banner

রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 605 বার পঠিত

 

পুরুষরা নারীকে সফল দেখতে চায়, ঘরেও রাখতে চায়

ঢাকা: নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল তিনজন নারী বলেছেন, সমস্যা ‍পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতায়। তারা নারীকে সফল দেখতে চায়, আবার ঘরেও রাখতে চায়। পুরনো ধ্যান-ধারণা আর মানসিকতার বদল না হলে এসব নারী দিবস করে কোনও ফল হবে না।

মঙ্গলবার বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে নিজ কার্যালয়ে নিউজনেক্সটবিডি ডটকম আয়োজিত এক ঘরোয়া আড্ডায় তারা একথা বলেন।

মর্ডার্ন সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর খাদিস্তা নূর-ই নেহেরিন, চিত্রনির্মাতা-অভিনেত্রী লুসি তৃপ্তি গোমেজ, এটিএন বাংলার সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার ফারহানা সালাম, বিনিয়োগ পরামর্শক সৈয়দ জামাল ও নিউজনেক্সটবিডি ডটকমের সম্পাদক নজরুল ইসলাম এ আড্ডায় অংশ নেন।

আড্ডার সূত্রপাত করেন নজরুল ইসলাম। জানতে চান, রাষ্ট্রপতি বাদ দিলে বাংলাদেশের বড় পাঁচটি পদে নারী, এই অবস্থায় নারী তার অধিকারগুলো এখনো পাচ্ছে না, তাহলে সমস্যাটা কোথায়?

জবাবে খাদিস্তা নূর-ই নেহেরিন বলেন, আমাদের দেশে পুরুষেরা খুব পরিবারতান্ত্রিক মানসিকতার। তারা নারীকে সফল দেখতে চায়, আবার ঘরেও রাখতে চায়।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে দেখবেন ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের রেসাল্ট অনেক ভালো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ডিএমসি সব জায়গাতেই মেয়েরা অনেক ভালো করছে। তারপরও মেয়েরা এগুতে পারছে না কারণ স্যাক্রিফাইসটা সবসময় মাকেই করতে হয়। সংসার কিংবা সন্তানের চাপটাও নিতে হয় মাকে।

মিডিয়া নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করে- প্রসঙ্গ যখন এই তখন ফারহানা সালাম বলেন, মেয়েরা সুন্দর বলেই কি তারা নিউজ প্রেজেন্টার হয়? ছেলেরা এই পেশায় আসতে পারে না? এটা আমাদের জন্য সম্মানের নাকি অসম্মানের? মাঝে মাঝে আমি নিজেই দ্বিধাতে পরে যাই। আর সাধারণ মানুষও নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে একটা সুন্দর মেয়েকেই দেখতে চায়।

একই বিষয়ে লুসি তৃপ্তি গোমেজ জানান, ‘এই ব্যাপারে আমার কোন দ্বিধা নেই, আমি নিশ্চিত যে মিডিয়া আসলে নারীকে পণ্য হিসেবেই উপস্থাপন করে। কারণ এখানে বিক্রির ব্যাপারটা মূখ্য।’

‘এক্ষেত্রে গোটা বিষয়টিকে শুধুমাত্র পণ্য হিসেবে না দেখে যদি জব হিসেবে দেখা যায় তাহলে কেমন হয়’- নজরুল ইসলামের এ প্রশ্নে লুসি তৃপ্তি গোমেজ বলেন, ‘এটাকে আমি জব হিসেবে দেখবো কেন?’

খাদিস্তা নূর-ই নেহেরিন বলেন, ‘এখানেও তো মেয়েদেরকে উপেক্ষা করা হচ্ছে, কারণ একটা মেয়েকে প্রোডাক্ট হিসেবে দেখালেও একটা ছেলেকে কেন প্রোডাক্ট হিসেবে দেখানো হচ্ছে না! তাছাড়া এখানে সব মেয়েরা কিন্তু সুযোগটা পাচ্ছে না। মেয়েদেরকে বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্কিন কালার, ফেস ডায়াগ্রাম এই বিষয়গুলোও কিন্তু বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠছে।’

সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে যে মামলাগুলো হয় সেই মামলার ৯৫%ই ফেক এর কারণটা কি- জানতে চান নজরুল ইসলাম।

জবাবে খাদিস্তা নূর বলেন, নারীরা প্রকৃতিগত ভাবেই পুরুষদের থেকে দুর্বল। ফলে পুরুষরা অত্যাচারের সুযোগ পায়। নারীরা যদি রুখে দাঁড়াতে পারতো তাহলে পুরুষেরা এ সুযোগ পেতো না। বিষয়গুলো আদালতে গেলে পুরুষরা সবাইকে কিনে ফেলে, ফলে নারীদের একা একা দৌঁড়াতে হয়। এমনকি তার পরিবারেরও কেউ তার পাশে দাঁড়ায় না। যার কারণে বেশিরভাগ মামলায় পুরুষরা জিতে যায় আর বাকি মামলাগুলো খুব দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। এর কোন সুরাহা হয় না।

তিনি বলেন, আমাদের সমাজে একজন নারী নির্যাতিত হয়েছে এটাই যেন একটা লজ্জার ব্যাপার। সোসাইটির সমস্ত লজ্জাই যেন নারীদের জন্য।

সৈয়দ জামাল বলেন, সবাই ধর্ষক না তবে আমরা অধিকাংশ লোকই ধর্ষককে বাঁচাই। আমার মেয়ে যখন ধর্ষণের শিকার হবে তখন আমি এটা আর কাউকে জানতে দেবো না। কারণ সমাজ ওই মেয়েটিকে দোষ দেবে। এজন্য বাবা হিসেবে দু:খটা নিজের মধ্যে চেপে রেখে আমি বিষয়টি মেনে নিচ্ছি।

তিনি বলেন, এক বছর আগে যখন নারীদের ‘জলন্ত শত্রু’ চট্টগ্রামের আল্লামা শফি অশ্রাব্য কথাগুলো বলেছেন আমার খুব কষ্ট লেগেছে। দেশে এত নারীবাদী আইনজীবী, এক্টিভিস্ট রয়েছেন তারা কেউ তার বিরুদ্ধে একটা মামলাও করেননি।

Facebook Comments