All posts by Oporajita

 

এইচপিভি টিকা বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত ও নিরাপদ: ওজিএসবি

 

জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের বিরুদ্ধে চলমান এইচপিভি টিকা বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত, নিরাপদ ও কার্যকর বলে জানিয়েছে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)।

সংগঠনটি বলছে, এই টিকার সঙ্গে বন্ধ্যাত্ব, গর্ভধারণ ক্ষমতা নষ্ট বা প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি এই টিকা নেওয়ার ফলে গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন কোনো জটিলতা হয় না বরং এই টিকা ক্যানসার থেকে জরায়ুমুখ সুরক্ষিত রাখে।

সোমবার (১১ নভেম্বর) ওজিএসবির সভাপতি অধ্যাপক ডা. ফারহানা দেওয়ান ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ডা. সালমা রউফ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকারের উদ্যোগে দেশে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন গত ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা বিভাগ ছাড়া অবশিষ্ট সাতটি বিভাগে শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৫ লক্ষাধিক এবং ঢাকা বিভাগ বহির্ভূত অবশিষ্ট সাতটি বিভাগে প্রায় ৪২ লাখ কিশোরীকে ১ ডোজ এইচপিভি টিকা সফলভাবে দেওয়া হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৭০ শতাংশ।

টিকা প্রসঙ্গে বলা হয়, এই বাইভ্যালেন্ট এইচপিভি টিকা বেলজিয়ামে তৈরি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত। এইচপিভি টিকা বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত নিরাপদ ও কার্যকর। মনে রাখবেন এই টিকার সঙ্গে বন্ধ্যাত্ব, গর্ভধারণ ক্ষমতা নষ্ট বা প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই, এই টিকা নেওয়ার ফলে গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন কোনো জটিলতা হয় না। এই টিকা ক্যানসার থেকে জরায়ুমুখ সুরক্ষিত রাখে। সারা বিশ্বে ১৪৩টি দেশ এই টিকাদান কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করছে ও তার মধ্যে ১৭টি দেশই মুসলিম দেশ।

এই অবস্থায় টিকাদান কার্যক্রম সম্পর্কিত ভুল ও অপপ্রচার রোধ এবং অভিভাবক কিশোরীদের উদ্বুদ্ধ করে সার্বিক কার্যক্রমকে সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধও জানায় ওজিএসবি।

আরও বলা হয়, নারীদের ক্যানসারজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ জরায়ুমুখ ক্যানসার। নারীরা যেসব ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তার মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যানসার বৈশ্বিকভাবে চতুর্থ সর্বোচ্চ এবং বাংলাদেশি নারীদের ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার জন নারী জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার জন মৃত্যুবরণ করে থাকেন, যার প্রায় ৯৪ শতাংশ মৃত্যুই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশে ঘটে থাকে।

দেশে জরায়ুমুখ ক্যানসারের প্রকোপ ভয়াবহ আকারে বাড়ছে উল্লেখ করে ওজিএসবি জানায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮ হাজার ২৬৮ জন নারী জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং তার মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ৯৭১ জন নারী মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী নারীদের ক্যানসারজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে জরায়ুমুখ ক্যানসার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। জরায়ুমুখ ক্যানসার এইচপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ দ্বারা হয়ে থাকে। সাধারণত এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হওয়া থেকে জরায়ুমুখ ক্যানসার লক্ষণ প্রকাশ পেতে ১৫-২০ বছর সময় লাগে। এজন্য এই রোগকে নীরব ঘাতক বলা হয়।

আরও বলা হয়, আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই প্রায় শেষ পর্যায়ে শনাক্ত হন, যখন রোগ থেকে সেরে ওঠা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে। একমাত্র এইচপিভি টিকা এই ক্যানসার প্রতিরোধে প্রায় শতভাগ সফল। সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় কিশোরীদের নির্দিষ্ট বয়সে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ সুপারিশ অনুযায়ী একডোজ এইচপিভি টিকা দিলে এই ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

 

পারিবারিক সম্পর্কঃ ভালো সম্পর্ক গড়ার ১০টি উপায়

 

পারিবারিক সম্পর্ক  আমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরিবারে ভালো সম্পর্ক, একে অপরের প্রতি ভালোবাসা এবং সমর্থন একজন ব্যক্তির মানসিক শান্তি এবং সুখী জীবনের মূল চাবিকাঠি হতে পারে। তবে, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো রাখা সবসময় সহজ নয়। একে অপরের সঙ্গে সঠিকভাবে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং সমস্যার সমাধান করা অনেক সময় জটিল হতে পারে।

আসুন জেনে নেই এমন কিছু সহজ এবং কার্যকর উপায় যার মাধ্যমে আপনি আপনার পরিবারে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী এবং ভালো রাখতে পারেন। এখানে এমন ১০টি উপায় তুলে ধরা হলো যা পরিবারে ভালো সম্পর্ক গড়তে সহায়ক হতে পারে-

১. যোগাযোগ রাখুন
পরিবারের সদস্যদের সাথে মন খুলে কথা বলা, নিজেদের অনুভূতি ও ভাবনা শেয়ার করা সম্পর্কের গুণগত মান উন্নত করে। যখন আপনি অন্যদের অনুভূতিগুলি শুনবেন এবং নিজের অনুভূতিও সৎভাবে প্রকাশ করবেন, তখন তা সম্পর্ককে আরও গভীর এবং মধুর করে তোলে।

টিপ: চেষ্টা করুন দিনশেষে পরিবারের সদস্যদের সাথে সেদিনের অভিজ্ঞতা এবং অনুভূতি শেয়ার করতে। এটি সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস এবং একে অপরের প্রতি সম্মান বাড়াতে সাহায্য করবে।

২. একান্ত সময় কাটান
দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ধরে রাখতে, মাঝে মাঝে একে অপরের জন্য সময় বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দাম্পত্য জীবন, মা-বাবা এবং সন্তানের সম্পর্ক বা ভাই-বোনের সম্পর্ক—সবক্ষেত্রেই একে অপরের জন্য সময় বের করা প্রয়োজন। একে অপরের সঙ্গে বিনোদনমূলক বা আগ্রহের বিষয় নিয়ে সময় কাটানোর মাধ্যমে সম্পর্ক মধুর এবং শক্তিশালী হয়।

টিপ: সপ্তাহে অন্তত একদিন পরিবারের সকল সদস্যের সঙ্গে বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করুন, সেক্ষেত্রে ফোন বা অন্যান্য গ্যাজেট থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করুন।

৩. প্রত্যেক ব্যাপারে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করুন 
ভালো সম্পর্ক গড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো ছোট ছোট বিষয়েও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। পরিবারের সদস্যরা মাঝে মাঝে আপনার উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন, তবে তাদের প্রতি আপনার সম্মান এবং শ্রদ্ধা অবশ্যই রাখতে হবে। কিছু ছোট বাক্য যেমন “ধন্যবাদ”, “দুঃখিত”, “দয়া করে” ইত্যাদি খুব বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

টিপ: পরিবারের সদস্যদের প্রতি আপনার আচরণে মমতা এবং সম্মান প্রদর্শন করুন, এটি সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে।

৪. একসাথে সমস্যা সমাধান করুন
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যে কোনো বিরোধ বা সমস্যা আসতেই পারে। তবে, একটি ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে সমস্যা গুলি একসাথে সমাধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একে অপরের প্রতি খোলামেলা মনোভাব এবং সহানুভূতি পোষণ করলে, তা সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে।

টিপ: যদি কোনো সমস্যা বা বিতর্ক তৈরি হয়, তবে তা সমাধান করার জন্য শান্ত এবং সঠিকভাবে আলোচনা করুন। আক্রমণাত্মক বা রেগে গিয়ে কথা না বলাই ভালো।

৫. একাধিক দায়িত্ব ভাগ করুন
পরিবারের মধ্যে দায়িত্ব ভাগাভাগি করা সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করে। যদি ঘরের কাজ, সন্তান লালন-পালন, অর্থনৈতিক বা অন্য কোনো দায়িত্ব ভাগ করা যায়, তবে তা পারিবারিক বন্ধন আরও শক্তিশালী করবে। একে অপরকে সাহায্য করা এবং সহযোগিতা প্রদর্শন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটায়।

টিপ: পরিবারের সকল সদস্যকে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিন এবং সেটা তারা যেন সঠিকভাবে পালন করে, সেজন্য একটি সিস্টেম তৈরি করুন।

৬. আশাবাদী মনোভাব রাখুন
বিপদ বা দুশ্চিন্তার মুহূর্তে আশাবাদী মনোভাব ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশাবাদী মনোভাব রাখলে, আপনি পরিবারের সদস্যদেরও উৎসাহিত করতে পারবেন। এর মাধ্যমে তারা মনে করবে যে, কোনো সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ থাকলেও একে অপরকে সমর্থন করতে হবে এবং একটি সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব।

টিপ: সংকটময় সময়ে পরিবারের সদস্যদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের উৎসাহিত করুন এবং একে অপরকে আশাবাদী হতে সাহায্য করুন।

৭. সহানুভূতির সাথে আচরণ করুন
সহানুভূতির মাধ্যমে আপনি অন্যদের অনুভূতিতে মনোযোগ দিতে পারেন এবং তাদের মনের অবস্থা বুঝতে পারবেন। যখন পরিবারের সদস্যরা খারাপ সময়ের মধ্যে থাকে, তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সহানুভূতির সাথে কথা বলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

টিপ: যখন কেউ আপনার কাছে দুঃখ, কষ্ট বা হতাশা শেয়ার করবে, তখন তার অনুভূতির প্রতি সহানুভূতি দেখান এবং তাকে ভালো লাগানোর চেষ্টা করুন।

৮. ঐক্য এবং সমর্থন প্রদান করুন
একটি পরিবারে একতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারে সবাই একে অপরকে সমর্থন করবে এবং একটি দল হিসেবে কাজ করবে—এটা পরিবারের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে। একে অপরকে সমর্থন দেওয়া এবং রক্ষা করা পারিবারিক বন্ধনকে মজবুত করে।

টিপ: যদি পরিবারের কোনো সদস্য সমস্যার মধ্যে থাকে, তবে তাকে সাহস দিন এবং তাকে মনে করিয়ে দিন যে সে একা নয়, পরিবারের সবাই তার পাশে আছেন।

৯. পরস্পরকে বুঝুন
অন্তরঙ্গ সম্পর্কের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেক সদস্যের ব্যক্তিগত জায়গাও গুরুত্বপূর্ণ। কখনো কখনো একে অপরকে কিছু সময়ের জন্য একা থাকতে দেওয়াও প্রয়োজন। এটি সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।

টিপ: পরিবারে ব্যক্তিগত সময় কাটানোর সুযোগ দিন। এটা সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী এবং সুন্দর করবে।

১০. ধৈর্য্য রাখুন
অনেক সময় সম্পর্কের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে, তবে ধৈর্য্য এবং শান্ত থাকার মাধ্যমে সবকিছু সমাধান করা সম্ভব। পরিবারের সদস্যদের প্রতি ধৈর্য্য এবং মমতা প্রদর্শন করলে সম্পর্ক শক্তিশালী হয়।

টিপ: প্রয়োজনে একটু বেশি সময়ের জন্য বিরতি নিয়ে শান্ত হয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করুন এবং তারপর আবার আলোচনা করুন।

পরিবার হলো আমাদের জীবনের ভিত্তি, এবং ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আমাদের নিজেদের মধ্যে খোলামেলা, সহানুভূতি, এবং শ্রদ্ধাশীল আচরণ বজায় রাখতে হবে। নিজেকে ভালো রাখার জন্যই পরিবারের সঙ্গে আরও মজবুত এবং আনন্দদায়ক সম্পর্ক গড়ে তুলার জন্য সচেতন থাকতে হবে।

 

উদ্যোক্তার কাতারে গারো নারীরা

 

টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলের পার্বত্য এলাকা গারো নারীদের জীবনাচরণে এক অনন্য চিত্র তুলে ধরে। পাহাড় আর বনাঞ্চলের মধ্যে গারো সমাজের বিশেষত্ব শুধু তাদের ঐতিহ্যিক চাষাবাদে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাদের মাতৃতান্ত্রিক পরিবারব্যবস্থা, যা সম্পত্তি এবং বংশ পঞ্জি মা-পিতার বদলে শুধুমাত্র মায়ের দিক থেকেই অর্জিত হয়, সেই বিষয়টিও সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। গারো সমাজে নারীরা পরিবার ও সমাজে এক বিশেষ মর্যাদা ও সম্মান লাভ করে থাকে, যা তাদের স্বাধীনতা ও আত্মবিশ্বাসকে আরো দৃঢ় করে।

গারো নারীদের জীবনাচরণ একটি উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে পুরুষরা গৃহকর্তা হিসেবে নয়, বরং শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করে এবং ঘরের কাজকর্ম ও সন্তানদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করে। এই পরম্পরা, যা শতাব্দীকাল ধরে চলে আসছে, গারো সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে আধুনিক প্রযুক্তি এবং সমাজে পরিবর্তনের ধারায়, গারো নারীরা শুধু কৃষি কাজেই নয়, বরং ব্যবসাবাণিজ্যে নিজেদের সাফল্যের কৃতিত্ব তুলে ধরছে।

মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের মধ্যে নারীদের আর্থিক অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি সমাজে নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা করছে। চাষাবাদে অভ্যস্ত গারো নারীরা এখন নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা হিসেবে উঠছেন, যেখানে ব্যবসা ও বাণিজ্য তাদের নতুন জীবনের পথপ্রদর্শক হয়ে উঠেছে।

এই পরিবর্তন গারো সমাজের ইতিহাসে একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। এখন গারো নারীরা আধুনিক সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসায়িক ও পেশাগত ক্ষেত্রে নিজেদের পরিচিতি তৈরি করছে। তাদের উদ্যোক্তা সত্ত্বা শুধু পরিবারের মধ্যে নয়, বৃহত্তর সমাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

তাদের জীবনযাত্রায় আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্যোগের মিশেলে গারো নারী সমাজ আরো শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী হয়ে উঠছে। এই পরিবর্তনের ধারায়, প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কারের সঙ্গে নতুন সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে গারো নারীরা। তাদের আত্মবিশ্বাস, সংগ্রাম এবং কঠোর পরিশ্রম তাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, এবং তারা আজ শুধুমাত্র নিজেদের পরিবারের নয়, বরং সমাজেরও শক্তিশালী চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে।

গারো সমাজে নারী শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও নতুন পেশায় নিয়োজিত নারীরা নিজেদের প্রতিভা এবং দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। সরকারের সহায়তায় এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে তারা আরো অধিক সাফল্য অর্জন করছে। তবে তাদের সামাজিক অবস্থান আজও সম্মানজনক ও শক্তিশালী, এবং তারা নিজেদের উদ্যোগে সমাজে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

এমন এক সময় যখন আধুনিকতার ছোঁয়া পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে, গারো নারী সমাজ তার পুরনো ঐতিহ্য ও সংস্কার ধরে রেখে, আধুনিকতার পথে পা বাড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের এই অবিচল পথচলা সত্যিই প্রশংসনীয় এবং তাদের অদম্য উদ্যোগ ভবিষ্যতে নতুন এক সম্ভাবনার সূচনা করবে।

 

জরিপে এগিয়ে গেলেন কমলা, ট্রাম্পের জন্য দুঃসংবাদ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত আইওয়া অঙ্গরাজ্যে এগিয়ে গেছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। আইওয়ার ডেজ মইনেস রেজিস্ট্রার/মিডিয়াকম আইওয়ার পোলের প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, ট্রাম্পের থেকে ৩ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন কমলা। যদিও সেপ্টেম্বরের জরিপে এই রাজ্যেই ৪ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প।

গত ২৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পরিচালিত এই জরিপে মোট ৮০৮ জন ভোটার অংশ নেন।

গতকাল শনিবার জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। জরিপে কমলা ৪৭ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪৪ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন। এর পেছনে সেখানকার নারী, বিশেষ করে বয়স্ক ও রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ নারী ভোটাররা ভূমিকা রেখেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্প ২০১৬ সালে আইওয়ায় ৯ শতাংশের বেশি পয়েন্ট ব্যবধানে এবং ২০২০ সালে ৮ পয়েন্ট ব্যবধানে জিতেছিলেন।

শেষ মুহূর্তে জরিপে এগিয়ে যাওয়া কমলার জন্য সুখবর হলেও তা নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে। তবে ১ ও ২ নভেম্বর পরিচালিত অন্য একটি জরিপে উল্টো চিত্র পাওয়া গেছে। এমারসন কলেজ পোলিং/রিয়ালক্লিয়ারডিফেন্স এই জরিপ পরিচালনা করে। এই জরিপে ট্রাম্প কমলার চেয়ে ১০ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।

আইওয়ায় ২০১৬ ও ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সহজ জয় পেয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

 

রাজধানীতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ৫০ শতাংশ শিশু গৃহকর্মী

 

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে পেশকৃত অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) পরিচালিত ‘সিচুয়েশন অব চাইল্ড ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স ইন ঢাকা সিটি’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের প্রায় ৫০ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়। আর ৩১ দশমিক ৪৫ শতাংশ গৃহকর্মী অত্যধিক কাজের চাপে থাকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ১২টি থানা এলাকায় এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। ৩৫২ জন গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশু এই জরিপে অংশ নেয়।

জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন এএসডির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইউ কে এম ফারহানা সুলতানা। নির্যাতনের শিকার শিশুদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ শারীরিক আঘাতের শিকার। মারধরের শিকার ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ, বকাঝকার শিকার ২০ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং যৌন নির্যাতনের শিকার ১ দশমিক ৭ শতাংশ।

এএসডির নির্বাহী কমিটির সভাপতি ড. আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. তরিকুল আলম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপ–পরিচালক ও শিশু অধিকার কমিটির সদস্য সচিব এম. রবিউল ইসলাম, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (স্বাস্থ্য) ডা. বিশ্বজিৎ রায়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মোছা. সালমা আক্তার, শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক এস এম এনামুল হক, এএসডির নির্বাহী পরিচালক এম এ করিম, স্ক্যান এর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল প্রমুখ।

আলোচনায় অংশ নিয়ে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. তরিকুল আলম বলেন, গৃহকর্মী শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। অনেক আগে থেকে শিশু শ্রমিক নির্যাতন চলে আসছে। তবে এটা সত্য, আগের তুলনায় শিশু গৃহকর্মী নির্যাতন অনেকাংশে কমে আসছে। আমরা চাই, এটা শতভাগ বন্ধ হোক।

শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ যে ৪৩টি কাজ চিহ্নিত করা আছে, তার সঙ্গে গৃহকর্মকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।

মানবাধিকার কমিশনের এম. রবিউল ইসলাম বলেন, গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের সুরক্ষায় মানবাধিকার সব সময় সক্রিয় আছে। শিশু নির্যাতনের ঘটনা বন্ধে সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে কাজ চলছে। নীতিমালা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি আইন প্রণয়নে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে আইনের খসড়া প্রণয়ন হয়েছে। দ্রুতই তা চূড়ান্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জরিপ প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের সুরক্ষায় আইন ও নীতিমালা সংশোধনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। গৃহকাজকে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিদ্যমান নীতিমালা ও আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির করতে হবে। নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আরও সক্রিয় হতে হবে। নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার শিশুদের স্বাস্থ্য ও আইনি সেবা প্রদান কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আলোচকেরা বলেন, বিগত সরকার নীতিমালা প্রণয়ন করলেও সেই নীতিমালা গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের (গৃহকর্মী) সুরক্ষা দিতে পারছে না। তাঁরা দ্রুত গৃহকর্মী সুরক্ষা আইন পাসের তাগিদ দেন। একই সঙ্গে গৃহকর্মকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।

 

কোনো কাজই সময়মতো গুছিয়ে করতে না পারলে কী করবেন

প্রোক্রাস্টিনেশন বা কার্য সম্পাদনে দেরি করা আমাদের জীবনে একটি সাধারণ সমস্যা। অনেকেই লক্ষ্য করেন যে তারা গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো পরে রাখেন, যার ফলে চাপ ও উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়। এই অভ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু কার্যকরী উপায় নিচে আলোচনা করা হলো।

১. লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

প্রথমে আপনি যে কাজটি করতে চান, তার একটি স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। লক্ষ্য যত সুনির্দিষ্ট হবে, তত সহজে আপনি কাজটি শুরু করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, “আমি একটি রিপোর্ট লিখব” বলার পরিবর্তে “আমি আগামী বুধবারের মধ্যে রিপোর্টের প্রথম খসড়া শেষ করব” বলুন।

২. কাজগুলো ভাগ করুন

বৃহৎ কাজগুলোকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করুন। প্রতিটি ছোট কাজ সম্পন্ন করা অনেক সহজ হয় এবং এর ফলে আপনি কাজের প্রতি উৎসাহিত হবেন। উদাহরণস্বরূপ, একটি গবেষণা প্রবন্ধ লেখার জন্য তা অধ্যায় অনুযায়ী ভাগ করুন।

৩. সময় নির্ধারণ করুন

আপনার কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। এটি হতে পারে একটি সময়সীমা বা একটি টাইম ব্লক। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করলে আপনার মনোযোগ বাড়বে।

৪. পরিবেশ সাজান

আপনার কাজের পরিবেশটি পরিচ্ছন্ন এবং সুগঠিত রাখুন। এলোমেলো পরিবেশ আপনার মনোযোগকে বিঘ্নিত করতে পারে। একটি শান্ত ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে কাজ করলে আপনার ফোকাস বাড়বে।

৫. বিরতি নিন

কাজ করতে করতে মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার মনকে সতেজ করবে এবং নতুন উদ্যমে কাজ করার সুযোগ দেবে। ২৫-৩০ মিনিট কাজ করার পর ৫-১০ মিনিটের বিরতি নিন।

৬. প্রযুক্তি ব্যবহার করুন

প্রযুক্তি আপনার প্রোক্রাস্টিনেশন কাটাতে সাহায্য করতে পারে। বিভিন্ন অ্যাপস যেমন ‘টম্যাটো টিমার’ বা ‘টাস্ক ম্যানেজার’ ব্যবহার করে আপনার কাজের তালিকা তৈরি করুন এবং সময় নির্ধারণ করুন।

৭. স্বয়ংক্রিয় প্রেরণা

নিজেকে উৎসাহিত রাখতে কিছু স্বয়ংক্রিয় প্রেরণা ব্যবহার করুন। একটি চেকলিস্ট তৈরি করুন এবং প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করার পর সেটি চেক করুন। এটি আপনাকে সাফল্যের অনুভূতি দেবে।

৮. ইতিবাচক চিন্তা করুন

নিজেকে বারবার স্মরণ করিয়ে দিন যে কাজটি শেষ হলে আপনার কাছে কতটা আনন্দ ও সাফল্য আসবে। ইতিবাচক চিন্তা আপনাকে কাজের প্রতি আগ্রহী করবে।

উপসংহার

প্রোক্রাস্টিনেশন কাটানো একটি অভ্যাস যা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। উপরোক্ত উপায়গুলো চেষ্টা করে দেখুন এবং ধীরে ধীরে আপনার কার্যসম্পাদনে পরিবর্তন আনুন। মনে রাখবেন, শুরু করা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। সফলতা আপনার হাতের মুঠোয়!

 

কোনো উদযাপন করতে চান না সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হান কাং

 

দক্ষিণ কোরিয়ার নোবেল বিজয়ী লেখক হান কাং জানান, তিনি তাঁর পুরস্কার উদযাপন বা সংবাদ সম্মেলন করতে আগ্রহী নন। এই সিদ্ধান্তের পেছনে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের মতো দুঃখজনক বিশ্ব পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন।

কোরিয়া টাইমসে হান কাং বলেন,

“যখন বিশ্বে যুদ্ধ বাড়ছে এবং অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন নোবেল পুরস্কার উদযাপনের এটা সঠিক সময় নয়।”

৫৩ বছর বয়সী এই লেখক বৃহস্পতিবার জানতে পারেন, তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম লেখক হিসেবে স্বীকৃত হয়েছেন, এবং তিনি তাঁর বাবা হান সিউংয়ের মাধ্যমে জানান যে, এই মুহূর্তে উদযাপনের কোনো ইচ্ছা নেই।

৮৫ বছর বয়সী হান সিউং-ওন শুক্রবার একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাঁর মেয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে চান না। তিনি আরও জানান, তিনি তাঁর মেয়ের জন্য একটি উদযাপনের আয়োজন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু হান কাং সেই উদযাপন থেকেও বিরত থাকার অনুরোধ করেন।

হান কাং কোরিয়া টাইমসে বলেন,

“আমরা যখন পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া এই দুঃখজনক ঘটনাগুলো দেখছি, তখন দয়া করে কোনো উদযাপন করবেন না। সুইডিশ একাডেমি আমাকে আনন্দ দেওয়ার জন্য এই পুরস্কার দেয়নি।”

তবে, তিনি জানিয়েছেন যে, পরবর্তীতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য তাঁকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে তিনি স্টকহোমে পুরস্কার গ্রহণ করতে যাবেন কিনা, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেননি।

হান কাং তাঁর ‘সাক্ষী-সাহিত্য’ রচনার জন্য পরিচিত, যেখানে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসের দুঃখজনক ও হিংসাত্মক ঘটনাবলী নিয়ে কাজ করেন। তাঁর বাবা কোরিয়া টাইমসে বলেন, “তাঁর মেয়ে কোরিয়ায় লেখক হিসেবে বিশ্বব্যাপী সচেতনতার দিকে ক্রমাগত অগ্রসর হচ্ছে।”

হান কাং জানান, তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়ে বিস্মিত ও সম্মানিত। নোবেল ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেছেন, কোরিয়ার সময় সন্ধ্যায় তিনি পুরস্কারের খবর পান এবং তারপর এক কাপ চা নিয়ে তার ছেলে সাথে কিছুটা উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

 

শনিবার শপথ নেবেন দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী অতীশি

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এএপি জানায়, আগামী ২১ সেপ্টেম্বর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন অতীশি। পরে তার মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরাও শপথ নেবেন।

দীর্ঘ ছয় মাস কারাভোগ শেষে কারামুক্তির মাত্র দুদিন পর মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। স্থানীয় সময় রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দিল্লিতে আয়োজিত দলীয় এক অনুষ্ঠানে কেজরিওয়াল পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

এরপর মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তিনি লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনার সঙ্গে তার বাসভবনে দেখা করে আনুষ্ঠানিক পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

ওইদিন সকালের দিকে কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি (এএপি) জানায়, দিল্লির পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন অতীশি মারলেনা। এক বৈঠকে এএপির জাতীয় আহ্বায়ক অতীশির নাম প্রস্তাব করেন এবং তার এ প্রস্তাবে পার্টির সব বিধায়ক উঠে দাঁড়িয়ে সমর্থন জানান এবং তাকে আইনসভা দলের নেতা নির্বাচন করা হয়।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। তার আগ পর্যন্ত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন অতীশি। যদিও, কেজরিওয়াল আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন।

 

শিল্পীর তুলির অপ্রতিরোধ্য শক্তি পর্ব-১

 

অপরাজিতা ডেস্কঃ একুশ শতকে শিল্পীর তুলির আধুনিকায়ন হয়েছে। বিভিন্ন এক্টিভিস্ট তুলির আচড়ের সাথে সাথে গ্রাফিক্স ডিজাইনসহ বিভিন্নভাবে শৈল্পিকভাবে প্রকাশ করছে নিজেদের কথা এবং আলোড়ন তুলছে পুরো বিশ্বে।

আসুন জেনে নেই কয়েকজন নারীর কথা যারা অদম্য সাহসের সাথে নিজ কমিউনিটিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য শৈল্পিক উপায়ে আলোড়ন তুলেছে-

প্রথম পর্বে আমরা জানবো ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য আর্ট থেরাপির গল্প-

মনোবিজ্ঞানী ও আর্ট থেরাপিস্ট কাটেরিনা শুক ২০২২ সাল থেকে একজন শরনার্থী হিসেবে জীবন যাপন করছেন। ইউক্রেনে পূর্ণ আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর কাটেরিনা ইউক্রেনের মারিউপোলে তার বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়ে পোল্যান্ডে চলে যান।

আমরা মনে করি যুদ্ধ এমন কিছু- যা অন্য লোকেদের সাথে ঘটে, যতক্ষণ না এটি আপনার সাথে ঘটে ততক্ষন পর্যন্ত! -ক্যাটরিনা শুক

তারপর থেকে, তিনি অন্যান্য ইউক্রেনীয় নারীদের তাদের ক্ষতি এবং ট্রমা সহ্য করার জন্য সহযোগিতা করছেন। নারীদের তাদের অনুভূতি প্রকাশ, পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমে সুন্দর কিছু তৈরি করার পথ-নির্দেশনা দেয় এ আর্ট থেরাপি।

আর্ট থেরাপির একটি সেশনে আগামী পাঁচ বছরে তাদের জীবনকে কীভাবে দেখতে চান তার উপর ভিত্তি করে একটি কোলাজ তৈরি অংশগ্রহণকারী নারীরা।

যুদ্ধের ফলে সব পরিকল্পনা, লক্ষ্য এবং স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর নারীদের তাদের ভবিষ্যত নিয়ে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ৷ যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য দৃঢ় ভূমিকা পালন করেছে এ আর্ট থেরাপি।

অনুবাদঃ  সিলভিয়া জুম

 

নারী ভোটারের সমর্থন হারাচ্ছেন ট্রাম্প

 

যুক্তরাষ্ট্রে নারী ভোটারদের মধ্যে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ক্রমে কমছে। এ নিয়ে দলটির নেতারা উদ্বিগ্ন। এমনটা যাতে না হয়, সেটাই চাচ্ছেন ট্রাম্প। তিনি চান, নারী ভোটাররা যেন তাঁর দিকে ঝোকেন। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না।

গতকাল বুধবার দ্য হিলের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, যদিও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিভিন্ন দলের মধ্যে রিপাবলিকানরা লিঙ্গ ব্যবধানের জন্য অপরিচিত নয়, তারা এখন নারী-পুরুষ ভোটারদের নিয়ে এক জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছে। দলটির জরিপকারী হুইট আইরেস বলেন, বড় নেতৃত্বের জন্য নারীদের মধ্য থেকে কমলার উঠে আসা ট্রাম্পের জন্য ‘বড় চ্যালেঞ্জ’ হতে চলেছে।

তিনি সতর্ক করেন, রিপাবলিকানদের জন্য এ মুহূর্তে আসল চ্যালেঞ্জ হলো নারীদের মধ্যে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়ানো। গত রোববার প্রকাশিত এবিসি নিউজ/ইপসস জরিপে দেখা গেছে, ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস নারীদের মধ্যে ট্রাম্পের চেয়ে বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। তিনি ৫৪ শতাংশ মার্কিন নারীর সমর্থন পেয়েছেন; ট্রাম্প পেয়েছেন ৪১ শতাংশের। তবে পুরুষদের মধ্যে কমলার চেয়ে ট্রাম্প ৫ পয়েন্ট এগিয়ে আছেন। ট্রাম্পকে ৫১ শতাংশ ‍পুরুষ ভোটার সমর্থন করেন; ৪৬ শতাংশ কমলাকে সমর্থন করেছেন।

এ জরিপের তথ্য অনুযায়ী, শিকাগোতে ডেমোক্রেটিক জাতীয় সম্মেলনের পর নারীদের মধ্যে কমলার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয় রয়টার্স/ইপসোস জরিপ। সেখানে নারীদের মধ্যে কমলা ট্রাম্পের চেয়ে ১৩ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। উভয় জরিপে দেখানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পের চেয়ে কমলা সামগ্রিকভাবে ৪ শতাংশ এগিয়ে আছেন। এ প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল তৈরি করে দেওয়া ছয় অঙ্গরাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপের ফল প্রকাশ করেছে সিএনএন।

তাদের জরিপে দোদুল্যমান এসব অঙ্গরাজ্যে সার্বিকভাবে কমলা হ্যারিসকে এগিয়ে রাখা হয়েছে। কমলার এগিয়ে থাকা অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে আছে উইসকনসিন ও মিশিগান। আরিজোনায় কিছুটা এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। তবে জর্জিয়া, নাভাদা ও পেনসিলভানিয়ায় সমানে সমান টক্কর চলছে।

সন্তানকে ‘ফ্যাটি লিভার’ থেকে নিরাপদে রাখবেন যেভাবে

আজকাল অনেক শিশুর লিভারে ফ্যাট জমে। কারণ আজকালকার বাচ্চারা বাড়ির খাবার খেতে পছন্দ করে না। বরং বারবার তাদের মন কেড়ে নেয় পিৎজা, বার্গার, মোমো, বিরিয়ানি, চাউমিনের মতো খাবার। এমনকী তাদের মধ্যে অনেকেই কোল্ড ড্রিংকস, চকোলেট এবং মিষ্টির পোকা।

আর এসব খাবারের কারসাজিতেই বিপদে পড়ে তাদের লিভার। এই অঙ্গে জমে ফ্যাট। আর এই সমস্যার নামই হল ফ্যাটি লিভার। এই সমস্যার দিকে প্রথমেই নজর না দিলে মুশকিল! সেক্ষেত্রে শরীরের বড়সড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
তাই বিপদ বাড়ার আগেই এই প্রতিবেদন থেকে ছোটদের ফ্যাটি লিভারকে বশে আনার ৪ কৌশল সম্পর্কে বিশদে জেনে নিন। তাহলেই অনায়াসে সমস্যাকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারবেন।
শিশুদের ​খেলতে পাঠান​
আপনার সন্তান কি মোবাইল, কম্পিউটারে গেম খেলে অভ্যস্ত? তাহলে আজ থেকেই তার এই অভ্যাসে বদল আনুন। তাকে সঙ্গে করে মাঠে যান।

সেখানে সমবয়সীদের সঙ্গে খেলতে দিন। আপনি চাইলে তাকে ফুটবল বা ক্রিকেট কোচিং সেন্টারেও তাকে ভর্তি করে দিতে পারেন। তাহলেই দেখবেন দ্রুত ফ্যাটি লিভারের মতো সমস্যাকে মাত দিয়ে সুস্থ-সবল জীবন কাটাতে পারবে ছোট্ট সোনা।
​কমিয়ে ফেলুন ওজন​
সন্তানের ওজন বেশি থাকলে ফ্যাটি লিভারের মতো সমস্যার থেকে মুক্তি মিলবে না। তাই আজ থেকেই ছোট্ট সোনার ওজন কমানোর কাজে লেগে পড়ুন।

সেক্ষেত্রে তাকে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার পরামর্শ দিন। সে ব্যায়াম করতে না চাইলে সাঁতারে ভর্তি করে দিন। কিংবা তাকে সাইকেল চালাতেও বলতে পারেন। এই কাজটা করলেই উপকার মিলবে। দ্রুত কমে যাবে তার ওজন।
যেসব খাবার থেকে বিরত রাখবেন​
জানি আপনার সন্তান, ফাস্টফুডের জন্য পাগল! তাই সে রোজ রোজ বিরিয়ানি, রোল, চাউমিন, বার্গার খাওয়ার জন্য বায়না ধরে। তবে ভুলেও তাকে এসব খাবার কিনে দেবেন না। এই ভুলটা করলে সমস্যা আরও বাড়বে। তবে শুধু এসব খাবারই নয়, এর পাশাপাশি চিপস, চকোলেটের থেকেও তাকে দূরে রাখতে হবে। এমনকী খেতে দেওয়া চলবে না কোল্ড ড্রিংকস। আশা করছি, এসব খাবার এবং পানীয়কে ডায়েট থেকে দূর করে দিলেই উপকার মিলবে হাতেনাতে।

​চেকআপে রাখুন​
বাচ্চার ফ্যাটি লিভার ধরা পড়লে মাঝে মাঝে চেকআপ জরুরি। তাই মাসে অন্তত একবার চিকিৎসকের কাছে যান। তিনি যদি ওষুধ বদলে দেন বা জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে বলেন, সেগুলি সন্তানকে মেনে চলতে বলুন। এমনকী তিনি কিছু টেস্ট দিলেও তা করে নিতে হবে। আশা করছি, এই নিয়মটা মেনে চললেই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে ছোট্ট সোনা। তাই ঝটপট এই কাজে লেগে পড়ুন।

হার্টের সুরক্ষায় ৪ খাবার এড়িয়ে চলুন

 

যা কিছু খেতে আমরা পছন্দ করি তার সবই কি স্বাস্থ্যকর? বিশেষ করে আমাদের হার্ট ভালো রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক হতে হবে। সম্প্রতি এক ইনস্টাগ্রাম রিলে লন্ডনের কার্ডিওভাসকুলার সার্জন ডাঃ জেরেমি চারটি খাবার নিয়ে আলোচনা করেছেন। যে খাবারগুলো হার্ট ভালো রাখার খাতিরেই এড়িয়ে যেতে হবে। কিন্তু সেই চারটি খাবারই আমরা প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে খেয়ে থাকি। তবে সব চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ এই চারটি খাবার, বিশেষ করে তার তালিকার তৃতীয় আইটেমটি সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করার সাথে একমত হবেন না। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক, ডাঃ জেরেমি কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলার কথা বলেছেন-

১. ফাস্ট ফুড
ফাস্ট ফুড চেইনের বেশিরভাগ খাবারই আসলে কেবল চটকদার। তাতে পুষ্টির কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। হার্ভার্ড হেলথের মতে, হ্যামবার্গার, ফ্রাই এবং চিনিযুক্ত কোমল পানীয় প্রদাহ বৃদ্ধি করতে পারে, যা ধমনী-ক্লগিং প্লেকের বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। অপরদিকে গবেষণায় দেখা গেছে যে ফল, শাকসবজি প্রদাহ বিরোধী খাবার এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।

২. কোমল পানীয়
ডাঃ জেরেমি নিয়মিত কোমল পানীয় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন। দ্য আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন-এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা প্রকাশ করে, যেখানে দেখা গেছে যারা সাপ্তাহিক দু্বারের বেশি চিনিযুক্ত পানীয় গ্রহণ করেন তারা কার্ডিওভাসকুলার রোগের উচ্চ ঝুঁকির সম্মুখীন হন। যারা প্রতিদিন কোমল পানীয় পান করেন তাদের জন্য এই ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পায়।

 

৩. দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য

আমরাই একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী যারা শৈশবকালের পরেও দুধ পান করি, এবং আমরা এটি একটি ভিন্ন প্রজাতির থেকে খাই। তাই এ সম্পর্কে আরেকটু ভেবে দেখুন, এমনটাই বলেন ডাঃ জেরেমি। তবে অন্য অনেক বিশেষজ্ঞেরই দুধ সম্পর্কে মতামত ভিন্ন। হার্ভার্ড হেলথের একটি প্রবন্ধে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে দুধ কি হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে? ডক্টর জোআন ম্যানসন উল্লেখ করেছেন, ফুল ফ্যাট দুধের পরিমিত ব্যবহার স্বাস্থ্যকর খাদ্যের অংশ হতে পারে।

৪. অ্যালকোহল
অ্যালকোহল আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের জন্য বিষাক্ত, এমনটাই বলেন কার্ডিয়াক সার্জন জেরেমি। এমনকি মাঝারি বা মাঝে মাঝে গ্রহণ করলে তাও আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। আমরা যদি আমাদের মঙ্গলকে অপ্টিমাইজ করার চেষ্টা করি, তাহলে অ্যালকোহল নির্মূল করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এমনটাই মত দেন ডাঃ জেরেমি।

 

রাতারাতি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী হয়ে ওঠেন যারা

নিজের যোগ্যতায় নয় বরং উত্তরাধিকার সূত্রে ধনী হয়েছেন এমন নারীর সংখ্যা নেহাতই কম নয়। কিন্তু এমনও নারী আছেন, যারা উত্তরাধিকার সূত্র বা ডিভোর্সের মাধ্যমে এতটাই ধনী হয়েছেন যে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন তারা।

ধনকুবেরদের তালিকা রাখা ফোর্বস জানিয়েছে, বর্তমানে শত কোটি ডলার বা তার চেয়ে বেশি সম্পদ আছে, এমন ব্যক্তির সংখ্যা ২ হাজার ৭৮১ জন। আর তাদের মধ্যে নারী হচ্ছে ৩৬৯ জন।

গেল বছরের চেয়ে ধনী নারীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে ফোর্বস। ২০২৩ সালে বিশ্বে সবচেয়ে ধনী নারীর সংখ্যা ছিল ৩৩৭ জন। এক বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে হয়েছে ৩৬৯ জন। এই ধনী নারীদের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী নারীর ৮ জনই উত্তরাধিকার সূত্রে এই বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হয়েছেন।

কেবলমাত্র একজন নারী নিজের যোগ্যতায় এই তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। আর ডির্ভোসের কারণে বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে তালিকায় স্থান পেয়েছেন এক নারী।

টানা চার বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারীর খেতাব জিতে নিয়েছেন ল’রিয়েলের উত্তরাধিকারী ফ্রাঁসোয়া বেনেটকোর্ট মেয়ার্স। ফোর্বস চলতি বছরের এপ্রিলে জানায়, গেল ১২ মাসে বেনেটকোর্টের সম্পদের পরিমাণ ১৯ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। সব মিলিয়ে তিনি এখন ৯৯.৫ বিলিয়ন ডলারের মালিক। দুই দশকের বেশি সময় ধরে ওয়ালটনে একজন উত্তরাধিকারী বা বেনেটকোর্ট বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারীর খেতাব দখলের রেখেছেন। মায়ের মৃত্যুর দুই বছর পর ২০১৯ সালে বেনেটকোর্ট প্রথমবার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারীদের তালিকায় স্থান পান।

ওয়ালমার্টের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়াল্টনের একমাত্র মেয়ে অ্যালিস ওয়ালটন। ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারীদের তালিকায় দ্বিতীয় ছিলেন। বিগত কয়েক মাসে ওয়ালমার্টের শেয়ার ফুলে-ফেঁপে ওঠায় আরও ধনী হয়েছেন তিনি। অ্যালিস কখনও ওয়ালমার্টের পরিচালকদের আসনে বসেননি, বরং আঁকাআঁকি নিয়েই থেকেছেন। নিজের হোমটাউন আরকানসাসের বেন্টনভাইলে একটি আর্ট গ্যালারি খুলেছেন তিনি শিল্পপ্রেমী অ্যালিস। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ৭২.৩ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী নারীর তালিকায় একমাত্র ব্যতিক্রম ম্যাকেঞ্জি স্কট। অন্যরা যেখানে বাবা, স্বামী বা মায়ের সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়েছেন, ম্যাকেঞ্জি সেখানে ডিভোর্সের পর রাতারাতি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ধনী নারীদের তালিকায় স্থান করে নেন।

ম্যাকেঞ্জি বিশ্বের দ্বিতীয় ধনীতম ব্যক্তি জেফ বেজোসের স্ত্রী ছিলেন। তাদের ডিভোর্সের পর অ্যামাজনের ৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক হন। ব্যাস, আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ৫৩ বছর বয়সী এই নারীর বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ৩৫.৬ বিলিয়ন ডলার। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারীদের তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছেন।

ধনীতম নারীদের এই তালিকায় একজন ভারতীয়ও রয়েছেন। তার নাম সাবিত্রী জিন্দাল। ৭৪ বছর বয়সী সাবিত্রী ভারতের সবচেয়ে ধনী নারী। ২০০৫ সালে স্বামী ওম প্রকাশ জিন্দালের মৃত্যুর পর তার বিশাল সাম্রাজ্যের মালিক হন সাবিত্রী। জিন্দাল গ্রুপের স্টিল, বিদ্যুৎ, সিমেন্ট ও অবকাঠামো খাতে ব্যবসা রয়েছে। ২০২৩ সালে বিশ্বের ধনীতম নারীদের তালিকায় ১২তম ছিলেন সাবিত্রী। তবে জিন্দাল গ্রুপের শেয়ারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ২০২৪ সালে এই তালিকায় ষষ্ঠ স্থান দখল করে নিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ৩৩.৫ বিলিয়ন ডলার।

তেল শোধনের ব্যবসা থেকে শুরু করে পেপার টাওয়ালের ব্যবসা করা জুলিয়া কোচ ও তার পরিবার বিশ্বের তৃতীয় ধনীতম নারী। তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা জ্যাকুলিন মার্স ক্যান্ডি ও পেট ফুডের ব্যবসা থেকে ধনী হয়েছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিপিং কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা রাফায়েলা অ্যাপোন্তে-ডিয়ামান্তর অবস্থান তালিকায় সপ্তম। শীর্ষ ১০ এর তালিকায় তিনিই একমাত্র নারী যিনি নিজের যোগ্যতায় ধনী হয়েছেন। মিরিয়াম অ্যাডেলসন ও তার পরিবার রয়েছে তালিকার অষ্টম অবস্থানে। আর জিনা রাইনহার্টের অবস্থান নবম। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারীদের তালিকায় অ্যাবিগেইল জনসন ১০ম স্থান দখল করেছেন।

 

১৫ বছরে বিদেশে গেছে ১১ লাখ নারী কর্মী

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, গত ১৫ বছরে অর্থাৎ ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত (১১ জুন ২০২৪) ১১ লাখ ১৪ হাজার ৩১২ জন নারী কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। সৌদি আরবে সব চেয়ে বেশি নারী কর্মী গেছেন।

রবিবার (২৩ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এ তথ্য জানান তিনি।

সরকারি দলের সদস্য মো. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীর প্রশ্নের জবাবে প্রতমিন্ত্রী জানান, বিদেশে কর্মী প্রেরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া।

এগুরুত্ব বিবেচনায় সরকার অধিক হারে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রেখেছে। বেসরকারি খাতকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্তকরণের অংশ হিসেবে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির অনুকূলে লাইসেন্স প্রদান করা হয়ে থাকে। এজেন্সি সমূহ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি’র) বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে কর্মী প্রেরণ করছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ ওভারসীজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিঃ (বোয়েসেল) এর মাধ্যমে জর্ডান, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ফিজি, মালয়েশিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিয়মিতভাবে স্বল্প খরচ-বিনা খরচে কর্মী পাঠানো হচ্ছে।

শ্রমিক পরিবারের নিরাপত্তায় ১২ বছরে ১৪২ কোটি টাকা সহায়তা প্রদান

শ্রমিকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে কিংবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে কেহ কর্ম অক্ষম হলে আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে শ্রমিক পরিবারের সামাজিক নিরাপত্তা গত ১২ বছরে ১৪১ কোটি ৬৬ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫৫ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে বলে সংসদে জানিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী মো নজরুল ইসলাম। সরকারি দলের সংসদ সদস্য ননী গোপাল মন্ডলের লিখিত প্রশ্নের উত্তরে তিনি তিনি আরো জানান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অন্যতম কাজ হচ্ছে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সকল সেক্টরের শ্রমিকের কল্যাণ ও সুরক্ষা প্রদান করা। এ লক্ষ্য অর্জনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সরকার পরিযায়ী শ্রমিকসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, মেধাবী সন্তানদের শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, কর্মরত অবস্থায় কোন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করলে বা কোন শ্রমিকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে কিংবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে কেহ কর্ম অক্ষম হলে আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে শ্রমিক পরিবারের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।

রিমালে ৭৪৮২ কোটি টাকার ক্ষতি

সরকারি দলের এস এম আতাউল হকের প্রশ্নের জবাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সারা দেশে টাকার অঙ্কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৭ হাজার ৪৮১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

একই দলের মাহবুব উর রহমানের প্রশ্নের জবাবে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালে মৃত্যের সংখ্যা ২০ জন। ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৮১৭ জন। দুর্যোগ মোকাবিলায় নগদ ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিন টন চাল, ১১ হাজার ৫০০ ব্যাগ শুকনো খাবার, দুই কোটি ৪৫ হাজার টকার শিশু খাদ্য, দুই কেটি ৪৫ লাখ টাকার গো-খাদ্য, ৩০০ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহমঞ্জুরি বাবদ ৯ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

 

ইতিহাস গড়লো ওড়িশার প্রথম মুসলিম নারী বিধায়ক সোফিয়া

ভারতের ওড়িশায় ইতিহাস গড়েছেন ৩২ বছর বয়সী নারী রাজনীতিক সোফিয়া ফিরদৌস। ওড়িশার বারাবতী-কটক কেন্দ্রে প্রথম মুসলিম নারী বিধায়ক (এমএলএ) নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। বিজেপির পূর্ণচন্দ্র মহাপাত্রকে ৮ হাজার এক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন তিনি।

সোফিয়ার জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে। কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা মোহাম্মদ মকিমের মেয়ে তিনি। ২০২৪ সালের ওড়িশা বিধানসভা নির্বাচনে সোফিয়া ফিরদৌস তার বাবার স্থলাভিষিক্ত হয়ে জয়লাভ করলেন।

সোফিয়া কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ২০২২ সালে ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (আইআইএমবি) থেকে এক্সিকিউটিভ জেনারেল ম্যানেজমেন্টে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।

২০২৩ সালের কনফেডারেশন্স অব রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (ক্রেডাই) ভুবনেশ্বর চ্যাপ্টারের সভাপতি নির্বাচিত হন সোফিয়া। এই সংগঠনের নারী শাখার পূর্ব জোনের সমন্বয়ক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।

এ ছাড়া ইন্ডিয়ান গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (সিআইআই) ভুবনেশ্বর চ্যাপ্টারের কো-চেয়ার এবং আইএনডব্লিউইসি’র কোর মেম্বার ছিলেন সোফিয়া। বিশিষ্ট শিল্পপতি শেখ মিরাজ উল হককে বিয়ে করেছেন তিনি। ওড়িশার প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী নন্দিনী শতপথীও এই আসন থেকেই ১৯৭২ সালে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২০২৪ সালের ওড়িশা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৪৭টি আসনের মধ্যে ৭৮টি আসনে জয়ী হয়ে মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক এবং বিজু জনতা দলের (বিজিডি) ২৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটায়।

এদিকে, সদ্য সমাপ্ত ভারতের লোকসভা নির্বাচনে মুসলিম প্রার্থীদের উপস্থিতি ছিল গতবারের তুলনায় কম। ২০১৯ সালে সাধারণ নির্বাচনে ১১৫ আসনে মুসলিম প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। তবে এবার মাত্র ৭৮ জন প্রার্থী নির্বাচনি লড়াইয়ে অংশ নেন। তাদের মধ্যে জয়লাভ করেন মাত্র ২৪ জন।

 

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আদালতের প্রথম মুসলিম নারী বিচারক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নুসরাত

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আদালতের প্রথম মুসলিম নারী বিচারক হিসেবে শপথ নিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নুসরাত জাহান চৌধুরী। ২০২২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফেডারেল আদালতের বেঞ্চে নিয়োগের জন্য নুসরাতসহ আটজনকে মনোনয়ন দেন। তিনি নিউ ইয়র্কের পূর্বাঞ্চলীয় জেলা বিচারকের দায়িত্ব পালন করবেন।

গত ১০ মে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে তিনি শপথ নেন। প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান, প্রথম মুসলিম নারী এবং দ্বিতীয় মুসলিম আমেরিকান হিসেবে ফেডারেল বেঞ্চে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।

শপথ অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের মেজরিটি লিডার চাক শুমার বলেন, নিউ ইয়র্ক ইস্টার্ন ডিসট্রিক্ট-এর কেন্দ্রীয় আদালতে বিচারক (ফেডারেল জাজ) হিসেবে নুসরাত চৌধুরীকে শপথ নিতে সাহায্য করতে পেরে আমি খুবই সম্মানিত। ফেডারেল জাজ হিসাবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে তার জন্য আমি তাকে সুপারিশ করতে পেরে গর্বিত।’

নুসরাত জাহান চৌধুরী বর্তমানে ইলিনয়ের আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (এসিএলইউ)আইনি পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শতবর্ষের পুরনো আইনি প্রতিষ্ঠান এসিএলইউ সাধারণ মানুষের অধিকারের পক্ষে কাজ করে থাকে।

নুসরাত চৌধুরী ১৯৭৬ সালে ইলিনয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক বাড়ি ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার ৬ নম্বর দাগনভূঞা সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ আলীপুর। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ল স্কুল, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করেন। তিনি ২০২০ সাল পর্যন্ত ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের লিগ্যাল ডাইরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি ২০০৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নিউ ইয়র্কে আমেরিকার সিভিল রাইটস ইউনিয়নে বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন। সর্বশেষ ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি রেসিয়াল জাস্টিস প্রোগ্রামের ডেপুটি ডাইরেক্টর ছিলেন। নুসরাত চৌধুরী ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রেসিয়াল জাস্টিস প্রোগ্রামের সিনিয়র স্টাফ অ্যাটর্নি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

 

মারা গেছেন নোবেলজয়ী সাহিত্যিক এলিস মুনরো

 

২০১৩ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী কানাডিয়ান লেখক এলিস মুনরো মারা (৯২) গেছেন। স্থানীয় সময় সোমবার (১৩ মে) রাতে কানাডার অন্টারিওর পোর্ট হোপে নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার পরিবার ও প্রকাশক।। তিনি এক দশক ধরে ডিমেনশিয়ায় ভুগছিলেন। খবর বিবিসির।

মুনরো ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ছোট গল্প লিখেছেন। কানাডার গ্রামীণ জীবনকে উপজীব্য করেই তার বেশিরভাগ লেখা। সুইডিশ নোবেল একাডেমি ২০১৩ সালে তাকে পুরস্কারে ভূষিত করার সময় ‘সমকালীন ছোটগল্পের মাস্টার’ অভিহিত করে বলেছিল, তার সুন্দর করে গুছিয়ে বলা গল্পের বিষয়বস্তু সুস্পষ্ট এবং বাস্তববাদী।

১৯৩১ সালের ১০ জুলাই কানাডার অন্টারিও প্রদেশের উইংহ্যাম এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন মুনরো। সেখানকার গ্রাম্য ও শান্ত পরিবেশেই তার বেড়ে ওঠা। বাবা ছিলেন খামার মালিক, মা স্কুলশিক্ষক।

মাত্র ১১ বছর বয়সেই মুনরো ঠিক করে ফেলেন, বড় হয়ে একজন লেখকই হবেন। সে মতোই এগিয়েছে সবকিছু। নিজের পেশা নিয়ে পরবর্তী সময়ে আর কখনো তিনি দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেননি।

মুনরো গভর্নর জেনালের অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনবার। ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত ড্যান্স অব দ্য হ্যাপি শেডস, ১৯৭৮ সালে হু ডু ইউ থিংক ইউ আর এবং ১৯৮৬ সালে দ্য প্রোগ্রেস অব লাভ বইয়ের জন্য। তিনি কানাডার সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কারও পেয়েছেন। আর সাহিত্যে নোবেলের পর সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ম্যান বুকার পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৯ সালে। দ্য বেয়ার কাম ওভার দ্য মাউন্টেন বইয়ের জন্য তিনি ওই পুরস্কার পান।

তার এই বই অবলম্বনে পরিচালক সারাহ পলি তৈরি করেন সিনেমা অ্যাওয়ে ফ্রম হার। তার প্রকাশিত অন্যান্য ছোটগল্পের সংকলনের মধ্যে আছে লাইভস অব গার্লস অ্যান্ড উইম্যান-১৯৭১, সামথিং আই হ্যাভ বিন মিনিং টু টেল ইউ-১৯৭৪, দ্য মুনস অব জুপিটার-১৯৮২, ফ্রেন্ড অব মাই ইয়োথ-১৯৯০, ওপেন সিক্রেটস-১৯৯৪, দ্য লাভ অব আ গুড উইম্যান-১৯৯৮।

 

পুরুষের চেয়ে বেশি অসুস্থ হন নারীরা

গড় হিসাবে পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি দিন বাঁচে। কিন্তু সেই জীবদ্দশায় পুরুষের চেয়ে বেশি অসুস্থ হন নারীরা। জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট পাবলিক হেলথ জার্নালে প্রকাশিত ফলাফলে এমনটাই দেখা যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচে কিন্তু দুর্বল স্বাস্থ্য নিয়ে। ফলে নারীদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতেও জোর দিয়েছেন তারা। দ্য গার্ডিয়ান।

বিশ্বের ২০টি রোগের প্রধান কারণের প্রভাব পরীক্ষা করে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।

সাধারণত বিষণ্নতা, মাথাব্যথা, উদ্বেগ, হাড় ও পেশির সমস্যা, স্মৃতিভ্রম, এইচআইভি সমস্যাগুলো নারীদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। এ ধরনের অসুখগুলো মারাত্মক শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি না করলেও অসুস্থতা ও অক্ষমতা তৈরি করে। ফলে নারীদের অকালমৃত্যুর হার কম।

অন্যদিকে গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে অসুস্থতা ও মৃত্যুর শীর্ষ ২০টি কারণের মধ্যে ১৩টি কারণই পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা গেছে। যেমন-কোভিড-১৯, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়া, হৃদরোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, যকৃতের রোগের মতো সমস্যাগুলো নারীর চেয়ে পুরুষদের মধ্যে বেশি। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশই প্রাণঘাতী ফলে পুরুষদের মধ্যে মৃত্যুর হার তুলনামূলক বেশি।

গবেষণার সিনিয়র লেখক ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই)-এর ডা. লুইসা সোরিও ফ্লোর বলেছেন: ‘এই প্রতিবেদনটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে, গত ৩০ বছরে স্বাস্থ্যবিষয়ক অগ্রগতি বিশ্বব্যাপী অসম ছিল। নারীরা দীর্ঘজীবী হলেও বেশির ভাগ সময় অসুস্থ থাকেন। বয়স্ক অবস্থায় নারীদের শারীরিক ও মানসিক কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এখন সেদিকে নজর দেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে।’ তবে এই গবেষণাটিতে স্ত্রীরোগ এবং প্রোস্টেট ক্যানসারের মতো লিঙ্গভিত্তিক স্বাস্থ্য অবস্থার তথ্যগুলো নেওয়া হয়নি।

সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর

 

দ্বীপ বাঁচাতে একাট্টা নারীরা

পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী ক্যারিবীয় দ্বীপ অ্যান্টিগার বাসিন্দা কিনিয়াহ ম্যাকে। ছবি : বিবিসি
ক্যারিবীয় দ্বীপ অ্যান্টিগার বাসিন্দা কিনিয়াহ ম্যাকে। বয়স মাত্রই ১১ বছর। হলে কী হবে, এই বয়সেই মেয়েটি জলবায়ু সংকট সম্পর্কে রীতিমতো সচেতন! কিনিয়াহ জানে, গাছ কমে গেলে পরিবেশে অক্সিজেন হ্রাস পায়। আরো জানে, উপকূলে আবর্জনা ফেললে সামুদ্রিক কচ্ছপরা মরে যায়, যারা কিনা সুন্দর রাখে সমুদ্রের পরিবেশ।

‘তরুণদের পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে’—বলে কিনিয়াহ। কথাটা বলার সময় এমন ভাবগম্ভীর দেখায় তাকে, কে বলবে বয়স মাত্রই ১০ পেরিয়েছে। বিবিসির সাংবাদিক যখন কিনিয়াহ ম্যাকের সঙ্গে কথা বলছিলেন তখন মাত্রই মার্চের মাঝামাঝি। কিন্তু এরই মধ্যে সূর্য ভয়ানক রকম তাপ ছড়াচ্ছে চারদিকে।

কিনিয়াহর ক্লাসরুমের বৈদ্যুতিক পাখাগুলো বনবন করে ঘুরেও যথেষ্ট ঠাণ্ডা করতে পারছে না ঘর।
ক্যারিবীয় অঞ্চলের বাকি অংশের মতো অ্যান্টিগায়ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিত্যদিনের বাস্তবতা। সৈকতের আকার হ্রাস, ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা ক্রমেই তীব্র হওয়া, তীব্র খরা আর গ্রীষ্মকালের ক্রমেই দমবন্ধ করা হয়ে ওঠা তার প্রমাণ।

তবে দ্বীপের মানুষের একাংশ এ অবস্থার বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে লড়ছে।

কিনিয়াহ তাদেরই একজন। ওদের এলাকার ৬০ জনের বেশি বিভিন্ন বয়সের নারীকে উপকূল রক্ষার কর্মী হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। উপকূলীয় ক্ষয় কমানোর জন্য দেশীয় গাছ লাগানো, বিপন্ন কচ্ছপের বাসা বাঁধার স্থানগুলো রক্ষা এবং সৈকতের আবর্জনা রাখার ডাস্টবিন তৈরি ও তার ব্যবস্থাপনার কাজ দেওয়া হয়েছে তাদের।
স্থানীয় এনজিও ‘অ্যাডপ্ট-এ-কোস্টলাইন’-এর নেওয়া এই প্রকল্পটি এতটাই সফল যে গত আগস্টে জাতিসংঘের গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ) থেকে এক লাখ ডলার অনুদানের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। ৬০০ আবেদনের মধ্যে নির্বাচিত মাত্র ২৩টি উদ্যোগের অন্যতম এটি।

এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক ক্যাট বাইলস জানিয়েছেন, তাঁদের কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার বিষয়ে নারী ও কম বয়সী মেয়েদের ‘আরো বেশি সোচ্চার হতে’ উৎসাহিত করা।
নারী-পুরুষের কাজকর্মের ক্ষেত্র নিয়ে এখনো ক্যারিবীয় অঞ্চলের বেশির ভাগ অংশে সেকেলে ভাবধারা বহাল। কিনিয়াহদের স্কুলের প্রিন্সিপাল রায়োনা শ জোসেফ তাঁর একদল শিক্ষার্থীকে নিয়ে সৈকত পরিচ্ছন্ন করার কর্মসূচিতে যুক্ত হয়ে খুবই আনন্দিত। ‘প্রাকৃতিক সম্পদের যত্ন নেওয়াটা শিশুদের শেখাতে হবে, যাতে তা ভবিষ্যতের জন্য টিকিয়ে রাখা যায়’, বলেন তিনি।

অ্যান্টিগার মাত্র ২৪ বছরের তরুণ এমপি কাইশা জোসেফ একদিন দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। আপাতত তাঁর মনোযোগ অবশ্য তরুণদের নিয়ে অ্যাডপ্ট-এ-কোস্টলাইনের পরিবেশ সংরক্ষণের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার ওপরই নিবদ্ধ।

বিবিসিকে কাইশা জোসেফ বলেন, ‘আমরা অ্যান্টিগা এবং বারবুডায় এমন একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি, যেখানে কিছু ভূমিকা শুধু পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট করা আছে। অনেক নারীই এখনো সেই ধাত্রী, শিক্ষক এবং সেক্রেটারির মতো গতানুগতিক চাকরির পেছনেই ছোটেন।’

অ্যান্টিগার পশ্চিম উপকূলের পেনশনারস বিচ কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবকদের দেখভাল করা জায়গাগুলোর মধ্যে একটি। কাইশা স্বেচ্ছাসেবী দলটির ফেলে দেওয়া টায়ার থেকে তৈরি করা ডাস্টবিনগুলোকে দেখালেন বিবিসির সাংবাদিককে। এ কাজে না লাগানো হলে টায়ারগুলোর ঠাঁই হতো ভাগাড়ে। ধবধবে সাদা বালির এ সৈকতের কিনার ঘেঁষেই রয়েছে সিগ্রেপ গাছের সারি। দৃশ্যটা ভিউকার্ডের ছবির মতোই নয়নাভিরাম। প্রতিবছর এই রৌদ্রোজ্জ্বল দ্বীপে আসা লাখো পর্যটককে মুগ্ধ করে এই ছবি। কিন্তু মুগ্ধ পর্যটকের ঢলের বিপরীত চিত্রটি হচ্ছে অবিরাম বর্জ্য জমে ওঠা। ভ্রমণের মৌসুমে প্রায়ই রাজধানী শহরের বন্দরে দেখা যাবে এক থেকে কয়েকটি বিশাল পর্যটকবাহী প্রমোদতরি।

আগামী মে মাসেই অ্যান্টিগায় বসছে জাতিসংঘের চতুর্থ উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র সম্মেলন। তখনো বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতাসহ কয়েক হাজার দর্শনার্থীর চরণ পড়বে এখানে। জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবের সম্ভাব্য শিকার ছোট দ্বীপগুলোর টেকসই উন্নয়নের সামর্থ্য মূল্যায়ন করা এ সম্মেলনের লক্ষ্য। এমপি কাইশা জোসেফের মতো তরুণী নারীদের মতামত এখানে গুরুত্বপূর্ণ হবে।

অ্যান্টিগা সরকারের যুব দপ্তরের কর্মকর্তা ক্যারোলাইন পেরি বলেছেন, এখন আগের চেয়ে বেশি নারী উচ্চতর শিক্ষা নিলেও তাঁরা এখনো উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনার চাকরি পেতে বেগ পান। তাঁর মতে, মেয়েদের অল্প বয়স থেকেই ক্ষমতায়িত করা গেলে সমাজের রূপান্তর ঘটবে।

অ্যাডপ্ট-এ-কোস্টলাইন মেয়েদের দাতব্য দোকানে বিক্রির জন্য সামুদ্রিক বর্জ্য থেকে গহনা, পাখির বাক্স এবং বেঞ্চ তৈরি করা শিখিয়ে কিছু হলেও আয়ের পথ করে দিচ্ছে। অ্যান্টিগার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা জেনিফার মেরান্টো ২০০৯ সালে এনজিওটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সবার আগে নিজের ‘কৃতকর্মের প্রতিকার’ করতে চান। এ জন্য নিজে গত ২০ বছরে দ্বীপের মাটিতে যে পরিমাণ আবর্জনা সৃষ্টি করেছেন তার একটা সম্ভাব্য হিসাব বের করেছেন। তিনি দেখেছেন, বর্জ্যের বেশির ভাগই শেষ পর্যন্ত সমুদ্রে যায়। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগে নিজের ‘অবদান’ মুছে ফেলবেন।

দ্বীপের সৈকতগুলো থেকে এক হাজার ব্যাগ বর্জ্য সরানোর মাধ্যমে কাজটা শুরুও করেছেন জেনিফার মেরান্টো। সূত্র : বিবিসি।

 

প্রথম নারী উপাচার্য পেল ভারতের আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়

ভারতের উত্তর প্রদেশে অবস্থিত প্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে (এএমইউ) উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক নাইমা খাতুন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাসে এই প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেলেন তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ভারতের রাষ্ট্রপতি মুর্মু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য অধ্যাপক নাইমা খাতুনকে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন। তার আগে দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় নাইমা খাতুনকে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নাইমা খাতুনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করে। অধ্যাপক নাইমা খাতুন আগামী পাঁচ বছর এই পদে দায়িত্ব পালন করবেন।

ভারতের ইতিহাসে অন্যতম প্রাচীন এই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন নাইমা। অবশ্য তাঁর আগে ১৯২০ সালে বেগম সুলতান জাহান বিশ্ববিদ্যালয়টির চ্যান্সেলর বা আচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

অধ্যাপক নাইমা খাতুন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী ছিলেন। এখান থেকে মনোবিজ্ঞানের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৮৮ সালে একই বিভাগেই প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৬ সালে অধ্যাপক হন। পরে ২০১৪ সালে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ওমেনস কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। মাঝে এক বছর আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পাঠদান করেছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ১৮৭৫ সালে মোহামেডান অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯২০ সালে সেটিকে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়। ২০২৩ সালের এপ্রিলে তৎকালীন উপাচার্য ও বিজেপি সহসভাপতি তারিক মনসুরের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো পূর্ণাঙ্গ উপাচার্য ছিলেন না। অবশেষে নিয়োগ পেলেন নাইমা।

 

সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন যেসব নারী

১৯০১ সাল থেকে দেওয়া হচ্ছে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার।  নোবেলপ্রাইজ. অর্গ এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ১২০ জন লেখককে সাহিত্যে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।  এদের মধ্যে মাত্র ১৭ জন নারী লেখক মর্যাদাবান এই পুরস্কারটি পেয়েছেন।

১. অ্যানি এরনো

নিজের বইয়ে স্বাক্ষর করছেন আনি এরনো

ফরাসি কথাসাহিত্যিক অ্যানি এরনো ২০২২ সালের সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ জিতেছেন। ফ্রান্সের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী যিনি মর্যাদাবান এই পুরস্কারটি পেলেন। ৮৩ বছর বয়সী এই লেখক ৫ দশকের বেশি সময় ধরে লেখালেখি করে ২০টির বেশি বই প্রকাশ করেছেন। এই বইগুলোতে তিনি নির্ভীকভাবে যৌনমিলন, অসুস্থতা, বার্ধক্য এবং মৃত্যুর মত জীবনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মুহুর্তগুলো গভীরভাবে অনুসন্ধান করেছেন।

 

২. লুইস গ্লিক 

২০২০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান মার্কিন কবি এবং প্রাবন্ধিক লুইস গ্লিক। তিনি পুলিৎজার, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, দ্য ওয়াইল্ড আইরিশ, ভিটা নোভা, অ্যাভের্নো।

 

৩. ওলগা তোকারচুক

নোবেল জয়ী ওলগা তোকারচুক ...

পোল্যান্ডের লেখক, সমাজকর্মী, নারীবাদী এবং বুদ্ধিজীবী ওলগা তোকারচুক ২০১৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ৬২ বছর বয়সী এই লেখক ২০১৮ সালে তার ফ্লাইট উপন্যাসের জন্য ইন্টারন্যাশনাল বুকার প্রাইজ পান। দ্য বুকস অব জ্যাকব উপন্যাসকে তোকারচুকের শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে অভিহিত করা হয়। নোবেল কমিটি এটিকে তার ম্যাগনাম ওপাস বা মহৎ কর্ম বলে উল্লেখ করেছে। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, দ্য বুকস অব জ্যাকব, ড্রাইভ ইয়োর প্লো ওভার দ্য বোনস অব দ্য ডেড, দ্য লস্ট সোল।

৪. সোয়েতলানা আলেক্সিয়েভিচ

বেলারুশের অনুসন্ধানী সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক সোয়েতলানা আলেক্সিয়েভিচ ২০১৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তার লেখাকে দুর্ভোগের স্মারক এবং সময়ের সাহসী লেখনী বলে উল্লেখ করেছে নোবেল কমিটি। তিনিই বেলারুশের প্রথম লেখক যিনি সম্মানজনক এই পুরস্কার পেয়েছেন। ভয়েস ফ্রম চেরনোবিল তার সাড়া জাগানো একটি বই। এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়া কয়েকশ নারীর সাক্ষাতকারের উপর ভিত্তি করে তিনি লিখেছেন, ‘দ্য আনউইমেনলি ফেস অব ওয়ার: অ্যান ওরাল হিস্ট্রি অব উইমেন ইন ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু’।

 

৫. অ্যালিস মুনরো

On “Dear Life”: An Interview with Alice Munro | The New Yorker

২০১৩ সালে কানাডিয়ান অ্যালিস মুনরো সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। মূলত ছোটগল্প লেখেন মুনরো। নোবেল কমিটি তাঁর কাজকে বলেছে, ‘সমসাময়িক ছোটগল্পের গুরু।’ কিশোর বয়স থেকেই লেখালেখি শুরু করেন মুনরো। তাঁর প্রথম ছোটগল্পের সংকলন ‘দ্য ডাইমেনশন্স অব শ্যাডো’ প্রকাশিত হয় ১৯৫০ সালে। সে সময়ে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিওতে ইংরেজি ও সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়ছিলেন তিনি। ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর আরেকটি ছোটগল্প সংকলন ‘ড্যান্স অব দ্য হ্যাপি শেডস’।

৬. হার্টা মুলার

Herta Müller wird 70: Ein kalter, klarer Blick auf die Welt২০০৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পান জার্মান-রোমানিয়ান লেখিকা হার্টা মুলার। ভাষার কাব্যিকতার জন্য তাঁর লেখনী বিশ্বজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছে। ১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয় মুলারের প্রথম ছোটগল্পের বই ‘নিয়েদেরুনজেন’ (নাদিরস)। এ গল্পগ্রন্থকে অনেকটাই মুলারের রোমানিয়ান জীবনের আত্মকথা বলে মনে করা হয়। মুলারের বিখ্যাত কাজের মধ্যে রয়েছে ২০০৯ সালে প্রকাশিত ‘দ্য হাঙ্গার অ্যাঞ্জেল’ উপন্যাসটি।

৭. ডরিস লেসিং

Doris Lessing obituary | Doris Lessing | The Guardian

২০০৭ সালে সাহিত্যে নোবেল পান ডরিস। সাহিত্যে নোবেলজয়ীদের মধ্যেই তিনি সবচেয়ে বয়স্ক। রাজনৈতিক এবং নারীবাদ তাঁর লেখনীর মূল শক্তি। ১৯৫০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য গ্রাস ইজ সিংগিং’। জিম্বাবুয়ের মানুষের মধ্যে জাতি ও বর্ণবাদের যে বিরোধ, তাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে উপন্যাসটিতে। এ ছাড়া ব্রিটিশ এই লেখিকার বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ১৯৬২ সালে প্রকাশিত ‘দ্য গোল্ডেন নোটবুক’।

৮. এলফ্রিদে জেলিনেক

2004 সালে জেলেনেক

২০০৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পান তিনি। অস্ট্রিয়ান এই ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার প্রথম জীবনে ছিলেন একজন মিউজিশিয়ান। ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লিসা’স শ্যাডো’। নারীর যৌন স্বাধীনতা তাঁর লেখার মূল উপজীব্য। তাঁর বিভিন্ন বক্তব্য অনেক সময় বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত ‘দ্য পিয়ানো টিচার’ তাঁর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস।

৯. ভিসলাভা সিমবরস্কা

Preminula Vislava Šimborska | SEEcult.org

১৯৯৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পান উইসলাওয়া। পুরস্কৃত করার সময় নোবেল কমিটি তাঁকে ‘কবিতার মোজার্ট’ বলে সম্বোধন করে। যুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদ উইসলাওয়ার লেখার মূল বিষয়। ১৯৪৫ সালে এই পোলিশ কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আই অ্যাম লুকিং ফর এ ওয়ার্ড’ প্রকাশিত হয়। ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘ডুয়েকরোপেক’।

১০. টনি মরিসন

টনি মরিসন

১৯৯৩ সালে সাহিত্যে পুরস্কার পান মার্কিন লেখিকা টনি মরিসন। আফ্রিকান-আমেরিকান চরিত্রগুলো তাঁর লেখায় মুখ্য হয়ে ওঠে। ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দ্য ব্লুয়েস্ট আই’। এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণীর কাহিনী এই উপন্যাসে বর্ণনা করা হয়েছে, যে কি না খুব করে চায় তার চোখটা যেন নীল হয়ে যায়। ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত হয় টনির আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস ‘বিলাভেড’। এ উপন্যাসের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পান তিনি। উপন্যাস অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়, যাতে অভিনয় করে অপেরাহ উইনফ্রে।

 

১১. নাদিন গর্ডামার

https://www.nobelprize.org/images/gordimer-13432-portrait-medium.jpg

১৯৯১ সালে সাহিত্যে নোবেল পান দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া এই লেখিকা। নোবেল কমিটি তাঁর কাজের বর্ণনায় বলে, ‘মানবতার জন্য অত্যন্ত সুখকর।’ বর্ণবাদ নিয়ে বেশি লেখালেখি করেছেন নাদিন। বিশেষ করে জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের ভয়াবহ চিত্র তাঁর লেখায় ফুটে উঠেছে। ১৯৫১ সালে দ্য নিউইয়র্কার পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গল্প ‘দ্য ওয়াচার অব দ্য ডেড’। এই লেখার মাধ্যমে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য কনজারভেশনিস্ট’। এই উপন্যাসের জন্য ফিকশন ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে ম্যান বুকার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি।

 

১২. নেলি স্যাচস

Central Press/Getty Images

১৯৬৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান নেলি। জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি বেড়ে ওঠেন সুইডেনে। কবি ও নাট্যকার নেলির লেখার মূল উপজীব্য বিষয় নাৎসি বাহিনীর ক্ষমতায় আরোহণের পর ইহুদিদের বিষাদময় জীবনের কথা। গীতিকাব্যধর্মী ধরনের লেখা তাঁর মূল শক্তি। ১৯৪৩ সালে তিনি লেখেন তাঁর নাটক ‘এলি : আ মিস্ট্রি প্লে অব দ্য সাফারিংস অব ইসরায়েল’। গণহত্যা নিয়ে লেখা এটাই পৃথিবীর প্রথম নাটক।

 

১৩. গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল

Gabriela Mistral: First Latina to Win the Nobel Prize in ...

১৯৪৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পান গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল। চিলির এই কবি হচ্ছেন লাতিন আমেরিকান অঞ্চলের একমাত্র নারী, যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। গ্যাব্রিয়েলার কবিতায় মূলত লাতিন আমেরিকার আলাদা সত্তার পরিচয় বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। ১৯২২ সালে প্রকাশিত তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘ডিসপেয়ার’ সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছিল।

 

১৪. পার্ল বাক

পার্ল এস. বাক - উইকিপিডিয়া

১৯৩৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন পার্ল বাক। আমেরিকায় জন্ম নিলেও চীনে বড় হন এই লেখিকা। ৩০টির বেশি উপন্যাস লিখেছেন পার্ল বাক। এর বাইরেও রয়েছে তাঁর আত্মজীবনী, নন-ফিকশন ও ছোটগল্প। ১৯৩১ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘দ্য গুড আর্থ’ উপন্যাসটি রচিত হয়েছিল চীনের গ্রামীণ জীবন নিয়ে। এ উপন্যাসের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।

 

১৫. সিগরিড আন্ডসেট

Sigrid Undset - Wikipedia

১৯২৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পান সিগরিড আন্ডসেট। নরওয়ের এই লেখিকা তাঁর কাজ নিয়ে নানা রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন। ইতিহাসভিত্তিক বেশ কিছু উপন্যাস লিখেছেন তিনি। ‘ক্রিস্টিন ল্যাভর‍্যান্সডেটার’ তাঁর বিখ্যাত ট্রিলজি, যা ১৯২০ সাল থেকে প্রকাশিত হয়। ১৫০০ শতকের এক নারীর জীবনী নিয়ে সিগরিড দীর্ঘ এই উপন্যাস লিখেছিলেন।

 

১৬. গ্রাজিয়া ডেলেড্ডা

Grazia Deledda - Wikipedia

১৯২৬ সালে নোবেল পান গ্রাজিয়া ডেলেড্ডা। সার্দিনিয়ায় জন্মগ্রহণ করা এই ইতালিয়ান লেখিকার লেখায় ঘুরেফিরে এসেছে তাঁর জন্মস্থানের মানুষের ভালোবাসা ও পাপের গল্প। এসেছে তাঁর নিজের পরিবারের গল্প। প্রথম ইতালিয়ান নারী হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন গ্রাজিয়া। ১৯২০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর উপন্যাস ‘লা মাদরে’। যেখানে এক সার্দিনিয়ান মায়ের গল্প বলা হয়েছে, যার একমাত্র ছেলে প্রেমে পড়ে এক বিধবার।

 

১৭. সেলমা লাগেরলফ

সেলমা লাগেরলফ - উইকিসংকলন একটি মুক্ত পাঠাগার

১৯০৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পান সেলমা। সুইডেনে জন্ম নেওয়া সেলমা হচ্ছেন পৃথিবীর প্রথম নারী, যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। শিশুসাহিত্যিক হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন। ১৯০৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বই ‘দ্য ওয়ান্ডারফুল অ্যাডভেঞ্চার্স অব নিলস’।

 

নারী উদ্যোক্তাদের ঋণপ্রাপ্তি সহজ করতে হবে: স্পিকার

 

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ, আর্থিক সহায়তা ও প্রণোদনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, `আমাদের দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে নারীরা একটি বড় অংশ। তাদের সহজ ঋণপ্রাপ্তি, আর্থিক সহায়তা এবং প্রণোদনা দিয়ে এগিয়ে নেওয়া হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের মতো এগিয়ে যাবে।’

শনিবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) জাতীয় অপরাজিতা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

খান ফাউন্ডেশন, ডেমোক্রেসিওয়াচ, প্রিপ ট্রাস্ট ও রূপান্তর যৌথভাবে এর এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর বলেন, নারীরা তাদের সংগ্রাম ও যোগ্যতার জন্য বিভিন্ন স্তরে অবস্থান করলেও এখনো নারীরা কিছু ক্ষেত্রে অবহেলিত।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, এমপি অ্যারোমা দত্ত, এমপি নাসিমা জামান ববি এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেটো রেঙ্গলি।

সম্মেলনে দেশের ছয় বিভাগ থেকে আসা ৩০০ ‘অপরাজিতা’ নারী নেত্রীদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং প্রকল্পের দাতা সংস্থা ও বাস্তবায়নকারী সংস্থাসমূহের কর্মকর্তা ও কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

গরমে খাবারের তালিকায় রাখুন প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার

 

 

প্রোবায়োটিক হলো কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া যা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করে আমাদের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে ।  গরমে প্রোবায়োটিক রয়েছে এমন খাবার খাওয়া ভালো। এগুলি খেলে মনও ভালো হয়, কারণ এ খাবারগুলোর মাধ্যমে শরীরে কিছু হরমোন নিঃসৃত হয় যা আপনাকে ভালো বা খুশি বোধ করতে সাহায্য করে।

চলুন জেনে নেই কোন খাবারগুলোতে প্রোবায়োটিক রয়েছে:

 

দই

Got Leftover Dahi? Here Are 3 Ways You Can Use It | HerZindagi

প্রোবায়োটিকের উন্নত উৎস টকদই। এটি অন্ত্রের ও হাড়ের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি করে।
দইয়ে প্রচুর একটিভ ব্যাকটেরিয়া থাকে যেগুলো আমাদের অন্ত্রের জন্য উপকারী। শরীরে দরকারি ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে পাচক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। দই দুধ থেকে তৈরি হলেও এতে দুধের চেয়ে বেশী প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম এবং প্রোবায়োটিক থাকে। বেশি উপকারিতা পেতে আপনি ঘরেই দই বানিয়ে খেতে পারেন।

পনির

Probiotic Foods — 30 Foods for Gut Health

দেশের বাজারে বিভিন্ন ধরনের পনির পাওয়া যায়। কটেজ চিজ বা পনিরে প্রোবায়োটিক সবচেয়ে বেশী থাকে। এই পনির সাধারণত নানারকম রান্নায় ব্যবহৃত হয় এবং এতে প্রোটিনও অনেক বেশী মাত্রায় থাকে। এতে অ্যাসিডের পরিমাণ কম থাকায় ভালো ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে সাহায্য করে। ফার্মেন্টেশনের পরেও পনিরে আসল দুধের প্রায় ৯০% ফ্যাট এবং প্রোটিন, ৫০% মিনারেল, এবং ১০% ল্যাক্টোজ বর্তমান থাকে।

 

বাটার মিল্ক

Health Benefits Of Buttermilk

মাঠা, বাটার মিল্ক অনেক জনপ্রিয় ও সুপরিচিত পানীয়। অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্যের মতো, এতেও প্রচুর পরিমানে প্রোবায়োটিক রয়েছে। দই এর মতই এর স্বাদও কিছুটা টক। খাবারের পরে এক গ্লাস বাটার মিল্ক পান করলে আপনার হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। শুধু তাই নয়, এটি আপনার অভ্যন্তরীণ সিস্টেম যে ভালো অবস্থায় আছে তা নিশ্চিত করে। বাটার মিল্ক বা ঘোল বয়স্ক লোকদের জন্য বেশ উপকারী পানীয়।

 

উত্তরা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. ইয়াসমীন আরা লেখার ডি-লিট ডিগ্রি অর্জন

ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট) ডিগ্রি অর্জন করেছেন উত্তরা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন আরা লেখা।

৪ এপ্রিল অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন আরা লেখাকে এই ডিগ্রি প্রদান করে রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন আরা লেখার থিসিসের টপিক ছিল ‘বাংলাদেশের প্রবাদ প্রবচন: ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’। তার থিসিসের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. এসকে পাল।

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে উত্তরা ইউনিভার্সিটির নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন এই শিক্ষাবিদ। ড. লেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ে ১৯৯২ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৯৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। গবেষক হিসেবে অর্জনের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

 

 ১৭৩ দেশ ভ্রমণের মাইলফলক স্পর্শ করলেন বাংলাদেশি পরিব্রাজক 

বাংলাদেশি বিশ্ব পরিব্রাজক নাজমুন নাহার ১৭৩ দেশ ভ্রমণের ব্যক্তিগত মাইলফলকটি স্পর্শ করেছেন। আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কার ভ্রমণের মাধ্যমে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই অনন্য রেকর্ডটি গড়েছেন তিনি।
রোববার মাদাগাস্কারের রাজধানী আন্তানানারিভো ছাড়া আগে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নাজমুন নাহার নিজেই। তিনি জানান, ‘এবারের ভ্রমণটি ছিল বেশ দুর্ধর্ষ ও কষ্টসাধ্য অভিজ্ঞতার। মঙ্গোলিয়া, সিরিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সী শেল ও মাদাগাস্কার—প্রতিটি দেশের অভিজ্ঞতাই ছিল একেকটার চেয়ে ভিন্ন।’
নাজমুন এ বছরের শুরুতেই এবারের অভিযাত্রা শুরু করেন মঙ্গোলিয়া থেকে। ১৬৮ তম দেশ হিসাবে মঙ্গোলিয়া ও দুর্গম সাইবেরিয়া অঞ্চল অভিযাত্রা করেন ডব্লিউপিসি- ওয়ার্ক পারমিট ক্লাউডের পৃষ্ঠপোষকতায়। মঙ্গোলিয়ার জনপ্রিয় পত্রিকা ‘জুনিমেডে (সেঞ্চুরি)’ এবং গো পো গণমাধ্যম নাজমুনকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
রমজানের প্রথমেই নাজমুন অভিযাত্রা শুরু করেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং দেশগুলো ভ্রমণের মাধ্যমে। এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল মানব কল্যাণে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা। তাই আরএফসি- রামাদান ফ্যামিলি কমিটমেন্টের অ্যাম্বাসেডর হয়ে ‘সাফার ফর পিস’-এর এই অভিযাত্রায় শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে নাজমুন যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, আফ্রিকান কন্টিনেন্টের দেশ সী শেল এবং পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র দেশ মাদাগাস্কার ভ্রমণ করেন।
এই ৫টি দেশে নাজমুন ভ্রমণ করেন ৫৬ হাজার ৭৭ কিলোমিটার পথ। যা ছিল অত্যন্ত দুর্গম এবং কঠিনতম দেশ ভ্রমণের অংশ। এই সফরে বাংলাদেশের পতাকা বাহনের পাশাপাশি ইউকে বেসড টিভি চ্যানেল, চ্যানেলে এস এর  উদ্যোগে ২৬টি চ্যারিটিকে সহযোগিতার জন্য মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন নাজমুন।
বাংলাদেশি এই পরিব্রাজক জিম্বাবুয়ে ভ্রমণের মাধ্যমে শততম দেশ পূর্ণ করেছিলেন ২০১৮ সালের ১ জুন। এরপর ২০২১ সালের অক্টোবরে তিনি ১৫০টি দেশ ভ্রমণ সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু এখনো তিনি থেকে নেই। লাল-সবুজের পতাকা হাতে তার জয়যাত্রা চলছেই।

 

প্রথম পেশাদার নারী সাহিত্যিক আফরা বেন

 

বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম পেশাদার নারী সাহিত্যিক আফরা বেন (Aphra Behn) বিখ্যাত হয়েছিলেন তাঁর রচিত নাটক, গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও অনুবাদ সাহিত্যের কারণে। ইংল্যান্ডের ক্যান্টাবেরির কাছে ১৬৪০ সালের ১৪ ডিসেম্বরে জন্মেছিলেন তিনি। এখনকার সময়ের চেয়েও পিছিয়ে থাকা সময়ে নারী হয়ে তিনি লিখেছিলেন তৎকালীন সমাজের রূঢ় বাস্তবতাগুলো নিয়ে। জীবিত অবস্থায় তিনি ছিলেন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। তাঁর লেখায় সমাজ সচেতনতা, লিঙ্গসমতা ও বর্ণবাদ বিরোধিতা তাঁকে সাহিত্যজগতে করে তুলেছে অনন্য। নিজেকে একজন পেশাদার লেখক হিসেবে তিনি দাবি করতেন। শুধু লেখালেখি করেই তিনি স্বাধীনভাবে জীবিকা নির্বাহ করেছিলেন ওই সময়ে। সে হিসেবে পৃথিবীর প্রথম পেশাদার নারী লেখক হিসেবে তাঁকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

আফরা বেনের জনপ্রিয় একটি উপন্যাস ‘অরুনোকো’ (Oroonoko), যেটিকে আজও ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে ধরা হয়। তাঁর মৃত্যুর এক বছর আগে ১৬৮৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল উপন্যাসটি।
আফ্রিকার সুরিনাম দেশের রাজপুত্র অরুনোকোর দাস মালিকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কাহিনী নিয়েই এই উপন্যাস। অরুনোকোর কাহিনী ছিল অনেকটা এমন :
অরুনোকোর পিতামহ (দাদা) ছিল আফ্রিকার একটি সম্প্রদায়ের রাজা। প্রচণ্ড লোভী ও বর্বর এই রাজার ছিল অনেক পত্নী-উপপত্নী ও সেবা দাসী। অরুনোকো ভালোবেসেছিল ইমোইন্ডাকে, গোপনে বিয়েও করেছিল তারা। কিন্তু অরুনোকোর দুশ্চরিত্র দাদা ইমোইন্ডাকে বিয়ে করতে চায়। তাতে রাজি না হওয়ায় জোর করে ইমোইন্ডাকে বানায় তার সেবাদাসী।
তবুও অরুনোকো আর ইমোইন্ডার প্রেম বাধা মানে না। একদিন ধরা পড়ে যায় ওরা। রাজা ইমোইন্ডাকে ক্রীতদাসী হিসেবে বেঁচে দেয় জঙ্গলে আর অরুনোকোকেও ক্রীতদাস বানিয়ে বিক্রি করে দেয়। অনেক জায়গায় হাতবদল হয়ে অরুনোকো একদিন সেই জঙ্গলেই নির্বাসিত হয়ে ফিরে আসে, যেখানে তার প্রেমিকা ইমোইন্ডা আছে।

আবার মিলন ঘটে অরুনোকো আর ইমোইন্ডার। সেখানে তারা নিয়মিত মিলিত হতে থাকে। ফলে ইমোইন্ডা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। নিরাপদ প্রসবের জন্য অরুনোকো ইমোইন্ডাকে দেশে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু এই আবেদন নাকচ করে দেয় ব্রিটিশ দাস মালিক ট্রেফরি ও ডেপুটি গভর্নর বিয়াম। প্রতিবাদী হয়ে ওঠে অরুনোকো। অন্যান্য ক্রীতদাসকে সঙ্গে নিয়ে মালিকের বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করে। সেই যুদ্ধে ক্রীতদাসরা পরাস্ত হয়। ইংরেজ ডেপুটি গভর্নর বিয়াম অরুনোকোর ওপর বর্বরতম নির্যাতন চালায়। তারপর শর্ত চাপিয়ে তাকে মুক্তি দেয়।

মুক্তি পেয়ে বিদ্রোহী অরুনোকো বিয়ামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নেয়। সেই যুদ্ধে তার মৃত্যুর আশঙ্কা আছে। তার মৃত্যুতে স্ত্রী ইমোইন্ডার জীবনে যে অপমান নেমে আসবে, তা থেকে মুক্তি দিতে স্ত্রীর সম্মতিতে যুদ্ধের আগেই অরুনোকো ইমোইন্ডাকে হত্যা করে। কিন্তু বিয়ামকে মারতে পারে না অরুনোকো। বন্দি অরুনোকোকে মেরে রক্তাক্ত করে তার সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে সর্দারদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়।

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে যোদ্ধা অরুনোকো যেন রোমের দাস বিদ্রোহের কিংবদন্তি নেতা স্পার্টাকাসেরই উত্তরসূরি। একই সঙ্গে অরুনোকো আমাদের সামনে একজন প্রেমিক ও স্বামীর প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে, যে তার স্ত্রীর সম্মান রক্ষার জন্য যুদ্ধ করে।

আফরা বেনের জীবন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। তথ্য খুবই কম, নির্ভরযোগ্য তথ্য আরো কম। পৈতৃক নাম আফরা জনসন। তাঁর শৈশব-কৈশোরের সময়টা ছিল ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্রের সংকটকাল, যাকে ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের কাল হিসেবে ধরা হয়।

ধারণা করা হয়, তিনি ১৬৬৩-৬৪ সালের দিকে আফ্রিকার সুরিনামে ছিলেন। আর সেখানেই তিনি অরুনোকোর কাহিনী বর্ণনাকারীর দেখা পান। ১৬৬৪ সালে লন্ডনে ফিরে তিনি মিস্টার বেন নামের এক বণিককে বিয়ে করেন। মিস্টার বেন ১৬৬৫ সালে মারা যান। তবে অনেকে মনে করেন, লেখিকা আত্মরক্ষার স্বার্থে নিজেকে বিবাহিত বলে দাবি করতেন, বাস্তবে তিনি বিয়েই করেননি।

ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের সুনজরে থাকায় কিছুদিন তিনি ব্রিটিশ সরকারের গুপ্তচর হিসেবেও কাজ করেছেন। বিনা বেতনের চর হিসেবে কাজ করতে গিয়ে অনেক দেনা করে ফেলেন লেখিকা, ফলে ঋণের দায়ে তাকে জেলখানায় কাজ করতে হয়েছিল। এর পর তিনি গুপ্তচরবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে নাটকে মনোনিবেশ করেন।

তাঁর প্রথম নাটক ছিল ‘দ্য ফোর্সড ম্যারেজ’ (১৬৭০), যা তাঁকে খ্যাতি ও অর্থ, দুই-ই এনে দেয়। ১৬৭১ সালে করেন ‘দি আমোরাস প্রিন্স’। এরপর একে একে ‘দ্য ডাচ লাভার’ (১৬৭৩), ‘আবদেলাজার’ (১৬৭৬), ‘দ্য টাউন ফপ’ (১৬৭৬), ‘দ্য ডেবাউচে’ (১৬৭৭), ‘দ্য কাউন্টার ফিট ব্রাইডগ্রুম’সহ (১৬৭৭) বেশ কয়েকটি সফল নাটক রচনা করেন।

ইংল্যান্ডের সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে (১৬৭৯-৮১) সেই সংকট নিয়ে মন্তব্য করার কারণে আফরা বেনকে আইনি হাঙ্গামা পোহাতে হয়।

আফরা বেনের সবচেয়ে সফল নাটক ছিল ১৬৭৭ সালে মঞ্চস্থ করা ‘দ্য রোভার’। ‘দ্য রোভার’-এর দ্বিতীয় অংশ মঞ্চস্থ করা হয় ১৬৮১ সালে। তাঁর অনেক নাটকেই যৌন বিষয় উপস্থাপনের কারণে সমসাময়িক সময়ে তিনি প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

তাঁর কবিতার বইয়ের মধ্যে ‘পোয়েমস আপন সেভারেল অকেশনস’ (১৬৮৪), ‘লাভ লেটারস বিটউইন এ নোবেল ম্যান অ্যান্ড হিজ সিস্টার’, ‘দি আমোরস অব ফিল্যান্ডার অ্যান্ড সিলভিয়া’ (১৬৮৭) উল্লেখযোগ্য।

মৃত্যুর আগে তিনি রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগে ভুগেছিলেন। ১৬৮৯ সালের ১৬ এপ্রিলে লেখিকা মারা যান। তাঁকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে সমাহিত করা হয়।

 

কঙ্গোর প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী জুডিথ সুমিনওয়া

ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেডি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ দিয়েছেন।পরিকল্পনামন্ত্রী জুডিথ সুমিনওয়াকে কঙ্গোর প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে।

বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জিন-মিশেল সামা লুকোন্ডের কাছ থেকে অর্থনীতিবিদ জুডিথ সুমিনওয়া প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গত জানুয়ারিতে শিসেকেদির দ্বিতীয় মেয়াদের ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী এবং সরকার গঠন নিয়ে কয়েক সপ্তাহের অনিশ্চয়তার অবসান ঘটল।জাতীয় টেলিভিশনে নতুন প্রধানমন্ত্রী সুমিনওয়া বলেন, ‘আমি মহান দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন… আমরা শান্তি ও দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করব।’ কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট সিসেকেডি আনুষ্ঠানিকভাবে ডিসেম্বরে ৭৩.৪৭ শতাংশ ভোট নিয়ে বিজয়ী হন। দীর্ঘ সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতায় বিধ্বস্ত দেশটিতে নির্বাচন অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়।

সোনা এবং মূলবান খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ কঙ্গো।

গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে শতাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াই করে আসছে দেশটির সরকার। এই সংঘাতে গত এক দশকে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ফলে নতুন প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।
সূত্র : রয়টার্স

 

যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বদলে দিয়েছে যে নারীর উদ্ভাবন

বিভিন্ন প্রয়োজনে এবং প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ইন্টারনেটে অডিও এবং ভিডিও কলের প্রযুক্তি উদ্ভাবন যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আমূল বদলে দিয়েছে। এক্ষেত্রে এককভাবে যাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি তাঁর নাম মারিয়ান রজার্স ক্রোক। তিনি বেলের হিউম্যান ফ্যাক্টরস বিভাগে শুরু করেছিলেন, মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে তা অধ্যয়নের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে।

১৯৯০ এর দশকের শুরুর দিকে দুই হাজারের বেশি প্রকৌশলীর একটি দল নিয়ে ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (ভিওআইপি) প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কাজ শুরু করেন ক্রোক। ভিওআইপি পরবর্তীতে ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগের দুয়ার খুলে দিয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ভিওআইপির হাত ধরে পরবর্তীতে জুম, ফেসটাইম, স্কাইপির মতো অ্যাপ্লিকেশন বিকাশ লাভ করে।

মার্কিন টেলিযোগাযোগ কোম্পানি এটিঅ্যান্ডটিতে ক্রোকের নেতৃত্বে ১৯৯৫ সালে ভিওআইপির কাজ শেষ হয়। ভয়েসের ডেটা ডিজিটালাইজ করে তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ট্রান্সমিট করার মধ্য দিয়ে কাজ করে ভিওআইপি। এই প্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগ বিকাশ লাভ করার পর প্রচলিত টেলিফোন ব্যবস্থা বলতে গেলে অকার্যকর হয়ে পড়ে।

করোনা মহামারির সময় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসে জুম বা অন্য মাধ্যমে ভিডিও কল ক্রোকের উদ্ভাবনের প্রভাবের কথা সবাইকে নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়। ভিওআইপিকে ভবিষ্যতের যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য বলে ধরা হয়।

ক্রোকের নামে প্যাটেন্ট করা উদ্ভাবনের সংখ্যা ২০০ এর বেশি। তাঁর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন ‘টেক্সট ডোনেশন’ প্রযুক্তি। মোবাইল ব্যবহারকারীরা টেক্সট ডোনেশন অ্যাপ ব্যবহার করে দুর্যোগকবলিত অঞ্চলের সার্বিক তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। রিয়েল-টাইমে এটি করা যায়। উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ ব্যবস্থাকে বদলে দিয়েছে এই প্রযুক্তি।

ক্রোক ২০১৪ সালে গুগলে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে নানা উদ্ভাবন চালিয়ে যাচ্ছেন। গুগলের প্রকৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের মধ্যে ডিজিটাল ব্যবধান কমিয়ে আনতে, প্রযুক্তি খাতে বর্ণ ও লিঙ্গ সমতা তৈরি করতে কাজ করছেন ৬৯ বয়সী ক্রোক।

প্রসঙ্গত, যোগাযোগ ব্যবস্থায় অবদানের স্বীকৃতি হসেবে ২০২২ সালে ক্রোককের নাম আমেরিকার ন্যাশনাল ইনভেন্টরস হল অব ফেমে স্থান করে নেয়। এর আগে প্যাট্রিসিয়া বাথ নামে আরেকজন কৃঞ্চাঙ্গ নারী এ বিরল সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন।

 

তিন মাসে ধর্ষণের শিকার ১১৪ নারী: আসক

 

চলতি বছর প্রথম তিন মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১১৪ নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে তিন জন নারীকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন একজন নারী। ৩১ জন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৩৭ জন নারী। এর মধ্যে ৬৫ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৪৯ জন নারী। এছাড়া শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৩ জন।

আজ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৬ জন। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে পাঁচ জনকে এবং যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন দুই জন নারী। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আট জন। সাত জন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা, চলতি বছর প্রথম তিন মাসে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৭৯ জন নারী-পুরুষ। তাদের মধ্যে হামলার শিকার হয়েছেন ৫৫ জন নারী ও ২৪ জন পুরুষ। বখাটেদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন ৪৫ জন। বখাটেদের উৎপাতকে কেন্দ্র করে সংঘাতে আহত হয়েছেন ২৬ জন।

এতে আরও বলা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে গত তিন মাসে ৩২৫ শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। এরমধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে ১৩৯ শিশু এবং একজন ছেলে শিশুকে বলাৎকারের পর হত্যা করা হয়েছে। আত্মহত্যা করেছে ২৭ শিশু। বিভিন্ন সময়ে ৩২ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বলাৎকারের শিকার হয়েছে ১৪ ছেলে শিশু এবং বলাৎকারের চেষ্টা করা হয়েছে একজন শিশুকে।

আসক বলছে, হেফাজতে মৃত্যু, সীমান্তে হত্যা, সাংবাদিক নিপীড়নসহ মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেওয়ার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে আইনের শাসন ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা জরুরি। অন্যথায়, বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বাড়তে থাকে। রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকের সব ধরনের মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার দ্রুততার সঙ্গে নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা, সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতাসহ বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ২৬৮টি। এতে নিহত হয়েছেন ২৩ জন। আহত হয়েছেন অন্তত ২ হাজার ৩৬৮ জন।

দেশের গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক ও নির্যাতন করে কারাগারে পাঠানোর পর ঢাকা ও চট্টগ্রামে ২ জনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বিগত তিন মাসে কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৩৫ জন। এর মধ্যে কয়েদি ১৪ জন এবং হাজতি ২১ জন। গত তিন মাসে ২০টি ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৩টি বাড়িসহ ২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। এ ছাড়া ১৫টি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

গত তিন মাসে ৮১ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলা ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ এর গুলি ও নির্যাতনে নিহত হয়েছেন ছয় বাংলাদেশি নাগরিক। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও চার জন। অপর দিকে মিয়ানমার সীমান্তে মর্টার শেলের আঘাতে একজন বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশে আশ্রিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একজন নিহত হয়েছেন।

তিন মাসে গণপিটুনীর ঘটনায় নিহত হন ১৭ জন। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগে ৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে একজন, খুলনা বিভাগে একজন এবং সিলেট বিভাগে একজন নিহত হয়েছেন।

সূত্রঃ আজকের পত্রিকaা

 

ভারতে নারীদের জন্য বছরে ১০ দিন বাড়তি ছুটি

নারীদের জন্য বছরে ১০ দিন বাড়তি ছুটির ঘোষণা করল ভারতের ওড়িষা রাজ্য সরকার।

আজ মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এতদিন রাজ্য সরকারের বিভিন্ন অফিসে কর্মরত নারী কর্মচারীরা বছরে ১৫টি ক্যাজুয়াল লিভ (সিএল) পেতেন। এখন থেকে তাদের ক্যাজুয়াল লিভের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২৫টি।

নতুন এ সিদ্ধান্তের কথা জানান ওড়িষার মুখ্যন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। ‍মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে নারী সরকারি কর্মচারীদের বাড়িতে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। তাদের ওপর বাড়তি চাপ থাকে। সেটা বিবেচনা করেই ক্যাজুয়াল লিভের সংখ্যা ১০টি বাড়ানো হয়েছে।

অনেকে বলছেন, আসন্ন লোকসভা আর বিধানসভা নির্বাচনে নারী ভোটারদের মন জয় করতেই এমন সিদ্ধান্ত নিল ওড়িষা সরকার। ইতোমধ্যে সরকারি চাকরিতে নারীদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষিত আসন রাখা হয়েছে।

গত বছরের অক্টোবরে রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছিল স্কুটার কেনার জন্য দুই লাখ নারীকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেবে সরকার। সেজন্য কোনো সুদ দিতে হবে না। সেই প্রকল্পের আওতায় সুদ বহন করার জন্য পট্টনায়েক সরকারের তরফে ৫২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল।

 

ইফতারের আয়োজনে মজাদার কাস্টার্ড

 

ইফতারে পেট ও মনকে প্রশান্তি এনে দিবে এমন খাবারের খোঁজেই থাকেন অনেকে। যারা স্বাদ, পুষ্টি দুটো বিষয়কে এক সূতায় বাঁধতে চান তারা ইফতার আয়োজনে রাখতে পারেন ফ্রুট কাস্টার্ড।

আসুন জেনে নেই রেসিপি-

উপকরন
ইভাপোরেটেড মিল্ক ৩৫৪ মিলি (ইভাপোরেটেড মিল্ক না থাকলে আধা লিটার দুধ ঘন করে নিলেই হবে)
হেভি ক্রিম আধা কাপ
চিনি ৩ টেবিল চামচ বা স্বাদমত
কর্ণফ্লাওয়ার দেড় টেবিল চামচ
ডিমের কুসুম ১ টি
ভ্যানিলা এসেন্স ১ চা চামচ
ইচ্ছামত ফ্রুট (স্ট্রবেরি, কলা, আপেল, আঙ্গুর, আম, বেদানা)
জেলো আধা কাপ (২ ফ্লেভারের)

প্রস্তুত প্রণালী

প্রথমে প্যাকেটের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলো তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দিন সেট হবার জন্য।

এরপর একটি পাত্রে ইভাপোরেটেড মিল্ক, হেভি ক্রিম, চিনি, কর্ণফ্লাওয়ার, ভ্যানিলা এসেন্স এবং ডিমের কুসুম নিয়ে সব একসঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে নিন।
পাত্রটি চুলায় বসিয়ে দিয়ে মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন। মিশ্রণটি ঘন ঘন নাড়ুন যাতে দুধ পাত্রের নিচে না লেগে যায়।
জ্বাল দিতে দিতে দুধের মিশ্রণ ঘন হয়ে গেলে চুলা বন্ধ করে দিয়ে পাত্র চুলা থেকে নামিয়ে নিন।

এখন রুম টেম্পারেচারে দুধ ঠাণ্ডা করে নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন ২ ঘণ্টা।
সবশেষে পছন্দসই ফল এবং জেলো কেটে কাস্টার্ডের সঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করুন।

 

ইফতার ও সেহরির খাবার কেমন হওয়া উচিত?

ইফতার : শুরু করা উচিত একগ্লাস পানি দিয়ে। ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে। কৃত্রিম শরবতের চেয়ে লেবুর শরবত স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে এক গ্লাসের বেশি শরবত না খাওয়াই ভালো। খেজুর অবশ্যই খাওয়া যেতে পারে।

 

ডায়াবেটিস রোগীরা একটি বা দুটি খেজুর খেলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ খেজুরের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তুলনামূলকভাবে কম। ডায়াবেটিস রোগীরা চাইলে কম মিষ্টিযুক্ত খেজুর সংগ্রহ করতে পারেন। আলজেরিয়া থেকে আমাদের দেশে যেসব খেজুর আসে সেগুলোর মিষ্টি অনেক কম।

শসা খাওয়া যেতে পারে যেহেতু এখন পর্যন্ত এর মধ্যে রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়নি। তরমুজ খেতে চাইলে সাবধানে খেতে হবে। কারণ তরমুজ টকটকে লাল রং করার জন্য অভিনব উপায়ে রঙিন রাসায়নিক পদার্থ তরমুজে প্রবেশ করানো হয়। পেট ভরে ইফতার করবেন না। এর ফলে পেটের সমস্যা ছাড়াও নামাজ এবং অন্যান্য ইবাদত করতে সমস্যা হবে।

অনেক সুস্থ মানুষ এমনভাবে ইফতার করেন যে, পরের দিন ইফতার পর্যন্ত ক্ষুধা লাগে না। এভাবে খাবার গ্রহণ রোজার আদর্শ বিরোধী। মনে রাখতে হবে রোজার মাসে সব কিছুর মাঝে সংযম থাকতে হবে।

ইফতারের সময় রেস্টুরেন্ট এবং ফুটপাথে যেসব শরবত বিক্রি করা হয় তাতে বরফ মেশানো হয় যা মূলত সরবরাহ করা হয় মাছের জন্য ব্যবহৃত বরফ, এমনকি মৃত মানুষ সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবহƒত বরফ থেকে। মাঝে মাঝে ছোটখাটো কারখানা থেকে নদীর দূষিত পানি দিয়ে বরফ তৈরি করে তা বাজারে সরবরাহ করা হয়।

শুধু ইফতারের শরবত নয় বরং রমজান মাসে কেনাকাটা করার সময় মেয়েরা বিশেষ করে লাচ্ছি এবং ফালুদা খাবেই। লাচ্ছি এবং ফালুদাতেও একই বরফ মেশানো হয়। মুড়ি, ছোলা, পিঁয়াজু, ঘুগনি, জিলাপি, ধনেপাতা সবকিছু এক করে মিশিয়ে সবাই মিলে ভাগাভাগি করে খাওয়ার মাঝে এক অন্য ধরনের আনন্দ রয়েছে।

কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুড়িকে বড় এবং সাদা করার জন্য ইউরিয়া মেশানো হয়। ইউরিয়া মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ইউরিয়া হজমের জন্য প্রয়োজনীয় ইউরিয়েজ এনজাইম মানব দেহে না থাকার জন্য মানুষ ইউরিয়া হজম করতে পারে না ফলে ইউরিয়া দেহের অভ্যন্তরে থেকে যায়। ইউরিয়া খেলে অ্যাসিডিটির সমস্যা ছাড়াও বিভিন্ন জটিলতা সহ মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সাদা মুড়ি বর্জন করে হাতে ভাজা মুড়ি খেতে হবে।

ইফতারে কলা খেতে চাইলে কেনার সময় দেখেশুনে কিনতে হবে যেন কলাতে কার্বাইড মেশানো না থাকে। কার্বাইড পাকানো কলার বোঁটা হালকা সবুজ থাকে এবং কলার খোসা বা উপরিভাগ দাগহীন পরিষ্কার হলুদ রঙের হয়ে থাকে। স্বাভাবিক কলা কখনোই এরকম দাগহীন পরিষ্কার হলুদ রঙের হয় না। তবে ব্যতিক্রম দেখা যেতে পারে। ছোট চিনি চম্পা কলা অথবা বিচি কলা কিনতে পারেন। দাম কম বলে এবং লাভ কম হয় বলে রাসায়নিক মিশ্রণের সম্ভাবনা কম থাকে।

রমজান মাসে কেউ যদি হোটেলে খেতে বাধ্য হন তাহলে ভাতের সঙ্গে মুরগির মাংস না খাওয়াই ভালো। ঢাকা শহরের অধিকাংশ হোটেলে ভালো মুরগির সঙ্গে মরা মুরগিও রান্না করা হয়। তাই হোটেলে একান্তই খেতে হলে মুরগির পরিবর্তে মাছ খাওয়াই উত্তম।

কিডনি রোগীরা যদি রোজা রাখেন তাহলে ইফতারের সময় ডালের তৈরি কোনো ইফতার সামগ্রী গ্রহণ করবেন না। বেগুনি না খাওয়াই ভালো। বিভিন্ন রঙিন জিলাপি খাবেন না। রঙিন জিলাপিতে কৃত্রিম রং মেশানো থাকে। এটি আপনার কিডনির অবস্থা আরও খারাপ করে ফেলবে।

শুধু তাই নয় কৃত্রিম রং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। হালিম খাওয়া আপনার জন্য বিষের মতো। ইফতারের সময় কিডনি রোগীরা শুধু পানি দিয়ে ইফতার শুরু করবেন। ফলের মধ্যে আপেল, নাশপাতি খাবেন। দু একটি খেজুর খেতে পারেন। পালংশাক, পুঁইশাক, অথবা অন্য কোনো শাকের পাকুড়া খাবেন না। কাবাব জাতীয় খাবার খাবেন না। সামান্য ইফতার করে নামাজ পড়ার পর আপনি আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রাতের খাবার খেয়ে নেবেন। তরকারি হিসাবে চিচিঙ্গা, ধুন্দুল এবং লাউ খেতে পারেন।

সেহরি : সেহরি খাবার পর চা বা কফি পান করবেন না। সেহরিতে কোমল পানীয় অর্থাৎ কোল্ড ড্রিংকস খাবেন না। এতে দিনের বেলায় আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাবে। ডিহাইড্রেশন হতে পারে। তখন আপনার রোজা রাখতে বেশ কষ্ট হবে। যারা মুখের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তারা সেহরি খাবার পর মলম জাতীয় ওষুধ মুখের অভ্যন্তরে ব্যবহার করবেন না।

রোজারত অবস্থায় মলম গলার অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে রোজা ভেঙে যাবে। রোজা রাখা অবস্থায় দিনের বেলায় টুথপেস্ট ব্যবহার করা যাবে না। মেসওয়াক করতে পারেন। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে ইফতার থেকে শুরু করে সেহরি পর্যন্ত।

লেখক :ডা. মো. ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
চেম্বার : ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার, বর্ণমালা সড়ক, ইব্রাহিমপুর, ঢাকা।

 

শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তি চান নারী গৃহকর্মীরা

শ্রম আইনে গৃহকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করে শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি এবং ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫’ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন ৫ শতাধিক গৃহকর্মী।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ-এর সুনীতি প্রকল্প আয়োজিত ‘গৃহকর্মী জাতীয় সম্মেলন ২০২৪’ শীর্ষক সম্মেলনে এই আহ্বান জানায় গৃহকর্মীরা।

‘সময় এখন গৃহকর্ম এবং গৃহকর্মীর’ প্রতিপাদ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৫ শতাধিক গৃহকর্মীর অংশগ্রহণে আয়োজিত এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য শিরীন আখতার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশিষ দামলে। সভাপতিত্ব করেন ডিএসকে’র নির্বাহী পরিচালক ডা. দিবালোক সিংহ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শামসুল আলম বলেন, ‘সরকার নানানভাবে দেশের উন্নয়ন করছে। গৃহকর্মীদের জন্যেও এই সরকার সংবেদনশীল। তারই প্রমাণ ২০১৫ সালে গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫ প্রণয়ন করা। আমি মনে করি এ যাবতকাল পর্যন্ত গৃহকর্মীরা নিগৃহীত শ্রেণির। তাদের ছুটিছাটা নেই, যেখানে রান্না করেন সেখানেই ঘুমান, তারা নির্যাতিত হন এমনকি তাদের হত্যা পর্যন্ত করা হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহকর্মীদের মানবেতর জীবন থেকে সুস্থ জীবনে নিয়ে আসা, সেটাও একটা মানবিক সংগ্রাম। গৃহকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি ও শ্রমআইনে অন্তর্ভুক্তির দাবির সাথে আমি একমত। গৃহকর্মী নীতি ঠিকভাবে মনিটরিং হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, দেশে প্রায় ৪০ লাখ গৃহকর্মী রয়েছেন, আসন্ন জাতীয় বাজেটে তাদের জন্য সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখা যেতে পারে। সর্বশেষ, গৃহকর্মী এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সন্তানদের মাধ্যমিক পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদান করা যায় কিনা ভাবতে হবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সংসদ সদস্য শিরীন আখতার বলেন, ‘গৃহকর্মীদের কোনও ছুটি নেই, কাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, নেই কোনও নিয়োগপত্র, স্বাস্থ্যসুবিধা এবং ন্যূনতম মজুরি। গৃহকর্মীরা যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। তাদের সামাজিক মর্যাদা নেই এবং পেশা হিসেবে কাজের কোনও স্বীকৃতি নেই।’

এসময় নিজের অধিকারের কথা, বঞ্চনার কথা, সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন গৃহকর্মীদের একাধিক প্রতিনিধি। তাদের বক্তব্যে ন্যূনতম মজুরি, কর্মক্ষেত্রে নির্যাতন, পর্যাপ্ত ছুটি না থাকা বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।

 

শিশুর ভিটামিন ডি এর ঘাটতির লক্ষণ

ভিটামিন ‘ডি’ আমাদের শরীরের অপরিহার্য উপাদান যা হাড় ও মাংসপেশিতে ক্যালসিয়াম ও ফসফেট শোষনে সাহায্য করে। বিশেষ করে শিশুদের শারীরিক বিকাশে এই ভিটামিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। এই ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে শিশুদের রিকেটস ও অস্টিওম্যালেশিয়ার মতো রোগ হতে পারে।

 

দুর্বলতা ও ক্লান্তিভাব

দুর্বলতা ও ক্লান্তিভাব শিশুদের শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ অভাবজনিত প্রধান লক্ষন। এছাড়া মাংপেশিতে ব্যাথা ও যেকোনো কিছুতে শিশুর মনোযোগ না দেয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

ফ্যাকাশে ত্বক

শরীর ভিটামিন ‘ডি’ কোষ ভালো রাখতে কাজ করে। ভিটামিন ‘ডি’ সূর্য থেকে সরাসরি গ্রহন করলে ত্বক স্বাস্থ্যকর থাকে। এর ঘাটতি হলে শিশুর ত্বক ফ্যাকাশে ভাব দেখা দিতে পারে।

খাদ্যে অনীহা

ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। সবসময় শরীরে ক্লান্তিভাব থাকায় অনেকক্ষেত্রে শিশুর খাদ্যে অনিহা দেখা দিতে পারে। এতে ওজন কমে যেতে পারে।

অপর্যাপ্ত ঘুম

ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে শিশুদের স্লিপ ডিসঅর্ডাররের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

রাতে সহজে ঘুম না আসা বা কম ঘুম হওয়ার মতো সমস্যার কারনে শিশুর মধ্যে দুর্বলতা কাজ করে। এসব লক্ষণ শিশুদের মধ্যে দেখা দিলে তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার পাচ্ছেন ফওজিয়া করিম

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার (ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড) পাচ্ছেন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফওজিয়া করিম ফিরোজ। আগামী ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে পররাষ্ট্র দপ্তর গতকাল শুক্রবার রাতে এ ঘোষণা দেয়।

ফওজিয়া করিম ফিরোজসহ বিভিন্ন দেশের ১২ জন এ বছর আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার পাচ্ছেন। আগামী সোমবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ওয়াশিংটন ডিসিতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ফওজিয়া করিম ফিরোজ সম্পর্কে বলেছে, তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। তিনি বর্তমানে তাঁর নিজস্ব ল চেম্বারের প্রধান এবং ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এফএলএডি) চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নেতৃত্বে এফএলএডি গৃহকর্মীদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি বিষয়ে একটি রায়ে জিতেছিল।

ফওজিয়া ফিরোজ ব্যক্তিগতভাবে গার্মেন্টস শ্রমিকদের পক্ষে তাঁদের নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রায় তিন হাজার মামলা করেছেন।

তিনি বাংলাদেশ স্বাধীন গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ফেডারেশন (বিআইজিইউএফ) এবং গৃহকর্মী নির্দেশিকা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছেন।
ফওজিয়া করিম ফিরোজ এর আগে ২০০৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এসিড সারভাইভরস ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি। ২০২৩ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন যৌন হয়রানির মামলা পর্যালোচনা এবং আদালতে সুপারিশ করার জন্য তাদের পাঁচ সদস্যের কমিটিতে ফওজিয়া ফিরোজকে নির্বাচিত করেছে।

 

নারী উদ্যোক্তা : বাংলাদেশের ৪ ধ্রুপদী নারীর সফলতার গল্প

 

“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”

সাম্যের কবি নজরুল ঠিকই বলেছেন। বিশ্বের অর্ধেক জনসংখা যেখানে নারী সেখানে নারীকে বাদ দিয়ে এই পৃথিবীর সামগ্রিক উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়। আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও কথাটি পুরোপুরি সত্য। তবে অপ্রিয় সত্য হচ্ছে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতিতে পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ সবসময়েই কম। তবে আশার কথা এই যে, নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ এবং অবদান দিন দিন বাড়ছে। আজ নারী ঘরের বাইরে বেরোচ্ছে, নানা প্রতিযোগিতামূলক কাজে অংশ নিচ্ছে পুরুষের পাশাপাশি সমান তালেই। নারী আজ শুধু চাকরিই নয়, উদ্যোগী হচ্ছে নানা স্বাধীন ব্যবসায়। নারী দিবসের প্রাক্কালে আজ হাজির হয়েছি বাংলাদেশের চারজন স্বনামধন্য এবং সফল নারী উদ্যোক্তার গল্প নিয়ে। তারা শত বাঁধাকে জয় করে আজ নিজের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে হাজারো নারী উদ্যোক্তার প্রেরণা স্বরুপ কাজ করছেন প্রতিনিয়ত।

তসলিমা মিজি

আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগে তিনি এসেছেন বাংলাদেশের টেক ইন্ডাস্ট্রিতে। প্রযুক্তিকে আপন করে নিয়ে একজন নারী হিসেবে শুরু করেছেন নিজের স্বাধীন ব্যবসা। ২০১৮ সালে এসেও দেশের টেক জগতে যখন খুব একটা ‘নারী পদচারণা’ চোখে পড়ে না, তখন তসলিমা মিজির কথা অবশ্যই বলতে হয়।

স্বাধীন নারী উদ্যোক্তা তসলিমা মিজি প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান টেকম্যানিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা এবং চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (CEO)। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি হার্ডওয়্যার, হার্ডওয়্যার বিষয়ক বিভিন্ন সেবা এবং নেটওয়ার্কিং বিষয়ক ব্যবসার সাথে জড়িত। এটি বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির একটি নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। একজন নারীর পক্ষে ২০০৮ সালের দিকে হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার খাতে ব্যাবসা শুরু করা মোটেও সহজ কাজ ছিল না। ছিল প্রতিযোগিতা, নারী হিসেবে একটা খাতে প্রথম কাজ শুরু করবার প্রতিকূলতা। বিশেষ করে সাংবাদিকতার জগত থেকে উঠে আসা একজন মহিলা খুব একটা আন্তরিক পরিবেশ পাননি শুরুর সময়টাতে। কিন্তু অদম্য সাহসী মিজি থেমে থাকেননি কখনোই। নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য সুন্দর জায়গা নির্বাচন করে কাজ শুরু করেন তিনি। সময়ের সাথে সাথে একটু একটু করে গড়ে তোলেন তার নিজের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, যা আজকে বাংলাদেশের কম্পিউটার ব্যবসায় নিজের জায়গা করে নিয়েছে বেশ ভালভাবেই।

তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রতি মিজির পরামর্শ অনেকটা এরকম–

“সবসময় লক্ষ্যটা ঠিক রাখুন। প্রতিকূলতা আসবে, কখনো হতাশ হবেন না। প্রচেষ্টাগুলোকে ঠিক জায়গায় ব্যবহার করুন। আপনি অবশ্যই সফল হবেন।“

সামিরা জুবেরি হিমিকা

নিজের প্রতিষ্ঠান গড়ার আগে তিনি কাজ করছেন দেশি-বিদেশি নানা যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে। অভিজ্ঞতার ঝুলি করেছেন সমৃদ্ধ, শিখেছেন অনেক কিছুই। শেষে নিজেই আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে গড়ে তোলেন টিম ইঞ্জিন নামের প্রতিষ্ঠান, যার ম্যানেজিং ডিরেক্টর তিনি নিজেই। সামিরা জুবেরি হিমিকা’র কথা বলছি।

দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি শেষ করে তিনি কাজ শুরু করেন ইউএনডিপিতে। পরবর্তীতে কাজ করেন বিবিসি ওয়াল্ড সার্ভিস, বাংলাদেশের ডেপুটি প্রধান হিসেবে। এরপরে কাজ করেন জিপি হাউজ আর্ট হাব নামের এক প্রজেক্টে। এটি ছিল কোনো বেসরকারি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে পরিচালিত প্রথম উদ্যোগ। প্রায় ৫-৬ বছর এভাবে কাজ করে তিনি নিজেই একদিন উদ্যোগী শুরু করেন নিজের প্রতিষ্ঠানের। এখন তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘টিম ইঞ্জিন’ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা নীতি নির্ধারণী বিষয়ে কাজ করছে।

একজন মহিলা হিসেবে টেলিকম সেক্টরে কাজ শুরু করা মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু হিমিকার নানা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাকে সাহায্য করেছে এক্ষেত্রে। নিজের প্রতিষ্ঠান বাদেও তিনি বেসিসের একজন এক্সিকিউটিভ কমিটি সদস্য। বাংলাদেশে প্রযুক্তি স্টার্ট-আপ ক্ষেত্রে তিনি এখন এক অতি পরিচিত নাম। বিভিন্ন কম্যুনিটি ইভেন্টে প্রায়ই দেখতে পাই আমরা। তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রতি তার পরামর্শ অনেকটা এরকম-

“অভিজ্ঞতা অনেক জরুরি একটা বিষয়। অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করুন। অভিজ্ঞতা কাজে লাগবেই। কখনো দাম্ভিকতা দেখাবেন না। এটা নিজের উন্নতির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।“

সাবিলা ইনুন

তিনি বিশ্বখ্যাত সংস্থা ব্র্যাকের শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন দেড় বছরের বেশি সময় ধরে। পরবর্তীতে একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে ডিক্যাস্টালিয়া (DCastalia) নামক প্রতিষ্ঠানের সাথে আছেন শুরু থেকেই। দেখাশোনা করছেন প্রতিষ্ঠানটির ‘যোগাযোগ এবং ব্যবসা উন্নয়ন’ বিভাগ। কথা বলছি দেশের স্বনামধন্য নারী উদ্যোক্তা সাবিলা ইনুন সম্পর্কে।

কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বিভাগে পড়াশোনা করা সাবিলা কাজ করেছেন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠানেই। তথ্য প্রযুক্তি এবং উন্নয়ন ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে তার কর্মযজ্ঞ। বিজনেস ইন্টেলিজেন্স হিসেবে কাজ করেছেন গ্রামীণফোনে, কাজ করেছেন সেল বাজারে, ডি নেটে, তিনি কাজ করেছেন সিস্টেম সাপোর্ট প্রকৌশলী হিসেবে। অতঃপর ২০১২ সালে নাইকি ফাউন্ডেশনের গার্ল ইফেক্ট প্রজেক্টের ডিজাইন ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে যোগ দেন। এই প্রজেক্টের অধীনে তিনি ব্র্যাক এবং পরবর্তীতে ফ্রগ ডিজাইন নামের নামকরা আমেরিকান প্রতিষ্ঠানেও কাজ করেছেন। এছাড়াও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইউএনডিপির এসআইসিটি প্রজেক্টে কাজ করেছেন একজন ট্রেইনার ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে।

বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে একজন নারী হিসেবে তিনিও সম্মুখীন হয়েছেন নানা প্রতিবন্ধকতার। কিন্তু কখনো থেমে যাননি তিনি। অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করা সাবিলা উনুন বাংলাদেশের নারীদের জন্য বিশেষ করে তরুণী নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা স্বরুপ। প্রবল ইচ্ছা এবং যোগ্যতা থাকলে কোনো বাঁধা যে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, তার অনন্য উদাহরণ হয়ে আছেন সাবিলা উনুন।

আইভি হক রাসেল

তিনি ছিলেন একজন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার, কিন্তু স্বপ্ন দেখতেন বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া মহিলা জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু করবেন। হঠাৎ করেই একদিন আইডিয়া এলো, মহিলাদের স্বাস্থ্য এবং নানা রকম সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি অনলাইন ভিত্তিক কোনো ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে পারেন। চাকরি ছেড়ে দিলেন, প্রতিষ্ঠা করলেন অনলাইনভিত্তিক ওয়েবসাইট– মায়া। আইভি হক রাসেলের কথা বলছি, যিনি এখন ‘মায়া আপা’ নামেই বেশি পরিচিত।

আইভি হক তার নানা উদ্ভাবনী ধারণা এবং ব্যবসাকেন্দ্রিক চিন্তা-ভাবনার জন্য সুপরিচিত। বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন্যান্স এবং অর্থনীতির উপরে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন। অনেক আগে থেকেই মানুষকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করার এক অনবদ্য প্রচেষ্টা কাজ করতো তার মধ্যে। মূলত এ কারণেই পড়াশোনার জায়গা থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে এসে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন কিছু করার চিন্তা করেন, যা আগে কেউ কখনো করেনি। সেই চিন্তা থেকেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন অনলাইন প্লাটফর্ম মায়ার, যা মূলত কাজ করে নারীদের নিয়েই। নারীদের জন্য দরকারি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য এবং সামাজিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মায়ার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এই একবিংশ শতাব্দীতে নারীদের কাছে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোর অবাধে যেন পৌঁছে যায়, এই ব্রত নিয়েই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আইভি হক রাসেলের প্রতিষ্ঠান মায়া।

তার আজকের এই অবস্থানে আসাটা কখনো সহজ হয়নি, এসেছে নানা প্রতিবন্ধকতা। তিনি শুরুর সময়টাতে কারো কাছ থেকে তেমন কোনো সাহায্যই পাননি। কিন্তু তিনি যে থেমে থাকার পাত্রী নন। কাজ চালিয়ে গিয়েছেন নানা বাঁধাকে উপেক্ষা করেই। আজ তার প্রতিষ্ঠান দেশের মহিলাদের কাছে তাদের দরকারি সব তথ্য এবং সেবা পৌঁছে দিতে কার্যকরী অবদান রাখছে। হাজারো নতুন তরুণী উদ্যোক্তার কাছে তিনি আজ এক অনুপ্রেরণার নাম।

 

সূত্রঃ দ্য ফিন্যান্স টুডে

 

গর্ভনিরোধক ওষুধ যেসব ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে

পরিকল্পনা ছাড়া সন্তানধারণের ঝুঁকি এড়াতে অনেক নারী ভরসা রাখেন গর্ভনিরোধক ওষুধের ওপর। পরিকল্পনা ছাড়া ঝুঁকি এড়ানোর জন্য অনেকে গর্ভনিরোধক ওষুধ উপযুক্ত মনে করলেও অত্যধিক হারে এই ওষুধ সেবনে শরীরে ক্ষতি করতে পারে। তাই এই ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সম্ভব্য কিছু ঝুঁকির কথা নিচে উল্লেখ করা হলো।

১) দীর্ঘদীন গর্ভনিরোধক ওষুধ সেবনে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। ফলে মানসিক অবসাদে ভুগতে পারেন।

২) অতিরিক্ত পরিমাণে গর্ভনিরোধোক ওষুধ সেবন ঋতুস্রাব শুরুর আগে ‘স্পটিং’ সৃষ্টি করতে পারে। মাসিকের আগে রক্তপাত হওয়াকে ‘স্পটিং’ বলে।

ঋতুচক্রের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
৩) শরীরের ওজনও বাড়িয়ে দিতে পারে গর্ভনিরোধক ওষুধ। যারা আগে থেকেই ওজন বাড়ার সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য বাড়তি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে অপরিকল্পিত জন্মনিয়ন্ত্রণের এই পদ্ধতি।

৪) গর্ভনিরোধক ওষুধ হরমোনের ভারসাম্য ব্যাহত করায় চোখের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

চোখে ঝাপসা দেখা, চোখ দিয়ে পানি পড়ার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে।
৫) যাদের শরীরে উচ্চরক্তচাপজনিত সমস্যা রয়েছে, তারা গর্ভনিরোধক ওষুধ সেবন করলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। এ ছাড়া স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

 

পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন মরিয়ম

পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন মরিয়ম নওয়াজ। পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গতকাল সোমবার শপথ নেন তিনি। মরিয়ম পাকিস্তান মুসলিম লিগ—নওয়াজের (পিএমএল-এন) জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মেয়ে এবং আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের ভাতিজি।

গতকাল প্রাদেশিক পরিষদে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে ২২০ ভোট পেয়ে জয়ী হন পিএমএল-এনের প্রার্থী মরিয়ম। অন্যদিকে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল (এসআইসি) ভোট বয়কট করায় তাদের প্রার্থী রানা আফতাব আহমেদ কোনো ভোট পাননি। ভোটের ফল জানিয়ে মরিয়মকে বিজয়ী ঘোষণা করেন প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার মালিক আহমেদ খান। পরে তিনি মরিয়মকে পরিষদের নেতার আসনে বসার আহবান জানান।

এ সময় মরিয়ম নওয়াজ বলেন, ‘একজন নারীর মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া প্রত্যেক মা, বোন ও কন্যার জন্য সম্মানের। আমি প্রার্থনা করি, প্রক্রিয়াটি যেন অব্যাহত থাকে এবং আরো নারীরা যেন পার্লামেন্টের নেতা হিসেবে আমার স্থান নিতে পারেন।’

 

কর্মব্যস্ত দিনেও যত্ন নিন দাম্পত্য জীবনের

 

প্রতিটি সম্পর্ক স্বাভাবিক ও সুন্দর রাখার জন্য  একে অপরকে  সময় দেওয়ার বিকল্প নেই। বর্তমানে আমরা নিজেদের নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে সম্পর্কে সময় দেওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়ে ওঠে না। আপনি যদি বিয়ে বা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কোনো সম্পর্কে আবদ্ধ হোন এবং ব্যস্ততার কারণে সঙ্গীকে পর্যাপ্ত সময় দিতে না পারেন, তাহলে কিছু নিয়ম অনুসরণ করে এ ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করতে পারেন:

 

পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হন 

সংসারজীবনে ছোট–বড় অনেক ঘটনাই ঘটতে পারে। হতে পারে মতানৈক্য। তাই বলে সেসব বিষয়কে ইস্যু করে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করা নিছক নির্বুদ্ধিতা। রাগ না দেখিয়ে বরং নমনীয়ভাবে আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করুন। পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল থেকে আলোচনা করলে সম্পর্ক সুখের হবে।

 

জীবনসঙ্গীর সঙ্গে মন খুলে কথা বলুন

সঙ্গীর সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারাটা সম্পর্কের মূল ভিত্তি। বিভিন্ন প্রজন্মের দম্পতিরাও একে অপরের সঙ্গে ভালো যোগাযোগের সুফল ভোগ করেছেন। আমরা যত স্বাবলম্বীই হই না কেন, দিনশেষে আমাদের সবারই মন খুলে বলার জন্য কাউকে না কাউকে প্রয়োজন হয়। বেশিরভাগ দম্পতিই দিনশেষে তাদের সঙ্গীকে মন খুলে কিছু বলতে পারার মাঝে আনন্দ খুঁজে পান এবং স্বাভাবিকভাবেই তখন তা একসঙ্গে কাটানো সময় হয়ে উঠে।

 

বন্ধুভাবাপন্ন সম্পর্ক তৈরি করুন 

দাম্পত্য জীবনে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিশেষ প্রয়োজন। এতে একজনের কাছে অন্যজন বিভিন্ন জটিলতা ও অসুবিধা সহজে শেয়ার করতে পারে। আর সেখান থেকে একটা সমাধান বের হয়ে আসে। তবে দাম্পত্যে যদি বন্ধুভাবাপন্ন সম্পর্ক না থাকে, তাহলে অনেক বিষয় অমীমাংসিত থেকে যায়, যা থেকে দূরত্বের সৃষ্টি হয়।

 

একে অপরের প্রশংসা করুন 

যেকোনো সাফল্য বা অর্জনে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে অভিবাদন জানাবে ও উৎসাহ দেবে। এতে দুজনের মধ্যে নির্ভরতা ও ঘনিষ্ঠতা বাড়বে। প্রশংসা পেলে আরও ভালো কিছু করার প্রেরণা জন্মে।

 

কোলাহল থেকে দূরে কোথাও বেড়িয়ে আসুন 

উপলক্ষ থাকুক বা না থাকুক দুজন মিলে মাঝে মাঝে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া জরুরি। বেড়ানো কিংবা একসঙ্গে বাইরে খাওয়া একঘেয়ে জীবনে ভিন্নমাত্রা যোগ করতে সাহায্য করে। তাই ব্যস্ততার ভেতরেও সময় বের করে মাঝে মাঝে ডেটিং করা দাম্পত্য জীবনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

 

শিশুর ওপর প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব

 

শিশু-কিশোরদের মধ্যে অধিক মাত্রায় ভিডিও গেম বা ফেসবুকের মতো ভার্চুয়াল লাইফে সংশ্লিষ্টতার কারণে ধীরে ধীরে তা আসক্তিতে পরিণত হয় – সংগৃহীত

নিঃসন্দেহে বলা যায়, বিশ্বের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শীর্ষ অবস্থায় এবং এ উন্নয়নের পরশে মানুষের জীবনযাত্রায় হয়েছে লক্ষণীয় পরিবর্তন; এনেছে গতি ও শৌখিনতা। কিন্তু এর অপব্যবহারে প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশুদের ওপরও নানাভাবে এর কুপ্রভাব পড়ছে।

উন্নত বিশ্বের শিশুদের মতো বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের মধ্যেও প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি আসক্তি বাড়ছে। আল্ট্রাপ্রযুক্তির বিভিন্ন উপকরণে আসক্তির কারণে শিশু-কিশোরদের প্রযুক্তির প্রতি এ ক্রম-আসক্তি পরিপূর্ণ মানসিক ও শারীরিক বিকাশের অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। পরিবারে মা ও শিশুর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। মায়ের জন্য তারা আলাদা সময় বের করতে পারছে না। যার ফলে পারিবারিক প্রথাগত শিক্ষা, শিষ্টাচার, ভ্যালুজ এডুকেশন তথা ধর্মীয় ও সামাজিক আচরণ অর্জন থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে।

অন্য দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতে নিয়মিত অনুপস্থিতির কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দিন দিন শিশু ও কিশোররা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অপরিণত বয়সেই বেশির ভাগের ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। বর্তমানে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ভিডিও গেম, মোবাইল, ল্যাপটপ ও বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্যসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নির্ভরতা সৃষ্টি হচ্ছে। এই ধারাবাহিক প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে শিশুসহ আবালবৃদ্ধবনিতা প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণ বেড়েই চলছে। ফলস্বরূপ পরিবার-পরিজনদের মধ্যে আন্তরিকতা কমে যাচ্ছে। বাবা-মায়ের অজান্তেই সন্তান কাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখছে, তা জানারও সুযোগ থাকছে না।

শিশু-কিশোরদের মধ্যে অধিক মাত্রায় ভিডিও গেম বা ফেসবুকের মতো ভার্চুয়াল লাইফে সংশ্লিষ্টতার কারণে ধীরে ধীরে তা আসক্তিতে পরিণত হয়। বাড়ন্ত বয়সে এ অস্বাভাবিক আকর্ষণ ক্রমান্বয়ে নেশায় পরিণত হয়। রাতের পর রাত জেগে এসব কাজে মগ্ন থাকায় পরদিন সকালে ক্লাসে ভীষণ অমনোযোগী থাকে এবং মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। বাবা-মায়ের সাথে ভালো ব্যবহার করে না। সে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে নিজেকে পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে।

বিরতিহীনভাবে এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শিশুদের চোখ ও মস্তিষ্কের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত চাপ পড়ে। রেডিয়েশনের প্রভাবে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করে না। তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কোনো কিছুতেই আগ্রহ থাকে না। কোনো কায়িক পরিশ্রম কিংবা খেলাধুলা তারা করতে চায় না। সারাক্ষণ আঙুল, চোখ ও মস্তিষ্ক ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তাদের মনের চাহিদা পূরণ করতে চায়।

অন্যদিকে বিরামহীনভাবে ভিডিও গেম খেলার কারণে কনভালশন তথা খিঁচুনি কিংবা মৃগীর মতো স্নায়বিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ সময় শুয়ে অথবা বসে ভিডিও গেমস বা ফেসবুকিং করার ফলে হাঁটু ও কোমরে ব্যথা দেখা দেয়। কায়িক পরিশ্রমের খেলাধুলা না করায় অল্প বয়সে তাদের শরীরে চর্বি জমে যায়। এতে করে লিভার, কিডনিসহ হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শিশুরা এখন মা-বাবার মনোযোগ পেতে তাদের প্রিয় ডিভাইসগুলোর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট শন পার্কার স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলেছেন, এই প্ল্যাটফর্ম আসক্তিপূর্ণ করে বানানো হয়েছে। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠার সময় তার কোনো ধারণা ছিল না যে তিনি কী করছেন। তিনি আরো বলেন, শুধু সৃষ্টিকর্তা জানেন, এটি আমাদের শিশুদের মস্তিষ্কের সাথে কী করছে?

ফেসবুক এমন প্রথম অ্যাপ্লিকেশন, যে অ্যাপ্লিকেশনগুলো বানানোর পেছনে পুরো চিন্তাধারা ছিল, আমরা কিভাবে আপনার যতটা বেশি সম্ভব সময় ব্যয় করব এবং সচেতন মনোযোগ আকর্ষণ করব। আর এ জন্যই তিনি নিজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি ব্যবহার থেকে বিরত রয়েছেন। মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এতটা প্রযুক্তিপণ্যের ওপর আসক্তি এক ধরনের মানসিক রোগ। বিকারগ্রস্ত মানসিকতা নিয়ে প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে এই শিশু-কিশোররাই বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। তাদের কচি মস্তিষ্কে বিভিন্ন ইনোভেটিভ ক্রাইমপ্ল্যান করে নানা ঘটনার সাথে যুক্ত হচ্ছে। যার ফলে আশঙ্কাজনকভাবে সমাজে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে।

আজকের শিশুই আগামীর ভবিষ্যৎ ও জাতির মেরুদণ্ড। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অস্তিত্বের প্রশ্নেই আমাদের বোধোদয় হওয়া উচিত। মূলত প্রযুক্তিপণ্য ও ফেসবুকই সব সমস্যা নয়, আমরা কিভাবে এগুলো ব্যবহার করছি, সেটাই অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি আসক্তি দূর করতে জনসচেতনতা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বাবা-মায়ের যেমন দায়দায়িত্ব সন্তানেরা কী করছে সেদিকে নজর রাখা; তাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সময় কাটানো, সাহচর্য প্রদান; তাদের ভার্চুয়াল প্লেগ্রাউন্ডের পরিবর্তে খেলার মাঠের প্রতি আগ্রহী করে তোলা। যাতে তাদের মানসিক বৃদ্ধির পাশাপাশি দৈহিক গঠন ও সামাজিক জ্ঞানে পরিপূর্ণতা আসে। তাদের বোঝানো যে আপনিই তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও হিতাকাক্সক্ষী। সব কিছু সব বয়সের জন্য নয়- এ বাস্তবতা তাদের নিকট খোলাসা করতে হবে। এ জন্য শিশু ও কিশোরদের সাথে নিয়মিত কাউন্সেলিং জরুরি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরও মহান দায়িত্ব রয়েছে প্রযুক্তি ব্যবহারের সুফল ও কুফল সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মৌলিক ধারণা দিয়ে সচেতন করে গড়ে তুলতে। সেই সাথে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষায় দীক্ষিত করে সত্যিকারের মানুষ করে তুলতে হবে।

 

নারীর মর্যাদা বৃদ্ধিতে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ জরুরি

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত সভায় বক্তারা বলেছেন, উপার্জানমূলক কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নারীর পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিতে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই তৃণমূলের নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলো এ বিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।

আজ মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর রায়েরবাজারস্থ কার্যালয়ে আয়োজিত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীদল সদস্যদের মধ্যে নগদ সহায়তা বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপিএস-এর ঢাকা পূর্ব কেন্দ্রের সমন্বয়ক সেলিনা পারভীনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন সহকারী কমিশনার রুবানা তানজিন, বিএনপিএস-এর সমন্বয়কারী নাসরিন বেগম ও ঢাকা পশ্চিম কেন্দ্রের সমন্বয়কারী মো. হেলাল উদ্দিন।

সভায় বলা হয়, সংবিধানে সব নাগরিককে সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত হয়নি। অনেক সামাজিক সূচকে ভালো করলেও সামাজিকভাবে বাংলাদেশের নারীদের অবস্থান খুবই দুর্বল। এর অন্যতম কারণ আর্থিক অস্বচ্ছলতা।

আর্থিক সচ্ছলতার জন্য নারীদের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
সভায় জানানো হয়, বিএনপিএস ১৯৮৬ সাল থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের আলোকে পরিবার থেকে রাষ্ট্রে নারীর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নানাবিধ কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের নারী সদস্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে পারিবারিক ও সামাজিক সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধির ব্যবসা বিষয়ক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এরপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২০ জনকে নগদ আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়।

 

বর্ণাঢ্য উৎসবে হিজাব পরলেন তিন হাজার তরুণী

ইরাকের কুর্দিস্তানে বর্ণাঢ্য হিজাব উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি, শনিবার রাজধানী শহর ইরবিলে ‘গোল্ডেন ক্রাউন ফেস্টিভাল’ নামের উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিন হাজারের বেশি মুসলিম তরুণী হিজাব পরেন। এ সময় উৎসবমুখর পরিবেশে তাঁদের মাথায় সোনালি মুকুট পরানো হয়।

জানা যায়, প্রতিবছর তরুণীদের হিজাব পরা উপলক্ষে বর্ণাঢ্য এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। টানা দশমবারের মতো গোল্ডেন ক্রাউন ফেস্টিভাল নামের এই উৎসবের আয়োজন করে কুর্দিস্তান স্টুডেন্টস ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএসডিও)।

অনুষ্ঠানের আয়োজক কেএসডিও এক বিবৃতিতে জানায়, গোল্ডেন ক্রাউন ফেস্টিভাল প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম নারীর হিজাব যে তার জন্য মুকুটের সমতূল্য এ বিশ্বাস থেকেই বিশাল এই আয়োজন করা হয়।

উৎসবমুখর পরিবেশে তরুণীরা এ আয়োজনে অংশ নেন। এখানে হিজাব পরতে শুরু করেন কুর্দিস্তানসহ ইরাকের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলিম তরুণীরা। হিজাবি তরুণীদের স্বাগত জানানো এবং সবার মধ্যে হিজাবের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো এ আয়োজনের মূল লক্ষ্য। এর অর্থ আবরণ। যে অতিরিক্ত বড় কাপড় দিয়ে দেহ আচ্ছাদিত করা হয়। মুসলিম নারীদের জন্য শরিয়তসম্মত উপায়ে হিজাব পরা আবশ্যক।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের ওপর টেনে দেন। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৯)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মুমিন নারীদের বলে দিন যেন তারা তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে…আর যা সাধারণত প্রকাশ পায়, তা ছাড়া তারা তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩১)

হিজাব পরায় ছাত্রীদের ঢুকতে দিলো না রাজস্থানের স্কুল

 

ভারতের রাজস্থানের পিপার শহরে একটি রাজ্য সরকার পরিচালিত স্কুল হিজাব পরার জন্য মুসলিম ছাত্রীদের ফিরিয়ে দিয়েছে। যা একটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

এই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা স্কুল কর্তৃপক্ষের মুখোমুখি হয়েছে এবং এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে বলে জানা গেছে।

হেট ডিটেক্টর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সে (সাবেক টুইটার) জানিয়েছে, হিজাব পরিহিত মেয়েদেরকে হুমকি দেয়া হয়েছিল। এছাড়া তারা স্কুল প্রাঙ্গনে হিজাব পরা চালিয়ে গেলে তাদের গ্রেডকে প্রভাবিত করবে বলে জানানো হয়েছিল।

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

অভিভাবকদের এক ভিডিওতে বলতে দেখা যায়, ‘এটা খুবই অনৈতিক যে আপনি শিক্ষার্থীদের হিজাব পরতে থাকলে তাদের নম্বর কমানোর হুমকি দিচ্ছেন।’

অন্য একটি ভিডিওতে স্কুল থেকে বের করে দেয়া মেয়েরা অভিযোগ করেছে, তাদের শিক্ষকরা হিজাব পরার জন্য তাদের ‘চাম্বল কে ডাকু’ বলে তিরস্কার করেছে।

তারা বলছে, ‘তারা আমাদের সতর্ক করে চলেছে যে স্কুলে হিজাব গ্রহণ করা হবে না।’

এদিকে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জনতাকে বলেন, তারা শুধুমাত্র মেয়েদের সরকারের নির্ধারিত স্কুল ড্রেস কোডে আসতে বলেছেন।

কয়েক দিন আগে শিক্ষামন্ত্রী মদন দিলাওয়ারও বলেছিলেন, রাজ্য সরকারের সকল সরকারি স্কুলে একটি নির্ধারিত ড্রেস কোড রয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র নির্ধারিত ড্রেস কোডেই স্কুলে যেতে হবে।

 

জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে যা করবেন

 

জরায়ুমুখ ক্যানসার হয় এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণে, যার নাম প্যাপিলোমা ভাইরাস। সাধারণত এই ভাইরাসটি ছড়ায় ওই ভাইরাস আছে এমন কারও সাথে যৌন মিলনের ফলে। যৌন মিলনের সময় পুরুষদের কাছ থেকে নারীদের দেহে এই ভাইরাসটি ঢুকে যায়। তবে ভাইরাস শরীরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসার হয় না। ক্যানসার হতে বেশ কয়েক বছর লাগতে পারে।
আসুন জেনে নেই জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে যা করবেন-

নারীদের যত ধরনের ক্যান্সার হয় তার মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যানসার অন্যতম। বাংলাদেশে প্রতিবছর জরায়ুমুখের ক্যানসারে হাজার হাজার নারী আক্রান্ত হন এবং মৃত্যুবরণ করেন।

২০১৮ সালের ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি অব রিসার্স অন ক্যানসার-এর (আইএআরসি) এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১২ হাজারের বেশি নারী জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং প্রায় সাড়ে ৬ হাজার নারী মারা যান সার্ভিকাল ক্যানসার বা জরায়ুমুখ ক্যানসারে।
একটু সচেতন থাকলেই খুব সহজে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধ বিষয়ে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডাক্তার দেলোয়ার হোসেনের কাছ থেকে চলুন জেনে নেই –

জরায়ুমুখ ক্যানসার হয় এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণে, যার নাম প্যাপিলোমা ভাইরাস। সাধারণত এই ভাইরাসটি ছড়ায় ওই ভাইরাস আছে এমন কারও সাথে যৌন মিলনের ফলে। যৌন মিলনের সময় পুরুষদের কাছ থেকে নারীদের দেহে এই ভাইরাসটি ঢুকে যায়। তবে ভাইরাস শরীরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসারহয় না। ক্যানসার হতে বেশ কয়েক বছর লাগতে পারে।

জরায়ুমুখ ক্যানসারের মূল অসুবিধে হলো এটি শেষ পর্যায়ে গেলেই শুধু ব্যথা দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলোকে অনেকেই মাসিকের মেয়েলি সমস্যা বলে মনে করেন। ক্যানসার যখন একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে যায় তখন রোগটা অনেকদূর ছড়িয়ে যায়।

যারা ঝুঁকিতে আছেন
১৬ বছর বয়সের আগে যৌন সঙ্গমের অভিজ্ঞতা থাকলে কিংবা পিরিয়ড শুরুর এক বছরের মধ্যে যৌনসঙ্গম শুরু করলে।
স্বামী বা যৌনসঙ্গীর শরীরে ভাইরাসটি থাকলে।
একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে।
জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘদী, বিশেষ করে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে পিল খেতে থাকলে।
শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি থাকলে।
যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে ছড়ায় এমন কোনো রোগ থাকলে যেমন এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া ইত্যাদি।

লক্ষণ
যৌন মিলনের পর যোনি পথে রক্ত পাত।
অনিয়মিত মাসিক, অতিরিক্ত রক্তপাত বা ২ মাসিকের মধ্যে রক্তপাত।
অতিরিক্ত সাদা স্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব বা চাল ধোয়া পানির মতো স্রাব অথবা কোনো সময় রক্ত মিশ্রিত স্রাব যাওয়া।
মেনোপজ এরপর আবার রক্তপাত, তলপেটে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, হাড়ে ব্যথা, কাশি, কাঁশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গও থাকতে পারে

প্রতিরোধ ব্যবস্থা
কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে না দেওয়া।
অধিক সন্তান ধারণা করা।
ধূমপান না করা।
যৌন-প্রজননস্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
একাধিক যৌনসঙ্গী না রাখা।
৯ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধক টিকা গ্রহন করা।
৩০ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত নারীদের প্রতি ৩ বছর পরপর ভায়া টেস্ট করা।
উপরের লক্ষণগুলোর কোনো একটি নিয়মিত হতে থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা।

 

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নারী বন্দিদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়া ঠেকাতে সুপারিশ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কারাগারগুলিতে থাকাকালীন নারী বন্দিরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন এবং কারাগারেই তাদের সন্তানরা জন্ম নিচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে রাজ্যগুলিতে কারাগারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে ‘অ্যামিকাস কিউরে’ বা আদালত বন্ধু হিসাবে নিযুক্ত আইনজীবী তাপস ভঞ্জ’র।

সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টকে এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছেন ওই আইনজীবী।

তিনি বলেন, “রাজ্যের সংশোধনাগারগুলির (কারাগার) পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে যে ছবি উঠে এসেছে সেটা উদ্বেগজনক। সংশোধনাগারে থাকাকালীন নারী বন্দিরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন। ১৯৬ জন শিশু মায়ের সঙ্গে সংশোধনাগারে রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “সংখ্যাটা গত বছর পহেলা এপ্রিল পর্যন্ত। ইতিমধ্যে ওই সংখ্যা হয়তো বেড়েছে বলেই আশঙ্কা করা যায়।”

কলকাতা হাইকোর্টে এই প্রতিবেদন পেশ করার পর দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি টি এস গণনম। বিষয়টি ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই এর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের জুন মাসে ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি আর সি লাহোটি সুপ্রিম কোর্টকে একটি চিঠি দিয়ে দেশের কারাগারের করুণ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছিলেন।

সে সময় সর্বোচ্চ আদালতকে দেশের কারাগারগুলিতে বন্দিদের মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যা, অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ সেখানকার বেহাল পরিস্থিতির কথা জানানো হয়েছিল। রাজ্যগুলি যে বন্দিদের প্রতি দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না, সে বিষয়েও উল্লেখ করেছিলেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি।

সে বছর জুলাই মাসে ওই চিঠি ‘জনস্বার্থ রিট পিটিশন’ হিসাবে দায়ের হয়।

“এই প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের হাইকোর্টগুলির প্রধান বিচারপতিদের নির্দেশ দেয় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করতে এবং সংশোধনাগারের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। হাই কোর্ট আমাকে নিয়োগ করে সংশোধনাগারের আবাসিকদের অভাব অভিযোগ শোনার জন্য এবং রাজ্যের প্রতিটি জেলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বলবৎ করতে,” বলেছেন আইনজীবী তাপস ভঞ্জ।

রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরিকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি অবশ্য বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, কোনও নির্দিষ্ট কারাগারের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে তাহলে নিশ্চয়ই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা

 

আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

 

দেশের প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সম্প্রতি তিনি ভারতে বেসামরিক বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’-তে ভূষিত হয়েছেন। এবার দেশি একটি সংগঠন থেকে পাচ্ছেন আজীবন সম্মাননা।

আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে অনুষ্ঠিতব্য একটি আয়োজনের মাধ্যমে তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেবে ‘টেলিভিশন রিপোর্টার্স ইউনিটি অব বাংলাদেশ (ট্রাব)।

এ মুহূর্তে কলকাতা অবস্থান করছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। মোবাইল ফোনে তিনি জানান, ‘নিশ্চয়ই যেকোনো পুরস্কার একজন শিল্পীর জন্য পরম আনন্দের, ভালোলাগার। যথারীতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিন এই সম্মাননা আমি আনন্দের সাথেই গ্রহণ করবো। ধন্যবাদ আয়োজকদের যারা আমাকে এই সম্মাননার জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করেছেন।’

অনুষ্ঠানের আয়োজন ট্রাব সভাপতি সালাম মাহমুদ বলেন, ‘বন্যা আপা আমাদের দেশের অত্যন্ত গুণী এবং প্রখ্যাত একজন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী। তার কণ্ঠ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের খ্যাতি ছড়িয়েছে। তাকে আমরা তাই পরম শ্রদ্ধা নিয়ে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করতে যাচ্ছি।’

এদিকে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি বন্যা দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, সংগীতে অবদানের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার পান বন্যা। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ‘বঙ্গভূষণ’, ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত এ শিল্পী।

 

দুদকে প্রথম নারী সচিব হিসেবে নিয়োগ পেলেন খোরশেদা ইয়াসমীন

 

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন খোরশেদা ইয়াসমীন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই অতিরিক্ত সচিবকে বৃহস্পতিবার সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে দুদকে পদায়ন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তিনি হলেন দুদকের প্রথম নারী সচিব।

এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আলাদা প্রজ্ঞাপনে দুদকের বর্তমান সচিব মো. মাহবুব হোসেনকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে বদলি করা হয়েছে।

অপরদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে চুক্তি ভিত্তিতে থাকা মো. এহছানে এলাহীর চুক্তি বাতিল করেছে সরকার।

 

কিচেন কেবিনেট পরিষ্কার রাখার টিপস

কিচেন কেবিনেট ব্যবহারের কারণে রান্নাঘর গোছানোও অনেক সহজ হয়ে পড়ে। তবে নিয়মিত পরিষ্কার না করা হলে কেবিনেটে পোকামাকড় বাসা বাঁধতে পারে।

আসুন জেনে নেইকিচেন কেবিনেট পরিষ্কার রাখতে পারেন-
যেসব স্থানে প্রতিদিন রান্নার উপকরণ রাখা হয় কিংবা যেসব কেবিনেট প্রতিদিনই খোলার প্রয়োজন পড়ে, সেসব নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। কিচেন কেবিনেট দীর্ঘদিন আবদ্ধ থাকলে তাতে তেলাপোকাসহ অন্যান্য যে কোনো পোকামাকড় বাসা বাঁধতে পারে। মাসে অন্তত দুইবার চেষ্টা করুন কেবিনেট পরিষ্কার করার।

কিচেন কেবিনেট যদি রঙ করা থাকে, তবে সেখানকার দাগ পরিষ্কার করতে বেকিং সোডা সবচেয়ে কার্যকরী।

একটি বাটিতে বেকিং সোডা আর পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার পেস্ট দাগের উপর রেখে সুতি কাপড় দিয়ে মুছে নিন। কাঠের কেবিনেটের জন্য যে সুতি কাপড় ব্যবহার করবেন খেয়াল রাখবেন সেটি যেন খুব ভেজা না হয়। এতে কাঠ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

কেবিনেটে যদি কাঁচ থাকে তাহলে সুতি কাপড়ে গ্লাস ক্লিনার নিয়ে ভেতরে ও বাইরে দুই দিক থেকেই ক্লিন করুন। কেবিনেট যেমন রান্নাঘরের শোভা বাড়ায়, তেমনই এটি ক্লিন না রাখলে দেখতেও ভালো লাগে না। তাই কাঠের বা কাঁচের কেবিনেট যাই হোক না কেন, নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরি।

 

অসাধারণ স্বাদের রসে ভেজা দুধপুলি

 

শীত মানেই পিঠার আয়োজন। আর পিঠার কথা এলে প্রথমেই যে পিঠাগুলোর কথা মনে হয় সেসবের মধ্যে প্রথম দিকেই রয়েছে দুধপুলি। আসুন জেনে নেই কীভাবে তৈরি করবেন মজাদার রসে ভেজা দুধপুলি-

যা যা লাগবে
চালের গুঁড়া- দুই কাপ
নারকেল কোরা- এক কাপ
গুড়- আধা কাপ
দুধ- চার কাপ
এলাচ গুঁড়া- এক চা চামচ
পানি- প্রয়োজন অনুযায়ী

যেভাবে তৈরি করবেন
প্রথমে পুর তৈরির জন্য নারকেল কোরা এবং গুড় মিশিয়ে না গলে যাওয়া পর্যন্ত চুলায় নাড়তে থাকুন। মিশ্রণ ঘন হয়ে এলে নামিয়ে নিন।
চালের গুঁড়া এবং পরিমাণমতো পানি দিয়ে ময়ান তৈরি করুন।
ময়ান থেকে ছোট ছোট বল বানিয়ে এবারে রুটি বেলার পিঁড়িতে বেলে নিয়ে গোল কাটার দিয়ে গোল করে কেটে তার ভেতরে পুর দিয়ে পিঠার মুখ মুড়ে নিন।

রস তৈরির জন্য একটি পাত্রে দুধ ফুটিয়ে স্বাদমতো চিনি, এলাচ গুঁড়া দিন এবং দুধ ঘন হওয়া পর্যন্ত নাড়ুন।
রসের মধ্যে প্রস্তুত করা পুলি ছেড়ে দিন এবং মৃদু আঁচে সিদ্ধ করুন যতক্ষণ না পুলি ভালো করে ফুলে ওঠে। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল দুধপুলি।

ঠাণ্ডা অথবা গরম অবস্থায় পরিবেশন করুন। পরিবেশনের সময় উপরে পেশ্তা বাদাম গুড়ো বা নারিকেল ছিটিয়ে দিতে পারেন।

 

শিশুরা মিথ্যা বললে কী করবেন?

অনেক সময় দেখা যায়, বুঝে না বুঝে শিশুরা মিথ্যা কথা বলে। তবে শিশু মিথ্যা বলতে বলতে এমন হয় যে তার অভ্যাসে পরিণত হয়। তখন সে কারণে অকারণে মিথ্যা বলে।

মনোবিদদের মতে, শিশুদের মিথ্যে কথা বলার প্রবণতাকে প্রশয় দেয়া উচিত নয়। সন্তান কল্পনাপ্রবণ আর কোনো বিশেষ উদ্দেশে মিথ্যে বলছে কিনা বোঝার চেষ্টা করুন।

 

শিশুরা কেন মিথ্যা বলে?

১. শিশুরা কল্পনাপ্রবণ হলে মিথ্যের আশ্রয় নিতে পারে।

২. অনেক শিশু বিশেষ উদ্দেশে মিথ্যা কথা বলে। যেমন হয়তো তার সেদিন হোমওয়ার্ক হয়নি। সেদিন স্কুল না যাওয়ার জন্য সে পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা বলতেই পারে।

৩. মা-বাবা খুব রাগী হলেও শিশুরা মিথ্যা বলে।

৪. বাড়ির বড়রা যদি মিথ্যা বলে শিশুরাও মিথ্যা বলতে শিখবে।

৫. বড়দের মতোই অপ্রিয় সত্য কথা গোপন করতেও শিশুরা মিথ্যা বলে।

কী করবেন?

১. শিশুরা বড়দের দেখে শেখে। তাই আগে নিজেকে সংশোধন করুন।

২. শিশুরা মিথ্যা বললে মারধর করবেন না। ঠাণ্ডা মাথায় বোঝান। কারণে-অকারণে মিথ্যা বলতে নেই।

৩. মনোবিদদের মতে, ছয় বছর বয়সের পর শিশুদের ‘সুপার ইগো’র বিকাশ ঘটে। তার ফলে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল সে বুঝতে শেখে। এই সময় নীতিকথামূলক গল্প শোনান।

৪. শিশুদের সত্যি কথা বলার শিক্ষা অবশ্যই দিতে হবে।

 

আফগান নারীদের জন্য অনলাইন ম্যাগাজিন ‘জান টাইমস’

কানাডায় বসবাসরত আফগান নারী জাহরা নাদের ‘জান টাইমস’ নামের একটি অনলাইন ম্যাগাজিন প্রকাশ করছেন। আফগানিস্তানে বাস করা নারী ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশে থাকা আফগান নারীরা এতে কাজ করছেন।

২০২১ সালের আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলকরার পর মেয়েদের অনেক অধিকার খর্ব করেছে। এই অবস্থায় সেখানকার নারীদের পরিস্থিতি তুলে ধরতে ২০২২ সালের আগস্টে জান টাইমস চালু করেন জাহরা নাদের।

আফগানিস্তানে থাকার সময় নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন ৩৪ বছর বয়সি জাহরা। এরপর পিএইচডি করতে ক্যানাডা পাড়ি জমান। তিনি যখন দেশ ছাড়েন তখনও তালেবান ক্ষমতা দখল করেনি। ‘আমার মাতৃভূমির মেয়ে ও নারীদের সহায়তা করার দায়িত্ব অনুভব করেছি আমি,’ বলেন জাহরা।

দেশ ও দেশের বাইরে থাকা আফগান নারী সাংবাদিকেরা তার ম্যাগাজিনে কাজ করেন বলে জানান তিনি।

‘আফগানিস্তানের অল্প কয়েকজন নারী সাংবাদিক স্থানীয় তথ্য সংগ্রহ করেন। তাদের জন্য কাজ করা খুব বিপজ্জনক। তালেবান যে ইস্যুগুলো শুনতে চায় না এমন বিষয়ে তারা প্রতিবেদন পাঠান—এলজিবিটি, মানবাধিকার, পারিবারিক সহিংসতা কিংবা বাল্যবিবাহ। প্রতিবেদন করার অনেক কিছু আছে। অনেক অবিচার আছে,’ বলেন জাহরা।

ফার্সি ও ইংরেজি ভাষায় ম্যাগাজিনটি প্রকাশিত হয়ে থাকে।

জাহরা বলেন, তালেবানের প্রোপাগাণ্ডার সঙ্গে মেলে না এমন বিষয়ে প্রতিবেদন করা খুব বিপজ্জনক। ‘আমাদের স্থানীয় সহকর্মীদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয়। তারা ছদ্মনামে লেখেন আর আমাদের সঙ্গে কথা বলার পর ঘরের বাইরে যান। তারা একে অপরকে চেনেন না। শুধু বিদেশে থাকা সহকর্মীদের সঙ্গে তাদের পরিচয় আছে,’ বলে জানান তিনি।

নিজের কাছে জমা থাকা অর্থ দিয়ে ম্যাগাজিনের কাজ শুরু করেছিলেন জাহরা। সে কারণে শুরুতে তাদের বেতন ছাড়াই কাজ করতে হয়েছে। তবে এখন তারা বৃত্তি ও দান পাচ্ছেন। জাহরা বলেন, ‘আমরা মানুষকে সচেতন করতে চাই। তাদের চিন্তা করতে শেখাতে চাই।’

আফগানিস্তানের নারীরা ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে থাকা আফগান নারীরা তার ম্যাগাজিন পড়েন বলে জানান তিনি।

 

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ক্র্যানবেরির প্রথম মুসলিম মেয়র ঈমান

 

প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ক্র্যানবেরি টাউনশিপে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এক মুসলিম। শুধু তাই নয়; তিনি একজন মুসলিম নারী।

এ মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ২০২৪ সালের মেয়র হিসেবে তাঁকে শপথ পাঠ করান সাবেক নারী মেয়র সাদাফ জেফার।

মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করা ওই নারীর নাম ঈমান আল-বাদাউই। তিনি মিসরীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত।

মেয়র নির্বাচিত হয়ে নিজের অনুভূতি জানিয়ে ঈমান বলেন, আমি কিছুতে প্রথম হতে চাইনি। তবে একজন হিজাবি নারী হিসেবে পুরোপুরি নতুন পরিবেশে নিজেকে দেখতে পেয়ে আমি সত্যিই অভিভূত। কারণ অনেক মানুষ নতুন করে আমার কার্যক্রম সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবে। সবাই আমার সম্পর্কে এভাবে বলা শুরু করছে, ‘ওহ, আপনি প্রথম ‍মিসরী মুসলিম, যিনি হিজাব পরে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন।’ আমি মনে করি, তা শুধু আমার জন্য নয়, বরং সবার জন্য গর্বের। সর্বোপরি আগের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতা ও দক্ষতা নিয়ে আমার শহরের জন্য কাজ করব।

এর আগে ২০২১ সালে ঈমান আল-বাদাউই তিন বছরের জন্য টাউনশিপ কমিটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর গত বছর তিনি প্রথম মুসলিম ডেপুটি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ক্র্যানবেরির একজন সফল নেতা ও মেয়র হিসেবে তিনি সবার জন্য কাজ করতে চান।

 

যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওতে নারী ক্রীড়া দলে ট্রান্সজেন্ডারদের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা

রিপাবলিকান শাসিত অঙ্গরাজ্য ওহাইওতে নারী ক্রীড়া দলগুলোতে ট্রান্সজেন্ডারদের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করল রাজ্যটির আইনপ্রণেতারা। ওহাইওর গভর্নর প্রথমে এই প্রস্তাবে ভেটো দিলেও স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার এ বিষয়ে চূড়ান্ত আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

একটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, নারী ক্রীড়া দলে ট্রান্সজেন্ডারদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ওহাইও সিনেট শিশুদের ক্ষেত্রে “জেন্ডার অ্যাফার্মিং কেয়ার” বা লৈঙ্গিক পরিচয় ফুটিয়ে তোলে এমন কোনো সেবা—চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবাও নিষিদ্ধ করেছে। এর ফলে এখন থেকে চাইলেও ট্রান্সজেন্ডার কোনো শিশুর ক্ষেত্রে তার কাঙ্ক্ষিত লিঙ্গ নিশ্চিত করতে সেবা দেওয়া যাবে না।

ওহাইও অঙ্গরাজ্যের গভর্নর মাইক ডেওয়াইন নিজেও রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অনেক বাবা-মায়ের কাছে তিনি শুনেছেন জেন্ডার অ্যাফার্মিং কেয়ার তাদের শিশুদের জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কিন্তু গভর্নরের ভেটো আমলে না নিয়ে গতকাল বুধবার ওহাইও সিনেট বিষয়টিকে আইনে পরিণত করেছে। তার আগে অঙ্গরাজ্যটির হাউস অব রিপ্রেজেন্টিটিভসেও বিলটি পাশ হয়। রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি গ্যারি ক্লিক বিলটি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘ওহাইও সিনেট আজ নারী ও শিশুদের সুরক্ষার জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা প্রশংসাযোগ্য।’

আগামী তিন মাস পর, অর্থাৎ ৯০ দিন পর থেকে এই আইন কার্যকর হবে। এর ফলে এখন রাজ্যটির কোনো চিকিৎসক শিশুদের স্বাভাবিকভাবে প্রাপ্ত লিঙ্গের পরিবর্তনের কোনো অপারেশন করতে পারবেন না। এমনকি, বয়ঃসন্ধিকালের বিকাশ রোধ করে এমন কোনো ওষুধও প্রেস্ক্রাইব করতে পারবেন না। একই সঙ্গে স্কুল, কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় পর্যায়ে নারীদের দলে ট্রান্সজেন্ডারদের অংশগ্রহণও নিষিদ্ধ করা হয়েছে এই আইনে।

ওহাইওর এলজিবিটিকিউ অধিকারগোষ্ঠী ইকুয়ালিটি ওহাইওর নির্বাহী পরিচালক সিওভান বয়েড নেলসন বলেছেন, ‘ওহাইওর ট্রান্সজেন্ডার, তাদের পরিবার ও মিত্ররা তাদের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে। কারণ, ওহাইও আমাদের নিজের দেশ।’

 

কুমিল্লায় ছাত্রীর হিজাব কেটে দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

 

কুমিল্লার নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের তিন শিক্ষার্থীর হিজাব কেটে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে মিরন নাহার নামে এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে ওই কলেজের ক্যাম্পাসে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, গত ২১ জানুয়ারি নার্সিং কলেজের ২য় বর্ষের এক শিক্ষার্থীর হিজাব কেটে দেন শিক্ষিকা মিরন নাহার। এসময় শিক্ষার্থীদেরকে হিজাব ছোট করে পড়ার কথা বললে শিক্ষার্থীরা এতে দ্বিমত পোষণ করেন। তবে ওই শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের কোনো কথার তোয়াক্কা না করে বারবার হিজাব কাটার কথা বলেন ও বিভিন্ন হুমকি দেন।

দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, এভাবে যদি আমাদের হিজাব কেটে পড়তে বলা হয়, বা কেটে ফেলা হয় তাহলে মেয়েদের নিরাপত্তা কোথায়? ক্যাম্পাসে আমাদের শালীনতা কীভাবে আমরা বজায় রাখবো?

আরেক শিক্ষার্থী মৌরী রহমান বলেন, আমাদের প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষ এবং তৃতীয় বর্ষ শিক্ষার্থীদেরকে বেল্ট দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। তাই আমরা মেয়েরা যারা হিজাব বড় করে পড়ি তাদের বেল্ট দেখা যায় না। তাই আমাদের হিজাব কেটে দেয়া হয়েছে। আমি বলব বেল্ট দ্বারাই কেন চিহ্নিত করতে হবে, অন্য কোন উপায়ও তো এটা করা যায়। আমি আমাদের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা চাই। মেয়েরা যাতে শালীনভাবে চলাফেরা করতে পারে এটা চাই।

৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আকতার বলেন, আমাদের এই বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নার্সিং কলেজের সিনিয়র শিক্ষিকা মিরন নাহার বলেন, একজন মুসলিম হিসেবে অবশ্যই আমার এটি করা ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে আমি অনুতপ্ত। শিক্ষার্থীদেরকে নিয়মের মধ্যে আনার জন্য আমি এটি করেছিলাম। তবে হিজাব কেটে দেয়া আমার উচিত হয়নি। আমি আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করব।

এ বিষয়ে কুমিল্লা নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের নার্সিং ইন্সট্রাক্টর ইনচার্জ আকবরী খানম এর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

 

নারীদের ক্যান্সারের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জরায়ুমুখ ক্যান্সার

 

জরায়ুর ক্যান্সার সচেতনতা মাস উপলক্ষে গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার কর্তৃপক্ষ। গত ২২ জানুয়ারি গোল টেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় ১ ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা অনুষ্ঠানটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য ছয়জন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

তারা হলেন ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের গাইনি অনকোলজি প্যানেলের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন, অধ্যাপক ডা. সাহানা পারভীন এবং অধ্যাপক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস, অনকোলজি প্যানেলের ছিলেন অধ্যাপক ডা. পারভীন আক্তার বানু, অধ্যাপক ডা. মো. এহতেশামুল হক, বিগ্রে. জেনা. (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. ইউছুফ আলী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন গাইনি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. সিলভিয়া হোসেন (মিথুন)।

আলোচনায় জানানো হয়, বাংলাদেশের নারীদের ক্যান্সারের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জরায়ুমুখ ক্যান্সার। গ্লোবোকান ২০২০-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি বছর নতুন করে ৮০৬৮ জন নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রায় ৫ হাজার নারীই মৃত্যুবরণ করেন।

অথচ এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য ক্যান্সার। সারা বিশ্বের মতো তাই জরায়ুমুখ ক্যান্সার বিষয়ে সচেতন করতে লার্ন, প্রিভেন্ট, স্ক্রিন এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখেই গোল টেবিল বৈঠকের শুরুতে প্রফেসর ডা. সাবেরা খাতুন জানান এইচপিভি ভাইরাস দিয়ে জরায়ু ক্যান্সার হয় কিন্তু এই ভাইরাস দেহের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে ২ বছরের মধ্যেই শরীর থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু যাদের ১৮ বছরের নিচে বিয়ে হয়/ যৌন সংযোগ ঘটে, বহুবিবাহ হয়, অল্প বয়সে প্রথম বাচ্চা হয়, ঘন ঘন বাচ্চা হয়, দীর্ঘদিন একটানা (৫ বছরের বেশি) জন্ম বিরতিকরণ পিল খায়, ধূমপান করেন তাদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস দীর্ঘস্থায়ী হয়ে জরায়ুমুখের পরিবর্তন ঘটায় এবং প্রায় ১০-১৫ বছর পর তা ক্যান্সারে রূপ নেয়। তাই যদি সচেতন হওয়া যায়, এইচপিভি ভ্যাকসিন নেওয়া হয়, ৩০-৬০ বছর বয়সে নিয়মিত ভায়া/প্যাপস/এইচপিভি ডিএনএ ভাইরাস পরীক্ষা করালে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
প্রফেসর জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, ৯-১৪ বছর বয়সী কিশোরী কন্যাদের ১ ডোজ এইচপিভি ডিএনএ ভ্যাকসিন দিলে তা শতভাগ কার্যকরী। ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে। সরকারিভাবে গত বছরের অক্টোবর মাসে ৯-১৪ বছর বয়সী কন্যাদের টিকা দেওয়া হয়েছে। ইপিআই-এ অচিরেই এই ভ্যাকসিন যুক্ত হবে বলে আশাবাদী চিকিৎসকরা। বর্তমানে বেসরকারিভাবে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের মতো অন্যান্য ভ্যাকসিন সেন্টারে পাওয়া যাচ্ছে এই ভ্যাকসিন।

তবে ভ্যাকসিন নিলেও ৩০ বছর বয়সী নারীদের নিয়মিতভাবে স্ক্রিনিং অবশ্যই করতে হবে।
প্রফেসের ডা. সাহানা পারভীন জানান, ক্যান্সারের পূর্ববর্তী এবং ক্যান্সারের শুরুতে সাধারণত তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। যখন ক্যান্সার ছড়াতে শুরু করে তখনই অনিয়মিত মাসিক, সহবাসের পর রক্তপাত, মেনোপোজের পর রক্তপাত, অতিরিক্ত দুর্গন্ধযুক্ত সাদাস্রাব শুরু হয়। স্ক্রিনিংয়ে যখনই জরায়ুমুখের পরিবর্তন ধরা পড়ে অথবা জরায়ুমুখের টিউমার দেখা দেয় তখন অবশ্যই একজন গাইনি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। শুরুতেই ক্যান্সার কোনো পর্যায়ে আছে তা নির্ধারণ করতে হবে, কারণ স্টেজ অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন। অনেক সময় দেখা যায় স্টেজ নির্ধারণ না করে শুধু জরায়ু ফেলে দেওয়া হয়। এটি রোগীর জন্য বিরাট ক্ষতি বয়ে আনে। প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যান্সারে শুধুমাত্র অপারেশন করতে হয় এবং এটি একটি জটিল অপারেশন, যা গাইনি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের মাধ্যমেই করানো উচিত। এদিকে অ্যাডভান্স স্টেজে অপারেশন করা যায় না, সেক্ষেত্রে রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপি দিতে হয়।

ডা. পারভীন আক্তার বানু জানান, প্রথমে জরায়ুমুখের ওপর থেকে রেডিওথেরাপী সাথে কেমোথেরাপী দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে জরায়ুমুখের নিচ দিয়ে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। থেরাপী চলাকালীন বা পরবর্তীতে যে সমস্যাগুলো হয় তা খুব সামান্য। থেরাপির জায়গা একটু শক্ত হয়ে যেতে পারে, মাসিকের রাস্তা সরু হয়ে যেতে পারে এবং পায়খানা প্রস্রাবের সাথে হালকা রক্ত যেতে পারে। কিন্তু এখন এতো ভালো আধুনিক রেডিওথেরাপির মেশিন আছে এবং চিকিৎসা আছে তাতে এই সমস্যাগুলো খুব কমই হয়ে থাকে।

ডা. এহতেশামুল হক জানান সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও রেডিও থেরাপী মেশিনের অপ্রতুলতা রয়েছে, তবে বেসরকারিখাতে বাংলাদেশে পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। সুখবর হলো রেডিওথেরাপীতে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালের মেশিন উন্নত এবং খরচও তুলনামূলক কম। যাদের রেডিও থেরাপী প্রয়োজন তাদের ২ মাসের মধ্যেই সেটি শেষ করতে হয়।

ডা. মো. ইউসুফ আলী জানান, রেডিওথেরাপির আধুনিকরণ এবং অন্যান্য থেরাপি যেমন ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপিসহ বিশ্বমানের ক্যান্সারের অন্যান্য সকল চিকিৎসা ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালে রয়েছে।

সবশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়,
১. জরায়ুমূখ ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি
২. কিশোরী কন্যাদের ভ্যাকসিন দেয়া
৩. ৩০-৬০ বছরের নারীদের স্ক্রিনিং করা
৪. বাল্য বিয়েকে না বলা
৫. বহুবিবাহ/একাধিক যৌনসঙ্গী বর্জন করা
৬. ধূমপান পরিহার করা
৭. ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ খেয়াল করা মাত্রই যত দ্রুত সম্ভব গাইনি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া এবং সঠিক স্থানে চিকিৎসা করানো।

সূত্রঃ যুগান্তর

 

কোকাকোলায় প্রথম বাংলাদেশি নারী এমডি জু-উন নাহার চৌধুরী

দেশের শীর্ষস্থানীয় পানীয় কোম্পানি কোকাকোলা, বাংলাদেশ লিমিটেডের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন জু-উন নাহার চৌধুরী। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি এই কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পেলেন। একইসঙ্গে তিনি কোকাকোলা, বাংলাদেশের প্রথম নারী এমডি। ২০২১ সালে যোগ দেওয়া সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তা জি তুং-এর স্থলাভিষিক্ত হবেন জু-উন নাহার।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জু-উন নাহার ইউনিলিভারের মার্কেটিং বিভাগের ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ইউনিলিভার বাংলাদেশের বিভিন্ন পদে তিনি কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে দেশব্যাপী ‘লাইফবয় হাত ধোয়া ক্যাম্পেইন বা হ্যান্ড ওয়াশিং ক্যাম্পেইন’ আয়োজন করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা করে নেয়। দেশের ৬০টির বেশি এলাকায় ৮৬ হাজার তরুণ একইসঙ্গে এই ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করে।

২০১৪ সালে রেকিট বেনকিজারে যোগদানের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ায় তার কর্মজীবন শুরু হয়। সেখানে তিনি ডেটলের ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ডানোন ইন্দোনেশিয়ার হেড অফ ইনোভেশন হিসেবে কাজ করার পর তিনি এক মার্স-এর এফএমসিজি ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই অ্যান্ড-টু-অ্যান্ড ই-কমার্স ফ্যাসিলিটেটর প্রতিষ্ঠানটি আসিয়ানভুক্ত সাতটি দেশে কাজ করে। ইন্দোনেশিয়ায় আট বছর কাটিয়ে ২০২৩ সালে দেশে ফিরে তিনি এপেক্সের মার্কেটিং ডিরেক্টর হিসেবে যোগদান করেন।

নতুন দায়িত্ব গ্রহণ সম্পর্কে কোকাকোলা বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জু-উন নাহার চৌধুরী বলেন, কোকাকোলা সিস্টেম বাংলাদেশে যোগ দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। ভোক্তাদের সতেজ রাখতেও আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কোকাকোলার এই যাত্রায় বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া আমার জন্য সম্মানের বিষয়। আমাদের ব্র্যান্ড ও ফ্র্যাঞ্চাইজি অপারেশনকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবো বলে আশাবাদী।

 

মুঘল সাম্রাজ্যের প্রভাবশালী কয়েকজন নারী ব্যক্তিত্ব

মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে বেশ কয়েকজন বিখ্যাত নারীর কথা জানা যায় যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ যোগ্যতার পরিচয় রেখেছেন এবং সাম্রাজ্যে যাদের প্রভাবও ছিল।  রাজকীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া বা যুদ্ধবিগ্রহে তাদের অনেকের অংশগ্রহণ ছিল, ডিক্রি বা ফরমান জারি, সংকেত দেয়া বা পরোয়ানা প্রদানসহ নানা ধরণের সরকারি নথি জারি করার ক্ষমতাও ছিল কারো কারো।

আসুন জেনে নেই মুঘল সাম্রাজ্যের প্রভাবশালী কয়েকজন নারী ব্যক্তিত্বের কথা-

মুঘল আমলে, ফার্স্ট লেডি হতেন সাধারণত সম্রাটের মা। সম্রাটের মায়ের মৃত্যুর পর তার জায়গা সম্রাটের স্ত্রী নিতে পারতেন। তবে, এক্ষেত্রে নুরজাহান এবং মমতাজ মহল অবশ্য ব্যতিক্রম ছিলেন। তারা রানী হিসেবেই ফার্স্ট লেডির মর্যাদা পেয়েছিলেন।

মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহিরুদ্দিন মুহম্মদ বাবর থেকে শুরু করে সব মুঘল সম্রাটেরই মায়ের প্রতি সম্মানের বিষয়টি সুবিদিত ছিল। ইতিহাসবিদ এস এম এডওয়ার্ডস, ‘বাবর, ডায়েরিস্ট অ্যান্ড ডিসপোট’-এ লিখেছেন যে নানী এয়সান দৌলত বেগম এবং মা কুতলুঘ নিগার সম্রাট বাবরের জীবন গঠনে প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন। বাবর তার বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা তার মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলেন।

বাবর, নিজের স্মৃতিকথা ‘বাবরনামা’-তে তার নানী এয়সান দৌলত বেগম সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। বাবরনামায় তিনি বলেন,

এয়সান দৌলত বেগম ছিলেন মেজাজি এবং কৌশলী। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দূরদর্শী ও বুদ্ধিমতী একজন নারী। তার পরামর্শেই বেশির ভাগ কাজ করা হতো।

এ বইয়ের মুখবন্ধে বলা হয়েছে, ১৪৯৪ সালে বাবরের পিতার মৃত্যুর পর বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে এয়সান দৌলত বেগম, বাবরের পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে পাশে ছিলেন। প্রকৃত ক্ষমতা এবং কার্য পরিচালনার ভার তাঁর হাতে ছিল।

রাধে শ্যাম তার ‘বাবর’ বইয়ে লিখেছেন যে “জিহাদের সময় মা কুতলুঘ নিগার খানম বাবরের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ছিলেন।”

তুর্কি এবং ফার্সি ভাষায় শিক্ষিত, খানম তার ছেলে বাবরের বেশিরভাগ অভিযানে এবং রাজত্বকালে তার সাথে ছিলেন।

বাদাখশান এবং ট্রান্সএক্সোনিয়ার মতো দূরবর্তী অভিযানে বাবর তার স্ত্রী অর্থাৎ হুমায়ুনের মা মাহাম বেগমকেও পাশে পেয়েছিলেন।

ইতিহাসবিদ রোমারগুডেনের মতে, মাহাম শক্তিশালী ও প্রাণোচ্ছল নারী ছিলেন, এবং ধারণা করা হয় বাবর তাকে কখনো কোন কিছু করতে নিষেধ করেননি।

বিবি মুবারাকাও ছিলেন বাবরের কাঙ্ক্ষিত স্ত্রীদের একজন। তাকে বিয়ে করার ফলে ইউসুফজাই বংশের সাথে বাবরের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় এবং আফগানিস্তানের উপর তার দখল জোরদার হয়।

তবে, মাহাম বেগম উচ্চ পদে আসীন ছিলেন এবং সিংহাসনে তাকে তার স্বামীর সাথে বসতে দেওয়া হতো।

গবেষক এস এ তিরমিজি লিখেছেন,

“হুমায়ূন তার মা মাহাম বেগমের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার কারণে সৌভাগ্যবান ছিলেন। মাহাম বেগম সুশিক্ষিতা, বুদ্ধিমতী এবং বড় মনের অধিকারী ছিলেন।”

সম্রাট হুমায়ুনের বোন গুলবদন বেগম ‘হুমায়ুন নামা’ লিখেছিলেন, যা ছিল ১৬ শতকের মুঘল ভারতে একজন নারীর লেখা একমাত্র বই

মাহাম বেগম, গুলবদনকে দেখাশোনা করতেন এবং তিনিই তাকে পড়ালেখা শিখিয়েছেন।

যখন হুমায়ুনকে বাদাখশানের গভর্নর হিসেবে প্রথম দায়িত্ব দেওয়া হয়, তখন তার প্রশিক্ষণের সময়ে মাহাম বেগম পুত্রের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

হুমায়ুনকে রাজ সিংহাসনের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে গড়ে তুলতে মাহাম বেগমের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।

লেখক রুবি লাল, ব্রিটিশ লেখক এএস বেভারিজকে উদ্ধৃত করে বলেছেন,

“স্ত্রী এবং রানী মা দুটি ভূমিকায়, মাহাম বেগমকে প্রজ্ঞা, মর্যাদা এবং কর্তৃত্বের সমন্বয়ে একজন বিচক্ষণ নারী বলে মনে করা হতো। যিনি তার সন্তানদের নানা ধরণের পরামর্শ এবং নির্দেশনা দিতে পছন্দ করেন। নেতৃত্ব দেওয়া এবং তার পরিবারের নাম ও সম্মান বজায় রাখাকে তিনি তার কর্তব্য বলে মনে করতেন।”

এর বাইরে রাজনৈতিক বিষয়ে হামিদা বানু বেগমের ভূমিকাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ, যিনি অনেক কষ্টে হুমায়ূনকে বিয়ে করতে রাজি হন।

এই ঘটনাটি ‘হুমায়ুন নামা’-তে বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে –

“৪০ দিন ধরে হামিদা বানু বেগম (বিয়ে করতে) অনিচ্ছুক ছিলেন এবং তিনি কোনোভাবেই রাজি হচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত আমার মা দিলদার বেগম তাকে বলেন যে, তার তো কাউকে না কাউকে বিয়ে করতেই হবে। তাহলে রাজার চেয়ে ভালো আর কে হতে পারে?”

উত্তরে বেগম বলেছিলেন,

“হ্যাঁ, আমি তাকেই বিয়ে করবো যার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারবো। তাকে বিয়ে করবো না যার পা পর্যন্ত আমার হাত পৌঁছাবে না। আমার মা তাকে অনেক উপদেশ দিয়ে অবশেষে রাজি করান।”

তাকে মরিয়ম মাকানি উপাধি দিয়েছিলেন তার ছেলে সম্রাট আকবর।

বিয়ের পর হামিদা বানুকে হুমায়ুনের সঙ্গে দীর্ঘ সময় প্রবাসে কষ্টকর সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

সিন্ধুর অমরকোটে আকবরের জন্মের এক বছরের মধ্যে, তাকে একজন ধাত্রীর কাছে রেখে, তিনি হুমায়ুনের সাথে কান্দাহার এবং তারপর পারস্যের বিপদজনক যাত্রায় অংশ নেন।

হুমায়ুনের আস্থাভাজন আমির মুনাইম খানের নাতনির সাথে আকবরের বিয়ের ব্যবস্থা করে বৈরাম খানের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তারা একটি রাজনৈতিক জোট গঠন করেন।

হামিদা বানু রাজকীয় হারেমে উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং তার ফরমান জারি করার অধিকার ছিল।

‘হুমায়ুন নামা’ অনুসারে, রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানের পর, যাকে জশন-ই-জুলুস বলা হয়, সম্রাট প্রথমে তার মা এবং পরে অন্যান্য আত্মীয়দের সাথে দেখা করতেন।

ইতিহাসবিদ আবুল ফজল লিখেছেন যে, আকবর তার মা মরিয়ম মাকানিকে খুব সম্মান করতেন এবং তাকে স্বাগত জানাতে রাজধানী থেকে বের হয়ে যেতেন।

একবার আকবরের মাকে পালকিতে করে লাহোর থেকে আগ্রায় নিয়ে যাওয়া হয়।

আকবর, যিনি তাঁর সাথে ভ্রমণ করছিলেন, তাঁর পালকি কাঁধে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেতেন এবং নদীর এক তীর থেকে অন্য তীরে নিয়ে যেতেন।

‘আকবরনামা’-তে লেখা আছে যে একবার শাহজাদা সেলিমকে অতিরিক্ত মদ্যপান ও খারাপ সঙ্গের কারণে সম্রাট আকবর কিছু সময়ের জন্য তাকে শাস্তি দিয়েছিলেন, কিন্তু পরে মায়ের অনুরোধে সেটি প্রত্যাহার করে নেন।জাহাঙ্গীর তার মা যোধাবাইকে (মারিয়াম-উজ-জানি) অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন।

যুবরাজ সেলিম একবার বিদ্রোহ করেন এবং এলাহাবাদে রাজকীয় অবস্থান গ্রহণ করেন। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আকবর তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত উপদেষ্টা আবুল ফজলের সাহায্য নেন। কিন্তু পথে আবুল ফজলকে হত্যা করেন সেলিম। আকবর খুবই কষ্ট পান এবং ক্ষুব্ধ হন।

মরিয়ম মাকানি এবং গুলবদন বেগম, সেলিমকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য সম্রাটের কাছে অনুরোধ করেন।

আকবর তাদের অনুরোধ মেনে নেন এবং তার ফুফু গুলবদন ও স্ত্রী সালিমা সুলতানা বেগমকে বলেন রাজকুমার যেন তার কাছে ক্ষমা চায় এবং তাকে যেন আদালতে হাজির করা হয়।

পরে স্ত্রী সালিমা ও সৎ মা মাহ চুচাক বেগমের মেয়ে বখতুল-নিসা দুজনের মধ্যে মীমাংসা করেন।

এই সেলিম, সম্রাট জাহাঙ্গীর হন। তুজুক-ই জাহাঙ্গীরীর মতে, জাহাঙ্গীর তার মা যোধাবাইকে যার আনুষ্ঠানিক নাম রাখা হয়েছিল মারিয়াম-উজ-জানি, তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন।

তার বাড়িতে সম্রাটের ওজন করা হতো এবং রাজকুমারদের বিয়ে দেয়া হতো।

মাহাম বেগমের মৃত্যুর পর বাবর তার বড় বোন খানজাদা বেগমকে বাদশাহ বেগম উপাধি দিয়ে হারেমের প্রধান করেন। গুলবদন তাকে ‘প্রিয়তম নারী’ বা ‘আকে জনম’ বলে সম্বোধন করতেন।

হুমায়ুনের শাসনামলে তিনি এই পদে বহাল ছিলেন। সেসময় খানজাদা বেগম হুমায়ুন এবং তার ভাই হিন্দাল, কামরান এবং আসকারির মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করেন।

গুলবদন বেগম ‘হুমায়ুন নামা’য় অনেক উদাহরণ দিয়েছেন যেখানে বোনদের প্রতি বাবর এবং হুমায়ুনের ভালবাসার চিত্র ফুটে ওঠে। বোন বিধবা হলে ভাই তাকে আশ্রয় দিতে সদা প্রস্তুত থাকতেন।

গুল মিশকা বেগম বিধবা হলে হুমায়ুন তাকে আগ্রায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। জাহাঙ্গীর তার স্মৃতিচারণে তার বোন শুকর-উল-নাসা বেগম এবং উরম বানু বেগমের কথা স্নেহের সাথে উল্লেখ করেছেন, যদিও তারা ভিন্ন মায়ের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

মুঘল সম্রাটরা তাদের কন্যাদের খুব ভালোবাসতেন। তাদের শিক্ষিত করে তুলতে এবং প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে নানা ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হত।

কিন্তু তাদের অনেকেই, বিশেষ করে আকবরের আমলে তারা অবিবাহিত থাকতেন। মানুচির মতো অনেক লেখক এবং বিদেশে ভ্রমণকারীরা আকবরকে এই ঐতিহ্যের সূচনা করার জন্য দায়ী করেন।

তবে অনেক লেখক এতে একমত হননি। তাদের মতে, আকবর তার বোন ও কন্যাদের যোগ্য পুরুষদের সাথে বিয়ে করাতেন। তবে আকবর নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে পছন্দ করতেন না।

শাহজাহানের সময় পর্যন্ত রাজকন্যাদের বিয়েতে কিছু বিধিনিষেধ ছিল। এটি সম্ভবত সিংহাসনের দাবিদারদের সংখ্যা সীমিত করার জন্য করা হয়েছিল।

কিন্তু আওরঙ্গজেব তার কয়েকজন কন্যা এবং ভাতিজিকে ভাই-বোনের সন্তানদের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন।

মুঘল রাজকন্যাদের শিক্ষিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হতো।

বাবরের কন্যা, যিনি সাহিত্যকর্মে নিয়োজিত ছিলেন, তিনি ছিলেন গুলবদন বেগম। তিনি ‘হুমায়ুন নামা’ লেখার জন্য ব্যাপক পরিচিত ছিলেন।

আকবরনামা অনুসারে, হুমায়ুনের স্ত্রী বেগা বেগম, যিনি হাজী বেগম নামেও পরিচিত, একজন শিক্ষিত নারী ছিলেন। তিনি লেখালেখি করতে জানতেন এবং ওষুধ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখতেন।

হুমায়ুনের ভাতিজি সালিমা সুলতানা বেগম ফার্সি ভাষা ও সাহিত্যে পারদর্শী ছিলেন।

সম্রাট আকবরের নিজস্ব আনুষ্ঠানিক শিক্ষা খুবই কম ছিল। তবে তিনি শিক্ষাদীক্ষা বিস্তারে এবং রাজকুমার ও রাজকন্যাদের শিক্ষিত করে তোলার ব্যাপারে খুব আগ্রহী ছিলেন।

কথিত আছে যে তিনি তার ফতেহপুর সিক্রি প্রাসাদে মেয়েদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মুঘল রাজকন্যাদের প্রাসাদের অভ্যন্তরে শিক্ষিত নারী বা বয়স্ক পুরুষদের দ্বারা শিক্ষা দেওয়া হত।

আকবরের শাসনামলে জান বেগম নামে এক নারীকে কুরআনের তাফসীর লেখার জন্য সম্রাটের পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার দিনার পুরস্কার দেয়া হয়েছিল।

শাহজাহান এবং রানী মমতাজ বেগমের কন্যা জাহান আরা তার জ্ঞান ও মাধুর্যের জন্য পরিচিত ছিলেন। চিশতী রাজবংশের প্রবীণদের উল্লেখ করে তাঁর লেখা ‘মনুস-উল-আরওয়াহ’ আজও গবেষকদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি বই।

মুঘল রাজকন্যাদের মধ্যে জাইব-উল-নিসা একজন খ্যাতনামা কবি এবং সাহেব দেওয়ান ছিলেন। তাঁর ফারসি গজলগুলো অত্যন্ত সমাদৃত হয়েছিল।

ইতিাহসবিদ সোমা মুখার্জি লিখেছেন যে, রানী যদি নিঃসন্তান হন তবে তাকে অন্য নারীর সন্তান দত্তক নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হতো।

হুমায়ুনের মা মাহাম বেগম হুমায়ুনের জন্মের পর চার সন্তানকে হারান। পরে হুমায়ুনকে লালন পালন করেন সম্রাট বাবরের দ্বিতীয় স্ত্রী দিলদার বেগমের সন্তান হিন্দাল এবং গুল বদন।

আকবরের প্রথম স্ত্রী রুকাইয়া সুলতান বেগম নিঃসন্তান ছিলেন। পরে শাহজাদা সেলিমের পুত্র খুররম জন্ম নেয়ার পর তাকে রুকাইয়া সুলতানের হাতে তুলে দেয়া হয়।

আরেক ইতিাহসবিদ ইরা মুখোতির মতে, আকবর বিধবাদের পুনরায় বিয়ে করতে উৎসাহিত করতেন। তিনি বিধবা ও বিবাহবিচ্ছেদকে কলঙ্ক হিসেবে বিবেচনা করেননি।

তার সামনে খানজাদা বেগমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিল, যিনি দুবার তালাকপ্রাপ্ত ছিলেন। তারপরও উচ্চ সম্মানে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

শুরুতে সতীদাহ প্রথা চর্চাকারী নারীদের প্রশংসা করলেও পরে, তিনি প্রথাকে ঘৃণা করতে শুরু করেন এবং যেসব যারা এর সমর্থন করতেন তাদের সমালোচনা করেন।

আবুল ফজলের মতে, পুত্র সন্তান জন্মের সময় সম্রাট আকবর যেমন বিশাল উদযাপন করতেন ঠিক কন্যা সন্তান জন্মের সময়ও তিন ধুমধাম আয়োজনের আদেশ দিতেন।

সম্রাট আকবর সমাজে প্রচলিত বাল্যবিবাহ প্রথা অপছন্দ করতেন।

আকবর বিবাহ সংক্রান্ত নিয়ম জারি করেন এবং শহরগুলোয় কোতোয়ালদের দায়িত্ব আরোপ করেন যেন যথাসম্ভব এই ধরনের প্রথা বন্ধ করা যায়।

মুঘল সম্রাটদের সম্মান তাদের মা বা বোনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না।

বাবর যখন রাজা ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করেন, তখন তিনি তার মাকে সম্মান করেছিলেন, তাকে জমি এবং একটি প্রাসাদ দিয়েছিলেন।

বাবর তাকে ‘মা’ বলে ডাকতেন। কিন্তু তারা সম্রাটের খাবারে বিষ মেশানোর ষড়যন্ত্র করেছিল এম তথ্য পাওয়া যায়।

সম্রাট খুব কম খাবার খেয়েও অসুস্থ হয়ে পড়ন। পরে জানা যায়, ইব্রাহিমের মায়ের দেওয়া বিষের কারণে এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাবর তার প্রতি নম্র ছিলেন।

ষড়যন্ত্রে জড়িত অন্যদের হত্যা করা হলেও ওই নারীকে কাবুলে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু রক্ষীদের হাত থেকে পালিয়ে তিনি সিন্ধু নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

নিজের মা ছাড়াও সম্রাট হারেমের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নারীদেরও সম্মান করতেন।

বাবর নিজে প্রায়ই তাদের কাছে যেতেন। তাদের কেউ এসেছে খবর পেলে তিনি তাদের স্বাগত জানাতে মাঝে মাঝে পায়ে হেঁটে বের হতেন।

‘হুমায়ুন নামা’য় লেখা আছে যে তিনি শুক্রবারে বয়স্ক নারীদের সাথে দেখা করতেন।

“একবার খুব গরম পড়েছিল। রানী বললেন, বাইরে তাপের স্রোত বইছে, ওই এক শুক্রবার সেখানে না গেলে কী হবে? উত্তরে বাবর বললেন, যাদের বাবা-ভাই নেই, তাদের মন যদি খুশি না হয়, তবে আমাকেই তা করতে হবে।”

তার পিতার মতো, হুমায়ুন ব্যক্তিগতভাবে হারেমের বয়স্ক নারীদের সাথে দেখা করতেন এবং তাদের সাথে সদয় হয়ে কথা বলতেন। তার সম্মানে অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হতো।

আকবর তার দাদী গুল বদনকেও খুবই ভক্তি করতেন, তার অনুরোধেই গুল বদন ‘হুমায়ুন নামা’ লেখেন।

মুঘল হারেমে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, ইরানী, তুরানি, পর্তুগিজ এবং অন্যান্য অনেক ইউরোপীয় জাতীয়তা এবং দেশের বিভিন্ন দেশের নারীরা ছিলেন।

বাবর হারেমের নারীদের পরগণা দেওয়ার প্রথা চালু করেন। পরগনা হল কয়েকটি মৌজা নিয়ে গঠিত এলাকা যেখান থেকে রাজস্ব আদায় করা হত।

তিনি ইব্রাহিম লোদির মাকে সাত লাখ টাকার একটি পরগনা দিয়েছিলেন। তিনি হারেমের নারীদের জন্য কিছু বাড়ি এবং জমিও বরাদ্দ করেছিলেন।

হুমায়ুন সুফি ভোজে হারেমের নারীদের আশরাফি ও শাহরাখী আকারে মূল্যবান উপহার দিতেন।

এই অর্থ দিয়ে, তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন ছাড়াও, রাজকীয় নারীরা দাতব্য কাজ এবং ভোজের আয়োজন করতেন।

বাবরের মৃত্যুর পর মাহাম বেগম দিনে দুবেলা মানুষদের খাওয়াতেন।

তিনি ১৫৩০ সালে হুমায়ুনের সিংহাসনে আরোহণের জন্য একটি দুর্দান্ত ভোজের আয়োজন করেন এবং সাত হাজার লোককে খাওয়ান।

হুমায়ুনের স্ত্রী হাজী বেগমও তার ব্যক্তিগত ভাতার একটি বড় অংশ দাতব্য কাজে ব্যয় করতেন।

তিনি মক্কায় হজে প্রচুর দান-খয়রাত করেন। হারেমের এই রাজকীয় নারীরা প্রিয়জনকে বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোয় মূল্যবান উপহার দিতেন।

প্রকৃত মা ছাড়াও মুঘল পরিবারে পালক মাও ছিলেন। এই পালক মায়েরা, যাকে বলা হয় অঙ্গাস, তারা মুঘলদের অত্যন্ত সম্মানের পাত্র ছিলেন।

আকবরের পালক মা মাহিম অঙ্গাস ছিলেন সম্রাটের পর সবচেয়ে শক্তিশালী নারী।

প্রকৃত মা ছাড়াও মুঘল পরিবারে পালক মাও ছিলেন। জাহাঙ্গীর তার পালিত মায়ের মৃত্যুর কথা তার স্মৃতিকথা ‘তাজক জাহাঙ্গীরী’তে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন –

“কুতুবউদ্দিন খান কোকার মা, যিনি আমাকে লালন-পালন করেছেন এবং আমার কাছে মায়ের মতো ছিলেন।”

“তিনি আমার আপন মায়ের চাইতেও সদয় ছিলের। কিন্তু আল্লাহর রহমত নিয়ে আমার সেই মা চলে গেছেন। তার লাশ বহনকারী খাটিয়ার যেদিকে পা ছিল, সেই অংশটি আমি কাঁধে নিয়েছি, এবং তাকে কবর পর্যন্ত বয়ে নিয়ে গিয়েছি। তীব্র যন্ত্রণায়, কয়েকদিন ধরে কিছু খেতে ইচ্ছে করেনি, জামাকাপড় বদলাতেও মন চায়নি।”

ইতিহাসবিদ ফজল হুসেন লিখেছেন যে, মুঘল হারেমে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, ইরানী, তুরানি, পর্তুগিজ এবং অনেক ইউরোপীয় জাতীয়তা এবং বিভিন্ন দেশের নারীরা ছিলেন।

এইভাবে, তারা পরোক্ষভাবে তাদের স্বামী এবং অন্যদের বিভিন্ন ভাষা শেখাতেন এবং তাদের বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্কৃতি ও শিল্পের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেন।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজদীপ সিনহা, অন্নপূর্ণা সিংহদাস গবেষণাপত্রে দেখেছেন যে, মুঘল ভারতে রাজবংশের নারীদের অনেক আইনি অধিকার এবং অসাধারণ ক্ষমতা ছিল।

তাদের ডিক্রি বা ফরমান জারি, সংকেত দেয়া বা পরোয়ানা দেয়াসহ নানা ধরণের সরকারি নথি জারি করার ক্ষমতা ছিল।

শাহজাহানের শাসনামলে শাহী সীলমোহরটি রানী মমতাজ মহলের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মমতাজ মহলের মৃত্যুর পর এটি বেগম সাহেবা অর্থাৎ মেয়ে জাহান আরাকে দেওয়া হয় ।

ঝাড়ুকা দর্শনে সম্রাটের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের রানী নূরজাহানকেও দেখা গিয়েছিল।

এভাবে প্রশাসন কার্যত নূরজাহানের হাতে চলে আসে এবং তার সম্মতি ছাড়া রাষ্ট্র সংক্রান্ত কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হতো না।

জাহাঙ্গীরের রাজকীয় আদেশের সাথে নুরজাহানের সীলমোহর এবং স্বাক্ষরও লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল।

জাহাঙ্গীরের সময়কার রৌপ্য ও স্বর্ণমুদ্রায়ও নুরজাহানের নাম খোদাই করা ছিল। জাহাঙ্গীরের নির্দেশে তিনি ১০০টি রত্ন পান। তাকে নুরজাহান বাদশা বেগম বলা হতো।

জার্মান প্রাচ্যবিদ অ্যান মেরি শ্মাল জাহাঙ্গীরের এই কথাগুলো লিখেছেন – “আমি নুরজাহানকে প্রশাসনের দায়িত্ব অর্পণ করেছি; আমি রক্ত মাংসের মানুষ ছাড়া আর কিছুই না।”

কিন্তু ভাষ্যকার আলেকজান্ডার ডাও বলেছেন –

“নুরজাহান সমস্ত বিধিনিষেধ ও প্রথা ভেঙ্গে জাহাঙ্গীরের দুর্বলতার চেয়ে নিজের যোগ্যতায় ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন।”

মূলত মুঘল সাম্রাজ্যে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী পুরুষদের একেকজনের দৃঢ় ব্যক্তিত্বের দিগ্বিজয়ী সম্রাট হয়ে ওঠা কিংবা তাদের মানস তৈরি অথবা পেছন থেকে তাদের পরিচালনায় ছিলেন কোন একজন অসামান্য নারী, যারা বুদ্ধিমত্তা এবং বিচক্ষনতার মাধ্যমে অর্জন করেছিলেন অগাধ শ্রদ্ধা আর বিপুল প্রভাব।

 

দাম্পত্য জীবনের শুরু থেকেই মনে রাখুন পাঁচ কৌশল

মাঝে মাঝে কিছু দমকা হওয়া ছন্দপতন এনে দিতে পারে সুন্দর দাম্পত্য জীবনে। অথবা কোনো ঠুনকো মান অভিমানের পাল্লা ভারী হতে হতে একসময় ভঙ্গুর হয়ে যায় দাম্পত্য জীবন। তাই দাম্পত্য জীবনের শুরুতেই মনে রাখুন পাঁচ কৌশল-

১। শ্রদ্ধার সম্পর্ক গড়ে তুলুন

দুটো প্রাণ এক সাথে পথ চলায় জীবনের আঁকাবাঁকা পথে কিছু কাঁটার আঁচড় রক্তাক্ত করে দেয় মাঝে মাঝে। রাগ ক্ষোভ জমতে জমতে একসময় একে অপরের প্রতি খানিক বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। ঠিক এ মুহুর্তে সঙ্গীর ভালো গুণগুলো মনে করুন। ভাবুন তাঁর অকৃত্রিম গুণসমূহের কথা, রাগ ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলে শ্রদ্ধা করুন একে অপরকে। স্বামী হলে স্ত্রীকে যথাযথ মর্যাদা দিন। তাঁর ব্যক্তিত্বে আঘাত লাগে এমন কথা কখনোই বলবেন না । আর স্ত্রী হলে স্বামীর প্রতি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কখনো বিষাক্ত বাণ ছুড়বেন না। কথার আঘাত তীরের চেয়েও ধারালো।

 

২। প্রত্যাশা ছাড়াই ভালবাসুন

কোনোরকম প্রত্যাশা ছাড়াই একে অপরকে ভালবাসুন। পরস্পরকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করতে হবে। যে কোনো সিদ্ধান্তে পরস্পরের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। আপনি হয়তো তাকে বেশী ভালোবাসেন , তাই বলে সবক্ষেত্রে নিজের মতো ভালবাসা প্রত্যাশা করবেন না । মনে রাখুন প্রত্যেকের ভালবাসা প্রকাশের ধরণ ভিন্ন।

৩। বিবাহ পূর্ব জীবন সম্পর্কে অকারণ গোয়েন্দাগিরি বন্ধ করুন

আজকাল কিছু অতি উৎসাহী দম্পতিকে দেখা যায়, সঙ্গীর বিবাহ পূর্ববতী জীবন নিয়ে অতি সজাগ থাকে। এমনও হতে পারে আপনার স্বামী বা স্ত্রী বিবাহ পূর্ব কোন সম্পর্ক বা ভালো লাগায় জড়িত ছিলেন। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে বিয়ের পূর্বে খোঁজ নিন, কিন্তু বিয়ের পরে নয়। স্বামী বা স্ত্রীকে মাফ করে দিন, মন থেকে ভালবাসুন।

৪। সহযোগী হন, প্রতিযোগী নয়

স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার মধ্য দিয়েই দাম্পত্য জীবন সুখী হয়। একে অপরের সাফল্যে নিজের মতোই খুশী হন । পরস্পরের কল্যাণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করুন। একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীল হন।

৫। আজীবন একে অপরকে আবিষ্কার করুন

স্বামী স্ত্রীকে একে অপরকে আবিষ্কার করুন৷ প্রতিটি মানুষেরই ব্যক্তিগত ভালো মন্দের বিষয় আছে ৷ পরস্পরের প্রিয় বিষয়গুলোকে বিষয়গুলো মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করতে হবে ৷ তার চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপারগুলোর প্রতিও একইভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে ৷ এগুলো আবিষ্কার করলেই হবেনা বরং ন্যায় সঙ্গত চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে ৷ তাছাড়াও ভালোবাসার কথা জানান দিন নিয়ম করেই।
এছাড়া স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে অবস্থান করলে নিয়মিত খোঁজ-খবর নেয়া উচিত ৷ কাজের ফাঁকে অফিস থেকে ফোন করে কথা বললে স্ত্রীর একাকীত্ব বা মন খারাপের ভেলা দূর হয়ে যায়। এছাড়া কোথাও বেড়াতে গেলে একে অপরকে ছোট-খাটো উপহার সামগ্রী দেয়া যেতে পারে। এতে হৃদ্যতা ও ভালোবাসা প্রকাশ পায়।

 

শীতের সবজি দিয়ে তৈরি করুন মজাদার সবজী খিচুড়ি

 

শীত মানেই বিভিন্ন সবজীর সমাহার এবং মজাদার খাবারের মেলা। শীতে সুস্বাদু সবজি খিচুড়ি হলে জমে বেশ। শীতের সকালে এক প্লেট গরম খিচুড়ি দিয়ে পরিবারের সবার মন ভালো করে দিতে পারেন। আসুন জেনে নেই মজাদার সবজী খিচুড়ির রেসিপি-

যা যা লাগবে-
পেয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ
আদা কুচি দেড় চা-চামচ,
হলুদ গুড়া ১ চা চামচ
মরিচ গুড়া ১ চা চামচ
কাঁচা মরিচ ফালি ৬/৭ টি
তেজপাতা ৩ টি
দারচিনি ৩ টি
লবঙ্গ ৩টি
পোলাওয়ের চাল ২ কাপ
মুগ ডাল ১/২ কাপ
মসুরির ডাল ১/২ কাপ
গাজর, বরবটি, আলু, ফুলকপি, সিম প্রতিটা সবজি ১/২ কাপ করে। তাছাড়া পছন্দ মত যেকোনো সবজি
আলুবোখারা ও কিসমিস পরিমাণ অনুযায়ী
লবণ স্বাদ মত
তেল পরিমান অনুযায়ী
ঘি ১ টেবিল চামচ

যেভাবে তৈরি করবেন-
প্রথমে মুগ ডাল ভেজে চাল ও ডাল এক সঙ্গে ধুয়ে ১০-১৫ মিনিট পর ভালভাবে পানি ঝরিয়ে নিবেন ।
একটি পাত্রে তেল গরম হলে পেয়াজ বেরেস্তা দিয়ে সবিজিগুলো কিছুটা ভেজে নিন। আদা কুচি, তেজপাতা, দারচিনি, লবঙ্গ, হলুদ ও মরিচ দিয়ে চাল ও ডাল ভেজে নিন। এরপর ৭ কাপ ফুটন্ত গরম পানি দিয়ে ঢেকে চুলার জ্বাল বাড়িয়ে দিন। ভালো করে ফুটে উঠলে জ্বাল কমিয়ে দিন। কাঁচা মরিচ, আলুবোখারা, কিসমিস ও ঘি দিয়ে দমে রেখে দিন। আচার বা ভর্তা দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

একই রকমভাবে হলুদ ও মরিচ ছাড়া অন্যান্য উপরকরণ দিয়েও তৈরি করতে পারেন মজাদার সবজী খিচুড়ী।

 

শীতে যেভাবে চুলের যত্ন নিবেন

 

শীতে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ার কারণে চুল হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ । আসুন জেনে নেই শীতে কীভাবে চুলের যত্ন নিবেন-

সঠিক উপায়ে চুল আঁচড়ান

শীতকালে চুলের শুষ্কতা বেড়ে যাওয়ায় সহজেই চুলে জট বেঁধে যায়। চুল ভালো করে আঁচড়ালে এই সমস্যা থাকবে না। তাছাড়া ঘুমানোর আগে, গোসলের আগে এবং তেল দেওয়ার আগে চুল আঁচড়ে নিলে চুল কম পড়ে। চুল নিয়মিত আঁচড়ালে মাথার রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এতে করে চুল ও চুলের গোড়া সুস্থ থাকে।

 

ভালোভাবে চুল পরিষ্কার করুন

যেহেতু শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে, তাই এ সময় মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো। এতে চুল পড়া কিছুটা হলেও কমে। এক মগ পানির সঙ্গে ২ চামচ ভিনেগার মিশিয়ে রেখে শ্যাম্পু করার পর এই ভিনেগার মেশানো পানি মাথায় ঢালতে হবে। এতে করে চুল হবে মসৃণ ও উজ্জ্বল। চুলের যত্নে শীতকালে কিছু মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। চুল পড়া রোধে নারকেল তেল ও ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গে ভিটামিন সি ক্যাপসুল ও ডিমের কুসুম মিশিয়ে মাথায় লাগালে চুলের উপকার হয়। আবার চুলে মসৃণ ও চকচকে ভাব আনার জন্য মধু, টকদই ও ডিমের সাদা অংশ একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

চুলে গরম পানি দেয়া থেকে বিরত থাকুন

শীতকালে কনকনে ঠান্ডায় কষ্ট হবে ভেবে চুলে গরম পানি ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে চুলের গোড়া নরম হয় ও চুলের নানা ক্ষতি হয়। বেশি গরম পানি চুলের গোড়াকে নরম করে দেয়, পাশাপাশি চুলকে অনেক বেশি শুষ্ক করে দেয়। তাই চেষ্টা করবেন বেশি গরম পানি চুলে না ঢেলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে।

চুলের যত্নে তেল ব্যবহার করুন

তেল দিয়ে অনেকটা সময় রেখে দেওয়া উচিত নয়। এতে চুল সহজে ময়লা ও চিটচিটে হয়ে যায়। রাতে ঘুমানোর আগে গরম তেলের ম্যাসেজ করে সকালে বাইরে যাওয়ার আগে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। গরম তেল ম্যাসাজ করে গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখা তোয়াল মাথায় জড়িয়ে রাখতে পারেন। এতে চুলের গোড়া হবে শক্ত ও মজবুত।

 

মেয়েই হচ্ছেন কিম জং উনের উত্তরসূরি

মেয়ে কিম জু আয়’কে উত্তর কোরিয়ার পরবর্তী প্রজন্মের শাসক হিসেবে তৈরি করতে চাইছেন কিম জং উন । বর্তমানে তার মেয়ের বয়স  ১০ বছর। বাবার সাথে বেশ কয়েকটি সামরিক কর্মসূচিতে দেখা গেছে তাকে।

এই প্রথম কিমের উত্তরসূরি হিসেবে কিম জু আয়ের নাম সামনে এনেছে  দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি সার্ভিস (এনএইএস)। অবশ্য বিষয়টি এখনো পিয়ংইয়ংয়ের বিবেচনাধীন বলে জানিয়েছে এনআইএস।

 

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের শেষের দিকে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আসেন কিম কন্যা জু আয়ে। প্রথম জনসমক্ষে আসার পর তাকে ‘প্রিয়’ কন্যার পরিবর্তে ‘সম্মানিত’ কন্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। আর ‘সম্মানিত’ বিশেষণটি উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তির জন্য সংরক্ষিত।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, কিম জং উন উত্তরসূরি হিসেবে তার মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করার পরিকল্পনা থেকেই জু আয়েকে জনসাধারণের কাছে আগে থেকেই পরিচিত করেন। কঠোরভাবে পিতৃতান্ত্রিক উত্তর কোরিয়ার জন্য কুসংস্কার কাটিয়ে ওঠার একটি উপায়ও হতে পারে এটি। কারণ দেশটির নেতৃত্ব কখনই কোনো নারীর হাতে আসেনি।

 

নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা

 

আজকাল পত্র- পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে নারী নির্যাতনের চিত্র। ঘরে- বাইরে কোথাও নারী নিরাপদ নয়। সভ্য মানুষের মুখোশের আড়ালে পাশবিকতায় বেশি দৃশ্যমান। অহরহ ঘটে চলেছে যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, গুম, খুন, হত্যার মতো বিভৎস ঘটনা। নারীর নিরাপত্তা যেন অকল্পনীয় কিছু! কিন্তু যেই নারীরা সমাজের স্তম্ভ, প্রকৃতির মতো লালন- পালন করার ক্ষমতা যাদের ওপর প্রদত্ত তারাই নির্যাতন – নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। নারীদের এই হীন দশা আধুনিক যুগে এসেও একই। বলা চলে বর্তমান সময়ে যুগের সঙ্গে নারী নির্যাতনের পথগুলো আরও সহজ হয়েছে পাশবিক মানুষদের কাছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে, ঘরে- বাইরে সর্বত্রই নারী এক গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছে। তবে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা গেলে জাতি মুখ থুবড়ে পড়বে। নারী এবং পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সুস্থ, সুন্দর সমাজ গড়ে ওঠে। তাই নারীর নিরাপত্তা এখন সময়ের দাবি।

হত্যা, ধর্ষণ, গুম, খুন, নির্যাতনের মতো সহিংস অপরাধের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভিকটিম পূর্ব পরিচিত বা এলাকার লোকজনের দ্বারা পাশবিকতার শিকার! কন্যা শিশু, তরুণী বা নারী যদি পূর্ব পরিচিতদের কাছেও নিরাপদ না হয় তাহলে নারীর নিরাপত্তা সত্যিই কোথায়? মানুষের নগ্নরূপ থেকে কিভাবে পরিত্রাণ মিলবে নারীদের?

সাম্প্রতিককালে নারী নিপীড়ন বহুগুণে বেড়েছে। যারা দৈনক পত্র – পত্রিকায় চোখ রাখেন তারা বাড়ির কন্যা সন্তান বা নারী সদস্যকে নিয়ে বলতে গেলে অনেকটাই ভীতির মধ্যে দিনযাপন করেন। সন্তানের চিন্তায় পিতা- মাতার স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে শুধু অল্প বয়সী তরুণীই নয় বর্তমানে শিশু থেকে প্রবীণ সব বয়সী নারীরা সমাজে অনিরাপদ। ভয়াবহ এক অশরীরী সময়ে বসবাস করছি যেন আমরা। কোথা দিয়ে কখন নারী কোন সর্বনাশের মধ্যে পড়ে যাবে সেই ভয় নারীকে সবসময় আচ্ছন্ন রাখছে! এই ভীতি আর কতদিন? নারীর জীবনকে কেন নিরাপদ করা যাচ্ছে না? এর দায় কার?

ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলোতে বেশিরভাগ সময় লক্ষ করা যায়, অভিভাবকের অনুপস্থিতির সুযোগই গ্রহণ করে নিপীড়নকারী। অভিভাবক চাকরিজীবী হলে সেক্ষেত্রে সন্তানকে পরিচিত কারো কাছে রেখে যাচ্ছেন। এবং পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে এই সন্তান ঠিক শতভাগ নিরাপদ নয় তাদের কাছেও! কখনও কখনও তাদের দ্বারাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কন্যা শিশু। তাহলে সত্যিকার অর্থে কন্যা শিশুর নিরাপত্তা কে দেবে? এক্ষেত্রে শুধু শিশুই নয় নারীরাই অনিরাপদ থাকছে ক্ষেত্রবিশেষে! নারীকে নিরাপদ করতে হলে সমাজকে মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে।

ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটার পিছনে অন্যতম কারণ প্রতারণামূলক উপায়ে প্রলুব্ধ বা জোরপূর্বক অপহরণ করে ধর্ষণ চেষ্টা। রাস্তা-ঘাটে নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে অহরহ। ভুল বুঝিয়ে বা কোন সমস্যা সৃষ্টি করে নারীকে বোকা বানিয়ে তার সর্বস্ব লুট করে নেওয়ার পাশাপাশি নারী জোর পূর্বক ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ধর্ষণের আরও একটি কারণ হিসেবে দেখা যায়, ভিকটিমের একাকী অবস্থান। কুচক্রী মহল নারীর একা থাকাকে কেন্দ্র করে সুযোগ গ্রহণ করে। কিন্তু নারীর নিরাপত্তার চাদর হয়ে কে বা কারা সবসময় সঙ্গে থাকবে? তাহলে কী এ সমাজে নারী একা চলাচল করতে পারবে না?

বর্তমান সময়ে নারীর ধর্ষণের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে প্রেমের নামে প্রতারণা। ছল-চাতুরি করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে একসময় শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাধ্য করা হচ্ছে । আর এই সুযোগে নারীকে বশে এনে নারীর সম্ভ্রম নিয়ে মেতে উঠছে কুচক্রী মহল। অনেক সময় নারীরা সরলতা, বিশ্বাসের জেরেও ফাঁদে পা দিচ্ছে। শিশুদের ধর্ষণের ক্ষেত্রে পাষণ্ডরা ব্যবহার করে চলেছে শিশুর অবুঝ মনকে। খাবার, খেলানা সামগ্রীর প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কব্জা করে শারীরিক নিপীড়ন করা হচ্ছে। শিশু ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বেশি কাছের মানুষ বা পূর্ব পরিচিত কারো দ্বারা। এক্ষেত্রে ধর্ষক শিশুর সারল্যকে পুঁজি করে এই নোংরা খেলায় মেতে উঠছে। কারণ শিশুরা অভিযোগ করতে পারে না। বা বোঝেই না তাদের সঙ্গে কত নোংরা পাশবিকতা ঘটে গেছে! ফলে কুরুচিপূর্ণ মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তি শিশুদের সারল্য, অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করছে! এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সর্বোচ্চ সচেতনতা জরুরি। সন্তানকে কার কাছে রাখছেন, কতটা ভরসা করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে।

বিয়ের আশ্বাস গ্রহণের মাধ্যমেও নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে! প্রেম এবং বিয়ের আশ্বাসে নারীর বিশ্বাসের সুযোগে তাকে ধর্ষণের শিকার করে তুলছে একশ্রেণির মানুষ। বর্তমান সময়ে এই ঘটনা খুব একটা বিরল নয় যে, বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন। নারীরা তাদের অসহায়ত্বকে সুযোগে পরিণত করে দেয় নিপীড়নকারীর। আবার অনেক সময় ধারালো অস্ত্র বা বন্দুকের মুখে রেখেও নারীর প্রতি পাশবিক অত্যাচার চালাচ্ছে! নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীদের তোপের মুখে ফেলতে মানসিকভাবে বিকৃত রুচিসম্পন্ন মানুষ নামের পশুরা
অভিনব ফন্দি, কৌশল ব্যবহার করে চলেছে।

ইন্টারনেটের যুগে সবার হাতেই প্রায় স্মার্টফোন। আর এই ফোনের মাধ্যমেই একে অপরের সঙ্গে আলাপ- পরিচয় ঘটছে। কিন্তু ভালোমতো চেনা- পরিচয় না ঘটলেও নারীরা অনেক সময় ব্যক্তিগত ছবি, গোপন ভিডিও আদান-প্রদানের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে। সম্পর্কের অবনতি, দ্বন্দ্ব, টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ধান্দায় ব্লাকমেইলিং করে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলাও খুব সাধারণ ঘটনা বর্তমানে। তাই সমাজে ঘটে চলা এসব সমস্যা থেকে নারীদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সচেতন হতে হবে পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে।

নারীরা নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলতে গিয়েও অনেক সময় ফাঁদে পা দিয়ে ফেলছেন। বিভিন্ন ধরনের চাকরির প্রলোভন, অভিনেত্রী হওয়া, পরীক্ষায় ভালো ফলের আশায় শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে নারীর অসতর্কতা, সারল্য, ভয়, সম্মানহানি, প্রলোভন সবই দায়ী। অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে নারীকে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন সমাজে ঘটেই চলেছে। নারীকে সচেতন হতে হবে। কর্মক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হলে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।

সবচেয়ে ভীতিপ্রদ অবস্থা গণপরিবহনে চলাচল। বর্তমানে নারীরা ঘরে- বাইরে সমানভাবে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করছে। আর এই সুযোগে এক শ্রেণির বখাটে, লম্পট, মদ্যপ, বিকৃত রুচিসম্পন্ন মানুষ নারীদের ভোগ্য পণ্য মনে করে চলেছে। এবং গণপরিবহন, রাস্তা-ঘাটে ইভটিজিং, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ করছে। চলন্ত বাসে নারী সংঘবদ্ধ ধর্ষণ জাতির নির্লজ্জ চিত্র আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। মানুষের রুচি কতটা নিচে নেমে গেলে নারীর সঙ্গে এরূপ বিভৎস আচরণ করে মানুষরূপী পশু। কাজের সূত্রে ঘরে ফিরতে দেরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু একলা নারীর পথ চলা সমাজে নিরাপদ নয় আজও। গণপরিবহনে অন্য নারী যাত্রী না থাকলে ভয়ে ভয়ে নারীকে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। এই পরিস্থিতির পরিত্রাণ কবে ঘটবে?

এর বাইরে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ বা ক্ষোভ থেকে অপরাধীর প্রতিশোধপরায়ণতা তো আছেই। পারিবারিক দ্বন্দ্ব সংঘাত, জমিজামা সংক্রান্ত সমস্যা, প্রেম, দাম্পত্য সংকট প্রভৃতি কারণেও নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে। মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা, বিকৃত চিন্তা-ভাবনা, জৈবিক চাহিদা, ক্ষমতা প্রদর্শন, রাজনৈতিক কারণ, পরকীয়া, পূর্ব শত্রুতা, মাদকাসক্তি, অপরিচিত স্থানে ভ্রমণ প্রভৃতি বহুকারণে নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে। কোন কারণকেই ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। নারীদের প্রতি অসম্মান – অশ্রদ্ধা, অবহেলিত বস্তু সদৃশ ভাবনা যতদিন সমাজে বিরাজ করবে ততদিন নারী এ সমাজে নিরাপদ নয়। নারীদের অবরুদ্ধ দেখতেই যেন এ জাতি অভ্যস্ত ফলে পুরুষতান্ত্রিক কদর্য মানসিকতা নারীদের জন্য ফাঁদ পেতে রেখেছে। নারীর জন্য স্বাভাবিকভাবে সুস্থ পরিবেশ অকল্পনীয়।

নারীরা শুধু কুরুচিপূর্ণ মানসিকতার মানুষ দ্বারা ধর্ষণের শিকারই হচ্ছে না। রাষ্ট্র কর্তৃক নারীর জন্য গড়ে তোলা হয়েছে প্রহসন! কোন নারী ধর্ষণের শিকার হলে বিচারের আশায় যাওয়া নারীকেই সন্দেহ করা হয়। একজন ভুক্তভোগী নারী যখন অভিযোগ তোলেন তখন উল্টো তাকেই জেরার মুখে পড়তে হয়। যা ধর্ষণকে আরও একবার জীবিত করে তোলে! ফলে ধর্ষিত নারী একবার নয় এ সমাজ, রাষ্ট্র কর্তৃক বারবার ধর্ষণের শিকার হয়! আইনের এই হীন চিত্রের মুক্ষাপেক্ষী নারীরা তাই সঠিক বিচারের আশা না করে অনেক সময় নিজের ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেন। আত্মহত্যা করেন। এর দায় কী সমাজ, রাষ্ট্রের নয়?

আইনের আশ্রয়প্রার্থী নারীকে ডিএনএ টেস্টে জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ করলে একরকম সন্দেহের তীর তার দিকে থাকে তেমনই কালক্ষেপণ করলেও নারীকে জটিলতায় পড়তে হয়। তদন্ত প্রক্রিয়ার নামে নারীকে অস্বস্তি, বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। বিচারের নামে চলে প্রহসন! এমনকি এ সমাজ নারীর চরিত্র নিয়েই প্রশ্ন তোলে। ভুক্তভোগী নারী বিচারের আশায় আইনের আশ্রয় নিলে ঘরে- বাইরে তাকে নির্যাতিত হতে হয়। পরিবারের সম্মান, সমাজের কদর্য কথা নারীকে হজম করতে হয়। ঘরের বাইরে না বেরুলেই নারীরা পারেন, রাত- বিরাত এত বাইরে থাকা কিসের, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে এত মেলামেশা কিসের, গণপরিবহনেই বা নারী কেন যাতায়াত করবে প্রভৃতি অসংখ্য মন্তব্য নারীকে রক্তাক্ত করা হয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর জন্য যে শেকল তৈরি করেছে সেই শেকলে নারী কেন বন্দি নয়! নারীর প্রতি হওয়া অন্যায়- অবিচার রুখে দিতে এখনই তৎপর ভূমিকা পালন করতে হবে। নারী ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার হলে তার দায় নারীর নয় বরং যারা নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি আজও তাদের ওপর বর্তায়।

নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তদন্তের নামে দীর্ঘসূত্রিতা বন্ধ করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া সঠিক বিচারের পথে ভুক্তভোগীর ধৈর্য্যচুত্যি ঘটায়। ফলে নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনতে আইনের শ্লথগতি আগে পরিহার করতে হবে। বর্তমান সময়টা স্মার্টফোনের যুগ, ইন্টারনেটের যুগ। ফলে নারীদের উচিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত কোন ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে না তোলা। ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও আদান-প্রদান থেকে বিরত থাকা। আস্থা, বিশ্বাসের সুযোগে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে না পড়া।

ধর্ষণের জন্য বিশেষভাবে দায়ী পর্ণগ্রাফির সহজলভ্যতা। উঠতি বয়সী ছেলে- মেয়েরা পর্ণগ্রাফির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নিজেদের জীবনেও এ ধরনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে গিয়ে ডেকে আনছে সর্বনাশ। ভালো- মন্দ বোঝার আগেই জীবনে অঘটন ঘটিয়ে ফেলছে। অবাধ মেলামেশার সুযোগেও ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলো ঘটছে৷ তাই সরকারের উচিত পর্ণগ্রাফির ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা। পারিবারিকভাবে সন্তানকে ভালো- মন্দের শিক্ষা দিতে হবে। নারী- পুরুষ লিঙ্গভেদে আলাদা হলেও কেউ কারো অশ্রদ্ধার নয়। পরিবার থেকে সন্তানদের মধ্যে মূল্যবোধ, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে গুড টাচ, ব্যাড ট্যাচের শিক্ষা দিতে হবে।

একা সরকারের পক্ষ সমাজ থেকে ধর্ষণকে প্রতিহত করা সম্ভব নয়। এরজন্য কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি প্রত্যেক জনগণকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে নারীদের নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অপরিচিত, অর্ধপরিচিত এমনকি পরিচিত কোন ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে যাওয়ার আগে মানসিকতাকে আগে বুঝতে হবে। পারতপক্ষে ব্যক্তিগত তথ্য আদান-প্রদানে সতর্ক হতে হবে। কতটুকু পর্যন্ত জীবনের জন্য পরবর্তী সময়ে সমস্যার সৃষ্টি করবে না সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। সামজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

ধর্ষণকে রুখে দিতে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে সভা, সেমিনার করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। জনসচেতনতামূলক ভিডিও ক্লিপ, পথ নাটক, লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সমাজে সবাইকে এর কদর্য দিক সম্পর্কে বোঝাতে হবে। সচেতন করতে হবে জীবনের নিরাপত্তা, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে।

সুস্থ ধারার বিনোদন, সংস্কৃতি চর্চা, সন্তানের বই পড়ার অভ্যেস গড়ে তুলতে হবে। একটি ভালো বই, সুস্থ সংস্কৃতি মানুষের বোধকে জাগ্রত করতে সহয়তা করে ফলে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তা বিধান অভিভাবকমণ্ডলীর অবশ্যই তার মানস গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। অবসর সময়ে খেলাধুলা, ব্যায়াম, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে হবে।

বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হওয়া বেশ জরুরি। অনেক সময় দেখা যায় বাজে বন্ধুদের পাল্লায় পড়েও সন্তান বিপথে যায়। ধর্ষণের মতো জঘন্য নৃশংস কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। মাদকাসক্তি, ধূমপান, অসৎসঙ্গ থেকে পরিত্রাণ করতে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সরকারের একার পক্ষে যেমন নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় তেমনই নারীর সচেতনতায় শুধু তাকে নিরাপদ করার জন্য যথেষ্ট নয়। সমাজের সবার একযোগে এ লক্ষে কাজ করতে হবে। পশু বৃত্তির পরিত্রাণ ঘটাতে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে নারীদের। নারী সমাজের বাইরের কেউ নয়। একজন পূর্ণ মানুষ ফলে নারীর প্রতি কৌতুহল বন্ধ করতে হবে। ছেলে- মেয়েদের কো এ্যাডুকেশন তাদের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে সহয়তা করবে। ফলে মেয়ে- ছেলে লিঙ্গ বৈষম্য করে একে অপরের প্রতি প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব গড়ে না তোলা। পরিবার, সমাজ গঠনে নারীর যেমন অংশগ্রহণ জরুরি পুরুষেরও সমান অংশগ্রহণ জরুরি। কেউ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। সহোযোগী।

নারীরা যুগের পর যুগ ধরে সমাজে নিপীড়নের শিকার। নারীকে সুস্থ পরিবেশ দিতে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান খুবই জরুরি। নারী-পুরুষের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ অনেকাংশেই নিপীড়নের হাত থেকে নারীকে রক্ষা করতে সক্ষম। নারীকে দূরদর্শী হতে হবে। হঠাৎ আবেগে গা ভাসিয়ে না দিয়ে নিজের সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। গড়ে উঠুক বৈষম্যহীন, নিরাপদ, সুস্থ, স্বাভাবিক, কল্যাণময় পৃথিবী। যেখানে নারী মুক্ত বিহঙ্গের মতো বিচরণ করতে পারবে।

 

শীতে রান্নাঘরের কাজ সহজ করার কয়েকটি টিপস

 

শীতের সময়টা খুব অলস লাগে কাজ করতে সবারই। এই সময়টায় আমার মতো আপনারও রান্নাঘরের কাজ করা কঠিন মনে হতে পারে। বিশেষ করে ঠান্ডা জলে হাত দিয়ে কাজ, রান্না, ঘন্টার পর ঘন্টা রান্নাঘরে থাকা, বাসনপত্র ধোয়া, পরিষ্কার করা সহজ নয়। মাঝে মাঝে মনে হয় সারাদিন কম্বল মুড়ি দিয়ে দিনটা কেটে যাক। কিন্
কাজ তো করতেই হবে, কিন্তু যদি শীতকালে যদি দ্রুত রান্নাবান্নার কাজ সেরে ফেলা যায় তাহলে মন্দ হয় না। চলুন আজ আপনাদের সাথে শীতকালে রান্নাঘরের কাজ সহজ করার টিপস শেয়ার করে নেওয়া যাক। এই ছোট্ট হ্যাকগুলো আমাদের কাজকে অনেক সহজ করে দিতে পারে এবং এগুলোর সাহায্যে আমরা শীতে আমাদের সময় বাঁচাতে পারি।

১. ঠাণ্ডা জলের হাত থেকে বাঁচাঃ
শীতের সকালে সবচেয়ে আলস্য লাগে বাসনপত্র ধুতে। ঠাণ্ডা জলে হাত দেওয়ার ভয়ে সকালে আমার মত যাদের কান্না পায়, তারা এই সহজ উপায় অবলম্বন করে দেখতে পারেন। সকালে উঠে চা ও জলখাবারের জন্য যেটুকু বাসন ধুতে লাগবে তা জল একটু গরম করে ধুয়ে নিন। বাকি বাসন একটু বেলার দিকে পরিষ্কার করুন। ততক্ষণে রোদের জন্য পাইপের জল যথেষ্ট গরম হয়ে যায়। যাতে হাত দিতে কোন অসুবিধা হয় না।

২. আলু সেদ্ধ হতে অর্ধেক সময় লাগবেঃ
আলু সেদ্ধ করার আগে কাঁটা চামচের সাহায্যে কিছু গর্ত করে নিন। এই পদক্ষেপটি আপনার কাছে ছোট মনে হতে পারে, তবে এই একটি পদক্ষেপটি আলু সেদ্ধ করার সময়কে অর্ধেক করে দেবে। আলুতে দুপাশ থেকে গর্ত করে নিন, এতে আলু ভিতর থেকে ভালোভাবে সেদ্ধ হবে এবং রান্নার গ্যাসের সাথে সাথে আলু সেদ্ধ করার সময়ও বাঁচবে।

৩. রসুন এবং পেঁয়াজ পিলিং ট্রিকঃ
শীতকালে রসুন-পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোও বড় কাজের থেকে কম মনে হয় না। শীতকালে, হাত এমনিতেই ঠান্ডা থাকে এবং একে একে খোসা ছাড়ানো একটি ঝামেলার কাজ বলে মনে হয়। এই পরিস্থিতিতে, আপনি একটি ছোট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। গরম জলে রসুন এবং পেঁয়াজ ৩-৪ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এর দুটি সুবিধা হবে, প্রথমত, এটি খুব সহজে খোসা ছাড়বে এবং দ্বিতীয়ত, এটি একটু নরম হয়ে থাকবে এবং এর কারণে রান্নার সময় অনেকটাই কমে যাবে।

৪. আগাম সবজি মসলা তৈরি করুনঃ
আপনি সহজেই সবজি মসলা আগে থেকে প্রস্তুত করতে পারেন, যা প্রতিদিন সবজি মসলা ভাজার জন্য সময় বাঁচাবে। আপনার যখনই সময় থাকবে তখনই এটি তৈরি করুন এবং তারপরে ১০-১৫ দিনের জন্য প্রতিদিন এটি ব্যবহার করুন।

৪-৫টি টমেটো
৪টি পেঁয়াজ
৩-৪টি কাঁচা লঙ্কা
১০-১২টি রসুনের কোয়া
১/২ ইঞ্চি আদা টুকরো (আপনার স্বাদ অনুযায়ী বাড়াতে পারেন)
বড় লাল লঙ্কা (ঐচ্ছিক)
এই সব জিনিস ভাল করে পিষে নিন প্রথমে। তারপর এতে তেল যোগ করুন। একটি প্যানে ২০-২৫ মিনিটের জন্য ভাজুন। এই মুহুর্তে আপনার মনে হতে পারে যে ২০-২৫ মিনিট অনেক, কিন্তু ১০-১২ দিনের রান্নার সময় বিবেচনা করলে তা খুব কম। মনে রাখবেন তেল বেশি লাগে কারণ অনেক দিন চালাতে হয়। ঠাণ্ডা হলে তা বয়ামে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। প্রতিদিন রান্নার আগে বের করে এর থেকে ব্যবহার করুন।

৫. দুধ ফুটাতে ব্যবহৃত পাত্র নোংরা হবে নাঃ
শীতকালে দেখা যায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হল থালা-বাসন ধোয়ার ক্ষেত্রে অলসতা। এমন অবস্থায় যদি পাত্রে ময়লা বেশি থাকে তাহলে দেখতে খুব খারাপ লাগবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুধের পাত্রের নীচে দুধের ক্রিমের মতো কিছু জমে থাকে। এটি ঘষা নিজেই একটি বড় কাজ এবং অনেক সময় এটি পরিষ্কার করা একটি ঝামেলা হয়ে দাঁড়ায়।এটি যাতে জমে না যায় সেজন্য, প্রথমে দুধের পাত্রে কিছু জল রেখে তার উপর দুধ ঢেলেফোটান। এইটুকুই আপনাকে করতে হবে আর কিছুই নয়। এতে করে দুধ গরম করার পাত্র বেশি নোংরা হবে না।

অনেক সময় এমন হয় যে দুধ গ্যাসে রাখতে ভুলে গেলে তা ফুটে যায় এবং নিচে পড়ে যায়। এটি একটি খুব ঝামেলার কাজ এবং এটি পরিষ্কার করাও খুব কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে, শুধুমাত্র একটি ছোট কৌশল দিয়ে এটি বন্ধ করা যেতে পারে যাতে আপনাকে শীতে অতিরিক্ত কাজ করতে না হয়। দুধের পাত্রের উপরে একটি হাতা রাখুন। কাঠের হাতা রাখতে পারেন বা স্টিলের। এটি আপনার দুধকে উথলে পড়ে যাওয়ার থেকে আটকাবে।

৬. কুকারে ডাল এভাবে রান্না করুনঃ
শীতকালে কুকার পরিষ্কার করা একটি কঠিন কাজ বলে মনে হতে পারে। মসুর ডাল কুকারের ঢাকনায় লেগে থাকলে আরও কঠিন হবে। এমন পরিস্থিতিতে ডাল সিদ্ধ করার সময় দুই থেকে তিন ফোঁটা উদ্ভিজ্জ তেল যোগ করাই সবচেয়ে ভালো উপায়। এতে করে আপনার ডাল কুকারের ঢাকনা থেকে বের হবে না। এই পদ্ধতিটিও সহজ এবং সাথে সাথে আপনার কাজ হয়ে যাবে।

৭. দ্রুত ৫ মিনিটের ব্রেকফাস্ট রেসিপিঃ
শীতকালে সকালের নাস্তা করা খুব কঠিন। তাহলে কেন নাস্তা তৈরিতে ডিম পোচ ব্যবহার করবেন না। আপনি নিশ্চয়ই হাফ ফ্রাই ডিম বা অমলেট বানিয়েছেন অনেকবার, কিন্তু আপনি যদি মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে নিখুঁত স্টিমড ডিম চান তবে এই রেসিপিটি আপনার জন্য খুব কার্যকর হবে।

একটি মাইক্রোওয়েভ সেফ কাপ বা মাফিন ট্রেতে ১ চা চামচ জল ঢেলে তার উপর একটি ডিম ফাটিয়ে দিন। আপনি চাইলে এর উপরে লবণ ও গোলমরিচ যোগ করতে পারেন অথবা রান্নার পর যোগ করতে পারেন। এবার মাইক্রোওয়েভে ৫ মিনিট বেক করুন। মনে রাখবেন মাইক্রোওয়েভ প্রিহিটেড রাখুন এবং এর তাপমাত্রাও যেন বেশি থাকে।

৮. একবারে দুবেলার রান্না করে রাখুনঃ
শীতের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল খাবার নস্ত হয় না। আর এক দু দিনের জন্য বেশি রান্না করলে তা ফ্রিজেও রাখতে হয় না। তাই রোজ সকালে এবেলা আর ওবেলার রান্না সেরে নিন। এতে করে সময় বাঁচবে আর ঠাণ্ডায় দুবার জল ঘাটার চান্স থাকবে না বেশি। ভাত বা রুটি বাদে বাকি রান্না একবারে করে রেখে দিন। চাইলে ভাত রুটি করে রাখতে পারেন। খাওয়ার আগে সব গরম করে নিলেই ঝামেলা শেষ।

 

শীতে সুস্থ থাকতে সাজিয়ে নিন সারাদিনের ব্যস্ত রুটিন

 

প্রতিদিনের কাজের মাঝে শরীরের প্রয়োজন পর্যাপ্ত যত্ন ও মানসিক প্রশান্তি। তাই আপনার সারাদিনের ব্যস্ত রুটিনকে সাজিয়ে নিন সাস্থ্যকর কিছু ধাপে। আসুন জেনে নেই দৈনন্দিন কাজের মাঝেও এই শীতে যেভাবে নিজের যত্ন নিবেন।

শীতের ভোরে সহজে কেউ ব্যায়াম করতে চায় না বা হাঁটাহাঁটি করতে চায় না। ফলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। তাই খাবার গ্রহণের সময় ব্যালেন্স করে খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন আগের দিন উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেলে পরেরদিন কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খান। আবার অনেকেই যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা এই সময় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম খেলে, নানান ধরনের সবজি খেয়ে খাবার গ্রহণের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন।

শীতের মিষ্টি রোদ আপনাকে ভিটামিন ডি’র যোগান দেবে, তাই শীতকালে অন্তত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট অবশ্যই নিজের শরীরে রোদ লাগান। এতে আপনার শরীরের ব্যথা দূর হবে।

শীতকালে জলবায়ু রুক্ষ ও শুষ্ক হওয়ায় আমাদের ত্বক ফাটতে থাকে। তাই ত্বক ভালো রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে হতে পারে ডিহাইড্রেশন, বলিরেখা, এবং মুখে দাগের মতো নানা ধরণের সমস্যা। যার ফলে ক্লান্তি বাড়ে এবং যে কাউকে বয়স্ক দেখাতে পারে। কনকনে শীতে শরীর চাঙা রাখতে অত্যন্ত উপকারী ও উপাদেয় একটি খাবার হলো স্যুপ। বিভিন্ন ধরনের সবজি ও মাংস দিয়ে তৈরি স্যুপ শরীরের পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করবে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় নরম পাতলা খিচুড়ি, লেবু চা, আদা চা, গরম দুধ ইত্যাদি খাবার খেলে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকেও নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন এবং দূর হবে পানির ঘাটতি।

প্রতিদিন আমরা কী খাচ্ছি তার উপরই নির্ভর করে আমাদের ভালো থাকা ও সুস্বাস্থ্য। খাবারের উপরেই নির্ভর করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। নিজেকে ফিট রাখতে শীতে খাদ্যতালিকায় কিছু কিছু খাবার অপরিহার্য। শীতে সতেজ থাকতে খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন কমলা, গাজর, ডিম, আদা, কাঠবাদাম, মাশরুম, রসুন, মধু, সবুজ পাতার সবজী গ্রিন টি, সাইট্রাস ফল, মিষ্টি আলু ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার।

 

নারীদের গৃহস্থালী কাজের বার্ষিক মূল্য ৫৩০ কোটি টাকা

 

বাংলাদেশের নারীরা নিজ বাড়িতে যেসব কাজ করে থাকে তার বার্ষিক মূল্য ৫৩০ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের ১৪.৮ শতাংশ। ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ‘নারীর অবৈতনিক ও অ-বিপণন কাজ’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। মূলত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরোর ‘টাইম ইউজ সার্ভের’ প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রতিবেদনটি করা হয়।

গবেষণা সম্মেলনে বলা হয়, করোনার কারণে নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়ে ২.৮ মিলিয়ন বা ২৮ লাখ মানুষ। ২০২২ সালের হিসাবে দারিদ্র্য বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে করোনা। একই বছর মন্দার কারণে বাড়তি ৫০ হাজার মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমেছে। আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কাও করেন গবেষকরা।

এমন যেকোনো নিষেধাজ্ঞা দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এদিন ছয়টি অধিবেশনে প্রায় ৯টি পেপার ও দুটি পাবলিক লেকচার অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিনব্যাপী বিভিন্ন অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান।
বিনায়ক সেন বলেন, শ্রীলঙ্কার নারীদের অবৈতনিক গৃহকর্মের বার্ষিক মূল্য তাদের জিডিপির ১৫ শতাংশ আর ২০১৯ সালের হিসাবে ভারতে তা ১৪ শতাংশ।
বিআইডিএসের এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গৃহস্থালির কাজের বিনিময়ে ৭৫ শতাংশ পারিশ্রমিক ধরা হলেও জিডিপিতে আরো ১৩ শতাংশ অবদান যুক্ত হতে পারে, যেখানে নারীদের অবদান থাকছে ১১ শতাংশ ও পুরুষের অবদান ২ শতাংশ। এমনকি ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিক দিলেও জিডিপিতে আরো ৮.৮ শতাংশ অবদান বাড়ত।

 

বেগম রোকেয়া দিবস আজ

আজ ৯ ডিসেম্বর, বেগম রোকেয়া দিবস। নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অধিকার ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বেগম রোকেয়ার অবদান ও নারী জাগরণের অগ্রযাত্রায় অন্তহীন প্রেরণার উৎস হিসেবে প্রতিবছর এই দিবসটি পালন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আজ বেগম রোকেয়া দিবস ও বেগম রোকেয়া পদক ২০২৩ প্রদান উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। নারী জাগরণে উদ্বুদ্ধকরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও গৌরাবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখায় এ বছর পাঁচজন বিশিষ্ট নারীকে বেগম রোকেয়া পদক দেওয়া হচ্ছে।

পদকপ্রাপ্ত পাঁচজন বিশিষ্ট নারী ও তাদের অবদানের ক্ষেত্রগুলো হলো—নারী শিক্ষায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য খালেদা একরাম, মরণোত্তর (ঢাকা জেলা), নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ডা. হালিদা হানুম আখতার (রংপুর জেলা), নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কামরুন্নেছা আশরাফ দিনা, মরণোত্তর (নেত্রকোনা জেলা), নারী জাগরণে উদ্বুদ্ধকরণে নিশাত মজুমদার (লক্ষীপুর জেলা) এবং পল্লী উন্নয়নে রনিতা বালা (ঠাকুরগাঁও জেলা)।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পদক প্রদান করবেন।

বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম এই উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও নিবন্ধ প্রকাশ করবে। নারী শিক্ষা, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার লাগানো ও লিফলেট বিতরণ করা হবে।

 

অক্টোপাশের থাবা: সুমাইয়্যা সিদ্দিকা

 

১.
চোখ খুলতেই গাঢ় অন্ধকারে ডুবে গেল নাসর। ধোঁয়ার গন্ধে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তার। তবুও উঠে বসার চেষ্টা করলো সে। মাথাটা মনে হচ্ছে কয়েক টন ওজনের। চুপচাপ পড়ে রইলো খানিকক্ষণ। বেশ খানিকটা সময় কেটে গেল। কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করলো সে। হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো।

: শিহাদাহ… হান্না… শামআহ… কিন্তু কন্ঠনালী থেকে ঘরঘরে আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই বের হলো না ওর। অন্ধকারেরই বাচ্চাদের মতো চারপায়ে হামাগুড়ি দিয়ে খানিকটা এগোলে সে।

হঠাৎ পায়ে কি যেন ঠেকলো। অনুমানে হাত বাড়িয়ে দিতেই ছোট্ট একটা শরীরে হাতে ঠেকলো ওর। ঘোরগ্রস্ত লোকের মতো সামনে এগোলো। তারপর উন্মত্তের মতো বুকে চেপে ধরলো শরীরটাকে। কাঁধ ছড়ানো এক রাশ চুলে ভরা মাথাটা কেমন আঠালো পানীয়তে ভরে রয়েছে অনুভব হতেই চোখ বেয়ে এক সমুদ্র যন্ত্রণা ঝরে পড়তে লাগলো নাসরের । মেয়ের খানিক দূরেই নাজের নিথর দেহ।

: হানা.. আমার ছোট্ট পাখি! অন্ধকারেই মেয়েকে বুকে চেপে টলতে টলতে এলোমেলো পদজোড়া নিয়ে এগোতে লাগলো।

: আহ.. হঠাৎ দেয়ালের ভাঙা ইটের টুকরোতে ধাক্কা খেলো সে। কোনমতে পতন ঠেকাতে ঠেকাতে রুমের বাইরে এলো সে। অন্ধকারেই অন্য রুমে এসে পৌঁছালো সে। পা বাড়াতেই কঁকিয়ে উঠলো কেউ।

:শিহাদাহ… ছোট ছেলের কন্ঠ চিনতে মূহুর্তও লাগলো না তার।

মেয়েকে পাশে নামিয়ে ছেলেকে উঠাতে এগিয়ে গেল। শিহাদাহর গায়ের উপর উপুড় হয়ে পড়ে আছে কে যেন! মাথার পাগড়িতে হাত লাগতেই বড় ছেলেকে চিনতে এতটুকুও ভুল হলো না নাসরের। তার হাফেজ ছেলেটা! ছোট ভাইকে বাঁচাতে নিশ্চয়ই নিজেকে ঢাল বানিয়েছিল সে। কষ্টে কাঁদতেও ভুলে গেল সে। বড় ছেলের গায়ের নিচে চাপা পড়া শিহাদাহকে বের করলো। পড়নের জোব্বাটা সম্পূর্ণ ভেজা। ওকে তুলতেই চিৎকার করে উঠলো।
ছেলের অমন চিৎকারে আতংকিত হলো সে। মনে হলো কোথাও ভেঙে গিয়েছে হয়তো বা।

: আব্বু….. কান্নার গমকে হারিয়ে গেল বাকি কথাগুলো।

২.
অক্টোবরের সন্ধ্যা। শীত আসি আসি করছে। শীতকাল বড্ড পছন্দ এখানকার বাসিন্দাদের। তবে এবারের সময়টা একেবারে অন্যরকম।

:আবু হানা! বাচ্চাদের নিয়ে খেতে আসুন। ভর সন্ধ্যাতেই টেবিল সাজিয়ে ফেলেছে নাজওয়া।

গরম গরম মাকলৌবা, দই, সালাদ, মাফতুউল, আখরোট, খুরমা। টেবিলের মাঝ বরাবর রূপার মোমদানিতে টিম টিম জ্বলছে মোমবাতি।

বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন গত দু’দিন যাবত। মোমবাতির স্টকও ফুরিয়ে আসছে। তাই তাড়াহুড়ো করে কাজ শেষ করছে নাজওয়া।

স্ত্রীর ডাকে বাচ্চাদের নিয়ে টেবিলে আসে নাসর। এ সময়ে ওরা কেউ বাসায় থাকে। সন্ধ্যার পরও মাদরাসাতে ক্লাস থাকে। নাসরেরও ফিরতে যথেষ্ট দেরী হয়। কিন্তু এখন দৃশ্যপট অন্য।

গত তিন-চারদিন যাবত আবারো উত্তপ্ত শহর। তবে এবারের পরিবেশ একবারে ভিন্ন।

সবাই এসে বসতেই গরম গমে মাকলৌবা বেড়ে দিতে থাকে নাজওয়া। হানার জন্য একবাটি মাফতুউল (সুপ্য জাতীয় খাবার) বেড়ে নেয়। চামচে করে খাইয়ে দিতে থাকে মেয়েকে।
: আব্বিজান! আমি ইয়াসিন ভাইয়ের সাথে যেতে চাই। দেমিরও গতকাল চলে গেল। সভয়ে বাবার উদ্দেশ্যে বলে শামআহ।

খাওয়া থামিয়ে ছেলের দিকে তাকায় নাসর। পরিবারকে নিরাপদ স্থানে রেখে ছত্রীসেনাদের সাথে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছিলো সে নিজেও।

: অবশ্য যাবে বেটা। আমিও যাবো। তবে তোমার মা ও ভাই-বোনদের জন্য একটা নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে আগে।
বাবার কথা শুনে খুশী হয় শামআহ।

গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির মত সমানে ফসফরাস বোমা ফেলছে শত্রু বাহিনী। জয়তুন বাগান, আঙুরের খেত, বসবাসের বাড়ী-ঘর সব গুড়িয়ে দিচ্ছে তারা। আকাশ পথের হামলা শেষ হওয়ার আগেই বাড়ী বাড়ী এসে হাজির হয় ওরা। প্রতিবারই এমন করে।

তবে এবার গাজাবাসীও চুপ করে নেই। প্যারাসুটের ডানায় ভর করে আবাবিলের মতো প্রিয়ভূমিকে রাহু মুক্ত করতে আকাশসীমা ছুঁয়েছে তারা। খেজুর গাছের শাখাগুলোও ডানা নেড়ে ওদেরকে সমর্থন জানিয়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্ববাসী ছত্রীসেনাদের উড়ার দৃশ্যে চমৎকৃত। আর ওদিকে সেনাদের অতর্কিত হামলায় দিশেহারা তেল আবিব।

হঠাৎ দ্রুম দ্রুম শব্দে কেঁপে উঠলো পুরো এলাকা। সমানে বোমা পড়ছে।

: লা হাওলা ওলা কুয়াতা…

:বাচ্চারা দ্রুত করো। শেল্টার নিতে হবে। চিৎকার করে বলে নাসর।

বোম্ব শেল্টারে যাওয়ার সুযোগও পায় না তারা। আধ খাওয়া খাবারের প্লেট টেবিলেই পড়ে থাকে। এলোমেলো।

৩.
ধসে পড়া বাড়ী থেকে অতিকষ্ঠে বের হয় নাসর। বুকের সাথে মেয়ে আর পিঠে বড় ছেলে আর স্ত্রীকে কাপড় দিয়ে শক্ত করে বাঁধে। মনের কোণে ক্ষীণ আশা। চিকিৎসা পেলে হয়তো কথা বলবে ওরা।
তারপর ছোট ছেলেকে কাঁধে তুলে নিয়ে পথে নামে। ধুকতে ধুকতে বাড়ী থেকে মাইল তিনেক দূরে আশ-শিফা হাসপাতাল পানে ছুটতে শুরু করে।

আলোহীন সমগ্র শহর। অন্ধকার যেন গিলে খাচ্ছে পুরো শহর। ভয়ানক এক মৃত্যুপুরী যেন! ধ্বংসস্তুপে পরিণত হতে চলেছে। কয়েক দশক ধরে শহরটাকে অক্টোপাশের থাবার মতো জীবন্ত কারাগারের পরিণত করে রেখেছে ওরা। চাইলেও কোথাও যাওয়ার জো নেই এখানকার অধিবাসীদের।

:পরিত্যক্ত হয়ে যাবে কি শহরটা!
নাকি ভূ-মধ্যসাগরের পানিতে মিশে যাবে!
বুকের ভেতর প্রচন্ড এক ভয় জাগে নাসরের।

চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে ওর। পূর্বপুরুষের বাসভূমি কোন আগুন্তকের জন্য একচুলও ছাড়বে না সে। হঠাৎই অজানা সাহসে ভরে ওঠে ওর হৃদয়।

হয়তোবা হাসপাতালে এখনও জেনারেটর চালু রয়েছে। ডাক্তার সালেহী ও তার টিমেরাও আছে। প্রতিনিয়ত নিরাপধ মানুষের প্রতি নিষ্ঠুর হামলার সাক্ষী হচ্ছে যারা।

আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলতে দুলতে নিশ্চিদ্র অন্ধকারে ইসরাঈলী হিংসার আগুনে পোড়া রুটির মতো ঝলসানো গাজার সড়ক বেয়ে গন্তব্য পানে এগিয়ে যেতে থাকে নাসর।

লেখক পরিচিতি: শিক্ষক ও সাহিত্যিক

 

রোকেয়া রচনাবলীই রোকেয়া র পরিচিতি: নূরুন্নাহার নীরু

 

‘যদি সমাজের কাজ করিতে চাও, তবে গায়ের চামড়াকে এতখানি পুরু করিয়া লইতে হইবে যেন নিন্দা-গ্লানি, উপেক্ষা-অপমান কিছুতেই তাহাকে আঘাত করিতে না পারে;মাথার খুলিকে এমন মজবুত করিয়া লইতে হইবে যেন ঝড়-ঝঞ্ঝা, বজ্র-বিদ্যুৎ সকলই তাহাতে প্রতিহত হইয়া ফিরিয়া আসে৷’ — এমনি ক্ষুরধার আহব্বান নিয়ে যে নারীর আত্মপ্রকাশ তিনিই রোকেয়া নামের সেই মহিয়সী রমনী যিনি এই উপমহাদেশের নারী জাগরণের পথিকৃৎ সম প্রদীপ ৷ যে প্রদীপের আলো আজও সমুজ্জল৷
১৮৮০ সালের ৯ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম এবং ১৯৩২ সালের ঠিক এই দিনেই মাত্র ৫২ বছর বয়সে আবার তাঁর তিরোধানও ঘটে ৷ বুঝ হওয়াকাল থেকেই এই মহীয়সী নারী তৎকালীন অন্ধকারাচ্ছন্ন নারী সমাজের মুক্তির লক্ষ্যে জেগে উঠেন আপন সত্তায় জাগ্রত হয়ে৷ ফলে দেখা যায় বিশেষভাবে লেখনীর মাধ্যমে সমাজকে নাড়া দিতে গিয়ে প্রথমেই তিনি ১৯০২ সালে ‘পিপাসা’ নামক প্রবন্ধ লিখে তাঁর আন্দোলন শুরু করেন এবং ১৯৩২ সালে মৃত্যুর আগে আগে তার অসমাপ্ত লেখনী ‘নারীর অধিকার’ নামক প্রবন্ধের মাধ্যমে তাঁর আন্দোলনের পরিণতি ঘটান ৷
ইদানীং সাহিত্য জগতে বা রাজনৈতিক অঙ্গনে নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে (১৮৮০-১৯৩২) অনেকেই চাচ্ছেন নারীবাদী বলে মূল্যায়ন করতে৷ কিংবা পুরুষ বিদ্বেষী বলে পরিচিত করতে৷ কিন্তু আমি বলবো তাঁর রচনাবলীই তাঁর পরিচয় বহন করছে৷ কেননা দেখা যাচ্ছে বেগম রোকেয়ার লেখালেখি, বক্তব্য, কর্মময় জীবন থেকে অবিসংবাদিতভাবে প্রমানিত যে, তিনি ধর্ম বিদ্বেষীও ছিলেন না কিংবা তিনি পুরুষ বিদ্বেষীও ছিলেন না- যা নারীবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য৷ তিনি যুদ্ধ করেছেন প্রচলিত প্রথা বা প্রতিষ্ঠিত সমাজ ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে -আর সেটি যেহেতু পুরুষ দ্বারাই পরিচালিত সেহেতু তীরটাতো ওদিকে যাবেই কিছুটা কিন্তু সেটি ছিলো গঠনমুখী৷ মূলতঃ তৎকালীন কুসংস্কারে আচ্ছন্ন সমাজের কর্ণধারগণ স্বীয় প্রতাপ প্রতিষ্ঠিত রাখতে ধর্মের দোহাই দিয়ে স্বঘোষিত আইনকানুন প্রয়োগে লিপ্ত ছিলেন যা বেগম রোকেয়া তাঁর দূরদর্শীতা দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন ৷ ফলে সোচ্চার প্রতিবাদী ভূমিকা রেখে গিয়েছেন৷ তাঁর উপলব্দিগত বক্তব্য ছিল এরূপঃ “আমরা সমাজের অর্ধাঙ্গ; আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কিরূপে? কোনো ব্যক্তি এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ আর আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে৷ তাহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা আমাদের লক্ষ্যও তাহাই৷” তিনি আরো বলেছেন ,”দেহের দুটিচক্ষু স্বরূপ নারী-পুরুষ; মানুষের সব রকমের কাজ কর্মের প্রয়োজনে দুটি চক্ষুর গুরুত্ব সমান ৷” মতিচূর প্রবন্ধে রূপকার্থে বলেছেন;” যে শকটেরএক চক্র বড়(পতি) এবংএক চক্র ছোট হয়(পত্নী) সে শকট অধিকদূর অগ্রসরর হইতে পারেনা৷সে কেবল একই স্থানে ( গেহকোনে) ঘুরিতে থাকিবে৷ তাই ভারতবাসী উন্নতির পথে অগ্রসর হইতে পারিতেছেনা৷”
বরং তিনি পুরুষদের সমালোচনা না করে প্রতিকারের জন্য নারীদের সক্ষমতা অর্জনের পরামর্শ দিয়েছেন তার লেখনীতে৷ যেমন তিনি তাঁর ‘রানী ভিখারীনি ‘ প্রবন্ধে নারীদেরে উদ্দেশ্য করে বলেছেনঃ “অযোগ্য বলার জন্য রাগ না করিয়া যোগ্য হইবার চেষ্টা করাই শ্রেয় ৷” — এমনি যাঁর আহবান তাঁকে আমরা পুরুষ বিদ্বেষী নারীবাদী বলি কি করে?

আবার দেখা যায়, যে ধর্ম (ইসলাম) নারীর শিক্ষা, অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার সেই ধর্মের অনুসরণে তিনি তাঁর স্বীকৃতি স্বরূপ ‘নারী শিক্ষা সমিতি’ প্রবন্ধে বলেছেনঃ “পৃথিবীর যিনি সর্বপ্রথম পুরুষ-স্ত্রীলোককে সমভাবে সুশিক্ষা দান করা কর্তব্য বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন তিনি আমাদের রাসূল মকবুল (সাঃ) ৷” আরো বলেছেন, “শিক্ষা লাভ করা সব নারীর অবশ্য কর্তব্য৷ কিন্তু আমাদের সমাজ সর্বদা তাহা অন্যায় করিয়াছে—মেয়েদের এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়া তুলিতে হইবে যাহাতে তাহারা ভবিষ্যত জীবনের আদর্শ গৃহিনী, আদর্শ জননী এবং আদর্শ নারী রূপে পরিচিত হইতে পারে ৷”
তৎকালীন বঙ্গীয় মুসলিম সমাজের করুণ দশা দেখে তাঁর মুক্তিকামী হৃদয় জেগে উঠেছিলো অধিকার চেতনায়৷ তারই আন্দোলনের ছাপ তাঁর লেখনীর ছত্রে ছত্রে নিবদ্ধ৷ শিক্ষা তথা উপযুক্ত শিক্ষার অভাব ই তৎকালীন অজ্ঞতায় নিমজ্জিত নারী সমাজের দুঃখ-দূর্দশার মূল কারণ ৷ এই বাস্তবতা হেতু উল্লেখ করে ‘বঙ্গীয় নারী শিক্ষা সমিতির’ সভার অভিভাষণে তিনি বলেন, ” মোছলমানদের যাবতীয় দৈন্য-দূর্দশার একমাত্র কারণ স্ত্রী শিক্ষার ঔদাস্য৷” প্রকৃতঃঅর্থেই তাই৷ সে সময় নারী এমনকি একটি শিশু বালিকাকেও এতটাই ঘরের কোনে বন্ধী রাখতে সচেষ্ট ছিল সে সমাজ যে, বিদ্যাশিক্ষাতো দূরে বাইরের আলো বাতাস ও দেখার স্বাধীনতা ছিলনা তাদের ৷ পর্দার নামে এমনই কঠোরতা বিরাজমান ছিলো যে, অচেনা-বেগানা নারীদের সামনেও শিশু বয়স থেকেই যাতায়াত নিষিদ্ধ ছিল৷ এভাবে একসময় নারী জাতি নিজেই নিজের উপর একটা শৃঙ্খলিত আভরণ পরিয়ে নিয়েছিল যা তাঁর ‘অবরোধ বাসিনী’ বইতে প্রচ্ছন্ন৷ ৷
নারীকূলের এমন ঔদাসীন্যতার জন্য তিনি ‘আমাদের অবনতি’ প্রবন্ধে লিখেছেনঃ “আমরা আলস্যের, প্রকারান্তরে পুরুষের দাসী হইয়াছি৷ ক্রমশঃ আমাদের মন পর্যন্ত দাস হইয়া গিয়াছে৷ এবং আমরা বহুকাল দাসীপনা করিতে করিতে দাসত্বে অভ্যস্থ হইয়া পড়িয়াছি৷ এইরূপে আমাদের স্বাবলম্বন, সাহস প্রভৃতি মানসিক উচ্চবিত্ত গুলো অনুশীলনের অভাবে বার বার অঙ্কুরে বিনাশ হওয়ায় এখন আর বোধ হয় অঙ্কুরিত হয় না৷” তাইতো তিনি বলেছেন; “ভগিনীরা! চুল রগড়াইয়া জাগিয়া উঠুন, অগ্রসরর হউন৷ মাথা ঠুকিয়া বলো মা! আমরা পশু নই৷ বলো ভগিনী আমরা আসবাব নই৷ বলো কন্যা! আমরা জড়োয়া অলঙ্কার রূপে লোহার সিন্ধুকে আবদ্ধ থাকিবার বস্তু নই৷ সকলে সমস্বরে বলো— আমরা মানুষ!”
তাঁর এই চেতনার প্রকাশ্য রূপই ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা ৷ অনেক বাঁধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে বাঙালি মুসলিম নারী সমাজের শিক্ষা বিস্তারে এ প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সে সময়ে৷ এছাড়া তিনি ১৯১৬ সালে ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম নারী সমাজকে সংঘবদ্ধ করেছেন- যা ছিলো তাঁর নারী অধিকার আন্দোলনের প্রকৃষ্ট উদাহারণ৷ ১৯০৪ সালে তিনি ‘ নবনূর’ পত্রিকায় লিখেনঃ “আমরা উচ্চ শিক্ষা প্রাপ্ত না হইলে সমাজও উন্নত হইবে না৷—- তাই আমাদিগকে সকল প্রকার জ্ঞান চর্চা করিতে হইবে৷ প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে তিনি নারীকে তাঁদের অলঙ্কারে সজ্জিত থাকার চেয়ে জ্ঞানঅর্জনে ভূষিত হবার প্রাধান্য দিয়েছেন বেশী৷ এজন্য তিনি শেকল তূল্য অলঙ্কার ছেড়ে জ্ঞানচর্চার আহবান জানিয়ে ‘বোরকা’ প্রবন্ধে লিখেছেনঃ ” নারীর শোভন অলংকার ছাড়িয়া জ্ঞানভূষণ লাভের জন্য ললনাদের আগ্রহ বৃদ্ধি হওয়া বাঞ্ছনীয়৷” অন্যত্র বলেছেন, “না জাগিলে ভারত ললনা এ ভারত জাগিবেনা” ৷”” আরো বলেন;কন্যারা জাগ্রত না হওয়া পর্যন্ত দেশ মাতৃকার মুক্তি অসম্ভব৷”
ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীশিক্ষা বিদ্বেষী কথিত আলেমদের বিরুদ্ধাচারণ করে তিনি স্বীকৃতি দেন যে , ইসলামই প্রথম উদ্যোগ নেয় নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় আর এর পথিকৃৎ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)৷ যা তিনি অকপটে প্রচার করেন এবং আরো দাবী করেন যে, “মোছলমান বালিকাদের প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে কোরান শিক্ষাদান করা সর্বাপেক্ষা অধিক প্রয়োজন৷ ” এ দাবীর ব্যাখ্যায় তিনি আরো বলেন যে, ” আপনারা কেহ মনে করিবেন না যে , প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে কোরান শিক্ষা দিতে বলিয়া আমি গোঁড়ামীর পরিচয় দিলাম৷ তাহা নহে,আমি গোঁড়ামী হইতে বহু দূরে৷ প্রকৃত কথা এই যে, প্রাথমিক শিক্ষা বলিতে যাহা কিছু শিক্ষা দেয়া হয়, সে সমস্ত ব্যবস্থাই কোরানে পাও যায় ” -তাঁর এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় তিনি ধর্ম বিদ্বেষী নন বরং ধর্মের অপব্যবহার, ধর্মের নামে গোঁড়ামীতা, কুসংস্কার ইত্যাদির বিরুদ্ধে তাঁর আন্দোলন গড়ে তোলেন ক্ষুরধার ‘মসি’ চালিয়ে৷ তিনি তাঁর ‘আমাদের অবনতি’ প্রবন্ধে লিখেছেনঃ ” আমরা সমাজেরই অর্ধাঙ্গ৷ আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কিরূপে? কোনো ব্যক্তির এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোঁড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষদের স্বার্থ আর আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে, একই৷”
যে সময়ে নারী জাতিকে জড়বস্তুতূল্য ভাবা হতো, কোনো কোনো ধর্মে নারীদেহে প্রাণ আছে বলেও ভাবা হতোনা সে সমাজের চিত্র তাঁকে কাঁপিয়ে তোলে নারীর অধঃপতনের দৃশ্যকল্পে৷ তাইতো তিনি বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত , নারীমুক্তির পথিকৃৎ হযরত রাসূলে মকবুলের সাঃ ভূমিকাকে প্রাধান্য দিয়ে তাঁর ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেনঃ” আরবে স্ত্রী জাতির প্রতি অধিক অত্যাচার হইতেছিলো৷ আরববাসীগণ কন্যা হত্যা করিতেছিলো তখন হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কন্যা কূলের রক্ষক স্বরূপ দন্ডায়মান হইয়াছিলেন৷ তিনি কেবল বিধি ব্যবস্থা দিয়াই ক্ষান্ত থাকেন নাই৷ স্বয়ং কন্যা লালন করিয়া আদর্শ দেখাইয়াছেন৷” – এই চেতনা থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে বেগম রোকেয়া ইসলামী বিধান অনুযায়ী নারীর মর্যাদা ও অধিকার আদায়ের আহব্বান জানিয়েছেন৷ তিনি তৎকালীন পর্দা নামের অবরোধ প্রথার বিরোধিতা করে শরিয়াত সম্মত পর্দা করতে আগ্রহী হয়ে ‘বোরকা’ প্রবন্ধে বলেনঃ “আমরা অন্যায় পর্দা ছাড়িয়া আবশ্যকীয় পর্দা রাখিবো ৷ প্রয়োজন হইলে অবগুণ্ঠনসহ মাঠে বেড়াইতে আমাদের আপত্তি নাই৷” — বেগম রোকেয়ার এসকল উক্তি প্রমান করে যে তিনি ধর্ম বিদ্বেষী তো ননই পুরুষ বিদ্বেষীও নন বরং ইসলামের অনুসরণেই ‘নারী মুক্তি সংগ্রামে’ নিবেদিত প্রাণ ছিলেন তিনি ৷ সুতরাং তাঁকে ‘নারীবাদী’ বলে অপব্যাখ্যায় না নিয়ে আমরা বলবোঃ বেগম রোকেয়া নারী মুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ৷
পরিশেষে বলবো, শিশু কাল থেকে বেগম রোকেয়াকে প্রজ্জলিত করতে, সমাজের বুকে এগিয়ে নিতে, প্রতিকূল পরিবেশেও বলিষ্ঠতার সাথে প্রতিষ্ঠিত হতে যাঁদের অবদান তাঁর পেছনে ভূমিকা রেখেছিলো তাঁরা আর কেউ নন; সেই পুরুষ জাতই ৷ বিশেষ ভাবে তাঁর বড় ভাই, তাঁর স্বামীর নাম উল্লেখযোগ্য৷
এক্ষণে মনে পড়ে যায় বিদ্রোহী কবির সেই যুগান্তকারী চরণঃ ‘এ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যানকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর৷”— এটা চিরন্তন সত্য যে একটি সুস্থ-সুষ্ঠু সমাজ গড়ে তুলতে শুধু নারীর একলা পদচারণা নয় বরং অবশ্যই পুরুষের নির্ভরযোগ্য, বলিষ্ঠ হাতের একাত্মতার প্রয়োজন আছে তাই আমরা স্বতঃই বলতে পারি; ধর্মবিদ্বেষী ,পুরুষ বিদ্বেষী নারীবাদিতার স্লোগানে নয় বরঞ্চ বেগম রোকেয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে নিতে হবে “নারী অধিকার আন্দোলনের ” স্লোগানে৷ যা তাঁর রচনাতেই প্রমানিত৷

সহায়ক গ্রন্থঃ রোকেয়া রচনাবলী
লেখিকাঃ কবি ও লেখক৷ ( অবঃ প্রঃ শিঃ ৷ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা৷) সাহিত্যসংস্কৃতি বিভাগ প্রধানঃ সামাজিক সংগঠন “নারী অধিকার আন্দোলন৷”

 

সৌদি আরবের প্রথম নারী নভোচারী রায়ানাহ বার্নাবি

 

সৌদি আরবের ইতিহাসে প্রথম নারী নভোচারী ৩৩ বছর বয়সী সৌদি নাগরিক  রায়ানাহ বার্নাবি। সৌদি আরবের ভিশন-২০৩০ পূরণের জন্য এএক্স টু মহাকাশ মিশনে যোগ দেয় এ দেশটি।

বার্নাবি বায়োমেডিকেল সায়েন্সে দুটি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি নিউজিল্যান্ডের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই বিষয়ে স্নাতক এবং আলফাইসাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

এ ছাড়া গবেষণাগার বিশেষজ্ঞ হিসেবে বেশ খ্যাতি রয়েছে তার। ক্যান্সার স্টেম সেল গবেষণায় প্রায় এক দশকের মতো কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন রায়ানাহ।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) মিশনে সৌদি পুরুষ নভোচারী আলি আল-কারনির সঙ্গে যোগ দেন রায়ানাহ বার্নাবি।

উল্লেখ্য, প্রথম আরব দেশ হিসেবে ২০১৯ সালে নিজেদের এক নাগরিককে মহাকাশে পাঠিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত।সেসময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের নভোচারী হাজ্জা আল-মানসুরি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ৮ দিন অবস্থান করেছিলেন।

তথ্যসূত্র: এএফপি, রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড

 

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রলোভনে প্রতারিত ৫০ নারী, গ্রেপ্তার ১

 

প্রায় অর্ধশত নারীর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ‘রোমান্স স্ক্যাম’ ও সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগে এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। গ্রেফতারকৃতের নাম মো. বেনজির হোসেন (৪০)।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, প্রতারক বেনজিরের ফেসবুকে ভুয়া জৌলুসপূর্ণ প্রোফাইল তৈরি করে এই প্রতারক নিঃসঙ্গ নারী ভিকটিমদের টার্গেট করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করতেন। পরে বিয়ের প্রলোভন ও সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে বছরের পর বছর ধরে। প্রথমে বিশ্বাস তৈরি করে সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে লাখ লাখ টাকা এমনকি কোটি টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন এই প্রতারক।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, বেনজির হোসেন শাহিদ হাসান নামে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশি পাইলটের প্রোফাইল হুবহু কপি করে Shahid Hasan (Pilot Officer) নামে একটি ফেক ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করেন। ফেসবুক প্রোফাইলটিকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য এই প্রোফাইল থেকে বিমান চালানোর ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতেন। প্রতারক বেনজির হোসেন ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে নিঃসঙ্গ নারী ভিকটিমদের টার্গেট করে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদ ফেলে, পরে বিয়ের প্রলোভন ও সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতেন। তিনি অডিও কলে ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বললেও নানান অজুহাতে কখনোই ভিডিও কলে কথা বলতেন না। এরপর অনলাইন প্রণয়ের একপর্যায়ে বিভিন্ন সময় বিপদে পড়ার কথা বলে তার দেওয়া বিভিন্ন নগদ নাম্বারে (প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা ১৯টি নগদ নাম্বারের বিষয়ে জানা গেছে) ধাপে ধাপে লাখ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। প্রতারক বেনজির হোসেনের প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১৩টি নগদ নাম্বারে গত ৪ মাসে ১ কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।

প্রতারক বেনজির হোসেন নড়াইল জেলায় নিজের বাড়িতে থেকে প্রতারণার কাজ করলেও ক্যাশ আউট করতেন তার বাড়ি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে যশোর ও খুলনা জেলায় বিভিন্ন নগদ ক্যাশ আউট পয়েন্টে। তার প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিম এবং নগদ নাম্বারের রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহৃত এনআইডি অন্য ব্যক্তির নামে।

ক্যাশ আউট করার সময় প্রতারক বেনজির হোসেন পরিচয় ও চেহারা গোপন করার জন্য ক্যাপ, সানগ্লাস ও মুখে মাস্ক পড়ে থাকতেন।

তিনি আরও জানান, এমনই একজন ভিকটিম স্বপ্না (ছদ্মনাম), একজন সিঙ্গেল মাদার। প্রতারক বেনজির হোসেনের প্রতারণার শিকার হয়ে গত সাত মাসে বিভিন্ন নগদ নাম্বারে প্রতি মাসে ১৪-১৫ লাখ করে টাকা দিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা খুইয়েছেন। একই সময়ে অপর একজন ভিকটিম জান্নাত (ছদ্মনাম) প্রতারক বেনজিরের কাছে খুইয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ টাকা। প্রতারক বেনজির হোসেনের স্মার্ট ফোনে ৫০ জনেরও অধিক ভিকটিমের সন্ধান পাওয়া যায়।

স্বপ্না এবং জান্নাত গত এক সপ্তাহের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে অভিযোগ নিয়ে সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে প্রতিকারের জন্য এলে সাইবার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন টিম তাদের মামলা করার পরামর্শ দেয় এবং ছায়া তদন্ত শুরু করে। ভিকটিম স্বপ্না রাজধানীর ওয়ারী থানায় প্রতারণার বিষয়ে ২১ নভেম্বর মামলা দায়ের করেন। পরে ২২ নভেম্বর ছায়া তদন্তে নেমে বিশদ প্রযুক্তিগত অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে বেনজির হোসেনকে শনাক্ত করে খুলনার ফুলতলায় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত নগদ নাম্বার থেকে ক্যাশ আউটের সময় সন্ধ্যায় হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়।

দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস না থাকা সত্ত্বেও বেনজির হোসেন গত কয়েক বছরে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ দিয়ে বিপুল অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।

তিনি গত কয়েক বছরে প্রতারণার অর্থে ৫ বিঘা জমির ওপর বাগান বাড়িতে (দুই তলা ডুপ্লেক্স ভবন), অনুমানিক ৩ বিঘা জমির ওপর সম্প্রতি কেনা বিলাসবহুল ভবন, নড়াইলে বিভিন্ন জায়গায় অনুমানিক ২০ বিঘা মাছের খামার, নড়াইলে বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ভবন, যশোর ও সাভারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবনসহ বিপুল ব্যাংক ব্যালান্স গড়েছেন।এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, বেনজির এইচএসসি পাস করে একটা চাকরিতে যোগ দেন। চুরির দায়ে সেই চাকরি চলে যায় তার। তিনি খুবই নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার পিতা সেই অঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে তালের শাস বিক্রি করতেন। তবে বেনজির খুব মেধাবী ছিলেন। তার বৈধ কোনো পেশা নেই। তার মূল পেশাই প্রতারণা করা। এলাকার সাধারণ মানুষ সন্দেহ করলেও নানা অপরাধের জড়িত থাকায় কেউ কিছু বলতেন না।

তিনি বলেন, একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। তার প্রতারণার শিকার অসংখ্য নারী। আমরা এরই মধ্যে ৫০ জনকে পেয়েছি যারা বেনজিরের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তার প্রতারণার শিকার হয়ে এক নারী আত্মহত্যাও করেছেন। ভিকটিমদের কাছ থেকে আপত্তিকর ছবিও সংগ্রহ করতেন। অনেক ভিকটিম মানসম্মানের ভয়ে প্রকাশও করতে চান না।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কাজে মনোযোগ বাড়াতে আয়ত্ব করুন কয়েকটি অভ্যাস

 

প্রতিদিন বিক্ষিপ্তভাবে আমরা অনেক ধরণের কাজ করি। কর্মক্ষেত্রে বা বাসায় যেকোনো কাজের সময়ই মনোযোগ ধরে রাখলে কাজটি হয় নিখুঁত ও আনন্দের! কাজে মনোযোগ ধরে রাখার টিপস নিয়ে আজকের এই ফিচার।

কোনো কাজেসফলতা অর্জন করতে চাইলে সবার আগে সবটুকু মনোযোগ সেই কাজে দিতে হবে। সবার আগে আপনার মাইন্ড ফোকাস করে গোল সেট করতে হবে।

আপনার কাজে যথেষ্ট ফোকাসড হওয়ার জন্য চারটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন-
১. আপনার কাজ সম্পর্কে সবসময় সচেতন থাকুন। দিনের শুরুতেই কাজের প্রাধান্য অনুসারে আপনার কাজের একটি তালিকা করুন। করতেই হবে এমন কাজগুলো পৃথকভাবে তালিকাবদ্ধ করুন। প্রতিদিন নিয়মমাফিক করে ফেলার পরিকল্পনা করে ফেলুন। এর পাশাপাশি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন কাজের তালিকা করে সেগুলো করার সময় বেঁধে নিন।
৩. একসাথে অনেক কাজ করবেন না। আপনার কাজকে কয়েকটি ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করুন
৪. কাজের ফাঁকে ছোট বিরতি নেন এবং পুনরায় কাজে ফিরে যান

 

আপনি যদি আপনার কাজে অমনোযোগী থাকেন, কাজে বাঁধা দেয় এই ধরনের বিষয়গুলো কোনোভাবেই এড়িয়ে না যেতে পারেন, আপনার কাজে কতটুকু অগ্রগতি হচ্ছে সেটি মনিটর করতে না পারেন তাহলে কয়েকটি অভ্যাসে আয়ত্ব করে নিন-

১) আপনি যদি অনেক বিষয়ে একসাথে মনোযোগ দিতে চান তাহলে তা কোনো কাজে আসবে না। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে ব্যাঘাত এড়াতে অফলাইনে থাকুন। এর মাধ্যমে কাজের গতি ও মনোযোগ যেমন বাড়বে তেমন কাজের মানও বাড়বে।
২) যেকোনো কাজ শুরু করার আগে আপনার শরীর ও মনকে শান্ত করে নিন। এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট প্রার্থনার মাধ্যমে নিজেকে জানাতে পারেন- এখন শুধুই কাজের সময়।
৩) কাজ শুরুর আগ কমফোর্ট জোন তৈরি করে নিন। গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিন যাতে করে আপনার নিঃশ্বাস পাকস্থলি পর্যন্ত পৌঁছায়। ২ মিনিট এই প্রসেসটি ফলো করুন।
৪) রাতে যদি ভালোভাবে ঘুম না হয় বা খাবার না খেয়ে কাজ শুরু করেন তাহলে দিনের কাজে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।
৫) আপনার কাজের জায়গায় অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থাকলে সরিয়ে ফেলুন এবং পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে মনোযোগী হন। কাজের ফাঁকে আপনার তৈরিকৃত রিমাইন্ডার কিংবা টু-ডু লিস্টে চোখ বুলিয়ে নিন।

‘আমি পারি, আমাকে এই কাজটা নিখুঁতভাবে শেষ করতে হবে’’ এই বিষয়টা মনে গেঁথে নিন। নিজেকে একটু সময় দিন, সেলফ মোটিভেশন-ই পারে যেকোনো কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য অনুপ্রেরণা যোগাতে। নিজের যত্ন নিলে আপনি সফল হবেনই!

 

 

এশিয়ার সেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় বাংলাদেশের ২ নারী

এশিয়ার সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের দুই নারী। তারা হলেন- বাংলাদেশের চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) পরিচালক ও অণুজীব বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গাওসিয়া ওয়াহিদুন্নেছা চৌধুরী।
গবেষণায় অনবদ্য অবদান রাখা বিজ্ঞানীদের নিয়ে ২০১৬ সাল থেকে তালিকা প্রকাশ করে আসছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী এশিয়ান সায়েন্টিস্ট। মোট ১৭টি ক্যাটাগরিতে এশিয়ার শীর্ষ ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকা প্রকাশ করে সাময়িকীটি। প্রতিবছরের মতো এবারও (অষ্টমবারের মতো) এশিয়ার শীর্ষ ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকা প্রকাশ করেছে।

অনুজীব বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা ‘লাইফ সায়েন্সে’ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য গবেষণায় ভূমিকা রাখছেন তিনি। চিকুনগুনিয়ার মতো যেসব ভাইরাস শিশুদের ভোগাতে পারে, তা নিয়েও কাজ করছেন এ বিজ্ঞানী। শিশুদের ক্ষেত্রে এ ভাইরাস মস্তিষ্কে আক্রমণ করে, সেঁজুতি সাহার দলের সদস্যরা তা প্রমাণ করেছেন।

স্বাস্থ্য বিজ্ঞান গবেষণায় অবদানের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন সেঁজুতি। তিনি ২০২০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল পোলিও ইরেডিকেশন ইনিশিয়েটিভের টিআইএমবির সদস্য নিযুক্ত হন।

সেঁজুতি সাহা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) পরিচালক। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম করোনাভাইরাসের জিন নকশা উন্মোচন করেন।

অন্যদিকে গাওসিয়া ওয়াহিদুন্নেছা চৌধুরী ‘সাস্টেইন্যাবিলিটি’ খাতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা এ নারী বিজ্ঞানী আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা ওয়াইল্ডটিমের বোর্ড সদস্য। তিনি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির একটি গবেষণা দলেও কাজ করেছেন।

এছাড়া প্লাস্টিক দূষণে পরিবেশ ও মানুষের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে একাধিক গবেষণা রয়েছে গাওসিয়ার। জলজ বাস্তুতন্ত্র ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণে অবদানের জন্য ২০২২ সালে তিনি ওডব্লিউএসডি-এলসেভিয়ার ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড পান। মাছ ধরার পরিত্যক্ত জাল নতুন করে ব্যবহার উপযোগী করে প্রস্তুত করার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখছেন।

বাংলাদেশের দুই নারী বিজ্ঞানীর সঙ্গে শীর্ষ ১০০ জনের তালিকায় রয়েছেন ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, হংকং, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের বিজ্ঞানীরা।

 

জামদানি শাড়ির যত্ন

আবহমানকাল ধরে অধিকাংশ নারীর পছন্দের শীর্ষে জামদানি। জামদানির প্রতি বাড়তি আকর্ষণের কারণ অপূর্ব কারুকাজ সমন্বিত নকশা ও মিহি সুতা। জামদানি শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে মিহি সুতার বুননে যেন মিশে থাকে অজস্র গল্প আর কথকত।

২০১৬ সালে জামদানিকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। সঠিকভাবে যত্ন করতে না পারলে জামদানি শাড়ি খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বুনন খুব মিহি হয় বলে বাড়তি খেয়াল ও যত্নের প্রয়োজন হয় জামদানির শাড়ির রক্ষণাবেক্ষণে। চলুন দেখা যাক কীভাবে যত্নে রাখতে পারেন আপনার শখের জামদানি-

শাড়িতে ফলস লাগানো
জামদানি শাড়ি কেনার পরপরই আপনার প্রথম কাজ হবে পাড়ে ফলস লাগিয়ে ফেলা। এতে করে পাড়ও যেমন ভাঁজ হবে না, তেমনি কুচিগুলোও সুন্দর থাকবে।

পানি থেকে দূরে
অন্যান্য শাড়ির মতো জামদানি শাড়ি সাবান পাউডার আর পানি দিয়ে ধোয়া যায় না। বরং জামদানিকে সবসময় নতুনের মতো রাখতে হলে পানি থেকে দূরে রাখতে হবে। জামদানি তৈরির সময় যে মাড় ব্যবহার করা হয়, সেখানে পানি লাগলে সুতার বুনন আলগা হয়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। এতে করে জামদানি শাড়ি সহজেই নষ্ট হয়ে যায়।
ডেমরার বিএসসিসিআই জামদানি পল্লী। ছবি: আনিসুর রহমান

কাঁটা ওয়াশ
যে কোনো দামি শাড়ির পরিচ্ছন্নতা বলতে অনেকের মাথায় ড্রাই ওয়াশের বিষয়টি আসে। কিন্তু জামদানি কোনোভাবেই ড্রাই ওয়াশ করা যাবে না। কারণ ড্রাই ওয়াশের পর জামদানি শাড়ি আয়রন করা হলে এতে শাড়ির বুনন নরম হয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই জামদানি ধোয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে কাঁটা ওয়াশ৷ এমনকি পছন্দের শাড়িটি যদি নষ্ট হয়ে যায় বা ফ্যাকাশে হয়ে যায়, তাহলেও কাঁটা ওয়াশে দিতে পারেন। মনে রাখতে হবে, যারা জামদানি তৈরি করে শুধুমাত্র তাদের কাছেই কাঁটা ওয়াশের জন্য দিতে হবে। কেননা কাঁটা ওয়াশ একমাত্র যারা জামদানি তৈরি করে তারাই করতে পারেন। তবে যদি কখনো জামদানি শাড়িতে দাগ লেগে যায়, তবে দাগ লাগার অংশটুকুতে ট্যালকম পাউডার ছিটিয়ে তারপর ড্রাই ওয়াশ করতে দিতে হবে। তবে এতে বেশ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

রোদে দেওয়া
অনেকদিন জামদানি শাড়ি আলমারির কোণে পড়ে থাকলে তাতে একটা আঁশটে গন্ধ তৈরি হয়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে মাঝে মাঝে শাড়ি রোদে শুকিয়ে নেওয়া ভালো। শুধু রোদে দিলেই হবে না, শাড়িটিকে উল্টিয়ে দিতে হবে যেন ২ দিকেই সমান রোদ লাগে। কোনো কারণে বৃষ্টির পানি পড়লে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নেওয়া উচিত। এতে শাড়ি সুরক্ষিত থাকবে।

শাড়ির সঠিক ভাঁজ
রোদে দেওয়া, কাঁটা ওয়াশ সবই তো হলো, এবার জামদানিকে আলমারিতে তুলে রাখার পালা। জামদানি তুলে রাখার সময় শাড়ির ভাঁজটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সাধারণ শাড়িগুলোতে ৪ ভাঁজ করে মাঝখানে একটা ভাঁজ দিয়ে আরেক ভাঁজ ভেঙে রেখে দেই। কিন্তু জামদানি কখনো এভাবে ভেঙে রাখা যাবে না। এমনকি শাড়ির মাঝখানে ভেঙে হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখাও ঠিক না। যেহেতু জামদানি হাতে খুব মিহি বুনন করা, তাই বুননের একটি সুতা এদিক সেদিক হলেই শখের শাড়িটি ফেঁসে যেতে পারে। জামদানির প্রথম ২ ভাঁজ দিতে হবে নরমাল শাড়ির মতোই। এরপর একটা পাতালি ভাঁজ দিয়ে তারপর মাঝখানে ভেঙে একটা ভাঁজ দিয়ে, হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। অথবা ২ পাশ থেকে ছোট ছোট ভাঁজ দিয়ে একটা আরেকটার ভেতরে দিয়ে দিতে হবে। জামদানি শাড়িকে কখনো অন্য শাড়ির নিচে রাখা যাবে না। আলমারিতে তুলে রাখার সময় সাদা কাগজের প্যাকেটে রেখে দিলে শাড়িতে যেমন ফাঙ্গাস পড়ে না, তেমনি সুরক্ষিতও থাকে। মাঝে মাঝে এই ভাঁজ পরিবর্তন করে রাখতে হবে। কারণ বেশি দিন এক ভাঁজে থাকলে শাড়িতে দাগ পড়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

বেশি দিন ফেলে রাখবেন না
সাধারণত উৎসব অনুষ্ঠান ছাড়া জামদানি শাড়ি পরা হয় না। বাস্তবতা হচ্ছে, জামদানি যত বেশি পড়া হবে তত বেশি ভালো থাকবে। তাই মাঝে মাঝে জামদানি পরা উত্তম।

নতুন করে রঙ করানো
অনেক সময় দেখা যায়, জামদানি বেশি ব্যবহারের কারণে রঙ জ্বলে যায়। জামদানির রঙ নষ্ট হওয়া কিংবা দাগ লাগলে জামদানিতে নতুন ডিপ কালারের রঙ করে নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে একরঙা শাড়িগুলোতেই রঙ করা যায়। মাল্টিকালারের জামদানিতে রঙ করার উপায় নেই।

 

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে চমক লাগানো কে এই নাবিলা ইসলাম?

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে চার বাংলাদেশি আমেরিকান প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এদের মধ্যে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে প্রথমবার নির্বাচন করে সিনেটর নির্বাচিত হয়ে চমক দেখিয়েছেন বাংলাদেশি আমেরিকান নারী নাবিলা ইসলাম। ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নির্বাচন করেন তিনি। নোয়াখালীর সন্তান নাবিলা হলেন জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সিনেটে প্রথম মুসলিম নারী এবং দ্বিতীয় বাংলাদেশি সিনেটর।

কে এই নাবিলা?
নাবিলা ইসলামের নিজস্বওয়েব থেকে জানা যায়, তিনি একজন সোশ্যাল একটিভিটিস। মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের গুইনেট কাউন্টির বিভিন্ন কমিউনিটির অধিকার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। রাজনীতির পাশাপাশি রয়েছে ছোটখাটো নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

গুইনেট কাউন্টি পাবলিক স্কুল থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করে জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন নাবিলা ইসলাম।

২০২০ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেলারি ক্লিন্টনের প্রচারণা শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রচারণা কমিটির সিনিয়র এডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জর্জিয়ায় বসবাস করা ভিয়েতনামিজ, কোরিয়ান এবং ল্যাটিনসহ বিভিন্ন কমিউনিটির অধিকার আদায়ে সোচ্চার এই বাংলাদেশি আমেরিকান। এছাড়া, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রচারণা দলেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন নাবিলা ইসলাম। জর্জ ফ্লোডেড হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনেও ছিলেন সক্রিয়।

 

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম দুই নারী স্নাতকের একজন কাদম্বিনী গাঙ্গুলি

 

উনিশ শতকে বাঙলার সমাজে নারীর জীবন যখন ছিল খুবই পশ্চাদপদ এবং বহু প্রতিকূলতায় জর্জরিত, তখন সবরকম সামাজিক বাধার বিরুদ্ধে লড়াই করে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন এক বাঙালি নারী, যার নাম কাদম্বিনী গাঙ্গুলি।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতেই শুধু নয়, উনবিংশ শতাব্দীতে তিনি ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম দুজন নারী স্নাতকের একজন।

ব্রিটিশ শাসিত দেশগুলো থেকে প্রথম যে দুজন নারী গ্র্যাজুয়েট হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন তারা হলেন কাদম্বিনী গাঙ্গুলি (তখন বসু) এবং চন্দ্রমুখী বসু। কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে ১৮৮৩ সালে তারা দুজনে স্নাতক হন।

কাদম্বিনী স্নাতক পাশ করার পর ডাক্তারি পড়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং তিনিই ছিলেন ইউরোপীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিক্ষিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পেশাজীবী নারী চিকিৎসক।

কিন্তু কাদম্বিনীর এই ইতিহাস গড়ার পেছনে রয়েছে কঠিন সংগ্রামের ইতিহাস। কিশোরী বয়স থেকে প্রতিপদে রক্ষণশীল সমাজ তাকে এগোনর পথে বাধা দিয়েছে, হেয় করেছে, এমনকি ডাক্তার হবার পরে তিনি যখন রাতে রোগী দেখতে যেতেন তখন এক পত্রিকায় তাকে “বেশ্যা” বলেও কুৎসা ছড়ানো হয়েছে।

অনেক রোগী চিকিৎসা নেবার পরও তাকে চিকিৎসকের মর্যাদা দিতে অস্বীকার করেছে।
কে এই কাদম্বিনী?

কাদম্বিনী বসুর জন্ম ১৮৬১ সালে। বরিশালের চাঁদসি গ্রামে ছিল তাদের পৈতৃক বাসস্থান। বাবা ব্রজকিশোর বসু চাকুরি সূত্রে থাকতেন বিহারের ভাগলপুরে, যেখানে তিনি ভাগলপুর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। সেখানেই জন্ম কাদিম্বিনীর।

ব্রজকিশোর ভাগলপুরে নারীমুক্তি আন্দোলন শুরু করেছিলেন এবং ভারতের প্রথম মহিলা সমিতি তিনিই স্থাপন করেন।

ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক পরিবেশের কারণে কাদম্বিনীর পড়াশোনায় ছিল প্রবল আগ্রহ। বাবা তাকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে ১৪ বছর বয়সে ভর্তি করে দেন মেয়েদের একটি বোর্ডিং স্কুলে।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলির জীবন নিয়ে গবেষণা করেছেন বরুণ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ওই কিশোর বয়সেই পরিবারের বাইরে থেকে বড় হয়ে ওঠা কাদম্বিনীর চরিত্রের ওপর একটা বড় প্রভাব ফেলেছিল।

নারী শিক্ষার গুরুত্ব তিনি বুঝতে শুরু করেছিলেন তখন থেকেই। তার স্কুলের শিক্ষক দ্বারকানাথ গাঙ্গুলি ছিলেন নারী শিক্ষার একজন প্রবক্তা। দ্বারকানাথের কাজ কাদম্বিনীর কিশোরী মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যা পরে গভীর প্রেমে রূপ নেয়। দ্বারকানাথকেই পরে বিয়ে করেছিলেন কাদম্বিনী।

বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয় নামে যে স্কুলে কাদম্বিনী পড়তেন সেটি বছর দুয়েকের মধ্যে উঠে যাবার উপক্রম হলে স্কুলটিকে কলকাতায় মেয়েদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেথুন স্কুলের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়। কালক্রমে ঐ স্কুল থেকে এন্ট্রাস বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা দেবার জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠেন মাত্র দুজন ছাত্রী, যাদের একজন ছিলেন কাদম্বিনী।

উনিশ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে নারীশিক্ষার চল ছিল না। মেয়েদের ঘরে থাকাটাই ছিল সমাজে বাঞ্ছনীয়

অন্য ছাত্রীটির পারিবারিক কারণে আর পরীক্ষা দেয়া হয়ে ওঠেনি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন একমাত্র কাদম্বিনী।

মেয়েদের উচ্চশিক্ষার কোন চল সেসময় ছিল না, ফলে মেয়েদের পড়ার জন্য কোন কলেজই ছিল না। মি. চট্টোপাধ্যায় বলছেন কাদম্বিনীর লেখাপড়ার জন্যই বেথুন স্কুল প্রথমে এফ.এ. (ফার্স্ট আর্টস- বর্তমানের উচ্চ মাধ্যমিক সমমান) ও পরে বি.এ. ক্লাস চালু করে।

বিশেষ অধ্যাদেশের মাধ্যমে বেথুন স্কুলকে কলেজে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্তে বাংলায় সাড়া পড়ে যায়।

খ্রিস্টান স্কুল থেকে প্রাইভেটে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এক ছাত্রী চন্দ্রমুখী বসু এসে তার সাথে যোগ দেন বেথুন কলেজে বিএ পড়তে এবং ১৮৮৩ সালের জানুয়ারিতে দু’জনে বিএ পাশ করে ইতিহাস গড়েন।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলির প্রপৌত্র রাজীব গাঙ্গুলি বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তার মেধার পরিচয় প্রকাশ পেয়েছিল।

“মেয়েদের শিক্ষার জন্য যারা সেসময় আন্দোলন করছিলেন কাদম্বিনীর কাছে একদিকে তাদের বিরাট একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, অন্যদিকে কাদম্বিনীর নিজের মধ্যেও একটা একরোখা ভাব ছিল- আমাকে এগোতেই হবে।”

কাদম্বিনী গাঙ্গুলির জীবন সংগ্রাম নিয়ে স্টার জলসা টেলিভিশনে প্রচারিত সিরিয়ালের লেখিকা শর্বরী ঘোষাল বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, কাদম্বিনীর জীবন কাহিনি মেয়েদের জন্য অসামান্য অনুপ্রেরণার ইতিহাস।

“এই মেয়েটি শিক্ষাজীবনে শুধু নিজেই এগোয়নি, নারীর জন্য শিক্ষাব্যবস্থাও তার কারণেই ধাপে ধাপে এগিয়েছে। তার জন্যই বেথুনের মত নার্সারি স্কুলে এন্ট্রাস ক্লাস চালু হয়েছে, বেথুন কলেজিয়েট স্কুল হয়েছে, কারণ তিনি পড়তে চেয়েছেন এফএ। তিনি স্নাতক পড়বেন, বেথুন স্কুলকে তাই কলেজে রূপান্তরিত করা হয়েছে। তার হাত ধরেই বাংলায় নারীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পথ তৈরি হয়েছে,” বলেছেন শর্বরী ঘোষাল।

রাজীব গাঙ্গুলি বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে এই দুজন নারীর ডিগ্রি নেওয়া দেখতে কীভাবে লোক ভেঙে পড়েছিল।

“ইংল্যান্ডেও তখন নারী শিক্ষার প্রসার সবে ঘটতে শুরু করেছে। কাজেই ইংল্যান্ডের বাইরে এই দুই নারীর সমাবর্তনে ব্যাপক উৎসাহ দেখিয়েছিলেন ভারতে ঔপনিবেশিক শাসক সমাজের বহু মানুষ।”

তবে গবেষক বরুণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, সবাই যে উৎসাহ নিয়ে তাদের অভিনন্দন জানাতে এসেছিলেন তা নয়, অনেক রক্ষণশীল মানুষ এসেছিলেন দুই নারীর স্নাতক উপাধি নেওয়া ভণ্ডুল করতে। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বিঘ্নেই অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
উচ্চশিক্ষার জন্য লড়াই

কাদম্বিনীর জন্য উচ্চ শিক্ষার পথ ছিল কঠিন সংগ্রামের। স্নাতক হবার আগেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মেডিকেল পড়বেন। আবেদনও করেছিলেন, কিন্তু তার আবেদন নাকচ হয়ে যায়।

সমাজেও নানাভাবে ব্যঙ্গবিদ্রূপের শিকার হলেন তিনি। নারীরা চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়বে এটা সেসময় সমাজ ভাবতেও পারত না। বিশেষ করে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে মেয়েদের সামনে বিস্তারিত আলোচনা ও পাঠদান তখন শিক্ষকদের জন্য ছিল খুবই অস্বস্তিকর। আর ক্লাসে একমাত্র ছাত্রী ছিলেন কাদম্বিনী গাঙ্গুলি।

তার প্রথম আবেদন নাকচ হয়ে যায় তিনি তখনও স্নাতক হননি সেই যুক্তিতে। কিন্তু স্নাতক হবার পর কাদম্বিনী যখন দ্বিতীয়বার চিকিৎসাশাস্ত্র পড়ার আবেদন জানালেন, তখন আপত্তি জানাল মেডিকেল কাউন্সিল, পাশাপাশি তার মেডিকেল কলেজে ঢোকা বন্ধ করতে উঠে পড়ে লাগল কলেজের শিক্ষকদেরই একাংশ।

বহু প্রতিরোধের দেয়াল ডিঙিয়ে এবং রক্ষণশীল সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত কাদম্বিনী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবার সুযোগ পেলেন মূলত সেসময় বাংলার লেফটন্যান্ট গর্ভনর রিভার্স টমসনের আগ্রহ ও ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপের কারণে।

তার হস্তক্ষেপে মেডিকেল কলেজ কাউন্সিল কাদম্বিনীকে ডাক্তারিতে ভর্তি করতে বাধ্য হয়।

দ্য ওম্যান্স হেরাল্ড নামে ইংরেজি একটি পত্রিকায় অগাস্ট ১৮৯৩ সালে কাদম্বিনীর শিক্ষাজীবনের সংগ্রাম নিয়ে এক নিবন্ধে লেখা হয়, কাদম্বিনীকে ডাক্তারি না পড়ার কারণ হিসাবে বলা হয়েছিল ডাক্তারি পড়তে গেলে পুরুষদের কাছ থেকে তাকে অপমান সহ্য করতে হতে পারে।

পত্রিকায় লেখা হয়, কাদম্বিনী বলেছিলেন তিনি সবরকম অপমান সহ্য করতে প্রস্তুত আছেন। ঐ রিপোর্ট অনুযায়ী এক বছর ক্লাসে তিনি ২০০ জন পুরুষের মধ্যে ছিলেন একমাত্র নারী।

গবেষক বরুণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন তার ডাক্তারি পড়াকে রক্ষণশীল বাঙালি সমাজ একেবারেই মেনে নিতে চায়নি। সমাজে যারা উদারমনস্ক ও নারী শিক্ষার সমর্থক ছিলেন, এমনকি তারাও চাননি একজন মেয়ে ডাক্তারি পড়ুক।

“এমনকি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কাদম্বিনীর এত বড় অর্জনে নিশ্চুপ ছিলেন। তিনি চন্দ্রমুখীকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন, উপহারে পুরস্কৃত করেছিলেন, কিন্তু কাদম্বিনীর সাফল্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তার উচ্চশিক্ষার তিনি বিরোধিতা করেননি, কিন্তু বিদ্যাসাগরের বিস্ময়কর নীরবতা থেকে মনে হয়েছে কাদম্বিনীর ডাক্তারি পড়াকে তিনি সমর্থন করতে পারছেন না।

“মেয়েদের বিজ্ঞান পড়া, সর্বোপরি ডাক্তারি পড়ে সক্রিয় পেশাজীবী জীবন বেছে নেওয়াকে কি তিনি সমর্থন করতে পারেননি। না হলে এমন আশ্চর্যজনকভাবে নীরব ছিলেন কেন?” মন্তব্য করেছেন বরুণ চট্টোপাধ্যায়।
চরিত্রের ওপর আঘাত

সেসময়কার একটি পত্রিকা বঙ্গনিবাসীতে একটি লেখায় তার পেশা নিয়ে তির্যক ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়েছিল। একটি ঘটনার খবর প্রসঙ্গে তার রাতে রোগী দেখতে যাওয়ার বিষয়ে কটাক্ষ করে তাকে “নটী” উল্লেখ করে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করা হয় “তিনি কি ডাক্তারি করেন না কি বেশ্যাবৃত্তি করেন?”

তবে তেজস্বিনী নারী কাদম্বিনী পত্রিকার সম্পাদককে ছেড়ে দেননি। তিনি ও তার স্বামী দ্বারকানাথ আদালতে অভিযোগ জানান । বিচারে সম্পাদকের ছয় মাসের জেল ও জরিমানা হয় এবং মানহানির ক্ষতিপূরণ হিসাবে কাদম্বিনীকে দেয়া হয় তিন হাজার টাকা। একজন নারীর এই সাহস সমাজে রীতিমত তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল।

তেজস্বিনী কাদম্বিনী সমাজের নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছেন আজীবন

মেডিকেল কলেজের একজন অতি রক্ষণশীল বাঙালি অধ্যাপক যিনি গোড়া থেকেই কাদম্বিনীর ডাক্তারি পড়ার বিষয়ে খোলাখুলি প্রতিবাদ করেছিলেন, তিনি কাদম্বিনীকে পরীক্ষা পাশের জন্য প্রয়োজনীয় নম্বর দেননি বলে কথিত আছে।

বরুণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন কাদম্বিনীকে এক নম্বর কম দিয়ে পাশ না করানোর বিষয়টি নিয়ে সেনেটের বৈঠকে তখন যে আলোচনা হয়েছিল, তার দালিলিক প্রমাণও রয়েছে।

ব্রিটিশ একজন চিকিৎসক ডা. জে এম কোটস যিনি তখন ছিলেন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং মেডিসিনের অধ্যাপক, তিনি বুঝেছিলেন যে, কাদম্বিনীর সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। তার উদ্যোগে সিন্ডিকেটে আলোচনার মাধ্যমে কাদম্বিনীকে ‘লাইসেনসিয়েট ইন মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি’ বা এলএমএসের সার্টিফিকেট দেওয়া হয় ১৮৮৬ সালে।

কিন্তু দু’বছর এলএমএস পড়ার পরে ফাইনালে ফের কাদম্বিনীকে অকৃতকার্য দেখানো হয়।

এরপর অধ্যক্ষ কোটস নিজের অধিকার প্রয়োগ করে কাদম্বিনীকে ‘গ্র্যাজুয়েট অফ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ’ বা জিবিএমসি উপাধি দেন, যার ফলে ডাক্তার হিসাবে প্র্যাকটিস করার ছাড়পত্র পান কাদম্বিনী গাঙ্গুলি।
পেশা জীবনের সংগ্রাম

ইডেন হাসপাতালে তাকে কাজের সুযোগ করে দিয়েছিলেন মি. কোটস। কিন্তু সেখানে ডাক্তার হিসাবে তাকে গণ্য করা হত না, সেখানে তাকে নার্সের মর্যাদা দেওয়া হত। রোগ নির্ণয় বা অস্ত্রোপচার করতে দেওয়া হত না।

এরপর লেডি ডাফরিন হাসপাতালে তার চিকিৎসার সুযোগ হয় ১৮৯০ সালে। সেই কাজ পেতে কাদম্বিনীর জন্য তদ্বির করেছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গল।

রাজীব গাঙ্গুলি বলছেন, “কাদম্বিনীর কথা কীভাবে পৌঁছেছিল ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের কাছে। তিনি লেডি ডাফরিনকে লিখে কাদম্বিনীকে সেখানে কাজ দেবার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সেই হাসপাতালে তখন ইংল্যান্ডের ডাক্তারদেরই প্রতিপত্তি। কাজ করার সুযোগ পাননি কাদম্বিনী।”

কাদম্বিনী ১৮৮৮ থেকেই প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেছিলেন। তিনিই প্রথম মহিলা চিকিৎসক, যিনি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রাইভেটে রোগী দেখতেন। ঘোড়ার গাড়িতে চেপে রাতবিরেতে রোগী দেখতে যেতেন, প্রাইভেট চেম্বার খুলেছিলেন এবং নিয়মিত অস্ত্রোপচারও করতেন, বলেছেন রাজীব গাঙ্গুলি।

কিন্তু তার ডাক্তারি ডিগ্রি নিয়ে, তার যোগ্যতা নিয়ে বিরোধীরা প্রতি পদক্ষেপে তাকে বিদ্রূপ করতেন, তাকে চিকিৎসকের দায়িত্ব দেওয়ার প্রতিবাদ করতেন, এবং বলতেন তিনি একজন ধাত্রী বা নার্স, আদতে কোন চিকিৎসকই নন।

বরুণ চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, এই বিষয়টি কাদম্বিনী মেনে নিতে পারছিলেন না। এ সময়ই বিদেশে গিয়ে তিনি ডাক্তারি ডিপ্লোমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এবং এ ব্যাপারে তার পেছনে ছিলেন তার স্বামী দ্বারকানাথ গাঙ্গুলি।

স্নাতক হবার কিছুদিনের মধ্যেই তার থেকে বয়সে অনেক বড়, বিপত্নীক দ্বারকানাথ গাঙ্গুলিকে কাদম্বিনী বিয়ে করেছিলেন, যিনি ছিলেন একজন ব্রাহ্ম সমাজ সংস্কারক, এবং নারী শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম একজন কর্ণধার।
কলকাতার ইডেন হাসপাতালের আঁকা ছবি

ইডেন হাসপাতালে কাদম্বিনীকে কাজের সুযোগ করে দিয়েছিলেন ডা. কোটস, কিন্তু চিকিৎসকের সম্মান সেখানে তার জোটেনি

তাদের এই বিয়ে নিয়েও সমাজে নানা কথাবার্তা উঠেছিল, তৈরি হয়েছিল তুমুল আলোড়ন।

আট সন্তানকে কলকাতায় রেখে স্বামীর উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় কাদম্বিনী ১৮৯৩ সালে ইংল্যান্ডে যান চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষা নেবার জন্য। এক বিদেশি মহিলার সঙ্গিনী হয়ে জাহাজে একা বিদেশযাত্রা করেন।

ক্লাস করতেন তিনি স্কটল্যান্ডে। অবিশ্বাস্য দ্রুততায় ১৮৯৩ সালের জুলাই মাসে স্কটিশ কলেজের তিনটি ডিপ্লোমা অর্জন করে তিনি দেশে ফিরে যান।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলির রোগীদের সিংহভাগ ছিলেন গরীব ও প্রান্তিক মুসলিম ও নিম্নবর্গীয় হিন্দুরা।

“ধনী পরিবারের, রাজপরিবারের মেয়েদের চিকিৎসা করে তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন কাদম্বিনী। নেপালের রাজপরিবারের চিকিৎসা করে প্রচুর অর্থ তিনি আয় করেছিলেন। প্রচুর উপহার পেয়েছিলেন তাদের কাছ থেকে। গরীব ও সমাজের অবহেলিত সম্প্রদায়ের মানুষের চিকিৎসাই ছিল তার জীবনের একটা বড় ব্রত,” বলছিলেন গবেষক বরুণ চট্টোপাধ্যায়।

তবে শর্বরী ঘোষাল বলেছেন, এত সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ডাক্তার হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার পরেও কাদম্বিনীকে সমাজ এমনকি একজন চিকিৎসকের যোগ্য সম্মানও দেয়নি।

“সন্তান প্রসব করানোর জন্য তিনি যখন সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বাড়িতেও গেছেন, তাকে ‘দাই’ বলে ডাকা হয়েছে। খেতে দিয়ে নিজের থালাবাসন তাকে ধুয়ে দিয়ে যেতে বলা হয়েছে।”

কদিম্বিনীর প্রপৌত্র রাজীব গাঙ্গুলি বলছিলেন: “ঠাকুমার কাছে শুনেছি, কঠিন কেসে সফলভাবে প্রসব বা অস্ত্রোপচারের পর কাদম্বিনীকে যখন খেতে দেয়া হয়েছে, তাকে ঘরের ভেতর আসন দেয়া হয়নি। এমন একটা বাড়িতে কাদম্বিনীর সাথে গিয়েছিলেন আমার ঠাকুমা।

“কাদম্বিনীকে বাইরে বসে খেতে বলেছিল, থালাবাটি ধুয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করে দিয়ে যেতে বলেছিল। অপমানে আমার ঠাকুমার চোখে জল এসেছিল। তখন কাদম্বিনী ইংল্যান্ড ফেরত ডাক্তার।”

রাজীব গাঙ্গুলি বলেন, ইউরোপীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিক্ষিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এই পেশাজীবী নারী চিকিৎসক জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পুরুষশাসিত সমাজে আত্মমর্যাদা পেতে লড়াই চালিয়ে গেছেন, নিজের যোগ্যতা প্রমাণে শেষ দিন পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়ে গেছেন।

আনন্দীবাঈ যোশী নামে আরেকজন ভারতীয় নারী একই বছর অর্থাৎ ১৮৮৬ সালে ডাক্তারি পাশ করেন আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ার উইমেন্স মেডিকেল কলেজ থেকে। বম্বের মেয়ে আনন্দীবাঈকে তার স্বামী ডাক্তারি পড়তে আমেরিকা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে ভারতে ফেরেন, প্র্যাকটিস করার সুযোগ তার আর হয়নি। পুনায় ২১ বছর বয়সে তিনি মারা যান। বিবিসি বাংলা

 

গ্রামের নারীদের তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক প্রশিক্ষণ তৃণমূলের নারীদের জন্য অবারিত করতে হবে। এতে তারা নিজেদের জীবনমান উন্নয়নে তা কাজে লাগাতে পারবেন।

বুধবার (১০ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২১ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

নারীবান্ধব নীতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে স্পিকার বলেন, নারীদের আরও এগিয়ে নিতে অবকাঠামোগত সকল সুবিধা নিশ্চিত জরুরি। নারীবান্ধব রাজস্বনীতি গ্রহণের পাশাপাশি করারোপ প্রক্রিয়ার সহজীকরণ প্রয়োজন শ্রমবাজারে নারীদের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান স্পিকার।

শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় ঘোষিত প্রণোদনা মাঝারি ও ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারা যেন সহজে পেয়ে উপকৃত হতে পারেন, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা দরকার। ডিজিটাল ডিভাইডের শিকার হয়ে নারীরা যেন তথ্য-প্রযুক্তিতে পিছিয়ে না পড়ে সেদিকে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

স্পিকার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের নারী-পুরুষ সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার আইনী কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানিক ভিত দিয়ে গেছেন। নারী-পুরুষ সকলের মৌলিক অধিকার তিনি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে গেছেন। এই আইনি কাঠামোর ভিতের উপর দাঁড়িয়ে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের নারী সমাজ।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরেই আজ নারীদের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি। কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেই নারীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নজির দৃশ্যমান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ জাতীয় সংসদে ৫০ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের পাশাপাশি ২৩ জন নারী সরাসরি নির্বাচিত, যা জাতির পিতার সুগভীর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তার ফল।

স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নে যে কাজ করছেন, তা সমগ্র বিশ্বে প্রশংসিত। এর স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড, প্ল্যানেট ফিফটি চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড, গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮, এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ডসহ অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

‘কোভিড মোকাবিলায় অসাধারণ নেতৃত্বের জন্য সম্প্রতি কমনওয়েলথ কর্তৃক বিশ্বের তিনজন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অন্যতম হিসেবে ইন্সপাইরেশনাল লিডারশিপ সম্মাননা তিনি অর্জন করেছেন। যা সমগ্র জাতির জন্য গৌরবের’ বলেন স্পিকার।

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীন, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন এবং সাধারণ সম্পাদক মাহবুবা বেগম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. সুলতানা শফি। সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি।

 

করোনায় ই-কমার্সে নারীরা ভালো অবদান রেখেছে : স্পিকার

নারীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, যোগ্যতা দিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করতে পারলে নারীদের পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি আর আসবে না।

বুধবার (১০ মার্চ) সিরডাপ মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন স্পিকার।

তিনি বলেন, করোনায় ই-কমার্স বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এতে নারীরা ভালো অবদান রেখেছে। ই-কমার্স আরও নারী বান্ধব করা প্রয়োজন। কর আরোপসহ নানা বিষয়গুলি সহজীকরণ করা দরকার।

ভারতের একটি আঁকা ছবির কথা উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, সেখানে একটা ছেলে তার মায়ের সারাদিনের কাজের চিত্র তুলে ধরে। অথচ তার বাবা বলে মা কোনো কাজ করে না। আমরা নানা যায়গায় গিয়ে দেখেছি, গৃহিণীরা নিজেও মনে করেন তিনি কিছু করেন না। স্বামীরাও মনে করে তাই। বিষয়টি কিন্তু উল্টো; কাক ডাকা ভোর থেকে রাত অবধি নারীরা কাজ করেন।

তিনি বলেন, নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টি আইনি কাঠামোয় এবং সংবিধানে সংযোজন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার বাস্তবায়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা ও জীবন মান উন্নতকরণে বিশেষ অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, নারীদের ক্ষমতায়ন তৃনমূল থেকে হতে হবে। তৃণমূলে আগে ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য চেয়ারম্যান বা নির্বাচিত সদস্যদের ইচ্ছায় মনোনীত হতো। তারা (পুরুষ) চাইলে কাজ করতে পারতো, না হয় না। অথচ ইউনিয়ন পরিষদে নারীদের নির্বাচন করে তুলে আনার মধ্য দিয়ে তাদের ক্ষমতায়ন করেছেন শেখ হাসিনা। এখন তারা নিজের ও নারীদের দাবি তুলে ধরতে পারছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারলে মানুষ এক সময় না এক সময় তার অধিকার নিতে পারে। শেখ হাসিনা নারীদের এগিয়ে যাওয়া, ক্ষমতায়ন ও অধিকার আদায়ের সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে দিয়েছেন।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, নারী শুধু মেয়ে মানুষ নয়, নারীও মানুষ এটিই হোক আমাদের পরিচয়। এতেই দূর হয়ে যায় অনেক বাধা।

আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান ড. সুলতানা শফির সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মেহের আফরোজ চুমকির সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন।

 

প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনিক ও উচ্চপদে নারীদের পদায়ন করেছেন

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশাসনিক এবং অন্যান্য উচ্চপদে নারীদের পদায়ন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

বুধবার (১০ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে জাতিসংঘের কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অব উইমেনের ৬৫তম সেশনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং ইউএন উইমেন বাংলাদেশের আয়োজনে এই সভা হয়।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাজনীতিতে আমাদের দেশের নারীরা অবহেলিত। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীরা রয়েছেন। বাংলাদেশে যারা বড় রাজনীতিবিদ বলে দাবি করেন তাদের দলে কিন্তু নারীদের এ ধরনের অবস্থান নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের নারীরা আজ এমন এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে যে বঙ্গবন্ধুর কন্যা সর্বপ্রথম এদেশে প্রশাসনিক এবং অন্যান্য উচ্চপদে নারীদের পদায়ন করেছেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নারীদের উচ্চপদে পদায়ন করেছেন। বর্তমানে আদালতে ১৮৪৫ জন জজ আছেন, তারমধ্যে নারী ৫৪৪ জন। বাংলাদেশের মেজর জেনারেল নারী; আগে কখনো নারী এসপি ছিলে না, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসে নারী এসপি নিয়োগ দিয়েছেন। দেশে ১৫ হাজার নারী পুলিশ রয়েছে, তার মধ্যে অনেকেই পুলিশ কর্মকর্তা। বর্তমান নারী ইউএনও’র সংখ্যা ১৩৪ জন।

বাংলাদেশ আজ নারীর ক্ষমতায়নে উন্নয়নশীল বিশ্বের রোল মডেল বলে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠনের মাধ্যমে নারী উন্নয়নের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নারী-পুরুষ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন সুসংহতকরণে গৃহীত কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত।

তিনি বলেন, গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ প্রতিবেদন ২০২০ অনুযায়ী ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম। ভিশন ২০২১ এবং ২০৪১-এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে ক্রমান্বয়ে একটি মধ্যম এবং উচ্চআয়ের দেশের পরিণত করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সকল আন্তর্জাতিক ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা সকলেই এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বাস্তবায়নে কাজ করছি। এক্ষেত্রে ৫ নং গোল সরাসরি নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ, বাল্যাবিয়ে নিরোধ, নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশ সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন, সমসুযোগ, সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় উন্নয়নের মূলধারায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দারিদ্রমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: সায়েদুল ইসলাম নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা, সুরক্ষা প্রদান এবং নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সামগ্রিক উন্নয়নের মূলস্রোত ধারায় সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের উদ্যোগে আগামী ১৫-২৬ মার্চ ২০২১ সময়ে কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অব উইমেনের ৬৫তম সেশন অনুষ্ঠিত হবে। মহামারির কারণে এবছর সেশনটি ভার্চুয়ালি হবে।

 

বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ নারী সহিংসতার শিকার

বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ নারী সারাটা জীবন ধরেই যৌন হেনস্তা বা শারীরিক সহিংসতার শিকার হন। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক নতুন প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানকে আহ্বান জানানো হয়েছে। নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করা, ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য বিভিন্ন সেবার উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য মোকাবিলা করা যার কারণে প্রায়ই নারী ও মেয়ে শিশুরা অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে।

১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ৩১ শতাংশ নারী অর্থাৎ বিশ্বের ৮৫ কোটির বেশি নারী শারীরিক বা যৌন হেনস্তার শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলছে, এ পর্যন্ত নারীদের ওপর সহিংসতার বিষয়ে করা এটাই সবচেয়ে বড় গবেষণা। ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ জরিপ এবং তথ্যও এতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতি সম্মান এবং যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সঙ্গীর মতামতকে গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টি স্কুলজীবনেই ছেলে শিশুদের শেখানো উচিত।

বিভিন্ন দেশ এবং সংস্কৃতিতে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় লাখ লাখ নারী এবং তাদের পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বিশ্বব্যাপীই অনেক বেড়ে গেছে।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরিদ্র দেশগুলোতে একজন স্বামী বা নারীর অন্তরঙ্গ সঙ্গীর দ্বারাই তারা সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হয়ে থাকেন। সেখানে বলা হয়েছে, এক চতুর্থাংশ নারী তাদের সঙ্গীর হাতে হেনস্তা বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। অনেক সময় একজন মেয়ে তার ১৫ বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন ধরনের মানুষের কাছে হেনস্তার শিকার হয়ে থাকেন এবং এটা তাকে সারাজীবন বয়ে নিয়ে যেতে হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, কিরিবাতি, ফিজি, পাপুয়া নিউ গিনি, বাংলাদেশ, কঙ্গো এবং আফগানিস্তানে মেয়েদের সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হতে হয়। এই সংখ্যা সবচেয়ে কম ইউরোপে। সেখানে সহিংসতার শিকার ২৩ শতাংশ নারী।

করোনা মহামারিতে বিভিন্ন দেশেই নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে নারীরা বাড়ির বাইরে যেতে না পারায় তারা তাদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন বা কাছের কারও কাছ থেকে সহায়তা নিতে পারেননি। তাদেরকে নিজেদের নির্যাতনকারীর সঙ্গে একই স্থানে অনেক বেশি সময় ধরে থাকতে হয়েছে। ফলে নির্যাতনের মাত্রাও বেড়ে গেছে।

প্লান ইন্টারন্যাশনালের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, কলম্বিয়ায় লকডাউন শুরুর পর সেখানে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা অন্যান্য বছরের তুলনায় ১৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে যা সত্যিই খুব আশঙ্কাজনক।

 

হোয়াইট হাউসে হিজাব পরে প্রেস ব্রিফিং, ইতিহাস গড়লেন কাশ্মীরী নারী

হিজাব পরে হোয়াইট হাউসে প্রেস ব্রিফিং। মার্কিন ইতিহাসে নতুন এক নজির গড়লেন বাইডেন প্রশাসনের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের ডেপুটি ডিরেক্টর। ওই ব্রিফিংয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে অংশ নেন বাইডেন প্রশাসনের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের দায়িত্ব পাওয়া কাশ্মিরী কন্যা সামিরা ফাজিলি। হোয়াইট হাউসের অন্যান্য কর্মকর্তার চেয়ে তার পোশাক ছিল একেবারেই আলাদা। প্রথম হিজাবধারী হিসেবে হোয়াইট হাউসের প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়ে গড়েন নতুন এক ইতিহাস।
হোয়াইট হাউসের ব্রিফিংয়ের সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন ভাইরাল। টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন ভাসছে যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিষয়ে বাইডেনের উদারনীতির প্রশংসায়। গত জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল বা ‘ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিল’-এর উপপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান কাশ্মীরি বংশোদ্ভূত সামিরা। এদিন করোনাভাইরাসের আঘাতে বিপর্যস্ত মার্কিন অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন বিষয়ক দিকনির্দেশনা দেন তিনি।

  1. এর আগে সামিরা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আটলান্টার সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ছিলেন। এ ছাড়া বারাক ওবামার আমলে হোয়াইট হাউসের আর্থিক নীতিনির্ধারক পরিষদের পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। সেই সময় এনইসি ও ট্রেজারি বিভাগের সিনিয়র উপদেষ্টা পদেও কাজ করেছেন সামিরা। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিকবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারির দাফতরিক নীতিনির্ধারক দলে কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার।
    সামিরা ক্ষুদ্র ঋণ, আবাসন ঋণ এবং গ্রাহক সম্পর্কিত বিষয়ের বিশেষজ্ঞ। তার জন্ম নিউইয়র্কের উইলিয়ামসভিলে। তিন সন্তানের জননী সামিরা এখন বসবাস করেন জর্জিয়াতে। পড়াশোনা করেছেন ইয়েল ল’ স্কুলে। স্নাতক সম্পন্ন করেছেন হার্ভার্ড কলেজ থেকে। পরবর্তীতে ইয়েল ল’স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

 

দুর্যোগ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে নারীদের ব্যাপক সাড়া

সরকারের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির আওতায় যেসব স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন তাদের অংশগ্রহণে তৃতীয় দিনের মতো শেষ হয়েছে ‘দুর্যোগে সাড়াদান ও জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম’ শীর্ষক উন্নত প্রশিক্ষণ সেশন। বুধবার (৩ মার্চ ) বিকালে কক্সবাজারের ইনানীর অর্কিড ব্লু হোটেলে জেলার উখিয়ার ২৪ জন প্রশিক্ষণার্থীর অংশগ্রহণে এই প্রশিক্ষণে শেষ হয়। এর মধ্যে ১৫ জন ছিলেন পুরুষ ও ৯ জন নারী।

তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিকের সমন্বয়ে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। এই প্রশিক্ষণসহ তিনটি পর্বে মোট ৮৫ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ৪৯ ছিলেন পুরুষ, ৩৬ জন ছিলেন নারী।

গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। প্রশিক্ষণ বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে ছিল বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।

ভূমিধস, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জরুরি উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসায় করণীয় নিয়ে ছিল মূল প্রশিক্ষণের আয়োজন। স্বেচ্ছাসেবকরা দুর্যোগকালে যাতে মূল উদ্বারকর্মীদের সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারেন এজন্য এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এছাড়া স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে দুর্যোগকালীন কেউ আহত বা বিপদে পড়লে তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় স্বেচ্ছাসেবকরা কীভাবে সহযোগিতা করবেন তা এতে তুলে ধরা হয়।

গত বছরের ৮ নভেম্বর থেকে তিনটি পর্বে শুরু হয় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় পাঁচ দিনব্যাপী তৃতীয় পর্বের এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ট্রেনিং কমপ্লেক্স বিভাগের ইনস্ট্রাক্টর মনির হোসেন, ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ইকবাল বাহার বুলবুল, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, নউটন দাশসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ। ব্র্যাকের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতাধীন দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কর্মসূচির সেক্টর স্পেশালিস্ট শুভ কুমার সাহা, একই কর্মসূচির সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান, কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট আলাল আহমেদ প্রমুখ।

প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন ইডেন কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা মৌসুমী আরজু। তিনি বলেন, ‘আমরা এই পর্বে ২৪ জন অংশ নিয়েছি। এর মধ্য থেকে ঘূর্ণিঝড় বা ভূমিধস এইরকম জরুরি অবস্থায় ১০ জনও যদি স্থানীয়দের উদ্ধার কাজে সহায়তা করতে পারে সেটা আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি।’ পরিবারের কাছ থেকে এই দুঃসাহসিক কাজে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

আরেক প্রশিক্ষণার্থী উখিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আসমা আক্তার তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি আনন্দিত ব্র্যাকের এরকম ব্যতিক্রমী আয়োজনে। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম যাতে অব্যাহত থাকে সংস্থাটির কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশা করি।’

 

সাফার নেতৃত্বে বাংলাদেশি নারী

সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের (সাফা) ওমেন লিডারশিপ কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশের মারিয়া হাওলাদার। আগামী দুই বছর তিনি এ দায়িত্ব পালন করবেন। মারিয়া হাওলাদার বর্তমানে দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সহ-সভাপতি।

আইসিএবি গত সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

এতে আরও বলা হয়, তিনি হাওলাদার মারিয়া অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ফার্মের প্রতিষ্ঠাতার পাশাপাশি ওমেন মেম্বারস এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট কমিটি অব আইসিএবিরও চেয়ারম্যান। ২০০৮ সাল থেকে তিনি নিরীক্ষা পেশায় রয়েছেন।

 

চলে গেলেন জনতা ব্যাংকের প্রথম নারী চেয়ারম্যান

জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও দোহাটেক নিউ মিডিয়ার চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহা আর নেই। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর মরদেহ ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

পারিবারিক সূত্রে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। রাষ্ট্র মালিকানাধীন কোনো ব্যাংকের প্রথম নারী চেয়ারম্যান ছিলেন লুনা শামসুদ্দোহা। এ ছাড়া তিনি সফটওয়্যার ফার্ম দোহাটেক নিউ মিডিয়ার চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ওমেন ইন টেকনোলজির (বিডব্লিউআইটি) ‘প্রযুক্তিতে বাংলাদেশি নারী’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ছিলেন। দেশের অর্থনীতিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড-২০১৭।

এ ছাড়া একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে স্থানীয় সফটওয়্যার শিল্পে নিজের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে লুনা শামসুদ্দোহা অনন্যা টপ টেন অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন।

 

ঋণের জন্য ব্যাংকে যেতে হবে নারী উদ্যোক্তাদের

করোনাভাইরাসের প্রকোপে নারী উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের জন্য আলাদা আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়নি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের জন্য যে ঋণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেটাও নারী উদ্যোক্তারা তেমন একটা পাচ্ছেন না। আবেদন করলেও ব্যাংকগুলো সাড়া দিচ্ছে না। কারণ হিসেবে বলা হয়, করোনার মধ্যে ব্যবসা খারাপ। উদ্যোক্তাদের লেনদেনও কমে গেছে।

বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিডব্লিউসিসিআই) আয়োজিত ‘নারী উদ্যোক্তাদের ওপর করোনার প্রভাব’ শীর্ষক এক অনলাইন সেমিনারে এসব মতামত দেন উদ্যোক্তারা।

এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে প্রয়োজনে আগের লেনদেন বিবেচনা করে ঋণ দিতে। তবে উদ্যোক্তাদের ব্যাংকে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিডব্লিউসিসিআইয়ের সভাপতি সেলিমা আহমাদ বলেন, করোনায় বাংলাদেশের বেশির ভাগ নারী উদ্যোক্তা ব্যবসা হারিয়েছেন। এই সময়ে কারও ব্যবসা ছোট হয়েছে। আবার কেউ কেউ নিজস্ব শোরুম ছেড়ে বাসায় ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। জমানো টাকা ভেঙে খেয়েছেন অনেকে। সম্পদ ও মেশিনপত্র বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন, এমনও হয়েছে।
বিজ্ঞাপন

সেলিমা আহমাদ আরও বলেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর থেকে ব্যবসা বন্ধ আছে, কিন্তু বেতন ও বিল দিতে হচ্ছে, এমন উদ্যোক্তাও আছেন। অনেকের অগ্রিম জমা টাকা থেকে দোকানের ভাড়া কেটে নেওয়া হয়েছে।

নারী উদ্যোক্তারা বলেন, লকডাউনের কারণে সীমান্ত ও যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। সে সময় বিদেশি অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। ফলে অনেক উদ্যোক্তা লাইসেন্স নবায়নে সমস্যায় পড়েছেন। এ ছাড়া প্রণোদনা প্যাকেজে নতুন উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার সুযোগ নেই।

এর জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হুসনে আরা শিখা বলেন, প্যাকেজের ৫ শতাংশ নারীদের দিতে বলা হয়েছিল, তবে ঋণ পেয়েছেন ৬ শতাংশ উদ্যোক্তা। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ আছে, যার সুদহার ৩ শতাংশ। এর জন্য কেউ আবেদন করছেন না। নারী উদ্যোক্তা ও ব্যাংকারদের মধ্যে দূরত্ব দূর করতে হবে।

 

একুশের সকালে সাইকেল শোভাযাত্রা

নারায়ণগঞ্জের নারী সাইকেল আরোহীদের দলটি শাড়ি পরে সাইকেল চালিয়ে প্রভাতফেরিতে অংশ নিয়েছিলেন। ফাল্গুনের কুয়াশাভাঙা রোদেলা সকাল। নারায়ণগঞ্জ শহরের পথে পথে প্রভাতফেরির গান। ‘ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি…।’

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরিতে একদল নারী যুক্ত হয়েছিলেন ভিন্নভাবে। শাড়ি পরে সাইকেল চালিয়ে প্রভাতফেরিতে অংশ নিয়েছেন তাঁরা। সঙ্গে ছিল ভাষার স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড। এই নারীরা নারায়ণগঞ্জের নারী সাইকেল আরোহীদের দল নভেরার সদস্য।

রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জ নগরের খানপুর থেকে যাত্রা শুরু করে মণ্ডলপাড়ায় গিয়ে শেষ হয় নভেরার সাইকেল শোভাযাত্রা। নিছক খেয়ালের বশে নয়, প্রতিবাদের ভাষা হিসেবেই ভাষা দিবসে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন বলে জানান নভেরার প্রতিষ্ঠাতা ফারজানা মৌসুমী। দুই বছর ধরে নভেরা একুশে ফেব্রুয়ারি এমন সাইকেল শোভাযাত্রা করে আসছে।

 

৩ দশক পড়াশোনা করে ইসলাম গ্রহণ জবি অধ্যাপকের

ধর্মতত্ত্ব নিয়ে প্রায় ২৯ বছর পড়াশোনার পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রিতু কুন্ডু। রিতু কুন্ডু ধর্মান্তরিত হয়ে নিজের নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন আদ্রিতা জাহান রিতু।

তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন আরো ৪ বছর আগে। তবে বিষয়টি এত দিন আড়ালেই ছিল। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই ভাইরাল হওয়া ভিডিওতেই

শান্তির এ ধর্মে তিনি দিক্ষিত হয়েছিলেন বছর চারেক আগে। তবে বিষয়টি এত দিন ওইভাবে জানাজানি হয়নি। নিজের ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার কথা বর্ণনা করেন রিতু।

ভিডিওটিতে ওই শিক্ষিকা বলেন, দীর্ঘ ২৯ বছরের বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা ও জ্ঞান-বুদ্ধির আলোকে আমি ইসলামের বিষয়ে এক মাসব্যাপী পড়াশোনা শুরু করি। ১৬ দিনের মধ্যেই আমি সত্য উপলব্ধি করি এবং ২০১৭ সালের মার্চে ইসলাম গ্রহণ করি। এই দীর্ঘ ২৯ বছর পর্যন্ত আমি নিজের পরিবার, সমাজ ও মানুষের আচার-ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করি। এ দীর্ঘ সময় অন্যান্য প্রধান সব ধর্মের গ্রন্থাবলি পাঠ করেছি। জাপানেও এ বিষয়ে পড়াশোনা করি। ২০১২ সালে এসে বুঝতে পারি, এগুলো মানুষ রচিত বই।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ ২৯ বছর পর আমি পবিত্র কোরআনের বাংলা অনুবাদ নিয়ে পড়ালেখা করি। এর পাশাপাশি আমি হাদিসও পাঠ করি। সামনে কোরআনের যে সূরা আর হাদিস পেয়েছি তাই মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। মহান আল্লাহর নির্দেশনার কারণ ও বিধিনিষেধ নিয়ে চিন্তাভাবনা করি। কখনও এ বিষয়ে স্বপ্নও দেখেছি। তা হয়তো অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হবে।

খুব ছোট থেকেই হয়তো আল্লাহ আমাকে ইসলাম কবুলের জন্য তৈরি করেছিলেন। ছোট থেকে আজ পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ঘটনা, শিক্ষা, প্রতিবন্ধকতা আর সমাজের অসংগতি আমাকে ধীরে ধীরে ইসলামের পথে পরিচালিত করেছে। আমি যখন বুঝতে পারলাম, আমাকে নামাজ পড়তে হবে সেদিন থেকে টানা ১৪ মাস আমার নামাজ কাজা হয়নি। এরপর চাকরির কারণে দু-একবার কাজা হয়ে যায়। আমি যখন অনুভব করলাম, আমাকে পর্দা করতে হবে সেদিন থেকে আমি হিজাব পরা শুরু করি।

পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্তে অবিচল ছিলেন বলেও জানান এ শিক্ষিকা।

নীলফামারী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন আদ্রিতা জাহান রিতু। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

২০১৩ সালে তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৭ সাল থেকে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।

 

বয়স ডিঙিয়ে এভারেস্টে

মাউন্ট এভারেস্ট—বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। ২৯ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতার এভারেস্টে ওঠা যেনতেন কথা নয়। বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে প্রবল যুঝতে পারলেই সর্বোচ্চ সেই স্থানে বিজয় পতাকা ওড়ানো যায়। আসুন, জেনে নেওয়া যাক, একই দেশের দুজন নারী পবর্তারোহীর কথা, যাঁরা কিনা ভিন্ন ভিন্ন বয়সে জয় করেছিলেন এভারেস্ট।

অভিনেতা রাহুল বোস পরিচালিতপূর্ণা সিনেমাটি কি দেখা হয়েছে? দেখা থাকলে পূর্ণা মালাভাথের জীবনের গল্পের সঙ্গে পরিচয় হয়ে যাওয়ার কথা। অজানা থাকলে বলছি শুনুন।

ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের একটি ছোট্ট গ্রামে ছিল পূর্ণার বাস। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ২০১৪ সালে এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছিলেন তিনি। এভারেস্টজয়ী সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে সেই সময় রেকর্ড করেছিলেন পূর্ণা। এর আগে ১৪ বছর বয়সী এক মার্কিন কিশোরের দখলে ছিল সেই রেকর্ড।

এভারেস্টের পথে পূর্ণা প্রচণ্ড বৈরী আবহাওয়ার মুখোমুখি হয়েছিলেন। কিছুদিন আগেই সেখানে হিমবাহ ধসের ঘটনা ঘটেছিল। তবে এত কিছুতেও দমে যাননি তখনকার ১৩ বছরের কিশোরী। এভারেস্টের চূড়ায় উড়িয়েছিলেন বিজয় পতাকা।

এভারেস্ট জয়ে কোন বিষয়টি পূর্ণাকে অনুপ্রাণিত করেছিল জানেন? তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, মেয়েরা যেকোনো কিছুই অর্জন করতে পারে। এভারেস্টের চূড়ায় উঠে সব প্রতিবন্ধকতাকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছিলেন পূর্ণা।

২০১১ সালে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় যখন ভারতের ঝাড়খন্ডের অধিবাসী প্রেমলতার পা পড়েছিল, তখন তাঁর বয়স ছিল ৪৮ বছর। তিনি ছিলেন দুই সন্তানের মা। এমন বয়সে সবাই চায় নির্ঝঞ্ঝাট জীবন। কিন্তু প্রেমলতা গিয়েছিলেন হিমালয়ের ঝঞ্ঝামুখর পথে। সে সময় তিনি ছিলেন ভারতের এভারেস্টজয়ী সবচেয়ে বেশি বয়সী নারী। যদিও পরে সেই রেকর্ড ভেঙেছিলেন আরেকজন, তবে পথপ্রদর্শক হিসেবে তিনিই ছিলেন।

শুধু তা-ই নয়। বিশ্বের সাত মহাদেশের সাত সর্বোচ্চ পাহাড়চূড়াতেও (সেভেন সামিট) পা রেখেছেন প্রেমলতা। প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে এই রেকর্ড গড়েছেন তিনি।

পর্বতারোহণে অবদান রাখায় ভারত সরকারের দেওয়া সম্মানসূচক ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার পেয়েছেন প্রেমলতা। আরও পেয়েছেন ‘তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড’। লিমকা বুক অব রেকর্ডসেও নাম লিখিয়েছেন প্রেমলতা।

তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, এনডিটিভি, দ্য হিন্দু ও টাইমস অব ইন্ডিয়া

 

প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কিশোরীর পেটে ছুরিকাঘাত

রাজধানীর ডেমরায় প্রেমের প্রস্তাব রাজি না হওয়ায় এক কিশোরীকে (১৫) পেটে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করেছে এক বখাটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মো. রেদুয়ানকে (২০) শনিবার দিবাগত রাতে গ্রেফতার করেছে ডেমরা থানা পুলিশ।

রোববার দুপুরে আদালতে পাঠানো হলে ওই দিন বিকালে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

রেদুয়ান শেরপুরের নালিতাবাড়ী থানার মো. মজিবুর রহমানের ছেলে। সে পরিবারের সঙ্গে বর্তমানে ডেমরার পশ্চিম বক্সনগর এলাকার মহসিন ভান্ডারির বাড়িতে ভাড়া থাকেন। হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করার এ ঘটনায় ওই কিশোরীর বাবা রাজমিস্ত্রি মো. আবদুল মান্নাফ রেদুয়ানের বিরুদ্ধে শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মামলা দায়ের করেন। ওই কিশোরী পেশায় একজন পোশাককর্মী।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডেমরা থানার এসআই মো. নজরুল ইসলাম বলেন, গার্মেন্টে যাওয়া-আসার পথে ওই কিশোরীকে প্রতিনিয়ত প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বিরক্ত করত একই বাড়ির ভাড়াটিয়া বখাটে রেদুয়ান। এ বিষয়ে ওই কিশোরীর বাবা ছেলেটিকে নিষেধ করলে থেমে যাওয়ার বদলে আরও ক্ষিপ্ত হয় সে। এদিকে গত শনিবার বিকালে রেদুয়ান ক্ষিপ্ত অবস্থায় মেয়েটির ঘরে গিয়ে তার হাতে থাকা ছুরি দিয়ে মেয়েটির পেটের ডান পাশে আঘাত করে। এ সময় ওই কিশোরী ডাক চিৎকার শুরু করলে তার মা ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে রেদুয়ান পালিয়ে যায়।

এসআই নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ঘটনার পরই গুরুতর আহত অবস্থায় মেয়েটিকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে মেয়েটি সেখানে চিকিৎসাধীন। আদালতে মাদকাসক্ত রেদুয়ান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

 

নারীর নিরাপত্তায় প্রস্তুত পুলিশের কিউআরটি

স্বামীর নির্যাতন থেকে শুরু করে পথে–ঘাটে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনায় নারী নিজেকে অনিরাপদ মনে করলে পাশে পাবেন পুলিশের কুইক রেসপন্স টিমকে (কিউআরটি)। দিন-রাত যেকোনো সময় এ দলকে পাশে পেতে ফোন করতে হবে ০১৩২০০৪২০৫৫ নম্বরে (হটলাইন)। তবে প্রচারের অভাবে এখন পর্যন্ত আশানুরূপ ফোন পাচ্ছেন না তাঁরা।

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের পাশাপাশি আক্রান্ত বা ভিকটিমকে দ্রুত উদ্ধারসহ অন্যান্য সহায়তা দিতে কিউআরটির যাত্রা। গত বছরের ২৭ অক্টোবর রাজধানীর তেজগাঁও থানা প্রাঙ্গণের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অধীনে এই টিমের উদ্বোধন করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। ১২ জানুয়ারি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, কিউআরটির নারী পুলিশ সদস্যরা একটি ঘরে বসে আছেন। উদ্ধারজনিত কোনো ফোন পেলেই ছুট লাগাবেন তাঁরা। কিউআরটিতে নারী পুলিশ সদস্য সংখ্যা বেশি হলেও পুরুষেরাও দায়িত্ব পালন করছেন।
বিজ্ঞাপন

উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হামিদা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, এ বিভাগের অধীনে তদন্ত ইউনিট, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পাশাপাশি কিউআরটিও পরিচালিত হচ্ছে। ২৮ জনবলের কিউআরটি পূর্ণাঙ্গ একটি দল হিসেবে কাজ করছে। ডিএমপির অধীনে কোনো স্থানে ঘটনা ঘটলে উদ্ধার পাওয়া যাবে এবং সারা বাংলাদেশের সবাই আইনি পরামর্শ পেতে এ নম্বরে ফোন করতে পারবে।

কিউআরটিতে আসা সব অভিযোগ নথিবদ্ধ হচ্ছে না, যেসব অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেগুলো নথিবদ্ধ করা হয়। সে হিসাবে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত নথিবদ্ধ হয়েছে ৯৬টি অভিযোগ। কিউআরটির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীরা বেশি ফোন করে সহায়তা চাচ্ছেন। কল বেশি আসে ঢাকার বাইরে থেকে। ৯৯৯-এর মাধ্যমে কল পেয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এই দল থেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতারণা, বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক, খারাপ ব্যবহার, অনলাইনে প্রতারণাসহ বিভিন্ন বিষয়েও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

কিউআরটির সদস্যরা আইনি পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগে ভিকটিম এলে সমস্যা সমাধান করার ব্যবস্থা নেন। ভিকটিমকে প্রয়োজনে কোনো থানায় যোগাযোগ করিয়েও দিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। এ পর্যন্ত পারিবারিক নির্যাতনের শিকার কয়েক ভিকটিমকে উদ্ধার করে তাঁদের ইচ্ছানুযায়ী পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

হটলাইন নম্বরটি আসলেই কাজ করছে কি না, তা যাচাই করতে গত ২৩ জানুয়ারি ফোন করলে একজন নারী কনস্টেবল নাম, পরিচয় ও অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চান। কোন ধরনের ফোন বেশি পাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বললেন, হটলাইন নম্বর তো, অনেক সময় ভুয়া ফোনও আসে, অনেকে ফোন করে কোনো অভিযোগের কথা বলতে পারেন না। অনেকে এ সেবা সম্পর্কে শুধু জানার জন্যই ফোন করেন।

কিউআরটির সদস্যরা ১২ ঘণ্টা করে দলে ভাগ হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। একজন সাব-ইন্সপেক্টর প্রতিটি দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দুজন গাড়িচালকও প্রস্তুত থাকেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. ওয়ালিদ হোসেন টেলিফোনে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় কিউআরটি গঠন করা হয়েছে। কিউআরটি ও হটলাইন নম্বরের প্রচার বাড়ানো জরুরি। -প্রথম আলো

 

শিল্প ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর তাগিদ

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, নারীকে তার কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে চাকরির পাশাপাশি শিল্প উদ্যোক্তা হতে হবে। শিল্প ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে নারী উদ্যোক্তাদের সামনে এগিয়ে আসতে হবে।

শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে কুসুমকলি সু ফ্যাক্টরির উদ্যোগে নতুন পণ্যের মোড়ক উন্মোচন ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান এনডিসি এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মাওলা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুসুমকলি সু ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী নাজমা খাতুন।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন জাতীয় শিল্পনীতি-২০২১ প্রণয়নের কাজ চলছে। নতুন এ শিল্পনীতিতে সরকার নারী শিল্প উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে সর্বাধিক সুযোগ সুবিধা দেয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করছে। বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর ভিড়ে দেশীয় চামড়া শিল্প ব্র্যান্ডগুলো নিজের চেষ্টায় জায়গা করে নিচ্ছে। কুসুমকলি সু ফ্যাক্টরির মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি চামড়া শিল্প উদ্যোক্তা নিজেরদের চেষ্টায় দেশে চামড়া শিল্প উন্নয়নে অবদান রেখে চলছে।’

‘বর্তমান সরকার দেশে শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি লক্ষ্যে উদ্যোক্তা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ, ঋণ প্রদান, প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদানসহ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান কার্যক্রম চলমান রেখেছে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিসিক চেয়ারম্যান বলেন, ‘২০৪১ সালে শিল্পোন্নত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে বিসিক একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করছে। যা বাস্তবায়িত হলে দেশে শিল্প বিল্পব ঘটবে এবং বাংলাদেশ একটি সুখী-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।’

 

বাংলাদেশি গৃহকর্মী হত্যায় সৌদিতে গৃহকর্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড

সৌদি আরবে বাংলাদেশি গৃহকর্মী মোছা. আবিরন বেগম হত্যা মামলার প্রধান আসামি সৌদি গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানিকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন দেশটির আদালত। রিয়াদের অপরাধ আদালত ১৪ ফেব্রুয়ারি এ রায় ঘোষণা করেন। দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রধান আসামি গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার কারণে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন আদালত।

এছাড়া রায়ে আলামত ধ্বংসের অভিযোগ, আবিরন বেগমকে নিজ বাসার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় কাজে পাঠানো ও চিকিৎসার ব্যবস্থা না করার পৃথক অভিযোগে গৃহকর্তা বাসেম সালেমকে মোট ৩ বছর ২ মাস কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল (১১ লাখ ২৭ হাজার টাকা) জরিমানা করেছেন আদালত।

আদালত অপর আসামি সৌদি দম্পতির কিশোর পুত্র ওয়ালিদ বাসেম সালেমকে সুনির্দিষ্টভাবে হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করার প্রমাণ পায়নি বলে জানান। তবে আবিরন বেগমকে বিভিন্নভাবে অসহযোগিতা করায় তাকে সাত মাসের কিশোর সংশোধনাগারে থাকার আদেশ দিয়েছেন।

ইতোপূর্বে আবিরনের মৃত্যুতে আদালত দুঃখ প্রকাশ করেছেন। হত্যার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে সৌদি শরিয়া আইন অনুযায়ী যথাযথভাবে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলেও আদালত উল্লেখ করেন।

২০১৯ সালের ২৪ মার্চ সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের আজিজিয়ায় সৌদি গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনে নিহত হন বাংলাদেশি গৃহকর্মী আবিরন বেগম যা পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ড বলে হাসপাতালের ফরেনসিক রিপোর্টে জানা যায়।

গতকাল রিয়াদের ক্রিমিনাল কোর্টের ৬ নম্বর আদালতে আবিরন বেগমের মামলা পরিচালনার জন্য দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের প্রথম সচিব মো. সফিকুল ইসলাম ও আইন সহায়তাকারী সোহেল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) আবিরন বেগম হত্যা মামালার রায় ঘোষণার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

 

মজাদার ‘চকলেট সন্দেশ’ তৈরি করুন ঘরেই

চলছে ভালোবাসার সপ্তাহ। ভ্যালেন্টাইন ডে পর্যন্ত প্রিয়জনকে নানা উপহার দিয়ে থাকেন সঙ্গীরা। এর মধ্যে চকলেট অন্যতম। যুগ যুগ ধরে উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে চকলেট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

ছোট থেকে বড় যে কাউকেই চকলেট উপহার দেওয়া যায়। অন্যদিকে চকলেট উপহার পেলেও খুশি হয়ে যায় প্রিয়জনরা। চকলেট খেতে কে না ভালবাসে!

বর্তমানে চকলেটের কেক, কুকিজ, আইসক্রিম, ক্যাডবেরি সবই পাওয়া যায়। চকলেট প্রেমীদের জন্য আরও এক মজাদার পদ হলো চকলেট সন্দেশ। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক রেসিপি-

উপকরণ

১. দুধ ১ লিটার
২. লেবুর রস ২ টেবিল চামচ
৩. চিনির পাউডার ৫ টেবিল চামচ
৪. কোকো পাউডার ২ টেবিল চামচ

পদ্ধতি:
প্রথমে দুধ ভালো করে জ্বাল দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর লেবুর রস মিশিয়ে নাড়তে থাকুন। দেখবেন দুধ কেটে ছানা হয়ে এসেছে।

এবার ছানা পরিষ্কার কাপড়ে ঢেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে নাড়ুন। কাপড়ের চারপাশ ধরে চেপে চেপে ছানার পানি ঝরিয়ে নিন। তারপর আধা ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখুন।

তারপর ছানা বের করে হাত দিয়ে মথে নিন। যখন দেখবেন একেবারে নরম হয়ে গেছে ছানা; তখন চিনির গুঁড়ো মিশিয়ে আবারও মাখুন। সবশেষে কোকো পাউডার দিয়ে ভালোভাবে মাখুন।

প্যানে এবার ছানার মিশ্রণটি কম আঁচে ৫ থেকে ৬ মিনিট নাড়ুন। তারপর প্লেটে নিয়ে ছড়িয়ে দিন। হালকা ঠান্ডা হলে অল্প করে হাতে নিয়ে সন্দেশের আকারে গড়ে নিন।

এরপর সন্দেশের উপরে গলানো চকলেট দিয়ে সাজান। তার উপরে চকলেটের গুঁড়ো দিন। এইতো তৈরি হয়ে গেল মজাদার চকলেট সন্দেশ। কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে দিলে সন্দেশের উপরের চকলেট একটু শক্ত হলে বের করে খেতে পারবেন।

কাউকে উপহার দিতে চাইলে সুন্দর চকলেট বক্সে রং-বেরংয়ের ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে নিন সন্দেশগুলো। এরপর চকলেট বক্সটি সুন্দর মোড়কে পেঁচিয়ে প্রিয়জনকে দিন। ছোট ছোট এ চকলেট সন্দেশ দেখতেও যেমন সুন্দর খেতেও অনন্য।

 

নারী ও পুরুষ হোক পরস্পরের সহযোগী

সাজেদা হোমায়রা

ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার হয়ে খুব দ্রুত ডিভোর্স দিয়ে অথবা শারীরিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে মামলা করে সাহসী হয়ে যেতে পারে কয়টা মেয়ে?

কিংবা অনেক আয় করে আত্নবিশ্বাসী হতে পারে কয়টা মেয়ে?

তাহলে যে মেয়েটা পারেনি, সে কী তার এই অসহায় জীবন ডিজার্ভ করে…?

জীবন ধারণের ন্যুনতম সুযোগটা পেতে অথবা হকের প্রয়োজনটা নিতে একজন নারীকে কেন প্রতিবাদী নারী হতে হবে?

বেশিরভাগ মেয়েরাই তো গতানুগতিক ও সাধারণ মানসিকতার পরিবারে জন্ম নেন। বেড়েও ওঠেন খুব সাধারণ চিন্তার মানুষ হিসেবেই। পড়াশোনাও অনেকের কম।

বিয়ের পর থেকেই শুরু হয়ে যায় স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির মানুষের অমানবিক কথা শোনা! খুব কষ্ট পেলেও তার কিছুই করার থাকে না। তাকে সয়ে যেতে হয় অথবা মনে করে নিতে হয় এটাই তার ভাগ্য!

একটা সাবান, একটা শ্যাম্পু কিংবা দুইটা জামার জন্য তাকে চেয়ে থাকতে হয় বাবার বাড়ির দিকে….

অনেক মেয়েই আছে, যারা সারাদিন নিরবিচ্ছিন্ন কাজের পর তাদের অল্প কিছু খাবার জোটে। অথচ আর্থিক দাঁড়িপাল্লায় তার কাজকে মাপা হলে তার মাসে অন্তত ১৫/২০ হাজার টাকা পাওয়া উচিত বা আরো বেশি। অথচ তাকে জরুরি চিকিৎসার খরচ পেতেও হিমশিম খেতে হয়!

একটু ব্যতিক্রম হলেই শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া, না খাইয়ে রাখা, দীর্ঘদিন বাবার বাড়িতে না যেতে দেয়া, মারধর করা… এগুলো অহরহ ঘটছেই!
নির্যাতনের মাত্রা সহ্য করতে না পেরে অনেক নারীই বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার পথ!

এমনভাবে জীবন কাটাতে কাটাতে একদিন মেয়েটা হাসতে ভুলে যায়। দিনের পর দিন অপমান সইতে সইতে সে ভুলে যায় ‘হিউম্যান ডিগনিটি কি?’

আবার যে মেয়েটাকে আয় করে নিজের খরচ চালাতে হয়, সে মেয়েটারই বা কী অবস্থা! তার যে কোনো প্রয়োজনে বা আর্থিক নিরাপত্তার দায়িত্বটা কি তার পার্টনারের উপর বর্তায় না? কেন মেয়েটাকে এতোটা চ্যালেঞ্জ নিতে হবে?

সব মেয়েই সাহসী হবে বা প্রতিবাদী হবে এটা তো কখনোই সম্ভব না!

আমাদের চারপাশে বিশাল সংখ্যক নারী ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার।
নারীর প্রতি অবিচার, মারপিট, মানসিক টর্চার, প্রতিটি কাজে দোষ ধরা ইত্যাদিকে পরিবারের সদস্যরা ছোট করেই দেখে কিংবা কেউ কেউ কেউ দেখেই না! আর আমাদের অন্ধ সমাজ তো একে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই ধরে নেয়। অথচ এটি সামাজিক অবক্ষয়ের একটি ভয়ঙ্কর দিক!

সুশিক্ষা ও সচেতনতার ঘাটতি এসব অপরাধকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। সমাজ ও পরিবার নৈতিক অবস্থানে দৃঢ় থাকলে এমন অপরাধ অনেকাংশেই কমে যেতো।
পরিবারের প্রতিটি সদস্যের নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মনোভাব গড়ে উঠলেই নারী শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকতে পারবে। ভালো থাকতে পারবে পরিবারের প্রতিটি সদস্য।

নারী একজন মমতাময়ী স্ত্রী , একজন স্নেহময়ী মা, একজন সংসারের রক্ষক। নারী ছাড়া সমাজ চলবে না, সংসার চলবে না। তাদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পরিবার ও সমাজের কর্তব্য।

নারী-পুরুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক একটি পরিবারকে মায়ার বন্ধনে বেঁধে রাখতে পারে…
পরিবর্তন শুরু করতে হবে ঘর থেকেই…

নারীর কাজের স্বীকৃতি আজ খুব প্রয়োজন… খুব প্রয়োজন নারীর সুযোগ সুবিধার প্রতি দৃষ্টিদান…
আরো প্রয়োজন নারী পুরুষ উভয়কেই উভয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া….

নারী-পুরুষের পারস্পরিক সহযোগিতায় গড়ে উঠুক একটি মানবিক সুন্দর পৃথিবী!

 

চিকেন ও ডিমের পুরে মজাদার রোল

ক্ষুধা লাগলেই রোল বা স্যান্ডউইচ খেয়ে থাকেন অনেকেই। বলতে গেলে, হালকা খিদের বড় সমাধান হলো রোল। ভেজিটেবল, বিফ কিংবা চিকেনের রোল সবারই পছন্দের।

চিকেন ও ডিমের পুর রুটি বা পাউরুটির মধ্যে দিয়ে পেঁচিয়ে তৈরি করা হয় রোল। এর স্বাদ যেমন; পুষ্টিও অনেক। তবে আপনি যদি একটু স্বাস্থ্যকর রোল খেতে চান, তাহলে বাড়িতে সহজেই তৈরি করে নিতে পারেন।

রোল তৈরি করাও খুব সহজ। তবে কেউ চাইলে পরোটা দিয়েও রোল বানাতে পারেন। ময়দা, ডিম, চিনি, ঘি, লবণ আর সামান্য দুধ একসঙ্গে মেখে নিন।

এরপর ভেজা কাপড় দিয়ে খানিকক্ষণ ঢেকে রাখুন। খুব নরম পরোটা তৈরি হবে। জেনে নিন রোল তৈরির রেসিপি-

উপকরণ
১. টমেটো ২০ গ্রাম
২. পেঁয়াজ ২০ গ্রাম
৩. ডিম ১টি
৪. চিকেন ৫০ গ্রাম
৫. লবণ ১০ গ্রাম
৬. গোলমরিচ ১০ গ্রাম
৭. মাখন ২০ গ্রাম
৮. বড় পাউরুটি ১টি
৯. মেয়োনিজ ৫০ গ্রাম
১০. টমেটো সস ২০ গ্রাম

পদ্ধতি: পাউরুটির এক পিঠে মেয়োনিজ মাখিয়ে নিন ভালো করে। ডিম সেদ্ধ করে চারটি ফালিতে কেটে নিন। চিকেনের টুকরোগুলো গ্রিল করুন।

এরপর টমেটো, পেঁয়াজ কুচি করে নিন। লবণ, মরিচ, গ্রিলড চিকেন, ডিম, টমেটো, পেঁয়াজ, সস মিশিয়ে সালাদের মতো তৈরি করুন।

মেয়োনিজ মাখানো পাউরুটির পিঠে সেটা রোলের মতো সাজিয়ে গোল করে নিন। রোলের বাইরের দিকে গলানো মাখন ব্রাশ করে নিন।

ওভেনে দিয়ে গ্রিল করুন। তৈরি হয়ে গেল আপনার মজাদার রোল। তারপর অর্ধেক করে কেটে নিয়ে পরিবেশন করুন গরম গরম।

 

শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী গণসমাবেশ

রাজধানীর শাহবাগে ‘দুর্নীতি ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে পূর্বঘোষিত ধর্ষণবিরোধী গণসমাবেশ হয়েছে।
শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র, প্রীতিলতা ব্রিগেডসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে নৃত্য ও ধর্ষণবিরোধী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সমাবেশটি শুরু হয়। এর আগে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায়।

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহর সঞ্চালনায় এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসিরুদ্দিন প্রিন্সের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এ আকাশ, সামিনা লুৎফা, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি আল কাদেরী জয়সহ অন্যান্য নেতাকর্মী।

সমাবেশে অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের যে পরিসংখ্যান আমরা দেখতে পাই, সেটার চেয়ে দ্বিগুণ ঘটনা আমাদের দেশে ঘটছে। ধর্ষণবিরোধী এই আন্দোলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক। এই আন্দোলন অন্যান্য আন্দোলনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেললে হবে না। সব রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সংগঠিত করে সারাদেশে এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে। ধর্ষণ ও নারী নিপীড়ন হ্রাস করতে হলে সকল ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণও বাড়াতে হবে। সর্বোপরি নারীদের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে।

নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, এই আন্দোলন সামাজিক আন্দোলন, এই আন্দোলন সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং রাজনৈতিক আন্দোলন। আল জাজিরার প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে যেভাবে সরকার আন্দোলন করছে, সেভাবে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলছে না, আন্দোলন করছে না। ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরকার কথা বলবে না, যা করতে হবে আমাদেরই।

 

মুক্তি পেলেন সৌদির সেই প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মী হাতলুল

তিন বছর পর জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন সৌদি আরবের সেই প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মী লুজাইন আল হাতলুল। বুধবার সৌদি কর্তৃপক্ষ কারাগার থেকে তাক মুক্তি দিয়েছে। তার বোনের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে তুর্কি সংবাদ মাধ্যম ইয়েনি শাফাক।

ওই মানবাধিকার কর্মীর বোন লিনা এক টুইট বার্তায় বলেন, এক হাজার এক দিন পর ছাড়া পেয়ে লুজাইন আল-হাতুলুল বাড়িতে।

হাতলুলকে ছাড়ার বিষয়ে আর বিস্তারিত কিছু জানাননি। হাতলুলকে আটকের পর থেকে আন্তর্জাতিক অনেক সংগঠন সৌদি আরবের এমন কর্মকাণ্ডে নিন্দা জানিয়েছে।

সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়ার পক্ষে আন্দোলনকারীদের মধ্যে অন্যতম লুজাইন আল হাতলুল।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, বেশ কিছু শর্তের অধীনে মুক্তি পেয়েছেন লুজাইন আল হাতলুল। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে কারাগারে তার সঙ্গে আচরণ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না এবং সৌদি আরব ছেড়ে যেতে পারবেন না। শর্ত ভঙ্গ করলে তার কারাদণ্ড পুনর্বহাল করা হতে পারে।

নিজের কারাদণ্ডের প্রতিবাদে আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন হাতলুল। এছাড়া অন্য নারী বন্দিদের সঙ্গে তিনিও বিচারকের কাছে দাবি করেন জিজ্ঞাসাবাদের সময় মুখোশ পরিহিত পুরুষেরা তাদের ওপর নির্যাতন ও যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে। তবে গত মঙ্গলবার একটি আপিল আদালত নির্যাতনের অভিযোগ খারিজ করে দেয় বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

 

ভারতে হিজাব খুলতে বলায় স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর

ভারতে এখন রাষ্ট্রীয় মদদে পদে পদে নিগৃহের স্বীকার হচ্ছেন মুসলিমরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে বর্ণবৈষম্য।

পুদুচেরী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস কমিউনিকেশনে স্নাতকোত্তরে সর্বোচ্চ নম্বরের অধিকারী রাবিহা আব্দুরেহিমকে হিজাব পরায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ।

সমাবর্তনে যোগ দিতে হলে হিজাব খুলে আসতে হবে, এমন শর্ত দেয়ায় তিনি স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান করে শুধু সার্টিফিকেট নিয়েই চলে আসেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির জওহরলাল নেহরু অডিটরিয়ামে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

তার হাত থেকেই সাফল্যের পুরস্কার নিতে গিয়েছিলেন রাবিহা। কিন্তু সেই সময় অনুষ্ঠানে ঢুকতেই দেয়া হয়নি তাকে। কারণ সেই হিজাব।

২০১৮ সালের ব্যাচের ওই ছাত্রী জানান, রাষ্ট্রপতি আসার কিছুক্ষণ আগেই তিনি অডিটরিয়ামে প্রবেশ করতে যান। কিন্তু সেখানেই নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে বাধা দেয়।

তারা তাকে বলেন, হিজাব খুলে না এলে ভেতরে ঢুকতে দেয়া যাবে না। নিরাপত্তারক্ষীদের প্রস্তাবে রাজি হননি রাবিহা। রাষ্ট্রপতি অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তাকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়।

এর পর কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের পদক ও সার্টিফিকেট দিতে শুরু করে। কিন্তু গোটা ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে, সোনার পদক নিতে অস্বীকার করেন রাবিহা। শুধু সার্টিফিকেট নিয়েই বেরিয়ে আসেন তিনি।

ক্ষুব্ধ রাবিহা বলেন, আমার সঙ্গে যে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে- তার প্রতিবাদেই আমি পদক নিতে অস্বীকার করি।

নিরাপত্তারক্ষীরা আমাকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঢুকতে বাধা দেয়। ওরা সন্দেহের চোখে দেখছিল আমাকে। যেন আমি কিছু একটা করার উদ্দেশ্যে ঢুকতে চাইছি। জানি না, ওরা কী ভাবছিল।

এর পরই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রসঙ্গ উঠে আসে তার কথায়। বলেন, পুলিশ যেভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মারধর করছে তার বিরোধিতা করছেন তিনি।

গোটা ভারতের শিক্ষার্থীরা বর্তমান পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদস্বরূপ এই পদক নিতে অস্বীকার করেছেন তিনি।

রাবিহার সঙ্গে এমন আচরণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

 

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে চীনে অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক গ্রেফতার

অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক চেং লেই চীনে কয়েক মাস আটক থাকার পর তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য পাচারের অভিযোগ এনে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর বিবিসির।

আটকের আগে চেং চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল সিজিটিন এর উপস্থাপক ছিলেন। অস্ট্রেলীয় কর্মকর্তারা জানান, গত আগস্টে তাকে আটক করা হয় এবং গত শুক্রবার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যারিস পেইন বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, বিচারে প্রাথমিক মানদণ্ড, প্রক্রিয়ার সততা ও মানবিক আচরণ মেনে চলা হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’ তিনি বলেন, ‘এই কঠিন সময়ে আমরা চেং ও তার পরিবারের পাশে আছি।’

গত আগস্টে চেং হঠাৎ টেলিভিশন থেকে হারিয়ে যান এবং তার বন্ধু ও স্বজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে চীন ঘোষণা দেয় যে তিনি এক অজানা স্থানে ‘আবাসিক নজরদারিতে’ রয়েছেন।

চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী, গত ছয় মাসে অস্ট্রেলীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা চেং এর সাথে ছয়বার দেখা করতে পেরেছেন। কূটনৈতিক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত বিতর্কের জেরে সাম্প্রতিক বছরে অস্ট্রেলিয়া ও চীনের সম্পর্ক অবনতি হয়েছে।

চীনে জন্ম হওয়া আরেক অস্ট্রেলীয় নাগরিক ও লেখক ইয়াং হেংজুন চীনে আটক রয়েছেন। তিনি গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন। অস্ট্রেলিয়া বলেছে, ইয়াং এর বিরুদ্ধে চীনের আচরণ ‘অগ্রহণযোগ্য।’

 

ডিপ্লোম্যাসি অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইদা মুনা তাসনীম

যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম উইমেন্স ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডব্লিওআইসিসিআই) প্রদত্ত ‘উইমেন অব দ্য ডিকেড ইন পাবলিক লাইফ অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসি অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন।

বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল অব উইমেন্স ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিআইবিসি-ডব্লিওআইসিসিআই)-এর উদ্যোগে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘উইমেন অন্ট্রাপ্রেনিওর সামিট-২০২১’র ভার্চুয়াল সমাপনী অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীমকে এ পুরস্কার প্রদান করেন।

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ হাইকমিশন এ তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে এবছর ডব্লিওআইসিসিআই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

পুরস্কার গ্রহণের পর হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তার এ পুরস্কার তিনি বাংলাদেশের তৃণমূলের নারী যারা প্রতিদিন কৃষি, পোশাক শিল্প, মৎস্য খামার, নির্মাণ শিল্প, গৃহকর্মী ও বিদেশে প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন তাদের উৎসর্গ করেন।

হাইকমিশনার প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিগত এক দশকে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীদের অভূতপূর্ব ক্ষমতায়নের মাধ্যমে দেশকে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের ‘গ্লোবাল জেন্ডার গেফ ইনডেস্কের’ শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত করার কথা উল্লেখ করেন।

বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান, নোবেল বিজয়ী ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে ডব্লিওআইসিসিআই এ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন মাল্টার প্রেসিডেন্ট ম্যারি লুই কোলেইরো প্রেসা, কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট লরা সিনসিলা মিরান্ডা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড।

ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক কো-অর্ডিনেটর মিস নিয়া শেফু, ডাব্লিওআইসিসিআই’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. হারবিন ওরোরা এবং বিআইবিসি-ডব্লিওআইসিসিআই’র সভাপতি মিস মানতাসা আহমেদ।

 

লা রিভে ফাল্গুন-ভ্যালেন্টাইনের নতুন কালেকশন

সাসটেইনেবল। মানানসই। উজ্জল কিন্তু রুচিশীল রঙ। স্প্রিং/সামারের ফ্যাশন-অভিধানে প্রকৃতির পাশাপাশি এই শব্দগুলো ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবার। এই প্রেক্ষাপটে দেশি স্টাইল ও আন্তর্জাতিক ট্রেন্ডের মিশেলে ফাল্গুন-ভ্যালেন্টাইনের বাস্তবধর্মী বা সফিস্টিকেটেড ফ্যাশনের বিশেষ একটি কালেকশন নিয়ে এসেছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থনীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড লা রিভ। সেই সঙ্গে পাওয়া যাবে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতি মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন।

লা রিভ এর প্রধান নির্বাহী পরিচালক মন্নুজান নার্গিস বলেন, ‘কোভিড-১৯ আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। পোশাকে ইউটিলিটি ও একাধিক উপলক্ষ্যে পরার উপযোগিতা, উজ্জল কিন্তু চোখে শান্তি দেবে এমন রঙের প্রতি আমাদের আগ্রহ বেড়েছে। তাই এবারের ফাল্গুন-ভ্যালেন্টাইন কালেকশনে বছরজুড়ে পরার মত মানানসই বা সাসটেইনেবল পোশাক তৈরির চেষ্টা করেছি আমরা। লা রিভের পোশাক মানেই আন্তর্জাতিক যা র‍্যাম্পের জনপ্রিয় প্রিন্টগুলোর বৈচিত্রময় উপস্থাপনা। নতুন কালেকশনেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কালার প্যালেটে শ্যাওলা সবুজ, গেরুয়া, হলুদ, ছাই, গোলাপি, কমলা, মেরুন, কালো, এবং নীলের নানারকম শেড ব্যবহার করা হয়েছে। বসন্তের নানারকম উজ্জল ফুল যেমন সূর্যমুখি, টিউলিপ, চেরি, পপির পাশাপাশি ইস্টার্ন বোটানিক, ফ্লোরাল টাইডাই ফর্ম, ফোক ফ্লোরাল এবং সবুজ পাতার বিভিন্ন শেড নিয়ে কাজ করা হয়েছে। বসন্তের প্রকৃতি ছাড়াও অন্যতম আকর্ষন ট্রেন্ডি ইক্কাত প্রিন্ট। ভিসকোস, ফেইলি, মসলিন, কটন, হাফ সিল্ক, এবং নিটের এই পোশাকগুলি ফাল্গুন-ভ্যালেন্টাইন ও একুশের আয়োজন ছাড়াও বছরজুড়ে যেকোন আয়োজনে পরা যাবে।’

এই কালেকশনে নারী, পুরুষ ও শিশু, তিনটি বিভাগেই দারুণ সব নতুন স্টাইল আনা হয়েছে। নারীদের জন্য থাকছে এম্ব্রয়ডারি, ফ্রিল, প্যটার্ন ও লেয়ারে সাজানো সালোয়ার কামিজ, সিঙ্গেল কামিজ, নিট ও উভেন টিউনিক, শার্ট ও টিশার্ট, ম্যাক্সি ড্রেস, গাউন ও শ্রাগ। কটন, হাফসিল্ক ও মসলিন শাড়ির অসাধারণ একটি কালেকশন রাখা হয়েছে এবার। পুরুষের জন্য থাকবে শর্ট ও ফুলহাতা শার্ট, ক্যাজুয়াল ও কমফোর্ট শার্ট, পোলো, টিশার্ট এবং সেমি ও ফিটেড পাঞ্জাবি। এছাড়াও থাকছে যেকোন অনুষ্ঠানে পরার উপযোগি আকর্ষনীয় কাবলি সেট।

লা রিভের নতুন এই কালেকশনে শিশুদের জন্য থাকছে বিশেষ আয়োজন। ছেলেশিশুদের জন্য পাঞ্জাবি, পোলো ও টিশার্ট, ক্যাজুয়াল শার্ট রাখা হয়েছে। মেয়েশিশুদের জন্য এবারের বিশেষ আকর্ষন উৎসবে পরার শাড়ি। ফ্রক, ঘাগরা-চোলি, সালোয়ার কামিজ, টিউনিক ও উভেন সেটের নতুন স্টাইলেও থাকবে ফাল্গুন ও একুশের ছোঁয়া। বাবা-মায়ের সাথে মিলিয়ে পরার জন্য মিনি-মি কালেকশনেও থাকছে নতুন সব স্টাইল।

বটমস কালেকশনে নারীদের প্যান্ট পাজামা, হারেম ও লেগিংস থাকছে। ছেলেদের জন্য ঘরে-বাইরে, পাঞ্জাবি ও শার্টের সাথে পরার মত পাজামা প্যান্টের বর্ণিল একটি কালেকশন নিয়ে আসা হয়েছে। আরামদায়ক কটন টুইল, টেনসেল, রেমি কটনে তৈরি এই পাজামাগুলোর আরাম ও বৈচিত্র ক্রেতাদের মুগ্ধ করবে। শিশুদের জন্য ম্যাচিং পালাজ্জো, পাজামা প্যান্টস, নিটেড, উভেন ও ক্যামোফ্লেজ বারমুডা ও ক্যামোফ্লেজ প্যান্টস সংযোজন করা হয়েছে।

লা রিভ লাইফস্টাইল সেগমেন্টে থাকছে গয়না, ম্যাচিং মাস্ক ও স্যান্ডেল এবং পুরুষের প্রয়োজনীয় ফ্যাশন অনুষঙ্গ।

নতুন কালেকশন পাওয়া যাবে লা রিভের ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, খুলনা, সিলেট দর্শন দেউরি ও নয়া সড়কসহ মোট ১৬টি আউটলেটে। এছাড়া দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে ক্যাশ অন ডেলিভারি সুবিধায় কেনা যাবে www.lerevecraze.com- এই সাইট থেকে। বিস্তারিত জানতে লগইন করুন।