banner

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 307 বার পঠিত

 

হত্যাকারীর লক্ষ্য কেবল নারী!

রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় গত তিন মাসে একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে দুই নারীকে। আরও দুই নারীকে একইভাবে কোপানো হলে তাঁরা গুরুতর আহত হয়েছেন। এই চারজনের মধ্যে তিনজনই বাড়িওয়ালার স্ত্রী। চারজনই চল্লিশোর্ধ্ব।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, প্রতিটি ঘটনা একই ধরনের। বাড়ি ভাড়া নেওয়ার কথা বলে বাসায় ঢোকার পর ওই নারীদের ওপর হামলা চালানো হয়।
দক্ষিণখান থানার সদ্যসাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ লুত্ফর রহমান  বলেন, যাঁরা নিহত হয়েছেন তাঁদের স্বজনদের বর্ণনা এবং যাঁরা আহত হয়েছেন তাঁদের বর্ণনা অনুযায়ী ঘটনাগুলো একই ব্যক্তি ঘটিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। একটি বাড়ি থেকে পাওয়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ইতিমধ্যেই ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এখনো কাউকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
হত্যার জন্য লোকটি নারীদেরই কেন বেছে নিচ্ছে, সে বিষয়ে লুৎফর রহমান বলেন, বিষয়টা রহস্যজনক। লোকটিকে গ্রেপ্তার করা গেলেই এর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
ধারাবাহিক এই ঘটনাগুলোর সূত্রপাত গত ২৪ জুলাই থেকে। ওই দিন দক্ষিণখানের আশকোনা মেডিকেল রোডে মাহিরা বেগমকে (৫০) কুপিয়ে আহত করা হয়। মাহিরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১ দিন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। এর প্রায় এক মাস পর ২১ আগস্ট দক্ষিণখানের তেঁতুলতলা রোডে গৃহকর্ত্রী সুমাইয়া বেগমকে (৫২) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ৩১ আগস্ট দক্ষিণখানের মুন্সি মার্কেট এলাকায় জেবুন্নেছা চৌধুরীকে (৫৬) কুপিয়ে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায় এক ব্যক্তি। ৭ সেপ্টেম্বর আবারও উত্তর গাওয়াইরে ওয়াহিদা আক্তার (৪৮) একইভাবে খুন হন। এর মধ্যে মাহিরা বেগম বাদে বাকি তিনজনই বাড়ির মালিকের স্ত্রী।
দক্ষিণখান থানা-পুলিশ একটি বাড়ি থেকে যে ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করেছে, সেখানে লোকটির চেহারা অস্পষ্ট। তবে লোকটির পরনে সাধারণ পোশাক ছিল। আর কাঁধে ঝোলানো ছিল ব্যাগ। নিহত ওয়াহিদা আক্তারের মেয়ে শোভার বর্ণনা অনুযায়ী, লোকটির বয়স ২৩ থেকে ২৬ বছর। তিনি খুব পরিপাটি ছিলেন।
তবে দক্ষিণখান থানা-পুলিশ বলছে, হামলাকারীর বয়স আনুমানিক ২৫-২৬ বছর। উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। গায়ের রং ফরসা। মাথার চুল ছোট। বাড়ি ভাড়া নেওয়ার কথা বলে বাসায় ঢোকেন। গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে ফ্ল্যাট দেখতে যান। আর ফ্ল্যাটে গেলেই পেছন থেকে গৃহকর্ত্রীর মাথা ও ঘাড়ে চাপাতি দিয়ে কোপ দেন। পরে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যান।
আহত দুই নারীর মধ্যে জেবুন্নেছা চৌধুরীর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। জেবুন্নেছার ছেলে কাউছার আহমেদ  বলেন, চাপাতির কোপে তাঁর মায়ের মাথার খুলির হাড়ের একটি অংশ ভেঙে গেছে। ২২ দিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন। তাঁর ডান হাত ও পা প্যারালাইজড হয়ে গেছে। দৃষ্টিশক্তিও হারিয়েছেন। সন্তানদেরই তিনি এখন ঠিকমতো চিনতে পারছেন না।
র্যাব ১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ  বলেন, ভাড়াটিয়া সেজে লোকটি আসেন। তারপর কোনো একসময় তিনি ঘটনাটি ঘটান। এ কাজে তিনি চাপাতি ব্যবহার করেন।
কর্নেল তুহিন বলেন, ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওই লোকটি সপ্তাহের কাজের দিনগুলো বেছে নেন। চারটি ঘটনাই বেলা দেড়টা থেকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে ঘটেছে। সাধারণত ওই সময়ে বাসায় কোনো পুরুষ লোক থাকেন না। এখনো লোকটিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ওই খুনির ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। কেউ তাঁর সন্ধান পেলে ০১৭৭৭৭১০১০০, ০১৭৭৭৭১০১৯৯ নম্বরে জানাতে অনুরোধ করেছেন তিনি।
দক্ষিণখান আদর্শ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম তোফাজ্জল হোসেন বলেন, মসজিদের ইমামের মাধ্যমে ও মাইকিং করে বাড়িওয়ালাদের এ বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। আগত ভাড়াটেদের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সব তথ্য সংগ্রহ করার জন্য তাঁদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাড়ি ভাড়া নিতে যারা আসছে, তাদের বাড়ি দেখানোর সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।

Facebook Comments