All posts by Oporajita

 

আমাদের মায়েরা যেন বিস্ময়!

ডা. মারুফ রায়হান খান


আমাদের মায়েরা একেকজন নিপুণ আর্টিস্ট। কতোটুকু চালের সাথে কতোটুকু ডাল, কতোটুকু তেল, কতোটুকু ঘি, কতোটুকু লবণ, কতোটুকু আদা-রসুন-পেঁয়াজ দিলে সেটা একটা পারফেক্ট খিচুড়ি হয়ে যাবে– এটা নিঃসন্দেহে একটা উচ্চমার্গের শিল্প। একটা দুটো না, এমন কতো কতো আইটেমের সবকটাই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানেন তারা কখন কোনটার পরে কী কতোটুকু দিতে হবে! পরিবারের কে কোনটা কীভাবে পছন্দ করে তা যেন তাদের মস্তিষ্কের একেকটা অঞ্চলে আলাদা করে খোদাইকৃত! অথচ তাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই এ বিষয়ে, নেই কোনো টেক্সটবুক যা দেখে দেখে প্র‍্যাক্টিস করবে কেবলমাত্র মা-শ্বাশুড়িদের কাছ থেকে দেখে দেখে শিখে ফেলা প্রচণ্ডমাত্রার মেধাবি না হলে সম্ভব নয়।

আমাদের মায়েরা একেকজন আর্কিটেক্ট। বাসা বানানোর সময়ে আমাদের মায়েরাই ডিজাইন করে দেন কোথায় কোথায় বেড রুম, ড্রয়িং-ডাইনিং-কিচেন, কার রুম কোনটা হবে…

আমাদের মায়েরা একেকজন ফ্যাশান ডিজাইনার। আমাদের ছোট বেলার ড্রেসগুলো তার প্রমাণ!

আমাদের মায়েরা একেকজন ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রোজেক্ট ম্যানেজার! ঘরের কোথায় কোন আসবাবপত্র থাকবে, কোন ঘরের সাজসজ্জা কেমন হবে তা তো আমাদের মায়েরাই নির্ধারণ করে দেন! অনবরত ক্লান্তিহীনভাবে কীভাবে তারা ঘরের সাজসজ্জা মেইন্টেইন করেন, গুছিয়ে রাখেন তীব্র মমতায় তা আমার কাছে এক বিস্ময়!

আমাদের মায়েরা একেকজন কুশলী জাজ! আমরা ভাই-বোনেরা মারামারি করলে, কোনো দুষ্টুমি করলে, কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে কাকে কতোটুকু শাস্তি দিতে হবে–কাকে শুধু সতর্কবাণী দিতে হবে, কাকে চোখ রাঙানি, কাকে বকাঝকা, আর কাকে মৃদু প্রহার করতে হবে তা আমাদের মায়েদের চেয়ে বেশি কে জানে!

আমাদের মায়েরা একেকজন সফল ইভেন্ট ম্যানেজার। বাসায় ছোট-বড় যতো প্রোগ্রামই হোক না কেন দায়িত্ব তো তার কাঁধেই এসে পড়ে! কাদের দাওয়াত করতে হবে, কী কী মেন্যু হবে, বাজারের লিস্ট, রান্না করা, পরিবেশন করা, সব সৌজন্যতা বজায় রাখা–কী নিপুণভাবেই না তারা সবগুলো প্রোগ্রাম সফলভাবে সম্পন্ন করেন।

আমাদের মায়েরা একেকজন কোচ-ট্রেইনার-কাউন্সেলর-সাপোর্টার। তারা আমাদের রুটিন তৈরি করে দেন, আমাদের ডায়েট প্ল্যান করে দেন, আমাদের নৈমিত্তিক কাজগুলো শেখান। কোথায় কেমন আচরণ করতে হবে, কার সাথে কীভাবে কথা বলতে হবে, কী কী করা যাবে, কী কী করা যাবে না সব তো প্রাথমিকভাবে তার কাছ থেকেই শেখা। আমাদের যেকোনো সমস্যায়, যেকোনো সংশয়ে আমাদের মায়েরা হয়ে ওঠেন শ্রেষ্ঠ কাউন্সেলর, অকৃত্রিম সাপোর্টার, অতুলনীয় শুভাকাঙ্ক্ষী।

আমাদের মায়েরা একেকজন বিচক্ষণ ডাক্তার। সন্তান যে অসুস্থ সবার আগে তো তার কাছেই ধরা পড়ে। আমাদের মায়েরা একেকজন অন্তঃপ্রাণ নার্স, কী ক্লান্তিবিহীন নিবিড় যত্নে তারা আমাদের সেবা-শুশ্রূষা করে যান। তারা ওষুধও বটে, অসুস্থ সন্তান মায়ের কাছে এলে পরেই অনেকটা ভালোবোধ করেন।

আমাদের মায়েরা আমাদের পরিবারের স্তম্ভ, তাদেরকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় আমাদের পরিবারগুলোর সমস্ত কার্যক্রম। তারা যেন খুঁটি, খুঁটিতে এক সূতোয় বাঁধনে বেঁধে রাখেন আমাদের পরিবারের সবাইকে। আমাদের মায়েরা একেকজন অলরাউণ্ডার। আমাদের মায়েরা পৃথিবীর একেকজন বিস্ময়। একেকজন গর্ব। একেকজন সুপারউইম্যান।

আমাদের মায়েরা আসলে কী নন!

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

লিসা (শেষ পর্ব)

দ্য স্লেভ


যে বার লিসা মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়ার জন্যে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করল সেটা ছিল মুসলিমদের রমজান মাস। এক সন্ধ্যার অবসরে নিজ ঘরে বসে সে টিভি দেখতে থাকে। সেখানে এক চ্যানেলে সে নারীদের মার্জিত পোশাক, এটি কেন করা উচিৎ, নারীর দেহ কেন পণ্য নয়, তাকে কে সৃষ্টি করেছে, কেন সৃষ্টি করেছে, এখানে তার উদ্দেশ্য কি, তার গন্তব্য কোথায়, পৃথিবীতে তাকে কার বিধান মানতে হবে, ইত্যাদি সম্পর্কে অত্যন্ত চমৎকার একটি বক্তৃতা শোনে।

ওই সন্ধ্যায়ই তার মাথায় হঠাৎ করেই কিছু প্রশ্ন প্রবেশ করে- আমি কে ? আমি এখানে কেন ? আমার উদ্দেশ্য কি ? আমার গন্তব্য কোথায়?  উক্ত টিভি অনুষ্ঠানে যে ইমেইল এ্যাড্রেস লেখা ছিল সে ঠিকানায় সে মেইল করে দেখা করতে চায়। ঘন্টা খানিকের মধ্যেই শেখান থেকে তাকে ফিরতি মেইল করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং পরের দিন সকালে একটি সময় নির্ধারণ করেন। পরদিন লিসা শেইখের সাথে দেখা করেন এবং তার সারা জীবনের যত মৌলিক প্রশ্ন ছিল তা একে একে করতে থাকে। তার মনে হতে থাকে-সে যেন সদ্য ভূমিষ্ট শিশুর মত অজ্ঞ এবং জীবন সম্পর্কে এতকাল তার কোনো জ্ঞানই ছিল না। লিসার অন্ত:দৃষ্টি খুলে যায়। জীবনের সকল রহস্যের জট খুলতে থাকে।
সে রাতে লিসা তার মস্তিষ্কের পুরো সক্ষমতা নিয়ে গোটা বিশ্ব সৃষ্টি এবং তার মালিককে খুঁজতে থাকে। এখানে তার নিজের অবস্থান কোথায় তা জানার চেষ্টা করতে থাকে। যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি সকল বিষয়ে ওয়াকিবহাল, আর নিশ্চয়ই লিসাকেও তিনি অবলোকন করছেন। লিসার মস্তিষ্কে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতির সৃষ্টি হয় এবং তা ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত দেহাভ্যন্তরে। ঠিক সেসময় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার আয়োজক এবং স্থানীয় বিশেষ কমিটির পক্ষ থেকে ফোন কল আসে। লিসা ব্যস্ত আছি,পরে কথা বলব বলেই ফোনের লাইন কেটে দেয়। পরদিন সকালে লিসা দুটি ফোন কল করে। দুটিই যুগান্তকরী। সে সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজনকারীদেরকে ফোন করে বলে আমার পক্ষে মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগীতায় গমন করা সম্ভব নয়। আমি আপনাদের প্রতিষ্ঠান এবং এ সংক্রান্ত সকল বিষয় প্রত্যাখ্যান করলাম। আপনারা অন্য কাউকে নির্বাচিত করুন। আমি আপনাদের ফোনকল পেতে চাই না। আমি মডেলিংকে বিদায় জানালাম।
লিসা শেইখ বা স্কলারকে ফোন করে বলেন-আমি আপনার সাথে এখুনি দেখা করতে চাই। শেইখ তার নিজের একটি জরুরী কাজ বাতিল করে তাকে তৎক্ষণিক আসতে বললেন।

লিসা : আমি আল্লাহকে চিনেছি, কিন্তু তিনি কি আমাকে গ্রহন করবেন ? আমি তো পাপী !
শেখ: তিনি তো এমনই মহা পরাক্রমশালী ও দয়ালু স্রষ্টা, যিনি ক্ষমা করতেই পছন্দ করেন। বান্দা পাহাড় পরিমান পাপ নিয়ে উপস্থিত হলে তিনি পাহাড় পরিমান ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হন।
লিসা: আমি সেই একক স্রষ্টা আল্লাহর উপরই ঈমান আনলাম। আসহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াহদাহু লা শারিক্কালা, ওয়া আসহাদু আন্না মুহাম্মদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু। লিসা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল, যেন তার সারা জীবনের সমস্ত পাপ, ক্ষোভ, ব্যথা,বেদনা সবকিছু গলে দূর হয়ে গেল।
শেখ তাকে ইসলাম শেখানোর জন্যে ভিডিও, বই এবং কয়েকজন উত্তম মুসলিমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। লিসা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে ইসলাম শিখতে লাগল। তার ছোট পোশাকের স্থলে এখন সর্বাঙ্গ ঢাকা পোশাক শোভা পাচ্ছে। প্রথমবার নিজেকে তার অনেক দামী কিছু মনে হচ্ছে, যার শরীর, চিন্তা চেতনা মোটেও সস্তা নয়। এক মহা পরাক্রমশালী স্রষ্টার অনুগত বান্দা হওয়ার মধ্যে যে অস্বাভাবিক মানুসিক শান্তি রয়েছে তা সে পূর্ণমাত্রায় উপভোগ করতে থাকল। যার দিন , রাত কাটত সেরা মডেল হওয়ার স্বপ্নে ও শিক্ষায়,অনুশীলনে, তার সমস্ত সময় কাটে ইসলাম চর্চায়। রাতারাতি সে মুসলিমদের জন্যে একটি উত্তম মডেলে পরিনত হয় এবং বহু নওমুসলিমের জন্যে আদর্শ হয়ে ওঠে।

ইসলাম গ্রহনের মাত্র ২ দিন পর, একদিন লিসা ঘরের ফ্লোরে পড়ে যায়। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং ডাক্তার তার ব্রেইন ক্যান্সার নিশ্চিত করে। ডাক্তার জানায়- তার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ, খুব শীঘ্রই সে মারা যাবে, হয়ত কয়েক মাস টিকবে।হাসপাতাল থেকে লিসা শেইখকে চিঠি লিখে:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ

প্রিয় শেইখ,

আমি ২২ বছর আল্লাহকে ভুলে ছিলাম, আমি তাকে পেলাম মাত্র দু সপ্তাহ হল। আর যখন আমি তাকে পেলাম, তখন তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন। হে শেইখ ! আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান। আমি আল্লাহর সাথে মিলিত হতে উদগ্রীব। শেইখ ! আমি সারাজীবন আমার পিতা-মাতাকে খুঁজেছি। আমি তাদেরকে কোথাও পাইনি। যদি আপনি তাদেরকে খুঁজে পান, তাহলে বলবেন তাদের কন্যা মহা ভাগ্যবান, সে আল্লাহর কাছে চলে গেছে। আমার পিতা-মাতা যেন আল্লাহকে চিনতে পারে। আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত করুন ! আমার জন্যে দোয়া করুন। আল্লাহ যেন আমাকে ক্ষমা করেন এবং সম্মানিত করেন !

এর কয়েকদিন পর লিসা মৃত্যু বরণ করেন।
***”আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি আর তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে”। (বি:দ্র:একটি সত্য ঘটনার উপর নির্ভর করে গল্পটা।)

লিসা-১

লিসা-২

 

 

লিসা-২

দ্য স্লেভ


এই ঘটনায় ডেভিডের সাবেক প্রেমিকা তার আরও কাছাকাছি চলে আসে। যদিও তারা শুধুমাত্র বন্ধুই ছিল কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতি তাদেরকে একে অন্যের বেশী কাছাকাছি নিয়ে আসে। ডেভিড পুরোনো প্রেমকে রিনিউ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু সমস্যা বাধে তার ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে। ডেভিডের প্রেমিকার পছন্দ নয় তার মেয়েকে। সে চায়, তার আর ডেভিডের মধ্যে যেন অন্য কেউ না থাকে। ডেভিড প্রেমিকার প্রতি নিবেদিত প্রাণ। তারা আলাদা হয়ে সময় উপভোগ করতে চায়। ডেভিড তার প্রেমকে একান্তে উপভোগ করাকেই নিজের জন্যে স্থির করে। তাছাড়া তার চাকুরী জীবন ছোট্ট এই মেয়েকে লালন পালন করার পক্ষে যথেষ্ট অন্তরায়। ডেভিড কন্যা লিসাকে আশ্রমে দিয়ে আসা হয়। সেখানে সে লালিত হতে থাকে।

ডেভিড প্রতি রবীবার তার কন্যাকে দেখতে যেত। সেদিন লিসা সকাল থেকেই বিভিন্ন পরিকল্পনা করত তার পিতার সাথে কি কি বিষয়ে গল্প করবে। পূর্বের সপ্তাহে কি কি বলতে ভুলে গেছে সেটাও সে নির্দিষ্ট করে রাখে। বিদায়ের সময় পিতার জন্যে একটি ছোট গিফট বক্স সে প্রস্তুত করে রাখে। সেখানে কিছু চকলেট,পি-নাট,ক্যান্ডী আর একটা হাতে লেখা চিঠি থাকে। সেসব চিঠিতে সে তার বাবাকে কতটা ভালবাসে সেটা জানায়। পিতাও তার জন্যে কিছু উপহার সামগ্রী নিয়ে যায়। ঘন্টা খানেক গল্প করে পিতা বিদায় গ্রহন করে। এই এক ঘন্টা সময়ের জন্যে লিসা সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করে এবং পিতাকে নিয়ে নানান পরিকল্পনায় মেতে ওঠে। কখনও কখনও তার ইচ্ছা হয় পিতার হাত ধরে লেকের ধারের সুন্দর রাস্তায় হাটতে। কখনও কল্পনা করে ব্লু মাউন্টেন যাবে,সেখানে সুন্দর সুন্দর পাহাড় আর গাছ গাছালিতে ঘেরা জঙ্গল আছে শুনেছে। আছে চমৎকার ঝর্না ,থ্রি সিস্টার পাহাড় আরও কত কি ! একটা দিন পিতার সাথে সেখানে কাটাতে পারার মত মজা আর কিছুই হতে পারেনা।
তার পিতা খুব একটা মজার নয় কিন্তু বেরসিকও নয়। কথা বলার সময় দু একটি কৌতুককর কথাও বলে। সেসব শুনতে লিসার খুব ভাল লাগে। লিসা তার পিতাকে আরও অনেক সময়ের জন্যে চায়, কিন্তু তার পিতা অনেক ব্যস্ত মানুষ। তাকে প্রত্যেকদিন অফিসে যেতে হয়, আরও কত কি! লিসার বয়স ১১ বছর হলেও তার অনেক জ্ঞান বুদ্ধি।

সে জানে পিতা তার মাকে পছন্দ করে না,তাই পিতার সামনে কখনও মায়ের কথা উচ্চারণ করে না,পাছে পিতা কষ্ট পেয়ে যদি তাকে দেখতে না আসে!

সপ্তাহের ওই এক ঘন্টা সে কোনো ভাবেই হারাতে চায়না। প্রথম দিকে আশ্রমে থাকতে তার কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে সে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এভাবেই চলতে থাকে সময়। স্কুলে লিসা অসম্ভব মেধার স্বাক্ষর রাখে। প্রত্যেকটি রেজাল্ট তার ভাল হয়। পড়াশুনার পাশাপাশি সে ভাল ছবি আঁকতে পারে,সুই সুতো দিয়ে কাপুড়ের উপর নানান নক্সা তৈরী করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়।তার পিতাও তার প্রশংসা করেছে। সে খুব গোছালো একটি মেয়ে।

লিসার বয়স যখন ১৩ তখন তার পিতার স্ত্রীর(প্রেমিকার) গর্ভ থেকে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। এর কিছুদিন পর থেকে তার পিতা প্রতি দুই সপ্তাহে একবার তাকে দেখতে আসে এবং কিছু দিনের মধ্যে সেটা মাসে এক বারে গিয়ে দাড়ায়। লিসার পিতা তাকে বলেছে সে অনেক ব্যস্ত এবং নতুন বাচ্চাকে অনেক সময় দিতে হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে আসা সম্ভব নয়। লিসা কখনও পিতাকে জোর করেনি,
শুধু একবার বলেছিল আগামী রবিবারে আসবে,স্কুলে একটি গানের অনুষ্ঠান আছে ? জবাবে পিতা বলেছিল-আমার অন্য একটি কাজ আছে। ওহ আচ্ছা, বলে লিসা চুপ হয়ে যায়। আবার বলে- আমার ছোট্ট বোনটাকে দেখতে নিয়ে যাবে? জবাবে পিতা বলে,আমার স্ত্রী এটা পছন্দ করেনা। সে রাতে লিসা অনেকক্ষণ কেঁদে ঘুমাতে যায় কিন্তু এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলে না। সে খুব চাপা স্বভাবের।

এক রবিবারে লিসা তার পিতার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকে কিন্তু তার পিতা আর আসে না। সন্ধ্যা হয়ে গেল কিন্তু তার পিতার কোনো খবর নেই। সে রাতে সে ঘুমাতে পারল না। অজানা আশঙ্কায় সে শিউরে উঠতে থাকল। তার পিতার কোনো ক্ষতি হয়নি তো ! পরদিন লিসার নামে একটি চিঠি আসে। সেখানে তার পিতা লিখেছে-আমাকে চাকুরীর প্রয়োজনে নাইজেরিয়া যেতে হচ্ছে। সেখানে অনেক দিন থাকতে হবে। তুমি ভাল থেকো।

লিসার পিতা নতুন স্ত্রী,সন্তান নিয়ে নাইজেরিয়া চলে যায়। এর পর বছরের পর বছর কাটতে থাকে। কিন্তু লিসার জন্যে তার পিতার পক্ষ থেকে একটি চিঠিও আসে না। পিতার ভবিষ্যৎ আগমন উপলক্ষ্যে লিসার গিফটের বাক্স জমতে জমতে স্তুপ হয়ে উঠতে থাকে। মাকে অনেক ছোটবেলায় হারানোর কারনে মায়ের স্মৃতি তার তেমন মনে পড়েনা,কিন্তু পিতাকে সে ভুলতে পারেনা,যদিও তার জীবনে পিতার অবদান মাত্র কিছু ঘন্টার।

কলেজে উঠে লিসা তার মেধার স্বাক্ষর রাখল। সকলের চাইতে ভাল রেজাল্ট করল সে। প্রত্যেকটা শিক্ষক তার প্রশংসা করে। লিসা অসম্ভব সুন্দরী একটি মেয়ে। সহপাঠীদের অনেকে তার পেছনে ঘুরঘুর করে বটে কিন্তু সে কারো দিকে ফিরেও তাকায় না,কাউকে পাত্তা দেয়না। এটা সে অহংকার বশে করে তা নয়,বরং ফ্রি মিক্সিং তার ভাল লাগে না।

একদিন সে তার বান্ধবীর সাথে একটি ফ্যাশন শো দেখতে যায়,আর সেখানে কিছু আয়োজকের নজরে পড়ে যায়। তাদেরই একজন বিখ্যাত মডেল তৈরী ও বিজ্ঞাপণ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্ণধর। বিভিন্নভাবে চাপাচাপির পর লিসা র্যাম্প মডেলিং শিখতে রাজি হয়। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই লিসা তার রূপ এবং গুন দিয়ে এ জগৎ মাতিয়ে ফেলে। স্থানীয় প্রতিযোগীতায় প্রথম হবার পর সে কিছু কালের মধ্যেই মিস অস্ট্রেলিয়া এবং মিস নিউজিল্যান্ড খেতাব প্রাপ্ত হয়। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। তার অর্থ বিত্ত, নাম যশ ব্যাপক বাড়তে থাকে।

এতদিন পরও তার পিতার কাছ থেকে কোনো চিঠি আসেনি। তার পিতা তাকে ঠিকানাও জানায়নি। পিতাকে সে খুঁজেছে কিন্তু কোনো হদিস মেলেনি। তার মাকেও সে অনেক খুঁজেছে কিন্তু তার ব্যাপারে সে সুনির্দিষ্ট কিছু মনে করতে পারেনা,ফলে তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

অর্থ,সম্পদ,মর্যাদা থাকার পরও তার কোথাও যেন একটা বাধা ছিল। সে তার জীবন নিয়ে নানান রকম চিন্তা করত। সমাজ,মানুষের আচরণ,পারিপার্শ্বিকতা সব কিছু নিয়ে সে গভীরভাবে চিন্তাযুক্ত ছিল। এভাবে ২২টি বছর পার হয়।

(একটা সত্য ঘটনাকে অবলম্বন করে গল্পটি। অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এক গল্প। ইচ্ছা হলে পড়তে পারেন। )

চলবে….

 

স্বপ্ন পূরনের অদম্য ইচ্ছা

তানিয়া ইসলাম ইতি


গত তিন বছর আগে স্কুল ফেরত এক বাচ্চা মেয়ের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। মেয়েটা বসে বসে কি যেন খুঁজছিল আর কাঁদতে ছিল। তারপরও গল্প আছে অনেক। ওর বাসায় আমি মাঝে মাঝে যাই।

আজকে রাস্তা ধরে হাটছিলাম তখন মেয়েটার সাথে হঠাৎ দেখা হল। আমাকে দেখে সামনে আসল।

বলল: আপু কেমন আছেন?

বললাম : ভালো তবে একটু অসুস্থ। তুমি? আর বাসার সবাই কেমন আছে?

আমার মনে হল, মেয়েটা কিছু একটা বলতে চাইছে। কিন্তু আমাকে খালি পায়ে বা জুতা হাতে দেখে বলতে পারছে না। বুঝতে পারলাম, আমি যে কতটা অসুস্থ তা ও বুঝতে পেরেছে।
যাইহোক, আবার বললাম: তোমার মা কেমন আছে?
তখন বলল: মায়ের অনেক অসুখ ৩ দিন দরে। কি হইছে বুজতাছি না। মা ৩ দিন দরে কাজে যায় না।

আমি  চলো: তোমাদের বাসায় যাই। এটা বলছি আর ভাবছি মনে মনে বস্তিতে এই অসুখ নিয়ে যাবো কিনা বা তাছাড়া বাসায় শুনলে বকবে। তারপরেও গেলাম। যখন আমি ওদের বাসায় উপস্থিত হই ওর মায়ের মুখে একটা শুকনো হাসি দেখলাম। অতিরিক্ত কাজ করার কারণে এ্যাজমা আর হাইপ্রেসার বেড়ে গিয়েছে। তিনটি সন্তানের পড়াশুনার খরচ আবার বস্তির ঘর ভাড়ার বাস্তবতা।

মনে হল যেন আমি ওনাদের অনেক দিনের পরিচিত। ভাল লাগল। তবে যাওয়ার পর আরও একটা দৃশ্য যা মন কেড়ে নিয়েছিল।

দেখলাম: ওর বড় ভাই ওর ছোট বোনকে অংক করাচ্ছে বর্গ মূলের। ওর ভাই এবার এইচ এস সি দিবে। ছোট বোন ক্লাস সেভেনে আর যে মেয়েটার সাথে আসলাম ও এবার ক্লাস নাইনে পড়ে। ওর বাবা মারা গেছে মা গার্মেন্টসে কাজ করে। ওর একটা মামা আছে যিনি ওদের মাঝে মাঝে পড়ালেখার খরচ দেয়।

আমি নিরবে দেখছি, ওর ভাই ওর বোনকে অংক করাচ্ছে কিন্তু বোন পারছে না। ক্যালকুলেটর নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। বারবার হিসাব করছে উত্তর মিলছে না। ভাই আরো বকছে, আর বলছে প্রশ্ন পড় ভালো করে। এই জন্যই পারস না একটা প্রশ্ন ৪/৫ বার পড়বি। তারপরেও ভাই, বোন কে বলছে না ওদের ক্যালকুলেটর টা ভাল না। আমি সামনে বলে। বার বার ভাই বলছে হাতে হিসাব কর। তখন আমার আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না। ভাই কমার্স এর ছাত্র ওর ক্যালকুলেটার টাই সব। ওরা কোন টিচারের এর কাছেও পড়ে না। তারপরেও রেজাল্ট অনেক ভাল ওদের।

প্রায় আধ ঘন্টা আমি এক অনাবিল আত্মসম্মানবোধ সম্পূর্ণ স্বপ্নময় বালক বালিকার সাথে ছিলাম। মানুষ বড় হয় তার স্বপ্নের সমান ছোট ছোট ভাবনা সাথে নিয়ে, ছোট ছোট স্বপ্ন আর ছোট ছোট কাজের সমষ্টিই জীবন। প্রতিটি চিন্তা, প্রতিটি স্বপ্ন প্রভাবিত করে জীবনকে সুন্দর করতে।

ওদের দেখলে মনে হয় বাচাঁর জন্য কি লাগে? শুধুমাত্র একটা সুন্দর সপ্ন লাগে। আর সেই স্বপ্ন পূরনের জন্য অদম্য ইচ্ছা শক্তিটাই যথেষ্ট। ছবি:স্কুল অফ হিউম্যানিটি।

 

লিসা (পর্ব-১)

দ্য স্লেভ


একটি বিশাল তেল কোম্পানির ঊর্ধ্ব পদস্থ প্রকৌশলী হিসেবে ডেভিড, ইরাক গমন করেন আশির দশকের মাঝামাঝি। নতুন দেশ, ভিন্ন সাংস্কৃতিতে হঠাৎ মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। আগা-গোড়া ভদ্রলোক ডেভিড ধীরে ধীরে মুসলিমদের সাংস্কৃতি বুঝে ফেলে এবং তাদের সাথে মিশতে তার তেমন সমস্যা হয় না।

কলিগদের অনেকে বিবাহিত এবং স্বপরিবারে বসবাস করছে। তার নিজেরও বয়স হয়েছে বিয়ে করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সে। সে সময় ইন্টারনেট না থাকাতে অস্ট্রেলিয়ার গার্লফ্রেন্ডের সাথে তার খুব একটা যোগাযোগ হত না। প্রথম দিকে টেলিফোনে বেশ কথা হত,পরে আস্তে আস্তে কথা বলার সময় সংক্ষিপ্ত হতে থাকে। এ নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ ছিল না। তবে একদা তারা চুটিয়ে প্রেম করেছে।

একই ডিপার্টমেন্টে কর্মরত ইরাকী মেয়ে সাবিনা নিজেকে বেশ স্মার্ট হিসেবেই উপস্থাপিত করে। মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও সে তার পোশাক বা মানুসিকতায় মুসলিমদের আদর্শ লালন না করায় ডেভিড বেশ কৌতূহলী হয়ে ওঠে।

একদিন লাঞ্চে উভয়ে টেবিলে সামনাসামনি বসে টুকটাক দু একটি কথা বলে। কিছুদিন পর উভয়ের লাঞ্চ টাইম বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠল। উভয়ে উভয়ের ব্যক্তিত্ব দ্বারা প্রভাবিত হল। ডেভিড জানতে পারল সাবিনা মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলেও চিন্তা চেতনায় নাস্তিক। ডেভিড স্রষ্টা সংক্রান্ত বিষয়ে তেমন চিন্তা ভাবনা করেনি তবে পারিবারিকভাবে ক্যাথলিক।

জীবনে কখনই চার্চে গমন করেনি,তবে স্রষ্টা একজন আছে সে ব্যাপারে তার দ্বিমত নেই। আবার কেউ যদি যুক্তি খাটিয়ে স্রষ্টাকে ভ্যানিশ করে দেয় তাতেও তার কিছু এসে যায় না। ফলে সাবিনার নাস্তিকতা তার ভেতর কোনো প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে না।

দিন যায়,মাস যায় তারা একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। বিষয়টি ডেভিড তার প্রেমিকাকে টেলিফোনে জানায় এবং তার প্রেমিকা তাকে শুভকামনা জানায়। ডেভিড অস্ট্রেলিয়ার প্রেমিকাকে ভুলে সাবিনার প্রেমে হাবুডুবু খায় এবং বিয়ের সিদ্ধান্তে উপনিত হয়।

একসময় সাবিনা তার পরিবারের অমতে বিয়ে করে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করতে থাকে। উভয়ের চাকুরী জীবন ও পারিবারিক জীবন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই চলতে থাকে। কয়েক বছরের মধ্যে তাদের ঘরে আসে একটি সুশ্রী কন্যা সন্তান। সে ইরাকের আবহাওয়া কয়েক বছর লালিত পালিত হওয়ার পর স্ব-পরিবারে তারা অস্ট্রেলিয়া চলে আসে।

এখানেই তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে। অস্ট্রেলিয়াতে ডেভিডের পূর্বের প্রেমিকা তার সাথে নিয়মিত দেখা করতে থাকে এবং তাকে নিয়ে ডেভিড ডিনার করা, ঘুরতে যাওয়া, শপিংয়ে যাওয়া ইত্যাদি করতে থাকে। যেহেতু তাদের সাংস্কৃতি এটাকে সমর্থন করে তাই খুবই স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে তারা একাজ গুলি করতে থাকে।

পাশাপাশি ডেভিড পরিবারের সাথেও সুন্দর সময় অতিবাহিত করতে থাকে। পরিবার তার কাছে আগে,তবে সাবেক প্রেমিকাও তার পর নয়। উভয়টিই সে স্বাভাবিকভাবে চালাতে থাকে। কিন্তু বিষয়টি সাবিনার পছন্দ হয়না। যদিও ডেভিড তাকে পছন্দ করে,কিন্তু বিষয়টি সে জানার পর থেকে কেন যেন মনে হতে থাকে তার ভালবাসায় ভাগাভাগি হচ্ছে এবং তাকে কোনো ভাবে ঠকানো হচ্ছে।

ডেভিড তার প্রেমিকার সকল বিষয় স্ত্রীর সাথে শেয়ার করে। তাকে সে প্রেমিকা নয় বরং একজন ভাল বন্ধু ভাবে এমনটাই বলে।

কিন্তু সাবিনার এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়। সে নাস্তিক হলেও অন্য একটি সাংস্কৃতির মধ্যে লালিত হয়েছে। ফলে তার পারিবার,সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও ভেতরে এক ধরনের আবেগ রয়ে গেছে। তার পারিবারিক চিন্তা,বিষয় বিশ্লেষনের ধারা সবকিছুর মধ্যেই পূর্বের সমাজের আদর্শিক প্রভাব কিছুটা রয়ে গেছে। এবং সে এটাকে বিলিন করতে পারেনা। ফলে তার স্বামী যতই স্বচ্ছতার সাথে তার সাবেক প্রেমিকার বিষয় উপস্থাপন করতে থাকে,সাবিনা ততই সন্দেহের মধ্যে পড়তে থাকে। এবং এক পর্যায়ে তার ভেতর ক্রোধের জন্ম হয়।

শীঘ্রই বিষয়টি তাদের মানুসিকভাবে অশান্তির কারন হয়ে ওঠে। এক সময় ব্যাপক বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে এবং সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তে উপনিত হয়। মামলা কোর্টে চলে যায়। তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। সাবিনা তার সন্তানকে ফেলে নিজ দেশ ইরাকে ফিরে যায়।

সেখানে সে কিছু দিনের মধ্যে বিয়ে করে তার মত জীবন যাপন করতে থাকে। (একটা সত্য ঘটনাকে অবলম্বন করে গল্পটি। অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এক গল্প। ইচ্ছা হলে পড়তে পারেন। )

চলবে….

 

চিকিৎসা দিতে ভিনদেশী বিশেষজ্ঞ আসছে, প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে,খেলাপি ঋন কমাতে বিদেশী বিশেষজ্ঞ নয় কেন?

ডা. এম এস কবীর জুয়েল


বিদেশে যেয়ে চিকিৎসা এক রকম Status Symbol হয়ে গেছে, অনেকেই আবার ইহাকে এক ধরনের বাতিকে পরিণত করেছেন, সাধারণ মানুষের এই প্রবণতাকে আমরা থামাতে পারছি না, ফলে লাখ লাখ ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে, সম্প্রতি নাগরিক পরিষদ নামক একটি সংগঠন মানব বন্ধন করেছে যার বিষয় ছিল- ‘চিকিৎসা নিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ না যাওয়ার দাবি’।

আসুন আলোচনায় আসা যাক, ব্যাপার-টি কতোখানি গুরুত্ববহ, মাহাথীর মোহাম্মদ এ পর্যন্ত কোনদিন বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাননি। তিনি যখন প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলেন, সেই সময় মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নাজুক ছিলো, উনি অসুস্থতাজনিত কারণে শয্যাশায়ী হলেন, তাকে সবাই অন্তত পাশের দেশ সিংগাপুর যেতে অনুরোধ করলেন, কিন্তু তিনি নির্বিঘ্নে না করলেন এবং যুক্তি দেখালেন, উনি যদি এ রোগের জন্য বাহিরে যেয়ে চিকিৎসা নেন, মালয়েশিয়ায় ইহার প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে অনেক দেরী হয়ে যাবে। তাহলে গরীব মানুষগুলো আর কক্ষনো-ই এ ধরনের রোগের চিকিৎসা পাবেন না কারন তারা কথায় কথায় সিংগাপুর যেতে পারবেন না।

সুতরাং মালয়েশিয়ায় তিনি সেই সময় থেকেই ‘চিকিৎসা সেবা উন্নতকরণ প্রকল্প’ নিলেন, সফল ও হলেন। আমাদের অনেকেই এখন মালয়েশিয়ায় চিকিৎসা করতে যান, অন্যান্য দেশের মানুষ ও যান, আমাদের দেশে একবার ভূটানের এক মন্ত্রী চিকিৎসা নিতে এলেন, আমাদের দেশে কি চিকিৎসা ব্যবস্থা খারাপ। মোটেও না। আমাদের চিকিৎসক-রা কি নিম্ন মানের! আমি কক্ষনো-ই তা মনে করি না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি-টাই যতো প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে। এ ধরনের নেতিবাচক চিন্তা চেতনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র প্রধান-দের নজীর দেখাতে হবে। দেশাত্মবোধের নজীর, যা মাহাথীর দেখিয়েছেন, ইহাই প্রকৃত দেশপ্রেম। তখনি অন্য দেশের মানুষও আসবে। কথায় কথায় দু-দিন পর পর ভিন দেশে যেয়ে চিকিৎসা নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ ও পাশের দেশের রাম-সাম-যদু-মদু ডাক্তারদের এদেশে অবাধে রোগী দেখতে দেয়া কক্ষনো কি দেশপ্রেমিক দেশাচার-এর লক্ষণ।

তাহলে, আমরা কেন তা করছি?

আমদের দেশে তো চিকিৎসাক্ষেত্র ছাড়াও অন্যান্য জায়গায় আরো অনেক বেশী অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, কই প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে তো একজন বিদেশী বিশেষজ্ঞ আনতে দেখলাম না, সুষ্ঠু নির্বাচন সৃষ্টিতে সাহায্য নিতে আমরা ভারতের প্রখ্যাত নির্বাচন কমিশনার ‘টি.এন সেশান’ সাহেবকে তো ডাকতে পারি।

আইনের শাসন আরো সুদৃঢ় করতে মিসেস ‘কিরণ বেদী’-কে ডাকতে পারি।

খেলাপি ঋন কমাতে একজন প্রখ্যাত বিদেশী ব্যাংকার কেন আনছি না। ড.ইউনুস সাহেবকে যদি দায়িত্ব না দেওয়া যায়, সেক্ষেত্রে অমত্য সেনদের এনেও তো চেষ্টা করা যায়।

এ দেশে যা করা আবশ্যক তা না করে অপ্রয়োজনীয় ও কম গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে অধিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তাতে কারো কারো ব্যক্তিগত সুবিধে হয়, বেশ কিছু পয়সা পকেটে আসে কিন্তু গরীব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণ অধরা-ই থেকে যায়।

ডা. এম এস কবীর জুয়েল
এমবিবিএস, বিসিএস, এম.ফিল(নিউরো-সাইকিয়াট্রি), ডক্টর অফ মেডিসিন(এম.ডি) মনোরোগ
সৌদি বিশেষায়ীত স্বাস্থ্য কমিশন সার্টিফাইড ইন সাইকিয়াট্রি এন্ড সাইকোথেরাপী
ভূতপূর্ব মনোরোগ ও মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, আল জউফ, সৌদি আরব
ভূতপূর্ব সহযোগী অধ্যাপক
এশিয়ান ইনষ্টিটিউট অফ মেডিসিন, সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কেদাহ্, মালয়েশিয়া
ইউনিট প্রধান, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সিলিং ইউনিট, মনোরোগ বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল

 

ঢাকা জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক শামছুন্নাহার

শওকত আলী রতন


ঢাকা জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন দোহার উপজেলার দোহার পৌরসভার অন্যতম বিদ্যাপীঠ কাটাখালী মিছের খান উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক শামছুন্নাহার সীমা।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি এই বিদ্যালয়ে কর্মরত থেকে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন তিনি। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৮ উপলক্ষে জেলাপর্যায়ের প্রতিযোগিতায় ঢাকার শেরেবাংলানগরে রাজধানী উচ্চবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সহপাঠ কার্যক্রম ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার ফলাফলে ঢাকা জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে তাকে নির্বাচিত করা হয়।

প্রতিযোগিতায় ঢাকা জেলার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও ধাইমরাই এ পাঁচটি উপজেলার শিক্ষক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এর আগে দোহার উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়ে জেলাপর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

পেশাগত দক্ষতা, সাবলীল মাল্টিমিডিয়া ক্লাস পরিচালনা ও পাঠদানে মনোযোগী হওয়ায় তাকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে দোহার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লিয়াকত আলী জানান, শিক্ষকদের পেশাগত কর্মকাণ্ড মূল্যায়নের ভিত্তিতে সারা দেশে প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষ্যে একজন করে শিক্ষককে নির্বাচিত করা হয়। শামছুন্নাহার সীমার পারফরম্যান্স সব দিক থেকে ভালো হওয়ায় তাকে নির্বাচিত করা হয়েছে।
শামছুন্নাহার সীমা কাটাখালী উচ্চ-বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অহিদুল ইসলাম খান অনুর সহধর্মিণী।

শামছুন্নাহার সীমা শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে শিক্ষার প্রসার ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে কাজ করার কথা বলেন। সুত্র: নয়া দিগন্ত।

 

দুই বিঘা জমি প্যারোডি ভার্শন

ডা. এম এস কবীর জুয়েল


বাবুরা কহিলেন,বুঝেছ মঈন- এ তল্লাটের লইবো দখল;
তোমাদের সবারে সহিতে হইবে সামান্য একটু ধকল।
মঈন কহিলো – মহাশয় ভূপতি,
আপনারা বিনে, আছে কি মোর গতি?
মঈন কাঁদিতে লাগিলেন হাও মাও, হাও মাও
জ্যো.বাবু কহিলেন, পঞ্চ অশ্ব লইয়া যাও।
প্রহর আসিলে জানিবে সবে,
কোথায় কখন কি করিতে হবে?
মঈন হ্রেষা সম সগতোক্তি করিয়া লইলো বিদায় ,
দেশে আসিয়া কেবলি নিজের আখের গুছায়।
অচিরেই আসিলো দিন ক্ষণ,
মঈন-ও বড্ড বিচক্ষণ;
দফায় দফায় করিলো লম্বা মিটিং সারা দিনভর,
ততক্ষণে পগার পার সকল অজ্ঞাত টার্গেট শুটার
এরপরের কাহিনী সকলের জানা,
বেশী কথা যে কইতে মানা।

 

ছড়ড়া-৬৮

আসাদ বিন হাফিজ


এসেছে ফাগুন লেগেছে আগুন মৌবনে
লাগেনি আগুন চেতনার কোষে, যৌবনে।
পলাশ শিমুল কৃষ্ণচুড়া হয়েছে রক্তরাল
ছালাম রফিক বরতের ভাই ঘুমে বেহাল।

রক্ত দিলাম মায়ের ভাষায় মনের কথা কইবো
তাতে যদি বাঁধা আসে কেমন করে সইবো।
আমার দেহের রক্তের কিরে নেই রে দাম
রক্ত না দিস আজকে দে তুই একটু ঘাম।

পরাণ খুলে মনের কথা কইতে চাই
এই দাকীতে কোন কালই আপোস নাই।

 

এমন কথা বলার সাহস কার?

জিয়াউল হক


আজ ২৪শে ফেব্রুয়ারি শনিবার,
বইমেলা পরিলেখ স্টলের সামনে হঠাৎ করেই আমি আগামীর বাংলাদেশকে দেখলাম। প্রায় বছর পাঁচেক বয়সের একটা ছেলে ‘নাজমুল’ পথশিশু, স্টলে এসে কচি হাতে ধরা পাঁচটা টাকা এগিয়ে দিয়েছে সেলস্ ম্যানের দিকে, আংকেল আমাকে একটা বই দেন তো!

ঠিক ঐ একই সময়ে ভাগ্যচক্রে আমি সেখানে গিয়ে উপস্থিত। সেলস্ ম্যান অবাক হয়ে ঐ পুঁচকে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো, কি বই নেবে তুমি? তুমি কি বই পড়ো?
ছোট্ট ছেলেটার চটপট জবাব, হ্যাঁ পড়ি।

আগ্রহ নিয়ে এবারে আমিই এগিয়ে গেলাম।

পরিচয় জানতে চাইলাম, নাম ”নাজমুল, পার্কের কোণায় এক জায়গায় থাকে, মা ঝি এর কাজ করে, বাবা নেই। মা’র কাছ থেকে কেঁদে কেঁদে পাঁচটা টাকা নিয়ে এসেছে বই কিনতে। সে পড়তে পারে। সেলস্ ম্যান পরখ করার জন্য জানতে চাইলেন, তুমি কি পড়তে পারবে? জ্বি পারবো ছেলেটার সপ্রতিভ জবাব।

তার সামনে কয়েকটি বই মেলে ধরা হলো, সে ঝর ঝরে রিডিং করে বইগুল পড়ে গেল, বাংলা অক্ষরগুলো যেমন পড়লো তেমনি সে ইংরেজি অক্ষর গুলোও সাবলীলভাবে পড়ে গেল গর গর করে।

জানতে চাইলাম কোথায় পড়া শিখলে? সে জানালো যে, পথশিশু স্কুলের আপুরা এসে তাকে পড়িয়েছে, সেখানেই সে পড়তে শিখেছে।

অবাক হলাম। সেলস্ ম্যানের দিকে বাড়িয়ে দেয়া পাঁচটা টাকা তার হাতে ফেরত দিয়ে তাকে ধরিয়ে দেয়া হলো একটা শিশুতোষ বই। আহা, ছেলেটার সারাটা মুখ এক বর্ণনাতীত চমৎকার হাসি ফুটে উঠলো।

পাশেই এক ভদ্রমহিলা স্টলের বই নেড়ে চেড়ে দেখা বাদ দিয়ে এতক্ষণ মনযোগ দিয়ে ছেলেটাকে দেখছিলেন। তিনি এগিয়ে এলেন এবার, তিনিও একটা বই কিনে উপহার দিলেন বাচ্চাটাকে। দেখা দেখি পাশের স্টল থেকে বের হয়ে এলেন ঐ স্টলের সেলস্ ম্যান ভদ্রলোক।
তিনিও এতক্ষণ অবাক বিস্ময়ে বই এর প্রতি বাচ্চাটার তীব্র আকর্ষণ খেয়াল করছিলেন, খেয়াল করছিলেন প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর তার সপ্রতিভ উত্তর। তিনিও তার স্টল থেকে দুটো শিশুতোষ বই এনে বাচ্চাটার হাত তুলে দিলেন। ছেলেটার মুখে সে কি হাসি! ভাষায় এ অভিজ্ঞতা বলে বোঝানো যাবে না।

বইগুলো একটা ব্যাগের মধ্যে ভরে ও যখন পথ ধরলো, আমি তার গমন পথের দিকে চেয়ে রইলাম।

যে জাতির এক ক্ষুদে সদস্য বইকে এতটা ভালোবাসতে শিখেছে, সে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার, এমন কথা বলার সাহস কার?

 

একুশে বই মেলায় নবীন লেখিকা পরিচিতি (পর্ব-২)

অপরাজিতা ডেক্স


‘একটি হলেও নবীন লেখকের বই কিনুন’- প্রতিপাদ্য সামনে রেখে অমর একুশে বইমেলা চলে গিয়েছিল ২০১৭। এ বছর মানে ২০১৮ একুশে বইমেলার প্রতিপাদ্য বিষয় হল, ‘পড়ব বই, গড়ব দেশ’। এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ১-২৮ ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী বইমেলা চলবে।

আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বইমেলায় আরও নবীব দুজন লেখিকার পরিচয় এবং আর অনেক বিষয়। আসুন জানি তাদের সম্পর্কে।

কাজী ফাবিয়া

লেখিকা পরিচিতি:

কাজী ফাবিয়া। পেশায় একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। সৃষ্টিতেই যেন তার অপার আনন্দ। হোক তা ডিজাইন, হোক তা কোন কবিতা। আপন খেয়াল ছবি আঁকা, সুরের ইন্দ্রাজালে গানে গানে ভূবন গড়া তার শখ। ছেলেবেলায় সংস্কৃতমনা মায়ের লেখা মায়ের লেখা টুকরো টুকরো ছড়া ছড়া তার লেখার অনুপ্রেরণারর জায়গা করে নিয়েছিলো। লেখার অভ্যাস তাই ছোটবেলা থেকেই, ইংরেজি এবং বাংলা। চয়ন প্রকাশন থেকে হতে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অর্পণ’ ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘শিরোনামহীন’ এবারের গ্রন্থমেলায় প্রকাশ করতে পের আমরা আনন্দিত।

এক নজরে কোথায় পাবেন বইটি

“শিরোনামহীন”
কবি : কাজী ফাবিয়া
প্রকাশক : লিলি হক
প্রকাশন : চয়ন প্রকাশন
প্রচ্ছদ : কাজী ফাবিয়া
পাওয়া যাচ্ছে : চয়ন প্রকাশন
স্টল নং : ৬৪৮
গায়ের মূল্য :১২৫ টাকা
বইমেলা মূল্য: ৯৫ টাকা মাত্র।

­জাকিয়া জেসমিন যুথী

লেখিকা পরিচিতি:

বাবা মোঃ দিদারুল ইসলাম, মা বেগম লুৎফুন্নেছা। আশির দশকের শুরুর দিকে পদার্পণ হয় পৃথিবীতে। ঢাকায় জন্মগ্রহণ হলেও বাবার কর্মস্থলের কারণে শৈশব কৈশোর কাটে নর্থ বেঙ্গলের মফস্বল শহরে। জন্ম শহরে প্রত্যাবর্তন হয় ১৯৯৮ সালে। তারপর জীবনের উচ্চশিক্ষার সব সমাপ্ত হয় এখানে। ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বি.কম, ঢাকা সিটি কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনায় এম কম শেষ করার পরে পড়াশুনার অদম্য আগ্রহের কারণে মায়ের উৎসাহে কৃতিত্বের সাথে ঢাকা টিটার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.এড এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর থেকে এম.এড সম্পন্ন করেন। বর্তমানে ফিল্যান্সর (গ্রাফিক্স ডিজাইন) পেশায় যুক্ত। ১৯৯৭ সালে ‘চলতিপত্র’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় ‘থমকে থাকা সেদিনের পৃথিবী’। আমার ব্লগে ডটকমের চিঠি সাহিত্যের বই ‘আমার চিঠি’ এর মাধ্যমে ২০১১ সালে বইমেলায় প্রথম আত্মপ্রকাশ।

এক নজরে কোথায় পাবেন বইটি

“অন্ধ স্মৃতির গলি”
লেখিকা: জাকিয়া জেসমিন যুথী
প্রচ্ছদ: হিমেল হক।
প্রকাশক: প্রকৌ. শামিম রহমান আবির
প্রকাশ করছে: কুঁড়েঘর প্রকাশনী লিমিটেড।
স্টল নং:১২২

 

নিঃসঙ্গ অনুভূতি

কামরুল হাসান তুহিন


আঁধার রাতের তারা গুলো
ঘুমিয়ে পড়া মেঘ গুলো
মেঘের মাঝে দুঃখ গুলো
কেউ দেখেনি, কেউ দেখেনি।

আকাশ ভরা বৃষ্টি গুলো
বৃষ্টি ভেজা পাখি গুলো
পাখির কন্ঠে গান গুলো
কেউ শোনেনি, কেউ শোনেনি।

সুবহে সাদিকের ক্ষণ গুলো
মুয়াজ্জিনের সুর গুলো
সুরের মাঝে মায়া গুলো
কেউ বোঝেনি, কেউ বোঝেনি।

ভোরে ওঠা নক্ষত্র গুলো
নিবিষ্ট মনের সালাত গুলো
সিজদারত অশ্রু গুলো
কেউ মোছেনি, কেউ মোছেনি।।

 

দীর্ঘায়ু পেতে জাপানি চিকিৎসকের ৬ পরামর্শ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত…


ডা. শিগেয়াকি হিনোহারা২০১৭ সালের ২৫ জুলাই ১০৫ বছর বয়সে মারা যান জাপানি এই চিকিৎসক। দীর্ঘজীবন ধারণে তাঁকে একজন বিশেষজ্ঞ মানা হয়। তাঁর পরামর্শেই গড় আয়ুর দিক থেকে জাপান বিশ্বে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে। বেশি দিন বেঁচে থাকার জন্য তাঁর কিছু পরামর্শ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বিশেষ করে হিনোহারার ছয়টি পরামর্শ-

প্রথম পরামর্শ: যত দেরিতে সম্ভব কর্মজীবন থেকে অবসর নিন। জাপানি এই চিকিৎসক নিজে মৃত্যুর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেও কর্মজীবনে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর এই পরামর্শ খুবই কার্যকর। সাধারণত চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অবসর নেওয়ার পর যেন তাঁদের বার্ধক্য হু হু করে বাড়ে। দেখা দিতে থাকে নানা অসুখ-বিসুখ। কাজ মানুষের বার্ধক্য আটকে রাখে।

দ্বিতীয় পরামর্শ: ওজনের দিকে খেয়াল রাখো। দিনে একবার খাও। ডিনারে মাছ ও সবজির ওপর বেশি জোর দিয়েছেন। মাংস অবশ্যই খেতে হবে। তবে সপ্তাহে দুবারের বেশি নয়। জলপাইয়ের তেল (অলিভ অয়েল) খাওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। শরীরের ত্বক ও শিরা-ধমনি ভালো রাখার জন্য জলপাই তেল ভালো কাজ করে।

তৃতীয় পরামর্শ: আনন্দে সময় কাটাও। অতিরিক্ত নিয়মকানুনের চাপে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। শৈশবে খাবারদাবারের অনিয়ম সত্ত্বেও শরীর অসুস্থ হয় না। কেন? কারণ, মানসিক চাপ থাকে না। মূলত ঘুমিয়ে বা কিছু না করেই শরীর ক্লান্ত না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

চতুর্থ পরামর্শ: যা জানো, তা অন্যকে জানাও। তিনি বিশ্বাস করতেন, আমরা পৃথিবীতে এসেছিই এই সভ্যতায় কিছু না কিছু অবদান রাখার জন্য, মানুষকে সাহায্য করার জন্য। আজ, আগামীকাল, এমনকি পাঁচ বছর পরের পরিকল্পনা করতেন তিনি।

পঞ্চম পরামর্শ: জাগতিক সম্পদ নিয়ে চিন্তা না করা। ভালো থাকার পেছনে অর্থবহ কাজ করাটাই জরুরি। বস্তুগত চিন্তার তুলনায় আধ্যাত্মিক চিন্তায় শরীর ও মন ভালো থাকে বলে বিশ্বাস করতেন। অর্থবিত্ত মানুষকে আরও বেশি মানসিক চাপের মধ্যে ফেলে। অল্পতেই তুষ্ট হওয়া তাই জরুরি। তিনি সব সময় এটা মনে রাখতে বলেছেন, শেষ ঠিকানায় এসব কিছুই সঙ্গে যাবে না।

ষষ্ঠ পরামর্শ: সিঁড়ি ব্যবহার করা। হিনোহারা নিজে একবারে সিঁড়ির দুটি ধাপ পার করতেন, যাতে তাঁর পেশি ঠিক থাকে। শারীরিক ব্যায়ামের জন্য দৈনন্দিন কাজকর্মে যান্ত্রিকতা কমানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কায়িক শ্রম পছন্দ করতেন। ডাক্তারের পরামর্শকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে মানা করতেন তিনি। চিকিৎসকেরা জীবন দিতে পারেন না। তাই অযথা সার্জারি করার বিপক্ষে ছিলেন। সূত্র: বিবিসি।

 

পুরানো দিনের গল্প বলি

ডা. ফাতিমা খান

আমার বড় ছেলের বয়স তখন দুই এর কিছু বেশী। সারাদিন বুলেটের মত কথার গুলি ছোড়ে। কথা শোনার চেয়ে বলে বেশী। সব ব্যাপারে তার কৌতুহল তখন তুঙ্গে। আমি সকালে কলেজে যাই, দুপুরে আসি। বিকালে হাসপাতালে প্র‍্যাক্টিস করি, রাতে ফিরি। রোগী আর রোগবিদ্যা নিয়ে তখন আমার সারাবেলা কাটে।

ছেলেটা বাসায় থাকত কাজের মেয়েটার কাছে, ওর কথাবার্তা তখন ছেলে চুম্বকের মত আত্নস্থ করছিল। (কাজের মেয়েটা কথায় কথায় ইংলিশ ঝাড়ত, মাঝে মাঝেই জিন্স গেঞ্জী কিনে দেয়ার বায়না করত, ছাদে গিয়ে নাকি লুকিয়ে বিড়িতেও দু- এক টান মারত। বাকী কাহিনী আরেকদিন বলব ) আমি অফিস যাওয়ার সময় ছেলেকে যতই বলতাম “আব্বু আল্লাহ হাফেজ”, সে খুব ভাব নিয়ে বলত ” সি ইউ মাম্মি।”
অনেক চেষ্টা করেও যখন ” মাম্মী” র বদলে “আম্মু ” শিখাতে আর ‘সি ইউ’ ছাড়াতে পারলাম না, হাল ছেড়ে দিলাম। ওর বাবা যখন আমার সাথে বিরক্ত মুখ করে বলত ” ছেলেটা আমাকে ‘বাবা’ ডাকে ভাল লাগে না, ‘আব্বা ‘ শিখিও তো “, তখন চুপ করে ভাবতাম, আমি কাকে বলব যে আমাকে ‘আম্মু ‘ বলা শেখাতে! বুঝতাম ছেলেকে সব শেখানোর দায়িত্ব টা মায়েরই বটে! ছেলে আমার ভীষণ জেদী ছিল। শিখালেই শিখবে বা বললেই মেনে নেবে এমনটা না। চাকুরী দুইটাও করতাম অনিচ্ছায়, প্রয়োজনের তাগিদে।

ছেলের বয়স যখন তিন বছর, চলে আসলাম বিদেশ। ততদিনে আমার ছেলে অনেক কথাই শিখে ফেলেছে। বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়ালে গার্মেন্টস কর্মীরা কেমনে ঝগড়া করছে, বা রিক্সাভাইকে সদা ক্ষিপ্ত রাস্তার সার্জেন্টগুলো কিরকম করে গালি দিচ্ছে, সব তার ঠোটস্থ!

এখানে আমার একটা ব্যক্তিগত মতামত বলি। আমি কোন জাতি, ভাষা বা কোন কাজ কে ছোট মনে করতাম না আর এখনো করি না, যতক্ষণ না তা আমার ধর্মীয় আদর্শের বা নৈতিকতার পরিপন্থী হয়। আমার ছেলেদেরকেও এই আদর্শ কে সামনে রেখেই গড়ে তুলছি। ভাষাগত ব্যাপারে বা সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও তাই। বিজাতীয় বা বিধর্মীয় সংস্কৃতি আমি পছন্দ করিনা। অকারণ বা অযৌক্তিক প্রথাগুলোও পছন্দ না। বছরে একদিন মাতৃভাষা দিবস পালন করি কিন্তু সারাবছর টডর মডর ইংরেজী বলার চেষ্টা করি আর বাচ্চাদেরও তাই শেখাই, এতে লাভ কি হল? ভাষার জন্য যারা সংগ্রাম করেছেন, জীবন দিয়েছেন তারা কি শুধু বছরে একটা দিনই সম্মানিত হবেন? জন্মের পর থেকে সন্তানকে ‘মা’ না শিখিয়ে ‘মাম্মা’ শেখাই আর এদিকে বছরে একদিন ভাষা শহীদদের সমাধিতে ফুল দেই…এটা কেমন কথা ?

ছুটিতে দেশে গেলে আমার খুব আজব লাগে যখন দেখি ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর সাথে বাবা মা (হোক শিক্ষিত বা মুর্খ) বাংলা-ইংরেজী শব্দ মিলিয়ে কথা বলে। একদিন তো এক কাজের মহিলাকেও দেখলাম ছেলেটাকে একপাশে সিথি কেটে চুল আচড়ে বলছে “নাইস লাগতাসে”।
কেউ কেউ আবার সকাল বেলা ‘মর্ণিং টি’ খায়, বাচ্চাকে বলে ‘সোপ’ দিয়ে ‘শাওয়ার’ করতে, বাংলা অনুষ্ঠানে পোলাও এর বদলে ‘রাইস’ খায়, খেয়ে আবার বাচ্চাকে ‘ডার্টি হ্যান্ডটা ‘ ‘ওয়াশ’ করে আসতে বলে, সব শুনে আমার কেমন যেন আউলা লাগে। আরে বাবা, বললে ভাল করে হয় বাংলা বল, নয়ত ইংরেজী! খিচুড়ি বানানোর কি আছে!

সব দেখে আমার নিজের ছেলেদের ব্যাপারে একটা প্রশান্তি লাগে। ওরা অন্তত নিজের দেশীদের সাথে খাটি বাংলায় কথা বলে, তাও আবার কখনো বই পত্রের মত বিশুদ্ধ ভাষায়। ইংরেজীতে বাচনভঙ্গি অন্তত আমার চেয়ে ওদেরটাই ভাল! কিন্তু মানুষ ও পরিস্থিতি বুঝে কথা বলতেও তারা জানে। ‘মাম্মী’ বদলে এখন বড়জন ‘আম্মু’ বলাও শিখেছে বিদেশে এসে। দেশী গালিগালাজ গুলো মনে হয় ভুলে গেছে এতদিনে । দেশীয় সংস্কৃতিগুলো সম্পর্কে তার জ্ঞান অন্তত ওর সমবয়সী দেশী আর দশজন বাচ্চার থেকে কোন অংশে কম না।
আলহামদুলিল্লাহ!

দেশে যাওয়া হয় প্রতি বছরই । সেবার শ্বশুরবাড়ির দিকের এক আত্নীয় জিজ্ঞেস করলেন ” বিদেশে থেকেও তোমার ছেলেরা এত ভাল বাংলা পারে কেমন করে? ”
আমি কিছুই বলিনি। শুধু এক বুক গর্ব হয়েছিল নিজের ভাষার জন্য, আমার পারগতার জন্য !

কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

২১শে ফেব্রুয়ারি ‘মাতৃভাষার শুদ্ধতা’

অপরাজিতা ডেক্স


আজ বুধবার ২০১৮ এর ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ৬৬ বছর পূর্ণ হল মাতৃভাষা আন্দোলনের। আজকের দিনে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে জাতিসংঘের উদ্যোগে ভাষা শহীদদের স্মরণে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়। রক্তস্নাত গৌরবে সাজানো একুশ আজ বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মানুষের প্রাণকে অনুরণিত করে।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদরা জাতিকে সে মহৎ ও দুর্লভ উত্তরাধিকার দিয়ে গেছেন। এই জাতির মায়ের ভাষা ‘বাংলা’। এই ভাষার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমা উদ্ভাসিত।

মহান একুশে বাঙালির জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক। রফিক, শফিউর, সালাম, বরকত ও জব্বার ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে প্রাণ দিয়েছিলেন। রক্তের বিনিময়ে মায়ের ভাষাই বরং শুধু নয় স্বাধীনতার বীজটিও সেই সময় রোপিত হয়েছিল।

২০১৮ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে দেশে ও দেশের বাইরে নানান আয়োজন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শিশু কিশোরদের জন্য বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি স্কুলের উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। কোন কোন স্কুলে বাংলা শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত করেন।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য বাংলাদেশে শুধুমাত্র ভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে তেমন কোন চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়নি।
এবং বাংলা ভাষার যত্রতত্র ব্যবহার এর জন্য কবিরা তাদের কলমে তুলে ধরেছেন অনেকটা ব্যঙ্গ করে।

প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার কবিতার লাইন গুল তার শক্ত প্রমাণ,

“শেক্সপীয়র, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলী বা কীটস বা বায়রন
ভাষা ওদের কী বলিষ্ঠ, শক্ত-সবল যেন আয়রন
কাজী নজরুল- রবীন্দ্রনাথ
ওদের কাছে তুচ্ছ নেহাত
মাইকেল হেরে বাংলায় ফেরে, আবেগে-উচছ্বাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না।”

আজ প্রায় লুপ্ত মাতৃভাষা সম্বন্ধে সচেতনতা। আজ শুদ্ধ বানান ও শুদ্ধ উচ্চারণ চর্চাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়না।

একুশে ফেব্রুয়ারি জাতীয় ছুটির দিন।

আসুন, মাতৃভাষাও শুদ্ধভাবে বলতে ও লিখতে গেলে তা শিখতে হয়, চর্চা করতে হয়—সব জাতিই তা করে। শুদ্ধ বানান ও শুদ্ধ উচ্চারণ চর্চা খুব জরুরি যার জন্য দরকার নিজের সচেতনতা। তারপর নিজে নিজে ভালো একটি উদ্যোগ নেওয়া সময়ের দাবী।

 

একুশে বই মেলায় নবীন লেখিকা পরিচিতি (পর্ব-১)

অপরাজিতা ডেক্স


‘একটি হলেও নবীন লেখকের বই কিনুন’- প্রতিপাদ্য সামনে রেখে অমর একুশে বইমেলা চলে গিয়েছিল ২০১৭। এ বছর মানে ২০১৮ একুশে বইমেলার প্রতিপাদ্য বিষয় হল, ”পড়ব বই, গড়ব দেশ’। এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ১-২৮ ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী বইমেলা চলবে।

আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বইমেলায় নবীব দুজন লেখিকার পরিচয় এবং আর অনেক বিষয়। আসুন জানি তাদের সম্পর্কে।

মুক্তারা বেগম নদী

এসেছে এই বইমেলায় তার একক কবিতার বই “একলা পাখি”।

লেখক পরিচিতি:

মুক্তারা বেগম নদী, জন্ম চায়ের দেশ সিলেট বিভাগের, হবিগঞ্জ জেলায়। বাবার মার বড় সন্তান। পড়াশুনা, ইডেন মহিলা কলেজ থেকে অর্থনীতিতে এম.এ, ইংল্যান্ডের লন্ডন স্কুল অফ কমার্স থেকে এম.বি.এ.। বর্তমানে দেশের বিখ্যাত আইটি কোম্পানিতে কর্মরত। শখ: বই পড়া, লেখালেখি, মুভি দেখা, ছবি তোলা, গান শোনা, ঘুরে বেড়ানো, বাগান করা, রান্নাবান্না, সবচেয়ে বেশি পছন্দ বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানো।প্রিয় লেখক : সৈয়দ মুজতবা আলী, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শহিদুল্লাহ কায়সার, জাহানারা ইমাম, আহমেদ ছফা, জীবনানন্দ দাশ, হেলাল হাফিজ রুদ্র মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ,পুর্নেন্দ্র পত্রী, মাওলানা জালাউদ্দিন রুমী, খলীল জিবরান, এরিক মারিয়া রেমার্ক, ও হেনরী, আর্নেষ্ট হেমিংওয়ে। প্রিয় বই : শবনম, পদ্মা নদীর মাঝি, পথের পাঁচালি, একাত্তরের দিনগুলি, হাজার চুরাশির মা, সংশপ্তক, যদ্যাপী আমার গুরু, যে জলে আগুন জ্বলে, কবি, আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস, ত্রী কমরেডস, দ্যা ওল্ড ম্যান এ্যান্ড সী, অলিভার টুইষ্ট, ল্যা মিজারেবল, মা।

এক নজরে কোথায় পাবেন বইটি

নাম : মুক্তারা বেগম নদী
একক কবিতার বই ” একলা পাখি”
প্রচ্ছদ – হিমেল হক।
প্রকাশ করছে – কুঁড়েঘর প্রকাশনী লিমিটেড।
স্টল নং ১২২
গায়ের মূল্য :২০০ টাকা
কবিতা বিষয় : ভালবাসা প্রেম বিরহ অপেক্ষা আর প্রকৃতি।

লুনা লাবিব

“নীল খামে তোমার নাম” তার একক কবিতার বই প্রথম এসেছে এবারের বই মেলায়।

লেখক পরিচিতি:

লুনা পারভীন। জন্ম ১৯৭৫ সালের ২৭ অক্টোবর, পিতা মরহুম ডাঃ এস এম আলতাফ হোসেন, মাতা ডাঃ জাহেদা খান ইউসুফ জাই, পৈতৃক নিবাস খুলনার ডুমুরিয়া, ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির সাথে জড়িত! তৎকালীন শিশুদের ম্যাগাজিন নিয়মিত ছড়া লিখতেন। পরবর্তীতে মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন এন্ড কলেজ, উত্তরা থেকে এমবিবিএস পাশ করে বর্তমানে শিশু স্বাস্থ্যের উপর উচ্চতর ডিগ্রী সম্পন্ন করে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১১ বছর যাবত কর্মরত আছেন। লেখাপড়া ও পেশাগত কারণে লেখালেখি থেকে সাময়িক বিরতির পর আবার নতুন করে গত এক বছর যাবত বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপ ও পত্রিকায় লেখালেখির সাথে জড়িত আছেন। এবারের বই মেলায় তার প্রথম কবিতার বই ‘নীল খামে তোমার নামে প্রকাশিত হলো।

এক নজরে কোথায় পাবেন বইটি

“নীল খামে তোমার নাম”
কবি : লুনা লাবিব
প্রকাশক : শ্রাবনী মজুমদার
প্রকাশনী : আনন্দম
প্রচ্ছদ : জয়ী আলম
পাওয়া যাচ্ছে : ম্যাগনাম ওপাস
স্টল নং : ৩৮৯-৩৯০
বইমেলা মূল্য: ১২০ টাকা মাত্র।

 

 

মাতৃকথন_২

ফারিনা মাহমুদ


এই .. শোনো … শোনো,
আমার ছবি আপলোড করো না কিন্তু খবরদার ! আমাকে বাদ দিয়ে শুধু বাবুর ছবি দাও …।কিংবা গ্রুপ ছবি তোলার সময় নিজের বেখাপ্পা শরীরটাকে দুইজনের মাঝের চিপায় যথাসম্ভব ঢেকে দাঁড়ানোর চেষ্টা।
কি? কমন পড়ে? মা হবার পরে মুটিয়ে যাওয়া শরীরটা নিয়ে আমাদের আড়ষ্টতা কথা বলছি !

‘মাইক্রোস্কোপিক’ একটা জাইগোট থেকে জ্বলজ্যান্ত একটা মানবসন্তান প্রসব … একটা বিন্দু থেকে পূর্ণাঙ্গ স্বপ্নের জয়যাত্রা। না, বায়োলজি ক্লাসে পড়া ব্যাঙের জীবনচক্র নয়, মানুষের জীবনচক্রের যাত্রাপথ! সেই যাত্রা কি আর সিরাতুল মুস্তাকিম। মোটেই নয়। একটু একটু করে স্ফীত হয়ে ওঠা শরীরটা কারো কারো ক্ষেত্রে শ্রী হারাতে থাকে নানাভাবে।

জীবনে একটা আঁচড় পড়েনি যে শরীরে, সেই চামড়ায় চিঁড় ধরে। ক্রমশ সেটা রূপ নেয় ফাটলে।
নাকটা কেমন যেন ফুলে ওঠে, ঠোঁটটা কালচে হয়ে যায়। ঘাড়ের কাছে, মুখে, কপালে ছোপ ছোপ কালচে পিগমেন্টেশনের দাগ, ফুলে ঢোল হয়ে যাওয়া পা। আর সর্বশেষ সিজারিয়ানের আড়াআড়ি কাটা কিংবা নরমাল ডেলিভারির থ্রি ডিগ্রি টিয়ারের যন্ত্রনা!!! তবেই না “মা”!

আর যে মুহূর্ত থেকে আদরের ধন বুকে এলো, মায়ের কি আর সময় হয় নিজের দিকে তাকানোর? আমি নিজে ১৯ দিন পরে চুল আঁচড়ানোর সময় পেয়েছিলাম!

কেমন কেমন করে যেন সময় চলে যায়। বাবুটা বড় হয়। একসময় হঠাৎ মায়ের খেয়াল হয়।
একি! আমার এমন হতচ্ছাড়া শ্রী ! হাত পায়ের এ কি দশা? খিদায় তো জান বের হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু পেট ভরে খেতে গিয়ে দেখি আরেক বিপদ! জামা কাপড় কিছুই গায়ে লাগে না ! নিজেকে কেমন যেন দুনিয়ার সাথে অচল মনে হয়।

..কুরূপা কুৎসিত মোটা একটা মহিলা মহিলা লাগে ! কেউ কেউ আপ্রাণ চেষ্টা করেন সান্ত্বনা খুঁজে নিতে। মা হয়েছি, মোটা হওয়া জায়েজ এখন। কেউ কেউ ফ্রাস্টেশনে ধুঁকে ধুঁকে নিজেকে গুটিয়ে নেয় আরো!

সমাধানটা আসলে কি?
বাস্তব হলো, আমরা কেউ কেট মিডলটন না, যে প্রসবের ১২ ঘন্টা পর মেকআপ করে হাই হিল পরে ওটি থেকে বের হবো আর লোকে বলবে – মাইরালা !! বাচ্চা আসলে কই আসিলো আর কইত্তে বাইর হইলো?

কাজেই ওইসব রাজ-পুত্রবধুদের কভার করা ম্যাগাজিন দেখে আক্ষেপ করতে গেলে মা না হওয়াই ভালো। আমরা হলাম প্রজাবধু।
আমরা আমাদের শান্তির জন্য যা করতে পারি তা হলো,
♥স্রেফ নিজেকে ভালোবাসা,
♥নিজের একটু যত্ন নেয়া।

হ্যা, “বাচ্চা হয়েছে, বাচ্চাই আমার পৃথিবী” – এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য যে আপনিও আপনার বাচ্চাটার পৃথিবী। দিনের ২০ ঘন্টা ওর যত্ন নিচ্ছেন, কিন্তু আধটা ঘণ্টা নিজেকে দিন। নিজের শরীরটাকে দিন। নিজের দিকে তাকান, নিজের হাত পা গুলো ম্যানিকিউর-পেডিকিউর এর অভাবে খুব অসুন্দর দেখাচ্ছে?

বাবুকে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে একটু পানিতে চুবিয়ে ফেলুন, তারপর বাবু ঘুমালে গোসলটা সেরে নিন। পরদিন চুলটাকে একটু তেল দিয়ে বাঁধুন, তার পরের দিন শরীরটা ভালো করে দেখুন, মুটিয়ে যাচ্ছেন? সঠিক ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কি করে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তার একটু খোঁজ খবর শুরু করুন।

একদিন, দুদিন … দেখবেন হারিয়ে যাওয়া লাবণ্য ফিরে আসছে একটু একটু করে। ফিরে আসছে আত্মবিশ্বাস। এই আত্মবিশ্বাসটা খুব জরুরি আমাদের সবার জন্য।

স্বার্থপর হতে বলছি না মোটেই, মোটেই ছোট করছি না একজন মুটিয়ে যাওয়া মায়ের চির সাবলীল সৌন্দর্যকে। শুধু বলছি, নিজের জন্য একটু সময় বের করতে প্রতিদিন, যাতে আক্ষেপে না ভূগি। দীর্ঘশ্বাস না ফেলি পুরানো এ্যালবাম দেখে অথবা ক্যামেরার সামনে গেলেই আড়ষ্ট হয়ে না যাই।

দিনশেষে … প্রতিটি মা-ই অনন্যা। মাতৃত্বের গুনে সম্পূর্ণা। তাই একটু বাড়তি যত্ন, ভালোবাসা পাবার অধিকার তাঁদের সবার আগে। তো সেই ভালোবাসাটা না হয় সামান্য একটু নার্সিসিজম দিয়েই শুরু হোক !

কি বলেন ?
শুরু হোক, নিজেকে ভালোবাসা দিয়ে … একটু একটু করে !

 

জেগে ওঠো

আফরোজা হাসান


একটি গাছে অনেক পাতা থাকে। অসংখ্য সবুজ পাতা গাছের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। সেই সৌন্দর্য দেখে সবাই মুগ্ধ হয়।

তবে অসংখ্য সবুজ পাতার মাঝে অনেক পাতাই মাঝে মাঝে শুকিয়ে যায়।
একসময় সেই শুকনো পাতাগুলো গাছ থেকে ঝরে মাটিতে পড়ে যায়। তখন সেই ঝরা পাতাকে কেউ আর মূল্য দেয় না।

মানুষের জীবনও একটা গাছের মতো। এই গাছেও সবুজ পাতার মতো সৌন্দর্য থাকে, সেই সৌন্দর্য হলো অসংখ্য সাফল্যের পালক।

মানুষের জীবন যখন সাফল্যের পালক দিয়ে ঢাকা থাকে, তখন তাকে সবাই সবুজ পাতার মতো ভাবে। আর যখন সাফল্যের পালক জীবন থেকে একটা একটা করে ছিঁড়ে যায়, তখন সেই মানুষটিকে সবাই ঝরা পাতার মতো মনে করে। তার জীবনে যেন আর কোনো মূল্য নেই!

সত্যিই কি ব্যর্থ হওয়া মানুষগুলোর জীবন গাছের ঝরা পাতার মতোই মূল্যহীন?

বনের ঝরা পাতাও কিন্তু অন্যের উপকার করে। বনের হিংস্র বাঘ যখন নিরীহ হরিণ শিকারের জন্য তীব্র বেগে ধেয়ে আসে, তখন শুকনো পাতাগুলো বাঘের পায়ের নিচে পড়ে মড়মড় আওয়াজ করে। সেই আওয়াজ শুনেই হরিণেরা বুঝতে পারে বিপদ আসন্ন। এভাবেই শুকনো পাতারা নিরীহ হরিণকে বিপদ থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করে।

আমরা যারা তরুণ মাঝি, তারা জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হই। তাই বলে কি সবসময় বিষণ্ন হয়ে বসে থেকে হাল ছেড়ে দেব?

হতাশাগ্রস্ত হয়ে নিজের জীবনকে তিলে তিলে শেষ করে দেব?

গাছের ঝরা পাতাগুলোর দেহে প্রাণ থাকে না, তবুও তারা অন্যের উপকারে আসে। আমাদের দেহে তো প্রাণ আছে, তবে আমরা কেন পারব না?

জীবনে চলার পথে কষ্ট আসবেই। অর্থকষ্ট, স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবার কষ্টসহ নানান ডিজাইনের কষ্ট। তারপরও কষ্টের নদী পাড়ি দিতে হবে।

কখনো যদি খুব বেশি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তবে মাঝে মাঝে গাছের ঝরা পাতাগুলোর কাছে যাবেন।

দেখবেন তারা আপনাকে সাহস দিয়ে বলবে, “তোমার জীবনে কিছুই হারিয়ে যায়নি। তোমার দেহে তো এখনো প্রাণ আছে। জেগে ওঠো! জ্বলে ওঠো হে তরুণ!”

 

তাহেরা রহমান প্রথম হিজাব পরা সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রের টিভিতে

হলিউড রিপোর্টার


অভিবাসীর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের একটি টেলিভিশনে প্রথমবারের মতো পূর্ণকালীন রিপোর্টার হিসেবে একজন হিজাব পরিহিত নারীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যের মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করা নারীটির নাম তাহেরা রহমান।

ইতিহাস গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের কোনো টেলিভিশন স্টেশনে তিনি প্রথম সাংবাদিক হিসেবে হিজাব পরে সংবাদ সংগ্রহের পাশাপাশি সংবাদ পাঠও করছেন নিয়মিত। ৯ ফেব্রুয়ারি ইলিনয়-আইওয়া সীমান্তবর্তী এলাকা কুয়াড সিটিজে স্থানীয় টিভি স্টেশন ‘লোকাল ফোর নিউজ’-এ হিজাব পরিহিত অবস্থায় সংবাদ পাঠ করেন তাহেরা।

‘লোকাল ফোর নিউজ’ চ্যানেলটি মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক সিবিএসের আঞ্চলিক শাখা। ইলিনয় ও আইওয়া দুই প্রদেশের সীমান্তবর্তী পাঁচটি শহরকে একসঙ্গে কুয়াড সিটিজ বলা হয়।

ওই অঞ্চলে সম্প্রচার হয় ‘লোকাল ফোর নিউজ।’ ওই টিভি স্টেশনে গত দুই বছর ধরে নিউজ প্রডিউসার হিসেবে কাজ করছিলেন তাহেরা। তবে সব সময়ই তার স্বপ্ন ছিল টিভি পর্দায় নিজের রিপোর্ট তুলে ধরার। কিন্তু মার্কিন টিভি চ্যানেলগুলোর অঘোষিত নীতি হলো- হিজাব পরা কাউকে পর্দায় হাজির না করার। মেধাবী তাহেরা স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি নিয়েছেন।

আগে কাজ করেছেন সিবিএসের শিকাগো অফিসে। সহকর্মী ও সিনিয়রেরা সব সময় তাকে বলে এসেছেন, পর্দার সামনে আসতে হলে তাকে হিজাব খুলতে হবে!

তাহেরা হিজাব মাথায় ওই টেলিভিশন চ্যানেলে যোগ দিয়েছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নারীদের জন্য একটি বড় সাফল্য তাহেরা জানান, ‘শিকাগোর একাধিক টিভি স্টেশনে তিনি চেষ্টা করেছেন রিপোর্টার বা সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কাজ করার।

কিন্তু সবাই তাকে হিজাবের কথা বলে না করে দিয়েছে। আর টিভিতে কখনো আমার মতো দেখতে কাউকে দেখিনি। তাই একপর্যায়ে মনে হয়েছিল আমি আসলে এই সুযোগ পাব না। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি।’ এরপরই তাহেরা যোগ দেন লোকাল ফোর নিউজে। শেষ পর্যন্ত কাজে মুগ্ধ হয়ে কর্তৃপ তাকে টিভি পর্দায় নিজের রিপোর্ট নিয়ে হাজির হওয়ার সুযোগ দেয় ৯ ফেব্রুয়ারি। সুযোগ পেয়ে তাহেরা খুব খুশি। তিনি বলেন, ‘এখানে আমাকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। আমি কর্তৃপরে উদারতায় খুশি। আশা করি, আমি আমার কর্মদতায় এগিয়ে যাব।’

শুক্রবার ‘লোকাল ফোর নিউজ’ জানায়, তাহেরা হলেন আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম কোনো হিজাবি মুসলিম নারী যিনি অন-এয়ার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করবেন। মেয়ের সাফল্যে খুবই খুশি তাহেরার বাবা-মা। প্রথম টিভি পর্দায় সংবাদ পাঠের দিন পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে কয়েক ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে তাহেরার অফিসে এসে হাজির হয়েছিলেন তারা।

অনুষ্ঠান দেখতে বসে কান্না থামাতে পারেননি মা। তাহেরার মা দারদুনেহ রহমান জানান, ‘তাহেরা হিজাব মাথায় ওই টেলিভিশন চ্যানেলে যোগ দিয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নারীদের জন্য একটি বড় সাফল্য। আর মা হিসেবে আমি অবশ্যই গর্বিত। ‘টেলিভিশনের পর্দায় মেয়েকে হিজাব মাথায় দেখে উচ্ছ্বসিত তাহেরার বাবা-মা। আর তাহেরাকে সহকর্মী হিসেবে পেয়ে খুশি রিচা টেইলর।

উল্লেখ্য, আমেরিকার পিউ রিচার্স সেন্টারের গবেষণা অনুযায়ী সে দেশের ৬৮ শতাংশ মুসলিম পুরুষ এবং ৮৩ শতাংশ মুসলিম নারী বৈষম্যের স্বীকার। অন্য দিকে মার্কিন সংস্থা রেডিও টেলিভিশন ডিজিটাল নিউজ অ্যাসোসিয়েশনের ২০১৫ সালের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, দেশটির স্থানীয় টিভি স্টেশনগুলোতে কাজের সুযোগ পাওয়াদের মধ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের হার মাত্র ২২ শতাংশ। সুত্র:নয়াদিগন্ত,যুগান্তর।

 

বসন্তের শুভেচ্ছা

ফাতিমা মারিয়াম


মালা গ্রামের মেয়ে। মামার পরিচয়ের সূত্রে বিয়ে হয় ঢাকায়।

মালার শ্বশুরবাড়ি আর বাবার বাড়ি একই জেলায়। তবে তার স্বামী আনিস ঢাকাতেই প্রতিষ্ঠিত।

আনিস একজন সরকারী কর্মকর্তা। বেতনের চাইতে উপরি আয়ই বেশি। অনেক অনেক টাকা হাতে আসার কারণেই হোক অথবা গ্রামের মেয়ে হঠাৎ রাজধানীতে রাজরানি হওয়ার কারণেই হোক মালা বেশ বেহিসাবি জীবন যাপন করা শুরু করে।

আনিস কখনো কিছু বলে না। কারণ বলার মত শক্ত মেরুদণ্ড তার নেই।

মালার লাগামহীন ছন্নছাড়া জীবন যাপনের ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে বললেই আনিস বলে- আরে থাক না। এখন তো সবাই এভাবেই জীবন কাটায়। ওকে তাই কিছু বলি না।

আনিসের মা বাবা কেউ কখনো মালার ব্যাপারে কিছু বলেও আনিসের কাছে পাত্তা পায় না। সবাইকে সে বুঝাতে চায় যেভাবেই চলুক না কেন মালা মানুষ হিসেবে ভালো। তার আত্মীয়স্বজন তো বটেই এমন কি মালার আত্মীয়রাও আনিসের স্ত্রৈণ স্বভাবের জন্য আড়ালে আবডালে বিরক্তি প্রকাশ করে।

একে একে দুইটি সন্তান হয় মালা ও আনিসের। তারা দিন দিন বড় হয়। মালার বেহায়াপনা বাড়তে থাকে, বাড়ে আনিসের আয়। আয়ের পুরো টাকা বউয়ের হাতে তুলে না দেয়া পর্যন্ত মায়া আনিসকে শান্তি দেয় না।

এক পর্যায়ে স্বামী স্ত্রী দুজনেই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এরপর
জানাজানি…..
কানাকানি।

তারপরও দিন যায়। সংসারে চরম অশান্তি।

ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে। তারা বাবা মা দুজনকেই কড়া কথা শোনায়। আবার তারা নিজেরাও যে ভালো পথে চলে তা নয়। ছেলেও এক মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সেই মেয়ের মাকে মালা দু কথা শোনায়। আবার মেয়ের প্রেমিককে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বেশ কায়দা করেই জানায়। ছেলেমেয়ে কোন শাসন মানতে চায় না।

পরিবারে চরম অশান্তি চলে…চলতে থাকে।



পহেলা ফাল্গুনে মা মেয়ে দুজনেই বাসন্তী শাড়ি পরে সাজুগুজু করে ফেসবুকে ছবি দেয়। আর ক্যাপশনে লিখে ‘সবাইকে বসন্তের শুভেচ্ছা’। লাইক আর কমেন্টের বন্যায় আপাতত তাদের পরিবারের অশান্তির কথা মা মেয়ে ভুলে যায়। মাতা কন্যা উভয়ে একে অন্যের পোষ্ট চেক করে দেখতে থাকেন কার পোস্ট এ লাইক বা কমেন্ট কত এসেছে![ছোট গল্প]

 

ঘুড়ি

দ্য স্লেভ


শৈশবের এই এক ঘুড়ি নিয়ে বহু পৃষ্ঠা লেখা যায়। আমাদের এলাকায় কিছু ছোট ছোট দোকান ছিলো, যেখানে নানান রঙের ঘুড়ি বিক্রি হত। কারো কারো ঘুড়ি ছিলো বিখ্যাত, কিন্তু দাম সকলের কাছেই এক টাকা। সে সময় ১ টাকা দরের ওই ঘুড়িটা যে কতটা আকাঙ্ক্ষিত ছিলো তা ঠিক ভাবে বুঝানো যাবে না। ওটা যেন এক টাকা মূল্যের কিছু ছিলোনা। ওটা ছিলো বহু মূল্যবান সম্পদের একটি অংশ।

আমার জানামতে আমি ১ টাকা দিয়ে সম্ভবত দু একবার ঘুড়ি কিনেছি। আমি একই দোকান থেকে ৫০ পয়সা দামের ছোট সাইজের ঘুড়ি কিনতাম। এই ঘুড়ি কিনে এর পেছনে লেজ লাগাতাম। সেই লেজ হত আমার অংশ খাতার কাগজ দিয়ে তৈরী। কখনও কখনও এত লম্বা লেজ তৈরী করতাম গরম ভাত দিয়ে টিপে টিপে,যে লেজের ভারে ঘুড়ি উড়তে পারত না। আমি ভাবতাম বাতাসের দোষ। তবে সেই লম্বা লেজওয়ালা ঘুড়ি নিয়ে জোরে দৌড় দিতাম,তখন তীব্র বাতাসে খানিকটা উপরে উঠত।

আমি ঘুড়ি তেমন কিনতাম না, তবে প্রতিদিন বিকেলে নদীর ধারে, রেল লাইনের উপরে তুখোড় ঘুড়িবীদরা কাটাকাটি খেলত। সে সময় আমরা বাচ্চারা দূরে দাড়িয়ে সে খেলা দেখতাম। কি যে মজা সেটা দেখতে। তবে আসল মজা হল ঘুড়ি কাটার পর সেই কাটা ঘুড়ি ধরার জন্যে দৌড় প্রতিযোগীতা। কাটাকাটি হলেই বিশাল লম্বা সূতোসহ ঘুড়ি ধীরে ধীরে নীচে নামত। বহু উপরের সেসব ঘুড়ির পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা আরেক গ্রামে পৌছে যেতাম কখনও।

আবার কখনও কখনও নদীতে পড়ত গিয়ে। তবে ঘুড়িটাকে পাবার জন্যে জীবন উৎসর্গ করতাম। কখনও সেটা লম্বা গাছে গিয়ে বেধে থাকত। এমন ক্ষেত্রে আমাদের এলাকার মারাত্মক গেছো আমিনই ঘুড়িটা পেত। আমিন যে কোনো গাছে অনায়াসে উঠে যেত দ্রুত। মাটিতে বা আমাদের আয়ত্বে থাকা স্থানে কখনও ঘুড়ি পড়লে আমি কখনও কখনও সেটা পেতাম। তখন যে কি খুশী লাগত ! তবে কখনও কখনও একাধিক লোকে ঘুড়ি ধরতে গেলে আমরা আমরা কোনো লাঠি,কঞ্চি দিয়ে ঘুড়িতে বাড়ি দিয়ে ছিড়ে ফেলতাম, যাতে কেউ নিতে না পারে। ঘুড়ি ধরা নিয়ে অনেক হাতাহাতিও হত। তবে অনেক ঘুড়িই ধরেছি।

আমার ধরা সেসব ঘুড়ি অনেক যত্ন করে খাটের নীচে অথবা ঘরের সানসাইডের উপর রাখতাম। আমার সুন্দর সুন্দর লাটাই(নাটাই) ছিলো। আমি এক ধরনের চমৎকার লাটাই বানাতাম। পুরোনো হাওয়াই চপ্পল সুন্দর গোল করে ২টা চাকা বানাতাম। এবার বাঁশের সরু কঞ্চী সুন্দর মাপে এর ভেতর প্রবেশ করিয়ে দিতাম। চাকার মাঝ বরাবর একটা ফুটো করতাম আর সেখানে মসৃণ বাঁশের কঞ্চী অথবা সুন্দর করে বানানো বাঁশের লাঠি ঢুকিয়ে লাটাই বানাতাম। আমার হাতের কারুকাজ খুব দারুন ছিলো।

আমরা সূতোয় মাজন দিতাম। বাল্বসহ নানান কাচের জিনিস ভেঙ্গে গুড়ো করতাম হামানদিস্তায়। এটার কাপুড়ে ভরে পাউডার অংশ বের করে নিতাম। এবার গদের আঠা আর কি কি যেন একসাথে জ্বালিয়ে এর ভেতর কাচের পাউডার দিতাম। তারপর এটা সূতোয় লাগিয়ে শুকাতে দিতাম। খুব ধারালো হত সূতো। এই সূতো নিয়ে কাটাকাটি খেলতাম। তবে আমার সূতোয় মজন থাকলেও আমি কাটাকাটি খেলতে চাইতাম না। কারণ ঘুড়ির প্রতি আমার খুব মায়া ছিলো। আমি আকাশে উড়িয়েই মজা পেতাম। তবে অন্যের কেটে যাওয়া ঘুড়ির প্রতি খুব লোভ ছিলো।
আমি,সাবু,ইদু,মাসু,রফি,রমজান, উজ্জল,দোলন,সুমন আরও অনেকে আমাদের মাঠে ঘুড়ি উড়াতাম। আবার কেউ কেউ অল্প সূতোয় ঘুড়ি বেধে সারা এলাকায় দৌড়ে বেড়াত, ওটাই আনন্দ। মাঠে ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি কত যে আনন্দ করতাম ! তবে সবশেষে মাঠের পুকুরে দল বেধে গোসল করতাম ঘন্টার পর ঘন্টা, সে আনন্দের কোনো তুলনা নেই।

আমি পলিথিন দিয়ে ঘুড়ি তৈরী করতাম। এই ঘুড়ি বেশী টেকসই তাই এইটা বানাতাম। আমি ভাবতাম রঙিন কাগজে এক টাকার তৈরী ওই ঘুড়ি সহজে ছিঁড়ে যায়। যদি এমন কাগজ হত, যা কখনও ছিড়বে না, তাহলে সেটা দিয়ে ঘুড়ি বানালে খুব ভালো হত। ঘুড়ি ছিলো একটা নেশা। এর অনেক কলা কৌশল রয়েছে। ঘুড়িকে বিশেষ কায়দায় বাক খাওয়ানো যায়, এক স্থান থেকে আরেক স্থানে আনা যায়। আবার পাক খাওয়ানো যায়। কাটাকাটি খেলার সময় এসব করা হয়।

এলাকার বিখ্যাত কাটাকাটিবীদ ছিলো আজিজুল ওরফে আইজুল চা(চাচা)। এছাড়া হাফি,মফিও খুব ভালো ছিলো এই বিষয়ে। ওরা রেল লাইনের উপরে গিয়ে ঘুড়ি কাটাকাটি খেলত। আমাদের উপর পারিবারিক নিষেধাজ্ঞা ছিলো রেললাইনের ওদিকে পর্যন্ত যাওয়ার ক্ষেত্রে, তাই আমরা সর্বোচ্চ নদীর ধার পর্যন্ত যেতাম। তবে বাজারের দিকে না গেলেও পায়রাডাঙ্গা, কুটিপাড়া পর্যন্ত চলে যেতাম, তাতে তেমন সমস্যা ছিলো না। কিন্তু বাজারের দিকে যাওয়া নিষেধ ছিলো। শুনতাম আইজুল চা’র সাথে অন্যরা কাটাকাটি খেলতে ভয় পেত। তবে তার ঘুড়িও কেটে যেত অনেক সময়। অনেক সময় অঅমরা নদীতে গোসলের সময়ও ঘুড়ি ধরেছি। কখনও সূতো করে ঘুড়ি উড়তে থাকা অবস্থায় ডাঙ্গায় তুলে ফেলতাম।

এখনকার বাচ্চারা এসব সাধারণ বিষয়ে মজা পায়না। এদের চিন্তার জগত পাল্টে গেছে। এদের মজার মাত্রাও তেমন মজাদার না। আমরা খুবই সামান্য কারনে মজা করতে পারতাম। সেই ঝরঝরে সুন্দর দিনগুলো এখন নেই। ৫০ পয়সা ১ টাকা দামের ঘুড়ি আমাদেরকে যে আনন্দ দিয়েছে,তা আজ লাখ টাকায়ও পাওয়া যাবে না। সেই মন আর নেই মানুষের, কেমন যেন ফর্মালিনযুক্ত মানসিকতায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছি। সেই সহজ সরল সোনালী দিনগুলোকে মনে পড়ে। বহু কথা,বহু স্মৃতি আছে কেবল এই এক ঘুড়ি নিয়ে!
আজ আর না।…

 

ভালবাসা দিবসে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন ‘সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে ভালবাসা বিতরণ’

অপরাজিতার নিজস্ব প্রতিবেদন


ভালোবাসা দিবস, ভিন্ন আয়োজন হিসেবে ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত কাটিয়েছে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে নিবেদিত সংগঠন ‘স্কুল অব হিউম্যানিটি’।

গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি রোজ বুধবার কর্মব্যস্ত ঢাকার মোহাম্মদপুর বটতলায় ছিলো উৎসবমুখর এক পরিবেশ। পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী এদিন ছিলো ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে ভালোবাসার উৎসব। তাই সুবিধা বঞ্চিত বাচ্চারা সকাল থেকেই সাজগোছ করে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।

তাদের ভাষ্যমতে, ভালোবাসা দিবসে তাদের আয়োজনে যা যা ছিল,

★চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ।

★আহারের পূর্বে কিভাবে হাত ধৌত করতে হয় তা ব্যবহারিক ভাবে শিখানো।

★সবার জন্য লাঞ্চ বক্স।

★সবাই একসঙ্গে বেলুন উড়ানো।

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়ক ফখরুল মজুমদার আমাদের আরো জানিয়েছেন যে, ‘আসলে আমরা সবসময় চেয়েছি এই শিশুদের সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসতে। সে থেকেই আমাদের সদস্যরা নিয়মিত কাজ করছে। জেনে খুশি হবেন যে, স্কুল অব হিউম্যানিটি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি এ পর্যন্ত শীতবস্ত্র বিতরণ, বন্যার্তদের সহায়তা ও ঈদ উৎসব সম্পন্ন করেছে। গত একবছর ধরে আমাদের পথচলা। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০১৮ এর জানুয়ারী থেকে।

বর্তমানে ঢাকার মোহাম্মদপুরে ক্লাস শুরু হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও ঢাকা ও ঢাকার বাহিরে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে শুরু কথার কথা ভাবছে।
শিক্ষা কার্যক্রমে দুটি প্রদক্ষেপ-

১) যারা পড়াশুনা করতে ইচ্ছুক, তাদেরকে স্পন্সর সংগ্রহের মাধ্যমে নিয়মিত পাঠদান করা।
২) যারা পড়াশুনা করবে নাহ, তাদেরকে অক্ষর জ্ঞান শিখিয়ে কর্মমুখী শিক্ষা প্রদান।

এছাড়াও স্কুল কার্যক্রম নিয়মিত চালিয়ে নিতে স্কুল অব হিউম্যানিটি ক্যাম্পাস ভিত্তিক দুই টাকা প্রকল্প শুরু করেছে। স্লোগান হলো- ‘রোজ দুই টাকা জমাই
পথ শিশুদের পাশে দাড়াই।’ ছবি এবং তথ্য সহযোগী: ফখরুল মজুমদার।

(http://oporajitabd.com)

 

‘প্রি- টিনেজার ও টিনেজার প্যারেন্টিং’ পর্ব-৩

ফাতিমা খান


বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা মানেই আমার ঘরে অন্যরকম একটা আমেজ । বাচ্চারা স্কুল থেকে ফিরলে ওদের ক্লান্ত চেহারাতেও একটা “তাইরে নাইরে না” টাইপ ভাব দেখি। আমার শত ক্লান্তির মাঝেও ওদের আনন্দ আমাকে পেয়ে বসে, বৃহস্পতিবারের সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ওদের “যা খুশী তাই কর” দিন, রুটিন-ছাড়া, বাধনহারা সময়। আমার বয়সটা ঠুস করে কমে একদম ওদের সমান সমান হয়ে দাঁড়ায়।

বাচ্চাদের মাঝে মাঝে এই ছাড় দেওয়া ওদের অনেক রিল্যাক্স আর রিফ্রেশ করে। আজকাল স্কুল কলেজের পড়াশোনার চাপ এত বেশী থাকে যে ওরা নিজস্ব সৃজনশীলতা প্রায় হারাতে বসেছে। প্রত্যেক মানুষ কোন না কোন বিশেষ গুণ নিয়েই পৃথিবীতে আসে।

এই বিশেষ গুনগুলো লালন করার জন্য একটু অবকাশ খুব দরকার যেন পরের ব্যস্ত ওয়ার্কিং ডে গুলোর জন্য ওদের দেহ ও মন-মস্তিষ্ক সতেজ হয়।

সংসার, চাকুরী, ঘর সামলে ক্লান্ত শুধু আমরাই হই না, ওরাও হয়, কিন্তু ধরন আর কারণটা ভিন্ন। একটু শিকল ছাড়া সময় আর বাবা মায়ের সান্নিধ্য পাওয়ার অপেক্ষাতেই মানসিক ভাবে ওরা ক্লান্ত থাকে, যা ওরাও প্রকাশ করে না আর আমরাও বুঝতে পারি না।

প্রায় বছর দুয়েক আগে আমেরিকায় করা একটা জরিপে দেখেছিলাম পনের বছর বয়স পর্যন্ত দৈনিক অন্তত আধা ঘন্টা মায়ের নিবিড় সান্নিধ্যে থাকা বাচ্চাগুলো মেধাবী হয়।

জীবন কতটা জটিল হলে মায়ের কাছে সন্তানের জন্য আধা ঘন্টা সময়ের দাবী করে জরিপ করা হয়েছিল তাই ভেবে কিছুটা হতাশও হয়েছিলাম।

আজ রাত নয়টায় বাসায় ফিরে দেখি আমার বড় ছেলে পপস্টিকাল স্টিক দিয়ে বাড়ি বানায়, ডুপ্লেক্স বাড়ি। আমার ছোটজন তার বাধ্য এসিস্ট্যান্ট। কোলের উপর বিশাল ওজন ওয়ালা ‘Big book of home plans’ বই নিয়ে ভাইকে গাইড করছে। আমার সারা ঘরের মেঝেতে সদ্য কিনে আনা ক্রাইলিক পেইন্টের ছড়াছড়ি। পপস্টিকাল স্টিকের বাড়ির ওয়াল পেইন্ট হচ্ছে।

আমাকে দেখেই বড়জন বলল, ” আম্মু আমাদের ফিউচার বাড়ির মডেল বানাই। ডুপ্লেক্স বাড়ি হবে আমাদের। নিচতলায় একপাশে নানাভাই নানুমণি থাকবে, আরেকপাশে দাদু। আমরা থাকব উপরে। নাইন সিটারের একটা গাড়ী থাকবে আমাদের। যেখানে যাব সবাই একসাথে যাব। ড্রাইভিং সিটে বসব আমি, পাশে নানাভাই। বাকী সবাই পেছনে।” আমার ছেলের চোখ স্বপ্নময়, মুখ হাসি হাসি।

ছোটজন আবার একটু ভাবুক। সে প্ল্যানের বাকীটা বলে ফেলল ” আর বাড়িটা হবে লেকের পাশে। একটা ওয়ালের পুরাটাই গ্লাসের উইন্ডো হবে। আর থাকবে অনেক বড় এয়ার এলার্ম। বাতাস আসবে আর এলার্ম বাজবে…আআআহহহহ ”(তার চোখ অলরেডি বন্ধ হয়ে গেছে)।

আমিও বোধ হয় হারিয়ে গিয়েছিলাম…!

আজ ওদের কান্ড দেখে নতুন কিছু প্যারেন্টিং এর আইডিয়া পেলাম।

♦ আমাদের প্রি-টিনেজার বা টিনেজার কে তাদের স্বপ্নগুলো লালন করার জন্য একটা মুক্ত ক্যাম্পাস দেয়া উচিৎ যেখানে তারা মনের সব কল্পনা আর রঙ মিশিয়ে স্বপ্ন গড়বে। এই চর্চাই একদিন তার যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব গঠনের সোপান হবে।

♦ ওরা নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত দিতে পারে অকপটে, যেগুল আমরা বড়রা সাত পাঁচ ভেবে বা ইগো সমস্যার জন্য হয়ত বলতে পারি না। পরিবারের যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় ওদের পরামর্শও নেওয়া উচিত। ওদের চিন্তার প্রসারতা ও ভালমন্দ জ্ঞান বাড়ানোর জন্যও এটা খুব ভাল উপায় হবে।(চলবে)

লেখিকা কর্মরত:আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ,জেদ্দা,সৌদি আরব।

 

ভালবাসার স্বপ্নরা অশ্রুতে লুকায়

ডা.সাকলায়েন রাসেল


ও বয়স ৩৫! বাড়ী জলঢাকা!
নীরার এই তথ্যগুলো আগেই দেখে নিলাম। পরণে শাড়ী। পরিপাটি গেট আপ। এই বয়সটাকেও আমি সন্ধিকাল বলি। কারণ এই সময়ে মেয়ে থেকে মা হয়ে যায় বেশিরভাগ মেয়ে। দেহে তাই পরিপূর্ণ নারীভাব চলে আসে। ছেলেরাও বাবা হয়। তবে তাদের পুরুষভাব আসতে কমপক্ষে চল্লিশ লাগে!

কথাটা ফানি। তবে সত্য বলে প্রমাণিত হয় অনেক সময়। মেয়েদের বয়স ত্রিশ থেকে চল্লিশ হতে কমপক্ষে ১৫ বছর লাগে!
নীরাকে অবশ্য তেমন মনে হল না। বয়স লুকাইনি সে। তবে ৩৫ এর চেয়ে বেশি বয়স্কা লাগার যথেষ্ট কারণ আছে। এই বয়সে ওর দেহে ডায়াবেটিস, হাই প্রেসারের মত হাই প্রোফাইল রোগ গুলো বাসা বেঁধেছে।

নীরাও আপন করে নিয়েছে তাদের। থাকে না তাই ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ। নিয়ন্ত্রণে আসে না প্রেসারও। না আসলে তাতে কি! পাত্তা দেয় না নীরা।

থাক না। ওতো কন্ট্রোল করে কি হবে?
রোগের কথা জানাচ্ছিল নীরা। পাশে সাথে আসা ভদ্রলোকও দুই একটা সমস্যা ধরিয়ে দিচ্ছিলেন। ভদ্রলোকের পরিচয় নেয়া হয়নি। তবে কথাবার্তায় স্বামী সুলভ ভাব স্পষ্ট।

নিশ্চিত হতে জিজ্ঞেস করে নিলাম, আপনাদের সম্পর্ক?
অবাক হলাম। কারণ লোকটি উত্তর দিতে কয়েক সেকেন্ড পজ নিলেন। অনেকটা ভাইভা বোর্ডের মত। সহজ প্রশ্ন কিন্তু টেনশনে মাথা থেকেই আউট।
হঠাৎ ‘ও হ্যা… মনে পড়েছে’!

লোকটি শুরু করলেও শেষ করলেন নীরা।

‘আমার স্বামী’। লোকটি মুচকি হাসিতে সম্মতি দিলেন। যার শাব্দিক রূপ উত্তর সঠিক হয়েছে। লোকটি হেল্পফুল। স্ত্রীর সাথে তাল মিলিয়ে নিজের মুখটাও কষ্টে মেখে রেখেছেন।

না নীরা প্রেসার বা ডায়াবেটিসের কথা বলতে আসেনি। তার শরীরে অনেক সমস্যা। ঢাকার বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েছে। কাজ হয়নি। ইন্ডিয়া গেছে। লাভ হয়নি।

কোন এক টিভিতে আমার সাক্ষাৎকার দেখেছে। খুব ভাল লেগেছে তার। তাই আসা। অনেক আশা নিয়ে। সাথে আসা ভদ্রলোক সে ভিডিও দেখালো। স্যার, অনেক আশা নিয়ে। এসেছি।

কত জায়গায় দেখালাম। কাজ হয়নি। কেউ ভাল করে বলেও না কি হয়েছে। প্রোগ্রামে আপনার কথা শুনে খুব ভাল লেগেছে। তাই আসলাম। আপনার সিরিয়াল না পেয়ে গত ৫ দিন ঢাকাতেই আছি।

নীরার ব্যথার সমস্যা। এ ব্যথা মূলত পায়ে। হাটতে গেলে ব্যথা। বসে থাকলেও ব্যথা। ব্যথা হয় ঘুমের মাঝেও। তীব্র ব্যথা না। ব্যথার চেয়ে জ্বালাপোড়া বেশি। তার চেয়েও বেশি রগে টান ধরা। জ্বালাপোড়া আছে হাতেও। পিঠেও মাঝেমধ্যে অস্বস্তি লাগে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় সকালে। অসহ্য ব্যথা। প্রতিদিন সকাল আসে তাই কান্না হয়ে। নীরা কান্নার শব্দে বাসার সবাই জেগে উঠে।

ডাক্তার দেখিয়েছে অনেক। কাজ হয়নি। ফিজিক্যাল মেডিসিন। রিউম্যাটোলজিস্ট। অর্থোপেডিক্স। ফিজিওথেরাপিস্ট। ঘুরে এসেছে চেন্নাই থেকেও।

স্বামী লোকটাকে বেশ ব্যস্ত মনে হল। এ ব্যস্ততা মোবাইল নিয়ে। ভিডিওটা বের করলেন। স্যার আপনার এই প্রোগ্রামটা ইউ টিউবে দেখেছি। তখন থেকেই ভক্ত। ভাবছি একবার হলেও আপনাকে দেখাব।
আমি কাগজপত্র চেক করলাম। কড়া কড়া ঔষধ ইতোমধ্যে খাওয়া শেষ। আমার প্রেসক্রিপশনে নতুন করে দেয়ার জন্য কিছুই রাখা হয়নি।

নীরাকে দেখলাম। সব পালস নরমাল। ডুপ্লেক্স এর সাহায্য নিলাম। না খারাপ কিছুই ধরা পড়ল না। নীরার উপসর্গ একেবারেই বে-মানান। কোন রোগের সাথে তাই মেলানো গেল না। নীরাকে পরীক্ষা করে নিজ চেয়ার এসে হেলান দিয়ে বসলাম। নীরা ও তার স্বামীর চোখে মুখে উৎকণ্ঠা! অপেক্ষায় আছে আমি কি বলি। কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা ভাঙ্গালো স্বামী।

– স্যার, কিছু বোঝা গেল? ও ভাল হবে তো?

নীরার মুখ আঁধারে ঢাকা। স্বামীর প্রশ্নে তার সায় আছে। সেও এর জবাব চায়।

আমি স্বামীর প্রশ্নের উত্তর দিলাম না। সবটুকু মনোযোগ তখন নীরার দিকে।

নীরা, ভুলে যান আমি আপনার ডাক্তার। ধরেন, আমি আপনার অতি পরিচিত কেউ একজন। গল্প করছি। জানিনা কিছুই। বুঝিনা অনেক কিছু। এমন কেউ। আমার কিছু প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিন।

-কোন কাজ কি গভীর মনোযোগ দিয়ে করতে পারেন? আই মিন কাজে কনসেন্ট্রেশন কেমন আপনার?
প্রশ্ন কমন পড়েছে। উত্তর দিতে নীরাকে চিন্তাই করতে হল না।
@না পারিনা, কোন কিছুতেই মনোযোগ নেই আমার!

-আপনার কোলাহল খারাপ লাগে? গ্যাদারিং এড়িয়ে চলেন?
@জ্বী, কোলাহল একদম সহ্য করতে পারিনা।

-গান শোনেন? টিভি দেখেন?
@না গান শোনা, টিভি দেখা, সিনেমা দেখা কোন কিছুই ভাল লাগে না আমার!

নীলার চোখে মুখে বিরক্তি রেখাটা স্পষ্ট হল। মনে হল আশেপাশে কোথাও গান বাজছে। নীরার সহ্য হচ্ছেনা।
স্বামীর দিকে তাকালাম।

-একটা মুচকি হাসির ছাপ আমার মুখে। আপনার উপর রাগ টাগ করে নাকি?
স্বামী থতমত খেল। মুখে একটা মরা মরা হাসি আঁকার চেষ্টা করল। তাকে কিছু বলতে দিলাম না। আবারো নীরার দিকে তাকালাম।

-মেজাজ কি খুব খিটমিটে থাকে?
@নীরা সাথে সাথে সায় দিল। জ্বী স্যার, খুব বেশি। সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করি। সব সময় খিটমিট করি।

-ঘুম কেমন হয়?
@নাই বললেই চলে। একটু ঘুম আসলেও গভীর ঘুম কখনোই হয়না।

নীরাকে কিছুটা বিচলিত মনে হল। কারণ যে রোগ নিয়ে এসেছে তার সাথে এসব প্রশ্ন যায় না। আমিও সময় সংক্ষিপ্ত করায় মনোযোগী হলাম। বাইরে রোগীর ভীর। একজনকে বেশি সময় দিলে বাকীদের অপেক্ষার প্রহর বেড়ে যায়।

-আচ্ছা শোনেন। দুজনকে একটু মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। ‘সোমাটোফর্ম ডিজওর্ডার’ নামে একটা রোগ আছে। এটা মনের রোগ। কিন্তু প্রকাশ পায় দেহে। অর্থাৎ মনের কিছু দ্বন্দ্ব প্রকাশিত হয় শরীরে। মনে হবে শরীর ব্যথা। এ সমস্যা। ও সমস্যা। তিনি আসলে মানসিক রোগী না। আবার অনেক বড় মানসিক সমস্যাও।

আমি সতর্ক। নীরা যাতে আবার ভেবে না বসে আমি তাকে মানসিক রোগী ভাবছি।
এমনই একটি রোগের নাম ফাইব্রোমায়ালজিয়া। সর্বাঙ্গে ব্যথা। খুব বেশি কষ্ট হয় না। আবার একেবারে সারেও না সহজে। অনেক ডাক্তার দেখিয়ে রোগীরা পরে বিরক্ত হয়ে পড়ে।
চেম্বারের আবহাওয়া ততোক্ষণে অনেকটা স্তব্ধ। গুমোট ভাব। । মনে হল এখনই ঝড় নামবে। কথা শেষ করে আনতে হবে।

-এবার সরাসরি নীরাকে প্রশ্ন করলাম, আপনার মনের মাঝে কি তীব্র কোন কষ্ট আছে?

স্বামী নিশ্চুপ। শব্দহীন নীরাও। সহসাই নীরবতা ভেঙে গেল। নীরার চোখ লাল হয়ে গেল। কন্ঠ আটকানো। ওড়না দিয়ে মুখ চেপে ধরল সে। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।

@স্যার, আমার স্বামী আসলে মারা গেছে আড়াই বছর হল। ওর ক্যান্সার হয়েছিল। শত চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারিনি। আমার একটা মেয়ে আছে। ক্লাস নাইনে পড়ে।
আজ আড়াই বছর হল। অথচ এক সেকেন্ডের জন্যও ভুলতে পারি না তাকে। সব সময় শুধু ওর কথা মনে পড়ে। উঠতে বসতে তার স্মৃতি আমাকে ঘিরে ধরে। আমি কিছুতেই তাকে ভুলতে পারি না। একবারের জন্যও না। আমার সমস্ত অস্তিত্ব ঘিরে শুধু তার স্মৃতি।

তাকালাম পাশে থাকা লোকটির দিকে। নীরা দ্রুতই কান্নার শব্দ কমিয়ে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিল।

@আমি ওকে পরে বিয়ে করি। ও খুব ভাল স্বামী।

নতুন এ পরিস্থিতির বিষয়ে আগে থেকে কিছু আঁচ করতে পারিনি। আমিও তাই বাক্যহীন। নতুন স্বামীর মুখের অভিব্যক্তি দেখতে অস্থির হলাম। অবাক নয়নে তাকিয়ে আছি তার দিকে। স্বামী অসহায় মত এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। মনে হল তার মাঝেও ঝড়। কান্নাকাটি পুরুষকে মানায় না। তাই সে সেটাকে গিলে খাওয়ার চেষ্টা করছে।

আমি সত্যিই অবাক হলাম এই লোকটিকে দেখে। এমন পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য জিজ্ঞাসা, কেমন লাগছে লোকটির?

যে নারীকে সে বিয়ে করেছে একান্ত আপন করে নিতে। সে কিনা ভালবাসার সবটুকু আঁচল পেতে রেখেছে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া প্রাক্তন স্বামীর জন্য!

লোকটি কি বিব্রত? সে কি লজ্জিত? তার স্ত্রী তার সামনেই আগের স্বামীর ভালোবাসায় ডুবে থাকার গল্প বলছে।
আমার কন্ঠই থেমে গেল। কিছু বলার শক্তি হারিয়ে ফেললাম।

নীরাকে স্বান্তনা দিয়ে বললাম, অনেক স্মৃতির অধ্যায় মিলিয়ে একটা জীবন নামক গল্প তৈরি হয়। দরকার কি সে গল্পের কোন অধ্যায় মুছে ফেলার?
আপনি অনেক হারিয়ে অনন্ত পেয়েছেন। আপনি তাই ভাগ্যবতী। স্বামী হারিয়ে বিয়ে করার গল্পটা এদেশে একেবারে সাধারণ। অসাধারণ শুধু নতুন স্বামীকে পাশে বসিয়ে হারিয়ে ফেলা স্বামীকে ভালবাসার সবটুকু অর্ঘ্য দিয়ে সাজানো।

লোকটির দিকে তাকালাম। মানুষ না। তাকে মহামানুষ মনে হল। সব শেষ। তবুও নীরার শুকনা মরুভূমিতে সবুজের চাষী সে! জীবন থেমে যায়, স্বপ্নরা গিয়ে অশ্রুতে লুকায়! অন্যের আঙিনায় দেহরা মেক আপে সাজে। মন শুধু হাতড়ে বেড়ায়। ফেলে আসা স্মৃতির দরজায়।
সব..সব কিছু একদিন স্মৃতি হয়ে যায়।
নীরারা বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকে ভালবাসারা।

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

ষষ্ঠ এশিয়ান ‘কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি’ কনফারেন্স (বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানীরা কতটা শক্তিশালী)

ষষ্ঠ এশিয়ান কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (সিবিটি) কনফারেন্স শেষ হল গত ১২ তারিখ সোমবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় (৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি) চারদিন ব্যাপী কনফারেন্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী’ সিনেট ভবনে।

‘মেন্টাল হেলথ গ্যাপ ইন এশিয়ান কান্ট্রিজ : স্কোপ অব সিবিটি’ এ প্রতিপাদ্য নিয়েই ষষ্ঠ এশিয়ান কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (সিবিটি) কনফারেন্স শুরু হয়েছিল।

৯ তারিখ শুক্রবার ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান-এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন— ঢাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক, বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সভাপতি ও কনফান্সের চেয়ারপারসন ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান প্রমুখ।

১০ই ফেব্রুয়ারি শনিবার এ সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, “দেশে এতো বেশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, শিশু-কিশোররা পর্যন্ত এত বেশি কম্পিউটার ট্যাব ব্যবহার করছে; এখান থেকে অনেক সময় তারা মানসিকভাবে অসুস্থ হতে পারে।”

১১ তারিখ রোববার ঢাবি সিনেট ভবনে সিবিটির কনফারেন্সের কর্মসূচিতে রয়েছিল— ট্রমা, সিবিটি, সাইকিয়াট্রি প্রাকটিসেসসহ সাইকোসিস, নিউরো সাইকোলজি, হেলথ সাইকোলজি, সাইকোথেরাপির বিভিন্ন , কমিউনিটিতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কাজ, কম্পিউটারাইজড সিবিটি, শিশু ও বয়ঃসন্ধিকালের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা উপস্থাপন ও সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হবে। কনফারেন্সের সেই দিনে উপস্থাপক হিসেবে কানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের গবেষকগণ তাদের অভিজ্ঞতা ও গবেষণা ফলাফল তুলে ধরবেন।

গত সোমবার অর্থাৎ ১২ ই ফেব্রুয়ারি সমাপনী দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছে বেশ আরোও কয়েকটি কর্মশালা।
যুব-সমাজকে মাদক থেকে রক্ষায় মনোবিজ্ঞানীদের করণীয় ও মাদকাসক্ত ব্যক্তির সুস্থতায় কনফারেন্সে বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। কনফারেন্সে মনোবিজ্ঞানীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ বাড়ানো এবং সহৃদয় ব্যক্তিত্ব ধারণ করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন বিশেষজ্ঞরা।

৬ষ্ঠ সিবিটি কনফারেন্সে দেশ-বিদেশের প্রায় ৯০টি গবেষণা উপস্থাপন করেন বিশেষজ্ঞরা। ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্তদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনসহ মানসিক সুস্থতার বিভিন্ন কৌশল কনফারেন্স এ অংশগ্রহণকারী বক্তব্যে উঠে আসে।

যুক্তরাজ্যের ক্লিনিক্যাল নিউরো সাইকোলজিস্ট ডেভিড এ কুইন, কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কিথ ডবসন, দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইয়াং হেউ কুন, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তিয়ান পো ওয়েই, এশিয়ান সিবিটি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ইয়ুং-হাই কুন, কানাডা প্রবাসী চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী সায়েদা নাফিসা বানু, বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সভাপতি ও কনফান্সের চেয়ারপার্সন ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার প্রমুখসহ আর অনেক বিশিষ্ট্য ব্যক্তি সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।

কনফারেন্সে দেশ-বিদেশের প্রায় ৯০টি গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করা হবে। উঠে আসবে গুরত্বপূর্ণ অজানা তথ্য। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তুলনামূলক চিত্র উঠে আসে।

এই কনফারেন্সটি আয়োজন করেছিলেন বাংলাদেশ ক্লিনিকেল সাইকোলজি সোসাইটি (বিসিপিএস), নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিট (এনপিইউ) ও এশিয়ান কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি এসোসিয়েশনের (এসিবিটিএ) সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে কনফারেন্স এর সর্বশেষ অভিব্যপ্তি প্রকাশ করেন,

“সব কটা জানালা খুলে দাও না:
আজ যেন আমাদের বিজয়েরই দিন। এই বিজয় শুধুমাত্র ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির নয়। এটি বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানের বিশ্বজয়।

গত চার দিনের কর্মযজ্ঞ এশিয়া, আমেরিকা, ইউরোপ এবং অষ্ট্রেলিয়া থেকে আসা ডেলিগেটদের কাছে প্রমান করেছে বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানীরা কতটা শক্তিশালী। গত বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা নিয়মিতভাবেই জাতীয় পর্যায়ে কনফারেন্স করে আসছি এবং সবগুলোই ভীষনভাবে সমাদৃত হয়েছে। তবে এবারের কনফারেন্সের ব্যাপারটা বেশ ভিন্ন।

চমৎকার সব ‘কী-নোট’, ওয়ার্কশপ আর সিম্পোজিয়ামে পরিপূর্ন ছিল চারটি দিন। দেশের মনোবিজ্ঞানীরা বিদেশীদের সাথে সমানতালে গবেষনা পত্র উপস্থাপন করেছে, ‘কী-নোট’ দিয়েছে, আর সিম্পোজিয়াম এবং আন্তর্জাতিক মানের ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেছে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা যখন আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষনার বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশংসা করছিল ওদের শরীরের ভঙ্গীই বলে দিচ্ছিল যে তারা বানিয়ে বলছে না।

এটি কখনোই সম্ভব হত না যদি সারা বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানীরা আমাদের সঙ্গে না থাকতেন। আট তারিখের অমন থমথমে পরিস্থিতির চাপে যদিও আমাদের ব্যাবস্থাপনায় বেশ কিছুটা নেতিবাচক ছাপ পড়েছিল, কিন্তু মনোবিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসার শক্তিতে এই ছাপ ওনাদের কারো মনেই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বাংলাদেশের নানা জায়গা থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের চকচকে চোখে যে স্বপ্নের ছোয়া দেখেছি – মনে হচ্ছিল এই স্বপ্নগুলোকে হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না।

ক্লান্তিহীন স্বেচ্ছা-সেবকের দলের দিকে যতবারই তাকিয়েছি – একগুচ্ছ হাসি ছুটে এসেছে। ঢাকা কলেজ, শেখ বোরহানউদ্দিন কলেজ, ইডেন কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরাও কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করেছে বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানের ইতিহাসের এই মাইলফলকটি অর্জনের জন্য।
এই বিজয়ে আমাদের সেনাপতি ছিল আমাদের সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষক শাহানুর হোসেন আর পদাতিক ছিল আমাদের সর্বকনিষ্ঠ ২২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা – পাশাপাশি তাদের পুর্বসুরী ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও তাদের সাথে হেটে গেছে পুরোটা পথ। ওরা প্রমান করেছে ভাল কাজের জন্য ভাল ইচ্ছা আর পরিশ্রমই যথেষ্ট আর যদি সাথে থাকে জহির ভাই আর মাহমুদ স্যারের মত নির্মোহ নেতৃত্ব তাহলে যে কোন অসম্ভবকেই সম্ভব করা যায়।

অনেক গুলো নাম নতুন করে মনে করিয়ে দিল তাদের উপস্থিতি কতটা জরুরী, অনেকগুলো নতুন নাম হৃদয়ে গাঁথা হয়ে থাকবে, আর অনেকগুলো নাম না জানা মানুষের মুখচ্ছবি মনের মধ্যে আকা হয়ে থাকবে। হয়তো কখনোই বলা হবে না তাদের ভালবাসা, তাদের অবদান কত দারুনভাবে অনুভব করছি।

মীর ফখরুজ্জামান স্যারকে দেখিনি, রোকেয়া ম্যাডাম আর আনিসুর রাহমান স্যারকে খুব কাছ থেকে জেনেছি। এ কয়েকদিন অনেক বার মনে হয়েছে তাদের কথা। আজ না হয় জানালা গুলো খোলাই থাক ওঁদের জন্যে।

দুইদিনব্যাপী কনফারেন্সে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে এটিএন বাংলা, আমাদের সময়, রেডিও স্বাধীন, জাগোনিউজ ২৪ ডটকম। ইয়ুথ এনগেজমেন্ট পার্টনার হিসেবে রয়েছে ডেইলি স্টার ইয়ুথ ফোরাম। (অপরাজিতা:http://oporajitabd.com)

 

ভালোবাসার জাদুকরী মহিমা

আজহারুল ইসলাম


বিবাহিতরা ভালো সৈনিক হতে পারে না, এই অজুহাতে ২৭০ খৃস্টাব্দের দিকে রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস তরুণ-তরুণীদের বিবাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু ধর্মযাজক ভ্যালেন্টাইন গোপনে প্রেমিক-প্রেমিকাদের উৎসাহিত ও বিয়ের ব্যবস্থা করতে থাকেন। খবর পেয়ে সম্রাট তাঁকে কারারুদ্ধ করেন। সম্রাট অবশ্য ভ্যালেন্টাইনের প্রত্যয় ও প্রেমের প্রতি অবিচল বিশ্বাসে মোহিত হয়ে শর্তসাপেক্ষে মৃত্যুদণ্ড বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। শর্ত হিসেবে তাঁকে খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ করে রোমান দেবতার প্রতি অনুরক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেন। ভ্যালেন্টাইন রাজি হননি বরং সম্রাটকেই খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের আহ্বান জানান। পরিণতিতে ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে। সেই থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপনের রেওয়াজ চালু হয়েছে।

অবশ্য, এই কাহিনী তথা ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস, একে জড়িয়ে বিশ্বব্যাপি ব্যবসা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক উপোযোগিতা নিয়ে রয়েছে ম্যালা বিতর্ক। আমরা সেদিকে যাব না। কীভাবে এলো, কারা আনলো ইত্যাদি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও যে বিষয়কে কেন্দ্র করে এই দিবস সেই ‘ভালোবাসা’ কিন্তু সার্বজনিন। স্থান, কাল, পাত্র বা জাত-গোষ্ঠীতে বিভাজন বা পার্থক্য থাকলেও ভালোবাসা উপলব্ধি বা আকাঙ্ক্ষায় কারো আগ্রহের কমতি নেই। সেই ভালোবাসা নিয়েই আজকের আলোচনা।

‘ভালোবাসা কাকে বলে?’ সম্ভবত অতি পুরাতন কিন্তু সবসময়ের আকর্ষণীয় এবং রহস্যময় প্রশ্ন। যুগে যুগে হাজারো কবি, সাহিত্যক, দার্শনিক আর অধুনাকালে বিজ্ঞান সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে। সেই চেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে কোনও সন্দেহ নেই। কোন সাধারণ বা সরল সূত্র দিয়ে ভালোবাসাকে প্রকাশ করা খুবই দুরহ। ভালোবাসার অনুভুতি অনেক বেশি ব্যাক্তি-আপেক্ষিক। এই অনুভুতির সূত্র ধরে বলা যায়, ভালোবাসা একটা আবেগ যেটা ভীষণভাবে অনুভুত হয়। যেমনটা হয়, ঘৃণার বেলায়, দুঃখের সময় অথবা রাগান্বিত হলে। তীব্র অপছন্দ থেকে ঘৃণা তৈরি হয়। আমরা অপছন্দের জিনিস বা ব্যক্তি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। সেটার কোন মঙ্গল চাই না। বরঞ্চ ধ্বংস হলেই ভালো। অন্যদিকে, ভালোবাসা হলো কাছে টানার, একত্রিত হওয়ার, বিকশিত হওয়ার আবেগ। এই আবেগ সামান্য কিছু সময় থেকে অনেক বছরব্যাপি উপলুব্ধ হতে পারে। বিজ্ঞান বলছে এগুলো আমাদের প্রাথমিক আবেগ যা সবার মাঝে থাকে। মস্তিস্কে লিম্বিক সিস্টেম নামে একগুচ্ছ ব্রেইন স্ট্রাকচার রয়েছে যা মুলত এই আবেগগুলোর জন্য দায়ী। আর আবেগগুলো দায়ী সৃষ্টি অথবা ধ্বংসে।

অন্য মানুষের অন্দরমহলে কী ঘটছে, কী চাচ্ছে সে অবচেতনে সেটা বুঝতে সাহায্য করে আমাদের আবেগ। আমরা অন্যের অনুভুতি খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারি এবং সে অনুসারে নিজের চিন্তা, অনুভুতি, অথবা কার্যক্রম সাজিয়ে ফেলি। এই বিষয়টাকে শারীরবিদরা নাম দিয়েছেন ‘লিম্বিক অনুরণন’ (Limbic Reasonace)। অবাচনিকভাবে এবং অপেক্ষাকৃত দ্রুততার সাথে পরস্পরের আবেগ অনুভুতিগুলো বিনিময় হয়ে খাপ খেয়ে যায়। এই আবেগীয় খাপ খাওয়াটাই আসলে ভালোবাসা। আর এই জন্যই বুঝি দু’জন দু’জনের সান্নিধ্য বা তাকিয়ে থাকার মধ্যে প্রেমিক-প্রেমিকা চরমভাবে পুলকিত হন। চোখ যে মনের সদর দরজা। এভাবে একটা গভীর, আন্ত-ব্যাক্তিক সম্পর্ক তৈরি হয়, অনেকটা অবচেতনে। অন্যের আবেগীয় চাহিদাগুলো বোঝার এবং সেই অনুসারে আবেগীয় প্রতি-উত্তর দেয়ার ক্ষমতার মধ্যে একটা ছান্দিক মিলন ভালোবাসার বন্ধন তৈরি করে। সেটা হতে পারে মায়ের সাথে শিশুর অথবা প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে।

ভালোবাসার ধরনের মধ্যেও ভিন্নতা থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা একটা সাধারণ সূত্র দেয়ার চেষ্টা করেছেন, যেখানে পরিপূর্ণ ভালোবাসাকে দেখা হচ্ছে চরম আবেগ, প্রতিশ্রুতি আর পারস্পরিক অন্তরঙ্গের সুষম মিশ্রণ হিসেবে। অনেকটা সমবাহু ত্রিভুজের তিন বাহুর মতো। যদি, তিনটা বাহু সমান না হয়? তাহলে, ভালোবাসা হবে তবে অসম্পূর্ণ। যেমন, শুধু অন্তরঙ্গ থাকলে সেটাকে পছন্দ বলা যায়। আবার ভালোবাসায় বিমুগ্ধদের মধ্যে শুধু তীব্র আবেগ থাকে, প্রতিশ্রুতি, অন্তরঙ্গের বালাই নেই।

একজন মানুষ ভালোবাসায় পড়লে বা ভালোবাসা পেলে কী অনুভব করে? লেখক-নির্মাতারা সুচারুভাবে সেই চিত্রায়ন করার প্রয়াস চালিয়েছেন বা যাচ্ছেন যুগ যুগ ধরে। আমরা দেখেছি, প্রেমে পড়লে মানুষকে একটু বোকা অথবা সাহসী হতে। অন্যসব চিন্তা বা কাজকর্ম ফেলে শুধু ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে। একটা অদৃশ্য কিন্তু স্পস্টত অনুমেয় ঘোরের মধ্যে থাকতে দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা ব্রেইন এর পরীক্ষা (এফএমআরআই) করে দেখেছেন এ সময় প্রেমিক-প্রেমিকার মস্তিষ্কের ভেন্ট্রাল এবং কডেট অংশ উদ্দীপ্ত হয়ে প্রচুর পরিমাণে ডোপামিন নামক এক রাসয়ায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ঘটে। অবশ্য অন্য কোনও কারণেও শরীরে ডোপামিন বৃদ্ধি পেতে পারে। যেমন, ড্রাগ। আবার এই ঘোর দীর্ঘদিন স্থায়ী হয় না। হয়তোবা, এই ঘোর রূপান্তরিত হয় সচেতনতায়, সামাজিকতায়।

পরিপূর্ণ ভালোবাসায় মগ্ন একজন মানুষের দেহ ও মন দুটোতেই ব্যপক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। সে তার ভেতরের আবেগ অনুভূতিগুলোর সাক্ষাৎ পায় অন্যের ভালোবাসার মাধ্যমে। বুঝতে পারে ‘আমার আমি’কে। নান্দনিক সৌন্দর্য তাকে যেন শীত কালে গরম চাদরের মতো মুড়িয়ে রাখে। সঙ্গত কারণেই অন্য নেতিবাচক আবেগগুলো দুর্বল হতে থাকে। রাগ, দুঃখ, ঘৃণা, ক্রোধ ব্যপকভাবে হ্রাস পায়। ফলে, নিজের প্রতি আস্থা বেড়ে যায়। নিজেকে মুল্যবান ভাবতে পারে, নিজের গুরুত্ব বুঝতে পারে। একবুক সাহস নিয়ে লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে থাকে। এতদিন শুধু অন্যদের রোল মডেল ভাবতো, এখন নিজেকেও তাদের মতো ভাবতে পারে।

পরিপূর্ণ এই ভালোবাসার জন্য উভয়ের মধ্যে সমানভাবে আবেগীয় অনুরণন (Emotional Reasonance) হওয়া আবশ্যক। তার উপস্থিতি, স্পর্শ, চোখ, ঘ্রাণ যদি আমাকে মোহিত না করে, পুলকিত না করে, তাহলে সেই ভালোবাসায় সম্পূর্ণতা আসে না। অনেককে দেখা যায়, ভালোবাসার জন্য বাজারের লিস্টের মতো বিশাল লম্বা একটা ক্রাইটেরিয়ার ফর্দ নিয়ে ঘুরে বেড়াতে। হেলদি, ওয়েলদি এন্ড ওয়াইজ হতে হবে, লাগবে অমুক, থাকতে হবে তমুক। প্রকৃত ভালোবাসায় এসবেই কী মুখ্য? এসব শর্তযুক্ত ভালোবাসায় স্বস্তি থাকে না, থাকে শংকা। যদি শর্ত পূরণ না হয়? নিজেকে না জেনে, নিজের মনের কথা না শুনে, অন্যের আবেগ না বুঝে, শুধু ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে ভালোবাসার জন্য হুরুহুরি করলে কোন লাভ হয় না। এতে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

ভালোবাসার যাদুকরী মহিমায় জড়িয়ে পড়ার সুযোগ মানুষের জন্য একটি অপরিসীম পাওয়া। বিবর্তনবাদের মতে নিজের প্রজাতি রক্ষার তাগিদেই মানুষ ভালোবাসে, প্রণয় করে। কারণ যাই-ই হোক না কেন, ভালোবাসার অকৃত্রিম স্বাদ থেকে কেউ বঞ্চিত হতে চায় না। ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসাকে নিয়ে ভালোভাবে ভাবার সুযোগ করে দিবে, সবার মনে সঞ্চার করবে প্রেম, এই প্রত্যাশা রইল।

সহকারি অধ্যাপক
এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সুত্র: মনোযোগী মন।

 

মাতৃ কথন ১

ফারিনা মাহমুদ


সন্তানকে যেমন একজন মা জন্ম দেয়, সন্তানও তেমনি একজন “মা” এর জন্ম দেয়। দুটোকেই আমার সমান আনন্দের আর সমান বিষ্ময়ের মনে হয়।

আল্লাহ !! আপনার বাচ্চা এখনো ফিডারে দুধ খায়? আমারটা তো সেই কবে থেকে মুরগির রান নিজে চিবিয়ে খায়, আর কিছুদিনের মধ্যে গরুর রানও পেরে যাবে ইনশাল্লাহ।

অথবা,
এখনো মাত্র আড়াইটা দাঁত উঠেছে ? আমার বাবুর তো আক্কেল দাঁতও উঠলো বলে।

মা মাত্রই এই কথাগুলোর সাথে কমবেশি সবাই পরিচিত। এর ফলাফল, নিজে হীনমন্যতায় ভোগা, এক বাচ্চার সাথে আরেক বাচ্চার তুলনা করে
“আমি কি ভুল করলাম”
জাতীয় মানসিক চাপের মধ্যে ডিপ ফ্রাই হওয়া ।

বাস্তব হলো, চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে:
নো টু চাইল্ড আর সেইম । একেকটা বাচ্চা একেক বয়সে একেক রকম ভাবে বড় হয়, শরীর ও মন দুই দিক থেকেই।

যেটা লক্ষ্য রাখা দরকার তা হলো, নির্দিষ্ট বয়স সীমার মধ্যে ডেভেলপমেন্ট মাইলস্টোনের কতোটা কাছাকাছি বা দুরে আপনার বাচ্চা এবং এই সংক্রান্ত সঠিক বৈজ্ঞানিক পরামর্শ আপনি সঠিক মানুষের কাছ থেকে নিচ্ছেন কিনা।

অনাবশ্যক মানুষজনের অকারণ পাকনামি কানে ঢুকলে তা কান পর্যন্তই থাকতে দিন, মাথায় ঢুকতে দেবেন না । আমি তো আমার বাচ্চাকে কোনদিন সন্ধ্যায় গোসল করাইনি অথবা আমি তো ৩ বছর বয়স পর্যন্ত খাবার ব্লেন্ড করে খাইয়েছি- এইসব থিওরি আসলে যার যার নিজের লাইফ স্টাইলের সাথে যায়।

পৃথিবীর হাজার হাজার মা বাচ্চাকে মাইনাস তাপমাত্রার মধ্যেও রাতে গোসল দিয়ে ঘুম পাড়ায় (আমি নিজেও তাই করি) অথবা ছয় মাস বয়স থেকে ফিঙ্গার ফুড দেয়া শুরু করে (আমি দিতে পারি নাই কারন আমার বাচ্চা চোক করতো এবং আমি ভয় পেতাম ওর গলায় খাবার আটকে গেলে) । কোনটাতেই মহাভারত রামায়ন অশুদ্ধ হয়ে যায় নাই।

কোনো বাচ্চাই সারাজীবন ব্লেন্ড খাবে না আবার কোনো বাচ্চাই সারাজীবন ঘড়ি ধরে দুপুর ১২ টায় গোসল করবে না ।
কাজেই – বাচ্চা বড় করার তরিকায় কোনো রাইট এন্ড রং নাই।

শুনতে হবে সবারটাই কিন্তু মানতে হবে বাস্তবে নিজের জীবনের সাথে যা ভালো খাপ খায়। ঠিক সেটায়।

 

ভালবাসা দিবসে ‘বন্ধু নির্বাচন’ (কাছে আসার গল্প)

রায়হান শরীফ


লিমা কলেজে এসেই আজ শরীফকে খুঁজছে। না,আজ শুধু নয় প্রতিদিনই তো খোঁজে। তবে আজ খোঁজার কারণটা আলাদা, অনেকটা পাগলের মত হন্যে হয়ে খুঁজছে।

সহপাঠি একজন বললো তাকে বটগাছের তলায় একা বসে থাকতে দেখেছে। হু একাই তো বসে থাকবে। তার কি অন্য কোনো বন্ধু আছে যে তার সাথে ঘুরবে?

আনমনে এসব ভাবছে, লিমা?

আসসালামু আলাইকুম..
শরীফ চমকে উঠেছে লিমাকে দেখে,,,,
অমাবস্যার রাতে যদি চাঁদ দেখত হয়তো এতটা চমকে উঠত না শরীফ। লিমাকে আজ প্রথম দেখছে তা ত নয়! লিমার আচরণ ও গায়ে পরা জামা কাপড়ের ধরণ দেখেই শরীফ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

যে মেয়ে জিন্সপ্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট ছাড়া কখনো জামা পড়েনি। তার আজ এত পরিবর্তন?

আজ লিমা অতি সাধারণ একটা জামা পড়েছে। ওড়না দিয়ে মুখের চারিপাশ ডেকে রেখেছে। তবে মুখটাই শুধু খোলা। আবার মুখে সালাম? জীবনে কখনো তার মা-বাবাকে সালাম দিয়েছে বলে শরীফের বিশ্বাস হয় না। শরীফ এতক্ষণ পাথরের মত তাকিয়েই ছিল। লিমা তার বাহুতে মৃদু আঘাত করায় তার ঘোর কাটলো।

কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
আমাকে কি নতুন দেখছিস নাকি? গত তিন বছর তো একইসাথে ক্লাস করছি কখনো চোখে চোখ রেখে কথা বলিস না
আজ কি হয়েছে?

নাহ্! কিছু না। বস। কেমন আছিস বলল, শরীফ বললো!
লিমা বলল, আমি তোর গায়ে একটু হেলান দিয়ে বসতে পারি?

অন্যদিন হলে শরীফ না বলে পাঁচ হাত দূরে সরে যেত। কিন্তু আজ কেন জানি লিমাকে দেখতেই মায়া হচ্ছে। লিমার মুখের দিকে তাকিয়ে বড্ড বেশি অসহায় লাগছে। লিমার মুখটা কেমন যেন মলিন হয়ে গেছে, মুখে কিছুই বললো না শরীফ, শুধু হ্যাঁ সুচক মাথা নেড়ে গেল!

একটু পরে শরীফ জিজ্ঞেস করলো তুই এই দুইদিন কোথায় ছিলি? তোকে দুইদিনব্যাপী ক্যাম্পসে না দেখে কালকে তোর মেসের ওই দিকে গিয়েছিলাম। তোদের মেসের দিকে তো কখনো যায়নি। আর যাবই বা কেন? ছাত্রীদের মেসেতো যাওয়া নিষেধ।

তাহু (সহপাঠি তাহমিনা) বললো তুই ঘুমাচ্ছিস, তাই চলে আসলাম।
আর তোর ফোনটাও বন্ধ। কেন ছিল?

১৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১১ টায় যে ফোন দিলি তার পর তো তোর কোন খবর নেই।
প্রতিদিন তো সকাল ৭ টা বাজতে না বাজতেই ফোন না ধরা পর্যন্ত দিতেই থাকিস। তোর জ্বালায় ফজরের পর সকালে একটু ঘুমাতে পারি না। অবশ্যই এই দুই দিন শান্তিতে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঘুমিয়েছি। তবে তোর কলকে খুব মিস করেছি! ওই দিন পার্টিতে গিয়েছিস তাই না?

=এই লিমা, আমার কথা তোর কানে যায় না!

আর রায়হান(সহপাঠি) তাকেও ওই দিনের পর এই দুই দিন দেখছি না। বলতে পারিস ও কোথায়? তুই তো বেশির ভাগ সময় ওর সাথেই থাকিস!

=কিরে কথা কস না কেন! লিমা এতক্ষণ কিছু শুনছে নাকি আবার চোখে ঘুম চলে আসছে ওর।

লিমার, রায়হানের নাম শোনা মাত্র বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে মোচড় দিয়ে উঠল। তাৎক্ষণিক শরীফের গা থেকে মাথাটা সরিয়ে নিল।

লিমার মুখটা হঠাৎ কেমন জানি ফ্যাকাসে হয়ে গেল, চাঁদের মত মুখটা কেমন অন্ধকারে চেয়ে গেল। চোখ কেমন ছল ছল করে উঠলো, এই বুঝি পানি গড়িয়ে পড়ল কিছুই বলছে না লিমা।

মনে পড়লো ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার কথা। ভালোবাসা দিবসে পার্টিতে গিয়ে ছিলো রায়হানের সাথে।

আনন্দে মেতে উঠেছিলো লিমা,রায়হান সহ হাজারো তরুণ-তরুণী, কিছু ড্রিংক্স না হলে তো পার্টিতে আবার আনন্দ মাটি।

রায়হান-লিমা পার্টি শেষে বাসায় ফিরতে বের হল।

লিমার মাথাটা কেমন যেন ধরেছে বেশ।

রায়হানকে বলতেই সে বললো, চল আমার বাসায়, তা ছাড়া এত রাতে তো তোর মেসের গেটও খুলবে না।

লিমারও মাথা ব্যাথার জন্য বেশি কিছু না বলে রায়হানের গাড়িতে সে উঠে বসল রায়হান পাশে। মাথার ব্যাথাটা এতই বেশি করছে যে, বাসায় কে আছে কি নাই তা দেখার সময়ও ছিল না লিমার।

রায়হান রুম দেখিয়ে দিয়ে অন্য রুমে যেতেই লিমা ঘুমিয়ে পড়লো। সকাল হল, লিমা তার বিবস্ত্র শরীরটা দেখে বুঝতে বাকী রইলো না ওর কাল রাতে কি ঘটে ছিল তার সাথে? কেনই বা কাল রাতে লিমার মাথা ব্যাথা করলো? সেতো এই প্রথম ড্রিংক্স নেয়নি! কত হাজার বার সে ড্রিংক্স নিয়েছে নিজেরও হিসেব নেই। কাল রাতে রায়হান যে কিছু মিশিয়ে দিয়েছে তা এখন পরিষ্কার।

লিমা রুম থেকে বেরিয়ে সামনের রুমে এসে এক মহিলার দেখতে পেল। এর আগে কখনো আসেনি তাই কাউকে চিনে না সে।

লিমা বললো, আপনি রায়হানের কে?
মহিলাটি বললো, আমি রায়হানের মা।

সকালে উঠেই কোথায় যেন গেল বললো কি যেন কাজ আছে কয়দিন পর ফিরবে বন্ধুদের সাথে গেল।

আসো নাস্তা করে নাও!!
লিমা বললো না,আমারো কাজ আছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

অন্য একদিন, এই বলেই চলে আসলো,
রুমে এসে কত যে কেঁদেছে লিমা। আর ভেবেছে বন্ধুত্বের দাম এইভাবেই দিলো রায়হান? আমার সরলতা নিয়ে খেলা করেছে রায়হান। কেন?

বিষ খেতে চেয়েছিলো লিমা, গলায় ফাঁসিও দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু পারেনি।সবসময় হাসিখুশি থাকা মেয়েগুলো তা পারে না হয়ত!

=কিরে কথা বলিসনা কেন??

শরীফের কথায় লিমার স্বরণ এলো সে শরীফের পাশে বসে আছে, না কিছুই বললোনা সে।
সে ভাবছে তার সাথে যা ঘটেছে তাকি তার “নিয়তি না পাপের ফল”?

=শরীফের দিকে না তাকিয়ে শুধু বললো, চল!! ভালো লাগছে না আজ। তোর হাতটা ধরে হাটতে পারি?

দুই জনে উঠে ক্যান্টিনের দিকে হাটতে লাগলো হাতে হাত রেখে। লিমার মনে হচ্ছে এটাই বিশ্বাসের হাত, বন্ধুত্বের হাত এটাই। ভুল করেছি, বড্ড বেশি ভুল করেছি জীবনে। বন্ধু নির্বাচনে বড় বেশি ভুল হয়ে গেছে!

যে ভুলের জন্য কোনো দিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না লিমা।

 

হলুদিয়া হাট

আখতারুজ্জামান সেলিম


সে যে আমায় খবর দিলো
আজকে অনেক ফুল ফুটেছে;
বটতলা আর বই মেলাতে
হলুদিয়া হাট বসেছে।
কুঞ্জ বনের কোকিলেরা
ব্যাকুল স্বরে ডাক দিয়াছে।
শাহাবাগের পুষ্পদামে
গাদা ফুলের দর বেড়েছে।
কিন্তু আমি ব্যস্ত অনেক
হয়নি দেখা দিনের আলো
বন্দী পাখি আপন নীড়ে
তা দিতেছে পরের ডিমে।
আমি নাহয় একাই থাকি
বসন্তের এই প্রথম দিনে;
রং এর বাহার সবার মনে
শয্যা ঢাকুক গোলাপ ফুলে।

 

অন্যরকম বসন্ত বরণ

গাজী আনোয়ার শাহ্


আমার বসন্ত আছে, কৃষ্ণচূড়া আর দক্ষিণের সমীরণও আছে।
হলুদ বা লাল পাঞ্জাবী নেই,
বাদামি রঙের হালকা প্রচ্ছদে বই আছে। যেটি স্বর্গের একটি টুকরো বলে মনে হয়।

এই পৃথিবী ভালোবাসা আর ভালো লাগার প্রাণ কেন্দ্র তখনি হবে যখন মানুষ বুঝতে শিখবে আমরা মানুষ!
আমাদের নিজস্বতা আছে, সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আছে।

আজকের হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা আমাদের ভুলিয়ে দিয়েছে আমাদের কোমলতা, হৃদয়ের অনুভব। তাই সে হারিয়ে যাওয়া সম্পদ ফিরে পেতে আমাদের একমাত্র নির্ভরযোগ্য নিবাস হওয়া চাই লাইব্রেরী।

যেখানে হাজারো লাল কৃষ্ণচূড়া, লাল গোলাপ, হাসনাহেনা, রজনীগন্ধারা রয়েছে। সে গোলাপের নাম বই”।

বই” যে ফুল কখনো তার সৌরভ হারায় না,
লাইব্রেরী ঐ বসন্ত যেখানে শীতের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত।
এখানে সুরের মোহনায় হরিয়ে যাওয়া যায়।
বসন্ত তার রাজসম্মান এখানেই পাবে।

হীরাতে যেমন কোন খাদ থাকে না, তেমনি এই বসন্তে কোন খাদ নেই। ভালোবাসার অতিশয্যটা এখানেই যৌবন পায়।
সব বিষণ্নতাকে অবাঞ্ছিত করে বসন্তের সুখ দেয় পাঠক মনে।
এটি আমি নির্বিবাদে মেনে নেই।
এটি একটি গোলাপী স্বপ্ন।

জীবনের বিক্ষুদ্ধ ঢেউগুলোর আঘাতে একেবারে অবিচলিত হওয়া মানুষটি যখন পাশে কাউকে পায় না একটি উষ্ণ প্রণয়ের অনুভূতি দিবে বলে,
তখন তাকে আমি চির বসন্ত গ্রন্থাগারে আমন্ত্রণ জানাবো।
তার রুদ্ধ দরজাটা সহসা খুলে যাবে। বেশভূষায় জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসবে।

আজ ফুসকার দোকান বা রিক্সায় রাইডিং হবে না,
হবে সব দিনকার মত রিডিং।
বসন্তকে আমি,
আমি বসন্তকে আলিঙ্গন করে নিয়েছি সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে।

জীবন হোক সুন্দর সুশোভিত মনোহর, মনরোমা।
ভালো আর সুন্দরের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ুক দক্ষীণা সমিরণে।
প্রতিটি দিন যেন রাঙ্গা থাকে ভালোদের আনাগোনায়।

বিদায়বেলায় লিখে দিবো কেবল……
তোমার অর্থ সম্পদ, দালান-ইমারত আর ঐশ্বর্যের ঈর্ষা করি না আমি,
প্রায়শই নজরুল ফররুখ স্বপ্নে দর্শন দেয় আমায় জানো না তুমি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,
আরবি বিভাগ,
৪র্থ বর্ষ

 

ভলান্টিয়ারের চোখে ACBTC কনফারেন্স…

সুমাইয়া তাসনিম


এই শহরে কাকডাকা ভোর আসে কিনা তাও জানার সময় নেই, এমন ছিল ক’টা দিন। কেমন যেন চাপ অনুভব করি ভেতরে.. এর্লাম বাজার আগে ঘুম ভেঙ্গে যায়। যন্ত্রের মত উঠে গিয়ে সময় গুনে ফ্রেশ হয়ে রেডি হওয়া আর বেরিয়ে পড়ার জীবন। ভীষণ জ্যামে নাকাল হতে ভাল্লাগেনা আর। মিরপুরে এই জ্যামের মহামারী লেগে থাকবে অনন্তকাল..

দীর্ঘ জ্যাম পেরিয়ে ছোট্ট মিটিং শেষে ফুড বুথে। এই চারদিনে কতরকম মানুষ দেখলাম। সবাই সাইকোলজির সাথে কোনো না কোনো ভাবে জড়িত। কাউকে নামে চিনি, কাউকে চেহারায়। বিখ্যাত মানুষজন যারা আছেন তারাও কিছুক্ষণের জন্য এসে ঢুঁ মেরে যান। ২য় দিন এলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তারপর দিন মোহিত কামাল, শেষদিন মেহতাব খানম। কলেজের ম্যামরা এসে বেশ খুশি। নিজেদের ডিপার্টমেন্টের মেয়েরা কাজ করছে, কিছু লাগলে এগিয়ে আসছে দেখেই তাঁরা আনন্দিত। হাসিনা ম্যামকে এগিয়ে গিয়ে কুশল জিজ্ঞাসা করতেই কাধ চাপড়ে গাল টিপে দিলেন।
ফুডবুথের কাজটা একরকম মজার আবার স্ট্রেসফুলও বটে। খাবার নিয়ে মানুষের কতরকম মন্তব্য, পছন্দ অপছন্দ.. সেই এক মজার ব্যাপার। কফি নিয়েও মানুষের মধ্যে দারুণ উত্তেজনা। কি জানি, আমার চা-কফির নেশা নেই বলেই হয়ত আমার কাছে অদ্ভুত লেগেছে। চারদিনে হাজারখানেক কফি টোকেন হাত দিয়ে গেলেও এক চুমুকের বেশি কফি আমার মুখে রুচলো না।
ফুডবুথের কাজ মানেই মাথা অলওয়েজ ঠাণ্ডা। কারণ খাবার হাতে পেতে দেরী হলেই মানুষের মাথা গরম। :/
সবার খাওয়া শেষ হলে পরে আসে আমাদের পালা। সবার ছোট বলে ঠিকই খেয়াল করে “এই পিচ্চিটার ক্ষুধা লাগছে ওরে আগে দে তাড়াতাড়ি ” ইত্যাদি বলে সিনিয়ররা জোর করে আমাকেই আগে বসিয়ে দেয় খেতে।
কাজের সুবাদে আগে পরে কতজনের সাথেই জানাশোনা হলো। গত চার বছরে সাইকোলজির ফিল্ড রিলেটেড যত মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে প্রায় সবার সাথেই দেখা হলো, কথা হলো। পরিচয় হলো নতুন অনেকের সাথেই। কথায় কথায় ধর্মেন্দ্রদা জানালেন কক্সবাজারে কাজের অভিজ্ঞতা। জানালেন কাজের ভালো সুযোগ আর ঝুঁকির কথাও। রোহিঙ্গাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণে APA টিম সেখানে যাচ্ছে আগামীকাল।
চবির বড় আপু জানালেন মন্ত্রনালয়ে কাজের অভিজ্ঞতা। বললাম, সব সময় কাউন্সেলিং করা যায়? বললেন, “যখন মুড ভালো থাকেনা তখন ত ক্লায়েন্ট ফিরিয়ে দিতেই হয়। তবে এটাও মাথায় থাকে, ক্লায়েন্টের দরকারটা জরুরী”।
কাজ করতে করতে বলছিলাম, কতজনকেই চিনি জানি অথচ নাম মনে রাখতে পারিনা বলে কথা বলা হয়না। সাকিব ভাই বললেন, “আমদের সেন্স অর্গান কয়টা?
-৫ টা।
-কোনো জিনিস মনে রাখার ক্ষেত্রে তুমি যত বেশি সংখ্যক সেন্স অর্গান ব্যবহার করবা তত বেশি বিষয়টা মনে থাকবে।

জিনিসটা বইতে পড়ে মাথায় না থাকলেও এখন মাথায় বেশ আছে।
রাহাত স্যারের কথা বলতে ভালো লাগে। চিনতে পেরেই যে কোমল হাসি হাসলেন দেখে ভালো লাগলো খুব।
শেষ দিনে এসে মোখলেস স্যার সিন্সিয়ারিটির ভূয়সী প্রশংসা করে ভাসিয়ে দিলেন আর জোবেদা ম্যাম দিলেন অনেক অনেক ধন্যবাদ। লজ্জায় এতটুকুন অবস্থা।
সেশন এ্যাটেন্ড করলাম কয়েকটাই। তবে কাজের ক্লান্তিতে খুব একটা মাথায় থাকেনি কিছু। তবে আরেকটু ঝালাই করে নিলে আশা করি অর্জন নিতান্তই কম নয়। শেষদিনে ডাঃ জাং হায়ে চই আর সাংইয়ং চইর ডে লং সেশন এ্যাটেন্ড করে স্কিমা থেরাপি অনেকটাই পরিষ্কার হওয়া গেলো। দেখলাম ট্রানজেকশনাল এ্যানালাইসিসের কিছু থিউরির সাথে অনেক সামঞ্জস্যতা। তবে এ্যাপ্রোচটা ভিন্ন। বাইদ্যাওয়ে, সাংইয়ং চই অসাধারণ বক্তা এবং অডিয়েন্সের সাথে কানেক্ট করার ক্ষমতা দারুণ। বলা বাহুল্য, তিনি অত্যন্ত সুদর্শন একজন কোরিয়ান প্রফেসর।
সাং হায়ে ক্বং এর সেল্ফ ইমেজারি কনসেপ্টটা বেশ ইউনিক মনে হলো। বাকেট লিস্টে থাকলো।

৩য় দিন যখন মালয়েশিয়ান প্রফেসর ফেরদৌস মুখতার ঘোষণা এবং একটা ডকুমেন্টারি দেখানোর মাধ্যমে নেক্সট CBT কনফারেন্সের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন, তখন হঠাৎই ভীষণ মন খারাপ হলো। এমনকি চোখেই পানি এসে গেল। কাজ করতে বিরক্তি লাগে। মনে হয় কখন শেষ হবে, কখন অবসর হবো, কিন্তু শেষ হয়ে যাবার পর মনে হচ্ছে যেন ঈদের অপেক্ষায় ছিলাম, সেই ঈদ চলে গেল। খালি খালি লাগছে ভেতরে। মনে হচ্ছে আরো কত অভিজ্ঞতা আর জ্ঞান নেওয়ার ছিল, নেওয়া হলো না..
শেষ তো হলো, এবার গালা নাইট। ৩য়দিন সন্ধ্যা থেকে আয়োজন ছিল টিএসসিতে। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে সবাই মিলে ঝাল ঝাল ফুচকা খেয়ে গিয়ে দেখি অসংখ্য ছবি টানানো হয়েছে। সবাই মহা উৎসাহে সেসব কিনে নিচ্ছে। কালচারাল নাইটে ভীষণ শব্দে গানবাজনা চলছে। সেসব সহ্য হলো না। মাঠে নেমে খালি পায়ে ফুলের পাশে হাঁটতেই বরং ভালো লাগছিলো। খাওয়া শেষে কিছু ছবি তোলাতুলি শেষে টিএসসির সামনে রুহির সাথে বসে রইলাম। রাত দশটায় শাড়ি পরে টিসসিতে বসে থাকা আর অদ্ভুত সব প্রলাপ বকার রাত আমার জীবনে আর আসবে কিনা জানিনা। জীবনটা এত ছোট…

শেষদিনে বিদায়ের পালা। রুইয়াহ জড়িয়ে ধরে বলল, ১০.২০ এর ট্রেনে চলে যাচ্ছি। আর দেখা হবে কিনা জানিনা।
আড্ডা দিতে দিতে হাঁটতে হাঁটতে শিমু হঠাৎ বলল, সুমাইয়ারে একটা হাগ দিই। তারপর জড়িয়ে ধরে বলল, ভুলটুল করলে মাফ করে দিস। আমি খুব অবাক হলাম।
তারপর হেসে ফেললাম। এই মেয়ে এমনই আউলা। পথে যেতে যেতে রুহিকে জিজ্ঞেস করলাম, আমি মানুষটা কেমন নিজের মত করে বলতো! সে বেচারি যেন লজ্জা পেলো! বললো, তুই সব সময় সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলিস। তারপর বলল, একটু মুডিও আছিস। হাহাহা..
শাহবাগের ফুল দেখতে দেখতে বাস ধরতে যাচ্ছিলাম দু’জনে। এত এত ফুল এসেছে কাল পরশুর চাহিদা মেটাতে… দেখলাম টিউলিপ ফুলের মত সাদা রঙের ফুল। এর আগে কখনো চোখে পড়েনি। অজস্র ফুলে ফুলে দোকান গুলো ভরে আছে।

ফিরতি পথে সিগনালে বসে জানালায় তাকাতেই দেখলাম একটা সাইকেল। হাল্কা গোলাপি রঙের সাইকেলের সামনের ঝুড়িতে রঙ মিলিয়ে কতগুলো গোলাপি প্লাস্টিকের ফুল। অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো দেখতে। লাগোয়া ঘড়ির দোকান পর্যন্ত দৃষ্টি প্রসারিত করতেই চোখে পড়লো ঘড়ি পছন্দ করতে থাকা গোলাপি টিশার্ট আর মাথায় গোলাপি ফুল লাগানো মেয়েটিকে। আমি সাইকেলের ছবি তুলছি দেখে আঢ়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি মনে মনে হাসলাম। কারো সাথে সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসে বৃষ্টির দিনে শহর ঘোরার চিন্তাটা বাদ দিয়ে নিজেই এমন একটা সাইকেল কিনে নিইনা কেন! আমার সাইকেলে ফুল থাকবে কিনা জানিনা, তবে একটা রঙিন উড়ন্ত বেলুন অবশ্যই বাধা থাকবে। একদিন এই শহর ছেড়ে হারিয়ে গেলে পলকা হাওয়ায় ভাসতে থাকা বেলুনটা আমায় সাহস দেবে…।

 

প্রি- টিনেজার ও টিনেজার প্যারেন্টিং; পর্ব-২

ফাতিমা খান


Stephen Covey এর লেখা ‘The 7 Habits of Highly Effective Families’ বইটা যখন পড়ি তখন তার প্রত্যেকটা কথা আমাকে যাদুর মত টানে। প্রায় ৩৮০ পাতার বইটার দু পাতা এগোই তো চার পাতা পিছিয়ে আবার পড়ি। ইচ্ছে করে পুরো বইটা এক চুমুকে গিলে ফেলি। অসাধারণ একটা বই!

নয় সন্তানের জনক এই লেখক বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে বাচ্চাদের সাথে কৌশলে “সুঅভ্যাস” গুলো গড়ে তোলার সহজ পথ বলে দিয়েছেন।

লেখকের টিপস এন্ড ট্রিক্স আসলে যে কত কাজে লাগল তা বাস্তবে দেখলাম, আমার ছেলেটাকে যখন সূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে ফজর নামাজ পড়ে স্কুল যাওয়ার অভ্যাস করালাম। যদিও শীতকালে আমার ঘুমকাতুরে ছেলেটার জন্য কাজটা খুব সহজ ছিল না। ভেবেচিন্তে জাওয়াদের সাথে একটা চুক্তি করলাম। দুটো কাজের জন্য প্রতিদিন তার জন্য দুই রিয়াল বরাদ্দ থাকবে, কিন্তু প্রতিদিন সে টাকা হাতে পাবে না। উইকেন্ডে পুরো সপ্তাহের সঞ্চয় তার হাতে আসবে সাথে থাকবে আরো ছয় রিয়াল বাড়তি। কিন্তু যদি সে দিনের টাকা দিনে নিয়ে নেয় তাহলে বাড়তি টাকাটা পাবেনা। প্রথম প্রথম কাজটা কঠিন ছিল কিন্তু এভাবে শুধু দুই সপ্তাহ…। তারপর থেকে ছেলের অভ্যাস হয়ে গেছে। ছুটির দিনেও তার ভোরবেলা গোসল আর নামাজ বাদ যায়না আলহামদুলিল্লাহ।

বোনাস হিসেবে আরেকটি ছোট অভ্যাসও কিন্তু তৈরী হয়ে গেল, তা হল টাকা “সঞ্চয়ের অভ্যাস”। প্রতিদিন তাকে দুই রিয়াল দেওয়া হলে সেদিনই সে হয়ত বিনা প্র‍য়োজনেই খরচ করে ফেলত, কিন্তু উইকেন্ডে অনেকগুলো টাকা একসাথে পাওয়ার পর আমি তাকে বলেছি ওর আর্ট বা পেইন্টিং এর জিনিসগুলো যেন সে ইচ্ছেমত কিনে নেয়। সঞ্চয়ের বা মিতব্যয়ীতার যে বীজটি আপনি এখন বুনে দিলেন তা কিন্তু থাকবে আজীবন।

প্রি-টিনেজারদের মাঝে একটু একটু করে “দায়িত্ববোধ” জাগিয়ে দেওয়া উচিত যা শুনতে বা বলতে খুব সহজ হলেও করাটা বেশ কঠিন। আমার বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আমি পয়েন্ট কালেক্ট করার সিস্টেম চালু করেছি। যেমন যেকোন একটা কাজের জন্য ১০ পয়েন্ট করে পাবে। যদি ছোট ভাইকে কোন কাজে (যেমন হোময়ার্ক করা, খাওয়া, ড্রেস আপ ইত্যাদি) সাহায্য করে তাহলে আরো ১০ পয়েন্ট যোগ হবে। সপ্তাহ শেষে পয়েন্ট সব যোগ করা হবে, অতঃপর মিনি পার্টি বা ছোট উপহার দেওয়া হবে। তাদের উদ্যমও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তবে কখনো আবার মুডের উপর ও নির্ভর করে। সব দিন একইরকম হবেনা এটাই স্বাভাবিক।

দায়িত্বের শুরুটা হয় তাদের নিজেদেরকে দিয়েই। যেমন নিজের কাপড়, জুতা, বইখাতা, টেবিল চেয়ার গোছগাছ করা থেকে শুরু করে খাবার পর নিজের প্লেট গ্লাস টা ধুয়ে জায়গামত রেখে দেওয়া। সোজা কথায় “আত্ননির্ভরশীলতা” অভ্যাস করানো। একদিনে বা একবারে সব কাজ করতে না বলে একেক দিন এক একটা কাজের ট্রেনিং দেওয়া হলে ওরা কাজে আনন্দ ও বৈচিত্র খুঁজে পাবে।

আমি অবশ্য ওদের ছোটখাট চেষ্টাগুলোর জন্য মাঝে মাঝে “সারপ্রাইজ গিফট” দেই। এতে আগ্রহ বাড়ে। চেষ্টা করছি কিন্তু এখনো পুরাপুরি ছেলেকে এই ব্যাপারে পারদর্শী করতে পারিনি।

আমরা বেশীরভাগ বাবা-মারা নিজেদের অজান্তে প্রায়ই একটা ভুল করি, যদিও আমাদের উদ্দেশ্য খারাপ না। বাচ্চাদেরকে কোন কাজে অভ্যস্থ করতে বা আরো বেশী পারদর্শী করতে তার সমবয়সী বা পাড়া পড়শীদের মধ্যে কারো “উদাহরণ দিয়ে কথা” বলি। যেমন – অমুক দেখেছ কত ভাল রেজাল্ট করেছে অথবা দেখেছ অমুক বাবা মাকে কত সাহায্য করে ইত্যাদি। আবার কখনো অন্যদের সামনেই বাচ্চাকে তার ভুলের জন্য “তিরষ্কার করি”। এ ধরনের আচরণগুলো তাদের মন মস্তিষ্কে এত গভীর ক্ষত তৈরী করে যার প্রভাব সারা জীবন থেকে যায়।

প্রত্যেকটি বাচ্চা ইউনিক, আপন গুনাগুনে অদ্বিতীয়। সবাই তারা নিজেদের বাবা মায়ের কাছে ‘ওয়ান এন্ড অনলি’ হতেই পছন্দ করে। তাই ওদের হতাশ হতে দিবেন না। রবিঠাকুরের ওই কবিতার লাইনটা মনে আছে তো ”খোকা বলেই ভালবাসি, ভাল বলেই নয়”! (চলবে)

লেখিকা কর্মরত আছেন: হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

ভালো বাবা মা হতে হলে

ফাতেমা শাহরিন


সন্তানদের লালনপালন করা অত্যন্ত কঠিন এবং একই সাথে আনন্দের কাজ। সুতরাং একথা না বললেই নয় যে, ভাল বাবা-মা হয়ে ওঠার বিষয়টি বিশাল পরিকল্পিত বিষয়।

ছোট্ট একটি ফেসবুকের স্ট্যাটাস দেখি আসুন, যা আমার ভাবনার দোর খুঁলতে সাহায্য করেছে।

“তখন আমার মেয়ে-দুটো অনেক ছোট। একটা বয়স থাকে না, বাচ্চারা কিউট করে অনেক অনেক অনেক কথা বলে। একদিন মেয়ে এসে বলে:

– বাপু তুমি কি করছো?
– লেখাপড়া করছি আম্মু।
– কেনো লেখাপড়া করছো?
– কারণ আমি ভালো বাবা হতে চাই।
– (হাসতে হাসতে) তুমি তো বাবা হয়েই গেছো।
– বাবা হতে লেখাপড়া করতে হয় না, তবে ভালো বাবা-মা হতে হলে কিছু পড়ালেখা করতে হয় আম্মু।
– ও, তুমি ভালো বাবা হতে চাও? তুমি তো ভালো বাবাই.. (মেয়ের হাসি চলতেই থাকে…)।” (শিবলী মেহদী)

অর্থাৎ সন্তানের বাবা-মা হতে হলে শিখতে হয়। পড়তে হয় ‘বই’। তা না হলে, মা-বাবা এবং বাচ্চা, উভয়ের জন্যই বিপদ। প্রথম মত, বাবা-মা একটি চলমান শিক্ষণীয় প্রক্রিয়া। সন্তান জন্মের পর আশেপাশে থেকে অনেক রকম উপদেশ আসে। আজকে সেই সব উপদেশগুল কতটুকু গ্রহণযোগ্য এবং কতটুকু ক্ষতির কারণ হতে পারে?
আসুন দেখি…

সন্তানের কান্না

সন্তান কান্নাকাটি করলে বাচ্চাকে কোলে নিতে নিষেধ করা হয়। বলা হয় কোলে নেওয়া হলে তার অভ্যাস খারাপ হয়ে যাবে। শৃঙ্খলা শেখানোর পদ্ধতি হিসেবে কান্না করতে দিতে বলা হয়। কিন্তু সবসময় এই উপদেশটি গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধারণাটি ভুল এতে বাচ্চার জেদ আর বেড়ে যায় বরং কোলে নিলে বাচ্চা দ্রুত ঠান্ডা হয়। (উপদেশ-১)

ব্যথা পেলে শাসন

বাচ্চা কোন নিষেধ কাজ যেমন-দৌড়ানো।ফলে আঘাত প্রাপ্ত হলে বাবা-মা উল্টো ধমক দিয়ে থাকেন। কখন কখন গায়ে হাত উঠান। এটা বাচ্চার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। (উপদেশ-২)

ঠাণ্ডার সময় সর্দি-কাঁশি বা জ্বর হয়

ঠান্ডার সময় শুধু নয় সব ঋতুতে সর্দি কাঁশি জ্বর হতে পারে। সব সময় বাবা-মার সচেতনতা দরকার। ঠান্ডার সময় জ্বর হবে এরূপ ধারণা ভুল। (উপদেশ -৩)

ফলের জুস বাচ্চার জন্য ভীষণ উপকারী

বাজারে বিক্রি হওয়া ফলের জুস গুলে প্রচুর সুগার থাকে। এছাড়া বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে আমসহ অন্যান্য ফলের ফ্লেভার মিশানো হয় যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। বেশি মাত্রায় জুস খেলে বাচ্চার দাঁতের ক্ষতি হয়। (উপদেশ -৪)

ভ্যাকসিন

বাচ্চাদের ভ্যাকসিন দেবার ক্ষেত্রে ভুল উপদেশ পেতে পারেন। কোন কোন মানুষের ধারণা ভ্যাকসিন ভীষণ ক্ষতিকর যা অটিজমসহ নানান প্রকারে রোগের জন্য দায়ী। এমনকি একাধিক ধারণা দিয়ে প্রমাণ করাতে চাইতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ ভুল নিশ্চিন্তে বাচ্চাকে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দিন। (উপদেশ -৫)

সহ-সম্পাদিকা(অপরাজিতা)
http://oporajitabd.com

 

প্রি- টিনেজার ও টিনেজার প্যারেন্টিং; পর্ব-১

ফাতিমা খান


চাইনিজ ব্যাম্বু ট্রি বা চীনা বাঁশ গাছের জন্মবৃত্তান্ত পড়ছিলাম। অন্যান্য হ
মত ওদেরও আলো, পানি, মাটি আর সারের প্রয়োজন হয়, দরকার হয় নিয়মিত পরিচর্যার। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল যে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বছরে শুধু ছোট্ট চারা গাছটার জন্ম ছাড়া তাদের আর কোন বাড় বৃদ্ধি দেখা যায়না। পঞ্চম বছর হঠাতই বাঁশগাছগুলো বেড়ে লম্বায় প্রায় ৮০ ফুট হয়ে যায়, সময় লাগে শুধু ছ’সপ্তাহ!
ভাবা যায়?

এবার বলি আসল রহস্যটা কোথায়?

প্রথম চারটা বছর ছোট চারাটা না বাড়লেও নিয়মিত যত্ন আর খোরাক পেয়ে মাটির নিচে একটু একটু করে তার শেকড় মজবুত হয়, আশপাশে মাটি টাকে ইতিমধ্যে শক্ত করে সে আঁকড়ে ধরতে শিখে যায়। তারপর ঐ শক্ত শেকড়ের উপর মাত্র ছয় সপ্তাহে পই পই করে বেড়ে উঠে তার ধড়।

মূল যার শক্ত তাকে ঠেকায় সাধ্যি কার!

‘এগার শেষ করে বারো’তে পা দিয়েছে আমার জাওয়াদ। আমার এই প্রি-টিনেজার ছেলেটার সাথে আচরণগত নির্দেশনার জন্য আমি প্রায়ই প্যারেন্টিং নিয়ে স্টাডি করি। যেহেতু প্যারেন্টিং আর চাইল্ড সাইকোলজি বিষয়ে আমার ফ্যাসিনেশন একটু বেশী, সময় পেলেই এই দুই বিস্ময়কর জগতে প্রতিদিন কিছুটা সময় হলেও ঘুরে আসি।

আমার দুই ছেলে শুধু আমার সন্তানই না, রীতিমত তারা আমার সাধনা। ওদের বেড়ে ওঠার সাথে সাথে আমার প্যারেন্টিং এর ব্যবহারিক জ্ঞান বাড়ছে প্রতিদিন।

টু বি অনেস্ট, আমার বড় ছেলেকে হ্যান্ডলিং করতে একটা সময় আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়ে ছিল। একে তো প্রথম বাচ্চা, আর তারপর একটু জেদী ও একরোখাও ছিল ছেলেটা। সেই ছোট্টকালে যখন লেবুগাছে লেবু দেখে বলত “লেবু গাছে শুধু লেবুই হবে কেন, তাও আবার একই কালারেরই সব ?” সেই থেকে আজ অবধি তার যাবতীয় গুগলহারা, ভুগোল ছাড়া প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে নিজেও শিখেছি অনেক কিছু।

প্যারেন্টিং, রহস্যময় বটে, ওই চাইনিজ বাঁশগাছের মতই ! যত্নটাও একটু বেশী দরকার হয়।

“টিন এজ” যদিও খুব রেডমার্কড একটা সময় কিন্তু আদতে পনের বছর পর্যন্ত বাচ্চারা কিন্তু একরকম শিশুই থাকে। এসময় বাচ্চাদের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন হয় বাবা মায়ের সাথে “বন্ধুত্বপূর্ণ” সম্পর্ক।

রিসার্চারদের মতে এই বয়সী বাচ্চারা যখন বাবা মা কে বন্ধুর মত কাছে পায় তখন তারা অন্য কোন অজানা পথে পা বাড়ায় না। তাদের কথাগুলো মন দিয়ে শুধু শোনাই না বরং নিজেকে তার জায়গায় ভেবে এর ঠিকঠাক সাড়া দেয়াটা তাদের সাথে বন্ধুত্ব তৈরির অন্যতম ধাপ।

আমার ব্যক্তিগত মতামত হল সন্তানের সাথে একটা যৌথ “ইমোশনাল ব্যাংক একাউন্ট” তৈরী করে নিন, যেখানে নেতিবাচক অনুভূতির কোন অবকাশই নেই। এখানে শুধু তার ভাল গুনাগুণ গুলো মূলধন করে তার সাথে আপনার লেনদেন হবে। ভুল সবাই করে, তাকে শুধরে দেয়ার সময় ঐ ইমোশনাল একাউন্টের সুন্দর কথাগুলো দিয়েই তাকে শুধরে দিন।

সন্তান এবং বাবা-মা দুজনে মিলে কিছু ক্লিয়ার কাট ‘নিয়মনীতি’ তৈরী করুন যেগুলো আপনার সন্তানকে তার ব্যবহারিক সীমারেখা বলে দেবে।

“বড়দের কথা শুনতেই হবে” না বলে ” আচ্ছা, আমরা না হয় একজন আরেকজনের মতামতগুলো মেনে নেব” কিংবা “এখন বাইরে যাবে না” না বলে “উইকেন্ডে না হয় আমরা একসাথে যাব” জাতীয় কথাগুলো বলা যেতে পারে। আমি নিশ্চিত আজ না হয় কাল ঠিক একই ধরনের কথা মানে আপনার কথার প্রতিধ্বনি আপনি ওদের কথায় শুনতে পাবেন। এখানে আরেকটা টিপস খুব কাজে আসবে। তা হল, আপনার সন্তানের ছোটকালের বা ইদানিং কালের কোন ভাল কাজের কথা মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দিবেন। ভাল কাজে তাকে উদ্দীপিত করতে এর চেয়ে বড় টনিক আর নেই।

প্রত্যেক মানুষ ভিন্ন, তার নিজস্ব গুনে স্বকীয়। এই ‘স্বকীয়তা’ আল্লাহতায়ালার কাছ থেকেই সে সংগে করে নিয়ে আসে। জন্মলগ্ন থেকেই তাদের এই নিজস্বতা কিছু না কিছু প্রকাশ পায়।তাই আমার সন্তান আমার মতই হতে হবে বা তার ভবিষ্যৎ আমার ইচ্ছানুযায়ী তৈরি হবে এমনটা আশা না করাই ভাল। আমার সন্তান তার নিজের পছন্দ, যোগ্যতা ও মেধা অনুযায়ী যদি তার ক্যারিয়ার গড়ে তবে তা হবে অসাধারণ। আমি ডাক্তার বলেই যে আমার সন্তানকে ডাক্তার হতে হবে, এমনটা আবশ্যক নয়। তার অবশ্যই নিজের ‘ফ্রিডম_অফ_চয়েস’ আছে। এটা তার ব্যক্তিত্ব গঠনেও সহায়ক । আমার ছেলেদের ক্ষেত্রে তাদের নিজের জিনিসগুলো ওদেরকেই চয়েস করতে দেই, তবে ভালমন্দের একটা ধারণা আগেই দিয়ে দেই যেন ফাইনাল সিলেকশনে ভুল না হয়।

( চলবে)

লেখিকা: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

ঘরের সৌন্দর্য রক্ষায় কিভাবে মশা তাড়াবেন

মশা এক প্রকারের ছোট মাছি প্রজাতির পতঙ্গ। অধিকাংশ প্রজাতির স্ত্রীমশা স্তন্যপায়ী প্রাণীর রক্ত পান করে থাকে। মেরুদণ্ডী প্রাণীর, যেমন স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ, উভচর প্রাণী এবং এমনকি কিছু মাছ, শরীর থেকে রক্ত শোষণ করে হাজার রকমের প্রজাতি আছে। যদিও যেসব প্রাণীর শরীর থেকে রক্ত শোষে নেয় তা তাদের শরীরের তুলনায় খুবই অল্প, কিন্তু কিছু মশা রোগজীবাণু সংক্রামক। মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ফাইলেরিয়া, পীত জ্বর, জিকা ভাইরাস প্রভৃতি রোগ সংক্রমিত হয়ে থাকে।(উইকিপিডিয়া)

কর্পূর
মশা তাড়াবার একটা সহজ উপায় হল, কয়েক টুকরো কর্পূর আধকাপ জলে ভিজিয়ে খাটের নীচে রেখে দিন। তারপর নিশ্চিন্তে ঘুমান।

নিমপাতা
কয়লা বা কাঠ-কয়লার আগুনে নিমপাতা পড়লে যে ধোঁয়া হবে তাতে সবংশে মশা পালাবে।

নিশিন্দা গুঁড়া
প্রতিদিন নিশিন্দা গুঁড়ো ধুনোর সঙ্গে ব্যবহার করলে মশার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

দেশলাই
অনেকদিন বন্ধ থাকা বা অব্যবহৃত ঘর খুললে একটা ভ্যাপসা গন্ধ বের হয়। দু-তিনটে দেশলাই কাঠি জ্বালালে দু-তিন মিনিটের মধ্যে ঘর থেকে গন্ধ চলে যাবে।

রুমাল
বোতলের ছিপি খুব শক্ত হয়ে আটকে গেলে, একটা রুমাল গরম জলে ভিজিয়ে নিংড়ে বোতলের ছিপির নীচে জড়িয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পরে ছিপিটি আলগা হয়ে আসবে।

ভিনিগার
রাতের দিকে বেসিনের পাইপের মুখে মাঝে মাঝে আধ কাপ মত ভিনিগার ঢেলে দেবেন। সকালে দু’মগ জল ঢেলে দিলেই বেসিনের পাইপ পরিষ্কার থাকবে।

গোলাপ সার
কাজুবাদাম ব্যবহারের সময় খোসাটা ফেলে দেওয়া হয়। ঐ ফেলে দেওয়া খোসাই গোলাপ গাছের সেরা সার।

চা পাতা
চা-পাতা ফেলে না দিয়ে ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিন। এইভাবে ঐ চা’পাতা ধুনোর বদলে ব্যবহার করুন। শুকনো চা’পাতা পোড়ানো ধোঁয়ায় ঘরের সমস্ত মশা, মাছি পালিয়ে যাবে।

হলুদ আলো
ঘরের মধ্যে মশার উৎপাত কমাতে চাইলে, ঘরের বৈদ্যুতিক আলোটি হলুদ সেলোফেনে জড়িয়ে দিন। ফলে হলুদ আলো হবে। দেখবেন মশা কমে গেছে, কারণ মশা হলুদ আলো থেকে দূরে থাকতে চায়।

লবণ
বাচ্চাদের ঘরে মশা, মাছি, পিঁপড়ে হয়। যদি নুন ছিটিয়ে ঘর মোছা যায়, পিঁপড়ে মাছি ও মশাও কম হবে।

বাতিদান জ্বালান
লোডশেডিঙের সময় যদি হ্যারিকেন বা কাঁচ ঢাকা বাতিদান জ্বালান তবে তার ওপর দু-একটা ব্যবহৃত মশা মারার রিপেলেন্ট রেখে দেবেন। আলোর সঙ্গে সঙ্গে মশা তাড়ানোর কাজও হবে।

 

আপনি, তুমি, তুই, এবং আমাদের জাতিগত সৌজন্যতাবোধ

কবীর মনিরুজ্জামান


বাংলা ভাষায় ‘আপনি’, ‘তুমি’, ও ‘তুই’ এর বিস্তৃত ব্যবহার আছে। এই শব্দগুলো ইংরেজীতে এক (you-ইউ) হলেও বাংলায় আলাদা অর্থ বহন করে।

এই শব্দগুলো আমাদের ভদ্রতা ও সৌজন্যবোধ, সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা এবং পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধের পরিচয় প্রকাশ করে।

তুমি
‘তুমি’ সম্বোধন টি অনেক ক্ষেত্রেই সম্পর্কের গভীরতা, নৈকট্য ও আন্তরিকতার উপর নির্ভর করে। নতুন পরিচিত মেয়েটাকে তুমি বলার পার্মিশন চাওয়ার মাঝে অনেক রকম অর্থ বুঝানো হয়।

তুই
‘তুই’ সম্বোধন তুচ্ছার্থে কিংবা ঘনিষ্ঠতা অর্থে ব্যবহৃত হয়। সহপাঠী বন্ধুদের তুই বলতে পারার মাঝে ঘনিষ্ঠতা বা তাচ্ছিল্য প্রকাশের একটা স্টেজ অতিক্রম করা বুঝায়। কাউকে তুই-তোকারী করতে পারলে যেন আমাদের অনেক বেশী বড়ত্ব প্রকাশ হয়।

তুমি ও তুই
ক্ষেত্র বিশেষে তুমি বা তুই অনেক আন্তরিক শোনায়। মা-বাবাকে আপনি বা তুমি বলার মাঝে সম্মান ও ঘনিষ্ঠতা প্রকাশে কোন পার্থক্য হয় বলে আমার মনে হয় না। ছোট বাচ্চাকে তুমি বলার মাঝে আদর প্রকাশ পায়। সম্পর্কের ঘনিষ্টতা বা পুর্বানুমতি ছাড়া কাউকে তুমি সম্বোধন অনেক ক্ষেত্রেই বিব্রতকর হয়ে দাড়ায়।

আপনি
সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রফেসর বি চৌধুরী একবার একটা আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তা হল ‘অপরিচিতকে আপনি বলুন’। জানি না তার এই আন্দোলনের মুলে কোন ধরনের চেতনা কাজ করেছিল। তবে তার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে আমার মনে ধরেছিল। কারণ আপনি তুমির যন্ত্রণা কম বেশি আমাদের সবাইকেই সইতে হয়। আমরা অনেক সময়ই বয়সে বা পদমর্যাদায় ছোট হলেই তুমি করে সম্বোধন করার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠি।

প্রতিপক্ষের মর্যাদা মূলত কি?

পরিচয়ের শুরুতেই আমরা প্রতিপক্ষের মর্যাদা নির্ণয়ে তৎপর হয়ে পড়ি। অন্য অর্থে পরিচয়ের শুরু থেকেই আমরা একে অপরকে সম্মান করব কি করব না বা কতখানি সম্মান করব এর মাপ জোক করতে থাকি। এটাই আমাদের কালচার। আমার ধারনা আমাদের এই কালচারের মধ্যেই উত্তর নিহিত রয়েছে যে, কেন আমরা বাঙ্গালী/বাংলাদেশীরা পরস্পরকে শ্রদ্ধা করতে, ভালবাসতে বা বিশ্বাস করতে পারিনা। কারন এই শ্রেণীবিন্যাস করার প্রবণতা থেকেই আমাদের মাঝে সুপিরিয়রিটি বা ইনফেরিয়রিটি কমপ্লেক্স আমাদের মননে বাসা বেধে ফেলে।

পশ্চিমা এবং আরব কালচার
পশ্চিমা এবং আরবরা এই ‘আপনি-তুমি-তুই’র জটিলতা থেকে মুক্ত হতে পেরেছে। কিন্তু আমরা বাঙ্গালিরা পারিনি। তাদের একটাই শব্দ- ইউ (you), আমাদের অনেক। বিদেশে গেলে তো বয়সে অনেক ছোটরাও নাম ধরে ডাকে এবং তা স্বাভাবিক লাগে, তুমি শোনা তো ব্যাপারই না। কারন ওটাই ওখানকার কালচার। ওরা তো বাপকেও নাম ধরে ডাকে। ‘আপনি, তুমি, তুই’র জটিলতা না থাকায় মর্যাদা নির্ণয়েরও কোন প্রশ্ন নেই। ফলে ঐ ভাষার জাতিগুলোতে পরিচয়ের প্রথম থেকেই সবাই সমান।

আপনি, তুমি এবং তুই
ইদানিং আমাদের দেশেও নব্য ইউরোপিয়ানরা নাম ধরে ডেকে ইংলিশ ব্যবহার করে আপনি তুমির ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে চায়। ভারতীয় বাঙ্গালিরা নাকি অনায়াসে অপরিচতকেও তুমি বলে সম্বোধন করে। যেটা আমরা পারিনা। এটি আসলে আমাদের একটি অন্ত:সারশূন্য জাতিগত ইগো। হায়রে আমাদের অন্তঃসারশূন্য অহম! কাজের কাজ আমরা কিছুই পারি না, খালি অর্থহীন অহমিকা! আমাদের এই অনাহুত সামাজিক hierarchy ভেঙ্গে সাম্যতা আনার প্রথম পদক্ষেপ হল ‘আপনি, তুমি, তুই’ থেকে বেরিয়ে আসা।

কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব? আদৌ কি তা সম্ভব?

(সংগৃহিত ও সংকলিত)

 

মিম্ মি রহমান: প্রতিটা মুহুর্তেই সম্ভব ঘুরে দাঁড়ানো, যদি আমি তা চাই

ফাতেমা শাহরিন


মিম্ মি রহমান পেশায় একজন ডাক্তার পাশাপাশি লেখালেখি করছেন। এবার বইমেলায় এসেছে তার একক লেখা, সম্পাদিত এবং গ্রুপ সম্মিলিতভাবে  কয়েকটি বই। এই সাক্ষাৎকারটিতে থাকছে তার একান্ত নিজস্ব কিছু কথা, একুশে বই মেলায় প্রকাশিত ও সম্পাদিত বই সম্পর্কে অজানা অনেক কথা।

‘আনটোল্ড স্টোরি ফর অ্যা স্ট্রাগলার’ বইয়ের লেখিকা মিম্ মি রহমান সাথে আছি আমি ফাতেমা শাহরিন।

অপরাজিতা: আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন আমাদের পাঠকদের?
মিম্ মি রহমান: আমার স্কুল কলেজ ছিল ফরিদপুরে। কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ থেকে MBBS শেষ করে বারডেম থেকে CCD এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে MPH করেছি। চাকরি শুরু করি USAID এর সূর্যের হাসি হাসপাতালে আউট ডোর মেডিকেল অফিসার হিসেবে। এরপর কাজ করেছি নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতালে ইনডোর মেডিকেল অফিসার হিসেবে। লেকচারার হিসেবে কাজ করেছি ফরিদপুর ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ট্রমা সেন্টার, অপরাজেয় বাংলাতেও কাজ করার সুযোগ ঘটেছে মেডিকেল অফিসার হিসেবে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রথম INTERNATIONAL Baccalaureate বোর্ডিং স্কুলে PHIS এ আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছি।

অপরাজিতা: ডাক্তারি নিয়ে দীর্ঘদিন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন, আছেন এবং পাশাপাশি লেখালেখি। কেমন চলছে বর্তমান কাজ এবং লেখালেখি?
মিম্ মি রহমান: লেখালিখি ছোটবেলা থেকে করতাম টুকটাক। দৈনিক ইত্তেফাকের দাদাভাই রোকনুজ্জামান খানের ‘কচি কাঁচার আসরে, ভোরের আলো, জনকন্ঠ এবং প্রথম আলোর বন্ধুসভাসহ বিভিন্ন পাতায় লেখা পাঠাতাম। ছাপাও হতো। এরপর ২০১৫ থেকে অনলাইনে লেখালেখির শুরু বিভিন্ন পোর্টালে। আর এ বছর বইমেলায় আসছে আমার একক বই ‘আনটোল্ড স্টোরি ফ্রম এ স্ট্রাগলার’ সম্পাদক হিসেবে জড়িত আছি ‘হার না মানা একদল অপরাজিতার জীবনযুদ্ধ’, ডাক্তারদের সাথে সম্মেলিত বই ‘স্টেথোস্কোপ রেখে কীবোর্ডে’ এবং সাহিত্য সংক্রান্ত ফেসবুক গ্রুপ জানালা থেকে আসছে ‘জানালা’তেও একটি লেখা।

অপরাজিতা: তাহলে বোঝা যাচ্ছে আপনার লেখার হাতিখড়ি সেই শৈশব থেকেই ‘সেই সব দিনগুল কেমন কেটেছে’ আমি শৈশবের কথা বলছি? হারানো সেই দিন গুলোতে কি ফিরে যেতে ইচ্ছে করে?
মিম্ মি রহমান: দারুণ আনন্দময় এক শৈশব কাটিয়েছি। পাঁচ বোন মিলে মিশে ছোটবেলা কেটেছে প্রাণের শহর ফরিদপুরে। নাহ ফিরতে চাই না ঐ দিনগুলোতে। আমার কাছে আমার বর্তমান জীবনটা যা আমি নিজে তৈরি করেছি সেই জীবনটাই আমার প্রিয়। এই জীবনটাতেই বারবার ফিরে পেতে চাই।

অপরাজিতা: গল্প, কবিতা, উপন্যাস এই সব ক্ষেত্রে আপনার পদচারণ আছে। যে কোন একটির কথা বললে আপনি কোনটাকে বেছে নিবেন?
মিম্ মি রহমান: গল্প।

অপরাজিতা: প্রথম প্রকাশিত বই ও প্রথম বইমেলা নিয়ে ‘কিছু বলুন’?
মিম্ মি রহমান: এবারের বইমেলায় প্রথম আসছে আমার একক এবং যৌথ বইগুলো। প্রথম ছাপার অক্ষরে হাতে নিয়েছি আমার ফেসবুক গ্রুপ ‘ভালো থাকি-ভালো রাখি’ র মেয়েদের জীবনের গল্প নিয়ে আমার সম্পাদিত বই ‘হার না মানা একদল অপরাজিতার জীবনযুদ্ধ’ বইটি। গ্রুপের সবাইকে নিয়ে খুব আনন্দের সাথে মনের ভেতর ধুকধুকানি নিয়ে কাটিয়েছি দোসরা ফেব্রুয়ারি।

অপরাজিতা: এবারের বই মেলায় প্রকাশিত বইটি সম্পর্কে জানতে চাই?
মিম্ মি রহমান: একক বইটিতে যে লেখাটি যাচ্ছে তা একজন নারী চিকিৎসকের জীবনের ছোট বড় ঘটনা নিয়ে লেখা। যেখানে একদিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন এবং সিঙ্গেল মা হিসেবে জীবনে ব্যালেন্স করে চলছে ডা.মম। আমার সম্পাদিত বইটিতে যাচ্ছে ২৩ জন নারীর জীবনের সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা জীবনের গল্প। ‘স্টেথোস্কোপ রেখে কীবোর্ডে’ যে লেখাটি যাচ্ছে তাতে কর্মস্থলে একজন নারীর বিড়ম্বনা নিয়ে ছোটগল্প লেখার চেষ্টা করেছি।

অপরাজিতা: লেখার সাথে সম্পর্কিত স্মরণীয় কোন ঘটনা?
মিম্ মি রহমান: স্মরণীয় ঘটনা হচ্ছে এই লেখালেখির বদৌলতে অনলাইনে অনেক মেয়ের সাথে কথা হয় যারা আমাকে কখনো দেখেনি কিন্তু আমার লেখার ভেতর দিয়ে নিজেকে খুঁজে পায়, ভালোবাসে।

অপরাজিতা: আপনার লেখা নিয়ে আগামীর পরিকল্পনা কী?
মিম্ মি রহমান: লেখালেখি নিয়ে আপাততঃ পরিকল্পনা নিজের ভালো লাগে বলেই লিখছি। যতদিন ভালো লাগবে লিখব। আরো দায়িত্বশীল হতে চাই লেখালেখি নিয়ে। আরো অনেক বই পড়তে চাই লেখালেখির প্রস্তুতি হিসেবে।

অপরাজিতা: আপনার পছন্দ এবং অপছন্দের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চাই?
মিম্ মি রহমান: পছন্দ করি নির্জনতা, একাকীত্ব, নির্ঝঞ্ঝাট, সরল জীবন কাটাতে। বই পড়তে, গান শুনতে, মুভি দেখতে এবং আহ্ নাফের সঙ্গ।
অপছন্দ– জটিলতা এবং মিথ্যে কথা।

অপরাজিতা: তরুণদের উদ্দেশে কিছু বলুন!
মিম্ মি রহমান: হাহাহা আমি নিজেই তো এখন তরুণ। আমি কি বলব ? যখন প্রবীণ হব তখন নাহয় বলব।

অপরাজিতা: উপরের প্রশ্নগুলো ছাড়াও এমন কোনো বিষয় আছে যা আপনি বলতে চান?
মিম্ মি রহমান: একটা কথা বলতে চাই। মরে না গেলে জীবনে শেষ বলে আসলে কিছু নেই। প্রতিটা মুহুর্তেই সম্ভব ঘুরে দাঁড়ানো, যদি আমি তা চাই। নিজের প্রতি বিশ্বাস এবং ভরসা করতে শিখলে জীবন মিরাকল ঘটাতে বাধ্য।

ধন্যবাদ, অপরাজিতার সবাইকে আমার মত সামান্য মানুষের সাক্ষাৎকার নেবার জন্য। ভালো থাকবেন সবাই। ধন্যবাদ অপরাজিতাকে।

ফাতেমা শাহরিন
সহ-সম্পাদিকা(অপরাজিতা)
web:http://oporajitabd.com
facebook: https://www.facebook.com/Oporajitabd/

 

ইতিবাচক স্বীকৃতির গুরুত্ব

মল্লিকা দে


মানুষ হিসেবে আমাদের ভিতর এক ধরনের সংকীর্ণতা আছে। পারিবারিক- ভাবে চর্চার অভাব, হিংসা বা অন্য কোন কারণেই হোক, আমরা অন্যের প্রশংসা করতে কার্পণ্য করি। বরং অন্যের দুর্বলতা নিয়ে সমালোচনা করতেই বেশী পছন্দ করি।

উদাহরণ: মা-বাবা, সন্তান কোন ভাল কাজ করলে তার প্রশংসা খুব কমই করেন কিন্তু খারাপ কাজ করলে তাকে শাস্তি ঠিকই দেন সঙ্গে সঙ্গে। এক্ষেত্রে অধিকাংশ মা-বাবার ধারনা, বেশী প্রশংসা করলে সন্তান বিগড়ে যেতে পারে।

আবার অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাও তার অধঃস্তন কর্মচারীকে সহজে প্রশংসা করতে চান না। কারণ তাদের ধারনা এতে করে কর্মচারীর অহমবোধ বেড়ে যেতে পারে।

এমনকি যে মা, সারাদিন ঘরের কাজ করেন, খাবার তৈরী করেন, সন্তানদের মানুষ করার গুরু দায়িত্ব পালন করেন, তাকে ছোট্ট একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দেয়া হয় না।

আবার প্রেমের শুরুতে প্রেমিক-প্রেমিকাদের মাঝে স্বীকৃতির আদান প্রদান বা প্রশংসা করার প্রবনতা খুব বেশী থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে এগুলো আস্তে আস্তে কমে যেতে থাকে এবং একটা সময় গিয়ে একেবারেই থাকে না। আর এ থেকেই মান-অভিমান এবং ভুল বোঝাবুঝির সূত্রপাত হয়। পরিশেষে ব্রেক-আপ বা ডিভোর্স।

সাইকিয়াট্রিস্ট এরিক বার্ণ’ মানুষের ছয় ধরনের মানসিক ক্ষুধার কথা বলেছেন। এদের ভিতর ‘স্বীকৃতির ক্ষুধা’ অন্যতম। কারণ আমরা শুধুমাত্র ব্যক্তি হিসেবেই নয়, আমাদের প্রত্যেক কাজের জন্যও মনে মনে অন্যের ‘স্বীকৃতি’ আশা করি। কাজটি যত ছোটই হোক বা বড়।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, ‘স্বীকৃতি’ বলতে আসলে কি বোঝায়?
‘স্বীকৃতি’ বলতে বোঝায় কোন ব্যক্তির তার নিজের প্রতি এবং অন্য কোন ব্যক্তি তার প্রতি বা তার কোন কাজের প্রতি যে মূল্যায়ন করে তাকে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে ‘স্ট্রোক’ বলে। আর এই স্বীকৃতির আদান-প্রদান ঘটে যখন ব্যক্তি নিজেই নিজের সাথে কথা বলে অথবা অন্য ব্যক্তির সাথে কথা বলে।

‘স্বীকৃতি’ আবার কয়েক ধরনের হতে পারে,

বাচনিক-অবাচনিক,ইতিবাচক-নেতিবাচক,শর্তযুক্ত-শর্তহীন।

আমাদের সমাজে ‘নেতিবাচক স্বীকৃতির’ পরিমানই বেশি। উপরের উদাহরণগুলো থেকে এটাই বোঝা যায়। কিন্তু নেতিবাচক স্বীকৃতির তুলনায় ইতিবাচক স্বীকৃতির গুরুত্ব বেশি।

‘ইতিবাচক স্বীকৃতি’ পেলে আমাদের আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হয়, কাজ করার আগ্রহ বেড়ে যায়, মনে সন্তুষ্টি আসে।

অপরদিকে ‘নেতিবাচক স্বীকৃতি’ আমাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়, নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা তৈরী করে, কাজ করার আগ্রহ কমিয়ে দেয়, জীবন সম্পর্কে হতাশা সৃষ্টি হয়।

তবে মানুষ যেহেতু স্বীকৃতির কাঙ্গাল, তাই অনেক সময় স্বীকৃতিহীন জীবনের চেয়ে, নেতিবাচক স্বীকৃতিও ভাল। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, ‘কোন ব্যক্তির নেতিবাচক কাজের জন্যও কি ইতিবাচক স্বীকৃতি দেব?
তবে উত্তর হবে অবশ্যই ‘না’।

কিন্তু আমাদের ভিতর ইতিবাচক স্বীকৃতি দেয়ার প্রবনতা বাড়াতে হবে। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তিরই তার কাজের যথাযথ মূল্যায়ন পাওয়ার অধিকার রাখেন। এমনকি যে রিক্সাওয়ালা আপনাকে নিজের রিক্সায় বহন করে বাড়ি পৌছিয়ে দেন, তাকেও আপনি একটা ধন্যবাদ দিতে পারেন। এতে করে খুব বেশি সময় নষ্ট হবে না কিন্তু সে তার কাজের স্বীকৃতি পাবে।

মাঝে মাঝে আপনি আপনার সন্তানকেও আলিঙ্গন করতে পারেন, তার ছোট ছোট কাজের প্রশংসা করতে পারেন।

আর আপনি যদি অফিসের বস বা শিক্ষক হন, তবে আপনি আপনার কর্মচারীর বা ছাত্র-ছাত্রীর ভাল দিকগুলোর প্রশংসা করতে পারেন। এতে করে তাদের আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হবে এবং যে ছাত্র বা ছাত্রী একসময় ক্লাসে কথাই বলতো না, তারাও আগ্রহ নিয়ে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবে। শুধুমাত্র প্রশংসাই নয়, অনেক সময় আপনার ছোট্ট একটা হাসিও অন্যের কাছে স্বীকৃতি হতে পারে।

কাজেই মন খুলে অন্যকে ইতিবাচক স্বীকৃতি দিন। তাহলে আপনিও দিনশেষে ইতিবাচক স্বীকৃতির ঝুড়ি নিয়ে সন্তুষ্ট চিত্তে ঘুমোতে যেতে পারবেন। পরিবারের ভিতরেও ছোট-বড় সবাইকে যার যার কাজের স্বীকৃতি দিন। সে কাজ যত ছোটই হোক না কেন।

আর কেউ যদি আপনাকে কোন স্বীকৃতি না দেয়, তবে মনে মনে ক্ষোভ না জমিয়ে, নিজেই নিজের কাজের স্বীকৃতি দিন, নিজের প্রশংসা করুন। কারণ, অনেক সময় কেউ ঢ়াক না বাজালে, নিজের ঢ়াক নিজেই বাজাতে হয়।

উপস্থাপনায়
মল্লিকা দে
প্রভাষক
মনোবিজ্ঞান বিভাগ
আই,ইউ,বি,এ,টি বিশ্ববিদ্যালয়
উত্তরা, ঢাকা।

 

‘একটা কথাই বলতে চাই, চলো, এগিয়ে যাই!’ হাবীবাহ্ নাসরীন

ফাতেমা শাহরিন


হাবীবাহ্ নাসরীন এ প্রজন্মের অন্যতম প্রতিভাবান একজন কবি ও লেখক। তিনি পেশায় সাংবাদিক হলেও লেখালেখির ক্ষেত্রে বিরামহীন এগিয়ে চলেছেন। তার লেখার সবচেয়ে বড় জাদু হলো, ভাষার সহজ সরল ও সাবলীল উপস্থাপনা। যা তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে। এ বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে অমর একুশে বইমেলায় আসছে তার কাব্যগ্রন্থ ‘তুমি আমার শুদ্ধতম পাপ’। এর আগে ও ২০১৬ ও ২০১৭ সালে একুশে বই মেলায় তার তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে। অপরাজিতার পক্ষ থেকে আমরা এই গুণী লেখিকার মুখোমুখি হয়েছিলাম। তার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল।

অপরাজিতা: কেমন কেটেছে আপনার শৈশব? হারানো সেই দিন গুলোতে কি ফিরে যেতে ইচ্ছে করে?
হাবীবাহ্ নাসরীন: খুব ছোটবেলায় বিভাগীয় শহরে ছিলাম। সেখানে জীবন ছিল ফ্ল্যাটবন্দী। পরে আব্বুর পোস্টিংয়ের কারণে চাখারে চলে যাই। চাখার গ্রাম হলেও বেশ উন্নত ছিল। কারণ এটি শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হকের গ্রাম। না গ্রাম, না শহর- আবহের একটি পরিবেশে আমার বেড়ে ওঠা। পুকুরে সাতার কাটা, গাছ থেকে ফল পেড়ে আনা, বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো, সকালে উঠে ফুল কুড়ানো, মধ্যরাতে রাতজাগা ডাহুকের ডাক শুনে ভয়ে ভয়ে জেগে থাকা- আমার মধুময় স্মৃতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। শুধু মধুময় স্মৃতিই বলবো না, আমার লেখক হয়ে ওঠার পেছনে এর অবদান অনেক। ছেলেবেলায় ওরকম পরিবেশ না পেলে আমার লেখনীয় সত্ত্বা বিকাশিত হতে পারতো কি না কে জানে! ছোটবেলায় ফিরে যেতে চাই না। কারণ তাতে যে আগামীর স্বপ্ন লালন করে আমি এতটা পথ এসেছি তা আবার পিছিয়ে যাবে।

অপরাজিতা: লেখা লেখির শুরুটা কী ভাবে হয়েছে? এ ক্ষেত্রে আপনার পথ চলা সম্পর্কে জানতে চাই!
হাবীবাহ্ নাসরীন: লেখালেখির শুরুটা হয়েছিল একাকিত্ব থেকে। আমার ছোট ভাইয়ের জন্মের সময়টাতে আম্মু খুব অসুস্থ ছিলেন। সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকতেন। আগের সেই আদর, আবদার, আহলাদ কিছুই পেতাম না। একা একা অসহায়ের মতো ঘুরে বেড়াতাম। তখন মনে হলো এইসব নিবিড় দুঃখের কথা লিখে রাখি। লিখে লিখে দুঃখ যদি কিছুটা কমে। লিখতে গিয়ে একটা নেশার মতো হয়ে গেল। মনে হতো, রবী ঠাকুর, কাজী নজরুলের মতো আমিও লিখতে পারি না কেন! ওদের মতো লিখতে চাইতাম। বানিয়ে বানিয়ে কিছু একটা লিখতামও। কিন্তু তখন তো ছোট মানুষ ছিলাম। ছয় বছর বয়স। প্রতিদিন লিখতাম আর ওদের মতো হচ্ছে না বলে মন খারাপ করতাম। এই লিখতে না পারার ক্ষুধাই আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। ১৯৯৭ সাল থেকে লেখার শুরু। প্রথম লেখাটি প্রকাশ হয় ছোটদের পত্রিকা নামের একটি ম্যাগাজিনে। এটি ২০০৪ সালের কথা। সে বছরই ছোটদের মেলা থেকে একটি ছড়ার সংকলন প্রকাশ হয়। ছড়াগুলো লিখেছে ছোটরা নামের বইটিতে আমারও একটি ছড়া প্রকাশ হয়েছিল। পাশাপাশি আমার ছবি আর সাক্ষাৎকারও ছেপে ছিল। এরপর ২০০৮ সালে ইত্তেফাকের কচিকাঁচার আসর আয়োজিত ছড়া প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ ছড়াকার নির্বাচিত হয়েছিলাম। ২০১০ সালে বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পে তৃতীয় ব্যাচে বৃত্তি পেয়েছিলাম। তখন ঢাকায় নতুন। কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। বাংলা একাডেমির নেয়া পরীক্ষায় এগারোতম হয়েছিলাম। এর মাঝে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে লেখা ছাপা হতো। বাংলা একাডেমির কোর্স শেষে আবার কিছুদিন আড়ালে চলে গিয়েছিলাম। ২০১৬ সালে এসে মনে হলো, এবার একটি বই হতে পারে। প্রকাশ হলো আমার প্রথম বই ‘কবিতা আমার মেয়ে’। এরপর ২০১৭ সালে উপন্যাস ‘তুমি আছো, তুমি নেই’, ছোটদের গল্পের বই ‘টুম্পা ও তার বিড়ালছানা’ প্রকাশ হলো। আর এ বছর নিয়ে এসেছি কবিতার বই ‘তুমি আমার শুদ্ধতম পাপ’। এভাবেই একটু একটু করে আগাচ্ছি। লেখালেখি নিয়ে আমার বেশকিছু স্বপ্ন আছে। পূরণ করার চেষ্টা করে যাবো।

অপরাজিতা: প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত মিলে এ পর্যন্ত আপনার কতগুলি লেখা রয়েছে?
হাবীবাহ্ নাসরীন: লেখার সংখ্যা খুব বেশি নয়। প্রথমদিকের অনেক লেখাই কোথাও প্রকাশ করিনি। সেগুলো তত মানসম্পন্নও নয়। তবে আমি সেগুলোকে অস্বীকারও করি না। ওইসব কবিতা আমার কাছে অনেকটা সিঁড়ির মতো। প্রকাশ করার মতো কবিতা সম্ভবত একশোটির মতো লিখেছি। কমও হতে পারে। আর উপন্যাস তো একটি। গল্প আছে আটটি। এইতো।

অপরাজিতা: প্রথম প্রকাশিত বই ও প্রথম বই মেলা সম্পর্কে জানতে চাই।
হাবীবাহ্ নাসরীন: প্রথম প্রকাশিত একক বই ‘কবিতা আমার মেয়ে’। মূলত এই বইটির মাধ্যমেই আমি আমার পাঠকদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। প্রথম বইমেলায় যাওয়া ২০১০ সালে। তখন নিজে প্রচুর বই কিনতাম আর বন্ধুদেরকেও কিনে দিতাম।

অপরাজিতা: এবারের মেলায় প্রকাশিত বইটি সম্পর্কে জানতে চাই?
হাবীবাহ্ নাসরীন: এবারের বই মেলায় প্রকাশ হচ্ছে কবিতার বই ‘তুমি আমার শুদ্ধতম পাপ’। এতে ষাটটির মতো কবিতা রয়েছে। যার বেশির ভাগই প্রকাশিত।

অপরাজিতা: লেখার সাথে সম্পর্কিত স্মরণীয় ঘটনা?
হাবীবাহ্ নাসরীন: আমার জীবনের বেশিরভাগ ঘটনাই লেখার সাথে সম্পর্কিত। যতটা সম্মান, ভালোবাসা পেয়েছি তার প্রায় সবটাই লেখার কারণে। অনেক অচেনা মানুষ ফুল, চকোলেট, রান্না করা খাবার, নানা উপহার নিয়ে দেখা করতে আসেন এটাই আমার কাছে আশ্চার্যজনক মনে হয়। লিখতে না জানলে এমন ভালোবাসা আর কিসে পেতাম!

অপরাজিতা: আপনার লেখা নিয়ে আগামীর পরিকল্পনা কী?
হাবীবাহ্ নাসরীন: পরিকল্পনা নেই। স্বপ্ন আছে। মৃত্যুর আগে কিছু লেখা সমাপ্ত করে যেতে চাই।

অপরাজিতা: আপনার পছন্দ অপছন্দের বিষয়গুলো কী কী?
হাবীবাহ্ নাসরীন: পছন্দের বিষয় হচ্ছে সততা, ভালোবাসা। হিংসা, কৃতঘ্নতা খুব অপছন্দ।

অপরাজিতা: তরুণদের উদ্দেশে কিছু বলুন!
হাবীবাহ্ নাসরীন: আমি নিজেই তো তরুণ! একটা কথাই বলতে চাই, চলো, এগিয়ে যাই।

ফাতেমা শাহরিন
সহ-সম্পাদিকা(অপরাজিতা)
http://oporajitabd.com

 

শিশুর আঘাত লাগলে অস্থির হওয়া সমাধান নয়

ইরা রহমান


প্রায়ই দেখি অনেক বোন পোস্ট দেয় বা আশেপাশেও দেখি অনেককেই তারা বলেন বাচ্চার আঘাত লাগলে বাচ্চার বাবা খারাপ ভাবে রিঅ্যাক্ট করে। অনেককে বলতে শুনেছি বাচ্চার মায়ের গায়ে পর্যন্ত হাত তোলে। খুব খারাপ লাগে শুনলে বিষয়টি।

একটা বাচ্চার সবচেয়ে আপন হল তার ‘মা’। কোন কোন ক্ষেত্রে বাবাও বাচ্চাদের ছেড়ে চলে যায় কিন্তু মা কোনও ভাবেই ছাড়তে পারেনা। হ্যাঁ ২/১ উদাহরণ আছে মা জাতির কলঙ্ক, তাদের কথা আলাদা। ব্যতিক্রম কখনওই উদাহরন নয়, হতেও পারে না। অনেক বাবা তো এমনও আছে যারা বাচ্চাকে ত্যাগ করতে গিয়ে বলে অমন বাচ্চা আরো পয়দা করতে পারব। ছিঃ, একরাশ ধিক্কার জানাই তাদের।

এখন আসি প্রসঙ্গে। কিছু কিছু বাবা আছেন যারা বাচ্চাদের অনেক ভালোবাসেন, খুবই ভালো কথা। কিন্তু সেই হারে বাচ্চার মা কে তোয়াক্কা করেন না।

বাচ্চা তাদের আপন আর বাচ্চার মা পরের মেয়ে (??) তাদের ধারণা বাচ্চার মা সারাদিন বাসায় বসেই কাটিয়ে দেয় তাহলে বাচ্চা পড়ে যাবে কেন বা আঘাত পাবে কেন? হায়রে হাস্যকর ভাবনা। একটা বাচ্চার পিছনে একজন মায়ের যে কি পরিমাণ শ্রম যায় তা যদি এই প্রজাতি বুঝত।

তবে এখানে পুরোপুরি বাচ্চার বাবাকেও দোষ দেয়া যায় না। বাচ্চার মায়েরও কিছু আচরণগত সমস্যা আছে। বাচ্চাকে আঘাত লাগতে দেখলেই মা ভয় পেয়ে যায় আর এটা মনে করে যে এই বুঝি বাচ্চার জন্য সে বকা খেল। তার আচরণ পালটে যায়। তার আচরণে অপরাধবোধ প্রবলভাবে দেখা যায়। যার সুযোগ নেয় বাচ্চার বাবা বা অন্য কেউ।

এই অবস্থা থেকে বের হবার জন্য প্রথমে বাচ্চার মা কে শক্ত হতে হবে। সে যদি নিজে না বদলায় তাহলে পরিস্থিতি বদলাবে না। একটা বাচ্চা যে নতুন হাঁটা বা দৌড়ানো শিখছে তাকে আঘাত লাগবেই। আঘাত লাগলেই কিছু কিছু মা আছে ‘ওরে বাবারে মারে’ শুরু করে দেয়। এটা ঠিক না।

বাচ্চার আঘাত লাগলে পরিচর্যা করতে হবে ঠিকই কিন্তু আপনাকে সেই বিষয়টিকে সহজভাবে মেনে নিতে হবে। অস্থির হওয়া চলবে না। আপনি যখন আঘাত লাগাটা সহজ ভাবে নিবেন আর পরিবারকে এই বিষয়টি বুঝাতে সক্ষম হবেন, যে বাচ্চার আঘাত লাগাটা স্বাভাবিক ঘটনা তখন দেখবেন আপনাকে আর এর জন্য কথা শুনতে হবে না বা বকাও শুনতে হবেনা।

নিজেকে ভালো রাখতে হবে। অন্যকে ভালো রাখার চেয়েও নিজে ভালো থাকা বেশি জরুরী।

প্রধান শিক্ষিকা
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,বগুড়া।

 

‘ক্যান্সার প্রতিরোধ’ : কোনো উপায় আছে কি?

ডা.মারুফ রায়হান খান


‘ক্যান্সার’ এই একটি শব্দের মাঝে যে লুকানো কতো ভয়-শঙ্কা-আর্তনাদ আর হাহাকার তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানে। ব্যাপারটা খুব বেদনাদায়ক যে ইদানিং খুব ফ্রিকোয়েন্টলি আমরা প্রিয় মানুষদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সংবাদ পাচ্ছি।
American Cancer Society বলছে এ বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮ মিলিয়ন মানুষ ক্যান্সারে মারা যাবেন। আমরা সবাই জানি, প্রিভেনশান ইজ বেটার দ্যান কিওর।

এখানে সহজ ভাষায় ক্যান্সার প্রতিরোধের কিছু উপায় লেখার চেষ্টা করছি।

১। যত দ্রুত সম্ভব সিগারেট খাওয়াটা ছেড়ে দিতে হবে। এমনকি প্যাসিভ স্মোকিংও যথেষ্ট ক্ষতিকর। তাই আপনার কাছের মানুষজনদেরও সিগারেট খাওয়াটা বন্ধ করাতে হবে আপনার স্বার্থেই। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে খুব কম অঙ্গই আছে যেখানের ক্যান্সারের সাথে স্মোকিংয়ের সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশে পুরুষদের সবচেয়ে বেশি হয় ফুসফুসের ক্যান্সার। যা স্মোকিংয়ের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এছাড়াও স্মোকিং মুখ, ঠোঁট, নাক, সাইনাস, স্বরতন্ত্র, শ্বাসনালী, খাদ্যনালী, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কিডনী, মূত্রথলী, গর্ভাশয়, জরায়ুমুখ, কোলন, মলাশয়, ডিম্বাশয় ইত্যাদি ক্যান্সারেরও কারণ।

২। মদ্যপান করা যাবে না। মুখ, গলা, লিভারের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

৩। যারা বেশি স্থূল স্বাস্থ্যের অধিকারী, তাদের ওজন কমাতে হবে। স্তন, বৃহদান্ত্র, মলাশয়ের ক্যান্সারের সাথে সংশ্লিষ্ট।

৪। রোদে গেলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি ত্বকের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

৫। চর্বিযুক্ত খাবার কমিয়ে ফেলতে হবে। স্তন, অন্ত্র, মলাশয়, প্রোস্টেট গ্ল্যাণ্ডের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া।

৬। প্রচুর পরিমাণে ফ্রেশ ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে। এসবে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সারে প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

৭। নিয়মিতভাবে সারভাইকাল স্মিয়ার টেস্ট করতে হবে (জরায়ু মুখের একটা পরীক্ষা)। বাংলাদেশের নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় জরায়ুমুখের ক্যান্সারে। যাদের একের অধিক সেক্সুয়াল পার্টনার থাকে, খুব ঘনঘন বাচ্চা জন্ম দেয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে, জন্মনিরোধক পিল সেবন করে তাদের জরায়ুমুখের ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৮। প্রতিমাসে একবার স্তন পরীক্ষা করতে হবে, যেটা নিজে নিজেও করা সম্ভব। সহজ ৫ টি ধাপ অনুসরণ করে সেল্ফ ব্রেস্ট এক্সাম (BSE) করা যায় নিজে নিজে। সারা বিশ্বে প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি নারী আক্রান্ত হয় স্তন ক্যান্সারে। যাদের পরিবারে অন্য কারও স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তুলনামূলক কম বয়সে মাসিক শুরু হয় এবং বেশি বয়সে মাসিক বন্ধ হয়, যাদের বাচ্চা নেই, বেশি বয়সে প্রথম বাচ্চা নেয়, বুকের দুধ বাচ্চাকে কম পান করায়, চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খায় তাদের স্তন ক্যান্সার হবার ঝুঁকি বেশি থাকে।

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

কেন আমরা অসুখী?

অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম


” নিজে যে অবস্থায় থাকি না কেন আমি উৎফুল্ল থাকতে এবং সুখী থাকতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বদ্ধ। কেননা আমি জানি আমাদের দুঃখ- কষ্ট বা অসুখী থাকার বেশীর ভাগই নির্ধারিত হয় আমাদের নিজস্ব ” স্বভাব/ প্রবনতার” উপর – পরিস্থিতির উপর নয়।”

কথাগুলো বলেছেন আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন এর স্ত্রী মার্থার।

এটা নিঃসন্দেহে আমরা সবাই সুখী থাকতে চাই।

মানুষ হিসেবে এটা আমাদের মেনে নিতে হবে যে,

ক) জীবন হচ্ছে ছোট এবং
খ) অসুখী থাকলে আমাদের এই ছোট জীবন আরো কঠিন হয়ে পড়বে।

আমাদের গুনগত উন্নত জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমাদের স্বভাব বা প্রবনতা। এই স্বভাব গুলো আমাদের অসুখী করে কিংবা সুখী করে। আজকের টিপসে এমন কিছু স্বভাবের কথা বলবো যা আমাদের অসুখী করে। মনে রাখতে হবে ” বিষন্নতা রোগ” বা ডিপ্রেশন ও “অসুখী জীবন- যাপন” এক বিষয় নয়। বিষন্নতা হয়, ব্রেইনের জৈব-রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতার কারণে। অন্য দিকে, অসুখী বা সুখী থাকা হচ্ছে এমন মানসিক অবস্থা বা প্রবনতা/ স্বভাব- যা অর্জিত হয় ‘কিভাবে আমরা জীবন যাপন করার সিদ্ধান্ত নেই’  তার উপর নির্ভর করে। সুখের কথা বিষন্নতাকে যেমন আমরা ডায়গনসিস ও চিকিৎসা করতে পারি, অসুখী থাকাকে ও তেমনি চিকিৎসা করতে পারি।

আমাদের অসুখী করে তেমন ১২টি স্বভাবের কথা পর্যায়ক্রমে বলবো। আজ উল্লেখ করছি তেমন দুটি স্বভাবের :

যে স্বভাবগুলো আমাদের অসুখী করে অথচ যা চাইলে আমরা এড়িয়ে চলতে পারি:

১। সব সময় অভিযোগ, অনুযোগ, নালিশ করার স্বভাব ( Chronic complaining)

সুখী মানুষ অতিরিক্ত অভিযোগ, নালিশ করে না। অন্য দিকে অসুখী মানুষরা সব সময় কোন না কোন বিষয় নিয়ে অভিযোগ করতেই থাকেন।

মূল কথা হচ্ছে

সারা জীবন আমরা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে থাকবো কিন্তু সবশেষে এ পরিস্থিতিগুলো আমাদের। তা সেগুলো ন্যায্য হোক বা অন্যায্য ; কাঙ্ক্ষিত হোক বা অনাকাঙ্ক্ষিত। তাই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করুন – এসবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নালিশ করার পরিবর্তে। কেননা নিরন্তর অভিযোগ আপনাকে / আমাকে কোথাও নিয়ে যেতে পারে না।

২। নিজের প্রতি বা অন্যের প্রতি সমালোচনাপূর্ণ থাকা (being critical of self and others) 

আমরা নিজেদের সঙ্গে নিজেরা কি ধরনের কথা বলি,সংলাপ করি (self-talk), তা নির্ধারন করে আমাদের আত্ম- ভাবমূর্তি ( সেল্ফ ইমেজ)। এই আত্ম সম্মান বোধ আমাদের সুখী হওয়ার অন্যতম উপাদান এবং নিজকে নিয়ে ভালো লাগা বোধ হচ্ছে সঠিক স্বভাব ও প্রবনতা। যখন ভুল করবেন সেটি বোঝার ও মেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন এবং সম্মুখ পানে এগিয়ে যাবেন। কখনোই এ সব নিয়ে নিজের সঙ্গে, মনে মনে নেতিবাচক সংলাপ চালিয়ে যাবেন না। তদুপরি অন্যদের মধ্যে যে ভিন্নতা রয়েছে, পার্থক্য রয়েছে, সেগুলোকে শ্রদ্ধার চোখে দেখুন এবং তাদের অধিকারকে স্বীকৃতি দিন। এরচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজকে আসামীর কাঠগড়ায় দাড় না করানো।নিজকে অতিরিক্ত অভিযুক্ত করবেন না। নিজের দোষ- ক্রটি, অযোগ্যতা নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগবেন না।

বরং নিজকে ভালোবাসুন, নিজকে শ্রদ্ধা করুন, নিজকে নিঃশর্ত ভাবে গ্রহন করুন।

এ ভাবে নিজকে ও অন্যদেরকে অনাবশ্যক সমালোচনা করার স্বভাব যদি বদলাতে পারেন। কেবল তাহলেই সুখী হতে পারবেন।

ডা. তাজুল ইসলাম
অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

 

বিশ্ব হিজাব দিবস ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টার


ফেব্রুয়ারি ১ তারিখ দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ব হিজাব দিবস’। ‘Better Awareness. Greater Understanding. Peaceful World’ স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে এবার এই দিবসটি পালিত হয়েছে।

‘হিজাব’ মুসলিম নারীর ধর্মীয় বিধিবিধানের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অংশ।

২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো এই দিবস পালন করা শুরু হয় এর পর থেকে এ পর্যন্ত ১৯০টি দেশের নারীরা এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

বিশ্ব হিজাব দিবসের নেপত্যে আছেন ‘নাজমা খান’ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত । তার উদ্যোগেই এই দিবসের প্রচলন শুরু হয় ২০১৩ সালে।

মুলত বিশ্ব হিজাব দিবস পালনের মুল উদ্দেশ্য ইভেন্ট আয়োজকদের হচ্ছে, হিজাব পরিধানের অভিজ্ঞতা শেয়ারের মাধ্যমে সব ধর্ম এবং ব্যাকগ্রাউন্ড নারীদের হিজাব পড়তে উৎসাহিত করা। অ-মুসলিম এবং মুসলিম সকল নারীজাতি হিজাব পরিধান করে তার অভিজ্ঞতা অর্জন করার সুন্দর সুযোগ আছে।

চলমান পরিস্থিতিতে ধর্মীয় সম্প্রীতির ব্যাপারটিকে আরো বেগবান করার অভিপ্রায়ে যারা মুসলমান নন, তাদেরও এদিন হিজাব পরার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আল কুরআনে “হিজাব” শব্দের শাব্দিক অর্থ ‘পর্দার প্রতিনিধিত্ব’। পর্দা শব্দটি দিয়ে মুলত শালীনতা ও গোপনীয়তার প্রতীক রূপে ব্যবহৃত হয়।

ওয়ার্ল্ড হিজাব ডে অর্গানাইজেশনের এই প্রতিষ্ঠাতা বলছেন, তারা একদিন আমার মতো করে চললে বুঝতে পারবে- আমার ও তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বরং ওই একদিনের কারণেই তারা হয়তো হিজাবকে অন্য আলোকে দেখতে সক্ষম হবে।

আল জাজিরাকে প্রশ্নে তিনি আরও বলেছেন, আমি যদি মাথায় হ্যাট পড়ি, আমাকে কেউ কিছু বলতে আসছে না, টেনে চুল বাঁধলাম বা খোলা রাখলাম বা বেনী করলাম- কেউ কিছু বলতে আসছে না, তাহলে কেন হিজাব পরার জন্য কোনো মেয়েকে কিছু বলা ঠিক হবে?

দিবসটি উপলক্ষে বিশ্বের নানা প্রান্তের মুসলিম মহিলারা সামাজিক মাধ্যমে হিজাব ব্যবহারের উপকারিতা নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন।

হিজাব পরিধানের ব্যাপারে একটি কলেজের প্রভাষক আফরীন তাসলিমা (কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট) বলেছেন, সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর আদেশ মানার জন্য ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য।

বাংলাদেশ থেকে ফাতিমা মারিয়াম নামে একজন অনলাইন এক্টিভিস্ট বলেছেন, ‘আল্লাহর হুকুম তাই হিজাব করি। সুরা নুর আর সুরা আহযাবের দুটি আয়াতে উল্লেখ আছে। নারীদের পর্দার বিধান সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, এই বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ (সূরা আহজাব : ৫৩)
আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সূরা নূরে বলা হয়,
(হে নবী!) মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ছাড়া নিজেদের আবরণ প্রদর্শন না করে (সূরা নূর : ৩১)।’

সিয়েরালিয়ন থেকে হাওয়া নামে এক মহিলা লিখেছেন,
‘হিজাব’ শুধু মাথা ঢেকে রাখার কাপড় নয়। এটা পর্দা রক্ষা করতে সহায়ক। আমাদের হাতের নখ ও লিপইস্টিকের রঙ দিয়ে মূল্যায়ন করলে চলবে না।’

 

ভাষা হোক শুদ্ধ

ডা.সাকলায়েন রাসেল


বসন্ত নেমেছিল আজ আমার রুমে..নীলার আগমনে..দরজা ঠেলে ধরে মুচকি হাসি..চোখে স্নিগ্ধতা!
ঠোট নড়ে উঠল..স্পষ্ট শোনা গেল না..তবে বোঝা গেল!
ঠোটের তুলিতে লেখাটা বুঝে নিলাম-আসতে পারি?
আমার অভিব্যক্তিতেও একই প্রকাশ..মুচকি হাসিটার আকার বেড়ে গেল..হুম, আসতে পারেন!
নীলার বাসন্তি প্রবেশ..বারবার বাসন্তি বলার কারণ এই একটাই..থ্রি পিসের পুরোটাই বাসন্তি রঙের! ওড়নাটা উলটা ইউ আকারে গলা পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে রাখা ।জংলি ছাপা। চুলগুলো মোটা হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে পিছনে টেনে রাখা। চোখ কাজলে হাইলাইট করা।
নীলাকে দেখলে হঠাৎ করে মহাসুন্দরী মনে হবেনা..আমারো মনে হয়নি..সময় সেটা ডিমান্ডও করছিল না..তবে আমার এটা সহজাত অভ্যাস..চেম্বারে রোগী কিংবা রোগীর লোক ঢোকামাত্র আমি সেকেন্ডেরও কম সময়ে তার আউটলুক দেখে নেই..বোঝার চেষ্টা করি এ্যাটিচুড কেমন..সামাজিক অবস্থা কেমন..কিংবা মানসিকতা কেমন!
বেশিরভাগ সময় মিলে যায়..এই মিলে যাওয়ায় অনেক সুবিধা..আপনি দ্রুতই রোগীর সাথে একটা সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন..আত্মীক সম্পর্ক! আর চিকিৎসা মানে কাগজ কলম প্রেসক্রিপশন নয়, নয় অপারেশন টেবিলে ছুরি কাঁচির কারসাজি!
চিকিৎসা একটা প্যাকেজ! এই প্যাকেজের নায়ক রোগী, ডিরেক্টর চিকিৎসক। আর রোগীর লোক পার্শ্ব অভিনেতা। কারো পারফরমেন্স একটু খারাপ হওয়া মানেই নায়কের কষ্ট, ডিরেক্টরের ব্যর্থতা! আমি তাই ভাসকুলারের চেয়ারে বসেও সাইকিয়াট্রিস্ট হওয়ার চেষ্টা করি।
কী আছে রোগীর মনে? মানুষটাই বা কেমন? কতটুকু ধারণক্ষমতা আছে তার-আমাকে বোঝার, আমার চিকিৎসা বোঝার! চিকিৎসা একটা গাইড লাইন, এই গাইড লাইন হওয়া উচিত রোগী নামক ছাত্রের অন্তরের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী! এই ক্যাপাসিটি জানতে হলে খুব দ্রুত রোগীর অনুভুতি পড়ে নিতে হয়। যে অনুভুতি লেখা থাকে তার পোশাকে,চলনে, অভিব্যাক্তিতে, ভাষায়!

আমিও পড়ে নিলাম নীলাকে..একটা সৌন্দর্য আছে তার চোখে মুখে..খুব চেনা সৌন্দর্য! স্নিগ্ধ সুন্দর..পোশাকের পরিপাটি রুপ নজরকে আহত করতে যথেষ্ট! আমি আহত না হলেও আকৃষ্ট হলাম..মুগ্ধ হলাম নীলাতে!
নীলার চোখেও আড়ষ্টতা! টানা টানা ঐ চোখগুলোর ভাষা বোঝা গেল না! অগ্যতা শব্দের কোলে আশ্রয় নিলাম!
-আপনি নীলা?
নীলার শব্দহীন.. মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিল সে নীলা। কৈশরের আভা ছড়িয়ে পড়ল তার অভিব্যক্তিতে!
বয়সের দিকে তাকালাম, ১৯!
-কী সমস্যা নিয়ে এসেছেন!
মুখ খুলল নীলা..আমি অস্থির! স্নিগ্ধ সুন্দর এমন মানুষের দেহে কী এমন রোগ লুকিয়ে আছে! যার স্মার্টনেস অলরেডি আঁচড় কেটে মনের আংগিনায় তার কন্ঠটাই বা কেমন! প্রকাশের ভংগিমায় বা কেমন!
আমি নীরব, শান্ত স্থীর শ্রোতা হয়ে গেলাম!
‘ অ স্যার, আমার পায়ের রগগুলা ক্যামন জানি ফুইল্যা ফুইল্যা গেছে! মাঝেমধ্যে জম্মের চুলকায়!’

আমি বাকরুদ্ধ!
নীলার সব স্মার্টনেস যেন পুড়ে গেল ভাষার অনলে!
———
মেকআপ মুখের সৌন্দর্য বাড়ায়! ভাষা পুরো মানুষটার!
‘ভাষা হোক উম্মুক্ত-অভ্র’
অফটপিক-ভাষা হোক শুদ্ধ!

অথচ বেশিরভাগ শিক্ষক ও মা বাবা…শিশুকে স্বরবর্ণ ও ব্যাঞ্জনবর্ণ শেখান ভুলভাবে!
——-
আসছে
‘অফটপিক’!
এবারের গ্রন্থমেলার ৪৫১ নং স্টল, আইডিয়া প্রকাশনে!
অফটপিক-যাপিত জীবনের বাঁকে অযত্নে পড়ে থাকা অবহেলিত চিন্তার শব্দরূপ!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

কফিমগ

শুকনো পাতা


সুখের হাসি দেখতে হয় এক ঝলক
দূর থেকে,
হাতে ধোঁয়া উঠা কফির মগ ছুঁয়ে
ভালোবাসা জমে থাকে পর্বতের ওপাড়ে!

টেবিলের পাশের জানালা ধরে দৃষ্টির বহুদূরে
ফেলে আসা সময় দেখা যায়,হিম মাঘের দুপুরে,
ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় কফির রেশ
শূণ্য মগে রয়ে যায় স্মৃতির আবেশ!

#কফিমগ

 

সমান্তরাল

ফাতিমা মারিয়ম


(এক)

সাত মাস আগে বিয়ে হয়েছে শাহেদার। স্বামী রাশেদ আর শাহেদা গার্মেন্টসে এ কাজ করে। পাশাপাশি দুই রুম ভাড়া নিয়ে একই বাসায় শ্বশুর শাশুড়ি সহ থাকে। সংসারে আরো আছে দুই ননদ। দুজনই স্কুলে পড়ে। শাহেদার শ্বশুর ভ্যান এ করে সবজি বিক্রি করে। মোটামুটি সংসার ভালো চলে। বিয়ের পর যেহেতু এটা প্রথম ঈদ তাই শ্বাশুড়িসহ সবার মনে আশা শাহেদার বাপের বাড়ি থেকে এবার এই পরিবারের সবার জন্য কাপড়চোপড় আসবে!

-অ বউ তুমার বাপের বাড়ির থন কাপড় পাঠাইব কবে? তুমার মায়েরে কইবা শুধু জামা কাপড় দিলেই হইব না; ঈদের লাইগা চিনি, সেমাই আরো জা লাগে সব কিছুই দিতে অইব। নইলে সবার কাছে আমরা মুখ দেখামু ক্যামনে? তুমার মায়েরে মনে রাকতে কইবা এইটা তুমার বিয়ার পরে পরথম ঈদ।

শুধু শাশুড়িই নয় দুই ননদ, শ্বশুর, স্বামী সবার মুখেই প্রতিদিন এসব শুনতে শুনতে শাহেদার কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে! অথচ তারা একবারও ভাবছে না যে ওরা বাবা মা কিভাবে এতগুলো মানুষকে খুশি করবে? বাবা রিকশা চালায়, মা বাসাবাড়িতে ছুটা কাজ করে। শাহেদার আরও ছোট তিনটা ভাই বোন আছে। তাদেরকে নিয়ে কত কষ্ট করে চলতে হয়! শাহেদার বিয়ের পর তার আয়টাও এই পরিবারে চলে এসেছে। মায়ের কাছে এসব কথা বলতে তার মন চাইছে না।

সে একা একাই এই যন্ত্রণা বয়ে যাচ্ছে।

(দুই)

তিন ছেলের জন্য ঈদের কেনাকাটা শেষ করে বাসায় ফিরলো মিনা আর শফিক।

শফিক বলল- যাক! এবার আসল কাজটা শেষ হয়ে গেছে।

মিনা হাসিমুখে মাথা নেড়ে সায় দিল।

– মিনা, কাল তো আমি সময় দিতে পারব না, তুমি মার্কেটে গিয়ে তোমার জন্য যা লাগবে কিনে নিও।

-শুধু আমার জন্য কিনব? তুমি কিছু কিনবে না?

– আমার জন্য আর কি কিনবে? আমি শ্বশুর বাড়ির একমাত্র জামাতা তারাই তো আমাকে দিবে…হাহাহা। শ্বশুর বাড়ি থেকে কবে যে ঈদের গিফট পেয়েছিলাম মনেও নেই। বিয়ের পর দুই তিন বছর দিয়েছিল… এখন তারা তো মনে হয় ভুলেই গেছে এই সব সামাজিকতা।

মিনা পাশের রুমে গিয়ে চোখের পানি মোছে। স্কুল শিক্ষক বাবার কানে এসব কথা তোলার কোন মানেই হয়না। বাবার সংসারে তো আর ঝামেলা কম না। মা অসুস্থ, ছোট ভাই দুইটির পড়ালেখার খরচ, সংসার খরচ সব মিলিয়ে বাবা মায়ের কষ্টের কথা মনে করে সে চুপচাপ সব সময়ই শফিকের এসব কথা সহ্য করে যায়। অথচ শফিক ভালো চাকুরী করে ভালো বেতন পায়। বাচ্চাগুলো এত ছোট সেজন্য সে নিজেও কোন জব করতে পারছে না। দাঁতে দাঁত চেপে সে এসব অপমান সয়ে যায়।

(তিন)

হিমেল বাসায় এসে দেখে মৌ বেশ খুশী!

-এই শোন না! আজকে আম্মু এসে টাকা দিয়ে গেছে। চল দুই একদিনের মধ্যেই কেনাকাটা শেষ করে ফেলি। আগে আব্বুর দেয়া টাকার ঈদ শপিং শেষ করি!

– বল কি! টাকা দিয়ে গেছে? আমিতো ভাবলাম এবার শ্বশুর শাশুড়ির সাথে দেশের বাইরে গিয়ে ঈদ শপিং করব! বিয়ের পর প্রথম ঈদে সিঙ্গাপুর নিয়ে গিয়েছিল! মাত্র একবার!! এতো টাকা দিয়ে তোমার আব্বু করবে টা কি শুনি? মেয়ে আর জামাইকে একটু মনের মত কেনাকাটাও করতে দিতে পারে না?

– দেশের বাইরে যেতে এত ইচ্ছে করে? তোমার নিজের টাকায় যাও না! আমার আব্বুর আশায় থাক কেন? তোমার তো প্রচুর টাকা। এমন তো না যে তোমার নিজের কিছু নেই। লজ্জা করে না পরেরটা আশা করতে? তারা যা দিয়েছে তা যদি তোমার পছন্দ না হয় তা হলে তোমার কিছু কেনা লাগবে না! আমি আমার জন্য আর হৃদিতার জন্য কিনে নেব! যত্তসব!!!

– তুমি দেখি রেগে যাচ্ছ! আমি কোন কথাটা মিথ্যা বললাম!

-রাগব না তো কি করব? সব সময় তুমি এমন সব কথা বল! কত সহ্য হয়! তুমি এসব কথা বন্ধ না করলে আমি হৃদিতাকে নিয়ে আম্মুর কাছে চলে যাব।

-আহা! রাগ করছ কেন? আচ্ছা চল,
আগামীকাল শপিং সেরেই ফেলি।

অনলাইন এক্টিভিটিস

 

রান্নার টুকিটাকি টিপস (রকমারি

রোজকার রান্না এবং রান্নাঘরকে গোছালো রাখতে টুকিটাকি অন্যতম কিছু উপকরণ সম্পর্কে জানি। ধরুন, পেঁয়াজ মত ঝাঁঝালো একটি মসলা উপাদানটি কাঁটার সময় চোখ জ্বালা করে, চোখে পানি চলে আসে। কি করলে এ সমস্যা সমাধান হতে পারে। এরকম সাতটি বিষয় আলোকপাত করা হল:

ঝাঁঝালো পেঁয়াজ

ঝাঁঝালো এ মসলা উপাদানটি কাটার সময় চোখ জ্বালা করে, চোখে পানি চলে আসে। একারণে না কেঁদে পেঁয়াজ কাটার জন্য চুইংগাম চিবুতে থাকুন।

পিঁপড়া সমাচার

মাঝেমধ্যে ঘরে পিঁপড়া তার সদলবল নিয়ে আয়োজন পাতে। এ সময় ছোট বড় সকলকে পিঁপড়ার কামড়ে অতিষ্ঠ হতে হয়। ছোট্ট একটি কাজ করতে তা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে ঘরে ‘শসার খোসা’ ফেলে রাখুন।

ইঁদুরের যন্ত্রণা

শহরের চেয়ে গ্রামে এ সমস্যাটি বেশ প্রকট। এক্ষেত্রে সহজে ‘গোলমরিচ’ ব্যবহার করে এ সমস্যাটি থেকে সমাধান পাওয়া যায়।

আয়না কাঁচে অস্পষ্ট

নেলপালিশের জন্য ব্যবহৃত স্প্রিড ব্যবহার করে সহজে আয়নাকে ঝকঝকে করা যায়।

মাথার চুলে অথবা কাপড়ে চুইংগাম

মাথার চুলে ভুল করে চুইংগাম লেগে গেলে পমেট(মেরিল অথবা ভেসলিন) লাগিয়ে সহজে ওঠানো যায়। তাছাড়া কাপড়ে লাগলে কাপড়টিকে ফ্রীজে রেখে দিলে ঘন্টাখানেক তাহলে চুইংগাম ছেড়ে যাবে।

ডিম সিদ্ধ খোসা ছাড়ান

ডিমের খোসা ছাড়ানোর আগে যদি পানিতে লেবুর রস চিপে দেওয়া যায় তাহলে সহজে এবং সুন্দরভাবে খোসা ছাড়ানো যায়।

সাদা কাপড়ে বাড়তি উজ্জ্বলতা

সাদা কাপড় পরিষ্কার করে ধুয়ে তা আবার লেবু সহ গরম পানিতে ১০মিনিট রাখলে পানি থেকে উঠাতে দেখা যাবে উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়।

 

পিতা পুত্রের আত্মকাহিনী

গাজী আনোয়ার শাহ্


পৃথিবীতে নিজের খুশিমত আসিনি, খুশিমতো চলেও যাব না। জীবন হাত ধরে নিয়ে এসেছিল বলেই এসেছি। মৃত্যু
হাত ধরে নিয়ে চলে যাবে, তখন চলে যাব।

সব সময় বৃষ্টির ফোঁটার হাত থেকে বাঁচাত। রাতের বেলা আকাশের তারা গোণা হতো এই বটগাছের ছায়ায় বসে। হঠাৎ বটগাছটা বাতাসে মিলিয়ে যায়, মিলিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বুঝিনি, এর মর্ম কি। আজ বুঝি।

ওহ হ্যাঁ,বাবার কথা বলছিলাম আর কি।

“বাবা”এই চরিত্রটা একটু অদ্ভুত। কখনো হয়ত খুব কাছ থেকে আপনি তাকে পাবেন না। তবে দুরে গেলেই হয়ত বুঝতে পারবেন বাবা নামক এই মানুষটি আপনার কত কাছে ছিলো। প্রত্যেক বাবার কাছেই তার মেয়ে রাজকন্যা এবং তার ছেলে রাজপুত্র । এই বাবা তার সন্তানের জন্য কতটা ছাড় দিয়ে থাকেন তা হয়ত একটা ছেলে বাবা হওয়ার আগে টের পায় না।

জানেন, আমাদের দেশের মায়েরা সন্তানদের সারাদিনই বকাবকি করে, আর সে সময়টাতে সন্তানের আশ্রয়স্থল থাকে বাবা। মায়ের বকাবাদ্য হয়ত বাবার কোল পর্যন্ত শোনা যায় না। তাই পরম শান্তিতে বাবার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়া যায়। তবে, বাবারাও হয়ত রাগে। সে সময়টাতে হয়ত মায়ের কোল পর্যন্ত গিয়েও সন্তানের নিস্তার হয় না।

একটা কথা শুনেছিলাম, একটা মেয়ে তখনই মা হয় যখন সে জানতে পারে সে মা হতে চলেছে। আর একটা ছেলে তখনি বাবা হয় যখন সে তার নিজ সন্তানকে কোলে নিয়ে দুচোখ ভরে দেখতে পারে।

আমার বাবাটাও না ঠিক একই রকম ছিলো, শেষ সময়টায় বাবা খুব অসুস্থ ছিলো। সেবার জন্য নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে বাবাকে খুশি রাখতে পেরেছি বলে মনে হতো। বাবা সন্তান হিসেবে হয়তো দোয়া করতো। মাঝে মাঝে বাবা হাসতো, খুব অদ্ভুত একটা হাসি। হয়ত বুঝি নি, সেই হাসিটাতে ছিলো শত কষ্টের মাঝেও আমাকে খুশি রাখার জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা।

আমার বাবাটা হয়ত খুব স্বার্থপর ছিলো, তাই যখনই কোন ভালো কাজ করতাম তখনই বলে উঠতো:-

আমার ছেলে।
আর খারাপ কাজ করলেই হয়ে যেতাম মায়ের ছেলে।এটাই হয়ত প্রত্যেক বাবার রীতি।

সেই বাবাটা আজ নেই। হারিয়ে গেছে সেই বটগাছটার মত। আজ বুঝি, এই বাবাটা আমার কত কাছে ছিলো।আমার এখনো মনে পড়ে বাবার সাথে আমার শেষ স্মৃতিগুলো। পাশেই বসা ছিলাম শেষ সময়টা পর্যন্ত।

ছয় মাস হতে চললো ক্যাম্পাস, বন্ধু, আড্ডা কোন কিছুতেই কেউ খুঁজে পায়নি আমাকে। আমিতো বাবার মাথার পাশে বসে বাবাকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাতাম। বাবার সাথে গল্প করতাম। বাবার খত মাংসের ড্রেসিং করতাম। মাঝে মাঝে গোস্তের স্তুপ কেটে তার উপর আমাকেই ব্যান্ডেজ করতে হতো। রক্ত, পুঁজ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটা ছেঁড়া আমাকে বিরক্ত করতে পারেনি, আমি বাবাকে ভালোবাসি। বাবার কোলে শিশুবেলা ঘুমাতাম। তাই আমিও গল্প বলে বাবার ঘুম পাড়াতাম।
বাবা নয় কেবল পুরো পরিবারের মধ্যমনি হয়ে উঠেছি। আমার অনুপস্থিতি কেউ মেনে নিতে পারতো না।

শেষ সময়টা বাবাকে কালেমা পড়াচ্ছিলাম আর মুখে হালকা পানি দিলাম। তখনো বুঝতে পারিনি বাবা ঠিক এখনি এতিম করে চলে যাবে। খুব কষ্ট পেতো বাবা, কিন্তু সব সময়ই একটি দোয়া করতাম বাবা তোমার অসুখটা যেন না বেড়ে যায়, যেভাবে আছো, থাকো। আমি এখানেই স্বর্গের সুখ খুঁজে পেয়েছি। সন্ধ্যে বেলা প্রায়শই ঘরে থাকা হয় না। কিন্তু বাবার মৃত্যুর দিন আমি বিকাল থেকেই ঘরে।

বাবা আজ আর নেই। আমি কান্না করিনি। কেনো জানি ভুলে গিয়েছিলাম কান্না করতে। আমি পারি না কাঁদতে। সবাই আকাশ ভারি করে ফেলছে, আমি নিতান্তই চুপ। আমার কান্নাগুলোকে হিমালয়ের স্তুপের নিচে চাপা দিয়ে দিয়েছি।

(মাইকে ভেসে আসছে
“একটি শোক সংবাদ…..।” লইন্নালিল্লাহির………রাজীউন।
মরহুমের জানাযার নামাজের সময়…………. )

পুরোটা রাত ধরেই বাবার নিথর দেহের পাশে নিশ্চুপ বসে আছি। তখনো আমি কান্না করিনি। হয়ত বুঝতে পারছি ঠিক করে নিজের ব্যাথার পাহাড় ভাঙ্গবো। এখনো কান্না করি না, শুধু মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে জ্বলজ্বল করা তারাগুলোর মাঝে বাবাকে খুঁজি। হয়ত একদিন খুঁজে পাবো বাবাকে ওই দূর আকাশে, যে আমায় দেখে হাসছে আর দোয়া করছে।

বাবার দেহকে চার খুঁটির খাটে নিয়ে সকালেই বের হলাম ইদগাহের দিকে। নামায হবে, শেষ নামায। আমিই নামায পড়াই। বাবারও তাই ইচ্ছা ছিলো। শেষ করে নিয়ে চললাম স্থির পায়ে গোরস্তানের ছোট্ট সে ঘরের দিকে। পিছনে মানুষের স্রোত। নির্বাক আমি। বাবাকে রেখে দিলাম সে ঠিকানায়, যে ঠিকানায় যাবে বলে জন্মেছিলো বাবা। আজ তাকে রবের কাছে সমর্পণ করে দিলাম। মাটির পর মাটি পড়ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে গেল বাবা।

ফিরে আসছি ঘরের দিকে, বাবাকে একা রেখে অন্ধকারের সে ছোট্ট কুঠিরে। কাল পর্যন্ত আমার সব ছিলো, ঠিক এখন আমি এতিম। গভীর রাত এখন, শুয়ে আছি বাবার স্মৃতিকে বুকে জড়িয়ে। যে খাটে বাবা নির্বাক শুয়ে ছিলেন মাসের পর মাস। আজ একাই শুয়ে আছি আমি।

বাবা এখন আমি তোমার জন্য কাঁদবো। পৃথিবীর সব ঘুমিয়ে পড়েছে, নিশ্চুপ চারিপাশ। নিরব, নিথর, ঘুটঘুটে অন্ধকার। এ সময়ে বাবা ঘুম থেকে উঠে রবের দুয়ারে হাত তুলো কাঁদতো। আজ আমি রবের কাছে কেঁদে বলছি, হে প্রভু তুমি বাবাকে জান্নাতের মেহমান করে নাও। তোমার প্রিয় পাত্র হিসেবে কবুল করো। (আমিন)

ভালো থাকুক সকল বাবারা। এপারের অথবা ওপারে।

পর্ব -১
আনোয়ার শাহ্
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,
আরবি বিভাগ,
৪র্থ বর্ষ।

 

টিনএজারদের জন্য প্রেমের গল্প

আফরোজা হাসান


গতকাল ক্লাস শেষে যখন সবাই মিলে গল্প করছিলাম এক স্টুডেন্ট তার জীবনে পড়া প্রথম প্রেমের গল্প বিষয়ক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিল ক্লাসের সবার সাথে। প্রেম ব্যাপারটা আসলে কি বোঝার জন্যই সে উপন্যাস হাতে তুলে নিয়েছিল। এবং প্রেম সম্পর্কে ধারণা আরো ঘোলাটে করার মধ্যে দিয়ে তার উপন্যাস শেষ হয়। সে বলছিল টিনএজারদের জন্য স্বচ্ছ, সুন্দর ও সঠিক প্রেমের গল্প লেখা দরকার। যেখানে গল্পে গল্পে তারা জেনে ও বুঝে যাবে প্রেম ব্যাপারটা আসলে কি এবং শরীয়তে এই বিষয়ে কি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া টিনএজে দেহ ও মনে যে পরিবর্তন সাধিত হয় তার ফলে আবেগের যে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয় এবং যে যে রূপে তা বাইরে বেড়িয়ে আসতে চায় সেই ব্যাপার গুলোও সুন্দর করে বিশ্লেষণ করা থাকবে গল্পের বইতে। যাতে আবেগকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেই ব্যাপারেও একটা ধারণা পেয়ে যায় গল্প পড়ে।

বেশ কিছুদিন আগে এক বোন ফোন করে খুব চিন্তিত কণ্ঠে জানিয়েছিলেন তার বারো বছর বয়সি মেয়েটি আজকাল খুব প্রেমের গল্প-উপন্যাস পড়তে পছন্দ করে। বারবী কার্টুন গুলোর খুব ভক্ত হয়ে উঠেছে। কার্টুনে যখন প্রিন্স ও প্রিন্সেস রোমান্টিক মুহুর্তে থাকে বা কথা বলে বোনটি খেয়াল করেছেন তার মেয়ের চেহারাতে গোলাপী আভা ছড়িয়ে পড়ে! ঠোঁট টিপে মেয়ে হাসে! মাঝে মাঝে নাকি দীর্ঘশ্বাসও ফেলে মৃদু মৃদু! বোনটি খুবই চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন মেয়েকে নিয়ে। চিন্তায় পরাটা অবশ্য স্বাভাবিক। সন্তানের চিন্তায় মায়ের মন সবসময় চিকন একটা দড়ির উপর দাঁড়িয়ে থাকে। যার নীচে থাকে জ্বলজ্বলে আগুণ কিংবা অথৈ পানি। এখন সার্কাসের দড়কাবাজের ট্রেনিং তো আর সব মায়েদের থাকে না। সুতরাং প্রতি মুহুর্তে ‘কি হয়’ ‘কি হয়’ অর্থাৎ, পড়ে যাবার ভয়।

গতবছর বড় ভাইয়ার কন্যারত্নাটি রোমিও-জুলিয়েট পড়ার আবদার করেছিল। ভাইয়া আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না যে, আমার মেয়ে তার জীবনের প্রথম লাভ স্টোরি পড়বে রোমিও-জুলিয়েট! শিক্ষণীয় তো কিছুই নেই এই গল্পে। ধোঁকা, মিথ্যা, আত্মহত্যার মত জঘন্য সব উপাদানে ঘেরা পথে চলে আমার মেয়ে ভালোবাসার ভুবনে প্রবেশ করবে? ভালোবাসার কারণে সবকিছু তুচ্ছ করা কি ঠিক? সম্পর্ক বা ভালোবাসার দাবী কি জীবনের চেয়ে বেশি হওয়া উচিত? আমার মনেহয় না। কারণ আমাদের জীবন তো প্রকৃত পক্ষে আমাদের নিজের না। আমাদের জীবন আমাদের কাছে আল্লাহর দেয়া আমানত। তাই জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছুই থাকা ঠিক না মানুষের কাছে। জীবন নেই তো কিছুই নেই। জীবনই যদি না থাকে ভালবাসা, স্বপ্ন, বন্ধন সবই তো অর্থহীন।কাউকে ভালোবেসে জীবন দিয়ে দেয়ার মত ইউজলেস আর কিছুই নেই দুনিয়াতে। তাহলে এমন ইউজলেস কাহিনী কেন পড়তে দেবো আমার মেয়েকে?

আমি সত্যি খুব অবাক হয়েছিলাম সেদিন ভাইয়ার কথা শুনে। এভাবে আমি কখনোই চিন্তা করিনি। গল্প-উপন্যাস-নাটক-সিনেমা-কার্টুন মনকে প্রভাবিত করে সেটা আমিও জানি। কিন্তু কোন মনে যখন সবকিছুর সংজ্ঞা তৈরি হচ্ছে সেই মনকে এইসব ভুল উদাহরণ থেকে বাঁচিয়ে রাখাটা কতটা জরুরি সেটা সেদিন অনুভব করেছিলাম। প্রেম-ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে যাদের নাম ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ, রোমিও-জুলিয়েট, লায়লা-মজনু, রাধা-কৃষ্ণ, রজকিনী-চণ্ডিদাস ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব প্রেম কাহিনীর মধ্যে ভালোবাসা কোথায় সেটাই আমি খুঁজে পাইনা। এসব হচ্ছে মোহ, আবেগ আর পরকিয়ার কাহিনী। একে-অন্যের জন্য আত্মহত্যা মানে হচ্ছে জাহান্নামের কাহিনী। আর এসবকে যদি কেউ ভালোবাসা বলে তাহলে এমন ভালোবাসা থেকে আমি নিজেকে মাহরুম রাখাই পছন্দ করবো। জীবন দেয়া কখনোই ভালোবাসার গভীরতা বোঝায় না। সেটা তো ভালোবাসাই না যা জীবনকে ধ্বংস করে দেয়।ভালবাসা তো সেটা যা আমাদেরকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়। জীবনকে ফুলে-ফলে গড়তে শেখায়। অনন্ত জীবন একসাথে কাটানোর স্বপ্ন দেখায়। দুনিয়ার ক্ষণিকের জীবনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে শেখায়।

ভাইয়া কাগজ-কলম নিয়ে বসে গিয়েছিলেন প্রেমের গল্প লিখতে। লিখেছিলেন উনার সাংসারিক জীবনের ভালোবাসার গল্প। ভাইয়ার কন্যার জীবনে পড়া প্রথম প্রেমের গল্প ছিল ওর বাবা-মার সংসার জীবনের ভালোবাসার গল্প। সেদিন আবারো মনে হয়েছিল বাবা- মা’ই তো সন্তানদেরকে দেখাবে সামনে চলার পথ, পথের দিশা, পথ মাঝের চরাই-উৎড়াই, অতঃপর গন্তব্য। বাবা-মা যদি কোন ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে অবহেলা করে, ব্যর্থ হয়। তাহলে সন্তানদের উপর সেটার প্রভাব পড়বেই। বাবা-মা না শেখালে কিন্তু সন্তানরা অজ্ঞ থেকে যাবে না। তারা হয়তো কোন ভুল মাধ্যম থেকে সেই জ্ঞানটা অর্জন করবে। যারফলে ভুলের পথে চলা সহজ হয়ে যাবে তাদের জন্য। বাবা-মা যেমন আঙ্গুল ধরে সন্তানদেরকে হাঁটতে শেখায়, চলতে চলতে পড়ে গেলে হাত বাড়িয়ে দেয় তাদের সামনে, যাতে আবার উঠে দাঁড়াতে পারে তারা। সন্তানদের মনোজগতেও বাবা-মার অবস্থান এমনটাই হওয়া উচিত। আঙ্গুল ধরে মনের আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু পথে বাবা-মাকেই হতে হবে সন্তানদের পথ প্রদর্শক। যতবার হোঁচট খেয়ে পড়বে সামনে বাড়িয়ে দিতে হবে হাত উঠে দাঁড়াবার জন্য।

কনসেপ্টটা অসাধারণ মনে হয়েছিল আমার কাছে। আসলেই কতই না সুন্দর হতো যদি প্রতিটা সন্তান ভালোবাসাকে জানতো বাবা-মাকে দিয়ে! প্রতিটা সন্তানের জীবনে পড়া প্রথম প্রেমের গল্প হত তাদের বাবা-মাদের জীবনের ভালোবাসার উপাখ্যান। তাহলে শুধু যে ভালোবাসার সঠিক জ্ঞান অর্জিত হতো সেটাই না। সাথে সাথে অর্জিত হতো জীবন-যাপনের নানাবিধ শিক্ষা। সন্তানরা জানতে পারতো জীবনে সুখী হবার পথে করণীয়-বর্জনীয়। এবং সেই আলোকে তারা আলোকিত করে নিতে পারতো তাদের জীবনের পথ। বর্তমানে আমরা এমন একটা সময় পার করছি যা সবদিক থেকে বৈরী আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। তাই এটা সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে জীবনের প্রতিটি ধাপের প্রয়োজনীয় শিক্ষা বাবা-মাকেই সকল দ্বিধা-সংকোচ ঝেড়ে ফেলে সন্তানদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।

টিনএজারদেরকে যে কোন ব্যাপারে বোঝানোর ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। সেটি হচ্ছে, ওদের প্রশ্নের জবাবে শরীয়তের বিধান বা কুরআন ও হাদিস থেকে বাছাইকৃত অংশ বলে দেয়াটা আসলে খুব সহজ।

কুরআন বা হাদিসের রেফারেন্স শুনে ওরাও হয়তো বেশির ভাগ সময় চুপচাপ মেনে নেয়। কেননা শরিয়তের বিধানের ব্যাপারে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই।কিন্তু এতে প্রায় সময়ই ওদের অনুসন্ধিৎসু মন পুরোপুরিভাবে পরিতৃপ্ত হয় না। কারন সমাধান পেলেও মনের খোঁড়াক পায় না যথাযথ। তাই ইসলামিক ভাবে সমস্যার সমাধান দেবার সময় প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে কোন উৎস থেকে এই চিন্তাটা বা প্রশ্নটা ওদের মনে জেগেছে। অতঃপর প্রাসংগিক আলোচনা কোনদিকে প্রভাবিত হবে সেটা নির্ধারিত করে নিয়ে সেই আলোকে বিশ্লেষণ করতে হবে পুরো বিষয়টাকে। এবং সবশেষে মন্তব্যে কুরআন বা হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে।

 

সখের সাইকেল

ডা.সাকলায়েন রাসেল


একটা মেডিকেলে চান্স পেলেই হলো
–আব্বা-আম্মার চাওয়াটা ঠিক এতোটুকুই ছিল। সে জায়গায় যখন চান্স পেলাম ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজে’ তখন তাদের সে কি আনন্দ !

দু’জনে আমাকে কাছে বসিয়ে বলল, তোমার ফলাফলে আমরা আনন্দিত, গর্বিত। এর বিনিময়ে তুমি কি চাও বলো?

‘একটা’ সাইকেল কিনে দাও!!!

আমার এই সামান্য চাওয়ায় বাবা-মা দু’জন বিস্মিত হলেও খুব দ্রুত একটা সাইকেল কিনে দিলেন। বংশাল থেকে, দাম ৩২০০ টাকা।

ফার্স্ট ইয়ার থেকে থার্ড ইয়ার। সব বিনোদন যেন আমার সাইকেলকে ঘিরেই। সাইকেল চালিয়ে বাসা থেকে সোজা ফজলে রাব্বি হল। এরপর সিড়ির গোঁড়ায় গিয়ে সাইকেল ঘাড়ে নিয়ে এক দৌড়ে তিন তলা। সেখান থেকে আবার সাইকেল চালিয়ে আমার রুমে প্রবেশ।

মন খারাপ লাগলে সাইকেল চালাতাম। বিকাল হলে সাইকেল চালাতাম। জ্বর এলেও সাইকেল। এবারের ১৬ ডিসেম্বর, ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার। সকাল ৮ টা ৩০ মিনিট, শত শত সাইকেল।

রঙ বেরঙের সাইকেল… কত ছেলে মেয়ে একসাথে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে ! মনটা ফিরে গেল মেডিকেল কলেজের সেই ফার্স্ট ইয়ারে!

ইদানিং সাইকেলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। মন চায় আবারও এর হ্যান্ডেল ধরি। পকেটে যা আছে তা দিয়ে ভাল একটা সাইকেলও কেনা যাবে। কিন্তু তা কি আর হবে? বয়স বাড়ছে…। মানুষ থেকে আবার ইতোমধ্যে ডাক্তারে পরিনত হয়েছি!!! পাছে লোকে যদি কিছু বলে? এই ‘পাছের লোকটাকে’ কেন যে এতো ভয়!!!!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

অন্য, এক নীল ব্যাথা- বেবি ব্লুস

ফাতিমা খান


নীল আকাশ, নীল জল, নীল নির্জনতা কিংবা নীল নীল ব্যাথার কথা আমরা গল্প, কবিতা বা গানে অনেক শুনেছি। কিন্তু এমন এক নীল কষ্টের কথা কি কেউ জেনেছেন যা একজন মা সন্তান জন্মদানের পর থেকে ভুগেন? আমরা কজনে জানি তাদের কষ্টের কথা?

তাহলে আসুন একটা গল্প বলি। গল্প না ঠিক, সত্য ঘটনা।

ভদ্রমহিলা আমার ডাক্তার কলিগের স্ত্রী।ঘটনা তাদের তৃতীয় সন্তান জন্মের সময়ের। এমনিতে তিনি অত্যন্ত অমায়িক ও স্বামী সংসারের প্রতি বেশ যত্নশীল । কিন্তু কি যে হল, বাচ্চার জন্মের পর থেকেই তিনি হঠাত করে একদম বদলে গেলেন। সারাক্ষন কাঁদেন, খাওয়া দাওয়া বন্ধ, ঘুম নাই চোখে, বড় দুই বাচ্চাকে শুধু শুধুই বকা ঝকা করছেন, তার জীবনের কিছু বাকী নাই…জাতীয় কথাবার্তা বলেন।
এদিকে নানা জনে নানারকম কথা বলছে, ‘ বাচ্চা সুস্থ হয়েছে তো?’ ‘মেয়ে বাচ্চা বলে কি মন খারাপ?’ ‘মায়ের জন্য মন কাদছে কি? দেশে পাঠিয়ে দেন’ ইত্যাদি ইত্যাদি।

স্বামী বেচারা টেনশনে পড়ে গেলেন। ডিউটি করবেন নাকি ঘর সামলাবেন। ঘটনা চরমে পৌছালো যখন একদিন ভদ্রলোক বাসায় ফিরে দেখেন তার স্ত্রী চাকু নিয়ে বসে আছেন স্বামীকে খুন করবে বলে !

ডাক্তার সাহেব অবশেষে সব সামাল দিয়েছেন অনেক ধৈর্যের সাথে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের জ্ঞান ভাল কাজে লেগেছিল সেদিন। এখন তারা ভালই আছেন।

প্রসুতি মায়ের এই সমস্যার নাম পোস্ট পার্টাম ব্লুস ( Postpertum blues) বা বেবি ব্লুস ( baby blues) অথবা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন (Postpertum depression)।

আজ দেখা হয়েছে এমন আরেকজন মায়ের সংগে। দাতের চিকিৎসার জন্য আসলেও উনার প্রোফাইলে গাইনোকলজিস্ট এর কমেন্টে দেখলাম উনি পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনে ভুগছেন। অযথাই কান্নাকাটি করছেন, স্বামীকে সহ্য করতে পারছেন না।

বেবি ব্লুস এ আক্রান্ত মায়েরা কিছুটা বিষন্নতায় ভুগেন। শতকরা প্রায় ১৫ জন মা ই বেবি ব্লুসে আক্রান্ত হন।কিন্তু আমরা অনেকেই কিংবা তার পরিবার ও স্বজনরা ব্যাপারটা বুঝতে পারিনা।সবসময় মন খারাপ থাকা, খাওয়া দাওয়া না করা, অকারণে কান্নাকাটি করা,ঠিকমত না ঘুমানো, কখনো কখনো ভয় পাওয়া এর কিছু লক্ষণ। সাধারনত সপ্তাহ দুয়েক এরকম সমস্যা স্থায়ী হতে পারে। কখনো এর বেশীও হয়।

লক্ষণগুলো যদি তীব্র হয়ে যায় একপর্যায়ে রোগিনীর সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি হতে পারে। কখনো নিজের সন্তান বা স্বামীকেও খুন করার ইচ্ছে জাগতে পারে। এই অবস্থাকে বলা হয় পোস্ট পার্টাম সাইকোসিস।

জেনে রাখা ভাল যে বেবি ব্লুস এ আক্রান্ত মায়েরা কিন্তু মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত বা পাগল নন। তাদের সমস্যাগুলো সাময়িক। প্রসবের পরপর হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এমনটা হতেই পারে। এসময় দরকার তার অনেক যত্ন আর সাইকোলজিকাল সাপোর্ট।পুষ্টিকর খাবার, রুটিন লাইফ ও রিল্যাক্স থাকলে দ্রুত সেরে ওঠা যায়। কখনও যদি এ সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন।

দশ দশটি মাস একটি ভ্রূনকে গর্ভেধারন, নিজের স্বাস্থ্য, পুষ্টি থেকে প্রতিদিন একটু একটু নিঃশেষ করে একটা পুরা মানব শিশুর বৃদ্ধি অত:পর প্রসব খুব নগন্য কোন ঘটনা নয়। এসময় তাদের দেহ, মন, হরমোন সবকিছুতেই এক বিরাট পরিবর্তন আসে। এমনিতেও একজন প্রসুতি মা পরিবারের সবার যত্ন আত্তির হকদার ও মধ্যমণি হওয়া উচিত। মনে রাখবেন একজন সুস্থ মা ই আপনাকে একজন সুস্থ সন্তান দিতে পারে।

লেখিকা: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

এন্ডোমেট্রিওসিস: নারীদের জন্যে এক আতঙ্কের প্রতিশব্দ

ডা.মারুফ রায়হান খান


এন্ডোমেট্রিওসিস বিষয়টাকে একেবারে সহজ ভাষায় বোঝানো অনেকাংশে মুশকিল। জরায়ুতে ৩টি স্তর থাকে। একেবারে ভেতরের স্তরটাকে বলা হয় এন্ডোমেট্রিয়াম। এই এন্ডোমেট্রিয়ামের কোষ যখন জরায়ুর বাইরে অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে এন্ডোমেট্রিওসিস বলে।

কোথায় কোথায় এটা ছড়াতে পারে ?

– ডিম্বাশয়
– গর্ভনালী
– পাউচ অফ ডগলাস
– পেটের ভেতর যে পর্দায় মোড়ানো থাকে সেখানে
– ব্রড লিগামেন্ট
– এপেন্ডিক্স
– আগে অপারেশান হয়েছে সে কাটা জায়গায়
– নাভী
– যোনি
– জরায়ুমুখ
– ফুসফুস
– নাক

কাদের বেশি হয়ে থাকে এ রোগ ?

১. ৩০-৪৫ বছর বয়সী নারী।
২. সাদাদের বেশি হয়।
৩. যাদের পরিবারে এ রোগের ইতিহাস থাকে।
৪. উচ্চবিত্ত পরিবারে।
৫. বিলম্ব করে বিয়ে করা।
৬. বিলম্ব করে সন্তান নেয়া।
৭. সন্তানহীন।

উপসর্গ কী কী থাকে ?

১. প্রায় ২৫ ভাগ নারীরই কোনো উপসর্গ থাকে না।
২. মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা (৫০%)। মাসিক শুরু হবার কয়েকদিন আগেই ব্যথাটা ধীরে ধীরে শুরু হয় কিন্তু মাসিক চলাকালীন সময় এটা তীব্রতর হয়। মাসিক শেষ হবার পরেও কিছুদিন এ ব্যথা থাকতে পারে।
৩. যৌনমিলনের সময় তীব্র ব্যথা (২০-৪০%)।
৪. বন্ধ্যাত্ব (৪০-৬০%)।
৫. পেটে ব্যথা।
৬. বারবার প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবে করতে অসুবিধা হওয়া, কখনও কখনও প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া।
৭. পায়খানা করার সময় ব্যথা, ডায়রিয়া, পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া।
৮. দীর্ঘসময় ধরে ক্লান্তি, অবসন্নতা।

চিকিৎসা :

অল্পবয়সী বিবাহিত মেয়েদের বাচ্চা নিতে বলা হয়, এতে দেখে যায় স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এ রোগ ভালো হয়ে যায়। এ রোগের চিকিৎসায় নিম্নোক্ত অপশনগুলো আছে।
১. হরমোনের মাধ্যমে চিকিৎসা।
২. অপারেশান
৩. হরমোন এবং অপারেশানের যৌথ চিকিৎসা
৪. রেডিওথেরাপি, ইত্যাদি ।

এন্ডোমেট্রিওসিস প্রতিরোধ করা যায় কী ?

এর প্রতিরোধের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা পাওয়া যায় না। তবে তাড়াতাড়ি সন্তান নিয়ে নেয়া, নিয়মিত ব্যায়াম, নিয়মিত চিকিৎসকের চেক-আপে থাকা উপকার বয়ে আনতে পারে।

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

মাইক্রোটিচ পদ্ধতি

আফরোজা হাসান


মাইক্রোটিচ একটি শিক্ষাদান পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে ছোট ছোট কোন বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্বল্পসময়ে পাঠদান করা হয়। বাংলায় একে বলে অনুশিক্ষন পদ্ধতি। মাইক্রোটিচিং পদ্ধতির তিনটি অংশ- মাইক্রো লেসন, মাইক্রো ক্লাস এবং মাইক্রো টাইম। এই পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের সব কৌশল একত্রে আয়ত্ত না করে সামগ্রিকভাবে শিক্ষার বিষয়বস্তুকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আয়ত্ত করানো হয়। মাইক্রোটিচিং মূলত নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষাগারে বিকশিত হয়। এটি শিক্ষকদের শিখন দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যকারী কৌশল হিসেবে বিবেচিত। এর লক্ষ্য শিক্ষাদান পদ্ধতিকে শক্তিশালী করা, ব্যক্তিগত সবল দিক ও উন্নয়নের ক্ষেত্র চিহ্নিত করা, শিক্ষার্থীর বোধগম্যতার উন্নয়ন সাধন, বিভিন্ন কার্যকর শিখন পদ্ধতির উন্নয়ন এবং কার্যকর ফলাফল প্রয়োগ ও গ্রহণ ক্ষমতার উন্নয়ন।

১৯৫০ সালের শেষ দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ডুইট ডব্লিউ অ্যালেন, রবার্ট বুশ এবং কিম রোমনি প্রথম মাইক্রোটিচিংয়ের ধারণা উপস্থাপন করেন। ১৯৬০ সালের দিকে ডুইট ডব্লিউ অ্যালেন ও তাঁর সহকর্মীদের মাধ্যমে এই পদ্ধতি আরো বিকশিত হয়। তাদের উপস্থাপিত টিচিং পদ্ধতি হল টিচ, রিভিউ, রিফ্ল্যাক্ট এন্ড রিটিচিং। ১৯৭০ সালের কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এডুকেশন মিনিস্ট্রি তাদের প্রশিক্ষণ সহায়ক কার্যক্রম হিসেবে এই পদ্ধতি গ্রহন করে। ১৯৮০ ও ১৯৯০ এর দশকে এই পদ্ধতি আরো বাস্তবধর্মী ও কার্যকরী ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও চীনে বিকাশ লাভ করে। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে এই পদ্ধতি আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতিতে সম্পৃক্ত হয়ে নতুন মাত্রা লাভ করে। বর্তমানে এই পদ্ধতি কানাডা আমেরিকা সহ বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং কার্যকর একটি পদ্ধতি।

এটি মূলত শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির একটা শিক্ষা পদ্ধতি। আর প্রত্যাশিত দক্ষতা অর্জনের জন্য এই পদ্ধতিতে তিনটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। প্রথম ধাপ হচ্ছে-জ্ঞান আহরণ বা অর্জনের ধাপ, দ্বিতীয় হচ্ছে দক্ষতা অর্জনের ধাপ আর তৃতীয় হচ্ছে স্থানন্তর ধাপ। সাবজেক্টের সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে কি শিখছে, পুর্ববর্তী শিক্ষার সাথে এর সম্পর্ক এবং ভবিষ্যতে এর প্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার উদ্দেশ্যেই এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। মাইক্রোটিচ পদ্ধতিতে শিক্ষকদের মধ্যে নয়টি বিষয় প্রত্যক্ষ করা যায়-

১। পাঠ পরিকল্পনা। অর্থাৎ, যে বিষয়ে শিক্ষার্থীদেরকে পড়ানো হয় তার সুনির্দিস্ট উদ্দেশ্য ও সঠিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকে টিচারদের মধ্যে।

২। আরোহী পদ্ধতি অনুসরণ। অর্থাৎ, ক্লাসে শুরুতেই শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষন করা।

৩। উপস্থাপন। মানে হচ্ছে যে বিষয়ে আলোচনা করা হয় তার ব্যাখ্যা, বর্ননা, সঠিক বিশ্লেষণ ও উদাহরণ প্রদান করা।

৪। উদ্দিপনা পরিবর্তন। অর্থাৎ, শিক্ষার্থীদের অবসাদ বা একঘেয়েমি কাটিয়ে তোলার জন্য অঙ্গভঙ্গি, নড়াচড়া, সেন্স অব হিউমারের প্রয়োগের মাধ্যমে নীরবতা ও মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করা।

৫। কণ্ঠস্বরের সঠিক ব্যবহার। সঠিক এবং স্পষ্টভাবে প্রতিটা শব্দ উচ্চারণ করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী টোনের ওঠা-নামা।

৬। শক্তি সঞ্চার। অর্থাৎ, শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা সনাক্ত করে তাদের উৎসাহিত করা এবং সাড়া দেয়া।

৭। প্রশ্নোত্তর। মানে ধারাবাহিকভাবে প্রশ্ন করা, প্রশ্নের মোকাবেলা করা এবং প্রশ্নের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করা।

৮। নীরবতা ও ইঙ্গিত। মানে হচ্ছে কথা না বলেও শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ও ইঙ্গিতের মাধ্যমে বক্তব্য প্রকাশ করা।

৯। মূল্যায়ন। কি পরিমাণ উন্নতি বা অবনতি হচ্ছে তা দেখা।

( ম্যাগাজিনে বিশাল বড় করে লেখা ছিল মাইক্রোটিচ পদ্ধতি সম্পর্কে। এখানে আমি শুধু মূল অংশটুকু সংক্ষেপে লিখেছি। দাদুর পাঠশালাতে এতো তথ্য ঢোকানোটা জটিল লাগছিলো তাই আলাদা লিখে দিলাম)

 

সৌন্দর্যকে সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ

মুশফিকুর রহমান আশিক


“সুন্দর” এর কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। ফর্সা মানেই সুন্দর না ফ্রেশ মানেই সুন্দর এই জিনিসগুলা নিয়ে বিতর্ক করা অর্থহীন !!

তুমি ফর্সা হও, শ্যামলা হও, কালো হও কিংবা তোমার চোখ ছোট হোক, নাক লম্বা হোক আর কান বড় হোক কিংবা চুল কম থাকুক আর বেশি থাকুক। পৃথিবীর কোন না কোন প্রান্তে এমন কেউ আছে, যার কাছে শুধু তোমাকেই “সুন্দর” লাগবে !

তুমি যেমন আছো, তেমনই “সুন্দর” লাগবে। তোমার ছোট চুলই তার কাছে অসাধারণ লাগবে। তোমার বড় চুলের খোপার মাঝে সে আটকে যাবে। তোমার এলোমেলো চুলের মাঝে তার লুকিয়ে থাকা ভালোবাসাটুকু সে আঙ্গুল ছুঁইয়ে খুঁজে নিবে !!

তোমার ছোট ছোট চোখই তার কাছে মায়াময় লাগবে। তোমার বড় চোখের অতল গভীরতায় সে ডুবে যাবে। তোমার দৃষ্টিতেই সে হারিয়ে যাবে !!

তোমার কন্ঠ যেমনই হোক, সে মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতে চাইবে। তুমি গান গাইতে পারো আর নাই পারো, তোমার প্রতিটা কথাই তার জন্য গান হবে !!

তুমি উচ্চতা নিয়ে ভেবো না। এমন কেউ আছে, যে তোমার মত খাটো কাউকেই চায়, হাত দিয়ে নিজের বুকের সাথে আগলে ধরে রাখতে চায় সবসময়। তুমি লম্বা বলে একদমই টেনশন করো না একটুখানি মাথা উঁচু করে তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে কারো খুব ভালো লাগবে। এমন কেউ আছে। নিশ্চয়ই আছে!

তোমার গায়ের রং যেমনই হোক, সে চোখ বুজলেই তোমাকে দেখবে। সে শিল্পী না হয়েও কল্পনার ক্যানভাসে সবটুকু আবেগ দিয়ে তোমাকে আঁকবে। তোমার রংটাই তার তুলিতে একমাত্র রং হবে!

আয়নার দিকে তাকিয়ে তুমি মন খারাপ করো না। আশেপাশের দশটা মানুষের কথায় তুমি নিজেকে ছোট ভেবো না। তুমি শুধু অপেক্ষা করো। তুমি কালো না, ফর্সা না, খাটো না, মোটা না।
তুমি সুন্দর !!

তুমি মানো আর নাই মানো, তুমি সুন্দর। কারো কাছে তুমি অবশ্যই সুন্দর। তুমি শুধু অপেক্ষা করো। পৃথিবীর কোন না কোন প্রান্ত থেকে কেউ তোমাকেই খুঁজছে। তোমাকেই তার লাগবে। আর কাউকে না।

হুম, তোমাকেই !!”

লেখকের ফেসবুক:
https://www.facebook.com/ash.ashique.

 

গর্ভাবস্থায় আপনার ভ্রুণের সঠিক গঠন ও বৃদ্ধি- আপনার খাদ্যতালিকা

ডা.ফাতিমা খান


গর্ভাবস্থায় একটি ভ্রুণের গঠন ও বৃদ্ধি একটি পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। প্রথম ৪ সপ্তাহ ভ্রূণে একটি দৈহিক কাঠামো তৈরী হয়, অতঃপর পর্যায়ক্রমে হাত, পা, চোখ, নাক, কান সহ অন্যান্য অংগ-প্রত্যংগ গঠন হয়। ২৪ সপ্তাহের একটি ভ্রূনের স্বাভাবিক ওজন হয় ১.৪ পাউন্ড। এই ওজন ২৮ সপ্তাহ বা সাত মাসে ২.৫ পাউন্ডে বেড়ে যায়।

গর্ভকালীন শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ যে ব্যাপারগুলো নিয়ন্ত্রণ করে তার মধ্যে অন্যতম হল মায়ের শারিরীক অবস্থা ও খাদ্যাভ্যাস।

একজন সুস্থ ও পুষ্টিকর সুষম খাদ্য গ্রহণকারী মায়ের সন্তান সাধারনত সুস্থই হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হতেও পারে।

গর্ভাবস্থায় প্রথম ৬-৭ মাসে বাচ্চার বৃদ্ধি হার তুলনা মুলকভাবে কারও কারও ক্ষেত্রে কম থাকে। এতে ভয় পাবার কিছু নেই। যদি ৭ মাসেও বাচ্চার ওজন ‘যদি একটু কমও হয়’ তবুও চিন্তার কিছু নেই, এ ক্ষেত্রে মায়েদের খাবারের দিকে বিশেষ ভাল করে নজর দিতে হবে। শেষের তিন মাস বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি পায়। তবে বাচ্চার ওজন এর চেয়েও কম হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ভিটামিন জাতীয় ঔষুধ সেবন করা যেতে পারে।

আসুন দেখে নেই কোন কোন খাবারগুলো খেলে বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি পাবেঃ

(১)ভাত, রুটি, অন্যান্য, শর্করাজাতীয় খাবার- ওজন বাড়াতে শর্করাজাতীয় খাবারের জুড়ি নেই। ভাত বা রুটি ছাড়াও সুজি কিংবা ওটস ও গমের দানার স্যুপ খাওয়া যেতে পারে, এর সাথে মেশাতে পারেন পছন্দের মাংস বা সিজনিং বিভিন্ন সবজি ও ডিম বা পছন্দের মাংস দিয়ে নুডুলস প্রতিদিনের তালিকায় থাকতে পারে। গর্ভাবস্থায় রুচির তারতম্য হয় খুব বেশী। সেক্ষেত্রে একই খাবার ভিন্ন ভাবে খাওয়া যেতে পারে। যেমন ভাত ভাল না লাগলে পায়েশ, চালের গুড়ার রুটি বা পিঠা বা চিড়া দই বিকল্প খাবার হতে পারে।

(২)ফল ও শাকসবজি- রকমারী ফল বা ফ্রুট সালাদ অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। কলাতে আয়রন ও অন্যান্য খনিজ উপাদান ভরপুর। ওজন বাড়াতে কলা আর আমের তুলনা নেই।প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় কলা রাখা যেতে পারে। পাচমিশালি শাকসবজি রান্না বা স্যুপ করে দুবেলা খাবারের সাথে খেতে পারেন। ভিটামিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উচ্চ মাত্রায় থাকে এসব খাদ্যে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন ফল রস করে খাওয়ার চেয়ে এমনিতে ফল চিবিয়ে খাওয়া বেশী ভাল। পালং শাক, লালশাক, কচুশাক, লাউ কুমড়া, ঢেড়শ সহ সব ধরনের মৌসুমী শাকসবজি সবচেয়ে উপকারী। কমলা বা লাল সবজি বিটা ক্যারোটিন ও আয়রনের অন্যতম উৎস। তাই এগুলো নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে। মিষ্টি আলু ওজন বাড়াতে ও খনিজ এর সরবরাহ করতে খুব সহযোগী।

(৩)ডাল ও অন্যান্য শস্যজাতীয় খাবার – অম্ল বা এসিডিটির যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে ডাল বা ছোলা জাতীয় খাবার আমিষের অন্যতম উৎস। তবে এগুলো কাঁচা বা ভাজা খাওয়ার চেয়ে রান্না করে খাওয়াই উত্তম। মাছ, মাংসের পর এই লিগিউমস গুলো প্রোটিন যুক্ত খাবার যা গর্ভের সন্তানের ওজন বৃদ্ধি করে। এর মধ্যে আছে মুগ, মসুর, ছোলার ডাল, সীমের বিচি ইত্যাদি। ডালের স্যুপ বা পাতলা ডাল উপাদেয় ও পুষ্টিকরও বটে।

(৪)বাচ্চামুরগী বা কবুতর- অনেকের ধারণা শুধু দুধ বা ডিম বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি করবে। এ ধারণা ঠিক নয়। বাচ্চা মুরগির ঝোল বা কবুতরের মাংস নিয়মিত খেতে পারেন। এটি বাচ্চার ওজন বাড়াবে ও সন্তান জন্মদানের পরও মাকে সুস্থ রাখতে সহায়ক হবে।

(৫)মাছ ও মাংস- সামুদ্রিক মাছে প্রচুর আয়োডিন থাকে ও প্রোটিনের ভাল উৎস। সামুদ্রিক বা নদীর মাছ বাচ্চার ওজন বৃদ্ধিতে কার্যকর। তবে তাজা ও কেমিকেলমুক্ত হতে হবে। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে যেগুলো হজমে দেরি হয় বা মার্কারীযুক্ত থাকে সেগুলো না খাওয়াই ভাল। ছোটমাছ ক্যালশিয়ামের যোগান দেয় যা বাচ্চার হাড়ের গঠনের জন্য অপরিহার্য। এ সময় যেকোন এলার্জিক মাছ এড়িয়ে যাওয়া ভাল। রেডমিট বা গরু ও খাশির মাংসতে ওজন বৃদ্ধি ও আয়রনের যোগান দিতে খুব সহায়ক। গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাছ ও মাংস অবশ্যই থাকা উচিৎ।

(৬)ড্রাই ফ্রুট ও বাদাম- এর মধ্যে আছে খেজুর, কিসমিস, শুকনো এপ্রিকোট, চিনাবাদাম, এলমোন্ড বা কাঠবাদাম, কাজু ইত্যাদি। পিনাট বাটার বা শুধু চিনাবাদামও দ্রুত ওজন বাড়ায়। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। সুতরাং গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে মায়েদের প্রচন্ড ক্ষুধা লাগে এসময় খেজুর খেতে মায়ের দুর্বলতা কমবে পাশাপাশি বাচ্চার জন্য উপকারী।

লেখিকা: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

বাসে মেয়েদের সিকিউরিটি

মুশফিকুর রহমান আশিক


গত কয়েকদিনে ফেইসবুকে যে ব্যাপারটা খুব বেশি চোখে পড়ছে সেটা হলো, লোকাল বাসে মেয়েদের সিকিউরিটি নিয়ে।  দুজনের লেখা ঘটনা পড়লাম, সকাল ১০-১১ টার মত সময়ে যখন লোকাল বাসে একটা মেয়েকে দরজা আটকে হ্যারাজ করার মত সাহস করা হয়, সেটা ভয়াবহ রকমের অ্যালার্মিং!

সকাল ৯ টায় এলিফ্যান্ট রোডের মত একটা ব্যস্ত এলাকায় শত শত মানুষের সামনে থেকে যেদিন আমার ফোন হাইজ্যাক করা হয়েছিল, সেদিনই বুঝে গেছিলাম এই দেশে আমাকে বা আপনাকে কেউ সিকিউরিটি দিবে না। নিজে সাবধান থেকে যতটুকু পারা যায়, ততটুকুই !

যেহেতু মেয়েদের বেলায় এই ব্যাপারটা বেশি হচ্ছে, যারা নিয়মিত বাসে যাতায়াত করেন, কয়েকটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেনঃ

১) বাসটা খালি কিনা
বাস যদি খালি হয়, অবশ্যই অবশ্যই উঠবেন না

২)অল্প কিছু যাত্রী
বাসে অল্প কিছু যাত্রী থাকলেও না উঠার চেষ্টা করবেন। যদি উঠতেই হয়, যাত্রীদের অবস্থা দেখে নিবেন।

এবার আসি যাত্রীদের অবস্থা দেখার বিষয় নিয়ে। দুটো ঘটনা পড়ে যেটা বুঝলাম, বাসওয়ালারা বেশ চালাক হয়ে গেছে। এরা বাস একদমই খালি না রেখে নিজেদেরই কিছু স্টাফ হেলপারকে যাত্রী সাজিয়ে বসিয়ে রাখে যাতে কেউ সন্দেহ না করে। তাই বাসে উঠার সময় যদি সন্দেহ হয় যে যাত্রীরা তাদেরই কেউ, দয়া করে উঠবেন না। এখানে নিজের Deduction Skill কাজে লাগান।

৩) গেটের কাছে বসুন
বাসে যদি উঠেই পড়েন, গেটের কাছে বসবেন। পেছনে যাবেন না। পেছনে গেলে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

যদি দেখেন কোন একটা স্টপেজে বাসের সব যাত্রী নেমে যাচ্ছে, এক মুহূর্ত দেরি না করে আপনিও নেমে যান। লাগলে ওখান থেকে অন্য উপায়ে বাসায় যাবেন। কিন্তু বাসে যেন একা পড়ে না থাকেন – এটা খেয়াল রাখবেন।

৪) বিপদে পড়ে গেছেন
কখনো যদি মনেই হয় বাসের ভেতর আটকে গেছেন, বিপদে পড়ে গেছেন, ফোন বের করে কোন বন্ধু বা কাউকে ফোন দিয়ে জোরে জোরে বাসের নাম, লোকেশন এগুলা জানিয়ে দিন। একটু হলেও সেটা বাসের ড্রাইভারকে ভীত করবে।

৫)999 ফোন দিন
আমি জানিনা বাংলাদেশে 999 এ ফোন দিলে ইমারজেন্সি পুলিশের হেল্প পাওয়া যায় কিনা। সেটাও ট্রাই করা যেতে পারে

৬)অ্যাথলেটিক হন
নরম বা দুর্বল হয়ে থাকার দিন এখন আর নাই। পারলে একটু অ্যাথলেটিক হন। আপনার কারাতে শেখার দরকার নাই। কিন্তু লাফিয়ে বাস থেকে নামতে পারার মত ক্যাপাবিলিটি যেন থাকে। এইটা নিশ্চিত করবেন !!

৭)বিকল্প চিন্তা করুন
রাতের দিকে যদি ট্রান্সপোর্ট না-ই পান, চেষ্টা করবেন UBER কিংবা Pathao তে আসার। ফাঁকা লোকাল বাসে উঠার চেয়ে UBER Pathao এর কার বা বাইকে উঠা ভালো। আনইজি লাগতে পারে। কিন্তু ঐখানে আপনার পুরা জার্নিটা ট্র্যাক করা হয়, ড্রাইভার/রাইডার এবং কার/বাইক এর ইনফরমেশনও থাকে। তাই সিকিউর বলা যায়। টাকা বেশি লাগুক। জীবনের মূল্যটা বেশি।

চোখ-কান খোলা রেখে চলবেন। নরমালি আপনি যে রাস্তায় নিয়মিত হাঁটেন, খেয়াল রাখবেন কেউ আপনাকে ফলো করছে কিনা। নিয়মিত এক রাস্তায় না চলে মাঝে মাঝে রুট চেঞ্জ করবেন। নিজের নিরাপত্তাটা নিজেরই নিশ্চিত করতে হবে। কারো ভরসায় থেকে লাভ নেই !

এই লেখাটা পারলে শেয়ার করেন। আমার ফ্রেন্ড আর ফলোয়ার লিস্ট মিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের অর্ধেকের কাছেও যদি এটি পৌছায়, হয়তো অনেকের লাইফ সিকিউর হবে। প্রতিদিনই আমার আপনার মা-বোন-বান্ধবী কিংবা আপনজন বাইরে বের হচ্ছে। তাদেরকে সতর্ক করা আমাদের দায়িত্ব !!

আপনার বাসায় যারা আছেন, কাছের মানুষ যারা আছেন, তাদেরকে জানান, সতর্ক করেন। আমরা আসলে নিজেরা বিপদে পড়ার আগ পর্যন্ত টের পাই না যে কতটা সতর্ক থাকা দরকার ছিল !

“আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুক।”

KUET

 

রেখেছি তোমায় হৃদমাঝারে

ফাতিমা শাহীন


এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে ঘড়ির কাঁটা রাত সাড়ে বারোটার ঘর পেরিয়েছে। বাসায় এসে বিশ্রাম নিয়ে দুটো খেতে বসেছি। ডাইনিং টেবিলে রুসাফী বললো, আম্মু , তুমি কি শিওর যে আমরা প্রপারলি কানে শুনতে পাচ্ছি ? আমি ম্লান হেসে বললাম, আমি বোধহয় এখনো ততটা শিওর নই…..।

আসলে ঢাকায় কত শব্দের ভেতরে যে আমরা ছিলাম ! প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি স্থানে নানান ধরণের শব্দ। চেনা অচেনা , বোধগম্য অবোধগম্য শব্দরাজি এ ক’দিনের মধ্যে আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিল যেন।

অন্যদিকে, নভেম্বর-জানুয়ারি মাস বাংলাদেশে ওয়াজ মাহফিলের মাস। জোহর নামাজের পর থেকেই চতুর্দিক থেকে ভেসে আসতে থাকে ওয়াজের ধ্বনি। মাঝে মাঝে কোন কোন রাতে না ঘুমিয়ে কান পেতে থাকতাম যে কোন একটি ওয়াজের প্রতি মন:সংযোগ করে শুনবো বলে, কিন্তু সে উপায় কি আর আছে ? শত মাইকে , শত কণ্ঠে হিদায়াতের কত না মহান বাণী ধ্বনিত হচ্ছে , কিন্ত কোনটাই শুনে কোন কিছু বোঝার উপায় নেই।

তবুও , বছরের পর বছরভর , নি:শব্দ ও স্তব্ধতায় মোড়া এই আমাকে কি যে নিবিড় মমতার অচ্ছেদ্য এক বাঁধনে বেঁধে রেখেছিল আমার প্রিয় ঢাকা ! ফিরে আসার দিন এয়ারপোর্টে আসার পথে আমার হৃদয়খানি সহস্র টুকরো করে ঢাকার পথে পথে আমি ছড়িয়ে রেখে এসেছি। কান পেতে তৃষ্ণার্তের মত শুনে নিয়েছি শত মসজিদ থেকে ভেসে আসা আজানের ধ্বনি , রাজপথের ব্যস্তসমস্ত মানুষের উচ্চকণ্ঠ , কারণে অকারণে বেজে ওঠা যানবাহনের হর্ন , ট্রাফিক পুলিশের হুইসেল ….।

মাঝে মাঝে অকারণেই মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। মনের আয়নায় ভেসে ওঠে চারতলা একটি বাড়ির বারান্দা , যেখানে বাতাসে উড়ছে আম্মুর শুকোতে দেয়া শাড়ির আঁচল, আব্বুর সবুজ গামছাখানি … আমার পুরো বাংলাদেশ হয়ে ! চোখ ভিজে ওঠে অজান্তেই ….
সেই ভেজা চোখ মুছতে ওই আঁচলখানির ছোঁয়া পেতে মন কেবলি হাহাকার করে ওঠে …. কেবলি …।।

 

এক মায়াবতী, রূপসী কিশোরীর করুণ কাহিনী

অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম


আমিরুল -বর্তমানে বয়স ৩২। সে ছোটকাল থেকে অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। তারা এক ভাই ও এক বোন। বোন বিয়ে করে জার্মান চলে যায়। তার খালু ও মা চেয়েছিল তার ঐ বোনের সঙ্গে তার খালাতো ভাইকে বিয়ে দেবে। তার মা ঐ ছেলেকে জামাই বাবা বলে ডাকতো। কিন্তু তাদের আর্থিক অবস্হা খারাপ থাকাতে ঐ মেয়ের এক ইন্জিনিয়ারের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায়।

আমিরুল মানসিক প্রতিবন্ধী হলেও সে মা- বাবার একমাত্র ছেলে সন্তান হওয়াতে, তার খালু চেয়েছিল তার সঙ্গে তার এক মেয়েকে বিয়ে দেবে। ঢাকায় আমিরুলদের একতলা একটি বাড়ী আছে। গ্রামে ও প্রচুর সম্পত্তি। কিন্তু ঐ মেয়ে এরকম হাবাগোবা, কুৎসিত চেহারার, অকর্মন্য ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয় না। এতে ঐ বাবার মনে আফসোস থেকে যায়। এ কারণে সে লোক তার কনিষ্ঠ কন্যাকে আমিরুলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করে।

এই মেয়েটির বয়স তখন ১২-১৩ বছর হবে। সে দেখতে শ্যামলা, কিন্তু খুবই সুশ্রী, মিষ্টি চেহারার, মায়াবতী মেয়ে। এ বিয়ে নিয়ে তাদের আত্মীয়দের মধ্যে মতানৈক্য হয়। তবে এ লক্ষি টাইপের, অল্প বয়সী মিষ্টি চেহারা লাজুক মেয়েটি, বাবার কথার অবাধ্য হয় না। সে রাজি হয়ে যায়।

অল্প বয়সের মেয়ে বিয়ে কি, সেক্স কি, ভবিষ্যৎ কি তেমন বুঝতো না। সবাই আশা করেছিল ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী হলেও, কিছু করতে বা বুঝতে না পারলে ও তাদের একটি সন্তান হলে, মেয়েটি তাকে নিয়ে কোন ভাবে জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে।

কিন্তু সে সব দিক থেকেই অপারগ। আমিরুল বউ কি,ভালোবাসা কি,সেক্স কি, দায়িত্ব কি – কিছুই বুঝে না। বরং তাকে খাইয়ে দেওয়া, গোসল করানো থেকে শুরু করে সব কিছু এই মেয়েকে করতে হয়। নিজ মা- বাবা যা করতে হিমসিম খায়, যা করতে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে যায়- এ মেয়ে অবলীলায় তা করে যায়। ২-৩ বছর পরেও যখন আত্মীয়রা দেখলো আমিরুল কোন সন্তান তো দিতে পারছে না,বরং তার তেমন শারিরীক সম্পর্ক করার চিন্তা, চেষ্টা, আগ্রহ, ধারনা কোনটিই নাই- তখন উভয় পক্ষের আত্মীয়রা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয় যে আমিরুলের বউয়ের বয়স এখনো কম আছে, সে সুন্দরী তাই এভাবে তার জীবন নষ্ট করা ঠিক হবে না।

সবাই তখন ঐ মেয়েকে আমিরুলকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করতে বলে।

কিন্তু এই ২-৩ বছরের মধ্যে মায়াবতী মেয়েটি এক মায়ার জালে জড়িয়ে যায়।সে বলে ওকে ছেড়ে যাবো চিন্তা করলেই আমার বুক ফেটে যেতো, কান্না পেতো।

ভাবলাম আরেকটি বিয়ে করলে সে স্বামী যে ভালো হবে তার গ্যারান্টি কি? এ যদি আবার কোন মেয়েকে বিয়ে করে সে মেয়ে পারলে আমি কেন পারবো না? তাছাড়া আমি তো অন্য সবদিক থেকে ভালো আছি। ভালো খাচ্ছি, ভালো পড়ছি,সবার আদর পাচ্ছি। এমনকি ও আমাকে পছন্দ করে, আমার মাথায় হাত রেখে সান্ত্বনা দেয়। আমি একে কিভাবে ছেড়ে যাবো? ও এতো অসহায়, ও আমার উপর নির্ভরশীল – আমি চলে গেলে ওর কি হবে? না পেলাম স্বামীর সোহাগ বা দৈহিক আনন্দ। না পারুক আমার জন্য কিছু করতে, হোক সে দেখতে কুৎসিত। সে তো সরল, অন্য পুরুষের মতন তার তো কোন বদ স্বভাব নেই-

আমার শুধু একটি সন্তান হলেই চলবে।

কিন্তু এরপর আমিরুলের আরো অবনতি হয়, অস্বাভাবিক আচরণ বেড়ে যায়, সারাক্ষণ হা করে থাকে, লালা জড়ে।তাকে সে লালা মুছে দিতে হয়, তার খামখেয়ালি পণা, অবাস্তব আবদার মেটাতে হয়। তার দাম্পত্য জীবন বলে কিছু নেই, সন্তান তো দূর থাক। অনেক মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ দেখানো হয়েছে। সবাই বলে এর উন্নতির কোন সম্ভাবনা নেই। মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বলে স্যার, আপনার অনেক প্রশংসা শুনে এসেছি। আমি সেক্স চাই না,ভালোবাসা, আদর চাই না, আমাকে শুধু একটি সন্তান পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।

একে আমি ছাড়তে পারবো না -ছাড়ার চিন্তা করলেই কান্না আছে, বুক ফেটে যায়। ওকে সুস্হ করে আমার একটি সন্তান হওয়ার ব্যবস্থা করে দিন স্যার
এ কাহিনী কি বলে:

(১) অটিজম, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলে মেয়েকে নিয়ে নিজ মা- বাবারাই যেখানে থাকে অতিষ্ঠ। সেখানে একটি রুপসী,কিশোরী কি দেখে মায়ায় জড়ালো?

(২) টাকা পয়সা,সম্পত্তির লোভে অনেক গরীব মা- বাবা তাদের সুন্দরী, গুনবতী মেয়েদেরকে ও আমিরুলের মতন সবদিক থেকে প্রতিবন্ধী ছেলের কাছে বিয়ে দিয়ে থাকে। একদিকে প্রতিবন্ধীদের ও অধিকার রয়েছে ঘর সংসার করার, আবার একটি গরীব ঘরের মেয়ের ও অধিকার, সাধ থাকে -একজন স্বাস্হ্যবান, সুস্হ, উপার্জনক্ষম, স্বাভাবিক স্বামীর ঘর সংসার করার।

এ দুয়ের সহজ ও ভালো সমাধান কি?

(৩) আমিরুলের মিষ্টি, রূপবতী বউ কিন্তু নিজ থেকে তাকে মেনে নিয়েছে। একজন কিশোরী -তরুনী মেয়ে সব ধরনের মানসিক, সামাজিক, দৈহিক চাহিদা থেকে বন্চিত থেকেও সে আমিরুলের সঙ্গে সংসার করতে হাসিমুখে রাজি।শারিরীক আনন্দের জন্য নয়, শুধু ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে তার জীবনের একমাত্র চাওয়া,আকাঙ্ক্ষা তার যেন একটি সন্তান হয়। হোক তা ছেলে বা মেয়ে। এ যুগে এমন ত্যাগী, নিবেদিতা স্ত্রী কতজনের আছে?

৪। কিন্তু এরকম ত্যাগ কি শুধু গরীবরা করবে? বা শুধু নারীরা করবে? কোন পুরুষ কি এমন কোন সবদিক থেকে প্রতিবন্ধী কোন কুৎসিত মেয়েকে এভাবে আপন করে নিবে?

এমন উদাহরণ কি আছে?

সাইকিয়াস্ট্রি, ইন্সটিটিউট অব ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ

 

বিষণ্ন চোখ ও ভুবনজয়ী হাসি

গাজী আনোয়ার শাহ্


শৈশব স্মৃতি মনে হলে ভাবি অনেক ভালোই ছিলাম, জীবন বাগানে কেবল ফুলের চাষ হতো। সুঘ্রাণ ছড়াতো মেশকের মত। হতাশা, দুরাশা, অপ্রাপ্তি, খারাপ লাগা, শূন্যতা, হারানোর ভয় কিছুই ছিলো না। জীবনটা একটা সুখ সম্পদ ছিলো ছোটবেলায়। পাপ, অন্যায়, কদর্য, হিংসা, ঈর্ষা, পরিশ্রীকাতরতা, হীনমন্নতা, নিচুতা এসবের স্থান ছিলো না। এ রাজ্যের একক অধিপতি ছিলাম আমি নিজেই।

আজ এই মুহুর্তে ভাবছি জীবনখানি দুধের সরের মত ভাসছে, এখানে আর স্থায়িত্ব বলে কিছু নেই। একটু তাপ লাগলেই সরটি দুধের সাথেই মিলিয়ে যায়, অর্থাৎ জীবনের কোন মানে খুঁজে পাই না। বৃথা মনে হয় সব।

এ জীবনে ২৭৬ টি পূর্ণিমা দেখেছি, ২৭৫ টি অমাবস্যা দেখেছি, ১৩৮ টি বসন্ত পেয়েছি, ৪৬ টি ইদ উপোভোগ করেছি, ২৩ টি বৈশাখ পেয়েছি। অনেক পাওয়া হয়ে গেছে ন্যাচারালি।

জীবনটা রূপার থালার মতোই উজ্জল হবে এমনটাই প্রত্যাশা ছিলো, কিন্তু বাস্তবক্ষেত্র আমাকে ভিন্ন কিছু বলছে। জীবন জুড়ে আছে কাঁটাসুদ্ধ গোলাপ। ফুলের কাটাই বিঁধছে দেহে। জানিতো ফুলশয্যা সবসময় আনন্দময় নয়। এখন ভয়ে আমার পা কাঁপছে। মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। জিভ সীসার মত ভারী হয়ে গেছে। জীবনকে নিয়ে আমি শঙ্কিত।

জীবন কোন ম্যাজিক নয়, কোন কাকতালীয় ব্যাপার নয়। এটি যুদ্ধক্ষেত্র। এখানে রণ সৈনিকের ভূমিকায় অগ্রগামী হতে হয়। না হলে সর্বনাশ সুনিশ্চিত। অনেক সুখ স্মৃতি মনের অজান্তেই পায়ের নিছে চাপা দিতে হয়। জীবন গদ্যময়। অতিরিক্ত মায়া করলেই মারা পড়তে হয়। বারবার থতমত খেয়ে খেই হারিয়ে আবার সম্বিত ফিরে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানোর সঠিক বাস্তবায়নই জীবন।

অভিমান ভালোবাসার মত, কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাই জীবন যদি তোমার সাথে অভিমান করে হতাশ হবার কিছু নেই। এসবই আমার এখন সান্ত্বনা। অথচ বাস্তু হারিয়ে এখন আমি পথের ভিখারি। জনমানব নেই এ দিগন্তে। ঘটে চলে অদ্ভুত কান্ড। যেন নিশুতি রাত। বিষণ্নতা চেয়ে যায় সর্বময়। অশরীরী আত্মারা হঠাৎ হঠাৎ ছুঁয়ে যায় দেহখানা। চোখ মুছতে হয় নিরবে।

আমি হতে চেয়েছিলাম মহাবীর। সর্বত্যাগী ভবঘুরে হতে চাইনি। পরিধেয় বস্ত্রও ছাড়তে চাইনি। কিন্তু হয়েছে এসব। অনিবার্য নিয়তি যে কত বিচিত্র ধরনের হতে পারে তা বুঝতে বাকি নেই। জীবনটা বরাবরই আড়চোখে তাকিয়েছে আমার দিকে।

এই পৃথিবীতে সবচেয়ে মহৎ এবং সবচেয়ে ভয়ংকর পরিকল্পনা গুলি নাকি রাতে করা হয়। সাধুরা ঈশ্বর চিন্তা করেন রাতে। কুৎসিততম অপরাধগুলি করতে অপরাধীরা রাতে বের হয়। সাধারণ মানুষের জন্য রাত বিশ্রামের কাল। আমার জন্মটাও হয়েছিলো রাতে।
আমার জীবন শিল্পীর তুলিতে আঁকা সহজ সরল কোন কল্পচিত্র ছিলো না। সংগ্রাম আর সংগ্রামই আমার জীবন। আমি নিজেই শিল্পী। আমি চির রহস্য। আমি অজানা। আমি বঞ্চিত। আমি অবহেলিত।

পর্ব -১
আনোয়ার শাহ্
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,
আরবি বিভাগ,
৪র্থ বর্ষ।

 

ছেলে বন্ধু মেয়ে বন্ধু

দ্য স্লেভ


কেস স্টাডি-১

জহীরের ক্লামমেট রুমা।
ওরা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। ওদের সকলের সাথে সকলের সম্পর্ক দারুন। একে অপরের সাথে তুই সম্বোধনে কথা বলে। তাদের মত এখানে আরও অনেক বন্ধু আছে। ওরা মোটেও প্রেমিক প্রেমিকা নয়,বরং ভাল বন্ধু। একজন আরেক জনের কথা জানে। একে অপরের সাথে সাধারণভাবে মিশে। উভয়ের পরিবারে উভয়ের যাতায়াত আছে। উভয়ের সাথে আরও ডজন ডজন বন্ধু বান্ধবী জড়িত আছে।

জহীর একদিন রুমাকে অন্য একটি মেয়েকে দেখিয়ে বলল
-ওর সাথে আমাকে একটু ফিট করে দিবি ? হঠাৎ রুমার গা জ্বলে উঠল, যদিও জানেনা সেটা কেন হল।
কিন্তু বন্ধু বলেছে, কিছু তো করতেই হবে। রুমা মেয়েটার সাথে দেখা করল এবং বলল
-জহার তোমাকে পছন্দ করে। মেয়েটা বলল-আমি কারো সাথে প্রেম করতে চাইনা। আর এটা করবও না। তুমি তো জানই আমি একা থাকা পছন্দ করি।

মেয়েটার এই না বোধক কথায় রুমা কেন যেন খুশী হয়ে উঠল। এবার সে জহীরের কাছে এসে বলল-দোস্ত আমি তোমার জন্যে অনেক চেষ্টা করেছি। সেই সকাল থেকে মেয়েটাকে অনেক বুঝালাম তোমার ব্যাপারে কিন্তু বিকেলে এসে জানলাম, সে ইতিমধ্যেই বিয়ের ব্যাপারে অন্যের বগলদাবায় চলে গেছে। বাপ মায়ের পছন্দে বিয়ে করছে। আরে বাবা তুই এংগেইজড তা আগে বলবি তো, আমি শুধু ব্যাটারী পোড়ালাম।

জহীর বলল-হুমম তাইলে আর কি, দেখি আরেকটা ধরা যায় কিনা।

এভাবে সময় চলে যায়। উভয়েই পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত। পরীক্ষার পর রুমা জহীরকে বলে, আচ্ছা পরশ ছেলেটা কিন্তু দারুন, কি বলিস? জহির হেসে বলে হ্যা পরশ ভাইকে যতটা চিনি তিনি ভালই। কিরে প্রেমে পড়লি নাকি ?

আরে নাহ, উনাকে ভাল লাগে,এইটুকই।
-উনার সাথে কিন্তু আমার জানাশোনা আছে, বলব নাকি কিছু ?
: নাহ, সময় হলে আমিই বলব।
পরশ জহীরের ১ বছরের সিনিয়র কিন্তু সম্পর্ক বন্ধুত্বের। একদিন পরশের সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্তে জহীর রোমার কথা বলে। পরশও খানিক খুশী হয়,কারন বাংলাদেশে মেয়েরা সাধারণত ছেলেদের কাছে নিজের ভাল লাগার বিষয়টি জানায় না। কিছু দিনের মধ্যেই পরশের সাথে রোমার ভাল সম্পর্ক তৈরী হয়। রোমা এসব কথা আবার জহীরকে বলে। উভয়ে নানান রকমের পরিকল্পনা উভয়কে জানায়।
চলছিল এভাবে…

একদিন পয়সা ওয়ালা এক ছেলের সাথে রুমার পরিবার তার বিয়ে ঠিক করে। রুমাও রাজি। ছেলেটা দেখতে বেশ। বিয়েতে জহীর অনেক দায়িত্ব পালন করে। জাকজমকপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হল। বর রুমাকে নিয়ে চলে গেল।

কিন্তু এরপর জহীরের বুকের ভেতর কেন যেন একটা তোলপাড় শুরু হল। বিয়ের আসরে রুমাকে অত্যন্ত সুন্দর দেখাচ্ছিল। সে ভাবছিল, আহ এতটা দিন ওর পাশে থাকলাম, আজ আরেকজন থাকবে…

পরক্ষণেই আরেক চিন্তা আসে,
নাহ একি ভাবছি…ও তো শুধুই আমার বন্ধু, আমার প্রেমিকা নয়।.. তাহলে এসব চিন্তা কেন মাথায় আসছে? না এসব ভুলিতে চাই।

ভুলতে চাইলেও সারারাত জহীর ঘুমাতে পারল না। বারবার রুমাকেই মনে পড়তে থাকল। ২দিন পর সে রুমার শশুড়বাড়ি ফোন দিল রুমার নাম্বারে। ফোন রিসিভ করল তার স্বামী। জহীর নিজের পরিচয় দেওয়ার পর রুমার স্বামী বলল-সে তো ঘুমাচ্ছে। স্বাভাবিক কথাই হল কিন্তু জহীরের কাছে মনে হল এই ফোন করাটা ভদ্রলোক ভাল চোখে দেখেনি।

জহীর চিন্তা করল না আর ফোন দিবেনা। আর তাকে তো আর সেভাবে পাওয়া যাবে না। কিন্তু জহীরের আরেক মন তাকে আরও যোগাযোগের ইঙ্গিত দিল। জহীর নিরুপায় হয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করল। রুমাও তার সাথে স্বাভাবিক কথা বার্তা বলল। এভাবে পূর্বের মত না হলেও জহীর রুমার সাথে যোগাযোগ ধরে রাখল। সে যখন একা থাকে,তখন তার নানান কথা মনে পড়ে। এমনও মনে হয়, এক সাথে এতদিন কাটালাম
-সে সময় যদি ওকে আটকাতাম, ভালই হত। আবার চিন্তা করে, নাহ সে তো ছিল শুধুই বন্ধু।

এভাবে তাদের যোগাযোগ চলতে চলতেই জহীর একদিন এক মেয়েকে বিয়ে করে ফেলে। তারপর কালে ভদ্রে রুমার সাথে কথা হয়। রুমাও তার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। একসময় তাদের যোগাযোগ প্রায় শুন্যের কোটায় চলে যায়। জহীর চিন্তা করে এক সময়ের সব থেকে বিশ্বস্ত, চমৎকার বন্ধুটি কিভাবে হারিয়ে গেল।

কেস স্টাডি-২

কামালের বন্ধু আরিফ। তারাও ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। প্রথমে ভাল সম্পর্ক ছিলনা। কিন্তু আরিফের ভাই অসুস্থ্য হলে তাকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। নেগেটিভ রক্ত পাওয়া কষ্টকর কিন্তু কামালের রক্তের সাথে মিলে। সে দেয়। এরপর থেকে যেন তাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর। চায়ের দোকান, রেস্টুরেন্ট,রাস্তার মোড়, নদীর ধার, উভয়ের বাড়ি সকল স্থানেই তারা আড্ডা মারে। এমন কোনো কথা নেই যা শেয়ার করেনা।

কামালের বিয়ে। দেখে মনে হচ্ছে আরিফের বিয়ে। সবকিছু সেই ঠিকঠাক করে। পুরো অনুষ্ঠান সেই পরিচালনা করে।

বিয়ে হয়ে গেল। কামাল বৌ আনল ঘরে। আগের মত আরিফের সাথে আড্ডা না হলেও কথা হয়। ইতিমধ্যে আরিফও বিয়ে করেছে, সেখানে কামালই বেশী দায়িত্ব পালন করেছে। উভয়ে উভয়ের পরিবার নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু তারা ঠিকই সময় বের করে মাঝে মধ্যে আড্ডাবাজি করে। আবার কখনও কখনও উভয়ের স্ত্রীসহ কোথাও ঘুরতে যায়।

কামাল এবং আরিফ উভয়কে ভুলে যায়নি। সাংসারিক কাজ তাদেরকে পরষ্পরের কাছাকাছি না রাখলেও মানুষিকভাবে তারা এখনও অটুট।



উপরের ঘটনাগুলো খুবই বাস্তব। আপনারা চোখ কান খোলা রেখে দেখবেন, এমনটাই বেশী ঘটে। একজন মেয়ের সাথে ছেলের বন্ধুত্বের স্থায়ীত্ব, মেয়ের সাথে মেয়ের এবং ছেলের সাথে ছেলের বন্ধুত্বের স্থায়ীত্ব বেশী।

একজন মেয়ে কোনো ছেলের বন্ধু হলেও এবং স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলেও তাদের উভয়ের শারিরীক, মানুসিক অবস্থার কারনে সে সম্পর্ক একই গতিতে চলে না। উভয়ে উভয়ের প্রতি আকর্ষণ অনুভব না করলেও সেখানে কিছু আকর্ষণ তৈরী হয় যা বিপরীত লিঙ্গগত আকর্ষণ এবং যা সহজাত। মূলত তারা এ বিষয়টিকে উপেক্ষা করেই নিজেদের সম্পর্কে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করে।

একজন ছেলে সাধারণত সেই মেয়েটির সাথে তার এই স্বাভাবিক বন্ধুত্ব স্থাপন করতে চায় না, যার রূপ, গুন তার কাছে ভাল লাগেনা। অথবা তার চোখে সুন্দর ও অসুন্দর এমন সব মেয়েরাই যদি তার বন্ধু হয়,তবু সে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বা যোগাযোগ রক্ষা করার ক্ষেত্রে সুন্দরীদের প্রাধান্য দেয়। অথচ ছেলেটি অন্য ছেলেদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি আমলে আনেনা। সেখানে তার সবথেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধুটি সবথেকে কুৎসিত হতে পারে। বিষয়টি মেয়েদের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য।

আমরা যদি আজকের প্রগতিশীলদের দিকে তাকাই, সহজে দেখতে পাব তারা ছেলে মেয়ের সম্পর্ককে স্বাভাবিকভাবে দেখতে বলছে। একটা ছেলে বন্ধু আর মেয়ে বন্ধুর মধ্যে পার্থক্য নেই, সেটাই তারা বলছে। এবং এভাবেই আচরণ করতে বলছে।

অথচ তারা যে প্রকৃতিকে বিশ্বাস করে, সেই প্রকৃতি অনুযায়ীই তাদের চিন্তা ভুল। এখানে বাস্তবে আমরা নারী,পুরুষের আচরণে অবশ্যই ভিন্নতা দেখী। এবং বাস্তবতা বলে নারীর সাথে পুরুষের বন্ধুত্বের চাইতে, পুরুষের সাথে পুরুষের, নারীর সাথে নারীর বন্ধুত্বের স্থায়িত্ব বেশী।

আমি এখানে স্বামী-স্ত্রীর বিষয়টি আলোচনায় আনিনি। শুধু নারী পুরুষের অবাধ বন্ধুত্বের বিষয়টি উল্লেখ করেছি।

 

সন্তান: স্বপ্নের পরিচর্যা (বুক রিভিউ-২)

অনবরত বৃক্ষের গান
|| বুক রিভিউ ||


সাহসের ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস, আপনার সন্তানকে কি আপনি সাহস যুগিয়ে থাকেন? সন্তান প্রতিপালনের জন্য বাবা-মায়েদের অবশ্যই সন্তানের কিছু মৌলিক বিষয় অবগত করার মাধ্যমে বিশ্বাস স্থাপন করাতে হবে, সন্তানকে ঝুঁকি নিতে উদ্ভূত করুন, সম্ভাবনাকে তুলে ধরুন। সন্তানকে ভুল করতে দিন, ভুল থেকে মৌলিক বিষয়টি শিখতে সহযোগিতা করুন। সন্তান সাহায্য করুন তার উৎসাহের বিষয়কে খুঁজে পেতে। কেন না, প্রতিটি আগ্রহই উৎকর্ষের শীর্ষে পৌছে দেয় সন্তানের সম্ভাবনা সমুহকে। সন্তানকে এমনভাবে তৈরি করুন, সে নিজেকে কোথায় পৌছাতে চায়,
খুঁজে পায়,
জিজ্ঞেস করুন জানার চেষ্টা করুন, জানুন।

উল্লেখ্য, বিপুল উপকরণের ভীড়ে,তাঁকে দরকারী বিষয়গুলো দিয়ে সজ্জিত করুন, তার মননশীল চারপাশ।

স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক

পিতামাতাকে তাঁর সন্তানকে জীবনের উদ্দেশ্য কি,তা বোঝাতে হবে,কেন তাঁকে সৃষ্টি করা হয়েছে,স্রষ্টা তাকে কেনই বা সৃষ্টি করলেন।জীবনের প্রতিটি কাজ যেন তাঁর সন্তুষ্টিরর জন্য হয়,তেমনি চেতনা গ্রোথিত করে দিতে হবে।

ছোট্ট সোনামনিকে কোলে নিয়ে চাঁদের আলো দেখাতে পারেন, ফুল পাখি,নদী, এমনকি প্রতিটি ক্ষুদ্র জিনিস দেখিয়েও তাঁকে রবের মহিমা শেখাতে পারেন, আল্লাহ চিনতে সাহায্য করতে পারেন।

সুন্দর করে মনীষি, নবী-রাসূলদের জীবনী শুনাতেন পারেন, যা সন্তান তাদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করতে পারে।

বাচ্চাদের সাথে নিয়ে সালাত আদায় করতে পারেন, বারবার সুন্দর বিষয়গুলো শেয়ার করতে পারেন, যাতে তারা আস্তে আস্তে বুঝতে শিখে।

তাদের সাথে রাজনৈতিক কিংবা ঐতিহাসিক যেকোন বিষয়ই আলোচনা করে শুনাতে পারেন, এমনকি কবিতাও।

যেটা তাদের চিন্তায় দাগ কেটে যায়। তাতে শৈশব থেকেই চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়বে,গভীরতা আসবে।

সন্তানের সার্বিক উন্নয়নে ইনভেস্টমেন্টের প্রশ্নপত্র

আপনি কি সন্তানের সার্বিক উন্নয়ন বলতে, প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনা ও খেলাধুলাকেই বুঝে থাকেন? আপনার সন্তানের আত্মিক উন্নয়ন হচ্ছে কি? সন্তান চাওয়া মাত্রই তা পূরণ করেন, নাকি ধৈর্যশীলতার প্রশিক্ষণ দেন?

অনুপ্রেরণা
আপনার সন্তানকে দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যে লাভে অনুপ্রেরণা দিন, যার প্রতিশ্রুতি পৃথিবীর কোনো বিনিয়োগেই দেওয়া হয়নি।

ত্যাগের মানসিকতা অর্জন
বাচ্চাদের নিজেদের মধ্যে খেলনা ভাগাভাগি করে খেলতে শিখান, এতে সে ত্যাগের মানসিকতা অর্জন করবে।

মিলেমিশে খাওয়ার অভ্যাস
খাবার খাওয়ানোর বেলায়ও মিলেমিশে খেতে অভ্যস্ত করুন।

ভালো আচরণ
পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে ভালো আচরণ করতে অভ্যস্ত করুন। সন্তানের আত্মিক উন্নয়নের দিকে নজর দিন।

শৈশব হচ্ছে চমৎকার সুযোগ,সন্তানকে সুন্দর করে গড়ার। এ সময় আপনি তাঁকে যেভাবে চান, সেভাবেই তৈরি করতে পারেন।

আপনি যদি নিজে স্রষ্টার সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেন, গভীর রজনীতে নিভৃতে তাঁকে খুঁজেন, সন্তানও তাঁর সান্নিধ্য চাইবে।বার্ধক্যের সময় রাত জেগে, আপনার সেবা করবে,উদার ও সহনশীল মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠবে। আপনি যখন কবরে শায়িত থাকবেন, আপনার জন্য দু’হাত তুলে দোয়া করবে।

লেখিকা: ইসলামিক স্টাডিজ, অনার্স ৩য় বর্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

জন্ম মরণের ইতিহাস খুঁজি

ডা. মারুফ রায়হান খান


তিনি এই নিয়ে ৪ বার গর্ভধারণ করলেন। গর্ভে ৩ মাস, ৪ মাস, ৬ মাস থেকে তারা ৩ অপূর্ণ সত্ত্বা মরে গেলো। এবারে যে এসেছে গর্ভে তার বয়স ২১ সপ্তাহ। হঠাত করে গতকাল থেকে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়ে শকে চলে গেলো পেশেন্ট…বাচ্চা তো টেকার আশা নেই-ই, মা-কে শেষ পর্যন্ত আই সি ইউতে পাঠাতে হলো। ৭ বছরের সংসার জীবনে এখনও সন্তানের মুখই দেখা হয়নি তার, ‘মা’ ডাক শুনে অন্তর জুড়ানো তো আরও অনেক দূরের গল্প।

১০ বছর, ১৫ বছর, ২০ বছর, ৩০ বছর পেরিয়ে গেলো দাম্পত্যজীবনের। কতো জায়গায় ঘুরলো, কতো ডাক্তার দেখালো। বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, সিঙ্গাপুর কিছু তো বাদ নেই। শুধু একটা সন্তানের আশায়। জীবনে আর কিচ্ছু চাওয়ার নেই। শুধু একটা সন্তান চায়। স্রষ্টার কাছে কতো কেঁদেছে, কতো আকুতি-মিনতি করেছে। যতো টাকা লাগুক চিকিৎসায়, জায়গা-জমি সব বিক্রি করে দেবে, যা করতে বলবে করবে–শুধু সন্তানের মুখটা দেখতে চায়। এক মানব জীবন পূর্ণ করতে চায়। পারে না। বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সংসারে আর সন্তান এলো না। কতো শত মানুষের দীর্ঘশ্বাস, হাহাকার আর কান্নার গল্প।

আমরা প্রায়ই এমন রোগী পাই যারা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সন্তান ধারণ করে ফেলেন। এই বাচ্চা রাখতে তারা কিছুতেই চান না। কতো বাচ্চা পূর্ণাঙ্গ শরীর ধারণ করে ফেলে, হৃদয় স্পন্দিত হতে থাকে–তবুও তারা নষ্ট করে ফেলেন। এবোর্টিফেশিয়েন্ট ওষুধ খান। এটা সেটা দিয়ে খোঁচাখুঁচি করে মেরে ফেলেন। অবৈধভাবে অবৈধ মানুষ দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে নষ্ট করিয়ে ফেলেন। ওয়ার্ডে একবার দেখেছিলাম মা’টা বাচ্চা নষ্ট হবার ওষুধ খেয়ে এসেছিলেন–হসপিটালে এসে ১৯ সপ্তাহের সেই সত্ত্বাটি যখন বের হলো, এই এতোটুকুন হাত-পা-নাক-কান-গলা-বুক-পেট…ছোট্ট বুকে ছোট্ট হৃদয়টা তখনও স্পন্দন দিয়ে যাচ্ছিলো…।

হায়রে বাচ্চা! কতোজনের পরম আরাধ্য আবার কতোজনকে বিপদে ফেলে দিয়ে, অস্বস্তিতে ফেলে দিয়ে জন্মের আগেই মরে যাবার ইতিহাস…

নদীর এপার আর ওপার…

আমার খুব প্রিয়…রবীন্দ্রনাথ…
নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস
ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস…।

 

বহে সমান্তরাল

ফাতিমা মারিয়ম


আম্মু, আমার না আব্বু আর তোমার সাথে কোথাও বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করছে। আমরা এখন আর একসাথে থাকিনা কেন?

কেয়া চুপ করে সামিরার কথা শুনে যায়।

জানো, স্কুলে আমার বন্ধুদের কাছে গল্প শুনি তারা ছুটির দিনে বাবা মায়ের সাথে কত্ত জায়গায় বেড়াতে যায়! আমরা আবার কবে একসাথে বেড়াতে যাব?

কেয়া একটু হেসে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। মেয়েকে কেয়া কিভাবে বোঝাবে সামিরা যা আশা করছে তা আর কখনো সম্ভব নয়। একসাথে তাদের আর কখনোই বেড়ানো হবেনা।

শুধুমাত্র মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কী কষ্টই না সে ভোগ করেছে। প্রায় দুইটা বছর অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেছে। প্রথম দিকে নির্যাতন ছিল শুধু মানসিক। পরে গায়ে হাত তোলা পর্যন্ত গড়ায়। আর অবজ্ঞা অবহেলা তো ছিলই।

একটা মানুষ আর কত সহ্য করতে পারে? মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে, পরিবারের মান সম্মানের কথা ভেবে জাকিরকে বহু বোঝানোর চেষ্টা করেছে। ফেরানোর চেষ্টা করেছে।

পরিবারের পছন্দেই জাকিরকে বিয়ে করেছিল সামিরা। শুরুতে জাকির এমন ছিল না। আর দশটা পরিবারের মতই বেশ সুখ আর আনন্দে জাকির কেয়ার দিন কেটে যাচ্ছিল। কখনো বড় ধরনের কোন ঝামেলা হয় নি। বিয়ের প্রায় দুই বছর পর সামিরার জন্ম হয়। তিনজনের সংসারটা যেন আক্ষরিক অর্থেই ‘সুখের সংসার’ ছিল।

কিন্তু কীভাবে যে কি হয়ে গেল! কেয়া আজো তার হিসেব মেলাতে পারে না।

প্রায় তিন বছর আগের কথা। সামিরার বয়স তখন তিন বছর। কেয়া খেয়াল করে জাকিরের আচরণে কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। সময়ের অনেক পরে বাসায় ফেরে। কারণ জানতে চাইলে দুর্ব্যবহার করে। প্রায়ই ছুটির দিনে সকালবেলা বাইরে চলে যায়। ফেরে সেই অনেক রাতে। বাসায় যতক্ষণ থাকে মোবাইল ফোনে কার সাথে যেন কথা বলেই যায়। কেয়াকে দেখলেই আচমকা কথা থামিয়ে দেয়।

ধীরে ধীরে কেয়ার মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে। পরে সে সুযোগ মত কল লিস্ট চেক করতে গিয়ে সুমির নাম্বার পায়। কেয়া জাকিরের কাছে সুমির পরিচয় জানতে চায়। কিন্তু জাকির তাকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে দেয়। জাকিরের বিভিন্ন আচরণে কেয়ার মনে সন্দেহ আরও বাড়তে থাকে।

একদিন সে সুমিকে ফোন করে। তখন সুমি অকপটে তার কাছে সব কথা স্বীকার করে। সুমি একটি এনজিওতে চাকুরী করে। আজ প্রায় এক বছর ধরে তাদের পরিচয়। অবসর সময়ে দুজনে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। কেয়া চোখে অন্ধকার দেখতে লাগল। সে কিভাবে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে?

জাকিরকে সে খুব বোঝাতে থাকে এই পথ থেকে ফিরে আসার জন্য। সে মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও জাকিরের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করে।

কিছুদিন পরে কেয়া জানতে পারে সুমির সাথে জাকিরের আর কোন যোগাযোগ নেই। সে এতে বেশ খুশিই হয়। কিন্তু এই খুশি বেশিদিন স্থায়ী হয় না। জাকির আবার আরেকজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তারপর আবার এই সম্পর্ক শেষ হয়। আবার আরেকজন……।

সুমি থেকে শুরু করে প্রতিটা মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক অনেকদূর পর্যন্ত গড়ায়। প্রায়ই সে কাউকে না কাউকে নিয়ে অফিসের ট্যুরের কথা বলে কয়েকদিনের জন্য ঢাকার বাইরে চলে যায়।
এবার কেয়ার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। সে সামিরাকে নিয়ে মায়ের বাসায় চলে আসে। মা বাবাকে সব কিছু খুলে বলে। উনারাই কেয়াকে বলেন তোর আর ফিরে যেতে হবেনা। তবুও কেয়া আশায় আশায় ছিল জাকির হয়ত অনুতপ্ত হয়ে তাকে নিতে আসবে! কিন্তু নিতে আসা তো দূরের কথা। একটু যোগাযোগও করেনা। মেয়ের প্রতিও তার বিন্দুমাত্র আকর্ষণ নেই! গতমাসে কেয়ার পক্ষ থেকেই ডিভোর্সের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

কেয়া একটি স্কুলে চাকুরী নিয়েছে। মেয়েকে নিয়ে বাবা মায়ের সাথে দিন কেটে যায়……
কেটে যাচ্ছে।

[এভাবে আমাদের সমাজে অনেক কেয়া জীবন যাপন করছে। এক বা একাধিক বাচ্চার দায়িত্ব মাকেই বহন করে তিল তিল করে বাচ্চাদের মানুষ করে তোলে। নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সব সমাজেই কেয়া বা সামিরা আছে। এছাড়াও আরও অনেক ধরনের বঞ্চনার শিকার হয়ে যেসব নারী দিনাতিপাত করছে তাদের নিয়েই আমার নতুন সিরিজ ‘ঝিনুক নীরবে সহে’।]

 

লজ্জাকর পেশা কি?

মুহাম্মদ হুমায়ন কবীর


কালো করে একটা মেয়ে ছোট একটা জবের জন্য বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সব রেস্টুরেন্টের মালিক সোজা বলে দিচ্ছে, দেখো, আমাদের এখানে কোনো লোক লাগবে না। অন্য কোথাও যাও। কালো মেয়েটা হতাশ হয়ে অন্য রেস্টুরেন্টে যায়।

এভাবে একদিন জব পেয়ে গেলো এক রেস্টুরেন্টে। মালিক প্রথম দিনই তাকে বলে দিলো, কখনও দেরি করে আসা চলবে না। তাহলে চাকরি বাতিল। সবকিছু মাথায় রেখেই মেয়েটা কাজ করে যাচ্ছে রেস্টুরেন্টে। খাবারের অর্ডার নিচ্ছে, তারপর খাবার পৌঁছে দিচ্ছে টেবিলে টেবিলে। খাওয়া শেষ হওয়ার পর টেবিল পরিস্কার করছে। কাজের কিছু অদক্ষতায় বকাও খাচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। কখনও হয়তো কোনো কাস্টমারের সামনে থেকে কফির মগ নিতে গিয়ে গায়ে একটু কফি ফেলে দিয়েছে। কাস্টমার প্রচণ্ড রেগে নালিশ করেছে মালিকের কাছে। মেয়েটি হয়তো কাঁদো কাঁদো গলায় মালিককে সরি বলে কোনো ভাবে পারও পেয়ে গেছে।

গায়ের রঙ কালো বলে সম্ভবত রেস্টুরেন্টের অন্য ছেলেরা তাকে খুব একটা পাত্ত্বাও দেয়নি কিংবা কোনোদিন তার সহকর্মীর জন্মদিনে তার বাসায় গেলো। কেক কাটার পর যে খাবার দেয়া হলো, সহকর্মী লক্ষ্য করে দেখলো কালো মেয়েটি সেটি একদমই খেতে পারছে না। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, খাবারে সমস্যা কিনা। কালো মেয়েটি বললো, না, পেট ভরা, তাই খেতে পারছে না।

কোনোদিন হয়তো রেস্টুরেন্টের অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে কম দামি গাড়িতে করে কোথাও ঘুরতেও গিয়েছিলো কালো মেয়েটি। কম দামি গাড়িতে বেশ কষ্টও হয়েছে তার। মুখ খুলে কিছু বলেনি কাউকে। সবকিছু চেপে গেছে আর ভেবে নিয়েছে, আমি অন্য দশটি মানুষের মতোই মানুষ। তারা পারলে আমি পারবো না কেনো।

দিন হয়তো এভাবেই যাচ্ছিলো। একদিন তার সহকর্মীর কেউ একজন দেখলো যে, কালো মেয়েটি রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার পর আড়াল থেকে ছয়জন বিশালদেহি মানুষ তাকে ঘিরে রাখে। রেস্টুরেন্টে শুরু হলো গুঞ্জন, কানাকানি। এভাবে ঘটনা চলে যায় সাংবাদিকদের কাছে। বেরিয়ে আসে কালো মেয়েটির পরিচয়। সবাই জানতে পারে, কালো মেয়েটি প্রেসিডেন্টের মেয়ে। তারপর দেশে দেশে আলোচনা উঠে, নিউজ হয়।

বিশ্ব জেনে যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ছোট মেয়ে সাশা ওবামা নিজের পরিচয় লুকিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন । গ্রীষ্মকালীন ছুটির ফাঁকে ম্যাসাচুসেটসের মার্থাস ভিনিয়ার্ড নামের একটি দ্বীপের ওই রেস্টুরেন্টে কাজ নিয়েছেন তিনি। অনেকদিন পর্যন্ত সাশার সহকর্মীরাও তাকে চিনতে পারেনি। পরে রেস্টুরেন্ট ঘিরে সার্বক্ষণিক ছয়জন গোয়েন্দার অবস্থান বিষয়টিকে স্পষ্ট করে তোলে।

এদিকে বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামা বলেন, -“সন্তানদেরকে একটা বয়সের পরে রাজকীয় বিলাসিতা ছাড়তে বাধ্য করেছি। কারণ তাদের সাধারণ মানুষের সাথে মিশতে হবে। অন্য দশটা মানুষের মতোই বাঁচতে শিখতে হবে তাদের।”

এবার আপনি বাংলাদেশের রাজনীতিবিদগণ এবং তাঁদের সন্তান বা আত্মীয়-স্বজনের কথা ভাবুন। নিজেদের অবস্থার কথাও ভাবা যেতে পারে।

 

শীতের পিঠাপুলি (চিতই ও ভাঁপা)

শীতকাল মানে নানান রকম মজাদার পিঠা বানানো ঘরে ঘরে। এ সময়ে ব্যস্ত সবাই রাস্তার ধারেই কিনে খেতে অভ্যস্ত তবুও আসুন দেখি দুটি পরিচিত পিঠা দুধ চিতই এবং ভাঁপা পিঠা বানানো নিয়ম।

ভাঁপা
ভাঁপা পিঠা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী পিঠা যা প্রধানত শীত মৌসুমে প্রস্তুত ও খাওয়া হয়। এটি প্রধানতঃ চালের গুঁড়া দিয়ে জলীয় বাষ্পের আঁচে তৈরী করা হয়।

লাগবে যা যা

  • চালের গুড়া,
  • লবন,
  • পানি,
  • দুধ,
  • দানা খেজুরের গুড় এবং
  • নাড়িকেল কুড়ানো

কিভাবে বানাবেন
প্রথমে তরল খেজুর গুড় চালের গুড়ার মিশিয়ে নিন এতে রং ভাপা পিঠার সুন্দর এবং মজাদার হবে লবন+পানি মিশিয়ে ডাই তৈরী করা। অর্থাৎ একদম শুষ্ক চালের গুড়িতে পরিমান মত লবণ মেশাতে হবে। এরপর দুধ ও অল্প পরিমাণ তরল খেজুর গুড় দিয়ে হালকা ভেজা ভেজা করতে হয়। মাখানোর পরও যেন ঝরঝরে থাকে, একদম ভিজে যেন না যায়। এরপর বাটিতে চালের গুড়ি দিয়ে তার উপর নারকেল কোরানো আর দানা খেজুর গুড় দিতে হবে।

এরপর আপনার পছন্দের সাইজ অনুযায়ী ভাপা পিঠা বানিয়ে ফেলুন জলীয় বাষ্পের আঁচে। পাঁচ-ছয় মিনিট পর পিঠা উঠিয়ে পরিবেশন করুন|

চিতই
ঐতিহ্যবাহী আরেক পিঠার নাম চিতই পিঠা। চালের আটা পানিতে গুলিয়ে গরম তাওয়াতে ভেজে এই পিঠা তৈরি হয়। এই পিঠা গুড় ( বিশেষত ঝোলা গুড়) দিয়ে খাওয়া হয়। এটি শুকনো অথবা দুধ ও গুড়ের তৈরি সিরায় ভিজিয়েও খাওয়া হয়।

লাগবে যা যা 

  • চালের গুড়া তিন কাপ,
  • খেজুরের গুড় ১ কেজি,
  • দুধ ২ লিটার,
  • পানি ১ লিটার,
  • পরিমান মতো লবণ এবং
  • এলাচ ৪/৫ টুকরা

কিভাবে বানাবেন
পরিমাণ মতো পানি চালের গুড়া ও সামান্য লবন মিশিয়ে মাঝারি ঘনত্বের গোলা বানিয়ে নিতে হয়। পিঠা গুলো তৈরি করবার জন্য মাটির খোলা বা লোহার কড়াই ব্যবহার করা হয়। কড়াইটি তেল দিয়ে মুছে মুছে চালের গুড়োর গোলা ঢেলে গোল গোল পিঠা তৈরি করে নিন।
সুবিধা মতো পাত্রে গোল আকারে চিতই বানিয়ে নিন। এবার ১ লিটার দুধে এলাচ, তেজপাতা আর চিনি দিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন। দুধ আধা লিটার হলে পিঠাগুলো এর মধ্যে ছেড়ে দিন।

সিরা তৈরির উপকরণ: খেজুরের গুড় ২ কাপ, দুধ ৪ লিটার, দারুচিনি ২ টুকরা, এলাচ ২টি, পানি ৪ কাপ। খেজুরের গুড় পানি দিয়ে জ্বাল দিন। এলাচ, দারুচিনি দিয়ে ফুটে উঠলে নামিয়ে গরম পিঠা গুড়ের সিরায় ছাড়ুন। তারপর জ্বাল কমিয়ে দিন। ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর পিঠা পরিবেশন করুন।

পিঠা খেতে ভালোবাসে সব বাঙালি। খুব কম সংখ্যক হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে বলা মুশকিল।

 

বই রিভিউ : পথের পাঁচালী এবং আমার অনুশীলন

গাজী আনোয়ার শাহ্


পথের পাঁচালী
লেখক: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

ইরানি মুভি “দ্যা চিলড্রেন অফ হ্যাভেন” অসাধারণ খ্যাতি কুড়িয়েছেন তার অনবদ্য সৃষ্টিশীল শিল্প প্রতিভা দ্বারা। যে মুভিটি হিন্দিতেও নকল করা হয়েছে। এক বাক্যে অসাধারণ। ছোট বাচ্চা (ভাই, বোন) দুটির কর্মকুশলতা, ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। দারিদ্র্যতার কষাঘাতে আহত পরিবারের এক অনন্য সমাচার।

বাংলা সাহিত্যের টর্চবিয়ারার, মশালবাহি লেখকের “পথের পাঁচালী” এমন একটি বাস্তব, জীবন্ত, সার্বজনীন রচনা যার স্বীকৃতি সর্বশেষ অস্কার পর্যন্ত পৌঁছেছে।

চলচ্চিত্র হিসেবেও এর খ্যাতি রয়েছে
পথের পাঁচালী ১৯৫৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রযোজিত ও সত্যজিৎ রায় পরিচালিত একটিবাংলা চলচ্চিত্র। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়েরউপন্যাস পথের পাঁচালী অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিটিসত্যজিৎ রায়ের পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। অপু ত্রয়ীচলচ্চিত্র-সিরিজের প্রথম চলচ্চিত্র পথের পাঁচালীর মুখ্য চরিত্র অপুর শৈশবকে কেন্দ্র করে বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে বাংলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের জীবনধারা চিত্রায়িত করা হয়েছে।

**৯৫৫শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার(স্বর্ণকমল পুরস্কার)
**শ্রেষ্ঠ বাংলা ভাষার চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার(রজতকমল পুরস্কার)
**৩য় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (ভারত) ভারত১৯৫৬পাল্ম দর
**শ্রেষ্ঠ মানবিক দলিল
**ওসিআইসি পুরস্কার – বিশেষ উল্লেখ১৯৫৬
** ৯ম কান চলচ্চিত্র উৎসব ফ্রান্স
১৯৫৬ ভ্যাটিকান পুরস্কার, রোম– ইতালি
১৯৫৬ গোল্ডেন কারবাও, ম্যানিলা– ফিলিপাইন
১৯৫৬ মেধার ডিপ্লোমাএডিনবরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব স্কটল্যান্ড
১৯৫৭ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য ‘সাজনিক গোল্ডেন লরেল’বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব জার্মানি
১৯৫৭শ্রেষ্ঠ পরিচালক জন্য গোল্ডেন গেট
শ্রেষ্ঠ ছবি জন্য গোল্ডেন গেটসান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব যুক্তরাষ্ট্র
১৯৫৮শ্রেষ্ঠ ছায়াছবিভ্যানকুভার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কানাডা
১৯৫৮ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ড স্ট্র্যাটফোর্ড ফিল্ম ফেস্টিভাল কানাডা
১৯৫৮ সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র, জাতীয় বোর্ড পর্যালোচনা পুরস্কার
১৯৫- যুক্তরাষ্ট্র১৯৫৯সেরা বিদেশী চলচ্চিত্রনিউইয়র্ক চলচ্চিত্র উত্সব যুক্তরাষ্ট্র
১৯৬৬কিনেমা জাম্পু পুরস্কার সেরা বিদেশী চলচ্চিত্র জন্য– জাপান
১৯৬৯শ্রেষ্ঠ অইউরোপীয় ছায়াছবির জন্য বদিল পুরস্কার– ডেনমার্ক হতে পুরুষ্কার লাভ করে।

রবীন্দ্রনাথের অনুগামী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার গ্রামীণ জীবনের ছিন্নমূল প্রান্তিক পর্যায়ের পরিবার গুলোর একটি জীবন বৈচিত্র্য শিল্পীর তুলিতে অঙ্কন করে জনমানুষের হৃদয়ে যায়গা করে নিয়েছেন।

বাংলা সাহিত্যের জীবননান্দ দাশ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পুতুল নাচের ইতিকথা”, জহির রায়হানের “হাজার বছর ধরে” এর মত অনেক লেখকের মত গ্রাম বাংলার চিত্র জীবন্ত করে উপস্থাপন করেছেন।

উপন্যাসটির প্রাধান চরিত্র দুই ভাইবোন অপু ও দূর্গা।

উপন্যাসটি সাধু ভাষায় বলে সুখপাঠ্য নয়, ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে পড়তে হবে। প্রথমে কঠিন মনে হলেও চরিত্রগুলো খুঁজে নিতে পারলে রসালো হবে।



সারসংক্ষেপ

পথের পাঁচালী’ প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর লেখা একটি বিখ্যাত সামাজিক বাস্তব উপন্যাস। এটি উপন্যাস হলেও পড়ার সময় একটিবারের জন্যও মনে হয় না যে এটা উপন্যাস। বরং লেখকের স্বচ্ছ -সাবলীল ভাষায় আমাদের সমাজের বাস্তব ও জীবন্ত ছবিটিরই একটি সহজ-স্বাভাবিক রূপ তুলে ধরেছেন এই উপন্যাসে।

আমরা, থার্ড জেনারেশান, কখনও কী ভেবেছি যে একজন নারীর কিরকম অনুভূতি হয় যখন সে ক্রমাগতভাবে নির্যাতিত, অবহেলিত, নিগৃহীত, নিষ্পেষিত হয়, কারণ তার কোন আয়ের উৎস নেই, ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, গঠনগত দূর্বলতার কারণে?

যখন একজন পরিচারিকা তার জীবনের শেষ দিনে চলে আসে, তখন তার সামাজিক পরিস্থিতি কেমন হয়? যখন কোন নারী অল্পবয়সে স্বামী হারা হয় এবং সমাজ তাকে আবার বিয়ে করবার অনুমতি দেয় না, তখন সেই নারীর সামাজিক অবস্থান কোথায় দাঁড়ায়? এই সব প্রশ্নের উত্তর অত্যান্ত নিখুঁতভাবে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পথের পাঁচালী” উপন্যাসে রয়েছে।

এই উপন্যাসের প্রথম অংশে আমরা তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম ত্রুটি বাল্যবিবাহ ও যৌতুককে দানবীয় আকার ধারণ করতে দেখি। ইন্দির ঠাকুরনের বিয়ে অল্পবয়সে এমনই এক লোকের সাথে লোকের সাথে দেয়া হয়, যে বেশি যৌতুকের লোভে অন্যত্র বিয়ে করেন এবং আর কখনও ফিরে আসে না। তখন আয়হীন ইন্দির ঠাকুরনের আবাসস্থল হয় তার পিতার বাড়িতে, এবং তাদের ও তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার দূরসম্পর্কের আত্মীয় হরিহরের বাড়িই তার স্থান হয়।

সেখানে প্রতিমুহূর্তে তাকে মনে করিয়ে দেয়া হত যে সে একজন আশ্রিতা, করুণার পাত্রী ছাড়া আর কেউ নয়। সে প্রায়শই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত, কিন্তু দিন শেষে তার পথ এসে শেষ হত হরিহরের বাড়িতেই। একবার ঘটনাক্রমে বাড়ি থেকে তাকে একেবারে বের করে দেয়া হয় এবং মর্মান্তিকভাবে তার জীবনের ইতি ঘটে। মৃত্যু হয় অসহায়ত্বেরর।

এই উপন্যাসের দ্বিতীয় অংশ ‘আম আঁটির ভেঁপু’-এ অত্যন্ত সুচারুভাবে হরিহরের সন্তানদ্বয়- বড়মেয়ে দূর্গা ও ছোট ছেলে অপুর টক-মিষ্টি সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে।

দূর্গা একপর্যায়ে অপুকে মারে, কারণ সে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে চুরি করে আম খাওয়ার ঘটনা বলে দেয়। এই কারণে তাকে প্রতিবেশীর কথাও শুনতে হয়। রাগের মাথায় দুর্গার মা সর্বজায়া ওকে বকাবকি করেন। উপন্যাসের এক পর্যায়ে ম্যালেরিয়া জ্বরের শেষ পর্যায়ে এসে দুর্গা মারা যায়।

উপন্যাসের শেষ অংশ ‘অক্রুর সংবাদে’ চিরাচরিত বাংলার বড়লোক-গরীবের বৈষম্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
লেখক সাফল্যের সাথে দেখিয়েছেন, যে একজন ব্রাক্ষ্মণ নারীর(সর্বজয়া) কি অবস্থা হয়, যখন অর্থের জন্য তাকে কাজের লোকের কাজ করতে হয়। দুর্গার মৃত্যুর পর তারা গ্রাম ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। সেখানে এক পর্যায়ে জ্বরে স্বামী হরিহরও মারা যায়। তার চোখের অশ্রু মোছার জন্যও কেউ ছিল না। সবাই তার কষ্টের সুযোগ নিতে চায়। সাহায্যের হাত কেউ বাড়ায় না।

অবশেষে সে অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ছেলে অপুকে নিয়ে তার নিজ গ্রাম নিশ্চিন্দি পুরের পথে রওনা হয়। কিন্তু সে তার সঠিক পথ খুঁজে পায় না।

কিন্তু বলাই বাহুল্য যে এই সামাজিক বৈষম্য আজকের একবিংশ শতাব্দিতে এই উন্নত সমাজেও পরিলক্ষিত হয়। বস্তুত এই উপন্যাস আদি ও বর্তমান সামাজিক উত্থান-পতন ও সামাজিক কুসংষ্কারেরই প্রতিচ্ছবি।


লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, জন্ম:১২ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪। তিনি ছিলেন একজন জনপ্রিয়ভারতীয় বাঙ্গালি কথাসাহিত্যিক। তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন।

পথের পাঁচালী ও অপরাজিত তাঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আরণ্যক, আদর্শ হিন্দু হোটেল, ইছামতী ও অশনি সংকেত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপন্যাসের পাশাপাশি বিভূতিভূষণ প্রায় ২০টি গল্পগ্রন্থ, কয়েকটি কিশোরপাঠ্য উপন্যাস ও কয়েকটি ভ্রমণকাহিনী এবং দিনলিপিও রচনা করেন।

বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী উপন্যাস অবলম্বনেসত্যজিৎ রায় পরিচালিত চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। ১৯৫১ সালে ইছামতী উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কাররবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন।

অধুনা ঝাড়খন্ডের ঘাটশিলাতে, ১ নভেম্বর ১৯৫০ তিনি মারা যান।

আনোয়ার শাহ্
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,
আরবি বিভাগ,
৪র্থ বর্ষ।

 

ভালো ও মন্দের ব্যাপারে শিশুদের দৃষ্টি উন্মোচন

আফরোজা হাসান


ভাইয়ার পাঁচ বছর বয়সি জমজ দুই পুত্রের চেহারা যেমন একদম আলাদা একে অন্যের থেকে স্বভাবেও দুইজন সম্পূর্ণ ভিন্ন! নুবাঈদ চঞ্চল, ছটফটে, মেজাজি, এলোমেলো এবং খুবই দুষ্টু স্বভাবের! আর নুসাঈব শান্ত, চুপচাপ, গোছানো, কেয়ারিং এবং খুবই পাকা পাকা কথা বলা স্বভাবের! দুই ভাইয়ের পছন্দ-অপছন্দও আলাদা আলাদা! ভাইয়ার গাছপালা ভীষণ পছন্দ। এই স্বভাবটা নুসাঈব পেয়েছে। প্রকৃতির কোলে কোলে থাকলে খুব পছন্দ করে। নুবাঈদ এর উল্টো। সে বাগানে যায়ই গাছপালার শান্তি ভগ্ন করতে। দেখা যায় নুবাঈদ বাগানে খেলার সময় টান দিয়ে একটা ফুল বা গাছের পাতা ছিঁড়ে ফেলেছে। নুসাঈব ছুটে গিয়ে গাছে হাত বুলিয়ে আদর মেশানো কন্ঠে গাছের নাম ধরে বলবে, তুমি ব্যথা পেয়েছো? আহারে… তোমাকে আদর। নুবাঈদ ছোট মানুষ তো তাই বেশি বেশি দুষ্টুমি করে। তুমি রাগ করো না কেমন! আমি পাপাকে বলে দেব যেন নুবাঈদকে বকে দেয়। তোমাকেও যেন এসে সরি বলে। তুমি পানি খাবে? আচ্ছা তোমাকে পানি এসে দিচ্ছি। এই হচ্ছে আমাদের দুই সোনা পুটুলের অবস্থা!

একে সাথে হলেই দুই ভাই খুটখাট শুরু করে দেয়। আজ নুবাঈদ বসে ড্রইং করছিল। নীল রঙ শেষ হয়ে গেলে নুবাঈদ পাশে বসে থাকা নুসাঈবকে বলল, যাও তো রুম থেকে আমাকে নীল কালারের পেন্সিল এনে দাও। নুসাঈব নিজের ড্রইং নিয়ে ব্যস্ত ছিল তাই যেতে রাজী হলো না! নুবাঈদ তখন তেড়ে এলো নুসাঈবকে মারতে। ভাইকে তার দিকে তেড়ে আসতে দেখে নুসাইব ‘আউজুবিল্লাহ হি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ বলে ফু দিতে শুরু করলো নুবাঈদের দিকে। নুবাঈদ চোখ বড় বড় করে বলল, তুমি আমাকে ফু দিচ্ছো কেন? নুসাঈব বলল, শয়তান করায় বলেই মানুষ দুষ্টু কাজ করে। মারামারি অনেক দুষ্টু কাজ। তুমি আমাকে মারতে এসেছো কারণ এখন শয়তান তোমার মধ্যে ঢুকে গিয়েছে। পাপা বলেছে শয়তানের দুষ্টামি থেকে রক্ষা পেতে আমাদের কে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। সেজন্য আমি ‘আউজুবিল্লাহ হি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ বলে তোমাকে ফু দিয়ে দিচ্ছি। যাতে শয়তানের দুষ্টমি থেকে আল্লাহর তোমাকে সাহায্য করেন। তাকে শয়তান বলেছে ভেবে নুবাঈদ ঝাঁপিয়ে পড়লো নুসাঈবের উপর।

ভাইয়া ছুটে এসে দুই পুত্রকে আলাদা করলেন। নুবাঈদ রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল, আমাকে শয়তান বলেছে। আমি শয়তান না। আমি ফেরেশতা। নুসাঈব প্রবল ভাবে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, আমি তোমাকে শয়তান বলিনি তো। শয়তান তোমার ভিতরে ঢুকে তোমাকে দিয়ে দুষ্টূ কাজ করাতে চাচ্ছিলো। আমি তাই দোয়া পড়ে শয়তানকে তাড়িয়ে দিয়েছি। নুবাঈদ তখন কিছুটা শান্ত হলো। এক মূহুর্ত চুপ থেকে সেও ‘আউজুবিল্লাহ হি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ বলে নুসাঈবকে ফু দিয়ে বলল, তুমি আমার কথা শোনোনি। আমাকে রঙ পেন্সিল এতে দাওনি। এটাও দুষ্টু কাজ। শয়তান তোমার মধ্যে ঢুকে ছিল বলে তুমি এই দুষ্টূ কাজটি করেছো। আমি ফু দিয়ে দিয়েছি এখন শয়তান চলে গেছে। যাও আমাকে নীল রঙের পেন্সিল এসে দাও। নুসাঈব এক মূহুর্ত দ্বীধা করলো এরপর রুমে গিয়ে রঙ পেন্সিল এসে দিলো নুবাঈদকে। ভাইয়া দুই পুত্রকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বললেন, মাশাআল্লাহ তোমরা দুইজনই আজ অন্নেক ভালো কাজ করেছো! এভাবে সবসময় নিজের সাথে সাথে একে অন্যের কাছ থেকেও দুষ্টু শয়তানকে তাড়িয়ে দিতে আল্লাহর সাহায্য চাইবে। পাপার মুখ দেখে প্রশংসা শুনে তো দুইজনই একদম গদগদ হয়ে গেলো।

দুই বাবা সোনার ঘটনাটি টাইম মেশিন হয়ে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল তিন বছর অতীতে। ইউরোপের এই বৈরী পরিবেশে শরীয়তের আলোকে সন্তানদেরকে গড়ে তুলতে চান এমন কয়েকটি পরিবারকে নিয়ে একটি ফ্যামেলি প্রোগ্রাম করতাম আমরা নিয়মিত। বাচ্চাদের শরীয়তের আলোকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নানান ধরণের ইভেন্ট ছিল আমাদের সেই প্রোগ্রমে। ছোট বাচ্চাদেরকে গল্প আকারে কিংবা ছোট ছোট প্রশ্নাকারে শেখালে ওরা মজা যেমন পায় তেমনি শিখতেও পারে দ্রুত। আমরা এমন অনেক প্রশ্ন তৈরি করেছিলাম ইসলামের মূল বিষয় সমূহকে ঘিরে। যেমন, তোমার সৃষ্টিকর্তা কে? পৃথিবীর সকল মানুষকে কে সৃষ্টি করেছেন? গাছ গাছালী এবং ফল ফলাদি কে সৃষ্টি করেছেন? সকল কাজ কোন দিক থেকে শুরু করতে হয়?যে কোন কাজ করা,যাওয়া,খাওয়া,পড়া,শোয়া, শুরু করতে হয় কি বলে?কেন সকল কাজের শুরুতে আমরা বিসমিল্লাহ বলবো? ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন প্রশ্নে প্রশ্নে ওদেরকে শয়তান সম্পর্কেও জানিয়েছিলাম। বুঝিয়ে বলেছিলাম শয়তান কিভাবে কুমন্ত্রণা দেয় মনে। কিভাবে মানুষকে দিয়ে দুষ্টু কাজ করায়! কিভাবে ভালো কাজ থেকে বিরত রাখে! সাথে সাথে এটাও বুঝিয়ে বলেছিলাম আমরা, কেন ভালো কাজ করতে হবে, কেন দুষ্টু কাজ এড়িয়ে চলতে হবে। নিজের সাথে সাথে অন্যদেরকেও ভালো কাজ করার পরামর্শ দিতে হবে, দুষ্টু কাজ করা থেকে বিরত করতে হবে।

শয়তান সম্পর্কে বাচ্চাদের সাথে প্রোগ্রাম করে আসার পর তো সব বোনদের বাসা থেকে ফোন আসতে শুরু করলো। কেউ বলল, আপু কি শেখালেন আমার ছেলে তো সারাদিন ফাইটিংয়ের উপরেই থাকে অদৃশ্য শয়তানের সাথে! আরেকজন বললেন, একটু পরপরই শুনি আমার মেয়ে বিড়বিড় করে ‘আউজুবিল্লাহ হি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ পড়ছে। জিজ্ঞেস করলে জবাব দেয়, শয়তান যাতে আমার কাছে আসতে না পারে তাই আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইছি। অবশ্য আমার নিজের ঘরের অবস্থাও একই রকম ছিল। নাকীব কখনো ছুটে এসে বলতো, আম্মুতা জানো একটু আগে কি হয়েছে? শয়তান এসে আমাকে খুবই দুষ্টু একটা কাজ করতে বলেছিল। আমি শয়তানকে ইচ্ছে মত মেরে গুড়াগুড়া করে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছি। আবারো কখনো ওর রুম থেকে প্রচন্ড ক্যারাটে প্র্যাকটিসের শব্দ ভেসে এলে কি হচ্ছে জানতে চাইলে জবাব দিতো, আম্মুতা শয়তানকে মারছি আমি। বাচ্চারা নতুন কিছু শিখলে প্রথম প্রথম যা হয় আরকি। তবে অন্য আর সব কিছুর চেয়ে এই ব্যাপারটায় খুব জোড়ালো প্রভাব ছিল বাচ্চাদের সবার মধ্যে। তারা অনেক সাবধান হয়ে গিয়েছিল দুষ্টুমির ব্যাপারে। টুকটাক মিথ্যা যা বলতো সেটার পরিমাণ আরো কমে গিয়েছিল। ভালো কাজের আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল।

আবারো অনুভব করেছিলাম যে, বাচ্চারা আসলে অনেক নরম, কোমল ও পবিত্র মনের অধিকারী। ভালোর প্রতি, কল্যাণের প্রতি ওদের মানসিক ও আত্মিক টান সহজাত। ওরা সুন্দর থাকতে, সুন্দর দেখতে এবং সুন্দর কিছু করতে পছন্দ করে। ওদের মনের ভেতরটা আসলে বিশাল বড় সাদা এক ক্যানভাস। যে রঙয়ের আঁচড়ই সেই ক্যানভ্যাসে পড়ে ওরা মুগ্ধ হয়ে সেটাকে অবলোকন করে। তারপর পাশে পড়ে থাকা সেই রঙয়ের তুলিটাই তুলে নেয় নিজে কিছু আঁকার জন্য। তাই বাচ্চাদের সামনে কোন কিছুকে উপস্থাপন করার সময় সতর্কতার প্রয়োজন খুব খুব খুব বেশি। বিশেষ করে শরীয়তের বিধি-নিষেধ, জীবনের চলার পথের কল্যাণকর ও অকল্যাণ বিষয়সমূহ, ভালো কোনটা, মন্দ কোনটা ইত্যাদি সবকিছু খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতে হবে। এবং ছোটবেলা থেকেই নিজের সাথে সাথে অপরকেও ভালো কাজে উৎসাহিত ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারেও দায়িত্ব পালনের শিক্ষা দিতে হবে। ছোটবেলাতেই যদি ভালো কিছু করার পথের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী এবং মন্দ পথকে আকর্ষনীয় ও সহজ করে সামনে পেশ কারী শয়তান সম্পর্কে সাবধানতার অবলম্বন করতে এবং সেই ব্যাপারে প্রভুর কাছে সাহায্যে প্রার্থনা করার শিক্ষার বীজ বুনে দেয়া যায় শিশুদের মনে! এবং সেই বীজকে বিকশিত করার লক্ষ্যে পরিমিত যত্ন নেয়া হয়, আগাছা দূরীভূত করা হয়! তাহলে ইনশাআল্লাহ ভালো ও মন্দ সম্পর্কে মোটামুটি স্পষ্ট ও সঠিক ধারণা নিয়ে শিশুরা বড় হতে এবং সেই অনুযায়ী জীবনকে পরিচালনা করতে শিখে যাবে ধীরে ধীরে!

 

ঘর সাজানোর কারুকাজ

অল্প খরচে এবং অলস সময়গুল ধরে রাখতে সবচেয়ে আনন্দময় কাজ হল ঘর সাজানো। আজকের আয়োজনে নানান রং এর কাগজ দিয়ে ঘর সাজানোর কৌশল শিখি। চলুন এখনি দেখে ফেলি কিভাবে নিজের প্রসাদকে অপূর্ব করে তোলা সম্ভব কাগজ দিয়ে।

কাগজের প্রজাপতি

আপনার বাসায় মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য তৈরি করা যাবে সামান্য কাগজ দিয়ে। আপনি নিজেই অবাক হয়ে যাবেন। সহজ উপায়ে ঘরের চেহারা পাল্টে দেবার জন্য কাগজের প্রজাপতি হতে পারে একটি সুন্দর উপাদান। এছাড়া আপনি ফুল, লতা পাতা এবং নানান ন্যাচারাল জিনিজও তৈরি করতে পারেন কাগজ দিয়ে।

কাগজের প্রজাপতি বানানোর কৌশলটি ধাপে ধাপে শিখে। আমরা সহজে ঘর সাজাতে পারি।

কি কি লাগবে

আর্ট পেপার পুরু এবং বড় সাইজের এক কালারের কাগজ আপনার বিভিন্ন প্রিন্ট পছন্দ হলে সেটিও রাখুন, পেন্সিল, কাঁচি, আঠা।

ধাপে ধাপে কৌশল

১ম ধাপ
প্রথমেই প্রজাপতি সিলেকশন(রংবাহারি, নাকি এক কালার, নাকি প্রিন্ট)। পেন্সিল দিয়ে প্রজাপতি আঁকতে পারেন অথবা যদি আপনি আর্টে পারদর্শী না হন তাহলে বিভিন্ন সাইজের প্লাস্টিক বা কাগজের প্রজাপতি কিনে নিতে পারেন ছোট থেকে বড় সাইজের দু একটা প্রজাপতি। এবার ছাপ দিয়ে দিয়ে আঁকুন।

২য় ধাপ
আঁকা অংশের পাশ দিয়ে কাঁচি দিয়ে প্রজাপতিগুলো কাটুন। ইচ্ছেমত প্রজাপতি বানাতে পারেন। তবে ছোট থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বড় করে অনেকগুলো প্রজাপতি বানালে দেখতে সুন্দর ও আকর্ষণীয় লাগবে। ৩০-৫০ টি বানাতে পারেন। খুব নিখুঁত করে কাঁটার চিন্তা করবেন না তাহলে মন খারাপ হতে পারে।

৩য় ধাপ
কাটা হয়ে গেলে। আঠা লাগানোর পালা। আঠা লাগানোর আগে প্রজাপতিগুলো মাঝখানে হালকা ভাঁজ করে নিন। যাতে দেয়ালে লাগানোর পর দেখতে সুন্দর ও জীবন্ত মনে হয়। কোথায় লাগাবেন এবং কতগুল লাগাবেন তার উপর সুন্দর বিষয় নির্ভর করবে না বরং আপনার পছন্দের উপর সৌন্দর্য নির্ভর করে।

আপনার যে কোন রুমের দেয়ালে বা শুধু ড্রয়িং রুমে অথবা এক পাশে দেয়ালের এই প্রজাপতিগুলো আটকে দিতে পারেন। খুবই সহজ উপায়ে এবং তেমন খরচ ছাড়াই রুমের ডেকোরেশন হয়ে যাবে।

 

বইয়ের সাথে সখ্যতা

বৈশালী রহমান


বাংলা সাহিত্যের একটা শাখা নিয়ে আমার একটু ক্ষোভের মতো আছে। সেটা হলো, ভৌতিক গল্প।

গত এক বছর ধরেই ফেসবুকিং কমিয়ে পড়াশোনা করছি প্রচুর। শুধু রিসার্চের পড়াশোনাই নয়, বাংলা সাহিত্য, গল্প, উপন্যাস, নন ফিকশন ইত্যাদিও ঝালাই করে নিচ্ছি খানিকটা।

সাহিত্যের অন্য শাখাগুলো যেমন রোমান্টিক, রহস্য, রম্য, ট্র্যাজেডি ইত্যাদিকে বাংলা সাহিত্য এবং সাহিত্যিকেরা আপন করে নিলেও এই হরর বা ভৌতিক শাখাটা কেন যেন অবহেলিতই রয়ে গিয়েছে। অধিকাংশ সাহিত্যিকরাই ভূতের গল্প লিখতে গিয়ে সেটাকে করে ফেলেছেন একেবারে ছেলেমানুষি বিষয়, হাস্যকর বস্তু, যেমনটা দেখা যায় প্রখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের “অদ্ভুতুড়ে সিরিজ” এ, নয়তো বিদেশী পিশাচ বা জম্বি কাহিনির অক্ষম অনুকরণ, যেটা করেছেন রহস্য পত্রিকা বা সেবা প্রকাশনী কেন্দ্রিক লেখকেরা।

বাংলার প্রকৃতি, পরিবেশকে আপন করে নিয়ে তার ভিত্তিতে গা ছমছমে ভূতের গল্প লিখতে দেখেছি খুব কম লেখককেই। তবে ভূতের গল্পে চমৎকার মানবিক প্রলেপ নিয়ে এসেছেন তারাশঙ্কর, মনোজ বসু বা পরশুরাম।

পরশুরামের বিখ্যাত গল্প “ভূষণ্ডীর মাঠে” তে ধর্মীয় কিছু সংস্কার নিয়ে ভূতের সংলাপের মাধ্যমে চমৎকার স্যাটায়ার রয়েছে। আবার “মহেশের মহাযাত্রা” পরশুরাম সুলভ স্যাটায়ার দিয়ে শুরু হলেও শেষ দিকে বেশ গা ছমছম করেই ওঠে। হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় নামে এক স্বল্প পরিচিত লেখকও চমৎকার কিছু ভূতের গল্প লিখেছেন। শরদিন্দু তাঁর বিখ্যাত চরিত্র বরদাচরণের জবানিতে লিখে গেছেন কয়েকটি অসাধারণ ভৌতিক গল্প।

বাংলায় প্রথম সম্পূর্ণ ভৌতিক উপন্যাস লেখেন ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, যদিও তাঁর লেখার মধ্যেও “শিশুদের জন্য প্রযোজ্য” ছাপই প্রবল। বড়োরা ওইসব লেখা পড়ে ভয় পাবে, এই সম্ভাবনা কম। মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারও চমৎকার দুটি পিশাচ উপন্যাস এবং কিছু ভৌতিক ছোটো গল্প লিখেছেন। কিন্তু সেইসব লেখার অধিকাংশের মধ্যেও কিছুটা মৌলিকতার অভাব আছে বলে মনে হয়েছিল আমার কাছে। বিদেশী গল্পের ছাপটা বেশ প্রকট। তবে কিছু কিছু গল্প সত্যিই চমৎকার।

আমার মতে, সার্থক ভৌতিক গল্প সেটাই, যেটা দেশ-কাল-পরিস্থিতি-পরিবেশকে তুলে ধরে এমন একটা ভয়ংকর আবহ এর সৃষ্টি করবে, যাতে করে গল্প পড়ার পর পাঠকের একা একা অন্য রুমে যেতেই ভয় লাগবে। যেখানে বাংলায় সার্থক ভূতের গল্পেরই অভাব, সেখানে ভূতের গল্পের একটা অনবদ্য অনুষঙ্গ, তন্ত্র, তান্ত্রিক সন্ন্যাসী প্রভৃতি সহযোগে বেশ “উপাদেয়” ভৌতিক গল্পের অভাব থাকাটা স্বাভাবিক। এই অভাব খানিকটা পূরণ করেছিল প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর হাতে সৃষ্ট এবং পরবর্তীতে তাঁর সুযোগ্য পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এর হাতে জীবন্ত রূপ পাওয়া চরিত্র তারানাথ তান্ত্রিকের গল্পগুলো। তারপর হাতে এলো অলাতচক্র। তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এর আরেকটি মাস্টারপিস। এরপর তন্ত্র এবং তান্ত্রিক চরিত্র সম্বলিত ভূতের গল্প পড়ার জন্য মনটা আনচান করছিল। কিছু থার্ড ক্লাস গল্প হাতে এসে মনটাই খারাপ হয়ে গেল।

মনে হচ্ছিল, আমি লিখলেও বোধহয় এর চেয়ে ভালো লিখতে পারতাম। ঠিক এ সময়েই খানিকটা রহস্যজনক ভাবেই ঠিক গতকাল রাত দুটোর সময় হাতে চলে এলো গজেন্দ্রকুমার মিত্র মহাশয়ের “অলৌকিক কাহিনি সমগ্র”।

মিত্রমশাইয়ের নাম যারা মনে করতে পারছেন না, তাঁরাও অনেকেই বোধহয় তাঁর রচিত বিখ্যাত উপন্যাস “পৌষ ফাগুনের পালা”র নাম শুনে থাকবেন। এটি মূলত একটি ট্রিলজি, যার প্রথম দুটি হলো “কলকাতার কাছেই” এবং “উপকণ্ঠে”। এই ভদ্রলোক যে এত অসাধারণ ভূতের গল্প লিখতে পারেন এটা জানা ছিল না। কী অসাধারণ পরিবেশ তৈরি করেন তিনি! অভিজ্ঞতা নিশ্চয় জানেন ভূতের গল্পে ভয় পাওয়ার জন্যে পরিবেশ একটা বিরাট ভূমিকা রাখে। আর মিত্রমশাইয়ের গল্পের আরেকটি অসাধারণ বিষয় হলো প্লট। হাজারবার শোনা বা পড়া ভূতের গল্পের চিরাচরিত প্লটের মতো নয়।

বইটির সব গল্প ভালো লাগেনি। অন্তত দশটি গল্প নিম্নমানের মনে হয়েছে। তবে ছয়শ পৃষ্ঠার একটি সংকলনে এটুকু ছাড় বোধহয় দেওয়াই যেতে পারে।

তারানাথ তান্ত্রিক এবং অলাতচক্র পড়ার পরে যাদের কাছে অন্য সব ভূতের গল্পই পানসে বলে মনে হচ্ছে, তারা এই বইটি পড়ে ফেলতে পারেন। সময়টা বৃথা যাবে না। বিশেষ করে শীতের রাতে কম্বলের তলায় ঢুকে বইটা পড়লে ভয় পাওয়ার গ্যারান্টি ১০০%।

লেখিকা: ডেপুটি ডাইরেক্টর, বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

মাতৃত্বকালীন ছুটি ও প্রাসঙ্গিক কথা

ডা. সাকলায়েন রাসেল


মাত্র মাসের ব্যবধানে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেল..দু’জন মা! না.. গ্রামের কোন এক অজপাড়া গাঁয়ের জরিনা খাতুন না..। আমিও কাউকে ছোট করে বলছি তা ঠিক না।

মারা গেল একেবারে শিক্ষা ও আর জ্ঞানের আলোয় পরিপূর্ণ দুই মা..দু’জনেই পেশায় চিকিৎসক! সবে মাত্র জীবন শুরু করেছিল..দেশকে, পরিবারকে কিছু দেয়ার আগে হারিয়ে গেল একেবারেই অকালে.. একজনতো গেল পেটে ৯ মাসের বাচ্চা সহ!

খবর দু’টো চোখ ভিজিয়ে দেয়..জীবনের সব ছন্দ যেন মুহুর্তেই থামিয়ে দিতে চায়..প্রশ্নরা আঁছড়ে পড়ে মনের কোণে?

চলে যাওয়াটা যদি এতোই স্বাভাবিক.. বেঁচে থাকার তবে কেন এত্তো আয়োজন!!!

কেন এত্তো স্বপ্নকে আলিঙ্গন করা?
প্রেগন্যান্সিটাকে আমার কাছে.. ১০ নং বিপদ সংকেতের মত মনে হয়… চুল থেকে মাথা পর্যন্ত যেন মায়ের শরীরে ঝড় বইতে থাকে.. এ ঝড়কে আড়াল করার প্রবণতা প্রথম চোখে পড়ে গ্রামে..শহরেও কিছুটা!

বউকে ডাক্তার দেখাননি কেন?..এমন প্রশ্নের উত্তরে কিছু পুরুষের উত্তর থাকে..ওর তো কোন সমস্যা ছিল না তাই দেখাইনি! ভাবখানা এমন যে প্রেগন্যান্ট তো কি হইছে, অসুস্থ তো আর না! অথচ প্রেগনেন্সি নিজেই একটা বড় রোগের নাম!

অন্তত আমার কাছে! যতই তাকে ফিজিওলজিক্যাল কন্ডিশন বলা হোক না কেন…গ্রামের অজ্ঞ স্বামীর চেয়েও এগিয়ে যাচ্ছে শহরের আধুনিক মেয়েরা! গ্রামের মেয়েদের মত শহরের মেয়েরা  আড়াল করে না!..স্মার্টলি শো করে! গ্রামের ‘সাধ’ অনুষ্ঠান তাই শহরের আধুনিকতায় ‘বেবি শোয়ার’ হয়ে যায়!

শুধু তাই না…তারা জানে বর্ধিত দেহ অবয়বকে কিভাবে আড়াল করতে হয়!..জানে কিভাবে দেহের আগলি ভাবকে মেক আপের আড়ালে লুকিয়ে রাখতে হয়!

প্রেগন্যান্সিতে তাই তারা সৌন্দর্যের আলাদা শিল্পে পরিণত করে! থামতে হয় না তাই শহরের মেয়েদের.. কিংবা থামার সুযোগ পায় না শহরের কর্মজীবী মহিলারা..প্রেগন্যান্সিতে সমভাবে সচল থাকে তারা!

ছুটি মাত্র ৬ মাসের!!

আপনার ইচ্ছায় আপনি তা যেকোন সময় নিতে পারেন! অনেকেই… ঠিক অনেকে না, প্রায় সবাই তাই হিসাব করে..কষ্ট করে প্রেগন্যান্সির সময়টি চালিয়ে নেই ছুটি ছাড়া..বাচ্চা হলে ছুটিটা বেশি কাজে লাগবে…

আর সে কারণে প্রায় সবাই বাচ্চা হওয়ার পর ছুটি নেয়! অনেকে কানাঘুষা করে.. ডাক্তার মেয়েদের বাচ্চাকাচ্চাদের ইদানিং অনেক বেশি সমস্যা হচ্ছে.. বৃহৎ অর্থে কর্মজীবী মায়েদের সন্তানদের মধ্যে সমস্যাযুক্ত সন্তান জন্মদানের হার বেশি!! না এ ব্যাপারে কোন গবেষণা আমার জানা নেই… এসব শুধু বাতাসে শুনি! হতে পারে এর পিছনে,

২ কারণ:

  •  প্রেগন্যান্সিকালীন বিশ্রামহীনতা কিংবা অতিরিক্ত কর্মক্ষম থাকা।
  •  চিকিৎসক কিংবা কর্মজীবী মায়েরা বেশি সচেতন বলে…আগেভাগেই তারা রোগ নির্ণয় করছেন!

অথবা.. আপনি চাইলে আমাকে গালমন্দ করতে পারেন… লোকটা নারী বিদ্বেষী… ইনিয়ে বিনিয়ে চাকরি জীবি মায়ের বিপক্ষে…আর হাউজ ওয়াইফ মায়ের পক্ষে বলছে!

সরি, আমি ঠিক সেভাবে ভাবছিনা! ভাবছি…
কোথাও তো একটা কিছু আছে আছে..না থাকলে চিকিৎসক কিংবা কর্মব্যস্ত “”মায়েদের সন্তানের এতো বেশি শারীরিক ও মানসিক সমস্যা কেন হচ্ছে?””

সমাধান তবে কি?

ছুটিটাই যেহেতু প্রধান সমস্যা..আমি তাই আমি এটা নিয়েই কথা বলতে চাই!

সিউর না…তবে শুনেছিলাম…ইন্ডিয়ায় একজন কর্মজীবী মা মাতৃত্বকালীন ছুটি সব মিলিয়ে ৫ বছর পান..এ ছুটি তিনি এক সাথে নিতে পারবেন না… ভেংগে ভেঙে মোট ৫ বছর নিতে পারবেন!

এতে দুই সুবিধা:

  • বাচ্চা জন্ম দেয়ার সময় লম্বা ছুটি নিয়ে বিশ্রামে থাকতে পারে।
  • ছেলে মেয়েদের পরীক্ষার সময় পাশে থাকতে পারে!

এই দুই সুবিধার পিছনে বড় সুবিধা হল…পরিবারের লোকজন চাকুরীজীবী মা কে স্বাগত জানায়…ধরেই নেয় যে, চাকরী করলেও বাচ্চাকাচ্চা লালনে মা ভাল সময় দিতে পারবেন!

কারণ, এই বাংলাদেশেরই অনেক মা সন্তানের কারণেই এক সময় চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাচ্চা পালনকেই অধিক শ্রেয় মনে করেন!

জানি এটা অনেক বড় স্বপ্ন.. পুরণ হতে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে! কিন্তু স্বপ্ন দেখতে দোষ কি!!

৫ বছর না হোক…৯ মাস তো পাব!! এর মধ্যে ৩ মাস প্রেগনেন্সি পিরিয়ডে… বাধ্যতামূলকভাবে! বাকী ৬ মাস…সন্তান লালন পালনে! তাও যদি পাওয়া না যায়…

তবে ৬ মাসের কয়েক মাসেক বরাদ্দ থাকুক প্রেগনেন্সি পিরিয়ডে! সন্তানরা আসুক সুস্থতা নিয়ে… মায়েরা বাঁচুক সন্তানদের আঁচলে রেখে…ভরসার সবটুকু জায়গা জুড়ে!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

অপেক্ষা

আখতারুজ্জামান সেলিম


অপেক্ষাতে কেটে যায় কতো যে সময়
যেজন প্রতীক্ষা করে সেই শুধু জানে
সময় কেমনে কাটে।
বিমানের প্রতীক্ষায় আছি কুর্মিটোলায়
মহাখালী ভরা থাকে ঈদের সময়
ঘরে ফেরা মানুষের শ্বাসে
বৃষ্টির প্রতীক্ষায় থাকে চাতকচাতকী
ভাটায় নোঙ্গর করে
জোয়ারের পতীক্ষায় থাকে নায়ের মাঝি
প্রেমিকার প্রতীক্ষায় কাটেনা সময়
জন্মের প্রতীক্ষা করে নবদম্পতি
মৃত্যুর পতীক্ষায় থাকে ফাঁসির আসামী,
আমি প্রতীক্ষায় একটি কবিতার
সারাটা জীবন প্রতীক্ষায় থাকে মৃত্যু।

 

কেন হচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদ?

ফাতেমা শাহরিন


কাজটি অত্যন্ত কঠিন বলা যে, সমাজে অবক্ষয়, নাকি অপসংস্কৃতির প্রভাব, অথবা নারী পুরুষভেদে মারাত্মকভাবে ‘ইগো’ প্রব্লেম। হা, আত্ম অহমিকা বন্ধনকে নাজুক করে দেয় এটা সত্যি কিন্তু আধুনিকতা এবং উচ্চ শিক্ষার হার যে হতে পারে তা বড় বড় পত্রিকায় আসছে শিরোনাম হয়ে। আজকের আধুনিক এবং দ্রুতগতির জীবনে সম্পর্কের বিচ্ছেদ রাষ্ট্রীয় কোন নতুন সমস্যা হয়ে দাড়িয়ে পড়বে কিনা বলা মুশকিল। কেন এই সম্পর্ক গুল ভালবেসে গড়েও ভেঙ্গে পড়ছে?

আসুন দেখি কিছু পয়েন্ট:

১) সেক্সচুয়াল সমস্যা

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এক নম্বর সমস্যা হল সেক্সচুয়াল সমস্যা। লোকলজ্জা অথবা অজানা জ্ঞান এব ভুল শিক্ষার জন্য একটি সুমধুর দাম্পত্য জীবন সূচনা লগ্নে অন্ধকার ছায়াতলে ডুবে যেতে পারে। এজন্য সুস্থ যৌন মিলন একটি অপরিহার্য অঙ্গ। যখন স্বামী-স্ত্রী পরিতৃপ্ত যৌন মিলনে ব্যর্থ হয় তখন তাদের মাঝে দূরত্ব বাড়তে থাকে। পরিশেষে ঘুমের ঘর থেকেই দাম্পত্য জীবন সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়।

২) সম্পর্কের অবনতি

দাম্পত্য জীবনে মতবিরোধ ও মনোমালিন্য থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে তাকে বেশী বাড়তে দেয়া যাবে না। তা যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, কেউ কারো সাথে কথা বলছে না তাহলে সমস্যা জটিলতর হয়ে ক্রমান্বয়ে তা বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়ায়।

৩) নির্যাতন

নির্যাতন তিন প্রকার, কখন শারীরিক, বস মানসিক, সেক্সচুয়াল। যা একটি সম্পর্ককে হত্যা করে। এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় বিপদ জনক কারণ হল, দৈহিক ভাবে অত্যাচার, মার-পিট ও রুক্ষ আচরণ অথবা মানসিকভাবে নির্যাতন তথা অপমান, হেয় প্রতিপন্ন, গালাগালি করা। বৈবাহিক বন্ধনে সেক্সচুয়াল নির্যাতন ভয়ংকর রূপে হলেও সমাজে হয়ে অনেক নারী বা পুরুষ নিরবে চুপ থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিন যুদ্ধ শেষে সম্পর্ক মরে যায়।

৪) দাম্পত্য জীবনে অনীহা

দাম্পত্য জীবনের ব্যাপারে বিতৃষ্ণা একটি জীবনে এক ঘেয়েমী ও বিরক্ত ছড়িয়ে দেয়। এটি সংসার ভাঙ্গার একটি কারণ। দীর্ঘ দিন ঘর সংসার করার পর যদি দেখা যায়, ভালোবাসার উষ্ণতা শীতল হয়ে পড়েছে। পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছে। তাহলে পরিণতিতে তা তালাকের দিকে গড়ায়। দীর্ঘদিন গোপন প্রেম, তারপর গোপন বিয়ে, এক সময় সবকিছু ফাঁস। দাম্পত্য জীবনের প্রতি অনীহার জন্ম নেয়।

৫) মাদকাসক্তি

মাদকাসক্তি ব্যক্তির নানান রকম সমস্যা দেখা দেয়, রাগ বেড়ে যায়, সন্দেহ জন্ম নেয়, এমনি প্রচন্ড অত্যাচারী হিসেবে পরস্পর এর প্রতি সহিংস্র হয়ে পরে। দাম্পত্য জীবনকে ধ্বংসের অতল তলে নিয়ে যায়। এর ধ্বংসাত্তক দিক অনেক। ফলে.. প্রচুর অর্থ অপচয়, অপর পক্ষের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন, শারীরিক নির্যাতন, সন্দেহ জনক অবৈধ সম্পর্ক আর পরিশেষে দাম্পত্যে জীবন ধ্বংস ‘তালাক’।

৬) বিয়ের পর অবৈধ সম্পর্ক

স্বামী অথবা স্ত্রীর পক্ষ থেকে যে কেউ যদি পরকীয়ায় লিপ্ত থাকে তাহলে পরবর্তীতে তা বৈবাহিক জীবনের ইতি টানতে বাধ্য করে। তা জীবনে একটি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাড়িয়ে যায়। পরকীয়া মূলত: দাম্পত্য জীবনে বিশ্বাস ঘাতকতার শামিল।

আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি দম্পতিকে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করে তাদেরকে একটি সুস্থ, সুন্দর, মধুময়, ও বরকতময় পরিবার গঠন করার তাওফীক দান করুন। এ জন্য পারষ্পারিক ভালোবাসার উষ্ণতা ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা প্রত্যেক জরুরী। রেফারেন্স: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব। সুখী ও সুন্দর পরিবার গঠন করবো।

মনোবিজ্ঞান

 

আলোক কণিকার পিছু পিছু

ডা.ফাতিমা খান


প্রতিদিন রোগী দেখা শেষ করে বাসায় ফিরতাম রাত দশটায়। বাসায় এসে ঠান্ডা পানিতে গোসল সেরে আয়েশ করে ধোঁয়া ওঠা চা/কফি খাওয়া ছিল আমার সে সময় প্রতিদিনের অভ্যাস। হয়তো ভাবছেন, এত রাতে চা-কফি ? ঘুম আসবে তো ?
আসবে…ঘুম আসতে চাইলে আসবেই, আর না আসলে কিছু করার নাই, চা-কফির দোষ দিয়ে লাভ নেই, আমার ঘুম এমনিতেই খুব কম । সারারাত ‘নির্ঘুম প্রহরী’ হয়ে জেগে থাকার অভ্যাস আমার বহুদিনের।

বাসায় ঢোকা মাত্র প্রায়ই দিনই কারেন্ট চলে যেত। আমাদের এলাকার লোডশেডিং এর সময়-জ্ঞানটা ছিল অসাধারণ! প্রতিদিন একই সময় বিদায় নিত, আবার ঠিক সময়মতই চলে আসত। আমার বুয়া রিমির মা ঝটপট ‘বিকল্প বাতি’র ব্যবস্থা করতে করতে ভেংচি কেটে বলত, ”ভাবী আইছে না, অহনই কারেন্টের যাওন লাগব”।

আমি হাসতাম। রিমির মায়ের এই কথায় একটা অব্যক্ত মমতা ছিল। ব্যাপারটা আমার সয়ে গেলেও রিমির মার কষ্ট হত এই ক্লান্ত আমার জন্য। ঢাকা শহরে দিনশেষে সহি-সালামতে ঘরে ফিরতে পেরেছি এই তো অনেক … প্রতিদিন শুকরিয়া নামাজ পড়া উচিত। কারেন্ট চলে গেলে যাক, আমি আমার মত আমার চা/কফির কাপটা নিয়ে সোজা চলে যেতাম আমার ছোট্ট বারান্দাটায়।

হিজিবিজি দালানের ঢাকা শহরেও উপরতলার ফ্ল্যাটগুলোর খোলা জানালা বা বারান্দা দিয়ে চমৎকার ফুরফুরে বাতাস আসে। আর যদি হয় দক্ষিণমুখী বারান্দা, তাহলে ত আর কথাই নাই ! পূর্ণিমারাতে চাঁদের আলোর একটুখানি হলেও দালানের গা গড়িয়ে তৃষার্ত শহরে ছড়িয়ে পড়ে। বর্ষার দিনে ঝিরঝির বৃষ্টি সামান্য হলেও বারান্দাটা ভিজিয়ে দেয়। এই বারান্দায় বসেই আমি ভেজা মাটি, বৃষ্টি আর বাতাসের একটা মিশ্র সুবাস নিতাম।

সেদিন রাত বাজে প্রায় ১ টা । ল্যাম্পের আলোয় বই পড়ছিলাম। এসময় বাসার সবাই দিব্যি ঘুমে তলিয়ে থাকে। সবাই বলতে আমার ছেলে, রিমির মা (ঘরের কাজের জন্যই তাকে রাখা হয়েছিল কিন্তু তাকে সবাই আমার আত্নীয়া মনে করত) আর রুবি, আমার ছেলের খেলার সাথী।
রিমির মা কখন যে এসে আমার সামনে দাড়িয়েছে টের পাইনি। টেবিল ল্যাম্প এর কুসুম আলোতে তাকে কিছুটা উজ্জ্বল লাগছে, রিমির মার চেহারায় অদ্ভুত একটা মায়াবী আর দুখী দুখী ভাব আছে। আজ মনে হচ্ছে এখানে আরও একরাশ মেঘ এসে জড় হয়েছে !

– কিছু বলবে?
_মা ফুন করছিল ভাবী।

– কি বলল ? সব খবর ভাল ? তোমার রিমি কেমন আছে ?
_ভাবী, রিমির বাপ আইছে বাড়িত।
– তো ?

_রিমিরে নেবার চায়। মাও এর হাতে পায়ে ধরে মাফ চাইছে। আমাদের রাখি আর কুনুখানে যাইব না।

এরকম শপথ রিমির বাপ আগেও অনেকবার করেছে, আবার অনেকবার ভেঙ্গেছেও । রিমির জন্মের আগেই এই লোকটা তার বউ আর অনাগত সন্তানকে ফেলে চলে গিয়েছিল অন্য কারো সংসারের অর্ধাংশ পূর্ণ করতে। এরপর ফিরে এসেছিল ঠিক, কিন্তু কিছুদিন পর সেই আবার একি ঘটনা ঘটায়। প্রতিবার সে হাতে পায়ে ধরে মাফ চায়।

যে বারবার কথা রাখবে না তার কথা দেয়ার কোন অধিকার আছে কি ?
রিমির মা রাও যে কি! এত অন্যায় সহ্য করে কেন?
কিন্তু ওদেরই বা কি দোষ!

আমাদের দেশের সমাজটাই তো এমন, যেকোন সাংসারিক বা সামাজিক ক্রন্দলের নন্দঘোষ হল বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরা। এদের কাজ হল মুখে ছিপি এঁটে, কানে তুলা দিয়ে, চোখে কালো কাপড় বেঁধে কোমড়ে বাঁধা দড়ি মোতাবেক চলতে থাকা। এই অদৃশ্য দড়ির পরিচালক বদলযোগ্য। দড়ি-চালক ভালো হলে তো ঠিক আছে, কিন্তু খারাপ হলে জীবনটা একেবারেই অসহনীয় করে দেয়।

আদর্শহীন মুর্খ সমাজব্যবস্থার এই একটা বিশাল সমস্যা। কিন্তু এগুলো কে বোঝাবে কাকে ?

– তুমি এখন ঘুমাও তো রিমির মা। কাল ভেবে দেখব।

কিছুই ভাবতে পারছিলাম না। আমার ছোট্ট সংসারে রিমির মায়ের অবদান ছিল অনেক বেশী। টাকা-পয়সা দিলে যতই কাজের মানুষ পাওয়া যাক না কেন, অন্যের সংসারকে আপন করে সাজিয়ে গুছিয়ে সবটুকু ভালবাসা দিয়ে কাজ করবে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। রিমির মায়ের স্বভাব-চরিত্র আর অভ্যাসগুলো অন্য আর দশজন কাজের মানুষের মত ছিল না। তাছাড়া কোথাও না কোথাও ওদেরকে আমার একাকীত্বের সাথীও মনে হত। জীবনের অতিরিক্ত ব্যস্ততায় আমি মেশিনের মত হয়ে গিয়েছিলাম , মাঝে মাঝেই কোন অনুভূতি কাজ করত না । আমার স্বস্তিময় জগতটা তখন খুব ছোট..শুধু আমার ছোট্ট ঘরটুকু। সারাদিন রোগবিদ্যা, ছাত্র-ছাত্রী, রোগী আর চিকিৎসার পাট চুকিয়ে ছুটে আসতাম আমার ছোট্ট জগতে, যেখানে আমার সোনামণিটা আমার জন্য অপেক্ষা করত সারাদিন, ওর উচ্ছলতা, দূরন্তপনা আর মিষ্টি হাসির আমেজে ভরে থাকত আমার স্বর্গসম নীড়।
আমার অনুপস্থিতিতে রিমির মা-ই ওকে বুকের মাঝে আগলে রেখেছে। রিমির মা চলে গেলে আমার চেয়ে বেশী কষ্ট হবে ওর। ওর অবুঝ চোখ দুটো খুঁজে বেড়াবে অনেক দিনের চেনা কোলটাকে! কিন্তু শুধু নিজের কথা ভাবলে তো আর চলবে না, আমিই বা এত স্বার্থ্পর হই কেমন করে ??…কি করি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।

বিদায় বেলায় রিমির মা অনেক কেঁদেছিল। সে কান্নায় কোন শব্দ ছিল না। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল ওখানে অসহায়ত্ব চিরস্থায়ীভাবে বাসা বেধেছে। অনিশ্চয়তার এক আর্তচিৎকার বেরিয়ে আসতে চাইছে ওর মুখ ফুটে। যে মানুষ বারবার ধোকা খেয়েছে সে জেনে বুঝে আরেকবার ধোকার জালে তখনই পা ফেলে যখন কোথাও না কোথাও তার বাধ্যবাধকতা থাকে।

রিমি ওর দূর্বলতা। ও বড় হয়েছে। তার ভবিষ্যত চিন্তা করে রিমির মা আবার ফিরে যাবে শ্বশুরবাড়ি। পরে কি হবে, আদৌ তার মেয়েটার পিতৃ-ঠিকানায় আশ্রয় দীর্ঘস্থায়ী হবে কিনা এগুলো ভাবার অবসর নাই। ওদের জীবনটা কূলহীন নদীতে ভাসিয়ে দেয়া নৌকাটার মত। ঝড়, ঝঞ্জা, বাতাস, জোয়ার-ভাটায় কখনও নাও টলমান তো আবার কখনো মৃদু গতিতে চলমান। রাত হলে দিনের অপেক্ষা…দিন এলে রাতের আয়োজন। অনেক কিছু না-পাওয়া জীবনেও ওদের সীমাহীন স্বপ্নই একমাত্র সম্বল।

যুক্তি বা বাস্তবতার পেশীবহুল হাতটা ওদের স্বপ্নের সাথে পাঞ্জা লড়ে হার মানে বারবার। বিত্তবান আর বিত্তহীনদের স্বপ্নের মাঝে একটা বিশাল তফাৎ হল বিত্তবানদের স্বপ্নগুলো ওদের ঘুম কেড়ে নেয়… আর বিত্তহীনরা স্বপ্নই দেখে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর। রিমির মায়ের চোখে মুখে এরকম এক স্বপ্ন আমি দেখেছি অনেক বার। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য সে অবিরাম ছুটে চলেছে…… ।

একদিন আফসোস করে বলেছিল, ” পোলা হইলে তো কথাই ছিল না ভাবী, মাইয়া।

লেখিকা কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

শিশুর মৃগীরোগ বা এপিলেপ্সির প্রতিকার এবং চিকিৎসা

ডা.মারুফ রায়হান খান


সারা পৃথিবী জুড়েই সবেচেয়ে বেশি যে স্নায়ুরোগটি পাওয়া যায় তা হচ্ছে এপিলেপ্সি বা মৃগীরোগ। পৃথিবীতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন এপিলেপ্সির রোগী আছে, যার মধ্যে ৪০ মিলিয়ন রোগীই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।

এপিলেপ্সি কী?

খুব সহজ ভাষায় বোঝাতে গেলে, বারবার খিঁচুনি হবার প্রবণতা যেখানে কোনো ধরনের প্ররোচনা থাকে না–তাকেই এপিলেপ্সি বলে। এটি সাধারণত ২০ বছরের আগে কিংবা ৬০ বছর বয়সের পর শুরু হয়।

কী কী কারণকে দায়ী করা হয় এ রোগের পেছনে?

১. অনেকক্ষেত্রেই কোনো কারণ জানা যায় না।
২. শিশু মায়ের গর্ভে থাকার সময় কিছু জীবাণু দিয়ে যদি আক্রান্ত হয়ে থাকে, যেমন : TORCH, HIV।
৩. জন্মগতভাবে মস্তিষ্কের গঠনে যদি ত্রুটি থাকে।
৪. হাইপোক্সিক ইশকেমিক এনকেফালোপ্যাথি (সাধারণত নবজাতক জন্মের পর দেরি করে কাঁদলে এ সমস্যা হয়ে থাকে)।
৫. মস্তিষ্ক বা মস্তিষ্কের আবরণে কোনো ইনফেকশান, যেমন : মেনিনজাইটিস।
৬. মস্তিষ্কে কোনো আঘাত।
৭. মস্তিষ্কে কোনো টিউমার।
৮. কিছু ক্রোমোজোমাল ডিজঅর্ডার ইত্যাদি।

কী কী ভাগে ভাগ করা যায়?

১. পার্শিয়াল সিজার : এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের দুটো ভাগের মধ্যে একটি ভাগ আক্রান্ত হয় এবং দেহের যেকোনো একপাশে খিঁচুনি হয়।
২. জেনারেলাইজড সিজার : এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের দুভাগই আক্রান্ত হয় এবং পুরো শরীরেই খিঁচুনি হয়।

পার্শিয়াল সিজার আবার ৩ ধরনের রয়েছে।

ক. সিম্পল পার্শিয়াল সিজার : এক্ষেত্রে দেহের এক অংশে খিঁচুনি হয় এবং খিঁচুনির পর রোগীর জ্ঞান ঠিক থাকে।
খ. কমপ্লেক্স পার্শিয়াল সিজার : এক্ষেত্রে দেহের এক অংশে খিঁচুনি হয় কিন্তু রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়।
গ. পার্শিয়াল সিজার উইদ সেকেণ্ডারি জেনারালাইজেশান : খিঁচুনি দেহের যেকোনো একদিকে শুরু হয় এবং তারপর সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়।

কী কী বিষয় মৃগীরোগের এ খিঁচুনিকে ত্বরান্বিত করতে পারে?

১. কম ঘুম হওয়া
২. যারা মৃগীরোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা যদি ওষুধ না খান
৩. মদ্যপান (বিশেষ করে মদ্যপান ছাড়ার সময়)
৪. শারীরিক এবং মানসিক অবসাদ
৫. ঝিকিমিকি আলোর সংস্পর্শে যেমন : টেলিভিশন এবং কম্পিউটার স্ক্রিন
৬. উচ্চ শব্দ, মিউজিক, পড়া, গরম পানিতে গোসল ইত্যাদিও অনেকের ক্ষেত্রে খিঁচুনির উদ্রেক করতে পারে।

কী কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়?

১. ইলেক্ট্রোএনকেফালোগ্রাম : এটি অনেকটা ইসিজি পরীক্ষার মতো, তবে এটি মস্তিষ্কের। কখনও কখনও এটা দিয়ে এপিলেপ্সি রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে যদি এ পরীক্ষা নরমাল আসে তার মানে এই না যে তার এপিলেপ্সি থাকার সম্ভাবনা নেই।
২. কিছু কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের এম.আর.আই করতে হতে পারে।

কীভাবে চিকিৎসা করা হয়?

১. প্রথমেই রোগীর মা-বাবাকে রোগের প্রকৃতি, কী কী বিষয় এ রোগকে ত্বরান্বিত করতে পারে, চিকিৎসা কী, নিয়মিত ওষুধ খাবার গুরুত্ব কী এবং এ রোগের আরোগ্যসম্ভাবনা কেমন সে সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলা হয়।
২. মৃগী রোগের নির্দিষ্ট ও উপযুক্ত ওষুধ দেওয়া হয়, যা এন্টিএপিলেপ্টিক ড্রাগ নামে পরিচিত।

কতোদিন ওষুধ খেয়ে যেতে হবে?

যদি রোগী খিঁচুনি-বিহীন কমপক্ষে দুই বছর পার করে, মৃগীরোগের ওষুধ ধীরে ধীরে পরবর্তী ৬-১২ সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ করা যায়।

জীবনযাত্রায় কী কী পরিবর্তন আনতে হয়?

১. উজ্জ্বল এবং ঝলকানো আলো পরিহার করতে হবে। যেমন : টিভি, ভিডিও গেইমস।
২. আগুন থেকে দূরে থাকতে হবে।
৩. পানিতে ঝাঁপ দেওয়া বা সাঁতার কাটা থেকে বিরত থাকা উচিত।
৪. গাছে চড়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

এ রোগের ভবিষ্যত কেমন?

১. ৭০% রোগীর ক্ষেত্রেই খিঁচুনি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
২. ৫-১০% রোগীর ক্ষেত্রে খিঁচুনি বারবার হতে পারে এবং অনিয়ন্ত্রিত থাকতে পারে।
৩. ৩০% রোগীর ক্ষেত্রে রোগের শুরু থেকেই “চিকিৎসা করা/নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

মেলবন্ধনেই অপরূপ বিছানাকান্দি

ডা.মনির হোসেন


স্বচ্ছ জলধারা।অনাবিল আনন্দে জলপাথরের বিছানায় শুয়ে বসে গোসল আর হৈ-হুল্লোড়ে সময়ের হিসেব হারিয়ে ফেলার অবস্থা আমাদের। শুধু পা ভিজিয়ে ক্ষান্ত থাকেন না এখানে আসা মানুষগুলো। শরীর এলিয়ে দিয়ে যখন চোখ বুজে আসে তখন একে পাথরে ভরা বাথটাব বলেই মনে হবে।নীল আকাশ আর থরে থরে বিছানো পাথর। দূরে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ পাহাড়ের হাতছানি। এসব কিছুর মেলবন্ধনেই অপরূপ বিছানাকান্দি।হ্যাঁ, সিলেটের স্বর্গ বিছানাকান্দি। স্রোতধারায় দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে পারবেন অন্য এক রাজ্য।

সীমান্তের ওপার থেকে বয়ে আসা স্বচ্ছ জলধারা আর পাথরের মায়াজালে যেখানে হারিয়ে যাবেন নিমিষেই। যেখানে মেঘ, পাহাড় আর জলধারার মিতালী আপনাকে আপন করবে গভীর মমতায়।

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টবড়ই অদ্ভুত এই জলের রাজ্য। কোনো গাছের হাঁটু পর্যন্ত ডুবে আছে পানিতে। একটু ছোট যেগুলো, সেগুলো আবার শরীরের অর্ধেকই ডুবিয়ে আছে জলে। কোথাও চোখে পড়বে মাছ ধরার জাল পেতেছে জেলেরা। ঘন হয়ে জন্মানো গাছপালার কারণে কেমন অন্ধকার লাগবে পুরো বনটা। মাঝেমধ্যেই গাছের ডালপালা আটকে দিবে পথ। হাত দিয়ে ওগুলো সরিয়ে তৈরি করতে হবে পথ। চলতে হবে খুব সাবধানে। কারণ রাতারগুল হচ্ছে সাপের আখড়া। বর্ষায় পানি বাড়ায় সাপেরা ঠাঁই নেয় গাছের ওপর। দেশের একমাত্র স্বীকৃত সোয়াম্প ফরেষ্ট বা জলার বন “রাতারগুল” সিলেটে অবস্থিত। সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলার বন কি? পানিসহিষ্ণু বড় গাছপালা একটা বনের রূপ নিলে তবেই তাকে বলে সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলার জঙ্গল। এই বনের আয়তন তিন হাজার ৩২৫ দশমিক ৬১ একর। এর মধ্যে ৫০৪ একর বন ১৯৭৩ সালে বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। মূলত প্রাকৃতিক বন হলেও বেত, কদম, হিজল, মুর্তাসহ নানা জাতের পানি সহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে বন বিভাগ। বিশাল এ বনে রয়েছে জলসহিষ্ণু প্রায় ২৫ প্রজাতির উদ্ভিদ। পাখিদের মধ্যে আছে সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল ও বাজ। শীতে মাঝেমধ্যে আসে বিশালকায় সব শকুন। আর লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ঘাঁটি গাড়ে বালিহাঁসসহ হরেক জাতের পাখি। এ দৃশ্য আসলেই দূর্লভ!

শুকনো মৌসুমে ডিঙ্গি নিয়ে ভেতরে গেলে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আপনাকে উড়ে সরে গিয়ে পথ করে দিবে।

 

নিভে যায় নক্ষত্রের আলো 

ফাতিমা শাহীন


দরজার যন্ত্র পাখিটি ডেকে উঠলো দুবার ৷ রিডিং রুমের কাউচে বসে একটি বইয়ে ডুবেছিলাম মন্ত্রমুগ্ধের মত৷ ডোরবেল শুনে মুখ তুললাম,
থাক,
ঘরে তো লোকজন আরো আছে, খুলে দেবে দরজা কেউ না কেউ৷ আবারও ডুবলাম বইয়ের গহীনে ৷

‘আপা , পাও দুইটা একটু তুইল্লা বসেন , নিচটা ঝাড়ু দিয়া যাই …’

হুকুম মত পা তুলে বসলাম৷ তাকালাম রাহেলার দিকে, থমথমে মুখে রাজ্যের কালো মেঘ ভর করে আছে৷ চোখের কোনায় শুকিয়ে থাকা অশ্রুর দাগও কি চোখে পড়ল আমার!

‘দাঁড়াও রাহেলা!’ কি হয়েছে তোমার? শামসু বুঝি আবারও …..

আমার কথা শেষ হবার আগেই দৌড়ে এসে আমার নামিয়ে বসা পা দুটোর উপর যেন ভেঙ্গে পড়ল রাহেলা৷ একটু সহানুভুতির ছোঁয়া যেন ওর বুকের ভেতর জোর করে চেপে রাখা, ঝরনার মুখ খুলে দিয়েছে কেউ৷ জলপ্রপাতের বাঁধভাঙ্গা জলের মত অশ্রুর প্লাবন বয়ে চলেছে ওর চোখে৷

আস্তে করে শুধালাম ,

‘কি হয়েছে রাহেলা? খুলে তো বলবে আমায়, নইলে বুঝব কেমন করে?’

একটু শান্ত হয়ে আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বলল,

‘আমার দুইন্যার দিন মনে হয় শ্যাষ গো আপা! কাইলও জরির বাপে আর ফুফায় ফুফু মিল্যা এমুন মাইর মারলো আমারে! আর কইছে, আমারে আর আমার ভাইরে জন্মের মতন শিক্ষা দিয়া দিব!’

বুঝলাম এতক্ষণে! রাহেলার একমাত্র ননদ-নন্দাই ওর ঘরের আশপাশে ঘর ভাড়া নিয়ে এসে উঠেছে ভাই আর মায়ের কাছাকাছি থাকবে বলে৷ আর এসেই শুরু করেছে ভাইয়ের সংসারের উপর খবরদারি৷ সুখের সংসার বলতে যা বোঝায় তা রাহেলার না থাকলেও এতদিন অন্তত নিজে উপার্জন করে খেত বলে স্বস্তিটা ছিল, এখন যেন সেটুকুর ওপরেও শকুনের নজর পড়েছে ! এখন শ্বাশুড়িও যোগ দিয়েছেন তার আদরের মেয়ের সঙ্গে৷ উদ্দেশ্য একটাই, যদি ফাঁকতালে রাহেলার ভাইয়ের কাছ থেকে নগদে কিছু আদায় করা যায়, তবে মন্দ কি!

ওদিকে রাহেলার ভাইয়ের অবস্থা আরো করুণ৷ নিজে করে লোহা লক্করের কারখানায় শ্রমিকের চাকরি, ওদিকে ঘরে রোগে ভোগা বুড়ো বাপ আর ৩/৪ টা অবুঝ বাচ্চার অনাহারক্লিষ্ট মুখ৷ সে ই বা বোনের শ্বশুরবাড়ির খামতি মেটায় কেমন করে!

রাহেলার কান্না আবার বাস্তবে ফিরিয়ে আনলো আমায়৷

‘ভাইরে কত কইছি, ভাইগো, আমারে এই জাহান্নাম থিকা ছাড়াইয়া লইয়া যাও৷ আমি তোমার ঘাড়ে বইয়া খামুনা, কাম কইরা নিজের ভাত নিজেই জোটামু৷ তাও তুমি আমারে এগো হাত থিকা বাচাও, নাইলে এরা আমারে জানেই মাইরা ফালাইবো৷’

অঝোরে কাঁদতে থাকে রাহেলা, আমারও চোখ দুটো বাষ্পাচ্ছন্ন হয়ে যেতে থাকে ধীরে ধীরে।

প্রায় চার পাঁচ দিন হয়ে গেল


রাহেলার খবর নেই৷ ওকে অনেকবার করে বলা আছে , কোনকারনে আসতে না পারলে আমাকে অন্তত একটা খবর যেন পৌঁছায়৷ কখনো কখনো জরিকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছে বটে, কিন্তু এখনকার মত এভাবে না জানিয়ে এতদিন ডুব দিয়ে কখনো তো থাকেনি রাহেলা!

বাজার এসেছে৷ কর্তা পাঁচমিশালী মাছের চচ্চরি পছন্দ করেন, তাই আজ নিজে বাজারে গিয়ে মনের সুখে কেজিখানেক পাঁচমিশালী গুঁড়া মাছ নিয়ে সহাস্যবদনে হাজির হয়েছেন৷ রাহেলা আসেনি আজ৷ কে কুটবে মাছ, কে বাছবে সবজি! সে চিন্তা তো আর কর্তাকে করতে হয়না! তিনি তো বাজার করে দিয়েই নিশ্চিন্ত আর সময়মত টেবিলেও হাজির!

গজ গজ করতে করতে ডালায় মাছ নিয়ে সবে কুটতে বসেছি, হঠাৎ বাইরে চাপা একটা গোলমাল শুনে কান সজাগ করলাম৷ শুনলাম অনেক নারী পুরুষের সম্মিলিত চাপা আতঙ্কভরা ফিসফাস! উঠে দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখি দারোয়ান সিদ্দিক ভাইও ফ্যাকাশে মুখে দাঁড়িয়ে আছে তাদের মধ্যে৷

‘কি হয়েছে সিদ্দিক ভাই? এত মানুষ কেন এখানে? ‘

‘আপা! সর্বনাশ হইছে! আমাগো রাহেলা …..’

আমার হৃদস্পন্দন যেন লহমায় বন্ধ হয়ে এলো৷ কি হয়েছে রাহেলার! দৌড়ে নিচে নামলাম৷ নিচে দাঁড়ানো শোকার্ত নারী পুরুষেরা হাউমাউ করে যা বলল, তাতে আমার ঝলমলে রোদ্দুরঘেরা সকালটাতে যেন মুহুর্তেই অন্ধকার অমাবস্যার রাত নেমে এলো৷ রাহেলা নেই! ওর পাষন্ড স্বামী আর লোভী, ঝগড়াটে আর হিংসুটে ননদ মিলে ওর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে! ওর চিত্কার শুনে আশপাশের মানুষ ছুটে এসে আগুন নিভিয়েছে বটে, কিন্তু ততক্ষণে শরীরের বেশিরভাগই শেষ হয়ে গেছে চিরতরে৷ হাসপাতালে নিতে নিতেই নিষ্ঠুর এই পৃথিবী ছেড়ে ওপারের দিকে যাত্রা শুরু করেছে রাহেলা!

আমি বজ্রাহত হয়ে বসে পড়লাম৷ আমার চোখের সামনে ভাসতে লাগলো রাহেলার হাসি ভরা মুখের ছবি৷ কত যে সুখ দুখের কাহিনী উজাড় করে ঢেলেছে আমার কাছে! কখনো হাসিমুখে শুনতাম, কখনো মৃদু বকে আগে হাতের কাজ শেষ করতে তাড়া দিতাম৷ তাতে হয়ত তার মুখের প্রদীপ্ত সুর্যের উপর পাতলা সাদা মেঘ জমত ক্ষণকালের জন্য, পরক্ষনেই আবার সেই মেঘ সরে গিয়ে প্রখর রোদ্দুর খেলা করত শ্যামলা মুখখানিতে৷ আজ সেই রাহেলা নেই! চিরদিনের জন্য চলে গেছে অভিমানিনীর মত, কিভাবে বিশ্বাস করব আমি!

গলায় স্বর ফুট ছিলনা আমার, তবুও এক মহিলাকে জিজ্ঞাস করলাম,

‘ওর ভাই কোথায়? সে জানে তার বোনের খবর?’

‘হ আফা, অর ভাই আছাড়ি খাইয়া কানতাছে আর পুলিশের হাতে পায় ধরতাছে বইনের লাশের লাইগা, নিয়া মাডিডা য্যান দিতে পারে৷’

বোনের লাশ প্রার্থী অসহায় ওই যুবকটির জন্য করুণা হতে লাগলো আমার৷ তার দরিদ্র ঘরে ভাতের দাবিদার একজন বাড়বে বলে বোনের হাজারও আর্তি উপেক্ষা করেছে সে৷ বরং মানিয়ে গুনিয়ে স্বামীর সংসারকেই আপন করে নিতে কত বুঝিয়েছে বোনকে৷ আজ এসেছে বোনের লাশ নিয়ে যেতে! লাশের ভাতের দরকার হয়না, হাজারো চাহিদা মেটানোরও প্রয়োজন পড়েনা৷ বরং বোনটি লাশ হয়ে চিরকালের জন্য তার কাঙ্গাল ভাইটিকে দায়মুক্ত করে দিয়ে গেল!

চোখে আঁচলচাপা দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম ৷ এক রাহেলার চলে যাওয়ায় পৃথিবী তো থেমে নেই৷ অনেক কাজ পড়ে আছে ঘরে৷ ঘড়ি ধরে সেসব তো শেষ করতে হবে আমাকেই!

 

‘ডায়রিয়ার জীবাণু’ থেকে শিশুদের বাঁচার উপায়

ডা. মারুফ রায়হান খান


পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হচ্ছে ডায়রিয়া। প্রতি বছর অনূর্ধ্ব -৫ বছরের শিশুদের ১০ ভাগই মারা যায় ডায়রিয়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বারবার পাতলা পায়খানা হওয়াই ডায়রিয়া।

কী হয় ডায়রিয়ার ফলে?

১. শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও ইলেক্ট্রোলাইটস (সোডিয়াম, পটাশিয়াম, বাইকার্বোনেট) বেরিয়ে যায় পাতলা পায়খানার মাধ্যমে। এর ফলে রোগী পানিশূন্যতায় এবং রক্তে ইলেক্ট্রো- লাইটসের অসামঞ্জস্যতায় ভোগে।

২. পাতলা পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক বেরিয়ে যায়। যা হলে রোগীর আরোগ্য দীর্ঘায়িত হয়, আর তা শিশুকে পরবর্তীতেও ভোগায়।

৩. ডায়রিয়াতে শিশুর ওজন কমে যায়। কারণ: খাওয়া কমে যায় – পুষ্টি উপাদান শোষণ হওয়া কমে যায়। – শরীরে পুষ্টি উপাদানের চাহিদা বেড়ে যায়।

ডায়রিয়া কয় ধরনের?

৩ ধরনের। যথা :

১. একিউট ওয়াটারি ডায়রিয়া
২. পারসিসটেন্ট ডায়রিয়া
৩. ডিসেন্ট্রি।

এর প্রত্যেকটি নিয়েই আমরা সামনে আলোচনা করব ইন শা আল্লাহ।

একিউট ওয়াটারি ডায়রিয়া

যখন ডায়রিয়া ১৪ দিনের কম স্থায়ী হয় তখন তাকে একিউট ডায়রিয়া বলে। এক্ষেত্রে রোগী প্রতিদিন অনেকবার (৩ বার বা তারও বেশি) পাতলা পায়খানা করে। – এক্ষেত্রে পায়খানায় রক্ত থাকে না। – কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাথে বমি এবং সামান্য জ্বর থাকতে পারে।

কোন কোন জীবাণু দিয়ে এটি হয়ে থাকে?

১. রোটা ভাইরাস
২. ভিব্রিও কলেরি (ব্যাকটেরিয়া)
৩. ই. কোলাই (ব্যাকটেরিয়া)

শিশুর ডায়রিয়া

পানিশূন্যতার প্রকারভেদ ও মারাত্নক পানিশূন্যতারর চিকিৎসা একটি ডায়রিয়ার রোগীর কী কী যাচাই করা হয়?

১. পাতলা পায়খানা কতোবার হয়েছে?
২. পাতলা পায়খানা কতোদিন ধরে হচ্ছে?
৩. পায়খানার সাথে কি রক্ত যায়?
৪. বমি হয়েছে কি?
৫. প্রস্রাবের পরিমাণ কেমন?
৬. কী খাবার এবং পানীয় খেয়েছিল?
৭. সম্প্রতি কি এন্টিবায়োটিক বা অন্য কোনো ওষুধ খেয়েছিল?
৮. পরিবারে বা প্রতিবেশিদের মধ্যে কারও ডায়রিয়া বা ডায়রিয়াজনিত মৃত্যু হয়েছে?
৯. চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন : – পানিশূন্যতার কোনো চিহ্ন আছে কিনা – পেট ফুলে গেছে কিনা – মারাত্নক অপুষ্টির কোনো চিহ্ন আছে কিনা।

পানিশূন্যতার চিহ্নগুলো কী কী?

. যদি নিচের ৪টি চিহ্নের মধ্যে শিশুর দুটো বা তার বেশি চিহ্ন উপস্থিত থাকে, তবে শিশুর “মারাত্নক পানিশূন্যতা” দেখা দিয়েছে বলে জানতে হবে।
১. নেতিয়ে পড়া/ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
২. চোখ খুব ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া ৩. কোনো কিছু পান না করতে পারা অথবা পান করলেও খুব দুর্বলভাবে পান করা।
৪. ত্বক টান দিয়ে ছেড়ে দিলে তা খুবই ধীরে ধীরে আগের জায়গায় ফিরে যাওয়া (২ সেকেণ্ড বা তারও বেশি সময়)।

. যদি নিচের ৪টি চিহ্নের মধ্যে শিশুর দুটো বা তার বেশি চিহ্ন উপস্থিত থাকে, তবে শিশুর “কিছু পানিশূন্যতা” দেখা দিয়েছে বলে জানতে হবে।
১. অস্থিরতা, অল্পতে বিরক্ত হয়ে যাওয়া। ২. চোখ ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া। ৩. খুব আগ্রহসহকারে যদি শিশু পান করে, যদি তৃষ্ণার্ত থাকে।৪. ত্বক টান দিয়ে ছেড়ে দিলে কিছুটা ধীরে ধীরে আগের জায়গায় ফিরে আসে।

. আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত যেসব শিশুর “মারাত্নক পানিশূন্যতা” বা “কিছু পানিশূন্যতা”র ক্যাটাগোরিতে পড়ার পর্যাপ্ত চিহ্ন নেই তাদেরকে “পানিশূন্যতা নেই” ক্যাটাগোরিতে রাখা হয়।

একিউট ডায়রিয়ার চিকিৎসা 

ক. যাদের “মারাত্নক পানিশূন্যতা” আছে

১. শিরাপথে কলেরা স্যালাইন/ রিংগার’স ল্যাকটেট দেওয়া হয়। যদি না থাকে তবে ডেক্সট্রোজ ইন নরমাল স্যালাইন অথবা নরমাল স্যালাইন দেওয়া হয়।
২. স্যালাইন দরকার হয় : ১০০ মিলিলিটার/কেজি বডি ওয়েট।
৩. শিশুর বয়স যদি ১২ মাসের কম হয় তাহলে ৩০ মিলিলিটার/কেজি বডি ওয়েট প্রথম এক ঘণ্টায় দেওয়া হয়। তারপর পরের ৭০ মিলিলিটার/কেজি বডি ওয়েট পরের ৫ ঘণ্টায় দেওয়া হয়। ৪. শিশুর বয়স যদি ১২ মাস বা তার বেশি হয় তাহলে ৩০ মিলিলিটার/কেজি বডি ওয়েট প্রথম আধা ঘণ্টায় দেওয়া হয়। তারপর পরের ৭০ মিলিলিটার/কেজি বডি ওয়েট পরের আড়াই ঘণ্টায় দেওয়া হয়।
৫. স্যালাইন চলার সময় বুকের দুধ ছাড়া বাকি সব খাবার বন্ধ রাখা হয়।

মনিটরিং

১৫-৩০ মিনিট পরপর শিশুকে পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে যতোক্ষণ না পর্যন্ত শিশুর হাতে জোরালো রেডিয়াল পালস না পাওয়া যায়। – যখন হিসেব অনুযায়ী পুরো পরিমাণের স্যালাইন দেওয়া শেষ হয়ে যাবে, তখন শিশুকে
আবার যাচাই করতে হবে এবং
নিম্নোক্তভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে :

*১. যদি তখনও “মারাত্নক পানিশূন্যতা” থাকে, তবে আবার “মারাত্নক পানিশূন্যতা”র চিকিৎসা পূর্ববর্ণিত উপায়ে দিতে হবে।
*২. যদি “কিছু পানিশূন্যতা” থাকে, তবে শিরাপথে স্যালাইন বন্ধ করে মুখে খাবার স্যালাইন দেওয়া হয় ৪ ঘণ্টার জন্যে।
*৩. যদি কোনো পানিশূন্যতা না থাকে, তবে মা-কে প্রতিবার শিশুর পাতলা পায়খানা হবার পর মুখে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে বলা হয়।

খ. কিছু পানিশূন্যতা ও কিছু পানিশূন্যতা নেই

এমন ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা, ডায়রিয়া পরবর্তী যত্ন যাদের “কিছু পানিশূন্যতা”র চিহ্ন আছে তাদের চিকিৎসা :

১. মুখে খাবার স্যালাইন খেতে দেওয়া হয় হিসেব অনুযায়ী।
২. স্যালাইনের পরিমাণ : ৭৫ মিলিলিটার/ কেজি বডি ওয়েট।
৩. সময় : ৪ ঘণ্টা
৪. এ সময় বুকের দুধ ছাড়া বাকি সব খাবার বন্ধ রাখা হয়।

মনিটরিং

৪ ঘণ্টা পর শিশুকে পুনরায় যাচাই করা হয়।

তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় :

*১. যদি কোনো পানিশূন্যতার চিহ্ন না থাকে, মা-কে প্রতিবার শিশুর পাতলা পায়খানা হবার পর মুখে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে বলা হয়।
*২. যদি “কিছু পানিশূন্যতা”র চিহ্ন থাকে, তবে আবার ৪ ঘণ্টার জন্যে উপরোক্তভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
*৩. যদি “মারাত্নক পানিশূন্যতা” এর চিহ্ন থাকে, তবে শিরা পথে স্যালাইন দেওয়া হয়।

গ. যাদের পানিশূন্যতার চিহ্ন নেই তাদের ক্ষেত্রে

*১. এ চিকিৎসা শিশু বাসায় নিয়ে থাকে, তাই একে “হোম ট্রিটমেন্ট” বলা হয়।
*২. মুখে খাবার স্যালাইন, চিড়া পানি, ভাতের মাড়, লাচ্ছি ইত্যাদি খেতে বলা হয়।
*৩. প্রতিবার পাতলা পায়খানা হবার পর যদি শিশুর বয়স ২ বছরের কম হয় তাহলে ৫০-১০০ মিলিলিটার তরল খাবে। আর যদি শিশুর বয়স ২ বছর বা তার বেশি হয় তবে ১০০-২০০ মিলি তরল খাবে।

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

শিশুদের মনোজগত ভ্রমণ

আফরোজা হাসান


অফ ক্লাসে যে কোন এক ক্লাসে ঢুকে ঘাপটি মেরে বসে জ্ঞানার্জন করাটা আমার সবচেয়ে প্রিয় শখগুলোর মধ্যে একটি!

ঘাপটি মেরে বসার জন্য সবসময়ই আমার ফাস্ট চয়েজ থাকে যুক্তিবিদ্যার ক্লাসগুলো!

একদিন যুক্তিবিদ্যার ক্লাসে প্রফ প্রশ্ন করেছিলেন, যুক্তিবিদগণ কাদের কাছ থেকে অতি উন্নত মানের যুক্তির টিউশন নিতে পারে বলো তো?

ক্লাসের সবাই টেনশনে পড়ে গেলেও আমি অনেকটা অজান্তেই বলে উঠেছিলাম, শিশুদের কাছ থেকে।

প্রফ বিকট শব্দে হা হা করে হাসতে হাসতে বলল, একদম ঠিক বলেছো! আমি বই পড়ে যতটা না যুক্তি শিখেছি তারচেয়ে বেশি শিখেছি আমার তিন ছেলে আর দুই মেয়ের কাছ থেকে! প্রফের সাথে সুর মিলিয়ে বললাম, আমিও পড়াশোনা না করেই যুক্তিবিদ্যার উপর বড় বড় ডিগ্রী অর্জন করে ফেলেছি আমাদের পরিবারের বিচ্ছুকূল আর আমার শিষ্যকূলদের কারণেই!

শিশুদের সাথে যারা নিয়মিত কথা বলেন, তারা সবাই এই কথাটি এক বাক্যে স্বীকার করে নেন যে, নিজের কর্মের পেছনে যুক্তি প্রদর্শনে শিশুদের কোন তুলনা চলে না! তারা এমন সব অকাট্য যুক্তি দেয় যে বাবা-মাকে গালে হাত দিয়ে চিন্তায় মগ্ন হতে হয়!

ঠিক তেমনি এটাও ঠিক শিশুদেরকে কোন কিছু বোঝানোর ক্ষেত্রে যুক্তির প্রয়োগ করলে সেটা অনেক বেশি কার্যকরি ও ফলপ্রসূ হয়! যেহেতু শিশুরা নিজেরা ওদের কাছে পেছনে যুক্তি দেখায়! সেহেতু কোন কাজের পেছনে ওদেরকেও যুক্তি দেখাতে পারলে বেশ সহজেই মেনে নেয়! আমার পুত্রকে যেমন কোন কিছু করতে বলার সাথে সাথে প্রশ্ন করে, কেন করবো? যদি কারণটা সুন্দর করে বুঝিয়ে বলি অপছন্দনীয় বা একটু কষ্টকর হলেও যে হেলে দুলে কাজটা করে বা অন্তত চেষ্টা করে!

বাংলা লেখা ও পড়া শিখতে নাকীব ছোটবেলা থেকেই নারাজ। আমিও খুব একটা প্রেশার দেইনি যেহেতু তার যুক্তি ছিল সে তো বাংলাদেশে থাকে না, মাঝে মাঝে শুধু বেড়াতে যাবে! সেজন্য বাংলা কথা বলতে পারাটাই যথেষ্ট। কিন্তু যখন ইসহাক খান ভাইয়ার অফিস থেকে আমার বই বাসায় নিয়ে আসা হলো। নাকীব লাফাতে লাফাতে গিয়ে সবার আগে বই হাতে নিলো। কিন্তু উল্টে পাল্টে দেখার পর যখন কিছুই বুঝতে পারলো না খুবই ব্যথিত হলো! এরপর যখন শুনলো যে আমি বইতে তার কথাই লিখেছি! সে খুবই উৎসাহিত বোধ করছিল জানার জন্য। কিন্তু যেহেতু বাংলা পড়তে পারে না তাই কি লেখা আছে বুঝতে পারলো না কিছুই।

কাঁটা ঘা’য়ে নুনের ছিটা দেবার জন্য আমি দুঃখী কন্ঠে বললাম, কত শখ করে আমি তোমার কথা লিখেছি বাবাসোনা! কিন্তু তুমি কিছুই পড়তে পারবে না! সাথে সাথে নাকীব সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো বাংলা শেখার! এখন তো আমি সময়ের অভাবে ফাঁকি দিতে চাইলেও সে খোঁচাতে থাকে বাংলা শেখার জন্য।

যখন চাইল্ড সাইকোলজির উপর কোর্স করেছিলাম প্রফ ক্লাসে ঢুকে বলেছিলেন,

তোমরা কি তৈরি এই পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত, সবচেয়ে বুদ্ধিমান, সবচেয়ে চিন্তাশীল প্রাণীটির নতুন প্রজন্মকে জানা-বোঝা ও চেনার জন্য?

তাদের মনের রাজ্যে অবাধ বিচরণের জন্য? তাদের কল্পনার রাজ্যে হাবুডুবু খাওয়ার জন্য?

তাদের সাথে আকাশে উড়ার জন্য?

খন্ড খন্ড মেঘের উপর লাফিয়ে লাফিয়ে চলার জন্য?

ছোট্ট থেকে ছোট্ট বিষয়ে বিস্ময়ে বিকশিত হবার জন্য?

প্রশ্ন বিশারদ হয়ে যাবার জন্য?

এই যেমন, পাখী কেন উড়ে, ফুল কেন ফোটে, প্রজাপতি কেন এত রঙিন?

আমার কেন ডানা নেই?

দাদুর কেন দাঁত নেই?

বাবা কেন রোজ অফিসে যায়?

ধূর ছাই সব্জি কেন খেতে গোশতের মত লাগে না?

আচ্ছা দিদার চামড়াকে আয়রণ করে দিলে কি কুঁচকানো ভাব কেটে যাবে?

ব্লগে শিশুদের মনোজগত ভ্রমণকারী দু’চার জনই পাবো জানি! তাদেরকে উদ্দেশ্যে করেই বলছি, চলুন কয়েকটা দিনের জন্য ডানা মেলে ঘুরে বেড়াই সেই জগতে…! একসময় আমরাও যার বাসিন্দা ছিলাম! দুনিয়ার নানান ম্লানতায় আমাদের যে মনোজগতের ব্যাপ্তি আজ বড় বেশি সংকীর্ণ! প্রায় নিভু নিভু যার আলো……।

মনোবিজ্ঞান

 

‘চার ধরনের মানুষ আছে’

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক


(১) আত্মস্বার্থবাদী

যারা নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ-উদ্দেশ্যের বাইরে কোনো কিছুকে তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। এদের মধ্যে যারা স্বীয় ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যে কোনো কিছু করতে পারে তাদেরকে আমরা সুবিধাবাদী বলি। আর যারা নিজের সুযোগ-সুবিধা চাইলেও অবৈধ ও অন্যায় পথে অগ্রসর হতে চায় না তাদেরকে আমরা নিরীহ নাগরিক হিসাবে সম্মান করি। তারা হলেন সাধারণ পর্যায়ের ভাল মানুষ।

(২) আদর্শবাদী

কিছু লোক আছে যারা কোনো না কোনো আদর্শের সাথে নিজেকে আইডেন্টিফাই করে। তারা নিজেদের আদর্শগত ভাল-মন্দের মাপকাঠি অনুসারে নিজেরা কোনোমতে চলে বটে। কিন্তু বাদবাকীদের ব্যাপারে, বিশেষ করে বিদ্যমান এস্টাবলিশমেন্টের নানা রকমের অন্যায়ের বিরুদ্ধে এরা উচ্চকণ্ঠ। আশেপাশে কার কার কী কী ভুল আছে তা তারা সোৎসাহে বলে বেড়াবে। এরা নিজেদেরকে বুদ্ধিজীবী হিসাবে উপস্থাপন করে। দেখবেন, আদর্শের মেশিগান হাতে ব্রাশ ফায়ার করার জন্য এরা সদা সর্বদা প্রস্তুত।

(৩) নেতৃত্বপ্রিয়

কিছু লোক আছে যারা সব সময়ে গণ মনোভাবের সাথে থাকে। পাবলিক যা বলে তারাও তা বলে। এতে করে তারা সামাজিক ও প্রশাসনিক নেতৃত্ব অর্জন করে। ভাল-মন্দের ব্যাপারে এদের নিজস্ব বিবেচনাবোধ খুব দুর্বল। দৃশ্যত জনসেবায় নিয়োজিত হলেও আসলে একটা পক্ষ নিয়ে লিডারশীপ হাসিল করাই এদের লক্ষ্য।

(৪) সমাজকর্মী

এরা গণ চরিত্রসম্পন্ন। নিজের স্বার্থের চেয়ে এরা সমাজ, রাষ্ট্র ও মানবতার কথা বেশি ভাবে। আদর্শকে চাপিয়ে দেয়ার পরিবর্তে তারা মানুষের মধ্যে গ্র্যাজুয়েল প্রসেসে সমাজ পরিবর্তনে আগ্রহী। তাই, মানুষের মন জয় করাকে তারা অগ্রাধিকার দেয়। এই ধরনের লোকেরা নেতৃত্বপ্রিয়দের মতো আপোষকামীও হয় না, আদর্শবাদীদের মতো নির্দয় সমালোচকও হয় না। তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মানুষের কাছে যায়। মানুষ তাদের কাছে হেদায়েতের জন্য আসবে, তখন তারা হক্ব কথাটা বলবে, মানুষ তাদেরকে নেতৃত্বের আসনে বসাবে তখন তারা ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে, এজন্য তারা অপেক্ষা করে না।
আমি চতুর্থ ক্যাটাগরিতে নিজেকে দেখতে চাই।
আপনি?

সহযোগী অধ্যাপক,
দর্শন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

জলে ভাসা পদ্ম

ফাতিমা মারিয়ম


আমি ক্লাস সেভেন এ পড়ার সময় আমার মা মারা যায়। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর তার মৃত্যু হয়। মা’র খুব জটিল একটা রোগ হয়েছিল। ধরা পড়ার প্রায় দেড় বছর বেঁচে ছিলেন। ডাক্তাররা আমার মায়ের রোগ নিরাময়ের জন্য অনেক চেষ্টা করেছিল। কোন চিকিৎসাই মাকে সারিয়ে তুলতে পারছিল না! দিনদিন মা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। মার মৃত্যু হয় হাসপাতালে।

আমাদের ছোট্ট সংসার……সুখের একটি রাজ্য। আমি মা আর বাবা। সব কিছুই কেমন যেন লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল। আমি আর বাবা ভীষণ একা হয়ে পড়লাম।

মা মারা যাওয়ার তিন মাস পর নানা-নানু, মামা-খালা, চাচা-ফুফুরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাবা আর আমার একাকীত্ব ঘোচানোর জন্য আমার একজন ‘আম্মু’ নিয়ে আসল। খালামণি, নানু ও ফুফুরা সবাই মিলে নতুন মাকে ‘আম্মু’ বলে ডাকতে শেখাল। আমি তাই প্রথম থেকেই উনাকে আম্মু বলে ডাকি।

ধীরে ধীরে বাবা স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। ছুটির দিনে আমাকে আর আম্মুকে নিয়ে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাসায় বেড়াতে যায়। হঠাৎ কোন একদিন আমাকে এসে বলে, নিশু চল আমরা আজ বাইরে কোথাও খেতে যাব। কোথায় যাওয়া যায় বল তো?’ আমরা তিনজনে মিলে প্ল্যান করে কোথাও যাই। বাইরে অনেকক্ষণ থেকে বাসায় আসি। আমরা সবাই সবাইকে নিয়ে ভালোই ছিলাম।

কিন্তু আমার জন্য এই দিনগুলিও বেশিদিন রইল না।

দিন দিন আমার আম্মু যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে! আমি মনে করতাম আমার সাথে উনার সম্পর্ক বেশ ভালো। আমি মনে প্রাণে উনাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। ভাবতাম উনিও আমাকে সেইভাবেই গ্রহণ করেছেন।

ধীরে ধীরে উনি আমার প্রতি কেমন যেন অনীহা প্রকাশ করা শুরু করলেন। আমি বুঝতাম। কিন্তু কাউকে কিছু বলতাম না। কারণ আমি ভাবতাম আমি নিজেই হয়ত ভুল বুঝছি।

প্রায়ই আমি স্কুলে যাবার সময় টিফিন পেতাম না! বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে স্কুলে যেতাম। স্কুলের ক্যান্টিনে টিফিন কিনে খেতাম। বাসায় ফেরার পরও দেখতাম যে আমার জন্য কোন খাবার নেই।

দুপুরে বাসায় আম্মু আর আমি থাকি। বাবা সকালে নাস্তা খেয়ে অফিসে যায় আর ফেরে রাতে। তাই দুপুরে কি হয় না হয় তিনি জানেন না।

এ ঘটনা কয়েক দিন ঘটার পর আমি বাবাকে জানাই। বাবা কোন পদক্ষেপ নেয় না! তাই আমার প্রতি আম্মুর অবহেলা দিন দিন আরও বাড়তে থাকে।

এমন দিনও আমার যেত দুপুরবেলা বাসায় ফিরে যখন দেখতাম যে টেবিলে বা ফ্রিজে কোন খাবার নেই তখন পট থেকে মুড়ি নিয়ে শুকনো মুড়ি বা বিস্কিট খেয়ে দিন পার করেছি। রাতে বাবার সাথে বসে যখন ভাত খেতাম তখন আমি বাবাকে বুঝতেই দিতাম না যে আমি দুপুরে ভাত খাইনি।

আম্মুকে খুশি রাখার জন্য আমার বাবার আচরণেও দিন দিন পরিবর্তন আসছিলো। প্রায়ই দেখি আমাকে ছাড়া আম্মু আর বাবা বাইরে ঘুরতে যায়। তারা বাইরে গেলে আমি মন খারাপ করে থাকি। একা একা আমকে বাসায় রেখে যেতে কি আমার বাবার একটুও খারাপ লাগেনা?

বাবার প্রতি ক্ষোভ বাড়তে থাকে। আমার প্রতি বাবা এতটা উদাসী হয়ে গেল কিভাবে? আমিতো বাবার একমাত্র মেয়ে! এভাবে আরও কয়েক মাস কেটে গেল।

আমার বয়স কম। কতটুকুই বা সহ্য করতে পারি!! ফুফুকে সব জানালাম। ফুফু বাবার কাছে জানতে চাইলেন এসব হয় যে তুই কোন পদক্ষেপ নিস না কেন? বাবা ফুফুকে জানালো যে মিতা (আম্মুর নাম) ভীষণ খামখেয়ালী টাইপের! তাই ওকে বেশি কিছু বলি না!

ফুফু আমাকে উনার বাসায় নিয়ে আসল। ফুফুর বাসা থেকে স্কুল অনেক দূরে। বাসে করে আসা যাওয়া করতে হয়! ফুফু এবং আমাদের সবার ধারনা ছিল কিছু দিন গেলে বাবা এবং আম্মু এসে আমাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় হয়ে গেল বাবা আমাকে নিতে আসেনি।

দেড় দুই মাস পর পর আসে! খুব অল্প সময় থাকে। কিছু টাকা হাতে দিয়ে যায় (স্কুল ও কোচিং এর খরচ)। আমি বাসায় যেতে চাই কি না তাও কখনো জানতে চায় না! দেখে মনে হয় বাবা এখন বেশ সুখেই আছে। ফুফু আমাকে সব সময় বলেন-‘তুই নিজ থেকে কখনো যাওয়ার কথা বলবি না। আমরা দেখি তোর বাবা কি বলে?’ কিন্তু ফুফু জানে না, কেউ জানে না আমি সব সময় মনে মনে একটি আহ্বানের অপেক্ষায় থাকি! আমার বাবা একদিন আমাকে এসে বলবে-‘আয় খুকু আয়…!’

অনলাইন এক্টিভিস্ট

 

বিয়ে হোক বাহুল্য ব্যয় বর্জিত

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক


বিয়েতে বাহুল্য ব্যয়ের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে যে লেখাটা গত পরশু শেয়ার করেছি সেটির ফরোয়ার্ডিং হিসাবে দেয়া সংক্ষিপ্ত মন্তব্যগুলো ছিল বেশ কড়া। সুখের বিষয় হলো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীসহ ইতোমধ্যে ২৬২ জন এটি লাইক করেছে। তন্মধ্যে ৩২জন এটি শেয়ারও করেছে। এই সামাজিক সমস্যার ব্যাপারে চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ উচ্চকণ্ঠ হচ্ছেন। এটি খুব ভালো লক্ষণ।

আশা করি এক দশকের মধ্যে বাহুল্য ব্যয় বর্জিত সাদামাটা বিয়ে অনুষ্ঠানের সামাজিক রীতি এ দেশে প্রতিষ্ঠিত হবে। অন্ততপক্ষে অন্যতম ডমিন্যান্ট সোশ্যাল ট্রেন্ড হিসাবে এটি উঠে আসবে বলে আমার ধারণা।

একটা সুস্থ সমাজ ব্যবস্থার জন্য ক্ষমতা, অর্থ ও বস্তুগত সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থার পাশাপাশি মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি নিবারণের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা থাকা জরুরী। কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিকে আপনি জরুরীভিত্তিতে যে কোনো প্রকারে মোকাবিলা করবেন। সম্ভাব্য কম ক্ষতিকে মেনে নিয়ে আমিও বৃহত্তর লক্ষ্যকে অর্জন করার চেষ্টা করবো।

প্রয়োজনে নানা ধরনের আপতকালীন ব্যবস্থা বা compatibility mood এডপ্ট করাতে সমস্যা নাই। সমস্যা হলো, জরুরীভাবে অগত্যা পরিস্থিতিতে গৃহীত সাময়িক ব্যবস্থাকে যখন কোনো সমাজ স্থায়ী ও স্বাভাবিক পন্থা হিসাবে গ্রহণ করে।

এ ধরনের নাজুক বিষয়ে উদাহরণ দিয়ে কথা বলাই ভালো। দুপুরে খাওয়ার সময়ে ভাত-তরকারী দিয়ে পেটপুরে নরমাল খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা না হলে কেউ চা-মুড়ি খেয়ে কোনো মতে খিদা মিটাতে ও সময় কাটাতে পারে। তাই বলে কেউ যদি ক্ষুধা পেটে ভাত না খেয়ে হামিশখন চিপস আর চনাচুর খেতে থাকে, তখন সেটা নিশ্চয়ই সেই ব্যক্তি ও সমাজের গুরুতর সমস্যা।

একটা সমাজে অনেক সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যা থাকাটা সমস্যা নয়, সমস্যাকে স্বীকার না করাটাই হলো এক নম্বরের গুরুতর সমস্যা। দেরীতে বিয়ে সব দিক থেকে বিরাট সমস্যা। তা অধিকতর ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না। আয়-উপার্জনের ব্যবস্থা না হওয়ার কারণে উপযুক্ত সময়ে ছেলে-মেয়েরা বিয়ে করতে পারে না। গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো দেরীতে বিয়ের এই ‘কালা জ্বর’ আরো প্রলম্বিত হয় বিয়েতে বাহুল্য ব্যয়ের কারণে।

যে যাই মনে করেন না কেন, আমার কাছে ব্যাপারটা সিম্পল। প্রাপ্ত বয়স্ক দু’জন নর-নারী মিলিত হবে। পরষ্পর হতে নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করবে। একজন আরেকজনকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা দিবে। একই সাথে এই ‘বিশেষ ব্যক্তিগত সম্পর্কের’ দায়-দায়িত্বও তারা বহন করবে। এরই নাম বিয়ে। সামাজিক স্বীকৃতি নয়, বরং সমাজের সাধারণ অবগতিই হলো বিয়ের শর্ত।

অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যা অর্জিত হয়। ইসলাম ধর্ম অনুসারে বিয়ের অনুষ্ঠানে শ্রেফ ৭জন লোক থাকাই যথেষ্ট। একজন কাজী, দু’জন অভিভাবক, দু’জন সাক্ষী এবং বর ও কনে। কেন বিয়েতে ৫-৭টা অনুষ্ঠান করতে হবে, কেন দফায় দফায় কয়েক শ’-হাজার লোক খাওয়াতে হবে, কেন সামর্থকে ছাড়িয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হবে, তা আমার বুঝে আসে না। অনাবশ্যক এই সব সামাজিকতা কি কাউকে বেহেশতে নিবে? না করলে কি কেউ দোজখে যাবে? যারা এ’সব ফালতু আনুষ্ঠানিকতা করে নাই তারা কি সমাজচ্যূত হয়েছে?

আমি কোনো দিনই কোনো উপলক্ষ্যে এমন কি ৫০ জন লোককেও কখনো দাওয়াত করে খাওয়াই নাই। তাতে কী হয়েছে? আমি কি কম সামাজিক? দীর্ঘদিন আমি কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতাম না। সংশ্লিষ্ট সবাই জানতো, বিয়ের বাহুল্য খরচকে অপছন্দ করার কারণে আমি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাই না।

২০০৯ সালে আম্মা মারা যাওয়ার পরে গ্রামে যাওয়া শুরু করি। আত্মীয় স্বজনদেরকে চেনার জন্য এরপর থেকে বিয়েশাদির অনুষ্ঠানেও নিয়মিতভাবে যাই। অবশ্য গিয়ে যা দেখি তাতে করে ফিরে আসার পরে ভিতরে ভিতরে যথেষ্ট অনুশোচনাতে ভুগি।

১৯৯৪ সালের জানুয়ারীতে আমার বিয়ের সময়ে যদি আমাদের পক্ষ থেকে দাবী করা হতো, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্যাণ্ডেল টানিয়ে দশ হাজার মানুষকে ‘বৈরাত’ খাওয়াতে হবে, তাহলে আমার শ্বশুর তা-ই করতেন। তখনকার সময়ে পাত্র হিসাবে আমার ততটা ‘বাজার-মূল্য’ ছিলো।

সংশ্লিষ্টরা জানে, আমার শ্বশুর মাদারীপুর শহরে তখনকার সময়ে ছিলেন যথেষ্ট বিত্তশালী। নিজের অনাড়ম্বর বিয়ের উদাহরণ টানলাম এ জন্য যে, বিয়েতে বাহুল্য খরচ রোধ করার জন্য সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক পজিশনে থাকে স্বয়ং পাত্র ও পাত্রী। বিশেষ করে, এ ক্ষেত্রে পাত্রীর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমার সংসারে শ্বশুড়বাড়ি হতে ‘উপহার’ হিসাবে পাওয়া কিছুই নাই।

কথা আর বেশি না বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করতে চাই, আছে কি এমন কোনো সাহসী নারী যে বলবে, “নিজের বিয়েতে আমি এ ধরনের অতিসামাজিকতা ও বাহুল্য ব্যয়কে যথাসাধ্য রোধ করবো”? আছে কি এমন সৎ পুরুষ যে বলবে, “প্রকাশ্য বা গোপন কোনো ধরনের যৌতুক নেয়া ও বাহুল্য ব্যয় ছাড়াই আমি বিয়ে করবো”? এমন কঠিন ওয়াদা করতে তোমরা যারা অনাগ্রহী তারা সারাজীবন আদর্শ-আদর্শ খেলতে পারো, নীতি-নৈতিকতার কথা বলে মানসিক সান্তনা পেতে পারো, আন্দোলন-আন্দোলন জপতে পারো, বাস্তবতা হচ্ছে you are a worthless defender of stagnant status-co. Actually, you are one of them, against whom you are claiming to fight.

সাহসীদের বলছি, জেনে রাখো, এমন ধরনের আদর্শবাদীদের দিয়েই একটা সুন্দর সমাজ গড়া সম্ভব যারা নিজেরা আদর্শের দাবীকে অন্তত নিজেদের ব্যক্তি জীবনে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করে অন্যদের জন্য নিজেদেরকে উদাহরণ হিসাবে উপস্থাপন করতে পারে। লম্বা লম্বা কথা বলা বকোয়াজদের সাথে আমি নাই। বিয়ে হোক বাহুল্য ব্যয় বর্জিত সহজতর স্বাভাবিক সম্পর্কের ব্যাপার।

গোপন ও দায়দায়িত্বহীন সম্পর্ক যেমন অন্যায় ও প্রান্তিকতা, অনর্থক এত ঢাকঢোল পিটানো ব্যয়বহুল এসব বিয়ে অনুষ্ঠানও সম-পরিমাণের অন্যায় ও প্রান্তিকতা। এই দুষ্টচক্র হতে সমাজটাকে বের করে নিয়ে আসার জন্য সমাজকর্মীদের হতে হবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ।

সহযোগী অধ্যাপক,
দর্শন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

তোমরা যারা ‘সংবাদ পাঠক’ হতে চাও

ডা. সাকলায়েন রাসেল


সবচেয়ে বেশি যে ম্যাসেজটি আসে…ভাই, সংবাদ পাঠক হতে চাই। একটু সাহায্য করবেন, প্লিজ। আজকের লেখা তাঁদেরই জন্যে।

এ পেশায় এসো না যদি
—————————
১। নিউজ পড়লে মানুষ বাহবা দিবে…অনেকে সমীহ করবে…আমি একটু ভাব নিয়ে চলতে পারব…মনে যদি এমন ভাবনা থাকে।
২। আমি নিউজ পড়ি এটা দেখিয়ে…আমার পেশায় স্বার্থ হাসিল করতে পারব!

সংবাদ পাঠক সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা
———————————————-
১। এ পেশায় চেহারা খুব ভাল লাগে…মোটেও না…স্ক্রিনে মোটামুটি ভাল দেখা গেলেই হল।
২। শুধুমাত্র তকদ্বীর করেই সংবাদ পাঠক হওয়া যায়…
না, কারণ এটা এমন এক পেশা যেখানে তোমার যোগ্যতা প্রথম দিন থেকেই স্ক্রিনে দেখা যায়…তকদ্বীর তোমার বাড়তি যোগ্যতা হতে পারে, মূল যোগ্যতা না।
৩। সংবাদ পাঠ করে অনেক টাকা পাওয়া যায়…
না, চ্যানেলগুলোতে যে সম্মানী দেয়া হয় তাতে খুব কম সময়ে সংবাদ পাঠক সম্মানিত বোধ করেন।

সংবাদ পাঠে যোগ্যতা
————————–
১। শুদ্ধভাবে কথা বলতে পারা।
২। সংবাদ পরিবেশন সুন্দর হওয়া।
৩। ক্যামেরা বান্ধব চেহারা বা স্ক্রিনে সুন্দর দেখায় এমন চেহারা।
৪। সংবাদ মনোস্ক মানসিকতা থাকা।
৫। কমপক্ষে গ্রাজুয়েশন থাকা…অনেক চ্যানেলে এটা শিথিলযোগ্য।

কিভাবে শুরু করবে
———————–
১। যে কোন জায়গা থেকে শর্ট কোর্স করে নিতে পার।
২। ভাল দুটো ফটো তুলে নিও… Side and Front View… প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার হলে ভাল।
৩। এবার সিভি তৈরী কর… সিভি হবে সংক্ষিপ্ত ও আকর্ষনীয়।
৪। কোথায় ট্রেনিং করেছ সেটা বড় কথা নয়… অডিশনে তোমার পারফর্মেন্স গুরুত্বপূর্ণ।
৫। এবার সিভিটা সব টিভি ষ্টেশনে জমা দাও… রেডিও বাদ দিও না আবার…কারণ রেডিও এখন খুব ভাল একটা সংবাদ মাধ্যম… বছরে প্রতিদিনই এসব সিভি জমা নেয়া হয়… সময়মত অডিশনে ডাকা হয়।

অডিশন প্রস্তুতি
——————
১। যে চ্যানেলে যাবে… সে চ্যানেলের পোশাক আশাক আগে থেকেই দেখে নিও… সে রকম পোশাক পরেই অডিশনে যেও… প্লিজ, যেমন খুশী তেমন সেজো না।
২। অডিশনের আগের দিন ঐ চ্যানেলের সব বুলেটিন দেখবে…সেদিনের বা সেদিনের আগের দিনের বুলেটিন সাধারণত পড়তে দেয়া হয়।
৩। আগে থেকে প্রস্তুতি না নিয়ে হুট করে অডিশন দিবে না…এতে তুমি হতাশ হয়ে যেতে পার।
৪। অডিশনে ভয় থাকবেই…তারপরেও কনফিডেন্স হারাবে না।
৫। প্রতিদিন পত্রিকার খেলার পাতা পড়বে… খেলোয়াড়দের নামগুলো খুব কঠিন হয়… বিশেষ করে টেনিস… সবসময় অডিশনে খেলার অংশটা কঠিন হয়ে থাকে।
৬। সংবাদের মেরিট অনুযায়ী মুড চেঞ্জ করবে…মনে রাখবে, বাংলা শুদ্ধ ভাবে পড়তে পারা… আর সংবাদপাঠক হওয়া এক কথা নয় ।

আচ্ছা, আমি কি পারব
—————————
আমার চেহারা তো তেমন ভাল না… কন্ঠটাও না… তকদ্বীর করারও কেউ নেই… আমি কি পারব সংবাদপাঠক হতে…এমন প্রশ্ন থাকে অনেকের মনে…যারা নিজেকে নিয়ে শংকায় থাকে তাঁরা আসলে কোন কিছুই পারে না… তুমি, যদি মনে প্রাণে চাও…ধৈর্য ধরতে পার… তবে, অবশ্যই তুমি পারবে…তোমার চাওয়ায় তুমি কতটুকু সৎ… কতটুকু আন্তরিক সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
দুটো কারণে এবার ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি… প্রথমত, নিজের মধ্যে মাস্টারি ভাব আনতে লেখায় ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করার জন্য… দ্বিতীয়ত, সংবাদ পাঠে মাত্র ৬ বছরের শিশু হওয়ার পরও এসব জ্ঞান দেয়ার সাহস দেখানোর জন্য… আশা করি, আমার প্রিয় সংবাদ পাঠকরা আমাকে ইঁচড়ে পাকা ভাববেন না!
—————————
সবার সফলতা কামনায়—
সাকলায়েন রাসেল

সিনিয়র সংবাদ পাঠক, মাইটিভি
সেক্রেটারী, সমাজকল্যাণ, নিউজ ব্রডকাস্টারস` এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম

 

সঙ্গীকে ধন্যবাদ দিতে ভুলে গেছেন কি?(দাম্পত্য টিপস)

ফাতেমা শাহরিন


বিয়ে মানে অনেক স্বপ্ন, ইচ্ছা, আশা সবকিছুতে বেশি বেশি ভাললাগা টাইপ আমাদের ধ্যানধারণায়। রাইট কিংবা রং কিছু বলছি না। ভাবনা ত ভাবনা। আসলে এমন অনুভূতিকে আমরা ‘বিয়ে’ শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারি না আদৌ। ‘বিয়ে’ মানে বিশাল কিছু। বলা যায়, ক্ষুদ্র রাষ্ট্র বা পরিবার গঠন। দুইজন মানুষের সঙ্গে, সঙ্গে দুইটি পরিবার, সব আত্মীয়তার বন্ধন। বিয়ে সমাজের ধারক ও বাহক। একটি নতুন পরিবার। একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের অংশ।

আসুন দেখি, বৈবাহিক জীবনের জন্য সুন্দর বাধন গড়তে কি কি প্রস্তুতি আছে আজকের আর্টিকেলে। দাম্পত্য জীবনে সুখের জন্য দরকার একে অপরের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং বিশ্বাস। আর ছেলে ও মেয়ে উভয়ের আবেগকে সমান দৃষ্টিকোণে গুরুত্ব দেওয়া।

দাম্পত্য টিপস

প্রশংসা
বিবাহিত সম্পর্ক সুন্দর রাখতে চাইলে ধরে রাখুন সবসময় কৃতজ্ঞতা ও মুগ্ধতাময় প্রশংসামুলক বানী। সঙ্গীকে ধন্যবাদ দিন ছোট খাট কাজেও। সামান্য পানির গ্লাস হাতে নিয়ে মুছকি হাসি দিয়ে ধন্যবাদ দিন। ধন্যবাদের গুরুত্ব অনেক। প্রশংসা পেলে মুহূর্তেই মনটা খুশিতে ভরে ওঠে। প্রশংসাকারীর জন্য ভালো কিছু করতে ইচ্ছা করে।

দুঃখ প্রকাশ
কোন কারণে খারাপ ব্যবহার করে ফেলতে বা কেউ আঘাত হলে কথা, কাজ, বা আচরণে নিজ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা এবং সরি বলা। কোন কারণে বাইরের কার সামনে ধমক দেয়া একে অন্যকে অসম্মান করা ঠিক না। কাউকে অপমান করা আপনার প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধকে কমিয়ে দিবে।

উচ্ছ্বসিত আবেগ
সঙ্গীর ছোটখাট উচ্ছ্বসিত আবেগকে মূল্যায়িত করুন। ছোট ছোট কাজে এখন প্রত্যাশা অনুযায়ী তা পূরণ করুন অল্প হলেও অভিমানকে প্রকাশ করতে দিন। একে অপরের প্রতি প্রশংসা, মুগ্ধতা আর কৃতজ্ঞতাই কিন্তু সব সময় সম্পর্কে সুন্দর করে।

উপহার
পারস্পরিক কথাবার্তা আর ‘সময়’ হল সম্পর্কের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার। তার প্রতি আপনার কর্তব্য রয়েছে, আপনার কিছু দায়িত্ব রয়েছে। কিছুটা অল্প দামী ব্যক্তির পছন্দের জিনিস মাঝেমধ্যে পাওয়ার অধিকার রাখে সঙ্গীরা। এই বিষয়টি খেয়াল রাখুন।

সুন্দর ব্যবহার
সুন্দর বিনয়ের সাথে কথা এবং আচরণ করলেও সঙ্গীরা খুশি হন সবচেয়ে বেশি।ভাল কিছুর জন্য যদি আমরা সুন্দর আচরণ করি তবে সেই ভাল কাজটা তার কাছ থেকে বারে বারে ফিরে বসবে ।

ভরসা ও বিশ্বাস
কখনো সন্দেহ নয় বরং ভরসা এবং বিশ্বাসের সাথে সংশয় দূর করুন। সন্দেহ সম্পর্ককে ধ্বংস করে তাই কোন বিষয়ে সন্দেহ কাজ করলে দুজনে বসে খোলামেলা আলোচনা করা ভরসা করা।জীবনসঙ্গী আপনার মত মানুষ খুব কাছের মানুষ এটা সত্যি কিন্তু খুঁতখুঁত করে যদি তার বিষয়ে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেন, আপনি নিঃসন্দেহে হতাশ হবেন। মানুষ কখনো নিখুঁত নয়। তাই বিশ্বাস আর ভালবাসাকে সাথে নিয়ে এগিয়ে চলুন।

ক্ষুদ্র আবেগকে গুরুত্ব
ভালোবাসার প্রকাশ থাকাটা খুবই প্রয়োজন। তাই কার অভিমান, আবদার, রাগ, ভাল লাগা, ভালবাসার ক্ষুদ্র আবেগকে মূল্য দেওয়া এবং শ্রদ্ধা করা উচিত। পছন্দ, ভালোলাগা কিংবা কথাবার্তাকে গোণায় ধরা এবং সন্মান দেয়া। সালাম দিয়ে, উত্তর দেওয়া। বেশ কিছুদিন যাবৎ খুব আগ্রহ নিয়ে কিছু বলছে আপনি ব্যস্ত হলে পরে বিশেষভাবে সময় নিয়ে কথাটি শুনুন।

ক্ষমা করা
ক্ষমা হল সংসার জীবনে ভালোবাসাকে প্রাণবন্ত করে রাখবার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। ঠিক যেমন সুঘ্রাণময় ফুলকে আপনি পানি দিয়ে আরো বেশি জীবন্ত করে রাখেন। দু’জন দু’জনকে জেনে-বুঝে তবেই তো সঙ্গী করা। দুজনে মানুষ। তাই ভুল ভাবনা, ভুল আচরণ, ভুল কোন ঘটনার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষমা করে দেওয়া দুইটি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার জন্য তার সবটুকু নিয়ে সংসার বাঁধা। ঘরে বাইরে যত রকম অভিজ্ঞতা হোক, হৃদয়ের প্রিয়তম কুঠুরিটা আপনার জন্যই তিনি বরাদ্দ রেখেছেন। তাই ক্ষমা করুন। ক্ষমা চান।

অভিমানটুকু যত্ন করে তুলে রেখে বাসুন সঙ্গীকে ভালো। ভালোবাসা আপনাকে বড় করে দিবে। ভালোবাসা তার কাছে আপনার ওজন বহুগুন বাড়িয়ে দিবে।ভালোবেসে, আপনারা নিজেদের কাছে সম্মানিত এবং আরো প্রিয় পাত্র হয়ে উঠুন।
আপনিই পারেন ভালোবাসা পাওয়ার একটি পথ তৈরি করতে… তাই আজকে থেকে ভাল থাকুন।
রেফারেন্স: বই-সুখী ও সুন্দর জীবন।

সাইকোলজি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

 

সন্তান: স্বপ্নের পরিচর্যা (বুক রিভিউ)

অনবরত বৃক্ষের গান
|| বুক রিভিউ ||


সন্তান: স্বপ্নের পরিচর্যা
মূল বইটির ইংরেজি নাম:
Raising A Muslim Child
লেখকঃ মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ
প্রকাশনাঃ সিয়ান পাবলিকেশন লিমিটেড
সম্পাদনাঃ আবু তাসমিয়া আহমদ রফিক
মোট পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৯৬

বইটির বিষয়বস্তু:
═════════
সন্তান প্রতিপালন ও পরিচর্যা
সন্তানকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা নিয়ে বাবা-মা, পরিবারের সকলের উৎকণ্ঠা, উদ্বেগের শেষ নেই।বর্তমানে প্যারেন্টিং বিষয় বেশ জনপ্রিয় হতে চলেছে,কিন্তু সঠিক লক্ষ্যে পানে সে প্রচেষ্ঠা প্রবাহিত হচ্ছে কি না, তাই যাচাই করে দেখব, লেখকের দলীল,যুক্তির কষ্টি পাথরে। সন্তানের পরিচর্যায় বইটি সকলের জন্য হতে পারে মাইলস্টোন।

বইটির বিষয়বিন্যাস:
══════════
বইটিতে “সম্পাদেকর কথা”, “দু’টি কথা” শিরোনামে দু’টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়,মৌলিক বটে। প্রথম পর্বে ভূমিকার সাথে, এদু’টি বিষয় ফোকাস করা হবে।
সম্পূর্ন নতুন আঙ্গিকে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন লেখক,

যা আপনাকে সমৃদ্ধ করবে।

যথা-
১. আপনার কাছে আপনার সন্তানের পরিচয় কি হবে?
২.কার সাথে কেমন হবে সম্পর্কগুল
৩.অফুরন্ত ভান্ডারের সন্ধানের পথে হাটার নাম প্যারেন্টিং
৫.মানবতা বা মানবিকতার প্রতি কি অবদান রাখবে

সম্পাদকের কথা: মানুষ প্রকৃতি গতভাবেই লিগ্যাসি রেখে যাওয়ার বাসনা পোষণ করে, চিন্হ রেখে যেতে চায়। পরকালে বিশ্বাসী হৃদয়ের কাছে বিষয়টি বেশী গুরুত্বপূর্ণ। একজন মুমিন মৃত্যুর পর তার আখিরাতে অ্যাকাউন্টে ক্রেডিট ট্রান্সফার করতে পারে তার একটি হলো ‘নেক সন্তানের ‘ দোয়া। সন্তানকে অক্লান্ত পরিশ্রমে মানুষ করে, পিতা-মাতা এই সুবিধা প্রাপ্ত হতে পারেন। এজন্য বিশ্বাসী সম্প্রদায়কে আরো বেশী যত্নবান হতে হবে, সন্তান প্রতিপালনে।

দু’টি কথা: লেখক এখানে প্রশ্ন করেছেন, “আপনার আদর্শ ব্যক্তিত্ব হলেন আপনার বাবা কিংবা মা?” আমরা কি আসলেই অনুসরণীয় হতে পারছি সন্তানের কাছে। শুধু পার্থিব নয়, সব জীবনে সাফল্য লাভের উপায় কি তাদের শেখাচ্ছি? পিতা-মাতার ব্যক্তি জীবন বলে কিছু নেই, তারা যা করবে, সন্তান তাই শিখবে।

ভূমিকা: বাবা-মা বড় রকম ভ্রান্ত ধারণ পোষণ করেন, যেটা প্যারেন্টসদের বিশেষ দায়িত্বগুলোকে চাপিয়ে যায়।

✅সন্তানের ভরনপোষন, সুন্দর ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করেই,কি দায়িত্ব শেষ?
✅ সন্তানকে বাস্তবতার নিরিখে দায়িত্ব গ্রহনের উপযোগী করে তুলতে হবে।
✅সন্তানকে জনহিত কাজে উৎসাহ দিতে হবে,অন্য দশটা শিশুর চেয়ে তাকে, উপলব্ধি করাতে হবে,মানুষ ধনী না গরীব তা, তার সম্পত্তির উপর নির্ভর করে না।
✅ দরিদ্র মানেই অসম্মানিত নয়।
মানুষের কষ্টে তাকে অশ্রু ঝরাতে দিন।
✅ সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল ও যত্নবান করে তুলুন, যাতে সে আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তিতে পরিণত না হয়।
✅ পরিবার, আত্মীয় সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে শিখান।

সবোর্পরি, সন্তানকে শিখান যে,তার সকল লাজ হবে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, আর কারো নয়।

১.আপনার কাছে আপনার সন্তানের পরিচয় কি হবে:

✅ মানবজাতিকে নেতৃত্ব দিতে যাওয়ার চূড়ান্ত লক্ষ্য হল সুন্দর আদর্শিকভাবে শিশুকে গড়ে তুলতে হবে।
✅সন্তানের সম্পর্ক গড়ে তুলার ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের প্রাথমিক দায়িত্ব সঠিকভাবে বোঝা।
✅বাচ্চাকে অবশ্যই চারিত্রিক শিক্ষা দিতে হবে। শিষ্ঠাচার বিষয়টিও বুঝিয়ে দিতে হবে।
✅খাবারের সময়সূচীর ব্যাপারে তাকে ধারনা দিতে হবে,সপরিবারে একত্রে সময় মেইনটেইন করতে শেখান। খাবার সময় টিভি দেখাসহ সব বদভ্যাস ত্যাগ করা।
✅বাবা-মা সন্তানকে সাথে নিয়ে নিজেদের কাজ নিজেরা করে ফেলায় অভ্যস্হ করা।

🔷 সীমা নির্ধারণ করা:
সন্তানের সাথে ভাল বোঝাপরার সম্পর্ক রাখুন, তবে তার একটা সীমারেখা থাকা চাই। বাবা-মা সন্তানের “অভিভাবক”, “বন্ধু ” নয়। কেননা, বন্ধুর উপর বাধন আরোপ করা যায় না। তাকে বোঝাতে হবে শ্রদ্ধা ও যৌক্তিকতার সাথে সে দ্বিমত পোষণ করতে পারে, তবে, আহ্লাদ বা বেয়াদবি নয়।

অর্থবিত্ত সম্পদ বাড়ায় না, বাড়ায় কেবল সম্পত্তি:
সন্তানকে মানুষের জন্য ব্যয় করতে শিখান। তাদের অর্থ-সম্পদের গুরুত্ব সঠিকভাবে বোঝাতে হবে।
‘বিনিয়োগ’ ও ‘ব্যয়’ এ মানদন্ডে বিচার করতে শেখান।

ব্যালান্স শীট:
সন্তানকে চমৎকার ব্যালান্স শীট তৈরি করতে শেখান। তাকে লেনদেনের সুযোগ দিন, পাশাপাশি হিসাব রাখতে বলুন, দেখুন যে, শুধু ব্যয়ই করছে নাকি, বিনিয়োগ করতে শিখছে। সংশোধন শুরু করতে হবে নিজের ঘর থেকেই।

🔹ইঁদুর বনাম বিড়াল: শিরোনাম দেখেই চমকে উঠবেন না, বোঝার স্বার্থে লেখক এ উপমাটি দিয়েছেন। আমরা দেখেছি, ইঁদুর-বিড়াল লড়াই এ, দু’টি প্রাণীকেই লড়তে হয়। দিনশেষে আসলে আমরা কি তেমনই লড়ে চলছি নাকি,
নিজেদের আত্মউন্নয়ন করছি,
সেটাই যাচাই করা যাক-

✅ইঁদুর দৌড়ানোর মতো অনেক মানুষ লোক দেখানোর জন্য কাজ করে, বেশী সম্পদ জড়ো করে। এগুলো জাহির করে তৃপ্তিজনক পায়।
✅অন্যের দুঃখ-দুর্দশায় খুশি হয়। অন্যের উপরে থাকাই, এদের জীবনের লক্ষ্য।
✅আর, বিড়াল হওয়া বলতে, নিজেকে শিকারী অনুসন্ধানী করে গড়ে তোলা। নিজেদের উন্নয়ন ও পারস্পারিক সহযোগিতা করা।

ফলে, দক্ষতা লাভ, ভুল থেকে শিক্ষা লাভ, ঝুঁকি গ্রহনের ক্ষমতা বাড়ে। দিনশেষে, নিজেকে সফল উদ্যোগতার কাতারে খুঁজে পায়, যার আলো কি না গভীর অরণ্যে থেকে ওঠে আসা সিগ্ধ কুয়াশার মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।(চলবে)

লেখিকা: ইসলামিক স্টাডিজ, অনার্স ৩য় বর্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ছেলে মেয়েতে বন্ধুত্ব

শারমীন আক্তার সেতু


চারপাশের অনেক অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেখে কিছু উপলব্ধি হল বেশ কিছুদিন ধরে। বিষয়টা যদিও খুব স্পর্শকাতর এবং অনেকেই হয়ত এই বিষয়ে আমার সাথে দ্বিমত পোষন করবেন। করতেই পারেন। কিন্তু এখানে আমি শুধু আমার উপলব্ধি টুকুই লিখেছি এবং সেখান থেকে সবাইকে একটা ম্যাসেজ দেয়ার চেষ্টা করেছি।

আপনার যদি আপত্তি থাকে বা এই বিষয়ের সাথে একমত না হতে পারেন তবে দয়া করে এড়িয়ে যান। অযথা তর্ক করবেন না।

কারণ প্রথমেই আমি বলে নিয়েছি এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত উপলব্ধি। আমি এখানে একজন সাধারন মানুষ হিসেবে লিখেছি। তাই আমার এই চিন্তাগুলো কেউ আমার পেশাগত চিন্তাভাবনার সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না যেন। কারন পেশাগতভাবে আমি এভাবে চিন্তা করব না বা করি না।

বন্ধুত্বের সংজ্ঞায় ব্যক্তিভেদে পার্থক্য আছে। অর্থাৎ একেকজন মানুষ বন্ধুত্বটাকে একেক রকমভাবে চিহ্নিত করবে, একেক রকমভাবে বর্ননা করবে।
কিন্তু দেশ, কাল বা সমাজ সংস্কৃতিভেদে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা যাই হোক না কেন সব দেশেই, সব সংস্কৃতিতেই সাধারনত এটাই ধরে নেয়া হয় যে, মেয়ে মেয়ে, ছেলে ছেলে বন্ধুত্ব হবে ।

এরপরে উদারতা, চিন্তার ভিন্নতা, প্রয়োজন, সহজভাবে গ্রহন করার ক্ষমতা , বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বা কৌতূহল ইত্যাদি সব কিছু বিবেচনায় ছেলে মেয়েতে বন্ধুত্ব হয় বা হতে পারে।

কিন্তু ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে লিঙ্গগত পার্থক্য এবং জৈবিক একটা চাহিদা থাকার কারনে যেটা হয় যে, মেয়ে মেয়েতে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে যেসব আচরণ স্বাভাবিক মনে হয় বা কোন ক্ষতির কারন হয় না সেটা একটি ছেলে এবং মেয়ের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে দৃষ্টিকটু এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষতির কারন হতে পারে।

যেমন, একজন মেয়ে যদি কোন মেয়ের বাসায় রাত্রিযাপন করে বা প্রতি মিনিটে মিনিটে তার মেয়ে বন্ধুটিকে তার নিজের আপডেট দিতে থাকে বা নিজের ব্যক্তিগত ছবি পাঠাতে থাকে তবে সেটা আমাদের সমাজে দৃষ্টিকটু নয় কিন্তু এই একই কাজই যদি কোন একটি ছেলে এবং
একটি মেয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তবে সাধারনভাবে সাদা চোখে কোন কিছু চিন্তা না করেই এটা ধরে নেয়া হয় যে তাদের মধ্যে শুধু বন্ধুত্ব না আরও গভীর কোন সম্পর্ক আছে। এর অবশ্য যথেষ্ট কারণও আছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, ছেলে আর মেয়ের মধ্যেকার এত গভীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছেলে অথবা মেয়েটির মধ্যেকার কেউ একজন আরেকজনের প্রতি আবেগীয়ভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে বা পড়ে। এতে দুজনেই যদি অবিবাহিত থাকে এবং দুজনেই যদি সম্মত থাকে তবে সেই ছেলে এবং মেয়েটির মধ্যে একটি সুন্দর পরিনতি হয়ত দেখা যায়।

এটা গেল অবিবাহিত ছেলে মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব। কিন্তু যখন এই ধরনের বন্ধুত্ব কোন বিবাহিত ছেলে মেয়েদের মধ্যে বা অবাহিত মেয়ে বিবাহিত ছেলে বা বিবাহিত মেয়ে অবিবাহিত ছেলের মধ্যে হয় তখন তা পরবর্তীতে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিতে পারে।

এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক গুনে বেড়ে যায় যখন এই বিবাহিত ছেলে বা মেয়েটি তার সঙ্গিনীর কাছে থেকে তাদের প্রয়োজনীয় মানসিক সহায়তা পায় না বা তাদের সঙ্গিনী তাদের পর্যাপ্ত সময় দেয় না বা তাদের শারীরিক চাহিদা মেটাতে পারে না বা তাদের সঙ্গিনীর সাথে এডজাস্ট হয় না।

তখন তারা তাদের মানসিক শান্তি খুঁজে নেয়ার জন্য বন্ধুত্ব নামক একটি সম্পর্ক গড়ে তোলে তারপর ধীরে ধীরে তা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মোড় নেয় বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে এটাও দেখা যায় যে, বিবাহিত ছেলে বা মেয়েটি ঘর বর ছাড়তে পারছে না কিন্তু আবার সে নিজের সঙ্গিনীর সাথে সন্তুষ্টও নয় তখন সে তার সঙ্গিনীর কাছে থেকে যা পায়নি তা বন্ধুর কাছে থেকে পূরণ করার চেষ্টা করে ।

এতে করে সে হয়ত নিজেকে নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রেখে তার বন্ধুর কাছে থেকে তার প্রয়োজন মেটাতে পারে কিন্তু তার বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুটি যে তার আবেগীয় নিয়ন্ত্রণ রাখতেই পারবে এমন নাও হতে পারে। আবার দুজনে যথেষ্ট বুদ্ধিমান হলে দুইটি সম্পর্ককেই সমান তালে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে কোন সম্পর্ককেই নষ্ট না করে। এতে হয়ত সম্পর্ক রক্ষা হয় কিন্তু তা সঙ্গিনীর সাথে প্রতারনা করা হয় কিনা তা আমার জানা নেই। বা সেক্ষেত্রে একে অপরকে নিজের প্রয়োজনে নিজের অজান্তেই ব্যবহার করে কিনা সেটাও আমার জানা নেই ।

যাইহোক, আমি ছেলে মেয়ের বন্ধুত্বের বিরোধী নই কারন আমারও অনেক ছেলে বন্ধু আছে। কিন্তু চারপাশের অনেক অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেখে আমি এতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, ছেলে মেয়ের বন্ধুত্ব অবশ্যই হবে কিন্তু তার একটা সীমারেখা থাকবে বা থাকা উচিত। কারন লিংগগত পার্থক্য এবং একে অপরের প্রতি সহজাত একটি আবেগীয় এবং শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করার অপরিবর্তনীয় প্রবৃতি।

বিশেষ করে বিবাহিত ছেলে এবং মেয়েদের এসব বিষয়ে মনোযোগী হওয়াটা জরুরী মনে করি। কারণ বিয়ের পর নিজের পরিবারে সুখী না হয়ে এরকম কোন বন্ধুত্বে জড়ালে তা খুব ভাল কোন ফলাফল বয়ে আনে না। বিশেষ করে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ।

এখন বলতে পারেন একজন মনোবিজ্ঞানী হয়ে আমি এরকম কথা বলতে পারছি কিভাবে? তাহলে আবারও বলব এই লেখাটা আমি একজন সাধারন মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে লিখেছি। আর মনোবিজ্ঞানে কালচারাল ডিফ্রেন্সটাকে কখনই বাদ দেয়া হয়নি বরং অনেক গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয় । কারন কালচারভেদে মানুষের চিন্তা এবং আচরণ পরিবর্তিত হয়।

আর বেশীরভাগ কালচারেই এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ার্সটাকে খারাপভাবে দেখা হয়।

যাইহোক, বিবাহিতরা যদি কাউকে তার বিপরীত লিঙ্গের কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করেন তবে একটু খেয়াল করুন আপনি আপনার সেই বন্ধুর সাথে সেইরকমই আচরণ করছেন কিনা বা সেইরকমই তথ্য বা নিজের ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার করছেন কিনা যা অন্য সবার সাথেই করছেন বা একইরকমভাবে একই সময় সবার সাথেই একইরকম সবকিছু করছেন কিনা।

যদি তা না হয়, যদি এমন হয় যে, আপনার সঙ্গী ব্যতীত বিপরীত লিঙ্গের শুধুমাত্র একজনের সাথেই সারাদিনের সব ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি আদানপ্রদান হচ্ছে, আপনার সুখ দুঃখের আলাপ তার সাথেই বেশি হচ্ছে, সব কাজ করতে গেলেই আপনার তার কথা মনে পড়ছে বা তাকে ছাড়া কোন কাজ করতে পারছেন না তাহলে মনে হয় আপনাদের এখনই সতর্ক হওয়ার সময়।

আর যদি আপনি আপনার সব বন্ধুর সাথেই এরকম আপনার ব্যক্তিগত সবকিছু সবসময় সমানভাবে শেয়ার করেন, সমান কেয়ার নেন, সবাইকেই সমান গুরত্ব দেন তাহলে কিছু বলার নেই। তাহলে বুঝতে হবে আপনার অভিযোজন ক্ষমতা এবং সবকিছু ম্যানেজ করার ক্ষমতা খুব ভাল এবং ছেলে মেয়ে বন্ধুত্বে আপনার চেয়ে উদার কেউ নেই এবং ছেলে মেয়ে উভয়ই আপনার কাছে সমান। এরকম হলে সেখানে অন্যকোন সম্পর্ক গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে না ।

কিন্তু বিষয়টা যদি এমন হয় যে, আপনি নিজে বিশ্বাস করছেন যে, ছেলে মেয়েতে কখনও বন্ধুত্ব সম্ভব নয় কারন একসময় না একসময় কোন একজন সেখানে দুর্বল হয়ে যেতে পারে কিন্তু আপনার নিজেরই কোন ছেলে বা মেয়ে বন্ধু আছে এবং সেখানে আপনি ভাবছেন আপনার নিজের উপর বা আপনার বন্ধুটির তার নিজের উপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ আছে তাই আপনাদের বন্ধুত্বে কেউ কারও প্রতি দুর্বল হয়ে যাবেন না। তাহলে কিন্তু বিষয়টি যথেষ্ট হাস্যকর এবং অগ্রহনযোগ্য হবে।

সারমর্ম:
লিঙ্গগত পার্থক্য এবং জৈবিক চাহিদার কারণে ছেলে এবং মেয়ের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটা সীমারেখা থাকা জরুরী । কারন আমরা যথেষ্ট উদার হলেও আমাদের আবেগ আমাদের প্রতি যথেষ্ট উদার নয়। আমাদের আবেগ যেকোন সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কোন এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিতে পারে।

কাউন্সেলর
সফটকল অ্যাসোসিয়েটেড উইথ প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ

 

‘মৃত্যুকে’ খুব কাছ থেকে দেখার অনুভূতি

ডা.ফাতিমা খান


যে মানুষটাকে ক্ষয়রোগ কোনভাবেই ছাড়ছে না কিংবা রোগবিদ্যা যার কাছে আত্নসমর্পন করেছে, যার আয়ুটাকে চিকিৎসক একটা সময়ের ফ্রেমে বেধে দিয়েছেন সেই মানুষটার স্বত্তাটা দুনিয়ার আর মানুষদের কি নাসিহা করতে চায় বা জীবনের শেষ কয়টা দিন সে কেমন করে কাটাতে চায় তা জানার অবাধ্য একটা সাধ আমার হয়।

নিশ্বাস প্রশ্বাসের সাথে এখনো যে পৃথিবীর হাওয়া বাতাস তার বুক পেটে মৃদু আন্দোলন তুলছে, সেটুকুই নিশ্চয়ই এই সময়ের জন্য তার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া।

পৃথিবীর আর মানুষদের কাছে এই মানুষটার আপাত অনুরোধ হয়ত এরকম  “এই শুনছ, তোমরা যারা বেঁচে আছ, তোমরা অনেক ভাগ্যবান। অত চাই চাই পাই পাই কইরো না, দোহাই লাগে।”

মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখার সবচেয়ে বেশী সুযোগ হয় ডাক্তার আর নার্সদের।

অসুস্থ মানুষটার চলে যাওয়ার নির্মম খবরটাও আপনজনদের কাছে তারাই পৌছান বেশী। একটু দীর্ঘ অবসর আর একটা সুযোগ পেলে মৃত্যুপথযাত্রী মানুষদের খুব কাছাকাছি সময় কাটাবো ভেবে রেখেছি।

যেখানে জীবন সমাপ্তির দিকে সেখানেই উপলব্ধির সূচনা, মৃত্যুর খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে যাত্রী মানুষটার অনেকগুলো উপলব্ধি হয় যা আগে অনুভূত হলে হয়ত জীবনটা পুরাই বদলে যেত!

– এই যে এলেবেলে ছেলেবেলা, রংধনু কৈশোর, উদ্দাম যৌবন কিংবা মলিন প্রৌঢ়ত্ব গেল, কই এগুলো তো কখনো একবারও মাথায় আসেনি! এখন কেমন বিদ্যূত বেগে চলে আসল দেখ!

তাদের এ ধরনের কথাগুলো শুনতে, ওদের সাথে জীবনের গল্প করতে আমার খুব ইচ্ছে হয় । হুট করে কখন কার জীবনের যতি পড়ে যাবে কে জানে!

আত্নসমালোচনা করার একটা অনেক পুরানো অভ্যাস আমার আছে। দিনশেষে চোখ বুজার আগে এই আমার শেষ কাজ। কয়দিন থেকে যে ব্যাপারটা বারবার মনের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে তা হল নিজের প্রতি আমি অন্যায় করেছি সবচেয়ে বেশী।

আমার জীবন, দেহ মন সব কিছুর মালিক এক আল্লাহ তায়ালা। তিনি সাময়িক কালের জন্য এই সম্পদগুলো আমানত হিসেবে আমাকে দিয়েছেন। সবচেয়ে বেশী অযত্ন অবহেলা হচ্ছে আমার এই নেয়ামত গুলোর সাথে যার হিসাব অবশ্যই দিতে হবে।

আমার মনে হয় আমার মৃত্যুর আগে যদি কিছু বলার সুযোগ পাই তাহলে অনেক কিছুর সাথে গুরুত্বপুর্ণ একটা নাসিহা এটাও হবে যে সবাই নিজের প্রতি যত্নবান হোন। আপনি নিজেও আপনার জীবনের অমূল্য রহমত ও নেয়ামত !

লেখক: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ,
জেদ্দা,সৌদি আরব।

 

সব হারিয়ে যাচ্ছে, টিকে আছে শুধু মুখোশ

ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস


সেদিন শুনলাম এক বিয়েতে নাকি ছোটখাটো প্রোগ্রাম। ছোটখাটো বলা হলেও এনগেইজমেন্ট আর আকদ মিলে বেশ বড় মাপের ও জাকজমক করে অনুষ্ঠান হয়েছে মোট ১০টি! ভাবা যায়! আমার তো এক বিয়েতে যেয়ে তারপর বৌভাতে যেতে হলেও মাথার ওপর বাজ পড়ে। কি পরে যাবো, সেই চিন্তাটা খুব মামুলি। কিন্তু দুশ্চিন্তা হলো সময় ও কাজকে ম্যানেজ করা। যানজট নামের মামদো ভূতের দেশে ওরা পারে কি করে এতগুলা অনুষ্ঠান আয়োজন এবং অংশগ্রহণ করতে?

সেই ১০টি প্রোগ্রামের শুরুটা ‘মিলাদ মাহফিল’ দিয়ে। প্রোগ্রামের হিসাব চেয়ে আমাকে বিব্রত করবেন না, দোহাই লাগে! এটা আমার মত বড্ড পুরানো সেকেলে মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষে মেলানো সম্ভব নয়। ৯ নম্বরে যেয়ে আটকে গেছি, সান’গীত (সাবধান! ‘সংগীত’ বললে আবারও কিন্ত ‘মিডল ক্লাস’ ‘সেকেলে’ কিংবা ‘খ্যাত’ মানুষের খাতায় নাম লিখাবেন)। ম্যাহেন্দী, ব্রাইডাল শাওয়ার, ব্যাচেলর্স নাইট, হালদী ১, ২ (হলুদ না, হাল’দী), নিকাহ (‘বিয়ে’ বললে আপনি বেজায় হাসির খোরাক যোগাবেন!) তারপর রিসেপশন; মানে বৌভাত। হলো ৯টা। আর শেষটা যে কি! আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন, পান কিনা, পেয়ে যাবেন! হিন্দি সিরিয়াল অনুসরণ শেষ করে আমরা আজকাল নাকি পাকিস্তানি সিরিয়াল চোখ বেঁধে হৃদয়ের কোটরে ভরে নিয়েছি। ১০টার জায়গায় ২০টা হলেও অবাক হবো না। আমরা খুবই উদারমনা, ‘কুল’ জাতি হয়েছি কিনা আজকাল!

যাই হোক,সেতো না হয় গেল এলাহী বড়লোকদের বিয়ে। তাদের পয়সা ফেলার জায়গা নাই; তাই তারা ফেলুক ১০ জায়গায় মানলাম! কিন্ত এই মধ্যবিত্তের কেন এই ‘ঘোড়ারোগ’? শুনলাম মধ্যবিত্তের ঘরেও নাকি আজকাল শুধু একদিনের প্রোগ্রামে ৫/১০ লাখ টাকার ডেকোরেশন হয়! তারপর আছে খাওয়ার খরচ, হল ভাড়া! বুঝি না, একে কি আমাদের অর্থনৈতিক দাসত্ব বলবো, নাকি নৈতিকতার অবক্ষয়? আমি আমার সন্তানের বিয়ে জাকজমকভাবে দেব, সে চাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক; কিন্ত এই অহেতুক খরচের বহর যখন আমার পুরা সমাজ, আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের ভেতর অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে শিক্ষক হিসেবে তা মানতে এবং দেখতে আমার কষ্ট হয়।

আপনার বিয়ে শাদীর অনুষ্ঠানগুলোর বৈভবের এই কুৎসিত ‘নিষ্কলুষ’ লোক দেখানো প্রতিযোগিতায় হয়তো জিতে গেছেন, আজও হয়তো আলোচনা হয় আত্মীয় স্বজনের মুখে মুখে আপনার এলাহী শান শওকতের বাহার নিয়ে, কিন্তু হেরে গেছে, বলতে গেলে অনেকটা মরেই গেছে হাজারও মধ্যবিত্ত পরিবার। এরা আপনারই আত্মীয় স্বজন।
ছেলে-মেয়েকে সাজিয়ে গুছিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করতে সাধ তো হয় সবার। সবারই বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন থাকে। যে স্বপ্ন বুনি আমরা সবাই সেই ছোট কাল থেকে। স্বপ্ন বুনি সেই একদিনের রাজকন্যা কিংবা রাজপুত্র হবার। স্বপ্ন বুনি সন্তানকে সাজিয়ে গুছিয়ে সুন্দর করে বিয়ে দেবার। কিন্ত আজকাল এই চিরচেনা স্বপ্নকে জাঁকজমকের আর নতুনত্বের নামে যে ‘এলাহী রুপে’ নিয়ে গেছি, তাতে স্বপ্ন পূরণের স্বপ্ন চলে গেছে অনেকেরই সাধ্যের বাইরে।

বলতে পারেন, সাধ্যে না কুলালে করবেন না। যেমন আয় তেমনি তো ব্যয়টা হওয়া উচিত। পরম আদরের মেয়েকে বিদায় দিচ্ছে বাবা-মা, কলিজাটা তো ওইখানে ভেঙে খান খান। সেই মুহূর্তে মেয়ের শখ, ছেলে মেয়ের ইচ্ছা, কিংবা ‘ছেলে-মেয়ের মুখ’ রাখার জন্য বাবা মা যদি এখনকার দিনের এই অহেতুক খরচের বোঝাটা মাথায় চেপে নেন, তাকে অবাস্তববাদী বলে দেওয়াটা খুব একটা অনুচিত হবে বলে আমি মনে করি না।

আমার অবাক লাগে ভাবতে, এই ছেলে-মেয়েগুলোর বিচার বুদ্ধির মাত্রা নিয়ে। এরাতো জানে তাদের বাবা-মার সামর্থ কতটুকু। কেমন করে পারে একের পর এক বায়না জুড়ে দিতে? অথবা আকারে ইংগিতে বুঝিয়ে দিতে অনুষ্ঠানের চাকচিক্য আমি কতটুকু চাই। আসলে বিবেকের বলিহারি।

আচ্ছা, বিয়ে মানেটা কি? দুটা মানুষের সঙ্গে সঙ্গে দুটো পরিবারের আত্মীয়তার বন্ধন কিংবা বলা যায়, বিয়ে সমাজের ধারক ও বাহক। মানে এক নতুন পরিবার। বিয়ের অনুষ্ঠান মানে তো আনন্দেরই হবার কথা। আগে মা-খালাদের দেখতাম বিয়েতে যাবার আগে আলমারি থেকে কাতান নামাতেন, লকার থেকে গয়না নামিয়ে বেশ সেজে গুজেই যেতেন। বেয়াই বাড়ির আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে পরিচয় হবে তাই পার্লারেও যেতেন কেউ কেউ। অনুষ্ঠানের গতানুগতিক দৃশ্য ছিল, দু’পক্ষের মুরুব্বিরা পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন এর সঙ্গে ওর সঙ্গে। পরিবারের সবাই যেয়ে বর বউকে দোয়া শুভেচ্ছা দিয়ে আসছেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে সানাই বাজছে। পোলাও কোরমা খাওয়া হচ্ছে। সবার সাথে দেখা হওয়াওটাই মূখ্য। আর বউ দেখাটা ছিল মহাআকর্ষণ। বউ লাল শাড়ি পরে যেন লাজুক মুখে সাক্ষাৎ পরী।

আর এখন, ওমা একি! বর বউ দেখবো কি? অপেক্ষায় থাকলে নির্দিষ্ট সময়ে হ্যালির ধুমকেতুও দেখতে পাবেন; কিন্তু অতিথি আসনের সামনের কাতারে বসেও মিলবে না বর বউয়ের দেখা! দেখবেন কিভাবে? স্টেজের সামনে দুই পক্ষ থেকে আসা ‘আশ্চর্য প্রদীপ’ মানে ডিএসএলআর ক্যামেরা আর ফটোগ্রাফারদের ইয়া বিশাল বিশাল ছাতা দিয়ে সব ঢাকা। এখনকার বিয়ের প্রোগ্রামে কাজীর চেয়ে এই ডিএসএলআর ক্যামেরাওয়ালাদের দাম বেশি। কাজী না এলেও বিয়ে হবে, কিন্ত ফটোগ্রাফার ছাড়া বিয়ে? অসম্ভব।

ফটোগ্রাফারই এখন পুরো অনুষ্ঠানের ডিরেক্টর। তারাই নির্ধারণ করেন বর বউয়ের পাশে বসে কতক্ষণ কথা বলতে পারবেন। স্টেজে উঠে আজকাল বর বউ দেখে আগে-পরে গোছগাছ করে বসে একটা ছবি তোলেন। এরপর ক্যামেরা ওয়ালাদের সহকারী হাতের ইশারায় আপনাকে নেমে যেতে বলবেন, আপনিও নেমে যেতে বাধ্য, কারণ পেছনে লম্বা লাইন।

আবার সবার সামনে বর বউয়ের ছবি তোলার হিড়িক। কাধে হাত মাথায় হাত,সামনে কাত পেছনে কাত, হাতে হাত; কত শত ভঙ্গিমায় কি অবলীলায় যে ছবি তোলা হচ্ছে; ভাবতে পারবেন না! কোথায় যে গেল সেই লাজুক লাজুক মুখের পরীর মতো বউগুলা।

নারী উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে গলা ফাটিয়ে ফেলছি একেকে জন। নারীর এগিয়ে চলার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তার আত্মবিশ্বাস, আত্মপ্রত্যয় আর দূরদর্শীতা। জেন্ডার ডাইভার্সিটি নিয়ে গবেষণা করা দেখে ভীষণ খুশি হই। যখন দেখি মেয়েরা ফেসবুক টুইটারকে পুঁজি করে স্বাবলম্বী হচ্ছে, টুকটাক কাজ দিয়ে শুরু করে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়ে উঠছে, তখনও খুশি হই। আমার মনে হতে থাকে, এইতো শুরু। কিন্তু আমার আশার মুখে কেউ যেন কষে কেউ চড় দেয়, যখন দেখি ব্যবসা সফল সেই মেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়- তার সারা জীবনের লক্ষ্য আজ অর্জিত হলো। কারণ তিনি তার বিয়ের জন্য সব্যসাচির লেহেঙ্গা কিনতে পেরেছেন। সেই লেহেঙ্গা কেনার সময়ক্ষণ, ডিজাইনারের সঙ্গে ছবি এবং তার নিচে ক্যাপশন ‘ফাইনালি আই হ্যাভ এচিভড হোয়াট আই ড্রেমট থ্রু আউট মাই লাইফ’! মানে? তার ব্যবসা, তার আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার গল্প, যা কিনা তাকে গর্বিত করার কথা ছিল, কথা ছিল তার গল্প অনুপ্রেরণা জাগাবে আর দশটা মেয়েকে-সবকিছু ছাপিয়ে তার সফলতা হলো সব্যসাচীর লেহেঙ্গা কিনতে পারা! দূরদর্শীতা হায়, তুমি কাঁদো নিরবে।

যার যা ইচ্ছা করুক, খালি মনে হয়, এই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় সমাজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মধ্যবিত্তের বাড়ছে ঋনের বোঝা। উচ্চবিত্তরাও যে সবাই কতটুকু সাদা টাকায় করছেন তাই বা কে জানে! কেমন করে ভুলে যাই এদেশের শতকরা কত ভাগ লোক উচ্চবিত্তের তালিকায় পড়ে আর কতভাগ নিম্ন কিংবা মধ্যবিত্তের কোটায়। কেমন করে ভুলে যাই এইদেশে আমরা এমনই অনুকরণ প্রিয় সংবেদনশীল জাতি যেখানে ‘পাখি ড্রেস’ না পাওয়ায় অভিমানী কিশোরী আত্মহত্যা করে। বাবা মা ‘বাইক’ দিতে না পারলে চোখের মনি সাত রাজার ধন ছেলে ঘুমের ওষুধ খেয়ে নির্বিকারভাবে বাবা মায়ের স্বপ্নকে হত্যা করে। সেখানে ‘বিয়ে তো একবারই হয়’ শ্লোগানের মোড়কে মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে দেবার খেলা কি পরিণাম ফেলতে পারে সে হিসেব কষা কি কঠিন কিছু?

লেখক: অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সুত্র:সমকাল

 

শিশু ধর্ষণের লজ্জা এবং শিশু সোনিয়া লাশ দিয়ে শুরু হল নতুন বছর

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাদি ইউনিয়নে ধর্ষণের শিকার হয়ে লজ্জায় নিজের শরীরে কোরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছিল স্কুলছাত্রী সোনিয়া (১৩)। পাঁচদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর রোববার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় সোনিয়ার।

সোনিয়া চরাদি ইউনিয়নের হলতা গ্রামের দুলাল খানের মেয়ে ও চরাদি বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

সোনিয়ার বাবা দুলাল খান জানান, গত বুধবার সকালে প্রতিবেশী পান্নু খানের বখাটে ছেলে আসাদ খান ডিম ভেজে দেয়ার কথা বলে শিশুটিকে তার নিজের ঘরে নিয়ে যায়। এসময় আসাদের বাবা-মা কেউ বাসায় ছিল না। এ সুযোগে আসাদ সোনিয়াকে ধর্ষণ করে।

পরে নিজ ঘরে গিয়ে ওই দিন বেলা ১২টায় সে লজ্জায় নিজের শরীরে কোরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তার চিৎকারে বাড়ির লোকজন উদ্ধার করে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেলের শিশু সার্জারি বিভাগে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার দুপুরে তাকে ঢাকায় পাঠান চিকিৎসকরা। রোববার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশু সোনিয়ার মৃত্যু হয়।

বাকেরগঞ্জ থানার ওসি মো. মাসুদুজ্জামান বলেন, শিশুটির পরিবার থেকে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।সুত্র:জাগোনিউজ২৪

 

চাইল্ড অ্যাবিউজ (চাইল্ড ইমোশনাল অ্যাবিউজ)

আফরোজা হাসান


আমার ছেলের সাথে নিয়মিত যে কাজগুলো করি তারমধ্যে একটা হচ্ছে কার্টুন দেখা। আমাদের দুজনেরই সবচেয়ে প্রিয় কার্টুনটা শুরু হলেই, চিৎকার করে বলে, আম্মু কার্টুন শুরু হয়েছে আর আমিও ছুটে যাই দেখার জন্য। কোনদিন যদি কোন কারণে একসাথে কার্টুন দেখা না হতো, প্রচণ্ড অভিমান করতো। একবার একটানা প্রায় একসপ্তাহ বিভিন্ন কারণে আমি ওর ডাকে সাড়া দিতে পারিনি। খেয়াল করলাম তিন-চার দিন পর থেকেই ধীরে ধীরে ওর অভিমান কমছে এবং আমাকে ডাকা ছেড়ে দিচ্ছে আস্তে আস্তে। তিন বছরে যে অভ্যাসটা গড়ে উঠেছিল, মাত্র একসপ্তাহে সেটা গতি হারালো। আবার অভ্যাসটা গড়তে অনেকদিন লেগেছিল আমার। কিন্তু এখনো মাঝে মাঝে আমাকে ডাকতে ভুলে যায় আর কোন কারণে ওকে সঙ্গ দিতে না পারলে তেমন অভিমানও করে না।

আমার ব্যালকনি থেকে আমাদের বাড়ির মেইন গেইট দেখা যায়। সকালে যখন ছেলেকে তার বাবা স্কুলে নিয়ে যায় আমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতাম। নীচে দাঁড়িয়ে উপর দিকে তাকিয়ে আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে তারপর সে বাবার হাত ধরে গুটুগুটু পায়ে গেট দিয়ে বেড়িয়ে যেতো। একদিন ব্যস্ততার কারণে আমি ব্যালকনিতে দাঁড়াতে পারিনি। সেদিন স্কুল থেকে বেড়িয়ে সে একদম কান্না করে দিলো অভিমান আর কষ্টের প্রচণ্ডতায়। ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলছিল, আমি বার বার উপরে তাকিয়েছি কিন্তু তুমি ছিলে না। শারীরিক অসুস্থতার কারণে একবার বেশ কয়েকদিন ব্যালকনিতে দাঁড়াতে পারিনি। যার ফলাফল প্রথম ঘটনার অনুরূপ। এখনো বেশির ভাগ সময় আমি ডাকলেই উপরের দিকে তাকায় সে, নয়তো না। আর কোনদিন না দাঁড়ালেও কোন অভিমান করে না।

চাইল্ড স্পেশালিস্টের সাথে কথা বলার পর জানলাম যে, শিশুরা যদি তাদের কোন আবেগের যথাযথ মূল্য না পায়, তাহলে একটা সময় সে আবেগের প্রকাশ বন্ধ করে দেয়। আর নিজের আবেগকে প্রতিনিয়ত অবহেলিত হতে দেখার ফলে অন্যের আবেগকেও মূল্যায়ন করতে শিখতে পারেনা। এটা এক ধরণের ইমোশনাল অ্যাবিউজ যার কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয় শিশুদের নিজেদের আবেগের প্রকাশ ও অন্যেদের আবেগকে মূল্যায়ন করার ক্ষমতা।

বাবা-মাদের একটা সমস্যা হচ্ছে সন্তানদের ভালোর চিন্তায় বা ভালোবাসার কারণে, নিজেদের পছন্দ বা ভালোলাগা গুলোকে সন্তানদের উপর চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করেন। অনেক বাবা-মা আছেন নিজেদের জীবনের অপুর্ন স্বপ্নকে সন্তানদের দ্বারা পূরণ করতে চান। যার ফলে সন্তানদের উপর চাপিয়ে দেন নিজেদের প্রত্যাশার ভার। জীবনে কি হতে বা কি পেতে চায় বোঝার আগেই শিশুদের শুনতে হয় তোমাকে ডাক্তার হতে হবে, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে কিংবা বিজ্ঞানী হতে হবে। নিজের স্বপ্নকে আবেগের সাথে উপলব্ধি করার আগেই বাবা-মার প্রত্যাশার বোঝা চেপে বসে কচি মন গুলোতে। স্বপ্নের পাখীরা আবেগের ডানার অভাবে হারিয়ে ফেলে উড়ার ক্ষমতা।

কম্পিটিশনের হাওয়া বইছে চারিদিকে। স্কুলের সাথে স্কুলের কম্পিটিশন, বাবা-মার সাথে বাবা-মাদের কম্পিটিশন, কোচিং সেন্টারের কম্পিটিশন, শিক্ষকদের কম্পিটিশন, হায় রে কম্পিটিশন……!!! নাইনটি পারসেন্ট মার্কস পেতে হবে, নাইটি ফাইভ পারসেন্ট মার্কস পেতে হবে……! এই ধরনের ইমোশনাল ব্লাকমেইল আর এক্সপেক্টটেশনের চাপে কোমল প্রাণ শিশুগুলোর শৈশবের আবেগ কোথায় যেন হারিয়ে যায়। আর সেই সাথে হ্রাস পায় আবেগের প্রকাশ, অনুভব, উপলব্ধির ক্ষমতা…….!!!

আমরা যেন ভুলে না যাই যে, সন্তানরা আমাদের সম্পত্তি না, আমাদের স্বপ্ন পূরণের কোন মাধ্যম না। বরং সন্তানরা আমাদের কাছে স্রষ্টার দেয়া আমানত। তাই তাদেরকে এমন করে গড়ে তোলা উচিত যাতে আমানতের খেয়ানত না হয়, বরং আমাদের জন্য হতে পারে সাদাকায়ে জারিয়া।

সাইকোলজি(পিএইচডি)

 

‘অপরাজিতা’ সালতামামি ২০১৭, স্বাগতম ২০১৮

সুখ, স্বপ্নে.. নতুন বছরের আনন্দ হোক অফুরন্ত! জীবনের সব অপূর্ণ ইচ্ছা পূর্ণতা পাক… পূরণ হোক সব স্বপ্ন… সবার ভালবাসার পাত্র … হয়ে ওঠুন! যাইহোক, এমন কতকগুল রং ছড়ানো কথা নিয়ে চলে আসছে নতুন বছর।

চলে গেলো একটি বছর। চিরতরে ছুটি ২০১৭। পৃথিবীর ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রবেশ করব আরো একটি নতুন বছরে। পেছনের ভালো কিছুকে আগলে ধরে ও মন্দ সব খবর পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া আবার শুরু হোক মানুষের পথচলা।

নতুন মানেই সম্ভাবনা। নতুন মানেই স্বপ্ন। নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় আজ কুয়াশার চাদর সরিয়ে উঁকি দিলল নতুন বছরের সূর্য।

প্রকৃতির নিয়মে সূর্যকে আরেকবার প্রদক্ষিণ করেছে পৃথিবী। সঙ্গে এনেছে একটি নতুন বছর।

নারী সমাজের জন্য কেমন ছিল ২০১৭ সাল?

নারীরা ২০১৭ সালে বিশাল ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশের এ বছর বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নে অবস্থান ষষ্ঠ। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ-২০১৭-এর তথ্য অনুসারে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে নারী বৈষ্যমের হার সবচেয়ে কম। এ তথ্য অনুসারে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭ নম্বরে। ইনডেক্স তৈরি করা হয় চারটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে-
১.অর্থনৈতিক কর্মকান্ড,
২.নারীর অংশগ্রহণ ও অংশগ্রহণের সুযোগ,
৩.শিক্ষাবিষয়ক অর্জন, স্বাস্থ্য ও মৃত্যুর হার এবং
৪.রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন।
যা নারীর উত্তরণকেই প্রমাণ করে। প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান দৃঢ়। ২০১৭ সালে সফলতায় দেশ, তথা বহির্বিশ্বে এদেশের নারী তার দৃঢ় অবস্থান বজায় রেখেছে।
উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

  • প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ বছরই টাইস্ অব লন্ডন তাকে দিয়েছে মাদার অব হিউম্যানিটি খেতাব। যা এ দেশের ইতিহাসে এক গৌরবময় প্রাপ্তি।
  • দ্বিতীয় মেয়াদে ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিকী। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এ্যান্ড কিলবার্ন আসনের প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং ব্রিটিশ সরকারের ছায়ামন্ত্রী হিসেবে আছেন।
  • ব্রিটিশ পার্র্লামেন্টে উত্তর পশ্চিম লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল এ্যান্ড এ্যাকটন আসনে লেবার পার্টি থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রুপা হক। এবং
  • তৃতীয়বারের মতো লন্ডনের বেথনান গ্রিন এ্যান্ড বো আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বাংলদেশী বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী।
  • এ বছরের জুন মাসে আর এক মানবতাবাদী বাঙালী নারী, বাংলাদেশ অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডারবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারর্সন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অটিজম ডিজঅর্ডার বিষয়ে বিশ্বখ্যাত চ্যাম্পিয়ন হিসেবে অভিহিত হয়েছেন। এবং জুন মাসেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাঁকে দুই বছরের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিয়োগ দেয়।
  • এ বছর বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি আবিষ্কারেও এগিয়ে আছে বাঙালী নারী। মহাকাশে সহজে ব্যবহার করা যাবে এমন ছোট ও যুগান্তকারী প্রযুক্তির যন্ত্র আবিষ্কারের জন্য নাসাতে কর্মরত বাংলদেশী বিজ্ঞানী মাহমুদা সুলতানা জিতে নিয়েছেন ২০১৭ সালের নাসার সেরা উদ্ভাবন পুরস্কার।
  • বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ট্রান্সপোর্ট এয়ার ক্রাফটের ‘নাজিয়া আফরিন’ প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে পেয়েছেন ইন্সপায়ারিং উইমেন ইন ডিফেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৭।
  • ইন্সপায়ারিং উইমেন অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন একজন সফল নারী গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও ‘ফারজানা চৌধুরী’।
  • বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ডাঃ সায়েবা আক্তার নারীর মৃত্যু এড়াতে তার উদ্ভাবিত ‘সায়েবাস মেথড’ নিয়ে আলোচনায় আসেন এ বছর।
  • বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সাহসী ভূমিকার জন্য মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ‘ইন্টারন্যাশনাল ওমেন অব কারেজ’ পুরস্কার লাভ করেণ শারমীন আক্তার।
  • হস্তশিল্পে দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার সোনা রানী রায়ের সেলাইকৃত নকশীকাঁথা স্পেনে আন্তর্জাতিক হস্তশিল্প মেলায় ‘সেরা তালিকায় স্থান পেয়েছে। সোনা রানীর ‘হোয়াইট অন হোয়াইট ময়ূর’ নামে নকশীকাঁথাটি স্পেনের লোয়েভে ক্রাফট প্রাইজের জন্য মনোনীত হয়েছেন।

নারী নির্যাতন কেমন ছিল দেশে?

এ বছর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল-‘সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে চলি, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করি।’ প্রতিবছর ২৫ নবেম্বর বিশ্বব্যাপী এ দিবস পালিত হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন প্রায় ২২০ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৬ জনকে। গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৬ জন। পুলিশ সদর দফতরের নথি অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে মোট ৪৩ হাজার ৭০৬টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে এর মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার মামলার ১ লাখ আসামি খালাস পেয়েছেন আর ধর্ষণ মামলায় খালাস পেয়েছেন ৮৮.৩৫ শতাংশ আসামি। নারী নির্যাতন মামলায় আসামি খালাসের পরিমাণ ৯৫ শতাংশ। আবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক পরিসংখ্যান বলছে চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে ১ হাজার ৭৩৭টি ধর্ষণসহ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ বছরের ২৫ আগস্ট গণধর্ষণ এবং বর্বর খুনের শিকার হয়েছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামের মেয়ে ‘রূপা’। বগুড়ায় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়ে ফেরার সময় ময়মনসিংহগামী যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় পৈশাচিক এ ঘটনা ঘটে। নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের এক ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে বগুরার যুবলীগ নেতা আবদুল মতিনের ছোট ভাই শ্রমিকলীগ নেতা, হত্যা, হত্যাচেষ্টা, মাদকব্যবসা ও চোরাচালান মামলার আসামি তুফান সরকার। এ বছরের ১৭ জুলাই এসএসসি পাস করা এক কিশোরীকে তার বাড়িতে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে সে। বিষয়টি জানাজানি হলে ঘটনার ১০ দিন পর ২৮ জুলাই তুফানের স্ত্রী আশা ও তার বড় বোন কাউন্সিলর রুমকিসহ একদল সন্ত্রাসী মা- মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারধরের পর নাপিত দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। কিশোরীর মায়ের দায়ের করা মামলার অভিযোগ অনুসারে তার মেয়েকে ভাল কলেজে ভর্তির প্রলোভন দেখিয়ে গত ১৭ জুলাই ও তারপরে কয়েকবার ধর্ষণ করে এ তুফান সরকার। এ ঘটনায় তুফান, তার স্ত্রী, বোনসহ মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ বছর নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দেয়া রায়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নরসিংদীর শিবপুরে এক নারীকে গণধর্ষণ ও হত্যার দায়ে সুলতান মিয়া ওরফে জামাই সুলতান (৩৫), শফিকুল ইসলাম শরীফ (৩২), ও ওসমান গণি (৩৪) কে আদালত ফাঁসির আদেশ দিয়েছে। আসামীদের স্বীকারোক্তিতে জানা যায় নিহত মাহমুদা আক্তার (২৮) ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার কিসমত আহমদাবাদ (চানপুর) গ্রামের মৃত বেল্লাল হোসেনের মেয়ে। এছাড়া ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগে পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী হত্যার আসামি তাঁদেরই সন্তান ঐশি রহমানের মামলার রায় প্রকাশ পায়। এ রায়ে তাকে মৃত্যুদন্ড- সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে হাইকোর্ট। রায়ের কারণ হিসেবে যে বিষয়গুলো বিবেচিত হয়েছে বলে আদালত জানায় তা হলো ঐশির বর্তমান বয়স ১৯ বছরের কম এবং ছোটবেলা থেকে বাবা-মায়ের আদর যত্নের অভাবে সে মানসিক বিকারগ্রস্ত। সে এ্যাজমা রোগে আক্রান্ত। মাদকাসক্ত। হত্যার দুইদিন পরে সে নিজেই আত্মসমর্পণ করে। এবং ঐশির পরিবার পরিজনের মধ্যে কারও ক্রিমিনাল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মীর কাজে নিযুক্ত বাংলাদেশী নারীদের নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা আলোচনায় ছিল এ বছর।

কালো কলমে অন্যান্য আলোচিত ঘটনা

এক বছরের আলোচিত বিষয় ছিল ‘রোহিঙ্গা’ ইস্যু। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বর্তমানে ১৪ লক্ষ রোহিঙ্গা রয়েছে বাংলাদেশে। নতুন বছরের জন্য যা এক বড় চ্যালেঞ্জ।

হৃদয়স্পর্শী ঘটনা অন্যতম হাওরে পাহাড়ি ঢল, উত্তরের বন্যা, পাহাড় ধসে মৃত্যু, জঙ্গি দমন, এক ঝাঁক গুণী মানুষের প্রয়াণ, প্রশ্নপত্র ফাঁস, দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি।

২০১৭ সালেই ডানা মেলেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

প্রত্যাশা করতেই পারি এবার সকল বাধা সরিয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে গণতন্ত্র। সাফল্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে বাংলাদেশ, মুছে যাবে ব্যর্থতার গ্লানি।

২০১৮ সালকে স্বাগতম

শুভ বিদায় ২০১৭ সালকে। ইংরেজি হ্যাপী নিউ ইয়ার (শুভ নববর্ষ) ২০১৮।
কুয়াশার চাদর গায়ে দিয়ে আসল নতুন বছরের নতুন আলো। নতুন করে শুরুর দিন। অতীতের সব হিংসা-বিদ্বেষ পেছনে ফেলে, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির সম্মিলনের দিন।

নতুন সালকে স্বাগত জানিয়ে এবং নতুন বছরে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সংগঠন। ইংরেজি নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রাজধানীসহ সারাদেশে নানা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

বিদায় বছরের সঙ্গে সঙ্গে বিগত দিনের দুঃখ বেদনা ভুলে নতুন দিনে নতুন করে সব শুরু করার তাগিদে মেতে উঠব আমরা। এগিয়ে যাবে দেশ; এমন প্রত্যাশায় শুভ বিদায় ২০১৭।

শুভেচ্ছা ২০১৮। শুভেচ্ছা সকল পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, হকার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের।

 

চাইল্ড অ্যাবিউজ (চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ)

আফরোজা হাসান


চাইল্ড অ্যাবিউজ:

পৃথিবীর সব বাবা-মা’রাই সন্তানের ভালো চান। সন্তান যাতে ভালো হয় তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। কিন্তু শিশুদেরকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার।

শিশুদের বৈচিত্র্যতার চেয়েও বেশি দেখেছি বাবা-মাদের বৈচিত্র্যময় আদর-সোহাগ-ভালোবাসা এবং শাসন-শোষণ। জেনে বা না জেনে কিংবা বুঝে বা না বুঝে বাবা-মারা বাচ্চাদের উপর নানা ধরণের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন।

শারীরিক আঘাত চোখে দেখা যায় তাই পরবর্তীতে বাবা-মা তাতে মলম লাগাতে পারেন বা চেষ্টা করেন।

কিন্তু মানসিক আঘাত………!!!

এই আঘাতের কারণেই হয়তো শিশুদের মানসিকতার সঠিক বিকাশ বাধাঁপ্রাপ্ত হয়। কারণ বিভিন্ন ইন্দ্রীয়ের সাহায্যে শিশুরা বিভিন্ন বস্তুগত গুণাবলী ও ঘটনা সম্পর্কে ধারণা বা উপলব্ধি করতে শেখে।

আর এর উপর নির্ভর করেই শিশুদের মধ্যে জন্ম নেয় স্মৃতিশক্তি, কল্পনাশক্তি, সৃজনশীলতা, বিচারবুদ্ধি ইত্যাদি।

আমার পরিচিত একটি বাচ্চা আছে।

১.বাচ্চাটা কোন কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারেনা,
২.স্থির হয়ে বেশিক্ষণ এক জায়গায় বসতে পারে না,
৩.কোন কিছু করতে বললেও ঠিকমতো করতে পারেনা,
৪.একটুতেই রাগ করে-কান্না করে, ৫.বেখেয়ালি তাই খুব ভুল করে বা ভুলে যায়।

বাচ্চাটির বাবা-মাকে যদি পরামর্শ দেয়া হয় যে, ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান তারা দুজনই ভীষণ বিরক্ত হন বা রাগ করেন। মোটকথা তারা মানতেই রাজী না যে তাদের বাচ্চাটি এডিডি বা এটেনশন ডেফিসিট ডিজঅর্ডারের শিকার। কেউ বোঝাতে গেলে উল্টো তাদের সাথে মনোমালিন্য হয়। অথচ সন্তানের প্রতি তাদের ভালোবাসার কোন কমতি নেই। বাচ্চা যা চাইছে বলার সাথে সাথে তা সামনে এনে হাজির করেন। কিন্তু মানুষ বলবে যে তাদের বাচ্চাটা স্বাভাবিক না, সে ভয়তে বাচ্চাকে ডাক্তারের কাছে নিতে চায় না বা নিজেরাও মানতে চায়না।

প্রতিবেশী একজনকে দেখেছি বাচ্চা কিছু করতে না চাইলে, নানাভাবে ভয় দেখিয়ে সে কাজটি করতে বাধ্য করে। কেউ আছেন সারাক্ষণ টিভি চ্যানেল আর ফোনালাপ নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকেন যে, তখন বাচ্চা কথা বলতে চাইলে ধমক দিয়ে আরেক দিকে পাঠিয়ে দেন।

একজন মাকে দেখেছি বাংলাদেশ থেকে জালিবেত নিয়ে এসেছেন তার পাঁচ বছর বয়সি মেয়েকে শায়েস্তা করার জন্য। এক মা বুকফাটা কান্নার সাথে জানিয়েছিলেন, সাত বছর বয়সি ছেলেটাকে তাঁর স্বামী সামান্য কারণেই মাথায় তুলে সোফা বা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলেন, কখনো লাথি দেন আর বাকিটা নাহয় নাই বললাম।

যে কোন ধরণের আচার-ব্যবহার-কাজ যা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বা ভালো থাকায় বাঁধা দেয়, তাকেই এককথায় চাইল্ড অ্যাবিউজ বলে।

চাইল্ড অ্যাবিউজকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে-

♠ফিজিক্যাল অ্যাবিউজ বা যে কোন ধরণের নিয়ন্ত্রণহীন শারীরিক আঘাত।

♠সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ বা শিশু এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যে কোন রকমের যৌন সংসর্গ।

♠বিহেবিয়ার অ্যাবিউজ বা শিশুর প্রতি অবহেলা-অমনোযোগিতা।

♠ইমোশনাল অ্যাবিউজ বা নানাভাবে শিশুকে বাধ্য করা।

এই প্রত্যেকটি কারণের দ্বারাই শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে এই প্রত্যেকটি কারণ নিয়েই আলোচনা করবো।

চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ

চাইল্ড অ্যাবিউজ নিয়ে কথা বলছিলাম প্রতিবেশী কয়েকজন ভাবীর সাথে। সবাই চলে যাবার কিছুক্ষণ পর এক ভাবী ফিরে এলেন আবার। চেহারা দেখেই বুঝতে পারলাম কিছু বলতে চান। বেশ সময় নিলেন উনি নিজেকে গুছাতে তারপর বললেন, ভাবী আমি যখন ছোট ছিলাম আমাদের বাসায় আমার দূর সম্পর্কের এক মামা থাকতেন। উনি আমাকে খুব আদর করতেন, জড়িয়ে ধরতেন……….!! এসব কি তাহলে অ্যাবিউজ ছিল? কিন্তু আমি তো তখন অনেক ছোট ছিলাম। মাত্র আট বছর বয়স ছিল আমার। বেশির ভাগ সময় আড়ালে করলেও, মাঝে মাঝে তো আব্বু-আম্মুর সামনেও আমাকে আদর করেছে মামা। উনারা তো কখনো কিছু বলেননি। বলেন না ভাবী আমি কি অ্যাবিউজের স্বীকার তাহলে? সংসার জীবনে খুব সুখী এই মেয়েটিকে সে যে অ্যাবিউজের স্বীকার ছিল, বুঝিয়ে বলতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছিলো। কিন্তু এখনো মেয়েটা সেসব ভেবে নীরবে কান্না করে।

ক্লাস টেনে পড়তাম তখনকার ঘটনা। আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীটা ছিল ক্লাসের মধ্যে সবচেয়ে আমুদে স্বভাবের। হঠাৎ করে একদিন ওকে ভীষণ চুপচাপ দেখে কি হয়েছে জানতে চাইলাম। অনেক করে জিজ্ঞেস করার পর বললো, দুই সপ্তাহ ধরে আমার আব্বুর এক বন্ধু আমাকে টিউশন দিচ্ছে। প্রথম থেকেই উনি যেন একটু কেমন। প্রথমে ড্রইংরুমে বসে পড়তাম কিন্তু উনি শুধু বেডরুমে বসে পড়লে পড়ায় মনোযোগ বেশি এমন নানা কথা আম্মুকে বললে, পড়ার সুবিধার কথা চিন্তা করে বেডরুমে পড়ার পারমিশন দিয়ে দিলেন আম্মু। তারপর থেকে উনি পড়ার ফাঁকে ফাঁকে নানা ধরণের নোংরা জোকস বলা শুরু করলেন। আর গতকাল আমাকে বললেন যে, তুমি এতো ঢেকেঢুকে বসো কেন? আরো একটু খোলামেলা হয়ে বসবে, এতে দেখতে সুবিধা হয়……..!! আমি এখনই কিছু না করলে লোকটা আরো সাহস পাবে। কিন্তু লজ্জার কারণে আব্বু-আম্মুকে বলতে পারছি না এসব কথা। পরে আমরা কয়েক বান্ধবী মিলে ওর আম্মুকে বলেছিলাম।

এমন অসংখ্য ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে আমাদের চারপাশে। বাবা-মার চোখের সামনে তাদের আদরের সন্তানটি অ্যাবিউজের স্বীকার হচ্ছে কিন্তু তারা বাঁধা দেয়া তো দূরে থাক টেরই পাচ্ছে না। বুক দিয়ে যাদের কাছ থেকে আগলে রাখার কথা সন্তানকে, অজ্ঞতার কারণে নিজেরাই ঠেলে দিচ্ছে তাদের কাছে। আর এই ধরণের ঘটনাগুলো বেশির ভাগই ঘটে ঘরের একান্ত কাছের আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারা। যারা আদরের ছলে এমন সব বিকৃত কাজ করে, শিশুরা অস্বস্তিবোধ করলেও ঠিক বুঝে উঠতে পারে না যে এটা আদর নাকি অন্য কিছু। যার ফলে তারা কারো কাছে বিষয়টি জানায় না বা জানাতে যে হবে সেটাও বুঝতে পারে না।

ঘরের মানুষ ছাড়াও যারা শিশুদের কাছে আসার সুযোগ পায়, যেমন বাসার কাজের মানুষ, গৃহশিক্ষক, আশেপাশের বাড়ি বা ফ্ল্যাটের কেউ, স্কুলের কেউ তাদের সবার ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

শিশু ছেলে হোক বা মেয়ে উভয়ই এই ধরণের অ্যাবিউজের স্বীকার হতে পারে।

আর এসব ঘটনা থেকে তাদের মধ্যে তৈরি হতে পারে নানা ধরণের ছোট-বড় মানসিক সমস্যা, হীনমন্যতা, ব্যক্তিত্বহীনতা, ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রভৃতি।

কেউ কেউ মারাত্মক কিংবা অপূরণীয় শারীরিক ক্ষতির স্বীকার হয় এর ফলে।

শিশুরা যাতে এই ধরণের জঘন্য হয়রানির স্বীকার হতে না পারে, সেজন্য সবার প্রথমে বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে।

কে কি মনে করবে ইত্যাদি চিন্তা করে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বা লজ্জায় না ভুগে ঘরে অবস্থানরত অন্যান্য সদস্যদের সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে যে শিশুদের কতটুকু আদর করা যাবে।

আর শিশুদেরকে বুঝিয়ে বলতে হবে কোন ধরণের আদর গুলো পচা, শরীরের কোন কোন অংশে কাউকে ছুঁতে দেয়া যাবে না।

এবং বাবা-মাকে অবশ্যই সন্তানদের সাথে এমন সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা তাদের কোন কথা বাবা-মাকে বলতে দ্বিধা না করে। বাচ্চারা যদি কারো সাথে বাইরে যায় ফিরে আসার পর প্রশ্ন করে জেনে নিতে হবে বাইরে কি হয়েছে, কি দেখেছে, কি করেছে ইত্যাদি।

তার মানে এই নয় যে, আমরা প্রতিটা সম্পর্ককেই সন্দেহের চোখে দেখবো। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, বিভিন্ন কেস স্টাডি থেকে পাওয়া যায় এই ধরণের বিকৃত মানসিকতার মানুষগুলো চাচা-মামা-খালু-দুলাভাই-কাজিন-এমনকি দাদা-নানা….. পর্যন্ত হতে পারে।

সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য যদি নিজেকেও সতর্কতার চোখে দেখতে হয়, আমার মনেহয় সেটাই করা উচিত। কে কি মনে করলো সেই চিন্তায় যেন আমরা আমাদের সন্তানদেরকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে না দেই।

সাইকোলজি(পিএইচডি)

 

চাইল্ড অ্যাবিউজ (চাইল্ড ফিজিক্যাল অ্যাবিউজ)

আফরোজা হাসান


চাইল্ড অ্যাবিউজ: পৃথিবীর সব বাবা-মা’রাই সন্তানের ভালো চান। সন্তান যাতে ভালো হয় তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। কিন্তু শিশুদেরকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার।

শিশুদের বৈচিত্র্যতার চেয়েও বেশি দেখেছি বাবা-মাদের বৈচিত্র্যময় আদর-সোহাগ-ভালোবাসা এবং শাসন-শোষণ। জেনে বা না জেনে কিংবা বুঝে বা না বুঝে বাবা-মারা বাচ্চাদের উপর নানা ধরণের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন।

শারীরিক আঘাত চোখে দেখা যায় তাই পরবর্তীতে বাবা-মা তাতে মলম লাগাতে পারেন বা চেষ্টা করেন।

কিন্তু মানসিক আঘাত………!!!

এই আঘাতের কারণেই হয়তো শিশুদের মানসিকতার সঠিক বিকাশ বাধাঁপ্রাপ্ত হয়। কারণ বিভিন্ন ইন্দ্রীয়ের সাহায্যে শিশুরা বিভিন্ন বস্তুগত গুণাবলী ও ঘটনা সম্পর্কে ধারণা বা উপলব্ধি করতে শেখে।

আর এর উপর নির্ভর করেই শিশুদের মধ্যে জন্ম নেয় স্মৃতিশক্তি, কল্পনাশক্তি, সৃজনশীলতা, বিচারবুদ্ধি ইত্যাদি।

আমার পরিচিত একটি বাচ্চা আছে।

১.বাচ্চাটা কোন কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারেনা, ২.স্থির হয়ে বেশিক্ষণ এক জায়গায় বসতে পারে না, ৩.কোন কিছু করতে বললেও ঠিকমতো করতে পারেনা,৪.একটুতেই রাগ করে-কান্না করে, ৫.বেখেয়ালি তাই খুব ভুল করে বা ভুলে যায়।

বাচ্চাটির বাবা-মাকে যদি পরামর্শ দেয়া হয় যে, ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান তারা দুজনই ভীষণ বিরক্ত হন বা রাগ করেন। মোটকথা তারা মানতেই রাজী না যে তাদের বাচ্চাটি এডিডি বা এটেনশন ডেফিসিট ডিজঅর্ডারের শিকার। কেউ বোঝাতে গেলে উল্টো তাদের সাথে মনোমালিন্য হয়। অথচ সন্তানের প্রতি তাদের ভালোবাসার কোন কমতি নেই। বাচ্চা যা চাইছে বলার সাথে সাথে তা সামনে এনে হাজির করেন। কিন্তু মানুষ বলবে যে তাদের বাচ্চাটা স্বাভাবিক না, সে ভয়তে বাচ্চাকে ডাক্তারের কাছে নিতে চায় না বা নিজেরাও মানতে চায়না।

প্রতিবেশী একজনকে দেখেছি বাচ্চা কিছু করতে না চাইলে, নানাভাবে ভয় দেখিয়ে সে কাজটি করতে বাধ্য করে। কেউ আছেন সারাক্ষণ টিভি চ্যানেল আর ফোনালাপ নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকেন যে, তখন বাচ্চা কথা বলতে চাইলে ধমক দিয়ে আরেক দিকে পাঠিয়ে দেন।

একজন মাকে দেখেছি বাংলাদেশ থেকে জালিবেত নিয়ে এসেছেন তার পাঁচ বছর বয়সি মেয়েকে শায়েস্তা করার জন্য। এক মা বুকফাটা কান্নার সাথে জানিয়েছিলেন, সাত বছর বয়সি ছেলেটাকে তাঁর স্বামী সামান্য কারণেই মাথায় তুলে সোফা বা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলেন, কখনো লাথি দেন আর বাকিটা নাহয় নাই বললাম।

যে কোন ধরণের আচার-ব্যবহার-কাজ যা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বা ভালো থাকায় বাঁধা দেয়, তাকেই এককথায় চাইল্ড অ্যাবিউজ বলে।

চাইল্ড অ্যাবিউজকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে-

♠ফিজিক্যাল অ্যাবিউজ বা যে কোন ধরণের নিয়ন্ত্রণহীন শারীরিক আঘাত।

♠সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ বা শিশু এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যে কোন রকমের যৌন সংসর্গ।

♠বিহেবিয়ার অ্যাবিউজ বা শিশুর প্রতি অবহেলা-অমনোযোগিতা।

♠ইমোশনাল অ্যাবিউজ বা নানাভাবে শিশুকে বাধ্য করা।

এই প্রত্যেকটি কারণের দ্বারাই শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে এই প্রত্যেকটি কারণ নিয়েই আলোচনা করবো।

চাইল্ড ফিজিক্যাল অ্যাবিউজ

সন্তানদের ভালোর জন্যই প্রয়োজনে
বাবা-মাকে দৃঢ় হতে হয়। এটা অবশ্যই ভালো কারণ বাবা-মার দৃঢ়তা সন্তানদের মনে নিরাপত্তা বোধের জন্ম দেয়।

কিন্তু ছেলেমেয়েরা যখন কথা শোনে না বা অবাধ্যতা করে, তখন তাদেরকে সঠিক পথে আনতে বাবা-মারা যে কাজটি করেন, তাঁর নাম ‘শাসন’।

আর শাসন মানে সবাই মনে করেন যে, বকাঝকা করা নয়তো কোন শারীরিক শাস্তি দেয়া কিংবা পছন্দের জিনিস বন্ধ করে দেয়া ইত্যাদি।

আর শাসনের পক্ষে নানা ধরণের যুক্তিও থাকে বাবা-মার কাছে। যেমন- মাঝে মাঝে শাসন না করলে বাচ্চারা মানুষ হয় না, সাহস বেশি বেড়ে যায়, ছোটবেলায় আমাদের বাবা-মা’রাও আমাদেরকে শাসন করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

অথচ শাসন আর গায়ে হাত তোলা কিন্তু এক জিনিস নয়। বাচ্চাদের ভুল বা অন্যায় গুলো অবশ্যই তাদেরকে ধরিয়ে দিতে হবে, তবে এরসাথে গায়ে হাত তোলার কোন সম্পর্ক নেই।

আমি দেখেছি আড়াই বছর বয়সি একটি মেয়েকে তার বাবাকে ঘর ভর্তি মানুষের সামনে চড় লাগিয়ে দিতে, মেহমানদের জন্য সাজিয়ে রাখা খাবার ধরার জন্য।

মেয়েটা ফ্যালফ্যাল করে বাবার দিকে তাকিয়ে ছিল, কারণ চড়টা কেন খেল বুঝতে পারছিলো না।

বাসায় টিচার আসলে পড়তে চায় না তাই চার বছর বয়সি মেয়েকে মা লাঠি পেটা শুরু করলো টিচারের সামনেই।

স্কুল থেকে ডেকে টিচাররা অভিযোগ করলো ক্লাসে বাচ্চা অমনোযোগী থাকে, বাসায় ফিরেই বাবার চড়-থাপ্পড়ের বৃষ্টি বাচ্চার উপর।

ছয় বছর বয়সি ছেলেটা তার তিন বছরের বোনের সাথে খেলনা শেয়ার করতে রাজী না হলেই শারীরিক আঘাতের স্বীকার হয়। ঘরের কোন জিনিসপত্র নষ্ট করলো তো আর রক্ষা নেই। এমন আরো অসংখ্য ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে বাচ্চাদের সাথে।

অথচ এই ব্যাপার গুলোর সমাধানের সাথে শারীরিক আঘাতের কোন সম্পর্ক নেই বা শারীরিক আঘাত এর সমাধানও নয়।

পরীক্ষায় নাম্বার কম পেলে, ঘরের কোন জিনিস নষ্ট করলে, ছোট ভাই-বোনের সাথে বনিবনা না হলে, কথা শুনতে না চাইলে, অবাধ্যতা করলে বাচ্চাদের বুঝিয়ে না বলে,

গায়ে হাত তুললে আসলে তেমন কোন লাভ হয় না।

শরীরে ব্যথা পায় কিন্তু কেন ব্যথা পেলো বুঝতে পারে না, ফলে একই কাজ বার বার করে এবং আবারো শাস্তি পায়।

এর ফলে বাচ্চাদের মনে বাবা-মায়ের প্রতি চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং ক্রমাগত তা বাড়তে থাকে।

একটা সময় বাচ্চারা বাবা-মার কথাই সহ্য করতে পারে না। ইচ্ছে করে তখন কথা শোনে না বা দুষ্টুমি করে। কারণ চিন্তা থাকে বড়জোর আমাকে ধরে মারবে এই তো!

তাই বাচ্চারা কোন অন্যায় করলে তাদের বোঝাতে হবে। কেন এই কাজটা করা ঠিক না, এর প্রভাব কি হতে পারে ইত্যাদি। আর শারীরিক আঘাতের চেয়ে এই বোঝানোটা অনেক বেশি ফলপ্রসূ।

শাসন আর অ্যাবিউজ কিন্তু এক জিনিস না। শাসন হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে শিশুর ভুল বা অন্যায় গুলো তাকে ধরিয়ে দিয়ে, তার থেকে বের হবার প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা করা।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে শাসনের নামে বাচ্চারা অ্যাবিউজের স্বীকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত, যার ফলে বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে তাদের সুষ্ঠু বিকাশ।

বাবা-মা যখন শাসন করতে গিয়ে বাচ্চাদের গায়ে হাত তুললেই যে সব ঠিক হয়ে যাবে এর কিন্তু কোন গ্যারান্টি নেই।
বরং বাচ্চারা আরো জেদি হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

যারা বাচ্চাদেরকে বোঝাতে পারেন না বা শেখাতে পারেন না তারাই আসলে শাসনের নামে গায়ে হাত তোলেন। কিন্তু এভাবে সন্তানদের মানুষ করা যায় না।

নিজেদের চরিত্রের অযোগ্যতা, নিয়ন্ত্রণহীনতাকে শাসনের নামে চালিয়ে দেন। যা কিনা প্রকৃত অর্থে চাইল্ড ফিজিক্যাল অ্যাবিউজ।

আজ যে বাচ্চাটাকে আমি সামান্য কারণে গায়ে হাত তুলছি, শরীরের সাথে সাথে ছোট্ট মনটাকেও করছি আঘাতে আঘাতে জর্জরিত…!!

যখন ওর স্নেহ- মমতা-সহমর্মিতা-ভালোবাসার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তখন পাচ্ছে শাসনের নামে চড়-থাপ্পড়-বকাঝকা…!!

একটা বয়সে গিয়ে যখন আমার স্নেহ-মমতা-সহমর্মিতা-ভালোবাসার প্রয়োজন পড়বে, তখন কি সন্তানের কাছ থেকে সেটাকে প্রাপ্য মনে করাটা অন্যায় হবে না?

আমার আজকের আচরণটাই যে আমার সন্তানের আগামীর পাথেয় হবে সেটা যেন আমরা কেউ ভুলে না যাই।

সাইকোলজি(পিএইচডি)

 

‘মা’ তোমাকে ভালবাসি

ডা. সাকলায়েন রাসেল


ক্লান্ত শরীরে সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম..চোখ খুলে দেখি মা.. মাথায় হাত বুলাচ্ছেন! তাঁর দিকে তাকাতেই বললেন…
ঘেমে গেছিস…ফ্যান ছেড়ে দিব?
কিছু বলার আগে আবারো বললেন,
চুল অনেক বড় হয়ে গেছে,কাটাবি না?

চুল তো চাইলেই ছোট করতে পারি…পারিনা নিজেকে ছোট করতে ! তাহলে হয়ত মায়ের সেই ছোট্ট সাকলায়েনটি হয়ে থাকতাম.. চিরদিন!

সেদিন মাকে বললাম, আজ রোজা রাখব…

-শোয়ার আগে মা বলল, সত্যি সত্যি রাখবি?

_‘হু’

-ভোরে উঠে ভাত গরম করে খেতে পারবি?

_আরে না, কি যে বল, ভাত গরম করতে হবে কেন!… পেটে গেলে দু’মিনিটেই সব ঠান্ডা হয়… ! নিজের অক্ষমতা আড়াল করতে এভাবেই যুক্তির আশ্রয় নিলাম।

-কিছুক্ষণ পর মা এসে বলল, শোন, হটপটে খাবার আছে…খেয়ে নিস…!

_আচ্ছা

-কিছুক্ষণ পর, মা আবার এসে ঠোটে হাসির রেখা টেনে বলল, শোন, হটপট সাবধানে খুলিস !

এমন সাবধান বাণীতে অবাক হলেও কোন প্রশ্ন করলাম না…
ঘড়িতে তখন রাত ৩ টা…
খেতে গিয়ে অবাক হলাম…পুরো হটপট ৩ টা সোয়েটারে ঢাকা…!
‘আহ হারে’ ! …

ছেলের খাবার গরম রাখতে কি প্রাণ পণ চেষ্টা মায়ের…! ভাতটুকু গলধকরণের আগেই তাই বোবা কান্নাটাও গিলে ফেললাম…

শেষ প্রান্তে এসে বুঝলাম… ভাত শেষ কিন্তু পেটে ক্ষুধা তখনো রয়ে গেছে!…তবুও একমুঠো ভাত রেখেই খাবার শেষ করলাম…। ব্যাখ্যাঃ যদি সকালে উঠে মা দেখে সব ভাত শেষ… তবে ভাবতে পারে… আমার হয়ত আরো ভাত লাগত… আমি ক্ষুধা নিয়েই রোজা রেখেছি…
ফলাফল, মা সারাদিন মন খারাপ করবে… আফসোস করবে… আহ হারে! কেন ভাত একটু বেশি দিলাম না..! পেট অপূর্ণ থাকার পরও আমি তাই একটু ভাত ছেড়েই উঠলাম… তাতে মা অন্তত স্বান্তনা পাবে, ভাতের পরিমান ঠিক ছিল।

বন্ধুরা, Love you mom…আমি তেমনটা পারিনা…আমার কাছে LOVE মানে ভাত গরম রাখতে সোয়েটার দিয়ে হটপট ঢেকে রাখা…
LOVE মানে পেটে ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও কিছু ভাত ছেড়ে উঠা!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম

 

ঝড়ের দিন -শেষ পর্ব

তানজীল আহমদ সিদ্দিকী


আলতানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়। কদিন আগেও গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কলকাকলিতে স্কুলটার প্রত্যেকটা ঘর মুখর হয়ে উঠতো। অ আ ক খ ধ্বনি উড়ে উড়ে বেড়াতো স্কুলের প্রতিটি ঘরে। আর এখন স্কুলের প্রতিটি ইটে পাক খায় হানাদারদের দ্বারা নির্যাতিত মানুষগুলোর মরণ আর্তনাদ। জানালার কপাটে ঠুকে মরে ধর্ষিতাদের নিস্ফল কান্না। দেয়ালে লেপ্টে যায় হতভাগীদের অসহায় হাতের ছাপ।
দীপককে কখন ওরা স্কুলের একটা ঘরে বেঁধে রেখে গেছে টের পায়নি সে। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখলো একটার অন্ধকার রুমে সিলিং থেকে ঝুলে থাকা দুটো দড়িতে হাত বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। দীপক প্রথমে ভেবছিলো এ ঘরে সে একা, পরে অন্ধকারে চোখ একটু সয়ে আসতে বুঝতে পারলো তার পাশে আরেক জন একইভাবে বাঁধা। হঠাৎ মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো দীপকের। প্রচন্ড দূর্বল লাগছে। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হতে লাগলো দীপকের। তার ভুলের জন্য পুরো মিশনটাই বোধহয় ভেস্তে যেতে যাচ্ছে। এমন সময় পাশের মানুষটা খুব মৃদু গলায় বলে উঠলো, ‘পানি! পানি! কেউ আমাকে একটু পানি খেতে দাও! ‘ কণ্ঠস্বরটা খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। দীপক ভালো করে কান পাতলো। এ তো তপেশ মাস্টারের গলা!
‘ মাস্টার সাব, ও মাস্টার সাব! ‘
তপেশ মাস্টার প্রথমে বুঝতে পারলেন না কোথা থেকে আসছে কণ্ঠটা। এই পিশাচের দঙ্গলে কে-ই বা তাকে এত সম্মানের সহিত ডাকবে! তবে সাড়া দিলেন!
‘ কে বলছো? তুমি কি এ ঘরেই আছো? ‘
‘ আমি দীপক, মাস্টার সাব! আপনার পাশেই বাঁন্ধা আছি। আপনার এই অবস্থা ক্যান, স্যার? ‘
তপেশ মাস্টার অতি কষ্ট করে একটু হাসলেন। সেই হাসিতে লেগে আছে ব্যথাহত হৃদয়ের উথলে ওঠা আবেগের পরশ। তারপর অসহায় গলায় বললেন, ‘ মিলিটারিরা ধরে নিয়ে এসেছে, নজর আলির নির্দেশে। আমার স্ত্রী, বোন এদের আমি রক্ষা করতে পারিনি। জানিও না এমুহুর্তে কি অবস্থায় আছে ওরা। তোমাকে ধরেছে কেন? ‘ তার চোখ খানিক উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। ‘ তুমি মুক্তিবাহিনীর লোক? ‘
দীপক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘ জে, মাস্টার সাব। ‘
হঠাৎ করে ভারী কাঠের দরজাটা খুলে গেলো। নজর আলি আর মেজর ওয়াসিমসহ কয়েকজন মিলিটারি ঘরে ঢুকলো। নজর আলির হাতে হারিকেন। সেই আলোয় পুরো ঘর আলোকিত হয়ে উঠলো। দীপক খেয়াল করলো তপেশ মাস্টারের শরীরের সর্বত্র অত্যাচারের চিহ্ন। বিভিন্ন জায়গায় চামড়া ছিলে ফেলা হয়েছে। রক্ত ঝরছে সেসব ক্ষত থেকে। আসন্ন অত্যাচারের কথা চিন্তা করে দীপকের পুরো শরীর খানিক কেঁপে উঠলো। মেজর ওয়াসিম খান সোজা এগিয়ে আসলেন দীপকের সামনে। তার চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ তুম মুক্তি হ্যায়? ‘
পাশ থেকে তপেশ মাস্টার চিৎকার করে উঠলেন, ‘ কিচ্ছু বলো না, দীপক। একদম কিচ্ছু বলো না। পশুগুলো তোমা…’ কথা শেষ করতে পারলেন না তিনি। নজর আলি সজোরে একটা চড় কষিয়ে দিলেন তিনি। তপেশ মাস্টারের চুলের মুঠি ধরে দাঁত কিড়মিড় করে বললেন, ‘ একদম চুপ, শালা মালাউন। তোর বউটারে তো সৈন্যরা ভোগ কইরা জঙ্গলে ফালায়ে রাইখা আসছে। আর তোর বোইনের মজা লুটসেন আমাগো মেজর। আর একটা কথা যদি কস, তাইলে তোর বউয়ের কাছে তোরে আর তোর বইনরে একলগে পাঠায় দিমু। ‘
নজর আলির কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলেন তপেশ মাস্টার। তার স্ত্রী আর বেঁচে নেই! তার অনাগত সন্তানও আর বেঁচে নেই। ছোট বোনটার ইজ্জত লুটে নিয়েছে পশুগুলো। আর কি লাভ বেঁচে থেকে! হতভাগিনী বোনটাকে সাথে নিয়ে মরে গেলেই বোধহয় সব জ্বালা জুড়িয়ে যায়! ফিসফিস করে শুধু বললেন, ‘ মেরে ফেল আমাকে। ‘
মেজর আবার জিজ্ঞেস করলেন দীপককে, ‘ তুম মুক্তি হ্যায়? ‘
হ্যাঁ না যা-ই বলুক পরিণতি কি হতে পারে জানা আছে দীপকের। তাই ও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো কোনভাবেই সহযোগিতা করবে না। পিশাচদের সাথে কোন আপোস করা যাবে না। মুখ ভর্তি থুতু ছুঁড়ে মারলো সে মেজরের দিকে। মেজর মুখ খারাপ গাল দিয়ে উঠে হাতের উলটো পিঠ দিয়ে সজোরে চড় মারলেন দীপককে । এমন সময়ে হঠাৎ বাইরে থেকে প্রচন্ড গোলাগুলির আওয়াজ ভেসে এলো। দুম করে গ্রেনেডও ফুটলো একটা। ঘরে উপস্থিত সকলে চমকে উঠলো। এক পাক সৈন্য ছুটতে ছুটতে এসে জানালো মুক্তিরা এট্যাক করেছে এবং সংখ্যায় মনে হচ্ছে বেশ ভারী ওরা! দীপকের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। আসাদ ভাইরা এসে পড়েছেন! দীপক বিজয়ী ভঙ্গিমায় হেসে মেজরকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘ এবার কোথায় পালাবি? ‘ মেজর সৈন্যদেরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দিলেন। তারপর দীপকের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে নজর আলিকে সাথে নিয়ে নিজেও বেরিয়ে গেলেন। দীপকের চোখ তখন জ্বলছে। ক্রোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। আজ পিশাচ বধ হবে। বহুদিন পর আলতানগরের আকাশে আবার স্বাধীন সূর্য উঠবে।
শিবু আর আসাদ যখন দীপকের বাড়িতে পৌঁছেছিলো তখন দীপকের মা-কে তারা বাড়ির উঠোনে অজ্ঞান অবস্থায় পেয়েছিলো। জ্ঞান ফেরানোর পর তিনি কাঁদতে কাঁদতে তাদের জানান যে মিলিটারিরা দীপককে ধরে নিয়ে গেছে। তারা তারপর সিদ্ধান্ত নেয় যে ওপারে ফিরে গিয়ে কমান্ডারকে জানানো যাবে। তারপর সম্ভব হলে একটা রেসকিউ অপারেশন চালাবে। পরবর্তীতে দীপকের মা-কে শান্ত করে খেয়াঘাটে পৌঁছে তারা দেখতে পায় তাদের পুরো গেরিলা দলটা খেয়াঘাটে অবস্থান নিয়ে আছে। কমান্ডার সাদেকও চলে এসেছেন। আসাদ আর শিবু অবাক হয়ে কমান্ডারের কাছে জানতে চেয়েছিলো – দলের একজন যোদ্ধার জন্য কমান্ডার এতবড় একটা ঝুঁকি নিলেন? কমান্ডার মুচকি হেসে বলেছিলেন, ‘ দেশটারে বাঁচাইতেই তো আমরা বেবাক্কে এক হইসি। ধইরা নাও দীপকই দেশ। কি? বাঁচাইবা না নিজের দেশরে? ‘ আসাদ অবাক তাকিয়ে ছিলো। কমান্ডারকে সবাইকে ডেকে পুরো মিশনটা বুঝিয়ে বললেন। চারদিক থেকে স্কুলটা ঘিরে ধরতে হবে। তারপর একসাথে সব দিক থেকে ফায়ারিং শুরু হবে।
প্ল্যান অনুযায়ী কমান্ডারের সাদেকের নেতৃত্বে গেরিলা দলের সবাই স্কুলের চারদিকে অবস্থান নিয়ে নেয়। আসাদ, শিবু সাথে আরো কয়েকজন অবস্থান নেয় স্কুলের সামনের দিকে। স্কুলের সামনে পাহারায় দাঁড়িয়ে থাকা কোন পাক সৈন্য কিচ্ছুটি টের পায়নি। তারপরই কমান্ডারের নির্দেশে শুরু হয়ে যায় গুলি বর্ষণ। স্টেনগান আর থ্রি নট থ্রি রাইফেলের একটানা গুলিবর্ষণে পুরো আলতানগর কেঁপে উঠলো। স্কুলের ভেতরে তখন মেজর দীপককে ইন্টারোগেট করছেন। পাক সৈন্যরা হামলার প্রথম ধাক্কাটা সামলে নিতেই বেশ হিমশিম খেয়ে গেলো। তিন জন সৈন্য গোলাগুলি শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই লুটিয়ে পড়লো। বাকি সৈন্যরা ততক্ষণে সামলে নিয়েছে। কাভার নিয়ে ওরাও পালটা গুলি করতে লাগলো। পুরোদমে শুরু হয়ে গেলো এক মরণপণ লড়াই। গেরিলা দলটা জীবন বাজি রেখে লড়ছে আলতানগরকে হানাদারমুক্ত করবে বলে। আর পাক বাহিনী দাঁতে দাঁতে চেপে লড়ে যাচ্ছে এই অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিলিটারি ঘাঁটির দখল রাখবে বলে। দুই পক্ষই সংখ্যায় ভারি। যদিও পাক বাহিনীর হাতে আছে একটা মেশিনগান। স্কুলের বাউন্ডারি ঘেঁষেই বসানো হয়েছে সেটি। অনবরত গুলি বর্ষিত হচ্ছে তা থেকে। ইতিমধ্যেই দুজন গেরিলা সেই মেশিনগানের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। কমান্ডার সাদিক সবাইকে খানিক পিছিয়ে যেতে বললেন। মেশিনগানটা কব্জা করতে না পারলে ক্যাম্পের দিকে আগানো সম্ভব না। বাঁশঝাঁড়ে অবস্থান নিয়ে থাকা কমান্ডারের পাশেই ছিলো শিবু। সে বলে উঠলো, ‘ আমি দখল নিমু মেশিনগানের। ‘ কমান্ডার অবাক হয়ে বললেন, ‘ কি কইরা? ‘
এই প্রথম শিবুকে হাসতে দেখলেন কমান্ডার। দু হাতে দুটো গ্রেনেড নিয়ে শিবু বললো, ‘ এইগুলান দিয়া। আপনেরা শুধু আমারে কাভার দেন। ‘ কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই শিবু বাঁশঝাড় থেকে বেরিয়ে এলো। আঁকাবাঁকা করে দৌড় দিলো স্কুলের দিকে, ঠিক যেখানে মেশিনগানটার অবস্থান। কমান্ডার চিৎকার করে সবাইকে নির্দেশ দিলেন শিবুকে কাভার দিতে। সবাই একযোগে গুলি শুরু করলো। স্টেনগানের কড়কড় আওয়াজে কান পাতা দায়। ওদিক থেকে চাইনিজ এসএসজি দিয়ে পাক বাহিনীও সমানে জবাব দিয়ে যাচ্ছে। আর সেই নরকের ভেতর দিয়ে শিবু এঁকেবেঁকে দৌড়ে যাচ্ছে। গুলির নহর ছুটে যাচ্ছে তার পাশ দিয়ে। তবু একটা গুলিও স্পর্শ করছে না তাকে। যেন অসম সাহসী মৃত্যুভয়হীন এই মানুষটাকে পরম শ্রদ্ধায় পথ করে দিচ্ছে গুলিগুলো। মেশিনগানের সামনে বসে গুলি রিলোড করতে পাক সৈন্যটা অবাক হয়ে দেখলো এক বাঙ্গাল দু হাতে দুটো গ্রেনেড নিয়ে ঠিক তার দিকেই ছুটে আসছে। মেশিনগানের গুলি রিলোডিং ফেলে সে তার রাইফেলটা হাতে তুলে নিলো এবং সাথে সাথেই গুলি করে দিলো। তবে তার আগেই ‘ ও মা, তোর লাইগা ‘ চিৎকার দিয়ে শিবু একটা গ্রেনেড ছুঁড়ে দিয়েছে মেশিনগানের দিকে! বিকট আওয়াজ করে দুটো গ্রেনেড একসাথে ফুটলো। মেশিনগান গানার আর তার মেশিনগান টুকরো টুকরো হয়ে গেলো মুহুর্তে। অসম সাহসী শিবুর শরীরও টুকরো হয়ে মিশে গেলো তার বাংলা মায়ের শরীরের সাথে। সাথে সাথে কমান্ডার সাদেক চিৎকার করে সবাইকে আগে বাড়তে বললেন। ক্যাম্পের চারদিক থেকে যোদ্ধারা গুলি করতে করতে এগিয়ে আসতে লাগলো। মেশিনগানটা উড়ে যেতে দেখেই পাক সৈন্যদের সাহস উবে যেতে শুরু করেছিলো, চারদিক থেকে গেরিলাদের এভাবে ছুটে আসতে দেখে অবশিষ্ট সাহসটুকুও আর রইলো না। নির্দিষ্ট কোন টার্গেট ভুলে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে লাগলো। ফলস্বরুপ বেশিরভাগ গুলিই যোদ্ধাদের আশপাশ দিয়ে চলে যেতে লাগলো। একটাসময় এসে পাক সৈন্যদের আর কেউই বেঁচে রইলো না ক্যাম্পটার দখল বজায় রাখার জন্যে। ভেতরে যারা ছিলো তারা সবাই মাথার উপরে হাত তুলে বেরিয়ে এলো। কমান্ডার সাদিক এগিয়ে আসলেন সামনে। সাত-আট সিপাহীকে সাথে নিয়ে মেজর ওয়াসিম খান সাদিকের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন। তাদেরকে কড়া পাহারায় রেখে কমান্ডার কয়েকজনকে সাথে নিয়ে স্কুলের ভেতরে ঢুকলেন। একটা ঘরের দরজা খোলা দেখে ভেতরে ঢুকলেন। তপেশ মাস্টার আর দীপককে এ ঘরেই বেঁধে রাখা হয়েছে। কমান্ডার তাড়াতাড়ি দুজনের বাঁধন খুলে দিলেন। বাঁধন খুলে দিতেই তপেশ মাস্টার মূর্ছা গিয়ে কমান্ডারের শরীরের উপর ঢলে পড়লেন। কমান্ডার আস্তে করে তাকে মেঝেতে শুইয়ে দিলেন। তারপর তিনি দীপকের বাঁধন খুলে তাকে বাইরে নিয়ে এলেন। দীপককে দেখে আসাদসহ অনেকে ছুটে এলো। আসাদ উদ্বিগ্ন স্বরে দীপককে জিজ্ঞাসা করলো, ‘ দীপক, ঠিক আসো তুমি? পশুগুলান মারে নাই তো? ‘ দীপক ক্লান্ত স্বরে বললো, ‘ আমি ভালা আছি, আসাদ ভাই। আপনেরা মাস্টার সাহেবরে দেখেন। ‘ কমান্ডারের মনে পড়লো তিনি মাস্টারকে ঘরে রেখে এসেছেন। সাথে সাথে তিনি একজনকে নির্দেশ দিয়ে দিলেন মাস্টার-কে যেন বাইরে নিয়ে আসা হয়। ততক্ষণে স্কুলের প্রত্যেকটি ঘরের দরজা খুলে বন্দিদের বাইরে নিয়ে আসা হয়েছে। সবই যুবতী মেয়ে। তাদেরকে দিনের পর দিন এখানে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়েছে। গায়ে একটা সুতো পর্যন্ত ছিলো না কারো। উপস্থিত গেরিলা দলের প্রত্যেকে তাদের নিজেদের শার্ট-গেঞ্জি খুলে তাদেরকে ঢেকে দিয়েছে। মানসিক আর শারীরিক অত্যাচার হাঁটার শক্তি পর্যন্ত নিয়ে নিয়েছে তাদের। দুজন তাদেরকে নিয়ে গ্রামের দিকে আগালো। আলতানগত যে শত্রুমুক্ত হয়ে গেছে, গ্রামবাসীকে সেকথা তারা-ই জানিয়ে দেবে।
তপেশ মাস্টারকে ধরে ধরে যখন স্কুলঘরের বাইরে নিয়ে আসলো, তিনি তার বোনের খোঁজ জানতে চাইলেন। কমান্ডার সাদিক গম্ভীর মুখে বললেন, ‘ মনডারে শক্ত করেন মাস্টার। ‘ কমান্ডারের কথা শুনে তপেশ মাস্টার ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন তার দিকে। এমন সময় ভেতর থেকে দুজন মুক্তিযোদ্ধা একটি মেয়ের লাশ ধরাধরি করে নিয়ে এলো। তারা সেই লাশটা পরম যত্নে শুইয়ে দিলো বারান্দার মেঝেতে। তপেশ মাস্টার এগিয়ে আসলেন। এ যে তার বোনেরই লাশ। তিনি আস্তে করে বসে পড়লেন তার বোনের পাশে। তারপর শান্ত গলায় কমান্ডারের কাছে জানতে চাইলেন, ‘ কিভাবে? ‘ কমান্ডার ধরা গলায় বললেন, ‘ পরনের শাড়ি দিয়া। পশুগুলোর অমানুষিক অত্যাচার আর নিতা পারেনি বেচারি। ‘ কমান্ডারের কথা শোনার পর তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তপেশ মাস্টার শান্তভাবে তার বোনের মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন। কমান্ডার আর দাঁড়াতে পারলেন সেখানে। আস্তে করে সরে আসলেন। মাটিতে হাঁটু গেড়ে মাথায় হাত দিয়ে বসা আত্মসমর্পণকারী পাক সৈন্যদের দিকে এগিয়ে এলেন। মেজর ওয়াসিম খানের সামনে এসে ডাক দিলেন তার এক সহযোদ্ধা-কে। শিক্ষিত লোক তিনি। শহরের কলেজে শিক্ষকতা করতেন, যুদ্ধের দামাম বাজতেই দেশের ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্র কাঁধে নেমে পড়েছেন যুদ্ধক্ষেত্রে। কমান্ডার তার হয়ে মেজরের সাথে কথা বলতে অনুরোধ করলেন তাকে।
তিনি কমান্ডারের কথা মতো মেজরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ ডু ইউ ফিল গিলটি ফর হোয়াট ইউ হ্যাভ ডান, মেজর? ‘
মেজর ঠান্ডা গলায় জবাব দিলেন, ‘ নো। বাট আই রিপেন্ট ওয়ান থিংগ। ‘
ভদ্রলোক তার মাথায় চেপে বসা রাগটা কোনরকমে ঠেলে সরিয়ে রেখে জানতে চাইলেন, ‘ হোয়াট? ‘
মেজর কুৎসিত একটা হাসি দিয়ে বললেন, ‘ ইফ আই কুড ফাক মোর ওব ইওর গার্লস! ‘ আর সহ্য করতে পারলেন সেই শিক্ষক। অন্তরের সব ঘৃণা এক করে হাতের মুঠোয় এনে সজোরে এক ঘুষি মেরে বসলেন মেজরকে। মেজরের নাক দিয়ে রক্তের ফোয়ারা ছুটলো। কমান্ডার তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে সরিয়ে নিয়ে গেলেন ভদ্রলোককে।
ভোর হবার খানিক আগে, কমান্ডার সাদিকের আদেশে মেজর ওয়াসিমকে স্কুলের পেছনে নিয়ে গিয়ে একটা বড় আমগাছের সাথে বেঁধে গুলি করে হত্যা করা হয়। বাকি সৈন্যদের যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটকে রাখা হয় স্কুলের একটা ঘরে। পরে সুযোগমতো অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হবে। পরিবেশ একটু শান্ত হতেই সবার মনে পড়লো নজর আলির কথা! আশেপাশের দশ-বারোটা গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত রাজাকারটা কোন ফাঁকে যেন পালিয়ে গেছে। কমান্ডার সাদিকের নেতৃত্বে গেরিল দলের একাংশ নজর মেম্বারের বাড়িতে পৌঁছুলো। কমান্ডার ঘরের বাইরে থেকে জোরে ডাক দিলেন, ‘ নজর আলি! নজর আলি, তুমি বাইর হয়া আহো। আলতানগরে স্বাধীন মাটিতে আইজ তোমার বিচার হইবো। ‘ খানিকক্ষণ পর সদর দরজা খুলে গেলো। জোহরা বেগম বেরিয়ে এলেন ভেতর থেকে। ঘোমটার আড়াল থেকে আশ্চর্য শান্ত গলায় তিনি বললেন, ‘ তিনি বাড়িতে নাই। ‘ কমান্ডার একটু রেগেই বললেন, ‘ অবশ্যই সে বাড়িতে আছে। বাইর হইতে কন তারে। ‘
জোহরা বেগম বললেন, ‘ তিনি গোয়ালঘরে আছেন। যান। ‘
কমান্ডার কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে রইলেন এই মহিয়সী নারীর দিকে। তারপর তার সহযোদ্ধাদের আদেশ দিলেন নজর আলিকে ধরে আনার জন্যে। কিছুক্ষণ বাদেই তারা নজর আলি-কে টানতে টানতে নিয়ে এলো। নজর আলির দুচোখে মৃত্যুভয় স্পষ্ট। কমান্ডার ঘৃণাভরে কণ্ঠে বললেন, ‘ উপরে বিচার করবেন আল্লাহ, আর নিচে তোমার বিচার করবো এই আলতাগরের মানষে, যাগোর লগে বেঈমানি করসো তুমি। ‘ কমান্ডারের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা নজর আলিকে তুলে দেয় ক্রোধের আগুনে জ্বলতে থাকা গ্রামবাসীদের হাতে। দা, বটি, কুড়াল কি দিয়ে তারা আঘাত করেনি নজর আলিকে! শেষপর্যন্ত যখন গ্রামবাসীদের ক্রোধের আগুন নিভলো, তখন নজর আলির শরীরটা একদলা মাংসপিন্ড ছাড়া আর কিছুই না। ততক্ষণে চারপাশ আলো হয়ে গেছে। গেরিলা দলটা স্কুলটাকে তাদের অস্থায়ী ঘাঁটি বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মুসেগুল থেকে এসে যদি হানাদাররা আক্রমণ করে, তাই শক্ত অবস্থান নিতে হবে তাদের। অনেক রক্ত ঝরেছে আলতানগর মুক্ত করতে। সেই রক্তের প্রতিটি ফোঁটার সম্মান তাদের বাঁচিয়ে রাখতেই হবে।
আজ অনেকদিন পর আলতানগরের আকাশে মেঘের ভেলা সরে গিয়ে ঝকঝকে লাল সূর্য উঠেছে। সেই চোখ ধাঁধানো আলোয় একজন নিঃসঙ্গ মানুষ একা বসে আছে নদীর ধারে। মানুষটা তপেশ মাস্টার। নদীর ওপারে দৃষ্টি তার। কিংবা শুধু চোখটাই সেখানে ফেরানো, দৃষ্টি নেই তাতে। সূর্য পরম ভালোবাসায় তার পবিত্র আলো বুলিয়ে দিতে লাগলো মানুষটার সারা গায়ে। সব গেছে তার, শুধু প্রাণটা আছে। ঠিক যেন এই অভাগা দেশটার মতো। সব যাচ্ছে তার, শুধু ধুকপুক করা প্রাণটা আছে। একদিন এই প্রাণ থেকে আবার সব হবে। নকূল বাউলরা আবার এই আলতানগরের পথে হেঁটে বেড়াবে। শিবুরা আবার পরম ভালোবাসায় তার দেশমায়ের জন্য জীবন বাজি রাখবে। তপেশ মাস্টারের হতভাগিনী বোনটার মতো ষোড়শীরা আবার আলতানগরের পথে হাসতে হাসতে ছুটে বেড়াবে। ঝড়ের দিন শেষ হয়েছে। এখন প্রতিদিন সূর্য উঠবে, উঠবেই উঠবে।

এইচ এস সি শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম

 

আমার শরীর, আমার অংশ, আমার স্বপ্ন!

ডা.সংগীতা হালদার রায়


ছোট খাট কিছু কম্পলিকেশন ছিল , ছিল মিস ক্যারিজের হিস্টরী, আর বাবুর মাথাও বেকে ছিল । তাই নরম্যাল ডেলিভারির আশা ছেড়ে দিয়ে সিজারিয়ান সেকশনের জন্যে চলে গেলাম CMH এ নির্ধারিত দিনের আগের দিনই।

মস্তিষ্কের একটা স্বাভাবিক প্রবণতা হল খুব চাপের সময়ে সে অন্য কোন পুরাতন স্মৃতি মনে করিয়ে দেয় বা অন্য কোন কিছু চিন্তাতে নিউরনগুলোকে কাজে লাগিয়ে ফেলে।

তাই ভর্তির সময়ে যখন আমার চিন্তিত বা আশংকিত হবার কথা ছিল পরদিন কি হবে বা সব কিছু ঠিক ভাবে হবে কিনা তখন আমি প্যালেস্টাইনি এক রোগীনির ভর্তি হবার পুরো প্রক্রিয়াতে মনোনিবেশ করে ফেললাম।

বেচারা ভীনদেশে বাবা হতে গিয়ে প্রচন্ড ভীত, ইন্টার্ন ডাক্তারদের কিছুতেই রোগীনিকে পরীক্ষা করতে দেবেন না , বলছেন ‘ আই ওয়ান্ত অনলি র‌্যাঙ্ক দক্তর’ । হিস্টরী নিয়ে রোগীকে রেডি করে সিনিয়রকে ডাকাই ইন্টার্নদের প্রথম দায়িত্ব, সে বেচারারা ভেবাচেকা খেয়ে একবার উনাকে বুঝাচ্ছিল, একবার রোগীকে বুঝাবার চেষতা করছিল, আরেকবার সিনিয়র নার্সকে জিজ্ঞেস করছিল সিনিয়র ডাক্তারকে ডাকা ঠিক হবে কিনা।

মহিলার প্রতিক্রিয়া দেখতে গিয়ে দেখি ছিপছিপে লম্বা ভদ্রমহিলা কিঞ্চিত দুশ্চিন্তা নিয়ে স্বামীর কান্ড দেখছেন কিন্তু কিছু বলতে চেয়েও পারছেন না। মহিলা এতোই ছিপছিপে ছিলেন যে নিজের বিশাল পেটের দিকে তাকিয়ে মনে হল, ” আরে আমার বাচ্চাটা কি পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে আর ইনারটা এটেনশন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নাকি? ”

ভেবেই আনমনে ফিক করে হেসে দিয়েছিলাম, মহিলা তো আর জানতেন না যে আমি ঐ অবস্থায় এরকম বিচিত্র কথা ভেবে হাসছিলাম; কাজেই উনি সৌজন্য বিনিময়ের হাসি ফেরত দিলেন আমায়। আমি সংযত হয়ে বসলাম লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে।যাহোক নিজের ক্যাবিনে এলাম। ঘর , বাথ্রুম , বারান্দা দেখে মোটামুটি সন্তুষ্ট হয়ে পরদিন কি পরে ওটিতে যাব , বাচ্চা কি পরবে, কোন কাঁথায় তাকে বরণ করা হবে সব কিছু একবার মা আরেকবার স্বামীকে বুঝিয়ে দিলাম ।

বুঝতে পারছিলাম অস্থিরতা কাজ করছিল ওর মাঝে, ছেড়ে যেতে চাইছিল না আমায়, কারণ আমার মায়ের কোমরে ফ্যাকচার আছে, হঠাত করে হাসপাতালের চিকন বেড থেকে ভারি শরীর নিয়ে ওঠা নামা করা ইত্যাদি কাজে অসুবিধার আশংকা করছিল সে। কিন্তু CMH এর নিয়ম ওটাই, কিছু করার ছিল না। বলে গেল ঘুমাতে আর সাথে দিয়ে গেল গল্পের বই, খুবই পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্তের কাজ ছিল সেটা কিন্তু আমার স্নায়ুকে শুধু বই-ই শান্ত রাখতে পারে , অগত্যা!মা কিছুক্ষণ ঘুমাতে বলে ঘুমিয়ে গেল , আমি গল্পের বইতেও মনযোগ দিতে পারছিলাম না আর অস্থিরতায় ঘুমও আসছিলনা। পেটে হাত দিয়ে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম অনাগত সন্তানের কথা ভেবে, কথা বললাম বাবুটার সাথে খানিক্ষণ , অতঃপর ঘুমিয়ে গেলাম।

কিন্তু নতুন জায়গায় চিকন বেডে ছাড়া ছাড়া ঘুম হচ্ছিল, বার বার ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছিল । বেড়ালের ডাকে, গাড়ির চাকার শব্দে, এমনকি ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকেও । আবার ঘুমাবার চেষ্টা করছিলাম , নিজেকে বোঝাচ্ছিলাম যে আমার ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিক রাখার জন্যে আমার ঘুমাতে হবে। আমার বাবুকে সুস্থ রাখতে আমাকে ঘুমাতে হবে।পরদিন ঘুম ভাংলো অনেক ভোরে সকালে উঠে দেখি মা স্নান সেরে নিজে নিয়ে আসা স্যাভলন দিয়ে ঘর , বারান্দা , এমনকি বাথরুমও মুছে ফেলেছে। আমি উঠতেই সাত তাড়াতাড়ি করে নিজের ফ্যাকচারড কোমর নিয়েই বেড থেকে নেমে এলো আমায় ব্যালান্স করে নামাতে । ধীরে ধীরে নেমে বাথরুমে গিয়ে মুখ ধোবার সময়ে নিজের চিন্তাক্লিস্ট চেহারাটা আয়নায় দেখে নিজেরই কেমন যেন লাগল । মনে হল আমার বাচ্চাটা প্রথমবার এমন ভাবে দেখবে আমায়!
বেড়িয়ে এসে সুন্দর করে নিজের চিল আচড়ে দুইটা বেনি করলাম। হালকা করে বিবি ক্রিম , পাউডার কাজল , হাতে পায়ের নখে নেইল পলিশ লাগালাম। তবুও দেখি সময় কাটেনা, স্বামীও আসেনা। মা তখন গীতা পড়ে যাচ্ছে মন দিয়ে। মাকে খেয়ে নিতে বলে আমার নিজের গীতাটা খুললাম । সাড়ে সাতটার দিকে আয়ারা চলে এলো আমাদের রুম মুছে দিতে আর আমাকে রেডি করে নিয়ে যেতে । আমার চুলের রাবার ব্যান্ড খুলে গজ ফিতা দিয়ে আবার বেঁধে দিল, কেন কে জানে ! আমার মনে হচ্ছিল যে ওদের করার কিছু নেই বলেই হয়তো অমন করেছিল। কারণ ঘর মোছা আর আমায় হালকা সাজুগুজু দেখে ওরা দুজন গা টেপাটেপি করে হেসেছিল।যখন নিয়ে যেতে চাইলো মা তখন ভয় পেয়ে গিয়েছিল একটু, কারণ বাবা বা তার জামাই কেউই তখনো আসেনি। এদিকে ‘ম্যাডাম বলেছে’ বলে ওরা আমাদের আটকে ফেলেছে । ফ্যামিলি ওয়ার্ড থেকে ওটিতে যাবার জন্যে এম্বুলেন্সে আরো তিন বা চারজন হবু-মা শুকনো মুখে উঠে বসে আছেন , তাড়া দিচ্ছিল ওরা তাই। হেসে মাকে প্রনাম করে যখন গাড়িতে উঠলাম তখন শুকনো চোখেও ঝাপসা দেখছিলাম দুশ্চিন্তায়, সামনের কারো চেহারা দেখি নি আমি । গাড়ির পেছনের কাঁচে মাকে দেখছিলাম ব্যস্ত হয়ে মোবাইল চাপতে।

ওটির কাছে পৌঁছে দেখি মা আর স্বামী দুজনেই এসে গিয়েছে। ওয়েটিং রুমে কিছুক্ষণ বসানো হল আমায়। জানতে পারলাম বাবা নাকি অনেক আগেই পৌঁছে কোন ওটিতে অপারেশন হবে , কে করবেন তাদের সাথে কথা বলতে গিয়েছে।

নিজের প্রাক্তন কাজের জায়গাতে মেয়ের কোন অসুবিধা হবেনা এমনটাই আশা ছিল তার। ফোনে শাশুড়িমা- শশুরের কাছে আশীর্বাদ চেয়ে বিদায় নিলাম ওটিতে ঢুকে যাবার আগে । মা আর স্বামী দুজনেই চিন্তিত মুখে আর ছলছল চোখে বিদায় জানালো আমায়।

হেঁটে যেতে শুরুতেই আমার জুতো খুলে নিতে বললো কিন্তু অন্য কোন জুতো দেয়া হলনা। হাসপাতালের ময়লা জীবাণু কল্পনা করে খুবই অস্বস্তি হচ্ছিল , ডাস্ট এলার্জির জন্যে খালি পায়ে হাঁটতে আমার ভালোও লাগছিলনা আর ঐ ভারী শরীরে হাঁটতে খুবই কষ্ট হচ্ছিল । হাঁপাচ্ছিলাম, ঘেমে গিয়েছিলাম আর অনুরোধ করছিলাম একটা ট্রলিতে নিতে। কিন্তু আয়া ‘এইতো আরেকটু’ বলে বলে নিয়ে যাচ্ছিল তো যাচ্ছিলই। দোতলায় উঠে অন্য একটা ওটির বাইরের ট্রলি পাওয়া গেল অবশেষে একটা।ওটিতে নিয়ে ক্যানুলা করিয়ে যখন ক্যাথেটেরাইজড করানো হচ্ছিল , প্রথমবার বুঝতে পারলাম আমার রোগীনিদের কেন অত অস্বস্তি লাগতো । সব সময় রোগীদের কাউকে নরম স্বরে আর কাউকে গরম হয়ে বলতাম “শুনেন আমরা প্রতিদিন ২০/২৫ জনকে এভাবে ক্যাথেটার পরাই, কাজটা ভালোভাবে করার চেষ্টা করি তখন। রোগীর দিকে কেউ অন্য চোখে তাকায় না”।

একই কথা আমার বেলায়ও প্রযোজ্য ছিল, কিন্তু মন মানছিলনা কিছুতেই ।ওটি বেডে শোয়ানোর পরে এনেস্থেটিস্ট আমাকে বলতে শুরু করলেন তিনি আমাকে ছোটবেলায় কবে কখন দেখেছেন, বাড়িয়ে দিলেন আমার অস্বস্তি । বাবাকে নিয়মের দোহাই দিয়ে চলে যেতে বললেন, আমি বাবার দিকে তাকিয়ে হেসে সাহস দিলাম যে আমার অসুবিধে হবেনা । এনেস্থেসিয়া হবার পরে যখন অপারেশন শুরু হল, মনে হচ্ছিল আমি সবই হাল্কা হাল্কা টের পাচ্ছিলাম , নিজের confusion দূর করতে একবার জিজ্ঞাসাও করে ফেললাম ‘ আঙ্গকেল আমি তো সবই বুঝতে পারছি মনে হচ্ছে, এমনই কি হয়?’ , উনি বললেন ‘তোমার মনের ভুল এটা’।

এক পর্যায়ে পাশে তাকিয়ে দেখি ওটি দরজার চৌকো কাঁচে বাবার মুখ দেখা যাচ্ছে। সেই মুখ হঠাত হেসে উঠতেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৯।৪৫ মিনিট বাজছে । মাথার কাছে এনেস্থেটিস্ট আংকেল হেসে বললেন তোমার মেয়ে হয়েছে, এখুনি মুছিয়ে নিয়ে আসবে।আমি বারবার তাকাচ্ছিলাম যেদিকে মোছাতে নিয়ে গেল সেদিকে , চিন্তা করছিলাম ওরা কি আমার পছন্দের জামাটা মেয়ের পরাবার জন্যে দিতে পেরেছে? কাঁথাটা দিতে পেরেছে তো? তোয়ালে দিয়েছে? আমি তো একটাই কাঁথা রেখে এসেছিলাম, যদি আরো লাগে ওরা সবাই পারবে তো দিতে?

ভাবতে ভাবতেই আমার সবুজ শাড়ির কাঁথায় মোড়ানো লাল টুকটুকে জামা পরা একটা ছোট্ট পুতুলকে পাশে নিয়ে এলো আয়া। শুনেছিলাম হাসপাতালে বাচ্চা বদলে যায় , খুব ভাল করে দেখে চিনে রাখার চেষ্টা করলাম মেয়েকে যেন বদলে না দেয়।

“আপনার ধর্মে আলহামদুলিল্লাহ’র মত যেইটা আছে সেইটা বলেন” বলে আয়া আমার গালে ছুঁইয়ে দিলো আমার সন্তানের গাল । আমার ডান গালে হালকা ঠান্ডা নরম স্পর্শে তখন অনেক বিস্ময় আর অনেক অনেক আনন্দ ! আমার শরীরের অংশ , আমার স্বপ্নের টুকরা আমার আমার চোখের সামনে ।

বিশ্বাস হচ্ছিল না যেন এই বাচ্চাটাই আমার শরীরে ছিল ! সত্যিই এ-ই ছিল তো (যদিও চিকন চোখ আর চাপা নাকে মেয়ের বাবার চেহারার আদলে সন্দেহ করবার মত আদৌ কিছু ছিলনা) । মায়া , ভালোবাসা, প্রতীক্ষা শেষের খুশী নেমে আসছিল চোখ বেয়ে !এরপরেও ঐ ওটিতেই আবারো কাঁদতে হয়েছিল, কাঁদতে কাঁদতে ঘামতে হয়েছিল এনেস্থেশিয়ার ঔষধের কার্যকারীতা শেষ হয়ে যাওয়ায় । কিন্তু সারাক্ষণ ঈশ্বরের কাছে বাঁচিয়ে রাখবার প্রার্থনা করছিলাম শুধু মেয়ের কাছেই ফিরে আসবার আকাংক্ষায়। প্রথম দেখায় কিংবা দেখারও আগে যাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম তাকে এরো একবার দেখবার আকাংক্ষায়।

ফরমাল লেকচারার
শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

 

ঝড়ের দিন: পর্ব-৪

তানজীল আহমদ সিদ্দিকী


গাঁয়ে মিলিটারি ঢোকার পর থেকে সন্ধ্যা হলেই পুরো গ্রাম শ্মশানঘাটের মতো নিস্তব্ধ হয়ে যায়। কিছু কিছু বাড়ি থেকে মিটিমিটি কূপির আলো দেখা যায়, বাকি বাকিগুলোতে তাও চোখে পড়ে না। জীবিত মানুষগুলো বেঁচে থাকার তাগিদে মৃতের ছদ্মবেশ ধরে। সময়টাই এমন। আলোতেও ভয় কাটে না বরং চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে। মিলিটারিরা যদি আলো দেখে বাড়িতে এসে কড়া নাড়ে? তাই পুরো বাড়ি অন্ধকার করে রেখে মানুষগুলো একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁপে। প্রার্থনা করে আরেকটা সূর্যোদয়ের।
সন্ধ্যে হয়ে গেছে। চারদিকে লালচে অন্ধকার। আকাশের দিকে তাকালে একটা দুটো তারা চোখে পড়ছে। খেয়াঘাটে কেউ নেই। শুধু দুটো নৌকা দুলকি চালে ভাসছে। খুঁটির সাথে বাঁধা সেগুলো। ভোর হলে পরে মাঝিরা এসে ভাসাবে। শুধুমাত্র একটা নৌকা খুব ধীরে আলতানগরের দিকে এগিয়ে আসছে। দূর থেকে তাকালে শুধু দাঁড় বাইতে থাকা মাঝিকে দেখা যাবে। ঘুণাক্ষরেও কেউ টের পাবে না যে নৌকার পাটাতনের নিচে আরো তিনটে মানুষ লুকিয়ে আছে। এরা হলো আসাদ, দীপক আর শেবু। একটা সশস্ত্র গেরিলা দলের রেকি টীম তারা। আজ রাতে আলতানগরে একটা গেরিলা এট্যাক হবে। রেকি দলের কাজ হলো শেষবারের মতো সবকিছু দেখে গিয়ে রিপোর্ট করা। নদীর ওপারেই বাকি যোদ্ধারা অপেক্ষা করে আছে। আসাদ আস্তে করে পাটাতন থেকে বেরিয়ে এলো। সুমন মাঝি অভ্যস্ত হাতে দাঁড় বাইছে। এই নদী তার নিজের হাতের তালুর মতো চেনা। রাতের অন্ধকারেও চোখ বন্ধ করে খেয়াঘাটে নৌকা ভেড়াতে পারে সে। আসাদ ছইয়ের ভেতরে ঢুকে পড়লো। পাড় থেকে কেউ লক্ষ রাখলে মাঝি ছাড়া আর কাউকে দেখবে না। তারপর সেখান থেকেই কথা বলতে লাগলো সুমনের সাথে।
‘ সুমন ভাই, গ্রামের অবস্থা কিরাম? ‘
‘ ভালা নারে ভাই। পাকিস্তানি বেজন্মাগুলা মশামাছির মতো মানুষ মারে। বাড়ি থেকে মেয়েদের উঠায়া ক্যাম্পে নিয়া যায়। নজর কুত্তাটায় হেগোরে পথ দেখায়। নজর আর মিলিটারির ভয়ে গেরামের মানুষ ঘর থিইকানই বাইর হয় না। দিনে যাও বা বাইর হয়, রাইতে তো পুরা গেরাম শ্মশান হয়া যায়। এশার ওয়াক্তে মসজিদে এক কাতার মানুষও হয় না! ‘
বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আসাদ। ছমাস আগে যখন ঘর ছেড়েছিলো তখন মুসেগুলেও পরিস্থিতি এমনই ছিলো। বরঞ্চ আরো খারাপ ছিলো। শুক্রবার হাট বেলায় মুসেগুল বাজারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলো পশুগুলো। তখন বাবার সাথে বাজারেই ছিলো আসাদ। হঠাৎ করে ‘ আগুন লাইগা গেসেরে ‘ চিৎকার শুনে আর সবার মতো সেও দৌঁড়েছিলো রুদ্ধশ্বাসে। পেছনে ব্রাশ ফায়ারের আওয়াজ। দাউ দাউ করে জ্বলছে দোকানপাট। মানুষজন চেঁচাতে চেঁচাতে দৌঁড়ুচ্ছে। এদিন যেন নরক নেমে এসেছিলো সেখানে। দৌড়ুতে দৌড়ুতে কখন যে বাজার থেকে বহুদূরে চলে এসেছে খেয়াল করতে পারেনি আসাদ। আব্বা কোথায় গেলেন! সাথে সাথে দৌড়ে বাজারে ফিরেছিলো সে। জন্মদাতা পিতার অর্ধদগ্ধ লাশটা পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে উঠতে গিয়েও থেমে গিয়েছিলো আসাদ। পিতার অর্ধদগ্ধ লাশটা কাঁধে তুলে নিয়ে চুপচাপ হাঁটা দিয়েছিলো সে। যত্রতত্র পড়ে থাকা দগ্ধ, অর্ধদগ্ধ, ব্রাশফায়ারে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া লাশগুলো টলাতে পারেনি তাকে। শত মানুষের হাহাজারিতে ভারি বাতাসে খুব অল্প অল্প করে কিছু দীর্ঘশ্বাস পড়ছিলো তার। সেই দীর্ঘশ্বাসগুলোর সাথে বেরিয়ে যাচ্ছিলো সব আবেগ। শুধু রয়ে গেছিলো বুকভর্তি ঘৃণা। নিজ হাতে বাবাকে দাফন করে বাড়ি ফিরেছিলো আসাদ। শোকে কাতর মা আর ছোট ভাই-বোন দুটোকে নিজে পৌঁছে দিয়ে এসেছিলো মামাবাড়িতে। তারপর কদিনের ভেতরেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চলে গিয়েছিলো ইন্ডিয়া। দু সপ্তাহ হলো সেখান থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে একজন প্রশিক্ষিত গেরিলা হিসেবে আবার নিজ জন্মভূমিতে ফিরেছে আসাদ। তার পিতার মতো এমন হাজারো পিতার মৃত্যুর বদলা নিতে হবে তাকে। সন্তানহারা হাজারো মায়ের চোখের পানির বিনিময়ে স্বাধীনতার রক্তলাল সূর্যটা ছিনিয়ে আনতেই হবে।
সুমন মাঝি অভিজ্ঞ হাতে নৌকা ভিড়ালো ঘাটে। আসাদ আস্তে করে ডাক দিলো বাকি দুজনকে। দীপক আর শিবু তাদের স্টেনগান হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো। মাঝিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে আসাদ তার দুই সঙ্গীকে নিয়ে সামনের বাঁশঝাড়ে ঢুকে গেলো। ঘন বাঁশঝাড়ে বসে তারা আরেকটু রাত হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগলো। আসাদ চুপচাপ পাথরের মূর্তির মতো বসে আছে। শিবু একটা বিড়ি ধরিয়ে অন্য হাতে ধরে রাখা স্টেনগানটার দিকে তাকিয়ে রইলো। নির্লিপ্ত মানুষ সে। কখনো মুখ দেখে তার মনের ভাব ধরতে পারা যায় না। আসাদ বুঝতে পারে না এই মানুষটাকে। নিজের সম্পর্কে কাউকে কিছু বলে না শিবু। শুধু নির্লিপ্ততার মূর্তিমান উদাহরণ হয়ে অস্ত্র কাঁধে হেঁটে বেড়ায় যতদূর শত্রুপক্ষের সীমানা কাঁটাতার দিয়ে আলাদা করে দেওয়া। দীপক কিছুক্ষণ থেকেই কেমন উশখুশ করছে। নৌকায় শিবুর সাথে বসে থাকার দরূণ কথা বলার সুযোগ পায়নি বেচারা। এখন কথা বলার একটা ছুঁতো খুঁজছে। দীপক দলের সবচেয়ে কনিষ্ঠতম সদস্য। তার কৈশোরসুলভ চঞ্চলতায় পুরো মুক্তি ক্যাম্প মাতিয়ে রাখে সে। আসাদ ব্যাপারটা খেয়াল করে জানতে চাইলো, ‘ দীপক, কিছু বলবা? ‘
‘ আমরা রওনা হমু কখন? ‘
‘ আরেকটু অন্ধকার নামুক, তারপর। ‘
দীপক কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলো। মায়ের সাথে একবার দেখা করে আসতে মন টানছে তার। মুখ ফুটে সেকথা কি করে বলে! আরেকটু বাদেই তাদের মিশন। আসাদ বুঝতে পারলো। সব আবেগ সেদিন চলে যায়নি তার। দু, আপনজনের অনুপস্থিতির বেদনা সবই পোড়ায় তাকে। আসাদ কোমল স্বরে দীপককে বললো, ‘ মায়ের লাইগা মন টানে? ‘
দীপক মাথা নিচু করে আস্তে করে শুধু ঘাড়টা উপর-নিচ করলো। আসাদ তাকে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলো। তবে শর্ত দিয়ে দিলো যে খুব সাবধানে থাকতে হবে এবং এক ঘণ্টার ভেতরেই চলে আসতে হবে। খুশিতে দীপকের মুখটা চিকচিক করে উঠলো। তারপর স্টেনগানটা শালের ভেতরে রেখে বেরিয়ে এলো বাঁশঝাড় থেকে। সতর্ক পায়ে হাঁটা দিলো বাড়ির দিকে। হতভাগিনী মা তার পথ চেয়ে আছেন।
দীপক যাওয়ার ঘণ্টাদেড়েক হয়ে গেছে। এখনো আসার নামগন্ধ নেই। আসাদ অধৈর্য হয়ে পড়লো। ধরা পড়ে গেলো না তো ছেলেটা? সে শিবুকে জানালো তার আশংকার কথা। শিবু নির্লিপ্ত মুখে বললো, ‘ আমারো তাই মনে হইতেসে। ‘ সদা নির্লিপ্ত শিমুর কণ্ঠে শংকার আওয়াজ পেয়ে আসাদের ভয় লেগে উঠলো। সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো সে। দীপকের বাড়ি পর্যন্ত যাবে তারা, গিয়ে দেখবে দীপকের আসতে এত দেরি হচ্ছে কেন। আসাদ প্রথমে সুমন মাঝিকে গিয়ে জানালো যে, যদি ঘণ্টাখাকের মধ্যে তারা কেউ না ফিরে তবে যেন সে ওপারে গিয়ে কমান্ডারকে খবরটা দেয়। তখন তিনি যা ভালো বুঝবেন তা করবেন। তারপর শিবুকে সাথে নিয়ে ঝোঁপঝাড় ঘেষে দীপকের বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো আসাদ। ছেলেটার কিছু হয়ে গেলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না সে।
দীপকের মা তার বুকের মানিককে কাছে পেয়ে আনন্দে একদম আত্মহারা হয়ে গেলেন। একবার হাসতে হাসতে ছেলের সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দেন, তো আরেকবার বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদেন। ছেলে বেঁচে আছে এটাই যেন তাঁর বিশ্বাস হচ্ছে না। দীপক অনেক কষ্টে তার মা-কে শান্ত করলো। বুঝিয়ে বললো যে আজ রাতে তাদের একটা মিশন আছে। তাই হাতে একদমই সময় নেই। বিচলিত মা শান্ত হলেন। ছেলের জন্য গরম গরম ভাত রাঁধতে বসে গেলেন। দীপক মায়ের পাশে বসে তার গেরিলা দলের গল্প করতে লাগলো। এমন সময় বাইরে কে যেন কড়া নাড়লো। সাথে সাথে দীপক স্টেনগান বের করে ফেললো। ফিসফিস করে তার মা কে বললো, ‘ আমি খাটের নিচে লুকাইতেসি। তুমি বাইর হয়া কও কেউ নাই ঘরে। ‘ পুত্রের বিপদের আশংকায় কাতর মা দরজা ঠেলে বাইরে বের হলেন। নজর আলি আর বেশ কজন মিলিটারি দাঁড়িয়ে আছে!
‘ ঘরে কে? ‘
দীপকের মা ঘোমটার আড়াল থেকে জবাব দিলেন, ‘ কেউ নাই। আমি একলা।’
নজর আলির কাছে খবর এসেছে গ্রামে মুক্তি ঢুকেছে। আর গ্রামের যেসব ছেলের নাম মুক্তি সন্দেহে লিস্টে তোলা আছে, সেখানে দীপকের নামও আছে। তাই নজর আলি দীপকের মায়ের কথা বিশ্বাস করলেন। তিনি ইশারা করতেই দুজন সৈন্য সামনে এগিয়ে এলো। তারপর বন্দুকের বাঁট দিয়ে এক বাড়ি মেরে মাটিতে শুইয়ে দিলো। মহিলা আর্তচিৎকার করে উঠলেন। নজর আলি তার বুকে একটা লাথি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ দীপক কুত্তার ছাওটা কই? ‘
মহিলা মুখ ভর্তি থুতু ছুড়ে মারলেন নজর আলির মুখে। ক্ষেপে গিয়ে নজর আলি আরেকটা লাথি মারলেন বৃদ্ধাকে। ব্যথায় চেঁচিয়ে উঠলেন মহিলা। আর সহ্য করতে পারলো না দীপক। স্টেনগান হাতে দৌড়ে চলে আসলো বাইরে। ‘ বেজন্মার বাচ্চা ‘ বলে স্টেনগান দিয়ে বাড়ি মেরে দিলো নজর আলি। নজর আলি বাড়ি খেয়ে পড়ে যেতে যেতে চিৎকার করে উঠলেন, ‘ গোলি মাত করো। জিন্দা পাকড়াও ইসে। ‘ পাক সৈন্যরা ঘিরে ফেললো দীপককে। নজর আলি মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় চিৎকার করে বললেন, ‘ একদম নড়বি না, দীপক। নইলে তোর মা রে মাইরা ফালামু। ‘ কথাটা শুনে দীপক তার হাতের স্টেনগান ফেলে দিলো। সাথে সাথে এক সৈন্য বন্দুকের বাঁট দিয়ে বাড়ি মেরে দিলো দীপকের মাথায়। অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো দীপক। তারপর সেই অজ্ঞান দেহকেই মরা কুকুরের মতো টেঁনে হিঁচড়ে ক্যাম্পের দিকে নিয়ে চললো। সবার আগে নজর আলি। স্টেনগানের আঘাতে মাথার চামড়া কেটে রক্ত পড়ছে। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তার। গ্রামে মুক্তি ঢুকেছে! তিনি এতদিন শুধু শুনেছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিরা গেরিলা হামলা চালাচ্ছে। আলতানগরেও যে মুক্তি ঢুকবে স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তিনি। এই বেজন্মাটার থেকে সব কথা বের করতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে জোর পদক্ষেপে হাঁটতে লাগলেন নজর আলি। দীপকের বাড়ির সামনে তার বৃদ্ধা মা তখন ফ্যালফ্যাল করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। উপরে বোধহয় ভগবান বলে কেউ নেই। নইলে তার সৃষ্ট মর্ত্যে পিশাচেরা হাসিমুখে হেঁটে বেড়ায় কি করে? বাঁশঝাড়ে শনশন করে বাতাসের ফিসফিসানি উঠে। এক অসহায় মায়ের বোবা কান্না ধীরে ধীরে ঘুরপাক খায় পিশাচের রাজত্বে।(চলবে)

এইচ এস সি শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম

 

প্রসব পরবর্তীকালীন বিষণ্ণতা

ডা.সংগীতা হালদার রায়


কিছুদিন আগে এক দাওয়াতে গিয়ে ‘বেবি ব্লুজ’ বা ‘প্রসব পরবর্তীকালীন বিষণ্নতা’ নিয়ে কথা উঠেছিলো।

টেবিলে বসা পুরুষদের একাংশের ধারণা এটা মর্ডাণ মেয়ে / মায়েদের হয় যেহেতু তারা ক্যারিয়ার / শপিং / স্টাইলিং ইত্যাদিকে জীবনে অত্যাধিক প্রাধান্য দিয়ে থাকেনন যা আগের যুগের মায়েদের বেলায় হত না।

সেই রাত থেকেই মনে হচ্ছে একজন ডাক্তার ও মা হিসেবে আমার উচিত আমার বন্ধুদের কিছু জানানো যা আমি জানি;

বেবি ব্লুজ : বই অনুযায়ী ৭০% – ৮০% মায়েদেরই হয়। আমার ধারণা আরো বেশি সংখ্যায় হয়ে থাকে কিন্তু ডাক্তারের কাছে ‘কেস’ খুব কম আসে বলেই বই এ ডকুমেন্টারি কম আছে।

হওয়ার কারণ : প্রেগন্যান্সির সময় প্রয়োজনয়ীয় হরমোন ১০০ – ১০০০ গুন (100- 10000 fold decrease) কমে যাওয়া এবং MAO – A হরমোনের হঠাৎ বেড়ে যাওয়া যা ব্রেইন সেলে বিষণ্নতা উৎপন্নকারী হরমোন বাড়িয়ে দেয় ।

সময় : প্রসবের পর থেকে শুরু হয় এবং ২-৩ সপ্তাহ স্থায়ী হয় সাধারণত । দিনে কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা হতে পারে এর স্থায়ীত্বকাল ।

স্টেজ: মোটা দাগে তিন ভাগে ভাগ করা যায় ।

(লক্ষণ সমূহ হিসেব করলে ডাক্তারী হিসেব মতে মোট ৬ টা স্টেজ , কিন্তু যারা ডাক্তার নন আবার সচেতন থাকতে চান তারা তিনটা জানলেই চলবে )

ক) বেবি ব্লুজ
মন খারাপ হয় কারণ ছাড়া, শুধু শুধুই কান্না পায় ( weeping ), খুব বেশি গুরুতর কারণ ছাড়াই বিরক্তি লাগে , মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে , বাচ্চা ও বাচ্চার যত্ন নিয়ে অতিরিক্ত টেনশন হয় (বাচ্চার বাবার কোলে বাচ্চা দিতেও টেনশন হয় )

প্রতিকার
শুধু মিষ্টি ব্যবহার , সহানুভূতিসম্পন্ন কথা ও ব্যবহার (তুমি ঠিক পারবে , সবারই এরকম অসুবিধা হয় আর এটাই স্বাভাবিক) বাচ্চা সামলাতে সহানুভূতিশীল সাহায্যই যথেষ্ট’
‘আমরা তো অমুক করেছি’ বা ‘আমরা যেন আর বাচ্চা সামলাই নাই ‘ টাইপ কথা বলা মানুষজনকে ১০০ x ২ = ২০০ হাত দূরে রাখা খুব দরকার।

খ) পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন 
বাচ্চা হবার তিন মাস পরেও যখন লক্ষণসমূহ থেকেই যায় বরং আগের সমস্ত লক্ষণ আরো প্রকট হয় , নিজের ছোট্ট বাচ্চাকে সহ্য করতে না পারা , নিজের উপরে নিজের অসন্তোষ , নিজের ক্যারিয়ার + নিজের রূপ সবকিছু নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগা, নিজের জীবনের প্রতি মায়া চলে যাওয়া।

প্রতিকার
কোন এমন মানুষের সাথে মনের কথা বলা যার উপরে মা পূর্ণ বিশ্বাস রাখেন , বাচ্চা সামলানোর জন্যে সাহায্যকারী যাতে মা অন্য কিছু করেও নিজেকে ভুলিয়ে রাখতে পারেন, একটু কোথাও ঘুড়ে আসা তা পাশের পার্কেও হতে পারে

গ) পোস্টপারটাম সাইকোসিস 
মা মনে করতে থাকেন শুধু তিনি মরে গেলেই মানুষ বুঝবে যে তিনি তার শিশুকে কত্ত ভালোবাসতেন , আত্মহত্যার প্রচেষ্টা এবং শিশুকে মেরে ফেলার ঘটনাও লিপিবদ্ধ আছে ।

পরিশেষে বলবো , এরকম আগেও হত ( ঘরে ছোট ভাইবোন আসার পরে মায়ের পিট্টি খাওয়া বা অতিরিক্ত কাজের চাপ নিয়ে মায়ের খিটখিটে হয়ে যাওয়া বা মা- বাবার / মা- দাদীর ঝগড়া বেড়ে যাওয়ার স্মৃতি মনে করে দেখুন ) আর এর সাথে ‘MODERNISM’ কোন সম্পর্ক নেই ।

‘উত্তম ব্যবহারেই উন্নত বংশের পরিচয়’ আর ‘সৃষ্টিকর্তাও একজন প্রসবিনীর প্রসব-পূর্ব সমস্ত পাপ মাফ করে দেন’ এগুলো তো অনেক প্রচলিত জানা কথা ।
কাজেই একটু ধৈর্য ধরে সহানুভূতিশীল ব্যবহার করুন। কারণ প্রতিটি মা-ই তার সন্তানকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন । তাকে মন ও শরীরে সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মা হয়ে ওঠার সময়টুকু দিন প্লিজ।

ফরমাল লেকচারার
শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

 

রাজধানী শহর ঢাকায় দূষণ বেড়েছে ৮০ ভাগ

বাতাসকে পরিশুদ্ধ করতে পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোর একটি প্রচেষ্টা স্পষ্টতই সাফল্য পেয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। গত দশ বছর ধরে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা’র একটি স্যাটেলাইটের পর্যালোচনায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

অরা মিশন নামের এই স্যাটেলাইটটি ২০০৪ সালে উৎক্ষেপণ করা হয় বিশ্বজুড়ে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের নিঃসরণ পর্যবেক্ষণ করতে।

পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে এই দূষণের মাত্রা কমেছে। কিন্তু একই সময়ে বাংলাদেশ-সহ এশিয়ার কিছু দেশে দূষণের হার বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকায় এই দূষণের হার গত দশ বছরে বেড়েছে শতকরা আশি ভাগ পর্যন্ত। আর চীনে এই বৃদ্ধির হার শতকরা ২৫ ভাগ।
অপরপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে গত দশ বছরে নাইট্রোজেন দূষণের হার কমে গেছে শতকরা ২০ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত।

সার্বিক বিচারে গত দশ বছরে বিশ্বে গড়ে এই গ্যাসের দূষণ অবশ্য কমেছে শতকরা ১৪ ভাগ হারে। নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড গ্যাস মূলত জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর ফলে নিঃসারিত হয়।

সংক্ষেপে ‘এনওটু’ নামে পরিচিত এই গ্যাসটির মূল উৎস গাড়ির নির্গমন পাইপ ও কয়লা পোড়ানো হয় এমন শিল্প কারখানা।

হলদে-বাদামী এই গ্যাস মানুষের শ্বাসযন্ত্রে মারাত্মক প্রদাহের কারণ। এটি বায়ুমণ্ডলের নিম্নভাগে ওজোন গ্যাস বাড়াতেও ভূমিকা রাখে।

অরা মিশন থেকে প্রাপ্ত গত দশ বছরের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এর ফলাফল আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের এক বৈঠকে উপস্থাপন করেন বিজ্ঞানীরা।
সুত্র: ইন্টারনেট

 

ঝড়ের দিন: পর্ব – ৩

তানজীল আহমদ সিদ্দিকী


যে রাতে মেজর ওয়াসিম খানের নির্দেশে নকূল বাউলকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, তার পর চার চারটে মাস পেরিয়ে গেছে। আলতানগরের পরিবেশ আর আগের মতো নেই। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এখন আর ক্ষেতের আইল জুড়ে ঘুড়ি হাতে উড়ে বেড়ায় না। জমির উদ্দিনের বাড়ির উঠোনে এখন আর মার্বেল খেলার আসর জমে না। রাতের বেলা ছোট বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতে গেলে মায়েদের আর বর্গির গল্প করতে হয় না, উড়ে এসে জুড়ে বসা হায়েনার দলকে এখন তারা ভালোভাবেই চেনে। আজকাল মাগরিবের আজান পড়ে গেলে সে-ই যে সবাই ঘরে ঢোকে, বিশেষ কোন প্রয়োজন না পড়লে ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ বের হয় না। মড়ক লাগা গ্রামে যেমন চারদিক সুনসান থাকে, আলতানগরের অবস্থাও এখন তেমনি। মড়ক এখানেও লেগেছে, আতংকের মড়ক।
নজর আলির পরামর্শ মতো গ্রামের স্কুলেই মিলিটারিরা ক্যাম্প বসিয়েছে। আশপাশের দশ-বারোটা গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্যাম্প এটাই। মুসেগুল থেকে জীপভর্তি সৈন্য এনে এখানে মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের অত্যাচারে গ্রামবাসীর জীবন বাঁচানো দায় হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে মশামাছির মতো মেরে ফেলা হয়। মানুষ মারতে তাদের কোন অজুহাতের প্রয়োজন পড়ে না তাদের। দুদিন আগে দুজন মিলিটারি ক্ষেতের আইল দিয়ে হাঁটছিলো। সেখানে তাদের একটা মোটাসোটা ছাগী চোখে পড়ে। ক্ষেতে গাঁড়া খুঁটিতে বাঁধা ছিলো ওটা। মিলিটারি দুজন দড়ি খুলে সেই ছাগল নিয়ে হাঁটা দেয় ক্যাম্পের দিকে। এমন সময় ছাগলের মালিক দৌঁড়ে এসেছিলো। মিলিটারি দুজনের পায়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো ছাগীটা না নিয়ে যেতে, গরীব মানুষ ও। অসহায় মানুষটাকে বন্দুকের বাঁট দিয়ে মারতে মারতে ক্যাম্পে নিয়ে গেছিলো ওরা। পরদিন সকালে, গ্রামবাসীরা রাস্তার একধারে খুঁজে পায় হতভাগ্য লোকটার মৃতদেহ। নকূল বাউলের মতোই ফেঁড়ে ফেলা হয়েছে দেহটা। টুঁ শব্দটি করতে পারেনি কেউ। হাতে দা-কাস্তে নিয়েও নিশ্চল দাঁড়িয়ে ছিলো তারা। রাইফেল কাঁধে পিশাচের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর হিম্মত তাদের নেই। দুমাস আগে এই মানুষগুলোই তপেশ মাস্টারের বাড়িতে বসে শেখ সাহেবের কণ্ঠে যখন শুনেছিলো – ” এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ” তখন চোখে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলো। কোদাল আর কাস্তে হাতে মিলিটারির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা ভেবেছিলো। সব স্বপ্নের আগুন নিভে গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে একেকটা দিন বেঁচে থাকাটাই যখন সংগ্রাম, স্বাধীনতার স্বপ্ন তখন কুহকিনীর মিথ্যে আশ্বাস।
আজকাল নজর আলির কাজের অন্ত নেই। পিস কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তার কাঁধে এখন প্রচুর দায়িত্ব। মেজর সাহেবের খেদমতের দায়িত্ব তিনি নিজ হাতে কাঁধে তুলে নিয়েছেন। মেজর সাহেবের প্রতিবেলার খানাদানা থেকে শুরু করে অবসর সময়ে বিনোদনের ব্যবস্থা পর্যন্ত সবকিছু তিনি নিজে দেখভাল করেন। মেজর সাহেব বহুদিন ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। জোয়ান মানুষ, শরীরে যে মাঝেমধ্যে বেচাইন করে সে তিনি ভালোভাবেই বোঝেন। তাই অবসর সময়ে একটু আধটু বিনোদনের জন্য মাঝেমধ্যেই ক্যাম্পে মেয়ে পাঠান তিনি। গ্রামে কোন কোন ঘরে সুন্দরী যুবতী আছে সব তার জানা। সেসব ঘর থেকেই যুবতী মেয়েদের জোর করে তুলে আনেন তিনি। সৈন্যরাই টেনে হিঁচড়ে বের করে আনে, তিনি শুধু প্রয়োজনীয় নির্দেশটুকু দেন। এই তো সেদিনই জামাল নাপিতের বড় মেয়েটাকে তুলে আনতে গেছিলেন। চোখ ধাঁধানো রূপ মেয়ের। মেয়েটাকে কায়দামতো পেলে তিনিই ভোগ করতেন, মেজরের জন্য নিয়ে যেতেন না। সৈন্যরা যখন টেনে হিঁচড়ে বের করছিলো মেয়েটাকে, জামাল নাপিতের বৌটা দা হাতে ছুটে এসেছিলো তার দিকে। আরেকটু হলেই ঘাড় থেকে তার মাথাটা নেমে যেতো যদিনা এক সিপাহী মহিলাকে গুলি না করতো। নজর আলি মেয়েটাকে সেদিন তার মায়ের লাশের উপর দিয়ে টেনে হিঁচড়ে এনে ক্যাম্পের একটি ঘরে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন। পরে শুনেছিলেন শুধু মেজর না, ক্যাম্পের প্রায় সব সৈন্যই সেদিন রাতটা সেই ঘরে কাটিয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত মেয়েটার পরিণতি কি হয়েছে সেটা জানা নেই তার, জানার ইচ্ছেও নেই। এমন কত গণিমতের মাল আসবে আর যাবে!
শেষ বিকেল। সূর্য বিদায় নেবার আগে তার শেষ রশ্মিটুকু অকাতরে বিলাচ্ছে। বাড়ির উঠোনে সেই রশ্মিগুলো কানামাছি খেলছে। তপেশ মাস্টার জানালা দিয়ে তন্ময় হয়ে তাকিয়ে আছেন। বয়স তার চল্লিশের উপর। শান্ত সৌম্য চেহারা। জুলফির গোড়ায় খানিক পাকা চুল ছাড়া বয়সের চিহ্নমাত্র পাওয়া যায় না। তবে এ কদিনে স্বাস্থ্যের বেশ অবনতি ঘটেছে তার। আর হবে নাই বা কেন! মাত্র কয়েক মাসে সবই কেমন ওলটপালট হয়ে গেছে। মূর্খ পশুগুলো তার স্কুলটা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে তারা ক্যাম্প বসিয়েছে। যে ঘরগুলোতে বসে বাচ্চারা অ আ শিখতো, সেই ঘরগুলোতে এখন মানুষ জবাই হয়। মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়। সব দেখে শুনেও কিছু করতে না পারার অক্ষমতার গ্লানিতে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছেন তিনি। কদিন ধরে কানাঘোষা শুনছেন দেশের অনেক জায়গায় নাকি পাক হানাদারদের সাথে খন্ড খন্ড যুদ্ধ হচ্ছে। সর্বস্তরের সাধারণ মানুষরাই এই যুদ্ধে শামিল হয়েছে। আশেপাশের গ্রামের অনেকেই নাকি ইন্ডিয়ায় পালিয়ে গেছে। সেখান থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে আবার দেশে ঢুকবে। তারও ইচ্ছে হয় সেই সংগ্রামীদের সাথে যোগ দিতে কিন্তু সন্তান সম্ভাবা স্ত্রী আর ছোট বোনটাকে এই নরকে ফেলে রেখে যাবেনই বা কি করে? তিনি কিংবা তাঁর স্ত্রী কারোরই তিনকূলে কেউ নেই যে কোন আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠবেন। শেষপর্যন্ত মনে হচ্ছে ইন্ডিয়াতেই পালিয়ে বাঁচতে হবে। এমন সময় একটা ডাকে তপেশ মাস্টারের ভাবনায় ছেদ পড়লো।
‘ মাস্টার! ও মাস্টার! একটু বাইরে আহো।
তপেশ মাস্টার চিনতে পারলেন গলাটা। নজর মেম্বার এসেছে। লোকটা সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত, যখন যেখানে যায় মৃত্যুর দুর্গন্ধ ছড়ায়। তিনি তাড়াতাড়ি তার বোন আর স্ত্রী-কে ডেকে বললেন, ‘ তোমরা কিছুক্ষণ বাড়ির পেছনে খড়ের গাদায় লুকিয়ে থাকো। আমি না বলা পর্যন্ত বের হবা না। ‘ বিনাবাক্য ব্যয়ে তারা তার নির্দেশ মেনে বাড়ির পেছনে চলে গেলো। তপেশ মাস্টার উঠোনে গিয়ে দেখলেন নজর আলি, সবুজ আর পাঁচ-ছজন মিলিটারি দাঁড়িয়ে আছে।
‘ কি ব্যাপার মেম্বার? এসময়ে এখানে? ‘
‘ মেজর সাব তোমারে তলব করসেন,মাস্টার। পুরা পরিবার সহ। ‘
‘ আমি ওদের আগেই অন্য জায়গায় রেখে এসেছি। আর তোমার মেজরকে গিয়ে বলে দিও, আমি তার হুকুমের চাকর নই যে তিনি তলব করলেই সাথে সাথে দৌঁড় দেবো। দরকার পড়লে তিনি নিজে এসে যেন আমার সাথে দেখা করে যান। ‘
‘ তোমার তেজ খুব বাড়সে, মাস্টার। ছুটাইতেসি তেজ ‘, বলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সিপাহীকে হাত দিয়ে ইশারা দিলেন। সাথে সাথে সেই সিপাহী তপেশ মাস্টারের তলপেটে সজোরে লাথি মারলো। তপেশ মাস্টার মাটিতে ছিটকে পড়লেন। বাকি সিপাহীরা এবার এগিয়ে আসলো। বন্দুকের বাঁট দিয়ে উপর্যুপরি মারতে লাগলো মাস্টারকে। মাথায় একটা শক্ত বাড়ি খেয়েই তপেশ মাস্টার অজ্ঞান হয়ে গেলেন। নজর আলি তখন দুজন সৈন্যকে নির্দেশ দিলেন তপেশ মাস্টারকে যেন মরা কুকুরের মতো হিঁচড়ে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। আর বাকি চর সৈন্যকে নির্দেশ দিলেন পুরো বাড়ি খুঁজে দেখতে। মেয়েমানুষ দুটো যাবে কোথায়! একটু বাদেই নারীকণ্ঠের চিৎকার শোনা গেলো। সৈন্যরা নির্দয় হাতে টেনে হিঁচড়ে তপেশ মাস্টারের ষোড়শী বোন আর সন্তানসম্ভবা স্ত্রী-কে নিয়ে এলো। তপেশ মাস্টারের বোনকে দেখে নজর আলির ভেতরে আবার কামনার আগুন জ্বলে উঠলো। মেয়েটাকে ঘরে আটকে রেখে এখানেই…! না, নজর আলি নিয়ন্ত্রণ করলেন নিজেকে। ঘটনাটা জানতে পারলে মেজর রেগে যাবেন। নজর আলি তপেশ মাস্টারের বৌকে এখানেই শেষ করে দিতে বলে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যাওয়া মেয়েটার হাত ধরে টানতে টানতে ক্যাম্পের দিকে হাঁটা দিলেন। সাথে রইলো আরেক সৈন্য। বাকি তিন সৈন্য চিৎকার করে কাঁদতে থাকা অসহায় প্রসূতি মহিলাটাকে টানতে টানতে জঙ্গলের দিকে নিয়ে গেলো।
তপেশ মাস্টারের স্ত্রী সৈন্যগুলোর পায়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। চিৎকার করে বলতে লাগলেন, ‘ আপনারা আমার ভাইয়ের মতো। ছাইড়া দেন আমারে। ভাই হয়া বোনের ইজ্জত নিয়েন না। ‘
সৈন্যরা অট্টহাসি দিয়ে উঠলো। বাঙ্গালি নারী তো বরাবরই তাদের কাছে ভোগের সামগ্রী, ” বেহেন ” হতে যাবে কোন দুঃখে! মানুষের মতো দেখতে সেই হায়েনাগুলো তারপর ঝাঁপিয়ে পড়লো অসহায়ভাবে পড়ে থাকা সেই মহিলার উপর।
একটা নারীকে শারীরিকভাবে যত রকমভাবে অসম্মান করা যায়, সব করলো তারা। উপর্যুপরি কয়েকবার গণধর্ষণ শেষে হতভাগিনী মহিলা যখন তার মৃত্যুর প্রহর গুনছেন, তখন পশুগুলো তার পেট বরাবর বেয়োনেট চার্জ শুরু করলো। অবাক প্রকৃতি নিশ্চুপ শুনে গেলো এক মৃত্যুপথযাত্রী গর্ভবতী মায়ের অসহায় আর্তনাদ। পৃথিবীর প্রতি একরাশ ঘৃণা আর অভিমান নিয়ে তপেশ মাস্টারের হতভাগিনী স্ত্রী অবশেষে তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। নরপশুগুলো প্যান্ট পরা শেষ করে বেল্ট পড়তে পড়তে হাঁটা দিলো ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে।
ততক্ষণে সন্ধ্যে হয়ে গেছে। তপেশ মাস্টারের মৃত্যুপথযাত্রী স্ত্রী-র মৃত্যু চিৎকার সহ্য করতে না পেরে যে কাকটা উড়ে চলে গিয়েছিলো, সে-ই কাকটা আবার এসে বসলো বিশাল বড় আমগাছটার মগডালে। তারপর স্থির চেয়ে রইলো হাঁটতে হাঁটতে দূরে সরে যাওয়া মিলিটারিদের গমনপথের দিকে। মানুষ অনেক দেখেছে সেটি। তবে অমানুষ বোধহয় এই প্রথম দেখলো! (চলবে)

এইচ এস সি শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম

 

গল্পে গল্পে বাচ্চাদের শেখানো

আফরোজা হাসান


বাগানে বসে কাজ করছিলো সিহাব। হঠাৎ কান্নার শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখল ভাতিজা আয়াত কান্না করতে করতে আসছে। অতি প্রিয় চাচ্চুকে দেখে আয়াতের কান্নার শব্দ আরো বেড়ে গেলো।কাজ বন্ধ করে ভাতিজাকে ধরে সিহাব বলল, কে ছেড়ে দিলো চোখের নল, ঝরছে অঝোর ধারায় জল।মোর আঁখিও ছলছল, এখনি বুঝি নামবে ঢল। চাচ্চুর ইন্সট্যান্ট কবিতা শুনে আয়াতের চোখে আনন্দের ঝিলিক দিয়ে উঠলেও সে কান্না জারি রাখলো।

-আরে আরে কি হয়েছে আমার সোনা বাবাটার? কেন কান্না করছেন আপনি বাবা? ব্যথা পেয়েছেন নাকি কেউ মেরেছে?

-(ফোঁপাতে ফোঁপাতে) নুবাঈদ আমার খেলনা নিয়ে গিয়েছে। সকালে তামান্না আমার চকলেট নিয়ে গিয়েছিলো। সবাই আমার কাছে থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়ে যায় সবসময়।

-(হাসি চেপে) সবাই তোমার কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়ে যায়?

-(পুতুলের মত মাথা দুলিয়ে) হ্যা সবকিছু নিয়ে যায়।

-তুমি নিতে দাও কেন? কাউকে কিছু বলো না কেন?

-দাদুভাই আমাকে বলেছে কাউকে কষ্ট দিতে নেই। তা না হলে আল্লাহ রাগ করবেন আমার উপর।

-দাদুভাই তোমাকে কাউকে কষ্ট দিতে মানা করেছেন কিন্তু আত্মরক্ষা করতে তো নিশ্চয়ই মানা করেননি।

-দাদুভাই বলেছেন কারো সাথে রাগ না করতে। কাউকে কষ্ট না দিতে।

-(হেসে) আচ্ছা ঠিকআছে। এখন তুমি কান্না বন্ধ করো। চলো তোমাকে চাচ্চু একটা গল্প শোনাই। শুনবে গল্প?

-(চোখ মুছে হাসি মুখে) হ্যা শুনবো।

-(ভাতিজাকে কোলে বসিয়ে আদর করে দিয়ে) এক গ্রামের রাস্তার ধারে এক সাপ বাস করতো। ভীষণ ছিল তার আকৃতি। সে যখন ফণা তুলে ফোঁস ফোঁস করতো তখন রক্ত হীম হয়ে আসতো।

-সাপটার নাম কি চাচ্চু?

-সাপটার নাম মিস্টার ফোঁস ফোঁস। কারণ রাস্তা দিয়ে মানুষ যেতে দেখলেই সে ফোঁস ফোঁস করে তার দিকে তেড়ে আসতো আর কামড় দিতো। বিনা দোষে পথচারীরা প্রাণ হারাতো। মিস্টার ফোঁস ফোঁসের এই অত্যাচারের কারণে সেই রাস্তা দিয়ে মানুষ চলাচল বন্ধ হয়ে গেলো। একদিন এক সাধু সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন।

-দুষ্টু মিস্টার ফোঁস ফোঁস সাধুকেও কামড়ে দিলো তাই না চাচ্চু?

-শোনই না তারপর কি হল। মিস্টার ফোঁস ফোঁস তো অনেকদিন পর মানুষের দেখা পেয়ে ফোঁস ফোঁস করতে করতে ছুটে এলো। কামড়ে দেবার দেবার আগেই সাধু তার মন্ত্রের জোরে তাকে বশ করে ফেললো। সে তখন মাথা নত করে চুপ করে থাকলো। সাধুটি কাছে বসে বললেন, অকারণে মানুষকে কষ্ট দিয়ো না, কারো ক্ষতি করো না, হিংসা পরিত্যাগ করো পুরোপুরি এবং পারলে মানুষের উপকার করবে। উপদেশ দিয়ে তো সাধু চলে গেলেন।

-মিস্টার ফোঁস ফোঁস কি তখন ভালো হয়ে গেলো চাচ্চু?

-বলছি কি হলো। এরপর তো অনেকদিন পার হয়ে গেলো। হঠাৎ একদিন সাধুটি ঐ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখলেন মিস্টার ফোঁস ফোঁস রাস্তার এক কোণে পড়ে আছে। তার শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। সাধু তখন এগিয়ে গিয়ে বললেন, তোমার এই অবস্থা কি করে হল? সে জবাব দিলো, আপনার উপদেশ মানতে গিয়ে। সাধু অবাক হয়ে বললেন, সেটা কি করে? বলল, আপনি বলেছিলেন হিংসা ত্যাগ করো, কাউকে কষ্ট দিয়ো না। যখন থেকে আমি তা করছি সবাই আমার উপর অত্যাচার করছে। এখানকার ছেলেরা আমাকে মেরে এক কোনায় ফেলে রেখেছে। আমি তাদেরকে কিছুই বলিনি। তখন সাধু বললেন, আরে বোকা আমি তোমাকে হিংসা পরিত্যাগ করতে বলেছি, কাউকে অকারণে কষ্ট দিতে মানা করেছি কিন্তু আত্মরক্ষা করতে তো নিষেধ করিনি। তুমি অবশ্যই কারো ক্ষতি করবে না এবং সেই সাথে কেউ যাতে তোমার ক্ষতি করতে না পারে তাই ফোঁস ফোঁস করে তাদের ভয় দেখানোতে কোন দোষ নেই। এখন বলো কি বুঝলে গল্প থেকে?

-আত্মরক্ষা করবো কিন্তু কাউকে কষ্ট দেবো না। আমি কারো ক্ষতি করবো না এবং কেউ যাতে আমার ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনে প্রতিবাদ করবো।

-(হেসে) মাশাআল্লাহ! এই তো তুমি বুঝে গিয়েছো। এখন তাহলে কি করতে হবে?

-নুবাইদকে প্রতিবাদ করতে হবে। জাযাকাল্লাহ চাচ্চু আমাকে বুঝিয়ে বলার জন্য। আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।

চাচ্চুর কোল থেকে নেমে প্রতিবাদ করতে ছুটল আয়াত। আর সিহাব হেসে কাজে মন দিলো।

@সাইকোলজি (পিএইচডি)