banner

বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1097 বার পঠিত

 

সালেহার শূন্যতা


ফাতিমা খান


সালেহার সাথে আমার অনেকদিন পর দেখা, প্রায় ২ বছর। পরিচয় হয়েছিল আমার ডেন্টাল অফিসেই। স্বামীর দাঁতের চিকিৎসার জন্য প্রায়ই আসত এই দম্পতি। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে সালেহার সাথে।

তায়েফের মেয়ে সালেহা।
হাসতে হাসতেই একদিন বলছিল, “তায়েফের মানুষ আমাদের নবীজীর সাথে উগ্র আচরণ করেছিল বলেই ভেব না আমরা তায়েফবাসীরা উগ্র, অর্বাচীন। আমাদের মধ্যে ভাল মানুষগুলো কিন্তু সাহাবীদের মতই ভাল। তুমি একবার এসো আমাদের শহরে। পাহাড়ের উপরের ছোট্ট শহরের মানুষ আমরা, যেখানে হাত বাড়িয়েই তুলা তুলা মেঘ ছুঁতে পারা যায়। শীতে কুয়াশা পড়ে। সোনালী ধূসর রঙ এর বালুগুলো দিগন্ত অবধি পাটি বিছিয়ে দিলেও সবুজের মায়া ম্লান হয়না একদম। পাহাড়গুলো সবুজে ঢাকা , মাঝে মাঝে আবার পাহাড়ি ঝর্ণা । স্বাধীন বানর দেখতে হলে এখানে আসতেই হবে তোমাকে, গাছে গাছে লাফিয়ে বেড়াতে ওদের নেই মানা। পাহাড়ের আড়ালে সূর্যোদয় দেখেছ কখনো? ঝমঝম বৃষ্টির পর রংধনু? এখানে দেখবে! এসো কিন্তু একবার। আমার দাদুর খেজুর বাগান আছে, মাইলের পর মাইল। তোমাকে নিয়ে খুব বেড়াব।”

ওখানকার আর বাকী মানুষগুলো কেমন জানিনা, কিন্তু ‘সালেহা’ হয়ত লাখে একজনই পাওয়া যাবে। সদালাপী, হাসিমুখ আর আন্তরিকতার জন্যই ওর কথা মনে করেছি বেশ কয়েকবার। জেদ্দা থেকে ওরা অন্য শহরে পোস্টিং হয়ে চলে যাওয়ার পর অনেকদিন ওর সাথে দেখা হয়নি।

আজ সালেহাকে দেখে আমি চিনতেই পারলাম না। শুকনো ফুলের মতই রিক্ত হয়ে গেছে একদম। ওর স্বামী মারা গিয়েছে আজ ৪ মাস ১৬ দিন। একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হলেও মানসিক ভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন ভদ্রলোক। Bipolar disorder এর জন্য মুড ফ্ল্যাকচুয়েশন হত খুব। আমি নিজে দেখেছি কত যত্ন করে সামলে নিত সে স্বামীকে। মানুষটার প্রচন্ড রোষের মুখেও ওর কষ্টচাপা একটা হাসিমুখ দেখতাম। নিখাদ ভালবাসা না হলে এমন মানুষের সাথে সংসার করা দুঃসাধ্যই বটে!

এত যত্ন, এত ভালবাসা ফেলে রেখে একদিন এই মানুষটা হাঠাতই ঘুমের মধ্যে চলে যাবে, সালেহা একটুও ভাবতে পারেনি।

সালেহা আমার সামনে বসে কাঁদছে, অঝোরে কাঁদছে।। কী গভীর সে কষ্ট, কী অসহ্য তার যন্ত্রণা! আমার ভেতরটা কাঁদছে, কি বলব বুঝতে পারছিনা। ওর অন্তরের কষ্ট মাপার কোন যন্ত্র যে আমার কাছে নেই! ওর শূন্যতা পূরণের রসদ হয়ত পুরো ধরণীতেই নেই!

Facebook Comments