banner

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 404 বার পঠিত

 

দেশে নারীর আত্মহত্যার হার বেশি

স্বামী ও দুই সন্তানসহ সেলিনা বেগম রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় বাস করতেন। কিন্তু আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে স্বামীর ইচ্ছায় তাঁকে গ্রামের বাড়ি ফিরে যেতে হয়। বাধ্য হয়ে গ্রামে এই ফিরে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেননি ২৭ বছরের এই গৃহবধূ। তাই বেছে নেন আত্মহননের পথ। এক সন্তানকে গলা টিপে হত্যা করে নিজে ঝুলে পড়েন ঘরের আড়ার সঙ্গে। ঘটনাটি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ভান্ডারদহ গ্রামে ঘটেছে। (সূত্র: প্রথম আলো)।
প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো নারী আত্মহত্যা করছেন। শিশুকন্যা থেকে বাদ যাচ্ছে না ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধাও। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার তুলনামূলক অনেক বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘প্রিভেনটিং সুইসাইড: আ গ্লোবাল ইমপেরাটিভ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই নারীদের তুলনায় পুরুষেরা বেশি আত্মহত্যা করে থাকে। অথচ বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি আত্মহত্যা করে থাকে। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও নারীর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পুরুষ আত্মহত্যা করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০১২ সালে ১০ হাজার ১৬৭ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছে, যার মধ্যে ৫ হাজার ৭৭৩ জন নারী। অন্যদিকে ৪ হাজার ৩৯৪ জন পুরুষ আত্মহত্যা করেছে। বিশ্বে আত্মহত্যায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম। ২০১৪ সালে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রতিবছর বিশ্বে আট লাখের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে। আর প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী মানুষ যে কয়টি কারণে মারা যায়, তার মধ্যে আত্মহত্যা দ্বিতীয়। বিশ্বে নারীদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ পুরুষ আত্মহত্যা করে। তবে এই হার অনুন্নত দেশের তুলনায় উন্নত দেশে তুলনামূলক বেশি।
বাংলাদেশে নারীদের বেশি মাত্রায় আত্মহত্যার কারণ হিসেবে নির্যাতন, সহিংসতা, নিরাপত্তাহীনতা, অবহেলাকেই চিহ্নিত করেছেন বিশিষ্টজনেরা। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০০৬ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে যত নারী আত্মহত্যা করেছে, তাদের মধ্যে শতকরা ৮৬ ভাগই পারিবারিক নির্যাতনের শিকার। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল হোসেন ঢালী বলেন, ‘আমাদের সামাজিক কাঠামোটি এমনভাবে গড়ে উঠেছে, যেখানে নারীকে সবকিছুর জন্য “দোষারোপ” করা হয়। নারীর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও থাকে না অধিকাংশ সময়। পাশাপাশি পুরুষতান্ত্রিক পরিবেশের কারণে নারীর কষ্ট, অপমান বা মানসিক চাপ কমানোর তেমন কোনো সুযোগ নেই।’
তবে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ বা চাপ সামলানোর কৌশল না জানা অথবা এ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে আত্মহত্যা হয় বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন কাউসার। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে নারীকে স্বাভাবিকভাবেই বেশি মাত্রায় অবদমন করাসহ বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করে রাখা হয়।’ আত্মহত্যা অবশ্যই প্রতিরোধ করা সম্ভব, উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘স্কুল পর্যায় থেকেই একটি বাচ্চাকে শেখাতে হবে, কী করে বিভিন্ন রকম চাপ সামলাতে হবে, নিজের রাগ বা আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বুঝতে হবে জীবনের থেকে কোনো কিছুই মূল্যবান নয়। নিজেকে ভালোবাসাতে হবে।’
আত্মহত্যা প্রতিরোধে পরিবারের পাশাপাশি ভিকটিমের নিজের সচেতনতাও খুব জরুরি বলে মনে করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও নারীনেত্রী মালেকা বানু। কাউন্সেলিংই এর অন্যতম সমাধান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেসব নারী আত্মহত্যা করে, তারা কোনো না কোনো ট্রমায় ভুগে থাকে। অথচ পরিবার সে বিষয়টি আমলে নেয় না। তাদের কাউন্সেলিং করানো হয় না। আত্মহত্যা বন্ধ করতে সরকারসহ সবাইকে কাজ করতে হবে।’

Facebook Comments