banner

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 135 বার পঠিত

নাজনীন সুলতানা, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম নারী ডেপুটি গভর্নর!

নাজনীন সুলতানাবাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে। ১৯৭২ থেকে ২০১২ সাল। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। একজন নারীর ডেপুটি গভর্নরের পদ পেতে এত সময় লেগে গেল। এ প্রাপ্তি নারী সমাজের সঙ্গে সঙ্গে আমার জন্যও আনন্দের ব্যাপার। যদিও বিষয়টি ভাবতে অবাক লাগে। আমাদের নারীরা এখনও পিছিয়ে আছেন। সফটওয়্যার তৈরি করাই আমার লক্ষ্য। এছাড়া দেশের জন্য আমার জায়গা থেকে যদি কোনও কাজ করতে পারি। সেটাও কম আনন্দের হবে না। এভাবেই প্রথম নারী ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
 
১৯৮০ সালের দিকে বাংলাদেশে মাত্র দুটি কম্পিউটার ছিল। একটি অ্যাটমিক এনার্জি সেন্টারে, দ্বিতীয়টি আদমজী জুট মিলে। শ্রমিকদের বেতনের কাজে ব্যবহƒত হত এ কম্পিউটার। বাংলাদেশ ব্যাংক আইবিএম ৩৭০ মেইন ফ্রেম কম্পিউটার কিনে সফটওয়্যার তৈরি করবে। এ পদে লোক নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। বিজ্ঞাপন দেখে নাজনীন সুলতানা চাকরির আবেদন করেন। চাকরি হয়ে গেল। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগে ১৯৮০ সালে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক অটোমেশনের লক্ষ্যে সফটওয়্যার তৈরি করেন।
 
এ প্রসঙ্গে নাজনীন সুলতানা বলেন, বাংলাদেশের কম্পিউটারের বিবর্তনে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যারে যে পরিবর্তন এসেছে তার সঙ্গে আমি জড়িত। এটা আমাদের সংস্কৃতির সংস্কার, তথ্য প্রযুক্তির সংস্কার। সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি নীতিমালা, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাজে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে অবদান রাখতে পেরেছি, তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে সবাইকে সমানভাবে সেবা দিতে পেরেছি এতেই আমার আনন্দ।
 
তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জার্মান সরকারের স্কলারশিপে আইসিটির ওপর ১৭ মাসের একটি উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরে জার্মানিতে যান। জার্মানিতে প্রশিক্ষণকালীন ১৯৮৫ সালে তিনি বাংলা ওয়ার্ড প্রসেসিংয়ের ওপর কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম বাংলা ওয়ার্ড প্রসেসিং তৈরি করলেও পরে তা আর জনসমক্ষে প্রকাশ হয়নি।
 
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নিজের তৈরি করা ৮০টি সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। আমার তত্ত্বাবধানে চালু করা হয় ই-টেন্ডার, ই-রিক্রুটমেন্ট, ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রানজিকশন মনিটরিং সিস্টেম, ক্যামেলস রেটিং ইত্যাদি সফটওয়্যার। এছাড়া ই-আর-পি, ব্যাংকিং, ডাটা ওয়্যার হাউস, অনলাইন সি আইবি, ন্যাশনাল প্রেমেন্ট সুইচ ইত্যাদি। নির্বাহী পরিচালক পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি ২০১১ সালের জুলাই মাসে এলপিআরে চলে যান। নভেম্বর মাসে পত্রিকার বিজ্ঞাপনে শর্তাবলী অনুযায়ী ডেপুটি গভর্নর পদে আবেদন করেন। অতঃপর পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতাবলে যোগদান করেন।
 
পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নাজনীন সুলতানা লেখালেখিও করেন। ১৯৯২ সালে নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মাধ্যমিক কম্পিউটার বিজ্ঞান’ নামে যৌথভাবে একটি বই লিখেন। বইটি পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অনুমোদিত। এছাড়া একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি ওষুধ, পথ্য সংগ্রহ, অর্থ, খবরাখবর সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা-শুশ্রƒষা করেন। এ সময়ের প্রতিদিনের ঘটনাবলী তিনি ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করতেন। তার লেখা সেই ডায়েরিটি মিজান পাবলিশার্স থেকে ২০০৭ সালে ‘একাত্তরের ডায়েরি’ নামে প্রকাশিত হয়। নাজনীন সুলতানা উদীচী শিল্পগোষ্ঠী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
 
১৯৬৯ সালে বদরুননেসা কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি করেন।
এ পথপরিক্রমায় পরিবারের সহযোগিতা কতটুকু পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মা-বাবা-স্বামী-শাশুড়ি সবার সহযোগিতায় আজ আমি এখানে পৌঁছতে পেরেছি। একজন নারীকে অনেক বাধা অতিক্রম করে এগোতে হয়। চাকরি করার পাশাপাশি স্বামী-সন্তান-সংসারও সামলিয়েছি। দু’সন্তানের মধ্যে ছেলে বুয়েট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে আমেরিকার কোয়ালকমে চাকরি করছে। মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত রয়েছে।
Facebook Comments