banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1665 বার পঠিত

 

মাতৃকথন-৬

ফারিনা মাহমুদ


ঘুম স্বল্পতা :
সদ্যজাত বাচ্চার পিছনে দিন রাত এক হয়ে যায়। বাচ্চা খাওয়ানো, ঘুম পড়ানো, কাঁথা পাল্টানো, কান্না সামলানো এই লুপের মধ্যে পড়ে যায় মা। আমি নিজেই মাথায় চিরুনি দিয়েছিলাম ১৯ দিন পরে, এমনও দিন গেছে যখন ২৪ ঘন্টায় একবার খাবার সময় পেয়েছিলাম! ভোজবাজীর মতো পাল্টে যাওয়া এই নিদ্রাহীন কান্ত জীবন ভীষণ প্রভাব ফেলে বাবা মায়ের উপরে, প্রভাব ফেলে সম্পর্কের উপরেও। মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে থাকে। বাবাদের জন্য অফিসে কাজে মন বসানো খুব কষ্টকর হয়ে যেতে পারে।

কি করবেন: ঘুমাবেন। সোজা হিসাব হচ্ছে যখনই একটু সুযোগ পাবেন, ঘুমিয়ে নেবেন। প্রথম ৬ সপ্তাহ বাচ্চার রুটিনের সাথে নিজে মানিয়ে নেয়া ছাড়া গতি নেই। বাচ্চা ঘুমালে এই করবো সেই করবো না করে নিজেও শুয়ে পড়বেন। হালকা তন্দ্রা বা বিশ্রামও আপনাকে অনেক ঝরঝরে করে তুলতে পারে। ২৪ ঘন্টায় কয়েকটা ছোট ন্যাপ নিলেও দেখবেন বাকি সময়টা অনেক ভালো কাটবে।

ক্ল্যাশিং প্যারেন্টিং স্টাইল:
ওই যে শুরুতে বললাম,বাবার বাড়ি থেকে বলেছে তেল ডলতে শ্বশুর বাড়ি বলছে না … এই ধরনের ক্ল্যাশ খুব কমন। এক একজনের বাচ্চা পালার তরিকা ও অভিজ্ঞতা এক এক রকম হয়। সবাই ভাবে সে ঠিক। এতে করে তৈরী হয় একটা সংঘাতময় অবস্থা। এর স্বীকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে মা। যেন মা ছাড়া দুনিয়ার সবাই সব জানে!

কি করনীয়: নিজেকে জানতে হবে কি করবো, কেন করবো। কনফিডেন্স রাখতে হবে নিজের উপরে। মানুষের বাচ্চা কোনো নতুন মডেলের গাড়ি না যে ম্যানুয়াল সাথে নিয়ে পৃথিবীতে আসবে। তবে হ্যা, সব গাড়ির কমন মেকানিজম থাকে। সেইটা জেনে রাখলে অন্যের কথা খুব বেশি আমল দেয়ার প্রয়োজন নেই যদি না যুক্তি যুক্ত মনে হয়। সবকিছুতে উদ্বিগ্ন হবেন না। তবে উদ্বিগ্ন কখন হতে হয় সেই বেসিক পয়েন্ট গুলো জানতে হবে।

একান্ত সময় থেকে বঞ্চিত:
বাচ্চা হবার আগে প্রতি সপ্তাহে দুজনে রিক্সার হুড ফেলে ঘুরতে যেতেন? রাত জেগে মুভি দেখতেন? আড্ডা দিতেন বন্ধুদের সাথে? আর এখন? নিজেদের বসে দুটো কথা বলার সময়ও নেই! আর কি কোনদিন জীবন স্বাভাবিক হবে?

কি করনীয়: জীবন স্বাভাবিক হবে আবার, তবে তার জন্য চেষ্টা করতে হবে দুজনকেই। বাচ্চার কাজগুলো দুজন মিলেই করুন। বাবা যখন বাচ্চার কাজ করতে চাচ্ছেন, মা তখন তাকে খবরদারি করা থেকে বিরত থাকুন, তাকে বুঝিয়ে দেখিয়ে দিন কি করলে ভালো হয়। তিনি একবারে না পারলেই গলা চড়াবেন না। আর একেবারে আপনার মতো করেই তাকে পারতে হবে এমন কথা নেই। একটু উনিশ বিশ হলে দুনিয়া উল্টে যায় না। ধৈর্য রাখুন, বাচ্চাকে একটা রুটিনে আনতে পারলে সব ই সম্ভব হবে। নিজেরা নিজেদের জন্য সময় বের করুন। সমঝোতা শক্ত করুন। একে অপরের পাশে থাকুন। একটু একটু করে প্রিয় জিনিসগুলো ফিরিয়ে আনুন।

এই চাল্যেঞ্জ গুলো প্রথম ৬ সপ্তাহ যদি ভালো মতো হ্যান্ডেল করতে পারেন, বিশ্বাস রাখেন,৬ সপ্তাহের পর থেকে পরিস্থিতি অনেক অনেক ভালো হবে!
ফিরে আসবো পরের পর্বে, নবজাতকের যত্ন নিয়ে!

চলবে..

পর্ব ৫

Facebook Comments