All posts by Oporajita

 

মেয়েই হচ্ছেন কিম জং উনের উত্তরসূরি

মেয়ে কিম জু আয়’কে উত্তর কোরিয়ার পরবর্তী প্রজন্মের শাসক হিসেবে তৈরি করতে চাইছেন কিম জং উন । বর্তমানে তার মেয়ের বয়স  ১০ বছর। বাবার সাথে বেশ কয়েকটি সামরিক কর্মসূচিতে দেখা গেছে তাকে।

এই প্রথম কিমের উত্তরসূরি হিসেবে কিম জু আয়ের নাম সামনে এনেছে  দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি সার্ভিস (এনএইএস)। অবশ্য বিষয়টি এখনো পিয়ংইয়ংয়ের বিবেচনাধীন বলে জানিয়েছে এনআইএস।

 

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের শেষের দিকে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আসেন কিম কন্যা জু আয়ে। প্রথম জনসমক্ষে আসার পর তাকে ‘প্রিয়’ কন্যার পরিবর্তে ‘সম্মানিত’ কন্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। আর ‘সম্মানিত’ বিশেষণটি উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তির জন্য সংরক্ষিত।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, কিম জং উন উত্তরসূরি হিসেবে তার মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করার পরিকল্পনা থেকেই জু আয়েকে জনসাধারণের কাছে আগে থেকেই পরিচিত করেন। কঠোরভাবে পিতৃতান্ত্রিক উত্তর কোরিয়ার জন্য কুসংস্কার কাটিয়ে ওঠার একটি উপায়ও হতে পারে এটি। কারণ দেশটির নেতৃত্ব কখনই কোনো নারীর হাতে আসেনি।

 

নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা

 

আজকাল পত্র- পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে নারী নির্যাতনের চিত্র। ঘরে- বাইরে কোথাও নারী নিরাপদ নয়। সভ্য মানুষের মুখোশের আড়ালে পাশবিকতায় বেশি দৃশ্যমান। অহরহ ঘটে চলেছে যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, গুম, খুন, হত্যার মতো বিভৎস ঘটনা। নারীর নিরাপত্তা যেন অকল্পনীয় কিছু! কিন্তু যেই নারীরা সমাজের স্তম্ভ, প্রকৃতির মতো লালন- পালন করার ক্ষমতা যাদের ওপর প্রদত্ত তারাই নির্যাতন – নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। নারীদের এই হীন দশা আধুনিক যুগে এসেও একই। বলা চলে বর্তমান সময়ে যুগের সঙ্গে নারী নির্যাতনের পথগুলো আরও সহজ হয়েছে পাশবিক মানুষদের কাছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে, ঘরে- বাইরে সর্বত্রই নারী এক গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছে। তবে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা গেলে জাতি মুখ থুবড়ে পড়বে। নারী এবং পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সুস্থ, সুন্দর সমাজ গড়ে ওঠে। তাই নারীর নিরাপত্তা এখন সময়ের দাবি।

হত্যা, ধর্ষণ, গুম, খুন, নির্যাতনের মতো সহিংস অপরাধের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভিকটিম পূর্ব পরিচিত বা এলাকার লোকজনের দ্বারা পাশবিকতার শিকার! কন্যা শিশু, তরুণী বা নারী যদি পূর্ব পরিচিতদের কাছেও নিরাপদ না হয় তাহলে নারীর নিরাপত্তা সত্যিই কোথায়? মানুষের নগ্নরূপ থেকে কিভাবে পরিত্রাণ মিলবে নারীদের?

সাম্প্রতিককালে নারী নিপীড়ন বহুগুণে বেড়েছে। যারা দৈনক পত্র – পত্রিকায় চোখ রাখেন তারা বাড়ির কন্যা সন্তান বা নারী সদস্যকে নিয়ে বলতে গেলে অনেকটাই ভীতির মধ্যে দিনযাপন করেন। সন্তানের চিন্তায় পিতা- মাতার স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে শুধু অল্প বয়সী তরুণীই নয় বর্তমানে শিশু থেকে প্রবীণ সব বয়সী নারীরা সমাজে অনিরাপদ। ভয়াবহ এক অশরীরী সময়ে বসবাস করছি যেন আমরা। কোথা দিয়ে কখন নারী কোন সর্বনাশের মধ্যে পড়ে যাবে সেই ভয় নারীকে সবসময় আচ্ছন্ন রাখছে! এই ভীতি আর কতদিন? নারীর জীবনকে কেন নিরাপদ করা যাচ্ছে না? এর দায় কার?

ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলোতে বেশিরভাগ সময় লক্ষ করা যায়, অভিভাবকের অনুপস্থিতির সুযোগই গ্রহণ করে নিপীড়নকারী। অভিভাবক চাকরিজীবী হলে সেক্ষেত্রে সন্তানকে পরিচিত কারো কাছে রেখে যাচ্ছেন। এবং পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে এই সন্তান ঠিক শতভাগ নিরাপদ নয় তাদের কাছেও! কখনও কখনও তাদের দ্বারাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কন্যা শিশু। তাহলে সত্যিকার অর্থে কন্যা শিশুর নিরাপত্তা কে দেবে? এক্ষেত্রে শুধু শিশুই নয় নারীরাই অনিরাপদ থাকছে ক্ষেত্রবিশেষে! নারীকে নিরাপদ করতে হলে সমাজকে মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে।

ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটার পিছনে অন্যতম কারণ প্রতারণামূলক উপায়ে প্রলুব্ধ বা জোরপূর্বক অপহরণ করে ধর্ষণ চেষ্টা। রাস্তা-ঘাটে নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে অহরহ। ভুল বুঝিয়ে বা কোন সমস্যা সৃষ্টি করে নারীকে বোকা বানিয়ে তার সর্বস্ব লুট করে নেওয়ার পাশাপাশি নারী জোর পূর্বক ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ধর্ষণের আরও একটি কারণ হিসেবে দেখা যায়, ভিকটিমের একাকী অবস্থান। কুচক্রী মহল নারীর একা থাকাকে কেন্দ্র করে সুযোগ গ্রহণ করে। কিন্তু নারীর নিরাপত্তার চাদর হয়ে কে বা কারা সবসময় সঙ্গে থাকবে? তাহলে কী এ সমাজে নারী একা চলাচল করতে পারবে না?

বর্তমান সময়ে নারীর ধর্ষণের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে প্রেমের নামে প্রতারণা। ছল-চাতুরি করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে একসময় শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাধ্য করা হচ্ছে । আর এই সুযোগে নারীকে বশে এনে নারীর সম্ভ্রম নিয়ে মেতে উঠছে কুচক্রী মহল। অনেক সময় নারীরা সরলতা, বিশ্বাসের জেরেও ফাঁদে পা দিচ্ছে। শিশুদের ধর্ষণের ক্ষেত্রে পাষণ্ডরা ব্যবহার করে চলেছে শিশুর অবুঝ মনকে। খাবার, খেলানা সামগ্রীর প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কব্জা করে শারীরিক নিপীড়ন করা হচ্ছে। শিশু ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বেশি কাছের মানুষ বা পূর্ব পরিচিত কারো দ্বারা। এক্ষেত্রে ধর্ষক শিশুর সারল্যকে পুঁজি করে এই নোংরা খেলায় মেতে উঠছে। কারণ শিশুরা অভিযোগ করতে পারে না। বা বোঝেই না তাদের সঙ্গে কত নোংরা পাশবিকতা ঘটে গেছে! ফলে কুরুচিপূর্ণ মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তি শিশুদের সারল্য, অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করছে! এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সর্বোচ্চ সচেতনতা জরুরি। সন্তানকে কার কাছে রাখছেন, কতটা ভরসা করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে।

বিয়ের আশ্বাস গ্রহণের মাধ্যমেও নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে! প্রেম এবং বিয়ের আশ্বাসে নারীর বিশ্বাসের সুযোগে তাকে ধর্ষণের শিকার করে তুলছে একশ্রেণির মানুষ। বর্তমান সময়ে এই ঘটনা খুব একটা বিরল নয় যে, বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন। নারীরা তাদের অসহায়ত্বকে সুযোগে পরিণত করে দেয় নিপীড়নকারীর। আবার অনেক সময় ধারালো অস্ত্র বা বন্দুকের মুখে রেখেও নারীর প্রতি পাশবিক অত্যাচার চালাচ্ছে! নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীদের তোপের মুখে ফেলতে মানসিকভাবে বিকৃত রুচিসম্পন্ন মানুষ নামের পশুরা
অভিনব ফন্দি, কৌশল ব্যবহার করে চলেছে।

ইন্টারনেটের যুগে সবার হাতেই প্রায় স্মার্টফোন। আর এই ফোনের মাধ্যমেই একে অপরের সঙ্গে আলাপ- পরিচয় ঘটছে। কিন্তু ভালোমতো চেনা- পরিচয় না ঘটলেও নারীরা অনেক সময় ব্যক্তিগত ছবি, গোপন ভিডিও আদান-প্রদানের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে। সম্পর্কের অবনতি, দ্বন্দ্ব, টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ধান্দায় ব্লাকমেইলিং করে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলাও খুব সাধারণ ঘটনা বর্তমানে। তাই সমাজে ঘটে চলা এসব সমস্যা থেকে নারীদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সচেতন হতে হবে পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে।

নারীরা নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলতে গিয়েও অনেক সময় ফাঁদে পা দিয়ে ফেলছেন। বিভিন্ন ধরনের চাকরির প্রলোভন, অভিনেত্রী হওয়া, পরীক্ষায় ভালো ফলের আশায় শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে নারীর অসতর্কতা, সারল্য, ভয়, সম্মানহানি, প্রলোভন সবই দায়ী। অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে নারীকে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন সমাজে ঘটেই চলেছে। নারীকে সচেতন হতে হবে। কর্মক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হলে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।

সবচেয়ে ভীতিপ্রদ অবস্থা গণপরিবহনে চলাচল। বর্তমানে নারীরা ঘরে- বাইরে সমানভাবে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করছে। আর এই সুযোগে এক শ্রেণির বখাটে, লম্পট, মদ্যপ, বিকৃত রুচিসম্পন্ন মানুষ নারীদের ভোগ্য পণ্য মনে করে চলেছে। এবং গণপরিবহন, রাস্তা-ঘাটে ইভটিজিং, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ করছে। চলন্ত বাসে নারী সংঘবদ্ধ ধর্ষণ জাতির নির্লজ্জ চিত্র আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। মানুষের রুচি কতটা নিচে নেমে গেলে নারীর সঙ্গে এরূপ বিভৎস আচরণ করে মানুষরূপী পশু। কাজের সূত্রে ঘরে ফিরতে দেরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু একলা নারীর পথ চলা সমাজে নিরাপদ নয় আজও। গণপরিবহনে অন্য নারী যাত্রী না থাকলে ভয়ে ভয়ে নারীকে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। এই পরিস্থিতির পরিত্রাণ কবে ঘটবে?

এর বাইরে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ বা ক্ষোভ থেকে অপরাধীর প্রতিশোধপরায়ণতা তো আছেই। পারিবারিক দ্বন্দ্ব সংঘাত, জমিজামা সংক্রান্ত সমস্যা, প্রেম, দাম্পত্য সংকট প্রভৃতি কারণেও নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে। মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা, বিকৃত চিন্তা-ভাবনা, জৈবিক চাহিদা, ক্ষমতা প্রদর্শন, রাজনৈতিক কারণ, পরকীয়া, পূর্ব শত্রুতা, মাদকাসক্তি, অপরিচিত স্থানে ভ্রমণ প্রভৃতি বহুকারণে নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে। কোন কারণকেই ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। নারীদের প্রতি অসম্মান – অশ্রদ্ধা, অবহেলিত বস্তু সদৃশ ভাবনা যতদিন সমাজে বিরাজ করবে ততদিন নারী এ সমাজে নিরাপদ নয়। নারীদের অবরুদ্ধ দেখতেই যেন এ জাতি অভ্যস্ত ফলে পুরুষতান্ত্রিক কদর্য মানসিকতা নারীদের জন্য ফাঁদ পেতে রেখেছে। নারীর জন্য স্বাভাবিকভাবে সুস্থ পরিবেশ অকল্পনীয়।

নারীরা শুধু কুরুচিপূর্ণ মানসিকতার মানুষ দ্বারা ধর্ষণের শিকারই হচ্ছে না। রাষ্ট্র কর্তৃক নারীর জন্য গড়ে তোলা হয়েছে প্রহসন! কোন নারী ধর্ষণের শিকার হলে বিচারের আশায় যাওয়া নারীকেই সন্দেহ করা হয়। একজন ভুক্তভোগী নারী যখন অভিযোগ তোলেন তখন উল্টো তাকেই জেরার মুখে পড়তে হয়। যা ধর্ষণকে আরও একবার জীবিত করে তোলে! ফলে ধর্ষিত নারী একবার নয় এ সমাজ, রাষ্ট্র কর্তৃক বারবার ধর্ষণের শিকার হয়! আইনের এই হীন চিত্রের মুক্ষাপেক্ষী নারীরা তাই সঠিক বিচারের আশা না করে অনেক সময় নিজের ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেন। আত্মহত্যা করেন। এর দায় কী সমাজ, রাষ্ট্রের নয়?

আইনের আশ্রয়প্রার্থী নারীকে ডিএনএ টেস্টে জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ করলে একরকম সন্দেহের তীর তার দিকে থাকে তেমনই কালক্ষেপণ করলেও নারীকে জটিলতায় পড়তে হয়। তদন্ত প্রক্রিয়ার নামে নারীকে অস্বস্তি, বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। বিচারের নামে চলে প্রহসন! এমনকি এ সমাজ নারীর চরিত্র নিয়েই প্রশ্ন তোলে। ভুক্তভোগী নারী বিচারের আশায় আইনের আশ্রয় নিলে ঘরে- বাইরে তাকে নির্যাতিত হতে হয়। পরিবারের সম্মান, সমাজের কদর্য কথা নারীকে হজম করতে হয়। ঘরের বাইরে না বেরুলেই নারীরা পারেন, রাত- বিরাত এত বাইরে থাকা কিসের, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে এত মেলামেশা কিসের, গণপরিবহনেই বা নারী কেন যাতায়াত করবে প্রভৃতি অসংখ্য মন্তব্য নারীকে রক্তাক্ত করা হয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর জন্য যে শেকল তৈরি করেছে সেই শেকলে নারী কেন বন্দি নয়! নারীর প্রতি হওয়া অন্যায়- অবিচার রুখে দিতে এখনই তৎপর ভূমিকা পালন করতে হবে। নারী ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার হলে তার দায় নারীর নয় বরং যারা নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি আজও তাদের ওপর বর্তায়।

নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তদন্তের নামে দীর্ঘসূত্রিতা বন্ধ করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া সঠিক বিচারের পথে ভুক্তভোগীর ধৈর্য্যচুত্যি ঘটায়। ফলে নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনতে আইনের শ্লথগতি আগে পরিহার করতে হবে। বর্তমান সময়টা স্মার্টফোনের যুগ, ইন্টারনেটের যুগ। ফলে নারীদের উচিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত কোন ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে না তোলা। ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও আদান-প্রদান থেকে বিরত থাকা। আস্থা, বিশ্বাসের সুযোগে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে না পড়া।

ধর্ষণের জন্য বিশেষভাবে দায়ী পর্ণগ্রাফির সহজলভ্যতা। উঠতি বয়সী ছেলে- মেয়েরা পর্ণগ্রাফির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নিজেদের জীবনেও এ ধরনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে গিয়ে ডেকে আনছে সর্বনাশ। ভালো- মন্দ বোঝার আগেই জীবনে অঘটন ঘটিয়ে ফেলছে। অবাধ মেলামেশার সুযোগেও ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলো ঘটছে৷ তাই সরকারের উচিত পর্ণগ্রাফির ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা। পারিবারিকভাবে সন্তানকে ভালো- মন্দের শিক্ষা দিতে হবে। নারী- পুরুষ লিঙ্গভেদে আলাদা হলেও কেউ কারো অশ্রদ্ধার নয়। পরিবার থেকে সন্তানদের মধ্যে মূল্যবোধ, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে গুড টাচ, ব্যাড ট্যাচের শিক্ষা দিতে হবে।

একা সরকারের পক্ষ সমাজ থেকে ধর্ষণকে প্রতিহত করা সম্ভব নয়। এরজন্য কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি প্রত্যেক জনগণকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে নারীদের নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অপরিচিত, অর্ধপরিচিত এমনকি পরিচিত কোন ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে যাওয়ার আগে মানসিকতাকে আগে বুঝতে হবে। পারতপক্ষে ব্যক্তিগত তথ্য আদান-প্রদানে সতর্ক হতে হবে। কতটুকু পর্যন্ত জীবনের জন্য পরবর্তী সময়ে সমস্যার সৃষ্টি করবে না সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। সামজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

ধর্ষণকে রুখে দিতে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে সভা, সেমিনার করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। জনসচেতনতামূলক ভিডিও ক্লিপ, পথ নাটক, লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সমাজে সবাইকে এর কদর্য দিক সম্পর্কে বোঝাতে হবে। সচেতন করতে হবে জীবনের নিরাপত্তা, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে।

সুস্থ ধারার বিনোদন, সংস্কৃতি চর্চা, সন্তানের বই পড়ার অভ্যেস গড়ে তুলতে হবে। একটি ভালো বই, সুস্থ সংস্কৃতি মানুষের বোধকে জাগ্রত করতে সহয়তা করে ফলে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তা বিধান অভিভাবকমণ্ডলীর অবশ্যই তার মানস গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। অবসর সময়ে খেলাধুলা, ব্যায়াম, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে হবে।

বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হওয়া বেশ জরুরি। অনেক সময় দেখা যায় বাজে বন্ধুদের পাল্লায় পড়েও সন্তান বিপথে যায়। ধর্ষণের মতো জঘন্য নৃশংস কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। মাদকাসক্তি, ধূমপান, অসৎসঙ্গ থেকে পরিত্রাণ করতে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সরকারের একার পক্ষে যেমন নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় তেমনই নারীর সচেতনতায় শুধু তাকে নিরাপদ করার জন্য যথেষ্ট নয়। সমাজের সবার একযোগে এ লক্ষে কাজ করতে হবে। পশু বৃত্তির পরিত্রাণ ঘটাতে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে নারীদের। নারী সমাজের বাইরের কেউ নয়। একজন পূর্ণ মানুষ ফলে নারীর প্রতি কৌতুহল বন্ধ করতে হবে। ছেলে- মেয়েদের কো এ্যাডুকেশন তাদের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে সহয়তা করবে। ফলে মেয়ে- ছেলে লিঙ্গ বৈষম্য করে একে অপরের প্রতি প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব গড়ে না তোলা। পরিবার, সমাজ গঠনে নারীর যেমন অংশগ্রহণ জরুরি পুরুষেরও সমান অংশগ্রহণ জরুরি। কেউ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। সহোযোগী।

নারীরা যুগের পর যুগ ধরে সমাজে নিপীড়নের শিকার। নারীকে সুস্থ পরিবেশ দিতে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান খুবই জরুরি। নারী-পুরুষের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ অনেকাংশেই নিপীড়নের হাত থেকে নারীকে রক্ষা করতে সক্ষম। নারীকে দূরদর্শী হতে হবে। হঠাৎ আবেগে গা ভাসিয়ে না দিয়ে নিজের সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। গড়ে উঠুক বৈষম্যহীন, নিরাপদ, সুস্থ, স্বাভাবিক, কল্যাণময় পৃথিবী। যেখানে নারী মুক্ত বিহঙ্গের মতো বিচরণ করতে পারবে।

 

শীতে রান্নাঘরের কাজ সহজ করার কয়েকটি টিপস

 

শীতের সময়টা খুব অলস লাগে কাজ করতে সবারই। এই সময়টায় আমার মতো আপনারও রান্নাঘরের কাজ করা কঠিন মনে হতে পারে। বিশেষ করে ঠান্ডা জলে হাত দিয়ে কাজ, রান্না, ঘন্টার পর ঘন্টা রান্নাঘরে থাকা, বাসনপত্র ধোয়া, পরিষ্কার করা সহজ নয়। মাঝে মাঝে মনে হয় সারাদিন কম্বল মুড়ি দিয়ে দিনটা কেটে যাক। কিন্
কাজ তো করতেই হবে, কিন্তু যদি শীতকালে যদি দ্রুত রান্নাবান্নার কাজ সেরে ফেলা যায় তাহলে মন্দ হয় না। চলুন আজ আপনাদের সাথে শীতকালে রান্নাঘরের কাজ সহজ করার টিপস শেয়ার করে নেওয়া যাক। এই ছোট্ট হ্যাকগুলো আমাদের কাজকে অনেক সহজ করে দিতে পারে এবং এগুলোর সাহায্যে আমরা শীতে আমাদের সময় বাঁচাতে পারি।

১. ঠাণ্ডা জলের হাত থেকে বাঁচাঃ
শীতের সকালে সবচেয়ে আলস্য লাগে বাসনপত্র ধুতে। ঠাণ্ডা জলে হাত দেওয়ার ভয়ে সকালে আমার মত যাদের কান্না পায়, তারা এই সহজ উপায় অবলম্বন করে দেখতে পারেন। সকালে উঠে চা ও জলখাবারের জন্য যেটুকু বাসন ধুতে লাগবে তা জল একটু গরম করে ধুয়ে নিন। বাকি বাসন একটু বেলার দিকে পরিষ্কার করুন। ততক্ষণে রোদের জন্য পাইপের জল যথেষ্ট গরম হয়ে যায়। যাতে হাত দিতে কোন অসুবিধা হয় না।

২. আলু সেদ্ধ হতে অর্ধেক সময় লাগবেঃ
আলু সেদ্ধ করার আগে কাঁটা চামচের সাহায্যে কিছু গর্ত করে নিন। এই পদক্ষেপটি আপনার কাছে ছোট মনে হতে পারে, তবে এই একটি পদক্ষেপটি আলু সেদ্ধ করার সময়কে অর্ধেক করে দেবে। আলুতে দুপাশ থেকে গর্ত করে নিন, এতে আলু ভিতর থেকে ভালোভাবে সেদ্ধ হবে এবং রান্নার গ্যাসের সাথে সাথে আলু সেদ্ধ করার সময়ও বাঁচবে।

৩. রসুন এবং পেঁয়াজ পিলিং ট্রিকঃ
শীতকালে রসুন-পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোও বড় কাজের থেকে কম মনে হয় না। শীতকালে, হাত এমনিতেই ঠান্ডা থাকে এবং একে একে খোসা ছাড়ানো একটি ঝামেলার কাজ বলে মনে হয়। এই পরিস্থিতিতে, আপনি একটি ছোট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। গরম জলে রসুন এবং পেঁয়াজ ৩-৪ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এর দুটি সুবিধা হবে, প্রথমত, এটি খুব সহজে খোসা ছাড়বে এবং দ্বিতীয়ত, এটি একটু নরম হয়ে থাকবে এবং এর কারণে রান্নার সময় অনেকটাই কমে যাবে।

৪. আগাম সবজি মসলা তৈরি করুনঃ
আপনি সহজেই সবজি মসলা আগে থেকে প্রস্তুত করতে পারেন, যা প্রতিদিন সবজি মসলা ভাজার জন্য সময় বাঁচাবে। আপনার যখনই সময় থাকবে তখনই এটি তৈরি করুন এবং তারপরে ১০-১৫ দিনের জন্য প্রতিদিন এটি ব্যবহার করুন।

৪-৫টি টমেটো
৪টি পেঁয়াজ
৩-৪টি কাঁচা লঙ্কা
১০-১২টি রসুনের কোয়া
১/২ ইঞ্চি আদা টুকরো (আপনার স্বাদ অনুযায়ী বাড়াতে পারেন)
বড় লাল লঙ্কা (ঐচ্ছিক)
এই সব জিনিস ভাল করে পিষে নিন প্রথমে। তারপর এতে তেল যোগ করুন। একটি প্যানে ২০-২৫ মিনিটের জন্য ভাজুন। এই মুহুর্তে আপনার মনে হতে পারে যে ২০-২৫ মিনিট অনেক, কিন্তু ১০-১২ দিনের রান্নার সময় বিবেচনা করলে তা খুব কম। মনে রাখবেন তেল বেশি লাগে কারণ অনেক দিন চালাতে হয়। ঠাণ্ডা হলে তা বয়ামে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। প্রতিদিন রান্নার আগে বের করে এর থেকে ব্যবহার করুন।

৫. দুধ ফুটাতে ব্যবহৃত পাত্র নোংরা হবে নাঃ
শীতকালে দেখা যায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হল থালা-বাসন ধোয়ার ক্ষেত্রে অলসতা। এমন অবস্থায় যদি পাত্রে ময়লা বেশি থাকে তাহলে দেখতে খুব খারাপ লাগবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুধের পাত্রের নীচে দুধের ক্রিমের মতো কিছু জমে থাকে। এটি ঘষা নিজেই একটি বড় কাজ এবং অনেক সময় এটি পরিষ্কার করা একটি ঝামেলা হয়ে দাঁড়ায়।এটি যাতে জমে না যায় সেজন্য, প্রথমে দুধের পাত্রে কিছু জল রেখে তার উপর দুধ ঢেলেফোটান। এইটুকুই আপনাকে করতে হবে আর কিছুই নয়। এতে করে দুধ গরম করার পাত্র বেশি নোংরা হবে না।

অনেক সময় এমন হয় যে দুধ গ্যাসে রাখতে ভুলে গেলে তা ফুটে যায় এবং নিচে পড়ে যায়। এটি একটি খুব ঝামেলার কাজ এবং এটি পরিষ্কার করাও খুব কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে, শুধুমাত্র একটি ছোট কৌশল দিয়ে এটি বন্ধ করা যেতে পারে যাতে আপনাকে শীতে অতিরিক্ত কাজ করতে না হয়। দুধের পাত্রের উপরে একটি হাতা রাখুন। কাঠের হাতা রাখতে পারেন বা স্টিলের। এটি আপনার দুধকে উথলে পড়ে যাওয়ার থেকে আটকাবে।

৬. কুকারে ডাল এভাবে রান্না করুনঃ
শীতকালে কুকার পরিষ্কার করা একটি কঠিন কাজ বলে মনে হতে পারে। মসুর ডাল কুকারের ঢাকনায় লেগে থাকলে আরও কঠিন হবে। এমন পরিস্থিতিতে ডাল সিদ্ধ করার সময় দুই থেকে তিন ফোঁটা উদ্ভিজ্জ তেল যোগ করাই সবচেয়ে ভালো উপায়। এতে করে আপনার ডাল কুকারের ঢাকনা থেকে বের হবে না। এই পদ্ধতিটিও সহজ এবং সাথে সাথে আপনার কাজ হয়ে যাবে।

৭. দ্রুত ৫ মিনিটের ব্রেকফাস্ট রেসিপিঃ
শীতকালে সকালের নাস্তা করা খুব কঠিন। তাহলে কেন নাস্তা তৈরিতে ডিম পোচ ব্যবহার করবেন না। আপনি নিশ্চয়ই হাফ ফ্রাই ডিম বা অমলেট বানিয়েছেন অনেকবার, কিন্তু আপনি যদি মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে নিখুঁত স্টিমড ডিম চান তবে এই রেসিপিটি আপনার জন্য খুব কার্যকর হবে।

একটি মাইক্রোওয়েভ সেফ কাপ বা মাফিন ট্রেতে ১ চা চামচ জল ঢেলে তার উপর একটি ডিম ফাটিয়ে দিন। আপনি চাইলে এর উপরে লবণ ও গোলমরিচ যোগ করতে পারেন অথবা রান্নার পর যোগ করতে পারেন। এবার মাইক্রোওয়েভে ৫ মিনিট বেক করুন। মনে রাখবেন মাইক্রোওয়েভ প্রিহিটেড রাখুন এবং এর তাপমাত্রাও যেন বেশি থাকে।

৮. একবারে দুবেলার রান্না করে রাখুনঃ
শীতের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল খাবার নস্ত হয় না। আর এক দু দিনের জন্য বেশি রান্না করলে তা ফ্রিজেও রাখতে হয় না। তাই রোজ সকালে এবেলা আর ওবেলার রান্না সেরে নিন। এতে করে সময় বাঁচবে আর ঠাণ্ডায় দুবার জল ঘাটার চান্স থাকবে না বেশি। ভাত বা রুটি বাদে বাকি রান্না একবারে করে রেখে দিন। চাইলে ভাত রুটি করে রাখতে পারেন। খাওয়ার আগে সব গরম করে নিলেই ঝামেলা শেষ।

 

শীতে সুস্থ থাকতে সাজিয়ে নিন সারাদিনের ব্যস্ত রুটিন

 

প্রতিদিনের কাজের মাঝে শরীরের প্রয়োজন পর্যাপ্ত যত্ন ও মানসিক প্রশান্তি। তাই আপনার সারাদিনের ব্যস্ত রুটিনকে সাজিয়ে নিন সাস্থ্যকর কিছু ধাপে। আসুন জেনে নেই দৈনন্দিন কাজের মাঝেও এই শীতে যেভাবে নিজের যত্ন নিবেন।

শীতের ভোরে সহজে কেউ ব্যায়াম করতে চায় না বা হাঁটাহাঁটি করতে চায় না। ফলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। তাই খাবার গ্রহণের সময় ব্যালেন্স করে খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন আগের দিন উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেলে পরেরদিন কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খান। আবার অনেকেই যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা এই সময় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম খেলে, নানান ধরনের সবজি খেয়ে খাবার গ্রহণের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন।

শীতের মিষ্টি রোদ আপনাকে ভিটামিন ডি’র যোগান দেবে, তাই শীতকালে অন্তত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট অবশ্যই নিজের শরীরে রোদ লাগান। এতে আপনার শরীরের ব্যথা দূর হবে।

শীতকালে জলবায়ু রুক্ষ ও শুষ্ক হওয়ায় আমাদের ত্বক ফাটতে থাকে। তাই ত্বক ভালো রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে হতে পারে ডিহাইড্রেশন, বলিরেখা, এবং মুখে দাগের মতো নানা ধরণের সমস্যা। যার ফলে ক্লান্তি বাড়ে এবং যে কাউকে বয়স্ক দেখাতে পারে। কনকনে শীতে শরীর চাঙা রাখতে অত্যন্ত উপকারী ও উপাদেয় একটি খাবার হলো স্যুপ। বিভিন্ন ধরনের সবজি ও মাংস দিয়ে তৈরি স্যুপ শরীরের পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করবে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় নরম পাতলা খিচুড়ি, লেবু চা, আদা চা, গরম দুধ ইত্যাদি খাবার খেলে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকেও নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন এবং দূর হবে পানির ঘাটতি।

প্রতিদিন আমরা কী খাচ্ছি তার উপরই নির্ভর করে আমাদের ভালো থাকা ও সুস্বাস্থ্য। খাবারের উপরেই নির্ভর করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। নিজেকে ফিট রাখতে শীতে খাদ্যতালিকায় কিছু কিছু খাবার অপরিহার্য। শীতে সতেজ থাকতে খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন কমলা, গাজর, ডিম, আদা, কাঠবাদাম, মাশরুম, রসুন, মধু, সবুজ পাতার সবজী গ্রিন টি, সাইট্রাস ফল, মিষ্টি আলু ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার।

 

নারীদের গৃহস্থালী কাজের বার্ষিক মূল্য ৫৩০ কোটি টাকা

 

বাংলাদেশের নারীরা নিজ বাড়িতে যেসব কাজ করে থাকে তার বার্ষিক মূল্য ৫৩০ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের ১৪.৮ শতাংশ। ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ‘নারীর অবৈতনিক ও অ-বিপণন কাজ’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। মূলত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরোর ‘টাইম ইউজ সার্ভের’ প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রতিবেদনটি করা হয়।

গবেষণা সম্মেলনে বলা হয়, করোনার কারণে নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়ে ২.৮ মিলিয়ন বা ২৮ লাখ মানুষ। ২০২২ সালের হিসাবে দারিদ্র্য বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে করোনা। একই বছর মন্দার কারণে বাড়তি ৫০ হাজার মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমেছে। আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কাও করেন গবেষকরা।

এমন যেকোনো নিষেধাজ্ঞা দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এদিন ছয়টি অধিবেশনে প্রায় ৯টি পেপার ও দুটি পাবলিক লেকচার অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিনব্যাপী বিভিন্ন অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান।
বিনায়ক সেন বলেন, শ্রীলঙ্কার নারীদের অবৈতনিক গৃহকর্মের বার্ষিক মূল্য তাদের জিডিপির ১৫ শতাংশ আর ২০১৯ সালের হিসাবে ভারতে তা ১৪ শতাংশ।
বিআইডিএসের এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গৃহস্থালির কাজের বিনিময়ে ৭৫ শতাংশ পারিশ্রমিক ধরা হলেও জিডিপিতে আরো ১৩ শতাংশ অবদান যুক্ত হতে পারে, যেখানে নারীদের অবদান থাকছে ১১ শতাংশ ও পুরুষের অবদান ২ শতাংশ। এমনকি ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিক দিলেও জিডিপিতে আরো ৮.৮ শতাংশ অবদান বাড়ত।

 

বেগম রোকেয়া দিবস আজ

আজ ৯ ডিসেম্বর, বেগম রোকেয়া দিবস। নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অধিকার ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বেগম রোকেয়ার অবদান ও নারী জাগরণের অগ্রযাত্রায় অন্তহীন প্রেরণার উৎস হিসেবে প্রতিবছর এই দিবসটি পালন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আজ বেগম রোকেয়া দিবস ও বেগম রোকেয়া পদক ২০২৩ প্রদান উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। নারী জাগরণে উদ্বুদ্ধকরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও গৌরাবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখায় এ বছর পাঁচজন বিশিষ্ট নারীকে বেগম রোকেয়া পদক দেওয়া হচ্ছে।

পদকপ্রাপ্ত পাঁচজন বিশিষ্ট নারী ও তাদের অবদানের ক্ষেত্রগুলো হলো—নারী শিক্ষায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য খালেদা একরাম, মরণোত্তর (ঢাকা জেলা), নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ডা. হালিদা হানুম আখতার (রংপুর জেলা), নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কামরুন্নেছা আশরাফ দিনা, মরণোত্তর (নেত্রকোনা জেলা), নারী জাগরণে উদ্বুদ্ধকরণে নিশাত মজুমদার (লক্ষীপুর জেলা) এবং পল্লী উন্নয়নে রনিতা বালা (ঠাকুরগাঁও জেলা)।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পদক প্রদান করবেন।

বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম এই উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও নিবন্ধ প্রকাশ করবে। নারী শিক্ষা, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার লাগানো ও লিফলেট বিতরণ করা হবে।

 

অক্টোপাশের থাবা: সুমাইয়্যা সিদ্দিকা

 

১.
চোখ খুলতেই গাঢ় অন্ধকারে ডুবে গেল নাসর। ধোঁয়ার গন্ধে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তার। তবুও উঠে বসার চেষ্টা করলো সে। মাথাটা মনে হচ্ছে কয়েক টন ওজনের। চুপচাপ পড়ে রইলো খানিকক্ষণ। বেশ খানিকটা সময় কেটে গেল। কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করলো সে। হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো।

: শিহাদাহ… হান্না… শামআহ… কিন্তু কন্ঠনালী থেকে ঘরঘরে আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই বের হলো না ওর। অন্ধকারেরই বাচ্চাদের মতো চারপায়ে হামাগুড়ি দিয়ে খানিকটা এগোলে সে।

হঠাৎ পায়ে কি যেন ঠেকলো। অনুমানে হাত বাড়িয়ে দিতেই ছোট্ট একটা শরীরে হাতে ঠেকলো ওর। ঘোরগ্রস্ত লোকের মতো সামনে এগোলো। তারপর উন্মত্তের মতো বুকে চেপে ধরলো শরীরটাকে। কাঁধ ছড়ানো এক রাশ চুলে ভরা মাথাটা কেমন আঠালো পানীয়তে ভরে রয়েছে অনুভব হতেই চোখ বেয়ে এক সমুদ্র যন্ত্রণা ঝরে পড়তে লাগলো নাসরের । মেয়ের খানিক দূরেই নাজের নিথর দেহ।

: হানা.. আমার ছোট্ট পাখি! অন্ধকারেই মেয়েকে বুকে চেপে টলতে টলতে এলোমেলো পদজোড়া নিয়ে এগোতে লাগলো।

: আহ.. হঠাৎ দেয়ালের ভাঙা ইটের টুকরোতে ধাক্কা খেলো সে। কোনমতে পতন ঠেকাতে ঠেকাতে রুমের বাইরে এলো সে। অন্ধকারেই অন্য রুমে এসে পৌঁছালো সে। পা বাড়াতেই কঁকিয়ে উঠলো কেউ।

:শিহাদাহ… ছোট ছেলের কন্ঠ চিনতে মূহুর্তও লাগলো না তার।

মেয়েকে পাশে নামিয়ে ছেলেকে উঠাতে এগিয়ে গেল। শিহাদাহর গায়ের উপর উপুড় হয়ে পড়ে আছে কে যেন! মাথার পাগড়িতে হাত লাগতেই বড় ছেলেকে চিনতে এতটুকুও ভুল হলো না নাসরের। তার হাফেজ ছেলেটা! ছোট ভাইকে বাঁচাতে নিশ্চয়ই নিজেকে ঢাল বানিয়েছিল সে। কষ্টে কাঁদতেও ভুলে গেল সে। বড় ছেলের গায়ের নিচে চাপা পড়া শিহাদাহকে বের করলো। পড়নের জোব্বাটা সম্পূর্ণ ভেজা। ওকে তুলতেই চিৎকার করে উঠলো।
ছেলের অমন চিৎকারে আতংকিত হলো সে। মনে হলো কোথাও ভেঙে গিয়েছে হয়তো বা।

: আব্বু….. কান্নার গমকে হারিয়ে গেল বাকি কথাগুলো।

২.
অক্টোবরের সন্ধ্যা। শীত আসি আসি করছে। শীতকাল বড্ড পছন্দ এখানকার বাসিন্দাদের। তবে এবারের সময়টা একেবারে অন্যরকম।

:আবু হানা! বাচ্চাদের নিয়ে খেতে আসুন। ভর সন্ধ্যাতেই টেবিল সাজিয়ে ফেলেছে নাজওয়া।

গরম গরম মাকলৌবা, দই, সালাদ, মাফতুউল, আখরোট, খুরমা। টেবিলের মাঝ বরাবর রূপার মোমদানিতে টিম টিম জ্বলছে মোমবাতি।

বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন গত দু’দিন যাবত। মোমবাতির স্টকও ফুরিয়ে আসছে। তাই তাড়াহুড়ো করে কাজ শেষ করছে নাজওয়া।

স্ত্রীর ডাকে বাচ্চাদের নিয়ে টেবিলে আসে নাসর। এ সময়ে ওরা কেউ বাসায় থাকে। সন্ধ্যার পরও মাদরাসাতে ক্লাস থাকে। নাসরেরও ফিরতে যথেষ্ট দেরী হয়। কিন্তু এখন দৃশ্যপট অন্য।

গত তিন-চারদিন যাবত আবারো উত্তপ্ত শহর। তবে এবারের পরিবেশ একবারে ভিন্ন।

সবাই এসে বসতেই গরম গমে মাকলৌবা বেড়ে দিতে থাকে নাজওয়া। হানার জন্য একবাটি মাফতুউল (সুপ্য জাতীয় খাবার) বেড়ে নেয়। চামচে করে খাইয়ে দিতে থাকে মেয়েকে।
: আব্বিজান! আমি ইয়াসিন ভাইয়ের সাথে যেতে চাই। দেমিরও গতকাল চলে গেল। সভয়ে বাবার উদ্দেশ্যে বলে শামআহ।

খাওয়া থামিয়ে ছেলের দিকে তাকায় নাসর। পরিবারকে নিরাপদ স্থানে রেখে ছত্রীসেনাদের সাথে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছিলো সে নিজেও।

: অবশ্য যাবে বেটা। আমিও যাবো। তবে তোমার মা ও ভাই-বোনদের জন্য একটা নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে আগে।
বাবার কথা শুনে খুশী হয় শামআহ।

গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির মত সমানে ফসফরাস বোমা ফেলছে শত্রু বাহিনী। জয়তুন বাগান, আঙুরের খেত, বসবাসের বাড়ী-ঘর সব গুড়িয়ে দিচ্ছে তারা। আকাশ পথের হামলা শেষ হওয়ার আগেই বাড়ী বাড়ী এসে হাজির হয় ওরা। প্রতিবারই এমন করে।

তবে এবার গাজাবাসীও চুপ করে নেই। প্যারাসুটের ডানায় ভর করে আবাবিলের মতো প্রিয়ভূমিকে রাহু মুক্ত করতে আকাশসীমা ছুঁয়েছে তারা। খেজুর গাছের শাখাগুলোও ডানা নেড়ে ওদেরকে সমর্থন জানিয়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্ববাসী ছত্রীসেনাদের উড়ার দৃশ্যে চমৎকৃত। আর ওদিকে সেনাদের অতর্কিত হামলায় দিশেহারা তেল আবিব।

হঠাৎ দ্রুম দ্রুম শব্দে কেঁপে উঠলো পুরো এলাকা। সমানে বোমা পড়ছে।

: লা হাওলা ওলা কুয়াতা…

:বাচ্চারা দ্রুত করো। শেল্টার নিতে হবে। চিৎকার করে বলে নাসর।

বোম্ব শেল্টারে যাওয়ার সুযোগও পায় না তারা। আধ খাওয়া খাবারের প্লেট টেবিলেই পড়ে থাকে। এলোমেলো।

৩.
ধসে পড়া বাড়ী থেকে অতিকষ্ঠে বের হয় নাসর। বুকের সাথে মেয়ে আর পিঠে বড় ছেলে আর স্ত্রীকে কাপড় দিয়ে শক্ত করে বাঁধে। মনের কোণে ক্ষীণ আশা। চিকিৎসা পেলে হয়তো কথা বলবে ওরা।
তারপর ছোট ছেলেকে কাঁধে তুলে নিয়ে পথে নামে। ধুকতে ধুকতে বাড়ী থেকে মাইল তিনেক দূরে আশ-শিফা হাসপাতাল পানে ছুটতে শুরু করে।

আলোহীন সমগ্র শহর। অন্ধকার যেন গিলে খাচ্ছে পুরো শহর। ভয়ানক এক মৃত্যুপুরী যেন! ধ্বংসস্তুপে পরিণত হতে চলেছে। কয়েক দশক ধরে শহরটাকে অক্টোপাশের থাবার মতো জীবন্ত কারাগারের পরিণত করে রেখেছে ওরা। চাইলেও কোথাও যাওয়ার জো নেই এখানকার অধিবাসীদের।

:পরিত্যক্ত হয়ে যাবে কি শহরটা!
নাকি ভূ-মধ্যসাগরের পানিতে মিশে যাবে!
বুকের ভেতর প্রচন্ড এক ভয় জাগে নাসরের।

চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে ওর। পূর্বপুরুষের বাসভূমি কোন আগুন্তকের জন্য একচুলও ছাড়বে না সে। হঠাৎই অজানা সাহসে ভরে ওঠে ওর হৃদয়।

হয়তোবা হাসপাতালে এখনও জেনারেটর চালু রয়েছে। ডাক্তার সালেহী ও তার টিমেরাও আছে। প্রতিনিয়ত নিরাপধ মানুষের প্রতি নিষ্ঠুর হামলার সাক্ষী হচ্ছে যারা।

আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলতে দুলতে নিশ্চিদ্র অন্ধকারে ইসরাঈলী হিংসার আগুনে পোড়া রুটির মতো ঝলসানো গাজার সড়ক বেয়ে গন্তব্য পানে এগিয়ে যেতে থাকে নাসর।

লেখক পরিচিতি: শিক্ষক ও সাহিত্যিক

 

রোকেয়া রচনাবলীই রোকেয়া র পরিচিতি: নূরুন্নাহার নীরু

 

‘যদি সমাজের কাজ করিতে চাও, তবে গায়ের চামড়াকে এতখানি পুরু করিয়া লইতে হইবে যেন নিন্দা-গ্লানি, উপেক্ষা-অপমান কিছুতেই তাহাকে আঘাত করিতে না পারে;মাথার খুলিকে এমন মজবুত করিয়া লইতে হইবে যেন ঝড়-ঝঞ্ঝা, বজ্র-বিদ্যুৎ সকলই তাহাতে প্রতিহত হইয়া ফিরিয়া আসে৷’ — এমনি ক্ষুরধার আহব্বান নিয়ে যে নারীর আত্মপ্রকাশ তিনিই রোকেয়া নামের সেই মহিয়সী রমনী যিনি এই উপমহাদেশের নারী জাগরণের পথিকৃৎ সম প্রদীপ ৷ যে প্রদীপের আলো আজও সমুজ্জল৷
১৮৮০ সালের ৯ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম এবং ১৯৩২ সালের ঠিক এই দিনেই মাত্র ৫২ বছর বয়সে আবার তাঁর তিরোধানও ঘটে ৷ বুঝ হওয়াকাল থেকেই এই মহীয়সী নারী তৎকালীন অন্ধকারাচ্ছন্ন নারী সমাজের মুক্তির লক্ষ্যে জেগে উঠেন আপন সত্তায় জাগ্রত হয়ে৷ ফলে দেখা যায় বিশেষভাবে লেখনীর মাধ্যমে সমাজকে নাড়া দিতে গিয়ে প্রথমেই তিনি ১৯০২ সালে ‘পিপাসা’ নামক প্রবন্ধ লিখে তাঁর আন্দোলন শুরু করেন এবং ১৯৩২ সালে মৃত্যুর আগে আগে তার অসমাপ্ত লেখনী ‘নারীর অধিকার’ নামক প্রবন্ধের মাধ্যমে তাঁর আন্দোলনের পরিণতি ঘটান ৷
ইদানীং সাহিত্য জগতে বা রাজনৈতিক অঙ্গনে নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে (১৮৮০-১৯৩২) অনেকেই চাচ্ছেন নারীবাদী বলে মূল্যায়ন করতে৷ কিংবা পুরুষ বিদ্বেষী বলে পরিচিত করতে৷ কিন্তু আমি বলবো তাঁর রচনাবলীই তাঁর পরিচয় বহন করছে৷ কেননা দেখা যাচ্ছে বেগম রোকেয়ার লেখালেখি, বক্তব্য, কর্মময় জীবন থেকে অবিসংবাদিতভাবে প্রমানিত যে, তিনি ধর্ম বিদ্বেষীও ছিলেন না কিংবা তিনি পুরুষ বিদ্বেষীও ছিলেন না- যা নারীবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য৷ তিনি যুদ্ধ করেছেন প্রচলিত প্রথা বা প্রতিষ্ঠিত সমাজ ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে -আর সেটি যেহেতু পুরুষ দ্বারাই পরিচালিত সেহেতু তীরটাতো ওদিকে যাবেই কিছুটা কিন্তু সেটি ছিলো গঠনমুখী৷ মূলতঃ তৎকালীন কুসংস্কারে আচ্ছন্ন সমাজের কর্ণধারগণ স্বীয় প্রতাপ প্রতিষ্ঠিত রাখতে ধর্মের দোহাই দিয়ে স্বঘোষিত আইনকানুন প্রয়োগে লিপ্ত ছিলেন যা বেগম রোকেয়া তাঁর দূরদর্শীতা দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন ৷ ফলে সোচ্চার প্রতিবাদী ভূমিকা রেখে গিয়েছেন৷ তাঁর উপলব্দিগত বক্তব্য ছিল এরূপঃ “আমরা সমাজের অর্ধাঙ্গ; আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কিরূপে? কোনো ব্যক্তি এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ আর আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে৷ তাহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা আমাদের লক্ষ্যও তাহাই৷” তিনি আরো বলেছেন ,”দেহের দুটিচক্ষু স্বরূপ নারী-পুরুষ; মানুষের সব রকমের কাজ কর্মের প্রয়োজনে দুটি চক্ষুর গুরুত্ব সমান ৷” মতিচূর প্রবন্ধে রূপকার্থে বলেছেন;” যে শকটেরএক চক্র বড়(পতি) এবংএক চক্র ছোট হয়(পত্নী) সে শকট অধিকদূর অগ্রসরর হইতে পারেনা৷সে কেবল একই স্থানে ( গেহকোনে) ঘুরিতে থাকিবে৷ তাই ভারতবাসী উন্নতির পথে অগ্রসর হইতে পারিতেছেনা৷”
বরং তিনি পুরুষদের সমালোচনা না করে প্রতিকারের জন্য নারীদের সক্ষমতা অর্জনের পরামর্শ দিয়েছেন তার লেখনীতে৷ যেমন তিনি তাঁর ‘রানী ভিখারীনি ‘ প্রবন্ধে নারীদেরে উদ্দেশ্য করে বলেছেনঃ “অযোগ্য বলার জন্য রাগ না করিয়া যোগ্য হইবার চেষ্টা করাই শ্রেয় ৷” — এমনি যাঁর আহবান তাঁকে আমরা পুরুষ বিদ্বেষী নারীবাদী বলি কি করে?

আবার দেখা যায়, যে ধর্ম (ইসলাম) নারীর শিক্ষা, অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার সেই ধর্মের অনুসরণে তিনি তাঁর স্বীকৃতি স্বরূপ ‘নারী শিক্ষা সমিতি’ প্রবন্ধে বলেছেনঃ “পৃথিবীর যিনি সর্বপ্রথম পুরুষ-স্ত্রীলোককে সমভাবে সুশিক্ষা দান করা কর্তব্য বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন তিনি আমাদের রাসূল মকবুল (সাঃ) ৷” আরো বলেছেন, “শিক্ষা লাভ করা সব নারীর অবশ্য কর্তব্য৷ কিন্তু আমাদের সমাজ সর্বদা তাহা অন্যায় করিয়াছে—মেয়েদের এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়া তুলিতে হইবে যাহাতে তাহারা ভবিষ্যত জীবনের আদর্শ গৃহিনী, আদর্শ জননী এবং আদর্শ নারী রূপে পরিচিত হইতে পারে ৷”
তৎকালীন বঙ্গীয় মুসলিম সমাজের করুণ দশা দেখে তাঁর মুক্তিকামী হৃদয় জেগে উঠেছিলো অধিকার চেতনায়৷ তারই আন্দোলনের ছাপ তাঁর লেখনীর ছত্রে ছত্রে নিবদ্ধ৷ শিক্ষা তথা উপযুক্ত শিক্ষার অভাব ই তৎকালীন অজ্ঞতায় নিমজ্জিত নারী সমাজের দুঃখ-দূর্দশার মূল কারণ ৷ এই বাস্তবতা হেতু উল্লেখ করে ‘বঙ্গীয় নারী শিক্ষা সমিতির’ সভার অভিভাষণে তিনি বলেন, ” মোছলমানদের যাবতীয় দৈন্য-দূর্দশার একমাত্র কারণ স্ত্রী শিক্ষার ঔদাস্য৷” প্রকৃতঃঅর্থেই তাই৷ সে সময় নারী এমনকি একটি শিশু বালিকাকেও এতটাই ঘরের কোনে বন্ধী রাখতে সচেষ্ট ছিল সে সমাজ যে, বিদ্যাশিক্ষাতো দূরে বাইরের আলো বাতাস ও দেখার স্বাধীনতা ছিলনা তাদের ৷ পর্দার নামে এমনই কঠোরতা বিরাজমান ছিলো যে, অচেনা-বেগানা নারীদের সামনেও শিশু বয়স থেকেই যাতায়াত নিষিদ্ধ ছিল৷ এভাবে একসময় নারী জাতি নিজেই নিজের উপর একটা শৃঙ্খলিত আভরণ পরিয়ে নিয়েছিল যা তাঁর ‘অবরোধ বাসিনী’ বইতে প্রচ্ছন্ন৷ ৷
নারীকূলের এমন ঔদাসীন্যতার জন্য তিনি ‘আমাদের অবনতি’ প্রবন্ধে লিখেছেনঃ “আমরা আলস্যের, প্রকারান্তরে পুরুষের দাসী হইয়াছি৷ ক্রমশঃ আমাদের মন পর্যন্ত দাস হইয়া গিয়াছে৷ এবং আমরা বহুকাল দাসীপনা করিতে করিতে দাসত্বে অভ্যস্থ হইয়া পড়িয়াছি৷ এইরূপে আমাদের স্বাবলম্বন, সাহস প্রভৃতি মানসিক উচ্চবিত্ত গুলো অনুশীলনের অভাবে বার বার অঙ্কুরে বিনাশ হওয়ায় এখন আর বোধ হয় অঙ্কুরিত হয় না৷” তাইতো তিনি বলেছেন; “ভগিনীরা! চুল রগড়াইয়া জাগিয়া উঠুন, অগ্রসরর হউন৷ মাথা ঠুকিয়া বলো মা! আমরা পশু নই৷ বলো ভগিনী আমরা আসবাব নই৷ বলো কন্যা! আমরা জড়োয়া অলঙ্কার রূপে লোহার সিন্ধুকে আবদ্ধ থাকিবার বস্তু নই৷ সকলে সমস্বরে বলো— আমরা মানুষ!”
তাঁর এই চেতনার প্রকাশ্য রূপই ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা ৷ অনেক বাঁধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে বাঙালি মুসলিম নারী সমাজের শিক্ষা বিস্তারে এ প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সে সময়ে৷ এছাড়া তিনি ১৯১৬ সালে ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম নারী সমাজকে সংঘবদ্ধ করেছেন- যা ছিলো তাঁর নারী অধিকার আন্দোলনের প্রকৃষ্ট উদাহারণ৷ ১৯০৪ সালে তিনি ‘ নবনূর’ পত্রিকায় লিখেনঃ “আমরা উচ্চ শিক্ষা প্রাপ্ত না হইলে সমাজও উন্নত হইবে না৷—- তাই আমাদিগকে সকল প্রকার জ্ঞান চর্চা করিতে হইবে৷ প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে তিনি নারীকে তাঁদের অলঙ্কারে সজ্জিত থাকার চেয়ে জ্ঞানঅর্জনে ভূষিত হবার প্রাধান্য দিয়েছেন বেশী৷ এজন্য তিনি শেকল তূল্য অলঙ্কার ছেড়ে জ্ঞানচর্চার আহবান জানিয়ে ‘বোরকা’ প্রবন্ধে লিখেছেনঃ ” নারীর শোভন অলংকার ছাড়িয়া জ্ঞানভূষণ লাভের জন্য ললনাদের আগ্রহ বৃদ্ধি হওয়া বাঞ্ছনীয়৷” অন্যত্র বলেছেন, “না জাগিলে ভারত ললনা এ ভারত জাগিবেনা” ৷”” আরো বলেন;কন্যারা জাগ্রত না হওয়া পর্যন্ত দেশ মাতৃকার মুক্তি অসম্ভব৷”
ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীশিক্ষা বিদ্বেষী কথিত আলেমদের বিরুদ্ধাচারণ করে তিনি স্বীকৃতি দেন যে , ইসলামই প্রথম উদ্যোগ নেয় নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় আর এর পথিকৃৎ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)৷ যা তিনি অকপটে প্রচার করেন এবং আরো দাবী করেন যে, “মোছলমান বালিকাদের প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে কোরান শিক্ষাদান করা সর্বাপেক্ষা অধিক প্রয়োজন৷ ” এ দাবীর ব্যাখ্যায় তিনি আরো বলেন যে, ” আপনারা কেহ মনে করিবেন না যে , প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে কোরান শিক্ষা দিতে বলিয়া আমি গোঁড়ামীর পরিচয় দিলাম৷ তাহা নহে,আমি গোঁড়ামী হইতে বহু দূরে৷ প্রকৃত কথা এই যে, প্রাথমিক শিক্ষা বলিতে যাহা কিছু শিক্ষা দেয়া হয়, সে সমস্ত ব্যবস্থাই কোরানে পাও যায় ” -তাঁর এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় তিনি ধর্ম বিদ্বেষী নন বরং ধর্মের অপব্যবহার, ধর্মের নামে গোঁড়ামীতা, কুসংস্কার ইত্যাদির বিরুদ্ধে তাঁর আন্দোলন গড়ে তোলেন ক্ষুরধার ‘মসি’ চালিয়ে৷ তিনি তাঁর ‘আমাদের অবনতি’ প্রবন্ধে লিখেছেনঃ ” আমরা সমাজেরই অর্ধাঙ্গ৷ আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কিরূপে? কোনো ব্যক্তির এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোঁড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষদের স্বার্থ আর আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে, একই৷”
যে সময়ে নারী জাতিকে জড়বস্তুতূল্য ভাবা হতো, কোনো কোনো ধর্মে নারীদেহে প্রাণ আছে বলেও ভাবা হতোনা সে সমাজের চিত্র তাঁকে কাঁপিয়ে তোলে নারীর অধঃপতনের দৃশ্যকল্পে৷ তাইতো তিনি বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত , নারীমুক্তির পথিকৃৎ হযরত রাসূলে মকবুলের সাঃ ভূমিকাকে প্রাধান্য দিয়ে তাঁর ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেনঃ” আরবে স্ত্রী জাতির প্রতি অধিক অত্যাচার হইতেছিলো৷ আরববাসীগণ কন্যা হত্যা করিতেছিলো তখন হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কন্যা কূলের রক্ষক স্বরূপ দন্ডায়মান হইয়াছিলেন৷ তিনি কেবল বিধি ব্যবস্থা দিয়াই ক্ষান্ত থাকেন নাই৷ স্বয়ং কন্যা লালন করিয়া আদর্শ দেখাইয়াছেন৷” – এই চেতনা থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে বেগম রোকেয়া ইসলামী বিধান অনুযায়ী নারীর মর্যাদা ও অধিকার আদায়ের আহব্বান জানিয়েছেন৷ তিনি তৎকালীন পর্দা নামের অবরোধ প্রথার বিরোধিতা করে শরিয়াত সম্মত পর্দা করতে আগ্রহী হয়ে ‘বোরকা’ প্রবন্ধে বলেনঃ “আমরা অন্যায় পর্দা ছাড়িয়া আবশ্যকীয় পর্দা রাখিবো ৷ প্রয়োজন হইলে অবগুণ্ঠনসহ মাঠে বেড়াইতে আমাদের আপত্তি নাই৷” — বেগম রোকেয়ার এসকল উক্তি প্রমান করে যে তিনি ধর্ম বিদ্বেষী তো ননই পুরুষ বিদ্বেষীও নন বরং ইসলামের অনুসরণেই ‘নারী মুক্তি সংগ্রামে’ নিবেদিত প্রাণ ছিলেন তিনি ৷ সুতরাং তাঁকে ‘নারীবাদী’ বলে অপব্যাখ্যায় না নিয়ে আমরা বলবোঃ বেগম রোকেয়া নারী মুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ৷
পরিশেষে বলবো, শিশু কাল থেকে বেগম রোকেয়াকে প্রজ্জলিত করতে, সমাজের বুকে এগিয়ে নিতে, প্রতিকূল পরিবেশেও বলিষ্ঠতার সাথে প্রতিষ্ঠিত হতে যাঁদের অবদান তাঁর পেছনে ভূমিকা রেখেছিলো তাঁরা আর কেউ নন; সেই পুরুষ জাতই ৷ বিশেষ ভাবে তাঁর বড় ভাই, তাঁর স্বামীর নাম উল্লেখযোগ্য৷
এক্ষণে মনে পড়ে যায় বিদ্রোহী কবির সেই যুগান্তকারী চরণঃ ‘এ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যানকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর৷”— এটা চিরন্তন সত্য যে একটি সুস্থ-সুষ্ঠু সমাজ গড়ে তুলতে শুধু নারীর একলা পদচারণা নয় বরং অবশ্যই পুরুষের নির্ভরযোগ্য, বলিষ্ঠ হাতের একাত্মতার প্রয়োজন আছে তাই আমরা স্বতঃই বলতে পারি; ধর্মবিদ্বেষী ,পুরুষ বিদ্বেষী নারীবাদিতার স্লোগানে নয় বরঞ্চ বেগম রোকেয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে নিতে হবে “নারী অধিকার আন্দোলনের ” স্লোগানে৷ যা তাঁর রচনাতেই প্রমানিত৷

সহায়ক গ্রন্থঃ রোকেয়া রচনাবলী
লেখিকাঃ কবি ও লেখক৷ ( অবঃ প্রঃ শিঃ ৷ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা৷) সাহিত্যসংস্কৃতি বিভাগ প্রধানঃ সামাজিক সংগঠন “নারী অধিকার আন্দোলন৷”

 

সৌদি আরবের প্রথম নারী নভোচারী রায়ানাহ বার্নাবি

 

সৌদি আরবের ইতিহাসে প্রথম নারী নভোচারী ৩৩ বছর বয়সী সৌদি নাগরিক  রায়ানাহ বার্নাবি। সৌদি আরবের ভিশন-২০৩০ পূরণের জন্য এএক্স টু মহাকাশ মিশনে যোগ দেয় এ দেশটি।

বার্নাবি বায়োমেডিকেল সায়েন্সে দুটি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি নিউজিল্যান্ডের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই বিষয়ে স্নাতক এবং আলফাইসাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

এ ছাড়া গবেষণাগার বিশেষজ্ঞ হিসেবে বেশ খ্যাতি রয়েছে তার। ক্যান্সার স্টেম সেল গবেষণায় প্রায় এক দশকের মতো কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন রায়ানাহ।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) মিশনে সৌদি পুরুষ নভোচারী আলি আল-কারনির সঙ্গে যোগ দেন রায়ানাহ বার্নাবি।

উল্লেখ্য, প্রথম আরব দেশ হিসেবে ২০১৯ সালে নিজেদের এক নাগরিককে মহাকাশে পাঠিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত।সেসময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের নভোচারী হাজ্জা আল-মানসুরি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ৮ দিন অবস্থান করেছিলেন।

তথ্যসূত্র: এএফপি, রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড

 

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রলোভনে প্রতারিত ৫০ নারী, গ্রেপ্তার ১

 

প্রায় অর্ধশত নারীর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ‘রোমান্স স্ক্যাম’ ও সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগে এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। গ্রেফতারকৃতের নাম মো. বেনজির হোসেন (৪০)।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, প্রতারক বেনজিরের ফেসবুকে ভুয়া জৌলুসপূর্ণ প্রোফাইল তৈরি করে এই প্রতারক নিঃসঙ্গ নারী ভিকটিমদের টার্গেট করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করতেন। পরে বিয়ের প্রলোভন ও সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে বছরের পর বছর ধরে। প্রথমে বিশ্বাস তৈরি করে সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে লাখ লাখ টাকা এমনকি কোটি টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন এই প্রতারক।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, বেনজির হোসেন শাহিদ হাসান নামে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশি পাইলটের প্রোফাইল হুবহু কপি করে Shahid Hasan (Pilot Officer) নামে একটি ফেক ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করেন। ফেসবুক প্রোফাইলটিকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য এই প্রোফাইল থেকে বিমান চালানোর ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতেন। প্রতারক বেনজির হোসেন ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে নিঃসঙ্গ নারী ভিকটিমদের টার্গেট করে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদ ফেলে, পরে বিয়ের প্রলোভন ও সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতেন। তিনি অডিও কলে ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বললেও নানান অজুহাতে কখনোই ভিডিও কলে কথা বলতেন না। এরপর অনলাইন প্রণয়ের একপর্যায়ে বিভিন্ন সময় বিপদে পড়ার কথা বলে তার দেওয়া বিভিন্ন নগদ নাম্বারে (প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা ১৯টি নগদ নাম্বারের বিষয়ে জানা গেছে) ধাপে ধাপে লাখ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। প্রতারক বেনজির হোসেনের প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১৩টি নগদ নাম্বারে গত ৪ মাসে ১ কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।

প্রতারক বেনজির হোসেন নড়াইল জেলায় নিজের বাড়িতে থেকে প্রতারণার কাজ করলেও ক্যাশ আউট করতেন তার বাড়ি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে যশোর ও খুলনা জেলায় বিভিন্ন নগদ ক্যাশ আউট পয়েন্টে। তার প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিম এবং নগদ নাম্বারের রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহৃত এনআইডি অন্য ব্যক্তির নামে।

ক্যাশ আউট করার সময় প্রতারক বেনজির হোসেন পরিচয় ও চেহারা গোপন করার জন্য ক্যাপ, সানগ্লাস ও মুখে মাস্ক পড়ে থাকতেন।

তিনি আরও জানান, এমনই একজন ভিকটিম স্বপ্না (ছদ্মনাম), একজন সিঙ্গেল মাদার। প্রতারক বেনজির হোসেনের প্রতারণার শিকার হয়ে গত সাত মাসে বিভিন্ন নগদ নাম্বারে প্রতি মাসে ১৪-১৫ লাখ করে টাকা দিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা খুইয়েছেন। একই সময়ে অপর একজন ভিকটিম জান্নাত (ছদ্মনাম) প্রতারক বেনজিরের কাছে খুইয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ টাকা। প্রতারক বেনজির হোসেনের স্মার্ট ফোনে ৫০ জনেরও অধিক ভিকটিমের সন্ধান পাওয়া যায়।

স্বপ্না এবং জান্নাত গত এক সপ্তাহের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে অভিযোগ নিয়ে সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে প্রতিকারের জন্য এলে সাইবার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন টিম তাদের মামলা করার পরামর্শ দেয় এবং ছায়া তদন্ত শুরু করে। ভিকটিম স্বপ্না রাজধানীর ওয়ারী থানায় প্রতারণার বিষয়ে ২১ নভেম্বর মামলা দায়ের করেন। পরে ২২ নভেম্বর ছায়া তদন্তে নেমে বিশদ প্রযুক্তিগত অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে বেনজির হোসেনকে শনাক্ত করে খুলনার ফুলতলায় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত নগদ নাম্বার থেকে ক্যাশ আউটের সময় সন্ধ্যায় হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়।

দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস না থাকা সত্ত্বেও বেনজির হোসেন গত কয়েক বছরে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ দিয়ে বিপুল অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।

তিনি গত কয়েক বছরে প্রতারণার অর্থে ৫ বিঘা জমির ওপর বাগান বাড়িতে (দুই তলা ডুপ্লেক্স ভবন), অনুমানিক ৩ বিঘা জমির ওপর সম্প্রতি কেনা বিলাসবহুল ভবন, নড়াইলে বিভিন্ন জায়গায় অনুমানিক ২০ বিঘা মাছের খামার, নড়াইলে বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ভবন, যশোর ও সাভারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবনসহ বিপুল ব্যাংক ব্যালান্স গড়েছেন।এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, বেনজির এইচএসসি পাস করে একটা চাকরিতে যোগ দেন। চুরির দায়ে সেই চাকরি চলে যায় তার। তিনি খুবই নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার পিতা সেই অঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে তালের শাস বিক্রি করতেন। তবে বেনজির খুব মেধাবী ছিলেন। তার বৈধ কোনো পেশা নেই। তার মূল পেশাই প্রতারণা করা। এলাকার সাধারণ মানুষ সন্দেহ করলেও নানা অপরাধের জড়িত থাকায় কেউ কিছু বলতেন না।

তিনি বলেন, একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। তার প্রতারণার শিকার অসংখ্য নারী। আমরা এরই মধ্যে ৫০ জনকে পেয়েছি যারা বেনজিরের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তার প্রতারণার শিকার হয়ে এক নারী আত্মহত্যাও করেছেন। ভিকটিমদের কাছ থেকে আপত্তিকর ছবিও সংগ্রহ করতেন। অনেক ভিকটিম মানসম্মানের ভয়ে প্রকাশও করতে চান না।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কাজে মনোযোগ বাড়াতে আয়ত্ব করুন কয়েকটি অভ্যাস

 

প্রতিদিন বিক্ষিপ্তভাবে আমরা অনেক ধরণের কাজ করি। কর্মক্ষেত্রে বা বাসায় যেকোনো কাজের সময়ই মনোযোগ ধরে রাখলে কাজটি হয় নিখুঁত ও আনন্দের! কাজে মনোযোগ ধরে রাখার টিপস নিয়ে আজকের এই ফিচার।

কোনো কাজেসফলতা অর্জন করতে চাইলে সবার আগে সবটুকু মনোযোগ সেই কাজে দিতে হবে। সবার আগে আপনার মাইন্ড ফোকাস করে গোল সেট করতে হবে।

আপনার কাজে যথেষ্ট ফোকাসড হওয়ার জন্য চারটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন-
১. আপনার কাজ সম্পর্কে সবসময় সচেতন থাকুন। দিনের শুরুতেই কাজের প্রাধান্য অনুসারে আপনার কাজের একটি তালিকা করুন। করতেই হবে এমন কাজগুলো পৃথকভাবে তালিকাবদ্ধ করুন। প্রতিদিন নিয়মমাফিক করে ফেলার পরিকল্পনা করে ফেলুন। এর পাশাপাশি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন কাজের তালিকা করে সেগুলো করার সময় বেঁধে নিন।
৩. একসাথে অনেক কাজ করবেন না। আপনার কাজকে কয়েকটি ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করুন
৪. কাজের ফাঁকে ছোট বিরতি নেন এবং পুনরায় কাজে ফিরে যান

 

আপনি যদি আপনার কাজে অমনোযোগী থাকেন, কাজে বাঁধা দেয় এই ধরনের বিষয়গুলো কোনোভাবেই এড়িয়ে না যেতে পারেন, আপনার কাজে কতটুকু অগ্রগতি হচ্ছে সেটি মনিটর করতে না পারেন তাহলে কয়েকটি অভ্যাসে আয়ত্ব করে নিন-

১) আপনি যদি অনেক বিষয়ে একসাথে মনোযোগ দিতে চান তাহলে তা কোনো কাজে আসবে না। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে ব্যাঘাত এড়াতে অফলাইনে থাকুন। এর মাধ্যমে কাজের গতি ও মনোযোগ যেমন বাড়বে তেমন কাজের মানও বাড়বে।
২) যেকোনো কাজ শুরু করার আগে আপনার শরীর ও মনকে শান্ত করে নিন। এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট প্রার্থনার মাধ্যমে নিজেকে জানাতে পারেন- এখন শুধুই কাজের সময়।
৩) কাজ শুরুর আগ কমফোর্ট জোন তৈরি করে নিন। গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিন যাতে করে আপনার নিঃশ্বাস পাকস্থলি পর্যন্ত পৌঁছায়। ২ মিনিট এই প্রসেসটি ফলো করুন।
৪) রাতে যদি ভালোভাবে ঘুম না হয় বা খাবার না খেয়ে কাজ শুরু করেন তাহলে দিনের কাজে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।
৫) আপনার কাজের জায়গায় অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থাকলে সরিয়ে ফেলুন এবং পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে মনোযোগী হন। কাজের ফাঁকে আপনার তৈরিকৃত রিমাইন্ডার কিংবা টু-ডু লিস্টে চোখ বুলিয়ে নিন।

‘আমি পারি, আমাকে এই কাজটা নিখুঁতভাবে শেষ করতে হবে’’ এই বিষয়টা মনে গেঁথে নিন। নিজেকে একটু সময় দিন, সেলফ মোটিভেশন-ই পারে যেকোনো কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য অনুপ্রেরণা যোগাতে। নিজের যত্ন নিলে আপনি সফল হবেনই!

 

 

এশিয়ার সেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় বাংলাদেশের ২ নারী

এশিয়ার সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের দুই নারী। তারা হলেন- বাংলাদেশের চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) পরিচালক ও অণুজীব বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গাওসিয়া ওয়াহিদুন্নেছা চৌধুরী।
গবেষণায় অনবদ্য অবদান রাখা বিজ্ঞানীদের নিয়ে ২০১৬ সাল থেকে তালিকা প্রকাশ করে আসছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী এশিয়ান সায়েন্টিস্ট। মোট ১৭টি ক্যাটাগরিতে এশিয়ার শীর্ষ ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকা প্রকাশ করে সাময়িকীটি। প্রতিবছরের মতো এবারও (অষ্টমবারের মতো) এশিয়ার শীর্ষ ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকা প্রকাশ করেছে।

অনুজীব বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা ‘লাইফ সায়েন্সে’ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য গবেষণায় ভূমিকা রাখছেন তিনি। চিকুনগুনিয়ার মতো যেসব ভাইরাস শিশুদের ভোগাতে পারে, তা নিয়েও কাজ করছেন এ বিজ্ঞানী। শিশুদের ক্ষেত্রে এ ভাইরাস মস্তিষ্কে আক্রমণ করে, সেঁজুতি সাহার দলের সদস্যরা তা প্রমাণ করেছেন।

স্বাস্থ্য বিজ্ঞান গবেষণায় অবদানের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন সেঁজুতি। তিনি ২০২০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল পোলিও ইরেডিকেশন ইনিশিয়েটিভের টিআইএমবির সদস্য নিযুক্ত হন।

সেঁজুতি সাহা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) পরিচালক। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম করোনাভাইরাসের জিন নকশা উন্মোচন করেন।

অন্যদিকে গাওসিয়া ওয়াহিদুন্নেছা চৌধুরী ‘সাস্টেইন্যাবিলিটি’ খাতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা এ নারী বিজ্ঞানী আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা ওয়াইল্ডটিমের বোর্ড সদস্য। তিনি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির একটি গবেষণা দলেও কাজ করেছেন।

এছাড়া প্লাস্টিক দূষণে পরিবেশ ও মানুষের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে একাধিক গবেষণা রয়েছে গাওসিয়ার। জলজ বাস্তুতন্ত্র ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণে অবদানের জন্য ২০২২ সালে তিনি ওডব্লিউএসডি-এলসেভিয়ার ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড পান। মাছ ধরার পরিত্যক্ত জাল নতুন করে ব্যবহার উপযোগী করে প্রস্তুত করার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখছেন।

বাংলাদেশের দুই নারী বিজ্ঞানীর সঙ্গে শীর্ষ ১০০ জনের তালিকায় রয়েছেন ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, হংকং, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের বিজ্ঞানীরা।

 

জামদানি শাড়ির যত্ন

আবহমানকাল ধরে অধিকাংশ নারীর পছন্দের শীর্ষে জামদানি। জামদানির প্রতি বাড়তি আকর্ষণের কারণ অপূর্ব কারুকাজ সমন্বিত নকশা ও মিহি সুতা। জামদানি শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে মিহি সুতার বুননে যেন মিশে থাকে অজস্র গল্প আর কথকত।

২০১৬ সালে জামদানিকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। সঠিকভাবে যত্ন করতে না পারলে জামদানি শাড়ি খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বুনন খুব মিহি হয় বলে বাড়তি খেয়াল ও যত্নের প্রয়োজন হয় জামদানির শাড়ির রক্ষণাবেক্ষণে। চলুন দেখা যাক কীভাবে যত্নে রাখতে পারেন আপনার শখের জামদানি-

শাড়িতে ফলস লাগানো
জামদানি শাড়ি কেনার পরপরই আপনার প্রথম কাজ হবে পাড়ে ফলস লাগিয়ে ফেলা। এতে করে পাড়ও যেমন ভাঁজ হবে না, তেমনি কুচিগুলোও সুন্দর থাকবে।

পানি থেকে দূরে
অন্যান্য শাড়ির মতো জামদানি শাড়ি সাবান পাউডার আর পানি দিয়ে ধোয়া যায় না। বরং জামদানিকে সবসময় নতুনের মতো রাখতে হলে পানি থেকে দূরে রাখতে হবে। জামদানি তৈরির সময় যে মাড় ব্যবহার করা হয়, সেখানে পানি লাগলে সুতার বুনন আলগা হয়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। এতে করে জামদানি শাড়ি সহজেই নষ্ট হয়ে যায়।
ডেমরার বিএসসিসিআই জামদানি পল্লী। ছবি: আনিসুর রহমান

কাঁটা ওয়াশ
যে কোনো দামি শাড়ির পরিচ্ছন্নতা বলতে অনেকের মাথায় ড্রাই ওয়াশের বিষয়টি আসে। কিন্তু জামদানি কোনোভাবেই ড্রাই ওয়াশ করা যাবে না। কারণ ড্রাই ওয়াশের পর জামদানি শাড়ি আয়রন করা হলে এতে শাড়ির বুনন নরম হয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই জামদানি ধোয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে কাঁটা ওয়াশ৷ এমনকি পছন্দের শাড়িটি যদি নষ্ট হয়ে যায় বা ফ্যাকাশে হয়ে যায়, তাহলেও কাঁটা ওয়াশে দিতে পারেন। মনে রাখতে হবে, যারা জামদানি তৈরি করে শুধুমাত্র তাদের কাছেই কাঁটা ওয়াশের জন্য দিতে হবে। কেননা কাঁটা ওয়াশ একমাত্র যারা জামদানি তৈরি করে তারাই করতে পারেন। তবে যদি কখনো জামদানি শাড়িতে দাগ লেগে যায়, তবে দাগ লাগার অংশটুকুতে ট্যালকম পাউডার ছিটিয়ে তারপর ড্রাই ওয়াশ করতে দিতে হবে। তবে এতে বেশ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

রোদে দেওয়া
অনেকদিন জামদানি শাড়ি আলমারির কোণে পড়ে থাকলে তাতে একটা আঁশটে গন্ধ তৈরি হয়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে মাঝে মাঝে শাড়ি রোদে শুকিয়ে নেওয়া ভালো। শুধু রোদে দিলেই হবে না, শাড়িটিকে উল্টিয়ে দিতে হবে যেন ২ দিকেই সমান রোদ লাগে। কোনো কারণে বৃষ্টির পানি পড়লে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নেওয়া উচিত। এতে শাড়ি সুরক্ষিত থাকবে।

শাড়ির সঠিক ভাঁজ
রোদে দেওয়া, কাঁটা ওয়াশ সবই তো হলো, এবার জামদানিকে আলমারিতে তুলে রাখার পালা। জামদানি তুলে রাখার সময় শাড়ির ভাঁজটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সাধারণ শাড়িগুলোতে ৪ ভাঁজ করে মাঝখানে একটা ভাঁজ দিয়ে আরেক ভাঁজ ভেঙে রেখে দেই। কিন্তু জামদানি কখনো এভাবে ভেঙে রাখা যাবে না। এমনকি শাড়ির মাঝখানে ভেঙে হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখাও ঠিক না। যেহেতু জামদানি হাতে খুব মিহি বুনন করা, তাই বুননের একটি সুতা এদিক সেদিক হলেই শখের শাড়িটি ফেঁসে যেতে পারে। জামদানির প্রথম ২ ভাঁজ দিতে হবে নরমাল শাড়ির মতোই। এরপর একটা পাতালি ভাঁজ দিয়ে তারপর মাঝখানে ভেঙে একটা ভাঁজ দিয়ে, হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। অথবা ২ পাশ থেকে ছোট ছোট ভাঁজ দিয়ে একটা আরেকটার ভেতরে দিয়ে দিতে হবে। জামদানি শাড়িকে কখনো অন্য শাড়ির নিচে রাখা যাবে না। আলমারিতে তুলে রাখার সময় সাদা কাগজের প্যাকেটে রেখে দিলে শাড়িতে যেমন ফাঙ্গাস পড়ে না, তেমনি সুরক্ষিতও থাকে। মাঝে মাঝে এই ভাঁজ পরিবর্তন করে রাখতে হবে। কারণ বেশি দিন এক ভাঁজে থাকলে শাড়িতে দাগ পড়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

বেশি দিন ফেলে রাখবেন না
সাধারণত উৎসব অনুষ্ঠান ছাড়া জামদানি শাড়ি পরা হয় না। বাস্তবতা হচ্ছে, জামদানি যত বেশি পড়া হবে তত বেশি ভালো থাকবে। তাই মাঝে মাঝে জামদানি পরা উত্তম।

নতুন করে রঙ করানো
অনেক সময় দেখা যায়, জামদানি বেশি ব্যবহারের কারণে রঙ জ্বলে যায়। জামদানির রঙ নষ্ট হওয়া কিংবা দাগ লাগলে জামদানিতে নতুন ডিপ কালারের রঙ করে নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে একরঙা শাড়িগুলোতেই রঙ করা যায়। মাল্টিকালারের জামদানিতে রঙ করার উপায় নেই।

 

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে চমক লাগানো কে এই নাবিলা ইসলাম?

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে চার বাংলাদেশি আমেরিকান প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এদের মধ্যে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে প্রথমবার নির্বাচন করে সিনেটর নির্বাচিত হয়ে চমক দেখিয়েছেন বাংলাদেশি আমেরিকান নারী নাবিলা ইসলাম। ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নির্বাচন করেন তিনি। নোয়াখালীর সন্তান নাবিলা হলেন জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সিনেটে প্রথম মুসলিম নারী এবং দ্বিতীয় বাংলাদেশি সিনেটর।

কে এই নাবিলা?
নাবিলা ইসলামের নিজস্বওয়েব থেকে জানা যায়, তিনি একজন সোশ্যাল একটিভিটিস। মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের গুইনেট কাউন্টির বিভিন্ন কমিউনিটির অধিকার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। রাজনীতির পাশাপাশি রয়েছে ছোটখাটো নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

গুইনেট কাউন্টি পাবলিক স্কুল থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করে জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন নাবিলা ইসলাম।

২০২০ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেলারি ক্লিন্টনের প্রচারণা শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রচারণা কমিটির সিনিয়র এডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জর্জিয়ায় বসবাস করা ভিয়েতনামিজ, কোরিয়ান এবং ল্যাটিনসহ বিভিন্ন কমিউনিটির অধিকার আদায়ে সোচ্চার এই বাংলাদেশি আমেরিকান। এছাড়া, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রচারণা দলেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন নাবিলা ইসলাম। জর্জ ফ্লোডেড হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনেও ছিলেন সক্রিয়।

 

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম দুই নারী স্নাতকের একজন কাদম্বিনী গাঙ্গুলি

 

উনিশ শতকে বাঙলার সমাজে নারীর জীবন যখন ছিল খুবই পশ্চাদপদ এবং বহু প্রতিকূলতায় জর্জরিত, তখন সবরকম সামাজিক বাধার বিরুদ্ধে লড়াই করে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন এক বাঙালি নারী, যার নাম কাদম্বিনী গাঙ্গুলি।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতেই শুধু নয়, উনবিংশ শতাব্দীতে তিনি ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম দুজন নারী স্নাতকের একজন।

ব্রিটিশ শাসিত দেশগুলো থেকে প্রথম যে দুজন নারী গ্র্যাজুয়েট হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন তারা হলেন কাদম্বিনী গাঙ্গুলি (তখন বসু) এবং চন্দ্রমুখী বসু। কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে ১৮৮৩ সালে তারা দুজনে স্নাতক হন।

কাদম্বিনী স্নাতক পাশ করার পর ডাক্তারি পড়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং তিনিই ছিলেন ইউরোপীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিক্ষিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পেশাজীবী নারী চিকিৎসক।

কিন্তু কাদম্বিনীর এই ইতিহাস গড়ার পেছনে রয়েছে কঠিন সংগ্রামের ইতিহাস। কিশোরী বয়স থেকে প্রতিপদে রক্ষণশীল সমাজ তাকে এগোনর পথে বাধা দিয়েছে, হেয় করেছে, এমনকি ডাক্তার হবার পরে তিনি যখন রাতে রোগী দেখতে যেতেন তখন এক পত্রিকায় তাকে “বেশ্যা” বলেও কুৎসা ছড়ানো হয়েছে।

অনেক রোগী চিকিৎসা নেবার পরও তাকে চিকিৎসকের মর্যাদা দিতে অস্বীকার করেছে।
কে এই কাদম্বিনী?

কাদম্বিনী বসুর জন্ম ১৮৬১ সালে। বরিশালের চাঁদসি গ্রামে ছিল তাদের পৈতৃক বাসস্থান। বাবা ব্রজকিশোর বসু চাকুরি সূত্রে থাকতেন বিহারের ভাগলপুরে, যেখানে তিনি ভাগলপুর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। সেখানেই জন্ম কাদিম্বিনীর।

ব্রজকিশোর ভাগলপুরে নারীমুক্তি আন্দোলন শুরু করেছিলেন এবং ভারতের প্রথম মহিলা সমিতি তিনিই স্থাপন করেন।

ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক পরিবেশের কারণে কাদম্বিনীর পড়াশোনায় ছিল প্রবল আগ্রহ। বাবা তাকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে ১৪ বছর বয়সে ভর্তি করে দেন মেয়েদের একটি বোর্ডিং স্কুলে।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলির জীবন নিয়ে গবেষণা করেছেন বরুণ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ওই কিশোর বয়সেই পরিবারের বাইরে থেকে বড় হয়ে ওঠা কাদম্বিনীর চরিত্রের ওপর একটা বড় প্রভাব ফেলেছিল।

নারী শিক্ষার গুরুত্ব তিনি বুঝতে শুরু করেছিলেন তখন থেকেই। তার স্কুলের শিক্ষক দ্বারকানাথ গাঙ্গুলি ছিলেন নারী শিক্ষার একজন প্রবক্তা। দ্বারকানাথের কাজ কাদম্বিনীর কিশোরী মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যা পরে গভীর প্রেমে রূপ নেয়। দ্বারকানাথকেই পরে বিয়ে করেছিলেন কাদম্বিনী।

বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয় নামে যে স্কুলে কাদম্বিনী পড়তেন সেটি বছর দুয়েকের মধ্যে উঠে যাবার উপক্রম হলে স্কুলটিকে কলকাতায় মেয়েদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেথুন স্কুলের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়। কালক্রমে ঐ স্কুল থেকে এন্ট্রাস বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা দেবার জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠেন মাত্র দুজন ছাত্রী, যাদের একজন ছিলেন কাদম্বিনী।

উনিশ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে নারীশিক্ষার চল ছিল না। মেয়েদের ঘরে থাকাটাই ছিল সমাজে বাঞ্ছনীয়

অন্য ছাত্রীটির পারিবারিক কারণে আর পরীক্ষা দেয়া হয়ে ওঠেনি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন একমাত্র কাদম্বিনী।

মেয়েদের উচ্চশিক্ষার কোন চল সেসময় ছিল না, ফলে মেয়েদের পড়ার জন্য কোন কলেজই ছিল না। মি. চট্টোপাধ্যায় বলছেন কাদম্বিনীর লেখাপড়ার জন্যই বেথুন স্কুল প্রথমে এফ.এ. (ফার্স্ট আর্টস- বর্তমানের উচ্চ মাধ্যমিক সমমান) ও পরে বি.এ. ক্লাস চালু করে।

বিশেষ অধ্যাদেশের মাধ্যমে বেথুন স্কুলকে কলেজে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্তে বাংলায় সাড়া পড়ে যায়।

খ্রিস্টান স্কুল থেকে প্রাইভেটে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এক ছাত্রী চন্দ্রমুখী বসু এসে তার সাথে যোগ দেন বেথুন কলেজে বিএ পড়তে এবং ১৮৮৩ সালের জানুয়ারিতে দু’জনে বিএ পাশ করে ইতিহাস গড়েন।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলির প্রপৌত্র রাজীব গাঙ্গুলি বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তার মেধার পরিচয় প্রকাশ পেয়েছিল।

“মেয়েদের শিক্ষার জন্য যারা সেসময় আন্দোলন করছিলেন কাদম্বিনীর কাছে একদিকে তাদের বিরাট একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, অন্যদিকে কাদম্বিনীর নিজের মধ্যেও একটা একরোখা ভাব ছিল- আমাকে এগোতেই হবে।”

কাদম্বিনী গাঙ্গুলির জীবন সংগ্রাম নিয়ে স্টার জলসা টেলিভিশনে প্রচারিত সিরিয়ালের লেখিকা শর্বরী ঘোষাল বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, কাদম্বিনীর জীবন কাহিনি মেয়েদের জন্য অসামান্য অনুপ্রেরণার ইতিহাস।

“এই মেয়েটি শিক্ষাজীবনে শুধু নিজেই এগোয়নি, নারীর জন্য শিক্ষাব্যবস্থাও তার কারণেই ধাপে ধাপে এগিয়েছে। তার জন্যই বেথুনের মত নার্সারি স্কুলে এন্ট্রাস ক্লাস চালু হয়েছে, বেথুন কলেজিয়েট স্কুল হয়েছে, কারণ তিনি পড়তে চেয়েছেন এফএ। তিনি স্নাতক পড়বেন, বেথুন স্কুলকে তাই কলেজে রূপান্তরিত করা হয়েছে। তার হাত ধরেই বাংলায় নারীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পথ তৈরি হয়েছে,” বলেছেন শর্বরী ঘোষাল।

রাজীব গাঙ্গুলি বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে এই দুজন নারীর ডিগ্রি নেওয়া দেখতে কীভাবে লোক ভেঙে পড়েছিল।

“ইংল্যান্ডেও তখন নারী শিক্ষার প্রসার সবে ঘটতে শুরু করেছে। কাজেই ইংল্যান্ডের বাইরে এই দুই নারীর সমাবর্তনে ব্যাপক উৎসাহ দেখিয়েছিলেন ভারতে ঔপনিবেশিক শাসক সমাজের বহু মানুষ।”

তবে গবেষক বরুণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, সবাই যে উৎসাহ নিয়ে তাদের অভিনন্দন জানাতে এসেছিলেন তা নয়, অনেক রক্ষণশীল মানুষ এসেছিলেন দুই নারীর স্নাতক উপাধি নেওয়া ভণ্ডুল করতে। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বিঘ্নেই অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
উচ্চশিক্ষার জন্য লড়াই

কাদম্বিনীর জন্য উচ্চ শিক্ষার পথ ছিল কঠিন সংগ্রামের। স্নাতক হবার আগেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মেডিকেল পড়বেন। আবেদনও করেছিলেন, কিন্তু তার আবেদন নাকচ হয়ে যায়।

সমাজেও নানাভাবে ব্যঙ্গবিদ্রূপের শিকার হলেন তিনি। নারীরা চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়বে এটা সেসময় সমাজ ভাবতেও পারত না। বিশেষ করে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে মেয়েদের সামনে বিস্তারিত আলোচনা ও পাঠদান তখন শিক্ষকদের জন্য ছিল খুবই অস্বস্তিকর। আর ক্লাসে একমাত্র ছাত্রী ছিলেন কাদম্বিনী গাঙ্গুলি।

তার প্রথম আবেদন নাকচ হয়ে যায় তিনি তখনও স্নাতক হননি সেই যুক্তিতে। কিন্তু স্নাতক হবার পর কাদম্বিনী যখন দ্বিতীয়বার চিকিৎসাশাস্ত্র পড়ার আবেদন জানালেন, তখন আপত্তি জানাল মেডিকেল কাউন্সিল, পাশাপাশি তার মেডিকেল কলেজে ঢোকা বন্ধ করতে উঠে পড়ে লাগল কলেজের শিক্ষকদেরই একাংশ।

বহু প্রতিরোধের দেয়াল ডিঙিয়ে এবং রক্ষণশীল সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত কাদম্বিনী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবার সুযোগ পেলেন মূলত সেসময় বাংলার লেফটন্যান্ট গর্ভনর রিভার্স টমসনের আগ্রহ ও ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপের কারণে।

তার হস্তক্ষেপে মেডিকেল কলেজ কাউন্সিল কাদম্বিনীকে ডাক্তারিতে ভর্তি করতে বাধ্য হয়।

দ্য ওম্যান্স হেরাল্ড নামে ইংরেজি একটি পত্রিকায় অগাস্ট ১৮৯৩ সালে কাদম্বিনীর শিক্ষাজীবনের সংগ্রাম নিয়ে এক নিবন্ধে লেখা হয়, কাদম্বিনীকে ডাক্তারি না পড়ার কারণ হিসাবে বলা হয়েছিল ডাক্তারি পড়তে গেলে পুরুষদের কাছ থেকে তাকে অপমান সহ্য করতে হতে পারে।

পত্রিকায় লেখা হয়, কাদম্বিনী বলেছিলেন তিনি সবরকম অপমান সহ্য করতে প্রস্তুত আছেন। ঐ রিপোর্ট অনুযায়ী এক বছর ক্লাসে তিনি ২০০ জন পুরুষের মধ্যে ছিলেন একমাত্র নারী।

গবেষক বরুণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন তার ডাক্তারি পড়াকে রক্ষণশীল বাঙালি সমাজ একেবারেই মেনে নিতে চায়নি। সমাজে যারা উদারমনস্ক ও নারী শিক্ষার সমর্থক ছিলেন, এমনকি তারাও চাননি একজন মেয়ে ডাক্তারি পড়ুক।

“এমনকি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কাদম্বিনীর এত বড় অর্জনে নিশ্চুপ ছিলেন। তিনি চন্দ্রমুখীকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন, উপহারে পুরস্কৃত করেছিলেন, কিন্তু কাদম্বিনীর সাফল্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তার উচ্চশিক্ষার তিনি বিরোধিতা করেননি, কিন্তু বিদ্যাসাগরের বিস্ময়কর নীরবতা থেকে মনে হয়েছে কাদম্বিনীর ডাক্তারি পড়াকে তিনি সমর্থন করতে পারছেন না।

“মেয়েদের বিজ্ঞান পড়া, সর্বোপরি ডাক্তারি পড়ে সক্রিয় পেশাজীবী জীবন বেছে নেওয়াকে কি তিনি সমর্থন করতে পারেননি। না হলে এমন আশ্চর্যজনকভাবে নীরব ছিলেন কেন?” মন্তব্য করেছেন বরুণ চট্টোপাধ্যায়।
চরিত্রের ওপর আঘাত

সেসময়কার একটি পত্রিকা বঙ্গনিবাসীতে একটি লেখায় তার পেশা নিয়ে তির্যক ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়েছিল। একটি ঘটনার খবর প্রসঙ্গে তার রাতে রোগী দেখতে যাওয়ার বিষয়ে কটাক্ষ করে তাকে “নটী” উল্লেখ করে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করা হয় “তিনি কি ডাক্তারি করেন না কি বেশ্যাবৃত্তি করেন?”

তবে তেজস্বিনী নারী কাদম্বিনী পত্রিকার সম্পাদককে ছেড়ে দেননি। তিনি ও তার স্বামী দ্বারকানাথ আদালতে অভিযোগ জানান । বিচারে সম্পাদকের ছয় মাসের জেল ও জরিমানা হয় এবং মানহানির ক্ষতিপূরণ হিসাবে কাদম্বিনীকে দেয়া হয় তিন হাজার টাকা। একজন নারীর এই সাহস সমাজে রীতিমত তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল।

তেজস্বিনী কাদম্বিনী সমাজের নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছেন আজীবন

মেডিকেল কলেজের একজন অতি রক্ষণশীল বাঙালি অধ্যাপক যিনি গোড়া থেকেই কাদম্বিনীর ডাক্তারি পড়ার বিষয়ে খোলাখুলি প্রতিবাদ করেছিলেন, তিনি কাদম্বিনীকে পরীক্ষা পাশের জন্য প্রয়োজনীয় নম্বর দেননি বলে কথিত আছে।

বরুণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন কাদম্বিনীকে এক নম্বর কম দিয়ে পাশ না করানোর বিষয়টি নিয়ে সেনেটের বৈঠকে তখন যে আলোচনা হয়েছিল, তার দালিলিক প্রমাণও রয়েছে।

ব্রিটিশ একজন চিকিৎসক ডা. জে এম কোটস যিনি তখন ছিলেন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং মেডিসিনের অধ্যাপক, তিনি বুঝেছিলেন যে, কাদম্বিনীর সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। তার উদ্যোগে সিন্ডিকেটে আলোচনার মাধ্যমে কাদম্বিনীকে ‘লাইসেনসিয়েট ইন মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি’ বা এলএমএসের সার্টিফিকেট দেওয়া হয় ১৮৮৬ সালে।

কিন্তু দু’বছর এলএমএস পড়ার পরে ফাইনালে ফের কাদম্বিনীকে অকৃতকার্য দেখানো হয়।

এরপর অধ্যক্ষ কোটস নিজের অধিকার প্রয়োগ করে কাদম্বিনীকে ‘গ্র্যাজুয়েট অফ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ’ বা জিবিএমসি উপাধি দেন, যার ফলে ডাক্তার হিসাবে প্র্যাকটিস করার ছাড়পত্র পান কাদম্বিনী গাঙ্গুলি।
পেশা জীবনের সংগ্রাম

ইডেন হাসপাতালে তাকে কাজের সুযোগ করে দিয়েছিলেন মি. কোটস। কিন্তু সেখানে ডাক্তার হিসাবে তাকে গণ্য করা হত না, সেখানে তাকে নার্সের মর্যাদা দেওয়া হত। রোগ নির্ণয় বা অস্ত্রোপচার করতে দেওয়া হত না।

এরপর লেডি ডাফরিন হাসপাতালে তার চিকিৎসার সুযোগ হয় ১৮৯০ সালে। সেই কাজ পেতে কাদম্বিনীর জন্য তদ্বির করেছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গল।

রাজীব গাঙ্গুলি বলছেন, “কাদম্বিনীর কথা কীভাবে পৌঁছেছিল ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের কাছে। তিনি লেডি ডাফরিনকে লিখে কাদম্বিনীকে সেখানে কাজ দেবার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সেই হাসপাতালে তখন ইংল্যান্ডের ডাক্তারদেরই প্রতিপত্তি। কাজ করার সুযোগ পাননি কাদম্বিনী।”

কাদম্বিনী ১৮৮৮ থেকেই প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেছিলেন। তিনিই প্রথম মহিলা চিকিৎসক, যিনি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রাইভেটে রোগী দেখতেন। ঘোড়ার গাড়িতে চেপে রাতবিরেতে রোগী দেখতে যেতেন, প্রাইভেট চেম্বার খুলেছিলেন এবং নিয়মিত অস্ত্রোপচারও করতেন, বলেছেন রাজীব গাঙ্গুলি।

কিন্তু তার ডাক্তারি ডিগ্রি নিয়ে, তার যোগ্যতা নিয়ে বিরোধীরা প্রতি পদক্ষেপে তাকে বিদ্রূপ করতেন, তাকে চিকিৎসকের দায়িত্ব দেওয়ার প্রতিবাদ করতেন, এবং বলতেন তিনি একজন ধাত্রী বা নার্স, আদতে কোন চিকিৎসকই নন।

বরুণ চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, এই বিষয়টি কাদম্বিনী মেনে নিতে পারছিলেন না। এ সময়ই বিদেশে গিয়ে তিনি ডাক্তারি ডিপ্লোমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এবং এ ব্যাপারে তার পেছনে ছিলেন তার স্বামী দ্বারকানাথ গাঙ্গুলি।

স্নাতক হবার কিছুদিনের মধ্যেই তার থেকে বয়সে অনেক বড়, বিপত্নীক দ্বারকানাথ গাঙ্গুলিকে কাদম্বিনী বিয়ে করেছিলেন, যিনি ছিলেন একজন ব্রাহ্ম সমাজ সংস্কারক, এবং নারী শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম একজন কর্ণধার।
কলকাতার ইডেন হাসপাতালের আঁকা ছবি

ইডেন হাসপাতালে কাদম্বিনীকে কাজের সুযোগ করে দিয়েছিলেন ডা. কোটস, কিন্তু চিকিৎসকের সম্মান সেখানে তার জোটেনি

তাদের এই বিয়ে নিয়েও সমাজে নানা কথাবার্তা উঠেছিল, তৈরি হয়েছিল তুমুল আলোড়ন।

আট সন্তানকে কলকাতায় রেখে স্বামীর উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় কাদম্বিনী ১৮৯৩ সালে ইংল্যান্ডে যান চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষা নেবার জন্য। এক বিদেশি মহিলার সঙ্গিনী হয়ে জাহাজে একা বিদেশযাত্রা করেন।

ক্লাস করতেন তিনি স্কটল্যান্ডে। অবিশ্বাস্য দ্রুততায় ১৮৯৩ সালের জুলাই মাসে স্কটিশ কলেজের তিনটি ডিপ্লোমা অর্জন করে তিনি দেশে ফিরে যান।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলির রোগীদের সিংহভাগ ছিলেন গরীব ও প্রান্তিক মুসলিম ও নিম্নবর্গীয় হিন্দুরা।

“ধনী পরিবারের, রাজপরিবারের মেয়েদের চিকিৎসা করে তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন কাদম্বিনী। নেপালের রাজপরিবারের চিকিৎসা করে প্রচুর অর্থ তিনি আয় করেছিলেন। প্রচুর উপহার পেয়েছিলেন তাদের কাছ থেকে। গরীব ও সমাজের অবহেলিত সম্প্রদায়ের মানুষের চিকিৎসাই ছিল তার জীবনের একটা বড় ব্রত,” বলছিলেন গবেষক বরুণ চট্টোপাধ্যায়।

তবে শর্বরী ঘোষাল বলেছেন, এত সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ডাক্তার হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার পরেও কাদম্বিনীকে সমাজ এমনকি একজন চিকিৎসকের যোগ্য সম্মানও দেয়নি।

“সন্তান প্রসব করানোর জন্য তিনি যখন সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বাড়িতেও গেছেন, তাকে ‘দাই’ বলে ডাকা হয়েছে। খেতে দিয়ে নিজের থালাবাসন তাকে ধুয়ে দিয়ে যেতে বলা হয়েছে।”

কদিম্বিনীর প্রপৌত্র রাজীব গাঙ্গুলি বলছিলেন: “ঠাকুমার কাছে শুনেছি, কঠিন কেসে সফলভাবে প্রসব বা অস্ত্রোপচারের পর কাদম্বিনীকে যখন খেতে দেয়া হয়েছে, তাকে ঘরের ভেতর আসন দেয়া হয়নি। এমন একটা বাড়িতে কাদম্বিনীর সাথে গিয়েছিলেন আমার ঠাকুমা।

“কাদম্বিনীকে বাইরে বসে খেতে বলেছিল, থালাবাটি ধুয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করে দিয়ে যেতে বলেছিল। অপমানে আমার ঠাকুমার চোখে জল এসেছিল। তখন কাদম্বিনী ইংল্যান্ড ফেরত ডাক্তার।”

রাজীব গাঙ্গুলি বলেন, ইউরোপীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিক্ষিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এই পেশাজীবী নারী চিকিৎসক জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পুরুষশাসিত সমাজে আত্মমর্যাদা পেতে লড়াই চালিয়ে গেছেন, নিজের যোগ্যতা প্রমাণে শেষ দিন পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়ে গেছেন।

আনন্দীবাঈ যোশী নামে আরেকজন ভারতীয় নারী একই বছর অর্থাৎ ১৮৮৬ সালে ডাক্তারি পাশ করেন আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ার উইমেন্স মেডিকেল কলেজ থেকে। বম্বের মেয়ে আনন্দীবাঈকে তার স্বামী ডাক্তারি পড়তে আমেরিকা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে ভারতে ফেরেন, প্র্যাকটিস করার সুযোগ তার আর হয়নি। পুনায় ২১ বছর বয়সে তিনি মারা যান। বিবিসি বাংলা

 

গ্রামের নারীদের তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক প্রশিক্ষণ তৃণমূলের নারীদের জন্য অবারিত করতে হবে। এতে তারা নিজেদের জীবনমান উন্নয়নে তা কাজে লাগাতে পারবেন।

বুধবার (১০ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২১ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

নারীবান্ধব নীতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে স্পিকার বলেন, নারীদের আরও এগিয়ে নিতে অবকাঠামোগত সকল সুবিধা নিশ্চিত জরুরি। নারীবান্ধব রাজস্বনীতি গ্রহণের পাশাপাশি করারোপ প্রক্রিয়ার সহজীকরণ প্রয়োজন শ্রমবাজারে নারীদের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান স্পিকার।

শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় ঘোষিত প্রণোদনা মাঝারি ও ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারা যেন সহজে পেয়ে উপকৃত হতে পারেন, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা দরকার। ডিজিটাল ডিভাইডের শিকার হয়ে নারীরা যেন তথ্য-প্রযুক্তিতে পিছিয়ে না পড়ে সেদিকে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

স্পিকার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের নারী-পুরুষ সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার আইনী কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানিক ভিত দিয়ে গেছেন। নারী-পুরুষ সকলের মৌলিক অধিকার তিনি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে গেছেন। এই আইনি কাঠামোর ভিতের উপর দাঁড়িয়ে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের নারী সমাজ।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরেই আজ নারীদের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি। কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেই নারীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নজির দৃশ্যমান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ জাতীয় সংসদে ৫০ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের পাশাপাশি ২৩ জন নারী সরাসরি নির্বাচিত, যা জাতির পিতার সুগভীর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তার ফল।

স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নে যে কাজ করছেন, তা সমগ্র বিশ্বে প্রশংসিত। এর স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড, প্ল্যানেট ফিফটি চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড, গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮, এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ডসহ অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

‘কোভিড মোকাবিলায় অসাধারণ নেতৃত্বের জন্য সম্প্রতি কমনওয়েলথ কর্তৃক বিশ্বের তিনজন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অন্যতম হিসেবে ইন্সপাইরেশনাল লিডারশিপ সম্মাননা তিনি অর্জন করেছেন। যা সমগ্র জাতির জন্য গৌরবের’ বলেন স্পিকার।

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীন, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন এবং সাধারণ সম্পাদক মাহবুবা বেগম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. সুলতানা শফি। সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি।

 

করোনায় ই-কমার্সে নারীরা ভালো অবদান রেখেছে : স্পিকার

নারীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, যোগ্যতা দিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করতে পারলে নারীদের পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি আর আসবে না।

বুধবার (১০ মার্চ) সিরডাপ মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন স্পিকার।

তিনি বলেন, করোনায় ই-কমার্স বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এতে নারীরা ভালো অবদান রেখেছে। ই-কমার্স আরও নারী বান্ধব করা প্রয়োজন। কর আরোপসহ নানা বিষয়গুলি সহজীকরণ করা দরকার।

ভারতের একটি আঁকা ছবির কথা উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, সেখানে একটা ছেলে তার মায়ের সারাদিনের কাজের চিত্র তুলে ধরে। অথচ তার বাবা বলে মা কোনো কাজ করে না। আমরা নানা যায়গায় গিয়ে দেখেছি, গৃহিণীরা নিজেও মনে করেন তিনি কিছু করেন না। স্বামীরাও মনে করে তাই। বিষয়টি কিন্তু উল্টো; কাক ডাকা ভোর থেকে রাত অবধি নারীরা কাজ করেন।

তিনি বলেন, নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টি আইনি কাঠামোয় এবং সংবিধানে সংযোজন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার বাস্তবায়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা ও জীবন মান উন্নতকরণে বিশেষ অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, নারীদের ক্ষমতায়ন তৃনমূল থেকে হতে হবে। তৃণমূলে আগে ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য চেয়ারম্যান বা নির্বাচিত সদস্যদের ইচ্ছায় মনোনীত হতো। তারা (পুরুষ) চাইলে কাজ করতে পারতো, না হয় না। অথচ ইউনিয়ন পরিষদে নারীদের নির্বাচন করে তুলে আনার মধ্য দিয়ে তাদের ক্ষমতায়ন করেছেন শেখ হাসিনা। এখন তারা নিজের ও নারীদের দাবি তুলে ধরতে পারছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারলে মানুষ এক সময় না এক সময় তার অধিকার নিতে পারে। শেখ হাসিনা নারীদের এগিয়ে যাওয়া, ক্ষমতায়ন ও অধিকার আদায়ের সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে দিয়েছেন।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, নারী শুধু মেয়ে মানুষ নয়, নারীও মানুষ এটিই হোক আমাদের পরিচয়। এতেই দূর হয়ে যায় অনেক বাধা।

আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান ড. সুলতানা শফির সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মেহের আফরোজ চুমকির সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন।

 

প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনিক ও উচ্চপদে নারীদের পদায়ন করেছেন

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশাসনিক এবং অন্যান্য উচ্চপদে নারীদের পদায়ন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

বুধবার (১০ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে জাতিসংঘের কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অব উইমেনের ৬৫তম সেশনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং ইউএন উইমেন বাংলাদেশের আয়োজনে এই সভা হয়।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাজনীতিতে আমাদের দেশের নারীরা অবহেলিত। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীরা রয়েছেন। বাংলাদেশে যারা বড় রাজনীতিবিদ বলে দাবি করেন তাদের দলে কিন্তু নারীদের এ ধরনের অবস্থান নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের নারীরা আজ এমন এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে যে বঙ্গবন্ধুর কন্যা সর্বপ্রথম এদেশে প্রশাসনিক এবং অন্যান্য উচ্চপদে নারীদের পদায়ন করেছেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নারীদের উচ্চপদে পদায়ন করেছেন। বর্তমানে আদালতে ১৮৪৫ জন জজ আছেন, তারমধ্যে নারী ৫৪৪ জন। বাংলাদেশের মেজর জেনারেল নারী; আগে কখনো নারী এসপি ছিলে না, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসে নারী এসপি নিয়োগ দিয়েছেন। দেশে ১৫ হাজার নারী পুলিশ রয়েছে, তার মধ্যে অনেকেই পুলিশ কর্মকর্তা। বর্তমান নারী ইউএনও’র সংখ্যা ১৩৪ জন।

বাংলাদেশ আজ নারীর ক্ষমতায়নে উন্নয়নশীল বিশ্বের রোল মডেল বলে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠনের মাধ্যমে নারী উন্নয়নের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নারী-পুরুষ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন সুসংহতকরণে গৃহীত কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত।

তিনি বলেন, গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ প্রতিবেদন ২০২০ অনুযায়ী ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম। ভিশন ২০২১ এবং ২০৪১-এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে ক্রমান্বয়ে একটি মধ্যম এবং উচ্চআয়ের দেশের পরিণত করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সকল আন্তর্জাতিক ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা সকলেই এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বাস্তবায়নে কাজ করছি। এক্ষেত্রে ৫ নং গোল সরাসরি নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ, বাল্যাবিয়ে নিরোধ, নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশ সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন, সমসুযোগ, সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় উন্নয়নের মূলধারায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দারিদ্রমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: সায়েদুল ইসলাম নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা, সুরক্ষা প্রদান এবং নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সামগ্রিক উন্নয়নের মূলস্রোত ধারায় সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের উদ্যোগে আগামী ১৫-২৬ মার্চ ২০২১ সময়ে কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অব উইমেনের ৬৫তম সেশন অনুষ্ঠিত হবে। মহামারির কারণে এবছর সেশনটি ভার্চুয়ালি হবে।

 

বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ নারী সহিংসতার শিকার

বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ নারী সারাটা জীবন ধরেই যৌন হেনস্তা বা শারীরিক সহিংসতার শিকার হন। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক নতুন প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানকে আহ্বান জানানো হয়েছে। নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করা, ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য বিভিন্ন সেবার উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য মোকাবিলা করা যার কারণে প্রায়ই নারী ও মেয়ে শিশুরা অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে।

১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ৩১ শতাংশ নারী অর্থাৎ বিশ্বের ৮৫ কোটির বেশি নারী শারীরিক বা যৌন হেনস্তার শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলছে, এ পর্যন্ত নারীদের ওপর সহিংসতার বিষয়ে করা এটাই সবচেয়ে বড় গবেষণা। ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ জরিপ এবং তথ্যও এতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতি সম্মান এবং যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সঙ্গীর মতামতকে গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টি স্কুলজীবনেই ছেলে শিশুদের শেখানো উচিত।

বিভিন্ন দেশ এবং সংস্কৃতিতে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় লাখ লাখ নারী এবং তাদের পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বিশ্বব্যাপীই অনেক বেড়ে গেছে।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরিদ্র দেশগুলোতে একজন স্বামী বা নারীর অন্তরঙ্গ সঙ্গীর দ্বারাই তারা সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হয়ে থাকেন। সেখানে বলা হয়েছে, এক চতুর্থাংশ নারী তাদের সঙ্গীর হাতে হেনস্তা বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। অনেক সময় একজন মেয়ে তার ১৫ বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন ধরনের মানুষের কাছে হেনস্তার শিকার হয়ে থাকেন এবং এটা তাকে সারাজীবন বয়ে নিয়ে যেতে হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, কিরিবাতি, ফিজি, পাপুয়া নিউ গিনি, বাংলাদেশ, কঙ্গো এবং আফগানিস্তানে মেয়েদের সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হতে হয়। এই সংখ্যা সবচেয়ে কম ইউরোপে। সেখানে সহিংসতার শিকার ২৩ শতাংশ নারী।

করোনা মহামারিতে বিভিন্ন দেশেই নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে নারীরা বাড়ির বাইরে যেতে না পারায় তারা তাদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন বা কাছের কারও কাছ থেকে সহায়তা নিতে পারেননি। তাদেরকে নিজেদের নির্যাতনকারীর সঙ্গে একই স্থানে অনেক বেশি সময় ধরে থাকতে হয়েছে। ফলে নির্যাতনের মাত্রাও বেড়ে গেছে।

প্লান ইন্টারন্যাশনালের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, কলম্বিয়ায় লকডাউন শুরুর পর সেখানে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা অন্যান্য বছরের তুলনায় ১৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে যা সত্যিই খুব আশঙ্কাজনক।

 

হোয়াইট হাউসে হিজাব পরে প্রেস ব্রিফিং, ইতিহাস গড়লেন কাশ্মীরী নারী

হিজাব পরে হোয়াইট হাউসে প্রেস ব্রিফিং। মার্কিন ইতিহাসে নতুন এক নজির গড়লেন বাইডেন প্রশাসনের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের ডেপুটি ডিরেক্টর। ওই ব্রিফিংয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে অংশ নেন বাইডেন প্রশাসনের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের দায়িত্ব পাওয়া কাশ্মিরী কন্যা সামিরা ফাজিলি। হোয়াইট হাউসের অন্যান্য কর্মকর্তার চেয়ে তার পোশাক ছিল একেবারেই আলাদা। প্রথম হিজাবধারী হিসেবে হোয়াইট হাউসের প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়ে গড়েন নতুন এক ইতিহাস।
হোয়াইট হাউসের ব্রিফিংয়ের সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন ভাইরাল। টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন ভাসছে যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিষয়ে বাইডেনের উদারনীতির প্রশংসায়। গত জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল বা ‘ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিল’-এর উপপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান কাশ্মীরি বংশোদ্ভূত সামিরা। এদিন করোনাভাইরাসের আঘাতে বিপর্যস্ত মার্কিন অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন বিষয়ক দিকনির্দেশনা দেন তিনি।

  1. এর আগে সামিরা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আটলান্টার সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ছিলেন। এ ছাড়া বারাক ওবামার আমলে হোয়াইট হাউসের আর্থিক নীতিনির্ধারক পরিষদের পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। সেই সময় এনইসি ও ট্রেজারি বিভাগের সিনিয়র উপদেষ্টা পদেও কাজ করেছেন সামিরা। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিকবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারির দাফতরিক নীতিনির্ধারক দলে কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার।
    সামিরা ক্ষুদ্র ঋণ, আবাসন ঋণ এবং গ্রাহক সম্পর্কিত বিষয়ের বিশেষজ্ঞ। তার জন্ম নিউইয়র্কের উইলিয়ামসভিলে। তিন সন্তানের জননী সামিরা এখন বসবাস করেন জর্জিয়াতে। পড়াশোনা করেছেন ইয়েল ল’ স্কুলে। স্নাতক সম্পন্ন করেছেন হার্ভার্ড কলেজ থেকে। পরবর্তীতে ইয়েল ল’স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

 

দুর্যোগ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে নারীদের ব্যাপক সাড়া

সরকারের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির আওতায় যেসব স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন তাদের অংশগ্রহণে তৃতীয় দিনের মতো শেষ হয়েছে ‘দুর্যোগে সাড়াদান ও জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম’ শীর্ষক উন্নত প্রশিক্ষণ সেশন। বুধবার (৩ মার্চ ) বিকালে কক্সবাজারের ইনানীর অর্কিড ব্লু হোটেলে জেলার উখিয়ার ২৪ জন প্রশিক্ষণার্থীর অংশগ্রহণে এই প্রশিক্ষণে শেষ হয়। এর মধ্যে ১৫ জন ছিলেন পুরুষ ও ৯ জন নারী।

তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিকের সমন্বয়ে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। এই প্রশিক্ষণসহ তিনটি পর্বে মোট ৮৫ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ৪৯ ছিলেন পুরুষ, ৩৬ জন ছিলেন নারী।

গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। প্রশিক্ষণ বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে ছিল বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।

ভূমিধস, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জরুরি উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসায় করণীয় নিয়ে ছিল মূল প্রশিক্ষণের আয়োজন। স্বেচ্ছাসেবকরা দুর্যোগকালে যাতে মূল উদ্বারকর্মীদের সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারেন এজন্য এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এছাড়া স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে দুর্যোগকালীন কেউ আহত বা বিপদে পড়লে তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় স্বেচ্ছাসেবকরা কীভাবে সহযোগিতা করবেন তা এতে তুলে ধরা হয়।

গত বছরের ৮ নভেম্বর থেকে তিনটি পর্বে শুরু হয় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় পাঁচ দিনব্যাপী তৃতীয় পর্বের এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ট্রেনিং কমপ্লেক্স বিভাগের ইনস্ট্রাক্টর মনির হোসেন, ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ইকবাল বাহার বুলবুল, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, নউটন দাশসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ। ব্র্যাকের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতাধীন দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কর্মসূচির সেক্টর স্পেশালিস্ট শুভ কুমার সাহা, একই কর্মসূচির সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান, কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট আলাল আহমেদ প্রমুখ।

প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন ইডেন কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা মৌসুমী আরজু। তিনি বলেন, ‘আমরা এই পর্বে ২৪ জন অংশ নিয়েছি। এর মধ্য থেকে ঘূর্ণিঝড় বা ভূমিধস এইরকম জরুরি অবস্থায় ১০ জনও যদি স্থানীয়দের উদ্ধার কাজে সহায়তা করতে পারে সেটা আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি।’ পরিবারের কাছ থেকে এই দুঃসাহসিক কাজে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

আরেক প্রশিক্ষণার্থী উখিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আসমা আক্তার তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি আনন্দিত ব্র্যাকের এরকম ব্যতিক্রমী আয়োজনে। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম যাতে অব্যাহত থাকে সংস্থাটির কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশা করি।’

 

সাফার নেতৃত্বে বাংলাদেশি নারী

সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের (সাফা) ওমেন লিডারশিপ কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশের মারিয়া হাওলাদার। আগামী দুই বছর তিনি এ দায়িত্ব পালন করবেন। মারিয়া হাওলাদার বর্তমানে দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সহ-সভাপতি।

আইসিএবি গত সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

এতে আরও বলা হয়, তিনি হাওলাদার মারিয়া অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ফার্মের প্রতিষ্ঠাতার পাশাপাশি ওমেন মেম্বারস এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট কমিটি অব আইসিএবিরও চেয়ারম্যান। ২০০৮ সাল থেকে তিনি নিরীক্ষা পেশায় রয়েছেন।

 

চলে গেলেন জনতা ব্যাংকের প্রথম নারী চেয়ারম্যান

জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও দোহাটেক নিউ মিডিয়ার চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহা আর নেই। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর মরদেহ ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

পারিবারিক সূত্রে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। রাষ্ট্র মালিকানাধীন কোনো ব্যাংকের প্রথম নারী চেয়ারম্যান ছিলেন লুনা শামসুদ্দোহা। এ ছাড়া তিনি সফটওয়্যার ফার্ম দোহাটেক নিউ মিডিয়ার চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ওমেন ইন টেকনোলজির (বিডব্লিউআইটি) ‘প্রযুক্তিতে বাংলাদেশি নারী’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ছিলেন। দেশের অর্থনীতিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড-২০১৭।

এ ছাড়া একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে স্থানীয় সফটওয়্যার শিল্পে নিজের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে লুনা শামসুদ্দোহা অনন্যা টপ টেন অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন।

 

ঋণের জন্য ব্যাংকে যেতে হবে নারী উদ্যোক্তাদের

করোনাভাইরাসের প্রকোপে নারী উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের জন্য আলাদা আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়নি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের জন্য যে ঋণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেটাও নারী উদ্যোক্তারা তেমন একটা পাচ্ছেন না। আবেদন করলেও ব্যাংকগুলো সাড়া দিচ্ছে না। কারণ হিসেবে বলা হয়, করোনার মধ্যে ব্যবসা খারাপ। উদ্যোক্তাদের লেনদেনও কমে গেছে।

বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিডব্লিউসিসিআই) আয়োজিত ‘নারী উদ্যোক্তাদের ওপর করোনার প্রভাব’ শীর্ষক এক অনলাইন সেমিনারে এসব মতামত দেন উদ্যোক্তারা।

এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে প্রয়োজনে আগের লেনদেন বিবেচনা করে ঋণ দিতে। তবে উদ্যোক্তাদের ব্যাংকে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিডব্লিউসিসিআইয়ের সভাপতি সেলিমা আহমাদ বলেন, করোনায় বাংলাদেশের বেশির ভাগ নারী উদ্যোক্তা ব্যবসা হারিয়েছেন। এই সময়ে কারও ব্যবসা ছোট হয়েছে। আবার কেউ কেউ নিজস্ব শোরুম ছেড়ে বাসায় ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। জমানো টাকা ভেঙে খেয়েছেন অনেকে। সম্পদ ও মেশিনপত্র বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন, এমনও হয়েছে।
বিজ্ঞাপন

সেলিমা আহমাদ আরও বলেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর থেকে ব্যবসা বন্ধ আছে, কিন্তু বেতন ও বিল দিতে হচ্ছে, এমন উদ্যোক্তাও আছেন। অনেকের অগ্রিম জমা টাকা থেকে দোকানের ভাড়া কেটে নেওয়া হয়েছে।

নারী উদ্যোক্তারা বলেন, লকডাউনের কারণে সীমান্ত ও যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। সে সময় বিদেশি অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। ফলে অনেক উদ্যোক্তা লাইসেন্স নবায়নে সমস্যায় পড়েছেন। এ ছাড়া প্রণোদনা প্যাকেজে নতুন উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার সুযোগ নেই।

এর জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হুসনে আরা শিখা বলেন, প্যাকেজের ৫ শতাংশ নারীদের দিতে বলা হয়েছিল, তবে ঋণ পেয়েছেন ৬ শতাংশ উদ্যোক্তা। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ আছে, যার সুদহার ৩ শতাংশ। এর জন্য কেউ আবেদন করছেন না। নারী উদ্যোক্তা ও ব্যাংকারদের মধ্যে দূরত্ব দূর করতে হবে।

 

একুশের সকালে সাইকেল শোভাযাত্রা

নারায়ণগঞ্জের নারী সাইকেল আরোহীদের দলটি শাড়ি পরে সাইকেল চালিয়ে প্রভাতফেরিতে অংশ নিয়েছিলেন। ফাল্গুনের কুয়াশাভাঙা রোদেলা সকাল। নারায়ণগঞ্জ শহরের পথে পথে প্রভাতফেরির গান। ‘ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি…।’

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরিতে একদল নারী যুক্ত হয়েছিলেন ভিন্নভাবে। শাড়ি পরে সাইকেল চালিয়ে প্রভাতফেরিতে অংশ নিয়েছেন তাঁরা। সঙ্গে ছিল ভাষার স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড। এই নারীরা নারায়ণগঞ্জের নারী সাইকেল আরোহীদের দল নভেরার সদস্য।

রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জ নগরের খানপুর থেকে যাত্রা শুরু করে মণ্ডলপাড়ায় গিয়ে শেষ হয় নভেরার সাইকেল শোভাযাত্রা। নিছক খেয়ালের বশে নয়, প্রতিবাদের ভাষা হিসেবেই ভাষা দিবসে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন বলে জানান নভেরার প্রতিষ্ঠাতা ফারজানা মৌসুমী। দুই বছর ধরে নভেরা একুশে ফেব্রুয়ারি এমন সাইকেল শোভাযাত্রা করে আসছে।

 

৩ দশক পড়াশোনা করে ইসলাম গ্রহণ জবি অধ্যাপকের

ধর্মতত্ত্ব নিয়ে প্রায় ২৯ বছর পড়াশোনার পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রিতু কুন্ডু। রিতু কুন্ডু ধর্মান্তরিত হয়ে নিজের নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন আদ্রিতা জাহান রিতু।

তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন আরো ৪ বছর আগে। তবে বিষয়টি এত দিন আড়ালেই ছিল। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই ভাইরাল হওয়া ভিডিওতেই

শান্তির এ ধর্মে তিনি দিক্ষিত হয়েছিলেন বছর চারেক আগে। তবে বিষয়টি এত দিন ওইভাবে জানাজানি হয়নি। নিজের ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার কথা বর্ণনা করেন রিতু।

ভিডিওটিতে ওই শিক্ষিকা বলেন, দীর্ঘ ২৯ বছরের বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা ও জ্ঞান-বুদ্ধির আলোকে আমি ইসলামের বিষয়ে এক মাসব্যাপী পড়াশোনা শুরু করি। ১৬ দিনের মধ্যেই আমি সত্য উপলব্ধি করি এবং ২০১৭ সালের মার্চে ইসলাম গ্রহণ করি। এই দীর্ঘ ২৯ বছর পর্যন্ত আমি নিজের পরিবার, সমাজ ও মানুষের আচার-ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করি। এ দীর্ঘ সময় অন্যান্য প্রধান সব ধর্মের গ্রন্থাবলি পাঠ করেছি। জাপানেও এ বিষয়ে পড়াশোনা করি। ২০১২ সালে এসে বুঝতে পারি, এগুলো মানুষ রচিত বই।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ ২৯ বছর পর আমি পবিত্র কোরআনের বাংলা অনুবাদ নিয়ে পড়ালেখা করি। এর পাশাপাশি আমি হাদিসও পাঠ করি। সামনে কোরআনের যে সূরা আর হাদিস পেয়েছি তাই মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। মহান আল্লাহর নির্দেশনার কারণ ও বিধিনিষেধ নিয়ে চিন্তাভাবনা করি। কখনও এ বিষয়ে স্বপ্নও দেখেছি। তা হয়তো অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হবে।

খুব ছোট থেকেই হয়তো আল্লাহ আমাকে ইসলাম কবুলের জন্য তৈরি করেছিলেন। ছোট থেকে আজ পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ঘটনা, শিক্ষা, প্রতিবন্ধকতা আর সমাজের অসংগতি আমাকে ধীরে ধীরে ইসলামের পথে পরিচালিত করেছে। আমি যখন বুঝতে পারলাম, আমাকে নামাজ পড়তে হবে সেদিন থেকে টানা ১৪ মাস আমার নামাজ কাজা হয়নি। এরপর চাকরির কারণে দু-একবার কাজা হয়ে যায়। আমি যখন অনুভব করলাম, আমাকে পর্দা করতে হবে সেদিন থেকে আমি হিজাব পরা শুরু করি।

পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্তে অবিচল ছিলেন বলেও জানান এ শিক্ষিকা।

নীলফামারী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন আদ্রিতা জাহান রিতু। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

২০১৩ সালে তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৭ সাল থেকে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।

 

বয়স ডিঙিয়ে এভারেস্টে

মাউন্ট এভারেস্ট—বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। ২৯ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতার এভারেস্টে ওঠা যেনতেন কথা নয়। বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে প্রবল যুঝতে পারলেই সর্বোচ্চ সেই স্থানে বিজয় পতাকা ওড়ানো যায়। আসুন, জেনে নেওয়া যাক, একই দেশের দুজন নারী পবর্তারোহীর কথা, যাঁরা কিনা ভিন্ন ভিন্ন বয়সে জয় করেছিলেন এভারেস্ট।

অভিনেতা রাহুল বোস পরিচালিতপূর্ণা সিনেমাটি কি দেখা হয়েছে? দেখা থাকলে পূর্ণা মালাভাথের জীবনের গল্পের সঙ্গে পরিচয় হয়ে যাওয়ার কথা। অজানা থাকলে বলছি শুনুন।

ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের একটি ছোট্ট গ্রামে ছিল পূর্ণার বাস। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ২০১৪ সালে এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছিলেন তিনি। এভারেস্টজয়ী সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে সেই সময় রেকর্ড করেছিলেন পূর্ণা। এর আগে ১৪ বছর বয়সী এক মার্কিন কিশোরের দখলে ছিল সেই রেকর্ড।

এভারেস্টের পথে পূর্ণা প্রচণ্ড বৈরী আবহাওয়ার মুখোমুখি হয়েছিলেন। কিছুদিন আগেই সেখানে হিমবাহ ধসের ঘটনা ঘটেছিল। তবে এত কিছুতেও দমে যাননি তখনকার ১৩ বছরের কিশোরী। এভারেস্টের চূড়ায় উড়িয়েছিলেন বিজয় পতাকা।

এভারেস্ট জয়ে কোন বিষয়টি পূর্ণাকে অনুপ্রাণিত করেছিল জানেন? তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, মেয়েরা যেকোনো কিছুই অর্জন করতে পারে। এভারেস্টের চূড়ায় উঠে সব প্রতিবন্ধকতাকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছিলেন পূর্ণা।

২০১১ সালে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় যখন ভারতের ঝাড়খন্ডের অধিবাসী প্রেমলতার পা পড়েছিল, তখন তাঁর বয়স ছিল ৪৮ বছর। তিনি ছিলেন দুই সন্তানের মা। এমন বয়সে সবাই চায় নির্ঝঞ্ঝাট জীবন। কিন্তু প্রেমলতা গিয়েছিলেন হিমালয়ের ঝঞ্ঝামুখর পথে। সে সময় তিনি ছিলেন ভারতের এভারেস্টজয়ী সবচেয়ে বেশি বয়সী নারী। যদিও পরে সেই রেকর্ড ভেঙেছিলেন আরেকজন, তবে পথপ্রদর্শক হিসেবে তিনিই ছিলেন।

শুধু তা-ই নয়। বিশ্বের সাত মহাদেশের সাত সর্বোচ্চ পাহাড়চূড়াতেও (সেভেন সামিট) পা রেখেছেন প্রেমলতা। প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে এই রেকর্ড গড়েছেন তিনি।

পর্বতারোহণে অবদান রাখায় ভারত সরকারের দেওয়া সম্মানসূচক ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার পেয়েছেন প্রেমলতা। আরও পেয়েছেন ‘তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড’। লিমকা বুক অব রেকর্ডসেও নাম লিখিয়েছেন প্রেমলতা।

তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, এনডিটিভি, দ্য হিন্দু ও টাইমস অব ইন্ডিয়া

 

প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কিশোরীর পেটে ছুরিকাঘাত

রাজধানীর ডেমরায় প্রেমের প্রস্তাব রাজি না হওয়ায় এক কিশোরীকে (১৫) পেটে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করেছে এক বখাটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মো. রেদুয়ানকে (২০) শনিবার দিবাগত রাতে গ্রেফতার করেছে ডেমরা থানা পুলিশ।

রোববার দুপুরে আদালতে পাঠানো হলে ওই দিন বিকালে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

রেদুয়ান শেরপুরের নালিতাবাড়ী থানার মো. মজিবুর রহমানের ছেলে। সে পরিবারের সঙ্গে বর্তমানে ডেমরার পশ্চিম বক্সনগর এলাকার মহসিন ভান্ডারির বাড়িতে ভাড়া থাকেন। হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করার এ ঘটনায় ওই কিশোরীর বাবা রাজমিস্ত্রি মো. আবদুল মান্নাফ রেদুয়ানের বিরুদ্ধে শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মামলা দায়ের করেন। ওই কিশোরী পেশায় একজন পোশাককর্মী।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডেমরা থানার এসআই মো. নজরুল ইসলাম বলেন, গার্মেন্টে যাওয়া-আসার পথে ওই কিশোরীকে প্রতিনিয়ত প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বিরক্ত করত একই বাড়ির ভাড়াটিয়া বখাটে রেদুয়ান। এ বিষয়ে ওই কিশোরীর বাবা ছেলেটিকে নিষেধ করলে থেমে যাওয়ার বদলে আরও ক্ষিপ্ত হয় সে। এদিকে গত শনিবার বিকালে রেদুয়ান ক্ষিপ্ত অবস্থায় মেয়েটির ঘরে গিয়ে তার হাতে থাকা ছুরি দিয়ে মেয়েটির পেটের ডান পাশে আঘাত করে। এ সময় ওই কিশোরী ডাক চিৎকার শুরু করলে তার মা ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে রেদুয়ান পালিয়ে যায়।

এসআই নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ঘটনার পরই গুরুতর আহত অবস্থায় মেয়েটিকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে মেয়েটি সেখানে চিকিৎসাধীন। আদালতে মাদকাসক্ত রেদুয়ান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

 

নারীর নিরাপত্তায় প্রস্তুত পুলিশের কিউআরটি

স্বামীর নির্যাতন থেকে শুরু করে পথে–ঘাটে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনায় নারী নিজেকে অনিরাপদ মনে করলে পাশে পাবেন পুলিশের কুইক রেসপন্স টিমকে (কিউআরটি)। দিন-রাত যেকোনো সময় এ দলকে পাশে পেতে ফোন করতে হবে ০১৩২০০৪২০৫৫ নম্বরে (হটলাইন)। তবে প্রচারের অভাবে এখন পর্যন্ত আশানুরূপ ফোন পাচ্ছেন না তাঁরা।

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের পাশাপাশি আক্রান্ত বা ভিকটিমকে দ্রুত উদ্ধারসহ অন্যান্য সহায়তা দিতে কিউআরটির যাত্রা। গত বছরের ২৭ অক্টোবর রাজধানীর তেজগাঁও থানা প্রাঙ্গণের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অধীনে এই টিমের উদ্বোধন করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। ১২ জানুয়ারি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, কিউআরটির নারী পুলিশ সদস্যরা একটি ঘরে বসে আছেন। উদ্ধারজনিত কোনো ফোন পেলেই ছুট লাগাবেন তাঁরা। কিউআরটিতে নারী পুলিশ সদস্য সংখ্যা বেশি হলেও পুরুষেরাও দায়িত্ব পালন করছেন।
বিজ্ঞাপন

উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হামিদা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, এ বিভাগের অধীনে তদন্ত ইউনিট, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পাশাপাশি কিউআরটিও পরিচালিত হচ্ছে। ২৮ জনবলের কিউআরটি পূর্ণাঙ্গ একটি দল হিসেবে কাজ করছে। ডিএমপির অধীনে কোনো স্থানে ঘটনা ঘটলে উদ্ধার পাওয়া যাবে এবং সারা বাংলাদেশের সবাই আইনি পরামর্শ পেতে এ নম্বরে ফোন করতে পারবে।

কিউআরটিতে আসা সব অভিযোগ নথিবদ্ধ হচ্ছে না, যেসব অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেগুলো নথিবদ্ধ করা হয়। সে হিসাবে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত নথিবদ্ধ হয়েছে ৯৬টি অভিযোগ। কিউআরটির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীরা বেশি ফোন করে সহায়তা চাচ্ছেন। কল বেশি আসে ঢাকার বাইরে থেকে। ৯৯৯-এর মাধ্যমে কল পেয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এই দল থেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতারণা, বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক, খারাপ ব্যবহার, অনলাইনে প্রতারণাসহ বিভিন্ন বিষয়েও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

কিউআরটির সদস্যরা আইনি পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগে ভিকটিম এলে সমস্যা সমাধান করার ব্যবস্থা নেন। ভিকটিমকে প্রয়োজনে কোনো থানায় যোগাযোগ করিয়েও দিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। এ পর্যন্ত পারিবারিক নির্যাতনের শিকার কয়েক ভিকটিমকে উদ্ধার করে তাঁদের ইচ্ছানুযায়ী পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

হটলাইন নম্বরটি আসলেই কাজ করছে কি না, তা যাচাই করতে গত ২৩ জানুয়ারি ফোন করলে একজন নারী কনস্টেবল নাম, পরিচয় ও অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চান। কোন ধরনের ফোন বেশি পাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বললেন, হটলাইন নম্বর তো, অনেক সময় ভুয়া ফোনও আসে, অনেকে ফোন করে কোনো অভিযোগের কথা বলতে পারেন না। অনেকে এ সেবা সম্পর্কে শুধু জানার জন্যই ফোন করেন।

কিউআরটির সদস্যরা ১২ ঘণ্টা করে দলে ভাগ হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। একজন সাব-ইন্সপেক্টর প্রতিটি দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দুজন গাড়িচালকও প্রস্তুত থাকেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. ওয়ালিদ হোসেন টেলিফোনে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় কিউআরটি গঠন করা হয়েছে। কিউআরটি ও হটলাইন নম্বরের প্রচার বাড়ানো জরুরি। -প্রথম আলো

 

শিল্প ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর তাগিদ

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, নারীকে তার কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে চাকরির পাশাপাশি শিল্প উদ্যোক্তা হতে হবে। শিল্প ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে নারী উদ্যোক্তাদের সামনে এগিয়ে আসতে হবে।

শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে কুসুমকলি সু ফ্যাক্টরির উদ্যোগে নতুন পণ্যের মোড়ক উন্মোচন ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান এনডিসি এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মাওলা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুসুমকলি সু ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী নাজমা খাতুন।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন জাতীয় শিল্পনীতি-২০২১ প্রণয়নের কাজ চলছে। নতুন এ শিল্পনীতিতে সরকার নারী শিল্প উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে সর্বাধিক সুযোগ সুবিধা দেয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করছে। বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর ভিড়ে দেশীয় চামড়া শিল্প ব্র্যান্ডগুলো নিজের চেষ্টায় জায়গা করে নিচ্ছে। কুসুমকলি সু ফ্যাক্টরির মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি চামড়া শিল্প উদ্যোক্তা নিজেরদের চেষ্টায় দেশে চামড়া শিল্প উন্নয়নে অবদান রেখে চলছে।’

‘বর্তমান সরকার দেশে শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি লক্ষ্যে উদ্যোক্তা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ, ঋণ প্রদান, প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদানসহ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান কার্যক্রম চলমান রেখেছে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিসিক চেয়ারম্যান বলেন, ‘২০৪১ সালে শিল্পোন্নত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে বিসিক একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করছে। যা বাস্তবায়িত হলে দেশে শিল্প বিল্পব ঘটবে এবং বাংলাদেশ একটি সুখী-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।’

 

বাংলাদেশি গৃহকর্মী হত্যায় সৌদিতে গৃহকর্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড

সৌদি আরবে বাংলাদেশি গৃহকর্মী মোছা. আবিরন বেগম হত্যা মামলার প্রধান আসামি সৌদি গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানিকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন দেশটির আদালত। রিয়াদের অপরাধ আদালত ১৪ ফেব্রুয়ারি এ রায় ঘোষণা করেন। দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রধান আসামি গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার কারণে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন আদালত।

এছাড়া রায়ে আলামত ধ্বংসের অভিযোগ, আবিরন বেগমকে নিজ বাসার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় কাজে পাঠানো ও চিকিৎসার ব্যবস্থা না করার পৃথক অভিযোগে গৃহকর্তা বাসেম সালেমকে মোট ৩ বছর ২ মাস কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল (১১ লাখ ২৭ হাজার টাকা) জরিমানা করেছেন আদালত।

আদালত অপর আসামি সৌদি দম্পতির কিশোর পুত্র ওয়ালিদ বাসেম সালেমকে সুনির্দিষ্টভাবে হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করার প্রমাণ পায়নি বলে জানান। তবে আবিরন বেগমকে বিভিন্নভাবে অসহযোগিতা করায় তাকে সাত মাসের কিশোর সংশোধনাগারে থাকার আদেশ দিয়েছেন।

ইতোপূর্বে আবিরনের মৃত্যুতে আদালত দুঃখ প্রকাশ করেছেন। হত্যার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে সৌদি শরিয়া আইন অনুযায়ী যথাযথভাবে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলেও আদালত উল্লেখ করেন।

২০১৯ সালের ২৪ মার্চ সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের আজিজিয়ায় সৌদি গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনে নিহত হন বাংলাদেশি গৃহকর্মী আবিরন বেগম যা পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ড বলে হাসপাতালের ফরেনসিক রিপোর্টে জানা যায়।

গতকাল রিয়াদের ক্রিমিনাল কোর্টের ৬ নম্বর আদালতে আবিরন বেগমের মামলা পরিচালনার জন্য দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের প্রথম সচিব মো. সফিকুল ইসলাম ও আইন সহায়তাকারী সোহেল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) আবিরন বেগম হত্যা মামালার রায় ঘোষণার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

 

মজাদার ‘চকলেট সন্দেশ’ তৈরি করুন ঘরেই

চলছে ভালোবাসার সপ্তাহ। ভ্যালেন্টাইন ডে পর্যন্ত প্রিয়জনকে নানা উপহার দিয়ে থাকেন সঙ্গীরা। এর মধ্যে চকলেট অন্যতম। যুগ যুগ ধরে উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে চকলেট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

ছোট থেকে বড় যে কাউকেই চকলেট উপহার দেওয়া যায়। অন্যদিকে চকলেট উপহার পেলেও খুশি হয়ে যায় প্রিয়জনরা। চকলেট খেতে কে না ভালবাসে!

বর্তমানে চকলেটের কেক, কুকিজ, আইসক্রিম, ক্যাডবেরি সবই পাওয়া যায়। চকলেট প্রেমীদের জন্য আরও এক মজাদার পদ হলো চকলেট সন্দেশ। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক রেসিপি-

উপকরণ

১. দুধ ১ লিটার
২. লেবুর রস ২ টেবিল চামচ
৩. চিনির পাউডার ৫ টেবিল চামচ
৪. কোকো পাউডার ২ টেবিল চামচ

পদ্ধতি:
প্রথমে দুধ ভালো করে জ্বাল দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর লেবুর রস মিশিয়ে নাড়তে থাকুন। দেখবেন দুধ কেটে ছানা হয়ে এসেছে।

এবার ছানা পরিষ্কার কাপড়ে ঢেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে নাড়ুন। কাপড়ের চারপাশ ধরে চেপে চেপে ছানার পানি ঝরিয়ে নিন। তারপর আধা ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখুন।

তারপর ছানা বের করে হাত দিয়ে মথে নিন। যখন দেখবেন একেবারে নরম হয়ে গেছে ছানা; তখন চিনির গুঁড়ো মিশিয়ে আবারও মাখুন। সবশেষে কোকো পাউডার দিয়ে ভালোভাবে মাখুন।

প্যানে এবার ছানার মিশ্রণটি কম আঁচে ৫ থেকে ৬ মিনিট নাড়ুন। তারপর প্লেটে নিয়ে ছড়িয়ে দিন। হালকা ঠান্ডা হলে অল্প করে হাতে নিয়ে সন্দেশের আকারে গড়ে নিন।

এরপর সন্দেশের উপরে গলানো চকলেট দিয়ে সাজান। তার উপরে চকলেটের গুঁড়ো দিন। এইতো তৈরি হয়ে গেল মজাদার চকলেট সন্দেশ। কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে দিলে সন্দেশের উপরের চকলেট একটু শক্ত হলে বের করে খেতে পারবেন।

কাউকে উপহার দিতে চাইলে সুন্দর চকলেট বক্সে রং-বেরংয়ের ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে নিন সন্দেশগুলো। এরপর চকলেট বক্সটি সুন্দর মোড়কে পেঁচিয়ে প্রিয়জনকে দিন। ছোট ছোট এ চকলেট সন্দেশ দেখতেও যেমন সুন্দর খেতেও অনন্য।

 

নারী ও পুরুষ হোক পরস্পরের সহযোগী

সাজেদা হোমায়রা

ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার হয়ে খুব দ্রুত ডিভোর্স দিয়ে অথবা শারীরিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে মামলা করে সাহসী হয়ে যেতে পারে কয়টা মেয়ে?

কিংবা অনেক আয় করে আত্নবিশ্বাসী হতে পারে কয়টা মেয়ে?

তাহলে যে মেয়েটা পারেনি, সে কী তার এই অসহায় জীবন ডিজার্ভ করে…?

জীবন ধারণের ন্যুনতম সুযোগটা পেতে অথবা হকের প্রয়োজনটা নিতে একজন নারীকে কেন প্রতিবাদী নারী হতে হবে?

বেশিরভাগ মেয়েরাই তো গতানুগতিক ও সাধারণ মানসিকতার পরিবারে জন্ম নেন। বেড়েও ওঠেন খুব সাধারণ চিন্তার মানুষ হিসেবেই। পড়াশোনাও অনেকের কম।

বিয়ের পর থেকেই শুরু হয়ে যায় স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির মানুষের অমানবিক কথা শোনা! খুব কষ্ট পেলেও তার কিছুই করার থাকে না। তাকে সয়ে যেতে হয় অথবা মনে করে নিতে হয় এটাই তার ভাগ্য!

একটা সাবান, একটা শ্যাম্পু কিংবা দুইটা জামার জন্য তাকে চেয়ে থাকতে হয় বাবার বাড়ির দিকে….

অনেক মেয়েই আছে, যারা সারাদিন নিরবিচ্ছিন্ন কাজের পর তাদের অল্প কিছু খাবার জোটে। অথচ আর্থিক দাঁড়িপাল্লায় তার কাজকে মাপা হলে তার মাসে অন্তত ১৫/২০ হাজার টাকা পাওয়া উচিত বা আরো বেশি। অথচ তাকে জরুরি চিকিৎসার খরচ পেতেও হিমশিম খেতে হয়!

একটু ব্যতিক্রম হলেই শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া, না খাইয়ে রাখা, দীর্ঘদিন বাবার বাড়িতে না যেতে দেয়া, মারধর করা… এগুলো অহরহ ঘটছেই!
নির্যাতনের মাত্রা সহ্য করতে না পেরে অনেক নারীই বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার পথ!

এমনভাবে জীবন কাটাতে কাটাতে একদিন মেয়েটা হাসতে ভুলে যায়। দিনের পর দিন অপমান সইতে সইতে সে ভুলে যায় ‘হিউম্যান ডিগনিটি কি?’

আবার যে মেয়েটাকে আয় করে নিজের খরচ চালাতে হয়, সে মেয়েটারই বা কী অবস্থা! তার যে কোনো প্রয়োজনে বা আর্থিক নিরাপত্তার দায়িত্বটা কি তার পার্টনারের উপর বর্তায় না? কেন মেয়েটাকে এতোটা চ্যালেঞ্জ নিতে হবে?

সব মেয়েই সাহসী হবে বা প্রতিবাদী হবে এটা তো কখনোই সম্ভব না!

আমাদের চারপাশে বিশাল সংখ্যক নারী ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার।
নারীর প্রতি অবিচার, মারপিট, মানসিক টর্চার, প্রতিটি কাজে দোষ ধরা ইত্যাদিকে পরিবারের সদস্যরা ছোট করেই দেখে কিংবা কেউ কেউ কেউ দেখেই না! আর আমাদের অন্ধ সমাজ তো একে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই ধরে নেয়। অথচ এটি সামাজিক অবক্ষয়ের একটি ভয়ঙ্কর দিক!

সুশিক্ষা ও সচেতনতার ঘাটতি এসব অপরাধকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। সমাজ ও পরিবার নৈতিক অবস্থানে দৃঢ় থাকলে এমন অপরাধ অনেকাংশেই কমে যেতো।
পরিবারের প্রতিটি সদস্যের নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মনোভাব গড়ে উঠলেই নারী শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকতে পারবে। ভালো থাকতে পারবে পরিবারের প্রতিটি সদস্য।

নারী একজন মমতাময়ী স্ত্রী , একজন স্নেহময়ী মা, একজন সংসারের রক্ষক। নারী ছাড়া সমাজ চলবে না, সংসার চলবে না। তাদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পরিবার ও সমাজের কর্তব্য।

নারী-পুরুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক একটি পরিবারকে মায়ার বন্ধনে বেঁধে রাখতে পারে…
পরিবর্তন শুরু করতে হবে ঘর থেকেই…

নারীর কাজের স্বীকৃতি আজ খুব প্রয়োজন… খুব প্রয়োজন নারীর সুযোগ সুবিধার প্রতি দৃষ্টিদান…
আরো প্রয়োজন নারী পুরুষ উভয়কেই উভয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া….

নারী-পুরুষের পারস্পরিক সহযোগিতায় গড়ে উঠুক একটি মানবিক সুন্দর পৃথিবী!

 

চিকেন ও ডিমের পুরে মজাদার রোল

ক্ষুধা লাগলেই রোল বা স্যান্ডউইচ খেয়ে থাকেন অনেকেই। বলতে গেলে, হালকা খিদের বড় সমাধান হলো রোল। ভেজিটেবল, বিফ কিংবা চিকেনের রোল সবারই পছন্দের।

চিকেন ও ডিমের পুর রুটি বা পাউরুটির মধ্যে দিয়ে পেঁচিয়ে তৈরি করা হয় রোল। এর স্বাদ যেমন; পুষ্টিও অনেক। তবে আপনি যদি একটু স্বাস্থ্যকর রোল খেতে চান, তাহলে বাড়িতে সহজেই তৈরি করে নিতে পারেন।

রোল তৈরি করাও খুব সহজ। তবে কেউ চাইলে পরোটা দিয়েও রোল বানাতে পারেন। ময়দা, ডিম, চিনি, ঘি, লবণ আর সামান্য দুধ একসঙ্গে মেখে নিন।

এরপর ভেজা কাপড় দিয়ে খানিকক্ষণ ঢেকে রাখুন। খুব নরম পরোটা তৈরি হবে। জেনে নিন রোল তৈরির রেসিপি-

উপকরণ
১. টমেটো ২০ গ্রাম
২. পেঁয়াজ ২০ গ্রাম
৩. ডিম ১টি
৪. চিকেন ৫০ গ্রাম
৫. লবণ ১০ গ্রাম
৬. গোলমরিচ ১০ গ্রাম
৭. মাখন ২০ গ্রাম
৮. বড় পাউরুটি ১টি
৯. মেয়োনিজ ৫০ গ্রাম
১০. টমেটো সস ২০ গ্রাম

পদ্ধতি: পাউরুটির এক পিঠে মেয়োনিজ মাখিয়ে নিন ভালো করে। ডিম সেদ্ধ করে চারটি ফালিতে কেটে নিন। চিকেনের টুকরোগুলো গ্রিল করুন।

এরপর টমেটো, পেঁয়াজ কুচি করে নিন। লবণ, মরিচ, গ্রিলড চিকেন, ডিম, টমেটো, পেঁয়াজ, সস মিশিয়ে সালাদের মতো তৈরি করুন।

মেয়োনিজ মাখানো পাউরুটির পিঠে সেটা রোলের মতো সাজিয়ে গোল করে নিন। রোলের বাইরের দিকে গলানো মাখন ব্রাশ করে নিন।

ওভেনে দিয়ে গ্রিল করুন। তৈরি হয়ে গেল আপনার মজাদার রোল। তারপর অর্ধেক করে কেটে নিয়ে পরিবেশন করুন গরম গরম।

 

শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী গণসমাবেশ

রাজধানীর শাহবাগে ‘দুর্নীতি ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে পূর্বঘোষিত ধর্ষণবিরোধী গণসমাবেশ হয়েছে।
শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র, প্রীতিলতা ব্রিগেডসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে নৃত্য ও ধর্ষণবিরোধী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সমাবেশটি শুরু হয়। এর আগে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায়।

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহর সঞ্চালনায় এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসিরুদ্দিন প্রিন্সের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এ আকাশ, সামিনা লুৎফা, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি আল কাদেরী জয়সহ অন্যান্য নেতাকর্মী।

সমাবেশে অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের যে পরিসংখ্যান আমরা দেখতে পাই, সেটার চেয়ে দ্বিগুণ ঘটনা আমাদের দেশে ঘটছে। ধর্ষণবিরোধী এই আন্দোলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক। এই আন্দোলন অন্যান্য আন্দোলনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেললে হবে না। সব রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সংগঠিত করে সারাদেশে এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে। ধর্ষণ ও নারী নিপীড়ন হ্রাস করতে হলে সকল ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণও বাড়াতে হবে। সর্বোপরি নারীদের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে।

নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, এই আন্দোলন সামাজিক আন্দোলন, এই আন্দোলন সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং রাজনৈতিক আন্দোলন। আল জাজিরার প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে যেভাবে সরকার আন্দোলন করছে, সেভাবে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলছে না, আন্দোলন করছে না। ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরকার কথা বলবে না, যা করতে হবে আমাদেরই।

 

মুক্তি পেলেন সৌদির সেই প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মী হাতলুল

তিন বছর পর জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন সৌদি আরবের সেই প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মী লুজাইন আল হাতলুল। বুধবার সৌদি কর্তৃপক্ষ কারাগার থেকে তাক মুক্তি দিয়েছে। তার বোনের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে তুর্কি সংবাদ মাধ্যম ইয়েনি শাফাক।

ওই মানবাধিকার কর্মীর বোন লিনা এক টুইট বার্তায় বলেন, এক হাজার এক দিন পর ছাড়া পেয়ে লুজাইন আল-হাতুলুল বাড়িতে।

হাতলুলকে ছাড়ার বিষয়ে আর বিস্তারিত কিছু জানাননি। হাতলুলকে আটকের পর থেকে আন্তর্জাতিক অনেক সংগঠন সৌদি আরবের এমন কর্মকাণ্ডে নিন্দা জানিয়েছে।

সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়ার পক্ষে আন্দোলনকারীদের মধ্যে অন্যতম লুজাইন আল হাতলুল।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, বেশ কিছু শর্তের অধীনে মুক্তি পেয়েছেন লুজাইন আল হাতলুল। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে কারাগারে তার সঙ্গে আচরণ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না এবং সৌদি আরব ছেড়ে যেতে পারবেন না। শর্ত ভঙ্গ করলে তার কারাদণ্ড পুনর্বহাল করা হতে পারে।

নিজের কারাদণ্ডের প্রতিবাদে আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন হাতলুল। এছাড়া অন্য নারী বন্দিদের সঙ্গে তিনিও বিচারকের কাছে দাবি করেন জিজ্ঞাসাবাদের সময় মুখোশ পরিহিত পুরুষেরা তাদের ওপর নির্যাতন ও যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে। তবে গত মঙ্গলবার একটি আপিল আদালত নির্যাতনের অভিযোগ খারিজ করে দেয় বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

 

ভারতে হিজাব খুলতে বলায় স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর

ভারতে এখন রাষ্ট্রীয় মদদে পদে পদে নিগৃহের স্বীকার হচ্ছেন মুসলিমরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে বর্ণবৈষম্য।

পুদুচেরী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস কমিউনিকেশনে স্নাতকোত্তরে সর্বোচ্চ নম্বরের অধিকারী রাবিহা আব্দুরেহিমকে হিজাব পরায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ।

সমাবর্তনে যোগ দিতে হলে হিজাব খুলে আসতে হবে, এমন শর্ত দেয়ায় তিনি স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান করে শুধু সার্টিফিকেট নিয়েই চলে আসেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির জওহরলাল নেহরু অডিটরিয়ামে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

তার হাত থেকেই সাফল্যের পুরস্কার নিতে গিয়েছিলেন রাবিহা। কিন্তু সেই সময় অনুষ্ঠানে ঢুকতেই দেয়া হয়নি তাকে। কারণ সেই হিজাব।

২০১৮ সালের ব্যাচের ওই ছাত্রী জানান, রাষ্ট্রপতি আসার কিছুক্ষণ আগেই তিনি অডিটরিয়ামে প্রবেশ করতে যান। কিন্তু সেখানেই নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে বাধা দেয়।

তারা তাকে বলেন, হিজাব খুলে না এলে ভেতরে ঢুকতে দেয়া যাবে না। নিরাপত্তারক্ষীদের প্রস্তাবে রাজি হননি রাবিহা। রাষ্ট্রপতি অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তাকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়।

এর পর কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের পদক ও সার্টিফিকেট দিতে শুরু করে। কিন্তু গোটা ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে, সোনার পদক নিতে অস্বীকার করেন রাবিহা। শুধু সার্টিফিকেট নিয়েই বেরিয়ে আসেন তিনি।

ক্ষুব্ধ রাবিহা বলেন, আমার সঙ্গে যে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে- তার প্রতিবাদেই আমি পদক নিতে অস্বীকার করি।

নিরাপত্তারক্ষীরা আমাকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঢুকতে বাধা দেয়। ওরা সন্দেহের চোখে দেখছিল আমাকে। যেন আমি কিছু একটা করার উদ্দেশ্যে ঢুকতে চাইছি। জানি না, ওরা কী ভাবছিল।

এর পরই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রসঙ্গ উঠে আসে তার কথায়। বলেন, পুলিশ যেভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মারধর করছে তার বিরোধিতা করছেন তিনি।

গোটা ভারতের শিক্ষার্থীরা বর্তমান পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদস্বরূপ এই পদক নিতে অস্বীকার করেছেন তিনি।

রাবিহার সঙ্গে এমন আচরণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

 

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে চীনে অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক গ্রেফতার

অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক চেং লেই চীনে কয়েক মাস আটক থাকার পর তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য পাচারের অভিযোগ এনে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর বিবিসির।

আটকের আগে চেং চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল সিজিটিন এর উপস্থাপক ছিলেন। অস্ট্রেলীয় কর্মকর্তারা জানান, গত আগস্টে তাকে আটক করা হয় এবং গত শুক্রবার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যারিস পেইন বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, বিচারে প্রাথমিক মানদণ্ড, প্রক্রিয়ার সততা ও মানবিক আচরণ মেনে চলা হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’ তিনি বলেন, ‘এই কঠিন সময়ে আমরা চেং ও তার পরিবারের পাশে আছি।’

গত আগস্টে চেং হঠাৎ টেলিভিশন থেকে হারিয়ে যান এবং তার বন্ধু ও স্বজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে চীন ঘোষণা দেয় যে তিনি এক অজানা স্থানে ‘আবাসিক নজরদারিতে’ রয়েছেন।

চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী, গত ছয় মাসে অস্ট্রেলীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা চেং এর সাথে ছয়বার দেখা করতে পেরেছেন। কূটনৈতিক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত বিতর্কের জেরে সাম্প্রতিক বছরে অস্ট্রেলিয়া ও চীনের সম্পর্ক অবনতি হয়েছে।

চীনে জন্ম হওয়া আরেক অস্ট্রেলীয় নাগরিক ও লেখক ইয়াং হেংজুন চীনে আটক রয়েছেন। তিনি গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন। অস্ট্রেলিয়া বলেছে, ইয়াং এর বিরুদ্ধে চীনের আচরণ ‘অগ্রহণযোগ্য।’

 

ডিপ্লোম্যাসি অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইদা মুনা তাসনীম

যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম উইমেন্স ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডব্লিওআইসিসিআই) প্রদত্ত ‘উইমেন অব দ্য ডিকেড ইন পাবলিক লাইফ অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসি অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন।

বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল অব উইমেন্স ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিআইবিসি-ডব্লিওআইসিসিআই)-এর উদ্যোগে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘উইমেন অন্ট্রাপ্রেনিওর সামিট-২০২১’র ভার্চুয়াল সমাপনী অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীমকে এ পুরস্কার প্রদান করেন।

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ হাইকমিশন এ তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে এবছর ডব্লিওআইসিসিআই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

পুরস্কার গ্রহণের পর হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তার এ পুরস্কার তিনি বাংলাদেশের তৃণমূলের নারী যারা প্রতিদিন কৃষি, পোশাক শিল্প, মৎস্য খামার, নির্মাণ শিল্প, গৃহকর্মী ও বিদেশে প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন তাদের উৎসর্গ করেন।

হাইকমিশনার প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিগত এক দশকে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীদের অভূতপূর্ব ক্ষমতায়নের মাধ্যমে দেশকে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের ‘গ্লোবাল জেন্ডার গেফ ইনডেস্কের’ শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত করার কথা উল্লেখ করেন।

বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান, নোবেল বিজয়ী ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে ডব্লিওআইসিসিআই এ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন মাল্টার প্রেসিডেন্ট ম্যারি লুই কোলেইরো প্রেসা, কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট লরা সিনসিলা মিরান্ডা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড।

ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক কো-অর্ডিনেটর মিস নিয়া শেফু, ডাব্লিওআইসিসিআই’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. হারবিন ওরোরা এবং বিআইবিসি-ডব্লিওআইসিসিআই’র সভাপতি মিস মানতাসা আহমেদ।

 

লা রিভে ফাল্গুন-ভ্যালেন্টাইনের নতুন কালেকশন

সাসটেইনেবল। মানানসই। উজ্জল কিন্তু রুচিশীল রঙ। স্প্রিং/সামারের ফ্যাশন-অভিধানে প্রকৃতির পাশাপাশি এই শব্দগুলো ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবার। এই প্রেক্ষাপটে দেশি স্টাইল ও আন্তর্জাতিক ট্রেন্ডের মিশেলে ফাল্গুন-ভ্যালেন্টাইনের বাস্তবধর্মী বা সফিস্টিকেটেড ফ্যাশনের বিশেষ একটি কালেকশন নিয়ে এসেছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থনীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড লা রিভ। সেই সঙ্গে পাওয়া যাবে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতি মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন।

লা রিভ এর প্রধান নির্বাহী পরিচালক মন্নুজান নার্গিস বলেন, ‘কোভিড-১৯ আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। পোশাকে ইউটিলিটি ও একাধিক উপলক্ষ্যে পরার উপযোগিতা, উজ্জল কিন্তু চোখে শান্তি দেবে এমন রঙের প্রতি আমাদের আগ্রহ বেড়েছে। তাই এবারের ফাল্গুন-ভ্যালেন্টাইন কালেকশনে বছরজুড়ে পরার মত মানানসই বা সাসটেইনেবল পোশাক তৈরির চেষ্টা করেছি আমরা। লা রিভের পোশাক মানেই আন্তর্জাতিক যা র‍্যাম্পের জনপ্রিয় প্রিন্টগুলোর বৈচিত্রময় উপস্থাপনা। নতুন কালেকশনেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কালার প্যালেটে শ্যাওলা সবুজ, গেরুয়া, হলুদ, ছাই, গোলাপি, কমলা, মেরুন, কালো, এবং নীলের নানারকম শেড ব্যবহার করা হয়েছে। বসন্তের নানারকম উজ্জল ফুল যেমন সূর্যমুখি, টিউলিপ, চেরি, পপির পাশাপাশি ইস্টার্ন বোটানিক, ফ্লোরাল টাইডাই ফর্ম, ফোক ফ্লোরাল এবং সবুজ পাতার বিভিন্ন শেড নিয়ে কাজ করা হয়েছে। বসন্তের প্রকৃতি ছাড়াও অন্যতম আকর্ষন ট্রেন্ডি ইক্কাত প্রিন্ট। ভিসকোস, ফেইলি, মসলিন, কটন, হাফ সিল্ক, এবং নিটের এই পোশাকগুলি ফাল্গুন-ভ্যালেন্টাইন ও একুশের আয়োজন ছাড়াও বছরজুড়ে যেকোন আয়োজনে পরা যাবে।’

এই কালেকশনে নারী, পুরুষ ও শিশু, তিনটি বিভাগেই দারুণ সব নতুন স্টাইল আনা হয়েছে। নারীদের জন্য থাকছে এম্ব্রয়ডারি, ফ্রিল, প্যটার্ন ও লেয়ারে সাজানো সালোয়ার কামিজ, সিঙ্গেল কামিজ, নিট ও উভেন টিউনিক, শার্ট ও টিশার্ট, ম্যাক্সি ড্রেস, গাউন ও শ্রাগ। কটন, হাফসিল্ক ও মসলিন শাড়ির অসাধারণ একটি কালেকশন রাখা হয়েছে এবার। পুরুষের জন্য থাকবে শর্ট ও ফুলহাতা শার্ট, ক্যাজুয়াল ও কমফোর্ট শার্ট, পোলো, টিশার্ট এবং সেমি ও ফিটেড পাঞ্জাবি। এছাড়াও থাকছে যেকোন অনুষ্ঠানে পরার উপযোগি আকর্ষনীয় কাবলি সেট।

লা রিভের নতুন এই কালেকশনে শিশুদের জন্য থাকছে বিশেষ আয়োজন। ছেলেশিশুদের জন্য পাঞ্জাবি, পোলো ও টিশার্ট, ক্যাজুয়াল শার্ট রাখা হয়েছে। মেয়েশিশুদের জন্য এবারের বিশেষ আকর্ষন উৎসবে পরার শাড়ি। ফ্রক, ঘাগরা-চোলি, সালোয়ার কামিজ, টিউনিক ও উভেন সেটের নতুন স্টাইলেও থাকবে ফাল্গুন ও একুশের ছোঁয়া। বাবা-মায়ের সাথে মিলিয়ে পরার জন্য মিনি-মি কালেকশনেও থাকছে নতুন সব স্টাইল।

বটমস কালেকশনে নারীদের প্যান্ট পাজামা, হারেম ও লেগিংস থাকছে। ছেলেদের জন্য ঘরে-বাইরে, পাঞ্জাবি ও শার্টের সাথে পরার মত পাজামা প্যান্টের বর্ণিল একটি কালেকশন নিয়ে আসা হয়েছে। আরামদায়ক কটন টুইল, টেনসেল, রেমি কটনে তৈরি এই পাজামাগুলোর আরাম ও বৈচিত্র ক্রেতাদের মুগ্ধ করবে। শিশুদের জন্য ম্যাচিং পালাজ্জো, পাজামা প্যান্টস, নিটেড, উভেন ও ক্যামোফ্লেজ বারমুডা ও ক্যামোফ্লেজ প্যান্টস সংযোজন করা হয়েছে।

লা রিভ লাইফস্টাইল সেগমেন্টে থাকছে গয়না, ম্যাচিং মাস্ক ও স্যান্ডেল এবং পুরুষের প্রয়োজনীয় ফ্যাশন অনুষঙ্গ।

নতুন কালেকশন পাওয়া যাবে লা রিভের ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, খুলনা, সিলেট দর্শন দেউরি ও নয়া সড়কসহ মোট ১৬টি আউটলেটে। এছাড়া দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে ক্যাশ অন ডেলিভারি সুবিধায় কেনা যাবে www.lerevecraze.com- এই সাইট থেকে। বিস্তারিত জানতে লগইন করুন।

 

ব্রিটেন সাময়িকী প্রসপেক্টাসের তালিকায় বিশ্বসেরা নারী চিন্তাবিদ

২০২০ আলের ১৪ জুলাই ৫০ সেরা চিন্তাবিদের তালিকা প্রকাশ করেছে ব্রিটেনের সাময়িকী প্রসপেক্টাস। সেখান থেকে শীর্ষ ১০ জনকে বাছাই করতে ২০ হাজার ভোট গ্রহণ করা হয়। সেই বিশ্বসেরা নারী চিন্তাবিদদের কয়েকজন হলেন-

কে কে সাইলাজা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী, কেরালা, ভারত

বিশ্বের সেরা ১০ চিন্তাবিদের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছেন ভারতের কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে সাইলাজা। তিনি সাইলাজা টিচার হিসেবে বেশি পরিচিত। ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি আন্তর্জাতিকভাবেও ব্যাপক প্রশংসিত। করোনা মোকাবেলায় ভারতের কেরালা এখন বিশ্বে মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে। জানুয়ারির শুরুতে কেরালায় তিন ছাত্রের করোনাভাইরাস সংক্রমণ চিহ্নিত হয়। ওই তিন ছাত্রই চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গেই চীন থেকে আগত ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। কেন্দ্রীয় সরকারের আগেই সাইলাজার নেতৃত্বে করোনা মোকাবেলায় সাফল্য অর্জন করেছে কেরালা রাজ্য।

জাসিন্ডা আরডার্ন
প্রধানমন্ত্রী, নিউজিল্যান্ড

বিশ্বের সেরা ১০ চিন্তাবিদের মধ্যে জাসিন্ডা আরডার্ন দ্বিতীয়। পুরো নাম জাসিন্ডা কেট লরেল আরডার্ন। নিউজিল্যান্ডের দু’-দু’বারের প্রধানমন্ত্রী থেকে তিনি এখন পরিণত হয়েছেন বিশ্বকে শান্তির পথে নেতৃত্ব দেয়ার দূত হিসেবে। মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন। গোটা বিশ্বে শান্তির পথে নেতৃত্ব দেয়ার দূত হিসেবে আলোচিত হচ্ছেন জাসিন্ডা অরডার্ন।

মেরিনা তাবাসসুম

স্থপতি

বিশ্বের সেরা ১০ চিন্তাবিদের মধ্যে মেরিনা তাবাসসুম তৃতীয়। তিনি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মিল রেখে ভবন নির্মাণ এবং পরিবেশের দ্বারা উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলো গ্রহণ করে নকশা তৈরিতে অবদান রেখেছেন। তার নকশা করা স্থানীয় উপকরণের হালকা ওজনের বাড়িগুলো স্টিলের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম এবং পানির মাত্রা বেড়ে গেলে সেগুলো সরানো যায়। বিষয়গুলো আন্তর্জাতিকভাবে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে।

ইলোনা জ্যাবো দে কার্ভালহো
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ব্রাজিল

বিশ্বের সেরা চিন্তাবিদদের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইলোনা জ্যাবো দে কার্ভালহো। তিনি একজন নাগরিক উদ্যোক্তা, ইগারাপা ইন্সটিটিউটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইন্সটিটিউটটি সুরক্ষা, জলবায়ু এবং উন্নয়নের ছেদগুলো নিয়ে অগ্রণী গবেষণা, নতুন প্রযুক্তি এবং নীতি তৈরি করেছে।

ওলিভেট ওটেলে
ইতিহাসবিদ

ব্রিটেনের ইতিহাসবিদ ওলিভেট ওটেলে বিশ্বের নারী চিন্তাবিদদের মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন। তিনি কালো নারীদের মধ্যে প্রথম যিনি ব্রিসটল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক।

রুথ উইলসন গিলমোর
ভূগোলবিদ, মার্কিন

বিশ্বের সেরা চিন্তাবিদদের মধ্যে মার্কিন ভূগোলবিদ রুথ উইলসন গিলমোর স্থান সপ্তম। তিনি সেন্ট্রার ফর প্লেসের পরিচালক, সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ এবং নিউইয়র্কের সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের পৃথিবী এবং পরিবেশবিজ্ঞানের অধ্যাপক। এ বছর তিনি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব জিওগ্রাফারস আজীবন সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড পান।

গ্রেটা সেলেস্ট গারউইগ
চলচ্চিত্র নির্মাতা

গ্রেটা সেলেস্ট গারউইগ। বিশ্বসেরা চিন্তাবিদদের তালিকায় রয়েছেন তিনিও। তিনি একজন মার্কিন অভিনেত্রী, লেখক, পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার। ২০১৭ সালে ‘লেডি বার্ড’ চলচ্চিত্র দিয়ে গ্রিটা গারউইগের একক পরিচালক হিসেবে অভিষেক হয়। ছবিটি সমাদৃত হয়। ৭৫তম গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারে সেরা সঙ্গীতধর্মী বা হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র বিভাগে পুরস্কার লাভ করে। ‘লেডি বার্ড’ ছবিতে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যের জন্য তিনি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। অর্জন করেন একাডেমি অ্যাওয়ার্ডও। গারউইগ অস্কারের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে মনোনীত পঞ্চম নারী।

হিলারি ম্যানটেল
ঔপন্যাসিক

সাহিত্যিক হিলারি ম্যানটেলের লেখা বই ‘উল্ফ হল’ ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয়। এ বইয়ের জন্য তিনি ম্যান বুকার পুরস্কার লাভ করেন। তার সাহিত্যকর্মগুলো ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক উপন্যাস পর্যন্ত বিস্তৃত। ইংল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রে তিনি বেশ কিছু পত্রিকা ম্যাগাজিনে সমালোচক হিসেবেও কাজ করছেন। সমাজের নানা বিষয় উঠে এসেছে তার লেখায়। বিশ্বসেরা চিন্তাবিদের তালিকায় এর আগেও ছিলেন তিনি। এবারও তিনি তালিকায় রয়েছেন।

সারাহ গিলবার্ট
বিজ্ঞানী

বিজ্ঞানী সারাহ গিলবার্ট। কোভিড-১৯ নিরসনের ভ্যাকসিনের খোঁজে পৃথিবী যখন তোলপাড় তখন সর্বপ্রথম ‘সুখবর’ দেন এই সারাহ গিলবার্টই। লন্ডনের জেনার ইন্সটিটিউট ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হচ্ছে নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন। এ গবেষণার পুরোভাগে রয়েছেন সারাহ গিলবার্ট। বিশ্বসেরা চিন্তাবিদদের তালিকায় তিনি জায়গা করে নিয়েছেন।

এস্তের ডুফলো
অর্থনীতিবিদ

ফরাসি অর্থনীতিবিদ এস্তের ডুফলো ২০১৯ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন। নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে তিনি সর্বকনিষ্ঠ অর্থনীতিবিদ। তার স্বামী ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। এ বছর তিনি বিশ্বসেরা চিন্তাবিদের তালিকায় রয়েছেন। তিনি ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়ন অর্থনীতির অধ্যাপক।

কোরনেল ওয়েস্ট
দার্শনিক আফ্রিকান-আমেরিকান

বিশ্বের সেরা ১০ চিন্তাবিদের মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন কোরনেল রোনাল্ড ওয়েস্ট। তিনি একজন আমেরিকান দার্শনিক, রাজনৈতিক কর্মী, সামাজিক সমালোচক, লেখক এবং বুদ্ধিজীবী। পশ্চিম আমেরিকার বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে তিনি যুক্ত। তিনি বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারিতে অভিনয় করেছেন।

ফিলিপ্পে ভ্যান প্যারিস
দার্শনিক, বেলজিয়াম

বিশ্বের সেরা চিন্তাবিদদের মধ্যে অষ্টম স্থানে রয়েছেন ফিলিপ্পে ভ্যান প্যারিস। তিনি একজন বেলজিয়ামের রাজনৈতিক দার্শনিক এবং রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ। তিনি একটি মৌলিক আয়ের ধারণার এবং ভাষাগত ন্যায়বিচারের প্রথম পদ্ধতিগত চিকিৎসার জন্য অন্যতম প্রবক্তা। প্রধান প্রতিরক্ষাকারী হিসেবে পরিচিত।

 

একজীবনে সফলতার প্রধান শর্ত সুপরিকল্পনা

সারা বিশ্বের রাজনৈতিক আলোচনায় এখন বাইডেন সর্বাধিক আলোচিত। আর তার নব্য ঘরানার প্রশাসন নিয়েও জল্পনা-কল্পনা অন্তহীন। তারই ধারাবাহিকতায় জেনিফার গ্রানহাম নামটি এখন আলোচনার শীর্ষে।

শুধু গ্রানহাম নামেই সারা বিশ্বে আলোচিত। পুরো নাম জেনিফার গ্রানহাম। জন্ম ১৯৫৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। জন্ম ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ভ্যানকোভারে। বর্তমানে রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, লেখক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার হিসেবে সুখ্যাত। ২০০৩ সাল থেকে ২০১১ সাল অবধি ছিলেন মিশিগানের গভর্নর। ২০১৭ সালে প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনে রাজনৈতিক ভাষ্যকার হিসেবে যুক্ত হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিন সন্তানের মা।

মাত্র চার বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে কানাডা থেকে অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রেও এসেছিলেন। আনাহিম, সান জোসে এবং সান কার্লোসে তিনি বেড়ে ওঠেন। ১৯৭৭ সালে সান কার্লোস হাইস্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার আগে ইদা প্রাইস জুনিয়র হাই এবং ডেল মার হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। মিস সান কার্লোস সুন্দরী প্রতিযোগিতায় তিনি জয়ী হয়েছেন।

শৈশব থেকেই হলিউডে অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তেমন সফল হতে না পেরে অভিনয় ছেড়ে দেন। ১৯৭৮ সালে ট্যুর গাইড হিসেবে চাকরি করেন। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসে পরিসেবা এবং রেডউড সিটিতে মেরিন ওয়ার্ল্ড আফ্রিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম নারী ট্যুর গাইড হিসেবেও কাজ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নতুন মন্ত্রিসভার জ্বালানিমন্ত্রী হিসেবে জেনিফার গ্রানহামের নাম ঘোষণা করেছেন। ইতোমধ্যে বাইডেন নিজে গ্রানহামকে সবার সামনে উপস্থিত করে তার যোগ্যতা সম্পর্কে সবাইকে ধারণা দেন। মূলত এরপর থেকেই গ্রানহাম নামটি আরও বেশি গুরুত্ব পায়।

সাবেক গভর্নর জেনিফার গ্রানহাম সম্পর্কে জো বাইডেন বলেন, আমার ভালো বন্ধু তিনি। জ্বালানি ও পরিবেশ বিভাগের সদস্যরা মেধাবী, যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছেন। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে প্রশাসনে গ্রানহাম ভবিষ্যতে সুদক্ষতার সঙ্গে কাজ করে নিজেকে আরও যোগ্য প্রমাণ করবেন।

সম্ভাব্য নতুন মন্ত্রিসভার পরিচিতি অনুষ্ঠানে জ্বালানিমন্ত্রী করায় ও তার প্রতি আস্থা রাখায় শুরুতেই জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান গ্রানহাম।

সামনের সময়ে সব দেশ ও গাড়ি কোম্পানিগুলো বৈদ্যুতিক গাড়ি ও ব্যাটারি তৈরিতে ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে। সৃষ্টি হবে লাখ লাখ কর্মসংস্থান। সুতরাং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে অপার সম্ভাবনা সামাল দিতে পারা দেশগুলোই থাকবে করোনা অর্থনীতি জয়ী দেশগুলোর সামনের কাতারে। যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে কোনোভাবেই পিছিয়ে থাকবে না বলে জানান ৬১ বছর বয়সি গ্রানহাম।

বাইডেন প্রশাসন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নির্বাচনের আগে থেকেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাই জ্বালানির উৎস বিশেষ করে গ্যাস, কয়লা আর তেলের ব্যবহার কমিয়ে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে এমন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করবে বাইডেন প্রশাসন। এ ব্যাপারে গ্রানহাম এখন সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। অতীতে তিনি দেশের জ্বালানি শিল্পকে কীভাবে গ্যাস, তেল ও কয়লানির্ভরতা থেকে বায়ু ও সৌর জ্বালানিতে রূপান্তরিত করা যায় তার ওপর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড্যান কামম্যান জেনিফার গ্রানহাম সম্পর্কে বলেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তিনি অসাধারণ ও অভাবনীয়। কারণ তিনি ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি বোঝেন এবং জানেন। কীভাবে বড় দায়িত্ব পরিকল্পনার সঙ্গে এগিয়ে নিতে হয় তাও তার অজানা নয়। ২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বারাক ওবামা নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়ার কথা আলোচনায় এসেছিল।

চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হবে। সফল হতে হলে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সুস্পষ্ট আর সম্যক ধারণা থাকাটা প্রথম শর্ত। সময় যেমনই আসুক ব্যবস্থাপনা আর সুপরিকল্পনা থাকলে তা থেকে উতরিয়ে যাওয়া কঠিন নয়। করোনা জয় করে জীবন একদিন স্বাভাবিক হবেই। বিশ্বাস নিয়ে একটু একটু করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। প্রতিদিনের কাজেও সফলতা আর না পারা থাকে। তাই জয়-পরাজয় নিয়ে থমকে না থেকে শুধু কাজ করে গেলে সফলতার পথ আপনা থেকেই অনুকূলে আসে। নিজের কথাগুলো এভাবেই জানিয়েছেন জেনিফার গ্রানহাম।

 

গরম ভাতে বেলে-টমেটোর টক

মাছে ভাতে বাঙালি। গরম ভাতের সঙ্গে মাছের বিভিন্ন পদ খিদে আরও বাড়িয়ে তোলে। মাছ খেতে সবাই কমবেশি পছন্দ করে থাকেন। মাছ দিয়ে বিভিন্ন পদ তৈরি করা যায়।

বেলে মাছ অনেকেরই পছন্দের। এ মাছের টক খেয়েছেন কখনো। রান্না করতেও কম সময় লাগে; আর স্বাদেও অনন্য বেলে-টমেটোর টক।

টমেটো ও মাছ দিয়ে দুর্দান্ত এই পদ চাইলেই দুপুরে রান্না করতে পারেন। উপকরণও লাগবে সামান্য। চলুন তবে জেনে নিন রেসিপি-

উপকরণ

১. বেলে মাছ ৪০০ গ্রাম
২. টমেটো কুচি ১টি
৩. পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ
৪. রসুন বাটা ১ চা-চামচ
৫. জিরা বাটা ১ চা-চামচ
৬. কাঁচা মরিচ ফালি ২-৩টি
৭. হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ
৮. মরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ
৯. লবণ স্বাদমতো
১০. তেল প্রয়োজনমতো
১১. পানি আধা কাপ।

পদ্ধতি

প্রথমে মাছ কেটে ধুয়ে নিন ভালোভাবে। এর সঙ্গে লবণ, হলুদ ও রসুন বাটা মেখে ফ্রাইপ্যানে তেল দিয়ে ভেজে তুলে রাখুন।

এবার প্যানে তেল গরম করে বাটা ও গুঁড়ো মশলাসহ লবণ দিয়ে কষিয়ে নিন। সামান্য পানি দিয়ে নিবেন।

মশলা কষানো হলে টমেটো কুচি দিয়ে একটু নেড়েচেড়ে পানি দিন। পানি ফুটে উঠলে বেলে মাছগুলো ঢেলে দিন।

ঝোল ঘন হলে কাঁচা মরিচ দিয়ে নামিয়ে নিন। চাইলে ধনেপাতা কুচিও নামানোর আগে দিতে পারেন। গরম ভাতের সঙ্গে এই পদ খেতে খুবই মজাদার।

 

প্রয়োজন পারিবারিক সচেতনতা

সম্প্রতি রাজধানীর কলাবাগানে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ১৭ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে সদ্য কিশোর বয়স পার করা তার ১৮ বছরের এক বন্ধু।

চলতি বছরের শুরুর দিকেই রাজধানীর কামরাঙ্গী চরের কয়লাঘাট এলাকায় পায়ে পাড়া দেওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হত্যা করা হয়েছে সিফাত নামের ১২ বছর বয়সি এক শিশুকে।

এ ঘটনায় যে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়- তাদের সবার বয়সও ১০ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। শুধু এ দুটি ঘটনাই নয়, প্রায়ই ধর্ষণ, ইভটিজিং, চুরি, আত্মহত্যা, মাদকসেবন, হত্যা থেকে শুরু করে এমন সব লোমহর্ষক কর্মকাণ্ড আমরা আশপাশে দেখি কিংবা পত্রিকা বা সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি যেখানে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্ত দু’জনই অপ্রাপ্তবয়স্ক।

এ বিষয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালের মনস্তত্ত্ববিদ তারানা আনিস বলেন, ‘কিশোর-কিশোরীরা অপরাধ প্রবণতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। শিশু বিকাশের কয়েকটি ধাপ রয়েছে এবং প্রতিটি ধাপের কিছু চাহিদা বা বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। কিশোর বয়সে মনের মাঝে নানারকম অ্যাডভেঞ্চার কাজ করে। এ বয়সে তারা নিজেকে প্রকাশ করতে চায়। আত্মপ্রকাশের চাহিদা তাদের কৌতূহলপ্রিয় করে তোলে। কৌতূহলের বশে তারা নতুন কিছু জানতে চায়, করতে চায়। তাদের একটা আলাদা জগৎ থাকে, মতামত থাকে। তারা চায় তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হোক। সামান্য প্রলোভন, কৌতূহল, আনন্দ ও ক্রোধ তাদের আলোড়িত করে। যা অনেক সময় কিশোর-কিশোরীদের বিপথগামী করে তোলে। তাদের বাধা দেওয়া হলে, তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া না হলে তারা সেই কাজটি করার জন্য আক্রমণাত্মক ও অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে।’

করোনার কারণে অনেকদিন ধরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এখন ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট থেকে শুরু করে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজ অনলাইনে করতে হচ্ছে। আবার বাইরে যাওয়ার সুযোগ কমে যাওয়ায়, ইনডোর-আউটডোর গেমের সুযোগ কমে যাওয়ায় বর্তমানে ইন্টারনেটেই শিশু-কিশোরদের বেশিরভাগ সময় কাটছে। এ সুযোগে তারা ইন্টারনেটে নানা ধরনের প্রাপ্তবয়স্ক মুভি দেখছে, গেম খেলছে, সামাজিক মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। ইন্টারনেটে মারামারি, ধ্বংসাত্মক গেম খেলে কিশোরীরা বাস্তবেও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে। সিনেমা, অপরাধবিষয়ক বিভিন্ন সিরিয়াল দেখে তারা অপরাধ সংঘটনের বিভিন্ন কৌশল শিখছে। চাওয়া-পাওয়া বা মতের মিল না হলে, ধর্ষণে বাধা দিলে খুন করে ফেলছে বন্ধু বা সহপাঠীকেই।

মনস্তত্ত্ববিদ তারানা আনিস জানান, ‘বয়ঃসন্ধিক্ষণে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে হরমোনাল চেঞ্জ হয়। এ বয়সে তাদের সেক্সের প্রতি আগ্রহ, কৌতূহল তৈরি হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সেক্স রিলেটেড বিষয়গুলো নিয়ে আমরা সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করি না। সচেতন করারও প্রয়োজন বোধ করি না। এতে করে তারা সেক্স রিলেটেড বিষয়গুলো বন্ধুবান্ধব, সহপাঠীদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করে। এতে অনেক ক্ষেত্রেই এ বিষয়ে তারা ভুল ইনফরমেশন পায়। যেটা তাদের ভুলের দিকেই প্রভাবিত করে। এমনও হচ্ছে কিশোর বা কিশোরীরা হয়তো শিক্ষামূলক কোনো কনটেন্ট গুগলে সার্চ করছে কিন্তু পাশে প্রাপ্তবয়স্ক বা নিষিদ্ধ কোনো কনটেন্ট চলে আসছে- এসব কনটেন্ট কিন্তু তাদের কৌতূহল প্রবণ করে তোলে। আবার ওই কনটেন্টটি সামনে চলে আসার মুহূর্তে অনেক সময় মা-বাবা তা দেখে ফেলছে এবং সন্তানকে এসব দেখার কারণে বকাঝকা করছে। এতে কিন্তু ওর মধ্যে মা-বাবা ওকে ভুল বুঝল এমন একটা ধারণা জšে§, সঙ্গে লুকোচুরি করে এ জিনিসগুলো দেখার প্রতি আগ্রহ তৈরি করে।’

শুধু ইন্টারনেট বা বাবা-মায়ের অতিশাসন নয়, মাতা-পিতার অযত্ন-অবহেলা, উদাসীনতা, সন্তানকে প্রয়োজনীয় ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা না দেওয়া, পিতা-মাতার ঝগড়া বিবাদ, ভাঙন, দারিদ্র্য, আর্থিক প্রাচুর্যতা, সুষ্ঠু বিনোদনের সংকট, মাদকসেবন, খারাপ সঙ্গসহ আরও বিভিন্ন কারণ কিশোরদের অপরাধী করে তোলে।

‘কিশোর বয়সে সন্তানকে খারাপ সঙ্গ থেকে দূরে রাখতে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। তাকে তার মতো করেই বুঝতে হবে, মিশতে হবে। মনে করুন আপনি আপনার মেয়ের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশলেন। সেই বন্ধুত্ব থেকে আপনার মেয়ে আপনাকে এসে বলল মা ওই ছেলেটা আমাকে প্রোপোজ করেছে। এটা শুনে আপনি তাকে বকাঝকা করলেন কিংবা এ জন্য তাকেই দোষারোপ করলেন- এটা কিন্তু সঠিক পদ্ধতি নয়। আপনার সন্তানের সঙ্গে বন্ধু হয়েই তাকে ধীরে ধীরে বিষয়টির নেগেটিভ দিকগুলো বুঝাতে হবে। সন্তানের সঙ্গে ইভেকটিভ কমিউনিকেশন বাড়াতে হবে। অর্থাৎ তাদের কথাগুলো মন দিয়ে শুনতে হবে। তারা কী বলতে চাচ্ছে সেটা বোঝার চেষ্টা করতে হবে এবং জাজমেন্টাল না হয়ে অনেক বিষয় চিন্তা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পাশাপাশি তাকে সমান হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। বাসার কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার মতামতকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে’- বলে তিনি মনে করেন ।

বাবা-মায়ের মধ্যে যদি সব সময় ঝগড়া বিবাদ লেখে থাকে, তাদের মধ্যে যদি সম্মানসূচক সম্পর্ক না থাকে তাহলে সন্তানরাও এ ধরনের নেতিবাচক আচরণ শিখে। কারণ তারা যত না শুনে শেখে তার চেয়ে অনেক বেশি দেখে শেখে। আপনি সন্তানকে বলছেন মোবাইল না চালাতে, টিভি না দেখতে কিন্তু আপনি নিজে সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে পড়ে আছেন, সিরিয়াল দেখছেন। এতে কিন্তু আপনার কথাগুলো আপনার সন্তান মান্য করবে না। কারণ বড়রা বা বাবা-মা যেটা করে না শিশুরা ধরেই নেয় যে, তারা সেটা না করলেও চলবে।

সন্তানকে রক্ষা করা বাবা-মায়ের দায়িত্ব। তবে সন্তানকে বিপদ থেকে রক্ষার জন্য সর্বক্ষণ চোখে চোখে রাখা কোনো ভালো অভ্যাস নয়। সন্তান কার সঙ্গে মিশল, ইন্টারনেটে কী করছে এ বিষয়গুলো অবশ্যই মনিটরিং করতে হবে। কিন্তু এ মনিটরিং যেন টর্চারের মতো না হয়। সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সেই সঙ্গে শুধু সন্তান ঠিকমতো খাচ্ছে কিনা বা ঘুমাচ্ছে কিনা এ বিষয়গুলো চিন্তা না করে তার সঙ্গে কানেকশন বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। কারণ সন্তানকে কারেক্ট করার চেয়ে তার মনোজগতের সঙ্গে কানেকশন বাড়ানো বেশি জরুরি। এতে করে সে ভুল পথে পা বাড়ানোর আগেই আপনি তা বুঝতে পারবেন এবং সংশোধনের সুযোগ পাবেন।

হাজার ব্যস্ততার মাঝেও বাবা-মায়েদের সন্তানের সঙ্গে গুণগত সময় ব্যয় করতে হবে। তাদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। ছোটবেলা থেকে ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে মিশতে দিতে হবে। এতে বড় হলে কিশোরদের সহপাঠী বন্ধু বা মেয়েদের প্রতি অতি কৌতূহল তৈরি হবে না। স্কুলগুলোতে পাঠ্যসূচিতে সেক্স এডুকেশন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং ক্লাসে আলোচনা করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।-যুগান্তর

 

গ্রেটার বিরুদ্ধে ভারতে মামলা

ভারতের নতুন কৃষি আইনের বিরোধিতা করে দেশটির কৃষকদের পক্ষে কথা বলায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী গ্রেটা থুনবার্গের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দিল্লি পুলিশ।

এর আগে বুধবার রাতে সিএনএনের একটি নিউজ টুইটারে শেয়ার করে সেখানে কৃষকদের পক্ষে কথা বলে গ্রেটা। এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দিল্লি পুলিশ তার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও শত্রুতা ছড়ানোর অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে।

এর আগে একই লিংক শেয়ার করে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সংগীতশিল্পী পপস্টার রিহানা। তিনি কৃষক আন্দোলনের সংবাদ শেয়ার করে লেখেন, ‘কেন আমরা এই বিষয় নিয়ে কথা বলছি না?’

এদিকে সর্বেশেষ একটি টুইটে গ্রেটা লেখেন, আমি এখনো কৃষক এবং তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সমর্থন করছি। কোনো হুমকি, ঘৃণা অথবা মানবাধিকার লঙ্ঘন আমাকে সরাতে পারবে না।

সূত্র: এনডিটিভি

 

উইঘুর ‘নারী ধর্ষণ’: চীনকে ফল ভোগের হুশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের

চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিম সংখ্যালঘুদের আটক রাখার বন্দিশিবিরগুলোতে নারীরা ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এমন খবরে ‘গভীরভাবে উদ্বেগের’ কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি চীনকে এর ফল ভোগ করতে হবে বলেও হুশিয়ারি দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।

বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে শিনজিয়াংয়ে সংঘটিত ‘বর্বরতার জন্য চীনের মারাত্মক পরিণতি ভোগ করা উচিত’ বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, উইঘুর নারীদের ওপর চলা অবিচার দেখে তারা বিচলিত হয়ে পড়েছে। চীনের আটককেন্দ্রের সাবেক ভুক্তভোগী ও প্রহরীর বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া জানায় যুক্তরাষ্ট্র।

একসময় বন্দি হিসেবে থাকা কয়েকজন ও একজন নিরাপত্তারক্ষী বিবিসিকে ক্যাম্পে সংগঠিতভাবে দলবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রমাণ দেখা কিংবা এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন।

গত বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতিবেদনটি পুরোটাই মিথ্যা। তবে চীনে বন্দিশিবিরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনেও বিস্তারিত বিবরণ উঠে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, চীনের জিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘু উইঘুর ও অন্য মুসলিমদের আটকে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং নারীদের ওপর অত্যাচার চালানোর খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

তিনি আরো বলেছেন, এই নৃশংসতা বিবেককে নাড়া দেয় এবং এর গুরুতর ফল অবশ্যই তাদের ভোগ করতে হবে।

 

শিক্ষিকা এখন মুদি-দোকানি

চন্দনা সাহা, দুই সন্তানের জননী। ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ভালকুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা। চাকরি করতেন স্থানীয় গোবিন্দাসী ক্যাডেট স্কুলে। বিগত আট বছর ধরে স্কুলে চাকরি করে আসছিলেন।

স্বামী বিপ্লব সাহা দুই বছর আগে ব্রেইন স্ট্রোক করে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়। কিন্তু তাতেও অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। এরই মাঝে শুরু হয় বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় চন্দনা-বিপ্লবের সুখের সংসার। সন্তানদের মুখের আহার ও অসুস্থ স্বামীর ওষুধের টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেয়ে যান চন্দনা।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত ৩৫টি কিন্ডারগার্টেনের কর্মজীবী ৫০০ শিক্ষক-কর্মচারী বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। চন্দনা সাহা (৩৫) তাদেরই একজন সংগ্রামী নারী।

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশের মতো এ উপজেলার কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছেন চন্দনা সাহার মত অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা। অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী ঋণ করে সংসার চালাচ্ছেন। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় অনেকে বিভিন্ন পেশার কাজ করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

করোনা ভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। সর্বশেষ ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলে চরম হতাশায় পড়েছেন চন্দনার মতো অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীরা। প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতা না পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

চন্দনা সাহা জানান, আমি আট বছর ধরে গোবিন্দাসী ক্যাডেট স্কুলে চাকরি করি এবং স্বামী বিপ্লব সাহা একটি ফ্লেক্সিলোডের দোকান চালিয়ে যা রোজগার হতো তা দিয়ে আমাদের চার সদস্যের সংসার ভালোই চলতো। কিন্তু বিগত দুই বছর আগে হঠাৎ আমার স্বামীর ব্রেইন স্ট্রোক হয়। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। কিন্তু তাতে তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। এছাড়া তিনি কাজ কর্মও করতে পারেন না। বর্তমানে আমার সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই কোনো উপায় না দেখে ধারদেনা করে নিজ বাড়িতেই একটি মুদি দোকান দিয়েছি। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দোকানে বিক্রি করে কোন রকম সংসার চালাচ্ছি।

গোবিন্দাসী ক্যাডেট স্কুলের পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, সরকারি যাবতীয় কার্যক্রমের সঙ্গে কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষকরা জড়িত। বৈশ্বিক এ মহামারির কবলে পড়ে উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন উপজেলার কয়েকশ শিক্ষক-কর্মচারী। বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান বন্ধ থাকায় অভিভাবকরা বেতন পরিশোধ না করায় স্কুল মালিকরা শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারছেন না। যার ফলে এমন নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেক কিন্ডার গার্টেনের বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে না পাড়ায় আসবাব পত্র বিক্রি করে দিয়ে দায় দেনা পরিশোধ করা হয়েছে। এমন দুর্দিনে কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খোলার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

 

ঈশ্বরদীর রত্নগর্ভা আমেনা খাতুনের ইন্তেকাল

ঈশ্বরদীর মহিয়সী নারী, রত্নগর্ভা মাতা এবং বিশিষ্ট ঠিকাদার মরহুম মোজাহার আলীর স্ত্রী আমেনা খাতুন (৯০) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টায় ঈশ্বরদীর চরসাহাপুর নতুন হাট মোড়ে নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারনে তিনি মারা যান।

সম্প্রতি ঈশ্বরদীর খ্যাতিমান এই নারী মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে পাবনা জেলার সফল নারী জননী হিসেবে ‘জয়ীতা’ পদকে ভূষিত হন। জীবদ্দশায় তিনি ৭ ছেলে এবং ১ মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করেছেন। যারা প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

রত্নগর্ভা মা আমেনা খাতুনের বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পুলিশের সাবেক ডিআইজি মাহফুজুল ইসলাম, মেজ ছেলে সড়ক ও জনপথের বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম (মরহুম), তৃতীয় ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনোয়ারুল ইসলাম, চতুর্থ ছেলে অতিরিক্ত সচিব মনোয়ারুল ইসলাম, পঞ্চম ছেলে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নাজমুল হাসান, ষষ্ঠ ছেলে পুলিশের এসপি সাইফুল ইসলাম এবং ছোট ছেলে ঠিকাদার ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নাহিদুল ইসলাম। একমাত্র মেয়ে মাহফুজা ইসলাম মিনু মাস্টার্স পাশ ও সমাজ সেবক।

সফল ও গুণী এই নারীর নামাজে জানাজা শুক্রবার বাদ মাগরিব চরসাহাপুর কেন্দ্রীয় গোরস্থানে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি ছেলে-মেয়ে, নাতি নাতনী, আত্নীয় স্বজন ও প্রচুর গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

 

 

কুমড়া বড়ি বানানোর সহজ পদ্ধতি

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এক খাবার হলো কুমড়া বড়ি। শীত এলেই কুমড়া বড়ি বানানোর ধুম পড়ে যায়। অনেকে একে ডালের বড়িও বলে থাকেন। তরকারির স্বাদ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় বড়ি। মজাদার বড়ি তরকারির পাশাপাশি ভর্তা করেও খাওয়া হয়।

কুমড়া বড়ি বানানো বেশ ঝামেলার বলে মনে করেন অনেকেই! তবে চাইলেই কিন্তু সহজ উপায়ে বাসায় তৈরি করে নিতে পারবেন কুমড়ার বড়ি। বড়ি অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করেও খাওয়া যায়। জেনে নিন রেসিপি-

উপকরণ
১. মাসকলাইয়ের ডাল ১ কাপ
২. চালকুমড়া একটার অর্ধেক
৩. পাঁচফোড়নের গুঁড়া আধা চা চামচ
৪. কালোজিরা সামান্য

পদ্ধতি: প্রথমে চালকুমড়া মিহি করে কুচি করে নিন। তারপর ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। যেন এর টক কস ভাব না থাকে। মিহি ভালো না হলে বেটেও নিতে পারেন। এদিকে সারারাত ভিজিয়ে রাখা মাসকলাইয়ের ডাল ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

যতক্ষণ না ডাল থেকে পরিষ্কার পানি বের হবে; ততক্ষণ ধুতেই হবে। যখন ডালগুলো সাদা হয়ে যাবে; তখন বুঝবেন হয়ে গেছে। তারপর পাটায় বা ব্লেন্ডারে বেটে নিতে হবে।

একটা বড় গামলায় বাটা ডাল ও চালকুমড়া ভালোভাবে অল্প অল্প করে মিশিয়ে মাখাতে হবে। ডাল মাখাতে মাখাতে একটা ফ্লাপি ভাব আনতে হবে।

মাথায় রাখবেন, এ মিশ্রণটি অনেকক্ষণ ধরে মাখাতে হবে। তারপর ছাদে পরিষ্কার পাতলা কাপড় পেতে ছোট ছোট করে বড়ি দিতে হবে। দু’দিন ভালোভাবে রোদ লাগলেই শুকিয়ে হয়ে যাবে বড়ি।

প্রথম দিন দুপুরের দিকে হাত দিয়ে দেখে যদি মনে হয় একটু শক্ত ভাব হয়ে গেছে। তাহলে কাপড় উল্টে বড়ির উল্টোপাশে রোদে দিবেন। ৫-৭ দিন পর থেকে রান্নায় ব্যবহার করতে পারবেন।

 

ঘরেই তৈরি করুন মজাদার ‘নাচোস’

বিভিন্ন ফাস্টফুড হাউস কিংবা রেস্টুরেন্টে বিদেশি খাবার নাচোসের দেখা মেলে। ছোট-বড় সবারই পছন্দ মেক্সিকান খাবারটি। এরই মধ্যে বাঙালির কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মুচমুচে নিমকি বা কর্ন চিপসের সঙ্গে সালাদ, চিকেন, মেয়োনিজ ও সসের দুর্দান্ত মিশেলে তৈরি হয় নাচোস।

এ খাবারে অনেক সস ও মেয়োনিজ থাকে, তাই বেশি ঝাল হয় না। এ কারণেই কম ঝালপ্রেমী ও শিশুদের কাছে নাচোস পছন্দের খাবার। তাই আপনি চাইলে কিছু উপকরণ দিয়ে ঘরেই তৈরি করে নিতে পারবেন খাবারটি। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক রেসিপি-

চিপসের উপকরণ
১. ভুট্টার আটা ২ কাপ
২. ময়দা আধা কাপ
৩. পনির গুঁড়া ২০০ গ্রাম
৪. কাঁচা মরিচ কুচি ১ টেবিল চামচ
৫. লবণ পরিমাণমতো
৬. মাখন ২৫ গ্রাম
৭. কুসুম গরম পানি পরিমাণমতো।

 

শীতে রুটি দীর্ঘক্ষণ নরম রাখার উপায়

স্বাস্থ্য সচেতনরা ভাতের বদলে এখন রুটি খেতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে রুটি ঠান্ডা হলে খেতে ভালো লাগে না। তাই বলে তো, দিনে ২-৩ বার রুটি বানিয়ে খাওয়া সম্ভব নয়। এজন্য অনেকেই এখন কিচেন হ্যাকস মেনে রুটি বেশি করে বানিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করেন। এতে যখন প্রয়োজন; তখনই বের করে চুলায় সেঁকে নিলেই হয়ে যায়।

তবে শীতের দিনে রুটি বানানোর কিছুক্ষণ পরই তা শক্ত হয়ে যায়। যদিও বানানোর কারিশমার ওপর নির্ভর করে রুটি মখমলের মতো হবে, না-কি চামড়ার মতো শক্ত হবে। অনেকেই রুটি তৈরির সঠিক উপায় কিংবা সংরক্ষণের উপায় জানেন না, এজন্যই বাধে বিপত্তি।

আটা যেভাবে মাখবেন: ভুষিযুক্ত আটায় বেশি ফাইবার থাকে, যা স্বাস্থ্যকর। এজন্য এমন আটা নিন পরিমাপ অনুযায়ী। এর মধ্যে লবণ মিশিয়ে নিন এক চিমটি। সামান্য তেল মিশিয়ে গরম পানি দিয়ে মাখিয়ে নিন। গরম পানি দিয়ে রুটি তৈরি করলে তা যেমন নরম হয়; তেমনই হজমেও সাহায্য করে।

আটা যাতে খুব বেশি শক্ত বা নরম না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। আটা ভালো করে মথে নিতে হবে। যখন দেখবেন, আঙুলে যাতে না লেগে থাকে ততক্ষণ মথতে হবে। এরপর পাতলা ভেজা কাপড় দিয়ে অন্তত ১৫ মিনিট ঢেকে রাখুন।

জেনে নিন কোন উপায়ে রুটি বানালে ৪-৫ ঘণ্টা পরে খেলেও রুটি একই রকম নরম থাকবে-

>> রুটি বানানোর আগে একবার ভালো করে মেখে নিন আটার মণ্ড।

>> লেচি কাটার আগে দেখুন, তা নরম আছে কি-না! আটা বা ময়দা বেশি টাইট মাখলে কিন্তু রুটি ফুলবেও না, নরমও থাকবে না। তাই মণ্ডটা একটু নরম আছে কি-না দেখে নিন।

>> বেলার সময় লক্ষ্য করুন রুটি ঘুরছে কি-না। যতটা সম্ভব পাতলা করে রুটি বেলবেন।

>> আগুনের উপর রেখে যদি রুটি ফুলিয়ে নিতে পারেন, তা সবচেয়ে ভালো হবে। এজন্য রুটির একেকটা দিক আগুনের উপরে ১৫-২০ সেকেন্ডের বেশি রাখবেন না। এতে রুটি পুড়ে শক্ত হয়ে যাবে।

>> রুটি সেঁকা হয়ে গেলে, গরম তাওয়ায় অল্প পানি দিয়ে রুটিগুলো সেই জলে একবার বুলিয়ে নিয়েই তুলে নিন। তারপর এয়ারটাইট পাত্রে রেখে দিন।

>> হটপটে কিংবা লাঞ্চ বক্সে একটি ভেজা নরম কাপড় বিছিয়ে রাখুন। রুটি সেঁকা হয়ে গেলে তার মধ্যে রেখে, ভালো করে কাপড়টি দিয়ে মুড়ে নিন।

>> তন্দুরি রুটি দোকান থেকে কিনে এনে কয়েক ঘণ্টা পর খেলে তা শক্ত হয়ে যায়। তন্দুরি গরম করতে একটা পাত্রে গরম পানি নিয়ে তার উপরে জালি রেখে তন্দুরিতে একটু স্টিম দিয়ে নিতে হবে। এতে তন্দুরি রুটি গরম ও নরম হবে।

>> রুটি কখনো দ্বিতীয়বার গরম করবেন না। তাহলে তা আরও শক্ত হয়ে যাবে।

 

মা হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধনে ২ মাসের শিশু

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার গৃহবধূ খাদিজা নাসরিন হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।

সোমবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে চরফ্যাশনের সদর রোডে নিহতের ৫৩ দিনের শিশুকে নিয়ে পরিবারের সদস্য, শিক্ষক, সাংবাদিক, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন সংগঠন এ মানববন্ধেনে অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন চরফ্যাশন পৌর কাউন্সিলর আকতারুল আলম সামু, চরফ্যাশন সরকারি টিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শামসুন্নাহার স্নিগ্ধা, মহিলা কলেজের প্রভাষক মাহমুদা খানম মিলি প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, চরফ্যাশন উপজেলার চরফ্যাশন সরকারি কলেজের অফিস সহকারী গৃহবধূ নাসরিন হত্যার পর ৫৩ দিন অতিবাহিত হয়েছে। তারপরও মামলার মূল আসামি তার স্বামী কামাল হোসেনসহ জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। দ্রুত প্রধান আসামি কামালসহ জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।

গৃহবধূ খাদিজা নাসরিন চরফ্যাশন পৌর ১ নম্বর ওয়ার্ডের হাদিস মিস্ত্রির বড় মেয়ে ও চরফ্যাশন উপজেলার চরফ্যাশন সরকারি কলেজের অফিস সহকারী ছিলেন।

গত বছরের ২২ নভেম্বর রাতে কালিয়াকান্দি এলাকায় শ্বশুর বাড়িতে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয় খাদিজার। এর দুদিন আগে তিনি এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।

নিহতের ভাই সাইফুল ইসলাম নাসরিনের স্বামী কামাল হোসেন ও তার পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগে গত ১ জানুয়ারি একটি হত্যা মামলা করেন।

 

বাংলাদেশের কোন ঘটনাগুলো ধর্ষণ বলে বিবেচিত হয়

বাংলাদেশে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন বিরোধী কঠোর আইন থাকলেও এ নিয়ে বিভ্রান্তিও কম নেই। প্রায়ই স্বামীর দ্বারা স্ত্রী ধর্ষণের শিকার কিংবা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ, আবার সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক হওয়া সত্ত্বেও সেটা ধর্ষণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের নারী ও শিশু দমন নির্যাতন আইনে শিশুকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ১৬ বা তার কম বছর বয়সী ছেলে ও মেয়ে উভয়কে।

মানবাধিকার সংস্থা ব্লাস্টের গবেষণা বিশেষজ্ঞ তাকবির হুদার মতে, এই সংজ্ঞায় শিশুকে ভুক্তভোগী হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই বয়সে মৌখিক বা লিখিত কোন সম্মতি দেয়ার মতো ক্ষমতা শিশুর গড়ে ওঠেনা।

তাই এই বয়সী কেউ যদি যৌন সম্পর্কে সম্মতি দিয়েও থাকে সেটা আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে না। নারী ও শিশু দমন নির্যাতন আইনে যদি কোন পুরুষ ১৬ বছরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে যদি তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ছাড়া যৌন সম্পর্ক করেন তারপরও তিনি ওই নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবে।

আবার বিবাহ বন্ধন ছাড়া ১৬ বছরের বেশি বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতি ছাড়া, ভয় দেখিয়ে বা প্রতারণা করে কেউ যদি যৌন সম্পর্ক করে সেটা ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে।

ভুক্তভোগীর বয়স ১৬ বছরের বেশি হলেও যদি প্রতারণা করে বা ব্ল্যাকমেইল করে তার সম্মতি আদায় করে যৌন সম্পর্ক করা হয়, সেটাও ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে।
আইনে দোষী সাব্যস্ত হলে দায়ী ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কিন্তু শিশু আইনে শিশুর সংজ্ঞায় বয়সের সীমা রাখা হয়েছে ১৮ বছর বা তার কম।

সেক্ষেত্রে অপরাধীর ক্ষেত্রে এই বয়স প্রাধান্য পাচ্ছে। ভুক্তভোগীর বয়স এখানে মুখ্য নয় বলে জানিয়েছেন মি. হুদা।

তিনি বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তির বয়স যদি ১৮ বা তার কম থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হলেও সেটার বিচার হবে শিশু আইনে।

অন্যদিকে, নারী ও শিশু দমন নির্যাতন আইনে মামলা সত্ত্বেও ভুক্তভোগী যদি বেঁচে থাকেন এবং তার বয়স যদি ১৮ বছরের নীচে থাকে তাহলে তার শিশু আইনের আওতায় শিশু আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসার সুযোগ আছে। তবে বিচার হবে নারী ও শিশু দমন নির্যাতন আইন অনুসারেই।

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ

বাংলাদেশে অনেক নারী বিয়ের আশ্বাসে সম্মতি দিয়ে তার সঙ্গীর সাথে যৌন সম্পর্ক করে থাকেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেই পুরুষ তাকে বিয়ে করতে না চাইলে অনেকেই বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

নারী ও শিশু দমন নির্যাতন আইনে যেহেতু বলা আছে, যদি প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি আদায় করে যৌন সম্পর্ক করা হয়, তাহলে সেটা ধর্ষণ হিসেবে দেখা হবে।

এখন বিয়ের প্রলোভন দেখানোর বিষয়টি আইনানুযায়ী প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি আদায়ের মধ্যে পড়লেও আদালতে অনেক সময় সেটা নাও টিকতে পারে।

এটা নির্ভর করে কতদিন ধরে বিয়ের আশ্বাস দেয়া হয়েছে, সম্পর্কের গভীরতা কেমন ছিল, লিখিতভাবে বিবাহিত না থাকলেও ধর্মীয় রীতিতে বিয়ে করেছিলেন কিনা, কোন সাক্ষী আছেন কিনা সেগুলোর ওপরেও নির্ভর করে বলে জানান তাকবির হুদা।

তবে বাংলাদেশের আইনে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কোন নারীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনার কোন সুযোগ নেই।
আইন।

স্বামী দ্বারা স্ত্রী ধর্ষণ

বাংলাদেশের নারী ও শিশু দমন নির্যাতন আইনে, বৈবাহিক ধর্ষণের বিষয়টি কোথাও উল্লেখ নেই।

তবে স্ত্রীর বয়স যদি ১৩ বছরের কম হয়, এবং তার স্বামী যদি জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক করেন তাহলে ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে বৈবাহিক ধর্ষণের অভিযোগ আনতে পারেন।

সেক্ষেত্রে শাস্তি শুধুমাত্র অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্লাস্টের গবেষণা বিশেষজ্ঞ তাকবীর হুদা।

স্ত্রীর বয়স যদি ১৩ বছর বা তার বেশি হয় তাহলে বৈবাহিক ধর্ষণের ফৌজদারি মামলা দায়েরের কোন সুযোগ নেই।

সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পারিবারিক সহিংসতা আইনের অধীনে যৌন সহিংসতার মামলা করলে কিছু প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে।

শুধু দেওয়ানি আদালতে প্রতিকার পাওয়া যাবে অর্থাৎ আদালত স্বামীর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ, ভরণপোষণের আদেশ দিতে পারে।

তবে অভিযুক্ত স্বামী এসব আদেশ লঙ্ঘন করলে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যাবে।

গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান যোগ করা হয়।

এর ফলে বাংলাদেশে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধর্ষণ, ধর্ষণ জনিত কারণে মৃত্যুর শাস্তি প্রসঙ্গে ৯(১) ধারায় এতদিন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

তবে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর যদি মৃত্যু হয় বা গণধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হয় বা আহত হন, তাহলেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছিল।

সেই সঙ্গে উভয় ক্ষেত্রেই ন্যূনতম এক লক্ষ টাকা করে অর্থ দণ্ডের বিধান ছিল।

সেই আইনে পরিবর্তন এনে ধর্ষণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেই মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবনের বিধান রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে অর্থদণ্ডের বিধানও থাকছে।

এর ফলে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান দেয়া সপ্তম দেশ হল বাংলাদেশ।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, ধর্ষণ বা ধর্ষণ-পরবর্তী অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটলেও একই শাস্তি হবে।

যদি কোন ব্যক্তি তার যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে শ্লীলতাহানি করেন তাহলে এটি যৌন নিপীড়ন বলে বিবেচিত হবে।

এজন্য ওই ব্যক্তির অনধিক ১০ বছর এবং ন্যূনতম তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা হবে।

এছাড়া পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে যদি কোন নারী ধর্ষণের শিকার হন, তাহলে যাদের হেফাজতে থাকাকালীন ওই ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে, তিনি বা তারা প্রত্যেকে হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য, সর্বোচ্চ ১০ বছর কিন্তু ন্যূনতম পাঁচ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং ন্যূনতম ১০,০০০ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

তবে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান কার্যকর করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিবৃতি প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

তাদের অভিমত: “চরম শাস্তি সহিংসতাকে অব্যাহত রাখে, তা প্রতিরোধ করে না।”  বিবিসি বাংলা

 

ঢাকা নর্থ লেডিস ক্লাবের পিঠা উৎসব

রাজধানীর উত্তরা-৪ নম্বর সেক্টর পার্কে পৌষ পার্বণ পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকা নর্থ লেডিস ক্লাব উদ্যোগে আয়োজিত এই পিঠা উৎসব পরিণত হয় মিলনমেলায়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ আয়োজনের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় বলি, সবাইকে নিয়ে আমাদের সবার ঢাকা। বর্তমানে শহুরে জীবনে বেশিরভাগ মানুষেরই প্রতিবেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। সামাজিক মেলবন্ধন বাড়াতে পিঠা উৎসবের পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায় আমাদের পাড়া-মহল্লা উৎসব করা দরকার।’

ঢাকা-১৮ আসনের সাংসদ হাফেজ হাবিব হাসান বলেন, ‘এই আয়োজনের জন্য ঢাকা নর্থ লেডিস ক্লাবের সব সদস্যদের ধন্যবাদ জানাই। দিনের শুরুতেই এত সুন্দর একটি পিঠা উৎসবের আয়োজন। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক আনন্দিত। ঢাকা নর্থ লেডিস ক্লাবের সাফল্য কামনা করছি।’

ক্লাবের সভাপতি আরফিনা বিলাল বলেন, ‘ঋতু বৈচিত্র্যের এই দেশে শীত আমাদের অনেকের কাছেই প্রিয়। ঐতিহ্যগত কারণে এই ঋতুর সঙ্গে পিঠার অন্যরকম যোগসূত্র আছে। তাই প্রতিবছর এই শীতকে বরণ করে নেয় পিঠা উৎসবের মাধ্যমে।’

অনুষ্ঠানে সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব খান মোহাম্মদ বিলালসহ ঢাকা নর্থ লেডিস ক্লাবের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

 

কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে স্বামী-স্ত্রীর লড়াই

আগামী ৩০ জানুয়ারি কলারোয়া পৌরসভার অনুষ্টিতব্য নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সাময়িক বরখাস্তকৃত পৌর মেয়র ও উপজেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আক্তারুল ইসলাম ও তার সহধর্মিনী নার্গীস সুলতানা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিয়েছেন।

ইতোমধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে উভয় প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধতা লাভ করেছে। এর ফলে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার চায়ের দোকান, কফি সপ, রেস্টুরেন্টে ভোটারদের মধ্যে একটাই আলোচ্য বিষয় স্বামী-স্ত্রীর প্রার্থী হওয়া নিয়ে।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মেয়র পদে একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন নাকি দুইজনই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে আক্তারুল ইসলামের স্ত্রী নার্গীস সুলতানা বলেন, স্বামীর নামে মামলা থাকায় আমিও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে চাই।

আক্তারুল ইসলাম জানান, প্রয়োজনে দুজনই মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে থাকব। তবে স্ত্রীর প্রচারণায় অগ্রাধিকার রেখে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখব। আমার বিশ্বাস স্বামী-স্ত্রী দুজনই যদি মাঠে থাকি অন্য প্রার্থীর চেয়ে আমরা এগিয়ে থাকব।

 

করোনার ভ্যাকসিন নিলেন রানি এলিজাবেথ

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়েছেন ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও তার স্বামী ডিউক অব অ্যাডিনবার্গ প্রিন্স ফিলিপ। ব্রিটিশ রাজপরিবারের সূত্রে বিবিসি এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার (৯ জানুয়ারি) উইন্ডসের প্রাসাদে রাজ পরিবারের একজন চিকিৎসকের কাছে রানী এবং তার স্বামী করোনার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়া হয়।

লকডাউনের পর থেকে ৯৪ বছর বয়সী রানী এবং ৯৯ বছর বয়সী ফিলিপ উইল্ডসর প্রসাদেই অবস্থান করছেন। মহামারি করোনা থেকে বাঁচতে যুক্তরাজ্যে এরই মধ্যে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ করোনার টিকা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন।

এদিকে যুক্তরাজ্যে নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সংক্রমণ ঠেকাতে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

 

সাদা এপ্রোন রক্ষায় সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে নার্সদের মানববন্ধন

‘নার্সবিদ্বেষী সিভিল সার্জন নিপাত যাক’, ‘আমাদের শরীর থেকে সুরক্ষা পোশাক খুলে নিতে দেব না’ ও ‘সাদা এপ্রোন নিয়ে হয়রানি চলবে না’ স্লোগানসহ নানা প্ল্যাকার্ড নিয়ে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামানের রিুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন নার্সরা।

রোববার (১০ জানুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী কুমিল্লা জেনারেল (সদর) হাসপাতালের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধনে নার্সরা জানান, কর্মস্থলে সাদা এপ্রোন পরিধান করা যাবে না সম্প্রতি এমন নির্দেশনা জারি করেছেন সিভিল সার্জন। তিনি জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না করে আমাদের এপ্রোন নিয়ে টানাটানি করছেন। মানববন্ধনে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) কুমিল্লা শাখার সহ-সভাপতি জাহানারা বেগম, আভা রানী মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌসী আক্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক বুলবুলী আক্তারসহ অন্যান্য উপস্থিত ছিলেন।

তারা বলেন, করোনায় সুরক্ষা হিসেবে সাদা এপ্রোন পরিধান করে আসছি। কিন্তু বর্তমান সিভিল সার্জন এ এপ্রোন পরিধান না করতে নির্দেশ দেন। এ জন্য প্রধান সহকারী হিসাবরক্ষক মো. আতিকুর রহমানের মাধ্যমে কর্মরত অবস্থায় ছবি তুলে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়ে হয়রানি করছেন।

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাতৃকালীনসহ ছুটিসহ বিভিন্ন আবেদন নিয়ে সিভিল সার্জনের দফতরে গেলে প্রধান সহকারী আতিকুর রহমানকে উৎকোচ না দিলে হয়রানির শিকার হতে হয়।

অভিযোগের বিষয়ে প্রধান সহকারী আতিকুর রহমান বলেন, ‘তিন বছর ধরে এখানে আছি। আমার বিরুদ্ধে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।’

কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সাদা এপ্রোন ব্যবহার না করে নার্স ও মিডওয়াইফদের জাতীয় ইউনিফরম পরিধান নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রধান সহকারীর মাধ্যমে উৎকোচ গ্রহণ ও হয়রানির অভিযোগ মিথ্যা।’

 

কন্যাশিশু ভূমিষ্ঠের খবরে নানা উপহার নিয়ে দরজায় পুলিশ

‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ স্লোগান সামনে রেখে মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে ভূমিকা রেখে চলছেন তিনি।

এরই ধারাবাহিকতায় নারীর ক্ষমতায়ন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ এবং লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজে ‘কন্যাসন্তান জন্ম হলে ফোন করুন, উপহার পৌঁছে যাবে সাথে সাথে’ শিরোনামে একটি পোস্ট দেয়া হয় সম্প্রতি। ওই পোস্টে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুমের একটি ফোন নম্বরও দেয়া হয়।

রোববার (১০ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার কেদারগঞ্জ মালোপাড়ার মফিজুল হক ও সুলতানা পারভিন দম্পতির পরিবারে একটি কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। স্বজনরা পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ওই নম্বরে ফোন দিয়ে বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার বিষয়টি জানায়। এর পরই চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা নিউবর্ন বেবি প্যাকেজ, পোশাক, মিষ্টি, ফল এবং ফুলের তোড়া নিয়ে তাদের বাসায় উপস্থিত হন।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার (এসপি) জাহিদুল ইসলাম বলেন, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নারী। এই বিপুল সংখ্যক নারী পিছিয়ে থাকলে সামগ্রিক উন্নয়ন অসম্ভব। তিনি চুয়াডাঙ্গা সর্বস্তরের জনসাধারণের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ এবং লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে সহযোগিতা কামনা করেন।

 

জার্মানিতে নতুন আইন : কার্যনির্বাহী বোর্ডে রাখতে হবে নারী সদস্য

জার্মানিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কার্যনির্বাহী বোর্ডে নারী সদস্য রাখা বাধ্যতামূলক করে নতুন আইন পাস হতে যাচ্ছে। বুধবার দেশটির ক্ষমতাসীন জোট সরকার এই ঐতিহাসিক বিলে সম্মতি জানিয়েছে। খবর এএফপির।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো, যাদের কার্যনির্বাহী বোর্ডে চার বা তার বেশি সদস্য রয়েছে, সেখানে অন্তত একজন নারী সদস্য রাখতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বিচার বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস্টিন ল্যাম্ব্রেখট এই আইনকে ‘একটি শক্তিশালী সংকেত’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি ‘যোগ্যতাসম্পন্ন নারীদের প্রতিনিধিত্বের এই সুযোগ কাজে লাগানোর’ আহ্বান জানান কর্পোরেশনগুলোকে।

পরিবার বিষয়ক মন্ত্রী ফ্রাঞ্জিসকা গিফে বলেন, ‘আমরা দেখাতে পারব যে জার্মানি ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত আধুনিক সমাজের পথে রয়েছে।’

ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানিতে উচ্চপদে নারীদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম। অলব্রাইট ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, জার্মানির ৩০টি বড় তালিকাভুক্ত কোম্পানির ব্যবস্থাপনা বোর্ডে মাত্র ১২.৮ শতাংশ নারী রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ২৮.৬ শতাংশ, ব্রিটেনে ২৪.৫ ও ফ্রান্সে ২২.২ শতাংশ।

করোনাভাইরাস মহামারির সময় জার্মানিতে নারীদের প্রতিনিধিত্ব আরও কমেছে। অক্টোবরে অলব্রাইট জানায়, ১১টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির কার্যনির্বাহী বোর্ড শুধুমাত্র পুরুষদের দ্বারা পরিচালিত হয়।

জার্মানিতে পুরুষদের তুলনায় নারীরা ২০ শতাংশ কম আয় করে থাকে, যা সমগ্র ইউরোপীয় ইউনিউয়নের চেয়ে ১৪ শতাংশ কম। যেসব কোম্পানির মালিকানার অধিকাংশ সরকারের হাতে সেগুলোতে আরও কঠোর হবে এই আইন। এসব কোম্পানির ব্যবস্থাপনা বোর্ডে দুই জনের বেশি সদস্য থাকলে সেখানে অন্তত একজন নারী থাকতে হবে।

 

ছুটির দিনে পাতে রাখুন সুগন্ধি পোলাও

ছুটির দিন মানেই ভরপেট খাওয়া-দাওয়া। পোলাও, বিরিয়ানি, কোফতা, কারি, ডেজার্ট সব কিছুর আয়োজনই থাকে ছুটির দিনটি ঘিরে। এবারের ছুটির দিন পরিবারসহ উপভোগ করতে পাতে রাখুন সুগন্ধি পোলাও। যেকোনো মাংসের সঙ্গে এ পোলাও দারুণ মানিয়ে যাবে। জেনে নিন রেসিপি-

উপকরণ
১. বাসমতি চাল ২ কাপ
২. ঘি ৫ টেবিল চামচ
৩. মাঝারি ২টি পেঁয়াজ কুচি
৪. গরম মশলা গুঁড়া ১ টেবিল চামচ
৫. লবণ প্রয়োজনমতো
৬. চিনি ৫০ গ্রাম
৭. কাজুবাদাম কুচি ২০ গ্রাম
৮. কিশমিশ ২০ গ্রাম
৯. গরম দুধে ভেজানো এক চিমটি জাফরান
১০. মটরশুটি এক মুঠো

পদ্ধতি: প্রথমে ২০ মিনিট চাল ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ভালো করে চাল ধুয়ে নিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। একটি বড় প্যানে ঘি গরম করে তাতে পেঁয়াজ কুচি ও গরম মশলার গুঁড়া দিয়ে ভেজে নিন। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে চাল দিয়ে পাঁচ মিনিট ভাজুন।

পরিমাণমতো পানি ও লবণ দিয়ে ঢেকে রান্না করুন। এরপর জাফরান ভেজানো দুধ, চিনি, কাজু বাদাম ও কিশমিশ দিয়ে ভালোমতো নেড়ে ঢাকনা দিয়ে রান্না করুন। ততক্ষণে পোলাও থেকে সুগন্ধ বের হতে থাকবে। এবার ভাত ফুটলে গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

কনের ইচ্ছায় এক টাকা দেনমোহরে বিয়ে

এটি কোনো চলচ্চিত্রের ঘটনা নয়। ফরিদপুরে একটি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে এক টাকা দেনমোহরে। আজ শুক্রবার দুপুরে শহরের ঝিলটুলী মহল্লার মেজবান পার্টি সেন্টারে কনের দাবির মুখে এবং কনের পরিবারের প্রস্তাবে এক টাকার দেনমোহরে কাবিন সম্পন্ন হয়। এরপর সেখানে আয়োজিত হয় বিয়ে–পরবর্তী ভোজের।

কনে বিপাশা আজিজ (২৫) মাদারীপুরের সাহেবের চর মহল্লার বাসিন্দা আজিজুল হক ও নাসরিন সুলতানার একমাত্র মেয়ে। তবে পরিবারটি ফরিদপুর শহরের আলীপুর মহল্লায় বসবাস করে। বিপাশা ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা পদে কর্মরত। বর আশীকুজ্জামান চৌধুরী (৩০) ব্যবসা করেন। ফরিদপুর শহরের কুঠিবাড়ি কমলাপুর মহল্লার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান চৌধুরী ও তাহমিনা চৌধুরীর ছেলে তিনি।

এ বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কনে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন, তিনি যেহেতু আর্থিকভাবে সচ্ছল, তাই তাঁর বিয়ের কাবিনে দেনমোহর ধরা হবে এক টাকা। কিন্তু ওই বিয়ের অনুষ্ঠানের কাজি দেনমোহরের জায়গায় দুই লাখ টাকা লেখেন। এ ঘটনা জানার পর মেয়ের মা তাঁর মেয়ের সিদ্ধান্ত জানিয়ে এক টাকা দেনমোহর লেখান।

বিয়েতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুরের সামাজিক ফোরাম নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন। তিনি বলেন, সাধারণত দেখা যায় কনেপক্ষই দর-কষাকষি করে কাবিনের সময় দেনমোহর বাড়িয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে এটি একটি ব্যতিক্রম ঘটনা। পাশাপাশি আর্থিকভাবে সচ্ছল এক নারীর আত্মমর্যাদা রক্ষার দৃষ্টান্তও বটে।

তবে এক টাকার দেনমোহরের দৃষ্টান্তকে সাধুবাদ জানাতে পারেননি নারী নেত্রী বেসরকারি আইনি সহায়তা প্রদান প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ফরিদপুরের সমন্বয়কারী শিপ্রা গোস্বামী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মুসলিম বিয়ে একটি চুক্তি। মোহরানা নারীর হক। স্বামীর আর্থিক সংগতি ও নারীর সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে দেনমোহর নির্ধারিত হয়ে থাকে।

শিপ্রা গোস্বামী বলেন, মোহরানার ব্যাপারে আবেগের কোনো স্থান নেই। আবেগের বশে মোহরানায় এক টাকা লেখা যেতে পারে। কিন্তু এটি মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। কেননা, নারী বর্তমানে সচ্ছল হতে পারেন, কিন্তু ভবিষ্যতে তিনি সচ্ছল না–ও থাকতে পারেন।

 

অনলাইনে নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিয়ে প্রচার দরকার

বয়সে কিশোরী সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর টিকটকে ভিডিও বানানোর শখ। তাকে এই জগতে তারকা বানানোর লোভ দেখান কয়েকজন তরুণ। নানাবাড়ি যাওয়ার কথা বলে কিশোরী বাড়ি থেকে বেরোয়। এরপর গণধর্ষণের শিকার হয় সে। এরপর মেয়েটি ভর্তি হয়ে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি)। এই কিশোরীই শুধু না, ইন্টারনেট দুনিয়ায় দ্রুত জনপ্রিয় হতে বা তারকা হতে গিয়ে কিশোরীরা অপরাধের শিকার হচ্ছে। টিকটক, লাইকির মতো ভিডিও প্রকাশের অ্যাপ কিংবা বিগোর মতো লাইভ ভিডিওর অ্যাপে দ্রুত তারকা হওয়ার ইচ্ছা থাকে কমবয়সী অনেক ছেলেমেয়ের। লাখ লাখ অনুসারী, লাইকের আশায় অনেকেই এসব মাধ্যমে যায়। আর এর সুযোগ নেয় অপরাধীরা। এখন নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার অন্যতম মাধ্যম হয়েছে অনলাইন দুনিয়া।

প্রায় দুই বছর আগে ইউনিসেফের জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ৩২ শতাংশ শিশু অনলাইন সহিংসতা, অনলাইনে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ডিজিটাল উৎপীড়নের শিকার হওয়ার মতো বিপদের মুখে রয়েছে। সেখানে ৬৩ শতাংশ ছেলে এবং ৪৮ শতাংশ মেয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এ ছাড়া বলা হয়, ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ ছেলে ও ৪৪ শতাংশ মেয়ে অনলাইনে অপরিচিত মানুষের বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করে।

প্রথম আলো ও বেসরকারি সংগঠন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ গত বছরের ২১ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে সহিংসতার মাত্রা বুঝতে অনলাইনে একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে দেখা যায়, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৫৩ শতাংশ নারী কখনো না কখনো অনলাইনে হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেড চিলড্রেনের (এনসিএমইসি) তথ্য অনুযায়ী, শিশুদের দিয়ে যৌন-দৃশ্যে কাজ করানো, তাদের যৌন নিপীড়নের ছবি ও ভিডিও ধারণ এবং তা আদান–প্রদানের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।

নারী ও শিশুর প্রতি সাইবার বুলিং এখন অন্যতম সমস্যা বলে জানান ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ শাবনাজ জাহেরিন। তিনি বলেন, অনলাইনে নিরাপত্তার বিষয়গুলো অনেকেই জানে না। সে কারণেই তারা বিভিন্ন সময়ে প্রতারণা ও অপরাধের শিকার হয়। দেখা যায়, অনেকে সরাসরি যেগুলো করতে সাহস পেত না, তা অনলাইনের মাধ্যমে করছে। অনলাইন সহিংসতায় মেয়েদের ক্ষেত্রে যৌন হয়রানির অভিযোগই বেশি।

শাবনাজ জাহেরিন ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা এবং নিজের নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রাখার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, অপরিচিত কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করা, দেখা করা, ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি শেয়ার করা—এ বিষয়গুলো করা যাবে না। অনলাইনে সুরক্ষিত থাকতে হলে কী করতে হবে, সেসব নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা দরকার। কেউ হয়রানি বা অপরাধের শিকার হলে কোথায় অভিযোগ করা যায়, সেগুলো নিয়েও সরকারকে প্রচারণা চালাতে হবে। ভুক্তভোগী সবার পক্ষে সব সময় পুলিশের কাছে যাওয়া হয়তো সম্ভব না। সে ক্ষেত্রে অভিযোগ করার উপায়গুলো সহজ করে দিতে হবে। বিচার-প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও যেন দীর্ঘসূত্রতা না হয়। সরকারের ডিজিটাল উন্নয়নের যেমন প্রচারণা আছে, পাশাপাশি অনলাইনে সুরক্ষিত থাকার বিষয়ে তেমন প্রচারণা চালাতে হবে। শিক্ষকেরাও যেন ক্লাস শেষে এসব নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

‘প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা নারীদের স্বাবলম্বী দেখতে চাচ্ছি এবং এটা সম্ভব। কিন্তু নারীদের জন্য সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে,’ বললেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারহানা এ রহমান। তিনি আরও যোগ করলেন, ছোট থেকে কঠোর পরিবেশে মেয়ে শিশুকে বড় করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে তাদের আর কিছু জানা বা বোঝার সুযোগ খুব কম দেওয়া হয়। কিন্তু সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ছোট থেকেই মেয়েদের মেশার সুযোগ দিতে হবে। তখন নিজেরাই মানুষ সম্পর্কেও ধারণা পাবে। নয়তো নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আটকে রেখে বড় করলে এই মেয়েরা যখন হঠাৎ হাতে প্রযুক্তি পায়, তখন তার জন্য ভালো–মন্দ বোঝা সম্ভব হয় না। সে অনেক ফাঁদে পড়ে যায়। অনলাইনে নারীরা নানান বিষয়ে প্রতারিত হচ্ছে। তাই ছোট থেকেই সব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।

সাইবার বুলিং বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার পেয়েছে সাদাত রহমান। নিজেদের তৈরি সাইবার টিনস নামের অ্যাপের মাধ্যমে সাইবার বুলিংয়ের ভুক্তভোগীদের সহায়তা করার চেষ্টা করে। নড়াইল জেলা-ভিত্তিক কাজই বেশি করেন সাদাত রহমানেরা। নিজেদের একটি কেসের উদাহরণ দিয়ে সাদাত প্রথম আলোকে বলে, নবম শ্রেণির এক মেয়ের ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে বেশি যোগাযোগ ছিল। অন্য জেলার এক ছেলের সঙ্গে তার অনেক সখ্য হয়। একপর্যায়ে ছেলেটি তার কাছ থেকে বিপদের কথা বলে কিছু টাকা নেয়। পরে ছেলেটি যোগাযোগই বন্ধ করে দেয়।

সাদাত জানায়, এসব ছাড়াও ব্ল্যাকমেলিংয়ের ঘটনা অনেক ঘটে। ব্যক্তিগত ছবি ছড়িয়ে দেওয়া, ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলার মতো অপরাধের শিকার হয় কিশোরীরা। নিজেদের অভিজ্ঞতার থেকে সাদাতের পরামর্শ, অনলাইনে এমন একটা জায়গা, যেখানে সবকিছুই তৃতীয় পক্ষের কাছে তথ্য চলে যায়। এখানে কখনোই ব্যক্তিগত কোনও তথ্য শেয়ার করা উচিত না। অপরিচিত কারও সঙ্গে শুধু অনলাইন বন্ধু হতে গিয়ে নিজের স্কুলের নাম পর্যন্তও জানানো উচিত না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার অপরাধ তদন্ত বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বললেন, ‘প্রযুক্তির অনেক উন্নয়ন হয়েছে। দেশে এখন টিকটক, লাইকি, নানা অ্যাপের ব্যবহার জনপ্রিয়। এসব ব্যবহার করে অনেক অপরাধের শিকার হওয়ার অনেক অভিযোগ পাচ্ছি আমরা। এ ধরনের অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে কিছু সামাজিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশ অবগত, আমরা চেষ্টা করছি মানুষকে সচেতন করতে। ইন্টারনেটের ব্যবহার যেন ভালো হয়। ভালো কাজে যেন এটা ব্যবহার করতে পারি।’

 

সাতক্ষীরায় দুই সন্তানসহ গৃহবধূ ১০ দিন ধরে নিখোঁজ

দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন গৃহবধূ শিল্পী রাণী ঘোষ (৩৪)। এরপর ১০ দিন কেটে গেলেও তাঁদের আর সন্ধান মিলছে না। স্ত্রী–সন্তানদের খোঁজ না পেয়ে পাগলপ্রায় হয়ে উঠেছেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ধান্দিয়া ইউনিয়নের ঝড়গাছা গ্রামের দীপংকর ঘোষ।

দীপংকর ঘোষ বলেন, কয়েক দিন আগে বড় মেয়ে চুমকি (১৩) ও ছেলে রুদ্রকে (৭) নিয়ে শিল্পী রাণী তালা উপজেলার খেসরা ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামে বাবার বাড়ি যান। গত ২৫ ডিসেম্বর সেখান থেকে শিল্পী তাঁর ছেলেমেয়েকে নিয়ে নিজ বাড়ি ঝড়গাছার আসার জন্য বের হন। এরপর থেকে তাঁদের কাছে থাকা দুটি মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

দীপংকর ঘোষ বলেন, তিনি তাঁর আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজখবর নিয়েও সন্ধান পাননি। এ বিষয়ে তাঁর শ্বশুর গোবিন্দলাল ঘোষ ২৭ ডিসেম্বর তালা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। পুলিশ তাঁদের খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে এখনো কোন ইতিবাচক তথ্য দিতে পারেনি। এমনকি তাঁদের ভাগ্যে কি ঘটেছে, তা–ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী রাসেল বলেন, তাঁরা জিডির সূত্র ধরে খোঁজাখুঁজি শুরু করছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

 

ব্যাংকে নারী কর্মী কমছে

ব্যাংক খাতে এমনিতেই নারী কর্মী কম। তার মধ্যে করোনার সময়ে গত ছয় মাসে সেই সংখ্যা আরও কমে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ৪০২ জন নারী ব্যাংকার কমে গেছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, করোনার কারণে নিয়োগ বন্ধ। এর মধ্যে অনেকে অবসরে গেছেন। আবার কোনো কোনো ব্যাংকে ‘স্বেচ্ছায় পদত্যাগ’ হয়েছে। আবার করোনার এ সময়ে অনেকে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়েছেন। এর ফলে বছরের প্রথম ছয় মাসে নারী ব্যাংকারের সংখ্যা কমে গেছে। আবার করোনার কারণে খুব শিগগির নতুন নিয়োগও হবে না। তাই ব্যাংকে নারী কর্মী শিগগির বৃদ্ধির পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন না ব্যাংকাররা।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লৈঙ্গিক সমতাভিত্তিক সূচক পর্যালোচনা করে জানুয়ারি-জুনভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখান থেকেই নারী কর্মী কমে যাওয়ার তথ্য মিলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুনে ব্যাংক খাতে কর্মীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৭৫। এর মধ্যে নারী কর্মকর্তা ছিলেন ২৫ হাজার ৭৭১ ও পুরুষ কর্মকর্তা ১ লাখ ৪৪ হাজার ১০৪ জন। গত ডিসেম্বর ব্যাংক কর্মী বেড়ে হয় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৩০ জন। এর মধ্যে নারী কর্মী ২৮ হাজার ৪৮০ জন ও পুরুষ কর্মী ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫০ জন। আর জুন শেষে ব্যাংকে মোট কর্মী ছিল ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫১০ জন। এর মধ্যে নারী কর্মী ২৮ হাজার ৭৮ ও পুরুষ ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৩২ জন।

গত ডিসেম্বরে বেসরকারি ব্যাংকে নারী কর্মী ছিল ১৭ হাজার ৭৯১ জন, জুনে তা কমে হয়েছে ১৭ হাজার ৬০৩ জন। বিদেশি ব্যাংকে নারী কর্মী ১ হাজার ৯৪ থেকে কমে হয়েছে ৯৭৮ জন। সব মিলিয়ে গত ৬ মাসে নারী কর্মী কমেছে ৪০২ জন।

জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান প্রথম আলোকে বলেন, কেন এত নারী কর্মী কমে গেল, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ব্যাংকগুলোতে ৩০ বছরের বেশি বয়সের নারী কর্মী প্রায় ২১ শতাংশ হলেও পঞ্চাশোর্ধ্ব কর্মী মাত্র ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২৯টি ব্যাংক নারী কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য পরিবহন সুবিধা দিচ্ছে। ৪৪ ব্যাংক লৈঙ্গিক হয়রানি রোধে নীতিমালা করেছে।

 

সরকারি নারী কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার

রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে আজ বুধবার বিকেলে পুলিশ সুব্রতা অধিকারী (৩৩) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে। তিনি ডেপুটি ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব অ্যাকাউন্টস অফিসার ছিলেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, সুব্রতা অধিকারী ধানমন্ডি ১-এর ২১ নম্বর বাড়ির ৪ নম্বর ফ্ল্যাটে থাকতেন। আজ বিকেলে পুলিশ ওই বাসা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। সুব্রতার গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন

তবে মর্গে স্বজনেরা সুব্রতার মৃত্যু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

যোগাযোগ করা হলে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. সাজ্জাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সুব্রতার স্বামী সঞ্জীব কর্মকার বরিশালে চাকরি করেন। ঘটনার সময় তিনি বাসায় ছিলেন না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে সুব্রতার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

 

নারী উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে কোভিড-১৯

একটা সময় নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টি ভাবাই যায়নি। বিভিন্ন গল্প-উপন্যাসে নারীকে সম্পত্তি হিসেবে উপস্থাপনের ঘটনাও কম দেখা যায়নি। অনেক দেশেই নারীরা তাদের পুরুষ অভিভাবকের কথার বাইরে এক চুলও নড়তে পারেন না। এসব দেশে জন্মের পর থেকেই বাবার কথামত চলতে হয়। আর বিয়ের পর স্বামীই যেন সব ধ্যান-জ্ঞান। খুব কম মানুষই নারীদের শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারে। একজন নারী যে জার্মানির মতো দেশের সরকার প্রধান বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান হতে পারেন অথবা কোনো নারী ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারেন এটা প্রাচীন ধ্যান-ধারণার খুব কম মানুষই বিশ্বাস করবেন হয়তো।

তবে আগের এই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। অনেক দেশেই নারীকে এখন নারী বলে ছোট করা বা ছেলে সন্তানের চেয়ে কম গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টিতে সেকেলে ধারণা বা কল্পনার বাইরেই মনে করা হয়। এখন বিশ্বের বেশিরভাগ ধনী দেশেই বাবা-মায়েরা তাদের ছেলে সন্তানের মতোই মেয়েদেরও একই রকমভাবে গুরুত্ব দিয়ে বড় করছেন। এমনকি তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রচুর অর্থও ব্যয় করছেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পুরুষদের তুলনায় এগিয়ে আছেন নারীরা। পাঁচ দশক আগে নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের দেশগুলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল মাত্র ৪৯ শতাংশ। সে সময় ছেলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল ৭১ শতাংশ। বর্তমানে বিদ্যালয়গুলোতে ছেলে-মেয়ের উপস্থিতি ৯০ শতাংশ। মাধ্যমিক স্তরেও মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

এক সময় মেয়ে সন্তানের জন্মে বাবা-মা খুশি হতে পারতেন না। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি বদলেছে। এখন ছেলে সন্তানের তুলনায় অনেক বাবা-মা একটি
মেয়ে সন্তানের আশা করেন। চীনের মতো দেশেও এই চিত্র পাল্টেছে। সেখানে লিঙ্গের ভিত্তিতে ভ্রূণ হত্যার প্রচলন অনেক আগে থেকেই আছে।

অপরদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মেয়েদের বাল্যবিয়ের সংখ্যাও আগের চেয়ে অনেক কমেছে। ১৯৯৫ সালের দিকে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ছয়জন মেয়ে ১৮ বছরের আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। এই সংখ্যা এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে।

মেয়েদের সার্বিক উন্নতির বিষয়টি অনেকাংশে সমাজের ওপর নির্ভর করে। নারীরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেলে তারাও পুরুষের মতোই সমান অবদান রাখতে পারবে এটা ভুলে গেলে চলবে না। যে মেয়েটি মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে সে অল্প বয়সেই বিয়ে করে সংসার জীবনে প্রবেশ করতে চাইবে না বা অল্প বয়সেই মা হয়ে সন্তান পালনের মতো কঠিন দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাইবে না। শিক্ষা মানুষকে আলোকিত করে, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। মানুষ নিজের জীবন সম্পর্কে ভাবতে শেখে এবং তার পছন্দের পরিধি বাড়ে। ফলে শিক্ষিত একজন নারী নিজেকে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ রেখে দরিদ্র জীবন-যাপন করতে চাইবেন না। বরং তিনি সাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করবেন। একজন অশিক্ষিত নারীর চেয়ে তিনি দ্বিগুণ উপার্জন করতে সক্ষম।

সাম্প্রতিক সময়ে সারাবিশ্বেই ভয়াবহ সঙ্কট তৈরি করে রেখেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এমন পরিস্থিতিতে দরিদ্র দেশগুলোতে করোনার কারণে নারীদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আগের সময়গুলোতেও একই পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। যে কোনো বিপর্যয়ে নারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় যখন ইবোলার প্রাদুর্ভাব ঘটে সে সময় প্রচুর মেয়ে শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থীই আর স্কুলে ফিরে আসেনি। পরবর্তীতে তাদের হয় অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে গেছে অথবা তারা শিশু শ্রমিক হিসেবে উপার্জনে নামতে বাধ্য হয়েছে।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, করোনা মহামারির কারণেও একই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের সংখ্যা আগের তুলনায় বেশি হবে। কারণ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। আর অল্প কিছু দেশ ছাড়া বাকি সব দেশেই করোনার কারণে ভয়াবহ বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, আগামী দশকে বাল্যবিয়ের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যেতে পারে। প্রায় দেড় কোটি মেয়ে শিশু বাল্যবিয়ের বলি হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দরিদ্র দেশগুলো শিক্ষা এবং নারীদের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিলেও বিভিন্ন দাতা সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে নারীদের স্কুলে ধরে রাখতে পারলেই তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা অর্জিত হয়ে যাবে না। বরং তাদের ভ্যাকসিন প্রদান, জন্মনিয়ন্ত্রণ, যে কোনো বিষয়ে তাদের সম্মতির বিষয়গুলো শেখানোর সুযোগও এটি। একই সঙ্গে বাবা-মাকেও সন্তানের বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া যায়।

বয়ঃসন্ধিকাল নারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়ই নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যার সম্মুখীন হয় তারা। মস্তিষ্কের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়কে কাজে লাগাতে পারলেই কয়েক লাখ নারী তাদের সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হবেন। কিন্তু যদি এক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তবে তাদের জীবন দরিদ্রের ছকেই আটকে থাকবে এবং তারা নিজেদের আত্মবিশ্বাস নিয়ে শক্তভাবে দাঁড়াতে পারবেন না। তাই সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত সময়েই নিতে হবে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

 

ভারতে দুই বছর কারাভোগ শেষে ফিরলেন ১৭ বাংলাদেশি নারী

ভালো কাজের প্রলোভনে পড়ে অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে দুই বছর কারাভোগ করে বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরেছেন ১৭ বাংলাদেশি নারী।

রোববার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে তাদেরকে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে রাত ৮টার দিকে থানা থেকে দুইটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য ওই ১৭ জনকে যশোর শেল্টার হোমে নিয়ে যায়।

ফেরত আসা নারীরা হলেন- বাগেরহাট জেলার আব্দুর রশিদের মেয়ে মরিয়ম খাতুন, মুজিবুর রহমানের মেয়ে তানিয়া খাতুন, যশোরের আব্দুল লতিফের মেয়ে ফাতেমা খাতুন, কাশেম আলী খার মেয়ে আফরোজা খাতুন, মুক্ত ফকিরের মেয়ে সনিয়া বেগম, নড়াইলের শওকত শেখের মেয়ে খাদিজা খাতুন, পারভেজ মোল্লার মেয়ে পলি খাতুন, তরফু মোল্লার মেয়ে বিউটি খাতুন, তোতা মোল্লার মেয়ে রুনা বেগম, বখতিয়ার রহমানের মেয়ে রুমানা খাতুন, সালমান মোল্লার মেয়ে সেফালি বেগম, আমির আলীর মেয়ে তহমিনা খাতুন, চাঁদপুরের সফিক মোল্লার মেয়ে রুমা বেগম, চুয়াডাঙ্গার মহিন আলীর মেয়ে রহিমা খাতুন, পটুয়াখালীর নাসির সিকদারের মেয়ে নাসরিন বেগম, সুনামগঞ্জের মোকারম আলীর মেয়ে শিল্পী বেগম ও খুলনার ছলেমান হোসাইন এর মেয়ে আসমা খাতুন।
তাদের সবার বয়স ২০ থেকে ২৮ বছর এর মধ্যে।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব বলেন, এই নারীরা পাসপোর্ট ছাড়াই বিভিন্ন সীমান্ত পথে ভারতের পুনে শহরে গিয়ে কাজ করার সময় সেদেশের পুলিশের হাতে আটক হয়। এরপর আদালতের মাধ্যেমে তারা জেল হাজতে যায়। পরে ভারতের রেসকিউ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা তাদের জেল থেকে ছাড়িয়ে নিজেদের শেল্টার হোমে রাখে। ভারত সরকারের বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে তারা দেশে ফিরেছে। ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদেরকে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

বেনাপোল পোর্ট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসব নারীরা সীমান্তের অবৈধ পথে দালালদের খপ্পরে পড়ে ভালো কাজের আসায় ভারত যায়। এরপর তারা সেদেশের পুলিশের হাতে আটক হয়। পরে দুদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় চিঠি চালাচালির এক পর্যায় বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যেমে রবিবার তারা দেশে ফেরেন। থানার আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদেরকে জাস্টিস কেয়ার ও যশোর রাইটস নামে দুটি এনজিওর হাতে তুলে দেয়া হবে।

যশোর রাইটস এর এরিয়া কোয়ার্ডিনেটর আব্দুল মুহিত জানান, থানার আনুষ্ঠানিকতা শেষে এই নারীদের যশোর নেয়া হবে। পরে যোগাযোগ করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

 

টানা ৩ বার ব্যর্থ, চতুর্থবারে সহকারী জজ পরীক্ষায় অষ্টম আরিফা

‘মারে, পড়াশোনার ভাগ কাউকে দিতে হবে না। আর কেউ তোমাকে পড়া করেও দিতে পারবে না। তাই নিজের মতো করে পড়াশোনা করো আর মানুষের মতো মানুষ হও’-কথাটি বাবা আমাকে প্রায়ই বলতেন। তিনি পেশায় কৃষক ছিলেন। বাবার পুঁজি বলতে শুধু তার ছেলেমেয়েই এবং এ পুঁজি তাদের পেছনেই বিনিয়োগ করতেন। কিন্তু আশানুরূপ ফল পাননি। তাই তার সর্বশেষ ভরসার জায়গা হলাম আমি। তিনি আমাকে দিয়ে বাকি ছেলেমেয়েদের অসম্পূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিলেন। আজ তার স্বপ্নটা বাস্তবে রূপ দিতে পারলেও তিনি আমাকে ছেড়ে সেই ১৮ বছর বয়সেই বহুদূর চলে গেছেন। আমার এ বিজয়ের ভাগিদার তিনি হতে পারলেন না।

অনেকটা ভেজা ভেজা কণ্ঠে নিজের স্বপ্ন পূরণের কথা এভাবে ব্যক্ত করছিলেন ১৩তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (সহকারী জজ) পরীক্ষায় অষ্টম মেধাতালিকায় মনোনীত কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফা আক্তার।

আরিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। কুষ্টিয়ার মিরপুরের সন্তান আরিফা ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা-দূরন্তপনা সবকিছুতেই তিনি প্রথম স্থানে থাকতেন।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন পার করেছেন গ্রামের স্কুল থেকেই। শিক্ষকদের প্রতি তার অন্যরকম আকর্ষণ কাজ করত। তাদের সান্নিধ্য পেতে সবসময় উৎসুক থাকতেন, কারণ তারাই তাকে মোটিভেট করতেন। তাই ষষ্ঠ শ্রেণি ব্যতীত তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বরাবরই প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন আরিফা।

অনেকটা আবেগের স্বরে আরিফা আক্তার বললেন, ‘প্রত্যেক নতুন ক্লাসে ওঠার সময় স্কুল পরিবর্তনের জন্য জিদ করতাম কিন্তু আমি বুঝতাম না যে ভালো স্কুলে পড়ানোর সামর্থ্য আমার পরিবারের নেই। আমার ভাইয়েরা বলত ক্লাসে প্রথম হলে স্কুল পরিবর্তন করাবে। আমিও প্রচুর পড়াশোনা করে প্রথম হতাম কিন্তু স্কুল আর পরিবর্তন হতো না। এভাবে প্রথম হতে হতে একসময় স্কুলজীবন শেষ হয়ে গেল।’
২০০৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৫০ নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়ে চিকিৎসক হওয়ার। তাই ভালো কলেজে পড়তে হবে। কিন্তু পরিবারের অসচ্ছলতা ও আর্থিক অনটনের কারণে এবারো উপজেলা শহরের মিরপুর মাহমুদ চৌধুরী কলেজে ভর্তি হতে হলো তাকে।

‘কলেজজীবন ছিল আমার সবথেকে কষ্টের। সবসময় ডিপ্রেশন কাজ করত, তাই রেজাল্টও খারাপ হলো। জিপিএ ৩.৮০ নিয়ে আমি এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হলাম। এবার মেডিকেলের স্বপ্ন একেবারই ভেস্তে গেল’-যোগ করলেন আরিফা।

প্রথম বছরে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং করতে না পারায় আর পরীক্ষা দেননি আরিফা। দ্বিতীয়বার বন্ধুদের উৎসাহে অনুপ্রাণিত হয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ওই বছরে তিনি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চান্স পান। ইবিতে ‘ছ’ ইউনিট তথা আইনে ৬১তম মেধাতালিকায় স্থান পান। আইনে চান্স পাওয়ায় আর কোনোদিকে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। জজ হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই ইবিতে ভর্তি হন।

তিনি বলেন, ‘আইনে ভর্তি হলে বাবা সবাইকে বলে বেড়াতেন যে, আমি জজ হবোই এবং তিনি আমাকে এ ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। আমিও প্রথম থেকেই জুডিশিয়ারির প্রস্তুতি নিতে থাকলাম। এরমাঝে আমার জীবনে নেমে আসল বড় বিপর্যয়। জীবনের বড় অনুপ্রেরণাদাতা (বাবা) আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন। বাবার মৃত্যুতে আমি মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়ি এবং একা হয়ে যায়।’
‘তখন থেকে আমার আপুই আমাকে দেখাশোনা করেন এবং ভাইয়েরা পরিবারে খরচ জোগান। দ্বিতীয়বার আমার রুমমেট শারমিন নাহার আপু থেকে অনুপ্রাণিত হয় যখন তিনি ১০তম সহকারী জজ পরীক্ষায় মনোনীত হন। তখন থেকেই আমি সিরিয়াস হয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাই। টানা তিনবছর সেশনজটে থেকে এলএলবিতে (স্নাতক) ৩.৪২ এবং এলএলএমে (স্নাতকোত্তর) ৩.৩৩ সিজিপিএ পেয়ে গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করি। বাবার স্বপ্ন পূরণে ২০১৬ সালের জুনে ঢাকায় পাড়ি জমাই। ৩৬ ও ৩৭তম বিসিএসে অংশ নিলেও কোনো রেজাল্ট আসেনি। পরে একমাত্র জুডিশিয়ারির জন্যই পড়ালেখা চালিয়ে যাই এবং জুডিশিয়ারি পরীক্ষার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হক ল’ একাডেমিতে ভর্তি হই।’

‘১০ম বিজেএস পরীক্ষায় নামমাত্র অংশগ্রহণ করি। ১১তম-তে অংশ নিলেও প্রিলিতে ফেল আসে। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। নিজের অবস্থানে অটল থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাই। অবশেষে ১২তম-তে প্রিলি-রিটেনে পাস করলেও ভাইভা বোর্ডে বাদ পড়ি। তখন মনটা আরও খারাপ হয়ে যায়। চারটি বছর জীবন থেকে এমনিতেই চলে গেছে। প্রচণ্ড মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যদিয়ে তখন বেকার অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছিলাম। এরই মধ্যে ২০১৮ সালে বার কাউন্সিলের সনদ পাই এবং ঢাকা জজকোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করি। কিন্তু জজ সাহেবদের সামনে দেখলে বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠত। মনে মনে ভাবতাম আমিও তো ওই চেয়ারে বসতে পারি। আরেকবার চেষ্টা করে দেখি। মনে অনেকটা জেদ-সাহস নিয়ে দিনরাত অধ্যবসায় চালিয়ে যাই। অবশেষে বিজয়ের হাসি।’

আবেগাপ্লুত কণ্ঠে কুষ্টিয়ার মেয়ে আরিফা আক্তার বলেন, ‘মহান রবের প্রতি কৃতজ্ঞতা যিনি আমাকে সম্মানিত করেছেন। কৃতজ্ঞতা পোষণ করছি আমার পরিবারের প্রতি, বিশেষ করে আপুর প্রতি। পরিবারের বাইরে শিক্ষকমণ্ডলী, বন্ধু-বান্ধবের প্রতি। বিশেষ কৃতজ্ঞতা পোষণ করছি শারমিন নাহার আপু (সহকারী জজ), নুরুল হক ভাই (হক ল’ একাডেমি) ও শরিফুল ভাইয়ের প্রতি। যারা আমাকে সর্বদা সাহস জুগিয়েছেন। আমি তাদের অবদান কখনো ভুলতে পারব না।’

স্বপ্নজয়ের অনুভূতির কথা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমি খুব মেধাবী সেটা কখনোই দাবি করি না। আমার মনে হয় যেকোনো প্রাপ্তির পেছনে আল্লাহর সন্তুষ্টি, চেষ্টা ও বাবা-মায়ের দোয়া কাজ করে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে চাকরি এখন মেধার চেয়ে ধৈর্যের ওপর বেশি নির্ভর করে। তাই ধৈর্য ধরে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে নিজের সর্বোত্তম চেষ্টা চালিয়ে গেলে সফলতা আসবেই।’

‘সমস্যা থাকবেই। এগুলো উপেক্ষা করতে পারলে জীবনযাত্রা সহজ হবে। বাধাবিহীন সফলতার আনন্দ কম তাই বাধাটা থাকাই ভালো। দুঃখগুলোকে পুঁজিতে রূপ দিতে পারলে সুখ আসতে সময় লাগে না’-বলেন সাহস না হারানো এই নারী।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে আরিফা আক্তার বলেন, ‘সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীদের কাছে ন্যায়বিচার পৌঁছে দিতে চাই। সামর্থ্যের মধ্যে নিজ এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানো। নিজ গ্রামকে একটি আদর্শ গ্রামে পরিণত করা। সর্বশেষ আমার স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে মেধার ভিত্তিতে বৃত্তি প্রদান করতে চাই।’

 

ভারতে কৃষক আন্দোলনের ‘পাওয়ারহাউস’ নারীরা

জীবনের বেশিরভাগ সময় কৃষিকাজে কাটিয়েছেন বলজিৎ কৌর। ৫০ বছর বয়সী এ নারীর কাছে শস্য উৎপাদন আর জমির যত্নআত্তি যেন আশীর্বাদ। কৃষিকাজ শুধু পেশাই নয়, এটি তার রক্তে মিশে গেছে। আর দশটা সাধারণ দিনে হয়তো মাঠে কাজ করেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতেন বলজিৎ, কিন্তু আজ দিল্লির প্রবেশদ্বার তিকরি সীমান্তে ঘাঁটি গেঁড়ে বসেছেন তিনি। শত শত কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে হাজারও কৃষকের সঙ্গে নেমেছেন ‘কালো আইন’ বাতিলের আন্দোলনে।

বয়স্ক এ নারী আল জাজিরাকে বলেন, নরেন্দ্র মোদি যে কালো আইন করেছেন তার বিরুদ্ধে আমরা আমাদের জমির জন্য আন্দোলন করছি। বলজিতের ভয়, ভারতে পাস হওয়া নতুন কৃষি আইনে তাদের জমির মালিকানা ঝুঁকিতে পড়বে। কিন্তু দেহে প্রাণ থাকতে এটি তিনি কিছুতেই হতে দিতে পারেন না।

ভারতীয় কৃষকদের মতে, দেশটিতে পাস হওয়া নতুন আইনগুলোতে শস্যের সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া নেই। তাদের শঙ্কা, এর কারণে কৃষকদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতে বাধ্য করা হতে পারে, প্রতিষ্ঠানগুলোর কথামতোই তাদের শস্য উৎপাদন করতে হতে পারে। নতুন আইনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কৃষিজমি কেনা ও পণ্য মজুতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়েছে।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসব আইনকে কৃষিখাত আধুনিকায়নের জন্য বলে দাবি করেছেন। তবে কৃষকদের বিশ্বাস, এর মাধ্যমে সংকটাপন্ন খাতটিতে চুক্তিভিত্তিক কাজের বিস্তার এবং ব্যাপক বেসরকারিকরণের দুয়ার খুলে দেওয়া হয়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতে চলছে কৃষকদের এই আন্দোলন। দেশটির তিন কৃষিপ্রধান রাজ্য পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ থেকে লাখ লাখ কৃষক এসে জড়ো হয়েছেন ভারতীয় রাজধানীর প্রধান প্রবেশপথ সিংহু ও কিতরি সীমান্তে। সরকারপক্ষ আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করলেও কৃষকদের এক কথা, এক দাবি, ‘ক্ষতিকর আইন বাতিল চাই’।

‘পুরুষের চেয়ে নারীর কাজ বেশি’

সারা ভারতেই পুরুষরা কৃষিকাজের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠলেও এক্ষেত্রে নারীদের অবদানও কম নয়। বরং, কাজের ক্ষেত্রে তো বটেই, নতুন আইনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে নারীদের। ভারতীয় সংগঠন মহিলা কিষাণ অধিকার মঞ্চের (মাকাম) হিসাবে, দেশটির ৭৫ শতাংশ কৃষিকাজ নারীরা করলেও ভূমির মালিকানায় তাদের অংশ মাত্র ১২ শতাংশ।

পাঞ্জাবের জালান্দর থেকে প্রায় ৬৪৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তিকরি সীমান্তে এসেছেন কুলবিন্দর কৌর ও পরমিন্দর কৌর। আরও কয়েকজন নারীর সঙ্গে রাত কাটাচ্ছেন একটি ট্রাকের ওপর। সেখনেই তাদের সঙ্গে কথা হয় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার।

সরকারের নতুন কৃষি আইনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে কুলবিন্দর বলেন, যদি নির্ধারিত মূল্য বা বাজার না থাকে, আমরা সন্তানদের রুটি খাওয়াব কী করে? শস্য বিক্রি করব বা কী করে?

পরমিন্দর বলেন, কোনও কাজই সহজ নয়। খাবার জোগাতে আপনাকে কাজ করতে হবে। কিন্তু কাজ করার পরেও যদি আমরা খাবার না পাই, সেটাই হবে সমস্যা।

৬০ বছরের জীবনে প্রায় ৩০ বছরই কৃষিকাজে কাটিয়েছেন মুলকিৎ কৌর। তার দাবি, পাঞ্জাবে তার গ্রামে অনেক নারীই পুরুষের চেয়ে বেশি কাজ করেন। এমনকি এই আন্দোলনের মধ্যেও অনেক নারী কৃষককে পরিবারের দেখাশোনার জন্য বাড়িতে থেকে যেতে হয়েছে। তবে পুরোপুরি নিবৃত্ত হননি, সেখান থেকেই আন্দোলনে মূল্যবান সমর্থন দিচ্ছেন তারা।

আন্দোলনরত মুলকিৎ পরের দিন বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও এ বৃদ্ধা জানান, তিনি যাওয়ার পর পরিবারের কোনও সদস্য এসে তার জায়গা নেবেন। তিনি বলেন, আমরা এত দূর এসেছি। আশা করি, ঈশ্বর আমাদের ডাক শুনবেন।

‘শিশুরা কষ্ট পেলে বেঁচে থেকে লাভ কী?’

ভারতের অনেক বয়স্ক নারী কৃষকের কাছেই এই আন্দোলন শুধু জমির মালিকানা বা অর্থের ইস্যু নয়। তাদের কাছে কয়েক প্রজন্ম ধরে থাকা জমি পূর্বপুরুষদের চিহ্ন, তাদের সংস্কৃতির অংশ, সন্তানদের ভবিষ্যৎ।

বলজিৎ বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কী বলবে, আমরা আওয়াজ তুলিনি? এর জন্যই রাস্তায় বসে রয়েছি, আমাদের নাতি-নাতনিদের জমি রক্ষা করতে।

তিকরি সীমান্তে আরও দুই নারীর সঙ্গে মাটিতে বসে ছিলেন জসপাল কৌর। তার কথায়, নাতি-নাতনিদের সম্পদ চুরি ঠেকাতে এসেছেন তারা। ৫৮ বছর বয়সী এ নারী বলেন, আমাদের সন্তানরা যদি কষ্ট পায় তাহলে জীবনের আর কী দাম থাকল?

অবশ্য তার এই কথা শুধু মুখের বুলি নয়, এর গুরুত্ব অনেক। দরিদ্র্যতা আর ঋণে জর্জরিত হয়ে ২০১৯ সালে ভারতে ১০ হাজারের বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন।

জসপাল বলেন, আমরা পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাব। তার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছিল, এধরনের মানুষগুলো এত সহজে পিছপা হওয়ার পাত্র নয়।

যৌথ রান্নাঘর আর নিঃস্বার্থ সেবা
সরকারের নতুন আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনস্থলে একসঙ্গে নেচে, গেয়ে, অভিনয়ের মাধ্যমে চলছে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আন্দোলনকারীরা থাকছেন দলবেঁধে, রান্না-খাওয়া সবই করছেন একসঙ্গে।

স্বঘোষিত কৃষককন্যা জাসসি সাংহা বলেন, আন্দোলনের একাধিক স্থানে লঙ্গর (সাম্প্রদায়িক রান্নাঘর) খোলা হয়েছে। সেগুলো চলছে শিখদের স্বপ্রণোদিত সেবায়। বিক্ষোভকারীরা কয়েক সপ্তাহের খাবার নিয়ে এসেছেন। তারা এত খাবার এনেছেন যে স্থানীয়রাও তাদের সঙ্গে খাচ্ছেন।

পাঞ্জাবের অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী সোনিয়া মানও যোগ দিয়েছেন কৃষকদের আন্দোলনে। তিনি বলেন, হরিয়ানা, রাজস্থানসহ অন্য রাজ্যের কৃষকরা এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তারা সবাই একসঙ্গে এসেছেন এবং একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তারা সবাইকে সমম্মান করেন। হিন্দু, মুসলিম, শিখ- সবাই এখানে এসেছেন।

নিজে কৃষক আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণ প্রসঙ্গে সোনিয়া বলেন, আমি কৃষকের মেয়ে। আমার বাবা ছিলেন কৃষক ইউনিয়নের নেতা। তিনি কৃষকদের জন্য নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। এজন্য আমিও এখানে এসেছি।

টিয়ারগ্যাস ও জলকামান
ভারতে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আন্দোলনরত কৃষকদের ‘দেশবিরোধী’ বলে উল্লেখ করছে। এমনকি তাদের কিছু নেতা কৃষকদের ‘সন্ত্রাসী’ পর্যন্ত বলেছেন।

সোনিয়া বলেন, তারা (বিজেপি) আমাদের আন্দোলন নষ্ট করতে চায়। তার বিশ্বাস, সরকার ও গণমাধ্যম কৃষকদের আন্দোলনকে ধর্মীয় ও দেশবিরোধী প্রমাণের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

এজন্য আন্দোলনরত কৃষকরা ক্ষুব্ধ ও রাগান্বিত হলেও একইসঙ্গে তারা যথেষ্ট ধৈর্য ও সতকর্তা অবলম্বন করছেন। কৃষকদের পক্ষে কে কী বলছেন, তা খুব সাবধানতার সঙ্গে খেয়াল রাখা হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের কথায়, মাত্র একটিবার ‘খালিস্তান’ (শিখ বিদ্রোহীদের দাবি করা স্বাধীন রাষ্ট্র) শব্দের উচ্চারণ গণমাধ্যম ও সরকারের জন্য কৃষক আন্দোলন ধ্বংসের অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।

আন্দোলনস্থলে দায়িত্বরত সাংবাদিক নিকিতা জেইন বলেন, মতামত থাকা মানেই সে দেশবিরোধী নয়। যে কৃষকরা সবচেয়ে বড় দেশপ্রেমিক, তাদেরই কীভাবে আপনারা দেশবিরোধী বলতে পারেন?

শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারগ্যাস ও জলকামান ব্যবহারের প্রতিবাদ জানিয়ে জাসসি বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ভারত। কিন্তু সেখানে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে যা হয়েছে, তা স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন।

‘সরকারের ঘাড়ে পা আমাদের’
ভারতীয় পুলিশের তথ্যমতে, দেশটিতে কৃষক আন্দোলনে এপর্যন্ত অন্তত ২৫ জন মারা গেছেন। তাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া, হাইপোথারমিয়া ও সড়ক দুর্ঘটনার কথা বলা হয়েছে।

আন্দোলনকারী কৃষকদের অনেকেই রাতে তীব্র শীতের মধ্যে মাটিতে ঘুমাচ্ছেন, কেউ ঘুমাচ্ছেন ট্রাকের ওপর। টয়লেট ব্যবহার করছেন স্থানীয়দের সাহায্যের ওপর নির্ভর করে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও সনোবল হারাননি নারী কৃষকরা।

গত সপ্তাহে কৃষক ইউনিয়নের নেতা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ষষ্ঠ আলোচনা বাতিল করা হয়েছে। দুই পক্ষই নিজ নিজ দাবিতে অনড়। কিন্তু কৃষকদের ইচ্ছাশক্তি প্রবল এবং তাদের পক্ষে ক্রমাগত জনসমর্থন বাড়ছে।

পরবিমন্দর ও কুলবিন্দর বলেন, আমরা যেখানে শুরু করেছিলাম, সেখানেই রয়েছি। আমরা এখানেই থাকব। কোনও সমস্যা নেই, আমাদের বাড়ির কথা মনে হচ্ছে না।

পরিবারের সদস্যরাও আন্দোলন চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিচ্ছেন জানিয়ে কুলবিন্দর বলেন, তারা আমাদের ফোন করে বলছে, শক্ত থাকো, হাল ছেড়ো না।

আন্দোলনে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু জানতে চাইলে পরমিন্দর ও কুলমিন্দর দু’জনই জোর গলায় বলেন, আমরা যখন তাদের ঘাড়ে পা দিয়ে রেখেছি, তারা এটা (নতুন আইন) ফেরাবে না কেন?

জাসসির কথায়, জমি মায়ের মতো। আর ভারতের মা, মেয়ে, কন্যারাই এই আন্দোলনের মেরুদণ্ড।

দৃঢ়কণ্ঠে বলজিৎ বলেন, আমরা আওয়াজ তুলেছি। আমরা আমাদের অধিকার নেবোই।

 

শীতে ত্বকের যত্নে জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ

শীতে ত্বককে দুটি জিনিসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। সেটি হল- তাপমাত্রা ও আদ্রতা। দুটোই কমে যায়। যার কারণে স্বাভাবিক ত্বক হয়ে ওঠে শুষ্ক এবং শুষ্ক ত্বক হয়ে ওঠে সংবেদনশীল। তাই নিতে হবে বিশেষ যত্ন।

ক্লিনজার: ঠাণ্ডার ভয়ে অনেকেই গোসল করতে চান না। প্রতিদিন না করলেও অন্তত একদিন অন্তর গোসল করতে হবে। এক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন। তবে মনে রাখবেন, খুব ঠাণ্ডা বা বেশি গরম পানি দুটোই ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। বেশি গরম পানি ত্বক থেকে অয়েল বা ময়েশ্চারকে ধুয়ে ফেলে। ত্বকের প্রোটিন ও ফ্যাটের জন্যও গরম পানি ক্ষতিকর। ফলে ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে ওঠে। দশ মিনিট বা তার কম সময় ধরে গোসল করুন। গোসলে সুগন্ধিবিহীন সাবান অথবা কোনো ক্লিনজার ব্যবহার করলে ভালো হয়।

ময়েশ্চারাইজার: গোসলের পর যত দ্রুত সম্ভব ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। সেটি হতে পারে লোশন, ক্রিম বা কোনো অয়েল। কিন্তু এ জিনিসগুলো হতে হবে কোনো ধরনের সুগন্ধিবিহীন ও রঙবিহীন। অন্তত দিনে একবার ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার ব্যবহার করতে হবে।

সানব্লক: শীতে স্বভাবতই সবাই রোদে বসতে পছন্দ করেন। তাই ত্বকে রোদে পোড়া একটা ভাব কিন্তু অনেকেরই আসে। তাই সঠিক নিয়মে সানব্লক ব্যবহার খুবই প্রয়োজন। বাসা থেকে বের হওয়ার দশ মিনিট আগে এক চা চামচ আন্দাজ করে মুখে লাগাতে হবে। সানব্লক ব্যবহার করুন, যেটি SPF 50+ অথবা ন্যূনতম SPF 30+ হতে পারে।SPF containing moisturizer ব্যবহার করতে পারেন। একবার লাগালে দুই থেকে তিন ঘণ্টা কাজ করে। পরবর্তীতে যদি রোদে থাকা হয় পুনরায় লাগাতে পারলে ভালো হয়। ক্রিম, লোশনসহ বিভিন্ন রকমের সানব্লক পাওয়া যায়। তাই যাদের স্কিন শুষ্ক এবং শীতে আরও শুষ্ক হয়ে যায়, তারা ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন।

মেকআপ ক্লিনজার: মেকআপ তোলার ক্ষেত্রে খুব সচেতন হতে হবে। কোনো ধরনের অ্যালকোহলযুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করা যাবে না। সেটি স্কিনকে অনেক বেশি শুষ্ক করে তুলে। এজন্য নারিকেলের তেল ব্যবহার করুন।

শুষ্ক ঠোঁট: ঠোঁট শুষ্ক হবে বলে বারবার জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভেজানো যাবে না। তাতে ঠোঁট আরও শুষ্ক হবে। রাতে মোটা করে ভ্যাসলিন লাগান। সকালে মুখ ধোয়ার সময় আলতো করে ঘষে শুকনো চামড়া তুলে ফেললেই ঠোঁট থাকবে সুন্দর। পাশাপাশি লিপ বাম অথবা ভ্যাসলিন লাগান; যা হবে কোনো রঙ ও সুগন্ধিবিহীন।

শুষ্ক হাত: একদিকে শীত অন্যদিকে করোনা। এ মহামারী পরিস্থিতিতে হাতে বারবার লাগাতে হয় স্যানিটাইজার বা হ্যাক্সিসল কিংবা হাত ধুতে হয়। সুতরাং যতবার এগুলো ব্যবহার করবেন ততবার ময়েশ্চারাইজার লোশন লাগান।

শুষ্ক পা: শক্ত কোনো কিছু দিয়ে পা ঘষা যাবে না। খুব হালকাভাবে ঘষতে হবে। মরা কোষগুলোকে তুলে ফেলুন। সপ্তাহে দুই দিন কুসুম গরম পানিতে পা ভিজিয়ে নিয়ে হালকা করে ঘষে পরিষ্কার করুন এবং নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার লাগান। অন্তত দিনে ও রাতে দুইবার ময়েশ্চারাইজার লাগাতে পারেন। যাদের খুব বেশি পা ফাটে তারা রাতে ভ্যাসলিন লাগিয়ে মোজা ব্যবহার করুন। যুগান্তর

লেখক: ডা. তাসনীম খান, অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজিস্ট ও লেজার স্পেশালিস্ট

 

নিউজিল্যান্ডে যৌন হয়রানি মামলা জিতে ক্ষতিপূরণ পেলেন যৌনকর্মী

নিউজিল্যান্ডে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা জিতে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ পেলেন এক যৌনকর্মী। আইনি লড়াইয়ে তার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করা এক মানবাধিকার সংগঠন এ তথ্য জানিয়েছে। সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) আদালতের এ সিদ্ধান্তকে যৌনকর্মীদের অধিকারের পক্ষে এক বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে গোপনীয়তার কারণে মামলার সঙ্গে জড়িতদের নাম ও অন্যান্য বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। খবর বিবিসি।

নিউজিল্যান্ড-ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মানসিক ক্ষতির পাশাপাশি আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যৌনকর্মীর যে ক্ষতি হয়েছে— তারই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। অভিযোগকারী যৌনকর্মী ছয় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ পেতে যাচ্ছেন। তবে তিনি ঠিক কত টাকা পেতে যাচ্ছেন তা জানানো হয়নি।

সোমবার নিউজিল্যান্ডের হিউম্যান রাইটস প্রসেডিংস-এর পরিচালক মাইকেল টিমিনস বলেন, “যে কোনো পেশার কর্মী, তিনি যে ধরনের কাজই করুণ, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে লড়াই করার অধিকার তার আছে। আমরা সব মালিক ও কর্মীদের উৎসাহিত করছি, তারা যেন এই অধিকারের বিষয়টি বুঝেন ও সম্মান করেন”।
বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, নিউজিল্যান্ডে যৌন পেশা আইনত বৈধ। যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষায় ২০০৩ সালে আইন পাশ হয়েছিল। ওই আইনে নিউজিল্যান্ডে যৌন পেশাকে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল।

নিউজিল্যান্ড সেক্স ওয়ার্কার্স কালেক্টিভের জাতীয় সমন্বয়কারী ডেম ক্যাথরিন হিলি বলেন, “যৌন পেশার ক্ষেত্রে এরকম ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে, এটি অনেক বড় ব্যাপার। যে কোনো কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস প্রয়োজন”।

 

৫ সূচকে কর্মজীবী নারীর ওপর মহামারির অভিঘাতের চিত্র

মহামারি করোনাভাইরাসের আঘাতে এক সময়কার সবল চাকরি-বাজার লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। মহামারির অভিঘাতে চাকরিক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন নারীরা। যুক্তরাষ্ট্রে গত মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর পরের এই সাত মাসে হারানো এসব চাকরির অর্ধেক অবশ্য আবার ফিরে এসেছে। তবে নভেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে— চাকরিক্ষেত্রে নারী পুরুষের মধ্যে ব্যবধান বড় হয়েছে। মহামারির ফলে ৫৩ লাখ নারী চাকরিহারা হয়েছেন, যেখানে পুরুষের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ৪৬ লাখ।
বিজ্ঞাপন

মহামারিটি চাকরি-বাজারে সবার আগে সেবা খাতে আঘাত হানে— বিশেষত যেসব চাকরিতে গ্রাহকের সঙ্গে সামনাসামনি সংযোগ প্রয়োজন— যেমন: রেস্টুরেন্ট, হোটেল, চিকিৎসা, সুপারশপ ইত্যাদি। যুক্তরাষ্ট্রে এসব চাকরির বেশিরভাগই নারীদের দখলে। তবে মহামারির শুরুতেই এসব শাখার কর্মী ছাটাই শুরু হয়, যার ধকল এখনও কাটেনি। এসব শাখায় হাজার হাজার পুরুষও চাকরি হারিয়েছেন— তবে নারীদের তুলনায় কম।

এই মহামারিকালেও যেসব নারীদের চাকরি টিকে আছে তাদের অবস্থাও এখন আর আগের মতো নেই। লক্ষ লক্ষ নারী করোনাভাইরাস দুর্যোগে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন। উদাহরণস্বরূপ— আমেরিকার হাসপাতালগুলোতে কর্মীদের শতকরা ৭৭ ভাগ নারী, এবং কিন্ডারগার্টেনের ৭৪ ভাগ কর্মীও নারী। তারা প্রবল মানসিক চাপ ও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও রোগীদের সেবা ও বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছেন।

কর্মজীবী মায়েদের জন্য সমস্যা আরও বাড়িয়েছে চাইল্ড কেয়ারের স্বল্পতা। যাদের বাচ্চা রয়েছে— এমন কর্মীরা বড় সমস্যায় পড়েছেন। মহামারি শুরুর প্রথম দুই মাসের মধ্যেই আমেরিকার চাইল্ড কেয়ার সেন্টারগুলো তাদের ৩৫ ভাগ স্টাফকে চাকরিচ্যুত করে। (উল্লেখ্য, এই চাইল্ড কেয়ার সেক্টরর সিংহভাগ কর্মী নারী: আমেরিকার চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে ৯৩ শতাংশ চাকরি নারীদের দখলে)। তবে সম্প্রতি এ সেক্টরে আবার কর্মী নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু গত নভেম্বর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এ সেক্টরে এখন পর্যন্ত ১৭ ভাগ হারানো চাকরি ফিরে আসেনি। এর অর্থ হলো— কর্মজীবী মা-বাবার জন্য বাচ্চার লালন-পালনের বিকল্প আগের চেয়ে কমে এসেছে। দীর্ঘদিন চাকরিহারা থাকার পর এখন যারা চাকরি পাচ্ছেন তাদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা। এর উপর আরেক সমস্যা হলো— চাইল্ড কেয়ারে বাচ্চা ভর্তি করানোর খরচও বেড়ে গেছে।

মহামারির কারণে স্কুল ও চাইল্ড কেয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাসায় বাচ্চাদের যত্ন ও লেখাপড়ার কাজে নারীদেরকেই বেশি সময় দিতে হচ্ছে। শুরুর দিকে করা কিছু সমীক্ষায় এমন চিত্র উঠে এসেছে। বাড়িতে বাচ্চাদের পড়ানো, লালন-পালন ইত্যাদি কাজে পুরুষের চেয়ে নারীদেরকেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে— ফলে কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে পুরুষের চেয়ে নারীর দূরত্ব বাড়ছে।

ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব ডালাসের অর্থনীতিবিদরা আমেরিকার শ্রম পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, মহামারিকালে শিশুদের যত্ন-আত্তি বনাম চাকরিতে মনোযোগের ব্যাপারে মা ও বাবার কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, ১৩ বছরের কম বয়েসি বাচ্চার মায়েরা, বাচ্চা ছাড়া নারীদের চেয়ে বেশি চাকরি হারিয়েছেন। বিপরীতে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা আরও কম। বাচ্চার মায়েরা সর্বোচ্চ ৩ পার্সেন্টিজ পয়েন্টে হারে চাকরি হারালেও বাচ্চা ছাড়া নারীরা চাকরি হারিয়েছেন ১.৮ পার্সেন্টিজ পয়েন্ট হারে। এদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা যথাক্রমে ১.৪ ও ১.২।

ডালাস ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের অর্থনীতিবিদরা তাদের বিশ্লেষণে দেখান, কর্মজীবী মায়েদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাকরি হারানোর হার কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনা নারীদের— সে তুলনায় শ্বেতাঙ্গ নারীদের চাকরি হারানোর হার কম। করোনা মহামারিতে ভুক্তভোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ কর্মজীবী মায়েরা। গত ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা চাকরি হারিয়েছেন ৬.৪ পার্সেন্টিজ পয়েন্ট হারে।

বর্তমানে চাকরির বাজার কিছুটা চাঙা হতে শুরু করেছে। তবে অগ্রগতির বর্তমান হার অনুযায়ী— চাকরির বাজার পুরোপুরি আগের অবস্থায় ফিরে যেতে অন্তত ৪০ মাস সময় লাগবে। অর্থনীতিবিদরা ইতিমধ্যে হুশিয়ার করেছেন— চাকরি থেকে দূরে থাকার সময় যত লম্বা হবে, তাদের চাকরিতে ফেরাও ততো কঠিন হবে। স্থায়ী চাকরি হারানো বা আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে কর্মক্ষেত্রে ও সমাজে লিঙ্গসমতার অগ্রগতির ধারায় বড় ছেদ পড়বে।
-সিএনএন অবলম্বনে

 

ভারি ঝুমকা পরে কান ব্যথা হলে করণীয়

যেকোনো অনুষ্ঠানে বেশিরভাগ নারী শাড়ি, চুড়িদার, শালোয়ারের সাথে একটু ভারি ঝুমকা বা কানের দুল পরতে পছন্দ করেন। যা দেখতে খুবই সুন্দর। তবে এ কথাও সত্য যে, ভারি ঝুমকা বেশিক্ষণ পরে থাকলে কানে ব্যথা হতে পারে।

ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে ভারি ঝুমকা পরতে চান না। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। এমন কিছু উপায় রয়েছে, যা সঠিকভাবে মেনে চললে কানের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাহলে আসুন জেনে নেই সেসব উপায় সম্পর্কে-

ক্রিম বা তেল: ভারি ঝুমকা পরার আগে কানে ক্রিম বা তেল লাগাতে পারেন। এতে কানের ত্বক নরম হবে। ঝুমকা পরার কারণে কানে জ্বালা বা ব্যথা হবে না।

সব সময় পরবেন না: এখন বিয়ের মৌসুম চলছে। এক্ষেত্রে যদি পরপর সব অনুষ্ঠানে ভারি ঝুমকা পরেন, তাহলে কানের ব্যথা বাড়তে পারে। তাই সব অনুষ্ঠানে ভারি ঝুমকা না পরে হালকা কানের দুলও পরতে পারেন।

বেশিক্ষণ পরে থাকবেন না: পুরো অনুষ্ঠানে ভারি ঝুমকা পরে থাকবেন না। ছবি তোলার পর বা অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি হালকা কানের দুল পরতে পারেন। এতে কানে খুব বেশি ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

ভারি দুলের সঙ্গে চেন: ভারি কানের দুলের ওজন কমাতে দুলের সঙ্গে চেন ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার কানে ব্যথা হবে না। কারণ ওজনের কিছু অংশ চেনও বহন করতে পারবে।

 

‘ভোগ বাই প্রিন্স’ এখন কুমিল্লায়

‘দেশের টাকা দেশে রাখুন’ স্লোগান নিয়ে বিজয়ের মাসে কুমিল্লায় উদ্বোধন হলো ‘ভোগ বাই প্রিন্স’- এর ১৩ তম শাখার। ১৫ ডিসেম্বর কুমিল্লার বাদুরতলায় প্রতিষ্ঠানটির ১৩তম শাখাটির উদ্বোধন করেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহারউদ্দিন বাহার, এম পি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল গ্রুপ ও আরটিভির পরিচালক ফিরোজ আলম, ভোগ বাই প্রিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসিম আক্তার, জাগ্রত মানবিকতার প্রতিষ্ঠাতা তাহসিন বাহার সূচনা ও সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শ্রাবণ্য তৌহিদা।

প্রতিষ্ঠানটির হেড অব মার্কেটিং শাকিল ইবনে সুলতান বলেন, ‘বাজারে বিদেশি পণ্যের রাজত্ব ঠেকিয়ে দেশের টাকা দেশে রাখতে সম্পূর্ণ দেশীয় নিজস্ব পণ্য নিয়ে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। ইতিমধ্যে ঢাকার ১০টি শাখাসহ সারাদেশে মোট ১৩টি শাখায় ক্রেতা সাধারণের ব্যাপক সাড়া মেলেছে। কুমিল্লার এই শাখাটিও ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে বলে আশা করি।’

জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটাতে দেশের মানুষকে দেশীয় তৈরি পণ্য ব্যবহার করার আহ্বান জানান প্রধান অতিথি।

এদিকে উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ক্রেতা সাধারণকে ৪০% ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। এই শোরুমটিতে ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি, প্যান্ট, জুতা এবং মেয়েদের জন্য ব্যাগ, জুয়েলারি, থ্রি পিসসহ বাহারি পোশাকের সমাহার রয়েছে।

 

গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাওয়া ক্ষতিকর

লাইফস্টাইল ডেস্ক

গর্ভাবস্থায় অন্তঃসত্ত্বার চাই বাড়তি যত্ন। এ সময়ে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি কিছু নির্দিষ্ট খাবার খাওয়া এড়ানো উচিত। কারণ মা যা কিছু খায়, তার সরাসরি প্রভাব পড়ে সন্তানের ওপর। তাই কোনো কিছু খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

আসুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাবেন না-

১. গর্ভাবস্থায় জাঙ্ক ফুড খাওয়া উচিত নয়। জাঙ্ক ফুড খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে ওষুধ খেতে হবে, যার প্রভাব পড়বে গর্ভের শিশুর ওপর। তাই স্ট্রিট ফুড, জাঙ্ক ফুড খাবেন না।

২. যদি প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল সেবন করেন, তবে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ধূমপান বা অ্যালকোহল কোনোটাই এ সময় নেয়া উচিত না। অতিরিক্ত ডোপামিন হরমোন ক্ষরণ এই সময় শিশুর ক্ষতি করে।

৩. গর্ভবতী মায়েদের হাঙর, সওয়ার্ডফিশ, টুনা, কিং ম্যাকেরেল এবং টাইল ফিশ খাওয়া উচিত নয়।

৪. কাঁচা স্প্রাউটস খুব স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। তবে রান্না না করা স্প্রাউটস গর্ভবতী নারীদের পক্ষে ভালো নয়। কাঁচা স্প্রাউটসে ব্যাক্টেরিয়া থাকতে পারে। রান্না করার পর এটি দূর হতে পারে।

৫. তৈলাক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ এতে উচ্চ পরিমাণে লবণ, চিনি থাকে ও প্রচুর প্রিজারভেটিভ কেমিক্যালও উপস্থিত থাকে, যা গর্ভবতী নারী ও শিশুকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই টাটকা খাবার খাওয়া উচিত এবং ক্যালসিয়াম ও আয়রনের পরিমাণ বাড়ানো উচিত।

তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই

 

ঠোঁট ফাটা সারানোর ঘরোয়া উপায়

লাইফস্টাইল ডেস্ক

শীতে ঠোঁট ফাটা একটি কমন সমস্যা। সবাই কমবেশি এই সমস্যায় ভোগেন। কিছু নিয়ম মেনে চললে সহজেই আপনি এ সমস্যার সমাধান করতে পারেন।

আসুন জেনে নিই ঠোঁট ফাটা সারানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে-

১. আধা চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ার সঙ্গে মধু, অলিভ অয়েল ও চিনি মিশিয়ে ঠোঁটে ঘষুণ। ঠোঁট ধুয়ে লিপবাম লাগান।

২. ১ চা চামচ নারিকেল তেল আর ১ চা চামচ চিনি দিয়ে বানিয়ে নিন লিপ স্ক্রাব। কয়েকবার ঠোঁট স্ক্রাব করে ধুয়ে ফেলুন।

৩. নারিকেল দুধ আর গোলাপজল মিশিয়ে লিপ ক্লিনজার বানিয়ে নিন। প্রতিদিন সকালে এটি ব্যবহার করুন।

৪. কয়েকটি গোলাপের পাপড়ি কাঁচা দুধে ভিজিয়ে রাখুন ঘণ্টা তিনেক। পাপড়িগুলোর পেস্ট বানিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৫. ২ চা চামচ দই আর ১ চা চামচ লেবুর রস দিয়ে লিপ মাস্ক বানাতে পারেন।

 

ত্বক ভালো রাখবে যেসব খাবার

ত্বক ভালো রাখতে চাই প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। কিছু ভিটামিনও ত্বক ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে, যা আপনি পাবেন খাবার থেকে।

আসুন জেনে নিই ত্বক ভালো রাখতে কী খাবেন-

১. শরীর সুস্থ রাখতে ভিটামিন ‘সি’ খুবই প্রয়োজন। এতে পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ত্বককে সূর্যালোকের কারণে হওয়া ক্ষতি থেকে বাঁচায়। এ ছাড়া ত্বক উজ্জ্বল করে ও রোদ থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখে।

পালংশাক, টমেটো, লেবু, আঙুর, কমলা, ক্যাপসিকাম, পেঁপে ও লেবুতে পাবেন ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বক উজ্জ্বল করে, রঙের ভারসাম্য বজায় রাখে।

২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের রোদে পোড়াভাব কমায়, অকাল বলিরেখা ও মৃত কোষের সমস্যার সমাধান করে।

শক্তিশালী কয়েকটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হলো– ক্যারোটিনয়েড যেমন- বিটা ক্যারোটিন, লাইকোপিন, আইসোফ্লেভোন্স, রেসভারাট্রোল, আলফা লিপোইক অ্যাসিড, গ্লুটাথিওন ইত্যাদি।

ক্যারোটিনয়েড’য়ের ভালো উৎস হচ্ছে– গাজর, মিষ্টি আলু, হলুদ ক্যাপসিকাম, পালংশাক, কুমড়া ও ব্রকলি।

৩. ভিটামিন ‘ই’ খুব ভালো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা ত্বককে উন্মুক্ত রেডিকেল থেকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে। এ ভিটামিন ত্বককে রোদ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে, কোলাজেনের ভাঙন রোধেও ভূমিকা রাখে।

বীজ ও বাদাম– আখরোট, সূর্যমুখীর বীজ ও তিসির বীজে পাবেন ভিটামিন ই। এই ভিটামিন সূর্যালোক থেকে রক্ষা, আর্দ্রতা রক্ষা ও ত্বক মসৃণ রাখে।

৪. জিংক ত্বকের ক্ষত দূর করে ও নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে। জিংকসমৃদ্ধ খাবার ত্বককে ব্রণ ও দাগ মুক্ত রাখতে সহায়তা করে। আখরোট, সূর্যমুখীর বীজ ও ব্রকলিতে পাবেন জিংক।

৫. ত্বক ভালো রাখে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে আর্দ্র রাখে ও ত্বকের সুরক্ষার স্তর নিশ্চিত করে। এর প্রদাহনাশক উপাদান ব্রণ, লালচেভাব ও এরিথিমা কমাতে সাহায্য করে।

ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ যেমন- স্যামন। এ ছাড়া তিসির বীজ ও অ্যাভোকাডো।

এসব খাবার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখুন। ফলে ত্বক দীর্ঘদিন সুস্থ ও সুন্দর থাকবে।

ডা. লুবনা খন্দকার
সহযোগী অধ্যাপক
চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

 

শীতে জিভে জল আনা দুধ খেজুর পিঠা

শীতকালে পিঠা খেতে কার না ভালো লাগে। সেটি যদি হয় দুধ খেজুর পিঠা, তবে তো কথাই নেই। নাম শুনলেই জিভে জল এসে যায়।

খুব সহজে ঘরেই তৈরি করতে পারেন সুস্বাদু এ পিঠা।

উপকরণ

খামির জন্য, ময়দা ১ কাপ, নারিকেলের দুধ ১ কাপ, লবণ ১/৪ চা চামচ, ডিম ১টি ও ঘি ২ টেবিল চামচ।

দুধের সিরার জন্য

দুধ ২ কাপ, চিনি ২ টেবিল চামচ, এলাচ ২টি।

প্রণালি

পাত্রে নারিকেলের দুধ গরম করে চুলায় দুধের ভেতর ময়দা ও লবণ দিয়ে খামির বানাতে হবে। এবার চুলা বন্ধ করে খামির একটু ঠাণ্ডা হলে ঘি ও ফেটানো ডিম মিশিয়ে মথতে হবে।

ছোট ছোট বল বানিয়ে পিঁড়িতে রেখে বেলুন দিয়ে বেলে একটু লম্বা করে হাত দিয়ে পেঁচিয়ে মুখ চেপে লাগিয়ে দিন।

এবার অল্প তাপে ডুব তেলে লাল করে ভেজে নিন পিঠাগুলো। ২ কাপ দুধ জ্বাল দিয়ে ১ কাপ করে নিন।

এতে চিনি ও এলাচ দিয়ে নাড়ুন। চুলা বন্ধ করে এবার পিঠাগুলো দুধে দিয়ে ঢেকে রাখুন কমপক্ষে চার ঘণ্টা। পরিবেশনের সময় পিঠার ওপর দুধের সর দিয়ে পরিবেশন করুন।

লেখক: নাজমা নাহার, শিক্ষক ও গৃহিণী।

 

ঘুরে আসুন সবুজে ঢাকা হেরিটেজ রিসোর্টে

সবুজে শ্যামল ছায়া ঢাকা প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে বিনোদন পার্ক ‘হেরিটেজ রিসোর্ট লিমিটেড’। রাজধানী ঢাকা থেকে অল্প দূরে নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলার নওপাড়ায় আন্তর্জাতিক মানের সুবিধা নিয়ে ভ্রমণ বিলাসী ও বিনোদন পিয়াসী মানুষের কাছে আস্থা অর্জন করেছে এই রিসোর্টটি।

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৩০০ ফুট রাস্তা ধরে কাঞ্চন ব্রিজ অতিক্রম করে ভুলতা গাউছিয়া হয়ে এই রিসোর্টটিতে পৌঁছা যাবে। এছাড়া সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে হয়েও এ রিসোর্টটিতে পৌঁছা যাবে।

এখানে অবকাশ যাপনের আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ৫০ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। পানির ওপরে ভাসমান কটেজগুলো এ রিসোর্টটির সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিয়ে, জন্মদিন কিংবা অফিসিয়াল কাজের জন্য একাধিক সুপরিসর কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে এখানে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য রয়েছে ডিজিটাল স্টেজ।

খেলার মাঠের পাশাপাশি আছে শিশুদের জন্য আলাদা প্লে-গ্রাউন্ড। সুপরিসর সুইমিং পুলে একসঙ্গে অনেক মানুষের গোসলের ব্যবস্থা আছে। স্পিড বোটে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ঢেউ তৈরি করা ওয়েববিচ আছে রিসোর্টে। অত্যাধুনিক জিমনেশিয়ামের পাশাপাশি এ রিসোর্টটিতে রয়েছে কম্পিউটারাইজড গেমস খেলার সুবিধা। আধুনিক সুবিধা নিয়ে বিনোদনের চাহিদা পূরণ করার জন্য রয়েছে সিনেপ্লেক্স।

এছাড়া ক্লাব কারে চড়ার সুযোগ পাবেন রিসোর্টে আসা অতিথিরা। রয়েছে বারবিকিউ জোন। অত্যাধুনিক জিমনেশিয়ামে আগত অতিথিরা ফিটনেস প্রাকটিস করতে পারবেন। এছাড়া রয়েছে নিরাপদ হ্যালিপ্যাড। যেখানে অতিথিরা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে রিসোর্টে আসতে পারবেন। আর অতিথিদের বিনোদনের চাহিদা পূরনের জন্য রয়েছে বিশ্বমানের প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি করা সিনেপ্লেক্স।

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় বিষয় করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে রিসোর্টটিতে।

রিসোর্টের কর্ণধার মিনহাজুল রহমান রাজু ভুঁইয়া বলেন, ‘আসলে মানুষ প্রতিনিয়ত বিনোদন কিংবা অবকাশ যাপনের জন্য ঘরের বাইরে বের হচ্ছে। দেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে ভ্রমণপ্রিয় মানুষের সংখ্যা। আমরা সেই মানুষের বিনোদনের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এ রিসোর্টটি প্রতিষ্ঠা করেছি।

তিনি বলেন, রাজধানীর কোলাহল থেকে বেরিয়ে শান্ত নিবিড় পরিবেশে অতিথিরা আমাদের এ রিসোর্টে এলে নির্মল প্রশান্তি পাবেন। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের মানুষের সেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

 

শীতে সোনামুনিকে উষ্ণ রাখতে কী করবেন

শীতে শিশুর জন্য চাই বাড়তি যত্ন। এ সময় তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে ঠাণ্ডা, জ্বর ও সর্দি-কাশি লেগেই থাকে সোনামুনিদের।

শিশুদের শরীর গরম রাখা, ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং শীতের বাতাস থেকে রক্ষা করার জন্য তাদের শীতের পোশাক পরাতে হবে।

আসুন জেনে নিই শীতে শিশুর শরীর গরম রাখতে কী করবেন-

মাথা ঢেকে রাখা জরুরি

শীতের সময়ে শিশুর মাথা ঢেকে রাখা উচিত। যদি মাথার তাপমাত্রা কম থাকে তা হলে এর প্রভাব পুরো শরীরে পড়ে। তাই শিশুকে ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করতে টুপি পরান বা কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন। এ ছাড়া খেয়াল রাখবেন যে, শিশুর টুপিটি যাতে খুব আঁটসাঁট না হয় এবং নরম কাপড়ের হয়।

নাক উষ্ণ রাখুন

জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া ও ক্ষতিকারক ধোঁয়া নাক দিয়েই শরীরে প্রবেশ করে। তাই শিশুর নাক সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হালকা গরম তেল দিয়ে শিশুর নাক মালিশ করতে পারেন। ঘরের তাপমাত্রা যাতে খুব কম না থাকে সেদিকেও নজর দিতে পারেন।

পা ঢেকে রাখুন

শিশুর শরীরের নিচের দিকেও ঠাণ্ডা লাগতে পারে। তাপমাত্রা তার পায়ের দিকটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও শিশুরা বেশিরভাগ সময় বিছানায় শুয়ে থাকে, মাটিতে পা রাখে না, তা হলেও তাদের দেহের নিচের দিকে ঠাণ্ডা লাগতে পারে। তাই শিশুকে মোজা পরানো বা পায়ের দিকে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা প্রয়োজন।

ম্যাসাজ করুন
শিশুর শরীর উষ্ণ রাখতে ম্যাসাজ করতে পারেন। শরীর উষ্ণ রাখার জন্য সরিষার তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন।

হাত ঠাণ্ডা

শিশুর হাত ঠাণ্ডা হয়ে গেলে নরম গ্লাভস পরান এবং ফুল হাতা পোশাক পরান। তবে রাতে ঘুমানোর সময় শিশুর মুখ কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখবেন না এবং গ্লাভস পরাবেন না।

তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই

 

করোনাকালে বিয়ে: সুরক্ষিত থাকতে যা করবেন

শীত এলেই সামাজিক অনুষ্ঠানের ধুম পড়ে যায়। বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো এ সময়েই বেশি হয়ে থাকে। তবে কোভিড-১৯ মহামারী দেখা দেয়ায় বহু সামাজিক অনুষ্ঠানে কড়াকড়ি চলছে। তবে এসব কড়াকড়ির মধ্যেও থেমে নেই বিয়েশাদি।

করোনার মধ্যেই যদি কারও বিয়ের অনুষ্ঠান থাকে, তা হলে কিছু বিষয় অবশ্যই মেনে চলতে হবে। কারণ শীতে করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলছে।

আসুন জেনে নিই সংক্রমণ এড়াতে কী করবেন-

১. বিয়ের অনুষ্ঠানে অবশ্যই মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রত্যেকের মুখেই যাতে মাস্ক থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।

২. যত্নসহ অতিথিদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। ক্যাটারিংয়ের জন্য এমন কাউকে ঠিক করতে হবে, যিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখবেন।

৩. মহামারীর সময়ে বিয়ের পরিকল্পনা থাকলে অতিথিদের সংখ্যায় কাটছাঁট করুন। নিমন্ত্রিতদের তালিকায় শুধু কাছের লোকদেরই রাখুন।

৪. করোনার এ সময়ে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সরকারি নির্দেশিকা অনুসারে কতজন লোককে অনুষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে সেটিও মানার চেষ্টা করুন।

 

করোনাভাইরাস: অন্তঃসত্ত্বা মাকে সুরক্ষিত রাখার ৭ উপায়

করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের নিতে হবে বিশেষ যত্ন। সংক্রমণ রোধে নিয়মিত মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।

আসুন জেনে নিই অন্তঃসত্ত্বা মাকে সুরক্ষিত রাখার ৭ উপায়-

১. খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। সঙ্গে রাখতে হবে স্যানিটাইজার।

২. সন্তান পেটে আসার পর নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। চিকিৎসকের কাছে গেলে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। ২ ফুট দূরত্ব মানতেই হবে, ভালো হয় ৬ ফুট দূরত্ব মেনে চললে। বাইরে বেরিয়ে চোখ, নাকে হাত দেয়া যাবে না।

৩. বাইরে থেকে ঘরে এসে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। যে জামাকাপড় পরে গিয়েছিলেন সেগুলো ধুয়ে ফেলুন।

৪. গর্ভাবস্থায় খাবারের বিষয়ে নজর দেয়া জরুরি। হবু মা যা খাবেন সেখান থেকেই পুষ্টি পাবে গর্ভস্থ শিশু। প্রোটিন, ফাইবার, ফলিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার খেতে হবে। শাকসবজি, মাছ, মাংস, দুধ সব যেন থাকে খাদ্যতালিকায়।

৫. প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। ফলে আপনার শরীর যেমন ভালো থাকবে, তেমন মনও।

৬. খাওয়ার আগে হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি। এতে হাতে থাকা জীবাণু আপনার পেটে পৌঁছতে পারবে না।

৭. পরিবারের কারও জ্বর, সর্দি, কাশি বা হাঁচি হলে তার থেকে দূরে থাকুন। আলাদা ঘরে থাকলে খুব ভালো হয়।

তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই

 

নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে সরকার অত্যন্ত কঠোর : প্রতিমন্ত্রী

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর বলে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। তিনি বলেন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার বদ্ধপরিকর। এক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর।

বুধবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীতে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সভাকক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ইউনাইটেড ন্যাশনস ইন বাংলাদেশ-এর যৌথ আয়োজনে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ১৬ দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার নারী নির্যাতন বন্ধ, নারী নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি “যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’-এর বদলে “মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের” বিধান রাখা হয়েছে। সংশোধিত আইনের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডিএনএ প্রোফাইলিং ও স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আন্তঃমন্ত্রণালয় এবং বিভাগীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা হয়েছে।’

নারীর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতা নারীর মানবাধিকারের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন, ‘এই নির্যাতন ও সহিংসতা বন্ধে সরকারের সঙ্গে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তবেই সবার সম্মিলিত উদ্যোগে আমরা নারী ও শিশুর প্রতি সব ধরনের নির্যাতন ও সহিংসতামুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারব।’

ইউএন উইমেন প্রকাশিত তথ্য তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে ৩৫ শতাংশ নারী বা প্রায় প্রতি তিনজনে একজন নারী তার জীবন পরিক্রমায় শারীরিক, মানসিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা ঘটে আপনজনের দ্বারা। সহিংসতার স্বীকার ৪০ শতাংশের কম নারী সহায়তা পেয়ে থাকে। বিশ্বে মোট মানব পাচারের ৭২ শতাংশ নারী ও শিশু। তাই নারীর প্রতি সংঘটিত সব ধরনের নির্যাতন ও অপরাধ নির্মূল করার জন্য বিশ্বব্যাপী সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা রাখেন বাংলাদেশে ইউএন রেসিডেন্ট কোর্ডিনেটর মিয়া সেপ্পো ও বাংলাদেশে নিযুক্ত কমনওয়েলথ উন্নয়ন পরিচালক জুডিথ হারবার্টসন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মাল্টিসেক্টোরাল প্রোগ্রামের পরিচালক ড. আবুল হোসেন।

 

বেগম রোকেয়া : নারী জাগরণের অগ্রদূত

ইয়ামিন আকন্দ

বাঙালি মুসলমান সমাজ যখন সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতায় আবদ্ধ ছিল; তৎকালীন নারী সমাজের শিক্ষার আলো নিয়ে এসেছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। বেগম রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে।

আজ বাঙালি লেখক, শিক্ষাবিদ, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়াকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। তার কর্ম ও আদর্শকে উদযাপনের লক্ষ্যে জন্ম ও মৃত্যুদিন ৯ ডিসেম্বরকে ‘বেগম রোকেয়া দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।

অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তিনি হয়েছিলেন বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত। তার বাবা আবু আলী হায়দার সাবের বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী হলেও মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে ছিলেন রক্ষণশীল। বড় দুই ভাই-বোনের সহযোগিতায় তিনি গোপনে শিক্ষালাভ ও সাহিত্যচর্চা করেন।

১৮৯৮ সালে বিহারের ভাগলপুরের সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন একজন উদার মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তি। স্বামীর সুদূরপ্রসারী প্রভাবের কারণেই তার জ্ঞানচর্চার পরিধি বিস্তৃত হয়। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের লেখকদের রচনার সাথে পরিচিতি ঘটতে থাকে। ১৯০৯ সালে স্বামী মারা গেলে বেগম রোকেয়া নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন।

১৯০২ সালে নভপ্রভা পত্রিকায় ‘পিপাসা’ প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতি পান। ১৯৫০ সালে মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য রচনা ‘সুলতানাস ড্রিম’ যার অনূদিত রূপ ‘সুলতানার স্বপ্ন’ প্রকাশের মাধ্যমে সর্বজন পরিচিত হয়ে ওঠেন। এটিকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইলফলক ধরা হয়। তার অন্যান্য গ্রন্থ হলো- পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী, মতিচুর। প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসের মধ্যদিয়ে তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আর লিঙ্গসমতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। হাস্যরস আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সাহায্যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসম অবস্থান ফুটিয়ে তোলেন।

২০০৪ সালে বিবিসি বাংলা একটি জরিপের আয়োজন করে। ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ তিরিশ দিনের ওপর চালানো জরিপে শ্রোতাদের ভোটে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ২০ জনের জীবন নিয়ে বিবিসি বাংলায় বেতার অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়। সেই শ্রেষ্ঠ কুড়ি জনের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে ছিলেন আমাদের বেগম রোকেয়া।

বিবিসি বাংলার প্রথম তথ্যচিত্র নির্মাতা বাণী দত্ত জানান, কিভাবে কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে তিনি নারীদের শিক্ষাদানে ব্রতী হয়েছিলেন, কিভাবে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ বিসর্জন দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাই স্কুল। যেটি আজ কলকাতার লর্ড সিনহা রোডের প্রথম সারির স্কুল। বেগম রোকেয়ার সাংগঠনিক কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ততা ছিল। ১৯১৬ সালে তিনি আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম নামে একটি মহিলা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এটি নারীদের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করতো।

বেগম রোকেয়ার অসামান্য অবদানের জন্য তিনি এখনো সর্বজন স্মরণীয় হয়ে আছেন। বেগম রোকেয়া ১৩৭তম জন্মদিনে গুগল তার নামে একটি ডুডল তৈরি করে। ২০০৮ সালের ৮ অক্টোবর রংপুর বিভাগের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা ২০০৯ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নামকরণ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীদের জন্য আবাসিক হল বেগম রোকেয়ার নামে নির্মাণ করে। বাংলাদেশ সরকার বেগম রোকেয়া স্মরণে গণউন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে স্থাপন করা হয় বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র। যা বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।

তিনি প্রথম নারীদের সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার কথা ভেবেছিলেন। বেগম রোকেয়া ছিলেন আত্মশক্তিতে বলীয়ান। অনেক দুঃখের বোঝা মাথায় নিয়েও নিজেকে কখনো অসহায় ভাবেননি। নারী শিক্ষার গুরুত্ব তিনি তার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝেছিলেন। তিনি কখনোই নারীতান্ত্রিক কিংবা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে চাননি।

তিনি চেয়েছিলেন, নারী ও পুরুষ উভয়ই যেন সমান মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে বাঁচেন। তিনি নারী-পুরুষকে একটি গাড়ির দুটি চাকার সঙ্গে তুলনা করেছেন। নারীকে জাগিয়ে তুলেছিলেন, নারীর পরাধীনতায় হয়েছিলেন সোচ্চার। বর্তমানে নারীদের ভোটাধিকার, শিক্ষার অধিকার, কর্মসংস্থানের সুযোগ হতো না। যদি কেউ নিজ থেকে উদ্যোগ না নিতেন। অথবা নারীশিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে না পারতেন।

বেগম রোকেয়া তার লেখনীর মাধ্যমে, সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দকে বিসর্জন দিয়ে হাজার নারীর মাঝে তার চেতনা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার অনুপ্রেরণামূলক কাজ বর্তমান নারীদের এতদূর নিয়ে এসেছে। নারীদের কাছে একজন অনুপ্রেরণীয় ব্যক্তিত্ব।

তাই তো ৯ ডিসেম্বরকে বেগম রোকেয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়। নারীদের শিক্ষা অর্জনের পথের কাঁটা সরাতে পেরেছিলেন বলেই আজ নারীদের সর্বক্ষেত্রে বিচরণ রয়েছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, লোক প্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

বাবার ওষুধ কিনতে সকাল-সন্ধ্যা ভ্যান চালায় শিশু শম্পা

জামালপুর সদর উপজেলার নাকাটি গ্রামের শফিকুল ওরফে ভাসানীর শিশু কন্যা শম্পা। দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে শয্যাশায়ী বাবার চিকিৎসা ও ওষুধের টাকার জন্য দেড় বছর ধরে ভ্যান চালাচ্ছে সে। শম্পা নাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।

সম্প্রতি বিষয়টি নজরে এলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে সরেজমিন পরিদর্শন করেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক। সোমবার সকালে শম্পা, তার বাবা-মা ও স্বজনদের সংখ্যা কথা বলেছেন তিনি। ওই সময় জামালপুর সদরের ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে শম্পার বাবা শফিকুল ওরফে ভাসানীর চিকিৎসার দায়িত্ব ও পরিবারের ব্যয়-ভার গ্রহণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।

শম্পার বাবা শফিকুল ওরফে ভাসানী বলেন, আমি আগে ভ্যান চালাতাম। পাঁচ বছর আগে জামালপুর শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় আমার এক পা ভেঙে যায়। এরপর পঙ্গু হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। সবকিছু বিক্রি করে প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ করেছি। তবু পা ভালো না হওয়ায় দেড় বছর ধরে ঘরে পরে আছি। প্রতিদিন আমার ১০০-১৫০ টাকার ওষুধ লাগে। কোনো উপায় না পেয়ে আমি ও আমার স্ত্রী সবজি বিক্রি করি ও আমার ছোট মেয়ে শম্পা ভ্যান চালায়। স্ত্রী-মেয়ের জন্যই এখনো বেঁচে আছি।

শম্পার মা নেবুজা বেগম বলেন, পঙ্গু হাসপাতাল থেকে জানিয়েছে আমার স্বামীর পা ভালো করার জন্য আরো অন্তত তিন লাখ টাকা প্রয়োজন। এ কারণে ছোট মেয়ে শম্পা ভ্যান চালায়। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে শম্পা। ওর হাত-পায়ে ব্যথা হয়। প্রতিরাতেই ওর হাত-পা টিপে দিতে হয়। তবু বাবার জন্য সকাল-সন্ধ্যা ভ্যান চালিয়ে টাকা নিয়ে আসে মেয়েটা।

ভ্যান চালাতে খুব কষ্ট হয় জানিয়ে শম্পা বলে, প্রতিদিন সকালে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হই। ২০০-৩০০ টাকা কামাই করে বাড়ি ফিরি। সেই টাকা দিয়ে বাবার ওষুধ কিনি।

শরিফুলের প্রতিবেশী হযরত আলী বলেন, দেড় বছর আগে শম্পা একবেলা পড়াশোনা করত, এক বেলা ভ্যান চালাত। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হওয়ার পর সারাদিন ভ্যান চালায় মেয়েটি।

জামালপুর সদরের ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। পরিবারটির খোঁজ নিয়েছি। স্থানীয়রা সাধ্যমতো তাদের সহযোগিতা করছে। অসহায় পরিবারটির দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে শিশু শম্পা ও তার বাবার খোঁজ নিয়েছি। অসহায় পরিবারটিকে সহযোগিতার বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

 

বাল্যবিয়ের অভিশাপে দুঃসহ জীবন কাটছে বৃষ্টির

বাল্যবিবাহের অভিশাপে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে এখন দুঃসহ জীবনযাপন করছে কিশোরী বৃষ্টি খাতুন। সে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের কাটাগাড়ি আদর্শ গ্রামের মৃত নুর হোসেন ও মোছা. বাঁচা খাতুনের মেয়ে।

বৃষ্টি খাতুন জানায়, উপজেলার বলদিপাড়া দাখিল মাদরাসায় ৭ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে পার্শ্ববর্তী দেশিগ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে আব্দুল মমিনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিন্তু কোনোভাবেই সে স্বামী, সংসার ও পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারছিল না। স্বামীকে দেখলেই তার খুব ভয় লাগত। এ বিষয়টা কেউই বুঝতে চাইত না। আবার কেউ মেনেও নিত না। এতো ভয়ের মধ্যে বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়ে সে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে কীটনাশক পানে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। অনেক চিকিৎসার পর প্রাণে বেঁচে গেলেও তার দুই পায়ের শক্তি হারিয়ে যায়। সে এখন পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারে না। ফলে লাঠিতে ভর দিয়ে কোনো রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে।

বৃষ্টির মা বাঁচা খাতুন জানান, দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছি যে, মেয়েকে এতো অল্প বয়সে বিয়ে দেয়া আমার মোটেও ঠিক হয়নি। তাই মেয়েকে আরো কিছুদিন নিজের কাছে নিয়ে এসে রাখতে চেয়েছিলাম। জামাই আবদুল মোমিন ও বেয়াই আবদুল মতিনকে অনুরোধও করেছিলাম। আরো কিছুদিন আমার বাড়িতে রেখে দিতে। তারপর ঠিক হলে পাঠাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা রাজি হয়নি। সপ্তাহ পার না হতেই জামাই চলে আসতো আমার বাড়িতে। এতে মেয়ে আরো ভয়ে পেয়ে যেতো। ফলে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

তিনি আরো জানান, মেয়ের জীবনটা দুঃসহ হয়ে উঠেছে। মমিন আবারো বিয়ে করেছে। তাকে নিয়ে সংসার করছে। আমার মেয়েটা আমার বাড়িতে এভাবে পড়ে আছে। তার কোনো খোঁজ-খবরও নেয় না। মেয়েটা এখন শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পাশাপাশি মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে। দু’জনের বয়স না হওয়ায় বিয়ের নিবন্ধন করাও সম্ভব হয়নি। ফলে আমরা কোথাও কোনো আইনি সহায়তা পাচ্ছি না।

এ বিষয়ে বৃষ্টির স্বামী আব্দুল মমিন জানায়, বৃষ্টিকে এক লাখ টাকা দিতে চেয়েছি। কিন্তু তার অভিভাবকরা তা নেয়নি।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে বৃষ্টির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সে নিজ বাড়ির উঠানে লাঠিতে ভর দিয়ে বসে আছে।

তাড়াশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে জানা যায়, তাড়াশে কন্যা সন্তানের অভিভাবকরা মেয়ে একটু বড় হলেই বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে। এর নেতিবাচক প্রভাবের শিকার বৃষ্টি।

তাড়াশ ইউএনও মো. মেজবাউল করিম বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাল্যবিয়ে সাময়িক বন্ধ করা গেলেও তা শেষ পর্যন্ত আটকে থাকছে না। পরে গোপনে বিয়ে দিয়ে দেয়। মাঝে মধ্যেই এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দোষীদের জেল-জরিমানা করা হয়। অভিভাবকরা সচেতন না হওয়ায় গোপনে এ কাজ চলছে। বৃষ্টির বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে অচিরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। -ডেইলি বাংলাদেশ

 

ব্যর্থতা থেকে জান্নাতের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

ফেসবুকে তিনি ‘অপরাজিতা জান্নাত’ নামেই বেশি পরিচিত। তার উদ্যোগের নাম ‘অপরাজিতা’। দেশি পণ্যকে তুলে ধরার প্রয়াস তার। অপরাজিতা এ নারীর পুরো নাম জান্নাতুল ফিরদাউস। বাবা ব্যবসায়ী আবু জাহির, মা সুলতানা সুফিয়া। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সিলেটের হবিগঞ্জে। পূর্বপুরুষ পারিবারিকভাবে ব্যবসায়ী ছিলেন; তাই ছোটবেলা থেকেই ব্যবসার সাথে পরিচিত তিনি। পাঁচ বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়।

জান্নাতুল বলেন, ‘আমার ভাই সবার ছোট। আমাদের বড় ভাই ছিল না। তাই বাবাকে সব কিছু একা সামলাতে হতো। দু’জন কর্মচারী থাকা সত্ত্বেও বাবার একজন বিশ্বস্ত লোকের প্রয়োজন ছিল। তখন আমার বয়স মাত্র ৮ বছর। একদিন একা একা বাবার দোকান দেখতে গিয়েছিলাম। বাবা আমাকে দেখে অনেক খুশি হন এবং ক্যাশ কাউন্টারে বসিয়ে দেন। তখন টুকটাক হিসাব জানতাম। বাবার কাছ থেকে কী করে পোশাক ভাঁজ করতে হয়, এগুলো শিখতাম। এভাবেই আমার ব্যবসার হাতেখড়ি।’

তিনি বলেন, ‘এভাবে প্রায় ৮ বছর বাবার সাথে কাজ করি। এমনকি বাবা যখন অসুস্থ; তখন পুরো দোকান সামলেছি। যখন মাধ্যমিকে পড়ি; তখন কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না। কারণ আমি একজন মেয়ে আর সামনে এসএসসি পরীক্ষা। সবদিক চিন্তা করে আমি ব্যবসার কাজ থেকে সরে আসি। এর একবছর পর আমার বাবা দোকানটি ছেড়ে দেন। দোকানের সম্পূর্ণ মালামাল বিক্রি করে ফেলেন।’

জান্নাত বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৫ বছর ব্যবসা করার পরও বাবা মাঝে মাঝে আক্ষেপ করে বলতেন, আমার মেয়েটা যদি আজ ছেলে হতো, তবে হয়তো আমার ব্যবসাটা আজ টিকে থাকত। বাবার সেই আক্ষেপ আর ব্যবসার প্রতি ভালোবাসা থেকেই মূলত ব্যবসায় কিছু একটা করার চিন্তা-ভাবনা করি। বাবার ইচ্ছে ছিল, আমি ঢাকায় পড়াশোনা করি। তাই ২০১৬ সালে ঢাকার লালমাটিয়া মহিলা কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হই।’

দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে অপরাজিতা জান্নাত বলেন, ‘১ম বর্ষের ফরম ফিলাপের আগের দিন পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে হয়। স্বামী এমদাদুল হক রুবেল পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার। তারপর থেকে মূলত উদ্যমী জীবন শুরু। বিয়ের পর হোস্টেল ছেড়ে নতুন জীবন শুরু। ছোট একটা বাসা নিয়ে সংসার আমাদের। এরই মধ্যে ১ম বর্ষের ফলাফল প্রকাশ হয়, আমি ফার্স্ট ক্লাস পাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাস থেকে বাসা দূরে হওয়ায় রেগুলার ক্লাস করা সম্ভব হয়নি। তাই বাসায় বসে না থেকে আমি চিন্তা করি চাকরি করব। স্বামীর মতামত নিয়ে একটি প্রাইভেট অফিসে জয়েন করি। কিন্তু পড়াশোনা, অফিস, সংসার সবকিছু সামলানো চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছিল। তখন ফ্রি টাইমে আমি বিভিন্ন নারী উদ্যোক্তার গল্প শুনতাম। এরপরই স্বপ্ন দেখতে শুরু করি ব্যবসা করার।’

ব্যবসা শুরুর গল্প জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বামীর উৎসাহে বাবা, স্বামী ও নিজের কিছু জমানো টাকা নিয়ে বাসার কাছে একটি দোকান ভাড়া করেন। ডেকোরেশনের কাজ শেষে সেখানে তিনি মেয়েদের ড্রেসসহ অন্যান্য আইটেমের পোশাক তোলেন। যেহেতু এটি মেয়েদের দোকান ছিল এবং সুন্দর সুন্দর কালেকশন ছিল; তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এলাকায় ভালো পরিচিতি পাই।’

জান্নাত বলেন, ‘এভাবে যখন একটু একটু করে দোকানটি বড় হচ্ছিল; তখনই বেবি কনসিভ হয়। আমাদের প্রথম সন্তান যেহেতু; তার প্রতি আমাদের অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করছিল। কিন্তু অন্যদিকে আমার স্বপ্ন কেবলমাত্র যাত্রা শুরু করেছে। সেই মূহূর্তে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আমার পক্ষে খুবই কষ্টকর ছিল। স্বামীর কথা ভেবে, সন্তানের কথা চিন্তা করে ব্যবসার পরিকল্পনা স্থগিত করি।’

প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আসলে প্রতিটি মানুষের জীবনেই কিছু স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্ন যদি চোখের সামনে ভেঙে যায়; তখন সেই পরিস্থিতিটা যে কতটা কষ্টের, সেটা আমি প্রথমবার উপলব্ধি করি। ডেকোরেশন ও মালামাল মিলিয়ে আমার লস হয়েছিল প্রায় লক্ষাধিক টাকা। মানসিকভাবে যে ক্ষতি হয়েছিল, তা ছিল অনেক বেশি। নিজেকে তখন শুধু ব্যর্থ মনে হতো। ডিসেম্বরের ৬ তারিখে আমার ছেলের জন্ম হয়। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে একটি কথা মনে হতো, একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমি ব্যর্থ হলেও একজন মা হিসেবে আমি সফল।’

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বলতে গিয়ে জান্নাত বলেন, ‘ফ্রেব্রুয়ারিতে আমার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়। মার্চ মাসে যখন করোনার প্রকোপ বেড়ে যায়, তখন চারটি পরীক্ষা স্থগিত রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে স্বামীর অফিস কার্যক্রমও বন্ধ ছিল। ওই সময়ে আমার স্বামী বলতেন, তুমি ঘরে বসে কাজ করা যায় এমন কিছু একটা চিন্তা করো। কিন্তু সেই সময়ে আমার মন-মানসিকতা এতটাই দুর্বল ছিল যে, আমি কিছু ভাবতে পারছিলাম না। তখন আমার একজন শিক্ষকের কথা মনে পড়ে যায়, তিনি ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার। যিনি সব সময় বলতেন, স্বপ্ন দেখুন, লেগে থাকুন, সফল হবেন। স্যারের এ উক্তি আমার মনোবলকে জাগিয়ে তোলে।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু অনলাইনে কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছিলাম না। সেই মূহূর্তে আরও একজন শিক্ষকের দেখা পাই। তিনি রাজীব আহমেদ স্যার। যিনি বলেন, পার্সোনাল ব্রান্ডিংয়ের দিকে গুরুত্ব দিতে। স্যারের কথা অনুযায়ী আমার মনে হলো, আমার আগে নিজেকে ব্রান্ডিং করতে হবে। আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডরা সবাই যেহেতু আমার পরিচিত ছিলেন; সেক্ষেত্রে আমি নতুন করে আবার সবার সাথে পরিচিত হওয়া শুরু করলাম। আমার আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিলাম।’

স্বপ্নের হাতছানি সম্পর্কে জান্নাত বলেন, ‘তারপর একদিন আমার একজন ফেসবুক ফ্রেন্ড আমাকে নক করলেন কিছু ড্রেস কেনার জন্য। কারণ তিনি জানতেন আমার নিজের একটা শপ আছে। আমার কাছে যেহেতু ড্রেস কালেকশন ছিল না, তাই আমি আমার একজন ফ্রেন্ডের কিছু ড্রেস কালেকশন তাকে দেখাই। তিনি সেখান থেকে ২ হাজার টাকার ব্লক এবং স্ক্রিন প্রিন্ট ড্রেস অর্ডার করেন। অর্ডারটা আমার ফ্রেন্ডকে কনফার্ম করার পর, সে এগুলো পাঠিয়ে দেয়। ড্রেস হাতে পেয়ে আমার সেই কাস্টমার ফ্রেন্ড অনেক খুশি হন। সেই অর্ডারে আমার লাভ ছিল মাত্র ৮০ টাকা। কিন্তু আনন্দ ছিল এত বেশি যে, আমার মনে হয়েছিল আমি কোটি টাকা হাতে পেয়েছি। কারণ তিনি আমার প্রথম অনলাইন কাস্টমার ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘তখন যেহেতু আমি ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছিলাম। তার পরের দিন আমার একজন প্রিয় বান্ধবীর সাথে বিষয়টি শেয়ার করি। সে তখন আমার কথা শুনে কালেকশনগুলোর ছবি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমি তাকে ছবিগুলো দিলে সে সেখান থেকে ৫ হাজার টাকার পণ্য অর্ডার করে। আমি প্রডাক্ট কনফার্ম করে আমার সেই সেলার ফ্রেন্ডকে অর্ডার দিলে, তিনি সবগুলো প্রডাক্ট তার কাছ থেকে নেন। আমার যেহেতু নতুন ব্যবসা আর ব্যবসায় প্রতিশ্রুতি রক্ষা যেহেতু বড় বিষয়, তাই আমি প্রথমবার অল্প কিছু টাকার প্রডাক্ট স্টক করি এবং সেই বান্ধবীর চাহিদা অনুযায়ী তার ড্রেসগুলো পাঠিয়ে দেই। সেই বান্ধবী ড্রেসগুলো পেয়ে অনেক খুশি হন এবং তিনি আমাকে পরামর্শ দেন অনলাইনে একটা গ্রুপ খোলার জন্য।’

এরপর তিনি তার বান্ধবীর পরামর্শ অনুযায়ী একটি পার্সোনাল গ্রুপ খোলেন তার শপের নাম অনুযায়ী। গ্রুপের নাম দেন ‘অপরাজিতা’। একই নামে একটি পেইজও খোলেন তিনি। পেজ এবং গ্রুপ খোলার পর পরিচিতদের থেকে ভালো সাড়া পান। গ্রুপ খোলার পর দুই মাসে তার পোশাক বিক্রি হয় ১ লাখ টাকা। অথচ তখন গ্রুপের সদস্য ছিল মাত্র ২৫০ জনের কাছাকাছি। এভাবে গত ৪ মাসে শুধু গ্রুপ এবং পেজ থেকে জান্নাতুলের পণ্য বিক্রি হয় আড়াই লাখ টাকারও বেশি। এর মধ্যে ব্লক এবং স্ক্রিন প্রিন্টের ড্রেস বিক্রি হয়েছে ২ লাখ টাকা। তাই তিনি সিগনেচার প্রোডাক্ট হিসেবে ব্লকের শাড়ি তৈরি করেছেন।

এ ছাড়াও তার উদ্যোগে সামিল হয়েছেন প্রতিবশী থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন এবং বিভিন্ন সময়ের বন্ধু-বান্ধব। তার এ সফলতার সবচেয়ে বড় অংশীদার তার স্বামী। বাবা-মায়ের দোয়া এবং ভালোবাসা সব সময় জান্নাতুলকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তিনি এমন দু’জন শিক্ষকের সান্নিধ্য পেয়েছেন; যাদের প্রতিটি কথা এবং কাজ তার ব্যক্তিগত জীবন ও ব্যবসায়িক জীবনের চিন্তা-ভাবনাকে বদলে দিয়েছে। জাগো নিউজ

 

ভরিতে ১১৬৬ টাকা কমল স্বর্ণের দাম

ভরিপ্রতি ১ হাজার ১৬৬ টাকা ক‌মি‌য়ে স্ব‌র্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) বাজুসের সভাপতি এনামুল হক খান ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বুধবার (২ ডিসেম্বর) থেকে স্বর্ণের এ নতুন দর কার্যকর হবে। এর আগে গত ২৫ নভেম্বর থেকে প্র‌তিভরিতে ২ হাজার ৫০৭ টাকা ক‌মি‌য়ে স্ব‌র্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে এক সপ্তাহে দুই দফায় ভরিতে ৩ হাজার ৬৭৩ টাকা কমল স্বর্ণের দাম।

বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় শঙ্কিত বৈশ্বিক অর্থনীতি, ডলার ও তেলের দরপতন, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় স্বর্ণবাজারে দামের উত্থান-পতন সত্ত্বেও এক সপ্তাহের মধ্যে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাজুসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার (২ ডিসেম্বর) থেকে বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম ভরিপ্রতি ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানো হলো।

তবে রুপার দাম অপরিবর্তিত থাকবে। নতুন দাম অনুযায়ী, ২ ডিসেম্বর থেকে ভালো মানের, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা ক‌মি‌য়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ হাজার ৬৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৯ হাজার ৫১৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬০ হাজার ৭৬৯ টাকায় ও সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি স্বর্ণ ৫০ হাজার ৪৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হ‌য়ে‌ছে।

স্ব‌র্ণের দাম কম‌লেও রুপার পূর্বনির্ধা‌রিত দাম বহাল রয়েছে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি রুপার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫১৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের রুপার দাম ১৪৩৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ১২২৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রূপার দাম ৯৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হ‌য়েছে।

এ‌দি‌কে আজ‌ ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দে‌শের বাজা‌রে ভালো মানের, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি স্বর্ণ বি‌ক্রি হ‌য়ে‌ছে ৭৩ হাজার ৮৩৩ টাকা। ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৭০ হাজার ৬৮৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬১ হাজার ৯৩৬ টাকায় ও সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি স্বর্ণ ৫১ হাজার ৬১৩ টাকা ভরি বিক্রি হয়েছে।

এদিকে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হলেও বিশ্ববাজারে আজ দাম বেড়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩৫ দশমিক ৮৮ ডলার বা ২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৮১২ দশমিক ৯০ ডলারে উঠেছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা তখন সিদ্ধান্ত নেয় যখন বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কম ছিল। আমরা সবসময় চেষ্টা করছি বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশের বাজারে স্বর্ণের দামের সমন্বয় রাখতে।

 

মডেলিং ছাড়লেন আলোচিত মডেল হালিমা আদেন

পশ্চিমা বিশ্বের আলোচিত হিজাবী র‌্যাম্প মডেল হালিমা আদেন। সম্প্রতি তিনি ফ্যাশন দুনিয়াকে চিরতরে বিদায় জানিয়েছেন। তিনি এই খবর ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ইসলামী মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছিলো এ ইন্ডাস্ট্রি।

ব্রিটিশ ফ্যাশন ম্যাগাজিন- ভোগ, ভোগ অ্যারাবিয়া এবং মার্কিন জনপ্রিয় পত্রিকা- আলুউরের প্রচ্ছদে জায়গা করে নিয়েছিলেন সোমালিয়ান বংশোদ্ভুত এ মার্কিনী।

প্রথাগত মডেলিং ধারার বাইরে গিয়ে হিজাব পরিহিত অবস্থায় ক্যাটওয়াক করে সবার নজর কাড়েন হালিমা। ধীরে-ধীরে নিজের স্বতন্ত্র স্টাইল নিয়েই হয়ে ওঠেন ফ্যাশন আইকন। আর ক্যারিয়ারের চূড়ায় থাকা অবস্থায়ই হালিমা ঘোষণা দিলেন, আর ফিরবেন না মডেলিংয়ে। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করলেন ‘হিজাব স্টোরি’ নামে সিরিজ বার্তা। জানান- এ সিদ্ধান্তের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তার মা।

মার্কিন হিজাবী মডেল হালিমা আদেন বলেন, বহু আগেই মা মডেলিং ছাড়ার কথা বলেছিলেন। এখন মনে হচ্ছে, সেসময় এতোটা প্রতিবাদী না হলেও পারতাম। কারণ, তিনিই একমাত্র মানুষ যে সবসময় আমার কল্যাণ কামনা করেন। দ্বীন ও দুনিয়ার ব্যাপারে তার পরামর্শে বরাবর অটল ছিলেন মা।

হালিমার দাবি- চোখ ধাঁধানো ফ্যাশন দুনিয়া ইসলামিক মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে তাকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে নিয়েছিলো। বিশেষ করে চলমান মহামারি পরিস্থিতি ধর্ম সম্পর্কে বেশি প্রভাবিত করেছে তাকে।

হালিমা আদেন বলেন, একজন মুসলিম নারী হিসেবে কী করা উচিৎ- সেটা চিন্তার সুযোগ তৈরি করে দিলো করোনা মহামারি। হিজাব পরে ফ্যাশন দুনিয়ায় টিকে থাকতে বহু চড়াই-উৎড়াই পার করেছি। আর হিজাবের মর্ম বুঝতে পারেন, এমন মুসলিম স্টাইলিস্টেরও বড় অভাব ইন্ডাস্ট্রিতে।

কেনিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করা হালিমা মাত্র ছয় বছর বয়সে পা দেন মার্কিন মুলুকে। ২০১৬ সালে প্রথমবার, মিস মিনেসোটা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় হিজাব পড়ে অংশ নেন হালিমা। এর পরে কেবলই সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। সেটাই ছিলো তার ক্যারিয়ারের শুরু। জায়গা করে নেন ‘ভোগ’ ‘আলুউরে’র মতো জনপ্রিয় ফ্যাশন ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে। প্রথমবার, বুরকিনি পড়ে পোজ দিয়েছিলেন ‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেডের’ জন্যেও।

 

যেকারণে ভাঙলো শবনম ফারিয়ার সংসার

দুই বছরও টিকল না অভিনেত্রী শবনম ফারিয়ার সংসার। মাত্র এক বছর নয় মাসের মাথায় সংসার জীবন থেকে ছুটি নিলেন শবনম ফারিয়া ও হারুন অর রশীদ অপু। গতকাল শুক্রবার তাদের বিচ্ছেদ হয়। দু’জনই তালাকনামায় সই করেছেন। বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গণমাধ্যমকে ফারিয়া বলেন, ‘‘আমার মা সব সময় একটা কথা বলে, ‘আল্লাহর হুকুম ছাড়া একটা গাছের পাতাও নড়ে না, আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারি!’ ঠিক সেভাবেই আমি আর অপু অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করেছি একসাথে থাকতে! কিন্তু বিষয়টা একটা পর্যায়ে খুব কঠিন হয়ে যায়! ‘মানুষ কি বলবে’ ভেবে নিজেদের উপর একটু বেশিই টর্চার করে ফেলছিলাম আমরা! ‘জীবনটা অনেক ছোট, এতো কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকার কি দরকার’? এইটা ভেবে আমরা এ বছরের শুরু থেকেই সিদ্ধান্তে আসি আমরা আর একসাথে থেকে কষ্টে থাকতে চাই না!’’

গত বছর ১ ফেব্রুয়ারি জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী হারুন অর রশীদ অপু। বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই সম্পর্ক শিথিল হতে শুরু করে তাদের। অনেক দিন আলাদা থাকতেন দুজন। অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হলেন তারা।

 

পাঞ্জাবি পরা বর, প্যান্ট-স্যুট পরা কনে

বিয়েতে সাধারণত সিল্কের শাড়ি অথবা লেহেঙ্গা পরেন ভারতীয় নারীরা। অনেকে লাল রঙের শাড়ি-লেহেঙ্গা পরতে পছন্দ করেন। অনেকে আবার সোনা বা রুপার সুতা দিয়ে এমব্রয়ডারি করা লেহেঙ্গা পরেন। এবার সাঞ্জানা রিশি নামের এক নারী বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন প্যান্ট-স্যুট পরে।

চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর দিল্লির ব্যবসায়ী ধ্রুব মহাজনের সঙ্গে ধুমধাম করে বিয়ে হয় ২৯ বছর বয়সী ভারতীয়-আমেরিকান উদ্যোক্তা সাঞ্জানা রিশির। এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আইনজীবী হিসেবে কাজ করতেন। গত বছর দেশে ফেরেন রিশি।

বিয়েতে সাঞ্জানা রিশি হালকা নীল রঙের প্যান্ট-স্যুট পরেন। ধ্রুব মহাজন পরেন পাঞ্জাবি। তার প্যান্ট-স্যুট পরার বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ফ্যাশন ডিজাইনার ও ফ্যাশন সচেতন ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন। ভারতীয় নারীরা বিয়েতে ঐতিহ্যবাহী পোশাক ছেড়ে প্যান্ট-স্যুট পরা ধরে কি-না, সাঞ্জানা রিশির এ ঘটনার পর সেটা নিয়েও ভাবছেন অনেকে।

বিয়ের পোশাক নিয়ে সাঞ্জানা রিশি বলেন, প্যান্ট-স্যুট তার খুব পছন্দের। এ কারণে বিয়েতে হালকা নীল রঙের প্যান্ট-স্যুট পরেছিলেন তিনি।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক বছর ধরে পশ্চিমা কনেদের প্যান্ট-স্যুট পরতে দেখা যাচ্ছে। ডিজাইনাররা বিয়ের পোশাক হিসেবে ট্রাউজার ও প্যান্ট-স্যুট প্রমোট করছেন। এ ব্যাপারে তারকাদের সমর্থনও পাচ্ছেন তারা।

গত বছর লাস ভেগাসে ‘গেম অব থ্রোনস’র নায়িকা সোফি টার্নারের বিয়ে হয়। তিনি সংগীতশিল্পী জো জোনোসকে বিয়ে করেন। বিয়েতে সাদা ট্রাউজার পরেন সোফি টার্নার। সম্প্রতি বিয়েতে অনেক তারকায় এ ধরনের পোশাক পরছেন। তবে রাঞ্জানা রিশি যে পোশাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন, তা সচরাচর ভারতীয়দের নারীদের বিয়ের পোশাক হিসেবে পরতে দেখা যায় না।

রিশির বিয়ের পোশাক নিয়ে ভারতের বিবাহবিষয়ক এক ম্যাগাজিনের সাবেক সম্পাদক নুপুর মেহতা পুরি বলেন, ‘আমি কখনো বিয়েতে ভারতীয় নারীদের এ ধরনের পোশাক পরতে দেখিনি। তারা বিয়েতে সাধারণত ভারতের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন। সেই সঙ্গে মা-দাদির কাছ থেকে পাওয়া গয়না পরেন। বিয়েতে রিশির প্যান্ট-স্যুট পরার বিষয়টি এখানে একেবারে নতুন।’

গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ের কাজ সম্পন্নের পরিকল্পনা করেছিলেন সাঞ্জানা রিশি। সেখানে তার ভাই ও অধিকাংশ আত্মীয়-স্বজন থাকেন। চলতি মাসে ভারতীয় রীতিতে দ্বিতীয় দফা বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসে কারণে এসব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

রিশি ও ধ্রুবর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ভারতে প্রেমের সম্পর্কগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো স্বাভাবিকভাবে দেখা হয় না। এ ব্যাপারে রিশি বলেন, যদিও তার বাবা-মা প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ, তারপরও তার বন্ধু ও প্রতিবেশীদের দিক থেকে বিয়ে নিয়ে একটু চাপ ছিল।

রিশি আরও বলেন, ‘গত আগস্টের এক সকালে ঘুম থেকে উঠেই সিদ্ধান্ত নিলাম, বিয়েটা সেরে ফেলব। তবে যখনই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলাম তখন একটা বিষয় মাথায় আসল, বিয়েতে আমি কোন পোশাক পরবো। আমি জানি আমার প্যান্ট-স্যুট পছন্দ। তাই সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললাম।’

রিশির স্বামী ধ্রুব মহাজন বলেন, ‘বিয়ের দিন তাকে দেখার আগে আমি ভাবিনি যে আসলে সে কোন ধরনের পোশাক পরবে। আমার কাছে এটা কোনো ব্যাপার ছিল না। কারণ আমি জানি সাঞ্জানা রিশি যাই-ই পরুক না কেন, সে একটা সাড়া জাগাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম যখন আমি তাকে দেখলাম, সে যে ট্রাউজার পরেছে তা লক্ষ্য করিনি। পরে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম, তাকে খুব সুন্দর লাগছে, একেবারে পরীর মতো।’

 

শখের বশে শুরু করে এখন লাখ টাকার মালিক

মেঘলা ভৌমিক থাকেন ধানমন্ডির জিগাতলায়। বর্তমানে এমবিএ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাশাপাশি একটি আইটি কোম্পানিতে বিজনেস অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। বাবা-মা ও দুই বোন নিয়ে মেঘলার পরিবার।

ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকির প্রতি ছিল প্রবল ঝোঁক। শৈশবে ২ বছর একটি স্কুলে ড্রইং শিখেছিলেন। তারপর থেকেই নিজের ইচ্ছায় ছবি আঁকা অব্যাহত রাখেন।

রংতুলির সাথে একটি অন্যরকম গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে মেঘলার। কারণ রঙিন সব কিছুই তার অনেক ভালো লাগে। নিজের ঘর থেকে শুরু করে আসবাবপত্র- সব কিছুই রঙিন রাখতে চান।

১০ বছর ধরে ছবি আঁকছেন মেঘলা। ২০১৬ সাল থেকে তার আঁকা ছবিগুলো অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি শুরু করেন। এ ছাড়াও মেঘলার কিছু নির্দিষ্ট কাস্টমার আছেন; যারা তার কাছ থেকে নিয়মিত আঁকা ছবিগুলো কিনে নেন।

মেঘলা ভৌমিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা মহামারীতে চাকরি নিয়ে একটু আতঙ্কে ছিলাম। যেকোনো কারণে যদি চাকরি চলে যায়, তখন আমি কী করব? কখনো হ্যান্ড পেইন্টিং নিয়ে কাজ শুরু করব ভাবিনি। এ ভাবনা মূলত লকডাউনে মাথায় আসে।’

তিনি বলেন, ‘তখন মনে হলো যে, এটাকে আমি এখন আমার কাজে লাগাতে পারি। এসব কিছুর পেছনে আমার বড় বোনের অনুপ্রেরণা অনেক বেশি। বড় বোন আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন এবং এখনো দিয়ে যাচ্ছেন।’

মেঘলা আরও বলেন, ‘প্রথমে আমি ১৫ হাজার টাকা দিয়ে কাপড় কিনে তাতে হ্যান্ড পেইন্ট করে বিক্রি শুরু করি। আমার হ্যান্ড পেইন্ট পণ্য বিক্রি হয় মোট ১ লাখ ৭৬ হাজার ১৯০ টাকা।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে- এটাকে অনেক দূর নিয়ে যাওয়া এবং চারুকুটির নামে একটি শো-রুম দেওয়া। আমি চাই, আমার পণ্য যেন দেশে-বিদেশে সুনাম অর্জন করে।’

তিনি মনে করেন, মানুষ যেন ভবিষ্যতে এখান থেকে এসে নিজে দেখে ঘুরে জিনিস কিনে নিয়ে যেতে পারেন। এ ছাড়াও চারুকুটিরের মাধ্যমে যেন আরও ১০ জনের কর্মসংস্থান হয়। জাগো নিউজ

 

শীতের রেসিপি: সবজি পনির কারি

বাজারে এখন হাত বাড়ালেই পাবেন শীতের সবজি। সবজি দিয়ে ঘরেই তৈরি করতে পারেন সুস্বাদু সবজি পনিরের কারি।

আসুন জেনে কীভাবে তৈরি করবেন-

উপকরণ

মটরশুটি এক কাপ, গাজর কিউব করে কাটা এক কাপ, ক্যাপসিকাম কিউব করে কাটা এক কাপ, পনির কিউব করে কাটা এক কাপ, ফুলকপি এক কাপ, মটর ডাল এক কাপ, টমেটো কিউব করে কাটা দুটি, কেসোনাট ১০টি, কাঁচামরিচ চার থেকে পাঁচটি, গরম মসলা এক চা চামচ, হলুদ গুঁড়া এক চা চামচ, মরিচের গুঁড়া এক চা চামচ, তেজপাতা একটি, জিরা আধা চা চামচ, আদা বাটা আধা চা চামচ, ধনেপাতা কুচি সামান্য, মাখন এক টেবিল চামচ, তেল পরিমাণমতো ও লবণ স্বাদমতো।

প্রস্তুত প্রণালি

প্রথমে একটি প্যানে তেল দিয়ে ফুলকপি ও পনির ভেজে নিন। এর পর একই প্যানে মটরশুটি, গাজর, মটর ডাল ও ক্যাপসিকাম ভেজে নিন। ভাজা সব সবজি অলাদা করে প্লেটে তুলে রাখুন।

এবার টমেটো ও কাজুবাদাম আলাদা করে ব্লেন্ডারে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। আর অন্য একটি প্যানে তেল দিয়ে তাতে জিরা, তেজপাতা, হলুদ গুঁড়া, আদা বাটা ও কাঁচামরিচ দিয়ে কষিয়ে নিন।

এর পর এতে গরম মসলা, মরিচের গুঁড়া ও পানি দিয়ে নেড়ে দিন। পাঁচ মিনিট পর এতে ব্লেন্ড করা টমেটো ও বাদাম বাটা দিয়ে নাড়তে থাকুন।

এখন এতে একে একে সব সবজি ও পনির দিয়ে দিন। এবার এতে লবণ ও মাখন দিয়ে সবজির সঙ্গে মিশিয়ে নিন। চাইলে সামান্য পানি দিতে পারেন। ঘন হয়ে এলে এর ওপরে ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে চুলা থেকে নামিয়ে প্লেটে ঢেলে গরম গরম পরিবেশন করুন দারুণ সুস্বাদু সবজি পনির কারি।

লেখক: গৃহিণী

 

সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর কন্টেন্ট থেকে শিশুদের বাঁচাবেন যেভাবে

সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে নানা ধরনের রেকমেনডেশন পাঠানোর জন্য যেসব প্রোগ্রাম দেয়া থাকে, তা শিশুদের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। মানসিক অবসাদ কিংবা আত্মহত্যার জন্য তথ্য খুঁজছে যে টিনএজার তার কাছে এসব রেকমেনডেশন ইঞ্জিনগুলো আরও বেশি করে তথ্য পাঠায়।

অনেক শিশু অনলাইনে ভিডিও দেখে সেগুলো থেকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা পেতে পারে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর কন্টেন্ট ও ভিডিও থেকে শিশুদের দূরে রাখতে বাবা-মায়ের সচেতনতাটাই সবচেয়ে জরুরি।

ব্রিটেনের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ অফকমের হিসাব অনুযায়ী, ১২-১৫ বছর বয়সীদের ৯০ শতাংশের হাতে মোবাইল ফোন রয়েছে। এদের মধ্যে প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনের এখন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টও রয়েছে।

আইন অনুযায়ী, জনপ্রিয় অ্যাপগুলোতে ১৩ বছর বয়সের নিচে কাউকে অ্যাকাউন্ট খুলতে দেয়ার কথা না। কিন্তু তা সত্ত্বেও শিশুরা এসব অ্যাকাউন্ট তৈরি করছে এবং তাদের ঠেকাতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো কিছুই করছে না।

ব্রিটেনের শিশু রক্ষা চ্যারিটি ন্যাশনাল সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েল্টি টু চিলড্রেন্স (এনএসপিসিসি) শিশুরক্ষা নীতি বিভাগের প্রধান এন্ডি বারোস জানান, শিশুরা এসব কন্টেন্ট দেখে যে ঝুঁকির মুখে পড়ছে তা বিবেচনা করার জন্য আইন তৈরি করে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করা উচিত।

চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে ফেসবুক ঘোষণা করেছে, আত্মহত্যা ও ক্ষতিকর কন্টেন্ট খুঁজে বের করতে এবং দূর করতে তারা ইনস্টাগ্রামে তাদের অটোমেটেড টুলের পরিধি আরও বাড়িয়ে দেবে।

কিন্তু ফেসবুক বলছে, ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার ওপর ইউরোপের আইন এতই কঠোর যে এ ক্ষেত্রে তাদের খুব বেশি কিছু করার থাকে না।

শিশুদের প্রযুক্তির ভালো ও খারাপ বিষয়গুলো বোঝাতে হবে। নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য অন্যান্য বিষয়ে যেভাবে শিশুদের শিক্ষা দেয়া হয়, তেমনি অনলাইনে নিরাপদ থাকার দক্ষতাও শিশুদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা

 

যে কারণে শিশুরা করোনায় কম আক্রান্ত হয়

সফলভাবে সংক্রমণ ঘটানোর জন্য করোনাভাইরাসকে ফুসফুসের ‘এপিথেলিয়াল সেল’ ভেদ করতে হয়। আর যে ‘এনজাইম’ বা ‘কো-রিসেপ্টর’য়ের মাধ্যমে ভাইরাসটি এই কাজ করে সেটি প্রাপ্তবয়স্ক ও বৃদ্ধদের তুলনায় শিশুদের থাকে কম।

গবেষণায় বলা হয়, ওই ‘এনজাইম’কে দমন করতে পারলে প্রাপ্তবয়স্কদের ‘কোভিড-১৯’ থেকে সুরক্ষা দেয়া এবং রোগ সারিয়ে তোলাও সম্ভব হবে।

করোনাভাইরাস সম্পর্কে আমাদের এখনও অনেকটা জানা বাকি। তবে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তা হল ‘ভাইরাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করার পর এর প্রোটিনের তৈরি ‘স্পাইক’ বা অভিক্ষেপগুলো ‘এসিই টু’ নামক ‘রিসেপ্টর’য়ের সঙ্গে আটকে যায়। এই ‘রিসেপ্টর’গুলো ফুসফুসের নির্দিষ্ট কিছু কোষের উপরিভাগে থাকে।

পরে কোষের ‘টিএমপিআরএসএস ‍টু’ নামক এনজাইম ওই প্রোটিনের অভিক্ষেপগুলো কেটে ধ্বংস করে। এতে ভাইরাস কোষের ‘মেমব্রেন’ বা ঝিল্লির সঙ্গে মিশে যায় এবং একপর্যায়ে কোষের ভেতরে প্রবেশ করে।

একবার কোষের ভেতরে প্রবেশ করতে পারলে ভাইরাস কোষের অভ্যন্তরীণ জিনগত নিয়ন্ত্রণ নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয় এবং নিজের ‘আরএনএ’য়ের ‘কপি’ তৈরি করা শুরু করে।

এই গবেষণার নেতৃত্তে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভ্যানডারবেল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকাল সেন্টার’য়ের ‘পিডিয়াট্রিকস’ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জেনিফার সুক্রে। তার সঙ্গে আরও ছিলেন এই সংস্থার ‘মেডিসিন’ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাথন ক্রপস্কি।

তারা মনে করেন, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ‘কোভিড-১৯’য়ের তীব্রতা বেশি আর শিশুদের ক্ষেত্রে তা কম হওয়ার পেছনে ‘টিএমপিআরএসএস ‍টু’ এনজাইমের ভূমিকা আছে।

ভ্যান্ডারবেল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকাল সেন্টার’য়ের প্যাথলজিস্টদের সাহায্য নিয়ে গবেষকরা বিভিন্ন বয়সের মানুষের ফুসফুস কোষের নমুনা সংগ্রহ করেন।

‘সিঙ্গেল সেল আরএনএ’ সিকোয়েন্সিং’য়ের মাধ্যমে বয়সের সঙ্গে ফুসফুসের বিকাশবিষয়ক তথ্য বের করা হয়।

দেখা যায়, বয়স যত বাড়ে, ততই বাড়ে ‘টিএমপিআরএসএস ‍টু’ সক্রিয়তা।

‘জিন ও প্রোটিন দুই ক্ষেত্রেই ওই এনজাইমের প্রভাব বিদ্যমান’, বলেন সুক্রে।

 

শীতে গরম গরম মাশরুম মাসালা

মাশরুম হলো খাবার উপযোগী ছত্রাকের ফলন্ত অঙ্গ, যা অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধি গুণসম্পন্ন। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ মুখরোচক খাবার হিসেবে মাশরুম খেয়ে আসছেন। এ ছাড়া বর্তমান বিশ্বে সব দেশের মানুষই মাশরুম খেয়ে থাকেন।

মাশরুম দিয়ে মজাদার অনেক খাবার তৈরি করা যায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো মাশরুম মাসালা।

আসুন জেনে নিই কীভাবে তৈরি করবেন মাশরুম মাসালা-

উপকরণ

মাশরুম ২০০ গ্রাম, পেঁয়াজ ২টি (স্লাইস), টমেটো ১টি (কুচি), কাঁচামরিচ ১টি (কুচি), রসুন ৬ কোয়া (কুচি), আদা ১ ইঞ্চি (কুচি), কারি পাতা কয়েকটি, তেল দেড় টেবিল চামচ, জিরা আধা চা চামচ, হলুদ গুঁড়া ১/৪ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া আধা চা চামচ, ধনিয়া গুঁড়া ১ চা চামচ, গরম মসলা গুঁড়া আধা চা চামচ, জিরার গুঁড়া আধা চা চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিনি ১/৪ চা চামচ, টকদই ১/৩ কাপ, পানি ১/৪ কাপ, ধনিয়া পাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, ঘি ১ টেবিল চামচ, ক্যাশুনাট ১ টেবিল চামচ ও গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা চামচ।

যেভাবে তৈরি করবেন

প্যানে তেল গরম করে আস্ত জিরা দিন। এর পর ফুটতে শুরু করলে কাঁচামরিচ কুচি, আদা ও রসুন কুচি দিয়ে নাড়ুন। কাচা গন্ধ চলে গেলে কারি পাতা, পেঁয়াজ কুচি ও হলুদ দিয়ে দিন। পেঁয়াজ বাদামি রঙ ধারণ করলে টমেটো কুচি দিয়ে কয়েক মিনিট নাড়ুন।

টমেটো নরম হয়ে গেলে গুঁড়া মসলা দিয়ে দিন। ভালো করে কষিয়ে মাশরুম দিয়ে দিন। চিনি ও লবণ দিয়ে নেড়ে নিন।

কয়েক মিনিট নেড়ে ঢেকে দিন প্যান। ৫ থেকে ৬ মিনিট মাঝারি আঁচে রান্না করুন। ঢাকনা তুলে জ্বাল কমিয়ে টকদই দিয়ে মিশিয়ে নিন। কয়েক মিনিট নেড়ে ১/৪ কাপ পানি দিয়ে রান্না করুন।

আরেকটি প্যানে ঘি গরম করে ক্যাশুনাট ভেজে নিন। বাদামি রঙ হয়ে গেলে গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মাশরুমের প্যানে ঢেলে নেড়ে নিন। ধনিয়া পাতা কুচি দিয়ে নেড়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

 

খুসখুসে কাশি সারানোর ঘরোয়া উপায়

শীতে বহু রোগব্যাধি দেখা দেয়। ঋতু পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ গরম থেকে ঠাণ্ডা অনেকের শরীর নিতে চায় না। ফলে একটু এদিক-ওদিক হলেই সর্দি ও খুসখুসে কাশি হয়ে থাকে।

এমনও হয় যে, খুসখুসে কাশির কারণে সারারাত ঘুমাতে পারেন না। এই সময়ে কাশির সঙ্গে গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টও হতে পারে।

ঘরোয়া উপায়েও এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। আসুন জেনে নিই খুসখুসে কাশি সারানোর ঘরোয় উপায়-

১. সর্দি, কাশি ও ঋতু পরিবর্তনের জ্বর থেকে মুক্তি দিতে পারে এলাচ। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরা এলাচ জীবাণুনাশকও৷ গলাব্যথা এবং শুকনো কাশি হলে নিরাময়ে এলাচ খেতে পারেন। এ জন্য এক কাপ পরিমাণে পানি নিন। পানি হালকা গরম হলে তাতে মধু এবং বেশ কয়েকটি ছোট এলাচ দিন৷ ফুটে গেলে এলাচ ছেঁকে ওই পানি পান করুন৷

২. ঠাণ্ডা ও শুকনো কাশি সমস্যায় মধু খেতে পারেন। ছোট থেকে বড় সবার জন্যই মধু উপকারী। এক টেবিল চামচ মধু সারা দিনে তিন থেকে চারবার খেতে পারেন। শুধু মধু খেতে পারেন, আবার কখনও হালকা গরম পানি কিংবা চায়ের সঙ্গে।

৩. সর্দি, কাশি দূর করতে তুলসি পাতার রস খুবই উপকারী। শিশুদের জন্য কয়েকটি তাজা তুলসি পাতার রসের সঙ্গে একটু আদার রস ও মধু দিয়ে খেলে খুব উপকার পাবেন।

তুলসি পাতা শুকনো কাশির জন্য খুবই কার্যকরী। সকালে খালি পেটে তিন থেকে চারটি তুলসি পাতা খেতে পারেন। তা ছাড়া তুলসি পাতা ফুটিয়ে চা তৈরি করে পান করতে পারেন।

৪. নিয়মিত দিনে তিন থেকে চার বার আদা দিয়ে পানি ফুটিয়ে সেই পানি ছেঁকে নিন। এর পর লবণ মিশিয়ে কুলিকুচি করুন। গলায় খুসখুসে ভাব দূর করতে আদা চাও খেতে পারেন।

 

ফাইজারের করোনা টিকা উদ্ভাবনে নেপথ্যে যে দম্পতি

ফাইজার দাবি করেছে, তাদের তৈরি টিকা ৯০ শতাংশ কার্যকরী। জার্মান সংস্থা বায়োএনটেকের সঙ্গে এই টিকা তৈরির কাজ করছে ফাইজার। এই টিকা তৈরিতে যারা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন, তারা হলেন উগুর শাহিন ও ওজলেম তুরেসি দম্পতি।

জার্মানির মেন্জ-এ বায়োএনটেক সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা উগুর ও ওজলেম। ২০০৮-এ অস্ট্রিয়ার ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফ হুবেরের সঙ্গে বায়োএনটেক সংস্থা তৈরি করেন তারা।

জন্মসূত্রে উগুর ও তুরেসি দুজনেই তুর্কি। শৈশব থেকেই মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখতেন উগুর। কোলঙের একটি হাসপাতালে কাজ করার সময় তুরেসির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তার।

দুজনেরই স্বপ্ন ছিল ক্যান্সার চিকিত্সা নিয়ে গবেষণা করা। ক্যান্সারের চিকিত্সায় ইমিউনোথেরাপি নিয়ে তাদের সংস্থা গবেষণা এখনও চালাচ্ছে।

সিএনএন এক প্রতিবেদনে বলেছে, বিজ্ঞানী উগুর শাহিন ও তুরেসিকে বিশ্ব দীর্ঘদিন মনে রাখবে। সংক্রামক রোগ ও টিউমারের চিকিৎসাক্ষেত্রে জীবন উৎসর্গ করেছেন এ জুটি। জীবনের দীর্ঘ সময় ক্যান্সার চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনে কাজ করেছেন দুজন। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে এ দুই বিজ্ঞানীর পরিবর্তিত জেনেটিক কোডের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উদ্ভাবন মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। বিশ্বের প্রথম কার্যকর করোনার টিকা হিসেবে যে ফাইজারের টিকাকে দাবি করা হচ্ছে, তার পেছনে রয়েছেন এ দুই বিজ্ঞানী।

২০০৮ সালে জার্মানির মেইঞ্জ শহরে শাহিন ও তুরেসি জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক প্রতিষ্ঠা করেন। গত সোমবার প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার করোনার টিকা নিয়ে সুখবর দিয়েছে। নতুন টিকা দিয়ে কোভিড-১৯ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষার দাবি করেছে উৎপাদনকারী দুটি প্রতিষ্ঠান।

করোনাভাইরাস মহামারীর শুরু থেকেই ফাইজার ও বায়োএনটেক নামের দুটি প্রতিষ্ঠান টিকা তৈরির চেষ্টা করে আসছিল। এবার প্রতিষ্ঠান দুটি জানিয়েছে, তাদের তৈরি টিকা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর।

 

গর্ভাবস্থায় প্রথম সপ্তাহে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়

প্রত্যেকটি নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে অন্তঃসত্ত্বা মুহূর্ত। গর্ভধারণের প্রথম সময়টায় নারীদের শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। গর্ভধারণের লক্ষণ সবার ক্ষেত্রে সমান হয় না।

গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় প্রথম সপ্তাহে কিছু লক্ষণ কমবেশি সব নারীর ক্ষেত্রে দেখা যায়।

আসুন জেনে নিই কী সেই লক্ষণগুলো-

১. রক্তক্ষরণ ঋতুচক্রের মতোই ৬ থেকে ১২ দিন হালকা রক্তপাত হতে পারে। এই লক্ষণ দেখলে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা অবশ্যই করে নিন।

২. প্রথম সপ্তাহে মুখে অন্য রকম স্বাদ বুঝতে পারবেন। অনেক সময় মুখে দুর্গন্ধও হতে পারে। আসলে গর্ভাবস্থার জেরে শরীরে হরমোনের মাত্রার তারতম্যের কারণেই এই তফাৎ হতে পারে।

৩. গর্ভে সন্তান এলে নারীরা অতিরিক্ত পরিমাণে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। তিনি গর্ভবতী হয়েছেন এমন স্বপ্নই দেখেন তারা।

৪. অনেক সময় মুখে বা হাত-পায়ে কালো কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা য়ায়। গর্ভধারণের সময় ত্বকের সংবেদনশীনতা বেড়ে যায়। এর ফলে চেহারায় এই কালো দাগ-ছোপ দেখা যায়।

৫. ক্লান্তি প্রেগন্যান্সির একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। যেহেতু শরীর এই সময় বাড়ন্ত শিশুকে পুষ্টি দেয়ার জন্য অতিরিক্ত রক্ত উৎপন্ন করে তার জেরে খুব অল্পতেই ক্লান্তি এসে যায়।

৬. প্রেগন্যান্সির সময় শরীর অতিরিক্ত পরিমাণ তরল উৎপাদন করে। আর তার জেরে কিডনি দ্বিগুণ পরিমাণে কাজ করে। আর সে কারণেই অতি ঘন ঘন শৌচাগারে যাওয়া প্রয়োজনীয় হয়।

৭. গর্ভাবস্থায় মাথার যন্ত্রণা হতে পারে। গর্ভধারণ করার প্রথম সপ্তাহের শুরুতেই মাথাব্যথা শুরু হতে থাকে। হরমোনের মাত্রা শরীরে বেড়ে যাওয়ার কারণেই এ সমস্যা হয়।

তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই

 

শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কী করবেন

ডা. মানিক কুমার তালুকদার

বড়দের মতো শিশুদেরও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। শিশুর বয়স দুই থেকে তিন বছরের সময় এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়। শৌচাগার ব্যবহারের অভ্যাস করানোর সময়ও এ সমস্যা হয়ে থাকে।

শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কী কারণে শিশুদের এ রোগ হয়?

এ বিষয়ে বাবা-মায়ের জানাটা খুবই জরুরি। শৌচাগার ব্যবহার করা শিখতে যে শিশুদের কষ্ট হয়, তাদেরই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। শিশু শৌচাগার ব্যবহারে সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন তাড়াহুড়ো না করে।

মলত্যাগের বেগ চেপে রাখা এবং পানি পানের ঘাটতির কারণে এই রোগ হতে পারে। তাই শিশুর মলত্যাগের অভ্যাসে বাবা-মায়ের নজরদারি প্রয়োজন। বাবা-মাকে অবশ্যই কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

কী করবেন

১. মলের পরিমাণ, রঙ, ধরন, মলত্যাগের সময় শিশু কোনো অস্বস্তি বোধ করে কিনা, কীভাবে শিশু বসে, বেগ চেপে রাখে কিনা– এসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। তাই শিশুদের শৌচাগার ব্যবহার শেখানো উচিত।

২. শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে দিনের যে কোনো সময় দুই থেকে তিনবার ভারী খাবার খাওয়ানোর আধা ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ থেকে ১০ মিনিটের জন্য ‘পট’ কিংবা শৌচাগারে বসাতে হবে। ‘অ্যানাল ফিশার’ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। যেন মলত্যাগ হয় ব্যথামুক্ত।

৩. শিশুদের শৌচাগার ‘লো-কমোড’ হলে হাঁটু ভাঁজ করে বসার অভ্যাস করাতে হবে। ‘হাই-কমোড’ হলে পায়ের নিচে পিঁড়ি দিলে ভালো হবে।

৪. শারীরিক কসরতের অনুশীলন শৈশব থেকে রপ্ত করানো উচিত। এতে হজমশক্তি জোরদার হবে ও স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

শিশুকে কেমন খাবার খাওয়াবেন

শিশুকে ফল, সবজি ও ভোজ্য আঁশযুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া শস্যজাতীয় খাবার, ডাল, যব ও সালাদ খাওয়াতে পারেন। আর শরীরের চাহিদামাফিক পানি পান করাতে হবে। এ ছাড়া দুধ অতিরিক্ত খাওয়ানো ঠিক নয়। আর ‘জাঙ্ক ফুড’ এড়িয়ে যেতে হবে।

লেখক: শিশু বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।