All posts by Oporajita

নাটোরে যৌতুকের দায়ে গৃহবধুকে হত্যা

natore-map20131130231251নাটোর প্রতিনিধি,অপরাজিতাবিডি ডটকম: নাটোরের সদর উপলার ছাতনী বটতলায় একটি সোনার মালা ও যৌতুক না দেয়ায় এক গৃহবধুকে গলায় ফাঁস দিয়ে ও কানের নিচে সুচ ফুটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

 

নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে নাটোর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

 

নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নাটোর সদরের কাফুরিয়া এলাকার মকবুল হোসেনের মেয়ে আশুরা বেগমের (২২) প্রায় দুই বছর আগে ছাতনী বটতলার আরিফুল ইসলামের সাথে বিয়ে হয়।

 

বিয়ের পর থেকে তার শাশুড়ী ও নোনদ একটি সোনার মালা ও যৌতুকের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। এক পর্যায়ে সোমবার রাতে তার গলায় ফাঁস দিয়ে ও কানের নিচে সুচ ফুটিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। লাশের চোখের পাশেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

 

 নাটোর থানার ওসি আসলাম উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মোজাম্মেল হক বাদী হয়ে নিহতের স্বামী আরিফুল ইসলাম, শশুড় আলাউদ্দিন ওরফে পলান কবিরাজ, শাশুড়ী জমেলা বেগম ও নোনদ কুলসুম খাতুনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে নাটোর থানায় হত্যা মামলা করেছে। অভিযুক্তদের আটকের চেষ্টা চলছে।

 

কথা সাহিত্যিক ফরিদা হোসেনকে নিয়ে লেখা-একজন ফরিদা হোসেন

Forida Hossain (2)বহুমুখী প্রতিভায় উদ্ভাসিত ফরিদা হোসেন। আমাদের সাহিত্য জগতের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। জন্ম : ১৯শে জানুয়ারি,স্থান কোলকাতা। ফরিদা হোসেন ২০০৪ সালে সাহিত্যে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদক পান। এছাড়াও ৬ টি স্বর্ণ পদক সহ মোট ২৫ টি সাহিত্য পুরস্কার পান বিভিন্ন সংগঠন থেকে। ফরিদা হোসেন একাধারে একজন ছোটগল্প লেখক, ঔপন্যাসিক, শিশু সাহিত্যিক, নাট্য পরিচালক, গীতিকার ও সুরকার এবং আবৃত্তিকার। লেখার বিষয়বস্তু প্রধানত ছোট গল্প উপন্যাস-শিশু সাহিত্য। শিশুদের জন্যে বিশেষ বানী সমৃদ্ধ রূপকথার নাটক ইত্যাদি। বিটিভিতে ধারাবহিক ভাবে প্রচারিত রূপকথার দেশে, সমাদৃত হয়েছে সর্বমহলে।

 

তিনি এক সময় রেডিওতে সংবাদ পাঠ, আবৃত্তি ও মহিলা এবং শিশুদের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংগঠন পি.ই.এন এর বাংলাদেশ সেন্টারের সভাপতি ও “অবিনশ্বর” সাহিত্য পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ৬০ এর দশকে ছাত্রী অবস্থায় তার প্রথম গল্প গ্রন্থ “অজন্তা” প্রকাশ করে পাইওনিয়ার পাবলিকেশন। প্রচ্ছদ করেন বিখ্যাত শিল্পী ও টিভি ব্যক্তিত্ব জনাব মোস্তাফা মনোয়ার।

 

১৯৬৫ সালে বিটিভিতে প্রচারিত হয় ফরিদা হোসেন রচিত ও পরিচালিত প্রথম শিশুতোষ নাটক। ফরিদা হোসেন ১৯৬৬ এর অক্টোবরে দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করেন। তিনি সহিত্য চর্চার পাশাপাশি আবৃত্তি, সংবাদ পাঠ, শিশু ও মহিলা বিষয়ক অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। মুক্তধারা, অঙ্কুর, নন্দন, মাওলা ব্রাদার্স, শিল্পতরু, হাতেখড়ি, শিকড় প্রকাশনী, মমন প্রকাশনী, মাম্মী প্রকাশনী এবং তার নিজের আঞ্জুম প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয়েছে বহু গ্রন্থ।

 

তার গল্প সংকলন, উপন্যাস, নাটক, শিশু সাহিত্য, অনুবাদগ্রন্থ সহ সব মিলিয়ে প্রায় ৪০টির মতো গ্রন্থ সংখ্যা রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, উপন্যাস- শ্রষ্ঠ গল্প সম্ভার,আরাধনা,সহযাত্রী,একজন কাজলীর কথা, একটি শীতল মৃত্যু,অজন্তা,ঘুম, শাড়ী, হিমালয়ের দেশে, নির্বাচিত গল্প, ক’জনার কথা,স্মৃতি কণিকা,জীবন যেমন,মুখোশ, ইংরেজি গল্প- Short Stories from Bangladesh, Blessing, Selected Short Stories, Devotion, শিশু সাহিত্যের মধ্যে- তেলেদা’র তেলাতঙ্ক, লুকোচুরি, মিতালী, আনন্দ ফুলঝুরি, সুরে ছন্দে ছড়াগান, রোজ রোজ, রূপকথার দেশে, শিশু সাহিত্য সমগ্র,নাটক- মায়া দ্বীপে অভিযান, খুকুর স্বপ্ন, চাঁদ কন্যার কথা, সপ্তবর্ণা, ঝড়ের পরে, অচীনপুরের রূপকথা, তুষার কন্যা, তারার খোঁজে, আনন্দ ভ্রমণ।

 

ফরিদা হোসেন ১৯৯৭ সালে স্কটল্যান্ড এবং ২০০৩ সালে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংস্থা (পি ই এন) এর সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। মেক্সিকোতে ফরিদা হোসেনের রচিত ও পরিচালিত শিশুতোষ সর্ট-ফিল্ম ফ্রেন্ডশীপ বিশেষ সুনাম অর্জন করে।

 

২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার জিয়ানজিওতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল পেন কংগ্রেসে যোগদান করেন এবং বাংলাদেশের লেখকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন। ফরিদা হোসেন আঞ্জুম প্রকাশনী, আঞ্জুম টেলি নেটওয়ার্ক ও অবিনশ্বর সাহিত্য পত্রিকার সত্ত্বাধিকারী।

 

বর্তমানে ফরিদা হোসেন আলোকিত শিশু গড়ার লক্ষ্যে, নিজস্ব রচনা ও পরিচালনায় নির্মান করছে শিশুতোষ ধারাবাহিক রূপকথার দেশে। যার ২৪ টি পর্ব ইতিমধ্যে বিটিভিতে প্রচারিত হয়েছে, এছাড়া ও তিনি ব্যস্ত রয়েছেন সাহিত্য ও শিশুতোষ অনুষ্ঠান নির্মানে।

 

ফরিদা হোসেন চট্রগ্রাম জেলার মিরেরশ্বরাই উপজেলার শাহেরখালী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শ্রমিক নেতা ও আই. এল. ও এর গর্ভনিং বডির প্রাক্তন পরিচালক মরহুম ফয়েজ আহমেদ ও মরহুম বেগম ফয়েজুন্নেছার প্রথম কন্যা এবং ফেনী জেলার রাজনীতিবীদ জনাব মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের সুযোগ্য স্ত্রী।

প্রতিবেদক,অপরাজিতাবিডি ডটকম

আগে সিদ্ধান্ত, পরে ক্যারিয়ার

image_99809ক্যারিয়ার প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ই নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। আপনার ইচ্ছা, চিন্তা-ভাবনাসহ অনেক বিষয়ই একটি সফল ক্যারিয়ারকে প্রভাবিত করে থাকে। তবে এতসব কিছুর মধ্যেও সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটি নেওয়ার সক্ষমতা অনেক সীমাবদ্ধতাকেই কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে। আর তাতে করেই ক্যারিয়ারের পথে অনেকটাই এগিয়ে থাকা যায়।

আমাদের জীবনটা খুব বেশি বড় নয়। ছোট্ট জীবনকে সীমিত চেষ্টায় অপরিসীম আন্তরিকতায় পূর্ণ করা যায় যদি সিদ্ধান্তটা ঠিক হয়। নিজের সিদ্ধান্তের উপর ভর করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার তৃপ্তির কোনো তুলনা হয় না। অপর দিকে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুল করার কষ্টও কিন্তু নিজেকেই ভোগ করতে হয়। কারণ সিদ্ধান্তটা যেহেতু আপনার তাই তার দায়ভারও আপনার। অনেক বাবা-মা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা ছেলে মেয়েদের পাশে এসে দাঁড়ান। তবে অনেকে আছেন যারা কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিতে একটুও ভুল করেন না। তাই মা বাবা যদি ভুল সিদ্ধান্তের ফলে বিরূপ হন, তাহলে তো আর কথাই নেই। তবে একটু ভেবে দেখুন, আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন কিন্তু তারাও দেখেছেন। তাই আপনার ক্ষতি কিংবা কষ্টে তাদের কষ্ট হয়। তাই যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তার সবদিক বিবেচনা করুন। তার ভালো-খারাপ দিক নিয়ে ভাবুন। পজেটিভ হওয়া ভালো কিন্তু আমরা অনেক ক্ষেত্রে নেগেটিভ দিকটাও এড়াতে পারি না। তাই ভুল করার আগেই সচেতন হওয়া জরুরি।

আলোচনা ও সিদ্ধান্ত

সব সময় মনে রাখতে হবে, আলোচনার মাধ্যমে একটা বিষয়ের অনেক দুর্বল আর সবল দিকগুলো বেরিয়ে আসে। তাই সেটা আপনার সাথে কতটা যায় তা দেখার সুযোগ আপনি আলোচনার ফলেই পাবেন। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মা-বাবা, ভাই-বোন, কাছের বন্ধু কিংবা সমবয়সী চাচা-মামার সাথে আলোচনা করতে পারেন। বেশিরভাগ শুভাকাঙ্ক্ষি যে মত দিবে আর আপনার মন যা বলবে তার উপর ভর করে সিদ্ধান্ত নিন। আমাদের বক্তব্য একটাই, বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিজে বুদ্ধি আর মনন প্রয়োগ করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারলে সেটা আত্মবিশ্বাসের পরিচয় সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটা যে সব সময় নির্ভুল হবে তার নিশ্চয়তাও নেই। তাই কাছের লোকজনের সাথে আলোচনা করুন। যারা আপনার ভালো চায় তাদের সাথে আলোচনা করে নিলে আপনার সিদ্ধান্তটাও ভালো হবে। দেখবেন এতে মনের জোরও অনেক বেড়ে যাবে। পরে কোনো সমস্যা হলে সাহায্যের হাতও পাবেন অনেক।

সব সিদ্ধান্তেই সবাই

যেকোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় হলে প্রথমে আমরা বাবা-মার দারস্থ হই। কিন্তু এমন অনেক সিদ্ধান্ত আছে যা নিয়ে বাবা-মার কাছে যাওয়া যায় না। যেমন, প্রেম-ভালোবাসার কথাই ধরা যাক। যদিও আজকাল অনেক মেয়েই মার ভালো বন্ধু। তারপরও এই বিষয়টা নিয়ে মায়ের সাথে আলোচনাটা আমাদের দেশে এখনও সহজ হয়নি। কোনো ছেলেকে অথবা মেয়েকে ভালো লাগলে তার সম্পর্কে জানা থেকে শুরু করে প্রেম প্রতিষ্ঠা করা পর্যন্ত আপনি আপনার ভালো বন্ধুর উপর নির্ভর করতে পারেন। প্রস্তাব দেওয়ার মধ্যস্থতা পর্যন্ত তাদের হাতে ছেড়ে দিতেন পারেন। আর এই সুযোগে তারা ‘বিপদে বন্ধুর পরিচয়’ কথাটির যথার্থতা প্রমাণ করবে। পরিচয়ের প্রথম দিকে বন্ধু-বান্ধব একসাথে মিলে বেড়াতে যান, এ ক্ষেত্রে অনেক ছোটখাট দিক বের হয়ে আসে। সম্পর্কটাও সহজ স্বাভাবিকভাবে এগুতে শুরু করে।

সমাধানে আপনি

আমরা অনেকেই ছোটবেলায় ‘এইম ইন লাইফ’ পড়ে জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে নেই। কারও ডাক্তার, কারও ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সিদ্ধান্ত পাকা। তবে কিছুদিন যেতে না যেতে সেই স্বপ্নের রঙ বদলাতে শুরু করে। স্বপ্নের রঙ তখন খয়েরি না হয়ে অন্য কোনো রঙ পায়। যখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসে, তখন নিজেকে প্রশ্ন করার সাথে সাথে বাবা-মার মতের ব্যাপারেও গুরুত্ব দিন। কারণ আপনার ভিতর এমন কোনো বিষয় আছে যা আপনার চেয়ে বাবা-মা ভালো বুঝেন। এ ছাড়া নিজের ক্যারিয়ারের ব্যাপারে নিজের মত নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করলে পরে কোনো সমস্যা হলে সমাধানে তারা সাহায্য করবে। সিদ্ধান্ত নিজের কিন্তু পরামর্শ বাবা-মার হতেই পারে।

পরিশেষ

‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’। ছোটবেলায় এই বাক্যের সারকথা আমাদের খুব ভালো করে বুঝানো হয়েছিল যেন কোনো অবস্থায় একাকিত্বকে আঁকড়ে না ধরি। তাই সিদ্ধান্ত নিজে নিন। নিজের সাথে নিজেই আলোচনা করুন, ভাবুন। সাথে সাথে মনের কথা খুলে বলুন আরও কয়েকজনকে। যদি সিদ্ধান্ত ভুল হয়, তবে তাদের সাথে আলোচনা করে মনের বোঝা তো হাল্কা করা যাবে।

মনে রাখুন

 সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে অন্যের পরামর্শ শোনা ও আলোচনা করা দুটোই সমান জরুরি।

 যখন কোনো আলোচনায় বসবেন, তখন অন্যের মতামত শোনার সাথে সাথে নিজের ভাবনাটাও স্পষ্টভাবে জানাতে হবে।

 কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাথে সাথে সেটা কাজে লাগানো উচিত্ নয়। কারণ অনেক সময় নিজের সিদ্ধান্তও বদলে যেতে পারে। তাই সময় নিয়ে এগুতে হবে।

 আবার সিদ্ধান্ত নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতাও ঠিক নয়। ঠিক হবে না ভুল হবে, করবো কি করব না করে অনেক সময় কাজের গুরুত্ব কমে যায়। সময়মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে সময়মতো কাজ করা ভালো। এতে কাজের ফলাফল ভালো হয়।

 আলোচনায় বসার পর অন্য কারও সাথে নিজের সিদ্ধান্ত বিপরীতমুখি অবস্থান নিতে পারে। সেক্ষেত্রে আরও কারও সাথে আলোচনায় বসুন। আর শেষ পর্যন্ত নিজের মন সায় না দিলে সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। এতে করে কাজের প্রতি নিজের আগ্রহ আর নিষ্ঠার ঘাটতি তৈরি হতে পারে। ফলে ওই কাজে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যেতে পারে। সূত্র: ওয়েবসাইট

শীতকালে শিশুর যত্ন

jfjfশীতে বেশি অসুস্থ্ হয় শিশুরা। বিরুপ এই সময়ে শিশুরা কী  ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় এবং কীভাবে প্রতিকার পাওয়া যায় এসব প্রশ্ন নিয়ে কথা বলেছেন এ্যাপোলো হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ কামরুল হাসান।

শীতে শিশুদের কী কী রোগ দেখা যায়?

ডাক্তার: মূলত এ সময় শিশুরা নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ঠাণ্ডা, কাশি, সর্দি এবং এ্যাজমায় বেশি আক্রান্ত হয়। আর সঙ্গে সিজোনাল জ্বর তো রয়েছেই।

এসব রোগের লক্ষণ:

ডাক্তার: ঠাণ্ডা অনেক দিন স্থায়ী হওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব, বুকের খাঁচা দেবে যাওয়া, দ্রুত শ্বাস নেয়া।

কারা বেশি আক্রান্ত হয়:

ডাক্তার: সাধারণত আমাদের দেশের অপুষ্ট, কম ওজনের শিশুরাই এধরনের রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। আর দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা সুষম খাদ্য এবং যত্নের অভাবে পুষ্টিহীনতায় ভোগে। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে।

কীভাবে সতর্ক হতে হবে?

ডাক্তার: শিশু অসুস্থ হলে মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে এবং নিয়মিত খাবার খাওয়াতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তার ঠাণ্ডা না লাগে। তাদের ধুলা বালি থেকেও দূরে রাখতে হবে। শিশু একটানা তিনদিনের বেশি অসুস্থ থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।naba20131221123543

চিকিৎসা: নিউমোনিয়া প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা গেলে ১৫ দিনের চিকিৎসায়ই শিশু ভালো হয়ে যায়। আর ভাইরাস জনিত জ্বরও ৩ থেকে ৫ দিনেই সেরে যায়। শিশুকে জন্মের পর থেকে সবগুলো টিকা সময় মতো দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। টিকার পাশাপাশি ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর বিষয়েও তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, সবগুলো টিকা নিয়মিত দিলে শিশু বিভিন্ন মারাত্বক রোগ থেকে রক্ষা পায় এবং তার মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

সাধারণ সর্দি, কাশিকে অবহেলা না করারও পরামর্শ দেন তিনি। শীতের মধ্যে আগুন জ্বেলে তাপ নেওয়ার সময় প্রতিবছর বহু দুর্ঘটনা ঘটে এবং এতে অনেক শিশু মারাত্বক আহত হয়, সবাইকে এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করেন কামরুল হাসান।

প্রতিবেদক,অপরাজিতাবিডি ডটকম

ফেসবুক নিয়ে বিব্রত শর্মিলী

 image_698_100188সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুক নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়েছেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ। চলতি সপ্তাহে তিনি জানতে পারেন, ফেসবুকে তার নামে একটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করা হচ্ছে।

 

 এ প্রসঙ্গে শর্মিলী আহমেদ বলেন, ‘আমি সবসময় শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকি। তাই ফেসবুক নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। কিন্তু ফেসবুকে আমার নামে কে বা কারা একটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। সেখানে যেসব স্ট্যাটাস আমি দেখেছি, তাতে সত্যিই হতাশ হয়েছি। যিনি বা যারা এই অ্যাকাউন্টটি খুলেছেন, তাদের প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ, প্লিজ এটা বন্ধ করুন। কারণ, আমার ব্যক্তিজীবনে এ নিয়ে অনেক ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে।’

 

শর্মিলী আহমেদ আরো বলেন, ‘অনেক পরিচিত সাংবাদিক এবং শিল্পী এই ফেজবুক পেজের সঙ্গে (বন্ধু হিসেবে) রয়েছেন। তাদেরও আমি অনুরোধ করব, আপনারা এই অ্যাকাউন্টকে বস্নক করে দিন।’

 

-প্রতিবেদক,অপরাজিতাবিডি ডটকম

 

পড়শীর বাজিমাত

1484110_10151932147094962_205620818_nকণ্ঠশিল্পী পড়শী।  কণ্ঠগুণে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন তিনি। প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে নিজেই প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে চলছেন তিনি। বছরজুড়ে আলোচনায় থাকা, রেকর্ডসংখ্যক সাড়ে তিন লাখ ভক্ত নিয়ে ফেসবুক পেজে ভেরিফায়েড হওয়া ও প্রকাশিত অ্যালবামের জনপ্রিয়তার বিচারে ২০১৩ সালের সেরা তারকার তকমাটি লাভ করেছেন তিনি। তাই তাকে নিয়ে বর্ষশেষ সংখ্যার বিশেষ এ আয়োজন।

 

আনলাকি থার্টিনকে লাকি থার্টিনে পরিণত করলেন তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী পড়শী। ২০১৩ সালে ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করেছেন তিনি। বছরজুড়ে আলোচনায় থাকা, রেকর্ডসংখ্যক সাড়ে তিন লাখ ভক্ত (বর্তমানে ছয় লাখ) নিয়ে ফেসবুক পেজে ভেরিফায়েড হওয়া ও প্রকাশিত অ্যালবামের জনপ্রিয়তার বিচারে ২০১৩ সালের বর্ষসেরা কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় তাকে।

 

চলতি বছর পড়শী নিজের অ্যালবামে হিন্দি গান স্থান দিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। এ জন্য তাকে বেশ সমালোচনারও মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে কেউ কেউ বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখেছেন। এদিকে ভারতের বিভিন্ন নৈসর্গিক লোকেশানে নির্মিত মিউজিক ভিডিওটি নিয়েও পড়শী অপ্রত্যাশিত সাড়া পেয়েছেন। সেই সঙ্গে টিভি লাইভ শো, কনসার্ট ও সর্বাধিক ছবিতে প্লেব্যাক করেও চমক সৃষ্টি করেছেন তিনি।

 

দিন দিন পড়শীর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তার ব্যস্ততাও দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। গানের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুকেও তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। বর্তমানে পড়শীর ফেসবুক ভক্তের সংখ্যা ছয় লাখ। এ বিবেচনায় তাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নারী তারকা হিসেবেও স্বীকৃতি প্রদান করা যায়।

 

খুদে গানরাজ থেকে উঠে আসা পড়শী কৈশোর থেকেই গান গেয়ে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই গানের সঙ্গে তার সখ্য। তার পুরো নাম সাবরিনা এহসান পড়শী। বর্তমানে তিনি ইন্টারে পড়ছেন। ২০০৮ সালে চ্যানেল আইয়ের খুদে গানরাজ প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়েছিলেন তিনি। ২০১১ সালের রোজার ঈদে স্বনামে প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ করে মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনায় আসেন। এ অ্যালবামের ‘তোমারই পরশ’ ও ‘লজ্জা’ গান দুটি সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। গত বছর তার দ্বিতীয় একক ‘পড়শী-টু’ প্রকাশিত হয়। এ অ্যালবামটিও শ্রোতাপ্রিয়তা অর্জন করে। সর্বশেষ চলতি বছর প্রকাশিত হয় তার তৃতীয় অ্যালবাম ‘পড়শী-থ্রি’। এ অ্যালবামটিও শ্রোতামহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। বাংলা গানের পাশাপাশি এতে স্থান পেয়েছে ‘খোদা তুজছে দোয়া হে এ/মেরি কিসমাত তু লিখ এইসে’ শিরোনামে একটি হিন্দি গান। এর কথা লিখেছেন মুম্বাইয়ের গীতিকার জোনায়েদ ওয়াসি। গানটির সুর-সঙ্গীত করেছেন ইমরান। অ্যালবাম প্রকাশের পর পরই এ গানটি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে অনেক ধরনের কথা ওঠে। ইতিবাচক ও নেতিবাচক বাকবিত-ার যুদ্ধের ফাঁকে গানটি শ্রোতাদের হৃদয়ে ভালো করেই ঠাঁই করে নেয়। ফেসবুক ভক্তদের অনুরোধে খুব শিগগিরই পড়শী গানটির মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করতে যাচ্ছেন।

 

পড়শী প্রতিদিন সকালেই হারমোনিয়ামে গানের রেওয়াজ করতে বসে পড়েন। ছোটবেলায় নানুর উৎসাহে গানের রেওয়াজ করা শুরু করেন তিনি। সেই থেকেই ছোট্ট পড়শী নানুর কাছে কখনো নাচ শেখা, কবিতা আবৃত্তি, আবার কখনো অঁকাঅঁকি শেখার সুযোগটা পেয়েছিলেন। নানু তার আদরের নাতনিকে গানের সিডি, আর্ট পেপার, কবিতার বই দেয়া থেকে শুরু করে নাচের স্কুলেও ভর্তি করিয়ে দেন। নাচের স্কুলে ভর্তির পর বোঝা গেল, শুধু নাচে নয়; গানেও পড়শীর স্বর্ণকণ্ঠ রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পড়শী চ্যানেল আইয়ের ‘খুদে গানরাজ’-এ অংশ নিয়ে সবার স্বপ্ন পূরণ করেন।

 

বর্তমান ব্যস্ততা প্রসঙ্গে পড়শী বলেন, ‘বর্তমানে আমার রুটিনগুলো কিছুটা এলোমেলো হয়ে গেছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণেই সব কিছু গুলিয়ে ফেলছি। আগে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতাম। গানের রেওয়াজ শেষে পড়াশোনায় মন দিতাম। এরপর স্কুলে যেতাম। বাসায় ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার পড়াশোনা শুরু করতাম। আর ছুটির দিনগুলোয় বিভিন্ন স্টেজ শো কিংবা কনসার্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। তবে ইদানীং অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কলেজ বন্ধ থাকছে। শোর সংখ্যাও কমে গেছে। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠতে আর ইচ্ছা হয় না। আজকাল অধিকাংশ সময় ঘরের মধ্যেই কাটাতে হচ্ছে।’

 

ফেসবুক কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতির বিষয়ে পড়শী বলেন, ‘আমার নামে অসংখ্য ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও ফ্যান পেজ আছে। এগুলোর ফলে আমার ভক্ত-শ্রোতারা প্রতারিত হচ্ছিলেন। এ ছাড়া সেসব অ্যাকাউন্ট থেকে নানা ধরনের বাজে কথাও ছড়ানো হচ্ছিল। সেসব বন্ধ করতে কিছু দিন আগে আমি ফেসবুকে ভিডিওবার্তাও প্রকাশ করি। তবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ভেরিফায়েড পেজের স্বীকৃতি দেয়ার ফলে এখন থেকে ভক্তরা খুব সহজেই আমার ফ্যান পেজটি চিনতে পারবেন। ফলে ভুয়া অ্যাকাউন্ট দ্বারা আর বিভ্রান্ত হবেন না। এ জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ।’

 

দেখতে দেখতে আরেকটি বছর পার হয়ে যাচ্ছে। এ বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতা আগামী বছরও ধরে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পড়শী।

 

-প্রতিবেদক, অপরাজিতাবিডি ডটকম

 

ঢাকা থেকে পারু

 হালিমা খাতুন

 

Bhutan-Paro-Tigers-Nestসকাল থেকে শরীরটা একদম ভাল লাগছে না। গরম পানি, গরম দুধ খেলাম, তবুও যেন শরীরে তাগদ পাচ্ছি না। এ ঘর থেকে ও ঘরে যেয়ে শুচ্ছি, বিছানার এ পাশ থেকে ও পাশ ফিরছি, তবুও দেহ মনটা চাঙ্গা করতে পারছি না। নি®প্রভ দেহ মন নিয়ে, বিছানায় শুয়ে দুপুর ছুঁই ছুঁই, তখনও বিছানায় শুয়ে। সাহেবেরও ছুটি, সেও বাসায়। অলস দেহ মন তারও শরীরটা ভাল না। আমার বড় ছেলে সাকিব কানাডা থাকে। ওর সাথে কথা হলো ও বলেছিল আম্মা তোমরা দুজন সিলেট থেকে বেড়ায় আস। মনে মনে সেখানে যাবার পরিকল্পনা করেছিলাম কিন্তু বাদ সাধল হরতাল, বিএনপি’র ইলিয়াস আলীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তার পরিপ্রেক্ষীতে বিএনপি পর পর তিনদিন হরতাল ডেকেছে। তাতে বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়াতে একজন পুড়ে মারা গেছে, আরও কয়েকজন পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। তাই পথে বের হলে আবার কোন পরিস্থিতিতে পড়ি তাই তুনুমুনু করছিলাম কি করব?

 

হঠাৎ সাহেবের ফোন বেজে উঠল। রিসিভ করে হ্যালো, ও ও স্যার, জ্বী বলেন স্যার। আমি আপনাকে বড় ভায়ের মত মনে করি, আর আপনি আমাকে না নিয়ে ভূটান চলে যাবেন?

 

হ্যাঁ যাব। কথা শেষ করে আমাকে বললো, জামান স্যাররা এবার ছুটিতে ভূটান যাবে। সেও দেখি ভূটান যাবার জন্য একবাক্যে রাজি। আমার দেহ-মন্টা যেন ঝেড়ে উঠল। উঠে বসলাম, ভাল না লাগাটা যেন মন থেকে আস্তে আস্তে ভ্যানিস হয়ে যেতে লাগল, দক্ষিণা হাওয়ার স্নিগ্ধ পরশে যেন আমেশ দিয়ে গেল।

 

মনে পড়ল, আগের দিনের ডাক্তাররা রুগী বেশী অসুস্থ হলে বা বেশী দিন ধরে অসুস্থ থাকলে হাওয়া বদলের পরামর্শ দিতেন। আজ ডাক্তারদের তেমন পরামর্শের কথা খুব একটা শুনা যায় না। কর্মব্যস্ততার ফাঁকে মানুষ নিজেরাই একটু সময় সুযোগ করে বেড়ায়, কর্মে উৎসাহ-উদ্দিপনা ও মনোযোগ আনার জন্য।

 

আয়াত: তিনি (আল্লাহ) এমন যিনি তোমাদেরকে স্থলভাগে ও জলধীতে পরিভ্রমণ করান। (সূরা ইউনুস-২২ আয়াতাংশ)

 

যাইহোক আমরা টাকা আর পাসপোর্ট জমা দিলাম ভূটানে যাবার জন্য। সার্কভূক্ত দেশ বলে আমাদের পাসপোর্ট ভিসা লাগলো না। আমাদেরকে অনারী ভিসা অর্থাৎ সম্মানজনক ভিসা দেয়া হল। ২৭ শে এপ্রিল ২০১২ তারিখ শুক্রবার রয়েল ভূঠান এয়ার লাইন্সের সকাল ৮.৫০ মিনিটে ভূটানের পারুর উদ্দেশ্যে রওনা দেই। মাত্র ৪৫ মিনিটে আমরা পেরুতে এসে পৌছাই। ভাল লাগল ভীষণ ভাল লাগলো। সার্কভূক্ত দেশ হওয়ায় পাসপোর্টে ভিসা লাগার ঝামেলা হল না। সব সার্ক ভূক্ত দেশগুলো যদি এমনটি করত তবে খুবই ভাল হোত। সার্কের সার্থকতা হোত।

 

সবাই প্লেনের জানালা দিয়ে উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে বাইরে দেখতেছে। আমিও তাদের দেখাদেখি বাইরে তাকাই। দৃষ্টিগোচর হয় পাহাড় আর পাহাড়। দুই পাহাড়ের মাঝখান থেকে প্লেনটি অতি সাবধানে ছোট্ট এয়ারপোর্ট পারুতে এসে অবস্থান করে। রানও বেশি করতে হয়নি। আমারা তো মুগ্ধ। যাত্রীরা সব প্লেন থেকে নামে, চারিদিকে পাহাড় মাঝখানে ছোট্ট একটা এয়ারপোর্ট । একটু পরে দেখি যাত্রীদের মধ্যে ছবি তোলা হিড়িক পড়ে গেছে। আমরাও তা থেকে পিছিয়ে রইলাম না। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে আমাদের গাইডম্যঅনের সাথে দেখা হয়। সে আমাদের জন্য মাইক্রো নিয়ে এসেছিল। তাতে চেপে রওনা হলাম। এত তাড়াতাড়ি হোটেলে যেয়ে কি করব? তাই আমাদের নিয়ে গেল মিউজিয়ামে।

 

Taktsang monasteryএখানে সাধারণ নাগরিকের জন্য দশ নু স্টুডেন্টদের জন্য পাঁচ নু, সার্কভুক্ত দেশের জন্য পঞ্চাশ নু ও বিদেশীদের জন্য দুইশত নু। ভূটানের মুদ্রার নাম নু। পাহাড়ি রাস্তা ধরে মিউজিয়ামের আসতে আমদের খুব ভাল লাগছিলো। লোকজন কম, নিরিবিলি শান্ত সুন্দর ঝরনার নুড়ি পাথরের ঝিল, আকাশের কোল ঘেঁষে দাঁড়িযে আছে পাহাড় দুরে নিচের ঘরবাড়ির দৃশ্য মনকে এক কাব্যিক জগতে নিয়ে যাচ্ছিল বার বার। বাইরের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ থেকে অনিচছা সত্ত্বেও মনকে বস্তুজগতে নিয়ে গেল। আমরা মিউজিয়ামে প্রবেশ করলাম।  কিছু মুখোশ দেয়ালে লটকানো। দেব দেবীদের কিচু ছবি ও এখানের রাজা ও তার পরিবারের কিছু ছবি ঝুলানো আছে। মিউজিয়ামের ভিতর থেকে বাইরে গাড়িতে একটু তন্দ্রাচ্ছদিত হয়ে পড়লাম। এরপর হোটেল এর সামনে এসে গাড়ীর ধাক্কায় আমার তন্দ্রা ভাঙ্গল। আমাদের গাড়ীর ধাক্কায় অন্য একটা গাড়ীর পাশের লাইট ভেঙ্গে গেছে।

 

অবাক হলাম কারোর মধ্যে কোন উত্তেজনা নেই, কয়েকজন উৎসুক তাকিয়ে দেখল আর আমাদের ড্রাইভার খুব অনুতপ্ত হতে লাগল অন্য গাড়ীর ড্রাইভার বা মালিকের কোন সাড়া শব্দ পেলাম না। এরকম যদি আমাদের দেশে হত তবে ভিন্ন চিত্র পরিগ্রহ করত। হাতাহাতি লাথালাথি গালাগালি ঝগড়াঝাটি যে কি হতো তা আর বলা অবকাশ রাখে না। আল্লাহ হেদায়াত নসিব করুক। এখঅনের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা দৃষ্টি , হৃদয় ও মনকে আকর্ষণ করে। রাস্তার পাশে ঢাকনা যুক্ত ড্রাম আছে ময়লা আবর্জনার জন্য। রাস্তার পাশের ড্রেনগুলো কি সুন্দর পরিস্কার। আর একটা জিনিসের ও খুব শান্তি পেলাম তা হল তাদের পোশাক আশাক, মেয়েরা ফুলহাতা জামা পরে এবং নিচে পা পর্যন্ত দোপাট্টার মত ঘাগরী পরে, ছেলেদের পেশাকও শালীন। এখানের বেশলিভাগ নারী-পুরুষ তাদের জাতীয় পোশাক পরে। তাদের জাতীয়তাবোধ ও  শালীনতাবোধ দেখে খুব ভাল লাগলো। আমাদের দেশেল মানুষের মধ্যে যে কবে জাতীয়তাবোধ জন্মাবে, সেই আক্ষেপে আসে মনে বার বার। দেশী জিনিসপত্র বাদ দিয়ে বিদেশী জিনিসের প্রতি ঝুঁকে চলেছে তারা দিন দিন। দেশটা যে কোথায় চলেছে কারও তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই সব আছে যার যার স্বার্থ নিয়ে। দোয়া করলাম সৃষ্টি কর্তার কাছে, ‘‘আল্লাহ সুবহানুহ তায়ালা আমাদের দেশের মানুষদেরকে তাদের জাতীয়তাবোধকে জাগ্রত করো, দেশ মাটি ও মানুষকে সর্বপরি তোমাকে ভালবাসার তৌফিক দাও। দেশের পরিবার, অফিস আদালত, স্কুল কলেজ সর্বপরি দেশ থেকে দুর্র্নীতি দূর কর, দেশের সকল নাগরিককে এক আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত কর’’ আমিন!

 

দুপুরে আমরা আমাদের হোটেলের পাশের একটা হাটেলে খেতে গেলাম। কথা প্রসঙ্গে আমাদের ড্রাইভার বলছিল গাড়ি এক্সিডেন্টের জন্য তাকে জরিমানা দিতে হবে। আমাদের কে ভাত, মিক্সিস সব্জি, ধনের পাতার ডাল ও রুইমাছ ফ্রাই খেতে দিল। আমরা সবাই আত্মতৃপ্তির সঙ্গে খেলাম কারণ আল্লাহর মর্জিতে রান্নাটা খুব ভাল ছিল। খেয়ে হোটেলে ফিরে আসার পথে আমাদের হোটেলের সামনে একটা পাঁচতলা ট্রী টেক্সটাইল সেখানে গেলাম। সেখানে তিন চারজন মহিলা তাঁত বুনছে। সুন্দর সুন্দর কাপড় বুনছে। দোকানটা ঘুরে দেখলাম, সুন্দর সুন্দর কাপড়ের পোশাক, গায়ের চাদর, বিছানার দাদর, টেবিল ক্লোথ নিচে বসার ম্যাট, সুতি ও সিল্ক এর মধ্যে দেখার মত, দাম ও সেই রকম, তিন হাজার , চার হাজার, পাঁচ হাজার , সত্তর হাজার।

 

Paro Airport, Bhutanভুটানকে আমরা ভেবেছিলাম গরিব দেশ কিন্তু পরে দেখি না আমাদের চেযে তারা উন্নত। আমার পথে ্মারা একটা মানি এক্সচেঞ্জ থেকে আমাদের খরচের জন্য ডলার ভাঙ্গাই একশত ডলারে এখানে দেয় পাঁচ হাজার একশত পঁচাত্তর নু। আর আমাদের একশত ডলার ভাঙ্গালে এখানে দেয় প্রায় আট হাজার পাঁচশত টাকা।  আমাদের একশ টাকা এখানে ষাট নু এর সমান। এাকনের একজনকে জ্যঅকেট পরা দেখে মনে হল এখানে কি এত শীত। আমাদের কাছে তো এমন মনে হচ্ছে না। আমাদের তো ভালই রাগছে, না শীত না গরম। স্বাভাবিক কাপড়েই আছি মিঠা মিঠা ঠান্ডা, মিঠা মিঠা রোদ ভঅলই লাগছে। কিছু রাখলে যেমন আমার গয়না খুলে গোসলে গেলাম। এসে পরতে যেয়ে ভালই ঠান্ডা হয়েছে। এবার একটু একটু করে ঠান্ডা আমাদের শরীরে ভালবাসার পরম আমেজ বুলাতে মুরু করল, এ যেন প্রেমি প্রেমিাকার লুকোচুরি খেলা খেলতে খেলতে অবশেষে ধরা দেয়া। শীতের পোশাক বের করে পরলাম তাতে ও হলো না এবার কম্বলের ভিতর ঢুকলাম অবশেষে ঘরে হিটার ও চালাতে হল।

 

মাগরিবের নামাজের পর আমরা একটু হাটতে বের হলাম। দোকান থেকে মোবাইলে সিম কিনলাম দেশে যোগাযোগের জন্য। মনটা একটু ব্যস্ত হল। ছোট ছেলে সাদিককে দেশে রেখে এসেছি। ওর এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। একটা পরীক্ষার পর সতের দিন বন্ধ তার পর ম্যাথ পরীক্ষা। মাঝে যে পরীক্ষাটা হওয়ার কথা ছিল তা বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খঅরৈদা জিযঅ ২৮ তারিখ পর্যন্ত সময় দিয়েছে। ইলিয়াস আলীকে না পাওয়া গেলে রবিাবর থেকে আবার হরতাল। ছেলেটা পড়ছে, নাকি করভে। ফোন দিয়ে ও খোঁজ খবর নিলাম। বড় ছেলের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলাম পারলাম না।

 

আসার পথে আবার একটা এ্যাকসিডেন্ট নজি আর প্রাইভেট কারে মুখোমুখি সংঘর্ষ । প্রাইভেট কারের সামনে ভসকায়ে গেচে। ড্রাইভাররা গাড়ি থেকে কেউ নামলো না। রাস্তার দুপাশে উৎসুখ  জনতা দাঁড়িযে দেখল কেউ গাড়ির কাছে গেল না। হঠাৎ কোথা থেকে পুলিশ আসল। কারটাকে ভাল করে দেখে জীপের ড্রাইভঅরের কাছে গেল। তখনও জীপের ড্রাইভার জীপে বসে কথা বলছে। যেটা বুঝলাম তা হল কেউ কার ক্ষতি কররৈ অনাসে সে সেটা স্বীকার করে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেয়। এ থেকে কি আমরা শিক্ষা পেতে পারি না?

 

হোটেলে ফিরে আসলাম। হোটেল সুপার জানাল আটটার মধ্যে দোকানপাট হোটেল সব বন্ধ হয়ে যাবে, আপনাদের খাবার সব রুমে দিয়ে আসা হয়েছে। আমরা রুমে এসে নামাজ পড়ে সবাই এক সাথে খেয়ে নিলাম।

 

মোবাইলে এ্যালার্ম বেজে উঠল আর ঘুম ভেঙ্গে গেল। এ্যালার্ম বন্ধ করে যত তাড়াতাড়ি পারাম ওযু করে এসে নামাজ পড়ে নিলাম। জানালার পর্দা সরিয়ে জানালাটার পাল্লাটা খুলে বাইরে ঝুকে করালের পারুর সৌর্ন্দযটা উপভেঅগ করার চেষ্টা করলাম। খোদা তালায়ার সৃষ্টি কত সুন্দর, পাহাড়রে পাদদেশে ছোট সুন্দর একটা শহর পারু। এখানের মানুষের মন মানসিকতা ও আল্লাহ তায়ালা সুন্দর করে দিয়েছেন।

 

জানালার গ্রীল নেই তাই ঝুকে বাইরেটা দেখতে পালাম খুব ভালভাবে। রাস্তার পাশে বেশ অনেক গাড়ী সারি দেয়া , একজন লোক রাস্তা দিয়ে হেটে আসছে। সারা রাত এ প্রাইভেট কারগুলো বাইরেই ছিল। ভাবরাম আমাদের দেশে গাড়ী গ্রঅরেজে তালা লাগায়েও রক্ষা করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। আর এখঅনে রাস্তায় গাড়ি রেখে দিয়েছে। একটা টোকই দেখলাম না, একটা ভিক্ষুক দেখলাম না। হাদীস শরীফে আছে ‘‘উপরের হাত নীচের হাত হতে উত্তম। উপরের হাত হল তাদার এবং নীচের হাত দান গ্রহীতার। অন্য এক দাহীসে আছে, যে ব্যক্তি অন্যের নিকট হাত না পেতে পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে তো পবিত্র রাখেন এবং যে স্বনির্ভর থাকতে চায় আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ছোটবেলায় দেখতাম এক হিন্দু বৃদ্ধা মহিলা মাথায় ডালায় করে শাক বিক্রি করতো। মহিলার দাঁত পড়ে চোঁয়াল ভেঙ্গে মুখটা শুকিয়ে গেছে। হাতের মাংশপেশী হাড় থেকে শুকিয়ে ঝুলে পড়েছে। কিন্তু তবুও কাজ করে খেতো। ইসলাম ধর্মে ভিক্ষাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অথচ মুসলমানের মধ্যই ভিক্ষাবৃত্তি প্রবণতা বেশী। এর কারণ বুঝলাম না।

 

রাস্তার ড্রেনটা কি সুন্দর পরিস্কার। ঝকঝকে স্বচ্ছ পানি বয়ে যাচ্ছে।

 

নিশ্চয় এখঅে ন চোর নাই তাই গাড়ীগুলো রাস্তায় রেখে দিয়েছে। মুরব্বিদের কাছে গল্প শুনেছি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান একবার খুব আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘‘সবাই পেয়েছে তেলে খনি, সোনার খনি, আর আমি পেয়েছি চোরে খনি’’। কথাটা মনে পড়ল। একটা জাতির জন্য এটা খুবই দু:খজনক। এ অবস্থা থেকে আমাদের ফিরে আসা দরকার। কিন্তু কিভাবে?

 

দেশের বাড়ী যতলোক আসে সাহায্য সহযোগিতার জন্য পারতপক্ষে কাউকে ফিরানো হয় না যতটুকু পারা যায় দেয়া হয়। তারপরও কয়েকদিন আগে আমার সেঝ দেবর ফোন করে বলল, ভাবী আমাদের পানির চাপ কল চোরে নিয়ে গেছে, গোড়া  থেকে কেটে। বড় কষ্ট লাগলো, কত মানুষ এ কল থেকে পনি খেত, অন্যান্য কাজে ব্যবহার করত। যেদিন ভুটান আসি ও দিন  বাড়ি থেকে ফেন করে বলল, স্যালো মেশিনটা চোরে নিয়ে গেছে। একটা গ্রামের চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে যদি চুরি হয় তবে কি বলবেন বলেন?

 

বড় বড় নেতারা ও হোতারা ও কর্মকর্তারা করে পুকুর চুরি আর ছোট চোরেরা করে ছিচকে চুরি । তবে কোনটাকে উৎসহা দেওয়ার অবকাশ নেই। দুটোই চুরি , চুরি । তবে কোনটাকে উৎসহা দেওয়ার অবকাশ নেই। দুটোই চুরি, চুরি একটি কবিরা গুনাহ অর্থাৎ বড় গুনাহ।

 

আল কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা চুরি করার নিষেধজ্ঞা ও বিচার সম্বন্ধে বলেছেন:

 

হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরস্পর এক অন্যের সম্পদ না-হকভাবে আত্মসাৎ করো না। কিন্তু ব্যবসায় বাণিজ্যে যাহা পরস্পরের সম্মিতিক্রমে হয়, তাহলে দোষ নাই। (সূরা নিসা-২৯ আয়াত)

 

আল-কুরআনে একটা ঘটনা কম বেশি আমরা সাই জানি, এক সম্ভ্রান্ত মহিলা চুরি কররে রাসূল (ষা:) বললেন, এ কাজ যদি আমার মেয়ে ফাতিমা (রা:) ও করতো, তবে আমি তারও হাক কেটে ফেলার আদেশ দিতাম। আমাদরে দেশে দুচারটার হাত যদি কাটা হোত তবে চুরিটা ইনশাআল্লাহ বন্ধ হতো। তাই বেল আমি বলচিনা যে আমাদের দেশে সৎ মানুষ নেই। আমরা অনেকেে জানি আমেরিকায় আমাদের এক বাংলাদেশি ট্যাক্সি ড্রাইভার ভাই এক তোড়া ডায়মন্ড পেয়েছিল। তার নিজ গাড়ির ভিতর। তিনি মালিককে খুঁজে তা ফেরত দেন। এক রিক্সা ড্রাইভার তার রিক্সায় লক্ষাধিক টাকা পেয়েছল সেও তার মালিককে খুঁজে ফেরৎ দেয়। মহৎ লোকের কার্যকলাপে ম্লান হয়ে না যায়। তাদের কাছ থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি। আমাদের মন মানসিকতাকে উন্নত করি। আবেগ তাড়িত হয়ে অনেক কথা লিখে ফেললাম কারণ মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস কমে যাচ্ছে। ওজনে কম দিচ্ছে, ভাল বেল পচা মাছ, ফলমূল, তরিতরকারী দিয়ে দিচ্ছে, অহরহ মানুষ মানুসের সাথে প্রতারণ করছে। অথট আমরা মুসলমনা এসব স্বভাব আমাদের মধ্যে থাকা উচিৎ নয়।

 

রাসূল (সা:) বলেছেন ‘‘ প্রতারক আমদেরে দলভূক্ত নয় ’’।

 

আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘‘তোমরা উত্তম সম্প্রদায় , যে সম্প্রদায়কে মানবমন্ডলীল উভয় জগতের কল্যানের জন্য করা হয়েছে, তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ কর এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ কর এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখ ’’। (সূরা আলে-ইমরান-১১০)

 

‘‘মানুষ বড় ক্ষতির মধ্যে, তবে তাহা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করে , হকের পথে দাওয়াত দেয় ও সবরের উপদেশ দেয়’’। (সূরা আল আসর ১-২)।

 

‘‘তুমি কি ইচার প্রতি লক্ষ কর নাই যে আল্লাহ আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেছেন, অত:পর আমি উহা দিয়া বিচিত্র বর্ণের ফলমুল উৎপন্ন করেছি। আর পর্বতমালারও বিভিন্ন অংশ আছে, সাদা, নীল, উহাদেরও বিভিন্ন বর্ণ আছে আর বহু আছে গাঢ়,  কালো বর্ণের’’। (সূরা ফাতেহ-২৭-২৮)

 

সুবহানাল্লাহ!  আমি অনেক পাহাড় দেখেছি, ভরতে, নেপালে, মালয়েশিয়ায়, বাংলাদেশে, সৌদি আরবে ও ভূটানে। এক এক স্থানে পাহাড় এক এক রকম। কোন কোন স্থানের পাহাড় নিচু কোনটার মাথা তীর্যক, কোনটার মাথা চ্যাপ্টা, কোনটার আবার লাল, কোন পাহাড় কাল পাথরের, কোনটা আবার পাথর মাটির সংমিশ্রণে।

 

কোনটা আবার ঢাকা। এক একটার মধ্যে এক এক রকমের সৌন্দর্য। ভুটানের পাহাড়গুলো অনেক উচু। চারিদিকে এত সুন্দরের ছড়াছড়ি।-(চলবে)

২০১৩’র আলোচিত নারী

ক্যালেন্ডারের পাতায় শেষ হলো ২০১৩। । ২০১৩ বিদায়ের প্রাক্কালে আমরা ফিরে দেখি বছরটি ছিল জাতীয়ভাবে নানা বিষয় নিয়ে আলোচিত দেশের প্রথম নারী স্পিকার ইতিহাসে নাম লেখিয়ে আলোচিত হন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। রাজনৈতিক কারণে সারা বছর জুড়েই আলোচনায় ছিলেন আমাদের দুই নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। আরো যারা এ বছর আলোচনায় নারী সমাজে প্রতিনিধিত্ব করছেন তাদের নিয়ে এই প্রতিবেদন-

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী
Shirin+Sharmin+Chowdhury+2বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রথম নারী স্পীকার নির্বাচিত হয়েছেন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এর আগে তিনি শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের নারীদের ক্ষমতায়নে এটা দারুণ একটি দৃষ্টান্ত। নবম সংসদে সংসদের নেতা, বিরোধী দলীয় নেতা স্পীকার এবং সংসদের উপনেতা সবাই ছিলেন নারী। মাত্র ৪৬ বছর বয়সে তিনি এই দায়িত্ব পেলেন। তাঁর আগে এতো কম বয়সে বাংলাদেশের সংসদের কর্তৃত্ব আর কেউ পাননি।
নাজমুন আরা সুলতানা
najmunএবছর তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ইতিহাসে প্রথম নারী বিচারপতি হলেন। হাইকোর্টেও তিনিই প্রথম নারী বিচারপতি। তার কর্মজীবন শুরু আইনজীবী হিসেবে ১৯৭২ সালে। নানা প্রতিবন্ধকতা ও ব্যঙ্গ কথা শুনে, প্রতিকূল পথ অতিক্রম করে আসতে হয়েছে এ পর্যন্ত। তার ইচ্ছা, দূরদর্শিতা ও সাহসিকতাই তাকে আজকের এ অবস্থানে এনেছে। তার বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল যে তিনি যেন আইনজীবী হন। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই তিনি এ পথে এগিয়ে যান। মানুষকে তার ন্যায্য অধিকার প্রদানে, সঠিক বিচারকার্য সম্পাদনে তার বিচারক হবার স্বপ্ন পূরণেও তিনি সক্ষম হন। জীবনসঙ্গী কাজী নুরুল হকের কাছ থেকে তার কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাবার লক্ষ্যে সবসময় উত্সাহ পেয়ে এসেছেন। তার অবস্থান এদেশের বহু নারীকে এগিয়ে যাবার সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়ে যাবে।
মাহফুজা আক্তার
mahfuja aktarএ বছর বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছেন তিনি। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তথ্যকল্যানী মাহফুজা আক্তার। জার্মানিতে ডয়াচে ভেলে আয়োজিত একটি প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম অ্যাওয়ার্ড গ্রহন করেন। এসময় তিনি তথ্যকলানী হিসেবে কিভাবে গ্রামের মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যান, গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে তাদের সেবা করেন তাই বলেন। তার সাহায্যের মধ্যে দিয়ে গ্রামের সবাই কিভাবে উপকৃত হচ্ছেন তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যেমন প্রেসার মাপা, জ্বর-ঠান্ডা-কাশির চিকিত্সা থেকে শুরু করে, মোবাইল সারানো, গর্ভাবস্থায় নানা পরামর্শ, শিক্ষাক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করা, নারীদের মুক্তচিন্তার বিকাশ ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই গ্রামবাসীরা আমাদের কাছে পায়। আমরা তাদের নানা উপকারের চেষ্টা করি। তাই তারাও আমাদের আপন করে নেন।
নাজমা আক্তার
nazma aktaবার্লিন থেকে ‘বর্ষসেরা নারী নেত্রী’-র পুরস্কার নিলেন নাজমা আক্তার৷ তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা বাংলাদেশের এই নারীর হাতে পুরস্কার তুলে দেয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার পক্ষেই আবেগ সামলানো খুব কঠিন ছিল৷
ওয়াসফিয়া নাজরীন
পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয়ী দ্বিতীয় বাংলাদেশী নারী ওয়াসফিয়া নাজরীন, ২০১৩ সালের মার্চ মাসে ইউরোপের সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট এলব্রুস জয় করেন। তিনি গত বছর এভারেস্টে ছাড়াও আফ্রিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কিলিমাঞ্জারো এবং দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আনকানগুয়া জয় করেন। তিনি গত বছর বলেছিলেন যে তার স্বপ্ন পৃথিবীর সাতটি মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়। এ পর্যন্ত তিনি চারটি শৃঙ্গ জয় করেছেন। তিনি প্রমাণ করলেন, ইচ্ছা থাকলে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। বাংলাদেশের নারীরা যে কোন ক্

 

প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী

khaleda zia

অপরাজিতাবিডি ডটকম: বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮১ সালে রাজনীতিতে আসা বেগম জিয়া স্বাধীন বাংলাদেশে তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। দেশের ইতিহাসের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীও তিনি।

 

পরিচয়: বেগম খালেদা জিয়ার প্রকৃত নাম খালেদা খানম। ডাক নাম পুতুল। ১৯৪৬সালের আগস্ট ১৫ জলপাইগুড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিন বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ভাইয়েরা সবার ছোট। তাঁর পিতামহ হাজী সালামত আলী, মাতামহ জলপাইগুড়ির তোয়াবুর রহমান। বাবা জনাব ইস্কান্দর মজুমদার এবং মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। তাঁর স্বামী বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান বীরউত্তম। তাঁর দুই ছেলের মধ্যে বড় তারেক রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রথম ভাইস-চেয়ারম্যান । তার কনিষ্ঠ ছেলে আরাফাত রহমান কোকো একজন ব্যবসায়ী।

 

স্থায়ী নিবাস: দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়া। আদি পিতৃ-ভিটা ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মজুমদার বাড়ী।

 

শিক্ষা: খালেদা জিয়ার স্কুলজীবন শুরু হয় পাঁচ বছর বয়সে দিনাজপুরের মিশন স্কুলে। এরপর দিনাজপুর গার্লস স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকেই অষ্টম শ্রেণী পাশ করেন।

 

রাজনীতিতে যোগদান: ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক ব্যর্থ সামরিক অভুত্থ্যানে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মিদের অব্যাহত অনুরোধ ও দাবির মুখে ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন বেগম জিয়া।

 

বিয়ে: ১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে জিয়াউর রহমানের সাথে তার বিয়ে হয়। জিয়াউর রহমানের ডাক নাম কমল। জিয়া তখন ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন। ডি এফ আই এর অফিসার হিসাবে তখন দিনাজপুরে কর্মরত ছিলেন।

 

প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী: ১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে প্রথন নারী প্রধানমন্ত্রী হন।

-নিজস্ব প্রতিবেদক

 

 

আমার নামে মিথ্যা মামলা হতে পারে: ন্যান্সি

ন্যান্সী

সঙ্গীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি বলেছেন, “মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আমাকে হয়রানি করা হতে পারে। আমি আতঙ্কিত ও ভীত।”

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। দুপুর পৌনে একটা থেকে প্রায় ২০ মিনিট বক্তব্য দেন ন্যান্সি।

তিনি বলেন, “কয়েকদিন আগে আমি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছি। তাতে রাজনৈতিক কিছু প্রসঙ্গ ছিল। আমি মনে করি কোনো দলের প্রতি ভালোলাগা-মন্দলাগা থেকে কিছু প্রকাশ করা আমার দোষের কিছু নয়।”

ন্যান্সি বলেন, “স্ট্যাটাস দেয়ার পর মোবাইল ফোনে আমাকে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে আমার নেত্রকোনার বাড়িতে পুলিশের পোশাকধারী ২০-২৫ জন লোক তল্লাশি করতে যান। আমাকে বলা হয় সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দাতা।”

তিনি বলেন, “ওই সময় আমি তাদের বলেছি তাদের তথ্য সঠিক নয়। তারা বলেছে আমাকে, আমার ছোট ভাইকে ধরে নিয়ে যাবে।”

মঙ্গলবার রাতের ঘটনায় পুলিশের দু’টি ভ্যান এবং ২০-২৫ জনের মধ্যে একজন ছাড়া বাকিরা পুলিশের পোশাক পরা ছিলেন জানিয়ে ন্যান্সি বলেন, “সিভিলে থাকা ব্যক্তি নিজেকে এসআই আলমগীর পরিচয় দেন। তিনি আপত্তিকর ভাষায় আমাকে বিভিন্ন কথা বলেন।”  

আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রসঙ্গে ন্যান্সি বলেন, “নেত্রকোনা থানার ওসি বলেছেন সন্ত্রাসীদের খুঁজতে গিয়ে আমার অসহযোগিতা ছিল। তাই আমাকেও ভবিষ্যতে পুলিশ কোনো সহযোগিতা করবে না। এ অবস্থায় আমি কীভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এজন্য সংবাদ সম্মেলনের প্রয়োজনীয়তা মনে করেছি।”

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠনের (জাসাস) সভাপতি আব্দুল মালেক, চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম ও সঙ্গীতশিল্পী মনির খান উপস্থিত ছিলেন।

কন্যা থাকুক নিরাপদে

২২২২২২২২২২পটুয়াখালী জেলার জৈনকাঠি গ্রামের সাফিয়ার বেগমের মেয়ে আদুরী। কিন্তু ওর ভাগ্যটা ঠিক উল্টো। গরিবের মেয়ে কখনো আদরের আদুরী হতে পারেনি। অভাব অটনের সংসার, বাবা বেঁচে নেই। সন্তানের মুখে দু’মুঠো ভাত দিতে হিমশিম খান সাফিয়া। মেয়ে ভালো খাবে ভালো থাকবে সেই আশায় রাজধানী পল্লবীর বাসিন্দা নওরীন আক্তার নদীর বাসায় কাজে দেন। আদুরীর বয়স আর কত হবে, নয় কি সাড়ে নয় বছর। যে বয়সে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরে বেড়ানোর কথা, সে বয়সে পেটের দায়ে অন্যের বাসায় কাজ করে। ঘর মোছা, ধোয়া-মোছা সবই তাকে করতে হয়। তার পরও পেট পুরে খেতে দেয় না। টুকটাক মারধর তো আছেই। যেন পান থেকে চুন খসলেই ওর পিঠে ঝড়ের গতিতে চলে মারধর।

আদুরী যেহেতু মেয়ে, সেহেতু ওর মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় একটু সাজতে। সেদিন ও নওরীনের কানের দুল পরেছিল। নওরীন তা দেখে ফেলে শুরু হয় অত্যাচার। ওকে মেরে আগুনে পুড়ে ময়লার স্তূপে ফেলে রাখে। পুলিশ ওকে উদ্ধার করে। নওরীন তো মা-নারী। ওরই বয়সী নিজের সন্তান আছে। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক সবার জন্য। তবে কেন আদুরী ঝরে পড়ল? এর দায়ভার আমাদের সবার- শিক্ষক, অভিভাবক এসএমসি’র সদস্যের, মেম্বর, চেয়ারম্যান, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সর্বোপরি সরকারের।

রিতা, এক সময় পরিবারে অবস্থা ভালো ছিল। তিন বোনের মধ্যে ও মেজ। ওর বাবার কাপড় ইস্ত্রি করার দোকান ছিল। হঠাৎ ওর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিন মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে ওর মা হিমশিম খান। পাশের বাড়ির একজন পরামর্শ দেয়, তার পরিচিত ঢাকায় এক জজ আছেন। তাদের মেয়েকে দেখাশোনার একজন লোক দরকার। যদি তোমার মেয়েকে দাও তা হলে সে পড়াশোনা করবে আর তার মেয়েকে দেখবে। রিতার মা রাজি হন। রিতা তখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। ওর মা ভাবে, মেয়ের লেখাপড়াও চলবে, তার পর ভালো খাবে। কিন্তু দেখা গেল লেখাপড়া তো দূরের কথা। ঠিকমতো তিন বেলা খেতে দেয় না। ঘর মোছা, থালা-বাটি ধোয়া- এসব করতে হয়। জজের স্ত্রী বলেন, গরিবের আবার লেখাপড়া কিসের। জজ শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করে সভা সমিতিতে বক্তৃতা দেন। অথচ তার ঘরে শিশু নির্যাতন চলে।

ছনিয়া ধোপাকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ত। এক দিন ওর মা-বাবা পরের বাড়িতে কাজে যায়। ও বাড়িতে একা। এ সুযোগে ওসমান মোল্লা ওর ইজ্জত লোটে। এ নিয়ে গ্রামে সালিসি ব্যবস্থা হয়; কিন্তু রায় মোল্লার পক্ষে। ছনিয়ার স্কুলে যাওয়া বন্ধ।

মনি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ত নানীর কাছে থেকে। ও এক দিন একটা ছেলের সাথে কথা বলে। চোখে পড়ে গ্রামের মাতব্বরের। ওর বিচার হবে। সালিস ডাকা হলো। বিচারে সাব্যস্ত হলো ও নষ্টা মেয়ে, ওকে গ্রামে রাখা যাবে না। অবশেষে মনি ও ওর নানী গ্রামের ছোট ঘরবাড়ি রেখে শহরের অনিশ্চিতের পথে পা বাড়ায়। যে মেয়েটির বয়স ১০-১১ বছর, যার ভেতর এখনো শৈশব। কৈশোরে পা দেয়নি। তাকে অপবাদ মাথায় নিয়ে গ্রাম ছাড়তে হয়েছে।

রহিমার বয়স ১০ হতে পারে। মা-বাবা নেই। নানীর কাছে মানুষ। নানীর অবস্থাও বেহাল। তাই ঢাকায় এক বাসায় কাজে দেন। মেমসাহেব ওকে খুব আদর করে মেয়ের মতো দেখেন। ওকে ভিন্ন বিছানায় ঘুমাতে দেন। মাঝ রাতে ওকে কে যেন চেপে ধরে বলে ভূত। তারপর শরীরে ওঠে। ও ব্যাপারটা মেম সাহেবের কাছে জানায়। মেম সাহেব বুদ্ধি করে বলেন, তুই আমার বিছানায় ঘুমা। আমি তোর বিছানায় ঘুমাই। মাঝ রাতে তিনি দেখলেন এ ভূত আর কেউ নয়। এ যে তার স্বামী। কত না নির্যাতন চলে অবুঝ শিশুদের ওপর। শুধু পেটের দায়ে অন্যের বাসায় কাজ করতে এসেছে।

সৎ বাবার পাশবিকতায় মৃত্যুবরণ করতে হলো চার বছরের শিশু সুনিয়াকে। মা রুমা শিশু সুনিয়াকে নিয়ে আবার বিয়ে করেন বাদলকে। ওরা কাজিমুদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থাকে। রুমা গার্মেন্টে কাজ করেন। মঙ্গলবার সুনিয়াকে রেখে রুমা কাজে যান। বাদল ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। রুমা বাসায় ফিরে মেয়ের অবস্থা খারাপ দেখে স্থানীয় হাসপাতালে নেন। অবশেষে বৃহস্পতিবার সুনিয়া পৃথিবীর মায়া ছেড়ে পরপারে চলে যায়। বাদল কী মানুষ? পিতা না হোক পিতার মতো ছিল। মেয়ে শিশুর জন্য কোনো পুরুষ নিরাপদ নয়। মামা-চাচা, নানা-দাদা, ফুপা, খালু, চাচাত ভাই, মামাত ভাই ইত্যাদি ইত্যাদি।

যাত্রাবাড়ীর কাজলায় ভাতিজিকে ধর্ষণ করতে গিয়ে মাহবুব ধরা পড়ে এলাকার লোকজনের কাছে। শুক্রবার দুপুরে মেয়েকে রেখে বাজারে যায় মা। মেয়ের বয়স ১৩ হবে। মাদরাসায় পড়ে। এ সময় স্বামীর মামাত ভাই সিএনজিচালক মাহাবুব ঘরে এসে ধর্ষণের চেষ্টা করে। মেয়ের চিৎকারে এলাকাবাসী মাহবুবকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়।

মেয়ে শিশু পুরুষ আত্মীয়ের কাছে নিরাপদ নয়। মেয়ে শিশু নির্যাতিত হয় বেশি। বাসা বাড়িতে কাজে দিলে গৃহকর্তা অথবা তাদের ছেলে দ্বারা ভাইয়ের বন্ধুদের দ্বারা, চাচাতো ভাই, মামাত ভাই তো দূরের কথা এমনকি শিক্ষক দ্বারাও ধর্ষিতা হয়। তাই মেয়ে অন্যের বাসায় কাজে দেবেন না। অন্যের কাছে রেখে কোথাও যাবেন না। ওকে চোখে চোখে রাখুন। পুরুষ হায়নার দল সুযোগ পেলেই ছোবল দিতে পারে।

 একটা শিশু একটা ফুল। সেই ফুলকে বিকশিত করার দায়িত্ব সমাজের সর্বস্তরের মানুষের। ওকে পড়াশোনা করার সুযোগ দিন। ও যেন মানুষ হতে পারে। শিশু নির্যাতন শুধু আইন করে বন্ধ করা যাবে না। সচেতন হতে হবে সবাইকে। আর একটা শিশুও যেন ধর্ষিত অথবা নির্যাতিত না হয়।

 লিখেছেন: আন্জুমান আরা রিমা

বাংলাদেশের নারী সংগঠন

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইট ফাউন্ডেশন
২০০৯ সালের ২৩ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইট ফাউন্ডেশন। হিউম্যান রাইট ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ও প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ২২ বছর ধরে আইন ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছেন। এই ফাউন্ডেশন পারিবারিক বিভিন্ন জটিলতায় মধ্যস্থতার মাধ্যমে আপস-মীমাংসার চেষ্টা করে এবং প্রয়োজনে নারীকে আদালতে আইনগত সহায়তা প্রদান করে। নারী নির্যাতনের বিভিন্ন স্পর্শকাতর ঘটনার প্রয়োজনবোধে তদন্ত এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করে। পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত স্পর্শকাতর ঘটনার ডকুমেন্টেশন, রিসার্চ এবং প্রয়োজনবোধে অ্যাডভোকেসি সহায়তা প্রদান করে নারীকে। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য বিদেশি কোনো ডোনারের সহযোগিতা নেয় না, বরং দেশের যাঁরা বিত্তবান আছেন তাঁদের আর্থিকভাবে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইট ফাউন্ডেশন।

যোগাযোগ :
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইট ফাউন্ডেশন
৭১, শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি
মহাখালী, ঢাকা-১২১২
ফোন: ০৪৪৭৬৪০১৭১৭
E-mail: dhrf.hr_gmail.com
Web: alenakhan_dhrf.org.bd

নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা
১৯৮৯ সালের ৯ ডিসেম্বর নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা আত্দপ্রকাশ করে। দ্রুতই চলমান নারী আন্দোলনের সহায়ক একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা। বর্তমানে এটা ‘উইমেন্স রিসোর্স সেন্টার’ ও প্রকাশক হিসেবে কাজ করছে। কানাডার পিডবি্লউআরডিসহ আরো কিছু সাহায্য সংস্থার সহায়তা পায় নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা। দেশব্যাপী তৃণমূল পর্যায়ের নারী লেখকদের বই প্রকাশ এবং বিক্রি করা হয় এখান থেকে। দক্ষিণ এশিয়ার নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধ নেটওয়ার্ক গঠন করেছে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা। কৃষি শ্রমিক, আদিবাসী চা শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা ও সংরক্ষণে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা। দেশব্যাপী দাই সম্মেলন করে তাদের সংগঠিত করা করছে।

যোগাযোগ:
নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা
ফরিদা আখতার, নির্বাহী পরিচালক
২/৮, স্যার সৈয়দ রোড
মোহাম্মদপুর, ঢাকা

নারী প্রগতি সংঘ
ষাটের দশকে বাম ছাত্র রাজনীতি এবং পরে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী সমমনা কয়েকজন নারী এক হয়ে ১৯৮৬ সালে গঠন করেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ। তৃণমূল পর্যায়ে নারীকে তাঁর অধিকার, জীবনমান উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি দিয়ে সচেতন করে থাকে। তাদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ট্রেনিং দেওয়া হয়। তিন-চার বছর ধরে মাইক্রো ফিন্যান্স ট্রাস্ট গঠন করেছে। যার মাধ্যমে ১৪ শতাংশ সুদের ভিত্তিতে আর্থিক ঋণ দেওয়া হয় উপার্জনক্ষম নারীকে এবং তাদের উন্নয়নের নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হয়। সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্যমূলক মতাদর্শ দূর করা, নারীবিরোধী মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারসহ আরো অনেক নারীবিষয়ক ইস্যু নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ।

যোগাযোগ:
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ
রোকেয়া কবির, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর
১৩/১৪, বাবর রোড (দ্বিতীয় তলা), ব্লক-বি
মোহাম্মদপুর হাউজিং এস্টেট
ঢাকা-১২০৭

নারীপক্ষ
পরিবার, সমাজে ও রাষ্ট্রে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮৩ সালে নারীপক্ষ আত্দপ্রকাশ করে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ, স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনায় সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, নারী নির্যাতনবিষয়ক গবেষণা, নারীর প্রতি বৈষম্য, অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং নারী অধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা প্রভাবিতকরণ ইত্যাদি নারীপক্ষের মূল কর্মসূচি।
সদস্যদের স্বেচ্ছাশ্রমের বিনিময়ে উপার্জিত আয়ের মাধ্যমে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের ব্যয় নির্বাহ হয়। তবে নারীবান্ধব হাসপাতাল, নারীর স্বাস্থ্যসেবা_এমন কিছু প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য ডেনমার্কের একটি সাহায্য সংস্থা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ইউনিসেফের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নিয়ে থাকে।

যোগাযোগ:
নারীপক্ষ
অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার, কর্মসূচি ব্যবস্থাপক
র‌্যাংকস নীলু স্কয়ার (পঞ্চম তলা)
রোড-৫/এ, প্লট-১, ৩, ৫
সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি
ঢাকা-১২০৯

নারীকণ্ঠ ফাউন্ডেশন
১৯৯৮ সালের ১৬ জুন ড. রওশন আরার উদ্যোগে নারীকণ্ঠ ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু। নারীকণ্ঠ মূলত নারীর প্রাথমিক উন্নয়ন এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান। নরসিংদীর পাঁচ-ছয়টি গ্রামের নারীদের জন্য খলাপাড়া গ্রামে নারীকণ্ঠের নিজস্ব জমিতে তৈরি করা হয়েছে চিকিৎসাকেন্দ্র, যেখানে নারী ও শিশুকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের শেষ দিকে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন শুরু করে নারীকণ্ঠ। মাইক্রোক্রেডিট থেকে ঋণ ক্ষতিগ্রস্ত নারীকে খুঁজে বের করে তাদের ঋণ গ্রহণের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করে দক্ষতা অনুযায়ী অফেরতযোগ্য অর্থ প্রদানের মাধ্যমে উপার্জনের ব্যবস্থা করা হয় এবং কর্মকাণ্ড নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হয়। পাশাপাশি নারী মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনাদের খুঁজে বের করে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করা হয়।

যোগাযোগ:
নারীকণ্ঠ ফাউন্ডেশন
ফারহানা রেজা, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর
১১/২, সিদ্ধেশ্বরী লেন (চতুর্থ তলা)
ঢাকা-১২১৭

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
সুফিয়া কামাল, মালেকা বেগম, নুরজাহান মুর্শিদ, আয়েশা খানম_এমন আরো অনেক নারী যাঁরা ষাটের দশকে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, তাঁরা কয়েকজন মিলে ১৯৭০ সালের ৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। নির্যাতিত নারীকে বিনামূল্যে আইনি সহযোগিতা, নারীবিষয়ক আইন সংস্কার, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, সুবিধাবঞ্চিত নারীর দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ট্রেনিং দেওয়া এবং আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মূল কর্মসূচি।
প্রথম থেকে পরবর্তী দুই দশক ধরে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে চলেছে মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক কাজ। বর্তমানে নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি নরওয়ের একটি দাতা সংস্থা এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে দেশীয় আর্থিক সহায়তায় চলে পরিষদের কর্মকাণ্ড।

যোগাযোগ:
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
আয়েশা খানম, সভাপতি
সুফিয়া কামাল ভবন
১০/বি/১, সেগুনবাগিচা, ঢাকা-১০০০
ফোন: ৭১৬৯৭০১

১০৫ বছর বয়সী নারীর ফেসবুকে বন্ধু ৪১ হাজার!

১১ফেসবুকের নিবন্ধিত ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ মানুষটির নাম এডিথ কির্চমায়ার। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, ১০৫ বছর বয়সী এ নারী পূর্ণোদ্যমে যেভাবে ফেসবুক ব্যবহার করেন, তাতে হার মানবেন তরুণ-তরুণীরাও।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান্তা বারবারার বাসিন্দা এডিথ বলছিলেন, ৯৫ বছর বয়সে তিনি সামাজিক নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট ফেসবুকে প্রথম অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। তার সন্তানরা তাকে একটি কম্পিউটার, একটি প্রিন্টার ও একটি ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই শুরু। শুধু নাতি-নাতনিদের ফটো দেখার জন্য এডিথ ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করেন না। ফেসবুকে তার বন্ধুর সংখ্যা ৪১ হাজারের বেশি। বিশ্বকে আরও উপযুক্ত স্থানে পরিণত করার করতে তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। বরাবরই তিনি মানুষকে সহায়তা করতে পছন্দ করতেন।

১৯৩০ ও ১৯৪০’র দশকে সারা বিশ্ব যখন ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা গ্রেট ডিপ্রেশনে জর্জরিত ছিল, তখন শিকাগোতে এক তরুণের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তার। পরবর্তীতে তারা বিয়ে করেন। ৭০ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে স্বামীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। গত ৪০ বছর ‘ডিরেক্ট রিলিফ’ সংস্থায় স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছেন এডিথ। এটি একটি মানবাধিকার সংস্থা। জনকল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করতে পেরে খুশি তিনি। এ কাজে তিনি আত্মিক প্রশান্তি খুঁজে পান। স্বপ্ন দেখেন একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ার। সে লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছেন বয়সের বাধাকে দূরে ঠেলে।

ফেসবুকে তিনি বিখ্যাত মনীষীদের অনুপ্রেরণামূলক উক্তি শেয়ার করেন। মানুষকে উৎসাহিত করেন, অনুপ্রাণিত করেন ভালো কাজ করতে।

ডিপ্রেসন বা বিষন্নতা বা মানসিক অবসাদ

বিষন্নতাডিপ্রেসন বা মানসিক অবসাদের কথা অমরা আজকাল প্রায়ই লোকের মুখে শুনে থাকি অনেকেই হয়ত কম বেশী এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেছেন কেউ কেউ প্রায় সময়ই বলে থাকেন মন ভাল নেই, সেটা কি ডিপ্রেসন না অন্য কিছু, যেমন মনে আনন্দ নেই, সেটা যে কারনেই হোক না কেনউদাহরন স্বরূপ বলা যেতে পারে কেউ কোনো কাজে অসফল হয়েছে তার জন্য মন খারাপ, বা কেউ পরিক্ষায় ফেল করেছে তার জন্য মন খারাপ, বা কেউ ভালবাসায় ব্যর্থ হয়েছে তার জন্য মনে আঘাত লেগেছে এই অবস্থাগুলোকে কি ডিপ্রেসন বলা যাবে? হয়ত কিছু কিছু ক্ষেত্রে বলা যাবে যদি দৈনন্দিন কাজ কর্ম ব্যহত হয়, আর মনে বিশেষ কষ্ট হয় তাহলে এই বিষন্ন অবস্থা অনেক সময় ভুক্তভোগী নাও বুঝতে পারে, যদিও তার খুব অসুবিধা হয়

বিষন্নতাবামানসিকঅবসাদেরকিকিউপসর্গ?

ডিপ্রেসনের প্রধান উপসর্গ হল, ভাল না লাগা, বা ইংরাজিতে যাকে বলে লো মুড(Low mood) কিন্তু কারও কারও ডিপ্রেসন না হয়ে খিটখিটে বা রাগের ভাব বেশী হতে পারে। আরো উপসর্গগুলো নিচে দেওয়া হলঃ

) বেশীরভাগ সময় মন ভাল না লাগা, বা কারও কারও সব সময় রাগ বা খিটখিটে মেজাজ

) ঘুমের অসুবিধা, যেমন, প্রথম রাত্রিতে ঘুম ঠিক এসে যায়, কিন্তু মাঝ রাত্রিতে বা খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে যায়, তারপর যার ঘুম আসে না। আবার ঘুমটা ভাঙ্গা ভাঙ্গাও হতে পারে

) খেতে ইচ্ছা না করা, তার জন্য দেহের ওজন কমে যেতে পারে। আবার কেউ কেউ ম্ন খারাপের জন্য অনেক বেশী খেয়ে বেশ মোটা হয়ে যেতে পারে। তারা আবার বেশি ঘুমায়ও

)আগে যা যা করতে ভাল লাগত তা আর ভাল লাগে না, যেমন গান শোনা, বই পড়া, বা সিনেমায় যাওয়া, বা বেড়াতে যাওয়া ইত্যাদি।এমনকি যৌনকাঙ্খাও কমে যায়

)নিজেকে গুটিয়ে ফেলে, বন্ধু বান্ধব, বা আত্মীয় স্বজন কারো সাথে মেলামেশা না করা

) কাজে না যাওয়া, বা পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়

) অনেকে বলেন স্মৃতি শক্তি কমে গেছে, কিছু মনে থাকে না, ঠিক মত মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারেন না। তার জন্য কাজে ভুল হতে পারে। কাজ সম্পূর্ন করতে অনেক বেশি সময় নিতে পারে

) কেউ কেউ বলেন, যখন ডিপ্রেসনের মাত্রা বেশী হয়, যে বেঁচে থেকে লাভ নেই। মরে যাওয়াই ভাল। এই সময় অনেকে আত্মহত্যা করে ফেলতে পারেন

) আমাদের দেশে ডিপ্রেসন হলে অনেকে বলেন, গা, হাত পা ব্যথা করছে, মাথা ব্যথা সব সময়। যাদের ডিপ্রেসনের সাথে টেনশন থাকে তারা বলেন, বুক ধড়ফড় করছে, গা, হাত পা ঝিন ঝিন করছে, যেন সাংঘাতিক কোনো দুরর্ঘটনা ঘটে যাবে।এক মুহূর্তের জন্য শান্ত থাকতে পারেন না। ভারতবর্ষে বা তার আশপাশের দেশ গুলোতে অবসাদের রোগীরা আরো নানা রকম শারীরিক উপসর্গ যেমন, হজমে গন্ডগোল, মাসিকে গন্ডগোল বা মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্ন, ইত্যাদিও হয়। তারজন্য রোগি অনেক সময় চিকিৎসার জন্য জেনারেল ডাক্তারের কাছে যায়

১০) এমনও দেখা গেছে অবসাদ অবস্থা যখন খুব বেশি হয় তখন রোগী কানে নানা কথা শুনতে পারে(হ্যালুসিনেসন,) যেমন কেউ যেন বলছে, ‘ তোমার বেঁচে থেকে লাভ নেই,এখনই মরে যাও, তুমি অনেক পাপকাজ করেছ, ইত্যাদি এই সময় রোগী ওই কথাগুলোকে সত্যি মনে করে আর তাতে আত্মহত্যা করার প্রবনতা অনেক বেশি হয়

ডিপ্রেসনকাদের?

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে ডিপ্রেসন বা মানসিক অবসাদ ভোগেন এমন রোগীর সংখ্যা এমন কিছু কম নয়, এবং বেশীর ভাগ রোগীরই চিকিৎসা করা হয় না  কারন তারা বুঝতে পারে না যে তাদের ডিপ্রেসন হয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে সারা বিশ্বে যে কোনো সময় প্রায় দশ কোটি মানুষের ডিপ্রেসন হয়, কিন্তু তার মধ্যে মাত্র এক কোটি রোগি ডাক্তারের কাছে যায় চিকিৎসা করাতে।মানসিক অবসাদের এই অবস্থা নারী পুরুষের মধ্যে প্রায় সমান সংখ্যায় হয়, যদিও পুরুষদের মধ্যে ডিপ্রেসন বেশী হয় বৃদ্ধ অবস্থায়। যেকোনো বয়সে এই মানসিক অবসাদ হতে পারে, এমনকি দশ বছরের কম শিশুদের মধ্যেও। শিশু বা বয়ঃসন্ধিক্ষনে ডিপ্রেসনের উপসর্গগুলো অনেকটা আলাদা হয়

ডিপ্রেসনবাঅবসাদকিভাবেপ্রভাবফেলতেপারে?

কারও মানসিক অবসাদ হলে তার জীবনে বেশ গভীর ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন

) কাজকর্মে অসুবিধা, নানা ভুল করতে পারে, কাজে মন না লাগার জন্য কাজে দেরী হওয়া, কাজে না যাওয়া, ইত্যাদি। কাজ না করার জন্য পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়

) পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে না। ছেলে মেয়েদের দেখাশোনা ইত্যাদি ঠিকমত করতে পারে না

) বন্ধু বান্ধব বা আত্মীয় স্বজনের থেকে দূরে সরে যায়

) যদি উঠতি বয়সের সময় এই অবসাদ হয় তখন তারা পড়াশোনায় মন দিতে পারে না, প্রায় রাগ ভাব আব ছটফটে ভাব হয় বা একদম নিস্তেজ ভাব হয়ে যায়। এতে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়তে পারে, সেটা আর কখনো মেকাপ করতে পারে না, যদি না সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করা হয়

) কেউ কেউ আবার নানা ড্রাগ নেওয়া শুরু করতে পারে, তখন ডিপ্রেসনের মাত্রা আরো বাড়তে পারে। অনেকে ভাবেন অ্যালকোহল খেলে হয়ত মনের অবসাদের ভাবটা কেটে যাবে। কিন্তু তাতে ডিপ্রেসনের মাত্রা আরো বেশী বেড়ে যায়। এমনকি আত্মহত্যা করার প্রবনতা বেড়ে যায়।সুতরাং দেখা যাচ্ছে মানসিক অবসাদের জন্য রোগীর জীবনে সব ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলে

ডিপ্রেসনবাঅবসাদকেন?

দেহের কোনো কারনের জন্য বিষন্নতা হতে পারে কি?

অনেক পরিক্ষায় বা গবেষনায় পাওয়া গেছে যে শারীরিক কিছু পরিবর্তনের জন্য মনের বিষন্নতা আসতে পারে। যেমন

ব্রেনেরবামস্তিষ্কেরনানানিউরোট্রান্সমিটারেরপরিবর্তনেরজন্যঅবসাদহতেপারে

নানা নিউরোট্রান্সমিটারের মধ্যে দুটি বিশেষ উল্লেখ যোগ্য, যেমন নর এপিনেফ্রিন(norepinephrine) সেরোটোনিন(serotonin)নিউরোট্রান্সমিটার হল এক রকমের কেমিক্যাল যেটা সাধারনতঃ নার্ভকোষে সব সময় তৈরী হয়ে চলেছে।যখন নার্ভ এর উত্তেজনা হয় তখন সেটা বাইরে বেরিয়ে এসে অন্য নার্ভকে উত্তেজিত করে, এই ভাবে এক নার্ভ থেকে অন্য নার্ভে যোগাযোগের জন্য আমরা সব অনুভূতি পাই।  এই নর এপিনেফ্রিন( norepinephrine) এর উপর প্রভাব ফেলে ভেনলাফাক্সিন(Venlafaxine) নামক ঔষধ যেটা ডিপ্রেসনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। সেই জন্য মনে করা হয় নরএপিনেফ্রিন যে নার্ভকোষের উপর কাজ করে তার বেশী ক্রিয়ার জন্য ডিপ্রেসন হয়

নার্ভে  সেরোটোনিন(serotonin) এরকমহওয়াজন্যডিপ্রেসন

কারন দেখাগেছে ফ্লুওক্সেটিন(Fluoxetine) নামকডিপ্রেসনেরঔষধব্রেনেসেরোটোনিনেরপরিমানবাড়িয়েদেওয়াজন্য  মনেরঅবস্থারউন্নতিয়েছে। তাই মনে করা হয়, সেরোটোনিন এর পরিমান কমে যাওয়ার জন্য হয়ত এই রোগটা হয়।শেষ কয়েক দশকে আরো কয়েক রকমের সেরোটোনিনের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেগুলো আরো নানা ভাবে মনের উপর প্রভাব ফেলে

ডোপামিন(Dopamine) আরেকরকমেরনিউরোট্রান্সমিটারযেটাকমহওয়াজন্যডিপ্রেসন কারন দেখা গেছে, টাইরোসিন (tyrosine) নামক অ্যামিনো অ্যাসিড, অ্যাম্ফিটামিন(amphetamine), বা বিউপ্রোপিওন(Bupropion),ইত্যাদি ব্রনের মধ্যে ডোপামিনের পরিমান বাড়িয়ে দেয়, তার জন্য এই ঔষঢগুলোকে ডিপ্রাসনের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার আমরা জানি যে পারকিনসন স্নায়ু রোগের(Parkinson’s disease)কারন হল ব্রেনের কিছু স্থানে বা সেন্টারে ডোপামিন কম হওয়া। সেই জন্য অনেক পারকিনসন রোগীর ডিপ্রেসন হয়।উপরের যে নিউরোট্রান্সমিটার গুলো বলা হল তাছাড়াও আরো নিউরোট্রান্সমিটার আছে যেমন, অ্যসিটাইলকোলিন(Acetylcholine) , গাবা( GABA, Gama Amino Butyric Acid), ইত্যাদি ডিপ্রেসনের কারন হতে পারে

হরমোনেরকমবেশিহওয়াজন্যওডিপ্রেসনহতেপারে

যেমনথাইরয়ে (thyroid hormone ) হরমোনগ্রোথ (Growth hormone ) হরমোনকমহলেডিপ্রেসন এছাড়া আরো নানা হরমোন আছে যার পরিমানের কম বেশি হওয়ার জন্য মনে উপর প্রভাব ফেলতে পারে,সেগুলো আর বলা হল না।হরমোন নিউরোট্রান্সমিটার কিভাবে কাজ করে,এবং কি ভাবে ডিপ্রেসন হয় এটা খুব জটিল, আর উপরের কারন গুলো খুব সরল ভাবে বর্ননা করা হল

ব্রেনেরআকৃতিরপরিবর্তনঃ

ক্যাট স্ক্যান (CAT Scan) বা এম আর আই(MRI) করে ব্রেনে নানা পরিবর্তন পাওয়া গেছেযেমনভেন্ট্রিকলয়েছে, ব্রেনেরকিছুজাগানার্ভশুকিয়েগেছে, ইত্যাদিসেগুলোআবারসবরোগিরক্ষেত্রেপাওয়াযানি।আবার পেট স্ক্যান(PET scan) করে পাওয়া গেছে যে যাদের ডিপ্রেসন হয়েছে তাদের ব্রেনেরকিছুকিছুজাগারক্তেরচলাচলকমেগেছে।যখনডিপ্রেসনেরথেকেসেরেউঠেছেতখনআবাররক্তচলাচলস্বাভাবিকয়েগেছে।এই সব পরিবর্তন কিছু কিছু ডিপ্রেসনের রোগির ব্রেনে পাওয়া গেছে, সবার ডিপ্রেসন রোগির মধ্যে পাওয়া যায় নি

ডিপ্রেসনবাবিষন্নতারোগকিবংশগত?

ফ্যামিলি স্টাডি, যেসব শিশুদের দত্তক নেওয়া হয়েছে তাদেরকে, এবং যমজ ছেলে মেয়েদের বেশ কয়েক বছর লক্ষ্য করার পর জানাগেছে যে, আমাদের এই মুডের (Mood) এর কারন অনেকটা বংশগত। যদি মা বা বাবার কোন একজনের ডিপ্রেসন বা ম্যানিয়া থাকে তাহলে তাদের সন্তানদেরও  ওই ডিপ্রেসন বা ম্যানিয়া হওয়ার সম্ভাবনা ১০ থেকে ২৫ শতাংশ। আর যদি পিতা মাতার দুজনেরই মুড প্রবলেম আছে তাহলে সন্তানদের হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুন হয়ে যায়।যমজ( যারা একদম একরকম) এক জনের যদি ডিপ্রেসন বা ম্যানিয়া থাকে তবে অন্য যমজ সন্তানের হওয়ার সম্ভাবনা ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ। যমজ (অথচ একদম একরকম নয়) তাদের একজনের যদি হয় তবে অন্য জনের হওয়ার সম্ভাবনা ১৬ থেকে ৩৫ শতাংশ। সুতরাং এর থেকে বেশ বোঝা যাচ্ছে যে বংশগত কারণ একটা প্রধান কারণ

ডিপ্রাসনকিসামাজিককোনোকারণে?

জীবনেরপারিপার্শিকনানাকারনেমানসিকচাপেরজন্যএইবিষন্নতাভাবআসতেপারে। কেউ কেউ মনে করেন জীবনের নানা ঘাতপ্রতিঘাত মানসিক চাপের জন্যই ডিপ্রেসন হয়। আর কেউ কেউ মনে করেন এই মানসিক চাপ ডিপ্রেসন করার জন্য এমনকিছু প্রভাব ফেলে না

লক্ষ্যকরাগেছেযেকোনোশিশুযদিএগারোবছরসেরআগেতারমাবাবারএকজনকেহারাতবেতাদেরয়েবিষন্নতাবাঅবসাদঅবস্থাহওয়াসম্ভাবনাখুববেশি।এটাপ্রাদেখাযাবিশেষকোনোক্ষতিহলেবাবিশষকিছুহারালেডিপ্রেসনেরআরম্ভ যেমন নিকট কোনো আত্মীয় স্বজন হারালে বা মৃত্যু হলে, হঠাৎ  বেশীটাকারকোনোলোকসানবাহারালে, বা চাকরিহারালে বা অবসরনিলে(বিশেষ করে যদি পরিবার স্বচ্ছল অবস্থায় না হয়), বিবাহবিচ্ছেদবাভালবাসাবিচ্ছেদহলে, এমনকিপরীক্ষাঅসফলহলে, ইত্যাদি। কোনকারনেডিপ্রেসনহবেতাঅনেকটানির্ভরকরেবিভিন্নমানুষেরবিভিন্নকারনেরউপরবিশেষগুরুত্তদেওয়াজন্য

বিশেষচিন্তারপরিবর্তনেকিডিপ্রেসনেরকারনহতেপারে?

বিখ্যাত সাইকোলজিস্ট অ্যারন বেক(Aaron Beck)এর মতে, ডিপ্রেসনে ভোগেন সেই সব রোগিদের চিন্তার কিছু পরিবর্তন হয় যেমনঃ

Ø তারা নিজেদের সম্বন্ধে নেতিবাচক ধারনা থাকে যেমন ভাবে তাদের দ্বারা কিছু হবে না,তারা অপদার্থ ইত্যাদি,

Ø পারিপার্শিক অবস্থা সম্বন্ধে ভাবে যে সেটা ভীষন এবং অনেককিছু আশা করে তার কাছ থেকে

Ø ভবিষ্যত সম্বন্ধে ভাবে সব সময় তাদের হার হবে আর তাদের ভুগতে হবে। সেই মনে করা হয় যদি এই ভুল ধারনা গুলো থেরাপি করে ঠিক করা যায় তবে ডিপ্রেসনেরও উপশম হবে

ডিপ্রেসনকিএকটাঅসহাঅবস্থাযেটামানুষজীবনধারনেরমধ্যেশেখে?

মনে করা হয় যদি কেউ পরের পর খারাপ অবস্থার বা মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে থাকে তবে তাদের মধ্যে এই অবস্থার সৃস্টি হতে পারে। তখন সে ভাবে তার আর এই খারাপ অবস্থার মধ্যেদিয়ে বেরোনোর উপায় নেই, হতাশ হয়ে যায়, সব আত্মবিশ্বাসও হারিয়ে ফেলে।সেই অবস্থাকে ডিপ্রেসন বলা হয়। সুতরাং একে বলা যেতে পারে বার বার আঘাতের জন্য এক অসহায় অবস্থা

মনেরাখাদরকারকোনোএকটাবিশেষকারনেডিপ্রেসননা।বেশিরভাগক্ষেত্রেইঅনেকগুলোকারনএকসঙ্গেকাজকরে।আবারআরএকরকমেরবিষন্নতাআছেযেটারকোনকারননেই, সেটাকেবলামেলানকোলিকডিপ্রেসন(Melancholic depression). এতেরোগিরমনেরমধ্যেএকদমআনন্দথাকেনা,অনেকসকালেঘুমভেঙ্গেযা, খাওয়াদাওয়াকমকরারজন্যবেশরোগায়েযা, আরমনেরমধ্যেখুবঅনুশোচনাভাবথাকে(এমনকিখুবছোটকিছুরজন্যও)এদেরকেউকেউআত্মহত্যারকরারকথাওবলেন।এদেরকোনোকোনোসমনানাহরমোনেরগন্ডগোলথাকতেপারে

ডিপ্রেসনেরসাথেআরকিকোনোউপসর্গথাকতেপারে?

ডিপ্রেসনের সঙ্গে বেশির ভাগ সময়েই আরো নানা উপসর্গ থাকে, যেমন

Ø কারো কারো উদ্দিগ্নভাব থাকে, যেমন বলে এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকতে পারে না। নানা শারীরিক উপসর্গ থাকে যেমন, বুক ধড় ফড় করা, মাথা ঝিম ঝিম করা, অনেকটা প্যানিক অ্যাটাকের মত

Ø কারো কারো নানা রকম বাতিক থাকে যেমন, ধোয়া ধুয়ি বাতিক, গোনা বাতিক, রোগের বাতিক, নিয়মের বাতিক ইত্যাদি

Ø এর সঙ্গে কেউ কেউ কানে নানা কথা শুনতে (হ্যালুসিনেসন) পান, যেন কেঊ তাদের নানা দোষারোপ করছে, বা তাদের সমালোচনা করছে ইত্যাদি হতে পারে

Ø কেউ কেউ নানা ড্রাগ ব্যাবহার করতে পারে, তার জন্য এই ডিপ্রেসন হতে পারে

Ø কারো যদি কোনো ক্রনিক কোনো রোগ অনেকদিন ধরে থাকে, তবে তাদেরও ডিপ্রেসন বা বিষন্নতা হতে পারে

সন্তানপ্রসবেরপরডিপ্রেসনবাবিষন্নতাভাব

সন্তানপ্রসবের পর কম বেশি মন থারাপ হওয়া প্রায়ই হয়ে থাকে। সেই অবস্থাটা সাধারনতঃ কয়েক সপ্তাহ থেকে মাস দুয়েকের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। যদি এই বিষন্নতা ভাব খুব বেশি হয়, তখন নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো থাকেঃ

Ø মনে ডিপ্রেসনের ভাব, আনন্দফুর্তি লাগে না। সন্তানকে দেখা শোনা পর্য্যন্ত করে না, খাওয়া দাওয়া কম করে বা বন্ধ করে দিতে পারে। ঘুমের অসুবিধা হয়

Ø মনে করতে পারে বাচ্চার বা সন্তানের কোনো দারুন অসুখ করেছে

Ø এমনকি কোনো কোনো মা আত্মহত্যা পর্য্যন্ত করে ফেলে, বাচ্চাকেও মেরে ফেলতে পারে।এই রকম অবস্থা হলে বাচ্চাকে মায়ের কাছথেকে আলাদা রাখা দরকার মায়ের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করা দরকার।কোনো মায়ের সন্তান সম্ভবা হওয়ার আগেই তাদের যদি ডিপ্রেসন থাকে, তাদের ডিপ্রেসনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যাদের আগের ডিপ্রেসন অবস্থা ছিল, কিন্তু সেরে গেছিল, তাদের সেই বিষন্নতা অবস্থা আবার সন্তান হওয়ার পরে হতে পারে

ডিপ্রেসনআত্মহত্যা

আত্মহত্যার একটা বিশেষ কারন হল ডিপ্রেসন বা বিষন্নতা অবস্থা। সেই জন্য ডিপ্রেসন হলেই বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হবে এই আত্মহত্যার কথা। প্রচলিত ধারনা আছে যে আত্মহত্যার কথা জিজ্ঞাসা করলে নাকি আত্মহত্যার প্রবনতা বেড়ে যায়। এর কোনো সঠিক প্রমান পাওয়া যায় নি

কোনোডিপ্রেসনেররোগিরআত্মহত্যারকরারপ্রবনতাবাড়েযদিঃ

Ø সে পুরুষ হয়, অবিবাহিত বা একা থাকেন বা পত্নিবিয়োগ হয়েছে

Ø ডিপ্রেসনের মাত্রা বেশি হয়, যেমন কানে নানা কথা শুনছেন যেবেচে থেক কি লাভ, মরে যাওয়াই ভাল ইত্যাদি বা বলছেন যেআগে অনেক পাপ করেছেন, বা দুর্নিতি করেছেন তার জন্য ভুগতে হচ্ছে, বা পুলিশে ধরে নিয়ে যাবে, ইত্যাদি

Ø বলেন ভবিষ্যতে আর আশা নেই, অসহায় অবস্থা প্রকাশ করছেন সব সময়। বলছেন কেউ তাকে আর ঠিক করতে বা সাহায্য করতে পারবে না

Ø আত্মহত্যা করার আগে তাঁরা বেশ প্ল্যান করেই করেন। অনেকেই মরার আগে সুইসাইড নোট লিখে রেখে যান

Ø যারা আগে আত্মহত্যা করতে গিয়ে অসফল হয়েছেন, তারা পরের বার আরও সাংঘাতিক রকমের আত্মহত্যার চেস্টা করেন। সুতরাং এটাও ভুল ধারনা যে যারা একবার আত্মহত্যায় অসফল হয় তারা আর আত্মহত্যার চেস্টা করে না

Ø কোনো না কোনো ভাবে আগে কাউকে আত্মহত্যার কথা বলে থাকেন এই সব ডিপ্রেসনের রোগিরা।তাই সব সময় সতর্ক থাকা দরকার

Ø ডিপ্রেসনের রোগির অ্যালকোহলের নেশা থাকলে, আত্মহত্যার প্রবনতা বেড়ে যায়

লিখেছেনঃশানুপাল

Ø কো

সুখী দাম্পত্যের দশ সূত্র

জীবনের এক প্রয়োজনীয় একইসাথে চ্যালেঞ্জিং ক্ষেত্র হলো দাম্পত্যজীবন। ছোট ছোট কয়েকটি টিপস অনুসরণ করলেই এ জীবন হতে পারে অনেক আনন্দময়।

সূখী দাম্পত্য

১. বাস্তববাদী হোন
আপনার দাম্পত্যজীবন নিয়ে আপনার ভাবনা কী? সেটা কি রূপকথার গল্পের মতো অত:পর তাহারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো ধরনের, নাকি বাংলা সিনেমার মতো সারাক্ষণ প্রেম-ভালবাসা-ভালবাসি র মতো অলীক কল্পনাবিলাস?
আপনি কি নাটক-উপন্যাস-সিনেমার নায়ক-নায়িকার মতো সর্বগুণ-রূপধারী জীবনসঙ্গী/ জীবনসঙ্গিনীর স্বপ্ন দেখেন?
অথবা আপনি কি বিয়ের পরও আশা করেন আপনার স্ত্রী/স্বামী সেই আচরণ করবে যা সে করতো বিয়ের আগে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসেবে?
দাম্পত্যজীবনে অশান্তির একটা বড় কারণ এই অবাস্তব, অলীক প্রত্যাশা। কারণ বাস্তবজীবনে অলীক প্রত্যাশাগুলো যখন বাস্তবায়িত না হয় তখন তা আশাভঙ্গ ও মর্মপীড়ার কারণ হয়। আবার বৈজ্ঞানিকভাবেই এটা এখন প্রমাণিত যে, প্রেমের প্রাথমিক উন্মাদনা ক্ষণস্থায়ী। আপনি যাকেই বিয়ে করেন না কেন, সে কখনোই ১০০% নিখুঁত হবে না। সারাক্ষণ শুধু আপনার চিন্তা করবে না। সুখী হতে হলে আপনাকে তাই বাস্তববাদী হতে হবে। সফল দম্পতিরা দৈনন্দিন জীবনযাপনেই রোমান্টিকতা খুঁজে নেন, প্রেমের প্রাথমিক উন্মাদনাকে দীর্ঘস্থায়ী প্রেমানুভূতিতে রূপান্তরিত করেন।

২. কাকে বিয়ে করবেন
শুধু বাইরের চাকচিক্য দেখে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলে আপনি ভুল করবেন। যেমন, পাশ্চাত্যের একজন তরুণী হয়তো একজন পুরুষ কতটা সুদর্শন, লম্বা বা তার মধ্যে পুরুষালি বৈশিষ্ট্য আছে কিনা বা তার ধনসম্পদের পরিমাণ কেমন ইত্যাদি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেবে। আবার আমাদের প্রাচ্যের কোনো অভিভাবক হয়তো পাত্রের ডিগ্রী, টাকা-পয়সা কিংবা পাত্র বিদেশে থাকে ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য দিয়ে প্রভাবিত হতে পারে। আপাত অনেক কিছু দেখে, অনেকভাবেই একজন প্রভাবিত হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বিয়ে সুখের হবে কিনা তা এসবের ওপর নির্ভর করে না। হয়তো দেখা গেল এসবকিছু দেখে যে পাত্র বা পাত্রীকে বাছাই করা হলো, বাস্তবে সে একজন স্বার্থপর মানুষ অথবা পাত্র-পাত্রীর মধ্যকার সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যবধান এত বেশি যে মানিয়ে চলা অসম্ভব।
আবার আমরা মনে করি প্রেমের বিয়ে হয়তো সুখের হয়। কিন্তু বিয়ের আগে প্রেম থাকলেই যে তা সুখের বিয়ে হবে তেমন কোনো কথা নেই। কারণ প্রেম আসলে নারী-পুরুষের শারীরিক আকর্ষণেরই এক পোশাকী নাম।
সুখী দাম্পত্যের জন্যে যা প্রয়োজন তাহলো আপনার জীবনসঙ্গী/সঙ্গিনী ভালো মানুষ কিনা, সৎ বিশ্বস্ত এবং উদারমনা কিনা। আদর্শ দাম্পত্য সম্পর্ক তখনই সৃষ্টি হয় যখন স্বামী এবং স্ত্রী দুজনই একই মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হন।
তাই বিয়ের আগে যে মানুষটিকে আপনি জীবনসঙ্গী করতে চাচ্ছেন, তার সম্পর্কে সম্ভাব্য সবকিছু জেনে নিন। পাত্র-পাত্রীর ব্যাপারে নিরপেক্ষ এবং বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দিতে পারে এমনদের সাথে যোগাযোগ করুন। আর যদি তথ্যের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ থাকে তাহলে একাধিক সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যগুলো মিলিয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিন। সবসময় মনে রাখবেন যা রটে তা কিছুটা বটে। কাজেই কোনো নেতিবাচক তথ্য পেলে তা যাচাই না করে হেলায় উড়িয়ে দিলে জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্তে আপনি বড় ধরনের ভুলও করে ফেলতে পারেন। আর অবশ্যই নিজের সম্পর্কে এমনকিছু গোপন করবেন না যা পরে জানলে ভুল বোঝাবুঝি হবে।

৩. শুধু দুজনে মিলে সুখী হতে পারবেন না
অভিভাবকের দোয়া ছাড়া আপনার দাম্পত্যজীবন কখনোই সুখী হতে পারে না। বাবা-মায়ের সংসারের সাথে যতই আপনি বাহ্যিক সম্পর্ক ছেদ করুন না কেন এর প্রভাব আপনার ওপর থেকেই যায়। পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে যারা বিয়ে করেন তাদের দাম্পত্যজীবনে একটা শূন্যতা থেকেই যায় যা কখনো পূরণ হয় না। এর মানে এই নয় যে, জীবনসঙ্গী নির্বাচনে আপনার কোনো ভূমিকা থাকবে না বা আপনার ওপর যেকোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হবে। বিয়েতে আপনার পছন্দকে যেমন অগ্রাধিকার পেতে হবে তেমনি থাকতে হবে দু’পরিবারের সর্বসম্মত অনুমোদন এবং সমর্থন।

৪. বিয়ের অনুষ্ঠান অনাড়াম্বর রাখুন
ইদানিং বিয়েতে আনুষ্ঠানিকতা এবং খরচের বাহুল্য একটি নৈমিত্তিক ব্যাপার। আর এর কারণ ছোটবেলা থেকে আমরা এক রূপকথাময় বিয়ের কল্পনা করে বড় হই। কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠানে যতই জাঁকজমক হোক তার স্থায়িত্ব মাত্র একদিন। প্রাচ্যের কোনো কোনো সংস্কৃতিতে বড়জোর এক সপ্তাহ। অথচ এই ক্ষণস্থায়ী আয়োজনে লোকদেখানো খরচের প্রতিযোগিতায় মাততে গিয়ে দুপরিবারকে হয়তো ঋণের জালে জর্জরিত হতে হয়। আর পরিণাম হয় আর্থিক-মানসিক এবং আত্মিক অশান্তি। শান্তিপূর্ণ দাম্পত্যজীবনের জন্যে তাই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা যথাসম্ভব অনাড়াম্বর রাখুন।

৫. আপনার সঙ্গী আপনাকে বুঝবে নয়, আপনি আগে তাকে বোঝার চেষ্টা করুন
দাম্পত্যজীবনে সমস্যার একটা অন্যতম কারণ হলো আমরা নিজেরাই যে সমস্যার জন্যে দায়ী – এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা সবসময় মনে করি: আমি ঠিক, আমার স্বামী/স্ত্রী ভুল। অথবা মনে করি ও আমার প্রতি অন্যায় করছে কিংবা মনে করি যে ও আমাকে বোঝে না। কিন্তু আমরা এটা বুঝি না যে, আরেকজনকে বোঝার জন্যে আমিই আগে উদ্যোগ নিতে পারি।
দাম্পত্যজীবনে ভুল বোঝাবুঝি দূর করার অন্যতম উপায় হলো, নিজের ভুলগুলো নিজেই খুঁজে বের করা এবং অপরপক্ষের অবস্থান থেকে দেখার চেষ্টা করা। আমরা এটা কখনোই আশা করতে পারি না যে, আমি যা করি না, আমার স্বামী/স্ত্রী সেটা করবে। আমরা যখন ধরে নিই যে, সমস্ত ভুল আরেকজনের, তখন ভুল বোঝাবুঝি দূর করার দায়ও আমরা তার ওপরই চাপিয়ে দিই। যদি আমরা শুধু এটা মনে করতাম যে, বোঝাবুঝির অভাব হলেই ভুল বোঝাবুঝি হয়, তখন আমরাই উদ্যোগ নিতাম। কোন সমস্যাই আর সমস্যা থাকতো না।

৬. জীবনসঙ্গী/ জীবনসঙ্গিনীর দূর্বলতা এবং সীমাবদ্ধতার ক্ষেত্রে প্রো-একটিভ হোন
প্রতিটি মানুষের মতো আপনার স্ত্রী বা স্বামীরও কিছু দোষ-ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা থাকবেই। তার চরিত্রের এমন কিছু দিক থাকবে যা আপনার মনপছন্দ না-ও হতে পারে। এই দিকগুলো আপনি কীভাবে সামলাবেন তার উপরই নির্ভর করবে আপনার দাম্পত্যজীবন কতটা সুখের হবে। খেয়াল রাখুন নিচের টিপসগুলো:
· জীবনসঙ্গী/ জীবনসঙ্গিনীকে পুরোপুরি গ্রহণ করুন – তার দুর্বলতা এবং সীমাবদ্ধতাসহ। মনে রাখবেন সমমর্মিতা/ প্রেম আরেকজনকে বিচার করে না, বরং তাকে বোঝার চেষ্টা করে।
· ব্যক্তিকে তার আচরণ থেকে আলাদা করে দেখুন। আজকের আচরণের চাইতে তার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দিকে মনোযোগ দিলে তার বর্তমান সীমাবদ্ধতাগুলো মেনে নেওয়া সহজ হবে।
· পরস্পরের প্রতি ভালো ধারণাগুলোকেই লালন করুন। স্বামী/স্ত্রীর ভালো গুণগুলো খুঁজে দেখুন এবং সেগুলোর প্রশংসা করুন। এটা তাকে তার সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠতে উৎসাহিত করবে।
· অতীত ভুলে যান। স্বামী/স্ত্রীর অতীত ভুলকে মনে রাখবেন না। বর্তমানকে নিয়ে বাঁচুন।
· স্বামী/স্ত্রীকে কখনো অন্যের সাথে তুলনা করবেন না। বরং অতীতের সাথে তার বর্তমানের অবস্থানকে তুলনা করে দেখুন তার কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে।

৭. আর্থিক বিষয় পরিচালনার ক্ষেত্রে দক্ষ হোন
দাম্পত্যজীবনে সমস্যার অন্যতম একটি কারণ। সমস্যাটি আরও প্রকট হয় যখন স্বামী হয় পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী এবং স্ত্রী থাকে আর্থিক ব্যাপারে পুরোপুরি স্বামীর ওপর নির্ভরশীল। এসব ক্ষেত্রে স্বামীর উপার্জন এবং স্ত্রীর প্রত্যাশার মধ্যে ভারসাম্য না থাকলেই সমস্যা দেখা দেয়। অর্থনৈতিক বিষয়ে ঝামেলা এড়াতে নিচের বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখুন।
· প্রথম থেকেই স্বামী/স্ত্রীকে নিজের উপার্জন সম্পর্কে বাস্তব ধারণা দিন। ফলে অবাস্তব প্রত্যাশা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
· পরস্পরের জন্যে ছোটখাটো হলেও উপহার কিনুন।
· স্বামী/স্ত্রী তার পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে চাইলে বা কোন উপহার দিলে অযৌক্তিকভাবে বাধা দেবেন না।
· ঝোঁকের বশে কেনাকাটা করে অপচয় করবেন না। অপচয় আপনার জীবনে দুর্ভাগ্য নিয়ে আসবে।
· পরিবারে আপনি (স্বামী হিসেবে) একা উপার্জনক্ষম হলে জীবনসঙ্গিনীর আর্থিক চাহিদার উত্তরে যত বেশীবার সম্ভব হ্যাঁ বলুন। আপনার স্ত্রীকে হাতখরচ হিসেবে টাকা দিন এবং সেই টাকা তিনি কীভাবে খরচ করেন সে ব্যাপারে কোন খোঁজ-খবর নেবেন না।
· পরিবারে আপনার স্বামী একা উপার্জনক্ষম হলে আপনার প্রত্যাশাকে যৌক্তিক সীমার মধ্যে রাখুন। তার সামর্থ্যের বাইরে কিছু চাইবেন না।

৮. পরিবারে সময় দিন, সম্পর্ক লালন করুন
জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো পরিবারিক জীবনেও আপনি যদি সাফল্য চান, আপনাকে পরিবারের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা কিংবা ক্লাবে তাস বা পুল খেলে সময় কাটানোর চাইতে পরিবারে সময় দিলে সেটা আপনার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্যে ভালো হবে। মনে রাখবেন, বাসায় থাকা আর পরিবারের সাথে সময় কাটানো – দুটি সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। বাসায় থাকলে টিভি না দেখে পরস্পরের সাথে কথা বলুন, অনুভূতি-মতামত-পরামর্শ বিনিময় করুন। অফিসের চাপ, ঝামেলা বা টেনশনকে অফিসে রেখে শুধুমাত্র পরিবারকেই সময় দিন। সুযোগ থাকলে ঘরের কাজে স্ত্রীর সাথে অংশ নিন।

৯. পরিবারিক সম্পর্কে আত্মিকতা বজায় রাখুন
শুধুমাত্র জৈবিক বা বাহ্যিক আকর্ষণের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সম্পর্কের ভিত খুব দুর্বল হয়। পারস্পরিক সম্পর্কে যখন সমমর্মিতা এবং ধর্মীয় বন্ধন থাকে তখনই সেই সম্পর্ক হয় সুখপ্রদ এবং দীর্ঘস্থায়ী।
জৈবিক সত্তা আমাদেরকে ভাবায় আমি কী পাবো ? আর আত্মিক সত্তা ভাবতে শেখায় আমি কী দিতে পারি? দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে সাধারণ ধারণা হলো আমি কী পাবো। কিন্তু মৌলিক সত্য হচ্ছে: যতই আমরা দিতে থাকবো, প্রাকৃতিক প্রতিদানের নিয়ম অনুযায়ী আমরা ততই পেতে থাকবো। আমাদের বিবাহিত জীবনে সবসময় আমরা শুধু যদি এটা ভাবতে পারি যে: আমি আমার সঙ্গীকে কি দিতে পারি, এর ফলাফল আমাদের বিস্মিত করবে। আমরা তখন আমাদের সঙ্গীর সেইসব দিকে তাকাতে পারবো, যেগুলোর দিকে আমরা আগে নজরই দেইনি। আমরা আরও উপলব্ধি করতে পারবো যে, স্বামী/স্ত্রীi কাছ থেকে কিছু চাওয়ার পরিবর্তে তাকে কোনো কিছু দিতে পারার আনন্দ অনেক বেশী। নিঃশর্ত ভালবাসা যে সম্পর্ক তৈরী করে, কোন চাহিদা-চুক্তি-কর্তৃত্ব সেরকম সম্পর্ক তৈরী করতে পারে না। কাজেই কোনোরকম প্রাপ্তির প্রত্যাশা না করে শুধু দিয়ে যান।

১০. কখন হাল ছাড়তে হবে, এটা বুঝুন
যতই চেষ্টা করা হোক, কিছু বিয়ে হয়তো টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয় না। স্বামী বা স্ত্রী যদি অত্যাচারী হয়, তার এমন কোনো চারিত্রিক দোষ থাকে যা সে শোধরাতে রাজী নয়, সে যদি সবসময় অমর্যাদাকর ব্যবহার করে বা আপনার প্রতি বিশ্বস্ত না হয়ে থাকে, তবে এ ধরনের দাম্পত্য সম্পর্কের ইতি ঘটানোই ভাল। এসব ক্ষেত্রে তিনি নিজের স্বভাব পরিবর্তন করে ভালো হয়ে যাবেন এমন আশা না করে বাচ্চা আসার আগেই দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিন। আসলে কেউ কেউ আছে কখনো বদলাতে চায় না। এও মনে রাখা দরকার, দাম্পত্যজীবনে আমি কী দিতে পারি এটা ভাবা আর দুর্বল বা নির্ভরশীল হওয়া এক কথা নয়। তবে আপনার যদি সন্তান থাকে, আইনানুগ বিবাহবিচ্ছেদের আগে সময় নিয়ে, গভীরভাবে সবদিক ভেবে নেবেন।

সূত্র: কোয়ান্টাম মেথড

বিয়ের আগে কনের প্রস্তুতি

বিয়ের প্রস্তুতি

বিয়ে প্রতিটি মেয়ের জীবনেই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই বিয়ের আয়োজন নিয়ে মেয়েদের মনে নানা ধরনের স্বপ্ন, ইচ্ছা, আকাঙ্খা বাসা বাঁধে। বিয়ের কাজ ও নানা মানসিক চাপের ফলে চেহারায় একটি ক্লান্তিভাব চলে আসে। তাই আগে থেকে যত্ন নিতে হবে।

বিয়ের অন্তত পনের দিন আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়া প্রতিটি মেয়ের জন্য খুব জরুরি, যাতে বিয়ের দিন কনে হিসেবে তাকে অনেক সুন্দর ও প্রাণবন্ত দেখায়। সঠিক নিয়ম পালন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে আপনি চাইলে আপনার ত্বকের ও চুলের যে কোন সমস্যা প্রতিহত করতে পারেন।

বিয়ের আগে কনে যেসব পরিচর্যা করতে পারেন তা হল-

ত্বক: 

বিয়ের আগে কনে বাসায় নিয়মিত কিছু নিয়ম মেনে চলতে পারে। এতে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হবে। যেমন-

  •  ক্লিনজার দিয়ে দিনে অবশ্যই দু’বার মুখ ধুতে হবে। এর পর মুখ শুকিয়ে এলে আবার টোনার দিয়ে মুখ মুছে নিন। এর পর আপনার ত্বকের জন্য উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
  • বেশি চা, কফি খাবেন না। কারণ বেশি চা, কফি খেলে নার্ভ উত্তেজিত হয় এবং শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বেরিয়ে যায়।

ত্বকের যত্ন

 দিনে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি ও ফলের রস খান।

  • ·         প্রচুর পানি পান করবেন; দিনে অন্ততপক্ষে ৭-৮ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করবেন।
    ·         ভিটামিন এ ও ই সমৃদ্ধ এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস্ ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
    ·         আপনি অবশ্যই বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন লাগানোর চেষ্টা করবেন।
    ·         পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম, পরিমিত খাবার এবং যথেষ্ট পানি খেতে চেষ্টা করুন।
    ·         রোদের তাপ থেকে সবসময় আড়াল থাকতে হবে।
    ·         বিয়ের আগে কনে বাসায় নিয়মিত কিছু ফেইস পেকও ব্যবহার করতে পারে। যেমনÑ
    ·         ত্বকের যে কোন দাগ দূর করার জন্য পাকা পেঁপের কোন ঝুড়ি নেই। পাকা পেঁপে চটকে তাতে টকদই মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করা যেতে পারে। এই প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে উঠিয়ে ফেলতে হবে। এর পর মুখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

·         এছাড়া পাকা পেঁপে চটকে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে মুখে, গলা ও হাতে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এর পর শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করে তুলে ফেলতে হবে।
·         চালের গুঁড়া টকদই, মূলতানি মাটি কমলালেবুর খোসার গুঁড়ার সঙ্গে মিশিয়ে পেক তৈরি করে মুখে এবং গলায় লাগাতে হবে। এই পেক নিয়মিত লাগালে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও সতেজ।
·         এছাড়া পাকা কলা লেবুর রস এবং মধু ভালো করে মিশিয়ে পেক তৈরি করে সেই পেকটি মুখে লাগিয়ে বিশ মিনিট রাখতে হবে। এর পর শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ কর তুলে ফেলতে হবে।
·         আপনার ত্বক বিরক্তি প্রকাশ করে এমন কোন কিছুই করা আপনার ত্বকের জন্য ভালো নয়। আপনি লোশন টাইপের পণ্য দিয়ে ক্লিনজিং ও ময়েশ্চারাইজিং করবেন এবং টোনিং করার জন্য অ্যালকোহলবিহীন টোনার নেবেন এবং যে ধরনের ফেসিয়াল মাস্ক ত্বককে উষ্ণ করে ফেলে তা আপনার জন্য প্রযোজ্য না।
·         আপনি যে কোন ধরনের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কেনার সময় প্রোডাক্টটি সেনসিটিভ স্কিনের জন্য প্রযোজ্য কিনা জেনে কিনবেন। এখন অধিকাংশ ব্র্যান্ডের গায়ে লেখা থাকে এটি কোন ধরনের ত্বকের জন্য প্রস্তুত হয়েছে।
·         বাসাতে আপনার ত্বকে ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহারের জন্য নিতে পারেন ১ চা চামচ করে মধু ও অ্যালোভেরার জেল এবং একটি ডিমের কুসুম মিলিয়ে ত্বকে ব্যবহার করে ৫ মিনিট পর উষ্ণ পানিতে ধুয়ে নিন।

  • ত্বকের মরা কোষ ঝরানোর জন্য ২ টেবিল চামচ করে ওটমিল ও অ্যালোভেরার জেল, ২ চা চামচ চিনি এবং ১ চা চামচ লেবুর রস একসঙ্গে মিলিয়ে ত্বকে ব্যবহার করে ৩ মিনিট পর ভেজা ও নরম হাতে ম্যাসাজ করে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এভাবে প্রতি সপ্তাহে একবার মরা চামড়ার কোষ ঝরানো যেতে পারে।

 চুল:
·         বিয়ের আগে কনে বাসায় নিয়মিত কিছু চুলের পেকও ব্যবহার করতে পারে। যেমন :
·         চুলের ডগা ফেটে গেলে তা কাটা ছাড়া কোন উপায় নেই। এ ছাড়া চুলে নিয়ম করে যতœ নিতে হবে। ২০০ গ্রাম নারকেল তেলের সঙ্গে ২০টা জবাফুল, দুটি আমলকী, দুই চামচ মেথি ১০ মিনিট ফোটান। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এই মিশ্রণ চুলে লাগাবেন।

চুলের যত্ন
·         রোজমেরি অ্যাসেন্সিয়াল অয়েল ও অলিভ অয়েল মেশানো কন্ডিশনার ভেজা চুলে লাগান। হালকা কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে মাথায় জড়িয়ে রাখুন ৪৫ মিনিট। তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল শুকিয়ে নিন ।
·         প্রতিদিন একটি করে ডিম মাথার ত্বক ও চুলে ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট পর ধুয়ে নিতে পারেন। অথবা তিনটা অ্যালোভেরার পাতা থেকে ভালো করে জেল বের করে নিয়ে এতে মধু মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে বিশ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে একবার করে তিন মাস এভাবে পরিচর্যা করতে থাকুন।
·         চুলের রুক্ষতা দূর করতে সপ্তাহে তিন দিন চুলে তেল লাগিয়ে এ প্যাকটি ব্যবহার করুনÑ এক চামচ নারিকেল তেল, এক চামচ কাস্টার অয়েল, এক চামচ ভিনেগার, এক চামচ শ্যাম্পু, একটা পাকা কলা ও এক চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন চলি¬শ মিনিট। এরপর পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
·         সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন নারকেলের দুধ, পাতিলেবুর রস ও নিমপাতা বাটা মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন। এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। শেষে দুধ ও মধুর মিশ্রণ দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।

·         খুশকি থেকে মুক্তি পেতে সপ্তাহে দুই দিন এই প্যাকটি লাগান। টকদই, একটি ডিস্ট্রিন ট্যাবলেট ও পাতিলেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে পুরো স্ক্যাল্পে লাগিয়ে রাখুন। দু-ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। শেষে চায়ের লিকারে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

  • এছাড়া বিয়ের পনের দিন আগে থেকেই ভালো কোন স্যালন থেকে কনে ত্বক ও চুলের কিছু ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে পারে।
    ·         বিয়ের পনের দিন আগে থেকে ভালো কোন বিউটি পার্লার থেকে কমপক্ষে দু’বার ফেসিয়াল করে নিন।
    ·         বিয়ের আগে ত্বকে বাড়তি উজ্জ্বলতা আনতে গোল্ড ফেসিয়াল, পার্ল ফেসিয়াল, ব্রাইটেনিং ফেসিয়াল, অক্সি-ব্রাইট ফেসিয়াল ইত্যাদি করা যেতে পারে।
    ·         বিয়ের দুই-তিন দিন আগে ম্যানিকিউর-পেডিকিউর করে নিন। অনুষ্ঠানের আগে পুরো মুখে থ্রেডিং করে নিতে পারেন।
    ·         ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে থ্রেডিং না করতে চাইলে মুখে ও হাতে ফেয়ারপলিশ করে নিন।
    ·         মেকআপের এক দিন আগে আই-ব্রাউ শেপ করে নিন। বিয়ের তিন-চার দিন আগে ওয়্যাক্সিং করে নিন।
    ·         চুলের স্বাস্থ্যোজ্জ্বল লুকের জন্য বিয়ের আগে অন্ততপক্ষে দু’বার হেয়ার ট্রিটমেন্ট করাতে হবে। যেমন : প্রোটিন হেয়ার ট্রিটমেন্ট, হার্বাল ট্রিটমেন্ট, হেয়ার স্পা ইত্যাদি করতে পারেন।
    ·         এছাড়া বিয়ের আগে কনের কিছু আলাদা প্রিপারেশনের প্রয়োজন পড়ে। যেমন :
    ·         বিয়ের আগের দিন হাতে মেহেদি পরুন। বিয়ের সাজের দিন পার্লারে যাওয়ার আগে ফুল কিনে রাখুন। শাড়ি, গহনা, জুতাসহ সব জিনিস সঙ্গে নিয়ে নিন।
    ·         মনের চাপ কমাতে বিয়ের আগে থেকে পাওয়ার ইয়োগা অথবা ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে পারেন।
    ·         নিজেকে রিল্যাক্স রাখতে ভালো কোন স্পা থেকে বডি ম্যাসাজ বা অ্যারোমা থেরাপি নিয়ে নিতে পারেন।

– কানিজ আলমাস খান

 

‘নারী সমাজকে পিছিয়ে রেখে উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়’

বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সম-অধিকার স্বীকৃত। এর পরও ঘরে-বাইরে সবখানেই নারীরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আইন রয়েছে, কিন্তু কোনো বাস্তবায়ন নেই। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে চলেছে ক্রমেই। সাক্ষাৎকারে এসব নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউএলএ) নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী।

সালমা আলী

# বর্তমানে প্রচলিত বিভিন্ন আইনে যেসব বিধান রয়েছে, তা নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কতটুকু কার্যকর?

সালমা আলী: আমাদের দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বেশ কিছু আইন রয়েছে, যেমন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩); যৌতুক নিরোধ আইন, ১৯৮০; অ্যাসিড অপরাধ দমন আইন, ২০০২; ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, ২০০৯; পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২; মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ ইত্যাদি। এসব আইনে যেসব বিধান রয়েছে, তা নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বলিষ্ঠ ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক যে, এসব আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে দুর্বলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের সুরক্ষায় সঠিক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ না নেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিও উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি বিচার-প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার জন্য নারীরা হয়রানির শিকার হন। মামলা পরিচালনার খরচ বেশি হওয়ায় অনেকের পক্ষে মামলা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

# পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে ২০১০ সালে আইন করা হয়েছে। কিন্তু এর বাস্তবায়ন কতটুকু?

সালমা আলী: পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ আইনটি একটি প্রতিরোধমূলক ও নমনীয় আইন। এটি পারিবারিক নির্যাতনকে অপরাধ হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়েছে। এ আইনের আওতায় দেশে ইতিমধ্যে ১১৫টির বেশি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনডব্লিউএলএ ৫০টির বেশি মামলা করেছে। এই আইনে বিধি দ্বারা নির্ধারিত ফরমে মামলা করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট বিধিমালা না থাকায় কোনো কোনো আদালত এ-সংক্রান্ত অভিযোগ আমলে নিতে অপারগতা প্রকাশ করতেন। একই কারণে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছিলেন না। ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ আইনের আওতায় খুব বেশি মামলা না হলেও বেশ কিছু সংগঠন আইনের আওতায় উপযুক্ততা ব্যবহার করে কিছু মামলা করেছে। গত ২৯ এপ্রিল সরকার গেজেট আকারে এই আইনের বিধিমালা প্রকাশ করেছে। এতে করে এ আইনের আওতায় মামলা করা এখন সহজ হবে।

# আইনটি বাস্তবায়নের পথে প্রধান বাধাগুলো কী?

সালমা আলী: আইনটি বাস্তবায়নের পথে প্রধান বাধা হচ্ছে আইনটি সম্বন্ধে সাধারণ জনগণের অজ্ঞতা। সাধারণ মানুষ পারিবারিক সহিংসতাকে নিতান্তই ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয় বলে মনে করে বিধায় একে বেশি গুরুত্ব দেয় না। এ আইনের আওতায় প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের অনেকের তাঁদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা নেই। অনেক ক্ষেত্রে মামলা করায় ‘স্বামী কর্তৃক তালাক’ দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়, যা একজন নারীর জীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়। কারণ, একজন স্বামী পরিত্যক্ত বা নির্যাতনের শিকার নারীর পুনর্বাসনের জন্য পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নেই। ফলে সাধারণ নারীরা পারিবারিক সহিংসতার বিষয় নিয়ে মামলা করতে আগ্রহী হন না। পাশাপাশি স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করা এখনো আমাদের সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়। এ ছাড়া বিচার-প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, দুর্নীতি, তদন্তে অবহেলা ও ধীরগতির কারণে অপরাধীরা অনেক সময় শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে অপরাধীরা আরও বেশি সক্রিয় হয়। এ ধরনের অপরাধের পেছনে জেন্ডার সংবেদনশীলতার অভাব, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, বেকারত্ব, দারিদ্র্যও ভূমিকা রাখছে।

# বিএনডব্লিউএলএর সাম্প্রতিক গবেষণায় নারীর প্রতি সহিংসতা কোন পর্যায়ে?

সালমা আলী: আমরা নিয়মিত ১৪টি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত নারীর প্রতি সহিংসতাবিষয়ক তথ্য পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করি। এ ছাড়া সমিতির সদস্য এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য পেয়ে গুরুতর নির্যাতন বা অপরাধের ক্ষেত্রে সত্যানুসন্ধান করি। সমিতির পক্ষ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে নারীর প্রতি সহিংসতার কিছু তথ্য উপস্থাপন করেছিলাম। এতে দেখা গেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশে নারীর প্রতি বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, যৌন হয়রানি, অপহরণ, যৌতুকের কারণে নির্যাতন ও হত্যা, পারিবারিক সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পারিবারিক সহিংসতার কথা সাধারণত নারীরা বলতে চান না। মানসিক নির্যাতনের বেশির ভাগ ঘটনার তথ্য ঘরের বাইরে আসে না। আমরা শুধু প্রকাশিত তথ্য দিয়ে নির্যাতনের হার কম না বেশি, তা নিরূপণ করছি।

আমরা সমিতির পক্ষ থেকে প্রয়োজনে অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের আইনগত সাহায্য করি। সম্প্রতি একজন সাংসদের এপিএস কর্তৃক গাজীপুরে কিশোরী গৃহপরিচারিকা নির্যাতন ও ধর্ষণ, মধুুপুরে কিশোরী গণধর্ষণের ঘটনায় সমিতি ওই কিশোরীদের পাশে দাঁড়িয়ে আইনগত সহায়তা দিয়েছে।

# সংসার, ঘরের বাইরে বা কর্মস্থলে নারীর প্রতি মানসিক নির্যাতন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এর পেছনে কী কারণ?

সালমা আলী: নারীরা আগের চেয়ে বেশি ঘরের বাইরে কাজ করছেন। তাঁরা নিজেদের যোগ্যতা, দক্ষতা, সততা, আন্তরিকতা কাজে লাগিয়ে কর্মক্ষেত্রে উন্নতি করছেন দ্রুত। ফলে নারীদের সফলতা ঈর্ষণীয়। এতে কিছু কিছু পুরুষ হীনম্মন্যতায় ভুগতে পারেন। এ কারণে নারীর প্রতি মানসিক নির্যাতন বাড়তে পারে। নারীর প্রতি মানসিক নির্যাতনের পেছনে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার পাশাপাশি দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা ও কুসংস্কার দায়ী। পারিবারিক ক্ষেত্রে মানসিক নির্যাতন প্রতিরোধে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ রয়েছে। তবে পারিবারিক পরিমণ্ডলের বাইরে বা কর্মক্ষেত্রে মানসিক নির্যাতন প্রতিরোধে বাংলাদেশে কোনো আইন নেই। শিক্ষা, চাকরি ও রাজনীতিতে নারী যখন নিজ মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, তখন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নেতিবাচক মানসিকতার কারণে নারীরা নানা নির্যাতনের মুখোমুখি হচ্ছেন। নারীর প্রতি বৈষম্য, নিষ্ঠুরতা, যৌন হয়রানি ও নিপীড়নসহ সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ না করলে সমাজ থেকে নারী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা এই নারী সমাজকে পিছিয়ে রেখে দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়। তবে সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে বিভিন্নমুখী উদ্যোগের ফলে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। ফলে মানুষ, বিশেষত নারীরা নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। এটাও ঠিক, নারীদের একটা বড় অংশ এখনো তাঁদের অধিকার সম্পর্কে অসচেতন।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অনিকা ফারজানা

সূত্র: প্রথম আলো

ঐতিহ্য চেতনায় আমাদের সাংস্কৃতিক উৎসব

আমাদের গৌরবগাঁথা অতীতকেই ঐতিহ্য বলতে পারি। আমাদের অস্তিত্বের সাথে, জীবনের সাথে যে সুমহান অতীত জড়িয়ে আছে তা-ই আমাদের ঐতিহ্য। অতীত দিনের গৌরবময় ইতিহাসকেও আমরা ঐতিহ্য বলতে পারি। তেমনই আমাদের লোকজ অস্তিত্বের সকল জীবনাচারণই হচ্ছে লোকসংস্কৃতি । আর লোকজ সত্ত্বায় মিশে আছে বাঙালির উৎসবের নানান দিক। আবহমান কাল ধরে লোকসংস্কৃতির বহুবিধ শাখা-প্রশাখার মতো বাঙালির উৎসববাদির মধ্যে ছড়িয়ে আমাদের স্বকীয়তা ও  সকল অস্তিত্ববোধ। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের আনাচে-আনাচে, পল্লীমায়ের কোল জুড়েই লালিত হয়ে বিকাশমান রয়েছে আমাদের লোকজ উৎসব।

আমাদের সংস্কৃতির ইতিহাস অনেক পুরানো। তেমনি আমাদের উৎসবের ধারাগুলোও অনেক পুরনো এবং ঐতিহ্যময়। হাজার বছরের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের গৌরবমাখা সোপানে আমাদের বাংলার সংস্কৃতির ভিত্তি মজবুত এবং বেশ শক্তিশালী।

বাংলার মানুষের হাসি-কান্না,আনন্দ-বেদনা, দু:খ-কষ্ট, বিরহ-যাতনা কিংবা সর্বজীবনের পরতে পরতে মাখামাখি হয়ে আছে আমাদের লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্য। বিপুল শৌর্য-বীর্যের তেজোদ্দীপ্ত শক্তি নিয়ে আমাদের লোকজ সংস্কৃতি সমগ্র বাঙালির হৃদয়ে গ্রথিত। আমাদের ধর্ম-কর্ম,বিবাহ-শাদি,ঈদআনন্দোৎব,

পুজা-পার্বনসহ জীবনের সর্বই এই সংস্কৃতির স্বরূপ ছড়িয়ে রয়েছে সর্বত্র। আমাদের লোকায়ত জীবনের প্রতিটি অঙ্গনেই এক যাদুকরী প্রভাব নিয়েইএই সংস্কৃতি সুপ্রতিষ্ঠিত এবং সঞ্চরণশীল।

বাংলার গ্রাম-গঞ্জ,নগর-বন্দর সর্বাঞ্চলের মানুষের সুখ-দু:খ,আনন্দ-বেদনার সাথে আমাদের ঐতিহ্যময় সংস্কৃতির নান্দনিক কীর্তি সমূহকে ধারন করেই আমরা নিজেদেরকে গৌরবান্বিত মনে করি।  বাংলাদেশের অস্তিত্বভিসারি ঐতিহ্যবোধের নিরিখে বৃহত্তর মুসলিম সমাজের ঐতিহ্যময় ঈদ, আনন্দমেলা, ঈ-দে মিলাদুন্নবী,মহরম,শবে বরাত,শবে কদর কিংবা হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান সমাজের পুজা-পার্বন,বড়দিনসহ বিভিন্ন উপাসনাত্রে গুলোও আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে উচ্চকিত অবস্থানে রেখেছে।

বাংলার সর্ব প্রকার পরিমার্জিত সাংস্কৃতিক অস্তিত্বই আমাদের লোকজসংস্কৃতির অংশ। এছাড়া বাংলা নববর্ষ,পহেলা বৈশাখ এবং শৌর্য-বীর্যগাঁথা বাংলার বারোমাসের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানাদি আমাদের লৌকিক সংস্কৃতির একটা বিরাট মহীরূহ হয়ে আছে।

আমাদের শহুরে কিংবা গ্রামবাংলার সকল প্রাণসঞ্চারি আচারানুষ্ঠান ও জীবনাচার বিশিষ্ট সবকিছুই আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের বাইরে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কিছু উৎসব আছে। যাকে আমরা সর্বজনীন উৎসব বলি। যেমন পহেলা বৈশাখ। বাংলা সালের সূচনা মাসের পহেলা বৈশাখে সমগ্র বাঙালি ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় সর্বস্তরের মানুষ এক মহা উৎসবে শামিল হয়। ব্যাপক সাড়ম্বরে জনগণ বাংলা নববর্ষের উৎসবে মেতে ওঠে। তেমনি গ্রীষ্মের দাবদাহের পর বাংলাদেশে বারিধারা সম্বলিত বর্ষার আগমনকেও অনেকে বিপুল উৎসাহে স্বাগত জানায়। এরকম আরো উৎসব আছে, যা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সম্পুরক গৌরবে উদ্ভাসিত।

আমাদের লোকসংস্কৃতির একটা বিরাট প্রাণময়ী শক্তি হচ্ছে আমাদের লোকজউৎসব। বাংলার গণমানুষের জীবনধারার সাথে আমাদের ঐতিহ্যমন্ডিত লোকসমাজে নানা রকম উৎসবের ইমেজ-আমেজ জড়িয়ে আছে ওৎপ্রোত ভাবে। একটা বিরাট গৌরব বহন করে চলেছে। অনেক পূর্বেই আমাদের লোকজউৎসবের বিভিন্ন পর্বগুলো বাংলাসংস্কৃতির ভূবনকে প্রদ্দীপ্ত, পরিব্যাপ্ত ও আলোকিত করে রেখেছে। সহস্ত্র বছরের ঐতিহ্য বহন করে আমাদের লোকসমাজ ও সাংস্কৃতিক উৎসবের অমীয়ধারা বাঙালিকে করেছে সুষমামন্ডিত, গৌরবান্বিত।

বাংলাদেশের গণমানুষের ধর্মীয় ও সামাজিক আচারাদির সবকিছুই আমাদের সংস্কৃতির অংশ। সবকিছুই ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। অতএব, সেইসব আনন্দ ধারা এবং উৎসবের স্বরূপকে জীবন্ত রেখেই আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষা ও লালন করতে হবে। এই ক্ষেত্রে হেনরি মিলারের একটা কথা মনে পড়ছ্ েতিনি বলেছেন-‘ আনন্দকে যারা অবজ্ঞা করতে বলে, তারা হয় বৃদ্ধ, অথবা একেবারে অসুস্থ’। আমাদের বুঝতে হবে যে,সব আনন্দধারা কিংবা উৎসবের মধ্যে মানুষকে জাগরিত করবার একটা প্রত্যাশা থাকে। সেই প্রত্যাশাকে স্বাগত জানাতে হবে।

বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে গৌরবজনক দিক হচ্ছে, সবার একটি মাত্র ভাষা। যার নাম বাংলাভাষা। এই মহিমান্বিত ভাষার মাধ্যমেই আমরা ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মাঝে একটা সৌহার্দ্দ-সম্প্রীতির ঐকতানে একই সূত্রে মিলে- মিশে আছি। একে অপরের সুখ-দু:খের সাথী হতে পারছি।

আমাদের এই দেশে সকল ধর্মমতের স্বাধীন সত্ত্বার উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থেকেই প্রত্যেকে আনন্দোৎসব পালন করে থাকে। ধর্মীয় কারণে কেউ কারো জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। প্রত্যেকেই তাদের ঐতিহ্যধারায় নিজস্ব ধর্মবোধের ভিত্তিতে উপাসনা ও ধর্মচর্চা করে । আনন্দ-উৎসব পালন করে। মুসলমানগণ মহিমান্বিত ঈদ আনন্দোৎব করে। খৃষ্টান সম্প্রদায় বড়দিনের উৎসব করে। বৌদ্ধগণ তাদের উৎসব পালন করে। পাহাড়ি অঞ্চলের আমাদের উপজাতিরা তাদের আনন্দের জয়গান গায়। তেমনি হিন্দু সম্প্রদায় বিভিন্ন পুজা-পার্বন ও উৎসবের মাধ্যমে তাদের ঐতিহ্যবোধকে জাগরিত রাখার চেষ্টা করে। ধর্মীয় উৎসব ও আনন্দের মাধ্যমে সকলে মেতে থাকে। সবকিছুই আমাদের অস্তিত্ববোধ ও সংস্কৃতির অংশ।

কারণ, প্রত্যেকেই তাদের বিশ্বাসের দীপ্তি দিয়ে নিজস্ব ধর্ম পালন করে পরিতৃপ্ত হয়। সুখী হয়। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সন্মান দেখায়।

আমাদের লৌকিক ঐতিহ্যের মাইলফলক হচ্ছে লোকজসংস্কৃতি, লোকসংগীত এবং বাংলার লোকজউৎসব। বাংলাদেশের মানুষের ঐতিহ্যকে লালন-পালনের মাধ্যমে বাঙালির চিরায়ত অস্তিত্ববোধকে জাগিয়ে রাখতে হবে। সকল প্রকার কুসংস্কারের অপনোদন ঘটিয়ে দেশের সর্বশ্রেণীর মানুষকে সুখ-দু:খের সঙ্গী করে তুলতে হবে। কারণ, সকল আনন্দ আর উৎসবের মূল প্রেরণা হচ্ছে,মানুষকে সুখী রাখা। মানবতাকে সজাগ-সমৃদ্ধ করে তোলা। ধনী-দরিদ্র সকল মানুষকে সমান চোখে দেখা। ঘৃণা নয়, প্রেম-ভালোবাসার মাধ্যমে মানুষের অন্তর করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বিদ্রোহী কবি,আমাদের জাতীয় চেতনার কবি কাজী নজরুল ইসলামের কণ্ঠ খুবই সোচ্চার। তিনি বলেন; ‘মানুষেরে ঘৃণা করি/ওরা কারা কোরান বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি! ও মুখ হইতে কেতাব গ্রন্থ নাও জোর করে কেড়ে/যাহারা আনিল গ্রন্থ কেতাব সেই মানুষেরে মেরে/পূজিছে গ্রন্থ,ভন্ডের দল।’

সব কথার সার কথা হচ্ছে,‘সবার উপরে মানুষ সত্য’। মানুষকে সেটা বঝতে হবে। মানুষের মর্যাদাকে রক্ষা করতে হবে।

আমাদের গণমানুষের আনন্দ-বেদনা,কামনা-বাসনার জয়গাঁথা উচ্ছ্বাস অনুভূতির উচ্চারণে শোক কিংবা আনন্দোৎবে যে আকণ্ঠ সুর উদ্ভাসিত হয়। এসব ভাষা ও সাহিত্যের সঠিক উপাত্তের কোন প্রকার অবলুপ্তি ও অবমাননা হবে আমাদের জন্য একধরনের আত্মঘাতি ব্যর্থতা। আমাদের লৌকিক আচারানুষ্ঠানদি ও জীবনাচারের সর্বক্ষেত্রে আমাদের অস্তিত্বভিসারি ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও সন্মান প্রদর্শন করতে হবে। আমাদের ঐতিহ্যের  লালন ও সংরণ করতে হবে। বাংলার প্রকৃতি, পাখ-পাখালির সুর,কিষাণ-মজুর,মাঝি-মাল্লার গান আর রাখালিয়ার বাঁশীর কণ্ঠনিসৃত সুরধ্বনি আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশে ঐতিহ্যের লালিত্যে বহমান রয়েছে,তাকে চিরসজীব করে রাখতে হবে। কারণ, এসব আমাদের বেদনা-বিরহ এবং প্রাণসঞ্চারি উৎসবের মাত্রাকে বেগবান করে। শক্তিময় করে তোলে।

আমাদের নিজস্ব কৃষ্টি,সভ্যতা ও সুপ্রাচীণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হবে। তাতে আমাদের গৌরব বাড়বে বৈ কমবে না। বাংলার পরিশীলিত,পরিমার্জিত গৌরবগাঁথা রূপসুন্দর লোকজসংগীত ও লোকসংস্কৃতিকে আরও বেগবান,আরও উচ্চকিত ভাবে জিয়িয়ে রাখতে হবে। আমাদের হারিয়ে যাওয়া অবলুপ্ত লোকজউৎসব ও লোকজসংগীত-সংস্কৃতির জাগরণ ঘটাতে হবে। আমাদের চিরায়ত বাংলার উৎসব এবং সংগীতঐতিহ্যকে জাগিয়ে রাখতে হবে।

আমাদের ঐতিহ্যের ধারক যে সকল সাংস্কৃতিক চেতনা রয়েছে তাকে জাগরুক রাখতে হবে।  আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষ তথা সমগ্র্র বিশ্বে অবস্থানরত: বাঙালিদের মাঝে সেই ঐতিহ্যময় সাংস্কৃতিক চেতনাকে জাগিয়ে রাখতে হবে। এজন্য প্রয়োজন লোকসংস্কৃতির উপর স্টাডি এবং ব্যাপক সংগীত চর্চা।

আমাদের হারানো ঐতিহ্যের দিকে ফিরে যাওয়া। আমাদের লোকজউৎসব এতদসংক্রান্ত লোকজসংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিজ্ঞ-জ্ঞানীদের মাধ্যমে গবেষণানিসৃত বই-পুস্তক ও পত্রিকা-ম্যাগাজিন প্রকাশের ব্যবস্থা করা। আমাদের ঐতিহ্যবাহী বাংলা একাডেমীর মাধ্যমে গ্রন্থ প্রকাশের কাজটি সবচেয়ে বেশি হতে পারে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এব্যাপারে প্রশাসন খুবই উদাসীন! সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিল চক্রের শিকারেআমরা আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যকে হারাতে বসেছি।

আমাদের ঐতিহ্যবোধের নিরিখে নিজেদের অস্তিত্ব ও স্বকীয়তার গৌরবকে  টিকিয়ে রাখার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে সবাইকে। আমাদের স্বদেশ ও বিদেশে অবস্থানরত: সকল বাংলাদেশী মিলে ব্যাপকভাবে সাংস্কৃতিক চর্চায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে হবে। লোকসংগীতের সুর সম্রাটদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। লোকসংগীতের ঐতিহ্যময় ধারাকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

আমাদের স্বকীয়তাপূর্ণ ঐতিহ্যের পথ ধরেই আমাদের গৌরবের ধারাকে সমুন্নত রাখতে হবে। নিজেদের আসল পথ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে চলবেনা। একজন ডেনিশ দার্শনিক বলেছেন- একবার পথ হারানোর চেয়ে দু’বার অনুসন্ধান করে নেয়া ভাল’। অতএব আমাদের হারিয়ে যাওয়া পথকে আবিষ্কারের জন্য প্রয়োজনে বারবার সঠিক পথের সন্ধান করতে হবে। এটাও সত্য যে, সন্ধান করতে করতে একদিন অবশ্যই আমরা আমাদের আসল পথ ও অস্তিত্বের সন্ধান পাবো।

বাংলাদেশের মত প্রবাসের বাঙালির মাঝে যে জাগরণ রয়েছে; তাকে আমাদের ঐতিহ্যের সাথে একীভূত করে নিতে হবে। নিজস্ব কৃষ্টি-সভ্যতার সাথে মিলাতে হবে। আমাদের ঐতিহ্যময় সংস্কৃতির সাথে বর্তমান প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করতে হবে। বিশেষ করে প্রবাসে অবস্থানরত: সকলের সন্তানদের জন্য বাংলা ভাষা ও কালচারের শিক্ষাদানের প্রতি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। যাতে তাদেরকে আমাদের মাটি, মানুষ ও শেকড়ের সাথে সবাইকে সম্পৃক্ত ও ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে বাংলাদেশীদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। তাদের মাঝে বাংলা সংস্কৃতির জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে লোকজসংস্কৃতির পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীদের ধর্মীয় রীতির সুন্দরালোকের উজ্জয়নী ধারা চমৎকারভাবে বেগবান হচ্ছে সর্বত্র। সেই সাথে সকল ধর্মের সহাবস্থানপূর্ণ পারস্পরিক সৌভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক আরো জোরদার হচ্ছে। প্রবাসে আমরা আমাদের

ঐক্যবোধের উজ্জল দৃষ্টান্তকে আরো গৌরবময় করে তুলবো। ভবিষ্যত প্রজন্মকে আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য ও অস্তিত্ববোধের সঙ্গে একীভূত করে রাখার চেষ্টা করবো। তাদেরকে বাংলা ভাষা,সভ্যতা ও সংস্কৃতির ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে অবহিত করবো। এটাই হওয়া উচিত আমাদের অঙ্গীকারের প্রধান বিষয়।

প্রবাসে আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে আমরা আমাদের  ঐতিহ্যগাঁথা পহেলা বৈশাখ ব্যাপকভাবে পালন করছি। এটা বড় গৌরবের বিষয়। তবে এ গৌরবটি ঐক্যের এবং সার্বজনীন একথাটি সবার মনে রাখা দরকার। আমাদের অস্তিত্বের প্রাণ পুরুষ সম্রাট আকবরের প্রতিও শ্রদ্ধা জানানো উচিৎ। বাংলাভাষাও বাংলা সনকে চিরঞ্জীব করে রাখার ব্যাবস্থাটিও তিনিই কিন্তু করে দিয়ে গেছেন। তা যেনো আমরা ভুলে না যাই। তিক্ত হলেও সত্যি বর্তমানে ইতিহাস বিকৃতির যে সর্বনাশা খেলা শুরু হয়েছে(!) তাতে বাঙালির অস্তিত্বের প্রকৃত ইতিহাস ধ্বংস

করে দেবার চক্রান্ত খুবই প্রকট। বাংলা নববর্ষের মহান উৎসবের দিনে সেইসব কুচক্রিদের সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যাতে আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের ইতিহাসটিও হাইজ্যাক হয়ে না যায়।

পহেলা বৈশাখ কিংবা বাংলা নববর্ষ আমাদের জীবনের এক সর্বসত্ব: জাগরণী উৎসব। শুধুমাত্র অঙ্গপ্রদর্শণ মূলক উল্লাস নয়। একটা মহিমাগাঁথা ঐতিহ্য আছে তার। সেই ঐতিহ্যের পুরোভাগে যাদের অবদান আছে; তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। আমাদের আলোচনা ও লেখালেখির মাধ্যমে সেই ইতিহাসটি সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে। পহেলা বৈশাখ প্রতিবছর আসে আমাদের সেই চেতনাকে জাগরিত করতে। সাম্য-মৈত্রীর বন্ধনে সবাইকে একত্রিত করে দিতে।

লিখেছেন- এবিএম সালেহ উদ্দীন

 

 

নাজনীন সুলতানা, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম নারী ডেপুটি গভর্নর!

নাজনীন সুলতানাবাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে। ১৯৭২ থেকে ২০১২ সাল। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। একজন নারীর ডেপুটি গভর্নরের পদ পেতে এত সময় লেগে গেল। এ প্রাপ্তি নারী সমাজের সঙ্গে সঙ্গে আমার জন্যও আনন্দের ব্যাপার। যদিও বিষয়টি ভাবতে অবাক লাগে। আমাদের নারীরা এখনও পিছিয়ে আছেন। সফটওয়্যার তৈরি করাই আমার লক্ষ্য। এছাড়া দেশের জন্য আমার জায়গা থেকে যদি কোনও কাজ করতে পারি। সেটাও কম আনন্দের হবে না। এভাবেই প্রথম নারী ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
 
১৯৮০ সালের দিকে বাংলাদেশে মাত্র দুটি কম্পিউটার ছিল। একটি অ্যাটমিক এনার্জি সেন্টারে, দ্বিতীয়টি আদমজী জুট মিলে। শ্রমিকদের বেতনের কাজে ব্যবহƒত হত এ কম্পিউটার। বাংলাদেশ ব্যাংক আইবিএম ৩৭০ মেইন ফ্রেম কম্পিউটার কিনে সফটওয়্যার তৈরি করবে। এ পদে লোক নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। বিজ্ঞাপন দেখে নাজনীন সুলতানা চাকরির আবেদন করেন। চাকরি হয়ে গেল। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগে ১৯৮০ সালে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক অটোমেশনের লক্ষ্যে সফটওয়্যার তৈরি করেন।
 
এ প্রসঙ্গে নাজনীন সুলতানা বলেন, বাংলাদেশের কম্পিউটারের বিবর্তনে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যারে যে পরিবর্তন এসেছে তার সঙ্গে আমি জড়িত। এটা আমাদের সংস্কৃতির সংস্কার, তথ্য প্রযুক্তির সংস্কার। সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি নীতিমালা, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাজে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে অবদান রাখতে পেরেছি, তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে সবাইকে সমানভাবে সেবা দিতে পেরেছি এতেই আমার আনন্দ।
 
তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জার্মান সরকারের স্কলারশিপে আইসিটির ওপর ১৭ মাসের একটি উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরে জার্মানিতে যান। জার্মানিতে প্রশিক্ষণকালীন ১৯৮৫ সালে তিনি বাংলা ওয়ার্ড প্রসেসিংয়ের ওপর কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম বাংলা ওয়ার্ড প্রসেসিং তৈরি করলেও পরে তা আর জনসমক্ষে প্রকাশ হয়নি।
 
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নিজের তৈরি করা ৮০টি সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। আমার তত্ত্বাবধানে চালু করা হয় ই-টেন্ডার, ই-রিক্রুটমেন্ট, ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রানজিকশন মনিটরিং সিস্টেম, ক্যামেলস রেটিং ইত্যাদি সফটওয়্যার। এছাড়া ই-আর-পি, ব্যাংকিং, ডাটা ওয়্যার হাউস, অনলাইন সি আইবি, ন্যাশনাল প্রেমেন্ট সুইচ ইত্যাদি। নির্বাহী পরিচালক পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি ২০১১ সালের জুলাই মাসে এলপিআরে চলে যান। নভেম্বর মাসে পত্রিকার বিজ্ঞাপনে শর্তাবলী অনুযায়ী ডেপুটি গভর্নর পদে আবেদন করেন। অতঃপর পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতাবলে যোগদান করেন।
 
পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নাজনীন সুলতানা লেখালেখিও করেন। ১৯৯২ সালে নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মাধ্যমিক কম্পিউটার বিজ্ঞান’ নামে যৌথভাবে একটি বই লিখেন। বইটি পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অনুমোদিত। এছাড়া একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি ওষুধ, পথ্য সংগ্রহ, অর্থ, খবরাখবর সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা-শুশ্রƒষা করেন। এ সময়ের প্রতিদিনের ঘটনাবলী তিনি ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করতেন। তার লেখা সেই ডায়েরিটি মিজান পাবলিশার্স থেকে ২০০৭ সালে ‘একাত্তরের ডায়েরি’ নামে প্রকাশিত হয়। নাজনীন সুলতানা উদীচী শিল্পগোষ্ঠী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
 
১৯৬৯ সালে বদরুননেসা কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি করেন।
এ পথপরিক্রমায় পরিবারের সহযোগিতা কতটুকু পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মা-বাবা-স্বামী-শাশুড়ি সবার সহযোগিতায় আজ আমি এখানে পৌঁছতে পেরেছি। একজন নারীকে অনেক বাধা অতিক্রম করে এগোতে হয়। চাকরি করার পাশাপাশি স্বামী-সন্তান-সংসারও সামলিয়েছি। দু’সন্তানের মধ্যে ছেলে বুয়েট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে আমেরিকার কোয়ালকমে চাকরি করছে। মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত রয়েছে।

সফল নারী কৃষি উদ্যোক্তা নুরুন্নাহার

1111গ্রাম্য বধূ নুরুন্নাহার চার দেয়ালের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ না থেকে একজন সমাজ উন্নয়নকর্মীর দায়িত্ব পালন করছেন। বসতবাড়ির আশপাশে নিবিড় সবজি চাষ করে এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এনসিডিপি গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভানেত্রী নুরুন্নাহারের স্বামী রবিউল ইসলাম। জয়নগরের চালকল মোকামের একটি মিলে ধান-চালের ব্যবসায় করেন।

চার সন্তানের জনক-জননী রবি-নুরুন্নাহার। নুরুন্নাহার জানান, ২০০৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে একটি অনুষ্ঠানে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে তারও ইচ্ছে জাগে বসতবাড়ির আশপাশে শাকসবজি ও ফলমূলের বাগান গড়ে তোলার। এর পর আর থেমে থাকেননি নুরুন্নাহার। লালশাক, পুঁইশাক, বেগুন, গোল আলু, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ চাষ করে সারা বছরের সবজির চাহিদা মেটাতে থাকেন। এমনকি বাড়তি কিছু আয়ও হয়। এ সময় উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, জাকির হোসেন ও আব্দুর রশিদ নুরুন্নাহারের এলাকায় ব্র্যাক এনসিডিপির মহিলা গ্রাম কমিটি গঠনের পর তাকে দায়িত্ব দিয়ে যান। এতে করে তার স্বামীর আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। একই বছর সেপ্টেম্বরে তিনি ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ির আঙিনায় এবং বাড়িসংলগ্ন ৫ বিঘা জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, গাজর ইত্যাদি আবাদ করে আশাতীত লাভবান হন। পরের বছর ঋণ পরিশোধ করে দ্বিতীয়বারের মতো ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। এ অবস্থায় তিনি জানতে পারেন বড়ইচারা দণিপাড়ায় ছিদ্দিকুর রহমান ময়েজের কুল চাষ প্রকল্পের কথা। ময়েজের কাছ থেকে চারা কিনে ১৭৫টি গাছের একটি কুল বাগান গড়ে তোলেন। প্রথম বছর কুল বিক্রি করে তিনি ২৫ হাজার টাকা আয় করেন। এ ছাড়া উন্নত জাতের ৪০টি পেয়ারার গাছও লাগানো হয় আঙিনায়। নুরুন্নাহার তার কৃষি খামারে উন্নত জাতের ৫০টি গরুর একটি খামার গড়ে তুলেছেন।

দেশের সব নারী কৃষককে ডিঙিয়ে ২০১০ সালে ঈশ্বরদীর নুরুন্নাহার সিটি গ্রুপ জাতীয় পুরস্কার পান। এতে সাড়ে তিন লাখ টাকা, একটি সার্টিফিকেট এবং একটি ২৪ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশন পুরস্কার দেয়া হয়। নুরুন্নাহার তার গ্রামের ২০০ নারীকে হাতে-কলমে কৃষিকাজের প্রশিণ দিয়ে দ কৃষক হিসেবে গড়ে তোলেন। ২০১১ সালে দেশের সেরা নারী কৃষক হিসেবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফল নারী উদ্যোক্তা ও নারী কৃষক নুরুন্নাহারের হাতে তুলে দেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক।

নুরুন্নাহার জানান, এরই মধ্যে ২০ বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন। সহজ শর্তে এবং কম সুদে ব্যাংক ঋণের সুবিধা পেলে নুরুন্নাহার তার আবাদি জমির পরিমাণ বাড়াবেন। কিছু দিনের মধ্যে বিনা খরচে এনসিডিপির প থেকে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় কৃষিকাজের আধুনিক প্রশিণের জন্য যাবেন বলেও তিনি জানান।

তাহাদের দিন কাল

ssssssssssনব্বইয়ের দশকে টিভি পর্দা মাতিয়ে রাখা চার তারকা বিপাশা হায়াত, শমী কায়সার, আফসানা মিমি ও সাদিয়া ইসলাম মৌ এখন কেমন আছেন? কী করছেন? সেসব বিষয় অনুসন্ধান করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন আলমগীর কবির-

 

বিপাশা হায়াত

২২২২২২২২২২

বিপাশা হায়াত ও তৌকীর আহমেদ পর্দা ও পর্দার বাইরে সফল দম্পতি। জনপ্রিয় এই তারকা জুটি এখন সফল উদ্যোক্তা। গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে তারা গড়ে তুলেছেন ‘নক্ষত্রবাড়ি’ নামে একটি রিসোর্ট। মূলত একটি সবুজ গ্রামের আদলে গড়ে তোলা এই রিসোর্টের অনেকটা অংশজুড়ে প্রাধান্য পেয়েছে বিপাশার চিত্রকর্ম। এখানে নাটক ও চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের পাশাপাশি অবকাশ যাপনের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। আছে একটি সাজানো-গোছানো কনফারেন্স সেন্টার। সারা বছর পিকনিক করার পাশাপাশি সপরিবারে রাত যাপনের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ এখানে আছে কয়েকটি কটেজ। রিসোর্টটি দেখাশোনার পাশাপাশি লেখালেখি, চিত্রকর্ম আর দুই ছেলেমেয়েকে নিয়েই বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকেন বিপাশা। মূলত এ কারণেই এখন বিশেষ দিবস ছাড়া তাকে ক্যামেরার সামনে দেখা যায় না।

 

আফসানা মিমি

1111

শোবিজে পথচলার ২৫ বছরের বেশি সময় অতিক্রম করেছেন আফসানা মিমি। তার অভিষেক হয়েছিল মঞ্চে। ১৯৮৬ সালে ব্যতিক্রম নাট্যগোষ্ঠীর হয়ে প্রথম মঞ্চে ওঠেন তিনি। অভিনয় করেন মনোজ মিত্রের ‘রাজদর্শন’ নাটকের রানী চরিত্রে। নাটকটি নির্দেশনা দেন মরহুম সৈয়দ মহিদুল ইসলাম। একই নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য গাজী রাকায়েতের মাধ্যমে পরে তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সাথে যুক্ত হন। এ প্রসঙ্গে আফসানা মিমি বললেন, ‘নাগরিকে এসে আসলে আমি বুঝতে পারি থিয়েটার জিনিসটা কী! বুঝতে পারি, অভিনয়ের মতোই থিয়েটারের অন্য কাজগুলোও গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরো বলেন, ‘নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকেরকে আমি গুরু মানি। আমি যখন নাগরিকে যুক্ত হই, তখন সব বিখ্যাত মানুষের সমাবেশ ছিল গ্রুপে। জামালউদ্দিন হোসেন, রওশন আরা হোসেন, আলী যাকের, সারা যাকের, ড. ইনামুল হক, লাকী ইনাম, আবুল হায়াত, আসাদুজ্জামান নূর, নিমা রহমান, খালেদ খানসহ অনেকে। নাগরিকে যুক্ত হওয়ার পর এমন সব গুণী মানুষের সান্নিধ্যে আমার ভেতরে যেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে।’ আরো জানালেন, নাগরিকের হয়ে প্রথম মঞ্চে উঠেছিলেন শেক্সপিয়রের ‘হ্যামলেট’ অবলম্বনে আলী যাকের রচনা ও নির্দেশনায় ‘দর্পণ’ নাটকের কোরাস দলের একজন হয়ে। পরে অভিনয় করেন ‘নূরুলদীনের সারা জীবন’, ‘দর্পণে শরৎশশী’, ‘ঈর্ষা’ প্রভৃতি নাটকে। সর্বশেষ আফসানা মিমিকে গত রোজার ঈদে এনটিভিতে ‘আকাশ জোড়া মেঘ’ শিরোনামে একটি টেলিছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল। অভিনয়ের চেয়ে আফসানা মিমি এখন বেশি মনোযোগী পরিচালনার দিকে। নাটক দিয়ে শুরু করলেও চলতি বছরের শুরুর দিকে তিনি হাতে নিয়েছেন ফিচারধর্মী চলচ্চিত্র ‘রান’র কাজ। স্বাধীনতা যুদ্ধের গল্প নিয়ে নির্মিতব্য ছবিটির চিত্রনাট্য লেখা হয়েছে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ‘ক্যাম্প’ উপন্যাস অবলম্বনে। এতে অভিনয় করছেন আফজাল হোসেন, সুবর্ণা মুস্তাফা, আজিজুল হাকিম, ডলি জহুল প্রমুখ।

 

সাদিয়া ইসলাম মৌ

035

খাঁটি সোনা যত পুরনোই হোক এর রঙ কখনো মলিন হয় না। আমাদের শোবিজে এ রকম হাতেগোনা কিছু সোনার মধ্যে অন্যতম হলেন সাদিয়া ইসলাম মৌ। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি যিনি ঝড় তুলেছিলেন মিডিয়ায়। মডেলিংয়ে যোগ করেছিলেন নতুন দ্যুতি। টিভিতে প্যাকেজ নাটক প্রচারের শুরুর দিকে কয়েকটি নাটকে অভিনয় করে দেখিয়েছিলেন চমক। নৃত্যশিল্পকে জনপ্রিয় করতেও রেখেছেন অবদান। তাকে ঘিরে দেশজুড়ে যখন তুমুল ক্রেজ, ঠিক সেই সময় টুপ করে বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়েন। ভালোবেসে ঘর বাঁধেন জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসানের সাথে। বিয়ের পরও সাদিয়া ইসলাম মৌকে মডেলিং করতে দেখা গেছে। অভিনয় করেছেন টিভি নাটকে। নৃত্য পরিবেশন করেছেন স্টেজে ও টিভি অনুষ্ঠানে। মিলেনিয়ামে পদার্পণের সময় থেকে একটু একটু করে নিজেকে গুটিয়ে নেন। একটা সময় চলে যান পুরোপুরি পর্দার অন্তরালে। এ সময় অবশ্য জাহিদ-মৌ দম্পতির কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে সন্তান পুষ্পিতা। বহু নাটক আর মডেলিংয়ের অফার থাকলেও প্রায় ছয়-সাত বছর সাড়া দেননি মৌ। দুই-তিন বছর ধরে বিভিন্ন চ্যানেলে ঈদের প্রোগ্রামে কয়েকটা নাচের অনুষ্ঠানে তাকে নৃত্য পরিবেশন করতে দেখা গেছে। বাস্তব জীবনের মতো এবার টেলিছবিতে জাহিদ হাসানের সাথে জুটি বাঁধছেন মৌ। নাম ‘আর কিছু নাই বাকি’। লিখেছেন তৌহিন হাসান, পরিচালনা করবেন দীপঙ্কর দীপন। পরিচালক জানালেন, আজ বৃহস্পতিবার থেকে টেলিছবিটির শুটিং শুরু করবেন তিনি। জাহিদ হাসান ও মৌ সর্বশেষ একসাথে অভিনয় করেন আফসানা মিমির ধারাবাহিক নাটক পৌষ ফাগুনের পালাতে। প্রচারিত হয়েছিল এটিএন বাংলায়। একটি টেলিছবিতেও কাজ করেছিলেন তারা। নাম ‘সেই চোখ’। তাও বছর তিনেক আগের কথা।

আমার জীবন এখন অবিশ্বাস্য পরিবর্তনের দিকে – কারলি ওয়াটস

২২২২২২২২২২নিজের জীবন ধারা পুরোপুরি পাল্টে চলে এসেছেন একটি সুন্দর বা পরিপাটি জীবনে। আর তিনিই হলেন ব্রিটিশ মডেল কারলি ওয়াটস।

কারলি ছিলেন অশোভন পোশাকের মডেল। পেশাগত কারণে তাকে পরতে হয়েছে শোভন-অশোভন পোশাক। এখন যেন তাকে (কারলি) অনেকে চিনতেই পারছেন না। কারণ তিনি এখন পরেন বোরকা। তার মনে এমন সুন্দর চিন্তাভাবনা এমনিতেই জাগেনি। তার উদয় ঘটেছে এক মুসলিমের সংস্পর্শে এসে। নাম মোহাম্মদ সালেহ।

কারলির বয়স প্রায় ২৪ বছর আর সালেহর প্রায় ২৫। কারলি ওয়াটস বলেন, আমার জীবনকে একেবারে পাল্টে দিয়েছে লাইফগার্ড সালেহ। আমি পুরোপুরি একজন মুসলিম নারী হতে চাই। কারণ এখন আমি মেনে চলি ইসলামি বিধিবিধান। বড় কথা হলো, জীবনের অর্থ কী আমাকে তা অনুধাবন করতে বা বুঝতে শিখিয়েছেন মোহাম্মদ সালেহ। সালেহর বাড়ি তিউনিসিয়ায়। গত এপ্রিল মাসে ছুটি কাটানোর উদ্দেশ্যে কারলি বেড়াতে যান তিউনিসিয়ায়। সেখানে গিয়ে কারলির পরিচয় হয় মোহাম্মদ সালেহ নামে এক যুবকের সাথে। উভয়ের মধ্যে কথাবার্তার একপর্যায়ে একজন যেন আরেকজনকে পছন্দ করেন মনের অজান্তেই। এমনকি বিয়ে করারও সিদ্ধান্ত নেন তারা। কারলি তার একমাত্র মেয়েসন্তান আলালাহকে নিয়ে মোহাম্মদের পরিবারের সাথে থাকবেন আগামী অক্টোবর থেকেই। সেখানে কারলি অবস্থান করবেন প্রায় ছয় মাস। তারা থাকবেন তিউনিসিয়ার মনাস্তির শহরে। এরপরই ধর্মান্তরিত হবেন কারলি। তারপর সালেহকে বিয়ে করার মনস্থির করেন তিনি।

কারলি বলেন, এত দিন আমি মডেলিং করেছি। বেশি সময় চলে গেছে নাইট কাবে। পরিচালনা করতে হয়েছে কিছুটা উচ্ছৃঙ্খল জীবন। অনেক সময় নাচতেও হয়েছে সংক্ষিপ্ত পোশাকে। মনে হলো, ওই জীবন ভালো নয় মোটেই। কিন্তু সুশৃঙ্খল জীবনে ফিরে আসতে পেরেছি মোহাম্মদকে ভালোবাসার পর থেকেই। অর্থাৎ কারলি জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সালেহ মোহাম্মদের সাথেই।

কারলি আরো বলেন, আমি গুরুত্ব দিই সালেহর ধর্মবিশ্বাসকে। আর এ কারণেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ধর্মান্তরিত হওয়ার। একসময় মডেলিংয়ের অনেক কিছুই আমার প্রায় অজান্তে ছাপা হয়ে যেত চটকদার নানা ম্যাগাজিনে। কিন্তু এখন সেগুলো আর নয়। আমার দিন পাল্টে গেছে। তিনি এমনো বলেছেন, প্রায় দুই বছরের মেয়েকে নিয়ে আমাকে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে তিউনিশিয়ায়। তার নজর এখন হিজাব, বোরকা প্রভৃতি শালীন পোশাকের প্রতি। কেননা শেখা হচ্ছে ইসলামি বিবিবিধান। কারলির পেশা সম্বন্ধে প্রথমেই সালেহ তার অভিভাবককে না জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। কেননা, প্রথমে তারা তা নাও বুঝতে পারেন। কারলি ওয়াটস নরফকের দিয়ারহাম অঞ্চলের একজন মডেল ছিলেন কিছু দিন আগেও।

গণমাধ্যমকে কারলি বলেন, আমার বান্ধবীরা বলেন, সে (কারলি) একজন উন্মাদ এবং একটা পর্যায়ে কারলির চার দিকে বান্ধবীরা ভিড় জমাবে, তা আশা করা যায় না মোটেই। একটি মেয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবেন, তা অবিশ্বাস্য হতে পারে অনেকের কাছে। এখন আমার জীবন অবিশ্বাস্য পরিবর্তনের দিকে, বলেছেন কারলি ওয়াটস। অবশ্য এ নিয়ে আমার মধ্যে নেই কোনো উৎকণ্ঠা। বিয়েবহির্ভূত মায়েদের কথা ও কাজের কোনো গুরুত্ব দেয়া হয় না তিউনিসিয়াতে। সেখানে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করে বিয়েবহির্ভূত জৈবিক কাজকেও। অবশ্য তা আইনেও দণ্ডনীয়। অনেক স্থানেই ঠাঁই নেই বিয়েবহির্ভূত মায়েদের। পুরুষরা অবিবাহিত মেয়েদের বাজে কাজে বাধ্য করলে ওই সব পুরুষকে পাঠানো হয় বন্দিশালায়। আর এটাই হলো পরিবারের বিশদ বিবরণ এবং এভাবে মাকে মূল্যায়ন করছেন কারলি।

কারলি বলেন, ‘এ সংস্কৃতিকে আমি যে ভালোবাসি এটি তার মূল্য।’ তিনি আরো বলেন, নারীদের দেখা হয় সম্মানের চোখে। তারা নিজেরা তাদের দেহ সম্বন্ধে বোঝে। নারীরা তাদের দেহকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যও মনে করে না। আমি যখন মোহাম্মদের সাথে থাকি তখন অনুভব করি তিনি তৃপ্ত, শান্ত এবং সুখী। আমি জানি, আমার জন্য তিনি একজন দয়ালু ও পরিবারপ্রেমিক লোক।

তিউনিসিয়ায় একসময় থাকতেন কারলি ওয়াটস। তার বাবা কাজ করতেন তেল কোম্পানিতে। তিউনিসিয়া ছিল তখন ফরাসি ঔপনিবেশের পাশ্চাত্য আরব দেশের একটি। এ দেশ পুনরায় সেই অবস্থায় ফিরে যেতে পারে বলে অনেকের ধারণা। তবে সততার সাথে বলতে হয়, এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে প্রায় ৩০ বছর। দুই বছরের বেশি আগে তিউনিসিয়ায় ধর্মনিরপেক্ষতা ও ইসলামের মধ্যে কমবেশি পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তার পরও তা অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো বলেও মনে করেন অনেকে।

রাজশাহীতে মা-মায়ের আত্মহত্যা

রাজশাহী: রাজশাহী নগরীর ভদ্রা রেলক্রসিংয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে শিশুকন্যাসহ এক মা আত্মহত্যা করেছেন।

সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- শামীমা আক্তার কাকলি (২৫) ও তার ১৯ মাসের শিশুকন্যা লাবনি। কাকলির গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ইসলামগাছি এলাকায়।Rajsahi

আর্থিক টানাপোড়ন ও স্বামীর ওপর অভিমান করে এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।
 
তার স্বামী মনসুর আলী রাজশাহী নগরীর ‘সিঙ্গার’ সাহেববাজার শাখার শপ এ্যাসিসটেন্ট পদে চাকরি করেন।

রাজশাহী জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, স্বামীর উপর অভিমান করে কাকলি দুপুরে নগরীর ভদ্রা রেলক্রসিংয়ের পাশে সৈয়দপুর থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে তার শিশুকন্যাকে নিয়ে ঝাঁপ দেন।
চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়ে কাকলি ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় মুমূর্ষু অবস্থায় তার ১৯ মাসের শিশুকন্যা লাবনিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক সাইদুর রহমান তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতদের মৃতদেহ বর্তমানে হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।

ওসি জানান, তারা ভদ্রা এলাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। সংসারের অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে স্বামীর উপর অভিমান করে কাকলি আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

কেবল বর্জনই নয়, নির্বাচন প্রতিহত করা হবে—খালেদা

khaleda ziaআন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন কেবল বর্জনই নয়, প্রতিহত করতে হবে।

২৫ অক্টোবরের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের বিল পাস না করলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে হটিয়ে দেশ বাঁচাতে হবে। গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে মিলিটারি, পুলিশ, আনসারসহ প্রশাসনের সবার কাছে সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করে তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির পাশে থাকারও প্রতিশ্রুতি দেন বিরোধীদলীয় নেতা। 

রোববার বিকালে খুলনার সার্কিট হাউস মাঠে এক বিশাল জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

স্থানীয় ১৮ দলীয় জোট আয়োজিত সার্কিট হাউস মাঠের এই জনসভায় খুলনার ১১টি জেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন, জনসভাটি এ সময় জনসমুদ্রে পরিণত হয়।  বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে খালেদা জিয়া জনসভা মঞ্চে উপস্থিত হন এবং বিকাল পৌনে ৫টায় ভাষণ শুরু করেন। 
দীর্ঘ ৫০ মিনিটের বক্তব্যে খালেদা জিয়া সরকারের নানা ব্যর্থতা, অপশাসন, দুর্নীতি, আগামী নির্বাচন, আন্দোলনের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। সরকারের একক নির্বাচনের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা যাবেন না। ২৫ অক্টোবরের পর আন্দোলনের কর্মসূচি দেবেন। জনগণকে ওই কর্মসূচিতে অংশ নিতে প্রস্তুত হতে হবে।

তিনি বলেন, সারাদেশে মানুষ জেগে উঠেছে। সরকার যদি সংসদে দ্রুত বিল নিয়ে না আসে তাহলে মানুষের যে স্ফুলিঙ্গ তিনি দেখেছেন, তা ঠেকানোর ক্ষমতা কারো থাকবে না।
ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতা সরকারি কর্মকর্তাদের একদলীয় নির্বাচনে কাজ না করলে ‘বাড়ি পাঠানো’ হুমকি সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার বুঝতে পেরেছে, চুরি করে এখন কিছু করা যাবে না। তাই আওয়ামী লীগের একজন নেতা সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। তাই সরকারকে বলবেন, ‘আপনাদের সময় শেষ হয়ে গেছে। বাড়ি পাঠানোর ক্ষমতা থাকবে না। আপনাদেরই বাড়ি পাঠানো হবে।’

সরকারি কর্মকর্তার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা তাদের অন্যায় নির্দেশ মানবেন না। এতে আপনাদের চাকরি চলে গেলে আমরা পুনর্বহাল করব।’

গণতন্ত্র রক্ষায় দেশে জনগণের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাসহ প্রশাসন এবং সর্বস্তরের পেশাজীবীদের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ‘রাজপথে আবার দেখা হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে বেইমান, জুলুমবাজ সন্ত্রাসী সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।’

তিনি অবিলম্বে সব রাজবন্দির মুক্তি দাবি করেন। নির্বাচনের প্রস্তুতি নয় আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার কথা বললেও মূলত নির্বাচনমুখী বক্তব্যে দিয়ে তিনি খুলনাবাসীর জন্য ব্যাপক উন্নয়নের আশ্বাস দেন। বলেন, ক্ষমতা এলে দেশের উন্নয়নের জন্য মহাপরিকল্পনা আছে। যা সময়মতো জনগণকে জানানো হবে। 
খালেদা জিয়া বলেন, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র করার বিপক্ষে নন তিনি। তবে রামপালের মতো জায়গায় বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে দেয়া হবে না। সুইটেবল জায়গায় এটি করতে হবে। যাতে কোনো ক্ষতি না হয়। রামপালে হলে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পশু থাকবে না, পাখি থাকবে না, পরিবেশ থাকবে না। মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে দেয়া যাবে না। আন্দোলনকারীদের সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করা হবে। বিএনপি আন্দোলনের পাশে থাকবে।
তিনি বলেন, এ সরকার কাউকে সম্মান দিতে জানে না। নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কি আচরণ করেছে সবাই জানেন। 
বিএনপি ক্ষমতায় এলে গ্রামীণ ব্যাংককে ড. ইউনূসের কাছে ফিরিয়ে দিবেন।

এ সরকার গার্মেন্ট শিল্পকে ধ্বংস করে বেকার সমস্যা বাড়াচ্ছে। দারিদ্র্যবিমোচন এ সরকারের কাজ নয়। এ সরকারের কাজ বেকার সমস্যা বাড়ানো। তারা দারিদ্র্যবিমোচন করেছেন। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিএনপি সরকার কৃষকদের মূল্যায়ন করেছে। আগামীতে কৃষকদের সব রকম সহায়তা দেবে। কৃষি এবং শিল্পনগরী এই খুলনাকে আবার নতুনভাবে সাজাবে। খুলনাতে তারা ইপিজেডের কাজ করবেন। মংলা বন্দরকে আধুনিকায়ন করবেন। যা এ সরকার করতে পারেনি। এ কাজে নতুন বিপ্লব হবে। 
খালেদা জিয়া বলেন, ভবিষ্যতে আল্লাহ তাদের ক্ষমতায় নিলে নতুন আঙ্গিকে সরকার গঠন করবেন। তারা পরিবর্তন ও ঐক্যের রাজনীতি করবেন। সবাইকে নিয়ে। ভালো ভালো লোকদের সরকারে আনা হবে। যারা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার কথা ভাবেন। তার সরকারের কর্মকৌশল কী হবে তা ঠিক করা আছে। 

বর্তমান সরকারের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, গতবার আওয়ামী লীগ ও তাদের কিছু লোক অপপ্রচার চালিয়েছিল। কিন্তু এবার তারা বহুগুণে দুর্নীতি করেছে। আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু করতে পারেনি। বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক দাতা ও সাহায্য সংস্থাগুলো সরকারের দুর্নীতির কারণেই পদ্মা সেতু করতে পারেনি। তারা ব্যাংকিং খাত তছনছ করে ফেলেছে। সোনালী ব্যাংকের এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে ৫টি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। যা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ৩০৯ বছর সময় লাগবে। যে ঋণের বোঝা পরবর্তী প্রজন্মকেও বহন করতে হবে। খালেদা জিয়া বলেন, সরকারের এই যে দুর্নীতি তা দেখছে না দুদক। কারণ দলীয় লোকদের দুদকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়া থেকে যে অস্ত্র ক্রয় করা হয়েছে সেখানে ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে। 

নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে–শেখ হাসিনা

PMপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন  অবাধ, মুক্ত ও নিরপেক্ষ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায়।

শনিবার জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে জাতিসংঘের মহাসচিবকে অনুরোধ করেন।

জাতিসংঘের ৬৮তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে জোট পরিত্যাগ করে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে এলে পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে কোনো রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি দেশের স্বার্থে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। বিএনপি নির্বাচন চাইলে তারা নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে পার্লামেন্টে প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, বান কি-মুন সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এমডিজি) বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্যের প্রশংসা করেছেন। জাতিসংঘের মহাসচিবের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, এমডিজি অর্জনে যে গুটি কয়েক দেশ দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে, বাংলাদেশ তার অন্যতম।

দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুসংহত করতে তার সরকারের নিরলস প্রয়াসের কথা জাতিসংঘের মহাসচিবকে অবহিত করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ৩৮ বছরে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ক্ষমতালিপ্সুরা ভোটকেন্দ্র দখল করে, টাকা ছড়িয়ে এবং গুন্ডা লেলিয়ে দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়ে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে।

তার নিউইয়র্ক সফরকে খুবই সফল হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত তিন বছরের মতো এবারো তিনি অনেক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিয়েছেন, মূল নিবন্ধ উপস্থাপন এবং কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী মানুষ যেন তাদের মৌলিক অধিকার পূরণ করতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টিতে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচনে বর্তমান সরকার শিক্ষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে।

তিনি বলেন, তার সরকার সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশের ক্ষমতা হস্তান্তরে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি জাতির ভবিষ্যতের কথা মনে রেখে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, তার সরকার সামরিক শাসন, জরুরি অবস্থা এবং সেনা সমর্থিত সরকারের নামে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের অবৈধ সংস্কৃতি বন্ধ করতে সংবিধান সংশোধন করেছে।

তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধানের আহ্বান জানানোর জবাবে বিরোধীদলীয় নেত্রী ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা পালানোরও পথ পাবেন না। শুধু তা-ই নয়, বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধী জামায়াত আর হোফাজতে ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্র করেছেন।

শনিবার নিউইয়র্কের হোটেল হিলটনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি এ কথা বলেন।

মহাজোট সরকার সততার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করছে বলেই দেশ আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মান অর্জন করেছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিএনপি দেশকে একটি সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি দিয়েছিল, কিন্তু মহাজোট সরকার দেশকে উন্নয়নের প্রথম সারিতে নিয়ে গেছে। সারা বিশ্ব আজ বাংলাদেশকে সেই স্বীকৃতি দিয়েছে।

নাগরিক সংবর্ধনায় আরো বক্তৃতা করেন শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল।

কেমন আছে কন্যাশিশুরা ?

Vhalo nei konna shishuকেমন আছে কন্যাশিশুরা ? সত্যি কি তারা ভালো আছে ? প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতোই আজকের নারীর এগিয়ে চলার আড়ালে বাড়ছে উদ্বেগ। অপুষ্টি, বাল্যবিবাহ, যৌন নির্যাতনের মতো হতাশাজনক চিত্র ক্রমেই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। 

শিশুবিষয়ক সংগঠন ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, উপযুক্ত শিক্ষার অভাব এবং স্বাস্থ্যসেবার সীমিত সুযোগের কারণে কন্যাশিশুরা নানা ঝুঁকির মধ্যে বেড়ে উঠছে। এ ছাড়া তারা দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য ও সেবার অপ্রতুলতা, অনিরাপদ পরিবেশসহ নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে, যা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছে কন্যাশিশুরা। পাচ্ছে না পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা। সহিংসতা, গর্ভধারণ জটিলতা ও বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে প্রতিবছর মারা যায় শত শত কন্যাশিশু। কন্যাশিশুর পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ক ইউনিসেফের এক গবেষণা তথ্য মতে, শতকরা ৩৫ ভাগ কিশোরী অপুষ্টির শিকার। শূন্য থেকে ৪ বছর বয়সী কন্যাশিশুরা ছেলেদের চেয়ে ১৬ শতাংশ ক্যালরি ও ১২ শতাংশ প্রোটিন কম পায়। এ ছাড়া ১০-১২ বছর বয়সী ৫৪ শতাংশ এবং ১৩-১৭ বছর বয়সী ৫৭ শতাংশের উচ্চতা আদর্শ উচ্চতার নিচে।

জাতীয় পুষ্টি কার্যক্রমের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের শতকরা ৬০ ভাগ কিশোরী অপুষ্টি ও রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। যার মধ্যে ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী ৪৩ ভাগ কিশোর-কিশোরী রক্তস্বল্পতায় ভুগছে এবং এদের প্রায় ৫ ভাগ কিশোর-কিশোরীর রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ১০ গ্রামের কম। দেশের কিশোর-কিশোরীর শতকরা ৪৩ জনের আয়োডিনের ঘাটতি রয়েছে এবং এর অভাবে স্নায়ুতন্ত্রের বৃদ্ধি ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, মেধা ও বুদ্ধিমত্তা কমে যায়। শতকরা ৬০ ভাগ কিশোরী অপুষ্টি ও অ্যানিমিয়ার শিকার। 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাল্যবিয়েতে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। শত প্রচার আর আইন করেও বাল্যবিয়ে বন্ধ করা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শতকরা ৬৬ ভাগ কন্যাশিশুর ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। এর মধ্যে ৬৪ ভাগ কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণ করে। আইসিডিডিআরবির পুষ্টি বিভাগের পরিচালক তাহমিদ আহমেদ সমকালকে বলেন, অপুষ্টির শিকার কিশোরী মা হলে সে একটি অপুষ্ট শিশুরই জন্ম দেবে। অপুষ্টির শিকার মায়ের নানা জটিলতা দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে অপুষ্টির শিকার মায়েরা কম ওজনের শিশু জন্ম দেন। 

প্ল্যান বাংলাদেশের সমীক্ষা মতে, পারিবারিক সহিংসতার কারণে ১৩ থেকে ১৮ বছরের যুব গৃহবধূ ও মেয়েদের শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি মারাত্মক শারীরিক আঘাতে মৃত্যুর সম্মুখীন হয়ে থাকে। এ ছাড়া এসিড সন্ত্রাস, যৌন হয়রানি, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনায় দেশের কন্যশিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন সূত্র মতে, শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ নারী ও কিশোরী এসিড সন্ত্রাসের শিকার। 
জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের ৩৪ ধারায় যৌন নির্যাতন বন্ধে রাষ্ট্রের দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও আমাদের দেশে এর প্রয়োগ তেমন একটা লক্ষ্য করা যায় না। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক পরিচালিত এক গবেষণা থেকে জানা যায়, দেশে প্রতি ১০ জন কন্যাশিশুর মধ্যে ৭ জন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
গত ৩ বছরে দেশে পনের বছরের কম বয়সী কিশোরীরা বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গবেষণায় বিভিন্ন জেলা থেকে নারী নির্যাতন সংক্রান্ত যেসব তথ্য সংস্থাটি পেয়েছে তাতে দেখা গেছে এ সময়ে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং ৫৯ শতাংশের ওপর ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে। 
শিশুবিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের সিনিয়র প্রকল্প সমন্বয়ক রোকসানা সুলতানা সমকালকে বলেন, একশ্রেণীর বিকৃত মানসিকতার মানুষ দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কন্যাশিশু ও কিশোরীরা। যৌন নির্যাতন বলতে কেবল ধর্ষণকেই বোঝায় না। এর মধ্যে রয়েছে ইশারা, স্পর্শ, কথা, অঙ্গভঙ্গি প্রভৃতি। যৌন নির্যাতনের এ ঘটনার মধ্যে ২/১টি মিডিয়ায় প্রকাশিত হলেও বেশিরভাগ ঘটনাই থেকে যায় অন্তরালে। কন্যাশিশু ও কিশোরী নির্যাতনের পেছনে আমাদের সামাজিক অস্থিরতা, মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং প্রত্যেকের আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাওয়াটাকেই দায়ী বলে মনে করেন তিনি।  �� কd@��H N�M��ির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালিত হবে। শিশু একাডেমী ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আজ সকাল ৯টায় এক র‌্যালির আয়োজন করেছে। এটি জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শুরু হয়ে শিশু একাডেমীতে এসে শেষ হবে। র‌্যালির উদ্বোধন করবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। র‌্যালি শেষে মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

নতুন বিজ্ঞাপনে শখ

Shokhনতুন বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছেন মডেল ও অভিনেত্রী শখ। চলতি সপ্তাহে আপন জুয়েলার্সের একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছেন তিনি। ২৪শে সেপ্টেম্বর রাজধানীর তেজগাঁওয়ে কোক ফ্যাক্টরিতে তিনি আপন জুয়েলার্সের বিজ্ঞাপনের শুটিং করেছেন। এটি নির্দেশনা দিচ্ছেন আনজাম মাসুদ।

নতুন এ বিজ্ঞাপনটি নিয়ে শখ বলেন, আপন জুয়েলার্স বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। এর আগে মৌ আপু এ বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছেন। আমি দুই বছরের জন্য এ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছি। আশা করি বিজ্ঞাপনটি প্রচারের পর সবার ভাল লাগবে। এ বিজ্ঞাপনে শখের সঙ্গে আরও কয়েকজন নৃত্যশিল্পীকে দেখা যাবে। বিজ্ঞাপনটির কোরিওগ্রাফি করেছেন তানজিল এবং ক্যামেরায় কাজ করছেন আলীম। আসছে ঈদে এ বিজ্ঞাপনটি প্রচার হবে বলে জানা গেছে। 

আদুরীর মুখচ্ছবি এবং লাশের লাথি

Aduriছবিটি হয়তো আমরা ভুলে গেছি, হয়তো ভুলিনি। রানা প্লাজায় ভবন ধসের দিনের ছবি। মেয়েটির মুখচ্ছবি দেখা যায়নি। শুধু একখানা পা। কঙ্কন পরা যে পা উদ্ধত ছিল বাংলাদেশের দিকে। যেন লাথি মারছিল আমাদের সবাইকে। লাশের লাথি খেয়ে হুঁশ ফেরার আশা করেছিলাম আমরা। কিন্তু আমাদের হুঁশ যে ফিরেনি তার প্রমাণ হিসেবে হাজির হয়েছে আরেকটি মুখচ্ছবি।

না, আদুরী লাশ হয়নি। সে মরেনি। তাকে পাওয়া গেছে ডাস্টবিনে। ২৩শে সেপ্টেম্বর সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করেন লিলি নামের এক নারী। এরপর তিনি আদুরীকে নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আদুরীর মুখচ্ছবি ছাপা হয়েছে পত্রিকায়। নির্মম নির্যাতনের শিকার মেয়েটির ছবি দেখে আঁতকে উঠি আমরা। কতই বা বয়স মেয়েটির। দশ কিংবা এগারো। বাবা-মা আদর করে নাম রেখেছিল আদুরী। যদিও খুব বেশি আদর তার জীবনে জোটেনি। নয় ভাই-বোনের সংসারের সপ্তম সদস্য আদুরী খুব কম বয়সেই চলে আসে ঢাকায়। ক্ষুধার বিরুদ্ধে সংগ্রাম ছিল তার। ওই সংগ্রামে প্রতিনিয়ত গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনের শিকার হয়েছিল সে। তবে আদুরী নিজেও হয়তো ভাবতে পারেনি নির্যাতন করে গৃহকর্ত্রী নওরীন আখতার নদী তাকে ফেলে  দেবে ডাস্টবিনে। ছোট্ট মেয়েটি কি একটুও অবাক হয়নি মানুষের নির্মমতা দেখে। যে বয়সে তার যাওয়ার কথা ছিল স্কুলে, খেলার মাঠ হওয়ার কথা ছিল ঠিকানা সে বয়সে গৃহকর্মীর জীবন বেছে নিতে হয়েছে তাকে। মানুষের কাছে হয়তো সে বেশি কিছু আশা করেনি। হয়তো সামান্য ভালবাসা চেয়েছিল। বোকা মেয়ে কি সভ্য দুনিয়ার কাছে বেশি কিছু প্রত্যাশা করেছিল। মাসে ৫০০ টাকা বেতন কি বেশি কিছু?

ক্ষত-বিক্ষত আদুরীর ছবি কিছু পুরনো প্রশ্ন নতুন করে আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে। যান্ত্রিকতার স্পর্শে ক্রমশ মানুষ কি তার মানবিকতা হারিয়ে ফেলছে? কোন দিকে যাত্রা শুরু হয়েছে মানুষের? ইতিহাস যে যুগের মানুষকে বর্বর হিসেবে চিহ্নিত করে সে যুগেও কি আদুরীরা এরকম নির্মম নির্যাতনের শিকার হতো। এটা ঠিক এখন ক’দিন আদুরীকে নিয়ে কিছু লেখালেখি হবে। বড় বড় মানুষেরা কিছু বাণী আউড়াবেন। ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা লোকেরা টিভি ক্যামেরার আলোতে চোখের পানি ফেলবেন। এবং এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, কিছুদিন পর সবাই আদুরীকে ভুলে যাবেন। আদুরী ফিরে যাবে তার সাধারণ জীবনে। হয়তো নতুন কোন বাসায় কাজে। হয়তো নতুন কোন নির্যাতনে। যতদিন আমাদের মৃত বিবেক না জাগবে ততদিন আদুরীদের ছবি পত্রিকায় ছাপা হবে। কঙ্কন পরা মেয়েটি তার উদ্ধত পা আমাদের দিকে তাক করবে। আমাদের মৃত বিবেকের জন্য লাশের লাথিই প্রাপ্য।

'কন্যা মানেই বোঝা নয়, করবে তারা বিশ্ব জয়'

Daughterআজ ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় কন্যাশিশু দিবস। অন্যান্য বছরের মতো এবারো দিবসটি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘কন্যা মানেই বোঝা নয়, করবে তারা বিশ্ব জয়’।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, আমাদের কন্যাশিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যত্। তারা আমাদের কন্যা-জায়া-জননী। তাই তাদের নিরাপদে বেড়ে ওঠা এবং তাদের অধিকার সুরক্ষা করা অত্যাবশ্যক। কন্যাশিশুদের অধিকার রক্ষার বিষয়টি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানসহ সংশ্লিষ্ট সকল আইন, নীতি ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় যথাযথ গুরুত্বের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কন্যাশিশুর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণসহ তাদের শিক্ষিত ও দক্ষ জনগোষ্ঠী রূপে গড়ে তোলার জন্য বর্তমান সরকার নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আমাদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে, কন্যাশিশুরা যদি প্রয়োজনীয় পুষ্টি, মানসম্মত শিক্ষা ও নিরাপত্তা পায়, তবে তারা উপার্জনক্ষম এবং স্বাবলম্বী নারী হিসেবে বেড়ে উঠতে পারবে। আসুন দিবস পালনকে কেন্দ্র করে আমাদের কন্যাশিশুর অধিকারকে সমুন্নত এবং তাদের নিরাপত্তা রক্ষায় সচেতন হই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, শিশু অধিকার রক্ষায় প্রণয়ন করা হয়েছে জাতীয় শিশু নীতি। কিশোরীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিসহ তাদের সুরক্ষার জন্য দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কিশোরী ক্লাব। শিশুবিবাহ একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের পূর্বে জন্ম নিবন্ধন সনদ কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বর্তমান সরকার নারীবান্ধব সরকার। পারিবারিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকসহ সব ক্ষেত্রে কন্যাশিশুর সমান অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে গত সাড়ে চার বছরে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা ও বৈষম্য দূর করতে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আগামী দিনের বাংলাদেশের কন্যাশিশুদের নেতৃত্ব দেয়ার উপযোগী করে গড়ে তুলতে সমসুযোগ প্রদানে এগিয়ে আসার জন্য আমি সরকারের পাশাপাশি সমাজের সবাকে আহ্বান জানাই।

রোববার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, এ বছর আমরা কন্যাশিশুর বাল্যবিবাহ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। দেশে কন্যাশিশুদের নিয়ে কাজ করে প্রায় ১৬২টি সংগঠন। তারা দিবসটি উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। দিবসটি পালনে কন্যাশিশুর বাল্যবিবাহের কুফল, কন্যাশিশুর সুরক্ষা, কন্যাশিশুর পুষ্টিসহ বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব পাবে।

দিবসটি উপলক্ষে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ, রচনা প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।

 

অসময়ের সঙ্গী বই

কিছুই ভালো লাগছে না ? সিনেমা বা গান কোনটাই মনের খোরাক দিতে পাচ্ছেনা ? সমস্যা নেই, বই পড়ুন। এই সময়টাতে আপনার একমাত্র সঙ্গী হতে পারে বই। চলুন জেনে নেই দুটি বই সম্পর্কে।

রয়্যাল মোগল লেডিস

মধ্যযুগে ভারতীয় উচ্চ শ্রেণী সমাজে নারীদের মর্যাদা ছিল অপেক্ষাকৃত বেশি। এরা অনেক সময় রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতেন। যেমন বলা যায় সুলতানি আমলের রাজিয়া সুলতানার কথা। এরপর মোগলদের সময় নারীরা তেমনভাবে কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় না এলেও তা থেকে যে খুব দূরে ছিলেন_এ কথা বলা যাবে না। সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় নূরজাহান কিংবা সম্রাট শাহজাহানের সময় মমতাজ হয়ে উঠেছিলেন মোগল ক্ষমতার অংশীদার। এরপর সরাসরি না হলেও অনেক সময়ই পর্দার আড়াল থেকেও মোগল নারীরা তৎকালীন সমাজে বেশ প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিলেন। তাঁরা নানাভাবে শিক্ষা-দীক্ষা, উৎসব, সাহিত্য, শিল্পকলা, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাবারদাবারে বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পেরেছিলেন। মহাফেজখানার নানা তথ্যউপাত্ত এবং সমসাময়িক বিভিন্ন স্মৃতিকথা ঘেঁটে এসব বিষয়ে নতুন করে আলোকপাত করছেন সোমা মুখোপাধ্যায়। ‘রয়্যাল মোগল লেডিস অ্যান্ড দেয়ার কনট্রিবিউশন’-এ সম্রাট বাবর থেকে আওরঙ্গজেবের সময় পর্যন্ত মোগল নারীদের কথা তুলে আনা হয়েছে।

রয়েল মোগল লেডিস

সোমা মুখোপাধ্যায়

গিয়ান পাবলিকেশন হাউস

মূল্য : ৫০০ টাকা

পথের কবি

যিনি পথের পাঁচালিকার, তিনিই পথের কবি। অর্থাৎ বিভূতিভূষণ। প্রকৃতি তাঁর রচনায় শুধু শোভাময়ী নয়, বাঙ্ময়ী। যাঁর রচনায় সহজ-সরল মরমি কাব্যময়তা, তাঁর জীবন কিন্তু দুর্বোধ্য আর জটিল। বিভূতিভূষণের চলার পথের দুই ধারে যে অজস্র ঘটনার ফুল আর কাঁটা ছিল ছড়ানো, দুর্লভ নিষ্ঠায় আর দুস্তর পরিশ্রমে সে সব সযত্নে কুড়িয়ে নিয়েছেন জীবনীকার কিশলয় ঠাকুর। আর উন্মোচন করেছেন বিভূতিভূষণের বহির্জীবন ও অন্তর্জীবনের এক অসামান্য আলেখ্য। বিভূতিভূষণ সম্পর্কে বহু অন্তরঙ্গ স্মৃতিসাক্ষ্য ও দুষ্প্রাপ্য সাক্ষাৎকার এবং তাঁর ঘটনাঘন জীবনের বহু দুর্লভ আলোকচিত্র এ বইয়ের অতিরিক্ত আকর্ষণ। প্রচলিতঅর্থে আত্মকথা লিখে যাননি পথের কবি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিল কিছু নোটবুক আর দিনলিপির টুকরো পাতা। ছিন্নবিচ্ছিন্ন সেসব সূত্র ধরে বিভূতিভূষণের জনজীবন ও মনোজীবনের চিত্র এঁকেছেন কিশলয় ঠাকুর

পথের কবি

কিশলয় ঠাকুর

আনন্দ

মূল্য : ৩৮০ টাকা

ধীরে ধীরে কিডনি বিকল

Kidniকিডনির প্রাথমিক রোগে বা অন্য কোনো কারণে কিডনি আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর ধরে যদি দুটো কিডনিরই কার্যকারিতা নষ্ট হতে থাকে তখন তাকে ক্রনিক বা ধীরগতিতে কিডনি ফেইলুর বলা হয়। একটি কিডনি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলে এবং অপরটির কার্যকারিতা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেলেও সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব। দুটো কিডনিরই শতকরা ৫০ ভাগ বিনষ্ট হলেও শরীর সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে, যার ফলে একজন সুস্থ মানুষ (কিডনি ডোনার) তার নিকট আত্মীয় বা অন্য আর একজন কিডনি বিকল রোগীকে (কিডনি গ্রহণকারী) একটি কিডনি দান করেও সুস্থ থাকেন, স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন।

কেবল দুটো কিডনির ৫০ ভাগের উপর নষ্ট হলেই কিডনি বিকল হওয়ার প্রবণতা শুরু হয় এবং ৭৫ ভাগ নষ্ট হলেই শরীরের লক্ষণগুলো ধরা যেতে পারে আর ৯৫ ভাগের উপর নষ্ট হলে কৃত্রিম উপায়ে (ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজন) ছাড়া রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয় না, যাকে বলে এন্ড স্টেজ রেলাল ফেইল্যুর।

কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণ:

১. গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিস বা কিডনির ছাকনি প্রদাহ রোগ ৫০-৫৫%।
২. ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগ ১৫-২০%।
৩. উচ্চ রক্তচাপজনিত কিডনি রোগ ১০-১৫%।
৪. কিডনি বা প্রস্রাবের রাস্তায় পাথর ও অন্য কোনো কারণে বাধাজনিত রোগ ৭-১৯%।
৫. কিডনি বা প্রস্রাবের রাস্তায় জীবাণুজনিত রোগ ৫-৭%।
৬. বংশানুক্রমিক কিডনি রোগ ৩-৫%।
৭. ওষুধজনিত কিডনি রোগ ৩-৫%।
৮. অন্যান্য ও অজানা।

উপসর্গ 

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, দুটো কিডনির শতকরা পঁচাত্তর ভাগ কার্যকারিতা নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত কিডনি বিকলের উপসর্গ দেখা যায় না। রোগী প্রাথমিক পর্যায়ে সামান্য ধরনের কিডনি রোগ থাকার দরুন গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে না। শতকরা ৭৫ ভাগের উপর কিডনি অকেজো হয়ে গেলে রোগীর ক্ষুধা মন্দা, আহারে অনীহা, বমি বমি ভাগ, বমি হওয়া, শরীর ক্রমান্বয়ে ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, শারীরিক দুর্বলতা প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়।

এছাড়াও প্রস্রাবের পরিমাণের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, রাতে প্রস্রাব করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। কোনো রকম চর্মরোগের উপসর্গ ছাড়াই শরীর চুলকায়, যখন তখন হেচকি ওঠে এবং অনেক ক্ষেত্রে খিঁচুনি হতে পারে। রোগী শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট, তীব্র গতিতে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস, ঝিমানো ভাব, এমনকি এক পর্যায়ে রোগী জ্ঞানও হারিয়ে ফেলতে পারে।

রোগীকে পরীক্ষা করে রক্তের স্বল্পতা বোঝা যায়। অধিকাংশ রোগীর উচ্চরক্তচাপ ধরা পড়ে। এছাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীর কারণ সাপেক্ষে শরীরে পানি দেখা যেতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে চামড়া শুকিয়ে যেতে পারে। কিছু কিছু রোগীর হৃিপণ্ডের আবরণে পানি এবং হার্ট ফেইলুরের চিহ্ন দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে শরীরের এমন কি হাত-পায়ের মাংসপেশী শুকিয়ে যায় যার দরুন রোগী সাধারণত চলাফেরার শক্তি হারিয়ে ফেলে।

রোগ নির্ণয়

ক্রনিক রেনাল ফেইলুর রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীর উপসর্গের ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা ছাড়াও প্রাথমিকভাবে রক্তের ইউরিয়া, ক্রিয়েটেনিন এবং ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষা করা হয়। কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তের ইউরিয়া, ক্রিয়েটেনিন বেড়ে যায়। পটাশিয়ামের পরিমাণ বাড়তে থাকে ও বাইকার্বোনেট কমে যায়। এছাড়াও ফসফেট শরীরে জমতে শুরু করে, যার ফলে ক্যালসিয়াম কমে যেতে বাধ্য হয় এবং অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও শুরু হতে থাকে।
এরপরে কি কারণে ধীরগতিতে কিডনি বিকল হয়েছে তা বের করার জন্য প্রস্রাব পরীক্ষা করে এ্যালবুমিন আছে কিনা তা দেখা হয় এবং লোহিত ও শ্বেত কণিকা আছে কিনা তাও দেখে নেয়া হয়। প্রয়োজনের ২৪ ঘ

বেবী নাজনীনের হাফ সেঞ্চুরী

Babynajninঅচিরেই একক অ্যালবামের হাফ সেঞ্চুরী করতে যাচ্ছেন ব্ল্যাক ডায়মন্ড খ্যাত কন্ঠ শিল্পী বেবী নাজনীন। বাজারে আসছে তার ৫০তম একক। এরই ভেতরে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যোগদানের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তবে ‘গান ছেড়ে দিচ্ছেন কি না’ এমন প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘অধিকাংশ রাজনীতিকরই রাজনীতির পাশাপাশি পেশাগত একটি পরিচয় থাকে। আমিও আমার রাজনীতির পাশাপাশি পেশাগতভাবে গানকে চালিয়ে যাবো। এবং আমি কোনোভাবেই শ্রোতাদের ঠকাতে চাই না। সেই লক্ষ্যেই এবারের ৫০তম এককে শ্রোতাদের নতুন ধারার কিছু গান দেওয়ার ইচ্ছে আমার। আর সেইভাবেই এগোচ্ছে ব্ল্যাক ডায়মন্ডের ৫০তম একক। খুব শিগগিরই মিউজিক ভিডিওসহ এই একক অ্যালবাম রিলিজ হবে ।

ভালোমন্দ শিক্ষা দেয়া বাবা-মা হিসেবে দায়িত্ব–কাজল

Kajalভারতের বিনোদনকেন্দ্রীক শহর মুম্বাইতে বাস হিন্দি সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাজলের। গ্ল্যামারের চাকচিক্যে মোড়ানো তার জীবন। তবে অভিনেত্রীর বাইরে অন্য একটি বড় পরিচয় আছে এ বলিউড আইকনের। দুই সন্তানের মা তিনি। মেয়ে নিশার বয়স ১০ এবং ছেলে যুগের বয়স তিন। স্বাভাবিক শৈশব নিশ্চিত করতে লাইমলাইট থেকে সন্তানদের সবসময় দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি আইএএনএসকে সাক্ষাতকার দিয়েছেন কাজল।  

সন্তানদের বেড়ে ওঠা

দিন শেষে, আমি চাই ওরা স্বাভাবিক সন্তান হিসেবে বেড়ে ওঠুক। এজন্য যতটুকু সম্ভব লাইমলাইট থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছি। যতটুকু সম্ভব তাদের যত্ন নেয়ার চেষ্টা করি। আমি আমার সন্তানদের ব্যাপারে খুবই কঠোর। আমার বিশ্বাস, ভালো মানুষদের দেখে তারা ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ‍ওঠবে। ভালোমন্দ সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া বাবা-মা হিসেবে এটি আমাদের দায়িত্ব।

নিজের ছবি দেখে না সন্তানরা ?

মেয়ে নাশা কখনই আমার ছবি দেখে না। কারণ সে মনে করে আমি ছবিতে অনেক বেশি কাঁদি। সে আমাকে বলে, “তার বাবার মতো আমারও ‘গোলমাল’র মতো ছবিতে অভিনয় করা উচিত। আমি বলি, ঠিক আছে ভেবে দেখব। আমার ছেলে আমার ছবি দেখা মতো এখনো যথেষ্ট বড় হয়নি।

অনেক ভোরে উঠতে হয়। সন্তানরা জাগার আগেই, নিজের কাজ শেষ করতে হয়। তারপর তাদের স্কুলে পাঠিয়ে নিজের কাজে যাই।

মা হওয়ার পর অভিনয়

গর্ভবতী থাকাকালেও দুটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন কাজল। ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ‘মাই নেম ইজ খান’ ও একই বছরের দুই আগস্ট ‘উই আর ফ্যামিলি’ ছবিগুলো মুক্তি পায়। একই বছর ১৩ সেপ্টেম্বর তার দ্বিতীয় সন্তান যুগের জন্ম হয়।

এ সম্পর্কে তিনি বলেন, “এটি কঠিন ছিল। কিন্তু ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়… যদি চান, আপনিও এটা পারবেন।”

অজয়ের সঙ্গে সম্পর্ক

অজয় এবং আমি একসঙ্গে ভালোই আছি। বিয়ের পর অজয় এখন নিজেকে স্থির মনে করে। একটি সম্পর্ক ঠিক রাখার ব্যাপারে তোমার চেষ্টা থাকা উচিত। সবধরনের সম্পর্কেই এটা প্রয়োজন। আমরাও তাই করি।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা

বর্তমানে ‘ওলে’সহ একাধিক ব্রান্ডের অ্যাম্বাসেডর ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’ খ্যাত এই তারকা। সন্তান লালন ও সংসারের জন্য অভিনয় কমিয়ে দিয়েছেন। সময় কম দিতে হয় বলে বর্তমানে টিভি শোতেই নিজের পরিধি সীমিত করে রেখেছেন। তবে চলচ্চিত্রে কাজ করলে, স্বামীর প্রোডাকশন হাউস দিয়েই শুরু করবেন এমন ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন। ভবিষ্যতে কাজলের ক্যারিয়ার কোন পথে এগোয়, সেটিই এখন দেখার পালা।

 সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া।

হাতছানি দিয়ে ডাকছে কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন

Saint-martinসৈকতে একসঙ্গে সাগর, নদী, পাহাড় আর সমুদ্রের দ্বীপ দেখতে চান? বাংলাদেশের একটি জায়গায় তা সম্ভব। চলে আসুন কক্সবাজারে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত। এর দৈর্ঘ্য ১২০ কি:মি:। সৃষ্টিকর্তা যেন রূপসী বাংলার সব রূপ ঢেলে দিয়েছে বালুর আঁচলে । কক্সবাজর শহরে ঢুকতেই কানে বাজবে উত্তাল সাগরের গর্জন। পশ্চিম দিকে উঁকি দিলে নজরে পড়বে বিশাল সাগর। নরম বালুচরে নেমে দেখবনে লাল রঙের রাজকাঁকড়ার দৌড়ঝাঁপ, গভীর সাগরে মাছ ধরে জেলেদের ফিরে আসা।

সাগরের বিশাল মায়াবী গোধূলী ও সুর্যাস্ত, রাতের নিস্তব্ধতায় এক অন্য জগতে হারিয়ে যাবেন। সূর্য্যস্নান কিংবা সমুদ্রস্নানে নিজেকে বিলীন করে দিন নীলাভ প্রকৃতিতে। খোলা জীপে, স্পীড বোটে বা ঘোড়ায় চড়ে বেড়ানো আর সমুদ্রের বালির বিছানায় দাঁড়িয়ে শামুক-ঝিনুকের সাখে লোকোচুরি খেলতে খেলতে উপভোগ করুন অনাবিল আনন্দ।

কক্সবাজার নাজিরার টেক থেকে শুরু করে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত উক্ত বীচ। কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে উক্ত বীচ অবস্থিত। বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার তাইতো নব বধুরুপে সেজে আপনার পথ পানে চেয়ে আছে ।

এখানে উপভোগ করুণ আর্ন্তজাতিক মানের হোটেল মোটেলের আতিথেয়তা ও সেবা। উত্তাল সাগরে ঢেউয়ের ওপর ছেলেমেয়েদের জলক্রীড়া (সার্ফিং) দেখে মন সতেজ করতে হলে যেতে হবে কলাতলী পয়েন্টে।

সৈকতের পাদদেশেই বিশাল ঝাউবাগান। উচুঁ পাহাড়ের ওপর ৩০০ বছর আগে স্থাপিত জাদিরাম মন্দির, ক্যাং, বার্মিজ মার্কেট মনোমুগ্ধকর রাডার ষ্টেশন, লাইট হাউজ এবং নাজিরাটেক শুটকিপল্লী ও ঝিনুক মার্কেট ঘুরে আসতে পারেন।

 স্বপ্নের প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন:

বাংলাদেশের একমাত্র সামুদ্রিক প্রবালদ্বীপ হচ্ছে কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন। এটি বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত। প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি এ সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। টেকনাফ উপজেলার এ প্রবালদ্বীপটি অবস্থান বঙ্গোপসাগরের মধ্যে। টেকনাফ থেকে প্রায় ৮ মাইল দক্ষিণে বঙ্গেপসাগরের মাঝখানে প্রবাল দ্বীপটি অবস্থিত। জিঞ্জিরা, দক্ষিণ পাড়া, গলাছিরা ও চেরাদিয়া এই চারটি দ্বীপ নিয়ে ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপ’ গঠিত। এর প্রাচীর নাম নারিকেল জিনঞ্জিরা, পরবর্তীতে বৃটিশ আমলে এ দ্বীপকে সেন্ট মার্টিন নাম করণ করা হয়। ভূ-তাত্বিকদের মতে দ্বীপটির বয়স ২০ লক্ষ বছর। এদ্বীপের মূল আকর্ষণ সামুদ্রিক কাঁকড়া, কাছিম. প্রবাল, মুক্তা আর বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রাকৃতিক এ্যাকুরিয়াম।

অনেকের মতে এখানে জীবন্ত পাথরও রয়েছে। অত্যাধুনিক বিলাসবহুল জাহাজ ও প্রমোদতরী দিয়ে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে উত্তাল-পাতাল ঢেউয়ের দোল আর সাগরের নয়াবিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আপনি পৌছে যাবেন সেন্ট মার্টিনে। নাফ নদীর পাশ দিয়ে একদিকে মায়ানমার আর অন্যদিকে প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ আর এর মাঝখানে পানির উপর ভেসে চলেছেন আপনি। নদীতে ছোট-বড় মাছ ধরার ট্রলার। বঙ্গেপসাগর এবং নাফ নদীর মোহনায় ডুবো চরে গাংচিলের ঝাঁক ও পানির উপর দিয়ে ফ্লাইং ফিশের ফ্লাই করা দেখে আপনি অবাক চোখে শুধু তাকিয়েই থাকবেন! দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপে রাত কাটানোর বিরল অভিজ্ঞতার অধিকারী হতে পারেন। নিঝুম নিস্তব্ধ রাতে সেন্ট মার্টিনের পাথুরে সৈকতে দাঁড়িয়ে চাঁদনী রাতে হাজার তারার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলবেন ইস! কি সুন্দর আমার এ প্রিয় দেশ। আরো দেখতে পারেন প্রবালদ্বীপের পাথরের গর্তে প্রাকৃতিক এ্যাকুরিয়ামে নানা রঙের মাছের ছুটোছুটি। আপনার চিরকাঙ্খিত প্রবাল দ্বীপ এবং ছেঁড়াদিয়ার নির্জনতা আপনাকে বিমোহিত করবেই।

মানচিত্রের শেষ বিন্দু ছেঁড়াদ্বীপ

সামুদ্রিক প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনের ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে দেশের মানচিত্রের শেষ বিন্দতে এর অবস্থান। সেন্ট মার্টিন থেকে পূর্ব দিকে ট্রলার বা স্পিডবোট করে যেতে হয় বাংলাদেশের মানচিত্রের শেষ কিন্দু ছেঁড়াদ্বীপে। সময় লাগে আড়াই ঘন্টা। এখানে কোনো লোকবসতি নেই। পুরোপুরি সংরক্ষিত এলাকা। এই দ্বীপের চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রবাল-শৈবাল, শামুক-ঝিনুক। এসব মনভরে উপভোগ করা যায়, কিন্তু আহরণ বা সংগ্রহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। স্বচ্ছ নীল জলের এই দ্বীপে দেখা মেলে নানা বৈচৈত্রের মাছের। স্পিডবোট দিয়ে সেন্ট মার্টিন থেকে মুহুর্তেই ঘুরে আসা যায় প্রকৃতিক সৌন্দর্যের এ দ্বীপকে। 

উজ্জ্বল লাবন্যময় ত্বকের যত্নে

For-Fair-Skinসুন্দর হতে চায় না এমন মানুষ এই গ্রহে আছে বলে মনে হয় না। সুন্দর  কথাটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে একটি লাবন্যময় হাসিমাখা মুখের প্রতিচ্ছবি।

কারো গায়ের রঙ যখন স্বাভাবিক, সুশ্রী এবং ফর্সা, বাইরে থেকে তার দেহের শিরাগুলো দ্দেখা যায়, তখন আমরা বলি তার ত্বক সুন্দর। ত্বক সুন্দর বা ফর্সা হবার অনেক কারন আছে। যদিও এর বেশিরভাগই বংশগত বা আমরা বলতে পারি জেনেটিক্যাল। তবে আপনি আপনার ত্বককে করে তুলতে পারেন আরো ফর্সা, আরো উজ্জ্বল কিছু কিছু হোম রেমেডি ব্যবহার করে। এতে আপনার প্রয়োজন হবে না কোন বিউটি পার্লারে যাওয়ার। শুধু একটু যত্ন, ব্যাস!

 আসুন জেনে নেই কিছু বিউটি টিপস

ত্বকের সৌন্দর্য্য চর্চা দুইভাবে করা যায়। একটি প্রাকৃতিক ও অন্যটি কসমেটিকস।

প্রাকৃতিক উপায়ঃ

এটাই আসলে প্রকৃত উপায়। আমরা রুপচর্চায় সাধারনত প্রাকৃতিক কিছু উপাদান যেমন শাক-সবজী, ফল এবং এগুলোর পাল্প বা মন্ড ব্যবহার করি। এটা একদিকে যেমন নিরাপদ তেমনি সাশ্রয়ীও বটে – বলা হয়ে থাকে জিরো কস্ট।

কসমেটিকসঃ

এতে ব্যবহৃত হয় কেমিক্যাল আর কৃত্রিম উপাদান। এর মধ্যে আছে ‘মাড প্যাক এবং অন্যান্য ফেয়ারনেস ক্রীম অথবা বিভিন্ন কেমিক্যাল এজেন্টের মিক্সার।

বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞরা ত্বকের সৌন্দর্য্য চর্চায় কসমেটিকসের পরিবর্তে প্রাকৃতিক পদ্ধতির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কসমেটিকস ব্যবহারে আপনি ফল পেতেও পারেন আবার নাও পেতে পারেন। তবে প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বনে সবচেয়ে ভাল ফল পাবেন – এটা নিশ্চিত। 

চলুন দেথি প্রাকৃতিক কি কি ব্যবহার করে ত্বক উজ্জল ও লাবন্যময় করা যায়।

মধুঃ

ত্বকের যত্নে এবং উজ্জ্বল, সুন্দর ত্বক পেতে বহুল প্রচলিত এবং উত্তম পদ্ধতি হল মধুর ব্যবহার।

ব্যবহার: একচামচ মধু নিন। মুখের ত্বকে লাগান। আস্তে আস্তে বৃত্তাকারে মেসেজ করুন। এইভাবে দিনে দুইবার সকালে আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্যবহার করুন। দুই সপ্তাহ পরে আপনি দেখবেন আপনার ত্বক কেমন উজ্জ্বল আর সোনালী রঙ ধারন করছে। তবে মনে রাখবেন এখানে শুধুই মধুর কথা বলা হয়েছে, মধুর সাথে দুধ মিশানোর কথা বলা হয় নি।

পেঁপেঃ

আপনারা হয়তো আগেই জেনে থাকবেন পেঁপের কথা। হ্যাঁ, পেঁপে খাওয়ার উপকারীতা আমরা সবাই জানি। তবে এটা আপনার ত্বকের জন্যও আশির্বাদস্বরুপ। এটাকে টপিক্যাল মেডিসিন হিসাবে ব্যবহার করা হয়।  টপিক্যাল মেডিসিন হচ্ছে যা কিছু বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়। ত্বকের যত্নে পেঁপে যেহেতু বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়, সুতরাং পেঁপে একধরনের টপিক্যাল মেডিসিন।

ব্যবহার: একটা পেঁপে নিন। খোসা ছাড়িয়ে নিন। শাঁসটা পিষে ঘন পেস্টের মত করুন। মুখে লাগান। ইচ্ছে করলে আপনি এই পেস্ট আপনার বাহু কিংবা যেসব স্থান রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে গেছে, সেসব স্থানেও লাগাতে পারেন। ১ ঘন্টা এভাবে রাখুন। আপনি যদি ব্যস্ত মানুষ হয়ে থাকেন বা আপনার হাতে সময় কম, সেক্ষেত্রে পেস্ট লাগিয়ে রেখে অন্যান্য কাজ করতে থাকুন কিংবা সকালে অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকুন। ১ ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কমপক্ষে ৩ মাস ব্যবহার করুন। পার্থক্যটা দেখুন।

শশাঃ

শশা ভোজ্য সবজী হিসাবে খাওয়া হয়, যেমন কাঁচা অবস্থায় তেমনি রান্না করে। শশার রয়েছে ত্বক ফর্সা করার গুন। কম দামী সবজী হওয়ায় এটির ব্যবহার যে কারো জন্যই উত্তম পরামর্শ। শশাতে আছে এমন সব উপাদান যা মেলানিনের উপস্থিতি কমায়, ত্বকের পুড়ে যাওয়া বা তামাটে হওয়া রোধ করে। আর এসব কারনেই বিশেষজ্ঞরা শশা ব্যবহারের পরামর্শ দেন এবং কিছু অংশ খেতেও বলেন। এটা পেস্টের মত করে লাগাতে পারেন অথবা এর রস লাগাতে পারেন।

শশা শুধু ত্বকের সুন্দর করে তা-ই নয়, শশা বাটা বা শশার রস লাগানো স্থানের তাপ কমিয়ে স্থানটি ঠান্ডা রাখে বিশেষ করে চোখের নীচ। নিয়মিত শশা ব্যবহারে কালো দাগ দূর হয়। যখন শশা পেস্ট ত্বকে লাগাবেন, চাক চাক করে কাটা শশার টুকরা চোখের উপর লাগাতে ভুলবেন না যেন। এতে আপনার চোখের নীচে কালো দাগ দূর হবে।

লেবুঃ

লেবুর রসও ত্বকের জন্য আশ্চর্য্য ফল দেয়। এটা আপনি যে কোন সময় ব্যবহার করতে পারেন, তবে দ্রুত ও ভাল ফলের জন্য দিনে বেশ কয়েকবার লাগাতে পারেন। লেবুর রস মাখালে প্রথম কিছুক্ষন হালকা সূচ ফোঁটার মত অনুভূতি হতে পারে – তবে এটা স্বাভাবিক। কাজেই এটাকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মনে করবেন না। প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর মধ্যে একমাত্র দই ছাড়া অন্য কোনটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। একবারে ১টা লেবুই যথেষ্ট। ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ নিয়মিত লাগান। আয়নায় পার্থক্যটা দেখুন।

টমেটোর রসঃ

আপনারা নিশ্চয়ই ‘লা টোমাটিনা ফেস্টিভাল’ এর কথা শুনে থাকবেন। এটা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে প্রায় ৩০ কি.মি দুরের একটি গ্রামের একমাত্র অনুষ্ঠান যা অন্য কোথাও নেই। এই অনুষ্ঠানে লোকেরা একে অপরের প্রতি পাকা টমেটো ছুঁড়ে মারে। ইতিহাস বলে দূষ্কৃতির প্রতিবাদ হিসাবে তারা সজোরে টমেটো ছুঁড়ে মারে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে যাদের মুখে টমেটো এসে সজোরে লাগছে, তারা বেশ সতেজ অনুভূতি লাভ করেন, যদিও কেউ কেউ সামান্য ব্যাথা পান। ওখানকার লোকেরা ত্বক সজীব রাখার জন্য নিয়মিত টমেটো ব্যবহার করেন।

তরমুজঃ

গ্রীষ্মকালে দৈনিক কমপক্ষে তিনবার তরমুজের টুকরা নিয়ে মুখে ঘষুন। রোদে পোড়া কালো দাগ দূর হবে। তবে সতর্কতার সাথে ব্যবহার করবেন। কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ততক্ষনাৎ ব্যবহার বন্ধ করে দিন।

তুলসিঃ

তুলসিকে বলা হয় ঈশ্বরের দান। এটা খেলে অনেক রোগের উপসম হয়। তবে ত্বকের জন্যও এটা এক বিস্ময়। যারা তুলসির রস ত্বকে ব্যবহার করেন তারা বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেন, সাথে সাথে স্বাভাবিক ত্বকও হয় আরো সুন্দর আর লাবন্যময়। কাজেই রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে যাওয়া প্রতিকারে অব্যর্থ ঔষধ তুলসির রস, সাথে উপহার সুন্দর ফর্সা ত্বক।

ব্যবহার: তুলসির কিছু পাতা নিন। শীল-পাটা দিয়ে বেটে কিংবা পিষে পেস্ট করুন। আস্তে আস্তে ত্বকে লাগান। কয়েক মিনিট রেখে হালকা কুসুম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ৩ সপ্তাহ লাগান।

হলুদঃ

ত্বকের সৌন্দর্য্যে হলুদের ব্যবহার ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপকমাত্রায় প্রচলিত। হিন্দু মেয়েরা তাদের পায়ে রঙ মাখাতে হলুদ ব্যবহার করে এবং এটা তাদের কাছে পবিত্র আচার। তবে এখন আর এটা ধর্মীয় আচারে সীমাবদ্ধ নয়। গবেষণায় প্রমানিত যে হলুদের ত্বকের রঙ ফর্সা করার গুন আছে। যেহেতু হলুদ দামী বস্তু নয়, তাই আপনি ইচ্ছে করলে আজই এর ব্যবহার শুরু করতে পারেন।

ব্যবহার: পনিমানমত হলুদ নিয়ে ভালো করে পেষ্ট করে নিন। তারপর মুখে, হাতে, পায়ে নিয়মিত সকালে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে লাগান।আপনি চাইোলে আস্ত হলুদও ঘষে ঘষে লাগাতে পারেন। কিছুদিন পরই পার্থক্যটা বুঝবেন। ফর্সা ত্বক! কোন ব্যাপারই না।

দইঃ

দই ছাড়া ডিনার? অসম্ভব! কারন দই ছাড়া আহারের স্বাদটাই যে অপূর্ণ থেকে যাবে! অন্ততঃ দক্ষিন ভারতীয়দের কাছে দই এমনই। সেই দই কি-না আপনার ত্বকও ফর্সা করে! শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটা সত্যি।

ব্যবহার: প্রতিদিন সকালে ১ টেবিল চামচ দই নিন। মুখে মাখুন। ৪ সপ্তাহের বেশি লাগবে না আপনার মুখে ত্বক ফর্সা হতে। সেই সাথে ব্রণ থাকলে তাও দূর হবে।

দইয়ে যাদের এলার্জি আছে, তারা বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। যেমনঃ

এই উৎসবের কিছুদিনের মধ্যে দেখা যায় যারা নিজেকে সতেজ রাখার জন্য নিয়মিত টমেটো ব্যবহার করেন, তাদের ত্বক হয়ে ওঠে আরো সুন্দর। এরপর থেকে পৃথিবীর অনেক স্থানেই টমেটোকে রুপ চর্চার উপকরণ হিসাবে ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়।

ব্যবহার: ১টা টমেটো নিয়ে চেপে রস বের করে মুখে লাগান সাথে শাঁসটাও। প্রতিদিন এভাবে ব্যবহার করুন অন্ততঃ ৬ মাস পর্যন্ত।

 গোলাপ জলঃ

খুব অল্প সময়ে সুন্দর ত্বক পেতে গোলাপ জল অনন্য। গোলাপ ফুল কিনে পাঁপড়িগুলো আলাদা করে একদিন জলে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর প্রতিদিন মুখে ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে যতবার মুখ ধোবেন, ততবারই গোলাপ জল ব্যবহার করবেন। মনে রাখবেন গোলাপ জলে মুখ ধোয়ার সময় কোন ধরনের সাবান ব্যবহার করবেন না। অনেকের ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে যে গোলাপ জল নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের রং শুধু সুন্দর ফর্সা হয়েছে তা-ই নয়, একটু গোলাপি বর্নও ধারন করেছে।

আলুঃ

আলু বা গোল আলু অন্যান্য উপকরণের মত ত্বক ফর্সা বা সুন্দর করার জন্য যতটা না ব্যবহার হয় তার চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় মুখের ত্বকের কালো দাগ দূর করার ক্ষেত্রে। রোদে মুখের ত্বক পুড়ে গেলে কালো দাগ পড়ে। আর সেই কালো দাগ দূর করায় পৃথিবীর অন্য যেকোন বস্তুর তুলনায় আলুই একমাত্র কার্যকরী উপাদান।

কচি ডাবের পানিঃ

বাইরে থেকে ঘরে এসে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কচি ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকে রোদের ক্রিয়া বা রোদে পোড়া ভাব দূর হবে। আপনাকে দেবে প্রশান্তি আর সতেজ অনুভূতি। চাইলে আপনি কচি ডাবের শাঁসও মুখে মাখতে পারেন। এতে ত্বকের রঙ স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি ত্বকের ব্রণও দূর হবে।

ডিমের কুসুমঃ

ত্বকের সৌন্দর্য্য রক্ষায় হোম রেমেডিগুলোর মধ্যে ডিমের কুসুম অন্যতম।

ব্যবহার: ১টি বাটিতে কুসুম নিয়ে ফেটিয়ে পেস্টের মত তৈরী করুন। ১ চামচ মধু আর ১ চামচ দই নিয়ে ভালভাবে কুসুমের সাথে মেশান। ‘ফেইস প্যাকে’র মত করে সারা মুখে লাগান। শুকাতে দিন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ২ থেকে ৩ মাস এভাবে প্রতিদিন ব্যবহার করুন আর রেজাল্ট লক্ষ্য করুন।

দুধের সাথে জাফরানঃ

ত্বকের সৌন্দর্য্য রক্ষায় সামান্য কিছু অর্থ খরচ করতে আপনার যদি বিশেষ অসুবিধা না থাকে, তাহলে দুধ আর জাফরান ব্যবহার করতে পারেন। যদিও জাফরান বর্তমানে বেশ দামী উপাদান। ২৫০মি.লি এর মত দুধ নিন। তাতে কিছু জাফরান ফেলে ভালভাবে মেশান। কোন ধরনের মেসেজ করা ছাড়াই মুখের সারা ত্বকে সমানভাবে লাগান। এভাবে কিছুক্ষন থাকুন। জাফরান মিশ্রিত দুধ মুখে লাগানোর পাশাপাশি খেতেও পারেন। এতে আরো ভাল ফল পাবেন। বেশ কয়েকটি গবেষনায় দেখা গেছে যে, দুধ আর জাফরান একসঙ্গে ব্যবহারের ফলে ত্বক ফর্সা হওয়ার পাশাপাশি গোলাপী আভা ধারন করে। যারা চান তাদের ত্বক যেন ঠিক শিশুদের ত্বকের মত গোলাপী হয়, তাদের জন্য বিশেষ পরামর্শ হল দুধ আর জাফরান একসঙ্গে ব্যবহারের।

 চন্দন পেস্টঃ

শেষ ভরসা চন্দন। ১ চিমটি চন্দন কাঠের পেস্টই আপনার এতদিনের ফর্সা হওয়ার স্বপ্ন স্বার্থক করতে পারে। চন্দন পেস্ট ‘ফেইস প্যাকে’র মত করে একটানা ৩০ দিন ব্যবহার করুন। আর আশ্চর্য্য ফল লাভ করুন।

কিছু সংশয়

উপরোল্লিখিত বিউটি টিপসগুলো নিঃসন্দেহে সাশ্রয়ী এবং কার্যকরি। এগুলো যেকোন সময় আপনার কাজে দেবে। এগুলো ব্যবহারে আপনার কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবারও দরকার নেই। আর হ্যাঁ, এতসব টিপস পেয়ে আপনার মনে হয়তো সংশয় দেখা দিতে পারে যে কোনটা রেখে কোনটা ব্যবহার করবো কিংবা কেউ ভাবতে পারেন একসঙ্গে সবগুলো কিভাবে ব্যবহার করব। এর উত্তর হচ্ছে ‘না’। সবগুলো একসঙ্গে নয়। যেমন ধরুন দুধ আর লেবু একসঙ্গে কাজ করে না। যেহেতু দু’টোই বিউটি টিপস হিসাবে দেয়া আছে, আর আপনি দু’টোই একসঙ্গে ব্যবহার করতে চাইছেন, সেক্ষেত্রে বরং আপনার ত্বকে উলটো প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কাজেই যেকোন একটি বেছে নিন এবং সেটাই রেগুলার ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। কোন কারনে আপনি যদি একটাতে সন্তুষ্ট না হন, সেক্ষেত্রে একটা ব্যবহারের পর অন্যটা ব্যবহার করে দেখতে পারেন। তবে কখনোই সবগুলো একসঙ্গে ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন না।

জেনে নেই কয়েকটা ছোট্ট টিপস

Tips১.কাঁচা দুধে তুলা ভিজিয়ে ঠোটে ঘষুন ,কালো দাগ তো উঠবেই সাথে ঠোটে গোলাপী ভাব আসবে ।

২.কনুইয়ের কালো দাগ দূর করতে লেবুর খোসায় চিনি দিয়ে ভালো করে ঘষুন ।চলে যাবে ।

৩.ব্রনের উপর রসুনের কোঁয়া ঘষে নিন,তাড়াতাড়ি মিলিয়ে যাবে ।গ্যারান্টি।

৪.পেডিকিউর মেনিকিউর আপনার কাছে ঝামেলা লাগে ? আমরা আছি তো, আজ থেকে যখনই আপেল খাবেন তখনই আপেলের খোসাটা হাত পায়ে ঘষে নিন । পরিস্কারও হবে ফর্সাও হবে।

৫.পায়ের গোড়ালী ফাটলে ,পেয়াজ বেটে প্রলেপ দিন ।ক্রীম কিংবা স্ক্রাব এর ঝামেলায় যেতে হবেনা ।

৬.প্রতিদিন টুথপেষ্ট দিয়ে দাত মাজেন কুলি করেন তবুও মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়? ব্যাপার না ,নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে টানা দুইমাস নিয়মিত দুই কোঁয়া করে কমলালেবু খান ।

মাংসের ৪ রেসিপি

MEAT KALIAপারিবারিক ছোট আয়োজনেও রসনা তৃপ্তিতে চাই মাংসের স্বাদ। সহজ রান্নায় খাবার টেবিলকে আভিজাত্য দিতে আপনিও বাড়িতে কাজে লাগাতে পারেন মাংসের এই চার রেসিপি

 মাংসের কালিয়া 

উপকরণ

১ কেজি মাংস (গরু/খাসি), হলুদ গুঁড়ো ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়ো ১ চা-চামচ, জিরা বাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁপে বাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, গরম মসলা ১ চা-চামচ, তেজপাতা ২টি, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, বেরেস্তা আধা কাপ, লবণ ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।

প্রণালী

মাংস কেটে ধুয়ে পানি ঝরান। সব মসলা দিয়ে মাংস মাখিয়ে এক ঘণ্টা ঢেকে রাখুন। এবার হাঁড়িতে তেল গরম হলে পেঁয়াজ ভাজুন। তেজপাতা দিন। মাখানো মাংস দিয়ে ভাজুন/কষান। সেদ্ধ হলে পেঁয়াজ বেরেস্তা ছিটিয়ে পরিবেশন করুন।

(৬ থেকে ৮ জনের জন্য)

 কিমা ভুনা

 উপকরণ

মাংস কিমা ১ কেজি, পেঁয়াজ বাটা ১ কাপ, আদা বাটা কোয়ার্টার কাপ, জিরা বাটা ১ চা-চামচ, রসুন বাটা কোয়ার্টার কাপ, হলুদ গুঁড়ো ২ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়ো ৩ চা-চামচ, তেল, লবণ পরিমাণমতো, এলাচ, দারুচিনি বাটা আধা চা-চামচ, জিরা ১ চা-চামচ।

প্রণালী

কিমায় সব উপকরণ একসঙ্গে মেখে রাখুন ঘণ্টাখানেক। চুলায় কড়াইয়ে তেল দিয়ে মাখানো কিমা ভুনতে থাকুন। তেল উঠলে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

(৬ থেকে ১০ জনের জন্য)

 রাঙা বিফ

 উপকরণ

মাংস টুকরো করা দেড় কাপ, গাজর কুচি ১টি, পেঁপে কুচি ১টি, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, টকদই ১ টেবিল চামচ, কর্নফ্লাওয়ার ১ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ ৪-৫টি, লবণ পরিমাণমতো, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ।

 প্রণালী

মাংস, লবণ ও টকদই দিয়ে মেখে ১৫ মিনিট রাখুন। পেঁপে, গাজর ভাপ দিন। চুলায় কড়াই গরম করে তেল দিয়ে পেঁয়াজ ও রসুন দিয়ে মাংস দিন। কাঁচা মরিচ ছিটিয়ে পেঁপে গাজর দিয়ে নেড়ে ঢেকে রাখুন। মাংস সেদ্ধ হলে কর্নফ্লাওয়ার দিয়ে নামান।

(৪ থেকে ৮ জনের জন্য)

 ঝাল বিফ

 উপকরণ

মাংস ১ কেজি, আদা, রসুন ২ চা-চামচ করে; পেঁয়াজ ৫/৬টি (বড় করে কাটা), লবণ ও তেল পরিমাণমতো, জিরা বাটা ১ চা-চামচ, দারুচিনি, এলাচ, কাঁচামরিচ, শুকনো মরিচ ৫-৬টি করে; সয়াসস, চিলিসস আধা কাপ করে।

 প্রণালী

মাংস চিকন লম্বা করে কাটুন। সব উপকরণ মেখে ১ ঘণ্টা রাখুন। কড়াইয়ে তেল দিয়ে আস্ত শুকনো মরিচ, এলাচ, দারুচিনি, পেঁয়াজ দিয়ে ভেজে তাতে মাংস দিয়ে রান্না করুন। পরিমাণমতো পানি দিন। নামানোর সময় চিলিসস, জিরা, কাঁচামরিচ দিয়ে নাড়ুন।

(৬ থেকে

৮ জনের জন্য)

শিশুর যত্ন

Babyঘনিয়ে আসছে শীতের মৌসুম। বিদয় নিচ্ছে বর্ষা। আবহাওয়া পনিবর্তনের এই সময়টাতে দেথা দেয় নানান অসুখ। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় শিশুরা। শীতকালে যে কোনো সময় সর্দি, কাশি, ঠাণ্ডা, জ্বরের মতো নানা অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকে। তাই এ সময়টাতে শিশুর বাড়তি যত্ন নিতে হয়। বাড়তি যত্ন নিলে শিশু থাকবে সুস্থ ও সুন্দর।

শীতের সময় শিশুকে ফুলাহাতা জামা ও পাজামা পড়াতে হয়। তবে এসময় খেয়াল রাখতে হবে, জামা কাপড় যেনো আটসাট না হয়। শীতের সময় শিশুদের পায়ে মোজা, জুতা, স্যান্ডেল আছে কিনা সব সময় খেয়াল রাখতে হবে।

 শিশুর জামা-কাপড় রোদে দিয়ে শুকাতে হবে।রোদে দেওয়া কাপড় পরালে শিশু আরাম পাবে।

 

পেশা হিসেবে ফ্যাশন ডিজাইনিং

image_39150অপরাজিতাবিডি ডটকম: ফ্যাশন ডিজাইনিং সৃজনশীল শিল্পের ব্যাবহারিক শাখা। যুগ যুগ ধরে সামাজিক বিবর্তনের মাধ্যমে পোশাক এবং আনুশাঙ্গিক বস্তুর পরিবর্তন আর মানুষের রুচির সাথে সাথে পরিবর্তন হচ্ছে ফ্যাশনের । কর্ম ক্ষেত্রে ফ্যাশন ডিজাইনিং সবচেয়ে লাভজনক, আকর্ষণীয়, চাকচিক্যময় এবং উত্তেজনাপূর্ণ পেশা। আপনার মধ্যে যদি সৃজনশীলতা, শৈলী এবং মৌলিকত্ব থাকে তবে ফ্যাশন ডিজাইনিং কে আজকের বিশ্বের প্রতিযোগিতা মূলক পেশার একটি বিকল্প হিসাবে নিতে পারেন।

কেন পেশা হিসাবে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিবেন ? এক কথায় যশ, সম্মান, আত্মতৃপ্তি আর উচ্চ মানের বেতন কাঠামো – সবই আপনাকে নিয়ে যাবে সাফল্যর দরজায়। সুতরাং, আপনি যদি রং, আকৃতি ও ডিজাইন দিয়ে ম্যাজিক তৈরি করতে পারেন, তাহলে শুধু একটি পেশাদারী কোর্সের মাধ্যমে শুরু করতে পারেন আকর্ষণীয় এই পেশা।

যোগ্যতা

যোগ্যতা সাধারনত দুই ধরনের

প্রাকৃতিক যোগ্যতা – রঙ, নকশা আর এই দুইয়ের সৃজনশীলতা নিয়ে যারা বেড়ে উঠে,ফ্যাশন ডিজাইনিং তাদের জন্য অনেক খানি সহজ হয়ে যায়।

অর্জিত যোগ্যতা– মান সম্পন্ন স্বীকৃত ফ্যাশন ইনস্টিটিউট থেকে কোর্স করে দক্ষতা অর্জন করা যায় এই পেশায়।এক্ষেত্রে যারা এইচএসসি পাশের পর এ পেশাতে আসাই ভালো।

তবে দক্ষতা হক প্রাকৃতিক অথবা অর্জিত, পেশাদারী মনোভাব, ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা আর কঠোর পরিশ্রমই দিতে পারে সাফল্য।

সিদ্ধান্ত নিন দ্রুত

বিশ্বে যখন ফ্যাশান নিয়ে তোলপাড় তখন পিছিয়ে নাই আমরাও। পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের সাফল্য আর নিত্য নতুন দেশিও ফ্যাশান হাউজ এর কারনে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এই পেশা। তরুণদের মধ্যে ফ্যাশন ডিজাইনিং পড়া এখন শুধু আর শখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। তাই যদি ডিজাইনারই হতে চান শুরু করুন একটু আগে।

ভাবছেন আপনার জন্য ফ্যাশন ডিজাইনিং উপযোগী কি না ?

যাই করুন ভালবেসে করুন – ভেবে দেখুন তো ডিজাইনিং আপনার কেমন লাগে ? রঙ, তুলি আর সেলাইর মেশিনে আগ্রহ আছে? মার্কেটে কোন জামা দেখলে কি মনে হয় কালার টা অন্য রকম হলে ভালো হতো। কখনও কি মনের জোকে করে ফেলেছেন টি-শার্ট এর ডিজাইন। উপরের কিছু না থাক- আছে কি অদম্য ইচ্ছা?

আর এগুলো যদি থাকে আপনার ভিতরে, কে জানি আজ থেকে ৫ বছর পরে আপনার ডিজাইন করা জামা হয়ত উচ্চ দামে কিনতে হবে।

যে বিষয়গুলো এড়িয়ে জলা ভালো

গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড, মিডিয়া, ফ্যাশান শো, তারকা খ্যাতি অথবা কোটি টাকার মালিক হওয়ার লোভে ভুলেও আসবেন না এই পথে। ফ্যাশান ডিজাইন একধরনের শিল্প, বই মুখস্ত করে ডিজাইনার হওয়া যায়না।

পড়বেন কোথায় ?

বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইনস্টিটিউট আছে। তার মধ্যে –

·         Bangladesh University of Textiles

·         BGMEA University Of Fashion and Technology. (BUFT)

·         Shanto-mariam University of Creative Technology. (SMUCT)

·         Raffles Design Institute, Dhaka

·         National Institute of Fashion Technology (NIFT)

ব্যায়

৪ বছর মেয়াদি বি এস সি করতে গেলে খরচ সবচেয়ে বেশি যাবে BUFT তে ৫ লক্ষ টাকার উপরে সেমিসটার ফি। বাকি গুলুতে এর চেয়ে কমে পড়তে পারবেন । শর্ট কোর্সে খরচ প্রতিষ্ঠান ভেদে কম বেশি হবে।

-প্রতিবেদক,অপরাজিতাবিডি ডটকম

ফ্যাশনে ব্লক প্রিন্ট

Fashionফ্যাশনেবল, কিন্তু আরামদায়ক পোশাক চাই। এমন ধরনের পোশাক, যা সব সময় পরা যাবে। হোক তা অফিস বা বিশ্ববিদ্যালয়। সঙ্গে যদি লেস বা পাইপিং যোগ করে দেওয়া হয়, তাহলে নিমন্ত্রণেও অনায়াসে পরা যাবে। শুনলে মনে হবে, এ আর নতুন কী! তবে নতুন মোটিফে নতুন করে বানিয়ে নিলে নতুনত্ব থাকবে বৈকি। বলছিলাম ব্লক প্রিন্টের সালোয়ার-কামিজের কথা।

কয়েক বছর ধরেই কমবেশি চল রয়েছে ব্লক প্রিন্টের। গত বছর কিছুটা কমলেও এ বছর আবার এর চাহিদা বেড়েছে। গরম আবহাওয়াই এর অন্যতম কারণ। ব্লক প্রিন্ট সাধারণত সুতি কাপড়ের ওপরই করা হয়। খুব বেশি জবরজং নকশা ও কাজ থাকে না। ফলে গরমে আরাম খুঁজতে মেয়েরা বেছে নিচ্ছে এই পোশাক।

ক্রেতারা সাদামাটা নকশার মধ্যে ব্লক প্রিন্টের পোশাক কিনছেন। গরমে কেউই জাঁকজমক পোশাক পরতে চান না। তবে লন কাপড়ের নকশার একটা প্রভাব থাকছে এ সময়ের ব্লক প্রিন্টের পোশাকে।

এখনকার সময়ে হালকা রং, যেমন লেবু রং, কচুপাতা সবুজ, হালকা ফিরোজা, হালকা গোলাপি ও সাদার মধ্যে বিভিন্ন রঙের মোটিফ ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার উজ্জ্বল রঙের কামিজ হলে সালোয়ার-ওড়না হচ্ছে সাদা রঙের।

কোনোটাতে থাকছে ফুলেল মোটিফ, কোনোটাতে জ্যামিতিক নকশা ও ফুলেল মোটিফের মিশেল। ফ্যাশন হাউস দর্জির স্বত্বাধিকারী সাশা মানসুর চৌধুরী বলেন, ব্লক প্রিন্টের কামিজে হাতায় ও ওপরের অংশে জ্যামিতিক নকশা থাকলে নিচের দিকে ফুলেল নকশা ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া কলকা নকশা কামিজে ব্যবহার করা হলে সালোয়ার ও ওড়নায় জ্যামিতিক নকশার চল রয়েছে। ব্লক প্রিন্টেও ফিউশন হচ্ছে। তবে কামিজের ঝুল বেশি এবং কাটিংয়ে এক ছাঁট চলছে; সঙ্গে থ্রি-কোয়ার্টার বা ফুলহাতা।

পোশাক না কিনে নিজের মনের মতো করে বানিয়ে নেওয়ারও সুযোগ থাকে ব্লক প্রিন্টের পোশাকে। ঢাকার গাউছিয়া, নিউমার্কেট, প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারসহ ছোট-বড় অনেক দোকানে ব্লক প্রিন্টের কাজ করা হয়। এক হাজার টাকার মধ্যে ব্লক প্রিন্ট করাতে পারবেন। এ ছাড়া বাড়িতে বসেও নকশা করা ব্লক ও রং কিনে ব্লক করা যেতে পারে। ঢাকার বনানী ১১ নম্বরেও নানা দোকানে পাবেন ব্লক প্রিন্টের পোশাক।

ব্লক প্রিন্টের পোশাকে নিতে হবে বাড়তি যত্ন। অন্তত দু-তিনবার পরে ধুয়ে ফেলবেন। ধোয়ার সময় উল্টো করে মৃদু ক্ষারের পরিষ্কারক দিয়ে ধুতে হবে। আর সরাসরি বা কড়া রোদে কখনোই ব্লক প্রিন্টের পোশাক শুকাতে দেবেন না। এতে রং জ্বলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকি ইস্তিরি করার সময়ও উল্টো করে নেবেন।ব্লক

 সুত্র: prothom-alo মডেল: বিদ্যা সিনহা মিম, পোশাক: চৈতি, সাজ: কিউবেলাক

বিয়ের সাজ, মধ্যমণি কনেকে থাকতে হয় সবার চেয়ে আলাদা

Biyer sajবিয়ে জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সাজগোজটাও হওয়া চাই মনের মতো। বিয়ে মানে এক নতুন অধ্যায়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়া। নতুন পরিবারের সঙ্গে নিজেকে খাপখাইয়ে চলা। বিয়ের এই অধ্যায়টা প্রতিটি মেয়ের কাছেই অন্যতম।

বর-কনের সমন্বয়ে যদিও বিয়ে আয়োজন করা হয়, তবুও বিয়েতে মধ্যমণি হিসেবে কনেই থাকে। কনের সাজ-পোশাক নিয়ে আগে থেকেই আলোড়ন হয়ে থাকে। যেহেতু মধ্যমণি কনে তাই সবার চেয়ে তাকে থাকতে হয় একদম আলাদা।

বিয়ের প্রস্তুতিতে শুধু রূপ নয় ব্যক্তিত্বেরও যেন প্রতিফলন ঘটে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। তাই কনের সামনে থাকতে হবে একটি গাইডলাইন। ত্বক এবং চুলের বাড়তি যত্ন এ সময় অতি জরুরি। ত্বক পরিষ্কার, টান টান ভাব বজায় এবং উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে ফেসিয়ালের কোনও বিকল্প নেই। ত্বকের ধরন অনুযায়ী এর পরিচর্যায় ফেসিয়াল এক কার্যকর উপায়।

তাই বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হলে ভালো পার্লারে গিয়ে দক্ষ হাতে ফেসিয়াল করে নিন। ফেসিয়াল করতে হবে অন্তত ১ মাস আগে। তারপর ১৫ দিন পর আবার ম্যাসাজ করে নিন। ব্লিচ করে নিন। কারণ বিয়ের আগে স্বাভাবিকভাবেই নানা টেনশনের কারণে ত্বক তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারায়। এ কারণেই ত্বকের নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। আর ফেসিয়ালসহ নানা ধরনের ম্যাসাজ ত্বকের আর্দ্র্রতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।

তবে শুধু পার্লারে গিয়ে ত্বকের যত্ন নিলেই হবে না, অবসর সময়ে ঘরে বসে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বক পরিচর্যা করতে হবে। ত্বকের যত্নে আলু এবং শসার রস খুব উপকারী। আলু এবং শসার রস একসঙ্গে মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত সেটা ব্যবহার করতে পারেন। আবার দিনের যেকোনও সময় তুলায় গোলাপজল ভিজিয়ে মুখ, গলা এবং ঘাড় মুছে নিন। গোলাপজল খুব ভালো একটি ক্লিনজারের কাজ করে। মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে মসুর ডাল বাটা ব্যবহার করতে পারেন। যাদের মুখে ব্রণ আছে তারা নিম এবং তুলসী পাতার রসের সঙ্গে সামান্য চন্দন গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট করে ব্রণের ওপরে লাগিয়ে নিন। নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণ দূর হবে। আবার অনেকের মুখেই রোদে পোড়া ভাব দেখা যায়। এ সমস্যা দূর করতে চালের গুঁড়ো, মসুর ডাল বাটা, এক টেবিল চামচ টকদই, এক টেবিল চামচ কাঁচা দুধ এবং সামান্য মধু একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ৫ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন। এবার ভালো ব্র্যান্ডের ক্রিম মেখে নিন।

শুধু মুখের যত্ন নিলেই হয় না, কনের হাত-পায়েরও পরিচর্যা করা জরুরি। হাত-পা পরিচর্যায় মেনিকিউর পেডিকিউর অত্যন্ত উপকারী। এ ছাড়াও ঘরেই নিতে পারেন যত্ন। একটি বড় বোলে কুসুম কুসুম গরম পানিতে শ্যাম্পু গুলিয়ে হাত-পা ভিজিয়ে বসে থাকুন ১০ মিনিট। এবার পিউমিস স্টোন দিয়ে পায়ের তালু ঘসে নিন। নেইল কাটার দিয়ে নখ সেইপ মতো কেটে আবার গরম পানিতে ২ মিনিট হাত-পা ভিজিয়ে কিছুক্ষণ পর পানি থেকে তুলে সুতি কাপড় দিয়ে মুছে ভালো লোশন লাগিয়ে নিন।

একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নিশাত আরা

nari-29

নিশাত আরা আলম। পেশা সফটওয়্যার পইঞ্জিনিয়ার। গল্পটির এখানেই শেষ নয়, বরং শুরু। পড়াশোনা শেষে আর দশটা ছেলেমেয়ে যখন হন্যে হয়ে চাকরির পেছনে ঘোরে, সেক্ষেত্রে নিশাত আরা আলমের গল্পটা একটু ভিন্নই। চাকরির পেছনে নিশাত কী ঘুরবেন, বরং চাকরি এখন তার পেছনে ঘুরছে।

দেশ-বিদেশ মিলিয়ে পড়াশোনা নিশাতের। নিশাত ইনফরমেশন টেকনোলজি এবং অটোমোশন সিস্টেম বিষয়ে মাস্টার্স করেছেন জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্স থেকে। আর দেশে এনসিসি এডুকেশন ইউকের অধীনে ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি (ডিআইআইটি) থেকে ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইটি) বিষয়ে বিএসসি অনার্স গ্রোগ্রামে পড়াশোনা করে সনদ লাভ করেন। নিশাত আরা আলম কাজ করেছেন মূলত জাভা ও ডটনেট প্রযুক্তির সাথে। জাভা ¯িপ্রং ফ্রেমওয়ার্কে রয়েছে তার বিশেষ দতা। আগস্ট ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার এম্পায়ার ওয়ান গ্র“পে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন। আগে তিনি ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে কাজ করেছেন ফেইরফ্যাক্স ডিজিটাল, সিডনি, অস্ট্রেলিয়ায়। তা ছাড়া তিনি সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে কাজ করেছেন কোয়েক্সটান্ট প্রফেশনাল সার্ভিসে। জার্মানির মানহেইম ইউনিভার্সিটির গবেষণা সহকারী হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।

তার সাফল্যের পেছনে ছোট একটি সিদ্ধান্ত তাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর কী করবেন, কোথায় পড়বেন- এ চিন্তায়ই মশগুল ছিলেন। পরে অবশ্য সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললেন নিশাত। ধানমন্ডির ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটিতে বিএসসি অনার্স ইন আইটি প্রোগ্রামে ভর্তি হলেন এবং সফলতার সাথে প্রোগ্রামটি সম্পন্ন করার পরই জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সে পড়ার সুযোগ আসে। নিশাত আরা আলমের কাছে এ সিদ্ধান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ আমাদের দেশে মেয়েদের আইটি বিষয়ে পড়াশোনা এখনো এতটা প্রাধান্য পায়নি- এ কারণে প্রথমে ভয়েই ছিলাম। আইটিতে পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে কী করব সে চিন্তাই বেশি কাজ করছিল। শেষে দেখলাম সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে পড়াশোনা করলে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। বাংলা, ইংরেজি ও জার্মান ভাষায় তার দতা রয়েছে। জাভা, সি-শার্প, ওয়েব সার্ভিস, হাইবারনেট, জেকুয়েরি, সিএসএস-৩, এইচটিএমএল-৫, মাই এসকিউএল, রুবি, পাইথন, ফেসবুক এপিআইসহ নানা বিষয়ে তার দক্ষতা রয়েছে।

যারা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনা করে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের উদ্দেশে নিশাত আরা আলমের একটাই কথা- নিজের স্বপ্ন নিয়ে আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে; আর সেই আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে নিজের জীবন গড়তে হবে। এখানে কোনো আবেগ বা খামখেয়ালির স্থান নেই। নিজের জয়ের জন্য তো একটু অপো করতেই হবে। নিশাত আরা আলম স্বপ্ন দেখেন এ দেশের নারীরা একদিন তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে দেশের সেরা চাকরি লুফে নেবেন নিজের যোগ্যতায়। আর হয়তো একদিন বিশ্বের সেরা আইটি চাকরিতে আমাদের দেশের নারীরা নেতৃত্ব দেবেন।

ঘরের সৌন্দর্যে পর্দা

Porda 1

জটিল নাগরিক জীবনের যান্ত্রিকতার মধ্যে আমরা যতই ডুবে যাই না কেন, এড়িয়ে চলতে পারি না জীবনযাপনে রুচিবোধ আর সৌন্দর্যপ্রিয়তাকে।

নিজেকে চমৎকার সাজে সজ্জিত করে সবার সামনে উপস্থাপনে যেমনি মনোযোগী থাকি, তেমনিভাবে আমাদের ঘরদোরও আকর্ষণীয় করে রাখতে সচেষ্ট থাকি। ঘরের ফার্নিচারে, রঙে, ফ্লোর, মোজাইক কিংবা সিলিংয়ে যেমন তার জৌলুস ফুটে ওঠে, তেমনি ঘরের জামা কাপড়ও সুন্দর হওয়া আবশ্যক। ঘরের এই জামা-কাপড়ই হলো পর্দা।

পর্দাকে বলা হয় গৃহের আব্রু। কারণ ঘরের গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় দরজা ও জানালায় পর্দা ব্যবহার করে। পর্দার রয়েছে কিছু ব্যবহারিক দিকও। যেমন- সূর্যের প্রখর রোদ থেকে ঘরের শীতলতা রক্ষা করা, বাইরের ধুলাবালি ও দূষিত বায়ু ঠেকিয়ে রাখা, শীতের সময় বাইরের ঠান্ডা হাওয়া থেকে ঘরের উষ্নতা রক্ষা করা, পুরাতন জিনিসপত্র আড়াল করা ইত্যাদি।

দরজা-জানালার এই আচ্ছাদনী গৃহের অন্দরসজ্জায় একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। সুন্দর, রুচিশীল পর্দা ঘরের পরিবেশকে মনোরম করে তোলে। তবে যুগের সাথে সব কিছুর পরিবর্তন হচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। পর্দাকে এখন শুধু দরজা-জানালা ঢেকে রাখার জন্যই ব্যবহার না করে তা এখন অন্দর সজ্জার সামগ্রী হিসেবে দেখা হয়।

শৌখিন গৃহিণীরা অন্দরের সাজ-সজ্জায় পর্দা নিয়ে করে থাকেন নানা রকম ভাবনা। ঘরের সাথে মানানসই, দেয়ালের রঙের সাথে খাপ খাওয়ানো আর কেমন ডিজাইনের তা হবে তা এখন প্রাধান্য পাচ্ছে বেশি। আর পর্দার কাপড়েও এসেছে বৈচিত্র্য।

তাই পর্দা নির্বাচনের সময় লক্ষ্য রাখা উচিত অনেক বিষয়েই। সেই সাথে পরিচয় দিতে হবে রুচিশীলতা ও সৃজনশীলতার, তবেই আপনার বাড়ি হয়ে উঠবে আকর্ষণীয়।

শুধু পর্দার ধরন, রঙ, কাপড়ের প্রিন্ট, পর্দার ডিজাইন, ঝোলানোর স্টাইল ইত্যাদি একটি সাধারণ মাত্রার খরচেও চূড়ান্তভাবে সুন্দর করে তুলতে পারে। বাড়িতে পর্দার সৌন্দর্যে চমক আনতে হলে আপনাকে এর কিছু কলাকৌশল জেনে নেয়া প্রয়োজন।

প্রথমেই বলা যাক, আপনার ঘরের পর্দা কোন ধরনের হবে সে বিষয়ে। পর্দার নানা ধরন নির্ভর করে ঘরের আয়তন, আলোর উৎস ও রঙের ওপর। ঘরের আয়তন যদি ছোট বা বর্গাকার হয় তবে শর্ট সাইজের বা আঁটসাঁট পর্দা ব্যবহার করা উচিত। অন্যদিকে ঘরে আকার যদি লম্বাটে বা আয়তকার হয় তবে ফ্লোর পর্যন্ত লম্বা পর্দার প্রয়োজন হবে।

আলোর উৎস ও বাতাস সঞ্চালন পেতে হলে শর্ট পর্দাই ভাল। এ ছাড়া ঘরে কৃত্রিম আলোর ওপর জোর দিলে আর ঘরটি এয়ারকন্ডিশনড হলে লম্বা পর্দা ঘরকে আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তুলবে।

তবে পর্দার ধরন ঘরের দেয়ালের রঙের ওপরও নির্ভর করে অনেক খানি। গাঢ় রঙের রুমে পর্দা হবে লম্বা সাইজের, অন্যদিকে হালকা রঙের ঘরে দু’ধরনের পর্দাই ঝোলানো যায়।

আবার বড় রুম ও ফার্নিচার দুটোর ক্ষেত্রেই পর্দা প্রথার কিছুটা পরিবর্তন আবশ্যক। ফার্নিচারের সঙ্গে পর্দার কালার ম্যাচিং হতে পারে। ফার্নিচার বেশিরভাগ সময়েই মেরুন বা কালচে রঙের হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে মেরুন রঙের পর্দার ওপর সাদা বা অফ হোয়াইট পেলমেট (পর্দার সঙ্গে যুক্ত কাপড়) দেয়া যেতে পারে।

তাছাড়া বড় রুমের ক্ষেত্রে পর্দায় পেলমেট ব্যবহার করতে হবে। ফার্নিচারের সঙ্গে ঘরের পর্দা মেলাতে গেলে ফার্নিচারের রং অনুযায়ী পর্দার পেলমেট হতে হবে। ঘরের সঙ্গে পর্দা মানানসই হওয়ার প্রশ্নে দেয়াল ও পর্দার রঙের একটা সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। এতে করে পর্দাকে ঘরের অংশ বলে মনে হয়। দেয়াল যদি অফ হোয়াইট হয় তবে পর্দাতেও সেই রং লাগাতে পারেন।

আবার যদি দেখা যায়, ঘরের ফার্নিচারগুলোর রং হালকা। এদিকে দেয়ালের একটা অংশের রং নীল, সবুজ বা লাল তখন দেয়ালের সঙ্গে পর্দার রঙের সমন্বয় করা যেতে পারে।

ড্রয়িং, ডাইনিং সবজায়গাতেই রুমের সাইজ, ফার্নিচারের সাইজ, রং, দেয়াল ও আবহাওয়া বুঝে পর্দা ঝোলাতে হবে। শোবার ঘরের পর্দা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে হালকা রঙ বেছে নেবেন। এতে ঘরে একটা স্নিগ্ধতার আভাস থাকে।

Porda 3

পর্দার কাপড়: পর্দার কাপড় ভারী বা হালকা সব ধরনেরই হতে পারে। পর্দা পাতলা হলে বাতাস সহজে ঘরে প্রবেশ করতে পারে। আবার ভারী পর্দা সূর্যের তাপ ও শীতে ঠান্ডা বাতাস থেকে সুরক্ষা দেয়। দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য মজবুত ও পাকা রঙের সুতির কাপড়ই পর্দার জন্য উপযোগী। নেট বা অন্যান্য দামী পর্দার কাপড়ও করতে পারেন, তবে সেগুলো তুলনামূলকভাবে ব্যয়সাপেক্ষ। এগুলো ময়লাও হয় তাড়াতাড়ি, অথচ ঘন ঘন পরিষ্কার করলে বা ধুলে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে সুতির পর্দা সহজেই পরিষ্কার করা যায় এবং একবার ইস্ত্রী করলে সহজে ভাঁজ নষ্ট হয় না। আর টেকেও অনেক দিন।

স্ট্রাইপ বা চেক কাপড়ের পর্দা হলে কনট্রাস্ট ও ম্যাচিং দুটোর মিশেল থাকলেই বেশিভাল লাগবে। আমাদের এখানে আজকাল বাহারি প্রিন্টের পর্দার বেশ প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। অনেক বাড়ির গৃহিণীরা প্রিন্টের পর্দা বেশ পছন্দ করেন। এটা আমাদের গৃহস্থালি আয়োজনের একটি ঐতিহ্যও বটে। শিশুদের ঘরের ক্ষেত্রে কার্টুন কিংবা স্পোর্টস প্রিন্টের পর্দা হওয়া ভাল। ডাইনিং স্পেসে ভাল লাগবে বিভিন্ন ফলমূলের ছবি প্রিন্ট করা পর্দা। আবার বেডরুমে ফুল-লতা-পাতা পর্দা রাখলে তা মানসিক ক্লান্তি দূর করতে বেশ সাহায্য করে।

ঘরের পর্দা ঝোলানোর স্টাইলের ওপরও ঘরের সৌন্দর্য অনেকটা নির্ভর করে। আমাদের এখানে বিভিন্ন বাড়িতে ট্রাডিশন অনুযায়ী পর্দা ঝোলানোর ক্ষেত্রে রোলিং পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে। এ পদ্ধতিতে রোলারের সঙ্গে প্লাস্টিকের বা ধাতব রিংয়ের ব্যবহার ঘটে বেশি। প্লাস্টিকের রিং ফেটে যায় বলে তা এড়িয়ে যাওয়া ভাল। এ পদ্ধতিতে পর্দা ঝোলানোর ক্ষেত্রে রোলারটি কাঠের বদলে ইস্পাতের হলে তা অনেক দিন টেকসই হয় এবং পর্দা নাড়াতে সুবিধা হয় সবচেয়ে বেশি।

পর্দা ঝোলানোর আরেকটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে ক্লিপিং সিস্টেম। সাধারণত পর্দায় কুচি দেয়ার ব্যবস্থা থাকলে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে পর্দার কাপড় বেশি প্রয়োজন হয় বলে এটি মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য খানিকটা খরচের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তবে এই পদ্ধতিতে ঝোলানো পর্দা ঘরে খানিকটা বাড়তি সৌন্দর্য সংযোজন করে। যদিও পর্দার সঙ্গে সংযুক্ত ক্লিপটিতে জং ধরে কিংবা নষ্ট হয়ে অনেক বিপত্তি সৃষ্টি করতে পারে। ক্লিপিং পদ্ধতিতে পর্দা ঝোলানোর জন্য যে মাধ্যমটি ব্যবহার করা হয় তা হালকা স্টিলের বলে এ পদ্ধতিতে হালকা কাপড়ের পর্দা ব্যবহারে সুবিধা বেশি।

পর্দা ঝোলানোর আধুনিক পদ্ধতির নাম লুপিং সিস্টেম। বর্তমানে দরজা জানালার ডিফারেন্ট লুক আনতে এটি খুব জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত একটি কাপড়ের লুপ দ্বারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় বলে এটিকে লুপিং পদ্ধতি বলে। এ ক্ষেত্রে ঝোলানোর জন্য রট আয়রনের ডিজাইন করা রোলার ব্যবহার করা হয় সবচেয়ে বেশি। তবে কাঠের রোলারের ব্যবহারও কম নয়। সাধারণত খদ্দর জাতীয় মোটা কাপড়ের পর্দা ব্যবহার করতে চাইলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা ভাল।

এছাড়া থিমভিত্তিকও ঘরের সাজ করা যায়। মিলমিশ রেখে ঘর সাজানো এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে ঘরের সবকিছুতে কোনো একটা মিল থাকে। তা হতে পারে রঙে বা উপকরণে। একে বলে থিমভিত্তিক ঘর সাজানো। 

 ❒ থিম নানা রকম হতে পারে- দেশীয়, মডার্ন, ঐতিহ্যবাহী, বিদেশি। যেমন- দেশীয় থিমে ঘর সাজাতে চাইলে ঘরের ফার্নিচার, ফেব্রিক, শোপিস সব কিছুই হবে দেশীয় উপাদানে তৈরি। মডার্ন সাজে সব কিছু একটু আধুনিক আর জমকালো হবে। ঐতিহ্যবাহী সাজে থাকবে ঐতিহ্যের ছোঁয়া। বিদেশি সাজে ভিন্ন দেশের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে ঘরের সাজে। কেউ অ্যারাবিক থিমে ঘর সাজাতে চাইলে ফার্নিচার ও ঘরের অন্যান্য সাজ সে অনুযায়ী হবে। দেয়ালে ইসলামী পেইন্টিং বা ছবি থাকতে পারে। পর্দা, কার্পেট আর শোপিসও হবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একইভাবে আদিবাসী জাপানি, রাজস্থানিসহ বিভিন্ন থিমে ঘর সাজাতে পারেন। 

❒ আবার রং, ম্যাটারিয়াল, প্রডাক্ট, ফেব্রিকসহ একটা একক উপাদানও গৃহসজ্জার থিম হতে পারে। ধরা যাক কেউ থিমভিত্তিক বেডরুম সাজাবেন। প্রথমেই তাঁকে পর্দা নিতে হবে। তিনি যদি গোলাপি রঙের পর্দা নেন, তবে শোবার ঘরের অন্য জিনিসপত্রের কভারের রংও একই হবে বা এই রঙের ছোঁয়া থাকবে। আবার হতে পারে কাজনির্ভর। যেমন- পর্দায় যদি অ্যাপ্লিকের কাজ হয়ে থাকে, তবে অন্যান্য জিনিসেও একই কাজ থাকবে। অর্থাৎ সব কিছুতেই একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে মিল থাকবে। হতে পারে রঙের মিল, কাজের মিল অথবা নকশার।

 ❒ ঘরের থিম হিসেবে বেছে নিতে পারেন জামদানি, সিল্ক, শাড়ি, খাদিসহ যেকোন ফেব্রিক। এ ক্ষেত্রে পুরো ঘরের সাজে নির্দিষ্ট ফেব্রিকটিকে হাইলাইট করা হবে। পর্দা, বিছানার চাদর, কুশন ও সোফার কভার, টেবিল ম্যাট, রানার, দেয়াল ম্যাট- সব কিছুতেই থাকবে সে কাপড়ের ছোঁয়া। আর ঘরের অন্যান্য আসবাব হবে থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ঘরের থিম জামদানি বা নকশিকাঁথা হলে তার সঙ্গে দেশীয় ফার্নিচার রাখতে হবে। এখানে মডার্ন ফার্নিচার বেমানান লাগবে। আবার থিম সিল্ক, মসলিন বা নেট হলে মডার্ন ফার্নিচার ভালো মানায়।

 ❒ পেইন্টিং, ল্যাম্পশেড, মুখোশ, টেরাকোটাসহ বিভিন্ন শখের সামগ্রীও থিম হতে পারে। পেইন্টিংয়ের শখ থাকলে শুধু দেয়ালে না পর্দা, বিছানার চাদর, কুশন কভারেও স্ক্রিনপ্রিন্টের পেইন্ট থাকতে পারে। আবার হ্যান্ডপেইন্টও ব্যবহার করতে পারেন। 

 ❒ শিশুদের ঘরে কার্টুন চরিত্র থিম হিসেবে বেছে নিন। মিকিমাউস, সিন্ডারেলা, টম অ্যান্ড জেরিসহ শিশুর পছন্দের চরিত্র বেছে নিন। বিছানার চাদর, ওয়ালপেপার, পড়ার টেবিল সব কিছু সাজান থিম মাথায় রেখে। টিনএজদের ঘরের থিম হিসেবে বেছে নিতে পারেন গিটার, বাস্কেটবলসহ সন্তানের শখের যেকোনো কিছু।

Porda 2
কোথায় পাবেন পর্দা: অনেকে আছেন রেডিমেড পর্দা কিনে নেন তবে বেশির ভাগেরই পছন্দ নিজের পছন্দ আর রুচির সাথে মিল রেখে কাপড় কিনে পর্দা বানানো। এলিফ্যান্ট রোডে বিভিন্ন পর্দার কাপড়ের দোকান রয়েছে। সেখান থেকে কিনে নিতে পারেন পছন্দ অনুযায়ী নানা কাপড় গজ হিসেবে। বিদেশি কাপড়ের মধ্যে চীনা জ্যাকেট, সিনথেটিক জ্যাকেট, নেট কাপড়, সেরেয়ারস কাপড় বেশি চলছে। আর দেশি কাপড়ের মধ্যে খাদি, সুতি চেক কাপড় বেশি চলে। চায়নিজ বিভিন্ন ধরনের কাপড় পাবেন গজপ্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। নেট কাপড়ের দাম পড়বে গজপ্রতি ৪৫০-৬০০ টাকা। সেরেয়ারস কাপড় গজপ্রতি ৪০০-৬০০ টাকা। ইসলামপুরের পাইকারি কাপড়ের দোকান থেকেও কেনা যাবে পর্দার কাপড়। সেখানে কটন ছাড়াও পাওয়া যাবে দেশি কাপরের মধ্যে বাসিতা, বনিতা, সান কাপড় বেশি চলছে। বিদেশি কাপড়ের মধ্যে চায়নিজ সিলসিলা কাপড় বেশ চলে। দেশি কাপড় কেনা যাবে গজপ্রতি ৯০-১২০ টাকা, চায়নিজ সিলসিলা কাপড় গজপ্রতি ৩৮০-৫৩০ টাকা, চায়নিজ নেট গজপ্রতি ২২০-৩৮০ টাকা দরে। এসব জায়গা ছাড়াও নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, গুলশান-২, মৌচাক ও নবাবপুর মার্কেটে পাবেন হরেক রকম পর্দার কাপড়। আর রেডিমেড পর্দা কিনতে চাইলে চলে যেতে পারেন আড়ং, যাত্রা, পিরান, রং অথবা নিপুণে। সেখানে পাবেন নানা রকম সুতার কাজ, ব্লক প্রিন্ট আর টাইডাই করা পর্দা।

দিশেহারা মায়ের চোখ খুঁজে ফেরে চন্দ্রমুখীকে

eঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে যে নাজনীন আখতার শুয়ে আছেন, তিনি নিরন্তর ছুটে চলা কোনো সাংবাদিক নন। তিনি একজন সন্তানহারা মা। এই মা আজ বৃহস্পতিবার সকালেও সন্তানের কাছে চলে যাবেন বলে চিকিৎসা নিতে চাননি।
১৬ সেপ্টেম্বর ছয় বছর বয়সী চন্দ্রমুখী মারা যাওয়ার পর পাঁচতলা থেকে লাফ দিয়েছিলেন মা নাজনীন। তিনি দৈনিক জনকণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। চন্দ্রমুখী বেশ কিছুদিন ধরে যকৃতের রোগে ভুগছিল। মারা যাওয়ার আগে অচেতন অবস্থায় ঢাকা শিশু হাসপাতালে ছিল সে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবেদনবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুর রহমান বলেছেন, নাজনীন এখনো বিপদমুক্ত নন। তাঁর সারা শরীরে অসংখ্য আঘাত। মেরুদণ্ডের চার জায়গায়, পায়ের ওপরের দিকে, হাতের কবজিতে ফাটল। পাঁচতলা থেকে লাফ দেওয়ায় বাঁদিকের ফুসফুসে আঘাত লেগেছে নাজনীনের। ফুসফুসে একটা টিউব লাগানো হয়েছে। ফুসফুস অকার্যকর হওয়ার আশঙ্কা আছে এখনো।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের ৬ নম্বর শয্যায় শুয়েছিলেন নাজনীন। ভেঙে যাওয়া হাতটা ওপরের দিকে তোলা। সেবিকারা তাঁর পায়ে ক্যানোলা লাগাচ্ছিলেন। আজ কাছে যেতেই শোনা গেল গোঙানির শব্দ। নাজনীনের চোখের কোলটা আজও ভেজা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলেন, নাজনীন তাঁদের জানিয়েছেন সারা শরীরে তাঁর অসহ্য ব্যথা, রাতভর চোখে ঘুম আসে না।
চিকিৎসকেরা বলছেন, নাজনীনের মনের ক্ষত পৃথিবীর কোনো চিকিৎসায় সারিয়ে তোলা যাবে না। সে ক্ষত বড় গভীর। আজ সকালেও তিনি চিকিৎসকদের বলেছেন, ‘আমি তো চন্দ্রকে বলেছি, আমি ওর কাছে চলে যাব। আপনারা কেন আমার চিকিৎসা করছেন?’
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অবস্থা উন্নতির দিকে গেলে নাজনীনকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হবে। তবে তিনি আবার কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ বলা যাচ্ছে না।

নাজনীন যখন নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন, বাইরে তখন অপেক্ষায় স্বামী রকিবুল ইসলাম ও সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ীরা।

সংবাদকর্মীদের বাইরে যাঁরা নাজনীনকে চিনতেন না, চন্দ্রমুখীর মৃত্যুর পর তাঁরাও জেনেছেন মা নাজনীনকে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নাজনীনের কোলে চন্দ্রমুখীর ছবি দেখে কেঁদেছেন অনেকেই। তাঁরা সমব্যথী হয়েছেন সন্তানহারা মায়ের।

চন্দ্রমুখীর জন্মদিনে ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন নাজনীন। লিখেছিলেন, ‘শুভ জন্মদিন মা। তোমার কারণেই আমার ভুবন এত আলোয় ভরা…আমার প্রাণ।…সবার দোয়া নিয়ে তুমি ভালো থাকো মা…শতায়ু হও।’

চন্দ্রমুখী চলে গেছে। মা নাজনীনের জীবনের সব আলোটুকুও যেন সে নিয়ে গেছে। দিশেহারা মায়ের চোখ কেবলই খুঁজে ফেরে চন্দ্রমুখীকে।

দিশেহারা মায়ের চোখ খুঁজে ফেরে চন্দ্রমুখীকে

eঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে যে নাজনীন আখতার শুয়ে আছেন, তিনি নিরন্তর ছুটে চলা কোনো সাংবাদিক নন। তিনি একজন সন্তানহারা মা। এই মা আজ বৃহস্পতিবার সকালেও সন্তানের কাছে চলে যাবেন বলে চিকিৎসা নিতে চাননি।
১৬ সেপ্টেম্বর ছয় বছর বয়সী চন্দ্রমুখী মারা যাওয়ার পর পাঁচতলা থেকে লাফ দিয়েছিলেন মা নাজনীন। তিনি দৈনিক জনকণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। চন্দ্রমুখী বেশ কিছুদিন ধরে যকৃতের রোগে ভুগছিল। মারা যাওয়ার আগে অচেতন অবস্থায় ঢাকা শিশু হাসপাতালে ছিল সে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবেদনবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুর রহমান বলেছেন, নাজনীন এখনো বিপদমুক্ত নন। তাঁর সারা শরীরে অসংখ্য আঘাত। মেরুদণ্ডের চার জায়গায়, পায়ের ওপরের দিকে, হাতের কবজিতে ফাটল। পাঁচতলা থেকে লাফ দেওয়ায় বাঁদিকের ফুসফুসে আঘাত লেগেছে নাজনীনের। ফুসফুসে একটা টিউব লাগানো হয়েছে। ফুসফুস অকার্যকর হওয়ার আশঙ্কা আছে এখনো।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের ৬ নম্বর শয্যায় শুয়েছিলেন নাজনীন। ভেঙে যাওয়া হাতটা ওপরের দিকে তোলা। সেবিকারা তাঁর পায়ে ক্যানোলা লাগাচ্ছিলেন। আজ কাছে যেতেই শোনা গেল গোঙানির শব্দ। নাজনীনের চোখের কোলটা আজও ভেজা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলেন, নাজনীন তাঁদের জানিয়েছেন সারা শরীরে তাঁর অসহ্য ব্যথা, রাতভর চোখে ঘুম আসে না।
চিকিৎসকেরা বলছেন, নাজনীনের মনের ক্ষত পৃথিবীর কোনো চিকিৎসায় সারিয়ে তোলা যাবে না। সে ক্ষত বড় গভীর। আজ সকালেও তিনি চিকিৎসকদের বলেছেন, ‘আমি তো চন্দ্রকে বলেছি, আমি ওর কাছে চলে যাব। আপনারা কেন আমার চিকিৎসা করছেন?’
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অবস্থা উন্নতির দিকে গেলে নাজনীনকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হবে। তবে তিনি আবার কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ বলা যাচ্ছে না।

নাজনীন যখন নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন, বাইরে তখন অপেক্ষায় স্বামী রকিবুল ইসলাম ও সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ীরা।

সংবাদকর্মীদের বাইরে যাঁরা নাজনীনকে চিনতেন না, চন্দ্রমুখীর মৃত্যুর পর তাঁরাও জেনেছেন মা নাজনীনকে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নাজনীনের কোলে চন্দ্রমুখীর ছবি দেখে কেঁদেছেন অনেকেই। তাঁরা সমব্যথী হয়েছেন সন্তানহারা মায়ের।

চন্দ্রমুখীর জন্মদিনে ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন নাজনীন। লিখেছিলেন, ‘শুভ জন্মদিন মা। তোমার কারণেই আমার ভুবন এত আলোয় ভরা…আমার প্রাণ।…সবার দোয়া নিয়ে তুমি ভালো থাকো মা…শতায়ু হও।’

চন্দ্রমুখী চলে গেছে। মা নাজনীনের জীবনের সব আলোটুকুও যেন সে নিয়ে গেছে। দিশেহারা মায়ের চোখ কেবলই খুঁজে ফেরে চন্দ্রমুখীকে।

সিদ্দিকা কবীরের রেসিপি : দেশী-বিদেশী ঘরোয়া রান্না

লেখিকা: অধ্যাপিকা সিদ্দিকা কবীর

প্রকাশক: শিমূল প্রকাশন

মূল্য: ২৫০ টাকা

rokimg_0709_48983

আজকাল পুষ্টি সম্বন্ধে মধ্যবিত্ত সব ধরনের পরিবারের মধ্যে সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়। সরকারি বেসরকারি মাধ্যমে নানা বিষয়ে নানাভাবে জনসাধারণকে স্বাস্থ্য বিষয়ে যত্নবান হতে প্রচার করছে ও বিভিন্ন কার্যক্রম নেয়া হচ্ছে। পত্র-পত্রিকা ম্যাগাজিন, রেডিও, টেলিভিশন এমন কি স্কুলের পাটঠপুস্তকেও পুষ্টি বিষয় অন্তভূক্ত হচ্ছে। শৈশব থেকে স্বাস্থ্য, পুষ্টি বিষয়ে জানা অতি প্রয়োজন। আমরা জেনেছি মানুষের বয়স, শারীরিক অবস্থা ও লিঙ্গভেদে খাওয়া দাওয়ার চাহিদাও একরকম থাকে না। সবার আগে জানতে হবে পুষ্টিকর খাদ্য সম্বন্ধে। খাবার দাবার নিয়ে তাই বর্তমানে বহুল প্রচার প্রচাণনা লক্ষ্য করা যায়। দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, পাক্ষিক সব ধরনের পত্র-পত্রিকায় স্বাস্থ্য, খাবার দাবার ও রান্না বিষয়ক লেখালেখি থাকছে। ফলশ্রুতিতে আমরা পাচ্ছি নানা তথ্য ও রান্নার অগুণিতি রেসিপি। পিছিয়ে নেই রান্নার বই প্রকাশনাও। শহরে, গ্রামে সব বয়সের লোকই রেসিপি পড়ে রান্নায় আগ্রহী হচ্ছে। মহিলারাও তাদের ভাল ভাল রান্নার রেসিপি প্রকাশে এগিয়ে আসছেন। তাদের উৎসাহে আমি মনে করি এ পর্যন্ত আমরা রান্নার বিষয়ে কিছুটা উন্নতি করতে পেরেছি যার সাক্ষর “দেশী, বিদেশী ঘরোয়া রান্না” বইটি। দেশী, বিদেশী ঘরোয়া রান্না বইয়ে বাংলাদেশের দৈনন্দিন খাবারের রেসিপি অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। ডালভাত, শাকসবজি, মাছ-মাংস যা আমরা দৈনন্দিন খাবারের শহরে এবং গ্রামাঞ্চলে খেয়ে থাকি সে ধরনের খাবারের রেসিপি যথাযথভাবে লেখা হয়েছে। সেসাথে আছে ছোটদের টিফিন, কিশোর কিশোরীদের জন্য স্ন্যাকস, নানা পালা পার্বণ, উৎসব অনুষ্ঠান যেমন শবে-ই-বরাতের হালুয়া, রুটি, রমজান মাসে ইফতার, ঈদের সেমাই এসব ঐতিহ্যপূর্ণ খাবারও বাদ পড়েনি। আর লক্ষ্য রাখা হয়েছে পুষ্ঠি, সহজভাবে রান্না ও সময় সংক্ষিপ্ত করে রান্নার বিষয়টিও। আমি মনে করি শহরে গ্রামে সবাইকে উৎসাহিত করবে এ বইয়ের রেসিপি ব্যবহার করে রান্না করতে। আশা রাখছি তারা সফলকাম হবেন। পরিবারকে পুষ্টিকর খাবার দিয়ে সুস্থ রাখতেও খুশী করতে পারবেন।

'নেকাব' পরায় বহিস্কার হলো ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী

cনেকাবসহ বোরকা পরার কারণে এক ছাত্রীকে বহিষ্কার করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ১২ সেপ্টেম্বর ‘ড্রেসকোড ভাঙ্গার’ অভিযোগে তাকে বহিস্কার করা হয়। ভুক্তভোগি ওই ছাত্রীর নাম হাফসা ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে (স্নাতক) সপ্তম সেমিস্টারের (মোট ১২ সেমিস্টার) ছাত্রী। হাফসার ভাই আবদুল্লাহ মুহাম্মদের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের খবর প্রকাশ হলে এর প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। 

আবদুল্লাহ মুহাম্মদের ভাষ্যমতে, ”ও ভাল স্টুডেন্ট। বহিষ্কারের অন্য কোনো কারণ নেই। ওর একমাত্র অপরাধ ও বোরকা পরে।”

এর আগে ব্যাপারটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিভাবক ডেকে পাঠিয়েছিলো বলেও দাবি করেন তিনি।

আবদুল্লাহ আরো বলেন, ”আমাদের তরফ থেকে আমরা প্রতিবারই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও উনারা উনাদের কথাই বারবার বলেছেন। উনারা ড্রেসকোডের কথা বলেছেন। তবে আমাদের অনুরোধে উনারা কোন ছাড় দেওয়ার পক্ষপাতি ছিলেন না।”

কেউই ড্রেসকোড শতভাগ মানছে না বলেও মন্তব্য করেন আবদুল্লাহ।

d

”বোরকা পরা আরো কয়েকজন ছিলো হাফসার সাথে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাপে তারা একপর্যায়ে বোরকা ছাড়তে বাধ্য হয়। কিন্তু আমাদের তরফ থেকে হাফসার ওপর পূর্ণ সাপোর্ট ছিলো। ওই একমাত্র, যে তার মুখ দেখাবে না। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওর আইডিটা ব্লক করে দেওয়া হয়।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে ড্রেসকোড সরবরাহ করা হয়েছিলো হাফসার অভিভাবককে।

আবদুল্লাহর অভিযোগ, ”বিশ্ববিদ্যালয়টিতে টি-শার্ট এবং থ্রি কোয়ার্টার পরে আসে অনেক ছাত্রী। এটা কমন একটা ঘটনা। এ ব্যাপারটি ড্রেসকোডের বাইরে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় এক্ষেত্রে কিন্তু নিশ্চুপ।”

তিনি বলেন, ”ব্যাপারটি নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতে একটি রিট করার প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি আগামী রোববারের মধ্যে এই সংক্রান্ত ব্যাপারে রেজাল্ট পাবো।”

এর আগে গত ২৮ মে ‘ড্রেসকোড না মানা হলে কেন হাফসাকে বহিষ্কার করা হবে না’ এই মর্মে একটি কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পর থেকে।

e

ওই শোকজ লেটারে ৩ জুনের মধ্যে কারণ দর্শানোর কথা বলা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে হাফসা নেকাবসহ (মুখ ঢাকা) বোরকা পরা বন্ধ করেনি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়য়ের রেজিস্ট্রার ইশফাক এলাহী চৌধুরী স্বাক্ষরিত একটি দাপ্তরিক চিঠিতে হাফসাকে বহিষ্কার করে। সেখানে জানানো হয়, হাফসার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিকে অবগত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার ইসফাক ইলাহী চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।

এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এ তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকেই। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ফেসবুকে। কেউ ব্লগে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। 

আবু দারদা নামের একজন তার ফেসবুক মন্তব্যে বলেন, ”আমাদের এই মুসলিম প্রধান দেশে? এদের সাহসের বহর দেখলে অবাক হতে হয়! এতো সাহস এরা পায় কোথেকে?”

ইব্রাহিম খলিল নামে এক ছাত্র ফেসবুকে মন্তব্য করেন, ”ব্র্যাক ভার্সিটির রেজিস্ট্রারকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, কারণ উনি ২০০৮-০৯ এর দিকে আমাদের ভার্সিটির রেজিস্ট্রার ছিলেন। উনি এমনিতেই সেকুলারপন্থি, এইরকম ইসলাম বিদ্বেষী মানুষের নাম আবার- “ইশফাক এলাহী”। আমার মনে হয় না এই জাহেল ইসলামতো দূরের কথা, নিজের নামের অর্থ জানে কিনা সন্দেহ! ইংল্যান্ড, আমেরিকার মতো অমুসলিম অধ্যুষিত দেশে মুসলমান মেয়েরা নেকাব পরে, পরিপূর্ণভাবে হিজাব করে ডাক্তারী -ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারছে, কলেজ ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি নিতে পারছে, সেখানে নিরাপত্তার বিঘ্ন হচ্ছে না।আর এই মুসলিম অধ্যুষিত দেশের ইউনিভার্সিটিতে মুসলিম মেয়ে নেকাব দিয়ে মুখ ঢাকলে নাকি নিরাপত্তার ব্যাঘাত ঘটে!! কি আজিব ব্যাপার!”

সোহেল মাহমুদ

কৃত্রিম ফুসফুস উদ্ভাবন করলেন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী আয়েশা আরেফিন!

Ayesha arefin

আয়েশা আরেফিন, যার ডাক নাম টুম্পা বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকোতে ন্যানো-সায়েন্সের উপর ডক্টরেট করছেন। একই সাথে লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবেরটরিতে চলছে তাঁর গবেষণা। আয়েশা আরেফিন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

২০১১ সালে আমেরিকার আলামস ন্যাশনাল ল্যাবেরটরির গবেষক ক্রিস ডেটার বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংক্রান্ত এক কাজে এসে এরকমই এক সম্ভাবনাময় জিনবিজ্ঞানী আয়েশা আরেফিনের দেখা পান। ডেটার ও তাঁর সহকর্মী ল্যান্স গ্রিনের একান্ত সহযোগিতার ফলেই আয়েশা লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবেরটরিতে উচ্চতর পড়াশোনা ও গবেষণার সুযোগ পান। আয়েশা তার যুক্তরাষ্ট্রের জীবনের প্রথম দিন গুলোতে ডেটারের বাড়িতেই থাকতেন।

আয়েশা তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেন লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবেরটরির বায়ো-সিকিউরিটি বিভাগে। এরপরেই ঐ ল্যাবের ভারতীয় গবেষক প্রখ্যাত টক্সিকোলজিস্ট রাশি আইয়ার আয়েশাকে অপ্টোজেনিক্স সঙ্ক্রান্ত গবেষণা কাজের জন্য নিয়োগ দেন। অপ্টোজেনিকস হচ্ছে জিন-বিদ্যা ও প্রোটিন প্রকৌশল(ইঞ্জিনিয়ারিং) এর মাধ্যমে জীবন্ত টিস্যুর মাঝে ঘটতে থাকা বিভিন্ন স্নায়বিক কাজ (neuron activity) নিয়ন্ত্রণ করা। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও কৃত্রিম টিস্যু বা কলা তৈরি করা সম্ভব।

আয়েশা ও রাশি আয়ারের দলের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট বিষক্রিয়া, রোগ ও কৃত্রিম অংগ সংস্থাপনের জন্য সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন। তাঁরা একটি কৃত্রিম মানব ফুসফুস তৈরি করেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, Chronic Obstructive Pulmonary Disease এর সময় ফুসফুসের কোষগুলো কিভাবে কাজ করে তা জানা ও এর প্রতিষেধক উদ্ভাবন করা।। এটি হচ্ছে তৃতীয় সর্বোচ্চ ভয়াবহ রোগ যাতে আমেরিকার অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। আয়েশা একই সাথে বিভিন্ন স্নায়বিক ব্যাধি ও মস্তিষ্কে রক্ত-ক্ষরণ নিয়েও গবেষণা করছেন।

বাংলাদেশী বিজ্ঞানী আয়েশা আরেফিন টুম্পা ভবিষ্যতে দেশে ফিরে এসে মানুষের জন্য কাজ করতে আগ্রহী। দেশে থাকাকালীন সময়ে তিনি নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি এইচ আই ভি/এইডস নিয়ে পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও কাজ করেছেন। তাঁর ইচ্ছা দেশে এসে নিজের বাড়িতে একটি স্কুল খোলার। যেখানে যে কোন শিশু বিজ্ঞান ও গণিত পড়ার সুযোগ পাবে।

আয়েশা আন্তরিকভাবেই বিশ্বাস করেন ভাগ্য ও আশেপাশের কিছু মানুষের সহযোগিতা ছাড়া তাঁর এই সাফল্য আসতো না। তিনি বলেন, “আমি আমার গবেষণাগারের, এর মানুষগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি আনন্দিত যে ব্যতিক্রম কিছু করার সুযোগ পেয়েছি”। তিনি আরো বলেন লস আলামসে কর্মরত অন্য অনেক দেশের গবেষক বিশেষ করে মন্টেনিগ্রোর গবেষক Momo Vuyisich তাঁর জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

ঝালে স্বাদবদল

2013-06-17-17-10-42-51bf431257d67-18শাহজাহানি বিরিয়ানি
উপকরণ: বাসমতী চাল ৫০০ গ্রাম, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, খাসির রানের মাংস ১ কেজি, রসুন বাটা ১ চা-চামচ, টক দই ১ কাপ, জিরা বাটা ১ চা-চামচ, কেওড়া জল ৪ টেবিল চামচ, এলাচ-দারুচিনি-জয়ফল-জয়ত্রী-শাহিজিরা গুঁড়া ১ চা- চামচ, জাফরান সিকি চা-চামচ, ঘি আধা কাপ, চিনি ১ টেবিল চামচ, তেল আধা কাপ, লবণ স্বাদমতো, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, নারকেলে দুধ ২ কাপ, মাওয়া সিকি কাপ, কাজুবাদাম কুচি সিকি কাপ, শাহিজিরা আধা চা-চামচ, কাঠবাদাম কুচি সিকি কাপ, কাঁচা মরিচ ৬-৭টা, কিশমিশ সিকি কাপ, তরল দুধ আধা কাপ।
প্রণালি: চাল ২০ মিনিট ভিজিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। জাফরান ১ টেবিল চামচ কেওড়া ও আধা কাপ দুধ দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। চালের চার গুণ পানি হাঁড়িতে নিয়ে তাতে লবণ, শাহিজিরা, দারুচিনি ও এলাচ দিয়ে ভেজানো চাল দিয়ে ফুটিয়ে নিন। চাল সামান্য শক্ত থাকতে কাঁচা মরিচ দিয়ে নামিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
অন্য পাত্রে ২ টেবিল চামচ ঘি দিয়ে সব বাদাম ও কিশমিশ ভেজে নিন। মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে ১০ মিনিট টক দই দিয়ে মেখে রাখুন। হাঁড়িতে পেঁয়াজ সোনালি করে ভেজে অর্ধেক তুলে নিন। বাকি বেরেস্তার মধ্যে সব বাটা ও গুঁড়া মসলা দিয়ে কষান। এবার মাংস দিয়ে রান্না করুন। এতে নারকেলের দুধ দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। এবার হাঁড়িতে সামান্য ঘি দিয়ে অর্ধেক রান্না করা চাল বিছিয়ে তার ওপর রান্না মাংস দিন। বেরেস্তা চিনি দিয়ে মাখিয়ে ছড়িয়ে দিন। সঙ্গে বাদাম ও দুধে ভেজানো জাফরান ছিটিয়ে দিন। সবার ওপরে ঘি গলিয়ে ছড়িয়ে দিন। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য তাওয়ার ওপর ঢাকনা দিয়ে দমে বসান। খেয়াল রাখতে হবে, এ সময় ঢাকনা খোলা যাবে না। এবার নামিয়ে পরিবেশন পাত্রে কিছু ভাজা বাদাম, কিশমিশ ও বেরেস্তা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

পেশোয়ারি কড়াই গোশত
উপকরণ: গরুর মাংস ১ কেজি, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, টক দই আধা কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, আদা কুচি ১ চা-চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, শাহিজিরা (আস্ত) আধা চা-চামচ, তেল আধা কাপ, গোটা গোলমরিচ আধা চা-চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ, টমেটো কিউব ১ কাপ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ৫-৬টা, গরম মসলা ১ চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো।
প্রণালি: কড়াইতে তেল ও ঘি গরম করে শাহিজিরা ও গোলমরিচের ফোড়ন দিয়ে কাটা পেঁয়াজ দিয়ে নাড়ুন। পেঁয়াজ হালকা বাদামি হলে মাংস দিয়ে কষিয়ে নিন। এরপর হলুদ, লবণ, আদা, রসুন, ধনে গুঁড়া ও টক দই দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে দেড় কাপ পানি দিয়ে ঢেকে দিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে টমেটো কিউব দিয়ে ভালো করে নেড়ে দমে বসান, কাঁচা মরিচ দিন। টমেটো মজে তেল উঠে এলে ধনেপাতা কুচি ও আদাকুচি দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

ভাপে কোফতা কারি
কোফতার উপকরণ: মুরগির কিমা ২ কাপ, কাবাব মসলা ১ চা-চামচ, আদা বাটা ১ চা-চামচ, পাউরুটি ২ টুকরা, রসুন আধা চা-চামচ, গুঁড়ামরিচ ১ চা-চামচ, ধনে গুঁড়া আধা চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, জিরা গুঁড়া আধা চা-চামচ, ডিম ১টা। এসব উপকরণ একসঙ্গে মেখে রাখুন। পেঁয়াজ বেরেস্তা আধা কাপ, পুদিনাপাতা কুচি ৪ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ কুচি ২ টেবিল চামচ, কিশমিশ ৪ টেবিল চামচ।
গ্রেভির উপকরণ: সয়াবিন তেল আধা কাপ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ, পেঁয়াজ বাটা ৪ টেবিল চামচ, টক দই আধা কাপ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, টমেটো-চিলি সস ২ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, এলাচ ও দারুচিনি ৪টি করে, ধনে গুঁড়া ১ চা-চামচ, শুকনা মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, মরিচ গুঁড়া ২ চা-চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ, তরল দুধ দেড় কাপ, লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: মাখানো কিমার সঙ্গে পুদিনাপাতা, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ও কিশমিশ মিশিয়ে বলের মতো কোফতা বানিয়ে নিন। কড়াইতে পানি গরম করে ৫-৬টি করে কোফতা ওই পানিতে দিয়ে ঢেকে রাখুন ২ মিনিট। জমে রং পরিবর্তন হলে পানি থেকে তুলে ট্রেতে রাখুন। এভাবে সব কোফতায় ভাপ দিয়ে নিন।
দুধ ও বেরেস্তা বাদে গ্রেভির সব উপকরণের সঙ্গে ১ কাপ পানি দিয়ে ফেটিয়ে চুলায় বসান। ভালোভাবে কষানো হলে দুধ দিন। ফুটে উঠলে কোফতাগুলো দিয়ে ওপরে বেরেস্তা ভেঙে দিন। এবার মাঝারি আঁচে রান্না করুন। ঝোল কমে তেল ভেসে উঠলে নামিয়ে পরিবেশন করুন। গরু বা খাসি যেকোনো কিমা দিয়ে এটি বানানো যাবে। স্বাদের জন্য সামান্য তেঁতুলের মাড় ব্যবহার করতে পারেন।

নবাবি খিচুড়ি
উপকরণ: চিনিগুঁড়া চাল ৫০০ গ্রাম, মুগডাল ২৫০ গ্রাম, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, কাবাব মসলা ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ৭-৮টা, তেল সিকি কাপ, লবণ ১ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, তেজপাতা ৪-৫টা, পানি চাল ডালের দেড় গুণ, মটরশুঁটি ১ কাপ, আলু ১ কাপ, মসলাসহ আচার ২ টেবিল চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ।
মুরগি রান্নার উপকরণ: মুরগি (মাঝারি) ১টি, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, আদা বাটা দেড় চা-চামচ, রসুন বাটা ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া দেড় চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, কাবাব মসলা ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল ১ কাপের তিন ভাগ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ, পানি ১ কাপ, জিরা গুঁড়া ১ চা-চামচ, টক দই আধা কাপ।
প্রণালি: মুরগি ছোট ছোট টুকরা করে কেটে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে পেঁয়াজ বেরেস্তা বাদে মাংস রান্নার সব উপকরণ দিয়ে একসঙ্গে মেখে চুলায় বসান। ১ কাপ পানি দিয়ে রান্না করুন। সেদ্ধ হয়ে ঝোল কমে এলে নামিয়ে নিন। ডাল ভেজে ঠান্ডা করে চালের সঙ্গে মিশিয়ে ধুয়ে ১০ মিনিট ডুবো পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। মটরশুঁটি লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। আলু সেদ্ধ করে ছিলে অল্প তেলে সামান্য লবণ দিয়ে ভেজে নিন। যে হাঁড়িতে খিচুড়ি রান্না হবে তাতে তেল ও সব মসলা দিয়ে কষাতে হবে। মসলার ঘ্রাণ চলে গেলে চাল ও ডালের দেড় গুণ পানি দিয়ে ফুটিয়ে তাতে চাল-ডাল ঢেলে দিন। ঢাকনা দিন। চাল ও পানি সমান হলে রান্না করা মুরগি, মটরশুঁটি, আলু ও আচার একসঙ্গে রান্না খিচুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে নিন। ওপরে ঘি ও বেরেস্তা ছড়িয়ে ২০ মিনিট তাওয়ার ওপর দমে বসান। এ সময় ঢাকনা খোলা যাবে না। এবার নামিয়ে পরিবেশন করুন।