banner

রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1578 বার পঠিত

 

বিয়ে ও সমাজ (পর্ব-৪)

কানিজ ফাতিমা


পরিবারে দ্বন্দ নিরসন এর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করছিলাম গত সংখ্যায়। আমরা জেনেছি যে, Conflict Management বা বিরোধ ব্যবস্থাপনার উপায়গুলো হল-

1. Forcing
2. Accommodating
3. Avoiding
4. Compromising
5. Collaborating

Forcing (চাপ প্রয়োগ), ও Accommodating (মেনে নেয়া) পদ্ধতি দু’টি সম্পর্কে আমরা জেনেছি। এবার বাকী তিনটি পদ্ধতি জানা যাক-

Avoiding বা সরে যাওয়া
দ্বন্দ সম্পর্কে নিশ্চুপ থাকা, কোনরূপ মনোযোগ না দেয়া এবং দ্বন্দ নিরসনে কোন ভূমিকা পালন না করা ও নিস্ক্রিয় থাকা। এটি Non-assertive ও non co-operative অর্থাৎ এ পদ্ধতিতে কোন চাপ প্রয়োগ নেই আবার কোন সহযোগিতাও নেই। যদি দ্বন্দের বিষয়টি খুবই নগণ্য হয় অথবা যদি আপনি মনে করেন যে কিছু সময় পরে প্রতিপক্ষ নিজে থেকেই চুপ হয়ে যাবে তবে এই Avoidance বা অগ্রাহ্য পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা উত্তম। অনেক ছোট-খাট দ্বন্দ পারিবারিক জীবনে ঘটে যা সময়ের ব্যবধানে আপনা থেকেই সমাধান হয়ে যায়। এই সব টুকিটাকি ব্যাপারে Avoiding খুবই কার্যকরী পন্থা। যেমন ধরুন যদি আপনার স্ত্রীর উপরে কোন কারণে Stress বা চাপ বেড়ে যায় (যেমন সন্তান অসুস্থ, বাসায় অতিরিক্ত মেহমানের চাপ ইত্যাদি), এবং এ কারণে তার মেজাজ কিছুটা খিটখিটে হয় এবং আপনার সঙ্গে দ্বন্দে লিপ্ত হয় হবে এক্ষেত্রে Avoiding সর্বাপেক্ষা উত্তম পন্থা। তবে অন্যপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ বা মৌলিক দাবীর মুখে লাগাতার নিশ্চুপ থাকা বা Avoiding পদ্ধতির ব্যবহার একটি অকার্যকরী পন্থা।

Collaborationবা সংযোগিতামূলক:
এটি সর্বাপেক্ষা উত্তম পন্থা। দ্বন্দ নিরসনের এ পদ্ধতিতে অন্যপক্ষের মতামতকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয় সাথে সাথে নিজ মতামতকেও সুদৃঢ়ভাবে উত্থাপন করা হয়। এ পদ্ধতিতে দু’পক্ষকেই মনে রাখতে হয় যে মতামতের ভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক এবং প্রত্যেকেরই নিজস্ব মত পোষণের অধিকার আছে। এ পদ্ধতিতে দু’পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে এমন একটি পথ খুঁজে বের করা হয় যাতে দুপক্ষের দাবীই পরিপূর্ণরূপে পূরণ হয়। এজন্য একে Win-Win পদ্ধতি বলা হয়।
যেমন ধরুন, স্বামী বললো আজ আমরা পার্কে বেড়াতে যাবো। স্ত্রী বললো আমি আজ চায়নিজ (ফুড) খেতে চাই। তারা যদি পার্কে বেড়িয়ে ফেরার পথে চায়নিজ খেয়ে আসে তবে তারা Collaboration পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করলো। এই পদ্ধতিটি বিরোধ নিরসনের সর্বাপেক্ষা উত্তম পন্থা। কিন্তু সমস্যা হল সব সমস্যায় এমন উপায় খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন যাতে দু’পক্ষের দাবী পূর্ণরূপে পূরণ হয়।

Compromise বা আপোসমূলক পদ্ধতি হল সম্ভবত:
সর্বাপেক্ষা বেশী ব্যবহৃত বিরোধ নিরসন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে দু’পক্ষের দাবীর কিছু অংশ মেনে নেয়া হয় এবং দু’পক্ষই তাদের অবস্থান থেকে সরে এসে মাঝামাঝি কোন স্থানে আপোস রফা করে। যদি Collaborating সম্ভব না হয় তখন স্বামী-স্ত্রীর উচিত Compromise-এর মাধ্যমে বিরোধ নিরসনের প্রচেষ্টা চালানো। যেমন ধরুন স্বামী চাইলো তার অফিসের কাছাকাছি বাড়ি ভাড়া করতে। স্ত্রী চাইলো তার অফিসের কাছাকাছি বাসা নিতে। তারা যদি দু’জনের অফিসের মাঝামাঝি কোন স্থানে বাসা নেয় তবে তারা Compromise পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করলো।

উপরোক্ত পাঁচটি পদ্ধতি জানার পর আপনি প্রশ্ন করতে পারেন কোন পদ্ধতিটি সর্বাপেক্ষা উত্তম? মূলত: প্রত্যেকটি পদ্ধতিরই কিছু ভাল ও কিছু দুর্বল দিক রয়েছে। তাছাড়া অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একেক সময় একেকটি পদ্ধতি বেশি কার্যকরী প্রমাণিত হয়। তবে সাধারণভাবে বলা যায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে Forcing পদ্ধতি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। এবং Collaborating ও Compromising পদ্ধতি দু’ টি সর্বাপেক্ষা বেশী অনুসরণ করার চেষ্টা করা উচিত।

(চলবে)

পর্ব-৩

Facebook Comments