banner

সোমবার, ০৬ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 58 বার পঠিত

নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা

 

আজকাল পত্র- পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে নারী নির্যাতনের চিত্র। ঘরে- বাইরে কোথাও নারী নিরাপদ নয়। সভ্য মানুষের মুখোশের আড়ালে পাশবিকতায় বেশি দৃশ্যমান। অহরহ ঘটে চলেছে যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, গুম, খুন, হত্যার মতো বিভৎস ঘটনা। নারীর নিরাপত্তা যেন অকল্পনীয় কিছু! কিন্তু যেই নারীরা সমাজের স্তম্ভ, প্রকৃতির মতো লালন- পালন করার ক্ষমতা যাদের ওপর প্রদত্ত তারাই নির্যাতন – নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। নারীদের এই হীন দশা আধুনিক যুগে এসেও একই। বলা চলে বর্তমান সময়ে যুগের সঙ্গে নারী নির্যাতনের পথগুলো আরও সহজ হয়েছে পাশবিক মানুষদের কাছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে, ঘরে- বাইরে সর্বত্রই নারী এক গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছে। তবে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা গেলে জাতি মুখ থুবড়ে পড়বে। নারী এবং পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সুস্থ, সুন্দর সমাজ গড়ে ওঠে। তাই নারীর নিরাপত্তা এখন সময়ের দাবি।

হত্যা, ধর্ষণ, গুম, খুন, নির্যাতনের মতো সহিংস অপরাধের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভিকটিম পূর্ব পরিচিত বা এলাকার লোকজনের দ্বারা পাশবিকতার শিকার! কন্যা শিশু, তরুণী বা নারী যদি পূর্ব পরিচিতদের কাছেও নিরাপদ না হয় তাহলে নারীর নিরাপত্তা সত্যিই কোথায়? মানুষের নগ্নরূপ থেকে কিভাবে পরিত্রাণ মিলবে নারীদের?

সাম্প্রতিককালে নারী নিপীড়ন বহুগুণে বেড়েছে। যারা দৈনক পত্র – পত্রিকায় চোখ রাখেন তারা বাড়ির কন্যা সন্তান বা নারী সদস্যকে নিয়ে বলতে গেলে অনেকটাই ভীতির মধ্যে দিনযাপন করেন। সন্তানের চিন্তায় পিতা- মাতার স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে শুধু অল্প বয়সী তরুণীই নয় বর্তমানে শিশু থেকে প্রবীণ সব বয়সী নারীরা সমাজে অনিরাপদ। ভয়াবহ এক অশরীরী সময়ে বসবাস করছি যেন আমরা। কোথা দিয়ে কখন নারী কোন সর্বনাশের মধ্যে পড়ে যাবে সেই ভয় নারীকে সবসময় আচ্ছন্ন রাখছে! এই ভীতি আর কতদিন? নারীর জীবনকে কেন নিরাপদ করা যাচ্ছে না? এর দায় কার?

ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলোতে বেশিরভাগ সময় লক্ষ করা যায়, অভিভাবকের অনুপস্থিতির সুযোগই গ্রহণ করে নিপীড়নকারী। অভিভাবক চাকরিজীবী হলে সেক্ষেত্রে সন্তানকে পরিচিত কারো কাছে রেখে যাচ্ছেন। এবং পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে এই সন্তান ঠিক শতভাগ নিরাপদ নয় তাদের কাছেও! কখনও কখনও তাদের দ্বারাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কন্যা শিশু। তাহলে সত্যিকার অর্থে কন্যা শিশুর নিরাপত্তা কে দেবে? এক্ষেত্রে শুধু শিশুই নয় নারীরাই অনিরাপদ থাকছে ক্ষেত্রবিশেষে! নারীকে নিরাপদ করতে হলে সমাজকে মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে।

ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটার পিছনে অন্যতম কারণ প্রতারণামূলক উপায়ে প্রলুব্ধ বা জোরপূর্বক অপহরণ করে ধর্ষণ চেষ্টা। রাস্তা-ঘাটে নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে অহরহ। ভুল বুঝিয়ে বা কোন সমস্যা সৃষ্টি করে নারীকে বোকা বানিয়ে তার সর্বস্ব লুট করে নেওয়ার পাশাপাশি নারী জোর পূর্বক ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ধর্ষণের আরও একটি কারণ হিসেবে দেখা যায়, ভিকটিমের একাকী অবস্থান। কুচক্রী মহল নারীর একা থাকাকে কেন্দ্র করে সুযোগ গ্রহণ করে। কিন্তু নারীর নিরাপত্তার চাদর হয়ে কে বা কারা সবসময় সঙ্গে থাকবে? তাহলে কী এ সমাজে নারী একা চলাচল করতে পারবে না?

বর্তমান সময়ে নারীর ধর্ষণের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে প্রেমের নামে প্রতারণা। ছল-চাতুরি করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে একসময় শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাধ্য করা হচ্ছে । আর এই সুযোগে নারীকে বশে এনে নারীর সম্ভ্রম নিয়ে মেতে উঠছে কুচক্রী মহল। অনেক সময় নারীরা সরলতা, বিশ্বাসের জেরেও ফাঁদে পা দিচ্ছে। শিশুদের ধর্ষণের ক্ষেত্রে পাষণ্ডরা ব্যবহার করে চলেছে শিশুর অবুঝ মনকে। খাবার, খেলানা সামগ্রীর প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কব্জা করে শারীরিক নিপীড়ন করা হচ্ছে। শিশু ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বেশি কাছের মানুষ বা পূর্ব পরিচিত কারো দ্বারা। এক্ষেত্রে ধর্ষক শিশুর সারল্যকে পুঁজি করে এই নোংরা খেলায় মেতে উঠছে। কারণ শিশুরা অভিযোগ করতে পারে না। বা বোঝেই না তাদের সঙ্গে কত নোংরা পাশবিকতা ঘটে গেছে! ফলে কুরুচিপূর্ণ মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তি শিশুদের সারল্য, অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করছে! এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সর্বোচ্চ সচেতনতা জরুরি। সন্তানকে কার কাছে রাখছেন, কতটা ভরসা করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে।

বিয়ের আশ্বাস গ্রহণের মাধ্যমেও নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে! প্রেম এবং বিয়ের আশ্বাসে নারীর বিশ্বাসের সুযোগে তাকে ধর্ষণের শিকার করে তুলছে একশ্রেণির মানুষ। বর্তমান সময়ে এই ঘটনা খুব একটা বিরল নয় যে, বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন। নারীরা তাদের অসহায়ত্বকে সুযোগে পরিণত করে দেয় নিপীড়নকারীর। আবার অনেক সময় ধারালো অস্ত্র বা বন্দুকের মুখে রেখেও নারীর প্রতি পাশবিক অত্যাচার চালাচ্ছে! নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীদের তোপের মুখে ফেলতে মানসিকভাবে বিকৃত রুচিসম্পন্ন মানুষ নামের পশুরা
অভিনব ফন্দি, কৌশল ব্যবহার করে চলেছে।

ইন্টারনেটের যুগে সবার হাতেই প্রায় স্মার্টফোন। আর এই ফোনের মাধ্যমেই একে অপরের সঙ্গে আলাপ- পরিচয় ঘটছে। কিন্তু ভালোমতো চেনা- পরিচয় না ঘটলেও নারীরা অনেক সময় ব্যক্তিগত ছবি, গোপন ভিডিও আদান-প্রদানের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে। সম্পর্কের অবনতি, দ্বন্দ্ব, টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ধান্দায় ব্লাকমেইলিং করে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলাও খুব সাধারণ ঘটনা বর্তমানে। তাই সমাজে ঘটে চলা এসব সমস্যা থেকে নারীদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সচেতন হতে হবে পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে।

নারীরা নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলতে গিয়েও অনেক সময় ফাঁদে পা দিয়ে ফেলছেন। বিভিন্ন ধরনের চাকরির প্রলোভন, অভিনেত্রী হওয়া, পরীক্ষায় ভালো ফলের আশায় শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে নারীর অসতর্কতা, সারল্য, ভয়, সম্মানহানি, প্রলোভন সবই দায়ী। অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে নারীকে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন সমাজে ঘটেই চলেছে। নারীকে সচেতন হতে হবে। কর্মক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হলে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।

সবচেয়ে ভীতিপ্রদ অবস্থা গণপরিবহনে চলাচল। বর্তমানে নারীরা ঘরে- বাইরে সমানভাবে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করছে। আর এই সুযোগে এক শ্রেণির বখাটে, লম্পট, মদ্যপ, বিকৃত রুচিসম্পন্ন মানুষ নারীদের ভোগ্য পণ্য মনে করে চলেছে। এবং গণপরিবহন, রাস্তা-ঘাটে ইভটিজিং, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ করছে। চলন্ত বাসে নারী সংঘবদ্ধ ধর্ষণ জাতির নির্লজ্জ চিত্র আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। মানুষের রুচি কতটা নিচে নেমে গেলে নারীর সঙ্গে এরূপ বিভৎস আচরণ করে মানুষরূপী পশু। কাজের সূত্রে ঘরে ফিরতে দেরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু একলা নারীর পথ চলা সমাজে নিরাপদ নয় আজও। গণপরিবহনে অন্য নারী যাত্রী না থাকলে ভয়ে ভয়ে নারীকে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। এই পরিস্থিতির পরিত্রাণ কবে ঘটবে?

এর বাইরে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ বা ক্ষোভ থেকে অপরাধীর প্রতিশোধপরায়ণতা তো আছেই। পারিবারিক দ্বন্দ্ব সংঘাত, জমিজামা সংক্রান্ত সমস্যা, প্রেম, দাম্পত্য সংকট প্রভৃতি কারণেও নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে। মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা, বিকৃত চিন্তা-ভাবনা, জৈবিক চাহিদা, ক্ষমতা প্রদর্শন, রাজনৈতিক কারণ, পরকীয়া, পূর্ব শত্রুতা, মাদকাসক্তি, অপরিচিত স্থানে ভ্রমণ প্রভৃতি বহুকারণে নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে। কোন কারণকেই ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। নারীদের প্রতি অসম্মান – অশ্রদ্ধা, অবহেলিত বস্তু সদৃশ ভাবনা যতদিন সমাজে বিরাজ করবে ততদিন নারী এ সমাজে নিরাপদ নয়। নারীদের অবরুদ্ধ দেখতেই যেন এ জাতি অভ্যস্ত ফলে পুরুষতান্ত্রিক কদর্য মানসিকতা নারীদের জন্য ফাঁদ পেতে রেখেছে। নারীর জন্য স্বাভাবিকভাবে সুস্থ পরিবেশ অকল্পনীয়।

নারীরা শুধু কুরুচিপূর্ণ মানসিকতার মানুষ দ্বারা ধর্ষণের শিকারই হচ্ছে না। রাষ্ট্র কর্তৃক নারীর জন্য গড়ে তোলা হয়েছে প্রহসন! কোন নারী ধর্ষণের শিকার হলে বিচারের আশায় যাওয়া নারীকেই সন্দেহ করা হয়। একজন ভুক্তভোগী নারী যখন অভিযোগ তোলেন তখন উল্টো তাকেই জেরার মুখে পড়তে হয়। যা ধর্ষণকে আরও একবার জীবিত করে তোলে! ফলে ধর্ষিত নারী একবার নয় এ সমাজ, রাষ্ট্র কর্তৃক বারবার ধর্ষণের শিকার হয়! আইনের এই হীন চিত্রের মুক্ষাপেক্ষী নারীরা তাই সঠিক বিচারের আশা না করে অনেক সময় নিজের ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেন। আত্মহত্যা করেন। এর দায় কী সমাজ, রাষ্ট্রের নয়?

আইনের আশ্রয়প্রার্থী নারীকে ডিএনএ টেস্টে জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ করলে একরকম সন্দেহের তীর তার দিকে থাকে তেমনই কালক্ষেপণ করলেও নারীকে জটিলতায় পড়তে হয়। তদন্ত প্রক্রিয়ার নামে নারীকে অস্বস্তি, বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। বিচারের নামে চলে প্রহসন! এমনকি এ সমাজ নারীর চরিত্র নিয়েই প্রশ্ন তোলে। ভুক্তভোগী নারী বিচারের আশায় আইনের আশ্রয় নিলে ঘরে- বাইরে তাকে নির্যাতিত হতে হয়। পরিবারের সম্মান, সমাজের কদর্য কথা নারীকে হজম করতে হয়। ঘরের বাইরে না বেরুলেই নারীরা পারেন, রাত- বিরাত এত বাইরে থাকা কিসের, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে এত মেলামেশা কিসের, গণপরিবহনেই বা নারী কেন যাতায়াত করবে প্রভৃতি অসংখ্য মন্তব্য নারীকে রক্তাক্ত করা হয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর জন্য যে শেকল তৈরি করেছে সেই শেকলে নারী কেন বন্দি নয়! নারীর প্রতি হওয়া অন্যায়- অবিচার রুখে দিতে এখনই তৎপর ভূমিকা পালন করতে হবে। নারী ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার হলে তার দায় নারীর নয় বরং যারা নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি আজও তাদের ওপর বর্তায়।

নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তদন্তের নামে দীর্ঘসূত্রিতা বন্ধ করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া সঠিক বিচারের পথে ভুক্তভোগীর ধৈর্য্যচুত্যি ঘটায়। ফলে নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনতে আইনের শ্লথগতি আগে পরিহার করতে হবে। বর্তমান সময়টা স্মার্টফোনের যুগ, ইন্টারনেটের যুগ। ফলে নারীদের উচিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত কোন ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে না তোলা। ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও আদান-প্রদান থেকে বিরত থাকা। আস্থা, বিশ্বাসের সুযোগে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে না পড়া।

ধর্ষণের জন্য বিশেষভাবে দায়ী পর্ণগ্রাফির সহজলভ্যতা। উঠতি বয়সী ছেলে- মেয়েরা পর্ণগ্রাফির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নিজেদের জীবনেও এ ধরনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে গিয়ে ডেকে আনছে সর্বনাশ। ভালো- মন্দ বোঝার আগেই জীবনে অঘটন ঘটিয়ে ফেলছে। অবাধ মেলামেশার সুযোগেও ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলো ঘটছে৷ তাই সরকারের উচিত পর্ণগ্রাফির ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা। পারিবারিকভাবে সন্তানকে ভালো- মন্দের শিক্ষা দিতে হবে। নারী- পুরুষ লিঙ্গভেদে আলাদা হলেও কেউ কারো অশ্রদ্ধার নয়। পরিবার থেকে সন্তানদের মধ্যে মূল্যবোধ, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে গুড টাচ, ব্যাড ট্যাচের শিক্ষা দিতে হবে।

একা সরকারের পক্ষ সমাজ থেকে ধর্ষণকে প্রতিহত করা সম্ভব নয়। এরজন্য কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি প্রত্যেক জনগণকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে নারীদের নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অপরিচিত, অর্ধপরিচিত এমনকি পরিচিত কোন ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে যাওয়ার আগে মানসিকতাকে আগে বুঝতে হবে। পারতপক্ষে ব্যক্তিগত তথ্য আদান-প্রদানে সতর্ক হতে হবে। কতটুকু পর্যন্ত জীবনের জন্য পরবর্তী সময়ে সমস্যার সৃষ্টি করবে না সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। সামজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

ধর্ষণকে রুখে দিতে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে সভা, সেমিনার করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। জনসচেতনতামূলক ভিডিও ক্লিপ, পথ নাটক, লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সমাজে সবাইকে এর কদর্য দিক সম্পর্কে বোঝাতে হবে। সচেতন করতে হবে জীবনের নিরাপত্তা, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে।

সুস্থ ধারার বিনোদন, সংস্কৃতি চর্চা, সন্তানের বই পড়ার অভ্যেস গড়ে তুলতে হবে। একটি ভালো বই, সুস্থ সংস্কৃতি মানুষের বোধকে জাগ্রত করতে সহয়তা করে ফলে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তা বিধান অভিভাবকমণ্ডলীর অবশ্যই তার মানস গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। অবসর সময়ে খেলাধুলা, ব্যায়াম, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে হবে।

বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হওয়া বেশ জরুরি। অনেক সময় দেখা যায় বাজে বন্ধুদের পাল্লায় পড়েও সন্তান বিপথে যায়। ধর্ষণের মতো জঘন্য নৃশংস কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। মাদকাসক্তি, ধূমপান, অসৎসঙ্গ থেকে পরিত্রাণ করতে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সরকারের একার পক্ষে যেমন নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় তেমনই নারীর সচেতনতায় শুধু তাকে নিরাপদ করার জন্য যথেষ্ট নয়। সমাজের সবার একযোগে এ লক্ষে কাজ করতে হবে। পশু বৃত্তির পরিত্রাণ ঘটাতে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে নারীদের। নারী সমাজের বাইরের কেউ নয়। একজন পূর্ণ মানুষ ফলে নারীর প্রতি কৌতুহল বন্ধ করতে হবে। ছেলে- মেয়েদের কো এ্যাডুকেশন তাদের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে সহয়তা করবে। ফলে মেয়ে- ছেলে লিঙ্গ বৈষম্য করে একে অপরের প্রতি প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব গড়ে না তোলা। পরিবার, সমাজ গঠনে নারীর যেমন অংশগ্রহণ জরুরি পুরুষেরও সমান অংশগ্রহণ জরুরি। কেউ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। সহোযোগী।

নারীরা যুগের পর যুগ ধরে সমাজে নিপীড়নের শিকার। নারীকে সুস্থ পরিবেশ দিতে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান খুবই জরুরি। নারী-পুরুষের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ অনেকাংশেই নিপীড়নের হাত থেকে নারীকে রক্ষা করতে সক্ষম। নারীকে দূরদর্শী হতে হবে। হঠাৎ আবেগে গা ভাসিয়ে না দিয়ে নিজের সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। গড়ে উঠুক বৈষম্যহীন, নিরাপদ, সুস্থ, স্বাভাবিক, কল্যাণময় পৃথিবী। যেখানে নারী মুক্ত বিহঙ্গের মতো বিচরণ করতে পারবে।

Facebook Comments