banner

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1071 বার পঠিত

 

সমস্যা যখন জন্মগত

হাবিব ও রাহেলার ছয় বছরের সংসার। একটি ছোট ছেলে তাদের। বয়স তিন। দুষ্টু আর মিষ্টি। রাহেলা সন্তানসম্ভবা। মাঝরাতে হঠাৎ ব্যথা উঠায় দ্রুত হাসপাতালে চলে আসেন তারা। হাবিব ব্যাংকের পিয়ন হিসেবে চাকরি করে। সংসারের ঝামেলাতে একটু দেরি করেই বিয়ে করেছিল। বউ এর অনেক যত্ন করে। সে দোয়া করছে যেন এবার মেয়ে হয়। মেয়ে হল সংসারের লক্ষ্মী। ওয়ার্ডের বাইরে বাপ বেটায় হাঁটাহাঁটি করছে। শাশুড়ি ও শ্যালিকা হাসপাতালের পথে রওনা হয়েছেন।

একটু পরে রাহেলার বরের ডাক পড়ল ভেতরে। কমবয়সী এক ডাক্তার ম্যাডাম বললেন, বসেন। আপনার একটা মেয়ে হয়েছে।

হাবিবের বুক থেকে পাথর নেমে গেল। বলে উঠল- আলহামদুলিল্লাহ। সে উঠে যেতে চাইল। কিন্তু ডাক্তারকে দেখে মনে হলো তিনি আরও কিছু বলতে চান। একটু সন্দেহ হল তার। হাবিবের ছেলে হয়েছিল যখন, তখনতো সোজা বাচ্চাটিকে হাতে তুলে দিয়েছিল। এত কথা কেউ তখন বলেনি। এসব ভাবতে ভাবতেই ডাক্তার ম্যাডাম বললেন- আপনার মেয়েটি সুস্থ্ই আছে তবে তার ঠোঁট আর তালু কাটা। হাবিব আকাশ থেকে পড়ল। এ আবার কেমন কথা। সে তো কোনোদিন এমন কিছুর কথা শোনেনি। ডাক্তার মেয়েটিকে দেখালেন। কী সুন্দর একটা শিশু। ঘুমাচ্ছে। কিন্তু ঠোঁটের কারণে কেমন কেমন লাগছে। হাবিবের বুকটা মুচড়ে উঠল। ডাক্তার তাকে বুঝিয়ে বললেন যে, এটা অপারেশনের মাধ্যমে ঠিক করা যায়। তবে শিশুর বয়স বাড়লে প্লাস্টিক সার্জনের কাছে যেতে হবে।

আসলে হাবিবের মেয়েটির যে সমস্যা তা সে না দেখলেও খুব একটা অপরিচিত রোগ এটি নয়। Medical Science এ এর নাম Cleft Lip. অনেক সময় ঠোঁটের সাথে তালুও কাটা থাকে। আবার কখনো শুধু তালুটাই কাটা থাকে।

সমস্যা কেন হয়?

অনেক ধরনের কারণে হতে পারে। কিছু বাবা-মায়ের জিন থেকে, কিছু আবার প্রকৃতিগত। যেমন- বাবার অধিক বয়স, মায়ের গর্ভকালীন সময়ে জ্বর, ইনফেকশন, এক্সরে বা রেডিয়েশন, কিছু ঔষধ যেমন ঘুমের, খিচুনির জন্য কোনো ঔষধ খাওয়া হলে।

কখন চিকিৎসা?

ঠোঁট কাটার জন্যে ৩ মাস থেকে ৬ মাস। তালু কাটার জন্যে ৯ থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত।  আসলে বাচ্চা ডেলিভারির পরেও করা সম্ভব। কিন্তু এই সময়ে করলেই সবচাইতে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।

না করালে কী সমস্যা?

বাচ্চার খেতে সমস্যা

দেখতে খারাপ লাগা

ওজন না বাড়া

কানে ও বুকে ইনফেকশন।

এই ধরনের বাচ্চাদের খাওয়ানোর নিয়ম 

বেশিরভাগ সময় যেসব বাচ্চার ঠোঁট কাটা থাকে তারা বুকের দুধ খেতে পারে না। সে কারণে তাদের বোতল বা চামচে করে খাওয়াতে হয়। এদের ফিডারের নিপলের ছিদ্রটা একটু বড় রাখতে হয় যাতে খুব সহজেই খেতে পারে। চামচ জিহবার পেছনের প্রান্তে নিয়ে খাওয়াতে হবে। খাওয়ানোর সময় মাথা উঁচু রাখতে হবে। খাওয়ানোর পর পরেই শিশুর পিঠে চাপড় দিয়ে অতিরিক্ত বাতাস বের করে ফেলতে হবে।

চিকিৎসা কোথায় পাওয়া যাবে?

বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ক্যাম্প-এ বিনামূল্যে অপারেশন করা হয়।

ডা. শারমিন সুমি : জুনিয়র কনসালট্যান্ট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জার

Facebook Comments