All posts by Oporajita

 

বাড্ডায় তরুণীকে ধর্ষণ যুবক গ্রেফতার

বাড্ডায় তরুণীকে ধর্ষণ যুবক গ্রেফতার


নারী সংবাদ


রাজধানীর বাড্ডায় বিয়ের প্রলোভনে এক তরুণীকে (২৪) ধর্ষণের অভিযোগে সোহেল আহম্মেদ (৩৫) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাড্ডার আলিফ নগরের বৈঠাখালীতে এ ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার যুবককে গতকাল জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী বাড্ডায় দায়েরকৃত মামলায় অভিযোগ করেন, আলিফ নগরের বৈঠাখালী ঢালীবাড়ি মোড় এলাকায় তাদের বাসা। একই এলাকার বাসিন্দা খলিলুর রহমানের ছেলে সোহেল আহম্মেদের সাথে তার তিন বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সোহেল পূর্ব বাড্ডায় কৃষি ব্যাংক রোডে হলি ভিশন স্কুলের পাশে দলিল লেখার কাজ করেন। জমির দলিলসংক্রান্ত কাজ করাতে গিয়ে ওই তরুণীর সাথে সোহেলের সখ্য গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সোহেল তরুণীকে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করে। তরুণী তাকে বিয়ের জন্য তাগিদ দিলে সোহেল নানা অজুহাতে সময় নিতে থাকে এবং বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিতে থাকে। এভাবে গত তিন বছর ধরে তাদের মধ্যে এই সম্পর্ক চলে। সম্প্রতি ওই তরুণী সোহেলকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে অস্বীকৃতি জানায় এবং নানা হুমকি দিতে থাকে। তরুণী বিষয়টি তার অভিভাবকদের জানান এবং আইনের আশ্রয় নেন।
এ ব্যাপারে বাড্ডা থানার ওসি জানান, ওই তরুণী ধর্ষণের অভিযোগে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সোহেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেফতারের পর সোহেলকে গতকাল কোর্টে প্রেরণ করা হয়। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর….১

স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর…১


আফরোজা হাসান


বার বার চেষ্টা করেও বইয়ের দিকে মনোযোগ দিতে পারছিল না আরভ। চোখ চলে যাচ্ছিলো সামনের সীটে বসে থাকা স্বাতির উপর। ট্রেন ছাড়ার পর থেকে গত দেড় ঘন্টায় এক মূহুর্তেও জন্য কথা বলায় বিরতি দেয়নি মেয়েটি। ক্রমাগত একজনের পর আরেকজনের সাথে ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে। এই হাসছে, এই কাঁদছে, এই অভিমান করছে, শঙ্কিত হচ্ছে আবার পর মূহুর্তেই নিজেই কাউকে আশ্বস্ত করছে। চোখের সামনে এইসব কর্মকান্ড চলতে দেখলে বইয়ের দিকে মন দেয়াটা কষ্টকরই বটে। হাতের বই বন্ধ করে সীটে একটু হেলান দিয়ে বসে ভালো মত তাকালো স্বাতির দিকে। খুবই সাধারণ একটি সুতির থ্রিপিস পড়েছে। দু’হাতে মেহেদির আল্পনা ছাড়া আর কোন গহনা বা প্রসাধনীর চিহ্ন নেই কোথাও। তবে লাল টুকটুকে ওড়নাটা মাথায় তুলে দেয়ার কারণে নববধূর মত লাগছে মেয়েটিকে। কার সাথে যেন কথা বলতে বলতে হেসে ফেললো স্বাতি। সাথে সাথে আরভের মনেহলো এমন হাসি যাকে আল্লাহ দিয়েছেন কোন কৃত্রিম প্রসাধনীর প্রয়োজন তার নেই! আরভের সাথে চোখাচোখি হলে ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে তুললো স্বাতি। আরভ চোখ ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরের তাকালো। ছুটে চলছে ট্রেন গন্তব্য পানে! অসুস্থতার কারণে বড় ফুপি আরভ ও স্বাতির বিয়েতে অংশগ্রহণ করতে পারেনেনি। এখনো ভীষণ অসুস্থ ফুপি। তাই পরিবারের অন্যান্যরা সবাই ঢাকা রওনা দিলেও স্বাতি আর আরভ চিটাগাং যাচ্ছে বড় ফুপির বাড়িতে। স্বাতি ট্রেনে যাবার বায়না ধরাতে আরভ আর আপত্তি করেনি।

দৃষ্টি বাইরে থাকলেও তার সহযাত্রীনি এত কি কথা বলছে সেটা শোনার চেষ্টা করলো আরভ। ফোনে বাবাকে বলছে, শোন নিয়মিত মেডিসিন নিতে যেন ভুল না হয়। মেডিসিন নেয়ার পর আমাকে ম্যাসেজ লিখে জানিয়ে দেবে মেডিসিন নিয়েছো। আর কোন কাজেই যেন অনিয়ম না হয় বলে দিচ্ছি। উল্টো পাল্টা হলে কিন্তু আমি ফিরে এসে তোমাকে কঠিন শাস্তি দেব সেটাও বলে রাখছি। আরেকটা কথা মামণির দিকেও কিন্তু খেয়াল রাখবে। দুজন মিলে কান্নাকাটি করবে না একদম। যদি আমি টের পাই তোমরা কান্না করেছো! তাহলে কিন্তু আমিও কান্না করবো বলে রাখছি। বলো তুমি চাও আমি কান্না করি? হুম! এমন আমিও চাই না তোমরা দুজন কান্না করো বুঝেছো?! আর তুমি এতক্ষণ ওয়াশরুমে কি করছিলে? যদি আমার সেলফোনের চার্জ শেষ হয়ে যেত তাহলে তোমার সাথে কথা বলতাম কিভাবে? সময়ের মূল্য ওয়াশরুমে গিয়ে ভুলে গেলে চলবে? আবার হাসো কেন তুমি? সেলফোনের চার্জ নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না। আমি তিনটা মোবাইল ভর্তি করে চার্জ নিয়ে এসেছি। একটার চার্জ শেষ হলে আরেকটা দিয়ে কথা বললো। আরভের একবার বলতে ইচ্ছে করলো, তিনটা মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গেলেও চিন্তার কিছু নেই। আমার কাছে যেটা আছে সেটা লোন দিতে কোনই আপত্তি নেই আমার। কিন্তু ইচ্ছেটা গোপন করে আবারো কথা শোনাতে মন দিলো। এখনো বাবাকে ধমকাচ্ছে তার স্বাতি কেন ওয়াশরুমে এতক্ষণ ছিল। বলে দিচ্ছে সর্বোচ্চ বিশ মিনিট থাকা যাবে ওয়াশরুমে।

কেমন যেন একটা সুখ সুখ আবেশ ছেয়ে গেলো আরভের মনের মাঝে। সব মেয়েরাই কি এমন অদ্ভুত রকমের আদুরে হয়?! আল্লাহ চাইলে তার নিজের যদি কখনো মেয়ে হয় সেই মেয়েটি কি স্বাতির মতোই আদুরে হবে? এমন ধমকের সুরে ওয়াশরুমে কতক্ষণ থাকবে সেটাও নির্ধারণ করে দেবে?!

বাড়ির সবার সাথে ফোনে কথা বলা শেষ করে আরভের দিকে তাকালো স্বাতি। গভীর মনোযোগ দিয়ে লিখছে কি যেন। একদম মুখোমুখি বসেছে সে তাই দেখার উপায় নেই কি লিখছেন উনি। এত মনোযোগ দিয়ে কি লিখছে? লেখা দেখতে ব্যর্থ হয়ে লেখকের দিকেই তাকালো! চেহারার মধ্যে কি অদ্ভুত আত্মনিমগ্নতা ছড়িয়ে গিয়েছে মানুষটার! মুগ্ধ না হয়ে পারলো না। খুব ইচ্ছে করতে লাগলো পাশে গিয়ে বসতে। কিন্তু নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছে সে। অকারণেই তর্ক জুড়ে দিয়েছিল ট্রেনে উঠার পর। দুষ্টুমির ছলে সেটা যে সিরিয়াস পর্যায়ে চলে যাবে মোটেই বুঝতে পারেনি। কথায় কথায় আরভকে বলে ফেলেছিল, তোমাকে বিয়ে করাই আমার ঠিক হয়নি। বাক্যেটি শোনা মাত্র দপ করে নিভে গিয়েছিল আরভের চেহারার আলো। শক্ত হয়ে গিয়েছিল চোখ মুখ। স্বাতি কিছু বলার আগেই কঠিন স্বরে বলেছিল, পুরো জার্নিতে তুমি আমার সাথে কোন কথা বলবে না। না আমি তোমাকে চিনি, না তুমি আমাকে চেনো। এরপর হাজারটা কথা বলেছে, অসংখ্যবার সরি বলেছে কিন্তু আরভের মুখ দিয়ে একটি শব্দও বের করাতে পারেনি। এজন্যই ফোনে কথা বলে কান ঝালাপালা করে দেবার চেষ্টা করেছে। যাতে বিরক্ত হয়ে কিছু বলে আরভ। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। বই পড়ছে, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকছে, এখন লিখতে বসেছে। কিন্তু কথা তো দূরে থাক একটা শব্দ পর্যন্ত বের করছে না মুখ দিয়ে বান্দাহ। এত কঠোর মানুষ হয়? কিভাবে এই লোকের সাথে সারাজীবন কাটাবে ভেবে কিছুটা শঙ্কিত বোধ করলো স্বাতি।

চলবে….

 

জিনের ভয় দেখিয়ে মেয়েদের ধর্ষণ : গ্রেফতার এক (মসজিদের ইমাম)

জিনের ভয় দেখিয়ে মেয়েদের ধর্ষণ : গ্রেফতার এক (মসজিদের ইমাম)


নারী সংবাদ 


মসজিদের ইমাম তিনি। পাশাপাশি স্থানীয় একটি মাদরাসার শিক্ষকও। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে স্থানীয় অনেকের অসুস্থতায় তিনি ঝাড়ফুঁক ও তাবিজ-কবজ দিতেন। ঝাড়ফুঁঁক নেয়াদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি। বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে ঝাড়ফুঁঁক ও জিনের ভয় দেখিয়ে সুন্দরীদের জোরপূর্বক ধর্ষণ করে আসছিলেন তিনি। বাদ যায়নি মাদরাসা ও মসজিদে আসা শিশুরাও। এমন অভিযোগে গত রোববার রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১। তার নাম ইমাম ইদ্রিস আহাম্মেদ (৪২)।

এক ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে দীর্ঘ সময় তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়ার পর রোববার মধ্যরাতে র‌্যাব-১ এর একটি দল দক্ষিণখান সৈয়দনগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার মোবাইল জব্দ করা হয়। ওই মোবাইলে ধর্ষণ ও বলাৎকারের অনেক ভিডিও ও ছবি পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।
গতকাল র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম। তিনি বলেন, দক্ষিণখানের স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি ও মাদরাসায় শিক্ষকতা এবং দীর্ঘ দিন দক্ষিণখান এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিশেষ প্রভাব বলয় তৈরি করেন ইদ্রিস আহাম্মেদ। প্রভাবকে পুঁজি করে দীর্ঘ দিন ধরে কৌশলে ধর্ষণ ও বলাৎকারের মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটিত করে আসছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে সম্প্রতি ভুক্তভোগী এক নারীর অভিযোগ আমলে নিয়ে ছায়াতদন্ত এবং গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে র‌্যাব-১। অনুসন্ধানের পর উঠে আসে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।
র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, অভিযুক্ত ইদ্রিস আহাম্মেদের বাড়ি সিলেট জেলায়। তিনি সিলেটের একটি মাদরাসা থেকে ১৯৯৮ সালে টাইটেল পাস করেন। এরপর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের একটি মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। ২০০২ সালে ঢাকায় এসে দক্ষিণখানের ওই মসজিদে ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে এলাকায় ঝাড়ফুঁঁক এবং তাবিজ-কবজ বিক্রি করেন। তার সাথে জিন আছে মর্মে প্রচার ও কুকর্মের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি সুন্দরী নারীদের মিথ্যা ঝাড়ফুঁঁক ও জিনের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে অনেক নারীই আত্মসম্মান এবং কুসংস্কারের কারণে তাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা কাউকে বলেননি।
তিনি বলেন, ইদ্রিস মসজিদে তার কক্ষে খেদমতের অজুহাতে কিশোরদের জোরপূর্বক বলাৎকার করেন। এ ছাড়া তিনি যে মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন সেখানকার ছাত্রদের মসজিদে ডেকে এনে বলাৎকার করে কৌশলে মোবাইলে অপকর্মের ভিডিও ধারণ করেন। জিন ও তাবিজ করার ভয় দেখিয়ে বিষয়টি গোপন রাখতে বলে পুনরায় ভিকটিমকে ধর্ষণে বাধ্য করেন। কোনো ভিকটিম অনৈতিক কাজে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে তাকে মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখানো হয়। এতে বাধ্য হয়ে ভিকটিম অনিচ্ছা সত্তে¡ও বারবার বলাৎকারের শিকার হয়েছে।
প্রথামিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, মসজিদের একটি বিশেষ কক্ষে তিনি ঘুমাতেন। তার সব অপকর্ম ওই কক্ষেই সম্পন্ন হতো এবং তার এই অপকর্মের ভিডিওগুলো সে তার খাদেমদের দিয়ে ধারণ করাতে বাধ্য করতেন। এ পর্যন্ত ইদ্রিস একাধিক নারীর সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন বলে স্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে মাকে হারালো অবুঝ শিশু তুবা

নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে মাকে হারালো অবুঝ শিশু তুবা


নারী সংবাদ(রুহুল চৌধুরী) 


কিন্তু তারপর একটি গুজব পাল্টে দিলো সব হিসেব-নিকেশ, গণপিটুনিতে প্রাণ গেলো এক মায়ের।

ছেলেধরা গুজবে কিছু মানুষের নিষ্ঠুরতা রক্তাক্ত করেছে স্নেহের আঁচল।
কিন্তু কেন এই পাশবিকতা? কেইবা রেনু? সে কি সত্যিই ছেলেধরা, নাকি মমতাময়ী এক মা ? কী বলছে স্বজন-প্রতিবেশীরা?
যদিও ছোট্ট তুবা এখনও জানেই না যে মা নেই, মা আর ফিরে আসবে না কখনই। আর কখনোই জাপটে ধরবে না বুকের ভেতর,কিনে দেবে না রঙিন জামা ও হরেক খেলনা।

আটষট্টি হাজার গ্রামের প্রতিটি মাঠ থেকে খুঁজে নিয়ে আসা, সবচেয়ে সুন্দর সরিষা ফুলের সবটুকু রেণু দিয়েও আর ফিরিয়ে আনা যাবে না মমতাময়ী এক রেনুকে তবে চাইলেই তো ফেরানো যায় মনুষ্যত্ববোধ।

তাসলিমা বেগম রেনু ৪০ বছরের সুন্দর নারী। পরিপাটি কাপড় পড়তেন, সুন্দর করে গুচিয়ে মানুষের সাথে কথা বলতে পারতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। মাস্টার্স করার পর বিয়ে হয়ে এক ব্যবসায়ীর সাথে। প্রথম কিছুদিন বেশ ভালোই চলছিলো সংসার। একবছরের মাথায় কোল আলো করে আসে এক ছেলে। ছেলে পেটে থাকা অবস্থায় স্বামীর আর তর সইলো না। জড়িয়ে গেলেন পরকীয়ার। বিষয়টি প্রথমে গোপনই ছিলো। কিছুদিন পর রেনু বুঝে পারে তার স্বামী আর তার নাই। তার প্রতি আর আগের আকর্ষণ নাই। তার দুঃখের জীবন তখনই শুরু । স্বামী ইচ্ছা মতো আচরণ করেন। এর মাঝেই আবার সন্তানসম্ভবা হয়ে যান আচমকা । স্বামী ততদিনে পুরোপুরি অন্য দিকে মজে গেছে। এবার একটা ফুটফুটে মেয়েও আসলো । মেয়ে জন্মানোর কিছু দিনের মধ্যেই সাংসারিক অশান্তি চরমে উঠলো। রেনুকে বাধ্য হয়ে ডিভোর্সের পথে হাঁটতে হলো । সেই থেকে সে একা তার একলা জীবন তরী। কতোবার ভেবেছেন আত্মহত্যার করবে । করতে পারেনি, মরতেও পারেনি। মরার মথা মনে হলেই সামনে ভেসে উঠে ছেলেমেয়ের মুখ। আহা এই ছেলেমেয়ে গুলোর যে আল্লাহ আর মা ছাড়া কেউ নেই।

বাবার বাসায় ভাইয়ের সংসারে কষ্ট করে মানিয়ে চলছে সে। ছোটখাটো একটা চাকরি যোগাড় করেছে। দেখতে দেখতে ছেলে কেজিতে পড়ছে । আর মেয়ের বয়স চার পূর্ণ হলো জুন মাসে। হঠাৎ একদিন মনে হলো মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করে দিলে কেমন হয়..? বছরের মাঝামাঝি সময় কোথায় ভর্তি করানো যায় ভাবছিলেন। বাড্ডার একটা প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ হতে পারে ভেবে সে এক দুপুরে ঐ স্কুলের গেটে দাঁড়ায়। ভিতরে ঢুকতে চাইলে আয়া ভিতরে ঢুকতে দেয় নি। তখন ভাবে ছুটি হলেই সে ভিতরে ঢুকবে। গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকলো একা-একা। এক ভদ্রলোক তাকে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন আপনি কে ? তখন সে তার নাম বললো “আমি রেনু”। আবার প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন এখানে কেনো আসছেন ? আপনি কি করেন? আপনার বাসা কোথায়? তার প্রশ্ন করার সময় আরো বেশ কিছু মানুষ জড়ো হয়ে গেলো। এতো মানুষ দেখে রেনু ভয় পেয়ে গেলো। সহজ প্রশ্নগুলোর ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারলো না। অবশ্য ডিভোর্স হওয়ার পর থেকেই কিছুটা মানসিক অবসাদে ভুগছিলো রেনু। কোথায় যেনো হারিয়ে গিয়েছিলো তার সমস্ত স্বতঃস্ফূর্ততা।

তার উত্তর শুনে উপস্থিত পাব্লিক তাকে ছেলে ধরা আখ্যা দিয়ে মুহুর্তেই তার প্রতি চড়াও হয়ে গেলো, সে সবাইকে বুঝানোর চেষ্টা করলো “আমি ছেলে ধরা না”। তাও কিছু উশৃংখল যুবক তার উপর হামলে পড়লো।

সে বললো, ” আমি বাসায় রেখে আমার দুইটা ছোট ছেলে-মেয়ে, দয়া করে আমাকে মারবেন না, আমি ভালো ঘরের মেয়ে”। কে শুনে কার কথা?

অতিউৎসাহীরা কোনভাবেই ছাড়তে রাজি নয়। হাকডাক দিয়ে জড়ো করে ফেলা হলো শতাধিক মানুষ। সবার উদ্দেশ্য একটাই একজন নারী ছেলে ধরাকে জীবনের মতো শায়েস্তা করবে । শুরু হলো বেধড়ক পেটানো । সে দৌড়ে পালাতে চেয়ে ছিলো তখন উশৃংখল জনগণ তাকে ধরে এনে উপর্যুপরি কিল ঘুষি, লাত্থি মারতে শুরু করলো। কিছু লোক লাটি দিয়ে বেধড়ক পেটালো, সে আর্তচিৎকার করতে লাগলো। কাউকেই থামাতে পারলো না । কেউ একজ এসে এই উশৃংখল উন্মাদ জনতাকে থামাবে ভাবছিলো সে। কেউ থামাতে চেষ্টা করলেও বাকীরা কর্ণপাত করেনি।

একের পর এক আঘাতে শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছিলো। একটা ছেলে লাফ দিয়ে বুকের উপর উঠে গেলো। তাখন হৃদপিণ্ডটা থমকে গেছে। আরেকটা ছেলে লাফ দিয়ে বুক আর গলার মাঝখানে আছড়ে পরলো। মাথায় আঘাতের পর আঘাতে সে পুরোপুরি বোধ শক্তি হারিয়ে ফেললো ততক্ষণে , এখন তাকে যতোই আঘাত করা হচ্ছে তার কোথায় কোন ব্যথা অনুভূত হচ্ছেনা। সে ক্ষীণ চোখ মেলে দেখতে পারছে তার উপর পাষণ্ডরা আঘাতের পর আঘাত করছে। তার কোনই কষ্ট হচ্ছে না। সে ততক্ষণে কষ্ট বেদনার অনুভূতি শূন্য হয়ে গেছে।

তার শুধু মনে পড়লো তার ছেলেকে স্কুলে রেখে এসেছে, মেয়েকে খেলনা দিয়ে খেলতে বসিয়ে এসেছে। ছেলেটা কিভাবে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরবে ? মেয়েটা মাকে ছাড়া এক রাত কারো সাথে ঘুমায়নি। আহা ফুটফুটে মেয়েটার কি হবে..?? কিছুক্ষণ পর সে আর জনতার হৈ-হুল্লোড় শুনতে পাচ্ছে না। অনুভব করছে শক্ত কোন ফ্লোরে শুয়ে আছে, রাস্তার ঝাঁকুনি তার মৃদু অনুভূত হচ্ছে। পৃথিবীর সমস্ত আলো নিভে গেছে। চোখ অন্ধকার ঘিরে ধরেছে । চোখ খোলার সামর্থ্য তার নেই । অস্তে অস্তে হৃদপিণ্ডের গ্রাফ নিচে নেমে যাচ্ছে, চোখ বেয়ে অনর্গল পানি পড়ছে। সে বুঝতে পারছে হায় দুনিয়া তাকে দূরে ঠেলে দিলো । কি হবে তার ছেলে মেয়ের ?

সারা শরীরে একটুও রক্তক্ষরণ নেই, ঠোঁটে দাঁতের আঘাতে সামান্য রক্ত বেড়িয়েছিলো তাও শুকিয়ে গেছে। তবে সারা শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। সাদা শরীর কালো হয়ে গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ নেই। গুলিতেও শরীর ঝাঁজরা হয়নি। তবুও আস্তে আস্তে হৃদপিণ্ডের গ্রাফ নিচে নেমে যাচ্ছে , ধমনিতে স্থবিরতা নেমেছে। অস্তে আস্তে শরীর শীতল হয়ে যাচ্ছে। হাত-পা কিছুই নাড়ানো যাচ্ছে না। কেউ একজন পরম যত্নে তাকে ডাকছে। বলছে তার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য আবে যমযম প্রস্তুত….

কিছুক্ষণ পর ডাক্তার ঘোষণা দিলেন রেনু আর বেঁচে নেই।

ময়নাতদন্তে দেখা গেলো রেনুর কষ্টে ভরা বুকের হাড় ভেঙ্গে হৃদপিণ্ডে ঢুকে গেছে, এ যেনো কষ্টের চির অবসান, মাথার মগজ নাক অবধি চলে এসেছে….

হায় দুনিয়া, হায় মানুষ, হায় জীবন । হায় সমাজ, হায় মানবতা, হায় মানবাধিকার, হায় অনুভূতি।
বাঙ্গাল তোমরা বেঁচে থাকো মানুষ নয় পশু হয়ে….!!!!

সুত্রঃ নিউজ দুইন্টিফোর & ফেসবুক।

 

সেই রুশ সুন্দরীকে তালাক দিয়েছেন মালয়েশিয়ার রাজা!

সেই রুশ সুন্দরীকে তালাক দিয়েছেন মালয়েশিয়ার রাজা!


নারী সংবাদ


মাত্র এক বছর আগেই তাদের বিয়ে হয়ে ছিল। রুশ সুন্দরীর সঙ্গে বিয়ের খবর দেশে ছড়াতেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। কিন্তু সুন্দরীর রূপের ছটাই বিভোর রাজা সমালোচনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে সিংহাসন ছেড়ে ছিলেন। কিন্তু এক বছর কাটতে না কাটতেই এবার সেই সুন্দরী স্ত্রী রিহানা ওকসানা ভোয়েভোদিনাকে তালাক দিলেন মালয়েশিয়ার রাজা পঞ্চম সুলতান মুহাম্মদ।

কিন্তু হঠাৎ এমন কঠিন সিদ্ধান্ত কেন নিলেন তিনি? সে ব্যাপারে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে সূত্র বলছে, রিহানার সঙ্গে এক অন্য পুরুষের আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস হওয়ার পরেই স্ত্রীকে ত্যাগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন সুলতান মুহাম্মদ।মুসলিম শরীয়া আইন অনুযায়ী, রিহানাকে তালাক দিয়েছেন সুলতান। এখন দুজনে আলাদা জায়গায় থাকছেন।

জানা গেছে, রিহানার প্রেমে পড়ে তাকে হঠাৎই বিয়ে করে ফেলেছিলেন সুলতান মুহাম্মদ। রিহার বয়স তখন ২৬ আর সুলতানের বয়স তার প্রায় দ্বিগুণ ৪৯ বছর। বিয়ে করার জন্য রুশ সুন্দরী ইসলাম ধর্মও গ্রহণ করেছিলেন। তিনি নাম বদলিয়ে রেখেছিলেন রিহানা ওকসানা পেত্রা। তাদের এই অসম বয়সের বিয়ে নিয়ে কম পানিঘোলা হয়নি। বিতর্কের অবসান ঘটাতে সুলতান মুহাম্মদ রাজ সিংহাসন পর্যন্ত ত্যাগ করেন।

গত বছর ৭ জুন তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু তাদের দাম্পত্যজীবন সূদুর-প্রসারী হলো না। এক বছর হতে না হতে ঘটে গেল বিচ্ছেদ। সূত্রের খবর, গত ১ জুলাই তাদের তালাকের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। বিচ্ছেদ চেয়ে সিঙ্গাপুর শরীয়া কোর্টে ২২জুন আবেদন করার পর বিচারক ওই দিনই চূড়ান্ত রায় দিয়ে দেন। তবে মালয়েশিয়ার রাজপরিবার থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।

জানা গেছে, তালাক নামার একটি কপি রিহানার কাছে পাঠিয়েছেন সুলতান মুহাম্মদ। তাদের একটি দু’মাসে শিশুসন্তান রয়েছে। ছেলের জন্মের পর ইনস্টাগ্রামে তার ছবি দিয়ে পোস্ট দেন রিহানা।

বিয়ের পর সুলতান ও রিহানার সংসার ভালোই কাটছিল। চলতি বছরের জানুয়ারির শুরু থেকে তাদের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। রাশিয়ার একটি টেলিভিশন রিয়ালিটি শো ‘ সেক্স ইন দ্য পুল’ -এ এক ব্যক্তির সঙ্গে রিহানাকে অন্তরঙ্গ দৃশ্যতে দেখা যায়।
তবে রিহানার সূত্রে দাবি করা হয়েছে, তাদের ঘর এখনো ভাঙেনি। রিহানার এক ঘনিষ্ঠজনের উদ্ধৃতি দিয়ে টেলিগ্রাফ অবশ্য বিয়ে ভাঙার বিষয়টিই নিশ্চিত করেছে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।
সেই রুশ সুন্দরীকে তালাক দিয়েছেন মালয়েশিয়ার রাজা! – ছবি : সংগৃহীত

 

সাজানোর সহজ নিয়ম “ঘর”


ঘরকন্যা


ঘর সাজানো শখ। অনেক কিছু থাকলে ঘর সাজানো সুন্দর হয় তা কিন্ত না। কিনতে পারা যায় না চাইলেও অনেক কিছু। কিন্তু চাইলেই একটু বুদ্ধি খাটিয়ে খুব কম জিনিস দিয়ে ঘর সাজানো যায়। জেনে নেই সস্তায় চমৎকার ভাবে ঘর সাজানোর কৌশলগুলোঃ

বই সাজানো
বই ঘরে থাকবেই তাই বইয়ে যত্ন নেওয়া হয় দরকার। ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে একই রঙের বইগুলোকে একসাথে করে সাজিয়ে নিন।

পর্দা পরিষ্কার রাখুন
অবশ্যই সারা ঘরের পর্দা পরিষ্কার রাখলে সেটাই ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবে।

ছবি দেওয়ালে লাগান
পছন্দের মত ছবি আপনি দেওয়া লাগাতে পারেন। এতে আপনার ঘর এর সুন্দর প্রশান্তির জায়গা মনে হবে।

গাছ ও ফুল
অন্যান্য ঘর সাজানোর জিনিসের তুলনায় ফুল এবং গাছ বেশ সস্তা। এই গাছ দিয়ে সাজিয়ে নিতে পারেন আপনার বাসাটি। গাছ ঘরকে রঙিন ও জীবন্ত করে তুলবে। জানালার ধার ঘেঁষে লতানো গাছ লাগানো যেতে পারে আর ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস না থাকলে গাছের বদলে রেখে দিতে পারেন একগুচ্ছ তাজা ফুল। ঘরের এক কোণে কয়েকটি তাজা ফুল রেখে দিলে নিমিষেই ঘর উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

একটি সাজানো পরিপাটি ঘর নিমিষেই আপনার মন ভালো করে দিতে পারে। বাড়িতে যারা থাকেন প্রত্যেকেরই দায়িত্ব থাকার জায়গাটি সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা। ঘর গোছানোর সময় খেয়াল রাখবেন যার ঘর গোছাচ্ছেন তার রুচি এবং পছন্দ সম্পর্কে। প্রতিদিন একটু একটু করে গোছানো যদি আপনার পক্ষে সম্ভব

 

একের পর এক ছাত্রী অপহরণে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা


দেশে একের পর এক ঘটছে ছাত্রী অপহরণের ঘটনা। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে মাদরাসার ছাত্রী অপহরণের ঘটনাও ঘটছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকেও ছাত্রী অপহরণের চেষ্টা হয়েছে সম্প্রতি। দেশে অপহরণের ঘটনা আগেও কমবেশি ঘটছে। কিন্তু সম্প্রতি ছাত্রী অপহরণের কয়েকটি ঘটনা কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে অভিভাবকদের মনে।

বিশেষ করে গত ২৯ জুন রাজধানীর আইডিয়াল স্কুলের সামনে থেকে সবার সামনে থেকে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অভিভাবকেরা। এ ছাড়া ১৩ জুলাই কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় সপ্তম শ্রেণীর এক মাদারাসাছাত্রীকে অপহরণ করা হয়। এ দুই ছাত্রীই গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ে অপহরণকারীদের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ দুই শিক্ষার্থীই জানিয়েছে, গাড়িতে তারা আরো মেয়ে ও শিশু দেখেছে, যাদের অপহরণ করা হয়েছে।
এ খবর অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেক দিন ধরে দেশে একের পর এক ধর্ষণ ও গণধর্ষণ শেষে হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে মেয়ে সন্তানদের মা-বাবা ও অন্য অভিভাবকদের মনে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের ছাত্রী ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অনেক ঘটনাও প্রকাশিত হচ্ছে অনেক দিন থেকে। একই সাথে বাড়ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রী অপহরণের ঘটনা। সব মিলিয়ে সার্বিক নিরাপত্তাহীনতা গ্রাস করেছে অভিভাবকদের।

মেয়ে সন্তান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বাইরে কোথাও গেলে বাসায় না ফেরা পর্যন্ত দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতার মধ্যে কাটাতে হয় মা-বাবাকে। এমনকি মা-বাবা সাথে করে মেয়েকে স্কুল-কলেজে পৌঁছে দেয়া আর নিয়ে আসার সময়ও অনিরাপদ বোধ করেন। কারণ অপহরণকারীরা সবার সামনে থেকে ছো মেরে গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে মেয়েদের। তা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছেও সন্তানকে নিরাপদ মনে করতে পারছেন না অনেকে।
অসহায় অনেক অভিভাবক পত্রিকা অফিসে ফোন দিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা লেখার অনুরোধ করেছেন। একজন অভিভাবক জানান, আমার মেয়েও রাজধানীর আইডিয়াল স্কুলের মুগদা শাখায় পড়ে। এ স্কুলের সামনে থেকেই যেভাবে একটি মেয়েকে অপহরণ করা হলো তাতে আমিও আমার মেয়েকে নিয়ে ভীষণভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। দয়া করে আমাদের জন্য কিছু একটা করেন। আমাদের কথা লেখেন। এসব যাতে বন্ধ হয় সেভাবে লেখেন। আমরা কোথাও আর নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারছি না।
গত ২৯ জুন দুপুরে রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মুগদা শাখার দশম শ্রেণীর ছাত্রী ফারাবি স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল বাসায় ফেরার জন্য। এ সময় একদল দুর্র্বৃত্ত আচমকা তাকে মাইক্রোবাসে তুলে সবার সামনে থেকে গাড়ি চালিয়ে চলে যায়। গাড়িতে তোলার পরই অচেতন করা হয় তাকে। এরপর গাড়ি কেরানীগঞ্জ পৌঁছার পর ফারাবি চেতনা ফিরে পেলে সুযোগ বুঝে গাড়ির দরজা খুলে গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে রক্ষা পায়। ফারাবি জানায়, গাড়িতে তার মতো আরো কয়েকটি মেয়েকে দেখেছে সে, যাদের অপহরণ করা হয়েছে।

১৩ জুলাই প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটে কুমিল্লার লালমাইয়ে। স্থানীয় ফয়েজগঞ্জ সিনিয়র মাদরাসায় সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী তাসলিমা ভোর ৬টায় নানার বাড়ি থেকে বের হয়ে কুমিল্লা-নোয়াখালী সড়ক সংলগ্ন খলিলপুর-বাইতুন নূর জামে মসজিদ মক্তবে যাচ্ছিল। এ সময় বোরকা পরিহিত এক মহিলা মুখে রুমাল দিয়ে চেপে ধরে তাকে মাইক্রোবাসে তোলে। সকাল ৭টার দিকে জামতলী এলাকায় পৌঁছলে মাইক্রোবাস থামিয়ে অপহরণকারীদের একজন (পুরুষ) রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিল। এ সুযোগে মহিলাকে ধাক্কা দিয়ে তাসলিমা মাইক্রো থেকে লাফিয়ে দৌড় দেয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করেন। তাসলিমাও জানিয়েছে, গাড়িতে সে দুইজন শিশুর কান্না শুনেছে।
গত ২৯ জুন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় অপহরণ করা হয় ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে। অপহরণের চার দিনের মাথায় ২ জুলাই মঙ্গলবার মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়। অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করে মেয়েটির পরিবার। পুলিশ ও মেয়েটির পরিবার গণমাধ্যমকে জানায়, উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের পেড়ি গ্রামের সোহেল (২৮) ওই ছাত্রীকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। গত ২৯ জুন সকালে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে সান্দিকোনা-সাহিতপুর সড়কের পটুয়াপাড়া এলাকা থেকে মেয়েটিকে সোহেল ও তার সহযোগীরা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠিয়ে নিয়ে যায়।

হবিগঞ্জের মাধবপুর থানায় গত ১২ এপ্রিল এক ছাত্রী অপহরণের অভিযোগ করা হয়। অপহরণের শিকার মেয়েটি লোকনাথ উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। ১২ এপ্রিল দায়ের করা অভিযোগে মেয়েটির মা জানান, ৯ এপ্রিল বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে একদল দুর্বৃত্ত তাকে অপহরণ করে। এর পর থেকে তার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
গত ১৬ জুন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মনি আক্তার (১২) নামে এক মাদরাসাছাত্রীকে অপহরণ করা হয়। মাদরাসায় যাওয়ার পথে বাগবাড়ি থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। সে উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের চারিগাঁও গ্রামের ইদ্রিছ আলীর মেয়ে এবং রসুলপুর মহিলা মাদরাসার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী।

সুত্র ঃ নয়াদিগন্ত

 

শিক্ষা-২


মনের জানালা 


পাকিস্তানে আজও যারা ১৯৭১ এ সঙ্ঘটিত যুদ্ধ বিষয়ে হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের ব্যপারে চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে আমি তাদের একজন’। বাকহারা হয়ে গেলাম। শুধু বলতে পারলাম, ‘আপনার তো তখনোও জন্ম হয়নি, হলেও হয়ত মায়ের কোলে দোল খাচ্ছিলেন। আপনি কেন নিজেকে দায়ী করছেন?’ কিন্তু আসলে আমি অনেক বেশি আপ্লুত বোধ করছিলাম। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরবর্তী প্রজন্ম, আমাদের দাদাদাদী নানানানীরা আমাদের রূপকথার পরিবর্তে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাতেন। আমাদের আত্মীয়স্বজন মুক্তিযুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণের জন্য প্রশংসিত হতেন, অহংকার করে নিজেদের আহত হবার কাহিনী বলতেন, নিহত বন্ধুজনের গল্প করতেন। আজ ৪৭ বছর পর এই নিয়ে অনেক আলোচনা গবেষণা তর্ক বিতর্ক অনেক কিছুই হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় গণমানুষের মনের অনুভূতিগুলোকে আমাদের মত করে আর কেউ উপলব্ধি করার সুযোগ পায়নি। আমার ছোট ভাইরাও নয়। মনে হল, আমার দাদা দাদী নানা নানী উপস্থিত থাকলে মনে প্রশান্তি অনুভব করতেন। মনে হল, সৎ চিন্তার ধারণকারী বাবামা সৎ চিন্তার বাহক সন্তান গড়ে তুলতে পারেন। তাঁরা যেমন ইসরাইলের অন্যায়ের বিরোধিতা করেছেন, তাদের সন্তান পাকিস্তানের অন্যায়ের বিরোধিতা করেছেন। আমরা কি আমাদের সন্তানদের এভাবে গড়ে তুলতে পারব?
সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যপার হল, আরব ক্রিশ্চানরা যেমন সালাম বিনিময় করে; ‘ইনশা আল্লাহ’, ‘মাশা আল্লাহ’ ইত্যাদি শব্দাবলী স্বাভাবিকভাবেই ব্যবহার করে; তিনিও দেখলাম স্বাভাবিকভাবেই সালাম দিলেন, ‘আবার দেখা হবে ইনশা আল্লাহ’ বলে বিদায় নিলেন। দুঃখ হল তাঁরা সত্যের এতটা কাছাকাছি থেকে কেবলমাত্র আভিজাত্যের অহমিকাবোধের কারণে সত্যকে গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক। তিনি নিজের নামটি পর্যন্ত বলেননি, কিন্তু তাঁর পরিচিতির দ্বিতীয় অংশটিই ছিল তাঁর ধর্মীয় পরিচয়। অথচ ক্যনাডায় প্রচুর বাংলাদেশীদের দেখেছি বাঙ্গালীত্ব এবং ইসলামের সকল চিহ্ন মিলিয়ে দেয়ার জন্য সে কি আপ্রাণ প্রচেষ্টা!
এজন্যই পশ্চিমে অবস্থানরত ইসলামিক স্কলাররা বলেন, ‘যারা এসব দেশে থাকতে আগ্রহী, সেসব মুসলিমদের উচিত এসব দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া। তাদেরই এসকল দেশে থাকা উচিত যারা এসকল দেশ ছেড়ে চলে যেতে চায়’। কারণ প্রথম শ্রেণীর লোকজন দুই এক প্রজন্মের পর ইসলাম থেকে সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমার এক ঈজিপশিয়ান-ক্যানাডিয়ান সহকর্মী ছিল। আপনারা হয়ত জানেন এদের অনেকেই দেখতে পুরোপুরি শ্বেতাঙ্গদের মত। শুভ্র ত্বক, সোনালী চুল। সে বিয়ে করেছিল এক শ্বেতাঙ্গ মেয়েকে। সুখে সংসার করছে দুই বাচ্চা নিয়ে। বসের সাথে, বন্ধুদের সাথে নিয়মিত পানশালায় যাতায়াত, মদ্যপান। একদিন কথাটা এক মিটিংয়ে আমার সামনে প্রকাশ হয়ে গেলে সে কেন যেন প্রচণ্ড লজ্জা পেল, লজ্জায় গাল গলা লাল হয়ে গেল। পরে কিচেনে কফি বানাতে গিয়ে দেখা হলে সে হঠাত অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলল, ‘আমার মা কিন্তু জুমায় যায়’। আমি বললাম, ‘বেশ, ভাল কথা। তুমি নামাজ পড় কিনা’। সে বেশ লজ্জা লজ্জা চেহারা করে বলল, ‘আমি নামাজ পড়তে জানিনা’। তারপর আর কথা খুঁজে না পেয়ে বলল, ‘তোমাদের তো কদিন আগে ঈদ গেল, হ্যাপি ঈদ’। কোনক্রমে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেল কিচেন থেকে। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম, ‘আহা, ছেলেটা ঈদে কি বলতে হয় সেটাও শেখেনি। এই দায় কার?’

 

শিক্ষা-১


মনের জানালা


ক্যানাডায় বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম এবং সংবাদ দেখেছিলাম। ইসরাইলে ইহুদীদের দুটি শ্রেণী রয়েছে। এদের একাংশ ধার্মিক এবং একাংশ রাজনৈতিক। যারা ধার্মিক তাঁরা বিবেকবান এবং ইসরাইলের রাজনৈতিক সম্প্রসারণবাদের বিরোধী।
তাঁরা শুধু মৌখিকভাবে বিরোধিতা করেই কর্মসম্পাদন করেন না বরং এই বিষয়ে সোচ্চার। এদের সন্তানদের মধ্য থেকে এক হাজার পাইলট সরকারের নির্দেশ সত্ত্বেও কোনপ্রকার ফিলিস্তিনি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানবেনা ঘোষনা করে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। তাদের অভিভাবকরা তাদের সমর্থনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ইসরাইলের ফিলিস্তিন বিষয়ক নীতির প্রতিবাদ জানিয়েছে। এসব খবর দেখেছি আর ভেবেছি আমরা তো প্রতিবাদ করার সাহসটুকুও রাখিনা! জেনেছি অনেক ইহুদী ইসরাইল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের স্বপ্নপূরণ হয়নি এই দুঃখে ঐ ভূখন্ড ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন অন্যত্র। তাঁরা এই অন্যায়ের কোন ভাগ চাননা। তাদের একজনের দেখা পেয়ে যাব ভাবিনি কোনদিন।
ক্যানাডায় দেখেছি ইহুদী সহকর্মীদের মাঝে যারা ধার্মিক ছিলেন তাঁরা কখনো মহিলাদের সাথে হ্যান্ডশেক করতেন না, হালালের ব্যপারে আমাদের অনেক মুসলিম কলিগদের চেয়ে ছিলেন অনেক বেশি সাবধান। এরা কাজের ব্যপারে অত্যন্ত আন্তরিক হতেন এবং লেখাপড়ার ব্যপারে অগ্রসর। অবশ্য যারা অধার্মিক ছিলেন তাদের কাহিনী পুরোই আলাদা।
কথাপ্রসঙ্গে বললাম বাবা ছোটবেলায় পাকিস্তানে পড়াশোনা করেছে, তারপর তো দেশবিভাগ হয়ে গেল। তিনি সাথে সাথে বলে উঠলেন, ‘পাকিস্তান বাংলাদেশের সাথে যা করেছে সেজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি। এমনটা হওয়া কিছুতেই কাম্য ছিলো না।
চলবে…

 

প্রবাসীর স্ত্রীকে নিজের বাসায় নিয়ে রাতভর ধর্ষণ


নারী সংবাদ


নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এক মাদরাসা ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। খড়িয়া মাদরাসার ছাত্রী ওই কিশোরীকে রাতভর একটি ঘরে আটকে রেখে রাতভর ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ধর্ষিতার মা ২২ জুন একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ধর্ষক রাকিবকে আটক করেছে।

পুলিশ জানায়, তার স্বামী প্রবাসে থাকেন এবং মেয়ে খড়িয়া মাদরাসার ছাত্রী। তারা আড়াইহাজার নাগেরচরে ভাড়া বাসায় থাকেন। একই বাড়ীতে ভাড়া থাকে ধর্ষক রাকিব (১৯) ও তার পরিবার। রাকিব প্রায় সময় ছাত্রীটিকে মাদরাসায় যাতায়তের পথে উত্যক্ত করতো।

২১ জুন রাতে ধর্ষক রাকিব মেয়েটিকে ফুসলিয়ে তার ঘরে নিয়ে যায়। তার বাসা সেদিন ফাঁকা ছিল। ওই বাসায় রাতভর তাকে আটকে রেখে তাকে জোরপূর্বক কয়েকবার ধর্ষণ করে। ভোর বেলা ধর্ষিতা কৌশলে রাকিবের ঘর থেকে বের হয়ে বাসায় গিয়ে তার মাকে সব খুলে বলে।

পরে ধর্ষিতার মা বাদী হয়ে রাকিবকে একমাত্র আসামী করে শনিবার রাতে মামলাটি দায়ের করেন।

নয়া দিগন্ত

 

সন্তান যতদিন ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতে না পারবে- ততদিন তার প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে

সন্তান যতদিন ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতে না পারবে- ততদিন তার প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে


প্যারেন্টিং


চৌদ্দ বছর বয়সী সাইম এবারই ক্লাস নাইনে ভর্তি হল। বরাবরই ভালো ছাত্র ছিল সে। কিন্তু ক্লাস নাইনে উঠার পর থেকেই তার আচার আচরণে কেমন যেন পরিবর্তন দেখা দিচ্ছিল। বিষয়টি বাবা-মা দু’জনেই বুঝতে পারলেও শুরুতে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। ভেবেছিল ছেলে বড় হচ্ছে, তাই হয়ত একটু রিজার্ভ থাকতে চাইছে।
সাইম বাসায় যতক্ষণ থাকতো, খুব কম কথাই বলতো অন্যদের সাথে। স্কুল থেকে এসেই সোজা নিজের রুমে ঢুকে যেত। আবার সন্ধ্যায় বের হয়ে যেত। প্রথম কয়েকদিন ঘন্টা খানেকের মধ্যে বাসায় চলে আসলেও এরপর রাত ৮টা/৯টার আগে বাসায় আসত না। এমনভাবেই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন অভিভাবকদের ডাক আসে সাইমের স্কুল থেকে। পরদিনই দু’জনই হাজির হন স্কুলে। সেখানে স্কুলের হেড মাস্টারের কথা শুনে যেন তাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। স্কুলের হেড মাস্টার জানান, সাইম প্রায় দিনই স্কুলে অনুপস্থিত থাকে। ক্লাস শিক্ষক জানান, সাপ্তাহিক পরীক্ষার সব কটিতেই তার মার্কস একেবারে কম।
বাসায় ফিরেই প্রথমে সাইমের রুমে ঢুকে সব কিছু ভালো করে দেখলেন তারা। পেলেন বেশ কয়েকটি সিগারেটের প্যাকেট। আর ফেনসিডিলের তিনটি খালি বোতল। তাদের আর বুঝতে বাকি রইল না যে, তাদের আদরের সন্তান মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে।
বাবা-মার বড় আদরের সন্তান রুপা। বড় চার ভাইয়েরও খুব আদরের একমাত্র বোন সে। স্কুল পাশ করে এবার কলেজে উঠেছে। ভাইদের সাথে বয়সের ব্যবধান একটু বেশিই। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনজন বিয়ে করে সংসারও করছেন। আর একজন করছেন চাকরি। সবাই এক সাথেই থাকেন। কিন্তু এর মধ্যেই রুপার মধ্যে একটা পরিবর্তন দেখা যায়। খুব চঞ্চল আর ভাইদের সাথে সারাক্ষণ ঝগড়া করা মেয়েটি কেন যেন হঠাৎ একেবারে চুপচাপ হয়ে যায়। বাসায় যতক্ষণ থাকে সারাক্ষণই রুমের দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। কেমন যেন শুকিয়েও যাচ্ছে মেয়েটি।
একদিন রুপার সেজ ভাই তেজগাঁও গেলেন অফিসের কাজে। সেখানে তিনি দেখলেন রুপা বেশ কয়েকজন বন্ধুর সাথে একটি গলিতে আড্ডা দিচ্ছে। বিষয়টি কেমন লাগল তার। কারণ, এখন রুপার থাকার কথা ছিল কলেজে। আর রুপার কলেজও এখানে না, মিরপুরে। আবার বন্ধুদের চেহারা দেখেও ভালো লাগল না। তিনি দূরে দাঁিড়য়ে দেখলেন রুপা কি করে। হঠাৎ দেখলেন কী একটা প্যাকেট নিয়েই সে তাড়াতাড়ি ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলছে। আবার বেশ কিছু টাকা বের করে দিচ্ছে।
রুপার সাথে কথা না বলেই তিনি কাজে চলে গেলেন। সন্ধ্যায় বাসায় এসে দেখেন রুপা আবার বেড়িয়েছে। তখন তিনি রুপার রুমে গিয়ে পড়ার টেবিলের ড্রয়ার খুলে দেখলেন ওই প্যাকট। খুলে দেখেন, সেখানে গাঁজা। বুঝতে বাকি থাকলো না যে রুপা কেন দিন দিন এমন আচরণ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে সন্তানের শারীরিক আর মানসিক বিকাশে বাবা-মায়ের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। সব বাবা-মা’ই চান তাদের সন্তান যেন সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠে এবং তাদের মঙ্গল হয়। কিন্তু তাদের অজান্তেই কোন কোন সন্তান বিপথে চলে যায়। হয়ে যায় মাদকাসক্ত। মূলত সন্তান যখন ছোট থাকে তখন বাবা-মায়ের চিন্তা-ভাবনা থকে সন্তানের স্বাস্থ্য এবং যতœ-আত্তির দিকে। কিন্তু সেই সন্তান যখন বড় হয় তখন সেই সন্তানকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনার পরিধিও বাড়তে থাকে। স্বাস্থ্য এবং পড়ালেখার পাশাপাশি বাবা-মাকে সন্তানের বন্ধু, স্কুল, খেলা সবকিছু নিয়েই ভাবতে হয়। স্কুলে কাদের সঙ্গে মিশছে? বন্ধুরা কেমন? স্কুলের বাইরে কোন বন্ধু আছে কিনা? যদি থাকে, তবে তারা কেমন? পাড়ার বন্ধুরা কেমন? বন্ধুদের মধ্যে কেউ নেশা করে কিনা? অথবা তাদের সন্তান নেশার খপ্পড়ে পড়লো কিনা? সবদিকেই নজর রাখতে হয় বাবা-মাকে।
মনোবিজ্ঞানী ডা. সাইদুর রহমান সোহাগ বলেন, সন্তান বড় হওয়ার সাথে সাথে আমরা অনেক বিষয় এড়িয়ে চলি। কিন্তু ভালো বাবা-মা হতে হলে সন্তান যতদিন বুঝতে না পারবে- কোনটাতে তার ভালো আর কোনটাতে তার খারাপ ততদিন সন্তানের প্রতি তীক্ষè নজর রাখতে হবে । তিনি বলেন, আমরা অনেক সময় সন্তানের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনি না। এতে তাদের মনে এক ধরনের দাগ লেগে যায়। প্রতিটি বাবা-মার উচিত সন্তানের সব কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনা। সন্তানের সাথে যত বেশি সময় কাটানো যায় ততই ভালো। তারপরও যতক্ষণ তার সাথে থাকা যায় ততক্ষণই তার সাথে কথা বলুন। তার ইচ্ছে-অনিচ্ছে, তার বন্ধু-বান্ধবদের খবর, টিচারের খবর, তার ভালো মন্দলাগা ইত্যাদি সব বিষয় নিয়ে কথা বলুন।
ডা. সোহাগ বলেন, সন্তানকে যে আপনি ভালোবাসেন তা সরাসরি প্রকাশ করুন। এতে সন্তান বাবা-মার প্রতি আরো বেশি নির্ভরশীল হবে এবং সব বিষয় তাদের সাথে শেয়ার করবে।
তার মতে সন্তানের সামনে কখনোই কোন অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। এজন্য কেউ যদি অপরাধ বা অন্যায় করে থাকে তবে তার পক্ষ নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া বাবা-মা নিজেরা যেন সন্তানের সামনে কোন মিথ্যে কথা না বলে। সন্তানকেও বুঝাতে হবে সে যেন মিথ্যে কথা না বলে।

সুত্রঃ বাসস।

 

কিভাবে অটিজম শনাক্ত করবেন?

কিভাবে অটিজম শনাক্ত করবেন?


শিশুর স্বাস্থ্যসেবা


অটিজমে আক্রান্ত শিশুকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে
অটিজম, এই শব্দটি বলতে অনেকে মানসিক রোগ বুঝলেও এটি মূলত এক ধরণের স্নায়ুবিক বিকাশজনিত সমস্যা। অটিজম আক্রান্তদের অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ ও সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকে।
যে কারো মধ্যে এই সমস্যাগুলো কম বা বেশি মাত্রায় থাকতে পারে। অটিজমের সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য কোন চিকিৎসা নেই। তবে দ্রুত অটিজম শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারলে আক্রান্তদের অনেকটা ঠিক করে তোলা সম্ভব বলে মত চিকিৎসকদের। এবার জেনে নেবো অটিজমের প্রধান ৯টি লক্ষণ।
১. ছয় মাস বা তার বেশি বয়সে স্বতঃস্ফূর্ত হাসি বা যে কোন আবেগ প্রকাশ করতে পারেনা।
২. ১২ মাস বয়সের মধ্যে আধো আধো কথা না বলা সেইসঙ্গে ইশারা বা হাত বাড়িয়ে কিছু চাইতে বা ধরতে পারেনা।।
৩. চোখে চোখ রেখে তাকাতে পারেনা।
৪. ভীড় এড়িয়ে একা থাকতে পছন্দ করে।
৫. অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারেনা।
৬. একই নিয়মে চলতে পছন্দ করে। কোন পরিবর্তন এলেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়।
৭.একই শব্দ বারবার বলতে থাকে বা একই আচরণ বারবার করে যেমন: একইভাবে হাত বা মাথা নাড়ানো।
৮. বিশেষ রং, শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ বা স্বাদের প্রতি কম বা বেশি মাত্রায় সংবেদনশীল হয়।
৯. কোন বিষয় বা বস্তুর প্রতি অতিমাত্রায় আগ্রহ দেখায়।
চিকিৎসকদের মতে সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে, বিশেষ করে স্কুলশিক্ষা বা প্রশিক্ষণ দিয়ে সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারলে আক্রান্তকে দক্ষ করে তোলা সম্ভব।

সুত্রঃ বিবিসি।

 

কই মাছ রান্নার সহজ ধাপ

কই মাছ রান্নার সহজ ধাপ


রেসিপি


কই মাছ আমাদের দেশীয় মাছ। বাজারে অবশ্য থাইল্যান্ডের কইও পাওয়া যায়। অনেকে দেশীয় কই ভালবাসেন আবার কেউ বা থাই কই কিন্তু কই মাছ যে স্বাদে অতুলনীয় সেটা সবাই স্বীকার করে। এখানে কই মাছের একটি সুস্বাদু রেসিপি দেওয়া হল।

কি কি লাগবে

কই মাছ ৪-৫ টি (৫০০ গ্রাম)
হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ
মরিচ গুঁড়ো ১.৫ (দেড়) চা চামচ
পেঁয়াজ কুচি ১/২ কাপ
কাঁচামরিচ ফালি ৪-৫ টি
ধনেপাতা কুচি ২ টেঃ চামচ
লবণ ১ চা চামচ
তেল ৪ টেবিল চামচ
পানি ১/২ কাপ

কয়েকটা ধাপ

ধাপ-১
প্রথমে কই মাছ ধুয়ে নিন।

ধাপ-২
মাছ আধা চা চামচ হলুদ গুঁড়ো আধা চা চামচ লবণে ভালো করে মেখে হালকা বাদামি করে ভাজুন।

ধাপ-৩
ভাজা হয়ে গেলে মাছগুলি তুলে রাখুন।

ধাপ-৪
এবার মাছ ভাজা তেলে হালকা করে পেঁয়াজ ভেজে নিন।

ধাপ-৫
বাকি হলুদ, মরিচ গুঁড়ো দিয়ে নেড়ে অল্প পানি দিয়ে ভালো করে নেড়ে ভাজা মাছ দিয়ে দিন।

ধাপ-৬
লবণ দিন।

ধাপ-৭
১/২ কাপ পানি দিয়ে ঢেকে ৩-৪ মিনিট রান্না করুন।

ধাপ-৮
কাঁচামরিচ, ধনেপাতা কুচি দিয়ে ২-৩ মিনিট পর নামিয়ে নিন।

পরিবেশন
ব্যস হয়ে গেল প্রিয় স্বাদের কই মাছ রান্না শেষ। এখন সুন্দর করে পরিবেশন করি পরিস্কার বাটিতে।

 

স্বাতীর রঙধনু

স্বাতীর রঙধনু


আফরোজা হাসান


বাচ্চা পালন নয়তো সহজ। এই বিষয়বস্তু কে কেন্দ্র করে একটা ধারাবাহিক আলোচনা সভার আয়োজন করা উচিত।
বাচ্চাদের জ্যুস বানানোর জন্য বাগান থেকে কমলা নিতে এসেছিল স্বাতী। পেছন থেকে বাক্যটা ভেসে এলে ঘুরে তাকিয়ে ননদ আজরা কে দেখতে পেয়ে হেসে বলল, হঠাৎ এমন ইচ্ছে উদ্রেক হবার পেছনে কারণ কি?
স্বাতীর পাশে এসে দাঁড়িয়ে আজরা বলল, তুমি তো জানোই আমার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই যা হয় তা হচ্ছে, চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। নতুন কোন পরিস্থিতি যখন সম্মুখে এসে দাঁড়ায় আমি হিমশিম খাই সেটা সামলাতে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে সেই পরিস্থিতিটা কত সুন্দর ভাবে হান্ডেল করা যেত তার শত শত আইডিয়া মাথায় কিলবিল করতে শুরু করে। এরচেয়েও বড় একটা সমস্যা হচ্ছে, কোন সংজ্ঞা বা উদাহরণের ভুল প্রয়োগ। এই যেমন একদিন খেলতে গিয়ে মুয়াজ প্রচন্ড জোরে আছড়ে পড়লো। আমি বিকট এক চিৎকার দিয়ে ছুটে যাচ্ছিলাম আরভ ভাইয়া আমাকে ধরে ফেলে বললেন, ওকে একাই উঠতে দে। জীবনের উত্থান পতনে সর্বদা যেহেতু তুই ওর সাথে সাথে থাকতে পারবি না। সেহেতু এখন থেকেই একা একা উঠে দাঁড়ানোর অভ্যাস হয়ে যাক।
স্বাতী হেসে বলল, এই কথাটা উনি বাচ্চাদেরকেও বলেন। বলেন, তোমরা যখন আছড়ে পরবে আমিও তোমাদের সাথে পরবো। কিন্তু উঠে তোমাদেরকে একাই দাঁড়াতে হবে। বাচ্চাদেরকে স্বনির্ভর বানানোর ব্যাপারে একদম হামাগুড়ি দেয়া যখন শুরু করে তখন থেকেই উনি ট্রেনিং দেয়ানো শুরু করেন। একটা ঘটনা মনে পরলে এখনো হাসি পায়। নাযীব তখন মাত্র নড়াচড়া শুরু করে। হাত বাড়িয়ে এটা সেটা ধরতে চেষ্টা করতো। একদিন ওর হাত থেকে খেলনা ছুটে দূরে গিয়ে পরেছিল। নাযীব হাত বাড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছিল কিন্তু পারছিল না। উনি পাশেই বসেছিলেন কিন্তু খেলনাটা এগিয়ে দিচ্ছিলেন না। কত রকমের কসরত করে সাড়ে সাত মিনিট লাগিয়ে নাযীব শেষ পর্যন্ত ওর খেলনাটা ধরতে পেরেছিল।
আজরা হেসে বলল, আমিও তো ভাইয়ার মতোই করতে চাই সবকিছু কিন্তু হয়ে যায় সব উল্টাপাল্টা। এই যেমন পরশু বিকেলে মুয়াজ কমলা গাছ থেকে কমলা পারার চেষ্টা করছিল। দেখছোই তো এই গাছের কমলাগুলো বেশ নিচুতেই ঝুলছে। কিন্তু তবুও মুয়াজের ধরাছোঁয়ার একটু বাইরেই। মুয়াজ বার বার লাফ দিয়ে চেষ্টা করছিল ধরার। আমিও পাশে বসে মনে মনে বলছিলাম, চেষ্টা চালিয়ে যাও সোনা আমার। কিন্তু অনেকবার চেষ্টা করার পরেও যখন ধরতে পারছিল না ধীরে ধীরে আঁধারে ঢেকে যাচ্ছিলো মুয়াজের চেহারা। এমন সময় ভাইয়া এসে পেছন থেকে মুয়াজকে ধরে সামান্য উঁচু করে ধরতেই মুয়াজ দুহাতে টেনে দুটা কমলা ছিঁড়ে নিলো। উফফ, সেকি খুশি বাচ্চার। আনন্দে লাফাতে লাফাতে ছুটে গেলো ভাইবোনদেরকে তার নিজ হাতে ছেঁড়া কমলা দেখাতে। ভাইয়া তখন আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুই বাচ্চাকে সাহায্য না করে চুপচাপ বসে আছিস কেন? দেখতেই তো পাচ্ছিলি মুয়াজ ধরতে পারছে না কমলা। এবং যতটূকুন উঁচুতে রয়েছে ওর পক্ষে ধরা সম্ভবও ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চারা কয়েকবার চেষ্টা করার পর ওদেরকে সাহায্য করতে হয়। তা না হলে চেষ্টা করে নিরাশ হবার কারণে চেষ্টা করার প্রতিই অনীহা চলে আসে মনে। আমি বললাম, তুমিই তো বলো বাচ্চাদেরকে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করতে দেয়া উচিত। ভাইয়া তখন হাসতে হাসতে বললেন, কিন্তু বাচ্চা কোন একটা কিছু করার চেষ্টা করছে। বেশ খানিকটা সফলও হয়েছে। কিন্তু তারপক্ষে একা সফল হওয়া সম্ভব নয় এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চাকে সাহায্য করতে হবে যাতে সে কাজটা করতে পারে। তা না হলে এমন ধরণের ব্যর্থতা বাচ্চার মনে চেষ্টা করার ব্যাপারে উৎসাহকে হ্রাস করে দেয়। কথা শেষ করে ভাইজান হাসতে হাসতে চলে গেলেন। আমি আর কি বলবো তখন। বোকার মতো দাঁড়িয়ে নিজের বোকামোর কথা ভাবতে লাগলাম। এখন তুমি হেসে আর আহত করো না আমাকে। পরামর্শ দাও কিভাবে তোমার মতো মা হবো।
কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিলো স্বাতী মাহিরাকে ছুটে আসতে দেখে বলল, কি হয়েছে? তুমি এমন করে ছুটছো কেন?
তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে গল্প করছো? ঐদিকে তো বিরাট কান্ড ঘটে গিয়েছে। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো মাহিরা।
কি কান্ড ঘটেছে? প্রশ্ন করলো আজরা।
মাহিরা বলল,বাচ্চারা যাতে খাবার নিয়ে ঝামেলা করতে না পারে সেজন্য ওদেরকে সাথে নিয়েই তো ওদের প্রতি বেলার খাবারের মেন্যু ঠিক করে দিয়েছিলেন আরভ ভাইয়া। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। আজ লেগে গিয়েছে যুদ্ধ।

 

শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজন সচেতনতা

শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজন সচেতনতা


নারী সংবাদ


গভীর রাত। সবাই ঘুমে অচেতন। হঠাৎ পাশের বাড়ির তিনতলা থেকে বাচাঁও বাচাঁও বলে চিৎকার করে ওঠে মধ্য বয়সী এক নারী। তাঁর চিৎকারে ঘুম থেকে জেগে ওঠে অনেকেই। মুহূর্তের মধ্যেই স্পষ্ট বোঝা গেল যে, মধ্যরাতে ঘরে ফিরে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে প্রহার করছে। এক পর্যায়ে ঐব্যক্তি চিৎকার করে কাটা চামচ দিয়ে তার স্ত্রীর চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দিলে, ঘরের বাইরে এসে আক্রান্ত নারী তার সর্ব শক্তি দিয়ে বলে বাচাঁও বাচাঁও বলে চিৎকার করতে থাকে। ওই মহিলার স্বামী মাঝে মধ্যেই তাকে এই ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন করে। অসহায় স্ত্রী মান-সম্মানের ভয়ে কাউকে কিছু না বলে নীরবে সব যন্ত্রণা সহ্য করে যায়।
আমাদের দেশে নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। শারীরিক নির্যাতন, যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, পাচার, খুন বা হত্যার মতো নানান ঘটনার খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যদিও দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী নারী ও শিশু নির্যাতন জঘন্য একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। বৈষম্যমুলক সমাজ কাঠামোর ভেতরে দেশের নারীরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তারা কর্মস্থলে বৈষম্য ও হয়রানীর শিকার হচ্ছে, ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে কিশোরীদের কেউ কেউ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। নারী ও কিশোরীদের অপহরণ করে সীমান্ত পার করে বিদেশে পাঁচার করা হচ্ছে।
এ ধরনের নির্যাতনের ফলে নারীর যেমন শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয় তেমনি তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘিœত হয়।
দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার অন্যতম কারণ হচ্ছে ‘যৌতুক’। সমাজে যৌতুক প্রথা একটি বড় অভিশাপ। আমাদের দেশে যৌতুক প্রথা যে সব কারণে এখন পর্যন্ত টিকে আছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, অর্থনৈতিক পরনির্ভরশীলতা, সামাজিক কুসংস্কার, বাল্য বিয়ে, রেজিষ্ট্রিবিহীন বিয়ে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা প্রভৃতি।
অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন (এএসএফ)-এর তথ্য অনুযায়ী গত ১৯ বছরে প্রায় দেড় হাজার নারী ও শিশু অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। এই অপরাধের দায়ে সাজা হয়েছে মাত্র ৩৪৩ জনের। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী অ্যাসিডের মামলায় গত ১৬ বছরে ১৪ আসামীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত কারও সাজা কার্যকর করা হয়নি। অ্যাসিড অপরাধ দমন আইন, ২০০২ অনুযায়ী ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার কথা বলা আছে।
জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। দেশটিতে নারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত কোটি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সূচকে গত এক দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। গত এক দশকে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে, নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত হয়েছে, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে নারীর প্রবেশ ঘটেছে।
তবে, দুর্ভাগ্যক্রমে এই অগ্রগতির যাত্রার মধ্যেও এদেশের নারীরা নানাভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১১ এর প্রতিবেদন দেখা যায়, এ দেশের ৮৭ শতাংশ নারী ও কন্যা শিশু সহিংসতার শিকার হচ্ছে। লিঙ্গভিত্তিক অসমতার সূচকে ১৮৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম।
বাংলাদেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ১৯৮৩ সালে প্রথম প্রণীত হয় নারী নির্যাতন (ন্যূনতম শাস্তি) অধ্যাদেশ ১৯৮৩ (১৯৮৩ সালের ৬০ নম্বর অধ্যাদেশ)। অন্যান্য আইনের ওপর প্রাধান্য দিয়ে প্রণীত এই আইনটিতে মোট নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিতকরণ ও এর শাস্তি নির্ধারণ করার বিধান আছে এবং ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ছাড়াও বখাটেদের উৎপাতের জন্য দন্ডবিধি আইন প্রচলিত আছে। প্রচলিত আইনে বখাটেদের যে শাস্তির বিধান আছে তা হলো- ঢাকা মহানগর পুলিশ আইনের ৭৬ ধারা ও দ-বিধির ৫০৯ ধারা অনুযায়ী এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদ-সহ ২ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ নম্বর ধারায় যৌন নিপীড়ন ও শ্লীলতাহানীর জন্য ১০ বছরের কারাদ- দেয়ার বিধান আছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এই নির্যাতন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সমাজে বসবাসরত সকল শ্রেণীর মানুষকে সচেতন করতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ তার সাড়ে সাত কোটি নারী ও কন্যা শিশুর জন্য অনুকূল পরিবেশে সৃষ্টি করতে পারে, যাতে তারা দেশের সামগ্রিক উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে।
সুত্রঃ বাসস

 

মাতৃকথন_১০

মাতৃকথন_১০


ফারিনা মাহমুদ


নিছক নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিতে লেখা শুরু করেছিলাম মাতৃকথন । খুব অবাক হয়ে খেয়াল করলাম ধীরে ধীরে বেশ অনেকেই আমাকে ইনবক্সে কমেন্টে প্রশ্ন করা শুরু করেছেন বাচ্চার ব্যাপারে । তাঁরা সবাই জানেন আমি ডাক্তার নই, শিশু বিশেষজ্ঞও নই। তাহলে আমার কাছে ক্যানো ? আমার মনে হয়েছে আমার কথাগুলো হয়ত খুব সাধারণ, আটপৌরে বলেই অনেকের সাথে মিলে গেছে । কাছের মানুষ ভেবেই তাঁরা আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, চাইছেন । এ এক পরম পাওয়া আমার জন্য । শুরু থেকে ব্যাপারগুলো এলোমেলো ছিলো । এখন ভাবছি একটু গুছিয়ে শুরু করবো । যদি একজনেরও একটু উপকার হয়, আমি ধন্য ।

#পৃথিবী_বদলে_গেছে…. যা দেখি নতুন লাগে !

দীর্ঘ অপেক্ষার পর কোলে যখন শিশুটা আসে,সে একা আসে না । নতুন মা বাবার জন্য নিয়ে আসে একরাশ আনন্দের বিপরীতে কিছু দুশ্চিন্তা, পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশন, নির্ঘুম রাত আর কি করবো কি করবো না এই দ্বিধার দোলাচল । এই নতুন পরিস্থিতিতে কিভাবে খাপ খাওয়াবেন বাবা মা ? কিভাবে কি করবেন দিশা পাওয়ার আগেই আরো কিছু সমস্যা হাজির হয় । মা আর বোনেরা এই করতে বলছেন তো শ্বাশুড়ি ননদ ঠোঁট উল্টে বললেন – যত্ত সব ঢং ! এইভাবে বাচ্চা পালে নাকি ? স্বামী বেচারা অটো হয়ে যান দু পক্ষের কথা শুনতে শুনতে । ফলাফল – সম্পর্কের অবনতি, রাগারাগি ঝগড়াঝাটি !

ব্যাপারগুলো ক্যানো ঘটে ?

ঘটে মূলত আমাদের অজ্ঞতা ও মানসিক প্রস্তুতির অভাবে । বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাবা মায়েরা নতুন বাচ্চা এবং প্রসুতি মায়ের ব্যাপারে খুব বেশি কিছু জানেন না । ভাবেন নানী দাদী তো আছেই ! কিন্তু মনে রাখতে হবে, দিনশেষে বাচ্চাটা যেহেতু আমার, তাই আমারই দায়িত্ব বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া । আমার মতে বাচ্চার জিনিসপত্র, নাম আর ঘর সাজানো নিয়ে মাথা ঘামানোর পাশাপাশি কিছু দরকারী বিষয় জেনে নেয়া জরুরি ।এতে করে সন্তান জন্ম পরবর্তী চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবেলা করা সহজ হয় ।

১) মায়ের পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশন :
প্রসব পরবর্তী ম্যাসিভ হরমোনাল চেঞ্জের কারণে নিজের ইমোশনের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না । প্রচন্ড রাগ, জিদ, অকারণে কান্না এই ধরনের কিছু অদ্ভূত উপসর্গ দেখা দেয় । মা নিজেও মোটামুটি তব্দা খেয়ে যায় তার নিজের আচরণে। অসম্ভব অসহায় লাগে নিজেকে । মনে হয় কেউ আমাকে বুঝতে পারছে না ।
অদ্ভূত ব্যাপার হছে, একটা সমময় নিজেকে খুব উপেক্ষিত আর বঞ্চিত মনে হয় । মনে হয় সবাই শুধু বাচ্চা বাচ্চা করে যাচ্ছে ক্যানো, আমি কি একটা মানুষ, না মানুষের ছায়া ! বিশেষত গর্ভাবস্থায় সবার আদর যত্ন পেয়ে এসে এই নতুন পরিস্থিতিতে হঠাত খুব খটকা লাগে ! ক্লান্ত অবসন্ন আপনার মাথায় আবার সারাক্ষণ সেই বাচ্চাকে নিয়েই টেনশন, বাচ্চাটাকে কারো হাতে দিয়ে শান্তি পাওয়া যায়না । মনে হয় চারপাশের সবাই ভুল, আমি ই শুধু ঠিক ।
কি করবেন : এই করনীয়র তালিকাটা মূলত অন্যদের জন্য, আরো আলাদা করে বললে বাবা দের জন্য । সাপোর্টিং পার্সন হসাবে তাদেরকে যথেষ্ট সংগ্রাম করতে হবে এই পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে, এইটা স্বীকার করে নিয়েই বলছি, আপনাদের দায়িত্ব মা কে সময় দেয়া, কাজ ভাগ করে নিয়ে বিশ্রামে সহায়তা করা । তাকে আঘাত করে বা দোষ দিয়ে কথা না বলা এবং কেউ যাতে বলতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া । তার রাগ জিদ ধরে আপনিও তার সাথে বাক বিতন্ডায় জড়াবেন না যেনো । তর্ক বাড়ছে বুঝলে ব্রেক নিন । কিছুক্ষণ বাইরে থেকে হেঁটে ফিরে আসুন । তাকেও কুল ডাউন টাইম দিন, নিজেও নিন । অবস্থা বেশি খারাপ হলে অবশ্যই চিকিত্সা সেবা নেবেন । তবে অবশ্যই আত্মীয়ও স্বজন, শ্বশুর বাড়ি বাপের বাড়ি এক করে বিচার সালিশ বসিয়ে আরো বড় বিপদ ডাকবেন না ।

২) ঘুম স্বল্পতা :
সদ্যজাত বাচ্চার পিছনে দিন রাত এক হয়ে যায় । বাচা খাওয়ানো, ঘুম পড়ানো, কাঁথা পাল্টানো, কান্না সামলানো এই লুপের মধ্যে পড়ে যায় মা । আমি নিজেই মাথায় চিরুনি দিয়েছিলাম ১৯ দিন পরে, এমনও দিন গেছে যখন ২৪ ঘন্টায় একবার খাবার সময় পেয়েছিলাম ! ভোজবাজীর মতো পাল্টে যাওয়া এই নিদ্রাহীন কান্ত জীবন ভীষণ প্রভাব ফেলে বাবা মায়ের উপরে, প্রভাব ফেলে সম্পর্কের উপরেও । মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে থাকে । বাবাদের জন্য অফিসে কাজে মন বসানো খুব কষ্টকর হয়ে যেতে পারে ।
কি করবেন : ঘুমাবেন । সোজা হিসাব হচ্ছে যখন ই একটু সুযোগ পাবেন, ঘুমিয়ে নেবেন । প্রথম ৬ সপ্তাহ বাচ্চার রুটিনের সাথে নিজে মানিয়ে নেয়া ছাড়া গতি নেই । বাচ্চা ঘুমালে এই করবো সেই করবো না করে নিজেও শুয়ে পড়বেন । হালকা তন্দ্রা বা বিশ্রামও আপনাকে অনেক ঝরঝরে করে তুলতে পারে । ২৪ ঘন্টায় কয়েকটা ছোট ন্যাপ নিলেও দেখবেন বাকি সময়টা অনেক ভালো কাটবে ।

৩) ক্ল্যাশিং প্যারেন্টিং স্টাইল :
ওই যে শুরুতে বললাম,বাবার বাড়ি থেকে বলেছে তেল ডলতে শ্বশুর বাড়ি বলছে না … এই ধরনের ক্ল্যাশ খুব কমন । এক একজনের বাচ্চা পালার তরিকা ও অভিজ্ঞতা এক এক রকম হয় । সবাই ভাবে সে ঠিক । এতে করে তৈরী হয় একটা সংঘাতময় অবস্থা । এর স্বীকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে মা । যেন মা ছাড়া দুনিয়ার সবাই সব জানে !
কি করনীয় : নিজেকে জানতে হবে কি করবো, কেন করবো । কনফিডেন্স রাখতে হবে নিজের উপরে । মানুষের বাচ্চা কোনো নতুন মডেলের গাড়ি না যে ম্যানুয়াল সাথে নিয়ে পৃথিবীতে আসবে । তবে হ্যা, সব গাড়ির কমন মেকানিজম থাকে । সেইটা জেনে রাখলে অন্যের কথা খুব বেশি আমল দেয়ার প্রয়োজন নেই যদি না যুক্তি যুক্ত মনে হয় । সবকিছুতে উদ্বিগ্ন হবেন না । তবে উদ্বিগ্ন কখন হতে হয় সেই বেসিক পয়েন্ট গুলো জানতে হবে।

৪) একান্ত সময় থেকে বঞ্চিত :
বাচ্চা হবার আগে প্রতি সপ্তাহে দুজনে রিক্সার হুড ফেলে ঘুরতে যেতেন? রাত জেগে মুভি দেখতেন ? আড্ডা দিতেন বন্ধুদের সাথে? আর এখন? নিজেদের বসে দুটো কথা বলার সময়ও নেই ! আর কি কোনদিন জীবন স্বাভাবিক হবে ?
কি করনীয় : জীবন স্বাভাবিক হবে আবার, তবে তার জন্য চেষ্টা করতে হবে দুজনকেই । বাচ্চার কাজগুলো দুজন মিলেই করুন । বাবা যখন বাচ্চার কাজ করতে চাচ্ছেন, মা তখন তাকে খবরদারি করা থেকে বিরত থাকুন, তাকে বুঝিয়ে দেখিয়ে দিন কি করলে ভালো হয় । তিনি একবারে না পারলেই গলা চড়াবেন না । আর একেবারে আপনার মতো করেই তাকে পারতে হবে এমন কথা নেই । একটু উনিশ বিশ হলে দুনিয়া উল্টে যায় না । ধৈর্য রাখুন, বাচ্চাকে একটা রুটিনে আনতে পারলে সব ই সম্ভব হবে । নিজেরা নিজেদের জন্য সময় বের করুন । সমঝোতা শক্ত করুন । একে অপরের পাশে থাকুন । একটু একটু করে প্রিয় জিনিসগুলো ফিরিয়ে আনুন ।
এই চাল্যেঞ্জ গুলো প্রথম ৬ সপাহে যদি ভালো মতো হ্যান্ডেল করতে পারেন, বিশ্বাস রাখেন, ৬ সপ্তাহের পর থেকে পরিস্থিতি অনেক অনেক ভালো হবে !
ফিরে আসবো পরের পর্বে, নবজাতকের যত্ন নিয়ে !

 

“ফ্রীল্যানসিং ফ্রি প্রশিক্ষণ” শুধুমাত্র নারীদের জন্য!

“ফ্রীল্যানসিং ফ্রি প্রশিক্ষণ” শুধুমাত্র নারীদের জন্য!


নারী সংবাদ


এগিয়ে যাচ্ছে যুগ ও প্রযুক্তি, এবং বর্তমান যুগে একজন নারীর জন্য আয় করার সবচেয়ে নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য উপায়ের একটি হচ্ছে ফ্রীল্যানসিং। অবিশ্বাস্য নয় সত্যি। শুধুমাত্র নারীদের জন্য। ফ্রি প্রশিক্ষণ দিবে CodersTrust সাথে চাকরীর সুযোগ বাড়বে আপনার।

দেরি না করে এখনই আবেদন করে ফেলুন ।

Course Name: Digital Marketing
Course Duration: 4 Months
Class Time: 3 Days/Week (9am-1pm) or (2pm-6pm)

এই প্রজেক্ট কাদের জন্য?

– শুধুমাত্র নারীদের জন্য (Students, Housewife, Job Seeker, Mothers, Unemployed)
– সর্বনিম্ন SSC পাস
– ঢাকায় অবস্থিত
– যাদের আর্থিক প্রয়োজন আছে, তারা অগ্রাধিকার পাবে
– বেসিক ইংলিশ ও কম্পিউটার জানা থাকতে হবে
– বয়স ১৮ – ৩৫

গত ৫ বছরে CodersTrust প্রশিক্ষণ দিয়েছে হাজারো মানুষদের, কিন্তু আমরা চাই আমাদের দেশের নারীরাও এর অংশ হোক, হয়ে যাক স্বাবলম্বী।

তাই এই প্রজেক্ট, যেন যেই নারীর ইচ্ছা আছে স্বাবলম্বী হওয়ার, সে যেন নির্ভয়ে, কোনো খরচের চিন্তা ছাড়াই, ফ্রি আমাদের প্রজেক্টের অংশ হতে পারবে।

৩টি রাউন্ডে বাছাই করা হবে, ১ম রাউন্ডে আবেদন করার জন্য নিম্নোক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করুন।

***বনানীতে ফ্রি কোর্সে অংশগ্রহণ করতে যোগাযোগ করুন,
ঠিকানাঃ

কোডার্সট্রাস্ট মেইন ক্যাম্পাস (বনানী ক্যাম্পাস) বাড়িঃ৮২ রোডঃ১৯/এ, ব্লক- ই বনানী ঢাকা।

ওয়েব সাইট ঠিকানাঃ
https://coderstrustbd.com/all-courses/

 

সফররত বান কি মুনের স্ত্রীর প্রয়াস স্কুল পরিদর্শন

সফররত বান কি মুনের স্ত্রীর প্রয়াস স্কুল পরিদর্শন


নারী সংবাদ


সফররত জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের স্ত্রী ইও শুন তায়েক আজ বুধবার সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় প্রয়াস স্কুল পরিদর্শন করেছেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ কথা জানানো হয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জুয়েনা আজিজ, পররাষ্ট্র্রমন্ত্রীর স্ত্রী বেগম সেলিনা মোমেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
আমন্ত্রিত অতিথিরা প্রয়াস স্কুলে এসে পৌঁছলে কেন্দ্রীয় প্রয়াসের নির্বাহী পরিচালক ও অধ্যক্ষ কর্নেল মোঃ নুরুল হুদা তাঁদেরকে স্বাগত জানান এবং প্রয়াসের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন। ইও শুন তায়েক প্রয়াসের আর্লি চাইন্ডহুড ডেভেলপমেন্ট (ইসিডিপি) প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরে তিনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে আন্তরিক সময় কাটান।
উল্লেখ্য, প্রয়াসের শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অতি অল্প সময়ের মধ্যেই প্রয়াস একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
পরে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ বিশেষ শিশুদের পরিবেশিত মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
সুত্রঃ (বাসস)।

 

চুপ করে থাকো,কাউকে বলো না! (পর্ব-৩)

চুপ করে থাকো,কাউকে বলো না!
(পর্ব-৩)


রাহনুমা সিদ্দিকা


নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শিশুকে শেখান-

আপনার শিশুকে/ কিশোর সন্তানকে ধীরে ধীরে তার বয়স উপযোগী sexual education আপনাকেই দিতে হবে, নাহলে কেউ তাকে বিকৃত ধারণা দিয়ে তাকে নির্যাতন করার সুযোগ নিতে পারে। একদিনে সব শেখানোর চেষ্টা করবেন না।

১) শিশুকে তার প্রত্যেকটি গোপন অঙ্গের নাম জানান। কোন অঙ্গগুলো প্রকাশ করা যাবে কোনগুলো গোপন রাখতে হবে তার পুরোপুরি জ্ঞান তাকে দিতে হবে। আপনার শিশুকে বোঝান- কোনটি ‘ভালো আদর’ কোনটি ‘মন্দ আদর’। কেউ তাকে ‘ভালো আদর’ করলে কোন সমস্যা নেই। ‘মন্দ আদর’ করলেই সাথে সাথে বাবা/ মা/ বাসার বড় কাউকে জানাতে হবে।

২) তাকে দু’হাত ছড়িয়ে দাঁড়াতে বলুন। সে যাদের পছন্দ করবে না তাদেরকে যেন কখনো এই ত্রিভূজের মধ্যে আসতে না দেয়। (ছবিটি ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স এর ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে।)

৩) তাকে আরো বলতে পারেন- তোমার শরীরের তিনটি জায়গা (নিচের ছবিতে চিহ্নিত) আছে, অনেক বড় বিপদ ঘটতে পারে যদি কেউ এগুলো মন্দভাবে ধরে। তাকে এ-ও বুঝিয়ে বলতে পারেন- কখনো কখনো গোসল করিয়ে দেয়ার সময় মা হয়তো ধরতে পারে। অসুখ হলে বাবামায়ের উপস্থিতিতে ডাক্তার ধরতে পারে। ‘ভালো আদর’ করার জন্য কখনো কেউ জড়িয়ে ধরতে পারে। কিন্তু তুমি যখনই বুঝবে কেউ ‘মন্দ আদর’ করবার জন্য ধরেছে তাকে জোরে ‘না’ বলতে হবে। যদি সে না শোনে তাহলে চিৎকার দিতে হবে, সে যে-ই হোক না কেন আর তাকে তুমি যতই ভালোবাসো না কেন। সেই জায়গা থেকে সরে নিরাপদ কোন জায়গায় চলে আসতে হবে। অবশ্যই মা কিংবা বাবা যাকে তুমি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করো তাকে বলে দিতে হবে। (আইডিয়াটি ‘সত্যমেভ জয়তে’র চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ’ নিয়ে করা এপিসোডের ওয়ার্কশপ থেকে নেয়া হয়েছে।)

৪) আপনার শিশুকে শেখান- যে সিক্রেটের সাথে খারাপ কাজ জড়িয়ে থাকে সে ‘সিক্রেট’ বলে দিতে হয় নাহলে বিপদ হয়।

৫) তাকে বলুন, যারা ‘মন্দ আদর’/ ‘খারাপ আদর’ করবে তারা কখনো ভালো মানুষ নয়, তাদের ভালোবাসা যাবে না।

৬) অনলাইনে সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ নিয়ে শিশুদের উপযোগী ভালো ভালো সচেতনতামূলক ওয়ার্কশপের ভিডিও পাবেন, শিশুকে সাথে নিয়ে সেগুলো দেখান। আপনার শহরে কোন ওয়ার্কশপ হলে সেগুলোতে শিশুকে নিয়ে যেতে পারেন।

আপনার শিশুর সবচেয়ে ভালো বন্ধু হন। যেন সে তার সব কথা আপনার সাথে নিঃসঙ্কোচে শেয়ার করতে পারে। তাকে একথা জানান যে, তাকে আপনি ভালোবাসেন ও বিশ্বাস করেন, আপনি সবসময় তাকে সাহায্য করবেন। শিশুর স্কুলের শিক্ষকদের সাথে পরিচিত হবেন। কোন শিক্ষক কেমন, কে তাকে আদর করে, তাকে কী কী দেয়, সে স্কুলে কী কী করে- গল্পচ্ছলে শিশুর কাছ থেকে জেনে নিন।

ধরুন, আপনার শিশু কারো দ্বারা সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজড হলো,

এখন আপনার করণীয় কী?

১) আপনার শিশু যদি কারো নামে আপনার কাছে নালিশ করে, শিশুকে বিশ্বাস করুন। শিশুরা সাধারণত এই ব্যাপারে মিথ্যা বলে না। আপনি অবিশ্বাস করলে ভবিষ্যতে হয়তো আর কখনোই শিশুটি আপনার সাথে শেয়ার করবে না।

২) আপনার শিশুকে এটা বুঝতে দেয়া যাবে না তার সাথে খুব ভয়ংকর কিছু ঘটে গেছে। আপনি আপনার শিশুর সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করুন, অস্থির হয়ে যাবেন না।

৩) নিয়মিত একজন ভালো শিশুমনোবিজ্ঞানীকে দিয়ে কাউনসেলিং করান।

৪) শিশুটি যদি খুব গুরুতর নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও শিশু মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নিন। কখনোই শিশুটিকে বকাবকি করা যাবে না। বরং তাকে আশ্বস্ত করতে হবে যা হয়েছে তা কোনভাবেই তার অপরাধ নয়, অপরাধ ওই ব্যক্তির। ব্যাপারটি যদি আদালত পর্যন্ত যায়, বিশেষ ব্যবস্থায় মনোবিজ্ঞানীর মাধ্যমে শিশুর জবানবন্দী নিতে হবে, কখনোই শিশুকে জনসমক্ষে ‘তার সাথে কী হয়েছে’ এর বর্ণনা দিতে বলা যাবে না। এসব শিশুর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

৫) ভিকটিম শিশুটি যদি খুব অল্প বয়েসী হয়- তাহলে হয়তো সে আপনাকে নির্যাতনকারীর কথা বলতে পারবে না। আপনাকে আগেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুকে একাকী যার-তার কোলে দেবেন না। নিচের লক্ষণগুলো দেখা গেলে সাবধান হোন, প্রয়োজন হলে ডাক্তার দেখান।

তবে এগুলো অন্য কারণেও হতে পারে,

• শিশুর গোপনাঙ্গে কোন ক্ষত বা অস্বাভাবিক ফোলা ভাব,
• মুখে ক্ষত,
• পেট খারাপ,
• খাওয়ায় অরুচি,
• বিশেষ কোন ব্যক্তিকে দেখে ভয় পাওয়া,
• হঠাৎ চমকে ওঠা ইত্যাদি।

নির্যাতনকারী কদাচিৎ অচেনা মানুষ হন, অধিকাংশ সময় সে নিকট বা দুরসম্পর্কের আত্মীয়, শিক্ষক, পরিবারের লোক, পারিবারিক বন্ধু, প্রতিবেশী, কাজের লোক ইত্যাদি হন। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে- কেবল সন্দেহ করে অহেতুক কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না, এতে ব্যক্তিগত সম্পর্ক খারাপ হতে পারে। আবার, নিশ্চিত হলে লজ্জায় চুপ করে থাকবেন না, সে আপনার যত ঘনিষ্ট বা সম্মানিত জনই হোক না কেন। পারিবারিকভাবে শালিস করা গেলে ভালো কিংবা আইনি সহায়তা নেবার প্রয়োজন হলে নিন।

আমরা তো এখন আধুনিকতার দোহাই দিয়ে অনেক বিকৃতিকেই স্বাভাবিকভাবে নেয়া শুরু করেছি। ভাবলে ভেতরটা হিম হয়ে আসে- একসময় হয়তো আমরা চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ, পেডোফিলিয়া এবং ‘অজাচার’ (ইনসেস্ট) এর মতো জঘন্যতম বিকৃতিগুলোকেও স্বাভাবিক ভাবে নিতে শুরু করবো।

আপনার আমার নীরবতাই হাজারো শিশুর নির্যাতিত হওয়ার পথ সুগম করে দেবে। আসুন, এদের মুখোশ খুলে দিই সভ্য সমাজে, ধিক্কার দিই, কঠোর আইন প্রণয়ন করি, আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড় করাই, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করি। সুস্থ-স্বাভাবিক-নিরাপদ শৈশব- প্রতিটি শিশুর অধিকার! আমাদের শিশুরা বেড়ে উঠুক নিবিড় পবিত্রতায়… আল্লাহর কাছে সে দোয়া রইলো।

লেখায় ব্যবহৃত তথ্যের রেফারেন্স ও গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু লিঙ্ক:

১) শিশু যৌন নির্যাতনরোধে বাংলাদেশে প্রচলিত আইন ও সহায়তা কেন্দ্রসমূহ সম্পর্কে জানতে এই লেখাটি পড়ুন।

২) Child Sexual Abuse – উইকিপিডিয়া

৩) ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স বাংলাদেশ এর ওয়েবসাইট

৪) যেভাবে একজন পেডোফাইলকে চিহ্নিত করবেন

৫)নিকটজনের কাছেই শিশুরা বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার (প্রথম আলো)

৬) নিজ ঘরেই যৌন নিপীড়নের শিকার বাংলাদেশের যে শিশু মেয়েরা (বিবিসি বাংলা)

৭) সত্যমেভ জয়তে’র পুরো এপিসোডটি

৮ ) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ (সংশোধিত)

ফুটনোট[১]
সম্রাট বাবুরের আত্মজীবনী ‘বাবুরনামা’ পড়ছিলাম।ভাবি নি সেখানেও পেডোফাইলদের দেখা পেয়ে যাবো। বাবুর লিখেছেন, “এ কুৎসিত প্রথা দেশময় এভাবে ছড়িয়ে পড়েছিলো যে প্রত্যেক সমর্থ পুরুষই ছেলে রাখতো। এমন কি এরূপ ছেলে রাখাকে গর্বের কাজ মনে করা হতো এবং না রাখাকে লোকে অপৌরুষের চিহ্ন বলে বিবেচনা করতো।”
এমনকি, বাবুর নিজেও স্বীকার করেছেন এক কিশোরের প্রতি তার আসক্তির কথা। তবে তার ওই ‘আসক্তি’ কোনো ‘সম্পর্কে’ রূপান্তরিত হয় নি বলেই মনে হলো। তেমন কোন বর্ণনা নেই।
ফুটনোট[২]
হুমায়ূন আহমেদের ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ছবিতে আমরা শিশু-পতিতাদের কীভাবে ব্যবহার করা হতো দেখেছি। দেখেছি-ইমতিয়াজ আলীর ‘হাইওয়ে’ চলচ্চিত্রে , যেখানে নায়িকাটির শৈশবে তার ‘আঙ্কেল’ কর্তৃক শারীরিকভাবে বারবার লাঞ্ছিত হওয়ার প্রসঙ্গ এসেছে, সেই যন্ত্রণা কীভাবে তাকে জীবনভর তাড়িত করেছে তাও দেখানো হয়েছে। অনেকদিন আগে দেখা আরো একটি চলচ্চিত্র ‘মিসটিক রিভার’ এ দেখেছিলাম পেডোফাইলরা কীভাবে শিশুদের ব্যবহার করে। ‘ফরেস্ট গাম্প’ মুভিতেও দেখা যায় শৈশবে মেয়েটি তার পিতার দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে। বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন শৈশবে তার চাচা ও মামা কর্তৃক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা।
ফুটনোট[৩]
আমাদের তথাকথিত আধুনিক পরিবারগুলোতে হরহামেশা রগরগে দৃশ্য সম্বলিত হিন্দি/ ইংরেজি চলচ্চিত্র, নাটক, বিজ্ঞাপন, মিউজিক ভিডিও চলছে। শিশুর সামনেই। কেউ কিছু মনে করেন না। তো, যে পরিবার শিশুকে ইমপ্লিসিটলি এই শিক্ষাই দিচ্ছে- ‘এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার’ সে পরিবারের শিশুকে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা খুবই সহজ। এমনও হতে পারে, শিশুটি পুরো ব্যাপারটাকে খুব স্বাভাবিকভাবে নেবে, পরিবারকে জানানোর প্রয়োজনও বোধ করবে না। নৈতিকতার শিক্ষা শিশু পরিবার থেকেই পাবে, না?

*****[পড়ার জন্য ধন্যবাদ। প্রাসঙ্গিক আলোচনা একান্তভাবে কাম্য। নিজে সচেতন হন, অপরকে সচেতন করুন। একমত হলে শেয়ার করুন।]*****

লিখেছেন-রাহনুমা সিদ্দিকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

চুপ করে থাকো,কাউকে বলো না! (পর্ব-২)

চুপ করে থাকো,কাউকে বলো না!
(পর্ব-২)


রাহনুমা সিদ্দিকা


কীভাবে একজন নির্যাতনকারীকে চিনবেন?

কেন কিছু মানুষ- এই ঘৃণ্য আচরণটি করে?

বয়স, চেহারা, লিঙ্গ, পেশা ভেদে একজন শিশু-যৌননির্যাতনকারী যে কেউই হতে পারে। সুতরাং তাকে চেনা তত সহজ নয়। এরা শিশুদের সাথে খুব সহজে মিশে যেতে পারে। সাধারণত গল্প বলে ও উপহার দিয়ে প্রথমে এরা শিশুদের ভালোবাসা ও বিশ্বাস অর্জন করে নেয়, এরপর নিজেদের উদ্দেশ্য সাধন করে। খুব পরিকল্পিতভাবে এগোয়।

আমরা পেডোফিলিয়ার কথা জানি। এটা একটা সেক্সুয়াল ডিজঅর্ডার। পেডোফিলিয়ার রোগীরা কেবল শিশুদের (যারা এখনো বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছোয় নি) প্রতি আসক্ত থাকে। কেন কিছু মানুষ- এই ঘৃণ্য আচরণটি করে- এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, যেসব শিশু শৈশবে দীর্ঘসময় ধরে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো এদের কেউ কেউ যৌবনে পেডোফাইলে পরিণত হয়।

পেডোফাইলদের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যেমনঃ এরা প্রধাণত হয় পুরুষ (তবে কদাচিৎ নারীও হতে পারে), সমকামীদের মধ্যেও পেডোফিলিয়ার কিছু লক্ষণ দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে এদের তেমন সখ্য থাকে না বরং এদের সখ্য থাকে শিশুদের সাথে, এরা শিশুদের সাথে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করে।

এখানে, স্মর্তব্য যে, সব পেডোফাইল শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন করে না এবং সব শিশু যৌন নির্যাতনকারীই পেডোফাইল নয়।

নির্যাতনকারী শিশুকে সাধারণত যে কথাগুলো বলে

এটা তোমার আমার মাঝে একটা ‘সিক্রেট’, কাউকে বলা যাবে না। (বাচ্চারা এতে মনে করে তাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।)
আসো আমরা বর-বউ খেলি/ বা, ওই মজার খেলাটা খেলি।
তুমি যদি এটা তোমার মাকে/বাবাকে বলে দাও আমি তোমাকে/ তাদেরকে মেরে ফেলবো।
তুমি বলে দিলেও তোমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।
সবাই তোমাকেই খারাপ ভাববে, সবাই তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে।
তুমি যদি আমার কথা মতো কাজ না করো আর কোনদিন আমি তোমাকে ভালোবাসবো না।

আপনার শিশুকে রক্ষার্থে আপনার করণীয়

কখনো যদি দেখেন/ নিশ্চিতভাবে জানতে পারেন কোন প্রাপ্তবয়স্ক লোক/মহিলা আপনার শিশুকে ‘আমার বউ’/ ‘আমার বর’ বলে সম্বোধন করছে, কঠোরভাবে তাকে নিষেধ করে দেবেন।
আপনার শিশুকে কোন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতি অস্বাভাবিকভাবে আকৃষ্ট দেখলে তার ব্যাপারে সাবধান হোন।
কখনো আপনার শিশুকে কারো বাসায় যেতে/ কারো কোলে বসতে/ কারো পাশে বসতে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাধ্য করবেন না। বরং তার কাছ থেকে অনীহার কারণ জেনে নিন আদর করে। শপিং মলে দোকানের স্টাফদের বদলে নিজেই শিশুকে পোশাক পরা/ ট্রায়াল দেয়ায় সহায়তা করুন।
আপনার শিশু যদি মাঠে খেলতে যায়, খেয়াল রাখুন সে কাদের সাথে খেলে। মাঠে বড় ছেলেরাও খেলতে যায়, এদের দ্বারাও নির্যাতিত হতে পারে আপনার শিশু। (আমরা হয়তো কল্পনাও করতে পারবো না- বর্তমানে CSA এর প্রণোদনা যোগানোর জন্য ইন্টারনেটে কত জিনিস ছড়িয়ে আছে। ‘শিশুপর্নোগ্রাফি’ খুব অপ্রচলিত কিছু নয় বাংলাদেশে। সমাজে আরো অনেক ‘টিপু কিবরিয়া’ আছে।)
আপনার শিশুকে যদি দেখেন সে তার বয়সের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ sexual behavior জানে, এবং তার বিভিন্ন গোপনাঙ্গকে বিকৃত/অদ্ভুত নামে (কোনো স্ল্যাং) চিহ্নিত করছে, তাহলে তার কাছ থেকে জেনে নিন সে এগুলো কোথা থেকে শিখেছে। রেগে গিয়ে নয়, ধৈর্যের সাথে জানুন। যদি জানার উৎস টিভি/ ইন্টারনেট হয়, দ্রুত উৎসমুখ বন্ধ করুন। যদি জানার উৎস কোন ব্যক্তি হয়, তার সম্পর্কে সাবধান থাকুন। তার সাথে শিশুকে কখনো মিশতে দেবেন না।
গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গেলে/ কোন আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গেলে রাতে ঘুমানোর সময় শিশুকে আত্মীয়/কাজিন এমনকারো সাথে একা একা ঘুমতে দেবেন না। নিজের কাছে রাখুন।

চলবে—-

পর্ব-১

 

চুপ করে থাকো,কাউকে বলো না! (পর্ব-১)

চুপ করে থাকো,কাউকে বলো না!
(পর্ব-১)


রাহনুমা সিদ্দিকা 


নিষ্পাপ শৈশবে- যখন উড়ে যাওয়া এরোপ্লেন দেখে পাইলট হতে ইচ্ছে করে, ফেরিওয়ালার ঝুড়িতে রঙবেরঙের পসরা দেখে পথে পথে ঘুরে ফেরি করতে ইচ্ছে করে, দাদার রেডিওর সমস্ত পার্টস খুলে- আর না লাগাতে পেরে স্টোর রুমে লুকিয়ে রেখে ভবিষৎ সায়েন্টিস্ট প্রস্তুতি নিচ্ছে দুনিয়া জয়ের, স্কুল ম্যাগাজিনে নিজের প্রথম প্রকাশিত লেখা ভবিষৎ সাহিত্যিকের ক্ষুদে বুকটা ভরিয়ে তুলছে- সেই সময়ই কিছু শিশুকে মুখোমুখি হতে কুৎসিত অন্ধকারের, বিনা অপরাধে রঙিন নিষ্পাপ স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায় দুঃস্বপ্নের ভীড়ে, জীবনটা হয়ে ওঠে বিভীষিকা।

ক্লাস ওয়ান পড়ুয়া মেয়েটি টিচারের কাছে পড়তে যেতে চাচ্ছে না। তার অভিযোগ টিচার তাকে ব্যথা দেয়। বাবা-মা ধমক দিয়ে পাঠালেন। তারা বললেন, ‘এসব তোমার ফাঁকি দেওয়ার ছল!’ চোখ মুছে শিশুটি টিচারের কাছে পড়তে বসলো। সে জানে না কেন স্যার তাকে কিছু জায়গায় এভাবে ছোঁয়।

গৃহকর্ত্রীর দূর-সম্পর্কের ভাই এসেছে বাসায়। দুপুরবেলা তারই হেফাযতে দশ বছরের কাজের মেয়েটিকে রেখে গৃহকর্ত্রী গেছেন শপিংয়ে। …… লোকটা মেয়েটিকে হুমকি দিলো কাউকে কিছু বললে মেরে লাশ বানিয়ে ফেলবে।

সাত বছরের ফুটফুটে ছেলেটাও বুঝতে পারলো না চাচ্চু তার সাথে বারবার এমন করছে কেন। চাচ্চু বলেছে এটা একটা সিক্রেট মজার খেলা- কাউকে বলা যাবে না। কিন্তু তার খুব কষ্ট হচ্ছে, ব্যথা লাগছে। আম্মু-আব্বুকে কি তার বলা উচিত? যদি তারা বিশ্বাস না করে? ওকেই পঁচা ভাবে? আচ্ছা, চাচা তো খুব ভালো, তাকে কত কি মজার খেলনা দেয়- কত গল্প করে! বলে দিলে কি চাচা আর কখনো ওকে আদর করবে না? সে কীভাবে বলবে আম্মু-আব্বুকে?

মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে মায়াবতী কন্যাশিশুটি যখন বলে উঠলো গ্রামের বাড়ি বেড়াতে এসে তার সাথে কী নির্মম ঘটনাটা ঘটে গেছে, হতভম্ব মা মেয়ের চোখের জল মুছে বললেন, ‘চুপ করে থাকো, কাউকে বোলো না!’

কাকে আমরা চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ বলছি?

চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ (CSA) কে বলা যায়, “the imposition of sexual acts, or acts with sexual overtones, by one or more persons on a child (under 18)”– Save the children, CSA Draft Policy.

• শিশুর গোপন অঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ,
• শিশুকে কারো গোপনাঙ্গ ধরতে বলা,
•penetration of a child’s mouth with a penis,
• শিশুর পর্ন ছবি তোলা,
• শিশুকে পর্নোগ্রাফি দেখানো এবং শিশুর সামনে নগ্ন হওয়া,
• শিশুদের পতিতাবৃত্তিতে ঢোকানো, বাল্যবিবাহ,
• শিশুর সাথে বয়স অনুপযোগী sexual behavior নিয়ে আলোচনা,
• শিশুকে ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা করা (যা ছেলে বা মেয়ে শিশু যে কারো ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে)
ইত্যাদি। সুতরাং, কেবল ধর্ষণ নয়, শিশু-যৌননির্যাতন একটি ব্যাপক পরিসরের শব্দ।

শিশুর উপর প্রভাব

মানসিক
বিষণ্নতা, সহিংস আচরণ, আত্মপীড়নমূলক কার্যকলাপ (নিজেকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দেওয়া), আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি ও হীনমন্যতা, দুঃস্বপ্ন, অসামাজিক আচরণ, সমবয়সীদের সাথে মিশতে না পারা, হঠাৎ হঠাৎ চমকে ওঠা, আত্মহত্যার প্রবণতা (কিশোর বয়েসীদের ক্ষেত্রে), স্বাভাবিক মানসিক বিকাশে বাধা।

শারীরিক
শিশু গুরুতরভাবে আহত হতে পারে, কোন কোন ক্ষেত্রে চিরতরে প্রজনন ক্ষমতা হারাতে পারে, নিউরোল্যজিকাল ড্যামেজ, দ্রুত ওজন কমে যাওয়া, রাতে বিছানা ভেজানো ইত্যাদি।

কিছু তথ্য-উপাত্ত

১৯০টি দেশের উপাত্ত নিয়ে তৈরি এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের তরফ থেকে বলা হয়েছে বিশ্বে প্রতি দশ জনে একজন মেয়েশিশু ধর্ষিত অথবা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। WHO এর হিসেব মতে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৪০ মিলিয়ন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।

ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ২০০৭ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভারতে ৫৩ভাগ শিশু শৈশবে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়।

ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স- নামে একটি বেসরকারি সংস্থার একজন কর্মকতা রোকসানা সুলতানা বলেন, ‘বাংলাদেশের শতকরা নব্বইভাগ শিশু পারিবারিক গন্ডিতেই ধর্ষণ থেকে শুরু করে অনাকাঙ্ক্ষিত শারীরিক স্পর্শসহ কোন না কোন যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।’ ১৯৯৭ সালে তারা শৈশবে যৌন নির্যাতনের শিকার ৫০ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেন, যার মধ্যে ৪৬ জনই পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত মানুষদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলেন। অর্থাৎ মাত্র ৪ জন শিশুর নির্যাতনকারী ছিলেন অপরিচিত ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত পাঁচ বছরের কম বয়েসী ২৮৬ জন শিশু সেক্সুয়াল অ্যাবিউজের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৯৯ ভাগ শিশু ধর্ষণের শিকার।

২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যে ৩৯৬ জন শিশু (অনূর্ধ্ব ১৮) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার, ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের কাউনসেলিংয়ের আওতায় আসে তাদের ৮৬ ছেলেশিশু। ছেলেশিশুরাও শংকার বাইরে নয়।

দুঃখজনক যে, বাংলাদেশে এই নিয়ে এখনো সরকারীভাবে পূর্ণাঙ্গ কোনো সমীক্ষা করা হয় নি। সামান্য নথিভূক্ত তথ্য-উপাত্ত যা পাওয়া যায় তা মোটেই প্রকৃত অবস্থাকে প্রতিফলিত করছে না। কারণ, এ ঘটনাগুলোর অধিকাংশই হয় অভিভাবকদের অসচেতনতায় অজানা থেকে যায় অথবা লোকলজ্জার ভয়ে ধামাচাপা দেওয়া হয়।

চলবে—

(অপরাজিতা প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে লিখেছেন রাহনুমা সিদ্দিকা। বাচ্চাদেরকে ধর্ষকের হাত থেকে বাঁচাতে সহযোগিতা করতে পারে এই সামান্য প্রচেষ্টা ধন্যবাদ)

 

ছাদ দেখাতে নিয়ে ৭ বছরের সায়মাকে ধর্ষণের পরে হত্যা

ছাদ দেখাতে নিয়ে ৭ বছরের সায়মাকে ধর্ষণের পরে হত্যা


নারী সংবাদ


ছোট্ট শিশু সায়মা। বয়স সবে মাত্র সাত বছর। বড় একটি পুতুলের মতো দেখতে মেয়েটি। ছোট্ট পায়ে ছোটাছুটি করে সারা ঘর মাথায় করে রাখত। সারাক্ষণ হাসি-খেলায় মাতিয়ে রাখত পুরো পরিবারকে। স্কুলেও যাওয়া শুরু করেছিল শিশুটি। তার খাতার পাতায় এখনো জ্বলজ্বল করছে সদ্য লিখতে শেখা গোটা গোটা হাতের লেখা। তার পানি খাওয়ার মগ, ভাত খাওয়ার থালা, স্কুলের ব্যাগ, পড়ার বইগুলো সবই আছে। নেই শুধু আদরের সন্তান সায়মা। তার পোশাক, বই ও ছবি এখন বাবা-মায়ের কাছে শুধুই স্মৃতি। শিশুটিকে পাশবিক নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। ছোট্ট শিশুটি যে কিনা এখনো জীবনকে চিনতেই শুরু করেনি, অথচ তাকে কি না মেনে নিতে হলো মৃত্যুর মতো করুণ উপসংহারকে! আর মৃত্যুর আগে সহ্য করতে হলো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম অত্যাচারকে! একটা নরপশু, একটা বিকৃত রুচির পাষণ্ড শিশুটিকে বাঁচতে দিলো না। ছোট্ট সায়মার বাবার কাঁধে সন্তানের লাশের যে বোঝা আমরা চাপিয়ে দিয়েছি, সেই ভার সইতে পারবে তো! হয়তো পারবে! এর আগেও তো তনু, রিশা, মিতু, বিশ্বজিৎ, নুসরাত, রিফাতদের ভার সয়ে নিয়েছে তাদের স্বজনেরা। সয়ে নিয়েছে সেই সব হতভাগ্যের লাশ যারা শুধু মৃত্যুই পেয়েছে, বিচারটুকুও পায়নি! আজ বিচার চেয়ে কাঁদছে সায়মার বাবা আব্দুস সালাম। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে মেয়ে হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে কাঁন্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, তার মেয়েকে দুইভাবে নির্যাতিত করা হয়েছে। সর্বোচ্চ তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে আসামির ফাঁসি কার্যকর করার দাবি জানান তিনি।
এর আগে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ওয়ারীর বনগ্রামের স্কুলছাত্রী সাত বছরের শিশু সামিয়া আক্তার সায়মাকে ধর্ষণের পরে হত্যার অভিযোগে হারুন অর রশিদ নামে এক যুবককে কুমিল্লার ডাবরডাঙ্গায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। হারুন তার খালাতো ভাই পারভেজের রঙের দোকানে কাজ করত।
শিশুটিকে ছাদ ঘুরিয়ে দেখানোর কথা বলে নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটে নিয়ে ধর্ষণ করে এই পাষণ্ড। হাত দিয়ে মুখ চেপে ধর্ষণের সময় সামিয়া নিস্তেজ হয়ে যায়। মৃত ভেবে গলায় রশি পেঁচিয়ে রান্না ঘরে রেখে হারুন পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন। গতকাল রোববার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুল বাতেন বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় ৬টার দিকে সায়মা তার মাকে বলে আট তলায় যাবে। সেখানে ফ্ল্যাট মালিক পারভেজের একটি বাচ্চা আছে তার সাথে একটু খেলেই চলে আসবে। প্রায় সময়ই ওই বাসায় গিয়ে বাচ্চার সাথে সায়মা খেলত। সেখানে গেলে পারভেজের স্ত্রী জানায়, তার মেয়ে ঘুমাচ্ছে। সেখান থেকে বাসায় ফেরার উদ্দেশে লিফটে ওঠে সায়মা। লিফটে সায়মার সাথে দেখা হয় পারভেজের খালাতো ভাই হারুনের। হারুন সায়মাকে লিফট থেকে ছাদ দেখানোর নাম করে ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে সায়মাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সায়মা চিৎকার করলে সায়মার মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে। ধস্তাধস্তিতে সামিয়া নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সায়মা নিস্তেজ দেখে গলায় রশি পেঁচিয়ে সামিয়াকে টেনে রান্না ঘরে সিঙ্কের নিচে রাখে। এরপর পারভেজের বাসায় না ফিরে হারুন গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গায় পালিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে আসে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে হারুন।
আব্দুল বাতেন বলেন, পারভেজের খালাতো ভাই হারুন। পারভেজের বাসায় থেকে গত দুই মাস ধরে তার রঙয়ের দোকানে কাজ করে আসছিল। পারভেজ জুলাই মাস থেকে হারুনকে তার দোকানে কাজ করতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। কারণ সে প্রতি সপ্তাহে কাউকে না বলে বাড়িতে চলে যেত। তারপরও খালাতো ভাই হওয়ায় কয়েকদিন ওই বাসায় ছিল। এরপর ধর্ষণ করে শুক্রবার সন্ধ্যায়ই পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আরো কেউ জড়িত আছে কি না আদালত হারুনকে রিমান্ডে দিলে জানা যাবে।
পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সামিয়া হত্যার ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে পেতে ওই বাসার সব নারী-পুরুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হওয়া যায় হারুনই ধর্ষণের পর হত্যা করেছে। রাতেই ডিবির টিম ঢাকা থেকে কুমিল্লায় চলে যায়। পরে তাকে গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এ দিকে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ধর্ষণে অভিযুক্ত হারুনকে মিডিয়া সেন্টারের সামনে দিয়ে আদালতে নেয়ার জন্য গাড়িতে তুলতে হাটিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল ডিবি পুলিশের একটি দল। তখন সাধারণ জনতা হারুনকে উদ্দেশ তরে গালিগালাজ করে। বিক্ষুব্ধ কয়েকজন এই নরপিশাচকে মারতে যায়। পরে পুলিশ তাকে নিয়ে দ্রুত চলে যায়।
গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে শিশু সায়মার খোঁজ পাচ্ছিল না তার পরিবার। আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নবনির্মিত ভবনটির নয় তলার ফাঁকা ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে মৃত সায়মাকে উদ্ধার করা হয়। ওই ভবনের ছয় তলায় বাবা-মায়ের সাথে থাকত সামিয়া। বাবা আব্দুস সালাম নবাবপুরের একজন হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সায়মা। সে ওয়ারী সিলভারডেল স্কুলে নার্সারিতে পড়ত।
সংবাদ সম্মেলনে সায়মার বাবা আব্দুস সালাম বলেন, ১০ মিনিট খেলেই বাসায় এসে পড়তে বসতে চেয়েছিল মেয়ে। মেয়েটি আর ফিরে এলো না। সায়মার মৃত্যুর পর বাসার কেউ খাবার খায়নি। সবাই সায়মার জামাকাপড় আর বই জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। আমার পরীর মতো মেয়েকে যে কষ্ট দিয়ে মেরেছে তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে তার ফাঁসি চাই।
দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, যাদের সন্তান আছে তারা এসব কুরুচিপূর্ণ ব্যক্তির কাছ থেকে কিভাবে আপনার সন্তানদের দূরে রাখবেন, বিষয়টি ভেবে দেখবেন। আমি আমার মেয়েকে দেখে রাখতে পারিনি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মেয়েটা আমার স্ত্রীকে বলে ১০ মিনিটের জন্য বাইরে গেল। এরপর আমার মেয়েটা আর ফিরল না, তাকে নৃশংসভাবে খুন করা হলো। গত ২ দিন ধরে আমি একফোঁটা পানিও খাইতে পারিনি। ঘরে গেলে মেয়ের কাপড়চোপড়, ছবি দেখে আর ঠিক থাকতে পারি না। আমার পুরো পরিবারটা বিধ্বস্ত হয়ে গেল।
কান্নাভেজা গলায় মেয়ের স্মৃতিচারণ করে আব্দুস সালাম বলেন, আজকের পর যেন ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে না যায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০


নারীর জন্য আইন


নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন৷ যেহেতু নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;

সেহেতু এতদ্‌দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল,

সূচী
ধারাসমূহ

১৷ সংক্ষিপ্ত শিরোনামা
২৷ সংজ্ঞা
৩৷ আইনের প্রাধান্য
৪৷ দহনকারী, ইত্যাদি পদার্থ দ্বারা সংঘটিত অপরাধের শাস্তি
৫। [রহিত]
৬। [রহিত]
৭৷ নারী ও শিশু অপহরণের শাস্তি
৮৷ মুক্তিপণ আদায়ের শাস্তি
৯৷ ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু, ইত্যাদির শাস্তি
৯ক৷ নারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনা, ইত্যাদির শাস্তি
১০৷ যৌন পীড়ন, ইত্যাদির দণ্ড
১১৷ যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানো, ইত্যাদির শাস্তি
১২৷ ভিক্ষাবৃত্তি, ইত্যাদির উদ্দেশ্যে শিশুকে অঙ্গহানি করার শাস্তি
১৩৷ ধর্ষণের ফলশ্রুতিতে জন্মলাভকারী শিশু সংক্রান্ত বিধান
১৪৷ সংবাদ মাধ্যমে নির্যাতিতা নারী ও শিশুর পরিচয় প্রকাশের ব্যাপারে বাধা-নিষেধ
১৫৷ ভবিষ্যত্ সম্পত্তি হইতে অর্থদণ্ড আদায়
১৬৷ অর্থদণ্ড বা ক্ষতিপূরণ আদায়ের পদ্ধতি
১৭৷ মিথ্যা মামলা, অভিযোগ দায়ের ইত্যাদির শাস্তি
১৮৷ অপরাধের তদন্ত
১৯৷ অপরাধ বিচারার্থ গ্রহণ, ইত্যাদি
২০৷ বিচার পদ্ধতি
২১৷ আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচার
২২৷ ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক যে কোন স্থানে জবানবন্দি গ্রহণের ক্ষমতা
২৩৷ রাসায়নিক পরীক্ষক, রক্ত পরীক্ষক, ইত্যাদির সাক্ষ্য
২৪৷ সাক্ষীর উপস্থিতি
২৫৷ ফৌজদারী কার্যবিধির প্রয়োগ, ইত্যাদি
২৬৷ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল
২৭৷ ট্রাইব্যুনালের এখ্‌তিয়ার
২৮৷ আপীল
২৯৷ মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন
৩০৷ অপরাধে প্ররোচনা বা সহায়তার শাস্তি
৩১৷ নিরাপত্তামূলক হেফাজত
৩১ক৷ ট্রাইব্যুনাল, ইত্যাদির জবাবদিহিতা
৩২৷ অপরাধের শিকার ব্যক্তির মেডিক্যাল পরীক্ষা
৩৩৷ বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা
৩৪৷ ১৯৯৫ সনের ১৮ নং আইনের রহিতকরণ ও হেফাজত।

সূত্রঃ http://bdlaws.minlaw.gov.bd/bangla_pdf_part.php?id=835

 

বাঁধাকপির পাকোড়া রেসিপি

  • উপকরণ
    • বাঁধাকপির – দেড় কাপ
    • ময়দা বা কর্ণ ফ্লাওয়ার- প্রয়োজন মত
    • ডিম- ১ টি
    • ধনে পাতা কুচি- ইচ্ছা মত
    • কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ কুচি- ইচ্ছা মত
    • লবণ- স্বাদ মত
    • ভাজা জিরার গুঁড়ো- ১/২ চ চামচ
    • টেস্টিং সল্ট (ইচ্ছা)- ১/২ চা চামচ
    • বাড়তি স্বাদের জন্য ম্যাগি নুডুলস এর মশলা দিতে পারেন এক প্যাকেট
    • বেকিং পাউডার- ১/২ চা চামচ
  • প্রণালী
    * বাঁধাকপিরকুচি কুচি করে কাটি। তারপরতিহাত দিয়ে ভালো করে ঘষে মিহি ঝুরি করে নিন।
    * বাঁধাকপি কুচি কুচি গুলো খুব ভালো করে পানিতে ধুয়ে চিপে চিপে বাড়তি পানি ফেলে দিন।
    * কর্ণ ফ্লাওয়ার ছাড়া বাকি সব উপকরণ দিয়ে মেখে নিন।
    * এবার একটু একটু করে কর্ণ ফ্লাওয়ার মেশান। হাত দিয়ে মিশ্রণটি দেখে নিবেন বড়ার আকার করা যায় এমন হলেই আর দিবেন না। যতটা কম দেয়া যায়। দেড় কাপ পাতাকপিতে ৪/৫ চামচ লাগতে পারে।
    * তেল মাঝারি আঁচে গরম করে নিন। পিঁয়াজুর আকারে পাকোরা ছেড়ে দিন তেলে।
    * লালচে সোনালি করে ভেজে তুলুন। বেশি আঁচে ভাজবেন না, তাতে পাকোরা মাঝে কাঁচা থেকে যাবে। ৫/৬ মিনিট ভাজলেই যথেষ্ট।

পরিবেশন

  • সসের সাথে গরম গরম পরিবেশন করুন বাঁধাকপির পাকোড়া।

 

টিনএজ বয়সে যৌনতা-বিষয়ক পাঠ

টিনএজ বয়সে যৌনতা-বিষয়ক পাঠ


মাসুদ শরীফ


নবি ﷺ যেভাবে যৌনতা-বিষয়ক পাঠ দিতেন

টিনএজ বয়সটা ছেলে-মেয়ে দুজনের জন্যই বেশ অস্থির একটা সময়৷ নিজের শরীর এবং বিপরীত লিঙ্গের শরীর প্রতি এ-বয়সে প্রথম তারা আকর্ষণ বোধ করে৷ এগুলোকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা যায় না৷ আপনার সুবোধ-সুশীলা ছেলে বা মেয়েকে এখনো ছোট্টটি মনে করার কারণ নেই৷ করলে পরে পস্তাবেন আপনিই৷
নবিজির সময়েও এ-বয়সী ছেলেমেয়েরা ছিল৷ তারা সবসময় নিজেদের দৃষ্টি সংযত করতে পারেনি৷ এটা মানুষের সহজাত স্বভাব৷ কিন্তু নবিজি এ-রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলেন৷ তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিয়েছেন৷

একবার হাজ্জের সময় নবিজি আর তার চাচাতো ভাই ফাদ্‌ল বিন আব্বাস যাচ্ছিলেন এক সওয়ারিতে চড়ে৷ ফাদ্‌ল ছিলেন বিখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ বিন আব্বাসের ছোট ভাই৷ আমরা ধারণা করতে পারি, নবিজির চাচাতো ভাই যেহেতু, তারা দুজনই সুদর্শন ছিলেন৷ বিশেষ করে নবিজির দাদার বংশের সব চাচা এবং চাচাতো ভাইয়েরা সুন্দর সুঠাম হয়ে থাকবেন৷

তো পথে খাসাম গোত্রের এক তরুণী নবিজির সামনে এসে দাঁড়ালেন৷ তরুণী তাকিয়ে আছেন ফাদ্‌লের দিকে৷ ফাদ্‌ল তাকিয়ে আছেন তরুণীর দিকে৷ এর ফাঁকেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “আমার বাবার উপর হাজ্জ করার বাধ্যবাধকতা চেপেছে৷ কিন্তু তিনি খুবই বয়স্ক৷ কোনো কিছুতে সওয়ার হতে পারেন না৷ আমি কি তার হয়ে হাজ্জ করতে পারব?”
“হ্যাঁ৷” নবিজি বললেন৷ (বুখারি)

আপনি-আমি হলে তো আমাদের মূল নজর থাকত প্রশ্নকর্তার দিকে৷ কিন্তু নবিজির একটা চোখ কিন্তু ছিল ফাদ্‌লের উপরও৷ তিনি জানতেন, ওদের যা বয়স, একজন আরেকজনের দিকে তাকাবেই৷ আর সেজন্য প্রশ্ন-উত্তর সময়টাতে বার তিনেক ফাদ্‌লের মুখ তিনি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন৷ তরুণীটিকে উত্তর দেয়া শেষ হলে নবিজি তার চাচাতো ভাইকে বললেন, “আজ এমন এক দিন, যে-তার দৃষ্টি সংযত রাখবে, লজ্জাস্থান ও জবান সুরক্ষিত রাখবে, তাকে মাফ করে দেয়া হবে৷” (ইবনু খুজাইমা)

ঘটনাটির আরও বেশ কিছু মজার দিক আছে৷

ঘটনাটি ঘটেছিল নবিজির বিদায় হাজ্জের সময় কাবা ঘরের আশেপাশে কোথাও৷ এ-থেকে বোঝা যায়, মানুষের চরিত্রের কিছু কিছু দিক সবসময় এক৷ মানুষ যেমন মরণশীল, মানুষ যেমন ভুল করে, তেমনি নারী-পুরুষের আকর্ষণ সহজ ও স্বাভাবিক বিষয়৷ একে অস্বীকার করা বোকামি৷ কথা হচ্ছে, কীভাবে সেই আকর্ষণ আমরা বৈধভাবে সামলাব সেটা৷
নবি ﷺ তাঁর চাচাতো ভাইকে ধমকের সুরে কিছু বলেননি৷ কিংবা শাস্তিমূলক কিছু বলেননি৷ সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছেন৷ প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করেছেন আগামীর জন্য৷ আজ হয়তো শাস্তির ভয়ে কিংবা নবিজির সামনে মুখ ফিরিয়ে থাকল৷ কিন্তু পরে যখন তিনি থাকবেন না, তখন কী হবে? এজন্য এমন সুন্দরভাবে কথাগুলো বললেন, যেন সেটা হৃদয়ের গভীরে দাগ কাটে৷ এর রেশ যেন থাকে আজীবন৷

ফাদ্‌ল তো শুধু তাকিয়েই ছিলেন কেবল৷ কিন্তু নবিজি তাকে লজ্জাস্থান সুরক্ষিত রাখার কথা বললেন কেন? আচ্ছা, তা নাহয় বললেন, কিন্তু জবান?
প্রথম দেখাতে আসলেই ভালোবাসা হয় কি না জানি না, তবে প্রথম দেখা থেকে ভালো লাগা, ভালো লাগা থেকে কথাবার্তা, ডেটিং, এরপর অনেক কিছু হয়ে যায়৷ নবিজি এজন্য শুরুতেই গোড়া কেটে দিয়ে আকর্ষণ বাড়ার পথ রোধ করে দিলেন৷ এটা ছিল যৌনতা বিষয়ে নবিজির শিক্ষা৷

আজকাল আমরা শুনি অবৈধ এবং বিয়ে-বহির্ভূত যৌন-সম্বন্ধ থেকে যদি গর্ভে বাচ্চা না আসে, তা হলে নাকি সব ঠিক৷ আজকাল যৌনশিক্ষা মানে ইমার্জেন্সি পিল, কনডম—যার পোশাকি নাম ‘নিরাপদ দৈহিক মিলন’৷ কিন্তু নবিজির শিক্ষা ছিল আদর্শমুখী৷ এর মূলে ছিল আল্লাহর প্রতি সচেতনতা৷ দৃষ্টি সংযত করো, লজ্জাস্থান ও মুখ সুরক্ষিত রাখো, আল্লাহর ক্ষমা অর্জন করো৷

ছোটবেলা থেকে যদি আপনি বাবা-মা’র ঘরে ঢোকার আগে অনুমতি নেন, আপনি ছেলে হন কি মেয়ে—ঘরের ভেতর যদি নিজের পর্দা রক্ষা করে চলেন, সালাতের সময়ে ঠিকঠাকভাবে পোশাক পড়েন, তা হলে ঘরের বাইরে আপনার পথ চলা সহজ হবে৷

[নবি ﷺ যেভাবে সন্তান মানুষ করেছেন, হিশাম আওয়াদির Children Around The Prophet অবলম্বনে…]

 

এবার ফতুল্লায় ১২ ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আটক

এবার ফতুল্লায় ১২ ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আটক


নারী সংবাদ


নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পর এবার ফতুল্লা থানার ভূঁইগড়ের মাহমুদপুর এলাকায় ১২ ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মাওলানা মো. আল আমিন নামে এক মাদ্রাসার প্রিন্সিপালকে আটক করেছে র্যাব। যৌন হয়রানির কথা স্বীকার করে আল আমিন জানান, তিনি আগে এমন ছিলেন না, শয়তানের প্ররোচনায় এ কাজ করেছেন। এ জন্য নিজের মৃত্যুদণ্ড কামনা করছেন।

বায়তুল হুদা ক্যাডেট মাদ্রাসা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তাকে আটক করা হয়। তিনি এ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। একই সঙ্গে তিনি ফতুল্লা এলাকায় একটি মসজিদে ইমামতিও করেন। আটকের সময় তার মোবাইল ও অফিসের কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে। খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন র্যাব-১১ অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী শামসের উদ্দিন, ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসলাম ও পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল আজিজ।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী শামসের উদ্দিন জানান, কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া স্কুলশিক্ষকের ধর্ষণের ঘটনাটির প্রচারিত বিভিন্ন নিউজ ও ভিডিও আমরা আমাদের ফেসবুক পেজে আপলোড করেছিলাম। স্থানীয় একজন মহিলা যখন ফেসবুকে দেখছিলেন, তখন তার তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে এটি দেখে তার মাকে জিজ্ঞাসা করে যে, ‘স্কুলের ওই শিক্ষকের শাস্তি হলে আমাদের হুজুরের কেন শাস্তি হবে না? আমাদের হুজুরও তো আমাদের সাথে এমন করে। পরে শিশুটি তার মাকে বিস্তারিত জানালে শিশুটির মা র্যাব অফিসে এসে আমাদের কাছে অভিযোগ করেন যে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক একাধিক ছাত্রীকে তার বাসায় পড়তে গেলে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করেছে।

তিনি জানান, এরপর র্যাব এসব অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করে। র্যাব অনুসন্ধানে জানতে পারে ২০১৮ সাল থেকে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মাদ্রাসার ১০ থেকে ১২ ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা ও যৌন হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে।

তিনি আরো জানান, শিক্ষক আল আমিন মাদ্রাসার একটি কক্ষে তার পরিবার নিয়ে থাকতেন এবং একটি অফিস কক্ষসহ কয়েকটি ক্লাস কক্ষে ছেলেমেয়েদের পড়াতেন। তার স্ত্রী একজন পর্দানশীন মহিলা, তিনি ভেতরের দিকে থাকতেন, সামনে তেমন একটা আসতেন না। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সময় পড়তে আসা ছাত্রীদেরকে আল আমিন ডেকে তার কক্ষ ঝাড়ু দেওয়া ও বিভিন্ন কৌশলে এনে তাদেরকে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ করে।

র্যাব-১১ অধিনায়ক জানান, এসব ঘটনার প্রমাণ স্বরূপ আমরা তার মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার তল্লাশি করে প্রচুর পর্নোগ্রাফি ভিডিও পেয়েছি। কিছু কিছু পর্নোগ্রাফি তিনি নিজেও তৈরি করেছেন। তিনি তার কাছে পড়তে আসা কোনো ছাত্রীর ছবির মাথার অংশ পর্নোগ্রাফি ভিডিওর সাথে সংযুক্ত করে ছাত্রীদের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে একাধিকবার ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে তিনি জানান।
সুত্রঃ ইত্তেফাক।

 

বিয়ে ভাঙার হার বাড়ছে নারী-পুরুষ পরস্পরের সহমর্মী হতে হবে

বিয়ে ভাঙার হার বাড়ছে
নারী-পুরুষ পরস্পরের সহমর্মী হতে হবে


দাম্পত্য


বিয়ে বা সংসার ভেঙে যাওয়ার ঘটনা রাজধানীসহ সারা দেশেই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ২০০৬ সালে যেখানে প্রতি হাজারে বিচ্ছেদের হার ছিল মাত্র দশমিক ছয় জন, সেটি বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১-এ। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সাত বছরে রাজধানীতে তালাক বেড়েছে অন্তত ৩৪ শতাংশ। তালাকের আবেদনকারীদের বেশির ভাগই নারী। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিয়ে ভাঙার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা সামাজিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক পটপরিবর্তন, ধর্মীয় অনুশাসনে শৈথিল্য ইত্যাদি বিষয়কে চিহ্নিত করছেন। পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যাওয়াকেও বিচ্ছেদের পেছনে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, সারা দেশে গত সাত বছরে তালাকের প্রবণতা বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তালাক হয়েছে বরিশালে। প্রতি হাজারে ২ দশমিক সাত জন। সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম ও সিলেটেÑ প্রতি হাজারে শূন্য দশমিক ছয় জন। শিক্ষিত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাকের ঘটনা বেশি ঘটছে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনেই স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে তালাক দেয়ার আবেদন বেড়েছে। তালাকের আবেদনের প্রায় ৭০ শতাংশই স্ত্রীর পক্ষ থেকে এসেছে। গুলশান ও বনানীর অভিজাত পরিবারের শিক্ষিত ও বিত্তবান নারীরা তালাকের জন্য আবেদন করছেন বেশি। স্ত্রীর করা আবেদনের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বামীর সন্দেহবাতিক মানসিকতা, পরকীয়া, স্বামী প্রবাসে থাকা, যৌতুক, মাদকাসক্তি, ফেসবুকে আসক্তি, ব্যক্তিত্বের সঙ্ঘাত ইত্যাদি। স্বামীর পক্ষে আবেদনের ক্ষেত্রেÑ স্বামীর ইচ্ছাকে প্রাধান্য না দিয়ে স্ত্রী নিজের ইচ্ছায় চলা, তার বদমেজাজ, সংসারের প্রতি কম মনোযোগ দেয়া, ধর্ম-কর্মে উদাসীনতা, বন্ধ্যত্বসহ বিভিন্ন কারণ প্রাধান্য পেয়েছে।
জানা যায়, এখন সামাজিক ও ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতা বাড়ায় মেয়েকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে তার পরিবার এগিয়ে আসছে। মেয়েরা আগে তালাকপ্রাপ্ত হলে পরিবারে আশ্রয় তো পেতেনই না, বরং তাদের হেয় করা হতো। এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। নারীর পেশাগত উন্নয়ন হয়েছে, আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে এবং সামাজিক মর্যাদা বেড়েছে। সেই সাথে তারা হয়ে উঠেছেন অধিকার সচেতন। তারা আর লোকলজ্জার ভয়ে পুরুষের কর্তৃত্ব ও আধিপত্যবাদী মনোভাবের সাথে সহজে আপস করছেন না, বরং অশান্তি এড়াতে বিয়ে ভাঙার ঝুঁকি নিচ্ছেন। এতে করে ভেঙে যাওয়া সংসারের স্বামী-স্ত্রীর মানসিক শান্তি বিঘিœত হচ্ছে। একধরনের বোবাকান্না অহরহ বুকে চেপে তাদেরকে নানা ধরনের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতির শিকার হচ্ছে ভেঙে যাওয়া পরিবারের শিশুরা। চরম অনিশ্চয়তার বোধে আক্রান্ত এসব শিশুর মানসিক স্থিতি নষ্ট হচ্ছে। সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে তাদের বেড়ে ওঠা হয়ে পড়ছে সুদূরপরাহত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল করিম বলেছেন, আমাদের দেশের স্কুলগুলোতে যদি মূল্যবোধ চর্চার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে এটা কিছুটা কমবে। দাম্পত্য বিচ্ছেদের বিষয়ে বিশিষ্ট নারী সংগঠক ও মানবাধিকার প্রবক্তা ফরিদা আখতার মনে করেন, এ রকম ক্ষেত্রে পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে নৈতিকতার দিকটির প্রতিও নজর দেয়া দরকার। তা ছাড়া, এ রকম ভাঙা সংসারের শিশুদের বা সিঙ্গেল প্যারেন্ট শিশুদের লালন-পালন ও শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব পালন করা উচিত। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, যে কারণেই তালাক বা বিচ্ছেদ হোক না কেন, এর কুফল পড়ে প্রধানত সন্তানের ওপর। একটি ভাঙা সংসারের শিশুরা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায় না; এক রকম প্রতিকূলতার মধ্যে মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে বেড়ে ওঠে। ফলে পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে নানা জটিলতা দেখা দেয়।
আমরা বলতে চাই, এক শ্রেণীর উগ্র নারীবাদীর প্রচারণার কারণে আমাদের অনেক সাধারণ নারী-পুরুষ পরস্পরকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করেছেন। কিন্তু সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবার গঠন করার জন্য নারী ও পুরুষকে যুদ্ধংদেহী অবস্থানে না গিয়ে সহমর্মী, সহযোগী বা বন্ধুত্বের সম্পর্কের মধ্যে আসতে হবে। এ ছাড়া, পারিবারিক সুখের আর কোনো বিকল্প নেই।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

 

শিশুদের হাঁপানি : চাই সযত্ন সতর্কতা

শিশুদের হাঁপানি : চাই সযত্ন সতর্কতা


স্বাস্থ্যসেবা


মাত্র সাত মাস বয়স রাইফার। কয়েকদিন ধরেই সর্দি লেগে আছে। প্রায় সময়ই কান্নাকাটি করছে ছোট্ট মেয়েটি। কাঁদতে কাঁদতে অনেক সময় বমিও করছে। রাতে ঘুমানোর পর নাক ঘড়ঘড় করছে। বারবার নাকে নেজাল ড্রপ দিয়ে চলেছেন রাইফার মা। এভাবেই চলছিল। কয়েকদিন পর আর থাকতে না পেরে ডাক্তারের কাছে নিতে হলো রাইফাকে। ডাক্তার শিশুটিকে দেখেই বুঝতে পারলেন, তার অবস্থা ভালো না। তিনি কয়েকটি টেস্ট আর রাতের জন্য অল্প কিছু ওষুধ লিখে দিলেন। বললেন টেস্ট গুলো করানোর পর কাল যেন অবশ্যই রিপোর্ট দেখিয়ে নিয়ে যান।
পরদিন রিপোর্ট দেখেই ডাক্তারের সন্দেহ সত্যি হয়ে গেল। রাইফা হাঁপানি রোগে আক্রান্ত। বেশি ঠান্ডা লাগার কারণে নিউমোনিয়াও হয়েছে। দ্রুত রাইফাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিলেন ডাক্তার।
রাইফার মতই ঠা-া লেগেছিল দুই বছর বয়সী শিশু আজাদের। কয়েকদিন পরপরই ঠা-া লেগে থাকে তার। প্রতিবারই নাকের ড্রপ আর ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে খাওয়ানো হয় ওকে। এভাবেই চলছিল। কিন্তু এবারের সর্দি আর কাশি কিছুতেই যেন ভালোই হচ্ছে না আজাদের। শেষ পর্যন্ত মায়ের পীড়াপীড়িতে বাবা ওকে নিয়ে যান এক শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, আজাদের হাঁপানি হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসপিটালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রহমত উল্ল্যাহ বলেন, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের মত নয়। যার ফলে অল্পতেই তাদের বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি হয়। এজন্য দরকার বাড়তি যত্ন।
তিনি বলেন, শীতকালে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এরমধ্যে শিশুরা হাঁপানি রোগে কষ্ট পায় বেশি। তাপমাত্রা কমে গেলে তা শিশুদের শ্বাসতন্ত্র সহ্য করতে পারে না। এতে তাদের সর্দি, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট হয়। এছাড়াও ঘুমানোর পর তাদের নিঃশ্বাস ভারি হয়ে ওঠে। এমনকি ঘড়ঘড় করে আওয়াজও হয়। শিশুদের শ্বাসনালি খুবই সংবেদনশীল। একটু ঠান্ডা লাগলেই তাদের সর্দি বা কাশি হয়ে যেতে পারে। এরপর আস্তে আস্তে তা হাঁপানিতে রূপ নেয়।
এছাড়াও বাইরের ধুলো-বালিও এই হাঁপানি রোগের আরেকটি অন্যতম কারণ। অনেক শিশুই ধুলো-বালি সহ্য করতে পারে না তাদের সংবেদনশীল শ্বাসনালির কারণে। তাই দেখা যায়, সুস্থ স্বাভাবিক বাচ্চা ধুলা-বালিতে খেলাধুলা করতে পারলেও হাঁপানি আক্রান্ত শিশুরা সেটা করতে পারে না। কিছুক্ষণ বাইরে থাকার পরই তাদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
ডা. রহমত উল্ল্যাহ বলেন, এই হাঁপানি আবার বংশগতও হতে পারে। তবে হাঁপানি হলে বেশ কিছু বিষয় এড়িয়ে সচেতনভাবে চলার পরামর্শ দেন তিনি। তার মতে, এলার্জি হয় এমন বিষয় যেমন ধুলো-বালি যত সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। ঠা-া, সর্দি এবং কাশি হলেই সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে। এছাড়াও বাচ্চাদের সামনে ধূমপান একেবারেই করা যাবে না। কারণ সিগারেটের ধোঁয়া বাচ্চাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। হাঁপানি রোগে আক্রান্ত শিশুদের সামনে ধূমপান করলে তা ওদের শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দেয়।
বাসা-বাড়ি সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দেন এই শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, বাসা-বাড়ি সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। যাতে করে কোথাও ধুলো-বালি না জমে। এছাড়াও ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। শীতকালে শিশুদের জন্য লোমযুক্ত কোনো কাপড়চোপড় বিশেষ করে কম্বল ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া এলার্জিযুক্ত খাবার বিশেষ করে যেসব খাবারে শিশুর এলার্জি হয় সেসব খাবার তাকে দেয়া যাবে না। হাঁপানি রোগে আক্রান্ত শিশুদেরকে সবসময় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে লালন পালন করার পরামর্শ দিয়েছেন ডা.রহমত উল্ল্যাহ।

সুত্রঃ বাসস।

 

ইলহান ওমরই (১ম পর্ব)

ইলহান ওমরই (১ম পর্ব)


অপরাজিতা


ইলহান ওমরই মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের প্রথম আফ্রো-আমেরিকান মুসলিম নারী সদস্য।

যিনি সব বাঁধা বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে মাথায় হিজাব বেঁধে তার বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ পেয়েছেন। মুসলিম নারী হিসেবে হিজাব পড়ার অধিকার সমুন্নোত রাখার জন্যও ইলহানকে অনেক প্রতিবাদি কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে।
তবে সে সব বিতর্ক বিরোধিতার গ্যারাকল ডিঙ্গিয়ে ইলহান ওমর অনেক এগিয়ে গেছেন। মিনেসোটার ডেমোক্র্যাটিক
-কৃষক-শ্রমিক-পার্টির প্রার্থী ইলহান ওমর ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচনে ২০১৬ সালে মিনেসোটা ফিফথ ডিস্ট্রিক্ট কনস্টিটিউয়েন্সি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন ৩৫ বছর বয়েসী কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম তরুণী ইলহান ওমর। পুরো নাম ইলহান আব্দুল্লাহি ওমর।

১৯৮১ সালে সোমালিয়ার রাজধানী মুগাদিসুতে জন্মগ্রহনকারী ইলহান ওমর নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রী অর্জন করেন। সম্ভবত ইলহান ওমরই হচ্ছে প্রথম কোনো সোমালি-আমেরিকান নাগরিক যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারার রাজনীতিতে নজিরবিহিন সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছেন।

সংক্ষিপ্ত পরিচয় উইকিপিডিয়াঃ

ইলহান ওমর
ইউনাইটেড স্টেটস রিপ্রেজেন্টেটিভ

জন্মের তারিখ এবং স্থান: ৪ অক্টোবর, ১৯৮১ (বয়স ৩৭ বছর), মোগাদিসু, সোমালিয়া
দল: ডেমোক্র্যাটিক পার্টি
স্বামীঃ আহমেদ হিরসি (বিবাহ. ২০১৮), আহমেদ নুর সাইদ এলমি (বিবাহ. ২০০৯–২০১৭)
শিক্ষা: নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি (২০১১), Edison High School
শিশু: ইসরা হিরসি
ভাইবোন: সাহরা নুর

চলবে…

 

চট্টগ্রামে ঘরের ভেতরে মা-মেয়ের ঝুলন্ত লাশ

চট্টগ্রামে ঘরের ভেতরে মা-মেয়ের ঝুলন্ত লাশ


নারী সংবাদ


চট্টগ্রামে একটি বাসা থেকে মা ও দুই বছর বয়সী মেয়ের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার নগরীর পাঁচলাইশ থানার ষোলশহর মসজিদ গলির লিচু বাগান এলাকা থেকে লাশ দু’টি উদ্ধার করা হয়। এদের একজন লক্ষ্মী রানী সরকার (২২) এবং অন্যজন তার দুই বছর বয়সী মেয়ে অনন্যা সরকার। তাদের বাড়ি ব্রাহ্মহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে। স্বামীর সাথে চট্টগ্রামে থাকতেন লক্ষ্মী রানী। লক্ষ্মী রানীর স্বামী নন্দন সরকার নগরীতে ভ্রাম্যমাণ চা ও রুটি বিক্রি করেন। পাঁচলাইশ থানার এসআই ইমাম হোসেন বলেন, নন্দন সরকার বলেছেন, সকালে চা বিক্রি করতে বের হয়েছিলেন তিনি। দুপুরে তিনি বাসায় এসে ভগ্নিপতিকে নিয়ে আবার বের হন। স্ত্রীর ফোন পেয়ে বিকেল ৪টায় বাসায় আসেন। দরজা বন্ধ দেখে বাইরে থেকে লাঠি দিয়ে হুক খুলে ঘরে ঢুকে ফ্যানের সাথে স্ত্রী ও মেয়ের লাশ ঝুলন্ত দেখেন তিনি। থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত

 

বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে জাঙ্ক ফুড কিশোরীদের জন্য ক্ষতিকর

বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে জাঙ্ক ফুড কিশোরীদের জন্য ক্ষতিকর


স্বাস্থ্যসেবা


মহুয়া এবারই ক্লাস নাইনে উঠেছে। তিন মাস আগে থেকে তার মাসিক শুরু হয়েছে। আগে বেশ প্রাণোচ্ছল থাকলেও মাসিক শুরুর পর থেকে মেয়েটি কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে, নেতিয়ে যাচ্ছে। শারীরিক পরিবর্তনও হচ্ছে। মুখে ব্রণ, আর শরীরও কিছুটা শুকিয়ে গেছে। সারাক্ষণ কেমন জানি আনমনা থাকে।
বিষয়টি প্রথমে কেউ খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও মহুয়ার মা খুব চিন্তায় পড়ে গেল মেয়েকে নিয়ে। দিন দিন কেমন জানি রোগা হয়ে যাচ্ছে মেয়েটি। একদিন পরিচিত এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন মহুয়াকে। ডাক্তার সব শুনে কিছু ঔষুধ আর খাবারের তালিকা বলে দিলেন।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ার হক বলেন, মূলত মেয়েদের এগার বছর থেকে আঠার বছরের মধ্যে মাসিক শুরু হয়। এ সময়টিকে মেয়েদের বয়:সন্ধিকাল বলা হয়। আর এ সময় কিশোরীদের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। মানসিক এবং শারীরিক পরিবর্তন হয় এ সময় কিশোরী মেয়েদের। এ সনয় হরমোন নিঃসরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। কিশোরীদের শারিরীক পরিবর্তন শুরু হয়। স্তনগ্রন্থি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চর্বি জমে, যৌনাঙ্গের গ্রন্থি বৃদ্ধির কারণে বিপাকক্রিয়ার হার বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, এসময় কিশোরী মেয়েদের প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন, যাতে করে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা পায়। কিন্তু আমাদের মত দেশে দেখা যায় উল্টো ঘটনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ সময় পুষ্টিকর খাবার পায় না কিশোরীরা। আবার খাবারের অনিয়মও হয় এই বয়সে। আর এসব কিছুর প্রভাব পড়ে কিশোরীর শরীরে। দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা।
ডা. মনোয়ারা বলেন, বয়:সন্ধিতে মেয়েদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মুখে ব্রণ। মূলত হরমোনের তারতম্যের কারনে এসময় কিশোরী মেয়েদের মুখে প্রচুর পরিমানে ব্রণ দেখা দেয়। আর তাই ব্রন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মেয়েদের প্রচুর পরিমান পানি পান করতে হবে। এছাড়াও খেতে হবে শাক-সব্জি ও আঁশযুক্ত খাবার। এসময় নানা ধরনের চকোলেট, আইসক্রিম এবং কোমল পানীয় না খাওয়াই উত্তম।
তিনি বলেন, এ সময় কিশোরী মেয়েরা এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতায় ভোগে। মূলত যখন মাসিক শুরু হয় তখন কারো কারো প্রচুর পরিমান রক্তক্ষরণ হয়। শরীর দুর্বল হয়ে যায়। আর তাই এ সময় আয়রন জাতীয় খাবার খেতে হবে। এসময় প্রচুর পরিমাণ মাংস, মাছ, ডিম এবং শাক খেতে হবে। এছাড়াও আয়রন আছে এমন ফলও খেতে হবে এসময় । খেজুর, কিসমিস, কলা এসব ফলে প্রচুর আয়রন রয়েছে।
তিনি বলেন, এসময় অনেক কিশোরী অতিরিক্ত মাত্রায় ডায়েটিং করে। মুলত নিজেদের স্লিম রাখতেই তারা খেতে চায় না। কিন্তু এই না খাওয়ার কারণে তারা অপুষ্টিতে ভোগে এবং শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধে। দেখা যায় মেয়েরা রক্তশূণ্যতা এবং ভিটামিনের অভাবে ভুগছে। আর তাই এই সময় প্রচুর পরিমান পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এ ছাড়াও এসময় ভিটামিন সি’র ঘাটতিও দেখা দেয়। আর তাই লেবু, পেয়ারা,কমলা খেতে পারে কিশোরীরা যাতে করে ভিটামিন সি’র ঘাটতি পূরণ হয়।
ডা. মনোয়ারা বলেন, এই বয়সে সবার কোমল পানীয়, চকোলেট, ফাস্টফুড, পেস্ট্রি জাতীয় খাবার খুব প্রিয়। অনেকে এসব খাবারের প্রতি চরম আসক্ত থাকে। কিন্তু এসব খেলে ওজন বেড়ে যায় এবং হরমোনের তারতম্য হয় এবং পলিষ্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম দেখা যায়। ফলে কিশোরী মেয়েদের মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে। তাই এ সময় সেসব খাবার পরিহার করে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সুত্রঃ বাসস

 

সন্দেহ

সন্দেহ


মিথিলা ফেরদৌস


দু’টি অভিজ্ঞতাই বাস থেকে নেয়া।খুব দুঃখজনক ঘটনা, দুটোই।

১.
কাউন্টারে বাসের টিকিট কেটে ঘুরে দাঁড়িয়েছি মাত্র,পাশেই লম্বা ফর্সা,কালো ফ্রেমের চশমা পরা ছেলেটা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

ঃকিউজ মি আপু,আপনি তো ডাক্তার তাই না?
ঃজ্বী?
ঃআপনাকে মনে হয় কোথাও দেখেছি।আপু,আমি আপনার জুনিয়র হবো।একটা দরকার ছিল।
ঃকি দরকার?
ঃআমার ওয়াইফের টিকিট আপনার সাথেই কেটেছি।আপনি যদি আপনার নাম্বার দিতেন, কখন পৌঁছায় জেনে নিতে পারতাম।

১০/১২ বছর আগের কথা,মোবাইল খুব একটা সবার কাছে না থাকাটা স্বাভাবিক ঘটনা তখন।আমি নাম্বার দিয়ে, একটু দূরে গোমড়া মুখ করে শুকনা এক মেয়ের দিকে তাকালাম।মেয়েটা ফাঁকে ফাঁকে এদিকে দেখছে,আবার অন্যদিকে তাকিয়ে উদাস!সেই মেয়েই ওই ছেলের বউ কিনা বুঝলাম না।নাম্বার দিয়ে,বাসের জন্যে অপেক্ষা করছি। কিছুক্ষণ পর বাস ছেড়ে দিবে, বাসে গিয়ে বসলাম। আমার সিট জানালার পাশেই। পাশে সেই গোমড়ামুখো মেয়েটিই এসে বসলো। আমি মেয়ের দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিতে গিয়ে দেখলাম, মেয়ে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।

আমি সাধারণত নিজে থেকে কারো সাথেই কথা বলিনা, কে কিভাবে নেয় সেইটা ভেবে। এই ক্ষেত্রেও বলতে গিয়ে লজ্জায় পরে গেলাম। বাস চলতে শুরু করেছে। জানালার ওপাশে তাকিয়ে নিজের চিন্তার জগতে চলে যাই।
ঘন্টাখানেক বা তারও বেশি পরে, মেয়েটা হঠাৎ কথা বলে উঠে।

ঃআপনি আমার হাজবেন্ডকে কিভাবে চেনেন?
আমি চমকায় উঠি। মেয়েটার মুখ থমথমে। শ্যামলা, অনেক হালকা পাতলা মেয়ে।
ঃআমি আপনার হাজবেন্ডকে চিনিনা।আপনি একা যাচ্ছেন তাই উনি আমার সাথে আপনার টিকিট করেছেন, তাই বললেন। আমার নাম্বার নিলেন, আপনার খবর নিতে।

মেয়েটা মনে হলো ব্যাপারটা সহজে মেনে নিতে পারছে না।
আমিও আর কথা বাড়াইনা।

এরপর মেয়ে আমাকে আরও কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হয়। আমার সাথে তার হাজবেন্ডের কোনও পুর্ব পরিচয় ছিল না।

মেয়ের কথায় যতটা বুঝি, হাজবেন্ড ডাক্তার, মেয়ে মেডিকেল স্টুডেন্ট। হাজবেন্ড খুব অত্যাচার করে। বাসা থেকেই বিয়ে। মেয়ের আগের পছন্দ ছিল, সেই ছেলে দেশের বাইরে। মেয়ের হাজবেন্ড মেয়েকে সন্দেহ করে, খুব টর্চার করে ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমার গন্তব্যে পৌছানোর আগেই একবার ছেলেটা ফোন করে, আমি সাথে সাথেই ফোন মেয়েকে দিয়ে দেই।

মেয়েটাকে দেখে আমার মনে হয়েছে, সে একটা মানসিক সমস্যার মধ্যে আছে।সমস্যা ছেলেটার না। আমার ভুলও হতে পারে। বহু পরে মেয়েটা একবার ফোন করে কেঁদেছিল। সম্ভবত বিয়েটা টেকেনি বা তেমন কিছু বলেছিল। আমার মনে নাই।

২.
বাসে আমি যথারীতি জানালার পাশে।পর্দা সরিয়ে বাইরের দিকে অপেক্ষা করছি, কখন বাস ছেড়ে দিবে। ঠিক সেই মুহুর্তে অপূর্ব সুন্দর একটা মেয়ে আমার পাশে বসে হাঁপাতে থাকে।

ঃআপু, আপনার কাছে পানি আছে?
আমি একটু অবাক হই। বাসে, বিশেষ করে এইসব বাসে এমন সবাই যায়!! সবাই নিজেকে সুপিরিয়র ভাবে। তাছাড়া নিরাপত্তার জন্যেই কেউ কারো কাছে পানি চায় না।
ঃআছে।
বলে, হ্যান্ড ব্যাগ থেকে পানির বের করে দিই। মেয়েটা পুরো পানি খেয়ে আমার দিকে তাকায়।
ঃস্যরি আপু, খুব পিপাসা পেয়েছিলো।জানালার পর্দাটা টেনে দিবেন আপু!আমার একটু সমস্যা আছে পরে বলছি।বাস চলতে শুরু করলে, আবার খুলে দিবেন।

মেয়েটা সুপারভাইজারকে ডেকে ডাব আর পানি কিনতে দেয়।

বাস ছাড়ার পর, পর্দাটা সরিয়ে দিলে, মেয়েটাকে খেয়াল করি। অতিমাত্রায় সুন্দর মেয়ে। গায়ের রঙ মধ্যপ্রাচ্যীয় টাইপ, গলায় নীলচে শিরা উপশিরাগুলি বোঝা যাচ্ছে। একহারা গড়ন। হালকা নীলের মধ্যে ডিপ নীল ব্লকের জামাটা অদ্ভুত সুন্দর মানিয়েছে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েই চোখ পরে যায়, ঘাড়ে লালচে মারের দাগ, গালে অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া চড়ের দাগ। চোখে স্পষ্ট মেঘ জমে আছে।মন খারাপ হয়ে যায়। চুপ মেরে বাইরে তাকাই।

মেয়ে বাস কিছুদুর চলে আসার পর, নিজে থেকেই শুরু করে। সে ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়ে। সেখানে তার হাজবেন্ড ব্যবসার কাজে গেলে, তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করে নিয়ে আসে।ঢাকার মগবাজারে শ্বশুরবাড়ি। বরের নিজেদের বাড়ি। বিয়ের পর ঢাকায় ইডেনে অনার্সে ভর্তি হয়। মেয়ে ভাল স্টুডেন্ট। বরের পড়ালেখা তেমন নাই।
বিয়ের কিছুদিন পর শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। সন্দেহ যার মুল কারণ।হাজবেন্ডের বন্ধু থেকে শুরু করে সবার সাথেই মেয়েকে সন্দেহ করে, প্রায়শই মেয়েকে অমানবিক নির্যাতন করা হতো।একবার আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টাও করা হয়েছে। মেয়েকে বাড়ির সাথে কোনও যোগাযোগ করতে দেয়া হয় না।আগেরদিন অনেক রাত পর্যন্ত মেরেছে, মাতাল স্বামী। সকালে ঘুমিয়েছিল। মেয়ে কলেজে যাওয়ার নাম করে বের হয়। সাথে গাড়ি পাঠানো হয়, যাতে পালাতে না পারে। মেয়ে গাড়ি বাইরে রেখে, কলেজে ঢুকে। কলেজ থেকেই কোনওমতে বাস স্ট্যান্ড এসেছে। রাত থেকে এখন অব্দি পানি পর্যন্ত খেতে পারেনি। ভয়ে ছিল, কেউ পিছে পিছে আসছে কিনা, ড্রাইভার খবর দিলো কিনা? গাড়িতে উঠে মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছে।

মেয়েকে সারারাস্তা কারো সাথেই কথা বলতে দেখিনি। পলাশবাড়ির কাছে মোবাইল অন করে, বোনকে ফোন করে শুধু জানায়, সে রংপুর হয়ে বাড়ি ফিরছে।

খুব মন খারাপ হয় মেয়েটার জন্যে। মেয়ের যদি তেমন কিছুই থাকতো, তাহলে আজ তার সাথেই পালাতো। আমি মেয়েকে পুরা রাস্তায় কোনও ছেলের সাথেই যোগাযোগ করতে দেখিনি। এবং মেয়েকে দেখে খুব সরল মনে হয়েছে। যেই ছেলে এই মেয়ের সাথে এমন করলো, সেই ছেলে নিজের ভাগ্য নিজেই নষ্ট করলো।

অতিরিক্ত সন্দেহ আমাদের নিজেদের যেমন অসুখী করে, আমাদের পার্টনার, সন্তানদেরকেও অসুখী করে তোলে। এইটা একটা মানসিক রোগ। আমরা কেউই সন্দেহবাতিকের উর্ধ্বে নই। কিন্তু তা যাতে বাড়াবাড়ি হয়ে না যায়। আমার মনে হয়, সন্দেহ না করে ঠকে যাওয়াতেও শান্তি।যেই ঠকা বুঝলামই না, তাতে আর কষ্ট কি! কিন্তু খামোখা সন্দেহের কষ্ট আরও বেশি কষ্ট দায়ক। যদিও এইটা আমার নিজস্ব ভাবনা। তবে সুখী হওয়ার জন্যে, এইটা খুবই জরুরী বিষয়।

 

স্বাতীর রঙধনু…৬

স্বাতীর রঙধনু…৬


আফরোজা হাসান


বাচ্চা পালন নয়তো সহজ। এই বিষয়বস্তু কে কেন্দ্র করে একটা ধারাবাহিক আলোচনা সভার আয়োজন করা উচিত।
বাচ্চাদের জ্যুস বানানোর জন্য বাগান থেকে কমলা নিতে এসেছিল স্বাতী। পেছন থেকে বাক্যটা ভেসে এলে ঘুরে তাকিয়ে ননদ আজরা কে দেখতে পেয়ে হেসে বলল, হঠাৎ এমন ইচ্ছে উদ্রেক হবার পেছনে কারণ কি?
স্বাতীর পাশে এসে দাঁড়িয়ে আজরা বলল, তুমি তো জানোই আমার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই যা হয় তা হচ্ছে, চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। নতুন কোন পরিস্থিতি যখন সম্মুখে এসে দাঁড়ায় আমি হিমশিম খাই সেটা সামলাতে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে সেই পরিস্থিতিটা কত সুন্দর ভাবে হান্ডেল করা যেত তার শত শত আইডিয়া মাথায় কিলবিল করতে শুরু করে। এরচেয়েও বড় একটা সমস্যা হচ্ছে, কোন সংজ্ঞা বা উদাহরণের ভুল প্রয়োগ। এই যেমন একদিন খেলতে গিয়ে মুয়াজ প্রচন্ড জোরে আছড়ে পড়লো। আমি বিকট এক চিৎকার দিয়ে ছুটে যাচ্ছিলাম আরভ ভাইয়া আমাকে ধরে ফেলে বললেন, ওকে একাই উঠতে দে। জীবনের উত্থান পতনে সর্বদা যেহেতু তুই ওর সাথে সাথে থাকতে পারবি না। সেহেতু এখন থেকেই একা একা উঠে দাঁড়ানোর অভ্যাস হয়ে যাক।
স্বাতী হেসে বলল, এই কথাটা উনি বাচ্চাদেরকেও বলেন। বলেন, তোমরা যখন আছড়ে পরবে আমিও তোমাদের সাথে পরবো। কিন্তু উঠে তোমাদেরকে একাই দাঁড়াতে হবে। বাচ্চাদেরকে স্বনির্ভর বানানোর ব্যাপারে একদম হামাগুড়ি দেয়া যখন শুরু করে তখন থেকেই উনি ট্রেনিং দেয়ানো শুরু করেন। একটা ঘটনা মনে পরলে এখনো হাসি পায়। নাযীব তখন মাত্র নড়াচড়া শুরু করে। হাত বাড়িয়ে এটা সেটা ধরতে চেষ্টা করতো। একদিন ওর হাত থেকে খেলনা ছুটে দূরে গিয়ে পরেছিল। নাযীব হাত বাড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছিল কিন্তু পারছিল না। উনি পাশেই বসেছিলেন কিন্তু খেলনাটা এগিয়ে দিচ্ছিলেন না। কত রকমের কসরত করে সাড়ে সাত মিনিট লাগিয়ে নাযীব শেষ পর্যন্ত ওর খেলনাটা ধরতে পেরেছিল।
আজরা হেসে বলল, আমিও তো ভাইয়ার মতোই করতে চাই সবকিছু কিন্তু হয়ে যায় সব উল্টাপাল্টা। এই যেমন পরশু বিকেলে মুয়াজ কমলা গাছ থেকে কমলা পারার চেষ্টা করছিল। দেখছোই তো এই গাছের কমলাগুলো বেশ নিচুতেই ঝুলছে। কিন্তু তবুও মুয়াজের ধরাছোঁয়ার একটু বাইরেই। মুয়াজ বার বার লাফ দিয়ে চেষ্টা করছিল ধরার। আমিও পাশে বসে মনে মনে বলছিলাম, চেষ্টা চালিয়ে যাও সোনা আমার। কিন্তু অনেকবার চেষ্টা করার পরেও যখন ধরতে পারছিল না ধীরে ধীরে আঁধারে ঢেকে যাচ্ছিলো মুয়াজের চেহারা। এমন সময় ভাইয়া এসে পেছন থেকে মুয়াজকে ধরে সামান্য উঁচু করে ধরতেই মুয়াজ দুহাতে টেনে দুটা কমলা ছিঁড়ে নিলো। উফফ, সেকি খুশি বাচ্চার। আনন্দে লাফাতে লাফাতে ছুটে গেলো ভাইবোনদেরকে তার নিজ হাতে ছেঁড়া কমলা দেখাতে। ভাইয়া তখন আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুই বাচ্চাকে সাহায্য না করে চুপচাপ বসে আছিস কেন? দেখতেই তো পাচ্ছিলি মুয়াজ ধরতে পারছে না কমলা। এবং যতটূকুন উঁচুতে রয়েছে ওর পক্ষে ধরা সম্ভবও ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চারা কয়েকবার চেষ্টা করার পর ওদেরকে সাহায্য করতে হয়। তা না হলে চেষ্টা করে নিরাশ হবার কারণে চেষ্টা করার প্রতিই অনীহা চলে আসে মনে। আমি বললাম, তুমিই তো বলো বাচ্চাদেরকে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করতে দেয়া উচিত। ভাইয়া তখন হাসতে হাসতে বললেন, কিন্তু বাচ্চা কোন একটা কিছু করার চেষ্টা করছে। বেশ খানিকটা সফলও হয়েছে। কিন্তু তারপক্ষে একা সফল হওয়া সম্ভব নয় এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চাকে সাহায্য করতে হবে যাতে সে কাজটা করতে পারে। তা না হলে এমন ধরণের ব্যর্থতা বাচ্চার মনে চেষ্টা করার ব্যাপারে উৎসাহকে হ্রাস করে দেয়। কথা শেষ করে ভাইজান হাসতে হাসতে চলে গেলেন। আমি আর কি বলবো তখন। বোকার মতো দাঁড়িয়ে নিজের বোকামোর কথা ভাবতে লাগলাম। এখন তুমি হেসে আর আহত করো না আমাকে। পরামর্শ দাও কিভাবে তোমার মতো মা হবো।
কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিলো স্বাতী মাহিরাকে ছুটে আসতে দেখে বলল, কি হয়েছে? তুমি এমন করে ছুটছো কেন?
তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে গল্প করছো? ঐদিকে তো বিরাট কান্ড ঘটে গিয়েছে। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো মাহিরা।
কি কান্ড ঘটেছে? প্রশ্ন করলো আজরা।
মাহিরা বলল,বাচ্চারা যাতে খাবার নিয়ে ঝামেলা করতে না পারে সেজন্য ওদেরকে সাথে নিয়েই তো ওদের প্রতি বেলার খাবারের মেন্যু ঠিক করে দিয়েছিলেন আরভ ভাইয়া। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। আজ লেগে গিয়েছে যুদ্ধ।
এত ভূমিকা কেন দিচ্ছো? কি হয়েছে বলে দিলেই তো পারছো। বললো স্বাতী।
আচ্ছা বলছি শোনো। বড় খালামণি চার্ট অনুযায়ী ই বাচ্চাদের সবাইকে নাস্তা দিয়েছিল। আজ সকালের নাস্তার মেন্যু ছিল ব্রেড, জেলি, মিল্ক, কলা আর ডিম বয়েল্ড। কিন্তু নাস্তার টেবিলে এসে বসেই নাযীব ঘোষণা দিলো আজ সে চকলেট ফ্লেক্স। নুবাইদ, নুসাইব, নাযীব, রিদান ওরা চারজন নাস্তা করতে আসার কিছুক্ষণ আগে মুসআব, নাহিব, উমায়ের আর মহিমা নাস্তা করে গিয়েছিল। নাহিব চকোফ্লেক্স খেয়েছিল সেই প্যাকেট টেবিলেই রয়ে গিয়েছিল।
সেটা দেখেই মূলত নাযীবের রুটিন ব্রেক করার ইচ্ছে জেগেছিল। কিন্তু নাযীবের ঘোষণা শুনে নুসাইব বলল, আজ আমাদের নাস্তার মেন্যুতে চকোফ্লেক্স নেই। তাই তুমি চকোফ্লেক্স খেতে পারবে না। নাযীব বলল, আমি চকোফ্লেক্সই খাবো। দাদুমণিকে বললেই আমাকে দেবে। নুবাইদ হিহি করে উঠে বলল, দাদুমণি কক্ষনো দেবে না রুটিনের বাইরের খাবার। দিলে পাপা রাগ করবে। তোমাকে তাই খেতে হবে যা আমাদের চার্টে আছে। রিদান বলল, বড়রা রাগ করবে এমন কাজ করতে হয়না। বড়দের বিরক্ত করা খুব খারাপ। দুষ্টু ছেলেরা এমন করে। তুমি কি দুষ্টু ছেলে হতে চাও নাযীব ভাইয়া? বড় দুই ভাইয়ের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে ছোটভাই ওরফে নিজের শিষ্যকেও তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখে নাযীবের মাইন্ডে লেগে গেলো। চোখ বড় বড় করে বলল, আমি চকোফ্লেক্সই খাবো। দাদুমণি আমাকে দেবে। পাপা আমার উপর রাগ করবে না। নুবাইদ, নুসাইব আর রিদান তিনজনই তখন খুকখুক করে হাসতে শুরু করলো।
বাচ্চাদের কান্ড শুনে হেসে ফেললো স্বাতী আড় আজরা। মাহিরাও হাসতে হাসতে বলল, কিছুক্ষণ তো নাযীব মহা বিরক্তি নিয়ে তিন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। এমন সময় বড় খালামণি চারজনের জন্য নাস্তা নিয়ে ঢুকলেন। বড় খালামণি সামনে নাস্তার প্লেট রাখলে নাযীব বলল, দাদুমণি এটা খাবো না। আমাকে চকোফ্লেক্স দাও। বড় খালামণি নাযীবের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, আজকের রুটিনে এগুলোই তোমাদের নাস্তা। এসবই খেতে হবে। গুড বয়ের মতো খেয়ে নাও দাদুভাই। নাযীব আর কিছু না বলে চুপ করে রইলো। সবাইকে নাস্তা দিয়ে বড় খালামণি চলে যেতেই নুবাইদ দুষ্টুমি করে ভারিক্কি চালে বলল, কি বলেছিলাম না দাদুমণি কক্ষনো রুটিনের বাইরে নাস্তা দেবে না। এবার বুঝেছো তো? নুসাইব আর রিদান মুখে কিছু না বললেও নুবাইদের সাথে হাসিতে যোগ দিলো। একে তো নিজের ইচ্ছে পূরণ না হওয়া তারউপর ভাইদের খুনসুটি! এত লোড আমাদের ছোট্ট একটু নাযীব সোনা নিতে পারলো না। অনেক রাগ হয়ে গিয়েছিল সোনা বাচ্চাটার। তাই পাশ থেকে চকোফ্লেক্সের প্যাকেট টেনে নিয়ে এক মুঠ ফ্লেক্স নিয়ে নুবাইদের গায়ে ছুঁড়ে মারলো। নুসাইব প্রায় চিৎকার করে উঠে বলল, নাযীব তুমি এসব কি করছো? তোমাকে না পাপা মানা করেছে খাবার নষ্ট করতে? নাযীব তখন আরেক মুঠ ফ্লেক্স নিয়ে অর্ধেক নুসাইবের দিকে আর অর্ধেক রিদানের দিকে ছুঁড়ে দিলো। ব্যাস মূহুর্তেই পরিস্থিতি পাল্টে গেলো। রিদান সাথে সাথে উঠে ভোঁ দৌড় লাগালো। এদিকে নুবাইদ আর নাযীব একে অন্যের দিকে ফ্লেক্স ছুড়াছুঁড়ি শুরু করলো। নুসাইব দুই ভাইকে শান্ত করার চেষ্টা করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ফ্লেক্সের ছিটা খেলো। আমাদের শান্ত নুসাইব বাবুটা বিরক্ত হয়ে চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ফ্লেক্সগুলোকে হাত দিয়ে জড়ো করে তুলে নিয়ে দুই ভাইয়ের দিকে ছুঁড়ে মারলো। রিদান ততক্ষণে যেয়ে আরভ ভাইয়া আর রিশান ভাইয়াকে খবর পৌঁছে দিয়েছিল। হৈচৈ শুনতে পেয়ে বড় খালামণিও কিচেন থেকে ছুটে এলেন। একদিক থেকে বড় খালামণি অন্যদিন থেকে ভাইয়ারা দুজন মোটামুটি একই সময়ে বাচ্চাদের ডাইনিং রুমে ঢুকলেন। এবং ভেতরের অবস্থা দেখে তিনজনই কয়েক মূহুর্তের জন্য হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন।
এইটুকু শুনে স্বাতী বাড়ির ভেতরে যাবার উদ্দেশ্যে ছুট লাগাতে যাচ্ছিলো কিন্তু মাহিরা স্বাতীর হাত টেনে ধরে বলল, বাকিটুকু শুনে যাও ভেতরে যাবার আগে। আরভ ভাইয়াকে দেখা মাত্রই নুসাইব ভ্যা করে কান্না করে দিয়ে বলল, পাপ্পা আমি কিছু করিনি। নুবাইদ আর নাযীব আমাকে মেরেছে চকোফ্লেক্স দিয়ে। আমি শুধু একবার মেরেছি। আই এম সরি পাপ্পা। আই এম সরি চাচ্চু। আই এম সরি দাদুমণি। আরভ ভাইয়া কাছে গিয়ে নুসাইবের মাথায় হাত বুলিয়ে হাসি মুখে বললেন, যা হবার তাতো হয়েই গিয়েছে। কান্না করে সোনা। নুবাইদ বলল, পাপা সব নাযীবের দোষ। নাযীবকে শাস্তি দাও। রিদান এক লাফে রিশান ভাইয়ার কোলে উঠে বলল, হ্যা নাযীব ভাইয়া দুষ্টু ছেলে। শাস্তি দাও। তিন ভাইয়ের কথাবার্তা শুনে নাযীব একদম চুপ হয়ে গিয়েছিল। সারাক্ষণ কটকট পটপট করতে থাকা আমাদের কামল বাবার মুখে কিছুই না বলে বড় বড় চোখ করে সবার দিকে ঘুরে ঘুরে তাকাতে লাগলো। আরভ ভাইয়া হাত বাড়িয়ে নাযীবকে কাছে টেনে নিয়ে বলল, আপনি এমন করেছেন বাবা? নাযীব মাথা নেড়ে বলল, হ্যা করেছি। আমাকে যে দুষ্টু কথা বলেছে সেজন্য করেছি। ভাইয়া তখন বললেন, আচ্ছা ঠিকআছে আগে তোমরা সবাই নিজ নিজ নাস্তা শেষ করো। এরপর সবাই মিলে এইসব কিছু পরিষ্কার করবে। তোমাদের ডাইনিং হল ঠিক যেরকম থাকে তেমন করে গুছিয়ে রেখে বাগানে আসবে। পাপা বাগানে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি। রিশান ভাইয়াও তখন রিদানকে কোল থেকে নামিয়ে দিলেন। এরপর ভাইয়ারা দুজনই বেরিয়ে গেলেন। বড় খালামণি নিঃশব্দে নাতীদের নাস্তা করার সময় পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। নাস্তা শেষ করার পর বড় খালামণির ডিরেকশনে নুবাইদ, নুসাইব, নাযীব আড় রিদান মিলে সবকিছু পরিষ্কার করে গুছিয়ে এতক্ষণে মনেহয় বাগানের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিয়েছে।

চলবে…

পর্ব-৫

 

সফল উদ্যোক্তা রুবিনা এখন উদ্যোক্তা তৈরির কাজ করছেন

সফল উদ্যোক্তা রুবিনা এখন উদ্যোক্তা তৈরির কাজ করছেন


ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা


হাঁস-মুরগী, মাছ আর কৃষি উদ্যান তৈরি করে সফলতা পেয়েছেন নাটোরের শিক্ষিত ও মার্জিত নারী উদ্যোক্তা রুবিনা। মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরের সফলতায় তার মিলেছে একাধিক স্বীকৃতি। রুবিনা এখন নারী উদ্যোক্তার ক্ষেত্র সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করছেন।

অভাব অনটনের সংসারে বাবার মৃত্যু আর বিয়ের পর নিজের সংসার ভেঙ্গে গেলেও ভেঙ্গে পড়েননি রুবাইয়া রহমান রুবিনা। নাটোর সদরের চাঁদপুর গ্রামে বাবার অবর্তমানে মা আর ছোট ভাই-বোনের সংসারের হাল ধরেন রুবিনা। সেলাই করে সংগৃহিত অর্থ এবং অর্থ লগ্নী প্রতিষ্ঠানের ঋণে বাড়ির আঙ্গিনায় শুরু করেন পাঁচশ’ বাচ্চা নিয়ে ব্রয়লার মুরগীর খামার। সেখানেও দুর্ভাগ্য। মুরগী বিক্রি করে মিলেছে লোকসান।

কিন্তু হার মানার পাত্রী নন রুবিনা। তাঁর ভাষায়, ব্যবসায়ের লোকসানের মধ্যে লুকিয়ে থাকে মুনাফা। নতুন উদ্যোমে শুরু করেন খামারের কার্যক্রম। শুধু মুরগীর খামারই নয়, বাড়ী সংলগ্ন নিজেদের পুকুরে শুরু করেন মাছ চাষ, সাথে তিনশ’ হাঁসের সমন্বয়ে খামার।

অসুস্থতা নিয়েও অফুরান জীবনী শক্তির অধিকারী রুবিনা। প্রায় একই সঙ্গে মাছ আর হাঁস-মুরগীর খামারের পাশাপাশি কৃষিও শুরু করেন তিনি। পর্যায়ক্রমে জমি ইজারা নিয়ে ফলের ছয়টি বাগান তৈরী করেছেন রুবিনা। এসব বাগানে ফলছে আম, লেবু, পেয়ারা, কলা, কুল আর পেঁপে; রয়েছে মরিচ। আমের তালিকায় আছে অপ্রচলিত ও আদরনীয় গৌরমতি, ব্যানানা ম্যাঙ্গোর মত আম। নাটোর হর্টিকালচার সেন্টার ড্রাগন ফলের ৪০টি খুঁটিতে ১২০টি ড্রাগনের প্রদর্শনী খামার স্থাপন করে দিয়েছে রুবিনাকে। ফুল আসা ড্রাগনের বাগানে চলতি বছরেই ফল পাওয়া যাবে। ড্রাগনের বাগানে সাথী ফসল হিসেবে রুবিনা চাষ করেছেন মৌসুমী সব্জি।

সকল উপকরণের কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে রুবিনা প্রমাণ করেছেন-কোন কিছুই অপ্রয়োজনীয় নয়। মুরগীর বিষ্ঠা দিয়ে তৈরী করছেন উৎকৃষ্ট জৈব সার-রিং কম্পোস্ট-প্রতি মাসে যার বিক্রয় মূল্য অন্তত তিন হাজার টাকা। পাশেই উৎপাদন করছেন আরো একটি জৈব সার- ভার্মি কম্পোস্ট। বাড়ির শোভা বাড়িয়ে রেখেছে এক ঝাঁক কবুতর। এর বাণিজ্যিক মূল্যও কম নয়।

রুবিনার বিশাল এই কর্মযজ্ঞে সহযোদ্ধা হিসেবে পেয়েছেন ছোট ভাই রুবেল আর পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স শেষ বর্ষে পড়–য়া ছোট বোন রিমি। সাথে দু’জন নিয়মিত কর্ম শ্রমিকসহ প্রতিদিন আরো গড়ে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করে।

রুবিনার কর্মযজ্ঞের স্বীকৃতি দিয়েছে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর। তাদের আঙ্গিনায় আই পি এম স্কুল পরিচালনা করে এলাকার ২৫ পরিবারের ৫০ সদস্যকে হাঁস-মুরগী পালন, গরু মোটাতাজাকরণ, সব্জি চাষ, বসতবাড়ীর বাগান ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও অর্থ সহায়তা দিয়েছে নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। রুবিনার নেতৃত্বে গঠিত চাঁদপুর নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতির ৫০ সদস্য প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেকেই সমবায় বিভাগ থেকে মাত্র দুই শতাংশ সার্ভিস চার্জে গাভী পালনের ঋণ পাচ্ছেন এক লাখ ২০ হাজার টাকা করে। একশ’ সদস্যের অন্যরা পর্যায়ক্রমে ঋণের অপেক্ষায় আছেন। রুবিনার গাভী খামার খুব শিগগিরই উৎপাদনে আসবে। সকলের উৎপাদন নিয়ে এই এলাকায় গড়ে তুলতে চান মিল্ক ভিটা বা প্রাণের দুগ্ধ ক্রয় কেন্দ্র।

রুবিনাকে সভানেত্রী করে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের নিবন্ধনে গঠিত ইয়ুথ উইম্যান ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি সেলাই কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। রুবিনাকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে সমাজ সেবা ও প্রাণি সম্পদ বিভাগ।

নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের অধীন ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পে’র আওতায় রুবিনাকে কমিউনিটি হর্টিকালচার প্রভাইডার মনোনীত করা হয়েছে। মাসে তিন হাজার টাকা সম্মানি ভাতায় কৃষিতে উদ্যোক্তা সৃষ্টির কাজ করছেন রুবিনা। এলাকার আট শতাধিক ব্যক্তিকে হর্টিকালচার সেন্টারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছাড়াও প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রশিক্ষণ শেষে হর্টিকালচার সেন্টারের গাছ, সার আর উপকরণ সহায়তায় গড়ে উঠেছে ৫০টি ফলের বাগান আর ৩৫টি বাড়ির বাগান। ইতোমধ্যে তাঁর হাতে তৈরি নারী উদ্যেক্তাদের মধ্যে সফল হয়েছেন হেনা বেগম, শাকিলাসহ বেশ ক’জন। হেনা বেগম বলেন, আমাদের নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে রুবিনা।

রুবিনা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে গত বছর নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কসহ গ্রামীণ সড়কের দু’কিলোমিটারে তালের গাছ লাগিয়েছেন। এবার নারকেলের চারা রোপণের পরিকল্পনা করেছেন।
নাটোর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর রুবিনাকে দিয়েছে জয়িতা পদক, ইউনিলিভার ‘তোমার স্বপ্ন কর সত্যি’ ক্যাটাগরিতে দু’লাখ টাকার প্রাইজমানী। আর সবচেয়ে সম্মানজনক হিসেবে ২০১৮ তে ঢাকার খামারবাড়ীতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের আয়োজনে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছ থেকে ‘কৃষি উন্নয়নে নারী’ পদক পেয়েছেন রুবিনা।

রুবিনা বলেন, আমার পথ চলাতেই আনন্দ। আমার পথ চলা সার্থক হবে-যদি আমি সমাজের অবহেলিত নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সফল হই। আমাদের এলাকায় কৃষির মাধ্যমে সবুজ বিপ্লব এবং গাভীর মাধ্যমে শ্বেত বিপ্লব ঘটাতে চাই। ইনশাল্লাহ আমি সফল হবো।

নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক স ম মেফতাহুল বারি বলেন, রুবিনাকে কমিউনিটি হর্টিকালচার প্রভাইডার মনোনীত করার পর সে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। নতুন উদ্যোক্তা বিশেষতঃ নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে ইতোমধ্যে সে সফলতা পেয়েছে।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরামর্শক এস এস কামরুজ্জামান বলেন, রুবিনার মেধা আর কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয় সমর্থন ও সহযোগিতায় রুবিনা এখন সফল উদ্যোক্তা। সারাদেশে রুবিনার মত উদ্যোক্তা তৈরি হলে দেশ হবে সমৃদ্ধ।

সুত্রঃ ফাররাজী আহম্মদ রফিক বাবন (বাসস)

 

স্বাতীর রঙধনু…৫

স্বাতীর রঙধনু…পর্ব-৫


আফরোজা হাসান


হাসলো আরভও। বাচ্চাদের যাতে ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটে তাই দুজন ওদের রুমের কাছ থেকে সরে বাইরের বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। চেয়ার টেনে বসতে বসতে আরভ প্রশ্ন করলো, কি লেখা হচ্ছিলো এত মনোযোগের সাথে?
স্বাতী হেসে বলল, আগামী বুধবার আমাদের মহিলা প্রোগ্রামে আলোচনার বিষয়বস্তু রাখা হয়েছে শিশুদের গড়ে তোলাকে কেন্দ্র করে। নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা লিখছিলাম বোনেদের জন্য। বোনেরা নিজ নিজ বাচ্চাদের জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের বিশাল এক লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছে। প্রশ্নগুলো দেখলে চোখ কপালে উঠে যাবার দশা হয়। এক ছোট ছোট বাচ্চারা এমন জটিল জটিল অদ্ভুত প্রশ্ন কিভাবে করে চিন্তা করে অবাক হই। তবে প্রশ্নের চেয়েও কঠিন উত্তর দেয়াটা। বাচ্চারা খুব সহজেই বুঝে যাবে এমন উদাহরণ সাজিয়ে বলাটা সত্যিই বেশ কঠিন লাগে। এই যেমন এক বোনের সাত বছর বয়সী মেয়ে প্রশ্ন করেছে, নামাজ না পড়লে কেন আল্লাহ গোনাহ দেবেন? সে যদি নামাজ তাহলে আল্লাহর কি উপকার হবে?
আরভ হেসে ফেললে স্বাতীও হাসতে হাসতে বলল, বেচারি মেয়ের প্রশ্ন শুনে খুবই ঘাবড়ে গিয়েছে। এই বয়সেই এমন প্রশ্ন করছে মেয়ে। বড় হলে না জানি কি করবে ভেবে ভেবে অস্থির। এখন বোঝে না বলেই এমন প্রশ্ন করছে। বড় হলে যখন বুঝবে তখন আর এমন প্রশ্ন করবে না। ইত্যাদি ইত্যাদি বলে বোনটিকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মনেহলো উনার অস্থিরতা মোটেই কমেনি। আরেক বোন উনার মেয়েকে নিয়ে খুব সমস্যাতে আছেন। কিছুদিন আগে অসাবধানতায় গরম তেল পড়ে উনার মেয়ের হাত অনেকখানি পুড়ে গিয়েছে। স্কুলের সবাই দাগের কথা জিজ্ঞেস করে বলে বাচ্চা এখন স্কুলেই যেতে চায়না। স্কুলে যাবার সময় হলেই কান্নাকাটি শুরু করে। আমার নিজেরও এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। তাই বাচ্চাটার ভীতি , কষ্ট অনুভব করতে পেরেছি। তোমার মনেআছে নিশ্চয়ই আমার বয়স যখন আট বছর ছিল বোনেদের সাথে দুষ্টুমি করতে করতে পড়ে গিয়ে চোখের একপাশে অনেকখানি কেটে গিয়েছিল।
হ্যা মনেআছে।
এখন তেমন একটা বোঝা না গেলেও ছোটবেলায় দাগটা বেশ দৃষ্টিকটু ছিল। আমি মনখারাপ করতাম দাগের কারণে তাই বাবা বলেছিলেন ‘তুমি স্পেশাল তো তাই আল্লাহ তোমাকে চিহ্ন দিয়ে দিয়েছেন। যাতে যখনই কারো স্পেশাল মানুষের প্রয়োজন পড়বে তোমাকে সহজে খুঁজে নিতে পারবে।’ দাগের কারনে নিজেকে স্পেশাল ভাবা আমি যখন সহপাঠীদেরকে আমার সেই স্পেশাল দাগটার দিকে অবাক চোখে তাকাতে দেখলাম, প্রশ্ন করতে দেখলাম, খুব ইতিবাচক পরিবেশে বড় হওয়া আমি সেটা মেনে নিতে পারলাম না কিছুতেই। কোন ভাবেই কেউ আমাকে রাজী করাতে পারছিলো না স্কুলে যাবার জন্য। এখনো মনে আছে বাবার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কান্না করতে করতে বলেছিলাম, সবাই আমার দাগকে কেন দেখে বাবা? আমাকে স্পেশাল কেন ভাবে না? ‘সত্যিই তো দাগ কেন? স্পেশাল নয় কেন?’ বাবা তখন আমাকে কোলে করে বাগানে নিয়ে গিয়ে বসে বলেছিলেন, মানুষের স্বভাব হচ্ছে চাঁদকে দেখার আগে তার দাগকে দেখা। প্রশ্ন করেছিলাম, কেন বাবা? বাবা হেসে জবাব দিয়েছিলেন, কারণ তাদেরকে দাগকে এড়িয়ে যেতে শেখানো হয়নি। যদি শেখানো হতো তাহলে মানুষ চাঁদকেই দেখতো দাগকে নয়। একটা কথা তুমি সবসময় মনে রাখবে মা এই পৃথিবীর বেশীর ভাগ মানুষগুলোই খুব ভালো। হ্যা কিছু খারাপ মানুষ আছে কিন্তু তাদের সংখ্যা খুবই নগন্য। আর তারা আছে বলেই তো আমরা বুঝতে পারি ভালোর মর্ম। মানুষের আরেকটা স্বভাব কি জানো মা? নতুন কিছু দেখলে মানুষ অবাক হয়। তোমার সামনে যদি একটা চড়ুই পাখি আসে যার মাথায় দুটা শিং আছে তুমি অবাক হবে না? চোখ বন্ধ করে চিন্তা করো তো একটু। আমি চিন্তা করে হেসে ফেলেছিলাম। সাথে সাথে অর্জন করেছিলাম নতুন এক শিক্ষা –“নতুন কিছু দেখলে মানুষ অবাক হতেই পারে, হাসতেই পারে এতে কষ্ট পাবার কিছু নেই। আমরা কষ্ট পাই নিজেকে দিয়ে চিন্তা করতে পারিনা বলে। মানুষ দাগ দেখে কারন তাদেরকে দাগকে এড়িয়ে যেতে শেখানো হয়নি বলে। আর এই পৃথিবীতে ভালো মানুষের সংখ্যাই বেশি।”
এখানে আরেকটা লক্ষণীয় বিষয় কি জানো স্বাতী? বাচ্চার মধ্যে যদি কোন খুঁত থাকে বা দোষ থাকে বাবা-মার কখনোই উচিত না কোন উপমা ব্যবহার করে তাকে সেটা বলা বা বোঝানো। বাচ্চাকে খুশি করতে গিয়ে তারা যে ভুল তথ্যটা বাচ্চাকে দেয় এক কারনে বাইরের জগতে বাচ্চা পড়তে পারে চাপের মুখে এবং তার মধ্যে জন্ম নিতে পারে হীনমন্যতা। আর হীনমন্যতা এমন এক কীট যার ফলে ধ্বসে যেতে পারে আত্মবিশ্বাস। অথচ আত্মবিশ্বাস বা আত্মমর্যাদা বোধই একজন মানুষকে মানুষ হিসেবে সুস্থ ও সুন্দর ভাবে বাচতে শেখায় এবং এটাই মানুষের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। তাই বাচ্চা যাতে নিজের সম্পর্কে কোন ভুল ধারণা বা ভ্রান্ত বিশ্বাস মনের মধ্যে লালন করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে বাবা-মাকে।
জ্বি আমিও এই কথাটাই বলতে যাচ্ছিলাম। বাবা মায়েরা প্রায়ই সময় সন্তানকে আশ্বস্ত করতে গিয়ে, স্বান্ত্বনা দিতে গিয়ে এটা খেয়াল রাখতে ভুলে যান, বাইরের মানুষেরা তাদের মতো করে আগলে রাখবে না তাদের সন্তানদেরকে। মনে যাতে সামান্য ব্যথাও না পায় এই খেয়াল রেখে কথা বা আচরণ করবে না বাইরের মানুষেরা। তাই সন্তানের তরে আশ্রয় হবার সাথে সাথে তারা যাতে নিজেও নিজের আশ্রয় হতে পারে সে শিক্ষাটাও দিতে হবে। আমরা যখন ছোট ছিলাম মাসে একবার আমাদের পারিবারিক বৈঠক বসতো। সবাই সবার কাজের সমালোচনা করাই ছিল বৈঠকের উদ্দেশ্য। আমরা সবাই খোলামেলা আলোচনা করতাম কার কোন আচরণটা ঠিক হয়নি, কোন কথাটা এভাবে না বলে অন্য ভাবে বললে বেশি সুন্দর হতো। কার ব্যবহার কষ্ট দিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। সাব্বিরের স্বভাব ছিল সারাক্ষণ সবার খুঁত ধরা। বাবা সবাইকে বোঝাতন, যাকে দরকার ধমকে দিতেন কিন্তু এই খুঁত বিশেষজ্ঞকে কখনোই কিছু বলতন না। প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে একদিন প্রশ্ন করেছিলাম, বাবা তুমি সাব্বিরকে কখনো কিছু কেন বলো না? বাবা হাসতে হাসতে জবাব দিয়েছিলেন, কারণ সাব্বিরের এই দোষটা তোমাদের বাকি সবাইকে সতর্ক হতে সহায়তা করছে খুব। সেদিন বাবার আলোচনা থেকে জেনেছিলাম-“সুন্দরের মাঝে যখন কোন দাগ থাকে মানুষ না চাইলেও সেদিকে নজর দিতে বাধ্য হয়। সাদার বুকে একফোঁটা কালো এমন ভাবে জ্বলজ্বল করে যে চোখে পড়েই যায়। সবসময় দাগকে দেখা মানেই সুন্দরকে অবমাননা করা নয়। তাই যারা সুন্দর মনের মানুষ তারা অন্যের দাগটাকে দেখে তাকে ছোট করার জন্য নয় বরং শুধরে দেবার জন্য। জীবনে এমন মানুষের জন্য মনের দরজা খুলে অপেক্ষা করা উচিত। কারন এরা আরো শুদ্ধ হতে আরো নিখুঁত হতে সহায়তা করে যাইহোক, এসব আলোচনা এখন থাক। এসব নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকে বসতে হবে তোমার সাথে। বোনেরা তাদের বাচ্চাদের যে প্রশ্নগুলো দিয়েছে সেগুলো নিয়েও আলোচনা করতে হবে তোমার সাথে। বাচ্চাদেরকে যে কোন কিছু সহজ ও সুন্দর করে বোঝানোতে তুমি আমার চেয়ে হাজার গুণ বেষ্ট, আলহামদুলিল্লাহ। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। তুমি রুমে যাও। আমি তোমার বাসন্তী পরীর হাত থেকে গল্পের বই নিয়ে তাকে ঘুমের রাজ্যে পারসেল করে আসি।
আরভ হেসে বলল, চলো দুজন মিলেই বাসন্তী পরীকে ঘুমের রাজ্যে পারসেল করার আয়োজন করে আসি।
স্বাতী হেসে বলল, ঠিক আছে চলো।

চলবে…

 পর্ব-৪

 

বাদলা দিনে মনে পড়ে

বাদলা দিনে মনে পড়ে


ফাতিমা মারিয়াম


আজ ছোটবেলার কথা ভীষণ মনে পড়ছে।

সেই বৃষ্টির দিনগুলির কথা। ঐ যে, যেদিন সকাল থেকেই আকাশ মুখ কালো রাখত সেদিনের কথা। একসময় সেই গোমড়া মুখো আকাশ থেকে ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হত।

আহা! কী আনন্দ! টিনের চালে বৃষ্টির একটানা ঘুঙুর পায়ে রুমঝুম রুমঝুম নৃত্য।

আম্মার চোখ ফাঁকি দিয়ে বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দকে এখন আর কিছুর সাথেই তুলনা করতে পারিনা। মধ্যাহ্নভোজনের পর কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতাম। হালকা হালকা শীতের একটা আমেজ থাকত। হয়ত অনেকক্ষণ ধরে বৃষ্টিতে ভেজার জন্যই এই শীত শীত ভাবটা আসত।

বিকেলবেলা বৃষ্টির পানি ভর্তি উঠানে পা ডুবিয়ে হাঁটতাম। আম্মার বকুনিতে কান ঝালাপালা। কিন্তু সেই বকুনিকে উপেক্ষা করেই সময়টুকু পার করতাম। আমি কাগজের নৌকা বানাতে পারতাম না! তাই সেই আনন্দ কখনো নিতে পারিনি। আশেপাশের বাসার অন্য বিচ্ছুগুলোকে দেখতাম কাগজের নৌকা বানিয়ে পানিতে ভাসাত। আমি শুধুই চেয়ে চেয়ে দেখতাম!

সন্ধ্যার আগে আম্মা কাঁঠালের বিচি বা শিমের বিচি ভেজে দিত। অথবা কখনো কখনো পিঁয়াজু। মাঝে মাঝে চাল ভেজে কাঁচামরিচ, পিয়াজ আর সরিষার তেল দিয়ে মাখিয়ে দিত অথবা ঝালমুড়ি। সেই মজাদার খাদ্যের কাছে চিকেন ফ্রাই বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই কিছুইনা।

বর্ষাকালে রাতেও এই অবিরাম বর্ষণ চলত। বাজের শব্দে ভীষণ চমকে উঠতাম। দিনের চেয়ে রাতের বৃষ্টির শব্দ একটু রকম ছিল! কেমন একটা ভয়ভয় ভাব। একসময় বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে কানে সয়ে যেত। তারপর কখন যে ঘুম এসে যেত!

ছোটবেলার মজার ঘটনা লিখব বলে লেখাটা শুরু করেছিলাম। কিন্তু লিখতে লিখতে মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল! আসলে সবাই এক সময় ছোটবেলাকে খুব বেশি মাত্রায় ফিরে পেতে চায়, সুন্দর, স্বর্ণালী সেই সময়ে ফিরে যেতে চায়! কিন্তু তা তো আর সম্ভব না! জীবন তার আপন গতিতেই বয়ে যায়…যাবে।

‘ছেলেবেলার দিন ফেলে এসে
সবাই আমার মত বড় হয়ে যায়
জানিনা ক’জনে আমার মত
মিষ্টি সে পিছু ডাক শুনতে যে পায়………

 

গরমের শরবত…


রেসিপি


বেলের শরবত
উপকরণ:

পাকা বেল ১টি। ঠাণ্ডা পানি ৪ কাপ। গুঁড়া দুধ আধা কাপ। চিনি প্রয়োজন মতো। বরফ-কুচি পরিমাণ মতো।

পদ্ধতি:

বেলের দানা ফেলে চামচ দিয়ে শাঁস বের করে নিন। পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। নরম হয়ে আসলে চালনি দিয়ে চেলে নিন।

এরপর এতে চিনি ও দুধ মেশান। বেশি ঘন হয়ে গেলে আরও কিছুটা পানি মিশিয়ে নিন। বরফকুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।

কাচা আমের শরবত
উপকরনঃ

আম-১টা, চিনি-৫-৬ চামচ, গোল মরিচ-১ চামচ, বীট লবন-১ চামচ, কাচা মরিচ-2, লবন-প্রয়োজন মত, পানি-আড়াই কাপ

প্রনালীঃ

কাচা আম কুচি কুচি করে কেটে উপকরন গুলোর সাথে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।বরফ কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।

বাঙ্গির শরবত
উপকরণ :

বাঙ্গির রস ১ কাপ, চিনি ১ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ চা চামচ, বরফ কিউব পরিমাণমতো, লবণ এক চিমটি ( না দিলেও হয়)।

প্রণালী :

বাঙ্গি কুচি কুচি টুকরো করুন। বড় বাটিতে বাঙ্গির সঙ্গে চিনি মিশিয়ে রেখে দিন বেশ কিছুণ। লেবুর রস ও বরফ মিশিয়ে রাখুন আরও কিছুণ। বাঙ্গি থেকে পানি বের হয়ে শরবত হবে। এটা ছেকে ঢেলে নিন গ্লাসে। লবণ মেশান। বরফ কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।

 

সুস্থ দাম্পত্য টিপস

সুস্থ দাম্পত্য টিপস


দাম্পত্য


দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক বন্ধন ও সুসম্পর্ক উপর নির্ভর করে, সুস্থ দাম্পত্য জীবন ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনে সহায়তা করে। এবং এর বিপরীতে গেলে ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরে।

*পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে সন্তুষ্ট, পরিতৃপ্ত ও সুখীবোধ

ব্যক্তি তার প্রতিদিনকার ঘটনাবলিতে পরিতৃপ্ত। স্বাভাবিকভাবেই উভয়েই সন্তুষ্ট ফলে মানসিক চাপ(stresses) গুলোর মুখোমুখি হলেও মোকাবেলা করতে পারেন। নিজের ব্যক্তিগত দক্ষতা এবং সমস্যা সমাধান করার কৌশল বুঝতে পারেন এবং রোজকার দিনের কাজ গুলো ঠিকভাবে গুছিয়ে করতে পারেন।

*পরস্পরের কাছে নিরাপদ এবং আরামদায়ক বোধ করবে

শুধু নিজের ভালো থাকাকে প্রাধান্য দেওয়া ছাড়াও অন্যের ভালো থাকাটাকে নিশ্চিত করেন ফলে নিরাপদ এবং আরামদায়ক সম্পর্কের জন্ম নেয়।

*পরস্পরের প্রতি আচরণ সম্মানপূর্ণ হবে

সন্মান হলো সন্মানিত ব্যক্তির চাদর। সুতরাং পরস্পরের বন্ধন তখনই সবচেয়ে বেশি মজবুত হয় যখন সন্মান সহিত আচরণ করেন পরস্পর।

*নিজেদের সঙ্গে কাটানো সময় আনন্দপূর্ণ হবে

কাটানো সময় আনন্দপূর্ণ হবে বলেই পরস্পরের জীবনের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। (যেমন: বন্ধুবান্ধব, ভালো লাগার বিষয়, পরিবার, জীবন নিয়ে ভাবনা, স্কুল-কলেজ, কর্মক্ষেত্র ইত্যাদি)।

*দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের প্রতি আস্থা/বিশ্বাস থাকবে

দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের প্রতি আস্থা ও পাশাপাশি পরিবার ও পরিবারের বাইরে সমাজ কমিউনিটি ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গনে অবদান গড়বে।

*দাম্পত্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, মমতা, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদির ভিত্তিতে পরস্পরকে প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে।

সুত্রঃ ইন্টারনেট৷

 

আমার বাবা…

আমার বাবা…


সাকলাইন রাসেল


ছেলে মেয়েদের সামনে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে ভালোবাসেন…তাঁর রাশভারী রূপ দেখে অভ্যস্ত আমি…ছোট বেলা থেকেই তাঁকে দেখলে ভয় পেতাম…আমি তখন রংপুরে প্রাইমারীতে পড়তাম…বাবা ঢাকায় থাকতেন…অনেক দিন পর পর রংপুর যেতেন…কবে রংপুর আসবেন সে দিনক্ষণ আমি লিখে রাখতাম…প্রচন্ড ডানপিটে ছিলাম..বাবার আগমন তাই আমার কাছে ছিল আতংকের…ভয়ের…পরাধীনতার…
কারণ, বাবা এলেই আমাকে নিদির্স্ট সময়ে উঠতে হবে…পড়তে হবে…ঘরে ফিরতে হবে…খেলা থেকে দূরে থাকতে হবে…তাঁর পছন্দের মেন্যু খেতে হবে (কাঁচা কলা, সবুজ শাক-সবজী)…সকালে সূর্য উঠার আগে বাবার পিছে পিছে ব্যায়ামের জন্য দৌড়াতে হবে…একটু এদিক সেদিক হলে পিটুনি থেকে নিস্তার নেই…

আমাদের গ্রামের বাড়ীটা থেকে..
দু’দিকে দু’টো রাস্তা চলে গেছে…বাবা যতবারই আসতেন সে রাস্তার মাঝখানে আড়াআড়ি একটা দাগ টেনে দিতেন…যাতে আমি সে দাগ পার হয়ে কোথাও খেলতে না যাই… স্পষ্ট মনে আছে ক্লাশ টু তে পুড়ুয়া সেই দূরন্ত এই আমি… সে দাগের সামনে সারাদিন বসে থাকতাম…চোখের জ্বলে গরম বালুগুলো ঠান্ডা করে দিলেও কখনো সে দাগ পার হতাম না… আমার ছোট চাচা মাঝে মধ্যে কোলে করে সে দাগ পার করিয়ে দিতেন…সাথে সাথেই আমি ভোঁ দৌড়…সেই মুহুর্তে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাধীন প্রাণী আমি…
বাবা যে কয়দিন থাকতেন…একদিনে কত ঘন্টা… কত সেকেন্ড … আমি হার্টবিট গুণেই দিব্যি বলে দিতে পারতাম…যেদিন চলে যেতেন সেদিনই আবার পতাকা উড়িয়ে দিতাম…স্বাধীনতার পতাকা…মুক্তির পতাকা!
.বাবা ছাড়া আর কাউকে কোনদিনও ভয় পেতাম না…সারাদিন খেলাধুলা শেষে ধুলিমাখা শরীরে ঘরে ফিরতাম…মা কিছু বোঝার আগেই গায়ে তেল মেখে চকচকে বানিয়ে ফেলতাম…উদ্দেশ্যে অবেলায় গোসল থেকে নিজেকে বাঁচানো!

এভাবেই গ্রামের পাঠ চুকিয়ে একদিন শহরে পা রাখলাম…সরাসরি ঢাকা শহরে…রংপুর শহর দেখার আগে আমি ঢাকা শহর দেখলাম…ক্লাস সিক্সে আমি…বাসা থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে স্কুল.. প্রথম দিন বাবা সাথে নিয়ে স্কুলে গেলেন…যাওয়া আসার পথে রাস্তায় বিভিন্ন দোকান চিহ্ন হিসেবে মনে রাখতে বললেন…এবং জানিয়ে দিলেন পরের দিন থেকে একা একাই স্কুলে যেতে হবে…কেউ সঙ্গে আসবে না!
সত্যিই আর কোন দিন আসেননি… ১০ দিন পরেই প্রথম সাময়িক পরীক্ষা…গ্রামের স্কুলে সর্বদা ২য়/৩য় হতাম…কিন্তু এখানে এসে একেবারেই হোঁচট খেলাম…অংকে পেলাম ৩০, ইংরেজিতে ২২…গ্রামে তো লিখিত পরীক্ষা কি জিনিস তাই জানতাম না… এখানে এসে বুঝলাম পড়ালেখা কারে বলে…!
রেজাল্ট দেখে বাবা মুখে কিছু বললেন না…যা বলার হাত দিয়ে বললেন…মাথা ছাড়া দেহের সব জায়গায় দাপটের সাথে লাঠির আগায় বাবার নাম লিখে দিলেন…ভাত বন্ধ করার হুমকি দিলেন…গ্রামে ফেরত পাঠানোর হুমকি দিলেন…এ হুমকির আওতায় আমার মাও পড়ে গেলেন…কারণ আমার ভাল ফলাফলে তাঁর হক থাকুক আর না থাকুক খারাপ ফলের পুরো ভাগিদার মা…কদিন পর ডেকে বললেন তুমি যদি ক্লাস সেভেনে ‘এ’ সেকশনে যেতে পার…তবে যা চাও তাই দিব…
আমি একটা হাতঘড়ি চাইলাম…ডিজিটাল হাতঘড়ি…ওটাই তখন একমাত্র আরাধ্য।
আমি তখন ‘এফ’ সেকশনে…এতো পিছনে থেকে সরাসরি ‘এ’ সেকশনে যেতে পারা সত্যিই কল্পনাতীত…তবুও উপর ওয়ালার ইচ্ছায় সেভেনে উঠলাম…এবং ‘এ’ সেকশনে…হাত ঘড়িও পেলাম!
তবে,
বাবা খুশী হয়েছেন কিনা বোঝা গেল না… কারণ, কোন বিষয়ে গালমন্দ না করার অর্থ হল বাবা সে বিষয়ে আমার উপর সন্তুষ্ট আছেন…মুখ ফুটে কখনো প্রশংসা করতেন না তিনি…ক্লাশ নাইন পর্যন্ত আমি কখনো প্রাইভেট পড়িনি…সত্যি বলতে প্রাইভেট পড়ানোর সামর্থও ছিল না বাবার…নিজেই পড়াতেন…পড়ানোটা ছিল মূলত পাটীগনিত কেন্দ্রিক!

আমি যদি কখনো পড়ালেখায় ফাঁকিবাজি করতাম…বেশি খেলাধুলা করতাম… রেজাল্ট খারাপ করতাম…মায়ের কথা না শুনতাম… তবে, বাবা নগদ আমাকে কিছু বলতেন না… হটাৎ একদিন ডাক পড়ত…..হুকুম আসত পাটীগণিত নিয়ে বসার জন্য…বাবা জানত, আমি পাটীগণিতে খুব দূর্বল… তাই রাগ হলে পাটীগণিত নিয়ে বসতে বলতেন… এবং যথারীতি আমি অংকের মাঝপথে গিয়ে ভয়ে…টেনশনে..খেই হারিয়ে ফেলতাম…অঙ্কের শেষটা আর মিলাতে পারতাম না…ঠিক তখনই বাবা কথা বলা শুরু করতেন… মুখে না, হাতে…কখনো খালি হাতে…কখনো পায়ে…কখনো স্কেল…কখনো পর্দার লাঠি… হাতের কাছে যা পাওয়া যেত তাই দিয়ে… এরপর শুরু হত জেরা…অমুক দিন কেন পড়ালেখা শেষ না করে খেলতে গেছো…অমুক বিষয়ে কেন এতো কম মার্কস পেয়েছো…অমুকের সাথে কেন ঐদিন মারামারি করেছো…পাশের বাসায় কেন টিভি দেখতে গেছ…!
উল্লেখ্য, আমার জন্য টিভি দেখা ছিল নিষিদ্ধ… কারণ, আমাকে বোঝানো হয়েছিল টিভিতে পড়ালেখার ক্ষতি হয়…ভাল রেজাল্ট করা যায় না ..তবে, ম্যগগাইভার সিরিয়াল দেখার অনুমতি ছিল…এবং যেদিন ম্যাগগাইভার ছিল সেদিন আমি সারাদিন খুব জোরে শব্দ করে পড়তাম…উদ্দেশ্য, বাবাকে শোনানো যে আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছি…এক সময় মা বাবার কাছে গিয়ে বলতেন…ছেলেটা তো সারাদিন অনেক পড়েছে…ও একটু ম্যাগগাইভারটা দেখে আসুক…দুই একটা কথা শুনিয়ে বাবা অনুমতি দিয়ে দিতেন… সাথে সাথে পাশের বাসায় ভোঁ দৌড়!

ক্লাশ নাইনে উঠার পর বাবা বাসায় প্রথম টিভি নিয়ে আসেন… ১৭ ইঞ্চি সাদা কালো টিভি টিভি….. কারণ, তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী আমি ক্লাশ নাইনে এ সেকশনে প্রথম ১০ জনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছি… এটাই তাঁর কেনা প্রথম টিভি…এবং আজ পর্যন্ত আর কোন টিভি কিনেন নাই তিনি…টিভি পেয়ে কি যে আনন্দিত হলাম…
আমার বন্ধুরা সারাদিনে টিভিতে কত অনুষ্ঠান দেখে… আর আমি সারাদিন পড়ার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি মেরে শুধু টিভিটাকেই দেখতাম…কারণ, ঘরে টিভি থাকলেও সেটা ছাড়ার সুযোগ ছিল না আমার…গলা ছেড়ে পড়ালেখার ব্যাপক শো ডাউনের পর… মাঝে মধ্যে পাটিগণিতের বৈতরণী পার হয়ে তবেই সুযোগ আসত টিভি দেখার…বাবার অনুমতি স্বাপেক্ষে মা টিভি ছেড়ে দিলে তবেই সুযোগ পেতাম…তবে, সেন্সর বোর্ডের মত বাবার সেন্সর করে দেয়া অনুষ্ঠানই কেবল দেখার সৌভাগ্য হত… বলে রাখা ভালো, আমি ইন্টারমেডিয়েট ২য় বর্ষে এসে প্রথম কারো অনুমতি ছাড়াই নিজে নিজে দুঃসাহস দেখিয়ে টিভি অন করি..এবং সেই থেকে একাই ছাড়ছি!
ঈদ আসার ঠিক আগেই বাবা পাটীগণিত নিয়ে বসতে বলতেন… সাথে সাথেই শুরু হত রেজাল্টের হিসাব নিকাশ…সর্বশেষ উত্তম মধ্যম…ফলে ‘ঈদে জামা চাই’ এমন বাক্য উচ্চারণ করার সাহস আর থাকত না…কোন রকম ঈদটা পার করতে পারলেই খুশী।
বলে রাখা ভাল ঘুমের ব্যাপারে আমি ছোট বেলার সেই রূপ এখনো ধরে রেখেছি…একবার ঘুমালে পুরো পৃথিবীর আর খবর থাকেনা…তবে, সকালে উঠেই খবর শোনাতেন বাবা…স্কুলে যাবার আগে প্রায় সময় ঘুম ভাঙত বাবার ডাকে…সে ডাক প্রথমে শুরু হত মুখে…তারপর হাতে…কখনো কখনো বিছানায় চোখ খুলেই দেখতাম বাবা ঝাড়ু দিচ্ছেন…উল্টো দিকে…ঝাড়ুর আগা ধরে গোড়া দিয়ে…এবং গোড়াটার পুরোটাই আমার দেহে পড়ছে!

এভাবেই বেড়ে উঠা আমার…আমার একটা দাঁতও পড়ে গিয়েছিল বাবার ধমকে…এমনিতেই সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী করেছি। সময় নিয়ে ব্রাশ করছিলাম…ঠিক সময় নিয়ে না। ইচ্ছা করে। যতক্ষণ ব্রাশ ততোক্ষণই পড়ালেখা থেকে মুক্তি।
হটাৎ গর্জে উঠল বাবা…সাথে সাথে হাত কেঁপে উঠে ব্রাশের ধাক্কা লাগল নড়বড় দুধ দাঁতটার গোড়ায়…ব্যাস, দাঁতটার অগ্রিম অপমৃত্যু ঘটল।

এহেন বন্দী জীবনে আমি প্রতিদিন প্রতি সেকেন্ডে ফিরে যেতাম আমার রংপুরে…আমার শৈশবে। শৈশবে বসেই খুঁজে বেড়াতাম আরেক শৈশবকে…আমার ফেলে আসা রংপুরের রূপসী গ্রামের সেই মেঠোপথ…ঘুড়ি উড়ানোর সেই চওড়া মাঠ…সেই বিস্তীর্ণ ফসলের গালিচা…ধানক্ষেতের পানিতে নড়ে উঠা সেই চতুর মাছের আনাগোনা…বর্ষা এলে টানা জালে তুলে আনা মাছের আহাজারী…ফসলের মাঠের আইল ধরে বেয়ে চলা সেই স্কুলের মেঠোপথ…ধুলোমাখা গ্রাম্য শিশুর পুকুরে ডুবখেলা…!!
মনটাকে রংপুরে রেখে দেহটাকে ঢাকার মত করে লালল করতে লাগলাম…বাবার মত করে…তাঁর ইচ্ছাকে কর্তব্য মনে করে…তাঁর ইচ্ছাকে পূরণ করতেই পা রাখলাম একসময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের চত্বরে…ঢাকা ভার্সিটিতে বায়োকেমিস্ট্রিতে চান্স পেয়েছিলাম…জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটিতে ফার্মেসীতে…কিন্তু বাবার ইচ্ছা…ডাক্তারী পড়তে হবে…কারণ, ছোট বেলায় অর্থাভাবে তিনি ডাক্তার হতে পারেননি…তাঁর বন্ধুরা পেরেছেন…তাই তাঁর অপূর্ণতা পূরণ করার দায় এলো আমার ঘাড়ে…
ডাক্তার হলাম…বলতে গেলে বাবার দৃষ্টি দিয়েই দেখলাম এক মেয়েকে… একদিন সেই মেয়েটিই ঘরে এলো বাবার বউমা হয়ে।

ব্যাস, এগিয়ে চলার গল্পটা এখানে এসে নতুন মোড় নিল! আমার কষ্টের সব পর্দা ভেদ করে একটা আনন্দ ভোমরা বের হয়ে এলো…নাম রাখা হলো আরিজ!
আরিজের জন্মদিনে আমারও জন্ম হল। এ জন্ম বাবা হিসেবে। অনেকে জিজ্ঞেস করে বাবা হিসেবে প্রথম অনুভূতি কি?
আমি বলি, যেদিন বাবা হলাম সেদিনই প্রথম বুঝলাম বাবা কি জিনিস। নিজ বাবার প্রতি বাড়তি টানটা সেদিনই প্রথম অনুভব করলাম।
আরিজই প্রথম শেখালো বাবা কি, বাবার স্নেহ কি, সন্তানের প্রতি বাবার মমত্ব কি!
দিন যাচ্ছে, আরিজ বড় হচ্ছে। শক্ত হচ্ছে ওর চাওয়াগুলো…দৃঢ় হচ্ছে ওর অস্থিমজ্জা, ওর মনটা।
ধীরে ধীরে দূর্বল হচ্ছে শুধু আমার বাবাটা। আগের মত রাগেনা। ধমক দেয় না। বকা দেয় না। পথ দেখায় না। ভালমন্দ শেখায় না। সবক্ষেত্রে একটা সমীহ সমীহ ভাব। নিজ ছেলের জন্য কোথায় একটা ভয় ভয় ভাব আগলে রাখে সে।
মাঝেমধ্যে যখন খেই হারিয়ে ফেলি…শত মানুষের ভীড়ে একা হয়ে পড়ি…খুব রাগ হয় বাবার উপর!
মানুষটা এমন কেন! বয়স হয়েছে। বাবা হয়েছি। জীবন যুদ্ধে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছি। কিন্তু বাবার সাথে বয়সের পার্থক্যটা সেই এক জায়গাতেই যে থেমে আছে!
এখন উল্টো আমি রাগ হই…অভিমানে কড়া ভাষা গুলোও বের হয়ে যায়।
আশ্চর্য! বাবা মুচকি হাসে। রিয়্যাক্ট করেনা। আগের মত রাগও করেনা। অভিমানও না। আমার জীবনের প্রথম নায়কটা কেমন জানি চুপসে গেছে। প্রতিবাদ নেই বললেই চলে। শান্ত একটা পুকুরের মত। অনেক পানি কিন্তু সেখানে জোয়ার নেই। অনেক গভীরতা কিন্তু ঢেউ নেই। কিন্তু আমার যে এরকম বাবাকে ভাল্লাগেনা। এখনো মন চায় বাবা আমাকে ধমক দিক। বলুক, এটা ভাল ওটা খারাপ। আগলে রাখুক সর্বদা ছায়া হয়ে।
হালের ফ্যাসবুক ফ্যাশন এখনো প্রবেশ করেনি আমার দেহ মনে। তাই বলব না যে আমার বাবা শ্রেষ্ঠ বাবা। কোনদিন সেটা ভাবিও নাই। ছোটবেলায় সব সময় মনে হত আমার বাবা সবচেয়ে পঁচা বাবা। অমুকের বাবা কত ভাল! কত কি কিনে দেয়! মারে না। ধমকায় না। যা চায় সব দেয়। কিন্তু আমার বাবা কখনো দেয়না।
আজ কাকতালীয়ভাবে একটা ঘটনা ঘটেছে। বাবার খুব স্বপ্ন দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু সময় কিংবা সামর্থ কোনটাই তার পক্ষে ছিল না। তাই ভাবলাম হোক না একটা স্বপ্নপুরণ ছেলের হাত ধরে!
সকালেই বললাম, সিংগাপুর যাবা নাকি?
বাবা যেন বিনামেঘে তুফানের আওয়াজ পেল।
এক সেকেন্ড সময় নিল না রাজী হতে। ছোট্ট বেলার সেই অবুঝ সাকলায়েনের মত। কখন বাবা এসে বলবে, যাও ম্যাগগাইভার দেখে এসো!

আমি অবশ্য একেবারের জন্যেও ভাবিনাই বাবা যাবেন। কারণ তাঁর তো পাসপোর্টই নাই। বাবা অবাক করে দিয়ে বললেন, তার পাসপোর্ট অনেক আগেই করা। চোখটা ছলছল করে উঠল। বিদেশ কোনদিন না গেলেও পাসপোর্ট ঠিকই করে রেখেছে!
সময় পক্ষে থাকলে শীঘ্রই বাবাকে নিয়ে সিংগাপুর যাচ্ছি। নো শপিং, নো এ্যামিউজমেন্ট পার্ক। শুধু রাস্তা আর ফুটপাত ধরে বাবা-ছেলে ঘুরে বেড়াব। হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে বসব।
বড় ঢেউটা যখন পায়ের উপর এসে আঁছড়ে পড়বে তখন বাবাকে বলব-
বাবা তোমার মনে আছে, বিয়ের আগের দিন আমাকে ডেকে একটা জোকস শুনিয়েছিলে!

বাবা ভুলে যাওয়ার ভান করবে। আমি জোকসটা বলা শুরু করব।
‘সাকলায়েন, বিবাহিত পুরুষ আর অবিবাহিত প্রেমিক পুরুষের মধ্যে পার্থক্য জানো?
না তো..কেন?
শোন,
অবিবাহিত প্রেমিক…সাগর পাড়ে প্রেমিকার পাশে বসে…সাগরের উত্তাল ঢেউ দুচোখ ভরে দেখে…সেই ঢেউয়ে পুলকিত হয়! আর বিবাহিত পুরুষ সেই ঢেউয়ে হাবুডুবু খেতে থাকে!’

তোমার কথাই সত্যি বাবা। জীবন সত্যি একটা যুদ্ধের নাম। এ যুদ্ধে কখনো ডুবি। কখনো ভাসি। ছোট্টবেলায় শুধু একটা স্বপ্নই দেখতাম। কবে বড় হব। কবে বাবাকেও ছাড়িয়ে যাব। এতোটাই ছাড়িয়ে যাব যে বাবা শাসন করার সাহস হারিয়ে ফেলবে! বড় হয়েছি অনেক বাবা। কিন্তু মনে হয় ঐ দিনগুলোতেই ভাল ছিলাম। মাঝেমধ্যে যখন ভালো লাগাগুলোকে হারিয়ে ফেলি। সব আনন্দগুলো যখন একেবারে হারিয়ে যায় তখন পিছনে ফিরে তাকাই। বাবার সেই শাসনের দিনগুলো ফিরিয়ে আনি। জাবর কাটি। খারাপ লাগাটা মুহুর্তেই আনন্দে রূপ নেয়।

জীবনটাকে মাঝেমধ্যে তাই ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারের মতো মনে হয়। যখন মনে হয় চেহারায় আর আগের জৌলুস নাই, তখন খুঁজে খুঁজে পুরাতন ছবিগুলো বের করি। সবচেয়ে সুন্দরটাকে আপলোড দেই। মানুষ বাহবা দেয়। আমি কৃত্রিম সুখে গা ভাসাই। ভালো থাকি।
আমার বাবাকে সত্যিই কখনো মনে হয়নি শ্রেষ্ঠ বাবা। কিন্তু আজ আমি নিশ্চিত বলতে পারি আমার বাবা আমার কাছে শ্রেষ্ঠতম দান। ভালো থেকো বাবা আমার আরিজের সমান আয়ু নিয়ে। আমি ভাগ্যবান বাবা। আমার একজন বাবা আছে। কতজন তো প্রাণ খুলে কাউকে বাবা ডাকার যোগ্যতাওটা হারিয়ে ফেলেছে। চীরতরে! তবুও… তোমার জন্যে খুব হিংসে হয় বাবা! খুব হিংসে। তোমার মত আমার যে একটা সাকলায়েন নেই বাবা।

 

সাতক্ষীরায় ঢাবি ছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ

সাতক্ষীরায় ঢাবি ছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ


নারী সংবাদ


সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ ও ব্লাকমেইল করেছে আব্দুল হাই ওরফে রাজু (২৬) নামের এক যুবক। ওই ছাত্রীর ল্যাপটপসহ কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে পুলিশ রাজুকে গ্রেফতার করেছে। রাজু কালীগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়নের বাজার গ্রাম রহিমপুর এলাকার শেখ রওশান আলীর ছেলে।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ঐ মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। পাঁচ মাস আগে ওই ছাত্রীর ক্যানসারে আক্রান্ত বন্ধুর জন্য তহবিল সংগ্রহের সূত্র ধরে রাজুর সাথে তার পরিচয় হয়। সেই সুযোগে গত ১৪ এপ্রিল ওই ছাত্রী ঢাকা থেকে বাসযোগে বাড়ি আসার পথিমধ্যে রাজু ওই ছাত্রীকে বাস থেকে নামিয়ে নলতায় তার এক বোনের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে রাজু ওই ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে সে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করে। একপর্যায়ে রাত ১০টার দিকে রাজু ধারালো চাকু দেখিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে তাকে ধর্ষণ করে এবং মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। পরের দিন ওই ছাত্রী বাড়িতে আসার পর রাজু তাকে মোবাইলে ফোন করে হুমকি দিয়ে বলে এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বললে ভিডিওটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবে। মান-সম্মানের ভয়ে ওই ছাত্রী এ ঘটনা এতদিন চেপে রেখেছিল। থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম আজিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে অভিযুক্ত রাজুকে গ্রেফতার করে তার কাছ থেকে ল্যাপটপটি উদ্ধার করেছে। মঙ্গলবার আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলা হাজতে পাঠানো হয়েছে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক।

 

আমার কাছে বাবার দায়িত্ব


মিথিলা ফেরদৌস


বাবা দিবস মাথায় রেখেই আব্বাকে ফোন করলাম।আমার বাবার অবশ্য দিবস নিয়া তেমন কোনও মাথা ব্যথা কখনওই ছিলনা।এমনকি সে আমার জন্মদিবসও মনে রাখতে পারেনা।কিন্তু আজ ফোন করার পর মনে হলো,সে অপেক্ষাই করছিল,আমার ফোনের জন্যে।

ঃআজ বাবা দিবস!
ঃহ্যা জানি তো!
ঃতুমি “বাবা দিবস” জানো!!
ঃবাবা হিসেবে কোনও দায়িত্ব তোমার জন্যে কখনও পালন করিনি।
ঃকথা সত্য।পালন করা উচিৎ ছিল।এখন আর কি করবা?
ওপাশে মন খারাপের নিঃশব্দতা।আমি বলতে থাকি।
ঃযা করোনি, করোনি,এখন করা শুরু করো।ঠিকঠাক মতো ঔষধ খেতে হবে,সুস্থ হতে হবে আরও বহুদিন দায়িত্ব নিয়ে সুস্থ থাকতে হবে,তোমার নাতির মানুষ হওয়া দেখতে হবে।আপাতত সুস্থ থাকাটাই আমার জন্যে তোমার দায়িত্ব।যেহেতু আগে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করছো।ঠিক আছে?
ঃঠিক আছে।
ঃতুমি কি কখনও আমাকে আদর করোনি?
ঃআদরই করছি,আর কিছু তো করিনি।
ঃবাবারা আদর ছাড়া আর কি কি দায়িত্ব পালন করে?
ঃতোমার মা তোমার জন্যে যে কষ্ট করছে তার একটুও আমি করিনি মা।
ঃতাও ঠিক।কিন্তু তুমি কি আমাকে খাওয়াওনি,পড়াওনি?
ঃকরছি।সেইটা খুব ভালভাবে করতে পারিনি।
ঃআমারতো কখনও এমন মনে হয় নাই।কারো চেয়ে কম আয়েশ করে আমি মানুষ হইছি! আমার কোনও আবদার অপূর্ন ছিল বলে আমার তো মনে পরেনা।বরং অনেকের চেয়ে অনেক কিছুই আমাদের ছিল,যা অন্যদের ছিল না, সেই আমলে।তুমি খেয়ালি ছিলে।আমার খেয়ালি বাবাই পছন্দ।হুট করে ভাল চাকরী ছেড়ে দিলে।বাপের টাকায় বানিজ্যে মনোনিবেশ করলে।সেইটায় মাঝে মাঝে চাংগা ভাব আবার মাঝে মাঝে অভাব।মোটকথা ধনী, গরীবি সব কিছুর সাথেই আমাকে অভ্যস্ত করেছো।তাহলে শুধু একসাইড ভাবো কেন?আমাকে সময় দিয়েছো।পরিক্ষার আগে বসে,তোমার ফাকিবাজ মেয়েকে রচনা,চিঠি সব ছোট করে দিতে,গ্রামার পড়াতে।ইংলিশে খুব ভাল মার্কস পেতাম তোমার জন্যে।এই যে বই পড়া অভ্যাস তা গড়ে উঠার পিছনে তোমার আর আম্মার দুইজনের অবদান ছিল।বই পড়ার অভ্যাসটাই আমার বেজ দাড় করিয়ে দিয়েছে।পড়াশুনায় ভাল হতে গেলে শুধু পাঠ্য পুস্তক বেশি পড়তে হয় না।আনন্দের মাধ্যমে অন্য বই পড়লেও সেইসব বুদ্ধিমত্তা তীক্ষ্ণ করে।তুমি সেই বেজ দাড় করিয়ে দিয়েছো।

আব্বা কথা বলতে পারেনা,শুধু বলে,
ঃআশু(তার গুনধর নাতি) কি করে?
ঃসে প্লান করছে তোমার সাদা চুল সেলুনে গিয়ে রঙ করে আনবে।সে যখন বড় হয়ে গাড়ি কিনবে,সেই গাড়ি তোমাকেই চালাতে হবে আব্বা।তোমাকে ওর গাড়ি চালানো পর্যন্ত সুস্থ থাকতে হবে।
ঃআচ্ছা মা ফোন রাখি।
ঃফোন রাখবা কেন?তুমি কেমন করে খারাপ বাবা হইলা,সেই হিসাবটা তো হওয়া দরকার তাই না?আমার দৃষ্টিতে যে বাবা তার ছেলে মেয়ে রেখে আরেকটা বিয়ে করে,সেই খারাপ বাবা!আমার বাবা সেই কষ্ট তো আমাকে দেয় নাই।তাহলে সে খারাপ বাবা হয় কি ভাবে !
ঃতোমার মত মেয়ে রেখে কোনও বাবা কি এমন করতে পারে মা?
ঃপারে আব্বা,অনেক বাবাই করে।ছেলে মেয়ে দেখে না।তোমাকে কখনও নিজের শখের কিছুই কিনতে দেখিনি।একটা ঈদ যায় নাই,আমি জামা নিই নাই এমন।অথচ তোমাকে কখনও ঈদে কিছুই নিতে দেখিনি।সেই না দেখা আমার প্রতি ঈদ আমি তোমার জন্যে ঈদে তোমার জামা কিনে কি শান্তি পাই তোমাকে কখনও বোঝাতে পারবো না।আমার ছেলে যখন তোমার জন্যে জুতা পছন্দ করে,তোমার মেয়েজামাই যখন পাঞ্জাবি কোনটা কিনবে কোনটা কিনবে না কুলকিনারা পায় না।সেই সুখগুলা আমি কখনও তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না।তুমি শুধু সুস্থ থাকো আব্বা,এর চেয়ে বড় দায়িত্ব একটা বাবার জন্যে একটা সন্তানের আর দরকার নাই।
ঃমা রাখি!
আব্বা ফোন রেখে দেয়।

যার বাবা নাই,পৃথিবীতে সেই জানে বাবা শব্দটার আসল অর্থ।তুমি অন্তত আমাকে সেই কষ্ট কখনও দিও না আব্বা।তুমি সুস্থ থাকো শুধু আমার দিকে চেয়ে।তোমার প্রতিটা অসুস্থতার সংবাদ আমাকে কি অসহায় করে দেয় কিভাবে তোমাকে বুঝাবো!প্রতি রাতে হুট করে কোনও ফোন আসলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে,আল্লাহ আমাকে এমন কষ্ট কখনওই দিও না,আমার যে কোন ভাল কাজের বিনিময়ে আমার প্রিয় মুখগুলিকে সুস্থ রেখো। শেষের কথাগুলি একাই মনে মনে বলতে বলতে ফোনটা শক্ত করে ধরে থাকি।বাবার প্রতি দায়িত্ব আমার নিজেরও পালন করা হয় না।অসুস্থ বাবাকে দূরে রেখেই আমাকে থাকতে হয়।তার অসুস্থতায় অনেক সময় যেতে পারিনা,অফিসে জানিয়ে গেলেও এসে দেখি খাতায় বড় করে লাল দাগ কাটা।যারা দাগ কাটে তারা কি কখনও বাবার মিথ্যা অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়েছিলো?কেন তাহলে অবিশ্বাস করে! আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে।বাবা দিবসে কর্তৃপক্ষের কাছে অন্তত একটা অনুরোধ থাকবে,আপনার কোনও সহকর্মীর সাথে এতটা নির্দয় হবেন না।পরিস্থিতি একদিন আপনাকেও এমন কষ্টের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারে।

 

ভারতে ‘মস্তিষ্ক অসুস্থতায়’ ১০৩ শিশুর মৃত্যু, বিক্ষোভ


নারী সংবাদ


ভারতের অন্যতম দরিদ্রতম বিহার প্রদেশে রহস্যজনক মস্তিষ্কজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক শিশুর মৃত্যুতে সেখানে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মস্তিষ্কজনিত এ রোগের সঙ্গে গ্রীস্মকালিন ফল লিচুর সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

চলতি বছর পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ বিহারের মোজাফ্ফরপুরে ১০ এবং তার চেয়ে কম বয়সী ১০৩ শিশু একিউট এনসেফালিটিস সিনড্রোম (এইস)-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। মৃতের সংখ্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। আরো অনেক শিশুই হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। টেলিভিশনের খবরে অনেক শিশুকে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখা গেছে।

মঙ্গলবার বেশ কিছু সংখ্যক লোককে কর্তৃপক্ষের স্থবিরতা ও অযতেœর অভিযোগ নিয়ে মোজাফ্ফরপুরের প্রধান হাসপাতালের বাইরে ভীড় করতে দেখা গেছে। রোববার এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলণ চলাকালে ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের কাছে জানতে চাওয়ায় এ বিষয়টি নিয়ে সমালোচিত হয়েছেন প্রাদেশিক স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বিরোধী দলীয় কংগ্রেস নেতা রণদীপ সূর্যবালা টুইটারে মন্তব্য করেছেন,‘ বিহারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী শিশু মৃত্যুর চেয়ে ক্রিকেট স্কোর নিয়ে অধিক উদ্বিগ্ন।’ অপর বিরোধী দলীয় ব্যক্তিত্ব রাবরি দেবী শিশু মৃত্যুকে, ‘ ঠান্ডা মাথার খুন’ বলে মন্তব্য করেছেন।

তিনি টুইট করেছেন, ‘ ওষুধ ও চিকিৎসার অভাবে শিশুরা মারা যাচ্ছে।’ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার মঙ্গলবার বিহারের সরকারি হাসপাতাল শ্রীকৃষ্ণ মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করেন, সেখানে বেশিরভাগ শিশুই মারা গেছে। গণমাধ্যমকে ভেতরে প্রবেশের ও অসুস্থ শিশুদের পরিবারের সদস্যদের বহিরাঙ্গণে গোলোযোগ সৃষ্টির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

রোগের বার্ষিক প্রাদুর্ভাব

এইএস-এ আক্রান্ত শিশুদের রক্তে শর্করার অতি দ্রুত পতন, উচ্চ তাপমাত্রা, খিচুনী ও পক্ষাঘাত হতে দেখা যায়। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্নভাবে শরীরে বিষক্রিয়া এ রোগের কারণ। ১৯৯৫ সাল থেকে এতাদ্ঞ্চলে প্রতি বছর গ্রীস্মকালে এবং সাধারণভাবে লিচুর সময়ে সব সময় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ২০১৪ সালে এই রোগে শিশু মৃত্যুর রেকর্ড সংখ্যা ১৫০ জন। অন্যান্য বছরে মৃত্যুর সংখ্যা সেই তুলনায় কম।

বেশ কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকগণ জানিয়েছেন, গ্রীস্মকালিন লিচুর ভেতরের এক ধরণের বিষাক্ততা এ মস্তিস্ক রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। গবেষকগণ, এ অসুস্থতার কারণ নির্ণয়ে আরো বেশি গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে বলে মতামত দেন। স্থানীয়ভাবে ‘চামকি বুখার’ নামে পরিচিত এ রোগ তৃতীয় ধরণের মারাত্মক।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার ও প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষকে এ রোগ মোকাবিলায় ভ্যাকসিন ও সচেতনতা কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছে। মঙ্গলবার হিন্দু পত্রিকায় এক সম্পাদকীয় বলা হয়েছে, কিছু দূরদর্শীতা ও প্রারম্ভিক যত্ন অতি সহজেই মৃত্যু কমিয়ে আনতে পারে।

এতে তুলে ধরা হয়, ২০১৪ সালে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষজ্ঞ দলের হস্তক্ষেপে শতকরা ৭৪ ভাগ শিশুর জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিল। এতে আরো বলা হয়, চলতি বছর সরকার এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রায় ১০ কোটি লোক অধ্যুষিত বিহার ভারতের দরিদ্রতম প্রদেশগুলোর অন্যতম। সম্প্রতি সেখানে ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার লু হাওয়া বয়ে গেছে। সেখানে দরিদ্র পরিবারের শিশুরা যারা এমন কি পেটপুরে খেতে পায় না তারা খালি পেটে লিচু খেয়ে মস্তিস্ক রোগের শিকার হয়। সূত্র : বাসস।

 

অভিমানী মনের আত্মদহন… শেষ খন্ড

অভিমানী মনের আত্মদহন… শেষ খন্ড


আফরোজা হাসান


আফরা হেসে বলল, জ্বি আপি। আমি গতকাল ধরতে চেষ্টা করেছিলাম। ধরতে যাচ্ছিলাম তখনই প্রজাপতি উড়ে অন্য আরেকটি ফুলে বসছিল। আমি পা টিপে টিপে সেই ফুলের কাছে গিয়ে ধরতে চেষ্টা করলাম প্রজাপতিটি আবারো উড়ে গেলো। এমন কয়েকবার করার পর শেষপর্যন্ত প্রজাপতিটি উড়তে উড়তে আমাদের বাগান থেকেই বাইরে চলে গেলো।
মারওয়া হেসে বলল, গতকাল তোমার আর প্রজাপতির কর্মকান্ড আমি দেখেছিলাম। জানো আফরা আমাদের মন বাগিচায়ও এমন বর্ণিল প্রজাপতির রূপে সুখ-শান্তি বসে থাকে চুপটি করে। সেই বর্ণিল প্রজাপতির সৌন্দর্যে লালায়িত হয়ে আমরা ছুটে যাই ধরার জন্য। সুখকে হাতের মুঠোয় পুরে ফেলতে চাইলে বেশির ভাগ সময়ই সেটা উড়ে আরেকটু দূরে সরে বসে। ধরে ফেলার চেষ্টা অব্যহত থাকলে একসময় বিরক্ত হয়ে সুখ মন বাগিচা ছেড়েই চলে যায়। সুখকে তাই কখনোই ধরতে চাওয়া ঠিক না। তাছাড়া মনের বাগিচাটা যেহেতু তোমার সেহেতু বাগিচার ফুল, পাখী, ফড়িং, প্রজাপতি, জোনাকি সবকিছুও তোমার। যা তোমার তাকে শুধু শুধু খাঁচায় কিংবা স্বচ্ছ কাঁচের জারে বন্দি করতে যাবে কেন? আকাশে ডানা মেলা পাখী আর খাঁচায় বন্দি পাখীর আনন্দ কি কখনো একই রকম হতে পারে? ফুলের বুকে প্রজাপতি আর তোমার দুই আঙ্গুলের মাঝে ছটফট করতে থাকা প্রজাপতি সৌন্দর্য কি এক? আমরা জানি এক না। অনেক পার্থক্য বিদ্যমান দু’য়ের মাঝে। কিন্তু তবুও শুধু নিজের করে পাবার লোভে আমরা কোন কিছুকে তার স্বকীয়তা থেকে আলাদা করতে দ্বীধা করি না। আমাদের জীবনের সম্পর্কের বন্ধনগুলোও কিন্তু এমনই। নিজের করে পেতে গিয়ে, নিজের মনের মত করে চাইতে গিয়ে আমরা সম্পর্কগুলোর প্রকৃত সৌন্দর্য ও আনন্দানুভূতি হারিয়ে ফেলি।
আমিও কি এমনটা করছি আপি?
মারওয়া হেসে বলল, আমার কাছে অভিমানে সবচেয়ে খারাপ দিক কি মনেহয় জানো? অভিমানের ভেতর সুপ্ত অবস্থায় থাকে জেদ। সেই জেদ মনে একধরণের প্রতিযোগী মনোভাবের জন্ম দেয়। মানে হচ্ছে, অপর পক্ষকেই আগে নিজের ভুল বুঝে সরি বলতে হবে। আমি কেন আগে যাবো? তাকেই আগে আসতে হবে! এই যে একটা হার-জিতের মনোবাসনা তৈরি হয়! এটাই আসলে যত সমস্যার মূলে। আমাকেই কেন সবসময় বুঝতে হবে? আমাকেই কেন ত্যাগ স্বীকার করতে হবে? সবসময় কি আমিই ছাড় দিয়ে যাবো? আমার আবেগই কেন সবসময় এমন মূল্যহীন থেকে যাবে? ইত্যাদি আরো নানা প্রশ্নের উদ্রেক ঘটে অভিমানী মনে! অভিমান মনকে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় জমিয়ে দেয়। সমস্যা হচ্ছে, সেই বরফকে গলানোর মত সঠিক উষ্ণতা বেশির ভাগ সময়ই অপর পক্ষ দিতে ব্যর্থ হয়। যেহেতু অপর পক্ষের জানা থাকা না মনের ঠিক কতটা তাপমাত্রা প্রয়োজন। মনকে তাই কখনোই বরফ হতে দিও না। তো কি হয়েছে স্বামী কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেনি?! চোখ পাকিয়ে কঠিন করে একটা ধমক এবং সাথে পরবর্তীতে এমন করলে শাস্তি দেয়া হবে সেই থ্রেট দিয়ে দুষ্টুমি করেই তো মিটিয়ে দেয়া সম্ভব ঘটনাটি। আমার এক যুগের দাম্পত্য অভিজ্ঞতা বলে যে, ভালোবাসার চেয়েও পার্টনার আমার ব্যর্থতা, অপারগতা, অসহায়ত্ব বোঝে, প্রতিকূল পরিবেশে আমাকে সাপোর্ট করে। এটা অনেক বেশি প্রভাব ও শ্রদ্ধাবোধের জন্ম দেয় তার মনে অপর পার্টনারের প্রতি।
আমি বুঝতে পেরেছি আপি।
মারওয়া হেসে বলল, না তুমি এখনো বুঝতে পারোনি। এত দ্রুত আসলে বোঝার দরকারও নেই। তবে প্রথম যে জিনিসটা তোমাকে বুঝতে হবে সেটা হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর ভিন্ন গ্রহ থেকে আসা কোন সম্পর্কের নাম নয়। আমাদের জীবনে বিদ্যমান অন্যান্য সম্পর্কের মতই এটি আরেকটি সম্পর্ক। আমার কথাই যদি বলি। এমন কতবার হয়েছে বাবা কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাবার কথা বলে নিয়ে যাননি। ভাইয়ারা পছন্দের মূল্য না দিয়ে জোড় করে অপছন্দনীয় কিছু চাপিয়ে দিয়েছেন। বোনেরা নষ্ট করে ফেলেছে খুব প্রিয় কিছু। মামণি অকারণেই বকাঝকা করেছেন। সেসব কি মেনে নেইনি আমি? ভুলে যাইনি কি? ছেড়ে দিয়েছি কি তাদেরকে অন্যায় আচরণের জন্য? এর কারণ কি বাবা-মা-ভাই-বোনকে ডিভোর্স দেয়া যায় না এটা? নাকি অকৃত্রিম ভালোবাসা? তাহলে স্বামীর ভুল কথা বা ভুল কাজ মেনে নিতে সমস্যা কোথায়? যেখানে সেই মানুষটাকে জড়িয়েই আমার জীবনের সবকিছু। নাকি ছেড়ে দেয়ার অপশন থাকার কারণেই এই সম্পর্কটির ক্ষেত্রে আমাদের মন ত্যাগ স্বীকার করতে এত বেশি কার্পণ্য করে? এটাই আসলে ফ্যাক্ট বুঝলে। জীবনের অংশ করে নিতে পারি না বলেই ছোট ছোট কথা, কাজকে ইস্যু করে একে অন্যেকে জীবন থেকে বের করে দিতে পারি। তাই এটা বোঝার চেষ্টা করো তোমার স্বামী তোমার জীবনের জন্য কতটা জরুরি। এই বিষয়টা বুঝতে পারলেই বাকি সবকিছু বোঝাটা তোমার জন্য সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আফরা হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ আপি আমি এখন থেকে এভাবেই ভাবতে চেষ্টা করবো। অভিমানের অনলে নিজেদের সম্পর্ককে আর কখনোই জ্বালাবো না। বরং যখনই কোন কিছু আমাদের মাঝে সমস্যার উদ্রেক করতে চেষ্টা করবে, আমরা দুজন মিলে সেটা নিয়ে মন খুলে কথা বলবো। এবং দুজন মিলে সেটার সমাধান করার চেষ্টা করবো।
মারওয়া হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ। এখন চলো আমরা রান্নায় মনোযোগ দেই।

লিখেছেন- আফরোজা হাসান

 

ছায়াদানকারী বট বৃক্ষ

ছায়াদানকারী বট বৃক্ষ


শামছুন নাহার মলি


২০১২ সালে প্রথম যে বার দেশ ছাড়লাম।আব্বা আমার জিপি নাম্বারে কল দিতেই থাকতেন।দুঃক্ষিত আপনার কাঙ্খিত নাম্বারে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা,অনুগ্রহপূর্বক আরেক টু পর আবার ডায়াল করুন। আব্বা আরেকটু পর আবার ডায়াল করছিলেন।বারবার,যদি মলির ফোনে কল যায়।এখন কি মলি আকাশে?নেটওয়ার্কেরর বাইরে?আবার কল দেয়।কল আসলে অন্যদের বলে মলিকে কল দিচ্ছি,একজন মেয়ে বলে একটুপর আবার কল করুন।এতবার কল দিচ্ছি মলি তো ধরেনা। অনেক পরে আব্বাকে বোঝানো গেছিলো মলি এখন নেটওয়ার্কেরর বাইরে।
ফিনল্যান্ডে আসার পর বুঝলাম আব্বা কতটা ভালবাসে,আমার একাকিত্বে কতটা ভয় পায়।প্রতিদিন কল দিলে আব্বা কথা বলতেন।আমি কি বলবো, কেমন আছেন আব্বা?ব্যাথা কমেছে?গরম কেমন?
এর পর আর কিছু বলার আসতো না।
আব্বার প্রশ্নের পর্ব শুরু।বাছা,ওখানে কি কি পাওয়া যায়?কি মাছ খাও?স্যালমন ফিস?স্যালমনের মাথা দিয়ে মুড়ো ঘন্ট করো খুব ভাল লাগে।লন্ডনে গিয়ে তোমার ভাইয়ার বাসায় খেতাম।বাছা বাংলাদেশি সবজি,ফল পাও তো?আরো কত কি?
সাম্মান কে পেটে নিয়ে দেশে গেলাম ৫ মাসের জন্য,একটা সেমিস্টার করবো।আগে আব্বাকে ফল কেটে আমি খাওয়াতাম।এবার অবাক করে দিয়ে আব্বা নিজেই আমাকে এলাকার মিষ্টি পেয়ারা ভাত খাওয়ার পর ঔষধের মত নিয়ম করে কেটে খাওয়াতেন। কারণ ভাত খাওয়ার পর পেয়ারা না খেলে মলির বমি বমি লাগতো।
দেশি ফল কেটে দিতেন পাশে বসিয়ে।আমার কি যে অস্বস্থি লাগতো।তারা নিজেই অসুস্থ।আমি তাদের সেবা করার চান্স পাইনি সেবার।৭ মাসে চলে আসবো ঢাকা থেকে।আব্বা আম্মা নাতির জন্য কাঁথা,আমার জন্য খাবার নিয়ে মেজ আপুকে নিয়ে রওনা হবেন ঢাকার উদ্দেশ্যে।দেশে তখন ভয়ংকর পরিস্থিতি।পরদিন সকালে সারা দেশে হরতাল।রাতের গাড়িতে সাতক্ষীরা থেকে রওনা হলে সকালে গাবতলি থেকে মীরহাজির বাগ যাওয়াটা কঠিন হবে।সিএনজি,বাসে আগুন জ্বালিয়ে দিতো,গুলি,এ্যারেস্ট ও তুমুল ভাবে।
আমি কাঁদলাম প্লিজ আসবেন না আব্বা ঢাকায়,এই পরিস্থিতিতে আপনারা ঢাকায় আসলে বিপদ।আমরা টেনশনে মরে যাবো।আব্বা আম্মা টিকেট নিয়ে গাড়ীতে উঠবে,আমি আর ছোট ভাইয়া হাতে পায়ে ধরে বল্লাম আব্বা বাড়িতে নিরাপদ এ থাকলে তাতেই আমাদের শান্তি।দেশের এ পরিস্থিতি তে বের হয়েন না।আম্মা বলে,মলি পরীক্ষা দিয়ে আর বাড়ি এলো না।আমি একটু না দেখে অসুস্থ মেয়েকে কিভাবে যেতে দিই।
আমার মণ কে পাষাণ বানিয়ে বল্লাম,আম্মা বাড়ি ফিরে যাও,আমার জন্য তোমাদের কিছু হয়ে গেলে সারা জীবনেও শান্তনা খুঁজে পাবোনা।আব্বা আম্মা বল্লেন এত টাকা দিয়ে টিকেট কাটলাম।বল্লাম জীবনের দাম আরো বেশি।কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে গেলেন।আমি ফিনল্যান্ডে আসার পর ডিলিভারি রুমে যাওয়ার পরও আব্বার সাথে কথা বলা লাগছে।
সাম্মান হলো,আব্বা সহ সবাই কি খুশি।আলহামদুলিল্লাহ্‌।আব্বার আর কথা বলার তোড়জোড় নাই।দু তিন দিন হয়ে গেলো।আম্মাকে বল্লাম আব্বা কই?বলেন,আছে।এখন তোমার একটা খেলার সাথি হয়েছে,ব্যস্ত থাকার সম্পদ হয়েছে তাই তোমার আব্বা নিশ্চিন্তে আছে তোমাকে নিয়ে।বাবা নামের মানুষ গুলো আসলেই অন্যরকম।আল্লাহ সকল মাকে নেক হায়াত দিন।সন্তানদের ছায়াদান কারী বটবৃক্ষ গুলো ভালো থাকুন দুনিয়া ও আখিরাতে।আমিন।

 

আমার ডাক্তার বাবা

আমার ডাক্তার বাবা


সুমাইয়া চৌধুরী


তিনি মূলত রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপক। তাঁর ডিগ্রী “Applied chemistry” এর উপর। কিন্তু তাঁর “Applied Homeopathy” দেখে আসছি সেই শৈশব থেকে ……হোমিওপ্যাথির উপর ভদ্রলোকের অগাধ আস্থা এবং শারীরিক অসুস্থতায় তিনি হোমিওপ্যাথিকেই বেছে নেন। সাগুদানার মতো দেখতে মিষ্টি ওষুধগুলো আমার কাছে চকলেটের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হতো আর শিশুচোরের উপদ্রবে এক ডোজের ওষুধ ৫-৬ বার কিনতে হতো ভদ্রলোককে।

অবসরে যাওয়ার পর ১ বছর বাসায় অবস্থান করলেন,,,,,পত্রিকা পড়েন , কোরআন পড়েন , মসজিদে যান সবই ঠিকমতো চলছে কিন্তু কোথায় যেন একটা অভাববোধ , শিক্ষকতাকালীন যে পড়াশোনা করতেন সেটার জন্য মন হাহাকার করে। অবশেষে ৬৭ বছর বয়সের আমার যুবক বাবা শিক্ষক থেকে ছাত্রে রূপান্তরিত হলেন ,ভর্তি হয়ে গেলেন হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজে ৪ বছরের DMHS (Diploma in Homeopathy Medicine and Surgery) কোর্সে।

কি তাঁর আনন্দ আর পড়াশোনার আগ্রহ !!! ক্লাসের ফাঁকে খাবে বলে মায়াবতী স্ত্রী নিয়ম করে টিফিন রেডি করে দেয়। আম্মা দেখি মাঝে মাঝে জানতেও চায় “ কয়টা বান্ধবী হলো তোমার ?” আব্বা নায়ক রাজ্জাকের মতো রহস্যময় হাসি দেয়।

আব্বা বরাবরই ম্যাথমেটিক্সে ভালো ছিলেন , বায়োলজি সাবজেক্ট টাই ছিলোনা তাঁর আর সেজন্য এনাটমি বা ফিজিওলজির এক্সাম এর সময় খুব স্টাডি করতে হতো। ২য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষে অভিভাবক হিসেবে জানতে চাইলাম “ ছাত্রের খবর কি ? রেজাল্ট খারাপ হলে পড়াশোনার খরচ বন্ধ।’’ আব্বা খুবই উদ্বিগ্ন স্বরে বললেন , “মা রে , এনাটমিতে পাস নিয়া চিন্তায় আছি”

আব্বা এখন ৪র্থ বর্ষের মেধাবী ছাত্র। কলেজে তাঁর যথেষ্ঠ সুনাম….পরীক্ষায় কোন অসুদপায় অবলম্বন না করে এই বয়সেও কঠোর অধ্যয়ন করার জন্য। চিকিৎসাও শুরু করেছেন , পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজনদের ওষুধ দিচ্ছেন নিয়মিত। বিশ্বস্তসূত্রে জানলাম তাঁর ওষুধ ভালো কাজ করে। বড় আপিও একদিন কথায় কথায় জানালো তাঁর বাচ্চাদের নাকি নানুভাইয়ের ওষুধ ছাড়া দেশের বাইরের ওষুধেও কাজ কাজ হয়না।

আব্বাকে কল দিলাম……..
-“কি ডাক্তার সাহেব, আপনারতো সেই নাম ডাক!!!! ”

আব্বা খুশিতে শরমে গদগদ কন্ঠে …….
– শোনো আমিতো বায়োকেমিক মেডিসিন দেই,এক ডোজেই হুম….

আমি বেশ সিরিয়াস হয়ে বললাম ,
—ফ্রী ফ্রী ওষুধ দেয়া যাবেনা , ওষুধের কার্যক্ষমতা কমে যাবে , আম্মাকে ওষুধ দিলেও মাথা টিপায়ে নিবেন , গা চুলকায়ে নিবেন।

কয়েকমাস আগে আমার পায়ে একটা ইনজুরি হয় , আব্বার কি আফসোস ,
— “ইসস , তুমি দেশে থাকলে এক ডোজ দিলেই ………”

আমি বললাম,
—আচ্ছা ঠিক আছে , দেশে এসে হাত পা কিছু একটা ভেঙে আপনার ওষুধ খাবো ”

আব্বা আমার সস্তা ফাইজলামিতে মহাবিরক্ত হয়।

মার্চে দেশে গেলাম। এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা পাতলা আবহাওয়ার মুখোমুখি। আম্মার মুখ শুকনো , মেয়ের জামাইকে ডাবের পানি আর স্যালাইন ছাড়া কিছুই খাওয়াতে পারছেনা। আব্বার চোখে মুখে চাপা আনন্দ….

ওর কাছে গিয়ে বলছে
—বাবাজি , চিন্তার কিচ্ছু নাই ……এক ডোজেই ……ইনশাআল্লাহ। ”

জামাইবাবাজি শ্বশুরের ডোজে সুস্থ হলো। আমি শুধু রাইস স্যালাইন খেয়েই সুস্থ হলাম বলে আমার উপর বেশ অভিমান করলেন। আব্বার পড়াশোনা চলছে , চিকিৎসাসেবাও চলছে। খুব আন্তরিকতার সাথে ওষুধ দেন। রোগীর জন্য দোয়া করেন।

সবার শেষ বয়সটা সুন্দর কাটেনা …..৭০ বছর বয়সে আমার শিক্ষানবিশ ডাক্তার বাবা মানুষের সেবা করার আনন্দময় ইচ্ছা নিয়ে সময় পার করছে আলহামদুলিল্লাহ !!!!

ইদানিং আমার শরীরটাও ভালো যাচ্ছেনা। ভাবছি ডাক্তার সাহেবের কাছে এপোয়েনমেন্ট নিবো।

 

শুধু শিশু নয় বরং বাবা-মা নতুনভাবে জন্ম নেন

শুধু শিশু নয় বরং বাবা-মা নতুনভাবে জন্ম নেন


ফাতেমা শাহরিন


একজন শিশুর জন্মের সাথে সাথে জন্ম নেয় একজন বাবা-মা। বর্তমানে ‘গুড প্যারেন্টিং’ শব্দটা বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। বাচ্চা মা বাবার কাছে সবচেয়ে দামী উপহার যেমন তদ্রূপ মা-বাবাও সন্তানের জন্য পৃথিবীতে বড় নিয়ামত। বাচ্চা আমাদের কাছ থেকে জেনে ও শিখে বড় হয়। একবারেই তো আর সবটা জানানো যায় না, আমরাও জানি না। জানতে হবে ধাপে ধাপে। এই ধাপগুলো নির্ধারণের সময় অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করে করে বাবা মা প্যারেন্টিং কিভাবে করতে হবে শিখেন।

এই ধাপগুলো সম্পর্কে জানুন ও তাদের সঙ্গে সবসময় একই আচরণ না করে ওই ধাপগুলো অনুযায়ী আচরণে পরিবর্তন আনুন।

বাচ্চার ব্যক্তিত্ব কেমন তা বুঝার চেষ্টা করুন

কোন বাচ্চা মিশুক কেউবা চুপচাপ, কেউবা শান্ত, কেউবা চঞ্চল। সুতরাং বাচ্চার মর্জি বুঝে সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার পক্ষে অনেক বেশি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করুন। বাচ্চা যদি বিদ্যুৎ চমকানি বা তেলাপোকা দেখে ভয় পায়, তখন সেটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া জরুরি। এটা অবহেলা করা অনুচিত।

প্রচুর সময় দিন

নিয়মতান্ত্রিক আর ধরা বাধা সময় না বরং বাচ্চাকে পর্যাপ্ত সময় দিন। বাইরেও তাদের নিজের ইচ্ছামতো ঘুরতে নিয়ে যাও। এটা তাদের সৃষ্টিশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও ভুমিকা রাখবে।

বাচ্চাকে বুঝতে শিখুন
আপনি যদি আপনার বাচ্চাকে বুঝার জন্য গুরুত্ব দেন এবং তা তুলে ধরতে পারেন, সেটা আপনাদের উভয়ের জন্যেই অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের হবে। শিশুরা চায়, বড়রা তাদের কথাগুলো আগে শুনুক। অনেক পরিস্থিতিই তাকেই সমাধান করতে দিন।

বাচ্চার কাছে নানান পরিচয়ে নিজেকে প্রকাশ করুন

মা বা বাবার পরিচয়টি আপনার কাছে অনেক বেশি আবেগময় অথবা সবচেয়ে পছন্দের হলেও কখনও বন্ধু, কখন শিক্ষক, কখনওবা দর্শক বা কখনওবা আপনার সন্তানকের স্টুডেন্ট হিসেবে বাচ্চার কাছে পরিচিত হোন।

বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয়

কিছু বলার চেয়ে করে দেখানোটা বাচ্চাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্ববহ।মনোযোগী বা কল্পনাশক্তিসম্পন্ন বলে ধারণা করি, তারা তার চেয়েও ঢের ক্ষমতা রাখে তাই আপনি আপনার বাচ্চাকে যেমন ভাবে গড়ে তুলতে চান তেমন আচরণ করুণ।

সুত্রঃ Parenting Guid. ছবির মডেলঃ আমান।

 

বার্ধ্যক্যের সীমাবদ্ধতা : ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম পর্ব -১

বার্ধ্যক্যের সীমাবদ্ধতা : ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম পর্ব -১


জিয়াউল হক


স্মৃতি লোপ পাওয়া : এর উৎপত্তিটা খুব ধীরে হয়। প্রথম প্রথম অতি সাধারণ কথাও মানুষ ভুলে যায়। ঘরের চাবিটা, হাতের কলমটা কিংবা একটু আগে ব্যবহার করা চশমাটা কোথায় রেখেছে, তা তারা ভুলে যান।
-এভাবেই শুরু। এরপর এর মাত্রা ও ব্যপ্তি বাড়তে থাকে ক্রমেই। এ ধারায় আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে কোন কাজে বা পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া বা তা ধরে রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ে।
– রোগটা আরও একটু এগিয়ে গেলে আক্রান্ত ব্যক্তি কারও সাথে আলাপচারিতায় বা কথোপোকথনের সময় সঠিক শব্দটিই খুঁজে পান না, বা সহজে মনে করতে পারেন না। অথচ তার কাছে শব্দটি াতি পরিচিত এবং সারাজীবন তা তিনি কথাবার্তায় ব্যবহার করেছেন অহরহ।
– এরপরে একটা পর্যায় এসে উপস্থিত হয় যেখানে তিনি সেই দিনটিতে করেছেন বা বলেছেন, এমন কোন কাজ বা কথা স্মরণ করতে অসুবিধা বোধ করেন বা স্মরণই করতে পারেন না।
– এরকম অবস্থা যখন হচ্ছে, তখন তিনি কারও কাছে তা স্বীকারও করতে পারছেন না, আবার এ থেকে কোন নিস্তারও পাচ্ছেন না, ফলে তিনি মনে মনে বিরক্ত হচ্ছেন। তার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। কথায় কথায় রেগে যাচ্ছেন।
– এ পর্যায়ে এসে তার স্বাভাবিক বিচার বিবেচনা লোপ পেতে শুরু করবে। কখনো কখনো তিনি এমনসব আচরণ করবেন যে, তার অতি নিকটজন, যারা তাকে খুব কাছে থেকে চেনেন, জানেন (যেমন- নিজের সন্তান বা স্ত্রী, এরা) বিশ্বাস করতে চাইবেন না যে তিনি এমন কাজ করতে পারেন বা এমন কথা বলতে পারেন।
– এরও পরে এসে কনফিউজড হতে শুরু করবেন। এ পর্যায়ে এসে দিনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম মানসিকতার প্রকাশ ঘটবে। কখনো চরম বিরক্ত (Irritable) হবেন।
– কখনো বা খুব মনমরা (Apathetic or Withdrawn) হয়ে বসে থাকবেন।
– কখনো বা তার আচার-আচরণে একরাশ হতাশা (Frustrated) প্রকাশ পাবে।
– আবার কখনো তার মন দুশ্চিন্তায় (Anxious) ছেয়ে যাবে।
– কখনো কখনো এমনসব জিনিস চোখে দেখতে পাচ্ছেন বলে দাবি করবেন আসলে তখন তার সামনে ঐসব জিনিসের কোন অস্তিত্বই নেই (Visual Hallucinations)।
– আবার এমন সব ধারণার কথা বলবেন যা অমূলক (Delusions), বাস্তবে যার কোন সংগত কারণ নেই।
– কোন ঘটনা বা কোন কিছু একটা বলতে গেলে তারা মাঝপথে ভুলে যান, ফলে তারা যা বলতে গিয়েছিলেন, তা বলতে থাকেন, তবে, এ ক্ষেত্রে তারা যে কাজটি করেন তাহলো- তারা ঘটনার যতটুকু মনে আছে তার সাথে কল্পনাপ্রসূত, অবাস্তব ও অসত্য কিছু কথা মিশিয়ে তাদের কথাগুলো পূর্ণ করেন। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকেই Confabulation বলা হয়ে থাকে।

চলবে…

 

বার্ধ্যক্যের সীমাবদ্ধতা : ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম পর্ব -২

বার্ধ্যক্যের সীমাবদ্ধতা : ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম পর্ব -২


জিয়াউল হক


সারা বিশ্বে প্রায় প্রতিটি প্রৌঢ় নারী-পুরুষর ক্ষেত্রেই কমবেশি এমনটা (Confabulation এর ঘটনা) ঘটে। আমাদের দেশে (এবং যে দেশে বা যে সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে গণসচেতনতা নেই, সেসব দেশ ও সমাজে) এসব প্রৌঢ়রা তাদের এ ধরনের আচরণের কারণে অনেক বিড়ম্বনা, অপমান ও নিগ্রহের শিকার হন।
আমার নিজের দেখা বেশ কিছু ঘটনা মনে পড়ছে এ সময়। প্রায় অশীতিপর বৃদ্ধ কিছুক্ষণ আগেও খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, এমন সময়, দূরের গ্রাম থেকে তার বড় মেয়ে বাবাকে দেখতে এসেছেন। বাবাকে পাশে বসিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কিছু খেয়েছেন কি না, বাবার সোজা সাপ্টা উত্তর হলো, না কিছু খাননি।
ষাটোর্ধ বিধবা কন্যা ছোট ভাইয়ের বাড়িতে, তারই আদরের ভ্রাতৃবধুর হাতে বৃদ্ধ বাবার প্রতি এ ধরনের অযতœ আর অবহেলা (!) দেখে ও স্বয়ং বাবার মুখে শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পাশে দাঁড়ানো বৃদ্ধের নাতি নাতনীর প্রদত্ত সাক্ষ্যও সেদিন সেই নারীকে এটা বিশ্বাস করাতে পারেনি যে, তার বাবা একটু আগেই নাতি-নাতনীদের সাথে বসে একত্রে খাবার খেয়েছেন। বৃদ্ধের পুত্রবধু তাকে কোনরকম অবজ্ঞা বা অবহেলা করেননি।
বেচারা বৃদ্ধ নাতি-নাতনীর চোখে পাক্কা মিথ্যাবাদী, তাদের মায়ের ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপকারী হয়ে রইলো। আর পুত্রবধুর চোখে তো এক পা কবরে রাখা বুড়ো বদমাশ (!) হয়ে গেল সেদিন থেকেই!
সম্ভাব্য সব ধরনের আদর যতেœ থাকা বৃদ্ধ মনের ভুলে এক সময় বলে ফেলা একটা কথার কারণে আমৃত্যু কি নিদারুণ নিগ্রহ আর মানসিক পীড়নের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এরকম অবস্থায় পরিবারের কর্তার সাথে পুত্রবধুর, আর পুত্রবধুর সাথে সংসারের অন্যন্য আত্মীয়-স্বজনের সামাজিক সম্পর্ক কোন পর্যায়ে যেতে পারে তা অতি সহজেই আমরা অনুধাবন করতে পারি। ডিমনেশিয়া বা স্মৃতিভ্রষ্টতা যে একটা অসুখ, এবং বৃদ্ধের কথাবার্তা, কাজকর্ম ও আচার-আচরণ যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই অসুখের কারণে প্রভাবিত হতে থাকবে, সে ধারণা আমাদের অধিকাংশেরই নাই।
এর ফলে আমাদের আদরের, শ্রদ্ধার বাবা-মা, বৃদ্ধ আত্মীয়-স্বজনরা অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমাদের অজান্তেই নিগ্রহ (Elderly Abuse) ও মানসিক পীড়নের (Psychological Abuse) শিকার হচ্ছেন। সমাজে এসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অত্যন্ত নাজুক (Vulnerable) অবস্থায় তাদের দিন কাটান।
অথচ আল-কুরআনে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন তাদের সাথে সদাচারণ ও উত্তম ব্যবহার করার জন্য। যেমন- নির্দেশ দেওয়া হয়েছে :
তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যাবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উফ’ শব্দটিও বোলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বলো। তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, বিন¤্র হও এবং বল- ‘হে আমাদের রব! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন’।২২ (সুরা আল ইসরা, ২৩-২৪)
অথচ বাস্তব সত্য হলো, আমাদের বাবা-মা যখন বুড়ো বয়সে উপনীত হন, যখন তারা নিজেদের উদ্যোগে যথাযথ কমিউনিকেশন করতে পরেন না, যখন তাদের নিজেদের প্রয়োজনটাকেও তারা প্রকাশ করতে পারেন না পূর্ণরূপে বা ঠিকভাবে, যখন তারা শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতার কারণে নিজেদের প্রয়োজন সময়মত ও যথাযথ মেটাতে পারেন না, যখন তাদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য, সাহচর্য, সান্নিধ্য আর মনোযোগ প্রয়োজন, সেসময়টাতেই আমরা তাদের প্রতি সবচেয়ে কম মনোযোগ দেই, তাদের সাথে সবচেয়ে কম সময় অতিবাহিত করি।
এতে করে আমরা যেমন তাদের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে যাই, তেমনি তারা নিজেরাও দুর্বোধ্য হন পরিবারের কাছে, সমাজের কাছে। তদের মানসিক শান্তি ও স্থিতির ভিতটাই নড়বড়ে হয়ে যায়। তারা নিঃসঙ্গতায় ভুগতে শুরু করেন।

 

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৬ষ্ঠ খন্ড

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৬ষ্ঠ খন্ড


আফরোজা হাসান


শরীয়তের পরিভাষায়,ইসলামের বিধান অনুযায়ী নারী- পুরুষ প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ ঢেকে রাখার নামই হিযাব বা পর্দা। এখন কথা হচ্ছে, টপস-জিন্স/স্কার্ট ইত্যাদি পড়েও নির্ধারিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূকে ঢেকে রাখা সম্ভব। কিন্তু তাতে কি পর্দার উদ্দেশ্য রক্ষা করা হবে? আবরণ বা অন্তরাল কিসের জন্য? যাতে দর্শনে নারী-পুরুষের একে অন্যের প্রতি সহজাত আকর্ষণের সেতার স্পর্শিত না হয়। তুমি যদি এমন ড্রেস পড়ো যাতে তোমার শারীরিক অবয়ব বোঝা যায়, তাহলে কেবল মাত্র মাথা ঢাকা থাকার কারণে তোমাকে পর্দানশীল নারী বলা যাবে না। ড্রেসটাকে তোমার শারীরিক গঠন ও সৌন্দর্যে অন্তরাল সৃষ্টি করার উপযোগী হতে হবে। এখন তুমিই ভেবে দেখো তুমি যেভাবে হিযাব করছো তাতে তোমার পরিপূর্ণ পর্দা হচ্ছে কিনা!
আমি বুঝতে পেরেছি আপি। ইনশাআল্লাহ আমি এখন থেকে পরিপূর্ণ পর্দা করার চেষ্টা করবো।
আমার কথা শুনে কি মন কিছুটা খারাপ হয়েছে?
আফরা হেসে বলল, না আপি আপনি তো সঠিক কথাই বলেছেন। আবির যদি এভাবে বুঝিয়ে বলতো তাহলে তো এত বেশি কষ্ট হতো না আমার। বা মনে হতো না আমার সাথে বাড়াবাড়ি করছে।
আসলে সবার তো বুঝিয়ে বলার ক্ষমতা একরকম থাকে না। তাছাড়া আমাদের একটা সমস্যা হচ্ছে বাইরের মানুষকে বুঝিয়ে বললেও আপনজনদেরকে আমরা সেভাবে বুঝিয়ে বলার চাইতে হুকুম করতে বেশি পছন্দ করি। আন্তরিক ভাবে এটা করা উচিত না বা ওভাবে করলে ভালো ইত্যাদি বলার চাইতে, করতে হবে বলে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এই মানসিকতার যেমন পরিবর্তন প্রয়োজন। তেমনি যখন আপনজনেরা আমাদের কোন কাজের সমালোচনা করে বা কোন বিষয়ে সংশোধনের পরামর্শে দেয়। বিরোধ না করে বা রেগে না গিয়ে প্রথমেই ভেবে দেখা উচিত এর পেছনে তাদের ইনটেনশন আসলে কি। তারা কি আমাদের কল্ল্যাণ কামনা করে এমনটা চাইছে নাকি অন্যকিছু। যদি দেখা যায় যে তাদের ইনটেনশন আমাদের জন্য কল্যাণময়। সেক্ষেত্রে তাদের পরামর্শ ইতিবাচক ভাবে নিতে হবে। আফরা এদিকে এসো।
এগিয়ে গেলো আফরা মারওয়ার কাছে। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাগানের দিকে আঙ্গুল তুলে মারওয়া বলল, দেখো ঐ ফুলের উপর প্রজাপতি বসে আছে কত আরামে, কত নিশ্চিন্তে। তুমি যদি এখন প্রজাপতিটিকে ধরতে যাও তাহলে উড়ে যাবার সম্ভাবনাই নাইনটি ফাইভ পার্সেন্ট তাই না?!

চলবে..

 

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৪র্থ খন্ড

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৪র্থ খন্ড


আফরোজা হাসান


মারওয়া হেসে বলল, যেসব বিষয়ে আবির তোমাকে বুঝতে চায় না বা বুঝতে পারে না। সেসব বিষয়ে তুমি আবিরকে বোঝার চেষ্টা করবে। এটাই তো রিলেশনশীপের চার্ম।
এটা রিলেশনশীপের চার্ম? অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো আফরা।
হুম! একে অন্যের দোষ, অপরগতা, ব্যর্থতা মেনে নেয়া, মানিয়ে চলা এসবের মাঝেই লুকায়িত থাকে সম্পর্কের চার্ম। এসবের দ্বারাই তো আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। একে অন্যেকে মুগ্ধ করার যাদুমন্ত্র হচ্ছে ছোট ছোট ত্যাগ করা।
আপনার কথা অনেক কঠিন লাগছে আপি।
আচ্ছা ঠিকআছে চলো তোমাকে বুঝিয়ে বলছি। আমাকে এমন দু’একটা বিষয়ে বলো যেসব ক্ষেত্রে আবির তোমাকে বুঝতেই চায় না।
পর্দার বিষয়টা নিয়ে আবির একদমই বুঝতে চায় না আমাকে। সারাক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করে আমার সাথে। বলে, আমার পর্দা নাকি ঠিকমতো হচ্ছে না। আমি যেভাবে হিযাব করি এতে নাকি পর্দার হক আদায় হয় না। আপি আপনি বলেন আমার পর্দা করা কি হচ্ছে না?
মারওয়া হেসে বলল, আবির যেদিন আমাকে প্রথম জানিয়েছিল ক্লাসের একটি মেয়েকে ওর খুব ভালো লেগে গিয়েছে। এবং যেহেতু শরীয়তে অনুমোদিত নয় এমন সবকিছু থেকে দূরে থাকতে চায় তাই চায় আমরা যাতে তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করি। আমি মনে মনে বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম ভেবে না জানি কেমন মেয়ে পছন্দ করেছে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ হিযাব পরিহিতা অবস্থায় যখন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম খুব ভালো লেগেছিল আমার।
আনন্দের হাসি ফুটে উঠলো আফরার মুখে মাওয়ারার কথা শুনে। বলল, আমি প্রাইমারীর পর থেকেই হিযাব করি আপি।
হিযাব মুসলিম মেয়েদের স্পেশালিটি। আলহামদুলিল্লাহ এই স্পেশালিটি তুমি বুঝে নিজের মাঝে ধারণ করতে পেরেছো। আর আবিরের কথা যদি বলি তাহলে বলবো যে, তোমাকে পছন্দ করার পেছনে অনেক কারণ হয়তো আছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি তোমার পর্দা করাটা সেইসবের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ ছিল। যেহেতু আবির আমাদের পরিবারের সবাইকে সবসময় পর্দা করতে দেখেছে। এছাড়া নিজেও সর্বাবস্থায় চেষ্টা করে শরীয়তের বিধান মেনে চলতে।
আমিও তো চেষ্টা করি শরীয়তের বিধান মেনে চলতে আপি।
এটাই আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সর্বাবস্থায় শরীয়তের বিধান মেনে চলতে চেষ্টা করাটা। তাই কোন বিষয়ে মানুষ কি বললো সেটার চেয়ে জরুরি হচ্ছে শরীয়ত কি বললো। ধরো কেউ যদি তোমাকে বলে, ফজরের ফরজ নামাজ দুই রাকআত না চার রাকআত পড়তে হবে তোমাকে। কিংবা যোহরে চারের বদলে দুই রাকআত ফরজ নামাজ পড়লেই যথেষ্ট। তুমি কি এটা মেনে নেবে?
কক্ষনো না।
কেন?
কারণ কোরআন ও হাদীস থেকে আমরা নামাজের ব্যাপারে যে নির্দেশ পেয়েছি সেটাই মানতে হবে আমাদেরকে।
একদম ঠিক বলেছো। এবং এটাই হচ্ছে মূল পয়েন্ট। কে কি বললো, না বললো তাতে কিছুই এসে যায় না। আমাদেরকে সর্বাবস্থায় দেখতে হবে শরীয়ত কি বলেছে। ঠিক তেমনি তোমার পর্দার বিষয়ে আবির বা আমি কি বলছি সেটার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শরীয়ত কিভাবে পর্দা করতে বলেছে এবং তুমি কিভাবে করছো। জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমাদের মানদন্ড কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত আদেশ-নিষেধ। যেখানে ভুল-শুদ্ধ প্রমাণের জন্য শরীয়ত বর্তমান। সেখানে মানুষ কি বলছে তাতে কিছু এসে যায় না।
জ্বি আপি।
মারওয়া হেসে বলল, আফরা তুমি নিজেকে আয়নায় দেখো। এরপর আবির তোমাকে কিভাবে দেখতে চাইছে আর শরীয়ত তোমাকে কিভাবে থাকতে বলেছে এবং তুমি কিভাবে আছো সেটা বিবেচনা করে দেখো। তোমার যদি মনেহয় যে, শরীয়ত যেভাবে বলেছে তোমার পর্দা তেমনিই আছে তাহলে আবির কি বললো, না বললো শোনার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি দেখো তোমার পর্দাতে ঘাতটি রয়েছে এবং আবির সেটাই দূর করার পরামর্শ দিচ্ছে তোমাকে। এর অর্থ আবির তোমাকে সেই রুপে দেখতে চাইছে যেই রুপে শরীয়ত তোমাকে থাকতে বলেছে। অর্থাৎ, স্বামী হবার সাথে সাথে আবির তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও সঠিক পথের প্রদর্শকও। এমন স্বামী পাওয়া তো যে কোন মেয়ের জন্যই সৌভাগ্যের। তাই না?
চেহারায় হাসির রেখা ফুটে উঠলেও মুখে কিছু বললো না আফরা। নিজের সাথে ওকে কিছুটা বোঝাপড়া করে নেবার সময় দিয়ে মারওয়াও আর কিছু না বলে রান্নার আয়োজনে মন দিলো।

চলবে…

 

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৩য় খন্ড

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৩য় খন্ড


আফরোজা হাসান


মারওয়া হেসে বলল, যেসব বিষয়ে আবির তোমাকে বুঝতে চায় না বা বুঝতে পারে না। সেসব বিষয়ে তুমি আবিরকে বোঝার চেষ্টা করবে। এটাই তো রিলেশনশীপের চার্ম।
এটা রিলেশনশীপের চার্ম? অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো আফরা।
হুম! একে অন্যের দোষ, অপরগতা, ব্যর্থতা মেনে নেয়া, মানিয়ে চলা এসবের মাঝেই লুকায়িত থাকে সম্পর্কের চার্ম। এসবের দ্বারাই তো আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। একে অন্যেকে মুগ্ধ করার যাদুমন্ত্র হচ্ছে ছোট ছোট ত্যাগ করা।
আপনার কথা অনেক কঠিন লাগছে আপি।
আচ্ছা ঠিকআছে চলো তোমাকে বুঝিয়ে বলছি। আমাকে এমন দু’একটা বিষয়ে বলো যেসব ক্ষেত্রে আবির তোমাকে বুঝতেই চায় না।
পর্দার বিষয়টা নিয়ে আবির একদমই বুঝতে চায় না আমাকে। সারাক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করে আমার সাথে। বলে, আমার পর্দা নাকি ঠিকমতো হচ্ছে না। আমি যেভাবে হিযাব করি এতে নাকি পর্দার হক আদায় হয় না। আপি আপনি বলেন আমার পর্দা করা কি হচ্ছে না?
মারওয়া হেসে বলল, আবির যেদিন আমাকে প্রথম জানিয়েছিল ক্লাসের একটি মেয়েকে ওর খুব ভালো লেগে গিয়েছে। এবং যেহেতু শরীয়তে অনুমোদিত নয় এমন সবকিছু থেকে দূরে থাকতে চায় তাই চায় আমরা যাতে তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করি। আমি মনে মনে বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম ভেবে না জানি কেমন মেয়ে পছন্দ করেছে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ হিযাব পরিহিতা অবস্থায় যখন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম খুব ভালো লেগেছিল আমার।
আনন্দের হাসি ফুটে উঠলো আফরার মুখে মাওয়ারার কথা শুনে। বলল, আমি প্রাইমারীর পর থেকেই হিযাব করি আপি।
হিযাব মুসলিম মেয়েদের স্পেশালিটি। আলহামদুলিল্লাহ এই স্পেশালিটি তুমি বুঝে নিজের মাঝে ধারণ করতে পেরেছো। আর আবিরের কথা যদি বলি তাহলে বলবো যে, তোমাকে পছন্দ করার পেছনে অনেক কারণ হয়তো আছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি তোমার পর্দা করাটা সেইসবের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ ছিল। যেহেতু আবির আমাদের পরিবারের সবাইকে সবসময় পর্দা করতে দেখেছে। এছাড়া নিজেও সর্বাবস্থায় চেষ্টা করে শরীয়তের বিধান মেনে চলতে।
আমিও তো চেষ্টা করি শরীয়তের বিধান মেনে চলতে আপি।
এটাই আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সর্বাবস্থায় শরীয়তের বিধান মেনে চলতে চেষ্টা করাটা। তাই কোন বিষয়ে মানুষ কি বললো সেটার চেয়ে জরুরি হচ্ছে শরীয়ত কি বললো। ধরো কেউ যদি তোমাকে বলে, ফজরের ফরজ নামাজ দুই রাকআত না চার রাকআত পড়তে হবে তোমাকে। কিংবা যোহরে চারের বদলে দুই রাকআত ফরজ নামাজ পড়লেই যথেষ্ট। তুমি কি এটা মেনে নেবে?
কক্ষনো না।
কেন?
কারণ কোরআন ও হাদীস থেকে আমরা নামাজের ব্যাপারে যে নির্দেশ পেয়েছি সেটাই মানতে হবে আমাদেরকে।
একদম ঠিক বলেছো। এবং এটাই হচ্ছে মূল পয়েন্ট। কে কি বললো, না বললো তাতে কিছুই এসে যায় না। আমাদেরকে সর্বাবস্থায় দেখতে হবে শরীয়ত কি বলেছে। ঠিক তেমনি তোমার পর্দার বিষয়ে আবির বা আমি কি বলছি সেটার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শরীয়ত কিভাবে পর্দা করতে বলেছে এবং তুমি কিভাবে করছো। জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমাদের মানদন্ড কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত আদেশ-নিষেধ। যেখানে ভুল-শুদ্ধ প্রমাণের জন্য শরীয়ত বর্তমান। সেখানে মানুষ কি বলছে তাতে কিছু এসে যায় না।
জ্বি আপি।
মারওয়া হেসে বলল, আফরা তুমি নিজেকে আয়নায় দেখো। এরপর আবির তোমাকে কিভাবে দেখতে চাইছে আর শরীয়ত তোমাকে কিভাবে থাকতে বলেছে এবং তুমি কিভাবে আছো সেটা বিবেচনা করে দেখো। তোমার যদি মনেহয় যে, শরীয়ত যেভাবে বলেছে তোমার পর্দা তেমনিই আছে তাহলে আবির কি বললো, না বললো শোনার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি দেখো তোমার পর্দাতে ঘাতটি রয়েছে এবং আবির সেটাই দূর করার পরামর্শ দিচ্ছে তোমাকে। এর অর্থ আবির তোমাকে সেই রুপে দেখতে চাইছে যেই রুপে শরীয়ত তোমাকে থাকতে বলেছে। অর্থাৎ, স্বামী হবার সাথে সাথে আবির তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও সঠিক পথের প্রদর্শকও। এমন স্বামী পাওয়া তো যে কোন মেয়ের জন্যই সৌভাগ্যের। তাই না?
চেহারায় হাসির রেখা ফুটে উঠলেও মুখে কিছু বললো না আফরা। নিজের সাথে ওকে কিছুটা বোঝাপড়া করে নেবার সময় দিয়ে মারওয়াও আর কিছু না বলে রান্নার আয়োজনে মন দিলো।

চলবে…

 

সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি?(পর্ব-২)

সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি?(পর্ব-২)


আফরোজা হাসান


অংক, ইংরেজি, ফিজিক্স, কেমেস্ট্রিতে নাম্বার কখনো কম পেলে নাকীবকে অবশ্যই আমার জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। কারণ এসব ওর পছন্দের বিষয়। তাছাড়া একদমই যদি জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে নাহয় তাহল নিজের মান উন্নয়নে গাফেল হয়ে যাবে। কিন্তু ভূগোল, ইতিহাসে পাশ মার্ক কিংবা তারচেয়ে এক দুই বেশি পেলেই আমি খুশি। অনেক সময় একটি দুটি অপছন্দনীয় বিষয়ের চাপের কারণে অন্যান্য সব বিষয়ের এমনকি সবচেয়ে পছন্দের বিষয়ের রেজাল্টও খারাপ হয়ে যায়।এক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় সন্তানের পাশে থাকা, সাহস যোগানো এবং অনর্থক আশা চাপিয়ে না দেয়া। সন্তানের রেজাক্ট আশানুরূপ না হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ পিতামাতার বিচার বিবেচনাহীন অতি আশা, উচ্চাশা।

তবে স্কুলের রেজাল্টের চাইতেও আমার কাছে অন্য একটি বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ণ। সেটি হচ্ছে শরীয়তের মানদন্ডে আমার সন্তানের অ্যাক্টিভিটি। একটা বাচ্চা সবদিক দিয়ে কখনোই পার্ফেক্ট হবে না। আমার ছেলে হয়তো ভূগোলে টপ করেনি কিন্তু রমজানে সে এক মাস রোজা রেখেছে, তারাবীহ আদায় করেছে কোন রকম আলসেমি ছাড়া আলহামদুলিল্লাহ। সেই সময় যখন তার স্কুল খোলা ছিল, ফাইনাল এগজাম চলছিল। ইউরোপে সামার শুরু হয়ে গিয়েছিল। রোজার দৈর্ঘ্য প্রায় সতেরো ঘন্টা। স্কুলে স্পোর্টস ক্লাসে নানান ধরণের অ্যাক্টিভিটি করতে হয়। আমি বাসায় বসে শঙ্কিত অনুভব করতাম রোজা রেখে না জানি কিভাবে আমার ছেলেটা স্পোর্টস ক্লাস করছে। কিন্তু নাকীব মাশাআল্লাহ হাসতে হাসতে বাসায় ঢুকেছে স্কুল থেকে। কখনোই বলেনি ক্ষুধা লেগেছে, পিপাসা পেয়েছে কিংবা আজকে রোজা রাখতে, তারাবীহ পড়তে চাইনা। আমার ছেলে হয়তো ইতিহাস পড়া নিয়ে গড়িমসি করে কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে কখনো গড়িমসি করতে দেখিনি আলহামদুলিল্লাহ। হয়তো কখনো সখনো দু’একদিন হোমওয়ার্ক করতে ভুলে যায়। কিন্তু আমাকে সাহায্য করার ব্যাপারে কখনোই ওর ভেতর কার্পণ্য, বিরক্তি দেখিনি। আমি ভুলোমনা স্বভাবের। বাজারের লিস্ট করার পরও দেখা যায় দরকারি অনেক কিছু লিখতে ভুলে গিয়েছি। এমনও হয় আমার ভুলো মনা স্বভাবের কারণে নাকীবকে একবারের জায়গায় তিন চারবার সুপার মার্কেটে যেতে হয় পরাপর। কখনো দেখিনি বিরক্ত হচ্ছে, মুখের উপর বলছে আমি পারবো না। বরং হাসে, মজা পায় মায়ের মেমোরির দশা দেখে, আলহামদুলিল্লাহ। আমি আমার ছেলের এই সমস্ত উত্তম গুণাবলীকে কিভাবে অবমূল্যায়ন করবো শুধুমাত্র ওর রেজাল্ট আমার মানদণ্ডকে ছুঁয়ে না দিলে?! এটা কি সন্তানের উপর সুস্পষ্ট অবিচার করা হবে না? আমার এই অবিচার কি আমার সন্তানের উত্তম গুণাবলীকে প্রভাবিত করবে না? ভাবতেই পারে আমি আম্মুতার জন্য একবারের জায়গায় চারবার সুপার মার্কেটে যেতে পারি, অথচ আম্মুতা আমার একটা ভুল কিংবা অপারগতা মেনে নিতে পারলো না?!

আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে আমরা কতটুকু সময় দিচ্ছি বাচ্চার পেছনে। প্রি স্কুল, কিন্ডার গার্ডেনে আমরা সারাক্ষণ লেগে থাকি বাচ্চার পেছনে। প্রতিটা বিষয় হাতে ধরে শেখাই। একবারের জায়গায় দশবার বলতে,বোঝাতে আমাদের বিরক্ত লাগে না। কিন্তু বাচ্চা যত বড় হতে থাকে আমাদের লেগে থাকা, হাতে ধরে কোন কিছু বোঝানোর মাত্রা ততই কমতে থাকে। আমরা তখন এটা করো, ওটা করো, সেটা করো না, ওমনটা করতে হয়না এই সমস্ত হুকুম দিয়েই দায়িত্ব পালন হয়ে গিয়েছি মনে করি। হ্যা সন্তান যখন বড় হয় তখন তাকে নিজের দায়িত্ব সমূহ পালন করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কিন্তু তাই বলে পিতামাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন ছেড়ে দেয়া যাবে না। নাকীব একদিন হোমওয়ার্ক নিতে ভুলে গিয়েছিল বিধায় ওর এক পয়েন্ট কেটে নেয়া হয়েছে। আমি এজন্য নাকীবকে নেতিবাচক কিছু বলিনি। বলেছি আর কখনো যাতে এমনটা নাহয় সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। কারণ আমার মনে হয়েছে ভুলের পেছনে আমিও নাকীবের সমান কিংবা ওর চেয়ে বেশি দায়ী। প্রাইমারিতে যেমন প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাবার আগে নাকীবের স্কুল ব্যাগ চেক করে দেখতাম সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। এখন নিজে না করলেও ঘুমোতে যাবার আগে নাকীবকে অন্তত মনে করিয়ে দেয়া উচিত আগামীকাল স্কুলের জন্য পরিপুর্ণ ভাবে প্রস্তুত কিনা। কেননা কখনো ভুল করে, কখনো অনিচ্ছায়, কখনো অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাচ্চারা তো ভুল করবেই। পিতামাতা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সেই ভুল সমহুকে প্রতিহত করা, সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। শুধু সঠিক পথের দিশা বাতলে দিলেই কিন্তু হবে না। হাত ধরে সঠিক পথে চলতে হবে ঠিক সেই সময়ের মতো যখন সন্তান কেবল মাত্র পিতামাতার হাত ধরে একপা দুপা করে হাঁটতে শিখেছিল। হাত ছাড়লেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাবার ভয় ছিল।

(শেষ পর

 

সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি? (পর্ব-১)

সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি? (পর্ব-১)


আফরোজা হাসান


অমনোযোগ, অবহেলা, গাফলতি, ফাঁকিবাজি কিংবা কারণ যেটাই হোক সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি? পিতামাতার অ্যাকশন কেমন হওয়া উচিত সন্তানের সাথে? সন্তানকে সান্ত্বনা দেয়া উচিত নাকি তিরষ্কার করা? সন্তানকে উৎসাহ দেয়া উচিত যাতে পরবর্তীতে লেখাপড়ায় মনোযোগী হয় নাকি হুমকি, ধামকি দেয়া উচিত? কি উচিত আর কি অনুচিত এই প্রশ্ন থাক আপাতত। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অ্যাকশন কেমন হয়? আমার মনেহয় এই সময়টাতেই সন্তানদের সবচেয়ে বেশি সাপোর্টের প্রয়োজন হয় পিতামাতার। আমার পুত্রের কথা যদি বলি ছোটবেলা থেকেই নাকীবের ভালো লাগা, মন লাগা, ভীতি, আনন্দ, খুশি আমার কাছে নিজের এই সমস্ত আবেগের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নাকীব যখন তেলাপোকা দেখে ভীত হয় তখন ওর মনে সাহস যোগানোর জন্য আমি ছোটবেলায় যেমন ওর পাশে থাকতাম, এখনো থাকি। পাশে থেকে ওকে সাহস যোগাই, এই ভয় থেক বেরিয়ে আসার ব্যাপারে উৎসাহ দেই। কিন্তু আমি কখনোই বলি না এখন তো তুমি বড় হয়েছো, সামান্য একটা তেলাপোকাকে ভয় পাওয়ার কি আছে? কিংবা ছেলে হয়ে তেলাপোকাকে ভয় পাও? কি লজ্জা! কি লজ্জা! হয়তো আমার সাপোর্ট আর পাশে থাকার কারণেই বেশ কিছুদিন আগে নাকীব একটা মৃত তেলাপোকাকে টিস্যু দিয়ে ধরে ডাস্টবিনে ফেলার মতো বিশ্বজয় করে ফেলেছিল। এই কর্ম সাধনের পর নাকীবের উল্লাস বিশ্বজয়ের চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না। নাকীবের সাথে উল্লাসিত আমি তখন বলেছিলাম, দেখেছো তুমি চাইলেই পারো। নাকীবও সমর্থন সূচক মাথা ঝাঁকিয়েছিল। সবজি খাওয়াটা খুবই জরুরি। কিন্তু নাকীবের সবজি ভীষণ অপছন্দ। জোর করে, বাধ্য না করে আমি আমি আমার রাঁধুনি সত্ত্বার ক্রিয়েটিভিটি কাজে লাগিয়ে এমন ভাবে সবজি রান্না করেছি নাকীব খুশি মনেই খেয়ে নিয়েছে। এমনটা শুধু আমি না, বেশিরভাগ মায়েরাই করেন সন্তানের খুশির জন্য, কমফোর্টের জন্য।

নাকীব সেকেন্ডারি স্কুলে উঠার পর নতুন নতুন অনেক বিষয় পাঠ্যসূচিতে সামিল হয়েছে। তারমধ্যে ভূগোল আর ইতিহাস নাকীবের কাছে আতঙ্কের বিষয়। নাকীব যখন ওর আতঙ্কের কথা আমাকে জানিয়েছিল আমি ওকে চাপ প্রয়োগ করিনি এই বিষয় দুটোকে ভালো লাগানোর জন্য। আমি যখন সেকেন্ডারিতে ছিলাম অর্থনীতি আর পৌরনীতি এমন আতঙ্কের ছিল আমার কাছে। তাই নাকীবের অবস্থাটা অনুভব করতে পারছিলাম। পাঠ্যসূচিতে থাকা প্রতিটা বিষয় একজন স্টুডেন্টের কাছে সমান প্রিয় হওয়াটা অসম্ভব। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে আমার সন্তানের টার্গেট যদি থাকে প্রোগ্রামার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা গবেষক হওয়ার। সেক্ষেত্রে আমি কেন তাকে জোর করে ভূগোল, ইতিহাসে মনোযোগী করার চেষ্টা করবো? সব বিষয়ে কেন তাকে জোর করে দশে দশ পেতে বাধ্য করবো? অপছন্দীয় বিষয়ে কম পেলে কেন তাকে শাস্তি দেবো, তিরষ্কার করবো, অন্যের সাথে তুলনা করবো? আমি নাকীবকে বলেছি তুমি তোমার সাধ্যমতো চেষ্টা করো। ঠিকআছে তুমি দশে দশ না পাও কিন্তু ইতিহাস ও ভূগোল সম্পর্কেও তোমাকে জানতে হবে। আর জানার জন্য তো তোমাকে পড়তেই হবে। আমার কথা শুনে নাকীব অনেকটাই আশ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। ( চলবে)

 

আবারো বোরকা পরে স্কুলছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা!

আবারো বোরকা পরে স্কুলছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা!
রাজবাড়ী ও বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী)


নারী সংবাদ


ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসা ছাত্রী নুসরাতকে বোরকা পড়ে পুড়িয়ে হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই এক স্কুলছাত্রীকে (১৬) গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাচুরিয়া ইউনিয়নের খোলাবাড়িয়া গ্রামে। দগ্ধ কিশোরী খানখানাপুর তমিজউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

এ ঘটনায় শনিবার সকালে রাজবাড়ী সদর থানায় ভূক্তভোগী স্কুল ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে তার এলাকার স্বামী প্রবাসী শিল্পী বেগম নামের এক মহিলাসহ অজ্ঞাত ৪ ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করেছেন।

স্কুল ছাত্রীর মা নাসিমা বেগম বলেন, ঈদের দিন (বুধবার) স্থানীয় প্রতিবেশী শিল্পী বেগম আমার মেয়ের কাছে অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক ও আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এতে আমার মেয়ে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বাড়িতে দুই বোন জাম খাচ্ছিল আর আমি তখন ঘরের মধ্যে ঘুমাচ্ছিলাম।

এসময় আমার ছোট মেয়ের চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। পরে বড় মেয়ের কথা জিজ্ঞাসা করতেই বোরখা পড়া দুইজন লোক তাকে তুলে নিয়ে গেছে বলে জানায়। তখন আমিও চিৎকার করতে থাকি। আমার চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে অনেক খোজাখুজির পর ঘরের পিছনের পাটক্ষেত থেকে বড় মেয়েকে উদ্ধার করা হয়।

দগ্ধ স্কুলছাত্রীর বড় ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র মোঃ সোহেল ব্যাপারী বলেন, এ ঘটনায় গত (শুক্রবার) রাতে আমি নিরাপত্তাহীনতার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করি। কিছুক্ষণ পর রাজবাড়ী সদর থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার পুলিশ পাঠিয়ে থানায় ডেকে নিয়ে বিস্তারিত শোনেন। পরে আমাকে মামলা দায়েরের পরামর্শ প্রদান করেন।

ওই স্কুল ছাত্রী বলেন, পাশের গ্রামের রাজু নামে একটি ছেলে আমাকে পছন্দ করতো। এ পছন্দের কথা স্থানীয় বাসিন্দা শিল্পী বেগম জানতো আর এটাকে কেন্দ্র করেই সে আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি বিষয়টি পরিবারকে জানাই। পরদিন বৃহস্পতিবার সে ওড়না দিয়ে আমার হাত-পা বেঁধে গায়ের জামায় আগুন ধরিয়ে দেয়।

পাশের বাড়ির বাসিন্দা সাথী সরকার জানান, চিৎকার চেচামেচিতে আমরাও এগিয়ে গিয়ে স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করি। তার মাথায় আঘাতের চিহ্নসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং গায়ের জামা কাপড় ছেড়া ছিল।

এ বিষয়ে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি জানান, এ ঘটনায় রাজবাড়ী সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্পর্শকাতর এ বিষয়টি নিয়ে পুলিশের দুইটি টিম মাঠে কাজ করছে এবং আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

 

বাচ্চাদের শাস্তি দেয়া

বাচ্চাদের শাস্তি দেয়া


আফরোজা হাসান


গতকাল আমার এক ক্ষুদে স্টুডেন্ট অনেক মন খারাপ করে ছিল সারা ক্লাসে। ক্লাস শেষে ওকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে তোমার? এতো মন খারাপ করে আছো কেন? কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল, আমি দুষ্টুমি করেছিলাম তাই আম্মু আমাকে বলেছে দুইদিন কার্টুন দেখতে পারবো না। এরপর তো সে কত অল্প একটু দুষ্টুমি করেছে আর আম্মু তাকে কত বড় শাস্তি দিয়েছেন তার লম্বা ফিরিস্তি দিলো। তার প্রিয় কার্টুন গুলো দেখতে পারবে না সেই আহাজারি করলো। আকার ইঙ্গিতে বোঝাল যে আম্মু তার সাথে অন্যায় করেছেন। ইচ্ছে করলেই আম্মু মাফ করে দিতে পারতেন তাকে সেটাও বুঝিয়ে দিলো কথা দিয়ে।

আমি মাঝে মধ্যে বাচ্চাদের শাস্তি দেয়ার পক্ষে। কারণ সবসময় যদি ক্ষমা করে দেয়া হয় তাহলে ভুলের প্রতি সাবধানতা বা সতর্কতা তৈরি হয় না বাচ্চাদের মনে। বরং বিশ্বাস জন্মে যায় যে সে যাই করবে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। এই বিশ্বাস তার ছোট ছোট ভুলগুলোকে বড় বড় ভুলের পথে টেনে নিয়ে যাবে। কিন্তু শাস্তি হিসেবে পছন্দের জিনিস বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে নই আমি। কারণ এতে বাচ্চাদের মনে চাপ পড়ে। অন্যায় করেছে সেই অনুশোচনার চেয়েও প্রিয় কিছু না পাবার কষ্ট বেশি কাজ করে মনে। বাবা-মা তাকে বোঝে না, ভালোবাসে না ইত্যাদি নানা ধরণের ভাবনা দানা বাঁধে মনে। অনেক সময় এই ধরণের শাস্তি ইমোশনালি অ্যবিউজের মধ্যেও পড়ে যায়।

বাচ্চারা দুষ্টুমি, ভুল, অন্যায় করবেই আর শাস্তিও তাদের দিতেই হবে মাঝে মধ্যে। আমি শাস্তি হিসেবে আমার বাচ্চাদের পছন্দের জিনিস কখনোই বন্ধ করি না। আমি যা করি তা হচ্ছে ওদের সবচেয়ে অপছন্দের কাজটি করাই শাস্তি হিসেবে। নাকিবের সবচেয়ে অপছন্দ হচ্ছে মাছ আর সব্জি। নুহেরির অপছন্দ ফল আর দুধ। নাকিব যদি কোন অন্যায় করে আমি মুখে কিছুই বলি না। খাবারের সময় হলে বিশাল বড় একটা মাছ ফ্রাই আর বড় এক বাটি সব্জি দিয়ে বসিয়ে দেই টেবিলে। মিষ্টি করে হেসে মাছ আর সব্জির পুষ্টিগুণ আর কেন এসব খেতে হবে বুঝিয়ে বলি। নুহেরির ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই করি। শাস্তি হচ্ছে বুঝতে পেরে খাবো না বলারও সাহস পায় না ওরা।

আমরা বোনেরা যখন ছোট ছিলাম ঠিক এই পদ্ধতিতেই আমাদেরকে শাস্তি দিতেন আমাদের বড় ভাইয়ারা। মুখে কোনদিনও কিছু বলতেন না। অপছন্দের জিনিস করিয়ে নিতেন শাস্তি স্বরূপ। আমারো নুহেরির মতোই দুধ আর ফল হচ্ছে সবচেয়ে অপছন্দ। বিশাল বড় এক গ্লাস দুধ আর ফলের বাটি যখন সামনে আসতো মনে মনে প্রতিজ্ঞা করতাম এই ভুল আর জীবনে করবো না। ভাইয়াদের প্রতি রাগ বা বিরক্তি আসতো না মনে কারণ উনারা হাসি মুখে পাশে বসে গল্প গুজব করতেন। খাদ্যের পুষ্টিগুণ শোনাতেন। নিজের উপরই বিরক্তি আসতো। মনেহতো কেন যে করতে গিয়েছিলাম এমন বোকার মতো কাজ। নয়তো এসব খেতে হতো না।

আমার মতে শাস্তি হতে হবে এমন যা বাচ্চাদেরকে তাদের ভুলকে উপলব্ধি করতে সহায়তা করবে। আর যাতে এমন ভুল না হয় সে ব্যাপারে সাবধানী হতে সাহায্য করবে। এবং যারা শাস্তি দিচ্ছেন তাদের প্রতিও কোন বিদ্বেষের জন্ম হবে না মনে। কারণ বড়রা তো আসলে মঙ্গলের জন্যই শাস্তি দেন। কিন্তু বাচ্চারা যদি এটা অনুভব না করে তাহলে শাস্তি তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে। তাই শাস্তি এমন হওয়া উচিত যা অভিভাবক এবং বাচ্চা উভয়ের জন্য ফলপ্রসূ।

 

সিরাজদিখানে ৭০ হাজার টাকায় নবজাতক বিক্রি, সন্তান ফেরত চাচ্ছেন মা

সিরাজদিখানে ৭০ হাজার টাকায় নবজাতক বিক্রি, সন্তান ফেরত চাচ্ছেন মা


নারী সংবাদ


সিরাজদীখান উপজেলার নিমতলা এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে নবজাতক বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি ওই এলাকার আইডিয়াল জেনারেল হাসপাতালে ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে এক নবজাতক বিক্রি করার খবর পাওয়া যায়। এছাড়া অপর আরেকটি নবজাতক বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়।

আইডিয়াল জেনারেল হাসপাতালে প্রায় ১৫ দিন আগে হাবিবা বেগম (২৫) নামে এক গৃহবধূ সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করার পর ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়া হয়। বেসরকারি ওই হাসপাতালের ম্যানেজার ইয়াসমিন আক্তার নীলা নবজাতকের মা হাবিবা বেগমকে টাকার প্রলোভনে ফেলে জনৈক এক ব্যক্তির কাছে নবজাতক বিক্রি করে। মা হাবিবা বেগম এখন তার সন্তান ফেরত চাইছেন।

তিনি অভিযোগ করেন-তার সন্তান বিক্রি করে দেয়ার পর তিনি কোন টাকা পাননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার কাছ শুধু মাত্র সিজার করার বিল নেয়নি। গৃহবধূ হাবিবা উপজেলার কাজীশাল গ্রামের বাবু মিয়ার স্ত্রী। হাসপাতালের ম্যানেজার ইয়াসমিন আক্তার নীলা বলেন,‘এর সাথে আমি জড়িত না, স্ট্যাম্প করে তারা নিজেরাই বিক্রি করেছে ।’

এদিকে, ঈদের দিন একই হাসপাতালে উপজেলার বাসাইল গ্রামের লিটন শেখের স্ত্রী কুলসুম বেগম এক সন্তান প্রসব করে। এর আগেই তার নবজাতক বিক্রির জন্য প্রলোভন দেখায় নিমতলা এলাকার হলি কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডি ল্যাব নামে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালের একজন নার্স। কুলসুম বেগম আলট্রসনোগ্রাম করতে গেলে নবজাতক প্রসবের সাথে সাথে তা অবগত করার জন্য ওই নার্স হলি কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডি ল্যাব এর নাম্বার দিয়ে দেন। জন্মের দুই দিন পর নবজাতক বিক্রির জন্য বাবা লিটন শেখ হলি কেয়ারের ওই নাম্বারে কল করলে কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে কেউ আর নবজাতক কেনার জন্য আসেনি। এতে নবজাতক বিক্রির হাত থেকে বেঁচে যান মা কুলসুম বেগম।

নবজাতক বিক্রি প্রসঙ্গে আইডিয়াল জেনারেল হাসপাতালের মালিক মো. সালাহউদ্দিন জানান, ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে স্ট্যাম্প করে নবজাতক বিক্রি করার খবর শুনেছি। এর উপযুক্ত বিচার হওয়া উচিত।

অপর বেসরকারি হাসপাতাল হলি কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডি ল্যাবের মালিক শহীদুল মোড়ল বলেন- ‘আমার হাসপাতালের কোন কর্মকর্তা নবজাতক বিক্রির জন্য মোবাইল নাম্বার দিয়ে থাকলে তার উপযুক্ত বিচার করা হবে।’

মুন্সীগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা: শেখ ফজলে রাব্বী বলেন, এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করলে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ঈদ মোবারক । মেয়েদের হাতে মেহেদী লাগানো ও মেয়েদের ঈদের নামাজ।

ঈদ মোবারক । মেয়েদের হাতে মেহেদী লাগানো ও মেয়েদের ঈদের নামাজ।


সত্যলিখন


আসসালামুআলাইকুম ।
ঈদ মোবারক ঈদ মুবারক ঈদ মুবারক

প্রবাসী দেশি দুরের কাছে আত্নীয় ও আত্নার সাথে সম্পর্কিয় সকল প্রান প্রিয় ব্লগার ভাই বোন ছেলে মেয়ে সবাইকে জানাই আমার প্রান ঢালা ঈদুল আযহার আন্তরিক শুভেচ্ছা ।ঈদুল আযহা বয়ে নিয়ে আসুক আমার আপনার জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।

আমাদের কে আল্লাহ সকল গুনা খাতা মাফ সহ সকল পাপপংকিলতা দূর করে দিয়ে চরম ধৈর্যশীল , তাকয়াবান , আল্লাহর হুকুম পালনে নিষ্টাবান , পিতা মাতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল , আদর্শ স্বামী আর সেই স্বামীর আদেশ পালনে বিনয়ী ও আনুগত্যশীল স্ত্রী হওয়া সহ সকল প্রকার ঈমানী এলেমী ও আমলী অর্জন করার তাওফিক দান করুন । আল্লাহ নিরীহ পশুটার সাথে আমাদের মনের পশুত্ব আচরন টাও কোরবানী করে খতম করে দিক ।

“তাকাব্বাল আল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম (মহান আল্লাহ আমার ও আপনার ভাল কাজগুলো কবুল করুন)। আমীন ।

মেয়েদের হাতে মেহেদী লাগানোঃ

শুধু ঈদে নয়, মেয়েদের হাতে সারাবছরই মেহেদী লাগানো উচিত । রাসূল (ছাঃ) মেহেদী ছাড়া মেয়েদের হাত কে, পুরুষের হাতের সাথে তুলনা করেছেন । তবে মেয়েদের মত পুরুষদের মেহেদী ব্যবহার করা জায়েয নয় । কারণ মেহেদী এক ধরণের রঙ । আর পুরুষদের জন্য রঙ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ ।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, জেনে রাখো যে, পুরুষদের খোশবূ (সৌন্দর্য) এমন, যাতে সুগন্ধি আছে রং নেই । পক্ষান্তরে নারীদের খোশবূ এমন, যাতে রং আছে কিন্তু তা থেকে সুগন্ধি বিচ্ছুরিত হয় না” (তিরমিযী, নাসাঈ, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৪৪৪৩)

তবে পুরুষদের জন্য পাকা দাড়ি ও চুলে মেহেদী ব্যবহার করার কথা হাদীছে এসেছে কিন্তু তাতে কালো রং (কলপ) ব্যবহার করতে রাসূল (ছাঃ) কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন” (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪২৮) মহিলাদের জন্য হাতে-পায়ে মেহেদী ব্যবহার করা জায়েয (আবুদাঊদ হা/৪১৬৫)। মেহেদীর রং ওযূর কোন ক্ষতি করে না। পুরুষের জন্য মেহেদী ব্যবহার করা নিষিদ্ধ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৫/২১৮)।

মেয়েদের ঈদের নামাজঃ

বোন ! ঈদের নামাজ পড়ার জন্য মানষিকভাবে প্রস্ত্তত হচ্ছেন তো ??

উম্মে আতিয়্যা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বৃদ্ধা, ঋতুবতী ও পর্দানশীল সকলের জন্য আদেশটি বহাল ছিল। তবে ঋতুবতী নারী ঈদের নামাজ থেকে বিরত থাকবে এবং কল্যাণ (নসিহত শ্রবণ) ও মুসলমানদের সাথে দুআয় শামিল থাকবে।

তিনি বললেন: হে আল্লাহর রাসূল; আমাদের মধ্যে কারো বড় চাদর না থাকলে সে কী করবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : তার কোন বোন তাকে নিজের চাদর পরিধান করতে দেবে। (সহীহ মুসলিম)

রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন: “কর্তব্য হল, পর্দানশীন কুমারী মেয়েরা; এমন কি ঋতুবতী মহিলারাও ঈদগাহে যাবে। তবে ঋতুবর্তী মহিলাগণ নামাযের স্থান থেকে দূরে অবস্থান করে কল্যাণময় কাজ এবং মুমিনদের দু’আতে শরীক হবে।” (বুখারীঃ হাদীস নং ৯২৭)

এ সুন্নাত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং বাংলাদেশের জাতীয় ঈদগাহ সহ অনেক এলাকায় আজো প্রচলিত আছে। সুতরাং যে সব এলাকায় তা চালু নেই সেসব স্থানের সচেতন আলেম সমাজ এবং নেতৃস্থানীয় মুসলমানদের কর্তব্য হল, আল্লাহর রাসূলের সুন্নতকে পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে মহিলাদেরকেও ঈদের এই আনন্দঘন পরিবেশে অংশ গ্রহণের সুযোগ প্রদানের জন্য এগিয়ে আসা।

তবে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, পর্দা হীনতা, উচ্ছৃঙ্খলতা ইত্যাদি যাতে না ঘটে তার জন্য আগে থেকে সকলকে সচেতন ও সাবধান করা জরুরী। মহিলাগণ যখন বাড়ি থেকে বের হবে সর্বাঙ্গ কাপড় দ্বারা আবৃত করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে।

সংগ্রহঃ বিডি টুডে ব্লগ থেকে….।

 

অন্ধের চাঁদ দেখা

অন্ধের চাঁদ দেখা


কানিজ ফাতিমা


এক অন্ধ লোক ঈদের সকালে বাড়ীর সামনে মনমরা হয়ে বসে আছে –

এক যুবক পাজামা পাঞ্জাবী পরে নামাজে যাচ্ছিলো।
বৃদ্ধকে দেখতে পেয়ে বললো,
” চাচা ঈদের নামাজে যাবেন না ?”

– কিভাবে যাই ? চাদ তো দেখি নাই।
“কেন চাচা, আমরা তো দেখেছি।”

– হ্যা তা দেখেছো – তাই এটা তোমাগো ঈদ। তোমার দেখনে আমার হইবে না। আমার দেখোন লাগবো, খালি চক্ষে।

“তা চাচা আপনি তো অন্ধ, দেখবেন কেমনে?”

– সেই জন্যইতো আমার ঈদ নাই। হাদিসে বলছে তোমরা চাঁদ দেখে ঈদ করো।

“চাচা, রাসূল সাঃ তো “দেখা” বলতে হিসাব বুঝাইছেন। তোমরা চাঁদ দেখে ঈদ করো মানে তোমার চাঁদের হিসাবে ঈদ করো। “

– বেশী বুঝছ ? বেশী আধুনিক হইছোছ? হাদিসে স্পষ্ট আইছে দেখার কথা।

” চাচা, নামাজ কি সূর্য দেইখা পড়েন? নাকি ঘড়ি দেইখা? হাদিসে তো সূর্যের হিসাব আইসে। যাকাত কি ফসলে দেন নাকি টাকায় ? হাদিসে তো ফসলের হিসাব আইছে। সেহেরীর সময় কি বাইরে গিয়া লাল আর কালা সুতার তফাৎ করেন নাকি চার্ট দেইখা করেন? হাদিসে তো সুতার রঙের তফাতের কথা আইসে। যাউকগা আপনারে বুঝাইতে গিয়া ঈদের আনন্দ মাটি করতে চাই না। হাদিস বোঝার ক্ষমতা আল্লাহ সবাইরে সমান দেন নাই। নবীদের আল্লাহ প্রজ্ঞা দিছেন , তাদের কথা বুঝতেও প্রজ্ঞা লাগে। হেইডা আল্লাহ সবাইরে দেন নাই।”

“ঈদ মোবারক।”

 

ঈদের রাতের ইবাদত

ঈদের রাতের ইবাদত


অন্যান্য


হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে আল্লাহ তাআলা চার রাতে সব ধরনের কল্যাণের দরজা খুলে দেন। যেমন- ঈদুল আজহার রাত, ঈদুল ফিতরের রাত ও ১৫ শাবানের রাত ও আরাফার রাত। আর তা এভাবে ফজরের আজান পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
ঈদ আমাদের মাঝে আনন্দের নিয়ে আসে এবং আল্লাহর নৈকট্যলাভের মহাসুযোগ এই ঈদের রাত।

হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি,

হজরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাত জাগবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। যেদিন (হাশরের দিন) সবার অন্তর মারা যাবে, সেদিন তার অন্তর মরবে না।

পাঁচ রাত জেগে থাকবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। সেই পাঁচটি রাত হলো-
এক. জিলহজ মাসের আট তারিখের রাত।
দুই. জিলহজের ৯ তারিখের রাত।
তিন. ঈদুল আজহার রাত।
চার. ঈদুল ফিতরের রাত।
পাঁচ. ১৫ শাবানের রাত।

হাদিসের মর্মার্থ তো এই, কেয়ামতে ভয়াবহ তাণ্ডবের সময় প্রতিটি মানুষের অন্তর যখন হাশরের ময়দানে ভয় আশঙ্কা অস্থিরতায় মৃতপ্রায় হয়ে থাকবে। মানুষের হুশ-জ্ঞান বলতে থাকবে না কিছু। ঈদের রাতে আমলকারীর হৃদয় তখনও সজীব ও সতেজ থাকবে। সেদিন তার অন্তর মারা পড়বে না। বরং থাকবে সদা প্রফুল্ল।

ঈদের রাতের আরেকটি বড় প্রাপ্তি হলো, এ রাতে দোয়া কবুল করা হয়। আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা চাইব। কবরের আজাব থেকে মুক্তি চাইব।
আজকের রাত আমাদের জন্য, এই দুনিয়ার যাবতীয় কল্যাণ লাভ এবং মঙ্গল কামনা করার রাত।

“ঈদ মোবারক”
আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের নিকট থেকে ইবাদতসমুহ কবুল করুন।
“আমিন”

 

অভিমানী মনের আত্মদহন… ২য় খন্ড

অভিমানী মনের আত্মদহন… ২য় খন্ড


আফরোজা হাসান


রান্নাঘরে ঢুকে মারওয়া চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। দেখে মনেহচ্ছে পুরো রান্নাঘরের উপর দিয়ে ছোট ছাট ঝড় বয়ে গিয়েছে। আফরা লাজুক স্বরে বলল, আমি নাস্তা বানানোর পর রান্নাঘর গোছানোর সময় পাইনি আপি।
মারওয়া হেসে বলল, কোন সমস্যা নেই। আমি রান্না করার সময় এরচেয়েও ভয়াবহ অবস্থা হয় রান্নাঘরের।
আফরা হেসে বলল, আমাকে সান্ত্বনা দেবার জন্য এমন বলছেন আপি সেটা জানি। গতকাল যখন আপনি রান্না করেছেন আমি দেখেছি সবকিছু কত সুন্দর করে গোছানো ছিল।
মারওয়া হেসে বলল, যখন রান্না করছিলাম তখন তুমি দেখেছো। যখন রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন তো দেখোনি। আমি আগে রান্নার সমস্ত উপকরণ রেডি করে নেই। এরপর রান্নাঘর গুছিয়ে তারপর রান্না করি। আমার মনেহয় রান্নাঘর গোছানো থাকলে রান্না করার আনন্দ অনেক বেড়ে যায়। সেই আনন্দের কিছুটা রান্নার উপকরণের সাথে মিশে স্বাদও বাড়িয়ে দেয় খাবারের।
আপনি অনেক মজা করে কথা বলেন আপি। আবির এখানে আসার সময় আমাকে বলেছে আপির কাছ থেকে আর কিচ্ছু শিখতে হবে না তোমাকে। শুধু সর্বাবস্থায় মজা করে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা শিখবে।
মারওয়া হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ! তবে আমি কিন্তু মজা করার উদ্দেশ্যে কিছু বলি না। যেটা মনে আসে সেটাই বলি। তবে এটা কিন্তু সত্যি যে সাজানো গোছানো পরিবেশ আমাদের মনে সুন্দর ও শান্তি শান্তি ভাবের উদ্রেক করে। বাইরে থেকে ফিরে আমি যদি ঘর এলোমেলো দেখি আমার শরীরের ক্লান্তি তো বেড়ে যায়ই, সাথে মেজাজও খিটপিটে হয়ে যায়। এজন্য আমি কি করি জানো?
কি করেন আপি?
বাইরে বের হবার আগে পুরো বাসা সুন্দর করি সাজিয়ে গুছিয়ে নেই। দরজা বন্ধ করবার আগে এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে করি। যাতে দরজা খোলার পর মিষ্টি ফুলেল ঘ্রাণ আমাকে স্বাগতম জানায়। আবার রান্না করার সময় একদিকে মসলা, সবজি রেডি করবো, অন্যদিকে চুলায় রান্না চাপিয়ে দেবো এমনটাও কখনোই করি না। আমি আগে সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে গুছিয়ে নিয়ে রান্না শুরু করি। এতে সবটুকুন মনোযোগ রান্নাতেই থাকে। পরিবেশটা সাজানো গোছানো টিপটপ ফিটফাট থাকার কারণে মনটাও ভালো থাকে।
সবসময় এমন নিয়ম মাফিক চলতে পারেন আপি?
না তা অবশ্য পারি না। ব্যস্ততার কারণে অনেকসময় ব্যতিক্রম হয়। অর্থাৎ, একদিক দিয়ে কাটতে থাকি, আরেকদিক দিয়ে চুলায় দিতে থাকি, অন্যদিক দিয়ে গোছাতে থাকি। সেদিন খাবারের স্বাদে তারতাম্য হয়ে যায়। আবার বাসা এলোমেলো রেখে যেদিন বেড়িয়ে যেতে হয় কোন কারণে। ফিরে আসার পর ভালো কথা শুনলেও মেজাজ গরম হয়ে যায়। অকারণেই সবার সাথে চিৎকার-চেঁচামেচি করি। এইসব অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার জন্য আমি একটা পন্থা বের করেছি। ব্যস্ততা থাকলে আমি রেডিমেড কোন খাবারের আয়োজন করি কিংবা একদম শর্টকার্ট কিছুর। যেমন ধরো ডিমভাজি, আলুভর্তা, ডাল। গোছানোর সময় না থাকলে এলোমেলো সব কিছু নিয়ে আলমারিতে ঢুকিয়ে রেখে বিছানাগুলো ঠিকঠাক করে পারফিউম স্প্রে করে বেড়িয়ে যাই। বাসায় ফিরে কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে এরপর সব বের করে গুছিয়ে নেই। এমনটা আমি করি কারণ মনের শান্তি বজায় রাখাটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যাপারটা আমি তোমাদের ভাইয়াকে দেখে শিখেছি। উনি এমন সবকিছু এড়িয়ে চলেন যা উনার মনের শান্তিতে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
আমাকেও শিখিয়ে দেন আপি কিভাবে সর্বক্ষণ মনে শান্তি ভাব বজায় রাখতে হয়।

চলবে

 

সুস্থ দাম্পত্য টিপস

সুস্থ দাম্পত্য টিপস


দাম্পত্য


দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক বন্ধন ও সুসম্পর্ক উপর নির্ভর করে, সুস্থ দাম্পত্য জীবন ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনে সহায়তা করে। এবং এর বিপরীতে গেলে ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরে।

সম্পর্ক নিয়ে সন্তুষ্ট, পরিতৃপ্ত ও সুখীবোধ

ব্যক্তি তার প্রতিদিনকার ঘটনাবলিতে পরিতৃপ্ত। স্বাভাবিকভাবেই উভয়েই সন্তুষ্ট ফলে মানসিক চাপ(stresses) গুলোর মুখোমুখি হলেও মোকাবেলা করতে পারেন। নিজের ব্যক্তিগত দক্ষতা এবং সমস্যা সমাধান করার কৌশল বুঝতে পারেন এবং রোজকার দিনের কাজ গুলো ঠিকভাবে গুছিয়ে করতে পারেন।

নিরাপদ এবং আরামদায়ক বোধ করবে

শুধু নিজের ভালো থাকাকে প্রাধান্য দেওয়া ছাড়াও অন্যের ভালো থাকাটাকে নিশ্চিত করেন ফলে নিরাপদ এবং আরামদায়ক সম্পর্কের জন্ম নেয়।

আচরণ সম্মানপূর্ণ হবে

সন্মান হলো সন্মানিত ব্যক্তির চাদর। সুতরাং পরস্পরের বন্ধন তখনই সবচেয়ে বেশি মজবুত হয় যখন সন্মান সহিত আচরণ করেন পরস্পর।

নিজেদের সঙ্গে কাটানো সময় আনন্দপূর্ণ হবে

কাটানো সময় আনন্দপূর্ণ হবে বলেই পরস্পরের জীবনের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। (যেমন: বন্ধুবান্ধব, ভালো লাগার বিষয়, পরিবার, জীবন নিয়ে ভাবনা, স্কুল-কলেজ, কর্মক্ষেত্র ইত্যাদি)।

দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের প্রতি আস্থা/বিশ্বাস থাকবে

দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের প্রতি আস্থা ও পাশাপাশি পরিবার ও পরিবারের বাইরে সমাজ কমিউনিটি ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গনে অবদান গড়বে।

*দাম্পত্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, মমতা, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদির ভিত্তিতে পরস্পরকে প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে।

 

মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর

মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর


ড. মেহরান মাহমুদ


মুসলিম জীবনে লাইলাতুল কদর অতিপুণ্যময় ও অনন্য এক রজনী। মর্যাদাময় এ রাতটিতে রয়েছে শান্তি, সান্ত¡না এবং সার্বিক কল্যাণ। এ রজনী ভাস্বর হয়ে আছে পবিত্র কুরআন নাজিলের মহিমায়, ভাস্বর হয়ে থাকবে স্বল্প সময়ে অধিক পুণ্য লাভের নিশ্চয়তায়। এ রাতের সম্মানেই পবিত্র কুরআনে ‘সূরা কদর’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা অবতীর্ণ হয়েছে।

লাইলাতুল কদরের অর্থ

‘লাইলাতুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে রাত। ‘কদর’ শব্দের অর্থ হচ্ছে পরিমাপ, পরিমাণ, নির্ধারণ ও ভাগ্য নিরূপণ। ‘কদর’ থেকেই ‘তাকদির’ শব্দ। অবশ্য কদর শব্দের অন্য অর্থ সম্মান, গৌরব, মর্যাদা ও মহিমা। সুতরাং ‘লাইলাতুল কদর’ মহিমান্বিত রজনী, সম্মানিত রাত্রি, ভাগ্য নিরূপণ, বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ রজনী অর্থে সাধারণত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। হজরত আবুবকর আররাক রা: বর্ণনা করেন, এ রাতকে এ জন্য ‘লাইলাতুল কদর’ বলা হয় যে, যে ব্যক্তি ইতঃপূর্বে কোনো ইবাদত বন্দেগি করে ‘কদর’ বা সম্মানের অধিকারী হয়নি, সে ব্যক্তি এ রাতে তওবা ইস্তিগফার করে ইবাদত-বন্দেগি করলে ‘কদর’ বা সম্মানের অধিকারী হতে পারবে।

লাইলাতুল কদরের উৎপত্তি

ইবনে জারির র.-এর বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সা: একবার ইসরাঈল গোত্রের জনৈক ইবাদতকারী সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, তিনি একাধারে এক হাজার মাস যাবত সমস্ত রাত্রি ইবাদতে মশগুল থাকতেন এবং সকাল হলেই জেহাদে বের হয়ে যেতেন। মুসলমানরা এ কথা শুনে বিস্মিত হন। রাসূলুল্লাহ সা: তার উম্মতের জন্য শুধু এক রাত্রির ইবাদতকেই সে ইবাদাতকারীর এক হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করেছেন। (তাফসিরে মাজহারি)

কদর কোন রজনীতে

পবিত্র কুরআনের সুস্পষ্ট বর্ণনায় লাইলাতুল কদর রমজান মাসেই। তবে কবে? এ নিয়ে আলেমদের একাধিক মতামত পরিলক্ষিত হয়। তাফসিরে মাজহারির বর্ণনা মতে, ‘এ রাত রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের মধ্যে আসে। কিন্তু এরও কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নেই। সহিহ হাদিস দৃষ্টে এই ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে ‘লাইলাতুল কদর’ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মহানবী সা: বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরকে রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে তালাশ করো।’ (বুখারি)
মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের রমজনর শেষ ১০ দিন অধিক ইবাদত করার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্যই মূলত লাইলাতুল কদরকে প্রচ্ছন্ন রেখেছেন। তারপরও অধিক সম্ভাব্য রাত হিসেবে ২৭তম রাতকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: গণিত সূত্র দিয়ে এর অধিক সম্ভাব্যতা প্রমাণ করেছেন। যেমন ‘সূরা কদর’-এ ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দটি তিনবার উল্লেখ আছে। আরবি বর্ণমালা অনুযায়ী ‘লাইলাতুল কদর’ লিখতে ৯টি অক্ষরের প্রয়োজন হয়। ৩ কে ৯-এর সাথে গুণ করলে গুণফল ২৭ হয়। উপর্যুক্ত হিসেবে ‘লাইলাতুল কদর’ রমজানের ২৭ তারিখ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। (তাফসিরে রুহুল বয়ান)

লাইলাতুল কদরের ইবাদাত

রাসূলুল্লাহ সা: যেভাবে এ রাত কাটাতেন এর পূর্ণ অনুসরণ করাই হবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে আমাদের নি¤œ বর্ণিত কাজগুলো করা আবশ্যক।
নিজে রাত জেগে ইবাদত করা এবং পরিবারের সদস্য ও অধীনস্থদের ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করা।
তারাবিহের সালাত আদায়ের পর রাতে তাহাজ্জুদ ও সালাতুত তাসবিহ আদায় করা।
নফল নামাজের সিজদার মধ্যে তাসবিহ পাঠ শেষে দোয়া করা। কেননা, সেজদাবনত অবস্থায় মানুষ তার রবের অতি নিকটে চলে যায়। ফলে তখন দোয়া কবুল হয়।
নিজের কৃত পাপরাশির জন্য বেশি বেশি তওবা করা। ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো পাপ না হয় তার জন্য দৃঢ়সঙ্কল্প করা।
অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা। উত্তম হবে অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ কুরআন অধ্যায়ন করা।
সাধ্য অনুযায়ী জিকির আজকার ও তসবিহ তাহলিল আদায় করা।
কবুল হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে নিজ, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, জীবিত-মৃত ব্যক্তিদের জন্য সর্বপরি দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করে একাগ্রচিত্তে দোয়া করা। বিশেষ করে মহানবী সা:-এর শিখানো এই দু’আটি বেশি বেশি করে পড়া, ‘হে আল্লাহ তুমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে তুমি ভালোবাস, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দাও।’
লাইলাতুল কদরের ফজিলত : অগণিত ফজিলতে পূর্ণ এ রাতটির কতিপয় ফজিলত নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

এ রাতের ফজিলত বর্ণনা

এ রাতের ফজিলত বর্ণনা করে এ রাতেই একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা অবতীর্ণ হয়েছে, যার নাম সূরাতুল কদর। এ এক রজনীর ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। এ রাতে পৃথিবীতে অসংখ্য ফেরেশতা নেমে আসেন এবং তারা তখন দুনিয়ায় কল্যাণ, বরকত ও রহমত বর্ষণ করতে থাকেন। এ রাতে ইবাদতে লিপ্ত বান্দাদেরকে ফেরেশতারা জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তির বাণী শোনান।
এ রাতে নফল সালাত আদায় করলে মুমিনদের অতীতের সগিরা গুনাহগুলো মাফ করে দেয়া হয়।
মহানবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় কদরের রাতে নফল সালাত আদায় ও রাত জেগে ইবাদত করে আল্লাহ তার ইতঃপূর্বের যাবতীয় সগিরা গোনাহ ক্ষমা করে দেন’। (বুখারি, মুসলিম)।

এ রাতে তওবা কবুল করা হয়।

রাতটি চিহ্নিত করার কিছু আলামত 

এ রাতকে চিহ্নিত করার কিছু আলামত হাদিস শরিফে পাওয়া যায়। যেমন রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না। নাতিশীতোষ্ণ হবে।
মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে। ইবাদাতে অধিক তৃপ্তি পাবে। বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে। হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে, যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো। (বুখারি, মুসলিম)
লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির উত্তম মাধ্যম : লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির সুবর্ণ সুযোগ হচ্ছে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। মহানবী সা: প্রতি রমজানের শেষ ১০ দিন নিয়মিত ইতিকাফ করতেন।

মুমিন বান্দাদের জন্য লাইলাতুল কদর অত্যন্ত মঙ্গলময় এবং বরকতময় রাত। এক রাত ইবাদত করে এক হাজার মাসেরও অধিক সময়ের ইবাদতের সাওয়াব পাওয়া যাবে, এর চেয়ে বড় সুবর্ণ সুযোগ আর কী হতে পারে? এ রাতের ইবাদত হতে বিমুখ ব্যক্তি সত্যিই হতভাগা। মহানবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শবে কদর থেকে বঞ্চিত হয়েছে সে ব্যক্তি সর্ব প্রকার মঙ্গল থেকেই বঞ্চিত হলো। আর যে বঞ্চিত হলো প্রকৃতপক্ষে সে সব কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো’ (নাসাঈ)।
লেখক : গবেষক
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

 

বয়স হার মেনেছে বৃদ্ধা মালঞ্চির জীবন সংগ্রামের কাছে


নারী সংবাদ


বর্তমানে বাংলাদেশের লোক সংখ্যা সাড়ে ষোল কোটির উপড়ে। যার মধ্যে ৬ দশমিক শতাংশের বয়স ৬০ বছরের ওপড়ে। বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি যখন ৫৫ কিংবা ৫৭ বছরে পা রাখেন তখন তাঁকে সাধারণত প্রবীণ কিংবা বৃদ্ধ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। কর্মক্ষম থাকলেও তাকে চাকরি এবং কাজ থেকে অব্যাহত দেয়া হয়। অনেক সময়ই তিনি কাজ করতে চাইলেও তাকে কাজে নেয়া হয় না। যে কারণে বৃদ্ধ বয়সে একজন মানুষের ভরসার পাত্র হয় তার সন্তান। তবে এ ক্ষেত্রে সমাজে গরীব মানুষের বেলায় ঘটে ভিন্ন কিছু। গরীবদের বেলায় কিছু কিছু সন্তানের নিষ্ঠুরতার কাছে মানবিকতা হার মানে। হার মানে অনেক বৃদ্ধ মা-বাবা। কারও নতুন ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম। গরীবদের বেলায় কারও ঠাঁই মেলে রাস্তার ফুটপাতে। আবার কেহ কেহ সন্তানের ধিক্কার এবং নিষ্ঠুরতার কাছে না হেরে নিজেরাই নিজেদের বাকি জীবনটাকে নতুনভাবে গোছাতে শুরু করে। কেহ কেহ সফল হয়। তাদেরই একজন ৬৬ বছর বয়সী মালঞ্চি । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মালঞ্চি বেশ পরিচিত মুখ।
চারুকলা অনুষদের সামনে একটি বড় কাঠের বাক্সে চুড়ি নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে। প্রায় ১৮ বছর ধরে চুড়ির ব্যবসা করছেন মালঞ্চি। স্বামী, তিন ছেলে এবং দুই মেয়েকে নিয়ে ছিল মালঞ্চির সংসার। অভাব অনটনের কারণে তিন ছেলেকে অষ্টম শ্রেণীর পর আর পড়াতে পারেননি তিনি। সংসারের টানাপোড়নের মধ্যেই তিনি তার ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। এরপর মালঞ্চি এবং তার স্বামীর জীবন অনাকাঙ্খিত মোড় নেয়। তাদের ছেলে-মেয়ে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। মালঞ্চি এবং তার স্বামীকে দেখাশোনা করতে চাইতো না তারা। তখন মালঞ্চি এবং তার স্বামীকে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার হতে হয়। এই বুড়ো-বুড়ি আলাদা একটি বস্তিতে থাকা শুরু করল। হাতে যে শেষ সম্বল নিয়ে তারা বের হয়েছিলেন তাও শেষ হবার পথে। পূর্ব থেকেই মালঞ্চির সংসারে অভাব-অনটন ছিল। তবে বুড়ো বয়সে সন্তানের সেবা পাবেন সেই আশায় ছিলেন তারা। তাদের আশা ছিল, ‘আমগো ছাওয়াল এই বুড়া-বুড়ীরে দেখব। জীবনে বড় কিছু হইব’। কিন্তু এই আশা যখন ভেঙ্গে গেল তখন তারা চোখের সামনে সরষে ফুল দেখতে লাগলেন। পরবর্তীতে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘আবার সংসারের হাল ধরন লাগব। এমনে বয়সের দোহাই দিয়া বইসা থাকলে চলবো না। আল্লাহ্ দিলে অহনও শরীরে যে শক্তি আছে কাজ কাম কইরা খাইতে পারমু’। চুড়ির ব্যবসা শুরু করার নিদ্ধান্ত নিলেন মালঞ্চি। কিন্তু তাদের এই সিদ্ধান্তে প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ায় মূলধনের অভাব। তিনি বললেন, ‘ঐ সময় খাওনের পর্যন্ত টেকা আছিল না। কিন্তু একটা কাজ শুরু করন লাগব। আমার জামাই(স্বামী)তখন রিক্সা চালাইত। কিন্তু বুড়া মানুষটার কষ্ট বেশি হইত। বেশি একটা আয়-রোজগারও হইত না। পরে আল্লাহর নাম নিয়া নামলাম এই ব্যবসায়ে। মাইনষের থেইক্কা সাত হাজার টেকা ধার নিয়া শুরু করছিলাম’।
ব্যবসায়ী হিসেবে মালঞ্চিকে বেশ দূরদর্শী বলা যেতে পারে। তিনি ব্যবসায়ের জন্য এমন স্থান বেছে নিলেন যেখানে হরহামেশা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিশোরীদের আনাগোনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন হওয়ায় বেচা-কেনাও ভাল হয়। এখানে কোন প্রকার সমস্যারও সমুখীন হতে হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এহানের পোলাপানগুলাই আমার মাইয়া, হ্যারাই আমার পোলা। আমার কোন সমস্যা হইলে এরাই আমার দেখভাল করে। এই শীতে আমি যহন কম্বল চাইছি তহনই দিছে। এত বছর হইয়া গেলো এরা কেউ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনাই।’ তিনি ৪০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা দামের চুরি বিক্রি করেন। তাঁর দৈনিক এক থেকে দুই হাজার টাকা আয় হয়। প্রথম দুই বছর কোন লাভের মুখ দেখতে পাননি মালঞ্চি। তিনি তার ব্যবসার মালামাল আনতেন চকবাজার থেকে বাকিতে। মাস শেষে যে আয় হত তা পাওনা পরিশোধ করতেই ফুঁড়িয়ে যেত। তবে পরবর্তীতে মালঞ্চি তার দক্ষতা এবং একাগ্রতার মাধ্যমে সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। বর্তমানে তার এই ব্যবসা থেকে যা লাভ হয় তা দিয়ে এই বুড়ো-বুড়ীর সংসার চলছে। মালঞ্চির বয়স প্রায় ৬৬। এই বয়সেও তিনি যেভাবে এই ব্যবসা অকপটে চালিয়ে যাচ্ছেন তা আমাদের সমাজের মানুষের জন্য একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি প্রমাণ করেছেন বয়স তো একটি সংখ্যা মাত্র। মনোবল থকালে একটি মানুষের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব।
কেবলমাত্র মালঞ্চি নন, আমাদের দেশে অনেক গরীব মানুষ আছেন যারা পরের কাছে হাত না পেতে পরিশ্রম করে নিজেদের সংসার চালান। এমন কাজ সত্যিই অনুকরণীয়।

সুত্রঃ (আবিদা হক লোরা) বাস

 

রেসিপি ( পিঁয়াজু এবং কাঁচা আমের শরবত)


রেসিপি


ঠান্ডা ঠান্ডা কাঁচা আমের শরবত

কাঁচা আমের শরবত ইফতারিতে খেতে মজা। গরমকালের জন্য পারফেক্ট শরবত কাঁচা আম।

উপকরণ

কাঁচা আমের টুকরো এক বাটি, ৪ চামচ লেবুর রস, পরিমান মত চিনি, স্বাদ মত লবণ, দুটো কাঁচা মরিচ, আদা কুচি, জিরাগুঁড়ো, বরফকুচি, পুদিনা পাতা।

বানানোর পদ্ধতি

কাঁচা আমের টুকরোর সাথে অল্প লেবুর রস, পরিমান মত চিনি, স্বাদ মত লবণ, দুটো কাঁচা মরিচ, আদা কুচি, জিরাগুঁড়োসহ পানি দিয়ে ব্লেন্ড করুন ভালো করে। এবার একটি বাটিতে লেবুর রস নিন। যে গ্লাসে শরবত খাবেন সেই গ্লাসটি উল্টো করে গ্লাসের মুখটা লেবুর রসে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন। এবার লেবুর রস থেকে গ্লাসটিকে সরিয়ে ঠিক একই ভাবে বিটনুন ও জিরের গুঁড়ো অল্প লাগিয়ে নিন। এর ফলে শরবত খাওয়ার সময় বেশি স্বাদ পাবেন।

পরিবেশন
পুদিনাপাতাসহ, বরফকুচি দিয়ে পরিবেশনের করতে পারেন।

মচমচে পিঁয়াজু

ইফতারির সবচেয়ে মজাদার আইটেম হলো পিঁয়াজু। আর সেই পিঁয়াজু যদি মচমচে হয় তাহলে কত মজা হতে।

 উপকরণ
মসুর ডাল, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচামরিচ চালের গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, আদা বাটা, পাউরুটি, রসুন বাটা, ধনিয়া পাতা কুচি, লবণ, তেল।

প্রস্তত প্রণালী 
মসুর ডাল ভাল করে ধুয়ে ২-৩ ঘণ্টা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর পানি ফেলে দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। একটু দানাদার থাকতে নিয়ে নিন। ব্লেন্ড করা বা বাটা ডাল একটি বাটিতে নিয়ে তেল ছাড়া সব উপকরণ দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। এবার প্যানে তেল গরম করে ১ টেবিল চামচ মত ডালের মিশ্রণ নিয়ে গোল করে তেলে ছাড়ুন।

পরিবেশন

প্যানে জায়গা অনুযায়ী আরও পিঁয়াজু তেলে দিন এবং মাঝারি আঁচে উভয় পাশ হাল্কা বাদামী করে ভেজে নিন।
ভাজা হয়ে গেলে কিচেন টিস্যুতে তুলে নিন। এভাবে সব পিঁয়াজু ভেজে গরম গরম পরিবেশন করুন আপনার ইফতারির টেবিলে।

 

চান্দিনায় সেহেরী রান্নার সময় গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা : বাধা দেয়ার স্বামী খুন

চান্দিনায় সেহেরী রান্নার সময় গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা : বাধা দেয়ার স্বামী খুন


নারী সংবাদ


কুমিল্লার চান্দিনায় সেহেরী রান্নার সময় এক গৃহবধূকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এতে বাধা দেয়ায় ছুরিকাঘাতে ওই গৃহবধূর স্বামীকে খুন করেছে প্রতিবেশি মামা। এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করেছে চান্দিনা থানা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চান্দিনা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড ছায়কোট এলাকায় এ ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ঘটে।

গৃহবধূর স্বামী নিহত ফারুক হোসেন (২৬) ছায়কোট এলাকার মৃত বাচ্চু মিয়ার ছেলে।

এ ঘটনায় নিহতের প্রতিবেশি দুই মামা- হত্যাকারী জানে আলম (৩৫) ও তার ভাই মোর্শেদকে (৩৭) আটক করেছে চান্দিনা থানা পুলিশ। তারা একই এলাকার রহমান ড্রাইভারের ছেলে।

স্থানীয় ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনাটি ঘটে গত সোমবার দিবাগত রাত ২টায়। আর ওই ঘটনার রেশ ধরে বৃহস্পতিবার ইফতারের পর গৃহবধূর স্বামীকে ছুরিকাঘাত করে ধর্ষণের চেষ্টাকারী জানে আলম। পরে রাত ১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু ঘটে তার।

নিহতের মা নাছিমা বেগম জানান, ‘গত সোমবার দিবাগত রাত ২টায় আমার পুত্রবধূ রান্না ঘরে সেহেরী তৈরি করছিল। এসময় প্রতিবেশী জানে আলম আমার পুত্রবধূকে রান্নাঘর থেকে মুখ চেপে ধরে পাশের একটি জমিতে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এসময় পুত্রবধূর চিৎকার শুনে আমার দুই ছেলে ফারুক ও জালালসহ বাড়ির লোকজন বের হয়। এ সময় জানে আলম তাকে ছেড়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পরপর আমার দুই ছেলেসহ অন্যান্যরা জানে আলমের বাড়িতে গেলে জানে আলম উল্টো আমার ছেলেদের মেরে ফেরার হুমকি দেয়।

পরদিন মঙ্গলবার সকালে আমরা এলাকার কাউন্সিলরসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি জানাই এবং তারা জানে আলমের বাড়িতে গিয়ে তাকে পায়নি। মঙ্গলবার ভোর থেকেই জানে আলম আত্মগোপন করে।

বৃহস্পতিবার ইফতারের পর প্রচন্ড গরমে আমার ছেলে ফারুক হোসেন আমাদের বসতঘর সংলগ্ন একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল। এসময় জানে আলম ও তার ভাই মোর্শেদ এসে বিষয়টি কেন এলাকায় জানাজানি হলো বলেই আমার ছেলের পেটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।’

ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল সালাম জানান, ‘দুটি পরিবারই হতদরিদ্র। তবে জানে আলম মাদকাসক্ত এবং চরিত্রহীন। ভোর রাতের সেহেরী তৈরি করার উদ্দেশ্যেই গৃহবধূ বাইরের রান্না ঘরে রান্না করছিল। এসময় গৃহবধূকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে জানে আলম। ঘটনার পর সে আত্মগোপন করে এবং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফারুককে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই ছুরি নিয়ে বাড়িতে আসে।’

এ ব্যাপারে চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবুল ফয়সল জানান, ছুরিকাঘাত করার পরপর নিহতের মা নাছিমা বেগম বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা রাত ৯টায় ধর্ষণের ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগে মামলা গ্রহণ করি। রাত সাড়ে ১২টার মধ্যে ঘটনার মূলহোতা জানে আলমসহ তার বড় ভাই মোর্শেদকে আটক করি। রাত অনুমান ১টার দিকে ঢামেকে মৃত্যু হয় ছুরিকাঘাতে আহত ফারুক হোসেনের। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

 

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-৪

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-৪


সাদিয়া মুকিম 


আমরা যা করতে পারি – অন্য সময়ের মতই রমজানে বারে বারে অল্প করে পরিমিত পরিমানে খাওয়ার অভ্যাস করা । যেমন: ইফতার অল্প করা,

একটু পরে অল্প রাতের খাবার খাওয়া , সেহেরীতেও পরিমিত খাওয়া । ইফতার, রাতের খাবার ও সেহেরী এই তিন বেলাই খাবার আমরা খাবো কোনো বেলা খাবার খাওয়া বাদ না দিয়ে বরং অল্প অল্প করে বার বার পরিমিত এবং ক্যালরি মান অনুযায়ী খেতে হবে। না হলে কিন্তু শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে ।

সেহেরী না খাওয়া: – সেহেরি একেবারেই না খাওয়া ঠিক নয় , প্রথমত, সেহেরী খাওয়া সুন্নত এবং এতে বরকত রাখা হয়েছে। রহমতের ফেরেশতারা এ সময় সেহেরী কারীদের জন্য দোয়া করেন। তাই এই সুবর্ণ সুযোগ হারানো ঠিক নয় । আর সেহরী না খেলে সারা দিনের ঘাটতিতে শরীর ও দুর্বল হয়ে যাবে ।

অনেকে মনে করেন, সেহরি না খেয়ে এক বেলা শুধু ইফতারে খেলে ওজন কমবে।কিন্তু এতে হিতে তাছাড়া সেহেরী না খেলে বিপকক্রিয়া পরিবর্তন হয়ে শরীরের সঞ্চিত শক্তি ক্ষয় হয়, ফলে দেহে ক্লান্তিআসে ও রোজা রাখতে অনেক কষ্ট হয় । আমাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ওজন কমানো না বরং সিয়াম পালনে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ এ কথা ভুলে গেলে চলবে না।

আমাদের করণীয় হলো কষ্ট হলেও সেহেরি খেতে হবে । একান্ত অরুচী হলে একটু পানি, ফল বা দুধ হলেও খাওয়া চাই । অনেকেই আম -দুধ -চিড়া খেয়ে থাকেন ।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরির মাঝে বরকত রয়েছে। (বুখারী)

এবং তিনি (সাঃ) বলেছেনঃ

“আমাদের সাওম আর আহলে কিতাবদের সাওম পালনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হচ্ছে সেহরী গ্রহণ।” (মুসলিম)

ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় : সারাদিনের রোযা শেষে অনেকেই প্রতীক্ষায় থাকি গরম এক কাপ চা এর জন্য । এমনকি অনেকে সেহরী এবং ইফতার উভয় সময়েই চা পান করেন। খেয়াল রাখতে হবে রোজায় চা, কফির মাত্রা যেনো কম হয় । তা না হলে পানিশুণ্যতা , কোষ্ঠকাঠিন্য, ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

কারণ, ক্যাফেইন হলো diuretic, যা শরীর থেকেপানি বের করে দেয়।

একান্ত না পারলে বা চা বা ক্যাফেইন যদি খেতেই

হয় , তবে হালকা ক্যাফেইনযুক্ত খাওয়া যেমন:গ্রিন টি। সেহেরিতে ক্যাফেইন না খাওয়াই ভালো, সারাদিন তাহলে পানি পিপাসা লাগবে এবং শরীরে পানি শুন্যতা তৈরী হবে।

রোজা রাখাকে ওজন কমানোর উপায় মনে করা :অনেকে মনে করেন রোজা রেখে ডায়েট করবেন ও ওজন কমাবেন। এটি ভুল, কারণ রোজা রেখে আমরা আল্লাহর ইবাদত করছি , আল্লাহ রোজার মাস দিয়েছেন বেশি বেশি ইবাদাত বন্দেগী করতে, আত্মশুদ্ধি করতে । তাই রোজার মাসকে ডায়েটিং এর মাস না মনে করে আল্লাহতায়ালা আখিরাতকে লাভ করার, গুনাহ মোচন করার যে অপূর্ব সুযোগ দিয়েছেন, তা আমাদের গ্রহণ করা উচিত।

অন্যান্যদের ও ইফতারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া — আমরা নিজেরাতো সামর্থ্যের মধ্যে সবচাইতে ভালো খাবারগুলো সেহরি ও ইফতারে খাচ্ছি, আসুন না তাঁদের পাশেও দাঁড়াই যারা এক মুঠো খাবার ও খেতে পারছেন না অভাবের তাড়ণায়!

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কেউ একজন রোযাদারের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করে, তাহলে তার জন্যও রোযাদার ব্যক্তির অনুরূপ সওয়াব

রয়েছে যদিও রোযাদারের সওয়াব থেকে কোনো কমতি হবে না।(তিরমিযী)
অনেক পুষ্টিমান যুক্ত, ক্যালরি যুক্ত, স্বাস্থ্যমান বজায় রেখে সেহরি ও ইফতার করছি কিন্তু এই আমি আর আপনি যেনো আল্লাহ তায়ালার দেয়া রিজিক স্বরুপ আমানতকে অপচয় যেনো না করি!

আমরা যেখানে খাদ্যের পুষ্টি মান নিয়ে এতো আলোচনায় মুখর আমাদের এই পৃথিবীর আরেক প্রান্তে ই কোনো মা এই মুহূর্তে তার সন্তানের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে এই কষ্টে যে তাদের কাছে এমন কোনো খাবার নেই যা দিয়ে ক্ষিদে নিবারণ সম্ভব ! সুবহানাল্লাহ। আল্লাহ আমাদের শুকর আদায় করার তৌফিক দান করুন।

খাওয়ার সময় যে খাবারটুকু প্লেটের কোনায় রয়ে যায়, পাতিল ধোয়ার সময় নিচে যে ভাত টুকু লেগে থাকে, ময়লা ফেলার সময় যে উচ্ছিষ্ট ফেলতে যাচ্ছি তখন যেনো আমরা প্রত্যেকেই মনে রাখি إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ আল্লাহ অপচয় কারীকে ভালোবাসেন না!

“.وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ﴾….তোমরা খাও এবং পান করো, এবং কোনো অবস্থাতেই অপচয় করো না, আল্লাহ্ তাআলা কখনোই অপচয়কারীদের ভালো বাসেন না ।” (সূরা আ’রাফঃ৩১)

রমাদ্বানের বরকতময় সময় চলে যাচ্ছে, আল্লাহ আমাদের ঠিকভাবে ইবাদাত করে উনার সন্তুষ্টি এবং আমাদের পাপ মোচন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

(কৃতজ্ঞতা স্বীকার- ওয়েবসাইট সমূহ)

 

উপবাসী ভোজন

উপবাসী ভোজন


ফাতিমা মারিয়াম


বাদল অনেকদিন পর চাচাতো বোন কেয়া আপার বাসায় এসেছে। ছোট বাচ্চারা মামাকে কাছে পেয়ে ভীষণ খুশি।মামার সাথে কিছুক্ষণ খেলা করার পর তারা নিজেদের রুমে চলে গেল। এবার কেয়া আপা এসে বাদলের সাথে গল্প শুরু করল। কথার এক পর্যায়ে কেয়া বাদলকে বলল-‘আম খাবি বাদল? তোর দুলাভাই রাজশাহী থেকে আম আনিয়েছে। একেবারে বাগান থেকে আনা, ফর্মালিন মুক্ত। কাল পাটিসাপটা পিঠা বানিয়েছিলাম, ফ্রিজে আছে। দিব তোকে?’

-‘আপা কী বলছ? আমি রোজা রেখেছি!’

-বাহ! ভালো, তুই তাহলে এখন রোজা রাখিস?

-হুমমম…আমি এখন বড় হয়ে গেছি।

এমন সময় পাশের বাসার ভদ্রমহিলা আসলেন। তিনি আসার পর বাদল উঠে অন্য রুমে গেল। উনি কিছুক্ষণ গল্প করে চলে যাওয়ার পর কেয়া আপা বাদলের কাছে এসে বসলেন। ‘আর বলিস না ভাই, এদের নিয়ে হয়েছে জ্বালা। পাশের বাসার ভাবী আসলেন না? উনি এসেই শুরু করলেন উনার ঈদের শাড়ির বাজেট কত? ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোন মার্কেট থেকে শপিং করবেন? উনার স্বামী উনাকে কত টাকা দিয়েছেন কেনাকাটার জন্য? এসব হাবিজাবি। আরে বাপু, আমরাও তো শপিং করি এইভাবে তো মানুষকে বলে বেড়াই না…হুঁহ!

বাদল মাথা নাড়িয়ে বলল- আপা কিছু মানুষের কাজই হল নিজেকে জাহির করা। এদের থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখাই ভালো।

– হুম ঠিক বলেছিস! এখন বল তোরা বাসার সবাই কেমন আছিস? বাবুলের বউ কেমন? সবার সাথে মানিয়ে চলে?

বাবুল হল বাদলের বড় ভাই। কয়েকমাস আগে বিয়ে হয়েছে।

-আর কি বলব আপা! ভাবী সংসারের কোন কাজই পারেনা। আম্মাকেই সব কিছু করতে হয়! ভাবীকে কিছু কাজ করতে বললেই সে আম্মাকে এসে বলবে আম্মা আপনি দেখিয়ে দেন। আরে! এত বড় মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে এসেছে কোন কাজ না শিখেই! আম্মার হয়েছে যত জ্বালা!

-হুম তুই ঠিকই বলেছিস। আমাদের পরিবারের বউগুলি একটাও ভালো পড়েনি। আমাদের মইন কে তো ওর বউ ভেড়া বানিয়ে রেখেছে। বউয়ের কথায় উঠে বসে।

– তারপর দেখনা আপু ভাবীর বিয়ের পর এইটা প্রথম রমজান। ভাবীর বাবার বাড়ি থেকে এখনও আমাদের বাসায় ইফতারি পাঠায়নি।
………

এসব কথোপকথন এভাবেই দীর্ঘায়িত হতে থাকে; আমার, আপনার এবং আমাদের সবার। এখানে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বাদল কিন্তু বোনের আহবানে কিছুই খায়নি। কারণ সে রোজা রেখেছে। কিন্তু কথার এক পর্যায়ে যখনই অন্যের সমালোচনা বা গীবত চলে এলো তখনই তারা দুজন একে অন্যকে উৎসাহিত করে যায়। এভাবেই আমরা আমাদের সিয়ামের মূল শিক্ষা থেকে দূরে চলে যাই। খাদ্যপানীয় গ্রহণ না করেও নিজেদের সিয়ামকে শুধুমাত্র উপবাসে পরিণত করে দিই।

অথচ আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত হাদিসে আমরা জানি যে আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (রোযা রাখার পরও) মিথ্যা বলা ও খারাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকে না তার পানাহার ত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।’ (বুখারী ও মুসলিম)

কিন্তু আমাদের বাস্তব জীবনে এর অনুশীলন আমরা করিনা। এই রোজার দিনে কেউ এক প্লেট সুস্বাদু খাবার দিলে সেটা এড়িয়ে যেতে পারলেও এক ঝুড়ি মন্দ কথা সানন্দে গ্রহণ করি এবং তাকেও এক ঝুড়ি বা তারচেয়েও বেশি উপহার দিই।

অথচ সূরা আল হুজুরাতে আল্লাহ গীবতকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। ‘হে ঈমানদারগণ, বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গোনাহ। দোষ অন্বেষণ করো না। আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে। এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু।’ [আল হুজুরাত-আয়াত নং-১২]

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করে আমাদের সব ইবাদাত কবুল করে নিন। আমীন।

 

রেসিপি (ভেজা ভেজা ছোলা বুট)

(ভেজা ভেজা ছোলা বুট)


রেসিপি


ভেজা ভেজা ছোলা বুট
ছোলা বুট হলো ইফতারির মুল আকর্ষণ। সাথে মচমচে মুড়ি। আসুন রমজানের শেষে আবার নতুন করে দেখে আসি ভেজা ভেজা ছোলা বুট তৈরি করার নিয়মটি

উপকরণে যা লাগবে

ছোলা সিদ্ধ পরিমাণ মত, পেঁয়াজ কুচি,
টমেটো কিউব করে কাটা, কাঁচামরিচ কুচি, তেল, ধনে গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, লেবুর রস, আদা-রসুন বাটা, গরম মসলা গুঁড়ো, লবণ স্বাদমতো এবং ধনে পাতা কুচি ইচ্ছে।

পদ্ধতি
সামান্য লবণ ও হলুদ গুঁড়ো দিয়ে ছোলা বুট সেদ্ধ করবেন, তেল দিয়ে গরম করে আদা-রসুন বাটা দিয়ে একটু লালচে হয়ে এলে এতে পেঁয়াজ কুচি দিবেন। পেঁয়াজ কুচি নরম হয়ে এলে বাকি সকল মসলা একের পর এক প্যানে দিয়ে সামান্য পানি দিয়ে মসলা কষাতে থাকুন। মসলা কষে আসার পর টমেটো কুচি দিয়ে ভালো করে নেড়ে ছোলা বুট ঢেলে দিন। ভালোমতো নাড়াতে থাকুন মসলা মাখা মাখা হয়ে যাওয়া পর্যন্ত। এরপর লেবুর রস দিয়ে ভালো করে নেড়ে উপরে ধনে পাতা কুচি ছিটিয়ে নামিয়ে নিন। ব্যাস, তৈরি মজাদার ছোলা বুট।

স্পেশাল আলুর চপ

উপকরণ

আলু ৫০০ গ্রাম,
ডিম ১টি সিদ্ধ করে ভর্তা করতে হবে,
কাঁচামরিচ কুচি ১ চা চামচ,
ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ,
পেয়াজ বেরেস্তা করা ২ টেবিল চামচ,
গরম মশলা গুঁড়ো ১ চা চামচ,
ডিম ১টি ফেটানো,
বিস্কুটের গুঁড়ো পরিমাণমতো,
তেল ভাজার জন্য পরিমাণমতো,
লবণ স্বাদ অনুযায়ী।

প্রস্তুত প্রণালী
প্রথমে আলু সিদ্ধ করে লবণ দিয়ে কিছুক্ষণ মেখে রাখতে হবে। একটি কড়াইয়ে তেল গরম করে একে একে তাতে আলু ভর্তা, ডিমের ভর্তা, কাঁচামরিচ কুচি, ধনেপাতা কুচি, গরম মশলা গুড়ো, স্বাদ অনুযায়ী লবণ এবং পেয়াজ বেরেস্তা দিয়ে ভালোভাবে ভাজা ভাজা করে আবার মেখে নিতে হবে। হাল্কা হাতে চ্যাপটা আকারের চপগুলো প্রায় ১০-১২টি করে ফ্রিজে প্রায় ৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর ডিমের গোলায় ডুবিয়ে বিস্কুটের গুঁড়ো মিশিয়ে গরম ডুবন্ত তেলে ভেজে টিস্যু পেপারে তুলে রাখতে হবে। ব্যাস তৈরি হয়ে গেলো মজাদার আলুর চপ।

 

এক গুচ্ছ মুক্তো-১ (কুরআন থেকে)


সাদিয়া মুকিম 


৩৪) প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানীর একটি নিয়ম ঠিক করে দিয়েছি, যাতে (সে উম্মতের) লোকেরা তাদের পশুদের উপর আল্লাহ্‌র নাম উচ্চারণ করতে পারে । কেননা তোমাদের ইলাহ একমাত্র আল্লাহ্‌, অতএব তোমরা তার [ ইচ্ছার ] নিকট আত্ম সমর্পন কর। এবং সুসংবাদ দিয়ে দাও বিনয়ের নীতি অবলম্বন কারীদেরকে ।

ব্যাখ্যা – এই আয়াতের অর্থ এই যে, এই উম্মতকে কোরবাণীর যে আদেশ দেয়া হয়েছে তা কোন নূতন আদেশ নয়। পূর্ববর্তী উম্মতদেরও কোরবাণীর আদেশ দেয়া হয়েছিলো। এই কোরবাণী হতে হবে শুধু মাত্র এক আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য। কোরবাণীর পশুর রক্ত মাংস কিছুই আল্লাহ্‌র কাম্য নয়। বান্দার একাগ্রতা ও নিজেকে উৎসর্গ করার মানসিকতা হচ্ছে কোরবাণীর প্রতীক যা পশু কোরবাণী ও তার মাংস গরীবদের সাথে অংশগ্রহণের মাধ্যমে উদ্‌যাপন করা হয়। কোরবাণীর পশুর উপরে আল্লাহ্‌র নাম উচ্চারণ করা হজ্জ্বের আনুষ্ঠানিকতার এক প্রধান অংশ।

“সুসংবাদ দাও ” তাদের জন্যই সুসংবাদ যারা বিনয়ী। দম্ভ বা অহংকার যাদের উদ্ধত ও অত্যাচারী করে তোলে নাই। যারা জাগতিক অর্থ সম্পদ ক্ষমতা সব কিছুর জন্য সর্বশক্তিমানের কাছে কৃতজ্ঞ এবং আল্লাহ্‌ সন্তুষ্টি লাভের জন্য গরীব ও নির্যাতিতের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে, যারা সুখে – দুঃখে স্বাচ্ছন্দে ও অভাব অনটনে আল্লাহ্‌র কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং সন্তুষ্ট থাকে তারাই বিণীত।

বিনয় এমন একটা গুণ যা আল্লাহ্‌র নিকট অত্যন্ত প্রিয়। মোমেন বান্দার চরিত্রে এই গুণটির প্রকাশ ঘটবে।

৩৫) যাদের অবস্থা এই যে, আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে, যে বিপদই তাদের ওপর আসে তার ওপর তারা সবর করে, নামায কায়েম করে এবং যাকিছু রিযিক তাদেরকে আমি দিয়েছি তা থেকে খরচ করে৷

ব্যাখ্যা -আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যে পাক-পবিত্র রিযিক ও যে হালাল উপার্জন আমি তাদেরকে দান করেছি তা থেকে তারা খরচ করে৷ আবার খরচ করা মানেও সব ধরনের যা-তা খরচ নয় বরং নিজের ও নিজের পরিবার পরিজনদের বৈধ প্রয়োজন পূর্ণ করা,আত্মীয়, প্রতিবেশী ও অভাবীদেরকে সাহায্য করা, জন কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করা এবং আল্লাহর কালেমা বুলন্দ করার জন্য আর্থিকত্যাগ স্বীকার করা৷ অভাবগ্রস্থদের মাঝে দান করা আল্লাহ্‌র প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর শ্রেষ্ঠ ভাষা।

 

বিবাহের উদ্দেশ্য-১

বিবাহের উদ্দেশ্য-১


কানিজ ফাতিমা


যদিও মানুষের জৈবিক চাহিদা শালীন উপায়ে পূরণ বিবাহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য তথাপি এটি বিবাহের একমাত্র মূল উদ্দেশ্য নয়। কুরআনের স্পষ্ট ভাষা অনুযায়ী দু’জন মানুষের মিলনের মাধ্যমে শান্তি ও স্বস্তি অর্জন করাই বিবাহের মূল লক্ষ্য।

“তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আর রূম : ২১)

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম নর ও নারীর সম্পর্ককে একে অপরের সাহায্যকারী রূপে বর্ণনা করেছেন যেখানে পরস্পর পরস্পরকে ভাল কাজে ও আল্লাহর দেয়া খেলাফতের দায়িত্ব পালনে সাহায্য করবে।

“আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক তারা পরস্পরকে ভাল কাজে সহায়তা করে ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সূরা আত তাওবাহ : ৭১)

বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ইউসুফ আল কারযাবী (রহ.)র মতে, “একটি জাতি গঠনের মূল ভিত্তি প্রস্তর হিসেবে ইসলাম যেমন সৎ ব্যক্তি গঠনকে উৎসাহিত করে, ঠিক তেমনি একটি সুষম সমাজ গঠনের অপরিহার্য শর্ত হিসেবে সুসংহত পরিবার গঠনকেও ইসলাম অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করে। এটা সর্বজন সম্মত যে, বিবাহ, যা একজন নারী ও একজন পুরুষকে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করে, একটি পরিবারের গোড়া পত্তন ঘটায়। বিবাহ ব্যতীত সত্যিকার অর্থে সুসংহত পরিবার গঠনের আর কোন পথ নেই। এটিই একমাত্র বৈধ যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কর্তৃক অনুমোদিত।

বিভিন্ন যুগে বিবাহের বিপক্ষে কিছু দর্শন বা মতবাদ সমাজে প্রচলিত ছিল এবং এখনও আছে। পারস্যে (বর্তমান ইরান) ইসলামের আগমন ঘটার পূর্বে মানির দর্শন (Mani’s Philosophy) প্রচলিত ছিল, সেখানে মনে করা হতো এ পৃথিবীর সবকিছু হচ্ছে শয়তানের প্ররোচনা। কাজেই পার্থিব সব ভোগ বিলাস ত্যাগ করতে হবে। এ ধারণার বশবর্তীরা বিবাহ বর্জনকেও নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের একটি উপায় বলে মনে করতো।

খ্রীস্ট ধর্মেও গোড়া সন্নাসবাদের অনুপ্রবেশ ঘটে- যেখানে পার্থিব সবকিছু ত্যাগ করে বৈরাগ্য বরণ করার কথা বলা হয়। এতে মহিলাদের সব ধরনের প্ররোচনার উৎস এবং শয়তানের মূর্ত প্রতীক হিসেবে চি‎িহ্নত করা হতো। নারীসঙ্গ আত্মাকে কলুষিত করে এবং স্বর্গ থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে নেয়।

এই আধুনিক যুগেও পশ্চিমা বিশ্বে একদল লোক রয়েছে যারা মহিলাদের বিষাক্ত সাপের সাথে তুলনা করেন, যাদের স্পর্শ মধুর কিন্তু ছোবল ভয়াবহ বিষাক্ত। তারা আরও দাবী করে যে বিবাহের মাধ্যমে নারী-পুরুষের হাতের মুঠোয় ভরে ফেলে এবং তাকে দায়িত্বের শেকলে বন্দী করে। কাজেই একজন পুরুষ যে স্বাধীনভাবে জন্মগ্রহণ করেছে, কেন স্বেচ্ছায় নিজ গলায় বিবাহ নামক বন্দীত্বের শিকল জড়িয়ে নেবে- দুঃখজনক হলেও সত্যি বর্তমান যুগের কিছু মুসলমান যুবক এই গোষ্ঠির বিকৃত চিন্তাকে গ্রহণ করেছে এবং বিবাহের দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্যের বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে চাচ্ছে। যদি তারা তাদের জৈবিক চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয় তবে তাদের জন্য সে চাহিদা পূরণের যে পথটি খোলা থাকে তা হলো- ব্যভিচার, যা ঘৃণ্য ও অবৈধ। অথচ তারা বিবাহের মাধ্যমে শালীন উপায়েই তা লাভ করতে পারতো

 

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-৩

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-৩


সাদিয়া মুকিম


আমরা যা করতে পারি চিনি মুক্ত খাবার ও পানীয় পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি। যেমন: ফলের শরবত, বিভিন্ন রকমের ফ্রেশ ফল , চিনি যুক্ত না করে দই এর শরবত ইত্যাদি। কোমল পানীয় পান না করে করে ইফতার থেকে সেহেরী পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা উচিত। এক্ষেত্রে ইসুবগুল এর ভুষির শরবত এবং ডাবের পানি অনেক সহায়ক ।

জটিল শর্করা না খাওয়া: শর্করা জাতীয় খাবার

আমাদের শরীরে শক্তি যোগায়, তাই অনেকে মনে করি রোজায় বেশি বেশি শর্করা খাওয়া উচিত। অনেকেই অন্যান্য সময়ের চাইতে রমাদ্বানেই বেশী ভাত খান । আমাদের দেশে সাধারনত: সাদা ভাত

বা সাদা আটা খাওয়া হয়। যা শরীরে ইনসুলিন এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে একটু পরেই আবার খেতে ইচ্ছা করে, তাছাড়া এগুলো হজম হতে সময় কম লাগে, ফলে ক্ষুধাও তাড়াতাড়ি লাগে।

আমরা যা করতে পারি সম্ভব হলে সাদা শর্করা বাদ দিয়ে লাল শর্করা: যেমন: লাল আটা, লাল চাল খেতে অভ্যাস করতে পারি। এগুলোতে low-glycaemic index থাকে,তাই হজম হয় আস্তে আস্তে এবং ক্ষুধা লাগে দেরীতে । রক্তে চিনির পরিমান তাড়াতাড়ি বাড়তে দেয় না। সম্ভব হলে সব সময়ের জন্য অভ্যাসে পরিণত করলে আমাদের ই কল্যাণ বয়ে আনবে ইনশা আল্লাহ।

একেবারেই বেশী না খাওয়া – ইফতার বা সেহরীতে যেনো মনে না করি সারা দিন খাই নি বা অনেক ক্ষণ না খেয়ে থাকতে হবে এজন্য বেশী করে খাই – এটা একেবারেই সঠিক না । এভাবে খাবার টেবিলের উপর পাগলের মতো ঝাপিয়ে পড়ে হাপুশ হুপুশ খাওয়া রোজার যে আসল উদ্দেশ্য–সংযম,সেই সংযম কিন্তু নষ্ট হয়ে যায়। সেই সাথে নষ্ট হয়

আমাদের শরীরের হজম প্রক্রিয়া । তাছাড়া একসাথে এতরকমের ও এত বেশি খাবার খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা,গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি বেড়ে যাতে পারে । আবার অনেকে সেহেরিতেও অনেক বেশি খান,মনে করেন, বেশি খেলে পরে ক্ষুধা লাগবে না, এটিও ভুল ধারণা।

 

প্যারেন্টিং (সন্তানের না বলা কথা বুঝি)

প্যারেন্টিং (সন্তানের না বলা কথা বুঝি)


ফাতেমা শাহরিন


সন্তানকে বাবা মা প্রাথমিকভাবে চান যাতে মা বাবার মনের মত ভাল সন্তান(?) সন্তান হোক। নিজেদেরকে শান্ত রাখুক। তার জন্য দরকার উপযুক্ত প্ল্যানিং। প্রথম থেকেই যদি সন্তানের না বলা অভিমান, আবেগ, চাওয়া বুঝেন মা-বাবা তাহলে সমাধান হয়ে যায় গোড়ার থেকেই অনেক সমস্যায়।

নিজেকে স্থিতিশীল রাখুন

মা বাবা ও পরিবারের সবাইকে খুব শান্ত ও সংঘবদ্ধ থাকতে হবে। যদি বাড়ীর লোকের মধ্যে মতের অমিল হয় তার কথা না বুঝে, প্রকাশ করতে না দেয় ওদের বিকাশে সুন্দর হবে না। সন্তানরা খুব সহজেই পরিবারের মেরুকরন বুঝতে পারে এবং সেই পরিস্থিতির সদ্ব্যবহার করে।

নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রাখুন

বাড়ীর মধ্যে সন্তানের সাথে কথা বলুন। সন্তানকে কিছু খেলনা দিয়ে আলাদা করে জানতে চান কেমন কাটলো সারাদিন। লক্ষ্য রাখবেন জায়গাটি যেন সুরক্ষিত হয় কারণ এই সময় সন্তান অনেক কথায় বলতে পারেন। সন্তানের ব্যবহারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবার চেষ্টাও করবেন। অ্যাটেনশন পেলে ওদের মধ্যে শান্ত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে।

ধীরে ধীরে সময় নিন

সন্তান প্রয়োজনীয় কিছু বলতে চাইছে বা বলা শুরু করেছে সময়টা প্যারেন্টিং এ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই সময় বাচ্চাকে স্নেহের সাথে বোঝাতে হবে সে যা ব্যবহার করছে তা পরিবারের কারোর কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। তার নিজস্ব চাহিদা নিশ্চয় করে, তা প্রকাশ করতে হবে সংযতভাবে।

সন্তানকে সবসময় উপদেশ নয়

অনেকসময় চুপ হয়ে যায় সন্তানরা এরকম বহি:প্রকাশ ঘটানোর কারণ হল উপদেশ আর শাসন। এখনকার সন্তানরা গন্তব্যস্থল বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় শপিং মল। সেখানে সার সার সুন্দর করে সাজানো খেলনাপাতির সামনে নি:সন্দেহে তাদের চাহিদার পরিমান হয়ে যায় আকাশছোঁয়া। বার বার কাউন্সেলিং করে বুঝাতে হবে আপনারা উপদেশ বা শাসন নয় বরং জানতে চান ওকে বুঝার জন্য।

রেফারেন্সঃ
প্যারেন্টিং আর্টিকেল অনলাইন।

 

গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা

গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা | প্রেগনেন্সিতে সিয়াম পালন ও করণীয়।


সোহানা তাসনিম অনুভা


অনেক মায়েদের প্রশ্ন থাকে যে গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কিনা কিংবা রাখলে করণীয় কী হবে। প্রকৃতপক্ষে গর্ভবতী মায়েরা রোজা রাখতে পারবেন কিনা তা নির্ভর করবে তার এবং তার গর্ভস্থ সন্তানের সুস্থতার উপরে। ইসলামে সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে কিছু শিথিলতা রয়েছে, যেমন ভ্রমণকারী, অসুস্থ ব্যক্তি, গর্ভবতী মা, সন্তানকে দুগ্ধ পান করা অবস্থা ইত্যাদি। হাদীসে বর্ণিত রয়েছে-“যদি কোন গর্ভবতী মায়ের গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হবার আশঙ্কা তৈরি করে, তবে সে রোজা থেকে বিরত থাকতে পারবে এবং পরবর্তীতে তার সুবিধাজনক সময়ে সে ওই রোজাগুলো কাজা আদায় করে নেবেন।” এখন যদি কোন মা মনে করেন তিনি রোজা রাখবেন, তবে তাকে প্রথমে একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। জেনে নিতে হবে গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা তার এবং গর্ভস্থ সন্তানের কোন ক্ষতির আশঙ্কা সৃষ্টি করছে কিনা।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ৪-৭ মাস প্রেগনেন্সি পিরিয়ড রোজা রাখার জন্য বেশি নিরাপদ, কারণ প্রথম ৩ মাসে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব হলে কম ওজনের শিশুর জন্ম হতে পারে এবং প্রেগনেন্সির শেষের দিকে পানি এবং খাদ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এছাড়া প্রেগনেন্সিতে যদি অন্যান্য সমস্যা থেকে থাকে, যেমন ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন/উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি ডিজিজ, ঘন ঘন প্রস্রাবের ইনফেকশন ইত্যাদি থাকলে রোজা থেকে বিরত থাকাই উত্তম।

গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা ও করণীয়

১) সেহরি এবং ইফতারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানীয় ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। বিভিন্ন ধরনের তাজা ফলের রস, ডাবের পানি শরীরে পানির চাহিদা দূর করবে।

২) ফলের মধ্যে খেজুর এবং কলায় প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে, যা দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে।

৩) প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো সেহরি এবং ইফতারের সময় খেতে হবে।
৪) বেশিক্ষণ রোদে ঘোরাঘুরি করা উচিত হবে না।

৫) দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।

রোজাদার মায়েদের যে সমস্যাগুলো দেখা
দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
১. বমি হলে।

২. অজ্ঞান হয়ে গেলে।

৩. বাচ্চার নড়াচড়া কম অনুভূত হলে, সাধারণত বলা হয় গর্ভের বাচ্চা ১২ ঘন্টায় ১০-১২ বার মুভমেন্ট করবে। এর থেকে কমে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

৪. লেবার পেইন বা পেটে ব্যথা অনুভূত হলে, কারণ ডিহাইড্রেশন-এর কারণে অনেক সময় ইউটেরাস-এর কনস্ট্রাকশন শুরু হতে পারে।

৫. প্রস্রাবের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলে ইত্যাদি।
এই ছিল গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা ও করনীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি।

সবাই ভালো আর সবাই সুস্থ থাকুন।
সবার জন্য শুভকামন

 

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-২

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-২


সাদিয়া মুকিম


আমাদের করনীয় হবে যথাসম্ভব ভাজাপোড়া খাবার বাদ দিয়ে সহজপাচ্য খাবার, যেমন: কাঁচা ছোলা , চিড়া- দই, লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, নুডুলস, নরম খিচুড়ি ,জাউ ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা । সাথে মৌসুমী ফল, সালাদ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

সেহরীতে,ডাল বা ডিম, স্বজি,মাছ ,গোশত যোগ করা যেতে পারে। বাদাম, বিনস, শস্য, ছোলা, দুধ, মিষ্টি আলু, ডাল, ফল, সবজি, সালাদ ইত্যাদি খেতে হবে । প্রতিবেলা মাংস না খেয়ে অন্তত এক বেলা মাছ খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত । সুষম খাবার (balance diet) এর আয়ত্ত্বে নিয়ে আসতে খাবার মেন্যু । যেমন: আমিষ, শর্করা, ফ্যাট, ভিটামিন, দুধ, দই, মিনারেলস, ফাইবার ইত্যাদি খেতে হবে সঠিক নিয়ম অনুযায়ী ।অতিরিক্ত ঝাল মশলা যুক্ত, ভুনা ও লবনাক্ত খাবার বাদ দেয়ার চেষ্টা করা উচিত।

যেসব খাবার, ফল, স্বজি পানি কন্টেইন করে সেসব খাবার ইফতারিতে প্রায়োরিটি দেয়া উচিত। যেমন- তরমুজ, পেঁপে,বাংগী,জাম্বুরা, কমলা, শশা, স্ট্রবেরী, বেরীস,সালাদপাতা, আভোকাডো, পীচ, চেরী, ঝুক্কিনী, আসপারাগাস, সেলারি, গাজর, টমেটু , ফুলকপি, ডাটা, ব্রোকলি ইত্যাদি ।

অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত – ইফতারের জন্য খেজুর অত্যন্ত উপযোগী কারণ এতে আছে শর্করা ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভ্যাস ছিল খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা ।

‘‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র ’’ [সুনান আবু দাউদ : ২৩৫৭,সহীহ]।

চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় খাওয়া: – আমাদের ইফাতরের টেবিলে রং বে রং এর পানীয় বা শরবত থাকেই । খুব বেশী চিনি যুক্ত খাদ্য ও পানীয় আমাদের শরীরে দরকার নেই, তাই নিয়মিত চিনি যুক্ত খাবার খাওয়া যথাসম্ভব বাদ দিতে হবে। কারণ এটা খুব তাড়াতাড়ি রক্তে চিনির(ইনসুলিন) মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে সাময়িকভাবে ব্রেইনে শক্তি জোগালেও একটু পরেই তা স্তিমিত হয়ে যায় এবং শক্তিহীন মনে হয়।

যেমন: ট্যাং, ট্রাডিশনাল মিষ্টি , পায়েশ, ফালুদা, শাহী জিলাপি, কেক, বিস্কিট ইত্যাদি রোজায় খাওয়া হয়, কিন্তু এগুলো প্রচন্ড চিনিযুক্ত ও উচ্চ ক্যালোরীযুক্ত । এগুলো রোজায় প্রতিদিন না খেয়ে মাঝে মাঝে হাওয়া যেতে পারে। এছাড়া যাদের এসিডিটির সমস্যা আছে তাদের লেবুর শরবত দিয়ে ইফতার শুরু না করাই ভালো।

 

দোয়াই হলো ইবাদত !

কোন মুসলমানের দোয়া বৃথা যায় না তোমরা যত প্রার্থনাই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করবেন


কুয়েত


বিসমিল্লাহ-হির-রাহ’মানির রাহীম।

কোনো মুসলিম ব্যক্তির দুআ কখনোই বৃথা যায় না দুয়া তিনভাবে কবুল হতে পারে দুয়া কবুল না হওয়ার কয়েকটি কারণ কোনো মুসলিম ব্যক্তির দুআ কখনোই বৃথা যায় না

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কোন ব্যক্তির দুয়া কবুল করা হয়; যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাড়াহুড়ো করে। (তাড়াহুডা করার অর্থ হচ্ছে, দুয়া করতে করতে ক্লান্ত হয়ে সে) বলে, আমার প্রভুর নিকট দুয়া তো করলাম, কিন্তু তিনি আমার দুয়া কবুল করলেন না।”

সহীহ মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, বান্দার দুয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয়, যতক্ষণ সে গুনাহর জন্য বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার জন্য দুয়া না করে, আর যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়ো করে। জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রসুল! তাড়াহুড়ো মানে কি?

তিনি বললেন, কোন দুয়াকারী ব্যক্তি বলে, দুয়া করলাম, আবার দুয়া করলাম, অথচ দেখলাম না যে, তিনি আমার দুয়া কবুল করছেন। কাজেই সে তখন ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে বসে পড়ে ও দুয়া করা ত্যাগ করে দেয়। সহীহ বুখারীঃ ৬৩৪০, সহীহ মুসলিমঃ ২৭২৯।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পৃথিবীর বুকে যেকোনো মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দুয়া করে (তা ব্যর্থ যায় না) হয় আল্লাহ (সে যা চায়) তাকে তাই দান করেন, অথবা অনুরূপ কোন মন্দ তার উপর থেকে অপসারণ করেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে (দুয়াকারী) গুনাহ বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার দুয়া না করবে। একটি লোক বলল, তাহলে তো আমরা অধিক মাত্রায় দুয়া করব। তিনি বললেন, আল্লাহ সর্বাধিক অনুগ্রহশীল। তিরমিযীঃ ৩৫৭৩, আহমাদ ২২২৭৯, হাদীসটি হাসান সহীহ।

দুয়া তিনভাবে কবুল হতে পারে

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি দুয়া করে, যে দুয়াতে কোনো পাপ থাকে না ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দুয়া অবশ্যই কবুল করে নেন।

(১) যে দুয়া সে করেছে, হুবহু সেভাবে তাই কবুল করেন, অথবা

(২) তার দুয়ার প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন, কিংবা

(৩) এই দুয়ার মাধ্যমে তার উপর আগত কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবীগণ বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দুয়া করতে থাকবো।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা যত প্রার্থনাই করবে, আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন। আদাবুল মুফরাদঃ ৭১০ ও মুসনাদে আহমদ।

দুয়া কবুল না হওয়ার কয়েকটি কারণ

কিছু পাপ আছে যা বান্দার মাঝে উপস্থিত থাকলে তার দুয়া কবুল হওয়ার জন্য বাঁধা হয়ে যায়। তাই খেয়াল রাখতে হবে, এই পাপগুলো এড়িয়ে চলতে হবে, যদি কেউ চায় তার দুয়া কবুল করা হোক।

দুআ কবুলের অন্তরায় সমূহ

(১) হারাম খাদ্য, হারাম পানীয় ও হারাম বস্ত্র
(২) সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ বর্জন করা
(৩) দুয়া কবুলে তাড়াহুড়ো করা
(৪) অন্তরের উদাসীনতা
(৫) ব্যক্তিত্বের এক বিশেষ ধরনের দুর্বলতা

সংগ্রহঃ বিডি টুডে ব্লগ।

 

শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা-২

শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা-২


আফরোজা হাসান 


যারা সীটে বসে ছিল তাদের একজন বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে। আমরা তো চুপ করে বসে ছিলাম। প্রফেসর বললেন, অন্যের কষ্ট, বিপদ দেখে তোমাদের মনে এতটুকু দয়া-মায়ার সৃষ্টি হয়নি এটা তো সবচেয়ে বড় অন্যায়। মনেরেখো তুমি অন্যের সাথে যে আচরণ করবে তোমার সাথেও অন্যেরা সেই আচরণই করবে। আজ তুমি অন্যের কষ্ট দেখে হাসলে, কাল তোমার কষ্টে অন্যেরা হাসবে। আজ তুমি কাউকে সাহায্য করতে কার্পন্য করলে, কাল তোমার বিপদে কাউকে খুঁজে পাবে না পাশে। এখানে তোমরা সবাই বন্ধু। একসাথে পড়বে, খেলবে, হাসবে, একের বিপদে অন্য সাহায্য করবে। আর যদি এমন না করো তাহলে কখনোই তোমরা ভালো মানুষ হতে পারবে না জীবনে। এখন বলো তোমরা কি ভুল করেছো? সবাই স্বীকার করে নিলো যে তারা ভুল করেছে। প্রফেসর বললেন, এখন যদি আমি তোমাদেরকে শাস্তি না দেই তাহলে তোমরা এই ভুলটা মনেরাখতে পারবে না এবং আবারো যখন এমন কোন পরিস্থিতি আসবে একই ভুল করবে। বাচ্চারা তখন খুশি মনে ওদের শাস্তি মেনে নিয়েছিলো।

এমন অনেক বাচ্চা আছে যারা বাবা-মা বা পরিবারের কারো কোন কথা শোনে না কিন্তু সেই কথাটা যদি স্কুলের টিচাররা করতে বলে তাহলে বিনা ঝামেলাতে করতে রাজী হয়ে যায়। আগে আমি বেশ অবাক হতাম এর কারণ কি হতে পারে চিন্তা করে। কিন্তু স্কুলে জয়েন করার পর বুঝেছি কেন বাচ্চারা এতো পাগল টিচারদের জন্য। কেন এতো ভালোবাসে টিচারদেরকে। কারণ উনারা সেই ভালোবাসা অর্জন করে নেন তাদের কথা, কাজ আর আচরণের দ্বারা। টিচিং কোর্স করার সময় আমাদেরকে বলা হয়েছিলো টিচারদের প্রতি ভালোবাসা বাচ্চাদেরকে অনেক বেশী উৎসাহিত করতে পারে পড়াশোনার প্রতি। বাচ্চাদের মনে যদি এই বিশ্বাস তৈরি করা যায় যে টিচাররা তাদেরকে ভালোবাসেন আর তাদের ভালো চান বলেই প্রয়োজনে তাদেরকে বকা দেন আর শাস্তি দেন এবং এরফলে উপকার তাদেরই হয় তাহলে স্কুল ও পড়াশোনার প্রতি বাচ্চাদের আগ্রহ অনেক বেশি থাকে।এ

ই চমৎকার আইডিয়াটা কিন্তু পারিবারিক জীবনেও এপ্লাই করা যায়। বাচ্চার মনে যদি বাবা-মা আর পরিবারের লোকজন এই বিশ্বাস ও ভরসা তৈরি করতে পারেন যে, তারা যা বলেন তাদের উপকার ও মঙ্গলের জন্যই বলেন তাহলে বাচ্চাদের মনে অকারণ রাগ, ক্ষোভ বা হতাশা সৃষ্টির সুযোগ অনেক কমে যায়। বাবা-মা যা করছেন আমার ভালো জন্য করছেন এবং আমার প্রতি ভালোবাসা থেকেই করছেন বাচ্চার মনে এই নিশ্চয়তা সৃষ্টির দায়িত্ব বাবা-মাকেই পালন করতে হবে। কথা, কাজ ও আচরণ দিয়ে বাচ্চার কাছে নিজেদেরকে কল্যাণকামী হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।

 

শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা-১

শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা-১


আফরোজা হাসান 


ছয়মাস ভলান্টিয়ার টিচার হিসেবে স্কুলে কাটানোর সময় গুলোতে অনেক কিছু নতুন করে শিখেছি আমি। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ একটি জিনিস হচ্ছে শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা। ইউরোপের স্কুলগুলোতে স্টুডেন্ট আর টিচারদের সম্পর্ক এতো সুন্দর আর বন্ধুত্বপুর্ণ যা নিজের স্কুল লাইফের দিকে তাকালে খুঁজে পাইনা। এখানকার টিচাররাও বাচ্চাদেরকের সাথে রাগ করেন, ওদেরকে বকাঝকা করেন, শাস্তি দেন। পার্থক্য শুধু পদ্ধতিতে। শাস্তি দেবার সময় কেন শাস্তি দিচ্ছেন, শাস্তিটা কেন দেয়া উচিত, দেয়ার ফলে কি উপকার হবে এবং না দিলে কি ক্ষতি হতো এই প্রতিটা বিষয় চমৎকার করে বুঝিয়ে বলেন টিচাররা স্টুডেন্টদেরকে। যারফলে বাচ্চাদের মনে টিচারদের প্রতি কোন ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে না এবং শাস্তির কারণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা জানার ফলে নিজেকে সংশোধন করাটাও সহজ হয়।

একদিন ক্লাসে একটা বাচ্চার হঠাৎ পেট ব্যথা শুরু হলে সে মেঝেতে শুয়ে ছটফট করতে লাগলো। স্বভাবতই কিছু বাচ্চার হাসির খোড়াক যোগালো দৃশ্যটি, কিছু বাচ্চা প্রশ্ন করলো ও কি এখন মারা যাবে? কয়েকজন ছুটে এলো বন্ধুর পাশে আর কয়েকজন নির্বিকার বলে রইলো নিজের সীটে। বাচ্চাটি সুস্থ হবার পর প্রফেসর বললেন যে কয়জন সাহায্যর জন্য ছুটে এসেছিলো তারা ছাড়া বাকি সবার আজকে টিফিন বন্ধ। কেউ টিফিন পিরিয়ডে পার্কে যেতে পারবে না। বাচ্চারা সবাই তখন চিৎকার করে বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে তাহলে কেন আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছো? প্রফেসর বললেন, তোমাদের অন্যায় তোমরা তোমাদের বন্ধুর বিপদে ছুটে আসোনি, তার কষ্টে সমব্যথী না হয়ে হেসেছো, সান্ত্বনা বা আশ্বাস দেবার বদলে মারা যাবে বলে ওকে আরো ঘাবড়ে দিয়েছো। একবার ওর জায়গায় নিজেকে চিন্তা করে দেখো তো। তুমি কষ্টে ছটফট করছো আর কেউ তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, কেন এতো ব্যথা করছে তুমি ভেবে পাচ্ছো না আর পাশ থেকে একজন বলছে তুমি এখন মারা যাবে। বাচ্চারা তখন চুপ হয়ে গেলো।

 

ডালে সজিনা

উপকরণ :  ডাল সিদ্ধ করা ২ কাপ, সজিনা ১০ টি সাইজ করে কাটা, আদা কুচি ১ টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ-তেল পরিমাণ মতো।

প্রস্তুত প্রণালি : সজিনা দিয়ে তেল বাদে বাকি সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে চুলায় চড়িয়ে দিন। পরে নামার আগে ধনিয়া পাতা দিয়ে গরম গরম রুটি বা ভাতের সাথে পরিবেশন করতে হবে।

 

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-১

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-১


সাদিয়া মুকিম 


আসসালামুআলাইকুম। আশা করি আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এই রমাদ্বানে সিয়াম, কিয়াম, তিলাওয়াত, দোআ, সাদাকাহ ইত্যাদি পবিত্র ও বহুল সওয়াবের কাজে নিয়োজিত রেখেছেন।

অন্যান্য ইবাদতের পাশাপাশি সেহরি এবং ইফতার এ দুটোও গুরুত্বপূর্ন ইবাদাত । তবে এ দুটোকে ঘিরে আমাদের উপমাহাদেশে রয়েছে বিরাট খাদ্য বিভ্রান্তি। বিষয়টি ইবাদতের পরিবর্তে ভোজোৎসব হয়ে দাঁড়িয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রেই ।

সেহরি এবং ইফতার নিয়ে রমাদ্বানের আগে ব্যাক্তিগত ভাবে আমি বেশ কিছু আর্টিকেল পড়েছিলাম। এর মাঝে বেশিরভাগ ছিলো স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক। যেগুলো পড়ে আমরা নিজেরা উপকৃত হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। সেখান থেকে সংগৃহ করে কিছুটা সংযোজনা করে আজকের এই সচেতনতা পোস্ট টির অবতারণা।

রমাদ্বানে সারাদিন সিয়াম সাধনার পর ইফতারের মুহূর্ত যখন আসে স্বভাবতঃ আমাদের চোখে ভেসে উঠে রকমারি বাহারি ভোজ্যবিলাসী ইফতারি সামগ্রী । অনেকেই আছি ভাজা পোড়া ছাড়া ইফতার মুখে ও নিতে না পারার কঠিন (? ) অভ্যাস। এটা ঠিক দীর্ঘ ক্ষণ না খেয়ে থাকার পর মুখ রোচক খাবার খাওয়ার আগ্রহ জন্মায় তবু নিজেদের স্বাস্থ্যের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে ইফতার ও সেহরিতে আমরা কী ধরণের খাবার মেন্যুতে রাখছি !

ভাজা -পোড়া, গুরুপাচক খাবার :- ইফতারে ভাজা পোড়া না থাকলে আমাদের যাদের কপাল কুঁচকে যায় ,তাদের উদ্দেশ্যে বলছি- একটু চিন্তা করলেই সহজবোধ্য হবে যে, আমাদেরকে বাংলাদেশে প্রায় ১৫ ঘন্টা আর ইউরোপে প্রায় ১৮ ঘন্টা সিয়াম করতে হচ্ছে। সারাদিনের সিয়ামে আমাদের পাকস্থলি ক্ষুধার্ত ও দুর্বল অবস্থায় থাকে । অনেক সময় ধরে না খেয়ে থাকার ফলে শরীরের এনজাইম, যা হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরী হয়,তা বন্ধ থাকে । তাছাড়া পাকস্থলীর ভিতরের মিউকাস আবরণও সংকুচিত অবস্থায় থাকার ফলে যখন ইফতার শুরু হয় ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত, গরম, গুরুপাক খাবার দিয়ে তখন পাকস্থলি নাজুক অবস্থায় পড়ে যায় । এতে যাদের গ্যাস্ট্রিক আছে সেটার পরিমাণ যায় বেড়ে আর যাদের নেই তাদেরও লক্ষণ শুরু হয়ে যাবে স্বল্প সময়ে । তাছাড়া পেটে জ্বালা পোড়া করা , পেটের সমস্যা,

কোষ্ঠকাঠিন্য, দুর্বলতা, অবসাদ, হজমের সমস্যা ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা শুরু হয়ে যাবে অল্প দিনে । এই সমস্যা ছাড়াও এই খাবারগুলোর ক্যালোরি মান অতি উচ্চ থাকায় আমরা অল্প খেলেও পেট ভরা অনুভূত হবে দ্রুত । যেমন- পিঁয়াজু,বেগুনী, আলু চপ, সমুচা, সিংগারা, বিরিয়ানি, তেহারি, হালিম, ছোলা ভুনা, ফাস্টফুড ইত্যাদি ।

 

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —(আল-বাক্বারাহ) ৫…

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —আল-বাক্বারাহ ১৮৩-১৮৫,১৮৭
৫…
ওমর আল জাবির

আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটাই চান, তিনি তোমাদের জন্য কঠিনটা চান না।

এই আয়াতটি একজন মুসলিমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ আয়াত। আমাদের অনেকের ভেতরেই একটা ভুল ধারণা আছে যে, আমরা মনে করি: আমরা আল্লাহর تعالى জন্য যত কষ্ট করবো, তত সওয়াব। ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। আল্লাহর تعالى কাছে সবচেয়ে পছন্দের ইবাদত হচ্ছে ফরজ ইবাদতগুলো। তিনি কখনই চান না আমরা যেন নিজেদেরকে জোর করি, ইচ্ছা করে কষ্ট দেই। তিনি চান আমাদের জীবনটা যেন সহজ, সুন্দর হয়। আমরা যেন দুনিয়ার হাজারো প্রলোভন থেকে নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তারপর একদিন জান্নাতে গিয়ে চিরজীবন আনন্দে থাকতে পারি। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে অনেকে ইসলাম ধর্মের মধ্যে কঠিন সব ইবাদত, হাজারো শর্ত জুড়ে দিয়ে ধর্মকে অনেক কঠিন করে গেছেন। যার ফলাফল হয়েছে, গত কয়েক প্রজন্ম ইসলাম থেকে দূরে সরে গেছে।

আজকাল অনেকেই বলেন, “ধর্ম মানলে জীবন অনেক কঠিন হয়ে যায়। এটা করা যাবে না, ওটা দেখা যাবে না, এটা বলা যাবে না, ওটা খাওয়া যাবে না। জীবনের প্রতি পদে বাঁধা। ধর্ম মানলে জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে যায়। ধর্ম ছাড়াই অনেক ভালো আছি।”

আপনারা যদি পাশ্চাত্যের অমুসলিমদের মুসলিম হওয়ার ঘটনাগুলো পড়েন, দেখবেন তাদের ঘটনায় একটি ব্যাপার বার বার ঘুরে ফিরে আসে: তাদের অনেকেই দিনরাত ফুর্তি করত, ব্যভিচার, মদ ছিল তাদের জীবনে খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা। শনি-রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বার-এ গিয়ে সারারাত ড্রিঙ্ক করে মাতাল হয়ে আসত। তারপর যখন সোমবারে হুঁশ ফিরত, এক ভয়ংকর হতাশা, বিষণ্ণতায় ডুবে যেত। নানা ধরণের অসুখে ভুগত। জীবনটা তাদের কাছে অসহ্য মনে হতো। নিজের কাছে নিজেকে একটা পশু মনে হতো। “জীবন কি এটাই? জীবনে কি এর চেয়ে বড় কিছু নেই? এভাবে নিজেকে শেষ করে দিয়ে কী লাভ?”—এই ধরনের প্রশ্ন তাদেরকে পাগলের মতো তাড়িয়ে বেড়াত। তাদের জীবনে কোনো সুখ ছিল না, ছিল কিছু ক্ষণস্থায়ী ফুর্তি। হতাশা, বিষণ্ণতা, অশান্তি এবং নিজেকে শেষ করে দেওয়ার একটা অসহ্য ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখার জন্য তাদেরকে দিনরাত নিজের সাথে সংগ্রাম করতে হতো।

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে ইসলাম দিয়েছেন, যেন আমাদের জীবনটা সহজ হয়, এরকম কঠিন না হয়। তিনি আমাদেরকে যে জীবন-বিধান দিয়ে দিয়েছেন, সেভাবে জীবন পার করলে এই দুনিয়াতেই আমরা হাসিখুশি থাকতে পারব, নিজের জীবনে, পরিবারে, সমাজে, দেশে শান্তি নিয়ে আসতে পারব। একই সাথে মৃত্যুর পরে অনন্তকাল পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে অনাবিল, অফুরন্ত শান্তিতে জান্নাত উপভোগ করতে পারব। তিনি আমাদেরকে বলেননি এই দুনিয়াতে নিজেদের উপরে ইচ্ছা করে কষ্ট দিতে। বরং তিনি পৃথিবীতে অসংখ্য হালাল আনন্দের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এবং সেগুলো উপভোগ করার নির্দেশ কু’রআনেই দিয়েছেন—

আল্লাহ তোমাদেরকে এই জীবনে যা দিয়েছেন, তা ব্যবহার করে এর পরের জীবনকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করো, কিন্তু সেই সাথে এই দুনিয়াতে তোমার যে প্রাপ্য রয়েছে, সেটা ভুলে যেও না। অন্যের সাথে ভালো কাজ করো, যেভাবে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দিয়েছেন। এই পৃথিবীতে দুর্নীতি ছড়ানোর চেষ্টা করবে না। দুর্নীতিবাজদের আল্লাহ পছন্দ করেন না! [আল-কাসাস ২৮:৭৭]

বল, “কে তোমাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট সৌন্দর্য এবং ভালো-পবিত্র খাবার উপভোগ করতে মানা করেছে, যা তিনি তার বান্দাদের জন্যই তৈরি করেছেন?” বলে দাও, “এগুলো তাদেরই জন্য যারা এই দুনিয়াতে বিশ্বাস করে: কিয়ামতের দিন এগুলো শুধুমাত্র তাদেরই হবে।” এভাবেই আমি আমার বাণীকে পরিষ্কার করে দেই বুদ্ধিমান লোকদের জন্য। [আল-আরাফ ৭:৩২]

ও প্রভু, আমাদেরকে এই দুনিয়াতে কল্যাণ দিন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দিয়েন। আর আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করেন। [আল-বাকারাহ ২:২০১]

উপরের আয়াতগুলো এবং বাকারাহ-এর আলোচ্য আয়াতের মূলকথা একটাই: জীবনকে উপভোগ করতে হবে আল্লাহর প্রতি অনুগত থেকে, কৃতজ্ঞ থেকে এবং পাপের ব্যাপারে সবসময় সাবধান থেকে। মনে রাখতে হবে, দুনিয়াতে আমরা যা কিছুই উপভোগ করব, কিয়ামতের দিন সেগুলোর সবকিছুর হিসাব দিতে হবে। সুতরাং, আমরা যেন উপভোগ করতে গিয়ে আল্লাহর تعالى অবাধ্য না হই। এমন কিছু যেন করে না ফেলি, যেটা কিয়ামতের দিন আমাদেরকে দেখানো হলে আমরা লজ্জায় কিছু বলতে পারব না।

রোজা নিয়ে সূরা আল-বাক্বারাহ’র শেষ আয়াতটি এসেছে একটি আয়াত পরে—

রোজার রাতে স্ত্রীদের সাথে ঘনিস্ট হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পোশাক, তোমরা তাদের পোশাক। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা নিজেদের সাথে প্রতারণা করছিলে। তাই তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন, তিনি তোমাদেরকে নিঃশর্তে মাফ করে দিয়েছেন। এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও, আর আল্লাহ তোমাদের জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, তা পাওয়ার চেষ্টা করো। খাও, পান করো, যতক্ষণ না ভোরের সাদা রেখা অন্ধকারের রেখা থেকে স্পষ্টভাবে আলাদা না হয়। তারপর রাত আসা পর্যন্ত রোজা সম্পূর্ণ করো। মসজিদে ইতিকাফ করা অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হবে না। এই হলো আল্লাহর দেওয়া সীমা, এর কাছেও যাবে না। এভাবে আল্লাহ তার বাণীকে মানুষের জন্য পরিস্কার করে দেন, যেন মানুষ অন্যায় থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে। [আল-বাক্বারাহ ১৮৭]

মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

সূত্র:

[১] নওমান আলি খানের সূরা আল-বাকারাহ এর উপর লেকচার এবং বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর।[২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ।[৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি।[৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী।[৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran[৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran[৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি।[৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী।[৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ।[১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি[১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি[১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ।[১৩] তাফসির ইবন আব্বাস।[১৪] তাফসির আল কুরতুবি।[১৫] তাফসির আল জালালাইন।[১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ।

সুত্র: কুরআনের কথা

 

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —(আল-বাক্বারাহ) ৪…

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —আল-বাক্বারাহ ১৮৩-১৮৫,১৮৭
৪…
ওমর আল জাবির

এরপরের আয়াতে আমরা জানবো রমজান মাসের আসল গুরুত্ব কী—

রমজান মাস, যখন নাজিল হয়েছিল কুর’আন —মানুষের জন্য পথনির্দেশ, পরিস্কার বাণী যা পথ দেখায় এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। তাই তোমাদের মধ্যে যে সেই মাসটি পাবে, সে যেন রোজা রাখে। আর কেউ যদি অসুস্থ থাকে, বা সফরে থাকে, তাহলে সে যেন পরে একই সংখ্যক দিন রোজা রেখে পূরণ করে নেয়। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটাই চান, তিনি তোমাদের জন্য কঠিনটা চান না। তিনি চান তোমরা যেন নির্ধারিত সময় পূরণ করো, তোমাদেরকে পথ দেখানোর জন্য তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো, আর যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো। [আল-বাক্বারাহ ১৮৫]

রমজান মাসের আসল গুরুত্ব হচ্ছে যে, এই মাসে কুর’আন নাজিল হয়েছে। এই মাসেই আল্লাহ تعالىমানবজাতিকে পথ দেখানোর জন্য সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারি পরিস্কার বাণী পাঠিয়েছেন। একারণেই এই মাসটি মুসলিমদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাস হচ্ছে কুর’আন উদযাপনের মাস। এই মাসে আমাদের কুর’আনের সাথে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। যেই বাণী মানুষের কাছে প্রচার করার জন্য একজন মানুষ ২৩ বছর কঠিন সংগ্রাম করেছেন, শত শত মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, হাজার হাজার মানুষ নির্যাতন সহ্য করেছেন, যেন এই বাণী একদিন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছুতে পারে, আপনি-আমি তা জানতে পারি, সেই বাণী আমাদেরকে গভীরভাবে বুঝতে হবে। যদি আমরা তা ভালো করে বুঝে, নিজেকে পরিবর্তন করতে না পারি, তাহলে সেটা হবে রাসুল (সা) এবং সাহাবাদের (রা) এত বড় ত্যাগের প্রতি চরম অবমাননা।

সুত্র: কুরআনের কথা

 

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —(আল-বাক্বারাহ) ৩…

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —আল-বাক্বারাহ ১৮৩-১৮৫,১৮৭
৩…
ওমর আল জাবির

নিজের উপর জোর করে, অসুস্থতা বাড়িয়ে রোজা রাখতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে বলেননি। আমাদের মধ্যে অনেকেই চেষ্টা করি জোর করে আল্লাহকে تعالىখুশি করার। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কোনো জবরদস্থি করতে বলেননি।

তাফসিরগুলোতে এই নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। একাধিক সাহাবি (রা) থেকে আসা মত অনুসারে: কারো যদি অসুস্থতা বাড়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তার জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়। গর্ভবতী বা শিশু বাচ্চাকে দুধ পান করান এমন মা, বৃদ্ধ, অসুস্থ মানুষরা রমজান মাসে রোজা রাখতে কষ্ট হলে বা স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি থাকলে, প্রতিটি রোজার বদলে একদিন করে একজন গরিব মানুষকে সাধ্যমত খাওয়াবে। একইভাবে সফরে থাকলেও রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়, যদি রোজা রাখার ফলে কষ্টের সৃষ্টি হয়।[১১][৩][৬] তবে একাধিক মাযহাবের মত অনুসারে কেউ যদি রমজানের পরে রোজা রাখতে সক্ষম হয়, তাহলে গরিব খাওয়ানো যাবে না, নিজে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। সুতরাং অসুস্থতা সাময়িক হলে এবং মা’দের রমজানের পরে রোজা রাখতে হবে, গরিব খাওয়ালে হবে না।

কী ধরণের অসুস্থতা হলে এবং কী ধরণের সফর হলে রোজা না রাখলেও হবে, এনিয়ে বিভিন্ন ফিকহ-এর আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।[১১][৩][৬]যেহেতু আল্লাহ تعالى এখানে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি, তাই তারা আশংকা করেছেন যে, মানুষ ব্যাপারটাকে সহজভাবে নেবে এবং একটু অসুস্থ হলেই, বা সামান্য সফরে গেলেই রোজা রাখা ছেড়ে দেবে। তাই তারা সফরের দৈর্ঘ্য কতটুকু, কতদিনের হতে হবে, এনিয়ে কিছু শর্ত দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো গ্রহণযোগ্য হাদিস থেকে এই শর্তগুলোর পক্ষে ইজমা হওয়ার মতো যথেষ্ট দলিল পাওয়া যায়নি বলে একাধিক তাফসিরবিদদের মত।[৩][৬] তাদের বক্তব্য হচ্ছে: আল্লাহ تعالى এখানে কোনো শর্ত দেননি, কারণ রোজা রাখার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন। কেউ যদি আল্লাহর تعالى সাথে প্রতারণা করতেই চায়, নিজের প্রবৃত্তির কাছে নিজেকে বিক্রি করে দিতে চায়, তাহলে তার জন্য এই সব শর্ত থাকা বা না থাকাটা একই কথা। যে সবসময় সুযোগ খুঁজে কীভাবে আইনের ফাঁকফোকর বের করে পার পেয়ে যাওয়া যায়, তাকে হাইকোর্ট দেখিয়ে খুব একটা লাভ হয় না। বরং এই সব মানুষকে ঠিক করতে গিয়ে অন্য সবার জন্য ধর্মের মধ্যে অতিরিক্ত কড়াকড়ি করলে, তা উলটো মানুষকে ধর্মের প্রতি নিরুৎসাহিত করে।[৬]

আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে, ইসলাম ধর্ম আল্লাহই تعالى আমাদেরকে দিয়েছেন, কোনো মানুষ তা নির্ধারণ করেনি। কখন মানুষকে শক্ত নিয়ম দিতে হবে, কখন ছাড় দিতে হবে, ছাড় দিলে তার সুদূর প্রসারি ফলাফল কী হবে —এটা আল্লাহ تعالى যে কোনো মানুষের থেকে ভালো জানেন। সুতরাং কোনো এক প্রজন্মের ইসলামকে হালকা ভাবে নিয়ে অবহেলা করা দেখে, সে প্রজন্মের আলেমরা যদি ইসলামে নানা শক্ত নিয়ম, শর্ত যোগ করেন, তাহলে সেটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সবসময় কল্যাণকর নাও হতে পারে, বরং তাদের প্রতি অন্যায় হয়ে যেতে পারে। একারণে আল্লাহ تعالى যদি কোনো নিয়ম মানার বেলায় শিথিলতা দেন, তাহলে আমাদের আল্লাহর تعالى প্রজ্ঞার উপর আস্থা রাখতে হবে।[৬]

সুত্র: কুরআনের কথা

 

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —(আল-বাক্বারাহ) ২…

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —আল-বাক্বারাহ ১৮৩-১৮৫,১৮৭
২…

ওমর আল জাবির

এখন প্রশ্ন হলো, রোজার সাথে তাকওয়ার সম্পর্ক কী?

একজন মানুষ যখন রোজা রাখে, সে একটা বিরাট সময় নিজেকে তার শারিরিক চাহিদা, কামনা থেকে নিজের ইচ্ছায় দূরে রাখে। ক্ষুধায় তার পেট মোড়ায়। হাত বাড়ালেই খাবার। ইচ্ছে করলেই সে মুখে একটু খাবার দিয়ে ক্ষুধাটা দমিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু না! সে নিজেকে বোঝায়: “মাগরিব হোক, তারপরে ইফতার, এর আগে কোনো খাবার নয়।” পিপাসায় তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। হাত বাড়ালেই এক গ্লাস পানি, কোমল পানীয়। শুকনো গলা দিয়ে ঠাণ্ডা পানি নেমে যাওয়ার সুখকর চিন্তা তার মনে ঘুরপাক খায়। কিন্তু না, সে নিজেকে বোঝায়, “মাগরিব আসুক। এর আগে এক ফোঁটাও পানি না।” সারাদিন অফিস-স্কুল-কলেজে তার চোখের সামনে নানা প্রলোভন ঘুরে বেড়ায়। কিছুক্ষণ পর পর বিপরীত লিঙ্গের হাতছানি। টিভি ছাড়লেই অশ্লীলতা। ইন্টারনেটে গেলেই কামনার সাগরে ডুবে যাওয়া যায়। কিন্তু না, সে নিজেকে বোঝায়, “আমি রোজাদার। আমি এখন কোনো খারাপ কিছু দেখতে পারি না, কোনো খারাপ কিছু করতে পারি না।” দিনে কয়েকবার সে সুযোগ পেয়েছে মিথ্যা বলে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার, নিজের দোষ ঢাকার, অন্যায়ভাবে সুবিধা হাতিয়ে নেওয়ার, অন্যের গীবত করার। কিন্তু না, সে নিজেকে সংযত করে, “আমি রোজাদার, আমি এখন মিথ্যা বলতে পারি না। আমার রোজা ভেঙ্গে যাবে।”

যখন আমরা রোজা রাখি না, তখন আমাদের শারীরিক চাহিদা আসলেই আমরা সেটা মিটিয়ে ফেলি, পাপ কাজের ইচ্ছা জাগলে করে ফেলি। ক্ষুধা লাগলেই খাই। পিপাসা পেলেই পান করি। কামনা জাগলে, তা পূরণ করে ফেলি। সুযোগ পেলেই মিথ্যা বলি, ঘুষ খাই, অন্যায় করি, গীবত করি। এভাবে আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে ক্রমেই প্রবৃত্তির দাস বানিয়ে ফেলি। যার ফলে দিনে দিনে কুপ্রবৃত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকি। প্রবৃত্তি জিততে থাকে, আর আমরা হারতে থাকি। কিন্তু যখন আমরা রোজা রাখি, প্রতিদিন একটা বিরাট সময় আমরা আমাদের প্রবৃত্তিকে শক্ত হাতে দমন করে রাখি। কিছুক্ষণ পর পর প্রবৃত্তি চাড়া দিয়ে উঠে, আমাদের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে চায়। কিন্তু তখনি আমরা সেটাকে পরাজিত করে নিজের উপর আবার নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেই। এভাবে দিনের পর দিন আমরা প্রবৃত্তির উপর জিততে থাকি। তখন সেটা আস্তে আস্তে দুর্বল হতে থাকে। আল্লাহর تعالى নির্দেশ মানা, অন্যায় থেকে দূরে থাকাটা তখন আমাদের জন্য আরও সহজ হতে থাকে। এভাবেই আমরা রোজা রেখে তাকওয়া অর্জন করি।[১]

প্রাচীন আরবরা ঘোড়া নিয়ে যুদ্ধ করতে যেত। কিন্তু ঘোড়া উটের মতো উত্তপ্ত মরুভূমিতে দীর্ঘ সময় থাকার জন্য ঠিক উপযুক্ত নয়। এরা পানি ছাড়া বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। একারণে আরবরা ঘোড়াকে মরুভূমির প্রখর উত্তাপে বার বার দৌড়িয়ে মরুভূমিতে টিকে থাকার প্রশিক্ষণ দিত। এভাবে ঘোড়াকে প্রচণ্ড তাপে যুদ্ধ করার জন্য তৈরি করাকে তারা সিয়াম বলত। সিয়াম, যাকে আমরা রোজা বলি, মুমিনদের জন্য একধরনের মিলিটারি ট্রেনিং। এটি আমাদের শক্ত করে, কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য শারীরিক এবং মানসিক ট্রেনিং দেয়।[১][১৬]

এরপরের আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে শেখাবেন, কোন পরিস্থিতিতে রমজানে রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়—

রোজা নির্দিষ্ট কিছু দিন। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ থাকে, বা সফরে থাকে, তাহলে পরে একই সংখ্যক দিন পূরণ করবে। আর যাদের জন্য রোজা রাখা ভীষণ কষ্টের, তাদের জন্য উপায় রয়েছে — তারা একই সংখ্যক দিন একজন গরিব মানুষকে খাওয়াবে। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়তি ভালো কাজ করে, সেটা তার জন্যই কল্যাণ হবে। রোজা রাখাটাই তোমাদের জন্যই ভালো, যদি তোমরা জানতে। [আল-বাক্বারাহ ১৮৪]

সুত্র: কুরআনের কথা

 

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —(আল-বাক্বারাহ) ১…

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —আল-বাক্বারাহ ১৮৩-১৮৫,১৮৭
১…

ওমর আল জাবির

সূরা আল-বাক্বারাহ’র নিচের কয়েকটি আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে সিয়াম অর্থাৎ রোজা রাখার নির্দেশ দেবেন এবং কেন আমরা রোজা রাখি, রোজা রেখে কী লাভ, তা শেখাবেন।

তোমরা যারা বিশ্বাস করেছ, শোনো, উপর রোজা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যে রকম তোমাদের পূর্বপুরুষদের উপর করা হয়েছিল। যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও। [আল-বাক্বারাহ ১৮৩]

এখানে আল্লাহ تعالى বলছেন যে, রোজা রাখার উদ্দেশ্য না খেয়ে থাকা নয়, বরং রোজা রাখার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি সচেতনতা বাড়ানো। প্রথমে বোঝা দরকার তাকওয়া কী।

তাকওয়া শব্দটির অর্থ সাধারণত করা হয়—আল্লাহকে ভয় করা। এটি পুরোপুরি সঠিক অনুবাদ নয়, কারণ ‘ভয়’ এর জন্য আরবিতে ভিন্ন শব্দ রয়েছে—যেমন খাওফ خوف, খাশিয়া خشي, হিযর حذر; শুধু কু’রআনেই ১২টি আলাদা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন গভীরতার ভয়, সতর্কতা, আতঙ্ক ইত্যাদি তুলে ধরার জন্য। এর মধ্যে ‘তাক্বওয়া’ হচ্ছে ‘সবসময় পূর্ণ সচেতন’ থাকা বা আল্লাহর কথা মনে রেখে নিজেকে অন্যায় থেকে দূরে রাখা।[১][২]

ধরুন, আপনি প্রতিদিন কী করেন, সেটা নিয়ে একটা ‘রিয়েলিটি টিভি শো’ বানানো হচ্ছে। আপনার বাসার সবগুলো রুমে ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আপনি ঘুম থেকে ওঠার পর ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত সবসময় আপনার সাথে একজন ক্যামেরাম্যান আপনার দিকে ক্যামেরা তাক করে রেখেছে। আপনি কী বলছেন, কী করছেন, কী খাচ্ছেন, কী দেখছেন, সবকিছু প্রতি মুহূর্তে রেকর্ড করা হচ্ছে। কল্পনা করুন, যদি এরকম কোনো ঘটনা ঘটে তাহলে আপনার মানসিক অবস্থা কী হবে? আপনি প্রতিটা কথা বলার আগে চিন্তা করবেন যে, আপনার কথাগুলো মার্জিত হচ্ছে কি না, আপনার হাঁটার ধরন ঠিক আছে কি না, আপনি উল্টোপাল্টা দিকে তাকালে সেটা আবার রেকর্ড হয়ে গেলো কি না। আপনি টিভিতে যেসব হিন্দি সিরিয়াল, বিজ্ঞাপন, মুভি দেখেন, যেসব গান শুনেন, ইন্টারনেটে যে সব সাইট ঘুরে বেড়ান, সেগুলো ক্যামেরায় রেকর্ড হয়ে গেলে লোকজনের কাছে মান-সন্মান থাকবে কি না। এই যে ক্যামেরাম্যানের প্রতি আপনার চরম সচেতনতা, এটাই তাক্বওয়া। আল্লাহর تعالى প্রতি আপনার ঠিক একই ধরনের সচেতনতা থাকার কথা।

সুত্র: কুরআনের কথা

 

রমজান মাসের ৩০ আমল (পর্ব- ১)

রমজান মাসের ৩০ আমল (পর্ব- ১)


হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল


এ মাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো পালন করার মাধ্যমে আমরা জান্নাতে যেতে পারি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি। নিম্নে রমাদান মাসের আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। তবে এ আমলগুলো করার জন্য শর্ত হলো:

এক. ইখলাস অর্থাৎ ‘‘একনিষ্ঠতার সাথে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যে আমল করা। সুতরাং যে আমল হবে টাকা উপার্জনের জন্য, নেতৃত্ব অর্জনের জন্য ও সুনাম-খ্যাতি অর্জনের জন্যে সে আমলে ইখলাস থাকবে না অর্থাৎ এসব ইবাদাত বা নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে না বরং তা ছোট শির্কে রূপান্তরিত হতে পারে।

আল-কুরআনে এসেছে,
“আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে” [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ : ৫]

দুই. ইবাদাতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ। সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে সকল ইবাদাতের কথা উল্লেখ আছে সেগুলো পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো বাড়ানো বা কমানোর সুযোগ নেই। কারণ, ইবাদাত হচ্ছে তাই যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দিয়েছেন।

কুরআনে এসেছে,
‘এবং রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও’ [সূরা হাশর: ৭]

এ বিষয়ে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘যে এমন ইবাদত করল যাতে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই তা পরিত্যাজ্য হিসাবে গণ্য হবে’’। [সহীহ মুসলিম : ৪৫৯০]
রমাদান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো হলো-

সিয়াম পালন করা

ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি রুকন হল সিয়াম। আর রমাদান মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। সেজন্য রমাদান মাসের প্রধান আমল হলো সুন্নাহ মোতাবেক সিয়াম পালন করা। মহান আল্লাহ বলেন,
“সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে, মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে” [সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৫]

সিয়াম পালনের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ইখলাস নিয়ে অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য রমাদানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’ [সহীহ বুখারী : ২০১৪]

‘‘যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য) একদিন সিয়াম পালন করবে, তাদ্বারা আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তীস্থানে রাখবেন’’। [সহীহ মুসলিম : ২৭৬৭]

সময় মত সালাত আদায় করা

সিয়াম পালনের সাথে সাথে সময় মত নামায আদায় করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,
‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।’ [সূরা নিসা : ১০৩]

এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে,
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, সময় মত নামায আদায় করা। [সহীহ মুসলিম : ২৬৩]”

সহীহ্ভাবে কুরআন শেখা

রমাদান মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। এ মাসের অন্যতম আমল হলো সহীহভাবে কুরআন শেখা। আর কুরআন শিক্ষা করা ফরয করা হয়েছে। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে,
‘‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’’ [সূরা আলাক : ১]
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন শেখার নির্দেশ দিয়ে বলেন,
‘‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর’’ [মুসনাদ আলজামি : ৯৮৯০]

চলবে…..
.

 

ভুলে ভরা জীবন


জাহেদ উদ্দীন মোহাম্মদ


(১)
আমি বাবা-মা’র পঞ্চম সন্তান। আমরা তিন ভাই দুই বোন। আমি সবার ছোট । বড়গুলো শহরে পড়াশোনা করে। আমি গ্রামের বাড়িতে থাকি। গ্রামের বাড়িতে এমন কোন কাজ নাই, যা আমাকে দিয়ে করানো হয় না।
প্রতিদিন সকালে লঙ্কাপোড়া দিয়ে পানতা খেয়ে মক্তবে যাই। তারপর স্কুল। স্কুল ছুটি হলে প্রতিদিন বাজারের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাবার সাথে বাজারে যাওয়া রুটিন কাজ। বাজার হতে এক বস্তা সস্তা তরকারি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। সন্ধ্যায় মুড়ি-চা খেয়ে পড়তে বসি। ছুটির দিনেও বাড়িতে অনেক কাজ। কোন রেহাই নাই। বাবাও সারাক্ষণ একাজ সেকাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অথচ, বাবা চাইলে এই কাজের জন্য একটা শক্ত সামর্থ্যেবান লোক রাখতে পারে। সে টাকা তাঁর আছে। কিন্তু খালি পয়সা বাঁচানোর ধান্ধা।
দাদা-দাদির একমাত্র সন্তান বাবা। উত্তরের বিলে কানি কানির ধানী জমি আছে। সবগুলো দো’ফসলি। বাড়ির এক পাশে বিরাট পুকুর। বিকালবেলা পুকুরে বড় বড় রুই-কাতলা ভুশ ভুশ করে ভাসে। কিন্তু এই মাছ আমাদের কপালে জোটে না। মোটা দাগে বিক্রি হয়, স্থানীয় স্কুল-কলেজের হোস্টেলে। বাড়ির জন্য বরাদ্দ ছোট মাছ।
গ্রামে লোকজন আড়ালে বাবাকে হাড় কিপ্টে, বখিল বলে। পথে-ঘাটে আমাকে “পোতাইয়ার পোলা” বলে। কাউকে লজ্জায় মুখ দেখাতে ইচ্ছে করে না।

মানুষের দোষ দিয়ে লাভ নেই। বাবা আসলে কিপটা। মাত্র দুইটা পাঞ্জাবি। একটার কলার ছেঁড়া অন্যটার বগলের তলে জোড়াতালি দেয়া। এইসব বাইরের যে কারো চোখে পড়ে।
একবার ছোট মামা মস্করা করে পাঞ্জাবির ফুটোতে আঙুল দিয়ে ছিড়ে দিল, বাবা তাকে বাড়ি ছাড়া করেছিল। মামা আর কখনো বাবার সামনে পড়েননি।
পরিবারে কারো দু’টার বেশী জামা-প্যান্ট নেই। অথচ গ্রামে আমাদের চেয়ে কয়েকগুণ গরীব গৃহস্থের ছেলেমেয়েদের কত রঙিন জামা! এই নিয়ে মনে মনে রাগ পুষে রাখি বটে বাবার মুখোমুখি হবার সাহস হয় না।

আমার অন্য ভাইবোন, যারা শহরে পড়াশোনা করে, সবাইকে বাবা নিয়মিত মানি-অর্ডার করেন। হিসাব পাক্কা। মাস শেষে কত টাকা বাঁচলো তার চুলচেরা হিসাব চাই।
পড়ালেখার খরচ দিতে কোন কার্পণ্য নেই। তবে কড়ায়-গন্ডায় তার হিসাব চাইই। নইলে পরের মাসে টাকা পাঠানো বন্ধ।
বাবা বাজারে গেলে, সব্জিওয়ালা, মাছওয়ালা হাসি-ঠাট্টা করে। সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,
– হাক্কু, অনে পরে আইসসুন। এহনো বড় মাছ বেচা শেষ ন অয়।
সবার শেষে উনি মাছ কিনবেন। এটা জেলেরাও জানে।কি লজ্জ্বার কথা! একবার ভাবুন তো! বাবা বাজারে গিয়ে পাহাড়ি লোকজনের ভাগে বেচা শাক-সবজি খুঁজে বেড়ান। সস্তার জন্য নয়তো আর কি হতে পারে?
মাংসের দোকানে গিয়েও সস্তা খুঁজে মরেন। আমি বন্ধু-বান্ধবের সামনে পড়ে যাই। ওদের বাবা কিনেন গরুর রানের মাংশ আর বাবা কিনেন সস্তা গরুর নলা-পায়া আর হাড়ওয়ালা মাংশ। লজ্জ্বায় মাথা হেটঁ হয়ে আসে। পরদিন বন্ধুরা স্কুলের এ নিয়ে আলোচনা করে আর হাসাহাসি করে।
অথচ ধান বেচা, মাছ বেচা আর বাগানের ফল বেচা টাকায় আমাদের রাজকীয় হালে চলার কথা কিন্তু বাবার এইসব কিপ্টামির কারণে আজ ফকিন্নী হালতে চলাফেরা। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে সমস্যা নেই। তবে জিনিসপত্র একটার বেশি দুটো কারো নেই। নতুন কিছু কেনার আগে পুরানোটা তিনি বারবার চেক করেন। কাপড় না ছেঁড়া পর্যন্ত কোন নিস্তার নাই। ইচ্ছেকৃত ছিঁড়লে,তিনি ঠিক ঠিক ধরে ফেলন। শাস্তি হিসাবে বাধ্যতামূলক ঐ ছেঁড়া কাপড় পরতে হবে।

মা যেন কেমন। দু’টোর বেশী শাড়ি নাই। এইসব নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নাই। বাবার সব কাজের এ যেন অন্ধ সমর্থক।
আমি প্রতিদিন এই কারাগার হতে মুক্তি চাই। কবে ম্যাট্রিক দিয়ে শহরে পা দেব, এই চিন্তায় দিন যায়। এই রকম কিপ্টা বাবাকে আমি ঘৃনা করি। আমি এভাবে মানুষের হাসি-ঠাট্টার পাত্র হতে চাই না।

(২)
সময়ের সাথে টেক্কা দিয়ে বয়স বাড়ে। বড় বোনদের বিয়ে হয়ে গেল। খুবই সাধারণ বিয়ে। অনেকটা গছিয়ে দেয়ার মতো। কোন ঢাকঢোল নেই, মাইকের গানবাজনা নেই,। কেবলমাত্র পঞ্চাশ জনের মতো লোকের খাওয়া-দাওয়া।ভাগ্য ভালো, বোনদের গায়ের সুন্দর রঙের কারণে বিয়ে আটকায় নি। বড় ভাই বৃত্তি নিয়ে বিদেশে পড়াশোনা করছে। হাড়কিপটে লোকের ছেলেকে কোন পাগলে মেয়ে বিয়ে দেবে? ওরা বিদেশি মেম বিয়ে করে ভালো কাজ করেছে।

আমি পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরিতে যোগ দিই। আজ এই জেলা, কাল এই জেলা। এখন নিজের টাকা নিজে ইচ্ছেমতো খরচ করি। মাকে দামী শাড়ি কিনে দিই। বাবার জন্য কিছু কিনতে ইচ্ছে করে না। কিনলে রাগারাগি করেন। বাড়তি খরচ তাঁর সহ্য হয় না। হাতে নগদ টাকা পেলে খুশি। তিনি জমিয়ে রাখেন।

তিনি সহজে গাড়ি চড়েন না। চা খান না। পান-বিড়ির অভ্যাস নেই। এতে নাকি খালি পয়সা খরচ হয়। আত্মীয় স্বজনের বাড়ি যান না, পাছে কিছু কিনতে খরচ হয়। বাটা কোম্পানির অক্ষয় সেন্ডেল জোড়ার ফিতে ছিঁড়ে গেলে, নতুন ফিতে লাগিয়ে নেন। সেন্ডেল ক্ষয় হয়ে মাটি স্পর্শ না করা পর্যন্ত কোন তালাক নাই।
-এই শালার পুত টাকা জমিয়ে কি করবে বুঝি না।
মাঝে মাঝে রাতেরবেলা ঘর ফিরতি মাছওয়ালা বাড়িতে হাঁক দেয়, কাক্কু, বাড়ি আছোনি?
তিনি ধড়পড় করে উঠে বলেন, হ বাজি; আছি।
-একটা বড় মাছ আছিল। অনর লাই রাহি দি।
এটা সম্ভবত পঁচা মাছ। খুবই সস্তা। বাবা মাছটা কেনার জন্য লাফিয়ে উঠেন।
-আইচ্ছা। রাহি জ। টেঁয়া পরে লইয়ু।
মা দ্রুত হাত চালিয়ে মাছ কুটেন আর রান্না ছড়িয়ে দেন। কোন ক্লান্তি নেই। কোন অভিযোগ নেই।
মাঝে মাঝে চমকে উঠি, কিভাবে এইরকম এক কিপটে লোকের সাথে ৪০ বছর একটা মেয়ে সংসার করে!
আমার কোন মান -সম্মান নেই। স্কুলে আমার সাথে জেলে-মুচি-কামার-কুমারের ছেলেমেয়েরাও পড়ে। অথচ গ্রামে একটু সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরা কিন্ডারগার্টেন-এ পড়ে। কি সুন্দর ড্রেস পড়ে, মাথায় ক্যাপ আর উজ্জ্বল রঙের ব্যাগ পিঠে স্কুলে যায়। আর আমি পড়ি অতি সাধারণ এক স্কুলে,যেখানে লুঙ্গি পরে টিচাররা স্কুলে আসে।
বাবার কোন রুচি নেই। টাকা বাঁচাতে গিয়ে ছেলের ইজ্জতের দিকে খেয়াল নেই।।
বাবার প্রতি কেমন বিতৃষ্ণা জমে রইল। মাঝে মাঝে একটু আধটু পত্র যোগাযোগ হয়। বছরে দুইটা ঈদের যে কোন একটাতে বাড়ি যাই। বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে না। দশজনে মন্দ বলবে, এই ভয়ে তবু বাড়ি যাওয়া।

(৩)
বাবার মৃত্যুর খবরে চমকে উঠি। আমার তখন সিলেটে পোস্টিং। মাইক্রোবাস নিয়ে বাড়ি ফিরি। বাড়ি লোকে লোকারণ্য। পা ফেলার জো নেই। বোনেরা ফ্যামিলি নিয়ে আগেই হাজির। লোকজন সামলাচ্ছে। বোনের জামাইরাও ব্যস্ত। প্রবাসী ভাই দ্রুত বিমানের টিকেটের অভাবে আসতে পারে না।
এত কিপ্টামির পরও এখানে মানুষের ঢল নামে। শেষ পর্যন্ত ভালোই ভালোই দাফন কাফনের কাজ শেষ হলো। পথে হরি কাকার সাথে দেখা, তিনি কাঁদছেন।
-বাবু, তোয়ার বাপর নান মানুষ আর নইবু। ইবা উগগা ফেরেশতা আছিল।
আমি দোটানায় পড়ি। জানি, মানুষ মারা গেলে, সবাই ভালো ভালো কথা বলে, কত কত তারিফ করে! অথচ জীবিতকালে সবাই তাঁরে কিপটে ছাড়া কিছু ভাবল না। তিনি কেঁদে কেঁদে হিক্কা তোলেন। বললেন,
-বাবু, তোয়ার বাপ আত্তুন মাছ কিনিতো। টেঁয়া আছে তবু হনোদিন ধুম গরি মাছ ন লইতো। একদিন আঁই পুচ গরনের পরে কি হওইয়ে জানো না?
– ওডা, আঁই যদি বেয়াগ মাইনসের আগে মাছ লই ফেলি, মাইনষে বদ দোয়া দিব। মনে গরিবু টেঁয়ার গরমে বড় মাছ আগে লই ফেলাই। আঁই এতাল্লাই আস্তে ধীরে মাছ লই। কেউত্তুন বড় মাছ খাইতু মন চাইলে, ইতারা আগে লই ফেলক।

বাড়িতে এতগুলো পাহাড়ি লোকজন বাবাকে শেষ দেখা দিতে এসেছে দেখে অবাক হই। তাদের মধ্যে বয়স্ক একজন বলল,
-বাবু, তোয়ার বাপ আরারঁতুন বেয়াক সময় শাক-সব্জি কিনিতো। আরাঁর লগে হনোদিন দরদাম ন গইরতো। দামের তুন বেশি টেঁয়া দিতো। আঁরা ত ভিক্ষা ন গরি; এতাল্লাই আঁরারে বেশি দয়া গইরতু। তোয়ার বাপ বেশি গম মানুষ আছিল।

বোডিং স্কুলের হল সুপার আমাকে অনেক্ষণ জড়িয়ে ধরলেন। বললেন,
-তোমার বাবা আমাদের হোস্টেলে তোমাদের পুকুরের মাছ অর্ধেক দামে দিতো। আমাদেরকে বলতেন,
-মাস্টার সাব, বাপ-মা ছাড়া ছেলেরা এখানে একা একা থাকে। আমি না হয়,অর্ধেক দামে মাছ দিয়ে একটু সাহায্য করি। ওরা এখানে কিইবা খেতে পায়, তাতো জানি না।

গ্রামের অনেকগুলো এতিমখানাগুলো কিভাবে চলে,আমরা কোন্দিন ভুলেও টের পাইনি। আমরা এতদিন জানতে পারিনি, আমাদের জমিনের অর্ধেক ধান কোথায় যায়? একজন কিপটে মানুষের জানাজায় হাজার হাজার মানুষ শরীক হবার আগে কেউ বাবাকে চিনতে পারিনি। আমরা কখনো তাঁর ভেতরটা পড়তে পারেনি। তিনি হয়তো নিজেকে আড়াল করেছিলেন নতুবা আমরা ছিলাম নির্ঘাত অন্ধ। এই যে ভুলেভরা জীবন! বাবাকে কখনো বলা হয়নি, তাঁকে কত্ত ভালোবাসি।

আমরা ভীষণ স্বার্থপর। আমরা শুধু নিজের সুখের কথা, আরামের কথা ভেবেছি।

ছবির উৎস : ইন্টারনেট।

 

গল্পে গল্পে শিশুদের কুরআন শেখা……১

গল্পে গল্পে শিশুদের কুরআন শেখা……১


আফরোজা হাসান


আজ মিহিরের মনে অনেক আনন্দ কারণ দেড়মাস পর দাদুভাই আর দাদুমনিকে আবার কাছে পেয়েছে। দুজনই হজ্জ করতে সৌদিআরব গিয়েছিলেন। মিহিরের জন্য অনেক উপহার নিয়ে এসেছেন তারা। সব উপহারের মধ্যে থেকে কাবা ঘরের শোপিস হাতে নিয়ে মিহির বলল, এটা দিয়ে আমি কি করবো দাদুভাই? দাদুভাই মিহিরকে কাছে টেনে হেসে বললেন, তুমি জানো এটা কি?

হুম জানি তো এটা হচ্ছে আল্লাহর কাবা ঘর। এখানেই তো তোমরা গিয়েছিলে হজ্জ করতে। আচ্ছা দাদুভাই আল্লাহই কি এই ঘর বানিয়েছেন?

হেসে, না দাদুভাই। তবে আল্লাহর নির্দেশে ইবরাহীম(আ)তাঁর ছেলে ইসমাইল(আ)কে নিয়ে কাবা ঘর বানিয়েছিলেন। সে এখন থেকে বহু বহু বছর আগের কথা। একবার কি হয়েছিলো জান?

কি হয়েছিলো দাদুভাই?

আবরাহা নামে এক দুষ্টু রাজা ছিল। সে ঠিক করেছিল সেই কাবাটা সে ভেঙে ফেলবে। কারণ তার ছিল অনেক শক্তি। ইবরাহীম(আ) আর ইসমাইল(আ) আল্লাহর কথা মত কাবা বানানোর পর থেকে অনেক দূর থেকে মানুষরা আল্লাহর ইবাদত করার জন্য কাবায় আসতো। তাই তার মনে কাবাকে ঘিরে খুব হিংসার সৃষ্টি হলো। সে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে দামি দামি জিনিসপত্র দিয়ে ভীষণ সুন্দর একটা উপাসনালয় বানালো। তারপরে মানুষকে দাওয়াত দিলো যাতে সবাই তার উপাসনালয়ে আসে। কিন্তু কেউ এলো না বরং সবাই আগের মতোই কাবা ঘরেই যাচ্ছিল ইবাদতের করতে। তাই সে ভীষণ রেগে ঠিক করলো কাবা ঘর ধ্বংস করে দিবে।

দুষ্টু রাজাটা তখন কি করলো দাদুভাই?

সে তখন অনেক সৈন্য সামন্ত আর বিশাল এক হাতির বহর নিয়ে কাবা ধ্বংসের উদ্দেশ্যে রওনা করলো।

তারপর কি হলো দাদুভাই?

আবরাহা তার সৈন্য বাহিনী আর বিশাল এক হাতির বহর নিয়ে কাবা ধ্বংস করতে আসছে শুনে তো মক্কার মানুষেরা অনেক ভয় পেয়ে গেল। তাদের তো অস্ত্র বলতে ছিল শুধু ঢাল, তলোয়ার আর বর্ষা। এত বিশাল সেনাবাহিনীর সাথে কিভাবে লড়াই করবে তারা ভেবে পাচ্ছিলো না। তাই তারা দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের কোন বাঁধা দিতে চেষ্টা করলো না।

মিহির ভীত কণ্ঠে বলল,তাহলে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যরা কাবা ঘর ভেঙ্গে ফেলেছিল?

না দাদুভাই দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের সেই ক্ষমতা কোথায় যে তারা আল্লাহর ঘর ভেঙ্গে ফেলবে। আল্লাহ তো সর্ব শক্তিমান। নিজের ঘরকে দুষ্টুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ আকাশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট ছোট আবাবীল পাখী পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

হাসি ফুটে উঠলো মিহিরের চেহারাতে। উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলল,আবাবীল পাখীরা দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের সাথে লড়াই করেছিল?

হেসে, তা বলতে পারো।পাখীদের প্রত্যেকের কাছে ছিল তিনটি করে পাথর। যা তারা সেনা বাহিনীর উপরে ছুড়ে দিয়েছিল। সেই ছোট্ট ছোট্ট নূরী পাথর বৃষ্টির ফোঁটার ঝরে পড়েছিল দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের উপর। যারফলে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

আনন্দে লাফিয়ে উঠে হাততালি দিয়ে মিহির বলল, খুব ভালো হয়েছে। কত্তো বোকা আল্লাহর ঘর ভাঙতে এসেছিল। উচিত শিক্ষা হয়েছে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের।

হেসে নাতীকে কোলে টেনে নিয়ে, ঠিক বলেছো দাদুভাই দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যরা ভীষণ বোকা ছিল। এমন অনেক বোকা মানুষ আছে যারা ক্ষমতা ও সম্পদের কারণে নিজেদেরকে অনেক বিশাল কিছু মনে করে। যারফলে তারা আল্লাহ্‌র সাথে লড়াই করতে চায়। কিন্তু…

দাদার মুখ থেকে কথা ছিনিয়ে নিয়ে বলল,আল্লাহ তো সর্বশক্তিমান তাই কেউ জিততে পারে না লড়াইতে।

হেসে,একদম ঠিক বলেছো। আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে যারা লড়াই করতে আসে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের মতই করুণ অবস্থা হয় তাদের।

চোখের সামনে কাবাঘরের শোপিসটা তুলে ধরলো মিহির। কিছুক্ষণ দেখে বলল, আমি আল্লাহর ঘরকে কোথায় রাখবো দাদাভাই?

তুমি কোথায় রাখতে চাও?

একটু চিন্তা করে মিহির বলল, আমার পড়ার টেবিলের উপর। এক্ষুনি রেখে আসি আমি। দাদার কোল থেকে নেমে নিজের ঘরের দিকে ছুট লাগালো মিহির।

 

ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য রোজার উপহার- শেষ পর্ব


ডা. মারুফ রায়হান খান


যারা নিয়মিত Sulfonylureas (Glipizide, Gliclazide, Glimeperide –ওষুধের প্যাকেটের গায়ে ছোট্ট করে ওষুধের এই জেনেরিক নেইম লেখা থাকে) প্রতিদিন সকালে খেতেন, তারা একই ডোজে ইফতারের সময় সেটা খাবেন। আর যারা এ ওষুধটি দুবেলা খেতেন, সকালে ও রাতে–তারা সকালের ডোজের পুরোটা ইফতারের সময় খাবেন। তবে রাতের ডোজের কেবল ‘অর্ধেকটা’ সেহরির সময় খাবেন।

যারা Metformin (Oramet, Comet, Metfo, Met, Informet ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়) ৩ বেলা ৫০০ মিলিগ্রামের একটি করে ট্যাবলেট খেতেন, তারা ইফতারে একসাথে দুটো ট্যাবলেট অর্থাৎ মোট ১০০০ মিলিগ্রাম খাবেন। আর সেহরিতে ৫০০ মিলিগ্রামের ১টি ট্যাবলেট খাবেন।

যারা দুবেলা ইনসুলিন নিয়ে থাকেন, সকালের ডোজটা সমপরিমাণ ইফতারের আগে নেবেন। আর রাতের ডোজের ‘অর্ধেক’ পরিমাণ সেহরির সময় নেবেন। ধরা যাক, কেউ সকালে ৩০ ইউনিট এবং
রাতে ২০ ইউনিট ইনসুলিন পেতেন। রমাদানে তিনি ইফতারের আগে সকালের ডোজের পুরোটা অর্থাৎ ৩০ ইউনিট ইনসুলিনই নেবেন। আর সেহরির সময় রাতের ডোজের অর্ধেক (২০/২=১০) অর্থাৎ ১০ ইউনিট ইনসুলিন পাবেন।

আপনি ডায়াবেটিক হোন কিংবা নন-ডায়াবেটিক, সুস্থ অবস্থায় সুষ্ঠুভাবে যেন সবগুলো রোজা রাখতে পারেন সে দু’আই করি। তবে মারাত্নক শারীরিক অসুবিধার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে যদি একান্তই রোজা রাখতে না পারেন, তাহলে দয়া করে মন খারাপ করবেন না। আপনার নিয়্যাত তো নিষ্কলুষ ছিল, আর আল্লাহ তো অন্তরের খবরও জানেন। পরবর্তী সময়ে সে রোজাগুলো কাজা আদায় করা যাবে। এই রমাদানটি হোক এ যাবতাকালের আমাদের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ রমাদান। আমীন।

 

চলতি মাসে ৯ দিনে ৩ জনের মৃত্যুসহ ধর্ষণের শিকার ৪১ শিশু !!!


নারী সংবাদ


শিশু ধর্ষণ! মে মাসের ১ তারিখ থেকে ৯ তারিখ, এই প্রথম নয় দিনে রাজধানীসহ সারাদেশে ৪১ শিশু ধর্ষণের শিকার। নিষ্পাপ তিনটি শিশু মারা গিয়েছে। এসব শিশুর মধ্যে মেয়ে শিশু ৩৭ জন এবং ছেলে শিশু চারজন। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। ছয়টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

সংস্থাটি জানায়, ধর্ষণের শিকার শিশুদের মধ্যে তিন শিশু লাশ পাওয়া যায়। আহত হয়েছে ৪১ শিশু। এছাড়া ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে আরও তিন শিশু। ফলে মোট নির্যাতনের শিকার ৪৪ জন শিশু।

শাহানা হুদা রঞ্জনা মতে, ‘ছয়টি পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে আমরা ধর্ষণের শিকার শিশুদের সংখ্যাটি নির্ণয় করেছি। আসল সংখ্যাটি হয়ত আরও বেশি। এ সংখ্যাটি অস্বাভাবিক।’ (মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক)

নারী ও শিশু র্ধষণ বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিমও। তিনি বলেন, ‘শিশুধর্ষণের ঘটনাগুলো খুবই অ্যালার্মিং। আমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। বিশেষ করে যারা নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে রয়েছে তাদের আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা নিতে হবে। শাস্তির বিষয়টি পরে, সবার আগে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে, সবাইকেই এ নিয়ে আরও বেশি কথা বলতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুঃখজনক হলে সত্য দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটি হয়নি। এটি হতাশাজনক ব্যাপার।’

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন সংস্থাটি তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, ‘শিশুদের প্রতি চলমান সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।’

 

সেহেরিতে টমেটো ভর্তার রেসিপি


রেসিপি


উপকরণ
আপনি টমেটো – ২ টা মাঝারি আকারের
নিতে পারেন। কাঁচামরিচ – ৩-৪ টা বা আপনার স্বাদ মত। পেঁয়াজকুচি- ৩ টেবিল চামচ নিবেন। আর লবন স্বাদমত।
সরিষার তেল- ১ চা চামচ এবং ধনিয়াপাতা কুচি – ১ টেবিল চামচ নিন।

পদ্ধতি
টমেটোর গায়ে সামান্য তেল মাখিয়ে একটি প্যানে নিয়ে মাঝারি আঁচে টেলে নিন (মাঝে মাঝে টমেটো নেড়ে দিন)। আপনি চাইলে প্যান ঢেকে দিয়ে টমেটো পুড়াতে পারেন। টমেটো নরম ও পোড়া পোড়া হয়ে আসলে চুলা বন্ধ করে ঠান্ডা হতে রাখুন। প্যানে কাঁচামরিচ নিয়ে মাঝারি আঁচে নরম ও হাল্কা পোড়া পোড়া হয়ে আসা পর্যন্ত টেলে নিন। এবার টমেটোর চামড়া ছাড়িয়ে একটি বাটিতে নিন। তাতে মরিচ পোড়া, পেঁয়াজকুচি, ধনিয়াপাতাকুচি, লবন ও সরিষার তেল দিয়ে একটি চামচ বা হাত দিয়ে ভাল করে ভর্তা করে নিন। আপনি চাইলে চপারে দিয়েও ভর্তা করতে পারেন।

পরিবেশন
টমেটো ভর্তার মধ্যে ধনিয়া পাতা দিয়ে পরিবেশন করুন।

 

গল্পে গল্পে শিশুদের হাদীস শেখা


আফরোজা হাসান


দুপুর থেকে ছেলের কর্মকাণ্ড দেখে খুবই মজা পাচ্ছিলো তাইয়্যেবাহ। বছর খানেক আগে আরিশকে একটি পিগি ব্যাংক কিনে দিয়েছিল। দুপুরে সেটা ভাঙার পর হিসাব করে দেখা গিয়েছে সব মিলিয়ে আরিশের জমানো টাকার পরিমাণ চারশো ইউরো। জমানো টাকার পরিমাণ চারশো ইউরো দেখে যতটা আনন্দিত হয়েছে আরিশ তারচেয়ে অনেকগুণ বেশি আনন্দিত হয়েছে এই তথ্য জানার পর যে, চারশো ইউরো মানে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা। এরপর থেকে টাকা দিয়ে কি করবে সেই পরিকল্পনা করছে আরিশ। একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হতে না হতেই সেটা বাদ দিয়ে নতুন আরেকটি পরিকল্পনার জন্য চিন্তাভাবনা শুরু করে দিচ্ছে। তাইয়্যেবাহ চুপচাপ ছেলের কান্ড দেখে আনন্দ নিচ্ছিলো। নিজ থেকে কোন পরামর্শ দেবার চেষ্টা করেনি। জানা আছে শেষমেশ তার কাছেই আসবে আরিশ ঘুরে ফিরে। এবং তাইয়্যেবাহর জানাকে সত্য প্রমাণিত করে বিকেলবেলা আরিশ হাজির হলো তার জমানো অর্থ সম্পদ সহ। খানিকটা চিন্তিত কন্ঠে বলল, আম্মু আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না আমার টাকা দিয়ে কি করবো। তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?

তাইয়্যেবাহ হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ অবশ্যই সাহায্য করবো বাবা। কিন্তু তারআগে বলো তোমার কি কি করতে ইচ্ছে করছে তোমার টাকা দিয়ে।

গড়গড় করে নিজের পছন্দের একগাদা গেমসের নাম বললো আরিশ। যেগুলো কিনতে ইচ্ছে করছে। এছাড়া আগামী রামাদানের ঈদ উপলক্ষ্যে বাবা তাকে যে গেমসটা কিনে দেবার কথা বলেছেন সেটাও এখনই কিনে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ঈদের সময় বাবার কাছ থেকে অন্যকিছু নেবে। নতুন যে হালাল খাবারের বুফে রেস্টুরেন্টটা হয়েছে তাদের বাসায় কাছে সেখানে বাবা, আম্মু, ভাইবোন আর খুব প্রিয় দুজন বন্ধুকে নিয়ে খেতে যেতেও ইচ্ছে করছে। নানাভাই, নানুমণি, দাদাভাই, দাদুমণিকে তাদের পছন্দের কোন উপহার দিতে ইচ্ছে করছে। এমন আরো অনেক কিছু করার ইচ্ছের কথা জানালো আরিশ।

ছেলের পরিকল্পনা শুনে তাইয়্যেবাহ হাসি মুখে বলল, তোমার টাকা তুমি অবশ্যই নিজের মতো খরচ করতে পারো। আম্মুর এতে কোনই আপত্তি নেই। কিন্তু তোমার নিশ্চয়ই মনেআছে বেশ কয়েকদিন আগে আম্মু তোমাকে বলেছিলাম, কোন কাজ করার সময় আমাদের সম্মুখে যখন অনেকগুলো অপশন খোলা থাকে। তখন আমাদের চেষ্টা করা উচিত সবচেয়ে উত্তম কাজটি করার।

হ্যা, আম্মু আমার মনেআছে তো তোমার কথা। সেজন্যই তো আমি তোমার কাছে এসেছি। তুমি বলে দাও কি করবো আমি।

তুমি কি ভেবে দেখেছো তোমার টাকা দিয়ে সবচেয়ে উত্তম কি কাজ করা যায়?

বুঝতে পারছি না। তুমি বলে দাও।

তোমার মনেআছে আরিশ গতবার যখন আমরা দেশে গিয়েছিলাম তখন আমার এক খালামণির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম তোমাকে? ঐ যে যার দুই ছেলের সাথে তুমি অনেক খেলা করেছিলে।

মনে নেই আবার। উফফ, ওরা আমাকে অনেক বিরক্ত করেছে। বিশেষ করে ছোট ছেলেটা।

তাইয়্যেবাহ হেসে বলল, বিরক্ত করেছে ঠিক। কিন্তু তোমার সাথে খেলাও তো করেছে। তা না হলে তোমাকে তো একাই খেলা করতে হতো। তাই না?

হ্যা তাও ঠিক।

কিছুদিন আগে কি হয়েছে শুনবে?

কি হয়েছে আম্মু?

আমার সেই খালামণির হাজবেন্ড মারা গিয়েছেন। খালামণি এখন খুবই বিপদে আছেন উনার দুই ছেলে নিয়ে। ওদের লালন-পালন, পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদিতে অনেক খরচ। খালামণির এখন এতটা খরচ বহন করার সামর্থ্য নেই। ওদের দুজনের স্কুলে যাওয়াটাই এখন অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরিশের হাস্যেজ্জ্বল চেহারায় ধীরে ধীরে আঁধার ছেয়ে গেলো। মন খারাপ করা কন্ঠে বলল, ওদেরকে সাহায্য করার কেউ নেই? তুমি আর বাবা সাহায্য করছো না কেন?

তাইয়্যেবাহ হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ আমি আর তোমার বাবা মিলে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। তুমি যদি চাও তাহলে তুমিও আমাদের সাথে যোগ দিতে পারো। তুমিও ওদেরকে সাহায্য করতে পারো।

আমি? আমি কিভাবে সাহায্য করবো আম্মু?

তোমার মনে নেই সেদিন আমরা দান-সাদাকাহর উপরে হাদীস পড়েছিলাম?

হ্যা আম্মু আমার মনে আছে তো। রাসূল (সঃ) বলেছেন, ”যে ব্যক্তি কোন অভাব গ্রস্তের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তার দু’নিয়া ও আখিরাতের সকল বিষয় সহজ করে দিবেন।” এরপর থেকে আমাদের স্কুলের পাশে মেট্রো স্টেশনের কাছে গরীব যারাই সাহায্যের জন্য বসে থাকে আমি তাদেরকে দেখতে পেলেই সাহায্য করি। গত সপ্তাহে তুমি যে আমাকে অনেক বেশি করে কুকিস দিয়েছিলে ফ্রেন্ডদের সাথে নিয়ে খাওয়ার জন্য। আমি ফ্রেন্ডদের না দিয়ে ওখানে যে দুজন গরীব মানুষ ছিলেন তাদেরকে দিয়েছি। অনেক খুশি হয়েছিল।

তাইয়্যেবাহ ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বলল, আলহামদুলিল্লাহ।সবসময় এমন চেষ্টা করবে অভাবী মানুষদেরকে সাহায্য করার। জানো রাসূল (সঃ) আরো কি বলেছেন? বলেছেন, “সালাত (আল্লাহর) নৈকট্য দানকারী, সিয়াম ঢাল স্বরূপ এবং দান-ছাদকা গুনাহ মিটিয়ে ফেলে যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে।” রাসূল (সঃ) আরো বলেছেন, “খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা কর।” আর সবচেয়ে আনন্দের কি জানো?

কি আম্মু?

রাসূল (সঃ) বলেছেন, “মিসকিনকে দান করলে তা শুধু একটি দান হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু গরীব নিকটাত্মীয়কে দান করলে তাতে দ্বিগুণ ছওয়াব হয়। একটি সাদাকাহ’র; অন্যটি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার।” মানে হচ্ছে, তুমি যদি কোন গভীর দুঃখীকে দান করো তাহলে তোমার যে সওয়াব হবে, তুমি যদি আত্মীয়দের কাউকে দান করো তার দ্বিগুণ সওয়াব হবে।

একটুক্ষণ চিন্তা করে আরিশ বলল, তারমানে আমি যদি উসমান আর উসামাকে সাহায্য করি তাহলে মেট্রো স্টেশনে যারা থাকেন তাদেরকে সাহায্য করার চেয়ে দ্বিগুণ সওয়াব হবে?

ইনশাআল্লাহ অবশ্যই দ্বিগুণ সওয়াব হবে তোমার।

তাহলে আমি এখন থেকে উসমান আর উসামাকেই সাহায্য করবো। কিন্তু ওদেরকে আমি কিভাবে সাহায্য করবো আম্মু? ওরা তো বাংলাদেশে থাকে।

তুমি যদি সত্যিই ওদেরকে সাহায্য করতে চাও তাহলে এখান থেকেও করতে পারবে।

আমি সত্যিই ওদেরকে সাহায্য করতে চাই আম্মু।

তাহলে তুমি তোমার জমানো টাকা থেকে কিছু টাকা উসমান আর উসামার জন্য পাঠাতে পারো। জানো পঁয়ত্রিশ হাজার টাকায় ওদের দুজনের প্রায় এক বছরের পড়াশোনার খরচ চলে যাবে। তবে তোমাকে সব টাকা দিতে হবে না। তুমি চাইলে যে কোন একজনকে সাহায্য করতে পারো।

না না আম্মু আমি দুজনকে ই সাহায্য করতে চাই। তাহলে আমার অনেক বেশি সওয়াব হবে। কিন্তু ওদেরকে টাকা কিভাবে দেবো?

তাইয়্যেবাহ হেসে বলল, এখান থেকে টাকা পাঠিয়ে দেয়া যাবে বাংলাদেশে। তোমার বাবাকে দিলেই উনি পাঠিয়ে দেবেন।

তাহলে এক্ষুণি আমি বাবাকে আমার জমানো সব টাকা দিয়ে আসছি। বলতে বলতেই উঠে ছুট লাগালো আরিশ। তাইয়্যেবাহও আলহামদুলিল্লাহ বলে রব্বের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে করতে ছেলের পিছু নিলো।

 

ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য রোজার উপহার-২


ডা. মারুফ রায়হান খান


রোজাতে ডায়াবেটিক রোগীর যে সমস্যাটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন চিকিৎসকরা–তা হচ্ছে ‘হাইপোগ্লাইসেমিয়া’ (Hypoglycemia)।সহজ ভাষায় বলতে গেলে রক্তে গ্লুকোজ/সুগারের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৩.৫ মিলিমোল/লিটারের নিচে নেমে গেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হিসেবে ধরা হয়। হাইপোগ্লাইসেমিয়া এতো মারাত্নক হতে পারে যে রোগী কোমায় চলে যেতে পারে, মস্তিষ্কের মারাত্নক ক্ষতি হতে পারে। তাই প্রতিজন ডায়াবেটিস রোগীর এবং তার পরিবার-পরিজনের হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে কী কী লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং করণীয় কী তা জানা অবশ্যই প্রয়োজন।

সচরাচর যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় :

– অতিরিক্ত ঘাম
– হাত-পা কাঁপা
– বুক ধড়ফড় করা
– বেশি ক্ষুধা লাগা
– উদ্বিগ্নতা
– ঝিমাতে থাকা
– কথা জড়িয়ে যাওয়া
– মনোযোগ প্রদানে বিঘ্ন ঘটা
– অল্পতে রেগে যাওয়া
– বমি বমি ভাব
– মাথা ব্যথা/ মাথা ঘোরা ইত্যাদি।

রোগীর হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে সাথে সাথে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। তা যদি ইফতারের ১০ মিনিট আগেও হয়।

৪. শারীয়াহগত দিক থেকে রোজা রেখে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করতে কোনো বাধা নেই। ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা থাকা অবস্থায় নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে সেহরির ঘণ্টা দুয়েক পর এবং ইফতারের ঘণ্টাখানেক আগে গ্লুকোজের মাত্রা দেখা উচিত। এছাড়া অন্যান্য সময়েও পরীক্ষা করা যেতে পারে।

৫. যেকোনো সময় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৩.৩ মিলিমোল/লিটারের নিচে নেমে গেলে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। এছাড়া সেহরি করার প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যদি ৩.৯ মিলিমোল/লিটারের নিচে নেমে যায় তখনও রোজা ভাঙতে হবে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ১৬.৭ মিলিমোল/লিটারের বেশি বেড়ে গেলেও রোজা ত্যাগ করতে হবে।

৬. ক্যালোরি এবং খাবারের গঠনগত দিক থেকে রমাদানের আগে যেমন স্বাস্থ্যকর ও ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খেতেন, রমাদানেও তেমনটাই চলবে। সেহরির সময় অপেক্ষাকৃত জটিল শর্করা যেগুলো হজম ও শোষণ ধীরে ধীরে হয় তেমন খাবার খেতে হবে। সেহরির সময় ভাত, রুটি, নান, সবজি, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ফল ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

ইফতারের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে :

– অনেক বেশি পরিমাণ শর্করা ও চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।

– মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খেতে হবে।

– মিষ্টি পানীয় পরিহার করতে হবে। মিষ্টি শরবতের বদলে আল্লাহর দেওয়া ‘প্রাকৃতিক শরবত’ ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে।

– ইফতার থেকে সেহরির মধ্যবর্তী সময়ে প্রচুর পানি খেতে হবে।

আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। সেহরি যতোটা সম্ভব দেরিতে খেতে হবে আর ইফতার যতোটা সম্ভব তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমাদের ধর্মীয় বিধানও তা-ই শিক্ষা দেয়। হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধে এটি একটি খুবই কার্যকরী উপায়।

৭. রোজাতে প্রাত্যহিক জীবনের স্বাভাবিক কাজগুলো করতে কোনো বাধা নেই। তবে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম হাইপোগ্লাইসেমিয়া করতে পারে। তাই দিনের বেলায় অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম না করাই ভালো। ইফতার এবং সেহরির মধ্যবর্তী সময়ে ঘণ্টাখানেকের জন্যে শরীরচর্চা করা যেতে পারে। তারাবীহ, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি অতিরিক্ত নামাজও শরীরচর্চা হিসেবে বিবেচনায় রাখা উচিত।

৮. সবশেষে আসা যাক ওষুধ/ইনসুলিন কীভাবে নিতে হবে। প্রত্যেকটা রোগীকে চিকিৎসকই ঠিক করে দেবেন এটা। তবে খুব সাধারণভাবে একটু আলোচনা করা যাক।

চলবে…

 

কাঁচা আমের পাতলা ডাল


রেসিপি


গরমে ইফতারির পর রাতের খাবার খেতে বসে এমন একটা আইটেম পেলে নিশ্চিত আপনার মন ভাল হয়ে যাবে। আমের টক এবং হালকা পাতলা ডাল ভাব আপনার খাবারের মজা অনেক গুন বেশী করে দিবেই। গরমে মুখে স্বাদ বাড়িয়ে দেবে কয়েক গুন।

প্রয়োজনীয় উপকরনঃ (উপকরণের অনুমান আপনি নিজেও করে নিতে পারেন)

– হাফ কাপ মুশরী ঢাল।
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ
– হাফ চামচ গুড়া হলুদ
– কয়েকটা পেঁয়াজ কুচি
– সামান্য ধনিয়া পাতা
– লবণ (পরিমাণ মত)
– পানি (কিছু গরম পানি আগে করে রাখলেই ভাল, প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে)
– কিছু রসুন কুচি (বাগার দেয়ার জন্য)
– সামান্য তেল

প্রণালীঃ
কাঁচা আম ফালা করে নেই।
মুশরী ডাল ভাল করে ধুয়ে হলুদ গুড়া, পেঁয়াজ কুচি, পরিমাণ মত লবণ ও কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাল করে জাল দিতে থাকুন। ডাল গলে গলে আসলে গুটনি দিয়ে আরো গলে মিহিন করে ফেলুন। একটা অনুমান করে কাঁচা আম দিতে হবে।

পরিবেশন
আরো কিছু সময় জাল দিতে হবে। থাকলে কিছু ধনিয়া পাতা কুঁচে দিন, খেতে ভাল লাগবে।

 

ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য রোজার উপহার-১


ডা. মারুফ রায়হান খান


আপনার আব্বু-আম্মু বা আত্নীয় কেউ ডায়াবেটিসের রোগী হলে আপনার জন্যে আমার পক্ষ থেকে রমাদানের উপহার এটি।

১. ডায়াবেটিসের রোগীরা কি রোজা রাখতে পারবে? কোন কোন ক্ষেত্রে পারবে না?

২. রোজা রাখলে কী কী উপকার হবে?

৩. কী কী ঝুঁকি থেকে যায়? কী করণীয় তখন?

৪. রোজা থাকা অবস্থায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা মাপা যাবে কি?

৫. কোন অবস্থায় রোজা অবশ্যই ভেঙে ফেলতে হবে?

৬. রোজাতে খাবার-দাবার কেমন হবে?

৭. রোজাতে শরীরচর্চা করা যাবে কীভাবে?

৮. ওষুধ/ইনসুলিন কীভাবে, কখন, কতোটুকু নিতে হবে?

মুসলিমদের জন্যে ইবাদাতের এক ভরা মৌসুম রমাদান। কে না শরীক হতে চায় এই মহিমান্বিত মাসের রহমাতে-বারাকাহতে-মাগফিরাতে-নাজাতে! তবে কিছুটা বিপাকে পড়ে যান ডায়াবেটিসের রোগীরা। অনেকগুলো প্রশ্ন আর সংশয় তাদের মনে উঁকি দিতে থাকে।

এবার চলুন এক এক করে আমরা প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

১. সারা বিশ্ব জুড়ে ৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ রোজা রাখেন। প্রচুর পরিমাণ লিটারেচারে এসেছে যে, অধিকাংশ ডায়াবেটিক রোগীরাই রোজা রাখতে পারেন। তবে এটা নির্দিষ্ট ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে তার রোজা রাখতে পারা বা না পারা। সেজন্যে প্রয়োজন রোজা শুরু হবার বেশ কিছুদিন আগেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে যাচাই-বাছাই (Pre-Ramadan Assessment) করিয়ে নেয়া যে তিনি রোজা রাখতে সক্ষম কিনা, রোজাতে কী কী নিয়মকানুন মেনে চলবেন, ওষুধ/ইনসুলিন কীভাবে নেবেন ইত্যাদি। রোগীর বিগত দিনগুলোতে ডায়াবেটিসের অবস্থা, জটিলতা, অন্যান্য রোগ, রক্তে চর্বির পরিমাণ, রক্তচাপ ইত্যাদি সবকিছু বিবেচনা করে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন রোগীটি রোজা রাখতে পারবে কি পারবে না। তবে খুব সাধারণভাবে বলতে গেলে যেসব ডায়াবেটিস রোগীরা ডায়াবেটিস অনেক কমে গেলেও বুঝতে পারেন না, যাদের ডায়াবেটিস একেবারেই নিয়ন্ত্রণে থাকে না, সম্প্রতি ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস হয়েছে–তাদেরকে রোজা না রাখতে বলা হয়। তাছাড়া যেসব ডায়াবেটিস রোগীদের কোনো অর্গান ফেইলিউর (যেমন : হার্ট ফেইলিউর, কিডনি ফেইলিউর, লিভার ফেইলিউর) আছে তাদেরও রোজা না রাখাই শ্রেয়। এছাড়াও যাদের মারাত্নক চোখের রেটিনায় সমস্যা, স্নায়ুতে সমস্যা, বড় ধরনের রক্তনালীতে সমস্যা, একিউট পেপটিক আলসার, মারাত্নক ধরনের ফুসফুসে যক্ষ্ণা, মারাত্নক ইনফেকশান, মারাত্নক হাঁপানি, বারবার পাথর হওয়া, যেসব ক্যান্সার রোগীদের শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ, সম্প্রতি হার্ট এটাক হয়েছে, লিভারে সমস্যা রয়েছে এবং মারাত্নক মানসিক সমস্যা যাদের রয়েছে–তাদেরও রোজা রাখতে নিরুৎসাহিত করা হয়। গর্ভবতী এবং শিশুকে বুকের দুধ পান করান তারা রোজা রাখবে না।

২. ডায়াবেটিস রোগীদেরও রোজা রাখলে বেশ কিছু উপকার হয়ে থাকে। যেমন :

– রোজা শরীরের বিপাকীয় (Metabolic) কাজের উন্নতি ঘটায়।

– শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে।

– উচ্চ রক্তচাপের নিয়ন্ত্রণ ভালো হয়।

– শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে।

– রোগ প্রতিরোধ-ক্ষমতা শক্তিশালী করে।

– সর্বোপরি রোজাতে নিয়মানুবর্তিতার এক অনন্য চর্চা হয়। আর আমরা সবাই জানি নিয়মানুবর্তিতা ডায়াবেটিসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা।

৩. ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা রাখলে যেসব ঝুঁকি থাকে :

– রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অতিরিক্ত কমে যাওয়া (হাইপোগ্লাইসেমিয়া)।

– রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া (হাইপারগ্লাইসেমিয়া)।

– পানিশূন্যতা।

– ওজনের তারতম্য ঘটা।

চলবে….

 

কটিয়াদীতে চলন্ত বাসে নার্সকে ধর্ষণের পর হত্যা

 


নারী সংবাদ


কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে স্বর্ণলতা যাত্রীবাহী বাসে শাহিনুর আক্তার তানিয়া (২৪) নামে এক নার্সকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষণকারীরা তাকে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের গজারিয়া জামতলী নামক স্থানে।

নিহত শাহিনুর কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শাহিনুর আক্তার তানিয়া ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে চাকরি করেন। সোমবার বিকালে তিনি এয়ারপোর্ট কাউন্টার থেকে টিকেট নিয়ে স্বর্ণলতা পরিবহনে উঠেন। স্বর্ণলতা বাস মহাখালী-থেকে কটিয়াদী হয়ে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত চলাচল করে। পিরিজপুর থেকে তার বাড়ির দূরত্ব মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা।

শাহিনুর বিকালে বাসে উঠার পর থেকে তার বাবা এবং ভাইদের সাথে মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কথা হয়। রাত ৮ টার দিকে তিনি যখন মঠখোলা বাজার অতিক্রম করেন তখন তার বাবার সাথে ফোনে জানান, আধা ঘন্টার মধ্যে বাড়ি পৌঁছতে পারবেন। তার বাবা তখন এশা এবং তারাবির নামাজের জন্য মসজিদে যাচ্ছেন।

সাড়ে আটটার দিকে বাসটি কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলে তখনো তার ভাইয়ের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয়। বলেন, আর মাত্র পাঁচ-সাত মিনিট লাগবে পিরিজপুর পৌঁছতে।

কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে বাসের সমস্ত যাত্রী নেমে যায়। কিন্তু গাড়ির ড্রাইভার এবং হেলপার কৌশলে কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড থেকে তাদের সাথের চার-পাঁচজনকে যাত্রীবেশে গাড়িতে তোলেন। কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড পার হয়ে দুই কিলোমিটার দূরবর্তী ভৈবর-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের গজারিয়া জামতলী নামক নীরব জায়গায় শাহিনুরকে জোরপূর্বক চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণ করে এবং গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে হত্যা করে বলে স্বজনরা ধারণা করছেন।

তার মৃত্যুর পর ধর্ষণকারীরা রাত পৌনে এগারোটার দিকে কটিয়াদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে দুর্ঘটনা কথা বলে লাশ ফেলে রেখে যায়।

হাসপাতাল রেজিস্ট্রার সূত্রে আনয়নকারীর নাম পাওয়া যায় আল আমিন, বাবা ওয়াহিদুজ্জামান, গ্রাম ভেঙ্গারদি, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

এদিকে পাঁচ মিনিটের কথা বলে দীর্ঘ সময়েও তানিয়া পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ডে স্বর্ণলতা বাস না পৌঁছায় তার ভাই মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। গভীর রাতে সংবাদ পায় শাহিনুরের লাশ কটিয়াদী হাসপাতাল থেকে থানায় নিয়ে রাখা হয়েছে।

তানিয়ার ভাই কফিল উদ্দিন সুমন জানায়, শাহিনুরের সাথে একটি এলইডি ১৯ ইঞ্চি টেলিভিশন, একটি স্যামসং এনড্রয়েট মোবাইল ফোন ও বেতনের ১৫-১৬ হাজার টাকা ছিল।

কটিয়াদী থানার ওসি (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ড্রাইভার নূরুজ্জামান (৩৯), হেলপার লালন মিয়াকে (৩৩) আটক করা হয়েছে। শাহিনুরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ব্যাগ, কাপড় চোপড় পাওয়া গেছে। ময়না তদন্তের জন্য লাশ কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।

তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে ওসি বলেন, ময়না তদন্তের রিপোর্টে বিস্তারিত প্রতিবেদন চাওয়া হবে। তবে তার হাত, মুখ ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

 

ইফতারিতে দই-চিড়া-কলা


রেসিপি


উপকরণ

১. মিষ্টি দই ২ কাপ
২. চিড়া ১কাপ
৩. পাকাকলা ২টি (চৌকো করে কাটা)। ৪. লবণ ১ চিমটি
৫.মসলার গুড়া

প্রক্রিয়া

প্রথমে চিড়া ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। তারপর একটি বাটিতে দই, লবণ, এবং সামান্য মসলা দিয়ে ভালোভাবে ফেটে নিবেন।

ফেটানো দইয়ে চিড়া মেখে এক ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে দিন।

পরিবেশন

ঠিক ইফতারির ৬ থেকে ১০ মিনিট আগে কলার সঙ্গে দই-চিড়া চামচ দিয়ে মেশাতে হবে। বরফ টুকরা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

 

আসুন রমজানের হক আদায় করি


আকলিমা ফেরদৌসি আখি


এ মাসের প্রস্তুতির জন্য যা করা যেতে পারে তা হলো-

১)ঈমান ও এহতেসাবের সাথে রোজার নিয়ত করা।

২)ইচ্ছা শক্তি দৃঢ় করে নেওয়া যে,‘ ইনশাল্লাহ রমজান মাসে আল্লাহর ক্ষমা ও নাজাত হাসিল করে নিবোই।’

৩)রমজানের প্রয়োজনীয় মাসলা মাসায়েল জানা ও দোয়া গুলো মুখস্ত করে নেওয়া।

৪)রমজান মাসে কি কি নেক আমল করা যায় তার একটা তালিকা তৈরি করে রাখা। যেমন-

-কোরআন অধ্যায়ন করা(অধ্যায়ন বলতে কোরআনের তাফসীর সহ পড়াকে বুঝায়)তিন/চারটি সূরা ঠিক করে নেওয়া এবং পুরো মাসে এই তিনটি/চারটি সূরা সর্ম্পকে একটি পরিপূর্ণ ধারনা নেবার চেষ্ঠা করা।

-কোরআন তেলওয়াত করা।প্রতি ওয়াক্ত নমিাজের পরে চার পৃষ্ঠা কোরআন তেলওয়াত করলে মাসে একটি খতম দেওয়া যায়।

-কয়েক টি ইসলামী ও হাদিস বই ঠিক করে রাখা এবং সারা মাস ধরে পড়া।

-ওয়াক্তের শুরুতেই নামাজ আদায়ের চেষ্ঠা করা এবং সুন্নত ও নফল নামাজ আদায়ে মনোযোগী হওয়া।

-নিয়মিত সালাতুল দুহা,তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা।

-তাহাজ্জুদ নামাজের আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকু তেলাওয়াত করা।

-দৈনিন্দন জীবনে প্রতিটি কাজে রাসুল(সা:) এর শিখিয়ে দেওয়া দোয়াগুলো পড়া।

-সহীহ করে কোরআন তেলওয়াত শেখার চেষ্ঠা করা।

-প্রতিদিন অন্তত: একজন ব্যক্তিকে ইফতার করানো।

-প্রতিদিন অন্ত:ত একজন ব্যক্তিকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া।ইত্যাদি

৫)নিজের কমপক্ষে দশটি দোষ চিহ্নিত করে তার তালিকা তৈরী করা এবং এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যে রমজানে এ দোষগুলো থেকে নিজেকে বাচিঁয়ে রাখার চেষ্ঠা করাএবং পরির্পূণভাবে দোষগুলি থেকে নিজেকে মুক্ত করা।

৬)পরিবারের সদস্যদের রমজানের হক আদায়ের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত করা।

৭)রমজানের প্রতিটি দিন ঠিক ভাবে কাজে লাগানো জন্য একটি রুটিন করে রাখা।

৮)শেষের দশদিন পরিপূর্ণভাবে হক আদায়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।(প্রয়োজনে ইত্তেকাফের নিয়ত করা যেতে পারে।ঈদের কেনাকাটা আগে থেকেই করে রাখা যাতে শেষের দিনগুলো ফ্রি থাকা যায়।)

৯)যাকাতের হিসাব করে রাখা।

১০)অভাবীদের মধ্যে ঈদের উপহার বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করা।

এবারে আসুন একজন রোজাদার হিসাবে নিজের কাজগুলি গুছিয়ে নিয়ে কিভাবে প্রতিটি সময়কে ইবাদতে পরিণত করে নেওয়া যায় তার একটা নমুনা দেখে নেয়া যাক-

রাতের শেষাংশে

সালাতুল তাহাজ্জুদ-২:৩০-৩:১৫
(তাহাজ্জুদ নামাজের আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে রাসূল সা: সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকু তেলওয়াত করতেন।এই আমলটির অভ্যাস করা যেতে পারে।)
সেহেরী গ্রহন-৩:১৫-৩:৫০মি:
সালাতুল ফজর ও সকালবেলার আযকার পাঠ-
৩:৫০মি:-৪:৩০মি: (হিসনূল মুসলিম অথবা কতিপয় প্রয়োজনীয় দোয়া বই গুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে)
কোরআন তেলওয়াত(চার পৃষ্ঠা)-৪:৩০-৬:০০টা
সালাতুল দুহা বা ইশরাক-৬:০০টা থেকে-৬:১৫মি:
বিশ্রাম ও ঘুম-৬:২০-৮:৩০মি:

সকাল বেলা

ঘুম থেকে উঠা-৮:৩০ থেকে ৯:৩০টা
দৈনিন্দন কাজ শেষ করা-৯:৩০টা থেকে-১১:৩০
(এ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের জন্য সারাদিনের খাবার রেডি করা,ইফতার কি হবে ,রাতের খাবার ও সেহেরী কি হবে তা রেডি করে রাখা।মাছ, সবজি কেটে ধুয়ে রাখা যেতে পারে)
কোরআন অধ্যায়ন,ইসলামী বই পড়া,হাদিস ইত্যাদি-১১:৩০ থেকে-১২:৩০

দুপুর বেলা

বিশ্রাম ও সালাতুল জহুরের প্রস্তুতি সালাত পরবর্তী মুস্তাহাব তাসবীহ ও যিকির পাঠ-১২:৩০- ১:০০
কোরআন তেলওয়াত(চার পৃষ্ঠা)-১:০০-২:০০মি:
সন্তানদের নিয়ে রমজান স্কুল
(প্রতিবেশীর সন্তানদেরও সাথে নেওয়া যেতে পারে)কোরআন পড়ানো,হাদিসের গল্প বলা,ইসলামী বই পড়িয়ে শুনানো,স্কুলের পড়া ইত্যাদি-২:০০-৩:৩০
ইস্তেগফার পাঠ(আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ ১০০বার তওবার অনুভুতি নিয়ে)-৩:৩০-৪:১৫
বিশ্রাম-৪:১৫-৫;০০
কোরআনের সূরা মুখস্ত(এ ক্ষেত্রে আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে কোন সূরা গুলো মুখস্ত করা হবে।)
প্রতিদিন অন্তত: একটি দোয়া মুখস্ত করা (রাসূল সা: যে গুলো দৈনিন্দন জীবনে পড়েছেন)

বিকেল বেলা

সালাতুল আসর,সালাত পরবর্তী মুস্তাহাব তাসবীহ ও যিকির এবং কোরআন পাঠ
রাতের খাবার,ইফতার ও সেহেরীর জন্য প্রস্তুতি এবং রান্না শেষ করে ফেলা-৫:০০-৬:১৫মি:
এ সময় মায়েরা যেহেতু রান্না বা ইফতারের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত থাকেন তাই বাবারা সন্তানদেরকে কিছুটা সময় দিতে পারেন।গল্পের বই পড়ে শুনানো, হাতের লেখা প্রেকটিস করানো,টিভিতি ভালো কোন অনুষ্ঠান দেখানো,আল্লাহর নিরানব্বইটা নাম থেকে প্রতিদিন পাচঁটি করে শিখানো ,সৃজনশীল লিখা ইত্যাদি।

ইফতার ও সন্ধ্যা বেলা

ইফতারের প্রস্তুতি নিয়ে পরিবারের সবাই একসাথে বসা:৬:২০-সময় হওয়ার আগ পযর্ন্ত
এ সময় পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে কেউ অথসহ কোরআন তেলওয়াত করতে পারে। একটি/দুইটি হাদিস পড়ে শোনানো এবং সবশেষে সবাই মিলে বা ব্যক্তিগত ভাবে দোয়ার পরিবেশ তৈরী করা যেতে পারেএবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা যেতে পারে।
ইফতার গ্রহন–৬:২০(ইফতারের সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সময়টা মিলেয়ে নিতে হবে।}
সালাতুল মাগরীব ও সন্ধ্যাকালীন আযকার পাঠ ৭:০০-৭:৩০
(হিসনূল মুসলিম অথবা কতিপয় প্রয়োজনীয় দোয়া বই গুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে)
বিশ্রাম ও প্রয়োজনীয় কাজ ৭:৩০-৮:০০

রাতে

সালাতুল এশা ,তারাবীহ ও কোরআন তেলওয়াত(চার পৃষ্ঠা)-৮:০০-১০:০০
রাতের খাবার-১০:০০-১০:৩০
সূরা মূলক তেলওয়াত ও এক আয়াত মুখস্ত-১০;৩০-১১:০০
ঘুমের প্রস্তুতি ও ঘুম-১১:০০-২:৩০
মহান আল্লাহ আমাদের রোজার যথাযথ হক আদায়ের তৌফিক দিন।আমীন।
(এটি একটি নমুনামাত্র যারা চাকুরিজীবি বা ছোট ছোট কয়েকটি বাচ্চার মা তাদেরজন্য এ রুটিন মেনে চলা কঠিন । তবে তারা যা করতে পারেন তা হলো সময় নয় কাজগুলি গুছিয়ে নিন তারপর সুযোগ মত কাজটি শেষ করুন আর লিস্টে টিক দিয়ে দিন )

আল্লাহ আমাদের রমজানের হক যথাযথভাবে আদায় করার তৌফিক দিন। আমীন।

 

রমজান মাসের ফজিলত – শেষ পর্ব


বিশেষ সংখ্যা মাহে রমজান


সাত. রমজান জাহান্নাম থেকে মুক্তির লাভের মাস,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : রমজান মাসের প্রথম রজনির যখন আগমন ঘটে তখন শয়তান ও অসৎ জিনগুলোকে বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, এ মাসে আর তা খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এ মাসে তা আর বন্ধ করা হয় না। প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে ঘোষণা দিতে থাকে যে, হে সৎকর্মের অনুসন্ধানকারী তুমি অগ্রসর হও ! হে অসৎ কাজের অনুসন্ধানকারী তুমি থেমে যাও ! এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।  [ তিরমিজি ]

আট. রমজান মাসে সৎকর্মের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। যেমন হাদিসে এসেছে যে, রমজান মাসে ওমরাহ করলে একটি হজের সওয়াব পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, বরং, রমজান মাসে ওমরাহ করা আল্লাহর রাসূলের সাথে হজ আদায়ের মর্যাদা রাখে। এমনিভাবে সকল ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল সৎকাজের প্রতিদান কয়েক গুণ বেশি দেয়া হয়।

নয়. রমজান ধৈর্য ও সবরের মাস। এ মাসে ঈমানদার ব্যক্তিগণ খাওয়া-দাওয়া, বিবাহ-শাদি ও অন্যান্য সকল আচার-আচরণে যে ধৈর্য ও সবরের এত অধিক অনুশীলন করেন তা অন্য কোন মাসে বা অন্য কোন পর্বে করেন না। এমনিভাবে সিয়াম পালন করে যে ধৈর্যের প্রমাণ দেয়া হয় তা অন্য কোন ইবাদতে পাওয়া যায় না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন : ধৈর্যশীলদের তো বিনা হিসাবে পুরস্কার দেয়া হবে। [সূরা যুমার : ১০]

সুত্র: কুরআনের আলো ডট কম।

 

রমজান মাসের ফজিলত – ৩


বিশেষ প্রতিবেদন


চার. রমজান মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তাআলা  বলেন : লাইলাতুল কদর সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সে রজনি উষার আবির্ভাব পর্যন্ত। [সূরা আল-কদর : ৩-৫]

পাঁচ. রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়। [ মুসনাদ আহমদ ]

অন্য হাদিসে এসেছে : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রতি রাত ও দিবসে মুসলিমের দোয়া-প্রার্থনা কবুল করা হয়। [ সহি আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ]

তাই প্রত্যেক মুসলমান এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের কল্যাণের জন্য যেমন দোয়া-প্রার্থনা করবে, তেমনি সকল মুসলিমের কল্যাণ, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জ্ঞাপন করবে।

ছয়. রমজান পাপ থেকে ক্ষমা লাভের মাস। যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপসমূহ ক্ষমা করানো থেকে বঞ্চিত হলো আল্লাহর রাসূল তাকে ধিক্কার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন : ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করা হয়নি। [ তিরমিজি ]

সত্যিই সে প্রকৃত পক্ষে সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত যে এ মাসেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল।

সুত্র: কুরআনের আলো ডট কম।

 

রমজান মাসের ফজিলত – ২


বিশেষ প্রতিবেদন


দুই. রমজান হল কোরআন নাজিলের মাস। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : রমজান মাস, এতে নাজিল হয়েছে আল-কোরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী।

 [ সূরা বাকারা : ১৮৪ ]

রমজান মাসে সপ্তম আকাশের লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে বায়তুল ইজ্জতে পবিত্র আল-কোরআন একবারে নাজিল হয়েছে। সেখান হতে আবার রমজান মাসে অল্প অল্প করে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি নাজিল হতে শুরু করে। কোরআন নাজিলের দুটি স্তরই রমজান মাসকে ধন্য করেছে। শুধু আল-কোরআনই নয় বরং ইবরাহিম আ.-এর সহিফা, তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল সহ সকল ঐশী গ্রন্থ এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে বলে তাবরানী বর্ণিত একটি সহি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। (সহি আল-জামে)

এ মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাজিল হয়েছে তেমনি আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছে সিয়াম। তাই এ দুই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বেশি বেশি করে কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত। প্রতি বছর রমজান মাসে জিবরাইল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ও তাকে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন। আর জীবনের শেষ রমজানে আল্লাহর রাসূল দু বার পূর্ণ কোরআন তিলাওয়াত করেছেন। সহি মুসলিমের হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত।

তিন. রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় শয়তানদের। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যখন রমজান মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে-শয়তানের শিকল পড়ানো হয়। [ মুসলিম ]

তাই শয়তান রমজানের পূর্বে যে সকল স্থানে অবাধে বিচরণ করত রমজান মাস আসার ফলে সে সকল স্থানে যেতে পারে না। শয়তানের তৎপরতা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে দেখা যায় ব্যাপকভাবে মানুষ তওবা, ধর্মপরায়ণতা, ও সৎকর্মের দিকে অগ্রসর হয় ও পাপাচার থেকে দূরে থাকে। তারপরও কিছু মানুষ অসৎ ও অন্যায় কাজ-কর্মে তৎপর থাকে। কারণ, শয়তানের কু-প্রভাবে তারা অনেক বেশি প্রভাবিত হয়ে পড়েছে।

সুত্র: কুরআনের আলো ডট কম।