাবস্থায় দীর্ঘদিন বড়রকম মানসিক অস্থিরতার মধ্যে ছিলেন, প্রধানত তাদের সন্তানরাই মানসিক সংকটে পড়েছে। যে সব মায়েদের গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ কম ছিল, তাদের সন্তানদের চেয়ে চাপে থাকা মায়েদের সন্তানদের ব্যক্তিত্ব বৈকল্য হয়েছে অনেক বেশি – প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। মায়েদের চাপের কারণগুলোর মধ্যে ছিল – সম্পর্কের সংকট, সামাজিক বা মনস্তাত্ত্বিক সঙ্কট।

কী করা যেতে পারে?

ব্রিটেনের রয়াল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টের অধ্যাপক ড. ট্রুডি সিনিভারত্নে বলছেন, গর্ভধারণ করলে অনেক নারী মানসিক চাপে পড়েন। তাদের জন্য সাহায্য খুবই জরুরী। তিনি বলছেন – যদি এই মানসিক চাপ ঠিকমতো নিরসন না করা হয়, তার পরিণতি দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে, তাদের জন্য এবং সন্তানদের জন্য।

“আমরা চাই না যে বাবা-মার মনে এমন কোনো অপরাধ-বোধ তৈরি হোক যে তারা তাদের সন্তানদের ক্ষতি করছেন- কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী এবং উঁচু মাত্রার মানসিক চাপ সন্তানদের ক্ষতি করে।”

কীভাবে গর্ভাবস্থায় মাসনিক চাপ কমানো সম্ভব

ড. সিনিভারত্নে বলছেন, গর্ভবতী নারীদের অবশ্যই বাড়িতে এবং কাজের জায়গায় সাহায্য করতে হবে। চাপ তৈরি হলে, কীভাবে সে তা সামলাতে পারে – সে ধ তাকে পরামর্শ দিতে হবে।

“সতাদেরকে জানতে হবে কীভাবে বিশ্রাম নিতে হয়, মানসিক চাপে পড়লে অন্যের কাছ থেকে কীভাবে সাহায্য চাইতে হয়।”

গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ধূমপান ত্যাগ এবং যথেষ্ট ঘুমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।

সূত্র : বিবিসি।

 

সম্পর্কে যত্নশীল হয়ে উঠি

সম্পর্কে যত্নশীল হয়ে উঠি


নিশাত জাহান নিশা


Effort and Expectation

দুটো শব্দই ইংরেজি অক্ষর E দিয়ে……. এই মিল টুকু ছাড়াও শব্দ দুটি একে অন্যের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।
আজকাল Discorded Relationship (সম্পর্ক কলহ) একটি কমন সমস্যা। আর এই সম্পর্কগুলো হতে পারে, বাবা-মা ও সন্তান, ভাই-ভাই, ভাই-বোন, বন্ধু, প্রেমিক-প্রেমিকা অথবা স্বামী-স্ত্রী….

আর এই কমন সমস্যার মূল কারণ Effort & Expectation এর অসমতা…
আর এই অসমতাই দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যকার সম্পর্ক গুলো অতি দ্রুত ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।।।

বিনা expectation এ যেমন কেউ effort করতে চায় না তেমনি effort ছাড়া expectation গুলোও কখনো পূর্ণতা পায়না। একটা সুষ্ঠু সম্পর্কের মধ্যে effort ও expectation দুটোই সমানতালে সমান ভাবে থাকতে হবে।

সম্পর্কে Effort ছাড়া Expectation হলো এক ধরনের ফুটো কলসির মত, effort না থাকলে আপনার expectation এর সেই কলস কখনোই পূর্ণ হবে না।।।
আজকাল সম্পর্ক গুলো কেন এত দ্রুত ভেঙে যায়, জানেন, কারন আজ কাল কার বেশিরভাগ সম্পর্কের মধ্যে এক পক্ষে effort দেয় আরেক পক্ষ expect করে, আর ভুলটা এই জায়গাতেই হয় সম্পর্ক যেহেতু দুটি মানুষের মধ্যে, তাই দুজনের মনের মধ্যেই থাকতে হবে একে অপরের প্রতি সম্মান দেওয়ার প্রচেষ্টা ও নিজ নিজ জায়গা থেকে নিজ নিজ দায়িত্ববোধ এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রত্যাশা, তবেই একটা সম্পর্কের মধ্যে ব্যালেন্স বজায় থাকে।
এবার চলুন জেনে নিই সম্পর্কের এক্সপেক্টেশন (প্রত্যাশা) গুলো কি কি।।।।
আমরা কমবেশি সবাই আমাদের সম্পর্কের মধ্যে যে এক্সপেক্টগুলো করি :

১) আমাকে বুঝতে হবে, কারন আমি আমি অভিজ্ঞ

২) আমার কথা শুনতে হবে, কারণ আমি ভাল চাই

৩) আমার ক্ষেত্রে ধৈর্যশীল হতে হবে

৪) ভালবাসলে সেক্রিফাইস মাইন্ডেড হতে হবে

৫) আমাকে অন্ধ বিশ্বাস করতে হবে, কখনো রিয়্যাক্ট করা যাবেনা

৬) আমার পছন্দ অপছন্দ কে মূল্যায়ন করতে হবে

৭) আমার ডিসিশন কে চূড়ান্ত বলে মেনে নিতে হবে

৮) আমার প্রতি 100% loyal থাকবে

৯) আমার মত করেই তাকে ভাবতে হবে (my choice is your choice)।।।

১০) আমার কথাকে অধিকতর সম্মান দিতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি……

অথচ আমরা খুব কম ব্যক্তিই আছি এই expect গুলো করার আগে, নিজেরা সম্পর্কের মধ্যে effort দেই।।।

এবার চলুন এফোর্ড (প্রচেষ্টা) গুলো কি জেনে নেই।

১) আপনার সম্পর্কের মানুষটির ধরন গড়ণ চলন সর্বোপরি সে যেই প্যাটার্নের তাকে সেভাবে গ্রহণ করা, অর্থাৎ যদি না সে গুরুতর সমাজ বিরোধী হয় তাকে পরিবর্তন করার আগে এটুকু বোঝা যে, আপনার সৃষ্টিকর্তা আপনাকে যেভাবে তৈরি করেছেন, সেই একই সৃষ্টিকর্তা তাকে তৈরি করেছেন তার মত করে।।।। অর্থাৎ প্রত্যেকটা ব্যক্তি যে স্বতন্ত্র সত্তার অধিকারী এতটুকু বিবেক বোধ রাখা।।।

২) আপনার যা ভালো লাগে তার কাছে সেটা ভালো নাও লাগতে পারে এই ছোট বিষয় টাকে শুধু জানা নয় মানতেও হয়।।।

৩) নিজের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত দাবি করার আগে, তার সিদ্ধান্তটির পক্ষের যুক্তি গুলো বুঝতে চেষ্টা করা।

৪) পরিপূর্ণ ভালোবাসা ও মর্যাদা দেওয়ার আগেই সেক্রিফাইস, ধৈর্য এগুলো আশা না করা।।।

৫) অপর মানুষটি নিজের অবস্থানে কতটুকু সমঝোতা করে, আপনাদের দুজনার সম্পর্কের মধ্যে সেক্রিফাইস মনোভাব গড়ে তুলতে হচ্ছে, সেটার সমীকরন তৈরি করা।।।

৬) নিজের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস প্রত্যাশা করার পূর্বে, নিজেকে তার কাছে আস্থাশীল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

৭)সম্পর্কের মধ্যে loyalty & liability দুটোই নিশ্চিত করা।

৮) সম্পর্কের মানুষটির প্রতি যত্নশীল হওয়া।

৯) সম্পর্কের মানুষটির self esteem, emotion, patience এগুলোর threshold লেভেল সম্পর্কে অবগত থাকা।

১০) আপনার সম্মান নিশ্চিত করার সাথে সাথে, তার সম্মান সুনিশ্চিত করা।

এই basic effort গুলো থাকলেই সম্পর্কগুলো মোটামুটি ব্যালেন্সে থাকে।।।

*সম্পর্কের মাঝে যখন আপনার expectation হবে ‘

‘feel to be comfort with him/her’

এর আগে আপনার effort হতে হবে

‘I have to make sure his/ her comfort with me’ কারণ আপনার effort এর ওপর ভিত্তি করেই আপনার expectation গুলোর পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটবে*

*Effort ছাড়া সম্পর্ক হলো হলো মাটি (ভিত্তি) ছাড়া গাছ, আর Expectation হলো সেই গাছের মধ্যে আবার ফলন চিন্তা করা।*

তোমার চেয়ে আমার Social Value/Network বেশি, তোমার কম… সম্পর্কটাকে এরকম competitive না করে complementary করে তুলুন “তোমার এটা আছে আমার ওটা আছে” একে অন্যের পরিপূরক। ব্যাস…

আজকাল আমাদের সম্পর্ক গুলোর মধ্যে এক ধরনের রোগ বাসা বেঁধেছে সেটা হলো: এক তরফা প্রচেষ্টা (effort) আর না হয় এক তরফা প্রত্যাশা (expectation)……আমরা যখন আমাদের সম্পর্কের মানুষের সাথে বাকবিতণ্ডা বা তর্কে জড়াই বা যেকোন বিষয়ে অমত হই, তখন কটু কথা বা কাজের মাধ্যমে তাকে ছোট করার সকল প্রচেষ্টা চালানো হয়, সে human being হিসেবে নূন্যতম যতটুকু মর্যাদা পাওয়ার কথা, (টাকা বা সম্পদের খোটা দিয়ে) সেটাও তাকে দেয়া হয় না…..
অথচ তার কাছ থেকে সেক্রিফাইস আশা করার বেলায় আমরা তাকে মহামানব বা দেবীর স্থানে বসিয়ে দেই, আর অকপটে বলে ফেলি আমার জন্য তুমি এতোটুকু সেক্রিফাইস করতে পারলে না…..

আচ্ছা বলুনতো সেক্রিফাইস কারা চায়? সেক্রিফাইস কাদের দরকার?
সেক্রিফাইস কাদের করা হয়?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কি?
উত্তর একটাই, যারা দুর্বল, অপারগ, নিজ দায়িত্বে বা ক্ষমতায় কায়েম থাকতে পারে না, তাদের জন্যই সেক্রিফাইস করা হয়।।‌। আর সেক্রিফাইস হলো একটি মোহ পেতে থাকলে, শুধু পেতেই ইচ্ছা করবে।
আপনাকে কেউ স্বেচ্ছায় সেক্রিফাইস করলো আপনি সেটা গ্রহণ করলেন, it’s ok এটা আপনার ব্যাপার।।।। কিন্তু আপনি কারো কাছ থেকে আগ বাড়িয়ে sacrifice আশা করবেন, it’s not ok। এটা শুধুই আপনার দুর্বলতার পরিচয় দিচ্ছেন।।।

উদাহরণস্বরূপ, একজন সুস্থ সবল ব্যক্তি যার দায়িত্ব নেয়ার সমস্ত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যদি সমাজ তাকে দায়িত্ব মুক্ত করে দেয়, সেটা কি তার জন্য উপকার বা সেক্রিফাইস? বলতে পারেন, সেটা ব্যাক্তির potentiality/ প্রতিভা নষ্ট করার মতো উপকার, আর এই উপকারের মধ্যে কোথাও না কোথাও তাকে demean/ অদক্ষ দাবি করার সূক্ষ একটা ঘ্রান ও পাওয়া যায়।।।

নিজের সম্মান নষ্ট করে sacrifice পেতে কে চায়? অন্যের টা জানিনা, তবে আমি তো অবশ্যই এই ধরনের সেক্রিফাইস পাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতেই পছন্দ করি।।। তাই sacrifice এর মোড়কে, নিজেকে অদক্ষ দাবি না করে বরং নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার মধ্যেই সম্পর্কের সার্থকতা।।

সর্বোপরি, আমরা আমাদের জীবনের বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, সবধরনের গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এর প্রতি দায়িত্ববান বা যত্নশীল হয়ে উঠি।। আপনার জন্য কেউ সুখ ত্যাগ বা জীবন দেওয়ার নাম sacrifice নয় বরং এই অস্থিতিশীল, প্রতিকূল পৃথিবীতে আপনার সাথে একত্রে স্বর্গের সুখ অনুভব করার অক্লান্ত প্রচেষ্টার নাম sacrifice…

আপনার জীবনের সম্পর্কের মানুষটি বেঁচে থাকতে তার গুরুত্ব বুঝুন।
তার নামে বড় বড় ইমারত তৈরী করে অর্থের সেক্রিফাইস না দেখিয়ে, তার মনে ভালোবাসার অখন্ড পাহাড় তৈরি করুন।।।।

*তাজমহল’কে দুনিয়া দেখছে, মমতাজ কিন্তু দেখেনি*

 

নিশাত জাহান নিশা 

অ্যাসিস্টেন্ট ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট

 

এসআই ও সোর্স মিলে ধর্ষণ করল আসামির স্ত্রীকে!

এসআই ও সোর্স মিলে ধর্ষণ করল আসামির স্ত্রীকে!


নারী সংবাদ


যশোরে পুলিশের এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে আসামির স্ত্রীকে ধর্ষনের অভিযোগ উঠেছে। যশোরের শার্শা উপজেলার গোড়পাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই খায়রুলসহ সোর্সের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন একই উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে আসাদুজ্জামান আশার স্ত্রী।

পুলিশ সুপার এ অভিযোগ আমলে নিয়ে ঘটনাস্থলে তদন্তের জন্য পুলিশ পাঠিয়েছেন। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ওই মহিলাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে অভিযুক্ত এসআই খায়রুল জানান, এ ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ওই গৃহবধূ সাংবাদিকদের জানান, শার্শার লক্ষণপুর গ্রামে তার স্বামী আসাদুজ্জামান আশাকে গত ২৫ আগস্ট রাতে শার্শা উপজেলার গোড়পাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই খায়রুল বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন ২৬ আগস্ট আশার কাছ থেকে ৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে তাকে আদালতে চালান দেয়।

স্থানীয়রা জানান, সোমবার রাত ২ টার দিকে এসআই খায়রুল সোর্সদের নিয়ে আশার বাড়িতে যায় এবং তার স্ত্রীকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। আশাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এসআই খায়রুল তার স্ত্রীর নিকট ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে খায়রুল ও সোর্স কামারুল ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

পরে ঘরের ভেতরে গিয়ে আশার স্ত্রীকে প্রথমে এসআই খায়রুল ও পরে পুলিশের সোর্স কামারুল ধর্ষণ করে। এসময় সোর্স লতিফ ও কাদের ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। বিষয়টি কাউকে জানালে তাকেও মামলা ঝুলিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আশার স্ত্রী যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অফিসে যান এবং সাংবাদিকদের কাছে তিনি ধর্ষণের অভিযোগ তুলে ধরেন।

যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামান সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে যান এবং হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদের অনুমতি নিয়ে ওই মহিলাকে নিয়ে পুলিশ সুপার মঈনুল হকের অফিসে নিয়ে যান।

এসময় ওসি মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি তিনি শুনে এসেছেন। তাকে নিয়ে এসপি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর বাইরে কোন কিছু বলা সম্ভব নয়।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত এসআই খায়রুল বলেন, এ ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পিক্ততা নেই। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে এসপি স্যার তদন্ত শুরু করেছেন।

যশোর পুলিশ সুপার মঈনুল হক সাংবাদিকদের জানান, ওই নারীর অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে। তাকে পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ সঠিক হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

By: dailynayadiganta

 

“বাবা”

বাবা


তানিয়া ইসলাম ইতি


বাবা শব্দ টা আমার মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সবচেয়ে স্বচ্ছ সবচেয়ে শক্তিশালী শব্দ।

আর বাবা নামের মানুষ, মানুষগুলো আরো বেশি শক্তিশালী আরো বেশি স্বচ্ছ, নির্ভীক, পৃথিবীর সবচেয়ে অনুপ্রেরণার জায়গা, আদর্শ আর কষ্ট লালিত এক পুরুষ। নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া এক সংগ্রামি যোদ্ধা ……….।

গত এক সপ্তাহ ধরে এই বাবা নামের শব্দটির সাথে হারিয়ে গেছি। নতুনভাবে আবিষ্কার করার চেষ্টা করছি এত কেন স্বচ্ছ এত কেন নির্ভেজাল বাবা নামের মানুষটা। খুজেও পেলাম অনেক কিছু……….।

১. সন্ধ্যার পরে হাঁটছি একজন বাবা আর সন্তান বাসায় ফিরছেন হয়তোবা সন্তানের পেন্সিল পরে গেছে । বাবা এমন ভাবে রাস্তায় পেন্সিল খুঁজছেন যেন পৃথিবীর সব চাইতে মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে ফেলেছেন। শুধুমাত্র সন্তানের একটা কথায় বাবা আমি পেন্সিল হারিয়ে ফেলেছি। হয়তো বাস এক্সিডেন্ট হতে পারতো। কারণ রাস্তায় এত গাড়ি যাচ্ছে বাস প্রাইভেট কার সেগুলো উপেক্ষা করে বাবা নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করে পেন্সিল খুঁজে দেয়ার চিন্তা করছে এটা শুধু এই মানুষটার পক্ষেই সম্ভব …….।

২. গত দুইদিন আগে বাংলা টিভি চ্যানেল দুরন্ত চ্যানেল সিসিমপুরে এক চাইনিজ বাবার গল্প বলছিল তার সন্তান। আমার বাবা বেহালা বাজাতে পারে। আমার বাবা ঘোড়ার ডাকার শব্দ, ঘোড়ার দৌড়ানোর শক্ত, হাঁটার শব্দ বেহালায় তুলতে পারে ।এমন ভাবে বাবাকে রিপ্রেজেন্ট করছিল একজন সন্তান ৭ বছরের সন্তান। মনে হলো পৃথিবীর সবচাইতে আদর্শবান বাবার গল্প সে সবার কাছে বলছে। তখন মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সবচাইতে ঘনিষ্ঠতম সম্পর্ক হচ্ছে বাবা আর সন্তানের সম্পর্ক……….।

৩. আজকে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড দিচ্ছিলাম। তখন ঐ দোকানের মালিকের সাথে কথা হচ্ছিল। আমি প্রায়ই মাঝেমাঝে উনার সাথে কথা বলি। কথা বলতে বলতে একটা সময় একটা পিচ্চি ছেলে এসে বলতেছে আঙ্কেল কিছু টাকা দেন ভাত খাবো। পকেট থেকে ২০০ টাকা বের করে দিল আমি বললাম ভাই আপনি টাকা দিয়েছেন ওই টাকা দিয়ে ভাত খাবে না। তখন উনি বলল আপা আমি ছোটবেলা থেকেই খাবারের জন্য কেউ কোন কিছু চাইলে আমি কখনো নিষেধ করি না। কারণ এটা আমার বাবার কথা, বাবা বলেছিল কখনো খাবারের উদ্দেশ্যে কেউ কিছু চাইলে তুমি খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না। তখন আমি বললাম তাহলে তো আপনার বাবা অনেক ভালো মানুষ। উনি বললেন, হ্যাঁ আমার বাবা পৃথিবীর সবচাইতে ভালো মানুষ ছিলেন। উনি এখন নেই মারা গেছে। আমার বাবার একটা কথা বলি আপনাকে, আমরা চার ভাই বোন প্রত্যেকেই অনেক অনেক ভালো জায়গায় আছি । সবাই অনেক ভালো জায়গা থেকে পড়াশোনা করেছি। আমি যখন খুব ছোট স্কুলে পড়তাম কখনো আমার বাবাকে সকালে দেখতাম না। উনি টিচার ছিলেন উনি প্রতিদিন কখন যে বের হয়ে যেতেন আসতেন সন্ধ্যার একটু আগে আর আমাদের পড়তে বসাতেন। তখন খুব রাগ হতো বাবার প্রতি সারাদিন থাকে না বাসায় আমাদের কোনো খোঁজখবর নেন না অথচ পড়ার সময় কোথা থেকে যেন চলে আসতেন। স্কুলে একবার করে প্রতিমাসে যেতেন আমাদের পড়াশোনার কি অবস্থা জানার জন্য। আর কোন মতে কোন কিছু শুনলে মার একটাও মাটিতে পড়তো না। কতবার যে মনে মনে বাবাকে বকেছি সেটার হিসাব নেই। কিন্তু যখন বড় হচ্ছি বুঝতে শিখছি দুনিয়ার সবকিছু। তখন প্রথম জানতে পারলাম আমার বাবা সকাল পাঁচটায় বের হয়ে যায় বাসা থেকে জমিতে। উনি কৃষি কাজ করতো তার পরে স্কুলে যেতো স্কুলের ক্লাস নিয়ে বাসায় ফিরে খাবার খেয়ে আবার জমিতে চলে যেতো কাজের উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যায় ঠিকই বাসায় এসে হাজির হতো আমার বাবা। আমার এখনো মনে আছে আমি যখন ক্লাস টেইনে পড়ি তখন আমার বড় ভাই বুয়েটে পড়ে। উনার স্কলারশিপ হয়েছিল তার তখন কিছু টাকা দরকার ছিল আমার বাবার তখন খাদ্যনালীতে ক্যান্সার ধরা পড়ে। আমাদের জমানো টাকা দিয়ে বাবাকে চিকিৎসা করালে বাবা সুস্থ হয়ে যেতেন । কারণ ক্যান্সারের এক্কেবারে প্রাইমারি অবস্থায় ছিল বাবার । কিন্তু বাবা আমাদের কাউকে জানায়নি না জানাই আমার ভাইকে টাকা দিয়ে কানাডাতে পাঠান। আর তখন বাবার ক্যান্সার পুরা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ……।

পৃথিবীর প্রত্যেকটা বাবাই মনে হয় নিঃস্বার্থ বান একজন মানুষ। যারা সারা জীবন দিয়ে যায় পাওয়ার বিন্দু পরিমান চিন্তা করেন না।

বেঁচে থাকুক এই বাবারা পৃথিবীতে প্রত্যেক আদর্শবান সন্তানের মাঝে, বেঁচে থাকুক। পৃথিবীর প্রত্যেক সন্তানের ভালো কাজের মাঝে প্রত্যেকটা শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে আর বাবা সম্পর্কে যত যত বলবো শেষ হবে না। শুধু বলবো ভালো থাকুক সব বাবারা।

 

দেশ বরিশাল উত্যক্তের শিকার স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা : বখাটে তামিম ৭দিনের রিমান্ডে


নারী সংবাদ


পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় বখাটের উৎপাতে অতীষ্ট হয়ে স্কুলছাত্রী রুকাইয়া আক্তার রূপার আত্মহত্যার ঘটনায় মামলার প্রধান আসামী তামিম খানকে সাত দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। রোববার পিরোজপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযুক্ত বখাটে তামিম খানের ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হলে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

জানা যায়, রোববার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাণ্ডারিয়া থানার এসআই মোঃ কাইয়ুম আসামী তামিমকে পিরোজপুরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে ভাণ্ডারিয়া থানার ওসি এস এম মাকসুদুর রহমান জানান।

এর আগে গত শনিবার রাতে স্থানীয় মঞ্জু খানের বখাটে ছেলে তামিম খানকে (১৯) প্রধান আসামী করে ৫ জনকে চিহ্নিত এবং অপর ৪/৫ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচণা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় ভাণ্ডারিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন নিহত রূপার বাবা মোঃ রুহুল আমিন মুন্সী। মামলার অন্য আসামীরা হচ্ছে- আঃ মালেক হাওলাদারের ছেলে রাইয়ান, ইরিন (পিতা-অজ্ঞাত), আলম জোমাদ্দারের ছেলে ওয়ালিদ, মোঃ রফিকুল ইসলামের ছেলে সাজিদ।

মামলা দায়েরের পর পিরোজপুর ডিবি পুলিশ ও ভাণ্ডারিয়া থানা পুলিশ গত শনিবার সন্ধ্যায় যৌথ অভিযান চালিয়ে স্থানীয় জমাদ্দার বাড়ী থেকে (বখাটের বাড়ী থেকে) মামলার প্রধান আসামী তামিম খানকে গ্রেফতার করে। পরে রোববার তাকে বিচারিক আদালতে তোলা হলে বিজ্ঞ আদালত তাকে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাকী আসামীদের আটক করতে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানান পিরোজপুরের পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান।

উল্লেখ্য, জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলার বখাটে তামিম খান স্কুলছাত্রী রূপাকে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। রূপা তা প্রত্যাখ্যান করায় এবং এর প্রতিবাদ করলে ওই বখাটে একটি নগ্ন ছবির সঙ্গে রূপার ছবি এডিট করে জুড়ে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ায় স্কুলছাত্রী রূপা ও তার পরিবার চরম বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েন। একপর্যায়ে শুক্রবার দিবাগত রাতে ক্ষোভ ও লজ্জায় ঘরে থাকা ঘুমের ওষুধসহ বিভিন্ন ধরণের ওষুধ সেবন করে আত্মহত্যা করে রূপা। সে স্থানীয় বন্দর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

 

স্মৃতির জোনাকি… ৬

স্মৃতির জোনাকি… ৬


আফরোজা হাসান


স্মৃতির জোনাকি… ৬

নাবিহা একবার ভেবেছিলো মামণি আর ফুপির কথায় কান পাতবে কিন্তু পরমূহুর্তেই এই দুষ্টু চিন্তাকে মন থকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আদীব্বার রুমের দিকে রওনা দিলো। যে ক’টি চেহারা না দেখলে নাবিহার মনের ভুবনে সূর্যোদয় হয়না পরিপূর্ণ রূপে তারমধ্যে অন্যতম একজন আদীব্বা। আদীব্বার রুমের দিকে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ পথ বদলে রান্নাঘরে পৌঁছে গেলো নাবিহা। ইচ্ছে ছিল গ্রীনটি বানিয়ে আদীব্বার জন্য নিয়ে যাবে। কিন্তু গ্রীনটি বানাতে বানাতে যার জন্য বানাচ্ছিলো তিনি এসে হাজির হলেন রান্নাঘরে। আদীকে ঢুকতে দেখে সালাম দিয়ে নাবিহা বলল, আদীব্বা আমি তোমার কাছেই যাবো ভাবছিলাম।

সালামের জবাব দিয়ে আদী হাসি মুখে বললেন, মা স্মরণ করেছে আর পুত্র হাজির হয়ে গিয়েছে। একেই বলে মাতা পুত্রের বন্ধনের ম্যাজিক। বুঝেছেন আম্মাজান!

নাবিহা হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। গ্রীনটি বানিয়েছি তোমার জন্য। সাথে আর কিছু দেবো?

আদী হেসে বললেন, কিছুক্ষণ আগে নাস্তা করেছি পেট একদম ভরা। তবে কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়ে মনের ক্ষুধা মেটাতে পারো। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, তুমি কি জানো আমাদের নেতাজ্বি কোথায় আছেন এই মূহুর্তে?

নাবিহা হেসে বলল, হসপিটাল থেকে ফোন এসেছিল এ বি নেগেটিভ রক্ত প্রয়োজন। পাপা, জিহাদ ভাইয়া রক্ত দান করতে গিয়েছেন।

জিহাদও গিয়েছে রক্ত দান করতে?

হ্যা, আজকে ভাইয়ার প্রথম রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ। পাপা অবশ্য প্রথমে নিতে চাননি ভাইয়াকে। কিন্তু ভাইয়া খুঁটি আঁকড়ে ধরে থাকা টাইপের জেদ ধরে বসে ছিল। পাপা তখন বিরক্ত কন্ঠে বলেছেন, একদম মায়ের মতো অবাধ্য প্রতিটা বাচ্চা। এরপর নিয়ে গিয়েছেন ভাইয়াকে। হাসতে হাসতে বললো নাবিহা।

আদী হেসে বললেন, আচ্ছা এবার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দাও। আনন্দবাড়ির বাতাসে একটা নিউজ ভাসছে, তোমাদের কন্যা গ্রুপের সদস্যারা মিলে নাকি বিজনেস প্ল্যান করছো? ঘটনা কি সত্যি?

নাবিহা চোখ বড় বড় করে বললো, হায় আল্লাহ! তোমার কাছে এই তথ্য পৌঁছে গিয়েছে? আমরা তো সারপ্রাইজ দেবো ভেবেছিলাম।

আদী হেসে বললেন, কিসের সারপ্রাইজ?

নাবিহা হেসে বলল, আচ্ছা চলো তোমাকে পুরো ঘটনা খুলে বলি। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল আজ থেকে প্রায় আড়াই মাস আগে। আমাদের ফ্রেন্ডদের একটা প্রোগ্রাম ছিল। সবসময় তো প্রোগ্রাম আমাদের বাড়িতেই হয়। কিন্তু ঐদিন প্রোগ্রাম আমরা হিবাদের বাসায় করেছিলাম। নানুমণি আমাদের সবার জন্য রসগোল্লা, কালোজাম মিষ্টি বানিয়ে দিয়েছিলেন। মামণি পেস্ট্রি কেক বানিয়ে দিয়েছিলেন। অনেক বেশি করে বানিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা সবাই খাওয়ার পরেও অনেক রয়ে গিয়েছিল। সবাই তখন ভাগ করে নিজ নিজ বাসায় নিয়ে গিয়েছিল মিষ্টি আর কেক। ওদের বাসা থেকে আবার ওদের রিলেটিভদের কেউ কেউ খেয়েছে সেই কেক মিষ্টি। মোটকথা, কেক, মিষ্টি ছড়িয়ে পড়েছিল দিকে দিকে, ঘরে থেকে ঘরে।

আদী হেসে ফেললেন। নাবিহাও হাসতে হাসতে বলল, হিবা, ফারিহা, মেহরিন তিনজনই পরদিন ফোন করেছিল কেক, মিষ্টির জন্য। আমি বলেছিলাম মামণি, নানুমণিকে বানিয়ে দিতে বলবো। কিন্তু ওরা যেহেতু পরিমাণে বেশি চাচ্ছিলো তাই হাদিয়া স্বরূপ নিতে চাচ্ছিলো না। কিনে নিতে চাচ্ছিলো। এই কথা শুনে আমি খুবই বিরক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু জিহাদ ভাইয়া বললো, এমনটা হলে কিন্তু মন্দ হয়না। পাপা , চাচ্চুদের স্টুডন্ট লাইফের কথা ভেবে দেখো। স্টুডেন্ট লাইফে পাপা, চাচ্চুরাও তো পার্টটাইম জব করেছেন। এবং হোম কিচেন সার্ভিসই করেছেন উনারা। পাপা, চাচ্চুরা সবসময় কতো কনফিডেন্টের সাথে বলেন উনারা সেলফ মেড পারসন। আমরা যদি এই সুযোগটা কাজে লাগাই তাহলে হয়তো আমরাও একসময় বলতে পারবো আমরা সেলফ মেড পারসন। ভাইয়ার কথাটা আমাদের সবার পছন্দ হয়েছিল।

আদী হেসে বললেন, মাশাআল্লাহ! পছন্দ করার মতো কথাই বলেছে জিহাদ। আমরা যখন হোম কিচেন সার্ভিস শুরু করেছিলাম তোমাদের বয়সীই ছিলাম।

আবারো শুনতে চাই তোমাদের কিচেন সার্ভিস শুরু গল্পটা। বলো না আদীব্বা প্লিজ।

আদী হেসে বললেন, একবার ছুটিতে দেশে গিয়েছিলাম আমরা। ফেরার সময় মা, মামণি, আম্মি সবাই মিলে ভাপের পুলি পিঠা, মালপোয়া, নাড়ু আরো অনেক কিছু দিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের ফ্রেন্ডদের জন্য। বিকেলে ফ্রেন্ডদেরকে যখন দিচ্ছিলাম তখন আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের ডেভিডকে দেখে ওকেও দিয়েছিলাম। ডেভিডের বাসায় তখন ওর কিছু ফ্রেন্ড এসেছিল। ওরা মালপোয়া আর ভাপা পুলিপিঠা খেয়ে এতই মজা পেয়েছিল আবারও নিতে চলে এসেছিল ডেভিড। যা ছিল দিয়ে দিয়েছিলাম তখন। এর পরের উইকএন্ডে ডেভিড অনুরোধ করেছিল ওর এক ফ্রেন্ডের পার্টির জন্য দেড়শো মালপোয়া আর ভাপের পুলিপিঠা এনে দিতে পারবো কিনা। ডেভিড কে বলা হয়নি ওগুলো যে মা দেশ থেকে পাঠিয়েছিলেন। তাই ভেবেছিল আমরা হয়তো আশেপাশের কোন ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট থেকে এনেছি। আমরা হ্যা বা না কিছু বলার আগেই ডেভিড হান্ডেড ডলার হাতে গুঁজে দিয়ে বলেছিল, এতে হয়ে যাবে নাকি আরো লাগবে? ঐ সময় টাকায় বেশ প্রয়োজনও ছিল আমাদের। তাই বললাম, এরমধ্যেই হয়ে যাবে। এরপর ওকে বিদায় দিয়ে তোমার পাপা, আমি আর হুজাইফা মিলেই বানিয়ে ফেলেছিলাম মালপোয়া আর ভাপের পুলিপিঠা। মামণিকে ফোন করে জেনে নিয়েছিলাম সবকিছু। আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি ভালোই হয়েছিল। পার্টির সবাইও খুব পছন্দ করেছিল । পরের ইউকএন্ডে তিনটা পার্টি থেকে প্রায় এক চারশো পিসের অর্ডার পেয়েছিলাম।ডেভিড এরমধ্যে একদিন এসে যেখান থেকে খাবার আনি সেই রেস্টুরেন্ট এর ঠিকানা চাইলো। তখন ওকে জানালাম আমরা নিজেরাই বানিয়ে দিয়েছি। ডেভিড ব্যবসায়ী মানুষ তাই ব্যবসার বুদ্ধি দিলো আমাদেরকে। পরের উইকএন্ডে নিজের বাসায় পার্টি দিয়েছিল। এবং ওর সাথে কথা পরামর্শ অনুযায়ী আমরা নতুন কিছু খাবার বানিয়ে দিয়েছিলাম সেদিন। বীফ টিকিয়া কাবাব, বুন্দিয়ার লাড্ডু, চিকেন রোল এন্ড ভেজিটেবল পাকোড়া। প্রতিটা আইটেমই সবার ভীষণ পছন্দ হয়েছিল আলহামদুলিল্লাহ। এরপর থেকে এত অর্ডার আসতে শুরু করেছিল যে রীতিমত হিমশিম খেতে হতো আমাদেরকে। পাবলিসিটির কাজে ডেভিডই সবকিছু করেছে। ডেভিড পরামর্শ দিয়েছিল ফার্স্টফুড রেস্টুরেন্ট দেবার। কারণ আমাদের স্যান্ডুইচ, বার্গারও খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু প্রথমেই আমরা রেস্টুরেন্ট নেবার সাহস করতে পারিনি। তাছাড়া আমরা সবাই স্টুডেন্ট ছিলাম অতটা সময়ও ছিল না আমাদের। প্রায় দেড় বছর আমরা হোম কিচেন সার্ভিসই চালিয়েছি। এরপর পাবলিক প্লেসে একটা পুরনো রেস্টুরেন্টের খোঁজ এনে দিয়েছিল ডেভিড আমাদেরকে।

সেটাই ছিল তোমাদের প্রথম রেস্টুরেন্ট, তাই না? উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বললো নাবিহা।

আদী হেসে বললেন, হ্যা, আলহামদুলিল্লাহ। সেই রেস্টুরেন্টটাই ছিল আমাদের রেস্টুরেন্ট বিজনেস শুরুর প্রথম রেস্টুরেন্ট। ডেভিডের উৎসাহ ও পরামর্শে আমরা রেস্টুরেন্ট তো নিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু যেহেতু আমরা সবাই স্টুডেন্ট ছিলাম। পড়াশোনা ঠিক রেখে ফুল টাইম রেস্টুরেন্ট দেখাশোনা করার মতো কেউ ছিল না আমাদের। তাই আমরা ডেভিডের সাথে কন্টাক্ট এভাবে করেছিলাম যে ইনভেস্ট আমরা করবো, কি কি খাবার থাকবে সেই মেন্যু আমরা নির্ধারণ করবো। কিন্তু দেখাশোনা থেকে নিয়ে শুরু করে অন্যান্য অফিশিয়াল সব কাজ ডেভিড করবে। এজন্য সেলারি ছাড়াও প্রফিটের টুয়েন্টি পার্সেন্ট ওকে দেয়া হবে। ডেভিড রাজী হয়ে গিয়েছিল বলার সাথে সাথেই। এরপর কাজ শুরু করেছিলাম আমরা। পুরো রেস্টুরেন্টই নতুন করে ডেকোরেশন করেছিলাম। কোয়ালিটির দিকে খুব বেশি কেয়ারফুল ছিলাম আমরা। যাতে কেউ একবার আমাদের রেস্টুরেন্টে এসে খেয়ে যাবার পর, পরবর্তীতে আবারো আসার সময় সাথে করে নতুন কাউকে নিয়ে আসে খাবার টেষ্ট করানোর জন্য। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিভিন্ন ফ্লেবারের জ্যুস, আইসক্রিম, চা-কফি, স্যুপ এসব আমরা রেখেছিলাম অ্যালকোহলের চাহিদা দূর করার লক্ষ্য। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ এই আইটেমগুলোই আমাদের রেস্টুরেন্টের মূল আকর্ষণে পরিণত হয়েছিল। অনেক দূর থেকেও লোকজন আসতো আমাদের রেস্টুরেন্টে। ধীরে ধীরে আমাদের অভিজ্ঞতা যত বেড়েছে, খাবারের মান তত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেই সাথে খাদ্য প্রেমী মানুষও। এক পর্যায়ে গিয়ে রেস্টুরেন্টের সংখ্যা।

নাবিহা হেসে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। আসলেই যখন মানুষ কল্যাণের পথে চলতে চেষ্টা করে, আল্লাহ সেটা সহজ করে দেন। কল্যাণের পথকে আমরাই কঠিন মনে করে এড়িয়ে যাই। নিজেদেরকে বঞ্চিত করি আল্লাহর করুণাধারায় সিক্ত হওয়া থেকে।

আদী হেসে বললেন, একথাটাই বেশির ভাগ মানুষ বুঝতে পারে না বা বোঝার চেষ্টা করে না। আল্লাহর উপর ভরসা করে বলে কিন্তু সেই ভরসা থেকে উদ্যোগ নেবার সাহস করে না। অথচ সেই ভরসার ভীত কতই না দুর্বল যা আমাদের কদমকে সামনে এগুবার সাহস পর্যন্ত দিতে পারে না। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের মনে এক মূহুর্তের জন্যও দ্বিধা কাজ করেনি। কারণ আমাদের লক্ষ্য ক্লিয়ার ছিল আমাদের কাছে। আমরা জানতাম কি করতে যাচ্ছি, কেন করতে যাচ্ছি। ব্যর্থতা আসতে পারে এই চিন্তাটাকেও আমরা মনের কাছে ভিড়তে দেইনি। হয়তো তখন সবে মাত্র আমরা টিনএজের গন্ডি থেকে বের হয়েছিলাম বলেই অন্যরকম উত্তেজনা ছিল মনে। রিক্স নিতে ভালো লাগতো। অ্যাডভেঞ্চার ভালো লাগতো। চিন্তার করার সাথে সাথেই অ্যাকশনে নেমে পড়তাম সবাই মিলে। ঐসময় একটাই ভাবনা ছিল আমাদের মনে, “ আমাদের উদ্দেশ্য যদি সুন্দর ও সঠিক থাকে তাহলে ব্যর্থতা আমাদেরকে স্পর্শ করতে পারবে না কিছুতেই।“ এই বিশ্বাস আর ভরসাকে আমরা সবসময় ইতিবাচক রুপেই ফিরে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ। তাই হয়তো প্রথম রেস্টুরেন্টটা দেবার সাড়ে তিন বছরের মধ্যে আমাদের রেস্টুরেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১৩ টিতে। এবং সেই বছরই আমরা প্রথম সুপার স্টোর দিয়েছিলাম সমস্ত হারাম ফুড অ্যাভয়েড করে শুধুমাত্র হালাল ফুডের। এমনকি আমরা সন্দেহযুক্ত ই-কোড আছে এমন খাবারও অ্যভয়েড করেছি। উইলি দাদু তখন বিশাল বড় সাহায্য করেছিলেন আমাদেরকে। আমাদের নানাভাইয়ের এক আমেরিকান ফ্রেন্ড ছিলেন।

উইলি দাদু, তাই না আদীব্বা?

আদী হেসে বললেন, হ্যা উইলি দাদু। উইলি দাদুদের পারিবারিক বন্ধ পরে থাকা ফ্যাক্টরিটা আমাদেরকে উপহার স্বরূপ দিয়েছিলেন। যারফলে, আমাদের সুপার মার্কেট আমরা নিজস্ব প্রোডাক্ট দ্বারা সাজানোর সুযোগ পেয়েছিলাম আলহামদুলিল্লাহ। আমাদেরকে পার্টটাইম জবের জন্য তখন আর অন্য কোথাও যেতে হতো না। নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেই আমরা নিজেরা কাজ করেছি, আমাদের যেসব ক্লাসমেটদের জবের দরকার ছিল তাদেরকে কাজ দিয়েছি। এছাড়া অসংখ্য নীডি মানুষেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছিল এরফলে আলহামদুলিল্লাহ।

নাবিহা বলল, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু পড়াশোনা সামলে এইসব কিছু দেখাশোনা নিশ্চয়ই অনেক বেশি কঠিন হয়েছিল তোমাদের জন্য।

আদী হেসে বললেন, কঠিন হতো যদি আমরা সংঘবদ্ধ না থাকতাম তাহলে। কিন্তু আমরা তো সর্বদা, সর্বাবস্থায় পরস্পরের হাত আঁকড়ে ধরে পথ চলেছি। আমাদের কারো জীবনে এমন কোন সফলতা নেই, যেটাকে ঘিরে বলতে পারি এটা আমার একার অর্জন। আমাদের একার কোন অর্জন নেই। যা কিছুই আছে সব আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রতিফল আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের প্রতিটা কাজের পেছনে পরিষ্কার পরিকল্পনা ছিল। নিয়ম ছিল, রুটিন ছিল প্রতিটা কাজের। কেউ যাতে ভুলেও রুটিনে বা নিয়মে কোন উল্টা পাল্টা করতে না পারে সেজন্য আমাদের চারজনের একটা গ্রুপ ছিল। তাদের কাজ ছিল একাউন্ট দেখা আর সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া। যদিও মনেহতো ওরা হয়তো কম কাজ করছে, আরামে আছে। কিন্তু ওদের কাজই ছিল সবচেয়ে কঠিন। সাথীদের পিছনে অতন্দ্রপ্রহরীর মতো লেগে থাকতো ওরা চারজন। আলহামদুলিল্লাহ ওদের এই ধৈর্য্য, অধ্যবসায় ও ত্যাগের মূলধন যদি না থাকতো আমরা কখনোই হয়তো পারফেকশনিস্ট হতে পারতাম না কথা, কাজ ও আচরণে।

নাবিহা হেসে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। আমার সেই চারটা সোনার টুকরো ছেলে যেন কে কে?

আদী হেসে বললেন, কুতায়বা, হুজায়ফা, হামজা আর মাহমুদ। তবে আম্মাজান আপনার এই সোনার টুকরোরা আপনার পাপার আত্মার একেকটা টুকরো।

নাবিহা হেসে বলল, হ্যা পাপা সবসময় বলেন, ‘আমার সাথীদের ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। আমার জীবনের সবকিছু অসম্পূর্ণ। ওরা আছে বলেই আমি আছি। ওদের একজনও যদি আমাকে ছেড়ে সরে যায় আমার ভীত হেলে যাবে। আমার প্রতিজন সাথী আমার অস্তিত্বর অত্যাবশ্যকীয় অংশ।’ তোমাদের সবার বন্ধন অদ্ভুত সুন্দর আদীব্বা। কত বছর হয়ে গিয়েছে তাও তোমাদের বন্ধন আগের মতোই আন্তরিক, সুদৃঢ়। মত পার্থক্য অনেক হয় তোমাদের কিন্তু তোমাদের মন সবসময়, সর্বাবস্থায় একত্রিত থাকে। এর কারণ তোমাদের বন্ধনের কেন্দ্রবিন্দু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি ভালোবাসা। ইনশাআল্লাহ আমরাও নিজেদেরকে এভাবেই গড়বো। এখন তাহলে আমি যাই আদীব্বা।

আদী বললেন, যাবে মানে? তোমাদের হোম কিচেন সার্ভিসের ঘটনা বলবে না?

নাবিহা হেসে বলল, অবশ্যই বলবো তবে এমন একা একা না। এটা আমাদের সবার অর্জন তাই সবাই মিলে একসাথে বলবো ইনশাআল্লাহ।

আদী তখন হাসি মুখে নাবিহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। নাবিহাও হাসতে হাসতে চলে গেলো।

চলবে…

পর্ব-৫

 

মানুষের সুচিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যসেবা

মানুষের সুচিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যসেবা


ডাঃ সাকলায়েন রাসেল


ইন্টার্নিশিপের সময় ২ বছর করায় তীব্র প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছেন…চিকিৎসক ও হবু চিকিৎসকরা! সম্ভাব্য আন্দোলনের দাবানল মেডিকেলে মেডিকেলে।

২ বছর ইন্টার্নিশিপের বিষয়ে আমি একটি প্রশ্ন রেখেছিলাম…এতে প্রায় ১২ শ চিকিৎসক, হবু চিকিৎসক মন্তব্য করেছেন!

মাত্র ২ জন…দুই বছরের পক্ষে মত দিলেও বাকী সবাই এর বিপক্ষে মত দিয়েছেন!

উল্লেখ্য, বর্তমানে MBBS পাশ করতে মোট ৬ বছর সময় লাগে। এরমধ্যে ৫ বছর একাডেমিক সময়, ১ বছর ইন্টার্নিশিপ।
২০১৯ সালের প্রস্তাবিত খসড়া অনুযায়ী ৫ বছর একাডেমিক, ২ বছর ইন্টার্নিশিপ।
ইন্টার্নিশিপের ২ বছরের মধ্যে আবার ১ বছর গ্রামে থাকতে হবে।

শুরুতেই জানিয়ে রাখি উক্ত নিয়ম শুরু থেকেই কার্যকর আছে গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেলে। যারা প্রবক্তা বহুল আলোচিত
ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী।
এখানে তাই ইন্টার্ন সময় দেড় বছর।
১ বছর নিজ মেডিকেলে, ৬ মাস বাইরে।
এটা নিয়ে সেখানকার ডাক্তাররাও শুরু থেকেই প্রতিবাদী। কিন্তু প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস কেউ করেন না।

যারা ২ বছর করার পক্ষে তাদের মত হলঃ
১. এতে নবীন চিকিৎসকরা অধিক দক্ষ হবেন।
২. গ্রামের মানুষ সুচিকিৎসা পাবেন।
৩. উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এটা করা হচ্ছে।

কিন্তু যারা বিপক্ষে তারা এটা মানতে নারাজ।
তাদের যুক্তি হলঃ
১. এতে করে শিক্ষাজীবন অহেতুক বৃদ্ধি পাবে। সাধারণ মানুষ চিকিৎসক হতে নিরুৎসাহিত হবেন।
২. ইন্টার্ন ডাক্তাররা গ্রামের মানুষদের চিকিৎসা দিতে পারবেন না। তারা সুপারভাইজড ট্রেইনিং করতে পারবেন মাত্র।
৩. গ্রামে পর্যাপ্ত কনসালটেন্ট নেই। সেক্ষেত্রে ইন্টার্ন ডাক্তারদের ট্রেইনিং কে দিবে, তারা রোগীর চিকিৎসাই বা কিভাবে করবে?
৪. উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে চাইলে MBBS এর সময় কমানো উচিত।
ইন্ডিয়ায় এমবিবিএস সাড়ে ৫ বছর, দুনিয়ার কোথাও এবিবিএস পাশ করতে ৭ বছর লাগেনা।
৫. অনেকে ডাক্তার বেকার আছে। গ্রামের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে তাই এসব ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হোক।
৬. গ্রামে পর্যাপ্ত জনবল, অবকাঠামো না থাকায়, নিরাপত্তা সমস্যা মনে করছেন অনেকে, বিশেষ করে নারী নবীন চিকিৎসকরা।
৭. বাংলাদেশের মেডিকেল গুলোতে অনেক বিদেশী স্টুডেন্ট পড়ালেখা করছেন। তাদের মাধ্যমে মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। ৭ বছর হলে তারা নিরুৎসাহিত হবেন। তারা কখনোই গ্রামে যেতে চাইবেন না।
৮. ইন্টার্ন নিয়োগ দিয়ে গ্রামের মানুষের চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানোর কথা বলা তাই স্রেফ ধোঁকাবাজি মনে করছেন কেউ।
৯. মেডিকেলে একবারে পাশ করার হার খুব বেশি না। তাই ফেল করলে তাদের শিক্ষাজীবন আরো বিলম্বিত হবে।
১০. এমবিবিএস পাশ করতেই যদি ৭ থেকে ১০ বছর লেগে যায় তবে পোস্ট গ্রাজুয়েট শুরু করবে কখন।

এসব দিক বিবেচনায় ইন্টার্নিশিপ সময় ২ বছর করার বিরোধিতা করছেন শিক্ষার্থীরা। শুধু তাই নয় আন্দোলনসহ আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষেও তারা।
কারণ, এখন যারা মেডিকেলে পড়ছেন তাদের প্রজ্ঞাপনে ১ বছর ইন্টার্নির কথা বলা ছিল।
হঠাৎ করে ২ বছরের আইন করলে তা আগামী ৬ বছর পর করতে হবে। কারণ নতুন ব্যাচ মেডিকেলে ভর্তি হলে তারা আগে থেকেই জানবে ইন্টার্নশিপ ২ বছর।

খসড়া নীতিমালা চুড়ান্ত করার আগে তাই এসব বিষয় বিবেচনা করা উচিত বলে করছেন সচেতন মহল।

 

স্মৃতির জোনাকি…৫

স্মৃতির জোনাকি…৫


আফরোজা হাসান


চা নিয়ে ব্যালকনিতে বসার পর তাসমিয়া বলল, আমার ফ্রেন্ড ঈশাকে তো তুমি চেনোই। ওর সমস্যা নিয়ে তোমার সাথে আলোচনা করতে চাচ্ছি ভাবী। ঈশা আর ওর হাজবেন্ডের চমৎকার রিলেশন ছিল। অনেকটা আমাদের বাড়ির ক্যাপলদের মতো সম্পর্ক ছিল ওদের হাজবেন্ড ওয়াইফের মাঝে বিয়ের পর থেকে গত দশ বছর। সারাক্ষণ দুষ্টুমি, খুনসুটি করতো দুজন। ওদের দুই মেয়ে। বড় মেয়ের বয়স সাত, ছোটটার চার। দুজনই যথাসাধ্য শরীয়তের বিধিবিধান মেনে চলার চেষ্টা করতো জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই। মাঝে বছর খানেক যোগাযোগ ছিল না ওর সাথে তেমন। সপ্তাহ খানেক আগে ঈশার হাজবেন্ড সাফী ভাই যোগাযোগ করেছেন আমার সাথে। তখন জানতে পারলাম ঈশা ডিভোর্স ফাইল করেছে। কারণ কি জানতে চাইলে সাফী ভাই জানালেন, বিয়ের আগে অন্য এক মেয়ের সাথে উনার রিলেশন ছিল। পারিবারিক কারণে বিয়ে হতে পারেনি। পরে ঈশার সাথে বিয়ে হয়েছিল। ঈশা খুবই ভালো মেয়ে। এত ভালো একটি মেয়েকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পেয়ে সাফী ভাই অতীত একদম ভুলে সুখের সংসার গড়ে তুলেছিল দুজন মিলে। গত রোজার ঈদের সময় ফেসবুকে আগে যে রিলেশন ছিল সেই মেয়েটার সাথে সাফী ভাইয়ের আবার কন্টাক্ট হয়। প্রথম দিকে দুজন শুধুমাত্র ফ্রেন্ডের মতো কথাবার্তা বলেছে। কিন্তু এভাবে কথা বলতে বলতে দুজন কাছাকাছি চলে আসে পুনরায়। অতীতের স্মরণ করতো দুজন, দুজনের বিয়ে হলে কত ভালো হতো সেসব কল্পনা জল্পনা করতো, বিচ্ছেদের জন্য একে অন্যকে দায়ী করে অভিমান করতো, এভাবে চলতে চলতে আবার পুরনো প্রেম জেগে উঠেছিল দুজনের মনে। একদিন ঈশা সাফী ভাইয়ের ম্যাসেঞ্জারে ঢুকে দেখে দুজনের প্রেমালাপ, মন জুড়ে এখনো তুমি, তোমারে পারিনি ভুলতে টাইপের হাহুতাশ। ঈশা জানার পর সাফী ভাই নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু ঈশার কথা হচ্ছে, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত্তিই হচ্ছে বিশ্বাস। বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে ভালোবাসা, সম্মান কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। এমন প্রাণহীন সম্পর্ক না আমাদের জন্য কল্ল্যাণকর হবে, না আমাদের সন্তানদের জন্য। তাই ডিভোর্সই উত্তম। সাফী ভাই অনেক ক্ষমা চেয়েছে, প্রেমিকাকে সব কিছু থেকে ব্লক করে দিয়েছে, সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন করেছে কিন্তু ঈশা কিছুতেই রাজী হয়নি ক্ষমা করে দিয়ে পুরনায় সংসার করতে। দুই মেয়েকে নিয়ে ঈশা চলে গিয়েছে ওর বাবার বাড়িতে। সাফী ভাই জানেন ঈশা যে তোমাকে ভীষণ পছন্দ করে। তাই আমাকে অনুরোধ করেছেন আমি যেন তোমাকে বলি ঈশাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে। তুমি কি ঈশার সাথে কথা বলবে ভাবী? ওর ফোন নাম্বার দেবো?

তাসমিয়ার প্রশ্ন শোনার পরও বেশ কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর নূহা বলল, কি কথা বলবো? আমার কাছেও দাম্পত্য জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিশ্বাস। কারো প্রতি বিশ্বাস না থাকলে তাকে শ্রদ্ধা, সম্মান করাও যায় না। আর শ্রদ্ধা, সম্মান, বিশ্বাস ছাড়া কোন সম্পর্ক টিকে থাকবে কিসের উপর ভিত্তি করে? ঈশার স্থানে আমি থাকলে আমি নিজেও হয়তো ঈশার মতোই সিদ্ধান্ত নিতাম। আমি নিজে যে কাজ করবো সেই কাজের বিপরীত কিছু করার জন্য আরেকজনকে কিভাবে উৎসাহিত করবো? তুমি বরং তোমার ভাইজানকে বলো এই বিষয়টা দেখতে। উনি আমার চেয়ে উত্তম পরামর্শ দিতে পারবেন সাফী ভাইকে উনার করণীয়র ব্যাপারে।

তাসমিয়া বলল, ভাইজানকে আমি বলেছি ভাবী। ভাইজান সাফী ভাইকে বিকেলে আসতেও বলেছেন কথা বলার জন্য। কিন্তু ঈশার সাথে কথা তোমাকেই বলতে হবে। ভাইজানও এই কথাই বলেছেন আমাকে।

কোন কথা?

ভাইজান বলেছেন, তোমাকে ভাবীকে বলো ঈশার সাথে কথা বলতে। দুষ্টু মিষ্টি মিশ্র হাসির অভিব্যক্তি ছড়িয়ে পড়লো তাসমিয়ার চেহারা জুড়ে। কিছু কিছু ব্যাপারে নূহা ভীষণ রকম অনুদার সেই তথ্য বেশ ভালো করেই জানা আছে তাসমিয়ার। জানে যে ব্যাপারগুলোতে নূহা কাউকে কনভিন্স করতে নারাজ তারমধ্যে একটি হচ্ছে বিশ্বাস ভঙ্গ। বিশেষ করে দাম্পত্য সম্পর্কে ধোঁকা দেয়া একেবারেই মেনে নিতে পারে না নূহা। সেজন্যই আগে জাওয়াদের কাছেই গিয়েছিল ঈশা, সাফীর সমস্যা নিয়ে তাসমিয়া। কারণ পুরো দুনিয়াতে জাওয়াদই একমাত্র ব্যক্তি যার বলা কোন কথা অপছন্দীয় হলেও বিরোধ করার আগে নূহা দ্বিতীয়বার ভেবে দেখে।

বেশ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ বসে থাকার পর নূহা বলল, সাফী ভাই যখন তোমার ভাইজানের সাথে কথা বলতে আসবেন আমাকে বলো। আমি আড়াল থেকে উনাদের কথোপকথন শুনবো। এরপর যদি আমার মনেহয় ঈশার সাথে কথা বলা উচিত তাহলে বলবো ইনশাআল্লাহ।

তাসমিয়া বলল, ঠিকআছে ভাবী। কোন ব্যাপার নিজে মেনে নিতে না পারলে, অন্যকে মানাতে যাওয়াটা আসলেই অনেক কঠিন।

নূহা হেসে বলল, উহু, মোটেই কঠিন না। বরং নিজে মান্য বা আমল না করে অন্যকে সেই ব্যাপারে উৎসাহিত করাটা বর্তমানে মানুষের স্বভাবধর্মে পরিণত হয়েছে। নিজে ভুলের পথে থেকে অন্যকে সঠিক পথের দিশা বাতলে দেয়ার মানুষের অভাব নেই। সেজন্যই হয়তো মাহফিলে স্ত্রীর হক আদায়ের উপরে বক্তব্য উপস্থাপন করা ব্যক্তি ঘরে ফিরে নিজের স্ত্রীকে অপমান, ভৎর্সনা, এমনকি গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করেন না। কিন্তু আমি এমন কিছু করতে চাইনা। আমি নিজে যা করবো না, অন্যকেও তা করতে বলবো না। যে বিষয়টা আমার পক্ষে মেনে নেয়া কঠিন, তেমন কিছু করার জন্য আমি কেন অন্য কাউকে বোঝাতে যাবো?

হুম, তোমার কথাও ঠিক আছে ভাবী। আচ্ছা তুমি সাফী ভাইয়ের কথা শুনে দেখো। এরপর যদি তোমার মনেহয় ঈশার সাথে কথা বলা উচিত তাহলে বলো। এখন ঈশার কথা বাদ। এখন আমার দুঃখের কথা শোনো এবং সমাধান দাও।

নূহা হেসে বলল, শোনাও তোমার দুঃখগাঁথা।

তাসমিয়া বলল, তোমার ভাই আমার হাজবেন্ড কম, দোস্ত বেশি এই তথ্য তো জানোই। এমনিতে সে ভীষণ ভালো একটা ছেলে এই তথ্যও তুমি জানো। সেই তথ্য তুমি জানো না সেটা হচ্ছে রাগ হলেই তোমার ভাই আউলা ঝাউলা হয়ে যায়। আমি রাগ করার মতো কর্মকান্ড করি সেটা মানছি। কিন্তু রাগ করার মতো কিছু করলেই কি সবসময় রাগ করতে হবে? ভালোবাসার মতো কত কাজও তো করি। কই সবসময় তো ভালোবেসে ভাসিয়ে দেয়না আমাকে। তাহলে রাগ দেখাতে এমন ভুলে যায় না কেন? ব্যস্ততার কারণে রাগ দেখানোর সময়ের অভাবে বকেয়াই পরে থাকে না কেন? তুমিই বলো ভাবী আমি কি খুব বেশি ভুল কিছু বলেছি?

নূহা হাসতে হাসতে বলল, মোটেই না।

তাসমিয়া বলল, তবে রাগ দেখানো নিয়েও আমার তেমন কোন অভিযোগ নেই। রাগলে তোতলা টাইপ হয়ে যায় তোমার ভাই। তোতলামো কথাগুলো শুনতে এত্তো কিউট লাগে যে কি বলবো! আমি ওর কিউটনেস দেখাতেই ব্যস্ত থাকি বিধায় রাগ করে কি বলছে না বলছে গায়ে মাখি না কখনোই খুব একটা। বকা দিলেও আমিই নিজ থেকে যেয়ে কথা বলি।। কিন্তু উমার ঠিক আমার উল্টো। আমি যদি রাগ করে কিছু বলি ওর গালে পানি এসে যায় একদম। মানে ফুলে ঢোল আরকি! সমবয়সী বিয়ে করার জ্বালাও কম না বুঝলে ভাবী। এই যেমন, তিন বাচ্চাকে আমার কাছে রেখে লাফাতে লাফাতে ছোট ফুপির ছেলের বিয়ে খেতে চলে গেলো গত পরশু। কথা ছিল গতরাতে চলে আসবে। কিন্তু ভাই-বন্ধুদের সাথে আনন্দে মশগুল থেকে আসেনি। আজকে ফার্স্ট ফ্লাইটে ওর চলে আসা উচিত ছিল কিনা বলো? আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম নয়টায় মধ্যে উমার আমার সম্মুখে থাকবে ইনশাআল্লাহ। ওর পছন্দের নাস্তাও রেডি করলাম ফজরের পর না ঘুমিয়ে। নাস্তা রেডি করে ফুপির বাসায় ফোন করেছিলাম উনাদের খোঁজখবর নেয়ার জন্য। তখন কথায় কথায় ছোট ফুপি জানালো উমার এখনো ঘুমোচ্ছে। মাথায় তখন বাজ পড়বে কিনা বলো? অবশ্যই পড়বে। আমারও পড়লো। মনেহলো একা জ্বলবো কেন? যার কারণে বাজ পড়েছে তারেও পুড়িয়ে ছারখাড় করে দেবো। যাইহোক, ফোন করে লেডি টারজান হয়ে কিছুক্ষণ চিৎকার করলাম। তোমার ভাইয়ের এতবড় দুঃসাহস সে নিজের ভুল স্বীকার না করে উল্টা আমাকে ঝাড়ির উপর ঝাড়ি। কবে আমার কারণে তার মেয়েদের জ্বর হয়েছে, কবে তার ছেলে একা একা রান্নাঘরে গিয়ে হাত পুড়িয়েছে, কবে আমি সুপার মার্কেটে গিয়ে নিজের মনে কেনাকাটা করতে করতে বাচ্চাদেরকে আরেক সারিতেই ফেলে এসেছিলাম, ইত্যাদি ইত্যাদি বিশাল লিষ্ট। বললাম, চিৎকার করে এসব কথা বলছো কেন? ফুপিরা শুনলে কি ভাববে? উমার বলল, ফুপিরা যাতে শোনে সেজন্যই জোরে জোরে বলছি। তোমার কর্মকান্ড মাইকিং করে বলার মতো। বাড়ির সবার জানা উচিত কেমন মেয়ে তারা আমার ঘাড়ে চাপিয়েছে। আর কিছু না বলে আমি ফোন রেখে দিলাম। এরপর থেকে আমার মাথা কাজ করছে না। তুমি বুদ্ধি দাও কিভাবে ঘাড়ের বোঝা বাড়িয়ে ওর ঘাড় মটকে দেয়া যায়। আমি মটমট শব্দও শুনতে চাই ওর ঘাড় ভাঙ্গার। হাসি থামাও তো ভাবী পরামর্শ দাও।

নূহা হাসতে হাসতে বলল, পরামর্শ থাক তারচেয়ে দোয়া দেই। দোয়া করি, সারাজীবন তোমরা দুজন এমনই থাকো, খুনসুটি ভালোবাসা দিয়ে পরস্পরকে আঁকড়ে রাখো। কখনো সখনো হলে হোক মত পার্থক্য,কিন্তু উভয়ের মন থাক একাকার অটুট থাকুক ঐক্য।

তাসমিয়া হেসে বলল, তোমার দোয়ায় আমীন।

একটুক্ষণ চুপ থেকে হাসি মুখে নূহা বলল, সুইজারল্যান্ড গিয়ে তুষার ঝড়ে আটকা পড়েছিলাম একবার। আমাদের থাকার প্ল্যান ছিল না। সকালের ফ্লাইটে গিয়েছিলাম। কাজ শেষ করে বিকেলের ফ্লাইটেই ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু প্রচুর তুষারপাতের কারণে আটকা পরে গিয়েছিলাম। তাও আবার মাঝপথে গাড়ির ভেতর। সামনে যাবার পথ ছিল বন্ধ আর পেছনে আমাদের মতো শুভ্র বরফের শ্রাবণে আটকা পরা আরো কয়েকজন ব্যক্তি। করুন চোখে আমার সফরসঙ্গীর দিকে তাকিয়েছিলাম। উনি মিষ্টি করে হেসে আশ্বাস ভরা কন্ঠে বলেছিলেন, এদিকটাতে এমনটা হয় প্রায়ই। চিন্তার কিছু নেই কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে সবকিছু ইনশাআল্লাহ। কিন্তু উনার কথা উল্টো প্রমাণিত হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আঁধার নেমে এলো এবং সেই সাথে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। গরম কাপড় যা ছিল তা মোটেই যথেষ্ট ছিল না। কোথাও থেকে গরম কাপড় কিনে নেবার মতো অবস্থাও ছিল না। আমার সফরসঙ্গী বড়ই রোম্যান্টিক ছিলেন। ঐ রকম ভয়ঙ্কর ঠান্ডার মধ্যেও মুখে হাসি টেনে দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, স্বামীরা শত ভালো কথা বললেও তো স্ত্রীদের সেটা মনঃপুত হয় না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কুরআনে বলে দিয়েছেন, “আমি তোমার পরিচ্ছদ এবং তুমি আমার পরিচ্ছদ”। সুতরাং, একে অন্যেকে ঢেকে রাখার, উষ্ণতা দেয়াটাই আমাদের ফার্স্ট ডিউটি। অন্যসময় হলে এই আহ্বান হয়তো বাতাসেই উড়িয়ে দিতাম। কিন্তু ঐ মূহুর্তে দরকার ছিল পরিচ্ছদের, তারচেয়েও বেশি উষ্ণতার।

হাসি একান ওকান বিস্তারিত করে তাসমিয়া হেসে বলল, ভাইজান ছিলেন তোমার সাথে?

তাসমিয়া প্রশ্ন শুনেও না শোনার ভান করে হাসি মুখে নূহা বলল, সূরা বাকারাহ এর ১৮৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,” তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ”। জীবনে এরআগে অসংখ্যবার এই আয়াত ও তার ব্যাখ্যা পড়েছিলাম, শুনেছিলাম। কিন্তু সেদিন প্রথম আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়েছিলাম উষ্ণতার আশায়। অন্যরকম একটা অনুভূতি ছিল ভালো লাগার। কিন্তু তারচেয়েও বেশি ছিল কারো পরিচ্ছদ হবার উপলব্ধি। পোশাক আসলে কি? যা আমাদেরকে ঢেকে রাখে। কিন্তু এই ঢেকে রাখার মাঝেও আছে বৈচিত্রতা। পরিবেশ-পরিস্থিতি, ঋতু-প্রকৃতি, আবহাওয়া ইত্যাদির প্রভাবে পোশাকের বদলে যাওয়া ধরণ। গরমের সময় পাতলা, নরম সুতি কাপড়ের পোশাক কতই না আরামদায়ক। শীতের সময় সেই পোশাকই হয়ে দাঁড়ায় শারীরিক কষ্টের কারণ। আবার শীতপ্রধান দেশের ভারি ওভারকোর্ট মরুভূমিতে বড়ই বেমামান। তেমনি বরষার রেইনকোর্ট গায়ে বসন্তের বুকে চলাও হাস্যকর। মূলকথা, বদলে যায় পোশাকের ধরণ, যখন হয় পরিবেশ ও অবস্থার পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তন মোটেই অপ্রয়োজনীয় কিছু নয়। বরং স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য অতীব জরুরি। মনে প্রশ্ন জাগাটা খুব স্বাভাবিক যে, তাহলে কি পরিবেশ ও পরিস্থিতি ভেদে, মনের ঋতু ও আবহাওয়ার পরিবর্তনে আমাদের মানসিক পরিচ্ছদের বদলটাও স্বাভাবিক নয়? স্বাভাবিকের সাথে সাথে অতীব জরুরিও আসলে।

হুম, এভাবে তো ভেবে দেখিনি কখনো। বললো তাসমিয়া।

নূহা বলল, স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনটাকে ভীষণ অদ্ভুত, বিস্ময়কর মনেহয় সবসময়ই। দুজন মানুষ যাদের মধ্যে থাকে না কোন রক্তের সম্পর্ক, থাকে না আত্মীয়তার বন্ধন। না থাকে বন্ধুত্ব, না কোন গভীর পরিচিতি। তবুও কি বিস্ময়কর ভাবে জুড়ে যায় পরস্পরের সাথে। এমন একটা বন্ধন যেটা মোটেই অটুট না। বরং ভেঙে যেতেই পারে প্রতিকূলতায় এমন গ্যারান্টি প্রাপ্ত। অথচ সেই বন্ধনের উপর ভর করেই দুজন মানুষ শ্রদ্ধা, সম্মান, বিশ্বাস, ভরসা ও ত্যাগের ফোঁড়ে গড়ে তোলে সুখ-স্বপ্ন-ভালোবাসার নকশীকাঁথা। অচেনা দুজন মানুষ হয়ে যায় সবচেয়ে আপন কেউ, কাছের কেউ, চিরচনা কেউ, সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী, মর্মব্যথী, পরম নির্ভরতার ও প্রশান্তির আশ্রয়। আগলে রাখে একে অন্যেকে সকল নেতিবাচকতা থেকে। ঠিক যেন পোশাকের মতোই। তবে খুব কম সময়ই হয়তো খেয়াল থাকে পোশাকের বৈচিত্রতার কথা। পরিবেশের সাথে সামঞ্জন্সতার কথা। বর্তমান অবস্থায় পরিহিত পোশাকটা ঋতু ও আবহাওয়ার সাথে মানান সই কিনা সেই বিবেচনাটা খুব জরুরি। কারণ কনকনে ঠান্ডায় কারো তরে ফিনফিনে মসলিন হয়ে কি লাভ? কি লাভ প্রখর রৌদ্দুরে উলের সোয়েটার হয়ে? আবার কে বলেছে অঝর শ্রাবণে ছাতা হয়ে লাভ নেই? কে বলেছে ছাতা পরিচ্ছদ নয়? কে বলেছে মরুর বুকে ঝর্ণাধারাই হতে হবে? সাইট ব্যাগে থাকা মিনারেল ওয়াটারের বটল হওয়া যাবে না? এই কথাই বা কে বলেছে?!

এভাবে তো কখনোই চিন্তা করিনি ভাবী।

এখন বসে বসে ভাবো। আমি ততক্ষণে পতিসেবা করে আসি। নাস্তা নিয়ে আসি তোমার ছোট ভাইয়া। বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো নূহা।

আর তাসমিয়া গালে হাত দিয়ে ভাবনায় মশগুল হলো।

চলবে..

পর্ব-৪

 

স্মৃতির জোনাকি…৪

স্মৃতির জোনাকি…৪


আফরোজা হাসান


মামণি একই রকম শাড়ি দুইটা কেন? বড় বড় আঁখিদুটি আরেকটু বড় করে বেশ অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো নাবিহা।

প্রশ্ন শুনে বুক সেলফ গুছানো ছেড়ে হাসি মুখে মেয়ের দিকে তাকালো নূহা। সেই হাসি সম্পূর্ণ চেহারাতে বিস্মৃত করে বলল, প্রথম যেদিন আমার মাঝে তোমার অস্তিত্ব টের পেয়েছিলাম আমার কি মনে হয়েছিল জানো?

কি মনে হয়েছিল মামণি? আহ্লাদিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো নাবিহা।

এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে মেয়েকে কাছে টেনে নিয়ে সুখানন্দ ও মমতা মিশ্রত কন্ঠে নূহা বলল, মনে হয়েছিল পুরো পৃথিবীটা ফুলে ফুলে ছেয়ে গিয়েছে। আকাশের বুকে বসেছে লক্ষ, কোটি নক্ষত্রের মেলা। ইচ্ছে করছিল সমস্ত ফুল আর নক্ষত্র তুলে নিয়ে একটা ফুলেল দোলনা বানাতে তোমার জন্য। যে দোলনার ভাঁজে ভাঁজে ঝিকমিক করবে বর্ণিল নক্ষত্রের আলো। আনন্দে আমি দিশাহারা হয়ে গিয়েছিলাম। রিমঝিম বরষা রুপে আনন্দরা অবিরাম ঝরছিল মনের মাঝে। কত শত প্ল্যান যে করে ফেলেছিলাম সেদিন তোমাকে ঘিরে। তারমধ্যে একটি প্ল্যান ছিল তুমি যেদিন প্রথম শাড়ি পড়বে সেদিন মা আর মেয়ে দুজন একই রকমের শাড়ি পড়বো, চুড়ি পড়বো। এরপর হাত ধরাধরি করে বাগানে ঘুরে বেড়াবো।

আনন্দ, খুশি, মুগ্ধতা ও ভালোবাসার মিশ্র পরশে নাবিহা দুহাত বাড়িয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মাকে। এরপর শাড়ি দুটো নিয়ে কিছুক্ষণ বুকে জড়িয়ে ধরে রেখে আনন্দসিক্ত কন্ঠে বলল, সেদিন তুমি আমাদের দুজনের জন্য একই রকম শাড়ি কিনেছিলে?

নূহা হেসে বলল, হুম। স্পেশাল কিছু মূহুর্ত আছে যা একবারই আসে আমাদের জীবনে। কিন্তু সেই মূহুর্তগুলোর প্রাপ্তি জীবনকে জড়িয়ে থাকে প্রতিক্ষণে। তোমার অস্তিত্বের উপলব্ধি তেমনই একটি মূহুর্ত।

নাবিহা বলল, ইশশ, কতই না ভালো হতো আমি যদি তোমার ভেতর একা থাকতাম। তাহলে তোমার সমস্ত অনুভূতি শুধু আমার একার হতো। ভাইয়া আর জিশানকে ভাগ দিতে হতো না।

নূহা হেসে ফেললে নাবিহাও হাসতে হাসতে বলল, অনেক বেশি সুন্দর শাড়ি দুটা মামণি। কিন্তু এত বছর তুমি আমাকে দেখাওনি কেন?

নূহা হেসে বলল, আমি তো আজকেও তোমাকে দেখাতে চাইনি। আমার ইচ্ছে ছিল স্পেশাল কোন দিনে তোমাকে এই উপহারটা দেবো। সিন্দুকে বন্দী থেকে ভাঁজে ভাঁজে শাড়ি যাতে নষ্ট হয়ে না যায় তাই মাঝেমধ্যে রোদে মেলে দেই। গতকালও দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আজকে আবার লুকিয়ে রাখবো সিন্দুকে। কিন্তু তার আগেই তুমি দেখে ফেলেছো।

নাবিহা হেসে বলল, ঠিকআছে আমি আমার মস্তিষ্কের মেমোরী কার্ড থেকে শাড়ি দেখার এই দৃশ্যটি ডিলিট করে দিলাম। তুমি শাড়ি দুটা সিন্দুকে ঢুকিয়ে রাখো মামণি। স্পেশাল সেই দিনটি যখন আসবে তখন তুমি আর আমি এই শাড়ি পড়বো, চুড়ি পড়বো এরপর হাত ধরাধরি করে বাগানে হাঁটবো।

নাবিহার কথাগুলো আনন্দ-বেদনার মিশ্র ঢেউ তুলে দিলো নূহার মনে। আনন্দ, কারণ এতটা বছর ধরে কল্পনায় দেখা সেই আকাঙ্ক্ষিত দিনটি হয়তো খুব শিঘ্রীই বাস্তব হতে চলছে। বেদনা, কারণ তার ছোট্ট পরীটা বড় হয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। মনেহয় এই তো সেদিন নূহার অন্ধকার জীবনকে আলোকিত করতে হাজির হয়েছিল তিনটি নক্ষত্র। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় আঠারো বছর। আর মাত্র চার মাস পরই আঠারোর ঘর ছুঁয়ে দেবে জিহাদ, জিশান, নাবিহা। নাবিহাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দিয়ে নূহা হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ।

নাবিহা হেসে বলল, এখন তাহলে বলে দাও ঈদে আমি কাকে কি গিফট দেবো। তুমি তো জানো আমার বাজেট অল্প। অল্প বাজেটেই আমি বাড়ির সবার জন্য কিছু না কিছু উপহার কিনতে চাই। এবং একই সাথে চাই যাকে যেই উপহার দেবো সেটা যেন তার কাজে লাগে। পাপা, আদীব্বা, বাবার জন্য উপহার আমি সিলেক্ট করে ফেলেছি। তিনজনের জন্যই পাঞ্জাবী অর্ডার করেছি। আমার দেয়া পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে পাপা, আদীব্বা, বাবা ঈদের নামাজে যাবে ইনশাআল্লাহ। আমার খুব ইচ্ছে ছিল ভাইয়া, জিশান আর জারিফের জন্যও একই রকম পাঞ্জাবী অর্ডার করার। কিন্তু তাহলে বাড়ির সবার জন্য উপহার নিতে পারবো না।

নূহা হেসে বলল, তুমি চাইলে আমার কাছ থেকে লোন নিতে পারো। পরে শোধ করে দিও।

নাবিহা বলল, আমিও প্রথমে এমনটাই করবো ভাবছিলাম। কিন্তু পরে পাপার কথা মনে পড়লো। পাপা একদিন বলেছিলেন, অর্থ ধার করা যায় কিন্তু আনন্দ না। নিজ সামর্থ্যর ভেতর থেকে মানুষের জন্য কিছু করতে পারার যে সুখ সেটা কখনোই অন্য কারো কাছ থেকে ধার করে পাওয়া সম্ভব না।

নূহা হেসে বলল, তোমার পাপা একদম ঠিক বলেছেন। আমার থেকে লোন নিয়ে তুমি হয়তো সবাইকে পছন্দনীয় উপহার দিতে পারবে। কিন্তু সেই প্রশান্তি কখনোই অনুভব করবে না, যেমনটা তোমার অল্প বাজেটের মধ্যেই সবার জন্য উপহার কিনলে অনুভূত হবে।

নাবিহা হেসে বলল, এজন্যই তো লোন চাইনা। পরামর্শ চাই অল্প টাকায় সবার জন্য অধিক খুশি কেনার।

নূহা হেসে বলল, পাঞ্জাবীর সাথে তোমার পাপাকে একটা গাছও উপহার দিও।

পাপার বেডরুমের জন্য আমি অলরেডি স্নেক প্ল্যান্ট কিনে ফেলেছি।

নূহা হেসে বলল, এত গাছ থাকতে স্নেক প্ল্যান্ট।

নাবিহা হেসে বলল, নাম শুনে তুমি ভীত হয়ো না মামণি। গুণের শেষ নেই স্নেক প্ল্যান্টের। আমি স্টাডি করে জেনেছি স্নেক প্ল্যান্ট রুমে থাকলে রুমে অক্সিজেনের কোনো ঘাটতি হয়না। বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইডও শুষে নেয়। এছাড়াও স্নেক প্ন্যান্ট নাইট্রোডেন ডাই অক্সাইড ও ফার্ম্যালডিহাইডের মতো ক্ষতিকারক গ্যাসসমূহকেও শোষণ করে ঘরকে দূষণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

নূহা হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে তো পার্ফেক্ট সিলেকশন। আচ্ছা আমাকে চিন্তাভাবনা করার জন্য কিছুটা সময় দাও। বিকেলে তোমাকে জানাবো কাকে কি উপহার দেয়া যায়।

কথাবার্তা তো শেষ এখন তাহলে আপনি প্রস্থান করেন আম্মাজান। কারণ আমার ভাবীজানের সাথে অতি জরুরি বিষয়ে শলাপরামর্শ করতে হবে আমাকে এখন। রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো তাসমিয়া।

নাবিহা চোখ বড় বড় করে বলল, তারমানে তুমি এতক্ষণ আমার আর মামণির কথা আড়িপেতে শুনেছো? আড়িপেতে কথা শোনা খুবই দুষ্টু কাজ ফুয়ি।

তাসমিয়া হেসে বলল, তোমার আর তোমার মার আবেগঘন আলাপনে যে আমি বিঘ্ন ঘটাইনি সেই উত্তম কাজের তুলনায় এই দুষ্টু কাজ খুবই গৌন্য আম্মাজান। পরিমাপ করলে দেখতে পাবে উত্তম কাজের দ্বারা মন্দ কাজকে ঢেকে দেবার পরও খানিকটা উত্তম রয়ে গিয়েছে। সেটুকু পরে কখনো কাজে লাগাবো ইনশাআল্লাহ।

হেসে ফেললো নূহা আর নাবিহা। এরপর মা আর ফুপিকে কথা বলার সুযোগ দিয়ে নাবিহা চলে গেলো। নূহা হেসে বলল, দুই কাপ চা বানিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে বোস। বুকসেলফ গুছিয়ে আমি আসছি ইনশাআল্লাহ।

জো হুকুম ভাবীজান বলে তাসমিয়া চা বানাতে ছুটলো।

চলবে..

পর্ব-৩

 

ধর্ষণ চেষ্টার শাস্তি জুতাপেটা

ধর্ষণ চেষ্টার শাস্তি জুতাপেটা


নারী সংবাদ


গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার শাস্তি হিসেবে দুই যুবককে জুতাপেটা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের মান্দ্রা গ্রামে ধর্ষণ চেষ্টার সালিশ বৈঠকে হামিদ শেখ (১৯) ও হালিম শিকদার (১৮) নামে দুই যুবককে জুতাপেটা করা হয়।

হামিদ শেখ মান্দ্রা গ্রামের হাবিব শেখের ছেলে। অপরদিকে হালিম শিদকার একই গ্রামের আনিস শিকদারের ছেলে। এলাকাবাসি সূত্রে জানাগেছে, গত সোমবার সন্ধ্যায় মান্দ্রা ইউনাইটেট ইনস্টিটিউশনের ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার সময় হামিদ শেখ ও হালিম শিকদার নামের দুই যুবক ওই স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় ওই ছাত্রীর চিৎকারের আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে হামিদ ও হালিম পালিয়ে যায়।

বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে মঙ্গলবার মান্দ্রা গ্রামের জনৈক আজাহার শেখের বাড়িতে এক সালিশ বৈঠক হয়। সালিশ বৈঠকে হাবিব ডাক্তার, হামিম শেখ, সালাম দাড়িয়া, ইলিয়াছ শেখ, মামুন শেখ, হাসান মিয়া নামে এলাকার সালিশবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

সালিশবর্গদের নির্দেশে মামুন শেখ ও হাসান মিয়া হামিদ এবং হালিমকে জুতাপেটা করে।

সালিশকারক হাবিব ডাক্তার বলেন, এলাকার শান্তির জন্য হামিদ ও হালিমকে জুতাপেটা করা হয়েছে। তবে ওই দুই যুবকের অভিভাবকরাই তাদের জুতাপেটা করেছে।

ওই স্কুল ছাত্রীর পিতা বলেন, এলাকার মুরব্বিদের অনুরোধে সালিশ বৈঠকের মাধ্যেমে বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে। সালিশ বৈঠকে ওই দুই যুববকে জুতাপেটা করা হয়েছে। এ ছাড়া সাদা কাগজে একটি মিমাংসাপত্র লেখা হয়েছে। মিমাংসাপত্রটি সালিশকারক হামিম শেখের কাছে রয়েছে।

কোটালীপাড়া থানার ওসি (তদন্ত) মো: জাকারিয়া বলেন, এ ধরণের ঘটনায় সালিশ বৈঠকের মাধ্যেমে মিমাংসা করার আইনগত কোন বিধান নেই। ওই স্কুল ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করলে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।

সুত্র: নয়া দিগন্ত।

 

গণপিটুনিতে নিহত রেনুর পরিবারকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রুল

গণপিটুনিতে নিহত রেনুর পরিবারকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রুল


নারী সংবাদ


রাজধানীর বাড্ডায় গণপিটুনিতে তাসলিমা বেগম রেনু নিহত হওয়ার ঘটনায় তার পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

রেনুর পরিবারের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।

চার সপ্তাহের মধ্যে জননিরাপত্ত বিভাগের সচিব, শিক্ষা সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিএমপি কমিশনার, বাড্ডা থানার ওসি, সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা বোর্ডের সভাপতিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

তাসলিমা বেগম রেনুর বোন নাজমুন নাহার নাজমা ও ভাতিজা সৈয়দ নাছির উদ্দিন এ রিট দায়ের করেন।

২০ জুলাই রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় মেয়েকে ভর্তি করানোর তথ্য জানতে স্থানীয় একটি স্কুলে যান তাসলিমা বেগম রেনু (৪০)। এসময় তাকে ছেলেধরা সন্দেহে প্রধান শিক্ষকের রুম থেকে টেনে বের করে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

 

শরীর ভালো রাখার উপায়

শরীর ভালো রাখার উপায়


স্বাস্থ্যকথা


শরীর এবং মন এক সাথে কাজ করে। মন ভালো থাকলেও শরীর ভালো না থাকলে কোনকিছুই ভালো লাগে না। তাছাড়া সুস্থ, সুন্দর ও ফিট শরীর মনকে ভালো করে দেয়। স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপনই পারে কেবন মাত্র মন মেজাজ ঠিক রাখতে এবং সুন্দর ও ফিট শরীর বজায় রাখতে।

মন এবং শরীর সুস্থ থাকার কিছু নিয়মাবলীঃ

হাটতে হবেঃ
হাঁটুন। হাটার চাইতে আর কোনো ভাল ব্যয়াম নেই। ফলে মন এবং শরীর সতেজ থাকে।

পুষ্টিকর খাবার
নিয়মিত খাবার খেতে হবে। খাবার তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার (যেমন শাক সবজি এবং ফলমূল) বাড়ান। চর্বিজাতীয় খাবার কমিয়ে আনুন। ফাস্টফুড জাতীয় খাবার কমিয়ে দিতে হবে।

পানি পান করুন
কমপক্ষে ১০-১২ গ্লাস পানি পান করুন। খাবার শেষে অন্তত এক থেকে দুই ঘণ্টা পর পানি পান করুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি খাবেন।

সালাদ এবং সবজি খানঃ
প্রত্যেকবারের খাবারের সময় কাঁচা সবজির সালাদ খাবেন। টাটকা শাক সব্জি খাওয়া শরীরের জন্য ভালো।

অতিমাত্রায় চা ও কফি পরিহার
অতিমাত্রায় চা ও কফির অভ্যাস ত্যাগ করার অল্প করে অভ্যাস করা যেতে পারে।

পরিমিত ঘুম
প্রত্যেকের ঘুমের সময় ভিন্ন ভিন্ন হিসাব ফলো করে। কারো ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমের অভ্যাস আবার কারো ৫ থেকে ৬ মিনিট। সুস্বাস্থ্য ও ফিগারের জন্য নিয়মিত ও পরিমিত ঘুম প্রয়োজন।

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। সবার আগে চাই সুস্থ শরীর।

 

মুরগীর গোস্তের স্যুপ

মুরগীর গোস্তের স্যুপ


রেসিপি

 


মুরগির গোস্তের কয়েকটা টুকরো নিয়ে ১৫-১৬ কাপ পানিতে একটু লবণ দিয়ে সিদ্ধ করি। পানি শুকিয়ে অর্ধেক হলে নামিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। হয়ে গেলো মুরগির স্টক।

উপকরণ :

১. স্টক ১০-১১ কাপ,
২. তেল ১ টেবিল চামচ,
৩. সয়াসস ১ টেবিল চামচ,
৪. চিনি ১ টেবিল চামচ,
৫. মুরগির বুকের মাংস ১ কাপ (মিহি করে কেটে নিতে হবে),
৬. লবণ পরিমাণমতো।

প্রস্তুত প্রণালি :

গোস্তের হাড় থেকে ছাড়িয়ে মিহি করে কেটে সয়াসস দিয়ে মেখে ১০ মিনিট রাখতে হবে। কর্নফ্লাওয়ার স্টক দিয়ে গুলিয়ে নিতে হবে। গরম স্টকে তেল-লবণ মাখানো গোস্ত কিছুক্ষণ সিদ্ধ করে আস্তে আস্তে নাড়তে হবে। শেষে চিনি দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। হয়ে গেলো মজাদার মুরগীর স্যুপ।

 

কাবিননামায় নারীদের জন্য সুখবর

কাবিননামায় নারীদের জন্য সুখবর


নারীর  জন্য আইন 


বিয়ের কাবিননামার পাঁচ নম্বর কলাম থেকে কনের বেলায় ‘কুমারী’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘অবিবাহিতা’ যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এটাকে নারীদের জন্য সুখবর বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

কারণ এক্ষেত্রে ‘কুমারী’ শব্দটি ছিল নারীদের জন্য অসম্মানজনক বলে মনে করা হয়।

হাইকোর্টের নির্দেশে মুসলমান নারী-পুরুষের বিয়ের নিবন্ধন ফরমের পাঁচ নম্বর কলাম থেকে কনের বেলায় ‘কুমারী’ শব্দ বাদ দেয়া ও চার নম্বর কলামে (ক) যুক্ত করে বরের ক্ষেত্রে ‘বিবাহিত’, ‘বিপত্নীক’ ও ‘তালাকপ্রাপ্ত কিনা’ শব্দগুলো সংযোজন করতে বলা হয়েছে।

মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী বিয়ের কাবিননামায় নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করার বিষয়ে রুল নিষ্পত্তি করে রোববার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

কোর্ট রায় দিয়ে বলেছে, ‘কুমারী’ শব্দটা বাদ দিতে হবে। কারণ এটা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারের ব্যপার। কাবিননামায় এর উল্লেখ থাকা মানে বৈষম্য সৃষ্টি করা। আদালত রায়ে একটি কলামও যোগ করে দিয়েছেন। যেখানে লিখতে হবে বর বিবাহিত কিনা, তালাকপ্রাপ্ত কিনা কিংবা বিপত্মীক কিনা।

কাবিননামার ফরমে পাকিস্তান আমলে তৈরি। স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের জায়গায় বাংলাদেশ বসানো ছাড়া আর কোনো সংশোধন করা হয়নি।

মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইনের ৯ ধারার ওই অনুচ্ছেদটি বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, নারীপক্ষ এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ২০১৪ সালেল ৭ সেপ্টেম্বর রিট আবেদন করে।

আবেদনে বলা হয়, রেজিস্ট্রেশন ফরমে (নিকাহনামায়) শুধু কনের বৈবাহিক অবস্থা ও তথ্য সন্নিবেশিত করার জন্য অনুচ্ছেদ রয়েছে।

তবে বরের বৈবাহিক অবস্থা-সম্পর্কিত কোনো কলাম নেই। এটা নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক। সংবিধানের ২৭, ২৮, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিষয়টি বৈষম্যমূলক এবং সংবিধান পরিপন্থী।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রেজিস্ট্রেশন ফরমের (নিকাহনামা) পাঁচ নম্বর কলাম কেন বৈষম্যমূলক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না; তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে।

ওই কলাম থেকে ‘কুমারী’ শব্দটি বিলোপ করে ফরমটি সংশোধন করা এবং বর সম্পর্কিত কোনো ক্রমিক ফরমে কেন উল্লেখ করা হবে না; তাও জানতে চাওয়া হয়।

জনপ্রশাসন সচিব, ধর্ম সচিব, প্রিন্টিং এবং প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচাকলসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

এর মধ্যে রুল শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে মতামত দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বেলায়েত হোসেন।

গত ১৬ জুলাই মতামত দেয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফরমের ৫ নম্বার কলামে কলামে এই শব্দটি থাকা উচিত না। কারণ এই শব্দটি ব্যক্তির মর্যাদা ও গোপনীয়তাকে ক্ষুণ্ণ করে; যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এছাড়া ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী এগুলো থাকা বাধ্যতামূলক নয়। মুসলিম শরীয়তে এ ধরনের শর্ত নেই।

#যুগান্তর

 

মানববন্ধনে অভিযোগ নারী নির্যাতন আইনের অপব্যবহারে হয়রানির শিকার হচ্ছে পুরুষরা

মানববন্ধনে অভিযোগ
নারী নির্যাতন আইনের অপব্যবহারে হয়রানির শিকার হচ্ছে পুরুষরা


নারী সংবাদ


নারী নির্যাতন আইনের সংশোধনের দাবি করে মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশনের ব্যানারে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, এ আইনের অপব্যবহারের দ্বারা নিরীহ পুরুষ ও তার পরিবারের লোকদের নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। গতকাল ‘নারী নির্যাতন আইনের অপব্যবহার বন্ধ ও সংশোধন’-এর দাবিতে জাতীয় প্রেস কাবের সামনে এক মানববন্ধনে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, বাংলাদেশ নারী অধিকার স্বীকৃতির মাধ্যমে নারী উন্নয়নের প্রসার ঘটিয়েছে। সংবিধানেও ২৮ ও ২৯ নং অনুচ্ছেদে নারী অধিকারের কথা বলা আছে। এ ছাড়াও নারীদের সুরার জন্য দেশে একাধিক আইন আছেÑ এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন (দমন) আইন ২০০০-এ নারী ও শিশু সম্পর্কিত অপরাধগুলোকে চিহ্নিত করে তা প্রতিকারের বিধি-বিধান প্রণীত আছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু নারী ও শিশু অধিকারের এ বিধানগুলো নিয়ে অন্যকে ঘায়েল করার মাত্রা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
সংগঠনের মহাসচিব প্রকৌশলী ফারুক শাজেদ বলেন, তাদের সংগঠনের ২১ দফা দাবির ২য় ও অন্যতম দাবি হলো নারী নির্যাতন আইনের সংশোধন। কারণ এ আইনের অপব্যবহারের দ্বারা নিরীহ পুরুষ ও তার পরিবারের লোকদের নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এ ছাড়াও মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলার কারণে ভুক্তভোগী ব্যক্তি সামাজিক, মানসিক ও আর্থিক তির শিকার হন। কারো সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হলে তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই অভিযোগ প্রমাণ না হোওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তের ছবি মিডিয়াতে প্রচার না করার ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি এর অপপ্রয়োগ বন্ধে নারী নির্যাতন দমন আইনকে সংশোধনের মাধ্যমে আরো যুগোপযোগী করার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাবনা পেশ করেন। তিনি বলেন, নারী নির্যাতন মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী মামলা করতে গেলে আদালতের অনুমতি লাগে। তাই ভুক্তভোগীরা হয়রানির ভয়ে বাদির বিরুদ্ধে মামলা করতে চান না। তাই ভুক্তভোগীর আবেদন ব্যতিত, যা ১৭(২) ধারা মোতাবেক লিখিত হওয়া বাঞ্ছনীয়, তা উঠিয়ে দিয়ে বিচারক রায়ে মিথ্যা মামলাকারীকে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ করা গেলে মিথ্যা মামলা নিঃসন্দেহে কমে যাবে।
এ ছাড়াও সুষ্ঠু তদন্ত ব্যতিত কাউকে যেন গ্রেফতার করা না হয়। তাই ১৮ ধারাকে সংশোধনে মাধ্যমে তদন্তে অবহেলাকে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য ও মিথ্যা মামলায় সহায়তাকারীকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে বিধি অনুযায়ী তাৎণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান তিনি।।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ খায়রুল আলম। তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটিকে আরো যুগোপযোগী করার প্রয়োজন রয়েছে। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে যাতে কারো অধিকার বিঘিœত না হয় সে দিকেও দৃষ্টি রাখা জরুরি।
মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক তাইফুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক আল-আমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক বাংলাদেশের আলোচিত চিত্রনায়ক আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম, বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশনের ঢাকা মহানগরীর সদস্য লিটন গাজী প্রমুখ।

সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

 

ইসলাম সন্তান সম্পর্কে কি বলে?

ইসলাম সন্তান সম্পর্কে কি বলে?


ফাতেমা মাহফুজ


অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল একটি বিষয় নিয়ে লিখতে ইচ্ছা করলো।বাস্তব সমাজে আসলে এই বিষয়ের সঠিক ধারনার খুবই অভাব।আর সে কারণেই মানুষের জীবনের অশান্তি,অস্থিরতা বেড়েই চলছে।

#ইসলাম সন্তান সম্পর্কে কি বলে#

বর্তমান সময়ে আমাদের আশে পাশে অনেক পরিবার আছেন যাদের সন্তান নেই। এই একটা সন্তান না হওয়ার জন্য তাদের স্বাভাবিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।তারা বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করছেন। কখনো কখনো মহিলাদের কে মানসিক চাপে রাখা হচ্ছে যে তার স্বামীকে আরেকটি বিয়ে দেয়া হবে।কখনো কখনো স্ত্রীকে সংসার ভেংগে চলে আসতে বলা হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের সুবাদে একে অপরকে দোষারোপ চলছে।অথচ মানুষ ভুলে যাচ্ছে এটা শুধুই আল্লাহর ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

বর্তমান সময়ে এই ধরনের পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন কিছুই হচ্ছে না।

মূলত দুনিয়ায় আল্লাহর দেয়া অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে একটি হল সন্তান।আল্লাহ সব নিয়ামত সবাইকে দেন না।যেমন সুস্বাস্থ্য, সৌন্দর্য, অর্থ সম্পদ, জ্ঞান, প্রতিভা, মেধা এগুলো আল্লাহ এক একজনকে একেক্টা দিয়েছেন।

আল্লাহর ভাষায়ঃ
মানুষের জন্য নারী, সন্তান, সোনা-রূপার স্তূপ, সেরা ঘোড়া, গবাদী পশু ও কৃষি ক্ষেতের প্রতি আসক্তিকে বড়ই সুসজ্জিত ও সুশোভিত করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের সামগ্রী মাত্র। প্রকৃতপক্ষে উত্তম আবাস তো রয়েছে আল্লাহ‌র কাছে।
(.৩-আলে-ইমরান:১৪.)

যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র ও কন্যা উভয়টিই দেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। তিনি সব কিছু জানেন এবং সব কিছু করতে সক্ষম।
(.৪২-শূরা:৫০.)

বিভিন্ন নবী ও রাসূলকেও ঠিক একইভাবে পরীক্ষা নিয়েছেন-
এ অবস্থা দেখে যাকারিয়া তার রবের কাছে প্রার্থনা করলোঃ “হে আমার রব! তোমরা বিশেষ ক্ষমতা বলে আমাকে সৎ সন্তান দান করো। তুমিই প্রার্থনা শ্রবণকারী।” যখন তিনি মেহরাবে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিলেন। (৩-আলে-ইমরান:৩৮.)

যাকারিয়া বললোঃ “হে আমার রব! আমার সন্তান হবে কেমন করে? আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি এবং আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা।” জবাব এলোঃ “এমনটিই হবে।আল্লাহ্‌ যা চান তাই করেন।” (৩-আলে-ইমরান:৪০.)
হে পরওয়ারদিগার! আমাকে একটি সৎকর্মশীল সন্তান দাও। (.৩৭-সাফ্ফাত:১০০.)

এমনকি বিবি আয়েশা রাঃ ও নিঃসন্তান ছিলেন।তবু তাদের মধ্যে কোন অসন্তোষ ছিলনা,বরং
নবী রাসূল গণ এই নিয়ামত আল্লাহর কাছে চেয়েছেন কিছু বিশেষ কারণেঃ
তারা প্রার্থনা করে থাকে, “হে আমাদের রব! নিজেদের স্ত্রীদের ও নিজেদের সন্তানদেরকে নয়ন শীতলকারী বানাও এবং আমাদের করে দাও মুত্তাকীদের ইমাম।”(সূরা ফুরকান-৭৪)

গর্ভ যখন ভারি হয়ে যায় তখন তারা দুজনে মিলে এক সাথে তাদের রব আল্লাহর কাছে দোয়া করেঃ যদি তুমি আমাদের একটি ভাল সন্তান দাও, তাহলে আমরা তোমার শোকরগুজারী করবো।
(.৭-আরাফ:১৮৯.)
তাদের উদ্দেশ্য ছিল একজন নেক উত্তরসুরী রেখে যাওয়া যে তাদের রেখে যাওয়া দ্বীনি দায়িত্ব পালন করবে।

তাই আল্লাহ কাউকে কাউকে সন্তান দান করেছেন তার সাথে সাথে এটাকে পরীক্ষা হিসেবে পাঠিয়েছেনঃ “এবং জেনে রাখো, তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি আসলে পরীক্ষার সামগ্রী। আর আল্লাহর কাছে প্রতিদান দেবার জন্য অনেক কিছুই আছে।”
(.৮-আনফাল:২৮.)

এরপর আমি তোমাদেরকে তাদের ওপর বিজয় লাভের সুযোগ করে দিয়েছি এবং তোমাদেরকে সাহায্য করেছি অর্থ ও সন্তানের সাহায্যে আর তোমাদের সংখ্যা আগের চেয়ে বাড়িয়ে দিয়েছি।
(.১৭-বনী ইসরাঈল:৬.)
এ ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের একটি সাময়িক সৌন্দর্য-শোভা মাত্র। (.১৮-কাহাফ:৪৬.)

কাজেই অস্থিরতা, কষ্ট,হতাশা দূর করে মনে তাওয়াক্কুল টাকেই আরো জোরদার করতে হবে।অনেক চেষ্টা,দোয়া করার পরও যদি আল্লাহ আপনাকে এই নিয়ামত না দিয়ে থাকেন,তো আলহামদুলিল্লাহ! নিশ্চয়ই এমন কোন কল্যাণ আছে যা আমাদের জানা নেই।

তাই বিকল্প উপায়ে সৎ কাজের ধারা অব্যাহত রাখা জরুরি।
যেমনঃ সাদকায়ে জারিয়াহ র কাজ করে যাওয়া,কুরআনের দাওয়াত পৌছে দেয়া,দ্বীনের পথে সংগীদের নিয়ে কাতারবন্দী হয়ে লড়াই করা,দান সাদাকাহ করা,উত্তম কথা,লেখনী এই পৃথিবীতে রেখে যাওয়া।আর বারবার দোয়া কবুল না হলেও করতে থাকা কেননা দুয়া একটি অব্যার্থ আমল,যা কোন না কোন কল্যাণ অবশ্যই বয়ে আনবে।

আল্লাহ বলে দিচ্ছেনঃ “আসলে তো স্থায়িত্ব লাভকারী সৎকাজগুলোই তোমার রবের কাছে ফলাফলের দিক দিয়ে উত্তম এবং এগুলোই উত্তম আশা-আকাঙ্ক্ষা সফল হবার মাধ্যম।” (কাহাফ:৪৬.)
আল্লাহ আমাদের প্রকৃত কল্যাণ দান করুন। আমীন।

 

শিশুদের জন্য আলাদা আদালত হওয়া উচিত : বিচারপতি ইমান আলী

শিশুদের জন্য আলাদা আদালত হওয়া উচিত : বিচারপতি ইমান আলী


নারীর জন্য আইন


শিশু কিশোর অপরাধের বিচারের জন্য আলাদা শিশু আদালত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিমকোর্টের স্পেশাল কমিটি অন চাইল্ড রাইটসের (এসসিএসসিসিআর) সভাপতি ও আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী।

সুপ্রিকোর্টের সম্মেলন কক্ষে ‘শিশু আইন ২০১৩’ নিয়ে বিভাগীয় পরামর্শ সভায় তিনি আজ এ মন্তব্য করেন। জাতিসংঘের শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ এবং সুপ্রিমকোর্টের বিশেষ কমিটি যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি নাইমা হায়দার আলোচনায় অংশ নেন। এ ছাড়া খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুালর বিচারক ও পাবলিক প্রসিকিউটর, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা উপস্থিতি ছিলেন।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিচারপতি ইমান আলী বলেন, শিশুদের জন্য পৃথক আদালত হওয়া উচিত। কারণ, শিশুদের বিচার হবে সংশোধনের উদ্দেশ্যে, শাস্তি দেয়ার উদ্দেশে নয়। শিশু আর প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীর বিচার একরকম নয়। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে শিশুদের জন্য আলাদা আদালত রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও আমরা করতে পারিনি। তিনি বলেন, আইনেই বলা আছে শিশু অপরাধীর বিচার তাড়াতাড়ি করতে হবে। কেননা তাদের ভবিষ্যত সামনে। তাকে ভালো হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিশু আদালত স্থাপন করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ছবি : সংগৃহীত & নয়া দিগন্ত

 

নিজের বুদ্ধিমত্তায় প্রাণে বাঁচল শিশু তানজিলা

নিজের বুদ্ধিমত্তায় প্রাণে বাঁচল শিশু তানজিলা


নারী সংবাদ


নিজের বুদ্ধিমত্তায় পাচারকারীদের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামের ১১ বছরে শিশু কন্যা তানজিলা আকতার। গত ১৯ আগস্ট (সোমবার) দুপুরে দেড়টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটেছে খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন সড়কে। তানজিলা ওই গ্রামের বেলাল সিকদারের মেয়ে।
উপজেলার রাজৈর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী তানজিলা জানায়, ওই সময়ে স্কুল থেকে সে বাড়িতে যাবার পথে পরিষদ সংলগ্ন মঠেরপাড় সড়কের মোড়ে একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস এসে তার পাশে দাড়ায়। জনশূন্য ওই সড়কে গাড়ির দরজা খুলে পাচারকারীরা তাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নাকের কাছে একটি রুমাল ধরার পর তানজিলা অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
পরে যখন তার জ্ঞান ফেরে, তখন তানজিলা নিজেকে একটি ঘরের তালাবদ্ধ রুমে আবিষ্কার করে। সেখানে আরো একটি শিশু অজ্ঞান অবস্থায় ওই রুমে পড়ে থাকতে দেখেছে সে। পাচারকারী দলের কেউ সেখানে নেই নিশ্চিত হয়ে তানজিলা রুমের জানালা ভেঙ্গে বাগানের মধ্য দিয়ে শরণখোলা-মোড়েলগঞ্জ সড়কের গাজীর ব্রীজ এলাকার মূল সড়কে উঠে ভ্যানযোগে চলে আসে। ওই রুমে থাকা অপর শিশুটির ভাগ্যে কি হয়েছে, তা সে বলতে পারেনি।

এদিকে, তানজিলার মা রিনা বেগম জানান, স্কুল থেকে টিফিনের সময় বাড়িতে ফিরতে দেরী হওয়ায় তিনি বিচলিত হয়ে পড়েন এবং ওই দিন সন্ধ্যার কিছু পুর্বে তানজিলা ফিরে আসায় পরিবারে মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। পরে সংশ্লিষ্ট খোন্তাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন খাঁন ও পরিবারে কাছে তানজিলা ঘটনার বর্ননা করে।
তানজিলা জানায়, ওই এলাকায় তাকে নিয়ে গেলে ওই বাড়ির লোকেশন সে দেখাতে পারবে।
ভ্যানচালক আমড়াগাছিয়া গ্রামের সালাম ফকির মুঠোফোনে জানান, বিকাল ৫টার দিকে শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ মহাসড়কের গাজীর ব্রিজ এলাকায় স্কুল ড্রেস পরিহিত ওই মেয়েটিকে কাঁদতে দেখে তিনি নিয়ে আসেন।
শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ দিলীপ কুমার সরকার জানান, ঘটনাটি তিনি জেনেছেন। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

সুত্র & ছবি : নয়া দিগন্ত।

 

দাম্পত্য সম্পর্কে কি প্রয়োজন?

দাম্পত্য সম্পর্কে কি প্রয়োজন?


দাম্পত্য


শ্রদ্ধা এবং সুন্দর ব্যবহার, সুন্দর হাসিমুখ সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে। তাই দুজনকে সেটি তৈরি করতে হবে। আপনার উৎফুল্ল আচরণ হতে পারে আপনাদের জন্য খুব দামি একটি উপহার।

দোদুল্যমান মন
কাউকে একইসাথে ভালোবাসা এবং ঘৃণা করা, অসম্ভব কিছু নয়। তবে ক্লিয়ার হওয়া কেন আপনি ব্যক্তিকে ভালো বাসবেন? দাম্পত্য জীবনে তা-ই নিয়ম যা দুইজনের পছন্দের ভিত্তিতে ঘটবে সবসময় আশা করা কঠিন। মেনে নিতে হবে।

ক্ষোভ
সাময়িক ঝগড়া বিবাদের কারণে দাম্পত্য সম্পর্ক পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় না। মনের মধ্যে জমে থাকা চাপা ক্ষোভ আর যন্ত্রণাই দাম্পত্য জীবনকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়।

আর্থিক সচ্ছলতা
আমি সর্বোত্তম”-এমনটি মনে হওয়া অতি আত্মবিশ্বাসের লক্ষণ। সংসারের ক্রমাগত আর্থিক সচ্ছলতা অর্থ এই নয় যে, দাম্পত্য জীবনও সুখের মধ্য দিয়ে কাটছে।

বিশ্বাস ভঙ্গ
বিশ্বাস ভেঙ্গে গিয়ে থাকে, তাহলে সেই বিশ্বাস জোড়া দেওয়ার সময় এখনও পার হয়ে যায়নি। এজন্য যেকোনো সময়ই উপযুক্ত সময়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যা নিয়ে তর্ক হয় তা আসল বিষয় থাকে না।

ভালোবাসা কেবল অনুভুতি নয়; বরং আমাদের কাজের মাধ্যমেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বেশি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা মনের হতাশা ও অতৃপ্তিকে বাড়িয়ে দেয়। দাম্পত্য জীবনের অনেক তর্কই হয়ত এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তবে ক্ষতিকর বিতর্ককে এড়িয়ে যেতেই হবে।

 

ট্রেনের টয়লেট থেকে মাদরাসাছাত্রীর লাশ উদ্ধার

ট্রেনের টয়লেট থেকে মাদরাসাছাত্রীর লাশ উদ্ধার


নারী সংবাদ


ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে একটি ট্রেনের বগির ভেতর থেকে পুলিশ গতকাল আসমা আক্তার (১৭) নামে এক মাদরাসাছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে।
গতকাল সকালে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। পুলিশের ধারণা, তরুণীকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। গত রোববার সকালে মেয়েটি পঞ্চগড় থেকে নিখোঁজ হয়েছিল বলে স্বজনেরা পুলিশকে জানিয়েছেন।
গতকাল রাতে কমলাপুর জিআরপি থানার ওসি রুশো বণিক নয়া দিগন্তকে বলেন, সকাল ৯টার দিকে স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে কমলাপুর রেলস্টেশনের ওয়াশফিড এলাকায় বলাকা ট্রেনের একটি ড্যামেজ বগির টয়লেটের ভেতর থেকে ১৭-১৮ বছর বয়সী এক তরুণীর লাশ উদ্ধার হয়। লাশটির গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল। ধারণা করছি, মেয়েটিকে দুর্বৃত্তরা শ্বাসরোধে হত্যা করে থাকতে পারে। তবে এর আগে সে ধর্ষিত হয়েছে কি না সেটি ময়নাতদন্তের আগে বলা যাচ্ছে না। প্রতিবেদনের পরই বলা যাবে ধর্ষিত হওয়ার বিষয়টি। আর মেয়েটির শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্নহ্ন পাইনি। এক প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন, আমরা লাশের পাশ থেকে তার ব্যবহৃত একটি ব্যাগ পেয়েছি। সেই ব্যাগে কিছু কাগজপত্র ছিল। বার্থ সার্টিফিকেট ছিল। সেই অনুযায়ী তার পরিচয় আমরা নিশ্চিত হয়ে স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করি। আসমার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার শীলপাড়ায়। তার বাবার নাম আব্দুল রাজ্জাক মিয়া।
তবে হাসপাতাল মর্গে কমলাপুর রেলওয়ে থানার সাব-ইন্সপেক্টর আলী আকবর সাংবাদিকদের বলেন, নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্নহ্ন রয়েছে। আর তরুণী ধর্ষিত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
আসমার চাচা মো: রাজু পুলিশকে জানান, রোববার সকাল থেকে তার ভাতিজি আসমা নিখোঁজ ছিল। সোমবার পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে তারা লাশ শনাক্ত করেন। চাচা জানান, আসমা গ্রামের একটি মাদরাসা থেকে গত বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। গ্রামের একটি ছেলের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আসমা নিখোঁজের পর থেকে ওই ছেলেকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করেন, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে ওই ছেলে জড়িত থাকতে পারে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে তিনি দাবি করেন। নিহত আসমার বাবা একজন কৃষক। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সে ছিল তৃতীয়। সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

স্মৃতির জোনাকি… ৩

স্মৃতির জোনাকি… ৩


আফরোজা হাসান


পাপার সন্ধানে পুরো বাড়ি পুনরায় আরেকবার ঘুরে দেখার পর নাবিহার খেয়াল হলো পাপার অন্যতম প্রিয় জায়গাতেই এখনো সন্ধান অভিযান চালানো হয়নি। সেই জায়গাটি হচ্ছে বাড়ির ছাদ। খেয়াল হওয়া মাত্র ছাদের দিকে ছুট লাগালো নাবিহা এবং তার আরাধ্য ব্যক্তিকে অবশেষে খুঁজে পেলো। কারো আগমনের শব্দ পেয়ে জাওয়াদও ফিরে তাকালেন। নাবিহা সালাম দিয়ে বললেন, পাপা তুমি এখানে? আমি সেই কখন থেকে তোমাকে খুঁজছি আর খুঁজছি।

সালামের জবাব দিয়ে জাওয়াদ বললেন, কেন আপনি আমাকে খুঁজছেন আর খুঁজছেন আম্মাজান?

নাবিহা হেসে বলল, অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপারে তোমার মতামত জানার জন্য। তবে সেই ব্যাপারে পরে কথা হবে। আগে বলো তুমি কি করছো এগুলো?

জাওয়াদ হেসে বললেন, আমি তোমার জাল দাদাভাইয়ের পাখীদের জন্য ঘর বানাচ্ছি। তোমার জাল দাদাভাইয়ের ব্যালকনির সাথে লাগোয়া গাছে যে দুটো পাখীর বাসা ছিল, গতরাতের ঝড়ো বাতাসের কারণে দুটো পাখীর বাসাই ভেঙে গিয়েছে। হজ্জ থেকে ফিরে এসে এই দৃশ্য দেখলে বাপী ভীষণ কষ্ট পাবেন। তাছাড়া নীড় ভাঙা পাখীরাও নিশ্চয়ই অনেক কষ্টে আছে। তাই ভাবলাম ওদের জন্য নতুন ঘর বানিয়ে দেই। বাড়ির বাচ্চাদের প্রায়ই দেখি পুরো ছাদ জুড়ে পাখীদের জন্য খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে। একটু বেখেয়াল হলেই খাবার পায়ের নিচে পড়ে। পাখীদের খাবার, পানি রাখার ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। বাচ্চাদের সবাইকে বুঝিয়ে বলবে এখন থেকে যেন নির্দিষ্ট স্থানে খাবার রাখে।

নাবিহা হেসে বলল, ওকে পাপা ইনশাআল্লাহ। পাপা এই যে তুমি পাখীদের জন্য ঘর বানিয়ে দিচ্ছো, পাখীদের খাবারের জায়গা করে দিচ্ছো এজন্যও তো অনেক সওয়াব হবে তাই না? রাসূল (সঃ) তো বলেছেন, “মুসলিম যখন কোনো গাছ রোপণ করে, তখন এর যে ফল খাওয়া হবে এটা তার জন্য সদাকা হিসেবে গণ্য হবে। এ থেকে যা চুরি যাবে তাও সদাকা হিসেবে গণ্য হবে।হিংস্র প্রাণীও যদি তা থেকে খায় তাও সদাকা হবে। পাখি খেলে সদাকা হবে। (এমনকি) যে কেউ যে কোনোভাবে এ থেকে (উপকার) গ্রহণ করবে তা সদাকা হিসেবে গণ্য হবে।” আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কত মহান তাই না পাপা? সবকিছুর মধ্যেই সওয়াবের সুযোগ রেখেছেন। আমরাই গাফলতী করে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারিনা।

জাওয়াদ হেসে বললেন, গাফলতী করো কেন? কোনদিন যদি তোমাকে গাছে পানি দেয়ার দায়িত্ব দিয়ে যাই, তুমি বেমালুম ভুলে গিয়ে গাছেদের তৃষ্ণার্ত রেখে দাও।

নাবিহা বলল, সরি পাপা। আর মন হবে না ইনশাআল্লাহ। এখন থেকে আমিও গাছ লাগাবো, গাছেদের যত্ন করবো।

জাওয়াদ হেসে বলল, এই কথা তো যখন থেকে কথা বলা শুরু করেছো তখন থেকেই বলছো।

নাবিহা কিছুক্ষণ হাসলো। এরপর বলল, গতরাতে কি প্রচন্ড ঝড়ো বাতাস হচ্ছিলো পাপা! ভয়ংকর শব্দে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিলো কিছুক্ষণ পরপর। আমি অনেক ভয় পেয়েছিলাম। একবার ভেবেছিলাম মাঈশার রুমে চলে যাবো ওর সাথে ঘুমোতে। যাওয়ার জন্য উঠেও ছিলাম। কিন্তু রুম থেকে বেরুনোর জন্য দরজা খুলে দেখি তুমি বসে আছো আমার রুমের সামনে। আমি ভয় পাচ্ছি তুমি ফিল করেছিলে তাই না পাপা?

জাওয়াদ হেসে বললেন, এসো আমাকে সাহায্য করো পাখীদের জন্য ঘর বানাতে। কিছু সওয়াব অর্জন করো। সেই সাথে সদাকায়ে জারিয়ার সুযোগ তৈরি করো নিজের জন্য।

নাবিহা পাপার পাশে গিয়ে বসে হাসি মুখে বলল, গতরাতে তোমাকে দেখা মাত্র আমার সমস্ত ভয় এক নিমিষে উধাও হয়ে গিয়েছিল পাপা। একবার ইচ্ছে হয়েছিল তোমার সাথে বসে গল্প করতে। কিন্তু তুমি গভীর মনোযোগের সাথে বই পড়ছিলে তাই আর বিরক্ত করিনি। কিন্তু বিছানায় গিয়ে বসতে না বসতেই আবারো প্রচন্ড শব্দে বজ্রপাত হলো। আমি তখন বজ্রপাতের দোয়া পড়লাম। এরপর সেলফ মোটিভেশনের জন্য বললাম, বসে আছেন পাপা দরজার বাহিরে, হে ভয় এখনো কি যাওনি আমায় ছেড়ে? জানো না বুঝি যখন আশেপাশে থাকেন পাপা, আমি হয়ে যাই পেইন কিলার নাপা। সমস্ত প্রতিকূলতা তখন করতে পারি জয়, বজ্রপাত ভীতি হয়ে যাও চূর্ণ, এই মূহুর্তে ক্ষয়।

হেসে ফেললেন জাওয়াদ। কন্যার কান ধরে ঝাঁকিয়ে দিয়ে বললেন, বেশি বেশি দুষ্টু হয়েছো তুমি।

নাবিহা হাসতে হাসতে বলল, আমার কোন দোষ নেই। দুষ্টুমি গুণও জেনেটিক্যালি পেয়েছি। আমার মামণির কাছ থেকে।

জাওয়াদ হেসে বলল, আচ্ছা! তা কেমন আছেন নাবিহার মামণি?

নাবিহা হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ মামণি ভালো আছেন। কিন্তু অনেক ঝামেলার মধ্যে আছে।

জাওয়াদ বললেন, ঝামেলার মধ্যে কেন? কি হয়েছে?

নাবিহা হেসে বলল, মামণির কিছু হয়নি পাপা। মামণির স্টুডেন্ট গ্রুপের বেশিরভাগ সদস্যাই তো এখন বিবাহিতা। তারা নিজ নিজ সংসার, বাচ্চাদের নিয়ে নানান ঝামেলাতে আছেন। সেসব ঝামেলার সমাধান করতে করতে মামণিরও ঝামেলার শেষ নেই। পাপা সুন্দর সুন্দর কিছু আশা জাগানিয়া কথা বলো।

জাওয়াদ হেসে বললেন, হঠাৎ আশা জাগানিয়া কথা কেন? তাছাড়া বলতে বললেই তো আশা জাগানিয়া কথা বলা যায় না। উৎস লাগে, প্রসঙ্গের দরকার হয়। তারপর যথার্থ বিশ্লেষণ অতঃপর মন্তব্যে গিয়ে আশা জাগানিয়া কথা বলতে হবে।

নাবিহা একটুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে বলল, পাপা তুমি তো আমাদের সবাইকে একা লালন পালন করেছো। আমরা তোমাকে অনেক যন্ত্রণাও করেছি। আমাদের দুষ্টুমিতে অতিষ্ট হয়ে তোমার কি কখনো মামণির উপর রাগ হয়েছে?

পাপা হেসে বললেব, তোমার মামণির স্টুডেন্টরা কি বাচ্চাদের সামলাতে গিয়ে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে তাদের লাইফ পার্টনারদের উপর অভিমান করে কখনো সখনো?

নাবিহা হেসে বলল, উনাদের সবার সাথে আমারও অনেক সুন্দর সম্পর্ক। ফোনে কথা হয় প্রায় সময়ই। অভিমানের কথা বলেনি কেউ সেভাবে তবে মাঝেমধ্যে রাগ হয় খুব নিজ নিজ লাইফ পার্টনারের উপর সেটা বলেছে।

জাওয়াদ হেসে বললেন, ওটা মূলত অভিমান, রাগ নয়। সন্তান বলো আর সংসার সেটা উভয়েরই। তাই আনন্দ বেদনা সবকিছু ভাগ করে নেবার একটা আকাঙ্ক্ষা থাকে মনে। পার্টনার যখন দূরে থাকে আনন্দের মূহুর্তগুলোতে যেমন তাকে মনে পড়ে, কষ্টের মূহুর্তগুলোতেও তাকেই সবার আগে মনেপড়ে। তোমরা যখন অনেক মজার কিছু করতে বা বলতে আমার তোমাদের মার কথা সবার আগে মনে পড়তো। মনেহতো তোমাদের মা সাথে থাকলে অনেক আনন্দ পেতো এখন। আবার যখন খুব বিরক্ত করতে কোন কারণে তখনো তোমাদের মাকেই সবার আগে মনে পড়তো। মনেহতো তোমাদের মা পাশে থাকলে এই পরিস্থিতিটা হ্যান্ডেল করা অনেক সহজ হয়ে যেতো আমার জন্য। এটা মূলত লাইফ পার্টনারের প্রতি নিজের নির্ভরশীলতার প্রকাশ। জীবনের আনন্দ বেদনা, সুখ দুঃখ সবকিছু ভাগাভাগি করে নেবার ওয়াদা করেও কেন নেই সে আমার পাশে কঠিন এই মূহুর্তে? এই চিন্তাটা মোটেও রাগ নয়। অধিকার মিশ্রিত অভিমান, ভালোবাসার আকুল আবেদন।

আমি তাহলে উনাদেরকে কি বলবো পাপা?

জাওয়াদ হেসে বললেন, উনাদেরকে বলার দায়িত্ব তোমার মাকেই পালন করতে দাও। আমরা খাল কেটে কুমীর না আনি।

নাবিহা হাসতে হাসতে পাপার কথাকে সমর্থন করলো। এরপর পাপাকে অনুকরণ করে পাখীদের জন্য ঘর বানানোতে মনোযোগ দিলো। বেশ অনেকক্ষণ নীরবে কাজ করার পর নাবিহা বলল, সুখী হওয়ার জন্য, ভালো থাকার জন্য চারপাশের সবকিছু কি মনের মতো হওয়াটা জরুরি পাপা?

জাওয়াদ হেসে বললেন, চারপাশের কোন কিছুই তো শতভাগ তোমার, আমার বা অন্য কারোই মনের মতো হওয়া সম্ভব নয়। আমাদের মন সদা জাগ্রত ক্রিটিকের মতো। পারফেক্ট সবকিছুর মধ্যে থেকেও অবলীয়ায় ইনপারফেকশন খুঁজে বের করে ফেলে মূহুর্তেই। জগতের কোন কিছুই একদম তোমার মনের মতো হবে না। সুখী হবার জন্য এই কথাটাকে মনের মাঝে স্থাপন করতে হবে সবার প্রথমে।

কিন্তু কথাটা যদি কোন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে হয় তাহলে? আইমিন, সময়ের ব্যবধানে কারো আচরণ যদি বদলে যায়? যেভাবে সাপোর্ট করা উচিত সেভাবে যদি না করে তাহলে? সেক্ষেত্রে কি হবে পাপা?

জাওয়াদ বললেন, সাপোর্ট করা উচিত কিন্তু স্বইচ্ছায় করছে না আবার সাপোর্ট করা উচিত কিন্তু করতে পারছে না কোন কারণে। এই দুটা সিচুয়েশন কিন্তু ভিন্ন। যারা আমাদেরকে ভালোবাসে, কেয়ার করে কিংবা যাদেরকে আমরা ভালোবাসি, কেয়ার করি তাদের অপরাগতা মেনে নেয়াটা ভালো থাকার এবং তাকে ভালো রাখার মূলমন্ত্র সমূহের একটি। ইউ কান্ট জাস্ট গিভ আপ অন সামওয়ান বিকজ দ্য সিচুয়েশন’স নট আইডিয়াল। এই জগতে যত সুন্দর সম্পর্ক আছে, বন্ধন আছে। যাদেরকে আমরা আদর্শ মানি, মডেল, আইডল হিসেবে ভাবি তুমি যদি তাদের ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখো তাহলে দেখতে পাবে যে, তাদের সম্পর্ক সুন্দর এর পেছনে কারণ এটা নয় যে তাদের মধ্যে কোন সমস্যা নেই। তাদের সম্পর্ক সুন্দর কারণ তারা সমস্যাগুলোকে তাদের সম্পর্কের উপর, বন্ধনের উপর সওয়ার হতে দেয়না। তারা প্রতিকূলতার জন্য একে অন্যকে দোষারোপ না করে পরস্পরকে আঁকড়ে ধরে সেই পরিস্থিতিটা মোকাবিলার চেষ্টা করে। যারফলে তাদের সম্পর্ক আরো সুন্দর হয়ে ওঠে এবং বন্ধন আরো মজবুত হয়। একটা কথা আছে, গুড বেটার এন্ড বেস্ট, নেভার লেট ইট রেস্ট। আমাদের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া রয়েছে, আমরা গুড ফ্রেন্ড, এরচেয়ে বেস্ট আর কিছু হতেই পারে না। এমন ভাবার কোন অবকাশই নেই নিজের ব্যক্তিজীবনের কোন ক্ষেত্রে কিংবা আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা কোন স্পেশ্যাল বন্ধনের ক্ষেত্রে। এই যেমন তোমরা যখন বলো, আমাদের পাপা এই পৃথিবীর বেস্ট পাপা। আমি তখন মনে মনে বলি, গুড বেটার এন্ড বেস্ট, নেভার লেট ইট রেস্ট। টিল ইউর গুড ইজ বেটার এন্ড ইউর বেটার ইজ বেস্ট। মোর, মোর এন্ড মোর।

নাবিহা হেসে বলল, লাভ ইউ পাপা। ইউ আর দ্য বেষ্ট, ঐ দেখো নানুমণিও হাজির করতে তোমায় অ্যারেস্ট।

হেসে ফেললেন জাওয়াদ। মিসেস সুরাইয়াও হাসতে হাসতে কন্যা জামাতা আর নাতনীর সাথে এসে বসলেন।

চলবে..
পর্ব-

 

স্মৃতির জোনাকি…২

স্মৃতির জোনাকি…২


আফরোজা হাসান


আজাদ সাহেব আর মিসেস সুরাইয়া নাস্তা করছিলেন। নূহা এসে সালাম দিয়ে হেসে বলল, মামণি তোমার জন্য একটা গিফট আছে। এরপর হাতের প্যাকেটটা মামণির দিকে বাড়িয়ে ধরে হেসে বলল, এখন খুলতে পারবে না। আমি চা নিয়ে উপরে যাবার পর খুলবে।

কন্যার হাত থেকে গিফট নিয়ে আহ্লাদিত কন্ঠে মিসেস সুরাইয়া বললেন, কি আছে এটার ভেতরে?

নূহা হেসে বলল, চা নিয়ে এক্ষুণি চলে যাচ্ছি এরপর নিজেই খুলে দেখো।

আজাদ সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, আমাদেরকে কেউ গিফট টিফট দেয় না কখনোই। অবশ্য মাকে তিনটা গিফট দেবার পর গিয়েই না বাবার পালা আসবে। মাত্র তো দুটা হলো এটা নিয়ে। হুমমম…

হাত থেকে চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে পাপাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দিয়ে হাসতে হাসতে চা নিয়ে চলে গেলো নূহা। তৎক্ষণাৎ দুই টানে প্যাকেট খুলে ফেললন মিসেস সুরাইয়া। আজাদ সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, মেয়ের ব্যাপারে একদম বাচ্চাদের মতো হয়ে যাও তুমি সুরাইয়া।

স্বামীর কথাওয়াই কান না দিয়ে প্যাকেট খুলে গিফট বের করে একদম বিমুগ্ধ হয়ে গেলেন মিসেস সুরাইয়া। আজাদ সাহেবও মুগ্ধ কন্ঠে বললেন, মাশাআল্লাহ এতো ভয়াবহ সুন্দর। আমার মা কি নিজ হাতে বানিয়েছে নাকি?

আনন্দিত কন্ঠে মিসেস সুরাইয়া বললেন, আলহামদুলিল্লাহ অবশ্যই আমার মেয়ে বানিয়েছে। দেখেছো কি অদ্ভুত সুন্দর টি-কোজিটা! নানান রঙের উলের সুতো দিয়ে ছোট্ট কুটিরের অবয়বে টি-কোজিটা টা বানিয়েছে। মুগ্ধ চোখে যখন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে টি কোজিটা টা দেখছিলেন মিসেস সুরাইয়া হঠাৎ ভেতর থেকে একটা চিরকুট পড়লো। আজাদ সাহেব হাত বাড়িয়ে চিরকুটটি তুলে নিয়ে খুলে হেসে বললেন, তোমার আদূরে কন্যা লিখেছে, “তোমাকে ঠেলতে গিয়ে দূরে মামণি, থমকে গিয়েছিলাম দেখে হৃদয়ের আয়নাখানি। অন্তর জুড়ে তোমার ছবিই সবচেয়ে উজ্জ্বল, তপ্তদাহে ছায়া তোমার মমতা মাখা আঁচল। যতই মেতে থাকি অন্যের সনে উল্লাসে, মাগো তুমি মিশে আছো মোর প্রতিটি নিঃশ্বাসে। জড়িয়ে থাকো তুমি সর্বদা ছায়ার মতোই, কাছে থাকি তোমার কিংবা দূরে যতোই।

আদরের মেয়ের কাছ থেকে এমন ভালোবাসা পূর্ণ শব্দসম্ভার উপহার পেয়ে মিসেস সুরাইয়ার দু’চোখ বেয়ে অঝোর অশ্রু নেমে এলো। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগলেন একদম। আজাদ সাহেব তখন স্ত্রীকে ধরে বললেন, এমন করে কেঁদো না সুরাইয়া প্লিজ। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। চলো তুমি উপরে চলো। নূহার কাছে গিয়ে বসবে। দুজন উপরে যাচ্ছিলেন কিন্তু জাওয়াদকে দেখে আজাদ সাহেবকে যেতে বলে মিসেস সুরাইয়া নাস্তা দিলেন জাওয়াদকে।

নাস্তা করতে বসে টেবিলের উপর কুটির আকৃতির টি কোজিটা দেখে জাওয়াদ হেসে বললেন, এটা কি টি কোজিটা? অদ্ভুত রকম সুন্দর। এটা কি আপনার কন্যার তৈরি?

মিসেস সুরাইয়া গর্বিত কন্ঠে বলল, আলহামদুলিল্লাহ অবশ্যই আমার কন্যার তৈরি। আমার কন্যা ছাড়া সবকিছুতেই এমন গৃহের মায়া ফুটিয়ে তোলার মতো আর কেউ আছে নাকি?

জাওয়াদ হেসে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। আমি উনার ড্রয়ারে কয়েক কালারের উলের সুতো দেখেছিলাম। সেই আন্দাজের সাথে আপনার চেহারায় ছড়িয়ে থাকা গদগদ ভাব দেখে ঢিল ছুঁড়েছিলাম। তা না হলে আমার জানা ছিল না আপনার কন্যা এত চমৎকার উলের কাজও জানেন।

তুই জানিসই কতটুকুন আমার মেয়ে সম্পর্কে? আমার মেয়ে হচ্ছে ম্যাজিক। বুঝেছিস?

জাওয়াদ হেসে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। কিভাবে জানবো বলেন? বিয়ের পর শ্বাশুড়িরা মেয়ের জামাইকে পাশে বসিয়ে মেয়ের সম্পর্কে খুঁটিনাটি সবকিছু জানান। কিন্তু আমার শ্বাশুড়ির আমার পাশে এসে বসা মানেই বকাঝকা। যাইহোক, তা আপনার ম্যাজিক গার্ল কোথায়? স্বামী বাড়িতে থাকলে তাকেও যে একটু আধটু ম্যাজিক দেখানো আবশ্যক এই তথ্য কি উনি জানেন না? এখনো পর্যন্ত জেনে না থাকলে আপনার তো উচিত কন্যাকে জানানো।

আমার মেয়েকে আমি কি জানাবো, কি জানাবো না সেটা কি এখন তোর কাছ থেকে শিখতে হবে? চোখ পাকিয়ে বললেন মিসেস সুরাইয়া।

জাওয়াদ হেসে বললেন, শিক্ষা তো মামণি অক্সিজেনের মতো। আমরা যেমন নিয়ম তৈরি করি না যে, আমি কেবল মাত্র বটবৃক্ষ বা আম গাছ থেকে বের হওয়া অক্সিজেনই গ্রহণ করবো। অন্য গাছের অক্সিজেনে আমার এলার্জী আছে। শিক্ষা ব্যাপারটাও এরকম। আমরা যে কোন সময়, যে কারো কাছ থেকেই শিক্ষা অর্জন করতে পারি।

যে কোন সময়, যে কারো কাছ থেকে শিক্ষা অর্জন করতে আমার কোনই আপত্তি নেই। আমার শুধু তোর কাছ থেকে শিক্ষা অর্জনে এলার্জী। তুই যেমন চেরীফল সহ্য করতে পারিস না, আমি তেমন তোর জ্ঞানের কথা সহ্য করতে পারিনা।

আচ্ছা বাদ তাহলে জ্ঞানের কথা। মেয়ের সংসারে তার মায়ের প্রভাব মারাত্মক। শ্বাশুড়িকে তাই খুশি রাখাটা জরুরি। হাসলে হাসতে বললেন জাওয়াদ।

টিজ করা কি মানুষকে খুশি রাখার নতুন পদ্ধতি নাকি? কথা বলছিস না কেন? চুপ করে আছিস কেন? জবাব দে?

জাওয়াদ হেসে বললেন, মেয়েকে যে স্বামীর সেবাযত্ন বিষয়ক কোন শিক্ষাই দেননি। সেই জবাব না আপনি দেবেন।

মিসেস সুরাইয়া বললেন, মেয়ের স্বামীর ঘরে যাবার বয়স হবার মতো সময় পেলে অবশ্যই দিতাম। কিন্তু মেয়ের দুধের দাঁত সব পরে উঠতে না উঠতেই তো জাদু টোনা করে জামাই এসে হাজির।

হাসতে হাসতে জাওয়াদ বললেন, জাদুটোনা করে?

অবশ্যই জাদুটোনা করে। জাদুটোনা ছাড়া তোর মতো বুড়া ছেলেকে আমার মেয়ে পছন্দ করতে যাবে কোন দুঃখে।

জাওয়াদ হেসে বললেন, জাদুটোনা জানলে মেয়ের আগে মেয়ের মাকেই করতাম। তাতে তার ভিলেনিপনার হাত থেকে অন্তত মুক্তি মিলতো। মামণি একটা প্রশ্ন করলে সত্যি জবাব দেবে?

তোকে কি আমি ভয় করি নাকি যে ভয়ে মিথ্যা জবাব দেবো?

জাওয়াদ হেসে বললেন, তোমার কি আমাকে মেয়ের জামাই হিসেবে পছন্দ হয়নি?

উহু, হয়নি।

জাওয়াদ হেসে বললেন, কেন?

আমি আমার মেয়ের জন্য খুব সহজ সরল একটা জামাই চেয়েছিলাম। নির্ঝঞ্ঝাট, পিছুটান নেই এমন কোন ছেলে। আটটা থেকে পাঁচটা ডিউটি করবে। বাকি সময় আমার মেয়ের সাথে কাটাবে। যার মাথার মধ্যে জ্ঞানার্জনের ভূত থাকবে না, মহাজ্ঞানী টাইপ হবে না। সারাক্ষণ মিশন, ভিশন জপবে না। কথায় কথায় তর্জন গর্জন করবে না। একদম শান্ত ও মিষ্ট স্বভাবের হবে। সাধারণ কর্মী টাইপ ছেলে হবে। নেতাগিরি করে বেড়াবে না সর্বত্র। বিশাল বিশাল দায়িত্ব যার কাঁধের উপর থাকবে না। যার জগত হবে আমার মেয়েকে ঘিরে। আমাকে মেয়েকে খুশি রাখা, আনন্দে রাখাটা যার ফেব্রেট হবি হবে। এমন আরো নানান চিন্তাভাবনা ছিল। যার কোনটাই তোর মধ্যে নেই। সেই সাথে আমার অপছন্দনীয় সমস্ত কিছু আবার উপস্থিত তোর মধ্যে।

জাওয়াদ হেসে বললেন, তুমি তাহলে তোমার পছন্দের লিষ্ট আমাকে দাও। যেটা যেটা আয়ত্ত্ব করা সম্ভব আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো নিজের মধ্যে ধারণ করার। যেমন তোমার মেয়েকে খুশি রাখা, আনন্দে রাখাটাকে আমি হবি না আমার কর্তব্যকর্ম মনেকরি। শখ বদলে যেতে পারে মা। কিন্তু কর্তব্যকর্ম প্রতিটি বন্ধনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যতক্ষণ বন্ধন অটুট থাকে, কর্তব্যকর্ম না বদলে যায়, না হেলাফেলা করার সুযোগ থাকে। আচ্ছা চলো তুমি আর আমি আজ একটা ডিল করি। মেয়ের জামাইকে ঘিরে তোমার যত চাওয়া পাওয়া ছিলো সবকিছু মিলিয়ে একটা কোয়েশ্চেন পেপার তৈরি করে দাও আমাকে। আমি তোমার কাছে পরীক্ষা দেবো। যদি সব প্রশ্নের জবাবে উৎরে যেতে পারি, তাহলে নিশ্চয়ই তোমার আপত্তি থাকবে না আমাকে মেয়ের জামাই হিসেবে খুশি মনে মেনে নিতে?

মিসেস সুরাইয়া বললেন, আইডিয়া মন্দ না। চিন্তা ভাবনা করে এরপর আমার সিদ্ধান্ত জানাবো তোকে ইনশাআল্লাহ।

জাওয়াদ হেসে বললেন, এখন তাহলে বলে দাও আমার বৌ কোথায়?

মামণি বললেন, উপরেই কোথাও আছে। উঠছিস কেন? বোস চুপচাপ। তুই যেতে পারবি না এখন ওর কাছে।

জাওয়াদ বললেন, এটা আবার কেন?

মিসেস সুরাইয়া বললেন, আইমিন, একা যেতে পারবি না। আমিও যাবো তোর সাথে। চা নিয়ে আসি রান্নাঘর থেকে ততক্ষণ বসে থাক। এরপর একসাথে যাবো।

জাওয়াদ হেসে বললেন, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। বৌকে একেবারে না দেখার চেয়ে ভিলেন শ্বাশুড়ির নজরদারীর মধ্যে দেখাও উত্তম। যান যান চা নিয়ে আসেন। আমিও বসে বসে দোয়া করতে থাকি আমার কানা মামা যাতে দুষ্টু গরু হয়ে না যায়। আমাকেও যাতে প্রবাদ উল্টে বলতে নাহয়, দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।

মিসেস সুরাইয়া জাওয়াদকে ঘুষি মেরে হাসতে হাসতে চলে গেলেন চা আনার জন্য। কারো মৃদু ধাক্কা মূহুর্তেই অতীতের আনন্দঘন সময় থেকে বর্তমানে নিয়ে এলো মিসেস সুরাইয়াকে। নাবিহা হাসতে হাসতে বলল, নানুমণি কি হয়েছে তোমার? সেই কখন থেকে দেখছি টি কোজিটার দিকে তাকিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে আছো। কি ভাবছো এমন করে?

বিরক্ত কন্ঠে মিসেস সুরাইয়া বললেন, তোদের যন্ত্রণায় শান্তি মতো কোথাও বসবো সেই সুযোগও নেই। কি চাই?

নাবিহা হেসে বলল, আমার পাপাকে খুঁজে পাচ্ছি না কোথাও। পাপা কোথায় বলে দাও। তাহলে তোমাকে আর বিরক্ত করবো না।

মিসেস সুরাইয়া বললেন, তোর পাজী পাপাকে তো আমিও খুঁজছি। মামণি নাস্তা দাও বলে সেই যে গেলো আর কোন খবর নেই।

নাবিহা হেসে বলল, তাহলে চলো আমরা দুজন মিলে পাপার সন্ধানে যাই। যে প্রথমে খুঁজে পাবে পাপাকে বিরক্ত করার প্রথম সুযোগ তার।

হেসে ফেললেন মিসেস সুরাইয়া। এরপর নানী, নাতনী মিলে খুঁজতে বের হলো জাওয়াদকে।

চলবে….

পর্ব-১

অসুস্থ কোহিনূরের পাশে বিভিন্ন সংগঠন


নারী সংবাদ


দৈনিক নয়া দিগন্তে সংবাদ প্রকাশের পর থেকে পাল্টাতে থাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামের অসুস্থ সেই কোহিনূরের কষ্টের জীবন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও মাধ্যমে বিনা খরচে চিকিৎসা শেষে এবার হাতে পেল নগদ লক্ষাধিক টাকা।

‘নবীনগরের আঞ্চলিক কথা’ নামের একটি ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপের সদস্যরা ১৩ আগষ্ট মঙ্গলবার রতনপুর গ্রামে গিয়ে কোহিনূরের হাতে নগদ এক লাখ ৯ হাজার ২৯২ টাকা তুলে দেন। একই সময়ে নবীনগর পৌর এলাকার আলীয়াবাদ গ্রামের বাহরাইন প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের মাধ্যমে দেওয়া হয় ২০ হাজার টাকা, ১১ আগস্ট যুবদল প্রবাসী অনলাইনের পক্ষ থেকে দেয়া হয় ৫০ হাজার টাকা।

নবীনগরের আঞ্চলিক কথা নামের ওই গ্রুপের সভাপতি মোজাম্মেল হক ও অ্যাডমিন বাবুল ভূঁইয়া বলেন, ‘নয়া দিগন্তে সংবাদটি প্রকাশের পর কোহিনূরের চিকিৎসার জন্য মাসখানেক আগে আমরা আমাদের ফেসবুক পেইজটিতে একটি বিকাশ নম্বর দিয়ে সহযোগিতা চাই। এরপরই বিভিন্ন বন্ধুরা দেশ বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতে থাকেন। আজ বন্ধুদের পাঠানো পুরো টাকাটা কোহিনূরের হাতে তুলে দিতে পেরে ভীষণ তৃপ্তিবোধ করছি।’

টাকা হস্তান্তরের সময় নবীনগর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক কাজী ওয়াজেদ উল্লাহ জসীম, আবদুল কাইয়ুম এবং ‘নবীনগরের আঞ্চলিক কথা’ গ্রুপের সদস্য মজিবুর রহমান পথিক, আসাদুজ্জামান, সোহেল রানাসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, নবীনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামের মৃত কবির হোসেনের মেয়ে কোহিনুর বেগম গত ৪ বছর আগে মেরুদন্ডের সমস্যার কারণে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তার পিঠে অপারেশন করে দুইটি রড স্থাপন করা হয়। এর পর থেকে অসুস্থ শরীর নিয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষে করে অন্যের বাড়িতে থেকে, ৫ বছর বয়সী একমাত্র ভাইটিকে রসুল্লাবাদ হাফেজিয়া মাদরাসায় পড়িয়ে কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। অর্থের অভাবে নির্ধারিত সময়ে সেই রড খুলতে না পারায় চামড়া ছিঁড়ে রডগুলো বেড়িয়ে গিয়ে ওই স্থানে পচন ধরে পোকা হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। গত কয়েক মাস ধরে তার মেরুদন্ডে ব্যথা আবারো ফিরে আসে। তীব্র আকার ধারণ করলে কোহিনূর আবারো শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে।

তার জীবনের করুণ এই চিত্র নিয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তে ২৮ জুন ‘এই যন্ত্রণা থেকে মরে যাওয়া অনেক ভালো’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর, এই মানবিক ঘটনাটি নবীনগরের ইউএনও মোহাম্মদ মাসুমের নজরে আসে। পরে তিনি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী হয়ে ১ জুলাই কোহিনূরকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে ঢাকার ‘ডু সামথিং ফাউন্ডেশনে’ পাঠান। সেখানে ফাউন্ডেশনের দুই সদস্য ডা: কাজী আয়েশা সিদ্দিকা বর্ণা ও ডা: হাসান মাহমুদের তত্ত্বাবধানে কোহিনূরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ১৩ ও ১৬ মে তার মেরুদন্ডে সফল অস্ত্রোপচার করেন অধ্যাপক ডা: শাহ আলম। এরপর কোহিনূর সুস্থ হয়ে ১ আগস্ট রতনপুর গ্রামে ফিরে আসে। এক মাস পর আবার যেতে হবে হাসপাতালে। তার এই চিকিৎসা ব্যয়বহুল বলে জানান ডা: কাজী আয়েশা সিদ্দিকা।

নবীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাসুম বলেন, কোহিনুরের সুস্থতার জন্য দেশবাসীর নিকট দোয়া কামনা করছি এবং নবীনগর উপজেলা প্রসাশন সব সময় তার পাশে থাকবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার জন্য সরকারি খাস জায়গা বন্দোবস্ত দেয়াসহ তার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্যও আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

মা-বাবাহীন কোহিনুর বেগম সু-চিকিৎসার সুযোগ ও হাতে নগদ টাকা পেয়ে আনন্দে কান্না জড়িতকন্ঠে সকলের কাছে কৃতজ্ঞা প্রকাশ করে দেশবাসীর কাছে দোয়া ও সহযোগিতা প্রার্থনা করেন।

কোহিনুর বেগমকে আর্থিক সহায়তা করতে ইচ্ছুকরা যোগাযোগ করতে পারেন। বিকাশ নম্বর : ০১৮৪৬৯৮৭২৮১ (ব্যক্তিগত)।

দৈনিক নয়া দিগন্তে

 

গরুর গোস্তের ভুনার

গরুর গোস্তের ভুনার


রেসিপি


টুপটুপ বৃষ্টি হচ্ছে আর খাবারের টেবিলে সাজানো গরম রুটি আর গরুর গোস্তের ভুনা। সাথে লেবু আর সালাদ। কেমন হবে সেই মুহূর্ত? এখন তো ছুটির দিন। তাই তো আজ নিয়ে এলাম মজাদার গরুর গোস্তের ভুনার রেসিপি।

উপকরণ:

গরুর গোস্ত ২ কেজি,

আদা বাটা ৪ টেবিল চামচ,

রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ,

আস্ত রসুন ৬ কোয়া,

জিরা বাটা ১ চা চামচ,

দারুচিনি ৬ টুকরা,

এলাচ ৬ টুকরা,

পেঁয়াজ মোটা গোল করে কাটা ২ কাপ,

পেঁয়াজ চিকন কুচি ১ কাপ,

কাঁচা জিরা,

শুকনা মরিচ ২টা, তেল ২ কাপ,

হলুদ বাটা দেড় চা চামচ,

শুকনা মরিচ বাটা ১ চা চামচ,

লবন ১ টেবিল চামচ,

চিনি ১ চা চামচ।

প্রণালি :

প্রথমে চুলায় তেল গরম করুন। কেলে চিকন কুচি করা পেঁয়াজ দিয়ে ভেজে নিতে হবে। পেঁয়াজ তুলে আলাদা করে রাখুন। তেলে এবার মোটা গোল পেঁয়াজ দিয়ে একটু বাদামি করে ভাজুন। পেঁয়াজ বাদামি রঙ হলে গোস্তে, আদা বাটা, রসুন বাটা, জিরা বাটা, হলুদ বাটা, মরিচ বাটা দিয়ে খুব ভালো করে মেশান। অল্প অল্প করে গরম পানি দিয়ে কষিয়ে নিন। গোস্তে ২ কাপ গরম পানি ঢেলে দিতে হবে।মাংস ঢেকে দিন। মাংস আধা সেদ্ধ হলে আস্ত রসুন দিতে হবে। পানি কমে আসলে চুলার আঁচ কমিয়ে দিন।ঢিমা আঁচে কিছু সময় রাখতে হবে। এবার চুলায় কাঁচা জিরা, দারুচিনি, এলাচ, শুকনা মরিচ শুকনা তাওয়ার ওপর দিয়ে ভেজে নিন। ভাজা মশলা পাটায় বা মিক্সারে গুঁড়া করে নিতে হবে। ভাজা পেঁয়াজ চিনির সঙ্গে মিশিয়ে হাত দিয়ে গুড়া করে নিতে হবে। যখন গোস্ত ভুনে তেলের ওপর আসবে, তখন পেঁয়াজের সঙ্গে গুড়া মশলা মিশিয়ে গোস্তের ওপর ছড়িয়ে দিন। অল্প আঁচে আধা ঘণ্টা রাখতে হবে।যখন পানি শুকিয়ে মাখা মাখা হবে এবং তেল ছাড়তে শুরু করবে তখন নামিয়ে নিন। ব্যাস হয়ে গেলো খুব সহজে মজাদার ‘গরু গোস্তের ভুনা।

পরিবেশনঃ গরম গরম রুটি আর ভুনা গোস্ত পরিবেশন করুন।

 

স্ত্রীকে ১৫ টুকরো করে শ্বাশুরীকে ফোন দিয়েছে ঘাতক স্বামী


নারী সংবাদ


গাজীপুরের শ্রীপুরে গার্মেন্টস কর্মী এক নারীকে ১৫ টুকরো করে হত্যা করেছে পাষন্ড স্বামী। পুলিশ ঘরের ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে নিহতের ৫ টুকরো মাংস পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের ঘাতক স্বামী মামুন মিয়াকে (২৫) সাভারের কবিরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।

পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, নেত্রকোনার পূর্বধলা থানার দেবকান্দা গ্রামের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে সুমা আক্তার ওরফে সুমির (২৭) সঙ্গে প্রায় দু’বছর আগে গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার সিংহশ্রী ইউনিয়নের বরইবাড়ি এলাকার ফজলুল হকের ছেলে মামুন মিয়ার (২৫) বিয়ে হয়। এটি উভয়ের দ্বিতীয় বিয়ে। বর্তমান সংসারে কোন সন্তানের জন্ম না হলেও তাদের উভয়ের পূর্বের সংসারের একজন করে সন্তান রয়েছে। ওই দু’সন্তানের একজন তার দাদীর কাছে এবং অপরজন তার নানীর কাছে থাকে। বিয়ের পর সুমা তার স্বামী মামুনকে নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গিলারচালা এলাকার শফিকুল ইসলামের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় সাবলাইম গ্রীনটেক নামের এক পোশাক কারখানার সুয়িং অপারেটর পদে চাকুরি করতো। মামুন ওই এলাকায় ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ করতো। বিয়ের কিছুদিন পর হতে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে মামুন ও সুমার মধ্যে ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিল। সম্প্রতি সুমার জমানো ৪০ হাজার টাকা ও মামুনের নারীঘটিত বিষয়াদি নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দাম্পত্য কলহ চরম আকার ধারণ করে।

পুলিশ সুপার আরো জানান, ঈদের ছুটি কাটাতে শুক্রবার স্বামীকে নিয়ে নেত্রকোনা গ্রামের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় সুমা। অপরদিকে আগেরদিন স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে মামুন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন স্থানীয় বাজার থেকে দু’টি ট্র্যাভেল ব্যাগ, পলিথিন ও কিছু ঘুমের ট্যাবলেট কিনে। এসময় সে একশ’টাকা দিয়ে একটি ধারালো চাকুও কিনে । বাসায় যাওয়ার সময় মামুন হোটেল থেকে হালিম ও রুটি কিনে নেয়। বাসায় ফিরে রাতে কৌশলে হালিম ও রুটির সঙ্গে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে সুমাকে খাওয়ায়। খাবার খেয়ে রাতে সুমা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এরপর রাত ১টার দিকে বুকের উপর বসে সুমার মুখ চেপে ধরে ও গলা টিপে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে পাষন্ড স্বামী। পরে সুমার লাশ টেনে গোসলখানায় নিয়ে যায়। সেখানে বাজার থেকে কিনে আনা স্টিলের ধারালো চাকু দিয়ে প্রথমে মাথা, হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করে। পরে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে শুধু মাংস খন্ড বিচ্ছিন্ন করে। এভাবে সুমার লাশকে মোট ১৫টি টুকরো করে ১০ কেজি ধারনক্ষম তিনটি পলিথিনে ভর্তি করে প্যাকেট করে মামুন।

শুক্রবার ভোরে দু’দফায় দু’টি প্যাকেটে ভর্তি লাশের ১০ টুকরো দু’টি ট্র্যাভেল ব্যাগে ভরে সিএনজি চালিত অটো রিক্সায় চড়ে পার্শ্ববর্তী কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী এলাকায় শীতলক্ষ্ম্যার শাখা বানার নদীর ব্রীজে নিয়ে যায়। সেখানে লাশের টুকরো ভর্তি ব্যাগগুলো নদীতে ফেলে তৃতীয় প্যাকেট নেওয়ার জন্য পুনঃরায় বাসায় ফিরে আসে মামুন। দু’দফায় ফেলে আসার মাঝে মামুন স্থানীয় রুহুলের বাড়িতে বিদ্যুতের লাইন মেরামতের কাজ করে নিজেকে স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টা করে। পরে রাতে মামুন তার শ্বাশুড়িকে মোবাইল ফোন করে জানান, সুমাকে সে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। সুমা বাড়িতে পৌঁছেছে কি-না এসময় শ্বাশুড়ির কাছে তাও জানতে চায় মামুন।

এদিকে শুক্রবার রাতে সুমা বাড়ি না পৌছায় স্বজনরা তার মোবাইলে ফোন করে বন্ধ পায়। সুমার খোঁজ না পেয়ে পরদিন শনিবার সুমার ছোট বোন বৃষ্টি ও তার (বৃষ্টির) স্বামী নবী হোসেন শ্রীপুরের গিলারচালায় আসে। বড় বোন সুমার সঙ্গে বৃষ্টি একই কারখানায় চাকুরি করেন। বৃষ্টি একই এলাকায় অনত্র ভাড়া থাকেন। সেখানে কাউকে না পেয়ে ঘরের দরজার তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে কারো খোঁজ পান নি। পরে পার্শ্ববর্তি এক বাড়ি থেকে মামুনকে পেয়ে তাকে সাথে নিয়ে সুমাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা।

এসময় মামুন কৌশলে পালিয়ে যায়। সুমা ও মামুনের খোঁজ না পেয়ে বৃষ্টি ও তার স্বামী গ্রামের বাড়ি ফিরে যান। তারা বাড়ি গিয়ে সুমার খোঁজ না পেয়ে সোমবার পুনঃরায় শ্রীপুরের ওই বাসায় আসেন এবং বাসার ভিতরে প্রবেশ করেন। এসময় তারা ঘরের ভিতরে দুর্গন্ধ পান এবং ঘরে থাকা ড্রেসিং টেবিলের নীচ থেকে মেঝেতে রক্তাক্ত পানি গড়াতে দেখেন। রাত ৮টার দিকে ড্রেসিং টেবিলটির ড্রয়ার খুলে পলিথিনে মোড়ানো মানবদেহের মাংসের পাঁচটি টুকরা দেখতে পান তারা। তবে সেখানে তার মাথা, হাত ও পা ছিল না। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই ৫টুকরো মাংস উদ্ধার করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।

নিহতের বোন বৃষ্টি জানায়, বৃহস্পতিবার বেতন দিয়ে কারখানায় ঈদের ছুটি হয়ে যায়। শুক্রবার তাদের সঙ্গে একত্রে বাড়ি যাওয়ার কথা সুমা’র। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সুমার জমানো ৪০ হাজার টাকা দিয়ে টিউবওয়েল স্থাপন ও বাড়ির বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করার কথা ছিল। শুক্রবার সকালে বাড়ি যাওয়ার সময় সুমাকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও না পেয়ে বৃষ্টি তার স্বামীর সঙ্গে ময়মনসিংহের শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। তারা বাড়িতে পৌঁছে একাধিকবার বড় বোন ও ভগ্নিপতির মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তাদের ফোন বন্ধ পেয়ে শ্রীপুরে সুমার বাসায় এসে মাংসের টুকরোর সন্ধান পান।

পুলিশ সুপার জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার ভোর রাতে পুলিশ ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার কবিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফুপাতো ভাইয়ের বাসা থেকে মামুনকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদকালে মামুন সুমাকে হত্যার কথা স্বীকার করে লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয়। এসময় সে জানায়, সুমার ৪০ হাজার টাকা নিয়ে একটি মোবাইল ফোন কিনে সে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু ও ট্র্যাভেল ব্যাগ এবং মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

ডেঙ্গু:জ্বর নেমে গেলে রোগীর পরিচর্যা কেমন হবে

ডেঙ্গু:জ্বর নেমে গেলে রোগীর পরিচর্যা কেমন হবে


স্বাস্থ্যসেবা


তাহমিনা আক্তার পলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক ও মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা।তার সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে নব জাহিদুল কবীরের গায়ে জ্বর উঠেছিলো ২০শে জুলাই। দেরী না করে দ্রুতই সন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে যান তারা।

“যখন ছেলেকে হাসপাতালে নিলাম তখন জ্বর ছিলো কম। কিন্তু প্রেশার কমে গিয়েছিলো। রক্তে প্লেটলেট কমতে শুরু করে। এরপর সাত দিন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।”

তিনি বলছেন, “জ্বর চলে যাওয়ার পর ছেলেকে স্যালাইন ও প্রচুর তরল খাওয়াতে হয়েছিলো এবং চিকিৎসকরা যে কয়েকটি জিনিসের প্রতি লক্ষ্য রেখেছিলেন তা হলো নব’র পাতলা পায়খানা হচ্ছে কি-না কিংবা বুকে বা পেটে কোনো ব্যথা হচ্ছে কি-না সেদিকে নজর রাখা।”

তাছাড়া আলট্রাসনোগ্রাম ও বুকের এক্স রে করা হয়েছে কয়েকবার বুকে পানি জমেছে কি-না সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য।

চিকিৎসকরা বলছেন, এবারে যাদের ডেঙ্গু হয়েছে তাদের মধ্যে জ্বর খুব একটা বেশি ওঠছে না। আবার উঠলেও সেটি ২/৩ দিনের মধ্যেই নেমে যাচ্ছে।

চিকিৎসকদের মতে এবারে ডেঙ্গুর যে প্রবণতা সেটি আগের বছরগুলোর মতো নয়, এমনকি লক্ষণও কিছুটা ভিন্ন।

কারণ আগের বছরগুলোতে এডিস মশা কামড়ালে প্রচণ্ড জ্বর হতো কিন্তু এবার অনেক ক্ষেত্রেই তাপমাত্রা খুব বেশি হতে দেখা যাচ্ছে না। গত কয়েক বছর হেমোরেজিক জ্বর হচ্ছিলো অনেকের।

কিন্তু এবার সেটি তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। এবার যা হচ্ছে চিকিৎসকরা তার নাম দিয়েছেন ‘শকড সিনড্রোম।’

একারণে এবার অল্প জ্বর হলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে বলছেন তারা।

 সুত্রঃ বিবিসি।

 

শিশুকে আদর–যত্ন–ভালোবাসা দিন


 প্যারেন্টিং


বাচ্চাদের পিছনে শুধু খাওয়া আর পড়াশুনা করান দায়িত্ব শেষ নয়। শিশুকে আদর–যত্ন–ভালোবাসা দিয়ে লালন–পালন করতে হয়। অভিজ্ঞতা শেয়ার করা, উপদেশ দেওয়া বা কখনও কঠিনভাবে কথা বলা; কখনওবা কোমলভাবে ডেকে নেওয়া। উভয়টাই আমাদের কল্যাণের জন্য ।

আসুন দেখিঃ

কি কি করা যাবে না…

খুব দ্রুত প্রশংসা বা তিরস্কার করে ফেলা

বিপদ থেকে দ্রুত উদ্ধার করে ফেলা

কোন ঝুঁকি নিতে না দেয়া

নিজের ভুল স্বীকার না করা

জ্ঞানী উপদেশ, এই করবে না

কি কি করব

 জেনে রাখুন, শিশুরা ছোটদের মতোই আচরণ করবে

১) রেগে গিয়ে বা ধৈর্য হারিয়ে নয় বরং ভেবে-চিন্তে, ধীরে-সুস্থে এই বিষয়গুলো মোকাবিলা করতে হবে, তাদের বুঝাতে হবে, বুঝতে সাহায্য করতে হবে।

২) দোষারোপ করে নয়, মর্জাদা বজায় রেখে সীমা নির্ধারণ করুন

৩) নিজে প্রতিটিসম্পর্কে সচেতন হোন

৪) আপনার শিশুর ব্যক্তিত্ব ও মেজাজ-মর্জি সম্পর্কে জানুন

৫) শিশুকে নিজের ইচ্ছামতো খেলাধুলা করার জন্য প্রচুর সময় দিন

৬) কখন আপনি কথা বলবেন আর কখন তাকে কথা বলতে দেবেন, সেটা জেনে রাখুন

৭) সন্তানের মা বা বাবা ছাড়াও আপনার যে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় আছে, তা তাকে বুঝতে দিন

৮) মনে রাখবেন, কিছু বলার চেয়ে করে দেখানোটা শিশুর কাছে অনেক বেশি গুরুত্ববহ

৯) মনে রাখবেন, শিশুর মধ্যে ইতিবাচক আচরণ ও সহযোগিতার মনোভাব গড়ে ওঠার জন্য দরকার সঠিক যোগাযোগ, আনন্দময় পরিবেশ এবং সৃষ্টিশীলতা

১০) শিশুর সঠিক আচরণ নয়, সঠিক হৃদয়বৃত্তি গড়ে তোলার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ভাবুন

 

কোটালীপাড়ায় ক্লাস ফোরের স্কুলছাত্রী ধর্ষণ : গ্রেফতার ১

কোূটালীপাড়ায় স্কুলছাত্রী ধর্ষণ : গ্রেফতার ১


নারী সংবাদ

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ইজাবুল মোল্লা (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল কোটালীপাড়া থানা পুলিশ ইজাবুল মোল্লাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।
জানা গেছে, ২ আগস্ট বিকেলে ইউসুফ মোল্লা জটিয়ারবাড়ী গ্রামের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে স্থানীয় ফরিদ মিয়ার মাছের ঘেরপাড়ে ধর্ষণ করে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে ইজাবুল মোল্লা নানাভাবে ওই ছাত্রীর পরিবারকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে। গতকাল ওই ছাত্রীর মা কোটালীপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ ইজাবুল মোল্লাকে গ্রেফতার করে।
কোটালীপাড়া থানার ওসি শেখ লুৎফর রহমান বলেন, ওই স্কুলছাত্রীর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ইজাবুল মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য ওই ছাত্রীকে জেলা সদরে পাঠানো হবে।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

 

“আরাফাত দিবসের দোয়া “

“আরাফাত দিবসের দোয়া “


অন্যান্য


’দুআ অর্থ হলো ডাকা, আল্লাহকে ডাকা। ‘ইস্তিগফার’ অর্থ হলো মাফ চাওয়া। আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া। আর ‘ইনাবত ইলাল্লাহ’ অর্থ আল্লাহর দিকে রুজু হওয়া। দুআ, ইস্তিগফার ও ইনাবাত ইলাল্লাহ মুমিনের প্রত্যাশা। ঈমানদারের সম্বল। মুমিন যখন সুখে থাকেন তখন আল্লাহকে ডাকেন, যখন কষ্ট থাকি তখনও আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়না। সুখ ও শান্তি আল্লাহর তরফ থেকে আসে।

“তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দিব।” (আল-মুমিন:৬০)

আরাফাত অর্থ পরিচয়। হযরত আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়ার পুনঃপরিচয়ের ক্ষেত্র এবং উভয়ের ক্ষমাপ্রাপ্তির স্থান হবার মর্যাদা লাভের কারণেই এ স্থানটি ‘ময়দান-এ আরাফাত’ নামে পুণ্যস্থানরূপে খ্যাত।

হযরত ইবরাহীম (আঃ)সহ বহু নবী রসুল ও তাদের অনুসারীগণ এ ময়দানে এসে আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি করেছেন। আল্লাহর পথের অনুসারী মানুষরা যুগ যুগ ধরে হজ্ব দিবসে নিজেদের গুণাহখাতা ও অপরাধসমূহের কথা স্মরণ করে এখানে আসছেন।

মহানবী (সাঃ) ঘোষণা করেছেন, কোনো লোক যথার্থ অর্থে হজ্ব পালন করার পর নিস্পাপ শিশুতুল্য হয়ে যায়। এমনকি ৪০ দিনের মধ্যে কেউ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে, সাক্ষাৎকারীর ছোট খাটো অপরাধসমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।

মেশকাত। মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ‘‘আরাফাতের দিন আল্লাহ তায়ালা সর্বনিম্ন আসমানে অবতরণ করেন এবং ফিরিস্তাদের নিকট নিজের বান্দাদের ব্যাপারে গর্ব করে বলেন,– দেখো, আমার বান্দাগণ ধূলী ধূসরিত হয়ে চতুর্দিক থেকে আমার কাছে আসছে। আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি যে, তাদের আমি ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর ফিরিস্তারা বলবে, হে পরোয়ারদেগার! উমক ব্যক্তি যে বিলম্বে এসেছে? তখন আল্লাহ বলেন, আমি তাকেও মাফ করে দিলাম।’– (শরহে সুন্নাহ)

রাসুল (সা:) আরাফাতের দিন দু’হাত এমন ভাবে উঠালেন, যেভাবে একজন মিসকিন খাবার প্রার্থনা করে। অতঃপর দোয়া করলেন,

আল্লাহ ব্যতিত আর কোনো উপাস্য নেই। তিনি এক, তার কোনো অংশীদার নেই। রাজত্ব ও সকল প্রশংসা তারই জন্য নিদিষ্ট। সব কল্যাণ তারই হাতে। তিনি সকল বিষয়ে শক্তিমান।

হে আল্লাহ! আমার অন্তরে আলো দান করুন, আমার কর্ণে আলো দিন, আমার দৃষ্টি শক্তিকে জ্যোতির্ময় করে দিন।

হে আল্লাহ! আমার বক্ষকে উন্মুক্ত করে দিন এবং আমার কাজকে সহজ করে দিন।

হে আল্লাহ! আমি আমার অন্তরের কুমন্ত্রনা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই, কর্মের বিভিন্নতা ও কবরের পরিক্ষা থেকেও।

হে আল্লাহ! আমি রাতে সংগঠিত অমঙল ও দিনের আলোয় সংগঠিত অকল্যান থেকেও আশ্রয় চাই। আর ঐসব অকল্যান থেকে আশ্রয় চাই যা বাতাসে বয়ে বেড়ায়, আর ঐসকল অনিষ্ট থেকে, যা কালের দুর্বিপাকে সংগঠিত হয়।

হে আল্লাহ! আপনার জন্যই সমস্ত প্রশংসা। যেমনি ভাবে প্রশংসা আপনি করতে বলেছেন, আমরা যা বলছি তার চেয়েও উত্তম ভাবে।

হে আল্লাহ! আমার নামাজ, আমার কোরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবই আপনার জন্য নিবেদিত। আপনারই নিকট আমার প্রত্যাবর্তন।

হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমার যাবতীয় সম্পদের অধিকর্তা।

হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি আমার কথা শুনছেন, আমার অবস্থা দেখছেন। আমার গোপন প্রকাশ্য সবই আপনি দেখেন। আমার কোনো কাজই আপনার নিকট অস্পষ্ট নয়।

আমি হতভাগা, নিঃস্ব, সাহায্যপ্রার্থী, আশ্রয় প্রার্থী, ভীত সন্ত্রস্ত্র, বঞ্চিত এবং গুনাহ ও অপরাধ স্বীকারকারী।

একজন মিসকীনের মতই আপনার দরবারে প্রার্থনা করছি। অপদস্ত ও অপরাধীর ন্যায় অনুনয় বিনয় করছি। ভীত পযুর্দস্ত ও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির ন্যায় আপনাকে ডাকছি। যার গর্দান আপনার সামনে অবনত। আপনার সন্তুষ্টির জন্যই যার নয়ন অশ্র প্রবাহিত করে। যার দেহ বিনয়াবনত রয়েছে। যার নাসিকা ধুলি মলিন হয়েছে।

হে আল্লাহ…….!!!

আপনার নিকট পেশ করা আমার এ দোয়া প্রত্যাখ্যান করে আমাকে হতভাগা করবেন না। আমার প্রতি দয়ালু ও মেহেরবান হোন।

হে আল্লাহ তুমি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করতে ভালোবাসো। আমাকে ক্ষমা করে দাও।

 

স্মৃতির জোনাকি…

স্মৃতির জোনাকি…


আফরোজা হাসান


আমি মনে হয় এই পৃথিবীর সেই সব সৌভাগ্যবতী মেয়েদের একজন যারা জন্মের আগে থেকেই তাদের মামণিদের কথনসাথী। মামণি যত কথা আমার জন্মের আগে আমার সাথে বলেছেন তত কথা মনে হয় না জন্মের পর থেকে নিয়ে গত ১৭ বছরে বলেছেন। আমাদের পরিবারের প্রতিজন সদস্য সম্পর্কে মোটামুটি সবকিছু জন্মের আগেই মামণি আমাকে বলে ফেলেছিলেন। কিভাবে বলেছিলেন? আমার জন্য লেখা মামণির ডায়েরিতে। এমন একটা করে ডায়েরির মালিক অবশ্য আমরা সব ভাইবোনেরাই। কিন্তু আমার ডায়েরিটা সবচেয়ে স্পেশাল। স্পেশাল হবার অন্যতম দুটা কারণের একটি হচ্ছে আমার ডায়েরিটা মামণিকে পাপা গিফট করেছিলেন। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে আমার ডায়েরিটার একটা নাম আছে। অদ্ভুত সুন্দর একটা নাম। ডায়েরির একদম প্রথমে মামণি লিখেছেন,” অনিশ্চিত অনাগতের স্বপ্ন আঁকি, সাথে নিয়ে অতীত স্মৃতির জোনাকি”।

প্রথম পৃষ্ঠায় মামণি লিখেছেন, প্রিয় মানুষরা সবসময় আমাদের সাথে থাকে না। সাথে থাকে প্রিয় মানুষদের সাথে কাটানো দুঃখ-সুখের মূহুর্তগুলো। প্রিয় জনদের দেয়া বিরহানন্দের প্রহরগুলোর স্পর্শে জীবন গল্পে রচিত আনন্দ-বেদনার কাব্য। মনের আকাশে প্রিয়জনরাই তারার ফুল হয়ে হাসে, শুভ্র মেঘ হয়ে ভাসে, উঁকি দেয় প্রশান্তির এক ফালি চাঁদ রুপে। প্রিয়জন নামক ভেলায় চড়েই জীবনগাঙে ভিড়ে সুখপাখী। প্রতিজন প্রিয় মানুষ আসলে এক একটি জোনাকি। তাদের সাথে কাটানো ক্ষণ আলোতে হাসে, আঁধারে জ্বলজ্বল করে। ঠিক যেন স্মৃতির জোনাকি! স্মৃতির জোনাকি শব্দটা মামণি একাধিকবার লিখেছেন ডায়েরিতে বিভিন্ন কথা প্রসঙ্গে। আমার ডায়েরির নাম তাই আমি রেখেছি স্মৃতির জোনাকি। নামকরণের পেছনে এরচেয়েও বড় কারণ হচ্ছে যখনই কোন কারণে আমার মনে আঁধার ভর করে, মামণির ডায়েরিতে চোখ বুলালেই মনের ভেতরটা আলো আলো হয়ে যায়। সকল প্রতিকূলতাকে দিতে পারি আমি ফাঁকি, সম্মুখে মেলে ধরি যখন মামণির রেখে যাওয়া স্মৃতির জোনাকি। আলহামদুলিল্লাহ।

ডায়েরিতে আমাকে বলা মামণির প্রথম শিক্ষা ছিল, “জানো ছোট্ট বুড়ি এই জগতে সত্যিকার সুখী হতে চাইলে সর্বাগ্রে আত্মসুখ বিসর্জন দিতে হয়। জগতে যারাই আত্মসুখের লিপ্সা ত্যাগ করতে পেরেছে সুখ তাদের মনের গহীনে সবরের অলংকারে নিজ সাম্রাজ্য গড়ে নিয়েছে। আত্মত্যাগী মানুষেরা সেজন্য ই এত স্থির, এত প্রশান্ত থাকতে পারে সর্বাবস্থাতে। আমিও আপ্রাণ চেষ্টা করি নিজের আগে আমার আপনজনদের সুখকে বড় করে দেখার। জানি না কতটুকুন পারি তবে কারো চোখের নদীতে ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ তোলার চাইতে তার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি রূপে ফুটতেই ভালোবাসি। আমার কারণে কেউ ব্যথিত হবে এমনটা কল্পনাও করতে পারিনা। মনেহয় কিছু ব্যথা সয়ে যদি অন্যের মুখে হাসি ফোঁটাতে পারি এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিইবা হতে পারে জীবনে! আমার এমন ভাবনার পেছনে তোমার নানুমণির বিশাল অবদান রয়েছে। তোমার নানুমণি মানে আমার মামণি আমার ছোট্ট জীবনে দেখা সবচেয়ে অনন্যা নারী। মামণিকে দেখেই আমি শিখেছি ভালোবাসার সুতোয় কিভাবে গাঁথতে হয় সম্পর্কের মোতি। হাসতে হাসতে কিভাবে নিজের সুখের বদলে অন্যের তরে খুশি খরিদ করতে হয় সেই শিক্ষাও তোমার নানুমণির কাছ থেকেই পেয়েছি। জানি না আমি আমার মামণির মতো অসাধারণ মা হতে পারবো কিনা! তবে আমার মামণির কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলো তোমাকে উপহার স্বরূপ দিয়ে যেতে চাই। কেননা তুমি এসবের হকদারও।”

এইটুকুন লিখে থামলো নাবিহা। জানালার পর্দা সরিয়ে বাগানে উঁকি দিলো। পুরো বাগানে চোখ বুলিয়ে আকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিতে দেখতে না পেয়ে কিঞ্চিৎ আশাহত হতো। এই সময় পাপা সাধারণত বাগানেই থাকেন। আজকে তাহলে নিয়মের ব্যতিক্রম হলো কেন? নিয়মের ব্যতিক্রম হবার কারণ উদঘাটনের জন্য ডায়েরি বন্ধ করে রুম থেকে বেরিয়ে এলো নাবিহা। মামণির ডায়েরির আলোকে নতুন আরেকটা ডায়েরি লিখতে শুরু করেছে এই তথ্যটা সবার আগে পাপাকে জানাতে চায় নাবিহা। কারণ এমনটা করার পরামর্শ পাপাই তাকে দিয়েছিলেন। একদিন কথায় কথায় পাপাকে বলেছিল মামণির ডায়েরি নিয়ে বসলেই নানান ধরণের ভাবনা এসে উঁকি দেয় মনে। পাপা তখন বলেছিলেন, এটা খুব স্বাভাবিক আমরা যখন কারো কথা শুনি, পড়ি তখন সেই কথাগুলোকে ঘিরে আমাদের মনে নিজস্ব ভাবনার জন্ম হয়। আমি চেষ্টা করি আমার এমন ভাবনাগুলোকে টুকে রাখতে। তুমিও চাইলে টুকে রাখতে পারো। পাপার কথা শোনার পর নাবিহা তার নিজস্ব ভাবনাগুলোকে লিখে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ডায়েরির প্রারম্ভটা প্রশান্তিকর হয়েছে কিনা সেটা একবার পাপাকে দিয়ে যাচাই করে নিতে চায় সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার আগে।

 

স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর…৪

স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর…৪


আফরোজা হাসান


নীলাকাশের বুকে ডানা মেলা পাখী দেখে নিজে পাখী হবার বায়না ধরে যেই শিশুরা তাদের মতই একজন ছিলাম আমি। পাখী দেখলেই বাবা আর মামণির কাছে গিয়ে ঘ্যানঘ্যান শুরু করতাম, আমাকে পাখী বানিয়ে দাও, আমাকে ডানা লাগিয়ে দাও। এই কথা সেই কথা বলে আমাকে বুঝ দিয়ে রাখতেন বাবা ও মামণি। আমার বয়স যখন ছয় তখন বড়আব্বু বেড়াতে এসেছিলেন আমাদের বাড়িতে। একদিন বিকেলে পাখী দেখে আবার কান্না শুরু করেছিলাম আমি। মামণির কাছ থেকে কান্নার রহস্য জেনে বড়আব্বু আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বাগানে গিয়ে বসলেন। আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, তুমি পাখী হতে চাও? ফোঁপাতে ফোঁপাতে জবাব দিয়েছিলাম, হু, কিন্তু কেউ আমাকে ডানা কিনে দেয় না। বড়আব্বু তখন হেসে বলেছিলেন, কেউ কেন তোমাকে ডানা কিনে দেয় না জানো? কারণ তোমার তো ডানা আছেই সেজন্য। আমি ভালো মত নিজেকে আরেকবার দেখে বললাম, কোথায় আমার ডানা? বড়আব্বু বলেছিলেন, তোমার ডানা আছে কিন্তু অনেক ছোট ছোট তাই দেখতে পারছো না। তুমি কি চাও তোমার ডানারা বড় হোক? মাথা দুলাতে দুলাতে বললাম, হু চাই। বড়আব্বু বললেন, তাহলে তোমাকে বেশি বেশি বই পড়তে হবে। তুমি যত বই পড়বে তোমার ডানারা তত দ্রুত বড় হবে। সেদিনই আমি জীবনে প্রথমবারের মত লাইব্রেরীতে গিয়েছিলাম। বড় আব্বু লাইব্রেরীতে নিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, যাও তোমার যে ক’টা ইচ্ছে বই নাও। দু’হাতে যতগুলো সম্ভব হয়েছিল তুলে নিয়েছিলাম বই। শিশুদের বই ছিল না একটাও তার মধ্যে। কিন্তু বড় আব্বু আমার উড়ন্ত মনে ছুটে চলা প্রথম কদমকে ব্যহত করতে চাননি। কিনে দিয়েছিলেন সবগুলো বই।

যেহেতু বুঝতাম না তাই কয়েকদিন সাথে সাথে রাখার পর একসময় ভুলে গেলাম প্রথম কেনা বইগুলোর কথা। বহু যতনে সেই বইগুলোকে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন বড়আব্বু। যখন ক্লাস ফাইভ থেকে সিক্সে উঠেছিলাম সেই বইগুলোকে খুব সুন্দর করে প্যাকেট করে উপহার দিয়েছিলেন আমাকে। সাথে দিয়েছিলেন আমার জীবনের প্রথম বই কেনার রত্নতুল্য স্মৃতিখানি। বড়আব্বুর কাছে থেকেই প্রথম বই উপহার পেয়েছিলাম। কমিকস আর রূপকথার জগত থেকে বড়আব্বুর হাত ধরেই প্রথম কদম রেখেছিলাম জ্ঞানোরাজ্যে। বড়আব্বু যখন আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসতেন কিংবা আমরা যখন বেড়াতে যেতাম পুরোটা সময় উনার সাথেই কাটতো আমার। এখন জানি ইতিহাস প্রিয় মানুষ ছিলেন বড়আব্বু। আর ইতিহাসের কথাই পড়ে শোনাতেন আমাকে। কিছু না বুঝলেও ডানা বড় করার জন্য চুপটি করে শুনতাম উনার সবকথা। এভাবেই যে কোন ব্যাপারে খুব মনোযোগী হবার বীজটিও বড়আব্বুই বুনে দিয়েছিলেন আমার কচি মনে। ডানার আকর্ষণে সেই যে ছুটে গিয়েছিলাম বইয়ের ভুবনে। এরপর আর কোনদিন ফিরে আসা হয়নি। এখনো সন্ধান চলছে ডানার। সময়ের বিবর্তনে ডানাতে পালকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, উড়ার ইচ্ছে আরো জোড়াল হয়েছে, মনটা বাঁধনহারা হয়েছে কিন্তু এখনো ডানাতে উড়ার শক্তি সঞ্চারিত হয়নি। মৌমাছি যেমন ফুলে ফুলে ঘুরে বিন্দু বিন্দু মধু সংগ্রহ করে। আমিও তেমনি বিভিন্ন বই থেকে করে চলছি একটু একটু শক্তি সঞ্চার। জানি না কবে আমার বাঁধনহারা মন প্রসারিত ডানা মেলে উড়তে শিখবে।

চুপচাপ বসে মুগ্ধ মনে স্বাতির কথা শুনছিল আরভ। স্বাতির কাছ থেকে কিছু জানতে হলে প্রশ্ন করে করে সেটা বের করতে হয়। সেটা গত এক সপ্তাহে বেশ ভালো মতোই বোঝা হয়ে গিয়েছে আরভের। অন্যে কেউ যাই বলবে চুপ করে শুনবে কিন্তু কখনোই নিজ থেকে কিছু জানতে চায় না। আবার নিজের সম্পর্কে কোন কথা বলতেও আগ্রহী নয়। তবে প্রশ্ন করলে জবাব দেয়। তাই প্রশ্ন করে করেই আরভকে জানতে হচ্ছে তার নববধূকে। এমনতর বইয়ের ভুবনে ডুবে থাকা কন্যা হবার রহস্য কি জানতে চাইলে নিজের ছোটবেলার কথাগুলো বললো স্বাতি। গত এক সপ্তাহ ধরে একটা প্রশ্ন করতে চাইছে আরভ স্বাতিকে। কিন্তু জিজ্ঞেস করবে কি করবে না সেটা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছে। আরভের খুব জানতে ইচ্ছে করে স্বাতির কি কখনো তাকে জীবনসাথীর জায়গায় কল্পনা করেছে?! যতবারই ভেবেছে জিজ্ঞেস করবে লজ্জা ও সঙ্কোচ ঘিরে ধরেছে মনকে। স্বাতি যদি তার ইনটেনশন না বোঝে? আরভের সবসময় মনেহয় স্বামী-স্ত্রীর কখনোই এমন কোন আচরণ বা কথা বলা উচিত নয়, যারফলে একে অন্যের প্রতি রেসপেক্টে প্রভাব পড়তে পারে। বাবা-মার চমৎকার দাম্পত্য জীবন দেখে বুঝেছে স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনে রেসপেক্ট সবচেয়ে শক্তিশালী স্তম্ভগুলোর একটি। যেটা নড়বড়ে হয়ে যাওয়া মানে সামান্য বাতাসেই দুলে ওঠা বন্ধনটি।

তোমাকে এত চিন্তিত দেখেচ্ছে কেন? মনেহচ্ছে খুব সিরিয়াস কিছু ভাবছো?

স্বাতির প্রশ্ন শুনে আরভ হেসে বলল, চেহারা দেখেই এতকিছু বুঝে ফেলেছো? শেষপর্যন্ত কি ফেস রিডার বিয়ে করে ফেললাম নাকি? অতি চিন্তার বিষয়।

স্বাতি হেসে বলল, চিন্তার বিষয় কেন? অনেক গোপন তথ্যাদির খাজানা লুকায়িত আছে নাকি আপনার মনের মাঝে?

হাত বাড়িয়ে স্বাতিকে আরেকটু কাছে টেনে নিলো আরভ। হেসে বলল, তুমি কি জানো তোমার শব্দরা অদ্ভুত সুন্দর?

চলবে..

পর্ব-৩

 

দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে

দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে


ফাতিমা মারিয়াম


এক
-আসসালামু আলাইকুম
-ওয়া আলাইকুম আসসালাম…কেমন আছ?
-আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি…আপনি কেমন আছেন?
-আমিও ভালো…এতদিনেও তুমি আমাকে আপনি করে বলছ? এখন যদি অভ্যাস না কর তবে পরেও তো পারবে না!
-যখন সময় হবে তখন দেখা যাবে। নাস্তা খেয়েছেন?
-হুঁ খেয়েছি…তুমি খেয়েছ?
-জি…আজ সকালে নামাজ পড়েছেন?
-পড়েছি…তবে সময়ের পরে।
-কেন? আজও উঠতে পারেন নি?
-না, তুমি এক কাজ করতো… প্রতিদিন ভোরে নামাজের টাইমে আমাকে জাগিয়ে দেবে।
-তারচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি আপনার মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রাখেন।
– তা হয় কিন্তু আমি চাই তুমিই আমাকে ডেকে দেবে। তোমার কথা শুনেই দিনটা শুরু করতে চাই। তাহলে দিনটা ভালো যাবে।
-এটা কুসংস্কার তা জানেন?
-জানি…কিন্তু আগামীকাল থেকে নামাজের সময় তুমিই আমার ঘুম ভাঙাবে।
-আচ্ছা এখন রাখি। আম্মু ডাকছে…
-আচ্ছা রাখছি…মনে থাকে যেন।

দুই
জেবা মায়ের রুমে এসে দেখে তার মা আলমারি খুলে একগাদা কাপড়চোপড় নামিয়ে নিয়েছেন। এগুলো এখন মা মেয়ে দুজনে মিলে গোছাবে। কাপড় ভাঁজ করতে করতে আসমা জেবাকে জিজ্ঞাসা করে- জাহিদ আজ রাতে আসিফকে আসতে বলেছে।

-কেন?

– এমনিই…অনেকদিন ছেলেটা আসে না। জাহিদ সকালে অফিসে যাওয়ার সময় আমাকে আর রূপাকে বলে গেল রাতের জন্য রান্নার ব্যবস্থা করতে।

-আমার সাথে তো কিছুক্ষণ আগেই আসিফের কথা হল! আমাকে তো এই বিষয়ে কিছুই বলল না!

– হয়ত মনে ছিল না।

মা মেয়ে দুজনেই কাপড় গুছানো শেষ করে বসে বসে গল্প করছে। এমন সময় জেবার ভাবী রূপা শাশুড়ির রুমে আসল। – মা আজ দুপুরে আর তেমন কিছু করছি না।কালকের যা আছে তা দিয়েই আমাদের চলবে। রাতের জন্য এখন থেকেই কিছু কাজ গুছিয়ে রাখি।

-রূপা, তাহলে তুমি যতটুকু পার করতে থাক আমি জাওয়াদকে স্কুল থেকে নিয়ে আসি। এসে সবাই মিলে বাকী কাজ শেষ করে ফেলব। জেবা তুইও রূপাকে হেল্প কর।

– তোমার আদরের বৌমার কোন কষ্ট হবে না আম্মু। আমি তার পাশেই থাকব। চিন্তা কোর না।

আসমা নাতিকে স্কুল থেকে আনতে বের হয়ে গেলেন।

মা বেরিয়ে যেতেই জেবা বলল-ভাবী আসিফকে আজ দাওয়াত দেয়ার কি দরকার ছিল? আমার কেমন যেন অস্বস্তি লাগে।

-অস্বস্তির কি আছে? তুই তো আর ওর সামনে যাবি না। বিয়ের এখনো দুই/তিন মাস বাকী। মাঝেমধ্যে তো ও আসবেই। এটাই স্বাভাবিক।

-ওর সাথে প্রতিদিন কথা বলতেও আমার ভালো লাগে না।

-তোর ভাইয়াই তো তোকে বলেছে ওর সাথে মাঝেমধ্যে কথা বলতে। এখানে তোর খারাপ লাগার কি আছে? এত খুঁতখুঁতে হলে এই যুগে চলা যায় না। আমি নিজেও এইভাবে কথা বলা পছন্দ করি না। কিন্তু আসিফ তোর সাথে কিছুটা ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য, তোকে কিছুটা বোঝার জন্য রিয়াদ ভাইকে বলে তোর ভাইয়াকে রাজি করিয়েছে। মা আর আমি আপত্তি করায় তোর ভাইয়া বলল বর্তমানে এসব বিষয় কোন ব্যাপার না। তাই আমরাও আর কিছু বলিনি। এখন তো মাও আসিফ কে বেশ পছন্দ করেন। এসব কথা রাখ তো এখন আয় আমরা মা আসার আগেই কিছু কাজ গুছিয়ে ফেলি।

তিন
রূপাকে কিছু কাজ গুছিয়ে দিয়ে রূপা নিজের রুমে চলে আসলো। আসলে ভাবীর কাছে স্বীকার না করলেও সে প্রতিদিন আসিফের ফোনের অপেক্ষায় থাকে।আগে ওর মোবাইল ছিল না। এঙ্গেজমেন্ট এর পরে ভাইয়া ওকে মোবাইল কিনে দিয়েছে। যাতে করে সে তার রুমে থেকেই আসিফের সাথে কথা বলতে পারে। ল্যান্ডফোনের সেট মায়ের রুমে। তাই জেবার সুবিধার জন্যই ভাইয়া এই ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

প্রথম প্রথম একটু কেমন জানি লাগলেও আসিফের সাথে গল্প করতে এখন তার কাছেও বেশ ভালো লাগে। ভাইয়ার বন্ধু রিয়াদ ভাই এই বিয়ের ঘটক। আসিফ উনার প্রতিবেশী। ভালো ছেলে, ভালো চাকুরী করে, পরিবার বেশ ভালো সব কিছু মনের মত হওয়াতে জাহিদ মা সহ সবার সাথে আলোচনা করেই পাকা কথা দেয়। এখন শুধুমাত্র এঙ্গেজমেন্ট হয়েছে। বিয়ে হবে আসিফের বোন এবং দুলাভাই দেশে আসার পর। উনারা প্রবাসী। তিন চার বছর পরপর দেশে আসেন। এবার তারা যে সময়ে আসবে সেই সময়ে বিয়ে হবে।

বিয়ের ডেট এখনো ঠিক হয় নি। আসিফের বোন আসার পরপরই ডেট হবে। তারপর বিয়ে। দুই পরিবারেই বিয়ে উপলক্ষে প্রস্তুতি চলছে। আসিফ প্রায় প্রতিদিনই ফোন করে। তেমন দরকারি কোন কথা না। কথায় কথায় তাদের সময় বেশ ভালোই কাটে। হুট করেই আসিফ ফোন করে বলবে- আগামীকাল আমার রুমের জন্য ম্যাচিং করে পর্দা আর বিছানার চাদর কিনব। তোমার কি রঙ পছন্দ বল তো! একসেট কিনব তোমার পছন্দ মত আরেক সেট কিনব আমার পছন্দ মত। অথবা আবার কোনদিন বলবে- তুমি কি জামদানী শাড়ি পছন্দ কর? আমি আজ খুব সুন্দর একটা জামদানী কিনে এনেছি। কি কালার সেটা বলব না।তবে এটুকু বলতে পারি তোমার পছন্দ না হয়েই যাবেনা। এভাবে সে আরো কিছু শাড়ি থ্রি পিস কিনে রেখেছে। যখনই যা কিনবে তাই জেবাকে জানাবে। এসব শুনতে জেবার খারাপ লাগে না।

চার
প্রায় দেড় মাস পরের কথা।

আসিফের বোন মিনু ও দুলাভাই মইন বাচ্চাদের নিয়ে দেশে এসেছেন। এসেই তারা জেবাকে দেখতে এসেছেন। মিনু যতক্ষণ এই বাসায় ছিল জেবা, রূপা ও আসমার সাথে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। এমনিতেও মিনু বেশ হাসিখুশি স্বভাবের মেয়ে। পরিচিত অপরিচিত সবার সাথেই গল্প করতে বেশ পছন্দ করে। তার স্বভাবসুলভ হাসি আনন্দ দিয়ে সে জেবার পরিবারের সবার সাথে কথা বলে গেছে।

কিন্তু বাসায় গিয়ে সে যা বলল তা শুনে আসিফ এবং তার বাবা মা স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। সে সাফ জানিয়ে দিয়েছে জেবাকে তার পছন্দ হয়নি। জেবার গায়ের রং পুরোপুরি ফর্সা নয় আর হাইটও কম।

আসিফ আমতা আমতা করে বলল- আপু তুমি এসব কি বলছ? সব কিছু ঠিকঠাক। দুই পরিবারে প্রস্তুতিও নেয়া হয়ে গেছে। এখন কিভাবে ওদের না বলা যায়?

-আচ্ছা আমি তোকে একটি মেয়ে দেখাচ্ছি। যদি এই মেয়ে তোর পছন্দ না হয় তবে জেবাকেই আমরা বউ করে আনব। এই মেয়েটাকে আমি কয়েকদিন আগে দেখেছি। যদি আগে দেখতাম তবে জেবার সাথে তোর এঙ্গেজমেন্ট করার প্রশ্নই আসত না। তোর দুলাভাইয়ের এক বন্ধুর মামা তার স্ত্রী এবং ছেলে মেয়ে নিয়ে কিছুদিন আগে আমাদের ওখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন। আমাদের বাসাতেই উঠেছিল। তখন উনার মেয়ে উর্মিকে দেখে আমাদের খুব পছন্দ হয়। দেখতে যেমন সুন্দর আলাপ ব্যবহারও তেমন ভালো। আমি মেয়ের মা বাবাকে হালকা ভাবে কিছু বলে রেখেছি।তারা আমাকে বলেছে আমরা দেশে এসে যেন তোকে নিয়ে তাদের বাসায় যাই। মা আর তোকে নিয়ে আগামীকাল আমি ওখানে যাব। তারপর ওকে দেখে সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্ত নেব।

 পরদিন আসিফ মিনু আর মায়ের সাথে পাত্রী দেখতে গেল। মেয়ে দেখে আসিফ ও তার মা মুগ্ধ! এত সুন্দর মেয়ে! বাসায় এসে সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিলো উর্মিকেই বাড়ির বউ করে আনবে।

কথার ফাঁকে আসিফ একবার মিনুকে বলল – কিন্তু আপু জেবা বা জেবার পরিবার আমাদের কি মনে করবে? এতদিন ধরে………

-আরে থাম তো! এঙ্গেজমেন্ট মানেই কি বিয়ে না কী? এখনো আমরা বিয়ের ডেটই ঠিক করিনি। এখন তো মানা করে দিতেই পারব। আর তুই এখন জেবার সাথে কোন কথা বলবি না। ও ফোন করলেও রিসিভ করবি না।

পাঁচ
সেদিন মিনু এসে দেখা করে যাবার পর থেকে আসিফের বাসার কেউই ফোন করছে না। জেবার বাসার সবাই ভাবল ওরা হয়ত ব্যস্ত! সামনে অনুষ্ঠান আর তাছাড়াও মিনু এবং তার বর তাদের বাচ্চাদের নিয়ে এতদিন পরে এসেছে। ওদেরকে নিয়েও তো সবাই ব্যস্ত। তিন চার দিন চলে গেল।

আরো দুইদিন পরে জেবা আসিফের নাম্বারে কল দিল। আসিফ এই কদিন একবারও জেবার সাথে কথা বলে নি। জেবা বেশ চিন্তিত। যত ব্যস্তই থাকুক জেবার সাথে আসিফ কথা না বলে থাকতেই পারে না। রিং হচ্ছে না, মোবাইল বন্ধ। জেবা কিছুক্ষণ পর আবার কল দিল। এখনো মোবাইল বন্ধ।

সন্ধ্যার পরও আসিফকে পেল না। আসিফের কোন সমস্যা হয়েছে কি না জেবা বুঝতে পারছে না। তার ভীষণ দুশ্চিন্তা হচ্ছে। সে রূপাকে বিষয়টা জানালো। রূপা গিয়ে শাশুড়িকে বলল মা আসিফের বাসায় একটু ফোন করে দেখুন তো ওদের কি হয়েছে? আসিফের মোবাইল বন্ধ কেন? কোন সমস্যা হয়েছে কি না একটু জানা দরকার।

আসমা আসিফের বাসার নাম্বারে কল করলেন। রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছেনা। কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করতেই ওপাশ থেকে ঐ বাসার বুয়া ফোন রিসিভ করল। বুয়া আসমাকে চিনতে পারল না। ভাবল হয়ত আসিফদের কোন আত্মীয়। তাই সে আসমাকে জানালো যে মিনু দেশে এসে আসিফের জন্য অন্য মেয়ে দেখিয়েছে। সেই মেয়েকে বাসার সবাই পছন্দ করেছে এবং আজ ওখানে সবাই গেছে ডেট ঠিক করার জন্য। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বিয়ে হয়ে যাবে।

আসমা রিসিভার নামিয়ে রেখে হতভম্ব হয়ে বসে রইলেন। মানুষ এভাবে প্রতারণা করতে পারে? এইজন্যই আসিফ তার মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে? আসমা বুঝতে পারছেন এখন তাকে শক্ত থাকতে হবে। তিনি যদি ভেঙ্গে পড়েন তবে জেবাকে কে সাহস যোগাবে? মেয়েটাকে আসিফের সাথে কথা বলতে, যোগাযোগ রাখতে পরিবারের সবাই উৎসাহ দিয়েছিল। সেই সুযোগে আসিফ ওর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করত। তিনি যদি এই কথা বলা সাপোর্ট না করতেন তবে আজ জেবাকে এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে যেতে হত না। উনি নিজেকেই দোষী মনে করছেন।

আসমা রুপা আর জাহিদকে উনার রুমে ডেকে পাঠালেন। ওরা আসলে তিনি পুরো ঘটনা খুলে বললেন। সব শুনে রুপা হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। আসমা খুব শান্ত গলায় বলল- কান্না করনা রুপা। আমাদের সবাইকে শক্ত থাকতে হবে। তা না হলে জেবা ঠিক থাকবে কিভাবে?

জাহিদ মনে মনে নিজেকেই এই ঘটনার জন্য দায়ী করছে। মুখ ফুটে মা বা রুপার সামনে কিছু বলতে তার সাহস হচ্ছেনা।

এদিকে আসিফের বন্ধ মোবাইলে জেবা বারবার কল দিয়েই যাচ্ছে… মনে মনে আশা এবার হয়ত রিং হবে, সে শুনতে পাবে আসিফের গলা!

[এই গল্পের পটভূমি বেশ আগের। তখন বাংলাদেশের মানুষ মাত্র মোবাইল ফোন ব্যবহার করা শুরু করেছে। তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না। তাই আসিফ তার মোবাইলের সিম বন্ধ রেখেই জেবার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলতে পেরেছিল।]

 

শিশু শরণার্থী থেকে দেশের প্রেসিডেন্ট

শিশু শরণার্থী থেকে দেশের প্রেসিডেন্ট


নারী সংবাদ


যুদ্ধের মধ্যে থাকা লাটভিয়া থেকে পালিয়ে গিয়েছিল ছোট্ট মেয়েটি। এরপর ৫০ বছর তাকে নির্বাসনে কাটাতে হয়। তবে দেশে ফেরার পরে ভাইরা ভাইক-ফ্রাইবার্গা হলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। শুধু তাই নয়, তিনি হলেন সাবেক সোভিয়েত ব্লকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম নারী প্রেসিডেন্টও।

তিনি বলেন, ”আমার বাবা-মা কখনোই আমাকে ভুলতে দেননি যে, আমি একজন লাটভিয়ান।”

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাল্টিক সাগরের তীরের এই দেশটিতে অভিযান চালায় নাৎসি জার্মানি এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন। সেই ১৯৪৪ সালের টুকরো টুকরো স্মৃতি মনে আছে তার, যখন রাশিয়ার কম্যুনিস্ট রেড আর্মি লাটভিয়ায় ঢুকে পড়ে।

”তাদের লাল পতাকা আর মুষ্টিবদ্ধ হাত দেখে আমি খুবই অভিভূত হয়ে ছিলাম। একপর্যায়ে তারা যখন মার্চ করে যাচ্ছে, আমিও আমার মুষ্টিবদ্ধ হাত তাদের উদ্দেশ্যে নেড়ে বললাম ‘হুররা”’, তিনি বলেন।

”একসময় আমি তাকিয়ে দেখলাম একটি ল্যাম্পপোস্টের আড়ালে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমার মা, পুরোপুরি বিধ্বস্ত লাগছিল তাকে। তার গাল বেয়ে চোখের পানি পড়তে শুরু করেছিল। তিনি আমাকে বলছেন, ”এরকম করো না। আজ লাটভিয়ার জন্য খুব দুঃখের একটা দিন।”

নিষ্ঠুর শিক্ষা

যখন ভাইরার বয়স সাত বছর, তখন তারা প্রথমে লাটভিয়া ছেড়ে বিধ্বস্ত জার্মানিতে যায়। এরপর তারা ফরাসি নিয়ন্ত্রিত মরক্কোয় যায়, তারপরে কানাডায়। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সে আর লাটভিয়ায় ফিরতে পারেনি। তবে ৬০ বছর বয়সে তিনি যখন ফিরলেন, তার আট মাসের মাথায় তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট হন।

ভাইরা স্মৃতিচারণ করেন, ১৯৪৪ সালের দিকে তারা বাবা বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস শুনতেন, বোঝার চেষ্টা করতেন যে যুদ্ধ কোন দিকে গড়াচ্ছে। পরের বছর তাদের পরিবার লাটভিয়া ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

”১৯৪৫ সালের নববর্ষের রাতে আমরা একটি জাহাজে উঠে বসলাম। এটা ছিল সৈন্যদের পারাপার করার জাহাজ, সেই সঙ্গে অস্ত্রপাতিও থাকতো। যদি কোন টর্পেডো জাহাজটিতে আঘাত করতো, তাহলে পুরো জাহাজটি বিস্ফোরিত হয়ে যেতো।”

”তারা বেশ কিছু বেসামরিক লোকজনকেও জাহাজে নিতো, যারা কম্যুনিজম থেকে যেকোনো মূল্যে পালাতে চাইতো। জাহাজে থাকা লাটভিয়ানরা ডেকে জড়ো হয়ে লাটভিয়ার জাতীয় সঙ্গীত গাইতো।”

জার্মানি জুড়ে যেসব শরণার্থী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছিল, সেখানে এসে পৌঁছায় পরিবারটি। সেখানকার পরিবেশ ছিল খুবই দুর্দশাজনক। তাঁর ১০ মাস বয়সী শিশু বোনটি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। একবছরের মধ্যে ভাইরার আরেকটি ভাই আসে পৃথিবীতে। তবে সেই আনন্দের ঘটনা ছাপিয়ে জীবনের একটি কর্কশ শিক্ষা পান সেদিন।

”আমার মায়ের সঙ্গে সেই রুমে আঠারো বছরের এক তরুণী একটি মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু সে শিশুটিকে নিতে চায়নি। এমনকি সে তার কোন নামও রাখতে চায়নি, শিশুটির কোন ব্যাপারেই সে আর জড়াতে চায়নি, কারণ রাশিয়ার সৈন্যদের গণ ধর্ষণের ফলে ওই শিশুটির জন্ম হয়েছিল।”

”প্রত্যেকবার যখন সেবিকারা অসহায় শিশুটিকে তার কাছে নিয়ে আসছিল, সে তার চেহারা দেয়ালের দিকে নিয়ে কাঁদছিল আর কোন কথা বলতেও অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল। সেবিকারা শিশুটির নাম দেয় মারা, আমার বোনের নামও ছিল তাই।”

তিনি বলছেন, ”আমার মনে হলো, এটা সত্যিই অন্যায়। এখানে একজন মারার জন্ম হয়েছে যাকে এই পৃথিবীতে কেউ চায় না। আর আমাদের মারাকে আমরা এতো বেশি চাইতাম, কিন্তু তাকে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়া হয়েছে। আমি বুঝতে শুরু করলাম, জীবন আসলেই খুবই রহস্যময় এবং পুরোপুরি ন্যায্য নয়।”

বাল্যবিয়ে ভীতি

১১ বছর বয়সের সময় ভাইরাকে আবার স্থানান্তরিত হতে হয়। এবার জার্মানি থেকে ফরাসি নিয়ন্ত্রিত মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কায়।

”মধ্যরাতে ট্রাক থেকে আমাদের যেখানে নামিয়ে দেয়া হলো, সেটা ছিল ছোট একটি অস্থায়ী গ্রাম। কিন্তু সেটা ছিল যেন পুরো বিশ্বের একটা সংক্ষিপ্ত রূপ। সেখানে ফরাসি লোকজন ছিল, বিশ্বের সবদেশের মানুষ ছিল। গৃহযুদ্ধের সময় থেকে থাকা স্প্যানিশ লোকজন, ইটালিয়ান এবং রাশিয়ান, সব ধরণের মানুষ ছিল।”

তার পিতার একজন সহকর্মী বললেন, তিনি ভাইরাকে বিয়ে করতে চান, যদিও ভাইরা তখন শিশু।

”বাবা একদিন বাসায় ফিরে বললেন, সে আমাকে ১৫ হাজার ফ্রাঙ্ক যৌতুক দিকে চায়। সে আমাকে প্রথম দুইটা গাধা আর গরুও দিতে চেয়েছে। কিন্তু বাবা তাকে বলেছেন, সে একটি শিশু এবং তার স্কুলে যেতে হবে। তখন ওই ব্যক্তি বলছেন, ঠিক আছে, তাকে আমরা স্কুলে যেতে দেবো।”

তার বাবা-মা দুজনে হেসে উঠলেন। কিন্তু ভাইরা সতর্ক হয়ে উঠলেন।

লিঙ্গ বৈষম্যের অধ্যাপক

এর কিছুদিন পরে ভাইরার পরিবার কানাডায় চলে যায়। ষোল বছর বয়সে ভাইরা একটি ব্যাংকে চাকরি পেলেন। সেই সঙ্গে তিনি নাইট স্কুলে যেতে শুরু করলেন। এরপরে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টোতে পড়ার সুযোগ পেলেন।

সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হলো এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে, যাকে পরবর্তীতে তিনি বিয়ে করেন। ইমান্টস ফ্রাইবার্গা লাটভিয়া থেকে পালিয়ে আসা আরেকজন। মনোবিজ্ঞানে পড়াশোনা করে ১৯৬৫ সালে পিএইচডি করতে শুরু করেন ভাইরা। কিন্তু ভাইরা বলেন, তার বেছে নেয়া বিষয়টি ছিল যেন ভাগ্যের অঙ্গুলি হেলনে নির্ধারিত একটি বিষয়।

”সম্ভাব্য বিষয়গুলোর একটি তালিকা ছিল রেজিস্টারের কাছে। আমি সেটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে দেখলাম এবং একটি লম্বা শব্দ দেখতে পেলাম যেটা শুরু হয়েছে পি দিয়ে এবং শেষ হয়েছে ওয়াই দিয়ে। আমি বললাম, এই বিষয়টি আমি নিতে চাই।”

কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি তিনি বুঝতে পারলেন, নারীদের এখনো পুরোপুরি স্বাগত জানানো হয় না।

”একদিন আমাদের অধ্যাপক একটি সেমিনারে বললেন, আমাদের এখানে তিনজন বিবাহিত নারী রয়েছেন যারা পিএইচডি করছেন। এটা আসলে পুরোপুরি অপচয়, কারণ যারা বিয়ে করবে, সন্তান জন্ম দেবে তারা এমন একটি জায়গা দখল করে আছে যেটি একটি ছেলে পেতে পারতো যে হয়তো সত্যিকারের একজন বিজ্ঞানী হতে পারতো। ওই সেমিনারে থাকা আমরা সব মেয়েরাই সারা জীবন ধরে সেই কথাগুলো মনে রেখেছি।”

তিনি বলেন, তারা ওই লিঙ্গ বৈষম্য করা অধ্যাপককে দেখিয়ে দিতে চেয়েছেন যে, তার পছন্দের ছেলেদের তুলনায় নারীরা আরো ভালো কিছু করতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব মন্ট্রিয়লে ৩৫ বছর কাজ করেছেন ভাইরা। তিনি পাঁচটি ভাষায় কথা বলতে পারেন এবং ১০টি বই লিখেছেন।

বাড়িতে প্রত্যাবর্তন…চূড়ান্তভাবে

১৯৯৮ সালে যখন ভাইরার বয়স ৬০ বছর, তিনি প্রফেসর এমেরিটাস নির্বাচিত হলেন এবং অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু একদিন বিকালে তার টেলিফোন বেজে উঠলো। ফোনের অপর প্রান্তে ছিলেন লাটভিয়ার প্রধানমন্ত্রী। লাটভিয়ার একটি নতুন প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে কাজ করার প্রস্তাব পেলেন ভাইরা।

তাকে বলা হলো, ”তারা বিদেশে থাকা এমন কাউকে খুঁজছে, যিনি অনেকগুলো ভাষায় কথা বলতে পারেন, পশ্চিমা মানসিকতা বুঝতে পারেন এবং সেই সঙ্গে লাটভিয়ার সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে।”

কিন্তু তখনই যেন দেখতে পেলেন যে, তিনি লাটভিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে গেছেন।

দেশে ফেরার আটমাস পরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য কানাডিয়ান পাসপোর্ট ত্যাগ করলেন ভাইরা। তিনি নির্বাচিত হলেন লাটভিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসাবে।

একপর্যায়ে তার জনপ্রিয়তা গিয়ে ঠেকেছিল ৮৫ শতাংশে।

”আমি ছিলাম এমন কেউ, যিনি অর্থ রোজগার বা অন্য কিছুর জন্য নয়, বরং শুধুমাত্র দায়িত্ব পালন করার জন্য। এই পদে এসেছিল। তখন অনেক সংবাদ মাধ্যম আগ্রহের সঙ্গে সমালোচনা করার চেষ্টা করছিল যে, আমি হচ্ছি খরুচে স্বভাবের, পশ্চিমে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেছি। কিন্তু এগুলো পুরোপুরি বানানো” তিনি বলেন।

”আমি আবিষ্কার করলাম, আপনি যদি গণমাধ্যমকে বিশ্বাস করতে না পারেন, তাহলে আপনাকে জনগণের কাছে সরাসরি গিয়ে কথা বলতে হবে।”

২০০৪ সালে নেটো আর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে লাটভিয়ার যোগদানের পেছনে তিনি মূল ভূমিকা রেখেছেন।

ইস্তানবুলে নেটো সম্মেলনের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সঙ্গে ভাইরা ”নারী হওয়ার অনেক সুবিধা আছে। আমার মনে পড়ছে, ইস্তানবুলে নেটো সম্মেলনের সময় প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ আমার বাহু ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন, কারণ আমি হাই হিল পড়েছিলাম আর মেঝে ছিল পিচ্ছিল, আমরা আস্তে আস্তে হাঁটছিলাম। আমি সাধ্যমত সবকিছুই করেছিলাম। তাকে বলেছিলাম নেটোর বিস্তৃতি করা কতটা দরকার এবং লাটভিয়া যেন সেখানে থাকে।”

”আমরা আস্তে আস্তে হাঁটছিলাম এবং সময়টা উপভোগ করছিলাম এবং তার কানে লাটভিয়ার প্রপাগাণ্ডা দেয়ার জন্য সবকিছুই করছিলাম। আমার মনে হয়নি এতে তার খারাপ লেগেছে’,’ তিনি বলছেন।

ভাইরার দ্বিতীয় দফার মেয়াদ শেষ হয় ২০০৭ সালে, তার ৭০তম জন্মদিনের কয়েকমাস আগে।

তিনি ক্লাব ডি মাদ্রিদ নামের একটি সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যেটি সাবেক নেতাদের নিয়ে গঠিত। এই সংগঠন গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব এবং গর্ভন্যান্স নিয়ে কাজ করে। নারীদের ক্ষমতায়ন নিয়েও তার বিশেষ নজর রয়েছে। সেই অধ্যাপকের মন্তব্য এখনো তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তিনি জানেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার এখনো অনেক বাকি আছে। সূত্র : বিবিসি।

 

জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ

জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ


স্বাস্থ্য কথা


চার সন্তানের জননী রাফিজা খানমের বয়স এখন ছত্রিশ বছর । বাবা-মা আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় দশম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় বিয়ে হয় প্রবাসী আব্দুস সাত্তারের সাথে। বিয়ের মাত্র দুই মাসের মাথায় অন্তঃসত্তা হয়ে পড়ে রাফিজা। আর তাই পরের মেট্রিক পরীক্ষা দেয়া হয়নি রাফিজার। কিন্তু স্বামী আশ্বস্ত করে বাচ্চা হওয়ার পরে সে আবার পড়ালেখা করতে পারবে। এভাবেই এক সময় মাস্টার্স শেষ করে নীলফামারীর স্থানীয় এক উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরীও পেয়ে যান রাফিজা। স্বামী প্রবাসে থাকলেও চার সন্তান নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল রাফিজার। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছে তার। প্রায়ই সময় তলপেটে যন্ত্রণা আর প্রশ্রাবের জ্বালা-পোড়া। শেষ পর্যন্ত এক গাইনী ডাক্তারের সাথে কথা বলে রাফিজা। অনেক পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর জানা যায় রাফিজা জরায়ুমূখ ক্যান্সারে আক্রান্ত। যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তার।
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের (আইএআরসি) সূত্র মতে বাংলাদেশের নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় স্তন ক্যানসারে। এর পরেই জরায়ুমুখ ক্যানসার । প্রতিবছর জরায়ুমুখ ক্যানসারে বাংলাদেশে ৮হাজার ৬৮ জন জন আক্রান্ত হয়। আর মৃত্যু বরণ করে প্রায় ৫ হাজার। এছাড়াও বিশ্বে প্রতিবছর এই রোগে আক্রান্ত হয় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ নারী। আর মৃত্যু হয় প্রায় ৩ লাখ।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. রোকেয়া বেগম বলেন, মূলত জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) নামের এক ভাইরাস। আর এই এইচপিভি বিভিন্ন ধরনের আছে, যার মধ্যে এইচপিভি ১৬ ও ১৮ জরায়ুমুখ ক্যান্সারের জন্য সবচেয়ে বেশী মারাত্মক। তিনি বলেন, মূলত যেসব মেয়েদের বাল্যবিবাহ হয় এবং যেসব নারী অধিক সন্তান জন্ম দেন তারাই এই জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়াও নারীর ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার বিষয়টিও রয়েছে। যেসব অল্পবয়সী নারী মাসিকরে সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে না পারে তাদের বিভিন্ন ধরনের জীবানু আক্রমন করতে পারে। আর তাই মাসিকের সময় অবশ্যই পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার এবং নিজেকে পরিষ্কার রাখতে হবে। ডা. রোকেয়া বলেন, অল্প বয়সী মেয়ে বিশেষ করে নয় থেকে ১৫ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য রয়েছে এইচপিভি টিকা। একটু দামী হলেও এই টিকা দিয়ে দেওয়াই উত্তম। এছাড়াও বেশী বয়সী নারীদের জন্য রয়েছে ক্যান্সার স্ক্রিনিং। ক্যান্সার স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে সহজে এই রোগ নির্ণয় করা যায় এবং পরবর্তী চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা যায়।
আরেক গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. শাহানা আক্তার বলেন, আমাদের দেশে বিশেষ করে এখনো গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের বয়:সন্ধির সময় নোংরা কাপড় ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। এসময় তাদের স্কুল পর্যন্ত বন্ধ করে দেয় কিছু কিছু অভিভাবক। অথচ তার কোন দরকারই হয়না। এখন বাজারে অল্প দামে দেশীয় তৈরী বিভিন্ন ধরনের প্যাড পাওয়া যায় এবং তারা এসব সহজেই ব্যবহার করতে পারে।
তিনি বলেন, এসব বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম আরো বেশী পরিমানে বাড়াতে হবে। যদিও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার স্বাস্থ্য সেবা ঘরের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক অন্যতম। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু মানুষ এখনো এসব সেবা নিতে আগ্রহী নয়। তাদেরকে এসব সেবার আওতায় আনার জন্য আরো বেশী পদক্ষেপ নিতে হবে।
ডা. শাহানা বলেন, প্রাথমিকভাবে এই ক্যান্সার ধরা পড়লে খুব সহজেই এ থেকে নিরাময় সম্ভব। নিয়মিত ঔষুধ সেবন করলে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে যদি দেরীতে ধরা পড়ে তবে তা অনেক সময় জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। অনেক সময় ডাক্তারদেরও আর কিছু করার থাকে না। আর তাই এ বিষয়ে পরিবারের সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরী করতে হবে।
তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত আমাদের দেশের নারীরা এসব মেয়েলী শারীরিক সমস্যা নিয়ে কারো সাথে আলোচনা করতে লজ্জা পায়। একেবারে চরম পর্যায়ে না গেলে তারা তা কাউকে জানায় না । এমনকি অনেক বিবাহিত নারীরাও তাদের স্বামীর সাথে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন না। এর ফলে অনেক নারীই এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। যা কখনোই কাম্য নয়। তিনি সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও যেসব সংস্থা এসব বিষয়ে কাজ করেন তাদেরকে এ বিষয়ে আরো বেশী জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানান। সুত্রঃ বাসস।

 

মা-বাবার মেসেজ গুলো সবসময় গুরুত্বপূর্ণ সন্তানদের জন্য

মা-বাবার মেসেজ গুলো সবসময় গুরুত্বপূর্ণ সন্তানদের জন্য


মো:আশরাফুল ইসলাম


সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে মা বাবা পরিপূর্ণতা লাভ করে। একটি বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই কান্নার মাধ্যমে তার অস্তিত্ব জানিয়ে দিচ্ছে। কান্নার পরপরই মা বাবা যখন তাকে জড়িয়ে ধরছে শিশুটির আরাম লাগছে এবং নিরাপদ অনুভব করছে। এরপর শিশুটি হামাগুড়ি দেওয়া, হাটতে শেখা, কথা বলতে শেখার মাধ্যমে বেড়ে উঠতে থাকে। শিশুটির বিকাশের ক্ষেত্রে তার মা বাবা এবং আশেপাশের লোকজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিশুটি একটু বড় হওয়ার সাথে সাথে মা বাবা থেকে বিভিন্ন ধরনের মেসেজ পাচ্ছে। এক্ষেত্রে, বিভিন্ন ধরনের মেসেজ পেতে পারে যেমনঃ শিশুটি যখন ঠিকমতো কথা বলতেও শেখে নাই তখন মা বাবা বলছে – আমাদেরতো খুব ইচ্ছা তুমি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে অথবা বাবা তুমি পেটে থাকতেই আমরা বলেছি তোমাকে মাদ্রাসাই পড়াব। এই যে মা বাবা তাদের নীডগুলো সন্তানের উপর চাপিয়ে দেওয়া শুরু করেছে। আবার, অনেকক্ষেত্রে মা বাবা বাচ্চাকে বলছে তুমি একটা গাঁধা, অন্যরা পারে তুমি কেন পারো না, তোমার দ্বারা কিছুই সম্ভব না। আবার, বাচ্চাটি একটি কাজ করতে গেলে তাকে বলা হচ্ছে তুমি ছোট মানুষ তুমি পারবে না দাও আমি করে দেই। একটি কথা বলতে গেলে তাকে থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে তুমি ছোট মানুষ তোমার এত কথা কিসের চুপ থাকো , বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছেলে বাচ্চাদের বলা হচ্ছে – ছেলে মানুষদের শক্ত হতে হবে বাবা কাদে না। মা বাবা যে মেসেজগুলো দিচ্ছে সন্তানরা কোন প্রকার চিন্তা ছাড়াই সেগুলোকে নিয়ে নিচ্ছে।
ফলাফল কি হচ্ছে?
মা বাবা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বানানোর জন্য সন্তানকে প্রচণ্ড চাপ দিচ্ছে, সমালোচনা করছে, সবসময় শাসনের মধ্যে রাখছে এর ফলে পড়ালেখার প্রতি তার বিরক্তি চলে আসছে। আবার, যে বাচ্চাটিকে মাদ্রাসায় দেওয়া হল সে কয়দিন পর পরই মাদ্রাসা থেকে পালাচ্ছে। আবার, যে বাচ্চাটিকে বলা হল তুমি একটা গাঁধা, অন্যরা পারে তুমি কেন পারো না, তোমার দ্বারা কিছুই সম্ভব না সে বড় হয়ে হীনমন্যতাই ভুগছে। দেখা যাচ্ছে, বড় হবার পরও নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারছে না, যখনি কোন একটি কাজে পারছে না তখন চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে ভাবছে আমার দ্বারা সম্ভব না এবং বিষণ্ণতাই ভুগছে অথবা তার মধ্যে উদ্বিগ্নতা তৈরি হচ্ছে। আবার, ছোট বলে যে বাচ্চাকে থামিয়ে দেওয়া হল বড় হয়ে সেই বাচ্চাটি কোন কাজ করতে গেলে এবং অন্যদের সামনে কোন কথা বলতে গেলে ভিতর থেকে বাধা পাচ্ছে।
ছোটবেলা বাচ্চারা কোন প্রকার যৌক্তিক চিন্তা ছাড়াই মা বাবার মেসেজগুলো নিয়ে নেয়। এর ফলে বাচ্চারা তার নিজের সম্পর্কে script তৈরি করে এবং মা বাবার মেসেজগুলো সারাজীবন বয়ে বেড়ায়। লক্ষ্য করে দেখবেন অনেক মানুষ সফল হওয়া সত্ত্বেও সারাজীবন নিজেদের অসফল ভাবে শুধুমাএ ছোটবেলায় দেওয়া মেসেজগুলোর কারণে।

বাচ্চারা যে গুরুত্বপূর্ণ এটি কি আমরা তাদের অনুভব করাতে পারি না? কি এমন অসুবিধা হত যদি তাদের শৈশব কাটত আনন্দ আর খেলাধুলায়। আমরা কি তাদের জিজ্ঞেস করতে পারিনা তুমি কি হতে চাও। প্রতিটা বাচ্চার শৈশব খুব গুরুত্বপূর্ণ আর এ সময়ে মা বাবার মেসেজগুলোও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

 

আমার সুখী ডেইলি লাইফ

আমার সুখী ডেইলি লাইফ


খালেদা বীথি


এক একজন আপুর ডেইলি লাইফ পড়ছি আর নিজের জীবনের সুখটুকু যেন বেশী উপলব্ধি করতে পারছি। এক একজন হোম মেকার আপু যেন এক একজন আলাদিনের জীনি। কতটা ধৈর্য্য নিয়ে তারা নিজেদের সংসার আলোকিত করে যাচ্ছেন।

আমার বিয়ে হয় ২০০৮ এ। ২০০৯ এর জুন থেকে চাকুরী শুরু করি। ঐ বছর এ অক্টোবর থেকে নতুন জীবন শুরু করি, শশুর শাশুড়ী ও দুই দেবর সহ। অফিস থাকতো বলে প্রতিদিনের রান্না বান্না সামলানোর যুদ্ধ সেভাবে করতে হয়নি। বাসায় রান্নার জন্য আলাদা লোক সব সময়ই ছিল কারণ শাশুড়ী ও চাকরি করেন। ছুটির দিনে চেষ্টা করতাম কিছু না কিছু বা পুরো রান্নার দায়িত্ব নিতে।

২০১৪ থেকে সম্পূর্ণ নিজের একার সংসার হল। তবে ভাগ্য ভালো আমার। তখনও আমাকে প্রতিদিনের রান্নার ঝামেলা পোহাতে হয়নি। সপ্তাহে ৫/৬ দিন চাকরি করি আর ছুটির দিনে স্পেশাল কিছু রান্না করি। মাঝে মাঝে এটা সেটা নাস্তার আইটেম করা। এই ছিল আমার কাজ।

২০১৮ তে এসে বিভিন্ন ঝামেলায় টিকতে না পেরে জব ছেড়ে দিলাম। প্রায় ৯ বছর চাকরি করে নিজেও যেন হাপিয়ে উঠেছিলাম। ভাবলাম কিছুদিন বিশ্রাম নেই। এজন্য আর নতুন করে চাকরির চেষ্টাও করলাম না। বুঝতে পারছিলাম যে আমার স্বামীর একার কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ও কখনোই আমাকে কোন কিছুর জন্য প্রেশার দেয় নি। ভাবলাম বাসায় বসে আছি। অনেক সময় আমার। একটা অনলাইন বিজনেস করি। কিন্তু যতটা সহজ হবে ভেবেছিলাম ততটা সহজ না আসলে কাজটা। ছোট ছোট দুটো বাচ্চা ( একজনের ৭, অন্যজনের সাড়ে ৩ চলছিল তখন) নিয়ে সারাদিন ওদের পেছনেই চলে যায়। তাই আমার দ্বারা বিজনেসও হয়ে উঠেনা।

আমি মনোবিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলাম। ২০১১ তে মনোবিজ্ঞানের আরেকটি Applied branch হিসেবে যাত্রা শুরু করে Educational & Counselling Psychology Department , আমার অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল এই বিষয়ে পড়াশুনা করার। কিন্তু এখানে full time student হতে হয় বলে তখন চাকরি ছেড়ে এখানে পড়ার সাহস হয়নি। তো গত বছর অক্টোবরে যখন শুনলাম নতুন বছরের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে তখনই ঠিক করে ফেললাম বসেই যখন আছি তখন কেন পড়াশোনাটা করে ফেলিনা এই সুযোগে। একাডেমিক পড়াশুনা শুরু করলাম পুরো ১০ বছর পর। ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলাম। ভয়ে ভয়ে ছিলাম, মনে হচ্ছিল যদি চান্স না পাই। আল্লাহর হুকুমে চান্স পেয়ে গেলাম। ২০১৯ জানুয়ারী থেকে শুরু করলাম নতুন করে ছাত্রী জীবন। এখন আমার ডেইলি লাইফ হল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস করে বাসায় আসি। তারপর কিছুটা রেস্ট নিয়ে মাঝে মাঝে ছোট কন্যাকে নিয়ে পড়তে বসি। আর নিজেও কিছুটা পড়ি। এখনো সেই আগের মতোই ছুটির দিনে স্পেশাল কিছু রান্না করি আর বাচ্চাদের জন্য এটা সেটা নাস্তা বানানো, মাঝে মাঝে ঘর গুছানো, কাপড় গুছানো আমার কাজ এতটুকুই। সেল্ফ কেয়ার হিসেবে চলে কাজের পাশাপাশি গান শোনা।

এর মাঝে উল্লেখযোগ্য একটা ঘটনা শেয়ার করতে ইচ্ছে হচ্ছে। আমার সহপাঠীরা আমার চেয়ে ১০ বছরের ছোট। ওরা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করে নিয়েছে যাতে আমার মনেই হয়না যে আমি বুড়ী হয়ে গিয়েছি। আমার মনে হয় আমি যেন আমার ১০ বছর আগের স্টুডেন্ট লাইফ ফিরে পেয়েছি আবার। গত মাসে এই বন্ধুদের কয়েকজন মিলে ৪ দিনের জন্য ঘুরে এলাম কক্সবাজার। আমার সমসাময়িক অনেকে খুব অবাক হয়েছে আমার এই ঘুরতে যাওয়া নিয়ে। কারণ সবাই এমন সাপোর্ট পায় না। তাই বাচ্চা রেখে একা ঘুরতে যাওয়ার কল্পনা ও করতে পারে না। আমি ভাগ্যবান আলহামদুলিল্লাহ। আমার নিজের রিফ্রেশমেন্ট এর জন্য এই ট্যুরটা যে কি উপকারী ছিল তা বলে বোঝানো যাবে না।

আমি বিন্দাস ইঞ্জয় করে যাচ্ছি আমার এই নতুন জীবন। আমার জন্য দোয়া করবেন আপুরা।

 

দ্রুত ডেঙ্গু প্রতিরোধে ১৩ দফা প্রস্তাব

দ্রুত ডেঙ্গু প্রতিরোধে ১৩ দফার প্রস্তাব


ডা. সাকলাইন রাসেল


১. সমস্ত স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হোক। কারণ এডিস মশা দিনের বেলা কামড়ায়। স্কুল কলেজ থেকে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা তাই বেড়ে যাচ্ছে।

২. যেকোন একটা দিনকে ‘ক্লিন ঢাকা দিবস’ ঘোষণা করা হোক। এই দিন সব স্থানে পরিস্কার করবে সিটি কর্পোরেশন, বাড়ীওয়ালা-ভাড়াটিয়া, স্বেচ্ছাসেবকরা।

৩. ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন করতে ৭২ ঘন্টার জন্য সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হোক।

৪. পূর্বের ন্যায় বিমান থেকে পুরো ঢাকাতে মশানাশক কার্যকর ঔষধ ছিটানো হোক।

৫. ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু কর্ণার চালু করে সেখানে চিকিৎসা জনবল বৃদ্ধি করা হোক।

৬. অতিরিক্ত রোগীর জন্য চিকিৎসক স্বল্পতা কমাতে দ্রুত ও অস্থায়ী ভিত্তিতে বেকার ডাক্তারদের নিয়োগ দেয়া হোক।

৭. ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাড়ী বাড়ী অভিযান চালানো হোক। কোন বাড়িতে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেলে জরিমানা করা হোক।

৮. ডেঙ্গু মানেই হাসপাতাল নয়। রোগী সেটেলড থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ঘরে বসেও চিকিৎসা নেয়া যায়। প্রচারণার সময় এ বিষয়টাকে গুরত্ব দেয়া হোক।

৯. ডেঙ্গু সম্পর্কিত সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হোক।

১০. বৃষ্টির আধিক্য জুলাই মাসে বেশি থাকায় প্রতি বছর জুলাই মাসকে ‘ডেঙ্গু সচেতনতা মাস’ ঘোষণা করা হোক।

১১. ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা প্রদানকারী চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকিভাতার আওতায় আনা হোক।

১২. সিনিয়র ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি ডেঙ্গু এডভাইজারি বোর্ড করা হোক। ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিলে এ বোর্ড দ্রুত গাইড লাইন প্রনয়ন ও দিকনির্দেশনা দিবে।

১৩. ডেঙ্গু নাই..নাই..নাই বলে যারা গুজব রটিয়েছেন..তাদেরকে এডিস বন্ধু ঘোষনা করা হোক এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যাবস্থা নেয়া হোক।

ডেঙ্গুর কোন কার্যকর টীকা নেই।
ডেঙ্গুর সরাসরি কোন চিকিৎসা নেই।
কিন্তু..
এটাকে শতভাগ প্রতিরোধ করা যায় শহরটাকে পরিচ্ছন্ন করে।
শ্লোগান হোক..
চল যাই যুদ্ধে..এডিস মশার বিরুদ্ধে।

 

স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর…৩

স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর…৩


আফরোজা হাসান


স্বাতি হেসে বলল, আপনার পদ্ধতিটাও কিন্তু সুন্দর। আমিও ইনশাআল্লাহ ট্রাই করে দেখবো আপনার এই পদ্ধতি। আচ্ছা এখনো কি এমন কিছু করছেন? অপছন্দনীয় কিছু কেটে দিয়ে পছন্দনীয় কিছু বসিয়ে দিচ্ছেন সে জায়গায়।

সামান্য হাসলো আরভ। কোন জবাব না দিয়ে আবারো লেখার মাঝে মগ্ন হলো। হঠাৎ লেখার গতি কমে গেলো আরভের। হোঁচট খেয়ে খুঁড়িয়ে চলতে চলতে একসময় থেমে গেলো। চোখ তুলে দেখলো স্বাতি তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আচ্ছা স্বাতির কথাটা শুনে এত রেগে গিয়েছিল কেন সে? এমন তো নয় যে ফান বোঝে না! ভালোই বোঝে। কিন্তু তবুও স্বাতির ফানটা নিতে পারেনি! কেন পারেনি? মানুষের মন আসলেই খুব বিচিত্র! কখনো কখনো অনেক বড় কিছুকেও হাওয়ায় উড়িয়ে দেয়! আবার কখনো কখনো ছোট্ট একটা ধূলি কণাকেও ঝেড়ে ফেলে দিতে তৈরি থাকে না! কিন্তু যত যাই কিছু হোক না কেন মজা করারও একটা লিমিটেশন থাকা উচিত! যে কোন সম্পর্কেকে সুন্দর ও গতিশীল রাখার জন্য লিমিটেশন জ্ঞানটা খুব জরুরি! প্রতিটা সম্পর্ক যেমন ভিন্ন, সম্পর্কেও মাঝে বিদ্যমান আদবও ভিন্ন। একটা সম্পর্ক যতই খোলামেলা বা উদার হোক না কেন তাতে বিদ্যমান আদবের বরখেলাপ করা অনুচিত! ইসলামও তো এমনটাই শিক্ষা দেয়! রসিকতার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা নেই শরীয়তে। বরং উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূল (সঃ)এর জীবনাচরণেও পাওয়া যায় যে, স্ত্রীদের সাথে তিনি খুবই প্রেমময়, উদার ও হাসি-মজাকারী ছিলেন। হযরত আলী(আ) বলেছেনঃ রাসূল (সা) যখনই তাঁর কোনো সহচরকে বিষন্ন বা মনমরা অবস্থায় দেখতেন, তখনই কৌতুক মজা করে তাকে প্রফুল্ল করে তুলতেন এবং বলতেনঃ নামাযের পর সবচেয়ে উত্তম আমল হলো মুমিনদের অন্তরকে প্রফুল্ল করা। অবশ্য এমনভাবে হতে হবে যেন তাতে গুনাহের লেশমাত্র না থাকে।

ইমাম হাসান (রা) কে ইমাম আলী (রা) এক উপদেশ বাণীতে বলেছেনঃ “হে সন্তান আমার! সে-ই ইমানদার যে তার দিনরাতের সময়গুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করে নেয়। একটি অংশকে কাজে লাগায় আধ্যাত্মিকতার চর্চা এবং আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করার মধ্য দিয়ে। অপর একটি অংশকে কাজে লাগায় পার্থিব জগতের প্রয়োজনীয়তা ও জীবন জীবিকার চাহিদা মেটাতে। আর তৃতীয় অংশটিকে নির্দিষ্ট করে বৈধ এবং হালাল বিনোদন উপভোগ করার জন্যে।” তোমাকে বিয়ে করাই আমার ঠিক হয়নি” স্বাতির বলা এই কথাটিতে কি রসিকতার মাঝে ফেলা যায় ? ঠিক বুঝতে পারছে না আরভ! সেকি ওভার রিঅ্যাক্ট করেছিল নাকি এই ধরণের কথা আসলেই বলা ঠিক না স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যেকে? জানে স্বাতি ফান করেই কথাটা বলেছে! কিন্তু ফান করে কি এমন কথা বলা যায় যাতে অন্যের মনে কষ্ট হতে পারে? ফান মানুষ আসলে কেন করে?

ডায়েরী পাশে রেখে আরভ বলল, আচ্ছা আপনি কি বলতে পারবেন মানুষ ফান কেন করে?

একটু ভেবে স্বাতি বলল, আনন্দ পাবার জন্য।

শুধুই পাবার জন্য?

না দেবার জন্যও।

তাহলে নিশ্চয়ই ফান করে কাউকে এমন কথা বলা উচিত নয় যাতে সে কষ্ট পেতে পারে তাই না?

হুম… একদমই উচিত নয় এটা।

আরভ হেসে বলল, আমারো এমনটাই মনেহয়। যে কোন সম্পর্কেই ফান আসলে এমন হওয়া উচিত যাতে দুজনই আনন্দ পেতে পারে। অন্যেকে কষ্ট দেবার জন্য যা করা হয় সেটা কখনোই ফান হতে পারে না!

অন্যকে কষ্ট দেয়ার নিয়্যাতে আসলে ফান করাও হয় না সাধারণত।

কিন্তু অন্যেকে ক্ষেপানো, রাগানো না বিরক্ত করার নিয়্যাতে অবশ্যই করা হয়। আমার মতে এটাও ঠিক না! যখন দুজন মানুষ একই রকম নির্মল আনন্দ অনুভব ও উপভোগ করবে সেটাই হচ্ছে প্রকৃত অর্থে ফান! সেই হিসেবে ফানের প্রথম শর্ত হচ্ছে, দুজনের জন্যই সেটা উপভোগ্য হতে হবে। তাছাড়া ফান তো আমরা সাধারণত খুব কাছের মানুষদের সাথেই করি তাই না? যারা মনের খুব কাছের! আর এমন প্রিয় মানুষদেরকে কষ্ট দ্বারা লব্ধ কিছু কি আনন্দের উপকরণ হতে পারে? নাকি হওয়া উচিত?

ভেতরে চেপে রাখা লম্বা শ্বাসটা ধীরে ধীরে বের করে দিয়ে স্বাতি বলল, কখনোই হওয়া উচিত নয়। আমি খুব দুঃখিত তোমাকে ঐ কথাটি বলার জন্য।

আরভ হেসে বলল, আমিও খুব দুঃখিত তোমার ফানকে ফান হিসেবে নিতে না পারার জন্য। সম্পর্কের বন্ধন আমার কাছে খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে বলেই হয়তো আমি তোমার কাথাটিকে ফান হিসেবে নিতে পারিনি। এখন আমার একটা প্রশ্নের জবাব দেন দেখি!

জ্বি কি প্রশ্ন?

আপনি এত দূরে বসে আছেন কেন? আপনি যদি এত দূরেই বসে থাকবেন তাহলে কেবিন ভাড়া করার দরকার কি ছিল আমার? শুধু দুজনে মিলে এই ছোট্ট ভ্রমণের পরিকল্পনা ও আয়োজন তো আমরা করেছিলাম জীবনের এই মূহুর্তগুলোর ভাঁজ থেকে শত সহস্র সুখানুভূতির শিহরণ, আনন্দানুভূতি আন্দোলন আর প্রেমানুভূতির বিচ্ছুরণ সমৃদ্ধ স্মৃতি সংগ্রহের জন্য। যেসব আমরা রেখে যাবো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। যা ওদের হৃদয়ে ঝরাবে তুমুল শ্রাবণের চাষবাস!

লাজুকতা জড়ানো হাসি ছড়িয়ে পড়লো স্বাতির চেহারায়। আরভের ঠোঁটের কোণেও ফুটে উঠলো ভালোবাসাময় হাসি। ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে দিলো স্বাতির দিকে………

চলবে…

পর্ব-২

 

ডেঙ্গুতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিবের স্ত্রীর মৃত্যু

ডেঙ্গুতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিবের স্ত্রীর মৃত্যু


স্বাস্থ্যকথা


ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ফারজানা (৪২) নামে আরও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর ঢামেকে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ৮ জনে দাঁড়াল। সোমবার দিবাগত রাতে ঢামেক হাসপাতালের জেনারেল আইসিইউতে মারা যান ফারজানা। রাজধানীর নিউ ইস্কাটন এলাকায় থাকতেন তিনি।

ঢামেকের সহকারী পরিচালক ডা. নাসির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ফারজানা আগেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। সোমবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে আইসিইউতে নেয়া হয়। রাতে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হেলথ ইকোনিক্স ইউনিটের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) ড. নুরুল আমিনের স্ত্রী তিনি।

ঢামেকে ডেঙ্গু রোগে মৃত ৮ জনের ৬ জনই নারী। মৃত অপর সাতজন হলেন- ফরিদপুরের রাবেয়া (৫০), আজমপুরের ফাতেমা (৪৩), এলিফ্যান্ট রোডের নাসিমা (৩৩), কামরাঙ্গীরচরের হাফিজা (৬১), ডেমরার রাজু (২০), লালবাগের ফরহাদ (৪৪) ও গাজীপুরের রিতা।

নাসির উদ্দীন আরও জানান, মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢামেকে ৫৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন।

ঢামেক সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত ঢামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে ভর্তি হয়েছে মোট ২০১১ জন; যার মধ্যে শুধু জুলাইয়ে ১৮৫৮ জন ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও এ বছরের জানুয়ারিতে তিনজন, (ফেব্রুয়ারি শূন্য) মার্চে চারজন, এপ্রিলে তিনজন, মে মাসে ৮ জন, জুনে ১৩৫ ভর্তি হন। তবে জুলাইয়ের ২৮ দিনে একলাফে এ সংখ্যা ১৮৫৮ জনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

 

বিতর্কের ভিডিওতে ভাইরাল হওয়া সেই ‘বিরল মেধাবীর’ গল্প

বিতর্কের ভিডিওতে ভাইরাল হওয়া সেই ‘বিরল মেধাবীর’ গল্প


অন্যান্য


বক্তব্যটা একটা বিতর্ক অনুষ্ঠানের। চিকন মুখে লেগেই আছে মায়াবী হাসি। কণ্ঠে যেন ভায়োলিনের সুর। কী বলছেন ক্ষণিকের জন্য তা ভুলে যেতে হয়; কীভাবে তিনি বলছেন বরং সেটি প্লাবিত হয় হৃদয়ে। দুই দিন ধরে এমনই একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বক্তার খোঁজ করতে গিয়ে জানা গেল নাম তার রেবেকা শফী।-দেশ রুপান্তর

ঢাকার ধানমন্ডিতে জন্ম এবং সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা তাকে বলছেন ‘বিরল মেধাবী’। বিতর্ক অনুষ্ঠানের যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, সেটি ছিল মূলত বিটিভি আয়োজিত স্কুলভিত্তিক বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনাল। ১৯৯৩-৯৪ সালের সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে পুরস্কার দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

রেবেকার গোটা পরিবারই পদার্থ বিজ্ঞানের চর্চায় নিয়োজিত। তার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা অধ্যাপক আহমেদ শফি। মা প্রফেসর সুলতানা শফি। আহমেদ শফির বাবাও রীতিমতো বিখ্যাত এক নাম, আবদুস সালাম, ছিলেন ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক। রেবেকার বড় বোন ফারিয়াল শফিও পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী।

রেবেকা জেনেটিকসের একজন রিসার্চ ফেলো। ঘরে আছে এনডিমিয়া নামের এক ফুটফুটে সন্তান।

ঢাকার হলিক্রসের পাঠ চুকিয়ে তিনি পদার্থ বিজ্ঞানে লেখাপড়া করতে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। আন্ডারগ্র্যাজুয়েটের পর হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে অ্যাস্ট্রোফিজিকস নিয়ে পিএইচডি করেন।

সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা শাব্বির আহসান নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তার সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘সেদিন পুরোনো এক টিভি ডিবেটের ভিডিও কে যেন পোস্ট করেছিল! এতই ভালো লাগল যে ভাবলাম ইনি কী করেন বা কোথায় আছেন দেখি!’

Physics Undergrad (GPA 4.00) – Cal Tech
Master’s Astrophysics – Harvard
PhD – Harvard (On Black hole Spin!)
Teaching Assistant, Post Doc RA, Swartz Fellow in Comp Neuroscience – Harvard Center of Brain Science
Post Doc Fellow – Broad Inst at MIT and Harvard
Post Doc Fellow – Harvard Med School
Winner of US$ 200,000 grant to study “Measure of Black hole Spin”
Best TV Debater – Bangladesh Television (I just saw her debate in a video, one of the best!)

পেশাজীবীদের সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট হিসেবে পরিচিত লিঙ্কডইন থেকে রেবেকা শফী সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জানা গেছে। নিজের পরিচয় তিনি এভাবে দিয়েছেন, ‘আমি ফিজিকস ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছি। কিন্তু সম্প্রতি বায়োলজিতে প্যাশন আবিষ্কার করেছি। এখন জেনেটিকস এবং নিউরোসায়েন্সের ইন্টারসেকশন নিয়ে কাজ করছি হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলে।’

ভাইরাল হওয়া ভিডিও ক্লিপে শুধু রেবেকাকে দেখা গেছে। কিন্তু বিতর্ক প্রতিযোগিতার ওই পর্বে আরও যারা ছিলেন, তারাও তুখোড় বিতার্কিক। সবাই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে এখন প্রতিষ্ঠিত।

বাংলাদেশ টেলিভিশন ওই সময় নিয়মিত এই ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করতো। এখনো কালেভদ্রে হয়। তবে হতাশার কথা হল আগের সেই জৌলুস এখন আর নেই। বাংলাদেশের বিতর্ক চর্চায়ও পড়েছে ভাটা। ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশন (এনডিএফ) এবং ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির মতো কয়েকটি সংগঠন নিজেদের লড়াইটা অবশ্য ধরে রেখেছে। তবে এই অঙ্গনের মানুষেরা সেটিকে যথেষ্ট বলে মনে করেন না।

সুত্রঃ আমাদের সময়।

 

দুবাইয়ের শাসকের বিরুদ্ধে পলাতক স্ত্রীর আইনি লড়াই

দুবাইয়ের শাসকের বিরুদ্ধে পলাতক স্ত্রীর আইনি লড়াই


নারী সংবাদ


দুবাইর শাসক শেখ মোহাম্মদ আল-মাখতুম ও তার পালিয়ে যাওয়া এক স্ত্রী প্রিন্সেস হায়া বিনত আল-হুসেইনের মধ্যে এক আইনি লড়াই লন্ডনের এক আদালতে শুরু হয়েছে।

শেখ মোহাম্মদ আল-মাখতুম মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ক্ষমতাবান এবং প্রভাবশালী নেতাদের একজন। অন্যদিকে প্রিন্সেস হায়া জর্দানের বাদশাহ আবদুল্লাহর সৎ বোন। তিনি পড়াশোনা করেছেন ব্রিটেনের প্রাইভেট স্কুলে এবং ঘোড়দৌড়ে অলিম্পিকে অংশ নেয়া প্রতিযোগী।

প্রিন্সেস হায়া কয়েক মাস আগে দুবাই থেকে পালিয়ে আসেন। বলা হচ্ছে, প্রাণনাশের আশঙ্কায় তিনি এখন লন্ডনে লুকিয়ে আছেন।

মূলত সন্তানরা কার কাছে থাকবে, তা নিয়েই লন্ডনের আদালতে এই দুজনের মধ্যে আইনি লড়াই হচ্ছে।

প্রিন্সেস হায়া ২০০৪ সালে শেখ মোহাম্মদকে বিয়ে করেন। তিনি হচ্ছেন শেখ মাখতুমের ছয় নম্বর স্ত্রী। শেখ মোহাম্মদের বয়স এখন ৭০। বিভিন্ন স্ত্রীর গর্ভে তার মোট ২৩ জন সন্তান।

শেখ মোহাম্মদেরও ঘোড় দৌড় নিয়ে আগ্রহ আছে। তিনি ব্রিটেনের নামকরা একটি ঘোড়ার আস্তাবল গোডোলফিন হর্স রেসিং স্ট্যাবলের মালিক।

প্রিন্সেস হায়া প্রথমে দুবাই থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন জার্মানিতে। সেখানে তিনি নাকি রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়ারও চেষ্টা করেন। কিন্তু এ মাসে জানা গেল যে তিনি এখন লন্ডনের কেনসিংটনে তার ১০ কোটি ডলারের বেশি দামের এক বাড়িতে থাকছেন ।

প্রিন্সেস হায়া এখন ব্রিটেনেই থাকতে চান বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু দুবাইর শাসক যদি এখন তার স্ত্রীকে ফেরত পাঠানোর দাবি জানান, সেটা ব্রিটেনের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কূটনৈতিক সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

শেখ মোহাম্মদ তার স্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার পর ক্রুদ্ধ হয়ে একটি কবিতা লেখেন। সেখানে তিনি নাম উল্লেখ না করে একজন নারীর বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ করেন। এই কবিতা তিনি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন।

প্রিন্সেস হায়া কেন পালিয়ে গেলেন
প্রিন্সেস হায়ার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো দাবি করছে, তিনি সম্প্রতি শেখ মোহাম্মদের এক কন্যা শেখ লতিফাকে রহস্যজনকভাবে যেভাবে দুবাই ফিরিয়ে আনা হয়, সে ব্যাপারে কিছু বিচলিত হওয়ার মতো তথ্য জানতে পেরেছেন। তারপরই তিনি নিজে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

শেখ লতিফা এক ফরাসী পুরুষের সাহায্য নিয়ে দুবাই থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন সমুদ্রপথে। কিন্তু ভারতের সশস্ত্র রক্ষীরা তাদের আটক করে আবার দুবাইর হাতে তুলে দেয়।

সেসময় এই ঘটনার সমালোচনা হলে প্রিন্সেস হায়া দুবাইর শাসকের পক্ষ নিয়ে বলেছিলেন, শেখ লতিফা দুবাইতেই নিরাপদ। কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলো তখন বলেছিল, শেখ লতিফাকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে অপহরণ করে দুবাইতে ফিরিয়ে নেয়া হয়।

কিন্তু প্রিন্সেস হায়ার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো এখন দাবি করছে, এঘটনার ব্যাপারে তিনি এখন নতুন কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন। আর এ কারণে তিনি তার স্বামীর পরিবারের দিকে থেকে প্রচন্ড চাপের মুখে ছিলেন।
সূত্র : বিবিসি

 

নুডলস এর রেসিপি

নুডলস এর রেসিপি


ঘরকন্যা


নুডলস পাকোড়াঃ

উপকরণঃ
রান্না করা নুডলস
ডিম ২টি
ময়দা/কর্ণ ফ্লাওয়ার
বিট লবন-১ চিমটি
ভাজার জন্য তেল

প্রস্তুত প্রণালীঃ
আপনার পছন্দ মত নুডলস রান্না করে নিন,চাইলে প্রণ বা চিকেন কিউবও দিতে পারেন । এবার একটু ঠান্ডা করে ফেটানো ডিম,সামান্য ময়দা/কর্ণ ফ্লাওয়ার,এক চিমটি বিট লবন দিয়ে মেখে নিন,আলতো করে মাখবেন নুডলস যেন চটকে পেস্ট না হয়ে যায়… ঝাল খেতে চাইলে একটু কাঁচা মরিচ কুচি দিতে পারেন । এবার গরম ডুবো তেলে ইচ্ছে মত আকারে লালচে করে ভেজে তুলে নিন । চা বা কফির সাথে গরম গরম পরিবেশন করুন।

চিকেন ম্যাগি নুডলসঃ

উপকরণঃ
সিদ্ধ করা ম্যাগি নুডলস ১ প্যাকেট
রসুন এর পেস্ট ২ চাচামচ
সিদ্ধ হাড় ছাড়া মুরগির পিস ১ কাপ বড়
লবন স্বাদমত
সর্ষের তেল ছোট ১ কাপ
ধনে পাতা অল্প।

প্রস্তুত প্রণালীঃ
এটা বানাতে আমরা আগে টমেটো পেস্ট করে নেব । টমেটো পেস্ট দিয়ে তাতে ১চা চামচ রসুন এর পেস্ট, অল্প সর্ষের তেল, ধনে পাতা দিয়ে ভালো ভাবে ব্লেন্ড করে নিন, রেডি হয়ে গেল বেসিক পেস্ট। এরপর নন স্টিক ফ্রাইং প্যানে খানিকটা তেল দিয়ে তাতে বাকি রসুন পেস্টটা দিন ও লাল করে ভাজুন। এবার ব্লেন্ড করা টমেটোর বেসিক পেস্ট টা দিয়ে দিন।সাথে সিদ্ধ মুরগির ছোট ছোট পিস গুলো দিন । ৩ মিনিট রান্না করুন যখন এটা ফুটে উঠবে তখন সিদ্ধ করে রাখা ম্যাগি নুডলস দিন, শেষে পরিমান মত লবন দিয়ে রান্না করুন আরো ৩ মিনিট। খেয়াল রাখেবন নুডলস যেন ড্রাই হয়ে না যায় এবং কিছুটা গ্রেভি যেন অবশ্যি থাকে । পরিবেশন করার আগে ধনে পাতা উপরে ছিটিয়ে দিতে পারেন।

 

স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর…২

স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর…২


আফরোজা হাসান


মামণি বড় ফ্লাক্সে করে চা/কফি দুটাই দিয়ে দিয়েছিলেন। নিজে চা নেবার সময় এক কাপ আরভের সামনেও রাখলো। ওমা সাথে সাথে হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ উঠিয়ে নিলো আরভ। একেই মনেহয় বলে জাতে মাতাল তালে ঠিক। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে মোবাইল নিয়ে ম্যাসেজ করলো স্বাতি। “হ্যাপিনেস ব্যান্ডের চশমা দিলাম তোমায় উপহার। নাকের ডগায় বসিয়ে দেখো ছড়ানো আনন্দের বাহার। আনন্দকে খুঁজে পেতে যদিও দরকার হয় না দৃষ্টি। আনন্দ তো মনের ঘরে ঝুমঝুমান্তি রহমতের বৃষ্টি। আনন্দের সবচেয়ে বড় ম্যাজিকটা কি জানো? খুঁজে না পেলেও আনন্দকে মনেতে যায় জন্মানো।”

ম্যাসেজ দেখে সময় আরভের চেহারাতে চাপা হাসি ঝলকে উঠতে দেখলো স্বাতি। কিছুটা সাহস পেলো মনে। আবারো লিখলো, আচ্ছা আমরা কি অপরিচিতদের মত কথা বলতে পারি? সাথে সাথেই জবাব এলো, হুম! আনন্দে হুরররে… বলে চিৎকার দিতে ইচ্ছে করলেও চিৎকারটা গরম চায়ের সাথে গিলে ফেললো স্বাতি। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আচ্ছা তো আপনি লেখক?

চোখ তুলে তাকালো আরভ। মুখে হাসি টেনে বলল, শখের লেখক বলতে পারেন। জীবনে ঘটমান হৃদয়াস্পর্শিত কথাগুলোকে মনের সাথে সাথে ডায়েরীর পাতাতেও টুকে রাখার চেষ্টা করি।

এর সার্থকতা কি?

সার্থকতা কি সেটা তো ভেবে দেখনি। তবে কখনো যদি মন ভুলে যায় কোন সুন্দর মুহুর্ত। ডায়েরীর পাতার ভাঁজ থেকে সেটিকে সযতনে তুলে নেয়া যাবে।

এটাই তাহলে আপনার লেখক হবার পেছনের কারণ?

ইন্টারভিউ নিচ্ছেন নাকি?

নাহয় হলোই ইন্টারভিউ!

আমার আসলে লাভ স্টোরি পড়ার হবি আছে।

তো? এরসাথে লেখার কি সম্পর্ক?

আমি প্রথম লাভ স্টোরি পড়েছিলাম যখন আমার বয়স সাড়ে সাত বছর।

স্বাতি চোখ বড় বড় করে বলল, সত্যি?

অবশ্যই সত্যি। বানান করে করে পুরো লাভ স্টোরি পড়ে ফেলেছিলাম। এরপর থেকে নিয়মিত পড়তাম।

আপনার বাবা-মা ধোলাই দেয়নি?

উনারা আসলে বুঝতেনই না যে আমি কঠিন সব বই পড়তে পারছি। তাই উনাদের চোখের সামনে বসেই জীবনের প্রথম আট দশটা লাভ স্টোরি পড়ে ফেলেছিলাম।

স্বাতি হাসতে হাসতে বলল, শুধুই কি পড়েছিলেন নাকি কিছু মিছু বুঝেও ছিলেন?

আরভ ঠোঁট টিপে হাসি চেপে বলল, সিরিয়াসলি লাভ স্টোরি পড়া শুরু করেছিলাম হাই স্কুলে উঠার পর। তখন কিছু মিছু না বেশ ভালোই বুঝতাম। কিন্তু বেশির ভাগ লাভ স্টোরিই আমার পছন্দ হতো না। কিছু অংশ খুবই বাজে লাগতো। একটা লাভ স্টোরি খুব পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু শেষে গিয়ে নায়িকা মারা যায়। আমি এটা কিছুতেই মানতে পারছিলাম না। খুব কান্না করেছিলাম। একটা সময় মনে হলো যে, আমি বোকার মতো কান্না করছি কেন? তারচেয়ে গল্পের এন্ডিংটা বদলে দেই। সেদিন থেকে শুরু আমার গল্পের অপছন্দনীয় অংশগুলোকে নিজের মনের পছন্দ মত লেখার। এরপর থেকে যদি একটা লাইনও আমার অপছন্দ হতো কোন বইয়ের আমি সেটা কেটে দিয়ে নিজের পছন্দের লাইন বসিয়ে দিতাম নীচে।

স্বাতি হেসে বলল, শুনতেই অদ্ভুত রকম ভালো লাগছে। আমারো অবশ্য লেখার অভ্যাস আছে। আমার বয়স যখন সাত বছর তখন জীবনের প্রথম ডায়েরীটি উপহার পেয়েছিলাম। নতুন গল্পের বই মনেকরে মহা আনন্দে প্যাকেট খুলে যখন অক্ষর বিহীন সাদা পৃষ্ঠাতে ভরা ডায়েরীটা দেখেছিলাম বিস্ময় ভরা চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম,এটাতে তো কিছুই লিখা নেই। কি পড়বো আমি? বাবা কাছে টেনে নিয়ে হেসে বলেছিলেন,এটাতে কিছু লেখা নেই কেন জানো মা? প্রশ্ন ভরা চোখে তাকালে বাবা বললেন, কারণ এটাতে তুমি লিখবে। অবাক হয়ে জানতে চেয়েছিলাম,আমি কি লিখবো এটাতে? বাবা জবাব দিয়েছিলেন,তোমার যা মন চাইবে তাই লিখবে মা। যেমন ধরো,আজ ঘুম থেকে উঠে তুমি সবার প্রথমে কি করলে, মামণির তোমাকে কতটা আদর করলো,বাবা অফিস থেকে ফেরার সময় তোমার জন্য কি নিয়ে এলো, ভাইয়াদের কাছে কি কি শিখলে,তোমার ভাইবোনদের সাথে কি কি দুষ্টুমি করলে, স্কুলে কি কি হয়েছে এইসব কিছু লিখবে। কিছুক্ষণ চিন্তা করে জানতে চাইলাম,বাবা আমি এসব কেন লিখবো? বাবা হেসে বলল,কারণ এটা হবে তোমার জীবন গ্রন্থ। এটাতে তাই তোমাকেই লিখতে হবে। যাতে বড় হয়ে তুমি জানতে পারো কেমন ছিল তোমার ছোটবেলা। কেমন ছিলে তুমি জীবনের প্রতিটি ধাপে।

আপনার বাবার কনসেপ্ট সত্যিই মুগ্ধকর। স্যালুট উনাকে।

স্বাতি হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। এরপর থেকে গত দশ বছরে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সব কথা লিপিবদ্ধ আছে আমার ডায়েরীতে। জীবনের সব খুঁটিনাটি লিখতে গিয়ে আমার বর্তমান ডায়েরীর সংখ্যা তেইশটা। জীবন যখন যে রূপে আমার সামনে এসেছে চেষ্টা করেছি ফুটিয়ে তুলতে সেই প্রতিচ্ছবি। যখন যে রঙে আমার ভুবন সেজেছে,সেই রঙের একটি করে আঁচড় আমার গ্রন্থেও পড়ছে। জীবন সেতো আনন্দ-বেদনার কাব্য। আমার গ্রন্থখানিতেও তাই খুঁজে পাই জীবনের নানান রূপ, নানান রঙ। কখনো মনকে বিষণ্ণ করে ঘন কুয়াশার রঙহীন কাব্য, কখনো বা আনন্দে রিমঝিম ধ্বনি তোলে ঠাস বুনোটের ছন্দ। জীবন গ্রন্থের কিছু পাতা আছে যা শোনায় কল্পনার রংয়ে ভালোবাসার তুলিতে বোনা তুলিতে বোনা স্বপ্নকথন,কিছু পাতা জুড়ে বিরাজমান ধূসর বিবর্ণ নিয়তির অমোঘ লিখন। আছে জীবনের প্রতি বাঁকে বাঁকে মোড়ে মোড়ে স্পর্শ রেখে যাওয়া বর্ণিল সব স্মৃতির সমাহার। দেখতে পাই ক্ষুদ্র এই জীবনে প্রাপ্তির বিশাল সম্ভার। নানা পরীক্ষায় যখনই টালমাটাল হয় মন,প্রবৃত্তি সুযোগে করে দেয় অসন্তোষের বীজ বপন। নজর পড়লে গ্রন্থে কৃতজ্ঞতার অশ্রু হয় বর্ষণ,তখন অনুভব করি নেয়ামতে ঘেরা আমার ভুবন।

আলহামদুলিল্লাহ এবার তো আপনি আমার মনকে মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ করে দিলেন। লাইক ফাদার লাইক ডটার। মাশাআল্লাহ।

চলবে

পর্ব-১

 

শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজন সচেতনতা

শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজন সচেতনতা


মুসলিমা খাতুন


গভীর রাত। সবাই ঘুমে অচেতন। হঠাৎ পাশের বাড়ির তিনতলা থেকে বাচাঁও বাচাঁও বলে চিৎকার করে ওঠে মধ্য বয়সী এক নারী। তাঁর চিৎকারে ঘুম থেকে জেগে ওঠে অনেকেই। মুহূর্তের মধ্যেই স্পষ্ট বোঝা গেল যে, মধ্যরাতে ঘরে ফিরে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে প্রহার করছে। এক পর্যায়ে ঐব্যক্তি চিৎকার করে কাটা চামচ দিয়ে তার স্ত্রীর চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দিলে, ঘরের বাইরে এসে আক্রান্ত নারী তার সর্ব শক্তি দিয়ে বলে বাচাঁও বাচাঁও বলে চিৎকার করতে থাকে। ওই মহিলার স্বামী মাঝে মধ্যেই তাকে এই ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন করে। অসহায় স্ত্রী মান-সম্মানের ভয়ে কাউকে কিছু না বলে নীরবে সব যন্ত্রণা সহ্য করে যায়।
আমাদের দেশে নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। শারীরিক নির্যাতন, যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, পাচার, খুন বা হত্যার মতো নানান ঘটনার খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যদিও দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী নারী ও শিশু নির্যাতন জঘন্য একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। বৈষম্যমুলক সমাজ কাঠামোর ভেতরে দেশের নারীরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তারা কর্মস্থলে বৈষম্য ও হয়রানীর শিকার হচ্ছে, ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে কিশোরীদের কেউ কেউ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। নারী ও কিশোরীদের অপহরণ করে সীমান্ত পার করে বিদেশে পাঁচার করা হচ্ছে।
এ ধরনের নির্যাতনের ফলে নারীর যেমন শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয় তেমনি তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘিœত হয়।
দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার অন্যতম কারণ হচ্ছে ‘যৌতুক’। সমাজে যৌতুক প্রথা একটি বড় অভিশাপ। আমাদের দেশে যৌতুক প্রথা যে সব কারণে এখন পর্যন্ত টিকে আছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, অর্থনৈতিক পরনির্ভরশীলতা, সামাজিক কুসংস্কার, বাল্য বিয়ে, রেজিষ্ট্রিবিহীন বিয়ে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা প্রভৃতি।
অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন (এএসএফ)-এর তথ্য অনুযায়ী গত ১৯ বছরে প্রায় দেড় হাজার নারী ও শিশু অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। এই অপরাধের দায়ে সাজা হয়েছে মাত্র ৩৪৩ জনের। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী অ্যাসিডের মামলায় গত ১৬ বছরে ১৪ আসামীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত কারও সাজা কার্যকর করা হয়নি। অ্যাসিড অপরাধ দমন আইন, ২০০২ অনুযায়ী ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার কথা বলা আছে।
জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। দেশটিতে নারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত কোটি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সূচকে গত এক দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। গত এক দশকে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে, নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত হয়েছে, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে নারীর প্রবেশ ঘটেছে।
তবে, দুর্ভাগ্যক্রমে এই অগ্রগতির যাত্রার মধ্যেও এদেশের নারীরা নানাভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১১ এর প্রতিবেদন দেখা যায়, এ দেশের ৮৭ শতাংশ নারী ও কন্যা শিশু সহিংসতার শিকার হচ্ছে। লিঙ্গভিত্তিক অসমতার সূচকে ১৮৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম।
বাংলাদেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ১৯৮৩ সালে প্রথম প্রণীত হয় নারী নির্যাতন (ন্যূনতম শাস্তি) অধ্যাদেশ ১৯৮৩ (১৯৮৩ সালের ৬০ নম্বর অধ্যাদেশ)। অন্যান্য আইনের ওপর প্রাধান্য দিয়ে প্রণীত এই আইনটিতে মোট নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিতকরণ ও এর শাস্তি নির্ধারণ করার বিধান আছে এবং ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ছাড়াও বখাটেদের উৎপাতের জন্য দন্ডবিধি আইন প্রচলিত আছে। প্রচলিত আইনে বখাটেদের যে শাস্তির বিধান আছে তা হলো- ঢাকা মহানগর পুলিশ আইনের ৭৬ ধারা ও দ-বিধির ৫০৯ ধারা অনুযায়ী এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদ-সহ ২ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ নম্বর ধারায় যৌন নিপীড়ন ও শ্লীলতাহানীর জন্য ১০ বছরের কারাদ- দেয়ার বিধান আছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এই নির্যাতন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সমাজে বসবাসরত সকল শ্রেণীর মানুষকে সচেতন করতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ তার সাড়ে সাত কোটি নারী ও কন্যা শিশুর জন্য অনুকূল পরিবেশে সৃষ্টি করতে পারে, যাতে তারা দেশের সামগ্রিক উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে।
সুত্রঃ বাসস.

 

কখন বুঝবো বাচ্চার ডেঙ্গু হয়েছে?

কখন বুঝবো বাচ্চার ডেঙ্গু হয়েছে?


শিশুর স্বাস্থ্যসেবা


ডেঙ্গু জ্বরের প্রকটতা বেড়েছে বহুগুণ। যেকোনো রোগীর চেয়ে শিশুদের ভোগান্তি একটু বেশিই। শিশুরা সহজে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। গতকাল ২৩ জুলাই মঙ্গলবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এক দিনের রেকর্ড সংখ্যক ৪৭৩ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৬৯ জন।

শিশুদের মধ্যে যে যে লক্ষণ দেখলে ডেঙ্গু টেস্ট করাবেন,

১. বাচ্চাগুলো একেবারেই নিস্তেজ হয়ে পরে
২. পালস খুব কম
৩. পানি শূন্যতা
৪. কোন কোন বাচ্চার শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসে
৫. বুকে পানি জমা
৬. রক্তচাপটা খুব কমে যাওয়া।
৭. জ্বরের মাত্রা ১০২ ও ১০৩ বা এর থেকেও বেশি থাকতে পারে। এভাবে জ্বরটা তিন থেকে পাঁচ দিন থাকে।
৮. মাথাব্যথা,
৯. চোখব্যথা,
১০. বমি, পেটেব্যথা সঙ্গে পাতলা পায়খানা থাকতে পারে।
১১. শরীরে দানা দানা র্যাশের মতো দেখা দিতে পারে।

মুলত প্লেটিলেট কমে গণনা করি, তখন দেখি খুবই কম। দেখা যায়, আগের দিন রাতে প্লেটিলেট গণনা খুব ভালো থাকলেও পরের দিনই প্লেটিলেট গণনা তিন লাখ থেকে চল্লিশ হাজারে নেমে যেতে পারে।

705 total views, no views today

 

বাড্ডায় তরুণীকে ধর্ষণ যুবক গ্রেফতার

বাড্ডায় তরুণীকে ধর্ষণ যুবক গ্রেফতার


নারী সংবাদ


রাজধানীর বাড্ডায় বিয়ের প্রলোভনে এক তরুণীকে (২৪) ধর্ষণের অভিযোগে সোহেল আহম্মেদ (৩৫) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাড্ডার আলিফ নগরের বৈঠাখালীতে এ ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার যুবককে গতকাল জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী বাড্ডায় দায়েরকৃত মামলায় অভিযোগ করেন, আলিফ নগরের বৈঠাখালী ঢালীবাড়ি মোড় এলাকায় তাদের বাসা। একই এলাকার বাসিন্দা খলিলুর রহমানের ছেলে সোহেল আহম্মেদের সাথে তার তিন বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সোহেল পূর্ব বাড্ডায় কৃষি ব্যাংক রোডে হলি ভিশন স্কুলের পাশে দলিল লেখার কাজ করেন। জমির দলিলসংক্রান্ত কাজ করাতে গিয়ে ওই তরুণীর সাথে সোহেলের সখ্য গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সোহেল তরুণীকে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করে। তরুণী তাকে বিয়ের জন্য তাগিদ দিলে সোহেল নানা অজুহাতে সময় নিতে থাকে এবং বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিতে থাকে। এভাবে গত তিন বছর ধরে তাদের মধ্যে এই সম্পর্ক চলে। সম্প্রতি ওই তরুণী সোহেলকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে অস্বীকৃতি জানায় এবং নানা হুমকি দিতে থাকে। তরুণী বিষয়টি তার অভিভাবকদের জানান এবং আইনের আশ্রয় নেন।
এ ব্যাপারে বাড্ডা থানার ওসি জানান, ওই তরুণী ধর্ষণের অভিযোগে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সোহেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেফতারের পর সোহেলকে গতকাল কোর্টে প্রেরণ করা হয়। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর….১

স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর…১


আফরোজা হাসান


বার বার চেষ্টা করেও বইয়ের দিকে মনোযোগ দিতে পারছিল না আরভ। চোখ চলে যাচ্ছিলো সামনের সীটে বসে থাকা স্বাতির উপর। ট্রেন ছাড়ার পর থেকে গত দেড় ঘন্টায় এক মূহুর্তেও জন্য কথা বলায় বিরতি দেয়নি মেয়েটি। ক্রমাগত একজনের পর আরেকজনের সাথে ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে। এই হাসছে, এই কাঁদছে, এই অভিমান করছে, শঙ্কিত হচ্ছে আবার পর মূহুর্তেই নিজেই কাউকে আশ্বস্ত করছে। চোখের সামনে এইসব কর্মকান্ড চলতে দেখলে বইয়ের দিকে মন দেয়াটা কষ্টকরই বটে। হাতের বই বন্ধ করে সীটে একটু হেলান দিয়ে বসে ভালো মত তাকালো স্বাতির দিকে। খুবই সাধারণ একটি সুতির থ্রিপিস পড়েছে। দু’হাতে মেহেদির আল্পনা ছাড়া আর কোন গহনা বা প্রসাধনীর চিহ্ন নেই কোথাও। তবে লাল টুকটুকে ওড়নাটা মাথায় তুলে দেয়ার কারণে নববধূর মত লাগছে মেয়েটিকে। কার সাথে যেন কথা বলতে বলতে হেসে ফেললো স্বাতি। সাথে সাথে আরভের মনেহলো এমন হাসি যাকে আল্লাহ দিয়েছেন কোন কৃত্রিম প্রসাধনীর প্রয়োজন তার নেই! আরভের সাথে চোখাচোখি হলে ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে তুললো স্বাতি। আরভ চোখ ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরের তাকালো। ছুটে চলছে ট্রেন গন্তব্য পানে! অসুস্থতার কারণে বড় ফুপি আরভ ও স্বাতির বিয়েতে অংশগ্রহণ করতে পারেনেনি। এখনো ভীষণ অসুস্থ ফুপি। তাই পরিবারের অন্যান্যরা সবাই ঢাকা রওনা দিলেও স্বাতি আর আরভ চিটাগাং যাচ্ছে বড় ফুপির বাড়িতে। স্বাতি ট্রেনে যাবার বায়না ধরাতে আরভ আর আপত্তি করেনি।

দৃষ্টি বাইরে থাকলেও তার সহযাত্রীনি এত কি কথা বলছে সেটা শোনার চেষ্টা করলো আরভ। ফোনে বাবাকে বলছে, শোন নিয়মিত মেডিসিন নিতে যেন ভুল না হয়। মেডিসিন নেয়ার পর আমাকে ম্যাসেজ লিখে জানিয়ে দেবে মেডিসিন নিয়েছো। আর কোন কাজেই যেন অনিয়ম না হয় বলে দিচ্ছি। উল্টো পাল্টা হলে কিন্তু আমি ফিরে এসে তোমাকে কঠিন শাস্তি দেব সেটাও বলে রাখছি। আরেকটা কথা মামণির দিকেও কিন্তু খেয়াল রাখবে। দুজন মিলে কান্নাকাটি করবে না একদম। যদি আমি টের পাই তোমরা কান্না করেছো! তাহলে কিন্তু আমিও কান্না করবো বলে রাখছি। বলো তুমি চাও আমি কান্না করি? হুম! এমন আমিও চাই না তোমরা দুজন কান্না করো বুঝেছো?! আর তুমি এতক্ষণ ওয়াশরুমে কি করছিলে? যদি আমার সেলফোনের চার্জ শেষ হয়ে যেত তাহলে তোমার সাথে কথা বলতাম কিভাবে? সময়ের মূল্য ওয়াশরুমে গিয়ে ভুলে গেলে চলবে? আবার হাসো কেন তুমি? সেলফোনের চার্জ নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না। আমি তিনটা মোবাইল ভর্তি করে চার্জ নিয়ে এসেছি। একটার চার্জ শেষ হলে আরেকটা দিয়ে কথা বললো। আরভের একবার বলতে ইচ্ছে করলো, তিনটা মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গেলেও চিন্তার কিছু নেই। আমার কাছে যেটা আছে সেটা লোন দিতে কোনই আপত্তি নেই আমার। কিন্তু ইচ্ছেটা গোপন করে আবারো কথা শোনাতে মন দিলো। এখনো বাবাকে ধমকাচ্ছে তার স্বাতি কেন ওয়াশরুমে এতক্ষণ ছিল। বলে দিচ্ছে সর্বোচ্চ বিশ মিনিট থাকা যাবে ওয়াশরুমে।

কেমন যেন একটা সুখ সুখ আবেশ ছেয়ে গেলো আরভের মনের মাঝে। সব মেয়েরাই কি এমন অদ্ভুত রকমের আদুরে হয়?! আল্লাহ চাইলে তার নিজের যদি কখনো মেয়ে হয় সেই মেয়েটি কি স্বাতির মতোই আদুরে হবে? এমন ধমকের সুরে ওয়াশরুমে কতক্ষণ থাকবে সেটাও নির্ধারণ করে দেবে?!

বাড়ির সবার সাথে ফোনে কথা বলা শেষ করে আরভের দিকে তাকালো স্বাতি। গভীর মনোযোগ দিয়ে লিখছে কি যেন। একদম মুখোমুখি বসেছে সে তাই দেখার উপায় নেই কি লিখছেন উনি। এত মনোযোগ দিয়ে কি লিখছে? লেখা দেখতে ব্যর্থ হয়ে লেখকের দিকেই তাকালো! চেহারার মধ্যে কি অদ্ভুত আত্মনিমগ্নতা ছড়িয়ে গিয়েছে মানুষটার! মুগ্ধ না হয়ে পারলো না। খুব ইচ্ছে করতে লাগলো পাশে গিয়ে বসতে। কিন্তু নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছে সে। অকারণেই তর্ক জুড়ে দিয়েছিল ট্রেনে উঠার পর। দুষ্টুমির ছলে সেটা যে সিরিয়াস পর্যায়ে চলে যাবে মোটেই বুঝতে পারেনি। কথায় কথায় আরভকে বলে ফেলেছিল, তোমাকে বিয়ে করাই আমার ঠিক হয়নি। বাক্যেটি শোনা মাত্র দপ করে নিভে গিয়েছিল আরভের চেহারার আলো। শক্ত হয়ে গিয়েছিল চোখ মুখ। স্বাতি কিছু বলার আগেই কঠিন স্বরে বলেছিল, পুরো জার্নিতে তুমি আমার সাথে কোন কথা বলবে না। না আমি তোমাকে চিনি, না তুমি আমাকে চেনো। এরপর হাজারটা কথা বলেছে, অসংখ্যবার সরি বলেছে কিন্তু আরভের মুখ দিয়ে একটি শব্দও বের করাতে পারেনি। এজন্যই ফোনে কথা বলে কান ঝালাপালা করে দেবার চেষ্টা করেছে। যাতে বিরক্ত হয়ে কিছু বলে আরভ। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। বই পড়ছে, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকছে, এখন লিখতে বসেছে। কিন্তু কথা তো দূরে থাক একটা শব্দ পর্যন্ত বের করছে না মুখ দিয়ে বান্দাহ। এত কঠোর মানুষ হয়? কিভাবে এই লোকের সাথে সারাজীবন কাটাবে ভেবে কিছুটা শঙ্কিত বোধ করলো স্বাতি।

চলবে….

 

জিনের ভয় দেখিয়ে মেয়েদের ধর্ষণ : গ্রেফতার এক (মসজিদের ইমাম)

জিনের ভয় দেখিয়ে মেয়েদের ধর্ষণ : গ্রেফতার এক (মসজিদের ইমাম)


নারী সংবাদ 


মসজিদের ইমাম তিনি। পাশাপাশি স্থানীয় একটি মাদরাসার শিক্ষকও। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে স্থানীয় অনেকের অসুস্থতায় তিনি ঝাড়ফুঁক ও তাবিজ-কবজ দিতেন। ঝাড়ফুঁঁক নেয়াদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি। বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে ঝাড়ফুঁঁক ও জিনের ভয় দেখিয়ে সুন্দরীদের জোরপূর্বক ধর্ষণ করে আসছিলেন তিনি। বাদ যায়নি মাদরাসা ও মসজিদে আসা শিশুরাও। এমন অভিযোগে গত রোববার রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১। তার নাম ইমাম ইদ্রিস আহাম্মেদ (৪২)।

এক ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে দীর্ঘ সময় তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়ার পর রোববার মধ্যরাতে র‌্যাব-১ এর একটি দল দক্ষিণখান সৈয়দনগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার মোবাইল জব্দ করা হয়। ওই মোবাইলে ধর্ষণ ও বলাৎকারের অনেক ভিডিও ও ছবি পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।
গতকাল র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম। তিনি বলেন, দক্ষিণখানের স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি ও মাদরাসায় শিক্ষকতা এবং দীর্ঘ দিন দক্ষিণখান এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিশেষ প্রভাব বলয় তৈরি করেন ইদ্রিস আহাম্মেদ। প্রভাবকে পুঁজি করে দীর্ঘ দিন ধরে কৌশলে ধর্ষণ ও বলাৎকারের মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটিত করে আসছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে সম্প্রতি ভুক্তভোগী এক নারীর অভিযোগ আমলে নিয়ে ছায়াতদন্ত এবং গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে র‌্যাব-১। অনুসন্ধানের পর উঠে আসে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।
র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, অভিযুক্ত ইদ্রিস আহাম্মেদের বাড়ি সিলেট জেলায়। তিনি সিলেটের একটি মাদরাসা থেকে ১৯৯৮ সালে টাইটেল পাস করেন। এরপর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের একটি মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। ২০০২ সালে ঢাকায় এসে দক্ষিণখানের ওই মসজিদে ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে এলাকায় ঝাড়ফুঁঁক এবং তাবিজ-কবজ বিক্রি করেন। তার সাথে জিন আছে মর্মে প্রচার ও কুকর্মের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি সুন্দরী নারীদের মিথ্যা ঝাড়ফুঁঁক ও জিনের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে অনেক নারীই আত্মসম্মান এবং কুসংস্কারের কারণে তাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা কাউকে বলেননি।
তিনি বলেন, ইদ্রিস মসজিদে তার কক্ষে খেদমতের অজুহাতে কিশোরদের জোরপূর্বক বলাৎকার করেন। এ ছাড়া তিনি যে মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন সেখানকার ছাত্রদের মসজিদে ডেকে এনে বলাৎকার করে কৌশলে মোবাইলে অপকর্মের ভিডিও ধারণ করেন। জিন ও তাবিজ করার ভয় দেখিয়ে বিষয়টি গোপন রাখতে বলে পুনরায় ভিকটিমকে ধর্ষণে বাধ্য করেন। কোনো ভিকটিম অনৈতিক কাজে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে তাকে মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখানো হয়। এতে বাধ্য হয়ে ভিকটিম অনিচ্ছা সত্তে¡ও বারবার বলাৎকারের শিকার হয়েছে।
প্রথামিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, মসজিদের একটি বিশেষ কক্ষে তিনি ঘুমাতেন। তার সব অপকর্ম ওই কক্ষেই সম্পন্ন হতো এবং তার এই অপকর্মের ভিডিওগুলো সে তার খাদেমদের দিয়ে ধারণ করাতে বাধ্য করতেন। এ পর্যন্ত ইদ্রিস একাধিক নারীর সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন বলে স্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে মাকে হারালো অবুঝ শিশু তুবা

নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে মাকে হারালো অবুঝ শিশু তুবা


নারী সংবাদ(রুহুল চৌধুরী) 


কিন্তু তারপর একটি গুজব পাল্টে দিলো সব হিসেব-নিকেশ, গণপিটুনিতে প্রাণ গেলো এক মায়ের।

ছেলেধরা গুজবে কিছু মানুষের নিষ্ঠুরতা রক্তাক্ত করেছে স্নেহের আঁচল।
কিন্তু কেন এই পাশবিকতা? কেইবা রেনু? সে কি সত্যিই ছেলেধরা, নাকি মমতাময়ী এক মা ? কী বলছে স্বজন-প্রতিবেশীরা?
যদিও ছোট্ট তুবা এখনও জানেই না যে মা নেই, মা আর ফিরে আসবে না কখনই। আর কখনোই জাপটে ধরবে না বুকের ভেতর,কিনে দেবে না রঙিন জামা ও হরেক খেলনা।

আটষট্টি হাজার গ্রামের প্রতিটি মাঠ থেকে খুঁজে নিয়ে আসা, সবচেয়ে সুন্দর সরিষা ফুলের সবটুকু রেণু দিয়েও আর ফিরিয়ে আনা যাবে না মমতাময়ী এক রেনুকে তবে চাইলেই তো ফেরানো যায় মনুষ্যত্ববোধ।

তাসলিমা বেগম রেনু ৪০ বছরের সুন্দর নারী। পরিপাটি কাপড় পড়তেন, সুন্দর করে গুচিয়ে মানুষের সাথে কথা বলতে পারতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। মাস্টার্স করার পর বিয়ে হয়ে এক ব্যবসায়ীর সাথে। প্রথম কিছুদিন বেশ ভালোই চলছিলো সংসার। একবছরের মাথায় কোল আলো করে আসে এক ছেলে। ছেলে পেটে থাকা অবস্থায় স্বামীর আর তর সইলো না। জড়িয়ে গেলেন পরকীয়ার। বিষয়টি প্রথমে গোপনই ছিলো। কিছুদিন পর রেনু বুঝে পারে তার স্বামী আর তার নাই। তার প্রতি আর আগের আকর্ষণ নাই। তার দুঃখের জীবন তখনই শুরু । স্বামী ইচ্ছা মতো আচরণ করেন। এর মাঝেই আবার সন্তানসম্ভবা হয়ে যান আচমকা । স্বামী ততদিনে পুরোপুরি অন্য দিকে মজে গেছে। এবার একটা ফুটফুটে মেয়েও আসলো । মেয়ে জন্মানোর কিছু দিনের মধ্যেই সাংসারিক অশান্তি চরমে উঠলো। রেনুকে বাধ্য হয়ে ডিভোর্সের পথে হাঁটতে হলো । সেই থেকে সে একা তার একলা জীবন তরী। কতোবার ভেবেছেন আত্মহত্যার করবে । করতে পারেনি, মরতেও পারেনি। মরার মথা মনে হলেই সামনে ভেসে উঠে ছেলেমেয়ের মুখ। আহা এই ছেলেমেয়ে গুলোর যে আল্লাহ আর মা ছাড়া কেউ নেই।

বাবার বাসায় ভাইয়ের সংসারে কষ্ট করে মানিয়ে চলছে সে। ছোটখাটো একটা চাকরি যোগাড় করেছে। দেখতে দেখতে ছেলে কেজিতে পড়ছে । আর মেয়ের বয়স চার পূর্ণ হলো জুন মাসে। হঠাৎ একদিন মনে হলো মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করে দিলে কেমন হয়..? বছরের মাঝামাঝি সময় কোথায় ভর্তি করানো যায় ভাবছিলেন। বাড্ডার একটা প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ হতে পারে ভেবে সে এক দুপুরে ঐ স্কুলের গেটে দাঁড়ায়। ভিতরে ঢুকতে চাইলে আয়া ভিতরে ঢুকতে দেয় নি। তখন ভাবে ছুটি হলেই সে ভিতরে ঢুকবে। গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকলো একা-একা। এক ভদ্রলোক তাকে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন আপনি কে ? তখন সে তার নাম বললো “আমি রেনু”। আবার প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন এখানে কেনো আসছেন ? আপনি কি করেন? আপনার বাসা কোথায়? তার প্রশ্ন করার সময় আরো বেশ কিছু মানুষ জড়ো হয়ে গেলো। এতো মানুষ দেখে রেনু ভয় পেয়ে গেলো। সহজ প্রশ্নগুলোর ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারলো না। অবশ্য ডিভোর্স হওয়ার পর থেকেই কিছুটা মানসিক অবসাদে ভুগছিলো রেনু। কোথায় যেনো হারিয়ে গিয়েছিলো তার সমস্ত স্বতঃস্ফূর্ততা।

তার উত্তর শুনে উপস্থিত পাব্লিক তাকে ছেলে ধরা আখ্যা দিয়ে মুহুর্তেই তার প্রতি চড়াও হয়ে গেলো, সে সবাইকে বুঝানোর চেষ্টা করলো “আমি ছেলে ধরা না”। তাও কিছু উশৃংখল যুবক তার উপর হামলে পড়লো।

সে বললো, ” আমি বাসায় রেখে আমার দুইটা ছোট ছেলে-মেয়ে, দয়া করে আমাকে মারবেন না, আমি ভালো ঘরের মেয়ে”। কে শুনে কার কথা?

অতিউৎসাহীরা কোনভাবেই ছাড়তে রাজি নয়। হাকডাক দিয়ে জড়ো করে ফেলা হলো শতাধিক মানুষ। সবার উদ্দেশ্য একটাই একজন নারী ছেলে ধরাকে জীবনের মতো শায়েস্তা করবে । শুরু হলো বেধড়ক পেটানো । সে দৌড়ে পালাতে চেয়ে ছিলো তখন উশৃংখল জনগণ তাকে ধরে এনে উপর্যুপরি কিল ঘুষি, লাত্থি মারতে শুরু করলো। কিছু লোক লাটি দিয়ে বেধড়ক পেটালো, সে আর্তচিৎকার করতে লাগলো। কাউকেই থামাতে পারলো না । কেউ একজ এসে এই উশৃংখল উন্মাদ জনতাকে থামাবে ভাবছিলো সে। কেউ থামাতে চেষ্টা করলেও বাকীরা কর্ণপাত করেনি।

একের পর এক আঘাতে শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছিলো। একটা ছেলে লাফ দিয়ে বুকের উপর উঠে গেলো। তাখন হৃদপিণ্ডটা থমকে গেছে। আরেকটা ছেলে লাফ দিয়ে বুক আর গলার মাঝখানে আছড়ে পরলো। মাথায় আঘাতের পর আঘাতে সে পুরোপুরি বোধ শক্তি হারিয়ে ফেললো ততক্ষণে , এখন তাকে যতোই আঘাত করা হচ্ছে তার কোথায় কোন ব্যথা অনুভূত হচ্ছেনা। সে ক্ষীণ চোখ মেলে দেখতে পারছে তার উপর পাষণ্ডরা আঘাতের পর আঘাত করছে। তার কোনই কষ্ট হচ্ছে না। সে ততক্ষণে কষ্ট বেদনার অনুভূতি শূন্য হয়ে গেছে।

তার শুধু মনে পড়লো তার ছেলেকে স্কুলে রেখে এসেছে, মেয়েকে খেলনা দিয়ে খেলতে বসিয়ে এসেছে। ছেলেটা কিভাবে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরবে ? মেয়েটা মাকে ছাড়া এক রাত কারো সাথে ঘুমায়নি। আহা ফুটফুটে মেয়েটার কি হবে..?? কিছুক্ষণ পর সে আর জনতার হৈ-হুল্লোড় শুনতে পাচ্ছে না। অনুভব করছে শক্ত কোন ফ্লোরে শুয়ে আছে, রাস্তার ঝাঁকুনি তার মৃদু অনুভূত হচ্ছে। পৃথিবীর সমস্ত আলো নিভে গেছে। চোখ অন্ধকার ঘিরে ধরেছে । চোখ খোলার সামর্থ্য তার নেই । অস্তে অস্তে হৃদপিণ্ডের গ্রাফ নিচে নেমে যাচ্ছে, চোখ বেয়ে অনর্গল পানি পড়ছে। সে বুঝতে পারছে হায় দুনিয়া তাকে দূরে ঠেলে দিলো । কি হবে তার ছেলে মেয়ের ?

সারা শরীরে একটুও রক্তক্ষরণ নেই, ঠোঁটে দাঁতের আঘাতে সামান্য রক্ত বেড়িয়েছিলো তাও শুকিয়ে গেছে। তবে সারা শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। সাদা শরীর কালো হয়ে গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ নেই। গুলিতেও শরীর ঝাঁজরা হয়নি। তবুও আস্তে আস্তে হৃদপিণ্ডের গ্রাফ নিচে নেমে যাচ্ছে , ধমনিতে স্থবিরতা নেমেছে। অস্তে আস্তে শরীর শীতল হয়ে যাচ্ছে। হাত-পা কিছুই নাড়ানো যাচ্ছে না। কেউ একজন পরম যত্নে তাকে ডাকছে। বলছে তার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য আবে যমযম প্রস্তুত….

কিছুক্ষণ পর ডাক্তার ঘোষণা দিলেন রেনু আর বেঁচে নেই।

ময়নাতদন্তে দেখা গেলো রেনুর কষ্টে ভরা বুকের হাড় ভেঙ্গে হৃদপিণ্ডে ঢুকে গেছে, এ যেনো কষ্টের চির অবসান, মাথার মগজ নাক অবধি চলে এসেছে….

হায় দুনিয়া, হায় মানুষ, হায় জীবন । হায় সমাজ, হায় মানবতা, হায় মানবাধিকার, হায় অনুভূতি।
বাঙ্গাল তোমরা বেঁচে থাকো মানুষ নয় পশু হয়ে….!!!!

সুত্রঃ নিউজ দুইন্টিফোর & ফেসবুক।

 

সেই রুশ সুন্দরীকে তালাক দিয়েছেন মালয়েশিয়ার রাজা!

সেই রুশ সুন্দরীকে তালাক দিয়েছেন মালয়েশিয়ার রাজা!


নারী সংবাদ


মাত্র এক বছর আগেই তাদের বিয়ে হয়ে ছিল। রুশ সুন্দরীর সঙ্গে বিয়ের খবর দেশে ছড়াতেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। কিন্তু সুন্দরীর রূপের ছটাই বিভোর রাজা সমালোচনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে সিংহাসন ছেড়ে ছিলেন। কিন্তু এক বছর কাটতে না কাটতেই এবার সেই সুন্দরী স্ত্রী রিহানা ওকসানা ভোয়েভোদিনাকে তালাক দিলেন মালয়েশিয়ার রাজা পঞ্চম সুলতান মুহাম্মদ।

কিন্তু হঠাৎ এমন কঠিন সিদ্ধান্ত কেন নিলেন তিনি? সে ব্যাপারে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে সূত্র বলছে, রিহানার সঙ্গে এক অন্য পুরুষের আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস হওয়ার পরেই স্ত্রীকে ত্যাগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন সুলতান মুহাম্মদ।মুসলিম শরীয়া আইন অনুযায়ী, রিহানাকে তালাক দিয়েছেন সুলতান। এখন দুজনে আলাদা জায়গায় থাকছেন।

জানা গেছে, রিহানার প্রেমে পড়ে তাকে হঠাৎই বিয়ে করে ফেলেছিলেন সুলতান মুহাম্মদ। রিহার বয়স তখন ২৬ আর সুলতানের বয়স তার প্রায় দ্বিগুণ ৪৯ বছর। বিয়ে করার জন্য রুশ সুন্দরী ইসলাম ধর্মও গ্রহণ করেছিলেন। তিনি নাম বদলিয়ে রেখেছিলেন রিহানা ওকসানা পেত্রা। তাদের এই অসম বয়সের বিয়ে নিয়ে কম পানিঘোলা হয়নি। বিতর্কের অবসান ঘটাতে সুলতান মুহাম্মদ রাজ সিংহাসন পর্যন্ত ত্যাগ করেন।

গত বছর ৭ জুন তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু তাদের দাম্পত্যজীবন সূদুর-প্রসারী হলো না। এক বছর হতে না হতে ঘটে গেল বিচ্ছেদ। সূত্রের খবর, গত ১ জুলাই তাদের তালাকের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। বিচ্ছেদ চেয়ে সিঙ্গাপুর শরীয়া কোর্টে ২২জুন আবেদন করার পর বিচারক ওই দিনই চূড়ান্ত রায় দিয়ে দেন। তবে মালয়েশিয়ার রাজপরিবার থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।

জানা গেছে, তালাক নামার একটি কপি রিহানার কাছে পাঠিয়েছেন সুলতান মুহাম্মদ। তাদের একটি দু’মাসে শিশুসন্তান রয়েছে। ছেলের জন্মের পর ইনস্টাগ্রামে তার ছবি দিয়ে পোস্ট দেন রিহানা।

বিয়ের পর সুলতান ও রিহানার সংসার ভালোই কাটছিল। চলতি বছরের জানুয়ারির শুরু থেকে তাদের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। রাশিয়ার একটি টেলিভিশন রিয়ালিটি শো ‘ সেক্স ইন দ্য পুল’ -এ এক ব্যক্তির সঙ্গে রিহানাকে অন্তরঙ্গ দৃশ্যতে দেখা যায়।
তবে রিহানার সূত্রে দাবি করা হয়েছে, তাদের ঘর এখনো ভাঙেনি। রিহানার এক ঘনিষ্ঠজনের উদ্ধৃতি দিয়ে টেলিগ্রাফ অবশ্য বিয়ে ভাঙার বিষয়টিই নিশ্চিত করেছে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।
সেই রুশ সুন্দরীকে তালাক দিয়েছেন মালয়েশিয়ার রাজা! – ছবি : সংগৃহীত

 

সাজানোর সহজ নিয়ম “ঘর”


ঘরকন্যা


ঘর সাজানো শখ। অনেক কিছু থাকলে ঘর সাজানো সুন্দর হয় তা কিন্ত না। কিনতে পারা যায় না চাইলেও অনেক কিছু। কিন্তু চাইলেই একটু বুদ্ধি খাটিয়ে খুব কম জিনিস দিয়ে ঘর সাজানো যায়। জেনে নেই সস্তায় চমৎকার ভাবে ঘর সাজানোর কৌশলগুলোঃ

বই সাজানো
বই ঘরে থাকবেই তাই বইয়ে যত্ন নেওয়া হয় দরকার। ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে একই রঙের বইগুলোকে একসাথে করে সাজিয়ে নিন।

পর্দা পরিষ্কার রাখুন
অবশ্যই সারা ঘরের পর্দা পরিষ্কার রাখলে সেটাই ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবে।

ছবি দেওয়ালে লাগান
পছন্দের মত ছবি আপনি দেওয়া লাগাতে পারেন। এতে আপনার ঘর এর সুন্দর প্রশান্তির জায়গা মনে হবে।

গাছ ও ফুল
অন্যান্য ঘর সাজানোর জিনিসের তুলনায় ফুল এবং গাছ বেশ সস্তা। এই গাছ দিয়ে সাজিয়ে নিতে পারেন আপনার বাসাটি। গাছ ঘরকে রঙিন ও জীবন্ত করে তুলবে। জানালার ধার ঘেঁষে লতানো গাছ লাগানো যেতে পারে আর ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস না থাকলে গাছের বদলে রেখে দিতে পারেন একগুচ্ছ তাজা ফুল। ঘরের এক কোণে কয়েকটি তাজা ফুল রেখে দিলে নিমিষেই ঘর উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

একটি সাজানো পরিপাটি ঘর নিমিষেই আপনার মন ভালো করে দিতে পারে। বাড়িতে যারা থাকেন প্রত্যেকেরই দায়িত্ব থাকার জায়গাটি সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা। ঘর গোছানোর সময় খেয়াল রাখবেন যার ঘর গোছাচ্ছেন তার রুচি এবং পছন্দ সম্পর্কে। প্রতিদিন একটু একটু করে গোছানো যদি আপনার পক্ষে সম্ভব

 

একের পর এক ছাত্রী অপহরণে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা


দেশে একের পর এক ঘটছে ছাত্রী অপহরণের ঘটনা। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে মাদরাসার ছাত্রী অপহরণের ঘটনাও ঘটছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকেও ছাত্রী অপহরণের চেষ্টা হয়েছে সম্প্রতি। দেশে অপহরণের ঘটনা আগেও কমবেশি ঘটছে। কিন্তু সম্প্রতি ছাত্রী অপহরণের কয়েকটি ঘটনা কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে অভিভাবকদের মনে।

বিশেষ করে গত ২৯ জুন রাজধানীর আইডিয়াল স্কুলের সামনে থেকে সবার সামনে থেকে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অভিভাবকেরা। এ ছাড়া ১৩ জুলাই কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় সপ্তম শ্রেণীর এক মাদারাসাছাত্রীকে অপহরণ করা হয়। এ দুই ছাত্রীই গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ে অপহরণকারীদের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ দুই শিক্ষার্থীই জানিয়েছে, গাড়িতে তারা আরো মেয়ে ও শিশু দেখেছে, যাদের অপহরণ করা হয়েছে।
এ খবর অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেক দিন ধরে দেশে একের পর এক ধর্ষণ ও গণধর্ষণ শেষে হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে মেয়ে সন্তানদের মা-বাবা ও অন্য অভিভাবকদের মনে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের ছাত্রী ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অনেক ঘটনাও প্রকাশিত হচ্ছে অনেক দিন থেকে। একই সাথে বাড়ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রী অপহরণের ঘটনা। সব মিলিয়ে সার্বিক নিরাপত্তাহীনতা গ্রাস করেছে অভিভাবকদের।

মেয়ে সন্তান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বাইরে কোথাও গেলে বাসায় না ফেরা পর্যন্ত দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতার মধ্যে কাটাতে হয় মা-বাবাকে। এমনকি মা-বাবা সাথে করে মেয়েকে স্কুল-কলেজে পৌঁছে দেয়া আর নিয়ে আসার সময়ও অনিরাপদ বোধ করেন। কারণ অপহরণকারীরা সবার সামনে থেকে ছো মেরে গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে মেয়েদের। তা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছেও সন্তানকে নিরাপদ মনে করতে পারছেন না অনেকে।
অসহায় অনেক অভিভাবক পত্রিকা অফিসে ফোন দিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা লেখার অনুরোধ করেছেন। একজন অভিভাবক জানান, আমার মেয়েও রাজধানীর আইডিয়াল স্কুলের মুগদা শাখায় পড়ে। এ স্কুলের সামনে থেকেই যেভাবে একটি মেয়েকে অপহরণ করা হলো তাতে আমিও আমার মেয়েকে নিয়ে ভীষণভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। দয়া করে আমাদের জন্য কিছু একটা করেন। আমাদের কথা লেখেন। এসব যাতে বন্ধ হয় সেভাবে লেখেন। আমরা কোথাও আর নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারছি না।
গত ২৯ জুন দুপুরে রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মুগদা শাখার দশম শ্রেণীর ছাত্রী ফারাবি স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল বাসায় ফেরার জন্য। এ সময় একদল দুর্র্বৃত্ত আচমকা তাকে মাইক্রোবাসে তুলে সবার সামনে থেকে গাড়ি চালিয়ে চলে যায়। গাড়িতে তোলার পরই অচেতন করা হয় তাকে। এরপর গাড়ি কেরানীগঞ্জ পৌঁছার পর ফারাবি চেতনা ফিরে পেলে সুযোগ বুঝে গাড়ির দরজা খুলে গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে রক্ষা পায়। ফারাবি জানায়, গাড়িতে তার মতো আরো কয়েকটি মেয়েকে দেখেছে সে, যাদের অপহরণ করা হয়েছে।

১৩ জুলাই প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটে কুমিল্লার লালমাইয়ে। স্থানীয় ফয়েজগঞ্জ সিনিয়র মাদরাসায় সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী তাসলিমা ভোর ৬টায় নানার বাড়ি থেকে বের হয়ে কুমিল্লা-নোয়াখালী সড়ক সংলগ্ন খলিলপুর-বাইতুন নূর জামে মসজিদ মক্তবে যাচ্ছিল। এ সময় বোরকা পরিহিত এক মহিলা মুখে রুমাল দিয়ে চেপে ধরে তাকে মাইক্রোবাসে তোলে। সকাল ৭টার দিকে জামতলী এলাকায় পৌঁছলে মাইক্রোবাস থামিয়ে অপহরণকারীদের একজন (পুরুষ) রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিল। এ সুযোগে মহিলাকে ধাক্কা দিয়ে তাসলিমা মাইক্রো থেকে লাফিয়ে দৌড় দেয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করেন। তাসলিমাও জানিয়েছে, গাড়িতে সে দুইজন শিশুর কান্না শুনেছে।
গত ২৯ জুন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় অপহরণ করা হয় ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে। অপহরণের চার দিনের মাথায় ২ জুলাই মঙ্গলবার মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়। অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করে মেয়েটির পরিবার। পুলিশ ও মেয়েটির পরিবার গণমাধ্যমকে জানায়, উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের পেড়ি গ্রামের সোহেল (২৮) ওই ছাত্রীকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। গত ২৯ জুন সকালে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে সান্দিকোনা-সাহিতপুর সড়কের পটুয়াপাড়া এলাকা থেকে মেয়েটিকে সোহেল ও তার সহযোগীরা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠিয়ে নিয়ে যায়।

হবিগঞ্জের মাধবপুর থানায় গত ১২ এপ্রিল এক ছাত্রী অপহরণের অভিযোগ করা হয়। অপহরণের শিকার মেয়েটি লোকনাথ উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। ১২ এপ্রিল দায়ের করা অভিযোগে মেয়েটির মা জানান, ৯ এপ্রিল বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে একদল দুর্বৃত্ত তাকে অপহরণ করে। এর পর থেকে তার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
গত ১৬ জুন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মনি আক্তার (১২) নামে এক মাদরাসাছাত্রীকে অপহরণ করা হয়। মাদরাসায় যাওয়ার পথে বাগবাড়ি থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। সে উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের চারিগাঁও গ্রামের ইদ্রিছ আলীর মেয়ে এবং রসুলপুর মহিলা মাদরাসার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী।

সুত্র ঃ নয়াদিগন্ত

 

শিক্ষা-২


মনের জানালা 


পাকিস্তানে আজও যারা ১৯৭১ এ সঙ্ঘটিত যুদ্ধ বিষয়ে হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের ব্যপারে চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে আমি তাদের একজন’। বাকহারা হয়ে গেলাম। শুধু বলতে পারলাম, ‘আপনার তো তখনোও জন্ম হয়নি, হলেও হয়ত মায়ের কোলে দোল খাচ্ছিলেন। আপনি কেন নিজেকে দায়ী করছেন?’ কিন্তু আসলে আমি অনেক বেশি আপ্লুত বোধ করছিলাম। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরবর্তী প্রজন্ম, আমাদের দাদাদাদী নানানানীরা আমাদের রূপকথার পরিবর্তে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাতেন। আমাদের আত্মীয়স্বজন মুক্তিযুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণের জন্য প্রশংসিত হতেন, অহংকার করে নিজেদের আহত হবার কাহিনী বলতেন, নিহত বন্ধুজনের গল্প করতেন। আজ ৪৭ বছর পর এই নিয়ে অনেক আলোচনা গবেষণা তর্ক বিতর্ক অনেক কিছুই হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় গণমানুষের মনের অনুভূতিগুলোকে আমাদের মত করে আর কেউ উপলব্ধি করার সুযোগ পায়নি। আমার ছোট ভাইরাও নয়। মনে হল, আমার দাদা দাদী নানা নানী উপস্থিত থাকলে মনে প্রশান্তি অনুভব করতেন। মনে হল, সৎ চিন্তার ধারণকারী বাবামা সৎ চিন্তার বাহক সন্তান গড়ে তুলতে পারেন। তাঁরা যেমন ইসরাইলের অন্যায়ের বিরোধিতা করেছেন, তাদের সন্তান পাকিস্তানের অন্যায়ের বিরোধিতা করেছেন। আমরা কি আমাদের সন্তানদের এভাবে গড়ে তুলতে পারব?
সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যপার হল, আরব ক্রিশ্চানরা যেমন সালাম বিনিময় করে; ‘ইনশা আল্লাহ’, ‘মাশা আল্লাহ’ ইত্যাদি শব্দাবলী স্বাভাবিকভাবেই ব্যবহার করে; তিনিও দেখলাম স্বাভাবিকভাবেই সালাম দিলেন, ‘আবার দেখা হবে ইনশা আল্লাহ’ বলে বিদায় নিলেন। দুঃখ হল তাঁরা সত্যের এতটা কাছাকাছি থেকে কেবলমাত্র আভিজাত্যের অহমিকাবোধের কারণে সত্যকে গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক। তিনি নিজের নামটি পর্যন্ত বলেননি, কিন্তু তাঁর পরিচিতির দ্বিতীয় অংশটিই ছিল তাঁর ধর্মীয় পরিচয়। অথচ ক্যনাডায় প্রচুর বাংলাদেশীদের দেখেছি বাঙ্গালীত্ব এবং ইসলামের সকল চিহ্ন মিলিয়ে দেয়ার জন্য সে কি আপ্রাণ প্রচেষ্টা!
এজন্যই পশ্চিমে অবস্থানরত ইসলামিক স্কলাররা বলেন, ‘যারা এসব দেশে থাকতে আগ্রহী, সেসব মুসলিমদের উচিত এসব দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া। তাদেরই এসকল দেশে থাকা উচিত যারা এসকল দেশ ছেড়ে চলে যেতে চায়’। কারণ প্রথম শ্রেণীর লোকজন দুই এক প্রজন্মের পর ইসলাম থেকে সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমার এক ঈজিপশিয়ান-ক্যানাডিয়ান সহকর্মী ছিল। আপনারা হয়ত জানেন এদের অনেকেই দেখতে পুরোপুরি শ্বেতাঙ্গদের মত। শুভ্র ত্বক, সোনালী চুল। সে বিয়ে করেছিল এক শ্বেতাঙ্গ মেয়েকে। সুখে সংসার করছে দুই বাচ্চা নিয়ে। বসের সাথে, বন্ধুদের সাথে নিয়মিত পানশালায় যাতায়াত, মদ্যপান। একদিন কথাটা এক মিটিংয়ে আমার সামনে প্রকাশ হয়ে গেলে সে কেন যেন প্রচণ্ড লজ্জা পেল, লজ্জায় গাল গলা লাল হয়ে গেল। পরে কিচেনে কফি বানাতে গিয়ে দেখা হলে সে হঠাত অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলল, ‘আমার মা কিন্তু জুমায় যায়’। আমি বললাম, ‘বেশ, ভাল কথা। তুমি নামাজ পড় কিনা’। সে বেশ লজ্জা লজ্জা চেহারা করে বলল, ‘আমি নামাজ পড়তে জানিনা’। তারপর আর কথা খুঁজে না পেয়ে বলল, ‘তোমাদের তো কদিন আগে ঈদ গেল, হ্যাপি ঈদ’। কোনক্রমে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেল কিচেন থেকে। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম, ‘আহা, ছেলেটা ঈদে কি বলতে হয় সেটাও শেখেনি। এই দায় কার?’

 

শিক্ষা-১


মনের জানালা


ক্যানাডায় বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম এবং সংবাদ দেখেছিলাম। ইসরাইলে ইহুদীদের দুটি শ্রেণী রয়েছে। এদের একাংশ ধার্মিক এবং একাংশ রাজনৈতিক। যারা ধার্মিক তাঁরা বিবেকবান এবং ইসরাইলের রাজনৈতিক সম্প্রসারণবাদের বিরোধী।
তাঁরা শুধু মৌখিকভাবে বিরোধিতা করেই কর্মসম্পাদন করেন না বরং এই বিষয়ে সোচ্চার। এদের সন্তানদের মধ্য থেকে এক হাজার পাইলট সরকারের নির্দেশ সত্ত্বেও কোনপ্রকার ফিলিস্তিনি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানবেনা ঘোষনা করে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। তাদের অভিভাবকরা তাদের সমর্থনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ইসরাইলের ফিলিস্তিন বিষয়ক নীতির প্রতিবাদ জানিয়েছে। এসব খবর দেখেছি আর ভেবেছি আমরা তো প্রতিবাদ করার সাহসটুকুও রাখিনা! জেনেছি অনেক ইহুদী ইসরাইল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের স্বপ্নপূরণ হয়নি এই দুঃখে ঐ ভূখন্ড ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন অন্যত্র। তাঁরা এই অন্যায়ের কোন ভাগ চাননা। তাদের একজনের দেখা পেয়ে যাব ভাবিনি কোনদিন।
ক্যানাডায় দেখেছি ইহুদী সহকর্মীদের মাঝে যারা ধার্মিক ছিলেন তাঁরা কখনো মহিলাদের সাথে হ্যান্ডশেক করতেন না, হালালের ব্যপারে আমাদের অনেক মুসলিম কলিগদের চেয়ে ছিলেন অনেক বেশি সাবধান। এরা কাজের ব্যপারে অত্যন্ত আন্তরিক হতেন এবং লেখাপড়ার ব্যপারে অগ্রসর। অবশ্য যারা অধার্মিক ছিলেন তাদের কাহিনী পুরোই আলাদা।
কথাপ্রসঙ্গে বললাম বাবা ছোটবেলায় পাকিস্তানে পড়াশোনা করেছে, তারপর তো দেশবিভাগ হয়ে গেল। তিনি সাথে সাথে বলে উঠলেন, ‘পাকিস্তান বাংলাদেশের সাথে যা করেছে সেজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি। এমনটা হওয়া কিছুতেই কাম্য ছিলো না।
চলবে…

 

প্রবাসীর স্ত্রীকে নিজের বাসায় নিয়ে রাতভর ধর্ষণ


নারী সংবাদ


নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এক মাদরাসা ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। খড়িয়া মাদরাসার ছাত্রী ওই কিশোরীকে রাতভর একটি ঘরে আটকে রেখে রাতভর ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ধর্ষিতার মা ২২ জুন একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ধর্ষক রাকিবকে আটক করেছে।

পুলিশ জানায়, তার স্বামী প্রবাসে থাকেন এবং মেয়ে খড়িয়া মাদরাসার ছাত্রী। তারা আড়াইহাজার নাগেরচরে ভাড়া বাসায় থাকেন। একই বাড়ীতে ভাড়া থাকে ধর্ষক রাকিব (১৯) ও তার পরিবার। রাকিব প্রায় সময় ছাত্রীটিকে মাদরাসায় যাতায়তের পথে উত্যক্ত করতো।

২১ জুন রাতে ধর্ষক রাকিব মেয়েটিকে ফুসলিয়ে তার ঘরে নিয়ে যায়। তার বাসা সেদিন ফাঁকা ছিল। ওই বাসায় রাতভর তাকে আটকে রেখে তাকে জোরপূর্বক কয়েকবার ধর্ষণ করে। ভোর বেলা ধর্ষিতা কৌশলে রাকিবের ঘর থেকে বের হয়ে বাসায় গিয়ে তার মাকে সব খুলে বলে।

পরে ধর্ষিতার মা বাদী হয়ে রাকিবকে একমাত্র আসামী করে শনিবার রাতে মামলাটি দায়ের করেন।

নয়া দিগন্ত

 

সন্তান যতদিন ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতে না পারবে- ততদিন তার প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে

সন্তান যতদিন ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতে না পারবে- ততদিন তার প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে


প্যারেন্টিং


চৌদ্দ বছর বয়সী সাইম এবারই ক্লাস নাইনে ভর্তি হল। বরাবরই ভালো ছাত্র ছিল সে। কিন্তু ক্লাস নাইনে উঠার পর থেকেই তার আচার আচরণে কেমন যেন পরিবর্তন দেখা দিচ্ছিল। বিষয়টি বাবা-মা দু’জনেই বুঝতে পারলেও শুরুতে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। ভেবেছিল ছেলে বড় হচ্ছে, তাই হয়ত একটু রিজার্ভ থাকতে চাইছে।
সাইম বাসায় যতক্ষণ থাকতো, খুব কম কথাই বলতো অন্যদের সাথে। স্কুল থেকে এসেই সোজা নিজের রুমে ঢুকে যেত। আবার সন্ধ্যায় বের হয়ে যেত। প্রথম কয়েকদিন ঘন্টা খানেকের মধ্যে বাসায় চলে আসলেও এরপর রাত ৮টা/৯টার আগে বাসায় আসত না। এমনভাবেই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন অভিভাবকদের ডাক আসে সাইমের স্কুল থেকে। পরদিনই দু’জনই হাজির হন স্কুলে। সেখানে স্কুলের হেড মাস্টারের কথা শুনে যেন তাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। স্কুলের হেড মাস্টার জানান, সাইম প্রায় দিনই স্কুলে অনুপস্থিত থাকে। ক্লাস শিক্ষক জানান, সাপ্তাহিক পরীক্ষার সব কটিতেই তার মার্কস একেবারে কম।
বাসায় ফিরেই প্রথমে সাইমের রুমে ঢুকে সব কিছু ভালো করে দেখলেন তারা। পেলেন বেশ কয়েকটি সিগারেটের প্যাকেট। আর ফেনসিডিলের তিনটি খালি বোতল। তাদের আর বুঝতে বাকি রইল না যে, তাদের আদরের সন্তান মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে।
বাবা-মার বড় আদরের সন্তান রুপা। বড় চার ভাইয়েরও খুব আদরের একমাত্র বোন সে। স্কুল পাশ করে এবার কলেজে উঠেছে। ভাইদের সাথে বয়সের ব্যবধান একটু বেশিই। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনজন বিয়ে করে সংসারও করছেন। আর একজন করছেন চাকরি। সবাই এক সাথেই থাকেন। কিন্তু এর মধ্যেই রুপার মধ্যে একটা পরিবর্তন দেখা যায়। খুব চঞ্চল আর ভাইদের সাথে সারাক্ষণ ঝগড়া করা মেয়েটি কেন যেন হঠাৎ একেবারে চুপচাপ হয়ে যায়। বাসায় যতক্ষণ থাকে সারাক্ষণই রুমের দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। কেমন যেন শুকিয়েও যাচ্ছে মেয়েটি।
একদিন রুপার সেজ ভাই তেজগাঁও গেলেন অফিসের কাজে। সেখানে তিনি দেখলেন রুপা বেশ কয়েকজন বন্ধুর সাথে একটি গলিতে আড্ডা দিচ্ছে। বিষয়টি কেমন লাগল তার। কারণ, এখন রুপার থাকার কথা ছিল কলেজে। আর রুপার কলেজও এখানে না, মিরপুরে। আবার বন্ধুদের চেহারা দেখেও ভালো লাগল না। তিনি দূরে দাঁিড়য়ে দেখলেন রুপা কি করে। হঠাৎ দেখলেন কী একটা প্যাকেট নিয়েই সে তাড়াতাড়ি ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলছে। আবার বেশ কিছু টাকা বের করে দিচ্ছে।
রুপার সাথে কথা না বলেই তিনি কাজে চলে গেলেন। সন্ধ্যায় বাসায় এসে দেখেন রুপা আবার বেড়িয়েছে। তখন তিনি রুপার রুমে গিয়ে পড়ার টেবিলের ড্রয়ার খুলে দেখলেন ওই প্যাকট। খুলে দেখেন, সেখানে গাঁজা। বুঝতে বাকি থাকলো না যে রুপা কেন দিন দিন এমন আচরণ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে সন্তানের শারীরিক আর মানসিক বিকাশে বাবা-মায়ের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। সব বাবা-মা’ই চান তাদের সন্তান যেন সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠে এবং তাদের মঙ্গল হয়। কিন্তু তাদের অজান্তেই কোন কোন সন্তান বিপথে চলে যায়। হয়ে যায় মাদকাসক্ত। মূলত সন্তান যখন ছোট থাকে তখন বাবা-মায়ের চিন্তা-ভাবনা থকে সন্তানের স্বাস্থ্য এবং যতœ-আত্তির দিকে। কিন্তু সেই সন্তান যখন বড় হয় তখন সেই সন্তানকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনার পরিধিও বাড়তে থাকে। স্বাস্থ্য এবং পড়ালেখার পাশাপাশি বাবা-মাকে সন্তানের বন্ধু, স্কুল, খেলা সবকিছু নিয়েই ভাবতে হয়। স্কুলে কাদের সঙ্গে মিশছে? বন্ধুরা কেমন? স্কুলের বাইরে কোন বন্ধু আছে কিনা? যদি থাকে, তবে তারা কেমন? পাড়ার বন্ধুরা কেমন? বন্ধুদের মধ্যে কেউ নেশা করে কিনা? অথবা তাদের সন্তান নেশার খপ্পড়ে পড়লো কিনা? সবদিকেই নজর রাখতে হয় বাবা-মাকে।
মনোবিজ্ঞানী ডা. সাইদুর রহমান সোহাগ বলেন, সন্তান বড় হওয়ার সাথে সাথে আমরা অনেক বিষয় এড়িয়ে চলি। কিন্তু ভালো বাবা-মা হতে হলে সন্তান যতদিন বুঝতে না পারবে- কোনটাতে তার ভালো আর কোনটাতে তার খারাপ ততদিন সন্তানের প্রতি তীক্ষè নজর রাখতে হবে । তিনি বলেন, আমরা অনেক সময় সন্তানের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনি না। এতে তাদের মনে এক ধরনের দাগ লেগে যায়। প্রতিটি বাবা-মার উচিত সন্তানের সব কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনা। সন্তানের সাথে যত বেশি সময় কাটানো যায় ততই ভালো। তারপরও যতক্ষণ তার সাথে থাকা যায় ততক্ষণই তার সাথে কথা বলুন। তার ইচ্ছে-অনিচ্ছে, তার বন্ধু-বান্ধবদের খবর, টিচারের খবর, তার ভালো মন্দলাগা ইত্যাদি সব বিষয় নিয়ে কথা বলুন।
ডা. সোহাগ বলেন, সন্তানকে যে আপনি ভালোবাসেন তা সরাসরি প্রকাশ করুন। এতে সন্তান বাবা-মার প্রতি আরো বেশি নির্ভরশীল হবে এবং সব বিষয় তাদের সাথে শেয়ার করবে।
তার মতে সন্তানের সামনে কখনোই কোন অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। এজন্য কেউ যদি অপরাধ বা অন্যায় করে থাকে তবে তার পক্ষ নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া বাবা-মা নিজেরা যেন সন্তানের সামনে কোন মিথ্যে কথা না বলে। সন্তানকেও বুঝাতে হবে সে যেন মিথ্যে কথা না বলে।

সুত্রঃ বাসস।

 

কিভাবে অটিজম শনাক্ত করবেন?

কিভাবে অটিজম শনাক্ত করবেন?


শিশুর স্বাস্থ্যসেবা


অটিজমে আক্রান্ত শিশুকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে
অটিজম, এই শব্দটি বলতে অনেকে মানসিক রোগ বুঝলেও এটি মূলত এক ধরণের স্নায়ুবিক বিকাশজনিত সমস্যা। অটিজম আক্রান্তদের অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ ও সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকে।
যে কারো মধ্যে এই সমস্যাগুলো কম বা বেশি মাত্রায় থাকতে পারে। অটিজমের সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য কোন চিকিৎসা নেই। তবে দ্রুত অটিজম শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারলে আক্রান্তদের অনেকটা ঠিক করে তোলা সম্ভব বলে মত চিকিৎসকদের। এবার জেনে নেবো অটিজমের প্রধান ৯টি লক্ষণ।
১. ছয় মাস বা তার বেশি বয়সে স্বতঃস্ফূর্ত হাসি বা যে কোন আবেগ প্রকাশ করতে পারেনা।
২. ১২ মাস বয়সের মধ্যে আধো আধো কথা না বলা সেইসঙ্গে ইশারা বা হাত বাড়িয়ে কিছু চাইতে বা ধরতে পারেনা।।
৩. চোখে চোখ রেখে তাকাতে পারেনা।
৪. ভীড় এড়িয়ে একা থাকতে পছন্দ করে।
৫. অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারেনা।
৬. একই নিয়মে চলতে পছন্দ করে। কোন পরিবর্তন এলেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়।
৭.একই শব্দ বারবার বলতে থাকে বা একই আচরণ বারবার করে যেমন: একইভাবে হাত বা মাথা নাড়ানো।
৮. বিশেষ রং, শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ বা স্বাদের প্রতি কম বা বেশি মাত্রায় সংবেদনশীল হয়।
৯. কোন বিষয় বা বস্তুর প্রতি অতিমাত্রায় আগ্রহ দেখায়।
চিকিৎসকদের মতে সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে, বিশেষ করে স্কুলশিক্ষা বা প্রশিক্ষণ দিয়ে সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারলে আক্রান্তকে দক্ষ করে তোলা সম্ভব।

সুত্রঃ বিবিসি।

 

কই মাছ রান্নার সহজ ধাপ

কই মাছ রান্নার সহজ ধাপ


রেসিপি


কই মাছ আমাদের দেশীয় মাছ। বাজারে অবশ্য থাইল্যান্ডের কইও পাওয়া যায়। অনেকে দেশীয় কই ভালবাসেন আবার কেউ বা থাই কই কিন্তু কই মাছ যে স্বাদে অতুলনীয় সেটা সবাই স্বীকার করে। এখানে কই মাছের একটি সুস্বাদু রেসিপি দেওয়া হল।

কি কি লাগবে

কই মাছ ৪-৫ টি (৫০০ গ্রাম)
হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ
মরিচ গুঁড়ো ১.৫ (দেড়) চা চামচ
পেঁয়াজ কুচি ১/২ কাপ
কাঁচামরিচ ফালি ৪-৫ টি
ধনেপাতা কুচি ২ টেঃ চামচ
লবণ ১ চা চামচ
তেল ৪ টেবিল চামচ
পানি ১/২ কাপ

কয়েকটা ধাপ

ধাপ-১
প্রথমে কই মাছ ধুয়ে নিন।

ধাপ-২
মাছ আধা চা চামচ হলুদ গুঁড়ো আধা চা চামচ লবণে ভালো করে মেখে হালকা বাদামি করে ভাজুন।

ধাপ-৩
ভাজা হয়ে গেলে মাছগুলি তুলে রাখুন।

ধাপ-৪
এবার মাছ ভাজা তেলে হালকা করে পেঁয়াজ ভেজে নিন।

ধাপ-৫
বাকি হলুদ, মরিচ গুঁড়ো দিয়ে নেড়ে অল্প পানি দিয়ে ভালো করে নেড়ে ভাজা মাছ দিয়ে দিন।

ধাপ-৬
লবণ দিন।

ধাপ-৭
১/২ কাপ পানি দিয়ে ঢেকে ৩-৪ মিনিট রান্না করুন।

ধাপ-৮
কাঁচামরিচ, ধনেপাতা কুচি দিয়ে ২-৩ মিনিট পর নামিয়ে নিন।

পরিবেশন
ব্যস হয়ে গেল প্রিয় স্বাদের কই মাছ রান্না শেষ। এখন সুন্দর করে পরিবেশন করি পরিস্কার বাটিতে।

 

স্বাতীর রঙধনু

স্বাতীর রঙধনু


আফরোজা হাসান


বাচ্চা পালন নয়তো সহজ। এই বিষয়বস্তু কে কেন্দ্র করে একটা ধারাবাহিক আলোচনা সভার আয়োজন করা উচিত।
বাচ্চাদের জ্যুস বানানোর জন্য বাগান থেকে কমলা নিতে এসেছিল স্বাতী। পেছন থেকে বাক্যটা ভেসে এলে ঘুরে তাকিয়ে ননদ আজরা কে দেখতে পেয়ে হেসে বলল, হঠাৎ এমন ইচ্ছে উদ্রেক হবার পেছনে কারণ কি?
স্বাতীর পাশে এসে দাঁড়িয়ে আজরা বলল, তুমি তো জানোই আমার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই যা হয় তা হচ্ছে, চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। নতুন কোন পরিস্থিতি যখন সম্মুখে এসে দাঁড়ায় আমি হিমশিম খাই সেটা সামলাতে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে সেই পরিস্থিতিটা কত সুন্দর ভাবে হান্ডেল করা যেত তার শত শত আইডিয়া মাথায় কিলবিল করতে শুরু করে। এরচেয়েও বড় একটা সমস্যা হচ্ছে, কোন সংজ্ঞা বা উদাহরণের ভুল প্রয়োগ। এই যেমন একদিন খেলতে গিয়ে মুয়াজ প্রচন্ড জোরে আছড়ে পড়লো। আমি বিকট এক চিৎকার দিয়ে ছুটে যাচ্ছিলাম আরভ ভাইয়া আমাকে ধরে ফেলে বললেন, ওকে একাই উঠতে দে। জীবনের উত্থান পতনে সর্বদা যেহেতু তুই ওর সাথে সাথে থাকতে পারবি না। সেহেতু এখন থেকেই একা একা উঠে দাঁড়ানোর অভ্যাস হয়ে যাক।
স্বাতী হেসে বলল, এই কথাটা উনি বাচ্চাদেরকেও বলেন। বলেন, তোমরা যখন আছড়ে পরবে আমিও তোমাদের সাথে পরবো। কিন্তু উঠে তোমাদেরকে একাই দাঁড়াতে হবে। বাচ্চাদেরকে স্বনির্ভর বানানোর ব্যাপারে একদম হামাগুড়ি দেয়া যখন শুরু করে তখন থেকেই উনি ট্রেনিং দেয়ানো শুরু করেন। একটা ঘটনা মনে পরলে এখনো হাসি পায়। নাযীব তখন মাত্র নড়াচড়া শুরু করে। হাত বাড়িয়ে এটা সেটা ধরতে চেষ্টা করতো। একদিন ওর হাত থেকে খেলনা ছুটে দূরে গিয়ে পরেছিল। নাযীব হাত বাড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছিল কিন্তু পারছিল না। উনি পাশেই বসেছিলেন কিন্তু খেলনাটা এগিয়ে দিচ্ছিলেন না। কত রকমের কসরত করে সাড়ে সাত মিনিট লাগিয়ে নাযীব শেষ পর্যন্ত ওর খেলনাটা ধরতে পেরেছিল।
আজরা হেসে বলল, আমিও তো ভাইয়ার মতোই করতে চাই সবকিছু কিন্তু হয়ে যায় সব উল্টাপাল্টা। এই যেমন পরশু বিকেলে মুয়াজ কমলা গাছ থেকে কমলা পারার চেষ্টা করছিল। দেখছোই তো এই গাছের কমলাগুলো বেশ নিচুতেই ঝুলছে। কিন্তু তবুও মুয়াজের ধরাছোঁয়ার একটু বাইরেই। মুয়াজ বার বার লাফ দিয়ে চেষ্টা করছিল ধরার। আমিও পাশে বসে মনে মনে বলছিলাম, চেষ্টা চালিয়ে যাও সোনা আমার। কিন্তু অনেকবার চেষ্টা করার পরেও যখন ধরতে পারছিল না ধীরে ধীরে আঁধারে ঢেকে যাচ্ছিলো মুয়াজের চেহারা। এমন সময় ভাইয়া এসে পেছন থেকে মুয়াজকে ধরে সামান্য উঁচু করে ধরতেই মুয়াজ দুহাতে টেনে দুটা কমলা ছিঁড়ে নিলো। উফফ, সেকি খুশি বাচ্চার। আনন্দে লাফাতে লাফাতে ছুটে গেলো ভাইবোনদেরকে তার নিজ হাতে ছেঁড়া কমলা দেখাতে। ভাইয়া তখন আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুই বাচ্চাকে সাহায্য না করে চুপচাপ বসে আছিস কেন? দেখতেই তো পাচ্ছিলি মুয়াজ ধরতে পারছে না কমলা। এবং যতটূকুন উঁচুতে রয়েছে ওর পক্ষে ধরা সম্ভবও ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চারা কয়েকবার চেষ্টা করার পর ওদেরকে সাহায্য করতে হয়। তা না হলে চেষ্টা করে নিরাশ হবার কারণে চেষ্টা করার প্রতিই অনীহা চলে আসে মনে। আমি বললাম, তুমিই তো বলো বাচ্চাদেরকে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করতে দেয়া উচিত। ভাইয়া তখন হাসতে হাসতে বললেন, কিন্তু বাচ্চা কোন একটা কিছু করার চেষ্টা করছে। বেশ খানিকটা সফলও হয়েছে। কিন্তু তারপক্ষে একা সফল হওয়া সম্ভব নয় এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চাকে সাহায্য করতে হবে যাতে সে কাজটা করতে পারে। তা না হলে এমন ধরণের ব্যর্থতা বাচ্চার মনে চেষ্টা করার ব্যাপারে উৎসাহকে হ্রাস করে দেয়। কথা শেষ করে ভাইজান হাসতে হাসতে চলে গেলেন। আমি আর কি বলবো তখন। বোকার মতো দাঁড়িয়ে নিজের বোকামোর কথা ভাবতে লাগলাম। এখন তুমি হেসে আর আহত করো না আমাকে। পরামর্শ দাও কিভাবে তোমার মতো মা হবো।
কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিলো স্বাতী মাহিরাকে ছুটে আসতে দেখে বলল, কি হয়েছে? তুমি এমন করে ছুটছো কেন?
তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে গল্প করছো? ঐদিকে তো বিরাট কান্ড ঘটে গিয়েছে। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো মাহিরা।
কি কান্ড ঘটেছে? প্রশ্ন করলো আজরা।
মাহিরা বলল,বাচ্চারা যাতে খাবার নিয়ে ঝামেলা করতে না পারে সেজন্য ওদেরকে সাথে নিয়েই তো ওদের প্রতি বেলার খাবারের মেন্যু ঠিক করে দিয়েছিলেন আরভ ভাইয়া। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। আজ লেগে গিয়েছে যুদ্ধ।

 

শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজন সচেতনতা

শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজন সচেতনতা


নারী সংবাদ


গভীর রাত। সবাই ঘুমে অচেতন। হঠাৎ পাশের বাড়ির তিনতলা থেকে বাচাঁও বাচাঁও বলে চিৎকার করে ওঠে মধ্য বয়সী এক নারী। তাঁর চিৎকারে ঘুম থেকে জেগে ওঠে অনেকেই। মুহূর্তের মধ্যেই স্পষ্ট বোঝা গেল যে, মধ্যরাতে ঘরে ফিরে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে প্রহার করছে। এক পর্যায়ে ঐব্যক্তি চিৎকার করে কাটা চামচ দিয়ে তার স্ত্রীর চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দিলে, ঘরের বাইরে এসে আক্রান্ত নারী তার সর্ব শক্তি দিয়ে বলে বাচাঁও বাচাঁও বলে চিৎকার করতে থাকে। ওই মহিলার স্বামী মাঝে মধ্যেই তাকে এই ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন করে। অসহায় স্ত্রী মান-সম্মানের ভয়ে কাউকে কিছু না বলে নীরবে সব যন্ত্রণা সহ্য করে যায়।
আমাদের দেশে নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। শারীরিক নির্যাতন, যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, পাচার, খুন বা হত্যার মতো নানান ঘটনার খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যদিও দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী নারী ও শিশু নির্যাতন জঘন্য একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। বৈষম্যমুলক সমাজ কাঠামোর ভেতরে দেশের নারীরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তারা কর্মস্থলে বৈষম্য ও হয়রানীর শিকার হচ্ছে, ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে কিশোরীদের কেউ কেউ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। নারী ও কিশোরীদের অপহরণ করে সীমান্ত পার করে বিদেশে পাঁচার করা হচ্ছে।
এ ধরনের নির্যাতনের ফলে নারীর যেমন শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয় তেমনি তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘিœত হয়।
দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার অন্যতম কারণ হচ্ছে ‘যৌতুক’। সমাজে যৌতুক প্রথা একটি বড় অভিশাপ। আমাদের দেশে যৌতুক প্রথা যে সব কারণে এখন পর্যন্ত টিকে আছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, অর্থনৈতিক পরনির্ভরশীলতা, সামাজিক কুসংস্কার, বাল্য বিয়ে, রেজিষ্ট্রিবিহীন বিয়ে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা প্রভৃতি।
অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন (এএসএফ)-এর তথ্য অনুযায়ী গত ১৯ বছরে প্রায় দেড় হাজার নারী ও শিশু অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। এই অপরাধের দায়ে সাজা হয়েছে মাত্র ৩৪৩ জনের। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী অ্যাসিডের মামলায় গত ১৬ বছরে ১৪ আসামীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত কারও সাজা কার্যকর করা হয়নি। অ্যাসিড অপরাধ দমন আইন, ২০০২ অনুযায়ী ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার কথা বলা আছে।
জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। দেশটিতে নারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত কোটি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সূচকে গত এক দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। গত এক দশকে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে, নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত হয়েছে, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে নারীর প্রবেশ ঘটেছে।
তবে, দুর্ভাগ্যক্রমে এই অগ্রগতির যাত্রার মধ্যেও এদেশের নারীরা নানাভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১১ এর প্রতিবেদন দেখা যায়, এ দেশের ৮৭ শতাংশ নারী ও কন্যা শিশু সহিংসতার শিকার হচ্ছে। লিঙ্গভিত্তিক অসমতার সূচকে ১৮৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম।
বাংলাদেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ১৯৮৩ সালে প্রথম প্রণীত হয় নারী নির্যাতন (ন্যূনতম শাস্তি) অধ্যাদেশ ১৯৮৩ (১৯৮৩ সালের ৬০ নম্বর অধ্যাদেশ)। অন্যান্য আইনের ওপর প্রাধান্য দিয়ে প্রণীত এই আইনটিতে মোট নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিতকরণ ও এর শাস্তি নির্ধারণ করার বিধান আছে এবং ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ছাড়াও বখাটেদের উৎপাতের জন্য দন্ডবিধি আইন প্রচলিত আছে। প্রচলিত আইনে বখাটেদের যে শাস্তির বিধান আছে তা হলো- ঢাকা মহানগর পুলিশ আইনের ৭৬ ধারা ও দ-বিধির ৫০৯ ধারা অনুযায়ী এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদ-সহ ২ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ নম্বর ধারায় যৌন নিপীড়ন ও শ্লীলতাহানীর জন্য ১০ বছরের কারাদ- দেয়ার বিধান আছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এই নির্যাতন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সমাজে বসবাসরত সকল শ্রেণীর মানুষকে সচেতন করতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ তার সাড়ে সাত কোটি নারী ও কন্যা শিশুর জন্য অনুকূল পরিবেশে সৃষ্টি করতে পারে, যাতে তারা দেশের সামগ্রিক উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে।
সুত্রঃ বাসস

 

মাতৃকথন_১০

মাতৃকথন_১০


ফারিনা মাহমুদ


নিছক নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিতে লেখা শুরু করেছিলাম মাতৃকথন । খুব অবাক হয়ে খেয়াল করলাম ধীরে ধীরে বেশ অনেকেই আমাকে ইনবক্সে কমেন্টে প্রশ্ন করা শুরু করেছেন বাচ্চার ব্যাপারে । তাঁরা সবাই জানেন আমি ডাক্তার নই, শিশু বিশেষজ্ঞও নই। তাহলে আমার কাছে ক্যানো ? আমার মনে হয়েছে আমার কথাগুলো হয়ত খুব সাধারণ, আটপৌরে বলেই অনেকের সাথে মিলে গেছে । কাছের মানুষ ভেবেই তাঁরা আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, চাইছেন । এ এক পরম পাওয়া আমার জন্য । শুরু থেকে ব্যাপারগুলো এলোমেলো ছিলো । এখন ভাবছি একটু গুছিয়ে শুরু করবো । যদি একজনেরও একটু উপকার হয়, আমি ধন্য ।

#পৃথিবী_বদলে_গেছে…. যা দেখি নতুন লাগে !

দীর্ঘ অপেক্ষার পর কোলে যখন শিশুটা আসে,সে একা আসে না । নতুন মা বাবার জন্য নিয়ে আসে একরাশ আনন্দের বিপরীতে কিছু দুশ্চিন্তা, পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশন, নির্ঘুম রাত আর কি করবো কি করবো না এই দ্বিধার দোলাচল । এই নতুন পরিস্থিতিতে কিভাবে খাপ খাওয়াবেন বাবা মা ? কিভাবে কি করবেন দিশা পাওয়ার আগেই আরো কিছু সমস্যা হাজির হয় । মা আর বোনেরা এই করতে বলছেন তো শ্বাশুড়ি ননদ ঠোঁট উল্টে বললেন – যত্ত সব ঢং ! এইভাবে বাচ্চা পালে নাকি ? স্বামী বেচারা অটো হয়ে যান দু পক্ষের কথা শুনতে শুনতে । ফলাফল – সম্পর্কের অবনতি, রাগারাগি ঝগড়াঝাটি !

ব্যাপারগুলো ক্যানো ঘটে ?

ঘটে মূলত আমাদের অজ্ঞতা ও মানসিক প্রস্তুতির অভাবে । বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাবা মায়েরা নতুন বাচ্চা এবং প্রসুতি মায়ের ব্যাপারে খুব বেশি কিছু জানেন না । ভাবেন নানী দাদী তো আছেই ! কিন্তু মনে রাখতে হবে, দিনশেষে বাচ্চাটা যেহেতু আমার, তাই আমারই দায়িত্ব বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া । আমার মতে বাচ্চার জিনিসপত্র, নাম আর ঘর সাজানো নিয়ে মাথা ঘামানোর পাশাপাশি কিছু দরকারী বিষয় জেনে নেয়া জরুরি ।এতে করে সন্তান জন্ম পরবর্তী চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবেলা করা সহজ হয় ।

১) মায়ের পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশন :
প্রসব পরবর্তী ম্যাসিভ হরমোনাল চেঞ্জের কারণে নিজের ইমোশনের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না । প্রচন্ড রাগ, জিদ, অকারণে কান্না এই ধরনের কিছু অদ্ভূত উপসর্গ দেখা দেয় । মা নিজেও মোটামুটি তব্দা খেয়ে যায় তার নিজের আচরণে। অসম্ভব অসহায় লাগে নিজেকে । মনে হয় কেউ আমাকে বুঝতে পারছে না ।
অদ্ভূত ব্যাপার হছে, একটা সমময় নিজেকে খুব উপেক্ষিত আর বঞ্চিত মনে হয় । মনে হয় সবাই শুধু বাচ্চা বাচ্চা করে যাচ্ছে ক্যানো, আমি কি একটা মানুষ, না মানুষের ছায়া ! বিশেষত গর্ভাবস্থায় সবার আদর যত্ন পেয়ে এসে এই নতুন পরিস্থিতিতে হঠাত খুব খটকা লাগে ! ক্লান্ত অবসন্ন আপনার মাথায় আবার সারাক্ষণ সেই বাচ্চাকে নিয়েই টেনশন, বাচ্চাটাকে কারো হাতে দিয়ে শান্তি পাওয়া যায়না । মনে হয় চারপাশের সবাই ভুল, আমি ই শুধু ঠিক ।
কি করবেন : এই করনীয়র তালিকাটা মূলত অন্যদের জন্য, আরো আলাদা করে বললে বাবা দের জন্য । সাপোর্টিং পার্সন হসাবে তাদেরকে যথেষ্ট সংগ্রাম করতে হবে এই পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে, এইটা স্বীকার করে নিয়েই বলছি, আপনাদের দায়িত্ব মা কে সময় দেয়া, কাজ ভাগ করে নিয়ে বিশ্রামে সহায়তা করা । তাকে আঘাত করে বা দোষ দিয়ে কথা না বলা এবং কেউ যাতে বলতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া । তার রাগ জিদ ধরে আপনিও তার সাথে বাক বিতন্ডায় জড়াবেন না যেনো । তর্ক বাড়ছে বুঝলে ব্রেক নিন । কিছুক্ষণ বাইরে থেকে হেঁটে ফিরে আসুন । তাকেও কুল ডাউন টাইম দিন, নিজেও নিন । অবস্থা বেশি খারাপ হলে অবশ্যই চিকিত্সা সেবা নেবেন । তবে অবশ্যই আত্মীয়ও স্বজন, শ্বশুর বাড়ি বাপের বাড়ি এক করে বিচার সালিশ বসিয়ে আরো বড় বিপদ ডাকবেন না ।

২) ঘুম স্বল্পতা :
সদ্যজাত বাচ্চার পিছনে দিন রাত এক হয়ে যায় । বাচা খাওয়ানো, ঘুম পড়ানো, কাঁথা পাল্টানো, কান্না সামলানো এই লুপের মধ্যে পড়ে যায় মা । আমি নিজেই মাথায় চিরুনি দিয়েছিলাম ১৯ দিন পরে, এমনও দিন গেছে যখন ২৪ ঘন্টায় একবার খাবার সময় পেয়েছিলাম ! ভোজবাজীর মতো পাল্টে যাওয়া এই নিদ্রাহীন কান্ত জীবন ভীষণ প্রভাব ফেলে বাবা মায়ের উপরে, প্রভাব ফেলে সম্পর্কের উপরেও । মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে থাকে । বাবাদের জন্য অফিসে কাজে মন বসানো খুব কষ্টকর হয়ে যেতে পারে ।
কি করবেন : ঘুমাবেন । সোজা হিসাব হচ্ছে যখন ই একটু সুযোগ পাবেন, ঘুমিয়ে নেবেন । প্রথম ৬ সপ্তাহ বাচ্চার রুটিনের সাথে নিজে মানিয়ে নেয়া ছাড়া গতি নেই । বাচ্চা ঘুমালে এই করবো সেই করবো না করে নিজেও শুয়ে পড়বেন । হালকা তন্দ্রা বা বিশ্রামও আপনাকে অনেক ঝরঝরে করে তুলতে পারে । ২৪ ঘন্টায় কয়েকটা ছোট ন্যাপ নিলেও দেখবেন বাকি সময়টা অনেক ভালো কাটবে ।

৩) ক্ল্যাশিং প্যারেন্টিং স্টাইল :
ওই যে শুরুতে বললাম,বাবার বাড়ি থেকে বলেছে তেল ডলতে শ্বশুর বাড়ি বলছে না … এই ধরনের ক্ল্যাশ খুব কমন । এক একজনের বাচ্চা পালার তরিকা ও অভিজ্ঞতা এক এক রকম হয় । সবাই ভাবে সে ঠিক । এতে করে তৈরী হয় একটা সংঘাতময় অবস্থা । এর স্বীকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে মা । যেন মা ছাড়া দুনিয়ার সবাই সব জানে !
কি করনীয় : নিজেকে জানতে হবে কি করবো, কেন করবো । কনফিডেন্স রাখতে হবে নিজের উপরে । মানুষের বাচ্চা কোনো নতুন মডেলের গাড়ি না যে ম্যানুয়াল সাথে নিয়ে পৃথিবীতে আসবে । তবে হ্যা, সব গাড়ির কমন মেকানিজম থাকে । সেইটা জেনে রাখলে অন্যের কথা খুব বেশি আমল দেয়ার প্রয়োজন নেই যদি না যুক্তি যুক্ত মনে হয় । সবকিছুতে উদ্বিগ্ন হবেন না । তবে উদ্বিগ্ন কখন হতে হয় সেই বেসিক পয়েন্ট গুলো জানতে হবে।

৪) একান্ত সময় থেকে বঞ্চিত :
বাচ্চা হবার আগে প্রতি সপ্তাহে দুজনে রিক্সার হুড ফেলে ঘুরতে যেতেন? রাত জেগে মুভি দেখতেন ? আড্ডা দিতেন বন্ধুদের সাথে? আর এখন? নিজেদের বসে দুটো কথা বলার সময়ও নেই ! আর কি কোনদিন জীবন স্বাভাবিক হবে ?
কি করনীয় : জীবন স্বাভাবিক হবে আবার, তবে তার জন্য চেষ্টা করতে হবে দুজনকেই । বাচ্চার কাজগুলো দুজন মিলেই করুন । বাবা যখন বাচ্চার কাজ করতে চাচ্ছেন, মা তখন তাকে খবরদারি করা থেকে বিরত থাকুন, তাকে বুঝিয়ে দেখিয়ে দিন কি করলে ভালো হয় । তিনি একবারে না পারলেই গলা চড়াবেন না । আর একেবারে আপনার মতো করেই তাকে পারতে হবে এমন কথা নেই । একটু উনিশ বিশ হলে দুনিয়া উল্টে যায় না । ধৈর্য রাখুন, বাচ্চাকে একটা রুটিনে আনতে পারলে সব ই সম্ভব হবে । নিজেরা নিজেদের জন্য সময় বের করুন । সমঝোতা শক্ত করুন । একে অপরের পাশে থাকুন । একটু একটু করে প্রিয় জিনিসগুলো ফিরিয়ে আনুন ।
এই চাল্যেঞ্জ গুলো প্রথম ৬ সপাহে যদি ভালো মতো হ্যান্ডেল করতে পারেন, বিশ্বাস রাখেন, ৬ সপ্তাহের পর থেকে পরিস্থিতি অনেক অনেক ভালো হবে !
ফিরে আসবো পরের পর্বে, নবজাতকের যত্ন নিয়ে !

 

“ফ্রীল্যানসিং ফ্রি প্রশিক্ষণ” শুধুমাত্র নারীদের জন্য!

“ফ্রীল্যানসিং ফ্রি প্রশিক্ষণ” শুধুমাত্র নারীদের জন্য!


নারী সংবাদ


এগিয়ে যাচ্ছে যুগ ও প্রযুক্তি, এবং বর্তমান যুগে একজন নারীর জন্য আয় করার সবচেয়ে নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য উপায়ের একটি হচ্ছে ফ্রীল্যানসিং। অবিশ্বাস্য নয় সত্যি। শুধুমাত্র নারীদের জন্য। ফ্রি প্রশিক্ষণ দিবে CodersTrust সাথে চাকরীর সুযোগ বাড়বে আপনার।

দেরি না করে এখনই আবেদন করে ফেলুন ।

Course Name: Digital Marketing
Course Duration: 4 Months
Class Time: 3 Days/Week (9am-1pm) or (2pm-6pm)

এই প্রজেক্ট কাদের জন্য?

– শুধুমাত্র নারীদের জন্য (Students, Housewife, Job Seeker, Mothers, Unemployed)
– সর্বনিম্ন SSC পাস
– ঢাকায় অবস্থিত
– যাদের আর্থিক প্রয়োজন আছে, তারা অগ্রাধিকার পাবে
– বেসিক ইংলিশ ও কম্পিউটার জানা থাকতে হবে
– বয়স ১৮ – ৩৫

গত ৫ বছরে CodersTrust প্রশিক্ষণ দিয়েছে হাজারো মানুষদের, কিন্তু আমরা চাই আমাদের দেশের নারীরাও এর অংশ হোক, হয়ে যাক স্বাবলম্বী।

তাই এই প্রজেক্ট, যেন যেই নারীর ইচ্ছা আছে স্বাবলম্বী হওয়ার, সে যেন নির্ভয়ে, কোনো খরচের চিন্তা ছাড়াই, ফ্রি আমাদের প্রজেক্টের অংশ হতে পারবে।

৩টি রাউন্ডে বাছাই করা হবে, ১ম রাউন্ডে আবেদন করার জন্য নিম্নোক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করুন।

***বনানীতে ফ্রি কোর্সে অংশগ্রহণ করতে যোগাযোগ করুন,
ঠিকানাঃ

কোডার্সট্রাস্ট মেইন ক্যাম্পাস (বনানী ক্যাম্পাস) বাড়িঃ৮২ রোডঃ১৯/এ, ব্লক- ই বনানী ঢাকা।

ওয়েব সাইট ঠিকানাঃ
https://coderstrustbd.com/all-courses/

 

সফররত বান কি মুনের স্ত্রীর প্রয়াস স্কুল পরিদর্শন

সফররত বান কি মুনের স্ত্রীর প্রয়াস স্কুল পরিদর্শন


নারী সংবাদ


সফররত জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের স্ত্রী ইও শুন তায়েক আজ বুধবার সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় প্রয়াস স্কুল পরিদর্শন করেছেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ কথা জানানো হয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জুয়েনা আজিজ, পররাষ্ট্র্রমন্ত্রীর স্ত্রী বেগম সেলিনা মোমেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
আমন্ত্রিত অতিথিরা প্রয়াস স্কুলে এসে পৌঁছলে কেন্দ্রীয় প্রয়াসের নির্বাহী পরিচালক ও অধ্যক্ষ কর্নেল মোঃ নুরুল হুদা তাঁদেরকে স্বাগত জানান এবং প্রয়াসের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন। ইও শুন তায়েক প্রয়াসের আর্লি চাইন্ডহুড ডেভেলপমেন্ট (ইসিডিপি) প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরে তিনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে আন্তরিক সময় কাটান।
উল্লেখ্য, প্রয়াসের শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অতি অল্প সময়ের মধ্যেই প্রয়াস একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
পরে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ বিশেষ শিশুদের পরিবেশিত মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
সুত্রঃ (বাসস)।

 

চুপ করে থাকো,কাউকে বলো না! (পর্ব-৩)

চুপ করে থাকো,কাউকে বলো না!
(পর্ব-৩)


রাহনুমা সিদ্দিকা


নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শিশুকে শেখান-

আপনার শিশুকে/ কিশোর সন্তানকে ধীরে ধীরে তার বয়স উপযোগী sexual education আপনাকেই দিতে হবে, নাহলে কেউ তাকে বিকৃত ধারণা দিয়ে তাকে নির্যাতন করার সুযোগ নিতে পারে। একদিনে সব শেখানোর চেষ্টা করবেন না।

১) শিশুকে তার প্রত্যেকটি গোপন অঙ্গের নাম জানান। কোন অঙ্গগুলো প্রকাশ করা যাবে কোনগুলো গোপন রাখতে হবে তার পুরোপুরি জ্ঞান তাকে দিতে হবে। আপনার শিশুকে বোঝান- কোনটি ‘ভালো আদর’ কোনটি ‘মন্দ আদর’। কেউ তাকে ‘ভালো আদর’ করলে কোন সমস্যা নেই। ‘মন্দ আদর’ করলেই সাথে সাথে বাবা/ মা/ বাসার বড় কাউকে জানাতে হবে।

২) তাকে দু’হাত ছড়িয়ে দাঁড়াতে বলুন। সে যাদের পছন্দ করবে না তাদেরকে যেন কখনো এই ত্রিভূজের মধ্যে আসতে না দেয়। (ছবিটি ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স এর ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে।)

৩) তাকে আরো বলতে পারেন- তোমার শরীরের তিনটি জায়গা (নিচের ছবিতে চিহ্নিত) আছে, অনেক বড় বিপদ ঘটতে পারে যদি কেউ এগুলো মন্দভাবে ধরে। তাকে এ-ও বুঝিয়ে বলতে পারেন- কখনো কখনো গোসল করিয়ে দেয়ার সময় মা হয়তো ধরতে পারে। অসুখ হলে বাবামায়ের উপস্থিতিতে ডাক্তার ধরতে পারে। ‘ভালো আদর’ করার জন্য কখনো কেউ জড়িয়ে ধরতে পারে। কিন্তু তুমি যখনই বুঝবে কেউ ‘মন্দ আদর’ করবার জন্য ধরেছে তাকে জোরে ‘না’ বলতে হবে। যদি সে না শোনে তাহলে চিৎকার দিতে হবে, সে যে-ই হোক না কেন আর তাকে তুমি যতই ভালোবাসো না কেন। সেই জায়গা থেকে সরে নিরাপদ কোন জায়গায় চলে আসতে হবে। অবশ্যই মা কিংবা বাবা যাকে তুমি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করো তাকে বলে দিতে হবে। (আইডিয়াটি ‘সত্যমেভ জয়তে’র চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ’ নিয়ে করা এপিসোডের ওয়ার্কশপ থেকে নেয়া হয়েছে।)

৪) আপনার শিশুকে শেখান- যে সিক্রেটের সাথে খারাপ কাজ জড়িয়ে থাকে সে ‘সিক্রেট’ বলে দিতে হয় নাহলে বিপদ হয়।

৫) তাকে বলুন, যারা ‘মন্দ আদর’/ ‘খারাপ আদর’ করবে তারা কখনো ভালো মানুষ নয়, তাদের ভালোবাসা যাবে না।

৬) অনলাইনে সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ নিয়ে শিশুদের উপযোগী ভালো ভালো সচেতনতামূলক ওয়ার্কশপের ভিডিও পাবেন, শিশুকে সাথে নিয়ে সেগুলো দেখান। আপনার শহরে কোন ওয়ার্কশপ হলে সেগুলোতে শিশুকে নিয়ে যেতে পারেন।

আপনার শিশুর সবচেয়ে ভালো বন্ধু হন। যেন সে তার সব কথা আপনার সাথে নিঃসঙ্কোচে শেয়ার করতে পারে। তাকে একথা জানান যে, তাকে আপনি ভালোবাসেন ও বিশ্বাস করেন, আপনি সবসময় তাকে সাহায্য করবেন। শিশুর স্কুলের শিক্ষকদের সাথে পরিচিত হবেন। কোন শিক্ষক কেমন, কে তাকে আদর করে, তাকে কী কী দেয়, সে স্কুলে কী কী করে- গল্পচ্ছলে শিশুর কাছ থেকে জেনে নিন।

ধরুন, আপনার শিশু কারো দ্বারা সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজড হলো,

এখন আপনার করণীয় কী?

১) আপনার শিশু যদি কারো নামে আপনার কাছে নালিশ করে, শিশুকে বিশ্বাস করুন। শিশুরা সাধারণত এই ব্যাপারে মিথ্যা বলে না। আপনি অবিশ্বাস করলে ভবিষ্যতে হয়তো আর কখনোই শিশুটি আপনার সাথে শেয়ার করবে না।

২) আপনার শিশুকে এটা বুঝতে দেয়া যাবে না তার সাথে খুব ভয়ংকর কিছু ঘটে গেছে। আপনি আপনার শিশুর সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করুন, অস্থির হয়ে যাবেন না।

৩) নিয়মিত একজন ভালো শিশুমনোবিজ্ঞানীকে দিয়ে কাউনসেলিং করান।

৪) শিশুটি যদি খুব গুরুতর নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও শিশু মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নিন। কখনোই শিশুটিকে বকাবকি করা যাবে না। বরং তাকে আশ্বস্ত করতে হবে যা হয়েছে তা কোনভাবেই তার অপরাধ নয়, অপরাধ ওই ব্যক্তির। ব্যাপারটি যদি আদালত পর্যন্ত যায়, বিশেষ ব্যবস্থায় মনোবিজ্ঞানীর মাধ্যমে শিশুর জবানবন্দী নিতে হবে, কখনোই শিশুকে জনসমক্ষে ‘তার সাথে কী হয়েছে’ এর বর্ণনা দিতে বলা যাবে না। এসব শিশুর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

৫) ভিকটিম শিশুটি যদি খুব অল্প বয়েসী হয়- তাহলে হয়তো সে আপনাকে নির্যাতনকারীর কথা বলতে পারবে না। আপনাকে আগেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুকে একাকী যার-তার কোলে দেবেন না। নিচের লক্ষণগুলো দেখা গেলে সাবধান হোন, প্রয়োজন হলে ডাক্তার দেখান।

তবে এগুলো অন্য কারণেও হতে পারে,

• শিশুর গোপনাঙ্গে কোন ক্ষত বা অস্বাভাবিক ফোলা ভাব,
• মুখে ক্ষত,
• পেট খারাপ,
• খাওয়ায় অরুচি,
• বিশেষ কোন ব্যক্তিকে দেখে ভয় পাওয়া,
• হঠাৎ চমকে ওঠা ইত্যাদি।

নির্যাতনকারী কদাচিৎ অচেনা মানুষ হন, অধিকাংশ সময় সে নিকট বা দুরসম্পর্কের আত্মীয়, শিক্ষক, পরিবারের লোক, পারিবারিক বন্ধু, প্রতিবেশী, কাজের লোক ইত্যাদি হন। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে- কেবল সন্দেহ করে অহেতুক কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না, এতে ব্যক্তিগত সম্পর্ক খারাপ হতে পারে। আবার, নিশ্চিত হলে লজ্জায় চুপ করে থাকবেন না, সে আপনার যত ঘনিষ্ট বা সম্মানিত জনই হোক না কেন। পারিবারিকভাবে শালিস করা গেলে ভালো কিংবা আইনি সহায়তা নেবার প্রয়োজন হলে নিন।

আমরা তো এখন আধুনিকতার দোহাই দিয়ে অনেক বিকৃতিকেই স্বাভাবিকভাবে নেয়া শুরু করেছি। ভাবলে ভেতরটা হিম হয়ে আসে- একসময় হয়তো আমরা চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ, পেডোফিলিয়া এবং ‘অজাচার’ (ইনসেস্ট) এর মতো জঘন্যতম বিকৃতিগুলোকেও স্বাভাবিক ভাবে নিতে শুরু করবো।

আপনার আমার নীরবতাই হাজারো শিশুর নির্যাতিত হওয়ার পথ সুগম করে দেবে। আসুন, এদের মুখোশ খুলে দিই সভ্য সমাজে, ধিক্কার দিই, কঠোর আইন প্রণয়ন করি, আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড় করাই, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করি। সুস্থ-স্বাভাবিক-নিরাপদ শৈশব- প্রতিটি শিশুর অধিকার! আমাদের শিশুরা বেড়ে উঠুক নিবিড় পবিত্রতায়… আল্লাহর কাছে সে দোয়া রইলো।

লেখায় ব্যবহৃত তথ্যের রেফারেন্স ও গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু লিঙ্ক:

১) শিশু যৌন নির্যাতনরোধে বাংলাদেশে প্রচলিত আইন ও সহায়তা কেন্দ্রসমূহ সম্পর্কে জানতে এই লেখাটি পড়ুন।

২) Child Sexual Abuse – উইকিপিডিয়া

৩) ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স বাংলাদেশ এর ওয়েবসাইট

৪) যেভাবে একজন পেডোফাইলকে চিহ্নিত করবেন

৫)নিকটজনের কাছেই শিশুরা বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার (প্রথম আলো)

৬) নিজ ঘরেই যৌন নিপীড়নের শিকার বাংলাদেশের যে শিশু মেয়েরা (বিবিসি বাংলা)

৭) সত্যমেভ জয়তে’র পুরো এপিসোডটি

৮ ) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ (সংশোধিত)

ফুটনোট[১]
সম্রাট বাবুরের আত্মজীবনী ‘বাবুরনামা’ পড়ছিলাম।ভাবি নি সেখানেও পেডোফাইলদের দেখা পেয়ে যাবো। বাবুর লিখেছেন, “এ কুৎসিত প্রথা দেশময় এভাবে ছড়িয়ে পড়েছিলো যে প্রত্যেক সমর্থ পুরুষই ছেলে রাখতো। এমন কি এরূপ ছেলে রাখাকে গর্বের কাজ মনে করা হতো এবং না রাখাকে লোকে অপৌরুষের চিহ্ন বলে বিবেচনা করতো।”
এমনকি, বাবুর নিজেও স্বীকার করেছেন এক কিশোরের প্রতি তার আসক্তির কথা। তবে তার ওই ‘আসক্তি’ কোনো ‘সম্পর্কে’ রূপান্তরিত হয় নি বলেই মনে হলো। তেমন কোন বর্ণনা নেই।
ফুটনোট[২]
হুমায়ূন আহমেদের ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ছবিতে আমরা শিশু-পতিতাদের কীভাবে ব্যবহার করা হতো দেখেছি। দেখেছি-ইমতিয়াজ আলীর ‘হাইওয়ে’ চলচ্চিত্রে , যেখানে নায়িকাটির শৈশবে তার ‘আঙ্কেল’ কর্তৃক শারীরিকভাবে বারবার লাঞ্ছিত হওয়ার প্রসঙ্গ এসেছে, সেই যন্ত্রণা কীভাবে তাকে জীবনভর তাড়িত করেছে তাও দেখানো হয়েছে। অনেকদিন আগে দেখা আরো একটি চলচ্চিত্র ‘মিসটিক রিভার’ এ দেখেছিলাম পেডোফাইলরা কীভাবে শিশুদের ব্যবহার করে। ‘ফরেস্ট গাম্প’ মুভিতেও দেখা যায় শৈশবে মেয়েটি তার পিতার দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে। বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন শৈশবে তার চাচা ও মামা কর্তৃক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা।
ফুটনোট[৩]
আমাদের তথাকথিত আধুনিক পরিবারগুলোতে হরহামেশা রগরগে দৃশ্য সম্বলিত হিন্দি/ ইংরেজি চলচ্চিত্র, নাটক, বিজ্ঞাপন, মিউজিক ভিডিও চলছে। শিশুর সামনেই। কেউ কিছু মনে করেন না। তো, যে পরিবার শিশুকে ইমপ্লিসিটলি এই শিক্ষাই দিচ্ছে- ‘এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার’ সে পরিবারের শিশুকে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা খুবই সহজ। এমনও হতে পারে, শিশুটি পুরো ব্যাপারটাকে খুব স্বাভাবিকভাবে নেবে, পরিবারকে জানানোর প্রয়োজনও বোধ করবে না। নৈতিকতার শিক্ষা শিশু পরিবার থেকেই পাবে, না?

*****[পড়ার জন্য ধন্যবাদ। প্রাসঙ্গিক আলোচনা একান্তভাবে কাম্য। নিজে সচেতন হন, অপরকে সচেতন করুন। একমত হলে শেয়ার করুন।]*****

লিখেছেন-রাহনুমা সিদ্দিকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

চুপ করে থাকো,কাউকে বলো না! (পর্ব-২)

চুপ করে থাকো,কাউকে বলো না!
(পর্ব-২)


রাহনুমা সিদ্দিকা


কীভাবে একজন নির্যাতনকারীকে চিনবেন?

কেন কিছু মানুষ- এই ঘৃণ্য আচরণটি করে?

বয়স, চেহারা, লিঙ্গ, পেশা ভেদে একজন শিশু-যৌননির্যাতনকারী যে কেউই হতে পারে। সুতরাং তাকে চেনা তত সহজ নয়। এরা শিশুদের সাথে খুব সহজে মিশে যেতে পারে। সাধারণত গল্প বলে ও উপহার দিয়ে প্রথমে এরা শিশুদের ভালোবাসা ও বিশ্বাস অর্জন করে নেয়, এরপর নিজেদের উদ্দেশ্য সাধন করে। খুব পরিকল্পিতভাবে এগোয়।

আমরা পেডোফিলিয়ার কথা জানি। এটা একটা সেক্সুয়াল ডিজঅর্ডার। পেডোফিলিয়ার রোগীরা কেবল শিশুদের (যারা এখনো বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছোয় নি) প্রতি আসক্ত থাকে। কেন কিছু মানুষ- এই ঘৃণ্য আচরণটি করে- এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, যেসব শিশু শৈশবে দীর্ঘসময় ধরে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো এদের কেউ কেউ যৌবনে পেডোফাইলে পরিণত হয়।

পেডোফাইলদের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যেমনঃ এরা প্রধাণত হয় পুরুষ (তবে কদাচিৎ নারীও হতে পারে), সমকামীদের মধ্যেও পেডোফিলিয়ার কিছু লক্ষণ দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে এদের তেমন সখ্য থাকে না বরং এদের সখ্য থাকে শিশুদের সাথে, এরা শিশুদের সাথে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করে।

এখানে, স্মর্তব্য যে, সব পেডোফাইল শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন করে না এবং সব শিশু যৌন নির্যাতনকারীই পেডোফাইল নয়।

নির্যাতনকারী শিশুকে সাধারণত যে কথাগুলো বলে

এটা তোমার আমার মাঝে একটা ‘সিক্রেট’, কাউকে বলা যাবে না। (বাচ্চারা এতে মনে করে তাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।)
আসো আমরা বর-বউ খেলি/ বা, ওই মজার খেলাটা খেলি।
তুমি যদি এটা তোমার মাকে/বাবাকে বলে দাও আমি তোমাকে/ তাদেরকে মেরে ফেলবো।
তুমি বলে দিলেও তোমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।
সবাই তোমাকেই খারাপ ভাববে, সবাই তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে।
তুমি যদি আমার কথা মতো কাজ না করো আর কোনদিন আমি তোমাকে ভালোবাসবো না।

আপনার শিশুকে রক্ষার্থে আপনার করণীয়

কখনো যদি দেখেন/ নিশ্চিতভাবে জানতে পারেন কোন প্রাপ্তবয়স্ক লোক/মহিলা আপনার শিশুকে ‘আমার বউ’/ ‘আমার বর’ বলে সম্বোধন করছে, কঠোরভাবে তাকে নিষেধ করে দেবেন।
আপনার শিশুকে কোন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতি অস্বাভাবিকভাবে আকৃষ্ট দেখলে তার ব্যাপারে সাবধান হোন।
কখনো আপনার শিশুকে কারো বাসায় যেতে/ কারো কোলে বসতে/ কারো পাশে বসতে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাধ্য করবেন না। বরং তার কাছ থেকে অনীহার কারণ জেনে নিন আদর করে। শপিং মলে দোকানের স্টাফদের বদলে নিজেই শিশুকে পোশাক পরা/ ট্রায়াল দেয়ায় সহায়তা করুন।
আপনার শিশু যদি মাঠে খেলতে যায়, খেয়াল রাখুন সে কাদের সাথে খেলে। মাঠে বড় ছেলেরাও খেলতে যায়, এদের দ্বারাও নির্যাতিত হতে পারে আপনার শিশু। (আমরা হয়তো কল্পনাও করতে পারবো না- বর্তমানে CSA এর প্রণোদনা যোগানোর জন্য ইন্টারনেটে কত জিনিস ছড়িয়ে আছে। ‘শিশুপর্নোগ্রাফি’ খুব অপ্রচলিত কিছু নয় বাংলাদেশে। সমাজে আরো অনেক ‘টিপু কিবরিয়া’ আছে।)
আপনার শিশুকে যদি দেখেন সে তার বয়সের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ sexual behavior জানে, এবং তার বিভিন্ন গোপনাঙ্গকে বিকৃত/অদ্ভুত নামে (কোনো স্ল্যাং) চিহ্নিত করছে, তাহলে তার কাছ থেকে জেনে নিন সে এগুলো কোথা থেকে শিখেছে। রেগে গিয়ে নয়, ধৈর্যের সাথে জানুন। যদি জানার উৎস টিভি/ ইন্টারনেট হয়, দ্রুত উৎসমুখ বন্ধ করুন। যদি জানার উৎস কোন ব্যক্তি হয়, তার সম্পর্কে সাবধান থাকুন। তার সাথে শিশুকে কখনো মিশতে দেবেন না।
গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গেলে/ কোন আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গেলে রাতে ঘুমানোর সময় শিশুকে আত্মীয়/কাজিন এমনকারো সাথে একা একা ঘুমতে দেবেন না। নিজের কাছে রাখুন।

চলবে—-

পর্ব-১

 

চুপ করে থাকো,কাউকে বলো না! (পর্ব-১)

চুপ করে থাকো,কাউকে বলো না!
(পর্ব-১)


রাহনুমা সিদ্দিকা 


নিষ্পাপ শৈশবে- যখন উড়ে যাওয়া এরোপ্লেন দেখে পাইলট হতে ইচ্ছে করে, ফেরিওয়ালার ঝুড়িতে রঙবেরঙের পসরা দেখে পথে পথে ঘুরে ফেরি করতে ইচ্ছে করে, দাদার রেডিওর সমস্ত পার্টস খুলে- আর না লাগাতে পেরে স্টোর রুমে লুকিয়ে রেখে ভবিষৎ সায়েন্টিস্ট প্রস্তুতি নিচ্ছে দুনিয়া জয়ের, স্কুল ম্যাগাজিনে নিজের প্রথম প্রকাশিত লেখা ভবিষৎ সাহিত্যিকের ক্ষুদে বুকটা ভরিয়ে তুলছে- সেই সময়ই কিছু শিশুকে মুখোমুখি হতে কুৎসিত অন্ধকারের, বিনা অপরাধে রঙিন নিষ্পাপ স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায় দুঃস্বপ্নের ভীড়ে, জীবনটা হয়ে ওঠে বিভীষিকা।

ক্লাস ওয়ান পড়ুয়া মেয়েটি টিচারের কাছে পড়তে যেতে চাচ্ছে না। তার অভিযোগ টিচার তাকে ব্যথা দেয়। বাবা-মা ধমক দিয়ে পাঠালেন। তারা বললেন, ‘এসব তোমার ফাঁকি দেওয়ার ছল!’ চোখ মুছে শিশুটি টিচারের কাছে পড়তে বসলো। সে জানে না কেন স্যার তাকে কিছু জায়গায় এভাবে ছোঁয়।

গৃহকর্ত্রীর দূর-সম্পর্কের ভাই এসেছে বাসায়। দুপুরবেলা তারই হেফাযতে দশ বছরের কাজের মেয়েটিকে রেখে গৃহকর্ত্রী গেছেন শপিংয়ে। …… লোকটা মেয়েটিকে হুমকি দিলো কাউকে কিছু বললে মেরে লাশ বানিয়ে ফেলবে।

সাত বছরের ফুটফুটে ছেলেটাও বুঝতে পারলো না চাচ্চু তার সাথে বারবার এমন করছে কেন। চাচ্চু বলেছে এটা একটা সিক্রেট মজার খেলা- কাউকে বলা যাবে না। কিন্তু তার খুব কষ্ট হচ্ছে, ব্যথা লাগছে। আম্মু-আব্বুকে কি তার বলা উচিত? যদি তারা বিশ্বাস না করে? ওকেই পঁচা ভাবে? আচ্ছা, চাচা তো খুব ভালো, তাকে কত কি মজার খেলনা দেয়- কত গল্প করে! বলে দিলে কি চাচা আর কখনো ওকে আদর করবে না? সে কীভাবে বলবে আম্মু-আব্বুকে?

মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে মায়াবতী কন্যাশিশুটি যখন বলে উঠলো গ্রামের বাড়ি বেড়াতে এসে তার সাথে কী নির্মম ঘটনাটা ঘটে গেছে, হতভম্ব মা মেয়ের চোখের জল মুছে বললেন, ‘চুপ করে থাকো, কাউকে বোলো না!’

কাকে আমরা চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ বলছি?

চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ (CSA) কে বলা যায়, “the imposition of sexual acts, or acts with sexual overtones, by one or more persons on a child (under 18)”– Save the children, CSA Draft Policy.

• শিশুর গোপন অঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ,
• শিশুকে কারো গোপনাঙ্গ ধরতে বলা,
•penetration of a child’s mouth with a penis,
• শিশুর পর্ন ছবি তোলা,
• শিশুকে পর্নোগ্রাফি দেখানো এবং শিশুর সামনে নগ্ন হওয়া,
• শিশুদের পতিতাবৃত্তিতে ঢোকানো, বাল্যবিবাহ,
• শিশুর সাথে বয়স অনুপযোগী sexual behavior নিয়ে আলোচনা,
• শিশুকে ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা করা (যা ছেলে বা মেয়ে শিশু যে কারো ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে)
ইত্যাদি। সুতরাং, কেবল ধর্ষণ নয়, শিশু-যৌননির্যাতন একটি ব্যাপক পরিসরের শব্দ।

শিশুর উপর প্রভাব

মানসিক
বিষণ্নতা, সহিংস আচরণ, আত্মপীড়নমূলক কার্যকলাপ (নিজেকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দেওয়া), আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি ও হীনমন্যতা, দুঃস্বপ্ন, অসামাজিক আচরণ, সমবয়সীদের সাথে মিশতে না পারা, হঠাৎ হঠাৎ চমকে ওঠা, আত্মহত্যার প্রবণতা (কিশোর বয়েসীদের ক্ষেত্রে), স্বাভাবিক মানসিক বিকাশে বাধা।

শারীরিক
শিশু গুরুতরভাবে আহত হতে পারে, কোন কোন ক্ষেত্রে চিরতরে প্রজনন ক্ষমতা হারাতে পারে, নিউরোল্যজিকাল ড্যামেজ, দ্রুত ওজন কমে যাওয়া, রাতে বিছানা ভেজানো ইত্যাদি।

কিছু তথ্য-উপাত্ত

১৯০টি দেশের উপাত্ত নিয়ে তৈরি এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের তরফ থেকে বলা হয়েছে বিশ্বে প্রতি দশ জনে একজন মেয়েশিশু ধর্ষিত অথবা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। WHO এর হিসেব মতে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৪০ মিলিয়ন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।

ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ২০০৭ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভারতে ৫৩ভাগ শিশু শৈশবে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়।

ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স- নামে একটি বেসরকারি সংস্থার একজন কর্মকতা রোকসানা সুলতানা বলেন, ‘বাংলাদেশের শতকরা নব্বইভাগ শিশু পারিবারিক গন্ডিতেই ধর্ষণ থেকে শুরু করে অনাকাঙ্ক্ষিত শারীরিক স্পর্শসহ কোন না কোন যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।’ ১৯৯৭ সালে তারা শৈশবে যৌন নির্যাতনের শিকার ৫০ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেন, যার মধ্যে ৪৬ জনই পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত মানুষদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলেন। অর্থাৎ মাত্র ৪ জন শিশুর নির্যাতনকারী ছিলেন অপরিচিত ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত পাঁচ বছরের কম বয়েসী ২৮৬ জন শিশু সেক্সুয়াল অ্যাবিউজের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৯৯ ভাগ শিশু ধর্ষণের শিকার।

২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যে ৩৯৬ জন শিশু (অনূর্ধ্ব ১৮) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার, ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের কাউনসেলিংয়ের আওতায় আসে তাদের ৮৬ ছেলেশিশু। ছেলেশিশুরাও শংকার বাইরে নয়।

দুঃখজনক যে, বাংলাদেশে এই নিয়ে এখনো সরকারীভাবে পূর্ণাঙ্গ কোনো সমীক্ষা করা হয় নি। সামান্য নথিভূক্ত তথ্য-উপাত্ত যা পাওয়া যায় তা মোটেই প্রকৃত অবস্থাকে প্রতিফলিত করছে না। কারণ, এ ঘটনাগুলোর অধিকাংশই হয় অভিভাবকদের অসচেতনতায় অজানা থেকে যায় অথবা লোকলজ্জার ভয়ে ধামাচাপা দেওয়া হয়।

চলবে—

(অপরাজিতা প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে লিখেছেন রাহনুমা সিদ্দিকা। বাচ্চাদেরকে ধর্ষকের হাত থেকে বাঁচাতে সহযোগিতা করতে পারে এই সামান্য প্রচেষ্টা ধন্যবাদ)

 

ছাদ দেখাতে নিয়ে ৭ বছরের সায়মাকে ধর্ষণের পরে হত্যা

ছাদ দেখাতে নিয়ে ৭ বছরের সায়মাকে ধর্ষণের পরে হত্যা


নারী সংবাদ


ছোট্ট শিশু সায়মা। বয়স সবে মাত্র সাত বছর। বড় একটি পুতুলের মতো দেখতে মেয়েটি। ছোট্ট পায়ে ছোটাছুটি করে সারা ঘর মাথায় করে রাখত। সারাক্ষণ হাসি-খেলায় মাতিয়ে রাখত পুরো পরিবারকে। স্কুলেও যাওয়া শুরু করেছিল শিশুটি। তার খাতার পাতায় এখনো জ্বলজ্বল করছে সদ্য লিখতে শেখা গোটা গোটা হাতের লেখা। তার পানি খাওয়ার মগ, ভাত খাওয়ার থালা, স্কুলের ব্যাগ, পড়ার বইগুলো সবই আছে। নেই শুধু আদরের সন্তান সায়মা। তার পোশাক, বই ও ছবি এখন বাবা-মায়ের কাছে শুধুই স্মৃতি। শিশুটিকে পাশবিক নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। ছোট্ট শিশুটি যে কিনা এখনো জীবনকে চিনতেই শুরু করেনি, অথচ তাকে কি না মেনে নিতে হলো মৃত্যুর মতো করুণ উপসংহারকে! আর মৃত্যুর আগে সহ্য করতে হলো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম অত্যাচারকে! একটা নরপশু, একটা বিকৃত রুচির পাষণ্ড শিশুটিকে বাঁচতে দিলো না। ছোট্ট সায়মার বাবার কাঁধে সন্তানের লাশের যে বোঝা আমরা চাপিয়ে দিয়েছি, সেই ভার সইতে পারবে তো! হয়তো পারবে! এর আগেও তো তনু, রিশা, মিতু, বিশ্বজিৎ, নুসরাত, রিফাতদের ভার সয়ে নিয়েছে তাদের স্বজনেরা। সয়ে নিয়েছে সেই সব হতভাগ্যের লাশ যারা শুধু মৃত্যুই পেয়েছে, বিচারটুকুও পায়নি! আজ বিচার চেয়ে কাঁদছে সায়মার বাবা আব্দুস সালাম। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে মেয়ে হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে কাঁন্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, তার মেয়েকে দুইভাবে নির্যাতিত করা হয়েছে। সর্বোচ্চ তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে আসামির ফাঁসি কার্যকর করার দাবি জানান তিনি।
এর আগে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ওয়ারীর বনগ্রামের স্কুলছাত্রী সাত বছরের শিশু সামিয়া আক্তার সায়মাকে ধর্ষণের পরে হত্যার অভিযোগে হারুন অর রশিদ নামে এক যুবককে কুমিল্লার ডাবরডাঙ্গায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। হারুন তার খালাতো ভাই পারভেজের রঙের দোকানে কাজ করত।
শিশুটিকে ছাদ ঘুরিয়ে দেখানোর কথা বলে নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটে নিয়ে ধর্ষণ করে এই পাষণ্ড। হাত দিয়ে মুখ চেপে ধর্ষণের সময় সামিয়া নিস্তেজ হয়ে যায়। মৃত ভেবে গলায় রশি পেঁচিয়ে রান্না ঘরে রেখে হারুন পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন। গতকাল রোববার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুল বাতেন বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় ৬টার দিকে সায়মা তার মাকে বলে আট তলায় যাবে। সেখানে ফ্ল্যাট মালিক পারভেজের একটি বাচ্চা আছে তার সাথে একটু খেলেই চলে আসবে। প্রায় সময়ই ওই বাসায় গিয়ে বাচ্চার সাথে সায়মা খেলত। সেখানে গেলে পারভেজের স্ত্রী জানায়, তার মেয়ে ঘুমাচ্ছে। সেখান থেকে বাসায় ফেরার উদ্দেশে লিফটে ওঠে সায়মা। লিফটে সায়মার সাথে দেখা হয় পারভেজের খালাতো ভাই হারুনের। হারুন সায়মাকে লিফট থেকে ছাদ দেখানোর নাম করে ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে সায়মাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সায়মা চিৎকার করলে সায়মার মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে। ধস্তাধস্তিতে সামিয়া নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সায়মা নিস্তেজ দেখে গলায় রশি পেঁচিয়ে সামিয়াকে টেনে রান্না ঘরে সিঙ্কের নিচে রাখে। এরপর পারভেজের বাসায় না ফিরে হারুন গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গায় পালিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে আসে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে হারুন।
আব্দুল বাতেন বলেন, পারভেজের খালাতো ভাই হারুন। পারভেজের বাসায় থেকে গত দুই মাস ধরে তার রঙয়ের দোকানে কাজ করে আসছিল। পারভেজ জুলাই মাস থেকে হারুনকে তার দোকানে কাজ করতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। কারণ সে প্রতি সপ্তাহে কাউকে না বলে বাড়িতে চলে যেত। তারপরও খালাতো ভাই হওয়ায় কয়েকদিন ওই বাসায় ছিল। এরপর ধর্ষণ করে শুক্রবার সন্ধ্যায়ই পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আরো কেউ জড়িত আছে কি না আদালত হারুনকে রিমান্ডে দিলে জানা যাবে।
পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সামিয়া হত্যার ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে পেতে ওই বাসার সব নারী-পুরুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হওয়া যায় হারুনই ধর্ষণের পর হত্যা করেছে। রাতেই ডিবির টিম ঢাকা থেকে কুমিল্লায় চলে যায়। পরে তাকে গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এ দিকে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ধর্ষণে অভিযুক্ত হারুনকে মিডিয়া সেন্টারের সামনে দিয়ে আদালতে নেয়ার জন্য গাড়িতে তুলতে হাটিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল ডিবি পুলিশের একটি দল। তখন সাধারণ জনতা হারুনকে উদ্দেশ তরে গালিগালাজ করে। বিক্ষুব্ধ কয়েকজন এই নরপিশাচকে মারতে যায়। পরে পুলিশ তাকে নিয়ে দ্রুত চলে যায়।
গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে শিশু সায়মার খোঁজ পাচ্ছিল না তার পরিবার। আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নবনির্মিত ভবনটির নয় তলার ফাঁকা ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে মৃত সায়মাকে উদ্ধার করা হয়। ওই ভবনের ছয় তলায় বাবা-মায়ের সাথে থাকত সামিয়া। বাবা আব্দুস সালাম নবাবপুরের একজন হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সায়মা। সে ওয়ারী সিলভারডেল স্কুলে নার্সারিতে পড়ত।
সংবাদ সম্মেলনে সায়মার বাবা আব্দুস সালাম বলেন, ১০ মিনিট খেলেই বাসায় এসে পড়তে বসতে চেয়েছিল মেয়ে। মেয়েটি আর ফিরে এলো না। সায়মার মৃত্যুর পর বাসার কেউ খাবার খায়নি। সবাই সায়মার জামাকাপড় আর বই জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। আমার পরীর মতো মেয়েকে যে কষ্ট দিয়ে মেরেছে তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে তার ফাঁসি চাই।
দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, যাদের সন্তান আছে তারা এসব কুরুচিপূর্ণ ব্যক্তির কাছ থেকে কিভাবে আপনার সন্তানদের দূরে রাখবেন, বিষয়টি ভেবে দেখবেন। আমি আমার মেয়েকে দেখে রাখতে পারিনি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মেয়েটা আমার স্ত্রীকে বলে ১০ মিনিটের জন্য বাইরে গেল। এরপর আমার মেয়েটা আর ফিরল না, তাকে নৃশংসভাবে খুন করা হলো। গত ২ দিন ধরে আমি একফোঁটা পানিও খাইতে পারিনি। ঘরে গেলে মেয়ের কাপড়চোপড়, ছবি দেখে আর ঠিক থাকতে পারি না। আমার পুরো পরিবারটা বিধ্বস্ত হয়ে গেল।
কান্নাভেজা গলায় মেয়ের স্মৃতিচারণ করে আব্দুস সালাম বলেন, আজকের পর যেন ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে না যায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০


নারীর জন্য আইন


নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন৷ যেহেতু নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;

সেহেতু এতদ্‌দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল,

সূচী
ধারাসমূহ

১৷ সংক্ষিপ্ত শিরোনামা
২৷ সংজ্ঞা
৩৷ আইনের প্রাধান্য
৪৷ দহনকারী, ইত্যাদি পদার্থ দ্বারা সংঘটিত অপরাধের শাস্তি
৫। [রহিত]
৬। [রহিত]
৭৷ নারী ও শিশু অপহরণের শাস্তি
৮৷ মুক্তিপণ আদায়ের শাস্তি
৯৷ ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু, ইত্যাদির শাস্তি
৯ক৷ নারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনা, ইত্যাদির শাস্তি
১০৷ যৌন পীড়ন, ইত্যাদির দণ্ড
১১৷ যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানো, ইত্যাদির শাস্তি
১২৷ ভিক্ষাবৃত্তি, ইত্যাদির উদ্দেশ্যে শিশুকে অঙ্গহানি করার শাস্তি
১৩৷ ধর্ষণের ফলশ্রুতিতে জন্মলাভকারী শিশু সংক্রান্ত বিধান
১৪৷ সংবাদ মাধ্যমে নির্যাতিতা নারী ও শিশুর পরিচয় প্রকাশের ব্যাপারে বাধা-নিষেধ
১৫৷ ভবিষ্যত্ সম্পত্তি হইতে অর্থদণ্ড আদায়
১৬৷ অর্থদণ্ড বা ক্ষতিপূরণ আদায়ের পদ্ধতি
১৭৷ মিথ্যা মামলা, অভিযোগ দায়ের ইত্যাদির শাস্তি
১৮৷ অপরাধের তদন্ত
১৯৷ অপরাধ বিচারার্থ গ্রহণ, ইত্যাদি
২০৷ বিচার পদ্ধতি
২১৷ আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচার
২২৷ ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক যে কোন স্থানে জবানবন্দি গ্রহণের ক্ষমতা
২৩৷ রাসায়নিক পরীক্ষক, রক্ত পরীক্ষক, ইত্যাদির সাক্ষ্য
২৪৷ সাক্ষীর উপস্থিতি
২৫৷ ফৌজদারী কার্যবিধির প্রয়োগ, ইত্যাদি
২৬৷ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল
২৭৷ ট্রাইব্যুনালের এখ্‌তিয়ার
২৮৷ আপীল
২৯৷ মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন
৩০৷ অপরাধে প্ররোচনা বা সহায়তার শাস্তি
৩১৷ নিরাপত্তামূলক হেফাজত
৩১ক৷ ট্রাইব্যুনাল, ইত্যাদির জবাবদিহিতা
৩২৷ অপরাধের শিকার ব্যক্তির মেডিক্যাল পরীক্ষা
৩৩৷ বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা
৩৪৷ ১৯৯৫ সনের ১৮ নং আইনের রহিতকরণ ও হেফাজত।

সূত্রঃ http://bdlaws.minlaw.gov.bd/bangla_pdf_part.php?id=835

 

বাঁধাকপির পাকোড়া রেসিপি

  • উপকরণ
    • বাঁধাকপির – দেড় কাপ
    • ময়দা বা কর্ণ ফ্লাওয়ার- প্রয়োজন মত
    • ডিম- ১ টি
    • ধনে পাতা কুচি- ইচ্ছা মত
    • কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ কুচি- ইচ্ছা মত
    • লবণ- স্বাদ মত
    • ভাজা জিরার গুঁড়ো- ১/২ চ চামচ
    • টেস্টিং সল্ট (ইচ্ছা)- ১/২ চা চামচ
    • বাড়তি স্বাদের জন্য ম্যাগি নুডুলস এর মশলা দিতে পারেন এক প্যাকেট
    • বেকিং পাউডার- ১/২ চা চামচ
  • প্রণালী
    * বাঁধাকপিরকুচি কুচি করে কাটি। তারপরতিহাত দিয়ে ভালো করে ঘষে মিহি ঝুরি করে নিন।
    * বাঁধাকপি কুচি কুচি গুলো খুব ভালো করে পানিতে ধুয়ে চিপে চিপে বাড়তি পানি ফেলে দিন।
    * কর্ণ ফ্লাওয়ার ছাড়া বাকি সব উপকরণ দিয়ে মেখে নিন।
    * এবার একটু একটু করে কর্ণ ফ্লাওয়ার মেশান। হাত দিয়ে মিশ্রণটি দেখে নিবেন বড়ার আকার করা যায় এমন হলেই আর দিবেন না। যতটা কম দেয়া যায়। দেড় কাপ পাতাকপিতে ৪/৫ চামচ লাগতে পারে।
    * তেল মাঝারি আঁচে গরম করে নিন। পিঁয়াজুর আকারে পাকোরা ছেড়ে দিন তেলে।
    * লালচে সোনালি করে ভেজে তুলুন। বেশি আঁচে ভাজবেন না, তাতে পাকোরা মাঝে কাঁচা থেকে যাবে। ৫/৬ মিনিট ভাজলেই যথেষ্ট।

পরিবেশন

  • সসের সাথে গরম গরম পরিবেশন করুন বাঁধাকপির পাকোড়া।

 

টিনএজ বয়সে যৌনতা-বিষয়ক পাঠ

টিনএজ বয়সে যৌনতা-বিষয়ক পাঠ


মাসুদ শরীফ


নবি ﷺ যেভাবে যৌনতা-বিষয়ক পাঠ দিতেন

টিনএজ বয়সটা ছেলে-মেয়ে দুজনের জন্যই বেশ অস্থির একটা সময়৷ নিজের শরীর এবং বিপরীত লিঙ্গের শরীর প্রতি এ-বয়সে প্রথম তারা আকর্ষণ বোধ করে৷ এগুলোকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা যায় না৷ আপনার সুবোধ-সুশীলা ছেলে বা মেয়েকে এখনো ছোট্টটি মনে করার কারণ নেই৷ করলে পরে পস্তাবেন আপনিই৷
নবিজির সময়েও এ-বয়সী ছেলেমেয়েরা ছিল৷ তারা সবসময় নিজেদের দৃষ্টি সংযত করতে পারেনি৷ এটা মানুষের সহজাত স্বভাব৷ কিন্তু নবিজি এ-রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলেন৷ তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিয়েছেন৷

একবার হাজ্জের সময় নবিজি আর তার চাচাতো ভাই ফাদ্‌ল বিন আব্বাস যাচ্ছিলেন এক সওয়ারিতে চড়ে৷ ফাদ্‌ল ছিলেন বিখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ বিন আব্বাসের ছোট ভাই৷ আমরা ধারণা করতে পারি, নবিজির চাচাতো ভাই যেহেতু, তারা দুজনই সুদর্শন ছিলেন৷ বিশেষ করে নবিজির দাদার বংশের সব চাচা এবং চাচাতো ভাইয়েরা সুন্দর সুঠাম হয়ে থাকবেন৷

তো পথে খাসাম গোত্রের এক তরুণী নবিজির সামনে এসে দাঁড়ালেন৷ তরুণী তাকিয়ে আছেন ফাদ্‌লের দিকে৷ ফাদ্‌ল তাকিয়ে আছেন তরুণীর দিকে৷ এর ফাঁকেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “আমার বাবার উপর হাজ্জ করার বাধ্যবাধকতা চেপেছে৷ কিন্তু তিনি খুবই বয়স্ক৷ কোনো কিছুতে সওয়ার হতে পারেন না৷ আমি কি তার হয়ে হাজ্জ করতে পারব?”
“হ্যাঁ৷” নবিজি বললেন৷ (বুখারি)

আপনি-আমি হলে তো আমাদের মূল নজর থাকত প্রশ্নকর্তার দিকে৷ কিন্তু নবিজির একটা চোখ কিন্তু ছিল ফাদ্‌লের উপরও৷ তিনি জানতেন, ওদের যা বয়স, একজন আরেকজনের দিকে তাকাবেই৷ আর সেজন্য প্রশ্ন-উত্তর সময়টাতে বার তিনেক ফাদ্‌লের মুখ তিনি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন৷ তরুণীটিকে উত্তর দেয়া শেষ হলে নবিজি তার চাচাতো ভাইকে বললেন, “আজ এমন এক দিন, যে-তার দৃষ্টি সংযত রাখবে, লজ্জাস্থান ও জবান সুরক্ষিত রাখবে, তাকে মাফ করে দেয়া হবে৷” (ইবনু খুজাইমা)

ঘটনাটির আরও বেশ কিছু মজার দিক আছে৷

ঘটনাটি ঘটেছিল নবিজির বিদায় হাজ্জের সময় কাবা ঘরের আশেপাশে কোথাও৷ এ-থেকে বোঝা যায়, মানুষের চরিত্রের কিছু কিছু দিক সবসময় এক৷ মানুষ যেমন মরণশীল, মানুষ যেমন ভুল করে, তেমনি নারী-পুরুষের আকর্ষণ সহজ ও স্বাভাবিক বিষয়৷ একে অস্বীকার করা বোকামি৷ কথা হচ্ছে, কীভাবে সেই আকর্ষণ আমরা বৈধভাবে সামলাব সেটা৷
নবি ﷺ তাঁর চাচাতো ভাইকে ধমকের সুরে কিছু বলেননি৷ কিংবা শাস্তিমূলক কিছু বলেননি৷ সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছেন৷ প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করেছেন আগামীর জন্য৷ আজ হয়তো শাস্তির ভয়ে কিংবা নবিজির সামনে মুখ ফিরিয়ে থাকল৷ কিন্তু পরে যখন তিনি থাকবেন না, তখন কী হবে? এজন্য এমন সুন্দরভাবে কথাগুলো বললেন, যেন সেটা হৃদয়ের গভীরে দাগ কাটে৷ এর রেশ যেন থাকে আজীবন৷

ফাদ্‌ল তো শুধু তাকিয়েই ছিলেন কেবল৷ কিন্তু নবিজি তাকে লজ্জাস্থান সুরক্ষিত রাখার কথা বললেন কেন? আচ্ছা, তা নাহয় বললেন, কিন্তু জবান?
প্রথম দেখাতে আসলেই ভালোবাসা হয় কি না জানি না, তবে প্রথম দেখা থেকে ভালো লাগা, ভালো লাগা থেকে কথাবার্তা, ডেটিং, এরপর অনেক কিছু হয়ে যায়৷ নবিজি এজন্য শুরুতেই গোড়া কেটে দিয়ে আকর্ষণ বাড়ার পথ রোধ করে দিলেন৷ এটা ছিল যৌনতা বিষয়ে নবিজির শিক্ষা৷

আজকাল আমরা শুনি অবৈধ এবং বিয়ে-বহির্ভূত যৌন-সম্বন্ধ থেকে যদি গর্ভে বাচ্চা না আসে, তা হলে নাকি সব ঠিক৷ আজকাল যৌনশিক্ষা মানে ইমার্জেন্সি পিল, কনডম—যার পোশাকি নাম ‘নিরাপদ দৈহিক মিলন’৷ কিন্তু নবিজির শিক্ষা ছিল আদর্শমুখী৷ এর মূলে ছিল আল্লাহর প্রতি সচেতনতা৷ দৃষ্টি সংযত করো, লজ্জাস্থান ও মুখ সুরক্ষিত রাখো, আল্লাহর ক্ষমা অর্জন করো৷

ছোটবেলা থেকে যদি আপনি বাবা-মা’র ঘরে ঢোকার আগে অনুমতি নেন, আপনি ছেলে হন কি মেয়ে—ঘরের ভেতর যদি নিজের পর্দা রক্ষা করে চলেন, সালাতের সময়ে ঠিকঠাকভাবে পোশাক পড়েন, তা হলে ঘরের বাইরে আপনার পথ চলা সহজ হবে৷

[নবি ﷺ যেভাবে সন্তান মানুষ করেছেন, হিশাম আওয়াদির Children Around The Prophet অবলম্বনে…]

 

এবার ফতুল্লায় ১২ ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আটক

এবার ফতুল্লায় ১২ ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আটক


নারী সংবাদ


নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পর এবার ফতুল্লা থানার ভূঁইগড়ের মাহমুদপুর এলাকায় ১২ ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মাওলানা মো. আল আমিন নামে এক মাদ্রাসার প্রিন্সিপালকে আটক করেছে র্যাব। যৌন হয়রানির কথা স্বীকার করে আল আমিন জানান, তিনি আগে এমন ছিলেন না, শয়তানের প্ররোচনায় এ কাজ করেছেন। এ জন্য নিজের মৃত্যুদণ্ড কামনা করছেন।

বায়তুল হুদা ক্যাডেট মাদ্রাসা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তাকে আটক করা হয়। তিনি এ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। একই সঙ্গে তিনি ফতুল্লা এলাকায় একটি মসজিদে ইমামতিও করেন। আটকের সময় তার মোবাইল ও অফিসের কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে। খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন র্যাব-১১ অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী শামসের উদ্দিন, ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসলাম ও পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল আজিজ।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী শামসের উদ্দিন জানান, কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া স্কুলশিক্ষকের ধর্ষণের ঘটনাটির প্রচারিত বিভিন্ন নিউজ ও ভিডিও আমরা আমাদের ফেসবুক পেজে আপলোড করেছিলাম। স্থানীয় একজন মহিলা যখন ফেসবুকে দেখছিলেন, তখন তার তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে এটি দেখে তার মাকে জিজ্ঞাসা করে যে, ‘স্কুলের ওই শিক্ষকের শাস্তি হলে আমাদের হুজুরের কেন শাস্তি হবে না? আমাদের হুজুরও তো আমাদের সাথে এমন করে। পরে শিশুটি তার মাকে বিস্তারিত জানালে শিশুটির মা র্যাব অফিসে এসে আমাদের কাছে অভিযোগ করেন যে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক একাধিক ছাত্রীকে তার বাসায় পড়তে গেলে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করেছে।

তিনি জানান, এরপর র্যাব এসব অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করে। র্যাব অনুসন্ধানে জানতে পারে ২০১৮ সাল থেকে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মাদ্রাসার ১০ থেকে ১২ ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা ও যৌন হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে।

তিনি আরো জানান, শিক্ষক আল আমিন মাদ্রাসার একটি কক্ষে তার পরিবার নিয়ে থাকতেন এবং একটি অফিস কক্ষসহ কয়েকটি ক্লাস কক্ষে ছেলেমেয়েদের পড়াতেন। তার স্ত্রী একজন পর্দানশীন মহিলা, তিনি ভেতরের দিকে থাকতেন, সামনে তেমন একটা আসতেন না। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সময় পড়তে আসা ছাত্রীদেরকে আল আমিন ডেকে তার কক্ষ ঝাড়ু দেওয়া ও বিভিন্ন কৌশলে এনে তাদেরকে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ করে।

র্যাব-১১ অধিনায়ক জানান, এসব ঘটনার প্রমাণ স্বরূপ আমরা তার মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার তল্লাশি করে প্রচুর পর্নোগ্রাফি ভিডিও পেয়েছি। কিছু কিছু পর্নোগ্রাফি তিনি নিজেও তৈরি করেছেন। তিনি তার কাছে পড়তে আসা কোনো ছাত্রীর ছবির মাথার অংশ পর্নোগ্রাফি ভিডিওর সাথে সংযুক্ত করে ছাত্রীদের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে একাধিকবার ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে তিনি জানান।
সুত্রঃ ইত্তেফাক।

 

বিয়ে ভাঙার হার বাড়ছে নারী-পুরুষ পরস্পরের সহমর্মী হতে হবে

বিয়ে ভাঙার হার বাড়ছে
নারী-পুরুষ পরস্পরের সহমর্মী হতে হবে


দাম্পত্য


বিয়ে বা সংসার ভেঙে যাওয়ার ঘটনা রাজধানীসহ সারা দেশেই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ২০০৬ সালে যেখানে প্রতি হাজারে বিচ্ছেদের হার ছিল মাত্র দশমিক ছয় জন, সেটি বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১-এ। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সাত বছরে রাজধানীতে তালাক বেড়েছে অন্তত ৩৪ শতাংশ। তালাকের আবেদনকারীদের বেশির ভাগই নারী। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিয়ে ভাঙার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা সামাজিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক পটপরিবর্তন, ধর্মীয় অনুশাসনে শৈথিল্য ইত্যাদি বিষয়কে চিহ্নিত করছেন। পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যাওয়াকেও বিচ্ছেদের পেছনে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, সারা দেশে গত সাত বছরে তালাকের প্রবণতা বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তালাক হয়েছে বরিশালে। প্রতি হাজারে ২ দশমিক সাত জন। সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম ও সিলেটেÑ প্রতি হাজারে শূন্য দশমিক ছয় জন। শিক্ষিত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাকের ঘটনা বেশি ঘটছে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনেই স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে তালাক দেয়ার আবেদন বেড়েছে। তালাকের আবেদনের প্রায় ৭০ শতাংশই স্ত্রীর পক্ষ থেকে এসেছে। গুলশান ও বনানীর অভিজাত পরিবারের শিক্ষিত ও বিত্তবান নারীরা তালাকের জন্য আবেদন করছেন বেশি। স্ত্রীর করা আবেদনের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বামীর সন্দেহবাতিক মানসিকতা, পরকীয়া, স্বামী প্রবাসে থাকা, যৌতুক, মাদকাসক্তি, ফেসবুকে আসক্তি, ব্যক্তিত্বের সঙ্ঘাত ইত্যাদি। স্বামীর পক্ষে আবেদনের ক্ষেত্রেÑ স্বামীর ইচ্ছাকে প্রাধান্য না দিয়ে স্ত্রী নিজের ইচ্ছায় চলা, তার বদমেজাজ, সংসারের প্রতি কম মনোযোগ দেয়া, ধর্ম-কর্মে উদাসীনতা, বন্ধ্যত্বসহ বিভিন্ন কারণ প্রাধান্য পেয়েছে।
জানা যায়, এখন সামাজিক ও ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতা বাড়ায় মেয়েকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে তার পরিবার এগিয়ে আসছে। মেয়েরা আগে তালাকপ্রাপ্ত হলে পরিবারে আশ্রয় তো পেতেনই না, বরং তাদের হেয় করা হতো। এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। নারীর পেশাগত উন্নয়ন হয়েছে, আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে এবং সামাজিক মর্যাদা বেড়েছে। সেই সাথে তারা হয়ে উঠেছেন অধিকার সচেতন। তারা আর লোকলজ্জার ভয়ে পুরুষের কর্তৃত্ব ও আধিপত্যবাদী মনোভাবের সাথে সহজে আপস করছেন না, বরং অশান্তি এড়াতে বিয়ে ভাঙার ঝুঁকি নিচ্ছেন। এতে করে ভেঙে যাওয়া সংসারের স্বামী-স্ত্রীর মানসিক শান্তি বিঘিœত হচ্ছে। একধরনের বোবাকান্না অহরহ বুকে চেপে তাদেরকে নানা ধরনের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতির শিকার হচ্ছে ভেঙে যাওয়া পরিবারের শিশুরা। চরম অনিশ্চয়তার বোধে আক্রান্ত এসব শিশুর মানসিক স্থিতি নষ্ট হচ্ছে। সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে তাদের বেড়ে ওঠা হয়ে পড়ছে সুদূরপরাহত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল করিম বলেছেন, আমাদের দেশের স্কুলগুলোতে যদি মূল্যবোধ চর্চার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে এটা কিছুটা কমবে। দাম্পত্য বিচ্ছেদের বিষয়ে বিশিষ্ট নারী সংগঠক ও মানবাধিকার প্রবক্তা ফরিদা আখতার মনে করেন, এ রকম ক্ষেত্রে পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে নৈতিকতার দিকটির প্রতিও নজর দেয়া দরকার। তা ছাড়া, এ রকম ভাঙা সংসারের শিশুদের বা সিঙ্গেল প্যারেন্ট শিশুদের লালন-পালন ও শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব পালন করা উচিত। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, যে কারণেই তালাক বা বিচ্ছেদ হোক না কেন, এর কুফল পড়ে প্রধানত সন্তানের ওপর। একটি ভাঙা সংসারের শিশুরা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায় না; এক রকম প্রতিকূলতার মধ্যে মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে বেড়ে ওঠে। ফলে পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে নানা জটিলতা দেখা দেয়।
আমরা বলতে চাই, এক শ্রেণীর উগ্র নারীবাদীর প্রচারণার কারণে আমাদের অনেক সাধারণ নারী-পুরুষ পরস্পরকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করেছেন। কিন্তু সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবার গঠন করার জন্য নারী ও পুরুষকে যুদ্ধংদেহী অবস্থানে না গিয়ে সহমর্মী, সহযোগী বা বন্ধুত্বের সম্পর্কের মধ্যে আসতে হবে। এ ছাড়া, পারিবারিক সুখের আর কোনো বিকল্প নেই।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

 

শিশুদের হাঁপানি : চাই সযত্ন সতর্কতা

শিশুদের হাঁপানি : চাই সযত্ন সতর্কতা


স্বাস্থ্যসেবা


মাত্র সাত মাস বয়স রাইফার। কয়েকদিন ধরেই সর্দি লেগে আছে। প্রায় সময়ই কান্নাকাটি করছে ছোট্ট মেয়েটি। কাঁদতে কাঁদতে অনেক সময় বমিও করছে। রাতে ঘুমানোর পর নাক ঘড়ঘড় করছে। বারবার নাকে নেজাল ড্রপ দিয়ে চলেছেন রাইফার মা। এভাবেই চলছিল। কয়েকদিন পর আর থাকতে না পেরে ডাক্তারের কাছে নিতে হলো রাইফাকে। ডাক্তার শিশুটিকে দেখেই বুঝতে পারলেন, তার অবস্থা ভালো না। তিনি কয়েকটি টেস্ট আর রাতের জন্য অল্প কিছু ওষুধ লিখে দিলেন। বললেন টেস্ট গুলো করানোর পর কাল যেন অবশ্যই রিপোর্ট দেখিয়ে নিয়ে যান।
পরদিন রিপোর্ট দেখেই ডাক্তারের সন্দেহ সত্যি হয়ে গেল। রাইফা হাঁপানি রোগে আক্রান্ত। বেশি ঠান্ডা লাগার কারণে নিউমোনিয়াও হয়েছে। দ্রুত রাইফাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিলেন ডাক্তার।
রাইফার মতই ঠা-া লেগেছিল দুই বছর বয়সী শিশু আজাদের। কয়েকদিন পরপরই ঠা-া লেগে থাকে তার। প্রতিবারই নাকের ড্রপ আর ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে খাওয়ানো হয় ওকে। এভাবেই চলছিল। কিন্তু এবারের সর্দি আর কাশি কিছুতেই যেন ভালোই হচ্ছে না আজাদের। শেষ পর্যন্ত মায়ের পীড়াপীড়িতে বাবা ওকে নিয়ে যান এক শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, আজাদের হাঁপানি হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসপিটালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রহমত উল্ল্যাহ বলেন, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের মত নয়। যার ফলে অল্পতেই তাদের বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি হয়। এজন্য দরকার বাড়তি যত্ন।
তিনি বলেন, শীতকালে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এরমধ্যে শিশুরা হাঁপানি রোগে কষ্ট পায় বেশি। তাপমাত্রা কমে গেলে তা শিশুদের শ্বাসতন্ত্র সহ্য করতে পারে না। এতে তাদের সর্দি, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট হয়। এছাড়াও ঘুমানোর পর তাদের নিঃশ্বাস ভারি হয়ে ওঠে। এমনকি ঘড়ঘড় করে আওয়াজও হয়। শিশুদের শ্বাসনালি খুবই সংবেদনশীল। একটু ঠান্ডা লাগলেই তাদের সর্দি বা কাশি হয়ে যেতে পারে। এরপর আস্তে আস্তে তা হাঁপানিতে রূপ নেয়।
এছাড়াও বাইরের ধুলো-বালিও এই হাঁপানি রোগের আরেকটি অন্যতম কারণ। অনেক শিশুই ধুলো-বালি সহ্য করতে পারে না তাদের সংবেদনশীল শ্বাসনালির কারণে। তাই দেখা যায়, সুস্থ স্বাভাবিক বাচ্চা ধুলা-বালিতে খেলাধুলা করতে পারলেও হাঁপানি আক্রান্ত শিশুরা সেটা করতে পারে না। কিছুক্ষণ বাইরে থাকার পরই তাদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
ডা. রহমত উল্ল্যাহ বলেন, এই হাঁপানি আবার বংশগতও হতে পারে। তবে হাঁপানি হলে বেশ কিছু বিষয় এড়িয়ে সচেতনভাবে চলার পরামর্শ দেন তিনি। তার মতে, এলার্জি হয় এমন বিষয় যেমন ধুলো-বালি যত সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। ঠা-া, সর্দি এবং কাশি হলেই সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে। এছাড়াও বাচ্চাদের সামনে ধূমপান একেবারেই করা যাবে না। কারণ সিগারেটের ধোঁয়া বাচ্চাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। হাঁপানি রোগে আক্রান্ত শিশুদের সামনে ধূমপান করলে তা ওদের শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দেয়।
বাসা-বাড়ি সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দেন এই শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, বাসা-বাড়ি সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। যাতে করে কোথাও ধুলো-বালি না জমে। এছাড়াও ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। শীতকালে শিশুদের জন্য লোমযুক্ত কোনো কাপড়চোপড় বিশেষ করে কম্বল ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া এলার্জিযুক্ত খাবার বিশেষ করে যেসব খাবারে শিশুর এলার্জি হয় সেসব খাবার তাকে দেয়া যাবে না। হাঁপানি রোগে আক্রান্ত শিশুদেরকে সবসময় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে লালন পালন করার পরামর্শ দিয়েছেন ডা.রহমত উল্ল্যাহ।

সুত্রঃ বাসস।

 

ইলহান ওমরই (১ম পর্ব)

ইলহান ওমরই (১ম পর্ব)


অপরাজিতা


ইলহান ওমরই মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের প্রথম আফ্রো-আমেরিকান মুসলিম নারী সদস্য।

যিনি সব বাঁধা বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে মাথায় হিজাব বেঁধে তার বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ পেয়েছেন। মুসলিম নারী হিসেবে হিজাব পড়ার অধিকার সমুন্নোত রাখার জন্যও ইলহানকে অনেক প্রতিবাদি কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে।
তবে সে সব বিতর্ক বিরোধিতার গ্যারাকল ডিঙ্গিয়ে ইলহান ওমর অনেক এগিয়ে গেছেন। মিনেসোটার ডেমোক্র্যাটিক
-কৃষক-শ্রমিক-পার্টির প্রার্থী ইলহান ওমর ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচনে ২০১৬ সালে মিনেসোটা ফিফথ ডিস্ট্রিক্ট কনস্টিটিউয়েন্সি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন ৩৫ বছর বয়েসী কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম তরুণী ইলহান ওমর। পুরো নাম ইলহান আব্দুল্লাহি ওমর।

১৯৮১ সালে সোমালিয়ার রাজধানী মুগাদিসুতে জন্মগ্রহনকারী ইলহান ওমর নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রী অর্জন করেন। সম্ভবত ইলহান ওমরই হচ্ছে প্রথম কোনো সোমালি-আমেরিকান নাগরিক যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারার রাজনীতিতে নজিরবিহিন সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছেন।

সংক্ষিপ্ত পরিচয় উইকিপিডিয়াঃ

ইলহান ওমর
ইউনাইটেড স্টেটস রিপ্রেজেন্টেটিভ

জন্মের তারিখ এবং স্থান: ৪ অক্টোবর, ১৯৮১ (বয়স ৩৭ বছর), মোগাদিসু, সোমালিয়া
দল: ডেমোক্র্যাটিক পার্টি
স্বামীঃ আহমেদ হিরসি (বিবাহ. ২০১৮), আহমেদ নুর সাইদ এলমি (বিবাহ. ২০০৯–২০১৭)
শিক্ষা: নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি (২০১১), Edison High School
শিশু: ইসরা হিরসি
ভাইবোন: সাহরা নুর

চলবে…

 

চট্টগ্রামে ঘরের ভেতরে মা-মেয়ের ঝুলন্ত লাশ

চট্টগ্রামে ঘরের ভেতরে মা-মেয়ের ঝুলন্ত লাশ


নারী সংবাদ


চট্টগ্রামে একটি বাসা থেকে মা ও দুই বছর বয়সী মেয়ের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার নগরীর পাঁচলাইশ থানার ষোলশহর মসজিদ গলির লিচু বাগান এলাকা থেকে লাশ দু’টি উদ্ধার করা হয়। এদের একজন লক্ষ্মী রানী সরকার (২২) এবং অন্যজন তার দুই বছর বয়সী মেয়ে অনন্যা সরকার। তাদের বাড়ি ব্রাহ্মহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে। স্বামীর সাথে চট্টগ্রামে থাকতেন লক্ষ্মী রানী। লক্ষ্মী রানীর স্বামী নন্দন সরকার নগরীতে ভ্রাম্যমাণ চা ও রুটি বিক্রি করেন। পাঁচলাইশ থানার এসআই ইমাম হোসেন বলেন, নন্দন সরকার বলেছেন, সকালে চা বিক্রি করতে বের হয়েছিলেন তিনি। দুপুরে তিনি বাসায় এসে ভগ্নিপতিকে নিয়ে আবার বের হন। স্ত্রীর ফোন পেয়ে বিকেল ৪টায় বাসায় আসেন। দরজা বন্ধ দেখে বাইরে থেকে লাঠি দিয়ে হুক খুলে ঘরে ঢুকে ফ্যানের সাথে স্ত্রী ও মেয়ের লাশ ঝুলন্ত দেখেন তিনি। থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত

 

বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে জাঙ্ক ফুড কিশোরীদের জন্য ক্ষতিকর

বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে জাঙ্ক ফুড কিশোরীদের জন্য ক্ষতিকর


স্বাস্থ্যসেবা


মহুয়া এবারই ক্লাস নাইনে উঠেছে। তিন মাস আগে থেকে তার মাসিক শুরু হয়েছে। আগে বেশ প্রাণোচ্ছল থাকলেও মাসিক শুরুর পর থেকে মেয়েটি কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে, নেতিয়ে যাচ্ছে। শারীরিক পরিবর্তনও হচ্ছে। মুখে ব্রণ, আর শরীরও কিছুটা শুকিয়ে গেছে। সারাক্ষণ কেমন জানি আনমনা থাকে।
বিষয়টি প্রথমে কেউ খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও মহুয়ার মা খুব চিন্তায় পড়ে গেল মেয়েকে নিয়ে। দিন দিন কেমন জানি রোগা হয়ে যাচ্ছে মেয়েটি। একদিন পরিচিত এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন মহুয়াকে। ডাক্তার সব শুনে কিছু ঔষুধ আর খাবারের তালিকা বলে দিলেন।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ার হক বলেন, মূলত মেয়েদের এগার বছর থেকে আঠার বছরের মধ্যে মাসিক শুরু হয়। এ সময়টিকে মেয়েদের বয়:সন্ধিকাল বলা হয়। আর এ সময় কিশোরীদের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। মানসিক এবং শারীরিক পরিবর্তন হয় এ সময় কিশোরী মেয়েদের। এ সনয় হরমোন নিঃসরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। কিশোরীদের শারিরীক পরিবর্তন শুরু হয়। স্তনগ্রন্থি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চর্বি জমে, যৌনাঙ্গের গ্রন্থি বৃদ্ধির কারণে বিপাকক্রিয়ার হার বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, এসময় কিশোরী মেয়েদের প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন, যাতে করে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা পায়। কিন্তু আমাদের মত দেশে দেখা যায় উল্টো ঘটনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ সময় পুষ্টিকর খাবার পায় না কিশোরীরা। আবার খাবারের অনিয়মও হয় এই বয়সে। আর এসব কিছুর প্রভাব পড়ে কিশোরীর শরীরে। দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা।
ডা. মনোয়ারা বলেন, বয়:সন্ধিতে মেয়েদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মুখে ব্রণ। মূলত হরমোনের তারতম্যের কারনে এসময় কিশোরী মেয়েদের মুখে প্রচুর পরিমানে ব্রণ দেখা দেয়। আর তাই ব্রন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মেয়েদের প্রচুর পরিমান পানি পান করতে হবে। এছাড়াও খেতে হবে শাক-সব্জি ও আঁশযুক্ত খাবার। এসময় নানা ধরনের চকোলেট, আইসক্রিম এবং কোমল পানীয় না খাওয়াই উত্তম।
তিনি বলেন, এ সময় কিশোরী মেয়েরা এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতায় ভোগে। মূলত যখন মাসিক শুরু হয় তখন কারো কারো প্রচুর পরিমান রক্তক্ষরণ হয়। শরীর দুর্বল হয়ে যায়। আর তাই এ সময় আয়রন জাতীয় খাবার খেতে হবে। এসময় প্রচুর পরিমাণ মাংস, মাছ, ডিম এবং শাক খেতে হবে। এছাড়াও আয়রন আছে এমন ফলও খেতে হবে এসময় । খেজুর, কিসমিস, কলা এসব ফলে প্রচুর আয়রন রয়েছে।
তিনি বলেন, এসময় অনেক কিশোরী অতিরিক্ত মাত্রায় ডায়েটিং করে। মুলত নিজেদের স্লিম রাখতেই তারা খেতে চায় না। কিন্তু এই না খাওয়ার কারণে তারা অপুষ্টিতে ভোগে এবং শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধে। দেখা যায় মেয়েরা রক্তশূণ্যতা এবং ভিটামিনের অভাবে ভুগছে। আর তাই এই সময় প্রচুর পরিমান পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এ ছাড়াও এসময় ভিটামিন সি’র ঘাটতিও দেখা দেয়। আর তাই লেবু, পেয়ারা,কমলা খেতে পারে কিশোরীরা যাতে করে ভিটামিন সি’র ঘাটতি পূরণ হয়।
ডা. মনোয়ারা বলেন, এই বয়সে সবার কোমল পানীয়, চকোলেট, ফাস্টফুড, পেস্ট্রি জাতীয় খাবার খুব প্রিয়। অনেকে এসব খাবারের প্রতি চরম আসক্ত থাকে। কিন্তু এসব খেলে ওজন বেড়ে যায় এবং হরমোনের তারতম্য হয় এবং পলিষ্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম দেখা যায়। ফলে কিশোরী মেয়েদের মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে। তাই এ সময় সেসব খাবার পরিহার করে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সুত্রঃ বাসস

 

সন্দেহ

সন্দেহ


মিথিলা ফেরদৌস


দু’টি অভিজ্ঞতাই বাস থেকে নেয়া।খুব দুঃখজনক ঘটনা, দুটোই।

১.
কাউন্টারে বাসের টিকিট কেটে ঘুরে দাঁড়িয়েছি মাত্র,পাশেই লম্বা ফর্সা,কালো ফ্রেমের চশমা পরা ছেলেটা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

ঃকিউজ মি আপু,আপনি তো ডাক্তার তাই না?
ঃজ্বী?
ঃআপনাকে মনে হয় কোথাও দেখেছি।আপু,আমি আপনার জুনিয়র হবো।একটা দরকার ছিল।
ঃকি দরকার?
ঃআমার ওয়াইফের টিকিট আপনার সাথেই কেটেছি।আপনি যদি আপনার নাম্বার দিতেন, কখন পৌঁছায় জেনে নিতে পারতাম।

১০/১২ বছর আগের কথা,মোবাইল খুব একটা সবার কাছে না থাকাটা স্বাভাবিক ঘটনা তখন।আমি নাম্বার দিয়ে, একটু দূরে গোমড়া মুখ করে শুকনা এক মেয়ের দিকে তাকালাম।মেয়েটা ফাঁকে ফাঁকে এদিকে দেখছে,আবার অন্যদিকে তাকিয়ে উদাস!সেই মেয়েই ওই ছেলের বউ কিনা বুঝলাম না।নাম্বার দিয়ে,বাসের জন্যে অপেক্ষা করছি। কিছুক্ষণ পর বাস ছেড়ে দিবে, বাসে গিয়ে বসলাম। আমার সিট জানালার পাশেই। পাশে সেই গোমড়ামুখো মেয়েটিই এসে বসলো। আমি মেয়ের দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিতে গিয়ে দেখলাম, মেয়ে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।

আমি সাধারণত নিজে থেকে কারো সাথেই কথা বলিনা, কে কিভাবে নেয় সেইটা ভেবে। এই ক্ষেত্রেও বলতে গিয়ে লজ্জায় পরে গেলাম। বাস চলতে শুরু করেছে। জানালার ওপাশে তাকিয়ে নিজের চিন্তার জগতে চলে যাই।
ঘন্টাখানেক বা তারও বেশি পরে, মেয়েটা হঠাৎ কথা বলে উঠে।

ঃআপনি আমার হাজবেন্ডকে কিভাবে চেনেন?
আমি চমকায় উঠি। মেয়েটার মুখ থমথমে। শ্যামলা, অনেক হালকা পাতলা মেয়ে।
ঃআমি আপনার হাজবেন্ডকে চিনিনা।আপনি একা যাচ্ছেন তাই উনি আমার সাথে আপনার টিকিট করেছেন, তাই বললেন। আমার নাম্বার নিলেন, আপনার খবর নিতে।

মেয়েটা মনে হলো ব্যাপারটা সহজে মেনে নিতে পারছে না।
আমিও আর কথা বাড়াইনা।

এরপর মেয়ে আমাকে আরও কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হয়। আমার সাথে তার হাজবেন্ডের কোনও পুর্ব পরিচয় ছিল না।

মেয়ের কথায় যতটা বুঝি, হাজবেন্ড ডাক্তার, মেয়ে মেডিকেল স্টুডেন্ট। হাজবেন্ড খুব অত্যাচার করে। বাসা থেকেই বিয়ে। মেয়ের আগের পছন্দ ছিল, সেই ছেলে দেশের বাইরে। মেয়ের হাজবেন্ড মেয়েকে সন্দেহ করে, খুব টর্চার করে ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমার গন্তব্যে পৌছানোর আগেই একবার ছেলেটা ফোন করে, আমি সাথে সাথেই ফোন মেয়েকে দিয়ে দেই।

মেয়েটাকে দেখে আমার মনে হয়েছে, সে একটা মানসিক সমস্যার মধ্যে আছে।সমস্যা ছেলেটার না। আমার ভুলও হতে পারে। বহু পরে মেয়েটা একবার ফোন করে কেঁদেছিল। সম্ভবত বিয়েটা টেকেনি বা তেমন কিছু বলেছিল। আমার মনে নাই।

২.
বাসে আমি যথারীতি জানালার পাশে।পর্দা সরিয়ে বাইরের দিকে অপেক্ষা করছি, কখন বাস ছেড়ে দিবে। ঠিক সেই মুহুর্তে অপূর্ব সুন্দর একটা মেয়ে আমার পাশে বসে হাঁপাতে থাকে।

ঃআপু, আপনার কাছে পানি আছে?
আমি একটু অবাক হই। বাসে, বিশেষ করে এইসব বাসে এমন সবাই যায়!! সবাই নিজেকে সুপিরিয়র ভাবে। তাছাড়া নিরাপত্তার জন্যেই কেউ কারো কাছে পানি চায় না।
ঃআছে।
বলে, হ্যান্ড ব্যাগ থেকে পানির বের করে দিই। মেয়েটা পুরো পানি খেয়ে আমার দিকে তাকায়।
ঃস্যরি আপু, খুব পিপাসা পেয়েছিলো।জানালার পর্দাটা টেনে দিবেন আপু!আমার একটু সমস্যা আছে পরে বলছি।বাস চলতে শুরু করলে, আবার খুলে দিবেন।

মেয়েটা সুপারভাইজারকে ডেকে ডাব আর পানি কিনতে দেয়।

বাস ছাড়ার পর, পর্দাটা সরিয়ে দিলে, মেয়েটাকে খেয়াল করি। অতিমাত্রায় সুন্দর মেয়ে। গায়ের রঙ মধ্যপ্রাচ্যীয় টাইপ, গলায় নীলচে শিরা উপশিরাগুলি বোঝা যাচ্ছে। একহারা গড়ন। হালকা নীলের মধ্যে ডিপ নীল ব্লকের জামাটা অদ্ভুত সুন্দর মানিয়েছে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েই চোখ পরে যায়, ঘাড়ে লালচে মারের দাগ, গালে অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া চড়ের দাগ। চোখে স্পষ্ট মেঘ জমে আছে।মন খারাপ হয়ে যায়। চুপ মেরে বাইরে তাকাই।

মেয়ে বাস কিছুদুর চলে আসার পর, নিজে থেকেই শুরু করে। সে ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়ে। সেখানে তার হাজবেন্ড ব্যবসার কাজে গেলে, তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করে নিয়ে আসে।ঢাকার মগবাজারে শ্বশুরবাড়ি। বরের নিজেদের বাড়ি। বিয়ের পর ঢাকায় ইডেনে অনার্সে ভর্তি হয়। মেয়ে ভাল স্টুডেন্ট। বরের পড়ালেখা তেমন নাই।
বিয়ের কিছুদিন পর শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। সন্দেহ যার মুল কারণ।হাজবেন্ডের বন্ধু থেকে শুরু করে সবার সাথেই মেয়েকে সন্দেহ করে, প্রায়শই মেয়েকে অমানবিক নির্যাতন করা হতো।একবার আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টাও করা হয়েছে। মেয়েকে বাড়ির সাথে কোনও যোগাযোগ করতে দেয়া হয় না।আগেরদিন অনেক রাত পর্যন্ত মেরেছে, মাতাল স্বামী। সকালে ঘুমিয়েছিল। মেয়ে কলেজে যাওয়ার নাম করে বের হয়। সাথে গাড়ি পাঠানো হয়, যাতে পালাতে না পারে। মেয়ে গাড়ি বাইরে রেখে, কলেজে ঢুকে। কলেজ থেকেই কোনওমতে বাস স্ট্যান্ড এসেছে। রাত থেকে এখন অব্দি পানি পর্যন্ত খেতে পারেনি। ভয়ে ছিল, কেউ পিছে পিছে আসছে কিনা, ড্রাইভার খবর দিলো কিনা? গাড়িতে উঠে মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছে।

মেয়েকে সারারাস্তা কারো সাথেই কথা বলতে দেখিনি। পলাশবাড়ির কাছে মোবাইল অন করে, বোনকে ফোন করে শুধু জানায়, সে রংপুর হয়ে বাড়ি ফিরছে।

খুব মন খারাপ হয় মেয়েটার জন্যে। মেয়ের যদি তেমন কিছুই থাকতো, তাহলে আজ তার সাথেই পালাতো। আমি মেয়েকে পুরা রাস্তায় কোনও ছেলের সাথেই যোগাযোগ করতে দেখিনি। এবং মেয়েকে দেখে খুব সরল মনে হয়েছে। যেই ছেলে এই মেয়ের সাথে এমন করলো, সেই ছেলে নিজের ভাগ্য নিজেই নষ্ট করলো।

অতিরিক্ত সন্দেহ আমাদের নিজেদের যেমন অসুখী করে, আমাদের পার্টনার, সন্তানদেরকেও অসুখী করে তোলে। এইটা একটা মানসিক রোগ। আমরা কেউই সন্দেহবাতিকের উর্ধ্বে নই। কিন্তু তা যাতে বাড়াবাড়ি হয়ে না যায়। আমার মনে হয়, সন্দেহ না করে ঠকে যাওয়াতেও শান্তি।যেই ঠকা বুঝলামই না, তাতে আর কষ্ট কি! কিন্তু খামোখা সন্দেহের কষ্ট আরও বেশি কষ্ট দায়ক। যদিও এইটা আমার নিজস্ব ভাবনা। তবে সুখী হওয়ার জন্যে, এইটা খুবই জরুরী বিষয়।

 

স্বাতীর রঙধনু…৬

স্বাতীর রঙধনু…৬


আফরোজা হাসান


বাচ্চা পালন নয়তো সহজ। এই বিষয়বস্তু কে কেন্দ্র করে একটা ধারাবাহিক আলোচনা সভার আয়োজন করা উচিত।
বাচ্চাদের জ্যুস বানানোর জন্য বাগান থেকে কমলা নিতে এসেছিল স্বাতী। পেছন থেকে বাক্যটা ভেসে এলে ঘুরে তাকিয়ে ননদ আজরা কে দেখতে পেয়ে হেসে বলল, হঠাৎ এমন ইচ্ছে উদ্রেক হবার পেছনে কারণ কি?
স্বাতীর পাশে এসে দাঁড়িয়ে আজরা বলল, তুমি তো জানোই আমার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই যা হয় তা হচ্ছে, চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। নতুন কোন পরিস্থিতি যখন সম্মুখে এসে দাঁড়ায় আমি হিমশিম খাই সেটা সামলাতে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে সেই পরিস্থিতিটা কত সুন্দর ভাবে হান্ডেল করা যেত তার শত শত আইডিয়া মাথায় কিলবিল করতে শুরু করে। এরচেয়েও বড় একটা সমস্যা হচ্ছে, কোন সংজ্ঞা বা উদাহরণের ভুল প্রয়োগ। এই যেমন একদিন খেলতে গিয়ে মুয়াজ প্রচন্ড জোরে আছড়ে পড়লো। আমি বিকট এক চিৎকার দিয়ে ছুটে যাচ্ছিলাম আরভ ভাইয়া আমাকে ধরে ফেলে বললেন, ওকে একাই উঠতে দে। জীবনের উত্থান পতনে সর্বদা যেহেতু তুই ওর সাথে সাথে থাকতে পারবি না। সেহেতু এখন থেকেই একা একা উঠে দাঁড়ানোর অভ্যাস হয়ে যাক।
স্বাতী হেসে বলল, এই কথাটা উনি বাচ্চাদেরকেও বলেন। বলেন, তোমরা যখন আছড়ে পরবে আমিও তোমাদের সাথে পরবো। কিন্তু উঠে তোমাদেরকে একাই দাঁড়াতে হবে। বাচ্চাদেরকে স্বনির্ভর বানানোর ব্যাপারে একদম হামাগুড়ি দেয়া যখন শুরু করে তখন থেকেই উনি ট্রেনিং দেয়ানো শুরু করেন। একটা ঘটনা মনে পরলে এখনো হাসি পায়। নাযীব তখন মাত্র নড়াচড়া শুরু করে। হাত বাড়িয়ে এটা সেটা ধরতে চেষ্টা করতো। একদিন ওর হাত থেকে খেলনা ছুটে দূরে গিয়ে পরেছিল। নাযীব হাত বাড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছিল কিন্তু পারছিল না। উনি পাশেই বসেছিলেন কিন্তু খেলনাটা এগিয়ে দিচ্ছিলেন না। কত রকমের কসরত করে সাড়ে সাত মিনিট লাগিয়ে নাযীব শেষ পর্যন্ত ওর খেলনাটা ধরতে পেরেছিল।
আজরা হেসে বলল, আমিও তো ভাইয়ার মতোই করতে চাই সবকিছু কিন্তু হয়ে যায় সব উল্টাপাল্টা। এই যেমন পরশু বিকেলে মুয়াজ কমলা গাছ থেকে কমলা পারার চেষ্টা করছিল। দেখছোই তো এই গাছের কমলাগুলো বেশ নিচুতেই ঝুলছে। কিন্তু তবুও মুয়াজের ধরাছোঁয়ার একটু বাইরেই। মুয়াজ বার বার লাফ দিয়ে চেষ্টা করছিল ধরার। আমিও পাশে বসে মনে মনে বলছিলাম, চেষ্টা চালিয়ে যাও সোনা আমার। কিন্তু অনেকবার চেষ্টা করার পরেও যখন ধরতে পারছিল না ধীরে ধীরে আঁধারে ঢেকে যাচ্ছিলো মুয়াজের চেহারা। এমন সময় ভাইয়া এসে পেছন থেকে মুয়াজকে ধরে সামান্য উঁচু করে ধরতেই মুয়াজ দুহাতে টেনে দুটা কমলা ছিঁড়ে নিলো। উফফ, সেকি খুশি বাচ্চার। আনন্দে লাফাতে লাফাতে ছুটে গেলো ভাইবোনদেরকে তার নিজ হাতে ছেঁড়া কমলা দেখাতে। ভাইয়া তখন আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুই বাচ্চাকে সাহায্য না করে চুপচাপ বসে আছিস কেন? দেখতেই তো পাচ্ছিলি মুয়াজ ধরতে পারছে না কমলা। এবং যতটূকুন উঁচুতে রয়েছে ওর পক্ষে ধরা সম্ভবও ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চারা কয়েকবার চেষ্টা করার পর ওদেরকে সাহায্য করতে হয়। তা না হলে চেষ্টা করে নিরাশ হবার কারণে চেষ্টা করার প্রতিই অনীহা চলে আসে মনে। আমি বললাম, তুমিই তো বলো বাচ্চাদেরকে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করতে দেয়া উচিত। ভাইয়া তখন হাসতে হাসতে বললেন, কিন্তু বাচ্চা কোন একটা কিছু করার চেষ্টা করছে। বেশ খানিকটা সফলও হয়েছে। কিন্তু তারপক্ষে একা সফল হওয়া সম্ভব নয় এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চাকে সাহায্য করতে হবে যাতে সে কাজটা করতে পারে। তা না হলে এমন ধরণের ব্যর্থতা বাচ্চার মনে চেষ্টা করার ব্যাপারে উৎসাহকে হ্রাস করে দেয়। কথা শেষ করে ভাইজান হাসতে হাসতে চলে গেলেন। আমি আর কি বলবো তখন। বোকার মতো দাঁড়িয়ে নিজের বোকামোর কথা ভাবতে লাগলাম। এখন তুমি হেসে আর আহত করো না আমাকে। পরামর্শ দাও কিভাবে তোমার মতো মা হবো।
কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিলো স্বাতী মাহিরাকে ছুটে আসতে দেখে বলল, কি হয়েছে? তুমি এমন করে ছুটছো কেন?
তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে গল্প করছো? ঐদিকে তো বিরাট কান্ড ঘটে গিয়েছে। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো মাহিরা।
কি কান্ড ঘটেছে? প্রশ্ন করলো আজরা।
মাহিরা বলল,বাচ্চারা যাতে খাবার নিয়ে ঝামেলা করতে না পারে সেজন্য ওদেরকে সাথে নিয়েই তো ওদের প্রতি বেলার খাবারের মেন্যু ঠিক করে দিয়েছিলেন আরভ ভাইয়া। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। আজ লেগে গিয়েছে যুদ্ধ।
এত ভূমিকা কেন দিচ্ছো? কি হয়েছে বলে দিলেই তো পারছো। বললো স্বাতী।
আচ্ছা বলছি শোনো। বড় খালামণি চার্ট অনুযায়ী ই বাচ্চাদের সবাইকে নাস্তা দিয়েছিল। আজ সকালের নাস্তার মেন্যু ছিল ব্রেড, জেলি, মিল্ক, কলা আর ডিম বয়েল্ড। কিন্তু নাস্তার টেবিলে এসে বসেই নাযীব ঘোষণা দিলো আজ সে চকলেট ফ্লেক্স। নুবাইদ, নুসাইব, নাযীব, রিদান ওরা চারজন নাস্তা করতে আসার কিছুক্ষণ আগে মুসআব, নাহিব, উমায়ের আর মহিমা নাস্তা করে গিয়েছিল। নাহিব চকোফ্লেক্স খেয়েছিল সেই প্যাকেট টেবিলেই রয়ে গিয়েছিল।
সেটা দেখেই মূলত নাযীবের রুটিন ব্রেক করার ইচ্ছে জেগেছিল। কিন্তু নাযীবের ঘোষণা শুনে নুসাইব বলল, আজ আমাদের নাস্তার মেন্যুতে চকোফ্লেক্স নেই। তাই তুমি চকোফ্লেক্স খেতে পারবে না। নাযীব বলল, আমি চকোফ্লেক্সই খাবো। দাদুমণিকে বললেই আমাকে দেবে। নুবাইদ হিহি করে উঠে বলল, দাদুমণি কক্ষনো দেবে না রুটিনের বাইরের খাবার। দিলে পাপা রাগ করবে। তোমাকে তাই খেতে হবে যা আমাদের চার্টে আছে। রিদান বলল, বড়রা রাগ করবে এমন কাজ করতে হয়না। বড়দের বিরক্ত করা খুব খারাপ। দুষ্টু ছেলেরা এমন করে। তুমি কি দুষ্টু ছেলে হতে চাও নাযীব ভাইয়া? বড় দুই ভাইয়ের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে ছোটভাই ওরফে নিজের শিষ্যকেও তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখে নাযীবের মাইন্ডে লেগে গেলো। চোখ বড় বড় করে বলল, আমি চকোফ্লেক্সই খাবো। দাদুমণি আমাকে দেবে। পাপা আমার উপর রাগ করবে না। নুবাইদ, নুসাইব আর রিদান তিনজনই তখন খুকখুক করে হাসতে শুরু করলো।
বাচ্চাদের কান্ড শুনে হেসে ফেললো স্বাতী আড় আজরা। মাহিরাও হাসতে হাসতে বলল, কিছুক্ষণ তো নাযীব মহা বিরক্তি নিয়ে তিন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। এমন সময় বড় খালামণি চারজনের জন্য নাস্তা নিয়ে ঢুকলেন। বড় খালামণি সামনে নাস্তার প্লেট রাখলে নাযীব বলল, দাদুমণি এটা খাবো না। আমাকে চকোফ্লেক্স দাও। বড় খালামণি নাযীবের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, আজকের রুটিনে এগুলোই তোমাদের নাস্তা। এসবই খেতে হবে। গুড বয়ের মতো খেয়ে নাও দাদুভাই। নাযীব আর কিছু না বলে চুপ করে রইলো। সবাইকে নাস্তা দিয়ে বড় খালামণি চলে যেতেই নুবাইদ দুষ্টুমি করে ভারিক্কি চালে বলল, কি বলেছিলাম না দাদুমণি কক্ষনো রুটিনের বাইরে নাস্তা দেবে না। এবার বুঝেছো তো? নুসাইব আর রিদান মুখে কিছু না বললেও নুবাইদের সাথে হাসিতে যোগ দিলো। একে তো নিজের ইচ্ছে পূরণ না হওয়া তারউপর ভাইদের খুনসুটি! এত লোড আমাদের ছোট্ট একটু নাযীব সোনা নিতে পারলো না। অনেক রাগ হয়ে গিয়েছিল সোনা বাচ্চাটার। তাই পাশ থেকে চকোফ্লেক্সের প্যাকেট টেনে নিয়ে এক মুঠ ফ্লেক্স নিয়ে নুবাইদের গায়ে ছুঁড়ে মারলো। নুসাইব প্রায় চিৎকার করে উঠে বলল, নাযীব তুমি এসব কি করছো? তোমাকে না পাপা মানা করেছে খাবার নষ্ট করতে? নাযীব তখন আরেক মুঠ ফ্লেক্স নিয়ে অর্ধেক নুসাইবের দিকে আর অর্ধেক রিদানের দিকে ছুঁড়ে দিলো। ব্যাস মূহুর্তেই পরিস্থিতি পাল্টে গেলো। রিদান সাথে সাথে উঠে ভোঁ দৌড় লাগালো। এদিকে নুবাইদ আর নাযীব একে অন্যের দিকে ফ্লেক্স ছুড়াছুঁড়ি শুরু করলো। নুসাইব দুই ভাইকে শান্ত করার চেষ্টা করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ফ্লেক্সের ছিটা খেলো। আমাদের শান্ত নুসাইব বাবুটা বিরক্ত হয়ে চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ফ্লেক্সগুলোকে হাত দিয়ে জড়ো করে তুলে নিয়ে দুই ভাইয়ের দিকে ছুঁড়ে মারলো। রিদান ততক্ষণে যেয়ে আরভ ভাইয়া আর রিশান ভাইয়াকে খবর পৌঁছে দিয়েছিল। হৈচৈ শুনতে পেয়ে বড় খালামণিও কিচেন থেকে ছুটে এলেন। একদিক থেকে বড় খালামণি অন্যদিন থেকে ভাইয়ারা দুজন মোটামুটি একই সময়ে বাচ্চাদের ডাইনিং রুমে ঢুকলেন। এবং ভেতরের অবস্থা দেখে তিনজনই কয়েক মূহুর্তের জন্য হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন।
এইটুকু শুনে স্বাতী বাড়ির ভেতরে যাবার উদ্দেশ্যে ছুট লাগাতে যাচ্ছিলো কিন্তু মাহিরা স্বাতীর হাত টেনে ধরে বলল, বাকিটুকু শুনে যাও ভেতরে যাবার আগে। আরভ ভাইয়াকে দেখা মাত্রই নুসাইব ভ্যা করে কান্না করে দিয়ে বলল, পাপ্পা আমি কিছু করিনি। নুবাইদ আর নাযীব আমাকে মেরেছে চকোফ্লেক্স দিয়ে। আমি শুধু একবার মেরেছি। আই এম সরি পাপ্পা। আই এম সরি চাচ্চু। আই এম সরি দাদুমণি। আরভ ভাইয়া কাছে গিয়ে নুসাইবের মাথায় হাত বুলিয়ে হাসি মুখে বললেন, যা হবার তাতো হয়েই গিয়েছে। কান্না করে সোনা। নুবাইদ বলল, পাপা সব নাযীবের দোষ। নাযীবকে শাস্তি দাও। রিদান এক লাফে রিশান ভাইয়ার কোলে উঠে বলল, হ্যা নাযীব ভাইয়া দুষ্টু ছেলে। শাস্তি দাও। তিন ভাইয়ের কথাবার্তা শুনে নাযীব একদম চুপ হয়ে গিয়েছিল। সারাক্ষণ কটকট পটপট করতে থাকা আমাদের কামল বাবার মুখে কিছুই না বলে বড় বড় চোখ করে সবার দিকে ঘুরে ঘুরে তাকাতে লাগলো। আরভ ভাইয়া হাত বাড়িয়ে নাযীবকে কাছে টেনে নিয়ে বলল, আপনি এমন করেছেন বাবা? নাযীব মাথা নেড়ে বলল, হ্যা করেছি। আমাকে যে দুষ্টু কথা বলেছে সেজন্য করেছি। ভাইয়া তখন বললেন, আচ্ছা ঠিকআছে আগে তোমরা সবাই নিজ নিজ নাস্তা শেষ করো। এরপর সবাই মিলে এইসব কিছু পরিষ্কার করবে। তোমাদের ডাইনিং হল ঠিক যেরকম থাকে তেমন করে গুছিয়ে রেখে বাগানে আসবে। পাপা বাগানে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি। রিশান ভাইয়াও তখন রিদানকে কোল থেকে নামিয়ে দিলেন। এরপর ভাইয়ারা দুজনই বেরিয়ে গেলেন। বড় খালামণি নিঃশব্দে নাতীদের নাস্তা করার সময় পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। নাস্তা শেষ করার পর বড় খালামণির ডিরেকশনে নুবাইদ, নুসাইব, নাযীব আড় রিদান মিলে সবকিছু পরিষ্কার করে গুছিয়ে এতক্ষণে মনেহয় বাগানের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিয়েছে।

চলবে…

পর্ব-৫

 

সফল উদ্যোক্তা রুবিনা এখন উদ্যোক্তা তৈরির কাজ করছেন

সফল উদ্যোক্তা রুবিনা এখন উদ্যোক্তা তৈরির কাজ করছেন


ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা


হাঁস-মুরগী, মাছ আর কৃষি উদ্যান তৈরি করে সফলতা পেয়েছেন নাটোরের শিক্ষিত ও মার্জিত নারী উদ্যোক্তা রুবিনা। মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরের সফলতায় তার মিলেছে একাধিক স্বীকৃতি। রুবিনা এখন নারী উদ্যোক্তার ক্ষেত্র সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করছেন।

অভাব অনটনের সংসারে বাবার মৃত্যু আর বিয়ের পর নিজের সংসার ভেঙ্গে গেলেও ভেঙ্গে পড়েননি রুবাইয়া রহমান রুবিনা। নাটোর সদরের চাঁদপুর গ্রামে বাবার অবর্তমানে মা আর ছোট ভাই-বোনের সংসারের হাল ধরেন রুবিনা। সেলাই করে সংগৃহিত অর্থ এবং অর্থ লগ্নী প্রতিষ্ঠানের ঋণে বাড়ির আঙ্গিনায় শুরু করেন পাঁচশ’ বাচ্চা নিয়ে ব্রয়লার মুরগীর খামার। সেখানেও দুর্ভাগ্য। মুরগী বিক্রি করে মিলেছে লোকসান।

কিন্তু হার মানার পাত্রী নন রুবিনা। তাঁর ভাষায়, ব্যবসায়ের লোকসানের মধ্যে লুকিয়ে থাকে মুনাফা। নতুন উদ্যোমে শুরু করেন খামারের কার্যক্রম। শুধু মুরগীর খামারই নয়, বাড়ী সংলগ্ন নিজেদের পুকুরে শুরু করেন মাছ চাষ, সাথে তিনশ’ হাঁসের সমন্বয়ে খামার।

অসুস্থতা নিয়েও অফুরান জীবনী শক্তির অধিকারী রুবিনা। প্রায় একই সঙ্গে মাছ আর হাঁস-মুরগীর খামারের পাশাপাশি কৃষিও শুরু করেন তিনি। পর্যায়ক্রমে জমি ইজারা নিয়ে ফলের ছয়টি বাগান তৈরী করেছেন রুবিনা। এসব বাগানে ফলছে আম, লেবু, পেয়ারা, কলা, কুল আর পেঁপে; রয়েছে মরিচ। আমের তালিকায় আছে অপ্রচলিত ও আদরনীয় গৌরমতি, ব্যানানা ম্যাঙ্গোর মত আম। নাটোর হর্টিকালচার সেন্টার ড্রাগন ফলের ৪০টি খুঁটিতে ১২০টি ড্রাগনের প্রদর্শনী খামার স্থাপন করে দিয়েছে রুবিনাকে। ফুল আসা ড্রাগনের বাগানে চলতি বছরেই ফল পাওয়া যাবে। ড্রাগনের বাগানে সাথী ফসল হিসেবে রুবিনা চাষ করেছেন মৌসুমী সব্জি।

সকল উপকরণের কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে রুবিনা প্রমাণ করেছেন-কোন কিছুই অপ্রয়োজনীয় নয়। মুরগীর বিষ্ঠা দিয়ে তৈরী করছেন উৎকৃষ্ট জৈব সার-রিং কম্পোস্ট-প্রতি মাসে যার বিক্রয় মূল্য অন্তত তিন হাজার টাকা। পাশেই উৎপাদন করছেন আরো একটি জৈব সার- ভার্মি কম্পোস্ট। বাড়ির শোভা বাড়িয়ে রেখেছে এক ঝাঁক কবুতর। এর বাণিজ্যিক মূল্যও কম নয়।

রুবিনার বিশাল এই কর্মযজ্ঞে সহযোদ্ধা হিসেবে পেয়েছেন ছোট ভাই রুবেল আর পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স শেষ বর্ষে পড়–য়া ছোট বোন রিমি। সাথে দু’জন নিয়মিত কর্ম শ্রমিকসহ প্রতিদিন আরো গড়ে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করে।

রুবিনার কর্মযজ্ঞের স্বীকৃতি দিয়েছে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর। তাদের আঙ্গিনায় আই পি এম স্কুল পরিচালনা করে এলাকার ২৫ পরিবারের ৫০ সদস্যকে হাঁস-মুরগী পালন, গরু মোটাতাজাকরণ, সব্জি চাষ, বসতবাড়ীর বাগান ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও অর্থ সহায়তা দিয়েছে নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। রুবিনার নেতৃত্বে গঠিত চাঁদপুর নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতির ৫০ সদস্য প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেকেই সমবায় বিভাগ থেকে মাত্র দুই শতাংশ সার্ভিস চার্জে গাভী পালনের ঋণ পাচ্ছেন এক লাখ ২০ হাজার টাকা করে। একশ’ সদস্যের অন্যরা পর্যায়ক্রমে ঋণের অপেক্ষায় আছেন। রুবিনার গাভী খামার খুব শিগগিরই উৎপাদনে আসবে। সকলের উৎপাদন নিয়ে এই এলাকায় গড়ে তুলতে চান মিল্ক ভিটা বা প্রাণের দুগ্ধ ক্রয় কেন্দ্র।

রুবিনাকে সভানেত্রী করে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের নিবন্ধনে গঠিত ইয়ুথ উইম্যান ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি সেলাই কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। রুবিনাকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে সমাজ সেবা ও প্রাণি সম্পদ বিভাগ।

নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের অধীন ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পে’র আওতায় রুবিনাকে কমিউনিটি হর্টিকালচার প্রভাইডার মনোনীত করা হয়েছে। মাসে তিন হাজার টাকা সম্মানি ভাতায় কৃষিতে উদ্যোক্তা সৃষ্টির কাজ করছেন রুবিনা। এলাকার আট শতাধিক ব্যক্তিকে হর্টিকালচার সেন্টারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছাড়াও প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রশিক্ষণ শেষে হর্টিকালচার সেন্টারের গাছ, সার আর উপকরণ সহায়তায় গড়ে উঠেছে ৫০টি ফলের বাগান আর ৩৫টি বাড়ির বাগান। ইতোমধ্যে তাঁর হাতে তৈরি নারী উদ্যেক্তাদের মধ্যে সফল হয়েছেন হেনা বেগম, শাকিলাসহ বেশ ক’জন। হেনা বেগম বলেন, আমাদের নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে রুবিনা।

রুবিনা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে গত বছর নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কসহ গ্রামীণ সড়কের দু’কিলোমিটারে তালের গাছ লাগিয়েছেন। এবার নারকেলের চারা রোপণের পরিকল্পনা করেছেন।
নাটোর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর রুবিনাকে দিয়েছে জয়িতা পদক, ইউনিলিভার ‘তোমার স্বপ্ন কর সত্যি’ ক্যাটাগরিতে দু’লাখ টাকার প্রাইজমানী। আর সবচেয়ে সম্মানজনক হিসেবে ২০১৮ তে ঢাকার খামারবাড়ীতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের আয়োজনে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছ থেকে ‘কৃষি উন্নয়নে নারী’ পদক পেয়েছেন রুবিনা।

রুবিনা বলেন, আমার পথ চলাতেই আনন্দ। আমার পথ চলা সার্থক হবে-যদি আমি সমাজের অবহেলিত নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সফল হই। আমাদের এলাকায় কৃষির মাধ্যমে সবুজ বিপ্লব এবং গাভীর মাধ্যমে শ্বেত বিপ্লব ঘটাতে চাই। ইনশাল্লাহ আমি সফল হবো।

নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক স ম মেফতাহুল বারি বলেন, রুবিনাকে কমিউনিটি হর্টিকালচার প্রভাইডার মনোনীত করার পর সে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। নতুন উদ্যোক্তা বিশেষতঃ নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে ইতোমধ্যে সে সফলতা পেয়েছে।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরামর্শক এস এস কামরুজ্জামান বলেন, রুবিনার মেধা আর কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয় সমর্থন ও সহযোগিতায় রুবিনা এখন সফল উদ্যোক্তা। সারাদেশে রুবিনার মত উদ্যোক্তা তৈরি হলে দেশ হবে সমৃদ্ধ।

সুত্রঃ ফাররাজী আহম্মদ রফিক বাবন (বাসস)

 

স্বাতীর রঙধনু…৫

স্বাতীর রঙধনু…পর্ব-৫


আফরোজা হাসান


হাসলো আরভও। বাচ্চাদের যাতে ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটে তাই দুজন ওদের রুমের কাছ থেকে সরে বাইরের বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। চেয়ার টেনে বসতে বসতে আরভ প্রশ্ন করলো, কি লেখা হচ্ছিলো এত মনোযোগের সাথে?
স্বাতী হেসে বলল, আগামী বুধবার আমাদের মহিলা প্রোগ্রামে আলোচনার বিষয়বস্তু রাখা হয়েছে শিশুদের গড়ে তোলাকে কেন্দ্র করে। নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা লিখছিলাম বোনেদের জন্য। বোনেরা নিজ নিজ বাচ্চাদের জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের বিশাল এক লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছে। প্রশ্নগুলো দেখলে চোখ কপালে উঠে যাবার দশা হয়। এক ছোট ছোট বাচ্চারা এমন জটিল জটিল অদ্ভুত প্রশ্ন কিভাবে করে চিন্তা করে অবাক হই। তবে প্রশ্নের চেয়েও কঠিন উত্তর দেয়াটা। বাচ্চারা খুব সহজেই বুঝে যাবে এমন উদাহরণ সাজিয়ে বলাটা সত্যিই বেশ কঠিন লাগে। এই যেমন এক বোনের সাত বছর বয়সী মেয়ে প্রশ্ন করেছে, নামাজ না পড়লে কেন আল্লাহ গোনাহ দেবেন? সে যদি নামাজ তাহলে আল্লাহর কি উপকার হবে?
আরভ হেসে ফেললে স্বাতীও হাসতে হাসতে বলল, বেচারি মেয়ের প্রশ্ন শুনে খুবই ঘাবড়ে গিয়েছে। এই বয়সেই এমন প্রশ্ন করছে মেয়ে। বড় হলে না জানি কি করবে ভেবে ভেবে অস্থির। এখন বোঝে না বলেই এমন প্রশ্ন করছে। বড় হলে যখন বুঝবে তখন আর এমন প্রশ্ন করবে না। ইত্যাদি ইত্যাদি বলে বোনটিকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মনেহলো উনার অস্থিরতা মোটেই কমেনি। আরেক বোন উনার মেয়েকে নিয়ে খুব সমস্যাতে আছেন। কিছুদিন আগে অসাবধানতায় গরম তেল পড়ে উনার মেয়ের হাত অনেকখানি পুড়ে গিয়েছে। স্কুলের সবাই দাগের কথা জিজ্ঞেস করে বলে বাচ্চা এখন স্কুলেই যেতে চায়না। স্কুলে যাবার সময় হলেই কান্নাকাটি শুরু করে। আমার নিজেরও এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। তাই বাচ্চাটার ভীতি , কষ্ট অনুভব করতে পেরেছি। তোমার মনেআছে নিশ্চয়ই আমার বয়স যখন আট বছর ছিল বোনেদের সাথে দুষ্টুমি করতে করতে পড়ে গিয়ে চোখের একপাশে অনেকখানি কেটে গিয়েছিল।
হ্যা মনেআছে।
এখন তেমন একটা বোঝা না গেলেও ছোটবেলায় দাগটা বেশ দৃষ্টিকটু ছিল। আমি মনখারাপ করতাম দাগের কারণে তাই বাবা বলেছিলেন ‘তুমি স্পেশাল তো তাই আল্লাহ তোমাকে চিহ্ন দিয়ে দিয়েছেন। যাতে যখনই কারো স্পেশাল মানুষের প্রয়োজন পড়বে তোমাকে সহজে খুঁজে নিতে পারবে।’ দাগের কারনে নিজেকে স্পেশাল ভাবা আমি যখন সহপাঠীদেরকে আমার সেই স্পেশাল দাগটার দিকে অবাক চোখে তাকাতে দেখলাম, প্রশ্ন করতে দেখলাম, খুব ইতিবাচক পরিবেশে বড় হওয়া আমি সেটা মেনে নিতে পারলাম না কিছুতেই। কোন ভাবেই কেউ আমাকে রাজী করাতে পারছিলো না স্কুলে যাবার জন্য। এখনো মনে আছে বাবার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কান্না করতে করতে বলেছিলাম, সবাই আমার দাগকে কেন দেখে বাবা? আমাকে স্পেশাল কেন ভাবে না? ‘সত্যিই তো দাগ কেন? স্পেশাল নয় কেন?’ বাবা তখন আমাকে কোলে করে বাগানে নিয়ে গিয়ে বসে বলেছিলেন, মানুষের স্বভাব হচ্ছে চাঁদকে দেখার আগে তার দাগকে দেখা। প্রশ্ন করেছিলাম, কেন বাবা? বাবা হেসে জবাব দিয়েছিলেন, কারণ তাদেরকে দাগকে এড়িয়ে যেতে শেখানো হয়নি। যদি শেখানো হতো তাহলে মানুষ চাঁদকেই দেখতো দাগকে নয়। একটা কথা তুমি সবসময় মনে রাখবে মা এই পৃথিবীর বেশীর ভাগ মানুষগুলোই খুব ভালো। হ্যা কিছু খারাপ মানুষ আছে কিন্তু তাদের সংখ্যা খুবই নগন্য। আর তারা আছে বলেই তো আমরা বুঝতে পারি ভালোর মর্ম। মানুষের আরেকটা স্বভাব কি জানো মা? নতুন কিছু দেখলে মানুষ অবাক হয়। তোমার সামনে যদি একটা চড়ুই পাখি আসে যার মাথায় দুটা শিং আছে তুমি অবাক হবে না? চোখ বন্ধ করে চিন্তা করো তো একটু। আমি চিন্তা করে হেসে ফেলেছিলাম। সাথে সাথে অর্জন করেছিলাম নতুন এক শিক্ষা –“নতুন কিছু দেখলে মানুষ অবাক হতেই পারে, হাসতেই পারে এতে কষ্ট পাবার কিছু নেই। আমরা কষ্ট পাই নিজেকে দিয়ে চিন্তা করতে পারিনা বলে। মানুষ দাগ দেখে কারন তাদেরকে দাগকে এড়িয়ে যেতে শেখানো হয়নি বলে। আর এই পৃথিবীতে ভালো মানুষের সংখ্যাই বেশি।”
এখানে আরেকটা লক্ষণীয় বিষয় কি জানো স্বাতী? বাচ্চার মধ্যে যদি কোন খুঁত থাকে বা দোষ থাকে বাবা-মার কখনোই উচিত না কোন উপমা ব্যবহার করে তাকে সেটা বলা বা বোঝানো। বাচ্চাকে খুশি করতে গিয়ে তারা যে ভুল তথ্যটা বাচ্চাকে দেয় এক কারনে বাইরের জগতে বাচ্চা পড়তে পারে চাপের মুখে এবং তার মধ্যে জন্ম নিতে পারে হীনমন্যতা। আর হীনমন্যতা এমন এক কীট যার ফলে ধ্বসে যেতে পারে আত্মবিশ্বাস। অথচ আত্মবিশ্বাস বা আত্মমর্যাদা বোধই একজন মানুষকে মানুষ হিসেবে সুস্থ ও সুন্দর ভাবে বাচতে শেখায় এবং এটাই মানুষের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। তাই বাচ্চা যাতে নিজের সম্পর্কে কোন ভুল ধারণা বা ভ্রান্ত বিশ্বাস মনের মধ্যে লালন করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে বাবা-মাকে।
জ্বি আমিও এই কথাটাই বলতে যাচ্ছিলাম। বাবা মায়েরা প্রায়ই সময় সন্তানকে আশ্বস্ত করতে গিয়ে, স্বান্ত্বনা দিতে গিয়ে এটা খেয়াল রাখতে ভুলে যান, বাইরের মানুষেরা তাদের মতো করে আগলে রাখবে না তাদের সন্তানদেরকে। মনে যাতে সামান্য ব্যথাও না পায় এই খেয়াল রেখে কথা বা আচরণ করবে না বাইরের মানুষেরা। তাই সন্তানের তরে আশ্রয় হবার সাথে সাথে তারা যাতে নিজেও নিজের আশ্রয় হতে পারে সে শিক্ষাটাও দিতে হবে। আমরা যখন ছোট ছিলাম মাসে একবার আমাদের পারিবারিক বৈঠক বসতো। সবাই সবার কাজের সমালোচনা করাই ছিল বৈঠকের উদ্দেশ্য। আমরা সবাই খোলামেলা আলোচনা করতাম কার কোন আচরণটা ঠিক হয়নি, কোন কথাটা এভাবে না বলে অন্য ভাবে বললে বেশি সুন্দর হতো। কার ব্যবহার কষ্ট দিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। সাব্বিরের স্বভাব ছিল সারাক্ষণ সবার খুঁত ধরা। বাবা সবাইকে বোঝাতন, যাকে দরকার ধমকে দিতেন কিন্তু এই খুঁত বিশেষজ্ঞকে কখনোই কিছু বলতন না। প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে একদিন প্রশ্ন করেছিলাম, বাবা তুমি সাব্বিরকে কখনো কিছু কেন বলো না? বাবা হাসতে হাসতে জবাব দিয়েছিলেন, কারণ সাব্বিরের এই দোষটা তোমাদের বাকি সবাইকে সতর্ক হতে সহায়তা করছে খুব। সেদিন বাবার আলোচনা থেকে জেনেছিলাম-“সুন্দরের মাঝে যখন কোন দাগ থাকে মানুষ না চাইলেও সেদিকে নজর দিতে বাধ্য হয়। সাদার বুকে একফোঁটা কালো এমন ভাবে জ্বলজ্বল করে যে চোখে পড়েই যায়। সবসময় দাগকে দেখা মানেই সুন্দরকে অবমাননা করা নয়। তাই যারা সুন্দর মনের মানুষ তারা অন্যের দাগটাকে দেখে তাকে ছোট করার জন্য নয় বরং শুধরে দেবার জন্য। জীবনে এমন মানুষের জন্য মনের দরজা খুলে অপেক্ষা করা উচিত। কারন এরা আরো শুদ্ধ হতে আরো নিখুঁত হতে সহায়তা করে যাইহোক, এসব আলোচনা এখন থাক। এসব নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকে বসতে হবে তোমার সাথে। বোনেরা তাদের বাচ্চাদের যে প্রশ্নগুলো দিয়েছে সেগুলো নিয়েও আলোচনা করতে হবে তোমার সাথে। বাচ্চাদেরকে যে কোন কিছু সহজ ও সুন্দর করে বোঝানোতে তুমি আমার চেয়ে হাজার গুণ বেষ্ট, আলহামদুলিল্লাহ। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। তুমি রুমে যাও। আমি তোমার বাসন্তী পরীর হাত থেকে গল্পের বই নিয়ে তাকে ঘুমের রাজ্যে পারসেল করে আসি।
আরভ হেসে বলল, চলো দুজন মিলেই বাসন্তী পরীকে ঘুমের রাজ্যে পারসেল করার আয়োজন করে আসি।
স্বাতী হেসে বলল, ঠিক আছে চলো।

চলবে…

 পর্ব-৪

 

বাদলা দিনে মনে পড়ে

বাদলা দিনে মনে পড়ে


ফাতিমা মারিয়াম


আজ ছোটবেলার কথা ভীষণ মনে পড়ছে।

সেই বৃষ্টির দিনগুলির কথা। ঐ যে, যেদিন সকাল থেকেই আকাশ মুখ কালো রাখত সেদিনের কথা। একসময় সেই গোমড়া মুখো আকাশ থেকে ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হত।

আহা! কী আনন্দ! টিনের চালে বৃষ্টির একটানা ঘুঙুর পায়ে রুমঝুম রুমঝুম নৃত্য।

আম্মার চোখ ফাঁকি দিয়ে বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দকে এখন আর কিছুর সাথেই তুলনা করতে পারিনা। মধ্যাহ্নভোজনের পর কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতাম। হালকা হালকা শীতের একটা আমেজ থাকত। হয়ত অনেকক্ষণ ধরে বৃষ্টিতে ভেজার জন্যই এই শীত শীত ভাবটা আসত।

বিকেলবেলা বৃষ্টির পানি ভর্তি উঠানে পা ডুবিয়ে হাঁটতাম। আম্মার বকুনিতে কান ঝালাপালা। কিন্তু সেই বকুনিকে উপেক্ষা করেই সময়টুকু পার করতাম। আমি কাগজের নৌকা বানাতে পারতাম না! তাই সেই আনন্দ কখনো নিতে পারিনি। আশেপাশের বাসার অন্য বিচ্ছুগুলোকে দেখতাম কাগজের নৌকা বানিয়ে পানিতে ভাসাত। আমি শুধুই চেয়ে চেয়ে দেখতাম!

সন্ধ্যার আগে আম্মা কাঁঠালের বিচি বা শিমের বিচি ভেজে দিত। অথবা কখনো কখনো পিঁয়াজু। মাঝে মাঝে চাল ভেজে কাঁচামরিচ, পিয়াজ আর সরিষার তেল দিয়ে মাখিয়ে দিত অথবা ঝালমুড়ি। সেই মজাদার খাদ্যের কাছে চিকেন ফ্রাই বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই কিছুইনা।

বর্ষাকালে রাতেও এই অবিরাম বর্ষণ চলত। বাজের শব্দে ভীষণ চমকে উঠতাম। দিনের চেয়ে রাতের বৃষ্টির শব্দ একটু রকম ছিল! কেমন একটা ভয়ভয় ভাব। একসময় বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে কানে সয়ে যেত। তারপর কখন যে ঘুম এসে যেত!

ছোটবেলার মজার ঘটনা লিখব বলে লেখাটা শুরু করেছিলাম। কিন্তু লিখতে লিখতে মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল! আসলে সবাই এক সময় ছোটবেলাকে খুব বেশি মাত্রায় ফিরে পেতে চায়, সুন্দর, স্বর্ণালী সেই সময়ে ফিরে যেতে চায়! কিন্তু তা তো আর সম্ভব না! জীবন তার আপন গতিতেই বয়ে যায়…যাবে।

‘ছেলেবেলার দিন ফেলে এসে
সবাই আমার মত বড় হয়ে যায়
জানিনা ক’জনে আমার মত
মিষ্টি সে পিছু ডাক শুনতে যে পায়………

 

গরমের শরবত…


রেসিপি


বেলের শরবত
উপকরণ:

পাকা বেল ১টি। ঠাণ্ডা পানি ৪ কাপ। গুঁড়া দুধ আধা কাপ। চিনি প্রয়োজন মতো। বরফ-কুচি পরিমাণ মতো।

পদ্ধতি:

বেলের দানা ফেলে চামচ দিয়ে শাঁস বের করে নিন। পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। নরম হয়ে আসলে চালনি দিয়ে চেলে নিন।

এরপর এতে চিনি ও দুধ মেশান। বেশি ঘন হয়ে গেলে আরও কিছুটা পানি মিশিয়ে নিন। বরফকুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।

কাচা আমের শরবত
উপকরনঃ

আম-১টা, চিনি-৫-৬ চামচ, গোল মরিচ-১ চামচ, বীট লবন-১ চামচ, কাচা মরিচ-2, লবন-প্রয়োজন মত, পানি-আড়াই কাপ

প্রনালীঃ

কাচা আম কুচি কুচি করে কেটে উপকরন গুলোর সাথে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।বরফ কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।

বাঙ্গির শরবত
উপকরণ :

বাঙ্গির রস ১ কাপ, চিনি ১ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ চা চামচ, বরফ কিউব পরিমাণমতো, লবণ এক চিমটি ( না দিলেও হয়)।

প্রণালী :

বাঙ্গি কুচি কুচি টুকরো করুন। বড় বাটিতে বাঙ্গির সঙ্গে চিনি মিশিয়ে রেখে দিন বেশ কিছুণ। লেবুর রস ও বরফ মিশিয়ে রাখুন আরও কিছুণ। বাঙ্গি থেকে পানি বের হয়ে শরবত হবে। এটা ছেকে ঢেলে নিন গ্লাসে। লবণ মেশান। বরফ কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।

 

সুস্থ দাম্পত্য টিপস

সুস্থ দাম্পত্য টিপস


দাম্পত্য


দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক বন্ধন ও সুসম্পর্ক উপর নির্ভর করে, সুস্থ দাম্পত্য জীবন ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনে সহায়তা করে। এবং এর বিপরীতে গেলে ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরে।

*পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে সন্তুষ্ট, পরিতৃপ্ত ও সুখীবোধ

ব্যক্তি তার প্রতিদিনকার ঘটনাবলিতে পরিতৃপ্ত। স্বাভাবিকভাবেই উভয়েই সন্তুষ্ট ফলে মানসিক চাপ(stresses) গুলোর মুখোমুখি হলেও মোকাবেলা করতে পারেন। নিজের ব্যক্তিগত দক্ষতা এবং সমস্যা সমাধান করার কৌশল বুঝতে পারেন এবং রোজকার দিনের কাজ গুলো ঠিকভাবে গুছিয়ে করতে পারেন।

*পরস্পরের কাছে নিরাপদ এবং আরামদায়ক বোধ করবে

শুধু নিজের ভালো থাকাকে প্রাধান্য দেওয়া ছাড়াও অন্যের ভালো থাকাটাকে নিশ্চিত করেন ফলে নিরাপদ এবং আরামদায়ক সম্পর্কের জন্ম নেয়।

*পরস্পরের প্রতি আচরণ সম্মানপূর্ণ হবে

সন্মান হলো সন্মানিত ব্যক্তির চাদর। সুতরাং পরস্পরের বন্ধন তখনই সবচেয়ে বেশি মজবুত হয় যখন সন্মান সহিত আচরণ করেন পরস্পর।

*নিজেদের সঙ্গে কাটানো সময় আনন্দপূর্ণ হবে

কাটানো সময় আনন্দপূর্ণ হবে বলেই পরস্পরের জীবনের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। (যেমন: বন্ধুবান্ধব, ভালো লাগার বিষয়, পরিবার, জীবন নিয়ে ভাবনা, স্কুল-কলেজ, কর্মক্ষেত্র ইত্যাদি)।

*দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের প্রতি আস্থা/বিশ্বাস থাকবে

দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের প্রতি আস্থা ও পাশাপাশি পরিবার ও পরিবারের বাইরে সমাজ কমিউনিটি ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গনে অবদান গড়বে।

*দাম্পত্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, মমতা, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদির ভিত্তিতে পরস্পরকে প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে।

সুত্রঃ ইন্টারনেট৷

 

আমার বাবা…

আমার বাবা…


সাকলাইন রাসেল


ছেলে মেয়েদের সামনে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে ভালোবাসেন…তাঁর রাশভারী রূপ দেখে অভ্যস্ত আমি…ছোট বেলা থেকেই তাঁকে দেখলে ভয় পেতাম…আমি তখন রংপুরে প্রাইমারীতে পড়তাম…বাবা ঢাকায় থাকতেন…অনেক দিন পর পর রংপুর যেতেন…কবে রংপুর আসবেন সে দিনক্ষণ আমি লিখে রাখতাম…প্রচন্ড ডানপিটে ছিলাম..বাবার আগমন তাই আমার কাছে ছিল আতংকের…ভয়ের…পরাধীনতার…
কারণ, বাবা এলেই আমাকে নিদির্স্ট সময়ে উঠতে হবে…পড়তে হবে…ঘরে ফিরতে হবে…খেলা থেকে দূরে থাকতে হবে…তাঁর পছন্দের মেন্যু খেতে হবে (কাঁচা কলা, সবুজ শাক-সবজী)…সকালে সূর্য উঠার আগে বাবার পিছে পিছে ব্যায়ামের জন্য দৌড়াতে হবে…একটু এদিক সেদিক হলে পিটুনি থেকে নিস্তার নেই…

আমাদের গ্রামের বাড়ীটা থেকে..
দু’দিকে দু’টো রাস্তা চলে গেছে…বাবা যতবারই আসতেন সে রাস্তার মাঝখানে আড়াআড়ি একটা দাগ টেনে দিতেন…যাতে আমি সে দাগ পার হয়ে কোথাও খেলতে না যাই… স্পষ্ট মনে আছে ক্লাশ টু তে পুড়ুয়া সেই দূরন্ত এই আমি… সে দাগের সামনে সারাদিন বসে থাকতাম…চোখের জ্বলে গরম বালুগুলো ঠান্ডা করে দিলেও কখনো সে দাগ পার হতাম না… আমার ছোট চাচা মাঝে মধ্যে কোলে করে সে দাগ পার করিয়ে দিতেন…সাথে সাথেই আমি ভোঁ দৌড়…সেই মুহুর্তে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাধীন প্রাণী আমি…
বাবা যে কয়দিন থাকতেন…একদিনে কত ঘন্টা… কত সেকেন্ড … আমি হার্টবিট গুণেই দিব্যি বলে দিতে পারতাম…যেদিন চলে যেতেন সেদিনই আবার পতাকা উড়িয়ে দিতাম…স্বাধীনতার পতাকা…মুক্তির পতাকা!
.বাবা ছাড়া আর কাউকে কোনদিনও ভয় পেতাম না…সারাদিন খেলাধুলা শেষে ধুলিমাখা শরীরে ঘরে ফিরতাম…মা কিছু বোঝার আগেই গায়ে তেল মেখে চকচকে বানিয়ে ফেলতাম…উদ্দেশ্যে অবেলায় গোসল থেকে নিজেকে বাঁচানো!

এভাবেই গ্রামের পাঠ চুকিয়ে একদিন শহরে পা রাখলাম…সরাসরি ঢাকা শহরে…রংপুর শহর দেখার আগে আমি ঢাকা শহর দেখলাম…ক্লাস সিক্সে আমি…বাসা থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে স্কুল.. প্রথম দিন বাবা সাথে নিয়ে স্কুলে গেলেন…যাওয়া আসার পথে রাস্তায় বিভিন্ন দোকান চিহ্ন হিসেবে মনে রাখতে বললেন…এবং জানিয়ে দিলেন পরের দিন থেকে একা একাই স্কুলে যেতে হবে…কেউ সঙ্গে আসবে না!
সত্যিই আর কোন দিন আসেননি… ১০ দিন পরেই প্রথম সাময়িক পরীক্ষা…গ্রামের স্কুলে সর্বদা ২য়/৩য় হতাম…কিন্তু এখানে এসে একেবারেই হোঁচট খেলাম…অংকে পেলাম ৩০, ইংরেজিতে ২২…গ্রামে তো লিখিত পরীক্ষা কি জিনিস তাই জানতাম না… এখানে এসে বুঝলাম পড়ালেখা কারে বলে…!
রেজাল্ট দেখে বাবা মুখে কিছু বললেন না…যা বলার হাত দিয়ে বললেন…মাথা ছাড়া দেহের সব জায়গায় দাপটের সাথে লাঠির আগায় বাবার নাম লিখে দিলেন…ভাত বন্ধ করার হুমকি দিলেন…গ্রামে ফেরত পাঠানোর হুমকি দিলেন…এ হুমকির আওতায় আমার মাও পড়ে গেলেন…কারণ আমার ভাল ফলাফলে তাঁর হক থাকুক আর না থাকুক খারাপ ফলের পুরো ভাগিদার মা…কদিন পর ডেকে বললেন তুমি যদি ক্লাস সেভেনে ‘এ’ সেকশনে যেতে পার…তবে যা চাও তাই দিব…
আমি একটা হাতঘড়ি চাইলাম…ডিজিটাল হাতঘড়ি…ওটাই তখন একমাত্র আরাধ্য।
আমি তখন ‘এফ’ সেকশনে…এতো পিছনে থেকে সরাসরি ‘এ’ সেকশনে যেতে পারা সত্যিই কল্পনাতীত…তবুও উপর ওয়ালার ইচ্ছায় সেভেনে উঠলাম…এবং ‘এ’ সেকশনে…হাত ঘড়িও পেলাম!
তবে,
বাবা খুশী হয়েছেন কিনা বোঝা গেল না… কারণ, কোন বিষয়ে গালমন্দ না করার অর্থ হল বাবা সে বিষয়ে আমার উপর সন্তুষ্ট আছেন…মুখ ফুটে কখনো প্রশংসা করতেন না তিনি…ক্লাশ নাইন পর্যন্ত আমি কখনো প্রাইভেট পড়িনি…সত্যি বলতে প্রাইভেট পড়ানোর সামর্থও ছিল না বাবার…নিজেই পড়াতেন…পড়ানোটা ছিল মূলত পাটীগনিত কেন্দ্রিক!

আমি যদি কখনো পড়ালেখায় ফাঁকিবাজি করতাম…বেশি খেলাধুলা করতাম… রেজাল্ট খারাপ করতাম…মায়ের কথা না শুনতাম… তবে, বাবা নগদ আমাকে কিছু বলতেন না… হটাৎ একদিন ডাক পড়ত…..হুকুম আসত পাটীগণিত নিয়ে বসার জন্য…বাবা জানত, আমি পাটীগণিতে খুব দূর্বল… তাই রাগ হলে পাটীগণিত নিয়ে বসতে বলতেন… এবং যথারীতি আমি অংকের মাঝপথে গিয়ে ভয়ে…টেনশনে..খেই হারিয়ে ফেলতাম…অঙ্কের শেষটা আর মিলাতে পারতাম না…ঠিক তখনই বাবা কথা বলা শুরু করতেন… মুখে না, হাতে…কখনো খালি হাতে…কখনো পায়ে…কখনো স্কেল…কখনো পর্দার লাঠি… হাতের কাছে যা পাওয়া যেত তাই দিয়ে… এরপর শুরু হত জেরা…অমুক দিন কেন পড়ালেখা শেষ না করে খেলতে গেছো…অমুক বিষয়ে কেন এতো কম মার্কস পেয়েছো…অমুকের সাথে কেন ঐদিন মারামারি করেছো…পাশের বাসায় কেন টিভি দেখতে গেছ…!
উল্লেখ্য, আমার জন্য টিভি দেখা ছিল নিষিদ্ধ… কারণ, আমাকে বোঝানো হয়েছিল টিভিতে পড়ালেখার ক্ষতি হয়…ভাল রেজাল্ট করা যায় না ..তবে, ম্যগগাইভার সিরিয়াল দেখার অনুমতি ছিল…এবং যেদিন ম্যাগগাইভার ছিল সেদিন আমি সারাদিন খুব জোরে শব্দ করে পড়তাম…উদ্দেশ্য, বাবাকে শোনানো যে আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছি…এক সময় মা বাবার কাছে গিয়ে বলতেন…ছেলেটা তো সারাদিন অনেক পড়েছে…ও একটু ম্যাগগাইভারটা দেখে আসুক…দুই একটা কথা শুনিয়ে বাবা অনুমতি দিয়ে দিতেন… সাথে সাথে পাশের বাসায় ভোঁ দৌড়!

ক্লাশ নাইনে উঠার পর বাবা বাসায় প্রথম টিভি নিয়ে আসেন… ১৭ ইঞ্চি সাদা কালো টিভি টিভি….. কারণ, তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী আমি ক্লাশ নাইনে এ সেকশনে প্রথম ১০ জনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছি… এটাই তাঁর কেনা প্রথম টিভি…এবং আজ পর্যন্ত আর কোন টিভি কিনেন নাই তিনি…টিভি পেয়ে কি যে আনন্দিত হলাম…
আমার বন্ধুরা সারাদিনে টিভিতে কত অনুষ্ঠান দেখে… আর আমি সারাদিন পড়ার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি মেরে শুধু টিভিটাকেই দেখতাম…কারণ, ঘরে টিভি থাকলেও সেটা ছাড়ার সুযোগ ছিল না আমার…গলা ছেড়ে পড়ালেখার ব্যাপক শো ডাউনের পর… মাঝে মধ্যে পাটিগণিতের বৈতরণী পার হয়ে তবেই সুযোগ আসত টিভি দেখার…বাবার অনুমতি স্বাপেক্ষে মা টিভি ছেড়ে দিলে তবেই সুযোগ পেতাম…তবে, সেন্সর বোর্ডের মত বাবার সেন্সর করে দেয়া অনুষ্ঠানই কেবল দেখার সৌভাগ্য হত… বলে রাখা ভালো, আমি ইন্টারমেডিয়েট ২য় বর্ষে এসে প্রথম কারো অনুমতি ছাড়াই নিজে নিজে দুঃসাহস দেখিয়ে টিভি অন করি..এবং সেই থেকে একাই ছাড়ছি!
ঈদ আসার ঠিক আগেই বাবা পাটীগণিত নিয়ে বসতে বলতেন… সাথে সাথেই শুরু হত রেজাল্টের হিসাব নিকাশ…সর্বশেষ উত্তম মধ্যম…ফলে ‘ঈদে জামা চাই’ এমন বাক্য উচ্চারণ করার সাহস আর থাকত না…কোন রকম ঈদটা পার করতে পারলেই খুশী।
বলে রাখা ভাল ঘুমের ব্যাপারে আমি ছোট বেলার সেই রূপ এখনো ধরে রেখেছি…একবার ঘুমালে পুরো পৃথিবীর আর খবর থাকেনা…তবে, সকালে উঠেই খবর শোনাতেন বাবা…স্কুলে যাবার আগে প্রায় সময় ঘুম ভাঙত বাবার ডাকে…সে ডাক প্রথমে শুরু হত মুখে…তারপর হাতে…কখনো কখনো বিছানায় চোখ খুলেই দেখতাম বাবা ঝাড়ু দিচ্ছেন…উল্টো দিকে…ঝাড়ুর আগা ধরে গোড়া দিয়ে…এবং গোড়াটার পুরোটাই আমার দেহে পড়ছে!

এভাবেই বেড়ে উঠা আমার…আমার একটা দাঁতও পড়ে গিয়েছিল বাবার ধমকে…এমনিতেই সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী করেছি। সময় নিয়ে ব্রাশ করছিলাম…ঠিক সময় নিয়ে না। ইচ্ছা করে। যতক্ষণ ব্রাশ ততোক্ষণই পড়ালেখা থেকে মুক্তি।
হটাৎ গর্জে উঠল বাবা…সাথে সাথে হাত কেঁপে উঠে ব্রাশের ধাক্কা লাগল নড়বড় দুধ দাঁতটার গোড়ায়…ব্যাস, দাঁতটার অগ্রিম অপমৃত্যু ঘটল।

এহেন বন্দী জীবনে আমি প্রতিদিন প্রতি সেকেন্ডে ফিরে যেতাম আমার রংপুরে…আমার শৈশবে। শৈশবে বসেই খুঁজে বেড়াতাম আরেক শৈশবকে…আমার ফেলে আসা রংপুরের রূপসী গ্রামের সেই মেঠোপথ…ঘুড়ি উড়ানোর সেই চওড়া মাঠ…সেই বিস্তীর্ণ ফসলের গালিচা…ধানক্ষেতের পানিতে নড়ে উঠা সেই চতুর মাছের আনাগোনা…বর্ষা এলে টানা জালে তুলে আনা মাছের আহাজারী…ফসলের মাঠের আইল ধরে বেয়ে চলা সেই স্কুলের মেঠোপথ…ধুলোমাখা গ্রাম্য শিশুর পুকুরে ডুবখেলা…!!
মনটাকে রংপুরে রেখে দেহটাকে ঢাকার মত করে লালল করতে লাগলাম…বাবার মত করে…তাঁর ইচ্ছাকে কর্তব্য মনে করে…তাঁর ইচ্ছাকে পূরণ করতেই পা রাখলাম একসময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের চত্বরে…ঢাকা ভার্সিটিতে বায়োকেমিস্ট্রিতে চান্স পেয়েছিলাম…জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটিতে ফার্মেসীতে…কিন্তু বাবার ইচ্ছা…ডাক্তারী পড়তে হবে…কারণ, ছোট বেলায় অর্থাভাবে তিনি ডাক্তার হতে পারেননি…তাঁর বন্ধুরা পেরেছেন…তাই তাঁর অপূর্ণতা পূরণ করার দায় এলো আমার ঘাড়ে…
ডাক্তার হলাম…বলতে গেলে বাবার দৃষ্টি দিয়েই দেখলাম এক মেয়েকে… একদিন সেই মেয়েটিই ঘরে এলো বাবার বউমা হয়ে।

ব্যাস, এগিয়ে চলার গল্পটা এখানে এসে নতুন মোড় নিল! আমার কষ্টের সব পর্দা ভেদ করে একটা আনন্দ ভোমরা বের হয়ে এলো…নাম রাখা হলো আরিজ!
আরিজের জন্মদিনে আমারও জন্ম হল। এ জন্ম বাবা হিসেবে। অনেকে জিজ্ঞেস করে বাবা হিসেবে প্রথম অনুভূতি কি?
আমি বলি, যেদিন বাবা হলাম সেদিনই প্রথম বুঝলাম বাবা কি জিনিস। নিজ বাবার প্রতি বাড়তি টানটা সেদিনই প্রথম অনুভব করলাম।
আরিজই প্রথম শেখালো বাবা কি, বাবার স্নেহ কি, সন্তানের প্রতি বাবার মমত্ব কি!
দিন যাচ্ছে, আরিজ বড় হচ্ছে। শক্ত হচ্ছে ওর চাওয়াগুলো…দৃঢ় হচ্ছে ওর অস্থিমজ্জা, ওর মনটা।
ধীরে ধীরে দূর্বল হচ্ছে শুধু আমার বাবাটা। আগের মত রাগেনা। ধমক দেয় না। বকা দেয় না। পথ দেখায় না। ভালমন্দ শেখায় না। সবক্ষেত্রে একটা সমীহ সমীহ ভাব। নিজ ছেলের জন্য কোথায় একটা ভয় ভয় ভাব আগলে রাখে সে।
মাঝেমধ্যে যখন খেই হারিয়ে ফেলি…শত মানুষের ভীড়ে একা হয়ে পড়ি…খুব রাগ হয় বাবার উপর!
মানুষটা এমন কেন! বয়স হয়েছে। বাবা হয়েছি। জীবন যুদ্ধে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছি। কিন্তু বাবার সাথে বয়সের পার্থক্যটা সেই এক জায়গাতেই যে থেমে আছে!
এখন উল্টো আমি রাগ হই…অভিমানে কড়া ভাষা গুলোও বের হয়ে যায়।
আশ্চর্য! বাবা মুচকি হাসে। রিয়্যাক্ট করেনা। আগের মত রাগও করেনা। অভিমানও না। আমার জীবনের প্রথম নায়কটা কেমন জানি চুপসে গেছে। প্রতিবাদ নেই বললেই চলে। শান্ত একটা পুকুরের মত। অনেক পানি কিন্তু সেখানে জোয়ার নেই। অনেক গভীরতা কিন্তু ঢেউ নেই। কিন্তু আমার যে এরকম বাবাকে ভাল্লাগেনা। এখনো মন চায় বাবা আমাকে ধমক দিক। বলুক, এটা ভাল ওটা খারাপ। আগলে রাখুক সর্বদা ছায়া হয়ে।
হালের ফ্যাসবুক ফ্যাশন এখনো প্রবেশ করেনি আমার দেহ মনে। তাই বলব না যে আমার বাবা শ্রেষ্ঠ বাবা। কোনদিন সেটা ভাবিও নাই। ছোটবেলায় সব সময় মনে হত আমার বাবা সবচেয়ে পঁচা বাবা। অমুকের বাবা কত ভাল! কত কি কিনে দেয়! মারে না। ধমকায় না। যা চায় সব দেয়। কিন্তু আমার বাবা কখনো দেয়না।
আজ কাকতালীয়ভাবে একটা ঘটনা ঘটেছে। বাবার খুব স্বপ্ন দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু সময় কিংবা সামর্থ কোনটাই তার পক্ষে ছিল না। তাই ভাবলাম হোক না একটা স্বপ্নপুরণ ছেলের হাত ধরে!
সকালেই বললাম, সিংগাপুর যাবা নাকি?
বাবা যেন বিনামেঘে তুফানের আওয়াজ পেল।
এক সেকেন্ড সময় নিল না রাজী হতে। ছোট্ট বেলার সেই অবুঝ সাকলায়েনের মত। কখন বাবা এসে বলবে, যাও ম্যাগগাইভার দেখে এসো!

আমি অবশ্য একেবারের জন্যেও ভাবিনাই বাবা যাবেন। কারণ তাঁর তো পাসপোর্টই নাই। বাবা অবাক করে দিয়ে বললেন, তার পাসপোর্ট অনেক আগেই করা। চোখটা ছলছল করে উঠল। বিদেশ কোনদিন না গেলেও পাসপোর্ট ঠিকই করে রেখেছে!
সময় পক্ষে থাকলে শীঘ্রই বাবাকে নিয়ে সিংগাপুর যাচ্ছি। নো শপিং, নো এ্যামিউজমেন্ট পার্ক। শুধু রাস্তা আর ফুটপাত ধরে বাবা-ছেলে ঘুরে বেড়াব। হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে বসব।
বড় ঢেউটা যখন পায়ের উপর এসে আঁছড়ে পড়বে তখন বাবাকে বলব-
বাবা তোমার মনে আছে, বিয়ের আগের দিন আমাকে ডেকে একটা জোকস শুনিয়েছিলে!

বাবা ভুলে যাওয়ার ভান করবে। আমি জোকসটা বলা শুরু করব।
‘সাকলায়েন, বিবাহিত পুরুষ আর অবিবাহিত প্রেমিক পুরুষের মধ্যে পার্থক্য জানো?
না তো..কেন?
শোন,
অবিবাহিত প্রেমিক…সাগর পাড়ে প্রেমিকার পাশে বসে…সাগরের উত্তাল ঢেউ দুচোখ ভরে দেখে…সেই ঢেউয়ে পুলকিত হয়! আর বিবাহিত পুরুষ সেই ঢেউয়ে হাবুডুবু খেতে থাকে!’

তোমার কথাই সত্যি বাবা। জীবন সত্যি একটা যুদ্ধের নাম। এ যুদ্ধে কখনো ডুবি। কখনো ভাসি। ছোট্টবেলায় শুধু একটা স্বপ্নই দেখতাম। কবে বড় হব। কবে বাবাকেও ছাড়িয়ে যাব। এতোটাই ছাড়িয়ে যাব যে বাবা শাসন করার সাহস হারিয়ে ফেলবে! বড় হয়েছি অনেক বাবা। কিন্তু মনে হয় ঐ দিনগুলোতেই ভাল ছিলাম। মাঝেমধ্যে যখন ভালো লাগাগুলোকে হারিয়ে ফেলি। সব আনন্দগুলো যখন একেবারে হারিয়ে যায় তখন পিছনে ফিরে তাকাই। বাবার সেই শাসনের দিনগুলো ফিরিয়ে আনি। জাবর কাটি। খারাপ লাগাটা মুহুর্তেই আনন্দে রূপ নেয়।

জীবনটাকে মাঝেমধ্যে তাই ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারের মতো মনে হয়। যখন মনে হয় চেহারায় আর আগের জৌলুস নাই, তখন খুঁজে খুঁজে পুরাতন ছবিগুলো বের করি। সবচেয়ে সুন্দরটাকে আপলোড দেই। মানুষ বাহবা দেয়। আমি কৃত্রিম সুখে গা ভাসাই। ভালো থাকি।
আমার বাবাকে সত্যিই কখনো মনে হয়নি শ্রেষ্ঠ বাবা। কিন্তু আজ আমি নিশ্চিত বলতে পারি আমার বাবা আমার কাছে শ্রেষ্ঠতম দান। ভালো থেকো বাবা আমার আরিজের সমান আয়ু নিয়ে। আমি ভাগ্যবান বাবা। আমার একজন বাবা আছে। কতজন তো প্রাণ খুলে কাউকে বাবা ডাকার যোগ্যতাওটা হারিয়ে ফেলেছে। চীরতরে! তবুও… তোমার জন্যে খুব হিংসে হয় বাবা! খুব হিংসে। তোমার মত আমার যে একটা সাকলায়েন নেই বাবা।

 

সাতক্ষীরায় ঢাবি ছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ

সাতক্ষীরায় ঢাবি ছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ


নারী সংবাদ


সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ ও ব্লাকমেইল করেছে আব্দুল হাই ওরফে রাজু (২৬) নামের এক যুবক। ওই ছাত্রীর ল্যাপটপসহ কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে পুলিশ রাজুকে গ্রেফতার করেছে। রাজু কালীগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়নের বাজার গ্রাম রহিমপুর এলাকার শেখ রওশান আলীর ছেলে।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ঐ মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। পাঁচ মাস আগে ওই ছাত্রীর ক্যানসারে আক্রান্ত বন্ধুর জন্য তহবিল সংগ্রহের সূত্র ধরে রাজুর সাথে তার পরিচয় হয়। সেই সুযোগে গত ১৪ এপ্রিল ওই ছাত্রী ঢাকা থেকে বাসযোগে বাড়ি আসার পথিমধ্যে রাজু ওই ছাত্রীকে বাস থেকে নামিয়ে নলতায় তার এক বোনের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে রাজু ওই ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে সে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করে। একপর্যায়ে রাত ১০টার দিকে রাজু ধারালো চাকু দেখিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে তাকে ধর্ষণ করে এবং মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। পরের দিন ওই ছাত্রী বাড়িতে আসার পর রাজু তাকে মোবাইলে ফোন করে হুমকি দিয়ে বলে এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বললে ভিডিওটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবে। মান-সম্মানের ভয়ে ওই ছাত্রী এ ঘটনা এতদিন চেপে রেখেছিল। থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম আজিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে অভিযুক্ত রাজুকে গ্রেফতার করে তার কাছ থেকে ল্যাপটপটি উদ্ধার করেছে। মঙ্গলবার আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলা হাজতে পাঠানো হয়েছে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক।

 

আমার কাছে বাবার দায়িত্ব


মিথিলা ফেরদৌস


বাবা দিবস মাথায় রেখেই আব্বাকে ফোন করলাম।আমার বাবার অবশ্য দিবস নিয়া তেমন কোনও মাথা ব্যথা কখনওই ছিলনা।এমনকি সে আমার জন্মদিবসও মনে রাখতে পারেনা।কিন্তু আজ ফোন করার পর মনে হলো,সে অপেক্ষাই করছিল,আমার ফোনের জন্যে।

ঃআজ বাবা দিবস!
ঃহ্যা জানি তো!
ঃতুমি “বাবা দিবস” জানো!!
ঃবাবা হিসেবে কোনও দায়িত্ব তোমার জন্যে কখনও পালন করিনি।
ঃকথা সত্য।পালন করা উচিৎ ছিল।এখন আর কি করবা?
ওপাশে মন খারাপের নিঃশব্দতা।আমি বলতে থাকি।
ঃযা করোনি, করোনি,এখন করা শুরু করো।ঠিকঠাক মতো ঔষধ খেতে হবে,সুস্থ হতে হবে আরও বহুদিন দায়িত্ব নিয়ে সুস্থ থাকতে হবে,তোমার নাতির মানুষ হওয়া দেখতে হবে।আপাতত সুস্থ থাকাটাই আমার জন্যে তোমার দায়িত্ব।যেহেতু আগে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করছো।ঠিক আছে?
ঃঠিক আছে।
ঃতুমি কি কখনও আমাকে আদর করোনি?
ঃআদরই করছি,আর কিছু তো করিনি।
ঃবাবারা আদর ছাড়া আর কি কি দায়িত্ব পালন করে?
ঃতোমার মা তোমার জন্যে যে কষ্ট করছে তার একটুও আমি করিনি মা।
ঃতাও ঠিক।কিন্তু তুমি কি আমাকে খাওয়াওনি,পড়াওনি?
ঃকরছি।সেইটা খুব ভালভাবে করতে পারিনি।
ঃআমারতো কখনও এমন মনে হয় নাই।কারো চেয়ে কম আয়েশ করে আমি মানুষ হইছি! আমার কোনও আবদার অপূর্ন ছিল বলে আমার তো মনে পরেনা।বরং অনেকের চেয়ে অনেক কিছুই আমাদের ছিল,যা অন্যদের ছিল না, সেই আমলে।তুমি খেয়ালি ছিলে।আমার খেয়ালি বাবাই পছন্দ।হুট করে ভাল চাকরী ছেড়ে দিলে।বাপের টাকায় বানিজ্যে মনোনিবেশ করলে।সেইটায় মাঝে মাঝে চাংগা ভাব আবার মাঝে মাঝে অভাব।মোটকথা ধনী, গরীবি সব কিছুর সাথেই আমাকে অভ্যস্ত করেছো।তাহলে শুধু একসাইড ভাবো কেন?আমাকে সময় দিয়েছো।পরিক্ষার আগে বসে,তোমার ফাকিবাজ মেয়েকে রচনা,চিঠি সব ছোট করে দিতে,গ্রামার পড়াতে।ইংলিশে খুব ভাল মার্কস পেতাম তোমার জন্যে।এই যে বই পড়া অভ্যাস তা গড়ে উঠার পিছনে তোমার আর আম্মার দুইজনের অবদান ছিল।বই পড়ার অভ্যাসটাই আমার বেজ দাড় করিয়ে দিয়েছে।পড়াশুনায় ভাল হতে গেলে শুধু পাঠ্য পুস্তক বেশি পড়তে হয় না।আনন্দের মাধ্যমে অন্য বই পড়লেও সেইসব বুদ্ধিমত্তা তীক্ষ্ণ করে।তুমি সেই বেজ দাড় করিয়ে দিয়েছো।

আব্বা কথা বলতে পারেনা,শুধু বলে,
ঃআশু(তার গুনধর নাতি) কি করে?
ঃসে প্লান করছে তোমার সাদা চুল সেলুনে গিয়ে রঙ করে আনবে।সে যখন বড় হয়ে গাড়ি কিনবে,সেই গাড়ি তোমাকেই চালাতে হবে আব্বা।তোমাকে ওর গাড়ি চালানো পর্যন্ত সুস্থ থাকতে হবে।
ঃআচ্ছা মা ফোন রাখি।
ঃফোন রাখবা কেন?তুমি কেমন করে খারাপ বাবা হইলা,সেই হিসাবটা তো হওয়া দরকার তাই না?আমার দৃষ্টিতে যে বাবা তার ছেলে মেয়ে রেখে আরেকটা বিয়ে করে,সেই খারাপ বাবা!আমার বাবা সেই কষ্ট তো আমাকে দেয় নাই।তাহলে সে খারাপ বাবা হয় কি ভাবে !
ঃতোমার মত মেয়ে রেখে কোনও বাবা কি এমন করতে পারে মা?
ঃপারে আব্বা,অনেক বাবাই করে।ছেলে মেয়ে দেখে না।তোমাকে কখনও নিজের শখের কিছুই কিনতে দেখিনি।একটা ঈদ যায় নাই,আমি জামা নিই নাই এমন।অথচ তোমাকে কখনও ঈদে কিছুই নিতে দেখিনি।সেই না দেখা আমার প্রতি ঈদ আমি তোমার জন্যে ঈদে তোমার জামা কিনে কি শান্তি পাই তোমাকে কখনও বোঝাতে পারবো না।আমার ছেলে যখন তোমার জন্যে জুতা পছন্দ করে,তোমার মেয়েজামাই যখন পাঞ্জাবি কোনটা কিনবে কোনটা কিনবে না কুলকিনারা পায় না।সেই সুখগুলা আমি কখনও তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না।তুমি শুধু সুস্থ থাকো আব্বা,এর চেয়ে বড় দায়িত্ব একটা বাবার জন্যে একটা সন্তানের আর দরকার নাই।
ঃমা রাখি!
আব্বা ফোন রেখে দেয়।

যার বাবা নাই,পৃথিবীতে সেই জানে বাবা শব্দটার আসল অর্থ।তুমি অন্তত আমাকে সেই কষ্ট কখনও দিও না আব্বা।তুমি সুস্থ থাকো শুধু আমার দিকে চেয়ে।তোমার প্রতিটা অসুস্থতার সংবাদ আমাকে কি অসহায় করে দেয় কিভাবে তোমাকে বুঝাবো!প্রতি রাতে হুট করে কোনও ফোন আসলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে,আল্লাহ আমাকে এমন কষ্ট কখনওই দিও না,আমার যে কোন ভাল কাজের বিনিময়ে আমার প্রিয় মুখগুলিকে সুস্থ রেখো। শেষের কথাগুলি একাই মনে মনে বলতে বলতে ফোনটা শক্ত করে ধরে থাকি।বাবার প্রতি দায়িত্ব আমার নিজেরও পালন করা হয় না।অসুস্থ বাবাকে দূরে রেখেই আমাকে থাকতে হয়।তার অসুস্থতায় অনেক সময় যেতে পারিনা,অফিসে জানিয়ে গেলেও এসে দেখি খাতায় বড় করে লাল দাগ কাটা।যারা দাগ কাটে তারা কি কখনও বাবার মিথ্যা অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়েছিলো?কেন তাহলে অবিশ্বাস করে! আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে।বাবা দিবসে কর্তৃপক্ষের কাছে অন্তত একটা অনুরোধ থাকবে,আপনার কোনও সহকর্মীর সাথে এতটা নির্দয় হবেন না।পরিস্থিতি একদিন আপনাকেও এমন কষ্টের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারে।

 

ভারতে ‘মস্তিষ্ক অসুস্থতায়’ ১০৩ শিশুর মৃত্যু, বিক্ষোভ


নারী সংবাদ


ভারতের অন্যতম দরিদ্রতম বিহার প্রদেশে রহস্যজনক মস্তিষ্কজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক শিশুর মৃত্যুতে সেখানে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মস্তিষ্কজনিত এ রোগের সঙ্গে গ্রীস্মকালিন ফল লিচুর সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

চলতি বছর পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ বিহারের মোজাফ্ফরপুরে ১০ এবং তার চেয়ে কম বয়সী ১০৩ শিশু একিউট এনসেফালিটিস সিনড্রোম (এইস)-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। মৃতের সংখ্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। আরো অনেক শিশুই হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। টেলিভিশনের খবরে অনেক শিশুকে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখা গেছে।

মঙ্গলবার বেশ কিছু সংখ্যক লোককে কর্তৃপক্ষের স্থবিরতা ও অযতেœর অভিযোগ নিয়ে মোজাফ্ফরপুরের প্রধান হাসপাতালের বাইরে ভীড় করতে দেখা গেছে। রোববার এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলণ চলাকালে ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের কাছে জানতে চাওয়ায় এ বিষয়টি নিয়ে সমালোচিত হয়েছেন প্রাদেশিক স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বিরোধী দলীয় কংগ্রেস নেতা রণদীপ সূর্যবালা টুইটারে মন্তব্য করেছেন,‘ বিহারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী শিশু মৃত্যুর চেয়ে ক্রিকেট স্কোর নিয়ে অধিক উদ্বিগ্ন।’ অপর বিরোধী দলীয় ব্যক্তিত্ব রাবরি দেবী শিশু মৃত্যুকে, ‘ ঠান্ডা মাথার খুন’ বলে মন্তব্য করেছেন।

তিনি টুইট করেছেন, ‘ ওষুধ ও চিকিৎসার অভাবে শিশুরা মারা যাচ্ছে।’ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার মঙ্গলবার বিহারের সরকারি হাসপাতাল শ্রীকৃষ্ণ মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করেন, সেখানে বেশিরভাগ শিশুই মারা গেছে। গণমাধ্যমকে ভেতরে প্রবেশের ও অসুস্থ শিশুদের পরিবারের সদস্যদের বহিরাঙ্গণে গোলোযোগ সৃষ্টির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

রোগের বার্ষিক প্রাদুর্ভাব

এইএস-এ আক্রান্ত শিশুদের রক্তে শর্করার অতি দ্রুত পতন, উচ্চ তাপমাত্রা, খিচুনী ও পক্ষাঘাত হতে দেখা যায়। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্নভাবে শরীরে বিষক্রিয়া এ রোগের কারণ। ১৯৯৫ সাল থেকে এতাদ্ঞ্চলে প্রতি বছর গ্রীস্মকালে এবং সাধারণভাবে লিচুর সময়ে সব সময় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ২০১৪ সালে এই রোগে শিশু মৃত্যুর রেকর্ড সংখ্যা ১৫০ জন। অন্যান্য বছরে মৃত্যুর সংখ্যা সেই তুলনায় কম।

বেশ কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকগণ জানিয়েছেন, গ্রীস্মকালিন লিচুর ভেতরের এক ধরণের বিষাক্ততা এ মস্তিস্ক রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। গবেষকগণ, এ অসুস্থতার কারণ নির্ণয়ে আরো বেশি গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে বলে মতামত দেন। স্থানীয়ভাবে ‘চামকি বুখার’ নামে পরিচিত এ রোগ তৃতীয় ধরণের মারাত্মক।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার ও প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষকে এ রোগ মোকাবিলায় ভ্যাকসিন ও সচেতনতা কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছে। মঙ্গলবার হিন্দু পত্রিকায় এক সম্পাদকীয় বলা হয়েছে, কিছু দূরদর্শীতা ও প্রারম্ভিক যত্ন অতি সহজেই মৃত্যু কমিয়ে আনতে পারে।

এতে তুলে ধরা হয়, ২০১৪ সালে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষজ্ঞ দলের হস্তক্ষেপে শতকরা ৭৪ ভাগ শিশুর জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিল। এতে আরো বলা হয়, চলতি বছর সরকার এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রায় ১০ কোটি লোক অধ্যুষিত বিহার ভারতের দরিদ্রতম প্রদেশগুলোর অন্যতম। সম্প্রতি সেখানে ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার লু হাওয়া বয়ে গেছে। সেখানে দরিদ্র পরিবারের শিশুরা যারা এমন কি পেটপুরে খেতে পায় না তারা খালি পেটে লিচু খেয়ে মস্তিস্ক রোগের শিকার হয়। সূত্র : বাসস।