banner

সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ইং, ,

All posts by Oporajita

 

মোরগ মোসাল্লাম রেসিপি

খুবই আকর্ষনীয় এবং সুস্বাদু একটি খাবারের নাম মোরগ মোসাল্লাম। সবার কাছেই এই খাবারটি খুব পছন্দের। কিন্তু রেসিপি জানা না থাকার কারণে সুস্বাদু এই খাবারটি খাওয়ার সুযোগ হারাচ্ছেন অনেকেই। তাই আমাদের এই সহজ রেসিপিটির মাধ্যমে আপনি ঘরের সাধারণ কড়াই বা হাড়িতেই তৈরি করতে পারবেন মুখরোচক মোরগ মোসাল্লাম। চলুন জেনে নেই আপনার পছন্দের মোরগ মোসাল্লাম এর রেসিপিটি।

উপকরণ

  • আস্ত মোরগ ১টি (১কেজি)
  • পেয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ
  • পেয়াজ বাটা ১ কাপ
  • মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ
  • হলুদ গুঁড়া ১/২ চা চামচ
  • ধনে গুঁড়া ১ চা চামচ
  • আদা বাটা ১ টেবিল চামচ
  • রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ
  • জিরা বাটা ১ চা চামচ
  • টকদই ২ টেবিল চামচ
  • গরম মশলা বাটা ১/২ চা চামচ
  • তেজপাতা ২টি
  • দারুচিনি ৩ টুকরা (২ ইঞ্চি সাইজের)
  • এলাচ ৩টি
  • চিনি ১/২ চা চামচ
  • জায়ফল জয়ত্রি গুঁড়া/বাটা ১/৩ চা চামচ
  • সয়াসস ১ চা চামচ
  • টমেটো সস ১ টেবিল চামচ
  • লেবুর রস ১ চা চামচ
  • তেল ১ কাপ
  • পানি ৪ কাপ
  • ঘি ২ টেবিল চামচ
  • কাঁচামরিচ ৩-৪টি (ফালি করা)
  • লবন স্বাদমতো

প্রস্তুত প্রণালী

প্রথমেই আস্ত মোরগটির চামড়া ছাড়িয়ে নিতে হবে। তারপর ভেতরটা খুব ভালো করে পরিষ্কার করে ডানার অর্ধেকটা, পা ও মাথা কেটে নিতে হবে। এখন মোরগের সঙ্গে লবন, আদা, হলুদ, রসুন মেখে আধা ঘন্টা রেখে দিন। এরপর কড়াইতে তেল গরম করুন এবং অল্প আঁচে মোরগটি ভেজে তুলুন।

এবার একই কড়াইতে গরম তেলে ঘি দিন। ঘি গরম হলে পেয়াজ কুচি দিয়ে নাড়তে থাকুন। পেয়াজ বাদামী রঙ ধারণ করলে চুলার আঁচ কমানো অবস্থায় টক দই, লেবুর রস, চিনি ও সয়াসস বাদে একে একে বাকী সব মশলা দিয়ে কষান।

ভাল করে কষানো হলে ভেজে রাখা মোরগটি দিয়ে কিছুক্ষণ ভুনে গরম পানি দিন। কড়াই/পাতিলে ঢাকনা দিয়ে রান্না করুন। মাঝে মাঝে ঢাকনা উঠিয়ে মোরগটি নাড়তে এবং উল্টে দিতে হবে।

মোসাল্লামের ঝোল কমে মাংস সিদ্ধ হয়ে মাখা মাখা হয়ে এলে টকদই, চিনি, লেবুর রস, সয়াসস, টমেটো সস ও কাচামরিচ দিয়ে আরো ১০ মিনিট অল্প আঁচে ঢেকে রান্না করতে থাকুন। ১০ মিনিট পরে কড়াই চুলার উপর থেকে নামিয়ে ফেলুন। ব্যাস হয়ে গেলো আপনার পছন্দের সুস্বাদু মোরগ মোসাল্লাম।

এবার আপনার পছন্দমত টমেটো, পেস্তা বাদাম কুচি, শশার টুকরো, ধনেপাতা ও পেয়াজ গোল করে কেটে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

 

জিভে জল আনা সরষে ইলিশ’র রেসিপি

বাংলাদেশের মানুষ আর ইলিশ মাছ খাবেন না এটা তো হতে পারেনা। সেই দূর দূরান্তের দেশ থেকেও বাংলার ইলিশ খাওয়ার জন্য লোকজন চলে আসে এদেশে। আর সেই ইলিশ যদি হয় সরষে দিয়ে ভাজা, তাহলে তো কথাই নেই। আমারতো এখনই জিভে পানি চলে আসলো। চলুন দেখে নেই সরষে ইলিশ কিভাবে রান্না করতে হয়।

সরষে ইলিশ উপকরণ

  • ইলিশ মাছ ৮ পিস
  • সরিষার তেল পরিমাণমত
  • পেঁয়াজ বাটা – ৩ টেবিল চামচ
  • সরষে বাটা – ২ টেবিল চামচ
  • হলুদ গুঁড়া – আধা চা চামচ
  • মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ
  • কাঁচা মরিচ – ৩/৪ টা
  • লবণ স্বাদমত

প্রণালী

ইলিশ মাছ ভালো করে ধুয়ে লবণ-হলুদ মেখে তেলে ভেজে নিন। মাছ ভাজা হলে নামিয়ে রাখুন। অন্য একটি কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ বাটা, সরষে বাটা, লবণ, মরিচ-হলুদ গুঁড়া দিয়ে কষাতে থাকুন। কষানো হলে পরিমাণমত পানি দিন। পানি ফুটে উঠলে মাছ ঢেলে দিন।কাঁচা মরিচ দিন। ঝোল ঘন হয়ে এলে নামিয়ে নিন। তৈরি হয়ে গেল সবার প্রিয় সরষে ইলিশ।

 

যে খাবার নারীদের প্রতিদিন খাওয়া উচিত

নারীরা সব সময় ঘরের সবার খেয়াল রাখেন। শুধু রাখেন না নিজেদের খেয়াল। তাদের শরীরের জন্য প্রতিদিনই পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন।

নারীদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যে সব খাবার রাখা উচিত—

রসুন

এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-বি৬, সি, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম আছে। রসুন উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সারের মতো রোগে বাধা সৃষ্টি করে। হাড় মজবুতে বেশ কার্যকর। কাজেই প্রতিদিন খাবারে এক কোয়া হলেও রসুন রাখা উচিত।

আদা

আদা শরীরের ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি বুক জ্বালা রোধ করে এবং ঠাণ্ডা ও ফ্লু দূরে রাখে। রসুন প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। কোলন ক্যান্সার দূরে রাখে।

দধি

শরীরে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি’র অভাব পূরণ করে দধি। হাড় ও দাঁত শক্ত করে। রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং পরিপাক ক্রিয়া ঠিক রাখে।

কমলা লেবু

কমলা লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি আছে। যা শরীরে সংক্রমণের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। এটি চোখকে রক্ষা করে। ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে।

আমলকি

আমলকি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন-সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে। চুল বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকর আমলকি। এটি কোলেস্টেরল হ্রাস করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। রক্তচাপ ঠিক রাখে।

মটরশুটি

হার্টের বন্ধু হচ্ছে মটরশুটি। এতে কম ফ্যাট এবং উচ্চমাত্রায় ফাইবার আছে। প্রোটিন পাওয়ার ভালো উৎস হচ্ছে মটরশুটি। রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক রাখে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে।

মিষ্টি আলু

মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, ই ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে। শরীরে দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন রোগ হ্রাস করে। এটি হার্ট ও শরীরের ভালো বন্ধু। কাজেই বেশি করে মিষ্টি আলু খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।

পালং শাক

পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ আছে। কাজেই প্রতিদিনের খাবারে পালং শাক রাখা উচিত।

 

জাকার্তায় সেরা বাংলাদেশি নারী নির্মাতা

এসিড সন্ত্রাসবিরোধী ‘ফাইট এসিড ভায়োলেন্স’ নির্মাণ করে সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার পেল বাংলাদেশি নারী নির্মাতা শাহিদা আখতার। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় নারী, সামাজিক বিষয় ও শূন্য বৈষম্যের ওপর আয়োজিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এ সম্মান পেয়েছেন তিনি।

সেরা পরিচালক হিসেবে শাহিদা পেয়েছেন প্লাটিনাম অ্যাওয়ার্ড। বাংলাদেশি এই নারী নির্মাতা জিতেছেন অনুষ্ঠানের সর্বোচ্চ সম্মান ও পুরস্কার। ফিল্মমেকার অব ইন্সপিরেশন হিসেবে বিশেষ পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও শূন্য বৈষম্য দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ, রেডিও রিপাবলিক ইন্দোনেশিয়া ও জাকার্তার ফিল্মফ্রিওয়ের সহযোগিতায় এ পুরস্কার বিতরণীর আয়োজন করেছে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অ্যালিয়েন্স। গত ৩ মার্চ শুরু হওয়া এ উৎসব চলবে ২৮ মার্চ পর্যন্ত।

উৎসবটির মূল লক্ষ্য হলো জাতিসংঘের শান্তি ও মানবাধিকার প্রকল্পের প্রচারণায় সহযোগিতার পাশাপাশি নারীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করতে সারাবিশ্বের নির্মাতাদের সহায়তা প্রদান ও উদ্বুদ্ধ করা।

এ উৎসবে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ‍যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালি, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, মিসর, আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর ও ভারতের নির্মাতা, পরিচালক, প্রযোজক, অভিনয়শিল্পী ও সংগীতশিল্পীরা।

 

জয়া আলোকিত নারী সম্মাননা পেলেন যারা

জয়া আলোকিত নারী-২০১৬ সম্মাননা প্রদান করেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাদের হাতে সম্মাননা পদক তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমের আসন তখন কানায় কানায় পূর্ণ। তারকাঠাসা আসন আর মনোমুগ্ধকর গান-নাচের পরিবেশনা। করতালির মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় দেশের খ্যাতনামা আট নারীকে।

চতুর্থ বারের মতো এ সম্মাননা প্রদান করেছে আরটিভি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এবার আটজন আলোকিত নারীকে সম্মাননা দেওয়া হয়। তারা হলেন— শিক্ষায় জাতীয় অধ্যাপক ড. সুফিয়া আহমেদ, সঙ্গীতে রুনা লায়লা, ভাষা আন্দোলনে ভাষাসৈনিক রওশান আরা বাচ্চু, অভিনয়ে (চলচ্চিত্র) কোহিনূর আখতার সুচন্দা, সাহিত্যে নাসরিন জাহান, নারী উদ্যোক্তায়, গোলাপ বানু, ক্রীড়া, মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ও মাহফুজা খাতুন শীলা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও সিপিএ’র নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন— আরটিভির চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক রহমান, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক সংসদ সদস্য কবরী সারোয়ার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, কবি আসাদ চৌধুরী, গাজী মাযহারুল আনোয়ার, সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব আজাদ রহমান, জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন কনকচাঁপা ও কণা, বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত আট উপন্যাস নিয়ে নির্মিত চলচিত্রের আট নারীকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ র‌্যাম্প শো। র‌্যাম্প শোটির কোরিওগ্রাফি ও নির্দেশনা দেন বুলবুল টুম্পা। ইভান শাহরিয়ার সোহাগের নির্দেশনায় লায়লা হাসান, অপি করিম ও রিচি সোলায়মান নৃত্য পরিবেশন করেন।

চিত্রনায়ক ফেরদৌসের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেছেন সোহেল রানা বিদ্যুত।

 

কোম্পানির পর্ষদে নারী : এশিয়ার শীর্ষে বাংলাদেশ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে নারীদের অংশগ্রহণের দিক থেকে এশিয়ার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কানাডা, রাশিয়ার মতো উন্নত দেশ থেকেও এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মঙ্গলবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। ‘রিং দি বেল ফর জেন্ডার একুয়ালিরি’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৬ উপলক্ষে।

এতে জানানো হয়, বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদের ১৭ শতাংশ সদস্যই নারী। যেখানে যুক্তরাজ্যে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে নারীর অংশগ্রহণ ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্রে নারীর অংশগ্রহণ ১২ দশমিক ২ শতাংশ।

অপরদিকে, এশিয়ার প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে ভারতে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে নারী সদস্যের হার ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, জাপানে মাত্র ২ দশমিক ৪ শতাংশ, চীনে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, হংকংয়ে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়াতে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, কোরিয়াতে মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ।

এ ছাড়া কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে সিঙ্গাপুরে ৯ শতাংশ, ফিলিপাইনে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়াতে ১৫ দশমিক ১ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, কানাডাতে ১৩ দশমিক ১ শতাংশ, আর্জেন্টিনাতে ৮ শতাংশ, ব্রাজিলে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, মেক্সিকোতে ৬ দশমিক ২ শতাংশ সদস্য নারী।

কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে নারীদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের থেকে বেশি এমন দেশের তালিকায় আছে ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নরওয়ে, সাউথ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস ও সুইডেন।

এর মধ্যে ডেনমার্কে ২১ দশমিক ৮ শতাংশ, ফিনল্যান্ডে ২২ দশমিক ১ শতাংশ, ফ্রান্সে ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ, জার্মানিতে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ, ইতালিতে ২২ দশমিক ৩ শতাংশ, নরওয়েতে ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ, সাউথ আফ্রিকাতে সাড়ে ১৭ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সুইডেনে ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ পরিচালনা পর্ষদ সদস্য নারী।

এদিকে, বাংলাদেশে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে নারীদের সংখ্যা সব থেকে বেশি ওষুধ ও রাসায়নিক খাতের কোম্পানিতে। এ খাতের কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ সদস্যের ২৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ নারী।

এ ছাড়া পরিচালনা পর্ষদে ২০ শতাংশের উপরে নারীরা রয়েছেন এমন খাতগুলোর মধ্যে টেক্সটাইলে ২৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ, চামড়ায় ২১ দশমিক ২১ শতাংশ, সেবা ও আবাসনে ২৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ, পাটে ২০ শতাংশ এবং বীমাতে ২২ দশমিক ১৪ শতাংশ।

বাকি খাতগুলোর মধ্যে ভ্রমণ খাতে ১২ শতাংশ, টেলিযোগাযোগে ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ, পেপার ও প্রিন্টিংয়ে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ, আইটিতে ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ, খাদ্যে ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ১৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ, সিরামিকে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ, সিমেন্টে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ব্যাংকে ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং বিবিধ খাতে ১৫ দশমিক ৩১ শতাংশ পরিচালনা পর্ষদ সদস্য নারী।

ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বপনকুমার বালার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক রুকসানা চৌধুরী, ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু, ডিএসইর খুজেস্তা নূর এ নাহারীন প্রমুখ।

বক্তরা বলেন, দেশে নারীরা অনেক এগিয়ে গেছেন। কিন্তু এখনো কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে পুরুষদের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ অনেক কম। তাই বিএসইসি, ডিএসই, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কোম্পানিগুলোকে পরিচালনা পর্ষদে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য চিঠি দেওয়া হবে।

 

এগ স্যালাড স্যান্ডউইচ

উপকরণ
ডিম- ২ টি (ভাল করে সিদ্ধ করে কুচি কুচি করে কাটা)
গাজর – ১/২ কাপ (সিদ্ধ করে লম্বা করে কাটা)
সেলারি – ১/২ কাপ (কুচনো)
মেয়োনিজ – ৩ টেবিল চামচ
মাস্টার্ড সস – ১/২ চা চামচ
গোলমরিচ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
পাউরুটি – ৪টি
লেটুস – ৪টি পাতা

প্রণালি
প্রমে একটি বাটিতে ডিম, গাজর, সেলারি,
মেয়োনিজ, মাস্টার্ড ও লবণ-মরিচ দিয়ে ভাল করে
মেখে নিন। ভাল করে চামচের সাহায্যে মিশিয়ে নিন।
ডিমটা ঘেটে গেলে ক্ষতি নেই। এবার পাউরুটির
একটা স্লাইসের উপর লেটুস পাতা রেখে ২ চামচ এই
স্পেডটা লাগিয়ে নিন। এবার অন্য একটি পাউরুটি
দিয়ে উপর থেকে ঢেকে পরিবেশন করুন।

 

ঘরে আনুন সবুজের ছোঁয়া

আপনার গৃহ সজ্জায় ইনডোর প্ল্যান্ট হতে পারে একটি অতি প্রিয় ও প্রয়োজনীয় উপাদান। সুন্দর টবে সবুজ কয়েকটি গাছ শুধু আপনার ঘরের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করবে না, পারিপার্শ্বিকতায় আনবে সতেজতা।কিন্তু বাড়িতে শুধু গাছ রাখলেই হবেনা, তার সঠিক যতড়ব ও সাজিয়ে রাখার কৌশলগুলোও রপ্ত
করতে হবে।

 ঘরের ভেতর বা বারান্দায় এমন জায়গায় ইনডোর প্ল্যান্ট রাখতে হবে যেন খুব বেশি কড়া আলো না পড়ে আবার খুব অন্ধকারেও না থাকে। জানালার কাছে, অথবা বারান্দায় গাছ রাখুন।

 সপ্তাহে অন্তত একদিন সব গাছ রোদে দিন। দুপুরের কড়া রোদে গাছ রাখবেন না। সকালের হালকা রোদে গাছ কিছুক্ষণ বাইরে রাখার চেষ্টা করুন।

 গাছে ঘনঘন পানি দেয়ার প্রয়োজন নেই। এতে গাছ পচে যেতে পারে এবং গাছ দুর্বল
হয়ে পড়বে।
 ইনডোর প্ল্যান্ট বেশি বড় করবেন না। এতে ঘর অন্ধকার লাগবে। তাই গাছের বাড়তি ডালপালা ছেঁটে
ফেলুন।

 গাছে ঘন ঘন পানি দেয়ার প্রয়োজন নেই। অতিরিক্ত পানি দিলে গাছ পচে যেতে পারে। কিন্তু তাই
বলে একেবারে পানি দেয়া বন্ধ করবেন না। তাহলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়বে। সকাল-বিকাল অল্প করে পানি দিন।

 ইনডোর পা›ট এসি বা এয়ারকুলারের খুব সামনে রাখা উচিত নয়। এতে গাছ খুব তাড়াতাড়ি
শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 সপ্তাহে একবার গাছে পোকামাকড়ের ওষুধ দিন।

 রাতে গাছ কার্বন-ডাই অক্সাইড ছাড়ে বলে সম্ভব হলে রাতে ঘরের বাইরে গাছগুলো রেখে দিন এবং
সকালে আবার ঘরে নিয়ে আসুন। আর যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে জানালা খোলা রাখুন।

 গাছের পাতায় বেশি ধুলো জমলে জোরে ঘষবেন না, নরম কাপড়ে অল্প পানি দিয়ে পরিষ্কার
করুন। অথবা স্প্রে করে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন। পাতার নিচের অংশও পরিষ্কার করুন।

 ইনডোর পা›ট রাখার জন্য আমরা অনেকেই শখ করে ডেকোরেটিভ পট ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু
খেয়াল রাখতে হবে যখনই দেখবেন শিকড় ড্রেনেজ হোলের কাছে পৌঁছে গেছে তখনই নতুন পটে গাছ
সরিয়ে রাখুন।

 পানি দেয়ার সময় খেয়াল রাখুন যেন বাড়তি পানি গড়িয়ে পড়ে। এতে আপনার ঘর অপরিষ্কার হয়ে
যাবে। তাই একদিন পরপর অল্প করে পানি দিন।

 টব বদলানোর সময় খেয়াল রাখুন শিকড় যাতে ভেঙে না যায়।

 গাছের পাতার রঙ হালকা হতে থাকলে ঠাণ্ডা ও আলো কম পৌঁছায় এমন জায়গায় গাছ রাখতে হবে।

 টবের মাটি মাঝে মাঝে ওলট-পালট করে দেয়া ভালো। এতে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে।

 শুধু গাছের গোড়ায় পানি দিলেই হবে না। গাছের পাতায় সপ্তাহে ৩ দিন পানি স্প্রে করতে হবে।

 কিছু গাছের জন্য খুব অল্প পানির প্রয়োজন পড়ে। যেমন- জেড প ্যান্ট, ক্যাক্টাস, এ্যারেইকা পাম। এগুলোতে সপ্তাহে ২ বার অল্প পরিমাণে পানি দিলেই হয়।

 খুব ছোট ক্যাক্টাস থাকলে গোড়ায় পানি না ঢেলে সপ্তাহে ১ দিন পানি স্প্রে করে দিলেই হবে।

 নতুন নতুন যারা ইনডোর প্যান্ট লাগানোরচিন্তা করছেন তাদের জন্য মানিপ্যান্ট, স্পাইডার প্যান্ট আর ইংলিশ আইভি সবচেয়ে উপযোগী। কারণ এগুলো সহজেই বেড়ে ওঠে।

 

সহস্রাব্দের নারীবাদ

‘ফেমিনিজম’ বা ‘নারীবাদ’ নিয়ে ভুল ধারণা বিদ্যমান রয়েছে সারা বিশ্বের প্রায় সবদেশেই।এমনকি এই ২০১৬ সালে এসেও ‘নারীবাদ’কে বেশ নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন স্বয়ং নারীরাও। অনেকে আবার ব্যঙ্গ করে বলেন
বর্তমানের নারীবাদে আসলে নারীকেই বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে! মূলতঃ নারীবাদ বিষয়টি নিয়ে সঠিক জ্ঞানের
অভাবই এসব নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিয়েছে। নারীদের অধিকার আদায়, সমতা অর্জন এবং সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংগঠিত বিভিনড়ব মতবাদ ও আন্দোলনই হলো ফেমিনিজম, যার বাংলা শব্দটি হলো নারীবাদ। এবং বলা হয়ে থাকে, এসব ‘কজ’ (পধঁংব)
বা অধিকারের যেকোন একটি যদি কোনো ব্যক্তি সমর্থন করে থাকেন তবে তিনি নিজেকে নারীবাদী বলুন আর
না-ই বলুন, সংজ্ঞানুযায়ী তিনি একজন ‘নারীবাদী’। এবং এসব কোনো একটি অধিকার আদায়ের জন্য সংঘটিত
আন্দোলনগুলোও নিজস্ব কর্মীদের দ্বারা নারীবাদী আন্দোলন বলে অ্যাখ্যায়িত নাহলেও সেগুলো আসলে
নারীবাদী আন্দোলন, বা সংক্ষেপে নারী আন্দোলন। এখানে অধিকার আদায় এবং অংশগ্রহণ বলতে
ভোটাধিকার, রাজনীতি, ব্যবসা, শিক্ষা, কাজের ক্ষেত্রে সমান পারিশ্রমিক, সম্পত্তির অধিকার, শিক্ষার অধিকার,
বিবাহে সমানাধিকার, মাতৃত্ব, অবসর, প্রজনন-সংμান্ত অধিকার (গর্ভনিরোধক ব্যবহার ও গর্ভপাতের অধিকার), ভাষার লিঙ্গ নিরপেক্ষতা, পক্ষপাতহীন বেতন-কাঠামো এবং বিভিনড়ব ক্ষেত্রে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার অধিকার প্রভৃতির স্বীকৃতি প্রদান তথা নারীর সার্বিক ক্ষমতায়নকে বোঝায়।
এসব অধিকার আদায়ের যেকোনো ধরনের আন্দোলনই
নারীবাদের অন্তর্ভূক্ত।
‘নারীবাদ’ ধারণাটি মোটেও নতুন নয়, বরং এর রয়েছে অন্তত ১৩০ বছরের প্রত্যক্ষ ইতিহাস। সভ্যতার ইতিহাসে প্রায় প্রতিটি সামাজিক পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে লিঙ্গবৈষম্য নিরসনকারী নারীবাদী আন্দোলনগুলো রয়েছে। বিভিনড়ব মতবাদ অনুযায়ী নারীবাদী হতে পারেন যেকোন লিঙ্গের। এমনকি ‘নারীবাদ’ শব্দটি প্রম যিনি ব্যবহার করেন এবং এই মতবাদের সূত্রপাত ঘটান, তিনি নিজেও একজন পুরুষ। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি দার্শনিক চার্লস ফুরেয়ার প্রম নারীবাদ শব্দটির আনুষ্ঠানিক ব্যবহার করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। নারীবাদ” (ভবসরহরংস) সহস্রাব্দের নারীবাদ এবং নারীবাদী” (ভবসরহরংঃ) শব্দ দুটি ফ্রান্স ও
নেদারল্যান্ডসে প্রম প্রকাশিত হয় ১৮৭২ সালে, যুক্তরাজ্যে ১৮৯০ সালে, এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১০ সালে। অক্সফোর্ড
ইংরেজি অভিধান অনুযায়ী, নারীবাদী” শব্দের উৎপত্তিকাল ১৮৫২ এবং নারীবাদ” শব্দের ক্ষেত্রে তা ১৮৯৫।
সময়কাল, সংস্কৃতি ও দেশভেদে বিশ্বের বিভিনড়ব প্রান্তের নারীবাদীরা বিভিনড়ব কর্মসূচী ও লক্ষ্য পূরণের জন্য কাজ করেছেন। তবে পাশ্চাত্য নারীবাদী আন্দোলনের ইতিহাস তিনটি প্রবাহ”-এ বিভক্ত। নির্দিষ্ট কিছু নারীবাদী লক্ষ্যের এক একটি আঙ্গিক নিয়ে এক একটি প্রবাহ কাজ করেছে। প্রম প্রবাহটি ছিল ঊনবিংশ শতক ও বিংশ শতকের প্রম ভাগে। এ সময় নারীর ভোটাধিকার অর্জনের উপর জোর দেওয়া হয়, এবং নারীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গুরুত্বটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এ শিক্ষার অধিকার অনেকটাই শুধু সমাজের ঊঁচু শ্রেণীর নারী সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
দ্বিতীয় প্রবাহ শুরু হয় ১৯৬০’র দশকে। এই সময়ে নারীর সামাজিক এবং কর্মক্ষেত্রে আইনগত সাম্য প্রতিষ্ঠার
ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়। তবে পুরুষতান্ত্রিকতার মূল কারণ হিসেবে শুধু মাতৃত্ব ও যৌনতায় পুরুষের নিয়ন্ত্রণকে দায়ী করার হয় এসময়ের কিছু ত্বত্ত্বে। ফলে নারীবাদের ধারণাকে এভাবে সীমিত করে ফেলায় সমালোচনার
মুখে পড়ে সেই সময়ের নারীবাদ। এছাড়া যৌনতার সঙ্গী হিসেবে পুরুষদের প্রয়োজন শেষ করার অংশ হিসেবে
সমলিঙ্গ সম্পর্কগুলো ব্যাপক হারে আত্মপ্রকাশ করে, এবং এতে সমকামীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনেরও
সূত্রপাত ঘটে। একইসঙ্গে সামনে চলে আসে তৃতীয় লিঙ্গদের সামাজিক অধিকারের বিষয়গুলোও।
তৃতীয় প্রবাহ মূলতঃ দ্বিতীয় প্রবাহের প্রতিμিয়া স্বরূপ ১৯৯০ এর দশক থেকে শুরু হয়। তবে এটি একটি
ভিনড়বমুখী ধারাবাহিকতা। এই পর্যায়ে প্রাগত লিঙ্গ নির্ভর সামাজিক মূল্যবোধ গুলোর পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যান নারীবাদীরা। নারীদের সাজসজ্জার বিষয়টিকে দ্বিতীয় প্রবাহে পুরুষতান্ত্রিকতার বাহক হিসাবে ধরা হতো।
তবে সাজসজ্জাসহ নারীদের সব ধরনের নারীসুলভ আচরণ নিয়েও একজন নারী যে কোনো পেশাতেই পুরুষের
সমান কর্মদক্ষ হতে পারে- এটাই ছিল তৃতীয় প্রবাহের মূল ভাবনা। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গদের অধিকার আন্দোলনও
আরো শক্তিশালী হয় এসময়। বর্ণবাদের শিকার কৃষ্ণাঙ্গ, বাদামি’, ‘হলুদ’ জাতিসমূহসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর
নারীদের অধিকার যে একজন শ্বেতাঙ্গ নারীর অধিকারের সমতুল্য, তা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেরও সূত্রপাত ঘটে। বলা হচ্ছে, নারীবাদের চর্তু প্রবাহ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে, এবং এই প্রবাহের মূল আন্দোলনটি অনেকটাই
ইন্টারনেট ও গণমাধ্যমভিত্তিক। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই সব শ্রেণীর সব বয়সের মানুষের কাছে ছড়িয়ে
পড়া ডিজিটাল গণমাধ্যমে নারীদের যেভাবে চিত্রিত করা হচ্ছে তা পুরুষতান্ত্রিকতার বাহক কি না তা অনুসন্ধান
করা, এবং এই ডিজিটাল গণমাধ্যম ব্যবহার করেই নারী আন্দোলন এবং এর মূল ভাবনাগুলো সব স্তরের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়াই হবে বর্তমান প্রবাহের মূল লক্ষ্য।

 

ট্রেন চালনায় নারী : ওঁরা ১৫ জন

কেউ তাঁদের দেখে বিস্মিত হন। কেউ মুগ্ধ। কারও কারও তো আবার প্রশ্নের শেষ নেই। কেউ কেউ জানতে চান, ‘এত সাহস হলো কী করে আপনাদের?’
তাঁরা সবাই ট্রেনের সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) বা সহকারী ট্রেনচালক। এই দেশে যখন নারীদের নানা বাধাবিপত্তিতে পড়তে হয়, তখন তাঁরা সাহসের সঙ্গে ছুটে বেড়ান রেলগাড়ি চালিয়ে। ফলে সাধারণ মানুষদের অবাক হওয়ারই কথা।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেল, বর্তমানে রেলওয়েতে ট্রেন চালনায় ১৫ জন নারী আছেন। এর মধ্যে সালমা খাতুন বাংলাদেশের প্রথম নারী ট্রেনচালক। তিনি এখন ঢাকায় লোকোমাস্টার। বাকিরা এখনো সহকারী লোকোমাস্টার।
প্রতিটি ট্রেনে একজন মূল চালকের সঙ্গে এএলএম থাকেন। এএলএম থেকে লোকোমাস্টার বা পূর্ণাঙ্গ চালক হতে সময় লাগে কমপক্ষে ১০-১২ বছর। কেবল ট্রেন চালনাই নয়, তাঁদের ট্রেনের ইঞ্জিনের যান্ত্রিক ও তড়িৎ (মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল) দিকগুলো শিখতে হয়। জানতে হয় সিগন্যালব্যবস্থা থেকে শুরু করে ইঞ্জিনের রক্ষণাবেক্ষণসহ ছোটখাটো মেরামতের কাজও।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরুষের পাশাপাশি সব ধরনের কাজ শিখলেও এখনো দূরের রাস্তায় নানা কারণেই আমরা মেয়েদের পাঠাতে পারছি না। অথচ তাঁরা সেটিও পারবেন। মেয়েদের যেমন এই পেশার চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে, তেমনি সমাজের সবাইকেও ইতিবাচক মনোভব পোষণ করতে হবে।’
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে চারজন এএলএম আছেন লালমনিরহাটে। তাঁরা হলেন আফরোজা বেগম, ফরিদা আক্তার, নাছরিন আক্তার ও মুনিফা আক্তার। চট্টগ্রামে আছেন ছয়জন—সালমা বেগম, খুরশিদা আক্তার, উম্মে সালমা সিদ্দীকা, কুলসুম আক্তার, রেহানা আবেদিন ও কোহিনুর আক্তার। কৃষ্ণা সরকার আছেন পাবনার ঈশ্বরদীতে। তাঁরা সবাই যোগ দিয়েছিলেন ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে। আর ২০১৪ সালে বেবি ইয়াসমিন, ছিপি খাতুন ও এ্যানি যোগ দিয়েছেন রেলওয়েতে। তাঁরা রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে কাজ করছেন। প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, তাঁরা এই পেশাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। এঁদের কয়েকজনের কথা থাকছে এই প্রতিবেদনে।
পথ দেখিয়েছেন সালমা
ট্রেনচালক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথম সহকারী লোকোমাস্টার পদে যোগ দেন টাঙ্গাইলের সালমা খাতুন। এখন তিনি সাব-লোকোমাস্টার। কিছুদিনের মধ্যেই লোকোমাস্টার হয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চালাবেন সালমা। চ্যালেঞ্জিং পেশায় কাজ করার আগ্রহ তাঁর ছোটবেলা থেকেই। প্রিয় খেলনা ছিল ট্রেন, সেই থেকেই ট্রেনের প্রতি ভালোবাসা।
সালমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথাগত পেশার বাইরে কিছু করার স্বপ্ন ছিল। তবে কাজটি সহজ নয়। রেলওয়েতে বাবার চাকরির সুবাদে এ পেশা সম্পর্কে আমি আগে থেকেই জানতাম। আমি আমার কাজটাকে ভালোবাসি। ভালো লাগে এই কারণে যে আজ আরও অনেক মেয়ে আসছেন। যত বেশি মেয়ে এ পেশায় আসবেন, তত তাড়াতাড়ি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাবে।’ প্রথম নারী চালক হিসেবে কেমন লাগে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন কমলাপুরে কাজ করছি। কোনো ট্রেন এলে ইঞ্জিন খুলে সেটি চালিয়ে আরেকটাতে লাগাই। লোকজন তখন বিস্ময় নিয়ে দেখে। অনেক পুরুষ তাঁদের স্ত্রীদের দেখান। তবে এ কাজটা কিন্তু চ্যালেঞ্জের। আমি সেই চ্যালেঞ্জটাই উপভোগ করি।’
প্রশ্নের শেষ নেই
নরসিংদীর মেয়ে সালমা বেগম ছোটবেলা থেকেই সাহসী। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে যোগ দেন এএলএম হিসেবে। তবে এখনো লেখপাড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম কলেজে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন। প্রায়ই ডেমু ট্রেন নিয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সালমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সপ্তাহে চার দিন, মাঝেমধ্যে পুরো সপ্তাহই বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেমু নিয়ে যাই। আমাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের প্রশ্নের শেষ নেই। তাঁরা জানতে চান মেয়ে হয়েও এত সাহস পাই কী করে?’ কী করে আসলে সাহস পান জানতে চাইলে সালমা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমি একটু সাহসী। অন্য ভাইবোন কিংবা কাজিনরা যেটা করতে সাহস পেত না, আমি সেটা করতে পারতাম।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে ভালো লাগে
ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে গণিতে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে এএলএম হয়েছেন চাঁদপুরের মেয়ে কুলসুম আক্তার। তাঁরও চ্যালেঞ্জিং পেশা বেছে নেওয়ার ইচ্ছা ছিল। তবে রেলওয়েতে যোগ দেবেন এমনটা ভাবেননি। তিনি বলেন, ‘নানা জায়গায় চাকরির আবেদন করেছিলাম। এখানে হয়ে গেল। মনের মতো কাজ পেলাম।’
পারিবারিকভাবে বিয়ে করেছেন রেলেরই এএলএম গোলাম মোস্তফাকে। দেড় বছরের একটি মেয়ে আছে তাঁদের। ডেমু ট্রেন নিয়ে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে মাঝেমধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। এত শিক্ষার্থী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে খুব ভালো লাগে তাঁর।
ছোট মেয়ের বড় দায়িত্ব
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বাড়ি নাছরিন আক্তারের। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট্ট এই মেয়েটি এখন রেলের সহকারী চালক। ডিগ্রি পাস করে তিনি এই কাজে যোগ দিয়েছেন। নাছরিন বলেন, ‘ট্রেনে থাকার খুব বেশি সুযোগ পাই না। বেশির ভাগ কাজ অফিসেই। তবে নতুন যে ডেমু ট্রেন আসছে, সেটার সহকারী চালক হিসেবে কয়েকবার লালমনিরহাট থেকে পার্বতীপুর গিয়েছি। আমার পাঁচ বছরের মেয়েটাকেও কয়েকবার আমার সঙ্গে নিয়েছি। ও খুব উপভোগ করে।’
মানুষের অনেক আগ্রহ
কুমিল্লার মেয়ে রেহানা আবেদিনের বেড়ে ওঠা ট্রেনের সঙ্গেই। নানা ছিলেন রেলের লোকোমাস্টার। বাবাও রেলের কর্মকর্তা। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে নিজেও চলে এলেন রেলে। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরেও বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করেছেন। মাঝেমধ্যেই ট্রেনে সহকারী চালক হিসেবে থাকেন। কেমন লাগে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের নিয়ে মানুষের অনেক আগ্রহ।’
মনে হলো আমিও পারব
নড়াইলের লোহাগড়ার মেয়ে কৃষ্ণা সরকার। তিন ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। যশোর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করে তিনি এসেছেন এই পেশায়। এখন কাজ করছেন পাবনার ঈশ্বরদীর লোকোশেডে। স্নাতকোত্তর নিয়েও কেন এই পেশায় এলেন? কৃষ্ণা বলেন, ‘আমি আসলে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখার আগে এ সম্পর্কে জানতাম না। কিন্তু খবরের কাগজে পড়েছিলাম সালমা আপার কথা। মনে হলো আমিও পারব। আমি মনে করি শিক্ষিত লোকজন এই পেশায় এলে মানুষের শ্রদ্ধা আরও বাড়বে।’
ছোটবেলার বড় ট্রেন এখন আর বড় নয়
চট্টগ্রামের মেয়ে উম্মে সালমা সিদ্দিকী স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। এ বছর স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দেবেন। তাঁর বাসা ষোলশহরের রেলস্টেশনের খুব কাছেই। বললেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ট্রেন দেখছি। তখন অনেক বড় মনে হতো একেকটা ট্রেনকে। এখন যখন ট্রেনের সহকারী চালক হিসেবে থাকি, তখন আর এত বড় মনে হয় না।’
লোকজনের বিস্ময় উপভোগ করি
আফরোজারা চার বোন। রেলওয়েতেই ছিলেন, ২০১১ সালে পরীক্ষা দিয়ে এএলএম হয়েছেন আফরোজা। বিভাগীয় পরীক্ষার্থী হিসেবে এই পদে আসা একমাত্র নারী তিনিই। বাড়ি লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগরে। প্রশিক্ষণ শেষে লালমনিরহাট থেকে পার্বতীপুর তিনি ট্রেন চালাতেন। এখন লালমনিরহাটেই আছেন। তিনি বলেন, ‘অনেকে চালকের স্থানে একজন নারীকে দেখে বিস্মিত হন। এই বিস্ময় উপভোগ করি। অনেক স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা জানতে চায় কাজটা কেমন? আমিও উৎসাহ দিই।’ আফরোজার স্বামীও ট্রেনচালক। তবে স্বামী-স্ত্রী এখনো একসঙ্গে কোনো ট্রেন চালাননি বলে হাসিমুখে জানান আফরোজা।
একটুও ভয় লাগে না
২০১২ সালে যে ৫৩ জন এএলএম যোগ দেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র একজন নারী ফরিদা আক্তার। প্রশ্ন করেছিলাম এত বড় ট্রেন চালাতে ভয় লাগে না? বগুড়ার এই মেয়েটি জানান, একটুও না। 

 

মায়ের মর্যাদা, মাতৃত্বের মর্যাদা

পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর শব্দটি হচ্ছে মা। কবির ভাষায়, ‘যেখানে দেখি যাহা, মা-এর মতন আহা, একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই।’ জগৎ-সংসারের শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে যে মানুষটির একটু সান্ত্বনা আর স্নেহ-ভালোবাসা আমাদের সব বেদনা দূর করে দেয়, তিনিই হলেন মা। মায়ের চেয়ে আপনজন পৃথিবীতে আর কেউ নেই। দুঃখে-কষ্টে, বিপদে-সংকটে যে মানুষটি স্নেহের পরশ বিছিয়ে দেন, তিনি হচ্ছেন আমাদের সবচেয়ে আপনজন—মা। প্রতিটি মানুষের পৃথিবীতে আসা ও বেড়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা একমাত্র মায়ের। মায়ের তুলনা অন্য কারো সঙ্গে চলে না।
শান্তির ও মানবতার ধর্ম ইসলাম মা-কে দিয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান। ইসলামের দৃষ্টিতে বাবার চেয়ে মায়ের মর্যাদা তিন গুণ বেশি। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে জানতে চান, ‘হে আল্লাহর রাসুল! মানুষের মধ্যে আমার কাছে সর্বোত্তম সেবা লাভের অধিকার কার?’ নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমার মায়ের।’ লোকটি পুনরায় জানতে চান, ‘তারপর কার?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ লোকটি পুনরায় জানতে চান, ‘তারপর কার?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ লোকটি আবারও জানতে চান, ‘তারপর কার?’ তিনি বললেন, ‘তোমার পিতার।’ (বুখারি ও মুসলিম)
উপমহাদেশের প্রখ্যাত কবি আল্লামা ইকবাল। তাঁর চিন্তা-চেতনায় ইসলামী ভাবধারা ফুটে উঠেছে। নারীত্ব ও মাতৃত্ব সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন চির স্মরণীয়। নারী অধিকার আন্দোলনের চারণভূমি ইউরোপে তিনি পড়াশোনা করেছেন। কাজেই নারী সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার দাবি রাখে। আল্লামা ইকবাল মনে করেন, নারী যদি প্রজ্ঞা-পাণ্ডিত্যে প্রাগ্রসর না-ও হতে পারে, মানবতার কল্যাণে কোনো কাজ না-ও করতে পারে, তবুও নারী ‘মা’ হওয়ার কারণে শ্রদ্ধার পাত্র, সম্মান পাওয়ার যোগ্য। পৃথিবীর এমন কোনো মানুষ নেই, যার ওপর নারীর অনুগ্রহ নেই, মায়ের করুণা নেই।
মরহুম ইকবাল মনে করেন, নারীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো আদর্শ মা হওয়া। মাতৃত্বের মাধ্যমে নারীত্ব পূর্ণতা লাভ করে। ইকবাল মনে করেন, মায়েরা হলেন পৃথিবীর ভিত্তিস্বরূপ। তাঁরা ‘মা’ না হলে বংশ বাড়বে না। সমাজ চলবে না। পৃথিবী থমকে যাবে। শত কোলাহল-উত্তাপ থেমে যাবে। সভ্যতার বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। তাই মায়েরা হলেন পবিত্র আমানত, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ইকবাল বলেছেন, ‘জগতের ভিত হলো মায়ের জাতি/দুনিয়ায় তারা আমানত-শ্রেষ্ঠ সম্পত্তি।’
ইকবাল মনে করেন, মাতৃত্বের প্রেরণা যদি নারীর মধ্যে অবিচল থাকে; তাতে সন্তানের কল্যাণ, পরিবারের কল্যাণ, পৃথিবীর কল্যাণ। যে সমাজে নারীরা মা হতে চায় না, মাতৃত্বের মর্যাদা দেওয়া হয় না, সে সমাজে শান্তি থাকে না। সুখ থাকে না। ঐক্য থাকে না। ছোট-বড়র পার্থক্য থাকে না। সুখের শেষ আশ্রয়স্থল পরিবার হয়ে ওঠে সাক্ষাৎ নরক। যে সমাজ মা হতে উৎসাহিত করে না, মাতৃকুলের মর্যাদা রক্ষা করে না, সে সমাজে নারী ভোগের পণ্য, জৈবিক চাহিদা পূরণের উপকরণ। যৌবন ফুরিয়ে গেলে, জৌলুস হারিয়ে গেলে নারী অর্থহীন, বিত্তহীন, মূল্যহীন। নীরবে-নিভৃতে তার সময় কাটে। অনাহারে-অর্ধাহারে তার দিন কাটে। কেউ তাকে চেনে না। কেউ তাকে দেখে না। বৃদ্ধাশ্রমে তার ঠাঁই মেলে। এ চিত্র আধুনিক যুগের। এ দৃশ্য পশ্চিমা সভ্যতার, পশ্চিমের দেশগুলোর। এ চিত্র ইকবাল স্বচক্ষে অবলোকন করেছেন। যে সমাজের বীভৎস রূপ ইকবাল সন্ধানী চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন, সে সমাজের স্বরূপ ইকবাল এভাবে তুলে ধরেছেন : ‘পশ্চিমা দুনিয়ায় মায়েদের মূল্য নেই/তাই তো তাদের সমাজে প্রাণ নেই।’
কেবল সন্তান জন্ম দেওয়ার মাধ্যমেই মায়েরা দায়মুক্ত হয়ে যান না, ভারমুক্ত হয়ে যান না। শিশুর সুন্দর বেড়ে ওঠা, তার ভাষা শেখা, চরিত্র গঠন ও শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। সন্তানের জীবনের সব উন্নতি-বিকাশ, চেতনা-সচেতনতা, চিন্তা-বিশ্বাস—সবই তার মায়ের তরবিয়াত ও দীক্ষার ফসল। মায়ের আত্মিক ভালোবাসা ও স্বচ্ছতার অবদান। ইকবাল মনে করেন, পুরনো, জীর্ণ, ঘুণেধরা সমাজ বদলে দিতে নারীরা অনেক বড় অবদান রাখতে পারে। নারীর মধ্যে আল্লাহ তাআলা এমন শক্তি, বিশ্বাস ও দরদ দিয়েছেন, সে চাইলে জাতির ধমনিতে ইমানের জ্যোতির্ময় দীপ্তি ছড়িয়ে দিতে পারে। ইকবালের দৃষ্টিতে নবুয়তের সঙ্গে মাতৃত্বের একটা জুতসই সম্পর্ক আছে। নবীদের মতো মায়েরা উম্মতের জন্য রহমতস্বরূপ। নবীদের মতো মায়েরা জাতির চরিত্র গঠনে ভূমিকা রাখতে পারেন। ইকবালের জবানিতেই দেখুন : ‘মায়েরা করে থাকেন চরিত্র গঠন/সত্য-সুন্দর মণি-মুক্তার মতন।/আদর্শ মা জাতির জন্য রহমত/নবুয়তের সঙ্গে আছে তাঁর নিসবত।/স্নেহ-মমতায় তাঁরা নবীদের মতন/যতন করে জীবন করে গঠন।’

 

অফিস থেকে দাওয়াতে

অফিস থেকে যেতে হবে দাওয়াতে। কথাটি মনে আসতেই কি কুঁচকে গেল ভুরু জোড়া? দাওয়াতের জায়গাটি যদি হয় বাড়ির আশপাশে, তাহলে দুশ্চিন্তামুক্ত। কিন্তু যদি যেতে হয় উল্টো পথে? বিষয়টি কষ্টকরই হয়ে দাঁড়ায়। এ রকম ক্ষেত্রে সহজ উপায় হলো অফিস থেকেই দাওয়াতে চলে যাওয়া। কিন্তু সাজসজ্জা? সমাধান জানালেন বিশেষজ্ঞরা।
.কর্মজীবীদের এই বিষয়টির ভেতর দিয়ে হরহামেশাই যেতে হয়। কর্মক্ষেত্রের পোশাক হওয়া উচিত হালকা ও আরামদায়ক কাপড়ের। সুতি, কোটা, সিল্ক কিংবা জর্জেটের শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজেই আরামবোধ করে থাকেন বেশির ভাগ কর্মজীবী নারী। দাওয়াতের শাড়িটি সেখানে একেবারেই বিপরীত। রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান মনে করেন, আগের দিন কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে অফিস থেকেই দাওয়াতে চলে যাওয়া যাবে। ছোটখাটো বিষয়গুলো দিয়েই শুরু করা যাক। দাওয়াত কী ধরনের, সেটার ওপর নির্ভর করেই সব প্রস্তুতি নিতে হবে। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে ব্লাউজ ও পেটিকোট পরার পরামর্শ দিলেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘যদি বিয়ের দাওয়াত থাকে সে ক্ষেত্রে সকালবেলায় শাড়ি পরেই বের হতে পারেন। ব্লাউজ ও পেটিকোটটি দাওয়াতের শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পরুন। তাহলে অফিস শেষে শুধু শাড়িটা পরিবর্তন করে নিলেই হবে।’ আগের দিনের প্রস্তুতি হিসেবে নেইলপলিশ লাগিয়ে রাখতে পারেন। চুল শ্যাম্পু করে ব্লো ড্রাই করে নিতে পারেন। কাজের মধ্যে চুলটা হালকা করে বেঁধে রাখবেন। দাওয়াতে যাওয়ার আগে চুল খুলে আঁচড়ে ছেড়ে রাখুন অথবা বেঁধে নিন। চুল সুন্দর থাকলে পুরো লুকটাই বদলে যায় বলে মনে করেন কানিজ আলমাস খান।
ব্যাগে বা প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গে পছন্দের চরিত্রগুলো আঁকা থাকলে আনন্দের মাত্রাটাও যেন বেড়ে যায় অনেকাংশে। মডেল: ওয়াসিউ ও নওরিন, ছবি: নকশাসারা দিন কর্মক্ষেত্রে কাজ করার পর চোখে-মুখে ক্লান্তি তো থাকবেই। হালকা মেকআপ নেওয়া প্রয়োজন যদি শাড়ি জমকালো হয়। মুখ পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার দিয়ে, লিকুইড ফাউন্ডেশন ও পাউডার ভালোমতো মুখে লাগিয়ে নিন। ভুরু জোড়া সকালেই এঁকে আসতে পারেন। কাজ কিছুটা এগিয়ে থাকল। যদি আইশ্যাডোর ঝামেলায় যেতে না চান, তাহলে বেশি করে মাসকারা আর কাজল ব্যবহার করুন। যাঁদের চোখ ছোট, তাঁরা বাইরের দিকে কাজল লাগাবেন। চোখের ওপরে একটু চিকন করে লাইনার টানতে পারেন।
ডিজাইনার লিপি খন্দকার দাওয়াতের দিনটিতে বাড়তি পোশাক সঙ্গে নিয়েই বের হন। তিনি মনে করেন, গয়না বড় ভূমিকা পালন করে সাজে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে তিনি পরে নেন বড় গলার মালা। জুতা ও ব্যাগ বদলে ফেললে সেটাও অনেকখানি সহায়তা করেব। দাওয়াতের জায়গার আশপাশে কাছের কারও বাড়িতে পোশাক বদলানোর সুযোগ থাকলে সেটার সদ্ব্যবহার করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। লিপি খন্দকার মনে করেন অ্যান্ডি সিল্ক, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি কর্মক্ষেত্র ও দাওয়াত দুই জায়গাতেই মানিয়ে যাবে। চওড়া কম আছে এমন পাড়ের মেরুন, কালো, সবুজ, নীল, পিচ, চাপা সোনালি রঙের শাড়িগুলো পরে ফেলতে পারেন।
গাজী টেলিভিশনের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার ও উপস্থাপক সামিয়া আফরিন নকশার এ আয়োজনে মডেল হয়েছেন। অফিস থেকে প্রায়ই দাওয়াতে উপস্থিত হতে হয় তাঁকে। তিনি বলেন, ‘দাওয়াত বুঝেই শাড়ি পরে আসি অফিসে। টুকটাক গয়না রেখে দিই ব্যাগে। অফিস শেষে মেকআপটা সেরে ফেলি। হালকা রঙের জামদানি, অ্যান্ডি সিল্কের শাড়ি পছন্দ এ ক্ষেত্রে। চুল খোলা রাখতেই ভালোবাসি। সম্ভব হলে নিচের অংশটি কোঁকড়া করে নিই।’
দাওয়াত যদি খুব জমকালো না হয় তাহলে সালোয়ার-কামিজ সহজ সমাধান। ব্যাগে করেই নিয়ে আসতে পারেন। অফিস শেষে চট করে পাল্টে নিলেন।
জানজটের শহরে অফিস শেষ করে বাড়ি গিয়ে তৈরি হয়ে আবার বের হওয়া অনেক সময়ের ব্যাপার। কর্মজীবী ও বিশেষজ্ঞরা এ কারণেই মনে করছেন, দাওয়াতের পোশাকটি সঙ্গে নিয়েই অফিসে চলে আসুন। পোশাক আনতে না পারলেও অনুষঙ্গগুলো সঙ্গে রাখুন। টুকটাক পরিবর্তনেই আপনি নিজেকে তৈরি করে ফেলতে পারবেন দাওয়াতের জন্য।

 

৫ উপায়ে শরীর রাখুন বিষমুক্ত

খাবার খাওয়ার পর তা অন্ত্রে রাসায়নিক রূপান্তরের ফলে সৃষ্টি হয় কিছু উপাদান, যা দীর্ঘকাল ধরে শরীরে থাকার জন্য পরিণত হয় বিষাক্ত উপাদানে। তবে এটা দূর করাও সম্ভব।

শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য শরীর বিষমুক্ত রাখা একান্ত প্রয়োজন। নিয়মিত সহজলভ্য কিছু খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীর থেকে এই বিষাক্ত উপাদানগুলো দূর করতে পারি।


তিতা খাবার
তিতা খাবার আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করে দিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে চিরতার পানি অথবা করলা কিংবা নিমপাতার রসের জুড়ি নেই।


লেবু
লেবুতে আছে একগুচ্ছ ডিটক্স ডাইট যা টক্সিন নামক বিশেষ প্রকার জৈব, যা বিষ নির্মূলে সহায়তা করে। এছাড়া লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি, যা দাঁত ও ত্বকের জন্য বিশেষ উপকারী। তাছাড়া লেবুর ক্ষারীয় প্রভাব আপনার শরীরে অম্লতার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে। প্রতিদিন এক ফালি লেবুর সাথে গরম পানি আপনার শরীর থেকে বিষ নির্মূল করবে।


রসুন
আমরা সবাই জানি হৃৎপিণ্ডের সুস্থতার জন্য সবচেয়ে উপকারী খাদ্য রসুন। এতে রয়েছে এলিসিন নামক রাসায়নিক উপদান যা রক্তে শ্বেত রক্তকণিকা উৎপাদন ও টক্সিন নির্মূলে সাহায্য করে। রস‍ুন কাচা খাওয়া সবচেয়ে উপকারী।


গ্রিন টি
শরীর থেকে বিষাক্ত জৈব রাসায়নিক নির্মূলে গ্রিন-টি’র কোনো বিকল্প নেই। তরল এই খাবার আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু চা নয়, একে ওজন কমানোর ঔষুধও বলা চলে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।


টাটকা ফল
তাজা ফলে আছে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার ও কম ক্যালোরি যা শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদানগুলো নির্মূলে সাহায্য করে।  সেই সঙ্গে চোখ ও ত্বককে উজ্বল করে এবং হজম শক্তি বাড়ায়।

 

অন্যের প্রতি খারাপ ধারণার অনিষ্টতা থেকে বাঁচুন

জীবনে চলতে গিয়ে আমরা অনেক সময়ই অনুমান ও ধারণার ওপর নির্ভর করে থাকি। ব্যক্তিজীবন হোক কিংবা সমাজজীবন হোক, অনুমানের আশ্রয় আমাদেরকে নিতেই হয়। কিন্তু সে অনুমান যদি নিজের গণ্ডি ছাড়িয়ে অন্যের ওপর গিয়ে পড়ে এবং তা কোনো মন্দ বিষয়ে হয়ে থাকে তখন সেটাকে আমরা মন্দ বা কুধারণা বলে থাকি।

সমাজে পারস্পরিক সহাবস্থান ও সম্প্রীতি রক্ষার জন্যে এ মন্দ ধারণা হুমকিস্বরূপ। কারো সঙ্গে মুক্ত মনে কিংবা ভালো ধারণা রেখে চলাফেরা করা আর তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে ওঠাবসার করার মাঝে স্বাভাবিকভাবেই বিস্তর ফারাক রয়েছে। কোনো দলিল-প্রমাণ ছাড়া অনর্থক কারো সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করতে তাই ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক রকম অনুমান থেকেই বেঁচে থাকো। কেননা কিছু কিছু অনুমান গোনাহের কারণ হয়।’ –সূরা হুজরাত : ১২

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবি (রহ.) উল্লেখ করেছেন, ‘কোরআনে যে অনুমান করতে নিষেধ করা হয়েছে তা হচ্ছে অন্যের সম্পর্কে মন্দ ধারণা ও অপবাদ দেওয়া। যে মন্দ বিষয়ের কোনো প্রমাণ নেই, সে বিষয়ে কেবলই অনুমানের ওপর ভর করে কিছু বলে দেওয়াকেই এ আয়াতে বারণ করা হয়েছে। যেমন, কাউকে কোনো অশ্লীল বিষয়ে কিংবা মদ্যপানে অভিযুক্ত করা।’

আয়াতের দ্বিতীয় অংশ থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়। অনুমান থেকে বেঁচে থাকার আদেশ দেওয়ার পর আল্লাহতায়ালা এর কারণ বলে দিয়েছেন এভাবে- কিছু কিছু অনুমান গোনাহের কারণ হয়। আর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, মন্দ ধারণা ও অনুমানই গিবত-পরনিন্দা-মিথ্যা অপবাদের মতো জঘন্য গোনাহের পথ করে দেয়।

কারো সম্পর্কে যদি স্পষ্টভাবে জানা যায়, সে কোনো পাপকাজে জড়িয়ে পড়েছে কিন্তু সে ব্যক্তি তা প্রকাশ করেনি এবং প্রকাশ করাকে সে পছন্দও করছে না, তাহলে সে পাপের কথা বলে বেড়ানোই তো মৃত ভায়ের মাংস খাওয়ার মতো অপরাধ! এ থেকেই বোঝা যায়, যদি কারো দোষ বলাটা শুধুই ধারণানির্ভর হয় তাহলে তা কত ঘৃণিত কাজ হবে!

হাদিস শরিফেও এ ধরনের অনর্থক মন্দ ধারণা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন, বোখারি ও মুসলিম শরিফের এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘তোমরা মন্দ ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা মন্দ ধারণাই হচ্ছে সবচেয়ে জঘন্য মিথাচার।’-সহিহ মুসলিম শরিফ, হাদিস নং : ৬৭০১

অনেক সময় মন্দ ধারণা ব্যক্তি, পরিবার এমনকি সমাজে মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনে। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) একবার শিকার হয়েছিলেন এ মন্দ ধারণার। হৃদয়বিদারক সে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে বোখারি শরিফসহ হাদিসের আরও অনেক কিতাবে।

ষষ্ঠ হিজরিতে রাসূলে কারিম (সা.) এক যুদ্ধ শেষে মদিনায় ফিরছিলেন। সঙ্গে হজরত আয়েশা (রা.) ছিলেন। রাতের বেলা পথ চলার এক পর্যায়ে এক জায়গায় যাত্রাবিরতি করলেন। কিন্তু সকালবেলা যখন কাফেলা আবার চলতে শুরু করল, তখন ঘটনাক্রমে সবার অজান্তে কাফেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন নবীপত্নী হজরত আয়েশা (রা.)। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তার সম্পর্কে সম্পূর্ণ অমূলকভাবে একটি মন্দ কথা রটিয়ে দেয় এবং তার প্ররোচনায় কয়েকজন মুসলমানও এতে অংশ নেয়।

এ ঘটনায় মদিনা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। অবশেষে মহিয়সী এ নারীর পবিত্রতা আল্লাহতায়ালা জানিয়ে দেন ওহির মাধ্যমে। পাশাপাশি তিনি মুমিনদেরকে পারস্পরিক ভালো ধারণা পোষণ করতে আদেশ করেন। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যখন একথা শুনেছিলে, তখন কেন এমন হলো না যে, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীগণ নিজেদের সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করত এবং বলে দিত, এটা সুস্পষ্ট মিথ্যা?’ –সূরা নূর : ১২

সূরা হুজরাতের যে আয়াতে মন্দ ধারণা করতে নিষেধ করা হয়েছে, সেটা যেমন মুমিনদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তেমনি তা আল্লাহতায়ালার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অর্থাৎ কোনো মুমিন যেন আল্লাহতায়ালা সম্পর্কেও খারাপ ধারণা পোষণ না করে। যেমন, কেউ মনে করল বা বলল, আল্লাহ আমার ওপর কিছুতেই অনুগ্রহ করবেন না কিংবা আল্লাহ আমাকে তো কেবল শাস্তিই দেবেন। এভাবে পরম দয়ালু আল্লাহকে কেবল নির্দয় মনে করা এবং তার অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ।

অপরাধ যত বড়ই হোক না কেন, কেউ যদি মন থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তাহলে আল্লাহ সে অপরাধ ক্ষমা করেন। তাকে সিক্ত করেন করুণা ও অনুগ্রহের বারিধারায়। প্রতিটি মুমিনকে দৃঢ়ভাবে আল্লাহর প্রতিটি গুণে পূর্ণ আস্থার সঙ্গে বিশ্বাস রাখতে হবে। এর ব্যতিক্রম করা আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ করারই নামান্তর। তাই হজরত রাসূলে কারিম (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন আল্লাহ সম্পর্কে ভালো ধারণা না নিয়ে মৃত্যুবরণ না করে। -সহিহ মুসলিম

লেখক : শিক্ষক, জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া, ঢাকা

 

নারীর নেতৃত্বে প্রথম পুলিশ প্যারেড

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো নারী কর্মকর্তা পুলিশ সপ্তাহের প্যারেডে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন। রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে শুরু হওয়া পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্যারেডের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এই পুলিশ সপ্তাহের কার্যক্রম। অধিনায়ক হিসেবে প্যারেডের নেতৃত্ব দেবেন চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার। সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত ১৩টি কনটিনজেন্টের (মহানগর পুলিশ, রেঞ্জ পুলিশ, আর্মড পুলিশ, র্যা বসহ পুলিশের ১৩টি দল) এই প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করবেন। এসপি শামসুন্নাহারের নেতৃত্বে পরিচালিত এই প্যারেডে অংশ নিচ্ছেন সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য। লৈঙ্গিক সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নে এটা নতুন মাইলফলক।
নারী কর্মকর্তাকে প্যারেড অধিনায়ক নির্বাচন করার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল দুটি। একটি হলো নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া, আরেকটি লৈঙ্গিক সমতা। গত বছর পুলিশ সপ্তাহে প্যারেডে উপ-অধিনায়ক ছিলেন একজন নারী। এবার আমরা অধিনায়কের দায়িত্ব একজন নারী কর্মকর্তাকে দিয়েছি।’
এবারের পুলিশ সপ্তাহে ২০১৫ সালে অসীম সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ কাজ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ১৯ পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), ২০ জনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম), ২৩ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা ও ৪০ জনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের পদক পরিয়ে দেবেন।
শামসুন্নাহার বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে পুলিশ একাডেমির সারদার ক্যাম্প থেকে প্যারেড করে আসছি, আমি অপেক্ষায় ছিলাম দিনটির জন্য। কারণ, প্যারেড একটি অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও সূক্ষ্ম কাজ। এ জন্য দেশবাসীসহ সবার কাছে আমি দোয়া কামনা করছি। যাতে করে যথাযথভাবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে পারি।’
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক আলাদা বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে বলেন, ‘শৃঙ্খলা-নিরাপত্তা-প্রগতি—এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বাংলাদেশ পুলিশ জনসেবা প্রদান ও জননিরাপত্তা বিধানে আরও পেশাদার এবং আন্তরিক হবে, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। দেশের সব প্রয়োজন ও সংকটকালে পুলিশ জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানে দেশপ্রেম, নিষ্ঠা ও পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও পুলিশের সাফল্য ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বাংলাদেশকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে অনন্য মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।

 

সখীপুরে এক বছরে ৫৮৩ বিবাহবিচ্ছেদ

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। গত এক বছরে তালাকের মাধ্যমে ৫৮৩টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। বিচ্ছেদের ঘটনা এত কেন? বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বাল্যবিবাহ, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর উদাসীনতা, পরকীয়া, নারীর প্রতিবাদী রূপ, নারীর শিক্ষা, স্বামীর মাদকাসক্তি, দীর্ঘদিন স্বামী প্রবাসে থাকা, শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন, যৌতুকের জন্য ক্রমাগত চাপ, স্বামীর নির্যাতন—এসব কারণ খুঁজে পাওয়া যায়।
সখীপুরের আট ইউনিয়ন ও একমাত্র পৌরসভায় ১২টি কাজি অফিস রয়েছে। কাজি অফিসের নথি থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালে উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নে ৫৫টি, যাদবপুর ইউনিয়নে ৩৯টি, বহুরিয়া ইউনিয়নে ৩২টি, গজারিয়া ইউনিয়নে ৩৭টি, দাড়িয়াপুর ইউনিয়নে ১৫টি, কালিয়া ইউনিয়নে ১১০টি, বহেড়াতৈল ইউনিয়নে ৩০টি, কাকড়াজান ইউনিয়নে ৬৩টি ও পৌরসভার চারটি কার্যালয়ে ২০২টি বিবাহবিচ্ছেদ (তালাক) নিবন্ধন করা হয়েছে।
২০১৪ সালে সখীপুরে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে ৪২৫টি। এদিকে ২০১৪ সালে উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের নিকাহ কার্যালয়ে ৩৪টি, যাদবপুর ইউনিয়নে ২৬টি, বহুরিয়া ইউনিয়নে ২৭টি, গজারিয়া ইউনিয়নে ২৯টি, দাড়িয়াপুর ইউনিয়নে ১৬টি, কালিয়া ইউনিয়নে ৯৪টি, বহেড়াতৈলে ২৩টি, কাঁকড়াজানে ৫০টি এবং পৌরসভার চারটি কার্যালয়ে ১২৬টি তালাকের ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়েছে ১৫৮টি।
একজন নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, ‘সামান্য কারণে একজন নারী কখনো বিবাহবিচ্ছেদ চান না। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন যখন সীমা অতিক্রম করে, তখন বাধ্য হয়েই এই কাজ করতে হয়।’
কনেপক্ষের তালাককে ডি-তালাক, ছেলেপক্ষের তালাককে বি-তালাক ও ছেলে-মেয়ের সমঝোতার তালাককে সি-তালাক বলা হয় বলে জানালেন কালিয়া ইউনিয়ন নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার (কাজি) মাহবুব সাদিক। সখীপুর উপজেলা নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সখীপুর পৌরসভার কাজি শফিউল ইসলাম বললেন, বাল্যবিবাহ, স্বামী বিদেশে থাকা ও পরকীয়াঘটিত নানা জটিলতা নিয়ে প্রথমে দুই পরিবারে ফাটল ধরে পরে তা বিচ্ছেদে রূপ নিচ্ছে। তিনি জানান, সখীপুরের ৯০ শতাংশ তালাক স্ত্রীরা দিয়েছেন।
এক নারী তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের পেছনের কারণ জানান এই প্রতিবেদককে। তাঁর স্বামী বিয়ে করে ১৫ দিনের মাথায় বিদেশ চলে যান। বিয়ের সময় শর্ত ছিল স্ত্রীকে পড়াশোনা করতে দেওয়া হবে। কিছুদিন পর স্বামী বিদেশ থেকে বলেন পড়াশোনা করা যাবে না। কেন? স্বামী তখন ফোনে জানিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী নাকি অন্য কারও সঙ্গে প্রেম করছে। পড়াশোনা করলে তাঁকে ফেলে চলে যাবেন। এসব মিথ্যা বলে স্ত্রীকে পড়াশোনা বন্ধ করার জন্য চাপ দেন। তবু স্ত্রী পড়াশোনা চালিয়ে যান। এরপর থেকে স্বামী কোনো খরচ দেন না তাঁকে। কোনো ফোন করেন না। মেয়েটিকে তালাক দেবেন বলে হুমকি দেন। দুই বছর স্বামী তাঁর খোঁজ না নেওয়ায় স্ত্রীই স্বামীকে তালাক দেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রাফেজা আক্তার বলেন, ‘আগে নারীর ক্ষমতায়ন এখনকার মতো ছিল না। পুরুষদের অত্যাচার সহ্য করে নীরবে সংসার করেছে। এখন মেয়েরা সচেতন, শিক্ষিত ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ায় মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এখন মেয়েরা আর নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে চায় না।’
এখন আগের চেয়ে নারীরা শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হওয়ায় তাঁদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁরা আর মুখ বুজে থাকেন না। তাই হয়তো বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যাটা বেড়েছে। এমনটা মনে করেন সখীপুর আবাসিক মহিলা অনার্স কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান শহীদুল্লাহ কায়সার।

 

১৮ বছরের আগে বিয়ে নয়

অভিভাবকেরা কন্যা শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠানে আসেন। সেখানে ১৮ বছরের আগে বিয়ে নয়, এমন শপথ করবে সবাই। সকাল নয়টার আগেই মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বিভিন্ন স্কুলের ৬৫০ জন কন্যা শিশু আসে অভিভাবকসহ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক। আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে ১১ অক্টোবর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানস্থলে কথা হয় গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী আয়েশা ইয়াসমীনের মা শাবানা ইয়াসমীনের সঙ্গে। বললেন, ‘স্বপ্ন পূরণের জন্য মেয়েকে স্বাবলম্বী করব। তারপর বিয়ে দেব। তাই ১৮ বছরের আগে বিয়ে নয়, প্রকাশ্যে এই শপথ করতে এখানে এসেছি।’
চিৎলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির জিন্নাত তাসনিন হোসেন জানাল, তার বাবা গাজিউর রহমান সঙ্গে এসেছেন। স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত সেও বিয়ে করবে না।
জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী আইনাতুল মার্জিয়ার চোখে পানি দেখা গেল। জানা গেল, তার বাবা কৃষক। ভাই নেই, তিন বোন। বড় দুই বোনের হয়েছিল বাল্যবিবাহ। এখন তাঁরা পরিবারে বোঝা হয়ে আছেন। বাবার ঘাম-ঝরানো অর্থে সে পড়াশোনা করছে। বাবার ইচ্ছা মেয়ে অনেক বড় হবে। তাই বাল্যবিবাহ নয়।
গাংনী পাইলট স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জানায়, মেয়ে মানেই বোঝা—এমন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তার মায়ের বাল্যবিবাহ হয়েছিল। তাই ‘মেয়ে মানেই বোঝা’—এই কথা মিথ্যা প্রমাণ করে দিতে সে ১৮ বছরের আগে বিয়ে করবে না।
জানা গেলে, এই মেয়েরা প্রথমে মা বা বাবাকে নিয়ে নিজ বিদ্যালয় বা বাড়িতে বসে বাল্যবিবাহবিরোধী শপথ নিয়েছে। সেসব শপথের ছবি প্রদর্শন করা হয়। এরাই অভিভাবকসহ অনুষ্ঠানে এসে প্রকাশ্যে বাল্যবিবাহ নয়, স্বাবলম্বী হওয়ার আগে বিয়ে নয়—এমন শপথ করেছে। কন্যা শিশুদের শপথ দেখে এবং বাল্যবিবাহের কুফল জেনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ৫০০ ছেলে শিশু ১৮ বছরের কম মেয়েকে বিয়ে না করার প্রকাশ্য অঙ্গীকার করে।
জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার। শুধু বাল্যবিবাহ নয়, মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, যৌতুক, নারী ও শিশু নির্যাতন, অ্যাসিড-সন্ত্রাস, অপরাজনীতিমুক্ত দেশ গড়তে উপস্থিত সবাইকে শপথবাক্য পাঠ করান তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের মেহেরপুর শাখার সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাবুদ হাসান, গাংনী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা আঞ্জুমান বানু, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাত মান্নান, জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসান আল নূরানী, নারী নেত্রী নূরজাহার বেগম, সুজনের গাংনী উপজেলা শাখার সহসভাপতি আবদুর রশিদ ও যুগ্ম সম্পাদক আক্তারুজ্জামান।
পরে অপরাজনীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও বাল্যবিবাহের কুফল নিয়ে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা সাতটি নাটিকা মঞ্চস্থ করে। অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারী হেলাল উদ্দিন বলেন, জেলায় ৭১ শতাংশ কন্যা শিশুর বাল্যবিবাহ হয়। তাই গাংনী উপজেলার ৪৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে চিহ্নিত করে সেসব বিদ্যালয়ের কন্যা শিশু ও অভিভাবকদের এই শপথের আওতায় আনা হয়েছে। অন্যান্য উপজেলাতেও এই কর্মসূচি পালন করা হবে।

 

সহজ সুন্দর সাজ

নারীদের অনেকেই সহজ সুন্দর সাজ পছন্দ করেন। সেই সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যবোধও করেন। জমকালো সাজ সবারই যে পছন্দ, এমন নয়। ব্যক্তিত্ব ও রুচির সঙ্গে মানিয়ে আপনার সহজ সাজটি কেড়ে নিতে পারে সবার দৃষ্টি। একটু পরই যেতে হবে পার্টিতে; পার্লারে যাওয়ার সময়ও নেই আপনার হাতে। সাজতে হবে ঘরেই। কী করা? মেকআপের কিছু প্রাথমিক নিয়ম জানা থাকলে ঘরে বসেই মেকআপ করতে পারেন আপনিও। এ জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হলো প্যানস্টিক, ডাস্ট পাউডার, প্যানকেক, পাফ ও ফোম, বস্নাশন, কয়েক রকম আইশ্যাডো, মাশকারা, লিপস্টিক ও গ্লস, বিভিন্ন রকম চোখের, গালের ও ঠোঁটের ব্রাশ। প্যানকেক ও ডাস্ট পাউডার ত্বকের রঙ অনুযায়ী বাছাই করবেন। ফর্সারা গোলাপি, শ্যামলারা বাদামি আর কালোরা গাঢ় রঙ বেছে নেবেন। মেকআপের আগে চাই ত্বকের যত্ন। ত্বক শুষ্ক হলে মুখ ধুয়ে হালকা করে তরল ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নেবেন। ত্বক তৈলাক্ত বা মিশ্র হলে টোনার বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুলেই চলবে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত হলে বরফ বেঁধে মুখে ঘষে নেবেন। মেকআপের আগে প্রথমে আঙুলের ডগায় প্যানস্টিক নিয়ে মুখের কালো দাগ ঢেকে দিতে হবে। এরপর পাফের সাহায্যে পুরো মুখে ডাস্ট পাউডার লাগাতে হবে ও পানি স্প্রে করতে হবে হালকাভাবে। আঙুলের সাহায্যে চেপে পাউডার মুখে বসিয়ে নিতে হবে। পাউডার বসে গেলে ভেজা ফোমের সাহায্যে প্যানকেক লাগিয়ে নিন। প্রথমে টি জোন, অর্থাৎ কপাল, নাক ও চিবুকে লাগাতে হবে। তারপর আঙুলের সাহায্যে মুখের অন্যান্য অংশে পুরোপুরি মেশাতে হবে। হাতেও প্যানকেক লাগাতে হবে, যাতে ত্বকের রঙে বৈসাদৃশ্য দেখা না যায়। হালকা ফেসপাউডার বুলিয়ে গালের ভাঁজে বস্নাশনের পরশ দিন। তৈরি হয়ে গেল মেকআপের বেজ। অনুষ্ঠানের সময় মাথায় রেখে চোখের সাজ করা ভালো। দিনে হালকা সাজই মানানসই। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে চোখে ন্যাচারাল টোনের শেড, যেমন সোনালি, গোলাপি, বা বাদামি শেড ভালো লাগবে। কাজল ব্যবহার করতে পারেন, সঙ্গে ভারী মাশকারা থাকবে। রাতের অনুষ্ঠান হলে গাঢ় শেড ব্যবহার করবেন। বস্নাশনও গাঢ় হবে। ঠোঁট লাইনার দিয়ে এঁকে নেয়া ভালো। দিনের বেলা হালকা, যেমন বাদামি, বিজ, গোলাপি ইত্যাদি রঙের লিপস্টিক বা শুধু গ্লস ব্যবহার করতে পারেন। রাতের অনুষ্ঠানে গাঢ় লিপস্টিক কিংবা গাঢ় শেডের গ্লস ভালো মানাবে। মেকআপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো, সঠিক নিয়মে মেকআপ তোলা। তাহলেই ত্বকে মেকআপের কোনো খারাপ প্রভাব পড়বে না। তাহলে আর দেরি কেন? ঘরে বসেই হয়ে যাক পার্লারের সাজ।

 

আসছে আমের দিন, চলো বানাই আম ভর্তা

এখন আমের দিন। কাঁচা এবং পাকা দুই ধরনের আমই পাওয়া যাচ্ছে। কাঁচা এবং পাকা আম মিলিয়ে কাসুন্দি দিয়ে বেশ মজার টক-ঝাল-মিষ্টি আমের ভর্তা বানিয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেশ মজা করে খাওয়া যেতে পারে এবং এটা যে কোন সময়। এমন কি রাতেও!

প্রয়োজনীয় উপকরনঃ (উপকরণের অনুমান আপনি নিজেও করে নিতে পারেন)
– কয়েকটা কাঁচা পাকা আম
– এক চামচ চিনি (পরিমাণ আপনার কাছে)
– পরিমাণ মত লবণ
– এক চিমটি মরিচের গুড়া
– দুই চামচ কাসুন্দি (দেশে এখন অনেক কোম্পানি কাসুন্দি বানিয়ে বোতলজাত করে বাজারে বিক্রি করছে)

প্রণালীঃ
নিজ গাছের আম হলে বেশী ভাল!
চিনি প্রথমে কম দেয়াই ভাল পরে স্বাদ বুঝে দিলে বেশ হয়।
কাসুন্দি দিন। ভাল করে মিশিয়ে নিন।
খালি হাতে ডলে ডলে মিশালে মজা বাড়ে।
ব্যস হয়ে গেল ভর্তা।
আম কাসুন্দি – টক-ঝাল-মিষ্টি!

 

ব্যবসায় নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন

বৈজ্ঞানিক হতে চেয়েছিলাম। আর্থিক সংগতি ছিল না। তাই ১১ বছর বয়সে পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করি। মার খেয়েছি। চাকরি চলে গেছে। দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলন করতে দেখে অনেকেই বলেছে আমার “চরিত্র” খারাপ। তবে একসময় যারা চরিত্র নিয়ে অপবাদ দিত, তারাই এখন আমাকে দেখে সালাম দেয়।’

নব্বইয়ের দশকের অভিজ্ঞতা বলছিলেন পোশাকশিল্প কারখানার একসময়কার শ্রমিক, বর্তমানে এ শিল্পেরই শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার। এখন তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে স্কুলে পড়ছে।

শুধু নাজমা নন, এভারেস্ট বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশি নারী নিশাত মজুমদার, চাঁদপুর সদরের দুবার নির্বাচিত উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুনিরা চৌধুরী, সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের জন্য সংগঠন ইউসেপ বাংলাদেশের কিশোরীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের ও পেশার নারীরা তাঁদের জীবনের কাহিনি শোনাচ্ছিলেন।

মুনিরা চৌধুরী বলেন, ‘ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে সেভাবে কোনো দায়িত্ব নেই। তবে আমি আইনজীবী। এই পেশাকে কাজে লাগিয়ে আমি অসহায় মানুষকে আইনি সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করি।’

নিশাত মজুমদার বলেন, ‘এভারেস্ট চূড়ায় ওঠার পরও তেমন কিছু মনে হয়নি। কিন্তু বিমান থেকে যখন প্রথম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখলাম, চারপাশে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। তখন মনে হলো, আমার দায়িত্ব তো অনেক বেড়ে গেছে।’

ইউসেপ বাংলাদেশের সাবেক শিক্ষার্থী সুবিধাবঞ্চিত শারমীন আক্তার বর্তমানে এনটেল ইলেকট্রনিকস নামের একটি কোম্পানিতে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘ইউসেপের অন্য সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের এখন নিজের কোম্পানিতে চাকরি দিচ্ছি।’

ব্র্যাকের কিশোরী ক্লাবের ক্রিকেটার নাসরিন বাংলাদেশ ক্রিকেট মহিলা দলের দলনেতা হওয়ার স্বপ্নের কথা শোনাল।

ব্র্যাক কিশোরী ক্লাবের আরেক নেত্রী জোহরা খানম বলেন, ‘আমি ব্র্যাকের সঙ্গে যুক্ত হতে না পারলে এত দিনে হয়তো এক সন্তানের মা হয়ে যেতাম।’ জোহরা শুধু নিজে সচেতন হননি, অন্যদেরও বাল্যবিবাহের হাত থেকে রক্ষা করছেন।

উদ্যোক্তা শিরীন রওশন ১৭ থেকে ১৮ বছর আগে প্রথম শুরু করেছিলেন ‘ফ্রোজেন ফুড’-এর ব্যবসা। গৃহবধূ থেকে এখন তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, তখন এক প্যাকেট শিঙাড়াও অনেক বলে-কয়ে বিক্রি করতে হতো। আর এখন পরোটাও কিনে খাচ্ছে মানুষ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক দীর্ঘ সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রের সফল নারীদের কথা শোনেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এ অনুষ্ঠান তারই প্রমাণ। অন্যদিকে বলা যায়, নারীরা এগিয়ে গেলে দেশ এগিয়ে যেতে বাধ্য।

ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর পাওলিন ট্যামেসিস বলেন, জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনেও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির স্বীকৃতি মিলেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ভারতের চেয়েও ভালো।

অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলাদেশ ফেডারেশন অব উইমেন্স এন্ট্রাপ্রেনিউরসের প্রেসিডেন্ট রোকেয়া আফজাল রহমান সবাইকে নিয়ে গেলেন তাঁর ২২ বছর বয়সে। তখন তিনি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক। তারপর বিয়ে, সন্তানের জন্য চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু। তখনো সবার অবাক হওয়ার পালা।

রোকেয়া আফজাল রহমান বলেন, সবাই চেষ্টা করে এক পথে হাঁটলে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।

বাংলাদেশের প্রথম নারী অ্যাম্বাসেডর নাসিম ফেরদৌস ৩০ বছর সরকারি চাকরি করে ২০০৮ সালে অবসর নেন। তারপর গড়ে তোলেন বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স ফর উইমেন লিডারশিপ নামের প্ল্যাটফর্ম। লুনা শামসুদ্দোহা দীর্ঘ ২২ বছর ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত। তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকেই প্রথম জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকাশিত হয়। এই দুই নারীও তাঁদের জীবনের কাহিনি শোনান।

 

নারী উদ্যোক্তাদের ঋণসীমা ৫০ হাজার টাকার নিচে : গভর্নর

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, এসএমই খাতের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের জন্যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর আওতায় নারী উদ্যোক্তারা এখন ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ

গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারা গ্রুপ গঠন করে ৫০ হাজার টাকা বা তার বেশি অংকের ঋণ নিতে পারছেন। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের ঋণসীমা যাতে ৫০ হাজার টাকার নিচে হয় সেজন্যে আমরা অচিরেই একটি নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছি।

বুধবার ইনস্টিটিউশন অব ডিপে¬ামা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) আয়োজিত উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মশালা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এসব কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা খাতের উন্নয়নে পৃথক এসএমই বিভাগ গঠন, নারী উদ্যোক্তা সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। উদ্যোক্তাদের জন্যে আমরা নীতি সহায়তার পাশাপাশি কয়েকটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছি। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্যে ৬০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল রয়েছে। এ তহবিল থেকে নতুন উদ্যোক্তারা ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ করতে পারছেন।

গভর্নর আরও বলেন, দেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ কর্মক্ষম জনবল তৈরি হচ্ছে। এই জনবলকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে এটি আমাদের জন্যে আশীর্বাদ হয়ে উঠবে। অবশ্য এদের কাজে লাগিয়েই গত দু’দশকে আমরা খাদ্য উৎপাদন, দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছি।

নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সূচকে আমাদের অগ্রগতি

উৎসাহব্যঞ্জক। রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত রাখা গেলে আমাদের সাফল্য আরো বেশি হবে। বাংলাদেশের এই সাফল্যগাঁথা এদেশের কর্মঠ ও সৃজনশীল উদ্যোক্তারাই রচনা করেছেন। কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে তাদের সফল পদচারণার কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। তবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি আমাদের জন্যে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঢাকা চেম্বারকে সঙ্গে নিয়ে আইডিইবি’র এক

হাজার নতুন শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টির এ প্রকল্প অন্যান্য সংগঠনের জন্যে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, আর্থিক খাতসহ যারা এসএমই ও নারী উদ্যোক্তা নিয়ে কাজ করছেন তাদের সকলকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এ দেশটিকে সত্যিকারের সোনার বাংলায় রূপান্তর করতে চাই। যেসব ডিপে¬ামা ইঞ্জিনিয়ার শিল্প উদ্যোক্তা হওয়ার বাসনা নিয়ে এখানে দুই দিনব্যাপী কর্মশালায় অংশগ্রহণ করছেন

তাদের ক্ষুদে উদ্যোক্তা হওয়ার তাত্ত্বিক জ্ঞান রয়েছে। যে জ্ঞান সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের নেই। এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এবং প্রাণশক্তিতে বলীয়ান হয়ে এগিয়ে যাবেন। অর্থায়নের অভাব ও অন্য সকল বাধা-বিপত্তি যেন আপনাদের পথ আটকাতে না পারে সে বিষয়টি আইডিইবি, ডিসিসিআই ও বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবে।

আইডিইবি’র সভাপতি এ কে এম এ হামিদের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন- বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ম. হামিদ, এ্যান্ট্রিপ্রিনিউয়ারশিপ অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো’র চেয়ারম্যান সবুর খান।

 

থাইল্যান্ডের হাসপাতালে সুজানা

অবসর পেলেই সুজানা জাফর দেশের বাইরে ঘুরতে যান। এবারও তিনি দেশের বাইরেই আছেন, তবে ঘুরতে নয়। থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন তিনি। নিজের চেকআপ করাচ্ছেন। এখনো চেকআপের রিপোর্ট আসেনি।

এনটিভি অনলাইনকে সুজানা বলেন, ‘এখনো চিকিৎসকরা কিছু বলেননি। আশা করছি, সিরিয়াস কিছু ঘটবে না। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। সবার ভালোবাসা নিয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে চাই।’

সুজানা আরো যোগ করেন, ‘এ মুহূর্তে আমার আব্বুকে খুব মিস করছি। আব্বু না-ফেরার দেশে চলে না গেলে হয়তো তিনি আমার এখন পাশে থাকতেন।’

এদিকে, চিকিৎসা শেষে ২২ মার্চ ঢাকায় ফিরবেন বলে জানান সুজানা।

 

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ফাহরিবার সাফল্য

মালয়েশিয়ায় অনলাইন মার্কেটিংয়ে সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশি ছাত্রী ফাহরিবা আবদুল্লাহ চিশতী। তিনি মেয়েদের বিভিন্ন বিখ্যাত পণ্য সংগ্রহ করে তা অনলাইনের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের ভোক্তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন। ‘অর্পিতা’স ক্রিয়েশন’ নামক একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইন মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন ফাহরিবা।

ফাহরিবা যে ধরনের পণ্য সরবরাহ করে থাকেন, তার মধ্যে রয়েছে মেয়েদের থ্রিপিস, টুপিস, জিন্স, হ্যান্ডব্যাগ, পার্স, নেকলেস, জুতা, কানের দুল, বোরখা, লং-গাউন, মেয়েদের সাজসজ্জা সামগ্রী, ফেসওয়াশ, ছবি তোলার জন্য সেলফি-স্ট্যান্ড ও ঘর সাজানোর জন্য শোপিস।

শুধু নিজ উদ্যোগে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি অনলাইন মার্কেটিংয়ের ব্যবসা শুরু করেন। বাংলাদেশে বসে ফাহরিবার ব্যবসায় তাঁকে সাহায্য করেন তাঁর মা।

এ ব্যাপারে এনটিভি অনলাইনকে ফাহরিবা বলেন, ‘আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে অনলাইন মার্কেটিংয়ের বিকল্প কিছু নেই। মানুষ এখন আগের মতো আর কষ্ট করতে চায় না। বিজ্ঞান পৃথিবীটাকে এখন হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। মানুষ এখন অনেক আধুনিক। ফেসবুক কিংবা টুইটারের মাধ্যমে এখন অনেক পণ্য কেনাবেচা হয়ে থাকে। আমি যেহেতু মার্কেটিংয়ে লেখাপড়া করছি, আমি কেন এ বিষয়ে পিছিয়ে থাকব।’

ফাহরিবা আরো বলেন, “দেশে থাকতে আমার ডিজাইন করা শাড়ি মানুষ কিনত। যখন নিজের ডিজাইন করা শাড়ির ছবি ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শেয়ার দিতাম, তখন সেগুলোর জন্য প্রচুর অর্ডার পেতাম। এভাবে দিন দিন আমার ডিজাইন করার শাড়ির অর্ডারের পরিমাণ বেড়ে গেল। তখন আমি ‘অর্পিতা’স ক্রিয়েশন’ নামে ফেসবুক পেজ খুললাম। তখন আমার থেকে যারা শাড়ি কিনত, তারা এই পেজের মাধ্যমে অর্ডার দেওয়া শুরু করে। ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য আমি ডাকযোগে পাঠিয়ে দিতাম। এভাবে ক্রেতাদের মধ্যে আমার পেজের প্রতি একটা বিশ্বাস জন্মাল।”

জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ফাহরিবা আবদুল্লাহ বলেন, ‘লেখাপড়া শেষ করে আমি অনলাইন ব্যবাসায় ভালোভাবে মনোযোগ দেব। এটাকে ধরে রাখব এবং ব্যবসার ক্ষেত্র আরো প্রসারিত করব।’

ফাহরিবা মনে করেন, অনলাইনে মার্কেটিংয়ে একটু মেধা এবং নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করলে ভালো করা যায়। যেখানে অনেকে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করেও ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারে না, সেখানে ফাহরিবার অনলাইন মার্কেটিংয়ের ব্যবসায় কোনো লোকসান নেই।

ক্রেতারা কেন আপনার কাছ থেকে পণ্য কিনবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ফাহরিবা আবদুল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার চিন্তাভাবনা, শিল্পমন এবং রুচি অনেক ক্রেতা পছন্দ করেন। বাংলাদেশে থাকতে আমার অনেক ক্রেতা ছিল। আমি মালয়েশিয়া আসার পর ওই ক্রেতারা এখনো আমার কাছ থেকেই পণ্য কেনেন।’

বর্তমানে ‘অর্পিতা’স ক্রিয়েশন’ নামক ফেসবুক পেজে ২২ হাজার ব্যবহারকারী লাইক দিয়েছেন।

ফাহরিবা বলেন, ‘বাংলাদেশে আমার পণ্যের অনেক ক্রেতা আছেন, যারা এখন মালয়েশিয়া থেকে পণ্য অর্ডার দেয়। আমি মালয়েশিয়ার বাজারে পাওয়া সেরা পণ্যগুলো ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিক্রি করি। ফলে ক্রেতারা আমার কাছে কোনো ভেজাল পণ্য পায় না এবং সঠিক, সুন্দর ও আসল ব্র্যান্ডের পণ্য পায় আমার কাছে। পরিশ্রম ছাড়া জীবনে কেউ বড় হতে পারে না। তাই দেশে থাকতেও আমি চাকরি করেছি, এখন মালয়েশিয়ায়ও লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্টটাইম জব করছি।’

এর বাইরে ছুটিতে বা অবসরে বেরিয়ে পড়েন মালয়েশিয়ার বিখ্যাত শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে পণ্য কিনে সেসব পণ্যের ছবি আপলোড করেন নিজের প্রতিষ্ঠানের পেজে।

ফাহরিবারা দুই বোন ও এক ভাই। তাঁর ভাই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এবং বোন ডেন্টিস্ট। ফাহরিবার বাবা একটি জাপানি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়া ইসলামী ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন ফাহরিবা। এর আগে ২০০৬ সালে ঢাকার ভিকারুননিসা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০০৮ সালে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এর পর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ থেকে বিবিএ শেষ করেন।

বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে এমএস করছেন। এর বাইরেও বাংলাদেশ স্টুডেন্ট ইউনিয়ন মালয়েশিয়ার একজন সম্মানিত সদস্য।

 

কিস্তিতে পণ্য বেচাকেনা প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান

আরমান চাকরিতে ঢুকেছেন মাত্র ৯ মাস। সর্বসাকল্যে বেতন পাচ্ছেন ১৪ হাজার ৪শ’ টাকা। অভিভাবকদের ইচ্ছায় এরই মধ্যে আবার বিয়েও করেছেন। নতুন সংসার পেতেছেন ভাড়া বাসায়। কত কিছু কেনাকাটা করতে হচ্ছে। হিমশিম অবস্থা। অফিসের কাজের চাপে আর ট্রাফিক জ্যামের সময় গ্রাসে ছুটির দিন ছাড়া পুরো সপ্তাহে বাজার করার আর কোনো ফুরসতই মেলে না।

তাই সাধ্য না থাকলেও দরকার একটি রেফ্রিজারেটর। কী করবেন ভেবে পান না। প্রতিবেশী ভাবি পরামর্শ দিল, শোরুম থেকে ছয় মাসের কিস্তিতে ফ্রিজ কেনেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, তিন মাসের কিস্তিতে কিনলে নগদ মূল্যের ওপর শতকরা পনের টাকা আর ছয় মাসের কিস্তিতে কিনলে শতকরা ২৫ টাকা বেশি দিতে হবে। তিনি হতাশ হলেন। রেফ্রিজারেটর কেনা তার জন্য সম্ভব নয়। যতই কষ্ট হোক সুদের কারবারে নিজেকে জড়িত করে আল্লাহর অবাধ্য হতে পারবেন না।

সানজিদা সেলাই কাজ শিখেছে। উদ্দেশ্য ছিল লেখাপড়ার পাশাপাশি বাড়িতে বসেই কিছু টাকা উপার্জন করবে। বাবার বোঝা কিছুটা লাঘব করবে; কিন্তু পল্লী বাজারের ছোট একটি দোকানদার আরিফ সাহেব। তার পক্ষে সম্ভব নয় মেয়েকে নগদ টাকা দিয়ে সেলাই মেশিন কিনে দেওয়া। তিনি খোঁজ পেলেন নগদ মূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশি দামে সহজ কিস্তিতে সেলাই মেশিন কেনা যায়। তিনি ভয় পেলেন, আমি মুসলমান। সুদে জড়িত হবো!

আমাদের সমাজে এ রকম আরমান, আরিফ অনেক আছেন। তারা এ ভুল করে থাকেন। নগদ মূল্য থেকে কিস্তি মূল্যের অতিরিক্ত অংশকে সুদ হিসেবে গণ্য করেন। আবার অনেকে কিস্তিকে সুদের সমার্থক ভাবেন। সুদ ও অতিরিক্ত অংশকে এক ভাবেন। অথচ এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে।

সব অতিরিক্ত অংশ সুদ নয়। কিস্তিতে টাকায় আদায় করা হলেই তা সুদ নয়- বিজ্ঞ ইসলামি চিন্তাবিদদের সুচিন্তিত মতানুসারে। কোনো লেনদেনে এক পক্ষের দেয় অতিরিক্ত অংশ সুদ হবে যদি উভয়পক্ষের আদান-প্রদানকৃত বস্তুদ্বয় সমজাতের হয়। আর যদি বস্তুদ্বয় সমজাতের না হয় তাহলে অতিরিক্ত অংশ সুদ হবে না।

যেমন- যায়েদ ২০ কেজি গমের বিনিময়ে উমরকে বাইশ কেজি গম দিল। এখানে যেহেতু উভয় পক্ষের বস্তু এক জাতের সেহেতু যায়েদের দেওয়া অতিরিক্ত দুই কেজি গম ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ। আবার যায়েদ ২০ কেজি ধানের বিনিময়ে উমরকে বাইশ কেজি গম দিল। এখানে যেহেতু উভয় পক্ষের বস্তু এক জাতের নয়, সেহেতু যায়েদের দেওয়া অতিরিক্ত দুই কেজি গম ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ নয়।

অনুরূপভাবে বেচাকেনায় যদি এক পক্ষ পণ্য দেয়, তা যে কোনো আইটেমের হোক। অপর পক্ষ মুদ্রা দেয়, তাহলে যে কোনো এক পক্ষের দেয় বস্তুটির পরিমাণ যত বেশিই হোক না কেন, আর এর পশ্চাৎ কারণ যা-ই থাকুক না কেন সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অংশকে সুদ গণ্য করা হয় না। কেননা, মুদ্রা ও পণ্য এক জাত নয়।

উপরোক্ত আলোচনা ও উদাহরণ দ্বারা স্পষ্ট যে, বর্তমানে বিভিন্ন উৎপাদক, পরিবেশক ও বিক্রেতা ক্রেতাদের কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের সুযোগ দিয়ে নিজেদের পণ্য বেশি টাকায় বিক্রির অফার দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ওইসব পণ্য যেমন- রেফ্রিজারেটর, মোটরসাইকেল, সেলাই মেশিন ইত্যাদি নগদ মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে কিস্তিতে কেনাকে সুদের কারবার বলা যাবে না এবং দামের ওই অতিরিক্ত অংশকে সুদ বলা যাবে না।

তবে কিস্তিতে বেচাকেনার যে পদ্ধতি আমাদের বাজারে প্রচলিত, তাতে একটি বিষয় অবশ্যই সংশোধনযোগ্য। সাধারণত বিক্রেতা পক্ষ কিস্তির সংখ্যাভেদে কয়েক ধরনের দাম প্রস্তাব করে। যেমন- মূল্য নগদ দিলে ১০ হাজার টাকা, তিন মাসে শোধ করলে ১২ হাজার টাকা, ছয় মাসে শোধ করলে ১৫ হাজার টাকা, ১২ মাসে শোধ করলে ১৮ হাজার টাকা।

ক্রেতা কিস্তির কথা বলে পণ্য নিয়ে যান। মূল্য ও কিস্তির ধরন নির্দিষ্ট করেন না। পরে নিজের রুচি ও সুবিধামতো প্রস্তাবের যে কোনো একটি মূল্য পরিশোধ করেন। মূল্য সুনির্দিষ্ট না করে বিভিন্ন মেয়াদভিত্তিক বিভক্ত রেখেই বেচাকেনার চুক্তি সম্পাদন করা ইসলামে নিষিদ্ধ।

বেচাকেনা শুদ্ধ হওয়ার জন্য আবশ্যক হলো- বিভিন্ন মেয়াদভিত্তিক বিভক্ত মূল্যগুলো থেকে যে কোনো একটি মূল্য ও মেয়াদ সুনির্দিষ্ট করে চুক্তি সম্পাদন করা।

 

মুসলিম ও অমুসলিম চিন্তাবিদদের দৃষ্টিতে হযরত ফাতেমা যাহরা (আলাইহাস সালাম)

সুনানে ইবনে দাউদ:

আবু দাউদ সুলাইমান ইবনে তিয়ালসী তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থে লিখেছেন:

আলী ইবনে আবি তালিব বলেছেন: তোমরা কি চাও না যে, নিজের ও নবী কন্যা ফাতেমা সম্পর্কে তোমাদেরকে অবগত করি?

তিনি মহানবী (স.) এর সবচেয়ে নিকটতম হওয়া সত্ত্বেও আমার বাড়ীতে যাতা পিষতে পিষতে তার হাতে ক্ষতের সৃষ্টি হত, পানি বহনের কারণে তার কাঁধে ব্যথা হত,ঝাড়ু দান ও গৃহ পরিচ্ছন্ন করার কারণে তার পোষাক পুরোনো হয়ে যেত। শুনেছি যে, মহানবী (স.) এর নিকট কয়েকজন গৃহ পরিচারিকা ছিলেন (দাসী)। ফাতেমা সাহায্য গ্রহণের আশায় বাবার কাছে গেলেন। যাতে ঐ গৃহ পরিচারিকাদের একজনকে বাড়ীর কাজের জন্য তাঁর (স.) নিকট চাইতে পারেন। কিন্তু তিনি বাবার নিকট উপস্থিত হয়ে সেথায় উপস্থিত যুবকদেরকে দেখে অতিমাত্রায় লজ্জিত হয়ে নিজের আবেদন প্রকাশ করা হতে বিরত থাকলেন এবং মনের কথা না বলেই তিনি ফিরে আসলেন।

(সুনানে আবি দাউদ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৪)

সহীহ আল বুখারী:

আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বুখারী নিজের প্রসিদ্ধ বুখারী গ্রন্থের ৫ম খণ্ডের ১৭তম পৃষ্ঠায় বাবু ফাদ্বায়েলুস সাহাবা’তে (১৩৭৬ ফার্সী/ ১৯৯৭-১৯৯৮ সালে মক্কায় প্রকাশিত) নিজস্ব সনদে বর্ণনা করেছে যে, মহানবী (স.) বলেছেন:

‘ফাতেমা আমার দেহের অংশ। যারা তাকে রাগান্বিত করবে (প্রকৃতপক্ষে) তারা আমাকে রাগান্বিত করেছে’।

৩য় খণ্ডের ১৪৬ পৃষ্ঠায় ও ৪র্থ খণ্ডের ২০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন যে, মহানবী (স.) বলেছেন: ফাতেমা আমার দেহের অংশ, যে তাকে রাগান্বিত করবে (প্রকৃত অর্থে) সে আমাকে রাগান্বিত করেছে।

৫ম খণ্ডের ২০তম পৃষ্ঠায় বলেছেন: ‘ফাতেমা বেহেশতের নারীদের সর্দার’।

সহীহ তিরমিযী:

প্রসিদ্ধ সহীহ তিরমিযী গ্রন্থের প্রণেতা নিজের সহীহ গ্রন্থে এ সম্পর্কে লিখেছেন: ‘আয়েশাকে জিজ্ঞেস করা হল, লোকদের মধ্যে কে আল্লাহর রাসূলের সবচেয়ে প্রিয়?

তিনি বলেন: ফাতেমা। জিজ্ঞেস করা হল: পুরুষদের মধ্যে? তিনি বললেন: তার স্বামী আলী।

(মাহমুদ শাহাবী রচিত ‘ইসলাম ওয়াশ শিয়া’ গ্রন্থ হতে সংকলিত)

সহীহ মুসলিম:

মুসলিম বিন হাজ্জাজ কুশাইরী (মৃত্যুকাল ২৬১ হিজরী) স্বীয় প্রসিদ্ধ সহীহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন: ‘ফাতেমা মহানবী (স.) এর দেহের অংশ। যে তাকে কষ্ট দেয় সে মহানবীকে কষ্ট দিয়েছে এবং যে তাকে খুশী করে সে মহানবীকে খুশী করলো।

মুসনাদে হাম্বাল:

অন্যতম সুন্নি মাযহাবের (হাম্বালী) ফিকাহে’র প্রণেতা ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল স্বীয় মুসনাদের তৃতীয় খণ্ডে নিজের বিশেষ সনদে মালেক ইবনে আনাস হতে বর্ণনা করেছেন যে,

‘দীর্ঘ ছয় মাস যাবত মহানবী (স.) যখন ফজরের নামাযের জন্য ফাতেমা’র গৃহে সামনে দিয়ে যেতেন তখন বলতেন: ‘নামায! নামায!‍ হে আহলে বাইত’… অতঃপর তিনি

((إنما یرید الله لیذهب عنکم الرجس اهل البیت و یطهرکم تطهیرا)) –এ আয়াতটি তেলাওয়াত করতেন।(সূরা আহযাব-৩৩)

খ্রিষ্টান চিন্তাবিদ সুলাইমান কাত্তানী’র দৃষ্টিতে নারীকূলের শিরোমনি

হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) এর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন বাণী ও রচনা রয়েছে যেগুলোর সংখ্যা অত্যাধিক, চাই তা বন্ধুদের পক্ষ হতে হোক বা শত্রুদের। বিশেষ করে বিজ্ঞ ও ন্যায়নীতিবান শত্রুদের পক্ষ হতে।

লেখক যখন এ অধ্যায়টি লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখন তার সম্মুখে বিশ্বের বিভিন্ন লেখক ও  চিন্তাবিদদের শত শত গ্রন্থ রয়েছে। ঐ সকল মন্তব্য ও লেখা একত্রে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। সুতরাং বাধ্য হয়ে কয়েকজন চিন্তাবিদ ও লেখকের মন্তব্য এখানে উল্লেখ করা হল।

লেখনী’র এ অংশে অমুসলিম চিন্তাবিদদের মতামত তুলে ধরা হয়েছে।

প্রথমে ‘সুলাইমান কাত্তানী’ নামক এক খ্রিষ্টান সাহিত্যিক, লেখক ও কবির মন্তব্য দিয়ে শুরু করতে চাই। যিনি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রন্থও রচনা করেছেন যা ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়েছেন।

তার সম্পর্কে অধিক জানতে এটা জানা জরুরী যে, কয়েক বছর পূর্বে নাজাফের আরবি-ইসলামি গ্রন্থাগার কর্তৃক আরব লেখকদের মাঝে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। যাতে প্রতিদ্বন্দিরা মুত্তাকিদের মাওলা আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) এর সম্পর্কে রচনা লিখে উক্ত প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন।

ঐ প্রতিযোগিতায় বিশিষ্ট লেবাননীয় সাহিত্যিক ও কবি জনাব সুলাইমান কাত্তানী ‘আল ইমাম আলী নাবরাস ও মেতরাস’ শীর্ষক গ্রন্থ লিখে অংশগ্রহণ করে। ঐ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সকল লেখা ও গ্রন্থাদি পর্যালোচনার পর সুলাইমান কাত্তানী’র গ্রন্থটি প্রথম স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয় এবং লেখক প্রথম পুরস্কার লাভ করেন।

দ্বিতীয় বার একই গ্রন্থাগার হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) এর ব্যক্তিত্বের উপর প্রতিযোগিতা আয়োজন করে। এবারও তিনি ‘ফাতেমাতুয যাহরা, ভিতরুন ফি গামাদিন’ শীর্ষক গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে প্রথমস্থান অধিকার করে প্রথম পুরস্কারটি জিতে নেন।

যদিও প্রথম অবস্থায় এ ধারণা করা হচ্ছিল যে, যেহেতু লেখক একজন অমুসলিম তাই তাকে উত্সাহিত করার উদ্দেশ্যে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু তার লেখা অধ্যয়নের পর স্পষ্ট হল যে, সে এ পুরস্কারের যোগ্য ছিল। কেননা তিনি একজন অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম লেখকদের সাথে একজন ইসলামি ব্যক্তিত্বের জীবনী ও ব্যক্তিত্বের উপর গ্রন্থ রচনা পূর্বক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং তার ঐ বইসমূহ হতে এও স্পষ্ট হয়েছে যে, তিনি অধিকাংশ ক্ষেত্রে সত্য বিষয়টিতে পৌঁছুতে পেরেছেন। সুতরাং যদি তার গ্রন্থটি প্রথম স্থান অধিকার করে তবে তাতে কোন কথা থাকার কথা নয়। কেননা হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) একজন ঐশী ও বিশ্ব ব্যক্তিত্বের অধিকারী যার ব্যাপারে লেখার অধিকার সকলের রয়েছে। যদিও বন্ধুর কথাকে শত্রু বা মিত্র যে কারও মুখ হতে শুনতে ভাল লাগে। তার জ্বলন্ত প্রমাণ হচ্ছে ‘আল ফাজলু মা শাহেদতু বিহিল আ’দা’ গ্রন্থটি।

বর্তমানে জামিলা বু পাশা, ইন্দ্রা গান্ধি, ফ্লোরেন্স, এলিজাবেথ ও বিনতুল হুদা’র ন্যায় ব্যক্তিত্বের জীবনীর উপর সমগ্র বিশ্বে আলোচনা ও পর্যালোচনা হয়ে থাকে। এখানে কি এটা সমিচীন নয় যে, বেহেশতের নারীকূলের সর্দারিনী, সর্বশ্রেষ্ঠ নারী, বিশ্বনবীর প্রাণপ্রিয় কন্যা, বেহেশতের যুবকদের সর্দারের মাতা হযরত ফাতেমা যাহরা ( আ.) এর জীবনীর পরিচয় তুলে ধরা?

জনাব সুলাইমনা কাত্তানী তার গ্রন্থের শুরুতে লিখেছেন:

‘ফাতেমা যাহরা (আ.) এর মর্যাদা এর উর্দ্ধে যে, ইতিহাসের প্রমাণ এবং রেওয়ায়েত তার ব্যক্তিত্বের প্রতি ইশারা করবে, এতটাই সম্মানিত যে, জীবনী ভিত্তিক লেখা গ্রন্থসমূহ তার পরিচয় তুলে ধরবে। ফাতেমা যাহরা ( আ.) এর জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, তিনি মুহাম্মাদ (স.) এর কন্যা ও আলী (আ.) এর স্ত্রী, হাসান ও হুসাইন (আ.) এর মাতা এবং বিশ্বের নারীদের সর্দার’।

(ফাতেমা যাহরা ভিতরুন ফি গামাদিন, ভূমিকা, পৃষ্ঠা ৩)

তিনি তার গ্রন্থের শেষাংশে লিখেছেন: ফাতেমা, হে মোস্তফা’র কন্যা! হে সর্বোচ্চ উজ্বল চেহারার অধিকারী যাকে পৃথিবী নিজের কাঁধে স্থান দিয়েছে, তুমি শুধুমাত্র দুইবার মুচকি হেসেছো; একবার নিজের বাবার সম্মুখে যখন তিনি মৃত্যুশয্যায়ে ছিলেন এবং তোমাকে তার সাথে অতি দ্রুত সাক্ষাতের সুসংবাদ দিলেন। আর দ্বিতীয়বার তোমার মুচকি হাসিটি তোমার সমগ্র ঠোঁটে ছড়িয়ে পড়েছিল যখন ছিল জীবনের শেষ মুহূর্তে তুমি তোমার শেষ নিঃশ্বাসটি ছেড়ে দিলে… তুমি সর্বদা ভালাবাসার সাথে জীবন যাপন করেছো, তুমি পবিত্রতার সাথে জীবন-যাপন করেছো…

তুমি পৃথিবীকে উপহাসব্যাঞ্জক মুচকি হাসির সাথে পরিত্যাগ করে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে রওনা হয়েছো। হে নবী কন্য! হে আলী’র স্ত্রী! হে হাসান ও হোসাইনের মাতা, হে সকল যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী’।

(প্রাগুক্ত গ্রন্থের অনুবাদ, পৃ. ২)

ফরাসী গবেষক লুঈ মাসিনিউন:

প্রখ্যাত ফরাসী প্রাচ্যবিদ ও গবেষক লুঈ মাসিনিউন, যিনি নিজের জীবনের বেশ কয়েকটি বছর হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) কে চেনার কাজে ব্যয় করেছেন। তার এক গবেষণা লব্ধ প্রবন্ধে নাজরানের খ্রিষ্টানদের সাথে হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর মোবাহেলা, –যা ১০ম হিজরীতে মদিনায় সংঘটিত হয়েছিল- সম্পর্কে লিখেছেন, যাতে গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলি বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি তার ঐ প্রবন্ধে বলেন: আওরাদ ও হযরত ইবরাহিম (আ.) এর দোয়াসমূহে ১২টি নূরে সংবাদ দেয়া হয়েছে যারা ফাতেমা কেন্দ্রিক…

মুসার তাওরাত গ্রন্থেও মুহাম্মাদ (স.) ও তার বরকতপূর্ণ কন্যা এবং ইসমাঈল ও ইসহাকের (হাসান ও হুসাইন) ন্যায় তাঁর দু’টি সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।

ঈসা (আ.) এর ইঞ্জিলেও আহমাদ (স.) এর আগমনের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। আরো সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, তিনি একটি বরকতপূর্ণ কন্যা সন্তানের অধিকারী হবেন, যে দু’টি পুত্র সন্তানের জন্ম দেবে…’।

আব্দুর রাহমান বাদাভী’র ব্যক্তিত্ব (যারা সাথে মোবাহেলার বিষয়টিও এসেছে), লুঈ মাসিনিউন, পৃষ্ঠা ১৭৯, ১৯৪৪ সালে মিলানে প্রকাশিত।#

সূত্র: ইন্টারনেট

 

সুখী পরিবার-২

প্রতিটি পরিবারকে সুখ-শান্তির সোনালী নীড়ে পরিণত করার সুমহান লক্ষ্য অর্জন করার জন্যে যেসব দিক-নির্দেশনা আল্লাহ রাববুল আলামীন এবং তাঁর প্রিয় রাসূল দিয়েছেন, সেগুলোর প্রতি যথার্থ মনোযোগী হওয়া একান্ত জরুরী ৷ পরিবারের সূচনা হয় বিয়ের মধ্য দিয়ে ৷ বিয়ের মাধ্যমেই নর এবং নারীর দুটি জীবন একটি মাত্র স্রোতে প্রবাহিত ৷ বাংলায় একটি প্রবাদ আছে,তেলে-জলে কখনো মেশে না ৷ অর্থাৎ মিলন ঘটে না ৷ তাই দেখা যায় বিপর্যয় ৷ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও যদি তেল আর জলের মতো হয়, তাহলে পারিবারিক বিপর্যয় দেখা দেবে-এটাই স্বাভাবিক ৷ ফলে প্রশ্ন দাঁড়ায় নর-নারী বাছাই কীভাবে করতে হবে ? অধিকার বা কর্তব্য সম্পর্কে কথা বলার আগে আমরা বরং এ প্রশ্নটির সমাধান করার চেষ্টা করি ৷

বিয়ের ক্ষেত্রে কনের চারটি গুনের কথা হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ এগুলো হলো- ঐশ্বর্য, আভিজাত্য, সৌন্দর্য ও দ্বীনদারিত্ব ৷ ইমাম রেজা (আঃ) বলেছেন, একজন পুরুষের জন্যে সবচেয়ে বড়ো সম্পদ হলো ঈমানদার নারী পাওয়া, যে নারী সেই পুরুষটিকে দেখামাত্রই সুখী হয়ে উঠবে এবং তার অবর্তমানে তার সম্পদ ও সম্মান রক্ষা করবে ৷” নারীর যে চারটি গুনের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে দ্বীনদারিত্বই হলো প্রধান বিষয় ৷ কারণ দ্বীনদার রমনীর কাছে অন্য তিনটি গুনের মূল্য অপ্রধান ৷ কেননা দ্বীনদার নারী ঐশ্বর্য, আভিজাত্য কিংবা সৌন্দর্যের বড়াই করে না ৷ ধন-সম্পদ এবং বংশগত সাম্য না থাকলে খুবই সমস্যা দেখা দেয় ৷ স্বামী বেশী ধনী হলে স্ত্রীকে ছোটলোক বলে খোটা দেয়ার আশঙ্কা থাকে ৷ পক্ষান্তরে স্ত্রীর বাবা-মা তুলনামূলকভাবে ধনী হলে স্বামীকে ছোটলোক বা বিভিন্নভাবে খোটা দেয়ার আশঙ্কা থাকে ৷ বিশেষ করে জীবন-যাপন প্রণালীতে তারতম্যের সম্ভাবনা থাকে ৷ আর এসব থেকেই পারিবারিক সমস্যা সাধারণত দেখা দেয় ৷ আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাহলো এই চারটি বিষয়ে সমতা থাকলেও বর-কনের পারস্পরিক পছন্দের ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে; কোনভাবেই জোর-জবরদস্তি করা যাবে না ৷ জোর করে বিয়ে করা বা দেয়া হলে পরিণতি কখনোই ইতিবাচক হয় না ৷ এই মৌলিক বিষয়গুলো মনে রেখে বিয়ে করার পর স্বামী-স্ত্রীর যে দাম্পত্য জীবন গড়ে ওঠে, সেক্ষেত্রে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর এবং স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্যগুলো আন্তরিকভাবে পালন করা সুখ-শান্তির অনিবার্য শর্ত ৷ আমরা প্রথমেই স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্যের দিকগুলো ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি ।
একটি পরিবারের স্তম্ভ হলো দুটি ৷ নারী-পুরুষ তথা স্বামী ও স্ত্রী ৷ এ দুজনের মধ্যে যে কোন একজনকে পরিবারের অভিভাবকত্ব নিতে হয় ৷ অভিভাবক শূন্য পরিবার বিশৃঙখল ৷ পরিবার সংগঠনটির সাথে ঘরে-বাইরের বহু বিষয়ের সম্পর্ক থাকে ৷ তাছাড়া নারীর তুলনায় পুরুষ যেহেতু কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রাকৃতিকভাবেই শক্তিমান, তাই আল্লাহ রাববুল আলামীন পুরুষকেই স্ত্রী তথা পরিবারের অভিভাবক হিসাবে ঘোষণা করেছেন ৷ বলেছেন, ‘পুরুষরা হলো স্ত্রীদের অভিভাবক এবং ভরণপোষণকারী ৷’ অন্যদিকে রাসূলে খোদা (সাঃ)বলেছেন, ‘পুরুষ হলো পরিবারের প্রধান, আর যারা প্রধান তাদের কর্তব্য হলো নিজ নিজ অধীনস্থদের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া ৷’
তো কোরআণ এবং হাদীস অনুযায়ী পরিবারের অভিভাবকত্ব যেহেতু পুরুষ তথা স্বামীর ওপর ন্যস্ত হয়েছে, তাই স্বামী অর্থাৎ পরিবারের অভিভাবকের দায়িত্ব এবং কর্তব্যও অনেক বেশী ৷ পুরুষ কর্তাটিকে তাই হতে হয় পরিবারের প্রধান শৃঙ্খলা বিধায়ক ৷ যে পরিবারে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়, সেখানেই বিপর্যয় নেমে আসে ৷ তবে এখানে যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে তাহলো পরিবারের কর্তা বলে সে যেন অন্যান্যদেরকে তার প্রজা ভেবে না বসে বরং পারস্পরিক পরামর্শ, আন্তরিকতা ও দুরদর্শিতার সাথে শ্রদ্ধা-সম্মান ও স্নেহের ভিত্তিতে একটি সুন্দর, সুশৃঙ্খল পরিবেশ গড়ে তোলাই হবে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য ৷ স্ত্রী যেহেতু পরিবার সংগঠনে স্বামীর প্রধান সহযোগী এবং পরিবারের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বিধানের প্রধান ব্যক্তি, সেজন্যে স্ত্রীর ওপর স্বামীর যথাযথ দায়িত্ব পালনই হলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ৷ একথা সর্বজনবিদিত সত্য যে, দীর্ঘ পথ চলতে গেলে মাঝখানে ছোট-খাটো সমস্যা অর্থাৎ হোঁচট খাওয়ার একটা আশঙ্কা থেকে যেতেই পারে ৷ আর যেখানে ব্যক্তি এবং ব্যক্তিত্বের সহাবস্থান ঘটে এবং তা যদি স্বামী-স্ত্রীর মতো দুটি ব্যক্তিত্বের দীর্ঘ সংসার জীবনের পথ পাড়ি দেয়ার মতো ঘটনা হয়, তাহলে ছোট-খাটো যে কোন ধরণের সমস্যা দেখা দেয়াটা অসম্ভব কিছু নয় ৷ আর সমস্যা দেখা দিলে দোষ কার তা না খুঁজে বরং কীভাবে তার সমাধান করা যায়, তারই প্রচেষ্টা চালানো উচিৎ ৷ কারণ মানুষের প্রকৃতিগত মানবীয় দুর্বলতার কারণেই দোষ-ত্রুটি হয়ে থাকে ৷ ফলে দোষ-ত্রুটি খুঁজতে গেলে অযথা বিড়ম্বনাই বাড়বে ৷ সেক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ ৷ সমস্যা সমাধানের পর দোষ যদি স্ত্রীরও হয়ে থাকে, তবু তাকে তিরস্কৃত করা যাবে না ৷ কারণ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, ‘কোন ঈমানদার পুরুষ যেন কোন ঈমানদার নারীকে ঘৃণা না করে ।’ স্ত্রীরতো দোষ থাকতেই পারে ৷ তাই বলে কি তার কোন গুণ নেই ? যদি গুণ থেকেই থাকে, সেক্ষেত্রে গুণগুলোকে সামান্য তুলে ধরে দোষকে চেপে যাওয়াটাই হবে অভিভাবকসুলভ আচরণ ৷ আল্লাহ রাববুল আলামীন পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণ কর ৷ তোমরা যদি তাদের অপছন্দ কর, তাহলে অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ তাদের মধ্যে অনেক কিছুই ভালো ও কল্যাণ জমা করে রেখেছেন ৷’ স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশিত আচরণবিধি অনুযায়ী অবশ্যই সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে হবে ৷ মনে রাখতে হবে মহানুভবতার মধ্যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে, আর অসহিষ্ণুতার মধ্যে রয়েছে সমূহ বিপর্যয় ৷

স্বামীকে হতে হবে প্রেমিক ৷ প্রেমের মাধ্যমে, ভালোবাসার মাধ্যমে স্ত্রীর সাথে নীবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে ৷ প্রত্যেক স্ত্রীই চায় তার স্বামী তাকে একান্তভাবে ভালোবাসুক ৷ কিন্তু ভালোবাসার জন্যে স্ত্রীরা সাধারণত মুখ খোলে না ৷ সেজন্যে স্বামীর ওপর একটা গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয় স্ত্রীকে আবিস্কার করার ৷ প্রতিটি মানুষেরই ব্যক্তিগত ভালো লাগা, মন্দ লাগার ব্যাপার থাকে ৷ স্ত্রীর প্রিয় বিষয়গুলোকে অর্থাৎ সে কী পছন্দ করে, কী অপছন্দ করে-সে বিষয়গুলো মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করতে হবে ৷ তার চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপারগুলোর প্রতিও একইভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে ৷ এগুলো আবিষ্কার করার পর ন্যায় সঙ্গত চাওয়া-পাওয়া ও অধিকারগুলো পূরণের ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে ৷ স্বামী তার আচার-আচরণ, ভাবভঙ্গী দিয়ে স্ত্রীকে যদি বোঝাতে পারে তাহলে স্বামীর প্রতি স্ত্রীও আকৃষ্ট হবে এবং সেও তার ভালোবাসা উজাড় করে দেবে ৷ আর স্বামীকে যদি তার স্ত্রী ভালোবাসে তাহলে তার সংসার গোছাতেও আন্তরিক হবে ৷ নারী জাতি স্বভাবতই স্নেহ, আদর, ভালোবাসা প্রত্যাশা করে৷ যতোই সে স্নেহ আর আদর পায়, ততোই সে সুন্দর হয়ে ওঠে ৷ নারী এমন এক আবেগপ্রবণ চরিত্র যে, স্নেহ আর আদর পাওয়ার জন্যে এবং সবার প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠার জন্য সে অনেক কিছু ত্যাগ করতেও দ্বিধা করে না ৷ ছোট বেলা থেকে যে মেয়েটি বাবা-মায়ের আদর-স্নেহ পেয়ে বড়ো হলো, সে মেয়েটি যখন বিয়ে করে স্বামীর কাছে আসে তখন স্বাভাবিকভাবেই সে চায় স্নেহ ভালোবাসার সকল আকাঙ্ক্ষা তার কাছ থেকেই পূরণ করতে ৷ বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে এতোদিন যতো ভালোবাসা পেয়েছিল সে, স্ত্রী হয়ে স্বামীর কাছে যাবার পর স্বামীর কাছ থেকেই তা পেতে চায় ৷ ফলে কতোবেশী পরিমাণ ভালোবাসা একজন স্ত্রী তার স্বামীর কাছে প্রত্যাশা করে তা একবার ভেবে দেখুন ৷ আর স্ত্রীর তা প্রাপ্য, কারণ স্ত্রী তার নিকটজনদের ছেড়ে একমাত্র স্বামীর কাছে চূড়ান্ত আস্থা নিয়ে এসেছে ৷ তার এই ত্যাগকে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখা খুবই জরুরী ৷ নবী করিম (সাঃ)বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি স্ত্রীকে বলে আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি’ এই কথাটা তার স্ত্রীর মন থেকে কখনোই মুছে যায় না ৷ এই হাদীস থেকে বোঝা যায় যে, স্ত্রীকে মনে মনে ভালোবাসলে চলবে না, ভালোবাসার কথা মুখেও প্রকাশ করতে হবে এবং ভালোবাসা হতে হবে আন্তরিক ও অকৃত্রিম ৷ স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে অবস্থান করলে নিয়মিত খোঁজ-খবর নেয়া উচিত ৷ কাজের ফাঁকে অফিস থেকে ফোন করে কথা বললে স্ত্রীর নিঃসঙ্গতা কাটে ৷ বিদেশ-বিভূঁয়ে বাস করলে চিঠিপত্র লেখা যেতে পারে ৷ ফোন করে অভাব-অনুভূতির কথা প্রকাশ করলে দূরত্ব সত্ত্বেও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায় ৷ যেখানেই আপনি বেড়াতে যান না কেন, বৌ-এর জন্য ছোট-খাটো করে হলেও উপহার সামগ্রী কিনে এনে তার হাতে দিলে স্ত্রী বুঝবে যে, স্বামী তাকে ভুলেনি ৷ সামান্য উপহার সামগ্রী ভালোবাসার অকৃত্রিম নিদর্শন হয়ে উঠবে ৷ বিনিময়ে স্ত্রীর অমূল্য ভালোবাসায় ধন্য হবে স্বামীর জীবন, পুষ্পিত হয়ে উঠবে সংসার তথা দাম্পত্য জীবন ৷

 

সুখী পরিবার-১

জীবনের স্রোতোধারার অনিবার্য সঙ্গী হলো মানবজাতি ৷ ‘নর’ এবং ‘নারী’ মানবজাতির এই জীবনধারাকে প্রবাহমান গতি দিয়েছে সেই সৃষ্টির আদি মানব আদমের যুগ থেকে ৷ বর্তমান বিশ্বের ৬১০ কোটি মানুষ যুগ-যুগান্তের ধারাবাহিক উত্তরাধিকার এখন ৷ মানুষ সম্পর্কে প্রসিদ্ধ একটি বক্তব্য প্রায় সবারই জানা, তাহলো-‘মানুষ হলো বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন প্রাণী’ ৷ সত্যিই এই বিচারবোধই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে তুলেছে ৷ সেজন্যে মানুষ অন্যান্য প্রাণীর মত জীবন যাপন না করে আল্লাহ প্রদত্ত বুদ্ধিমত্তা দিয়ে গড়ে তুলেছে একটি সুশৃঙ্খল সামাজিক ও পারিবারিক জীবন ৷ যুগে যুগে আল্লাহ প্রেরিত রাসূলগণই এই পরিবার গঠনের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন ৷ সুশৃঙ্খল এই পারিবারিক কাঠামো থেকেই মানুষ পেয়েছে সভ্যতার আলো ৷ পরিবার কাঠামোর সাথে সভ্যতা যেন নিত্যসঙ্গী ৷ যেখানে পরিবার কাঠামো নেই, সেখানে সভ্যতা বলতে যা বোঝায়, তার সাথে অন্যান্য প্রাণীকূলের জীবনযাপন পদ্ধতির খুব বেশী পার্থক্য নেই ৷ নারী এবং পুরুষ উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে পরিবার ৷ এই ‘সম্মিলিত’ শব্দের মধ্যেই নিহিত রয়েছে নারী-পুরুষের পারস্পরিক অবদান এবং অধিকারের সূক্ষ্ম বিষয় ৷ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই নারী-পুরুষের অধিকার এবং পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাপারে বিভিন্ন ধর্ম ও আদর্শগত মতবাদ বিচিত্র দৃষ্টিভঙ্গী প্রকাশ করেছে ৷ সেসব দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী একমাত্র ইসলাম ব্যতীত অন্য সকল ধর্ম ও মতবাদই নারীকে কখনো ভোগ্যপণ্যে কিংবা কখনো পুরুষ দেবতার সেবাদাসীতে পরিণত করেছে ৷ সভ্যতার এই স্বর্ণযুগেও নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও অধিকার নিয়ে এখনো চলছে বিচিত্র কৌণিক মতামত ৷

পশ্চিমা সমাজে পরিবার কাঠামো ভেঙ্গে পড়ায় সেখানে বিবাহ-বহির্ভূত লিভিং টুগেদার বা নারী-পুরুষের একত্রবাস প্রথা চালু রয়েছে ৷ এছাড়া বিয়ের প্রচলন সেখানে যতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, তাতে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার প্রশ্নে মতবিরোধের জের ধরে ডিভোর্সের মাত্রাই ব্যাপক ৷ যে সমাজে লিভ-টুগেদারের জন্যে বিয়েরই প্রয়োজন নেই, সে সমাজে ডিভোর্স বা তালাক প্রদানের মাত্রা যে কতো মামুলি ও ভয়াবহ, তা খুব সহজেই অনুমান করা যায় ৷ জ্ঞান-বিজ্ঞানে বা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের মানদন্ডে পশ্চিমা জগত আধুনিক সভ্যতার দাবীদার হলেও ক্ষয়িষ্ণু পরিবার কাঠামোর ফলে পাশ্চাত্য সভ্যতা বিশ্বব্যাপী অকল্যাণই বয়ে এনেছে ৷ তাদের ঐ কু-সংস্কৃতির ব্যাপক প্রভাবে মুসলিম জাতির মধ্যেও তা এখন সংক্রমিত হচ্ছে ৷ এরফলে পারিবারিক বিশৃঙ্খলা ব্যাপক বেড়ে গেছে ৷ অথচ পরিবারের প্রধান যে দুটি স্তম্ভ অর্থাৎ বাবা-মা বা স্বামী-স্ত্রী-তাদের মধ্যে যদি পারস্পরিক কর্তব্যবোধ স্পষ্টভাবে জাগ্রত থাকতো, তাহলে এই সমস্যা হয়তো দেখাই দিত না ৷ বহু শিক্ষিত পরিবারেও যথার্থ ইসলামী শিক্ষার অভাবে এ ধরণের সমস্যা বিরাজ করছে ৷ শিক্ষিত এইসব পরিবার তাদের পারস্পরিক অধিকার সম্পর্কে চিন্তা করে থাকে পাশ্চাত্যের মানদন্ডে, যেখানে নারী-পুরুষ স্বাধীনভাবে যাপন করছে পশুর মত জীবন ৷ তাই মুসলিম দম্পতিদের উচিৎ তাদের নিজস্ব ধর্মাদর্শ সম্পর্কে সচেতন হয়ে পারস্পরিক কর্তব্যবোধে উজ্জীবিত হওয়া এবং যথাযথভাবে তা মেনে চলা ৷ তাহলেই দেখা যাবে সংসার হয়ে উঠেছে শান্তির সোনালী নীড়।
একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, স্বামী-স্ত্রীর সুদৃঢ় বন্ধন এবং পারস্পরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামই সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ স্থাপন করেছে ৷ ইসলাম পূর্বকালে নারীকে মানুষই মনে করা হতো না ৷ গ্রীকরা তাদেরকে মনে করতো শয়তানের চর ৷ জৈবিক চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনেই তাদের ব্যবহার করা হতো ৷ রোমানদের অবস্থাও ছিল তাই ৷ সেখানে কন্যাসন্তানকে বিক্রি করা হতো ৷ জাহেলিয়াতের যুগে আরবে কন্যাসন্তানকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলার ইতিহাস সর্বজনবিদিত ৷ পারস্য সভ্যতায়ও কন্যাসন্তানকে ভীষণরকম অকল্যাণকর বলে মনে করা হতো ৷ চীনের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, কোন পরিবারে কন্যাসন্তানের জন্ম হলে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনরা দুঃখ ও সহানুভূতি জানাতো ৷ অর্থাৎ নারী ছিল একটা ভোগ্যপণ্য ৷ তাদের ব্যক্তিগত কোন মানবিক সত্ত্বাই স্বীকার হতো না ৷ আর হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা মৃত ব্যক্তির সাথে তার স্ত্রীকেও জীবন্ত পুড়ে মারতো ৷ এরকম করুণ একটা ঘটনাকে তারা স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালোবাসা ও ত্যাগের নিদর্শন বলে মনে করতো ৷ কী আশ্চর্য, বিধবাকে সম্পত্তির অধিকার না দিয়ে, দিয়েছিল চিতার আগুনে জীবন্ত পোড়াবার নির্দেশ ! এভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিচিত্র উপায়ে নারীদের সত্ত্বাকে লাঞ্চিত করা হয়েছিল ৷ ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের ফলে নারী পেল তার মৌলিক মানবিক অধিকার । নবী করিম (সাঃ) ঘোষণা করেন, হে মুসলমানেরা! তোমাদের উপর তোমাদের স্ত্রীদের যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি তাদের উপরও তোমাদের অধিকার রয়েছে ৷” আল্লাহ রাববুল আলামীন বললেন, নারীরা তোমাদের পোষাক এবং পুরুষরাও নারীদের পোষাকস্বরূপ ৷ যুগান্তকারী এইসব ঘোষণার মাধ্যমে নারী ফিরে পেল তাদের অধিকার, ফিরে পেল মানুষ হিসাবে তাদের অস্তিত্ব, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তারাও হয়ে উঠলো সভ্যতা সৃষ্টির প্রশংসিত স্রষ্টাদের গর্বিত অংশীদার ৷ কবি নজরুলের ভাষায়-

পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর, চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর

ইসলাম নারী এবং পুরুষকে তাদের পারস্পরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি পরিবারের শৃঙ্খলা বিধানের জন্যে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে একটা আদর্শ সমাজ বিনির্মানকে সুনিশ্চিত করেছে ৷ পরিবারের মূল হলো স্বামী-স্ত্রী বা বাবা-মা৷ স্বামী-স্ত্রীর জীবনে শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার অনুশীলন যদি না থাকে, তাহলে তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জীবনেও তা আশা করা যায় না ৷ আর স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের বংশধরের সামষ্টিক রূপই হলো সমাজ ৷ আর সমাজ কাঠামোর বৃহত্তর সংগঠনই রাষ্ট্র ৷ তাই বলা যায় একটা রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ও আদর্শের মূল ভিত্তিই হলো পরিবার ৷ ইসলাম তাই পরিবার তথা বাবা-মা এবং তাদের সন্তানদের মধ্যকার পারস্পরিক শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা বিধানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একের প্রতি অপরের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন সম্পর্কে যথাযথ রূপরেখা দিয়ে দিয়েছে ৷ কারণ স্বামী-স্ত্রীর সুদৃঢ় বন্ধনই উত্তর প্রজন্মের নৈতিক শৃঙ্খলা বিধানের একমাত্র উপায় ৷ সমাজের প্রতি একটু সচেতন দৃষ্টি দিলে লক্ষ্য করা যাবে, যে পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ রয়েছে, সে পরিবারে শান্তিতো নেই-ই বরং পরবর্তী প্রজন্মও বিশৃঙখল জীবন যাপনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে ৷ সামাজিক অনাচার, মাদকাশক্তিসহ মানবিক মূল্যবোধ বর্জিত কর্মকান্ডের মূলে রয়েছে এই পারিবারিক বিশৃঙ্খলা ৷ অথচ পরিবারে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা সাধারণত খুবই ছোটখাট ঘটনাকে কেন্দ্র করেই দানা বেঁধে ওঠে ৷ ঘটনাগুলোর জন্য পারস্পরিক অহমবোধ, অশ্রদ্ধা, সম্মানহীনতা এবং নিজ নিজ কর্তব্যের ব্যাপারে ইসলামের বেধে দেয়া মানদন্ড সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা না থাকাই দায়ী ৷ আমাদের সমাজে এখনও অজ্ঞানতাবশত স্বামীদের অনেকেই মনে করেন যে, স্ত্রী হলেন তাদের দাসীর মতো ৷ স্ত্রীর কাজ হলো স্বামীর সকল আদেশ মেনে চলা ৷ খুব স্বাভাবিকভাবেই একজন স্ত্রী এ ধরনের স্বৈরাচারী স্বামীর কর্তৃত্ব মেনে নেয় না ৷ সেজন্যেই শুরু হয় দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ৷ স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের ওপর যেরকম অধিকার চর্চা করার চেষ্টা চালায়, স্ত্রীদেরও যে স্বামীর ওপর সেরকম আধিকার চর্চার সুযোগ রয়েছে এ কথাটা স্বামীরা ভুলে যান এবং পুরুষতান্ত্রীক স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেন ৷ সেজন্যে স্ত্রীর ওপর স্বামীর কর্তব্য এবং স্বামীর ওপর স্ত্রীর কর্তব্য সংক্রান্ত ইসলামী নীতিমালা নিয়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব ৷ প্রথমেই আমরা স্ত্রীর ওপর স্বামীর কী কী কর্তব্য রয়েছে সেগুলো তুলে ধরবো ৷ একজন পুরুষ ইসলামের এই নীতিমালার মানদন্ডে নিজেকে বিচার করবেন এবং পারিবারিক শৃঙ্খলা ও দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবেন এটাই প্রত্যাশা ৷

 

নারীর অধিকার

নারী অধিকার বিষয়টি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশ আলোচিত বিষয়। নারী তার অধিকার এবং অবস্থানের ক্ষেত্রে ছিল অনেক পিছিয়ে। বর্তমান সময়ে বহু সমাজে নারীরা বহু রকম সমস্যার শিকার এমনকি নির্যাতনের শিকার। সে জন্যে আমরা একটি পরিবারে নারীর মৌলিক অধিকার সম্পর্কে ইসলাম কী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে সে বিষয়ে খানিকটা আলোকপাত করার চেষ্টা করবো।

বিয়ে এবং পরিবার গঠন মানব সভ্যতার একটি জরুরী প্রয়োজন। পরিবারের ছত্রচ্ছায়ায় নারী–পুরুষ এবং সন্তানেরা উন্নয়ন ও পূর্ণতায় পৌঁছে। আসলে পরিবার হচ্ছে মানব উন্নয়নের সবচেয়ে উপযোগী ক্ষেত্র। কেননা সমাজকে একটা জীবন্ত কাঠামোর সাথে তুলনা করা যায় যার বিভিন্ন অঙ্গ রয়েছে,নারী পুরুষ হচ্ছে এই সমাজ কাঠামোর মূল অঙ্গ। এদের সবারই যেমন নিজ নিজ দায়িত্ব রয়েছে তেমনি সামষ্টিক কিছু দায়-দায়িত্বও রয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে পারিবারিক কাঠামো আইনের উর্ধ্বে উঠে প্রেম ভালোবাসা এবং ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল। কেননা এ ক্ষেত্রে দুটি মানব-মানবী তাদের জীবনের সবোর্ত্তম বছরগুলো একে অপরের খুব কাছে থেকে ঘনিষ্টতার মধ্য দিয়ে কাটায়। ইসলামের শিক্ষা হলো পরিবারের সদস্যরা নৈতিক গুণাবলির এমন এক পর্যায়ে পৌঁছাবে যাতে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের অধিকার সম্পর্কে আন্তরিক ও সচেতন হয়।

ইসলামের অধিকার আইনে পরিবারের ভরণ-পোষণ বা অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে পুরুষের ওপর। নারী যেহেতু পরিবারের এই গুরুত্বপূর্ণ ঝামেলা থেকে দায়িত্বমুক্ত, সে জন্যে সাংসারিক রান্না-বান্না এবং সন্তান-সন্ততিকে লালন-পালন করা,তাদের শিক্ষা-প্রশিক্ষণের দায়িত্ব ইত্যাদি বর্তায় নারীর ওপর। বিয়ের (আকদের) পর নারী,পুরুষের কাছ থেকে সম্পদের অধিকার লাভ করে,অর্থাৎ পুরুষ তার মালামাল এবং অর্থ-সম্পদের একটা অংশ তার স্ত্রীকে দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দেয়,যাকে মোহরানা বলা হয়। অবশ্য মোহরানা পুরুষের সামর্থের ভিত্তিতে নির্ধারিত হওয়া উচিত।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সূরা নিসা’র ৪ নম্বর আয়াতে পুরুষদেরকে মোহরানা পরিশোধের দায়িত্ব দিয়ে বলেছেন,

‌’নারীদের মোহরানাকে পরিপূর্ণভাবে প্রদান করো,তবে যদি তারা সন্তুষ্টচিত্তে তার কিছু অংশ ছেড়ে দেয়,তোমরা তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করবে।

বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে মোহরানা নারীর প্রতি পুরুষের সততার প্রমাণ। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ শহীদ মোতাহহারী নারী-পুরুষের সমান অধিকার এবং মোহরানা বাতিল করা সংক্রান্ত বিতর্কের জবাবে বলেছেন,

মোহরানার বিধান আসলে প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটা আরো প্রমাণ করে যে প্রেম পুরুষের পক্ষ থেকে শুরু হয় আর নারী তার প্রেমে সাড়া দেয়। নারীর সম্মানে পুরুষ তাকে একটি উপহার প্রদান করে। সেজন্যে মোহরানার বিধান নারী-পুরুষের সমান অধিকারের নামে বাতিল করা বা রহিত করা উচিত নয়।
ইসলামের আবির্ভাবের আগে মোহরানা ছিল নারী কেনা-বেচার মূল্য। জাহেলিয়াতের যুগে নারীদের কোনো মূল্যই ছিল না। আবার যেই মোহরানাটা পুরোপুরিই ছিল নারীর প্রাপ্য তা বাবা এবং ভাইয়ের অধিকারে দেওয়া হতো। ইসলাম জাহেলী এই বিশ্বাসকে বাতিল করে দিয়ে মোহরানাকে নারীর অধিকার বলে ঘোষণা করে বলেছেঃ পুরুষের পক্ষ থেকে তা আন্তরিকভাবে নারীকে প্রদান করতে হবে। পরিবারে নারীর ভরণ-পোষণও তার প্রাপ্য অধিকার। আজকের সমাজে নারীর ভরণ পোষণ বলতে মৌলিক প্রয়োজনীয়তা যেমন অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসাসহ নারীর জীবনযাপনের জন্যে অন্যান্য বস্তু। স্ত্রীর এইসব মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা স্বামীর অবশ্য কর্তব্য।

আজকালফ্যামিনিস্টরা এবং বহু পশ্চিমা মতবাদ নারীকে প্রদেয় মোহরানা এবংভরণ-পোষণকে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের সাথে বৈষম্যের সমার্থক বলে মনেকরে। অথচ মোহরানা এবং ভরণ-পোষণের বিধানটি নারী-পুরুষের বৈশিষ্ট্য এবংতাদের ভূমিকাগত তারতম্যের কারণেই দেওয়া হয়েছে। প্রজন্ম উৎপাদন এবংঅন্তসত্ত্বার বোঝা বহনের দায়িত্বটি প্রাকৃতিকভাবেই নারীর কাধেঁ অর্পিতহয়েছে। অধ্যাপক শহীদ মোতাহহারীর মতে সন্তান ধারণ এবং শিশুকে দুধ খাওয়ানোরমতো কঠিন দায়িত্ব যেহেতু নারীর ওপর অর্পিত হয়েছে,সে জন্যে তার ভরণ-পোষণপ্রাপ্তির অধিকারটি যথার্থ এবং উপযুক্ত। শারীরিক শক্তি-সামর্থের পার্থক্যথাকার কারণেই নারীর পক্ষে অর্থনৈতিক কঠিন কাজগুলো আঞ্জাম দেওয়া পুরুষেরমতো সম্ভব নয়। পুরুষ ভারি কাজগুলো করার সামর্থ বেশি রাখে। আল্লাহ রাব্বুলআলামিন নারীদের অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পুরুষের ওপরঅর্পন করেছে আবার পুরুষকে তার আত্মিক দিক থেকে নারীর মুখাপেক্ষী করেসৃষ্টি করা হয়েছে।

স্ত্রী এবং মায়ের ভূমিকা পালন করার জন্যে নারীর নিরাপত্তা এবং প্রশান্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যদি একজন নারী শক্ত কাজ করে দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে তাহলে স্বামী-সন্তানের ব্যাপারে করণীয় দায়িত্বগুলো পালন করতে পারবে না। শহীদ মোতাহহারীর মতে, নারীকে যেহেতু প্রফুল্ল থাকতে হয় তাই তার প্রশান্তির প্রয়োজনীয়তা পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি। সৃষ্টি প্রক্রিয়ার বিধানটাই এমন যে, নারী-পুরুষের মাঝে স্বাভাবিকভাবেই কিছু তারতম্য রেখে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এজন্যে ইসলামের বিধান হলো পরিবারের জন্যে কিংবা নিজের জন্যে নারী কাজ করতে বাধ্য নয় বরং নারীর ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করার ভার পুরুষের ওপর বিধিবদ্ধ করা হয়েছে।নারীর দেহ ও মনকে প্রশান্ত রাখার স্বার্থে ইসলাম কাজ করাকে তাদের জন্যে অভিষ্ট্য করে দেয় নি,তবে তাদের মেধা বিকাশ এবং সামাজিক চাহিদা নিশ্চিত করার স্বার্থে চাকুরি করা অগ্রাহ্য নয়।

পাশ্চাত্যে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রশ্নে নারীর বাইরে চাকুরি করাটা একটি মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত। এক্ষেত্রে তারা নারী-পুরুষের প্রকৃতিগত পার্থক্যের বিষয়টি বিবেচনা করছে না। ফলে নারীর মানসিক অশান্তি এবং পরিবার কাঠামো ভেঙ্গে পড়ার ঘটনা পাশ্চাত্যে এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। মার্কিন সমাজ বিজ্ঞানী গেরহার্ড লেনস্কি পশ্চিমা সমাজে তালাকের প্রবণতা বৃদ্ধির ঘটনার পেছনেও এটি দায়ী বলে মনে করেন। বহু মনোবিজ্ঞানী মনে করেন যে নারী তার শারীরিক এবং মানসিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই স্বামী এবং মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি নিজের পেশাগত দায়িত্ব সঠিকভাবে এবং ভালোভাবে পালন করতে পারেন না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন মনোবিজ্ঞানী কর্মজীবী নারীদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, আমেরিকার শতকরা ৬০ ভাগ কর্মজীবী নারী মাতা বলেছেন,তারা প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভুগে থাকেন। নিঃসন্দেহে নারী-পুরুষের মধ্যকার পার্থক্যকে উপেক্ষা করার কারণেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

পশ্চিমাবিশ্ব অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অজুহাতে নারীকে অর্থনৈতিক কঠিন কর্মকাণ্ডেনিয়োজিত করেছে এবং তাকে পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত করেছে। আর নারীওনিজেকে পুরুষের সমান অধিকার অর্জনের জণ্যে মাতৃত্ব এবং স্ত্রীর দায়িত্বথেকে দূরে সরে গেছে। কিন্তু তারা নিজেদের যথার্থ অবস্থান অর্জন করতে পারেনি। ইসলামের দৃষ্টিতে মা এবং স্বামী হিসেবে পরিবারে একজন নারীর অবস্থানখুবই মূল্যবান। তবে এর পাশাপাশি সমাজেও একজন নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকারাখতে পারে।

উপরি উক্ত আলোচনা থেকে এ সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে, নারী-পুরুষভেদে ইসলামের নৈতিক এবং বিশ্বাসগত বিধি-বিধান এক ও অভিন্ন,তবে লৈঙ্গিক বিষয়ে স্বাভাবিকভাবেই পার্থক্য রয়েছে। যেমন ভরণপোষণ প্রদান করা,উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিষয়,পরিবার কাঠামোয় নারী-পুরুষের দায়িত্বের ভিন্নতা ইত্যাদি। ইতিপূর্বে আমরা আলোচনা করেছি যে, স্ত্রীর ভরণপোষণের ব্যয়ভার বহন করা স্বামীর দায়িত্ব। তবে ভরণপোষণের অধিকারটি নিঃশর্ত নয়। ভরণপোষণ পেতে হলে নারীকে কিছু শর্ত পালন করতে হবে। তাহলো দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বামীর যথাযথ আনুগত্য তথা স্ত্রী হিসেবে স্বামীর ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা। তবে আইনগত দিক থেকে এই আনুগত্যের দুই ধরনের অর্থ রয়েছে। সাধারণত, আনুগত্য বলতে স্বামীর প্রতি তার দায়িত্ব পালন করাকে বোঝায়,তাছাড়া পরিবারের অর্থনৈতিক বিষয়ে স্বামীর পরিচালনা মেনে নেওয়াটাও আনুগত্যের পর্যায়ে পড়ে। একইভাবে স্বামীর সাথে স্ত্রীর মেলামেশা-জীবনযাপন করা এবং চলাফেরাটাও এর অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ অর্থে আনুগত্য দাম্পত্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত এবং স্বামীর জৈবিক চাহিদা মেটানো। যে বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করা জরুরী তাহলো নারীরা সাধারণত মাতৃত্বের কাজসহ যেসব কাজ বাসায় আঞ্জাম দেয় সেগুলো আনুগত্যের বাইরে। কোনো কোনো মতাদর্শ বিশেষ করে ফ্যমিনিস্টরা স্বামীর আনুগত্য করাকে লিঙ্গগত বৈষম্য বলে মনে করে। তাদের দৃষ্টিতে আনুগত্যের সংজ্ঞার্থ অনুযায়ী নারী স্বামীর লৈঙ্গিক দাসে পরিণত হয়। অবশ্য প্রাকৃতিকভাবেই নারী পুরুষের অধিকার এবং দায়িত্বের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক থেকেই পার্থক্য রয়েছে।

বৈষম্য তখনই অর্থবহ হয় যখন দেখা যায় দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একই রকম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী,অথচ তাদের সুযোগ-সুবিধাগুলো একরকম নয়। ইসলাম মানুষ হিসেবে নারী-পুরুষকে এক সমান বলে মনে করে এবং নারী-পুরুষের মাঝে কোন রকম বৈষম্যকে গ্র্রহণ করে না। কিন্তু নারী-পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক এবং শারীরবৃত্তীয় পার্থক্য থাকার কারণে তাদের কাজকর্ম এবং দায়িত্বের মাঝেও পার্থক্য থাকবে-এটাই তো স্বাভাবিক। কেউই এমনকি চরম নারীবাদীরাও নারী-পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক এবং শারীরবৃত্তীয় এই পার্থক্য থাকার কথাটি অস্বীকার করতে পারবে না। ফরাসি দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট নারী-পুরুষের শারীরিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কাঠামোর মধ্যেও পার্থক্য রয়েচে বলে মনে করেন। তাঁর বিশ্বাস এই পার্থক্যের ভিত্তিতে সমাজ এবং পরিবারে সবারই সৃষ্টিশীল ভূমিকা রাখার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।

বিয়েরঅনেক লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের মধ্যে একটা হলো নারী-পুরুষের জৈবিক চাহিদা নিশ্চিতকরা। ইসলাম এই প্রয়োজনীয়তাটিকে দ্বিপাক্ষিক বলে মনে করে এবং তা নিশ্চিতকরার স্বার্থে স্বামী-স্ত্রীর প্রকৃতিগত নিজ নিজ দায়িত্ব দেওয়াহয়েছে।বিয়ের ক্ষেত্রে এইসব দায়িত্বের ব্যাপারে পারস্পরিক সচেতনতা যথেষ্টপরিমাণে থাকা প্রয়োজন, পরস্পরের ফিজিওলজিক্যাল এবং বায়োলজিক্যাল বৈশিষ্ট্যসম্পর্কেও জানা উচিত যাতে দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক সন্তুষ্টিবিধানের মধ্য দিয়ে জীবনের প্রশান্তি নিশ্চিত করা যায়। এদিক থেকে পরিবারেনারী-পুরুষের সম্পর্কের অর্থ নারী,পুরুষের সেবাদাসী নয়, বরং তারা উভয়েই একএবং অভিন্ন জীবনের অধিকারী। মনোবিজ্ঞানীদের মতে স্বামীর আনুগত্য স্বীকারনা করার ফলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে। দাম্পত্য জীবনে শীতল সম্পর্ক বিরাজকরা, উশৃঙ্খলতার চর্চা,পারিবারিক ধস নেমে আসা ইত্যাদি বিচিত্র দুর্যোগদেখা দেয়। ইরানী সমাজ বিজ্ঞানী ডঃ রহমতুল্লাহ সিদ্দিক মনে করেনস্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে মিল না থাকাটা তালাকের নেপথ্য গুরুত্বপূর্ণকারণ।

নারীদের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি অধিকার হলো মাতৃত্বের অধিকার। ইসলামের বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এ সম্পর্কে। ইসলাম মায়েদেরকে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়ার জন্যে সকল মানুষকে আহ্বান জানিয়েছে। কোরআনে কারিমও মায়েদের মর্যাদা ও ব্যক্তিত্বকে ব্যাপক উঁচু পর্যায়ে স্থান দিয়েছে। সূরায়ে লোকমানের ১৪ নম্বর আয়াতে বাবা-মায়ের সেবা-যত্ন করা বিশেষ করে মায়ের সাথে সদাচরণ করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বলা হয়ে থাকে মা গর্ভকালীন অবস্থার কষ্ট,দুধ খাওয়ানোর কষ্ট এমনকি সন্তানদের লালন-পালন করা,প্রশিক্ষণ দেওয়ার কষ্টগুলোকে স্নেহ-মমতাপূর্ণভাবে সহ্য করে। সে কারণেই কোরআন সন্তানদের কাছ থেকে সদয় আচরণ ও সদ্ব্যবহার প্রাপ্তিকে মায়েদের প্রাপ্য বলে মনে করে।

একজন মা তার সন্তানকে শিশুকালে দুধ খাওয়ান যাতে সন্তান বেড়ে ওঠে। কোরআন সন্তানকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর মেয়াদ দুই বৎসর বলে ঘোষণা করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তান-সন্ততিদের রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব শরীয়তের বিধান অনুযায়ী বাবার ওপরে বর্তায়। বাবার দায়িত্ব হলো সন্তানদের ভরণ-পোষণ তথা জীবিকা নির্বাহের জন্যে প্রয়োজনীয় অর্থ পরিশোধ করা যাতে মা প্রশান্তচিত্ত্বে সন্তানদের লালন পালন করতে পারে। এ কারণেই সন্তানদের প্রতিপালনের এবং তাদের জীবনে মায়েদের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক। পরিবারের অঙ্গনটা হলো এমন এক সবুজ শ্যামল ও উর্বর ভূমির মতো যেখানে সন্তানেরা বেড়ে উঠবে প্রস্ফুটিত ফুলের মতো,বেড়ে উঠবে সতেজতার সাথে। এক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকাটাই মৌলিক।

সন্তানদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে মায়েদের ভূমিকা দু’দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি হলো শিশু তার শৈশবের ব্যক্তিত্ব বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ বছরগুলো মায়ের স্নেহ-মমতার মধ্যেই কাটায়। ফলে এই বছরগুলোতে শিশু তার আচার-আচরণ ও অভ্যাস গড়ে তোলার ব্যাপারে মায়েরই মুখাপেক্ষী থাকে। দ্বিতীয়ত, সন্তান এ সময় মাকেই বিপদ-আপদে একমাত্র নিশ্চিত আশ্রয়স্থল মনে করে। সেজন্যে শিশু যখনই কোন রকম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে,তখনই সে দৌড়ে গিয়ে মায়ের আঁচলে লুকায়। ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী জন বাবলী বলেছেন,’অনেক পরে এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছি যে,মায়ের সাথে সন্তানদের আন্তরিক সম্পর্ক না থাকলে শিশুরা বিশেষ করে পুত্র শিশুরা এমন এক ব্যক্তিতে পরিনত হয় যে কিনা অন্যান্যদের সাথে যথাযথ সম্পর্ক সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় না।‘

সন্তান প্রতিপালনেরব্যাপারে মায়ের যথাযথ ভূমিকা পালনে ঔদাসীন্য পশ্চিমা সমাজে বহু সমস্যারসৃষ্টি করেছে। মার্কিন বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী ডেভিস কিংস্‌লিলিখেছেন,’পাশ্চাত্যে শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক একটি দিক হচ্ছে বাবা-মা‘র সাথেসন্তানদের দূরত্ব সৃষ্টি করা।‘ পশ্চিমা সমাজে মায়েরা তাদের সময়েরবেশিরভাগই বাসার বাইরে এবং কর্মস্থলে ব্যয় করেন আর তাদের সন্তানেরাডে-কেয়ার সেন্টারে কাটায়। মা বাসায় ফেরার পরও ক্লান্তির কারণে সন্তানেরপ্রতি মাতৃত্বের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারে না। মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ডক্টর বার্টন ওয়ায়েটডে-কেয়ার সেন্টারকে শিশুদের জন্যে একটা বিপর্যয় বলে মনে করেন। তিনিবলেছেন,ডে-কেয়ার সেন্টারগুলোতে মায়েদের ভালোবাসার চেয়ে বেশি ভালোবাসাউৎপন্ন করা একটা অসম্ভব ব্যাপার।

পশ্চিমা মনোরোগ চিকিৎসক ডক্টর এলিয়ট বার্কার দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রূঢ় বা উত্তেজিত এবং হত্যাকারী ব্যক্তিদের ওপর কাজ করেছেন। এ ধরনের অপরাধী লোকদের বাবা-মা‘রা যখন তাদের সন্তানদের দেখতে আসতেন তিনি তখন তাদেরকে বলতেন,বাবা-মাকে যে সময় এই সন্তানদের প্রয়োজন ছিল সে সময় তাঁরা কোথায় ছিলেন। আমি জানি এই সন্তানেরা তাদের জন্মের অল্প পরেই তাদের মায়ের কাছ থেকে পৃথক হয়ে গেছে এবং সেবিকাদের হাতে তাদেরকে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের মায়েরা তাদের কাছে খুব কম সময়ই ছিল। এ কারণেই ইসলাম মাকে সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষক বলে মনে করে। পরিবারকে মনে করে সমাজের মৌলিকতম ভিত্তি আর মাকে মনে করে ভবিষ্যত প্রজন্মের স্থপতি। ইসলাম তাই সমাজের জন্যে উপযুক্ত সন্তান উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে মায়ের গঠনমূলক ভূমিকার ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে।

পারিবারিকঅধিকারের সাথে নারীর মিরাস বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্য সম্পদের বিষয়টিজড়িত। ইসলামে মিরাসী ব্যবস্থা বা উত্তরাধিকার পরিবারের গুরুত্বের প্রতিদৃষ্টি রেখেই সংরক্ষণ করা হয়েছে। যারা নারী-পুরুষের সমান অধিকারের সমর্থকতারা দাবি করে যে ইসলামে মৌরুসি সম্পত্তির ক্ষেত্রে নারীকে উপেক্ষিত বাঅবমূল্যায়িত করা হয়েছে। এ পর্যায়ে আমরা ইসলামের দৃষ্টিতে উত্তরাধিকার এবংতালাকের বিষয়টি নিয়ে খানিকটা কথা বলার চেষ্টা করবো।

মানুষ যখন থেকে মালিকানার অর্থ বুঝতে পারলো এবং সামষ্টিক জীবন যাপন করতে শুরু করলো,তখন থেকে মানুষ মালামাল ও অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হয়। ইসলামের আবির্ভাবের আগে এই সম্পদ ছিল বিশ্বের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রের শক্তির উৎস বা প্রতীক। আর যে-ই তুলনামূলকভাবে বেশি শক্তিশালী ছিল সে-ই অপেক্ষাকৃত কম শক্তির অধিকারী লোকদের সম্পদ নিজের কুক্ষিগত করে নিত। দুর্বলরা তাই শক্তিমানদের কারণে বঞ্চিত ছিল সে সময়। অবশ্য বিশ্বের সকল জাতি ও গোত্রেই নারীরা পৈত্রিক সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতো। নারীরা স্ত্রী হিসেবে,মা হিসেবে,কন্যা বা বোন হিসেবে তাদের উত্তরাধিকার বা মৌরুসি সম্পত্তির অধিকার পেত না।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় রোমানরা, গ্রিকরা, মিশরীয়রা এবং চীনারা নারীদেরকে অপরাপর মালামালের মতো নিজেদের ভোগ দখলাধীন সম্পদ বলে মনে করতো। সর্বোপরি নারী সবসময়ই ছিল মৌরুসি সম্পদ থেকে বঞ্চিত, মৌরুসি সম্পত্তির অধিকারী ছিল শুধু ছেলেরা অর্থাৎ পরিবারের পুরুষ সদস্যরা। ইউরোপের অবস্থাও ছিল একই রকম। সেখানেও যারা রক্ত-সম্পর্কের দিক থেকে খুব ঘনিষ্ট ছিল কেবল তারাই মৌরুসি সম্পত্তি পেত এবং মেয়েরা মৌরুসি সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত ছিল। ইসলামই সর্বপ্রথম কোনো বিশ্বজনীন জীবন বিধান যেখানে নারীকে মৌরুসি সম্পত্তির অধিকার দেওয়া হয়েছে এবং নারীদের ব্যাপারে জাহেলী যুগের সকল মর্যাদা হানিকর নিয়ম-নীতির বিলোপ ঘটানো হয়েছে। ইসলাম সমাজ ও পরিবারে নারী-পুরুষের প্রত্যেকের ভূমিকা ও আর্থিক দায়িত্বের ভিত্তিতেই মিরাসের (উত্তরাধিকারের) বিষয়টি বিবেচনা করেছে।

আসলে মৌরুসি (উত্তরাধিকারী) আইনটি একটা অর্থনৈতিক বিষয়। ইসলামে মৌরুসি আইনটি সামাজিক ন্যায়ের ভিত্তিমূলেই স্থাপন করা হয়েছে। নারী তার অর্থনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে মোহরানা,জীবিকা নির্বাহের জন্যে আবশ্যিক প্রদেয় খোরপোষসহ আরো অনেক কিছু প্রাপ্য। এমনকি নারী তার মৌরুসি সম্পদের পুরো অংশই বিনিয়োগ করার অধিকার রাখে, তার জীবন জীবিকার প্রয়োজনে তার মৌরুসি সম্পত্তির অংশ ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজন নেই। অথচ পুরুষ নারীর মোহরানা এবং ভরণপোষণের জন্যে প্রদেয় অর্থসহ জীবনযাপনের জন্যে আরো যা যা প্রয়োজন সবকিছু পরিশোধ করতে বাধ্য। এমনকি নারী যদি বাচ্চাদের প্রতিপালনের জন্যে কোনো কিছু চায়,তাহলে পুরুষ তা দিতে বাধ্য। এদিক থেকে চিন্তা করলে দেখা যাবে পুরুষের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশই খরচ হয় পরিবার,স্ত্রী ও সন্তানদের পেছনে।

মৌরুসি সম্পত্তির অংশ ভাই-বোনদের গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে ভাইয়ের অংশ বোনের অংশের দ্বিগুণ। বোনের বিয়ের পর তার জীবন-জীবিকার সমূহ ব্যয়ভার স্বামীর ওপর বর্তায়। তাই তার মৌরুসি সম্পত্তির অংশ সে বিনিয়োগ করে এবং স্বামীর সম্পত্তি ব্যবহার করে নিজের জীবন চালায়। কিন্তু ভাই তার বোনের দ্বিগুণ অংশ পেয়ে তার নিজের,স্ত্রীর,সন্তান-সন্ততির সর্বপ্রকার ব্যয় নির্বাহ করতে বাধ্য। তাই বোনের তুলনায় ভাইয়ের অংশ বেশি হলেও দেখা যায় ভাইয়ের অংশের পুরোটাই পরিবারের জন্যে ব্যয় হয়। এছাড়া লক্ষ্য করা যায় সমাজের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুরুষেরা নারীদের তুলনায় তাদের পুজিঁ বেশি বিনিয়োগ করে থাকে যা একটি সমাজের অর্থনৈতিক ধস প্রতিরোধ করে। অবশ্য সর্বক্ষেত্রে যে মৌরুসি সম্পদের অংশ পুরুষের চেয়ে নারীর কম তা কিন্তু নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের অংশ সমান। আবার কখনো কখনো নারীর অংশ পুরুষের চেয়ে বেশিও আছে।

পরিবার সংক্রান্ত আলোচনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তালাক। মানব সমাজের যে কটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা রয়েছে তার মধ্যে পরিবার ব্যবস্থাটি অন্যতম কেন্দ্রিয় একটি বিষয়। আজ পর্যন্ত পরিবার ব্যবস্থার কোনো বিকল্প দেখতে পাওয়া যায় নি। সন্তান-সন্ততিদের আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত চাহিদাগুলো মেটানোর ক্ষেত্রে প্রধান দায়িত্ব পালন করে থাকে পরিবার। আর পরিবার গঠনের মূল উৎস বিয়ের উপকারিতা ও কল্যাণ সম্পর্কে বিচিত্রমুখি কথা বলেছে ইসলাম। পরিবারের গুরুত্বের কারণে তালাকের নোংরা ও মন্দ দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে পরিবার এবং সন্তান-সন্ততিদের ওপর তালাকের কী রকম কুপ্রভাব পড়ে-সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। রাসূলে আকরাম (সা) বলেছেনঃ “আল্লাহর কাছে সেই ঘরই সবচেয়ে প্রিয় যে ঘরটি বিয়ের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে আর সেই ঘরের মতো ঘৃণ্য কোনো ঘর নেই যে ঘর তালাকের কারণে ধ্বংস হয়।”

অনেকেইছোটোখাটো বিষয়-আশয় নিয়ে সহজেই পারিবারিক জীবনের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে দেয়।অনেকে আবার ক্যাথলিকদের একটি গোষ্ঠীর মতো বিশ্বাস করে-কোনো দম্পতি ভীষণরকমপারিবারিক অসংলগ্নতায় ভোগার পরও বাকি জীবন সেভাবেই কাটাতে হবে। কিন্তুইসলাম সর্বপ্রকার চরমপন্থা ও উগ্রতা পরিহার করে তালাক এবং পরিবারসহ সকলবিষয়েই মধ্যপন্থা ও ন্যায়ের আশ্রয় নিয়েছে। সেজন্যেই ইসলাম পরিবারব্যবস্থার প্রতি ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়ার পরও বলেছে একান্তই যদি কোনোদম্পতির মধ্যকার সম্পর্ক এমন এক তিক্ততার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে যা আরসমাধানের যোগ্য থাকে না, সেরকম অবস্থায় সেই দম্পতিকে চরম তিক্ততা নিয়েজীবনযাপন করতে ইসলাম বাধ্য করে নি।

ইসলাম আসলে বোঝাতে চায় যে দাম্পত্য জীবনটা হলো একটা মানবিক এবং প্রাকৃতিক সম্পর্ক নির্ভর, এটা কিছুতেই চুক্তি ভিত্তিক সম্পর্ক নয়। অধ্যাপক মোতাহহারী এ সম্পর্কে বলেছেনঃ “প্রকৃতি বিয়ের ভিত্তিকে স্থান দিয়েছে প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা, একতা এবং আন্তরিকতার ওপর। এখানে জোর-জবরদস্তির কোনো সুযোগ নেই। বলপ্রয়োগ করে কিংবা আইনের বাধ্যবাধকতা দিয়ে দু ব্যক্তিকে পরস্পরকে সহযোগিতা করতে এবং ঐ সহযোগিতা চুক্তির প্রতি উভয়কে সম্মান প্রদর্শন করতে বাধ্য করা যায়। কিন্তু জোর করে বা আইনের মারপ্যাঁচ দিয়ে পরস্পরকে ভালোবাসতে দুজনকে বাধ্য করাটা অসম্ভব।”

আবার কোনো স্বামী যদি স্ত্রীকে জ্বালাতন করে তাহলে ইসলামী আদালত অভিযোগ পাবার ভিত্তিতে নারীপক্ষকে সহযোগিতা করে। মানবীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে এবং মানবীয় পূর্ণতায় পৌঁছার দিক থেকে নারী-পুরুষের মাঝে কোন রকম ভেদরেখা ইসলাম টানে নি। ইসলাম সবসময়ই নারীকে মর্যাদাবান করেছে, যথাযোগ্য সম্মান দিয়েছে।

 

মাত্র ৩০ সেকেন্ডে!

আমাদের অনেকেরই প্রায়ই মাথাব্যথা হয়। অনেকেই আবার নানা করণে টেনশনে থাকি। এই খারাপ লাগার অনুভূতিগুলো সত্যিই খুব যন্ত্রণা দেয় আমাদের।

ওষুধ খেলে এগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, কিন্তু সেজন্য অনেক সময় লাগে। যদি এমন হয় মাত্র ৩০ সেকেন্ডে এই দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তাও আবার কোনো ওষুধ ছাড়াই।

অসম্ভব মনে হচ্ছে? একদমই না বন্ধুরা। এটা সম্ভব। আমরা অনেকেই জানি, ব্যথা ও রোগ নিরাময় করার জন্য ব্যবহৃত প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে আকুথেরাপি।  মানবদেহের রোগ নির্ণয়, রোগ নিরাময় এবং রোগ প্রতিরোধ বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন আকুথেরাপি। শরীরে সুচের মতো চাপ প্রয়োগ করে আকুথেরাপি দেওয়া হয়।

কিন্তু ভয় পাবেন না, আপনার মাথাব্যথা আর টেনশন থেকে মুক্তি পেতে মাথায় সুই ফোটাতে হবে না।

মাত্র ৩০ সেকেন্ড বাম হাতের পয়েন্টে ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে ছবির মতো চাপ দিয়ে ধরে রাখুন।

আর মুহূর্তেই অনুভব করুন মাথাব্যথা কোথায় পালিয়েছে, আর দুশ্চিন্তাও উধাও!

 

গর্ভাবস্থায় আলু খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে

গর্ভকালীন সময় যে সব নারী বেশি আলু খান তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। ২১ হাজার গর্ভবতী নারীর ডাক্তারি কাগজপত্র ঘেঁটে এই তথ্য দিয়েছেন তারা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সপ্তাহে পাঁচবারের মতো আলু প্রধান খাবার খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ ভাগ বেড়ে যায়। আলুতে যে স্টার্চ থাকে সেটি রক্তে চিনির পরিমাণ হঠাৎ বাড়িয়ে দেয়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সাধারণত সন্তান প্রসবের পরপরই দূরীভূত হয়। কিন্তু এটা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

 

স্বপ্ন অনুসরণ করেই সফল আমি

মা চেয়েছিলেন মেয়ে আর যাই হোক, কিছুতেই রাজনীতিবিদ হতে পারবে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যাঁর নানা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাঁর খালা, তিনি কি রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে পারেন! পারেননি। আজ তিনি ব্রিটিশ এমপি।


 

১৩-১৪ বছর বয়সে বসে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দীকের মনে হলো, কোনো পার্টিতে জয়েন করা দরকার। কনজারভেটিভ পার্টির ম্যানিফেস্টো দেখলেন, লেবার পার্টির ম্যানিফেস্টোও দেখলেন। লেবার পার্টির ম্যানিফেস্টো পছন্দ হওয়ায় তাদের পার্টিতে যোগ দিলেন। তখন টিউলিপের বয়স ১৬। ব্রুনাই, সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশ ঘুরে ততদিনে তিনি লন্ডনে থিতু হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এমপি হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমি যে আসনে সদস্য হয়েছি, সেখানে ১৯৯২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন লেবার পার্টির স্লেন্ডা জ্যাকসন। তিনি দুবার একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস, একবার এমি অ্যাওয়ার্ডসজয়ী জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তিনি টনি ব্লেয়ারের মন্ত্রিসভায় পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জুনিয়র মন্ত্রীও ছিলেন। ফলে লেবার পার্টির দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে প্রথমবার পরাজিত হই। তবে পরাজিত হলেও দমে যাইনি।’
এ প্রসঙ্গে টিউলিপের বক্তব্য—‘হারলেও পুরো প্রসেসটা খুব এনজয় করলাম। আমার মনে হলো, ক্যাম্পেইন খুব মজার, ইটস এক্সাইটিং। আই এনজয়েড নকিং অন ডোর। তারপর ২০০৮ সালে আমেরিকায় গেলাম ওবামার ক্যাম্পেইনে। ওই ক্যাম্পেইনটাও খুব এনজয় করলাম। তখন ভাবলাম ঠিক আছে, আরেকবার চেষ্টা করি। এরপর ২০১০ সালে আবার দাঁড়ালাম কাউন্সিলরের জন্য। কিন্তু আমাদের নমিনেশন প্রসেসটা খুবই কঠিন, এমনকি মূল নির্বাচনের চেয়েও নমিনেশনে আরো বেশি কাজ। যতজন লেবার পার্টির সদস্য থাকেন, তাঁদের দরজায় গিয়ে নক করে বলতে হয়—আমি ক্যান্ডিডেট হতে চাই, আমাকে ভোট দাও। মানুষরা আমাকে বলেছে—তুমি টিউলিপ সিদ্দীক? স্লেন্ডা জ্যাকসনের দুটি অস্কার আছে, তোমার কী আছে?’
তিনি আরো যোগ করেন, ‘তবে আমি অনেক লোকাল ক্যাম্পেইন করেছি। আমাদের লোকাল পোস্ট অফিস বন্ধ করে দিচ্ছে, তখন আমি ওখানে গিয়ে ক্যাম্পেইন করলাম, বললাম, এটা খোলা রাখতে হবে। আমাদের ফায়ার স্টেশন বন্ধ করে দিচ্ছে, তখন আমি ক্যাম্পেইন শুরু করলাম। পিটিশন দিলাম, লোকাল পেপারে লিখলাম, জনগণকে বললাম, চলো আমরা প্রটেস্ট করি, র‌্যালি করি। এসব আমি করেছি, মানুষজন জানে। আমাদের লোকাল খবরের কাগজে আর্টিকেল লিখি। মানুষ আমাকে এভাবে চিনল।
ব্রিটেনের নির্বাচনেও ধর্মীয় পরিচয়টাকে কিছু মানুষ ভোটের রাজনীতিতে ব্যবহার করে। ভোটের আগে আমাকে অনেকে বলেছে, ব্যালটে তুমি তোমার নাম টিউলিপ সিদ্দীক দিয়ো না। তোমার হাজব্যান্ডের নাম দাও। টিউলিপ পার্সি। কারণ মুসলমান নাম দেখলে ভোট দেবে না। আমি বলেছি—আমি ওই সব মানুষের এমপি হতে চাই না। মুসলমান নাম দেখে যদি ভোট না দেয়, তবে আমি পার্লামেন্টে তোমাদের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই না। আমি খুব আত্মপ্রত্যয়ী। যদি আমি কিছু করতে চাই—যতই কষ্ট হোক, চেষ্টা করব, অনেক কাজ করব, আর দেখাব যে করতে পারি কি না। আমি যে আসন থেকে দাঁড়িয়েছি, ওটা ছিল দেশের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসন। ৪২ ভোটে আমার আগের এমপি জিতেছেন। আমি যখন দাঁড়িয়েছি, সবাই বলেছে, তুমি এটা জিততে পারবে না। কিন্তু আমি আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে জিতলাম।’
‘আমাদের একটা ভোট ছিল—ওয়েলফেয়ার রিফর্ম বিল। চিফ হুইপ আমাদের বলেছেন, তোমরা এই বিলের বিপক্ষে ভোট দেবে না। চিফ হুইপের কথা না শুনলে প্রমোশন পাওয়া কিন্তু কঠিন। কিন্তু আমি যে ওই বিলটার পক্ষে ভোট দিতে পারব না। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম—তার বিরুদ্ধে ভোট দিলাম। জানি, এ জন্য আমি প্রমোশন না-ও পেতে পারি, এ জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী না-ও হতে পারি। কিন্তু আমি বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছি। কারণ আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বাসটাই আসল। বিশ্বাসটা আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
নিজের রাজনৈতিক সফলতার কথা বলতে গিয়ে টিউলিপ বলেন, ‘রাজনীতিতে নিজের সাফল্যের পেছনে পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতাও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। ছোটবেলা থেকেই মা আর খালা বলতেন—তুমি যা করতে চাও, তুমি তা-ই করতে পারবে। তুমি প্রধানমন্ত্রী, আইনজীবী হতে চাও আর যা-ই হতে চাও, হতে পারবে। এ আত্মবিশ্বাসটা যদি না থাকে, তবে মহিলারা কিছুই করতে পারবে না। এ আত্মবিশ্বাস আমার পরিবার থেকে দেওয়া হয়েছে। আমার মা-বাবা, ভাই-বোন—সবার সহযোগিতায় আজ আমি টিউলিপ সিদ্দীক এমপি। পরিবারের সাপোর্ট না থাকলে এটি সম্ভব হতো না।’

 

যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মুসলিম নারী বিচারক ক্যারোলিন ওয়াকার ডিয়ালো

মনোরমভাবে সাজানো হয় নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন বরো হল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দেশের উচ্চপদস্থ লোকদের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীরাও। বিশাল এ আয়োজন ক্যারোলিন ওয়াকার ডিয়ালোকে কেন্দ্র করে। গত ১০ ডিসেম্বর (২০১৫) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি শপথ নেন নিউ ইয়র্কের কিংস কাউন্টির সপ্তম মিউনিসিপ্যাল ডিস্ট্রিক্ট সিভিল কোর্টের বিচারক হিসেবে। বিশ্বের মুসলমানদের জন্য খুশির খবর হলো, ক্যারোলিন ওয়াকার যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মুসলমান নারী বিচারক। আর শপথ নেন পবিত্র কুরআন স্পর্শ করে। আরেকটি ভালো খবর হলো, ওই আদালতের আরেক বিচারপতি তাকে শপথবাক্য পাঠ করান। তার নাম ক্যাথি কিং।
ডিয়ালো ওই কাউন্টির জনগণের সরাসরি ভোটে বিচারক নির্বাচিত হয়েছেন গত ৩ নভেম্বর মঙ্গলবার (২০১৫)। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ইমাম বরো হলে তার জাঁকজমকপূর্ণ শপথ অনুষ্ঠানে কুরআন থেকে পাঠ এবং মোনাজাত করেন। এতে তাদের অংশগ্রহণে খুবই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এই নারী বিচারক। সংক্ষেপে অনেকে তাকে এখন বলছেন নগরীর সিভিল বিচারক।
ডিয়ালো আফ্রিকান-আমেরিকান বংশোদ্ভূত নারী। কৃষ্ণাঙ্গ ক্যারোলিন ব্রুকলিনের বাসিন্দা। বয়স প্রায় ৪০ বছর। তার জয়ের খবর শুনে রীতিমতো উৎসবে মেতে ওঠে সেখানকার মুসলিম অভিবাসীরা। ওই সময়েই ডিয়ালোর সম্মানে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয় ব্রুকলিনের একটি রেস্তোরাঁয়। তাকে এক নজর দেখা ও সংবর্ধনা জানাতে ভিড় করেন বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের মুসলিম অভিবাসী। নির্বাচিত হয়েছেন বলে তিনি কাউন্টির জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। ডিয়ালো বলেন, তাদের কারণেই আমি বিচারক হয়েছি। আর জনগণ বলেছে, ‘যোগ্যতা আছে বলেই তিনি নির্বাচিত হয়েছেন’। গণমাধ্যমকে ডিয়ালো বলেন, ‘প্রথম মুসলিম নারী বিচারক নির্বাচিত হওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত ও উৎফুল্ল’। তিনি আরো বলেন, ‘আমি দেশটির সংবিধান মেনে চলারও ওয়াদা করছি। বিচার জগতে আমাকে বিশাল বা গুরু দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সবার প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য এবং আমি আমার সম্প্রদায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ ও বিনম্র।’ তিনি আরো বলেন, ‘যদি আমরা সবাইকে সমান ও মুক্ত বলে মনে না করি, তবে তা হবে মার্কিনিদের সারবত্তা বা পদার্থ হারিয়ে যাওয়ার শামিল।’ অনুষ্ঠানের ভিডিওটি তার পদে অধিষ্ঠিতকরণের বিষয়েও এ সংক্রান্ত নানা অনুকূল মন্তব্যের জন্ম দিয়েছে।
অভিষেক অনুষ্ঠানেও আইন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সবার সম-অধিকারের কথার ওপর জোর দিয়ে অনেক কিছু বলেন ডিয়ালো। বলা যেতে পারে, ঘটা করে এই উদযাপন শুধু তার বিচারক হওয়া উপলক্ষে নয়, এই আয়োজন সবাইকে ভালো কিছু করার ক্ষেত্রেও অনুপ্রেরণা জোগাবে। ইতিহাস রচনাকারী এই বিচারক এ পর্যন্ত পৌঁছেছেন আইনের প্রতি নিষ্ঠা দিয়ে।
ডিয়ালোর জন্ম ব্যাপ্টিস্ট পরিবারে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সুশৃঙ্খল জীবন পরিচালনা তাকে মুসলমান হওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করেছে। তাই তার মাথায় এখন হিজাব উঠেছে। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন ২০০১ সালের ৯/১১-এর পর। ধর্মকে মনেপ্রাণে লালন করেন ঠিকই; তবে তার ব্যাপ্টিস্ট-মুসলিম মিশ্র পরিবারে নেই বিদ্বেষমূলক ছিটেফোঁটা মনোভাব। এটি লক্ষ করা গেছে বিচার বিভাগীয় অভিষিক্তকরণ অনুষ্ঠানেও।
ওয়াকার ডিয়ালোর নির্বাচনী প্রচারণায় মুসলমানদের পাশাপাশি ইহুদিরা কাজ করেছে। এতেই বোঝা যায়, সাদা-কালো-বাদামি বর্ণের কোনো ভেদাভেদ বা পার্থক্য নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশটির অসাম্প্রদায়িকতা এখন চ্যালেঞ্জের মধ্যে। এমন খারাপ সময়ে তার বিচারক হওয়া রীতিমতো আশাব্যঞ্জক। তা ছাড়া দেশটিতে মুসলিমবিরোধী একটা সিন্ডিকেটও জাতি-ধর্মে সমস্যা বাড়াচ্ছে। আর সেই দেশই স্বীকার করছে একজন মুসলিম নারীকে বিচারক (সিভিল কোর্টের) হিসেবে। এটি রীতিমতো একটি ঐতিহাসিক ঘটনাও।
বিচারক ক্যারোলিন ওয়াকারের মা ন্যান্সি ওয়াকার জনাকীর্ণ ওই অনুষ্ঠানে খুশির সাথে বলেছেন, আমার বিশ্বাসই হয়নি ডিয়ালো বিচারকের পদকে অলঙ্কৃত করবে। এ বিজয়ের খবর শুনে আমি অবর্ণনীয় উৎফুল্লতা অনুভব করেছি। এ দিকে ডিয়ালোর খালা অ্যানি পেরি বলেছেন, সে বিচারক নির্বাচিত হয়ে রীতিমতো ইতিহাস রচনা করল। নিউ ইয়র্ক মুসলিম ভোটার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা নাজি আল মোতাসের বলেছেন, ডিয়ালো নিরঙ্কুশ একজন প্রথম মুসলিম নারী বিচারক। তিনি যেমন বুদ্ধিমতী তেমনি জ্ঞানী। বিশেষ যতœবান দায়িত্বের প্রতি। তার ব্যক্তিত্বও সবার কাছে পছন্দের।
ডিয়ালো নিউ ইয়র্ক ল’ স্কুল থেকে জুরিস ডক্টর ডিগ্রি লাভ করেন। কমিউনিটি বোর্ড ৫, বোর্ড চেয়ার অব দ্য জজ ওয়াকার জুনিয়র কমিউনিটি কোয়ালিশন ইন করপোরেশন, বোর্ড মেম্বার ইস্ট নিউ ইয়র্ক রেস্টরেশন লোকাল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অদিকন্তু, তিনি ৭৫তম প্রিসিঙ্কট কমিউনিটি কাউন্সিলের সদস্য। তার আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, তিনি নিউ ইয়র্ক শান্তি কমিশনে একজন প্রশিক্ষিত মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
সূত্র: অনলাইন ডেক্স

 

সফলতার শর্ত মেধাশ্রম

হুইটম্যান নামেই তিনি ব্যবসায়ীক দুনিয়ায় সুপরিচিতি। পুরো নাম মার্গারেট কুশিং হুইটম্যান। ৪ আগস্ট, ১৯৫৬ নিউইয়র্কের কোল্ড স্প্রিং হার্বার শহরে তার জন্ম। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া শহরে বসবাস করছেন। রিপাবলিকান রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ তার পছন্দ। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৭ সালে অর্থনীতিতে বিএ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এরপর হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে ১৯৭৯ সালে এমবিএ শেষ করেন। ১৯৮০ সালে বিয়ে করেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি দুই সন্তানের মা । শক্ত হাতে সংসারও সামলাছেন তিনি।

১৯৭৯ সালে সিনসিনাটিতে প্রোক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বলের ব্র্যান্ড ম্যানেজার হিসেবে তার কর্মজীবনের সূচনা। এরপর শুধুই এগিয়ে চলা। বর্তমানে বিশ্বের আলোচিত সিইও। গত জুলাইয়ে এইচপির বোর্ড অব চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। সফল নারীরা সাধারণ মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করেন। তেমনই একজন সফল নারী মেগ হুইটম্যান। বিশেষ করে নারী অঙ্গনে সাফল্যের অগ্রদূত মনে করা হয় হুইটম্যানকে। স্মার্টফোন আর ট্যাবলেট আধিপত্যের সময়ে হুইটম্যান এখনও বিশ্বাস করেন ডেস্কটপ কম্পিউটারের দিন শেষ হয়ে যায়নি। বিখ্যাত টিভি চ্যানেল সিএনবিসিতে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি ডেস্কটপ পিসি নিয়ে তার দৃঢ় আশার কথা জানিয়েছেন। বাণিজ্যিকভাবে এইচপির সুবিশাল পণ্যের সম্ভার আছে।

কারণ এইচপি ভার্চুয়াল ডেস্কটপ এবং ওয়ার্কস্টেশন থেকে ডেস্কটপ অবধি বহু পণ্য রয়েছে। এছাড়াও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ল্যাপটপ, হাইব্রিড এবং ট্যাবলেট পণ্যের মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে এইচপি। হুইটম্যান জানালেন, ভবিষ্যতের জন্য ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট কম্বো ডিভাইসের গবেষণা করছে এইচপি। এইচপিতে বছরে মাত্র ১ ডলার বেতন নিয়ে নতুন করে আলোচনায় আসেন তিনি। তবে নগদ অর্থ এবং এইচপির শেয়ার নিচ্ছেন তিনি। ২০১২ অর্থবছরে ২৪ লাখ ডলার বোনাস নিয়েছেন। এ ছাড়াও এইচপির লক্ষ্য পূরণে তিনি ৬০ লাখ ডলার বোনাসও পাবেন। হুইটম্যান ১৯৯৮ থেকে ২০০৮ সাল অবধি অনলাইন নিলাম সাইট ইবে-এর সিইও ছিলেন। তার আমলেই ইবে মাত্র ৩০ জনের প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫ হাজার কর্মীর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বার্ষিক আয় ৪০ লাখ ডলার থেকে বেড়ে ৮০০ কোটি ডলারে পৌঁছে যায়।

যদিও এইচপির জন্য সময়টা ভালো যাচ্ছে না। নানামুখী চাপই সামলাতে হচ্ছে হুইটম্যানকে। অনেকটা সময়ের ভাবনার উল্টো পথেই এগোচ্ছেন হুইটম্যান। তাই এইচপি নিয়ে ভবিষ্যৎ ভাবনায় তিনি বলেছেন, একেবারেই নতুন কিছু কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। সামনের প্রান্তিকগুলোয় নতুন বাজার লক্ষ্য করে কিছু উদ্ভাবন নিয়ে আসার পরিকল্পনা আছে। তাই সামনের প্রান্তিক থেকেই এইচপির আয় ও মুনাফা বাড়বে। নতুন একটি ট্যাবলেট পিসি দিয়ে মোবাইল ডিভাইসের বাজারেও আবার আত্মপ্রকাশ করেছে এইচপি।

তবে হুইটম্যানের গল্পের শুরুটা ১৯৮০ সালে। কাজের হাতেখড়ি দ্য ওয়াল্ট ডিজনিতে। কাজের মাধ্যমে প্রথম কর্মক্ষেত্রেই বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন হুইটম্যান। এরপর একে একে নির্বাহী হিসেবে কাজ করেছেন ড্রিমওয়ার্ক এবং হ্যাজব্রোর মতো প্রতিষ্ঠানে। একান্ত কর্মনিষ্ঠা আর পরিশ্রম যে কাউকেই মেলে ধরে। মেগ হুইটম্যান যেন তারই প্রমাণ। তিনি বিশ্বাস করেন, সফলতার প্রথম শর্তই হচ্ছে মেধাশ্রম।

 

সুস্থ থাকতে রোজ খেতেই হবে কলা, জেনে নিন কলার ১০ গুণ

কাঁচ কলার শুক্তো, পাকা কলা, থোড়, মোচা কোনটা বাদ দেবেন? আর এমন কি গাছ আছে বলুন তো যার ল্যাজা থেকে মুড়ো গোটাটাই খেয়ে ফেলতে পারেন? শুধু তাই নয়, কলা পাতায় মুড়ে মাছের পাতুরিও কি কম সুস্বাদু? ইচ্ছে হলে কলা পাতায় ভাত খেতে পারেন, কলার ভেলায় চড়ে খানিক ঘুরেও আসতে পারেন। এমনকী, কলার খোসাও দারুণ উপকারী। কেন কলার এত নামডাক? আসলে কলার গুণ যে অসীম। জেনে নিন কলার ১০ গুণ।
১। হার্ট- কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে হার্ট সুস্থ থাকে। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
২। এনার্জি- ন্যাচারাল সুগার, সলিউবল ফাইবার ও পটাশিয়াম থাকা কারণে যে কোনও রকম এনার্জি ড্রিঙ্ক, এনার্জি বুস্টারের থেকে অনেক বেশি, অনেক ন্যাচারাল এনার্জি জোগায় কলা। এক্সারসাইজের আগে ও পরে তাই অবশ্যই কলা খান। অ্যাথলিট, টেনিস প্লেয়াররাও এনার্জির জন্য সবচেয়ে বেশি কলার উপরই ভরসা রাখেন।
৩।হজম- ডায়েটারি ফাইবার থাকার কারণে কলা হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে পেট পরিষ্কার রাখে। হজমের সমস্যায় অ্যান্টাসিডের থেকে অনেক ভাল কাজ করে কলা। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে সকালে উঠে দুটো কলা খেয়ে নিন।
৪।আলসার- কলার মধ্যে থাকা প্রয়োজনীয় খনিজ ও উপাদান হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের ক্ষরণ রুখতে সাহায্য করে। ফলে স্টমাক অলাসারের সমস্যায় ভাল কাজ করে কলা।
৫।ভিটামিন বি ৬- কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি ৬। যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে ভিটামিন বি ৬। অ্যামাইনো অ্যাসিডের সিন্থেসিস বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৬।ভিটামিন ও মিনারেল- ভিটামিন বি ৬ ও পটাশিয়ামের পাশাপাশি কলায় রয়েছে ভিটামিন সি, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়োডিন, সেলেনিয়াম ও জিঙ্ক। ফলে প্রতি দিনের ডায়েটে কলা থাকলে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি অনেকটাই মেটে।
৭।কলার খোসা- শুধু শাঁস নয়। কলার খোসাও দারুণ উপকারী। সোরেসিস, অ্যাকনের মতো ত্বকের সমস্যায় ভাল কাজ করে কলার খোসা। সদ্য ছাড়ানো টাটকা কলার খোসা ত্বকের সোরেসিসের উপর ঘষে নিন। সারা রাত রেখে দিন। সকালে উঠে মুখে ধুয়ে ফেলুন।
৮।ক্যানসার- সম্পূর্ণ পাকা কলার মধ্যে রয়েছে টিউমর নেক্রোসিস ফ্যাক্টর।এই সাইটোকিন কমপাউন্ড রক্তের শ্বেতকণিকা বাড়াতে সাহাযিয করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়।
৯।স্ট্রেস- স্ট্রেস কমাতে অব্যর্থ কলা। এর মধ্যে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড ট্রিপটোফ্যান যা শরীরে সিরোটোনিমে পরিণত হয়।এই সিরোটোনিন স্ট্রেস কমিয়ে মুড ভাল করতে সাহায্য করে।অতিরিক্ত চাপের সময় কলা খেয়ে নিন। চাপ কমবে।
ক্যানসার রোধে সাহায্য করে বেদানা
১০।হ্যাংওভার– এক্সারসাইজে যেমন কাজে আসে কলা, তেমনই পার্টিতেও কাজে আসে কলা। পার্টি হ্যাংওভার কাটাতে কলার থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে না। ব্লেন্ডারে দুটো কলা ও বরফ একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিন, কয়েকটা বেরি, নারকেলের দুধ বা গরুর দুধ মিশিয়ে শেক বানিয়ে খেয়ে নিন। হ্যাংওভার কেটে যাবে।

 

ভারতের শেষ প্রান্ত

একবার ভারতের শেষপ্রান্তটা ঘুরে আসতে পারেন। দক্ষিণ প্রান্তের শেষ সীমা-ছোট্ট একটি বিন্দু। মনে হলে প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে নীল সমুদ্রে ঘেরা তামালনাড়ুর ছোট জেলা কন্যাকুমারী। ইচ্ছা হলে বেড়িয়ে আসতে পারেন কেপ কমোরিন বা কন্যাকুমারী থেকেও।
১৯৭০ সাল থেকে ভারতের কন্যাকুমারী অন্যতম উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গোটা বিশ্বের কাছেই পরিচিতি পেয়ে এসেছে। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর একেবারে শেষ প্রান্তে অবস্থিত কন্যাকুমারীর ভৌগলিক অবস্থান এমনই যে তা পর্যটকদের আকৃষ্ট করবেই। ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরের সঙ্গম স্থলে অবস্থিত এই কন্যাকুমারী এমন একটি উপদ্বীপ যেটি তীর্থস্থান এবং ভ্রমণস্থল উভয়ের জন্যই বিখ্যাত।
একবার চোখ বুলিয়ে নিন এত জায়গা থাকতে কেন যাবেন কন্যাকুমারীতে? কী দেখবেন সেখানে গিয়ে?
বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল- এটি পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় জায়গা। কথিত আছে, রামকৃষ্ণ পরমহংমদেবের শিষ্য সন্নাসী বিবেকানন্দ সাঁতরে পার হয়েছিলেন ভারত মহাসাগর। সেই সময় কন্যাকুমারীতে সমুদ্রের বুকে ভেসে থাকা এক বিশাল পাথরের উপর বসে তিনি বিশ্রাম নিয়েছিলেন এবং ধ্যান করেছিলেন। আধ্যাত্মিক এই গুরুঠাকুর বিবেকানন্দের স্মৃতিতে ১৯৭০ সালে সমুদ্রে উপর তৈরি করা হল ‘বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল’। এই মেমোরিয়ালের উপর থেকে সমুদ্রের ঢেউ-এর উথাল পাথাল দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। দিগম্ত বিস্তৃত সমুদ্রের উথাল হাওয়া আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য জগতে। বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য-জাস্ট অসাধারণ। এই মেমোরিয়ালের ভিতরে একটি মেডিটেশন হল রয়েছে যেখানে আপনি বসে নিশ্চিন্তে ধ্যান করতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনার যাবতীয় চিন্তা-ভবনা দূর হয়ে যেতে পারে।
কন্যাকুমারী সমুদ্রতট-তিনটি সমদ্রের সংযোগস্থলে অবস্থিত এই সমুদ্রতট কন্যাকুমারীর প্রধার আকর্ষণ। এখানে সমুদ্র কিছুটা উত্তাল প্রকৃতির। সমুদ্রতটটি চারিজিক থেকে পাথর দিয়ে ঘেরা। তাই ইচ্ছে হলেও সহজে সমুদ্রের জলে পা ভিজাতে পারবেন না। কিন্তু তার বদলে বিচের ধারে অবস্থিত লাইট হাউস- এর উপর থেকে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দারুণ লাগবে।
গান্ধী মেমোরিয়াল – মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিতে ১৯৫৬ সালে তৈরি করা হয়েছে এই মেমোরায়ালটি। এই মেমোরিয়ালটি ‘অমন টেম্পেল’ নামেও পরিচিত। উড়িশার মন্দিরের ধাঁচে তৈরি এই ‘গান্ধী মেমোরিয়াল’ পর্যটন কেন্দ্র কন্যাকেমারীর আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র। গান্ধীজির মৃত্যুর পর তাঁর অস্থিভস্ম এখানকার সমুদ্রতটের ধারে এই গান্ধী মেমোরিয়ালটি তৈরি করা হয়। এই ‘অমন টেম্পেল’ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে প্রত্যেকদিন ঠিক দুপুর ১২টায় যখন সূর্য মাথার উপর আসে, তখন গান্ধীজির সমাধিস্থলের উপর সূর্যের রশ্মি এমনভাবে পড়ে যে তাঁর অস্থিভস্ম বিসর্জনের স্থানটি প্রজ্বলিত হয়ে ওঠে। এই মেমোরিয়াল ঘুরে দেখলে গান্ধীজির শেষ বয়সের নানান কথা সম্পর্কে জানা যায়। তাঁর নানান ছবি, তাঁর শেষ বয়সের ব্যবহারের নানান সামগ্রী অতি যত্ন সহকারে সংরক্ষিত রয়েছে এই মেমোরিয়ালে।
থিরুভাল্লুভার স্ট্যাচু – বিখ্যাত তামাল কবি এবং সন্ন্যাসী থিরুভাল্লুভারকে সম্মান প্রদর্শন করে তৈরি বিশাল উচ্চতার এক মূর্তি হল এই ‘থিরুভাল্লুভার স্ট্যাচু’। সমুদ্রের মাঝে বিবেকানন্দ রকের ঠিক পাশে অবস্থিত এই বিশালাকার মূর্তির উচ্চতা ১৩৩ ফুট বা ৪০.৬ মিটার। আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগর যে জায়গায় ভারত মহাসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে, ঠিক সেখানেই তৈরি করা হয়েছে তামিল কবির এই মূর্তি। ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালে-টানা দশ বছর ধরে তৈরি করা হয় এই মূর্তি। এই মূর্তির আসল উচ্চতা ৯৫ ফুট এবং মূর্তিটি যে স্তম্ভমূলের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেটির উচ্চতা ৩৮ ফুট। তামিলনাড়ুর বাসিন্দা কবি থিরুভাল্লুভার-র লেখা বই ‘থিরুক্কুরাল’- এর নানান ধর্মপোদেশ খোদাই করা আছে এই মূর্তির পাদদেশের স্তম্ভমূলে। মূর্তিটির ভস্কর্য এতটাই চিত্তাকর্ষক যে প্রত্যেক পর্যটক অবাক না হয়ে থাকতে পারবেন না। এর স্তম্ভমূলটিতে সম্পদ এবং নানান আনন্দমূলক বিষয় সম্পর্কে খোদাই করা রয়েছে। থিরুক্কুরালের ১৩৩টি অধ্যায়ের নানান কথা উল্লেখ রয়েছে এই থিরুভল্লুভার স্ট্যাচু-র গায়ে।
কন্যাকুমারী মন্দির – তামিলনাড়ুর বাসিন্দাদের মধ্যে ঈশ্বর ভক্তি এতটাই বেশি যে সমগ্র রাজ্য মন্দিরে মন্দিরে জয়লাপ। কন্যাকুনারীই বা তার ব্যতিক্রম হয় কি করে? চোখ ধাঁধানো স্থাপত্যের জন্য এখানকার মন্দিরগুলির সৌন্দর্য এককথায় অনবদ্য। এখানকার কিছু কিছু মন্দির ১০০ বছরেরও বেশী পুরোনো। দাক্ষিণাত্যের পাজাদের আমলে তৈরি এই সকল মন্দিরগুলির শিল্পকলা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এই মন্দিরগুলির মদ্যে পর্যটনের জন্য বিখ্যাত হল ‘দেবী কন্যাকুমারী মন্দির’ এবং ‘সুচিন্দ্রম মন্দির’ । সতীর ৫১ পীঠের মধ্যে একটি হল এই কন্যাকুমারী মন্দির। এই মন্দিরের আরাধ্যা দেবী হলেন দেবী পার্বতী। এটি সমুদ্রের একেবারে পাড় বরাবর অবস্থিত বলে পর্যটকরা সারা বছরই এখানে ভিড় জমান। কন্যাকুমারীর অপর বিখ্যাত মন্দির সুচিন্দ্রমে তিন দেবতা ব্র ,বিষ্ণু এবং মহেশ্বরের আরাধনা করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই সুচিন্দ্রম মন্দিরে কেউ মানত করলে তার সেই আশা পূরণ হয়। এই মন্দিরটি কন্যাকুমারী থেকে মাত্র ১১ কিমি দুরে অবস্থিত।
থিরপারাপ্পু ঝরনা- রোডায়ার নদীর ঝরনা ৫০ ফুট উপর থেকে নীচে পড়ছে এবং ঝরনার নীচে দাড়িয়ে আপনি ছবি তুলছেন। ভারলেই কেমন যেন মনটা রোমাঞ্চে ভরে ওঠে। তাই হাতে সময় নিয়ে ঘুরতে গেলে থিরপারাপ্পু ঝরনা দেখতে ভুলবেন না ‌‌‌যেন। ৩০০ ফুট দৈর্ঘের এই জলপ্রপাত কন্যাকুমারী শহর থেকে মাত্র ৬০ কিমি দুরে । এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফটোগ্রাফারদের জন্য আদর্শ একটি স্থান। তাই থিরপারাপ্পু ঝরনা দেখতে গেলে সঙ্গে অবওশ্যই নিয়ে যাবেন ক্যামেরা ।
উদয়গিরি ফোর্ট – যারা অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন, তাদের জন্য উদয়গিরি ফোর্ট আদর্শ স্থান। কন্যাকুমারী শহর থেকে মাত্র ১৪ কিমি দূরে অবস্থিত এই ফোর্টটি প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো। ২৬০ ফুট উচ্চতার এই ফোর্ট বা দুর্গটি ধ্বংস করেছিলেন রাজা চোল। এরপর খ্রীষ্টপূর্ব ১৭২৯ থেকে১৭৫৮ সাল-এই সময়কালের মধ্যে দুর্গটিকে পুনরায় তৈরি করা হয়েছিল। ইউরোপিয়ান বন্দী ডি লেনয় এই দুর্গে বহু বছর জীবন কাটিয়েছিলেন বলে এই দুর্গের অপর নাম ‘দিল্লানাই কোট্টাই’ ।
পেচিপারাই ড্যাম – তামিলনাড়ুর পেচিপারাই গ্রামে অবস্থিত এই ড্যাম বা বাঁধটি দেখতে হলে কন্যাকুমারী থেকে মাত্র ৫৬ কিমি পথ অতিক্রম করতে হবে। কোডায়ান নদীর উপর তৈরি করা এই বাঁধটি ১৯০৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল। এই ড্যাম এলাকায় বোটিং- এর সুবিধা থাকার এটি বনভোজন এবং পড়ুয়াদের এক্সকারশন-এর জন্য আদর্শ জায়গা। এই ড্যামের পাশে সংকটমোচন হনুমানজির একটি মন্দিরও রয়েছে ।
নাগরাজ মন্দির – সারি সারি নারকেল গাছ এবং তার মাঝে অবস্থিত একটি মন্দির। চারপাশে শুধু সবুজ আর সবুজ, তার বাইরে দিয়ে সমুদ্রের ঘেরাটোপ। সবমিলিয়ে অসাধারণ সুন্দর এই নাগরাজ মন্দির। মন্দির হলেও এটির শিল্পকলা অনেকাংশে বৌদ্ধদের মনেস্ট্রির মত। এই মন্দিরের ছাদটিও অন্যান্য মন্দিরের থেকে অনেকটাই আলাদা আকৃতির। নারকেল পাতা এবং বাঁশ কাঠি দিয়ে এই মন্দিরের ছাদ, মাটি দিয়ে তৈরি দেওয়াল আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবেই। এই নাগরাজ মন্দিরে চারটি ধর্ম – জৈন, বৌদ্ধ, শৈব এবং বৈষ্ণব ধর্মের মিলিত প্রতীক রূপে তৈরি করা হয়েছে।

 

সময় হলে ঘুরে আসুন টাংগুয়ার হাওর এবং বারাকীয়ার টিলা

নাজির হোসেইন: সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় টাংগুয়ার হাওর এবং বারাকীয়ার টিলা দুটি স্থান পর্যটকদের জন্য এখন সহজগম্য হয়েছে। আব্দুজ জহুর সেতুর কল্যানে কার ও মাইক্রো করে সরাসরি চলে যাওয়া যায় তাহিরপুর এবং লাউরের গড় । তাহিরপুর থেকে নৌকা করে ঘুরে আসতে পারেন টাংগুয়ার হাওর। লাউরের গড় থেকে যাদুকাটা নদী পেরুলেই বারিকীয়ার টিলা । হাওড় আর পাহাড়ী সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি এই পর্যটন অঞ্চল । সৌন্দর্য বিক্রির টাকায় একদিন এখানে সভ্যতা গড়ে ওঠবে ।কক্সবাজার থেকেও শতগুন লোক সমাগম হবে এই এলাকায় ।এখনও থাকা খাওয়ার সুবিধা গড়ে ওঠেনি । সুনামগঞ্জ শহরে সুরমাভেলী রেসিডেন্টসিয়েল রিসোর্ট এ ২ রাত কাটিয়ে টাংগুয়ার হাওর এবং বারিকীয়ার টিলা দেখে আসতে পারেন ।
টাংগুয়ার হাওরের কিছু ছবি

 

চিনামাটির পাহাড়ে

আলমগীর কবির: বাংলাদেশ অনন্য সুন্দর একটি দেশ যেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক দর্শনীয় স্থান। বলছি নেত্রকোনা জেলার বিরিশিরির গল্প। বিরিশিরির মূল আকর্ষণ বিজয়পুর চীনামাটির খনি। এ ছাড়াও দেখার মতো আরো রয়েছে রানীখং গির্জা, কমলা রানীর দীঘি এবং সোমেশ্বরী নদী। জাফলংয়ের স্বচ্ছ পানি কিংবা সেন্টমার্টিনের গভীর নীল পানি অনেকের কাছে পরিচিত। কিন্তু সবুজ নীলের মিশেলে অদ্ভুত-রঙা হ্রদটা কখনো দেখেছেন? যদি না দেখে থাকেন তবে তৈরি হয়ে যান এখনই। শীতের এই শেষ দিকেই বিরিশিরি ঘোরার উপযুক্ত সময়। কারণ অনেকটা পথ মাটির। বৃষ্টির দিন কাদামাটির পথ মাড়ানো ঝামেলার।
বিরিশিরির সৌন্দর্য আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেবে সব ব্যস্ততা। আবারো বলছি বিরিশিরির মূল আকর্ষণ হচ্ছে চিনামাটির পাহাড়, যার বুক চিরে জেগে উঠেছে নীলচে-সবুজ পানির হ্রদ। সাদামাটি পানির রঙটাকে যেন আরো বেশি গাঢ় করে দিয়েছে। তবে বিরিশিরি গিয়েই আপনি এ সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারবেন; সেটা কিন্তু না।
আপনাকে যেতে হবে আরেকটু দূর বিজয়পুর চিনামাটির পাহাড়ে। বিচিত্রময় সাংস্কৃতিক আবহাওয়া, কংশ-টেপা-সোমেশ্বরীর কাশবন আর দূরে আকাশে হেলান দিয়ে গম্ভীর গারো পাহাড়ের ধ্যানমগ্ন প্রতিকৃতি সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই সৌন্দর্যপিপাসুদের মন কেড়ে নেয়। বর্ষায় সোমেশ্বরীর তীরবর্তী বিরিশিরির সৌন্দর্য বেড়ে যায় অনেক গুণ।
পাহাড় থেকে নেমে আসা উত্তাল ঢলের রুদ্ররূপ বর্ষায় বিরিশিরি ঘুরতে আসা পর্যটকদের দেখায় তার বন্য সৌন্দর্য। বিরিশিরিতে রয়েছে পাহাড়ি কালচারাল অ্যাকাডেমি। এখানকার অধিবাসীদের শতকরা ৬০ ভাগই গারো, হাজং ইত্যাদি নৃগোষ্ঠীর। এখানে আছে টুঙ্কা বিপ্লবের কয়েকটি স্মৃতিস্তম্ভ। হাজং ভাষায় তেভাগা আন্দোলনের আরেক নাম টুঙ্কা বিপ্লব।তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি কমরেড রাসমনি সিংহের স্মৃতিভাস্কর আছে এখানে। এখানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় সবাই পাহাড়ি- গারো, হাজং।
এ ছাড়াও যেতে পথে পড়বে সেন্ট যোসেফের গির্জা। গির্জাটা বেশ সাজানো-গোছানো, নীরব আর খুব সুন্দর। তারপর এসে পৌঁছবেন বিজয়পুরের চিনামাটির পাহাড়ে। পাহাড় ও সমভূমিসহ এটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৬০০ মিটার। বিস্তর পাহাড়জুড়ে রয়েছে সাদামাটি। কিছু কিছু জায়গায় লালচে মাটিও দেখা যায়। পাহাড় থেকে মাটি কাটায় সেখানে হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে যার পানি কোথাও স্বচ্ছ নীল কোথাও সবুজাভ নীল কোথাও বা একদম লাল। তবে লাল পানি এখন নেই বললেই চলে। এই হ্রদের নীল পানি যেন আপনার সব অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করে দেবে। শ্বেত-শুভ্র চিনামাটির পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে গেছে অপরূপ নীলের উৎস সোমেশ্বরী নদী। যা বর্তমানে কয়লা খনি হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়াও দুর্গাপুর থেকে ছয় কিলোমিটার উত্তর সীমান্তে পাহাড়ের চূড়ায় রানীখং গির্জা অবস্থিত। এই পাহাড়ের চূড়া থেকে বিরিশিরির সৌন্দর্য যেন অন্য মাত্রা পায়।
বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই কমলা রানী দীঘি। এই কমলা রানী দীঘি সাগর দীঘি নামেও পরিচিত। দীঘিটি পুরোপুরি নদীতে বিলীন হয়ে গেলেও এর দক্ষিণ-পশ্চিম পাড় এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে। বিরিশিরির নিরিবিলি কোলাহলহীন ছিমছাম শান্ত পরিবেশ মনে প্রশান্তি এনে দেয়। এমন পরিবেশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতেও আপনার খারাপ লাগবে না। এ ছাড়া দু’চোখ যেদিকে যাবে দেখবেন শুধুই পাহাড়। তবে এগুলোর বেশির ভাগই ভারতে।
ঢাকায় যারা আছেন তারা বিরিশিরি যাবেন ঢাকার মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সরাসরি দুর্গাপুর যাওয়ার বাসে। ৫-৭ ঘণ্টার মধ্যেই আপনি পৌঁছে যাবেন অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বিরিশিরিতে। তা ছাড়া কমলাপুর থেকে প্রতিদিন রাতে নেত্রকোনার উদ্দেশে ট্রেন ছাড়ে। ট্রেনে নেত্রকোনা পৌঁছে সেখান থেকে বিরিশিরি যাওয়া যায়।
দুর্গাপুরে থাকার জন্য ভালো ব্যবস্থা হলো ইয়ুথ মেন খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমসিএ-এর রেস্ট হাউজ ও কালচারাল অ্যাকাডেমি। এ ছাড়াও দুর্গাপুরে সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। স্বর্ণা গেস্ট হাউজ, হোটেল সুসং, হোটেল গুলশান ইত্যাদি। এগুলোর ভাড়া খুব কম। এলাকাভিত্তিক বিশেষ খাবার- নেত্রকোনা জেলার বিখ্যাত খাবার বালিশ মিষ্টি খেতে ভুলবেন না কিন্তু।

 

অলিভ অয়েলের ৫ ব্যবহার রূপচর্চায়!

অলিভ অয়েল ভিটামিন, মিনারেল এবং প্রাকৃতিক ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ একটি তেল। এই তেল ত্বক এবং চুলের জন্য অনেক উপকারী। এমনকি সেনসিটিভ ত্বকেও এটি ব্যবহার করা যায় সহজে। এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অলিভ অয়েলের অ্যান্টি অক্সিডেণ্ট উপাদান ত্বকের বলিরেখা, রিংকেল দূর করে ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে থাকে। শুধু ত্বকের যত্নেই নয়। চুল নরম, শাইনি স্বাস্থ্যজ্বল করতে এর বিকল্প নেই।
১। গোসলে অলিভ অয়েল
বিশ্ববিখ্যাত অভিনেত্রী সোফিয়া লরেনকে মনে আছে? এই ইটালিয়ান সুন্দরী অলিভ অয়েল দিয়ে গোসল করতে পছন্দ করতেন। আপনার গোসলের পানিতে ৫ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এবার এটি দিয়ে গোসল করুন। এক নিমিষে আপনার ত্বক নরম কোমল হয়ে উঠবে। এছাড়া গোসলের সময় অলিভ অয়েল সারা শরীরে ম্যাসাজ করে নিতে পারেন। এই একটি কাজ নিয়মিত করার ফলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে অবিশ্বাস্য রকমের নরম এবং কোমল।
২। শুষ্ক ত্বকের জন্য
শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের ত্বকের রুক্ষতার কারণে ত্বকে নান সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। তাদের জন্য অলিভ অয়েল সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরী সমাধান। গোসলের পর আপনি কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল শরীরে ম্যাসাজ করুন। এরপর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন শুকিয়ে যাওয়ার জন্য। এটি আপনার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে থাকবে। অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে কোন লোশন ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে না।
৩। স্ট্রেচ মার্ক রিমুভার
অলিচ অয়েল ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ধরে রাখে। আপনার স্ট্রেচ মার্কের উপর অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করুন। এটি শুধু দাগ নয় পুরাতন স্ট্রেচ মার্কও হালকা করে থাকবে। তবে এটি নিয়মিত করতে হবে।
৪। সানস্ক্রিন
সমপরিমাণ অলিভ অয়েল এবং চায়ের লিকার পানি মিশিয়ে নিন। এটি আপনি মুখ এবং সারা শরীরে ম্যাসাজ করুন। এবার এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন না। এটি সানস্ক্রিনের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।
৫। চুল শাইনি করতে
লেবুর রস, ডিমের কুসুম এবং দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। এটি চুলে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এটি চুল নরম এবং সাইনি করে তুলবে। খুশকি দূর করার জন্য সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করুন।
ত্বক থেকে মেকআপ দূর করতে অলিভ অয়েল বেশ কার্যকরী। এক টুকরো তুলোয় অলিভ অয়েল লাগিয়ে ত্বকে ঘষুন। এটি সুন্দরভাবে ত্বক থেকে মেকআপ তুলে ফেলবে।

 

মেহেদি প্যাকে রেশম কোমল মজবুত চুল

খুশকি, চুলের আগা ফাটা সর্বোপরি প্রচুর পরিমাণে চুল উঠে যাওয়া এখন যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। চুল পড়া রোধ করে চুলের গোড়া মজবুত করার কাজে মেহেদি ব্যবহার হয়ে আসছে আদিযুগ থেকে। চুলে মেহেদি অনেকভাবে লাগানো যায়। মেহেদির কিছু প্যাক আছে যা খুশকি দূর করে, গোড়া মজবুত করে এবং রেশম কোমল চুল উপহার দেয়। তাই আসুন জেনে নেয়া যাক এমন কিছু উপকারী মেহেদির প্যাক সম্পর্কে।
– ডিমের সাদা অংশ, অলিভ অয়েল এবং মেহেদি গুঁড়ো মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। এটি চুলের গোড়ায় খুব ভালো করে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ভালো করে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
– একটি লেবুর রস, চার টেবিল চামচ মেহেদির গুঁড়ো এবং পরিমাণমত টকদই মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। এটি চুলের গোঁড়া থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ চুলে লাগিয়ে নিন। চুল শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এতে চুল খুশকিমুক্ত এবং ঝরঝরে হবে।
– মেহেদি গুঁড়ো, লেবুর রস, এক টেবিলচামচ অলিভ অয়েল, সাদা ভিনেগার, মেথি গুঁড়ো এবং দুই টেবিল চামচ টকদই ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার প্যাকটি ১২ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। পরেরদিন সকালে এই প্যাকটি মাথায় ভালো করে লাগিয়ে নিন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। এই প্যাকটি খুশকি দূর করবে, চুলের গোড়া মজবুত করে চুলকে স্বাস্থ্যোজ্বল করে তুলবে।
– রাতে একটি পাত্রে সরিষা তেল গরম করে নিন। তারপর এতে কিছু তাজা মেহেদি পাতা এবং দুই চা চামচ মেথি দিয়ে রেখে দিন। পরেরদিন এটি ছেঁকে পাতা এবং তেল আলাদা করে নিন। এই তেলটি নিয়মিত চুলে ম্যাসাজ করে লাগান। এক ঘণ্টা এই তেল মাথায় রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এভাবে মেহেদির তেল ব্যবহারে চুল পড়া রোধ করবে এবং খুশকি দূর হবে।
সূত্র: অনলাইন ডেক্স

 

পাউরুটি দিয়ে মাত্র ১০ মিনিটেই তৈরি করুন মজাদার “ব্রেড সুশি”

সকাল-বিকালের নাস্তা কিংবা টিফিন নিয়ে ঝামেলায় থাকেন? তাহলে এই ব্রেড সুশির রেসিপিটি আপনারই জন্য। হরেক রকম স্বাদে তৈরি করা যায় বিধায় কেউ খেয়ে বোর হবেন না। সবচাইতে ভালো দিকটি হচ্ছে, এই খাবারের আসলে কোন রেসিপি নেই, কেবল আছে তৈরি করার কৌশল। দারুণ সেই কৌশলটি জেনে নিন আর মাত্র ১০ মিনিট সময়ে তৈরি করে ফেলুন অসাধারণ একটি খাবার ব্রেড সুশি। পাউরুটি দিতে এত অল্প সময়ে এর চাইতে মজার ডিশ আর হয় না!

উপকরণ
তাজা পাউরুটি
আপনার পছন্দের যে কোন একটি সস বা জ্যাম/জেলী (এটা প্রয়োজন সুশিকে আটকে রাখতে)
চীজ, চকলেট সস, পিনাট বাটার ইত্যাদি যে কোন কিছু যা আপনার ভালো লাগে
ঝাল খেতে চাইলে কিছু তাজা সবজি কুচানো বা লম্বা করে কাটা
মিষ্টি খেতে চাইলে কিছু ফল বা বাদাম
আপনার পছন্দের যে কোন ঝাল বা মিষ্টি ফিলিং (চিকেন থেকে শুরু করে শ্রিম্প, টুনা, বাদাম, বীফ, মাটন, মাছ, ডিম যে কোন কিছু)
প্রণালি
-রুটির চারপাশ থেকে বাদামী অংশটি ফেলে দিন।
-এবার রুটি বেলার বেলন দিয়ে ভালো করে বেলে চ্যাপ্টা করে নিন রুটিগুলোকে।
-চ্যাপ্টা হয়ে গেলে ভেতরে সস বা জ্যাম/ জেলী মাখান। সেটা দেয়া হয়ে গেলে চীজ বা মেয়নিজ বা পিনাট বাটার মাখিয়ে দিন।
-এবার ভেতরে ফল/সবজি ও সাথে আপনার পছন্দের ফিলিং দিন।
-সুন্দর করে রোল করে নিন।
-ধারালো চাকু দিয়ে রোলগুলো সুশির আকারে কেটে নিন। ব্যাস, তৈরি আপনার ব্রেড সুশি।

 

স্টিমার কারি

উপকরণ:পাঁঠার মাংস— ৫০০ গ্রাম, পেঁয়াজকুচি  ১৫০ গ্রাম, আদাবাটা ২ চা-চামচ, রসুনবাটা ২ টেবিল-চামচ, হলুদ গুঁড়ো ১ চা-চামচ, কাশ্মীরি লঙ্কা গুঁড়ো ১ ১/২ চা-চামচ, গোলমরিচ গুঁড়ো  ১/২ চা-চামচ’ ধনে গুঁড়ো ১ চা-চামচ, জিরে গুঁড়ো ১ চা-চামচ, তেঁতুলের পাল্প ২ চা-চামচ, সর্ষে বাটা ২ টেবিল চামচ, নারকেলের দুধ ২০০ মিলি, নুন স্বাদমতো, চিনি ১ চা-চামচ, কাঁচালঙ্কা কুচি ১ চা-চামচ, ধনেপাতা কুচি ৩ টেবিল-চামচ, সর্ষের তেল ১/২ কাপ
প্রণালী: মাংস ধুয়ে আদা, রসুন, ২ টেবিল-চামচ সর্ষের তেল, হলুদ, লঙ্কা, ধনে, জিরে গুঁড়ো দিয়ে এক ঘণ্টা মেখে রাখুন। কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি দিন। পেঁয়াজ হাল্কা ভাজা হলে মশলা মাখা মাংস ও চিনি দিন।
নুন দিন স্বাদমতো এবং ভাল করে মাংস কষতে থাকুন। মাংস বেশ কষানো হলে ও তেল ছেড়ে দিলে গোলমরিচ গুঁড়ো দিন। এইবার নারকেলের দুধ ও এক কাপ জল দিয়ে মাংস সেদ্ধ হতে দিন কম আঁচে। মাংস সেদ্ধ করতে প্রেশার কুকারও ব্যবহার করতে পারেন।
মাংস সেদ্ধ হলে কড়াইতে ভাল করে ফুটতে দিন। এই বার মাংসতে সর্ষে বাটা, তেঁতুলের পাল্প, কাঁচালঙ্কা কুচি ও ধনেপাতা কুচি দিন। বেশ ঘন গ্রেভি হলে মাংস নামিয়ে নিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে সার্ভ করুন।

 

শিখে নিন কি ভাবে তৈরি করবেন গরুর মাংসের কোরমা

উপকরণ: ১ কেজি গরুর মাংস। ১ কাপ টক দই (খুব বেশি টক দই দেওয়া যাবে না এবং দইটা যেন হালকা মিষ্টি হয়)। আধা কাপ পেঁয়াজবাটা। ১ টেবিল-চামচ রসুনবাটা। ১ টেবিল-চামচ আদাবাটা। ১টেবিল-চামচ জিরাবাটা। ৩,৪টি ফালি করা কাঁচামরিচ। ১ চা-চামচ গরম মসলাগুঁড়া। ৫টি এলাচ। ৩ টুকরা দারুচিনি। ২টি তেজপাতা। ৪,৫টি গোলমরিচ। ৩টি লবঙ্গ। ১ কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ তেল এবং হাফ কাপ এবং আধা কাপ তেল। স্বাদ মতো লবণ। মিহি পেঁয়াজকুচি আধা কাপ। ৩ টেবিল-চামচ ঘি। ১ টেবিল-চামচ চিনি। ৩,৪টি আস্ত কাঁচামরিচ।
পদ্ধতি: মাংস একটু বড় বড় টুকরা করে কেটে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
দই, পেঁয়াজবাটা, আদা-রসুনবাটা, জিরাবাটা, সব গরম মসলা, লবণ, কাঁচামরিচ-ফালি এবং ১ কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ তেল দিয়ে মাংস মাখিয়ে দুই ঘন্টা রেখে দিন।
তারপর মাংস ঢেকে ভালো মত কষিয়ে রান্না করুন। কোনো পানি দেবেন না। মাংসের পানি সব শুকিয়ে আসলে অল্প অল্প পানি দিয়ে মাংস সিদ্ধ করুন। লক্ষ রাখুন পুরে যেন না যায়।
এবার অন্য একটি হাঁড়িতে আধা কাপ তেল গরম করে, পেঁয়াজকুচি দিয়ে বেরেস্তা করে তুলে নিন। এই গরম তেলেই সিদ্ধ করা মাংসগুলো দিয়ে দিন।
ভাজতে থাকুন। লবণ চেখে নিন। কোরমাতে বেশি লবণ হলে ভালো লাগেনা। লবণ একটু কম কম হতে হবে।
ঝোলের জন্য অল্প পানি দিন।
ফুটে উঠলে পেঁয়াজ বেরেস্তা, চিনি, ঘি ও আস্ত ৩,৪টি কাঁচামরিচ দিয়ে অল্প আঁচে রেখে দিন। ঝোল তেলের উপর উঠলে নামিয়ে নিন।
তবে খুব বেশি পানি টানিয়ে ফেলবেন না। একটু ঝোল রাখলে খেতে ভালো লাগে। ইচ্ছে হলে সামান্য লেবুর রস দেওয়া যেতে পারে।
পরিবেশন করুন পোলাও, পরোটা, নান কিংবা ভাতের সঙ্গে।

 

হাত ছাড়া বিমানের পাইলট

হাত ছাড়া বিমান চালিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জেসিকা কক্স (৩০) নামে যুক্তরাষ্ট্রের এক নারী।

জেসিকা ইচ্ছা করে এটি করেছেন, এমন নয়। আসলে তিনি পৃথিবীতে এসেছেন দুটি হাত ছাড়া।

হাত নেই বলে জেসিকা থেমে থাকেননি। দৈনন্দিন সব কাজই করে চলেছেন স্বাভাবিক অন্য সবার মতো। আর পাইলট হিসেবে বিমান চালিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন তিনি।

এতে করে একটি রেকর্ডের সঙ্গেও নিজের নাম জড়িয়ে নিয়েছেন জেসিকা কক্স। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার এই নারী বিশ্বের প্রথম হাতহীন নারী বিমানচালক। ২০০৮ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাকে এ স্বীকৃতি দিয়েছে।

স্বাভাবিক একজন মানুষ যতটুকু করতে পারেন, তার চেয়ে কম নয়, বরং বেশিই করছেন জেসিকা। পা দিয়ে বিমান চালাতে পারেন, গাড়িও চালান ধুমছে। এমনকি পা দিয়েই বাজান পিয়ানো।

জেসিকার যে দুই হাত নেই, ছোটবেলা থেকে তা একদমই পাত্তা দেননি। খেলাধূলার মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে বেড়ে উঠেছেন তিনি। জিমন্যাস্টিকস, নাচ আর সার্ফিং আগেই শিখে ফেলেন। এরপর একে একে গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে একেবারে আকাশ উড়াল দিলেন জেসিকা কক্স।

এক সাক্ষাৎকারে জেসিকা বলেন, ‘হাত নেই তো কী হয়েছে, আমার পা দুটিকেই তো কাজে লাগাতে পারছি।’

জেসিকা ২০১২ সালে প্যাট্রিককে বিয়ে করেন। স্বামী আবার তারই সাবেক তায়কোয়ান্দো প্রশিক্ষক। দু’জনে অ্যারিজোনার তুকসনে বসবাস করছেন। দুটো ব্ল্যাক বেল্টও অর্জন করেছেন জেসিকা।

পাইলট হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি জেসিকা অন্যদের অনুপ্রেরণা দিতে বিশ্বব্যাপী কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দর্শকদের সামনে নিজের উদাহরণ তুলে ধরছেন।

জেসিকা কক্স বলেন, মানুষ যা চায়, চেষ্টা থাকলে তা অর্জন করতে পারে। প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষায় তিনি সম্প্রতি ইথিওপিয়া সফর করেন। তার বিশ্বাস, তিনি এ কাজেও সফল হবেন।

খবর বিবিসির

 

নারী নেতৃত্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দক্ষিণ এশিয়া : স্পিকার

দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহ নারী নেতৃত্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে জানালেন স্পিকার ও সিপিএ’র চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, নারীদের গতিশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের উন্নতি সাধন করে দক্ষিণ এশিয়া সমগ্র বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
তিনি আজ দিল্লীতে ভারতের লোকসভা আয়োজিত ভারতের মহিলা আইন প্রনেতাদের জাতীয় সম্মেলনের প্রথম প্লেনারি সেশনে চেয়ারপার্সনের বক্তৃতায় একথা বলেন।
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী ড. নাজমা এ.হেপতুল্লা এ সেশনে প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
স্পিকার বলেন, বিশ্ব নারী দিবসকে সামনে রেখে ভারতের নারী নেত্রীদের এ সম্মেলন নারী অধিকার আদায়ে নতুন মাত্রা যোগ করবে। তিনি বলেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে ভারতের নারী নেত্রীগণ আরো সমৃদ্ধ হয়ে ভারতের পুনঃজাগরণে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
স্পিকার নারী নেতৃত্বকে সমাজ তথা দেশ পরিবর্তনের এজেন্ট হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সমাজের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মহিলা, শিশুসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য কল্যাণকর। তিনি বলেন, পৃথিবীতে অনেক নারী নেতৃত্ব অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।
স্পিকার বাংলাদেশের নারী নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা এবং সংসদের স্পিকার নারী। এই নারী নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে এবং দেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে উন্নিত করেছে।
এর আগে তিনি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

 

চাঁদ পুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার যে দিনের অপেক্ষায় ছিলেন

খুব ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম ব্যারিস্টার হওয়ার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে চান্স না পেয়ে ভেঙে যায় স্বপ্ন। পরবর্তীতে ভর্তি হই রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। এভাবেই তার জীবনের কথা বলছিলেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার। ১৯৯১ সালে ভর্তি হন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে। শামসুন্নাহার বলেন, প্রথম প্রথম খুব মন খারাপ লাগতো কাঙ্ক্ষিত সাব্জেক্টে পড়তে না পেরে। কিন্তু পরবর্তীতে ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের ভালবাসায় আর সহপাঠীদের সহযোগিতায় ভালো লাগতে শুরু করে সবকিছু। রোকেয়া হলে থাকাকালীন  যোগ দেন বিএনসিসিতে । বিএনসিসি’র বিমান শাখার ক্যাডেট ছিলেন তিনি। ১৯৯৩ সালে বিএনসিসি’র পক্ষ থেকে যশোরে যান। সেখানে বিমানবহিনীর কার্যক্রম দেখে মুগ্ধ হন। সেখানকার পাইলটদের ইউনিফর্ম, নিয়ম-শৃঙ্খলা, জীবন প্রণালি মুগ্ধ করে তাকে। আর তখনই মনে মনে স্বপ্ন দেখতে থাকেন এমন একটা চাকরির যেখানে ইউনিফর্ম পরা যাবে। নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে।

 

মূলত ইউনিফর্মটাই আমাকে বেশি আকৃষ্ট করেছিল কিছুটা হেসে বললেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। আর তাই দেরি না করে তখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন  বিসিএস’র। ১৯৯৬ সালে অনার্স পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পরই অংশগ্রহণ করেছিলেন ২০তম বিসিএস পরীক্ষায়।  নিষ্ঠা আর কঠোর সাধনায় হয়েছেন সফল।  প্রথম পছন্দই ছিল পুলিশ। এখনও বিসিএস’র ফল প্রকাশের  দিনটির কথা মনে হলে আনন্দিত হন এই পুলিশ সুপার।  ফল প্রকাশের সময় তিনি ছিলেন ৮ মাসের গর্ভবতী। আর তাই ফল প্রকাশের পর যখন ভবিষ্যতে শক্ত, মজবুত অবস্থানের হাতছানি পান তখনই ভেসে যান আনন্দে।

 

চার ভাইবোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও এমফিল সম্পন্ন করার পর স্কলারশিপ নিয়ে চলে যান যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তার  ভাইবোনও তার মত স্বমহিমায় উজ্জ্বল। তারা ২ বোন ও ২ ভাই। সবার বড় তিনি।  মা-বাবার স্বপ্নও তাকে নিয়ে  ছিল তাই আকাশ ছোঁয়া। মেজো ভাই ডাক্তার। সেজো ভাই হাইকোর্টের আইনজীবী। সবার ছোট বোন স্কুলের শিক্ষিকা। দুই সন্তানের জননী এই সফল নারী। বড় সন্তানের বয়স ১৫। ছোট সন্তানের ৪। সুযোগ পেলেই গানের চর্চা করেন। নজরুলগীতি তার সবচেয়ে পছন্দের। বিটিভি’র তালিকাভুক্ত শিল্পী, এই এসপি অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। মুগ্ধ করেন তার সুরের মায়ায় দর্শকদের। নজরুলের খেলিছ এ বিশ্বলয়ে বিরাটও শিশু গানটি তার পছন্দের।

 

২০০১ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদানের পর পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা মেট্রপলিটন পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশসহ বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের শাখা অফিস ইতালিতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। ২০০৯ ও ২০১০ সালে পূর্ব-তিমুরে জাতিসংঘ মিশনের জাতীয় পুলিশের মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘে উচ্চপদে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন সাতবার জাতিসংঘ শান্তি পদক। তাছাড়া পুলিশে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য পেয়েছেন দুইবার আইজি ব্যাজ।

 

শামসুন্নাহার ২০১৫ সালের ১২ই জুন চাঁদপুরে পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। এর পরপরই তিনি সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি কমিউনিটি পর্যায়ে পুলিশের কার্যক্রমকে আরো বিস্তৃত করেছেন। যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে অপরাধপ্রবণতা কমিয়ে আনার জন্য কাউন্সিলিং করে। সুযোগ পেলে চলে যান নিজেই। তিনি প্রমাণ করতে চান পুলিশ জনগণের বন্ধু। আর কাজও করে যাচ্ছেন সেই লক্ষ্যে। তার অফিসের একপাশেই গড়ে তুলেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেল। যেখানে গড়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন নারী আসেন তাদের অভিযোগ নিয়ে। এর ফলে চাঁদপুরে অপরাধপ্রবণতা অনেক কমেছে। তার অরেকটি বড় পরিচয় পুলিশ সপ্তাহ-২০১৬ এ প্যারেডের নেতৃত্ব দেন তিনি। পুলিশ সপ্তাহের এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহানগর পুলিশ, রেঞ্জ পুলিশ, আর্মড পুলিশ, ও র‌্যাবসহ ১৩ টি দলের সহস্রাধিক সদস্যের প্যারেডে নেতৃত্ব দেন এই গর্বিত নারী পুলিশ।

 

দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোনো নারী কর্মকর্তা পুলিশ সপ্তাহের প্যারেডে নেতৃত্ব দেন। আর এর মাধ্যমে তিনি গড়েন এক নতুন ইতিহাস। পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন, লোকমুখে শুনতে পেতাম পুলিশের দায়িত্ব শুধু ছেলেরাই পালন করতে পারে। মেয়েদের পক্ষে এই গুরুদায়িত্ব পালন করা অসম্ভব। কিন্তু কর্মজীবনে প্রবেশের পর দেখেছি এর সম্পূর্ণ বিপরীত। এ কাজে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। নেই কোনো অসুবিধা। বরং রয়েছে দেশের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করতে পারার এক অপরিসীম পরিতৃপ্তি। প্যারেডে নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়টি নিয়ে শামসুন্নাহার মানবজমিনকে বলেন, প্যারেডে নেতৃত্ব দেয়া আমার স্বপ্ন ছিল। ২০০১ সাল হতে পুলিশ একাডেমি সারদার ক্যাম্প থেকে প্যারেড করছি। প্যারেড একটি দায়িত্বশীল ও সূক্ষ কাজ। এজন্য প্রয়োজন পরিশ্রম ও নিষ্ঠা। একটি বাহিনীর প্যারেড কমান্ডার হওয়া সবার জন্যই গৌরবের।  প্যারেডে কমান্ডার হওয়ার গৌরব অর্জন করায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। ২০০৮ সালে তিনি পুলিশ সপ্তাহের প্যারেডের উপ-অধিনায়ক ছিলেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকায় সেদিন কমান্ডার হওয়ার সুযোগ ছিল না। আর তাই অপেক্ষায় ছিলেন এই দিনটির। তার নেতৃত্ব ও দৃঢ় পদক্ষেপ স্বয়ং নজর কাড়ে প্রধানমন্ত্রীর।

 

জীবনের সকল ক্ষেত্রে সফল এই নারী মানবজমিন-এর মাধ্যমে বিশ্ব নারী দিবসে সকল নারীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আমরা মেয়েরা রক্ত মাংসের পিণ্ড নই। আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় আমরা মানুষ। আমরা সবকিছু করতে পারি। নিজেদেরকে অবহেলিত ভাবার কোনো অবকাশ আমাদের নেই। আমরা নিজেদের খাদ্যের সংস্থান করতে পারি। করতে পারি আমাদের মা-বাবাদের জন্য, সন্তানদের জন্য । প্রয়োজনে আমরা আমাদের স্বামীদেরও খাদ্যের সংস্থান করতে পারি। আমরা ঘরে-বাইরে সব জায়গায় সমানভাবে কাজ করতে পারি। অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কন্যা শিশুদেরকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। একটি ছেলেকে আপনারা যেভাবে সবকিছু দিয়ে সাপোর্ট দেন। মেয়েদের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই হতে হবে। নারীদের তিনি যার যার অবস্থান থেকে স্বাবলম্বী হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি মনে করেন নারী-পুরুষের বৈষম্য যদি একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে মূলোৎপাটন করা যায় তাহলেই একটি সুখি ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

 

অফিসে ফিটফাট

 

একজন নারীকে এখন নিপুণভাবে ঘর সামলে, কর্মক্ষেত্রও পরিচালনা করতে হয় দক্ষ হাতে। এখন অনেক প্রতিষ্ঠানেই নারীরা উচ্চ পদে কাজ করেন। কর্মক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া, অধীনে থাকা সদস্যদের নিয়ে দলের পথ সঠিকভাবে দেখানো, কর্মক্ষেত্রের ভেতরে-বাইরে আনুষ্ঠানিক সভায় যোগ দেওয়া ইত্যাদি কাজ করতে হয়। এত কাজের মধ্যেও সাজপোশাক হওয়া চাই ফিটফাট। কোনো অফিসের ‘বস’ সেখানকার সব কর্মীর কাছেই অনুকরণীয়। বিশেষজ্ঞদের মতে কর্মক্ষেত্রের বড় বড় কাজ যিনি পরিচালনা করেন, তাঁর পোশাক হওয়া উচিত রুচিসম্মত ও পরিপাটি।
ব্র্যাক ব্যাংকে কমিউনিকেশন অ্যান্ড সার্ভিস কোয়ালিটি প্রধানের দায়িত্বে আছেন জারা জাবীন মাহবুব। কথা হলো তাঁর সঙ্গে। তাঁর মতে কাজের জায়গার পোশাকটি হওয়া চাই পুরোদস্তুর আনুষ্ঠানিক, ছিমছাম কিন্তু ‘স্মার্ট’। মানুষের রুচি ও ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে পোশাক-পরিচ্ছদে। অফিসে এমন পোশাক পরা উচিত যা আপনাকে সম্মানিতবোধ করায়। জারা জাবীন মাহবুব জানালেন, তিনি অফিসে সব সময় লম্বা ব্লাউজের সঙ্গে সাধারণ শাড়ি পরেন। সালোয়ার-কামিজ তাঁর কাছে ঠিক আনুষ্ঠানিক পোশাক বলে মনে হয় না। মাঝেমধ্যে করপোরেট স্যুট এবং প্যান্টও পরেন। গয়নার মধ্যে সাধারণ নকশার মুক্তার মালা, কানে ছোট দুল, হাতে চিকন চুরি বা ব্রেসলেট এবং অন্য হাতে থাকে ঘড়ি।
ছবি: কবির হোসেনউচ্চ পদে কাজ করলেই যে জমকালো, চকমকে পোশাক পরে কর্মক্ষেত্রে হাজির হতে হবে, এমনটা নয়। বরং একজন বসকে তাঁর পোশাক নির্বাচনের বেলায় আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। ‘একজন নারী বস তাঁর অধস্তন সকল নারী কর্মীর কাছে আদর্শ। তাই ব্যক্তিগত পছন্দ বা ফ্যাশনের চলতি হাওয়া সব সময় এখানে খাটানো ঠিক হবে না। কর্মক্ষেত্রের পোশাক ছিমছাম ও কাজের উপযোগী।’ জমকালো পোশাক তোলা থাক দাওয়াতের জন্য। এখানে যেহেতু ব্যক্তির কাজের দিকেই মূল মনোযোগ থাকবে, তাই নিজেকে আকর্ষণীয় করার জন্য বাড়তি কিছু করার প্রয়োজন নেই। নিরীক্ষাধর্মী কোনো সাজ, পোশাক অফিসের জন্য নয়।
কামিজ বা কুর্তা পরলে তার কাট ও নকশায় আনুষ্ঠানিক ভাব থাকা ভালো। পোশাক: আরমাডিওতাহলে কেমন হবে অফিসের সাজ? অফিসের সাজ হবে খুব হালকা। মেকআপ বলতে চোখে পানিরোধক কাজল অথবা চিকন করে দেওয়া আইলাইনার। মাসকারা চাইলে ঘন করে দেওয়া যেতে পারে। মুখে কোনো দাগ বা চোখের নিচে কালি থাকলে হালকা ফাউন্ডেশন লাগানো যেতে পারে। তবে তা যেন ত্বকের ওপর ভেসে না থাকে। আইশ্যাডো অফিসে ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন এই রূপবিশেষজ্ঞ। ব্যবহার করলেও সেটি অবশ্যই হতে হবে একদম ন্যুড বা ন্যাচারাল রঙের। লিপস্টিক হতে পারে হালকা গোলাপি, পিচ বা বাদামি রঙের। অফিসে বিশেষ কোনো দিনে গালে হালকা গোলাপি আভার ব্লাশন বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে। মুখের মেকআপ করার পর হাত বা গলার রঙের মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে হবে। নইলে সবার আগে মানুষের নজর মুখের দিকেই যাবে। এই খুঁটিনাটি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখা দরকার, মনে করিয়ে দেন মুন্নী।
চুলগুলোকে তো অবশ্যই পরিপাটি করে রাখতে হবে; যেন কাজের মনোযোগ নষ্ট না হয়। চুলে সাধারণ কোনো হাতখোঁপা বা পনিটেইল করা যেতে পারে। সামনে ছোট চুল থাকলে তা ক্লিপ দিয়ে আটকে নিন। ফ্যাশন হাউস আরমাডিওর ক্রিয়েটিভ অ্যাডভাইজার ফারহিন লালারুখ খুররুম বলেন, অফিসে যে পোশাক পরবেন, তা হতে হবে আরামদায়ক। পাশাপাশি এটি যেন আত্মবিশ্বাস ঠিক রাখে, সেটিও মাথায় রাখা ভালো। মোট কথা, অফিসে ফিটফাট হয়ে থাকতে হবে। সাধারণ মানেই একদম আটপৌরে নয়। হালকা রঙের সুতি, কোটা বা জর্জেট শাড়ি পরা যেতে পারে। পোশাকে জরি, চুমকির কাজ যেন না থাকে। থাকতে পারে হালকা এমব্রয়ডারির কাজ। ছাপা নকশায় ফুলেল মোটিফ থাকতে পারে, তবে তা যেন খুব চোখে না লাগে। চড়া রংগুলো এড়িয়ে যান। কামিজ বা কুর্তা পরলে তার কাট ও নকশা আনুষ্ঠানিক হওয়া চাই। চাইলে লিনেন বা জর্জেটের শার্ট পরতে পারেন। ব্লেজার, প্যান্টও খুব ভালো পোশাক হতে পারে একটি করপোরেট অফিসে।
এরপরেও কথা থেকে যায়, সব অফিসের পরিবেশ এক নয়। সেখানে পোশাকের নীতিমালা একটু শিথিল, সেখানে সাজপোশাক একটু শৌখিন হলেও সমস্যা নেই। তাই সবার আগে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ এবং সহকর্মীদের মনোভাব বুঝতে হবে।

 

দাওয়াতে নতুন বউ

আলোকসজ্জা, সানাই, খাওয়া, সাজপোশাক—বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো জমজমাট থাকে এসব আয়োজনেই। বিয়ে শেষ হওয়ার পরও যেন বিয়ের আমেজ শেষ হয় না। ঘুরে বেড়ানো, দাওয়াত খাওয়া—এসবের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বর-কনের নতুন জীবন। আর নতুন বউ বলে কথা! সবার নজর থাকে তার ওপরই। কীভাবে সাজল, কোন পোশাক পরল—সবকিছুই থাকে আলোচনার কেন্দ্রে। চেহারায় ফুটে ওঠে নতুন জীবনের আনন্দ। সঙ্গে হাতের মেহেদি, গয়না, হালকা ভারী কাজের শাড়ি—সবকিছু মিলিয়েই যেন নতুন বউয়ের সাজ।
বিয়ের পরের কিছুদিন কেটে যায় ঘোরের মধ্য দিয়েই। সবকিছু নতুনভাবে অনুভব করা হয় বলেই হয়তো দিনগুলো স্মরণীয় হয়ে থাকে। বিয়ে-পরবর্তী সময়ে বউদের একটু হালকা সাজে দেখতে ভালোই লাগে বলে জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ ফারজানা মুন্নী। বিয়ের সময় স্যুটকেসে পাওয়া শাড়িগুলো এ সময় বেশ কাজে লেগে যায়। তিনি বললেন, ‘দাওয়াতে উজ্জ্বল রঙের কাতান, মসলিন বা সিল্কের শাড়ি; উজ্জ্বল লিপস্টিক, চোখে হালকা কাজল ও মাসকারা, হাতভর্তি চুড়ি ভিন্ন একটা চেহারা এনে দেয়। নতুন বউদের সাজের ক্ষেত্রে কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। তবে পরিবেশ বুঝে গয়না ও সাজে হালকা পরিবর্তন আনতে পারে। জীবনের এ সময়টার প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করা উচিত। তাহলে চেহারায়ও সেই সৌন্দর্য ফুটে উঠবে।’
পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে লাল, কমলা, ম্যাজেন্টা রঙের লিপস্টিক পরতে পারেন। যদি শুধু লাল রঙের লিপস্টিক ভালো না লাগে, তাহলে দু-একটা রং মিলিয়ে লিপস্টিকের রং বানিয়ে নিতে পারেন। বিয়ের পরের কয়েকটা দিনই একটু ভারী গয়না পরে নিতে পারেন। কারণ, কিছুদিন পরে এই গয়নাগুলোই বাক্সবন্দী হয়ে পরে থাকে।
নতুন বউ মানেই যে অনেক ভারী সাজে সব দাওয়াতে উপস্থিত হতে হবে, এমনটি নয়। হালকা, স্নিগ্ধ সাজেও তাকে অনন্য লাগবে। তুলে ধরবে তার ব্যক্তিত্ব। এন্ডি সিল্ক, হাফ সিল্ক বা তাঁতের শাড়িতে পাড়ে ভারী কাজ আছে এমন শাড়িও বেশ মানাবে বলে মনে করেন যাত্রার ডিজাইনার উর্মিলা শুকলা। তিনি মনে করেন, নতুন বউয়ের আবহ ফুটিয়ে তোলা যায় অনেকভাবেই। কাঠ-পুঁতি দিয়ে তৈরি ভারী গলার মালায় ভিন্নতা আসবে।
বিয়ে হয়ে গেছে এক বছর তিন মাস। কিন্তু বিয়ে-পরবর্তী দাওয়াত খাওয়া কিন্তু এখনো চলছে। এ কারণে অভিনেত্রী আফসান আরা বিন্দু এখনো নতুন বউয়ের সাজগোজের মধ্যেই আছেন। বিন্দু বলেন, ‘শাড়ির রং নিয়ে সব সময়ই আমি একটু খুঁতখুঁতে। গাঢ় রংগুলো বেশি ভালো লাগে। শাড়ির পাড় অন্য রঙের হতে পারে। আমার বিয়ের পর লাল, কমলা, ম্যাজেন্টা, নীল, গাঢ় সবুজ, গাঢ় মেরুন, সাদা, কালো, গোলাপি বেশি পরা হয়েছে। বিয়ের পর একটু গাঢ় রঙের লিপস্টিক, সোনার চুড়ি, হালকা চেইন, ছোট দুল পরে থাকলে নতুন বউদের দেখতে ভালোই লাগে। দাওয়াতে আমি চুল বেঁধে রাখা পছন্দ করি।’ বিন্দু বিয়ের পর গাঢ় মেরুন, লাল রঙের নেলপলিশ বেশি ব্যবহার করতেন। সুবিধা ছিল যে শাড়ির সঙ্গে মিলে যেত সহজেই। বারবার সময় ব্যয় করতে হতো না এর পেছনে। বিয়ের পরের দাওয়াতগুলোতে স্বর্ণের গয়নাই পরেছেন মূলত। স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন ক্লাচ ব্যাগে। গয়নার মধ্যে কাটাইয়ের কাজ করা গয়না এখন খুব পছন্দ করছেন।
বিয়ের সময় উপহার হিসেবে অনেক শাড়ি ও গয়না পেয়ে থাকেন নতুন বউরা। নেমন্তন্ন করেছেন যিনি তাঁর কাছ থেকে যদি এমন শাড়ি বা গয়না উপহার হিসেবে পেয়ে থাকেন, তবে সেটা পরে যেতে পারেন। খুশি হবেন তাঁরা। শাড়ি ও গয়না পরার সময় খেয়াল রাখবেন আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন কি না। নাহলে আপনার চেহারায় সেটা ফুটে উঠবে। কনক দ্য জুয়েলারি প্যালেসের ডিজাইনার লায়লা খায়ের বলেন, ‘শাড়ি ও গয়নার মধ্যে যেকোনো একটিকে প্রাধান্য দিতে হবে। শাড়ি হালকা হলে গয়না যেন একটু ভারী হয়। গলার মালাটা বেশি ভারী হলে শুধু দুল আর মোটা দুটো বালা পরে দাওয়াতে যেতে পারেন। কোনো দাওয়াতে লম্বা মালা পরলে, কোনো দাওয়াতে গলায় চিক পরতে পারেন। তাহলে একেক দিন একেকটি লুক তৈরি হবে।’ কাতানের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী গয়না বেশি ভালো মানায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সিল্ক শাড়ির সঙ্গে বেছে নিতে পারেন মুক্তার গয়না। মসলিন শাড়ির সঙ্গে পাথরের গয়না বা রূপার গয়না ভালো লাগবে। জামদানি শাড়ির রং যদি চাপা সাদা হয় কিংবা জরির কাজ বেশি থাকে, পরে ফেলুন মুক্তার মালা। এ ছাড়া সোনার গয়না মানাবে।

প্রথম জয় পেল বাংলাদেশের মেয়েরা

মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। গ্র“প পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৩ রানে হারিয়েছে তারা।
মঙ্গলবার সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামে দিনের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের গড়া ৯

 

বাস এলো শতাব্দীর জন্য

রাজধানীর শেওড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে: ‘মহিলাদের উঠতে দেওয়া যাবে না’, ‘মহিলা আসন খালি নেই’- প্রতিদিনের এমন অবজ্ঞা আজ আর শুনতে হয়নি। বরং বাসটাই অপেক্ষা করছিল মহিলাদের/নারীদের জন্য। সে বাসে  সেই মেয়ে এবং তারপরে একে একে স্কুলগামী অন্য মেয়েরা উঠলো। পরে বাস ছুটে চললো।

রোববার (১৩ মার্চ) ভোর ঠিক সাড়ে ৬টায় শেওড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রা শুরু করে বাসটি। এতে একই সঙ্গে অবসান হয় শতাব্দীর মতো শত শত মেয়ের কষ্ট।

শতাব্দী বাসে চড়ে পরবর্তী বাসস্ট্যান্ড ক্যান্টনমেন্ট এমইএস বাস বাসস্ট্যান্ডে নেমে গেলো। আর এখন থেকে এই বাস প্রতিদিন চলবে। শেওড়া থেকে মহাখালী পর্যন্ত মহিলা বাস সার্ভিস নামে সরকারের বিশেষ এই বাস সেবা।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীকে সরাসরি পেয়ে শামসুন্নাহার শতাব্দী গতকাল শনিবার (১২ মার্চ) প্রশ্ন করেছিল এই সড়কে কি কোনো মহিলা (নারী) বাসের প্রয়োজন নেই?

এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী সেই মুহুর্তেই বাসের ঘোষণা দিয়েছিলেন। মন্ত্রীর ঘোষণা মাত্রই তা কার্যকর হলো। এই সড়কের যেসব মহিলা যাত্রীদের আগে লোকাল বাসে উঠতে দেওয়া হতো না, বা উঠতে গেলে শত পুরুষ ঠেলে বেগ পেতে হতো- এখন তাদের জন্যই আলাদা একটি বাস অপেক্ষা করছে।

প্রথম দিনের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাসে প্রথম যাত্রী ছিলেন শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী শতাব্দী। তারপরে তাকে দেখে অন্য মেয়েরাও ছুটে আসে বাসের দিকে। শতাব্দী নিজে আরও মেয়েদের ডেকে নিয়ে আসে বাসে। হাসিমুখে একে একে বাসে উঠে উল্লাসিত মেয়েরা।

শতাব্দী  বলেন, আমাদের ক্লাস শুরু হয় সকাল ৭টায়। ৭টার আগ পর্যন্ত বিশ্বরোড শেওড়া বাসস্ট্যান্ডে শত শত মেয়ে এসে বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকে।

আগে বাসের জন্য আগে আসার প্রবণতা থাকতো। সময় নষ্ট হতো, এখন আর তা হবে না বলে মনে করেন শামসুন্নাহার শতাব্দী।

আর স্কুল শেষ হয় সোয়া ১২টায়। তবে আজকে সাড়ে ৯টায় শেষ হবে এবং তখনই এমইএস বাসস্ট্যান্ডে শিক্ষার্থীদের জন্য অপেক্ষায় থাকবেন বলে জানান, বাসটির চালক মিজানুর রহমান।

বাসের কন্ডাক্টর মো. আলমাস প্রথম দিন ডেকে-ডেকে মেয়েদের তুলেছেন।

‘কাল (সোমবার-১৪ মার্চ) থেকে আর ডাকা লাগবে না; দেখবেন এমনিতেই ভরে যাবে’-এমন আশাবাদ তারও।

শতাব্দী জানান, প্রতিদিন বাসের জন্য আগে আগে আসার যে প্রবণতা ছিল এবং তড়িঘড়ি করে জোরজবরদস্তি করে বাসে উঠতে হতো। সেটি এখন কমে যাবে। সময়টাও যে নষ্ট হতো এখন আর তা হবে না।

শতাব্দীর এই সাহসী উচ্চারণে বাস পেয়ে উল্লাসিত সকালে স্কুলগামী ওই গন্তব্যের অন্য মেয়েরাও।

প্রতিদিন শেওড়া থেকে সকাল ৬টা থেকে বিকেল পর্যন্ত শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য বিআরটিসির এই বাস চলবে।

 

হাদিসের আলোকে রাগ নিয়ন্ত্রণ

রাগ আমাদের জীবনের একটা প্রধান সমস্যা। ‘রাগকে নিয়ন্ত্রণ কর’- জীবনে একাধিকবার এ কথা শোনেনি; এমন মানুষ পাওয়া খুব কঠিন। আবার এই বিষয়টিকে খুব সুন্দরভাবে সমাধান করেছেন; এরকম মানুষও আছে। তবে যারা এ কাজটি খুব ভালোভাবে ভদ্রতার সাথে করতে পারে; তারা কোনো সাধারণ মানুষ নন। এ অসাধারণ মানুষের মধ্যে একজন আমাদের মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স:)।

এক মূহুর্তের রাগ, সারা জীবনের কান্না। আল্লাহ্ ﷻ বলেছেন – “তোমরা রাগকে গিলে ফেলো” (সূরা আলে ইমরান:১৩৪)। রাগ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে রাগের মাথায় আমরা এমন কিছু করে বসতে পারি বা বলে বসতে পারি যার জন্য আজীবন অনুশোচনা করতে হবে।

আজ আমরা রাগ সংক্রান্ত ৩টি হাদিস সম্পর্কে জানবো। এই তিনটি হাদিস থেকে এটা দেখবো যে, কেউ যখন রাসূলুল্লাহ (স:)’কে রাগিয়ে দেয়ার মতো আচরণ করতেন, তখন তিনি ﷺ কীভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করতেন:

১) আনাস (রা:) ছিলেন ৭-৮ বছরের ছোট্ট একটা ছেলে। তাঁর মা তাঁকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে পাঠিয়েছিলেন তাকে ছোটখাটো কাজ করে সহযোগীতা করার জন্য। যতোটা না কাজ করতেন তার চেয়ে বেশি দুষ্টুমিই করতেন। একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ আনাসকে (রা:) একটা কাজে বাইরে পাঠালেন। যাওয়ার পথে তিনি রাস্তার মধ্যে কয়েকজন ছেলেকে খেলা করতে দেখেছিলেন। তাদেরকে দেখে কাজের কথা ভুলে ছোট্ট আনাসও (রা) খেলায় মগ্ন হয়ে গেলেন। খেলার ঘোরে কতক্ষণ যে কেটে গেছে তাঁর আর সেই খেয়াল ছিল না। পরে হঠাৎ একসময় আনাস (রা) বুঝতে পারলেন যে, কেউ তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন।  তিনি মাথা ঘুরিয়ে দেখেন – একি! এ যে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ এক মুখ হাসি নিয়ে উপস্থিত!

রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে জরুরি কাজেই পাঠিয়েছিলেন। অনেক সময় পার হওয়ার পরেও যখন তিনি ফিরলেন না, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রেগে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তিনি আনাস(রা:) এর উপরতো রাগলেনই না, বরং হাসি ভরা মুখে তাঁকে নিতে এলেন।

অনুসরণীয়-১: রাগকে হাসিতে রূপান্তর করুন।

২) একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ দেখলেন, এক মহিলা কবরের সামনে খুব কান্নাকাটি করছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন,  “আল্লাহকে ﷻ ভয় করো এবং ধৈর্য ধরো।” তখন ঐ মহিলা রাসূলুল্লাহকে ﷺ চিনতে না পেরে রেগে গিয়ে বলে উঠলেন,  “যান এখান থেকে! আমার মতো বিপদতো আর আপনার হয়নি!” তিনি ঐ মহিলাকে কিছুই জবাব দিলেন না। শুধু চুপচাপ সেই স্থান থেকে চলে গেলেন।

অনুসরণীয় -২: রেগে থাকা মানুষকে বুঝাতে যাবেন না। কারণ, সে বুঝবে না। তাকে শান্ত হওয়ার জন্য সময় দিন।

৩) রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “যে ব্যক্তি তর্ক করা ছেড়ে দিবে, সে যদি ভুলের পক্ষেও হয় তবুও সে জান্নাতের প্রান্তে বাড়ী পাবে। আর যে ব্যক্তি সঠিক হওয়ার পরেও তর্ক ছেড়ে দিবে, সে জান্নাতের মাঝখানে বাড়ী পাবে। আর যে ব্যক্তি নিজের চরিত্রের উন্নয়ন করবে সে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে বাড়ী পাবে।”

অনুসরণীয় -৩: রাগ বা তর্ক করার মতো কারণ থাকা সত্ত্বেও তা করবেন না। এসব না করে আল্লাহর ﷻ ওপর ছেড়ে দিন বিচারের ভার। এসব করে সাময়িক জয় পাওয়া যায় কিন্তু স্থায়ী সমাধান হয় না। আর কোনোকিছুর পরিবর্তন আপনি চাইলেই হবে না। যার সমস্যা তার একান্ত ইচ্ছা থাকলেই একমাত্র পরিবর্তন সম্ভব।

ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান; যা আপনার জীবনকে শান্তিময় করে তুলবে, এই জীবনে এবং তার পরের জীবনেও। তাই শুধু বড় বড় উপদেশ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি আল্লাহর প্রেরিত নবী-রাসুলরা। তাঁরা দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে তা বাস্তবে প্রয়োগ করতে হয়। একজন প্রকৃত মুসলিম ইসলামকে সঠিকভাবে মেনে চলেন নিজের জীবনের সুখ-সমৃদ্ধি আর অপার শান্তির জন্য। এতে তার ইহকাল এবং পরকাল এ দুঃসময়ের জন্যই পরম শান্তির বার্তা বয়ে আনে।

 

বৈচিত্রময় হিজাব

হিজাবের সাথে আধুনিক পোশাকের একটা মিশেল লক্ষ্য করা যায় । মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে নারীরা সাধারণত স্কার্ফ বা হিজাব পড়েন৷ মাথার চুল ঢেকে রাখাই এই হিজাবের মুখ্য উদ্দেশ্য৷

কিন্তু বর্তমানে এটি যেন ফ্যাশান অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে৷ আর তার ফলে ফ্যাশান মঞ্চেও এখন উঠে এসেছে হিজাব৷হিজাব আসলে কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়৷ এই ঢিলাঢালা পোশাকে শরীর ঢেকে রাখার পাশাপাশি আপনি কতটা আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে পারেন, এর মাধ্যমে সেটাই প্রকাশ পায়৷ আর তার সঙ্গে সঙ্গে এটা বেশ আরামদায়ক পোশাক৷

দিনকে দিন বাড়ছে হিজাবের কদর। হিজাব এখন আর শুধু পর্দা করার কাজে আটকে নেই, ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তাই ব্যবসায়ীরাও ক্রেতার চাহিদার ভিত্তিতে বাজারে নিয়ে আসছে নানা ধরণের হালফ্যাশনের হিজাব।

শুধু দেশেই তৈরি হচ্ছে না, বিদেশ থেকে বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য থেকে হিজাব আসছে বাংলাদেশে। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত বিপনীগুলোতে গড়ে উঠেছে হিজাবের দোকান। বর্তমানে সব বয়সী নারীরাই হিজাব পরছেন।

অনেকে ছোট্ট শিশুটিকেও হিজাব পরাচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন বাইরের ধুলাবালি থেকে ত্বক ও চুলের সুরক্ষা হচ্ছে, অন্যদিকে ফ্যাশনে এসেছে নতুনত্ব।

হিজাব পরার টিপস:    হিজার পরার ক্ষেত্রে পোশাক বাছাইয়ের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। হিজাব পরতে পারেন শাড়ি, কামিজ, কুর্তা বা অন্য যে কোনো পোশাকের সঙ্গে। তবে হিজাব পরার আগে অবশ্যই লম্বা হাতা বা থ্রি কোয়ার্টার হাতার পোশাক বেছে নিতে হবে।

হিজাবের সঙ্গে ছোট হাতার পোশাক একদমই বেমানান। স্কুল-কলেজ, নানা ধরণের সামাজিক অনুষ্ঠানসহ কর্মস্থলেও মেয়েরা অনায়াসে ব্যবহার করতে পারেন হিজাব।

পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে হিজাব পরলে খুব সুন্দর দেখায়। পরনের পোশাকটি বেশি নকশা করা বা প্রিন্টের হলে একরঙা হিজাবও পরতে পারেন।

3হিজাবকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে নানা ধরনের স্টাইল ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে হিজাবের সঙ্গে পরার জন্য পাথর ও পুতির বিভিন্ন ডিজাইন করা ব্রোজ পাওয়া যায়।

চকচকে রঙের ব্রোজগুলোর ব্যবহার আপনাকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলবে। এছাড়া হিজাবের সঙ্গে মানানসই নানা পাথরের গহনাও এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

বর্তমানে মুসলমানদের মধ্যে বিয়ের কনের সাজেও স্বগর্বে স্থান করে নিয়েছে হিজাব। জমকালো সাজকে সবার কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য করতে হিজাবকে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন।

কোথায় পাবেনঃ ঢাকার বসুন্ধরা সিটি,যমুনা ফিউচার পার্ক, নিউ মার্কেট, পিঙ্ক সিটি, এমনকি আপনার হাতের কাছে যে কোন বিপনি বিতানে।

চট্টগ্রামে মিমি সুপার মার্কেট, সেণ্ট্রাল প্লাজা, আফমি প্লাজা, মতি কমপ্লেক্সসহ প্রায় সব শপিংমলেই পাবেন আপনার পছন্দসই হিজাব ।

বাজারে কটন, লেস, জর্জেট ও সাটিনসহ নানা ধরনের কাপড়ের হিজাব পাওয়া যায়। কাপড়ের মান ও নকশার উপর ভিত্তি করে হিজাবগুলো পাবেন ১০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।

আপনি চাইলে ঘরে বসেই বিভিন্ন অনলাইন সপগুলো থেকে আপনার হিজাবটি কিনে নিতে পারেন। তাই খুব সহজেই বেছে নিতে পারবেন সাধ্যের মধ্যে পছন্দের হিজাবটি।

 

হাল ফ্যাশনের অনুষঙ্গঃ ক্লাচ বা ছোট পার্স

ক্লাচ বর্তমানে তরুণীদের বহুল জনপ্রিয় ফ্যাশন অনুসংগ। আকারে ছোট আর হাতের মুঠোয় ধরে রাখা যাওয়ায় মেয়েরা এখন এই ব্যাগ বহন করছে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে। একটি ক্লাচ ব্যাগ কিন্তুhot-pink-fuchsia-clutch আপনার নিতান্ত সাদামাঠা পোশাককেও নিমেষে গ্ল্যামারাস করে দিতে পারে৷

তাই সংগ্রহে রাখুন কয়েকটি ক্লাচ ব্যাগ পার্টিতে বা কোনও অনুষ্ঠানে তো রোজকার ঢাউস ব্যাগটা নিয়ে যাওয়া যায় না৷ এত জিনিসপত্রেরও দরকার পড়েনা৷ তাই এই ধরনের অনুষ্ঠানে ক্লাচ ব্যাগের ব্যবহার অনেক দিন থেকেই চলে এসেছে৷ক্লাচ ব্যাগ রয়েছে নানা আকার আর উপকরণের।

চারকোণা, ডিম্বাকৃতি, গোলাকৃতি, পানপাতা আকৃতি, বেলুন আকৃতি, তিনকোণা, কাঠের হাতলসহ বাজারে রয়েছে নানা আকারের ক্লাচ ব্যাগ।

উপকরণে ব্যবহার করা হয়েছে সার্টিন, গার্মেন্ট ফেব্রিক, সিনথেটিক, লেদার, পাট, রেক্সিনসহ নানা কিছু। নজরকাড়া নকশা ক্লাচ ব্যাগের নানা ডিজাইন নজর কাড়ে খুব সহজেই।

এই ব্যাগ যেমন রয়েছে জমকালো নকশায় তেমনি রয়েছে সিম্পলে সুন্দরও। কারুকাজে ব্যবহার করা হয় আর্টিফিশিয়াল মুক্তা, স্টেন, পুঁতি, চুমকি, অন্টিক, ক্রিস্টালসহ নানা কিছু। রঙেও নান্দনিক ক্লাচ ব্যাগে খুঁজে পাওয়া যায় না এমন রঙ খুব কম রয়েছে। হোক সে চামড়ার ক্লাচ ব্যাগ কিংবা কাপড়ের।

সোনালি, সবুজ, হলুদ, লাল, গোলাপি, বেগুনিসহ রয়েছে নানা রঙের ক্লাচ ব্যাগ। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে পাওয়া যায় শেডের ক্লাচ ব্যাগও। যার একটি নেওয়া যাবে কয়েকটি পোশাকের সঙ্গে। কোন পোশাকে কেমন ক্লাচ ব্যাগ বিবিয়ানার ফ্যাশন ডিজাইনার লিপি খন্দকার বলেন, শাড়ির সঙ্গে ক্লাচ ব্যাগ বেশি মানানসই।

তবে জমকালো লং কামিজ, পার্টি পোশাকের সঙ্গে গর্জিয়াস ক্লাচ ব্যাগও মানানসই।

তাছাড়া বর্তমানে জমকালো ক্লাচ ব্যাগের শেপ ঠিক রেখে আর্টিফিশিয়াল লেদার, রেক্সিন, পাটের খুব সিম্পল নকশার কিছু ক্লাচ ব্যাগ বাজারে পাওয়া যায়। এগুলো নেওয়া যায় যে কোনো ধরনের সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে।

আবার একেক ধরনের শাড়ির সঙ্গে একেক ধরনের ক্লাচ ব্যাগ মানানসই। অঞ্জন’স, আড়ং, বিবিয়ানাসহ বেশ কিছু ফ্যাশন হাউসে জামদানি, তসর, কাতান কাপড় দিয়ে ডিজাইন করা ক্লাচ পাওয়া যায়।

এগুলো ভালো মানায় তসর, কাতান, বেনারসি, জামদানি শাড়ির সঙ্গে।

নানারকম স্টোনের ক্লাচ ব্যাগ ভালো লাগবে সিল্ক, সুতি, জর্জেট শাড়ির সঙ্গে।রেড বিউটি স্যালুনের রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বলেন, সব ধরনের সাজ, পোশাকের সঙ্গে ক্লাচ ব্যাগ মা1-2014-handmade-clutch-for-girls-collectionনানসই নয়।

ক্লাচ ব্যাগ যেমন আভিজাত্যপূর্ণ হয়, তেমনি সাজটিও হওয়া উচিত একটু গর্জিয়াস।

একদম সাদামাটা সাজের সঙ্গে হাতে ক্লাচ ব্যাগ ঠিক মানানসই নয়। তবে তাই বলে মেকআপে মুখখানি ভরে ফেলতে হবে, তা কিন্তু নয়। বেইজ মেকআপটা হালকাই করুন। তবে চোখটা একটু সাজাতে পারেন।

যদি দিনের সাজ হয় তাহলে হালকা শ্যাডো কিংবা শুধু আইলাইনার আর রাতের সাজে একটু গাঢ় শেডের শ্যাডো, গ্লিটার শ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন।

এ ক্ষেত্রে হেয়ার স্টাইলে কোনো বাছবিচার নেই। আপনার পছন্দমতো যে কোনো স্টাইলেই হেয়ার সেট করতে পারেন।

তবে বর্তমানে স্ট্রেইট, রোলার, এলোমেলো নানা ধরনের বেণি চলছে। করতে পারেন এসবও।

দরদাম

স্টোনের ক্লাচ ব্যাগ পাওয়া যাবে ৮০০-২০০০ টাকায়, পার্ল বসানো ক্লাচ ব্যাগ ২৫০০-৪০০০ টাকা, কাতান কাপড়ের ৬০০-১২০০ টাকা, জামদানি কাপড়ের ৮০০-১৫০০ টাকা, পুঁতি, পাট, চুমকি, অন্টিকের নকশা করা ক্লাচ ব্যাগ ৫০০-১০০০ টাকায়, বিবিয়ানা, বাংলার মেলা, অঞ্জন’সে কাতান কাপড়ের ক্লাচ ব্যাগ পাওয়া যাবে ৪০০-৯০০ টাকায়, মায়াসিরে বেনারসি, সিল্ক, তসর কাপড়ের লেইস বসানো ক্লাচ ব্যাগ ১০০০-২৫০০ টাকা। কোথায় পাবেন?

নানা ডিজাইনের ক্লাচ ব্যাগ পাওয়া যাবে বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, আড়ং, অঞ্জন’স, মায়াসির, বাংলার মেলা, যমুনা ফিউচার পার্ক, রাপা প্লাজা, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটিসহ বিভিন্ন শপিংমল এ।

 

সহজেই দূর করুন আয়নার দাগ

যতই দিন যায়, আয়নার ঔজ্জ্বল্য ততই বিনষ্ট হয়। আয়নায় পড়ে হাজারো দাগ। সেই দাগ যতই তোলার চেষ্টা করুন না কেন, উঠবে না৷ তাই আজ খুব সহজে ঘরোয়া উপায়ে আয়নাকে দাগমুক্ত করতে দেওয়া হলো কিছু উপায়-

১. সংবাদপত্র

আয়না পরিষ্কারের সবচেয়ে সস্তা উপায় হচ্ছে সংবাদপত্র। পানিতে ভেজানো সংবাদপত্র দিয়ে আয়না ঘষে নিন। এবার নরম কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন। ইচ্ছে করলে ভিনেগার মেশানো পানিতেও সংবাদপত্র ভিজিয়ে নিতে পারেন। এটা আরো ভালো কাজ করবে।

২. সাদা ভিনেগার

একটি বোতলে এক কাপ ভিনেগারের সঙ্গে এক কাপ পানি ভালো করে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি দিয়ে আয়নার ওপর স্প্রে করে নিন। কিছুক্ষণ পর ভেজানো তোয়ালে দিয়ে আয়না মুছে ফেলুন। দেখবেন, আয়নাটি নতুনের মতো ঝকঝক করবে এবং যেকোনো দাগ দূর হবে।

৩. শেভিং ফোম

সবচেয়ে বেশি দাগ পড়ে বাথরুমের আয়নায় যা সহজে উঠতেই চায় না। আয়নায় শেভিং ফোম মেখে কিছুক্ষণ পর নরম কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন। দেখবেন পানির সব দাগ উঠে যাবে। তবে মনে রাখবেন, আয়নার ওপর বেশিক্ষণ শেভিং ফোম রাখবেন না। এতে উল্টো দাগ পড়ে যেতে পারে।

৪. বেকিং সোডা

এক চা চামচ বেকিং সোডা একটি স্ক্রাবারে নিয়ে আয়নায় ভালো করে ঘষে নিন। এবার পানিতে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন। দেখবেন, আয়নার দাগ এক নিমেষেই চলে যাবে এবং ঝকঝক করবে।

৫. ডিস্টিল্ড ওয়াটার

সাধারণ পানির চেয়ে আয়না বেশি পরিষ্কার হয় ডিস্টিল্ড ওয়াটারে। একটি তোয়ালের মধ্যে ডিস্টিল্ড ওয়াটার নিয়ে আয়না ভালো করে মুছে নিন। নিয়মিত ব্যবহার করবেন। এতে আয়না নতুনের মতো চকচক করবে।

 

অপরাজিতার নন্দিতা

দীপ্ত টিভির নিয়মিত শিল্পীদের একজন শারমিন আঁখি । টেলিভিশনটিতে প্রচার হওয়া অরিজিত মুখার্জির পরিচালনায় ওপার বাংলার প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর উপন্যাস ‘বালুচারী’ অবলম্বনে টিভি ধারাবাহিক ‘অপরাজিতা’র নন্দিতা চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি।

‘অপরাজিতা’ সিরিয়ালে নিজের চরিত্র সম্পর্কে শারমিন বলেন, “ছটফটে ও চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে নন্দিতা।পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে বোন নন্দিতার অবস্থান সেঝো । ছোটবেলা থেকেই সংসারের টানা পোড়েন দেখে বেড়ে ওঠা নন্দিতার। তাই শুরু থেকেই নন্দিতা চরিত্রটি অনেক কেলকুলেটিভ। নিজের চাহিদাগুলো কিভাবে আদায় করে নিতে হয় তা শিখে নিয়েছে ছেলেবেলা থেকেই।”

অপরাজিতা মেগা সিরিয়ালটি শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ছয়দিন রাত ৮.৩০ মিনিটে প্রচারিত হচ্ছে দীপ্ত টিভির পর্দায়। শারমিন আঁখির টেলিভিশন পর্দায় পথ চলা শুরু ২০১১ সালে দেবাশীষ বড়ুয়া দ্বীপের ‘ঘটক বাকী ভাই’ ধারাবাহিক নাটক দিয়ে । তারপর নার্গিস আক্তারের টেলিছবি ‘ভালোবাসা কী করে ভালো হয়’, দেবাশীষ দ্বীপের আরেকটি ধারাবাহিক ‘চারকন্যা’য় কাজ করেন। এরপর ইমরাউল রাফাতের ‘আপন খবর’, ধারাবাহিক ‘রাব্বু ভাইয়ের বৌ’, আশুতোষ সুজনের ‘বাইশে শ্রাবণ’, রাহাত কবিরের ‘না বলা কথা’ রাসেল শিকদার এর “গিটার” সহ প্রায় অর্ধ শতাধিক একক ও ধারাবাহিক নাটকে কাজ করেছেন।

শিহাব শাহীন পরিচালিত ‘নীলাঞ্জলা’, ‘তোমার আমার বিয়ে’ এবং মিজানুর রহমান আরিয়ানের ‘উৎসর্গ’ , শুভ্র খান এর পরিচালিত ধারাবাহিক ‘অনাকাঙ্খিত সত্য’ তার উল্লেখযোগ্য কাজ।মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের প্রযোজনায় আবুল হোসেন খোকনের পরিচালনায় ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজের তার অভিনীত ‘জিনা’ চরিত্রটি দর্শকের দৃষ্টি কেড়েছে। প্রচারের অপেক্ষায় রয়েছে ফয়সাল খান রিপনের ‘মিছা কথার মেশিন’ এবং রাহাত কবিরের ‘ভালবাসার রঙ’, ‘সম্পর্কের আবর্তে’ সহ আরও বেশকিছু নাটক।

 

এবার দেখা যাবে তিশা-সোহম জুটি

ছোট পর্দায় জনপ্রিয়তা অর্জন করার পর বড় পর্দায় পদার্পণ করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। অভিনয় করেছেন শাকিব খান ও আরিফিন শুভর বিপরীতে। এবার অভিনয় করতে যাচ্ছেন কলকাতার জনপ্রিয় নায়ক সোহমের বিপরীতে। ছবির নাম ‘তোর নামে লিখেছি হৃদয়’।

ছবিটি তৈরি হচ্ছে যৌথ প্রযোজনায়। প্রযোজনা করছে বাংলাদেশের এসএস মাল্টিমিডিয়া ও কলকাতার নায়াগ্রা এন্টারটেইনমেন্ট। পরিচালনা করবেন অনন্য মামুন এবং কলকাতার ভুবন চ্যাটার্জি। যৌথ প্রযোজনায় এটি অনন্য মামুনের দ্বিতীয় ছবি। আগেরটি ছিলো ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’।

এর আগে অনন্য মামুনের ‘অস্তিত্ব’তে অভিনয় করেছেন তিশা। আর তিশার আগে সোহম যৌথ প্রযোজনায় ‘ব্ল্যাক’ ছবিতে অভিনয় করেন। তার বিপরীতে ছিলেন বিদ্যা সিনহা মিম।

চলতি মাসের শেষ দিকে শুরু হবে দৃশ্যধারণ। ছবিটির জন্য গান তৈরি করছেন হাবিব ওয়াহিদ, নাভেদ পারভেজ, আকাশ প্রমুখ। তিশা-সোহম ছাড়াও থাকছেন সুচরিতা, মিশা সওদাগর, ডন, কলকাতার খরাজ মুখার্জি, সুপ্রিয় প্রমুখ।

 

শমী কায়সারের স্বপ্ন হিন্দি গানের কনসার্ট!

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর আল-বদরের হাতে অপহৃত হন লেখক শহীদুল্লা কায়সার। এরপর আর ফিরে আসেননি। স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন তিনি। অথচ তার কন্যা অভিনেত্রী, ব্যবসায়ী শমী কায়সার এ কি করলেন! এ কি বললেন! তা-ও স্বাধীনতার মাস মার্চেই!

শমীর প্রতিষ্ঠান ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন্স বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজন করে ‘অরিজিৎ সিং উইথ সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা’। শিরোনাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এ কনসার্ট ছিলো ভারতীয় সংগীতের বর্তমান সেনসেশন অরিজিৎ সিংকে ঘিরে।

মধ্যভাগে মঞ্চে এসে শমী তার বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ‘আমরা বারবার প্রমাণ করি, বাঙালি গান শোনে। বাঙালি নাটক দেখে। বাঙালি সংস্কৃতিকে ভালোবাসে।’ এরপর তিনি উল্লেখ করেন, ‘এটা অনেক বড় স্বপ্ন ছিলো। এতো বড় একটি স্বপ্ন সফল হয়েছে এক বছর ধরে। আমাদের এই স্বপ্নকে সফল করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’

শমীর মুখে এ কথা শুনে বিস্মিত হন অনেকে। যার বাবা শহীদ বুদ্ধিজীবী, তিনি হিন্দি গানের পসরা বসিয়ে নিন্দিতই হলেন বলা চলে। বিশেষ করে হিন্দি গানের কনসার্ট করা তার স্বপ্ন উল্লেখ করায় হতবাক সবাই। অরিজিৎ বলিউডের গান-বাজনায় হালের ক্রেজ ঠিকই, কিন্তু তাকে নিয়ে তো কনসার্ট আগেও ঢাকায় হয়েছে, এতে স্বপ্নের কি আছে ঠিক বোধগম্য হলো না বেশকিছু দর্শক-শ্রোতার।

তবে ব্যবসার জায়গা বা ব্যবসায়িক কৌশল থেকে ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন্স এমন কনসার্ট আয়োজন করতেই পারে। তাছাড়া সংগীতের কোনো সীমান্ত নেই, তাই হিন্দি গানের পসরাও তারা সাজাতে পারেন। এটা তাদের চেতনার ব্যাপার। কিন্তু বুদ্ধিজীবীর সন্তান হয়ে হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতার সামনে এসে শমী যেভাবে গর্ব নিয়ে এটাকে স্বপ্ন বললেন, তা দৃষ্টিকটুই লেগেছে। শমী যতোটা না ব্যবসায়ী, তার চেয়েও অভিনেত্রী ইমেজটা ইতিবাচক। দর্শকদের মধ্যে তাকে নিয়ে এখনও দূষিত কোনো মনোভাব তৈরি হয়নি। সে ক্ষেত্রে এমন বক্তব্য সাংঘর্ষিক বলে মনে করা হচ্ছে।

অবশ্য কনসার্টের শুরুতে অদিত অ্যান্ড ফ্রেন্ডস বাংলা ভাষার গান গেয়েছেন। তাদের পরিবেশনায় ছিলো দেশাত্মবোধক গানও। যদিও বাংলাদেশি শিল্পীদের মধ্যে অদিতের নয়, গান গাওয়ার কথা ছিলো এলিটা ও মাহাদীর। কিন্তু প্রচারণায় অরিজিতকে প্রাধান্য দেওয়ায় তারা নিজেদেরকে সরিয়ে নেন। তাদের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সংগীতশিল্পীরা।

গায়িকা আলিফ আলাউদ্দিন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আজ থেকে বেশ অনেক বছর আগে সালমান খান ঢাকায় এসেছিলেন। গানের তালে হাত নাড়িয়ে তারপর চলে গেলেন। সেই অনুষ্ঠানে আমারও গাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু সেই একই কারণে গাইনি। আমার এসব বিষয় গায়ে লাগে। আমাদের সবারই গায়ে লাগে।’

গেলো বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আলিফ আরও লিখেছেন, ‘বলিউড তারকা হৃতিক রোশনের পাশে লোকগানের সম্রাজ্ঞী মমতাজের ক্ষুদ্র ছবি অতিশয় বেমানান। মমতাজ যে কোনো আন্তর্জাতিক তারকার চেয়ে যখন-তখন দর্শক মাতাতে সক্ষম। আমরা নিজেরাই নিজেদের ওপর আস্থা রাখতে পারি না। নিজেদেরকে নিয়ে লজ্জা হয়!’

প্রতিবাদ জানানোর জন্য এলিটা আর মাহাদীকে বাহবাও দিয়েছেন আলিফ। সংগীতশিল্পী প্রীতম আহমেদ লিখেছেন, ‘যাক, অন্তত মাহাদী ও এলিটা প্রমাণ করলো এখনও কিছু সংগীতশিল্পীর আত্মসম্মানবোধ আছে।’ দর্শক-শ্রোতাদের একজন ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশীয় শিল্পীদেরকে হেয় করা উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিবাদ জানাতে জনসাধারণেরও উচিত এগিয়ে আসা।’

চলতি মাসে ভারতের আরও কয়েকজন সংগীতশিল্পীর অনুষ্ঠান হবে ঢাকায়। ১৮ মার্চ মোনালি ঠাকুর আর ৩১ মার্চ আসবেন ফারহান আখতার। শুক্রবার (১১ মার্চ) বিশাল-শেখরের আসার কথা থাকলেও তা স্থগিত হয়েছে। ভারতীয় শিল্পীদের প্রতি আয়োজকদের অতি আগ্রহে হতাশ শিল্পীসমাজ। গায়ক আসিফ আকবর তো অনেকদিন ধরেই এর বিরুদ্ধে বলে আসছেন, ফেসবুকেও লিখেছেন।

এবার মাইলস ব্যান্ডের শাফিন আহমেদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কলকাতা থেকে আমার এক বন্ধু আমাকে জানালো, অরিজিৎ সিং আর্মি স্টেডিয়ামে ঢাকঢোল পিটিয়ে গান করবেন। ফারহান আখতার আসবেন ৩১ মার্চ। সেই বলিউড জোর করে শুনতেই হবে! বাংলা রক ভালো লাগে ওর। যাকে আমরা ব্যান্ড সংগীত হিসেবে উল্লেখ করি। ওপার থেকে এই বেদনা অনুভব করছে সে।’

শাফিন যোগ করে আরও লিখেছেন, ‘আমরা মাইলসের সদস্যরা জানি, কতোটা কঠিন ও কতো বছর সংগ্রাম করে বাংলা রককে বাংলাদেশের মূলধারার সংগীতের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আমরা এখনও লড়াই করে যাচ্ছি। কিন্তু যদি নিজের দেশের মানুষই তা বুঝতে না চায় এবং নিজেদের সংস্কৃতিকে সুরক্ষার ব্যাপারে উদ্যোগ না নেয়, তাহলে কে নেবে? বলিউডের সংগীত ও চলচ্চিত্র তারকাদেরকে প্রতি সপ্তাহে কতো টাকা দিয়ে দিচ্ছি আমরা? সে খেয়াল আছে কারও?’

শমী কায়সার কি এসব মন্তব্য দেখছেন? অরিজিৎ সিংকে এনে তিনি নিজের স্বপ্নপূরণ তো করেছেন, এবার বাংলাদেশের শিল্পীদের নিয়ে কিছু করুন ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন্স থেকে। যে দেশটাকে স্বাধীন করার জন্য তার বাবা শহীদ হয়েছেন। যার সবচেয়ে গর্বের পরিচয়, তিনি শহীদের সন্তান।

 

নারীবিদ্বেষীদের প্রতি হিলারির জবাব

রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বনামে উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বদের পোশাক-আশাক নিয়ে অভিনয়শিল্পী বা সঙ্গীতশিল্পীদের পোশাক, সাজসজ্জার মতই মাতামাতি হয়ে থাকে পাশ্চিমা দেশগুলোতে। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনের নারী তারকাদের ক্ষেত্রে তাদের পোশাক, সাজসজ্জা নিয়ে মাতামাতিটা বাড়াবাড়ি, ক্ষেত্রবিশেষে সমালোচনাতেই রূপ নেয় বেশি। ব্যক্তির, বিশেষ করে নারীদের, কাজের মূল্যায়ন তার পোশাক আশােকর সমালোচনার ভিড়ে হারিয়ে যায় যেন।
তবে নিজের নতুন ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা প্রম ছবিতে এসব সমালোচনার জবাব দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন।প্রম ছবিতে একসঙ্গে লাল, সাদা ও নীল রঙয়ের (যা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার রং) প্যান্ট-স্যুট পরিহিতা ছবি দিয়ে যেন বলতে চাইলেন, “ফ্যাশন নিয়ে মন্তব্য করা শুধু যারা ফ্যাশন নিয়ে কাজ করে তাদেরই দখলে নয়, রাজনীতিবিদরাও ফ্যাশনেবল হতে পারে”। হিলারির পোশাক নিয়ে প্রায়ই সমালোচনা করা হয় যে, তার পোশাকগুলো ঠিক ‘নারীসুলভ’ না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিনড়ব
টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জনপ্রিয় টক শোগুলোতেও তার পোশাক নিয়ে সরাসরি কৌতুক করা হয়ে থাকে প্রায়ই। এমনকি ফ্যাশন বিশ্লেষক টিমগান এমনও মন্তব্য করেছেন যে, হিলারির পোশাক দেখে মনে হয় তিনি তার লিঙ্গপরিচয় নিয়ে বিভ্রান্ত। হিলারি পুরুষদের মধ্যে নিজেকে স্বতন্ত্র করে তোলার চেয়ে বরং তাদের মধ্যে মিশে যেতে চান বলেই এধরনের পোশাক পড়েন বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে। সাবেক ফার্স্ট লেডি, পরবর্তীতে সিনেটর এবং প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রম মেয়াদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে কাজ করা
হিলারির সব অর্জনই যেন তুচ্ছ তার সাজপোশাকের কাছে! শুধু হিলারি নয়, বর্তমান ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার সাজপোশাক নিয়েও আলোচনা সমালোচনা কম হয় না মার্কিন মিডিয়াতে। সাজপোশাক নিয়ে আলোচনায় বিভিনড়ব বিষয়ে তাদের বক্তব্য, কাজ ও গুরুত্বপূর্ণ অবদানগুলো অনেকাংশেই আলোচনার আড়ালে চলে যায়। এমনকি অভিনয়শিল্পী বা সঙ্গীতশিল্পীদের ক্ষেত্রেও এধরনের বৈষম্য হরদম করা হয়ে থাকে মিডিয়াগুলো।
কোন অনুষ্ঠানের শুরুতে লাল গালিচায় সাক্ষাতকারে ‘অভিনেতাদের’ সাধারণত প্রশড়ব করা হয় তাদের পরবর্তী সিনেমা বা টেলিভিশন সিরিজে অভিনীত চরিত্রগুলো নিয়ে। আর ‘অভিনেত্রীদের’ প্রতি মূলত প্রশড়ব থাকে তাদের সাজপোশাক নিয়েই, তাদের অভিনয় বা সঙ্গীত বিষয়ক কোন প্রশড়ব করাই হয় না এক রকমের। এছাড়া মিডিয়ার তৈরি করে দেয়া ফ্যাশন সংজ্ঞার মধ্যে সামাজিক বৈষম্যগুলো আরো প্রকটভাবেই ফুটে ওঠে। তবে হিলারি ক্লিনটন তার ইনস্টাগ্রাম ছবির মাধ্যমে নিজের অভিরুচি আর বুদ্ধিমত্তার
সঙ্গেই মিডিয়ার তৈরি করে দেয়া ভাষাতেই মিডিয়াকে ঘায়েল করেছেন বলে মনে করছেন তার ভক্তরা।

 

ওজন কমে ঘরের কাজেও

বাড়ির কাজে আপনার সাহায্যকারী যদি এক দিন না আসেন, তাহলে সেদিন মাথায় হাত পড়ে যায়। কীভাবে করবেন এত কাজ? তা নিয়ে বেশ ঝামেলাই হয় বটে। আবার ধরুন, শরীরচর্চা বা হাঁটার জন্য বাড়তি সময় বের করা কষ্টকর আমাদের জন্য। এই দুই সমস্যার সমাধান হলো বাড়িতে কিছু কাজ নিজেই করে ফেলা। একদিকে ঘরের কাজগুলো করা হবে, অন্যদিকে ঝেড়ে ফেলা হবে শরীরের বাড়তি ওজনটুকু। তা না হলে শরীরে বাড়তে থাকে ক্যালরির পরিমাণ। ফলে ওবেসিটি, শ্বাসকষ্ট, পায়ে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করাসহ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হয়। একটু পরিশ্রম করলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এমন পরামর্শ দেন পারসোনা হেলথের প্রধান প্রশিক্ষক ফারজানা খানম।
ঘর ঝাড়ু দেওয়া, ঘর মোছা, জানালা পরিষ্কার করা, থালাবাসন ধোয়া শরীরের জন্য খুব ভালো ব্যায়াম। এই কাজগুলো করতে গেলে শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করে থাকে। ফলে খুব দ্রুতই শরীর থেকে ঝরে যায় বাড়তি ক্যালরি। ঘরের কোনো কাজে কতটুকু ক্যালরি ব্যয় হচ্ছে, তারও একটা হিসাব জানালেন ফারজানা।
তিনি বলেন, প্রতিদিন থালাবাসন পরিষ্কার করলে ৮৫ ক্যালরি, কাপড় ইস্ত্রিতে ৭০ ক্যালরি, ঝুল ঝাড়ায় ৫০ ক্যালরি, বাথরুম পরিষ্কার করলে ২০০ ক্যালরি, কাপড় পরিষ্কার করলে ৬৮ ক্যালরি খরচ হয়। খুব দ্রুত ক্যালরি পুড়িয়ে ওজন কমাতে চাইলে ঘর মোছা সবচেয়ে কাজে দেয়। তবে পেটে চাপ দিয়ে মুছতে হবে ঘর। আর এভাবেই পুড়বে ১১৯ ক্যালরি। যাদের পিঠের দিকে মাংস বেশি তাঁদের জন্য ঝুল ঝাড়া হলো আদর্শ কাজ। এতে খুব দ্রুতই কমবে পিঠের মেদ।
অনেকে এটা জানেন না যে রান্না করলে ওজন কমে। রান্নাঘরের গরম বাষ্প আর তাপের কারণে আধ ঘণ্টা রান্না করলে পুড়বে ১০৮ ক্যালরি। শরীর থেকে কতটুকু ক্যালরি পুড়ল সে হিসাবটা ঘরে বসে করতে পারেন। এ জন্য শরীরের বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স) অনুপাতটা বের করে নিন। বিএমআই যদি ১৮.৫ থেকে ২৪.৯-এর মধ্যে থাকে তাহলে আপনি শারীরিকভাবে সম্পূর্ণভাবে ফিট রয়েছেন। বিএমআই যদি এর চেয়ে কম হয় তাহলে আপনি আন্ডারওয়েট। আবার যাদের বিএমআই ২৫.০২ থেকে ২৯.৯-এর মধ্যে থাকে তাহলে ওজনটা অতিরিক্ত হলেও সেটা ওবেসিটি নয়। তবে এই মাত্রাটা ছাড়িয়ে গেলেই ওবেসিটির তালিকায় ঢুকে পড়ছেন আপনি। তাই বয়সটা ১৬-এর কোটায় পা দেওয়ার পর থেকেই যদি ক্যালরি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তাহলে এড়িয়ে যাওয়া যাবে জটিল সব রোগ। আর এ জন্য শারীরিক পরিশ্রমের বিকল্প নেই।

সূত্র : প্রথমআলো

 

ইসলামী চরিত্রের মৌলিক বিষয়সমূহ

মুসলমানদের ১৫ টি প্রশংসনীয় চারিত্রিক গুণাবলী

১ সত্যবাদিতা:

আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের যে সকল ইসলামী চরিত্রের নির্দেশ দিয়েছেন, তার অন্যতম হচ্ছে সত্যবাদিতার চরিত্র। আল্লাহ তাআলা বলেন,

“হে ঈমানদারগণ আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা সত্যবাদীদের সাথী হও।” সূরা আত-তাওবাহ : ১১৯
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
“তোমরা সততা অবলম্বন গ্রহণ কর, কেননা সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায় আর পূণ্য জান্নাতের পথ দেখায়, একজন লোক সর্বদা সত্য বলতে থাকে এবং সত্যবাদিতার প্রতি অনুরাগী হয়, ফলে আল্লাহর নিকট সে সত্যবাদী হিসাবে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।” মুসলিম

২ আমানতদারিতা :

মুসলমানদের সে সব ইসলামী চরিত্র অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার একটি হচ্ছে আমানতসমূহ তার অধিকারীদের নিকট আদায় করে দেয়া। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের নিকট আদায় করে দিতে।” সূরা আন নিসা : ৫৮
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট আল আমীন উপাধি লাভ করেছিলেন, তারা তাঁর নিকট তাদের সম্পদ আমানত রাখত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার অনুসারীদের মুশরিকরা কঠোর ভাবে নির্যাতন শুরু করার পর যখন আল্লাহ তাকে মক্কা হতে মদীনা হিজরত করার অনুমতি দিলেন তিনি আমানতের মালসমূহ তার অধিকারীদের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা না করে হিজরত করেননি। অথচ যারা আমানত রেখেছিল তারা সকলেই ছিল কাফের। কিন্তু ইসলাম তো আমানত তার অধিকারীদের নিকট ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছে যদিও তার অধিকারীরা কাফের হয়।

৩ অঙ্গীকার পূর্ণ করা:

ইসলামী মহান চরিত্রের অন্যতম হচ্ছে অঙ্গীকার পূর্ণ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন :
“আর অঙ্গীকার পূর্ণ কর, কেননা অঙ্গীকার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে।” সূরা ইসরা : ৩৪
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিশ্রতি ভঙ্গকরা মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে গণ্য করেছেন।

৪ বিনয় :

ইসলামী চরিত্রের আরেকটি হচ্ছে একজন মুসলমান তার অপর মুসলিম ভাইদের সাথে বিনয়ী আচরণ করবে। সে ধনী হোক বা গরীব। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“তুমি তোমার পার্শ্বদেশ মুমিনদের জন্য অবনত করে দাও।” সূরা আল হিজর : ৮৮
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
“আল্লাহ তাআলা আমার নিকট ওহী করেছেন যে, ‘তোমরা বিনয়ী হও যাতে একজন অপরজনের উপর অহংকার না করে। একজন অপর জনের উপর সীমালংঘন না করে।” -মুসলিম।

৫ মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার:

মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার উত্তম চরিত্রের অন্যতম। আর এটা তাদের অধিকার মহান হওয়ার কারণে, যে অধিকার স্থান হল আল্লাহর হকের পরে।আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
‘আর আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না, এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার কর।” [সূরা আন-নিসা : ৩৫ আয়াত]
আল্লাহ তাআলা তাদের আনুগত্য, তাদের প্রতি দয়া ও বিনয় এবং তাদের জন্য দু’আ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন :
“তাদের উভয়ের জন্য দয়ার সাথে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া কর যেভাবে শৈশবে আমাকে তারা লালন-পালন করেছেন।” [ সূরা আল ইসরা : ২৪ ]
এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল,
‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার সবচেয়ে বেশী অধিকারী ব্যক্তি কে ? তিনি বললেন, ‘তোমার মা।’ অত:পর জিজ্ঞেস করল তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন, ‘তোমার মা।’ অতঃপর জিজ্ঞেস করল তার পর কে? তিনি উত্তর দিলেন, ‘তোমার মা।’ অতঃপর জিজ্ঞেস করল তার পর কে? উত্তর দিলেন, ‘তোমার পিতা।’ [বুখারী ও মুসলিম]
মাতা-পিতার প্রতি এ সদ্ব্যবহার ও দয়া অনুগ্রহ অতিরিক্ত বা পূর্ণতা দানকারী বিষয় নয় বরং তা হচ্ছে সকল মানুষের ঐক্যমতের ভিত্তিতে ফরযে আইন।

৬ আত্মীয়তার সর্ম্পক বজায় রাখা :

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ইসলামী চরিত্রের অন্যতম। আর তারা হচ্ছে নিকটাত্মীয়গণ যেমন, চাচা, মামা, ফুফা, খালা, ভাই, বোন প্রমূখ।
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ওয়াজিব, আর তা ছিন্ন করা জান্নাত হতে বঞ্চিত ও অভিশাপের কারণ। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“ যদি তোমরা ক্ষমতা পাও, তাহলে কি তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে? তারা তো ঐ সব লোক যাদের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ করেছেন। এতে তিনি তাদেরকে বধির করে দিয়েছেন এবং তাদের দৃষ্টি অন্ধ করে দিয়েছেন।” [সূরা মুহাম্মাদ : ২২-২৩]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
“আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী বেহেশ্তে প্রবেশ করবে না।” [বুখারী ও মুসলিম]

৭ প্রতিবেশীর প্রতি সুন্দরতম ব্যবহার:
 প্রতিবেশীর প্রতি সুন্দরতম ব্যবহার হচ্ছে ইসলামী চরিত্রের অন্যতম। প্রতিবেশী হচ্ছে সে সব লোক যারা আপনার বাড়ীর আশে পাশে বসবাস করে। যে আপনার সবচেয়ে নিকটবর্তী সে সুন্দর ব্যবহার ও অনুগ্রহের সবচেয়ে বেশী হকদার। আল্লাহ তাআলা বলেন,
“আর মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার কর, নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকীন নিকটতম প্রতিবেশী ও দূরবর্তী প্রতিবেশীর প্রতিও।” [সূরা আন-নিসা : ৩৬]
এতে আল্লাহ নিকটতম ও দূরবর্তী প্রতিবেশীর প্রতি সদ্ব্যবহার করতে ওসিয়ত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনঃ
‘জিবরীল আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে ওসিয়ত করতেছিল এমনকি আমি ধারণা করেনিলাম যে, প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকার বানিয়ে দেয়া হবে।’ [বুখারী ও মুসলিম]
অর্থাৎ আমি মনে করেছিলাম যে ওয়ারিশদের সাথে প্রতিবেশীর জন্য মিরাসের একটি অংশ নির্ধারিত করে দেবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু যর রা. কে লক্ষ্য করে বলেন,
‘হে আবু যর! যখন তুমি তরকারী পাক কর তখন পানি বেশি করে দাও, আর তোমার প্রতিবেশীদের অঙ্গীকার পূরণ কর।” [ মুসলিম]
প্রতিবেশীর পার্শ্বাবস্থানের হক রয়েছে যদিও সে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি অবিশ্বাসী বা কাফের হয়।

৮ মেহমানের আতিথেয়তা:

ইসলামী চরিত্রের আরেকটি হচ্ছে মেহমানের আতিথেয়তা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী,
“যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস করে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে।” [বুখারী ও মুসলিম]

৯ সাধারণভাবে দান ও বদান্যতা:

ইসলামী চরিত্রের অন্যতম দিক হচ্ছে দান ও বদান্যতা। আল্লাহ তাআলা ইনসাফ, বদান্যতা ও দান কারীদের প্রশংসা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে অতঃপর যা খরচ করেছে তা থেকে কারো প্রতি অনুগ্রহ ও কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্য করে না, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রতিদান রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাও করবে না।” [সূরা আল বাকারাহ : ২৬২]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
‘যার নিকট অতিরিক্ত বাহন থাকে সে যেন যার বাহন নেই তাকে তা ব্যবহার করতে দেয়। যার নিকট অতিরিক্ত পাথেয় বা রসদ রয়েছে সে যেন যার রসদ নেই তাকে তা দিয়ে সাহায্য করে।” [মুসলিম]

১০ ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা:

ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা হচ্ছে ইসলামী চরিত্রের অন্যতম বিষয়। অনুরূপভাবে মানুষদের ক্ষমা করা, দুর্ব্যবহারকারীকে ছেড়ে দেয়া ওজর পেশকারীর ওজর গ্রহণ করা বা মেনে নেয়াও অন্যতম। আল্লাহ তাআলা বলেন :
“আর যে ধৈর্য্য ধারণ করল এবং ক্ষমা করল, নিশ্চয়ই এটা কাজের দৃঢ়তার অন্তর্ভূক্ত।” [সূরা আশ শুরা : ৪৩]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন
‘তারা যেন ক্ষমা করে দেয় এবং উদারতা দেখায়, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করে দেয়া কি তোমরা পছন্দ কর না?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “দান খয়রাতে সম্পদ কমে যায় না। আল্লাহ পাক ক্ষমার দ্বারা বান্দার মার্যাদাই বৃদ্ধি করে দেন। যে আল্লাহর জন্য বিনয় প্রকাশ করে আল্লাহ তার সম্মানই বৃদ্ধি করে দেন।” [মুসলিম ] তিনি আরো বলেন, “দয়া কর, তোমাদের প্রতি দয়া করা হবে। ক্ষমা করে দাও তোমাদেরও ক্ষমা করে দেয়া হবে।” [আহমাদ]

১১। মানুষের মাঝে সমঝোতা ও সংশোধন:

ইসলামী চরিত্রের আরেকটি হচ্ছে মানুষের মাঝে সমঝোতা ও সংশোধন করে দেয়া, এটা একটি মহান চরিত্র যা ভালবাসা সৌহার্দ প্রসার ও মানুষের পারষ্পারিক সহযোগিতার প্রাণের দিকে নিয়ে যায়।আল্লাহ তাআলা বলেন:
“তাদের অধিকাংশ শলাপরামর্শের মধ্যে কল্যাণ নেই। কেবল মাত্র সে ব্যক্তি ব্যতীত যে সাদকাহ, সৎকর্ম ও মানুষের মাঝে সংশোধনের ব্যাপারে নির্দেশ দেয়। যে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে এসব করে অচিরেই আমরা তাকে মহা প্রতিদান প্রদান করব।” [সূরা আন নিসা : ১১৪]

১২। লজ্জা:

ইসলামী চরিত্রের অন্যতম আরেকটি চরিত্র হচ্ছে লজ্জা। এটা এমন একটি চরিত্র যা পরিপূর্ণতা ও মর্যাদাপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের দিকে আহবান করে। অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা হতে বারণ করে। লজ্জা আল্লাহর পক্ষ হতে হয়ে থাকে। ফলে মুসলমান লজ্জা করে যে, আল্লাহ তাকে পাপাচারে লিপ্ত দেখবে। অনুরূপভাবে মানুষের থেকে এবং নিজের থেকেও সে লজ্জা করে। লজ্জা অন্তরে ঈমান থাকার প্রমাণ বহন করে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
‘লজ্জা ঈমানের বিশেষ অংশ।’ [বুখারী ও মুসলিম]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, “লজ্জা কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসে না।” [বুখারী ও মুসলিম]

১৩। দয়া ও করুণা:


ইসলামী চরিত্রের আরেকটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র হচ্ছে দয়া বা করুণা। এ চরিত্রটি অনেক মানুষের অন্তর হতে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। ফলে তাদের অন্তর পাথরের মত অথবা এর চেয়েও শক্ত হয়ে গেছে। আর প্রকৃত মু’মিন হচ্ছে দয়াময়, পরোপকারী, গভীর অনুভূতি সম্পন্ন উজ্জল অনুগ্রহের অধিকারী। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“অত:পর সে তাদের অন্তর্ভূক্ত হয় যারা ঈমান এনেছে পরস্পর পরস্পরকে ধৈর্য্য ও করুণার উপদেশ দিয়েছে। তারা হচ্ছে দক্ষিণ পন্থার অনুসারী।” [সূরা আল-বালাদ : ১৭- ১৮]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
“মুমিনদের পারস্পরিক সৌহার্দ্য, করুণা, অনুকম্পার উপমা হচ্ছে একটি শরীরের মত। যখন তার একটি অঙ্গ অসুস্থ হয় গোটা শরীর নিদ্রাহীনতা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়।” [মুসলিম]

১৪। ইনসাফ বা ন্যায়পরায়ণতা:


ন্যায় পরায়ণতা ইসলামী চরিত্রের আরেকটি অংশ। এ চরিত্র আত্মার প্রশান্তি সৃষ্টি করে। সমাজে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন প্রকার অপরাধ বিমোচনের দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা ইহসান ও নিকটাত্মীয়দের দান করতে নির্দেশ দেন।” [সূরা আল নাহাল : ৯০]
আল্লাহ তাআলা বলেন :
“ইনসাফ কর, এটা তাক্বওয়ার অতীব নিকটবর্তী।” [সূরা আল মায়িদা : ৮
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
“ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিরা আল্লাহর নিকট নূরের মিম্বরের উপর বসবে। তারা হল সে সব লোক, যারা বিচার ফয়সালার ক্ষেত্রে, পরিবার-পরিজনের ক্ষেত্রে এবং যে দায়িত্বই পেয়েছে তাতে ইনসাফ করে।”

১৫। চারিত্রিক পবিত্রতা:

ইসলামী চরিত্রের অন্যতম বিষয় হচ্ছে চারিত্রিক পবিত্রতা। এ চরিত্র মানুষের সম্মান সংরক্ষণ এবং বংশে সংমিশ্রন না হওয়ার দিকে পৌঁছে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন :
“যাদের বিবাহের সামর্থ নেই, তারা যেন চারিত্রিক পবিত্রতা গ্রহণ করে। যতক্ষণ না আল্লাহ তার অনুগ্রহে তাকে সম্পদশালী করেন।” [ সুরা আন নূর-৩৩ ]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন,
“তোমরা আমার জন্য ছয়টি বিষয়ের জিম্মাদার হও। তাহলে আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হব। যখন তোমাদের কেউ কথা বলে সে যেন মিথ্যা না বলে। যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় তখন যেন খেয়ানত না করে। যখন প্রতিশ্র“তি দেয় তা যেন ভঙ্গ না করে। তোমরা তোমাদের দৃষ্টি অবনত কর। তোমাদের হস্তদ্বয় সংযত কর। তোমাদের লজ্জাস্থান হেজাফত কর।” [ হাদীসটি তাবারানী বর্ণনা করেছেন এবং হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন
ইসলামের এ সব চরিত্রে এমন কিছু নেই যা ঘৃণা করা যায়। বরং এসব এমন সম্মান যোগ্য মহৎ চারিত্রাবলী যা প্রত্যেক নিষ্কলুষ স্বভাবের অধিকারীর সমর্থন লাভ করে। মুসলমানগণ যদি এ মহৎ চরিত্র ধারণ করত তাহলে সর্বস্থান থেকে তাদের নিকট মানুষ আগমন করত এবং দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে তারা প্রবেশ করত যেভাবে প্রথম যুগের মুসলমানদের লেন-দেন ও চরিত্রের কারণে সে সময়ের মানুষ ইসলামে প্রবেশ করেছিল।

– See more at: http://womenexpress.net/shahidrxbd/religion-and-research/%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a7%a7%e0%a7%ab-%e0%a6%9f%e0%a6%bf-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%b6%e0%a6%82%e0%a6%b8%e0%a6%a8/#sthash.lXISwVEl.dpuf

 

আইসিএবি এর প্রথম নারী সভাপতি

পারভীন  মাহমুদ এফ সিএ : চার্টাড একাউন্ট্যান্ট এবং উন্নয়নকর্মী

পারভীন মহমুদ এফ সি এ, চট্টগ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার তিন বোন এক ভাই। তার বাবা নিয়ামতপুর, নওগাঁর মরহুম মোঃ লুৎফুর রহমান, আয়কর উপদেষ্টা হিসাবে চট্টগ্রামে স্থায়ী ভাবে বসবাস করেন। তার মা শামসুন্নাহার রহমান পরাণ, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা “ঘাসফুল” এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি চট্টগ্রামে সমাজসেবা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৮ সালে ঘাসফুল চট্টগ্রাম জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে সরকারী রেজিষ্ট্রেশন লাভ করে এবং চট্টগ্রামের প্রথম রেজিষ্টার্ড এনজিও হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। মা সমাজ সেবী শামসুন্নাহার রহমান পরাণ তাঁর কর্ম প্রেরনার উৎস। পারভীন মাহমুদের স্বামী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তার সাথে বিয়ের পর তিনি কিছুকাল যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেন। তাদের দুটি সন্তান। তাদের ছেলে শামস মাহমুদ, যুক্তরাজ্যে আইনে মাষ্টার করেছে এবং মেয়ে জেরীন মাহমুদ হোসেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সিপিএ করেছে। অবসরে তিনি দেশ ভ্রমন, ছবি আঁকা ও বাগান করতে  পছন্দ করেন।

পারভীন মাহমুদ এফ সি এ, The Institute of Chartered Accountants of Bangladesh (ICAB) এর প্রথম  মহিলা কাউন্সিল মেম্বার নির্বাচিত হন (২০০৭-২০০৯)। ২০০৮ সালে প্রথম মহিলা  ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি (২০১০-২০১৩) কাউন্সিল মেম্বার পূনরায় নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে ICAB এর প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সেই বছরে South Asian Federation of Accountants (SAFA) বোর্ডে তিনিই প্রথম মহিলা বোর্ড সদস্য। SAFA, SAARC এর শীর্ষ এক্যাউন্টিং প্রফেশনাল বডি’র সংগঠন। তিনি (২০০৭-২০০৮) সালে কমিটি ফর জেন্ডার ডেভেলপমেন্ট এবং (২০০৯-২০১৩) সালে ইনফরমেশন এন্ড টেকনোলোজীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি Acnabin & Co. চার্টাড একাউন্ট্যান্টস এর পাটর্নার ছিলেন। পারভীন মাহমুদ যুক্তরাজ্যের মিড-হাটর্স কলেজ, ওয়েলিন গার্ডেন সিটি, হার্টফোর্ডশ্যায়ার থেকে “ও” এবং “এ” লেভেল পাশ করেন। তিনি সিএ পড়ার উদ্দেশ্যে বর্তমান হার্টফোর্ডশ্যায়ার ইউনির্ভাসিটি, হ্যাটফিন্ড থেকে একাউন্টেন্সী ফাউন্ডেশন কোর্স সম্পন্ন করেন। এস.এফ. আহমেদ এন্ড কোম্পানী, চার্টাড একাউন্ট্যান্টস ফার্ম, ঢাকা থেকে আর্টিকেলশীপ করেন এবং ১৯৯১ সালের চার্টাড একাউন্ট্যান্ট হন। তার কন্যাও ICAB এর মেম্বার। এ পর্যন্ত ICAB তে তারাই প্রথম মা ও মেয়ে একই সাথে মেম্বার। তিনি এবং ডা: জাভেদ সিদ্দিকী ম্যানচেষ্টার বিজনেস স্কুল, যুক্তরাজ্য একটি জরিপ পরিচালনা করেন এবং ৮ই মার্চ ২০১৪ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে “Cracking the glass ceiling: An exploration of gender equity in the Chartered Accountancy Profession in Bangladesh” শীর্ষক সমীক্ষা রিপোর্টটি আইসিএবিতে উপস্থাপন করেন।

পারভীন মাহমুদ ব্র্যাক এ তার কর্ম জীবন শুরু করেন। তিনি CIDA এর প্রজেক্ট এ কর্মরত ছিলেন এবং Action AID International Bangladesh (AAIB) এর ফাইন্যান্সিয়াল কন্ট্রোলার ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ প্রদানকারী শীর্ষ সংস্থা পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনে (PKSF) যোগদান করেন এবং ২০১১ সাল পর্যন্ত উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ২০১২ সালে তিনি গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে যোগদান করেন। গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট সামাজিক ব্যবসা বিকাশে সহায়তা প্রদান করছে। তিনি SME ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পর্ষদ সদস্য এবং বর্তমানে সাধারন পর্ষদ সদস্য। তিনি ক্ষুদ্র ও  মাঝারী শিল্প উন্নয়নের জন্য  গঠিত জাতীয় পরামর্শক প্যানেলে সদস্য এবং SME Women’s Forum এর সভাপতি ছিলেন। তিনি মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি (MRA) এর প্রতিষ্ঠা লগ্নে টেকনিক্যাল কমিটি সদস্য হিসাবে কাজ করেছেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারী ঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি, আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য সেবা প্রদানকারী সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার মাধ্যমে টেকশই উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমাতায়নে তার দীর্ঘ  অভিজ্ঞতা  রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে সহায়তার জন্য ২০০৬ সালে তিনি নারীকণ্ঠ ফাউন্ডেশন থেকে “কোম রোকেয়া শাইনিং পারসনালিটি এ্যাওয়ার্ড” লাভ করেন।

বেগম মাহমুদ গ্রামীণ ফোন লিঃ, লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড, গ্রামীণ ডানোন ফুডস লি:, ইউসেপ- বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, এ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, মাইডাস এবং ব্র্যাক ইন্টান্যাশনাল এর পর্ষদ সদস্য। তিনি ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোফাইন্যান্স এর সাধারন পর্ষদ সদস্য। তিনি লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউসেপ- বাংলাদেশ, এ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, ব্র্যাক এবং ব্র্যাক ইন্টান্যাশনাল এর অডিট কমিটির সদস্য। তিনি জনতা ব্যাংক লি:, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদ সদস্য ছিলেন। তিনি ইউসেপ বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান ও এসিড সার্ভাইভারস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ছিলেন।

যোগাযোগ :

ই-মেইল : parveen@gtctrust.com, parveenmahmud55@gmail.com

লেখক : পারভীন  মাহমুদ

 

অনলাইন শপে আইফোন কিনে পেলো তালা

অনলাইন ই-কমার্স সাইটগুলোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে প্রতারণা। ক্লাসিফায়েড সাইটগুলোতে এ প্রতারণার হার সবচে বেশি। তেমনি একটি ঘটনা ঘটল মালয়েশিয়ান এক ফোন ক্রেতার ভাগ্যে। অনলাইন রিটেইলার ১১ স্ট্রিটের মাধ্যমে অন্য তৃতীয় পক্ষ থেকে তিনি কিনেছিলেন একটি আইফোন ৬ এস। যার মেমোরি ছিল ১৬ জিবি। ক্রেতার নাম অ্যালানস এনজি।   তিনি যে ফোনটি কিনেছিলেন তার দাম ছিল ৭৩৬ ডলার সমমূল্যের। সাধারণ মূল্যের চেয়ে তিনি পেয়েছিলেন ৫০ ডলার ডিসকাউন্ট। নতুন আইফোন কেনার উত্তেজনা ছিল এনজির মধ্যে। যদিও যেদিন ফোনটি হাতে পাওয়ার কথা ছিল তার একদিন পরে পেলেন। কিন্তু তার উত্তেজনা পরিণত হল শোকে। তিনি ফোনটির প্যাকেটটি খুললেন এবং যা দেখলেন তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না তিনি।   অ্যালানস এনজি যে ফোনটি কিনতে চেয়েছিলেন সে ফোনটির রঙ ছিল উজ্জ্বল সোনালী। কিন্তু প্যাকেট খুলে তিনি ফোনের বদলে পেলেন একটি স্বস্তা মানের তালা। তিনি বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে পড়লেন। তবে তিনি দমে যান নি। ব্যবহার করলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে। নিজের ওয়ালে পোস্ট করলেন ছবি সহ ঘটনাটি। ২৪ ঘন্টার আগেই তা দৃষ্টি গোচর হয় ১১ স্ট্রিটের কর্মকর্তার।   সুসংবাদ হল এনজি শিগগিরই এই পণ্যের একটি বদলি পণ্য পাচ্ছেন তার হাতে। ১১ স্ট্রিটের কার্যপ্রণালি অনুসারে, বিক্রেতা ততক্ষণ পর্যন্ত টাকা পাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ক্রেতা পণ্য কিনে সন্তুষ্ট হওয়ার ছাড়পত্র দেবে।   তবে পুলিশ এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছে।   সূত্রঃ TipsRound.Com

 

‘নারীর ক্ষমতা অর্জনের পথ দীর্ঘ’

দেশের নারীরা অর্থনৈতিক কাজে এখন অনেক বেশি সম্পৃক্ত হলেও ক্ষমতা অর্জনের জন্য নারীকে এখনো  দীর্ঘ সংগ্রামী পথ পাড়ি দিতে হবে। এমনটিই মনে করেন গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সমন্বয়ক ও আলোকচিত্রী তাসলিমা আক্তার।

তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘এখন নারীর কাজের ক্ষেত্রে পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন মেয়েরাও বাইরে এসে কাজ করে অর্থ উপার্জন করছেন। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে শুরু করে শ্রমজীবী নারীদের মধ্যে এ পরিবর্তন এসেছে। এসবই দেশের উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নারীদের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতার ক্ষেত্রে এখনো যথেষ্ট অভাব রয়েছে।’

‘নারীরা এখনো নিজের বিষয়ে, অর্থনৈতিক ব্যাপারে, সর্বপরি নিজের জীবনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা অর্জন করেননি। আবার  নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রেও নারীর উপস্থিতি কম,’ যোগ করেন তিনি।

নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে তাসলিমা বলেন, ‘ক্ষমতা কেউ কাউকে দেয় না… নারীর ক্ষমতায়নের জন্য এখনো অনেক বড় সংগ্রামের পথ পাড়ি দিতে হবে। নারীকে হয়ে উঠতে হবে একটি ব্যাক্তিসত্ত্বা, নীতি-নির্ধারণের জায়গা ও নেতৃত্বের জায়গায় আসতে হবে। এসবই নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

‘নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার রক্ষার কাজ রাষ্ট্রের’ – একথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘এ দেশের নারীরা ছোটবেলা থেকেই নানা বঞ্চনা ও হীনমন্যতার মাঝে বেড়ে ওঠে। এছাড়াও আইনেও সম্পত্তির ওপর নারীর সমান অধিকার নেই এবং নারীকে অভিভাবক হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। এ জন্য চাই আইনের পরিবর্তন। নিপীড়ক-ধর্ষকদের আইনের আওতায় এনে নিশ্চিত করতে হবে কঠোর শাস্তি।’

‘নারী অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই’—এ কথা জানিয়ে তসলিমা আক্তার বলেন, ‘নারী অধিকার রক্ষার জন্য মতাদর্শের জায়গাতে চাই পরিবর্তন। পাশাপাশি মিডিয়ায় ও বইপত্রে নারীর উপস্থাপন হতে হবে সংযত। গল্প, কবিতা ও টেলিভিশনের পর্দায় নারীকে কীভাবে উপস্থাপন করা হবে বা তার ভূমিকা কী হবে, তা নির্ধারণে রাষ্ট্রের নজরদারি থাকা দরকার।’

বিজ্ঞাপণসহ অন্যন্য বিভিন্ন মিডিয়ায় নারীর ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ মাধ্যমগুলোতে নারীর সৌন্দর্য উপস্থাপন করা হয়, কিন্তু তার কর্মকে কখনই প্রাধান্য দেয়া হয় না। এগুলো নির্মাতাদের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা প্রকাশ করে– যা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’

 

পুরুষরা নারীকে সফল দেখতে চায়, ঘরেও রাখতে চায়

ঢাকা: নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল তিনজন নারী বলেছেন, সমস্যা ‍পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতায়। তারা নারীকে সফল দেখতে চায়, আবার ঘরেও রাখতে চায়। পুরনো ধ্যান-ধারণা আর মানসিকতার বদল না হলে এসব নারী দিবস করে কোনও ফল হবে না।

মঙ্গলবার বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে নিজ কার্যালয়ে নিউজনেক্সটবিডি ডটকম আয়োজিত এক ঘরোয়া আড্ডায় তারা একথা বলেন।

মর্ডার্ন সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর খাদিস্তা নূর-ই নেহেরিন, চিত্রনির্মাতা-অভিনেত্রী লুসি তৃপ্তি গোমেজ, এটিএন বাংলার সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার ফারহানা সালাম, বিনিয়োগ পরামর্শক সৈয়দ জামাল ও নিউজনেক্সটবিডি ডটকমের সম্পাদক নজরুল ইসলাম এ আড্ডায় অংশ নেন।

আড্ডার সূত্রপাত করেন নজরুল ইসলাম। জানতে চান, রাষ্ট্রপতি বাদ দিলে বাংলাদেশের বড় পাঁচটি পদে নারী, এই অবস্থায় নারী তার অধিকারগুলো এখনো পাচ্ছে না, তাহলে সমস্যাটা কোথায়?

জবাবে খাদিস্তা নূর-ই নেহেরিন বলেন, আমাদের দেশে পুরুষেরা খুব পরিবারতান্ত্রিক মানসিকতার। তারা নারীকে সফল দেখতে চায়, আবার ঘরেও রাখতে চায়।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে দেখবেন ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের রেসাল্ট অনেক ভালো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ডিএমসি সব জায়গাতেই মেয়েরা অনেক ভালো করছে। তারপরও মেয়েরা এগুতে পারছে না কারণ স্যাক্রিফাইসটা সবসময় মাকেই করতে হয়। সংসার কিংবা সন্তানের চাপটাও নিতে হয় মাকে।

মিডিয়া নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করে- প্রসঙ্গ যখন এই তখন ফারহানা সালাম বলেন, মেয়েরা সুন্দর বলেই কি তারা নিউজ প্রেজেন্টার হয়? ছেলেরা এই পেশায় আসতে পারে না? এটা আমাদের জন্য সম্মানের নাকি অসম্মানের? মাঝে মাঝে আমি নিজেই দ্বিধাতে পরে যাই। আর সাধারণ মানুষও নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে একটা সুন্দর মেয়েকেই দেখতে চায়।

একই বিষয়ে লুসি তৃপ্তি গোমেজ জানান, ‘এই ব্যাপারে আমার কোন দ্বিধা নেই, আমি নিশ্চিত যে মিডিয়া আসলে নারীকে পণ্য হিসেবেই উপস্থাপন করে। কারণ এখানে বিক্রির ব্যাপারটা মূখ্য।’

‘এক্ষেত্রে গোটা বিষয়টিকে শুধুমাত্র পণ্য হিসেবে না দেখে যদি জব হিসেবে দেখা যায় তাহলে কেমন হয়’- নজরুল ইসলামের এ প্রশ্নে লুসি তৃপ্তি গোমেজ বলেন, ‘এটাকে আমি জব হিসেবে দেখবো কেন?’

খাদিস্তা নূর-ই নেহেরিন বলেন, ‘এখানেও তো মেয়েদেরকে উপেক্ষা করা হচ্ছে, কারণ একটা মেয়েকে প্রোডাক্ট হিসেবে দেখালেও একটা ছেলেকে কেন প্রোডাক্ট হিসেবে দেখানো হচ্ছে না! তাছাড়া এখানে সব মেয়েরা কিন্তু সুযোগটা পাচ্ছে না। মেয়েদেরকে বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্কিন কালার, ফেস ডায়াগ্রাম এই বিষয়গুলোও কিন্তু বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠছে।’

সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে যে মামলাগুলো হয় সেই মামলার ৯৫%ই ফেক এর কারণটা কি- জানতে চান নজরুল ইসলাম।

জবাবে খাদিস্তা নূর বলেন, নারীরা প্রকৃতিগত ভাবেই পুরুষদের থেকে দুর্বল। ফলে পুরুষরা অত্যাচারের সুযোগ পায়। নারীরা যদি রুখে দাঁড়াতে পারতো তাহলে পুরুষেরা এ সুযোগ পেতো না। বিষয়গুলো আদালতে গেলে পুরুষরা সবাইকে কিনে ফেলে, ফলে নারীদের একা একা দৌঁড়াতে হয়। এমনকি তার পরিবারেরও কেউ তার পাশে দাঁড়ায় না। যার কারণে বেশিরভাগ মামলায় পুরুষরা জিতে যায় আর বাকি মামলাগুলো খুব দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। এর কোন সুরাহা হয় না।

তিনি বলেন, আমাদের সমাজে একজন নারী নির্যাতিত হয়েছে এটাই যেন একটা লজ্জার ব্যাপার। সোসাইটির সমস্ত লজ্জাই যেন নারীদের জন্য।

সৈয়দ জামাল বলেন, সবাই ধর্ষক না তবে আমরা অধিকাংশ লোকই ধর্ষককে বাঁচাই। আমার মেয়ে যখন ধর্ষণের শিকার হবে তখন আমি এটা আর কাউকে জানতে দেবো না। কারণ সমাজ ওই মেয়েটিকে দোষ দেবে। এজন্য বাবা হিসেবে দু:খটা নিজের মধ্যে চেপে রেখে আমি বিষয়টি মেনে নিচ্ছি।

তিনি বলেন, এক বছর আগে যখন নারীদের ‘জলন্ত শত্রু’ চট্টগ্রামের আল্লামা শফি অশ্রাব্য কথাগুলো বলেছেন আমার খুব কষ্ট লেগেছে। দেশে এত নারীবাদী আইনজীবী, এক্টিভিস্ট রয়েছেন তারা কেউ তার বিরুদ্ধে একটা মামলাও করেননি।

 

লাল চা ত্বকের কী উপকার করে?

লাল চা স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী, তেমনি ত্বকের জন্যও ভালো। এতে ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মিনারেল, যেমন—পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক রয়েছে, যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।

লাল চা ত্বকের কী উপকার করে, তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বোল্ডস্কাই ওয়েবসাইটের লাইফস্টাইল বিভাগ। চলুন, দেখে নিই সেগুলো কী।

কালচে দাগ দূর করে

লাল চা ত্বকের কালচে দাগ দূর করে। এটি ত্বকে প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করে। আর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ত্বকের সংক্রমণজাতীয় সমস্যারও সমাধান করে। চিনি ছাড়া লাল চা ঠান্ডা করে মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। এতে মুখের কালচে দাগ অনেকটা দূর হবে।

বলিরেখা দূর করে

লাল চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন-সি ত্বককে নরম ও মসৃণ করে। এর ফলে ত্বকের শুষ্কতা অনেকটা দূর হয়, যা বলিরেখার প্রধান কারণ। নিয়মিত লাল চা ঠান্ডা করে মুখে লাগালে কোঁচকানো ভাব দূর হয়ে ত্বক হয় বলিরেখামুক্ত।

চোখের নিচের কালো দাগ ও ফোলা ভাব কমায়

লাল চায়ের পানি চোখের চারপাশে লাগিয়ে হালকাভাবে ম্যাসাজ করলে চোখের নিচের কালো দাগ ও ফোলা ভাব কমে যায়। এ ছাড়া টি-ব্যাগ ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে চোখের নিচে দিয়ে ১৫ মিনিট পর চোখ ধুয়ে ফেলুন। এটিও চোখের জন্য বেশ কার্যকর।

 

সমস্যা যখন জন্মগত

হাবিব ও রাহেলার ছয় বছরের সংসার। একটি ছোট ছেলে তাদের। বয়স তিন। দুষ্টু আর মিষ্টি। রাহেলা সন্তানসম্ভবা। মাঝরাতে হঠাৎ ব্যথা উঠায় দ্রুত হাসপাতালে চলে আসেন তারা। হাবিব ব্যাংকের পিয়ন হিসেবে চাকরি করে। সংসারের ঝামেলাতে একটু দেরি করেই বিয়ে করেছিল। বউ এর অনেক যত্ন করে। সে দোয়া করছে যেন এবার মেয়ে হয়। মেয়ে হল সংসারের লক্ষ্মী। ওয়ার্ডের বাইরে বাপ বেটায় হাঁটাহাঁটি করছে। শাশুড়ি ও শ্যালিকা হাসপাতালের পথে রওনা হয়েছেন।

একটু পরে রাহেলার বরের ডাক পড়ল ভেতরে। কমবয়সী এক ডাক্তার ম্যাডাম বললেন, বসেন। আপনার একটা মেয়ে হয়েছে।

হাবিবের বুক থেকে পাথর নেমে গেল। বলে উঠল- আলহামদুলিল্লাহ। সে উঠে যেতে চাইল। কিন্তু ডাক্তারকে দেখে মনে হলো তিনি আরও কিছু বলতে চান। একটু সন্দেহ হল তার। হাবিবের ছেলে হয়েছিল যখন, তখনতো সোজা বাচ্চাটিকে হাতে তুলে দিয়েছিল। এত কথা কেউ তখন বলেনি। এসব ভাবতে ভাবতেই ডাক্তার ম্যাডাম বললেন- আপনার মেয়েটি সুস্থ্ই আছে তবে তার ঠোঁট আর তালু কাটা। হাবিব আকাশ থেকে পড়ল। এ আবার কেমন কথা। সে তো কোনোদিন এমন কিছুর কথা শোনেনি। ডাক্তার মেয়েটিকে দেখালেন। কী সুন্দর একটা শিশু। ঘুমাচ্ছে। কিন্তু ঠোঁটের কারণে কেমন কেমন লাগছে। হাবিবের বুকটা মুচড়ে উঠল। ডাক্তার তাকে বুঝিয়ে বললেন যে, এটা অপারেশনের মাধ্যমে ঠিক করা যায়। তবে শিশুর বয়স বাড়লে প্লাস্টিক সার্জনের কাছে যেতে হবে।

আসলে হাবিবের মেয়েটির যে সমস্যা তা সে না দেখলেও খুব একটা অপরিচিত রোগ এটি নয়। Medical Science এ এর নাম Cleft Lip. অনেক সময় ঠোঁটের সাথে তালুও কাটা থাকে। আবার কখনো শুধু তালুটাই কাটা থাকে।

সমস্যা কেন হয়?

অনেক ধরনের কারণে হতে পারে। কিছু বাবা-মায়ের জিন থেকে, কিছু আবার প্রকৃতিগত। যেমন- বাবার অধিক বয়স, মায়ের গর্ভকালীন সময়ে জ্বর, ইনফেকশন, এক্সরে বা রেডিয়েশন, কিছু ঔষধ যেমন ঘুমের, খিচুনির জন্য কোনো ঔষধ খাওয়া হলে।

কখন চিকিৎসা?

ঠোঁট কাটার জন্যে ৩ মাস থেকে ৬ মাস। তালু কাটার জন্যে ৯ থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত।  আসলে বাচ্চা ডেলিভারির পরেও করা সম্ভব। কিন্তু এই সময়ে করলেই সবচাইতে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।

না করালে কী সমস্যা?

বাচ্চার খেতে সমস্যা

দেখতে খারাপ লাগা

ওজন না বাড়া

কানে ও বুকে ইনফেকশন।

এই ধরনের বাচ্চাদের খাওয়ানোর নিয়ম 

বেশিরভাগ সময় যেসব বাচ্চার ঠোঁট কাটা থাকে তারা বুকের দুধ খেতে পারে না। সে কারণে তাদের বোতল বা চামচে করে খাওয়াতে হয়। এদের ফিডারের নিপলের ছিদ্রটা একটু বড় রাখতে হয় যাতে খুব সহজেই খেতে পারে। চামচ জিহবার পেছনের প্রান্তে নিয়ে খাওয়াতে হবে। খাওয়ানোর সময় মাথা উঁচু রাখতে হবে। খাওয়ানোর পর পরেই শিশুর পিঠে চাপড় দিয়ে অতিরিক্ত বাতাস বের করে ফেলতে হবে।

চিকিৎসা কোথায় পাওয়া যাবে?

বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ক্যাম্প-এ বিনামূল্যে অপারেশন করা হয়।

ডা. শারমিন সুমি : জুনিয়র কনসালট্যান্ট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জার

 

হঠাৎ খুশকি? জেনে নিন কারণগুলো

কোনও কারণ ছাড়াই একদিন খেয়াল করলেন আপনার সুন্দর কালো চুল থেকে ঝরছে খুশকি। নিয়মিত চুল পরিষ্কার করছেন, শ্যাম্পু করছেন, কন্ডিশনার দিচ্ছেন- এর পরেও কেন খুশকি হবে? কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে আসলে অনেক কাজই আমরা করি যার ফলে খুশকি দেখা দিতে পারে। আমাদের স্বাস্থ্যের অবস্থার ওপরেও খুশকি থাকা না থাকা নির্ভরশীল। চলুন দেখে নেই খুশকি হবার অজানা এসব কারণ

১) আপনার মাথার ত্বক সংবেদনশীল

অনেকেই ভাবি মাথার ত্বক শুকনো হলেই খুশকি হবে। আসলে কিন্তু এর জন্য দায়ী Pityrosporum orbiculare নামের এক ফাঙ্গাস যা আমাদের সবারই মাথায় থাকে কমবেশি। এই ফাঙ্গাস আমাদের মাথার ত্বক থেকে তেল খেয়ে বেঁচে থাকে। এ কারণে অনেক সময় দেখা যায় যাদের ত্বক তৈলাক্ত, তাদের খুশকির প্রকোপ বেশি। আপনার মাথার ত্বকও যদি এমন হয়, তার অর্থ হলো এই ফাঙ্গাসের কারণে যে কোনও সময়েই আপনার খুশকি হতে পারে। সাধারণত ঘরোয়া প্রতিকার বা অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু সপ্তাহ দুয়েক ব্যবহার করলেই এই সমস্যা চলে যায়।

২) আপনি স্ট্রেসে আছেন

আপনার রিল্যাক্স করা প্রয়োজন- এই ব্যাপারটা বোঝা যেতে পারে ড্যানড্রাফের প্রাদুর্ভাব দেখে। ত্বকের যে কোনও সমস্যাকে বাড়িয়ে দিতে পারে স্ট্রেস। স্ট্রেস আমাদের ইমিউন সিস্টেমের বারোটা বাজিয়ে দেয়। এতে ড্যানড্রাফের সমস্যাও বাড়ে। দৈনন্দিন জীবনে শান্তি নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। ইয়োগা করুন, কিছুক্ষণ হেঁটে আসুন, গভীর নিঃশ্বাস নিন। স্ট্রেস কমাতে পারলে ড্যানড্রাফের সমস্যাও কমে আসবে।

৩) আপনি চুল ঠিকমতো পরিষ্কার করছেন না

প্রাকৃতিকভাবেই আমাদের মাথার ত্বক তেল এবং সিবাম নামের একটি পদার্থ উৎপাদন করে। যখন এগুলো মাথার ত্বকে জমে যায়, তখন এগুলো খুশকির প্রকোপ বাড়ায়। নিয়মিত শ্যাম্পু না করলে বা চুল ঠিকমতো ধোয়া না হলে এগুলোর পরিমাণ বাড়তে পারে। আপনি এক্ষেত্রে টি ট্রি অয়েল সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও এই শ্যাম্পু ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে চুল থেকে। চুলে শ্যাম্পু থেকে গেলে সেটাও খুশকি বাড়াতে পারে।

৪) আপনি ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করছেন না

শুধু ভালো ভালো শ্যাম্পু, কন্ডিশনার আর ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করলেই হবে না। চুলের পুষ্টি যোগাতে হবে ভেতর থেকে। আপনার খাদ্যভ্যাসের ওপরে খুশকির পুরো দোষ চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয় বটে। কিন্তু কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলোর কারণে খুশকি অনেক বেড়ে যেতে পারে। যেমন স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট বেশি আছে এমন খাবারের কারণে সেবাশিয়াস গ্ল্যান্ডগুলো অনেক বেশি করে তেল উৎপাদন করে যার ফলে খুশকি বেড়ে যেতে পারে। বেশি করে খান স্বাস্থ্যকর মনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড। এর ভালো উৎস হলো অ্যাভোকাডো, বাদাম, জলপাই এবং স্যাফ্লাওয়ার অয়েল। ভিটামিন বি কম খেলেও খুশকি বাড়তে পারে।

৫) আপনি চুলের ওপর বেশি অত্যাচার করছেন

কিছু কিছু হেয়ার স্টাইলিং প্রোডাক্ট খুশকির প্রকোপ বাড়াতে পারে। খুব দরকার না হলে হেয়ার স্প্রে, জেল এবং মুজ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
ড্যানড্রাফ এমন একটি সমস্যা যা থেকে আপনি পুরোপুরি নিস্তার পাবেন না। যতদিন বেঁচে থাকবেন কোনো না কোনো সময়ে এটা দেখা দেবেই। তবে এসব কারণ জানা থাকলে খুশকি কমিয়ে রাখা ও নিয়ন্ত্রণ করা আপনার জন্য সহজ হবে।
সংগৃহীতঃ

কে এন দেয়া
প্রিয়.কম

 

আমরা গাজার নারী

শুভ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ! এই বছর, আমরা  ফিলিস্তিনি ফটোগ্রাফার সামর আবু ইলুপ কে বলেছিলাম তার চারপাশে আছে এমন বিভিন্ন নারীর ছবি তুলে দিতে।

আমরা তার কাছে জানতে চাই, আজ গাজা একটি নারী হতে কি আশা করে?  সমর এর ছবিতে অনেক নারীর মাথায় ফুলের মালা পরা দেখা যাচ্ছে,  আমরা জিজ্ঞেস করি এর কারন কি?

সমর ব্যাখ্যা করলো: “তারা নিজেদের কে গাছের প্রথম ফুলের সাথে তুলনা করে এবং তারা বুঝাতে চায় শীত ও শতকষ্ট  হলেও আমরা তা সাহসের সাথে মোকাবেলা করি।

 

 

‘গরম’ কাটুক স্বস্তিতে

প্রকৃতিতে চলছে গ্রীষ্মের রুক্ষতা। তীব্র রোদ আর গরমে নাকাল শিশু থেকে শুরু করে বয়স্করা পর্যন্ত। তার ওপর আবার ঘন ঘন লোডশেডিং, পানির সঙ্কট, রাস্তায় যানজট। সব মিলিয়ে যেন গরমের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয় বহুগণ। কিন্তু গরম বলে তো আর সব কাজ ফেলে গরমের দাসত্ব করা যায় না।

এ গরমে নিজের প্রতি যত্নবান হলে সহজেই থাকা যায় ফুরফুরে ও সতেজ। তাই দিনভর স্বস্তির জন্য চাই আরামদায়ক পোশাক, সাজসজ্জা আর পুষ্টিকর খাবার।

বৈশাখের প্রচণ্ড খরতাপে অস্থির জনজীবন। অসহ্য গরমে হাঁপিয়ে উঠেছে নগরবাসী। তবে একটু সচেতন থাকলে এই গরমেও আপনি থাকবেন সুস্থ ও সুন্দর।

প্রখর রোদ থেকে ত্বককে বাঁচাতে বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখবেন সেটি যেন আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী হয়। সারাদিন বাইরে থাকলে তিন-চার ঘণ্টা পর আবার সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না।

গরমের সময় আরামদায়ক পোশাক পরিধান করতে হবে। ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের পোশাক এই গরমে স্বস্তিতে রাখবে আপনাকে।
এই গরমে ফ্রেশ থাকতে বারবার মুখ ধোয়ার বিকল্প নেই। গ্রীষ্মে ধুলো-বালির প্রকোপ দেখা যায়। ফলে মুখে ব্রণ হয় খুব বেশি। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিয়ে মুখটা ধুয়ে নেওয়া ভালো। এতে যেমন ধুলো-বালি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তেমনি গরমেও থাকা যায় ঝরঝরে।

খেয়াল রাখুন:

১। দিনে কমপক্ষে দু’বার গোসল করুন।
২। রোদ থেকে বাঁচতে ছাতা বা ক্যাপ ব্যবহার করুন। তারপরও ত্বক রোদে পুড়ে গেলে তরমুজ চটকে ফ্রিজে রেখে দিন। ঠাণ্ডা হলে ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন।
৩। যারা সারাদিন বাইরে থাকেন তারা সঙ্গে ভেজা টিস্যু রাখতে পারেন। ঘেমে গেলে চট করে মুখে বুলিয়ে নিন।
৪। গরমে চুল ঘামে খুব বেশি। তাই বাইরে বের হওয়ার সময় চুল খোলা না রাখাই ভালো। চুলে সপ্তাহে অন্তত একদিন ডিপ কন্ডিশনিং ব্যবহার করুন।
৫। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করুন। কারণ গরমে ঘাম খুব বেশি হয়। ফলে শরীরে পানির চাহিদা বেড়ে যায়।
৬। গরমে সুস্থ থাকতে প্রচুর পরিমাণে মৌসুমি ফলমূল খেতে পারেন। এ সময় তেল-মসলা জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো।

 

ইসলাম নারীকে যেভাবে সম্মানিত করেছে

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি উদযাপন করা হবে। ইতোমেধ্যে মহিলা এবং শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ মানবাধিকার ও নারী সংগঠনগুলো দিবসটি উদযাপনের নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বছরের চাকা ঘুরে যখন ৮ মার্চ সমাগত তখন নারীদের অধিকার মর্যাদার কথাগুলো চিত্রায়িত হয় বিভিন্নভাবে। নারী দিবসের র‌্যালি, আলোচনা সভা, মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ক্রোড়পত্র প্রকাশ ও টকশোর আয়োজনসহ বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুনও পোস্টারের মাধ্যমে দিবসটি সর্ম্পকে সচেতনতা সৃষ্টির নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রতি বছর ৮ মার্চে উদযাপিত হয়এ দিবসটি।সারা বিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ্য হিসেবে এই দিবস উদযাপন করে থাকেন। বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারীদিবস উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য এক এক প্রকার হয়। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপনের মুখ্য বিষয় হয়। আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়টি গুরুত্ব পায়। বছরে একবার নারী দিবস আসলে এই কথাগুলো বিশেষভাবে উচ্চারিত হয্ মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়। নারীবাদীদের বক্তব্য হলো ‘নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার ও সম্মান থেকে বঞ্চিত’। বিশেষ করে ইসলাম নারীদের অধিকার খর্ব করেছে। নারীর অগ্রযাত্রায় অনেক বাধা দিয়েছে, সৃষ্টি করেছে নানা প্রতিবন্ধকতা’। এসব কারণে ২০০৯ সালে নারী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে দরকার নারী পুরুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্ট’। বিগত বছরগুলোতে প্রতিপাদ্য ছিল ‘নারী-পুরুষের অঙ্গীকারে গড়ে তুলি সমতার বিশ্ব শ্লোগানে ‘আমরাই পারি’, ‘অধিকার মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমানে সমান’। ‘নারীপক্ষ’ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ঠিক করেছে ‘উৎসবে পার্বণে, নারী থাকবে সবখানে’। মূলত এসব বুদ্ধিজীবীরা নারীর সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থানের ভুল ও বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিয়ে নারীকে করে প্রতারিত, অপমানিত; সমাজকে করে কলুষিত। তাই নারীবাদীদের ষড়যন্ত্রের খপ্পর থেকে নিরীহ নারী জাতিকে মুক্ত করার লক্ষ্যে নারীদের সঠিক সামাজিক অবস্থান নির্ণয় করা অপরিহার্য। বক্ষমান নিবন্ধে নারী দিবস বনাম ইসলামে নারীদের আধিকার-মর্যাদা বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করার প্রয়াস চালানো হলো। প্রথমে নারী দিবসের ইতিহাস প্রেক্ষাপট নিযে আলোচনা করবো। নারী দিবসের সূচনা ১৮৫৭ সালে। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের সেলাই কারখানায় বিপদজনক ও অমানবিক কর্মপরিবেশ, স্বল্প মজুরী এবং দৈনিক ১২ ঘন্টা শ্রমের বিরুদ্ধে নারী শ্রমিকরা প্রতিবাদ করে। এরপর বিভিন্ন সময়ে ৮ মার্চে উল্লেখযোগ্য আরো ঘটনার ধারাবাহিকতায় ১৯১০ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় অন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সন্মেলনে জার্মান সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা ক্লারা জেটকিনের প্রস্তাবে ৮ মার্চকে আর্ন্তজাতিক নারী দিবস ঘোষণা করা হয়। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সাল থেকে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন শুরু করে। তখন থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি উদযাপন করা হয়। নারী দিবসটি বিশ্বে পালিত হচ্ছে ১৯৭৫সার থেকে। অথচ ১৫শ বছর আগেই ইসলাম নারী ও পুরুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে।

জাহেলি যুগে নারী জাতির কোনো মর্যাদা ছিল না। সে সময় নারীরা ছিল নিপীড়িত-নির্যাতিত ও অবহেলিত। নারীদের সঙ্গে করা হতো পশুর মতো আচরণ। পুরো নারী সত্ত্বাকে পরিবার,সমাজ ও বংশের জন্য অভিশাপ মনে করা হত। কন্যা সন্তান জন্মকে অসম্মান ও অপমানকর মনে করা হতো। শুধু কি তাই? নারীর অধিকার বলতে কিছুই ছিল না সমাজে। নারীরা যেমন মর্যাদা ও সম্মান পেতো না, ঠিক তেমনি তাদের ন্যায্য অধিকার (মিরাস) উত্তরাধিকারী পেতো না। কোন সম্পদের মালিকানাও লাভ করতে পারতো না। এমনকি একজন মানুষ হিসেবে যে অধিকারগুলো লাভ, তার কোনটিই বলতে গেলে নারীদের দেওয়া হত না। তাদের ইজ্জত-আব্রæ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ছিল নৈমত্তিক ব্যাপার। সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থান ছিল নিম্নে। ছিল না স্বীকৃতি। বৌদ্ধ সমাজে নারীদেরকে নিছক বিলাসিতার উপকরণ মনে করা হতো। এ ধর্মে নারী হচ্ছে ভোগের বস্তু এবং মানবতার নির্মাণ লাভের জন্য বিঘ্নস্বরূপ। ইয়াহুদি ধর্ম মতে নারীদেরকে সকল পাপের উৎসমূল মনে করা হত। সেই তিমিরাচ্ছন্ন কলুষিত সমাজকে নিষ্কলুষ করার জন্য বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা. সত্যের বাণী নিয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ধরার বুকে আবির্ভূত হলেন। আল্লাহ ও তদীয় রাসুল সা. কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হল নারীর অধিকার ও মর্যাদা। বিশ্বনবীর কল্যাণে মহিয়সী নারী মর্যাদা পেয়েছে মাতা হিসেবে। পিতা-মাতা ও স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্বামীর সংসারে স্ত্রীর অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। নারী তার বৈবাহিক জীবনে খাদ্য উপার্জনের চিন্তা হতে মুক্ত হয়েছে। তেমনিভাবে সমাজের সসর্বস্তরের নারীর যথার্থ মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইসলাম সর্বক্ষেত্রে নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান ও যথাযথ অধিকার দিয়েছে। নারীর মর্যাদা বলতে কী বুঝায়? মর্যাদা মানে পদ ও সম্মান। কারও পদ বা মর্যাদার অর্থ হচ্ছে যথাযথভাবে তার প্রাপ্য প্রদান করা। আর প্রাপ্য বলতে তাদের অধিকার স্বীকার করা, কর্তব্যের যথাযথ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও সামাজিক জীবনে তার অবদানসমুহের মুল্যায়নকে বুঝায়। নারীর মর্যাদা দেওয়ার অর্থ হচ্ছে তার ন্যায্য অধিকার সঠিকভাবে আদায় করা, তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের সঠিক ব্যাখ্যা ও তার অবদানের যথাযথ মুল্যায়ন করা।

ইসলাম মানব প্রকৃতির সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি জীবন বিধান। এখানে মানুষকে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। নারী-পুরুষ সবাই মানুষ হিসেবে এই মর্যাদার অংশীদার। মানবকুল নারী-পুরুষ দ্বারা গঠিত। নারী থেকে পুরুষ, পুরুষ থেকে নারী কোনভাবেই আলাদা করার সুযোগ নেই। এই পৃথিবীতে মানব সমাজের অস্তিত্ব থাকতে হলে নারী-পুরুষের যৌথ উপস্থিতি অপরিহার্য। নারীর কাছে পুরুষ, আর পুরুষের কাছে নারী ঋণী। এই দুই এর কোন একজনকে বাদ দিয়ে মানব জীবনের অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। একদিকে যেমন একজনকে ছাড়া আরেকজনের অস্তিত্বই বিপন্ন, অন্যদিকে একজনের কাছে আরেকজন অপরিহার্যভাবে ঋণী। সুতরাং ব্যক্তি জীবন, সমাজ জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, সব জীবনেই একজনের কাছে আরেকজন দায়বদ্ধ। মা-বাবা বিশেষ কোন দিবসের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে না। তারা তো প্রতিদিনের মত। মা চাঁদের আলোরমত আর বাবা সূর্যের আলোরমত দরকারী। মুসলিম সভ্যতায় পুরুষের চেয়ে নারীর মর্যাদা, মুল্যায়ন, অধিকার কোনক্রমেই কম নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে নারীর মর্যাদা পুরুষের চেয়েও বেশি। স্ত্রী হিসেবে একজন নারীর জন্য ইসলাম মানবিক অধিকার নিশ্চিত করেছে । পুরুষের জন্য অপরিহার্য করা হয়েছে স্ত্রীর মোহরানা আদায় । এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক এরশাদ করেন, তোমরা স্ত্রীদেরকে তার পারিবারিক জীবনে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে। সুরা নিসা: ৪। আল্লাহর রাসুল সা. এরশাদ করেন, যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান আছে যাদের সে লালন পালন করে এবং তাদের সঙ্গে সদয় আচরণ করে, তার জন্য অবশ্যই জান্নাত ওয়াজিব। সাহাবায়েকেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! যদি দুটি মেয়ে থাকে? নবীজী বললেন, দুটি থাকলেও। বুখারি শরিফ। আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যব্যহার করতে। তার মা তাকে গর্ভে ধারণ করেছে বড় কষ্টের সঙ্গে এবং তাকে প্রসব করেছে খুব কষ্টের সঙ্গে। তাকে গর্ভধারণ করতে এবং প্রসবান্ত দুধ ছাড়াতে ত্রিশমাস সময় লেগেছে’। (আহকাফ: ১৫)

নারীর মর্যাদা ইজ্জত সতীত্ব সুরক্ষার জন্য আল্লাহতায়ালা পর্দার বিধান ফরজ করেছেন। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, হে নবী! মুমিনদেরকে বলে দিন, তারা যেন পরস্ত্রী থেকে তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং নিজ যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। তেমনি মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, পুরুষের থেকে তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং স্বীয় যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষা করে। (সুরা নুর: ৩০)

নারীরা পুরুষ থেকে পর্দা করবে। তার রূপ-সৌন্দর্য পরপুরুষ থেকে আবৃত রাখবে। পর্দার অর্থ এই নয় যে, নারীকে অবরুদ্ধ করে রাখা বরং প্রয়োজনে পর্দার সঙ্গে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। পর্দার মাধ্যমে খাঁচার পাখির মত বন্দি করে রাখা নয় বরং নারীর ইজ্জত ও সম্মান রক্ষার জন্য ইসলামের এ বিধান। মুসলিম সমাজে সভ্যতায় মেয়ে অপেক্ষা ছেলের দায়দায়ত্বত্ব বেশি। নারী ও পুরুষ কার অধিকার বেশি? কার মর্যাদা বেশি? সামগ্রিক বিচার-বিশ্লেষণ শেষে জবাব হবে- নারী-পুরুষের অধিকার ও মর্যাদা কোনো ক্ষেত্রে সমান, আবার কোনো ক্ষেত্রে কমবেশি। ইসলাম ঢালাওভাবে সবাইকে সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার দেয়নি। প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক’। (মুসলিম)

স্ত্রীদের সম্পর্কে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম’। (বুখারি) মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।’ (তিরমিজি)

শেষ কথা, শুধু বছরে একবার নারীদের প্রতি দরদী না হয়ে সারা বছর নারীদের যথাযথ প্রাপ্য আদায়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও আন্তরিক ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রচেষ্টা জরুরি। ইসলাম নারীকে সমধিকার নয় পুরুষের চেয়ে বেশি অধিকার প্রদান করেছে। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে তথাকথিত নারীবাদীরা নারীদেরকে ধর্ম সম্পর্কে ভুল ও ভ্রান্তিকর ব্যাখা প্রচারে লিপ্ত। কাজেই নারীবাদীদের ষড়যন্ত্রের খপ্পর থেকে নিরীহ নারী জাতিকে মুক্ত করার লক্ষে সবাইকে সচেতন ও দায়িত্বশীল ভ’মিকা পালন করতে হবে।

সূত্রঃ মাওলানা এহসান বিন মুজাহির

লেখক: আলেম সাংবাদিক

 

কুলফি পছন্দ করেন? ঘরেই তৈরি করে ফেলুন দোকানের মত পারফেক্ট কুলফি !

গরমটা বেশ ভালভাবে পড়তে শুরু করেছে। এই গরমে স্বস্তি পেতে ঠান্ডা জাতীয় খাবারের জুড়ি নেই। আর আইসক্রিম বা কুলফি হলে তো কোন কথাই নেই! কুলফি এমন একটি খাবার যা যেকোন সময় খেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু সব সময় কি আর বাইরে যাওয়া হয়, কুলফি খাওয়ার জন্য। এই কুলফি ঘরে তৈরি করা গেলে দারুন হতো! দোকানের মত পারফেক্ট কুলফি খুব সহজে ঘরে তৈরি করে ফেলুন।

উপকরণ:

  • ১ লিটার দুধ
  • ৪ টেবিল চামচ মালাই বা ক্রিম
  • ১/২ কাপ চিনি
  • কয়েকটি জাফরান
  • ৪-৫ টি এলাচ
  • ১.৫ টেবিল চামচ পেস্তা কুচি
  • ১.৫ টেবিল চামচ কাঠবাদাম কুচি

প্রণালী:

১। একটি প্যানে দুধ জ্বাল দিতে দিন। বলক না আসা পর্যন্ত বার বার নাড়তে থাকুন।

২। দুধ গরম হয়ে এলে এক চামচ দুধ নিয়ে জাফরানের সাথে মিশিয়ে নিন।

৩। এরপর প্যানে ক্রিম বা মালাই দিয়ে দিন।

৪। ২০ মিনিট বা তার বেশি সময় ভালো করে নেড়ে নেড়ে দুধ ঘন করতে থাকুন। এরপর দুধ শুকিয়ে অর্ধেকটা হয়ে এলে, পেস্তা বাদাম কুচি, চিনি এবং বাদাম কুচি দিয়ে আরও ৫ মিনিট জ্বাল দিয়ে নিন।

৫। চুলা বন্ধ করে দিন। এবং এতে এলচির গুঁড়া দিয়ে সাধারণ তাপমাত্রায় ঠান্ডা হতে দিন।

৬। ঠান্ডা হয়ে এলে কুলফির ছাঁচে কুলফি ঢালুন। এরপর এটি ৫-৬ ঘন্টার জন্য ফ্রিজের রেখে দিন।

৭। ২-৩ ঘন্টার পর কুলফির মধ্যে কাঠি ঢুকিয়ে দিন এবং কাঠিটি পুরোপুরি সেট হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

৮। ব্যস তৈরি হয় গেল দারুন স্বাদের মজাদার কুলফি।

 

রেস্তরাঁর স্বাদের ছোলা ভাটোরা তৈরি হবে আপনার রসুই ঘরে।

রেস্তরাঁগুলোতে ভারতীয় যেসব চটকদার খাবার পাওয়া যায় সেগুলোর মাঝে অন্যতম হলো ছোলা ভাটোরা। বড় বড় ফুলকো রুটির সাথে পরিবেশন করা হয় দারুণ মশলাদার একটা ছোলার তরকারি। আপনি যদি ভেবে থাকেন এই খাবার শুধু রেস্তরাঁগুলোতেই তৈরি করা সম্ভব তাহলে আপনি ভুলে ভেবেছেন! শিখে নিন খুব সহজ একটা রেসিপি যাতে আপনি বাড়িতেই তৈরি করতে পারেন দারুণ এই খাবারটি।
উপকরণ
ভাটোরার জন্য
  • – দেড় কাপ ময়দা
  • – ২ টেবিল চামচ সুজি
  • – সিকি চা চামচ বেকিং সোডা
  • – ১ চা চামচ চিনি
  • – আধা চা চামচ অথবা স্বাদমতো লবণ
  • – ১ চা চামচ তেল
  • – সিকি কাপ টক দই
  • – ডুবোতেলে ভাজার জন্য যথেষ্ট তেল
ছোলা মাসালার জন্য
  • – ১ কাপ ছোলা (ধুয়ে ৮ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখা)
  • – ১/২টা টি ব্যাগ
  • – লবণ স্বাদমতো
  • – দেড় কাপ পানি
  • – ১টা মাঝারি পিঁয়াজ কুচি করা
  • – ৪ টেবিল চামচ তেল
  • – ১ চা চামচ জিরা
  • – ২ টেবিল চামচ আদা, লম্বা করে কাটা
  • – ৫টা কাঁচামরিচ লম্বালম্বি চেরা
  • – ২টা বড় টমেটো পিউরি করা
  • – ১ চা চামচ জিরা গুঁড়ো
  • – ১ চা চামচ আমচুর গুঁড়ো
  • – ১ চা চামচ মরিচ গুঁড়ো
  • – ২ চা চামচ ধনে গুঁড়ো
  • – ২ চা চামচ আনারদানা গুঁড়ো
  • – ১ চা চামচ গরম মশলা গুঁড়ো
  • – ২ টেবিল চামচ ধনেপাতা কুচি
  • – অর্ধেকটা লাল পিঁয়াজ কুচি
প্রণালী
১) একটি বড় পাত্রে ভাটোরার জন্য সব উপকরণ নিন। ভালো করে মাখিয়ে ডো তৈরি করে নিন। অল্প অল্প করে পানি দিতে পারেন। ডো তৈরি হয়ে গেলে ওপরে কয়েক ফোঁটা তেল মাখিয়ে নিন। এবার পাত্রটাকে প্লাস্টিক র্যা প দিয়ে মুড়ে পাশে রেখে দিন। আধা ঘন্টার মতো রাখতে হবে।
২) এবার ছোলা তৈরির পালা। ভেজানো ছোলা থেকে পানি ঝরিয়ে নিন। ছোলা দিয়ে দিন প্রেশার কুকারে। এতে দিন দেড় কাপ পানি, একটা টি ব্যাগ, দেড় চা চামচ লবণ। এবার মাঝারি আঁচে প্রেশার কুকার রাখুন। ৩-৫টা সিটি দিলেই সাধারণত ছোলা নরম হয়ে যায়। এরপর আঁচ কমিয়ে রান্না করতে হবে আরও ১০ মিনিট। এই সময়ে আপনি মাসালা তৈরি করে নিন।
৩) একটা ছড়ানো কড়াই চুলোয় দিন। এতে ৪ টেবিল চামচ তেল দিন। তেল গরম হয়ে এলে এতে দিন জিরা এবং পিঁয়াজ। পিঁয়াজটা ভাজা ভাজা হয়ে এলে এতে টমেটো পিউরি দিয়ে দিন। এরপর এতে গুরম মশলা বাদে সব গুঁড়ো মশলাগুলো দিয়ে ভালো করে নেড়ে মিশিয়ে নিন। এটাকে ঢেকে রান্না হতে দিন ১০-১৫ মিনিট। রান্না হয়ে গেলে তেল ওপরে ভেসে উঠবে।
৪) টমেটো রান্না হতে দিয়ে আপনি ছোলাটাকে চেক করে নিতে পারেন। ছোলা রান্না হয়ে গেলে ভেতর থেকে টি ব্যাগটাকে বের করে ফেলে দিন। টমেটো মাসালা রেডি হয়ে গেলে এতে দিয়ে দিন ছোলাগুলোকে। ছোলার সাথে যে পানি থাকবে সেটা ফেলবেন না, এটাও দিয়ে দিন মশলায়। দরকার হলে আরও একটু পানি দিতে পারেন। ভালো করে মশলায় মাখিয়ে নিন ছোলা। ইচ্ছে হলে এ সময়ে আপনি কিছুটা লবণ দিতে পারেন। কাঁচামরিচ এবং আদা দিয়ে দিন। ঢেকে রান্না হতে দিন ৫ মিনিট। নামানোর আগে দিয়ে দিন লাল পিঁয়াজের কুচিগুলো। চুলো বন্ধ করে গরম মশলা দিয়ে দিন, ভালো করে মিশিয়ে নিন। ওপরে দিয়ে দিন ধনেপাতা কুচি।
৫) এবার ভাজতে হবে ভাটোরা। বড় কড়াইতে ডিপ ফ্রাই করার জন্য তেল গরম করে নিন মাঝারি আঁচে। ডোটা বের করে আরেকবার মাখিয়ে নিন। ছোট ছোট লেচী করে নিন, তবে এগুলোকে অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে যেন শুকিয়ে না যায়। একটা একটা করে রুটি বেলে নিন। রুটি বেলার জন্য অল্প করে তেল ব্যবহার করবেন, আটা বা ময়দা ছড়াবেন না। রুটি বেশি পাতলা করবেন না।
৬) তেল গরম হয়ে গেলে এতে ছেড়ে দিন একটা করে রুটি। দুপাশে লালচে সোনালি হলে তেল ঝরিয়ে ভাটোরা উঠিয়ে নিন।
ছোলা মাসালার সাথে পরিবেশন করুন গরম গরম মুচমুচে ভাটোরা।

 

জনপ্রিয় ভারতীয় খাবার ডাল পাকোয়ান রেঁধেছেন কি আগে?

রুটি কিংবা পরোটা অথবা চাপাতি সবকিছুর সাথে ডালের তৈরি খাবার খেতে দারুন লাগে। আর তা যদি হয় বুটের ডালের কোন খাবার, তবে তো কথা নেই। ভারতে বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার হল ডাল পাকয়োন। ডালের এই খাবারটি এক ধরণের পুরির সাথে পরিবেশন করা হয়, পুরিটিকে বলা হয় পাকোয়ান। আসুন তাহলে ডাল পাকোয়ানের রেসিপিটি জেনে নিই।

উপকরণ

১ কাপ বুটের ডাল

২টি কাঁচা মরিচ

১/২ চা চামচ মরিচ গুঁড়ো

১টি পেঁয়াজ কুচি

১ চা চামচ জিরা

১/৪ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো

২ টেবিল চামচ তেঁতুলের রস

১/২ চা চামচ গরম মশলা

১ চা চামচ আদার পেস্ট

লবণ স্বাদমত

ধনেপাতা কুচি

আমচূর পাউডার

পাকয়োন তৈরির জন্য

১ কাপ ময়দা

১ চা চামচ জিরা

২ টেবিল চামচ তেল

লবণ স্বাদমত

তেল

সাজানোর জন্য

১টি পেঁয়াজ কুচি

ধনেপাতা কুচি

লাল মরিচ গুঁড়ো

কাঁচা মরিচ কুচি

আমচূর পাউডার

জিরা গুঁড়ো

প্রণালী:

১। প্রথমে প্রেসার কুকারে তেল গরম করতে দিন।

২। তেল গরম হয়ে আসলে জিরা, পেঁয়াজ কুচি, আদা কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি এবং বুটের ডাল দিয়ে দিন।

৩। এবার এতে আমচূর গুঁড়ো, গরম মশলা, হলুদ গুঁড়ো, লাল মরিচ গুঁড়ো, লবণ এবং পানি দিন। পানি এমনভাবে দেবেন যেন ডাল সম্পূর্ণ ডুবে যায়।

৪। এখন প্রেশার কুকার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে উচ্চ তাপে সিদ্ধ হতে দিন। দুটি শিস দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

৫। ডাল হয়ে গেলে ধনেপাতা কুচি মিশিয়ে নিন।

৬। পাকোয়ান তৈরির জন্য, ময়দা, তেল, জিরা, লবণ এবং পানি মিশিয়ে ডো করে নিন।

৭। এবার ডো দিয়ে ছোট ছোট লুচি তৈরি করে নিন। কাঁটা চামচ দিয়ে লুচির মাঝে কিছুটা ছিদ্র করুন।

৮। তেল গরম হয়ে এলে এতে লুচিগুলো দিয়ে দিন। বাদামী রং হয়ে এলে নামিয়ে ফেলুন।

৯। পরিবেশনের সময় লুচির উপরে ডাল পাকোয়ান, তার উপর তেঁতুলের সস, লাল মরিচ গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো, পেঁয়াজ কুচি, ধনেপাতা কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।

 

বিশ্ব নারী দিবসে শাহরুখের বার্তা

লিঙ্গ বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসার মত পদক্ষেপ বলিউড সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম শুরু করেছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা শাহরুখ খান। আগে সিনেমার শুরুতে নায়কের পরে নায়িকার নাম দেখানো হত। ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ সিনেমা থেকে সেই ফর্মুলা বদলে ফেলেন শাহরুখ। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সেই স্মৃতি আরও এক বার শেয়ার করলেন বাদশাহ খান।

কিং খান শাহরুখ বলেন, ‘আমি প্রত্যেক নারীকে সম্মান করি। পৃথিবীতে নারীরা আরও বেশি সম্মান এবং স্বাধীনতা পাক সেটাই আমি চাই।’

তিনি আরও জানান, মা, বান্ধবী, সহ-অভিনেত্রী, স্ত্রী, মেয়ে— সকলের কাছ থেকেই কিছু না কিছু শিখেছেন তিনি। আর এই সুন্দরীরা ছিলেন বলেই তাঁর চলার পথ আজ এত মসৃণ।

 

শিক্ষার দিক থেকেও শীর্ষে ছয় বলিউড অভিনেত্রী

বলিউডের নায়িকারা যে শুধু নাচ-গানই পারে, এমন নয়। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে পড়াশোনার যোগাযোগ নেই, এই ধারণা ভুল। সবাই না হলেও বেশ কিছু তারকার ঈর্ষণীয় একাডেমিক রেকর্ড চোখ কপালে তুলে দিতে বাধ্য। মিডিয়ায় না থাকলেও শুধু পড়াশোনার বদৌলতে তারা হয়তো আরও উচ্চ শিখরে পৌঁছুতে পারতেন।

েীিাীবিদ্যা বালান
ছোট থেকেই অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও পড়াশোনায় কোনদিন ফাঁকি দেন নি ‘কাহানি’খ্যাত অভিনেত্রী বিদ্যা বালান। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী পাওয়ার পর মুম্বাই ইউনিভার্সিটি থেকে সোশিওলজিতে স্নাতোকত্তর ডিগ্রী পান তিনি। অনুরাগ বসু একটি টিভি ধারাবাহিকের জন্য বিদ্যাকে একটা রোল অফার করেছিলেন। কিন্তু পড়াশোনার খাতিরে বিদ্যা তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।  পরে পড়াশোনা শেষ করে তবেই অভিনয় জগতে পা রাখেন তিনি।

েৈীপরিণীতি চোপড়া
হরিয়ানায় একটা পাঞ্জাবী পরিবারে জন্ম পরিণীতির। আম্বালার কনভেন্ট অব জেসাস অ্যান্ড মেরী স্কুলে পড়তেন তিনি। এরপর ১৭ বছর বয়েসে লন্ডনে পাড়ি দেন ইনভেস্টমেট ব্যাঙ্কার হওয়ার জন্য। তিনি ম্যানচেস্টার বিজনেস স্কুল থেকে তিনটি অনার্স ডিগ্রী পেয়েছেন বিজনেস‚ ফিন্যান্স এবং ইকোনমিক্স-এ। অভিনয় শুরু করার আগে তিনি যশরাজ ফিল্মসের জন্য পাবলিক রিলেশনস অফিসারের কাজ করতেন।

1প্রীতি জিনতা
বরাবরই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন প্রীতি। সিমলাতে সেন্ট এডেস কলেজ থেকে সাইকোলজিতে গ্রাজুয়েট। ক্রিমিনাল সাইকোলজির ওপর মাস্টার ডিগ্রীও রয়েছে তার।

ে্িশ্রুতি হাসান
অভিনেতা কমল হাসান কন্যা শ্রুতি হাসানের চেন্নাইতেই জন্ম এবং বড় হওয়া। শ্রুতি অ্যাবাকাস মন্টেসরি স্কুলে ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছেন। তারপর তিনি মুম্বাইয়ের সেন্ট অ্যানড্রুজ কলেজে সাইকোলজি পড়তে ঢোকেন। এরপর তিনি সঙ্গীত এবং অভিনয়ের দিকে নজর দেন। গান শেখার জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার মিউজিশিয়ানস ইনস্টিটিউটে বেশ কিছুদিন ছিলেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি রক ব্যান্ড ‘দ্য এক্সট্রামেন্টেলস’ এর একজন গায়িকাও শ্রুতি।

িেোাীসোহা আলী খান
২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘রঙ দে বাসন্তি’ ছবির জন্য সোহা আলী খান পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে জিতেছিলেন অসংখ্য পুরস্কার। তবে শুধু অভিনয়েই নয়, শিক্ষার জন্যও তার হাতে রয়েছে অসংখ্য অর্জন। অক্সফোর্ডের বেলিল কলেজে তিনি মডার্ন হিস্টোরি  নিয়ে পড়াশোনা করেন। পরে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’ বিভাগ থেকে।

্ি্রিচা চাড্ডা
২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’ ছবির মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন অভিনেত্রী রিচা চাড্ডা। এই ছবির জন্য ফিল্মফেয়ারের সমালোচক বিভাগে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতে নেন তিনি। তবে তিনি শুধু একজন ভাল অভিনেত্রীই নন, একজন মেধাবী ছাত্রীও বটে। শিক্ষার দিক থেকেও অনেক এগিয়ে আছেন রিচা। ২০০২ সালে স্কুল পাশ করার পর দিল্লির সেইন্ট স্টিফেন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।

 

 

ফ্যাশন রোদচশমায়…

রোদচশমা পরার জন্য দিন ও তিথি লাগে না। চলতি ফ্যাশন হিসেবে সব ঋতুতেই থাকে এটি। শুধু রোদ থেকে বাঁচতেই রোদচশমা প্রয়োজন তা নয়। একই সঙ্গে এটি ফ্যাশন অনুষঙ্গও। কিন্তু যাঁদের চোখে পাওয়ারের চশমা পরতে হয়, তাঁরা কি কেতাদুরস্ত রোদচশমায় চোখ ঢাকবেন না! তাঁরাও চাইলে পরতে পারেন হাল ফ্যাশনের যেকোনো রোদচশমা। শুধু প্রয়োজন অনুসারে চোখের পাওয়ারের সঙ্গে মিল রেখে পরিবর্তন করে নিন রোদচশমার কাচটি। এতে রথ দেখাও হবে, সঙ্গে কলা বেচাও!

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ শরফুদ্দিন আহমেদ জানালেন, ‘চোখের সুরক্ষার জন্য রোদচশমা ব্যবহার করতেই পারেন। এটি ক্ষতিকারক অিত বেগুনী রশ্মির প্রভাব থেকে চোখকে সুরক্ষা দেয়। নিয়মিত ব্যবহারে অনেক রোগও এড়ানো সম্ভব। এ ছাড়া মানসম্মত কাচের তৈরি চশমায় প্রয়োজনমতো পাওয়ার বসিয়ে নিতে পারেন। তবে সস্তা প্লাস্টিকের চশমা চোখের জন্য ক্ষতিকর এবং ভেঙে গিয়ে দুর্ঘটনারও আশঙ্কা থাকে। চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে চশমা পরুন।

“চোখের যত্ন নিন, চোখ আপনার যত্ন নেবে”
গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে রোদের তাপ। রোদচশমা শুধু তীব্র সূর্যালোক থেকেই চোখের সুরক্ষা দেয় না। সেই সঙ্গে ধুলা থেকেও চোখকে বাঁচায়। যাঁদের ধুলায় অ্যালার্জি, তাঁদের জন্য রোদচশমা শুধু ফ্যাশন নয়, অত্যাবশ্যকীয়ও বটে। চোখের সংক্রমণ এড়াতেও পরতে পারেন চশমা। চোখে যদি পাওয়ারের চশমা দরকার হয়, ব্যবস্থাপত্র নিয়ে হাজির হয়ে যান দোকানে। চোখের আরামও হবে, সঙ্গে ফ্যাশনও। বসুন্ধরা লেভেল-৫-এর লুক এক্সক্লুসিভের স্বত্বাধিকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম জানালেন, ‘চলতি ফ্যাশন হিসেবে এখন ছেলেদের ক্লাব মাস্টার আর মেয়েদের ক্যাটস আই, রিমলেস ফ্রেম বেশি চলছে। ফ্যাশনেবল রোদচশমায় প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী আমরা পাওয়ারও যুক্ত করে দিতে পারি।’
যাঁরা বাইকে ঘোরেন তাঁদের জন্য এই রোদচশমা অতি জরুরি। তীব্র গতিতে বাইক ছুটে চলার সময়, বাতাসে ভেসে বেড়ানো ধুলা এসে চোখে আঘাত করে। এই অনাবশ্যক ক্ষতি এড়াতে পরে নিন রোদচশমা। আর যাঁরা সাইকেল কিংবা স্কেটিং করেন, চোখের সুরক্ষায় তাঁরাও পরতে পারেন হাল ফ্যাশনের রোদচশমা।
এখন রোদচশমায় গাঢ় রং খুব ট্রেন্ডি। নীল, সবুজ, লাল, কমলার মতো রঙের প্রাধান্য দেখা যায়। চাইলে কয়েকটা শেডেরও রোদচশমা মিলবে। অনুষ্ঠানভেদে রোদচশমায় বৈচিত্র্য আনতে পারেন। ক্লাব মাস্টার ফ্রেম ফরমাল কিংবা ঘরোয়া দুই ধরনের অনুষ্ঠানেই মানিয়ে যায়। আর এভিয়েটর ফ্রেম ফরমাল পোশাকেই বেশি মানানসই। মুখের গড়ন ও চুলের স্টাইলের সঙ্গে মিল রেখে বেছে নিন আপনার পছন্দের রোদচশমাটি। সঙ্গে দরকারমতো পাওয়ারটিও যুক্ত করে নিন।
ব্র্যান্ড ভেদে রোদচশমার দামের পার্থক্য হয়। বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর কপি পাওয়া যাবে ২৫০০ থেকে ১২০০০-এর মধ্যে। নন-ব্র্যান্ডের রোদচশমা সর্বোচ্চ ৩০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যেই মিলবে।

 

নারী–পুরুষের অনুপাত হবে সমান সমান

বিশ্বজুড়ে প্রায় প্রতি তিনজন নারীর একজন (৩৩%) জীবনের কোনো না কোনো সময়ে নিজেদের স্বামী বা নিকটতম পুরুষসঙ্গীর মাধ্যমে শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিভিন্ন দেশের ওপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নারী নির্যাতননিষয়ক  একটি গবেষণা করে। তাতে দেখা যায়, নারীরা তাদের বিবাহিত জীবনে একবার না একবার তাদের স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। স্বামী বা ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর মাধ্যমে যৌন বা শারীরিক কিংবা উভয় ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন এমন নারীর হার ১৫ থেকে ৭১ শতাংশ। এসব সহিংসতা সংঘটনের হার ও মাত্রা দেশভেদে ভিন্ন হলেও ব্যক্তি ও পরিবারের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব সর্বজনীন এবং স্বাস্থ্যসমস্যার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। নারীর প্রতি সহিংসতা ব্যক্তি, পরিবার, সম্প্রদায় ও সরকারকে দুর্বল করে দেয় এবং একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ব্যাহত করে।

নারীর প্রতি সহিংসতার ওপর ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত ছিল না। তাই এ ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ ও নিরসনের জন্য সরকা​ির এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নিতে পারেনি। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) সহায়তায় বাংলাদেশ জাতীয় পরিসংখ্যান বিভাগ ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর অংশগ্রহণে প্রথমবারের মতো  নারীর প্রতি সহিংসতার ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়। ২০১১ সালে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। এতে বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য–উপাত্ত পাওয়া যায়।

জরিপে দেখা যায়, ৮৭ শতাংশ বিবাহিত নারী তাঁদের স্বামী কর্তৃক কোনো না কোনো সহিংসতা বা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৭৭ শতাংশ নারী গত ১২ মাসে তারা কোনো না কোনো নির্যাতনের ​শিকার হ​েয়ছেন বলে উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ নারী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এসব নির্যাতিত নারীর মাত্র ২ দশমিক ৪ শতাংশ তাঁদের বর্তমান স্বামীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেন এবং ৮ দশমিক ৯ শতাংশ নির্যাতিত নারী তাঁদের প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেন।

বিডিএইচএস ১৯৯২ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৪ শতাংশ মাতৃমৃত্যুর জন্য নারীর প্রতি সহিংসতা দায়ী।  এইচডিঅারসি ও ইউএন উইমেনের ২০১৩ সালের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনুমানিক ৭৬ শতাংশ ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হন। ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাইরে ওই প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট পুরুষেরাই ছাত্রীদের এসব হয়রানি করে থাকেন। নারীর প্রতি সহিংসতাকে সমাজ এখনো মেনে নেয়। এ ব্যাপারে ন্যায়বিচার চাওয়ার ও পাওয়ার বিষয়টি নারী এবং দরিদ্র মানুষের জন্য এখনো দুরূহ, জটিল, ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদি। বিচারপ্রার্থী নারীরা নানাভাবে হেনস্তার শিকার হন।

সংঘটিত সহিংসতার ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত পাওয়া কঠিন। কারণ, এসব ঘটনার প্রামাণ্য দলিল সংরক্ষণে ঘাটতি রয়েছে। তাই বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার সমস্যা মোকাবিলায় অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করাটা  সরকারি বা বেসরকারি সংস্থাসমূহের জন্য কঠিন ব্যাপার।

তাই ইউএনএফপিএ নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের জন্য ও সহিংসতার শিকার নারীদের সুরক্ষা সেবা আরও জোরদার করার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধী​েন বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে  যৌথভাবে কাজ করছে। সহিংসতার ঘটনাগুলোর তথ্য-উপাত্তের ঘাটতির সমস্যাটি সমাধানের জন্য এসব ঘটনার তথ্য একত্র করে অপরাধ তথ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেমে (সিডিএমএস) যুক্ত করা হচ্ছে। পুলিশ সেগুলো ব্যবহার করে অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কাজ করছে। নারীর প্রতি সহিংসতার  নতুন তথ্য বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটে আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে সরাসরি দেখা যাবে। তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে প্রাথমিক উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও  পুলিশ অধিকতর সেবা প্রদান এবং নারীদের জন্য আরও বন্ধুসুলভ সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আগ্রহী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে।

নারীর প্রতি সহিংসতার তথ্য-প্রমাণ সংরক্ষণের পাশাপাশি তা ফলোআপের ব্যাপারে পুলিশ কর্মকর্তারা বিশেষ প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। এসব প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে কীভাবে সহিংসতার ঘটনাগুলো নিয়ে সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করা যায়, যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য-বিষয়ক ধারণা এবং সহিংসতার পর মানবিক সংকটের ব্যাপারে কীভাবে সাড়া দেওয়া যায় প্রভৃতি। ঢাকা মহানগরসহ চার জেলার মোট ৪৪টি থানায় পুলিশ কর্মকর্তাদের এসব প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। থানাগুলোয় পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য একটি আদর্শ পরিচালন প্রক্রিয়া (SOP) নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এটি ব্যবহার করে তাঁরা অতি সংবেদনশীল ঘটনা এবং সহিংসতার শিকার নারীদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সকল পরিস্থিতিতে দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন। ১৫টি থানায় নারীদের সহায়তার জন্য বিশেষ ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। এতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী পুলিশ কর্মকর্তারা নির্যাতিত নারীদের সেবা দিচ্ছেন এবং একটি সুরক্ষিত  ও গোপনীয় পরিবেশে তাঁদের মামলা নথিভুক্ত করছেন। নির্যাতনের শিকার নারীদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে রেফার করার জন্যও পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

নারীর প্রতি সহিংসতা ঘটার   পরপরই তা মোকাবিলা করাটা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তবে এসব অপরাধ প্রতিরোধ করাটা আরও গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করার ব্যাপারেও বাংলাদেশ পুলিশ সহায়তা করছে বিশেষ করে তরুণ–তরুণী ও কিশোর–কিশোরীদের জন্য।

জেন্ডার বিষয়ে প্রচলিত রীতিনীতির ব্যাপারে আলোচনা করে সেগুলো পাল্টাতে হবে এবং নারী ও মেয়েদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নের জন্য আইনি প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য দারিদ্র্য বিমোচনসহ উন্নয়নমূলক অন্যান্য ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। পারিবারিক নির্যাতনের সঙ্গে দারিদ্র্যের তাৎপর্যপূর্ণ সংযোগ রয়েছে। তরুণ বয়সী, বিশেষ করে মেয়েদের উচ্চশিক্ষা ও দক্ষতা অর্জনের মধ্য দিয়ে অধিকতর অর্থনৈতিক সামর্থ্য ও সুযোগ তৈরি হলে পারিবারিক নির্যাতন কমে  আসবে। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে। এতে বাল্যবিবাহ দূর করার চেষ্টাতেও সাফল্য আসবে। কারণ, মেয়েদের দেরিতে বিয়ে হলে তাদের উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়ে যায়। এভাবেও পারিবারিক আয় বাড়ে। সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, নারী ও কন্যাশিশুর সুরক্ষায় আরও বিনিয়োগ করলে সহিংসতার শিকার নারীরা একটি উন্নততর ভবিষ্যতের আশা করতে পারেন।

ইউএনএফপিএর একটি প্রতিবেদন থেকে অনূদিত

নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতার ক্ষতি

ক্ষতির ধরন                                          টাকা           জিডিপির শতাংশ (%)

পরিবারপিছু ক্ষতি (মোট গড় মূল্য)        ১১,১৮০      –

উপার্জনের গড় ক্ষতি                      ৮,২২৮      –

মোট ব্যক্তিগত ক্ষতি                       ১৯,৪০৮     –

প্রত্যক্ষ জাতীয় ব্যয় (কোটি টাকায়)        ৮,১০৫      ১. ১৮

জাতীয় আয়ে লোকসান (কোটি টাকায়)    ৫,৯৬৬      ০. ৮৭

মোট ক্ষতি (কোটি টাকায়)                ১৪,০৭১      ২. ০৫

সূত্র: কেয়ার বাংলাদেশ ২০১৩

 

নারীদের মিলনমেলা

তরুণ প্রজন্মের নারীরা শোনালেন তাঁদের বিজয়ের কথা, জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার কথা। নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে এই নারীরা এগিয়ে চলেছেন তাঁদের নিজ গন্তব্যে। স্বপ্ন তাঁদের আরও বড়। যেতে চান বহুদূরে। এসব নারীর এগিয়ে চলার গল্পে আবেগাপ্লুত নানা শ্রেণি-পেশার সফল নারীরাও। তাঁরাও বললেন, এঁরাই আমাদের নায়িকা, এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা।
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন কিরণ চন্দ্র রায় ও চন্দনা মজুমদারগতকাল সোমবার ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন মিলনায়তনে বিকেল সাড়ে চারটায় শুরু হয় নারী দিবসের অনুষ্ঠান। এবারের আয়োজনের বিষয় ছিল ‘আমার কাজ, আমাদের অর্জন’। সেই অনুষ্ঠানে কলসিন্দুরের মেয়েরা, সাফ গেমসে সোনা বিজয়ী দুই নারী আর ভারতে নির্যাতিত আয়শা সিদ্দিকা শোনালেন জীবনযুদ্ধের কথা, সফলতার কথা। সেখানে আরও এসেছিলেন নানা শ্রেণি-পেশার সফল নারীরা। তারুণ্যের বিজয়ের কথা শুনে কখনো অতিথিরা হেসেছেন, কখনো কেঁদেছেন। হাসি-কান্না-আড্ডায় সফলতার গল্প শুনেছেন তাঁরা।
কলসিন্দুর গ্রামের দুই ফুটবলার সানজিদা ও মারিয়া জানাল তাদের কথা। কতটা বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে তারা দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে, সেই বর্ণনা ছিল তাদের সহজ-সরল ভাষায়। তারা বলল, ভালো খেলে তারা দেশকে ও নিজেদের অনেক দূর নিয়ে যেতে চায়। তাদের স্কুলের শিক্ষক মিনতি রানী সাহা গ্রামের মেয়েদের জন্য সবার সহযোগিতা চান।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম কুড়ানো ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের নারী ফুটবলাররাও এসেছিলেন। সঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিনতি রানী সাহাভারোত্তোলনে সোনাজয়ী মাবিয়া আক্তার আর সাঁতারে দুটি সোনা বিজয়ী মাহফুজা খাতুন শোনালেন তাঁদের কথা, এগিয়ে যাওয়ার কথা। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সোনা বিজয়ী মাবিয়ার কান্নার সেই ভিডিও ফুটেজ বিমোহিত করে অনুষ্ঠানে আসা সবাইকে। সবাই দাঁড়িয়ে শুভেচ্ছা জানান এই দুই নারীকে। জবাবে তাঁরা দুজনই ভবিষ্যতে অলিম্পিকসহ বড় আসরে বাংলাদেশের সম্মান আরও বাড়ানোর জন্য কাজ করবেন বলে জানান।

অনুষ্ঠানে আসা বিভিন্ন ক্ষেত্রের সফল নারীরা বললেন, নারী-পুরুষের পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া কেউই এগোতে পারবে না। কোনো উন্নয়নও স্থিতিশীল হবে না। নারী-পুরুষকে একসঙ্গে চলতে হবে। যার যা প্রতিভা, সেটা বিকশিত হতে একে অপরকে সহযোগিতা করতে হবে। দুজনে সমান না হলে কেউই টিকে থাকতে পারবে না।

অনুষ্ঠানের শুরুতে তিন ভাইবোন স্বাগতা, সভ্যতা আর সন্ধির গাওয়া ‘আমরা করব জয়’ গানটির সঙ্গে কণ্ঠ মেলালেন সবাই। সবাই মিলে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। জয়ের প্রত্যয় নিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানটির সমাপ্তিও হয় জয়ী হওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে।

সাবেক খাদ্যসচিব ও ট্যারিফ কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান মুশফেকা ইকফাৎ​ বলেন, মেয়েদের অর্জনের পথটা সহজ ছিল না। তাঁদের ব্যাচের নারীরাই প্রথম জেলা প্রশাসক ও সচিব হয়েছেন। এখন তো অনেকেই বড় পদে যাচ্ছেন।

শাহলা খাতুন বললেন, নারীরা একা উঠে আসতে পারবে না। তাদের বাবা, ভাই ও বন্ধুদের সহযোগিতা লাগবে। একইভাবে পুরুষের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাই নারী-পুরুষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

মার্শা বার্নিকাট বলেন, নারী-পুরুষকে হাতে হাত রেখে এগোতে হবে। আলাদা করে কিছু হবে না। এখানে সবাই সবার গাইড।

অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন গানের কিছু অংশ গেয়ে শোনান। নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নাচ করার কারণে কোনো নারীকেই যেন নিগৃহীত হতে না হয়, সেটাই চাওয়া।

 নারীরা নানা বাধা ও প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে। এমন অসংখ্য বাধা পেরোনোর ঘটনা নারীদের এগিয়ে নিয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানের শেষে গান গেয়ে শোনান কিরণ চন্দ্র রায় ও চন্দনা মজুমদার। তাঁদের গানের মধ্য দিয়েই শেষ হয় নারী দিবসের অনুষ্ঠান।

Source Of: Prothom-alo

 

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে ৫ হাজার নারী

প্রতিষ্ঠানের ‘বস’ একজন নারী। পুরো প্রতিষ্ঠান চালানোর গুরুদায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এমন দৃশ্য বাংলাদেশে খুব একটা দেখা যায় না। পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখনো নারীরা এ দেশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে যেতে পারছেন খুব কম। ব্যবসায় নেতৃত্বে নারীরা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। বিশ্ব প্রেক্ষাপটেও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নারী নেতৃত্বের খুব বেশি অগ্রগতি নেই।
বাংলাদেশে শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা নীতিনির্ধারণী উচ্চ পদে মাত্র ৪ হাজার ৯৮৫ জন নারী আছেন। শিল্প ও সেবা খাতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা উচ্চ পদের মাত্র ১৩ দশমিক ৩ শতাংশে কাজ করছেন নারীরা।
এই হিসাব সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)। ২০১৩ সালের শ্রমশক্তি জরিপে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নারীর নেতৃত্বের এই চিত্র ফুটে ওঠে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাইডাস ফিন্যান্সিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান রোকিয়া আফজাল রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পৃথিবীর সব জায়গায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার নেতৃত্বে নারীর অংশগ্রহণ বেশ কম। বাংলাদেশেও নারীর নেতৃত্বের হার কম। এর মানে এই নয় যে তাঁদের নেতৃত্বগুণ নেই। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার দক্ষতা তাঁরা রাখেন। নেতৃত্বের পারদর্শিতাও তাঁদের রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এ দেশের নারীরা তা প্রমাণও করেছেন। তিনি মনে করেন, নারীদের উচ্চ পদে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। এ ছাড়া নেতৃত্বগুণের দক্ষতা বাড়ানোর সুবিধা সম্প্রসারিত করতে হবে।
কৃষি, সেবা ও শিল্প—এই তিনটি খাতের প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কিংবা উচ্চ পদে কর্মরতদের হিসাব দেওয়া হয়েছে বিবিএসের ওই জরিপে। গ্রাম এলাকায় এসব খাতের কোনো প্রতিষ্ঠানেই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদে নারী নেই। এমনকি উচ্চ পদে বা নীতিনির্ধারণী পদেও নেই। আবার শহর এলাকায় কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানেও নারীরা উচ্চ পদে নেই। শহর এলাকার শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানেই শুধু নারীরা উচ্চ পদে আছেন। সেই হিসাবে নারীরা এখন কেবল শহর এলাকার শিল্প ও সেবাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কিংবা উচ্চ পদে যেতে পেরেছেন। বিবিএসের হিসাবে, শিল্প খাতে প্রধান নির্বাহী কিংবা উচ্চ পদে আছেন ২ হাজার ২৪৩ জন। আর সেবা খাতে এর সংখ্যা ২ হাজার ৭৪১।
এবার দেখা যাক, পুরুষের চিত্রটি। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, পুরুষেরাই দেশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ৮৬ দশমিক ৭ শতাংশ উচ্চ পদ দখল করে আছেন। দেশে ৩৭ হাজার ৩৮২ জন পুরুষ আছেন, যাঁরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কিংবা নীতিনির্ধারণী পদে আছেন। এমন উচ্চ পদে রয়েছেন কৃষি খাতে ১ হাজার ৫২৩ জন, শিল্পে ৯ হাজার ৮৮৮ এবং সেবা খাতে ২৫ হাজার ৯৭১ জন পুরুষ।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নারী নেতৃত্বের বৈশ্বিক চিত্রটি বাংলাদেশের চেয়ে ভালো হলেও আশাবাদী হওয়ার মতো নয়। বিশ্বজুড়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার নেতৃত্বেও পুরুষেরা এগিয়ে আছেন। তবে অবশ্যই তা বাংলাদেশের চিত্র অপেক্ষা বেশ ভালো।
২০১৪ সালের গ্রান্ট থর্নন্টন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্বখ্যাত ফোর্বস সাময়িকী জানিয়েছে, গত কয়েক বছরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নারীর অংশগ্রহণ খুব একটা বাড়েনি। ২০০৭ সালে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নেতৃত্বদানকারী পদগুলোতে মাত্র ২৪ শতাংশ ছিলেন নারী। ২০১৩ সালের এসেও এই হারে পরিবর্তন হয়নি, ২৪ শতাংশই রয়ে গেছে। ২০১১-১২ সময়কালে এই হার বরং কিছুটা কমে গিয়েছিল।
নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ক্যাটালিস্ট। প্রতিষ্ঠানটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর (এসঅ্যান্ডপি) সূচকের ৫০০টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ২০টির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন নারীরা। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হলো জেনারেল মোটরস, পেপসিকো, ইয়াহু, ওরাকল, আইবিএম, হিউলেট প্যাকার্ড (এইচপি) প্রভৃতি। মোটা দাগে বলা যায়, বিশ্বের অন্যতম বড় এই স্টক এক্সচেঞ্জের এসঅ্যান্ডপি সূচকের ৫০০ কোম্পানির মাত্র ৪ শতাংশের প্রধান নারীরা।
ক্যাটালিস্টের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আর এসব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের মাত্র ১৯ দশমিক ২ শতাংশ পদে নারী রয়েছেন। তবে আশার কথা—এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমশক্তির ৪৫ শতাংশই নারী।

source: collected

 

আজ পর্দা নামছে ডিজিটাল আইসিটি মেলার

আজ জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে আইসিটি এক্সপো ২০১৬। ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়েছিল তিনদিনের এই প্রযুক্তির আসর। আজ বিকেলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। গত দুই দিন ধরে প্রযুক্তি প্রেমীদের উপচে পড়া ভিড় ছিলো। মেলায় অংশ নেয়া বিক্রেতারা জানান, দর্শক সমাগম ছিল প্রচুর এবং  বিক্রিও ভালো হচ্ছে।
দ্বিতীয় দিনের বিকেল বেলার মূল আকর্ষণ ছিল শিশুদের জন্য ডিজিটাল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন। গত দুই দিনের মত আজও তিনটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। আজকের সেমিনারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘ক্রস বর্ডার সাইবার ক্রাইম’ নামক সেমিনারটি, যেখানে দেশ-বিদেশের সাইবার অপরাধ বিষয়ক আলোচনা এবং এ থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায় সেই নিয়ে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারটিতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নের্টওয়ার্কের (বিডিওএসএন) সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, মাইক্রোসফ্ট বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সোনিয়া কবির বশির।
প্রদর্শনী চলাকালে ইনোভেশন প্রজেক্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, সেলফি কনটেস্ট, গেইমিং কনটেস্ট, সেলিব্রেটি শো, প্রোডাক্ট  শো নামের নানান সেশনে এই দিনে দর্শনার্থীদের উপড়ে পড়া ভিড় ছিল। বিশেষ করে গিগাবাইটের আয়োজন  গেইমিং কনটেস্টে তরুণদের ভিড় ছিল বেশি।1
এই মেলায় ৫৯টি প্যাভিলিয়ন ও ৭০টি স্টলে প্রযুক্তি পণ্য দেখানো হচ্ছে। মেলা উপলক্ষে প্রযুক্তিপণ্য বিক্রয়ের ওপর ছাড় দিয়েছে অধিকাংশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। মাইক্রোসফ্ট থেকে যে কোন পণ্য কিনলে ক্রেতারা পাবেন ৪ শতাংশ ছাড়। ডেলের পণ্যে থাকছে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যছাড়। ওয়ালটন দিচ্ছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়সহ ৩০ দিনের রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা।  সিম্ফনির স্টল থেকে মুঠোফোন কিনলে পাওয়া যাবে ৪ শতাংশ ছাড়। টিপিলিংকের পণ্য কিনে লটারিতে মোটরসাইকেল জেতার সুযোগ রয়েছে। আজও মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।
মেলার কনভেনার নজরুল ইসলাম মিলন বলেন, আসলে আমরা আইসিটি এক্সপো ২০১৬ নিয়ে যা আশা করেছিলাম তিন দিনের এই মেলায় তার থেকে অধিক সাড়া পেয়েছি। এই মেলায় আমরা  গুরুত্ব দিয়েছি দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর। আজ মেলার শেষ দিনে অসংখ্য দর্শনার্থীদের সমাগমে সফলভাবে শেষ করতে পারবো  বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো-২০১৬।
তিনি আরও বলেন, আজ মেলার শেষ দিনে বিকাল তিনটায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এই মেলার সমাপনী ঘোষনা করবেন। এখানে আরো উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি  প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ এমপি, আইসিটি সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি এ এইচ এম মাহফুজুল আরিফ সহ অনেকে।
এবারের মেলায় সহযোগী হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও কন্ট্রোলার অব সার্টিফায়িং অথরিটি।
এছাড়াও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বিএসিসিও)।

 

যা যা আসছে এবার ঈদের ঢাকাই সিনেমা হল গুলোতে

ঈদে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে,নতুন মুক্তি প্রাপ্ত সিনেমা। প্রতি ঈদেই তাই মুক্তি পেয়ে থাকে বেশ কিছু নতুন সিনেমা। যদিও বিগত কয়েক বছরে এই মুক্তি পাওয়া সিনেমা গুলোর সংখ্যা আগের চেয়ে কমে এসেছে।

মোট চারটি ছবি মুক্তি প্রতিক্ষিত এবারের ঈদে। যার মধ্যে দু’টি ছবিতে আছেন হালের ব্যস্ত চিত্রনায়ক শাকিব খান। আর তার বিপরীতে এবারও দেখা যাবে অপু বিশ্বাসকে। গত কয়েক বছরের ধরে এমনই ধারাবাহিকতা চলছে। তবে জুটি হিসেবে দর্শক জনপ্রিয় ও ব্যবসাসফল তারা। তাই প্রযোজকদের অন্তত হল পাওয়ার চিন্তাটা করতে হয় না। কারণ ঈদে সারাদেশে অর্ধেকেরও বেশি হল শাকিবের দখলে। আর হল মালিকরাও সন্তুষ্ট।

শাহিন সুমন পরিচালিত ‘লাভ ম্যারেজ’ ছবিটি এবার ঈদে মুক্তি পাচ্ছে। এই ছবিটিতেই জুটি হিসেবে থাকছেন শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। শাকিব খানের দ্বিতীয় ছবিটিতে তার বিপরীতে থাকছেন পরীমনি। পরীর নামের সাথে বিতর্ক জড়িয়ে থাকলেও ইন্ডাস্ট্রির ব্যস্ততম নায়িকা এখন তিনি। প্রায় সারাবছরই ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত এই নায়িকা। তবে ঈদে শাকিবের সাথে জুটি বেধে দর্শকদের মাঝে কতটা সাড়া ফেলতে পারবেন তা এখন অপেক্ষা।

‘আরো ভালোবাসবো তোমায়’ শিরোনামে এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন এস এ হক অলিক। ছবিটির মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর আবারও চলচ্চিত্র নির্মাণ করলেন তিনি। নতুন ছবির ব্যবসা প্রসঙ্গে অলিক বলেন, ‘এবার রোমান্টিক ছবি নির্মাণ করেছি। আর এবার যেহেতু চারটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে তাই ব্যবসাটাও তো ভাগ হয়ে যাবে। তবুও আমি আশাবাদী। আর গত কয়েক বছর ধরেই শাকিবের প্রতি একটা নির্ভযোগ্যতা সবার তৈরি হয়েছে।’

নায়িকা নির্ভর চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকদিন ধরেই ছিল না। শাবনুর, পূর্ণিমা ও মৌসুমীর সময়ের পর দর্শক নায়িকা দেখে হলে যান গুটিকয়েক মাত্র। কিন্তু চলচ্চিত্রের এই সময়ে জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহী আসার পর সেই সঙ্কটটা অনেকটা পূরণ হয়েছে। যদিও জাজ মাল্টিমিডিয়ার নিজস্ব হলগুলোতেই মুক্তি পায় ছবিগুলো। তবে জনপ্রিয়তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। জাজের বাইরেও তাকে নিয়ে ছবি করতে প্রস্তুত অনেক প্রযোজক। মাহীর প্রতি ইন্ডাস্ট্রির এই নির্ভরশীলতার ইতিবাচক দিকটা এখন পরিস্কার। এবার ঈদে মুক্তি পাচ্ছে মাহীর ‘অগ্নি ২’ ছবিটি। ‘অগ্নি’ ছবির সাফল্যের পর সিক্যুয়াল নির্মাণ হয়েছে যৌথ প্রযোজনায়। ওপার বাংলার ওম ও আশীষ বিদ্যার্থী অভিনয় করেছেন ছবিটিতে। ছবিটি প্রসঙ্গে চিত্রনায়িকা মাহী বলেন, ‘নতুন এক অভিজ্ঞতা আমার জন্য ‘অগ্নি ২’ ছবিটি। চলচ্চিত্রের আরও একটা অধ্যায় শেষ করলাম। আশাবাদী ছবিটি নিয়ে, কারণ ‘অগ্নি’ ছবিটি থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি বলেই এর সিক্যুয়াল করা।’
Mahi-Large20150509185644
‘অগ্নি ২’ ছবিটি এরইমধ্যে ২০০টি হল দখল করেছে। এবার জাজের নির্দিষ্ট হল ছাড়াও মুক্তি পাচ্ছে স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমাস’সহ বেশ কয়েকটি বাইরের হলে। ছবিটি প্রসঙ্গে জাজ মাল্টিমিডিয়ার ইন্টারন্যাশনাল উইং ও মার্কেটিং কনসালটেন্ট রোমিম রায়হান বলেন, ‘ছবিটি ঈদে দেশে মুক্তি পাবে এবং দেশের বাইরে ঈদের পরেই একসাথে মুক্তি দেয়া হবে। বাইরের দেশগুলোতে সেন্সরের কাজ চলছে। প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিকভাবে এতগুলো দেশে বাংলা ছবি মুক্তি পেতে যাচ্ছে। এতে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নতিতে আরও একধাপ এগুচ্ছি আমরা।’
ঈদে চার নম্বর ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে ‘পদ্ম পাতার জল’। তন্ময় তানসেন পরিচালিত ছবিটিতে অভিনয় করেছেন ইমন ও বিদ্যা সিনহা মীম। নির্ভরযোগ্য কাস্টিং ছাড়া ঈদে চলচ্চিত্র মুক্তি থেকে বিরত থাকেন অনেকে। ঈদের পরেই হল বুকিং চলে অনেক ছবির। ‘পদ্ম পাতার জল’ ছবির নায়ক ইমন বড়পর্দায় অনেকদিন। তবে এখনও তার অবস্থান নড়বড়ে। অন্যদিকে মীম সম্প্রতি বড়পর্দায় নিয়মিত হলেও তার অবস্থানটাও নির্ভযোগ্য নয়। তাই এবারে ব্যবসার দৌড়ে এই চলচ্চিত্রটি নিয়ে আয়ের হিসেবটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে মুক্তির কয়েকদিন পর পর্যন্ত। তবে প্রত্যাশার বিষয়টি চলচ্চিত্রের প্রচারণা। কিছুদিন আগেই ছবিটি উপলক্ষে এক পার্টিতে যোগ দেন দেশের জনপ্রিয় মুখগুলো। যেখানে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনুর। তাই এই ছবিটি নিয়ে আশার কথাও কম না।
 download

এবার চলচ্চিত্র মুক্তির তালিকায় নেই ঢালিউডের আলোচিত অনেকেই। যার মধ্যে রয়েছেন আরিফিন শুভ, জায়েদ খান, বাপ্পিসহ অনেকে। তবে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সবার হতাশার জাগাটা হল সঙ্কট নিয়ে। দেশে প্রায় ৩২০টি হল। যার সংখ্যা প্রতিনিয়তই কমছে। এরমধ্যে চাইলেও অনেক ছবি মুক্তি দিতে পারছেন না প্রযোজকরা। চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নতির জন্য তাই এখন জরুরি হল বাড়ানো। পাশাপাশি বর্তমান হলগুলোর পরিবেশ উন্নয়ন। হল না থাকলে দেশের চলচ্চিত্রের নিকট ভবিষ্যত্ নিয়ে যতই আশাবাদী মন্তব্য প্রকাশ পাক, সেগুলো স্বপ্নই থেকে যাবে। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি গুরত্বসহকারে দেখা উচিত। পাশাপাশি পেশাদার প্রযোজকের অভাবে ভুগছে এখন এফডিসি। তাই হলের পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজন এখন পেশাদার প্রযোজক।

 

এবার ঈদে দেশীয় ফ্যাশন হাউজ গুলোর নানা আয়োজন

সাদাকালো
11401419_906586569387636_1057436663860270696_n
কিউবিজম শিল্পের সৃজনকৃত শিল্পের ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে এবারের ঈদ আয়োজন। কিউবিজমের বিভিন্ন মোটিফ ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টপস, স্কার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, টি-শার্ট এবং মগ। এই ঈদ আয়োজন নিয়ে সাদাকালোর একটি প্রদর্শনী চলছে গ্যালারি টুয়েন্টি ওয়ানে (৭৫১, সাত-মসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা)।
মায়াসির
10600670_960237600687975_6146221799778212849_n
মায়াসির ঈদ কালেকশন ২০১৫ মাহিন খাঁনের নতুন স্টাইলে গাঁথা। আন্তর্জাতিক ভিন্নধর্মী প্যাটার্ন, ফ্যাশন, রঙ ও নকশার সাজে সাজিয়েছে আকর্ষণীয় ঈদের সংগ্রহ। এ কাট, অ্যাঙ্গেল কাট, উঁচু-নিচু কাট, ভায়েজ কাট দিয়ে, তার সাথে নিখুঁত হাতের এমব্রয়ডারি ও প্রিন্টের এক অনন্য সমন্বয় ঘটিয়েছেন মাহিন খাঁন তার নিজস্ব ডিজাইনে।
উৎসবমুখী এ আয়োজনে থাকছে ছোট ও বড় মেয়েদের থ্রিপিস, টপস্, সিঙ্গেল কামিজ, বিভিন্ন সিল্কের নকশিকাঁথা শাড়ি ও ছেলেদের পাঞ্জাবি, এছাড়াও থাকছে সেন্ডেল, ব্যাগ এবং রুপার তৈরি গহনা। পাওয়া যাবে মায়াসিরের গুলশান ও ধানমন্ডি শাখায়।
ক্যাটস আই
11403489_10153046515270983_6777429313989168475_n
উৎসবের রঙে তারুণ্যের উচ্ছলতা পোশাকের ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলে ক্যাটস আই। এবার ঈদে সিম্পল প্যাটার্ন ভেরিয়েশনে থাকছে মেনজ ও ওমেন কালেকশন। রঙকে প্রাধান্য দিয়ে ফেস্টিভ-কেন্দ্রিক ভ্যালু এডিশন থাকছে পোশাকে। গতানুগতিক প্যাটার্ন ভাবনা থেকে বেরিয়ে আনা হয়েছে স্মার্ট অ্যান্ড ট্রেন্ডি লুক। ডিজাইনেও থাকছে বৈচিত্র্য। পাশাপাশি আউটগোয়িং নারীদের জন্য আছে গাউন কামিজ বা ম্যাক্সি টিউনিক এলিগেন্ট আউটফিট। এছাড়া কো ব্র্যান্ড মুনসুন রেইনে থাকছে শুধুই পুরুষদের জন্য ঈদ-উপযোগী ফরমাল ও ক্যাজুয়াল শার্টিং ও স্যুটিং।
ইয়েলো 
11667387_10153028367033716_446357205597472100_n
নন্দিত ফ্যাশন হাউজ ইয়েলো এবার ঈদে এনেছে তাদের বাহারী এবং এক্সক্লুসিভ কিছু কালেকশন। লিলিয়েন এবং সুতি মূলত এই দুই রকমের কাপড়ের পর ভিত্তি করেই বানানো হয়েছে বেশিরভাগ ড্রেস তবে এছাড়াও রয়েছে শিফন,জর্জেট সহ আরো নানান কালেকশন।
কে ক্র্যাফট
দেশের প্রধান প্রত্যেকটি তাঁত অঞ্চলে এবং প্রায় প্রতিটি কারুশিল্প এলাকায় কে ক্র্যাফট কর্মীবাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রম, ডিজাইন স্টুডিওর মেধা-মনন এবং ক্রেতাদের ভালোবাসা ও সমর্থনে কে ক্র্যাফট বিশ বা একুশ বছর ধরে এগিয়ে চলছে। প্রতিটি কে ক্র্যাফট আউটলেটে নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টপস, সিঙ্গল কামিজ, লেডিস কুর্তা, স্কার্ট-টপস, পাঞ্জাবি, শর্ট-পাঞ্জাবি, লং পাঞ্জাবি, সেমি লং পাঞ্জাবি, সেমি ফিটিং লং পাঞ্জাবি, সেমি ফিটিং শর্ট-পাঞ্জাবি, জেন্টস কুর্তা, ফতুয়া, শার্ট, টি-শার্ট, শিশুদের যাবতীয় পোশাকসহ নানা উপহার সামগ্রী ও ঘর সাজানোর অনুষঙ্গ পৌঁছে গেছে। নানা রং বিন্যাস, অলংকরণ ও নিরীক্ষায় ঈদ পোশাকের কালেকশন সাজিয়েছে কে ক্র্যাফট। মেয়েদের পোশাকের মধ্যে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টপ্স, লং-কুর্তার সাথে রয়েছে ম্যাচিং গহনা, স্যান্ডেল ও ব্যাগ।
বাসন্তী
তাজমহল রোডের ফ্যাশন হাউস বাসন্তী বরাবরের মতো এবারের ঈদে সবার জন্য এনেছে আকর্ষণীয় ডিজাইনের পোশাক। পোশাকগুলোর মধ্যে আছে সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, শাড়ি, পাঞ্জাবি, ছেলেমেয়েদের ফতুয়া ও টি-শার্ট। রং, ডিজাইন, কাটিংয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ এসব পোশাকে কাজ করা হয়েছে এমব্রয়ডারি, ব্লক, ইয়ক, কারচুপি, চুমকিসহ বিভিন্ন মোটিফে। সুতি, তাঁত, সিল্ক ও চিকেন, জামদানি কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে এসব পোশাকে।
লিটল চ্যাম্পস
ঈদ কিংবা উত্সব পার্বণে বড়দের পোশাক খুব অনায়াসেই যেকোনো শোরুম থেকে কেনা যায়। কিন্তু পরিবারের ছোট্ট সোনামণির পোশাক কিনতে বাবা-মাকে সবসময়ই উদ্বিগ্ন থাকতে দেখা যায়। আর তাই তো বাবা-মায়ের সেই উদ্বিগ্নতা থেকে মুক্তি দিতে ‘লিটল চ্যাম্পস’ নিয়ে এসেছে শিশুদের জন্য পোশাকের এক্সক্লুসিভ সব কালেকশন। ওয়েস্টার্ন ফ্যাশনের সঙ্গে মিল রেখেই হাউসটিতে রয়েছে বাচ্চাদের টপস, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, স্কার্ট, লেগিংস, জিন্স, প্যান্ট-শার্ট থেকে শুরু করে হরেক রকমের জুতা। নগরীর ওয়ারি ও সাভার নিউমার্কেটে রয়েছে লিটল চ্যাম্পসের দুটো শোরুম।
রিচম্যান-লুবনান
11143465_376142035920369_7957727426610651453_n
সম্প্রতি বরিশালের কেন্দ্রস্থল বিবির পুকুর পাড় ফাতেমা সেন্টারের নিচতলায় খ্যাতনামা ফ্যাশন হাউস রিচম্যান-লুবনানের শোরুম উদ্বোধন করেন বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য জেবুনেসা আফরোজ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় মডেল নোবেল, কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জুনাইদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হক খান, পরিচালক নাইমুল হক খানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
বাংলার মেলা
10414851_826354844115568_8917230365026251427_n 11692542_826354890782230_2522548411827623956_n
ঈদ উপলক্ষে বাংলার মেলা সবার জন্য তৈরি করেছে নানা ডিজাইনের পোশাক। অর্গানজা সিল্ক, অ্যান্ডি, হাফসিল্ক, অ্যান্ডি কটন ব্লেন্ড ও টাঙ্গাইল শাড়ি থাকছে এবারের শাড়ির কালেকশনে। সালোয়ার-কামিজে এবার থাকছে সবচেয়ে বেশি ডিজাইন ও রঙের ভেরিয়েশন। বাচ্চাদের জন্যও থাকছে নানা ডিজাইন ও রঙের পোশাক।
নিপুণ
ঈদকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে সবাই। হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন। প্রকৃতির পরিবর্তন, গরমের তীব্রতা সাথে বর্ষার মৌসুম। তাই ক্রেতাদের উপযোগী পোষাকে সমৃদ্ধ হয়েছে দেশীয় ফ্যাশন হাউস ‘নিপুণ’। আর তাই ক্রেতাদের স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দের কথা চিন্তা করে নিপুণের প্রোডাক্ট লাইনে ফেব্রিক্স হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে সুতি, লিনেন, জয়সিল্ক ও তাঁত কটন। ঈদ আয়োজনে পোশাকে থাকছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তী, সিঙ্গেল পিস, ছেলেদের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া। আর এই ঈদে বাচ্চাদের পোশাকে নিপুণ সেজেছে ভিন্ন সাজে।
শৈল্পিক
10423762_969377879749441_6902525707851924323_n
আসছে ঈদ উপলক্ষে শৈল্পিক এনেছে নতুন ডিজাইনের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টপস, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট ও টি-শার্ট। উত্সবের পোশাককে জমকালো করার জন্য বিভিন্ন ধরনের আধুনিক মোটিফেরও সমন্বয় করা হয়েছে। অ্যারাবিক ক্যালিওগ্রাফিক, ফোক মোটিফ, জিওমেট্রিক্যাল ও ফ্লাওয়ার মোটিফসহ নানা ধরনের মোটিফের ছোঁয়া পাওয়া যাবে শৈল্পিকের সবগুলো পোশাকে।
ঈদ উপলক্ষে ভাসাভি’র ফ্যাশন শো
vasavi-tradition-fashion
প্রতিবছর দেশের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন হাউস ভাসাভি ঈদ উত্সবকে সামনে রেখে আয়োজন করে ঈদ ফ্যাশন শো। এবারও দেশের শীর্ষস্থানীয় অভিজাত ফ্যাশন হাউজ ভাসাভি ফ্যাশনস বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের ট্রেডিশনাল শাড়ির এক বিশাল সম্ভার নিয়ে আয়োজন করে ‘এক্সিবিশন অব ট্র্যাডিশনাল শাড়িজ অ্যান্ড ঈদ কালেকশনস’-এর লাইভ ফ্যাশন শো। সম্প্রতি গুলশানে ভাসাভির নিজস্ব শোরুমে ইমন, ফারাহ্ রুমা, নাদিয়া, ইমি, হিরা, ওরিনসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় মডেলদের অংশগ্রহণে এ মনোজ্ঞ ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয়। দেশের চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও সঙ্গীতাঙ্গনের তারকা শিল্পীদের উপস্থিতিতে ভাসাভি ঈদ ফ্যাশন শোর উদ্বোধন করেন ভাসাভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল জামান।
সূত্র- ইত্তেফাক।

 

কিশোরী ফেলানী হত্যাকান্ডের আসামী কে আবারো নির্দোষ ঘোষনা আদালতের!

বাংলাদেশের কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আবার নির্দোষ বলে বিবেচিত হয়েছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) অভিযুক্ত সদস্য অমিয় ঘোষ। বিএসএফের নিজস্ব আদালত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট (জিএসএফসি) প্রথমে অমিয় ঘোষকে নির্দোষ বলে রায় দেন। পুনর্বিবেচনার পরও তাঁরা সেই রায়ই বহাল রেখেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের কোচবিহারে বিএসএফের ১৮১ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরের সোনারি ক্যাম্পে আদালত বসে। গভীর রাত পর্যন্ত আলোচনা করে কোর্ট মার্শালের সমতুল্য বিএসএফের নিজস্ব আদালত এই রায় দিয়েছেন। বিবিসি বাংলার খবরে জানানো হয়, বিএসএফের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে বিএসএফ আনুষ্ঠানিকভাবে রায়ের কথা ঘোষণা করেনি। বিএসএফের মহাপরিচালক এই রায় অনুমোদন করবেন। ফেলানীর পরিবার এই রায় চ্যালেঞ্জ করতে পারবে।
বিএসএফের পাঁচ সদস্যের নিজস্ব আদালতের প্রধান ছিলেন বিএসএফ আধিকারিক সি পি ত্রিবেদী। পাঁচজন সদস্য মূল মামলার শুনানিতে বিচারক ছিলেন।

২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জিএসএফসি ফেলানী হত্যা মামলায় অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে নির্দোষ বলে রায় দেন। সেই রায় যথার্থ মনে না হওয়ায় পুনর্বিবেচনার আদেশ দিয়েছিলেন বাহিনীর মহাপরিচালক। পুনর্বিবেচনার কাজ শুরু করতে প্রায় এক বছর লেগেছিল। তিনবার পুনর্বিবেচনার কাজ স্থগিতও করা হয়।

রায়ের প্রতিক্রিয়া
ফেলানী হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী কুড়িগ্রামের আব্রাহাম লিংকন বলেন, তাঁদের আশঙ্কা ছিল, যে বিচারকেরা প্রথম মামলাটা শুনেছেন, তাঁরাই আবার পুনর্বিবেচনা করছেন। এ ক্ষেত্রে যদি তাঁরা অন্য কোনো রায় দিতেন, তাহলে তাঁদের প্রথমে দেওয়া রায় নিয়ে প্রশ্ন উঠে যেত। আগের রায় তাহলে ভুল ছিল বলে প্রমাণিত হতো। তাই আগের রায়ই তাঁরা বহাল রাখলেন।

সূত্র- প্রথম আলো।

আব্রাহাম লিংকন বলেন, বিএসএফের মতো একটা শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীর একজন সদস্যের অপকর্মের দায় গোটা বাহিনীই নিয়ে নিল। এই দায় রাষ্ট্র হিসেবে ভারতেরও।

বিবিসি বাংলার খবরে জানা যায়, রায়ের পর সীমান্তে বিএসএফের গুলি চালানো নিয়ে সরব ভারতের মানবাধিকার সংগঠন মাসুম প্রথম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মাসুমের প্রধান কিরীটী রায় বিবিসিকে বলেন, বিএসএফের আদালতে আগেই স্থির করা ছিল যে কী রায় দেওয়া হবে। এটা লোক দেখানো বিচার হলো। পরবর্তী সময়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে মাসুম চিন্তাভাবনা করছে বলে তিনি জানান।
কান্নায় ভেঙে পড়লেন ফেলানীর মা
সকাল সাতটার দিকে রায়ের খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ফেলানীর মা। তিনি বলেন, ‘ভাইজান, বুক ভরা আশা নিয়াছিলাম মাইয়া হত্যার বিচার পামু। কাছ থাইকা অমিয় ঘোষ গুলি কইরা মাইডারে মারলো। হেই আসামি কেমনে খালাস পায়। আল্লা বিচার করব।’ ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম শোকে স্তব্ধ। তিনি বলেন, ‘কিছুই ভালা লাগতাছে না ভাই। খুব আশা ছিল ন্যায়বিচার পামু। আমি আবার আপিল করুম।’

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কিশোরী ফেলানী খাতুন ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে ভারত থেকে বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল। দেশে ফেরার সময় অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফের জওয়ান অমিয় ঘোষ গুলি করে হত্যা করে ফেলানীকে। কাঁটাতারের ওপর দীর্ঘক্ষণ ঝুলে থাকে ফেলানীর মৃতদেহ। পরে অমিয় ঘোষ ফেলানীকে গুলি করার কথা স্বীকার করেন। ওই হত্যার বিচারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে পরিচালিত বিএসএফের একটি বিশেষ আদালত ‘নির্দোষ’ হিসেবে সাব্যস্ত করেন অমিয় ঘোষকে। ফেলানী হত্যার রায় অনুমোদনের জন্য বিএসএফের মহাপরিচালক (বিশেষ-পূর্ব) বি ডি শর্মার কাছে পাঠানো হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে রিভিশনাল ট্রায়ালের (পুনর্বিচার) নির্দেশ দেন।

 

ঈদে এসেছে শিশুদের বাহারী পোষাকের সমাহার

শিশুদের কথা মাথায় রেখে ফ্যাশন ও বুটিক হাউসগুলোর আয়োজনের কমতি নেই। দুই থেকে ১২ বছর বয়সী মেয়েশিশুদের জন্য থাকছে সালোয়ার-কামিজ, ফ্রক, স্কার্ট-টপস, ফতুয়া, থ্রিপিস ও টি-শার্ট। আর ছেলেদের জন্য ফতুয়া, প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, শর্ট পাঞ্জাবি ইত্যাদি। মেয়েশিশুদের পোশাকে নকশা ও কাটিংয়ে রয়েছে বিশেষ ভিন্নতা। অ্যালাইন কাট, হাতাকাটা পোশাক ছাড়াও ঘটি হাতার ফ্রক ও টপসের সংগ্রহ বেড়েছে। কামিজের লেইসের ওপর বিশেষ ডিজাইন থাকছে। অধিকাংশ পোশাকই হাতা ছাড়া বা ছোট হাতার। কাপড়ের ক্যানভাসে থাকছে নানা রঙের আঁকিবুঁকি।

যে পুতুলটি নিয়ে খেলে, সেই ‘বার্বি ডলে’র গোলাপি ঝালরের পোশাকটি যেমন আছে, তেমনি আছে জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র টম অ্যান্ড জেরি, ব্যাটম্যান, সুপারম্যানের মতো পোশাকে সাজার সুযোগ। এ প্রসঙ্গে ক্যাটস আইয়ের পরিচালক সাদিক কুদ্দুস বলেন, ‘শিশুদের পোশাকের মোটিফ হিসেবে এলোমেলো নকশার বদলে চল বেড়েছে সাদাসিধে নকশার। বর্ণমালা কিংবা মজার সব ছবির ব্লকপ্রিন্টও আছে। তবে সুপার হিরো সিরিজের নানা কমিক ক্লাসিক্যাল চরিত্রগুলোও আছে ছোটদের পোশাকের ক্যানভাসে।’

10930068_10152921350495983_3097823985294016110_n 11181915_10152929369030983_1978034405776980301_n 11210519_10152908307275983_1124628282777824779_n

এই ঈদে বিশেষ মনোযোগ পাচ্ছে আবহাওয়ার বিষয়টি। বর্ষার বৃষ্টি হানা দিলেও গরম কিন্তু খুব একটা কমেনি। তাই আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে প্রাধান্য পাচ্ছে সুতি পোশাক। পাশাপাশি কিছু পোশাকে জর্জেট ও নেটের ব্যবহারও দেখা গেছে। ফ্যাশন হাউস ফড়িংয়ের ডিজাইনার মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘শিশুদের ক্ষেত্রে আরামের জন্য মনোযোগ দিচ্ছি সুতিতে। পাশাপাশি নজর রাখছি রঙে। কন্ট্রাস্ট কালার খুব চলবে শিশুদের এবারের ঈদ পোশাকে।’

1743592_450581961782651_8692982919775709943_n 11138100_450581291782718_991035887211225226_n

পরিবারের সবাই মিলে এক পোশাকে ঈদ উদ্‌যাপনেরও সুযোগ রেখেছে ফ্যাশন হাউসগুলো। বড়দের পোশাকের ডিজাইন ঠিক রেখে শুধু মাপ কমিয়ে বানানো হয়েছে শিশুদের পোশাক। বিশেষ করে মেয়েদের শাড়ি আর ছেলেদের পাঞ্জাবিতে দেখা মিলল এই ধারার। ফ্যাশন হাউস রিচম্যানের পরিচালক মনিরুল হক খান জানালেন, ‘বড়দের মতো ছোটদের জন্যও একই ডিজাইনের পাঞ্জাবি থাকছে, কেবল কমেছে পরিমাপ।’

পোশাকে প্রিন্টের অনেক রকম কাজ থাকছে। স্ক্রিনপ্রিন্টে নানা মোটিফের অলংকরণ যোগ হয়েছে। গরমের কারণে ভারী ডিজাইন করা হয়নি। হাতের কাজ, কারচুপি, কম্পিউটার এমব্রয়ডারি, অ্যাপ্লিক, রিবনের নকশাই কমবেশি রয়েছে। প্রজাপতির ডানা, কাপড়ের ফুল, টুনটুনি পাখি, সবই দেখা গেছে মোটিফ হিসেবে। মেয়েদের পোশাকের মধ্যে থ্রিপিসই বেশি চলছে বলে জানালেন ডিজাইনার মাহবুবুর রহমান মাসুম ‘মেয়েশিশুদের থ্রিপিসে এবারের ট্রেন্ড লং প্যাটার্ন। আগে কাপড়ের মাঝামাঝি শেড থাকত। এবার শেডের বদলে থাকছে স্ট্রেইটকাট।’

ছেলেদের শার্টে প্রাধান্য পাচ্ছে হাফ হাতা ও হাতা ছাড়া কাট। শার্টের মধ্যে চেকেরই প্রাধান্য। লং প্যান্টের বদলে কোয়ার্টার। সাদার পাশাপাশি রঙিন পাঞ্জাবি বেশ পছন্দ ছেলেশিশুদের। বিভিন্ন রঙের পাঞ্জাবির হাতা ও বুকে থাকছে কারুকাজের ছোঁয়া। বসানো হয়েছে পুঁতি। সুতি কাপড়ের বাইরে কারুকাজ করা সিল্কের পাঞ্জাবিও দেখা গেছে। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে দেখা গেল বড়দের পাঞ্জাবির সঙ্গে মিলিয়ে শিশুদের পাঞ্জাবি তৈরি করেছে। পাঞ্জাবির সঙ্গে আছে চুড়িদার পায়জামা, আলিগড়ি, কাবলি পায়জামাসহ নানা ধরনের প্যান্ট। বড়দের মতো এসব পাঞ্জাবির কলার ও হাতায় মেশিন এমব্রয়ডারির কাজ থাকছে।

10959312_10152571015506555_1593120823705727136_n

স্টুডিও এমদাদের ডিজাইনার এমদাদ হক বলেন, ‘অন্যান্য উৎসবের মতো ঈদের পোশাকেও রঙের যথেষ্ট ব্যবহার দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে ডিজাইনের সঙ্গে মিলিয়ে রং ব্যবহার হয়।’ ডুয়েটঅ্যাড ঐতিহ্যের কর্ণধার অনুপ কুমার পাল জানান, বর্ষা ও গরমের কথা মাথায় রেখে পোশাকে সব ধরনের উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা হয়েছে। কাপড়ে ব্যবহার করা হয়েছে আকাশি, গাঢ় নীল, লাল, কমলা, জলপাই, হলুদ, বাদামি, ম্যাজেন্টা, নীল, গোলাপি, টিয়া, সবুজ, কালো ইত্যাদি রং। কোথাও শুধু সাদা কাপড়ের অর্ধ ভাগজুড়ে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন রং। আবার দু-তিনটি রঙের মিশেলে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রংবৈচিত্র্য।

সূত্র-কালের কন্ঠ।

মজাদার হরেক রকমের হালিম

রমজানে ইফতারের নানা আয়োজনের মাঝে হালিম অন্যতম একটি নাম। আমাদের দেশে বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী ঢাকায় ইফতারে হালিমের চাহিদা অনেক। আর তাই আমাদের রন্ধনশিল্পীরাও তৈরী করছেন নানান রকমের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের সুস্বাদু হালিম।

আজকে আমরা দেখবো মিসেস নাজমা হুদার তৈরী কয়েক রকমের হালিম তৈরীর প্রণালী।

মাখন পনির হালিম

11666035_919088561491439_5567090117782597566_n

উপকরণ: পনির ২ লিটার দুধের, কাজুবাদাম আধা কাপ, মাখন ৫০ গ্রাম, তেল আধা কাপ, হালিম মিক্স ১ কাপ (পানিতে ভেজানো), পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, লবণ স্বাদমতো, বেরেস্তা (সোনালি রং) ৪ টেবিল চামচ, ক্রিম ১ টিন, কাশ্মীরি মরিচের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, দই ২ টেবিল চামচ, হালিম মিক্স ২ কাপ (সেদ্ধ করা), হালিম মসলা ১ চা-চামচ, কাসুরি মেথি ১ টেবিল চামচ, টমেটোকুচি ১ কাপ, আদা-রসুনকুচি ২ টেবিল চামচ।
প্রণালি: প্যানে মাখন দিয়ে আদা, রসুনকুচি দিয়ে একটু ভেজে পেঁয়াজ দিন। পেঁয়াজ একটু সেদ্ধ হয়ে এলে টমেটোকুচি ও কাজুবাদাম দিয়ে ভেজে নিন। এটি ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করে নিন। পনির ছোট ছোট করে টুকরা করে সামান্য বাগার দিয়ে একটু ভেজে নিন। এবার পাত্রে তেল দিয়ে ব্লেন্ড করা মসলা ঢেলে তার মধ্যে কাশ্মীরি মরিচের গুঁড়া ও হালিম মসলা দিয়ে খুব ভালো করে কষিয়ে নিন। সেদ্ধ করা হালিম মিক্স দিয়ে দিন। হালিম হয়ে এলে ভাজা পনির ও কিছু কাজু দিয়ে ক্রিম ও বেরেস্তা দিয়ে দমে রাখুন। নামানোর আগে মাখনে কাসুরি মেথি দিয়ে হালিমের মধ্যে ঢেলে দিন। ইচ্ছে করলে একটু চিনি দেওয়া যায়।

 

মুরগি-সবজি হালিম
11709401_919088548158107_373879807945525972_n
উপকরণ: :
মুরগির মাংস ১ কাপ (কিউব কাট),গাজর আধা কাপ,আলু আধা কাপ,মটরশুঁটি আধা কাপ,হালিম মিক্স ১ কাপ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ২ টেবিল চামচ, মালাই ২ টেবিল চামচ,
আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হালিম মসলা ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ৪-৫টি,
ধনেপাতা ও পুদিনাপাতা ১ মুঠ, তেল আধা কাপ, ঘি ২ টেবিল চামচ, লবণ ও চিনি স্বাদমতো।

প্রণালি: :
সব সবজি কিউব করে কেটে নিন। একটি পাত্রে ঘি দিয়ে মুরগিতে একটু লবণ মাখিয়ে ভেজে উঠিয়ে নিন। একই পাত্রে সবজিগুলো হালকা করে ভেজে নিন। তেলে পেঁয়াজ দিয়ে ভেজে একে একে সব মসলা দিয়ে কষিয়ে নিন। এবার হালিম মিক্স দিয়ে কষিয়ে সেদ্ধ হওয়ার জন্য পানি দিন। হয়ে গেলে মালাই, বেরেস্তা, চিনি ও কাঁচা মরিচ দিয়ে দমে রাখুন। একটু পর নামিয়ে পাত্রে সাজিয়ে পরিবেশন করুন। 

চিকেন তন্দুরী হালিম 
2331a3fc48f97210ff6c349d6723977a-14
উপকরণ: মুরগির মাংস ১৬ টুকরা, হালিম মিক্স ১ কাপ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজবাটা আধা কাপ, তন্দুরি মসলা ২ চা-চামচ, হালিম মসলা ১ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচের গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, আদাবাটা ২ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ২ টেবিল চামচ, টকদই ২ টেবিল চামচ, টমেটো সস ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: সব মসলা থেকে অর্ধেক দিয়ে মুরগি মাখিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। এরপর শিকে অথবা তাওয়াতে অল্প তেল দিয়ে পোড়া পোড়া করে সেঁকে নিন।
হালিম মিক্স পানিতে ২০ মিনিট ভিজিয়ে সেদ্ধ করে নিন। তেলে পেঁয়াজ লাল করে ভেজে নিন। এবার হলুদ, মরিচের গুঁড়া, আদাবাটা, রসুনবাটা, টকদই ও হালিম মসলা দিয়ে কষিয়ে নিন। মুরগি দিয়ে কষিয়ে ২ কাপ পানি দিন। মুরগি সেদ্ধ হলে হালিম মিক্স দিন। প্রয়োজনমতো পানি দিয়ে ভালো করে জ্বাল দিয়ে নামিয়ে নিন।

 

মাথা ব্যাথার নানা কারণ

মোবাইল ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ, ডেস্কটপের মতো ডিজিটাল যন্ত্র একটানা ব্যবহার করলে মাথাব্যথা হতে পারে। এ সমস্যার সমাধানে কথা বলেছেন নিউইয়র্কের এক স্নায়ুবিদ।
কখনো কখনো একটানা কম্পিউটার ব্যবহারে মাথার ভেতর দপদপে বা চিনচিনে ব্যথা শুরু হয় পরে আবার তা চলেও যায়। কিন্তু এই সামান্য মাথাব্যথাও অনেক সময় তীব্র যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। একে মাইগ্রেনও বলে। মাইগ্রেনের সমস্যায় যদি কোনো চিকিৎসা নেওয়া না হয় তবে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত মাইগ্রেনের যন্ত্রণা হতে পারে।
কতবার এবং কতক্ষণ মাইগ্রেন স্থায়ী হচ্ছে সে বিবেচনা করেই চিকিৎসা দেন চিকিৎসক। অবশ্য এই মাইগ্রেন বা মাথাব্যথা পুরোপুরি নির্মূল করার চিকিৎসা নেই। কারণ এটি প্যাথো-ফিজিওলজির বিষয়। এটি ঠিক কী কারণে হয় তা পুরোপুরি এখনো বুঝতে পারেননি গবেষকেরা। কিন্তু মাইগ্রেনের লক্ষণ দেখে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন এনেই এর চিকিৎসা করা যায়। এ জন্য অবশ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ম্যাশেবলে গত জুন মাসটি মাইগ্রেন সচেতনতা দিবস হিসেবে পালন করেছে। এ মাস উপলক্ষে ম্যাশেবলের প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. অড্রে হালপার্নের পরামর্শ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রযুক্তির প্রতি আসক্তি এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে কীভাবে আমাদের মাথাব্যথা বা মাইগ্রেন হচ্ছে তা নিয়ে কথা বলেছেন এই স্নায়ুবিদ।
ডিজিটাল স্ক্রিনের দিকে চেয়ে থাকা
মোবাইল, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের মতো স্ক্রিনে দীর্ঘক্ষণ এক নাগাড়ে তাকিয়ে থাকলে মাথা ব্যথা দেখা দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে ৬০ শতাংশ মার্কিনিরা দিনে ছয় ঘণ্টা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ডিজিটাল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকায় চোখের যে প্রদাহ হয় তাতে মাথা ব্যথা হতে পারে। ড. হালপার্নের পরামর্শ হচ্ছে, হিপটোনাইজ করে রাখে যে ডিভাইসগুলো তা থেকে কিছুক্ষণের জন্য বিরতি নিতে হবে। কিংবা এক নাগাড়ে আধা ঘণ্টার বেশি ডিজিটাল স্ক্রিনের দিকে চেয়ে থাকা যাবে না। এ ছাড়া অ্যান্টি-গ্লো স্ক্রিন প্রটেক্টরও কেনা যেতে পারে।
ঘাড়ে টান লাগা
ড. হালপার্ন বলেন, ফোনের দিকে ঘাড় নিচু করে চেয়ে থাকা বা এক নাগাড়ে ডেস্কে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করায় ঘাড়ে টান লাগতে পারে এবং মাইগ্রেন শুরু হতে পারে। ঘাড়ের এই টান লাগার সঙ্গে মাইগ্রেনের সম্পর্কের বিষয়টি অত্যন্ত জটিল একটি বিষয়। কাজের ক্ষেত্রে যাতে ঝুঁকে বসে কাজ করতে না হয় বা কম্পিউটার স্ক্রিনের সঙ্গে যেন বসা ঠিক হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সঠিক উচ্চতায় বসা, চেয়ারের উচ্চতা ঠিক ও কম্পিউটার স্ক্রিনের উচ্চতা ঠিকঠাক রাখলে ঘাড়ে টান লাগে কম।
মোবাইল যন্ত্রণা
সব কিছুতেই এখন মোবাইল বাগড়া দেবে, বিষয়টি এখন প্রতিনিয়তই ঘটছে। ড. হালপার্ন বলেন, এখন ভারচুয়ালি কাজ বা চাপ সৃষ্টিকারী বিষয় থেকে দূরে থাকা আর সম্ভব নয়।
তাঁর মতে, মানসিকভাবে যদি বিরতি না নেওয়া হয় তবে আমাদের মনের ওপর চাপ বাড়তে তাকে। এর ফলেও মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। তাঁর পরামর্শ হচ্ছে, যেহেতু রাত আটটার পরেই ফোন বন্ধ করে মানসিক শান্তি খুঁজে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না তাই অন্য কোনো উপায়ে চাপ কমাতে হবে। এ ক্ষেত্রে যোগ ব্যায়াম বা মেডিটেশন কাজে আসতে পারে।
উজ্জ্বল আলো
যদি ঘুমানোর আগে ফোনের দিকে তাকানোর অভ্যাস গড়ে ওঠে তবে ঘুম চক্র নষ্ট হবে। এতে দিনের বেলায় কাজের সময় বেশি ক্লান্ত ও চাপ মনে হবে। রাতে কোনো উজ্জ্বল আলো ঘুম নষ্ট করলে তা থেকে মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ড. হালপার্ন বলেন, আমাদের শরীর ঘুমানোর সময় বিশ্রামে যেতে চায়, উদ্দীপক কোনো উজ্জ্বল আলো চায় না। এর সঙ্গে চোখের প্রদাহের পরিষ্কার কোনো সম্পর্ক আছে। ল্যাপটপ চার্জ হওয়ার সময় যে সামান্য আলো দেখা যায় সেটি কিংবা রাতে টিভি চালিয়ে রেখে ঘুমাতে গেলেও সহজে ঘুম আসতে চাইবে না। স্নায়ুবিদ হালপার্ন মনে করেন, ঘুমানোর ঘরে কোনো ইলেকট্রনিকসের জিনিস থাকা ঠিক নয়। আমাদের পুরো ঘর অন্ধকার করে ঘুমানো উচিত।

সূত্র-প্রথম আলো।

 

অন্যদের কথায় মন দিলে নিজের লক্ষ্যের দিকে যাওয়া যায় না- হাসিনা নেওয়াজ

আজকে যাকে নিয়ে যার শুরু এবং সফলতা নিয়ে কথা হবে তিনি আমাদের মাঝে অনেক গুলো পরিচয়ে পরিচিত। একাধারে গৃহিনী,মা,স্ত্রী এবং সফল ব্যবসায়ী। সমাজে নিজ পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত একজন সফল নারী। তখন সত্তরের দশকে বাঙ্গালী সমাজে কোন নারী নিজ উদ্যোগে কিছু করার ব্যাপারে,নিজের আলাদা একটা পরিচয় দাঁড় করানোর ব্যাপারে অতোটা ভাবতেন না। কিন্তু ব্যতিক্রম তো কেউ না কেউ থাকে,যারা কি না সাধারনের ভীড় থেকে তৈরী করেন নিজের অসাধারন পরিচয়। তেমনই একজন আমাদের অত্যন্ত প্রিয় মুখ,গর্বিত হাসির অধিকারিণী মিসেস হাসিনা নেওয়াজ।

মিসেস নেওয়াজের শুরুটা ছিল ১৯৭৬ সালে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে পড়াশোনা শেষে সবাই ধরেই নিয়েছিল গৃহিণীই হবেন তিনি। মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করার জন্য যেকোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানেই চাকরির সুযোগ মিলত তাঁর। এমফিল করার সুযোগও ছিল। বাংলা একাডেমিতে চাকরির সুযোগ ছিল। সেসব কিছুই করলেন না তিনি। হাসিনা বলেন, ‘আমি নিজে কিছু করতে চাইছিলাম। প্রচলিত চাকরির ধারণাকে ছাপিয়ে নিজের ব্যবসা বা উদ্যোগের প্রতি আমার আগ্রহ ছিল তখন।’ চাকরির চেয়ে হাসিনা নেওয়াজের অবশ্য ভাবনা ছিল বড় কিছু করা। ঢাকায় স্বামী আর কন্যাকে নিয়ে সুখেই দিন কাটানোর সব সুযোগই ছিল তাঁর। সব একপাশে রেখে বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি লেখা শুরু করেন তিনি। বিভিন্ন দূতাবাস থেকে ঠিকানা জোগাড় করে বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানির জন্য লিখতেন। চিঠি লিখতে লিখতে একসময় একটা সুযোগ পেয়ে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধু সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণী রপ্তানির বুদ্ধি দেয়। সহপাঠী হংকংয়ের এক ব্যবসায়ীর খোঁজও দেয়। অনেক দৌড়াদৌড়ি আর পরিশ্রমের পরে সেই ভদ্রলোক হাসিনা নেওয়াজের কাছ থেকে কচ্ছপ, ইলিশ মাছ, কাঁকড়া নেওয়া শুরু করেন। বাবার অনুপ্রেরণা আর স্বামী শাহনেওয়াজ তালুকদারের উৎসাহে ধীরে ধীরে শুরু করেন অন্য ব্যবসা।

11146283_450243981811067_2870035727694325137_n

১৯৮২ সালে শুরু করেন অর্কিড প্রিন্টার্স। হাসিনার ভাষ্যে, ‘ব্যবসায় প্রচুর প্রতিবন্ধকতা থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় সামাজিক প্রতিবন্ধকতা। অনেকেই অনেক কথা বলতেন, কিন্তু আমার একটা ব্যাপারেই মনোযোগ ছিল; আর তা কাজ আর কাজ।’ বাবা আবদুল হাসিব চৌধুরীর ব্যবসা দেখেই ছোটবেলা থেকে নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন হাসিনা। তিনি জানান, ‘আমার বাবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েও চাকরি করেননি, ব্যবসা করেছেন। আমিও বাবার মতো কিছু করতে চেষ্টা করেছি।’
১৯৮২ সালে শুরু করা মুদ্রণ ব্যবসাকে সময় আর শ্রম দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন হাসিনা। তিনি বলেন, ‘পথে নামলে অনেক কথা শুনতে হয়। অন্যদের কথায় মন দিলে নিজের লক্ষ্যের দিকে যাওয়া যায় না। সমাজের প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, কিন্তু নিজের জ্ঞান আর বুদ্ধি দিয়ে সব পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে হবে লক্ষ্যের দিকে।’ এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রত্যয়ী হাসিনা নেওয়াজ।

11103023_1408111039507852_5894643267663730164_n

মিসেস হাসিনা নেওয়াজ বর্তমানে ঢাকার একটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান অর্কিড প্রিন্টার্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সেই সাথে বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্সের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি। এ ছাড়া তিনি ডেইলি স্টার-ডিএইচএল ‘আউটস্ট্যান্ডিং উইমেন ইন বিজনেস’ পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৫ সালে। ২০১৩ সালে পেরুর রাজধানী লিমাতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থা ইউএনআইডিওর এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর মিনিস্ট্রিয়াল সাউথ সাউথ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সদস্য ছিলেন তিনি।

অপরাজিতাবিডি পরিবারের পক্ষ থেকে মিসেস হাসিনা নেওয়াজের জন্য রইলো অনেক অনেক সফলতা ও শুভ কামনা।

 

জাতীয় কবি পৌত্রীকে সম্মাননা দিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে নজরুল-প্রমীলার কলকাতানিবাসী পৌত্রী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অনিন্দিতা কাজীকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার আর্টস মিলনায়তনে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে এ সম্মাননা দেয়া হয়।

11013102_431723750322807_8227905856558728736_n

 

নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এ সম্মাননা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন। সম্মাননা জ্ঞাপক বক্তব্য প্রদান করেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এবং সামাজিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। অনুষ্ঠানের শুরুতেই উপাচার্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে অনিন্দিতা কাজীকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন।

অনিন্দিতা কাজী তার বক্তব্যে পারিবারিক স্মৃতিচারণ করে দাদু নজরুলের জীবনের সঙ্গে নিজের জীবন-সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দাদু বিদ্রোহের চেয়েও বেশি ভালোবাসা লালন করতেন। বাংলাদেশে নজরুল চর্চার নানা দিকের কথা উল্লেখ করে বর্তমানে তরুণ শিল্পীরা নজরুলশিক্ষার প্রতি যে আগ্রহী হয়ে উঠছে, সেটি একটি শুভ লক্ষণ বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মান প্রদান করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

 

রোগীদের জন্য রমজানে যে বিষয়গুলো লক্ষ্যনীয়

ইসলামের ৫টি মূল স্তম্ভের মধ্যে রোজা অন্যতম। রমজানের রোজা আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নিয়ামত।
অনেকে জটিল রোগে ভোগেন, কিন্তু নিজের আত্মার শান্তি এবং ধর্মীয় নির্দেশনার প্রয়োজনে রমজানের রোজা রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আবার এমনও লোক দেখা যায় যারা অজুহাত খোঁজেন রোজা না রাখার জন্য। কিন্তু অনেক রোগের ক্ষেত্রে রোজা রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে তীব্র অসুস্থতায় অথবা কোন জটিল রোগে রোজা রাখা না রাখার ব্যাপারেও ধর্মীয় নির্দেশনা আছে। তবে কোন অজুহাতে বা সামান্য কোন অসুস্থতায় রোজা না রাখার কোন যৌক্তিকতা নেই।
পেপটিক আলসার রোগে আক্রান্ত রোগী
যারা গ্যাস্ট্রিক আলসার বা পেপটিক আলসারে ভোগেন, তারা অনেকেই মনে করেন খালি পেটে থাকলে এসিডিটির সমস্যা বাড়বে। এ ধরনের রোগীরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন যে রোজা রাখবেন কিনা। আসলে রোজা রাখলে সাধারণত এসিডিটি বাড়ে না। রোগীদের প্রধান কাজ হল নিয়মিত খাবার খাওয়া, নিয়মিত ঘুমানো এবং নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ। রোজায় মানুষের জীবন একটা নিয়মে চলে আসে বিধায় এ সময় এসিডিটির সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। অবশ্যই ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। প্রয়োজনে ইফতার এবং সেহেরির সময় রেনিটিডিন বা ওমিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধ একটা করে খেয়ে নিতে পারেন। এমনকি রাত্রে দুই-তিনবার এন্টাসিড ওষুধ খেলেও কোন অসুবিধা হবে না।
ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস হলে রোগী রোজা রাখতে পারবেন না একথা মোটেই ঠিক নয়। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকগণ এবং ইসলামী আলেমগণ উভয়েই রোজা রাখার পক্ষেই মত দিয়েছেন। মোটামুটিভাবে নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে খুব সহজেই রোজা রাখা সম্ভব। আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য রোজা রাখা অনেক সহজ করে দিয়েছে। তবে রোজা রাখার জন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিন কিংবা কোনো ওষুধ গ্রহণের সময়টা একটু পরিবর্তন করে সেহরি ও ইফতারের সঙ্গে সমন্বয় করে নিতে হবে। যেসব ডায়াবেটিক রোগী ঝুঁকির কথা জেনেও ধর্মীয় কারণে রোজা রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তারা রোজা শুরুর আগেই চিকিত্সকের সাথে পরামর্শ করে জটিলতা এড়িয়েই রোজা রাখতে পারেন।
হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের রোগী
রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। রোজা কোনোভাবেই হাঁপানি রোগ বাড়িয়ে দেয় না। যদি হাঁপানি বাড়তেই থাকে, তাহলে রোগী ইফতার এবং সেহেরির সময় দীর্ঘস্থায়ী জাতীয় বড়ি খেয়ে নিতে পারেন। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, দিনের বেলায় শ্বাসকষ্ট হলে ইনহেলার নেয়া যাবে। তাতে রোজার কোন ক্ষতি হবে না।
কিডনি রোগ
যারা কিডনির রোগে আক্রান্ত তাদের রোজা রাখা যাবে না এমন কোনো কথা নেই। যে সমস্ত রোগী ক্রনিক কিডনি ফেইল্যুরে আক্রান্ত, তাদেরকে সুনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হয়, নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, এমনকি পানি খাওয়ার ক্ষেত্রেও সতর্কতা ও পরিমাণ অনুযায়ী খেতে হয়। তাই রোজা রাখার ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। যাদের কিডনি ফেইল্যুরের মাত্রা একেবারে শেষ পর্যায়ে, তাদের পক্ষে রোজা রাখা সম্ভব নয়। তেমনি যারা ডায়ালাইসিসের রোগী অথবা ইতোমধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন তাদের পক্ষেও রোজা রাখা প্রায় অসম্ভব। অল্প থেকে মধ্যম মাত্রার কিডনি ফেইল্যুর রোগীরা রোজা রাখলে কোনো ক্ষতি হয় না। তবে কিডনি আক্রান্ত রোগীদের শারীরিক অবস্থা যা-ই থাকুক না কেন, সর্বাবস্থায় একজন কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়াই শ্রেয়।
উচ্চ রক্তচাপ
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের বেলায় রোজা আরও উপকারী। আজকাল অনেক ওষুধ পাওয়া যায় যেগুলো দিনে একবার বা দুইবার খেলেই চলে। ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী ইফতার বা সেহেরির সময় বা প্রয়োজনে দুইবারই ওষুধ খেলে রক্তচাপ পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অনেক রোগীর রক্তে কোলেস্টেরল বা অন্যান্য চর্বির মাত্রা বেশি থাকে। এসব নিয়ন্ত্রণেও রোজা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
হার্টের রোগ
হূদরোগ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই রোজা রাখতে কোন নিষেধ নেই। তবে একিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, হার্ট ফেইলিউর ইত্যাদি রোগ থাকলে রোজা না রাখাই শ্রেয়। আবার একথাও সত্য যে অনেক ক্ষেত্রে হূদরোগীদের জন্য রোজা রাখা খুবই উপকারী। ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলা, চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করা এবং ইফতারের দুই ঘণ্টা পর একটু ব্যায়াম করা উচিত। যারা নিয়মিত তারাবির নামাজ আদায় করেন, তারা ব্যায়াম নাও করতে পারেন। যারা নিয়মিত ওষুধ খান, তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সম্ভব হলে সবগুলো ওষুধ রাতের বিভিন্ন সময়ে ভাগ ভাগ করে খেলে যদি অসুবিধা না হয় তো সেভাবেই ওষুধ খাবেন। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, দিনে যদি এনজাইনার ব্যথা হয়, তবে জিহ্বার নিচে স্প্রে জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যাবে, তাতে রোজার ক্ষতি হবে না।
লিভারের অসুখ
লিভারের রোগীদের রোজা রাখা নির্ভর করে রোগটির ধরনের ওপর। কেউ যদি ভাইরাল হেপাটাইটিস নামক রোগে আক্রান্ত হন, তারা খেতে পারেন না, ঘন ঘন বমি হয়, রুচি নষ্ট হয়, জন্ডিস দেখা দেয়। অনেক সময় তাদের শিরায় স্যালাইন বা গ্লুকোজ দিতে হয়। তাদের পক্ষে রোজা না রাখাই ভাল। আবার যারা লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত, তাদের যদি রোগের লক্ষণ কম থাকে, তবে রোজা রাখতে পারেন।
চোখ, কান বা নাকের রোগী
রোজায় চোখের বা নাকের রোগীরা যে সমস্যায় পড়েন সেটি হল রোজা রাখা অবস্থায় ড্রপ ব্যবহার করতে পারবেন কিনা। চোখ বা নাকে ড্রপ দিলে তা মুখে চলে যেতে পারে, তা ফেলে দিয়ে কুলি করে ফেলা উচিত। ফলে ওষুধ গলায় বা পেটে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। সে ক্ষেত্রে রোজা রেখে অনায়াসে চোখে বা নাকে ড্রপ দেয়া যায়। কানের ড্রপ দিলেও রোজার কোন ক্ষতি হবে না। এমন মতামতই ব্যক্ত করেছেন ইসলামী চিন্তাবিদগণ।
গর্ভাবস্থায় রোজা
গর্ভবতী মায়ের যদি শারীরিক কোনো জটিলতা না থাকে, তা হলে রোজা থাকতে কোনো বাধা নেই।
বুকের দুধ খাওয়ানো
বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ালে রোজার কোন ক্ষতি হবে না। রোজা রাখলে বুকের দুধ কমে যায় না। অবশ্যই সেহরি ও ইফতারের সময় প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে। ইফতারের পর শোয়া পর্যন্ত প্রচুর পানি ও তরল খাবার খেতে হবে।
শেষ কথা হচ্ছে নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগে কিংবা সামান্য অসুস্থতায় রোজা রাখতে কোনো নিষেধ নেই, বরং রোজা রাখা রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে তীব্র অসুস্থতায় কিংবা জটিল রোগে রোজা রাখা ঠিক হবে না। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন সংশ্লিষ্ট চিকিত্সক।

 

লেখক: ডাঃএবিএম আব্দুল্লাহ। অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

 

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সেবা কার্যক্রম এনেছে আইডিএলসি

নারী উদ্যোক্তাদের আর্থিকসহ সব ধরনের সহযোগিতা করতে ‘আইডিএলসি পূর্ণতা’ নামে সেবা কার্যক্রম চালু করেছে নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড।

সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, নারীদের সব কাজের স্বীকৃতি মিললে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের আসন আরও ওপরে থাকতো। নারী উদ্যোক্তাদের যে ধরনের সহায়তা দেয়া দরকার আমরা তা দিতে পারিনি। ‘আইডিএলসি পূর্ণতা’র কথা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানালে তারাও উত্সাহিত হবে। এতে সুফল পাওয়া যাবে।
bb1
পূর্ণতা প্রকল্পের আওতায় নারী উদ্যোক্তাদের ঋণের পাশাপাশি ব্যবসায়িকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে ডিপোজিট সুবিধা, সব উদ্যোক্তার মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ সম্পর্ক স্থাপন, বীমা সুবিধা দেয়া, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সহায়তা, অনলাইনে পণ্য বিপণনের সুযোগ সৃষ্টি করা, হেল্পলাইনের মাধ্যমে তথ্য সেবা দেয়া হবে।
এছাড়া ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় দলিল ও ঋণ অনুমোদনপত্র প্রস্তুতে সহায়তা করা এবং নির্দিষ্ট বিপণি বিতানে বিভিন্ন পণ্যের আকর্ষণীয় মূল্য সুবিধা উপভোগ করতে বিশেষ ‘মূল্যছাড় কার্ড’ দেয়া হবে।
পূর্ণতা প্রকল্পের অধীনে চাহিদা অনুযায়ী চলতি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিতে পারবেন নারী উদ্যোক্তারা। এক্ষেত্রে তিন লাখ টাকা থেকে শুরু করে ব্যবসার ধরন বুঝে ঋণ দেয়া হবে। নতুন প্রকল্পের সুবিধা হল, কোনো উদ্যোক্তা আবেদন করার তিনদিনের মধ্যে ঋণ পাবেন কি-না তা জানিয়ে দেয়া হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম, আইডিএলসি’র চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন, মহাব্যবস্থাপক জাহিদ ইবনে হাই প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে আইডিএলসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন জানান, গত পাঁচ বছরে তাদের প্রতিষ্ঠানের এসএমই ঋণ বেড়েছে প্রায় আট গুণ। ২০১১ সালে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত দুই হাজার ২২০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এই খাতে খেলাপির সংখ্যাও এতই কম, যা মাত্র ০.০৭ শতাংশ।

জাহিদ ইবনে হাই জানান, ব্যবসা পরিচালনার জন্য তারা প্রয়োজনীয় দলিল ও ঋণ অনুমোদনপত্র প্রস্তুতে সহায়তা করা এবং নির্দিষ্ট বিপণি বিতানে বিভিন্ন পণ্যের আকর্ষণীয় মূল্য সুবিধা উপভোগ করতে বিশেষ ‘মূল্যছাড় কার্ড’ দেবেন। এ ছাড়া পূর্ণতা প্রকল্পের অধীনে চাহিদা অনুযায়ী চলতি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিতে পারবেন নারী উদ্যোক্তারা।

সূত্র- ইত্তেফাক

 

বাড়ছে নারী উদ্যোক্তা

স্বল্প সুদে জামানত ছাড়া ঋণ পাওয়ায় বাড়ছে নারী উদ্যোক্তা। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা। আর সমাজে নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী উদ্যোক্তা বাড়াতে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে (এসএমই) প্রতিনিয়ত নতুন নারী উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। বাড়ছে উদ্যোক্তার সংখ্যা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে—চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) এসএমই খাতে এক হাজার ৭৮২ জন নতুন নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। গতবছর অর্থাত্ ২০১৪ সালের প্রথম তিন মাসে এর পরিমাণ ছিল ৬৭৭ জন। ফলে গতবছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর এক হাজার ১০৫ জন বেশি নতুন নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। অর্থাত্ শতকরা হিসেবে এর বৃদ্ধির হার ১৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ।
নতুন নারী উদ্যোক্তা তৈরি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশ্যাল প্রোগ্রামস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক স্বপন কুমার রায় বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলেরর আওতায় নারী উদ্যোক্তারা সহজ শর্তে এবং স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ায় এসএমই খাতে নতুন নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ছে। এর পাশাপাশি প্রান্তিক পর্যায়ের কোনো নারী ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে যাতে কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন না হয়, এ বিষয়ে আমরা কঠোর মনিটারিং করছি। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও এ বিষয়ে সচেতন রয়েছে। এতে সহজে নতুন উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রত্যেক শাখা থেকে কমপক্ষে তিনজন নারী উদ্যোক্তাকে ঋণ দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে আমরা যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলাম, তারও সুফল উদ্যোক্তারা পেতে শুরু করেছেন। কেবল চলতি বছর নয়, বিগত কয়েকবছর যাবত্ নতুন নারী উদ্যোক্তা বৃদ্ধির এই প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। আর নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে নারীরাই বেশি সফল হচ্ছেন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে—চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সেবার আওতায় ৮০ হাজার ৩৭০ জন নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন। এদের মাঝে বছরের প্রথম তিন মাসে ৮৮৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যা বিগত বছরের একই ত্রৈমাসিকে বিতরণকৃত ঋণের চেয়ে ৫৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বেশি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এসএমই খাতে ২ লাখ ১০ হাজার ৮০০ উদ্যোক্তার মাঝে মোট ২৬ হাজার ১৪০ কোটি ৮ লাখ টাকার এসএমই ঋণ বিতরণ করেছে।
সূত্র- ইত্তেফাক।

 

মুন্সীগঞ্জে পৃথক ঘটনায় দুই গৃহবধু খুন!

জেলা শহরের পাঁচঘড়িয়াকান্দিতে মরিয়ম আক্তার নিশি (১৮) নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ শাশুড়ি ফাতেমা বেগমকে (৫০) আটক করেছে। তবে স্বামী আল আমিন ব্যাপারি পলাতক রয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে।  ওই গৃহবধূর ৯ মাস বয়সী আমেনা নামের শিশু কন্যা রয়েছে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন বছর আগে গনকপাড়া গ্রামের আক্তার হোসেনের কন্যা নিশি ও খোরশেদ মিয়ার পুত্র আল আমিন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সম্প্রতি তাদের দাম্পত্য কলহ চলছিল। গতকাল বুধবার রাতে কলহের এক পর্যায়ে ওই গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর স্বামী আলামিন পালিয়ে যায়।
নিশির পরিবারের অভিযোগ, এ হত্যার ঘটনায় শাশুড়ি ফাতেমা বেগম জড়িত।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইউনুচ আলী জানান, এটি হত্যাকাণ্ড। নিহতের মা শেফালী বেগম বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আল আমিনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে অপর ঘটনায় জেলার গজারিয়া উপজেলায় শ্বাসরুদ্ধ করে সম্পা বেগম (২২) নামের অপর এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার মেঘনা ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামের মেঘনার শাখা নদীর পাড় থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর থেকে গৃহবধূর স্বামী সাইফুল মাঝি পলাতক রয়েছেন।
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস হাসান জানান, সকালে গোসল করতে গিয়ে দীর্ঘ সময় পার হলেও সম্পা বাড়ি ফিরে আসছিলেন না। পরে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে মেঘনার শাখা নদীর পাশের ধঞ্চা ক্ষেত থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ওসি আরো জানান, গৃহবধূকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। তবে কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে তা বলা যাচ্ছে না। তদন্ত চলছে।

 

চুপ করে থাকো,কাউকে বলো না!

নিষ্পাপ শৈশবে- যখন উড়ে যাওয়া এরোপ্লেন দেখে পাইলট হতে ইচ্ছে করে, ফেরিওয়ালার ঝুড়িতে রঙবেরঙের পসরা দেখে পথে পথে ঘুরে ফেরি করতে ইচ্ছে করে, দাদার রেডিওর সমস্ত পার্টস খুলে- আর না লাগাতে পেরে স্টোর রুমে লুকিয়ে রেখে ভবিষৎ সায়েন্টিস্ট প্রস্তুতি নিচ্ছে দুনিয়া জয়ের, স্কুল ম্যাগাজিনে নিজের প্রথম প্রকাশিত লেখা ভবিষৎ সাহিত্যিকের ক্ষুদে বুকটা ভরিয়ে তুলছে- সেই সময়ই কিছু শিশুকে মুখোমুখি হতে কুৎসিত অন্ধকারের, বিনা অপরাধে রঙিন নিষ্পাপ স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায় দুঃস্বপ্নের ভীড়ে, জীবনটা হয়ে ওঠে বিভীষিকা।

ক্লাস ওয়ান পড়ুয়া মেয়েটি টিচারের কাছে পড়তে যেতে চাচ্ছে না। তার অভিযোগ টিচার তাকে ব্যথা দেয়। বাবা-মা ধমক দিয়ে পাঠালেন। তারা বললেন, ‘এসব তোমার ফাঁকি দেওয়ার ছল!’ চোখ মুছে শিশুটি টিচারের কাছে পড়তে বসলো। সে জানে না কেন স্যার তাকে কিছু জায়গায় এভাবে ছোঁয়।

গৃহকর্ত্রীর দূর-সম্পর্কের ভাই এসেছে বাসায়। দুপুরবেলা তারই হেফাযতে দশ বছরের কাজের মেয়েটিকে রেখে গৃহকর্ত্রী গেছেন শপিংয়ে। …… লোকটা মেয়েটিকে হুমকি দিলো কাউকে কিছু বললে মেরে লাশ বানিয়ে ফেলবে।

সাত বছরের ফুটফুটে ছেলেটাও বুঝতে পারলো না চাচ্চু তার সাথে বারবার এমন করছে কেন। চাচ্চু বলেছে এটা একটা সিক্রেট মজার খেলা- কাউকে বলা যাবে না। কিন্তু তার খুব কষ্ট হচ্ছে, ব্যথা লাগছে। আম্মু-আব্বুকে কি তার বলা উচিত? যদি তারা বিশ্বাস না করে? ওকেই পঁচা ভাবে? আচ্ছা, চাচা তো খুব ভালো, তাকে কত কি মজার খেলনা দেয়- কত গল্প করে! বলে দিলে কি চাচা আর কখনো ওকে আদর করবে না? সে কীভাবে বলবে আম্মু-আব্বুকে?

মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে মায়াবতী কন্যাশিশুটি যখন বলে উঠলো গ্রামের বাড়ি বেড়াতে এসে তার সাথে কী নির্মম ঘটনাটা ঘটে গেছে, হতভম্ব মা মেয়ের চোখের জল মুছে বললেন, ‘চুপ করে থাকো, কাউকে বোলো না!’

কাকে আমরা চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ বলছি?  

চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ  (CSA) কে বলা যায়, “the imposition of sexual acts, or acts with sexual overtones, by one or more persons on a child (under 18)”– Save the children, CSA Draft Policy.

• শিশুর গোপন অঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ,
• শিশুকে কারো গোপনাঙ্গ ধরতে বলা,
•penetration of a child’s mouth with a penis,
• শিশুর পর্ন ছবি তোলা,
• শিশুকে পর্নোগ্রাফি দেখানো এবং শিশুর সামনে নগ্ন হওয়া,
• শিশুদের পতিতাবৃত্তিতে ঢোকানো, বাল্যবিবাহ,
• শিশুর সাথে বয়স অনুপযোগী sexual behavior নিয়ে আলোচনা,
• শিশুকে ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা করা (যা ছেলে বা মেয়ে শিশু যে কারো ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে)
ইত্যাদি। সুতরাং, কেবল ধর্ষণ নয়, শিশু-যৌননির্যাতন একটি ব্যাপক পরিসরের শব্দ।

শিশুর উপর প্রভাব- 

মানসিক
বিষণ্নতা, সহিংস আচরণ, আত্মপীড়নমূলক কার্যকলাপ (নিজেকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দেওয়া), আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি ও হীনমন্যতা, দুঃস্বপ্ন, অসামাজিক আচরণ, সমবয়সীদের সাথে মিশতে না পারা, হঠাৎ হঠাৎ চমকে ওঠা, আত্মহত্যার প্রবণতা (কিশোর বয়েসীদের ক্ষেত্রে), স্বাভাবিক মানসিক বিকাশে বাধা।

শারীরিক
শিশু গুরুতরভাবে আহত হতে পারে, কোন কোন ক্ষেত্রে চিরতরে প্রজনন ক্ষমতা হারাতে পারে, নিউরোল্যজিকাল ড্যামেজ, দ্রুত ওজন কমে যাওয়া, রাতে বিছানা ভেজানো ইত্যাদি।

কিছু তথ্য-উপাত্ত-

১৯০টি দেশের উপাত্ত নিয়ে তৈরি এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের তরফ থেকে বলা হয়েছে বিশ্বে প্রতি দশ জনে একজন মেয়েশিশু ধর্ষিত অথবা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। WHO এর হিসেব মতে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৪০ মিলিয়ন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।

ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ২০০৭ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভারতে ৫৩ভাগ শিশু শৈশবে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়।

ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স- নামে একটি বেসরকারি সংস্থার একজন কর্মকতা রোকসানা সুলতানা বলেন, ‘বাংলাদেশের শতকরা নব্বইভাগ শিশু পারিবারিক গন্ডিতেই ধর্ষণ থেকে শুরু করে অনাকাঙ্ক্ষিত শারীরিক স্পর্শসহ কোন না কোন যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।’ ১৯৯৭ সালে তারা শৈশবে যৌন নির্যাতনের শিকার ৫০ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেন, যার মধ্যে ৪৬ জনই পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত মানুষদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলেন। অর্থাৎ মাত্র ৪ জন শিশুর নির্যাতনকারী ছিলেন অপরিচিত ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত পাঁচ বছরের কম বয়েসী ২৮৬ জন শিশু সেক্সুয়াল অ্যাবিউজের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৯৯ ভাগ শিশু ধর্ষণের শিকার।

২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যে ৩৯৬ জন শিশু (অনূর্ধ্ব ১৮) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার, ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের কাউনসেলিংয়ের আওতায় আসে তাদের ৮৬ ছেলেশিশু। ছেলেশিশুরাও শংকার বাইরে নয়।

দুঃখজনক যে, বাংলাদেশে এই নিয়ে এখনো সরকারীভাবে পূর্ণাঙ্গ কোনো সমীক্ষা করা হয় নি। সামান্য নথিভূক্ত তথ্য-উপাত্ত যা পাওয়া যায় তা মোটেই প্রকৃত অবস্থাকে প্রতিফলিত করছে না। কারণ, এ ঘটনাগুলোর অধিকাংশই হয় অভিভাবকদের অসচেতনতায় অজানা থেকে যায় অথবা লোকলজ্জার ভয়ে ধামাচাপা দেওয়া হয়।

কীভাবে একজন নির্যাতনকারীকে চিনবেন? কেন কিছু মানুষ- এই ঘৃণ্য আচরণটি করে?

বয়স, চেহারা, লিঙ্গ, পেশা ভেদে একজন শিশু-যৌননির্যাতনকারী যে কেউই হতে পারে। সুতরাং তাকে চেনা তত সহজ নয়। এরা শিশুদের সাথে খুব সহজে মিশে যেতে পারে। সাধারণত গল্প বলে ও উপহার দিয়ে প্রথমে এরা শিশুদের ভালোবাসা ও বিশ্বাস অর্জন করে নেয়, এরপর নিজেদের উদ্দেশ্য সাধন করে। খুব পরিকল্পিতভাবে এগোয়।

আমরা পেডোফিলিয়ার কথা জানি। এটা একটা সেক্সুয়াল ডিজঅর্ডার। পেডোফিলিয়ার রোগীরা কেবল শিশুদের (যারা এখনো বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছোয় নি) প্রতি আসক্ত থাকে। কেন কিছু মানুষ- এই ঘৃণ্য আচরণটি করে- এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, যেসব শিশু শৈশবে দীর্ঘসময় ধরে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো এদের কেউ কেউ যৌবনে পেডোফাইলে পরিণত হয়।

পেডোফাইলদের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যেমনঃ এরা প্রধাণত হয় পুরুষ (তবে কদাচিৎ নারীও হতে পারে), সমকামীদের মধ্যেও পেডোফিলিয়ার কিছু লক্ষণ দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে এদের তেমন সখ্য থাকে না বরং এদের সখ্য থাকে শিশুদের সাথে, এরা শিশুদের সাথে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করে।

এখানে, স্মর্তব্য যে, সব পেডোফাইল শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন করে না এবং সব শিশু যৌন নির্যাতনকারীই পেডোফাইল নয়।

নির্যাতনকারী শিশুকে সাধারণত যে কথাগুলো বলে-

  • এটা তোমার আমার মাঝে একটা ‘সিক্রেট’, কাউকে বলা যাবে না। (বাচ্চারা এতে মনে করে তাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।)
  • আসো আমরা বর-বউ খেলি/ বা, ওই মজার খেলাটা খেলি।
  • তুমি যদি এটা তোমার মাকে/বাবাকে বলে দাও আমি তোমাকে/ তাদেরকে মেরে ফেলবো।
  • তুমি বলে দিলেও তোমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।
  • সবাই তোমাকেই খারাপ ভাববে, সবাই তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে।
  • তুমি যদি আমার কথা মতো কাজ না করো আর কোনদিন আমি তোমাকে ভালোবাসবো না।

আপনার শিশুকে রক্ষার্থে আপনার করণীয়-

  • কখনো যদি দেখেন/ নিশ্চিতভাবে জানতে পারেন কোন প্রাপ্তবয়স্ক লোক/মহিলা আপনার শিশুকে ‘আমার বউ’/ ‘আমার বর’ বলে সম্বোধন করছে, কঠোরভাবে তাকে নিষেধ করে দেবেন।
  • আপনার শিশুকে কোন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতি অস্বাভাবিকভাবে আকৃষ্ট দেখলে তার ব্যাপারে সাবধান হোন।
  • কখনো আপনার শিশুকে কারো বাসায় যেতে/ কারো কোলে বসতে/ কারো পাশে বসতে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাধ্য করবেন না। বরং তার কাছ থেকে অনীহার কারণ জেনে নিন আদর করে। শপিং মলে দোকানের স্টাফদের বদলে নিজেই শিশুকে পোশাক পরা/ ট্রায়াল দেয়ায় সহায়তা করুন।
  • আপনার শিশু যদি মাঠে খেলতে যায়, খেয়াল রাখুন সে কাদের সাথে খেলে। মাঠে বড় ছেলেরাও খেলতে যায়, এদের দ্বারাও নির্যাতিত হতে পারে আপনার শিশু। (আমরা হয়তো কল্পনাও করতে পারবো না- বর্তমানে CSA এর প্রণোদনা যোগানোর জন্য ইন্টারনেটে কত জিনিস ছড়িয়ে আছে। ‘শিশুপর্নোগ্রাফি’ খুব অপ্রচলিত কিছু নয় বাংলাদেশে। সমাজে আরো অনেক ‘টিপু কিবরিয়া’ আছে।)
  • আপনার শিশুকে যদি দেখেন সে তার বয়সের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ sexual behavior জানে, এবং তার বিভিন্ন গোপনাঙ্গকে বিকৃত/অদ্ভুত নামে (কোনো স্ল্যাং) চিহ্নিত করছে, তাহলে তার কাছ থেকে জেনে নিন সে এগুলো কোথা থেকে শিখেছে। রেগে গিয়ে নয়, ধৈর্যের সাথে জানুন। যদি জানার উৎস টিভি/ ইন্টারনেট হয়, দ্রুত উৎসমুখ বন্ধ করুন। যদি জানার উৎস কোন ব্যক্তি হয়, তার সম্পর্কে সাবধান থাকুন। তার সাথে শিশুকে কখনো মিশতে দেবেন না।
  • গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গেলে/ কোন আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গেলে রাতে ঘুমানোর সময় শিশুকে আত্মীয়/কাজিন এমনকারো সাথে একা একা ঘুমুতে দেবেন না। নিজের কাছে রাখুন।

নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শিশুকে শেখান-

আপনার শিশুকে/ কিশোর সন্তানকে ধীরে ধীরে তার বয়স উপযোগী sexual education আপনাকেই দিতে হবে, নাহলে কেউ তাকে বিকৃত ধারণা দিয়ে তাকে নির্যাতন করার সুযোগ নিতে পারে। একদিনে সব শেখানোর চেষ্টা করবেন না।

১) শিশুকে তার প্রত্যেকটি গোপন অঙ্গের নাম জানান। কোন অঙ্গগুলো প্রকাশ করা যাবে কোনগুলো গোপন রাখতে হবে তার পুরোপুরি জ্ঞান তাকে দিতে হবে। আপনার শিশুকে বোঝান- কোনটি ‘ভালো আদর’ কোনটি ‘মন্দ আদর’। কেউ তাকে ‘ভালো আদর’ করলে কোন সমস্যা নেই। ‘মন্দ আদর’ করলেই সাথে সাথে বাবা/ মা/ বাসার বড় কাউকে জানাতে হবে।

২) তাকে দু’হাত ছড়িয়ে দাঁড়াতে বলুন। সে যাদের পছন্দ করবে না তাদেরকে যেন কখনো এই ত্রিভূজের মধ্যে আসতে না দেয়। (ছবিটি ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স এর ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে।)

Capture

৩) তাকে আরো বলতে পারেন- তোমার শরীরের তিনটি জায়গা (নিচের ছবিতে চিহ্নিত) আছে, অনেক বড় বিপদ ঘটতে পারে যদি কেউ এগুলো মন্দভাবে ধরে। তাকে এ-ও বুঝিয়ে বলতে পারেন- কখনো কখনো গোসল করিয়ে দেয়ার সময় মা হয়তো ধরতে পারে। অসুখ হলে বাবামায়ের উপস্থিতিতে ডাক্তার ধরতে পারে। ‘ভালো আদর’ করার জন্য কখনো কেউ জড়িয়ে ধরতে পারে। কিন্তু তুমি যখনই বুঝবে কেউ ‘মন্দ আদর’ করবার জন্য ধরেছে তাকে জোরে ‘না’ বলতে হবে। যদি সে না শোনে তাহলে চিৎকার দিতে হবে, সে যে-ই হোক না কেন আর তাকে তুমি যতই ভালোবাসো না কেন। সেই জায়গা থেকে সরে নিরাপদ কোন জায়গায় চলে আসতে হবে। অবশ্যই মা কিংবা বাবা যাকে তুমি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করো তাকে বলে দিতে হবে। (আইডিয়াটি ‘সত্যমেভ জয়তে’র চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ’ নিয়ে করা এপিসোডের ওয়ার্কশপ থেকে নেয়া হয়েছে।)

w

৪) আপনার শিশুকে শেখান- যে সিক্রেটের সাথে খারাপ কাজ জড়িয়ে থাকে সে ‘সিক্রেট’ বলে দিতে হয় নাহলে বিপদ হয়।

৫) তাকে বলুন, যারা ‘মন্দ আদর’/ ‘খারাপ আদর’ করবে তারা কখনো ভালো মানুষ নয়, তাদের ভালোবাসা যাবে না।

৬) অনলাইনে সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ নিয়ে শিশুদের উপযোগী ভালো ভালো সচেতনতামূলক ওয়ার্কশপের ভিডিও পাবেন, শিশুকে সাথে নিয়ে সেগুলো দেখান। আপনার শহরে কোন ওয়ার্কশপ হলে সেগুলোতে শিশুকে নিয়ে যেতে পারেন।

আপনার শিশুর সবচেয়ে ভালো বন্ধু হন। যেন সে তার সব কথা আপনার সাথে নিঃসঙ্কোচে শেয়ার করতে পারে। তাকে একথা জানান যে, তাকে আপনি ভালোবাসেন ও বিশ্বাস করেন, আপনি সবসময় তাকে সাহায্য করবেন। শিশুর স্কুলের শিক্ষকদের সাথে পরিচিত হবেন। কোন শিক্ষক কেমন, কে তাকে আদর করে, তাকে কী কী দেয়, সে স্কুলে কী কী করে- গল্পচ্ছলে শিশুর কাছ থেকে জেনে নিন।

ধরুন, আপনার শিশু কারো দ্বারা সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজড হলো, এখন আপনার করণীয় কী?

১) আপনার শিশু যদি কারো নামে আপনার কাছে নালিশ করে, শিশুকে বিশ্বাস করুন। শিশুরা সাধারণত এই ব্যাপারে মিথ্যা বলে না। আপনি অবিশ্বাস করলে ভবিষ্যতে হয়তো আর কখনোই শিশুটি আপনার সাথে শেয়ার করবে না।

২) আপনার শিশুকে এটা বুঝতে দেয়া যাবে না তার সাথে খুব ভয়ংকর কিছু ঘটে গেছে। আপনি আপনার শিশুর সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করুন, অস্থির হয়ে যাবেন না।

৩) নিয়মিত একজন ভালো শিশুমনোবিজ্ঞানীকে দিয়ে কাউনসেলিং করান।

৪) শিশুটি যদি খুব গুরুতর নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও শিশু মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নিন। কখনোই শিশুটিকে বকাবকি করা যাবে না। বরং তাকে আশ্বস্ত করতে হবে যা হয়েছে তা কোনভাবেই তার অপরাধ নয়, অপরাধ ওই ব্যক্তির। ব্যাপারটি যদি আদালত পর্যন্ত যায়, বিশেষ ব্যবস্থায় মনোবিজ্ঞানীর মাধ্যমে শিশুর জবানবন্দী নিতে হবে, কখনোই শিশুকে জনসমক্ষে ‘তার সাথে কী হয়েছে’ এর বর্ণনা দিতে বলা যাবে না। এসব শিশুর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

৫) ভিকটিম শিশুটি যদি খুব অল্প বয়েসী হয়- তাহলে হয়তো সে আপনাকে নির্যাতনকারীর কথা বলতে পারবে না। আপনাকে আগেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুকে একাকী যার-তার কোলে দেবেন না। নিচের লক্ষণগুলো দেখা গেলে সাবধান হোন, প্রয়োজন হলে ডাক্তার দেখান। তবে এগুলো অন্য কারণেও হতে পারে।
• শিশুর গোপনাঙ্গে কোন ক্ষত বা অস্বাভাবিক ফোলা ভাব,
• মুখে ক্ষত,
• পেট খারাপ,
• খাওয়ায় অরুচি,
• বিশেষ কোন ব্যক্তিকে দেখে ভয় পাওয়া,
• হঠাৎ চমকে ওঠা ইত্যাদি।

নির্যাতনকারী কদাচিৎ অচেনা মানুষ হন, অধিকাংশ সময় সে নিকট বা দুরসম্পর্কের আত্মীয়, শিক্ষক, পরিবারের লোক, পারিবারিক বন্ধু, প্রতিবেশী, কাজের লোক ইত্যাদি হন। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে- কেবল সন্দেহ করে অহেতুক কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না, এতে ব্যক্তিগত সম্পর্ক খারাপ হতে পারে। আবার, নিশ্চিত হলে লজ্জায় চুপ করে থাকবেন না, সে আপনার যত ঘনিষ্ট বা সম্মানিত জনই হোক না কেন। পারিবারিকভাবে শালিস করা গেলে ভালো কিংবা আইনি সহায়তা নেবার প্রয়োজন হলে নিন।
710913b2d09fe41e095d41ea47c951f8

আমরা তো এখন আধুনিকতার দোহাই দিয়ে অনেক বিকৃতিকেই স্বাভাবিকভাবে নেয়া শুরু করেছি। ভাবলে ভেতরটা হিম হয়ে আসে- একসময় হয়তো আমরা চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ, পেডোফিলিয়া এবং ‘অজাচার’ (ইনসেস্ট) এর মতো জঘন্যতম বিকৃতিগুলোকেও স্বাভাবিক ভাবে নিতে শুরু করবো।

আপনার আমার নীরবতাই হাজারো শিশুর নির্যাতিত হওয়ার পথ সুগম করে দেবে। আসুন, এদের মুখোশ খুলে দিই সভ্য সমাজে, ধিক্কার দিই, কঠোর আইন প্রণয়ন করি,  আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড় করাই, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করি। সুস্থ-স্বাভাবিক-নিরাপদ শৈশব- প্রতিটি শিশুর অধিকার! আমাদের শিশুরা বেড়ে উঠুক নিবিড় পবিত্রতায়… আল্লাহর কাছে সে দোয়া রইলো।

লেখায় ব্যবহৃত তথ্যের রেফারেন্স ও গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু লিঙ্ক:

১) শিশু যৌন নির্যাতনরোধে বাংলাদেশে প্রচলিত আইন ও সহায়তা কেন্দ্রসমূহ সম্পর্কে জানতে এই লেখাটি পড়ুন।

২) Child Sexual Abuse – উইকিপিডিয়া

৩) ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স বাংলাদেশ এর ওয়েবসাইট

৪) যেভাবে একজন পেডোফাইলকে চিহ্নিত করবেন

৫)নিকটজনের কাছেই শিশুরা বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার (প্রথম আলো)

৬) নিজ ঘরেই যৌন নিপীড়নের শিকার বাংলাদেশের যে শিশু মেয়েরা (বিবিসি বাংলা)

৭) সত্যমেভ জয়তে’র পুরো এপিসোডটি

৮ ) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ (সংশোধিত)

ফুটনোট[১]
সম্রাট বাবুরের আত্মজীবনী ‘বাবুরনামা’ পড়ছিলাম।ভাবি নি সেখানেও পেডোফাইলদের দেখা পেয়ে যাবো। বাবুর লিখেছেন, “এ কুৎসিত প্রথা দেশময় এভাবে ছড়িয়ে পড়েছিলো যে প্রত্যেক সমর্থ পুরুষই ছেলে রাখতো। এমন কি এরূপ ছেলে রাখাকে গর্বের কাজ মনে করা হতো এবং না রাখাকে লোকে অপৌরুষের চিহ্ন বলে বিবেচনা করতো।”
এমনকি, বাবুর নিজেও স্বীকার করেছেন এক কিশোরের প্রতি তার আসক্তির কথা। তবে তার ওই ‘আসক্তি’ কোনো ‘সম্পর্কে’ রূপান্তরিত হয় নি বলেই মনে হলো। তেমন কোন বর্ণনা নেই।
ফুটনোট[২]
হুমায়ূন আহমেদের ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ছবিতে আমরা শিশু-পতিতাদের কীভাবে ব্যবহার করা হতো দেখেছি। দেখেছি-ইমতিয়াজ আলীর ‘হাইওয়ে’ চলচ্চিত্রে , যেখানে নায়িকাটির শৈশবে তার ‘আঙ্কেল’ কর্তৃক শারীরিকভাবে বারবার লাঞ্ছিত হওয়ার প্রসঙ্গ এসেছে, সেই যন্ত্রণা কীভাবে তাকে জীবনভর তাড়িত করেছে তাও দেখানো হয়েছে। অনেকদিন আগে দেখা আরো একটি চলচ্চিত্র ‘মিসটিক রিভার’ এ দেখেছিলাম পেডোফাইলরা কীভাবে শিশুদের ব্যবহার করে। ‘ফরেস্ট গাম্প’ মুভিতেও দেখা যায় শৈশবে মেয়েটি তার পিতার দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে। বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন শৈশবে তার চাচা ও মামা কর্তৃক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা।
ফুটনোট[৩]
আমাদের তথাকথিত আধুনিক পরিবারগুলোতে হরহামেশা রগরগে দৃশ্য সম্বলিত হিন্দি/ ইংরেজি চলচ্চিত্র, নাটক, বিজ্ঞাপন, মিউজিক ভিডিও চলছে। শিশুর সামনেই। কেউ কিছু মনে করেন না। তো, যে পরিবার শিশুকে ইমপ্লিসিটলি এই শিক্ষাই দিচ্ছে- ‘এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার’ সে পরিবারের শিশুকে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা খুবই সহজ। এমনও হতে পারে, শিশুটি পুরো ব্যাপারটাকে খুব স্বাভাবিকভাবে নেবে, পরিবারকে জানানোর প্রয়োজনও বোধ করবে না। নৈতিকতার শিক্ষা শিশু পরিবার থেকেই পাবে, না?

*****[পড়ার জন্য ধন্যবাদ। প্রাসঙ্গিক আলোচনা একান্তভাবে কাম্য। নিজে সচেতন হন, অপরকে সচেতন করুন।  একমত হলে শেয়ার করুন।]***** 

লিখেছেন-রাহনুমা সিদ্দিকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

মেয়েদের চাকরী করতে ‘হবেই’??

চারটি চাকা আর ইঞ্জিনের সমন্বয়ে গাড়ি হয়, তাতে চালকের বসার জায়গা হুইল এইসব জুড়ে দেয়ার পরও বহু কাজ বাকি থেকে যায়। অনেক সময় একটা গাড়ির যথাযথ দাম, চমৎকার ইঞ্জিন কিংবা মাইলেজ আর অন্যান্য জিনিস সুবিধাজনক হলেও শুধুই ‘দেখতে ভালো লাগছে না’ এজন্য একজন খদ্দের সে গাড়িটি কিনার আশা বাদ দেন।

মানুষ হিসেবে করণীয়র গন্ডি পেরিয়ে মানুষ যখনই আরও একটু গভীরে গিয়ে ভাবতে থাকে, আমি কে, কেন এসেছি আর কোথায় যাবো, ভাবনা বা যুক্তির সে জগতে তার লিঙ্গবিচারের চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায় তার বিশ্বাস, জীবনের লক্ষ্য এবং তার চারপাশের জগত।

নারী অধিকারের কথা আসতেই কেনই যেন সবাই দুইটি চরমপন্থার অনুসারী মানুষের কাছ থেকে শুনতে পছন্দ করে। একদল হলেন ইসলামিস্টরা, যাঁরা প্রায়শই কথা বলার সময় ভুলে যান , তাঁর এই কথাগুলো হয়ত এমন কোন বোন শুনছেন যিনি মুসলমান নন, অথবা যিনি মুসলমান হলেও তাঁর জীবনের সবগুলো প্যারামিটার ইসলামিক নয়। আর একদল হলেন নারীবাদী। এই শ্রেণীর বা এই শ্রেণীভুক্ত হতে চাওয়া মানুষ এমন বজ্রনির্ঘোষে মেয়েদের অধিকার বর্ণণা করেন, শুনতে থাকা মেয়েরা উজ্জীবিত হলেও বাস্তব জীবনে এসে সেসব ‘অধিকার’ প্রয়োগের জায়গা না দেখে ‘যাহা লাউ, তাহাই কদু’ নামক চক্রে ঘরতে থাকেন। আর পুরুষ শ্রোতা হলে তো কথাই নেই, নিজের আর সঙ্গের মহিলাদের কর্ণকুহরে সে ‘অধিকারময়’ লু হাওয়া ঢুকতে না দিয়ে কেটে পড়েন। কারণ, নারী অধিকারের শ্লোগানে কেবল নারীই মানুষ, পুরুষ তার প্রতিপক্ষ কোন এক অপ্রয়োজনীয় সৃষ্টি।

মজার ব্যপার হল, এই দুই দলের কোন দলই খুব স্পষ্ট করে একটা বিষয়ে কথা বলেন না। সেটা হল, নারীর ‘কর্তব্য’। বলেন নাকি? আসুন, আমরাও আলোচনা করি।

মোটাদাগে ভাগ করতে গেলে মানুষের জীবনের অনেকগুলো ভাগের মধ্যে কয়েকটাতেই মাত্র এইসব অধিকার-কর্তব্যের টানাপড়েন দেখা যায়। কি সেগুলো? প্রথমতই হল, অর্থনৈতিক কর্তব্য। এরপর আসে, সামাজিক কর্তব্য, পারিবারিক দায়িত্ব ইত্যাদি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলাম বা অন্য যে কোন ধর্মে নারীকে যে অধিকারই দেয়া হোক না কেন, আজকাল নারী অধিকার সংস্থা এমনকি রাষ্ট্র পর্যন্ত এ ব্যপারে বেশ সচেতন। ইসলাম যে অধিকার দিয়েছে, তাকে ‘কম’ মনে করে, অন্যান্য ধর্মে একেবারেই না দেয়া অধিকারকে পাশ কাটিয়ে নারী এখন তার ‘সমানাধিকার’ বুঝে নিতে রাষ্ট্রেরও সহায়তা নিয়ে চলেছে। কিভাবে? বিয়ের বেলায় মোহর বুঝে নেয়া, পিতার অবর্তমানে পিতার সম্পত্তিতে সমান হিস্যা ইত্যাদি। এমনকি অনাদিকাল থেকে চলে আসা পুরুষের একমাত্র অধিকার (!) যৌতুকেও বাগড়া এখন রাষ্ট্রের, নিলেই শাস্তি। বেশ! বিয়ের পর? দারা-পুত্র-পরিবারের চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয়, সকল প্রকার বৈধ-অবৈধ, ন্যায্য-অন্যায্য চাওয়াকে পাওয়ায় বানানোর সামাজিক দায়িত্ব কার? পুরুষের। বেশ! এমনকি, যদি স্ত্রী ঘরের রান্না করতে না চান, বাচ্চাদের দেখেশুনে মানুষ করার দায়িত্ব নিয়ে তাঁর চব্বিশ ঘন্টা ব্যয় না করতে চান, তবে তার বিকল্প ব্যবস্থার জন্য ব্যয় করবে কে? পুরুষ। বেশ!! এ পর্যন্ত ঠিক আছে। ধর্ম বা মানবিকতার দৃষ্টিতে এইটুকু অধিকার খুব দোষের কিছু না।

না, আমি এই বিচারে যাবো না যে কয়টা মেয়ে এ অধিকারটুকু পাচ্ছে। যেহেতু এটি সংবিধানে লিখিত অধিকার, এর ওজন আছে এবং সেই ওজন রক্ষা করে তাকে বাস্তব রূপ দান রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। আজ না হোক, কাল এই অধিকার আদায় হবেই। সেই বিশ্বাস আমার আছে। তবে? নারী, যে অধিকারের দিক থেকে ‘সমঅধিকার’ পাচ্ছে, অন্তত সে ব্যবস্থা করতে সবাই আন্তরিক, কর্তব্যের বেলায় সে কেন ‘সমদায়িত্ববোধ’ অনুভব করবে না? যে নারী, সমাজের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যাকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য বাবা মা থেকে শুরু করে পাড়ার রিকশাওয়ালা পর্যন্ত বাড়তি কষ্ট করে, তার সেই ঋণ কে শোধ করবে? সেই দায়িত্ববোধ, এক কাঁড়ি গয়না পরে ঘন্টাচারেক ধরে ‘ওয়েডিং ফটোগ্রাফী’ তুলে, কিংবা নয় মাস সমাজের জন্য নতুন একজন সুনাগরিককে বহন করেই কি শেষ? কেন? কেন নয়?  

সোজা কথা একটাইঃ সমাজের প্রতি নারীর দায়িত্ব কি? আদর্শ অবস্থা ধরে নিই, নারী তার অধিকার বুঝে পাচ্ছে। মুসলিম হলে মুসলিম পারিবারিক আইনে ভাইয়ের অর্ধেক আর অন্য ধর্মের হলে, ধর্ম না দিলেও সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে ভাইয়ের সমান অংশ পাচ্ছে পিতার সম্পত্তিতে। আর মুসলিম হলে মাহর পাচ্ছে। তো, এই পরিমাণ সহায় সম্পদ অর্জনের পর রাষ্ট্র/ সমাজ /পরিবার বলছে, “নেও এইবার আলমারিতে তালা দেও। খুশী তো?”। ব্যাস, সমঅধিকারবাদীদের কাজ কিন্তু আর নাই। এইবার কে আছে, নারীকে কোন কাজ দেবেন? আপাতদৃষ্টিতে কেউই নাই। সুতরাং বৈভব দেখাতে এই মহিলারা বাচ্চাকে স্কুল থেকে আনতে যান বেনারসী বা সাউথ কাতান পরে, বাচ্চাকে হরেক কোচিং এ দিয়ে আত্নতৃপ্তিতে ভুগতে থাকেন, অথবা গয়নার স্টাইল জানতে সিরিয়ালের শরণাপন্ন হন। একটা অংশ আছেন, ধর্মকর্মে মন দেন। বাচ্চাদের মানুষ করার সময়টুকু বাদে বাকিটা সময় দেন ইসলামকে জানতে। হায়! এই লাইটহাউসেরা যদি জানতেন, তাঁরই পাশের কোন এক অন্ধকারে হাতড়ে মরছে অন্য কোন নারী। জানেন কি? খুব কম!

আর পুরুষেরা? কামাই করেন উদয়াস্ত খেটে, বাসায় ফিরে পানের ওপর যথাস্থানে চুন দেখতে ভালোবাসেন। আর পার্টিতে গল্প করেন, “আপনার ভাবি, বুঝলেন না, মার্কেটে গেলে আমাকে কাঁদায় ছাড়ে। এতো কেনে তবু শেষ নাই। হে হে হে…” এই সমাজের সুবিধাভোগীদের কেউ স্মরণ করিয়ে দেন না, ইসলাম নারীকে অর্থনৈতিক অধিকার যেমন দিয়েছে, অলাভজনক সেবামূলক কাজের ভারও নারীকেই দিয়েছে। প্রমাণ চান? সন্তানকে লালন পালনের কাজ, বিনে পয়সায় স্তন্যদান কে করবে? দুই/আড়াই বছর পর্যন্ত? এরপর কে তার প্রাথমিক শিক্ষা দেবে? কি বলে আপনার জ্ঞান?

20121106053453

পুরুষের সাথে নারীর কাজের পার্থক্য মূলত দুইটি। এক, নারীর বাড়তি শারীরিক মানসিক যোগ্যতা। আর দুই, নারীকে অর্থোপার্জনের বাধ্যতামূলক কাজ করতে হবে না। তাই এই কাজ তিনি করতে পারবেন, ইচ্ছেমত, সানন্দে, অন্যদের স্বস্তি দিতে। এবার আসি আর একটু বড় প্রসঙ্গে, সমাজ বা রাষ্ট্র এক্ষেত্রে কি করবে? জবাব হল, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষ যেমন সময়/সুযোগ/ইচ্ছেমতন পেশা বাছাই করে নেন, কোন পিছুটান ছাড়াই, নারীকে সে ব্যবস্থা করে দিবে। উদাহরণ দিই। গুলশান বনানী বলুন, কিংবা ঠাকুরগাঁওয়ের কোন গ্রাম বলেন, সব জায়গায় একদুইজন মুচি থাকে, মাছওয়ালা থাকে, দর্জি থাকে, মুদি দোকানদার থাকেন। কয়জন থাকবে, সরকার সে সংখ্যা ঠিক করে দেন না, তবে কোন পুরুষ যখন সে পেশা বেছে নেয় বাকিরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ঈদ সামনে রেখে কাজের চাপ বাড়লে দর্জিবাড়ির ধান কেটে বাড়িতে আনতে গেরস্থবাড়ির পুরুষটিও হাত বাড়ান। অর্থাৎ এক্ষেত্রে শুধু নিজের লাভ না ভেবে সমাজের উন্নতির কথা ভাবে সবাই। কিন্তু নারীর কাজের বেলায় কি আমরা এমনভাবেই হাত বাড়াই?

আপনার আমার স্ত্রী-বোন-মা অসুস্থ হলে খুঁজেপেতে মহিলা ডাক্তার বের করি, আমার আত্নীয়াটির মানসিক আরামের কথা ভেবে, কিংবা মেয়ে সন্তানটির জন্য শিক্ষক হিসেবে কোন মহিলাকেই দেখতে চাই, প্রবাসী হলে চাই আমার আত্নীয়াটি ব্যাঙ্কে কোন মহিলা কর্মকর্তার সহায়তায় সঞ্চয়পত্র খুলুক বা সাহায্য নিক। কিন্তু সমাজের সদস্য হিসেবে, সে ডাক্তার মহিলাটিকে এক বেলা রেঁধে খাওয়াবার পরামর্শ দিই আমার আত্নীয়াদের? আমার মা বোনকে বলি প্রতিবেশী ডাক্তার বা শিক্ষিকা বা অন্য পেশায় নিয়োজিত মহিলাটির সন্তানকে নিজের সন্তানের মত দেখে রাখতে? যতক্ষণ না তিনি নিজে বাসায় ফিরে আসেন? তবে?

পুরুষের যেমন কাজের বৈচিত্র্য আছে, থাকাই দরকার, নারীরও তাই থাকা চাই। কাউকে যেমন হোমমেকার হতে হয়, বা হতে পারার যোগ্যতা দেয়া হয়েছে, কেউ পারেন, চাকুরীক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কাজ করে আরও দশজন নারীর জন্য অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করে দিতে। তবে, এজন্য পুরোটা সমাজকেই একত্র হতে হবে। আবার যারা ঘরে বসে কাজ করতে চান, তাঁরাও যেন কাজ করতে পারেন, এমন দরজাও খোলা থাকা দরকার। কে করবে এই কাজ? আপনি। আপনি পুরুষ না মহিলা, যা ই হোন, আপনিই শুরু করে দিতে পারেন।

আপনি যদি গ্রামে থাকেন, আপনার বাড়ির মেয়ে বউদের নিয়ে বসুন। যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী সামষ্টিক কাজ ভাগ করে দিন। লেখাপড়া জানা বউটিকে বলুন, রান্নার কাজের সহায়তা করে বিকেল থাকতেই বাড়ির বাচ্চাদে রপড়ানো শুরু করতে। আর তার কিছু কাজ আপনারাই এগিয়ে দিতে পারেন। আর যদি শহরে থাকেন, আপনার এলাকার না পারেন, বিল্ডিং এর মেয়ে বউদের একত্র করুন। অযথা আত্নম্ভরিতা বা নাক উঁচু ভাবের খোলস ছেড়ে বের করে আনুন। যে তিনটি মহিলা কর্মজীবি, তাঁদের বাচ্চার দেখাশোনার জন্য আর এক দুইজন সমবয়সী বাচ্চাদের মা’কে অনুরোধ করুন, খানিকটা বেতনের আদানপ্রদানও হলে ক্ষতি নেই। অন্য দুই একজন রান্নাবিলাসীদের বলুন, সবার জন্য কম দামে বাড়িতে তৈরী খাবার বানিয়ে বিক্রী করতে। যেন, কর্মজীবি মা’টি কাজের তাড়ায় বাচ্চাদের কেনা খাবার খাওয়াতে গিয়ে ঠকে না যান।

এ তো গেলো, ক্ষুদ্র পর্যায়ে। চাইলে আর একটু দূরেও আপনি প্রসারিত করতে পারেন ইনসাফের হাত। মোটের ওপর কথা হল এই যে, যেহেতু মহিলাদের হাতে সংসার চালাবার ভার নেই, এমন কাজ তিনি করতেই পারেন যাতে অন্যদের উপকার হয়, আর তিনি চাইলে অন্তত সে উপকারের খরচটূকু তুলে নিতে পারেন। আর যে মা’কে অর্থোপার্জনের জন্য কাজ করতেই হয়, তিনি তো আরও সাহায্য পাবার দাবীদার। মূল লক্ষ্য হল, নিজেরা ভালো থাকা আর ভবিষ্যত প্রজন্মকে হাত-পা-মাথাওয়ালা ‘প্রাণী’ না বানিয়ে মানুষ বানানো।

মহিলারা যেইদিন নিজেদের এভাবে তুলে ধরতে পারবেন, সেদিন অবশ্য পুরুষের একটা কাজ কমে যাবে। কি? “আর বলবেন না ভাই, আটটা থেকে এগারোটা রিমোটটা পাই না, কিনেই ফেললাম একটা ট্যাব” গল্প করতে পাবেন না, অথবা বাজারে বাজারে ‘বিবির বিবি (bag bearer)’ হয়ে ঘুরতে হবে না আগের মত। ভাগ্যবান হলে, আপনার স্ত্রী-কণ্যা-বোন বা মা-ও হয়ে যেতে পারেন, মনের রঙ দেখানোর কারিগর। বাইরের রঙ কেনার ঝোঁকে আর সন্ধেগুলা খরচ করতে নাও রাজী হতে পারেন তিনি। কাজ বাড়বেও বৈকি, বাইরে যাবার সময় আপনার চশমাটি এগিয়ে দিতে যেমন আপনার স্ত্রী হাতের মশলা মুছে ছুটে আসেন, মাঝে সাঝে আপনিও দৌড়াতে হতে পারে স্ত্রীর আধখাওয়া চা নিয়ে।

তাতে কি? সুস্থ শরীর আর সুস্থ মনে বেড়ে উঠতে থাকা আপনার সন্তানদের মুখগুলো আপনাকে ভালোবাসার আধার বানিয়ে দিতেই পারে, না? ইচ্ছে করেই মুখ‘গুলো’ বললাম। হোক সে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা অন্য কোন পেশার, আপনার স্ত্রী সামাজিক নিরাপত্তা পেলে হয়ত আপনার সন্তানটিকে একাকীত্বের ভয়াবহ যন্ত্রণা থেকে বাঁচিয়ে দিতে আপনারা দুজনেই একমত হয়ে যেতে পারেন, নয় কি?

লেখক- ব্লগার অর্ফিয়ুস

 

আমি চাই পৃথিবীটাকে নারীদের জন্য নিরাপদ করে গড়ে তুলতে- সালমা হায়েক

আমি বড় হয়েছি বাবা-মা এবং ছোট ভাইয়ের সঙ্গে, মেক্সিকোর ছোট একটা শহরে। আমাদের বাসা ছিল সমুদ্রের ধারেই। সারা দিন প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতাম, রাস্তায়-সাগর পাড়ে ফুটবল খেলতাম। এর চেয়ে ভালো শৈশব একজন শিশু আর কোথায় পাবে?
আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করে, আমার নিজের কোনো রোল মডেল আছে কি না, বা অভিনেত্রী হিসেবে আমি কাউকে অনুসরণ করি কি না। জীবনের অনেকটুকু সময় আমি এর উত্তর নিয়ে সন্দিহান ছিলাম। কিন্তু দেরিতে হলেও আমি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছি। আমি বুঝতে পেরেছি, আমার পরিবারের সেই সব নারী যাঁরা প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও সেটাকে বিকশিত করার সুযোগ পাননি, তাঁদের স্বপ্নগুলোকে পূর্ণতা দিতে পারেননি—তাঁরাই আমার জীবনের অনুপ্রেরণা।
আমার মাকে তাঁর স্বপ্নের পথ থেকে সরে আসতে হয়েছিল। তিনি একজন সংগীতশিল্পী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় সমাজে এটাকে ছোট করে দেখা হতো। তিনি নিজেকে মিথ্যা সান্ত্বনা দিতেন যে তাঁর হয়তো সেই যোগ্যতা নেই। সংগীতের সাধনা করার বদলে তিনি বিয়ে করলেন, তাঁর সন্তানেরা জন্ম নিল। এর অনেক বছর পরে সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তিনি আবার সংগীতের চর্চা শুরু করলেন এবং অসাধারণ সাফল্য পেলেন।
এরপর মা আমাদের শহরে গান শেখার স্কুল খুললেন। শিশুদের অপেরা শেখাতে শুরু করলেন, অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। মেক্সিকো সিটি থেকে ভালো শিক্ষক নিয়ে এলেন। তাঁদের অনেক ছাত্র এখন পেশাদার শিল্পী হিসেবে খ্যাতিমান হয়েছেন।
বাবা-মাকে দেখে আমি সব সময়ই মানুষকে সাহায্য করতে শিখেছি। বিশেষ করে বিশ্বজুড়ে নারীদের অধিকার রক্ষায় ‘চাইম ফর চেঞ্জ’ যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার অনুপ্রেরণা তাঁদের কাছ থেকেই আমি পেয়েছি। পৃথিবীর যেখানে জনগণ নিপীড়নের শিকার হয়েছে, সেখানে নারীরাই সবচেয়ে নিগৃহীত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে আমরা দেখতে পাব, সমগ্র আমেরিকাজুড়ে মানব পাচার একটি লাভজনক ব্যবসা। এখানে নারীরা এখনো পারিবারিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছে এবং তাঁদের সাহায্য করার জন্য পর্যাপ্ত বিচারিক ব্যবস্থা নেই।
আমার দাদি মারিয়া লিসা লোপেজ, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। একাধারে তিনি ছিলেন একজন প্রতিভাবান কবি, গীতিকার, বিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ। ইতিহাস ও চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়েও তিনি অনেক কিছু জানতেন।
তিনি নিজেই বিউটি ক্রিম বানাতেন এবং বাজারজাত করতেন। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এসব তিনি করতেন তাঁর রান্নাঘরে। তিনি তাঁর সময়ের চেয়ে অনেকটুকুই এগিয়ে ছিলেন এবং যেকোনো কিছুই করতে পারতেন। কিন্তু সময়টা তখন ছিল ১৯৩০। তাই তাঁকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে তিনি তাঁর স্বামীকে ত্যাগ করেন এবং মেক্সিকো সিটিতে চলে এসে নিজের ব্যবসা শুরু করেন।
নিজেকে একজন মা ভাবতে আমি গর্ব বোধ করি। কিছু মানুষের জন্য মাতৃত্ব একটা কাজের বোঝা। কিন্তু আমার জন্য তা নয়, এটার কারণ হতে পারে আমি আমার মেয়ে ভ্যালেন্তিনা’কে পেয়েছি জীবনের ৪১তম বছরে এসে।

images
আমার অনেক বন্ধু, যাদের কোনো সন্তান নেই তারা বলে, আমার সঙ্গে থাকা অসম্ভব। কারণ, আমার সব কথাই মাতৃত্বকে কেন্দ্র করে। কিন্তু একজন মা হওয়া হাজারো কাজের চেয়ে ক্লান্তিকর। মা হওয়া ছাড়া আমি এখন কোনো কাজ করছি না। আমি এখন যে কাজটি করছি সেটি টাকার জন্য নয়। এটা মানুষ হিসেবে আমার নিজের উন্নতির জন্য।
আমি যখন অভিনয় শুরু করি, আমাকে বারবার বলা হয়েছিল, আমি যথেষ্ট ভালো না। কিন্তু আমি প্রতিবার নিজেকে বলেছি, আমাকে লেগে থাকতে হবে। আমি এখন বুঝতে পারি, আমার মা ও দাদির অভিজ্ঞতাগুলো আমাকে কতটুকু সাহায্য করেছিল। ভ্যালেন্তিনাকেও আমি একইভাবে বড় করতে চাই। তার ওপরে আমি কোনো স্বপ্ন বা চাহিদা চাপিয়ে দিতে চাই না। আমি চাই, সে বড় স্বপ্ন দেখবে এবং নিজের যোগ্যতায় সেটা অর্জন করে নেবে।
একজন অভিনেত্রী হিসেবে, একজন মা হিসেবে আমি সব সময়ই সেরা কিছু করতে চেয়েছি। কারণ, আমি সেই সব মহান নারীকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে চেয়েছি, যাঁরা নিজেদের প্রতিভার প্রাপ্য সম্মানটুকু পাননি।
আমি নিজেকে একজন নারীবাদী হিসেবে ভাবি। কারণ, আমি নারীদের ভালোবাসি এবং তাঁদের জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত। আমি চাই পৃথিবীটাকে নারীদের জন্য নিরাপদ করে গড়ে তুলতে। আমি নারীবাদী কারণ, বন্ধু হিসেবে, সহকর্মী হিসেবে আমি প্রতিদিনই নারীদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হচ্ছি। অনেক অসাধারণ নারী আমাকে আজকের আমি হিসেবে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করেছেন।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান। ২৯ মার্চ, ২০১৩ সালে দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকার অবলম্বনে লিখেছেন মনীষ দাশ

 

ছয় বছরের রনি বাড়ি ফিরতে চায়!

দেড় মাস ধরে ভারতের আসাম রাজ্যের শিশু আশ্রমে আছে ছয় বছরের শিশু রনি। টেলিফোনে মায়ের সঙ্গে কথা বলে সে। ফিরতে চায় মায়ের কাছে। ছয় বছরের রনি কোনো নিয়ম বোঝে না। মাকে সে বলে, ‘মা মুই তোর কাছে যাইম, মোক বাড়িত নিয়া যাও।’
গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুরুসা ফেরুসা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আশ্রম থেকে স্থানীয় এক বাসিন্দার মাধ্যমে মুঠোফোনে মায়ের কাছে ফোন করেছে শিশুটি। ছেলের আকুতি শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা। পাশেই ছিলেন রনির বাবা জয়নাল আবেদীন (৩০)। চোখের পানি মুছে বলেন, দেড় মাস ধরে ছেলেটা আসামের একটি আশ্রমে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি দুই দেশের সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই হামার ছাওয়াক আনি দেও। তানা হইলে ওর মাকে বাঁচানো যাবে না।’
রনি কীভাবে আসামের ওই আশ্রয়ে গেল, এ ব্যাপারে বাবা জয়নালের দেওয়া ভাষ্য, এলাকায় রিকশা চালাতেন তিনি। সংসারের অভাব লেগেই থাকত। তাই বাধ্য হয়ে প্রায় পাঁচ বছর আগে এক দালালের মাধ্যমে অবৈধপথে ছয় মাসের শিশু রনিকে নিয়ে ভারতে চলে যান। দিল্লির ঝরঝর জেলার শনিপথ থানার খরগোদা গ্রামে দূর্গা নামের একটি ইটভাটায় স্বামী-স্ত্রী দুজনে কাজ শুরু করেন। সেখানে তাঁদের আরও দুটি মেয়ের জন্ম হয়। তাদের নাম জান্নাতী (৪) ও জেসমিন (দেড় বছর)। এর মধ্যে বড় হয়ে যায় রনি। রনিকে বাংলাদেশের স্কুলে ভর্তি করানোর কথা ভাবেন তাঁরা।
ছেলেকে বাংলাদেশে পাঠাতে আবার দালালের কাছে যান জয়নাল। তাঁর ভাষ্য, সীমান্ত পারাপারের ভারতীয় দালাল মইনুদ্দিনের মাধ্যমে তিনি আসাম রাজ্যের ধুবড়ি জেলার টাকিমারী সীমান্ত দিয়ে রনিকে দেশে তার দাদা-দাদির উদ্দেশে পাঠিয়ে দেন। গত ১১ এপ্রিল টাকিমারী সীমান্ত পার হওয়ার সময় ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা মইনুদ্দিন ও রনিকে ধরে ফেলে। মইনুদ্দিন কৌশলে পালিয়ে যান। রনি বিএসএফের কাছে আটকা পড়ে।
জয়নালের তথ্যমতে, খবর পেয়ে রনির দাদা হজরত আলী কুড়িগ্রাম ৪৫ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অধীন চৌদ্দকুড়ি বিজিবি ক্যাম্পে এ ঘটনার কথা জানান। বিজিবি আটক হওয়া রনিকে ফেরত চেয়ে টাকিমারী বিএসএফ ক্যাম্পে চিঠি পাঠায়। এ পর্যন্ত তিন দফা পতাকা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু রনিকে ফেরত দেওয়া হয়নি। মাস খানেক আগে দেশে ফিরে এসেছেন রনির মা-বাবা।

এ ব্যাপারে রনির দাদা হজরত আলীর ভাষ্য, যখন জানতে পারেন বিএসএফ তাঁর নাতিকে নিয়ে গেছে, তখন চৌদ্দকুড়ি বিজিবি ক্যাম্পে ঘটনাটি জানান। সেখানে প্রথম পতাকা বৈঠক হয়। ওইদিন বিএসএফ তাঁকে বলেছে যে রনিকে ফেরত পেতে হলে তার বাবা-মাকে উপস্থিত হতে হবে। বিষয়টি জানার পর রনির মা-বাবা নানা কৌশলে ভারত থেকে দেশে ফিরে আসেন। বিএসএফের দাবি অনুযায়ী রনির মা-বাবাসহ স্থানীয় ইউপি সদস্যকে নিয়ে তাঁরা দ্বিতীয় দফা পতাকা বৈঠকে যান। বৈঠকে বিএসএফ শিশুকে ফেরত না দিয়ে জানায়, রনির বাবা-মার রক্ত পরীক্ষার কাগজপত্র, জাতীয় ভোটার আইডি কার্ড, রনির ছবি ও জন্মনিবন্ধন কার্ড লাগবে। সেগুলো নিয়ে গেলে রনিকে ফেরত দেওয়া হবে।

তৃতীয় দফা পতাকা বৈঠকে সপরিবারে কাগজপত্রসহ গেলে টাকিমারী ক্যাম্পের বিএসএফ জানায়, রনি আসামের ধুবরীর একটি শিশু আশ্রমে আছে। তাঁকে পেতে হলে আরও ওপর মহলে যোগাযোগ করতে হবে।

রনির দাদা হজরত আলীর ভাষ্য, রনিকে ফেরত না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। এ সময় আবু তালেব নামের এক ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে রনিকে ফিরিয়ে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। তাঁর বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা ইউনিয়নের জালিরচর গ্রামে। রনিকে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চার দফায় ১১ হাজার টাকা হাতিয়ে তিনি পালিয়ে যান।

ফুলবাড়ী নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শান্তাদুল ইসলামের ভাষ্য, তিনি তৃতীয় দফা পতাকা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বিএসএফের কাছে রনির বাবা-মা, দাদার রক্ত পরীক্ষার প্রতিবেদন, ভোটার আইডি কার্ড, ছবি সবই দেওয়া হয়। কিন্তু রনিকে ফেরত দেওয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে বিজিবির দইখাওয়া ক্যাম্পের হাবিলদার আলী আহম্মেদের ভাষ্য, শিশু রনিকে ফেরত চেয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিন দফা পতাকা বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন। শিশুটির বাবা-মা ও দাদার রক্ত পরীক্ষার প্রতিবেদন, ছবি, ভোটার আইডি কার্ডসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু বিএসএফ শিশুটিকে ফেরত দেয়নি। এখনো যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।

সূত্র-প্রথম আলো।

 

ধর্ষনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল মুহাম্মদপুর প্রিপারেটরী স্কুল প্রাঙ্গন

ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানীর অন্যতম খ্যাতনামা বিদ্যালয় মোহাম্মপুর প্রিপারেটরি স্কুল ও কলেজ।

শনিবার সকাল থেকেই মোহাম্মপুরে বিদ্যালয়ের বালিকা শাখার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন অভিভাবকরা। এ সময় বিদ্যালয়ের বালিকা শাখার ইংরেজি বিভাগের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা জিন্নাতুননেছার পদত্যাগ দাবি করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন তারা। উত্তেজিত অভিভাবকরা এ সময় বিদ্যালয়ের গেটের সামনে ও জানালায় ভাঙচুর করেন।

এদিকে এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এখনও এসে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের ট্রাস্টিবোর্ডের সদস্য ও বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. ম তামিম।

তিনি বলেন, ”গত ৫ মে প্রথম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীকে পাশের একটি নবনির্মিত ভবনের রুমে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে শারীরিক লাঞ্ছনার চেষ্টা করা হয় গত ৯ মে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে এ রকম একটি অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীর মা।”

ওই অভিযোগকে আমলে নিয়ে আমরা তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। কমিটিকে বলা হয়েছিলো তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য। ওই অনুযায়ী তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিলো আজ (শনিবার)।  কিন্তু বিশেষ কারণে তা জমা দেয়া হয়নি।’

কেন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্তের সময়সীমা আরও তিনদিন বাড়ানো হয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ইতোমধ্যেই ভবনের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। স্কুলের প্রতিটি টয়লেটের সামনে একজন করে আয়া নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ছাত্রীরা কোনো সমস্যায় পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের জানাতে পারবে। এছাড়া স্কুলের দুই জন কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলেও সাংবাদিকদের জানান ম. তামিম।

এদিকে বিক্ষোভের সময় রুমের বাইরে ভাঙচুর করেন অভিভাবকরা। এ সময় বিদ্যালয়ের বালিকা বিভাগের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা জিন্নাতুন্নেছার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে অভিভাবকরা বলেন, তার দায়িত্বে অবহেলার কারণেই এসব হয়েছে। অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করেন অভিভাবকরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছিলো।

 

রাজধানীতে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত।

অপরাজিতা ডেস্কঃ  গত ১২ই মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় স্তন ক্যান্সার সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা ও দিক-নির্দেশনা নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনার। ‘মুন্সী আফজাল হোসেন ও সেলিমা খাতুন ফাউন্ডেশন’ এবং ‘এডওয়ার্ড এম কেনেডী সেন্টার’ যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।

 

ধানমন্ডিস্থ মাইডাস সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে মুখ্য আলোচক ছিলেন শিশু ও মহিলা বিষয়ক সার্জন ও সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট ডাঃ তাসনিম আরা। তিনি বলেন, স্তন ক্যান্সার বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিশ্বে নারীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় অন্যতম কারণ স্তন ক্যান্সার। শতকরা ১২ জন নারী তাদের জীবদ্দশায় স্তন ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে আছে। অনেক পরিবার ব্যয়বহুল চিকিত্সার কারণে অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে নিঃশেষিত হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে উন্নত বিশ্বে প্রতি ৮ নারীর মধ্যে ১ জন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত।
11256500_10203391144213899_751904653_n

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে পরবর্তী দশকে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১৪ মিলিয়ন থেকে ২২ মিলিয়নে দাঁড়াবে এবং প্রতি ৩ জনের ১ জন বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বর্তমানে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। ক্রমেই বিভিন্ন হাসপাতাল ও সমাজে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। স্তন ক্যান্সার সম্বন্ধে ভয়, লজ্জা ও সামাজিক পরিবেশের কারণে অনেক রোগী শেষ পর্যায়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। তখন চিকিত্সা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে এবং সফল চিকিত্সা দেয়া প্রায় অসম্ভব। অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে ৯০ শতাংশ রোগী সুস্থ জীবন-যাপন করতে পারে। সেমিনারে স্তন ক্যান্সার বিষয়ক সচেতনতা ও প্রচারের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়।

 

 

পহেলা বৈশাখে ইলিশের ভিন্ন কিছু রেসিপি

বাঙ্গালীর খাবার মানেই নানান পদের,নানান স্বাদের ছড়াছড়ি। বিভিন্ন মশলায়,বিভিন্ন রকম স্বাদে খাবার খাওয়া এবং তৈরীতে আমাদের আগ্রহের সীমা নেই। আর যেহেতু পহেলা বৈশাখের মতো সার্বজনীন উৎসবে আমাদের কে খেতে হয় সম্পূর্ণ দেশীয় স্বাদের খাবার এবং সেই খাবারটা যদি হয় ভিন্ন ভিন স্বাদের তবে আর মন্দ কি?

পহেলা বৈশাখে খাবারের আইটেমের প্রধান আকর্ষন থাকে ইলিশ মাছ। ষোলআনা বাঙ্গীলায়ান প্রকাশের কারণেই হোক,আর ঐতিহ্য পালনেই হোক,ইলিশ মাছের হরেক রকমের আইটেমের সাথে পান্তা ভাত মানেই উৎসব হবে আনন্দে পরিপূর্ণ।

তো চলুন আজ জেনে নেই,আসছে উৎসবে ইলিশের কি কি আইটেম তৈরী করে আমরা আমাদের উৎসব কে করতে পারি আনন্দে মুখর,

লবণ ইলিশের ভুনা 

উপকরণ : লবণ ইলিশ ২/৪ টুকরা , পেঁয়াজ কুচি ১/২ কাপ, হলুদ গুঁড়া ১/২ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, তেল পরিমাণ মতো।

প্রস্তুত প্রণালি : লবণ ইলিশ ভালো করে বেটে নিন। বাটা ইলিশের সঙ্গে তেল বাদে সব উপকরণ ভালো করে মেখে নিন। প্যানে তেল দিয়ে গরম করে মাখানো উপকরণ ছেড়ে দিন। ভালো করে কষানো হলে সামান্য পানি দিন। কিছুক্ষণ চুলায় বসিয়ে রাখুন। তেল উপরে উঠে এলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

ইলিশ মাছের ভর্তা

ilish-macher-vorta-180912-p-alo
উপকরণ : ইলিশ মাছ ৪ টুকরা, শুকনা মরিচ ২/৩টি, পেঁয়াজ কুচি ১/২ কাপ, হলুদ গুঁড়া ১/২ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ পরিমাণমতো, তেল ১/২ কাপ, কাঁচামরিচ ২/৩ টি।
প্রস্তুত প্রণালি : ইলিশ মাছ লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে কাঁটা ফেলে নিন। সিদ্ধ করা মাছের সঙ্গে হলুদ-মরিচ মেখে নিন। প্যানে তেল দিয়ে শুকনা মরিচ, কাঁচা মরিচ ফালি, পেঁয়াজ কুচি দিয়ে লাল করে ভাজুন। কাটা বাছা মাছ দিয়ে দিন। ভালো করে কষিয়ে সামান্য পানি দিন। তেলের ওপর উঠে এলে নামিয়ে পরিবশন করুন ।

ভাপানো ইলিশ

Picture38

উপকরণ : ইলিশ মাছ ৬ টুকরা, সরিষা বাটা ১ চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১/২ কাপ, হলুদ গুঁড়া ১/২ চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চামচ, কাঁচামরিচ ৬/৭ টি, তেল ১/২ কাপ, লবণ পরিমাণমতো।
প্রস্তুত প্রণালি : একটি সসপ্যানে মাছ নিয়ে সব উপকরণ এক সঙ্গে মাখিয়ে আধা ঘণ্টা ম্যারিনেট করুন। একটি বড় কড়াইয়ে পানি ফুটিয়ে নিন। ফুটন্ত গরম পানিতে সসপ্যানটি ঢেকে বাসিয়ে ভারী কিছু দিয়ে চাপা দিন। ১০ মিনিট পর আস্তে করে মাছগুলো উল্টে দিন। আবার ১০ মিনিট পর নামিয়ে নিন। সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

ইলিশের দোপেঁয়াজি

520935970e6df-Untitled-20
উপকরণ : ইলিশ মাছ ৬ টুকরা, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, তেল ১/২ কাপ, লবণ স্বাদমতো, কাঁচামরিচ ৪টি।
প্রস্তুত প্রণালি : মাছ ধুয়ে হলুদ, মরিচ ও লবণ মাখিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিতে হবে। প্যানে তেল দিয়ে মাছগুলো ছেড়ে দিন। কাঁচামরিচ দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

পাতলা ঝোলে ইলিশ

01552601805_20140414025853
উপকরণ : ইলিশ মাছ ৮ টুকরা, পেঁয়াজ বাটা ১/২ কাপ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া, ১ চা চামচ, লবণ পরিমাণমতো, কাঁচামরিচ ৪/৫টি, তেল ৪ টেবিল চামচ।
প্রস্তুত প্রণালি : মাছ ধুয়ে সব উপকরণ মাখিয়ে পরিমাণমতো পানি দিয়ে (ঝোল পাতলা হবে, সে অনুযায়ী পানি দিতে হবে) চুলায় বসিয়ে দিন। নামানোর আগে কাঁচামরিচ ফালি দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

দই ইলিশ

Borishali-Ilish

উপকরণ : ইলিশ ১টা, সয়াবিন তেল হাফ কাপ, পেঁয়াজ বাটা হাফ কাপ, পেঁয়াজ বাটা হাফ কাপ, পেঁয়াজ কুঁচি হাফ কাপ, হলুদ বাটা ২ চা চামচ, মরিচ বাটা ২ চা চামচ, ধনে বাটা ২ চা চামচ, ভাজা মসলা হাফ চা চামচ, আদার পাউডার হাফ চা চামচ, লবণ পরিমাণ মত।

প্রণালী : ইলিশ মাছের বড় টুকরা করে নিতে হবে। কড়াইয়ে তেল গরম করে পেঁয়াজ দিতে হবে। পেঁয়াজ একটু ভেজে সব মসলা ও পেঁয়াজ বাটা দিয়ে কষিয়ে নিন। অল্প পানি দিয়ে মাছের টুকরাগুলো বিছিয়ে দিন। কিছুক্ষণ কষিয়ে ১ কাপ পানি ও লবণ দিয়ে ঢেকে মৃদু আঁচে ৫ মিনিট রান্না করুন। তারপর দই দিয়ে ৩০ মিনিট রান্না করতে হবে। মাঝখানে ঢাকনা খুলে মাছ উল্টিয়ে কাঁচামরিচ দিয়ে ঢেকে নিন। টক দই হলে সামান্য চিনি দিন। মৃদু আঁচে রেখে ভুনা করে চুলা থেকে নামান।

কড়াই ইলিশ
উপকরণ: মাঝারি বা বড় ইলিশ মাছ ১টি, টমেটো ২টি, ক্যাপসিকাম ১টি, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ২ চা-চামচ, ধনে ও জিরা গুঁড়া ১ চা-চামচ করে, এলাচ ও লবঙ্গ তিনটি করে, তেজপাতা ১টি, গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, সয়াবিন তেল ৫ টেবিল চামচ, কালোজিরা আধা চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিনি এক চিমটি, কাঁচা মরিচ কুচি ২-৩টি, পানি ২ কাপ।

প্রণালি: মাছ টুকরা করে কেটে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। টমেটো ও ক্যাপসিকাম কুচি করে নিন। শুকনা কড়াইয়ে ক্যাপসিকাম কুচি টেলে নিন। কড়াইয়ে ৪ টেবিল চামচ তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি ভেজে নিন। এতে এলাচ-লবঙ্গ-তেজপাতা দিন। কালোজিরা বাদে একে একে বাকি মসলাগুলোও দিয়ে কষিয়ে নিন। টমেটো ও ক্যাপসিকাম কুচি দিয়ে একটু নাড়ুন। এবার এই মিশ্রণ ব্লেন্ডারে মিহি পেস্ট করে নিন। অন্য কড়াইয়ে বাকি তেল গরম করে কালোজিরা ফোড়ন দিন। এতে মসলার পেস্ট দিয়ে দিন। একটু কষিয়ে ২ কাপ পানি দিন। ঝোল ফুটলে মাছ বিছিয়ে দিয়ে লবণ ছিটিয়ে দিন। এক ঘণ্টা তাওয়ার ওপর দমে রেখে দিন। ঝোল মাখা মাখ হলে নামিয়ে একটু চিনি ছিটিয়ে দিন। গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

 

 

নিয়মিত পরিস্কার করুন আপনার ল্যাপটপ

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অনেকেই বাড়িতে কিংবা অফিসে ল্যাপটপ ব্যবহার করেন। অনেক ব্যবহারের কারণে ল্যাপটপে ধুলো জমে। আর অপরিষ্কার থাকলে এর পারফরম্যান্স কমে যায়, কাজ করার সময় হ্যাং হয়ে যায়, রিস্টার্ট নেয় এবং হঠাৎ বন্ধও হয়ে যেতে পারে। তবে ল্যাপটপ পরিষ্কারের সঠিক নিয়ম জানেন না অনেকেই। আর ভুলভাবে পরিষ্কার করলে ক্ষতি হতে পারে আপনার ল্যাপটপ।
ল্যাপটপ পরিষ্কারের সাধারণ কিছু নিয়ম রয়েছে। এগুলো মেনে ল্যাপটপ পরিষ্কার করা উচিত। যেমন-
* প্রথমেই ল্যাপটপের পাওয়ার সুইচ বন্ধ করুন। বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এর সঙ্গে চার্জারের সংযোগ থাকলে সেটিও খুলে নিন।
* এরপর একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ল্যাপটপের স্ক্রিন মুছে নিন। তবে ভেজা বা নোংরা কাপড় ব্যবহার করা ঠিক নয়। আর মনে রাখবেন কাপড়টি সুতির হলে ভালো হয়।
* ময়লা-ধুলোবালি আপনার ল্যাপটপের প্রধান শত্রু। এজন্য কি-বোর্ডের কোণায় কোণায় জমে থাকা ময়লা সরাতে নরম একটি টুথব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন।
* এছাড়া বাজারে ল্যাপটপের উপযোগী স্ক্রিন প্রোটেক্টর, কিবোর্ড প্রোটেক্টর ও মিনি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার পাওয়া যায়। তাছাড়া ধুলোবালি পরিষ্কার করতে কম্প্রেসড এয়ারও ব্যবহার করতে পারেন।
* ল্যাপটের মনিটর মোছার জন্য অ্যালকোহল ও অ্যামোনিয়া যুক্ত ক্লিনার ব্যবহার করা উচিত নয়। কেননা এতে মনিটরের ক্ষতি হয়।
* বাজারে নানা রকমের ক্লিনার স্প্রে পাওয়া যায়। তবে সেগুলো কখনোই ল্যাপটপ বা টিভির মনিটর পরিষ্কারে ব্যবহার করা ঠিক নয়। অনেকেই ফেসিয়াল টিস্যু দিয়ে মনিটর পরিষ্কার করেন; সেটিও ঠিক নয়।
* মনিটর পরিষ্কার করতে সুতির কাপড় ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভালো।
* ল্যাপটপ পরিষ্কারের সময় আরও কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। যেমন-
        * ল্যাপটপ যেহেতু অনেক বেশি তাপ উৎপন্ন করে তাই একে ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করতে হবে। এজন্য বাজারে নানা ধরনের কুলার পাওয়া যায়। তাছাড়া সূর্যের আলো, হিটার এবং রান্নাঘর থেকে ল্যাপটপ দূরে রাখা ভালো।
        * ল্যাপটপের ভেতরের অংশে পরিষ্কার করতে হলে এর ম্যানুয়াল ভালো করে পড়ে নেয়া উচিত।
         * পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পর ল্যাপটপ আবারও চালু করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন; সেটি যেন ভেজা না থাকে।
উল্লেখ্য, ল্যাপটপহলো কম্পিউটারের বহনযোগ্য সংস্করণ; এর পর্দা ১২ দশমিক ১ থেকে ১৯ ইঞ্চি হয়ে থাকে। ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ল্যাপটপ বাজারে ছাড়ে আইবিএম।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া