banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: April 23, 2024

 

চুল সাজে ঝুঁটিতে

কোরবানি ঈদ মানেই নানা কাজের ঝক্কি-ঝামেলা। এর মাঝে তো সাজটাও ঠিক রাখা চাই। ঈদের দিন নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার নানা আয়োজনের মাঝে চুলের সাজ অন্যতম। ঈদের দিন সকালে হালকা সাজ হিসেবে চুলে ঝুঁটি করার পরামর্শ দিলেন রূপবিশেষজ্ঞ ফারজানা মুন্নি। তিনি বললেন, এখন যেহেতু দিনের বেলা বেশ গরম থাকে এবং ঈদের দিন বিভিন্ন রকমের কাজ থাকে, সে জন্য যেকোনো পোশাকের সঙ্গেই ঝুঁটি হতে পারে আরামদায়ক এবং স্টাইলিশ একটি সমাধান।

স্টাইলিংয়ের আলাদা কোনো বয়স বা সময়সীমা নেই, তাই ঝুঁটি করতে পারেন যে কেউই। হালকা সাজের জন্য সামনের চুলগুলোতে একটু বেণি করে পেছনে টেনে ঝুঁটি করা যেতে পারে। আবার পাশে সিঁথি টেনে সামান্য টুইস্ট করেও চুলে স্টাইলিশ ঝুঁটি বাঁধতে পারেন।

অপরদিকে, যাঁদের সামনের চুল ছোট অর্থাৎ চুলে ব্যাংগস কাট, লেয়ার অথবা ফ্রেঞ্চ কাট দেওয়া, তাঁরা সামনের চুলগুলো খোলা রেখে পেছনে একটু ওপর করে ঝুঁটি করতে পারেন। তবে কেউ যদি সামনের চুলগুলো খোলা রাখতে না চান, সে ক্ষেত্রে হালকা মুজ দিয়ে সামনের চুলগুলো আটকাতে পারেন। মাঝারি ধাঁচের চুলের সঙ্গে মেসি পনিটেইল এবং কেউ যদি চান সাধারণভাবে ঝুঁটি করে সেটা ফোল্ড করে বাঁধতে পারেন।

শুধু ঘরে নয়, বেড়াতে গেলেও একইভাবে ঝুঁটি করে বের হতে পারেন যে কেউ। যেকোনো দাওয়াত কিংবা পার্টিতেও চুলের ঝুঁটি দিতে পারে ভিন্ন লুক। এমনকি শাড়ির সঙ্গে যে কেউ চুলে ঝুঁটি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে ব্লাউজের গলার কাট কেমন। তবে যাদের কাঁধ ভারী, তাঁদের জন্য পনিটেইল না করাই ভালো, হালকা গড়নের যে কেউই শাড়ির সঙ্গে ঝুঁটি করলে তা সুন্দরভাবে মানিয়ে যাবে।

 

চা পান করেই পাবেন পরিষ্কার ত্বক

চা আমরা প্রত্যেকেই কম বেশি পান করি। অনেকে আবার একটু বেশিই পান করে। সকালে উঠে এক কাপ চা দিয়ে দিনটা শুরু না হলে কেমন একটি ফিকে ব্যাপার হয়ে যায়।

কিন্তু আপনি কি জানেন, এই চাতেই লুকিয়ে রয়েছে আপনার ত্বকের সৌন্দর্য।

পরিস্কার ও উজ্জ্বল ত্বক দেবে যেসব চা
ক্যামোমাইল টি: এই ধরনের চায়ে কুয়েরসেটিন নামক উপাদান রয়েছে, যা চোখের ক্লান্তি দূর করে, ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে। অনিদ্রা প্রতিরোধ করে। ক্যামোমাইল টি ব্যাগ চোখের উপরে কিছুক্ষণ রেখে দিলেই এই সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

জ্যাসমিন টি: এটি অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল। ত্বকের ব্রণ সারাতে সাহায্য করে। ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে। ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে।

গ্রিন টি: অতি মাত্রায় সূর্যালোক ত্বকে ক্যানসারের সম্বাবনা বাড়িয়ে তোলে। গ্রিন চা ক্ষতিগ্রস্ত ত্বককে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। ত্বকের বলিরেখা এবং রিঙ্কলস দূর করে। নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে।

ব্ল্যাক টি: এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট রয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে।

আদা চা: পেটের সমস্যা হলে ত্বকে তার প্রভাব পড়ে। আদা চা হজম শক্তি বাড়িয়ে তোলে। ফলে ত্বক পরিষ্কার থাকে।

পিপারমিন্ট টি: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এই চা খুবই উপকারি। ত্বকে অতিরিক্ত তেলের উৎপাদন কমায়। মৃত কোষকে ত্বকের উপর থেকে সরিয়ে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।

হোয়াইট টি: গ্রিন টি-র থেকেও অনেক বেশি অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট রয়েছে এতে। ত্বকের ম্যাট্রিক্স মেটালোপ্রোটিনেজ মাত্রা কমিয়ে ত্বকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে।

কম্বু চা: ত্বকে জমে থাকা টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। ত্বককে টানটান করতে সাহায্য করে। সানবার্ন দূর করে।

ম্যাট চা: জাপান থেকে এই চা এসেছে। এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট। খাওয়ার পাশাপাশি ম্যাট চা পাউডার ত্বকে প্যাক হিসাবে লাগাতেও পারেন।

সূত্র: জিনিউজ।

 

এফডিসির জোছনা বেগম

খাবারের দোকানের ক্যাশ কাউন্টারে বসে আছেন শান্ত। সাইনবোর্ডবিহীন এই দোকানের নাম জানতে হলো শান্তর কাছ থেকে—‘হালিম হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। শান্তর সামনের বেশ কয়েকটা টেবিল ও বেঞ্চ। সেখানে নানা বয়সী লোকজন দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। খাওয়া শেষ করে এসে বিল মেটাচ্ছেন কেউ কেউ। খানিক পরে শান্ত উঠে দাঁড়ালেন। চেয়ার ছেড়ে দিয়ে সামনে দাঁড়ালেন। চেয়ারে বসলেন একজন মধ্যবয়সী নারী। শান্ত পরিচয় করিয়ে দিলেন—‘আমার মা’। গত বছর এইচএসসি পাস করেছেন শান্ত।

হালিম হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের অবস্থান কারওয়ান বাজার রেলগেট পার হয়ে এফডিসির পাশে গাড়ি মেরামতের গ্যারেজগুলোর পেছনে। ‘এফডিসির খাবার’ বলে খ্যাত খাবার রান্না হয় এখানে। যে তিনটি হোটেল থেকে শুটিং স্পটে খাবার যায় এবং স্থানীয়রা ‘এফডিসি’র খাবার খান, তারই একটি হালিম হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। অন্য দুটির চেয়ে এখানে খাওয়ার পরিবেশও ভালো। তাই ভিড়টা বেশ।

খেয়ে ঢেকুর তুলতে তুলতে একেকজন আসছেন আর বিল দিচ্ছেন। শান্তর মা তাই ব্যস্ত। একবার সামনের টেবিলের ড্রয়ার খুলছেন, টাকা রাখছেন। ভাংতি ফেরত দিচ্ছেন। কাস্টমার টিস্যু পেপার চাইলে সেটাও হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

দুপুর গড়িয়ে এসেছে। এফডিসির খাবার তালিকায় বড় জায়গাজুড়ে থাকা ‘কালা ভুনা’ও শেষ ততক্ষণে। হোটেলের ভিড় খানিকটা কমে এসেছে। তবে এই ফাঁকে কথা হয়েছে শান্তর সঙ্গে। পুরো হোটেলটি শান্তর মা জোছনা বেগম দেখভাল করেন। প্রায় ১৫ বছর আগে শান্তর বাবা আবদুল হালিম হোটেলটা করেছিলেন বটে, কিন্তু বছর সাতেক ধরে তিনি বিছানায় পড়ে রয়েছেন। শরীরের এক পাশ অবশ তাঁর।

ভিড় কমে এলে মুখোমুখি বসি জোছনা বেগমের। শুরু করেন শুরুর গল্প। জোছনা বেগমের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে। স্বামীর বাড়ি যশোরের কেশবপুরে। ঘটকের মাধ্যমে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। পাত্র হিসেবে আবদুল হালিমের বড় পরিচয় ছিল তিনি এফডিসির লোক। ‘এফডিসির লোক’ ব্যাপারটি পরিষ্কার করেন ছেলে শান্ত। ‘আমার বাবাকে এফডিসি এলাকার সবাই চেনেন। উনি একসময় সিনেমার প্রডাকশনে কাজ করতেন। তাই সবাই খুব পছন্দ করতেন। পরে হোটেল চালু করেছেন।’

ছেলের মুখের কথা টেনে নিয়ে জোছনা বেগম বলেন, ‘আমার বিয়ের পরে সবকিছু ভালোই চলছিল। বছর ঘুরতে ছেলে হলো। স্বামীকে সবাই চিনত বলে প্রতিদিন অনেক অর্ডার আসত। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেটা থেমে যায়।’ ততদিনে জোসনা বেগম তিন সন্তানের মা।

তারপর জমানো টাকা দিয়ে বছরখানেক স্বামীর চিকিৎসা করিয়েছেন। এই হাসপাতাল থেকে সেই হাসপাতাল। কিন্তু বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ানো ছাড়া বিশেষ কোনো উন্নতি হয়নি। তারপর একদিন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। সংসার তো চালাতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে স্বামীর ব্যবসায় হাত দেন জোছনা বেগম।

ব্যবসার হাল ধরার শুরুর দিকে গল্পগুলো মনে করে বলেন, ‘শান্তর বাবা অসুস্থ হওয়ার পর হোটেলের কর্মচারীরা সবাই চলে যায়। কারণ, তাদের তো আর বসে বসে বেতন দেওয়া সম্ভব নয়। বছরখানেক পরে আমি যখন নতুন করে শুরু করি, তখন তারা আরেক জায়গায় কাজ নিয়েছে। তাই নতুন নতুন কর্মচারী নিয়োগ দিতে হয়েছে। প্রচার করতে হয়েছে। তারপর ধীরে ধীরে এগোচ্ছি।’

জোছনা বেগমের অধীনে এখন ১১ জন নিয়মিত কর্মী রয়েছেন এই দোকানে। তাঁদের কেউ বাজার করেন, কেউ রান্না, আর কেউ শুটিং বাড়িতে খাবার পৌঁছানোর দায়িত্ব পালন করেন।

জোছনা বেগম বললেন, ‘এফডিসির খাবারের আলাদা কদর আছে সবার কাছে। এ কারণে আমাকেও বাড়তি খেয়াল রাখতে হয়। সকালে বাজারটা যেন ভালো হয়। রান্নাটা যেন ভালো হয় এমনকি পরিবেশনটাও যেন সুন্দর হয়।’

তাহলে সংসার?

‘সেটাও আমি দেখি। কাছেই বাসা। তাই সকালে রান্না বসিয়ে দিয়ে চলে যাই। দুপুরে এসে শুটিং বাড়িতে খাবার পাঠানো এবং হোটেলে আসা কাস্টমারদের খাওয়ানো দেখভাল করি। তারপর দুপুরের পর বাসায় গিয়ে বাচ্চাদের দেখাশোনা করি। বাড়তি পরিশ্রম হলেও করতে তো হবেই।’ বলেন জোছনা বেগম।

কথা বলার এক ফাঁকে শান্ত জানিয়ে রাখে, এখানে খাবারের দাম কিন্তু কম। সব প্যাকেজ সিস্টেম। ভাত, ডাল সবজি ও গরুর মাংস দিয়ে খেলে ১২০ টাকা। গরুর মাংসের জায়গায় মুরগি খেলে ৯০ টাকা এবং মাছ খেলে ৮০ টাকা। তবে অর্ডার করলে যেকোনো খাবারই রান্না করে দেওয়া হয়।

ছেলের কথা বলার ফাঁকে মা উঠে গেলেন। রান্নাঘরে গিয়ে বাবুর্চিকে বুঝিয়ে দিলেন, কীভাবে হাঁস রান্না করতে হবে। রান্নাঘরে গিয়ে ছয়টা চুলার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই হাসিমুখে জোছনা বেগম বললেন, ‘রাতে একটা হাঁস রান্নার অর্ডার আছে। সেটাই বলে দিচ্ছিলাম। রাতে তো অর্ডার ছাড়া রান্না হয় না এখানে।’

স্বামীর হঠাৎ অসুস্থতায় নিশ্চয়ই অশান্ত হয়ে গিয়েছিল জোছনা বেগমের জীবন। িকন্তু জোছনা বেগম থেমে যাননি। ব্যবসা, স্বামীর চিকিৎসা, সংসার এবং সন্তানদের মানুষ করে চলেছেন শান্তভাবেই। জীবনের অমাবস্যা নিজেই দূর করছেন জোছনা।