banner

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 458 বার পঠিত

 

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে ৫ হাজার নারী

প্রতিষ্ঠানের ‘বস’ একজন নারী। পুরো প্রতিষ্ঠান চালানোর গুরুদায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এমন দৃশ্য বাংলাদেশে খুব একটা দেখা যায় না। পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখনো নারীরা এ দেশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে যেতে পারছেন খুব কম। ব্যবসায় নেতৃত্বে নারীরা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। বিশ্ব প্রেক্ষাপটেও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নারী নেতৃত্বের খুব বেশি অগ্রগতি নেই।
বাংলাদেশে শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা নীতিনির্ধারণী উচ্চ পদে মাত্র ৪ হাজার ৯৮৫ জন নারী আছেন। শিল্প ও সেবা খাতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা উচ্চ পদের মাত্র ১৩ দশমিক ৩ শতাংশে কাজ করছেন নারীরা।
এই হিসাব সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)। ২০১৩ সালের শ্রমশক্তি জরিপে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নারীর নেতৃত্বের এই চিত্র ফুটে ওঠে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাইডাস ফিন্যান্সিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান রোকিয়া আফজাল রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পৃথিবীর সব জায়গায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার নেতৃত্বে নারীর অংশগ্রহণ বেশ কম। বাংলাদেশেও নারীর নেতৃত্বের হার কম। এর মানে এই নয় যে তাঁদের নেতৃত্বগুণ নেই। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার দক্ষতা তাঁরা রাখেন। নেতৃত্বের পারদর্শিতাও তাঁদের রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এ দেশের নারীরা তা প্রমাণও করেছেন। তিনি মনে করেন, নারীদের উচ্চ পদে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। এ ছাড়া নেতৃত্বগুণের দক্ষতা বাড়ানোর সুবিধা সম্প্রসারিত করতে হবে।
কৃষি, সেবা ও শিল্প—এই তিনটি খাতের প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কিংবা উচ্চ পদে কর্মরতদের হিসাব দেওয়া হয়েছে বিবিএসের ওই জরিপে। গ্রাম এলাকায় এসব খাতের কোনো প্রতিষ্ঠানেই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদে নারী নেই। এমনকি উচ্চ পদে বা নীতিনির্ধারণী পদেও নেই। আবার শহর এলাকায় কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানেও নারীরা উচ্চ পদে নেই। শহর এলাকার শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানেই শুধু নারীরা উচ্চ পদে আছেন। সেই হিসাবে নারীরা এখন কেবল শহর এলাকার শিল্প ও সেবাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কিংবা উচ্চ পদে যেতে পেরেছেন। বিবিএসের হিসাবে, শিল্প খাতে প্রধান নির্বাহী কিংবা উচ্চ পদে আছেন ২ হাজার ২৪৩ জন। আর সেবা খাতে এর সংখ্যা ২ হাজার ৭৪১।
এবার দেখা যাক, পুরুষের চিত্রটি। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, পুরুষেরাই দেশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ৮৬ দশমিক ৭ শতাংশ উচ্চ পদ দখল করে আছেন। দেশে ৩৭ হাজার ৩৮২ জন পুরুষ আছেন, যাঁরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কিংবা নীতিনির্ধারণী পদে আছেন। এমন উচ্চ পদে রয়েছেন কৃষি খাতে ১ হাজার ৫২৩ জন, শিল্পে ৯ হাজার ৮৮৮ এবং সেবা খাতে ২৫ হাজার ৯৭১ জন পুরুষ।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নারী নেতৃত্বের বৈশ্বিক চিত্রটি বাংলাদেশের চেয়ে ভালো হলেও আশাবাদী হওয়ার মতো নয়। বিশ্বজুড়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার নেতৃত্বেও পুরুষেরা এগিয়ে আছেন। তবে অবশ্যই তা বাংলাদেশের চিত্র অপেক্ষা বেশ ভালো।
২০১৪ সালের গ্রান্ট থর্নন্টন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্বখ্যাত ফোর্বস সাময়িকী জানিয়েছে, গত কয়েক বছরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নারীর অংশগ্রহণ খুব একটা বাড়েনি। ২০০৭ সালে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নেতৃত্বদানকারী পদগুলোতে মাত্র ২৪ শতাংশ ছিলেন নারী। ২০১৩ সালের এসেও এই হারে পরিবর্তন হয়নি, ২৪ শতাংশই রয়ে গেছে। ২০১১-১২ সময়কালে এই হার বরং কিছুটা কমে গিয়েছিল।
নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ক্যাটালিস্ট। প্রতিষ্ঠানটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর (এসঅ্যান্ডপি) সূচকের ৫০০টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ২০টির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন নারীরা। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হলো জেনারেল মোটরস, পেপসিকো, ইয়াহু, ওরাকল, আইবিএম, হিউলেট প্যাকার্ড (এইচপি) প্রভৃতি। মোটা দাগে বলা যায়, বিশ্বের অন্যতম বড় এই স্টক এক্সচেঞ্জের এসঅ্যান্ডপি সূচকের ৫০০ কোম্পানির মাত্র ৪ শতাংশের প্রধান নারীরা।
ক্যাটালিস্টের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আর এসব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের মাত্র ১৯ দশমিক ২ শতাংশ পদে নারী রয়েছেন। তবে আশার কথা—এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমশক্তির ৪৫ শতাংশই নারী।

source: collected

Facebook Comments